Posts: 777
Threads: 0
Likes Received: 1,586 in 920 posts
Likes Given: 1,442
Joined: Jan 2021
Reputation:
187
(10-05-2021, 10:25 AM)dada_of_india Wrote: বাস্তব কাহিনী:-
########################
সম্রাট : বয়স কত ?
স্বপ্না : কেন বাবু, বয়স শুনলে ২০০ আরো বেশি দেবেন ?
সম্রাট : নাম ?
স্বপ্না : কেনো নাম দিয়ে ধুয়ে খাবেন ?স্বপ্না আমার নাম ….
সম্রাট : এমন ভাবে কথা বলছো কেন ?
স্বপ্না : ভালো ভাবে কথা বলার জন্য তো এক্সট্রা পয়সা দেননি বাবু
সম্রাট : তা বলে এইভাবে কথা বলার জন্যও তো কম পয়সা নাওনি ?
স্বপ্না : বাবু, পয়সা তো শুধু শরীরের জন্যই, কেনোই বা সময় নষ্ট করছেন, শুরু করুন
সম্রাট : সিগারেট খেতে পারি একটা ?
স্বপ্না : খান না, আমাকে জিজ্ঞেস করছেন কেন
সম্রাট : নাহঃ, যদি সমস্যা থাকে …
স্বপ্না : বাব্বা, পারি না গো পারিনা, করতে এসে এতো ন্যাকামো আসে কিভাবে
সম্রাট : এমন কেন বলছো ? সমস্যা তো থাকতেই পারে অনেকের সিগারেটে
স্বপ্না : বাবু, সমস্যা তো প্রাণীর থাকে, আমরা তো জড়ো পদার্থ
সম্রাট : একটু বেশিই বাজে বকছো, সমস্যা আছে কিনাই জাস্ট জিজ্ঞেস করলাম
স্বপ্না : তবে রে, অনেকক্ষন ধরে বড্ডো কপচাচ্ছেন, এবার নিজের সমস্যা দূর করে বিদায় হন তো, শুরু করুন
সম্রাট : হ্যাঁ
স্বপ্না : খুলবো ? না নিজেই খুলবেন ?
সম্রাট : হ্যাঁ ..না…হ্যাঁ আমিই..না…
স্বপ্না : ওহ বুঝেছি, সোনাগাছিতে প্রথমবার ?
সম্রাট : হ্যাঁ
স্বপ্না : কেনো ? গার্লফ্রেন্ড দেয়নি ?
সম্রাট : না না, গার্লফ্রেন্ড টার্ল্ফ্রেন্ড নেই
স্বপ্না : এমন ঝাঁট জ্বালানো পাবলিক হলে গার্লফ্রেন্ড হবেই বা কি করে
সম্রাট : না না, আমি বিবাহিত
স্বপ্না : তোহ ? বউ কি রাতে ডিস্ক গেছে ? আর আপনি এলেন সোনাগাছি ? সত্যিই মাইরি, আপনারা বড়লোকরাই পারেন এমন নাটক করতে?
সম্রাট : না না, আমি ওই জন্য আসিনি, বউ কে খুঁজতে এসেছি
স্বপ্না : মানে ?
সম্রাট : হ্যাঁ, জানেন ..রাতে শপিং করে ফিরছিলাম দুজনেই, আমি আর আমার স্ত্রী উত্তরা , হঠাৎ ৪ জন এলো, আমাদের দুজনের মুখে রুমাল চেপে ধরলো, জ্ঞান ফিরলো যখন,পরদিন সকালে আমি স্থানীয় একটা হসপিটালে বেডে শুয়ে আছি , উত্তরা নেই, অনেক খুঁজেছি জানেন, কোথাও পাইনি
স্বপ্না : তাহ হটাৎ আজ রাতে সোনাগাছিতে একরাতের জন্য বউ খুঁজতে এলেন বুঝি ?
সম্রাট : নাহঃ,বলছি, প্লিজ পুরোটা শুনুন, ওই রাতের ঘটনার ২৬ দিনের মাথায় মানে গতকাল স্ত্রীর ফোন আসে, শুধু বললো সোনাগাছিতে এসে আমাকে নিয়ে যেও, নাম আমার নিশা ….আমি কিছু বলার আগেই ফোন টা কেটে দিলো উত্তরা, বুঝতে পেরেছিলাম হয়তো ৫ সেকেন্ডের সুযোগ টাই পেয়েছিলো আমাকে জানানোর জন্য, তারপর কাল থেকে যতবার ফোন করেছি ওই নম্বরে, ফোন লাগে নি আর …তাই আমি খুঁজতে এসেছি উত্তরা কে, জানি এতো বড় সোনাগাছিতে আমার স্ত্রীকে খোঁজা সম্ভব নয়, শুধু চাই তোমার মতো একজন বন্ধু যে আমার স্ত্রীকে খুঁজে বের করে দেবে এই নরক থেকে, প্লিজ তুমি খুঁজে দাও উত্তরা কে, যা লাগবে আমি তোমাকে দেবো ….
স্বপ্না : আমার কি লাগবে সে দাবি না হয় আপনাকে পরেই বলবো তবে পারবেন নিজের স্ত্রীকে এখান থেকে ফিরিয়ে নিতে সব কিছু জেনেও ?
সম্রাট : কেনো পারবো না ? আমি তো বেশ্যা নিশাকে কিনতে আসিনি, স্ত্রী উত্তরা কে ফেরাতে এসেছি ..তুমি তো কত দালাল, কত মাসি কে চেনো….প্লিজ ফিরিয়ে দাও আমার উত্তরা কে …..
স্বপ্না : আচ্ছা, আপনার নম্বর টা দিয়ে যান, আমি আপনাকে জানাবো কথা দিলাম যত তাড়াতাড়ি সম্ভব
(৩ দিন পর সম্রাট কে ফোন করে স্বপ্না)
স্বপ্না : শুনছেন ? নিশার খবর পেয়েছি ..আমার বিল্ডিঙের ডান দিকের ৩ নং বিল্ডিয়েই নিশা থাকে, এখানে নতুন তো তাই হাতে ফোন পায়না, আর হ্যাঁ, হয়তো কোনো বাবুর ফোন থেকেই আপনাকে সেদিন ৫ সেকেন্ডের জন্য ফোন করতে পেরেছিলো, নিয়ে যান আপনার নিশা কে
(সাথে পুলিশ নিয়ে গিয়েই সম্রাট উদ্ধার করলো নিশা ওরফে তার স্ত্রী উত্তরা কে এবং ফেরার পথে দেখা করতে যান ওই স্বপ্না নামক বেশ্যার সাথে )
সম্রাট : কি বলে ধন্যবাদ দেবো তোমায়, নিজেও জানিনা, এবার বলো তোমার কত টাকা লাগবে ?
স্বপ্না : টাকা লাগবে না, টাকার থেকেও অনেক বেশি কিছু আপনি আমাকে দিয়ে গেলেন বাবু …
সম্রাট : মানে ? কি বলতে চাইছো ? কিছুই বুঝলাম না …
স্বপ্না : জানেন বাবু ? আজ থেকে ৩ বছর আগে গ্রামেরই একটা ছেলে কে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম, খুব ভালোবাসতাম ….বাবা মা মানে নি তাই পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম….জানেন বাবু ? বিয়ের ১৯ দিনের মাথায় আমাকে এই নরকে বিক্রি করে দিয়ে যায় ১৩ হাজার টাকায়.. অনেকবার এখান থেকে পালিয়ে যাবার চান্স পেয়েছিলাম, কিন্তু কোথায় যাবো বলুন, বাবা-মার সামনে কোন মুখে দাঁড়াবো, রাস্তায় নামলেও তো সেই আমাকে ছিঁড়েই খাবে সমাজের বাবুরা রাতের অন্ধকারে , আর দিনের বেলায় খেপি সাজিয়ে রাখবে রেল স্টেশনের চাঁতালে ..তার থেকে বরং এখানে দিব্যি খেতে বাঁচতে তো পারছি ….বিশ্বাস করুন বাবু, সেদিন থেকে কোনো পুরুষ কে মন থেকে সহ্য করতে পারি না, কোনো পুরুষ কে বিশ্বাস করতেও পারিনা, শুধু এটাই মনে হতো সব পুরুষ সমান ….৩ দিন আগে আপনি আমার সেই ভুল ভাঙলেন, নতুন করে বিশ্বাস করতে শিখলাম, একটা পুরুষ যেমন তার স্ত্রীকে বিক্রি করতেও পারে সোনাগাছিতে, তেমন কোনো পুরুষ তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতেও পারে সোনাগাছি থেকে ….গতর খাটিয়ে পয়সা তো ৩ বছরে অনেক রোজগার করেছি বাবু, তবে ৩ বছরে যে ভুল টা রোজ ভেবে এসেছি, সেই ভুল টা আপনি ৫ মিনিটেই ভেঙে দিলেন.. যেটা পয়সার থেকেও অনেক দামি ….যান বাবু, ভালো থাকবেন আপনার উত্তরা কে নিয়ে …আর অনেক ধন্যবাদ এই সত্যিটা আমাকে বুঝিয়ে দিয়ে যাবার জন্য “সব পুরুষ সমান নয়” …..কেউ রেখে যায়, কেউ নিয়ে যায় ….কেউ রাখতে আসে, কেউ ফেরাতে আসে... ❤️
বেশ আবেগী ছোট গল্প.......
•
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,072 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
(10-05-2021, 10:25 AM)dada_of_india Wrote: বাস্তব কাহিনী:-
########################
সম্রাট : বয়স কত ?
স্বপ্না : কেন বাবু, বয়স শুনলে ২০০ আরো বেশি দেবেন ?
সম্রাট : নাম ?
স্বপ্না : কেনো নাম দিয়ে ধুয়ে খাবেন ?স্বপ্না আমার নাম ….
সম্রাট : এমন ভাবে কথা বলছো কেন ?
স্বপ্না : ভালো ভাবে কথা বলার জন্য তো এক্সট্রা পয়সা দেননি বাবু
সম্রাট : তা বলে এইভাবে কথা বলার জন্যও তো কম পয়সা নাওনি ?
স্বপ্না : বাবু, পয়সা তো শুধু শরীরের জন্যই, কেনোই বা সময় নষ্ট করছেন, শুরু করুন
সম্রাট : সিগারেট খেতে পারি একটা ?
স্বপ্না : খান না, আমাকে জিজ্ঞেস করছেন কেন
সম্রাট : নাহঃ, যদি সমস্যা থাকে …
স্বপ্না : বাব্বা, পারি না গো পারিনা, করতে এসে এতো ন্যাকামো আসে কিভাবে
সম্রাট : এমন কেন বলছো ? সমস্যা তো থাকতেই পারে অনেকের সিগারেটে
স্বপ্না : বাবু, সমস্যা তো প্রাণীর থাকে, আমরা তো জড়ো পদার্থ
সম্রাট : একটু বেশিই বাজে বকছো, সমস্যা আছে কিনাই জাস্ট জিজ্ঞেস করলাম
স্বপ্না : তবে রে, অনেকক্ষন ধরে বড্ডো কপচাচ্ছেন, এবার নিজের সমস্যা দূর করে বিদায় হন তো, শুরু করুন
সম্রাট : হ্যাঁ
স্বপ্না : খুলবো ? না নিজেই খুলবেন ?
সম্রাট : হ্যাঁ ..না…হ্যাঁ আমিই..না…
স্বপ্না : ওহ বুঝেছি, সোনাগাছিতে প্রথমবার ?
সম্রাট : হ্যাঁ
স্বপ্না : কেনো ? গার্লফ্রেন্ড দেয়নি ?
সম্রাট : না না, গার্লফ্রেন্ড টার্ল্ফ্রেন্ড নেই
স্বপ্না : এমন ঝাঁট জ্বালানো পাবলিক হলে গার্লফ্রেন্ড হবেই বা কি করে
সম্রাট : না না, আমি বিবাহিত
স্বপ্না : তোহ ? বউ কি রাতে ডিস্ক গেছে ? আর আপনি এলেন সোনাগাছি ? সত্যিই মাইরি, আপনারা বড়লোকরাই পারেন এমন নাটক করতে?
সম্রাট : না না, আমি ওই জন্য আসিনি, বউ কে খুঁজতে এসেছি
স্বপ্না : মানে ?
সম্রাট : হ্যাঁ, জানেন ..রাতে শপিং করে ফিরছিলাম দুজনেই, আমি আর আমার স্ত্রী উত্তরা , হঠাৎ ৪ জন এলো, আমাদের দুজনের মুখে রুমাল চেপে ধরলো, জ্ঞান ফিরলো যখন,পরদিন সকালে আমি স্থানীয় একটা হসপিটালে বেডে শুয়ে আছি , উত্তরা নেই, অনেক খুঁজেছি জানেন, কোথাও পাইনি
স্বপ্না : তাহ হটাৎ আজ রাতে সোনাগাছিতে একরাতের জন্য বউ খুঁজতে এলেন বুঝি ?
সম্রাট : নাহঃ,বলছি, প্লিজ পুরোটা শুনুন, ওই রাতের ঘটনার ২৬ দিনের মাথায় মানে গতকাল স্ত্রীর ফোন আসে, শুধু বললো সোনাগাছিতে এসে আমাকে নিয়ে যেও, নাম আমার নিশা ….আমি কিছু বলার আগেই ফোন টা কেটে দিলো উত্তরা, বুঝতে পেরেছিলাম হয়তো ৫ সেকেন্ডের সুযোগ টাই পেয়েছিলো আমাকে জানানোর জন্য, তারপর কাল থেকে যতবার ফোন করেছি ওই নম্বরে, ফোন লাগে নি আর …তাই আমি খুঁজতে এসেছি উত্তরা কে, জানি এতো বড় সোনাগাছিতে আমার স্ত্রীকে খোঁজা সম্ভব নয়, শুধু চাই তোমার মতো একজন বন্ধু যে আমার স্ত্রীকে খুঁজে বের করে দেবে এই নরক থেকে, প্লিজ তুমি খুঁজে দাও উত্তরা কে, যা লাগবে আমি তোমাকে দেবো ….
স্বপ্না : আমার কি লাগবে সে দাবি না হয় আপনাকে পরেই বলবো তবে পারবেন নিজের স্ত্রীকে এখান থেকে ফিরিয়ে নিতে সব কিছু জেনেও ?
সম্রাট : কেনো পারবো না ? আমি তো বেশ্যা নিশাকে কিনতে আসিনি, স্ত্রী উত্তরা কে ফেরাতে এসেছি ..তুমি তো কত দালাল, কত মাসি কে চেনো….প্লিজ ফিরিয়ে দাও আমার উত্তরা কে …..
স্বপ্না : আচ্ছা, আপনার নম্বর টা দিয়ে যান, আমি আপনাকে জানাবো কথা দিলাম যত তাড়াতাড়ি সম্ভব
(৩ দিন পর সম্রাট কে ফোন করে স্বপ্না)
স্বপ্না : শুনছেন ? নিশার খবর পেয়েছি ..আমার বিল্ডিঙের ডান দিকের ৩ নং বিল্ডিয়েই নিশা থাকে, এখানে নতুন তো তাই হাতে ফোন পায়না, আর হ্যাঁ, হয়তো কোনো বাবুর ফোন থেকেই আপনাকে সেদিন ৫ সেকেন্ডের জন্য ফোন করতে পেরেছিলো, নিয়ে যান আপনার নিশা কে
(সাথে পুলিশ নিয়ে গিয়েই সম্রাট উদ্ধার করলো নিশা ওরফে তার স্ত্রী উত্তরা কে এবং ফেরার পথে দেখা করতে যান ওই স্বপ্না নামক বেশ্যার সাথে )
সম্রাট : কি বলে ধন্যবাদ দেবো তোমায়, নিজেও জানিনা, এবার বলো তোমার কত টাকা লাগবে ?
স্বপ্না : টাকা লাগবে না, টাকার থেকেও অনেক বেশি কিছু আপনি আমাকে দিয়ে গেলেন বাবু …
সম্রাট : মানে ? কি বলতে চাইছো ? কিছুই বুঝলাম না …
স্বপ্না : জানেন বাবু ? আজ থেকে ৩ বছর আগে গ্রামেরই একটা ছেলে কে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম, খুব ভালোবাসতাম ….বাবা মা মানে নি তাই পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম….জানেন বাবু ? বিয়ের ১৯ দিনের মাথায় আমাকে এই নরকে বিক্রি করে দিয়ে যায় ১৩ হাজার টাকায়.. অনেকবার এখান থেকে পালিয়ে যাবার চান্স পেয়েছিলাম, কিন্তু কোথায় যাবো বলুন, বাবা-মার সামনে কোন মুখে দাঁড়াবো, রাস্তায় নামলেও তো সেই আমাকে ছিঁড়েই খাবে সমাজের বাবুরা রাতের অন্ধকারে , আর দিনের বেলায় খেপি সাজিয়ে রাখবে রেল স্টেশনের চাঁতালে ..তার থেকে বরং এখানে দিব্যি খেতে বাঁচতে তো পারছি ….বিশ্বাস করুন বাবু, সেদিন থেকে কোনো পুরুষ কে মন থেকে সহ্য করতে পারি না, কোনো পুরুষ কে বিশ্বাস করতেও পারিনা, শুধু এটাই মনে হতো সব পুরুষ সমান ….৩ দিন আগে আপনি আমার সেই ভুল ভাঙলেন, নতুন করে বিশ্বাস করতে শিখলাম, একটা পুরুষ যেমন তার স্ত্রীকে বিক্রি করতেও পারে সোনাগাছিতে, তেমন কোনো পুরুষ তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতেও পারে সোনাগাছি থেকে ….গতর খাটিয়ে পয়সা তো ৩ বছরে অনেক রোজগার করেছি বাবু, তবে ৩ বছরে যে ভুল টা রোজ ভেবে এসেছি, সেই ভুল টা আপনি ৫ মিনিটেই ভেঙে দিলেন.. যেটা পয়সার থেকেও অনেক দামি ….যান বাবু, ভালো থাকবেন আপনার উত্তরা কে নিয়ে …আর অনেক ধন্যবাদ এই সত্যিটা আমাকে বুঝিয়ে দিয়ে যাবার জন্য “সব পুরুষ সমান নয়” …..কেউ রেখে যায়, কেউ নিয়ে যায় ….কেউ রাখতে আসে, কেউ ফেরাতে আসে... ❤️
অসাধারণ!! এই লেখার মাধ্যমে যেটা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সেই মূল বিষয়টা অসাধারণ. পৃথিবীতে শুধু দু রকমের মানুষ হয়. ভালো আর মন্দ. ব্যাস. এর মধ্যেই সবাই পড়ে. সত্যিকারের ভালোবাসা ও সম্মান যে কি সেটা খুব স্পষ্ট ফুটিয়ে তোলা হয়েছে.❤
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
12-05-2021, 11:47 AM
(This post was last modified: 14-03-2023, 01:58 PM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
-"আরে, টিটোদা! তুমি?দাদা তো বাড়ি নেই..."
-"ও। নেই?"
-"কেন, তুমি জানো না? তোমাদের ই তো গ্রুপে মেসেজ দেখে দাদা বেরিয়েছে, কাকে ওষুধ দেবার জন্য..."
-"ও।"
-"তোমার হাতে ওই প্যাকেটটাতে কি গো? দাদাকে কিছু দেবার ছিল?"
-"তুই এত কথা বলিস কেন রে?"
-"অ্যাঁ!"
-"মনে হচ্ছে যেন তুই পুলিশ আর আমি মোস্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল! "
-"আরে না না...এই বৃষ্টি মাথায় নিয়ে তুমি এলে, দাদা নেই...তাই আর কি!"
-"হুম!"
-"..."
-"চুপ করে গেলি কেন?"
-"বা রে! তুমিই তো আমাকে পুলিশ আরো কত কি বানিয়ে দিলে কথা বলছিলাম বলে!"
-"আহা, কথা বলবি না কেন? বল...কিন্তু ঘোরালো প্রশ্ন করছিস কেন?"
-যাচ্ছলে! ঘোরালো প্রশ্ন আবার কোনটা?"
-"এই, কার কাছে এসেছি, হাতে কি...এইসব.."
-"এটা ঘোরালো প্রশ্ন?"
-"উফ! আমি তোর কাছে এসেছি। এই প্যাকেট টাও তোর দাদার জন্য না, তোর জন্য!"
-"ক্কি...কি আছে এতে?"
-"তুই তো ব্যাটা ভাজাভুজি খাবার পোকা! এখন তো বেরোচ্ছিস না কোথাও, আবার আজকের এই বৃষ্টিতে নিশ্চয়ই ইচ্ছে করছে তোর এসব খেতে? তাই..."
-"ওমা! দোকান কোথায় খোলা পেলে?"
-"টিটো চপ সেন্টার খোলা ছিল! ইউটিউব দেখে শিখেছি, বুঝলি?"
-"ও ব্বাবা! তা আমার জন্য এত কষ্ট করলে কেন? আর তুমি জানলেই বা কিভাবে আমি এসব খেতে ভালবাসি?"
-"ফেসবুকটা কি এমনি এমনি আছে?"
-"কিন্তু তুমি তো সবসময় ব্যস্ত! দেখার সময় পাও টাইমলাইন?"
-"টাইমলাইন কেন দেখব?"
-"তবে?"
-"প্রোফাইল দেখতে পারিনা আমি?"
-"টিটোদা, আমাকে স্টক করো তুমি?"
-"সে তো তুই ও করিস!"
-"আ আমি?"
-"সেদিন আমার একটা ছবিতে লাইক দিয়ে দিয়েছিলি...তারপরেই আনলাইক করে দিলি.."
-"তুমি অনলাইন ছিলে?"
-"আমি তো স্টক করছিলাম তোকে..."
-"সত্যি?"
-"নইলে জানলাম কিভাবে তুই পেঁয়াজি সবচেয়ে বেশি ভালবাসিস? "
-"মোটেও না!"
-"না?"
-"না...আমি একটা স্টকারকে তারচেয়েও বেশি ভালবাসি..."
-"ধ্যাত!"
-"এই না না...ধ্যাতটা মেয়েদের ডায়লগ! "
-"উফ! চা খাওয়াবি?"
-"নিশ্চয়ই! এসো!"
-"শুধু আজ না, সবকটা বিকেলে?"
-"টিটোদা! ধ্যাত!"
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,216 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
মিষ্টি প্রেমের ছোট্ট গল্প .. কিন্তু খুব unique
চলতে থাকুক এইরকম আরও কিছু
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
21-05-2021, 10:41 AM
(This post was last modified: 14-03-2023, 01:59 PM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
অনেকদিন পর আজ আয়নায় নিজেকে দেখলাম
জানো?
আসলে এতদিন নিজেকে প্রশ্ন করছিলাম...
সেই যে সেদিন
কেমন রেগে রেগে, হাত নেড়ে বললে না,
আমি তোমার জন্য কিচ্ছু করিনি?
সেদিন থেকেই ভাবছি,
সত্যিই তো, কি করেছি আমি?
সতেরো বছর আগে নিজের বাড়ি,
বিছানা, বালিশ, বক্স জানলা আর
স্নানঘরের নির্জনতা ছেড়ে,
তোমার এক কামরার ঘরে এসেছিলাম।
বাড়িওলা মাঝে মাঝেই বকেয়া ভাড়ার জন্য
তাগাদা দিতে আসতেন...
তুমি ভয়ে বাথরুমে লুকিয়ে থাকতে
আর আমি বলতাম,'কাকু, এ মাসটা, এই কটা দিন শুধু...'
আর উনি বলতেন 'শুধু তুমি বলছ বলে, মা, নইলে...'
নাহ্, কিচ্ছু করিনি আমি!
সেবার হুট বলতে হুট চাকরিটা চলে গেল তোমার
আঁচ অবশ্য পেয়েছিলে কদিন আগেই...
একদিন কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলে
'চলো, দুজন একসাথে মরি!'
তোমাকে জড়িয়ে ধরেছিলাম শক্ত হাতে...
আমি ঠাকুমার দেওয়া হারটা নিয়ে বেরিয়ে গেছিলাম...
নাহ্, সেবারও কিচ্ছু করিনি আমি!
হঠাৎ করেই এসে গেছিল মুনিয়া
তখনও তুমি তৈরি ছিলে না...
তাই, মুনিয়া রয়ে গেল
কালো প্লেটের ইউ এস জি র ছবি হয়ে
আমার মনের মাঝে...
কিছুই তো করিনি আমি!
দিনের পর দিন স্বপ্ন দেখেছি
'সব ঠিক হয়ে যাবে'
রাতের পর রাত ভেবেছি
'কাল একটা নতুন দিন আসবে...'
আজ এই দক্ষিণ খোলা মহার্ঘ্য থ্রি বিএইচকে
ঝাঁ চকচকে ইন্টিরিয়ার...
ওয়াল টু ওয়াল কার্পেট দেখে মনে হয়,
সব অলীক, সব অতীতটাই কেমন স্মৃতির ওপারে।
ঠিক মনে পড়ে না কিছুই।
নাহ্, তুমিই বোধহয় ঠিক, জানো?
একদম ঠিক হয়ত...
আমি কিছুই করিনি তোমার জন্য...
কিচ্ছু, কিচ্ছু, কিচ্ছু করিনি...
নিজেকে বিলিয়ে দেওয়াকে কি 'করা' বলা যায় নাকি!
Posts: 23
Threads: 0
Likes Received: 18 in 14 posts
Likes Given: 62
Joined: Mar 2020
Reputation:
-1
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
03-06-2021, 11:32 AM
(This post was last modified: 14-03-2023, 02:00 PM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
জন্মের পরে জন্ম ভাঙছে, দিনেরা জমেছে ঋণে-
ভালোবেসে কারা লাল হয়ে গেছে নিষিদ্ধ আলপিনে…
অভিলাষ নয়, অভ্যেসে তাই- আরবার ফেরে পাখি,
বোবা বাক্সতে কান্না জমাই, ফাঁকা হাতে হাত রাখি।
যে মাটি ভীষণ প্রিয় ছিল তার, গন্ধ পড়ছে মনে-
আমরা কজন বেঁচে আছি তবু নিষিদ্ধ ফাল্গুনে ।।
গভীরতাতেই ফিরে গেছে প্রাণ শুকনো বিকেলগুলো
গোলাপ গন্ধে হেরেছে ভীষণ, বোবা ‘কার্পাস’ তুলো
অভিসম্পাতে অজস্র নদী গতিহারা হয় যেই,
জন্ম নিখাদ মৃত্যুর সুরে চোরাবালি চেনাবেই…
কাব্যের নয়, যাপনে স্বাধীন বাতাস চেয়েছে যারা-
বাজারের আলো ঠিকরেছে যেই, ঘর ফিরে গেছে তারা।
জন্মের পরে জন্ম ভাঙছে, দিনেরা জমছে ঋণে,
ভালোবেসে কারা হেঁটে গেছে পথ অভ্যেসহীন জিনে।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
12-06-2021, 09:01 AM
(This post was last modified: 14-03-2023, 02:01 PM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
অকাল বসন্ত
"হ্যাঁ কাকু, ঠিক আছি মোটামুটি। না, জ্বর আসেনি। হ্যাঁ, আজ সকাল থেকে অল্প টেস্ট পাচ্ছি... ওই, হোম ডেলিভারি থেকে খাবার দিয়ে যাবে...আচ্ছা কাকু...রাখি?" বলতে বলতে ফোনটা রেখে দিল শুভমের। বাড়িওলা কাকুর ফোন। এই কদিন খুব খোঁজ নিয়েছেন ভদ্রলোক। প্রথমদিন তো ও ফোন ধরে ভেবেছিল ভাড়াটার জন্য ফোন করেছেন। বেশ বিরক্ত হয়েছিল তাই। তাও বাড়িওলা বলে কথা! তাই ফোনটা ধরেছিল। পরে বুঝল উনি ওর খোঁজ নেবার জন্যই ফোন করছিলেন।
কথা বলতে বলতে বাইরের দিকে চোখ গেল ওর। ওই অভদ্র মেয়েটা কথা গুলো শুনছে! ভাবতেই বিরক্ত লাগল শুভমের। এই মাস চারেক হল এই এক কামরার ফ্ল্যাটটায় ভাড়া এসেছে ও। লাগোয়া আরেকটি ফ্ল্যাটে একটি মেয়ে তার বাবার সাথে থাকে। একদিন না দুদিন এমনিই কৌতূহলের বশে শুভম তাকিয়েছিল মেয়েটাদের ঘরের জানলার দিকে। সেরকম কিছু ভেবে তাকায় নি। জাস্ট চোখ পড়ে গেছিল। কিন্তু মেয়েটা ঘটাং করে জানলাটা বন্ধ করে দিয়েছিল। খুব অপমানিত লেগেছিল ওর। সেই থেকে পারতপক্ষে ওইদিকে তাকায় না শুভম। এমনকি একদিন সামনা সামনি দেখা হয়ে গেছিল, ও না দেখার ভান করে সরে গেছিল। এত অহংকারী মেয়ের সাথে আলাপের কোনো ইচ্ছেই নেই ওর। না হয় দেখতে সুন্দর, আর ব্যাংকে চাকরি করে। তা বলে না বুঝে ওমনি ব্যবহার করবে? মানুষের আসল সৌন্দর্য তো তার ব্যবহারেই।
ভাবতে ভাবতেই কলিংবেলের আওয়াজ। এই সময়ই খাবার আসে ওর। তবে খাবার কোনো আগ্রহই নেই আজ। ভীষন ব্লান্ড আর রংহীন খাবার! দেখেই খেতে ইচ্ছে করে না। এদিকে রান্না করতেও ইচ্ছে করে না, এত দুর্বল ও। কোনোরকমে ব্রেকফাস্টটা বানিয়ে নেয়, এই না কত! আর একদিন দুদিন দেখে ডেলিভারি বন্ধ করে দেবে ও...নিজেই সেদ্ধভাত করে খাবে...।
বেজার মুখে দরজাটা খোলে শুভম। দেখে একটা তিন থাকের স্টিলের টিফিন বাক্স। কিন্তু ওর হোম ডেলিভারি থেকে তো ফয়েল প্যাকেটে করে খাবার দেয়! আজ তাহলে ইচ্ছে করে এতে দিয়েছে। ভেবে তাড়াতাড়ি বাক্সটা নিয়ে ঘরে আসে। একদম গরম খাবার! অন্যদিন এতটা গরম থাকে না!
টেবিলের ওপর টিফিনবাক্সটা রাখতেই চোখে পড়ল একটা কাগজের টুকরো! এটা আবার কি!
"হ্যালো নেবার,
আপনি ভাল আছেন জানতে পারলাম। ভাল লাগল শুনে খুব। রোগা হয়ে গেছেন কিন্তু অনেকটা। এবার থেকে ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করবেন, কেমন?
খাওয়া দাওয়ার কথায় মনে পড়ল। টেস্ট ফিরে পাওয়া সেলিব্রেট করার জন্য মুগডাল, উচ্ছে ভাজা আর চিকেন পাঠালাম। আমার রান্না। বাবা বলেন আমি রান্না খারাপ করি না। আপনার কেমন লাগবে জানি না অবশ্য!
আর হ্যাঁ, সেদিনের জন্য স্যরি। মাথা গরম ছিল একটা কারণে।
সেরে উঠুন ঝটপট।
ইতি,
আপনার রুড নেবার!"
চিঠিটা পড়ে একটু হাসে শুভম। আহ, মনটা ভাল হয়ে যাচ্ছে! টিফিনবাক্স খুলেই জিভে জল এলো ওর। কতদিন পরে ভাল খাবার খেতে পাবে!
"হ্যালো, 'রুড' না, 'গুড' নেবার,
থ্যাংকইউ! কত্তদিন পরে এত সুস্বাদু খাবার খেলাম। আপনার বাবা ঠিক ই বলেন, আপনার রান্না খুব ভাল।
আবার কবে খাওয়াবেন?
অপেক্ষায় থাকলাম, উত্তরটা জানলা দিয়েও দিয়ে দিতে পারেন।
ইতি,
আপনার হ্যাংলা নেবার!"
টিফিনবাক্সটা ধুয়ে চিঠিটা ওপরে রেখে স্যানিটাইজ করে একটা মোটা ধূপকাঠির প্যাকেট দিয়ে পাশের বাড়ির কলিংবেল বাজিয়ে ঘরে চলে আসে শুভম।
এবার অপেক্ষার পালা...তবে এই অপেক্ষা মিষ্টি অপেক্ষা....
প্রখর গ্রীষ্মেও অকাল বসন্ত আসছে...
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,072 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
(12-06-2021, 09:01 AM)ddey333 Wrote: অকাল বসন্ত
"হ্যাঁ কাকু, ঠিক আছি মোটামুটি। না, জ্বর আসেনি। হ্যাঁ, আজ সকাল থেকে অল্প টেস্ট পাচ্ছি... ওই, হোম ডেলিভারি থেকে খাবার দিয়ে যাবে...আচ্ছা কাকু...রাখি?" বলতে বলতে ফোনটা রেখে দিল শুভমের। বাড়িওলা কাকুর ফোন। এই কদিন খুব খোঁজ নিয়েছেন ভদ্রলোক। প্রথমদিন তো ও ফোন ধরে ভেবেছিল ভাড়াটার জন্য ফোন করেছেন। বেশ বিরক্ত হয়েছিল তাই। তাও বাড়িওলা বলে কথা! তাই ফোনটা ধরেছিল। পরে বুঝল উনি ওর খোঁজ নেবার জন্যই ফোন করছিলেন।
কথা বলতে বলতে বাইরের দিকে চোখ গেল ওর। ওই অভদ্র মেয়েটা কথা গুলো শুনছে! ভাবতেই বিরক্ত লাগল শুভমের। এই মাস চারেক হল এই এক কামরার ফ্ল্যাটটায় ভাড়া এসেছে ও। লাগোয়া আরেকটি ফ্ল্যাটে একটি মেয়ে তার বাবার সাথে থাকে। একদিন না দুদিন এমনিই কৌতূহলের বশে শুভম তাকিয়েছিল মেয়েটাদের ঘরের জানলার দিকে। সেরকম কিছু ভেবে তাকায় নি। জাস্ট চোখ পড়ে গেছিল। কিন্তু মেয়েটা ঘটাং করে জানলাটা বন্ধ করে দিয়েছিল। খুব অপমানিত লেগেছিল ওর। সেই থেকে পারতপক্ষে ওইদিকে তাকায় না শুভম। এমনকি একদিন সামনা সামনি দেখা হয়ে গেছিল, ও না দেখার ভান করে সরে গেছিল। এত অহংকারী মেয়ের সাথে আলাপের কোনো ইচ্ছেই নেই ওর। না হয় দেখতে সুন্দর, আর ব্যাংকে চাকরি করে। তা বলে না বুঝে ওমনি ব্যবহার করবে? মানুষের আসল সৌন্দর্য তো তার ব্যবহারেই।
ভাবতে ভাবতেই কলিংবেলের আওয়াজ। এই সময়ই খাবার আসে ওর। তবে খাবার কোনো আগ্রহই নেই আজ। ভীষন ব্লান্ড আর রংহীন খাবার! দেখেই খেতে ইচ্ছে করে না। এদিকে রান্না করতেও ইচ্ছে করে না, এত দুর্বল ও। কোনোরকমে ব্রেকফাস্টটা বানিয়ে নেয়, এই না কত! আর একদিন দুদিন দেখে ডেলিভারি বন্ধ করে দেবে ও...নিজেই সেদ্ধভাত করে খাবে...।
বেজার মুখে দরজাটা খোলে শুভম। দেখে একটা তিন থাকের স্টিলের টিফিন বাক্স। কিন্তু ওর হোম ডেলিভারি থেকে তো ফয়েল প্যাকেটে করে খাবার দেয়! আজ তাহলে ইচ্ছে করে এতে দিয়েছে। ভেবে তাড়াতাড়ি বাক্সটা নিয়ে ঘরে আসে। একদম গরম খাবার! অন্যদিন এতটা গরম থাকে না!
টেবিলের ওপর টিফিনবাক্সটা রাখতেই চোখে পড়ল একটা কাগজের টুকরো! এটা আবার কি!
"হ্যালো নেবার,
আপনি ভাল আছেন জানতে পারলাম। ভাল লাগল শুনে খুব। রোগা হয়ে গেছেন কিন্তু অনেকটা। এবার থেকে ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করবেন, কেমন?
খাওয়া দাওয়ার কথায় মনে পড়ল। টেস্ট ফিরে পাওয়া সেলিব্রেট করার জন্য মুগডাল, উচ্ছে ভাজা আর চিকেন পাঠালাম। আমার রান্না। বাবা বলেন আমি রান্না খারাপ করি না। আপনার কেমন লাগবে জানি না অবশ্য!
আর হ্যাঁ, সেদিনের জন্য স্যরি। মাথা গরম ছিল একটা কারণে।
সেরে উঠুন ঝটপট।
ইতি,
আপনার রুড নেবার!"
চিঠিটা পড়ে একটু হাসে শুভম। আহ, মনটা ভাল হয়ে যাচ্ছে! টিফিনবাক্স খুলেই জিভে জল এলো ওর। কতদিন পরে ভাল খাবার খেতে পাবে!
"হ্যালো, 'রুড' না, 'গুড' নেবার,
থ্যাংকইউ! কত্তদিন পরে এত সুস্বাদু খাবার খেলাম। আপনার বাবা ঠিক ই বলেন, আপনার রান্না খুব ভাল।
আবার কবে খাওয়াবেন?
অপেক্ষায় থাকলাম, উত্তরটা জানলা দিয়েও দিয়ে দিতে পারেন।
ইতি,
আপনার হ্যাংলা নেবার!"
টিফিনবাক্সটা ধুয়ে চিঠিটা ওপরে রেখে স্যানিটাইজ করে একটা মোটা ধূপকাঠির প্যাকেট দিয়ে পাশের বাড়ির কলিংবেল বাজিয়ে ঘরে চলে আসে শুভম।
এবার অপেক্ষার পালা...তবে এই অপেক্ষা মিষ্টি অপেক্ষা....
প্রখর গ্রীষ্মেও অকাল বসন্ত আসছে...
কি সুন্দর শর্ট আর সুইট একটা গল্প.....
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
12-06-2021, 09:30 PM
(This post was last modified: 14-03-2023, 02:02 PM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
-"কেমন আছ এবেলা?"
-"ঠিক আছি!"
-"গলাটা এমনি কেন?"
-"ব্যথা তো, তাই।"
-"শ্বাসকষ্ট হচ্ছে না তো? ঠিক করে বলো"
-"না না।"
-"মাপছ ঠিক মতো? তিন ঘন্টা পরপর কিন্তু মাপবে"
-"হ্যাঁ রে বাবা। মাপছি।"
-"চার্ট রেখেছ তো? আমাকে পাঠাও।"
-"কেন? তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না আমি চার্ট রেখেছি?"
-"তা তুমি যা অগোছালো... না ই রাখতে পারো!"
-"আহ্! খালি অবিশ্বাস! পাঠালাম, দাঁড়াও! এই...এই যে...এবার দেখো, গেছে!"
-"দিয়া, এ কি? এটা কি পাঠিয়েছ?"
-"যা সত্যি, যা ফিল করি সবসময়, তাই তো লিখলাম..."
-"তাহলে যে বলো আমাকে বিয়ে করাটা মস্ত বড় ভুল তোমার?"
-"ভুল বলি"
-"আচ্ছা?"
-"হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ... এই ক'টা দিন একা এই ঘরে থেকে বুঝেছি কি ভীষণ ভালোবাসি তোমাকে!"
-"তাইইইই?"
-"হ্যাঁ তাই, মশাই! এই যে তুমি স্নান করে ভিজে তোয়ালেটা বিছানায় রেখে দাও, সেটা মিস করছি। অফিস যাবার সময় হাজার ব্যস্ততার মাঝেও আমার গাল স্পর্শ করে তোমার ঠোঁট...মিস করছি সেটাও... আমার পাশবালিশটা প্রায়ই নিয়ে নাও তুমি নিজের দিকে। বাধ্য হয়ে তোমার গায়েই পা তুলে দিতে হয়...মিস করছি...সেই নৈকট্য!"
-"বুঝলাম!"
-"কি?"
-"তুমি এখনও সেই পাগলীই আছো! আর নিজ গৃহে পরবাসী হওয়া খুব খারাপ কিছু না!"
-"হুম! শুধু এইটুকু?"
-"হোয়াটসঅ্যাপ খোলো..."
-"খুললাম!"
-"বিছানায় ভিজে তোয়ালে বলো, বা অন্যকিছু...তুমি যখন ভুরু কুঁচকে আমার দিকে তাকাও, ঠোঁটটা টিপে, ডান গালে একটা আলতো টোল পড়ে...মনে হয়, পৃথিবীর বুকে নেমে এসেছে স্বয়ং চন্দ্রিমা!...বাবা, তুমি এত কাব্যও জানো?"
-"জানতাম না! এই দুষ্টু ভাইরাসটা শিখিয়ে দিল। বলে দিল যে মনের কথা আর মনে রাখতে নেই। ছড়িয়ে দিতে হয়। ভাসিয়ে দিতে হয় মনের মানুষের উদ্দেশ্যে..."
-"মিথিল...আই..."
-"হ্যাঁ দিয়া...আই লাভ ইউ টুউউউউ..."
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,072 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
আবারো মিষ্টি একটা ছোট্ট প্রেমের গল্প. হ্যা তারা বিবাহিত.... একে অপরকে চিরদিনের জন্য কাছে পেয়েছে তবু লুকিয়ে থাকা ভালোবাসা, অভ্যেস গুলো যেন না বলেও বুঝিয়ে দেয়-
ভালোবাসি তোমায়
Posts: 3,682
Threads: 14
Likes Received: 2,558 in 1,403 posts
Likes Given: 2,044
Joined: Apr 2021
Reputation:
530
ddey333 নিজেকে সামান্য পাঠক বলে পরিচয় দেন। কিন্তু এই ক্ষুদ্র গল্প গুলো পড়লে মনে হয় যেন এক বিখ্যাত কালজয়ী লেখক।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(12-06-2021, 09:49 PM)satyakam Wrote: ddey333 নিজেকে সামান্য পাঠক বলে পরিচয় দেন। কিন্তু এই ক্ষুদ্র গল্প গুলো পড়লে মনে হয় যেন এক বিখ্যাত কালজয়ী লেখক।
শুধু একটা আমার জীবনের সত্যি কাহিনী ছেড়ে দিলে , এই থ্রেডের একটা গল্পও আমার লেখা নয় সবই সংগৃহিত ....
সুতরাং কোনো ভুল ধারণা করবেন না আমার ব্যাপারে !!!
Posts: 446
Threads: 3
Likes Received: 11,694 in 2,466 posts
Likes Given: 4,988
Joined: Jan 2019
Reputation:
2,925
গল্প আপডেট দিতে থাকুন দে বাবু। আপনি আছেন ভেবেই মনে হয় পুরনো দিন এখন বিদ্যমান আছে। নইলে এক এক করে পিনু বাবু, রাজদীপ দা, মিস্টার ফ্যান্টাস্টিক সবাই বিদায় নিয়েছেন।
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
13-06-2021, 10:02 AM
(This post was last modified: 14-03-2023, 02:03 PM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
আলোময়
দেখতে দেখতে সাত সাতটা দিন কেটে গেল রিনির।
এতবার স্যানিটাইজ করা আর বাকি সব কিছু মেনে চলা সত্ত্বেও যখন জ্বর এলো, মাথা ব্যথা, গা হাত পায়ে ব্যথা আর একটা বিরক্তিকর শুকনো কাশি নিয়ে, বড্ড অবাক হয়েছিল ও। প্রথম প্রথম তো ভেবেছিল এমনি ঠান্ডা লেগেছে বোধহয়। কিন্তু তারপর হুট করে স্বাদ আর গন্ধও চলে গেল! ঘরমোছার ফিনাইল থেকে গেলবছর সখ করে কেনা শ্যানেলের পারফিউম পর্যন্ত, গন্ধ যখন আর নাকে লাগে না...তখন বুঝতে পারল 'তিনি এসেছেন'! তা, এমনি কোনো অসুবিধা হয়নি ওর। ডাক্তারবাবুর সাথে কথা বলে ওষুধ শুরু করে দিয়েছিল। এমনিতেও একাই থাকে ও, তাই আইসোলেশানের প্রশ্ন ও নেই!
আর সময় তো প্রায় কেটেই গেল! একটা সপ্তাহ কেটে গেছে, আরেকটা সপ্তাহ কাটলেই... সুস্থ হয়ে যাবে...
বিছানায় শুয়ে শুয়ে এতাল বেতাল ভাবছিল রিনি। এই রোগটা বড্ড দুর্বল করে দিয়েছে ওর মতো ছটফটে মেয়েকেও! নইলে আগে তো সারা সপ্তাহ হাড়ভাঙা খাটুনির পরেও রবিবার গুলোতে বেরিয়ে পড়ত এদিক সেদিক। মন ভাল করার জন্য। আর এই কদিন হল - রাজ্যের ক্লান্তি এসে ভিড় করেছে শরীরে। মোবাইল ঘাঁটতে ইচ্ছে করে না... জোর করে একটা দুটো ছবি পোস্ট বা কমেন্ট করার পরেই বন্ধ করে দেয়। বইয়ের এক পাতা দুপাতা পড়ার পরেই চোখ বুজে আসে...
ভাবতে ভাবতেই চোখ বুজে এসেছিল ওর। হঠাৎ কলিংবেলের শব্দে ঘুমের চটকাটা ভেঙে যায় ওর।
এই সময়ে কে রে বাবা! এখন তো খাবার আসার ও সময় নয়।
ক্লান্ত শরীরটাকে কোনোমতে টেনে দরজাটার কাছে নিয়ে আসে রিনি। আইহোল দিয়ে দেখে দরজার সামনে কিছু একটা রেখে চলে যাচ্ছেন কেউ একজন। দেখে মনে হলো কুরিয়ার সার্ভিসের মতো কেউ! আসলে ও দরজার বাইরে পোস্টারের মতো টাঙিয়ে দিয়েছে " আমি কোভিড ১৯ পজিটিভ। দয়া করে বাইরে খাবার রেখে যান।" যাতে কোনো সমস্যা না হয়।
মাস্কটা পরে নিয়ে দরজাটা খোলে রিনি। একটা ছোট্ট কাডবোর্ডের বাক্স। তুলে নিয়ে ভেতরে আসে ও। আর প্রেরকের নাম দেখে অবাক হয় ও।
ওর খুড়তুতো ভাই রুন্টু!
কতদিন কথা হয়না রুন্টুর সাথে! সেই জমি বাড়ির ভাগ নিয়ে কাকুদের সাথে ঝামেলার পর থেকেই। সেইসময় ও রুন্টুকে, আর রুন্টু ওকে কিছু অপ্রীতিকর কথা বলে দিয়েছিল...ব্যাস, সেই থেকেই...
আজ হঠাৎ রুন্টু কি পাঠাল?
স্যানিটাইজার স্প্রে করে জীবাণুমুক্ত করে বাক্সটা খুলল রিনি। দেখে একটা গোলাপী জামা পরা পুতুল! ওর ছোটবেলার পুতুল! আর তার বুকের কাছে একটা কাগজ। চিঠি!
"ডিয়ার ছুটকিদি,
কাল তোর পোস্ট দেখলাম ফেসবুকে। তুই লিখেছিস স্বাদ গন্ধ ছাড়া পৃথিবীটা যে এত একা লাগে, জানতিস না। দেখে বুকে একটা মোচড় লাগল, জানিস?
তুই অসুস্থ, একা। মন খারাপ করছিস নিশ্চয়ই? তাই তো এই গুলো পাঠালাম, তোর ছোটবেলা আর বেড়ে ওঠার সময়টার সঙ্গী। আশা করি এদের পেয়ে তোর আর একা লাগবে না।
আর তারপরেও যদি লাগে?
এই বোকা ভাইটাকে ফোন করিস।
টাটা!"
চিঠিটা পড়ে ফিক করে হেসে ফেলে রিনি। তারপর দেখে গোলাপী পুতুলের নিচে ক'টা বই। ঠাকুরমার ঝুলি। আবোল তাবোল। সেরা সন্দেশ। আহা! এখন মোবাইলেই সব বই পাওয়া যায় বটে, কিন্তু পিডিএফ কি পারে এমনভাবে স্মৃতি, সেইসব সোনালী দিনের কথা মনে করাতে?
কিন্তু এটা কি!
ভুরু কুঁচকে যায় রিনির। তারপর কাঁপা কাঁপা হাতে তোলে সেটিকে।
কে সি নাগের অঙ্ক বই! নবম - দশম শ্রেণীর জন্য!
সেই বই যা দেখে এই তিরিশ পেরিয়েও ভয় লাগছে রীতিমতো। এমনকি ও তো কখনও কে সি দাসের রসগোল্লা খায়নি, কে সি পালের ছাতা মাথায় দেয় নি এই 'কে সি' নামের ভয়েই! আর পাজি হনুমান রুন্টু কিনা...!!
ছুট্টে গিয়ে মোবাইলটা নিয়ে এল রিনি। হতভাগাটার একদিন কি ওর একদিন আজ!
মোবাইলে কলার টিউনে গান বাজছে "ফির লে আয়া দিল..."
বরফ গলছে...
আলো আসছে...ভালো আসছে...
Posts: 3,682
Threads: 14
Likes Received: 2,558 in 1,403 posts
Likes Given: 2,044
Joined: Apr 2021
Reputation:
530
18-06-2021, 12:37 PM
(This post was last modified: 18-06-2021, 12:38 PM by Bichitro. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
আপনার এই সব অনু গল্পে নাম নেই কেন?
একটা নাম দিলে বেশ ভালো লাগতো। পড়তে কিন্তু দারুণ লাগে। ভাষার ব্যাবহার, শব্দ চয়ন এইসবের তুলনা হয় না। ( যদিও আপনি বলেন এসব আপনার লেখা না। )
তবে পড়ে কিছুটা মন খারাপও হয়। বাস্তব। কঠিন বাস্তব।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
#অন্য_রূপকথা
আজকাল আমাকে বাজারে যেতে হয় না!
লকডাউনের পর থেকেই আমাদের পাড়ায় সাইকেল ভ্যানে করে সবজি, মাছ, ফল এমনকি পুজোর ফুল মালা নিয়ে আসেন অনেকে। কোভিড সেরে গেলেও আমি এখনো বেশ দুর্বল, তাই মোটামুটি সকাল আটটা বেজে গেলেই তক্কেতক্কে থাকি, আর দরকার মতো ওঁদের ডাক শুনে নেমে আসি বাড়ির নিচে, সবজি, ফল, এসব কেনার জন্য।
আজ ঘুম ভেঙেছে টাপুরটুপুর নূপুর বাজার শব্দে। বেশ মনোরম সকাল। আষাঢ়স্য দ্বিতীয় দিবস... আহা! কিন্তু বাকি কিছু ভাবার আগেই "সবজি লাগবেএএএএএ সবজি" শুনে মনে পড়ে গেল আজ কেনাকাটা করতেই হবে।
রাস্তায় এসে দেখি বেশ কয়েকজন ভ্যানের কাছে এসে দাঁড়িয়ে আছেন। একটু দূরত্ব রেখে আমিও দাঁড়ালাম। সবার পরে ওই সবজি দাদা আমাকে আমার প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো দিতে শুরু করলেন। আর তখনই আমার চোখ গেল ওঁর দিকে। আসলে, ওঁর বুকপকেটের দিকে, সেখানে রাখা একটা বেশ বড় চকোলেট।
আমি আবার বড্ড কৌতূহলী। তাই জিজ্ঞেস করেই ফেললাম "দাদা, চকোলেট ভালোবাসেন বুঝি? এভাবে পকেটে রেখেছেন, গলে যাবে তো..."
আমার জন্য পটল আর হিমসাগর আম ওজন করার ফাঁকেই একগাল হেসে বললেন "আর বলবেন না বৌদি, ওই হলুদ বাড়ির ভদ্রমহিলা দিলেন। ওই বাড়ির সবার করোনা হয়েছিল, তখন আমি ওঁদের যা যা দরকার এনে দিয়েছি, ওই ফুল ফল দুধ এইসব, এখন সুস্থ হয়ে আমাকে থ্যাংকইউ বলে এইটা দিলেন। এতবার করে বললাম এ তো আমার কর্তব্য ছিল, তেমন কিছুই করিনি... শুনলই না...হেঁ হেঁ..."
বৃষ্টিভেজা সকালে, হাঁটু পর্যন্ত গোটানো প্যান্ট, মলিন চেককাটা জামা আর ক্লান্ত, তোবড়ানো মুখে একগাল হাসি... আমার সামনে তখন এই পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী মানুষটি দাঁড়িয়ে...! যিনি নিজের সাধ্যমতো সাহায্য করেছেন কয়েকটি অসুস্থ মানুষকে, আর কয়েকজন মানুষ...আহা, মানুষের মতো মানুষ, তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন নিজেদের মনের মাধুরী মিশিয়ে। কখনো কখনো জীবনে ক্ষয়াটে রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে আমরা ভুলেই যাই, ধন্যবাদ দেবার প্রয়োজন কতটা... প্রায়শই 'টেকেন ফর গ্রান্টেড' হিসেবে নিয়ে ফেলি উপকারী মানুষদের। অথচ, একটু ভালবাসা...একটু উষ্ণতা...এইটুকুই... এইটুকুই তো পারে অপার আনন্দ নিয়ে আসতে।
আর...ওই হাসি! আজ সবজিদাদা সারাদিন হাসবেন...আরও আরও মানুষকে সাহায্য করবেন, আমি যেন দেখতে পাচ্ছিলাম...
স্যাঁতসেঁতে দিন আর কানায় কানায় ভরে যাওয়া মন - শুধু সবজি দাদা ই নয়, আমিও আজ খুব, খুব সুখী মানুষ...
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
প্রিয়ন্তে..
এই মাত্তর ক'দিন হল অফিসটা খুলেছে, তাও ঘন্টা ছয়েকের জন্য...তারমধ্যে আবার টানা বৃষ্টি! রাস্তায় জল জমে একাকার কান্ড...গাড়িঘোড়াও কম। তাই চারটে বাজতেই টেবিল গুছিয়ে, ড্রয়ারে ছাবি দিয়ে বেরোবার তোড়জোড় করছিলেন বিকাশবাবু। হঠাৎ অফিসের ছোকরা পিওন অনিল এসে বলল "আপনাকে স্যার ডাকছেন"।
স্যার মানে মালিকের ছেলে। গতবছর এই অফিস যাঁর হাতে তৈরি, সেই মালিক এই বিচ্ছিরি রোগটায় মারা যাবার পর থেকে অফিসে আসা শুরু করেছে ও। একদিকে সদ্য পিতৃহারা, তারমধ্যে 'মার্কেটের' অবস্থা শোচনীয়... সবমিলিয়ে জেরবার হয়ে গেছিল সবে কলেজ পাশ দেওয়া ছেলেটা তখন। কিন্তু তারপর আস্তে আস্তে ভালোই হাল ধরেছে ব্যবসার। তবে, সব আগের মতো হবার আগেই এই দ্বিতীয় ঢেউ এসে গেল আর আবার সব পিছিয়ে গেল! কিন্তু তাও কাজ তো করতেই হবে...। তাই হয়ত স্যার ডাকছেন, কোনো কাজের জন্য। কিন্তু এখন যেতে গেলে তো দেরি হয়ে যাবে বেরোতে...এদিকে পাশের বাড়ির গৌরবকে বলেছেন সে যেন অফিস থেকে বাড়িতে যাবার সময় বাইকে করে নিয়ে যায়...। সে এসে রাস্তায় দেখতে না পেলে যদি একা একাই চলে যায়...?
"বিকাশ বাবু,,আপনি তো অনেকদিন ধরেই কোম্পানিতে আছেন...আপনার আধার কার্ডটা একটু দেবেন?" স্যারের একচিলতে ঘরে ঢুকতেই উনি জিজ্ঞেস করলেন।
"আ...আধার কার্ড? কেন স্যার?" অবাক হয়ে বললেন উনি।
"এমনি...অফিসিয়াল রিজন.." স্যার বললেন।
আধার কার্ডের একটা জেরক্স কপি রাখা ছিল ওনার কাছে। সেটা এনে দিলেন বিকাশ বাবু। তারপর ব্যাগটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন।
মনটা... ভাল লাগছে না একদম!
এত পুরোনো কোম্পানি, কখনও পাঁচটাকার হিসাবেও গরমিল করেননি...আর স্যার কি ভাবলেন উনি চুরিটুরি করতে পারেন? তাই আধার কার্ড নিয়ে রাখলেন? তা ভালো... যার যা মনে আছে, করুক...উনি তো নিজে জানেন উনি সৎ! ভাবতে ভাবতেই বাড়ির পথ ধরলেন উনি।
রবিবারের সকাল। আজও আকাশের মুখ ভার। এখনও বৃষ্টি শুরু হয়নি ঠিক ই, কিন্তু যে কোনো সময়েই ঢালবে। আজ একটু সবজি কিনতে হবে...মাসের শেষ...এদিকে মাইনে যে কবে পাওয়া যাবে...
ঘরে পরার লুঙ্গিটা ছেড়ে পাজামা পরছেন সবে, হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। পাশের বাড়ির কেউ হবে বোধহয়! তারে মেলা জামাটা নিতে যাবেন, দেখেন গিন্নি ঢুকলেন ঘরে ব্যস্ত হয়ে । "শুনছ...বাইরের ঘরে এসো...তাড়াতাড়ি। "
বাইরের ঘরে এসে দেখেন অফিসের স্যার। হাতে একটা প্যাকেট!
"স্যার...আপনি...মানে এখানে..."
"বাহ্, আজ আসব বলেই তো কাল আপনার কাছ থেকে আধার কার্ডটা নিলাম...যদিও জানতাম আপনি এই চিৎপুর অঞ্চলেই থাকেন, কিন্তু আসল লোকেশানটা না জানলে আসতাম কিভাবে..." বলেই একটু এগিয়ে এসে ওনাকে প্রণাম করলেন। তারপর বললেন "বাবা চলে যাবার পর থেকে আপনি আমাকে সবকিছুতে গাইড করেছেন। আপনি না হলে ব্যবসা লাটে তুলে দিতে হত। এদিকে লোন নেওয়া আছে...জানেন ই তো। প্রতিবছর বাবাকে ফাদার্স ডে উপলক্ষ্যে উপহার দিতাম। আজ উনি নেই, আপনি আছেন...সামান্য কিছু উপহার এনেছি আপনার জন্য, কাকু...হ্যাঁ এই নামেই ডাকব আজ থেকে আপনাকে...আপনি ফিরিয়ে দেবেন না প্লিজ..." বলে, গিন্নির দিকে এগিয়ে গিয়ে ওঁকে প্রণাম করেন স্যার... না না... 'কাকু' বলছে যখন... উনিও 'অভিষেক' বলেই ডাকবেন...।
বাইরে বৃষ্টি নেই, তবে মেঘলা হয়ে আছে...
আর ওনার বুকে মেঘ নেই একটুও...কিন্তু চোখে যে কেন বৃষ্টি নামে এইভাবে...
আহ... এই জীবন আর এইভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁচে থাকা যে কত সুন্দর...
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
#কথোপকথন
-"হ্যালো, কে বলছেন?"
-"বাড়ির সামনে জল জমেছে এবারও? সবজি টবজি...মুদি দোকানের জিনিস...আছে তো বাড়িতে?"
-"কে বলছেন বলুন তো?"
-"ওহ! গলাটাও অচেনা বুঝি এখন!"
-"তুমি!"
-"আজ ই পেপারে দেখলাম ওইদিকে বৃষ্টি হচ্ছে খুব..."
-"কাল থেকে একটু কম... শুক্র, শনি ভাসিয়ে দিয়েছিল একেবারে।"
-"তাই তো জিজ্ঞেস করছি, সব আছে তো বাড়িতে?"
-"আছে বোধহয়।"
-"বোধহয়! সেই, কোনোদিন তো দেখলেই না কিছু..."
-"সোমা, জানি কিছু দেখিনি। তবে এই নিয়ে তো কথা হয়েছে অনেকবার। এখন আর কি..."
-"হ্যাঁ, স্যরি, আমার আর কি! আজ পেপারে না দেখলে মনেও পড়ত না। "
-"তাই কি?"
-"আবার কি!"
-"আমার কাছে তো অন্যরকম খবর আছে, সোমা।"
-"কি বলতে চাও তুমি? আমি সেপারেশানের পরেও তোমাকে ভুলতে পারিনি? তোমার খোঁজ রাখি? এটাই তো? ভুল কথা! একদম ভুল! আমি...ইয়ে, মানবিকতার খাতিরে ফোন করেছিলাম।"
-"আসলে বৃষ্টি পড়ছে শুনে ই পেপার খুঁজে পড়েছ। আর তাই, চিন্তা হচ্ছিল তোমার...আমার বাড়ির সামনে জল জমেছে কিনা...তাই না?"
-"বললাম তো, ভুল হয়েছে। স্যরি। "
-" না না স্যরি কেন। এ তো তোমার ও বাড়ি।"
-"মোটেও না।"
-"তাই? তাহলে জানলায় তোমার লাগানো জবা, বেল, নয়নতারার টবগুলোকে সরিয়ে দিই?"
-"গাছ অবলা জিনিস। ওদের ওপর আমার রাগটা কেন ফলাবে?"
-"রাগ! রোজ জল দিই, জানো?"
-"জানি।"
-"কিভাবে?"
-"মানে...মনে হয় আরকি!"
-"আমিও একটা জিনিস জানি!"
-"কি?"
-"সুলতা মাসি ভালোই স্পাইয়ের কাজ করছে! 'ফ্যামিলি ম্যানে'র নেক্সট সিজনে টাস্ক জয়েন করতে বললেই হয়!"
-"সু..সুলতা মাসি মানে?"
-"মানে, গাছে জল দেবার খবর তো উনিই দেন..."
-"কিভাবে বুঝলে?"
-"যেভাবে বুঝলাম তুমি আজ ওনাকে রান্না করতে আসার সময় মুদি দোকান থেকে খিচুড়ি রান্নার জিনিস কিনে আনতে বলেছিলে একেবারে... যাতে এই বৃষ্টির দিনে আমার ভাল লাগে.."
-"মোটেও না.."
-"সোমা, তাহলে যে গোবিন্দভোগ চাল, সোনামুগ ডালের গন্ধটা বেরোচ্ছে রান্নাঘর থেকে, সেটা এমনি এমনি?"
-"জানি না যাও!"
-"ভালো ও বাসবে, আবার দূরেও থাকবে! কি যে করো!"
-"রাখছি আমি!"
-"এই, রেখো না...শোনো..."
-"কি?"
-"তোমার জবা গাছে অনেক ফুল ফুটেছে, মাথা দুলিয়ে গুড মর্নিং বলে আমাকে সকালে। দুপুরে নয়নতারা ফিকফিক করে হাসে। রাতে বেলফুল বলে শুভরাত্রি...কালকের দিন ভাল কাটুক..."
-"হুম, তো?"
-"তো...ওরা তো তোমার রিপ্রেজেন্টটেটিভ, তাই না?"
-"..."
-"ফিরে এসো, সোমা! দেখো, এখন গোবিন্দভোগ আর সোনামুগের নাম জানি, গন্ধ জানি। বাকিটাও... শিখে নেব...প্রমিজ! "
-"পাক্কা?"
-"হিমসাগরের মতো পাকা!"
-"ধ্যাত!"
-"হা হা হা!"
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
26-06-2021, 11:29 PM
(This post was last modified: 14-03-2023, 02:04 PM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
নতুন মা
ওয়ার্ক ফ্রম হোম করতে করতে মাঝে মাঝে পিঠটা ব্যথা করে ওঠে সায়ন্তনের। তাই একটু স্ট্রেচিং করার জন্য চেয়ার থেকে উঠল ও। আজ এগারোটা থেকে টানা মিটিং চলেছে ওর। তাই ক্লান্তু লাগছে খুব। একটু চা খেলে হতো। ভাবতে ভাবতেই ঘর থেকে বেরোল ও।
ছোট্ট ফ্ল্যাট ওদের। দুটো বেডরুম, ড্রয়িংরুম,রান্নাঘর, বাথরুম আর এক চিলতে একটা ছোট্ট ঘর, একটা ক্যাম্প খাট আর একটা চেয়ার রাখার পরেই যেখানে আর নড়াচড়ার জায়গা নেই। আর দুটো বেডরুমের একটায় বাবা থাকেন, অপেক্ষাকৃত বড় ঘরটায় ও আর সোনালী থাকে। আগে ওটা মা বাবার ঘর ছিল, কিন্তু মা চলে যাবার পর, বাবা ওকে একদিন ডেকে বলেছিলেন 'বুবুন, তুই এই ঘরে চলে আয়, আমি ওই ঘরটায় চলে যাব'। প্রথমে ওর ইচ্ছে ছিল না একেবারেই, কিন্তু বিয়ের জন্য দেখাশোনা শুরু হবার পর থেকে বাধ্য হয়েই সায় দিয়েছিল। আর ওর বিয়েও তো হয়ে গেল জানুয়ারিতে। দেখাশোনার বিয়ে, এখনো পর্যন্ত কেন জানি না ওরা তেমনি বন্ধু হয়ে উঠতে পারেনি, সোনালী একটু বেশিই চুপচাপ, শান্ত। তবে মোটের ওপর সুখীই আছে ওরা।
রান্নাঘরে যাবে বলে বেরিয়েছে, দেখে একটা কেমন যেন গন্ধ..একটু নাকটা কুঁচকে বুঝতে পারে ফিনাইলের গন্ধ। বাথরুমের দিকে তাকিয়ে দেখে বাবা বেরিয়ে আসছেন, হাতে একটা ভিজে আন্ডারওয়্যার। আর, সোনালী উবু হয়ে বসে ঘর মুছছে। দেখেই বুঝতে পারল, বাবার হয়ত বাথরুমে যেতে যেতেই টয়লেট হয়ে গেছিল, তাই এখন সোনালীকে পরিষ্কার করতে হচ্ছে। সত্যি, সারাদিন রান্নাবান্না, ঘরের সব কাজ করার পর যদি এভাবে টয়লেট পরিষ্কার করতে হয়, ওর তো খারাপ লাগবেই। বাবার আগে এমন ছিল না, এই কিছুদিন হলো টয়লেট চেপে রাখতে পারছেন না। যেতে যেতেই হয়ে যাচ্ছে।।
মাথা নিচু করে ঘরে এলো সায়ন্তন। সোনালী কি ভাবছে কে জানে...বাবা ও তো অসহায়!
ভাবতে ভাবতেই ঘরে এলো সোনালী। ওকে এইসময়ে এই ঘরে দেখে যেন একটু অবাক হয়েছে মেয়েটা। বলল 'কি গো, তোমার মিটিং শেষ? চা খাবে?'
এক নজর তাকালো বৌয়ের দিকে সায়ন্তন। তারপর বলল 'সোনালী স্যরি..'
'ওমা!কেন?'
'আসলে বাবা কিন্তু ইচ্ছে করে কিছু করেন না, জাস্ট হয়ে যায়। আমি কালই নেট খুঁজে কোনো একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলব.. আর বাবার সাথেও কথা বলব'
ওর কথা শুনে একটু চুপ করে থাকে সোনালী। তারপর, খুব আস্তে, প্রায় শোনা যায় না, এমন গলায় বলল 'আমার দাদুর রেনাল ফেলিওর হয়েছিল। দাদু ছিল আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আমার বড় হবার সবচেয়ে বড় সঙ্গী। কিন্তু...সেই দাদু...জানো, সারা শরীর ফুলে গেছিল দাদুর, টয়লেট না হওয়ায়। তোমার বাবা, এত শান্ত একজন মানুষ...ওনার জন্য নিশ্চয়ই ডাক্তার কনসাল্ট করবে, কিন্তু, প্লিজ বাবাকে বকাবকি করো না...আসলে উনি কেমন অপরাধীর মতো তাকান আমার দিকে বাথরুম হয়ে গেলে। আমার খুব খুব কষ্ট হয় দেখে...মনে হয়, হাতটা ধরে বলি, "ইটস ওকে বাবা...কিচ্ছু হয়নি..."
সোনালীর কথা শুনতে শুনতে চোখটা কেমন ঝাপসা লাগে সায়ন্তনের। এত ভাল ওর বৌ টা! এত গভীর!
কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছিল না সায়ন্তন, নইলে দেখতে পেত বাবা ওদের ঘরের দরজার সামনে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছেন...হয়ত কিছু বলতে আসছিলেন...হয়ত দুঃখপ্রকাশ করতে আসছিলেন...কিন্তু এখন তাঁরও চোখে জল...আর বুক ভরা আনন্দ...বাড়িতে 'বৌমা' নয়, 'মা' এসেছেন যে...।।
|