17-03-2021, 08:15 PM
Part 2
বেশ কিছুদিন আগে অপু নিজের মায়ের সাথে ট্রেনে করে নানা বাড়ি বেড়াতে আসে । খুব খুসি ছিলো অপু , অনেকদিন পর নানা বাড়ি যাওয়ার খুসি । তবে নানা বাড়ি ভ্রমণটা অপুর জন্য ছিলো অম্ল মধুর । অম্ল এই কারনে বলছি যে এই কয়দিনের ব্যাবধানে অপুর পরিবার আর আগের মতো নেই । আর মধুর বলছি এই কারনে যে অপুর মা একটি অনাকাঙ্ক্ষিত বন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পেরেছে । আর নিজের মায়ের এই মুক্তি অপুর জন্য অনেক বড় ব্যাপার । তবে শেষটা অপুর জন্য ভালো হয়নি , অপুকে এখন নানা বাড়ি ছেড়ে নিজের বাড়ি যেতে হবে তাও একা । চলুন তাহলে অপুর মুখেই শুনি ।
ফিরতি পথে আমারা ট্রেনে নয় বাসে যাচ্ছি । আমারা মানে আমি আর মনি বুড়ো । কথা ছিলো ছোট মামা আমাকে নিয়ে যাবে , কিন্তু হঠাত করে এই বুড়ো এসে বলল ছোট মামা না উনি নিজেই আমাকে নিয়ে যাবে ঢাকা । আর বুড়োর উপরে তেমন কেউ কথা বলার নেই । তার উপর এইরকম ছোট খাটো ব্যাপারে কেউ বাধাই বা দেবে কেনো । নির্ধারিত দিনে রাতের বেলা বুড়ো ই আমাকে নিয়ে রওনা হলো ।
কাজ হবেনা জেনেও আমি অনেক চেষ্টা করেছি , আম্মুকে অনেক বলেছি , নানিজান কে ধরেছি , বুড়ো শালা কেও বলেছি । কিন্তু কোন লাভ হয়নি , হবে না তা আমি জানতাম । কারন আমার মাধ্যমিক এর রেজিস্ট্রেশন ঢাকা থেকে করা । এখন আমি দশম শ্রেণীতে তাই চট্টগ্রাম এসে এখন রেজিস্ট্রেশন করার কোন উপায় নেই । আমাকে ঢাকা থেকেই পরিক্ষা দিতে হবে এর মানে আগামি প্রায় ১৫ মাস আমাকে ঢাকা থাকতে হবে আব্বুর সাথে । না জানি আব্বু আমার সাথে কেমন ব্যাবহার করে । অবশ্য আব্বু আমার সাথে কখনোই তেমন খারাপ ব্যাবহার করেনি । যা করার আম্মুর সাথেই করতো , ছেলে হিসেবে উনি আমাকে যথেষ্ট আদর করেন । তবে আমার ভয় হচ্ছে আমি কি আর ওনাকে আগের মতো মান্য করতে পারবো কিনা জানি না ।
একটু ঘুমানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু ঘুম আসছে না , আমি সব সহ্য করতে পারি কিন্তু নাক ডাকা সহ্য হয় না । আর আমার পাশে বসে মনি বুড়ো নাক ডাকছে । খুব জোড়ে অবশ্য নয় কিন্ত তাতেই আমার ঘুম টাটা বাইবাই বলে বিদায় নিয়েছে । আমি বুড়োর দিকে তাকালাম , বুড়োর চেহারায় কেমন একটা প্রসান্তি ভাব । হবেই বা না কেনো কোন ক্রমে তো আম্মুর যাওয়া আটকাতে পেরেছে । তবে বুড়ার চেহারায় এমন শান্তি শান্তি ভাব আমার মনে খুব অশান্তি বাড়িয়ে দিচ্ছে । শালা আমাকে তো চলে যেতে হচ্ছে । যদিও কথা হয়েছে আমি ছুটিতে ওখানে থাকবো নানা বাড়ি । আর টেস্ট এর পর যে তিন মাস সময় আছে সেটাও আমি ঐ বাড়িতেই থকবো । তবুও আমার কিছু ভালো লাগছে না ।
তবে বুড়ো কে ধন্যবাদ দিতেই হয় , আমিতো মনে করেছিলাম , বুড়ো পালিয়েছিলো , আসলে পালায় নি । আম্মু নানা বাড়িতে থেকে যাওয়ার পেছনে সবচেয়ে অবদান মনি দত্তের আর আমার নানির । অবশ্য এই দুইজনের জন্য ই আম্মুর আজ এই বেহাল দশা । বুড়ো নাকি ভোর বেলা এসেছিলো নানির কাছে , চুপি চুপি , দুই বুড়ো বুড়ি যে চুদাচুদি করেনি পুরনো দিনের মতো সেটা আমি নিশ্চিত তবে দুজনের মাঝে কি কথা হয়েছে বুড়ো আমাকে বলনি । তবে বুড়ো এমন একটা কিছু বলেছে যে নানিজান সেই কয়েক ঘণ্টার মাঝে আমার নানাজান কে বাধ্য করেছে মেয়েকে বাড়িতে রেখে দেয়ার জন্য । আর এখন বোঝা যাচ্ছে আম্মু নিজেও চাইছিলো তাকে জোড় করে রেখে দিক । আর নানাভাই যখন জোড় করে বল্লো তখন আম্মু ও না করলো না ।
এক পর্যায়ে বুড়োর নাক ডাকা ও আমার চোখ দুটি খোলা রাখতে পারলো না । বাসের মৃদু দুলুনিতে ঘুমিয়ে গেলাম । ঘুম ভাংলো মনি বুড়োর ধাক্কায়
__ এই অপু ওঠা , আমরা এসে গেছি
আড়মোড়া ভেঙ্গে যখন চোখ খুললাম তখন দেখি ঢাকা শহর এখনো ঘুমন্ত । রাস্তায় কোন যানজট নেই , অল্প কিছু মানুষ রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করছে । আমার হার্ট বিট বেড়ে গেলো , তাহলে শেষ পর্যন্ত চলেই এলাম আমি । এই প্রথম কোথাও আম্মু কে ছাড়া থাকছি । কেমন জানি একটা খারাপ লাগা এসে চারদিক থেকে ঘিরে ধরলো আমাকে ।
__ নেমে আয় ,
মনি বুড়ো আমাকে তারা দিতে লাগলো । তাই আমার ব্যাগটা নামিয়ে নিয়ে আমি বাস থেকে নেমে গেলাম ।
বাস থেকে নেমে আমরা একটা রিক্সা নিলাম , আমি আর বুড়ো পাশা পাসি সেই রিক্সায় বসে আছি , দুজনেই চুপ চাপ । একটু পর বুড়ো কথা বলে উঠলো
__ কি ব্যাপের তোকে তো কোনদিন এতো চুপচাপ থাকতে দেখিনি
আমি কোন উত্তর দিলাম না চুপ করেই রইলাম , কেন জানি এই বুড়োর উপর আর আম্মুর উপর রাগ হচ্ছে । এখন মনে হচ্ছে আম্মু চলে এলেই পারত । অন্তত এই একটা বছর এখানে থেকে আমার পরিক্ষার পর না হয় চলে যেতাম ।
__ মন খারাপ করিস না মাত্র তো একটা বছর , এর পর তুই ওখানেই থাকবি ।
বুড়ো মনেহয় আমার মন খারাপ ব্যাপারটা ধরতে পেরেছে , তাই সান্তনা দেয়ার চেষ্টা করলো । কিন্তু বুড়োর সান্তনা আমার কাছে ভালো লাগলো না । মনে হচ্ছে বুড়ো মনে মনে হাসছে আর বলছে ... কি এবার তোকেও সরিয়ে দিলাম দেখলি , এখন আমি আর খুকি , খুকি আর আমি হাহাহাহাহ ।
__ তুই যদি সেদিন আমাকে অমন করে না বলতি তাহলে হয়ত আমি সাহস করে আর তোর মায়ের কাছে যেতাম না রে , এর জন্য তোকে ধন্যবাদ দিতে হয় । তুই একদম তোর বাবার মতো নোস , এতদিন আমি সুধু সুধু তোর উপর রাগ করেছি রে ।
হ্যাঁ এখন তো বলবেই , তোমার পথ খালি করে দিয়ে এলাম যে , এখন আমার মতো ভালো মানুষ এই দুনিয়ায় আর কেউ নেই । মনে মনে বললাম আমি , এছাড়া আমি আরও একটি সদ্ধান্ত নিলাম সেটা হচ্ছে আমি আব্বুর কাছেই থাকবো । আর যাবো না ঐ খানে , ওরা যখন সুধু নিজেদের কথাই চিন্তা করলো থাকুক ওরা ওদের নিয়ে ।
প্রায় আধ ঘণ্টা পর আমারা বাসার সামনে চলে এলাম । এতো পরিচিত বাসা কিন্তু দেখেই জানি কেন বুকের ভেতর টা ধক করে উঠলো । প্রচণ্ড কান্না পেতে লাগলো । এই বাড়ির মানুষ গুলি কেউ আমার পর না কিন্তু মনে হতে লাগলো আমি কি করে একা একা এখানে থাকবো।
__ শোন অপু , কষ্ট করে কয়টা দিন এখানে থেকে যা , মন খারাপ করিস না । আমি প্রতি মাসে ঢাকায় এসে তোর সাথে দেখা করবো । আর তোকে ছুটির সময় নিয়ে যাবো বুঝেছিস । আর নিজেকে শক্ত রাখবি , তুই ই তো চাইছিলো তোর মা জেনো এই বদমায়েশ লোকটার কাছ থেকে মুক্তি পায় । মনে করবি তোর এই একা থাকা সেই মক্তির জন্য লড়াই ।
শেষ সময় বুড়ো আমাকে সান্তনা দিতে লাগলো । আরও নানা রকম সান্তনার কথা বলল বুড়ো , ভালো করে লেখা পড়া করার জন্য বলল । কিছু টাকা ও দিলো । মনে মনে ভাবলাম , বাহ আমার এই পরিনতির জন্য আমাকেই দায়ী করা হলো । বুড়ো এর পর আমার সাথে ভেতরে আসতে চাইলে আমি না করে দিলাম । ধিরে ধিরে আমি সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠলাম। নিজের বাড়িতে আসতে যে এমন দ্বিধা হবে সেটা আমি কোনদিন কল্পনা করিনি ।
দরজা খুল্লো একটা মেয়ে , নিশ্চয়ই কাজের মেয়ে হবে । বয়স ২৫-২৬ হবে দেখতে কালো , কালো মানে অনেক কালো । আর বেশ স্বাস্থ্য বতি ।
__ কারে চান ?
আমাকে দেখেই জানতে চাইলো মেয়েটি । একটা ধাক্কার মতো খেলাম , আমাকে জিজ্ঞাস করছে “কারে চান” । এর উত্তর কি করে দেবো? আমি কি বলবো আমি জাকির উদ্দিন এর কাছে এসেছি । আমি তার ছেলে , যে ছেলে তার সংসার ভাঙ্গায় বিশাল বড় ভুমিকা রেখছে ।
__ আমি অপু ,
মিনমিন করে বললাম আমি , কিন্তু মেয়েটির ভাব ভঙ্গি দেখে মনে হলো সে আমাকে চেনে না । প্রস্নবোধক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে । এমন সময় দাদির গলা পেলাম ,
__ সালেহা , কে আসছে , কার সাথে কথা বলো ?
__ আম্মা অপু নামে একটা পোলা আইসে
__ ভেতরে আসতে দে হারামজাদী
ভেতর থেকেই আমার দাদি চেচিয়ে উঠলো । সালেহা নামক মেয়েটি আমাকে ভেতরে ঢুকতে দিলো । আমি ভেতর ঢুকতেই সালেহা দরজা বন্ধ করে দিলো , বিড়বিড় করে কি যেন বলছে , মনে হয় দাদি ওকে গালি দিয়েছে বলে রাগ করেছে । আমি হাতের ব্যাগ রেখে সোফায় বসে পড়লাম । মনে হচ্ছে আমার এই সোফায় ই বসা উচিত , ঘরের ভেতর নয় । আমি সোফায় বসতেই আমার দাদি কে দেখতে পেলাম ।
__ ভাই তুমি আসছো ? কি হইসে ভাই তোমার বাবা মায়ের ? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না , তোমার আব্বু ও কিছু বলে না । তোমার মা নাকি কার সাথে থকবে, আর নাকি আসবে না ।
মনটা খারাপ হয়ে গেলো , এই হচ্ছে আমার দাদি , এতো বয়স হয়েছে কিন্তু কথার কোন ছিঁড়ি নাই । আমি কোন উত্তর দিলাম না , চুপ করে রইলাম । দাদি এসে আমার পাশে বসলেন , আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন
__ এহ ভাই এই কয়দিনে তুমি কেমন শুকাইয়া গেছো , বাবা মায়ের অশান্তির ঝামেলা তোমারে পোহাতে হচ্ছে । এই বলে দাদি যেন আমার আম্মুর উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো , ... আরে তোর সাথে তোর স্বামীর ঝগড়া হইসে , কিন্তু ছেলের যত্ন তো নিবি । এই ১৭-১৮ বছরেও কিছু শিখাতে পারলাম না । শিখাবো কি করে বাড়িতে যদি সিক্ষা না পায় তাহলে কি শ্বশুর বাড়ির সিক্ষা কাজে আসে ।
আমি কোন প্রতিবাদ করলাম না , আমার কাছে বরং ভালোই লাগলো । আমি জানি এগুলি সব মিথ্যা অপবাদ কিন্তু এই মিথ্যা অপবাদ গুলি আমার মনে এক ধরনের শান্তি এনে দিচ্ছে । এমন সময় আব্বু বেড়িয়ে এলো
__ তোর আম্মু সত্যি সত্যি এলো না , কার সাথে এসেছিস
নিজেকে অবাক করে দিয়ে আমি মিথ্যা বললাম । বললাম
__ একা এসেছি
কেনো মিথ্যা বললাম জানি না । মুখ দিয়ে বেড়িয়ে গেলো আর বলে ফেললাম । মনে হয় আমার অবচেতন মন চাইছে এদের কাছ থেকে সহানুভুতি নেয়ার জন্য । ঠিক তাই হলো ,আব্বু প্রচণ্ড রেগে গেলেন ।
__ ঐ চরিত্রহীন মহিলা কত নিচে নামবে আর , নিজের * প্রেমিক এর সাথে থাকার জন্য ছেলেকে একা একা এতদুর পাঠিয়ে দিয়েছে।
__ ও জাকির , কি বলছিস এই সব , * প্রেমিক মানে ?
আমার দাদি হাহাকার করে উঠলো
__ তুমি বুঝবে না মা চুপ থাকো , আমি ওদের দেখে নেবো সব কয়টাকে ।
আব্বু রেগে বল্লো , তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বল্লো
__ তুই ঘরে যা , আর কোনদিন ঐ নষ্টা মেয়ে মানুষ এর মুখ দেখবি না , ও থাকুক ওর প্রেম পিরিত নিয়ে , তুই তো দেখলি তোর জন্য কোন মায়া নেই । যদি থকাতো তাহলে কি আর এভাবে থেকে যেতে পারত । ছেলে মেয়ের জন্য মেয়েরা কত কিছু করে , আর তোর মা কি করলো।
আমি ধিরে ধিরে নিজের ঘরে চলে গেলাম । ঘরে এসে এতক্ষণ বন্ধ হয়েথাকা ফুসফুস আবার সচল হলো জেনো আমার ।
বেশ কিছুদিন আগে অপু নিজের মায়ের সাথে ট্রেনে করে নানা বাড়ি বেড়াতে আসে । খুব খুসি ছিলো অপু , অনেকদিন পর নানা বাড়ি যাওয়ার খুসি । তবে নানা বাড়ি ভ্রমণটা অপুর জন্য ছিলো অম্ল মধুর । অম্ল এই কারনে বলছি যে এই কয়দিনের ব্যাবধানে অপুর পরিবার আর আগের মতো নেই । আর মধুর বলছি এই কারনে যে অপুর মা একটি অনাকাঙ্ক্ষিত বন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পেরেছে । আর নিজের মায়ের এই মুক্তি অপুর জন্য অনেক বড় ব্যাপার । তবে শেষটা অপুর জন্য ভালো হয়নি , অপুকে এখন নানা বাড়ি ছেড়ে নিজের বাড়ি যেতে হবে তাও একা । চলুন তাহলে অপুর মুখেই শুনি ।
ফিরতি পথে আমারা ট্রেনে নয় বাসে যাচ্ছি । আমারা মানে আমি আর মনি বুড়ো । কথা ছিলো ছোট মামা আমাকে নিয়ে যাবে , কিন্তু হঠাত করে এই বুড়ো এসে বলল ছোট মামা না উনি নিজেই আমাকে নিয়ে যাবে ঢাকা । আর বুড়োর উপরে তেমন কেউ কথা বলার নেই । তার উপর এইরকম ছোট খাটো ব্যাপারে কেউ বাধাই বা দেবে কেনো । নির্ধারিত দিনে রাতের বেলা বুড়ো ই আমাকে নিয়ে রওনা হলো ।
কাজ হবেনা জেনেও আমি অনেক চেষ্টা করেছি , আম্মুকে অনেক বলেছি , নানিজান কে ধরেছি , বুড়ো শালা কেও বলেছি । কিন্তু কোন লাভ হয়নি , হবে না তা আমি জানতাম । কারন আমার মাধ্যমিক এর রেজিস্ট্রেশন ঢাকা থেকে করা । এখন আমি দশম শ্রেণীতে তাই চট্টগ্রাম এসে এখন রেজিস্ট্রেশন করার কোন উপায় নেই । আমাকে ঢাকা থেকেই পরিক্ষা দিতে হবে এর মানে আগামি প্রায় ১৫ মাস আমাকে ঢাকা থাকতে হবে আব্বুর সাথে । না জানি আব্বু আমার সাথে কেমন ব্যাবহার করে । অবশ্য আব্বু আমার সাথে কখনোই তেমন খারাপ ব্যাবহার করেনি । যা করার আম্মুর সাথেই করতো , ছেলে হিসেবে উনি আমাকে যথেষ্ট আদর করেন । তবে আমার ভয় হচ্ছে আমি কি আর ওনাকে আগের মতো মান্য করতে পারবো কিনা জানি না ।
একটু ঘুমানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু ঘুম আসছে না , আমি সব সহ্য করতে পারি কিন্তু নাক ডাকা সহ্য হয় না । আর আমার পাশে বসে মনি বুড়ো নাক ডাকছে । খুব জোড়ে অবশ্য নয় কিন্ত তাতেই আমার ঘুম টাটা বাইবাই বলে বিদায় নিয়েছে । আমি বুড়োর দিকে তাকালাম , বুড়োর চেহারায় কেমন একটা প্রসান্তি ভাব । হবেই বা না কেনো কোন ক্রমে তো আম্মুর যাওয়া আটকাতে পেরেছে । তবে বুড়ার চেহারায় এমন শান্তি শান্তি ভাব আমার মনে খুব অশান্তি বাড়িয়ে দিচ্ছে । শালা আমাকে তো চলে যেতে হচ্ছে । যদিও কথা হয়েছে আমি ছুটিতে ওখানে থাকবো নানা বাড়ি । আর টেস্ট এর পর যে তিন মাস সময় আছে সেটাও আমি ঐ বাড়িতেই থকবো । তবুও আমার কিছু ভালো লাগছে না ।
তবে বুড়ো কে ধন্যবাদ দিতেই হয় , আমিতো মনে করেছিলাম , বুড়ো পালিয়েছিলো , আসলে পালায় নি । আম্মু নানা বাড়িতে থেকে যাওয়ার পেছনে সবচেয়ে অবদান মনি দত্তের আর আমার নানির । অবশ্য এই দুইজনের জন্য ই আম্মুর আজ এই বেহাল দশা । বুড়ো নাকি ভোর বেলা এসেছিলো নানির কাছে , চুপি চুপি , দুই বুড়ো বুড়ি যে চুদাচুদি করেনি পুরনো দিনের মতো সেটা আমি নিশ্চিত তবে দুজনের মাঝে কি কথা হয়েছে বুড়ো আমাকে বলনি । তবে বুড়ো এমন একটা কিছু বলেছে যে নানিজান সেই কয়েক ঘণ্টার মাঝে আমার নানাজান কে বাধ্য করেছে মেয়েকে বাড়িতে রেখে দেয়ার জন্য । আর এখন বোঝা যাচ্ছে আম্মু নিজেও চাইছিলো তাকে জোড় করে রেখে দিক । আর নানাভাই যখন জোড় করে বল্লো তখন আম্মু ও না করলো না ।
এক পর্যায়ে বুড়োর নাক ডাকা ও আমার চোখ দুটি খোলা রাখতে পারলো না । বাসের মৃদু দুলুনিতে ঘুমিয়ে গেলাম । ঘুম ভাংলো মনি বুড়োর ধাক্কায়
__ এই অপু ওঠা , আমরা এসে গেছি
আড়মোড়া ভেঙ্গে যখন চোখ খুললাম তখন দেখি ঢাকা শহর এখনো ঘুমন্ত । রাস্তায় কোন যানজট নেই , অল্প কিছু মানুষ রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করছে । আমার হার্ট বিট বেড়ে গেলো , তাহলে শেষ পর্যন্ত চলেই এলাম আমি । এই প্রথম কোথাও আম্মু কে ছাড়া থাকছি । কেমন জানি একটা খারাপ লাগা এসে চারদিক থেকে ঘিরে ধরলো আমাকে ।
__ নেমে আয় ,
মনি বুড়ো আমাকে তারা দিতে লাগলো । তাই আমার ব্যাগটা নামিয়ে নিয়ে আমি বাস থেকে নেমে গেলাম ।
বাস থেকে নেমে আমরা একটা রিক্সা নিলাম , আমি আর বুড়ো পাশা পাসি সেই রিক্সায় বসে আছি , দুজনেই চুপ চাপ । একটু পর বুড়ো কথা বলে উঠলো
__ কি ব্যাপের তোকে তো কোনদিন এতো চুপচাপ থাকতে দেখিনি
আমি কোন উত্তর দিলাম না চুপ করেই রইলাম , কেন জানি এই বুড়োর উপর আর আম্মুর উপর রাগ হচ্ছে । এখন মনে হচ্ছে আম্মু চলে এলেই পারত । অন্তত এই একটা বছর এখানে থেকে আমার পরিক্ষার পর না হয় চলে যেতাম ।
__ মন খারাপ করিস না মাত্র তো একটা বছর , এর পর তুই ওখানেই থাকবি ।
বুড়ো মনেহয় আমার মন খারাপ ব্যাপারটা ধরতে পেরেছে , তাই সান্তনা দেয়ার চেষ্টা করলো । কিন্তু বুড়োর সান্তনা আমার কাছে ভালো লাগলো না । মনে হচ্ছে বুড়ো মনে মনে হাসছে আর বলছে ... কি এবার তোকেও সরিয়ে দিলাম দেখলি , এখন আমি আর খুকি , খুকি আর আমি হাহাহাহাহ ।
__ তুই যদি সেদিন আমাকে অমন করে না বলতি তাহলে হয়ত আমি সাহস করে আর তোর মায়ের কাছে যেতাম না রে , এর জন্য তোকে ধন্যবাদ দিতে হয় । তুই একদম তোর বাবার মতো নোস , এতদিন আমি সুধু সুধু তোর উপর রাগ করেছি রে ।
হ্যাঁ এখন তো বলবেই , তোমার পথ খালি করে দিয়ে এলাম যে , এখন আমার মতো ভালো মানুষ এই দুনিয়ায় আর কেউ নেই । মনে মনে বললাম আমি , এছাড়া আমি আরও একটি সদ্ধান্ত নিলাম সেটা হচ্ছে আমি আব্বুর কাছেই থাকবো । আর যাবো না ঐ খানে , ওরা যখন সুধু নিজেদের কথাই চিন্তা করলো থাকুক ওরা ওদের নিয়ে ।
প্রায় আধ ঘণ্টা পর আমারা বাসার সামনে চলে এলাম । এতো পরিচিত বাসা কিন্তু দেখেই জানি কেন বুকের ভেতর টা ধক করে উঠলো । প্রচণ্ড কান্না পেতে লাগলো । এই বাড়ির মানুষ গুলি কেউ আমার পর না কিন্তু মনে হতে লাগলো আমি কি করে একা একা এখানে থাকবো।
__ শোন অপু , কষ্ট করে কয়টা দিন এখানে থেকে যা , মন খারাপ করিস না । আমি প্রতি মাসে ঢাকায় এসে তোর সাথে দেখা করবো । আর তোকে ছুটির সময় নিয়ে যাবো বুঝেছিস । আর নিজেকে শক্ত রাখবি , তুই ই তো চাইছিলো তোর মা জেনো এই বদমায়েশ লোকটার কাছ থেকে মুক্তি পায় । মনে করবি তোর এই একা থাকা সেই মক্তির জন্য লড়াই ।
শেষ সময় বুড়ো আমাকে সান্তনা দিতে লাগলো । আরও নানা রকম সান্তনার কথা বলল বুড়ো , ভালো করে লেখা পড়া করার জন্য বলল । কিছু টাকা ও দিলো । মনে মনে ভাবলাম , বাহ আমার এই পরিনতির জন্য আমাকেই দায়ী করা হলো । বুড়ো এর পর আমার সাথে ভেতরে আসতে চাইলে আমি না করে দিলাম । ধিরে ধিরে আমি সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠলাম। নিজের বাড়িতে আসতে যে এমন দ্বিধা হবে সেটা আমি কোনদিন কল্পনা করিনি ।
দরজা খুল্লো একটা মেয়ে , নিশ্চয়ই কাজের মেয়ে হবে । বয়স ২৫-২৬ হবে দেখতে কালো , কালো মানে অনেক কালো । আর বেশ স্বাস্থ্য বতি ।
__ কারে চান ?
আমাকে দেখেই জানতে চাইলো মেয়েটি । একটা ধাক্কার মতো খেলাম , আমাকে জিজ্ঞাস করছে “কারে চান” । এর উত্তর কি করে দেবো? আমি কি বলবো আমি জাকির উদ্দিন এর কাছে এসেছি । আমি তার ছেলে , যে ছেলে তার সংসার ভাঙ্গায় বিশাল বড় ভুমিকা রেখছে ।
__ আমি অপু ,
মিনমিন করে বললাম আমি , কিন্তু মেয়েটির ভাব ভঙ্গি দেখে মনে হলো সে আমাকে চেনে না । প্রস্নবোধক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে । এমন সময় দাদির গলা পেলাম ,
__ সালেহা , কে আসছে , কার সাথে কথা বলো ?
__ আম্মা অপু নামে একটা পোলা আইসে
__ ভেতরে আসতে দে হারামজাদী
ভেতর থেকেই আমার দাদি চেচিয়ে উঠলো । সালেহা নামক মেয়েটি আমাকে ভেতরে ঢুকতে দিলো । আমি ভেতর ঢুকতেই সালেহা দরজা বন্ধ করে দিলো , বিড়বিড় করে কি যেন বলছে , মনে হয় দাদি ওকে গালি দিয়েছে বলে রাগ করেছে । আমি হাতের ব্যাগ রেখে সোফায় বসে পড়লাম । মনে হচ্ছে আমার এই সোফায় ই বসা উচিত , ঘরের ভেতর নয় । আমি সোফায় বসতেই আমার দাদি কে দেখতে পেলাম ।
__ ভাই তুমি আসছো ? কি হইসে ভাই তোমার বাবা মায়ের ? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না , তোমার আব্বু ও কিছু বলে না । তোমার মা নাকি কার সাথে থকবে, আর নাকি আসবে না ।
মনটা খারাপ হয়ে গেলো , এই হচ্ছে আমার দাদি , এতো বয়স হয়েছে কিন্তু কথার কোন ছিঁড়ি নাই । আমি কোন উত্তর দিলাম না , চুপ করে রইলাম । দাদি এসে আমার পাশে বসলেন , আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন
__ এহ ভাই এই কয়দিনে তুমি কেমন শুকাইয়া গেছো , বাবা মায়ের অশান্তির ঝামেলা তোমারে পোহাতে হচ্ছে । এই বলে দাদি যেন আমার আম্মুর উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো , ... আরে তোর সাথে তোর স্বামীর ঝগড়া হইসে , কিন্তু ছেলের যত্ন তো নিবি । এই ১৭-১৮ বছরেও কিছু শিখাতে পারলাম না । শিখাবো কি করে বাড়িতে যদি সিক্ষা না পায় তাহলে কি শ্বশুর বাড়ির সিক্ষা কাজে আসে ।
আমি কোন প্রতিবাদ করলাম না , আমার কাছে বরং ভালোই লাগলো । আমি জানি এগুলি সব মিথ্যা অপবাদ কিন্তু এই মিথ্যা অপবাদ গুলি আমার মনে এক ধরনের শান্তি এনে দিচ্ছে । এমন সময় আব্বু বেড়িয়ে এলো
__ তোর আম্মু সত্যি সত্যি এলো না , কার সাথে এসেছিস
নিজেকে অবাক করে দিয়ে আমি মিথ্যা বললাম । বললাম
__ একা এসেছি
কেনো মিথ্যা বললাম জানি না । মুখ দিয়ে বেড়িয়ে গেলো আর বলে ফেললাম । মনে হয় আমার অবচেতন মন চাইছে এদের কাছ থেকে সহানুভুতি নেয়ার জন্য । ঠিক তাই হলো ,আব্বু প্রচণ্ড রেগে গেলেন ।
__ ঐ চরিত্রহীন মহিলা কত নিচে নামবে আর , নিজের * প্রেমিক এর সাথে থাকার জন্য ছেলেকে একা একা এতদুর পাঠিয়ে দিয়েছে।
__ ও জাকির , কি বলছিস এই সব , * প্রেমিক মানে ?
আমার দাদি হাহাকার করে উঠলো
__ তুমি বুঝবে না মা চুপ থাকো , আমি ওদের দেখে নেবো সব কয়টাকে ।
আব্বু রেগে বল্লো , তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বল্লো
__ তুই ঘরে যা , আর কোনদিন ঐ নষ্টা মেয়ে মানুষ এর মুখ দেখবি না , ও থাকুক ওর প্রেম পিরিত নিয়ে , তুই তো দেখলি তোর জন্য কোন মায়া নেই । যদি থকাতো তাহলে কি আর এভাবে থেকে যেতে পারত । ছেলে মেয়ের জন্য মেয়েরা কত কিছু করে , আর তোর মা কি করলো।
আমি ধিরে ধিরে নিজের ঘরে চলে গেলাম । ঘরে এসে এতক্ষণ বন্ধ হয়েথাকা ফুসফুস আবার সচল হলো জেনো আমার ।