Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
#61
[Image: 118333330_10158484332606815_757864217908...e=5FC88389]
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#62
(24-08-2020, 09:36 PM)ddey333 Wrote: ঝাপসা হয়ে যাওয়া চোখ...আর মুখে হাসি নিয়ে লিখছি।
আজ দিনটা খুব ভাল কেটেছে কিছু প্রিয়জনের সাথে। প্রায় সারাদিন তাদের সাথে কাটিয়ে ফিরছি, হাজরা মোড় দিয়ে, মেট্রো ধরব বলে। আমার কানে রোজকার মতোই হেডফোন গোঁজা ছিল।আমি সাধারণত খুব মৃদুসুরে গান শুনি। উচ্চগ্রামের শব্দতরঙ্গ আমার একদম নাপসন্দ।
কিন্তু সেই মৃদু গান আমার কান অবধি আর পৌঁছতে পারছিল না, কারন দুটি বাচ্চা - মানে, একজন একটু বড় একটি মেয়ে, তা প্রায় বছর বারো তেরো হবে...অন্যজন একদম ছোট্ট একটা ছেলে...চার পাঁচ হবে বড়জোর। নোংরা চিটকানি জামা পরা, দুজনের ই দুপায়ে দুরকমের চটি। মাথায় জটা পরা চুল আর ছেলেটার নাক বেয়ে সর্দি। দুজনের হাতেই দুটো মার্বেলের মতো একটু শক্ত পাথর। সে দুটো ঘষছিল দুজন। যেভাবে এরা বাসে বাসে গান গেয়ে ভিক্ষা চায়। আর এই মার্বেল ঘষার আওয়াজ টা খুব কর্কশ লাগে আমার।
যাই হোক...ওদের পাশ দিয়ে হনহন করে এগিয়ে গিয়ে মেট্রোর সিঁড়ি দিয়ে নামতে যাব, দেখি, সিঁড়ির সামনেই এক যুবক দাঁড়িয়ে। ভদ্র চেহারা, চোখে চশমা, হাতে ক্রাচ...পাশে একজন ভদ্রমহিলা। শাঁখা সিঁদুর পরা। মার্জিত, মৃদু কন্ঠে বলছেন 'শুনছেন? একটু সাহায্য করে যাবেন?' খুব খুব মৃদু কন্ঠে...কারন বেশি জোরে কথা বলার অভ্যাস নেই বোধহয়।
আমি সাধারণত এই ধরনের মানুষদের সাহায্য করিনা। কারন বেশিরভাগ ই তো ফেক হন, ঠকান আমাদের, তাই। কিন্তু, এই দুজনকে দেখেই মনে হচ্ছিল পার্ক স্ট্রিটের 'এক্সিউজ মি, আমার মানিব্যাগ হারিয়ে গেছে' বলার মতো লোক এঁরা নন। নিতান্তই অবস্থার বিপাকে রাস্তায় দাঁড়িয়েছেন একটু সাহায্যের আশায়। আমি একটু থমকে গেলাম। আসলে আজ আমার ওয়ালেটে তেমন খুচরো টাকা ছিল না, ছিল একটাই গোলাপী নোট। তাই ব্যাগের এদিক ওদিক খুঁজছি, যদি একটা পঞ্চাশ টাকাও পাওয়া যায়,হঠাৎ একটা 'ঠং' করে আওয়াজ শুনলাম। ভুল বললাম, ঠিক ঠং না...'ঝনঝন'...
পেছন ফিরে দেখি সেই বাচ্চা দুটো এক মুঠো খুচরো পয়সা ফেলে দিয়েছে অসুস্থ ছেলেটির সামনে রাখা পাত্রে। তার পাশে দাঁড়ানো ভদ্রমহিলা অবাক হয়ে 'এই তোরা দিলি কেন?' বলার আগেই দুজন হাত ধরাধরি করে দে ছুট চিত্তরঞ্জন ক্যান্সার হাসপাতালের অন্ধকার রাস্তাটার দিকে...।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম সেদিকে।
রাস্তাটা আর অন্ধকার লাগছিল না...দু' দু'টো আলোকবিন্দু... গেছে ওখান দিয়ে...।
যে ছেলেটি অসুস্থ, তার নাম সৌমিক জানা। অ্যাকসিডেন্ট হয়েছিল। নিম্নবিত্ত বাড়ির একমাত্র রোজগেরে। ছ' ছ'টা অপারেশান হয়ে গেছে...যেটুকু জমানো ছিল চলে গেছে তাতেই। এখন বাধ্য হয়ে রাস্তায় দাঁড়াতে হয়েছে। আমি ফোন নাম্বার নিয়ে এসেছি...কেউ যদি পারেন, যদি ইচ্ছে করে..পৌঁছে দিতে পারেন সাহায্য ওদের কাছে। ওদের অনুমতি নিয়েই ছেলেটির ছবি ও নাম্বার টি পোস্টে দিলাম - 8583912764।
তবে, আমি জানি সৌমিক জানা সেরে উঠবেই, আবার কাজেও যাবে...কারন দুজন দেবশিশু...না না ভুল বললাম...দুজন 'মানুষের মতো মানুষ' আজ ওকে ভালবাসা পাঠিয়ে দিয়ে গেছে....আর এই ভালবাসা কক্ষনো মিথ্যা হতে পারে না...।।
Ai ghatona katodin age kar, r ata ki sotti, ami kicu help korte chai, plz janaben.
[+] 1 user Likes Kala23's post
Like Reply
#63
(04-11-2020, 09:53 PM)Kala23 Wrote: Ai ghatona katodin age kar, r ata ki sotti, ami kicu help korte chai, plz janaben.

বেশি পুরোনো নয় , মোটামুটি দু মাস আগের কথা .......

সত্যি ঘটনা

Namaskar
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#64
*HEART- TOUCHING*         
 
বাস থেকে নেমে *পকেটে* হাত ঢুকিয়ে আমি চমকে উঠলাম 
 
*পকেটমার* হয়ে গেছে
 
 *পকেটে* ছিলটাই বা কি?
 
মোট *90* টাকা আর *একটা চিঠি,* 
 
যেটা আমি
 *মা*কে লিখেছিলাম যে
 
আমার *চাকরি* চলে গেছে;
 
এখন আর *টাকা* পাঠাতে পারব না
 
 
 তিনদিন ধরে *পোস্টকার্ডটাও* পকেটে পড়েছিল
 
 *পোস্ট* করতে *মন* করছিল না
 
*90 টাকা* পকেটমার হয়েছে এমনিতে *90 টাকা* কোন
 *বড় অংকের* টাকা নয়,
 
কিন্তু ,যার *চাকরি* চলে গেছে
তার কাছে *90 টাকা* ,, *900টাকার* থেকে কম নয়
 
 কিছুদিন পর 
*মায়ের*  *চিঠি* পেলাম
 
 *পড়ার* আগেই আমার *লজ্জা ভয়* লাগছিল
 
 নিশ্চয়ই *টাকা* পাঠাতে লিখে থাকবে….
 
কিন্তু
*চিঠিটা* পড়ে
আমার *মাথাটা* ঘুরে গেল
 
 *মা* লিখেছে— *“বেটা,* তোর পাঠানো *1000 টাকার*
  *মানি অর্ডারটা* পেয়েছি
 
 বাবা তুই কত *ভাল* রে *সোনা*!…
 
*টাকা* পাঠাতে
 কখনও *অবহেলা* করিসনি
 

আমি *আকাশ-পাতাল* চিন্তায় ব্যস্ত ছিলাম...
তাহলে
 
 *মা* কে *মানি অর্ডার* কে পাঠাল?
 
কিছু *দিন* পর, আর
একটা *চিঠি* পেলাম
 
 *কয়েক লাইন* লেখা ছিল— *আঁকা-বাঁকা*
 খুবই *কষ্ট* করে *চিঠিটা* পড়তে পেরেছি
 
 লেখা ছিল— *“ভাই,*
 *90 টাকা* তোমার
আর
*910 টাকাআমার কাছ থেকে দিয়ে আমি
 তোমার *মা* কে *মানি অর্ডার*পাঠিয়ে দিয়েছি 
 
*চিন্তা করো না….*
 
*মা* তো সবারই *একই রকম* হয়..তাই না?
 
 *সে কেন না খেয়ে কষ্ট করে  থাকবে…*
 
ইতি!
*তোমার--- পকেটমার??..*
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
#65
জাতে মাতাল কিন্তু তালে ঠিক  Smile clps
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply
#66
ঋণ শোধ
চোখে আলো পড়তেই ধড়মড় করে উঠে বসল নলিনী। কাল সারারাত ঘুমোতে পারেনি, বারবার শুধু সেই কথাটাই মনে পড়ছিল। হাতে মাত্র দুটোদিন সময় আছে...মাত্র দুটোদিন। তারপরেই যে কী হবে...!
ঘটনার শুরু মাস খানেক আগে। টানা কয়েকদিন ধরে নিম্নচাপের একঘেয়ে বৃষ্টি পড়ছিল। সেদিন ওদের অফিসে আবার মাইনে পাবার দিন। ওদের অফিসে যাদের মাইনে কম, তাদের একটা কাগজে সই করে নগদে টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু প্রতিমাসেই বড়বাবু টাকা দেওয়া শুরু করতে করতে বেশ দেরি করিয়ে দেন। তারপরেও বাথরুমে গিয়ে টাকা ক'টা গুনে নেয় ও। বলা যায় না টাকা কম পড়ে যায়! বড়বাবুর গুনতে ভুল হয় যদি? বলা তো যায় না, মানুষের তো ভুল হয় ই। তখন তো ওর সমস্যা হয়ে যাবে! ওর বাড়ির একমাত্র রোজগেরে তো ও ই। ওর মা আগে কাজকাম করত, এখন তো পুরোই শোয়া! তাই ওর এই সামান্য বেতনেই ওর বস্তির ঘর ভাড়া, খাওয়া দাওয়া, মায়ের ওষুধ পত্র, সবকিছু। সেজন্য এক একটা টাকার দাম ও ওর কাছে অনেক! তারমধ্যে আবার ওদের অফিসের এক পিওন দাদার পাল্লায় পড়ে দু মাস আগে একাতা নতুন মোবাইল কিনেছে ও। বেশ সিনেমা টিনেমা দেখা যায়। প্রতি মাসে সেজন্য টাকা দিতে হয় ওই পিওন দাদা কে। উনি নিজের কার্ড দিয়ে কিনে দিয়েছেন। প্রতিবার ই মাইনে পাবার পর অফিসের পেছনের দিকে ওদের জন্য যে বাথরুম টা আছে, সেখানে চলে যায় ও। টাকা গুনে, দাদার কিস্তির টাকাটা বের করে নিয়ে, বুকের মধ্যে খাম টা ঢুকিয়ে রাখে। বাসে-ট্রেনে যাওয়া, বলা যায় না...কার কী মতলব।
সেদিন ও এই করতে গিয়েই দেরি হয়ে গেছিল খুব। তারমধ্যে অফিস থেকে বেরিয়েই দেখে এক কোমর জল রাস্তায়। আর এত বৃষ্টি যে, ছাতায় মানছিল না। খুব ই অসুবিধা হয়েছিল ওর বাস স্টপ অবধি আসতে। এই বৃষ্টিতে রাস্তায় কোথায় গর্ত টর্ত আছে বোঝাই তো যায় না! তাই সাবধানে পা ফেলতে হয়েছে। ও পড়ে গেলে, লেগে গেলে, চুন - হলুদ টুকুও লাগিয়ে দেবার কেউ নেই। আর তারচেয়েও বড় কথা, ওরা অফিস না গেলেই টাকা কাটে। তাই অফিসে যেতেই হয়, মরতে মরতেও।
বাস স্টপে পৌঁছে দেখে একটাও বাস নেই। এদিকে ভিড় আছে অনেক। সেদিন মেট্রো রেল ও চলছিল না। কেউ একজন ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছিল নাকি! কেন যে এরা মরে যায়, লড়াই টুকু না করে! তাহলে ওর মতো জীবন হলে কী করত! ছোটবেলা থেকে দেখেছে বাপটা মাতাল, মা কে,ওকে ঠ্যাঙাত। তারপর তো একদিন মালের ঘোরে বাসের তলায় চাপা পড়ে মরেই গেল। আগে ইকলেজে যেত ও, বাপ মরে যাবার পর পাট চুকে গেল। পড়াতে মাথাও ছিল না। তারপর থেকেই কাজে লেগে গেল। আগে বাড়িতে কাজ করত, মায়ের সাথে। তারপর এক বাড়ির দাদাই অফিসে কাজে ঢুকিয়ে দিয়েছিল। হাউজকিপিং এর কাজ। বাথরুম, প্যান্ট্রি পরিষ্কার করতে হয়। তা হোক! তবু 'লোকের বাড়ি কাজ করি' বলার চেয়ে 'অফিসে কাজ করি' বলায় প্রেস্টিজ বেশি! মা তখন কাজ করতেন, চলেও যেত। তারপর মায়ের শরীর ভাঙতে শুরু করল। প্রথমে কিছু করে নি ওরা। ওদের মতো ঘরে অত সহজে ডাক্তার দেখানো হয় না। কিন্তু একদিন যেতেই হলো, আর তাতেই জানা গেল মায়ের নার্ভের কিছু সমস্যা হয়েছে। হাত -পা কাঁপে সারাক্ষণ। তারপর থেকেই তো মা ঘরেই বসা! আর। এভাবেই চলছে! এখন মাসে হাজার টাকার ওষুধ ই চলে! কীভাবে যে চলে, ও ই জানে সেটা।
অথচ সব মেয়ের মতোই ওর ও ইচ্ছে ছিল...বিয়ে হবে। কিন্তু কে আর বিয়ে দেবে ওকে! ছেলেরা যে ছুঁকছুঁক করে নি, তা না। কিন্তু, বারবার বাপের কথাই মনে পড়ত ওর। ভাত দেবে না, কিন্তু রাতে মাতাল হয়ে এসে স্বামীর অধিকার দাবী করবে...মারবে... এই তো ওদের পাড়ার বেশিরভাগ মরদের ছিরি! আগে আগে ভেবেছিল একটা সন্তান যদি থাকত। কিন্তু, ছেলেরাও খুব অল্প বয়সেই মদ-গাঁজা ধরে ওদের ওখানে। তাই এমনিই ভালো আছে ও। এতটা দূর যাওয়া আসা...তারপর কাজের চাপ...যখন ঘুমোতে যায়, মনে হয় চোখ জুড়িয়ে আসছে...। ক্লান্তি আসে এতো...।
ঘুমের কথা ভাবতে ভাবতেই চোখ যেন জড়িয়ে আসছিল ওর। একটাও শিয়ালদা যাবার বাস আসছে না। ওদিকে নাকি খুব জল জমেছে। ক'জন বলাবলি করছিল। তারা তো হেঁটেই রওনা হয়ে গেল। এই বৃষ্টির দিনে ট্রেনে গোলমাল হলেই তো হয়ে গেল! কী যে আতান্তর!
শেষমেষ হেঁটেই শিয়ালদা আসতে হলো। কম দূর নাকি! ছ' সাতটা স্টপেজ। আর স্টেশানেও মেলা ভিড়! একটা ট্রেন ছেড়ে, দু নম্বর ট্রেন টায় উঠল ও। নামার সময় টানাটানিতে ওর কুর্তির হাতাটা ছিঁড়েই গেল! একে ওর বাইরে পরার জামা সেরকম নেই, তাতে এই কান্ড! প্ল্যাটফর্মে নামার পর চোখে জল এলো নলিনীর। অন্যদিন টোটো থাকে স্টেশানের বাইরে, আজ একটাও নেই। রাত ও হয়েছে অনেক। মোবাইল টা ব্যাগের ভেতরে, বৃষ্টিতে বের করতে পারছে না, তাও এগারোটা তো বেজেই গেছে নিশ্চয়ই। শিয়ালদা তেই তো সাড়ে দশটা বাজছিল। বাধ্য হয়ে হাঁটাই লাগালো নলিনী।
পাড়ায় ঢোকার মুখে দেখে শহীদ বেদীটার ওপর ছেলেগুলো আড্ডা জমিয়েছে। ক্লাবের ছেলে ওরা। কাজ নেই, কম্ম নেই, দিন রাত গজল্লা, মেয়েদের আজেবাজে কথা বলা, আর রাতে মদ গেলা...এই তো কাজ। তারমধ্যে ও কলকাতায় কাজ করে বলে ওরা অনেকে অনেক কথা বলে! টোন কাটে! ও নাকি অফিসের বাবু! অহঙ্কারী!
তাড়াতাড়ি রাস্তাটা পেরোতে যাবে,হঠাৎ শোনে 'এই যে এলো অফিসের ম্যাডাম..' আরেকজন রসিয়ে রসিয়ে বলে উঠল 'ম্যাডামের জামা ছেঁড়া কেন?' 'আরে, শুধু কি জামা ই ছেঁড়া, না অন্য কিছুও?'...এইসব নোংরা কথা আর সমবেত অশ্লীল হাসির মধ্যেই হনহন করে ঘর ঢুকেছিল ও। ভেবেছিল স্নান করার সাথে সাথেই কথা গুলোর ক্লেদ বেরিয়ে যাবে মন থেকে..কিন্তু হতে দিল কই! বরং কীভাবে যেন পাড়ায় রটে গেল ও নাকি খারাপ পাড়ায় যায়! এই পাড়ার কে জানি দেখেছে। অথচ যে দেখেছে, সে কী করতে সেখানে গেছিল, সেটা জিজ্ঞেস করে নি কেউ! একেই মফঃস্বল, তাতে এইরকম রটনা। ঘরে অসুস্থ মা। অফিসে খ্যাঁচখ্যাঁচ, অপমান। আর পারছিল না নলিনী। বাধ্য হয়ে একদিন ক্লাব ঘরে গিয়ে ছেলেদের যে পান্ডা, সেই চিতু বলে ছেলেটাকে ডেকে বলল "তোরা আমাকে নিয়ে এসব রটাচ্ছিস কেন?" শুনে আবার অশ্লীল হেসেছিল চিতু। তারপর বলেছিল 'যেটা রটে, তার খানিকটা তো বটে, শোন, তোরা হয় ঘর ছেড়ে দে, নইলে আমাকেও কিছু ট্যাক্স দিয়ে দে...এখানে থেকে অফিসের ফুটানি চলবে না...'
আর, সেই ঘর ছেড়ে দেবার জন্য দেওয়া সময়ের মাত্র দুদিন বাকি। এর মধ্যে ওরা আরো কোণঠাসা হয়ে গেছে। ওদের বস্তিতে অনেক গুলো ঘরের একটাই এজমালি কল। সেখানে ওকে, ওর মা কে যেতে দিচ্ছে না কেউ। কী না...'এটা ভদ্রপাড়া...এখানে এসব চলে না!'
এবার বুঝি মরতেই হবে। কারণ এই মুহূর্তে কোথাও ঘর ভাড়া নেবার মতো টাকা ওর নেই।
দুটোদিন কেটে গেল। চিতুর দলবল আসবে আজ। মায়ের দিকে তাকাতে পারছে না নলিনী। এই দু দিন অফিসেও যায় নি ও। কাজ টা চলে গেলে কী হবে, ভাবতে পারছে না...। এর মাঝেই অফিস থেকে ফোন...রিসেপশানে যে দিদি বসে, সেই দিদি ফোন করে বলেছে সোমবারে জয়েন করতে, না হলে নতুন লোক রেখে নেওয়া হবে।
পারছে না নলিনী আর!
"কি রে, বেশ্যা মাগী, নিজেকে নিয়ে ব্যবসা করতে হলে অন্য জায়গায় যা...এখানে থাকা চলবে না.." চিৎকার করে বলে উঠল কেউ।
মায়ের চোখে ভয়। ভীষন, ভীষন ভয়। হাত, পা, ঠোঁট...সব কাঁপছে মায়ের।
মায়ের দিকে তাকিয়ে কি যেন হয়ে গেল নলিনীর।
গু -মুত ঘেঁটে, পরিষ্কার করে খায়...কারো বাপের পয়সায় খায় না। ঘর ভাড়া দেয় সময় মতো। এই শালারা কে ওকে বের করে দেবার? কি প্রমাণ আছে ও বেশ্যা? ও তো অফিসে নিয়ে গিয়ে দেখিয়ে দিতে পারে ও কি করে। হারামী গুলো নিজেরা কাজ করে না, তাই কাউকে করতেও দেবে না।
কি মনে হলো, বাইরে বেরিয়ে চিৎকার করে কথা ক'টা বলে দিল ও। বেজন্মার বাচ্চাগুলো বুঝুক, ও আর ভয় পায় না। সারাজীবন ছেলে গুলো পায়ের নীচে রেখেছে। বাবা, উঠতি বয়সের ছোঁড়া গুলো...আর এখন এই জানোয়ার গুলো...
'তবে রে শালী...' বলে ভেতরে ঢুকে এলো চিতু। চিরকালের চুপ করে থাকা মেয়ের এতো মুখ সহ্য করার বান্দা নয় চিতু! মেয়েদের জায়গা নিচে...আর তারমধ্যে এই গু ঘাঁটা মেয়ের বড় বড় কথা...আজ বুঝবে ছেলেদের জায়গা আসলে কী আর মেয়েদের কী...আর ট্যাক্স ওকে দিতেই হবে...হয় টাকায়...আর নইলে...ভাবতে ভাবতেই প্যান্টের জিপে হাত দেয় চিতু। আজ অফিসের বাবুর গুমোর ভাঙবে। এই গোটা এলাকায় কারো ক্ষমতা নেই চিতু গুন্ডার মুখের ওপর কিছু বলে...।
ওর দিকে এগোতেই, ওদের ঘরের লাগোয়া এক চিলতে বারান্দার রাখা বঁটি টা তুলে নেয়... তারপর চিতুর উদ্যত পুরুষাঙ্গে কোপ বসিয়ে দেয় নলিনী...তারপর...রক্তে ভেসে যাওয়া বঁটি নিয়ে ভিড় জমে যাওয়া বাইরে এসে চিৎকার করে বলতে থাকে "আয় কে আসবি...আয়...আমি সব আমার মোবাইলে ভিডিও করে রেখেছি...পুলিশকে দেবো...আয়...অনেক বছর...বছরের পর বছর চুপ করিয়ে রেখেছিস...কর লাগবে তোদেএ? ট্যাক্স? মেয়েরা বেশ্যা হলে তোরা কী? তোরা কী? বল, বল... "
ওর একটানা বোবা চিৎকারে চুপ করে থাকে সারা এলাকা। খোলা চুল...হাতে রক্তমাখা বঁটি...রং জ্বলা নাইটি পরা নলিনী তখন যেন স্বয়ং নাঙ্গেলী, যিনি উনবিংশ শতাব্দীতে নিজের স্তন যুগল ঢাকার জন্য টাকা দিতে না পেরে স্তন কেটে দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন...আর এই একবিংশ শতাব্দীতে অত্যাচারীর পুরুষাঙ্গ কেটে নিয়ে নলিনী তাঁরই ঋণ শোধ করল...
সময়...মানসিকতা..সাহসিকতার সংজ্ঞা এইভাবেই হয়ত পালটে যায়...যুগ থেকে যুগে... কাল থেকে কালে...শিক্ষা দিয়ে...শিক্ষা নিয়ে...।।
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
#67
সাবাশ, দারুন গল্প !
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply
#68
বছর কয়েক আগের কথা। বছর ঘুরে মা আসছেন আমাদের ঘরে। তা, দক্ষিন কলকাতার একটি বিখ্যাত ক্লাবের পুজোর সেবারের থিম ছিল হাজার হাতের মা দুর্গা। সেই পুজোটি ছিল আমার ভূতপূর্ব অফিসের খুব কাছে। প্রাণান্তকর ভিড় ঠেলে বাড়ি ফিরছি, হঠাৎ শুনি একজন মাঝবয়সী ভদ্রমহিলা যানজটের মধ্যে অটোয় বসে বসে বিরক্ত হয়ে বললেন "হাজার হাতের মা তো আমাদের শিবপুরেই আছে বাপু...সারাবছর পুজো হয়...জাগ্রত মা আমাদের! সেখানে না গিয়ে এখানে এত ভিড়...যত্ত হুজুগ!"
সেদিন ওনার থেকে মোটামুটি শুনেছিলাম লোকেশান টা। তারপর, ভাগ্য...এখন আমার বাসস্থান এই শিবপুরের কাছেই। তাই অনেকদিন ধরেই ভেবেছিলাম একবার মায়ের দর্শন করে আসব। আমার এক দাদাকে জিজ্ঞেস করে জেনেও নিয়েছিলাম আসল জায়গাটা। তারপর... ওই আমি যা করি আর কি...হুউউউউউশ করে চলে গেলাম একদিন...মায়ের কাছে!
বিদ্যাসাগর সেতু পেরিয়ে মন্দিরতলা। সেখান থেকে টোটো করে যাওয়া যায় এই মন্দিরে। টোটো -দাদাদের বললেই নিয়ে আসবে... আর জায়গাটির পোষাকি নাম ওলাবিবি তলা। মাত্র দশ টাকা ভাড়া, মন্দিরতলা থেকে এখানে।
বাইরে থেকে ছাপোষা, আটপৌরে মন্দির। লাল রং করা। প্রবেশ করার পরে বজরংবলির ছোট্ট মন্দির আছে। আর আছেন মা স্বয়ং।
এখনকার এই নিউ নর্ম্যাল পরিস্থিতির জন্য একটু দূর থেকে দর্শন করতে হচ্ছে মা কে। কিন্তু কী অপরূপ শোভা মায়ের! আহা! বড্ড ভালো লাগল দেখে!
পরিবারের এক সদস্যের কাছ থেকে শুনলাম, এই পরিবারের এক পূর্বপুরুষ নিমতলা শ্মশানঘাটে সাধন -ভজন করতেন। সেখানেই স্বপ্নাদেশ পান মায়ের। এই হাজার হাত বিশিষ্ট রূপে মহিষাসুরকে দেখা দিয়েছিলেন মা। সেইরূপেই এবং ঘরের মেয়ের মতো পূজিতা হন মা এখানে। এখানে মা কে আমিষভোগ দেওয়া হয়।
বেশ খানিকক্ষণ মুগ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ফিরলাম বাড়ি। বারবার মনে হচ্ছিল... সময় আর পরিস্থিতি আমাকে আজন্মের পরিচিত জায়গা থেকে অনেক দূরে এনে রেখেছে... কিন্তু.. খারাপ নেই আমি...ভালোই তো আছি! সুস্থ আছি...নিজের লোকের সাথে আছি...
এই যে অপার শান্তি... নিজের লোকের সাথে থাকা... এই যে খুব আপনার একটা ব্যাপার...এই তো, এইইই তো আসলে আমাদের কলকাতার জাদুমন্ত্র...যার প্রধান উপাচার...ভালোবাসা [Image: 2764.png]
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
#69
#কথোপকথন[
"এই, জানিস একটা খবর?"
"না, জানি না রে বর্বর!"
"বর্বর? কে? আমি?"
"না তো কি আয়নার সাথে কথা বলছি নাকি?"
"আরে, আমি কি করেছি ভাই?"
"আবার জিজ্ঞেস করছিস? স্টুপিড গাই!"
"আমি না, তুই স্টুপিড!"
"ঠোঁট ফোলাচ্ছিস তো? সাচ আ কিড!"
"এই, তুই ভাগ!"
"সে তো যাব ই, রাত বারোটা বাজতে যায়, তুই জাগ!"
"আরে শোন, স্টুপিড বললি কেন সেটা তো বল.."
"এতদিন কোথায় ছিলা ভাইটু! না মেসেজ, না কল!"
"আরে, নেটওয়ার্ক ছিল না রে..."
"কেন? চড়েছিলি কোন পাহাড়ে?"
"এই, এই, তুই কিভাবে জানলি?"
"সিড! ডোন্ট টেল মি! তুই পাহাড়ে গেছিলি?"
"ইয়েস ম্যাম! আর তাই তো..."
"বলিস নি তো? এই, এবার তুই ভাগ তো..."
"শোন, শোন একবার.."
"কিচ্ছু শোনার নেই আমার..."
"মুন! কতদিন বেড়াতে যাই নি বল.."
"হুম! ঠিক...কিন্তু জানাবার কথা ভাবিস নি! ভালো..."
"ভাগ্যিস গেছিলাম, তাই তো বুঝলাম তুই ই আলো আমার আলো..."
"ভাট বকিস না সিদ্ধার্থ!"
"শোন, বলতে দে এর অর্থ!"
"বল, বলে উদ্ধার কর.."
"ওখানে একদিন সকালে উঠে বুঝলাম...তোকে ছাড়া সূর্যোদয় ও...অন্ধকার!"
"সিড! আর ইউ..."
"ইয়েস! আই অ্যাম, মুন...আই... আই লাভ ইউ..."
"শোন, জানিস, খুলে গেছে ভিক্টোরিয়া?"
"এই অধম কি করিবে জানিয়া.."
"ওখানে বিয়ের আগে আমার বাবা মা ও যেতেন..."
"বেশ, বেশ! আমরাও যাব তবে...কাল সকালে...শার্প অ্যাট টেন..."
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
#70
[Image: 124580473_10158671953636815_729973207467...e=5FD44F68]
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#71
বক্ষলগ্না

এই বছরটার সব ই যেন বিচ্ছিরি... কিচ্ছু ভালো হচ্ছে না...দেখতে দেখতে এগারোটা মাস কেটে গেল, তাও... কফির কাপ হাতে জানলা দিয়ে তাকিয়ে ভাবছিল সুমেধা।
রবিবারের সকাল। বেশ সোনাঝরা রোদ্দুর উঠেছে। এইবছর উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছে সুমেধা, তবে কলেজ এখনও শুরু হয়নি, পড়াশুনাও না.. তাই সকাল থেকে রাত অবধি গড়িমসি করে আর ওয়েব সিরিজ দেখেই সময় কেটে যায় ওর। মা অবশ্য রাগ করেন। ওকে বলেন "এই এক হয়েছে মোবাইল... কাল রাত দুটোয় বাথরুমে যাবার জন্য উঠে দেখি মোবাইল খুলে বসে আছিস...চোখের বারোটা না, চোদ্দটা বাজল বলে তোর..."। কখনও আবার বাবাকেই বকে দেন "মেয়ে নতুন মোবাইল চাইল, তো উনি দিয়ে দিলেন। এখন মেয়ের চোখটা যখন গোল্লায় যাবে, বুঝবে!" শুনে বাবা আর ও হাসে। তবে, বাবাও ওকে বারন করেন এত বেশি মোবাইল ঘাঁটতে...। ও রোজই ভাবে, এবার কম ইউজ করবে, একটা অ্যাপ ও ঘটা করে ডাউনলোড করে রেখেছে যেখানে বোঝা যায় সারাদিনে কতক্ষণ মোবাইলে খুটুরখাটুর করছে ও...কিন্তু রোজ ভাবা সত্ত্বেও কোনোদিন ই সাড়ে সাত - আট ঘন্টার নিচে হয়না ব্যবহার। এত ভালো ভালো ওয়েব সিরিজ - সিনেমা - অরিজিনালস আছে যে দেখতে তো হয় ই।
আর, শুধু এসব ই তো নয়...অন্য একটা জিনিস ও আছে...যেটা আজকাল দেখতে খুব ভালো লাগে ওর। আসলে, এর আগে স্মার্টফোন থাকলেও সেটা ফোর জি ছিল না, আর ও সাইটগুলোর নাম ও জানত না। তাই এক দুবার দেখার চেষ্টা করলেও এত বেশি সময় লাগত ভিডিও খুলতে যে ইচ্ছেটাই চলে যেত। কিন্তু এই নতুন মোবাইলে বেশি সমস্যা হয় নি। প্রথম প্রথম কৌতুহল নিয়েই দেখতে শুরু করেছিল, কিন্তু তারপর... নেশা হয়ে গেছিল প্রায়। রোজ রাতেই একটু সময়ের জন্য হলেও একটা না একটা সাইটে যাওয়া চাই ই ওর... আর এভাবেই কিছুদিন ধরে একটা অদ্ভুত চিন্তা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে ওকে। একটা অদ্ভুত অনিশ্চয়তা...হীনমন্যতা...ক্লান্তি... অথচ এই কথাটা যে মা কে বা অন্য কাউকে বলবে, সেটাও যে সম্ভব না!
"এই মুনিয়া, আয়, ব্রেকফাস্ট করে নে! উফ, আমার হয়েছে যত জ্বালা! বাবা এই এগারোটার সময় মাটন নিয়ে এলো! কোনো মানে হয়! " টেবিলে খাবার দিয়ে গজগজ করছিলেন মা। এখন না উঠলেই বকা খেতে হবে! ভেবে উঠে এলো সুমেধা। আর টেবিলের কাছে এসেই ভুরুটা কুঁচকে গেল ওর! লুচি! ওফ! কতবার মাকে বলেছে এত তেল ভালো লাগে না ওর। কিন্তু বাবার আবার রবিবার মানেই লুচি বা পরোটা লাগবেই। মা দুজনকে দুরকমের খাবার করে দেবেন না। আর কিছু বললেই বলেন " প্যাঁকাটির মতো চেহারা, হাড় গুলো গোনা যায় পারলে, আর তার কিনা এটা খাব না, ওটা খাব না!"
কথাটা মনে পড়তেই মুখটা ম্লান হয়ে গেল সুমেধার।
প্যাঁকাটি! হ্যাঁ, ভীষণ রোগা ও... আর হয়ত সেইজন্যই...ওর চেহারাটা এত অন্যরকম। এতদিন মনে হয়নি...উলটে স্মল সাইজের জামাকাপড় সুন্দরভাবে ওকে ফিট করে যায় বলে মজা হতো ওর। আর এখন...কষ্ট হয় বড্ড। নিজেকে একদম ভালো লাগে না ওর।
এরকম হলে কি শৌনকের ওকে পছন্দ হবে?
শৌনক ওর ক্লাসমেট, আগে ওরা শুধুই বন্ধু ছিল, মানে এখনও আছে...কিন্তু কলেজের শেষদিনে কেমন একটা মনখারাপ ছিল শৌনকের জন্য। আর যদি না দেখা হয়! আর সেটা ভাবতে গিয়েই চোখে জল এসেছিল ওর। আর...এতগুলো মাস তো দেখা হলোই না... তখন কে ভেবেছিল যে ওদের পরীক্ষা গুলোও সব দিতে পারবে না ওরা...।
তবে ওদের ব্যাচের হোয়াটসএপে দুটো গ্রুপ আছে। একটায় ক্লাসের সবাই, আর একটায় ওরা, যারা বেশি ক্লোজ বন্ধু, তারা। সেখানে শৌনক ও আছে। আর ওরা মাঝেমাঝে নিজেরাও চ্যাট করে। কিন্তু...ক'দিন ধরেই সুমেধার মনে হচ্ছে...ওকে যদি ওর চেহারার জন্য শৌনকের পছন্দ না হয়! ওকে যদি রিজেক্ট করে দেয়...। ভিডিওগুলোর ছেলেদের মতো!
যতবার এটা ভাবে নিজেকে ঘেন্না করতে শুরু করে। কেন ও একটু মোটাসোটা হলো না? তাহলে তো 'বি' না, 'সি' বা 'ডি' হতো ওর সাইজ!
ভাবতে ভাবতেই তারস্বরে 'টুম্পা' গান টা বেজে উঠল। এই গানটা ওর হোয়াটসএপের কলার টিউন। ওখানে আবার কে ফোন করল!
লুচি প্লেটে রেখে উঠতে যাবে, মা ঘর থেকে ওর মোবাইল টা নিয়ে বেরোলেন...টেবিলে রেখে বললেন "কিসব গান... সত্যি!" মায়ের কথা শুনে ফিক করে হেসে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখে ওদের 'কলেজ ফ্রেন্ডস', মানে কয়েকজন বন্ধুর যে গ্রুপ টা আছে, সেখান থেকে গ্রুপ কল।
"বল রে" বলল ও। সাথে সাথেই ঝুমুরের গলা "এই সুমেধা, আজ বিকেলে ফ্রি আছিস? প্লিজ আয় না...আমাদের সল্টলেকের মলটায়? সবাই রাজি...একটু ফুডকোর্টে খেয়ে আর আড্ডা মেরে চলে আসব.."
আড্ডা! কত্তদিন পরে!
খুব মজা হবে!
"কে কে আসবে রে?"
"আমরা সবাই রে গাধী! ঝুমুর বলল না!" সুমনের গলা।
সবাই! তারমানে শৌনক ও থাকবে!
"প্লিজ আয়, এক্ষুণি ঠিক হলো...এটা বেশ আমাদের বিজয়া সন্মিলনী!" কোরকের গলা।
"না রে, আমার আজ বিকেলে হবে না। একজন রিলেটিভ আসবেন। তোরা এঞ্জয় কর!"
"প্লিজ আয় সুমেধা" শৌনকের গলা এটা।
শৌনক!
এবার আর কিছু না বলে ফোন টা কেটে দিল ও।
আর, চোখ ভরে গেল জলে।
ধ্যাত, কতদিন পরে একটু সুযোগ এসেছিল, কিন্তু হলো না...। ওর জন্য... ওর জন্য...
"মুনিয়া কী হয়েছে রে? বন্ধুরা কোথাও দেখা করতে বলছিল? 'না' করে দিলি কেন? যা, ঘুরে আয়, এসে জামাকাপড় ছেড়ে ভালো করে হাত পা ধুয়ে নিবি, মাস্ক পরে যাবি, এক্সট্রা একটা মাস্ক ক্যারি করবি, স্যানিটাইজার নিয়ে যাবি... ব্যাস তাহলেই হলো..." মা বললেন।
মায়ের কথা শুনে চোখের জল গাল বেয়ে নামল ওর।
কিভাবে বোঝায় মা কে, ওর কষ্ট?
"ওসব কারণ না মা...তুমি বুঝবে না.." বলে উঠে গেল ও। ওর প্রিয় আলুর সাদা সাদা তরকারিও এখন বিস্বাদ!
"মুনিয়া, মা, কি হয়েছে, আমাকে বল?" মা একদম ই ছাড়ার পাত্রী না। মাঝে মাঝে মনে হয় অধ্যাপক না হয়ে গোয়েন্দা হলে ভালো হত মায়ের!
জলভরা চোখে মায়ের দিকে ফিরে বুকে মুখ গুঁজে দেয় কাঁদতে কাঁদতে সুমেধা। তারপর বলে "মা, আমি এত বাজে আর বিচ্ছিরি কেন? সব এত ছোট ছোট কেন আমার?"
"ছোট ছোট! মানে!" অবাক হয়ে বলেন মা।
একটু চুপ করে থাকেন। বোধহয় বোঝার চেষ্টা করেন মেয়ে কি বলতে চাইছে। তারপর বলেন "শরীরের গঠন এক একজনের একেকরকম হয় মা! সে যেমনি হোক, আমাদের সেটাকে মেনে নিতে হয়, ভালোবাসতে হয়! আর তোরাই তো বলিস কাউকে রোগা বা মোটা না বলতে, বডি শেমিং না করতে। তাহলে, এইজন্য নিজেকে বাজে আর বিচ্ছিরি ভাবা টা কি? সেটা সেল্ফ শেমিং না...?"
"কিন্তু মা..."
"কোনো কিন্তু নয়, মুনিয়া। এই চিন্তার বা ফোবিয়ার একটা গালভরা নাম আছে - ম্যাস্ট্রোফোবিয়া। তবে, আমার মনে হয়, নিজেকে অ্যাকসেপ্ট করার মতো, নিজেকে নিজের মতো করে ভালোবাসার মতো আর কিচ্ছু হয় না... আর নিজেকে ভালোবাসলে তবেই না অন্যরাও আমাদের ভালোবাসবে?" হাসতে হাসতে, ওর মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলেন মা।
শুনে একটু হাসে সুমেধা।
সত্যিই তো... ওর প্রিয় গানের মধ্যে একটা 'নিজেকে ভালবাসো তুমি এবার'... আর ও কিনা কিছু বানানো ভিডিও দেখে, হীনমন্যতায় ভুগছিল? নিজেকে, নিজের বাহ্যিক রূপটাকে ঘেন্না করছিল? ধ্যাত!
মনস্থির করে আবার খাবার টেবিলের কাছে চলে এলো সুমেধা। ঝুমুরকে বলে দিতে হবে আসছে ও...
শৌনককে কিচ্ছু বলবে না...
ওটা সারপ্রাইজ থাক বরং...
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
#72
নিজের জন্য

আজ সকাল থেকেই খুব মন ভার অনিমার। আজ ওনার জন্মদিন। সেই উপলক্ষ্যেই বাড়িতে নাকি আজ অনেক লোকজন আসার কথা। আর, তাদের সামনে নতুন শাড়ি পরে, হাসি হাসি মুখে উপস্থিত থাকতে হবে ওনাকে। গদগদ মুখে বলা "হ্যাপি বার্থডে" র উত্তরে আরো গদগদ হয়ে "থ্যাংকইউ" বলতে হবে...।
বলতেই হবে।
নাহলে ওনার ছেলে আর মেয়ের স্টেটাস ঠিক থাকবে কীভাবে?
এমনিতে সারাবছর ই বিভিন্নভাবে অপমানিত হন উনি। না, খাওয়া -পরার অভাব হয় না কখনো। প্রতিবছর পুজোতে মেয়ে জোর করে নামী মলের দামী দোকানের শাড়ি কিনে দেয়। ছেলে কোনোবছর মোবাইল, কোনোবছর অন্য কিছু 'দরকারী' জিনিস কিনে দেয়। এইভাবেই আলমারি ভরে গেছে বহুমূল্য শাড়িতে...বাড়িতে ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেটস এর ও অভাব নেই। এমন কি, ব্লু টুথ হেডফোন ও আছে...যেখানে ওঁর কানে হেডফোন গুঁজে গান শোনার অভ্যেস নেই একটুও...তাও "সব ই তো মায়ের আছে" লিস্টে যোগ হয়েছে সেটিও। কিন্তু যে জিনিসটির জন্য ওঁনার মাতৃহৃদয় কাঁদে - সন্তানদের কাছে সম্মান, ভালোবাসা, নিদেন পক্ষে মাঝে সাঝে একটু মিষ্টি কথা...কিচ্ছু পান না উনি। বরং বারবার মনে করিয়ে দেওয়া হয় উনি স্বল্প শিক্ষিত, তাই ছেলে বা মেয়ের জন্য 'কিছুই করেন নি!' উনি নেহাতই একজন জড়বস্তু যেন! মাঝে মাঝে ভাবেন, এই কি সেই বাপ্পা আর গিনু? বিয়ের বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বাপ্পা এসেছিল কোল জুড়ে। তার পাঁচবছর পরে গিনু। তখন ওঁকে ঘিরেই রাজ্যপাট ছিল ওদের। কত বড় বয়স পর্যন্ত গিনুকে ভাত মেখে খাইয়ে দিতে হয়েছে...বাপ্পা তো কোনো চাকরির ইন্টারভিউ থাকলে সকালে উঠে অন্য কারো মুখ ও দেখত না, ওনার মুখ ই দেখবে বলে....।
পুরোনো কথা ভাবতে ভাবতে চোখে জল এলো অনিমার। সময় কীভাবে পালটে যায়! ওনার স্বামীর ক্যান্সার ধরা পড়েছিল। ক্যান্সারের চিকিৎসা যথেষ্ট খরচাসাপেক্ষ...সেইসব সামলাতে গিয়ে যেটুকু সঞ্চয় ছিল, চলে গেছে সবটাই। উনিও আর রইলেন কই! আর, তারপর থেকেই শুরু হলো এই অবমাননা। এক ই বাড়িতে থাকলেও বাপ্পা দিনের পর দেখাই করে না। গিনু ফোন করে রোজ ই প্রায়, কিন্তু 'কেমন আছো?' র পরে আর কথা এগোয় না! না, বৌমার দোষ দেন না উনি। কিন্তু, ছেলেটা এমন হলো কেন?কখনো কথা বলার জন্য ওর কাছে গেলেই 'পরে বলো,এখন একটু কাজ করছি!' শুনতে হয় ওনাকে। আর সেই পর টা আর আসেই না! কিন্তু এত কিছুর মাঝেও, প্রতিবছর ঘটা করে ওনার জন্মদিন পালন করা হয়, যেখানে বাপ্পা ওর অফিসের লোকজন, বিজনেস অ্যাসোসিয়েটস দের ডাকে। গিনুর শ্বশুরবাড়ির কয়েকজন ও আসেন। সবমিলিয়ে একটাই জিনিস প্রকট হয় 'দেখো আমরা আমাদের মা কে কত ভালো রেখেছি...আমরা কত ভালো ছেলে আর মেয়ে!'
"এই যে রেডি হও নি তুমি এখনও? লোকজন চলে এলে কি এই রং চটা নাইটি পরেই যাবে নাকি?" খরখর করে বলে নিজের ঘরে গেল গিনু। ও আজ সকালেই চলে এসেছে এই বাড়ি। দুপুরে খাওয়া দাওয়া গজল্লা সব হয়েছে...কিন্তু...একবার ও প্রনাম করার কথা মনে পড়েনি মেয়ে বা ছেলে কারো।
খাট থেকে উঠে বাথরুমে গিয়ে চোখে মুখে একটু জল দিলেন অনিমা। ভাদ্র মাসের পচা গরম। বৃষ্টি পড়ছে ঠিক ই, কিন্তু গরম ও কমছে না। তারমধ্যে পঁচাত্তর হয়ে গেল! ডায়মন্ড জুবিলি! ভাবা যায়!
ঘরে এসে আলমারি খুলে কী পরবেন ভাবছেন...শাড়ি তো অজস্র...কিন্তু...
হঠাৎ চোখ আটকে গেল কিছুদিন আগেই লন্ড্রি থেকে কাচিয়ে আনা একটা শাড়ির দিকে। শাড়িটা এখনও খবরের কাগজ দিয়ে মোড়া আছে, কিন্তু একটা হেডলাইন নজর কাড়ল ওঁর। "মহানগরে অবসাদ বৃদ্ধদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি, জানাল সমীক্ষা"। হেডলাইন টা দেখেই কেমন একটা শিহরণ বয়ে গেল ওনার মধ্যে। অবসাদ! হ্যাঁ, তীব্র একটা অবসাদ তো আছেই। নিজেকে ছেলে মেয়ের মুখাপেক্ষী ভাবা, ওদের করুণার পাত্রী ভাবা.. আর সেই থেকে আসা অবসাদ...কিন্তু উনি যে সারাজীবন জেনে আর মেনে এসেছেন, সংসারে সবাই সমান গুরুত্বপূর্ণ? উনি নিজে হাউজ ওয়াইফ ছিলেন, যাকে আজকাল ঘটা করে 'হোম মেকার' বলা হয়। ওনাদের সময় এই পরিভাষা না থাকলেও ওনার স্বামী বিশ্বাস করে এসেছেন ঘর তৈরি উনিই করেন! আর সেই ভাবনাতে পারস্পরিক শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা ছিল সমান তালে। হয়ত, বাপ্পা, গিনু কে সেটাই মনে করিয়ে দেবার সময় এসেছে! ভেবে, আলমারির নিচের তাক থেকে একটা শাড়ি বের করে নিলেন উনি। একটা তাঁতের শাড়ি। চলে যাবার আগে ওঁনার দেওয়া শেষ উপহার। ছানার জল রঙের ওপর সবুজ পাড়। আজ এটাই পরবেন উনি।
শাড়ি পরে নিয়ে মুখে আলতো করে পাউডার বোলাচ্ছেন, ঘরে এলো গিনু। লাল শিফনে অপরূপা লাগছে ওকে। ওনাকে দেখে অবাক হয়ে বলল "এই শাড়িটা কেন পরেছ মা? তোমার আর শাড়ি নেই? অন্য কিছু পরো...একটা গর্জাস কিছু... এত তো দেওয়া হয় তোমাকে!"
মেয়ের মনে নেই এই শাড়িটার কথা!
একটু চুপ করে রইলেন উনি। তারপর একটু আগে নিজেকে করা প্রতিজ্ঞার কথা মনে রেখে বললেন "সোহাগিনী, এই শাড়িটা তোমার মনে নেই নিশ্চয়ই, এটা তোমাদের বাবার আমাকে দেওয়া শেষ উপহার। তাই আমি আজ এটাই পরব। আর তোমরা নিজেদের ইচ্ছেমতো কিনে দাও আমাকে, বরং সেসব না করে একটু কাছ্র এসে বসলে ভালো লাগত আমার।"
অবাক হয়ে ওঁর দিকে একবার তাকালো গিনু! গিনু নয়...সোহাগিনী! মা কি খুব রেগে আছেন? আর কতদিন হয়ে গেল...মায়ের সাথে কথাই বলা হয় না...সত্যিই তো...বাবার দেওয়া শাড়ি...মায়ের কাছে তো আলাদা ইমোশান হবেই।
এর ই মধ্যে ফোনে বাড়ির পথনির্দেশ দিতে দিতে ঘরে ঢুকল বাপ্পা। পাঞ্জাবি পরেছে...বেশ সুপুরুষ লাগছে ওকে। কিন্তু সে ও ওঁকে দেখে কেমন অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল "মা তুমি রেডি হয়েছ? সবাই চলে আসছে তো!"
একবার ছেলের দিলে তাকালেন উনি, তারপর ম্লান হেসে বললেন "তাও, ভাগ্যিস সবাই আসছেন, সুমন্ত্র, তাই তো তুমি আজ নিজে থেকে এই ঘরে এলে, 'মা' বলে ডাকলে! সবাই আসুন, যদিও আমি কাউকে আমন্ত্রণ জানাই নি, কিন্তু তোমাদের সম্মানের কথা মাথায় রেখে আমি সামনে যাব...কিছুক্ষণ থাকবও, কিন্তু আজ আমার একটু একা থাকতেই বেশি ভালো লাগবে, আমাকে জোর করো না তোমরা কেউ!"
চিরজীবনের ভালোমানুষ, চুপ করে থাকা মায়ের কথা শুনে একটু চুপ করে রইল ছেলেও। তারপর বলল "স্যরি মা, সত্যিই আসা হয় না তোমার কাছে...কাজে ব্যস্ত থাকি...তবে আর কোনো অজুহাত দেব না...এবার থেকে রোজ আসব তোমার কাছে...অন্তত অফিস থেকে ফিরে, যাবার আগে যদি সময় না ও পাই..."। তখনই গিনুও বলে উঠল "মা, আজ আমি তোমার সাথে শোব রাতে, সেই আগের মতো?"
একটু চুপ করে রইলেন অনিমা। তারপর একটু হাসলেন। ওনার স্বামী বারবার বলতেন "শুধুই সর্বংসহা 'মা' হোয়ো না...মাঝে মাঝে বারণ করা 'না' হতেও শেখো..."। আর আজ সেই "না" ই হয়ত ছেলে-মেয়ের কাছে মনে করিয়ে দিল, উনি আছেন এখনও, নিছক জড়বস্তু না হয়ে...একজন রক্তমাংসের মানুষ হয়ে।
এই যে সবকিছু মেনে নেওয়া 'মা' থেকে নিজের কথা, নিজের 'না' বলার মানুষে উত্তরণ...এই পঁচাত্তরে এটাই ওনার উপহার, নিজের জন্য, নিজেকে।
[+] 3 users Like ddey333's post
Like Reply
#73
(13-11-2020, 02:45 PM)ddey333 Wrote: #কথোপকথন[
"এই, জানিস একটা খবর?"
"না, জানি না রে বর্বর!"
"বর্বর? কে? আমি?"
"না তো কি আয়নার সাথে কথা বলছি নাকি?"
"আরে, আমি কি করেছি ভাই?"
"আবার জিজ্ঞেস করছিস? স্টুপিড গাই!"
"আমি না, তুই স্টুপিড!"
"ঠোঁট ফোলাচ্ছিস তো? সাচ আ কিড!"
"এই, তুই ভাগ!"
"সে তো যাব ই, রাত বারোটা বাজতে যায়, তুই জাগ!"
"আরে শোন, স্টুপিড বললি কেন সেটা তো বল.."
"এতদিন কোথায় ছিলা ভাইটু! না মেসেজ, না কল!"
"আরে, নেটওয়ার্ক ছিল না রে..."
"কেন? চড়েছিলি কোন পাহাড়ে?"
"এই, এই, তুই কিভাবে জানলি?"
"সিড! ডোন্ট টেল মি! তুই পাহাড়ে গেছিলি?"
"ইয়েস ম্যাম! আর তাই তো..."
"বলিস নি তো? এই, এবার তুই ভাগ তো..."
"শোন, শোন একবার.."
"কিচ্ছু শোনার নেই আমার..."
"মুন! কতদিন বেড়াতে যাই নি বল.."
"হুম! ঠিক...কিন্তু জানাবার কথা ভাবিস নি! ভালো..."
"ভাগ্যিস গেছিলাম, তাই তো বুঝলাম তুই ই আলো আমার আলো..."
"ভাট বকিস না সিদ্ধার্থ!"
"শোন, বলতে দে এর অর্থ!"
"বল, বলে উদ্ধার কর.."
"ওখানে একদিন সকালে উঠে বুঝলাম...তোকে ছাড়া সূর্যোদয় ও...অন্ধকার!"
"সিড! আর ইউ..."
"ইয়েস! আই অ্যাম, মুন...আই... আই লাভ ইউ..."
"শোন, জানিস, খুলে গেছে ভিক্টোরিয়া?"
"এই অধম কি করিবে জানিয়া.."
"ওখানে বিয়ের আগে আমার বাবা মা ও যেতেন..."
"বেশ, বেশ! আমরাও যাব তবে...কাল সকালে...শার্প অ্যাট টেন..."

দুই পাগল-পাগলির কথোপকথন গুলো এরকমই হয়  Big Grin banghead
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply
#74
#অন্য_রূপকথা
আজ সন্ধ্যেবেলার কথা। সারাদিনের বাড়ির কাজ এবং বাড়ি থেকে কাজ সামলে একটু বাড়ির কাছের বাজারে গেছিলাম, কিছু অত্যাবশ্যকীয় জিনিস কেনার জন্য। তা, ভিড় বাঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছি, হঠাৎ শুনি খুব মৃদু কন্ঠে একটা বাক্য -"চা লাগবে, মা?"
চমকে উঠে, তাকিয়ে দেখি, তুঁতে নীল রঙা সার্জিক্যাল মাস্কের আড়ালে চেনা চোখ... ভুল বললাম...চেনা চশমা। মোটা, কালো ফ্রেমের...হরলিক্সের কাঁচের মতো চশমা। সাথে এই অবয়ব...মাথা জোড়া বাদামী টাক..আধময়লা সাদাটে ফতুয়া...
এক হাতে একটি স্টিলের কেটলি... অন্য হাতে ক'টা কাগজের কাপ...
বড্ড চেনা...বড্ড চেনা...
আমার চোখেও বোধহয় বিষ্ময়, বা পরিচিতির ভাব ফুটে উঠেছিল, তাই মাস্ক টা একটু খুলে বললেন "ভালো আছ তো? অনেকদিন দেখি না..."
এক লহমায় চিনতে পেরে গেলাম। এই জ্যেঠু আর জ্যেঠিমা, মানে ওনার স্ত্রী মিলে একটা চপের দোকান মতো চালান...দোকান মানে রাস্তার ধারে বসে। জ্যেঠিমা তৈরি করেন, আর এই জ্যেঠু ভাজেন।
কিন্তু আজ চা নিয়ে?
মুখ ফুটে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম। আর তার উত্তরে বিষন্ন ভাবে মাথা নেড়ে বললেন "আজকাল চপের বিক্কিরি নেই মা। সারা সন্ধ্যে বসেও পঞ্চাশ -ষাট টাকার বেশি হয় না, খরচা দিয়ে থুয়ে। তাতে দুজনের খাওয়া, ওষুধ...আর চলে না। পেটের দায় বড় দায়! তাই চা বিক্কিরি করছি। দোকান তো দিতে পারব না, অনেক খরচা! ...এইভাবে ঘুরে ঘুরে বেচি...তোমার জ্যেঠিমা বানিয়ে দেন...সকাল আর বিকেল দু'বেলাতেই বেরোই... বাঁচতে তো হবে...হার তো মানতে পারব না! কিছুতেই না!" বলে একমুখ হেসে, পা টা টানতে টানতে চলে গেলেন উনি।
বাঁচতে হবে!
হার মানতে পারব না।
কিছুতেই না!
কী অপরূপ শব্দবন্ধ, তাই না?
অদ্ভুত এক ক্ষয়াটে সময় আর সমাজের মাঝে দাঁড়িয়ে আমরা। মাঝেমাঝে দিশাহারা হয়ে পড়ি। অবসাদ আর "ভাল্লাগছে না" নিত্যসঙ্গী আমাদের। পালিয়ে যেতেও কি ইচ্ছে করে না, মাঝে মাঝেই!
আর সেই সবকিছুর মাঝে এমনি এক একজন মানুষ সামনে আসেন...একেবারে সেই ছোটবেলায় পড়া রবার্ট ব্রুসের গল্পের মতো করে বুঝিয়ে দেন বুক চিতিয়ে, ফাটিয়ে 'ফাইট' করার নাম ই জীবন!
পর পর দু'কাপ লেবু চা আর ভরে যাওয়া মন - এই তো... এইটুকু ই তো প্রাপ্তি আজ জীবনের কাছে আমার, আজকের জন্য, আগামীর জন্য।
চরৈবতি [Image: 2764.png]
[+] 3 users Like ddey333's post
Like Reply
#75
" ফাইট কোনি ফাইট !! "
[+] 2 users Like Mr Fantastic's post
Like Reply
#76
(19-11-2020, 06:24 PM)Mr Fantastic Wrote: " ফাইট কোনি ফাইট !! "

দাদা... কি লিখলেন..... লাইনটা পড়ে সেই মানুষটার কথা মনে পড়ে গেলো. জলে প্রানপনে সাঁতার কাটছে একটা মেয়ে আর  তার  স্যার উত্তেজনায় চিল্লাছে-
 "ফাইট কোনি ফাইট"
আজ সে নেই আমাদের মাঝে কিন্তু নিজের কাজের মাধ্যমে সর্বদা আমাদের সাথে থেকে যাবেন. আমাদের সবার প্রথম ফেলুদা. ❤
[+] 2 users Like Baban's post
Like Reply
#77
#অনুগল্প
ছুটির দিন। অনেকদিন পরে আজ মাংস এনেছেন অসীম বাবু। যা দাম এখন সবকিছুর, বাপরে বাপ!
বাজারের ব্যাগ টা রান্নাঘরের মাটিতে রেখে তাকে রাখা জলের বোতল টা নিয়ে ঢকঢক করে জল খেলেন অসীম বাবু।
নভেম্বরের মাঝামাঝি হয়ে গেছে, তাও গরম কমেনি তেমন। আর, জিনিসপত্রের যা দাম, তাতে তো এমনিতেই ঘাম শুধু না, কালঘাম ছুটে যাচ্ছে।
জল খেয়ে ঘরের চৌকিতে বসতে যাবেন, হঠাৎ ফোনের আওয়াজ। প্লাস্টিকের খাবারের টেবিলের ওপর রাখা মোবাইল হাতে নিয়ে অসীম দেখে, বসের ফোন! রবিবারেও মুক্তি নেই!
'হ্যালো, স্যার?'
''অসীম বাবু, আপনাকে দিয়ে কি একটা কাজ ও ঠিকভাবে হয় না? ডিসগাস্টিং! আজ আমাদের সাইট অফিসে ইন্সপেকশন হচ্ছে, আর আপনি এখানো পৌঁছান নি?'
'কিন্তু, স্যার, আমার তো থাকার কথা ছিল না...মানে আমাকে তো কেউ বলে নি...' আমতা আমতা করে বলেন অসীম।
'বলেনি মানে? আপনি নিজে খবর রাখেন নি কেন? এখনই বেরোন...আর পৌঁছে যান।' খটাং করে ফোন নামিয়ে রাখেন বস।
হতাশ হয়ে বসে পড়েন অসীম বাবু। এখন আবার সেই সাঁতরাগাছি ছুটতে হবে। একটা ছুটির দিন ও রেহাই নেই। সবদিন তো জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ চলছেই!
শালার চাকরি!
আর ভাল লাগে না!
ছেড়ে দিলে বস বুঝবে কত ধানে কত চাল!
এই অপমান নিয়ে আর পোষাচ্ছে না...।
ভাবতে ভাবতেই বাজারের ব্যাগটার দিকে তাকান অসীম বাবু।
ছেড়ে তো দেওয়াই যায়... তারপর... খাবেন কি...?
দরজার পেছনে ঝোলানো হুক থেকে জামা প্যান্ট হাতে নেন উনি।
বেরোতেই হবে। কিচ্ছু করার নেই।
'কিগো, এখন বেরোচ্ছো?' চায়ের কাপ নিয়ে ঘরে ঢুকে বলেন গিন্নি।
চুলে এলো খোঁপা, ডুরে শাড়ি আর কপালে এত্ত বড় একটা সিঁদুরের টিপ।
নাহ্, এই মানুষ গুলোর মুখের দিকে তাকিয়ে....হঠকারি হওয়া যাবে না...।
কান্না চেপে অসীম বাবু বলেন 'অফিসের বস ফোন করেছিলেন...রিকোয়েস্ট করলেন খুব করে একবার সাইট অফিসে যেতে...তাই...। তুমি রান্নাটা করো, আমি রাতে এসে খাব...'। বলে, এক নিঃশ্বাসে চা শেষ করে বেরিয়ে পড়েন উনি। হতাশায়, অপমানে আসা চোখের জল আড়াল করে...।
দেওয়ালে ঝোলানো নীলকন্ঠ মহাদেবের ছবি দেওয়া ক্যালেন্ডার উড়ছে পতপত করে।
আজ উনিশে নভেম্বর, বিশ্ব পুরুষ দিবস।
----------------------------------------
নারী দিবসের মতো উৎসবের আবহ নেই, দিনটির অস্তিত্ব সম্পর্কেই কজন জানেন সন্দেহ। তবু, দিনটি ঘুরে ফিরে আসে...এই প্রত্যাশা নিয়ে যে 'মর্দ কো দর্দ নেহি হোতা' র বাইরে, নিজের মনের কথা মন খুলে বলার, অনুভূতিকে প্রকাশ করার স্বাধীনতা, এবং, 'ভাল নেই', 'ভাল লাগছে না' এই কথাগুলো স্বীকার না করার পলকা ইগোকে কাটানোর ইচ্ছা পুরুষ একদিন পাবেন। পাবেন ই।
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
#78
Mard ko dard nahi hota. ....sotti osadharon !!!!
Like Reply
#79
গহীন

এই দু' তিন দিন হলো, হঠাৎ করেই বেশ ঠান্ডা পড়ে গেছে। এমনিতেই ওদের বাড়ি শহরতলিতে হওয়ায় ঠান্ডা কলকাতার তুলনায় বেশি পড়ে। আর, বাড়িতে বেশ কিছু গাছপালা থাকায় হাওয়াও দেয় খুব! তবে, শীতের খারাপ দিক এগুলো হলে, ভালো দিক হলো ওদের বেশ বড় একটা উঠোন আছে... ছাদ আছে। শীতকালে লেপ কম্বল রোদে দেওয়া হয়। কী যে ভালো লাগে তারপর সেই লেপ কম্বল গায়ে দিতে!
মনে মনে এই কথা গুলো ভাবতে ভাবতে হাসছিল অতীশ। এই তো, আজকের টপিক পাওয়া গেছে। এইসব এতাল বেতাল কথা বলেই আলাপ জমাতে হবে মোহরের সাথে। নইলে তো ওদের দুজনের প্রেমটা একদম ই জমছে না। সারাদিন মেয়েটা হাসিখুশি থাকে, কিন্তু এই ঘরে এলেই চুপচাপ হয়ে যায়। লজ্জা পায় বোধহয়।
ওদের সম্বন্ধ করে বিয়ে, ম্যাট্রিমনিয়াল অ্যাপ থেকে। বিয়ে ঠিক হয়েছিল এইবছরের জানুয়ারিতে। প্রথমে একটা কফি শপে দেখা করেছিল ওরা দুজন। অতীশের বেশ এমব্যারাসিং লেগেছিল! মাত্র ঘন্টাখানেকের মিটিং এ কি কাউকে জীবন সাথী করা যাবে কিনা ঠিক করা সম্ভব! কিন্তু মোহরকে দেখে সব ভুলে গেছিল ও। একটু শ্যামলা রং, দীঘল চোখ, গজদাঁত আর খুব মিষ্টি কন্ঠস্বর। একেবারে বোল্ড আউট হয়ে গেছিল অতীশ। আর, কি অবাক কান্ড! মোহর ও 'হ্যাঁ' বলে দিয়েছিল বিয়েতে! ওর মতো সাধারণ দেখতে একজনকে!
দুই বাড়ির লোকেদের ও নিজেদের ভালো লেগেছিল। আমাদের দেশে তো এমনিতেই বিয়ে মানে দুই পরিবারের মধ্যে মিলন। অতীশের খুব ইচ্ছে ছিল চুটিয়ে প্রেম করার, কিন্তু লকডাউন হয়ে যাওয়াতে শুধুই ফোনে কথা হত। তারপর ঠিক হলো এই নভেম্বর মাসেই চার হাত এক হবে ওদের। বাবা মায়ের মুখে এই খবর শুনে খুব ভালো লেগেছিল অতীশের। যাক, এতদিনে তাহলে মোহর ওর হবে। ওই দীঘল চোখে চোখ রেখে গাইতে পারবে "সেই সুরে বাজায় বাঁশি...ভালোবাসি, ভালোবাসি!"
এবছরের পরিস্থিতির জন্য বিয়েটা বেশ অনাড়ম্বর ভাবেই হয়েছে ওদের। তবে অতীশ ঠিক করেছে অ্যানিভার্সারিটা একদম জমিয়ে দেবে। ততদিনে নিশ্চয় পৃথিবী সুস্থ হয়ে যাবে!
ভাবতে ভাবতেই ঘরে এলো মোহর। লাল পাড়ের হলুদ তাঁতের শাড়িতে ওর বৌ টাকে মোহময়ী লাগছে। এই মেয়েটার সাথে বিয়ের আগে ফোনে কতবার কথা হয়েছে, তবে সামনা সামনি যেন জড়তাটা কাটে নি এখনও। কেমন অপরিচিত লাগে যেন! অবশ্য দোষ ওর ও। পুরো লকডাউন চলাকালীন ভয়ে আর টেনশানে ছিল অতীশ, চাকরিটা যদি চলে যায়, সেই ভেবে! তাই সেভাবে ফ্রি হয়ে কথাও বলতে পারে নি। তবে, সব আক্ষেপ এবার পুষিয়ে নেবে ও। যারা বলে, বিয়ের পরে প্রেম হয় না, তাদের ভুল প্রমান করেই ছাড়বে!
ওর বিনব্যাগ টা থেকে উঠে দাঁড়াল অতীশ। ড্রেসিং টেবিলের সামনে রাখা বেঁটে টুলটায় বসে ক্রিম লাগাচ্ছে মোহর। আহা, তাতেও কী যে মিষ্টি লাগছে ওকে! হাতের শাঁখা -পলার রিনিঝিনি আওয়াজ, লাল সিঁদুরের টিপ...সিঁদুরের গুঁড়ো পড়ে লাল লাল নাক...আবিষ্ট করে তুলছিল অতীশকে।
পায়ে পায়ে এগিয়ে এলো অতীশ, আয়নার দিকে।
মোহর এখন শাড়িটা পায়ের কাছে একটু তুলে ময়শ্চারাইজার লাগাচ্চে। পায়ে একটা নূপুর...। আবেশ আসছে আরও।
একটু নীচু হয়ে বসে মোহরের কাঁধে মাথাটা রাখল অতীশ। আহ, কী সুন্দর একটা গন্ধ ভেসে আসছে ওর শরীর থেকে! একেই কি মৃগনাভি বলে?
দীঘল চোখ মেলে তাকিয়েছে মোহর। চোখে কি আমন্ত্রন?
নিমেষে ডুবে গেল অতীশ, মোহরের অধরে। নাকি, দুজনে, দুজনের মধ্যে!
ঘোরের মধ্যে বিছানায় নিয়ে এলো অতীশ মোহরকে। আজ একাত্ম হবে ওরা...
উদ্যত হতে যাচ্ছে, ঠিক সেইসময় একটু ফুঁপিয়ে মোহর বলে ওঠে..."আজ না, প্লিজ...আজ না...আজ ছেড়ে দাও!"
থমকে গেল অতীশ।
আজও!
এই নিয়ে পরপর পাঁচদিন! সেই বৌভাতের দিন থেকেই।
কিন্তু কেন?
বিকারগ্রস্তের মতো মোহর তখনও বলে যাচ্ছে "ছেড়ে দাও...প্লিজ..."
স্বভাব বিরুদ্ধ ভাবেই মাথা গরম হয়ে গেল অতীশের। এক ঝটকায় উঠে পড়ে বলে উঠল "প্লিজ, এরকমভাবে কেঁদো না। আমি রেপিস্ট না, মলেস্ট করতে চাই না তোমাকে। ভালোবাসি তোমাকে। তাই...স্যরি।"
মাথা কাজ করছে না ওর।
মোহর কেন নিজেকে মেলে ধরতে পারছে না? তবে কি ওর মন অন্য কোথাও বাঁধা আছে? তাই?
তাহলে বিয়ের প্রহসন কেন করল? কেন?
ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন গুলো করতে যাবে, রূঢ় ভাবে, হঠাৎ শোনে, অবিরাম ফোঁপানির মাঝে মোহর বলছে "আমি খুব খারাপ...তোমার জীবন নষ্ট করছি...বিশ্বাস করো, আমিও তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু...আমার খুব ভয় লাগে অতীশ... মনে হয়...খুব যন্ত্রনা করবে...তোমার ভালো লাগবে না আমাকে...তাই... হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায় আমার..."
"আগে বলোনি কেন আমাকে?" তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মোহরের দিকে তাকিয়ে বলে অতীশ।
"ভেবেছিলাম..অষ্টমঙ্গলায় গিয়ে মা কে বলব...লজ্জা করবে খুব...কিন্তু বলব..." কান্নায় বুজে আসে মোহরের গলা।
গলার কাছে কষ্ট দলা বাঁধছে অতীশের ও।
'জেনোফোবিয়া' বা 'এরোটোফোবিয়া' - যৌনমিলন সম্পর্কিত ভয় বা ফোবিয়া। কলেজে সায়কোলজি ছিল অতীশের সাবজেক্ট কম্বিনেশানে। তাই জানে, এই ফোবিয়ার বিস্তার কত গহীন।
আর এই ক'দিন আগেই না ও অকম্পিত স্বরে বলেছে "যদিদং হৃদয়ং মম, তদস্তু হৃদয়ং তব"...আর হৃদয় তো শুধু হৃদয়ের ভালো কিছু না...ফোবিয়া থাকলে সেটাও গ্রহন করতে হবে ওকে। নইলে আর কিসের পাশে থাকার অঙ্গীকার করা?
পায়ে পায়ে এগিয়ে এলো অতীশ মোহরের দিকে। অঝোরে কাঁদছে মেয়েটা এখনও।
হাঁটু গেড়ে বসে অতীশ। মোহরের মাথায় হাত রাখে আলতো করে। কাউন্সেলিং করাতে হবে মেয়েটাকে।
তবে তার আগে দরকার ভালোবাসার ভরসা যোগান দেওয়া।
চোখের জলটা মুছে দিয়ে মোহরের কপালে ঠোঁট রাখে অতীশ।
পৃথিবীর পবিত্রতম ভালোবাসার ঠিকানা সেই স্পর্শে....
[+] 3 users Like ddey333's post
Like Reply
#80
জেনোফোবিয়া বা আরেটোফোবিয়া আগে পিনুর ছিলো ! যদি ঢুকে গিয়ে হারিয়ে যায় ? এখন কাটিয়ে উঠেছে ! তাই ৬১ বছর বয়েসে ১৮ বছরের বাচ্চার বাপ ! দেরি হলেও ক্ষতি নেই ! হারিয়ে তো যায়নি ! :D :D
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply




Users browsing this thread: 26 Guest(s)