Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
গরিব জ্যোৎস্নার পৃথিবী
শ্রীজাত
সকালের জলখাবার আর নানান টুকিটাকি ঘরের কাজ সেরে সবে বিছানায় একটু এলিয়েছি, এমন সময় দরজায় বেল। করোনার কারণে সারাক্ষণ দুর্বলতা আর ক্লান্তির এক বোধ আচ্ছন্ন করে রেখেছে। তাও কোনওরকমে নিজেকে টেনে নিয়ে চললাম দরজার দিকে। এ-সময়ে কেউ বড় একটা আসার কথা নয়, তাছাড়া আমাদেরও দরজা খুলে তাঁদের সঙ্গে কথা বলা ঠিক নয়, তাঁদেরই স্বাস্থ্যের কারণে। যেতে যেতে আরও একবার বেজে উঠল বেল। বেশ তাড়ায় আছেন, যিনিই এসে থাকুন না কেন।
দেখি, পক্ককেশ এক প্রৌঢ় চারতলার সিঁড়ি ভেঙে উঠে দেয়ালে হাত রেখে হাঁপাচ্ছেন। অপর হাতে মলিন একটি পলিথিন ব্যাগ আঁকড়ে ধরা। দেখে চিনতে পারলাম না। আমার চোখে সেই ধন্দ দেখেই তিনি নিজের মাস্ক কিছুটা নামিয়ে ‘চিনতে পারছেন?’ ব’লে নিজের নাম বললেন। আমি প্রথমে কিছুটা সন্ত্রস্ত হয়েই ওঁকে মাস্ক পরে নিয়ে দূরে সরে যেতে বললাম এবং জানালাম যে, আমি কোন রোগে আক্রান্ত। উনি তাতে বিশেষ ভয় পেলেন বা গা করলেন বলে মনে হল না। বরং নিজের পেশার কথা জাহির করলেন, ওই হাঁপাতে হাঁপাতেই।
হ্যাঁ, এবার আবছা চেনা লাগছে ঠিকই। খুব নিয়মিত না হলেও, কারও কারও সঙ্গে ওঁকে মঞ্চে বসতে দেখেছি, যেদিকটায় কখনওই বেশি আলো এসে পড়ে না, সেইদিকে। ভদ্রলোক পারকাশন আর্টিস্ট। বাজনা ওঁর পেশা, ওঁর শিল্প। আমি ওঁর পরিচিতির উত্তরে সামান্য ‘হুঁ’ বললাম বটে, কিন্তু বুঝে উঠতে পারলাম না, কেন হঠাৎ আমার বাড়ি এসে হাজির হয়েছেন।
উত্তরটার জন্য অবশ্য প্রশ্ন বা অপেক্ষা, কোনওটাই করতে হলো না। কপালের ঘাম মুছে নিজেই বললেন, ‘অনেকের সঙ্গে বাজিয়েছি এত বছর। কী আর বলব আপনাকে। কিন্তু আজ সাত মাস হলো একটাও অনুষ্ঠান নেই, রেকর্ডিং নেই। হাতে টাকা নেই। এখন অবস্থা এমন হয়েছে, আপনারা সাহায্য না করলে খেতে পাবো না’। কথাটা শুনে আমি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম দরজায়। ঠিক কেমন মনে হচ্ছে নিজের, সেটা বুঝে উঠতেও যেন সময় লেগে যাচ্ছে কিছুটা। সেই ফাঁকেই ভদ্রলোক বললেন, ‘অনেকে দিয়েছেন কিছু কিছু’। ব’লে, কয়েকজন গানবাজনার সতীর্থের নাম করলেন। তারপর বললেন, ‘তাই হেঁটে হেঁটে বাড়ি বাড়ি ঘুরছি। অনেক কষ্টে আপনার বাড়ি খুঁজে পাওয়া। একটু কিছু দেবেন?’
আমার মাথা আপনা থেকেই হেঁট হয়ে গেল। লজ্জায়, ব্যর্থতায়। একজন প্রবীণ, যিনি সারাটা জীবন বইয়ে দিয়েছেন গানবাজনার জন্য, আমরা বদলে তাঁকে এটুকু সচ্ছলতাও দিতে পারিনি, যাতে বিপদে তাঁকে অন্যের দ্বারস্থ না হতে হয়। এ-লজ্জা আমাদেরই, এ-ব্যর্থতাও আমাদের। বরং সফল উনি, যিনি নিজের মধ্যে সাহস জাগিয়ে তুলতে পেরেছেন, এভাবে মানুষের দরজায় পৌঁছনোর।
ওঁকে বাইরেই দাঁড় করিয়ে ভিতরে গিয়ে দূর্বাকে বললাম, শুনে ওরও মন নিভে গেল এই অসুস্থতার মধ্যেই। আমরা আমাদের সাধ্যমতো যেটুকু পারলাম, ওঁর জন্য বার করে আনলাম দেরাজ থেকে। এ কোনও সাহায্য নয়। মানুষকে সাহায্য করবার স্পর্ধা আমাদের নেই, কোনওদিন হবেও না। এ কেবল নিজেদের থেকে অপরের সঙ্গে কিছুটা ভাগ করে নেওয়া। একটাই তো সংসার, ওঁর আর আমার। মঞ্চও তো একটাই। একদিকে টান পড়লে অন্যদিক থেকে আপনিই চলে যাবে।
দরজায় গিয়ে দাঁড়ালাম ফের। অন্যান্য বছর এমন সময়ে অপরিচিত মানুষ এলেও রেওয়াজ তাঁকে জল আর মিষ্টি এগিয়ে দেওয়ার। বিজয়া চলছে। কিন্তু এ-বছর এতটাই দুঃসময় যে, দূর থেকে হেঁটে আসা ক্লান্ত মানুষটিকে সেটুকুও দিতে পারলাম না। আমাদের হাতের খাবার এখন অস্পৃশ্য। কিন্তু টাকা সেসবের অনেক উর্ধ্বে। তার স্পর্শদোষ হয় না, হতে নেই।
আমি সংকুচিত হাতে টাকাটা এগিয়ে দিতেই ভদ্রলোক হাত পাতলেন নিচু হয়ে। ঘর্মাক্ত, কম্পমান হাতের পাতা, রেখায় রেখায় অনেক বছরের কাটাকুটি। এক সময়ে কত খঞ্জনি চমকে উঠেছে এই হাতের পাতায়, গানের লয় বাঁক থেকে বাঁকে ঘুরে গেছে এই হাতেরই খঞ্জিরায়। আজ সেই হাত আমার সামনে পাতা। ক’টা টাকার জন্য। ভাতের জন্য। জীবনের জন্য। এই দৃশ্যের সামনে এসে আমি প্রস্তরবৎ স্থাণু হয়ে গেলাম। এ কোন পৃথিবীতে এসে দাঁড়িয়েছি আমরা? মঞ্চের বাইরে এ কোন সাজঘরে দেখা হচ্ছে আমাদের?
পেতে রাখা হাতের পাতাটার দিকে বেশিক্ষণ তাকাতে পারলাম না। কেবল বললাম, ‘ওভাবে নেবেন না। সোজা হাতে নিন’। কী ভাবলেন কে জানে। আমি তখনও মেঝের দিকে তাকিয়ে ওঁর প্রতি হাত বাড়িয়ে আছি। তবু, নিচ্ছেন যখন, একবার সাহস করে তাকালাম ওঁর দিকে। হাত সোজা করেছেন ঠিকই, কিন্তু কাঁদছেন ভদ্রলোক। সন্তানের বয়সী একজনের কাছ থেকে টাকা নিতে গিয়ে চোখে জল এসে গেছে তাঁর। মর্যাদা বড় স্রোতস্বী। একটা নুড়ি পড়লেও ছিটকে এসে গায়ে লাগে জল। আর এ তো পাথরের কাহিনি।
অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে করছিল, পারলাম না। গলা ধরে আসছে আমারও। কেবল বলতে পারলাম, ‘সাবধানে যাবেন’। উনিও সিঁড়ির মুখে দাঁড়িয়ে আমায় নমস্কার জানিয়ে বললেন, ‘আপনি কিন্তু লেখা ছাড়বেন না’। দরজা বন্ধ করে কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলাম। নিজেকে এত বেশি ছোট মনে হতে লাগল, এত বেশি অসফল, ভুলে যেতে চাইছিলাম ঘটনাটা। এতদিনকার লেখালেখির কী দাম, কী মূল্য এত বছরের গানবাজনার, যদি মানুষ খেতে না পায়? আমার দরজা থেকে বেরিয়ে মানুষটি তখন রোদ মাথায় হাঁটছেন, আরও কোনও দরজার দিকে। মলিন একখানা পলিথিন ব্যাগে আমাদের অর্জিত ব্যর্থতা জমা হচ্ছে একে একে।
এই অতিমারী কয়েক মাসে আমাদের অনেক কিছু নিয়ে গেল। কিন্তু আমাদের অহং আর দম্ভ, সে কি মরবে না এর প্রকোপে? নিজের খ্যাতি, মান, অর্থ, সাফল্য, কীর্তি নিয়ে ব্যস্ত থাকা লোকজন কি বুঝবে না এরপরেও যে, একজন নিঃস্ব মানুষের সামনে দাঁড়ালে এই গৌরবের সিন্দুকই বড় দৈন্যের কুঠুরি হয়ে যায়? সে কি এরপরেও বুঝবে না যে, পরিস্থিতির এক ঝাপটার সামনে তার সমস্ত অর্জন কুটোর মতো উড়ে যেতে পারে? আর তাকেও একদিন সব ছেড়ে নেমে আসতে হতে পারে মাটিতেই, যেখান থেকে সে শুরু করেছিল? কে জানে।
কাল কোজাগরী পূর্ণিমা। লক্ষ্মীপুজো। আমাদের অন্নের দেবী, আমাদের প্রাচুর্যের প্রতিমা। ঘরে ঘরে পূজিত হবেন তিনি, ধানের ছড়ায়, মঙ্গলঘটে। যাঁরা বিশ্বাসী, তাঁরা যেন নিজেরটুকুর বাইরে গিয়েও চাইতে পারেন, এই আমার চাওয়া। আর যাঁরা আমার মতো, যাঁরা বহমান এই মহাসময়কেই জীবনদেবতা মেনে চলেন, তাঁদের জন্য দেবীর বরাভয়ের মুদ্রায় আগামীকাল ফুটে উঠবে প্রবীণ এক হাতের পাতা। ঘর্মাক্ত, কম্পমান, রেখায় রেখায় কাটাকুটি। আর সামনে রাখা ঘটে পবিত্র জলের জায়গায় ভরা থাকবে এক প্রৌঢ়ের চোখের জল। অভাবের, উপোসের, দারিদ্রের। এই নিরন্নের দেশে এটুকুই আমার উপাচার, এমনই আমার কোজাগরী। কে জাগবে, সত্যিই জানি না। এই গরিব জ্যোৎস্নার পৃথিবীতে নিজেকে যেন জাগিয়ে রাখতে পারি।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
Posts: 727
Threads: 9
Likes Received: 2,486 in 419 posts
Likes Given: 141
Joined: Dec 2019
Reputation:
776
ভারী ভালো লাগলো গল্পটা | একজনও যদি উপলব্ধি করে, বলতে হবে মানুষকে 'মানুষ' হতে খানিকটা ধাক্কা দিল সামনের দিকে | পানু সাইট এই গল্পের যোগ্য জায়গা নয় | তবু বলব একদম ঠিক করেছেন দাদা, এরকম গল্প ছড়িয়ে যাওয়া উচিত সমাজের কোনে কোনে | লাইক আর রেপু রইলো |
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
'স্তন'
নারীদের স্তন দেখতে ভালো লাগে আপনার? আমারও লাগে। তারপরে একদিন দেখলাম এক তালপাতা ছাওয়া ঝুপড়ির লালমাটির দাওয়ায় বসে একজন মা তার বাচ্চাটাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছে। তার উদোম বুক, গলা, কাঁধ। বাচ্চাটা চোঁক চোঁক করে শুকনো বুকের বোঁটাটা চুষেই যাচ্ছে। দুধই নেই তো খাবে কি? মা'ও বুঝছে সেটা। এক দৃষ্টিতে কোলের বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে আছে আর টস টস করে ঝরে পড়ছে চোখের জল, তারই শূণ্য বুকে। সেই জল ফোঁটায় ফোঁটায় গড়িয়ে গিয়ে ঢুকছে বাচ্চাটার মুখে। হাড় জিরজিরে বাচ্চাটা টেনেই যাচ্ছে চোঁক চোঁক চোঁক। আচ্ছা, ও কি ওর মায়ের ঐ চোখের জলটাকেই দুধ ভাবছে? কি জানি। ব্যাপারটা কেমন অদ্ভুত না? অভুক্ত মায়ের বুকের দুধ শুকিয়ে যায় কিন্তু চোখের জল শুকায় না।
আমি এখনো মেয়েদের স্তন দেখি, এখনও ভালো লাগে। শুধু নজরটা একটু পালটে গেছে। খালি মনে হয়, ওগুলো ভরা থাকুক। বয়েস অনুযায়ী যেমন দরকার তেমন পুষ্ট থাকুক। এই জগতের একটা বাচ্চারও যাতে মনে না হয়, দুধের স্বাদ চোখের জলের মতো নোনতা।
লিখেছেন - Joydeep Mukherjee
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,072 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
(01-11-2020, 11:21 AM)dada_of_india Wrote: 'স্তন'
নারীদের স্তন দেখতে ভালো লাগে আপনার? আমারও লাগে। তারপরে একদিন দেখলাম এক তালপাতা ছাওয়া ঝুপড়ির লালমাটির দাওয়ায় বসে একজন মা তার বাচ্চাটাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছে। তার উদোম বুক, গলা, কাঁধ। বাচ্চাটা চোঁক চোঁক করে শুকনো বুকের বোঁটাটা চুষেই যাচ্ছে। দুধই নেই তো খাবে কি? মা'ও বুঝছে সেটা। এক দৃষ্টিতে কোলের বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে আছে আর টস টস করে ঝরে পড়ছে চোখের জল, তারই শূণ্য বুকে। সেই জল ফোঁটায় ফোঁটায় গড়িয়ে গিয়ে ঢুকছে বাচ্চাটার মুখে। হাড় জিরজিরে বাচ্চাটা টেনেই যাচ্ছে চোঁক চোঁক চোঁক। আচ্ছা, ও কি ওর মায়ের ঐ চোখের জলটাকেই দুধ ভাবছে? কি জানি। ব্যাপারটা কেমন অদ্ভুত না? অভুক্ত মায়ের বুকের দুধ শুকিয়ে যায় কিন্তু চোখের জল শুকায় না।
আমি এখনো মেয়েদের স্তন দেখি, এখনও ভালো লাগে। শুধু নজরটা একটু পালটে গেছে। খালি মনে হয়, ওগুলো ভরা থাকুক। বয়েস অনুযায়ী যেমন দরকার তেমন পুষ্ট থাকুক। এই জগতের একটা বাচ্চারও যাতে মনে না হয়, দুধের স্বাদ চোখের জলের মতো নোনতা।
লিখেছেন - Joydeep Mukherjee
অসাধারণ....
কামনা ও মাতৃত্ব কে কয়েকটা লাইন লিখেই যেভাবে আলাদা করে তুলে ধরা হয়েছে সেটা অসাধারণ
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(01-11-2020, 11:21 AM)dada_of_india Wrote: 'স্তন'
নারীদের স্তন দেখতে ভালো লাগে আপনার? আমারও লাগে। তারপরে একদিন দেখলাম এক তালপাতা ছাওয়া ঝুপড়ির লালমাটির দাওয়ায় বসে একজন মা তার বাচ্চাটাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছে। তার উদোম বুক, গলা, কাঁধ। বাচ্চাটা চোঁক চোঁক করে শুকনো বুকের বোঁটাটা চুষেই যাচ্ছে। দুধই নেই তো খাবে কি? মা'ও বুঝছে সেটা। এক দৃষ্টিতে কোলের বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে আছে আর টস টস করে ঝরে পড়ছে চোখের জল, তারই শূণ্য বুকে। সেই জল ফোঁটায় ফোঁটায় গড়িয়ে গিয়ে ঢুকছে বাচ্চাটার মুখে। হাড় জিরজিরে বাচ্চাটা টেনেই যাচ্ছে চোঁক চোঁক চোঁক। আচ্ছা, ও কি ওর মায়ের ঐ চোখের জলটাকেই দুধ ভাবছে? কি জানি। ব্যাপারটা কেমন অদ্ভুত না? অভুক্ত মায়ের বুকের দুধ শুকিয়ে যায় কিন্তু চোখের জল শুকায় না।
আমি এখনো মেয়েদের স্তন দেখি, এখনও ভালো লাগে। শুধু নজরটা একটু পালটে গেছে। খালি মনে হয়, ওগুলো ভরা থাকুক। বয়েস অনুযায়ী যেমন দরকার তেমন পুষ্ট থাকুক। এই জগতের একটা বাচ্চারও যাতে মনে না হয়, দুধের স্বাদ চোখের জলের মতো নোনতা।
লিখেছেন - Joydeep Mukherjee
•
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,994 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
(31-10-2020, 10:42 AM)ddey333 Wrote: শ্রী...
এবার লক্ষীপুজো দুদিনেই করা যাবে বটে, তবে নিয়ম মেনে আজই পুজো করছেন শিখা। এবার অবশ্য অন্যান্যবারের তুলনায় একটু ছোট করেই হচ্ছে পুজো, আত্মীয় স্বজনেরা কেউই সেভাবে আসতে পারবেন না বলে। তবে এই দিনটাও তো বচ্ছরকারের দিন... মা কে আরাধনা না করলে হয়?
পুজোর ভোগ রান্না, গুছোনো সব শেষ, এদিকে কিছুটা খড়িমাটি ভেজানো আছে এখনও, তাই ফ্ল্যাটের দরজার সামনে একটু আলপনা দেবেন বলে দরজা টা খুললেন শিখা। দরজার দুই পাশে মঙ্গলঘট, তার কাছে মা লক্ষীর পদচিহ্ন আগেই এঁকেছিলেন, এখন একটু ধানের শীষ ও আঁকবেন।
দরজা খুলেই দেখেন পাশের ফ্ল্যাটের ও দরজা খোলা। আর সেখানে দুটো পুঁচকে প্রদীপ রাখছে মেয়েটা।
মেয়েটাকে দেখেই কেমন যেন গা টা শিরশির করে ওঠে শিখার, প্রতিবার। ওরা এখানে নতুন ভাড়া এসেছে, লকডাউন হবার আগে আগে। প্রথম কদিন ফ্ল্যাটবাড়ির চাপা স্বভাব অনুযায়ী দেখেন নি কে এসেছে, বাড়িতে ক'জন আছে, এইসব। কিন্তু তিনতলার বি ফ্ল্যাটের বৌদি বলার পরে জানতে পারেন কর্তা, গিন্নি আর এক মেয়ের সংসার। বছর কুড়ি -বাইশের মেয়েটাকে তিনবছর আগে কেউ অ্যাসিড ছুঁড়ে দিয়েছিল, প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায়। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে, অনেক অপারেশানের পর মেয়েটা এখন খানিকটা সুস্থ, তবু, মেয়েটাকে দেখলে কেমন লাগে একটা! বাচ্চা মেয়ে...শুনেছিলেন পড়াশুনায় তুখোড় মেয়ে...কিন্তু তাও নিজের অজান্তেই মেয়েটিকে... এড়িয়ে চলেন উনি। নইলে পাশের বাড়ি, লাগোয়া ফ্ল্যাট...হৃদ্যতা তৈরি হতো না?
মেয়েটি দরজার কাছে প্রদীপ রেখে দাঁড়িয়েই রইল। একটু অবাক হলেন শিখা। আজ কি দীপাবলি নাকি, যে এইভাবে প্রদীপ রাখতে হবে!
এদিকে আলপনা দেবেন বলে বাবু হয়ে বসেছেন উনি, একদম দরজার মুখোমুখি, তাই অস্বস্তি হলেও ওঠা যাবে না...
"কাকিমা, কী সুন্দর তোমার আঁকার হাত গো! কী সুন্দর করে মায়ের পা আঁকছ!" বলে মেয়েটি। বেশ রিনরিনে কন্ঠ তো মেয়ের!
একটু হাসলেন শিখা। তারপর বললেন "থ্যাংকইউ! "
"তোমাদের পুজো কখন হবে কাকিমা? তোমার সব কাজ হয়ে গেছে? আমি হেল্প করব? আমার কিন্তু কাচা জামাকাপড়... " বলে মেয়েটি।
আগে থেকে আলাপ নেই, তাও এইভাবে আপন করা স্বর...শুনতে খুব ভালো লাগছিল।
"হ্যাঁ মা, সব গুছোনোই আছে, এই পূর্ণিমা পড়বে,,তারপর ঠাকুরমশাই এলে পুজো হবে..." বলতে বলতেই আলপনা দেওয়া শেষ। খড়িমাটির বাটিটা নিয়ে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে পা টা টনটন করে উঠল ওনার।
সেই যে অপারেশান হলো,বাদ গেল কিছু অঙ্গ, সেই থেকেই ওজন বাড়ছে সমানে। সকালে উঠে লেবু-মধুর জল, হাঁটা, ভাত না খাওয়া...কোনো কিছুই ওজন কমাতে পারেনি। ফলে পা ব্যথা হয় খুব। বসতে-উঠতে গেলে যেন প্রান বেড়িয়ে যায়!
ওনার বিকৃত মুখ দেখে এগিয়ে আসে মেয়েটা। হাতটা ধরে বলে ওঠে "লাগল কাকিমা?"
"তা লাগবে না? বাড়িতে বসে বসে ওজন টা বাড়িয়েছে দেখেছ? পুরো ফুটবল! তোমার যা বয়স, তারচেয়ে তোমার হাঁটুর বয়স বেশি!" পিছন থেকে বলে ওঠেন বীরেনবাবু, শিখার স্বামী।
আজকাল এভাবেই ঠেস দিয়ে কথা বলেন উনি। খিটখিটে বুড়ো কোথাকার! এক একবার ইয়ার্কির ছলে বললে মানা যায়, কিন্তু তা বলে এইভাবে, সবসময়! চোখে জল আসছিল শিখার। ধুত, ভাল্লাগে না!
"উঁহু, কাকু, নট ফেয়ার! কাকিমা সারাদিন ধরে অনেক কাজ করেছেন, এখন এই এত আলপনা দিয়ে উঠতে গিয়ে পায়ে লেগেছে, আর তুমি খোঁটা দিচ্ছ? জানো না, এইভাবে চেহারা নিয়ে কথা বলাকে বডি শেমিং বলে? আর সেটা খুউউউব বাজে জিনিস?... এই যে তোমার কেমন ঝাঁটার মতো গোঁফ, আমি যদি তোমাকে 'হেডঅফিসের বড়বাবু' বলে রাগাই সেটা তো গোঁফ শেমিং হবে, তোমার কি ভালো লাগবে সেটা?" হাসতে হাসতে বলে মেয়েটি।
শুনে কেমন অপ্রস্তুত হয়ে বোকা বোকা হাসেন বীরেন বাবু। "সে তো বটেই" বলতে বলতে।
"বেশ হয়েছে, যোগ্য জবাব পেয়ে চুপ করে গেছে লোকটা" মনে মনে ভাবেন শিখা। আর শোনেন মেয়েটি যোগ করল "এই ধরো, তুমি বা কাকিমা যদি আমার এই অ্যাসিডে পুড়ে যাওয়া স্কিন নিয়ে কিছু বলো, আমার ও তো খারাপ লাগবে, বলো? সেটাও শেমিং হবে। যে যেমন ই হোক, আসলে আমাদের গ্রেটফুল...ইয়ে কৃতজ্ঞ থাকা দরকার। এই ধরো, আমিও কৃতজ্ঞ, ভাগ্যিস বেঁচে আছি, তাই তো আজ তোমাদের বাড়িতে পুজো হয়ে যাবার পরে প্রসাদ খেতে পাব.." কলকল করে বলে মেয়েটি।
কৃতজ্ঞ থাকা...এই মেয়েটিও কৃতজ্ঞ জীবনের কাছে...আহা কী অপূর্ব জীবনবোধ!
একটু আগে ব্যথা লাগা পা টা কে ই একটু উঁচু করে দাঁড়ান শিখা। তারপর মেয়েটির কপালে একটা চুমু খান।
আহা, এমনি ঋজু যার চিন্তা, সেই তো স্বয়ং শ্রী...
এটা দারুন সত্যিই।
•
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,994 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
(31-10-2020, 10:19 PM)ddey333 Wrote: কিন্তু , শিবানী দাস কে এখনো বুঝতে পারলাম না
লেখিকার নাম
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
01-11-2020, 08:06 PM
(This post was last modified: 01-11-2020, 08:07 PM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
দেখ কাণ্ড
আমি একজন মধ্যবয়সী পুরুষ। ফেসবুকে আমার অনেক অনেক ফ্রেন্ড। তার মধ্যে অনেক মেয়ে ফ্রেন্ডও আছে। চ্যাট ট্যাট করে, নানারকম গল্পসল্প করে ভালই দিন কাটে। এরকম একজন হল প্রিয়া। বয়স ত্রিশ পয়ত্রিশ, বিবাহিতা। অসাধারণ সুন্দরী। কি সুন্দর করে কথা বলে ইনবক্সে! কথা বলতে বলতে খেয়ালই থাকে না। সময় কোনদিক দিয়ে চলে যায়। একদিন সে কল করে বলে, " আমার স্বামী ব্যবসার কাজে কোলকাতা গেছে, বাড়িতে কেউ নেই। তুমি এসো"।
--কিন্তু তোমার স্বামী যদি ফিরে আসে এর মধ্যে?
--আরে আসবে না। আর আসলে তুমি একটা ন্যাকড়া নিয়ে দরজা জানালা মুছতে থাকবে। আমি ওকে বলব তুমি ক্লিনিং কোম্পানী থেকে এসেছো, ঘর পরিস্কার করতে। এমনিতেও পূজো সামনে।
--আচ্ছা ঠিক আছে, আমি এখনি আসছি।
কি অদ্ভুত! আমি যাওয়ার ৫ মিনিটের মধ্যে ওর স্বামী এসে হাজির। কি আর করা যায় আমি সাথে সাথে জানালার গ্লাস মুছতে শুরু করলাম। গ্রীল পরিস্কার করলাম। সবগুলো জানালা দরজা পরিস্কার করলাম। রান্নাঘরের কোনাকানি পরিস্কার করলাম। বাথরুম পরিস্কার করলাম।
ফ্যান মুছলাম, ফার্নিচার মুছলাম। ৪-৫ ঘন্টার মধ্যে তাদের পুরো বাড়ি পরিস্কার ঝকঝকে করে দিলাম। সে আর তার স্বামী মিলে সারাক্ষণ এটা সেটা ইন্সট্রাকশন দিয়ে গেলো। পরিস্কার করা শেষ হলে তার স্বামী জিজ্ঞাসা করল, "আপনার বিল কত হয়েছে?" সে আগ বাড়িয়ে উত্তর দিল, "জানু আমি তো আগেই অনলাইনে পেমেন্ট করে দিয়েছি। তারপর ওরা লোক পাঠিয়েছে"।
"ও আচ্ছা" বলে ওর স্বামী আমাকে ১০০ টাকা বখশিশ্ দিয়ে দিল। আমি বাড়ি চলে এলাম। কাজের লোক পাওয়া যে কঠিন আজকাল!
তাই তো বলি পোলাপান, ফেসবুকের সুন্দরী সুন্দরী মেয়ে দেখে পটে যাস না । দুনিয়াটা ভরে গেছে ধোকাবাজে।
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,994 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
(01-11-2020, 08:06 PM)dada_of_india Wrote: দেখ কাণ্ড
আমি একজন মধ্যবয়সী পুরুষ। ফেসবুকে আমার অনেক অনেক ফ্রেন্ড। তার মধ্যে অনেক মেয়ে ফ্রেন্ডও আছে। চ্যাট ট্যাট করে, নানারকম গল্পসল্প করে ভালই দিন কাটে। এরকম একজন হল প্রিয়া। বয়স ত্রিশ পয়ত্রিশ, বিবাহিতা। অসাধারণ সুন্দরী। কি সুন্দর করে কথা বলে ইনবক্সে! কথা বলতে বলতে খেয়ালই থাকে না। সময় কোনদিক দিয়ে চলে যায়। একদিন সে কল করে বলে, " আমার স্বামী ব্যবসার কাজে কোলকাতা গেছে, বাড়িতে কেউ নেই। তুমি এসো"।
--কিন্তু তোমার স্বামী যদি ফিরে আসে এর মধ্যে?
--আরে আসবে না। আর আসলে তুমি একটা ন্যাকড়া নিয়ে দরজা জানালা মুছতে থাকবে। আমি ওকে বলব তুমি ক্লিনিং কোম্পানী থেকে এসেছো, ঘর পরিস্কার করতে। এমনিতেও পূজো সামনে।
--আচ্ছা ঠিক আছে, আমি এখনি আসছি।
কি অদ্ভুত! আমি যাওয়ার ৫ মিনিটের মধ্যে ওর স্বামী এসে হাজির। কি আর করা যায় আমি সাথে সাথে জানালার গ্লাস মুছতে শুরু করলাম। গ্রীল পরিস্কার করলাম। সবগুলো জানালা দরজা পরিস্কার করলাম। রান্নাঘরের কোনাকানি পরিস্কার করলাম। বাথরুম পরিস্কার করলাম।
ফ্যান মুছলাম, ফার্নিচার মুছলাম। ৪-৫ ঘন্টার মধ্যে তাদের পুরো বাড়ি পরিস্কার ঝকঝকে করে দিলাম। সে আর তার স্বামী মিলে সারাক্ষণ এটা সেটা ইন্সট্রাকশন দিয়ে গেলো। পরিস্কার করা শেষ হলে তার স্বামী জিজ্ঞাসা করল, "আপনার বিল কত হয়েছে?" সে আগ বাড়িয়ে উত্তর দিল, "জানু আমি তো আগেই অনলাইনে পেমেন্ট করে দিয়েছি। তারপর ওরা লোক পাঠিয়েছে"।
"ও আচ্ছা" বলে ওর স্বামী আমাকে ১০০ টাকা বখশিশ্ দিয়ে দিল। আমি বাড়ি চলে এলাম। কাজের লোক পাওয়া যে কঠিন আজকাল!
তাই তো বলি পোলাপান, ফেসবুকের সুন্দরী সুন্দরী মেয়ে দেখে পটে যাস না । দুনিয়াটা ভরে গেছে ধোকাবাজে।
হরি ওঁম
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(01-11-2020, 08:06 PM)dada_of_india Wrote: দেখ কাণ্ড
আমি একজন মধ্যবয়সী পুরুষ। ফেসবুকে আমার অনেক অনেক ফ্রেন্ড। তার মধ্যে অনেক মেয়ে ফ্রেন্ডও আছে। চ্যাট ট্যাট করে, নানারকম গল্পসল্প করে ভালই দিন কাটে। এরকম একজন হল প্রিয়া। বয়স ত্রিশ পয়ত্রিশ, বিবাহিতা। অসাধারণ সুন্দরী। কি সুন্দর করে কথা বলে ইনবক্সে! কথা বলতে বলতে খেয়ালই থাকে না। সময় কোনদিক দিয়ে চলে যায়। একদিন সে কল করে বলে, " আমার স্বামী ব্যবসার কাজে কোলকাতা গেছে, বাড়িতে কেউ নেই। তুমি এসো"।
--কিন্তু তোমার স্বামী যদি ফিরে আসে এর মধ্যে?
--আরে আসবে না। আর আসলে তুমি একটা ন্যাকড়া নিয়ে দরজা জানালা মুছতে থাকবে। আমি ওকে বলব তুমি ক্লিনিং কোম্পানী থেকে এসেছো, ঘর পরিস্কার করতে। এমনিতেও পূজো সামনে।
--আচ্ছা ঠিক আছে, আমি এখনি আসছি।
কি অদ্ভুত! আমি যাওয়ার ৫ মিনিটের মধ্যে ওর স্বামী এসে হাজির। কি আর করা যায় আমি সাথে সাথে জানালার গ্লাস মুছতে শুরু করলাম। গ্রীল পরিস্কার করলাম। সবগুলো জানালা দরজা পরিস্কার করলাম। রান্নাঘরের কোনাকানি পরিস্কার করলাম। বাথরুম পরিস্কার করলাম।
ফ্যান মুছলাম, ফার্নিচার মুছলাম। ৪-৫ ঘন্টার মধ্যে তাদের পুরো বাড়ি পরিস্কার ঝকঝকে করে দিলাম। সে আর তার স্বামী মিলে সারাক্ষণ এটা সেটা ইন্সট্রাকশন দিয়ে গেলো। পরিস্কার করা শেষ হলে তার স্বামী জিজ্ঞাসা করল, "আপনার বিল কত হয়েছে?" সে আগ বাড়িয়ে উত্তর দিল, "জানু আমি তো আগেই অনলাইনে পেমেন্ট করে দিয়েছি। তারপর ওরা লোক পাঠিয়েছে"।
"ও আচ্ছা" বলে ওর স্বামী আমাকে ১০০ টাকা বখশিশ্ দিয়ে দিল। আমি বাড়ি চলে এলাম। কাজের লোক পাওয়া যে কঠিন আজকাল!
তাই তো বলি পোলাপান, ফেসবুকের সুন্দরী সুন্দরী মেয়ে দেখে পটে যাস না । দুনিয়াটা ভরে গেছে ধোকাবাজে।
বলতে খারাপ লাগছে , কিন্তু এরকম ব্যাপার গুলো শুধু তোমার সঙ্গেই হয় কেন
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(01-11-2020, 08:18 PM)ddey333 Wrote: বলতে খারাপ লাগছে , কিন্তু এরকম ব্যাপার গুলো শুধু তোমার সঙ্গেই হয় কেন
আমার ধোন দাঁড়ায় বলে। ....
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
#কথোপকথন
-"আচ্ছা, তোর ঘরে এখন এসি চলছে?"
-" মানে! হঠাৎ এই প্রশ্ন! মাথাটা কি গেছে?!"
-"আহ্, বল যেটা জিজ্ঞেস করছি...!"
-" আগে তুই বল, মাথাটা গেছে কি?"
-"বড় বাজে বকিস তুই.."
-"আমি মোটেও বাজে বকি না জুঁই।"
-" এসি চলছে, হলো?"
-" অ্যাই, এসি বন্ধ করে জানলা টা খোলো..."
-"বাব্বা! তুই না তুমি! হঠাৎ..."
-"আহ্...মোমেন্ট টা করিস না বরবাদ!"
-"কিন্তু জানলা টা খুলব কেন খামোকা..."
-"কারণ এর পরে আর পাবি না এই মৌকা!"
-"মৌকা! বাবা! হলো কি তোর?"
-"বাজে বকেই তুই করবি রাত ভোর.."
-"দেখ ভাই, আগে আমাকে রিজন বল, তারপর.."
-"সামান্য জানলা খুলতে মেয়ের গায়ে আসছে জ্বর.."
-"জ্বর! ওরে বাবা! তারচেয়ে... খুলছি..."
-"খুললি? দেখতে পাচ্ছিস কি?"
-"কি? তুই কি বলিউড হিরোর মতো বাড়ির নীচে নাকি?"
-"আমি এত নেকু নই রে, নেকি!"
-" থ্যাঙ্ক গড! এবার তো বল কারণ.."
-"আজ চাঁদটা দেখেই আনমনা হচ্ছিল মন"
-"ওহো! ওয়াও! কী সুন্দর আজ চাঁদ.."
-"ওই চাঁদ ই যে পাতল আজ ফাঁদ"
-"ফাঁদ? কিসের? কি কেস?"
-"সিরিয়াস কেস! আজ বুঝলাম তুই না থাকলে জীবন হবে মেস!"
-"মানে! নীল! কি বলছিস তুই!"
-"খুব ইচ্ছে করছে আজ জ্যোৎস্না মেখে তোকে ছুঁই!"
-"কবে থেকে ভেবেছি এসব কথা, নীল..."
-"জুঁই...ডু ইউ লাভ মি? ক্যান ইউ ফিল?"
-"সেইইই কব্বে থেকে রে হাঁদা ছেলে..."
-"তাহলে চেপে রেখেছিলি কেন? কেন দিসনি বলে?"
-"তোর জন্যই করছিলাম ওয়েট.."
-"আমি ভাবতাম তুই আমাকে করছিস অ্যাভয়েড..."
-"শোন, মাস্ক আর স্যানিটাইজার..."
-"হ্যাঁ হ্যাঁ ইউজ করছি, এসব কথা ছাড়!"
-"আরে গাধা, এসব নিয়ে কাল চলে আয় কফিশপে..."
-"ওয়াও! আমাদের প্রথম ডেট! এতদিন পর দেখা হবে!"
-"আজ রাত্তিরে ঘুমোবার সময়ে মুখে থাকবে হাসি..."
-"জুঁই...আমি তোকে বড্ড ভালোবাসি..."
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
সেদিন একজনকে বললাম শুভ একাদশী।
তিনি খুব রেগে গিয়ে বললেন হতেই পারেনা, শুভ একা দোষী হতেই পারেনা, নিশ্চয় ওর বৌয়ের ও কিছু দোষ আছে।
:D :D :D :D
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
03-11-2020, 11:49 AM
(This post was last modified: 03-11-2020, 11:49 AM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
-- ও বুড়ো , তুই কাঁদিস কেন ?
ছেলে খোঁজ নেয় না ?
ভালোই করে , তুই-ই তো শিখিয়েছিলি একদিন , মনে নেই তোর ? যখনই কোথাও যেতিস , বইতে দিস নি ব্যাগ কখনও ছেলেকে । বাসে দাঁড়িয়ে থাকা বৃদ্ধাকে বসতে দেয় নি তোর ছেলে তোর সামনে যখন সে কলেজে পড়ছিল , তখন তো গর্ব হতো তোর , ভাবতিস , শুধু তোর ছেলে সোনার টুকরো !
--- ও বুড়ি , তুই কাঁদছিস কেন ?
ছেলে বুঝি খেতে দেয় না ?
ভালোই তো করে , শিখিয়েছিলি তো তুই-ই একদিন , মনে পড়ে আজ ? খাওয়ার পাতে বেছে বেছে ভালোটা দিতিস , নিজে খারাপটা খেয়ে , কম খেয়ে , কখনও না খেয়ে মহান সাজতিস । অতিথি বাড়িতে আসলে ছেলের খাবারটা লুকিয়ে রাখতিস , পাছে অন্য কাউকে ভাগ দিতে হয় । বলতিস , এতো লেখাপড়া করে , ভালো না খেলে চলবে ? তখন তো গর্বে বুক ভরে উঠতো , ভাবতিস , শুধু তোর ছেলেই হীরের টুকরো !
ভালোবাসা , স্নেহ , মমতা দেখাতে গিয়ে পঙ্গু করেছিস তোরা একটা প্রজন্মকে । বাছাই করা ভালো খাবার খাইয়ে স্বার্থপর করে তুলেছিস তোরা সহজ সরল শিশুদের , শিক্ষক-গুরুজনের সমালোচনা করে অসম্মান করতে শিখিয়েছিস তোরা , মানুষের কষ্টের কথা ওদের থেকে লুকিয়ে আবেগহীন , মমতাহীন বানিয়েছিস ওদেরকে তোরা , ছেলের জন্যে কত কষ্ট করেছিস সে সব গল্পের ছলে না বলে ওদেরকে বেইমান বানিয়েছিস তোরা ।
তবে কেন আজ আফশোস করিস ? কেন কষ্ট পাস ? কেন বৃদ্ধাশ্রম দেখে ভয় পাস ? সারাজীবন শ্রেষ্ঠ মা-বাবা হওয়ার প্রমাণ দেখিয়েছিস সবাইকে । একবারও ভাবিস নি , ঘষে-মেজে চক চক করতে গিয়ে আসল জিনিসটাই ক্ষয় করে ফেলেছিস ।
শ্রেষ্ঠ বাবা-মা নয় , সাধারণ হয়েই থাক তোরা ; এক টুকরো খাবার সবাই ভাগ করে খাওয়া , ব্যাগ নিজে বয়ে নিয়ে যাওয়া , সন্তানকে সাথে করে বাজার-হাটে নিয়ে যাওয়া , বড়দের শ্রদ্ধা করা , যার কাছ থেকে যতটুকু পেয়েছে , তার কাছে কৃতজ্ঞ থাকা , প্রকৃতির সাথে পরিচয় করে দেওয়া , সহজ সরল জীবন যাপন করা -- এটাই তো জীবন ।
নাই বা হলি বেস্ট বাবা -মা , সন্তান হোক বেস্ট , রোজগারে নয় , বেস্ট হোক ব্যবহারে , বেস্ট হোক ভদ্রতায় , সভ্যতায় , ভালোবাসায় , সততায় , পরম্পরায় ।
সার্থক হোক মা-বাবার জীবন ..... ওরা যেন কখনও আপন সন্তানের কাছে বোঝা হয়ে না ওঠে .... সন্তান হয়ে উঠুক বাবা-মায়ের শেষ বয়সের অবলম্বন ।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
#অন্য_রূপকথা
সন্ধ্যা পেরিয়ে ঘড়ির কাঁটা ছুঁয়ে গেছিল আটটার ঘর। আজ একটু দেরিই হয়ে যাচ্ছিল বাড়ি ফিরতে। তাই, এপাং ওপাং ঝপাং কায়দায় হনহন করে পা চালিয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম। ঠিক এক্সাইড বিল্ডিংটার সামনে দিয়ে।
কিন্তু, এই 'নিউ নর্ম্যাল' দিনে যতই আগের তুলনায় ভিড় কম হোক না কেন, সপ্তাহের প্রথম কাজের দিন, একেবারে ঠেলাঠেলি না হলেও, ভিড় ছিল যথেষ্ট। তার মধ্যেও যতটা সম্ভব দূরত্ববিধি বজায় রেখে এগোচ্ছি, পথ আটকে দাঁড়াল একটি ছোট্ট ছেলে। শনের মতো শক্ত, ঝাঁকরা চুল, একটা হলুদ গেঞ্জি পরা, বুকের কাছে ইয়াব্বড় একটা ফুটো! কাঁধে ক'টা বেলুন -হলুদ রঙের, তাতে খুশি খুশি মুখ চোখ আঁকা!
এই রে! বেলুন নিয়ে শাটল গাড়িতে উঠব কি করে! সেকথা ভাবতে ভাবতেই দেখি, বাচ্চাটা একটু কিন্তু কিন্তু করে বলে উঠল "আমাকে একটু মোমো খাওয়াবে?"
আমি সাধারণত ভিক্ষা দিই না, বেশিরভাগ সময়েই খেয়ে নিতে বলি। নিদেন বিস্কুটের প্যাকেট দিয়ে দিই। কিন্তু ছেলেটির বলার মধ্যে কিছু যেন একটা ছিল। তাই "চল" বলে গেলাম মোমোর স্টলের কাছে। মোমো পেয়ে তার কী হাসি! দুই হাতে কাগজের প্লেট আর সুপের বাটি সামলাবার কী প্রাণান্তকর প্রয়াস!
পয়সা মিটিয়ে পা চালাতে যাব, দেখি পাশে দাঁড়িয়ে আছে বাচ্চাটা তখনও।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে ভাবলাম আরও সাঙ্গোপাঙ্গোর জন্য কিনে দিতে বলবে বোধহয়! তাই একটু গম্ভীর হয়ে বললাম, "আমার কাছে কিন্তু আর কেনার মতো টাকা নেই!"
ছেলেটা আমার দিকে তাকাল। তারপর, আমাকে আরও অবাক করে দিয়ে বলে "আমার থেকে একটা নেবে?"
না, নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারি নি!
আমাকে বাচ্চাটা খাবার নিতে বলল ওর থেকে? আমি একবার কনফার্ম হবার জন্যই জিজ্ঞেস করলাম "কি...কি বললি?"
ছেলেটা একটু হেসে বলল "তোমার কাছে টাকা নেই বললে...আমার থেকে নেবে মোমো?"
একটু তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে।
আমার শিশু ভোলানাথ।
কী অবলীলায় আমার মিথ্যে মিথ্যে "টাকা নেই" কে সত্যি ভেবে আমার সাথে ওর পরম লোভনীয় খাদ্য ভাগ করে নিতে চেয়েছে...!
আর আমরা... তথাকথিত সুপ্রতিষ্ঠিত ভদ্রমানুষেরা...পারি? এমনি অকপট আর মন ছোঁয়া হতে?
কেন যে পারি না!
জল জল চোখে গাল টা ধরলাম বাচ্চাটার...রুক্ষ চুলে একটু হাত বুলিয়ে দিলাম....
নিজেকে বড্ড পবিত্র লাগছে আজ....
(সঙ্গের ছবিটি মোবাইলে তোলা, নিতান্ত আকস্মিক ভাবে...কখন যে আঙুল পড়ে গেছিল, কে জানে!
এখন আফশোষ হচ্ছে... যদি একটা ভালো ছবি তুলতে পারতাম... ছোট্ট বীজটার...যে হয়ত একদিন মহীরুহ হয়ে উঠবে..।)
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
#অণুগল্প
"বিশ্বনাথ দাদা, ও বিশ্বনাথ দাদা...বাড়ি আছো নাকি?" ডাক শুনে কপাট টা একটু খুলে দাঁড়ালো গীতা। এই সাতসকালে কে এলো রে বাবা! সাদা ধূতি আর স্যান্ডো গেঞ্জি পরা, হাতে একটা থলি। এইরকম একজন মানুষের এখানে, এই বস্তিতে কি কাজ রে বাবা!
"উনি তো ঘরে লাই.." কিন্তু কিন্তু করে বলল গীতা
"বাড়ি নেই? কোথায় গেছেন? কখন ফিরবেন জানেন বৌদি?"
"জানি না.." বলে চুপ করে থাকে গীতা। চেনে না শোনে না, একজন অচেনা মানুষকে কিভাবে বলবে যে, যে মানুষটার কাছে ফুচকা খাবার জন্য সন্ধ্যে থেকে পাড়ার মোড়ে ভিড় জমে থাকত...ও বেশ রাগ রাগ গলায় রোজ বলত "এত ছোঁড়িরা তুমাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকে কেন রোজ?" আর বিশ্বনাথ পান্ডে, এই মল্লিকবাজারের বিখ্যাত ফুচকাওয়ালা হা হা করে হেসে উঠত শুনে...মাঝে মাঝে ওকে রাগিয়ে দিয়ে বলত "উ সানিয়াল বাবুর বেটি আছে না? রোজ আমার কাছে আসে...না হলে তার চলেই না...", সেই ফুচকাওয়ালার বাড়িতে চাল বাড়ন্ত!
কি যে একটা রোগ এলো... শেষ করে দিল সব কিছু। রোজ দোকান সাজিয়ে বসছে পান্ডেজি...কিন্তু...লোক আর আসে না। হাত পরিষ্কার করার জন্য স্যানিটাইজার ও রাখা থাকে সামনে...কিন্তু... সবাই এখন বাড়ির খাবার খাচ্ছে...এখন নাকি অনেকে বাড়িতে ফুচকা বানিয়ে খাচ্ছে...তার ছবি দিচ্ছে মোবাইলে...পাশের ঘরের সোমুরা দেখিয়েছে গীতাকে। তাহলে ওদের কি হবে!
"বৌদি, আমার নাম নরেশ। বিশ্বনাথ দাদা আমাকে চেনেন। আমি একটা দরকারে এসেছিলাম...আমার ঘরে অনেক জিনিস জমে গেছে...চাল ডাল এসব...তোমরা যদি একটু নাও, উপকার হয় খুব...নইলে সব নষ্ট হয়ে যাবে..."
চাল -ডাল! ওরা নিলে সেটা উপকার হবে! অবাক হয়ে তাকায় গীতা।
"বৌদি, না করো না...আমার বাড়িতে রাখার জায়গা নেই...আমি ওই 'মা শীতলা স্টোর্সে' যে ছেলেটা কাজ করে, তাকে বলব দিয়ে যেতে...আমি তো ভারি তুলতে পারি না, অভ্যেস নেই..." বলতে বলতে চলে যান উনি, গীতাকে কিচ্ছু বলার সুযোগ না দিয়ে।
চলেই যাচ্ছিলেন, হঠাৎ চেনা একজন ডেকে বললেন "কি দাদা, গঙ্গায় যাচ্ছেন নাকি? তর্পণ করতে?"
শুনে থমকে তাকালেন একবার উনি... যিনি একটু আগেই শীতলা স্টোর্স থেকে কিছু জিনিস কেনার সময় শুনেছিলেন বিশ্বনাথ পান্ডে ধারে চাল কিনতে গেছে. দোকানদার দিতে রাজি হন নি, তাই মাথা নিচু করে চলে গেছেন, বোধহয় অন্য কোনো দোকানের দিকে...আর তখনই ঠিক করে নিয়েছিলেন...নিজের আসল নাম না বলে, যে নাম মুখে আসে বলে কিছু সাহায্য করবেন ওঁদের পরিবারকে।
চটকা ভেঙে এবার উনি তাকালেন প্রশ্নকর্তার দিকে, তারপর একটু হেসে বললেন "না...তর্পণ করে এলাম..."
কঠিন সময়ে অন্যকে সাহায্য করলেও তো পূর্বপুরুষকে শ্রদ্ধা জানানো যায়...তাই না?
(সম্পূর্ণ সত্যি ঘটনা অবলম্বনে)
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
#কথোপকথন
-'হাই!'
-'হাই!'
-'স্যরি, ঠিক বেরোবারে মুখে গেছিলাম ফেঁসে..'
-'ইটস ওকে!'
-'কি অর্ডার করবে? চা?'
-'আমি আর খাই না..'
-'তুমি চা এ না! সেকি!'
-'ছেড়ে দিলাম...ডায়েট করছি...আস্তে আস্তে হবো মেকি..'
-'চন্দ্রানী, প্লিজ...আমাদের দুজনের সিদ্ধান্ত এটা..'
-'অস্বীকার করেছি সেটা?'
-'আমাকে গিল্টি ফিল করিও না তবে...'
-'স্যরি বিমান, মনে হয় না এরকম আর হবে...'
-'এমনি তোমার অফিসের সব ঠিক তো?'
-'হ্যাঁ, সবই চলছে আগের মতো...'
-'আর...আর সব...'
-'সব ভালো...সব টিপটপ...'
-'অফিস থেকে আসছ, খাবে না কিছু? তোমার প্রিয় চাউমিন?'
-'বললাম না,,ডায়েটে আছি, ফাস্ট ফুড খাব না কোনোদিন...'
-'তুমি ফাস্ট ফুড ছাড়া? হা হা...স্যরি, কিছু মনে করো না..'
-'না না, আমি তো মোটা হাতি, ডায়েট করতে পারি না...'
-'স্যরি চন্দ্রানী, কিন্তু তুমি হাতি না, কিউট, মিষ্টি..'
-'কিউট! মিষ্টি! বাদ দাও, তাতে আর তোমার কী!'
-'কয়েকমাস আগেও তো ছিল সব আমার...'
-'ছয়মাস পরে...যোগাযোগ ও থাকবে না আর...'
-'হুম...ছয়বছরের সংসার...ছয়মাসে শেষ...'
-'সেটা হলেই তো ভালো হয় বেশ..'
-'সেই! এনেছ? কাগজপত্র?'
-'হ্যাঁ...আচ্ছা একটা কথা বলো, বিয়েতে তো চেঞ্জ হয় গোত্র?'
-'হ্যাঁ, তাই তো শুনেছি। গোত্রান্তর নাকি বলে?'
-'আচ্ছা, ডিভোর্স হলে কি আবার পুরোনো গোত্রটাই ঝোলে গলে?'
-'আমার জানা নেই চন্দ্রানী। কিন্তু এসব কথা হঠাৎ...'
-'জানি না...মাঝে মাঝে ভাবি, বুকটা করে ওঠে ছ্যাঁত..'
-'আমার ও...দুজনে তো ভালবাসতাম দুজনকে...তাহলে...কেন হলো এসব...'
-'এখন যদি বলো আমি সংসার চাই নি, সেটা হবে ডাহা ঢপ!'
-'ক্যান উই স্টপ ব্লেমিং ইচ আদার?'
-'বয়ে গেছে ব্লেম করতে! আমি এমনিতেও মুখ লাগি না কোনো গাধার।'
-'হ্যাঁ আমি তো গাধা ই। অযোগ্য, স্টুপিড, ইডিয়ট'
-'সাথে স্নব! অহঙ্কারে করো মটমট!'
-'আপনিও কম না ম্যাডাম...মুখ খোলাবেন না...'
-'হ্যাঁ আমিও ঝগড়াটি...তবে তুমি তো কালিঘাটের কুকুর!'
-'হোয়াট! কালিঘাটের কুকুর!'
-'জানো না, কাউকে কিছু দিয়ে ফেরত নিলে হয়?'
-'হা হা, শুনেছি ছোটবেলায়..'
-'খুব তো বড় বড় কথা বলে বলেছিলে আই লাভ ইউ.. নিজেকে দিয়ে নিচ্ছো ফিরিয়ে...'
-'চন্দ্রানী...তুমি আটকাতে চেয়েছ? ফিরিয়ে না দিয়ে?'
-'তুমি একবার ও বলেছ? যে ফিরে এসো...বাড়ি কি তোমার একার?'
-'বাড়ি আমার কোথায়! ও তো তোমার!'
-'নেকু! মিটমিটে শয়তান..'
-'জানো, তুমি নেই, তাই বাড়িতে নেই কোনো প্রান..'
-'সেকথা আগে বলতে কি হয়েছিল? শুধু শুধু উকিলের লাগল ফি...'
-'স্যরি বাবু...আর হবে না...কোনওদিন ও না...এবারকার মতো দিয়ে দাও মাফি..'
-'প্রমিস? আর ছেড়ে যাবে না তো...বলো? প্রমিস?'
-'কক্ষনো না...খুব, খুব, খুউউউউব করেছি মিস...'
-'আমিও! ভালো কিছু খাওয়াও দেখি...'
-'তোমার ডায়েটের কি হবে? সেকি!'
-'কাল থেকে, আজ করব সেলিব্রেট..'
-'বেশ...কাল থেকে...জীবনের সবকিছু হবে সেট...'
-'বিমান, আই লাভ ইউ, উইথ অল মাই সোওল অ্যান্ড হার্ট..'
-'সবসময় পাশে থাকব...টিল ডেথ টু আস পার্ট...'
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
#অন্য_রূপকথা
ইদানীং কালের স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমি খুব, খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের হই না।।আর তাই, যখন ই বাইরে বেরোতে হয়, এক সাথে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে আনি যাতে অন্তত এক সপ্তাহ আর বেরোতে না হয়।
আজ রবিবার। তাই বাজার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য বেরোতে হয়েছিল। সারা সপ্তাহের মতো মাংস, মাছ, তরি তরকারি, ঠাকুরের ফুল, এমনকি সদ্য প্রকাশিত পুজোসংখ্যা -সবকিছু কেনা প্রায় শেষ...হঠাৎ নজর পড়ল দূরত্ববিধি মেনে রাস্তার এক কোণে বসে থাকা দুজনের দিকে। মলিন সালোয়ার কামিজ পরা, মাথায় ওড়না দেওয়া, কৃশকায়া একটি মেয়ে...কত আর বয়েস হবে...একুশ, বাইশ? আর তার পাশে একটি ছোট্ট শিশু - বছর পাঁচ বা ছয়ের। মাটি মাটি খালি গা...একটা পেন্টুল পরা। সামনে, মাটিতে রাখা একটি প্লাস্টিকের বস্তার ওপর কয়েক আঁটি কুমড়ো শাক, পুঁই শাক, লঙ্কা, পাতিলেবু।
একজন ও খদ্দের নেই সামনে।
আমাকে দেখেই কেমন চোখটা চকচক করে উঠল যেন মেয়েটির।
আর, আমার মনে হলো, কুমড়ো শাক বড্ড ভালো খেতে...রাঁধতে জানি না বটে, সে শিখে নেব বড়দের কারো কাছ থেকে। পাতিলেবু তো ভিটামিন সি...এইসময়ে তো খেতেই হবে! আর লঙ্কার মতো দরকারি কিছু হয় নাকি! সে যত ই বাড়িতে থাকুক না কেন! তাই, দু আঁটি শাক, চারটে লেবু, একশো গ্রাম লঙ্কা কেনার পর দেখি - মাত্র তিরিশ টাকার সওদা হয়েছে। বাড়িয়ে দিলাম একটা পঞ্চাশ টাকার নোট। মেয়েটি একটু কিন্তু কিন্তু করে বলে উঠল "খুচরো লাই?"
আমার কাছে ছিল না। শুনে বস্তা উলটে একটা ব্যাগ বের করে একটু খুঁজে একটা কুড়ি টাকার নোট বের করে দিল। দেখেই মনে হচ্ছিল, টাকা বোধহয় বেশি নেই ওর ভেতর।
যাই হোক, ভারি ব্যাগটা নিয়ে হাঁটছি...কয়েক পা ই মাত্র গেছি...হঠাৎ পেছন থেকে অন্য একজন ব্যাপারি ডেকে উঠলেন "ও দিদি, আপনাকে ডাকছে তো..."
তাকিয়ে দেখি, সেই মাটি মাটি শিশুটি দৌড়ে আসছে আমার দিকে। পায়ে একটা অনেক বড় রবারের চটি...তাই খোঁড়াচ্ছে। আমি বেশ অবাক ই হয়েছিলাম...কী হলো রে বাবা!
আমার সামনে এসে বাচ্চাটি বলল "আম্মু পাটাল...লোটটা ছেঁড়া আসে..."
বুঝলাম! আমার দেওয়া পঞ্চাশ টাকার নোট টা ছেঁড়া ছিল! আমার বদভ্যাস হলো, আমি কখনো টাকা দেখে নিই না! খুব খারাপ লাগছিল, আবার ভাবছিলাম...খুচরো তো নেই...একশো টাকা খুচরো করাতে হবে এইবার।
ভাবতে ভাবতেই দেখি ক্ষুদেটা মুঠি করা হাত থেকে দুটো পাঁচ টাকার কয়েন, আর ক'টা একটাকা, দু'টাকার কয়েন মেলে দিয়েছে আমার দিকে। তারপর বলল "আম্মু বলেসে লোট টা দিয়ে দিতে..."
এতক্ষণে বুঝলাম! ওদের দেওয়া নোটটা ছেঁড়া ছিল...। তাই...।
মনে পড়ে গেল...আমাকে দেখে ওদের চকচকে চোখের কথা...আমাকে ফিরতি টাকা দিতে গিয়ে আতান্তরে পড়া চোখের কথাও...
কিন্তু, আমার বরাবর বেশি কথা বলার অভ্যেস। তাই বললাম "অ্যাই, তুই এই বড় চটি পরেছিস কেন? আবার দৌড়চ্ছিলি? যদি পরে যেতিস?"
বাচ্চাটা একটু চুপ করে বলল "আমার চটি ছিঁড়ে গেসে। আব্বু কিনে দেবে পরে। তুমি লোট টা দাও..."
খটখটে সকালের কটকটে রোদ...তবু কেন যে ঝাপসা লাগে সব...
তখনও মুঠি বাড়িয়ে রাখা শিশু ভোলানাথকে বললাম - "আমাকে তোরা যে নোট টা দিয়েছিলি, একদম ঠিক আছে সেটা। কোনো ছেঁড়া নেই...আর এবার হেঁটে হেঁটে যাবি...দৌড়বি না..."
ফেরার পথে মনে হলো...কুমড়ো শাক খুব ভালো জিনিস...পুঁই ও...এবার থেকে সপ্তাহে প্রতিদিন ই খাওয়া উচিৎ... কাল তো লকডাউন...মঙ্গলবার ই আবার বেরোতে হবে আমাকে, বাজারে।
কুড়ি টাকার ছেঁড়া 'লোট' টা রেখে দেব আজীবন - ক্ষয়ে আসা সমাজের মাঝেও সততার দলিল হয়ে থাকুক ওটা আমার কাছে...থাকুক...থাকুক...
মিথ্যে বলেও যে কত তৃপ্তি পাওয়া যায়....
|