21-10-2020, 05:39 PM
Indian Private Cams | Porn Videos: Recently Featured XXXX | Most Popular Videos | Latest Videos | Indian porn sites Sex Stories: english sex stories | tamil sex stories | malayalam sex stories | telugu sex stories | hindi sex stories | punjabi sex stories | bengali sex stories
কিছু মনের সত্যি কথা
|
21-10-2020, 08:48 PM
(21-10-2020, 03:02 PM)ddey333 Wrote: ভালো -বাসা "আজ এই দিনটাকে মনের খাতায় লিখে রাখো...আমায় পড়বে মনে কাছে দূরে যেখানেই থাকোওওও..." -- আহা এই প্রেম মধুর গানটা অনেকদিন পর দেখলাম কোথাও এরকম মন মাতানো গান এখন আর আসে কই...
21-10-2020, 08:51 PM
(21-10-2020, 03:06 PM)ddey333 Wrote: আলোর দেখা অতীব সুন্দর, মন ছুঁয়ে যাওয়া গল্প। এরকম আরও থাকলে পোষ্ট কোরো।
22-10-2020, 03:57 PM
#অন্য_রূপকথা
গত শনিবারের কথা। একটু বেরিয়েছিলাম...হাজরা মোড়ের কাছে যাবার ছিল। প্রতিপদ তিথি ছিল সেদিন...যেতে যেতে কেবল ই ভাবছিলাম গতবছরের কথা। পুজো মানে 'পুজো পুজো ভাবের' কথা। আর এবছর তো...! নিজের খেয়ালে এসব ভাবছি, হঠাৎ দেখি, ট্যাক্সি দাদা হরিশ মুখার্জী রোড ধরেছেন হাজরার দিকে যাবার জন্য! কি মনে হলো...নেমে গেলাম কালিঘাট পটুয়াপাড়া তে। রাস্তার ওপরেই সারিবদ্ধ প্রতিমা...চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রস্তুতি চলছে...। মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ততা ছিল চোখে পড়ার মতো। সেদিন থেকেই অনেক ক্লাবে প্রতিমা নিয়ে যাবার জন্য, পুরো এলাকাতেই অনেক পুলিশ কর্মীরা ছিলেন, আর বেশ কিছু লরিও এসে গেছিল সেই ভর দুপুরবেলাতেই। যাই হোক, আমি একটু কোল্ড ড্রিংক খাবার অছিলায় একটি স্টুডিওর পাশের একচিলতে গলিতে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আর একমনে দেখছিলাম কিভাবে রং করার পালা চলছে...। মনে পড়ে যাচ্ছিল ফেলুদা শশীবাবুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন "পরশু তো ষষ্ঠী...কাজ শেষ হবে তো?" এসব এতালবেতাল ভাবছি, হঠাৎ দেখি "আরেএএএ তুই এখানে ঘাপটি মেরে আচিস? কখন থেকে খুঁজচি তোকে?" বলে আমার সামনের ফুটপাথে একটি পরিত্যক্ত ব্যাটারির ওপর বসে থাকা বাচ্চা মেয়েকে বকে উঠলেন একজন ভদ্রমহিলা। তখনও হাঁফাচ্ছিলেন উনি। স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম রোদে অনেকটা ঘুরে আসতে হয়েছে। ভদ্রমহিলা! না বোধহয়! অন্তত, আমাদের সমাজের চলতি অর্থে তো নয়। একঝলক ওঁর দিকে তাকিয়েই বুঝেছিলাম...ওই ভর দুপুরেও আঁটোসাঁটো পোষাক দেখে বুঝেছিলাম...সমাজের কোন প্রান্তসীমায় বাস ওঁর। ছোট্ট মেয়েটি...এই বছর পাঁচেক হবে...রোগা টিংটিঙে, কৃষ্ণকলি...ভয় পেয়ে তাকিয়েছিল...। ভাবছিলাম আরও বকা খাবে বোধহয়। কিন্তু তার আগেই যে শিল্পী মন দিয়ে একটি বড় টিনের কৌটোতে রং গুলছিলেন, হেসে বললেন "তোর মেয়েকে তুই অন্য জায়গায় খুঁজিস কেন? এখানেই তো আগে আসবি!" কথার মধ্যে অদ্ভুত একটা প্রশ্রয় আর মায়া ছিল! যেমন বাড়ির বৃদ্ধ দাদুরা নাতি-নাতনিদের জন্য বলে থাকেন। শুনে মা টি বলে উঠেছিলেন "তা বলে সারাক্ষণ বসে থাকবে? খাবেদাবে না? তুমি আর লাই দিও নি বাপু!...এই, তুই আয়...!" বলে মেয়েটিকে কোলে নিয়ে, ওড়না দিয়ে ছোট্ট মাথাটা ঢেকে নিয়ে চলে গেলেন। বড্ড রোদ ছিল যে! কড়া রোদ...তবু মন যে কেন এত মেঘলা লাগে! শিল্পীর (ওঁর নাম তারক দাস) কাছ থেকে শুনলাম, কালিঘাট ব্রিজ লাগোয়া গণিকালয়ের বাসিন্দা ওঁরা। করোনা পরবর্তী সময়ে দিন কাটছে অত্যন্ত অনিশ্চয়তার সাথে, যে বিষয়ে অল্প বিস্তর আমরা সবাই অবগত আছি...পড়েছি আমরা বিভিন্ন মিডিয়াতে। তা, এই বাচ্চা মেয়েটি (যার নাম টুম্পা) প্রায়ই এখানে পালিয়ে আসে। ওর নাকি গণেশ দাদাকে খুউউউউব পছন্দ। একটু খোঁচানোর জন্যই ওঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম "খারাপ পাড়ার মেয়ে...আপনি অ্যালাও করেন কেন?" কাজ থামিয়ে একনজর আমার দিকে তাকিয়েছিলেন তারকবাবু। তারপর বলেছিলেন "খারাপ ভালো বোঝা খুব মুশকিল দিদি...কত খারাপ দেখলাম, মুখ দেখে কিচ্ছুটি বোঝার উপায় নেই...আবার কত ভালো, দেখে মনে হবে বদ! ওরা ভান করে না অন্তত...।" শুনতে শুনতে গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল। শাস্ত্রে আছে, মায়ের মূর্তি তৈরিতে যে অষ্টকন্যার মাটি লাগে, গণিকারা তার মধ্যে অন্যতম। কারণ মা আছেন সবার মাঝেই। আর..স্বয়ং মৃন্ময়ী মায়ের সামনে আমি একজন চিন্ময়ী মা কে দেখলাম... একজন 'মা' কে দেখলাম। কাল দুর্গাষষ্ঠী। সন্তানের মঙ্গলকামনার দিন। আমার কোনো জঠর-জাত সন্তান নেই...জানি না, আমার প্রার্থনার মূল্য কতটুকু...। কিন্তু মনেপ্রানে চাইব এই মা আর এই সন্তান,সব মা আর মায়ের সব ছায়েরা যেন ভালো থাকেন ... মা অন্নপূর্ণা যেন ভাতটুকুর ব্যবস্থা করে দেন বচ্ছরভর।
22-10-2020, 03:57 PM
(This post was last modified: 22-10-2020, 03:59 PM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
22-10-2020, 04:12 PM
#অন্য_রূপকথা
আমি হাওড়া জেলার বাসিন্দা। যে রাস্তা দিয়ে আমার রোজকার চলাফেরা, তার নাম 'আন্দুল রোড'... মানে, এই অঞ্চলের এক্কেবারে 'দুষ্টু রাস্তা'! দু' চারমাস পরপর সারানো হলেও, উঠে যাওয়া খোয়া আর গর্ত হলো এই রাস্তার অলঙ্কার। আর সাথে প্রানঘাতী ট্রাফিক তো আছেই! সে যাই হোক, আজ একটু দরকারে বেরিয়েছি সন্ধ্যেবেলা। টোটো তে উঠেছি, একটু পরেই দেখি আরও দুই ছেলে উঠল টোটোতে, এবং বসল আমার উল্টোদিকের সিটে। কেন জানি না ছেলে দুটিকে দেখে একটু অস্বস্তি হচ্ছিল আমার। দুজনেই টিংটিঙে রোগা। কালো রঙের ওপর মড়ার খুলি আঁকা টি শার্ট পরা। একজনের আবার ন্যাড়া মাথায় অদ্ভুতভাবে কাটা চুল! ওঠার পরই একজন ছেলে বলল "কুন্ডু কত দেবে বলল? একুশ টাকা? ওতে কি হয় ভাই? দুর্গাপুজোর চাঁদা, না ভিক্ষে দিচ্ছে ?" তো, আরেকজন বলে উঠল "আর সাহা বাড়িতে দেখলি? মুখের ওপর বলে দিল চাঁদা দিতে পারবে না! আরে, পুজো তো বন্ধ করা যায় না...কি যে হবে বাঁ.." বলতে বলতেই আমার দিকে, আমার কোঁচকানো ভুরুর দিকে তাকিয়ে একটু সমঝে গেল যেন! কিন্তু আরেকজন বলেই যাচ্ছে "ভাব, এদিকে অন্তত হাজার পাঁচেক টাকা না উঠলে কিভাবে ওদেরকে দেব!" শুনতে শুনতে বেশ বিরক্ত হচ্ছিলাম আমি। ক'দিন আগেই হোয়াটসঅ্যাপে বন্ধুরা পাঠিয়েছে একটি খবর...কিভাবে ওনামের সময় কেরালায় ছড়িয়েছে করোনা এবং সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিৎ আমাদের। আর সেখানে এই ছেলেগুলো, চাপ দিয়ে চাঁদা আদায়ের প্ল্যান করছে! একেই বিরক্ত ছিলাম...আরো বিরক্ত হয়ে বললাম "কোন ক্লাব তোমাদের? পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা চাইছ এই বাজারে?" ন্যাড়া ছেলেটিও প্রায় আমার মতোই ভুরু কুঁচকে তাকাল আমার দিকে। তারপর বলল "পাঁচ হাজারের নীচে ঢাকী দাদা দের কি দেব শুনি? লবডঙ্কা?" ঢাকী দাদা! শুনে চুপ করে গেলাম আমি। কিন্তু ছেলেটা বলেই যাচ্ছিল... "আমাদের এমনিতেই ছোট পুজো, এই হাঁসখালি পোল নস্করপাড়ায়। ঠাকুর, প্যান্ডেল সব ছোট। ঠাকুর মশাই ও পাড়াতেই থাকেন। সেসব নিয়ে চাপ নেই। চাপ হচ্ছে এবার ঢাকী লাগবে না, কিন্তু আমাদের যে দাদা ঢাক বাজান, উনি গত পাঁচ ছ' বছর ধরে বাজাচ্ছেন। উনি তো আশা করে থাকবেন, নাকি? তাই পাঁচ হাজার টাকা খুব দরকার আমাদের। ওনার বাড়ি বর্ধমানে...ঠিকানা জানি...গিয়ে টাকা ক'টা দিয়ে আসব তবে...বেঁচে থাকলে পরের বছর পুজোয় দেখা যাবে..." খুব, খুব নীচ মনে হচ্ছিল নিজেকে। বাহ্যিক রূপ দেখে ওদের ভুল ভেবে নিয়েছিলাম বলে...। তাই মাথা নীচু করে বলে উঠলাম "মা তোমাদের আশীর্বাদ করবেন...টাকা ঠিক উঠে যাবে, দেখো..."। আর, বলার সময় গলাটা কেঁপে গেছিল বড্ড... মুখে মাস্ক...কাঁপা গলা...ছেলে দুটি শুনতে পেল কিনা কে জানে...কিন্তু সেই সন্ধ্যে থেকেই প্রানপনে চাইছি - পাঁচটি হাজার টাকা উদ্বৃত্ত হোক ওদের...পৌঁছে যাক সেই নাম না জানা, আর হয়ত আশা করে থাকা ঢাকী দাদা দের বাড়ি... আহা, কত খুশি হবেন উনি...ভাববেন, মা, স্বয়ং মা ই পাঠালেন ওঁর জন্য... মনটা ভরে গেল আজ, আবার। মা আসছেন, সবাইকে ভরিয়ে দিতে। মা আসছেন, সত্যিকারের কিছু 'মানুষের' কাছে। "আনন্দধারা বহিছে ভুবনে..."
23-10-2020, 08:03 AM
#অন্য_রূপকথা
আজ একটু লেক মার্কেটের দিকে গেছিলাম, কিছু কেনাকাটা করার জন্য। কাজ সেরে আগে পেটপুজো করব, নাকি একটু লেক মলের পিছন দিকে যে গাছের দোকানগুলো আছে, সেদিকে যাব ভাবছি, এইসময় হাত ধরে টানল কেউ একজন। তাকিয়ে দেখি, একটি ছোট্ট মেয়ে, রং জ্বলা ফ্রক পরা...কত হবে বয়স? এই সাত বা আট? হাতে কয়েকটা ধূপের প্যাকেট। যাঁরা এই অঞ্চলে যাতায়াত করেন, তাঁরা জানেন, এখানে একটু দাঁড়ালেই এই ধরনের বাচ্চারা ধূপ বিক্রি করতে আসে। যদিও ধূপের গুনমান তেমন ভালো না, তবু মানবতার খাতিরে এবং মায়াবশত কিনতেই হয়। আসলে, "ভিক্ষা করিস কেন...কাজ করে খেতে পারিস না?" যাতে কেউ বলতে না পারেন, সেজন্যই বোধহয় এইভাবে বাচ্চাদের হাতে ধূপ ধরিয়ে দেওয়া হয় বিক্রির জন্য । বেশিরভাগ সময়েই বাচ্চারা ঘ্যানঘ্যান করে এবং কয়েকটি বেশি ধূপ কিনতেই হয়, অনিচ্ছাসত্ত্বেও। ঠিক সেইরকম মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছিলাম আমি। তবে, সাধারণত আমি যাঁদের কাছ থেকেই কিছু কিনি না কেন, একটু কথা বলার চেষ্টা করি...এইভাবেই কত কিছু শিখতে পারি। কখনও অতুলনীয় জেদের কাহিনী, কখনও বা জীবনদর্শন,যা মুগ্ধ করে। তা, এই বাচ্চাটিকেও জিজ্ঞেস করলাম "এই, তোর নাম কি রে?" বাচ্চাটা একটু চুপ করে বলল "আমার নাম রাজকুমারী!" রাজকুমারী! ওর নাম! বাকরুদ্ধ হয়ে গেছিলাম। কলেজবেলায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে কাজ করতাম, পথশিশুদের পড়াতাম। বিশেষ কিছু না, এই বাংলা আর অল্পস্বল্প অঙ্ক আর ইংরিজি। কিন্তু তাদের বেশিরভাগেরই নাম হতো 'আশু', 'ছোটকা', 'খোকা' বা 'বিজ্লী', বড়জোর 'গীতা'। 'রাজকুমারী' শুনে তাই অবাক এবং হয়ত হতভম্ব ও হয়ে গেছিলাম! আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বাচ্চাটিও বোধহয় সেটা বুঝতে পেরেছিল। তাই খুবই স্বাভাবিক গলায় বলে উঠল "আমাকে আগে 'কালী' বলে ডাকত! আমার ভালো লাগত না নামটা। তাই আমি নিজেই নিজের এই নাম দিয়েছি! আমি এই জায়গাটার রাজকুমারী! ভাল নাম না?" বলে একমুখ হেসে তিড়িংবিড়িং করে চলে গেল আমার সামনে দিয়ে। নতুন খরিদ্দারের খোঁজেই হয়ত...। আমি কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম সেই গমনপথের দিকে। আমরা অনেকেই নিজের শর্তে জীবন কাটানোর কথা বলি এবং ভাবি। অনেকে পারি, বেশিরভাগ ই পারি না। কিন্তু...কতজন ভাল না লাগা বিষয় গুলিকে পরিবর্তনের কথা ভাবি? আর এই চালচুলোহীন শিশু ভোলানাথ... কী প্রচন্ড পজিটিভ...কী ভীষন আত্মবিশ্বাস! নিজেই নিজের পছন্দমত নাম যে দিতে পারে...সে কি আরও অনেক, অনেক ভালোবাসার যোগ্য না? আজ খুব পরিপূর্ণ মন নিয়ে বাড়ি ফিরেছি। চোখে কাজলের মতো লেপ্টে আছে লেকমার্কেট এলাকার রাজকুমারীর ঝকঝকে হাসি... হাতের ধূপের সুগন্ধ হৃদয়ে লেগে গেছে... আমি একজন সুখী মানুষ আজ...
23-10-2020, 09:27 AM
(22-10-2020, 04:12 PM)ddey333 Wrote: #অন্য_রূপকথা ওসাম শালা !!!!!!!
23-10-2020, 10:11 AM
23-10-2020, 07:17 PM
(23-10-2020, 08:03 AM)ddey333 Wrote: #অন্য_রূপকথা এটাও নিলাম !
23-10-2020, 07:18 PM
(23-10-2020, 08:03 AM)ddey333 Wrote: #অন্য_রূপকথা এটাও নিলাম !
24-10-2020, 08:04 AM
29-10-2020, 03:39 PM
মাতৃরূপেন
গত কয়েকদিন ধরে আকাশের মুখ ভার থাকার পর আজ বেশ সোনা রোদ্দুর উঠেছে। কিন্তু, আজ ও যে ঝিমলির মন খুব খারাপ! একবছর আগেও আজকের দিনটা ছিল অন্যরকম। শত ব্যস্ততার মধ্যেও এই দিনটাতে চেম্বার বন্ধ রাখত ঝিমলি...তন্ময় ও চেষ্টা করতেন সন্ধ্যে সন্ধ্যে ফেরার। বা, রাত হলে খাবার প্যাক করিয়ে নিয়ে আসার। উনি না আসা পর্যন্ত বরণের পরের সিঁদুর মাখা গাল -মুখ নিয়ে বসে থাকত ঝিমলি...একটু আবেশ ভরা চোখের অপেক্ষায়...। ওইটুকুই তো পাওনা ছিল প্রতিবছর। বিয়ের আগে থেকেই জানতেন, একজন ডাক্তার, একজন পুলিশ - পুজোপার্বনের দিনে সেভাবে একসাথে ছুটি পাওয়া যাবে না। কিন্তু তাতে বিয়ে, ভালোবাসা কোনোটাই আটকায় নি। যে যে বছর তন্ময়ের ডিউটি থাকত, সেই বছর গুলোতে ঝিমলি অনেকগুলো সেলফি তুলে পাঠাত ওঁকে। এইভাবেই ছ' ছটা বছর কেটেও গেছিল। ভালোবাসায়...আগলে রাখায়...। কিন্তু সব হিসেব পালটে গেল এইবছর। মার্চ-এপ্রিল-মে ঠিকভাবে কাটার পরে জুন মাসে ভাইরাস ধরাশায়ী করে ফেলল তন্ময়কে। ঝিমলিকেও। তবে...তন্ময় আর ফিরলেন না। ঝিমলিকে এক অন্তহীন অপেক্ষার মধ্যে ফেলে পাড়ি দিলেন এক আজানা দেশে.... মন খারাপ করে বসে থাকলে চলবে না। তাই হাতের কাজ গুলো সারছিল ঝিমলি। এবছর পাড়ার পুজোও নমো নমো করেই হয়েছে। মাইকে মন্ত্র শুনে অঞ্জলি দিয়েছেন সবাই। আজও পুজোকমিটির পক্ষ থেকে নাকি মাত্র একজন বরণ করবেন, সিঁদূর খেলা, ভাসানের শোভাযাত্রা বন্ধ। সকাল থেকে এই ঘোষনা শুনে কান ঝালাপালা হয়ে গেছে ওর! আজকাল আর কিছু খেতে ইচ্ছে করে না। আজ রান্নার দিদিও আসবেন না। তাই একার জন্য সিদ্ধভাত বসিয়ে ঘরে এসেছে ঝিমলি, হঠাৎ কলিংবেলের আওয়াজ। "এইসময় আবার কে এলো!" ভাবতে ভাবতে দরজা খুলল ও, আর খুলেই অবাক। সামনে দাঁড়িয়ে আছেন তারাপদ কাকু, এই পাড়ার প্রবীন মানুষ এবং পুজোর মূল উদ্যোক্তা। পিছনে আরও দুজন। পুজোর চাঁদা দেওয়া হয় নি এবছর! মাথাতেই ছিল না...তাই হয়ত এসেছেন ওঁরা...ভাবতেই ভীষণ লজ্জা লাগছিল ঝিমলির। "মা, তুমি কি আজ চেম্বারে যাবে?" জিজ্ঞেস করলেন তারাপদ কাকু। অবাক হলো ঝিমলি। বলল "না কাকু, আমি আজ বাড়িতেই থাকব।" তারপর যোগ করল, "কিছু সমস্যা হয়েছে, কাকু?" "না মা, সমস্যা কিছু না...আসলে আমরা ভাবছিলাম...আজ তো মা চলে যাবেন...তা তুমি যদি মা কে বরণ করতে আমাদের সবার পক্ষ থেকে.." বরণ! ও! অবিশ্বাস্য লাগছিল ওর। কাকু এটা কি বলছেন! একজন প্রবীন মানুষ হয়ে মজা করছেন ওর সাথে! ওর জলভরা চোখের দিকে তাকিয়ে একটু চুপ করে রইলেন উনি। তারপর বলে উঠলেন "এই ক'টা দিনের জন্য মা আসেন আমাদের কাছে...মেয়ে হয়ে। বরণের পরে তো তিনি শ্বশুরঘরে যান...তা মেয়ের কাছে মায়ের ভালোবাসা আর স্নেহটুকুই যে সব গো মা...তাই বিধবা মা আর সধবা মা...দুজনেই যে তাঁর কাছে সমান... তন্ময় আর তুমি যেভাবে মানুষের সেবা করেছ, ভালোবেসেছ...কর্তব্যে অবহেলা করোনি দুজনের কেউ...এমনকি ডিউটির জন্যই তন্ময়ও....তুমি খুব ভালো মা...মা দুর্গার মতোই মহিয়সী আর শক্তিশালী...তাই মেয়েকে বিদায় দেবার অধিকার তো তোমার ও আছে...।" স্তব্ধ হয়ে শুনছিল ঝিমলি। মা! বায়োলজিক্যাল মাদার তো হওয়া হলো না...কিন্তু স্বয়ং মা কে আদর করে, মিষ্টিমুখ করিয়ে..."আবার আসিস মা" বলতে পারবে ও? আর কন্যারূপী জগজ্জননী তাতে খুশি হবেন? চোখ ফেটে জল আসছিল ঝিমলির। সত্যি তো...ওর ও তো বাবা নেই, কিন্তু তা বলে কি মা ওর 'মা' নন? প্রতিবার ওই বাড়ি থেকে আসার সময় "সাবধানে থাকবি, খাবি ঠিকমতো... কী চেহারা হয়েছে...এই নে একটু লাউচিংড়ি.." বলে টিফিনবাক্স হাতে ধরিয়ে দেন না? তেমনি ও ও তো...পারবে ও? "কাকু একটু দাঁড়ান, আমি এক্ষুণি আসছি, মাস্ক টা নিয়ে" হেসে বলে ঘরে চলে এলো ঝিমলি। বাইরে তখন ঝকঝকে রোদ্দুর - ঠিক ওর হাসিটার মতোই...।।
29-10-2020, 03:39 PM
(This post was last modified: 29-10-2020, 03:41 PM by ddey333. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
30-10-2020, 07:10 PM
(29-10-2020, 03:39 PM)ddey333 Wrote: মাতৃরূপেন মা মা ই হয় ! আর মেয়ে সেট মেয়েই ! বিধবা আর সধবা ! মা মা ই থেকে মেয়ে মেয়েই থেকে যায় ! খুব ভালো লাগলো !
30-10-2020, 08:42 PM
এরকম সুপাঠ্য আরও দাও
30-10-2020, 09:47 PM
31-10-2020, 10:42 AM
শ্রী...
এবার লক্ষীপুজো দুদিনেই করা যাবে বটে, তবে নিয়ম মেনে আজই পুজো করছেন শিখা। এবার অবশ্য অন্যান্যবারের তুলনায় একটু ছোট করেই হচ্ছে পুজো, আত্মীয় স্বজনেরা কেউই সেভাবে আসতে পারবেন না বলে। তবে এই দিনটাও তো বচ্ছরকারের দিন... মা কে আরাধনা না করলে হয়? পুজোর ভোগ রান্না, গুছোনো সব শেষ, এদিকে কিছুটা খড়িমাটি ভেজানো আছে এখনও, তাই ফ্ল্যাটের দরজার সামনে একটু আলপনা দেবেন বলে দরজা টা খুললেন শিখা। দরজার দুই পাশে মঙ্গলঘট, তার কাছে মা লক্ষীর পদচিহ্ন আগেই এঁকেছিলেন, এখন একটু ধানের শীষ ও আঁকবেন। দরজা খুলেই দেখেন পাশের ফ্ল্যাটের ও দরজা খোলা। আর সেখানে দুটো পুঁচকে প্রদীপ রাখছে মেয়েটা। মেয়েটাকে দেখেই কেমন যেন গা টা শিরশির করে ওঠে শিখার, প্রতিবার। ওরা এখানে নতুন ভাড়া এসেছে, লকডাউন হবার আগে আগে। প্রথম কদিন ফ্ল্যাটবাড়ির চাপা স্বভাব অনুযায়ী দেখেন নি কে এসেছে, বাড়িতে ক'জন আছে, এইসব। কিন্তু তিনতলার বি ফ্ল্যাটের বৌদি বলার পরে জানতে পারেন কর্তা, গিন্নি আর এক মেয়ের সংসার। বছর কুড়ি -বাইশের মেয়েটাকে তিনবছর আগে কেউ অ্যাসিড ছুঁড়ে দিয়েছিল, প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায়। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে, অনেক অপারেশানের পর মেয়েটা এখন খানিকটা সুস্থ, তবু, মেয়েটাকে দেখলে কেমন লাগে একটা! বাচ্চা মেয়ে...শুনেছিলেন পড়াশুনায় তুখোড় মেয়ে...কিন্তু তাও নিজের অজান্তেই মেয়েটিকে... এড়িয়ে চলেন উনি। নইলে পাশের বাড়ি, লাগোয়া ফ্ল্যাট...হৃদ্যতা তৈরি হতো না? মেয়েটি দরজার কাছে প্রদীপ রেখে দাঁড়িয়েই রইল। একটু অবাক হলেন শিখা। আজ কি দীপাবলি নাকি, যে এইভাবে প্রদীপ রাখতে হবে! এদিকে আলপনা দেবেন বলে বাবু হয়ে বসেছেন উনি, একদম দরজার মুখোমুখি, তাই অস্বস্তি হলেও ওঠা যাবে না... "কাকিমা, কী সুন্দর তোমার আঁকার হাত গো! কী সুন্দর করে মায়ের পা আঁকছ!" বলে মেয়েটি। বেশ রিনরিনে কন্ঠ তো মেয়ের! একটু হাসলেন শিখা। তারপর বললেন "থ্যাংকইউ! " "তোমাদের পুজো কখন হবে কাকিমা? তোমার সব কাজ হয়ে গেছে? আমি হেল্প করব? আমার কিন্তু কাচা জামাকাপড়... " বলে মেয়েটি। আগে থেকে আলাপ নেই, তাও এইভাবে আপন করা স্বর...শুনতে খুব ভালো লাগছিল। "হ্যাঁ মা, সব গুছোনোই আছে, এই পূর্ণিমা পড়বে,,তারপর ঠাকুরমশাই এলে পুজো হবে..." বলতে বলতেই আলপনা দেওয়া শেষ। খড়িমাটির বাটিটা নিয়ে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে পা টা টনটন করে উঠল ওনার। সেই যে অপারেশান হলো,বাদ গেল কিছু অঙ্গ, সেই থেকেই ওজন বাড়ছে সমানে। সকালে উঠে লেবু-মধুর জল, হাঁটা, ভাত না খাওয়া...কোনো কিছুই ওজন কমাতে পারেনি। ফলে পা ব্যথা হয় খুব। বসতে-উঠতে গেলে যেন প্রান বেড়িয়ে যায়! ওনার বিকৃত মুখ দেখে এগিয়ে আসে মেয়েটা। হাতটা ধরে বলে ওঠে "লাগল কাকিমা?" "তা লাগবে না? বাড়িতে বসে বসে ওজন টা বাড়িয়েছে দেখেছ? পুরো ফুটবল! তোমার যা বয়স, তারচেয়ে তোমার হাঁটুর বয়স বেশি!" পিছন থেকে বলে ওঠেন বীরেনবাবু, শিখার স্বামী। আজকাল এভাবেই ঠেস দিয়ে কথা বলেন উনি। খিটখিটে বুড়ো কোথাকার! এক একবার ইয়ার্কির ছলে বললে মানা যায়, কিন্তু তা বলে এইভাবে, সবসময়! চোখে জল আসছিল শিখার। ধুত, ভাল্লাগে না! "উঁহু, কাকু, নট ফেয়ার! কাকিমা সারাদিন ধরে অনেক কাজ করেছেন, এখন এই এত আলপনা দিয়ে উঠতে গিয়ে পায়ে লেগেছে, আর তুমি খোঁটা দিচ্ছ? জানো না, এইভাবে চেহারা নিয়ে কথা বলাকে বডি শেমিং বলে? আর সেটা খুউউউব বাজে জিনিস?... এই যে তোমার কেমন ঝাঁটার মতো গোঁফ, আমি যদি তোমাকে 'হেডঅফিসের বড়বাবু' বলে রাগাই সেটা তো গোঁফ শেমিং হবে, তোমার কি ভালো লাগবে সেটা?" হাসতে হাসতে বলে মেয়েটি। শুনে কেমন অপ্রস্তুত হয়ে বোকা বোকা হাসেন বীরেন বাবু। "সে তো বটেই" বলতে বলতে। "বেশ হয়েছে, যোগ্য জবাব পেয়ে চুপ করে গেছে লোকটা" মনে মনে ভাবেন শিখা। আর শোনেন মেয়েটি যোগ করল "এই ধরো, তুমি বা কাকিমা যদি আমার এই অ্যাসিডে পুড়ে যাওয়া স্কিন নিয়ে কিছু বলো, আমার ও তো খারাপ লাগবে, বলো? সেটাও শেমিং হবে। যে যেমন ই হোক, আসলে আমাদের গ্রেটফুল...ইয়ে কৃতজ্ঞ থাকা দরকার। এই ধরো, আমিও কৃতজ্ঞ, ভাগ্যিস বেঁচে আছি, তাই তো আজ তোমাদের বাড়িতে পুজো হয়ে যাবার পরে প্রসাদ খেতে পাব.." কলকল করে বলে মেয়েটি। কৃতজ্ঞ থাকা...এই মেয়েটিও কৃতজ্ঞ জীবনের কাছে...আহা কী অপূর্ব জীবনবোধ! একটু আগে ব্যথা লাগা পা টা কে ই একটু উঁচু করে দাঁড়ান শিখা। তারপর মেয়েটির কপালে একটা চুমু খান। আহা, এমনি ঋজু যার চিন্তা, সেই তো স্বয়ং শ্রী...
31-10-2020, 06:35 PM
(This post was last modified: 31-10-2020, 06:35 PM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
লালচাঁদ ও বিশু পাগলা।
শিবানী দাশ। সন্ধের পর থেকে রাত যতই গড়াচ্ছে, মনের উচাটন ভাবটা ও পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে বিশুর। এত রাত হল, কোথায় গেল ছেলেটা! এদিকে বৃষ্টি থামার ও কোনো লক্ষণ নেই। কান ফাটানো কড় কড় আওয়াজের সঙ্গে কালো আকাশের বুক চিরে ঘন ঘন বিদ্যুৎ শলাকার আঁকিবুকি। বেশ চলছিল কদিন। লালকে ঘরের পাহারায় রেখে সকাল থেকে এদিক ওদিক ঘুরে খাবার দাবারের জোগাড় হয়ে যাচ্ছিল বেশ। আজ তিন দিন ধরে ধুম জ্বর। মাথা তুলতে পারছে না বিশু। তবুও কষ্টেসৃষ্টে দিনে একবার জমানো চাল ডাল আলু --- পুরোনো কেরোসিন স্টোভটাতে ফুটিয়ে নিয়ে যা হোক করে চলে যাচ্ছিল দুজনের। কিন্তু কালকের থেকে ভাঁড়ে মা ভবানী। সকাল থেকে নিজের সঙ্গে ছেলেটার ও তাই হরিমটর। বিশু বুঝতে পারছিল, খাবারের সন্ধানে বেরিয়েছে নিশ্চয়ই। এই করোনার আবহে আজকাল অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বিভিন্ন জায়গায় খাবারের দানসত্র খুলে বসে আছে। কিন্তু সেসব তো দিনে দিনেই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। এই দুর্যোগের রাতে এতক্ষন বাইরে তাহলে কী করছে লালচাঁদ! টেনশনে টেনশনে মাথার মধ্যে চিড়বিড় করে উঠল বিশুর। নাঃ। আর ভাবতে পারছে না। ছেঁড়া মাদুরের উপর ছেঁড়া কাঁথার বিছানার চারপাশ দিয়ে মশারি অনেক ভিতর পর্যন্ত ঢুকিয়ে নিয়ে শুয়ে পড়ল বিশু। আনমনা ভাবে ফাঁকা রাস্তায় হেঁটে বেড়াচ্ছে লালচাঁদ। রাস্তার ফুটে দু চার জায়গায় কাগজের প্লেটে সাজানো খাবারের প্রলোভন পার হয়ে এসেছে লাল। মাংস ভাতের গন্ধে পেটের মধ্যে চোঁ চোঁ করে উঠেছে খিদে। কাল দুপুরের পর থেকে এখন পর্যন্ত একটা দানাও পেটে পড়েনি। খাবারের দিকে কয়েক পা বাড়িয়ে ও ফিরে এসেছে লাল। বিশুর জীর্ণ শীর্ণ মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে। তাকে রেখে একা একা খেয়ে নেবে! ভেতর থেকে সায় পায়নি লাল। ভ্রাম্যমাণের মত এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে কয় বছর আগের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল লালের। যখন সে নিজে এই এত্তটুকুন। লাফ দিয়ে পার হতে গিয়ে তার দুটো পা বিচ্ছিরি ভাবে আটকে গিয়েছিল দুই লাইনের ক্রশিংএর খাঁজে। চোখের সামনে দিয়ে শয়ে শয়ে মানুষ রেললাইন পার হয়ে এপাশ ওপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে। লাইনে পা আটকে সে যে কঁকিয়ে চলেছে, সেদিকে কারও নজর নেই। রোজ দিনের মত গান গেয়ে পয়সা রোজগারের পর রাত দশটার লোকাল থেকে নেমে রেললাইন পার হচ্ছিল বিশু। বগল থেকে একটা ক্র্যাচ নামিয়ে তার পা দুখানা টেনে বের করে কোলে তুলে নিয়ে বিশু তাকে নিয়ে এসেছিল স্টেশনে ওর নিজের ডেরায়। গরম চুন হলুদ, মলম লাগিয়ে, ব্যান্ডেজ বেঁধে, প্রায় মাসখানেক চিকিৎসার পর বিশু তাকে পুরোপুরি সুস্থ করে তুলেছিল। সোনারপুর স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে ঘেরা জায়গাটাতে ছিল বিশুর আস্তানা। তখন থেকে সে বিশুর সঙ্গে থাকে। সোনালী গায়ের রঙ দেখে আদর করে বিশু তার নাম রেখেছিল লালচাঁদ। সেই থেকে এতগুলো বছর তারা দুজনে এক সঙ্গে বাস করছে। যা রান্না করে বিশু দুজনে ভাগ করে খায়। রাতের বেলা মশারির নীচে অকাতরে ঘুমায় দুজনে। দিনের বেলা বিশু যখন ট্রেনে গান গেয়ে রোজগারের ধান্দায় বেরিয়ে যায়, তার স্থাবর অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তির দেখভাল করে লালচাঁদ। আগলিয়ে রাখে তাদের ছোট্ট সংসারটাকে। এসব দেখে স্টেশনের অন্য বাসিন্দারা নাক সিঁটকায়। বলে ‘আপনি পায় না খেতে, শঙ্করাকে ডাকে’। তখন থেকেই বিশুর সঙ্গে তাদের দূরত্বের শুরু। দেখতে দেখতে একসময় ল্যাংড়া বিশুর নাম পাল্টে হয়ে যায় ‘বিশু পাগলা’। বিশু পাগলাও সবাইকে ছেড়ে লালচাঁদকে হৃদয়ের বন্ধু করে নেয়। বিশু বলে ---আমার ভাই ছেলে বন্ধু --- সব তুই লাল। যতদিন বেঁচে আছি, দুজন একসাথে বাঁচব। মরব যখন একসাথে। আমাকে ছেড়ে চলে যাস না কখনও। ফাঁকা রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সন্ধানী চোখে এদিক ওদিক নজর করতে থাকে লাল। বেশ কিছুটা দূরে একটা জটলা দেখে এগিয়ে যায়। দূর থেকে দেখতে পায় মানুষের একটা লম্বা লাইন। কলেজ বাড়ির বারান্দায় কিছু মানুষ দানসত্র খুলেছে। রান্না করা খাবারের প্যাকেট তুলে দিচ্ছে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বুভুক্ষু মানুষ গুলোর হাতে। বারান্দার এক কোনে শুয়ে অপেক্ষা করতে থাকে লাল। লাইন শেষে তখনও কয়েকটা প্যাকেট বাকি রয়ে গেছে। একজনের চোখ পড়ে যায় লালের দিকে। পাশের সঙ্গীকে বলে ---কেমন শুয়ে আছে দেখেছ। আহারে, খুব খিদে পেয়ে গেছে মনে হয়। একটা প্যাকেট হাতে নিয়ে তার সামনে এগিয়ে আসে লোকটি। বলে ---রাস্তার এখানে ওখানে তোদের জন্য খাবারের কত ব্যবস্থা। কোথাও কিছু জোটাতে পারলিনা সারাদিনে! বলতে বলতে লালের মুখের সামনে বসে প্যাকেটটা খুলতে যাবে, ছোঁ মেরে লোকটার হাত থেকে প্যাকেটটা মুখ দিয়ে টেনে নেয় লাল। তারপর চোঁ চোঁ দৌড় শুরু করে। টিপটিপ বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে স্টেশনে নিজের আস্তানায় এসে থামে। খাবারের প্যাকেট মুখ থেকে বিছানার পাশে নামিয়ে, বিশুর গায়ের চাদর টানাটানি শুরু করে দেয়। ঘুম ভেঙে বিছানায় উঠে বসে বিশু। লালকে দেখে আশ্বস্ত হয়। খাবারের প্যাকেটটা দেখতে পেয়ে ঘোর বিস্ময়ে খাবারের প্যাকেট আর লালকে দেখতে থাকে। বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, যে লাল তার জন্য খাবার নিয়ে এসেছে! নিজের আর লালের থালায় খিচুড়ি লাবড়া ডিমের ডালনা সাজাতে সাজাতে বিশুর দু চোখ বেয়ে দরদরিয়ে জলের ধারা নেমে আসেছে। অবাক হচ্ছিল লাল। এতদিন সে জেনে এসেছে, দুঃখ হলে কাঁদে সবাই। তাহলে এমন আনন্দের মুহূর্তে তার বন্ধু এমন আকুল হয়ে কেঁদে চলেছে কেন! স্বান্তনা দেওয়ার জন্য কাছে এগিয়ে এসে বিশুর কোলে মুখ গুঁজে দেয় লাল। বাইরে তখন আবার মুষলধারে বৃষ্টি নেমেছে। খাবারের গন্ধে ভুরভুর করছে চারপাশ। বৃষ্টির শব্দের সঙ্গে হাপুস হুপুস খাওয়ার শব্দ মিশে এক স্বর্গীয় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। লালচাঁদের ভেতরটা আনন্দে ভরপুর হয়ে উঠেছে। এতদিনে সে বন্ধুর জন্য সত্যি করে কিছু করতে পেরেছে। তবে এই খুশির মুহুর্তে বন্ধুর এমন চোখের জলের কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছিল না সে। ভাবছিল, এইজন্যেই মনে হয় সবাই লোকটার নাম দিয়েছে ‘পাগলা বিশু’। খাওয়া শেষ করে বিশুর কোল ঘেঁষে লালচাঁদ আনন্দের চোটে চিৎকার করে উঠল 'ভৌ ভৌ'। দুই বন্ধুর জীবনের এমন অলৌকিক দৃশ্যের সাক্ষী ছিল না কেউ। শুধুমাত্র বিশ্বপিতা অন্তরালে থেকে তাঁর সৃষ্ট জীব কুলের এমন স্বর্গীয় মুহূর্তের নীরব সাক্ষী হয়ে সব দেখে যাচ্ছিলেন। তাঁর দুচোখে ও তখন গড়িয়ে নামছিল অঝোর বৃষ্টিধারা। |
« Next Oldest | Next Newest »
|
Users browsing this thread: 9 Guest(s)