Thread Rating:
  • 43 Vote(s) - 3.26 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
মধ্যরাত্রে সূর্যোদয় (Dawn at Midnight) Written By pinuram
#61
মিথ্যা কথা কি করে বলেন।আমার কাছে পিনুরামের করা অনুবাদ টার পুরোটাই আছে।আর আপনি ভাবছেন গল্পটা আমার পড়া নয় তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন।অন্য কারও গল্প চুরি করে নিজের নামে ক্রেডিট নিলে হয়ত কোন সমস্যা হত না কিন্তু পিনুরামের গল্প চুরি করে ভুল করলেন।
[+] 1 user Likes johny23609's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#62
পিনুরামের প্রতিটি থ্রেড আমি ফলো করেছি এমনকি উনার ফেসবুক গ্রুপ এউ আমি ছিলাম।নির্জনমেলায় ও ফলো করেছি আর আপনি এখানে পিনুরাম এর গল্প এর ক্রেডিট নিচ্ছেন।
[+] 1 user Likes johny23609's post
Like Reply
#63
/////////
Like Reply
#64
(25-03-2020, 08:10 AM)Isiift Wrote: আমার কাছেই আছে অনুবাদটুকু।আপনার আলাদা করে করতে হবে না।

যতটা অবধি লেখা ছিল সেটাও তো আবার ইনি পোষ্ট করা স্থগিত রেখে দিয়েছেন ! যাই হোক আমি পোষ্ট করছি অবশিষ্টাংশ টুকু  Sad
Like Reply
#65
এই গল্পটার পুরোটা বাংলা অনুবাদ কারোর কাছে আছে কি? দয়াকরে দিন। অনেক খুঁজে এটুকু পেলাম। সেই কত বছর ধরে অভি আর পরির মধুর পরিণতির আশায় সাইটে সাইটে ঘুরেছি। এখানে যায় বা পেলাম তাও অসমাপ্ত। প্লিজ কেও দিন। প্রত্যেকবার চোখে জল চলে আসে। দয়া করেন কেও।
[+] 1 user Likes sumits53a's post
Like Reply
#66
                                  সপ্তপদীর বহ্নিশিখা (#01)

নভেম্বরের শুরু থেকেই বাড়িতে লোকজনের আনাগোনা শুরু হয়ে যায়। বাড়ি ধিরে ধিরে মুখর হয়ে ওঠে, সেজে ওঠে আমাকে বিদায় জানাবার জন্য। আমি দিন গুনি, সোনার খাঁচা থেকে মুক্তির দিন, কিন্তু মনে এক অজানা আশঙ্কা ভর করে, ডানা মেলে উড়ে যাব, কিন্তু সামনের আকাশ ত আজানা অচেনা। কি আছে এই নব দিগন্তে সেই চিন্তায় মাঝে মাঝে রাতে ঘুম হয় না।

একদিন রাতে হিমাদ্রি আমাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করে, “কেমন আছো শুচি? ঘুমিয়ে পরেছ নাকি?”

এক নতুন নাম পেলাম, শুচি। আমি উত্তর দিলাম, “না তবে ঘুমাতে যাবো। কি ব্যাপার, ফোন করেছ?”

হিমাদ্রি একটু ইতস্তত হওয়ার পরে জিজ্ঞেস করে, “এই রবিবারে দেখা করতে পারি?”

আমি, “তুমি ধানবাদ থেকে এখানে আসবে আমার সাথে দেখা করতে?”

আমি অবাক ওর প্রশ্ন শুনে। 

হিমাদ্রি হেসে বলে, “হ্যাঁ, নিশ্চয়, কেন নয়। আমার কিছু প্রশ্ন আছে, সেগুলোর একটু উত্তর চাই, আর দুজনে পরস্পরকে একটু জেনে নেওয়া ভালো। তাই নয় কি, শুচি? একদিনের দেখায় কি আর মানুষ চেনা যায়।”

আমি, “বাড়িতে চলে আসো। ছোটমা বাবু তোমাকে দেখে খুব আনন্দিত হবেন।”

হিমাদ্রি, “কেন আমার সাথে একা বের হতে ভয় করছে?”

ওর হাসি মজার কোন ভাবাবেগ আমার হৃদয়কে নাড়াতে পারেনা। আমি শান্ত গলায় উত্তর দেই, “না, তবে ছোটমাকে জিজ্ঞেস করতে হবে।”

হিমাদ্রি, “না না, তাঁর দরকার পড়বে না। আমি তোমার ছোটমাকে জিজ্ঞেস করে নিয়েছি, তিনি অনুমতি দিয়ে দিয়েছেন। আমি তোমার বাড়িতে এসে তোমাকে নিয়ে কোথাও বেড়িয়ে পড়বো।”

আমি একটু রেগে যাই ওর উত্তর শুনে, “তুমি আমাকে একবারের জন্য জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করলে না? তুমি যখন নিজেই সব ঠিক করে নিয়েছ তাহলে আবার আমাকে জিজ্ঞেস করছ কেন?”

আমি উত্তরটা বেশ কড়া সুরে দিয়েছিলাম। উত্তর দেওয়ার পরে আমার মনে হল একটু বেশি বলে ফেললাম হয়ত। ওর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলাম, “দুঃখিত, তোমাকে আঘাত করেছি বলে।”

হিমাদ্রি আমার কথা গায়ে মাখেনি, হেসে বলে, “ঠিক আছে শুচি, এত হতেই থাকে।”

পরের রবিবারে সকালে বেলা হিমাদ্রি আমাদের বাড়িতে আসে। ছোটমা ওকে দেখে খুব খুশি হন। আমি বেশি সাজিনি সেদিন। হিমাদ্রি আমাকে নিয়ে পিয়ারলেস ইনের, আহেলি রেস্টুরেন্টে গেছিলাম। 

হিমাদ্রি আমাকে জিজ্ঞেস করে, “ছোটমা তোমার দূর সম্পর্কের দিদি, তাই না?”

আমি মাথা নাড়িয়ে জানাই, হ্যাঁ।

হিমাদ্রি, “তাহলে দিদিকে ছোটমা কেন ডাকো?”

আমি, “আমার মায়ের মতন তাই ডাকি।”

হিমাদ্রি, “আচ্ছা, বুঝলাম। আমার কিছু বলার আছে।”

আমি ভাবি, হটাত কি বলার থাকতে পারে এই সময়ে। আমি ভুরু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকি। হিমাদ্রি আমার মুখের ভাব দেখে মনের প্রশ্ন বুঝে ফেলে। হেসে বলে, “না না, সেই রকম কিছু না। তবে আমি একটু ড্রিঙ্ক করি আর সিগারেট খাই।”

আমি মৃদু হেসে মাথা দুলিয়ে বলি, “ওকে। তোমার কাজের চাপে তুমি খেতেই পার।”

হেসে বলে আমাকে, “তুমি খুব তাড়াতাড়ি সব কিছু বুঝে মেনে নাও দেখছি।”

আমি শুধু একটু হাসি, উত্তর দেই না।

হিমাদ্রি কিছু পরে আমাকে জিজ্ঞেস করে, “বিয়ের পরে কোথায় ঘুরতে যেতে চাও? আমি শুনেছি তুমি পাহাড় খুব ভালোবাসো। কোথায় যাওয়া যেতে পারে, তুমি বল?”

পাহাড়ের নাম শুনে বুক কেঁদে ওঠে। আমি নিচু গলায় বলি, “না আমার পাহাড় বিশেষ ভালো লাগেনা। ওই পাহাড় চরতে গেলে রাস্তায় আমার মাথা প্রচন্ড ঘোরে।”

মিথ্যে কথা বলি আমি, পাহাড়ের নাম শুনলেই আমার সেই সুদর্শন তস্করের কথা মনে পরে যায়, আমাকে চুরি করে নিয়ে গেছিল সুদুর পাহাড়ে, চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে। বুক বেঁধে সেই জল পান করি আমি।

হিমাদ্রি, “আন্দামান কেমন হবে? আমি অনেক দিন ধরে ভাবছিলাম আন্দামান যাওয়ার।”

কিছু পরে হিমাদ্রি আমাকে একটা প্রশ্ন করে। সেই প্রশ্ন আমাকে ভেতর থেকে নাড়িয়ে দেয়, পাঁজর কাঁপিয়ে দেয় ওর কথা। হিমাদ্রি, “তোমার ছোটমায়ের এক ছেলে আছেন, তাই না? তোমার বিয়েতে আসবে ত?”

আমার সারা শরীর সেই প্রশ্নের বাণে কেঁপে ওঠে। টেবলের নিচে প্রানপন শক্তি দিয়ে হাত মুঠি করে নিজেকে সামলে নেওয়ার প্রবল চেষ্টা করি। আমি ওর দিকে মাথা তুলে তাকাতে পারিনা। টেবিলের ওপরে তাকিয়ে কোনরকম মাথা নাড়িয়ে জানাই যে ও আসবে কি না, সেটা আমার জানা নেই।

হিমাদ্রি, “আচ্ছা শুচি, তোমার গাড়ির কোন রঙ পছন্দ?”

হিমাদ্রির সেই প্রশ্নে আমি আরও অবাক হয়ে যাই। হিমাদ্রি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আবার জিজ্ঞেস করে সেই প্রশ্ন।

আমি ওকে পালটা প্রশ্ন করি, “তুমি গাড়ি কিনছো?”

হিমাদ্রি হেসে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ, মারুতি বালেনো।”

আমি হিমাদ্রির ঠোঁটের হাসি দেখে বুঝতে পারি যে বিয়ের যৌতুক হিসাবে বাবু ওকে গাড়ি দিচ্ছে, আমার নিরাপত্তার জামানত। রাগে দুঃখে কান লাল হয়ে আসে আমার। মনে মনে বলি, আর কত ঋণের বোঝা আমার এই ছোটো হৃদয়ে চাপিয়ে দেবে। আমি হিমাদ্রিকে জানাই যে আমি বাড়ি ফিরে যেতে চাই, আমার শরীর ভালো লাগছিলনা, মাথা ব্যাথা করছিল ওর কথা শুনে। আমার কথা মেনে আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দেয় হিমাদ্রি।

হিমাদ্রি চলে যাওয়ার পরে, বাবু ছোটমা আমাকে তাদের ঘরে ডাকেন। আমি ঘরে ঢুকে দেখি, বাবুর সামনে একটা ফাইল খোলা। বাবু আমাকে কিছু কাগজ দেখিয়ে বলেন, “এই কিছু কাগজ পত্র তোমার জন্য রাখা।”

একটা ব্যাঙ্কের খাতা আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলেন, “তোমার মায়ের জমান কিছু ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স আছে তোমার নামে। তোমার বাড়ির অংশের টাকা তোমার নামে ফিস্কড ডিপসিট করে দেওয়া হয়েছে। তা প্রায় সাত লাখের মতন আর আমি এই তিন লাখের মতন আরও দিয়ে সেটা দশ লাখ করে দিয়েছি।”

আমি বিছানায় বসে কাগজ হাতে নিয়ে ছোটমাকে জিজ্ঞেস করি, “তোমরা গাড়ি দিচ্ছ সেটা একবার আমাকে জানাও নি ত?”

ছোটমা, “তোকে কে বলল?”

আমি জোর গলায় বললাম, “আমার প্রশ্নের উত্তর দাও ছোটমা। তুমি যৌতুকে গাড়ি দিচ্ছ কি না? গাড়ি কি আমার নিরাপত্তার দাম হিসাবে দেওয়া হচ্ছে?”

বাবু প্রত্যয়ের স্বরে আমাকে বলেন, “সোনা মা, গাড়ি যৌতুকে দিচ্ছিনা রে। তুমি আমাদের মেয়ের মতন, আমাদের কিছু ত একটা দিতে হত, তাই গাড়ি দিচ্ছি। আর গাড়ির অর্ধেক টাকা হিমাদ্রি অফিস থেকে লোন নেবে।” 

আমি ঠাণ্ডা গলায় উত্তর দেই, “আর কত ঋণের বোঝা আমাকে বয়ে বেড়াতে হবে?”

ছোটমা আমার গালে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে দেন। সেই স্নেহের স্পর্শ আমার কাছে আগুনের তাপের চেয়েও উত্তপ্ত মনে হয়। আমি জোর গলায় তাদের বলি, “আমাকে ছেড়ে দাও। তোমাদের যা মনে আসে তাই করো, আমাকে জিজ্ঞেস করতে যেওনা, আমি একটু একা থাকতে চাই।”

কিছুদিন পরে হিমাদ্রি আর নিলাদ্রি আমাদের বাড়ি আসে। বাবু, ছোটমা সবাই আমরা পার্ক স্ট্রিটে মারুতির শোরুমে যাই, গাড়ি দেখার জন্য। হিমাদ্রি আমাকে গাড়ির রঙের কথা জিজ্ঞেস করে, আমার গাড়ির প্রতি সেইরকম কোন আগ্রহ ছিলনা, মনের মধ্যে এক চিন্তা, গাড়ি আমার নিরাপত্তার যৌতুক। আমি ওদের জানাই যে গাড়ি যেকোনো রঙের নিলে চলবে, কোন এক নির্দিষ্ট রঙের প্রতি আমার পছন্দ ছিলনা। নিলাদ্রি সাদা রঙের গাড়ির কথা বলে, বলে যে আমার যে রঙ পছন্দ সেটা কেনা উচিত। কিন্তু হিমাদ্রির কালো রঙ পছন্দ ছিল। হিমাদ্রি আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে থাকে যেন আমি কালোই পছন্দ করি। শেষ পর্যন্ত ওর মন রাখার জন্য কালো রঙের মারুতি বালেনো পছন্দ করা হয়।

নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে মৈথিলী আমাদের বাড়িতে চলে আসে। সারাক্ষণ মৈথিলী আমাকে আগলে রাখে, আমার পাশে পাশে থাকে, যতক্ষণ না আমি সপ্তপদীর বহ্নিশিখার সামনে বসে, “মিসেস. শুচিস্মিতা কর্মকার” এ পরিনত না হয়ে যাই।

কেনাকাটা জোর কদমে শুরু হয়ে যায়। আমি কোনদিন ছোটমায়ের সাথে বাজারে কেনাকাটা করতে যাইনা। বিয়ের সব কেনাকাটা মৈথিলী আর ছোটমা করেন। আমি শুধু একদিন ছোটমায়ের সাথে কলেজস্ট্রীট গিয়েছিলাম, যেদিন আমার জন্য লাল বেনারসি শাড়ি কেনা হয়। আমি সারাদিন নিজের ঘরে বই পরে বা রান্না ঘরে কাটিয়ে দিতাম। আমার চারপাশের কোলাহল আমাকে কোন ভাবে নাড়াতে পারেনা। হৃদয়ের মাঝে সর্বক্ষণ একটা অনন্ত শূন্যতা ভর করে থাকে।

একদিন তিস্তা আর দেলিসা কে ফোন করে জানাই আমার বিয়ের কথা। সেই সংবাদ শুনে ওরা খুব খুশি হয়। দেবব্রত তিস্তাকে নিয়ে একদিন আমার বাড়িতে আমার সাথে দেখা করতে আসে।

তিস্তা আমাকে জিজ্ঞেস করে, “শেষ পর্যন্ত মিতা তার মনের মানুষ খুঁজে পেল।”

অব্যাক্ত বেদনায় হ্রদয় মোচর দিয়ে উঠলো। মৈথিলী কাছেই দাঁড়িয়ে ছিল, তিস্তাকে জিজ্ঞেস করে, “তোমরা ওর বন্ধু?”

তিস্তা মৈথিলীর প্রশ্নের গুড় উদ্দেশ্য বুঝতে না পেরে মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয়, হ্যাঁ। মৈথিলী ওদের দিকে শূন্য চোখে তাকিয়ে ম্লান হেসে বলে, “না এমনি জিজ্ঞেস করছি।”

আমি মৈথিলীর আসল বেদনা বুঝতে পারি, কত নিরুপায়, শত চেষ্টা করেও এই পাখিকে উড়াতে পারল না।

একদিন সন্ধ্যের পরে ছোটমা আমাকে তাদের ঘরের মধ্যে ডেকে বসতে বলেন। ছোটমা আমাকে বলেন, “পরী, আমরা তোর ভালোর জন্যেই এইসব করছি। খুব শীঘ্র তুই নতুন জীবনে পা দিবি, তাঁর আগে তোকে কিছু বলতে চাই।”

আমি জিজ্ঞেস করি, কি? ছোটমা বলেন, “কয়েক দিনের দেখায় একটা মানুষকে সম্পূর্ণ চেনা যায়না। আমরাও ঠিক করে চিনতে পারিনা সামনের মানুষ কে। জানিনা তোর নতুন বাড়ি কেমন হবে। সবাই নিজের নিজের চেহারায় এক মুখোশ এটে থাকে। জীবন চলার পথে, মানুষের সাথে থাকতে থাকতে সেই মুখোশের আড়ালের মানুষ টাকে আমরা দেখতে পাই।” 

আমি ছোটমায়ের কথার উদ্দেশ্য ঠিক বুঝে উঠতে পারিনা, ছোটমাকে আমি জিজ্ঞেস করি, “তুমি কি বলতে চাও আমাকে? আমি জানি যে আমার সামনে এক নতুন জীবন, আমি জানিনা আমার ভবিষ্যতে কি লেখা আছে। তবে আমি আপ্রাণ চেষ্টা করব আমার নতুন জীবনে সবাইকে খুশি রেখে চলতে।”

ছোটমা আমার গালে আদর করে বলেন, “দেখ মা, হিমাদ্রি কয়লার খনিতে চাকরি করে আর তার বাবা মায়ের সাথে থাকে। ওর বাবা কয়লার কন্ট্রাক্টর। সেই কারনে জানাচ্ছি যে ওদের মানসিকতা কি রকমের হবে সেটা এখন ঠিক পরিষ্কার নয়। তোর নামে আমরা বেশ কিছু টাকা রেখে দিয়েছি যাতে কোনোরকমের কষ্ট তোকে ছুঁতে না পারে। প্রথমেই সেই সব টাকা পয়সার কথা খোলসা করে ওদের বলতে যাস না, ধিরে ধিরে ওদের মানসিকতা বুঝে নিজে বুঝে পদক্ষেপ নিস।”

ছোটমায়ের কথা শুনে রাগে দুঃখে চোখের পাতা ভিজে যায় আমার, “আমার বিয়ে কিছু দিন পরে আর আজ তুমি আমাকে বলছ যে যার সাথে আমি বিয়ে করতে চলেছি তাদের তুমি ভালো করে জানো না?”

চোখের কোল থেকে জল গড়িয়ে পরে, “আমাকে কি করতে বলছ তাহলে?”

ছোটমা, “কাঁদিস না, মা। তোর বিয়ের পরে, শুধু হিমাদ্রিকে বলসি কোলকাতার হেড অফিসে ট্রান্সফার নিয়ে চলে আসতে। তুই সবসময়ের জন্য আমার সামনে থাকবি তাহলে।”

ছোটমায়ের কথা শুনে মন বিরক্তিতে ভরে গেল, চোয়াল শক্ত করে ছোটমাকে বললাম, “ছোটমা, তুমি একি বলছ আমাকে? তুমি নিজের ছেলের কাছ থেকে আজ বিচ্ছুত, তোমার বুক কাঁদে তাঁর জন্য আর তুমি কিনা এক মা হয়ে এক ছেলেকে তাঁর মায়ের কাছ থেকে দুরে সরে যেতে বলছ?”

ছোটমা বুঝতে পারল আমার কথা, “পরী, আমি যা কিছু বলছি তোর ভালোর জন্য বলছিরে।”

আমি থাকতে না পেরে ডুকরে কেঁদে বলি, “ছোটমা, আমার কিসে ভালো কিসে মন্দ সেটা তুমি ভালো করে জানো। আর কেন আমাকে বারেবারে কষ্ট দিচ্ছ বলত।”

বাবু ঘর থেকে বেড়িয়ে চলে যান।

ছোটমায়ের চোখে জল, আমার মুখখানি দুহাতে আঁজলা করে তুলে ধরে বলে, “সোনা মা, তুই যা চাইছিস তা আমি তোকে দিতে পারিনা। পরী একটু বুঝতে চেষ্টা কর মা, সবার সামনে আমাদের মাথা নত হয়ে যাবে, সমাজ আমাদের কলঙ্কিত বলবে।”

আমি কেঁদে ফেলি ছোটমার কথা শুনে। বুকের মাঝে প্রচন্ড ব্যাথা শুরু হয়ে যায়, “ছোটমা আমাকে একটু একা থাকতে দাও।”

সেদিনের পর থেকে আমি নিজেকে যেন আরও গুটিয়ে নেই। এঁকে এঁকে বাড়িতে অতিথিরা আসতে শুরু করে। ইন্দ্রানিদি, চন্দ্রানিদি সপরিবারে বাড়িতে এসে পড়েন। শশাঙ্কদা, মেঘনা বৌদি দুষ্টুকে সাথে নিয়ে বাড়িতে আসেন। আমি দুষ্টুর সামনে যেতে পারিনা। ওর মুখ দেখে আমার বড় কষ্ট হয়, ও যেন আমার মনের আসল কথা বুঝে ফেলেছে।

একবার দুষ্টু আমাকে জিজ্ঞেস করে, “অভি কাকু আসবে না?”

আমি বহু কষ্টে ঠোঁটে হাসি মাখিয়ে ওকে বলি, “না রে আসবে না।”
Like Reply
#67
                    সপ্তপদীর বহ্নিশিখা (#02)

অবশেষে সেইদিন আসে। আমার বিবাহ, ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের সোমবার। বাড়ি ভর্তি লোকজন, চারদিকে হইহই রইরই ব্যাপার। বিয়ে উপলক্ষে একটা বাড়ি ভাড়া করা হয়েছিল, বরযাত্রী থাকার জন্য একটা হোটেল ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। সকাল থেকে বাড়িতে সানাই বাজতে শুরু করে। সকাল বেলায় আমাকে এক রকম টেনে ঘুম থেকে তুলে দেওয়া হল। অনেক রাতে ঘুমিয়েছিলাম তাই চোখে তখন ঘুম মাখা ছিল। ছোটমা আর কয়েকজন মিলে দধিমঙ্গল করে আমাকে দই চিড়ে খাইয়ে দিল। বড়রা বলল যে আমাকে সারাদিন কিছু খেতে দেওয়া হবে না। মৈথিলী আমার দিকে চোখ টিপে ইশার করে যে খাওয়ার জন্য কোন চিন্তা নেই, ও ঠিক আমার জন্য খাবার নিয়ে আসবে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে ফেলি।

সকালে গড়িয়ে এলে নিলাদ্রি আমার জন্য গায়ে হলুদের হলুদ নিয়ে আসে। মৈথিলী সবার আগ আমাকে গায়ে হলুদ লাগিয়ে দেয়, আমি স্থানুর মতন দাঁড়িয়ে থাকি। মৈথিলী আমার চোখের দিকে তাকিয়ে গালে হলুদ লাগিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে। তারপরে একে একে বাড়ির এয়োস্ত্রীরা আমাকে হলুদ লাগিয়ে দেয়। ছোটমা আমাকে স্নান সেরে নিতে বলেন। আমি স্নান সেরে বেড়িয়ে একটা কাঁচা হলুদ রঙের শাড়ি পরি। ছোটমার চোখে জল, কিছু কষ্টে কিছু আনন্দে। আমার হাথে একটা লোহার বালা পড়িয়ে দেন ছোটমা। আমি নিজের ঘরে ঢুকে যাই। তিস্তা দেলিসা বাড়ি পৌঁছে গেছে। আমার বিয়ে উপলক্ষে ওরা বেশ খুশি।

আমি একটু পরে বসার ঘরে যাই, বসার ঘরে পা দিতেই আমার পা মেঝেতে আটকে যায়। বসার ঘরের দেয়ালে একটা বিশাল পেন্টিং ঝুলছে, পেন্টিং টা সক্রেটিসের। সেই পেন্টিঙ্গের এক কোনায় সই করা “অভিমন্যু, 1991.” ছোটমা সেই পেন্টিঙ্গের সামনে দাঁড়িয়ে একমনে সেই দিকে তাকিয়ে থাকেন। সবার চোখ আড়াল করে চোখ মুছে নেন ছোটমা। বুঝতে কষ্ট হয়না যে মায়ের মন তাঁর পুত্রের জন্য কেঁদে উঠেছে। আমি চুপচাপ সরে এলাম সেখান থেকে।

ধিরে ধিরে বিকেল গড়িয়ে এল। আমাকে সাজাতে এক মহিলাকে ডাকা হয়েছিল। প্রথমে কপালে চন্দনের ফোঁটা, ভুরুর মাঝে সুন্দর একটা লাল টিপ, কপালে সুন্দর আঁকিবুঁকি। চোখের কোনে কাজল, এঁকে এঁকে রঙ মাখানো হয় আমার মুখে। প্রাণহীনাকে জীবন্ত করে তুলতে সবার যেন এক মরিয়া প্রচেষ্টা। লাল বেনারসি, লাল ব্লাউস আর লাল চেলিতে ঢেকে দেওয়া হয় আমার দেহ। আমি রক্তাত এক নারী, অতি সুন্দর করে সাজান।

মৈথিলী আমার সামনে বসে আমাকে এক এক করে সোনার গয়না পড়িয়ে দিতে শুরু করে। কানে বড় বড় দুটি ঝুমকো। গলায় একটার পর একটা সোনার হার। হাতে সোনার চুরি, চুড়, বালা ইত্যাদি। সারাক্ষণ আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি, আমাকে সাজিয়ে তোলে মন ভরে। কারুর মুখে কোন কথা নেই। আমার বুক কেঁপে ওঠে ওর ভেজা চোখের পাতা দেখে, আমি কেঁপে উঠি, মৈথিলী জোর করে চেপে ধরে আমার হাত, শেষ চুড়ি পড়িয়ে দেয় আমার হাতে। সাজানোর পরে আমার মুখের দিকে তাকায় মৈথিলী, চোখের পাতা কেঁপে ওঠে ওর। আমার বুক কেঁপে ওঠে, আমার ঠোঁট কেঁপে ওঠে, আমি যেন এবারে ভেঙ্গে পড়বো। আমি ঠোঁট কামড়ে ধরি নিজেকে সামলানোর জন্য। মৈথিলী আমার মাথায় আঁচল টেনে দেয়। আমার গাল ছুঁয়ে সস্নহে আদর করে আর চোখের কোল মছে বারেবারে। এই পৃথিবীতে একমাত্র মৈথিলী জানে আমি কত নিরুপায়, আমার ব্যাথা দেখে মৈথিলী নিজের বুকের ভাষা হারিয়ে ফেলে। 

আমি উঠে দাঁড়িয়ে নিজেকে আয়নায় দেখি। আয়নার প্রতিফলন এক নির্জীব প্রাণহীন নারীর, ঠোঁটে মেকি হাসি নিয়ে অতি সুন্দর সেজে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বাড়ির সবাই আমার বিয়ে উপলক্ষে খুশি, একমাত্র আমি যার বিয়ে সে যেন এক নিস্তব্ধ প্রাণহীন মূর্তি।

দরজায় কেউ টোকা দেয়। মৈথিলী দরজা খুলে দেখে যে আমার বড়দা দরজায় দাঁড়িয়ে। সুমন্তদা ঘরে ঢুকে আমাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখেন। সস্নেহে আমার মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করে বলেন, “আমি তোর অভাগা দাদা রে, পরী। তোকে দেওয়ার মতন আমার কাছে কিছু নেই।”

আমার হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বলেন, “এই পৃথিবীতে আমার আর কেউ নেই রে, তাই আমি আমার সম্পত্তি সব বিক্রি করে তোর নামে কিছু টাকা ফিক্সড করে দিয়েছি।”

আমি নিজেকে আর সামলাতে পারিনা। আমি বেদনায় প্রায় আঁতকে উঠি, “না, আমি এটা নিতে পারব না দাদা। তোমার কি হবে, তুমি কোথায় যাবে এর পরে।”

দাদা আমার প্রশ্নের উত্তর দিলেন না, পকেট থেকে একটা ছোটো বাক্স বের করে আমার হাতে দিলেন, আমি খুলে দেখলাম তাঁর মধ্য একটা হীরের আংটি আছে। দাদা আমাকে বললেন, “তোর বউদির সব গয়না আমি বিক্রি করে দিয়ে এই আংটি কিনেছি। তোর বৌদি নেই, এখানে থাকার আর কোন মানে নেই। আমি এবারে হরিদ্বার না হয় হৃষীকেশ চলে যাব।”

আমি বারেবারে মাথা নাড়িয়ে কেঁদে বলি, “তুমি শেষ পর্যন্ত আমাকে ছেড়ে চলে যাবে? না, তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারো না। না।”

আমার দু’চোখে অশ্রু বয়নি সেদিন, সেদিন দুচোখ দিয়ে বুকের রক্ত নেমে এসেছিল। মৈথিলী আমার মাথা কোলের মাঝে জড়িয়ে ধরে আমাকে শান্ত করার জন্য, বুক ফেটে চৌচির হয়ে যায় আমার। সেই শেষ বারের মতন আমি সুমন্তদাকে দেখি। ফিরে তাকালেন না দাদা, দরজা দিয়ে বেড়িয়ে চলে গেলেন চোখের জল মুছতে মুছতে।

আমি মৈথিলীকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠি, “আমাকে ছেড়ে যেওনা দাদা, আমি বড় অভাগী।”

আমার কান্না শুনে অনেকেই আসে ঘরের মধ্যে। মৈথিলী কাউকে ঢুকতে দেয়না। ওর চোখেও সেদিন আষাঢ়ের বারিধারা নেমে আসে। ধরা গলায় আমার চোখের জল মুছিয়ে, আবার সাজিয়ে তুলে বলে, “পরী সময় হয়ে এসেছে।”

দরজার বাইরে থেকে ছোটমা আমাকে ডাক দিলেন, “পরী আর কতক্ষণ, দেরি হয়ে যাবে যে। বরযাত্রী কিছু পরেই চলে আসবে। তাড়াতাড়ি কর।”

মৈথিলী উত্তর দিল, “একটু সময় দাও আমাদের, আমি ওকে নিয়ে আসছি।” আমার দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে হাসি টেনে আমার চোখের জল মুছিয়ে বলে, “এবারে যেতে হবে, পরী।”

আমি ধিরে ধিরে উঠে দাড়াই, আমার ঘরের চার দেয়ালের দিকে তাকিয়ে দেখি। বইয়ের তাক ছুঁয়ে তাকে বিদায় জানাই, আমার বিছানা ছুঁয়ে তাকে বিদায় জানাই। শেষ বারের মতন আমার পড়ার টেবিল ছুঁয়ে তাকে বিদায় জানাই।

ছোটমা কিছু পরে আমার ঘরে ঢুকে আমাকে দেখে আনন্দে কেঁদে ফেলেন, গালে হাত দিয়ে ধরা গলায় বলেন, “সোনা মা, তোকে খুব সুন্দর লাগছে দেখতে।”

আমি ছোটমায়ের স্নেহের পরশে গলে যাই, গলা জড়িয়ে কেঁদে ফেলি, “মা আমাকে ক্ষমা করে দিও।”

আমাকে জড়িয়ে ধরে পিঠে হাত বুলিয়ে বলেন, “সোনা মা, বিয়ের আগুনে তোকে তোর অতীত জ্বালিয়ে দিয়ে এক নতুন জীবন শুরু করতে হবে।”

আমি মাথা নাড়াই, হ্যাঁ। তিস্তা আর মৈথিলীর সাথে আমি আমার ঘর থেকে বেরিয়ে যাই। 

বিয়েতে আমার সব বন্ধু বান্ধবীরা এসেছিল। একে একে আত্মীয় সজ্জনেরা এসে আমাকে অভিবাদন জানিয়ে গেল। দেবব্রত আর তিস্তা কে দেখলাম। তিস্তা বিয়ের সময়ে একটা সুন্দর শাড়ি পড়েছিল। ওর সব থেকে ভালো বান্ধবীর বিয়ে, খুব আনন্দিত। আমি ওকে দেখে হেসে জিজ্ঞেস করি, “কিরে তোদের কি খবর, সব ভালো?”

আমার কথা শুনে দেবব্রতর দিকে তাকিয়ে লাজুক হেসে বলে, “বড় শয়তান ছেলে।”

ওর লাজুক হাসি দেখে আমার খুব ভালো লাগে। দেবব্রত আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পরে, পেছনে তিস্তা। আমি ওকে দেখে একটু ঘাবড়ে যাই, কি করতে চলেছে ছেলেটা। দেবব্রত আমার হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে কাঁপা গলায় বলে, “মিতা, আমাদের ভুলে যাবে না ত? আমি আমার ভালোবাসা শুধু তোমার জন্য ফিরে পেয়েছি, আমাদের সব কিছু তোমার দেওয়া।” 

তিস্তা কেঁদে ফেলে, “আমি খুব খারাপ মেয়ে ছিলাম। সেদিন গ্লোবে যদি তুমি আমাকে পথ না দেখাতে তাহলে হয়ত আমি বয়ে চলে যেতাম।”

তিস্তা আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে, “আমাদের ভুলে যেওনা।”

আমি ওর পিঠে হাত বুলিয়ে শান্ত করে বলি, “এই পাগলি মেয়ে, এই রকম করে কেউ কাঁদে নাকি? আমি তোদের কি করে ভুলে যাই বলত? আমি তোদের বিয়েতে নিশ্চয় আসব, কথা দিচ্ছি।”

দেলিসা আর দানিস কাছেই দাঁড়িয়ে ছিল। দানিস আমার কথা শুনে চেঁচিয়ে বলে, “আপা আপা, আমার কথা ভুলে গেলে। আমার বিয়েতে আসবে না?”

আমি দানিসকে কাছে ডেকে বলি, “ওরে ছেলে, আমি তেপান্তরের মাঠে যাচ্ছি নারে, আমি ধানবাদ যাচ্ছি। আমি যেখানেই থাকি না কেন, তোদের বিয়েতে নিশ্চয় আসবো।”

এমন সময় ইন্দ্রানিদি আমার কাছে এসে বলেন, “তুই কোনদিন আমাদের বম্বের বাড়িতে যাস নি। এবারে বর কে নিয়ে একবার যাস।”

আমি উত্তরে মৃদু মাথা নাড়িয়ে বলি, ঠিক আছে নিয়ে যাব। সবার প্রশ্ন, সবার আব্দার, সবার খুশি, আমি চেহারায় এক নকল আনন্দ মাখিয়ে সবার আব্দার রাখি।

নিলাদ্রি এক সময়ে আমার কানে এসে ফিসফিস করে বলে যায়, “বৌদি তোমাকে দারুন দেখতে লাগছে।”

আমি ওর দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলি। 

সেই আনন্দের ক্ষণে আমার চোখ আমার বড়দা সুমন্তদা কে বারেবারে খুঁজে বেড়ায়। মৈথিলী সর্বদা আমাকে আগলে রাখে, আমি ওকে বড়দার কথা জিজ্ঞেস করাতে উত্তর দেয় যে বড়দার ট্রেন রাতে, তাই বড়দা চলে গেছেন। বড়দা হয়ত বুঝতে পেরেছিল তাঁর ছোটো বোনের মনের কষ্ট, তাই হয়ত আমার চোখের জল আড়াল করে নিজেকে এই বিশাল পৃথিবীর বুকে হারিয়ে দিয়েছেন।

দীপঙ্কর কে দেখে আমি খুব আনন্দিত হয়ে উঠি, আমার প্রানের বান্ধবী কল্যাণী অচিরে মা হতে চলেছে। আমি দিপঙ্করকে জিজ্ঞেস করি কল্যাণীর কথা। দীপঙ্কর আমাকে ফোন ধরিয়ে দিয়ে কল্যাণীর সাথে কথা বলতে বলে।

আমি ফোন ধরে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকি, গলার কাছে এক অব্যক্ত ব্যাথা দলা পাকিয়ে ওঠে। আমি ওকে জিজ্ঞেস করি, “কেমন আছিস তুই?”

কল্যাণী ওপর পাস থেকে ফুঁপিয়ে ওঠে, “আমি তোর সাথে কোনদিন কথা বলব না, তুই ফোন রেখে দে।”

আমি কানের ওপরে চেপে ধরি ফোন, যদি ওর নিস্বাসের আওয়াজ শোনা যায়। আমি চোখের জল মুছে দিপঙ্করের হাতে ফোন ধরিয়ে দেই। 

আমি নিরুপায়, সেই সময় কে আমি থামিয়ে দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু হায় এই প্রকৃতির নিয়ম, সময় কারুর জন্য অপেক্ষা করে থাকেনা। রাত বাড়তে শুরু করে, বিয়ের লগ্ন আসন্ন।

ছোটমা আমার কাছে এসে বলেন, “সোনা মা, সময় হয়ে এসেছে।”

এ যেন বলির জন্য ডাক!

শশাঙ্কদা, সুব্রত, দেবব্রত, দানিস চারজন মিলে আমাকে পিঁড়িতে বসিয়ে বিয়ের মন্ডপের দিকে নিয়ে যায়। বিয়ের মন্ডপে রইরই হইহই শুরু হয়ে যায় কনে দেখে। সবার চেহারায় আনন্দের হাসি, আমি সাজান এক মূর্তির মতন নকল হাসি নিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে থাকি।

ওর সামনে দাঁড়িয়ে শেষ পর্যন্ত আমাদের মালা বদল হয়ে গেল। আমি ওর চোখের দিকে তাকালাম। ওর চোখে কেমন একটা হাসি, যেন অবশেষে একটা যুদ্ধ জিতে নিয়েছে। আমি ওর চোখের হাসি দেখে লজ্জা পেয়ে গেলাম, শেষ পর্যন্ত আমার মনে এক লাজুক ভাব ফুটে উঠল সেই নকল খুশির মাঝে।

বিয়ের পিঁড়িতে বসে পড়লাম দুজনে। বাবু আমার কন্যাদান করবেন, হোমের স্থানে বসে আছেন বাবু। সেই সকালে বৃদ্ধির সময়ে বাবুর সাথে দেখা হয়েছিল, সারাদিনে বাবু আমার সামনে আসেন নি। বাবুর মুখ বড় গম্ভির, একটু বেদনা মাখানো।

পিতলের কলসের দুপাশে বসিয়ে দেওয়া হল আমাকে আর হিমাদ্রিকে। হিমাদ্রির হাতে আমার হাত তুলে দেওয়ার সময়ে বাবু চোখের কোল মোছেন। ব্রাহ্মনের মন্ত্র, প্রদীপের উত্তাপ, ধুপকাঠির ধোঁয়া, সব মিলিয়ে এক অধভুত অনুভুতি আমার শরীরে ভর করে। বিয়ের মন্ত্র শুরু হয়। মৈথিলী আমার বেনারসির লাল আঁচল হিমাদ্রির সাদা জোড়ের কোনে বেঁধে দিল। আমার জীবন অবশেষে এক অচেনা অজানা ব্যাক্তির ভাগ্যের সাথে বাঁধা পরে গেল। হোমের আগুন জ্বলে ওঠে। সপ্তপদীর ডাক আসে, সেই বহ্নিশিখাকে সাক্ষী করে নিতে হবে জীবনের একসাথে থাকার প্রতিজ্ঞা। এই কি আমি চেয়েছিলাম? আমি চোখ বন্ধ করে নেই কিছুক্ষণের জন্য। চোখ খুলে ছোটমা আর মৈথিলীর দিকে তাকাই। মৈথিলীর চোখে জল, ঠোঁটে হাসি, ছোটমা মৃদু মাথা নাড়িয়ে আমাকে আশীর্বাদ জানায়। এক এক পাঁকে আমি আমার অতীত সেই সপ্তপদির বহ্নিশিখায় পুড়িয়ে ছারখার করে দিলাম। বুক আর জ্বলে ওঠেনি সেই অতীত জ্বালিয়ে দেওয়ার সময়। 

সিঁদুর পরানোর সময় এসে গেল। হিমাদ্রি আঙটি সিদুরে ডুবিয়ে আমার সিঁথিতে ছুঁইয়ে দিয়ে পেছন দিকে টেনে দিল। প্রথমে সেই আংটি আমার কপাল ছুঁয়ে যায়, ঠিক যেখানে ওর ঠোঁটের পরশ লেগে। আমি চোখ বন্ধ করে নেই, আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি, যে, যেখানে ওর ঠোঁটের পরশ লেগে, সেখান সেদিন অন্য একজন সিঁদুর পড়িয়ে নিজের করে নেবে। বুক একটু কেঁপে উঠেছিল, কিন্তু থামিয়ে দিলাম সেই কম্পন, অনেক আগে চলে এসেছি আমি। পিছনে ফেরার আর পথ নেই আমার। সিঁদুর পরানো শেষ কিন্তু আমার নাকের ওপরে এক ফোঁটাও সিন্দুর পরে না। সবাই চেঁচিয়ে ওঠে, নাকে যে সিঁদুর পরেনি, সবার একটা অন্ধবিশ্বাস যে কনের নাকের ওপরে সিঁদুর পড়লে সেই বর কোনে কে খুব ভালবাসে। মৈথিলী আলতো করে আমার মাথা সামনের দিকে ঠেলে দেয় কিন্তু তা সত্তেও একফোঁটা সিঁদুর আমার নাকের ওপরে পরে না। আমি ওদের কান্ড দেখে হেসে মনে মনে ফেলি, কিন্তু কেউ তাতে ক্ষান্ত নয়।

মৈথিলী সবার উদ্দেশ্যে জোর গলায় বলে, “ও একটা গরু নয় যে বারেবারে মাথা নাড়াবে।”

ওখানে দাঁড়ান সবাই ভাবে যে মৈথিলী আমাকে আগলে রাখছে কারন আমি সারা দিনের উপসে আর বিয়ের হট্টগলে হয়ত ক্লান্ত, কিন্তু আমি জানতাম ওর মনের আসল অভিপ্রায়। মৈথিলী প্রানপন চেষ্টা করে যায় আমাকে সব বিপদের থেকে আগলে রাখতে কিন্তু ভবিতব্যের সামনে সবাইকে হার মানতে হয়, অগত্যা মৈথিলী তার সাধের ননদিনিকে বাচাতে সক্ষম হয় না শেষ পর্যন্ত। 

আমার চোখের পাতা ভিজে ওঠে, চোখের কোন থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরে, সেই অশ্রু তে অনেক কিছু মেশানো ছিল সেদিন। আমার দুঃখ আমার কষ্ট, আমার বেদনা, আমার রাগ, আমার ভালোবাসা, অজানার ডাক, অনন্ত শূন্যতা অনন্ত অন্ধকার। আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করি, সত্যি কি আমি খুশি? আমি জানিনা। আমি ত ছোটমা আর বাবুর ঋণ শোধ করেছিলাম, নিজের জীবনের দাম দিয়ে। হৃদয়ের এক এক পাঁজর দিয়ে বানানো একটা বাক্সে আমি আমার অতীত, আমার ভালোবাসা, আমার স্বপ্ন তালা বন্ধ করে সেই পাঁজরের বাক্স ছুঁড়ে ফেলে দিলাম অতল সমুদ্রের গহিনে।




দু’নয়ন ভাবলেশ হীন, ঠোঁটে নকল হাসি টেনে ঝাপসা দৃষ্টি হোমের আগুনে নিবদ্ধ। আমার সামনে সপ্তপদীর লেলিহান শিখায় “পরী” জ্বলছে, “মিতা” আমার পাশ থেকে সরে দাঁড়াল, বিয়ের পিঁড়িতে বসে এক নতুন “শুচি”, শুচিস্মিতা কর্মকার!
[+] 2 users Like Mr Fantastic's post
Like Reply
#68
পিনুদা তুমি যদি অনুমতি দাও তাহলে আমি বাকিটা অনুবাদ করার চেষ্টা করতে পারি  Namaskar Namaskar

জানি তোমার মতো নিপুণ ভাবে দক্ষতার সাথে লিখতে পারবো না। ভালো না লাগলে আমি তৎক্ষণাৎ লেখা বন্ধ করে দেবো  Namaskar

তবে সময় লাগবে। ভাবটা নিজের মধ্যে আনার জন্য দুটো উপন্যাসই পুরোটা পড়তে হবে, তার উপর pressure of work from home is really killing my leisure time. 
Like Reply
#69
(25-09-2020, 08:09 PM)Mr Fantastic Wrote: পিনুদা তুমি যদি অনুমতি দাও তাহলে আমি বাকিটা অনুবাদ করার চেষ্টা করতে পারি  Namaskar Namaskar

জানি তোমার মতো নিপুণ ভাবে দক্ষতার সাথে লিখতে পারবো না। ভালো না লাগলে আমি তৎক্ষণাৎ লেখা বন্ধ করে দেবো  Namaskar

তবে সময় লাগবে। ভাবটা নিজের মধ্যে আনার জন্য দুটো উপন্যাসই পুরোটা পড়তে হবে, তার উপর pressure of work from home is really killing my leisure time. 

অনুবাদ করার আগে দুটো গল্প ভালো করে পড়বে, মন দিয়ে নয়, পারলে নিজের আত্মা দিয়ে একটু পড়বে ( এটা আমার একান্ত অনুরোধ Namaskar Namaskar Namaskar Namaskar Namaskar ) আর পোস্ট করার আগে প্লিজ একবার আমাকে ই মেল কর dhrubajhaldar ar gmail dot com.
[Image: 20210115-150253.jpg]
[+] 3 users Like pinuram's post
Like Reply
#70
এই গল্পে Adultry ট্যাগ কেন? এটা ত আমার একদম বোধগম্য হচ্ছে না Huh দয়া করে ওটা সরিয়ে Romantic নয়ত Non-erotic ট্যাগ দেওয়ার অনুরোধ জানাই !!!!!!!
[Image: 20210115-150253.jpg]
[+] 2 users Like pinuram's post
Like Reply
#71
(25-09-2020, 08:43 PM)pinuram Wrote: এই গল্পে Adultry ট্যাগ কেন? এটা ত আমার একদম বোধগম্য হচ্ছে না Huh দয়া করে ওটা সরিয়ে Romantic নয়ত Non-erotic ট্যাগ দেওয়ার অনুরোধ জানাই !!!!
আপনাকে একটাই অনুরোধ, দয়াকরে গল্পটার 2nd পার্ট এর পুরোটা বাংলায় অনুবাদ এর ব্যবস্থা করুন। আর যে পারছি না যে জ্বালা নিয়ে বসে থাকতে। ওদের মধুর পরিণতি না দেখা অব্দি খুব ই কষ্ট হচ্ছে। প্লিজ কিছু একটা করুন। প্লিজ আর এই কষ্ট সহ্য হচ্ছে না।
[+] 1 user Likes sumits53a's post
Like Reply
#72
(25-09-2020, 09:06 PM)sumits53a Wrote: আপনাকে একটাই অনুরোধ, দয়াকরে গল্পটার 2nd পার্ট এর পুরোটা বাংলায় অনুবাদ এর ব্যবস্থা করুন। আর যে পারছি না যে জ্বালা নিয়ে বসে থাকতে। ওদের মধুর পরিণতি না দেখা অব্দি খুব ই কষ্ট হচ্ছে। প্লিজ কিছু একটা করুন। প্লিজ আর এই কষ্ট সহ্য হচ্ছে না।

আপনাকে ইংলিশ গল্পটার লিংক পাঠিয়েছি ইনবক্সে, আশা করি আপনার যন্ত্রণার উপশম হবে  Smile
Like Reply
#73
(25-09-2020, 08:40 PM)pinuram Wrote: অনুবাদ করার আগে দুটো গল্প ভালো করে পড়বে, মন দিয়ে নয়, পারলে নিজের আত্মা দিয়ে একটু পড়বে ( এটা আমার একান্ত অনুরোধ  Namaskar Namaskar Namaskar Namaskar Namaskar ) আর পোস্ট করার আগে প্লিজ একবার আমাকে ই মেল কর dhrubajhaldar ar gmail dot com.

আপনার উপদেশ মেনে চলবো   Namaskar   Namaskar
দুটো গল্পই নিজের অন্তরাত্মা দিয়ে আরেকবার পড়বো  Heart Heart আর ইমেল করে আপনাকে ফেসবুকে জানিয়ে দেবো
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply
#74
Good things are really happening now.
Fantastic দাদা , প্রচুর আশা জাগিয়ে দিলে তুমি ,
Wish you all the best for a grand success

clps thanks yourock
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#75
(25-09-2020, 08:43 PM)pinuram Wrote: এই গল্পে Adultry ট্যাগ কেন? এটা ত আমার একদম বোধগম্য হচ্ছে না Huh দয়া করে ওটা সরিয়ে Romantic নয়ত Non-erotic ট্যাগ দেওয়ার অনুরোধ জানাই !!!!!!!

Requesting Nefertiti to change it's category from Adultery to Romantic, Pinuram himself wants it to be !!!
[+] 2 users Like Mr Fantastic's post
Like Reply
#76
বাকি গল্পটা অনুবাদ হবে শুনেই চারিদিকে কেমন খুশির আমেজ ছড়িয়ে পড়লো! আশা রাখি এই চৌচির শুষ্ক হৃদয়ে এক পশলা বৃষ্টি রূপে অনুবাদ গুলো ফিরে আসবে।
[+] 2 users Like Thumbnails's post
Like Reply
#77
Amio khushi holam Bangla anubad obe shune.....ami english jani na
[+] 2 users Like sorbobhuk's post
Like Reply
#78
(27-09-2020, 01:02 AM)Thumbnails Wrote: বাকি গল্পটা অনুবাদ হবে শুনেই চারিদিকে কেমন খুশির আমেজ ছড়িয়ে পড়লো! আশা রাখি এই চৌচির শুষ্ক হৃদয়ে এক পশলা বৃষ্টি রূপে অনুবাদ গুলো ফিরে আসবে।

আমি চেষ্টা করবো আপনাদের আশার যথাযথ মর্যাদা রাখতে  Heart  Namaskar তবে আরও দিন চারেক সময় লাগবে।
[+] 3 users Like Mr Fantastic's post
Like Reply
#79
(25-09-2020, 08:40 PM)pinuram Wrote: অনুবাদ করার আগে দুটো গল্প ভালো করে পড়বে, মন দিয়ে নয়, পারলে নিজের আত্মা দিয়ে একটু পড়বে ( এটা আমার একান্ত অনুরোধ  Namaskar Namaskar Namaskar Namaskar Namaskar ) আর পোস্ট করার আগে প্লিজ একবার আমাকে ই মেল কর dhrubajhaldar ar gmail dot com.
খুব খুশি হলাম অনুমতি দিয়েছেন দেখে।আসলে এই গল্পটার জন্য কত বছর ধরে যে অপেক্ষায় আছি তা বলাই বাহুল্য।যদিও শেষ পরিণতি অনেকে প্রকাশ করে দিয়েছে তারপরও মাঝের টুইস্ট টা  এখনো অজানা।আর ফ্যান্টাস্টিক দাদাকে শুভকামনা আশা করি আমাদের সব অপূর্ণতা দূর হবে।আপডেট এর অপেক্ষায় রইলাম।অনেক অনেক ভালবাসা।
[+] 1 user Likes johny23609's post
Like Reply
#80
(27-09-2020, 07:46 PM)Mr Fantastic Wrote: আমি চেষ্টা করবো আপনাদের আশার যথাযথ মর্যাদা রাখতে  Heart  Namaskar তবে আরও দিন চারেক সময় লাগবে।

ফ্যান্টাস্টিক দাদা , কিছু এগিয়েছে কি অনুবাদের কাজ !!

তর্ যে আর সয়না !!!!!!! 

Smile Smile
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply




Users browsing this thread: 3 Guest(s)