Thread Rating:
  • 32 Vote(s) - 3.22 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
মহানগরের আলেয়া
রক্তের খেলা (#১০)

ঘড়ি দেখে দানা, রাত সাড়ে দশটা বাজে। মহানগরে পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত বারোটা হয়ে যাবে। গাড়ি নিয়ে গ্রামের মধ্যে দিয়ে যাওয়া যাবে না। একা নয়নাকে গাড়িতে করে মাঠের মধ্যে দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেয়। বাকিদের গাড়ি নিয়ে ওর পিছুপিছু আসতে বলে। এবোড়খাবোড় মাঠের মধ্যে দিয়ে নাচতে নাচতে গাড়ি চালিয়ে বড় রাস্তা ধরে। বড় রাস্তায় ওঠার আগে এক বার পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখে। বিমান চন্দের বাগান বাড়ি দাউদাউ করে জ্বলছে। ততক্ষণে মনে হয় গ্রামের লোকজন জড়ো হয়ে গেছে ওইখানে। রাতের নিস্তব্ধতা চিরে বহু মানুষের হইচই শোনা যায়। বিন্দুমাত্র অপেক্ষা না করে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে দেয়।

কোমরে শুধু মাত্র একটা তোয়ালে, ঊর্ধ্বাঙ্গ খালি এইমত অবস্থায় মহানগরে পৌঁছালে সমস্যায় পরে যাবে। পেছনের সিটে নয়না তখন অজ্ঞান। তোয়ালে দিয়ে ওর শরীর যদিও ঢেকে দিয়েছিল কিন্তু গাড়ির নাচনের ফলে তোয়ালে আবার সরে গেছে। বেশ কিছুদুর গিয়ে একটা খালি জায়গা দেখে গাড়ি দাঁড় করিয়ে দেয়। বাকিদের মহানগরে ফিরে যেতে বলে আর বলে মহুয়াকে যে জানিয়ে দেয় দানা ঠিক আছে। শক্তি আর বলাইকে গাড়ি পরিস্কার করার সরঞ্জাম আনতে অনুরোধ করে, রাতের মধ্যেই গাড়ি পরিষ্কার করে ফেলেতে হবে। নয়নাকে ওর বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে তারপরে বাড়ি ফিরবে বলে জানিয়ে দেয়। আকরাম শক্তি গাড়ি চালিয়ে মহানগরের দিকে চলে যায়। কোথায় যাবে এত রাতে? নিজের বাড়িতে না নয়নার বাড়িতে? ওকে আর নয়নাকে রক্তাক্ত এইমত অবস্থায় দেখলে মহুয়া ভিরমি খেয়ে যাবে, ভয়ে কেঁদে ফেলবে। নয়নার বাড়িতে যাওয়া উচিত, ওইখানে ওকে রেখে তারপরে নিজের বাড়ি চলে আসবে। না না, নিজের বাড়িতে যাওয়াই বিবেচ্য, মহুয়া এতক্ষণে নিশ্চয় চরম উৎকণ্ঠায় প্রহর গুনছে। এতক্ষণ পরে আর মাথা কাজ করছে না। বারেবারে রুহির আদো আবদার কানে ভেসে আসে, "ডিনার?" চোরা পকেটে যে মোবাইলটা ছিল সেটা এতক্ষণে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে ওর জামা কাপড়ের সাথে।

সকাল হলেই এই শহর জ্বলে উঠবে, একসাথে দুই তাবড় রাজনৈতিক নেতা খুন হয়েছে। সকাল হলেই পুলিস গোয়েন্দা নিজেদের তদন্তে নেমে পড়বে। নিজেকে কি ভাবে বাঁচাবে সেটা ভাবে, যদিও নিজে থেকে একটাও গুলি চালায়নি দানা। যতদূর মনে পড়ে ওই বাড়িতে ওর অস্তিত্বের প্রমান নেই কিন্তু নয়নার অস্তিত্বের প্রমান হয়ত খুঁজে বের করে নেবে গোয়েন্দারা। নয়নাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে দানার ধরা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নয়নাকে সরিয়ে ফেলার চেষ্টা চালাতে হবে।

একটা সিগারেট জ্বালিয়ে জলের খোঁজে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে। একটু দূরে রাস্তার পাশে একটা পুকুরের দেখা পায়। তোয়ালে খুলে পুকুরে নেমে গলা পর্যন্ত ভালো ভাবে স্নান করে নেয়। তোয়ালে দিয়ে গা হাত পা মুছে আবার তোয়ালে কোমরে জড়িয়ে এপাশ ওপাশ দেখে। একটা প্লাস্টিকের বোতল পেয়ে যায় আর তাতে পুকুর থেকে জল নিয়ে নেয় নয়নার জন্য। গাড়িতে এসে নয়নার মুখে চোখে জলের ছিটা মারতেই ভয়ার্ত চোখ মেলে আসেপাসে তাকায় নয়না। কোথায় আছে ঠাহর পেতে একটু সময় লাগে। নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে সারা শরীরে রক্ত মাখা, ওর শরীরে একটা তোয়ালে জড়ানো। প্রচন্ড আতঙ্কে নয়নার চেহারা রক্ত শুন্য, চোখে ভাষা নেই। দানাকে দেখে ফ্যাকাসে চেহারায় আবার কেঁদে ফেলে।

মাথা জোরে জোরে নাড়িয়ে আর্তনাদ করে, "আমার সব শেষ হয়ে গেল দানা, আমার সব শেষ হয়ে গেল।"

দানা ওর পাশে বসে প্রবোধ দিয়ে বলে, "শান্ত হও নয়না, নিজে বেঁচে গেছ এই অনেক। ওইখানে থাকলে তুমিও বাপ্পার গুলিতে নয়ত নিতাইয়ের গুলিতে প্রান হারাতে।"

ওর বুকের ওপরে কিল মারতে মারতে চেঁচিয়ে ওঠে, "আমি কি করবো, দানা। আমি সব কিছু হারিয়ে ফেলেছি।"

দানা ওর হাত ধরে শান্ত কণ্ঠে বলে, "কাছেই একটা পুকুর আছে। সব থেকে আগে ওই পুকুরে নেমে স্নান করে গায়ের রক্ত ধুয়ে ফেল। তারপরে দেখি কোথায় যাওয়া যায়, কি করা যায়।"

নয়না তোয়ালে জড়িয়ে দানার পেছন পেছন পুকুর পাড়ে আসে। কোনোদিন কি পুকুরে নেমেছিল এই অভিনেত্রী নয়না বোস? তোয়ালে খুলে উলঙ্গ হয়ে পুকুরে নেমে, দানার নির্দেশ মতন গলা পর্যন্ত ভালো করে ডলে ডলে রক্ত মুছে স্নান সেরে ফেলে। তোয়ালে দিয়ে শরীর মুছে খানিকটা শান্ত হয়। কেঁদে কেঁদে চোখ মুখ ফুলে গেছে, বেদনার সাথে সাথে চেহারায় ভয়ার্ত চাহনি। সাক্ষাৎ মৃত্যুর কবল থেকে কোনোরকমে বেঁচে ফিরে এসেছে। দানার বাজু আঁকড়ে ধরে ওর দেহের উত্তাপ নিজের দেহে মাখিয়ে নেয়। দানার দিকে প্রগাড় কৃতজ্ঞতার ভরা চোখে তাকায়। দুই চোখ ছলকে ওঠে। এই অশ্রু কি মেকি না সত্যি? দানা ওই অশ্রু দেখে ভোলার পাত্র আর নয়। তাও চেহারায় শান্ত ভাব এনে ওকে গাড়িতে উঠিয়ে দেয়। পেছনের সিটে কুঁকড়ে পা গুটিয়ে এক কোনায় বসে পড়ে নয়না। খালি রাস্তা ধরে প্রবল গতিতে গাড়ি চালিয়ে দেয় মহানগরের উদ্দেশ্যে।

নয়না মিহি কণ্ঠে ওকে ধন্যবাদ দিয়ে বলে, "তোমাকে কি বলে ধন্যবাদ জানাবো ভেবে পাচ্ছি না দানা। তুমি না থাকলে সত্যি আজকে ওইখানে মরে পড়ে থাকতাম।" একটু থেমে জিজ্ঞেস করে, "কিন্তু ভেবে পাচ্ছি না, বাপ্পা নস্কর এই বাড়ির খবর কি ভাবে পেল?"

সামনের আয়নায় নয়নার চোখে চোখ রেখে উত্তর দেয় দানা, "ওইদিন বাপ্পা নস্করকে হুমকি দিয়ে শালা ভুল করেছিলাম। জানতাম না যে শালা মাদারচোদ আমার পেছনে লোক লাগাবে। শালা আমাকে অনুসরন করতে করতে যে শেষ পর্যন্ত এইখানে এসে পৌঁছাবে সেটা আমার ধারনার বাইরে ছিল।"

কোনরকমে ঠোঁটে ম্লান হাসি টেনে বলে, "আমাদের কপালে মৃত্যু লেখা ছিল না তাই ভগবান বাঁচিয়ে দিয়েছেন।"

দানা মনে মনে হেসে ফেলে, বাঁচানোর চক্রান্ত ওর। এরপরে না হলে মোহন খৈতান আর সিমোন খৈতানকে ফাঁদে কি করে ফেলবে? গাড়ি চালাতে চালাতে মাথায় ষড়যন্ত্র আঁটে যদি সব কিছু ঠিকঠাক হয় তাহলে তিন চারদিনের মধ্যেই নয়নার ভবলীলা সাঙ্গ হয়ে যাবে সেই সাথে এক নয় মোহন খৈতানের, নয় সিমোন খৈতানের। তবে এখন পর্যন্ত কঙ্কনা দেবনাথ আর নাসরিন আখতার বাকি। এদের কি ভাবে ধরবে? সঠিক জানা নেই তবে কঙ্কনা আর নাসরিনকে পারলে নিজের সামনে ওদের জানিয়ে খুন করবে। রমলা বিশ্বাস আর দুলাল মিত্রকে দানা কিছু করতে চায় না।

নয়না ওকে জিজ্ঞেস করে, "কোথায় যাচ্ছি?"

দানা উত্তর দেয়, "আমার বাড়ি।"

চুপচাপ নয়না জানালার বাইরে ভাসাভাসা চোখ নিয়ে তাকিয়ে কোথাও হারিয়ে যায়। কিছু পরে নয়নার দুই চোখ ছলকে ওঠে, ঠোঁট জোড়া তিরতির করে কেঁপে ওঠে। বেদনা ভরা কণ্ঠে বলে, "সনু আর সুমিতা চলে গেল।" দুই হাতে মুখ ঢেকে কেঁদে ফেলে, "সমুদ্র আমার ভালোবাসা দানা, ওকে আমি ভালবাসতাম।"

কি বলছে নয়না? দানা একটু আধটু যে বোঝেনি সেটা নয়। দানা চোরা হেসে গাড়ি চালাতে মন দেয়। কিন্তু এই ধূর্ত হিংস্র নারীকে কোন মতেই বাঁচিয়ে রাখা উচিত নয়। বিমান আর নেই এখন হয়ত মহানগরে ফিরে গিয়ে মোহনের কোলে ঢলে পড়বে আর ওর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করবে। একটু আগেই বিমান আর সমুদ্রের কাছে ওর বিরুদ্ধে ফাঁদা ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সব কিছু জেনে ফেলেছে। এই চূড়ান্ত ছলনাময়ী নারীকে কোনোদিন বিশ্বাস করা উচিত নয়।
[+] 2 users Like Mr Fantastic's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
একটানা দুই ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে মহানগরে পৌঁছে যায়। রাত দেড়টা বাজে, রাস্তা নির্জন হয়ে গেছে তাও রাস্তায় বেশ কিছু ট্রাক আর ইতস্তত পুলিসের গাড়ির দেখা পাওয়া যায়। বড় কালো দামী বি এম ডাবলু দেখে কেউ আটকাতে সাহস করে না। সোজা নোনাঝিলে নিজের বাড়ির নিচে এসে গাড়ি দাঁড় করায়। বারান্দা থেকে মহুয়া গাড়ি দেখতে পেয়েই দৌড়ে নিচে নেমে আসে। চোখে মুখে চরম উৎকণ্ঠা। নাড়ু ফোন করে যদিও জানিয়ে দিয়েছিল কিন্তু চোখে না দেখা পর্যন্ত স্বস্তির শ্বাস নিতে পারেনি। বুক চেপে রুদ্ধশ্বাসে এতক্ষণ অধীর উৎকণ্ঠায় প্রহর গুনছিল। ছলছল চোখে এক দৌড়ে গাড়ির কাছে চলে আসে।

ড্রাইভারের দরজা খুলে দানাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে, "এতক্ষণ লাগে নাকি আসতে?"

পেছনে গলা খাঁকড়ানির আওয়াজ শুনে চমকে যায়। পেছনে তাকিয়ে দেখে, একটা তোয়ালে গায়ে জড়িয়ে নয়না বসে। নাড়ু যে বলেছিল নয়নাকে ওর বাড়িতে নামিয়ে দেবে? এত রাতে কেন বাড়িতে এনেছে? চোখ মুছে দানাকে জিজ্ঞেস করে, কি ব্যাপার? দানা ওদের জন্য জামা কাপড় আনতে অনুরোধ করে। তড়িঘড়ি করে দৌড়ে, দানার জন্য একটা ট্রাকসুট আর নয়নার জন্য একটা টপ আর লম্বা স্কার্ট নিয়ে আসে। দানা ট্রাক সুট পরে গাড়ি থেকে নেমে পরে আর নয়নাকে পোশাক ধরিয়ে পরতে বলে দেয়।

গাড়ি থেকে নেমেই মহুয়াকে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমু খায়। দুই হাতে শরীরের সব শক্তি নিঙরে নিয়ে দানার দেহ নিজের সাথে মিলিয়ে দেয় মহুয়া। বুকের মধ্যে মাথা গুঁজে হৃদপিণ্ডের ধুকপুকানি কান পেতে শোনে। রোজ দিন ওই হৃদপিণ্ডের ধুকপুক আওয়াজ কানে না আসলে ঠিক শান্তি পায় না। দানার শরীরের উত্তাপ নিজের শরীরের না মাখালে মনে হয় যেন ওর প্রসাধনী ওর সাজ অসম্পূর্ণ। ওর পুরু ঠোঁটের চুমু না খেলে ওর মন ভরে না। রাতে যদি জড়িয়ে না শোয় তাহলে ঘুম আসে না কিছুতেই।

দানা ওর মুখ আঁজলা করে তুলে ধরে বলে, "এই তো আমি পাপড়ি। এইবারে শান্তি?"

ছলছল চোখে ওর দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে। অনেককিছু বলার আছে কিন্তু পেছনে নয়নাকে দেখে থেমে যায়। বুক ফেটে যাচ্ছে ওর গল্প শোনার জন্য কিন্তু দুইজনের চোখে চোখে কথা হয়। "পরে বলব।" আলতো মাথা দোলায় মহুয়া, "ঠিক আছে।"

মহুয়াকে সব কিছু না বলা পর্যন্ত স্বস্তি পাচ্ছে না কিছুতেই, কিন্তু নয়নার সামনে মুখ খোলা যাবে না একদম। ওর সামনে বেফাঁস কিছু বেড়িয়ে গেলেই মুশকিল। ওইদিকে আবার শক্তি বলাইকে বলে দেওয়া হয়েছে কেমিক্যাল আর গাড়ি পরিষ্কার করার সরঞ্জাম নিয়ে আসতে। পেছনের সিটে বেশ কয়েক জায়গায় রক্তের ছোপ ছোপ দাগ পরে গেছে। গাড়ির নিচে মাঠের মাটি পরিষ্কার করে ফেলতে হবে, চাকার খাঁজ থেকে খুটে খুটে মাটি ফেলে বের করে দিতে হবে, ভালো ভাবে গাড়ি পরিষ্কার করতে হবে।

দানা নয়নার দিকে তাকিয়ে দেখে। ফ্যাকাসে চেহারা, প্রচন্ড বেদনায় কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সারা শরীর শুকিয়ে গেছে। চোখে মুখ রক্তহীন, ভাষাহীন চাহনি নিয়ে মহুয়া আর দানার দিকে তাকিয়ে কেঁদে ফেলে। দানা চাইছিল নয়নাকে ওর বাড়িতে ছেড়ে দিয়ে আসতে, কিন্তু মহুয়া বারন করে।

নয়নার অলক্ষ্যে দানার দিকে চোখ টিপে বলে, "মেয়েটা কাঁদছে আর তুমি কি যে বল না?" নয়নাকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে, "কি হয়েছে তোমার?" এমন একটা ভাব দেখায় যেন কিছুই জানে না মহুয়া।

ওর উষ্ণ হাতের পরশ পেয়ে মহুয়ার কাঁধে মাথা গুঁজে ডুকরে কেঁদে ফেলে নয়না, "আমার সব শেষ হয়ে গেছে মহুয়া। আমার সব শেষ হয়ে গেছে। আমি এত পাপ করেছি আজকে সব পাপের শাস্তি একসাথে পেয়ে গেছি মহুয়া।"

ওর মাথায় হাত বুলিয়ে প্রবোধ দিয়ে শান্ত কণ্ঠে বলে, "উপরে চলো, একটু শান্ত হও, তারপরে শুনবো কি হয়েছে।"

দানার চোয়াল কঠিন হয়ে যায়। নয়নাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে নারাজ, কিন্তু মহুয়া চোখের ইশারায় ওকে শান্ত হতে অনুরোধ করে। ইঙ্গিতে জানিয়ে দেয়, বেফাঁস আচরন করলে হিতে বিপরিত হয়ে যেতে পারে। নয়নার মনে সন্দেহ জাগতে পারে। ওর কি বলা উচিত যে নয়না রুহিকে অপহরন করার চক্রান্ত করেছিল? না এখুনি বলা ঠিক হবে না তাহলে মহুয়া আরো ভয় পেয়ে যাবে। নিজের বাড়ির ওপরে পাহারা আরো কড়া করে দিতে হবে।

নয়নাকে ধরে ধরে বসার ঘরে নিয়ে আসে মহুয়া। কাজের মেয়ে নিতা ততক্ষণে ঘুম থেকে উঠে গেছে। অভিনেত্রী নয়নাকে বাড়িতে ওই অবস্থায় দেখে চমকে যায়। মহুয়া ওদের নির্দেশ দেয় জল আনতে। নয়নাকে জল খেতে দিয়ে ঘটনা বলি জিজ্ঞেস করে। মহুয়ার হাত আঁকড়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে রাতের ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরন দেয়। শুধু মাত্র নিজেদের কাম কেলির ঘটনা বাদ দিয়ে বাকি সব বলে মহুয়াকে। শুনতে শুনতে মাঝে মাঝে মহুয়া আঁতকে ওঠে, "উফফফ তাই নাকি?" "জানতে পারলো কি করে?" ইত্যাদি জিজ্ঞেস করে। চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ মাখিয়ে নেয় মহুয়া। বুকের রক্ত চঞ্চল, এই ছলনাময়ী নারীর সাথে উচিত হয়েছে। কতজনের সাথে ছলনার খেলা করেছে তার ইয়াত্তা নেই, তার পরিনাম একদিন এইভাবে হবে সেটা অবশ্যাম্ভাবি। নয়নাকে অতিথিদের শয়ন কক্ষে শুইয়ে দিল মহুয়া। আতঙ্কে আর দুঃখে এই কয় ঘণ্টায় ওর শরীরের সব রক্ত শুকিয়ে গেছে। শরীরে কিছু আর বেঁচে নেই। চোখ বুজলেও মাঝে মাঝেই কেঁপে কেঁপে ওঠে, কেঁদে কেঁদে ওঠে। মহুয়া আর দানা বড় মুশকিলে পড়ে যায়।

সকাল হতে আর কয়েক ঘন্টা বাকি, হাতে সময় খুব কম, নেই বললেই চলে। পরবর্তী পদক্ষেপের কথা ভাবতে হবে কিন্তু বাড়িতে নয়না থাকায় সেটা কিছুতেই সম্ভবপর হয়ে উঠছে না।

কিছুপরে শক্তি আর বলাই, গাড়ি পরিস্কার করার সরঞ্জাম নিয়ে বাড়িতে চলে আসে। দানা ওদের নিয়ে গ্যারেজে চলে যায় গাড়ি পরিস্কার করতে। মহুয়াও ওর পেছন পেছন নেমে আসে। বাড়ির বাইরে একমাত্র একটু মন খুলে কথা বলতে পারা যাবে।

গ্যারেজে ঢুকেই ওকে জড়িয়ে ধরে মহুয়া, "তুমি গেলে আর আমার বুকের এক লিটার রক্ত শুকিয়ে গেল।"

দানা হেসে ওর কপালে চুমু খেয়ে বলে, "তোমাকে আর রুহিকে ছেড়ে কোথাও কি যেতে পারি বলো।"

শক্তি বলাই গাড়ি পরিস্কার করতে লেগে পরে। দানা এক এক করে সব ঘটনা মহুয়াকে খুলে বলে। বাথরুমের চরম কাম কেলির কথা লুকায় না। শুনতে শুনতে মহুয়া মাঝে মাঝেই আঁতকে ওঠে, "বাপরে কি অসম্ভব ঝুঁকি নিয়েছিলে।"

শক্তি ওদিক থেকে বলে, "আর বলবেন না ম্যাডাম। আমাদের বের হতেই দেয়নি। সবার হাতে পিস্তল ছিল কিন্তু এতক্ষণ বসে বসে শুধু মশা মেরে গেলাম একটাও গুলি মারতে পারলাম না।"

দানা মিচকি হেসে বলে, "তুই তোর কাজ কর বাড়া। পরে গুলি চালাস। গুলি চালানো আমাদের পরিকল্পনায় ছিল না।"

মহুয়া ওর গালে চাঁটি মেরে বলে, "ইসসস, এত চাপা উৎকণ্ঠার মধ্যেও তোমার ওইসব করতে মন চাইলো? তুমি না যাচ্ছেতাই একটা মানুষ মাইরি।"

দানা মিচকি হেসে বলে, "কি করব সোনা। না করলে ধরা পড়ে যেতাম ওদের কাছে। ওরা সবাই উলঙ্গ হয়ে সঙ্গমে মত্ত আর আমি জামা কাপড় পরে পকেটে পিস্তল গুঁজে পড়ে থাকতাম নাকি? অন্তত নয়নার সাথে করতেই হতো না হলে মেয়েটা সন্দেহ করতো।"
[+] 2 users Like Mr Fantastic's post
Like Reply
Dada taratari update diben
[+] 1 user Likes S2929's post
Like Reply
রক্তের খেলা (#)

এমন সময়ে কাজের মেয়ে মণি দৌড়ে নিচে এসে খবর দেয় নয়না বমি করছে। দানা আর মহুয়া দৌড়ে ঘরে ঢুকে দেখে, নয়না বমি করে বাথরুমের মেঝেতে অচৈতন্য হয়ে লুটিয়ে পড়ে রয়েছে। সমুদ্র আর সুমিতার মৃত্যু ওকে বড় নাড়িয়ে দিয়েছে। কাজের মেয়ে দুটোর সাহায্যে নয়নার চোখে মুখে জল দিয়ে হুঁশ ফিরিয়ে আনে। দানা ওকে পাঁজাকোলা করে তুলে আবার বিছানায় শুইয়ে দেয়। সেই রাতে দানার আর মহুয়ার আর ঘুম হল না। বসার ঘরে বসে সকালের অপেক্ষায় প্রহর গোনে দুইজনে।

সকালের দিকে টিভি চালায় দানা, এতক্ষণে নিশ্চয় ওই খবর চারদিকে আগুনের মতন ছড়িয়ে গেছে। খবরের চ্যানেল খুলতেই বড় বড় করে ভেসে ওঠে ব্রেকিং নিউজ। রাজনৈতিক দলনেতা বিমান চন্দের বাগান বাড়িতে বিমান চন্দ খুন হয়েছে, সেই সাথে বিধায়ক বাপ্পা নস্কর খুন হয়েছে। অভিনেত্রী নয়নার বোসের সেক্রেটারি সুমিতা আর ম্যানেজার সমুদ্র মারা গেছে। আরো চারজনের মৃত দেহ পাওয়া গেছে। বাগান বাড়ির একাংশ আগুনে পুড়ে গেছে কিন্তু দেহ গুলো ভালো ভাবে জ্বলার আগেই গ্রামের লোকজন আগুন নিভিয়ে দেয়। কেন এতগুলো লোক একসাথে এক জায়গায় মারা গেছে সেই সম্বন্ধে তদন্ত চলছে। তবে পুলিস গোয়েন্দার প্রাথমিক সুত্রের খবর, বাপ্পা নস্কর আর বিমান চন্দের রাজনৈতিক বিরোধিতার ফলে পরস্পরকে খুন করেছে। বাড়ি থেকে বেশ কয়েকটা জ্বলে যাওয়া বন্দুক উদ্ধার করেছে পুলিস। অভিনেত্রী নয়না বোস কি ওই স্থানে উপস্থিত ছিল সেটা সঠিক এখন জানা যায়নি। তবে অভিনেত্রীর ফোন পাওয়া যাচ্ছে না, বাড়িতে ফোন করেও তার খবর পাওয়া যায়নি। সাংবাদিকের যতদূর ধারনা, ওরা সবাই ওই বাগান বাড়িতে মধু লীলা করতে গিয়েছিল, কারন সুমিতা আর বিমানের দেহে কোন বস্ত্র ছিল না। বাড়ির পেছনে সমুদ্রের মৃত দেহে শুধু মাত্র একটা জাঙ্গিয়া ছিল।

সকাল সকাল দানার ফোন বেজে ওঠে। কে করলো এত সকালে ফোন? ফোন তুলে দেখে, শিল্পপতি মোহন খৈতান ফোন করেছে। মহুয়া আর দানা, চাপা উত্তেজনায় মুখ চাওয়াচায়ি করে। সঙ্গে সঙ্গে টিভি বন্ধ করে দুইজনে শোয়ার ঘরে ঢুকে পরে। পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে।

ফোন তুলে ঘুম জড়ানো কণ্ঠে দানা বলে, "হ্যালো, হঠাৎ এত সকালে ফোন করেছেন?"

ওইপাশ থেকে মোহন চাপা গলায় প্রশ্ন করে, "আপনি এখন ঘুমাচ্ছেন? টিভি খুলে দেখুন সর্বনাশ হয়ে গেছে। সারা জগত তোলপাড় হয়ে গেছে।"

দানা না জানার ভান করে প্রশ্ন করে, "কি হয়েছে একটু খুলে বলুন।"

মোহন খৈতান চেঁচিয়ে ওঠে, "অবুঝ হওয়ার ভান করবেন না মিস্টার বিশ্বজিৎ মন্ডল। আপনি ভালো ভাবেই জানেন আমি কিসের কথা বলতে চাইছি। বিমানের বাগান বাড়িতে নয়না ছিল আমি জানি।"

দানার কান গরম হয়ে যায়। ভেবেছিল এই কথা কেউ জানে না এইবারে পুলিসের কাছে যদি মোহন খৈতান মুখ খুলে দেয় তাহলে ওর সর্বনাশ। মোহন চাপা কণ্ঠে প্রশ্ন করে, "নয়না কোথায়, মিস্টার মন্ডল? আমি হলফ করে বলতে পারি আপনি নয়নার খবর জানেন।"

দানা চুপ করে যায়, মহুয়া চোখ বুজে কিছুক্ষণ ভাবনা চিন্তা করে দানাকে নির্দেশ দেয় সব সত্যি বলতে। দানা অবাক হয়ে যায়, ফোন চেপে চাপা আঁতকে ওঠে, "কি বলতে চাইছো?"

মহুয়া ঠোঁট আঙ্গুল দিয়ে চুপ করে থাকতে বলে বলে, "ওকে বলো তুমি আর নয়না ওইখানে ছিলে। কিন্তু বাপ্পা নস্কর আসার আগেই তোমরা দুইজনে ওই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেছিলে। বাকি আমি তোমাকে পরে বলছি। তুমি আগে মোহনের সাথে কথাবার্তা সারো।"

মহুয়ার পরিকল্পনা ঠিক বুঝে উঠতে পারে না দানা, কিন্তু বুদ্ধিমতী প্রেয়সী নিশ্চয় কিছু একটা ভেবেই ওকে এই কথা বলতে বলেছে। মোহনের প্রশ্নের উত্তরে বলে, "হ্যাঁ আমি জানি নয়না কোথায়। নয়না আমার বাড়িতে।"

ওইপাশে গর্জে ওঠে মোহন খৈতান, "আপনি সবার সাথে চাল খেলে বেড়াচ্ছেন। আপনাকে আমি দেখে নেব।"

দানা চোয়াল চেপে ক্রোধ সংবরণ করে বলে, "আমি কারুর সাথে কোন চাল চালিনি মিস্টার খৈতান। আমি জানি না বাপ্পা নস্কর কি ভাবে ওই বাড়ির খবর পেল। আমি এটাও ভালো ভাবে জানি একটু বাদে পুলিস গোয়েন্দা আমার বাড়িতে চলে আসবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে। যেটা সত্যি সেটাই আমি ওদের বলবো।"

মোহন মুষড়ে পড়ে দানার কথা শুনে। ভাঙ্গা কণ্ঠে দানাকে বলে, "ওই ছেনালি মাগী নয়নাকে আমি কিছুতেই ছাড়বো না। ওই মাগীর চক্করে পরে আমার বন্ধু প্রান হারিয়েছে। ওকে আমি কিছুতেই ছাড়ব না।"

দানা ওকে শান্ত হতে অনুরোধ করে বলে, "কয়েক সপ্তাহ খুব গরম থাকবে এই মহানগর। একসাথে দুই বড় রাজনৈতিক দলের নেতার খুন সেই সাথে অভিনেত্রী নয়নার সেক্রেটারি আর ম্যানেজারের খুন। এখুনি মাথা গরম করে কিছু করতে যাবেন না, মিস্টার খৈতান। হিতে বিপরিত হয়ে যাবে। কয়েক দিন শান্ত থাকুন।"

কণ্ঠস্বর নামিয়ে ফিসফিস করে বলে, "আপনি যখন আমাকে বিশ্বাস করে চারশো কোটি টাকার প্রকল্প দিয়েছেন তখন এইটুকু বিশ্বাস রাখুন আমি আপনাকে সাহায্য করবো।"

মোহন ভাঙ্গা কণ্ঠে বলে, "বলছেন?"

দানা উত্তর দেয়, "হ্যাঁ, আরো একটা কথা। পরের সপ্তাহে আপনার ওই বাগান বাড়িতে একবার দেখা করতে চাই। বিস্তারে সব পরিকল্পনা ওই বাড়িতে জানাবো আপনাকে।"

মোহন দাঁত পিষে বলে, "আমার সাথে ছল চাতুরি চলবে না মিস্টার মন্ডল। আপনি জানেন না আমি কি করতে পারি।"

দানা মনে মনে হাসে, জানে টাকার জোরে অনেক কিছু করতে পারে সিমোন আর মোহন খৈতান তবে এতদিন একটা রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়া ওদের মাথার ওপরে ছিল। সেটা সরে যেতেই ওরা দিশা হারা হয়ে পড়েছে। দানা জানিয়ে দেয় ওর সাথে কোন ছল চাতুরি করবে না।

ফোনে কথা শেষ হলে মহুয়াকে জিজ্ঞেস করে কেন ওকে সত্যি বলতে বলেছে। মহুয়া ফিসফিস করে ওকে বলে, "গোয়েন্দা পুলিস তদন্তে নামবে এইবারে। এটা খুব সংবেদনশীল কেস। এই ঘটনায় রাজনৈতিক মহল তোলপাড় হয়ে উঠবে। কেউ কাউকে ছেড়ে দেবে না, জিত। গোয়েন্দা পুলিসকে সব সত্যি বলবে, শুধু মাত্র একটা জায়গায় একটু হেরফের করবে। বলবে তুমি আর নয়না, বাপ্পা নস্কর আসার আগেই ওই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গিয়েছিলে তাই তোমাদের খুঁজে পায়নি ওরা আর মারতে পারেনি। বাকিটা নিজের বুদ্ধি বিবেচনা করে ঠাণ্ডা মাথায় সকল উত্তর দেবে। গোয়েন্দারা জিজ্ঞেস করলে বাপ্পা নস্কর আর নয়নার সম্পর্কের বিষয়ে জানিয়ে দেবে, সেই সাথে বাপ্পা নস্করের দৌরাত্মের সব কিছু খুলে বলে দেবে। দেখবে এক ঢিলে দুই পাখী মরে যাবে। মৈনাকের খুনের তদন্ত যদি একবার খুলে যায় তাহলে সিমোন ধরা পড়বে। আর যদি ধরা না পড়ে তাহলে আমরা নয়নাকে কাজে লাগাবো। বর্তমানে সুমিতা আর সমুদ্রের মৃত্যুর ফলে নয়না খুব ভেঙ্গে পড়েছে। নয়নার যা মনের অবস্থা ওকে সম্পূর্ণ গল্প বানাতে গেলেই গোয়েন্দারা ধরে ফেলবে। আমি নয়নাকে বুঝিয়ে দেব ভালো করে চিন্তা নেই।"

দানা বুঝতে পারে ওর প্রেয়সী সুচতুর এবং বুদ্ধিমতী। নিজেকে বাঁচাতে হলে সত্যির আশ্রয় নেওয়া বিবেচ্য তাতে অনেক সুবিধা। সঙ্গীতার প্রেমিকের খুনিদের ধরা যাবে।

আলোচনা সেরে বাইরে বেড়িয়ে দেখে নয়না ঘুম থেকে উঠে গেছে। চোখ মুখ ভার, চেহারায় ক্লান্তির সাথে সাথে ভীষণ বেদনার ছাপ স্পষ্ট। কাজের মেয়ে চা বানিয়ে আনলে বসার ঘরে ওরা তিনজনে বসে পরবর্তী পদক্ষেপের আলোচনা করে। মহুয়া নয়নাকে পাখী পড়ার মতন জানিয়ে দেয় কি কি বলতে হবে। কখন নয়না ওই বাড়িতে গিয়েছিল কাদের সাথে গিয়েছিল, কে কে এসেছিল। দানাকে ডাকা হয়েছিল সব যেন খুলে বলে পুলিসকে। শুধু মাত্র একটা ছোট ফের বদল করতে হবে এই গল্পে, নয়নাকে জিজ্ঞেস করলে যেন বলে যে দানা আসার কিছু পরেই ওরা ওই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গিয়েছিল। গাড়ি নিয়ে অন্য কোথাও একটু খোলা আকাশের নীচে নিজদের সান্নিধ্য উপভোগ করছিল। শেষের কথা শুনে নয়না চমকে ওঠে। দানার স্ত্রী সত্যি জানে যে ওদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে? তাও এত মাথা ঠাণ্ডা রেখে কি করে মহুয়া ওকে এই সব কথা বলছে? কে এরা, এদের মনে কি কিছু ভিন্ন চক্রান্ত চলছে? মহুয়া আর দানার ঠাণ্ডা হিমশীতল চেহারা দেখে বোঝার উপায় নেই ওদের মনের ভেতরে কি চলেছে।

ঠিক সেই সময়ে রমলার ফোন আসে দানার কাছে। এতদিন পরে রমলার ফোন পেয়ে দানা অবাক হয়ে যায়। ফোন নিয়ে স্টাডিতে চলে যায়। রুহি ততক্ষণে জেগে গেছে। মহুয়া রুহিকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরে। নয়না চুপচাপ বসার ঘর মাথা ধরে কাঁদতে শুরু করে দেয়। ওর চোখের জল আর থামতেই চায় না। সব থেকে প্রিয় বান্ধবী আর বুকের ভালোবাসার মৃত্যুতে প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছে।

রমলা ফোন তুলেই দানাকে বলে, "কি করে এই সব হলো?"

দানা অবাক কণ্ঠে প্রশ্ন করে, "কি হলো?"

রমলা চাপা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, "না জানার ভান করবে না দানা। আমি জানি তুমি বাপ্পা নস্করের খুব কাছের লোক সেই সাথে আবার মোহনের বিশাল প্রকল্প গুলো হাতে পেয়ে গেছ সুতরাং তুমি বিমানের কাছের লোক। এত কিছু হয়ে গেল আর তুমি না জানার ভান করছো?"

চোয়াল চেপে হেসে দানা উত্তর দেয়, "কি চাও তুমি?"

রমলা ফিসফিস করে বলে, "এইবারে ময়দান একদম খালি হয়ে গেছে। দুলাল একবার তোমার সাথে দেখা করতে চায়।"

এতদিনে দুলাল মিত্রের খেয়াল পড়লো? দানা চোয়াল চেপে উত্তর দেয়, "এখন আমার কাছে সময় নেই রমলা। পরে দুলালের সাথে আলোচনা করব এই বিষয়ে। একটু পরেই হয়তো পুলিস গোয়েন্দা সাংবাদিকের ভিড় লেগে যাবে আমার বাড়িতে। ওদের সামনে আমি সব সত্যি কথা বলবো।"

রমলা আঁতকে ওঠে, "কি বলছ তুমি? না না, নয়না ফেঁসে গেলে আমিও ফেঁসে যাবো। গোয়েন্দারা খুঁজে খুঁজে নয়নার সাথে আমার সম্পর্ক বের করে ফেলবে আর....."

দানা চোরা হেসে বলে, "তুমি চুপ থাকো আমিও চুপ থাকবো। শুধু একটা কথা মনে রেখো, কঙ্কনা আর নাসরিন যেদিন এই শহরে পা রাখবে সেইদিন আমি যেন খবর পাই।"

রমলা ওকে বলে, "হ্যাঁ হ্যাঁ তাই হবে।"

এমন সময়ে রুহি এসে ওকে বকাঝকা শুরু করে দেয়, "ডিনার করতে আতনি কেন?"

রুহিকে কোলে নিয়ে ওর নরম টোপা গাল চুম্বন করে বলে, "কাল রাতে একটু কাজ ছিল, মা। আজকে আমরা সবাই মিলে ডিনার করবো।"

রুহি মাথা নাড়িয়ে বলে, "আন্তি কাঁদছে কেন?"
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply
রুহি নয়নার সামনে গেছে জানতে পেরেই ওর মাথা গরম হয়ে যায়। দানা কিছুতেই চায় ওই হিংস্র জঘন্য মেয়ের দৃষ্টি কোনোভাবে ওর মেয়ের ওপরে পরুক। কিন্তু কচি রুহিকে কি আর সেইসব কথা বলে বোঝানো যায়? তাই রুহিকে শান্ত কণ্ঠে উত্তর দেয়, "আন্টির মন খারাপ তাই কাঁদছে। মাম্মা কোথায়?"

রুহি উত্তর দেয়, "মাম্মা আর আন্তি ভেতলে।"

একটার পর একটা ঝড়। এই ঝঞ্ঝা এত সহজে থামবে বলে মনে হয় না। ষড়যন্ত্র ফাঁদার সময়ে এত অঙ্ক কষে দেখেনি দানা। ভেবেছিল নয়নাকে বাঁচিয়ে নিলেই কাজ শেষ, কিন্তু এটা মাথায় ছিল না যে নয়নাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আহত নয়না সত্যি বলে দিতে পারে পুলিসের সামনে। মহুয়া পাশে না থাকলে এই যাত্রায় বাঁচা অসম্ভব হয়ে যেত। মনা পিন্টু যথারীতি সময় মতন ওর বাড়িতে চলে আসে। আকরাম, নাসির, শঙ্কর রামিজ সবার ফোনের এক এক করে উত্তর দিতে হয়। ফোনের রিং কিছুতেই আর থামতে চায় না। নয়নাকে ওর বাড়িতে পৌঁছে দিতে পারলে শান্তি। রুহিকে নিয়ে ভেতরের ঘরে ঢুকে দেখে নয়নাকে সান্ত্বনা দিয়ে শান্ত করিয়ে দিয়েছে মহুয়া। দানাকে বলে ওকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে। সেই সাথে আরো জানিয়ে দেয়, এতক্ষণে নিশ্চয় ওর বাড়ির সামনে সাংবাদিকের ভিড় উপচে পড়েছে, সেই গুলো যেন সাবধানে এড়িয়ে যায়। হয়ত পুলিস ওর বাড়িতে পৌঁছে যাবে আর সেই সুত্র ধরেই একদিন দানার বাড়িতে আসবে। তার মধ্যে দানার আর মহুয়া পরবর্তী পরিকল্পনার কথা ভেবে নেবে।

নয়নাকে নিয়ে ওর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয় দানা। পথে যেতে যেতে নয়না দানাকে বারে বারে ধন্যবাদ জানায় আর বলে মহুয়া আর দানা না থাকলে রাতেই হয়তো ওর মৃত্যু হত। দানা মনে মনে হাসে, মাছের চারাকে কি কেউ অত সহজে মেরে ফেলে? মাছ ধরার জন্য কেঁচোকে জীবিত রাখতে হয়। নয়না জানিয়ে দেয়, মহুয়ার নির্দেশ মতন যা যা পাখী পড়া ওকে করানো হয়েছে, অক্ষরে অক্ষরে সেই কথা মেনে চলবে। নয়না একদম হাতের মুঠিতে তবে, সেই সাথে দানা এটাও জানে এই ছলনাময়ী আহত নারী যেদিন সুস্থ হয়ে দাঁড়াবে সেদিন খুঁজে খুঁজে সমুদ্র আর সুমিতার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেবে। তার আগেই দানাকে সঙ্গীতার ;., আর ইন্দ্রাণীর নাম করে হুমকি দেওয়ার প্রতিশোধ নিতে হবে। নয়না ওর পরিবারের সম্বন্ধেও জেনে গেছে, সুতরাং একবার যদি কোন ভাবে আঁচ পায় যে দানা এই সকল ষড়যন্ত্রের মূলে তাহলে ওকেও ছেড়ে দেবে না। ভবিষ্যতে নয়না যে মোহনের সাথে হাত মিলিয়ে কাজ করবে না সেটা কে বলতে পারে? তবে মোহন এখন নয়নার ওপরে ক্ষেপে, এটাই ওকে কাজে লাগাতে হবে।

নয়নার বাড়ির সামনে প্রচুর সাংবাদিকের ভিড়। গাড়ি থেকে নামতেই ওকে সাংবাদিকেরা ছেঁকে ধরে। "কোথায় ছিলেন আপনি?" "আপনার সেক্রেটারি আর ম্যানেজারের মৃত্যুর বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কি?" "আপনার সাথে বিমান চন্দের কি সম্পর্ক?" "আপনার সেক্রেটারি আর ম্যানেজার কি ভাবে বিমান চন্দকে চেনে?" "ওদের কে খুন করছে বলে আপনার মনে হয়?" ইত্যাদি প্রশ্নের ঝড় বয়ে আসে ওদের দিকে। দানার একবার মনে হচ্ছিল উত্তর দেয়, "শালা তোদের বাপ মরলে তোরা কি করিস।" কিন্তু চুপচাপ নয়নাকে আগলে বাড়ির ভেতরে ঢুকে যায়।
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply
রক্তের খেলা (#১২)

বাড়িতে ঢুকে দেখে, নিতা আর কমলা বুবাইকে আগলে ধরে জুবুথুবু হয়ে বসার ঘরে বসে। বলা ছিল যে রাতে ফিরবে না কিন্তু সকাল থেকে দরজার কলিং বেল আর থামতে চায় না। নয়নার দেহ রক্ষী এতজন মানুষ কে সামলাতে পারেনি।

নয়নাকে পেয়ে ওর ভাই ওকে জড়িয়ে ধরে মাথা দুলিয়ে প্রশ্ন করে, "ওরা কেন? ওরা কেন?"

কি উত্তর দেবে ভেবে পায়না নয়না। ওকে নিয়ে ভেতরে যেতে বলে দেয়। দানা ওকে বলে সারাদিন যেন বাড়ির বাইরে না বের হয়। হয়ত পুলিস আসতে পারে আর পুলিস আসলে যেমন ভাবে মহুয়া ওকে শিখিয়ে দিয়েছে ঠিক সেই কথা গুলো যেন বলে। বাধ্য মেয়ের মতন নয়না মাথা নাড়ায়।

এমন সময়ে মহুয়ার ফোন, "এই তাড়াতাড়ি বাড়িতে এস। বড়দা আর সাত্যকি বাবু এসেছেন।"

দানার মাথায় বাজ পড়ে। তবে এটা জানে সাত্যকি বাবু যখন বাড়িতে এসেছেন তখন এই সমস্যার সুরাহা কিছু একটা হবে। তাড়াতাড়ি গাড়ি চালিয়ে বাড়ি পৌঁছে যায়। বাড়িতে পৌঁছেই দেখে বসার ঘরে সাত্যকি চ্যাটার্জি আর মহেন্দ্র বাবু বসে।

দানাকে দেখে মহেন্দ্র বাবু স্মিত হেসে প্রশ্ন করে, "কখন ফিরেছিস তুই?"

মহুয়া ওর হয়ে উত্তর দেয়, "রাতেই ফিরে এসেছিল, বড়দা।"

সাত্যকি চ্যাটার্জি চোরা হাসি দিয়ে বলেন, "শেষ পর্যন্ত আইন হাতে তুলে নিলি?"

সাত্যকি চ্যাটার্জির পাশে বসে দানা ওকে বলে, "বিশ্বাস করুন স্যার, আমি মেয়ের দিব্যি দিয়ে বলছি, আমি আইন হাতে নেইনি। আমার কাছে পিস্তল বন্দুক কিছুই ছিল না।"

মহেন্দ্র বাবু চোরা হাসি দিয়ে দানার দিকে তাকায়। সাত্যকি চ্যাটার্জি জিজ্ঞেস করাতে দানা এক এক করে সব কিছু খুলে বলে তাঁকে। দানা শুধু মাত্র একটা জায়গায় মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে বলে রক্তারক্তি কান্ডের আগেই নয়নাকে নিয়ে বেড়িয়ে গিয়েছিল সেটা বলে কারন নয়নার আর ওর বক্তব্যে যদি মিল না থাকে তাহলে সমস্যায় জড়িয়ে পড়বে। গুলি খরচ না করেই নিখুঁত ষড়যন্ত্র ফেঁদে সবাইকে একসাথে শেষ করে দেওয়ার কথা শুনে সাত্যকি চ্যাটার্জি বিস্মিত হয়ে যান। দানা সেই সাথে এটাও জানায় যে বাপ্পা নস্করের বিরুদ্ধে ওর কাছে প্রচুর তথ্য প্রমান আছে। বাপ্পা নস্কর ভাড়াটে গুন্ডা দিয়ে ফারহানের ওপরে গুলি চালিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছিল।

ফোন করে ইন্দ্রনীল আর ভুপেনকে বাড়িতে ডাকে। ইন্দ্রনীল আর ভুপেন, সাত্যকি চ্যাটার্জিকে সব ঘটনা খুলে বলে। নিতাই ভাড়াটে গুন্ডা এনেছিল। ফারহানকে মারার কারন শুনে ক্রোধে ঘৃণায় সাত্যকি চ্যাটার্জির শরীর রি রি করে জ্বলে ওঠে। দাঁতে দাঁত পিষে বলেন এইরকম নিষ্ঠুর দুরাত্মা পাপী লোকের মৃত্যু হওয়া অনেক ভালো।

সঙ্গীতার পাঠান চিপ সাত্যকি চ্যাটার্জির হাতে দানা তুলে দেয়। ওই চিপে, বাপ্পা নস্করের বিরুদ্ধে প্রচুর তথ্য প্রমান রয়েছে, সেই সাথে কোন আমলা কোন পুলিস কোন সরকারী অফিসার কবে কোথায় কত টাকা খেয়ে কি কি কাজ করেছে সব কিছু আছে। সাত্যকি চ্যাটার্জি অবাক হয়ে দানা আর মহুয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। মহেন্দ্র বাবুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেন এতদিন এইসব ওকে কেন জানানো হয়নি। মহেন্দ্র বাবু জানিয়ে দেন, সময় হয়নি তাই জানানো হয়নি। এখন সময় হয়েছে আর সেই সাথে যাদের সরানোর কথা ছিল তারা সবাই সরে গেছে। মহেন্দ্র বাবু বলেন, দানার মাথায় বুদ্ধি আছে। মহেন্দ্র বাবুর কাছে যতদিন কাটিয়েছে ততদিন খালি সময়ে বই পড়ে কাটিয়েছে। সবকিছু শোনার পরে অনেকক্ষণ চুপ করে বসে থাকেন সাত্যকি চ্যাটার্জি।

তারপরে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বলেন, "সেদিন নাতনি কে দেখতে পেলাম না। কোথায়?" মহুয়া আর দানা স্বস্তির শ্বাস নেয়। মহুয়া ছলছল চোখে সাত্যকি চ্যাটার্জির দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতা ব্যাক্ত করে। সাত্যকি চ্যাটার্জি মহুয়ার ছলছল চোখ দেখে বলেন, "কি হলো বৌমা? যাও নাতনিকে নিয়ে এসো, একটু দেখি।"

মহুয়া রুহিকে কাছে ডাকে। রুহি মায়ের আড়াল থেকে জুলুজুলু চোখে মহেন্দ্র বাবু আর সাত্যকি চ্যাটার্জির দিকে তাকিয়ে থাকে।

সাত্যকি চ্যাটার্জি রুহিকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করেন, "তোমার কি খেতে পছন্দ?"

মহুয়ার আড়ালে দাঁড়িয়ে রুহি আদো আদো কণ্ঠে বলে, "চকোলেট।"

সাত্যকি চ্যাটার্জি হেসে বলেন, "ইসসস রে সোনা, চকোলেট তো আনিনি।"

রুহি পুলিসের উর্দি পরা সাতকি চ্যাটার্জিকে দেখে নালিশ জানায়, "দুত্তু ডাডা, ডিনার করেনি আমাল সাথে।"

সাত্যকি চ্যাটার্জির সাথে সবাই হেসে ফেলে। ওকে খাওয়ানোর সময়ে মাঝে মাঝেই ভয় দেখানো হয়, তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও না হলে পুলিস ধরে নিয়ে যাবে। ও জানে পুলিস "দুত্তু" লোকেদের ধরে নিয়ে যায় তাই নালিশ।

সাত্যকি চ্যাটার্জি ওকে হেসে বলেন, "আজকে মাম্মা আর বাবা তোমার সাথে ডিনার করবে। চিন্তা নেই।" তারপরে দানাকে বলেন, "শোন, তোকে একবার আমার সাথে আমার অফিসে যেতে হবে। সেইখানে তোর স্টেটমেন্ট নেব। চিন্তা নেই তোর, তোর গায়ে আঁচ পড়বে না।"

স্বস্তির শ্বাস নেয় দানা আর মহুয়া। পুলিস গোয়েন্দা নিয়ে বড় ভয় ছিল, কখন কোথা থেকে কি সুত্র খুঁজে বের করবে তার নেই ঠিকানা। ওদের অভয় দিয়ে বলেন, ভুপেন আর ইন্দ্রনীল কে ও একবার পুলিস স্টেসানে এসে স্টেটমেন্ট দিতে হবে। আদালতে তিনি সব চেষ্টা করবেন যাতে বাপ্পা নস্করের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়ে যায়। যেহেতু নয়না, বিমান চন্দ আর বাপ্পা নস্করের সাথে জড়িত তাই এখুনি কিছু কথা দিতে পারছেন না, তবে চেষ্টা করবেন নয়নাকে দূরে সরিয়ে রাখতে। দানা সেটাই চায়, একবার পুলিসের হাতে চলে গেলে পুলিস ওর ওপরে নজর রাখবে তাহলে ওর চক্রান্তের কি হবে। মহুয়া আর দানা চোখে চোখে কথা সারে।

মহুয়া মৃদু আবেদন জানায় সাত্যকি চ্যাটার্জির কাছে, "প্লিস একটু দেখবেন। মেয়েটা বড় ভেঙ্গে পড়েছে।"

সাত্যকি চ্যাটার্জি ওর দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, "সত্যি বৌমা, তোমার মন বোঝা বড় মুশকিল। রাতে দানা আর নয়না কি কি করে বেড়িয়েছে সেটা জেনেও?"

মহুয়া মৃদু হেসে বলে, "মেথর যখন পায়খানা পরিস্কার করে তখন কিছুটা গুয়ের ছিটে ওর গায়ে পরে। মেথর যে একেবারে পরিস্কার থাকার চেষ্টা করবে সেটা কিন্তু কখনই সম্ভব নয়। আর এটাই অকাট্য সত্যি।"

সাত্যকি চ্যাটার্জি হেসে ফেলেন মহুয়ার কথা শুনে, "তুমি অনেক বুদ্ধিমতী আর সহনশীল মেয়ে, বৌমা।" দানার দিকে তাকিয়ে বলেন, "উঠি রে, দেখি কাল অথবা পরশু তোকে অফিসে ডেকে নেব।" রুহির দিকে তাকিয়ে হেসে বলেন, "পরের বার তোমার জন্য অনেক চকোলেট আনবো।"

সকাল থেকে একবিন্দু স্বস্তির শ্বাস নিতে পারেনি দুইজনার কেউই। বাড়ি ফাঁকা হতেই সোফায় গা ভাসিয়ে দেয় দানা। রুহি ওর কোলে ঝাঁপিয়ে কিছুক্ষণ মারামারি করে।

মহুয়া ওর পাশে বসে বলে, "বাপ রে, একের পর এক ঝড় চলছে।"

দানা মৃদু হেসে বলে, "একটা ঝড় শেষ হলো, এইবারে দ্বিতীয় ঝড়ের প্রস্তুতি নিতে হবে।"

মহুয়া গলা নামিয়ে ওকে বলে, "তোমার সাথে অনেক কথা আছে।"

দানা ভুরু কুঁচকে ইশারায় জানতে চায়, "কি?"

মহুয়া বলে, "ওই তোমার নয়নার ব্যাপারে। মেয়েটা প্রচন্ড ধুরন্ধর।"

দানা মাথা দোলায়, "জানি।"

মহুয়া বলে, "কি জানো?"

সত্য গোপন করে দানা উত্তরে বলে, "আমার বিরুদ্ধে কিছু একটা চক্রান্ত করেছিল ওরা, এই টুকু জানি।"

মহুয়ার চেহারা সঙ্গে সঙ্গে কঠিন হয়ে যায়, "মেয়েটা সত্যি শয়তানের গ্রহে জন্মেছিল। জানো ওর আসল নাম কি? ওর নাম শায়ন্তনি বসাক।"

দানা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, "তুমি কি করে জানলে।"

মহুয়া ওকে বলে, "কাঁদতে কাঁদতে পাপের পরিতাপ করতে করতে নিজের কথা খুলে বলে আমাকে। ওর ইতিহাস শুনে আমার গায়ের রক্ত হিম হয়ে গেছিল জানো।"

তারপরে, মহুয়া, নয়না বোসের গল্প দানাকে শুনায়। নয়নার আসল নাম, নয়না নয়, ওর নাম শায়ন্তনি বসাক। ওদের বাড়ি ছিল দূরে খয়রাসোল নামে এক জায়গায়। বাবা, অশোক বসাক রেল ইঞ্জিনের কারখানায় চাকরি করতো, আর মা, মৃদুলা বসাক ছিলেন গৃহিণী। কুড়ি বছর আগে, যখন বুবাই খুব ছোট, হামাগুড়ি পর্যন্ত দিতে জানত না, সেই সময়ে এক সন্ধেতে শায়ন্তনির বাবা, ওর মা আর মায়ের মামাতো ভাই, সুখেনকে খুন করে। শায়ন্তনি তখন বাইরের বারান্দায় ভাইকে নিয়ে পুতুল খেলায় মত্ত ছিল। রক্তাক্ত বাবা ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে ওর ভাইকে তুলে ধরে মেঝের ওপরে ছুঁড়ে মারতে উদ্যত হয়। কচি বাচ্চাটার মাথা ফেটে যায়। ছোট শায়ন্তনি, বাবার এই রুদ্র মূর্তি দেখে ভয় পেয়ে মা'কে ডাক দেয়, কিন্তু ঘরের মধ্যে ঢুকে মায়ের আর দুর সম্পর্কের মামার মৃত দেহ দেখে ভয় সিটিয়ে যায়। ওর বাবা, ওর ভাইকে মেরে ফেলতে যায় তখন একটা দা দিয়ে শায়ন্তনি ওর বাবার হাতের ওপরে বসিয়ে দেয়। শায়ন্তনি তারস্বরে কান্না জুড়ে দেয়। কাটা হাতে ওর বাবা ওইখান থেকে পালিয়ে যায়। ছোট বালিকা শায়ন্তনি ওর অজ্ঞান ভাইকে বুকে ধরে মাথা থেকে রক্তক্ষরণ বন্ধ করার প্রবল প্রচেষ্টা করে। আশেপাশের লোকজন ছুটে আসে ওদের সাহায্যের জন্য, সঙ্গে সঙ্গে বুবাইকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শায়ন্তনির দিদা ওদের ভার নিতে চলে আসে। চিকিৎসা করে ডাক্তার ওদের জানায় যে মাথার ঘিলুতে জোর আঘাতের ফলে বুবাই আর পাচজনের মতন সাধারন জীবন যাপন করতে পারবে না।
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply
মায়ের মৃত্যুর পরে আর বাবা পালিয়ে যাওয়ার পরে, শায়ন্তনি আর বুবাই দিদার সাথে, নুরপুরে মামাবাড়িতে চলে আসে। মামা মামির লাথি ঝেঁটা ইত্যাদি সহ্য করে বুবাইকে কোলে আঁকড়ে ধরে বাঁচার পথ খোঁজে। ওর দিদা ওকে কলেজে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিল, তাই দশ ক্লাস পর্যন্ত পড়াশুনা করতে পেরেছিল। দিনে দিনে বুবাই বড় হল আর শায়ন্তনি বুঝতে পারল যে ওর ভাই মন্দবুদ্ধি।

সব থেকে বড় বাধা মায়ের পেটের ভাই, বুবাই। ছোট বেলায় মায়ের বুকের দুধ পায়নি, রোজ রাতে দিদির বুকে মায়ের স্তন খুঁজতে চেষ্টা করত। ছোট শায়ন্তনি কেঁদে বুক ভাসিয়ে দিত, কিন্তু ওর করার কিছু ছিল না। একটু দুধ পেলে নিজের বুকের মধ্যে লাগিয়ে ভাইয়ের মুখে ধরতো, সেই দুধ টুকু চেটে খেয়ে মনের সুখে দিদিকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়তো বুবাই। দিন দিন যত বড় হল তত একা একা হয়ে গেল, কেউ ওর সাথে খেলে না, কেউ ওর সাথে কথা বলে না। কিন্তু শায়ন্তনি ভাইকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারে না। দিদিকে ওর পাশে চাই, বড় হলেও ওর সেই স্তন থেকে দুধ খাওয়ার নেশা আর ছাড়ানো গেল না। ধীরে ধীরে বুবাই যত বড় হলো, তত ওর আবদার বেড়ে উঠল। শায়ন্তনির দেহে তখন ভরা যুবতীর লক্ষন। আড়ালে নিজের উধভিন্ন যৌবনা কচি স্তন খুলে দুধে মাখিয়ে যুবক বুবাইয়ের মুখে ধরতে হতো তবে ওর ভাই ঘুমাতো। দুধ খাওয়াতে খাওয়াতে সদ্য যুবতী শায়ন্তনির শরীরে যৌবনের সুখের হাতছানি মাঝে মাঝেই মাথা চাড়া দিয়ে উঠতো। আর সেই সময়ে শায়ন্তনি প্রেমে পড়ল, নুরপুর গ্রামের একটা ছেলের সাথে। ছেলেটা ওর কলেজেই পড়তো।

দশ বছর পরে, দিদা মারা যেতেই ওর মামা মামি অত্যাচার ওর ওপরে অনেক বেড়ে ওঠে। এক রাতে পাশের বাড়ির একটা মেয়ের সাহায্যে মামা মামির খাবারের সাথে ইঁদুর মারার বিষ মিশিয়ে মেরে ফেলে। তারপরে নিশুতি রাতে, নিজের ব্যাগ কাঁধে চাপিয়ে, ছোট ভাইয়ের হাত ধরে অজানা পথের দিকে পাড়ি জমায় শায়ন্তনি। নিরুদ্দেশের পথে এক নাম না জানা ট্রেনে উঠে পরে। শায়ন্তনির তখন বাড়তি বয়স, চাপা জামা ওর ফুলের কুঁড়ির মতন কচি দেহ পল্লবকে ঠিক ভাবে ঢেকে রাখতে অখম। ভিড় ভর্তি ট্রেনে অনেকেই ওর দিকে জুলুজুলু ক্ষুধার্ত চোখে তাকিয়ে।

সেই ট্রেনে সমরেশ নামের একজন বয়স্ক ভদ্রলোক শায়ন্তনিকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়। ভাইকে নিয়ে মৃত্যুর চেয়ে অজানা পথে পাড়ি দেওয়া সঠিক বলে মনে হয় তখন। খিদেতে পেট জ্বলছে, হাতে পয়সা কড়ি নেই, তাই কিছু না ভেবেই পঞ্চাশ ঊর্ধ্ব সমরেশের সাথে ওর বাড়িতে আসে। সমরেশে ওকে একটা কলেজে ভর্তি করিয়ে দেয়, বাড়ির কাজের সাথে সাথে পড়াশুনা আর ভাইকে দেখা। দেখতে সুন্দরী, ফর্সা, ঠিক মায়ের গায়ের রঙ আর বাবার সৌন্দর্য পেয়েছিল শায়ন্তনি। বারো ক্লাস পর্যন্ত পড়াশুনায় বেশ ভালো ছিল, ইচ্ছে ছিল আরো পড়াশুনা করার। সমরেশ বাবু বিপত্নীক, তাই বাড়ির সব কিছুতে ওদের অধিকার ছিল। সমরেশ বাবু সৌখিন মেজাজের লোক ছিলেন, বাড়িতে মদের আসর, লাস্যময়ী নারীদের নিয়ে কাম কেলির আসর বসতো। মাঝে মাঝেই পারলে শায়ন্তনিকে কাছে ডেকে গায়ে হাত বুলিয়ে দিতেন, এদিক ওদিকে ছুঁয়ে একটু আদর করে দিতেন। শায়ন্তনির খারাপ লাগতো, কিন্তু মুখ বুঁজে সহ্য করে থাকতো। একরাতে সমরেশ বাবু প্রচুর মদ খেয়ে শায়ন্তনিকে ;., করার চেষ্টা করে। বুবাই চেঁচিয়ে উঠে মারতে আসে সমরেশ বাবুকে। উল্টে সমরেশ বাবু, বুবাইয়ের চুলের মুঠি ধরে মেঝেতে ফেলে এলো পাথারি কিল চড় লাথি মারতে শুরু করে দেয়। সেই দেখে শায়ন্তনির মাথায় রক্ত চড়ে যায়, হাতের কাছে একটা ফুলদানি দিয়ে মাথার মধ্যে জোরে মারতেই, মাথা ফেটে যায় সমরেশ বাবুর। টলতে টলতে বারান্দা দিয়ে নিচে পড়ে গিয়ে মৃত্যু ঘটে। সবাই ভাবে, সমরেশ বাবু মদের ঝোঁকে বারান্দা থেকে পড়ে মারা গেছে।

বালিকা শায়ন্তনি আর সেই কচি বালিকা নেই, ইতিমধ্যে ওর শরীরে মাদকতাময় সৌন্দর্যের দেখা দিয়েছে। সমরেশ বাবু মারা যাওয়ার পরে ওর এক ফটোগ্রাফার বন্ধু, আদিত্য ওকে কাজের অছিলায় নিজের বাড়ি নিয়ে যায়। এক রাতে আদিত্য, শায়ন্তনিকে নিজের স্তন খুলে ভাইকে দুধ খাওয়ানোর দৃশ্য দেখে ফেলে। উদ্ভিন্ন যৌবনা ভীষণ সুন্দরী শায়ন্তনিকে দেখে, আদিত্য নিজের কামক্ষুধা আর সংবরণ করতে পারে না। একাকী ঘরের মধ্যে বন্ধে করে ওর সতীত্ব হরন করে। তবে ওর নারী সুখের বদলে আদিত্য ওকে সামান্য এক মেয়ে থেকে, মডেলিংয়ের পথ দেখিয়ে ছিল। শায়ন্তনি আর বুবাইকে নিয়ে আদিত্য এই মহানগরে আসে। প্রতিরাতে আদিত্যকে শারীরিক সুখ দিত শায়ন্তনি, আর দিনের বেলা আদিত্য ওকে নিয়ে বিভিন্ন মডেলিং এজেন্সির কাছে নিয়ে যেত। শায়ন্তনি নিজের নাম বদলে নয়না বোস হয়ে উঠল। একটু আধটু অভিনয় করতে পারতো নয়না, সেই দেখে আর প্রডিউসারের সাথে শুয়ে বেশ কয়েকটা ছোট ছোট রোল পেয়ে গেল। এক রাতে মদের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে আদিত্যকে মেরে ফেললো।

নিজের ইতিহাস মুছে শায়ন্তনিকে সম্পূর্ণ জ্বালিয়ে দিল নয়না বোস। যুবতী শায়ন্তনির মৃত্যুর পরে, সেই নারী হয়ে উঠল উদ্ভিন্ন যৌবনা লাস্যময়ী নয়না বোস। এই ঝকমকে দুনিয়ায় বাঁচতে হলে এক অবলা নারীকে নিজের শরীর সম্বল করেই বাঁচতে হবে। তারপরে আর পেছনে তাকায়নি নয়না। প্রডিউসার, ডাইরেক্টারের সাথে শুয়ে বসে নিজের কাজ হাসিল করেছে।

বছর চারেক আগে একটা পার্টিতে বাপ্পা নস্করের সাথে দেখা হয়। বাপ্পা নস্কর ওকে বড় নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন দেখায়। এতদিন শুধু শরীর দিয়ে ছোট ছোট রোল পেত, বাপ্পা নস্করের গুন্ডামির হুঙ্কারে বেশ কয়েকটা বড় রোল পেয়ে গেল। পেটে বিদ্যে ছিল, আর অভিনয় ভালোই করতে পারতো, নয়নাকে তাই আর পিছনে তাকাতে হলো না। ধীরে ধীরে নয়না নামকরা এক অভিনেত্রী হয়ে গেল। তবে বাপ্পা নস্কর ওকে বিশেষ টাকা দিয়ে সাহায্য করতো না, বরং ওকে স্বপ্ন দেখাত একদিন ওকে রাজনীতিতে নামাবে। কিন্তু চার বছর পরেও নয়নাকে রাজনীতিতে নামায়নি। নয়নার ইচ্ছে ছিল অভিনয় ছেড়ে রাজনীতি করার। যৌবন যতদিন ততদিন অভিনয়। বড় জোর দশ বারো বছর কাজ করা যায়, তারপরে বয়স হলে বয়স্ক অভিনেত্রীদের কেউ চিনতে চায় না। রাজনীতি করলে সারা জীবনের জন্য টাকা কামানো যাবে। বিমানের সাথে হাত মিলিয়ে বাপ্পা নস্করকে সরানো চক্রান্ত করে, কিন্তু দানা ওর ওপরে গুপ্তচর গিরি করাতে সেটা আর সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। বাকি কথা দানা ভালো ভাবেই জানে।

সবকিছু শোনার পরে, দানা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে। মহুয়া ওকে বলে, "এইবারে বুঝলে নয়না কত সাঙ্ঘাতিক মেয়ে। ওর প্রান ভোমরা ওর ভাই বুবাই। সুমিতা আর সমুদ্রকে ছাড়া এই জগতে আর কাউকে বিশ্বাস করতো না। এখন নিরুপায় তাই পরিতাপে আমাকে খুলে সব বলে দিল। সুমিতা, ওর মামা বাড়ির পাশের বাড়ির মেয়ে, যে ওকে ওর মামা মামিকে মারতে সাহায্য করেছিল। আর সমুদ্র সেই ছেলে যাকে ছোটবেলায় ভালোবেসে ছিল।"

"শায়ন্তনি" যে সমুদ্রের "শায়নি" সেটা এইবারে দানার কাছে পরিস্কার হয়ে গেল। দানার বুঝতে বাকি রইলো না যে এক আহত সাপের গর্তে মাথা ঢুকিয়েছে। নয়না ভেঙ্গে পড়েছে বটে, তবে উঠে দাঁড়ালে ওদের ছোবল মারবেই এই ধূর্ত ছলনাময়ী মহিলা।

সব কিছু শোনার পরে দানা খানিক চিন্তা করে ওকে বলে, "নয়না একটা আহত সাপ, পাপড়ি। বর্তমানে একটু বেকায়দায় পড়ে গেছে তাই ছোবল মারতে দেরি হবে। গতকাল রাত্রে আমি ওই বাড়িতে শুনেছি যে বিমান আর মোহন খৈতান আমার বিরুদ্ধে কোন চক্রান্ত করেছিল। ওরা তোমাকে আর রুহিকে অপহরন করার চক্রান্ত করেছিল।"

কথাটা বলার সময়ে দানার গলা কেঁপে ওঠে। সেই সাথে ভীষণ ক্রোধে আর বিস্ময়ে মহুয়ার চোখ ফেটে জল চলে আসে।

দানা বলে চলে, "এর পেছনে নিশ্চয় সিমোনে আর নয়নার মাথা আছে। বাপ্পাকে কি ভাবে মারা হবে সেটার ছক আসলে নয়না একসময়ে আমাকে বলেছিল, আর সিমোনের ছকেই কিন্তু সঙ্গীতার বদলে মৈনাকের মৃত্যু হয়েছে। সুতরাং এরা যেদিন জানতে পারবে বিমান, সমুদ্র আর সুমিতার মৃত্যুর পেছনে আমাদের মাথা কাজ করেছে, তাহলে আমাদের শেষ করে দেবে।"

মহুয়া দাঁতে দাঁত পিষে দানাকে বলে, "ওকে ওইখানে শেষ করে দিয়ে এলে না কেন?"

দানা মাথা চুলকে বলে, "তুমি বারন করেছিলে, তাই।"

একবার ঘাড় ঘুরিয়ে মেয়েকে দেখে দানার হাত শক্ত করে ধরে বলে, "এখন কি করা যায় বলো তো?"

একটু খানি ভেবে বলে, "আমার মাথায় একটা বুদ্ধি আছে। বর্তমানে নয়না খুব ভেঙ্গে পড়েছে আর তুমি ওকে বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছ। মোহন আর সিমোন এই সুযোগ নিতে চেষ্টা করবে, তার আগেই আমি যদি ওর পাশে ভালো বান্ধবীর মতন গিয়ে দাঁড়াই তাহলে নয়না বুকে বল পাবে। আর তখন দেখবে, ওকে ধরার জন্য মোহন হাঁসফাঁস করছে। সেই সুযোগ আমাদের কাজে লাগাতে হবে জিত।"

পরামর্শটা বেশ লাগে দানার, সেইসাথে মহুয়াকে পরামর্শ দেয় যেন খুব সাবধানে মেপে মেপে কথা বলে ওর সাথে।




********** পর্ব চোদ্দ সমাপ্ত **********
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply
পনেরো


রেড এন্ড ব্লু ক্লাব (#১)

পুলিস গোয়েন্দা তদন্তে নেমে অনেক কিছুই উদ্ধার করে। নয়নার একটা গলার হার ওই পোড়া বাড়িতে পাওয়া যায়। আগে থেকেই বলা ছিল যে নয়না ওদের জানাবে দানা আসার পরে ওরা ওইখান থেকে বেরিয়ে গেছিল তাই এই খুনোখুনির ব্যাপারে কিছুই জানে না। বাড়ির ভেতরের অধিকাংশ দেয়াল পুড়ে গেছে, বিছানা জ্বলে গেছে। সমুদ্রের দেহ বাদে সব কয়টা মৃতদেহ বেশ খানিকটা ঝলসে যায়। তবে কাউকে শনাক্ত করতে বিশেষ অসুবিধে হয়নি কারন আগুন আর গুলির শব্দ শুনে গ্রামবাসীরা এসে পড়েছিল। পুলিস আসার আগেই গ্রামের লোকজন এসে যাওয়ার ফলে অনেক সুত্র ওদের পায়ের তলায় চাপা পরে অথবা হাত লেগে যাওয়ার ফলে হারিয়ে গেছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, মৃত দেহে যে কয়টা গুলি পাওয়া গেছে সব কটার বন্দুক ওই বাড়িতেই পাওয়া গেছে। সুতরাং পুলিস এই সিদ্ধান্তে আসে যে বাপ্পা নস্কর আর বিমান চন্দের রাজনৈতিক দ্বন্দের ফলে পরস্পরকে খুন করে। বাকিরা সাথে থাকায় ওই গোলাগুলির মাঝে পরে প্রাণ হারিয়েছে। দানা আর ইন্দ্রনীলের সহযোগিতায় পুলিস বাপ্পা নস্করের বিরুদ্ধে প্রচুর জালসাজির নথিপত্র উদ্ধার করে। মৃত বাপ্পা নস্করের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। আদালতের আদেশে বাপ্পা নস্করের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। ভুপেনের সাহায্যে পুলিস খুঁজে খুঁজে নিতাইয়ের সঙ্গী সাথীদের গ্রেফতার করে। খুনের মামলায় দানার সাহায্যে পুলিস অনেক তথ্য প্রমান উদ্ধার করেছে সেটা খবরের কাগজে, টিভিতে প্রকাশ হয়ে যায়। কয়েকদিনের মধ্যে দানার সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পরে। দানা আর মহুয়া জানে এই সুনামের সাথে সাথে ওদের ওপরে বিরোধী পক্ষের নজরদারি বেড়ে উঠবে।

রাজনৈতিক মহল সরগরম। মহানগর জুড়ে দুই দলের মিটিং মিছিল বের হয়। একবার এক দলের রাজনৈতিক কর্মকর্তার বাড়ি ভাঙচুর হয় আর তার বদলে অন্য রাজনৈতিক কর্মকর্তার বাড়ি ভাঙচুর শুরু হয়ে যায়। পুলিস সেই সব আটকাতে হিমশিম খেয়ে যায়।

নয়না এক প্রকার গৃহ বন্দী হয়ে যায়। সাংবাদিকের ভিড় আর পুলিসের প্রশ্নাবলীর উত্তর দিতে দিতে হিমসিম খেয়ে গেছিল প্রায়। তবে দানাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন সাত্যকি চ্যাটার্জি, নয়নাকে বিশেষ পুলিস আদালতের ঝামেলা পোহাতে হয় না। দানার অনুরোধে, সাত্যকি চ্যাটার্জি নয়নার বাড়ির সামনে সাদা পোশাকের পুলিস মোতায়ন করে দেয়। যদিও আকরাম আর নাসির আড়াল থেকে নয়নার বাড়ির ওপরে নজর রেখে চলেছে। দানা জানে, বিমানের মৃত্যুর জন্য মোহন খৈতান দানাকে আর নয়নাকে দোষারোপ করবে আর সুযোগ পেলেই ওদের আক্রমন করবে। নয়নাকে সরাসরি আক্রমন করলেও দানাকে সরাসরি আক্রমন করতে চাইবে না, কারন মোহনের প্রচুর টাকার সম্পত্তি এখন পর্যন্ত দানার অধীনে। হয়ত মোহন কোন দুরাভিসন্ধি ফাঁদবে, যাতে আগে ওই প্রকল্প গুলো হাতাতে পারে তারপরে ওর ওপরে আক্রমন করবে।

ভদ্রতার মুখোশের আড়ালে মহুয়া সকাল দুপুর বিকেল, প্রত্যেক দিনই দুই তিন ঘন্টা অন্তর অন্তর নয়নাকে ফোন করে কুশল জিজ্ঞেস করতে ভোলে না। দানাকে বলে, এমন কোন পদক্ষেপ এখুনি নেবে না যাতে নয়নার মনে সন্দেহের উদ্রেক হয়। শুধু মাত্র সুযোগের অপেক্ষায় ওঁত পেতে থাকে। সমুদ্র আর সুমিতার মৃত্যুর পরে, পাশে কাউকে না পেয়ে এই কয়দিনে মহুয়ার ওপরে নয়না প্রচন্ড নির্ভরশীল হয়ে পরে। সব কথাতেই একবার করে মহুয়াকে ফোন করে শলা পরামর্শ নেয়। মহুয়া হাসি মুখে ওকে পরামর্শ দেয় বটে, কিন্তু মাথার পেছনে সেই এক চিন্তা ঘোরাফেরা করে এই ছলনাময়ী আহত নারী একসময়ে ওর মেয়েকে অপহরন করার চক্রান্ত করেছিল। এই মেয়ের চিতার ছাই না ওড়া পর্যন্ত শান্তিতে ঘুমাতে পারবে না ওরা। ইতিমধ্যে নয়না হয়তো নিশ্চয় নিজের সব শক্তি লাগিয়ে সুমিতা আর সমুদ্রের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।

নয়না, মোহন আর সিমোনের শেষ না দেখা পর্যন্ত দানার অথবা মহুয়ার কারুর মনে শান্তি নেই। শত ব্যাস্ততার মধ্যে প্রত্যকে আধা ঘন্টায় ফোন করে খবর নেয় দানা, রুহি আর মহুয়া কি করছে। অফিসে যাওয়া যদিও বন্ধ করে না মহুয়া, পিন্টু আর মনা আরো সতর্ক হয়ে যায়, ওইদিকে আকরাম আর নাসির কড়া নজর রেখেছে নয়নার বাড়ির ওপরে।

এই ঝামেলার কয়দিনে দানার অনুপস্থিতির ফলে ওর কাজে বেশ ব্যাঘাত ঘটে। তবে মহেশ বাবু অনেকটাই হাল ধরে ছিলেন বলে রক্ষে। এই কয়দিনে মোহন খৈতান একবারের জন্যেও ওকে ফোন করেনি। সরিকেরা দানাকে বিশেষ ঘাঁটাতে সাহস পায় না। পুলিস প্রসাশনকে সাহায্য করার পরে ওর সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে দানা ওদের প্রবোধ দিয়ে বলে, ছল চাতুরির ব্যাবসা ওর দ্বারা হয় না সুতরাং কাজ যেমন আগের মতন চলছিল ঠিক তেমনি ভাবেই চলবে। একবার ভেবেছিল এইবারে দানা গায়ের জোরে ওদের কাছ থেকে সব কিছু কেড়ে নেবে। ছোট প্রকল্পের সরিকেরা সেই শুনে স্বস্তির শ্বাস নেয়।

ফারহান সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে এসেছে। ওর বিয়ে কয়েক মাস পিছিয়ে দেওয়া হয়। জারিনা আর ফারহানের মা, দানাকে আর মহুয়াকে বারেবারে ধন্যবাদ জানায়।

ফারহানের সাথে দেখা করে দানা বলে, "এই বালচোদা ছেলে তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়া। শালা তোর বিয়েতে নাচবো বলে বসে আছি, আর তুই বাড়া এইখানে মটকা মেরে পড়ে আছিস।"

জারিনা আর বাকিদের মুখ থেকে এতদিনে ফারহান সব খবর শুনেছে। বাপ্পা নস্করের মৃত্যু, বিমান চন্দের মৃত্যু সেই সাথে নিতাই আর বেশ কয়েকটা সাঙ্গপাঙ্গ মারা গেছে। সুমিতা সমুদ্র মারা গেছে। ফারহান ওর হাত ধরে বলে, "তুই এত সব করলি আমার জন্য? কেন?"

দানা মিচকি হেসে বলে, "ধুর বাল, তোর ফাটা গাঁড়ের জন্য করেছি নাকি? ওই জারিনার ফ্যাকাসে গাল দেখে করেছি। ইসসস শালা গুলি খেয়ে তুই উল্টে পরলি আর ডবকা সুন্দরী মেয়েটা একদিনে শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল।" কানেকানে ইয়ার্কি মেরে বলে, "ভেবেছিলাম তোর বিয়ের আগে শেষ বারের মতন একবার জারিনার গুদে বাঁড়া ঢুকাবো। হানিমুনে আমাকে সাথে নিয়ে যাস। তোর মনে হয় না চোদার ক্ষমতা হবে, আমি সেই জায়গা পুষিয়ে দেব।"

ফারহান হেসে ফেলে, "ম্যাডামকে বলবো নাকি? শালা বোকাচোদা, তোর বাড়া কেটে তোর হাতে ধরিয়ে দেবে ম্যাডাম। তখন ওই বাড়া হাতে নিজের গাঁড়ে ঢুকাস বালচোদা ছেলে।"

জারিনা আর মহুয়া অদুরেই দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু ওদের ফিসফিসানি ওদের কানে যায়নি তাই রক্ষে না হলে দানাকে ফারহানের পাশের খাটে শুইয়ে দিত মহুয়া।

দানা ওর হাত শক্ত করে ধরে বলে, "এইবারে তোকে অফিসে কাজ দেব।"

ফারহান মাথা নাড়িয়ে তেড়ে ওঠে, "না না আমি অফিসে কাজ করবো না। আমি তোর গাড়ি চালাবো।"

মহুয়া আর দানা সমস্বরে বলে, "একি না না, তুমি আমার গাড়ির ড্রাইভার, সেটা চিন্তা ধারনার বাইরে ফারহান।"

ফারহান নাছোড়বান্দা হয়ে মহুয়াকে বলে, "আরে ম্যাডাম, জুতো পেটা করুন আর বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিন। আমি এইবারে আপনার বি.এম.ডাবলু. চালাবো। কোন কথা শুনতে নারাজ আমি। এই বালচোদা ছেলেটা ছিল বলে..... আপনাকে মাইনে দিতে হবে না ম্যাডাম।"

দানা মাথা নাড়িয়ে বলে, "তোর মতন একটা আলবাল ছেলের হাতে গাড়ি দেব না, ভাগ শালা।"

ফারহান হেসে উত্তর দেয়, "তোর কাছ থেকে গাড়ির চাবি চেয়েছি নাকি রে? ওই গাড়ি আমার, আমি চালাবো। রুহিকে রোজদিন কলেজে নিয়ে যাবো আর তারপরে ম্যাডামকে অফিসে নিয়ে যাবো। তুই বাল গাড়ির কাঁচ পরিস্কার করে দিস রোজ সকালে উঠে। আর বিকেলে তুই আর আমি পেছনের সিটে বসে মদ খাবো ব্যাস।"

সবাই হেসে ফেলে ওর কথা শুনে। "ঠিক আছে তাড়াতাড়ি সেরে ওঠ তারপরে দেখা যাবে কি করবে তুমি।" উত্তর দেয় মহুয়া।

মাঝেই মাঝেই মহুয়া নয়নার বাড়িতে ওর সাথে দেখা করতে যায়। সেদিন বিকেলে মহুয়া একাই নয়নার বাড়িতে গিয়েছিল দেখা করার জন্য।

কাজের পরে ফারহানের বাড়ি গিয়ে ওর সাথে দেখা করে বাড়ি ফিরে রুহিকে নিয়ে পড়াতে বসেছিল দানা। এই উটকো ঝামেলার জন্য রুহিকে কলেজে ভর্তি করানো যাচ্ছে না। তবে এই বারে ভর্তি করাতেই হবে। এলাকায় খুব নামকরা ভালো একটা ইংরেজি মিডিয়াম কলেজে আছে, তার অধ্যাপিকার সাথে মহুয়ার আলোচনা হয়ে গেছে। অধ্যাপিকা জানিয়ে দিয়েছেন, রুহিকে নিয়ে এলেই ভর্তি করে নেবেন। নিজেরা ভাগ্যের ফেরে, না মহুয়া, না দানা কেউই ভালো ভাবে পড়াশুনা করতে পারেনি, কিন্তু মেয়ের জন্য সেটা করতে চায় না।
Like Reply
স্টাডিতে বসে রুহিকে নিয়ে পড়াতে বসেছিল। ডাডার কাছে কি আর পড়াশুনা হয়? একদম নয়, কত রকম ঘুষ দিতে হয়, তবে একটা অক্ষর পড়ে। একটু পড়ে নে তারপরে চকোলেট দেব, কালকে পুতুল কিনে দেব, পার্কে বেড়াতে নিয়ে যাবো। এখন আবার টিভিতে ওয়াটার পার্ক দেখেছে সেখানে যাওয়ার বায়না ধরে। পড়বে কি, ওর বায়না আর প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে দানা হিমশিম। মহুয়ার ওপরে রেগে যায় দানা, কেন মরতে ওদের ছেড়ে ওই নয়নার সাথে দেখা করতে গেছে। তার চেয়ে ভালো, মেয়েকে নিয়ে একটু পড়াতে বসতে পারত, তা নয় ভদ্রতা দেখাতে গেছে, প্রাণের বান্ধবী সাজতে গেছে। দানা রাগে গজগজ করে আর পিন্টু ওইদিকে বসার ঘরে বসে ডাডা আর রুহির পাঠ যুদ্ধ দেখে হাসাহাসি করে।

মনার সাথে সাথে মহুয়াকে ঢুকতে দেখেই রুহির পড়াশুনা শিকেয় উঠল। "মাম্মা তি এনেতো? মাম্মা তি এনেতো?" বলেই দানার কবল থেকে এক দৌড়ে পালিয়ে যায়।

দানা হাল ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে ঝাঁঝিয়ে ওঠে, "এত দরদ যখন বাড়িতে এনে রাখতে পারো তো।"

মহুয়া মিচকি হেসে বলে, "আগে হলে নিজেই যেচে বাড়িতে ডেকে নিয়ে আসতে, তাই না জিত।"

দানা ওর কথা শুনে হেসে ফেলে, "তুমি না, আর কি বলি।"

মহুয়া ব্যাগ থেকে একটা চকোলেট বের করে রুহির হাতে দিয়ে দানাকে বলে, "মেয়েকে পড়াতে পারলে না? যাই হোক ওই প্রিন্সিপালের সাথে বাজারে দেখা হয়েছিল। কাবেরি ম্যাডাম বলেছেন আগামী সপ্তাহে কলেজে নিয়ে যেতে। বেশি দেরি করলে সেশান নষ্ট হয়ে যাবে।"

দানা মাথা দোলায়, "না না সেশান নষ্ট করতে চাই না। আর কেমন দেখলে নয়নাকে?"

মহুয়া মাথা দুলিয়ে উত্তর দেয়, "ভালো আছে তবে বুঝতেই পারছ খুব গভীর জলের মাছ। ওর প্রকৃত মন বোঝা দুঃসাধ্য ব্যাপার। কথাবার্তা বলে মনে হল আমার ওপরে বেশ নির্ভরশীল। নতুন একটা ম্যানেজার এসেছে, নতুন সেক্রেটারি নিযুক্ত হয়েছে। বাড়ির বাইরে একটা সাদা পোশাকের পুলিস মোতায়ন আছে দেখলাম। তবে এইবারে খুব সাবধানে চলছে নয়না।"

দানা জিজ্ঞেস করে, "আকরাম আর নাসিরের সাথে দেখা হল?"

নয়না মাথা দুলিয়ে জানিয়ে দেয়, আকরাম আর নাসির পালা করে আড়াল থেকে ওর ওপরে নজর রেখে চলেছে।

ঠিক সেই সময়ে মোহনের ফোন আসে দানার কাছে। বাল্য বন্ধু বিমানের মৃত্যুতে মোহন খৈতান একপ্রকার জ্বলছে, ফোন করেই দানাকে দৃঢ় কণ্ঠে বলে, "বাপ্পা নস্কর আর নেই মিস্টার মন্ডল। আপনার মাথার ওপর থেকে কিন্তু ছত্রছায়া উঠে গেছে। এইবারে আমার প্রকল্প গুলো আমাকে ফিরিয়ে দিন।"

সঙ্গে সঙ্গে দানার মনে পরে যায় বিমানের সাথে মিশে সিমোন খৈতান ওর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছিল। ওকে ধূলিসাৎ করার জন্যেই ওর প্রকল্প গুলো হাতিয়ে নিয়েছিল দানা। প্রকল্প ফিরিয়ে দেওয়ার কোন অর্থ হয়না। ওই হুমকিতে কাবু হয়ে পড়ার মতন মানুষ নয় তাই ঠাণ্ডা মাথায় উত্তর দেয়, "রাজনৈতিক মহল বর্তমানে গরম তেলের মতন টগবগ করে ফুটছে মিস্টার খৈতান। পুলিসের তদন্ত, আদালতের মামলার এখন সুরাহা হয়নি। এমত অবস্থায় আমাদের কিছুদিন শান্ত থাকা বাঞ্ছনীয় মিস্টার খৈতান। আপনি পালিয়ে যাচ্ছেন না আমিও এই মহানগরে আছি। সময় হলেই আপনার সম্পত্তি আপনাকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। একটু ধৈর্য ধরুন।"

মোহন তিতিবিরক্ত হয়ে চেঁচিয়ে ওঠে, "আমার সাথে আবার নতুন কি ছলনা করা হচ্ছে, মিস্টার মন্ডল।"

দানা বলতে যাচ্ছিল, বিমান চন্দের সাথে মিশে ওর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের উচিত শিক্ষা দেবে কিন্তু মাথা ঠাণ্ডা করে উত্তর দেয়, "আপনি মাথা গরম করছেন কেন মিস্টার খৈতান? এই সময়ে মাথা গরম করে কোন কাজ হবে না।"

মোহন চাপা গরগর করে ওঠে, "বিমান আমার বাল্যবন্ধু, ওর মৃত্যুশোকে আমি পাগল হয়ে গেছি।"

দানা হিমশীতল কণ্ঠে ওকে বলে, "আপনার বাল্যবন্ধু মারা গেছে বলে আপনি পাগল হয়ে গেছেন। আসলে কে এর পেছনে সেটা এক বার খুঁজে দেখবেন না?"

দানা চাইছিল মোহনের সন্দেহের তীর নয়নার দিকে যাক তাই ওই উত্তর দেয়।

মোহন ওকে প্রশ্ন করে, "কি বলতে চাইছেন একটু খুলে বলুন মিস্টার মিন্ডল, আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।"

দানা বাঁকা হেসে উত্তর দেয়, "আপনি কি সত্যি জানেন না, না জেনেও না জানার ভান করছেন মিস্টার খৈতান।"

ইচ্ছে করেই মোহনকে আরো খেপিয়ে তুলে বলে, "দেখুন মিস্টার খৈতান, প্রকল্প নেওয়ার সময়ে মিস্টার বিমান চন্দ আর নয়না আমাদের মাঝে মধ্যস্ততা করেছিল। এবারে যখন ফিরিয়ে দেওয়ার পালা, বিমান চন্দ যখন নেই তাহলে নয়নাকে মধ্যস্ততা করতে হবে। কি বলেন?"

যদি ওর তীর ঠিক নিশানায় লাগে তাহলে এইবারে মোহনের ক্ষোভ ওর বদলে নয়নার ওপরে গিয়ে পরবে। নয়নাকে আক্রমন করে শেষ করে দিক তাহলে ওর পথের কাঁটা আপনা থেকেই সরে যাবে আর তারপরে সঙ্গীতাকে খুনের চক্রান্তের রেকর্ড করা আলোচনা নিয়ে সোজা পুলিসের হাতে তুলে দেবে।

রাজনৈতিক মহল সরগরম। এই এলাকার দুই দলের রাজনৈতিক নেতার মৃত্যুর পরে বিধায়ক পদের প্রার্থী হিসাবে একা দুলাল মিত্র। বিমানের দল অন্য একজনকে দাঁড় করাবে বলে ঠিক করে আর বাপ্পা নস্করের দল পিছিয়ে যায়। প্রথমে ভেবেছিল বাপ্পা নস্করের স্ত্রী, ঝুমা নস্করকে দাঁড় করাবে কিন্তু ওদের বিরুদ্ধে এত চুরি জালসাজির তথ্য প্রমান উজাগর হতেই দল পিছিয়ে যায়। একদিন রমলা ফোন করে দানাকে দেখা করতে বলে। দানা জানিয়ে দেয় দেখা করতে পারে, তবে দুলাল মিত্রের সাথে নয়। সেই শুনে রমলা দমে যায়, আসলে দুলাল মিত্র চেয়েছিল দানাকে ব্যাবহার করে এই সিটে পরের নির্বাচন জেতে। কিন্তু দানা সেই পথে হাঁটে না, উল্টে রমলাকে জানিয়ে দেয় যদি রমলা ওর বিরুদ্ধে কোন কুচক্রান্ত করে তাহলে ওর আর দুলাল মিত্রের কানীন সন্তানকে সব বলে দেবে আর দুলালের যে নিষ্পাপ ছবি জনগনের সামনে রয়েছে সেটা খর্ব করে দেবে।

রাতের বেলা বড় আয়নার সামনে প্রসাধনী সারতে সারতে দানাকে জিজ্ঞেস করে, "মোহন কি বলছে গো? এখন বাপ্পা নস্কর নেই ওইদিকে বিমান চন্দ আর নেই। এইবারে দেখবে মোহন খৈতান আবার দুলাল মিত্রের সাথে মিত্রতা করে বসেছে। সেই বিষয়ে কি কিছু ভেবেছ? মনে রেখো তোমার অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে কিন্তু এই কয়েক মাসে।"

দানা উত্তর কি দেবে, মহুয়ার মসৃণ পুরুষ্টু অনাবৃত জঙ্ঘা দেখে পাগল হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। রুহি তখন ঘুমায়নি, বিছানায় শুয়ে মায়ের বকুনি খেয়ে চোখবুজে এপাশ ওপাশ ধপাস করছে। দানাকে ওই ভাবে তাকাতে দেখে আরও বেশি উত্যক্ত করে তোলে মহুয়া। প্রায় ঊরুসন্ধি পর্যন্ত গাউন টেনে সম্পূর্ণ পেলব জঙ্ঘা অনাবৃত করে দুই হাতে ক্মির মাখিয়ে লাগায়, আর আড় চোখে দানার ছটফটানি উপভোগ করে। নীচে ঝোঁকার ফলে সুউন্নত স্তন যুগল গাউনের ভেতর থেকে বেড়িয়ে পরে। ছোট ব্রার মধ্যে হাঁসফাঁস করে ওঠা নিটোল স্তনের মাঝের গভীর খাঁজ দানাকে হাতছানি দিয়ে ডাক দেয়। দানা চোয়াল চেপে একবার রুহির দিকে তাকায় একবার মহুয়ার দিকে তাকায়। রুহি চোখ চেপে বন্ধ করে পা দাপিয়ে জানিয়ে দেয় এখন ওর চোখে ঘুম আসেনি। বারমুডার ভেতরে পাহাড় তৈরি হয়ে গেছে। ফর্সা জঙ্ঘা জোড়া মৃদু হলদে আলোয় চিকচিক করছে। ঠোঁটে মাখা দুষ্টু মিষ্টি হাসি যেন বলতে চায়, মেয়ে এখন জেগে আছে জিত, সুতরাং কিছু করতে পারবে না।

মহুয়া চোখ পাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "কি হল বিকেলে মোহনের সাথে কি কথা হল বললে না তো?"

দানা মহুয়াকে খুলে বলে বিকেলের বার্তালাপ। সেই সাথে একটু চিন্তায় পরে যায়। মৈনাকের মৃত্যুর সম্বন্ধে পুলিসকে কিছুই জানায়নি দানা তাই মোহন খৈতান আর সিমোনে খৈতানের ওপরে পুলিসের আঁচ পরে না। আগে ওদের পথে বসাতে চায়। বিকেলের কথাবার্তা শুনেই বুঝে গেছে এই অভূতপূর্ব দুর্ঘটনায় মোহন খৈতান পাগল কুকুরের মতন তেতে আছে। বিমান মারা যাওয়াতে ওদের সব শক্তি খর্ব হয়ে গেছে, সম্পত্তির অনেকাংশ বিমান চন্দ আর নয়নার কথায় দানার নামে লিখে দিয়েছিল। সব শুনে মহুয়া ওকে চুপ করে থাকার পরামর্শ দেয়, কিন্তু সেই সাথে জানে মোহন খৈতান ওকে ছেড়ে দেবে না।
Like Reply
রেড এন্ড ব্লু ক্লাব (#০২)

কয়েক দিন আগেই রুহির কলেজে এডমিশান করানো হয়ে গেছে। মনার কাজ আরো বেড়ে যায় কিন্তু তাতে ওর দ্বিরুক্তি নেই বরঞ্চ বেশ খুশি। পরেরদিন রুহি প্রথম বার কলেজ যাবে, খুব খুশি। মাম্মা ডাডার সাথে কেনাকাটা করতে বেড়িয়েছে। কেনা কাটার চেয়ে কোন রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে একটু ফুচকা খাওয়া, কোন রাস্তার দোকানে দাঁড়িয়ে এগ রোল খাওয়া, দুইজনে মেয়ে নিয়ে প্রথম প্রেম করতে বেড়িয়েছে। এতদিনে বাড়ি থেকে ঠিক ভাবে ঘুরতে বের হবার সময় পায়নি। আর আগে যাও বের হত সোজা কোন বড় রেস্তুরেন্তে ঢুকে যেত, রাতের খাওয়া না হয় দুপুরের খাওয়া সেরে বাড়ি। রুহিকে নিয়ে পাশে প্রেয়সীকে নিয়ে এই ভাবে বের হওয়া কোনোদিন হয়নি ওদের। একে গ্রীষ্ম কাল তায় আবার এই মহানগরের ভ্যাপসা গরম, কিছুক্ষণের মধ্যেই হাঁপিয়ে ওঠে দুইজনে। শেষ পর্যন্ত গাড়ি করে একটা বড় মলে এসে ঢোকে।

দানার অনেকদিনের ইচ্ছে মহুয়া জিন্স, শার্ট এই সব আধুনিক পোশাক আশাক পরুক। দানার মন রক্ষার্থে কেনেনি যে তা নয় তবে কোনোদিন পরেনি মহুয়া। বাড়িতে থাকলেও সেই শাড়ি না হয় সালোয়ার কামিজ। কোন কোনদিন অবশ্য লম্বা স্কার্ট টপ পরে, তবে সেদিন দানার দৌরাত্ম বেড়ে যায়। হয়ত মহুয়া রান্না ঘরে অথবা স্টাডিতে অথবা শোয়ার ঘরে কিছু একটা করছে, এমন সময়ে হঠাৎ দানা এসে ওকে জড়িয়ে ধরবে। ইলাস্টিক দেওয়া স্কার্টের কোমর বন্ধনি নামিয়ে দিয়ে নরম পাছার ওপরে হাত বুলিয়ে উত্যক্ত করে তুলবে। শয়তানি আর গেল না। একবার এমন উত্তেজিত হয়ে উঠেছিল যে সম্পূর্ণ জামা কাপড় খোলার অবকাশ পায়নি দুইজনে। স্টাডির মধ্যে টেবিলে ওপরে মহুয়াকে উঠিয়ে দিয়ে, প্যান্টি সরিয়ে কোনোরকমে প্যান্টের চেন খুলে এক ধাক্কায় লিঙ্গ ঢুকিয়ে দিয়েছিল ওর শিক্ত যোনির মধ্যে। মহুয়া কিছু বুঝে ওঠার আগেই কঠিন উত্তপ্ত লিঙ্গকে ওর শিক্ত কোমল যোনি গ্রাস করে নিয়েছিল তাই উপভোগ করা আর কিছু করার ছিল না। মাঝে মাঝে এমন অতর্কিতে হানা দেয় দানা সেটা যে মহুয়ার খারাপ লাগে তা নয়। খুব ভালো লাগে, সারাদিন সেই অনুভুতি গায়ে মাখিয়ে কাটিয়ে দেয়। মাঝে মাঝে আনমনা হয়ে রান্না করতে করতে কিম্বা অফিসে বসে এমনি এমনি হেসে ফেলে আর শরীর চঞ্চল হয়ে ওঠে, গায়ে কাঁটা দিয়ে দেয়। উফফফ কি না একটা পাগলের পাল্লায় পড়া গেছে।

রুহি একমনে এদিক ওদিক তাকিয়ে তাকিয়ে দানা আর মহুয়া হাত ধরে হাঁটে। মহুয়া ওর বাজু ধরে হাঁটতে হাঁটতে জিজ্ঞেস করে, "এই আমরা বিয়ে কবে করবো?"

দানার খুব ইচ্ছে যত তাড়াতাড়ি বিয়েটা সেরে ফেলা যায়। কত জায়গায় স্বাক্ষর করতে গেলে মাঝে মাঝেই মহুয়া ভুল করে মন্ডল লিখে দেয়। একবার অফিসের মাইনের চেক বাউন্স হয়ে চলে এসেছিল। ব্যাঙ্কের ম্যানেজার হেসে ফোন করে বলেছিল, "স্যার এই বারে বিয়েটা সেরে ফেলুন।" কি লজ্জার ব্যাপার।

দানা ওর কাঁধে হাত রেখে কাছে টেনে বলে, "চলো আজকে রাতেই সেরে ফেলি।"

মহুয়ার গাল লাল হয়ে যায়, "ইসসস, তাড়া দেখ শয়তানের।"

দানা অবাক হয়ে বলে, "যাঃ বাবা, এই তো তুমি বললে আবার এখন পিছিয়ে যাচ্ছও কেন? বাড়ি থেকে পালিয়ে মন্দিরে কি কেউ বিয়ে করে না নাকি?"

মহুয়া লাজুক হেসে ওর নাক টেনে বলে, "করে তবে মেয়ে কোলে, বি.এম.ডাবলু. চড়ে বাড়ি পালিয়ে কেউ মন্দিরে গিয়ে বিয়ে করে না।"

পাশের একটা দোকানের কাঁচের জানালার পেছনে একটা পুতুল একটা ছোট টপ আর ছোট সাদা রঙের স্কার্ট পরে দাঁড়িয়ে ছিল। দানা সেটা দেখে মহুয়াকে বলে, "ওই পুতুলের জায়গায় তোমাকে দাঁড় করিয়ে দিলে ভালো লাগত পাপড়ি।"

মহুয়া কটমট করে তাকিয়ে বলে, "ওই পোশাক, না না একদম নয়। ইসসস এটা রুহির স্কারটের চেয়েও ছোট। আর তুমি না....." বলতে বলতে ওর স্কার্ট পরে কামকেলির দৃশ্য গুলো মনে পরে যায় আর কান লাল হয়ে ওঠে।

দানা ওর কানে ফিসফিস করে বলে, "স্টাডি না রান্না ঘর, কোথায় হারিয়ে গেলে?"

মহুয়া ওকে মারতে শুরু করে দেয়, "যাও আর কথা বলবো না।"

মাম্মার হাতে ডাডার মার খাওয়া দেখে রুহি হেসে ফেলে, "যাও আর কত্তা বব্ব না।"

দানাও হেসে ফেলে, "তোকে কি করলাম রে বাঃবা।"

মহুয়া অভিমানী কণ্ঠে বলে, "জিন্স কিনলাম কিন্তু পরতে পারলাম কই। কখন কোথাও বেড়াতে নিয়ে গেছ কি?"

সেটা সত্যি, প্রেম করার পর থেকে এই ঝামেলা সেই ঝামেলায় জড়িয়ে পরে ওদের কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়নি। এই শহরের মধ্যে কোথাও গেলে মহুয়া জিন্স পরে বের হবে না। দূরে যদি দানা ওকে বেড়াতে নিয়ে যায় তবেই জিন্স পরবে নচেত নয়।

দানা ম্লান হেসে বলে, "পাপড়ি প্লিস রাগ কর না, এই ঝামেলা মিটে যাক আমি তুমি রুহি মিলে এক মাসের জন্য কোথাও বেড়াতে যাবো।"

বেড়াতে যাবার নাম শুনেই রুহি নেচে ওঠে, "ডাডা কোথায় যাবো?"

মহুয়ার কাছেও এক প্রশ্ন। বিয়ের পরে পূর্বতন স্বামী, রাজেশের সাথে একবার শুধু মাউন্ট আবু বেড়াতে গিয়েছিল তারপরে সেই যে গৃহ বন্দী হয়েছিল কোথাও বের হতে পারেনি। দানার হাত ধরে ওই খাঁচা থেকে বেড়িয়ে রোজদিন যেন ওর সাথে কাটানোটা একটা বেড়ানোর মতন।

দানার হাত খানি শক্ত করে ধরে বলে, "তুমি পাশে থাকলে ওই রান্না ঘর আর স্টাডি আমার বেড়ানোর জায়গা।"

সেটা দানাও জানে অবশ্য তাও এই মহানগরের হইচই ছাড়িয়ে দূরে কোথাও মেয়েকে নিয়ে প্রেয়সীকে নিয়ে বেড়াতে যেতে চায়। এক নয় পাহাড় পর্বতে না হয় কোন সমুদ্র সৈকতে।

দানা ওর কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে ফিসফিস করে ইয়ার্কি মেরে বলে, "তাহলে আজ রাতে রান্নাঘরেই বেড়াতে যাওয়া যাক কি বলো?"

ওই কথা শুনে লজ্জায় মহুয়া কোথায় লুকাবে ভেবে পায় না। ওর বাজুতে আলতো চাঁটি মেরে বলে, "ধ্যাত, তুমি না সবসময়ে। একদম ভাল্লাগে না কিন্তু।"

এমন সময়ে দানার ফোন বেজে ওঠে। ফোন খুলে রমলার নাম দেখে আশ্চর্য হয়ে যায় দানা। একবার বলে দিয়েছিল যে দুলাল মিত্রের সাথে হাত মেলাতে নারাজ তাও কেন ফোন করেছে? মহুয়া ওকে ফোন তুলে কথা বলতে অনুরোধ করাতে শেষ পর্যন্ত দানা উত্তর দেয়।

ফোন তুলে রমলাকে জিজ্ঞেস করে, "তারপরে কেমন আছো?"

রমলা স্মিত হেসে বলে, "এই ভালো আছি। একটা খবর দেওয়ার ছিল তোমাকে।"

উৎসুক দানা জিজ্ঞেস করে, "কি খবর?"

রমলা ওকে জানায়, কঙ্কনা আর নাসরিন নাকি রমলার পত্রিকার বার্ষিক উৎসবে আসছে না। এই ঝামেলার মধ্যে পড়ে কঙ্কনা আর নাসরিনের কথা এই প্রকার ভুলতে বসেছিল। হঠাৎ রমলার ফোন পেয়ে শরীরের সব স্নায়ু একত্রে সতর্ক হয়ে যায়। সেটা শুনে দানার মাথা গরম হয়ে যায়, রমলাকে শাসায়, নিশ্চয় রমলা ওর নামে কঙ্কনা আর নাসরিনকে লাগিয়ে দিয়েছে তাই ওরা আর এই শহরে আসছে না। রমলা উত্তরে জানায়, এই কয়দিনে দানার নাম যেভাবে খবরের কাগজে ছড়িয়ে পড়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই যে কঙ্কনা আর নাসরিন সেই খবর পড়ে সতর্ক হয়ে গেছে। তবে রমলা সেই সাথে এটাও জানায় যে ওদের এই শহরে অন্য একটা কাজে আসার কথা ছিল। হয়ত রমলাকে না জানিয়ে ওরা সেই কার্যসিদ্ধি করতে আসবে। কিসের জন্য আসবে সেটা অবশ্য রমলা জানে না।

কঙ্কনা আর নাসরিন আসছে না শুনে দানা হতাশ হয়ে পড়ে। যদিও রমলা ওকে কঙ্কনা আর নাসরিনের নতুন ফোন নাম্বার আর ঠিকানা দিয়েছে, কিন্তু অতদুর জায়গায় গিয়ে ওদের খুঁজে বের করে প্রতিশোধ নেওয়া কেমন যেন ঠেকে ওর কাছে।

লোকেশের নামে একটা পোস্ট বক্স ছিল, সেটা লোকেশের বড় ছেলে সোমেশ নিজের নামে করে নিয়েছিল। এতদিন ওই পোস্ট বক্সে দরকারি কাগজ পত্র আসত। যেগুলো সোমেশের দরকারের হতো সেইগুলো রেখে দিয়ে বাকি কাগজ পত্র সব মহুয়াকে পৌঁছে দেওয়া হত।

বিকেলে বাড়ি ফিরে কাজের মেয়ে মণি জানায় মহুয়ার নামে একটা বাক্স এসেছে। একটা মাঝারি আকারের সাদা রঙের কার্ডবোর্ডের বাক্স, তার ওপরে পোস্ট বক্স নাম্বার ছাড়া আর কিছু লেখা নেই। দানা আর মহুয়া মুখ চাওয়াচায়ি করে। এই রকম একটা অদ্ভুত অপরিচিত বাক্সের অর্থ খোঁজার চেষ্টা করে।

দানা বাক্সটা হাতে নিয়ে এদিক ওদিক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মহুয়াকে ইয়ার্কি মেরে জিজ্ঞেস করে, "কি গো, নতুন নতুন ল্যাপটপ পেয়ে ইন্টারনেট থেকে ডিলডো অথবা ভাইব্রেটার মার্কা কিছু কিনেছ নাকি?"

মহুয়া কিঞ্চিত রেগে গিয়ে আলতো চাঁটি মেরে বলে, "ধ্যাত জত্তসব আজেবাজে কথাবার্তা। আমি কোন দুঃখে ওইসব কিনতে যাবো বলো তো? কোন রাতে কি আমাকে একটু শান্তিতে ঘুমাতে দাও?"

দানা হেসে ফেলে, প্রতি রাতে একবার মহুয়াকে আস্টেপিস্টে ভালো না বাসলে ঠিক ঘুম হয়না। তার ওপরে আবার ফাঁক পেলে একটু এদিক ওদিকে হাত দিয়ে আদর করা, ফাঁক পেলে আর রুহির নজর বাঁচিয়ে রান্না ঘরে অথবা স্টাডিতে একটু কষে আদর করা হয়েই যায়।

দানা ওকে জড়িয়ে ধরে কানেকানে বলে, "চল স্টাডিতে গিয়ে একেবারে একসাথে মিলে এই বাক্স খুলি।"

স্টাডিতে ঢুকে বাক্সটাকে হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে, একবার কানের কাছে ধরে দেখে। এর মধ্যে কেউ আবার বোমা গুঁজে দেয়নি ত? কিন্তু লোকেশের পোস্ট বক্সে আসা, সুতরাং বোমা থাকার সম্ভাবনা খুব কম। সাদা বাক্স খুলতেই ওদের আশ্চর্যচকিত হয়ে যায়। বাক্সের ভেতরে একটা হলদে রঙের আমন্ত্রন পত্র, একটা চাবি আর একটা লাল রঙের একটা কাপড়ের মুখোশ। মুখোশ হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে চেহারার অর্ধেক ঢাকা যায়, সম্পূর্ণ মাথা ঢাকা যায় আর চোখের জায়গায় দুটো ফুটো, সম্ভবত নিজেদের পরিচয় গোপন করার জন্য এই লাল রঙের মুখোশ।

আমন্ত্রন পত্রের এক কোনায় দুটো পান পাতার চিহ্ন, একটা লাল অন্যটা নীল। জলছবিতে এক জোড়া যৌন সঙ্গম রত নর নারীর ছবি। কাগজের ওপরে বড় বড় অক্ষরে গাঢ় বাদামী রঙ্গে ইংরেজি হরফে লেখা "সুধী সদস্য, ওয়ান নাইন সিক্স টু জিরো ফোর টু ফাইভ। রেড এন্ড ব্লু ক্লাব, আপনাকে সাদর নিমন্ত্রন জানায় তাদের বার্ষিক মিলন সম্মেলনে। তারিখ (আগামী কাল) সন্ধ্যে ছ'টা আপনার উপস্থিতি কাম্য। আর.এস.ভি.পিঃ (একটা ফোন নাম্বার দেওয়া)"।

কার্ড, চাবি আর লাল রঙের মুখোশ দেখে দানা আর মহুয়া দুইজনে বিস্মিত হয়ে পরস্পরের দিকে তাকিয়ে থাকে। এই "রেড এন্ড ব্লু ক্লাব" এর কথা মহুয়া লোকেশের মুখে শুনেছিল, দানাকে এই ক্লাবের কথা কঙ্কনা বলেছিল আর একবার গাড়ি চালাতে চালতে নয়নার মুখে শুনেছিল। কিন্তু লোকেশ মারা গেছে তাও কেন এই কার্ড পাঠানো হয়েছে? নিশ্চয় এই ক্লাবের উদ্যোক্তারা এখন হয়ত জানে না যে লোকেশ এই পৃথিবীতে আর নেই। কঙ্কনা লোকেশকে চেনে, সেই ওকে মহুয়ার খবর দেয়, কিন্তু নয়না কি কঙ্কনাকে চেনে? এর উত্তর ওদের জানা নেই। রমলা কি সত্যি জানে না এই বিষয়ে? জলছবি আর পান পাতা থেকে সহজে বোঝা যায় এই সমাগম যৌন কাম ক্রীড়ার সমাগম। কারা এর সদস্য, কি হয় এইখানে? ওই সংখ্যার কি অর্থ, লোকেশের নাম কেন লেখা নেই এই আমন্ত্রন পত্রে? কোথায় এই যৌন সঙ্গমের সমাগম অনুষ্ঠিত হবে সেটা ওই আমন্ত্রন পত্রে লেখা নেই। বহু প্রশ্ন মহুয়া আর দানার মনে ভিড় করে আসে।

দানা ওকে বলে, "কি ব্যাপার বলো তো? এই সংখ্যার অর্থ কি? তোমার কাছে কি লোকেশের কোন ফাইল অথবা জিনিস পত্র আছে?"
Like Reply
মহুয়া খানিক চিন্তা ভাবনা করে বলে, "শ্বশুরজির অনেক ফাইল পত্র আমার কাছে আছে। সব গুলো ঘাঁটার সময় পাইনি। একবার সেই গুলো ঘেঁটে দেখা যেতে পারে। হয়তো কিছু বের হতে পারে।"

পুরানো ফাইল, কাগজ পত্র ঘাঁটতে শুরু করে দুইজনে। বেশ কিছুক্ষণ ফাইল পত্র ঘাঁটার পরে একটা সাদা রঙের খাম থেকে একটা ছোট লাল রঙের প্লাস্টিকের কার্ড পায়। কার্ডের এক কোনায় লেখা "রেড এন্ড ব্লু ক্লাব"। হুবহু হলদে আমন্ত্রন পত্রের মতন লাল কার্ডে একটা নগ্ন নর নারীর যৌন সঙ্গম রত ছবি। কার্ডের ওপরে কারুর নাম লেখা নেই, তার পরিবর্তে একটা রুপোলী অক্ষরে আট অঙ্কের একটা সংখ্যা লেখা – ওয়ান নাইন সিক্স টু জিরো ফোর টু ফাইভ (এক নয় ছয় দুই শূন্য চার দুই পাঁচ) যেটা ওই আমন্ত্রন পত্রে লেখা। তাছাড়া ওই লাল রঙের কার্ডের কোথাও কিছু লেখা নেই। বড় রহস্য জনক ব্যাপার। এই কার্ড দিয়ে কি হবে? ওই মোবাইলে কি কেউ ফোন করবে? ফোন করলে কি উত্তর দেবে দানা? নিশ্চয় এটা কোন অতি গোপনীয় ক্লাব তাই কারুর নাম হয়ত উল্লেখ করা নেই। জলছবি দেখে এই সমাগমের অর্থ বোঝা অতি সহজ। এই ক্লাবের সদস্য কারা হয়? খাম থেকে আরো একটা ছোট কাগজ বের হয়, তার ওপরে লোকেশের হাতে লেখা আরো একটি সংখ্যা – ফোর নাইন টু সিক্স (চার নয় দুই ছয়)।

মহুয়া লাল কার্ডটি হাতে নিয়ে সংখ্যাটি বারেবারে পড়ে দানাকে বলে, "এই সংখ্যাটা শ্বশুরজির জন্মদিন। পঁচিশে এপ্রিল উনিশশো বাষট্টি আমার শ্বশুরের জন্মদিন। যতদূর মনে হয় সবার কার্ডে ওদের নামের জায়গায় ওদের জন্মদিন লেখা। আর যতদূর মনে হয় এই ক্লাবের সব কিছু গোপনীয় কেউ কাউকে নাম ধরে চেনে না। সবাই সবাইকে শুধু ওই সংখ্যা দিয়েই চেনে। আর এই কাগজে লেখা সংখ্যাটা যতদূর সম্ভব ওই ক্লাবের কোন পাসওয়ার্ড না হলে কোন লকারের তালার কম্বিনেশান, তাই এটা নিজের হাতে অন্য জায়গায় লেখা। চাবিটা কোন লকারের হতে পারে।"

একটু খানি চিন্তা করে দানাকে প্রশ্ন করে, "কঙ্কনা আমার শ্বশুরজিকে চেনে, কিন্তু কঙ্কনা নয়নাকে চেনে না। রমলা দুইজনকেই চেনে কিন্তু এই ক্লাবের বিষয়ে কিছু জানে না। বড় ধন্দে পড়া গেল জিত। এখানে যদি সবাই সবাইকে চেনে তাহলে এই কার্ডের ওপরে নামের জায়গায় সংখ্যা কেন লেখা?"

দানা মাথা চুলকিয়ে মহুয়াকে বলে, "ধুর পাগলী, আমি কোনোদিন এই ক্লাবে গেছি নাকি যে জানবো। মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে, দাঁড়াও একটু ভাবতে দাও। হতে পারে রমলা জানে কিন্তু বলছে না।"

মহুয়া হেসে ওর গলা জড়িয়ে ধরে বলে, "তুমি জানবে না তো আর কে জানবে জিত। তুমি যে আমার অভিধান।" একটু ভেবে বলে, "না রমলা কিছু বলতে পারবে না তাহলে ফোনেই তোমাকে জানিয়ে দিত। আরো একটা কথা কেন ভুলে যাচ্ছ। ওই পার্টিতে কঙ্কনার সাথে রমলার প্রথম দেখা তার আগে ওদের পরিচয় ছিল না। আমার মন বলছে এই রেড এন্ড ব্লু ক্লাবের বার্ষিক সম্মেলনে কঙ্কনা আর নাসরিন নিশ্চয় আসবে। আর এর উত্তর তুমি নয়নার কাছ থেকে পেতে পারো।"

দানা স্মিত হেসে মহুয়াকে চুমু খেয়ে বলে, "হ্যাঁ হতে পারে। আগে চল এই ফোন নাম্বারে ফোন করে দেখা যাক।"

মহুয়া মাথা দোলায়, "হ্যাঁ ফোন করবে, কিন্তু নিজের নাম বলা চলবে না। একটা উলটো পাল্টা নাম ভেবে নাও।"
Like Reply
রেড এন্ড ব্লু ক্লাব (#৩)

ল্যাপটপ খুলে ইন্টারনেটে ফোন নাম্বার পরীক্ষা করাতে দেখে এটা একটা বাইরের দেশের নাম্বার। সেই দেখে দানা আর মহুয়া আরো বেশি আশ্চর্য হয়ে যায়। নিশ্চয় নিজেদের আসল পরিচয় গোপন করার জন্য এই সব ব্যাবস্থা। এই অ্যানুয়াল মিট যখন পরের দিনেই অনুষ্ঠিত হবে তখন নিশ্চয় বাইরের দেশে হবে না, এই দেশেই হবে যেখানে ক্লাবের সদস্যরা অতি সহজে যেতে পারে। সাতপাঁচ ভেবে শেষ পর্যন্ত আমন্ত্রন পত্রের নীচে লেখা ফোন নাম্বারে ফোন করে দানা। বেশ কিছুক্ষণ ফোন বেজে যাওয়ার পরে ওইপাশে একজন অল্প বয়স্ক মেয়ের কণ্ঠ স্বর শোনা যায়।

দানা জিজ্ঞেস করে, "রেড এন্ড ব্লু ক্লাব?"

মেয়েলী কণ্ঠের উত্তর আসে, "কাকে চান?"

দানা খানিক ইতস্তত করে গম্ভীর কণ্ঠে আবার প্রশ্ন করে, "রেড এন্ড ব্লু ক্লাব?"

গম্ভির গলায় উত্তর আসে ওই পাশ থেকে, "দুঃখিত ভুল নাম্বারে ডায়াল করেছেন।" বলেই মেয়েটা ফোন রেখে দেয়।

দানা হতাশ হয়ে যায়। এই ক্লাবে কিছু করে হোক ওকে যেতেই হবে, নাহলে কঙ্কনা আর নাসরিনের হদিস পাওয়া যাবে না। দানা আমন্ত্রন পত্র আবার দেখে, সঠিক নাম্বারেই ফোন করেছিল তাও কেন মেয়েটা ভুল বলছে? এইবারে ঠিক করে যে, আর জিজ্ঞেস না করে সোজা সুজি কথা বলবে। ঠিক সেই সময়ে ওই নাম্বার থেকে দানার কাছে ফোন আসে। মহুয়া ওকে ফোন উঠাতে বলে।

দানা ফোন উঠাতেই ওইপাশের নারী কণ্ঠ ওকে জিজ্ঞেস করে, "আপনার কোন রঙ, কার্ড নাম্বার কত?"

সঙ্গে সঙ্গে মহুয়া লাল কার্ড খানা দানার হাতে ধরিয়ে দেয়। দানা ফোনে উত্তর দেয়, "কার্ডের রঙ লাল, কার্ড নাম্বার ওয়ান নাইন সিক্স টু জিরো ফোর টু ফাইভ।"

মেয়েটা জিজ্ঞেস করে, "পাসওয়ার্ড?"

দানা কপাল ঠুকে সাদা কাগজে লেখা নম্বরটা বলে দেয়, "ফোর নাইন টু সিক্স।"

মেয়েটা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পরে হেসে ফেলে, "আচ্ছা আপনি (বলেই হেসে ফেলে)। তাহলে ওই ভাবে প্রশ্ন করতে গেলেন কেন? মস্করা করার ইচ্ছেটা আপনার সত্যি গেল না দেখছি। কিন্তু এইবারে আপনার গলা কেমন যেন শোনাচ্ছে। বেশ সুস্থ সবল, বয়স কমিয়ে ফেলেছেন নাকি?"

বুক ভরে শ্বাস নেয় দানা, বুকের ভেতরে দুমদুম করে দামামা বেজে চলেছে। ভেবেছিল হয়ত ধরা পরে যাবে। কিন্তু ওইপাশের মেয়েটা ওকে লোকেশ ভেবেই কথা বলছে। মহুয়া ওকে ইশারায় জানায় উত্তেজনা দমিয়ে একদম সাধারন ভারী কণ্ঠে কথাবার্তা বলতে। নির্দেশ মতন দানা অন্যপাশের মেয়েটাকে বলে, "না মানে বেশ সুস্থ বোধ করছি তাই হয়তো আমার গলা ওই রকম শুনাচ্ছে। তাহলে কাল বিকেলে দেখা হচ্ছে।"

মেয়েটা হেসে বলে, "কি যে বলেন না আপনি। না না আমি কেন যাবো। আপনাদের জন্য প্রচুর নীল কার্ডের মেয়েরা রয়েছে। তাহলে আপনার নাম্বার লিস্টে লিখে ফেলি, ফাইনাল তো?"

দানা মুচকি হেসে জানায়, "হ্যাঁ করে ফেলুন।"

দ্বিধা বোধ জাগে, মেয়েটাকে কি সমাগমের জায়গা জিজ্ঞেস করা উচিত? জিজ্ঞেস করলে ধরা পরে যাওয়ার বিপুল সম্ভাবনা আছে তাই এড়িয়ে যায় সেই প্রশ্ন।

মেয়েটা হেসে ওকে জিজ্ঞেস করে, "আপনি এইবারে কোন নীল কার্ড নিয়ে আসছেন কি?"

নীল কার্ড মানে? কিন্তু না জেনেও জানার ভান করে উত্তর দেয়, "না না, কোন নীল কার্ড সাথে নেই।"

মেয়েটা হেসে ফোন রেখে দেয়। দানার দৃঢ় বিশ্বাস এই ক্লাবে গেলে কঙ্কনা আর নাসরিনের হদিশ পাওয়া যাবে। এখন পর্যন্ত এই মিট কোথায় হবে সেটা জানা গেল না। নীল কার্ডের কি অর্থ সেটা জানা গেল না। হাতে মাত্র একদিন সময়, এমনিতে রাত হয়ে গেছে, এখুনি কি পরিকল্পনা করা যায় ওদের বিরুদ্ধে।

দানা একটু ভেবে বলে, "নয়নার কাছে এর উত্তর পাওয়া যাবে। ওর বাড়ি একবার গেলে কেমন হয়?"

মহুয়া মানা করে দেয় দানাকে, "এতদিন দেখা পর্যন্ত করতে যাওনি আর এইরাতে হঠাৎ করে যাবে? রুহির কাল প্রথম কলেজ, আমাদের কলেজে নামিয়ে দিয়ে তুমি সোজা নয়নার বাড়িতে চলে যেও। এত ভেবো না, কাল বিকেল পর্যন্ত সময় আছে। কিছু একটা পরিকল্পনা করা যাবে।"

রাতের খাওয়া দাওয়া সেরে, দানা স্টাডিতে বসে সিগারেট টানতে টানতে লাল কার্ড আর চাবি হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে। এই কার্ডে লেখা নাম্বার আর কাগজে লেখা সংখ্যার রহস্য জানা গেল। রেড এন্ড ব্লু ক্লাবের বার্ষিক যৌন সঙ্গমের সমাগম কোথায় হবে সেটা জানা যায়নি। এক কালে কঙ্কনা বলেছিল এই ক্লাবে এক রাতে এক লাখ টাকা আয় করা যাবে। ওইদিকে নয়নার মুখে শুনেছিল এইবারে নাকি চল্লিশ লাখ টাকা চায়। চারদিকে টাকার ছড়াছড়ি। কিন্তু এই চাবিটা কিসের? দেখে মনে হচ্ছে কোন তালার চাবি হয়ত কোন লকারের। সেই লকার কোথায়?

এই খবর একমাত্র নয়না ওকে দিতে পারবে। রাত অনেক হয়ে গেছে, এত রাতে নয়নাকে কি ফোন করা ঠিক হবে? এই সব আলোচনা সামনা সামনি হওয়া ভালো। হাতে সময় খুব কম, একটা দিন ও হাতে নেই।

পরের দিন আবার রুহির কলেজ, সকালে দাঁত মাজার সময়ে উভয়সঙ্কটে পড়ে যায় দানা। শেষ পর্যন্ত সিগারেট টেনে কমোডে বসে ঠিক করে আগে মেয়ের কলেজ তারপরে বাকি সব কাজ। মহুয়া রুহিকে ঘুম থেকে তুলতে ব্যাস্ত, এমনিতে রোজদিন দেরি করে ওঠে কিন্তু প্রথম দিন কলেজ যাবে তাই লাফাতে লাফাতে সকাল সকাল উঠে পড়েছে। নতুন কলেজ ড্রেস, মাথায় দুটো ঝুঁটি বাঁধা, সাদা ছোট জামা আর লাল কালো ডোরা কাটা স্কার্টে মেয়েকে দেখে মহুয়া প্রায় কেঁদে ফেলে। কলেজের গেট পর্যন্ত ছেড়ে দিতে যায় দানা আর মহুয়া। রুহির বেশ আনন্দ কলেজ যাবে, কিন্তু বেচারি এটা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি যে মাম্মা আর ডাডা ওর পাশে থাকবে না। যেই কলেজের ম্যাডামের হাতে ওকে ধরিয়ে দেওয়া হয় সেই কান্না জুড়ে দেয়, আর রুহি কিছুতেই ভেতরে যাবে না। পা দাপিয়ে, কলেজ মাথায় করে তুলে ধরে। অবশ্য রুহি একা নয় ওই বয়সের আরো অনেক বাচ্চারাই এটা করে। তবে নিজের মেয়ের কান্না দেখে কি আর থেমে থাকা যায়, মহুয়া চুপচাপ দাঁড়িয়ে, একবার ভাবে না আজকে না হয় নাই বা গেল আগামী কাল থেকে যাবে।

নার্সারির ম্যাডাম ওকে বুঝিয়ে বলে, "একদিন আপনাকে ছাড়তেই হবে, সেটা আজ। আপনি বাড়ি যান।"

রুহি কিছুতেই মায়ের আঁচল ছাড়বে না। মহুয়া ওর ক্লাসের ম্যাডামকে জিজ্ঞেস করে, "আমি একটু বসতে পারি।"

ওর ম্যাডাম মাথা দুলিয়ে বলে, "দুঃখিত ম্যাডাম। প্রথম দিন সব বাচ্চাই এমন করে, একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে।"

মহুয়ার পা আর নড়ে না, দানার পাশ ঘেঁসে চুপচাপ ছলছল চোখে দাঁড়িয়ে থাকে। দানা বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে নিজের পুরানো দিনে হারিয়ে যায়। ওর মা কাজে বেড়িয়ে যাওয়ার সময়ে মায়ের আঁচল ধরে থাকত, কিছু করার ছিল না তখন। ওই বস্তির অলি গলির মধ্যে কুকুর বেড়ালের সাথেই খেলা করতো দানা আর ওর মা কাজে বেড়িয়ে যেত। রুহিকে অন্তত এঁদো বস্তির পুতিময় অলি গলিতে ছেড়ে ওরা যাচ্ছে না। রুহির ম্যাডাম ওকে নিয়ে চলে যাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পরে মহুয়া ওকে জানিয়ে দেয় যে প্রথম দিনে এই কলেজেই বসে থাকবে। দানা ওকে মানা করে না তবে মনাকে বলে যায় একটু নজর রাখার জন্য।

যদিও মহুয়াকে একলা ছাড়তে একদম ইচ্ছে নেই তাও ওকে একা ছেড়ে নয়নার বাড়ির দিকে যাত্রা করে। হাতে সময় খুব কম, ওর দৃঢ় বিশ্বাস এই সমাগমে নিশ্চয় কঙ্কনা আর নাসরিন আসবে। তার খবর হয়ত নয়না দিতে পারবে না কিন্তু কিছু সাহায্য হয়তো করতে পারবে বলে ওর বিশ্বাস। যদিও নয়নার সামনে দাঁড়ালে ওর মাথার ঠিক থাকবে কি না সেটা সন্দেহের ব্যাপার তাও মহুয়া ওকে বারেবারে শান্ত থাকতে অনুরোধ করে।

এত সকালে দরজায় দানাকে দেখে নয়না বিস্মিত হয়ে যায়। ওই রাতের ঘটনার পরে আর দানার সাথে দেখা হয়নি অথবা কথাও হয়নি। কারন অবশ্য নয়নার অজানা নয়। হয়তো সেই বোঝা পড়া করার জন্যই এসেছে। বসার ঘরে ঢুকে চোখ চোখ রেখে কিছুক্ষণ কঠোর চাহনি নিয়ে নয়নাকে পর্যবেক্ষণ করে দানা। ওই কঠিন ধারালো দৃষ্টির সামনে দাঁড়াতে কুণ্ঠিত বোধে কুঁকড়ে যায় নয়না।

কুশল আদান প্রদানে সময় নষ্ট না করে সোজা বিষয়ে চলে আসে। দানা গম্ভীর কণ্ঠে ওকে জিজ্ঞেস করে, "রেড এন্ড ব্লু ক্লাবের বিষয়ে কি জানো তুমি?"

অবাক নয়না পাল্টা প্রশ্ন করে, "তুমি ওই ক্লাবের বিষয়ে কি করে জানলে?"

নয়নার চোখে চোখ রেখে দানা জিজ্ঞেস করে, "যা প্রশ্ন করছি তার সঠিক উত্তর দাও, নয়না।"

নয়না নিরুপায়, জানে ওর সামনে একটা ক্ষুধার্ত সিংহ বসে এর সামনে একটু এদিক ওদিক করলে ওর মাথা ধড় থেকে নামিয়ে দিয়ে চলে যাবে। তাই পাশে বসে রেড এন্ড ব্লু ক্লাবের বিষয়ে বলতে শুরু করে, "দেখো দানা, এই ক্লাব গুটি কয় উচ্চবিত্ত ধনী কামুক নর নারী কাম সহবাসের সমাগম। এই ক্লাবের সদস্যরা বেশির ভাগ পুরুষ আর বেশ কয়েকজন নারী, সব মিলিয়ে তিরিশ জনের মতন হবে। এদের বার্ষিক একটা সেক্সুয়াল মিট হয় তবে সেটা আর বার্ষিক নয়। এই সেক্সুয়াল পার্টি মিট গত দুই বছরে তিন চার মাস অন্তর অন্তর হয়ে থাকে। এই বছর কিছু কারনে হয়তো হয়নি। সেই কারন আমার অজানা। এই ক্লাবের নাম রেড এন্ড ব্লু এই জন্য কারন সদস্যদের কার্ডের রঙ লাল আর যে ছেলে মেয়েদের টাকা দিয়ে ওইখানে যৌন সঙ্গমের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় তাদের কার্ডের রঙ নীল। লাল কার্ডের সদস্যরা সবাই লাল রঙের মুখোশ আর লাল রঙের জাঙ্গিয়া অথবা প্যান্টি পরে ঘুরে বেড়ায়। নীল রঙের কার্ডের সদস্যেরা সবাই কোন অভিনেত্রী, অথবা মডেল অথবা সুঠাম স্বাথ্যবান কম বয়সী পুরুষ হয়। তাদের বাজুতে একটা নীল রঙের ফিতে আটকানো থাকে তাছাড়া অঙ্গে কোন বস্ত্র থাকে না। আমি এই ক্লাবের নীল রঙের কার্ডের অধিকারী। এই সমাগম কোথায় অনুষ্ঠিত হয় সেটা নীল কার্ডের লোকেরা জানে না। কারন সব নীল রঙের কার্ডের ছেলে মেয়েদের চোখে কাপড় বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়। বাড়িতে ঢুকানোর পরেই আমাদের চোখের কাপড় খোলা হয়। আবার সকালে আমাদের চোখে কাপড় বেঁধে বের করে নিয়ে আসা হয়। লাল কার্ডের সদস্যদের কি নিয়ম তাও সঠিক ভাবে জানা নেই। খুব গোপন ভাবে নিজেদের আসল পরিচয় বাঁচিয়ে এরা সবাই এক রাতের জন্য প্রচন্ড যৌন সঙ্গমের খেলায় মেতে ওঠে। উলঙ্গ নর নারীরা মদ খেয়ে, ড্রাগস নিয়ে সারা রাত ধরে বিভিন্ন ভাবে যৌন ক্রিড়া করে চলে। সবার নানান ধররনের পছন্দ অপছন্দ। কারুর চাই কচি বাচ্চা মেয়ে, কারুর চাই সুন্দরী মেয়ে, কোন ছেলের আবার ছেলে চাই, কোন মেয়ের আবার মেয়ে চাই, কেউ চায় ভারজিন, কেউ একটু কড়া ধরনের সেক্স চায়। নীল কার্ডের মেয়েদের যোনি মেলে শুয়ে থাকতে হয়, এক রাতে কয়জনে ওর সাথে সঙ্গমে মত্ত হবে তার ইয়াত্তা নেই। কোন মানুষ কোন ফুটোতে কি ঢুকাবে সেটাও জানা নেই। হয়ত একটা মেয়ের সাথে একসাথে চার পাঁচ জন মিলে সেক্স করছে। কেউ পাছায়, কেউ মুখে, কেউ যোনিতে, কেউ বুকের ওপরে চড়ে। এর জন্য কয়েক লক্ষ টাকা দেয় ওরা। তবে একজন লাল কার্ডের সদস্যকে আমি চিনি যে আমার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে। বিত্ত মন্ত্রালয়ের সচিব মিসেস রাগিণী ভৌমিক। দুঃখিত দানা এই ছাড়া আমি আর কোন খবর তোমাকে দিতে পারছি না।"

দানা সব শুনে চুপ করে থাকে তারপরে জিজ্ঞেস করে, "এইবারের এই রেড এন্ড ব্লু ক্লাবের সমাগম কোথায় অনুষ্ঠিত হবে সেটা জানো?"

নয়না মাথা নাড়ায়, "না গো জানি না। লাল কার্ডের সদস্য ছাড়া এই সমাগম কোথায় অনুষ্ঠিত হবে সেটা কেউ জানে না। আর এইবারে আমি এই সমাগমে যাচ্ছি না দানা। কিন্তু তুমি কেন জানতে চাইছো?"

দানা বাঁকা হেসে বলে, "এই ক্লাবের নাম আমি বেশ কয়েক জনার মুখে শুনেছি, এমনকি একদিন তোমার মুখেও শুনেছিলাম নয়না।"

নয়না অবাক হয়ে যায়, দানা ওকে বলে, "এই ক্লাবের এইবারের মিট কোথায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেটা জানা খুব দরকার। তুমি বললে যে নীল রঙের কার্ডের সদস্যদের চেহারা মুখোশে ঢাকা থাকে না, তার মানে তাদের তুমি চেন। ঠিক কি না? তোমার জানা শোনা কেউ থাকলে ফোন করে দেখ কে যাচ্ছে এইবারের সমাগমে।"

নয়না প্রশ্ন করে, "কিন্তু সেও জানবে না দানা, তাহলে?"
Like Reply
দানা স্মিত হেসে বলে, "তাকে জানতে হবে না শুধু মাত্র কে যাচ্ছে সেই খবর দাও। তার পরের পরিকল্পনা আমার। আমি ঠিক খুঁজে চলে যাবো।"

নয়না ওকে বলে, "দানা, এই জায়গা খুব সাঙ্ঘাতিক। যেহেতু এই সমগম খুব গোপনে অনুষ্ঠিত হয় তাই এই ক্লাবের সদস্যেরা বেশ কড়া নিরাপত্তার ব্যাবস্থা করে। এই ক্লাবের সদস্যরা সবাই সমাজের উচ্চবিত্ত প্রতিপত্তিশালী ধনী মানুষ। নিজেদের পরিচয় আর গোপনীয়তা রক্ষা করার জন্য অনেক কিছুই এরা করতে পারে। নিরাপত্তা রক্ষীরা সবাই বাইরে থেকে ভাড়া করে আনা। কালো পোশাকে হাতে খোলা বন্দুক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ওদের এই জায়গার আশেপাশে কোন সন্দেহ ভাজন ব্যাক্তি দেখলে মেরে ফেলতে কুণ্ঠিত বোধ করবে না। সাবধান দানা।"

দানা মাথা দুলিয়ে বলে, "এই সমাগমে আমাকে যেতেই হবে নয়না। তুমি শুধু মাত্র এই খোঁজ লাগাও তোমার চেনাজানা কে এইবারের সমাগমে যাচ্ছে বাকিটা আমার ওপরে ছেড়ে দাও।"

নয়না প্রশ্ন করে, "কিন্তু এত বড় ঝুঁকি নিয়ে কেন যেতে চাইছো?"

দানা হিমশীতল কণ্ঠে জবাব দেয়, "দরকার আছে। এক নয় তুমি ফোন করে রাগিণীকে বল যে তুমি যাবে না হয় তুমি খবর লাগাও কে কে যাচ্ছে। তাদের সাথে একবার দেখা করা খুব জরুরি আমার।"

এই সমাগমে যাওয়ার মতন মানসিক অবস্থা নয়নার নেই কিন্তু দানাকে মানা করতে পারে না কিছুতেই। গত বারের মধ্যে যাদের নয়না চিনতে পেরেছিল তাদের এক এক করে ফোন করে। বেশির ভাগ ছেলে মেয়েদের এই বারে আমন্ত্রন জানানো হয়নি। প্রত্যেক বার যেমন এই ক্লাবের সমাগমের জায়গা বদল হয় ঠিক তেমনি দুই তিন বছর অন্তর অন্তর ছেলে মেয়েদের বদলে দেওয়া হয়। একজন কে বেশি বার ডাকা হয়না কখন, তবে নয়না এবং বেশ কয়েকজন ব্যাতিক্রম, প্রায় আট নয় বার এই রেড এন্ড ব্লু ক্লাবের যৌন সমাগমে গেছে। অনেক ফোন করা পরে শেষ পর্যন্ত এক উঠতি টিভি অভিনেত্রী, রিচা দত্ত নয়নাকে খবর দেয় তাকে এই ক্লাবে ডাকা হয়েছে। তাকে বলা হয়েছে, বিকেল চারটে নাগাদ ওর বাড়ির সামনে একটা গাড়ি আসবে আর সেই গাড়িতে করে ওকে নিয়ে যাওয়া হবে। এর চেয়ে বেশি আর কিছু জানে না। রিচা দত্তের জন্য এইবার প্রথম, একটু ভয় ভয় করছে কিন্তু ওই সমাগমের জন্য ওকে অনেক টাকা দেওয়া হচ্ছে। জানায় এক রাতের জন্য ওকে কুড়ি লাখ টাকা দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে দশ লাখ দেওয়া হয়েছে আর বাকি টাকা পরেরদিন সকালেই ওর একাউন্টে চলে আসবে বলে কথা দিয়েছে।

মহুয়ার দৌরাত্মে মাঝে মাঝে হিন্দি বাংলা টিভি সিরিয়াল দেখা হয়ে যায় আর মেয়ের আবদারে "কারতুন"। দানার হাতে টিভির রিমোট খুব কম থাকে। রুহির কাছ থেকে রিমোট চাইলে নাক মুখ কুঁচকে আদর করে বলে, "ইত্তু কারতুন তা-পয়ে দেব।" আর মহুয়ার সময়ে চাইলে, ঝাঁঝিয়ে ওঠে, "আমার সিরিয়াল গুলো দেখার সময়ে তোমার যত রিমোটের কথা মনে পড়ে যায় তাই না। তুমি যখন ওই বাঘ সিংহ দেখ তখন মানা করেছি? কি একটা লোক বন বাদারে ঘুরে বেড়ায় পচা উঠের মাংস খায়, জ্যান্ত টিকটিকির মাথা ছিঁড়ে খায়। মাগো অয়াক অয়াক, সেই সব তুমি গোগ্রাসে গিলতে পারো। কেমন ছেলে গো তুমি? এখন পাবে না একদম।" ব্যাস দানার টিভি দেখার যবনিকা পাত।

ছোট পর্দার উঠতি অভিনেত্রী রিচা দত্তকে, মহুয়ার দৌরাত্মে বেশ কয়েকটা টিভি সিরিয়ালে, পত্রিকায় দানা দেখেছে। একটা টিভি সিরিয়ালে নায়িকার বোনের চরিত্রে দেখেছে। লাস্যময়ী সুন্দরী বলা চলে, গায়ের রঙ ঈষৎ চাপা হলেও চোখ নাক বেশ তীক্ষ্ণ। আর পাঁচ খানা বাঙালিদের মতন গোলগাল চেহারা, নধর গোলগাল দেহের গঠন। বুক পাছা দুই বেশ বড় বড়, তবে কোনোদিন পোশাকের নীচে কি লুকিয়ে রেখেছে সেটা দেখার সুযোগ হয়নি। ঈষৎ মোটা ঠোঁট জোড়া দেখলে বড় চুমু খেতে ইচ্ছে করে আর যখন হাঁটে তখন পাছার দুলুনি দেখে মনে হয় এই একটু চাঁটি মেরে দেওয়া যাক। এই অভিনেত্রী গুলোর হাতে সারা বছর বিশেষ কাজ থাকে না, কোনোরকমে একটা সিরিয়ালে ছোট কোন চরিত্র করার পরে হয়ত আবার অনেকদিন বসে থাকতে হয়। কিন্তু ওদের কেতা দুরস্ত জীবন শৈলীর জন্য অর্থের প্রয়োজন আর তার তাগিদে অনেকেই রাতের বেলা এই মহানগরের বুকে বেড়িয়ে পরে শরীর প্রদান করতে। এক রাতে কুড়ি লাখ টাকার হাতছানি অনেকেই সামলাতে পারে না।

নয়না দানাকে সাবধান করে বলে, "কি করতে চলেছ এইবারে? সাবধানে যেও, আমন্ত্রন পত্র আর কার্ড ছাড়া ওইখানে যাওয়া মানে সাক্ষাৎ মৃত্যুর কবলে। লাল কার্ডের সদস্যেরা অনেক শক্তিশালী ব্যাক্তি, খুব কড়া নিরাপত্তা নেওয়া হয়। তুমি কি করে যাবে, মাথায় কি কোন পরিকল্পনা আছে?"

দানা কিছু না জানিয়ে শুধু বলে, "সেটা তোমার জেনে দরকার নেই। তুমি শুধু রিচা দত্তের ঠিকানা আমাকে দাও।"







রেড এন্ড ব্লু ক্লাব (#০৪)

নয়না ওকে রিচা দত্তের বাড়ির ঠিকানা দিয়ে দেয়। যাওয়ার আগে নয়না ওর হাত ধরে বলে, "এতোদিন আসোনি কেন? আমার ওপরে রেগে আছো?"

দানার হাতা ওর গলা চেপে ধরার জন্য নিশপিশ করে ওঠে কিন্তু নিজেকে সামলে হিমশীতল কণ্ঠে নয়নাকে বলে, "না ঠিক রেগে নেই।"

নয়নার বাড়ি থেকে বেড়িয়ে সোজা রুহির কলেজে চলে যায় দানা। এতক্ষণে হয়ত ছুটি হয়নি, মহুয়া কি ওইখানে এক ভাবে দাঁড়িয়ে আছে নাকি? মহুয়া চুপচাপ একটা গাছের নীচে বসে তখন পর্যন্ত রুহির কলেজ ছুটি হওয়ার অপেক্ষা করছিল। মহুয়াকে ওই ভাবে বসে থাকতে দেখে দানার মন কেমন করে ওঠে। মনে হয় এক একা সুন্দরী যেন অধীর অপেক্ষায়। কলেজের গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে অনেকক্ষণ প্রেয়সীকে দেখে যায়। শাড়ি সালোয়ার ছাড়া আর কোন পোশাক কোনোদিন পরে বের হয়না মহুয়া। দানার সাথে থাকার পরে, বাড়িতে শাড়ির দোকান। তুঁতে রঙের শাড়িতে ফর্সা মহুয়াকে আরো বেশি মাদকতাময় মনে হয়। প্রসাধনীর মাত্রা বরাবর একটু কম, কপালে ছোট টিপ, কানে দুল আর ঠোঁটে লিপস্টিক। খুব ইচ্ছে করলে চোখের কোনে হালকা কাজল লাগায়। মেয়েকে প্রথম বার কলেজে দিতে এসেছে তাই একটু সেজেই এসেছে। বড় বড় চোখের পাতা একটু ভিজে, মেয়েকে কাঁদতে দেখে নিজের চোখের জল সামলাতে পারেনি।

ওকে দেখতে পেয়েই চোখের কোল মুছে মিষ্টি হেসে জিজ্ঞেস করে নয়নার বাড়িতে কি কি হল। মহুয়াকে সব কিছু বলাতে মহুয়া পরামর্শ দেয়, রিচা দত্তের বাড়ির ওপরে নজর রাখতে। ওকে নিতে যে গাড়ি আসবে সেই গাড়িকে অনুসরন করলে দানা ঠিক জায়গায় পৌঁছে যাবে।

ছুটির ঘন্টা বাজতেই "ডাডা" আর "মাম্মা"র খোঁজে রুহি। ওদের দেখে রুহির কি অভিমান, মুখ ভার করে একবার ডাডাকে দুই ঘা কষিয়ে দেয় একবার মাম্মাকে দুই ঘা কষিয়ে দেয়।

আদো আদো কণ্ঠে নালিশ জানায়, "ক্লাসে কেন আসোনি? স্তুলে আর যাবো না।" মাথা ঝাঁকিয়ে মাম্মার গলা জড়িয়ে মুখ লুকিয়ে পড়ে থাকে, "আমি স্তুলে যাবো না।"

রুহির ছুটির পরে মহুয়া আর রুহিকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে দানা বেরিয়ে পড়ে। বুকের মধ্যে কি হবে কি হবে ভাব। দানার মুখে সব কিছু শোনার পরে মহুয়ার বুকের ধুকপুকানি শত গুন বেড়ে যায়। সাক্ষাৎ মৃত্যুর কবলে, ওই সমাগমে কেউ যদি ওকে চিনে ফেলে তাহলে নিরাপত্তা রক্ষী দ্বারা ওকে মেরে ফেলতে কুণ্ঠিত বোধ করবে না কেউই। সমাগমের সবাই উচ্চবিত্ত ক্ষমতাশালী পুরুষ আর নারীর মেলা, নিজেদের পরিচয় অতীব গোপন করেই এই তীব্র যৌন সঙ্গমে সবাই মেতে ওঠে।

বের হওয়ার আগে রুহি আর মহুয়াকে জড়িয়ে ধরে দানা। প্রেয়সী আর মেয়ের গায়ের উষ্ণতা নিজের বুকে মাখিয়ে নিয়ে বেড়িয়ে যায়। বাড়ি থেকে লাল কার্ড, মুখোশ, আমন্ত্রন পত্র, চাবি ইত্যাদি সঙ্গে নিয়ে নেয়। সব থেকে আগে, হিঙ্গল গঞ্জে গিয়ে শঙ্কর রমিজ আর বাকিদের ওর পরিকল্পনা বুঝিয়ে বলে। দানা একা রিচা দত্তের গাড়ি অনুসরন করবে। ওর পেছনে মনা ওর গাড়ি অনুসরন করবে। দলের বাকিরা সবাই শঙ্করের নির্দেশ মতন কাজ করবে। একবার দানা ওই সমাগমের ভেতরে ঢুকে গেলে বাকিদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে না। সব থেকে বড় বিষয়, কোথায় এই অনুষ্ঠান আয়োজিত হচ্ছে সেটাই কারুর জানা নেই। তাই আগে থেকে ওই জায়গায় চলে যাবে তার উপায় নেই।

রমিজ ওকে দুটো পিস্তল দিয়েছিল, কিন্তু পিস্তলে কাজ হবে না। নিশ্চয় ওই নিরাপত্তা রক্ষীরা ওর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে নেবে আর একবার ভেতরে ঢোকার পরে শুধু মাত্র জাঙ্গিয়া আর মুখোশ পরে থাকতে হবে সেখানে পিস্তল গোঁজার কোন অবকাশ নেই। একটা অন্য গাড়িতে মনা ওকে অনুসরন করে। রিচা দত্তের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায় দুইজনে। মনা বাকিদের ফোন করে সেই খানে ডেকে নেয়। অল্প কথায় জানিয়ে দেয় খুন খারাবি হয়ত হতে পারে, আর সেই সাথে এই গোপন সম্প্রদায়ের গোপন যৌন সঙ্গমের কথাও জানাতে ভোলে না। দুটো গাড়ি করে শঙ্কর আর রামিজ ওদের বেশ দূরে অপেক্ষা করে। পরিকল্পনা মাফিক, দানা রিচা দত্তের গাড়ি অনুসরন করবে আর মনা দানাকে অনুসরন করবে। সবাই শঙ্করের হুকুমের তালিম করবে।

বিকেলের পর থেকেই আকাশে মেঘের আনাগোনা শুরু হয়ে যায়। একটু পরেই রিচা দত্তের বাড়ির সামনে একটা গাড়ি এসে দাঁড়ায়। কিছু পরে রিচা দত্ত নীচে নেমে গাড়িতে উঠে বসে, সাথে কেউ নেই। দানা ঘড়ি দেখে বুঝে যায় চারটে বেজে গেছে এটা ওই রেড এন্ড ব্লু ক্লাবের গাড়ি। ওদের গাড়ি ছাড়তেই দানা ওকে অনুসরন করতে শুরু করে। মহানগর ছাড়িয়ে গাড়ি কিছুক্ষণের মধ্যেই দক্ষিণে নদীর মোহনার দিকে যাত্রা করে। ওদের গাড়ি পাশ কাটিয়ে আরো বেশ কয়েকটা দামী গাড়ি এগিয়ে যায়। গাড়ি গুলো দেখে দানা বুঝতে পারে সঠিক পথেই যাত্রা করছে। সবাই রেড এন্ড ব্লু ক্লাবের সদস্য। কারুর গাড়ি অবশ্য দানা চেনে না। কঙ্কনা আর নাসরিন হয়ত এই গাড়ি গুলোর একটায় থাকতে পারে।

বেশ কিছু দুর যাওয়ার পরে রিচার গাড়ি একটা গ্রামের পথ ধরে, সেই সাথে আরো বেশ কিছু গাড়ি গ্রামের পথ ধরে। কিন্তু কিছু গাড়ি সার বেঁধে বড় রাস্তা ধরে আরো দক্ষিনে চলে যায়। দানা উভয় সঙ্কটে পড়ে যায়, ঠিক কোনদিকে যাওয়া উচিত সেটা ভেবে পায় না। বড় রাস্তার ওপরে গাড়ি থামিয়ে একবার দক্ষিন দিকে দেখে একবার গ্রামের রাস্তার দিকে দেখে। শঙ্কর ওকে ফোন করে, দক্ষিনে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলে, গ্রামের ভেতরে যে গাড়ি গুলো গেছে সেগুলো হয়ত নীল কার্ডের জন্য আর বাকি গাড়ি লাল কার্ডের সদস্যদের নিয়ে যাচ্ছে। শঙ্করের কথা মেনে দক্ষিনে গাড়ি চালানো শুরু করে দেয়। মনা গাড়ি নিয়ে গ্রামের ভেতরে ঢুকে পরে। বেশ কিছু দুর এগিয়ে যাওয়ার পরে দানা আবার আগের গাড়ি গুলোর দেখা পায়। ঠিক সেই সময়ে মনা ওকে ফোন করে জানায়, যে রিচা এবং আরও বেশ কয়েক জন ছেলে মেয়েকে গাড়ি থেকে নামিয়ে একটা বড় বাসে তোলা হয়েছে। বাসের চারপাশে বন্দুক ধারি কালো পোশাক পরা নিরাপত্তা রক্ষী বাহিনী। মনা আরো জানায়, বাসের সামনে পেছনে দুটো জিপে নিরাপত্তা রক্ষী বাসকে আগলে গ্রামের পথ ধরে দক্ষিনে মোহনার দিকে, কাবুলি ঘাটের দিকে যাত্রা শুরু করেছে। দানা ওকে ওই বাসের পিছু নিতে পরামর্শ দেয়। বাসের বেশ তফাতে মনা অনুসরন করে।

আর অন্য দিকে দানা বাকি গাড়ি গুলো অনুসরন করে কাবুলি ঘাটে পৌঁছে যায়। কাবুলি ঘাটে একটা ছোট সাদা রঙের লঞ্চ দাঁড়ানো। বাঁধানো ঘাটের কাছে বেশ কয়েকটা গাড়ি দাঁড়িয়ে। বাকি গাড়ি গুলো থেকে বেশ কিছু দূরে গাড়ি দাঁড় করিয়ে প্রথমে ওদের পর্যবেক্ষণ করে। কারন ওর কাছে লাল কার্ড আর নয়না এই লাল কার্ডের সদস্যদের বিষয়ে কোন আলোকপাত করতে পারে নি। একটা গাড়ি থেকে একজন পঞ্চাশ ঊর্ধ্ব ভদ্রলোক ধোপ দুরস্ত সুট পরে, লাল মুখোশে চেহারা ঢেকে লঞ্চের দিকে এগিয়ে যায়। লঞ্চ থেকে দুই কালো পোশাক পরিহিত বন্দুক ধারি নেমে এসে ওই ভদ্রলোকের কাছে কিছু দেখতে চায়। দানা অত দুর থেকে বিশেষ কিছু বুঝতে পারে না তবে এইটুকু বুঝতে পারে ওকে ওই মুখোশ পড়তে হবে। গাড়িটা ধীরে ধীরে চালিয়ে লঞ্চের কাছে নিয়ে যায়। গাড়িতে বসেই একটা সিগারেট ধরিয়ে বেশ কিছুক্ষণ বসে চারপাশ ভালো ভাবে নিরীক্ষণ করে। বুকের মধ্যে যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে। আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা বেড়ে ওঠে। যে কোন মুহূর্তে ঝড় জল অবশ্যাম্ভাবি। জলের মাঝে যদি এই সমগম অনুষ্ঠিত হয় তাহলে দানার পক্ষে ভালো। কারন মহেন্দ্র বাবুর কাছে থাকার সময়ে আড়াই মাসের মতন ঝড় জল মাথায় করে সমুদ্র যাত্রা করেছিল।

সিগারেট শেষ করে, পকেটে যা ছিল সবকিছু গাড়ির মধ্যে রেখে দেয়। লাল কার্ড, চাবি, মুখোশ আর আমন্ত্রন পত্র ছাড়া কিছুই সঙ্গে নেয় না। লাল মুখোশ পরে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে। ঠোঁট আর চোখে দুটো ফুটো তাছাড়া সম্পূর্ণ চেহারা লাল কাপড়ে ঢাকা। ওকে দেখতে পেয়েই লঞ্চ থেকে দুটো নিরাপত্তা রক্ষী হাসি হাসি মুখ অভ্যর্থনা জানাতে নেমে আসে। একজনের হাতে বন্দুক অন্য জনের হাতে ছোট ল্যাপটপ। বন্দুকধারী রক্ষী ওর কাছে এসে কোন কিছু জিজ্ঞেস না করেই হাত বাড়িয়ে দেয়। দানা বুঝতে পারে যে ওকে কার্ড দেখাতে হবে তাই বুক পকেট থেকে লাল কার্ড বের করে লোকটার হাতে ধরিয়ে দেয়। দ্বিতীয় রক্ষী ওর দিকে ল্যাপটপ খুলে একটা স্ক্রিন দেখিয়ে দেয়। সেইখানে লেখা "পাসওয়ার্ড"। দানা মাথা চুলকে সংখ্যা মনে করতে চেষ্টা করে। ওর দেরি দেখে দুই জন রক্ষী পরস্পরের দিকে একটু চাওয়াচায়ি করে। দানা স্মিত হেসে ল্যাপটপের বোতাম টিপে পাসওয়ার্ড দিয়ে দেয়। দুই রক্ষী ওর সাথে হাত মিলিয়ে ওকে লঞ্চে আসতে আহবান জানায়।
Like Reply
ছোট লঞ্চ, মাঝ খানে জনা দশেক নর নারীর ভিড়। বেশির ভাগ পুরুষ মনে হয় চল্লিশের ওপরে। মেয়েদের দেখে পরিচয় জানার উপায় নেই, সবার চেহারা লাল কাপড়ে ঢাকা। মেয়েদের পোশাক আশাক বেশ খোলামেলা, হতেই হবে কারন এই সমাগমে সবাই একটু পরে উলঙ্গ হয়ে যাবে তাই বেশি রাখঢাক করার দরকার নেই। চারজন মহিলার পরনে রাত্রিবাসের মতন পাতলা স্ট্রাপ দেওয়া স্লিপ। সমুদ্র থেকে ভেসে আসা হাওয়ায় বারেবারে ওদের স্লিপ উড়ে যায় আর নধর গোলগাল পুরুষ্টু ঊরু যুগল বেড়িয়ে পরে। একজন মনে হয় বেশ সুন্দরী, চোখের ছিদ্র থেকে যেটুকু চোখ আর ঠোঁট দেখা গেছে তাতে বোঝা যায়। সেই মহিলার দেহের গঠন বেশ লোভনীয়। কিন্তু কাউকেই ঠিক ভাবে চেনা যায় না। ওদের দেহের গঠন দেখে দানা বুঝতে পারে এদের সাথে দানা কোনোদিন সহবাস করেনি। হয়ত এরা কঙ্কনার আওতার বাইরে অথবা ভিন্ন প্রদেশের মহিলা। কারুর মুখে কোন কথা নেই সবাই নির্বাক। সবাই এক একটা চেয়ারে বসে। ওকে দেখে বাকিরা মাথা নুইয়ে অভিবাদন জানায়। দানাও মাথা নুইয়ে অভিবাদন জানায়। এক কোনায় একজন ফর্সা মোটা মহিলাকে দেখে দানার চিনতে কষ্ট হয় না এই রাগিণী। ওর চোখ খুঁজে বেড়ায় কঙ্কনা আর নাসরিনকে। কঙ্কনা আর নাসরিনের শরীরের গঠন ওর পরিচিত, মুখ না দেখলেও ওদের দেহের গঠন দেখে দানা ঠিক চিনে যাবে।


এই চারপাশ খোলা লঞ্চে অত জায়গা নেই যে একটা ভীষণ কামনা বাসনা যুক্ত যৌন সঙ্গমের খেলা চলতে পারে। মনে প্রশ্ন জাগে তাহলে ওদের কেন এই লঞ্চে তোলা হল? কিছুক্ষণ পরে লঞ্চ ছেড়ে দেয় আর দানার বুকের ধুকপুকানি বেড়ে ওঠে। লঞ্চ তীব্র গতিতে সমুদ্রের দিকে যাত্রা করে। চারপাশে ততক্ষণে অন্ধকার নেমে এসেছে। কিন্তু লঞ্চ ছাড়া পর্যন্ত ওদের না দেখতে পেয়ে দানা হতাশ হয়ে যায়। তাহলে কি এত ঝুঁকি নিয়ে এইখানে আসা সব বৃথা। কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ওদের? শঙ্কর রমিজ আর বাকিরা ওর পেছনে আছে কি না সেটা আর বোঝা গেল না। কিছুক্ষণের মধ্যেই নদীর তট অন্ধকারে ঢেকে যায়, ওদের চারপাশে কালো সাগরের জল আর উত্তাল ঢেউয়ের মেলা। সাগর তট অনেক পেছনে ফেলে প্রায় আধা ঘন্টা লঞ্চ চলার পরে সামনে একটা বিশাল সাদা রঙের জাহাজ দেখা যায়। আলোয় আলোকিত ওই জাহাজ দেখে দানার বুঝতে পারে যে এই যৌন সমাগম ওই জাহাজে অনুষ্ঠিত হবে। নিরাপত্তার এক অভিনব উপায়, চারপাশে উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ জল, জাহাজের ডেকে অলিন্দে বন্দুক ধারী নিরাপত্তা রক্ষী। কোন প্রতারকের পালিয়ে যাওয়ার রাস্তা নেই।

জাহাজের কাছে আসতেই দানা দেখতে পায় আরো ছোট দুটি লঞ্চ আগে থেকে জাহাজের কাছে দাঁড় করানো। হয়ত ওই দুটি লঞ্চের একটাতে কঙ্কনা আর নাসরিন এসেছে। ওদের লঞ্চের পেছনে একটা বেশ বড় লঞ্চ দাঁড়িয়ে, ওদের অপেক্ষায়।

ওদের লঞ্চ জাহাজের কাছে আসতেই একটা সিঁড়ি নেমে আসে। সিঁড়ি বেয়ে বাকি মুখোশ ধারী সদস্যদের সাথে জাহাজে উঠে যায়। জাহাজে উঠেই আরো এক প্রস্থ নিরীক্ষণ চলে, লাল কার্ড দেখায় তারপরে একটা ল্যাপটপ খুলে পাসওয়ার্ড দিতে হয়। একজন ওর কাছ থেকে আমন্ত্রন পত্র নিয়ে নেয়। দানার কার্ড দেখে আর আপাদমস্তক দেখে সেই নিরাপত্তা রক্ষী কিছুক্ষণের জন্য থমকে যায়, কিন্তু যেহেতু দানার কাছে সঠিক কার্ড আর সঠিক আমন্ত্রন পত্র আছে তাই কিছু বলার সুযোগ পায় না। কার্ডে লেখা জন্ম তারিখ হিসাবে এতদিনে ওর বয়স হওয়া উচিত পঞ্চাশের উপরে কিন্তু দানার বয়স অনেক কম। একজন নিরাপত্তা রক্ষী ওকে নিয়ে একটা ঘরের মধ্যে ঢুকে একটা বড় সুটকেস ধরিয়ে দেয়। সেই ঘরে আরও পুরুষের মেলা। দানা সবার দিকে দেখে, সবার চেহারা লাল মুখোশে ঢাকা, কারুর পরিচয় জানার উপায় নেই। বাকিদের দেখা দেখি পকেট থেকে চাবি বের করে ওই সুটকেস খোলে দানা। বাকিরা নিজেদের পোশাক খুলে শুধু মাত্র একটা লাল রঙের জাঙ্গিয়া পরে নেয়। দানাও বাকিদের দেখাদেখি নিজের পোশাক খুলে ওই সুটকেসে রেখে দেয় আর ওর ভেতরে রাখা একটা লাল রঙের জাঙ্গিয়া পরে নেয়। সারা অঙ্গ অনাবৃত, পরনে শুধু মাত্র একটা জাঙ্গিয়া আর মুখের ওপরে একটা মুখোশ ছাড়া আর কিছু নেই।

বাকি পুরুষদের পেছন পেছন দানা ওই ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে। সামনে এক নিরাপত্তা রক্ষী ওদের পথ দেখিয়ে একটা বিশাল সুসজ্জিত হল ঘরে নিয়ে আসে। হলের ছাদে একটা বিশাল বড় ঝাড় বাতি টাঙ্গানো, চারদিকের দেয়ালে বড় বড় আয়না আর অসংখ্য ছোট ছোট আলো। আয়নার ঘষা কাঁচে উলঙ্গ নর নারীর বিভন্ন ভঙ্গিমার যৌন সঙ্গমরত ছবি। হল ঘরে বেশ কয়েকজন অর্ধ উলঙ্গ নর নারীর ওদের আগেই উপস্থিত। জনা দশেক অর্ধ উলঙ্গ মহিলা আর কুড়ি জনের মতন পুরুষ। সবার যৌনাঙ্গ লাল রঙের কৌপিনে ঢাকা। তাহলে এখন নীল কার্ড ধারী ছেলে মেয়েদের আগমন হয়নি এখন। মহিলাদের ঊরুসন্ধি একটা লাল ক্ষুদ্র প্যান্টিতে ঢাকা আর বাকি অঙ্গ অনাবৃত। প্যান্টির সামনের ছোট ত্রিকোণ কাপড় কোন রকমে ওদের যোনি দেশ ঢেকে রাখতে সক্ষম হয়েছে। কারুর প্যান্টি বেশ পাতলা আর বেশ ছোট, যোনি চেরার ওপরে এঁটে বসে ফোলা যোনির আকার অবয়াব পরিস্কার ফুটিয়ে তুলেছে। কারুর প্যান্টির কাপড় একটু খানি যোনি পাপড়ি মাঝে ঢুকে গেছে। কোন স্থুল নারীর স্তন জোড়া ঝুলে পড়েছে, কারুর স্তন জোড়া নিটোল সুগোল, স্তনের বোঁটা জোড়া লোভনীয়। সমুদ্রের ঠাণ্ডা হাওয়া আর আসন্ন কামকেলির উত্তেজনায় সবার স্তনের বোঁটা উন্নত আকার ধারন করে নিয়েছে ইতিমধ্যে। কেউ ফর্সা, কেউ স্থুলালায়, কেউ নধর গোলগাল, কেউ কৃশকায়। তবে লাস্যময়ী বলতে যারা তারা হয়ত এখন এসে পৌঁছায়নি অথবা অন্য কোথাও আছে।

পুরুষেরা সবাই ওর মতন লাল কাটা জাঙ্গিয়া পরা। সবার দেহের গঠন, ছাতির কাঁচা পাকা চুল দেখে বয়স আন্দাজ করতে বাধে না, সবাই পঁয়তাল্লিশ পঞ্চাশের কোঠায়। মেয়েরা কেউ কেউ তিরিশের কোঠায়। ওদের দেখে বাকিরা মাথা নুইয়ে নিঃশব্দে অভিবাদন জানায়। হয়ত এরা সবাই সবাইকে চেনে তাও কেমন মেকি পরিচয় হীনতার আড়ালে দাঁড়িয়ে। বিশাল হলঘরের চারদিকে ছোট ছোট আরো অনেক ঘর। ওপরে একটা বিশাল ঝাড় বাতি। হলের চারদিকে বড় বড় সোফা আর ডিভান গোল করে সাজানো। মাঝখানে একটা গোল বড় টেবিল। হলের একপাশে খাওয়া দাওয়ার জায়গা, একপাশে বার। এই হলের মধ্যে সবাই অর্ধ উলঙ্গ। এমনকি যে পুরুষেরা মদ আর খাওয়াদাওয়া পরিবেশন করছে তাদের পোশাক বলতে একটা সাদা রঙের জাঙ্গিয়া।

দানার চোখ বারেবারে কঙ্কনা আর নাসরিনকে খুঁজে বেড়ায়। দেখা পাবে সেটা নিশ্চিন্ত জানা নেই, তবে ওদের নজর এড়িয়ে চলতে হবে।

Like Reply
রেড এন্ড ব্লু ক্লাব (#৫)

একটা মদের গেলাস উঠিয়ে নিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে। এক কোনায় দুইজন মহিলাকে একসাথে দেখে দানা থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে। উলঙ্গ দেহের গঠন দেখে কাউকেই চিনতে ভুল করে না দানা। বহুবার এই নারীদের সাথে যৌন সহবাস করেছে। শ্যামবর্ণের কঙ্কনাকে চিনতে ভুল হয় না দানার, প্যান্টির ভেতর থেকে ফোলা যোনির চারপাশ থেকে কুঞ্চিত কেশ উঁকি মারছে। ফর্সা লাস্যময়ী নিটোল স্তনের অধিকারিণী নাসরিনের দেখা পেয়ে বুকের রক্ত টগবগ করে ফুটতে শুরু করে দেয়। খানিক তফাতে স্থুলকায়া ফর্সা রাগিণীকে চিনতে একটু ভুল হয় না, বড় বড় মেদ যুক্ত ঝুলে পড়া স্তন জোড়া দেখে অতি সহজে চেনা যায়। এদের দেখতে পেয়ে আপনা হতেই গেলাসের চারপাশে ওর হাতের থাবা শক্ত হয়ে বসে যায়। এদের চোখ বাঁচিয়েই ওকে ওদের ওপরে নজর রাখতে হবে। একবার এদের চোখে পড়ে গেলে সর্বনাশ, চারদিকে সসস্ত্র নিরাপত্তা রক্ষী। দানা একদম খাঁচায় আটকা, একটু এদিক ওদিক হলেই মৃত্যু অবশ্যাম্ভাবী। চতুর্থ মহিলা, সুন্দরী লাস্যময়ী সিমোন খৈতান। কেউই কারুর সাথে কথাবার্তা বলছে না, সবাই চুপচাপ। নাসরিনের উলঙ্গ দেহ আর সিমোনের উলঙ্গ দেহ দেখে দানার মাথার রক্ত আর কামোত্তেজনা, দুটোই একসাথে বেড়ে ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে জাঙ্গিয়ার ভেতরে সুপ্ত সিংহ ওদের ছিঁড়ে খাবার জন্য গর্জন করে ওঠে।

অনেকেরই নজর ওর দিকে, কেউ হয়তো ধারনা করতে পারেনি একজন সুঠাম স্বাস্থ্যের কম বয়সী ছেলে লাল মুখোশ পরিধান করে এই সমাগমে আসবে। সবাই ভেবেছিল সুঠাম স্বাস্থ্যের কম বয়সী ছেলে শুধু মাত্র নীল কার্ড ধারী হবে।

ঠিক সেই সময়ে একটা ঘন্টা বেজে ওঠে হলের মধ্যে। সদস্যেরা সবাই যে যার জায়গায় দাঁড়িয়ে যায়। একপাশের একটা ঘরের দরজা খুলে যায়। এক এক করে সার বেঁধে উলঙ্গ মেয়েরা আর ছেলেরা বেড়িয়ে আসে। সবার বাজুতে একটা নীল রঙের কাপড় বাঁধা, তাছাড়া ওদের সারা অঙ্গে একটা সুতো পর্যন্ত নেই। ইন্দ্রাণী কি কোনোদিন এই সমাগমে এসেছিল? ওর মনে পড়ে যায়, একবার ইন্দ্রাণী ওকে বলেছিল যে কঙ্কনার সাথে এক সমাগমে গিয়েছিল, সেখানে সবাই উলঙ্গ হয়ে চরম কামকেলিতে মেতে উঠেছিল। সবার সামনে উলঙ্গ হয়ে সবার সাথে যৌন সঙ্গমে রাজি হয়নি ইন্দ্রাণী, তাই আর কঙ্কনার সাথে যায়নি।

ওই ঘর থেকে বেড়িয়ে আসা মেয়েরা সবাই সুন্দরী, তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের মুখ চেনা। কেউ টিভি সিরিয়ালের অভিনেত্রী, কেউ সিনেমার অভিনেত্রী, কেউ নামকরা মডেল। সবাইকে দারুন ভাবে সাজানো হয়েছে, চোখের কোলে কাজল, ঠোঁটে গাড় রঙের লিপস্টিক, চোখের পাতার ওপরে রঙ করা, গালে গোলাপি রুজ। এক এক মেয়ে যেন স্বর্গের নর্তকী, উলঙ্গ হয়ে ওদের জাহাজে এসে ওদের মনোরঞ্জন করতে তৎপর হয়ে উঠেছে। বেশির ভাগ মেয়েরাই ফর্সা, নিটোল বড় বড় স্তনের অধিকারিণী, সুগোল পাছা, পুরুষ্টু ঊরু। কোন মেয়ের ঊরুসন্ধি একদম মসৃণ করে কামানো, কারুর একটু একটু কেশ আছে কারুর যোনি বেদির ওপরে ছোট কেশের পাটি, তবে সবার যোনি চেরা সম্পূর্ণ ভাবে রোমহীন। কোন মেয়ের যোনি পাপড়ি, যোনি চেরা থেকে ফুটে বেড়িয়ে উঁকি মারছে।

এদের অনেকের চেহারা টিভিতে, পত্রিকায়, রাস্তার হোর্ডিংয়ে দেখা যায়। ছোট পর্দার উঠতি নায়িকা রিচা দত্ত, বড় পর্দার স্বনামধন্য নায়িকা কাকলী, কিছুদিন আগেই বিয়ে হয়েছে এক লাস্যময়ী নায়িকা দিব্যা, নামী মডেল বৈশাখী এমন আরো অনেক চেনা চেহারা দেখে দানা অবাক হয়ে যায়। টিভিতে সিনেমার পর্দায় এই অভিনেত্রী মডেলদের মিষ্টি হাসি দেখে বোঝার উপায় নেই এরা টাকার জন্য বহু পুরুষের সামনে কাপড় খুলে উলঙ্গ হয়ে যৌন সঙ্গমে মেতে উঠতে পারে। অবশ্য এই পৃথিবীতে অর্থের নেশার চেয়ে বড় নেশা আর কিছু নয়। লাল কার্ডের মানুষদের কাছে অনেক টাকা, আর সেই টাকা দিয়ে এক রাতের জন্য বহু সুন্দরী লাস্যময়ী কোমল নারী যোনির স্বাদ আস্বাদন করবে। ছেলেদের মধ্যেও বেশ কয়েকজনের মুখ চেনা, কয়েকজন মডেল তবে সবাই সুঠাম স্বাস্থ্যবান। এতগুলো মেয়েদের উলঙ্গ দেখে হয়ত ওদের লিঙ্গ আগে থেকেই দাঁড়িয়ে গেছে।

উলঙ্গ ছেলে মেয়েরা মাঝখানের টেবিল ঘিরে গোল করে দাঁড়িয়ে পরে। লাল কার্ডের সদস্যেরা সবাই নিজের নিজের জায়গা গ্রহন করে। বাকিদের দেখাদেখি দানাও কঙ্কনা, নাসরিন আর সিমোনের নজর বাঁচিয়ে ওদের থেকে বেশ দূরে একটা লম্বা সোফার ওপরে হেলান দিয়ে আয়েশ করে বসে পড়ে। উলঙ্গ নীল বাজু বন্ধে বাঁধা ছেলে মেয়েদের চোখে মত্ত কামের রঙ, সবাই কামোন্মাদ হয়ে উঠেছে। হয়তো ওদের ইতিমধ্যে কোন ওষুধ অথবা ড্রাগস খাইয়ে দেওয়া হয়েছে তাই ওদের চেহারায় লালচে রঙ ধরে গেছে, চোখ জোড়া কেমন ভাসাভাসা আর ঢুলুঢুলু। মৃদু সঙ্গীতের তালে তালে ছেলে মেয়েরা লাস্যময়ী নাচ শুরু করে দেয়। এই নির্দেশ যেন আগে থেকেই ওদের দেওয়া ছিল, কখন কি করতে হবে। এক এক করে মেয়েরা নাচতে নাচতে পুরুষ সদস্যদের দিকে এগিয়ে যায় আর ছেলে গুলো বসে থাকা মহিলা সদস্যদের দিকে এগিয়ে যায়।

দানার বুক ঢিপঢিপ করতে শুরু করে, চুপচাপ বসে থাকলে সবার সন্দেহের ঘেরে পড়ে যাবে। দানা মদের গেলাসে চুমুক দিয়ে আঙ্গুলের ইশারা করে বৈশাখী আর রিচাকে কাছে ডেকে নেয়। বৈশাখীর ওপরে মনে হয় পাশের এক বয়স্ক ভদ্রলোকের নজর ছিল, ওর দিকে এগিয়ে যেতেই পাশের ভদ্রলোক দানার দিকে আময়িক হেসে বৈশাখীকে নিজের কাছে ডাকে। দানা মাথা নাড়িয়ে বৈশাখীকে ওর দিকে যেতে বলে। রিচা কোমরে হাত রেখে ধীর পায়ে মত্ত চালে দানার দিকে এগিয়ে যায়। ওর পেছনে দাঁড়িয়ে সদ্য বিবাহিতা নায়িকা দিব্যাকে দানা কাছে ডেকে নেয়। প্রায় সব পুরুষের ভাগ্যে অন্তত দুটো করে মেয়ে জুটে যায়।

রিচা আর দিব্যা দানার দুইপাশে বসে পড়ে। রিচা ওর বুকের ওপরে হাতের পাতা মেলে ওকে আলতো নখের আঁচর কেটে কামোত্তেজিত করে তোলে। দুই পেশীবহুল হাতে দুই নারীর কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের দিকে টেনে নেয় দানা। দিব্যার ভারী নিটোল স্তন নিজের প্রশস্ত ছাতির ওপরে পিষে ধরে। দানার পেটের ওপরে আলতো নখের আঁচর কেটে দিয়ে রিচা ওর পেটের ওপরে ঝুঁকে চুমু খেতে শুরু করে দেয়। কামোন্মাদ দানা রিচার মাথা ধরে নিজের যৌনাঙ্গের দিকে ওর মাথা ঠেলে দেয়। জাঙ্গিয়ার বাঁধনে বাঁধা ভিমকায় কঠিন লিঙ্গের ছটফটানি দেখে রিচা মৃদু কামুকী হাসি দেয়। দিব্যার স্তন জোড়া হাতের মুঠির মধ্যে নিয়ে পিষতে শুরু করে দেয় দানা। দিব্যা দুই ঊরু মেলে ধরে নিজের যোনি মেলে দেয় দানার সামনে। ফর্সা গোলাপি কোমল যোনির দেখা পেয়ে দানার শরীরের রক্ত চঞ্চল হয়ে ওঠে। একপাশে রিচা একপাশে দিব্যা, কাকে আগে ভোগ করবে সেটাই ঠিক করতে পারে না। ঠোঁটে চুমু খেতে উদ্যত হয় দানা, দিব্যার চুল টেনে ধরে ওর মাথা নিজের মুখের কাছে নিয়ে আসে। বাদামী রঙ মাখানো রসালো ঠোঁট জোড়া পুরু কালো ঠোঁটে চেপে ধরে। ভীষণ কামাবেগে দিব্যার চোখ বুজে যায়, দানার মুখ আঁজলা করে ধরে ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিলিয়ে জিবের খেলা খেলে চলে দিব্যা। অন্যদিকে রিচা ওর জাঙ্গিয়া নামিয়ে দিয়ে নরম আঙ্গুল দিয়ে ওর কঠিন উত্তপ্ত লিঙ্গ মুঠির মধ্যে ধরে নাড়াতে শুরু করে দেয়। লিঙ্গের ওপরে নরম আঙ্গুলের পরশ পেয়েই দানার শরীর ছটফটিয়ে ওঠে। ঊরুসন্ধির ওপরে রিচার উষ্ণ শ্বাসের পরশ পেয়ে দানার শরীর চঞ্চল হয়ে ওঠে কাম তাড়নায়।

দিব্যার ঠোঁটে চুমু খেতে খেতে, আড় চোখে একবার নাসরিন আর কঙ্কনার ওপরে নজর করে। শ্যামবর্ণের কঙ্কনার ওপরে আর নীচে দুই সুঠাম স্বাস্থ্যবান ছেলে, একজন ওপরে কঙ্কনা উপুড় হয়ে শুয়ে, অন্য জন ওর পিঠের ওপরে। দুই পুরুষের মাঝের ভীষণ কামুকী কঙ্কনা কাম যাতনায় ছটফট করছে। নীচে চিত হয়ে শুয়ে থাকা ছেলেটা কঙ্কনার দুই স্তন হাতের মুঠির মধ্যে নিয়ে বেশ করে চটকে পিষে একাকার করে দেয় অন্যদিকে উপরে থাকা ছেলেটা ওর পাছ ফাঁক করে, কোমর ধরে উঁচিয়ে পেছন থেকে শিক্ত যোনির মধ্যে লিঙ্গ ঢুকিয়ে মন্থনে মেতে ওঠে। নাসরিন থেমে নেই, এক ছেলের কোলে বসে তার লিঙ্গ নিজের যোনির মধ্যে ঢুকিয়ে মত্ত ছন্দে চরম গতিতে ভীষণ যৌন সঙ্গমে মেতে উঠেছে। কামোন্মাদ হস্তিনী রাগিণী, একটা ছেলের ওপরে উঠে বসে ওর মুখের ওপরে নিজের ঊরুসন্ধি ঘষে ঘষে ওকে প্রায় মেরে ফেলার যোগাড় করছে। সিমোন একটা ডিভানে দুইপাশে দুটো ছেলেকে নিয়ে চরম কামকেলিতে মত্ত। একজন ছেলে ওর স্তন জোড়া পিষে ডলে একাকার করে দেয় অন্যজনে ওর মেলে ধরা উরুর মাঝে মাথা গুঁজে ওর যোনি লেহন করে সুখ প্রদান করে। এক দৃশ্য প্রত্যেক জুটির মধ্যে, কথাও একটা নারী সদস্যের সঙ্গে তিনটে ছেলে যৌন সঙ্গমে মত্ত, কোথাও একটা পুরুষ সদস্যের সাথে তিনটে মেয়ে যৌন সঙ্গমে মেতে, কোথাও আবার একটা মেয়েকে ডিভানে শুইয়ে দিয়ে, একজন ওর যোনির মধ্যে লিঙ্গ ঢুকিয়ে দিয়েছে, অন্য একজন পায়ুছিদ্রে, একজন মাথার কাছে বসে মেয়েটার মুখের মধ্যে লিঙ্গ ঢুকিয়ে দিয়েছে। সারা হল ঘর ময় শুধু মাত্র কামগন্ধে আর কামার্ত মিলিত কণ্ঠ স্বরে ভরে উঠেছে। কোন সদস্যের মুখে কোন কথা নেই শুধু মাত্র তীব্র কামার্ত শীৎকার ছাড়া, "হ্যাঁ হ্যাঁ চোদ চোদ..... উফফফ আরো জোরে....." "এই নে মাগী, খানকী মাগী..... বড্ড গরম তুই..... শালী পর্দায় দেখে তোর পোঁদ মারার খুব শখ ছিল....." ইত্যাদি..... রিচা ততক্ষণে দানার লিঙ্গ মুখের মধ্যে নিয়ে চুষতে শুরু করে দেয়। দানা, দিব্যাকে ঠেলে সোফার ওপরে শুইয়ে দেয়। সোফার ওপরে শুয়ে পরে দিব্যা দুই ঊরুর বুকের কাছে টেনে ধরে ঊরুসন্ধি দানার সামনে সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে দেয়।

দানার ওই সিক্ত কোমল যোনি মন্থনে বিশেষ মন ছিল না, কি করে নাসরিন আর কঙ্কনাকে বাগে আনা যায় সেটাই চিন্তা করে। কিন্তু চুপচাপ বসে থাকলেই কারুর নজরে পড়ে যাওয়ার ভয় আছে। ইতিমধ্যে ওদের চারজনের নজর যে দানার ওপরে পড়েনি কে বলতে পারে। তবে ওরা কেউই এখন পর্যন্ত দানার কাছে আসেনি, সুতরাং দানা একটু নিশ্চিন্ত হয়ে যায়, হয়ত ওরা অবাক হয়েছে কিন্তু চিনতে হয়ত পারেনি।

মেলে ধরা দিব্যার পুরুষ্টু ঊরু যুগল দুই হাতে উপরের দিকে ঠেলে দিয়ে ঊরুসন্ধির ওপরে মাথা নামিয়ে আনে দানা। দিব্যার যোনি থেকে নির্গত ঝাঁঝালো তীব্র কামনা ভরা মাদকতাময় ঘ্রাণ দানাকে পাগল করে তোলে। জিব বের করে দিব্যার যোনি লেহনে মেতে ওঠে। অন্য দিকে চরম কামনা ভরে ওঠে রিচা, ওর লিঙ্গ মুখের মধ্যে নিয়ে চুষে চেটে একাকার করে দেয়। দানার ভিমকায় লিঙ্গ রিচার মুখের মধ্যে ফেটে পড়ার যোগাড় হয়ে যায়। রিচাকে নিজের লিঙ্গের থেকে টেনে দাঁড় করিয়ে দিব্যার ওপরে শুইয়ে দেয়। দুই নারী সমকামী কামকেলিতে মেতে ওঠে, স্তনের সাথে স্তন মিলিয়ে, ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিলিয়ে একে ওপরের শরীর সুধা আস্বাদনে মেতে ওঠে। দানার দিকে দুই উন্মুক্ত যোনি, উপরে রিচার নীচে দিব্যার। দুই নরম ফর্সা ফোলা যোনি দেখে দানার বুকের রক্ত ঊরুসন্ধির দিকে ধেয়ে যায়। রিচার পাছার ওপরে বেশ কয়েকটা চাঁটি মেরে ওদের পেছনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে। পাছা জোড়া ফাঁক করে রিচার কোমর উঁচিয়ে নিজের লিঙ্গের সমান্তরালে নিয়ে আসে। দুই আঙ্গুল ঢুকিয়ে দেয় পিচ্ছিল যোনির মধ্যে। বার কতক আঙ্গুল দিয়ে রিচার যোনি মন্থন করার পরে এক ধাক্কায় অর্ধেক লিঙ্গ রিচার কোমল কচি যোনির মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়। দিব্যা রিচাকে দুই হাতে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে নিজের বুকের ওপরে চেপে ধরে। দানা কামোন্মাদ ষাঁড়ের মতন রিচার যোনি মন্থনে মেতে ওঠে। বেশ কিছুক্ষণ রিচার যোনি মন্থন করার পরে ওর যোনি থেকে লিঙ্গ বের করে নীচে শুয়ে থাকা দিব্যার সিক্ত কোমল যোনির মধ্যে ঢুকিয়ে মন্থনে মেতে ওঠে। এই ভাবে একবার দিব্যার যোনি একবার রিচার যোনির মধ্যে লিঙ্গ সঞ্চালন করে নিজের কামক্ষুধা মেটাতে মেতে ওঠে।

চারপাশে শুধু ভীষণ রিরংসা ভরা যৌন সঙ্গমের খেলা। ইতিমধ্যে একজন সদস্য সিমোনের দিকে এগিয়ে যায়। এটা নিয়মে আছে কি নেই সেটা জানা নেই তবে সিমোন দুই হাত মেলে ওই সদস্যকে নিজের বুকের ওপরে আহবান জানায়। দানার মনে পড়ে যায়, একদিন সিমোন ওকে বলেছিল যে একমাত্র ওর স্বামী ছাড়া আর দানাকে ছাড়া আর কাউকে ওর ওপরে উঠে যৌন সহবাস করতে দেয়নি। তাহলে কি এই মুখোশধারী পুরুষ স্বয়ং মোহন? স্বামী স্ত্রী দুইজনে মিলে এই ভীষণ কামক্রীড়ার মহা কুম্ভে যোগদান করতে এসেছে? হতেও পারে এই তথাকথিত উচ্চবিত্ত ক্ষমতাশালী নর নারীরা নিজের কামক্ষুধা মেটানোর জন্য অনেক কিছুই করতে পারে আর সেটা দানা নিজের জীবন থেকে উপলব্ধি করেছে।

দানা কিছু পরে রিচাকে টেনে দিব্যার ঘর্মাক্ত লাস্যময়ী ক্লেদাক্ত দিব্যার শরীরের ওপর থেকে টেনে নামিয়ে দেয় তারপরে নিজেই সোফার ওপরে শুয়ে পড়ে। দিব্যাকে ইশারায় ওর লিঙ্গের ওপরে বসতে নির্দেশ দেয়। দিব্যা উঠে বসে ওর লিঙ্গ মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে চুষে চেটে পিচ্ছিল করে দেয়। অণ্ডকোষ আঙ্গুলের মাঝে নিয়ে টিপে টিপে ওর অণ্ডকোষে বীর্যের ঝঞ্ঝা তৈরি করে দেয়। দানার লিঙ্গ কঠিন শাল গাছের মতন উপরের দিকে উঁচিয়ে যায়। দুই মেয়েই ওর লিঙ্গের কাছে চলে যায়। রিচা ওর লিঙ্গের মাথা মুখের মধ্যে নিয়ে আলতো করে চুষে চেটে দিতে শুরু করে আর দিব্যা ওর অণ্ডকোষ মুখের মধ্যে নিয়ে চুষতে শুরু করে দেয়। দানার দেহ কাম যাতনায় ছটফট করে ওঠে। ওর বীর্য ঊর্ধ্বমুখী হয়ে আসে। রিচা আর দিব্যাকে ওর লিঙ্গ ছেড়ে নিজেদের যোনির মধ্যে ঢুকাতে নির্দেশ দেয়। দিব্যা মিচকি হেসে রিচাকে সরিয়ে দিয়ে দুই পুরুষ্টু ঊরু মেলে ওর ঊরুসন্ধির উপরে বসে পড়ে। বৃহৎ কঠিন লিঙ্গ দিব্যার সিক্ত কোমল যোনি বরাবর চেপে যায়, ওর লিঙ্গ ইতিমধ্যে দুই মেয়ের মুখের লালায় পিচ্ছিল হয়েছিল, দিব্যা ওর ঊরুসন্ধির ওপরে উঠে বসার ফলে ওর যোনি নির্গত কাম রসে দানার লিঙ্গ ভিজে যায়। বার কতক কোমর আগুপিছু নাড়িয়ে দিব্যা দানার লিঙ্গ নিজের কোমল আঁটো যোনির মধ্যে ঢুকিয়ে নেয়। রিচা দুই হাতে দিব্যার স্তন জোড়া খামচে ধরে পিষে ডলতে শুরু করে দেয়। দানা একবার রিচার পাছা চটকায় একবার দিব্যার আন্দোলিত স্তন চটকায়। দিব্যা ওর লিঙ্গ নিজের আঁটো যোনির শেষ প্রান্তে প্রবেশ করিয়ে দিয়ে ওর ওপরে লাফাতে লাফাতে নিজের যোনি মন্থনে মেতে ওঠে।

এইভাবে এই ভঙ্গিমায় বেশ কিছুক্ষণ দিব্যার যোনি মধ্যে লিঙ্গ সঞ্চালন করার পরে দানা উঠে বসে আর দিব্যা পা মেলে শুয়ে পড়ে। দানা ওর যোনি মধ্যে থেকে লিঙ্গ বের করে নেয় আর রিচাকে সোফার ওপরে বসিয়ে দেয়। সোফা থেকে নেমে পরে, রিচার পা দুটো নিজের কাঁধের ওপরে উঠিয়ে দিয়ে ওর কচি আঁটো নরম যোনির মধ্যে নিজের লিঙ্গ ঢুকিয়ে চরম গতিতে মন্থনে মেতে ওঠে। ধীরে ধীরে দানার কামোত্তেজনা শিখরে উঠে যায়, ওর লিঙ্গের ছটফটানি দেখে রিচা ওকে যোনির মধ্যে থেকে লিঙ্গ বের করে নিয়ে কন্ডোম পড়তে অনুরোধ করে। দানার সেই আবেদন শোনার শক্তি নেই, ক্ষিপ্র ষাঁড়ের মতন রিচাকে সোফার সাথে পিষে ধরে ওর যোনির মধ্যে বীর্য স্খলন করে দেয়। দিব্যা ততক্ষণে নিজের যোনির মধ্যে দুই আঙ্গুল ঢুকিয়ে প্রচন্ড বেগে আঙ্গুল সঞ্চালন করে রাগ মোচন করে। কাম ক্ষুধা মেটার পরে তিনজনে নিস্তেজ হয়ে কিছুক্ষণ সোফার ওপরে জড়াজড়ি করে পরে থাকে।
Like Reply
রেড এন্ড ব্লু ক্লাব (#০৬)


আশেপাশের অনেকের এক অবস্থা, অনেকেই অনেক আগেই কাম রস স্খলন করে এলিয়ে পড়েছে। কেউ কেউ আবার উঠে গিয়ে বারে থেকে মদ আর কিছু ট্যাবলেট খেয়ে দ্বিতীয় বারের জন্য যৌন সঙ্গমের প্রস্তুতি নেয়।

দানা দুই নারীকে জড়িয়ে ধরে ওদের গালে চুমু খেয়ে দেয়। দিব্যা আর রিচা দুইজনেই তৃপ্তি সহকারে নিজেদের শরীর দানার বাহুপাশে সমর্পণ করে দেয়। এই ভাবে বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকার পরে একজন পুরুষ সদস্য এসে রিচাকে ডেকে নিয়ে যায়। দানা আলতো মাথা দুলিয়ে রিচাকে তার সাথে ছেড়ে দেয়। এইখানে একজনের কোলে এক মেয়ে বেশিক্ষণ থাকে না। এইখানে এই মেয়েরা সারা রাত যার ইচ্ছে হবে তার সাথেই চরম কামকেলিতে মেতে ওঠার জন্য এসছে।

দিব্যাকে কোলের ওপরে বসিয়ে ওর কোমল শরীর বাহু পাশে বেঁধে নরম স্তন জোড়া টিপতে টিপতে এপাশ ওপাশ ঘাড় ঘুরিয়ে বাকিদের দেখে নেয়। নাসরিন আর কঙ্কনা শরীর এলিয়ে ডিভানে পড়ে রয়েছে। ওদের শরীর বেশ কয়েকজন ছেলের বীর্যে মাখামাখি। অন্যদিকে রাগিণীকে ঘিরে চার জন ছেলে তখন পর্যন্ত ওর সাথে চরম কামকেলিতে মত্ত। সিমোনে শরীর এলিয়ে এক পুরুষ সদস্যের কোলে একপ্রকার ঢলে পরে রয়েছে আর অন্যদিকে একজন ছেলে ওর যোনি ক্ষিপ্র গতিতে মন্থন করে চলেছে।

চরম কামকেলির পরে দানার মাথায় ঘোরে কি ভাবে নাসরিন আর কঙ্কনাকে আক্রমন করা যায়। কোল থেকে দিব্যাকে নামিয়ে দিয়ে লাল জাঙ্গিয়া পরে বারের দিকে হেঁটে যায়। বার থেকে একটা বড় গেলাস হুইস্কি নিয়ে আর একটা সিগারেট প্যাকেট আর লাইটার নিয়ে হলের বাইরে চলে আসে।

এতক্ষণ মত্ত কাম ক্রীড়ার জন্য ওরা যে জাহাজে ছিল সেটা টের পায়নি। বড় জাহাজ দাঁড়িয়ে ছিল তাই সমুদ্রের ঢেউয়ে কম দুলছিল, কিন্তু হলের বাইরে এসে বুঝতে পারে যে জাহাজ বেশ দুলছে। এতক্ষণ প্রচণ্ড কাম ক্রীড়ার ফলে এই দুলুনি কেউ বুঝতে পারেনি, তবে এক প্রস্থ কাম ক্রীড়া শেষ হয়েছে, এইবারে হয়তো সবাই বুঝতে পারবে। ডেকে এসে দেখে আকাশ কালো হয়ে গেছে ঘন বর্ষার মেঘে। যেদিকে চোখ যায় সেদিকে শুধু কালো সমুদ্রের জল থমথমে সমুদ্র। জল যেন থেমে গেছে, আসন্ন ঝঞ্ঝার অপেক্ষায় ঢেউয়ের আন্দোলন নিস্তব্দ হয়ে গেছে। অন্ধকারে জাহাজের চারদিকে কিছুই দেখা যায় না। উপরের ডেকে বেশ কয়েকজন বন্দুকধারী রক্ষী দাঁড়িয়ে, নিচের বড় ডেকে কেউই নেই। এই ডেকের ওপরেও বেশ কয়েকটা সোফা আর ডিভান পাতা রয়েছে। হয়ত রাত বাড়লে হল থেকে জোড়ায় জোড়ায় অথবা নর নারী এইখানে বেড়িয়ে এসে যৌন সঙ্গমে মেতে উঠবে।

দানা মদের গেলাসে চুমুক দিতে দিতে ডেকের পেছনের দিকে চলে আসে। এইদিকে বেশ অন্ধকার। একটা সিগারেট জ্বালায় দানা, দূরে ছোট ছোট বেশ কয়েকটা মাছ ধরার নৌকা দেখতে পায়। শঙ্কর, রমিজ মনা এরা কি করছে? দানা নির্দেশ দিয়ে এসেছিল ওকে অনুসরন করতে। ওরা কি মাছ ধরার নৌকা যোগাড় করে এই জাহাজের পিছু করেছে? যদি করে থাকে তাহলে কিছু করে ওদের সঙ্কেত দিতে হবে। দানা লাইটার জ্বালায়, একবার দুইবার তিনবার। যদিও এই সঙ্কেত ওদের বলা ছিল না তাও বুক ঠুকে চেষ্টা করে দেখে, অন্ধকারে তীর লাগলেও লেগে যেতে পারে। ঠিক তখনি দূরে একটা নৌকা থেকে একটা টর্চ তিনবার জ্বলে ওঠে। দানা বুঝতে পারে ওই নৌকায় শঙ্কর রমিজ আর দলবল আছে। বুকে বল পায় দানা, এইবারে একবার অন্তত কঙ্কনা অথবা নাসরিনকে প্রলুব্ধ করে পেছনের ডেকে নিয়ে আসতে হবে। এই মহাসাগরের জল ওর অজানা নয়, মহেন্দ্র বাবুর কাছে থাকাকালীন বহুবার এই সাগরের বুকে কাটিয়েছে, তুমুল ঝড় ঝঞ্ঝা মাথায় করে সমুদ্রের জলে ঝাঁপিয়ে সোনার বাক্স নিয়ে উঠে এসেছে। কিন্তু ওই নৌকা এখন এই জাহাজ থেকে অনেক দূরে। এতটা জল পেরিয়ে একা সাঁতরে যাওয়া সম্ভব কিন্তু সাথে কাউকে নিয়ে সাঁতরে যাওয়া একটু দুঃসাধ্য।

দানা আরো একবার লাইটার জ্বালায়, ওইদিকে নৌকা থেকে একবার টর্চ জ্বলে ওঠে। দানা সিগারেট ধরিয়ে হলের দিকে অগ্রসর হয়, ঠিক তখনি ওকে অবাক করে দুই লাল প্যান্টি পরা মহিলা সদস্য ওর দিকে এগিয়ে আসে। আধো আলো অন্ধকার হলেও ওই মহিলাদের চলন আর দেহের রঙ আর গঠন দেখে বুঝতে অসুবিধে হয় না যে ওরা কঙ্কনা আর নাসরিন। তাহলে দানা ঠিক ধরেছিল, ওর ওপরে অনেক আগে থেকেই কঙ্কনা আর নাসরিনের নজর ছিল শুধু মাত্র সুযোগের অপেক্ষায় ছিল কখন দানাকে একা হাতের কাছে পাবে। হয়ত ইতিমধ্যে বাকি সদস্যরাও জেনে গেছে দানার আসল পরিচয়, বুক ঠুকে বলতে পারে সিমোনকে এরা বলে দিয়েছে।

চেহারা থেকে মুখোশ খুলে ফেলে দানা, সেই সাথে নাসরিন আর কঙ্কনা নিজেদের চেহারা থেকে মুখোশ খুলে ওর দিকে এগিয়ে আসে। দানার চোয়াল সঙ্গে সঙ্গে শক্ত হয়ে যায়। ওদের দুই নারীর চোখে ক্ষুধার্ত বাঘিনীর চাহনি, এইদিকে দানা খেপা ষাঁড় হয়ে উঠেছে। কঙ্কনা আর নাসরিনকে দেখে দানা কয়েক পা এগিয়ে যায়।

নাসরিন আর কঙ্কনা একবার উপরের ডেকের দিকে বন্দুক ধারী রক্ষীদের দিকে তাকিয়ে ওদের অবস্থান দেখে নেয়। পেছন দিকে কোন বন্দুক ধারী রক্ষী নেই তবে সামনের দিকে একটু দুরেই দুই জন রক্ষী দাঁড়িয়ে। লাল কৌপিন পরিহিত এই ক্লাবের সদস্য দেখে ওরা আর এইদিকে আসে না। দুইজনে অন্যদিকে চলে যেতেই দানা একবার ঘাড় ঘুরিয়ে নৌকার অবস্থান দেখে নেয়।

দানার দিকে তাকিয়ে কঙ্কনা প্রশ্ন করে, "তোমাকে এইখানে এই ভাবে দেখতে পাবো আশা করতে পারিনি।"

ওদের কথাবার্তা শুনে দানা বুঝতে পারে যে রমলা তাহলে ওর সম্বন্ধে এদের কিছুই বলেনি। দানা চোয়াল চেপে কঙ্কনা আর নাসরিনের দিকে চাপা গর্জন করে ওঠে, "অনেকদিন থেকেই তোমাদের খোঁজ করছি। পুরানো পাপের হিসাব নেওয়া বাকি আছে। আমাকে কেন মারতে চেয়েছিলে, নাসরিন?"

প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে নাসরিন ক্রুর হেসে বলে, "তোমাকে এইখানে দেখতে পাবো সেটা সত্যি অভাবনীয়। যাই হোক পুরানো দিনের কথা যখন মনে করিয়েই দিলে তাহলে আজ রাতে এই সাগর জলে তোমার সলীল সমাধি ঘটিয়ে দেব।"

এমন সময়ে দমকা ঝোড় হাওয়ায় জাহাজ দুলে ওঠে। কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রবল বৃষ্টির সাথে তুমুল ঝঞ্ঝা শুরু হয়ে যায়। সাথে সাথে বড় বড় ঢেউয়ের তালে তালে জাহাজ দুলে ওঠে। দানা মনে মনে হেসে ফেলে, অদুরে ওর জন্য একটা নৌকা দাঁড়িয়ে। ওকে ঠেলে ফেলে দিলেও দানা বেঁচে যাবে, তবে এই জাহাজ থেকে যাওয়ার আগে এই দুই ধূর্ত ছলনাময়ী মহিলার কাছ থেকে উত্তর জেনেই যাবে আর পারলে ওদের সাথে নিয়ে এই অতল সাগর জলে ঝাঁপ দেবে। দানা ঘাড় ঘুরিয়ে একবার দুরের নৌকা দেখে নেয়। ওই নৌকা ততক্ষণে ওদের জাহাজের বেশ কাছে চলে এসেছে।

কঙ্কনা ওর দিকে তাকিয়ে ক্রুর হেসে বলে, "আজ রাত এই পৃথিবীতে তোমাদের শেষ রাত। দিব্যা আর রিচার সাথে বেশ চোদাচুদি করলে দেখলাম। আর তোমার স্ত্রী মহুয়া কেমন আছে, দানা?"

ছলনাময়ী চটুল কঙ্কনার মুখে মহুয়ার নাম শুনে জ্বলে ওঠে দানা। ওদের দিকে তেড়ে এগিয়ে এসে গর্জে ওঠে, "মহুয়ার দিকে চোখ তুলে তাকাবে না, নাসরিন। চোখ উপড়ে দেব।"

তুমুল ঝড় আর বৃষ্টির সেই সাথে সাগরের ঢেউয়ের ভীষণ গর্জনে নিজের কথাই নিজের কানে পৌঁছায় না। কঙ্কনা আর নাসরিন মুখ চাওয়াচায়ি করে হেসে ফেলে। কঙ্কনা চেঁচিয়ে ওকে উত্তর দেয়, "চারদিকে জল, ওপরে বন্দুকধারী নিরাপত্তা রক্ষী। তুমি চাইলেও আজ এইখান থেকে পালাতে পারবে না দানা। ওই হলে সিমোন আর মোহন আছে। ওরা তোমাকে চিনে ফেলেছে। ভেতরে গেলে ওরা তোমাকে ছিঁড়ে খাবে আর এইখানে আমরা তোমাকে ছিঁড়ে খাবো। তুমি এইখানে কি করে এসেছো সেটা জানি না, তবে খোঁজ লাগিয়ে অতি সহজে জেনে যাবো। তারপরে মহুয়া আর রুহিকে....."

রুহি আর মহুয়ার নাম আবার শুনেই দানা খেপা ষাঁড়ের মতন ওদের দিকে মদের গেলাস ছুঁড়ে মারে। অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে কঙ্কনা সরে যায় আর গেলাস ডেকের মেঝের ওপরে পড়ে ভেঙ্গে যায়। কঙ্কনা আর নাসরিন হাসতে হাসতে ওর দিকে এগিয়ে আসে। চকিতে দানা দুই মহিলার হাত টেনে ধরে। আচমকা এইভাবে টানার ফলে নাসরিন টাল সামলাতে না পেরে ডেকের মেঝের ওপরে পড়ে যায় আর কঙ্কনা রেলিংয়ের ধারে চলে যায়। সঙ্গে সঙ্গে কঙ্কনার পা দুটো ধরে রেলিঙ্গের ওপর থেকে সমুদ্রের জলের মধ্যে ওকে ফেলে দেয়। নাসরিন গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে ওঠে, কিন্তু তুমুল ঝড় আর উত্তাল সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জনে ওর আর্তনাদ কারুর কানে পৌঁছায় না। ঝড়ের জন্য বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা দুই রক্ষী ডেকের ওপর থেকে ভেতরে চলে গেছে। দানা সঙ্গে সঙ্গে নাসরিনের মুখ চেপে ধরে ওর কোমর পেঁচিয়ে ধরে জলে ঝাঁপ দেয়।

ওইদিকে নৌকা থেকে ওদের জলে ঝাঁপ দিতে দেখে বেশ কয়েকজন ছেলে কোমরে দড়ি বেঁধে জলে ঝাঁপ দিয়ে দেয়। বিশাল ঢেউয়ের টানে কঙ্কনার দেহ নৌকা থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। নৌকা থেকে কেউ একজন জাল ফেলে কঙ্কনাকে জড়িয়ে ধরে। নাসরিনের সঙ্গে জলে ঝাঁপ দিতেই তলিয়ে যায় দুইজনে। মাথার ওপরে কালো মেঘে ঢাকা আকাশ, থেকে থেকে প্রবল ঝড় আর বিশাল ঢেউ ওদের একবার উঁচুতে উঠিয়ে আছড়ে ফেলে ডুবিয়ে দিতে প্রস্তুত। শক্তি ততক্ষণে একটা দড়ি নিয়ে সাঁতরে সাঁতরে দানার কাছে চলে আসে। একহাতে নাসরিনের চুলের মুঠি ধরে অন্য হাতে দড়ি ধরে প্রবল ঢেউ উপেক্ষা করে সাঁতরে সাঁতরে নৌকায় ওঠে। জালে বাঁধা কঙ্কনাকে অন্যকেজন টেনে নৌকায় তুলতেই ওদের নৌকা ছেড়ে দেয়। বিশাল ঢেউয়ের তালে উপর নীচে নাচতে নাচতে ওদের নৌকা জাহাজ থেকে বেশ দূরে চলে যায়।

কঙ্কনা আর নাসরিন আচমকা এই ঘটনায় থতমত খেয়ে নির্বাক হয়ে যায়, কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলে। খাবি খাওয়া মাছের মতন দুই ছলনাময়ী উলঙ্গ মহিলা শ্বাস নিতে চেষ্টা করে। আতঙ্কে আর মৃত্যু ভয়ে ওদের চেহারা রক্ত শূন্য হয়ে যায়। চুল ভিজে শরীর বুকে অসীম আতঙ্ক নিয়ে ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে নাসরিন আর কঙ্কনা বাকিদের দিকে তাকায়। জল থেকে উঠে দুই ভিজে নারী কোনোরকমে এক ওপরকে জড়াজড়ি করে নৌকার পাটাতনের এক কোনার দিকে সরে যায়। ছোট নৌকা বিশাল উঁচু উঁচু ঢেউ উপেক্ষা করে নদীর তীরের দিকে যাত্রা শুরু করে। দুই মহিলার অঙ্গে শুধু মাত্র একটা লাল প্যান্টি ছাড়া আর কোন কাপড় নেই। উত্তাল সমুদ্রের ঠাণ্ডা জল আর সাঙ্ঘাতিক এই ঘটনায় ওরা দুইজনে ভীষণ আতঙ্কিত। দানা দুটো গামছা ওদের দিকে ছুঁড়ে দেয়। মাটি থেকে গামছা তুলে মাথা শরীর মুছে কোন রকমে ভিজে নগ্ন শরীরের ওই গামছা জড়িয়ে নৌকার পাটাতনে চুপচাপ আতঙ্ক মাখা চোখে বসে থাকে।

দানা ততক্ষণে একটা গামছা দিয়ে শরীর মুছে কোমরে জড়িয়ে নেয়। একজনকে জিজ্ঞেস করাতে দানা জানতে পারে যে রাত দশটা বাজে। ভাগিস্য প্যান্টের পকেটে কিছু দরকারি অথবা ওর পরিচয় জানার মতন কিছুই নিয়ে যায়নি। ওর পার্স, গাড়ির চাবি আর বাকি সব কিছু ওর গাড়ির মধ্যেই। মনা আর বাকিদের ওপরে অগাধ বিশ্বাস ছিল। একবার মনা ওকে অনুসরন করে কাবুলি ঘাটে পৌঁছে গেলে ওর গাড়ি আর বাকি জিনিস পত্র সুরক্ষিত থাকবে। জাহাজে ওর জামা কাপড়ের পকেট হাতিয়ে রুমাল আর লাল কার্ড ছাড়া কোন জিনিস পাবে না।

ছোট নৌকা, তুমুল ঝড়ে উলটপালট হওয়ার যোগাড়। শঙ্কর নৌকার হালে দাঁড়িয়ে, রমিজ একটা বড় ধারালো ছুরি নিয়ে তৈরি। দানা একবার নির্দেশ দিলেই এই দুই মহিলার গলা নামিয়ে দিতে প্রস্তুত।

রমিজ স্মিত হেসে দানার কাঁধে হাত রেখে বলে, "নে একটু বস, দেখি এই মাল দুটোকে। ওই ফর্সা মাগীটা বেশ জম্পেশ।" নাসরিনের নাকের কাছে একটা বড় ছুরি নাড়িয়ে জঘন্য একটা হাসি হেসে প্রশ্ন করে, "এই খানকী, তোর নাম কি রে?"

ওর হাতে ধারালো চকচকে ছুরি দেখে নাসরিন আতঙ্কে ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে উত্তর দেয়, "নাসরিন আখতার।"

রমিজ অট্টহাসিতে ফেটে পরে, "উম্মম তুই আজ রাতে আমাদের খোরাক হবি না মাছেদের?"

নাসরিন আর কঙ্কনা চারদিকে চোখ বুলিয়ে শক্তি, বলাই, নাসির, আক্রামের দিকে তাকায়। সবার জিব লকলক করছে দুই মহিলাকে ছিঁড়ে খাবার জন্য। রমিজ ওদের দিকে চাপা গর্জন করে ওঠে, "তোরা নাকি দানাকে খুন করতে চেয়েছিলিস?"

কঙ্কনা আর নাসরিন নির্বাক, ভীষণ আতঙ্কে ওদের গলা শুকিয়ে কাঠ। কথা বলার ভাষা হারিয়ে ছলছল চোখে হাত জোর করে ক্ষমা ভিক্ষে করে রমিজের কাছে, "না আমাদের ভুল হয়ে গেছে। আমাদের ছেড়ে দিন। সত্যি বলছি, আমার পুত্র কন্যের শপথ নিয়ে বলছি আর কোনোদিন দানার ছায়া মাড়াবো না।"

দানা ক্রোধে বিতৃষ্ণায় গরগর করে ওঠে, "শালী খানকী, তোরা কি করে মহুয়া আর রুহির কথা জানলি?"

কঙ্কনা আর নাসরিন দুইজনেই কেঁদে ফেলে। দানা ওদের চোখের জল উপেক্ষা করে আবার প্রশ্ন করে, "মহুয়া আর রুহির সম্বন্ধে তোদের কে খবর দিয়েছে?"

দানার গর্জন শুনে নাসরিন কোন রকমে ঢোঁক গিলে বলতে শুরু করে, "তোমার পরিবারের সম্বন্ধে, সিমোন আমাদের জানিয়েছে। কিন্তু ওই জাহাজে সিমোন দানাকে চিনে ফেলেছে, সুতরাং দানার নিস্তার নেই।"

দানা দীর্ঘ এক শ্বাস ছেড়ে হেসে বলে, "সিমোনকে বাগে ফেলার সব উপাদান আমার হাতে, কঙ্কনা। এবারে একটু বলো তো কেন আমাকে মারতে চেয়েছিলে? আমি তোমাদের কি ক্ষতি করেছিলাম?"

কঙ্কনা আমতা আমতা করে বলতে শুরু করে, "আমরা, কেউই নয়না অথবা রমলা কে চিনতাম না। ওইদিন ইন্দ্রাণীদির বাড়িতে পার্টির নাম শুনেই মনে হলো পার্টিতে যাই। রমলাকে ইন্দ্রাণীদির বান্ধবী হিসাবে পরিচয় দিলাম আর রমলা সহজে বিশ্বাস করে নিল। তবে তোমাকে ইন্দ্রাণীদির বাড়িতে দেখে আমাদের সন্দেহ হয়েছিল যে তুমি ইন্দ্রাণীদিকে ভালোবাসো। তাই তোমার বিষয়ে একটু জানতে ইচ্ছে করলো। পার্টিতে একজন বেয়ারাকে টাকা দিয়ে তোমার পার্স চুরি করে জানতে পারলাম আসলে তুমি কোন বড় ব্যাবসায়ী নও, তুমি কালী পাড়ার বস্তির সামান্য একজন ট্যাক্সি চালক। তাহলে কি ইন্দ্রানীদি একজন সামান্য ট্যাক্সি চালকের প্রেমে পড়েছে? হতেই পারে। ভেবেছিলাম সেই রাতে তোমার সাথে নেচে তোমাকে হাত করে নিতে পারবো, কিন্তু ইন্দ্রানীদি তোমাকে যেমন ভাবে আঁকড়ে ধরে নিয়ে গেল তাতে একটু হিংসে হল বৈকি। বাইরে গিয়ে দেখলাম ততক্ষণে বাপ্পা নস্কর, বিমান চন্দ, দুলাল মিত্র এরা এসে গেছে। তোমাকে দেখে বিমান চন্দের গাড়ির ড্রাইভার তোমার নাম ধরে চেঁচিয়ে উঠলো। আমি বুঝতে পারলাম যে এই গাড়ির ড্রাইভার তোমাকে ভালো ভাবে চেনে। ওর কাছে ইনিয়ে বিনিয়ে তোমার নাম ধাম ঠিকানা ফোন নাম্বার ইত্যাদি যোগাড় করে নিলাম।"

Like Reply
Darun hoche..Aaro suspecse baran dada..
Ralph..
[+] 1 user Likes wanderghy's post
Like Reply
(19-09-2020, 04:49 PM)wanderghy Wrote: Darun hoche..Aaro suspecse baran dada..

দাদা এটা আমার লেখা নয় 
শ্রদ্ধেয় পিনুরামের লেখা  Namaskar
আমি শুধু পোষ্ট করে যাচ্ছি
Like Reply
রেড এন্ড ব্লু ক্লাব (#)


এতদিন পরে দানার কাছে সব পরিষ্কার হলো কি ভাবে কঙ্কনা আর নাসরিন ওর ফোন নাম্বার আর আসল পরিচয় যোগাড় করেছে। দেবুকে একবার যদি হাতের কাছে পেত..... দানা মনে মনে হেসে ফেলে, দেবু অনেক আগেই নিজের পাপের শাস্তি পেয়ে গেছে।

কঙ্কনা একটু থেমে আবার বলতে শুরু করে, "কিন্তু তোমার এই স্বাস্থ্যবান দেহ দেখে আর থাকতে পারলাম না, তোমাকে ইন্দ্রাণীদির কবল থেকে মুক্ত করে নিজেদের কাজে লাগাবো ভাবলাম। আমাদের বাঁধা ছকে তুমি পা দিয়ে ফেঁসে গেলে। তোমাকে খুন করার আমাদের কোন পরিকল্পনা ছিল না কারন তোমাকে দিয়ে আমাদের বেশ কাজ হচ্ছিল। তুমি উচ্চবিত্ত ক্ষমতাশালী মহিলাদের সাথে সেক্স করতে। এই উচ্চবিত্ত ক্ষমতাশালী মানুষেরা বাগানের মালী, রান্নার লোক, কাজের লোক, গাড়ির চালক এদের মানুষ বলে গন্য করেনা আর সেই সুযোগ আমরা কাজে লাগালাম। তোমাকে যে পেন দেওয়া হত সেইগুলো আসলে ছোট অত্যাধুনিক মাইক্রোফোন। ওর মধ্যে একটা চিপে কথাবার্তা রেকর্ড করা যায়। ওই পেন থেকে অনেকের গোপন কথোপকথন আমরা জানতে পারলাম। যদিও ওদের ব্লাকমেইল করার ইচ্ছে আমাদের ছিল না, তবে এই উচ্চবিত্ত সমাজে অন্যের গোপন খবর জানা গেলে তাকে দমিয়ে রাখা সহজ হয়। আমাদের কাছে একটা জায়গার কোন বার্তালাপ ছিল না। সেটা হলো, লোকেশের বাড়ির।"

দানার মনে পড়ে যায়, মহুয়া ওকে শোয়ার ঘরে জামা কাপড় খুলে ড্রেসিং গাউন পরে আসতে বলতো। তাই যখন মহুয়ার সাথে কথাবার্তা হতো, তখন ওর কাছে পেন থাকতো না।

কঙ্কনা বলে, "আসলে কি জানো, লোকেশ বাজপাই অত্যন্ত ধূর্ত আর সাঙ্ঘাতিক মানুষ। কচি মেয়েদের ওপরে ওর খুব লোভ। ইচ্ছে করেই রাজস্থানের ছোট জায়গা থেকে ছেলের জন্য বৌমা খুঁজেছিল। হারামির বাচ্চার কপাল দেখো, মহুয়া ভারী সুন্দরী। ছেলের বিয়ে দেওয়ার পর থেকেই মহুয়ার ওপরে ওর নজর। ছেলে মারা যাওয়ার পরে সেই সুযোগ একেবারে হাতে চলে আসে।"

এই খবর শুনে দানার সাথে সাথে বাকি লোকেরা চমকে যায়। কিন্তু কঙ্কনা যখন জানে যে মহুয়া বর্তমানে দানার স্ত্রী তাহলে নিশ্চয় ওরা মহুয়াকে দেখেছে অথবা মহুয়ার আসল পরিচয় জানে। সিমোন কি জানে মহুয়া আসলে লোকেশের ছোট ছেলে রাজেশের স্ত্রী?

দানা চোয়াল চেপে গর্জন করে ওঠে, "তোমরা সত্যি বলছো?"

কঙ্কনা কাঁপা কণ্ঠে উত্তর দেয়, "হ্যাঁ, সত্যি বলছি। বিশ্বাস না হলে লোকেশকে জিজ্ঞেস করে নিও। আসলে কি জানো, আমরা কোনোদিন লোকেশকে ভালো চোখে দেখতাম না। কিন্তু লোকটার অনেক টাকা আর এই যৌন সংসর্গের জন্য প্রচুর টাকা খরচ করত। ওর বাড়ি আমরা কোনোদিন যাইনি, তাই ওর বৌমা, মহুয়াকে কোনোদিন দেখিনি। তবে যখন সিমোনের মুখে তোমার স্ত্রীর নাম মহুয়া শুনলাম তখন আমাদের সন্দেহ হয়েছিল বৈকি। কিন্তু হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলাম কারন, লোকেশ বেঁচে থাকতে ওর কবল থেকে ওর বৌমাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার সাধ্য কারুর নেই। এই আসল কথা বলি, ওই পনেরো কুড়ি দিন তুমি যে মহুয়ার সাথে যৌন সহবাস করেছিলে তাতে লোকেশের তোমার ওপরে সন্দেহ জাগে। বুড়ো ভয় পেয়ে যায়, বারেবারে এই যৌন সংসর্গ করতে করতে তোমার আর মহুয়ার মধ্যে যদি হৃদ্যতা গড়ে ওঠে। যদি কোনোদিন তুমি ওর বাড়িতে এসে চড়াও হয়ে মহুয়াকে মুক্ত করে নিয়ে যাও? সেই ভয়ে লোকেশ আমাদের নির্দেশ দিল যে তোমাকে মেরে ফেলতে হবে।"

বুক ভরে শ্বাস নেয় দানা, এরা এখন জানে না যে লোকেশ মারা গেছে। না জেনেই তাহলে নিজের খুনের চক্রান্তের প্রতিশোধ নিয়ে নিয়েছে আর মহুয়াকে মুক্তি দিয়েছে।

দানা প্রশ্ন করে, "যদি লোকেশ তখন আমাকে মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিল তাহলে প্রায় এক মাস দেরি কেন করলে?"

কঙ্কনা বলতে শুরু করে, "তোমাকে সোজা মেরে ফেলতে হলে অনেক আগেই গুলি মারতাম, কিন্তু সিমোনের কাছে তোমাকে পাঠানো খুব দরকার ছিল। আসলে সিমোনকে কিছুতেই বাগে ফেলা যাচ্ছিল না। ওই আরেক ধূর্ত কুটিল নারী, নিজের কার্যসিদ্ধির জন্য যেমন নীচে নামতে প্রস্তুত তেমনি খুন করতেও পিছপা হয় না। ঠিক তাই হল, তোমাকে সিমোনের কাছে পাঠালাম, আর প্রথম দিনেই তুমি আমাদের খবর এনে দিলে। শুধু ওই সাংবাদিকের পরিচয় জানতে পারলাম না, তাহলে একসাথে অনেক কেই বাগে ফেলতে পারতাম। সিমোন সেই সাংবাদিককে খুন করার পরিকল্পনা করছিল সেটা জানা গেল। আগে সিমোন এই রেড এন্ড ব্লু ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ ছিল। ওর কাছ থেকে সেই পদ হাতিয়ে নেওয়ার জন্য ওই বার্তালাপ কাজে লাগালাম। কোটি কোটি টাকা আসে এই রেড এন্ড ব্লু ক্লাবে, সব টাকা খরচ হয় না। একবার সমাগমের পরে কেউই আর সেই টাকার আয় ব্যায়ের হিসাব চায় না, ওই টাকা খুব সহজে এদিক ওদিক করা যায়।"

সব কিছু শোনার পরে দানা চুপচাপ ওদের দিকে তাকিয়ে থেকে চাপা কণ্ঠে বলে, "আমাকে খুনের চক্রান্তের প্রতিশোধ আমি নেব কঙ্কনা। বল কি ভাবে মৃত্যু বরন করতে চাও? রমিজ ভাইয়ের ছুরির ঘায়ে, না এই সাগর জলে সলীল সমাধি লাভ করে।"

কঙ্কনা আর নাসরিন দুইজনেই কেঁদে ফেলে। হাতজোড় করে ক্ষমা ভিক্ষে করে দানাকে বলে, "দানা আমাদের ছেলে মেয়েরা ছোট ছোট। দয়া করে ওদের মুখ চেয়ে অন্তত আমাদের ছেড়ে দাও।"

দানা বাঁকা হাসি হেসে বলে, "আমি যদি পাখীর সাথে দেখা করতাম তাহলে ওকেও তোমার খুন করতে তাই না? তখন শুচিস্মিতা আর দেবাদিত্যের কথা তোমাদের মনে পড়েনি?"

কঙ্কনা আর নাসরিন মাথা নিচু করে বসে থাকে। কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পরে নাসরিন মৃত্যু ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলে, "একটা কথা মনে রেখো দানা, তুমি যে আজকে এই ক্লাবের সমাগমে এসেছ তার মাশুল তোমাকে গুনতেই হবে। সিমোন আর মোহন খৈতান তোমাকে চিনে ফেলেছে। হয়তো তোমার পরিচয় ওই ক্লাবের সবাইকে জানাবে না, তবে ওরা তোমাকে ছাড়বে না, কারন তুমি ওদের অনেক গোপন তথ্য জেনে ফেলেছ। নিজেদের বাঁচানোর জন্য ওরা তোমাকে আর তোমার পরিবারকে আক্রমন করবেই। ইতিমধ্যে ওরা হয়ত তোমার বিরুদ্ধে ফাঁদ তৈরি করতে শুরু করে দিয়েছে।"

দানা মাথা দুলিয়ে হেসে বলে, "ওদের কি ভাবে শায়েস্তা করব সেটা তোমার কাছ থেকে শুনতে চাই না, নাসরিন। তবে তোমরা যদি আমার কথা মতন কাজ কর তাহলে আমি তোমাদের ছেড়ে দেব।"

দানার কথা শুনে অনেকেই অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। রমিজ জিজ্ঞেস করে, "কি বলছিস তুই? এই মহিলারা একবার তোকে খুন করার চেষ্টা করেছে, দ্বিতীয় বার করবে না তার প্রমান কি?"

দানা মৃদু হেসে শঙ্করকে জিজ্ঞেস করে, "ও শঙ্করদা, কাবুলি ঘাট আর কতদুর?"

শঙ্কর উত্তর দেয়, "যা ঝড় উঠেছে তাতে প্রায় এক ঘণ্টার মতন আরো লাগবে রে।"

কালো সমুদ্রের মাঝে উত্তাল ঢেউয়ের দোলায় ছোট মাছ ধরার নৌকা খোলামকুচির মতন দুলতে দুলতে কোনোরকমে মোহনার দিকে এগিয়ে চলেছে। যেদিকে চোখ যায় সেদিকে শুধু অসীম উত্তাল বঙ্গোপসাগর। ওদের অনেক দূরে প্রমোদ জাহাজ। এতক্ষণে নিশ্চয় কঙ্কনা নাসরিন আর দানার অনুপস্থিতিত সবাই টের পেয়ে গেছে। এতদুর থেকে জাহাজের কিছুই পরিস্কার দেখা যায় না। ওদের কাছে কোন দূরবীন নেই যে ওই জাহাজে কি হচ্ছে সেটা একবার দেখে। প্রচন্ড দুলুনির ফলে নাসরিন আর কঙ্কনার নাড়িভুড়ি বেড়িয়ে আসার যোগাড়। নাসরিন জল খেতে চাইলে একজন ওর দিকে একটা জলের বোতল এগিয়ে দেয়। কঙ্কনা আর থাকতে না পেরে নৌকার পাটাতনের ওপরে বমি করতে শুরু করে দেয়।

দানা ওদের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলে, "জল খাওয়া হয়ে গেলে তোমাদের ছাড়।"

কঙ্কনা আর নাসরিন ওর কথা শুনে পরস্পরের দিকে তাকায়। তারপরে দানার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "সত্যি বলছো আমাদের ছেড়ে দেবে? আমাদের কি করতে হবে, দানা?"

দানা বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে অঙ্ক কষতে শুরু করে। এমনিতে সিমোন জেনে গেছে যে দানা ওই জাহাজে ছিল। যদি ওরা কঙ্কনা আর নাসরিনের দেখা না পায় তাহলে সন্দেহের তীর সোজা দানার দিকেই আসবে। এখুনি কঙ্কনা আর নাসরিনকে মেরে ওর খুনের প্রতিশোধ নেওয়া ভুল পদক্ষেপ প্রতিপন্ন হবে। এরা যখন রমলাকে বলেনি এইখানে আসার কথা তাহলে নিশ্চয় আগে থেকে সিমোনকেও বলেনি যে ওরা এই সমাগমে আসবে। এখন যখন ওদের দেখা হয়েই গেছে তখন সিমোনের বিরুদ্ধে এদের ব্যাবহার করা যায়।

দানা ওদের জিজ্ঞেস করে, "তোমাদের মধ্যে কে ভালো প্রতারনা করতে পারে? আশা করি কঙ্কনা তুমি ভালো পারো?"

নাসরিন চুপচাপ বসে থাকে আর কঙ্কনা কি বলবে ভেবে পায় না।

নিরুত্তর কঙ্কনার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে বলে, "মৌনং সম্মতি লক্ষনম, তাই ত কঙ্কনা। আমি হলফ করে বলতে পারি আমাকে ফাঁদে ফেলার পুরো পরিকল্পনা তোমার মাথা থেকেই এসেছিল। সিমোনেকে ওই কোষাধ্যক্ষ পদ থেকে সরানোর ষড়যন্ত্র সেটাও নিশ্চয় তোমার মাথার উপজ। তাই তো?"

কঙ্কনা মৃদু মাথা দোলায়, "হ্যাঁ।"

দানা বলতে শুরু করে, "তাহলে আমার কথা মন দিয়ে শোনো। তুমি কাল সকালে সিমোনকে বলবে তোমরা ডেকে গিয়েছিলে আর প্রবল ঝড়ের ফলে তোমরা ডেক থেকে জলে পড়ে গিয়েছিলে। জাহাজের অদুরে একটা মাছ ধরার লঞ্চ তোমাদের বাঁচায়। আমার কথা জিজ্ঞেস করলে বলবে, আমি ওই জাহাজে ছিলাম না। মনে থাকবে?"

কঙ্কনা মাথা দোলায়, "হ্যাঁ, কিন্তু সিমোন তোমাকে চিনে ফেলেছে দানা। তোমার মতন পেটানো দেহ বহুবার সিমোনকে যৌন সুখ দিয়েছে, সেই উলঙ্গ দেহ কি করে ভুলবে।"

দানা ওদের বলে, "তুমি গল্প বানিয়ে বলবে, যে ওই ছেলেকে সিমোনের চিনতে ভুল হয়েছে। মুখোশের পেছনে কে ছিল সেটা তোমরা জানো না এবং বিশ্বাসের সাথে বলবে যে ওই ছেলে দানা নয়।"

কঙ্কনা মাথা দোলায়, "ঠিক আছে, সেটা না হয় ওকে আমরা বলব।"

দানা ওদের বলে, "এবারে আমাকে বল, সিমোন আমার বিরুদ্ধে কি ষড়যন্ত্র করছে?"

কঙ্কনা আর নাসরিন দুইজনে মাথা নাড়ায়, "সেটার বিষয়ে জানি না দানা। কোষাধ্যক্ষ পদ থেকে ওকে সরিয়ে দেওয়ার পরে সেই রকম ভাবে মেলামেশা আর নেই ওর সাথে। তবে জাহাজে তোমাকে দেখে আমাকে বলেছিল যে তোমাকে এইবারে সরাতে হবে। ঠিক কি ষড়যন্ত্র করছে সেটা জানা নেই। সত্যি বলছি দানা..... আমার ছোট ছেলের মাথার দিব্যি দিয়ে বলছি।"

দানা ওদের কথা বিশ্বাস করে নেয়। সিমোন আর মোহন প্রচন্ড ধূর্ত প্রকৃতির মানুষ, অত সহজে কাউকে নিজেদের ষড়যন্ত্রের বিষয়ে জানাবে না। একটু ভেবে কঙ্কনাকে বলে, "তুমি ওকে বলবে যে আমার সাথে তোমার দেখা হয়নি। খবরের কাগজে নিশ্চয়ই আমার বিষয়ে পড়ে তুমি রমলার পত্রিকার বার্ষিক উৎসবে আসনি, তাই না?"

কঙ্কনা মাথা দোলায়, "হ্যাঁ।"

দানা ওদের বলে, "তুমি বলবে যে তোমাদের সাথে আমার দেখা হয়নি। কিন্তু তুমি রমলার মুখ থেকে শুনেছ যে আমি ওকে এই রেড এন্ড ব্লু ক্লাব নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলাম। এবং নয়না আমাকে এই রেড এন্ড ব্লু ক্লাব সম্বন্ধে সব কিছু জানিয়ে দিয়েছে।"
Like Reply
কঙ্কনা সঙ্গে সঙ্গে বলে, "হ্যাঁ হ্যাঁ, সিমোন আর মোহন কথায় কথায় বলে ফেলেছিল যে ওই নয়নার জন্যেই নাকি ওদের বন্ধু বিমান চন্দের মৃত্যু হয়েছে। কি হয়েছিল আসলে দানা?"


দানা বাঁকা হেসে উত্তর দেয়, "হ্যাঁ সেটা একপ্রকার সঠিক। ওই নয়না দুই নৌকায় পা রেখে চলতে চেষ্টা করেছিল আর যখন বাপ্পা নস্কর, নয়নার সাথে বিমানের যৌন সম্পর্কের বিষয়ে জেনে ফেলে তখন রাগে ওদের খুন করে। সেই খুনোখুনিতে সবাই মারা যায়।"

কঙ্কনা ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করে, "কিন্তু নয়না আর তুমি বেঁচে গিয়েছিলে....."

দানা বাঁকা হেসে বলে, "এত উত্তর দেওয়ার সময় এখন নেই আমার কাছে। তুমি সিমোনকে গিয়ে বলবে আমাকে খৈতানের প্রকল্প গুলো হাতিয়ে দেওয়ার পেছনে নয়নার হাত ছিল। আসলে নয়না চেয়েছিল রাজনীতিতে নামার, তাই প্রথমে আমাকে ব্যাবহার করে বাপ্পাকে সরাতে চেয়েছিল। একবার বাপ্পা নস্কর সরে গেলে ওর ওপরে বিমান চন্দের বিশ্বাস বেড়ে যেত আর তখনি বিমান চন্দকেও পথের থেকে সরিয়ে দিত নয়না। খৈতানের প্রকল্প গুলো আমাকে দিয়ে হাতানোর পেছনেও নয়নার মাথা কাজ করেছে। কিছু বুঝলে?"

কঙ্কনা আর নাসরিন স্তম্ভিত হয়ে ওর কথা শুনে যায়। নাস্রিন অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, "তুমি সত্যি বলছো?"

দানা মাথা দোলায়, "সব কিছু সত্যি বলছি আর এই সব কিছু তোমাকে সিমোনে আর মোহনের কানে তুলে দিতে হবে।"

কঙ্কনা ওকে বলে, "কিন্তু কোন প্রমান ছাড়া ওরা এই কথা বিশ্বাস করবে না।"

দানা সেটা ভালো ভাবে জানে তবে ওর কাছে এখুনি কোন প্রমান নেই, তাই ওদের বলে, "দেখো তুমি এইসব ওদের বলবে আর বলবে এই সব কথা তুমি রমলার কাছ থেকে শুনেছ। নয়না আর রমলার মাঝে গভীর সম্পর্ক আছে সেটা অবশ্য তোমার অজানা যাই হোক।"

কঙ্কনা আর নাসরিন মাথা দোলায়, "ঠিক আছে। কিন্তু এটা হলে সিমোন আর মোহনের সব রাগ নয়নার ওপরে পড়বে। তাতে তোমার কি লাভ?"

দানা বাঁকা হাসি দিয়ে বলে, "সেটাও জেনে তোমার দরকার নেই কঙ্কনা। আমি ঠিক যেমন বলছি তেমন কাজ করলে আমি তোমাদের ছেড়ে দেব। যখন সিমোন রাগে বিতৃষ্ণায় কাঁপতে শুরু করবে তখন তুমি ওকে নয়নাকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা বলবে।"

কঙ্কনা আর নাসরিন দানার অনেক কথার অর্থ বুঝতে পারে না তাও মাথা নাড়িয়ে যায়। দানা ওদের বলে, "তুমি সিমোনের কাছে গিয়ে বলবে, যদি নয়নাকে বাগে করতে চায় তাহলে আগে ওর ভাইকে আঘাত করতে হবে। নয়নার প্রান ভোমরা ওর ভাই। ওকে যদি কিছু করে অপহরন করতে পারে তাহলে নয়নাকে অতি সহজে ফাঁদে ফেলতে সক্ষম হবে। তুমি এটা ওদের বলবে যে আমি ওদের সব প্রকল্প ফিরিয়ে দিতে রাজি আছি। তুমি বলবে যে আমাকে তোমরা মহুয়াকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে এইসব কথা বের করেছ। বুঝলে?"

কঙ্কনা মাথা দোলায়, "হ্যাঁ সব বুঝেছি।"

দানা ওদের বলে, "যতদিন না আমার কাজ শেষ হচ্ছে ততদিন নাসরিন আমাদের কাছে থাকবে।"

নাসরিন চিৎকার করে ওঠে, "না, প্লিস আমাকে ছেড়ে দাও।"

দানা বাঁকা হাসি দিয়ে বলে, "ঠিক আছে তাহলে কঙ্কনা আমাদের কাছে থাকবে আর তুমি এই সব কথা সিমোনকে বলবে। কে আমাদের কাছে থাকবে সেটা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক করে নাও।"

সব কিছু বলার পরে দানা চুপ করে ওদের দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে। নিরুপায় নাসরিন মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয়, যতদিন কঙ্কনা এইসব কাজ করবে ততদিন দানার কাছে বন্দী থাকতে রাজি।







রেড এন্ড ব্লু ক্লাব (#০৮)

প্রচন্ড ঝড়ের ফলে আর ছোট লঞ্চের ভীষণ দুলুনির ফলে নাসরিন আর কঙ্কনার শরীর খারাপ হয়ে যায়। একে আতঙ্কে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে ছিল, তায় সমুদ্রের ঠাণ্ডা জলো হাওয়ায় ওরা কাবু হয়ে পড়ে। প্রবল ঝড়ের ফলে কাবুলি ঘাট পৌঁছাতে পৌঁছাতে ওদের বেশ রাত হয়ে যায়। রাত প্রায় এগারোটা বেজে যায় যখন ওরা কাবুলি ঘাটে পৌঁছায়। কঙ্কনা জানায় মধ্য মহানগরের একটা বেশ বড় হোটেলে ওরা উঠেছে, সেখান থেকে ভাড়ার গাড়ি করে ওরা কাবুলি ঘাটে এসেছিল। দরকারি সব কিচুই হোটেলের কামরায়, তবে ওদের হোটেলের কামরার কার্ড ওই জাহাজে রয়ে গেছে।

মনা ওকে দেখতে পেয়েই তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফোন করতে বলে। মহুয়া চরম উৎকণ্ঠায় কেঁদে কেটে একসা। বিমান বাপ্পার সময়ে ওর হাতে পিস্তল ছিল, সাথে লোকজন ছিল কিন্তু এইবারে যখন মনার মুখে শুনেছে যে দানা একটা লঞ্চে চেপে সমুদ্রের দিকে পাড়ি দিয়েছে, তখন থেকেই বুকের ধুকপুকানি থামেনি।

দানা ফোন করতেই মহুয়া কেঁদে ফেলে, "আমার কথা মেয়ের কথা মনে থাকে না তাই না?" ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলে, "কি অদৃষ্টে তোমাকে প্রেম করেছিলাম কে জানে। না তুমি কোথাও যাবে, না আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে পারি।"

দানা চুপ, কি বলবে, ওইপাশ থেকে শুধু ফোঁপানোর শব্দ ছাড়া কিছুই ভেসে আসে না। মহুয়া কিছুতেই ফোন ছাড়বে না, অন্তত দানার নিঃশ্বাসের শব্দটুকু ওর কানের রন্ধ্রে প্রবেশ করে বুকের মাঝে শান্তির মলয় বইয়ে দেয়। শত হোক ঠিক আছে। বেশ কিছুপরে মৃদু কণ্ঠে বলে, "কখন আসছো বাড়িতে? কিছু খেয়েছো?"

দানা এতক্ষণ পরে মুখ খোলে, "এই সোনা, প্লিজ কাঁদে না। দেখো আমি ঠিক আছি, কিছুই হয়নি। তুমি থাকতে আমার গায়ে কি কেউ আঁচড় লাগাতে পারে?"

কান্না ভরা মৃদু হেসে বলে, "হ্যাঁ, আমাকে যেন সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলে!"

দানা হেসে ফেলে, "ওইখানে তোমার না যাওয়াই ভালো। যাই হোক কঙ্কনা নাসরিনের খবর পাওয়া গেছে। এর কয়েক ঘন্টার মধ্যে কঙ্কনাকে হোটেলে নামিয়ে দিয়ে বাড়ি ফিরে সব কিছু বলছি।"

কঙ্কনার বিষয়ে মহুয়ার মাথাব্যাথা নেই, আবার প্রশ্ন করে সুন্দরী প্রেয়সী, "কিছু খেয়েছো? তোমার’ত আবার জাহাজে চড়লে মাথা ঘোরায়। বমি টমি করনি তো?"

সত্যি মেয়েটা বড় ভালোবাসে। হ্যাঁ তা বাসে বৈকি, পারলে আঁচলের তলায় লুকিয়ে রাখতো, কিন্তু দানা শুনলে তো। দানা হেসে বলে, "তুমি কিছু খাওনি আমি কি করে খেতে পারি।"

কান্না ভেজা গলায় হেসে বলে, "তাড়াতাড়ি এসো, আমি আটা মাখছি।"

"আচ্ছা আসছি।" বলে দানা ফোন রেখে দেয়।

শঙ্কর একটা লুঙ্গি দিয়েছিল সেটা কোমরে জড়িয়ে নেয়। কোন এক ছেলে কঙ্কনার জন্য জামা দিয়েছিল, সেটা কোনোরকমে উলঙ্গ কঙ্কনা গায়ে জড়িয়ে দানার গাড়ির পেছনের সিটে উঠে বসে। কঙ্কনাকে নিয়ে দানা বেড়িয়ে পড়ে মহানগরের উদ্দেশ্যে, আর নাসরিনকে লঞ্চের মধ্যে বন্দী রেখে বাকিরা হিঙ্গলগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পথে যেতে যেতে শহরের এক জায়গায় থেমে কঙ্কনার জন্য কিছু জামা কাপড় কিনে নেয়।

দানা জানতে চায় কেন ওরা এই মহানগর ছেড়ে দিয়ে অন্য শহরে চলে গেছে। তার উত্তরে কঙ্কনা জানায় ওর স্বামী শঙ্কর দেবনাথ আর নাসরিনের স্বামী আমজাদের নতুন জাহাজের কোম্পানিতে চাকরি হয়ে যায়, যার জন্য ওদের এই মহানগর ছেড়ে চলে যেতে হয়। তবে বিত্ত মন্ত্রালয়ের সচিব, রাগিণীর সাথে ওদের যোগাযোগ ছিল। রেড এন্ড ব্লু ক্লাব সম্বন্ধে জানতে চাইলে, কঙ্কনা বলে এই রেড এন্ড ব্লু ক্লাবের উদ্যোক্তা আসলে রাগিণী আর সিমোনের মতন কয়েকজন প্রচণ্ড কামুকী মহিলা বছর ছয়েক আগে শুরু করে। বছর পাঁচেক আগে একটা পার্টিতে রাগিণীর সাথে কঙ্কনার আলাপ পরিচয় হয়, তারপরে ওরা এই ক্লাবে যোগদান করে। বছরে প্রায় পাছ ছয় বার এই রিরংসা মাখা ভীষণ যৌন সহবাসের সমাগম হত। ক্লাবের সদস্যরা সবাই বিশাল বড়লোক, এক রাতের জন্য তিরিশ চল্লিশ লাখ টাকা দেওয়া ওদের পক্ষে কিছুই না। রাগিণীর কাছে এটাও জানতে পারে যে একবার টাকা দিলে সেই টাকার আয়ব্যায়ের খোঁজ খবর কেউ নেয় না। সিমোন এই ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ পদে অধিষ্ঠিত, ক্লাবের টাকা নাকি নিজের ব্যাবসায় খাটিয়েছে সিমোন। টাকার অঙ্ক দেখে ওদের লোভ হয় আর সেই থেকে ওদের মাথায় ঘোরে কি ভাবে কোষাধ্যক্ষ পদ সিমোনের কাছ থেকে হাতাবে। সেই সুযোগ দানার হাত ধরে ওদের ঝুলিতে এসে পড়ে। সাংবাদিকের খুনের পরিকল্পনা জানিয়ে এই কোষাধ্যক্ষ পদ নিজের নামে করে নেয়। বিভিন্ন পার্টি আর এইরকম গোপন কামক্রীড়ার সমাগমে গিয়ে ওরা নতুন সদস্য খোঁজে।

দানা চুপচাপ সব কিছু শোনার পরে ওকে জানিয়ে দেয় ওর কথা মতন কাজ করলে ওদের ছেড়ে দেবে। কঙ্কনাকে এক সপ্তাহের সময় দেয় দানা, তার মধ্যে যদি কাজ করতে না পারে তাহলে বন্দিনী নাসরিনের মৃত্যু অবশ্যাম্ভাবী। ছোট বেলার বান্ধবী নাসরিনের অসহায় অবস্থা চোখের সামনে ভেসে উঠতেই কঙ্কনা জানিয়ে দেয় ওর কথা মতন কাজ করবে।

বাড়ি ফিরতে আরো রাত হয়ে যায় দানার। মহুয়া জেগেই বসে ছিল, দানা সেই যে দুপুরবেলায় বেরিয়েছিল, সেই থেকে ওর বুকের ধুকপুকানি বিন্দুমাত্র কমেনি। কি যে করে না মাঝে মাঝে। কিন্তু সেই সাথে জানে, এই সাপ গুলোকে না মারা পর্যন্ত ওরা শান্তিতে চোখ বুজে ঘুমাতে পারবে না। সবসময়ে মাথার মধ্যে মৃত্যু ভয় ঘোরাফেরা করবে।

গাড়ির আওয়াজ পেয়েই দৌড়ে নীচে নেমে জিজ্ঞেস করে, "কিছু খাওয়া দাওয়া করেছ, না কি শুধু....." দানার চেহারা দেখে কথাটা শেষ করতে পারে না মহুয়া।

দানাকে দুইহাতে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে বুকের মধ্যে মাথা গুঁজে দেয়। ওর বুকের ধুকপুকানির মাত্রা আর কমতে চায় না কিছুতেই। দানা নিজের বুকের সাথে মহুয়াকে মিশিয়ে দিয়ে ওর মাথা চুম্বন করে বলে, "এই পাপড়ি.... এই তো আমি এসে গেছি।"
Like Reply




Users browsing this thread: 8 Guest(s)