Thread Rating:
  • 24 Vote(s) - 3.17 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
চোরাবালি (কালেক্টেড)
পর্ব পাঁচ। রাগ অনুরাগ (#1-#26)
কম্বল মুড়ি দিয়ে একটু টানটান হয়ে শুয়েছিল অভি, কিন্তু চোখে আর ঘুম আসে না। কখন সকাল হবে, বাইকে করে দিয়াকে নিয়ে বারাসাত যাবে। যদিও এইটুকু পথ তাও সেটাই মধুর। ভোরের আলো দিয়ার মসৃণ ত্বকের ওপর পিছল খেয়ে পরবে, সেই দেখে অভির মনে দোলা লাগবে। শীতকাল, নিশ্চয় দিয়া ওর পিঠের ওপর ঝুঁকে বসবে, এই সব চিন্তায় মগ্ন। রাতে কি পরে শুয়েছিল, ওর কোন শারট না টিশারট? নাকি গ্রে সাইড অর্থাৎ শুধু মাত্র ব্রা আর প্যান্টি পরেই লেপের তলায় শুয়েছিল। দময়ন্তীকে বড়মায়ের বেশ ভালোই লেগেছে, তাহলে এত তাড়াতাড়ি প্রপোজ করে কি দরকার, একটু দুষ্টুমি করবে দিয়া সাথে। শান্ত ছেলেটার হৃদয়ে দোলা লাগে।
পাপার উপনিষদ পাঠ শুরু হতেই বুঝে গেল যে নতুন দিন চলে এসেছে, এইবার বড়মা উঠে পড়বে। অভিও উঠে পরল। এত সকালে ছেলেকে উঠতে দেখে প্রনবেশ বাবু একটু অবাক কিন্তু মন্ত্র জপা থামান না। অভিও সোফা ছেড়ে উঠে পড়ল। দিদিভাইয়ের রুমে ঢুকে দেখে যে যথারীতি ভাগ্নে তিতাস পাছা উল্টে লেপের তলায় গুটিশুটি মেরে বড়দি আর নীলাদ্রীদার মাঝখানে শুয়ে। বিছানায় ঝুঁকে পরে তিতাসকে চুমু খেয়ে উঠতে যাবে কি বড়দিও উঠে পড়ল।
অভির দিকে ঘুম চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি রে তুই রাতে ঘুমাসনি নাকি?”
অভি হেসে উত্তর দেয়, “না রে আর ঘুম আসে নি।”
বড়দি জানে না যে বাড়িতে দিয়া এসেছে, জানে না রাতে বড়মায়ের সাথে কি কথা হয়েছে। শায়িত বড়দির পাশে বসে কোলের মধ্যে মাথা গুঁজে বলে, “আমাকে একটু ঘুমাতে দিবি?”
শর্বাণী খুব অবাক হয়ে যায়, “কি হয়েছে রে তোর?”
বড়দির কোলের মধ্যে মাথা রেখে বলে, “কিছু না তো, এই ঘুম ঘুম পাচ্ছে তাই।” বড়দি জানে না, গত রাতে বড়মায়ের কাছে শুনেছে কি ভাবে বড়দি একা একা বড় হয়েছে।
শর্বাণী বিছানায় উঠে বসে, অভির মাথায় হাত বুলিয়ে হেসে ফেলে, “আচ্ছা বাবা শো।”
ইতিমধ্যে দীপাদেবী উঠে পড়লেন। বড়মেয়ের রুমে এসে দেখলেন যে অভি চুপচাপ চোখ বন্ধ করে শর্বাণীর কোলে মাথা রেখে শুয়ে, বিছানায় তখন বাকিরাও ঘুমিয়ে। দীপাদেবী ওদের দেখে জিজ্ঞেস করলেন, “কি রে উঠে পড়েছিস? চা বানাবো।”
শর্বাণী উঠতে যায়, অভি বড়দির কোল চেপে ধরে বলে, “ধ্যাত একটু শুতে দে না, মা চা বানিয়ে আনবে খানে।”
শর্বাণী এইবারে সত্যি অবাক হয়ে যায়। এত বছরে কোনদিন অভি ওর কোলে শোয়নি, বরাবর মনামির কোলে মাথা রেখে শুয়েছে, এমনকি মনামির বিয়ের কয়েকদিন আগে পর্যন্ত মনামির কোলেই মাথা রেখে আদর খেয়েছে। শর্বাণী অভির মাথার চুলে বিলি কেটে জিজ্ঞেস করে, “সত্যি বলত কি হয়েছে?”
অভি মিষ্টি হেসে উত্তর দেয়, “বললাম তো ঘুম পাচ্ছে তাই। যা তোর খুব কষ্ট হচ্ছে আর শোব না।”
শর্বাণী ওর মাথার চুলে বিলি কেটে হেসে উত্তর দেয়, “আচ্ছা বাবা, শো।”
কিছুক্ষন পরে দীপদেবী চা বানিয়ে বড় মেয়ের রুমের মধ্যে ঢোকেন। চা খেতে খেতে একটু গল্প গুজব, তিতাসের স্কুলের দুষ্টুমির গল্প ইত্যাদি হয়। চা শেষে সবাই সবার কাজে লেগে পরে, শর্বাণী মুখ ধুয়ে ব্যাগ গুছাতে শুরু করে দেয়। নীলাদ্রীও ইতিমধ্যে উঠে পরে। দীপাদেবী অভিকে রান্না ঘরে ডেকে নিয়ে গিয়ে বলেন, যে দময়ন্তীকে উঠিয়ে দিতে। অভি বড়মায়ের সামনে লাজুক হেসে মাথা চুলকে মাথা দুলিয়ে বাধ্য ছেলের মতন নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়।
নিজের রুমের দরজা খুলবে তাতেই কত ইতস্তত ভাব, ঘুম ঘুম চোখে দিয়া বিছানা ছেড়ে উঠে দরজা খুলে দেবে। ঢুলুঢুলু টানাটানা চোখে ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি এক হাসি দেবে, এই সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে দরজাতে টোকা মারতেই দরজা খুলে গেল। অভি একটু অবাক, এত তাড়াতাড়ি দিয়ার ঘুম ভেঙ্গে গেল নাকি? দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে দিয়াকে দেখে আরো অবাক লাগলো অভির, সকাল সকাল উঠে পড়েছে, ওর টেবিলের ওপর মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে। রাতে কি সত্যি ঘুমায়নি মেয়েটা। এর মধ্যেই জামা কাপড় পরে তৈরি। ওর বিছানা একদম পরিপাটি করে সাজানো গুছানো। এমন কি ওর টেবিল যেটা গত রাত পর্যন্ত আগোছোলা ছিল সেটাও বেশ পরিপাটি করে সাজান। টেবিলের নিচে একটা কাপে সিগারেট রাখা ছিল, সেই সিগারেট উধাও, খালি কাপ ধুয়ে সেখানেই রাখা। হটাত কি হল মেয়েটার, একটু চিন্তা হয় অভির। গলা খ্যাঁকরে নিজের অস্তিত্বের জানান দেয়। টেবিল থেকে মাথা তুলে ওর দিকে ঘুম ভরা চোখে তাকায় দিয়া। অভিকে দেখতে পেয়েই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।
অভি ওর দিকে দুকদম এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার, তুমি কি কাল রাতে ঘুমাওনি নাকি?”
দিয়া অন্য দিকে তাকিয়ে চোখ মুছে উত্তর দেয়, “এই একটু আগেই উঠেছি। তুমি কখন উঠলে?”
অভি উত্তর দেয়, “বেশ আগেই।”
দিয়া ছোট উত্তর দেয়, “ওহ আচ্ছা” তারপর নিজের দুটো ব্যাগ হাতে নিয়ে অভিকে বলে, “আমি বাড়ি যাবো।”
দিয়ার কন্ঠস্বরে সেই উচ্ছলতা নেই। অভির বুকে দামামা বেজে ওঠে, এক রাতে এমন কি হল যে দিয়া আমূল বদলে গেল। দিয়ার দিকে একটু ঝুঁকে প্রশ্ন করে, “তোমার কি হয়েছে বল তো?”
দিয়া ওর দিকে না তাকিয়েই শীতল কণ্ঠে উত্তর দেয়, “না মানে, বেশ ক্লান্ত তাই, আর কিছু না।”
অভি বেশ বুঝতে পারে এই সুর ক্লান্তির নয় কিন্তু দিয়ার মনের কথা আর বুঝতে পারে না। অভি মাথা নাড়িয়ে বলে, “না মানতে পারছি না।”
দিয়ার বুক ককিয়ে ওঠে। শীতল কণ্ঠে বলে, “না মানলে আমার কি করার আছে।”
কথা গুলো বলার সময়ে বেশ কষ্ট হচ্ছিল দিয়ার। জানতে হবে না তোমাকে, আমি অলীক স্বপ্নের পেছনে ছুটে গেছিলাম বুঝতে পারিনি সেই ছোটা তোমার জীবনে এতবড় আঘাত এনে দেবে। তোমার মনে কি কিছুই হয় না নাকি? তুমি কি করে এত সহজে আমার সাথে কথা বল? তুমি সত্যি কি রক্ত মাংসের গড়া মানুষ নাকি পাথরের মানুষ? তোমার বুকের মধ্যে হৃদয় নেই এটা বলা ভীষণ ভুল, সেটা আছে, ভীষণ ভাবেই আছে। আর সেই হৃদয়ে আমার জায়গা নেই সেটা আমি বুঝে গেছি। তোমার পৃথিবী আর আমার পৃথিবী অনেক আলাদা, অভিনন্দন। আমাদের এই দুই পৃথিবী কোনদিন মিশতে পারবে না।
অভিকে পাশ কাটিয়ে ব্যাগ হাতে রুম ছেড়ে বের হতে যায়। অভি বাধা দিতে গেলে ঠান্ডা গলায় বলে, “পথ ছাড়ো আমি যাবো।”
অভি ভুরু কুঁচকে দিয়ার নত মুখের দিকে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে। দিয়ার মনের মধ্যে কি চলছে সেটা কিছুতেই বোধগম্য হয়ে ওঠে না ওর। অভি পথ ছেড়ে দাঁড়িয়ে বলে, “আচ্ছা বেশ।” দিয়ার দিকে হাত বাড়িয়ে ব্যাগ গুলো বইতে সাহায্য করে। দিয়া কোন কথা না বলেই একটা ব্যাগ অভির হাতে ধরিয়ে দেয়। রুম থেকে বেড়িয়ে আসতেই, বড়মায়ের সাথে দেখা।
দীপাদেবী দিয়াকে দেখে স্মিত হেসে বলেন, “এত তাড়াতারি উঠে পড়লে যে?”
দিয়া একটু ভদ্রতার হাসি দিয়ে বলে, “না মানে বাড়ি যেতে হবে তাই।”
দীপাদেবী দিয়াকে বসতে বলে বলেন, “বস, আমি চা নিয়ে আসছি।”
অভি ব্যাগ রেখে নিজের রুমে চলে যায়। দিয়া চুপচাপ সোফায় বসে পরে। অভির মায়ের স্মিত হাসি আর গত রাতের দৃশ্য, কিছুতেই মেলাতে পারছে না দিয়া। সত্যি যদি গতরাতে অভিকে বকাঝকা করে থাকেন তাহলে সকাল বেলা ওর দর্শন পেয়ে এইভাবে আময়িক হাসি নিশ্চয় দেবেন না অভির মা। দীপাদেবী কিছুক্ষনের মধ্যে চা নিয়ে বসার ঘরে ঢোকেন। দিয়ার দিকে চায়ের কাপ বাড়িয়ে সামনের সোফায় বসে পড়েন।
দীপাদেবী দিয়ার হাতে একটা খাম তুলে দিয়ে বলেন, “এটা রাখো।”
দিয়া জানে এই খামে কি তাও ভদ্রতার খাতিরে বলে, “মাসিমা, এর কি সত্যি কোন দরকার ছিল?”
দীপাদেবী হেসে বলেন, “এটা আমার তরফ থেকে নয়, এটা মনামি তোমাকে দিয়েছে।”
দিয়া মিষ্টি হেসে খামটা নিজের হাত ব্যাগে ঢুকিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দেয়। দীপাদেবী দিয়াকে জিজ্ঞেস করেন, “তোমার সাথে ভালো করে এই কয়দিনে কথাই হল না।” একটু থেমে জিজ্ঞেস করেন, “তোমার বাবা কি করেন?”
দিয়া উত্তর দেয়, “বাবা বারাসাত বিডিও অফিসে চাকরি করেন।”
দীপাদেবী মাথা দুলিয়ে বলেন, “আচ্ছা, আর বাড়িতে কে কে আছে?”
দিয়া, “মা আছেন। দাদা, বেড়াচাপায় হেলথ সেন্টারে চাকরি করে।”
দীপাদেবী জিজ্ঞেস করেন, “তোমার দাদার বিয়ে হয়ে গেছে?”
মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয়, “না এখন বিয়ে হয়নি।”
দীপাদেবী, “বারাসাতে তোমাদের নিজেদের বাড়ি?”
দিয়া, “হ্যাঁ, নিজেদের।”
দীপাদেবী, “বারাসাতে কোথায় বাড়ি?”
দিয়া, “নবপল্লীতে।”
দীপাদেবী, “তুমি এই বিউটিসিয়ানের কাজ কত দিন ধরে করছ?”
দিয়া একটু হেসে উত্তর দেয়, “এই বছর তিনেকের মতন।”
দীপাদেবী মাথা দোলায়, “আচ্ছা, এরপর কি করার ইচ্ছে আছে?”
দিয়া একটু ভেবে উত্তর দেয়, “সেই রকম ভাবে কিছু ভাবিনি তবে ভবিষ্যতে নিজের একটা বিউটি পার্লার খোলার ইচ্ছে আছে।”
দীপাদেবী মিষ্টি হেসে বলেন, “তুমি খুব ভালো সাজাতে পারো। কোথাও শিখেছ?”
দিয়া একটু লজ্জা পেয়ে বলে, “না না, তেমন ভাবে কোথাও কোর্স করে শিখিনি, এই একটু আধটু ইন্টারনেট থেকে আর একজন জানা শোনা আছেন তার কাছে দেখে একটু শেখা।”
দীপাদেবী অবাক কণ্ঠে বলেন, “বাপ রে, নিজে নিজে শিখেছ? এতো বেশ ভালো কথা।”
দিয়া লাজুক হেসে উত্তর দেয়, “না তেমন কিছু নয়।”
দীপাদেবী স্মিত হেসে বলেন, “না না, সত্যি বলছি তোমার হাত খুব ভালো।” একটু থেমে জিজ্ঞেস করেন, “এই বিয়ে বৌভাতে যখন তুমি সাজাতে যাও, তখন তোমার বেশ কষ্ট হয় তাই না?”
দিয়া প্রশ্ন করে, “কেন?”
দীপাদেবী স্মিত হেসে বলেন, “এই যে রাত হয়ে যায় বাড়ি ফিরতে, কোনদিন হয়ত ঠিক ভাবে ঘুম হয়না তাই জিজ্ঞেস করলাম।”
দিয়া হেসে ফেলে, “না মাসিমা, অন্য সব জায়গায় বিয়ে বৌভাতে সাজিয়ে দিয়েই চলে আসি। কোথাও থাকি না। এখানের কথা আলাদা, লেখা জোর করে বলল তাই থেকে গেলাম।”
দীপাদেবী একটু হেসে বলেন, “আচ্ছা বুঝলাম। ”
দিয়া বেশ ধন্ধে পরে যায়, এত প্রশ্ন কি ব্যাপার, কি চাইছেন অভির মা? ওর মনে হাজার প্রশ্ন ওঠে, অভির মা কি জানেন ওদের ব্যাপারে। এমন ভাবে ওর সাথে কেন কথা বলছে? অভি কি ওর মাকে কিছু বলেছে? যদি কিছু বলেও থাকে, তাহলে গতকাল রাত্রে যা কিছু শুনেছে সেটা কি ভুল শুনেছে? না, দিয়া ভুল দেখেনি অথবা শোনেনি। ঠিক দেখেছে যে অভি মাথা নিচু করে ওর মায়ের সামনে অপরাধির মতন হাঁটু গেড়ে বসে।
অভি মুখ ধুয়ে জামা কাপড় পরে তৈরি, দিয়াকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে যাবে। কিন্তু দিয়ার মুখ ভার কেন? কাল রাত অবধি সব ঠিক ছিল, সকালবেলা অভিও ভেবেছিল ওকে ছাড়তে যাওয়ার সময়ে একটু খুনসুটি করবে। রুম থেকে বেড়িয়ে দেখে বড়মা আর দিয়া বেশ গল্প করছে, সেটা দেখে বেশ ভালো লাগলো। অভিকে দেখে দিয়া সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় বিদায় নেওয়ার জন্য।
দীপাদেবী বলেন, “দুই মেয়েরই বিয়ে হয়ে গেল, দুই মেয়েই দূরে চলে যাবে। মাঝে মাঝে এসো ভালো লাগবে।”
দিয়া দীপাদেবীকে প্রনাম করে স্মিত হেসে বলেন, “মাসিমা, আপনি ডাকলে নিশ্চয় আসবো।”
বড়মা, অভির দিকে দেখে বলে, “সাবধানে যাস।”
দিয়া আলতো মাথা দুলিয়ে ব্যাগ হাতে অভির পেছন পেছন বাড়ি ছেড়ে বেড়িয়ে আসে। ভোরের আলোর ছটায় পূব আকাশে লাল রঙ ধরেছে, একটু কুয়াশাচ্ছন সকাল। আগে এই পাড়ায় সবার নিজের নিজের ছোট বাড়ি ছিল, এখন সবার দুইতলা তিনতলা বাড়ি। সবার বাড়িতে একটু জায়গা ছিল, সেইগুলো বিক্রি হয়ে গেছে, সবার বাড়িতে একটা বাগান একটু গাছপালা ছিল, সেই গাছাপালা গুলো কেটে সেখানে গজিয়ে উঠেছে বাড়ি। পাড়ার মধ্যে শুধু মাত্র ওদের বাড়িটাই এখন অক্ষত, একতলা, বাড়ির সামনে ফুলের বাগান এখন আছে, বাড়ির পেছনে অনেকটা জায়গা, একটা ছোট পুকুর, তার পাছে কয়েকটা আম গাছ, একটা জামরুল গাছ, দুটো কাঁঠাল গাছ। অনেকে এসেছিল জায়গা কিনতে, পাপা সবাইকে ভাগিয়ে দিয়েছে। পাপা বলেন চারদিকে শুধুমাত্র লোহার জঙ্গল তার মাঝে একটু সবুজের জঙ্গল থাকতে ক্ষতি কি।
দিয়ার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখল অভি। মাথার চুল একটু এলোমেলো, হয়ত রাতে না ঘুমানোর ফলে এই হয়েছে। চলনে সেই আগের দিনের মত্ততা নেই, মুখ একটু শুকনো, চোখের পাতা ভারী। জ্যাকেটের সব বোতাম লাগানো, সত্যি এইবার ঠান্ডা বেশ জমিয়ে পড়েছে। অভির ইচ্ছে করছিল জিজ্ঞেস করে, যদি ঠাণ্ডা লাগে তাহলে আরো একটা জ্যাকেট দিতে পারে, কিন্তু দিয়ার থমথমে চেহারা দেখে সেই সাহস আর পেলো না।
বাইকে স্টারট দিয়ে আরেকবার দিয়ার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখল। কাঁধের ব্যাগটা অভির দিকে এগিয়ে দিল দিয়া। বিনা বাক্যব্যায়ে দিয়ার কাঁধের ব্যাগটা সামনের দিকে ঝুলিয়ে নিল, যাতে দিয়ার বসতে কষ্ট না হয়। বাইকের পেছনে উঠে বসে দুইজনার মাঝে মেকআপের বাক্সটা রেখে দিল। কাঁধে আলতো একটা চাটি মেরে ইশারায় জানিয়ে দিল যে যেতে প্রস্তুত। অভি ভেবেছিল যে বাক্সটা পেছনে রেখে দেবে, ওদের মাঝের ব্যাবধান থাকবে না, ভেবেছিল এই শীতের মনোরম প্রভাতে পেছন থেকে একটু নিবিড় ঘন হয়েই বসবে দিয়া। বাইক চালিয়ে বড় রাস্তা পর্যন্ত কারুর মুখে কোন কথা নেই, যেন কেউই কাউকে চেনে না। সত্যি কি অচেনা নাকি অচেনার ভান করছে দুইজনেই। অভির বাড়ি থেকে দিয়ার বাড়ি, মিনিট কুড়ির পথ। ভোরের বেলা রাস্তা একদম ফাঁকা তাই অভিও বেশ জোরেই বাইক চালিয়ে দিল। এবারে দিয়ার মনের মধ্যে কোন প্রশ্ন নেই, আবদার নেই যে “ধিরে চালাও”, কণ্ঠে সেই উত্তাপ নেই। অভি উত্তর হাতড়ে বেড়ায়, এক রাতে কি হয়েছে যে উচ্ছল উদ্দাম মেয়েটা একেবারে চুপ করে গেছে? সারাটা রাস্তা, অভির কাঁধে ডান হাত রেখে নিজেকে সামলে বসেছিল দিয়া, এর বেশি কাছে আসার চেষ্টা করেনি অথবা একটাও শব্দ করেনি।
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
পর্ব পাঁচ। রাগ অনুরাগ (#2-#27)
সারাটা রাস্তা দিয়ার মনে অসংখ্য প্রশ্নের ভিড় করে আসে। দ্বিধায় দোদুল্যমান হৃদয় কে কিছুতেই মেলাতে পারে না গত রাতের ঘটনার সাথে আজকে সকালের ঘটনা। এক রাতের মধ্যে এইভাবে ওর জীবনে এতটা ওঠানামা কোনদিন হয়নি। কি চাইছে অভিনন্দন, কি চাইছে অভির মা? কেন গতরাতে অভিকে শাসন করছিলেন আর কেনই বা সকালে দিয়ার সম্বন্ধে এত প্রশ্ন। দিয়াকে কি সত্যি ভালোবাসে অভি, যদি সত্যি ভালোবাসে তাহলে অভি কেন এত চুপচাপ আছে? একটা শব্দ না করে এতটা রাস্তা পার করে এলো শুধুমাত্র ওকে বাড়িতে পৌঁছে দেবে বলে? বাসে উঠিয়ে দিলেই সহজে দিয়া বাড়ি চলে আসতে পারতো। অভির মা যদি অভিকে বকাঝকা করে থাকেন, তাহলে সকালে কেন আবার বাড়িতে আসতে বলেছেন? প্রচুর প্রশ্ন, কিন্তু যার কাছে উত্তর সেতো কোন কথাই বলছে না।
দিয়ার পাড়ার গলিতে ঢোকার মুখে বাইকটা একটু ধিরে করে দেয় অভি। বাইক একটু আস্তে হতেই দিয়া বুকের ঢিপঢিপানি বেড়ে যায়, হটাত কি হল এইখানে বাইক থামাবে নাকি? অভি নিশ্চয় প্রশ্ন করবে, কি বলবে? যা ভাবছিল তাই হল।
বাইক গলির মুখে দাঁড় করিয়ে অভি প্রশ্ন করল, “একটা প্রশ্ন করতে পারি কি?”
দিয়া মাথা দোলায়, “হুম।”
অভি, “তুমি কি রাতে ঘুমাওনি?”
দিয়া চোখ বন্ধ করে নেয়, কি করে বলবে গতরাতে তোমার ওই অবস্থা দেখার পর সত্যি নিজেকে খুব বড় অপরাধি মনে হয়েছে। প্রশ্নের উত্তর ঘুড়িয়ে দিয়ে বলে, “হ্যাঁ একটু ঘুমিয়েছি তো।”
অভি ধিরে ধিরে বাইকটা গলির মধ্যে ঢুকাতে ঢুকাতে প্রশ্ন করে, “তোমার কি হয়েছে একটু বলবে?”
দিয়া চেঁচিয়ে ওঠে, না বলব না, তুমি আমার সামনে থেকে চলে যাও। না দিয়া এটা বলতে পারেনি, ছোট উত্তর দেয়, “কিছু হয়নি তো, কি হবে। ঠিক ভাবে ঘুম হয়নি তাই বড্ড ঘুম ঘুম পাচ্ছে।”
অভি ভাবলও এই ঠান্ডা ভাব কাটানোর জন্য একটু রসিকতার প্রয়োজন আছে, “কেন কেন, ছাড়পোকা কেটে ছিল নাকি?”
দিয়ার বুঝতে অসুবিধে হয়না যে অভি রসিকতা করেই কথাটা বলেছে। মনে মনে বলে, ছাড়পোকা কেন কাটতে যাবে, এত বড় একটা শয়তান আছে, তার বড় বড় দাঁত আছে সেই কেটেছে। আলতো মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয়, “আমি এত সকালে উঠি না তাই।”
সত্যি বাবা, মেয়েটা একদম চুপ মেরে গেছে, কিছুতেই মন গলাতে পারছে না। “ওহ আচ্ছা” বলে অভিও চুপ করে যায়।
দিয়ার বাড়ির অদুরে বাইক দাঁড় করায় অভি। এত সকালে ঠিক বাড়ির সামনে নামাতে একটু দ্বিধা বোধ করে। যদিও এখন রাস্তায় লোকজনের চলাচল শুরু হয়নি, তাও। দিয়া নেমে পড়ে বাইক থেকে, হাত বাড়িয়ে ব্যাগ চায়। অভি ব্যাগ খুলে হাতে দেওয়ার সময়ে দিয়ার হাতের সাথে অভির আঙ্গুল ছুঁয়ে যায়। অভি ব্যাগ ধরে থাকে, দিয়া হাত বাড়িয়ে অপেক্ষা করে ব্যাগ নেওয়ার জন্য। ব্যাগের স্ট্রাপ হাতে নিয়ে একটু টানাটানি। অভি কিছুতেই ব্যাগ ছাড়বে না।
দিয়া ব্যাগের স্ট্রাপ ধরে টেনে বলে, “ব্যাগ ছাড়ো আমি বাড়ি যাবো।” ওর কণ্ঠে এক বেদনার সুর।
অভি ব্যাগ না ছেড়ে প্রশ্ন করে, “সত্যি তোমার কিছু হয়নি?”
দিয়া এবারে রাগত সুরে অভির দিকে তাকিয়ে বলে, “না কিছু হয়নি। আমাকে যেতে দেবে নাকি ব্যাগ নিয়ে তুমি চলে যাবে?”
অভির খুব ইচ্ছে করছিল বলেই ফেলে, ব্যাগ কেন তোমায় নিয়ে যেতে চাই। কিন্তু দিয়ার থমথমে চেহারা দেখে সেই সাহস পেলো না। ব্যাগের স্ট্রাপ ছেড়ে দিয়ে একটু আহত হয়েই বলে, “সাবধানে থেকো।”
বড্ড কান্না পায় দিয়ার, চোখ জোড়া জ্বালা জ্বালা করে ওঠে। অভির সামনে বেশিক্ষন এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে পাগল হয়ে যাবে। শেষ কথাটা বলে ফেলাই উচিত। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে অভির দিকে দুইপা এগিয়ে বলে, “অভি, একটা কথা বলব?” অভি ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে দিয়ার দিকে, কি বলতে চায় মেয়েটা। দিয়া বলে, “তোমার পৃথিবী আর আমার পৃথিবী সম্পূর্ণ আলাদা, অভিনন্দন।”
বাজ পরে অভির বুকের মধ্যে, কি বলতে চলেছে? “অভিনন্দন” শব্দটা ভীষণ ভাবেই জোর দিয়ে বলে দিয়া। গত রাতে বন্ধুত্ত হল, এক উচ্ছলতা ওর ঘরের মধ্যেও ছিল। চোয়াল চেপে দিয়ার মুখের দিকে তাকায়, দুই চোখ ছলছল করছে। হটাত এমন উচ্ছল মেয়েটার চোখে জল দেখে অভি প্রমাদ গোনে। বাইক থেকে নেমে এসে দিয়ার কাঁধে হাত রেখে বলে, “যা বলার একটু খুলে বল, প্লিজ।”
অভির হাত কাঁধে পড়তেই, দিয়া মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে নেয়। ভীষণ ইচ্ছে করছে শেষ বারের মতন একবার দুই হাতে এই ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চাইতে। ওর উচ্ছলতার মাশুল এই ছেলেটা গত রাতে মায়ের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে দিয়েছে। সেই দৃশ্য মনে পড়তেই নিজেকে খুব বড় অপরাধি বলে মনে হয়। অস্পষ্ট গলায় বলে, “কি বলবো বলো, আমি ত অনেক কিছুই ভেবেছিলাম...” বলেই ফুঁপিয়ে ওঠে।
অভি বুঝতে পারলো এইবারে দিয়ার হৃদয়ের বেদনা। দিয়া যে ঠিক কি ভেবেছিল, সেটা অভি ভালো ভাবেই বোঝে এবং সেটা এখন বুঝেছে সেটা নয়, এই কথাটা অনেক আগেই বুঝে গিয়েছিল অভিনন্দন। সেটাই এড়াতে গত রাতে গাড়িতে আসার সময়ে বলেছিল ওর জীবনে শুধু মাত্র দিদিভাই আর বড়মা। দিয়া নিশ্চয় সেটাই ধরে বসে আছে। অভি যে রাতে বড়মায়ের সাথে কথা বলেছে এবং বড়মা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেটা দিয়ার না জানারই কথা। দিয়ার বাড়ির অদুরে দাঁড়িয়েছিল না হলে দিয়াকে জড়িয়ে ধরে বুকের মধ্যে লুকিয়ে নিত। দিয়ার থমথমে চেহারা দেখে অভির খুব কষ্ট হল, নিশ্চয় এই ভেবেই মেয়েটা সারাটা রাত ঘুমায়নি।
দিয়ার মাথার ওপর ঝুঁকে খুব নিচু গলায় বলে, “তোমায় কিচ্ছু বলতে হবে না, তুমি চোখ মোছ।”
দিয়া ভাবে ওকে প্রবোধ দেওয়ার জন্য অভি এই কথা বলছে, তাই মাথা নিচু করেই দাঁড়িয়ে থাকে। অভির দেহের আকর্ষণে ওকে যেন মাটির সাথে গেঁথে রেখে দিয়েছে, চাইলেও যেন নড়তে পারছে না সামনে থেকে। উলটো হাতে চোখ মুছে নেয়, কিন্তু কিছুতেই অভির দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারে না। ওর মাথায় অভির উষ্ণ শ্বাসের ঢেউ ওর বুকের মাঝে ভীষণ আন্দোলন ডেকে আনে।
মেয়েটা যে কিছুতেই মাথা উঁচু করছে না, কি মুশকিল। অভি এপাশ ওপাশ তাকিয়ে দিয়ার মাথায় আলতো নাক ছুঁইয়ে বলে, “এত সকালে এই ভাবে কেউ যদি আমাদের দেখতে পায় তাহলে সেটা খারাপ দেখাবে দিয়া।”
মরন দশা আমার, দিয়া ভাবে। দিয়ার বুক ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে আর অভি এখন পরে আছে কে কি ভাববে না ভাববে সেই চিন্তায়। শেষ বারের জন্য ঝাঁঝিয়ে উঠতে মন করে, বলে ফেলে, কেউ দেখুক না দেখুক সেটা তে তোমার খুব চিন্তা তাই না। না দিয়া সেই কথা মুখে আনতে পারেনি, শুধু মনে হয়েছে ওর গায়ের কোট, ওর হাসির আওয়াজ আর অভির ওইভাবে মাথা হেট করে হাঁটু গেড়ে বসে থাকাটা।
দিয়ার চোখে জল মানায় না একদম, সবসময়ে প্রজাপতির মতন উচ্ছল উদ্দাম দুষ্টুমি করে বেড়াবে সেটাই দিয়ার আসল পরিচয়। মেয়েটা এখন একদম চুপ। এইভাবে শুকনো মুখ করে বসে থাকা দিয়ার মানায় না। মনের কথাটা এই সকালে বলে ফেলাই উচিত না হলে দিয়ার মন কিছুতেই হাল্কা হবে না। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে দিয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বলে, “আমার দিয়ার চোখে জল মানায় না।”
দিয়া প্রথমে বিশ্বাস করতে পারে না অভি ওর কানে কানে কি বলল। ঠিক শুনেছে, “আমার দিয়া”। ধুকধুক...ধুকধুক... হৃদয়ের স্পন্দন এক ধাক্কায় বেড়ে ওঠে।
অভি না থেমে বলে, “আমার দিয়া শুধু হাসবে আর নেচে বেড়াবে।”
দিয়া এবারে কান্না ভুলে যায়। ভীষণ দুষ্টু এই ছেলেটা। মাথা তুলে অভির দিকে তাকাতে যাবে কি অভির থুতনির মধ্যে দিয়ার মাথা ধাক্কা খায়। উফফফফ...
অভি উফফফ করে ওঠে, “কি হল, এইভাবে মারবে নাকি?”
দিয়া ভুরু কুঁচকে অভির চোখের দিকে তাকিয়ে। সত্যি কি বলতে চাইছে সেটা বুঝতে চেষ্টা করে। অভির চোখ জোড়া ভীষণ চকচক করছে, কেমন যেন এক মুচকি দুষ্টুমির হাসি ওই ঠোঁটে মাখা। সত্যি ঠিক দেখছে ত অভিকে? না ঠিক দেখছে। কানে ঠিক শুনেছে, “আমার দিয়া” কি বলতে চাইছে, একবার স্পষ্ট করেই বলে ফেলুক। অভির চোখের হাসি দেখে দিয়া খুশিতে মাতোয়ারা হয়ে যায়।
চোখের পাতায় জল, অনুরাগের হাসি ঠোঁটের কোনায় মাখিয়ে অভির বুকের ওপর দুম করে একটা কিল মেরে বলে, “শয়তান ছেলে, এবারে সত্যি মারবো কিন্তু।” বলে বুকের ওপর মাথা ঠেকিয়ে দেয়।
পকেটে রাখা ফোনটা অনেক্ষন ধরেই বেজে চলেছে। ফোন বের করে দেখল যে বড়মায়ের বেশ কয়েকটা মিস কল। এতক্ষন ফোনের দিকে খেয়াল করেনি। বাড়ি যাওয়ার তাড়াও আছে, সেই সাথে দিয়াকে ছেড়ে যেতেও ভালো লাগছে না। ভালোবাসার ছোট আভাস, প্রথম পদক্ষেপ, এইভাবে দুম করে সাত সকালে বেড়িয়ে যাবে সেটা কি আর আগে থেকে ভেবেছিল অভিনন্দন? ফোন সাইলেন্ট করে আবার পকেটের মধ্যে ঢুকিয়ে দিল অভি। বড়মা জানে যে দিয়াকে ছাড়তে এসেছে, সুতরাং কয়েক মিনিট অপেক্ষা করতে পারে।
রাস্তার মাঝখানে না হলে অভি তৎক্ষণাৎ দিয়াকে জড়িয়ে কোলে তুলে নিত। দুই হাতে পিষে ধরত প্রথম ভালোবাসার ললনাকে। চুমুতে চুমুতে দিয়ার মিষ্টি ঠোঁট জোড়া ভরিয়ে তুলতো। হাত দুটো ভীষণ নিশপিশ করছিল বটে কিন্তু বুকের উচ্ছলতা সামলে বাইকে উঠে বলে, “বিকেলে মার খেতে আসবো।”
দিয়া নেচে ওঠে, বলে কি ছেলেটা, সত্যি আসবে? কিছুই যেন বিশ্বাস হচ্ছে না। শীতের ভোর নয়, যেন বসন্ত কাল এসে গেছে। ভীষণ ইচ্ছে করছে কষে ছেলেটার গালে একটা চড় মারে আর তারপর দুই হাতে গলা জড়িয়ে ধরে সেই জায়গায় নরম ঠোঁট চেপে ধরে। শয়তান ছেলে, প্রথমে হাসাবে, তারপর কাঁদাবে, তারপর আবার হাসাবে, তারপর কি যে করবে কে জানে। ব্যাগ দুটো হাতে তুলে মিষ্টি হেসে বলে, “বিকেলে না এলে একদম গলা টিপে দেবো কিন্তু।”
অভি বাইক স্টারট করে মাথা নিচু করে বলে, “জো হুকুম মহারানী।” বলেই বুকের বাঁ দিকে একটা কিল মারে।
মাটিতে পা নেই, দিয়া ব্যাগ হাতে একটু নেচে ওঠে। নাক কুঁচকে, ঠোঁট কুঁচকে হাওয়া চুমু ছুঁড়ে দেয় অভির দিকে। ভুরু নাচিয়ে ইশারা করে, “এবারে যাও।”
অভি দিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে, “তুমি আগে বাড়িতে ঢোক তারপর যাবো।”
দিয়া জোরে মাথা নাড়িয়ে বলে, “না, আগে তুমি আসো তারপর আমি যাবো।”
আবার বড়মায়ের ফোন, পকেটের মধ্যে ক্রমাগত ভাইব্রেট করে চলেছে। অগত্যা অভি কি করে, হেলমেট চাপিয়ে বাইক চালিয়ে দেয়। তিরিশ মিনিটের পথ, পোনেরো মিনিটে পার করে দেয়। শেষ পর্যন্ত মনের কথাটা বলে ফেলে বেশ হাল্কা মনে হচ্ছে, মনেই হচ্ছে না যে বাইক চালাচ্ছে, মনে হচ্ছে যেন এক পক্ষীরাজ ঘোড়ার পিঠে চেপে নীল আকাশের বুকে উড়ে চলেছে। কি ভীষণ দুষ্টু মেয়েটা, গতকাল রাতে যেভাবে বুকের ওপরে মাথা রেখে একটু খানি শুয়েছিল, তাতে অভির বুকের স্পন্দন যে কতজোরে ধুকধুক করছিল সেটা বোঝানোর উপায় নেই। মনে হয়েছিল অন্ধকার গাড়িতে দিয়ার ঠোঁটে একটা মিষ্টি চুম্বন এঁকে দেয়।
দিয়া, দময়ন্তী ঘোষ, কবে প্রথম দেখা হয়েছিল মেয়েটার সাথে? কবে সঠিক ভাবে মাথায় এসেছিল? প্রায় এক বছর আগের কথা, ঝন্টুর বিয়েতে প্রথম দেখা। বরের গাড়ি বিয়ে বাড়ির সামনে থামতেই, গাড়ির দরজা খুলে প্রথমে নেমে এসেছিল অভি। ঝন্টু তখন গাড়ির মধ্যে বসে। বর এসেছে, বর এসেছে, বিয়ে বাড়িতে ভীষণ শোরগোল বেধে যায়। বাড়ির সামনের লোহার গেট আটকে লেখার বোনেরা আর বান্ধবীরা, দশ হাজার না দিলে বরকে ঢুকতে দেবে না। মেয়েদের দলের মধ্যে সব থেকে সামনে ছিল দিয়া, দুই হাতে গেটের দুই পাল্লা ধরে অভির সামনে দাঁড়িয়ে। অভিও কম যায়না, দশ হাজার কেন চাই? আমাদের ছেলের দাম কি শুধু মাত্র দশ হাজার নাকি? সেই শুনে দিয়া বলেছিল, না, ভাবলাম এত দুর থেকে এসেছেন তাই শুধু মাত্র দশ হাজারে ছেড়ে দেই। অভি হেসে ফেলে, এতদুর থেকে এসেছি বলেই তো কোন টাকা পয়সা আনিনি। এখানে ভাবলাম ফ্রিতে খানা পিনা পাবো, মজা করব আর চলে যাবো। ওর এই কথা শুনে সবাই কি উত্তর দেবে ভেবে পায়না। দিয়া হারতে নারাজ, দশ হাজার দিলে তবেই গেট খুলবে। অভিও সমান তালে বলে, দশ হাজার পয়সা দিতে পারে এর বেশি নয়। অভি, পাশের একজনকে ডেকে একটা চেয়ার আনতে বলে, সেই চেয়ারে গেটের সামনে বসে পরে। ঝন্টু তখন গাড়ির ভেতর। ওদিকে মেয়েদের জটলার পেছনে লেখার মা বরন কুলো নিয়ে প্রস্তুত, সময় পেরিয়ে যাচ্ছে, বরকে বরন করে আনতে হবে। অভি সেটাই চাইছিল, যতক্ষণ না বড়রা মধস্ততা করবে ততক্ষন এরা কিছুতেই গেট ছাড়বে না। দেরি দেখে শেষ পর্যন্ত পাপা অভিকে বলেন যে এত জেদ না করে যা চাইছে দিয়ে দিতে। পাপার আদেশ অমান্য করতে পারে না, অগত্যা অভি পকেট থেকে দুই হাজার টাকা বের করে দিয়ে দেয়। কিন্তু দিয়া আর বাকি মেয়েরা সেটা কিছুতেই নেবে না, দশ হাজার টাকা না দিলে কিছুতেই গেট ছাড়বে না। অভি বলল এর বেশি এক পয়সা নেই, ওর কাজ ছিল বর আনার, বর এনেছে, এবারে মেয়ের বাড়ির লোকেরা ঠিক করুক বিয়ে করাবে কি করাতে চায় না। ওইদিকে লেখার বাবা এসে শেষ পর্যন্ত মেয়েদের জটলাকে শান্ত করান। সেই প্রথম দেখা দময়ন্তীর সাথে। ভারী সুন্দর সাজিয়েছিল নিজের প্রানের বান্ধবীকে। তারপর আর সেভাবে দিয়ার সাথে পরিচয় হয়নি অভির। ভাগ্নে তিতাসের শরীর খারাপ করল, সেই রাতেই গাড়ি করে বড়দিকে নিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছিল অভি। বৌভাতের দিনে কাজের মধ্যে ব্যাস্ত থাকায় আর ঠিক ভাবে দেখা হয়নি দিয়ার সাথে। তারপর দময়ন্তী নামটা মুছে গিয়েছিল ওর মাথা থেকে। দিদিভাইয়ের বিয়েতে, লেখা যদি দিয়াকে না ডাকতো তাহলে চিরতরে মুছে যেত দিয়া।
বাড়ির সামনে বাইক রাখতেই দিয়ার ফোন আসে, “পৌঁছেছ?”
অভি হেসে বলে, “হ্যাঁ রে বাবা, এই পৌছালাম, এখন বাড়িতে ঢুকতে পারিনি।”
দিয়া প্রশ্ন করে, “বিকেলে কখন আসবে?” দিয়ার কণ্ঠে সেই পুরানো উতফুল্ল, পুরানো চঞ্চলতা শুনে নেচে ওঠে অভির হৃদয়।
অভি মনে মনে একটু খানি সময় হিসেব করে উত্তর দেয়, “এই পাঁচ’টা নাগাদ পৌঁছে যাবো।”
দিয়া যেন হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে, “আচ্ছা আমরা কোথায় যাবো?”
অভি হেসে ফেলে, “তোর প্রেমের চোরাবালিতে যাবো...”
দিয়া ফোনের মধ্যে চুমু ছুঁড়ে দিয়ে বলে, “তাহলে তাড়াতাড়ি আসিস ডুবে মরতে...”
তোর প্রেমের চোরাবালিতে, হারাতেও নেই ভয়,
চাই না কেউ আমাকে টেনে তুলুক, বিচ্ছিন্ন করে দিক দুটি প্রান,
তোর নীলচে চোখের চোরাবালিতে ডুবে মরব বলে এসেছি তোর কূলে,
এই মরনেও সুখ, তোর বুকে জমা চোরাবালিতে।।
Like Reply
অস্থির। দাদা চালিয়ে যান
Like Reply
আরে লাভলি লাভলি, ফাটাফাটি, সেরা, পুরো জমে ক্ষীর, শো হাউসফুল, দুটো সিটি মেরে দিলাম  banana happy
দাদা আপনার উপর ভরসা করছি পিনুদা যতটা লিখেছেন আপনি ততখানি পোষ্ট করবেন। তারপর সম্পূর্ণ করার দায়িত্ব কলির কেষ্টকে দেওয়া হবে  Smile Shy
[+] 4 users Like Mr Fantastic's post
Like Reply
পর্ব পাঁচ। রাগ অনুরাগ (#3-#28)
বাড়িতে পা রাখতেই বড়মায়ের সামনা সামনি পড়ে যায়, “কি রে এতবার ফোন করি ফোন তুলিস না কেন?”
অভি মাথা চুলকে অপরাধীর মতন এক হাসি দিয়ে বলে, “না, এই বাইক চালাচ্ছিলাম তাই উঠাতে পারিনি।”
দীপাদেবী বলেন যে, কখন গাড়ি নিয়ে আসবে সেটা জানার জন্য মহেশ দুই বার ফোন করেছিল। ওইদিকে দিদিভাইও নাকি ফোন করেছিল জানার জন্য যে বড়দি এয়ারপোরট কখন পৌঁছাবে। দিদিভাইও আসতে চায় এয়ারপোরটে, বড়দিকে ছাড়তে। অভি সব কথা শুনে, মহেশকে ফোন করে বলে দিল আট’টার মধ্যে গাড়ি নিয়ে আসতে। অভি জানে বড়দির রিতিমত বের হতে দেরি হবে। মাকে জড়িয়ে খানিকক্ষণ কান্নাকাটি করবে, তারপর দিদিভাইকে জড়িয়ে... না দিদিভাই এইবারে আর ওদের সাথে এয়ারপোরট যাচ্ছে না। দিদিভাই আলাদা আসবে এয়ারপোরটে, মধ্যমগ্রাম থেকে নয়, আসবে সোনারপুর থেকে সঙ্গে শিতাভ্র থাকবে।
ম্লান হেসে নিজের ঘরে ঢুকে বিছানায় সটান শুয়ে পড়ল অভি। দিয়া কি এই বিছানায় শুয়েছিল? সকালে নিজের ঘরের দরজা খুলে কিন্তু অন্য দৃশ্য দেখেছিল, দেখেছিল দিয়া ওর পড়ার টেবিলের ওপরে মাথা রেখে চুপচাপ শুয়ে। মেয়েটাকে এই ভাবে কাঁদানো একদম উচিত হয়নি ওর। অভি কি ইচ্ছে করে কাঁদিয়েছে নাকি? দিয়াই ত ওর পেছনে ছাড়ে না, না এক হাতে তালি বাজে না অভি। সেই তালে অভিও কিছুটা সাথ দিয়েছিল তাই দিয়ার বুকের মধ্যে প্রেমের আগুনে হাওয়া লেগেছিল। অভি যদি শুরুর থেকেই দুরে থাকতো তাহলে দিয়ার সাথে কিছুই হত না। তবে এইবারে উচ্ছল দিয়ার চোখের টানে ভীষণ ভাবেই বাঁধা পড়ে গিয়েছিল অভিনন্দন।
একটু খানি চোখ লেগেছে কি আবার ফোন বেজে উঠল, আবার দিয়া, “কি করছ?”
অভি অল্প হেসে উত্তর দেয়, “আরে জাস্ট একটু শুয়েছি। কি হয়ছে বল, এই তো দশ মিনিট আগেই ফোন করলে।”
দিয়ার গলায় প্রচন্ড উচ্ছলতা, “না মানে কিছু না, খুব এক্সাইটেড লাগছে জানো।” ফিসফিস করে বলে, “ফারস্ট টাইম তো তাই।”
অভি হসে ফেলে, “হ্যাঁ, এমন বলছ যেন আমি ছোট বেলা থেকে মেয়ে চড়িয়ে বেড়িয়েছি।”
দিয়া মুখ গোমড়া করে উত্তর দেয়, “এমন কেন বলছ গো।”
অভি একটু হেসে বলে, “না কিছু না, এখন ফোন রাখো, আমি বের হবো।”
দিয়া প্রশ্ন করে, “কোথায় বেরোবে?”
অভি, “বড়দিকে নিয়ে এয়ারপোরট যাবো।”
দিয়া, “ওহ হ্যাঁ, একদম ভুলে গেছিলাম... ... আচ্ছা তাহলে এখন রাখছি।”
ফোন রেখে অভি মনে মনে ভাবে, এক সময়ে লেখা ঠিক বলেছিল, প্রেম করলে বারেবারে কানে ফোন ধরে রাখতে হয়। মনে মনে হেসে ফেলে অভি, আন লিমিটেড প্লান আছে তাই বাঁচোয়া, না হলে ফোনের বিল ভরতে ভরতে কপদরকহীন হয়ে যেত। ল্যাপটপ খুলে কয়েকটা ইমেল দেখে নিল। বেশ কয়েকটা চাকরির ওয়েবসাইটে নিজের রিসিউম আপলোড করেছে। বেশির ভাগ ডাক কোলকাতার বাইরে থেকেই আসে, কোলকাতার যা আসে সেগুলো সেলসের জন্য। অভি একটু চুপচাপ থাকতে ভালোবাসে, নিজের কাজেই মগ্ন থাকতে ভালোবাসে, অহেতুক কথা বলা একদম ভালো লাগে না। লোকের মাথা মুড়িয়ে জিনিস বিক্রি করার ক্ষমতা অভির নেই।
দুপুরে, বড়দিকে এয়ারপোরটে ছেড়ে আসার পর, স্নান করে খেয়ে দেয়ে একটু বিছানায় টানটান হয়ে শুয়েছিল। দিদিভাই চলে যাওয়ার পর বাড়িটা সত্যি একদম ফাঁকা হয়ে গেছে। বাড়িতে ঢোকার সময়ে বড়মার চোখে একটু জল চলে এসেছিল। অভির যে খারাপ লাগেনি সেটা নয়, এতদিন এই বাড়িতে একটা হইচই হত, দিদিভাই যাওয়ার পরে সেখানে নেমে আসে নিস্তব্দতা। এমনিতে পাপার চেহারা দেখে বোঝার উপায় নেই তাঁর মনের মধ্যে কি চলছে, কিন্তু গাড়িতে আসার সময়ে সামনের সিটে বসে, সবার চোখের আড়ালে একবার চোখের কোনা মুছেছিলেন, অভি সেটা লক্ষ্য করেছিল। দিদিভাই ওকে বলেছিল বিকেলে একবার সোনারপুর আসতে, এমনকি শিতাভ্রও ওদের আমন্ত্রন জানিয়েছিল বিকেলের দিকে সোনারপুর চলে আসতে। কিন্তু বড়মায়ের সাবধান বাণী অভির মনে পড়ে যায়।
লেপটা মেলে ধরেতেই চোখ আটকে যায় একটা জায়গায়। এই দাগটা কি আগে ছিল এখানে? আঙ্গুল দিয়ে আঁচড় দিতেই কেমন যেন খসখসে মনে হল জায়গাটা। অভি হস্তমৈথুন করে মাঝে মাঝে, ওর ল্যাপটপে বিদেশী স্বদেশী মেয়েদের প্রচুর নগ্ন ছবি আছে, এমনকি প্রচুর মুভি ক্লিপ ও আছে। কিন্তু এইভাবে অসতর্ক হয়ে এদিকে ওদিকে ছড়ায় না। নাকের কাছে নিয়ে একটু শুঁকে দেখে, একটা কেমন সোঁদা মিষ্টি ঝাঁঝালো গন্ধ এখন আছে ওই জায়গায়। চিরিক করে বিজলী বাতি জ্বলে ওঠে মাথার মধ্যে, দুষ্টু দিয়ার কান্ড এটা। ফেরোমন যোগাড় করতে লেখার প্যান্টি চুরি করেছিল ঝন্টুর বিয়ের সময়ে। সেই প্যান্টির কাপড়ে, ঠিক যোনির জায়গাটা ঠিক এই রকম ছিল, মনে পড়তেই অভির রক্তে মাতন লাগে। ঠিক কি করছিল দিয়া? সত্যি মেয়েটার গ্রে সাইড ভীষণ কামঘন কল্পনায় ভর্তি।
মোবাইল খুলে বিয়েতে তোলা দিয়ার কিছু ছবি দেখে। মিষ্টি মাদক মোহিনী হাসি সবসময়ে যেন ওর ঠোঁটে লেগেই আছে। নীলচে চোখ জোড়া মোবাইল ফুঁড়ে ওর দিকেই তাকিয়ে মিটিমিটি করে হাসছে। ফোন করবে নাকি একবার? নাহ, ফোনের দরকার নেই। অভির ধুসর মস্তিস্কে লাস্যময়ী দিয়ার রঙিন ছবি ভেসে ওঠে। কল্পনায় দিয়ার নগ্ন কমনীয় দেহলতা এঁকে নিতেই অভির আঙ্গুল নিশপিশ করে ওঠে। স্তন জোড়া সামনের দিকে বেশ উঁচিয়ে, দুই স্তনের মাঝের গভীর গিরিখাতের দৃশ্য মনে পড়তেই বারমুডার সামনের দিকটা মাথা উঁচু করে দেয়। লাল টপের নিচে, স্তনের ওপরে ব্রার দাগ গতকাল রাত্রে গাড়িতে স্পষ্ট দেখতে পেয়েছিল। টপটা যেমন ইতর ভাবে দিয়ার শরীরের সাথে মিশে গিয়েছিল তাতে গোল মাংসল পেটের আকার খুব সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছিল। জিন্স পড়েছিল বলে নিতম্বের আকার অবয়াব আর এঁকে নিতে হয়নি, বেশ ভালো ভাবেই বোঝা গিয়েছিল যে দিয়ার সুগোল নিতম্ব জোড়ার আয়তন। আর, ঠিক কদলী কান্ডের মতন পুরুষ্টু ঊরু জোড়া ভীষণ ভাবেই মাতাল করে তুলেছিল অভিকে। লাস্যময়ী তন্বী তরুণী মাদক চাহনি নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে, ঠোঁটের কোনায় এক চিলতে কামুকি আহবানের হাসিতে মাখা। আঙ্গুল নাড়িয়ে ওকে কাছে ডাকছে।
অভি এক নির্জন সমুদ্র তীরে বালির ওপরে বসে, সামনে দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন আর আগুনের সেই লেলিহান শিখায় কামাগ্নিতে জ্বলে পুড়ে ছারখার দিয়ার লাস্যময়ী অতীব কামুকী দেহলতা। লাস্যময়ী ললনার পরনে একটা ছোট ব্রার মতন কাঁচুলি, কোমরে বাঁধা একটা পাতলা ফিনফিনে কাপড়, যার নিচে কিছুই পরা নেই। সেই পাতলা কাপড়ের আড়ালে, দুই মসৃণ সুগোল পুরুষ্টু ঊরু জোড়ার মাঝে একটা ফোলা নরম ত্রিভুজের দৃশ্য, সেই ত্রিভুজ আকারের অঙ্গের চারপাশে সুন্দর করে ছাঁটা কালো কুঞ্চিত কেশরাশি। দিয়া ওর সামনে সারা অঙ্গ দুলিয়ে ভীষণ এক লাস্যময়ী নাচ নেচে চলেছে। অভির দেহের কামনার আগুন থেকে থেকে বেড়ে উঠছে, কিন্তু দিয়া কিছুতেই আর ধরা দেয় না। ধিরে ধিরে কোমর নাচিয়ে পিঠের পেছনে হাত নিয়ে গিয়ে ব্রা খুলে ফেলে। উফফ করে ওঠে অভি, ছলকে বেড়িয়ে আসে দিয়ার দুই সুগোল নিটোল স্তন। স্তনের বোঁটা জোড়া ভীষণ ভাবেই ফুলে রয়েছে, উঁচিয়ে রয়েছে অভির দিকে। অভি আর কিছুই ভাবতে পারছে না... প্যান্টের ভেতরে হাত ঢুকিয়ে লিঙ্গটাকে মুঠোর মধ্যে ধরে নাড়াতে শুরু করে দেয়। দিয়ার হাত স্তনের ওপর, নিজের স্তন নিয়ে খেলতে খেলতে হাঁটু গেড়ে অভির সামনে চলে আসে। অভির পায়ের মাঝে ঝুঁকে পড়ে দিয়া, মাথা নামিয়ে আনে কঠিন পুরুষাঙ্গের ওপর। লিঙ্গের লাল ডগাতে গোলাপি জিব দিয়ে চেটে দেয়। নাআহহহহহহহ... দিয়া... লিঙ্গের ওপর হাতের গতি বাড়িয়ে দেয় অভি। দিয়ার লালচে ঠোঁট গোল হয়ে ওর লিঙ্গের মাথাটাকে চুম্বুন করতে শুরু করে দিয়েছে। ইসসস... কি যে করছে না মেয়েটা। ধিরে ধিরে অভির সম্পূর্ণ লিঙ্গটা হারিয়ে যায় দিয়ার মুখের মধ্যে। পাছাটা পেছনের দিকে ভীষণ ভাবে উঁচিয়ে, অভির দুই পায়ের মাঝে মাথা নিচু করে মুখ মেহন করতে শুরু করে অভির প্রানের প্রেয়সী। নাহহহহ... ইসসস মেয়েটা সত্যি ভীষণ কামুকী, কেমন ভাবে ওর লিঙ্গটাকে চুষছে। ওর পুরুষালী কঠিন লোমশ ঊরুর ওপর হাতের পাতা মেলে ভার সামলে কামোন্মাদ রমণী অভির লিঙ্গ নিয়ে মেতে ওঠে মুখ মেহনে। দিয়া দিয়া দিয়া... সারা শরীর ঘামিয়ে যায় অভির। অভি এক হাত দিয়ে দিয়ার মাথা নিজের লিঙ্গের ওপর চেপে ধরে, অন্য হাত দিয়ে পেছন দিকে উঁচিয়ে থাকা সুগোল কোমল নিতম্বের ওপর আলতো চাঁটি মারতে শুরু করে দেয়। থলথলে নরম পাছা জোড়া, অভির থাবড়ে দুলে দুলে ওঠে। অভি উন্মাদ হয়ে ওঠে এই ধুসর রঙিন কল্পনায়। এতদিন ল্যাপটপে দেখা বিদেশী মেয়েদের কথা ভেবেছে, এবারে ওর স্বপ্নের নারী ওর সামনে, ওর হাতের নাগালে। উফফফ... পারছে না অভি, বীর্য লিঙ্গের মাথায় এসে গেছে, ইসসসস... মেয়েটা শুধু স্বপ্নতেই এই খেলা দেখিয়ে গেল।
এলিয়ে পড়ে বিছানায়। সারা গায়ে ঘামের বিন্দু। বারমুডা ভীষণ ভাবেই নোংরা হয়ে গেছে। নিজের মনেই প্রশ্ন করে, দিয়া কি ভারজিন? দিয়া উচ্ছল উদ্দাম, পাহাড়ি স্রোতস্বিনীর মতন এক কন্যে, দিয়ার কূলে যে একাধিক প্রেমিকের কুঠির বসতি করবে না সেটা ভাবা একটু ভুল। কলেজে পড়ার সময়ে প্রেম হতেই পারে এবং তার সাথে কোন এক সময়ে শারীরিক মিলন হতেই পারে। অভির কারুর সাথে শারীরিক মিলন হয়নি বলে যে দিয়ার জীবনে হবে না সেটা ভাবা একটু ভুল। যদিও তাতে অভির কিছু যায় আসে না, আজকাল বিয়ের আগে সঙ্গমের ব্যাপারে লোকজনের মানসিকতা অনেক খোলা মেলা হয়ে গেছে। সতীত্ব এমন একটা শব্দ যেটা অভিধানের অনুসারে শুধু মাত্র শারীরিক দিকেই বিচার করে। অভির ধারনা, সতীত্ব সেখানে, যেখানে মনের মিল, যেখানে হৃদয়ের মিলন হয়। শারীরিক মিলন তো অনেক সময়ে, ঝোঁকের বশেও ঘটে যায়, কখন শারীরিক টানেও ঘটে যায়। শারীরিক মিলন শুধু মাত্র শারীরিক খিধেটাকে মেটানো, যেমন পেটের খিধে, তেমনি শরীরের একটা খিধে হয়। অভিও তো, ল্যাপটপে বসে, বিদেশী মেয়েদের নগ্ন ছবি দেখে হস্তমৈথুন করে। তবে হ্যাঁ, ঝোঁকের বশে কোনদিন পা পেছলায়নি অভি। অভি আবেগ প্রবন হতে পারে তবে বেশ সচেতন, মদ খেয়ে মাতলামি করেও কোন মেয়ের সাথে বিছানায় যায়নি। তবে এইবারে দময়ন্তীকে শুধু মাত্র নিজের করেই রাখতে চায় অভিনন্দন।
সেই কলেজে পড়ার সময়ে খুব ঝোঁকের বশে একবার ঝন্টুর সাথে কালিঘাটে গিয়েছিল। প্রথম বার সম্পূর্ণ উলঙ্গ মেয়েকে দেখে ভীষণ ভাবেই ঘাবড়ে গিয়েছিল। প্যান্টের চেন আটকে গিয়েছিল, কিছুতেই আর খুলতে পারে না। ঝন্টু ওর চেইন খুলতে গিয়ে, লিঙ্গতে চেন আটকে যায়, সে এক কান্ড বটে। নিজের মনেই হেসে ফেলে অভি, না, সেবারে অনেক গালাগালি দিয়েছিল ঝন্টু, ওর দ্বারা কিছুই হবে না।
এমন সময়ে ফোন বেজে উঠল, দিদিভাইয়ের ফোন, “কি করছিস রে?”
অভি তখন দিয়ার স্বপ্নে মশগুল ছিল, সেই ঘোর কাটিয়ে উত্তর দেয়, “এই একটু শুয়েছিলাম... তুই কি করছিস?”
মনামি উত্তর দেয়, “এই তো একটু বসে আছি।”
অভি, “একা একা নাকি রে?”
মনামি, “হ্যাঁ রে একা একা, শিতাভ্র একটু বেড়িয়েছে।” একটু অভিমান করে জিজ্ঞেস করে, “তুই আমাদের সাথে এলি না কেন?”
অভি হেসে উত্তর দেয়, “কি করব এসে, তুই থাকবি তোর শিতাভ্রকে নিয়ে আর আমি কি একা একা কলা খেতাম নাকি?”
মনামি একটু রেগে উত্তর দেয়, “ধ্যাত, এদের বাড়িতে কত লোকজন রে বাবা। সেই যে কখন বেড়িয়েছে এখন দেখা নেই।”
অভি হাসে, “ফোন কর ওকে।”
মনামি, “করেছি তো, বলল এই আসছে, সেটাও প্রায় এক ঘন্টা আগে। গেল যে কোথায়?”
অভি হেসে বলে, “পুরানো গারলফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে গেছে আবার কি।”
মনামি রেগে উত্তর দেয়, “একদম বাজে কথা বলবি না, ওর কোন গারলফ্রেন্ড নেই।”
অভি, “আচ্ছাআআ... তুই যেন সব জেনে বসে আছিস?”
মনামি, “হ্যাঁ জানি, ও আমাকে সব বলেছে।”
অভি রসিকতা করে বলে, “হ্যাঁ হ্যাঁ এক রাতে তুই সব জেনে বুঝে গেছিস।”
মনামি একটু আহত হয়ে বলে, “যাঃ ফোন রাখ...”
অভি হেসে দিদিভাইকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, “আরে খেপে যাচ্ছিস কেন।”
অভি কিছুক্ষন ভাবে, আজ পর্যন্ত ওর জীবনে যা যা ঘটেছে, সবকিছুই দিদিভাইকে জানিয়েছে। দিয়ার ব্যাপারে কি দিদিভাইকে জানাবে? জানানো উচিত, দিদিভাইয়ের শুধু মাত্র বিয়ে হয়েছে, হ্যাঁ একটু বদলে গেছে তাই বলে কি দিদিভাই নেই? একশো বার দিদিভাই ওর সেই দিদিভাই আছে।
অভি গলা নামিয়ে ফিসফিস করে বলে, “এই দিদিভাই, একটা কথা আছে...”
মনামি উতসুক হয়ে প্রশ্ন করে, “কি রে?”
অভি আমতা আমতা করে বলে, “মস্তিস্কের মধ্যে একজনের প্রবেশ ঘটিয়াছে...”
মনামি সেই শুনে উৎফুল্ল হয়ে বলে, “কে কে?... আমি যাকে ভাবছি সেই হবে... তাও নাম বল।”
অভি, “তুই আবার কাকে ভেবে রেখেছিস?”
মনামি হেসে বলে, “জানি জানি সে কে। তুই কি ভেবেছিস আমি আমার ভাইকে চিনিনা নাকি? কত ডুবে ডুবে জল খাস বল। প্রপোজ করলি কবে?”
অভি লাজুক হাসে, “যা বাবা, এখন সেই ভাবে প্রপোজ করে উঠতে পারিনি।”
মনামি হেসে ফেলে, “যা বাবা, আমি জানতাম আমার ভাইয়ের দ্বারা কিছু হবে না। তুই না খুব মুখচোরা জানিস।”
অভি হেসে বলে, “তোর ভাই তো, এর বেশি আর কি হবে।” একটু থেমে বলে, “জানিস মা জেনে ফেলেছে।”
মনামি আঁতকে ওঠে, “বলিস কি? মা জানলো কি করে?”
অভি, “গতকাল রাত্রে ধরা পরে গেছি আবার কি।”
মনামি খিলখিল করে হেসে ফেলে, “মা কি বলল?”
অভি, “মা আর কি বলবে, একটু বকাঝকা করল তারপর মেনে গেলো।”
মনামি হেসে ফেলে, “মা বুঝে গেছে তোর দ্বারা সহজে কিছু হবে না তাই নিজেই নিজের বৌমা খুঁজে নিয়েছে আর কি।”
অভি, “ধ্যাত, কাল রাতে আমার যা অবস্থা হয়েছিল সেটা কি করে বুঝবি।”
মনামি হিহি করে হেসে ফেলে, “বেশ হয়েছে, বেশ হয়েছে। আমাকে আগে বলতে পারতিস, তাহলে আমি ব্যাবস্থা করে দিতাম।”
অভি হেসে বলে, “আমি নিজেই ঠিক ছিলাম না।”
মনামি, “শয়তান ছেলে, তোর চোখ সারাক্ষন দিয়া দিয়া করছিল আর বলে কি না ঠিক ছিল না।”
অভি ভীষণ লজ্জা পেয়ে যায়, “না রে সত্যি বলছি, আমি নিজেই ঠিক ছিলাম না।”
মনামি হেসে বলে, “আচ্ছা বেশ মেনে নিলাম। যাই হোক, আমি দিল্লী যাওয়ার আগে তোদের সাথে একদিন দেখা করতে চাই।”
অভি আঁতকে ওঠে, “কি বলছিস রে? এখন পর্যন্ত কিছুই ঠিক হল না, তার আগেই দেখা করতে চাস?”
মনামি, “যা বাবা, আমার ভাইটাকে কার হাতে তুলে দিয়ে যাচ্ছি তাকে একবার দেখে যাবো না?”
অভি হাসে, “আচ্ছা দেখছি।”
মনামি ফোনের মধ্যে একটা স্নেহের চুমু দিয়ে বলে, “তুই না... উম্মম আমার ভীষণ শয়তান ভাই।”
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
পর্ব পাঁচ। রাগ অনুরাগ (#4-#29)
ঘুম আর হল না, প্রথমে এলো দিয়ার স্বপ্ন তারপর দিদিভাইয়ের ফোন। সাড়ে চারটে বাজে, পাঁচ’টার মধ্যে বারাসাত পৌঁছাবে কথা দিয়েছিল। দিয়াকে ফোনে জানিয়ে দেওয়া দরকার। মেয়েদের ব্যাপার, সাজতে বসবে, তারপর সময়ের ঠিকানা থাকবে না। অভি ভালো ভাবেই জানে এই ব্যাপারে, বাড়িতে দু’দুটো দিদি, বিশেষ করে বড়দি, সাজতে বসলে সময়ের ঠিক থাকে না। বয়সের জন্য একটু ভারী হয়ে গেছে বড়দির শরীর না হলে ওর দুই দিদিকেই বেশ সুন্দরী দেখতে।
ফোন করল দিয়াকে, “এই বেরোচ্ছি।”
অভির ফোন পেয়েই লাফিয়ে ওঠে দিয়া, “বাপরে, এতক্ষন পরে আমার কথা মনে পড়ল?”
অভি নিজের মাথায় চাটি মারে, যা বাবা, সকাল থেকে দুই বার ফোনে কথা হয়ে গেছে, দেখা করতে যাচ্ছে, তাতেও যেন মেয়ের শান্তি নেই, “আসছি তো রে বাবা, আচ্ছা রেডি থেকো।”
দিয়া মুচকি হেসে বলে, “আচ্ছা বাবা, কি ড্রেস পড়ব সেটা বল?”
অভি হেসে ফেলে, “তোমার যা ইচ্ছে, তবে বেশি দেরি কর না।”
দিয়া মাথা নাড়িয়ে হেসে বলে, “নাহ না, একদম না। তুমি গলির ভেতরে এসো না, রাস্তা মোড়ে এসে একটা ফোন কর আমি বেড়িয়ে আসবো।”
অভি মাথা দোলায়, “আচ্ছা ঠিক আছে।”
তাড়াতাড়ি করে বিছানা ছেড়ে উঠে আলমারি খুলে জামা কাপড় পড়ে নেয়। এতদিন বাইকে দিদিভাই বসত তাই একটা হেলমেট ছিল, সেটা সাথে নিয়ে নিল। ঘর থেকে বেড়িয়ে বড়মাকে জানিয়ে দিল যে ফিরতে রাত হবে। দীপাদেবী স্মিত হেসে বললেন যেন বেশি রাত না করে, বাড়ি পুরো ফাঁকা। অভি মাথা দুলিয়ে বেড়িয়ে আসে।
ঠান্ডা একটু বেশি, গলা পর্যন্ত চেন আটকে দিল জ্যাকেটের। সোঁ সোঁ করে বাইক ছুটিয়ে দিল বারাসাতের দিকে। দিয়ার বাড়ির এলাকায় ঢোকার মুখে বাইক দাঁড় করিয়ে ফোন করে জানিয়ে দিল যে পৌঁছে গেছে। শীতকাল, রাস্তায় লোকজনের ভালো ভিড়। সামনে ক্রিসমাস, তাও সেটা যেন বাঙালিদের পার্বণ এমন ভাবে কেনা কাটা করতে বেড়িয়েছে। সিগারেট ধরিয়ে গলির ভেতরে বারেবারে তাকায়, এক মিনিট যেন এক ঘন্টা মনে হয়। ঘড়ির কাটা কি দাঁড়িয়ে গেছে নাকি? ধুস, আরো দেরি করলে মনে হয় ভালো হত। মেয়েদের সাজার ব্যাপার, একটু দেরি হবেই জানা কথা, তাও আবার দিয়া, যে কিনা সাজতে এবং সাজাতে খুব ভালোবাসে। কারুর জন্য অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে থাকতে একদম ভালো লাগে না অভির, কিন্তু বড়দি আর দিদিভাইকে নিয়ে বের হওয়া মানেই দেরি, তাই অপেক্ষা করাটা গা সওয়া হয়ে গেছে অভির। অস্থির হয়ে ওঠে অভি, এতক্ষন লাগে নাকি সাজতে, সাড়ে পাঁচ’টা এখানেই বেজে গেলো, যাবে কোথায় সেটাও জানেনা। আরো একটা সিগারেট, সেই সাথে ঘন ঘন গলির দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
ওই তো, বাড়ি থেকে বেড়িয়েছে। দুর থেকে অভিকে দেখতে পেয়েই চঞ্চলামতির পা যেন আর মাটিতে পড়তে চায়না। পারলে দিয়া এক দৌড়ে অভির কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে, কিন্তু আশেপাশের লোকের জন্য তাড়াতাড়ি পা চালায়। অভি সিগারেট ফেলে একভাবে দিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। চোখ আটকে যায়, চঞ্চলা হরিণীর অঙ্গের চলনে। পরনে একটা লাল প্লাজো, প্লাজো গুলো কেন এমন হয়, নিতম্বের চারপাশে বেশ আঁটো তারপরেই ঢলঢলে। প্লাজোটা বড্ড নচ্ছাড়, দিয়া সুগোল নিতম্বের ওপর জেঁকে বসে ওই কোমল লোভনীয় নিতম্বের আকার অবয়াব সবার চোখের সামনে ইতরের মতন মেলে ধরেছে। প্লাজোর সাথে একটা নীলচে ফুল ছাপা সাদা রঙের টপ, তার ওপর জিনসের জ্যাকেট। জ্যাকেটের বোতাম গুলো খোলা। টপটা বুকের সাথে এঁটে বসা, দুই উন্নত স্তন জোড়া সামনের দিকে উঁচিয়ে। মত্ত চলনের ফলে কোমল স্তন জোড়া একটু দুলেদুলে উঠছে। যত কাছে আসে তত দিয়ার গতি বেড়ে ওঠে। চেরি লাল রসালো ঠোঁটের কোনায় মিষ্টি মাদক হাসি। চোখের কোলে কাজল, চোখের পাতা গুলো বেশ লম্বা, মনে হয় আইল্যাস পড়েছে। লম্বা চুল মাথার পেছনে একটা খোঁপা করে বাঁধা, সেই খোঁপা আবার একটা স্টোলের মধ্যে বাঁধা, স্টোলের খালি দুই পাশ, দুই কাঁধের ওপর দিয়ে সামনের দিকে ঝুলিয়ে দেওয়া।
দুর থেকে অভিকে দেখতে পেয়েই, বুকের রক্তে হিল্লোল লাগে, চঞ্চল হয়ে ওঠে ললনা। কতদুরে দাঁড়িয়ে আছে, গলির ভেতরেই আসতে বলতে পারতো। গতকাল দাড়ি কামিয়েছিল, আজকে আর কামায়নি মনে হচ্ছে। একটা গোঁফ রাখলে বেশ পুরুষালী দেখাবে, অনুরোধ করবে যেন অভি গোঁফ রাখে। কেমন ভাবে বুকের কাছে হাত গুটিয়ে একভাবে ওর দিকে তাকিয়ে, চোখে ঝলসানো আগুন, ওই প্রেমের আগুনে পুড়তেই চলেছে দিয়ার অন্তর। অমোঘ তীব্র আকর্ষণের টানে দিয়া আপনা হতেই একটু দৌড়াতে শুরু করে দেয়। পা যেন মাটিতে পড়তেই চাইছে না।
দিয়াকে দেখে আশেপাশের বেশ কয়েকজন লোক হাঁ করে তাকিয়ে। একজন জিজ্ঞেস করে, কোথায় যাচ্ছে। দিয়া, উত্তর দেয়, এই একটু বন্ধুর সাথে বেড়াতে। লোকটার বয়স প্রায় চল্লিশের মতন হবে, দিয়ার সুগোল নিতম্বের ওপর লোকটার লোলুপ দৃষ্টি। অভি চোয়াল চেপে লোকটার দিকে তাকাতেই চোখাচুখি হয়ে যায়, লোকটা মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে নিজের পথে চলে যায়।
কাছে এসে ডান হাত একটু তুলে মিষ্টি হেসে জিজ্ঞেস করে, “কতক্ষন এসেছো?”
অভি মাথা নাড়িয়ে হেসে ফেলে, “অনেকক্ষণ এসেছি।”
নাক কুঁচকে অভির একদম কাছে এসে আদর করে ক্ষমা চেয়ে বলে, “সরি গো, এই লিপস্টিকের শেডটা খুঁজে পাচ্ছিলাম না।”
অভি মাথা নাড়ায়, এটা ওর কাছে কোন নতুন জিনিস নয়, দিদিভাইয়ের সাথেও এক ঘটনা ঘটে। ঠিক বের হওয়ার আগেই কোন একটা সাজার জিনিস খুঁজে পাবে না, সারা বাড়ি মাথায় করে নেবে তারপর দেখা যাবে যে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারের এক কোনায় পড়ে। অভি নিস্পলক দৃষ্টিতে দিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। এতদিন যাকে মাথার মধ্যে এঁকে রেখেছিল, আজ দুরপুরে যাকে স্বপ্নে দেখেছিল, সেই সুন্দরী ললনা আজকে ওর সামনে দাঁড়িয়ে। ওর বুকের একদম কাছে এসে মাথা তুলে ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দেয়। ঠোঁট জোড়া অসম্ভব মিষ্টি দেখতে, চেরি লালে রাঙ্গানো ঠোঁট জোড়া দেখে অভির মনে হল এখুনি একটা চুমু খেয়ে নেয়।
সারারাত এই ছেলেটার জন্য কেঁদেছে, খুব ইচ্ছে করছে অভির গালে সপাটে একটা চড় কষাতে আর তারপর গলা জড়িয়ে ধরে সেই গালে ঠোঁট চেপে ধরতে। নিজেকে ওই প্রসস্থ বুকের সাথে মিশিয়ে দিয়ে একাকার করে নিতে। সত্যি ওদের পৃথিবী অনেক আলাদা। ধীরস্থির কম কথার মানুষ অভি, নিজের গন্ডি সম্পর্কে বেশ সচেতন আর সেখানে দিয়া ঠিক উলটো চরিত্রের, চঞ্চলামতি, খুব কথা বলে, সব সময়ে নেচে বেড়ায়, সবার সাথে মিশে যায়। ওর দেখা ছেলেদের থেকে বেশ আলদা স্বভাবের অভিনন্দন আর সেই ব্যাক্তিত্ব দিয়াকে ভীষণ ভাবেই আকর্ষিত করেছে। অন্য সব ছেলেরা যেমন মেয়ে দেখলেই হ্যাংলার মতন আগ বাড়িয়ে কথা বলতে চলে আসে অথবা গায়ে পড়ে খেজুরে আলাপ পরিচয় শুরু করে দেয়, অভি একদম সেই ধরনের মানুষ নয়। ভীষণ স্থির মতির মানুষ বলেই প্রথম দিন থেকেই অভির প্রতি দিয়ার আকর্ষণ।
পদ্ম কুঁড়ির মতন চোখ মেলে অভির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কেমন লাগছে আমাকে?”
অভি ওর মুখের দিকে একটু ঝুঁকে বলে, “ভীষণ সুন্দরী।”
চোখে লাগে লজ্জার রঙ, বুকের কাছে ঘন হয়ে এসে জিজ্ঞেস করে, “প্লিজ এখান থেকে অন্য কোথাও চলো। এইভাবে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে কেমন একটা লাগছে।”
অভিও বুঝতে পারে, অনেকের চোখ ওদের দিকে। এটা দিয়ার এলাকা, ওকে নিশ্চয় অনেকেই চেনে তাই দিয়া বিব্রতবোধ করছে। বাইকে উঠে দিয়ার দিকে হেলমেট এগিয়ে দিয়ে স্মিত হেসে বলে, “ওকে বাইকে ওঠো।”
হেলমেট হাত থেকে নিতে গিয়ে কঠিন আঙ্গুলের সাথে ওর চাঁপার কলি আঙ্গুল ছুঁয়ে যায়। শিরশির করে ওঠে দিয়ার হাত। অভির চোখ জোড়া ওকে পুড়িয়ে দেবে মনে হল। অনুরক্তির ভাষা বুঝতে পেরে চোখ নামিয়ে মৃদু সুরে বলে, “হুম।” বাইকের দুইপাশে পা ঝুলিয়ে অভির পেছনে উঠে বসে কানে কানে ফিসফিস করে বলে, “এই শোনো না, প্লিজ জ্যাকেট’টা উলটো করে পড়ো।”
অভি অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, “কেন?”
দিয়া হেসে ফেলে, “আরে বাবা, সামনে থেকে হাওয়া লাগবে তাই বললাম।” আসলে দিয়ার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি ছিল।
দিয়ার কথা মেনে জ্যাকেট উলটো করে পড়ে নিয়ে বলে, “এবারে পিঠের চেনটা লাগিয়ে দাও।”
পেছন থেকে অভিকে কোমল দুই হাতে শক্ত করে জাপটে ধরে কানের কাছে ফিসফিস করে বলে, “পেছনে আমি আছি তো। চেন লাগানোর কি দরকার।”
দিয়ার নিটোল উষ্ণ স্তনের কোমল পরশে অভির পিঠ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। একটা ঝাঁকুনি দিয়ে বাইক স্টারট করে হেসে বলে, “আচ্ছা তোমার এই মতলব ছিল।”
অভির ডান কাঁধে থুঁতনি রেখে পেছন থেকে অভিকে জাপটে ধরে বলে, “হুম।”
রাত হয়ে গেছে না হলে ব্যারাকপুরের গান্ধীঘাটে যেতে পারতো, বারাসাত এলাকায় থাকা ঠিক হবে না, কেউ হয়ত দিয়াকে ওর সাথে দেখে ফেলতে পারে তাতে দিয়ার অসুবিধে হতে পারে, মধ্যমগ্রামেও যাওয়া যাবে না। কোন রেস্টুরেন্টে বসতে পারে, সাতপাঁচ চিন্তা ভাবনা করতে করতে দিয়াকে জিজ্ঞেস করে, “কোথায় যেতে চাও?”
দিয়া চোখ বুজে অভির দেহের উষ্ণতায় ডুবে ছিল। অভির প্রশ্নে সম্বিত ফিরে আসাতে উত্তর দেয়, “জানি না, যাও। আমি তোমার সাথে কথা বলব না।”
বাইক ধিরে ধিরে ব্যারাকপুর রোডের দিকে নিয়ে যায়। দিয়ার অভিমানী সুর শুনে হেসে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা বাবা, কিছু বলতে হবে না, ব্যাস এইভাবে একটু জড়িয়ে ধরে বসে থাকো।”
দিয়া অভিমানী কন্ঠে উত্তর দেয়, “তুমি কিছু বুঝবে না। গতরাত থেকে আজকের সকাল পর্যন্ত, এই সাত আট ঘন্টা আমার জীবনের সব থেকে বিচিত্রময়। কয়েক ঘন্টার মধ্যে জীবন এতটা ওঠানামা করতে পারে সেটা আমার ধারনার বাইরে। তুমি সেটা জানো কি?”
অভি মনে মনে হেসে ফেলে, হ্যাঁ এই ওঠানামার অনেক কিছুই আন্দাজ করতে পেরেছে। গতরাতে গাড়িতে আসার সময়ে প্রথমে একটু কাছে আসা, তারপর বন্ধুত্তের একটু ছোঁয়া, তারপর দিয়াকে নিয়ে বাড়িতে ঢোকা। রাতে দিয়া নিশ্চয় ওর বিছানায় কিছু দুষ্টুমি করেছিল যার প্রমান স্বরূপ ওর লেপের ওপর একটা ছোপ দাগ। তারপরে ঠিক কি ঘটেছিল সেটা ঠিক ভাবে আন্দাজ করতে না পারলেও হয়ত গতরাতের গাড়ির মধ্যে ওর কথা ভেবেই সকালে মন মরা হয়ে গিয়েছিল। অভি হলফ করে বলতে পারে, গতরাতে বড়মায়ের সাথে ওর কথাবার্তা সম্পর্কে দিয়া ওয়াকিবহাল নয়। যদি জানত তাহলে সকালে গোমড়া মুখে আসতো না। তাও, সকালে মায়ের সাথে বেশ কথা বলেছে। দিয়ার এই রূপটাই ভীষণ ভাবে অভিকে আকর্ষণ করে। বুকের মধ্যে হয়ত প্রচুর ঝড় তাও ওর ঠোঁটে সর্বদা এক দুষ্টুমিষ্টি হাসি, দুই চোখ অনবরত কথা বলে চলেছে।
এত কিছু আন্দাজ করার পরেও না জানার ভান করে দিয়াকে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা বেশ, কেমন ওঠানামা হয়েছিল সেটা জানতে পারি কি?”
দিয়া অভির পিঠের ওপরে গাল ঘষে মিহি সুরে বলে, “জানো সকালে মাসিমা আমাকে যেভাবে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে দিলেন তাতে আমি খুব ঘাবড়ে গেছিলাম।”
অভি যেন আকাশ থেকে পরে, “আচ্ছা তাই নাকি? মা কি জিজ্ঞেস করছিল?”
দিয়া উত্তর দেয়, “এই আমার ব্যাপারে, আমি কোথায় থাকি, বাড়িতে কে কে আছে, বাবা কি করেন, দাদা কি করে এইসব।” কথা গুলো বলতে বলতে ফিক করে হেসে ফেলে যেন অভির মা আগে থেকেই জানতেন যে তাঁর ছেলে ওর প্রেমে পড়েছে।
অভি মনে মনে হাসে, মায়ের মন, অন্তর্যামী, কিছু না বললেও ঠিক ওর চোখ দেখে ধরে নেবে কি হয়েছে। মুচকি হেসে বলে, “ওহ আচ্ছা এই কথা।” দিয়ার দুষ্টুমির কথা মনে পড়তেই হেসে ফেলে জিজ্ঞেস করে, “শুধু এই টুকু নাকি?”
গতরাতের স্বমেহনের কথা মনে পড়তেই দিয়া লজ্জায় কুঁকড়ে গিয়ে বলে, “হ্যাঁ এই টুকু।” অভির পিঠের ওপরে থুঁতনি দিয়ে একটু ঠেলা মেরে বলে, “এই প্লিজ কিছু বলো না।”
অভি কি বলবে, যেভাবে এক সুন্দরী ললনা ওকে পেছন থেকে লতার মতন জড়িয়ে ধরে আছে তাতে ওর কথা বলার শক্তি অনেক আগেই লোপ পেয়ে গেছে। তাও ঘাড় ঘুড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা তুমি যখন আমার ঘরে ঢুকলে তখন বেশ হাসিখুশি ছিলে। রাতে এমন কি হয়েছিল যে সকাল বেলা একেবারে মন মরা হয়ে গেল?”
এই প্রশ্নের উত্তর দিয়ার ভীষণ ভাবেই চাই। গতরাতে অভিকে ওর মায়ের সামনে হাঁটু গেড়ে অপরাধীর মতন বসে থাকতে দেখেছে। সেই অভির মা সকাল বেলা নিজে হাতে চা বানিয়ে খাইয়ে আবার হাজার প্রশ্ন করেছে। পালটা প্রশ্ন করে অভিকে, “আমাকে একটা সত্যি কথা বলবে?”
অভি হেসে ফেলে, “যা বাবা আমি আগে প্রশ্ন করলাম তার উত্তর দাও তারপর ভাবছি।”
জোরে জোরে মাথা নাড়ায় দিয়া, “না আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।”
অভি হেসে ফেলে, “আচ্ছা জিজ্ঞেস কর।”
দিয়া, “কাল রাতে মসিমা তোমাকে কি বলেছিলেন?”
প্রশ্ন শুনে ছোট একটা ধাক্কা খায় অভি, এই প্রশ্নের অর্থ কি? দিয়া কি ওর আর ওর মায়ের মধ্যে যা কথাবার্তা হয়েছে সেটা শুনে ফেলেছে? যদি শুনে থাকে তাহলে তো সকালে ওইরকম গোমড়া মুখ করে বের হওয়ার কোন মানে হয়না। অভি পালটা প্রশ্ন করে, “আমার সাথে মায়ের কথাবার্তা হয়েছে সেটা তুমি কি করে জানলে?”
এবারে দিয়া ধরা পরে গেছে, লাজুক হেসে ফিসফিস করে বলে, “আসলে কি জানো, রাতের বেলা এক সময়ে আমি দরজা খুলে দেখি তুমি মাসিমার সামনে অপরাধীর মতন হাঁটু গেড়ে বসে...”
অভি হেসে ফেলে, “ওহ দুষ্টু মেয়ে, রাতে তাহলে গোয়েন্দা গিরি করা হয়েছিল।”
লজ্জা পেয়ে যায় দিয়া, আসলে গোয়েন্দাগিরি করতে যায়নি, চেয়েছিল একবার অভির দর্শন পাওয়ার। আমতা আমতা করে বলে, “না মানে এমনি।” আদুরে সুরে জিজ্ঞেস করে, “প্লিজ বল না।”
অভি সেই রাতের ঘটনা সংক্ষেপে জানাতেই দিয়ার মনে হল দীপাদেবীকে জড়িয়ে ধরতে। অভি, পাপার কথা চেপে যায়, সেই নিয়ে ওর মনেও একটু সংশয় যদিও আছে তবে সেই সাথে আসার আলো আছে যে দিদিভাই আর মা ওর পাশে।
সব শুনে দিয়া আনন্দে প্রায় লাফিয়ে ওঠে, অভি যদি হেলমেট না পরে থাকতো তাহলে অভির গালে একটা মিষ্টি চুম্বন এঁকে দিত। অভিকে ভীষণ শক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে, “এখন আমার বিশ্বাস হচ্ছে না যে মাসিমা এমন বলেছেন।”
অভি হেসে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ তো, তুমি তো আজব মেয়ে, অর্ধেক কথা শুনে মুখ হাড়ি করে অভিমান করে এমন এক কান্ড ঘটালে কি বলব। সেই জন্য লোকে বলে, অল্প বিদ্যে ভয়ঙ্করি।” বলেই হেসে ফেলে।
দিয়া ঠোঁট উলটে অভির বুকের ওপর আলতো নখের আঁচড় দিয়ে বলে, “আমি ভয়ঙ্করি?”
অভি হেসে ফেলে, “আরে বাবা, সেটা বলিনি রে। তুমি তো আমার দুষ্টু মিষ্টি দিয়া।”
অভিকে জাপটে ধরে কাঁধের ওপর থুঁতনি রেখে মিহি কণ্ঠে বলে, “আমার বিশ্বাস হচ্ছে না যে আমি তোমার সাথে আছি জানো।”
শক্ত করে জড়িয়ে ধরার ফলে দিয়ার কমনীয় উষ্ণ দেহপল্লব অভির পিঠের ওপরে গলে যায়। অভির বুকের মধ্যে এক ভীষণ উত্তপ্ত ভালোলাগার শিরশিরানি শুরু হয়। ওর বুকের কাছে, দিয়ার চাঁপার কলি আঙ্গুল ওর জামা খামচে ধরে। পিঠের ওপর কোমল স্তন জোড়ার স্পর্শ ওকে উন্মত্ততার শিখরে ছুঁড়ে দিতে প্রস্তুত। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে দিয়াকে বলে, “এই তো তোমার পাশেই আছি দিয়া।”
দিয়া চোখ বুজে নিজেকে ডুবিয়ে নেয় অভির পিঠের ওপরে। কোথায় যাচ্ছে, কেন যাচ্ছে কিছুই ভাবতে ইচ্ছে করছে না, শুধু প্রানপন চেষ্টা, এই রাত যেন এইভাবেই অভির বাইকের পেছনে বসে কাটিয়ে দেয়। হয়ত হাত ছাড়লেই অভি কোথাও হারিয়ে যাবে।
এই রাস্তায় প্রচুর যান চলাচল করে, কোথাও ঠিক ভাবে দাঁড়াবার অথবা বসে কথা বলার মতন জায়গা নেই। কিছুদুর গিয়ে বড় রাস্তা ছেড়ে একটা ছোট রাস্তার মধ্যে ভেতরে ঢুকে গেল অভি, এইদিকে একটু এগিয়ে গেলে গ্রাম এলাকা, এইদিকে শহরের কোলাহল নেই, নেই সারিসারি বাড়ি ঘর, এইদিকে রাস্তা একটু খালি পাওয়া যেতে পারে। রাস্তার দুপাশে হুহু করে জমি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে, ইট কাঠ পাথরের জঙ্গল মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। একটু এগিয়ে গেলে ওদের ধানা জমি পড়বে। বিকাশ, যে ওদের এই ধানা জমি দেখাশুনা করে তাঁর বাড়িও এইদিকে। বেশ কিছুদুর এগিয়ে গিয়ে একটা ফাঁকা মেঠো পথে বাইক নামিয়ে দিল, আরো একটু গেলেই ওদের জমি।
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
পর্ব পাঁচ। রাগ অনুরাগ (#5-#30)
মেঠো গ্রাম্য পথে বাইক পড়তেই একটু ঝাঁকানি দিল, দিয়া চোখ মেলে দেখে যে চারদিক ভীষণ খালি, দুরে কোন গ্রামের বাড়ির আলো জ্বলছে। অভিকে জিজ্ঞেস করে, “এটা কোথায় গো?”
অভি কিছুদুর এগিয়ে একটা ফাঁকা ধান রোয়া মাঠের পাশে দাঁড় করিয়ে বলে, “আরেকটু এগিয়ে গেলে আমাদের জমি।”
দিয়া অবাক হয়ে যায়, “তোমাদের জমি মানে? এখানেও তোমাদের জমি আছে নাকি?”
অভি উত্তর দেয়, “হ্যাঁ।”
ধান কাটা অনেক আগেই হয়ে গেছে, কয়েক বিঘাতে আঁখ চাষ হয়েছে আর কয়েক বিঘাতে পালং শাক। ফাঁকা মাঠের পশ্চিম দিক থেকে হুহু করে বয়ে আসা ঠান্ডা হাওয়ায় জমে যাওয়ার যোগাড়। অভিরে পিঠের সাথে নিজেকে মিশিয়ে দিয়ে দিয়া দেহের উত্তাপ খুঁজে বেড়ায়। আরো একটু এগিয়ে গিয়ে ওদের জমির পাশে বাইক দাঁড় করিয়ে দেয়। বেশ দুরে ছোট ছোট বাড়ি ঘর। মাথার ওপরে খোলা আকাশ, কালচে নীল রঙের সামিয়ানায় অসংখ্য তারা ঝিকিমিকি করছে।
বাইক দাঁড় করিয়ে হেলমেট খুলে অভি দিয়াকে বলে, “এই এইখান থেকে” দুরের দিকে একটা জায়গা দেখিয়ে, “ওই পর্যন্ত আমাদের জমি।”
দিয়া বাইক থেকে নেমে এসে অভির পাশ ঘেঁসে দাঁড়িয়ে হেসে বলে, “তুমি আমাকে জমি দেখাতে এনেছ নাকি?”
অভি দিয়ার কাঁধে হাত রেখে কাছে টেনে উত্তর দেয়, “না, তোমাকে একা পাওয়ার জন্য এই জায়গায় এনেছি।”
গাড় নীল আকাশে তারার ঝিকিমিকি, শীতের রাতে খোলা মাঠের পাশে দুই প্রেম ঘন যুবক যুবতি নিজেদের প্রেমে মগ্ন। অভির বুকের কাছ ঘেঁসে মিহি প্রেমঘন কণ্ঠে বলে, “ওহ, তাই নাকি।” অভির বুকের ওপর ছোট কিল মেরে আদুরে গলায় বলে, “তুমি না ভীষণ দুষ্টু।”
দিয়ার নরম হাত দুটো ধরে সামনে দাঁড় করিয়ে নীলচে চোখের দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকে অভি। ভীষণ মোহময় এই চোখ জোড়া, তীব্র আকর্ষণে বেঁধে রেখেছে ওকে। অভির ওই ভাবে তাকানোর ফলে দিয়ার সর্বাঙ্গ অসাড় হয়ে আসে। অভি দিয়ার মুখের ওপর মাথা নামিয়ে এনে বলে, “তোমায় ঠিক কবে থেকে ভালোবেসে ফেলেছি, নিজেই জানি না।”
দিয়া এগিয়ে যায় অভির বুকের কাছে, কোমল বুক দিয়ে চেপে ধরে অভির ছাতি। অভির জামার কলার দুই হাতে খামচে ধরে মাথা উঠিয়ে তাকায় প্রেমশিক্ত অভির চোখের দিকে। দিয়ার চোখ জোড়া ছলকে আসে। তিরতির করে কেঁপে ওঠে লাল শিক্ত ঠোঁট জোড়া, “তুমি শুধু কাঁদাতেই পারো।”
দিয়ার পান পাতার মতন মুখ খানি দুই হাতে আঁজলা করে নিজের দিকে তুলে ধরে অভি। কোমল গালের ওপর অভির উষ্ণ হাতের ছোঁয়ায়, দিয়ার শ্বাস ঘন হয়ে আসে। ওর সারা চেহারা অভির উষ্ণ শ্বাস ভাসিয়ে দেয়। নাকের কাছে চলে আসে নাক। বুকের ভেতর ধুকপুকানি বেড়ে ওঠে প্রতি মুহূর্তে। দিয়ার চোখের কোল বেয়ে এক বিন্দু অশ্রু অভিকে কাঁদিয়ে তোলে। বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে দিয়ার গালের অশ্রু মুছে মিহি কণ্ঠে বলে, “এই সোনা, কাঁদে না, দেখো আমি তোমার সামনেই আছি।” দিয়ার মাথা টেনে কপালে ঠোঁট চেপে ধরে অভি।
উষ্ণ ঠোঁটের পরশে দিয়ার বুকের গহীন থেকে গহীনতম কোনা ভরে ওঠে উষ্ণ ভালোলাগায়। অভিকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে। নিজেকে উজাড় করে দেয় অভির বুকের ওপরে। অভির মাথা নেমে আসে দিয়ার চোখের পাতায়। দিয়ার মুখ আঁজলা করে নিজের দিকে তুলে ধরে আলতো ঠোঁট ছোঁয়ায় দিয়ার ডান চোখের পাতায়। উষ্ণ পরশে কেঁপে ওঠে দিয়ার কমনীয় দেহপল্লব।
তৃষ্ণার্ত কপোতী চোখ বুজে ঠোঁট জোড়া আলতো মেলে ধরে আসন্ন অধর সুধার আশায়। সারা হৃদয় ছাপিয়ে মিহি কণ্ঠে বলে ওঠে দিয়া, “আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না অভি।”
দিয়ার কাঁপা ঠোঁটের ওপর আলতো করে জিব বুলিয়ে মিহি কণ্ঠে বলে, “তোমায় ছাড়বো বলে এই হাত ধরিনি দিয়া।”
কাঁপা ঠোঁটে দিয়া কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল। আলতো করেই দিয়ার কুসুম কোমল ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে অভি। উপরের ঠোঁট নিজের ঠোঁটের মাঝে নিয়ে আলতো চুমু খায়। দিয়ার মুখ ছেড়ে দিয়ে বাম হাতে দিয়ার ঘাড় ধরে নিজের ঠোঁটের সাথে দিয়ার ঠোঁট চেপে ধরে। অন্য হাত নেমে যায় দিয়ার পিঠের ওপর। চোখ বুজে চুষতে থাকে মিষ্টি অধর। একবার ওপরের ঠোঁট চোষা হওয়ার পর নিচের ঠোঁট চুষে নেয়। দিয়ার পিঠের ওপরে হাতের তালু চেপে ধরে দিয়ার নরম উষ্ণ দেহ নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে দেয় অভি। অভির পিঠের ওপরে, জামা খামচে শক্ত করে ধরে নিজেকে ঢেলে দেয় গভীর চুম্বনে। খোলা মাঠ, শীতের হিমেল হাওয়া কোন কিছুই বাঁধ মানে না। অনাবিল প্রেমের চুম্বনে হারিয়ে যায় প্রেম ঘন যুবক যুবতী। ভীষণ ভালোলাগায় ভরে ওঠে দিয়ার প্রান, এই প্রথম এইভাবে কেউ ওর ঠোঁটে চুমু খেল, ভরিয়ে দিল ওর হৃদয়। উচ্ছল দিয়ার মিষ্টি অধরের ছোঁয়া পাওয়ার জন্য অসংখ্য পুরুষ অনেক চেষ্টা করেছে, কিন্তু দিয়ার ঠোঁটের মধু শুধু মাত্র বাঁচিয়ে রেখেছিল হৃদয়ের সেই পুরুষের জন্য যার আলিঙ্গনে নিজেকে সঁপে দিতে পারবে। শরীরের প্রতিটি রন্ধ্র রন্ধ্র অভির সাথে মিশে যাওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে ওঠে। কাম তাড়নায় নয়, প্রেমের আলিঙ্গনে হারিয়ে যেতে উন্মুখ হয়ে ওঠে দিয়ার চঞ্চল প্রান। অভির চুম্বনে শুধু প্রগাড় ভালোবাসার মিষ্টি মধু। প্রেমের তরল আগুনে একটু একটু করে গলতে শুরু করে দিয়ার দেহ। প্রগাড় ভালোবাসার চুম্বনের আবেশে শ্বাস থেমে যায় দিয়ার। অভি দিয়ার মুখের মধ্যে জিব ঢুকিয়ে আলতো করে দিয়ার জিব নিয়ে খেলা করতে শুরু করে দেয়। অভির বাম হাত দিয়ার ঘাড় ছাড়িয়ে উঠে যায় দিয়ার মাথার পেছনে। আলতো মুঠোতে মাথার পেছনের চুলের মুঠো ধরে দিয়ার মুখের ভেতর জিব দিয়ে খেলতে শুরু করে দেয়। পূর্ণবয়স্ক কোন যুবতীকে এই প্রথম প্রেম নিবেদন করে এই ভাবে চুমু খেল অভি। এর আগেও এক সুন্দরী রমণীর অধর রসে নিজেকে নিমজ্জিত করেছিল অভি, কিন্তু সেই চুম্বনে ছিল ঘনীভূত এক কাম তাড়না, ছিল এক নিষিদ্ধ স্বাদের দংশন। এই প্রগাড় প্রেমের সুবাসের লেশ মাত্র ছিল না সেই চুম্বনে। সময় থেমে যায় ওদের চারপাশে, এইভাবে যদি সারারাত শুধু চুম্বনে হারিয়ে যেতে পারতো তাহলে সত্যি কত ভালো হত। হটাত করে ঠোঁট গোল করে দিয়ার দুই ঠোঁটের ওপর চেপে মুখের লালা চুষে নেয় অভি। অভির এই প্রক্রিয়ায় দিয়ার সর্বাঙ্গ কেঁপে ওঠে। উষ্ণ এক শ্বাস আলতো করেই দিয়ার গলার ভেতর থেকে বেড়িয়ে আসে। গলা কেঁপে ওঠে দিয়ার, চুম্বনেই এত প্রেম, উম্মম্মম্ম, তাহলে বুকের ভেতরে সেঁধিয়ে গেলে কি কি খুঁজে পাবে।
অল্পক্ষন না অনেক্ষন, কারুর ঠিক খেয়াল নেই। দিয়ার ঠোঁট ছাড়তেই, অভির বুকের মধ্যে মাথা গুঁজে নিঃসাড় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে দিয়া। দুই বলিষ্ঠ বাহুডোরে আষ্টেপিষ্টে দিয়ার কমনীয় দেহলতাকে বেঁধে ফেলে অভি। মাথার ওপরে মাথা চেপে খালি মাঠের মাঝে, খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে থাকে অনেকক্ষণ। কারুর মুখে কোন শব্দ নেই, বিনা বাক্যব্যায়েই দুই প্রেম ঘন কপোত কপোতীর হৃদয় মাঝে যে বাক্যালাপ ঘটে যায়, তার একমাত্র সাক্ষী এই রাতের আকাশের তারা, এই ধানের ক্ষেত, এই হীমেল হাওয়া আর অভির সাধের বাইক। দুরে কোন গাছের থেকে কোন এক নাম না জানা পাখী ডেকে উঠতেই সম্বিত ফিরে পায় প্রগাড় আলিঙ্গনে জড়িয়ে থাকা দুটো প্রান। অভির কঠিন বাহুপাশে কেঁপে ওঠে দিয়া। প্রেমিকার উষ্ণ দেহলতাকে দুই হাতে আরো বেশি করে চেপে ধরে বুকের কাছ।
এক হাতে অভির জামা খামচে ধরে জামার ওপর দিয়েই অভির বুকের বাম দিকে ঠোঁট চেপে ধরে প্রেমঘন কণ্ঠে বলে, “তোমায় না কি বলবো, খুব মারতে ইচ্ছে করছে।”
ধুকধুক ধুকধুক ... বুকের ওপর উষ্ণ নরম ঠোঁটের পরশে অভির দেহ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দিয়ার মাথায় ঠোঁট চেপে হেসে ফেলে অভি, “আচ্ছা বাবা যত খুশি ইচ্ছে মারপিট করো আর কেউ মানা করবে না।”
এমন সময়ে দিয়ার মায়ের ফোন আসে, ফোন উঠিয়ে নরম সুরে জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছে?”
দিয়ার মা প্রশ্ন করেন, “না মানে কখন বাড়ি ফিরবি?”
অভির দিকে মুখ কাচুমাচু করে তাকিয়ে বলে, “আর একটু পরে।”
ফোন রেখে কাতর দৃষ্টি নিয়ে অভির দিকে তাকায়। অভি ওর থুঁতনি ধরে আলতো নাড়িয়ে বলে, “বাড়ি যাবে না?”
দিয়া লাজুক হেসে ঠোঁট বেঁকিয়ে বাচ্চা মেয়ের মতন মাথা নাড়িয়ে বলে, “না গো, আজকে তোমাকে কিছুতেই ছাড়তে ইচ্ছে করছে না।”
অভি দিয়াকে জিজ্ঞেস করে, “কি বলে বেড়িয়েছ বাড়ি থেকে?”
দিয়া মুচকি হেসে উত্তর দেয়, “ওই এক মেকআপ আরটিস্টের কাছে একটা টিপস নিতে যাচ্ছি।” বলেই অভির গালে চিমটি কেটে বলে, “আমার সাধের মেকআপ আর্টিস্ট আমার লিপস্টিক চেটে পুছে খেয়ে নিল, দুষ্টু ছেলে।”
চেরি লাল ঠোঁট আর লাল নেই, লিপস্টিকের রঙ মুছে গেছে গভীর চুম্বনে। অভিও দিয়ার নরম গোলাপি রসালো ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে, “তোমার লিপস্টিক তো আমার খাওয়ার জন্য।”
দিয়াও হেসে ফেলে, “হ্যাঁ, বুঝলাম, এবারে আমার লিপস্টিক গুলো বড্ড তাড়াতাড়ি খরচ হবে।”
অভি হেসে বলে, “চিন্তা নেই আমি কিনে দেবো।”
অভির বুকের ওপর ছোট কিল মেরে বলে, “ইসসস, কি শয়তান, লিপস্টিক খাবে।”
অভি দিয়ার থুঁতনি নাড়িয়ে মোবাইল খুলে সময় দেখে, সবে মাত্র আট’টা বাজে। খোলা মাঠের হিমেল বাতাস ওদের চারপাশে এসে নৃত্য করে বেড়ায় কিন্তু ওদের কাবু করতে পারে না। দুইজনের শরীরের ধমনীতে প্রেমের উষ্ণ তরল আগুনে কুলুকুলু বয়ে চলে। অভি দিয়ার নাকের ওপর নাক ঘষে বলে, “মিষ্টি সোনা, এবারে বাড়ির দিকে যাই? এরপর সত্যি তোমার মা চিন্তা করবেন।”
দিয়া কিছুতেই অভিকে ছাড়তে নারাজ। কাতর প্রেমঘন কণ্ঠে আবদার করে প্রেমিকের কাছে, “তোমাকে একদম ছাড়তে ইচ্ছে করছে না গো। প্লিজ আজকে আমাকে কোথাও নিয়ে চলো।”
দিয়ার থুঁতনি নাড়িয়ে একটু হেসে বলে, “এমন করে না সোনা।” দিয়ার বুকের বাম দিকে হাত দিয়ে বলে, “এখানে আছি তো।”
উষ্ণ হাত খানি নিজের উপরি স্তনের ওপর চেপে ধরে বলে, “জানি তাও তোমায় একদম ছাড়তে ইচ্ছে করছে না।” কাতর কণ্ঠে বলে, “চলো না প্লিজ, আজকের রাত’টা?”
অভি দিয়াকে জড়িয়ে ধরে প্রোবধ দিয়ে বলে, “আজকে নয় পরে একদিন লং ড্রাইভে যাবো।”
কথাটা শুনে দিয়া একটু আহত হয়, “তুমি কি গো? অন্য কেউ হলে এতক্ষনে গারলফ্রেন্ডকে নিয়ে কোথাও পালিয়ে যেত।”
দিয়াকে ছাড়ার ইচ্ছে অভির একদম ছিল না। দিয়ার শরীরের তীব্র মাদক ঘ্রান, কোমল উষ্ণ দেহের পরশ ছেড়ে যেতে কিছুতেই ইচ্ছে করছিল না অভির। খুব ইচ্ছে এইভাবে সারা রাত দুইজনে জড়িয়ে ধরে কোথাও বসে থাকে। অভি যদি বলে আসতো যে রাতে কোন বন্ধুর বাড়িতে থেকে যাবে অথবা দেবাশিস বাবুর ফ্লাটে থেকে যাবে তাহলে অন্য কথা ছিল, কিন্তু সেই রকম কিছুই জানানো হয়নি, তাই দিয়ার সাথে রাত কাটাতে দ্বিধাবোধ করে। ভীষণ ভাবেই দোটানায় পরে যায়, একদিকে দিয়ার কাতর প্রেমের আহ্বান অন্যদিকে বড়মায়ের অপেক্ষা করে বসে থাকা। অভি যখন বাড়ি থেকে বিকেলে বেড়িয়েছিল, তখন বড়মা নিশ্চয় এটা আন্দাজ করে নিয়েছিলেন যে দিয়ার সাথেই দেখা করতে যাচ্ছে। কিন্তু যদি রাতে বাড়িতে না ফেরে তাহলে বড়মা অনায়াসে বুঝে যাবেন যে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে যখন সারা রাত বাইরে থাকে তখন তাদের মধ্যে কি হতে পারে। বড়মাকে না জানিয়ে, লুকিয়ে রাত কাটানো এক ভিন্ন ব্যাপার, কিন্তু সেইরাতে যদি কোথাও রাত কাটায় তাহলে বড়মায়ের সামনে মুখ দেখাতে ভীষণ লজ্জা পাবে অভি।
অভি বাইকের সিটের ওপরে এক পাশ হয়ে বসে পরে। দুই পা একটু মেলে ধরে তাঁর মাঝে দিয়াকে টেনে নিয়ে আসে। দিয়ার পাতলা কোমর জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে বলে, “কি করবো সোনা, আমি তো আর অন্য কেউ নই। আমি অভিনন্দন।”
লাস্যময়ী যুবতী আপনা হতেই ঘন হয়ে যায় প্রেমিকের প্রসস্থ ছাতির সাথে। দুই কোমল পেলব বাহুডোরে বেঁধে নেয় অভিকে। হিমেল হাওয়ায় ভেজা পায়রার মতন কাঁপতে কাঁপতে মিশে যায় অভির উষ্ণ বুকের সাথে। নিটোল কোমল স্তন জোড়া পিষে যায় অভির প্রসস্থ ছাতির ওপরে। দিয়ার উষ্ণ নরম স্তন জোড়া ছাতির ওপর লেপটে যেতেই অভির সর্বাঙ্গ কেঁপে ওঠে এক উষ্ণ মিষ্টি কাম তাড়নায়। হিমেল হাওয়ার আর অভির নিবিড় প্রেমঘন আলিঙ্গনের ফলে দিয়ার স্তনের বোঁটা জোড়া ধিরে ধিরে শক্ত হয়ে ওঠে। ধিরে ধিরে দিয়ার শ্বাস ঘন হয়ে আসে। দিয়ার নরম গোল পেটের সাথে অভির পেশী বহুল পেট চেপে যায়। ওর নরম মাংসল উষ্ণ তলপেটের সাথে অভির কঠিন তলপেট চেপে যায়। প্রেমিকের ঋজু দেহের উত্তাপে এক ভীষণ উষ্ণ ভালোলাগা আর নিরাপত্তার ছোঁয়া দিয়ার মনকে দোলা দেয়। নিজেকে মিশিয়ে দিয়ে প্রেমিকের বুকে মাথা গুঁজে দেয় দিয়া।
যেকোনো ছেলেকে যদি কোন মেয়ে এই প্রস্তাব দেয় যে তাকে নিয়ে কোন নির্জনে যেতে, রাত কাটাতে তাহলে সেই ছেলে বিনা বাক্যব্যায়ে নাচতে নাচতে সেই মেয়েকে নিয়ে কোন না কোন জায়গায় ঠিক নিয়ে যেত। সেটা কোন হোটেল হোক অথবা কোন বন্ধুর খালি ফ্লাট হোক। কিন্তু অভি সম্পূর্ণ বিপরিত। একটু আহত হয় কিন্তু সেই সাথে ওর হৃদয় যে মানুষকে বেছে নিয়েছে তার চরিত্র সম্পর্কে ধারনা করতেই এক অনাবিল আনন্দ আর নিরাপত্তার আভাসে বুক জুরিয়ে আসে দিয়ার। দিয়ার হৃদয় যে স্বপ্নের মানুষের অপেক্ষায় রাতের পর রাত জেগে কাটিয়েছে, সেই সাত সাগর পাড়ের রাজপুত্র এই অভিনন্দন অন্য এক ধাতুর তৈরি।
অভির মুখ কোমল হাতে আঁজলা করে ধরে, ঠোঁট কুঁচকে ছোট গোল করে অভির ঠোঁটে একটা চুমু খেয়ে বলে, “আমি ভালো করে জানি তুমি কে।”
অভি হেসে বলে, “আচ্ছা তাই নাকি? তোমার বান্ধবীর কাছ থেকে জেনেছো?”
দিয়া চোখ বড় বড় করে বলে, “মাথা খারাপ নাকি? দুপুরে ফোন করেছিল কিন্তু আমি কিছুই বলিনি।” বলেই খিলখিল করে হেসে ফেলে।
অভি একটু থেমে বলে, “একটা কথা বলবো?”
দিয়া, “বলো।”
অভি, “দিদিভাই তোমার সাথে একবার দেখা করতে চায়।”
এই কথা শুনে দিয়া চমকে ওঠে, “কি বলছো?”
অভি মুচকি হেসে বলে, “হ্যাঁ, দিদিভাইও বুঝে গেছে।”
দিয়া ভুরু কুঁচকে হেসে বলে, “তুমিও না, কি যে বলবো।”
অভি ম্লান হেসে বলে, “আমি খোলা বই দিয়া, অন্তত কাছের লোকের কাছে তো তাই।”
অভির গাল দুটো চিমটি করে ধরে, “সে আর বলতে। চোখে অনেক কিছু কিন্তু কিছুতেই বাবুর মুখে রা আসবে না।”
Like Reply
পর্ব পাঁচ। রাগ অনুরাগ (#6-#31)
অভিও হেসে ফেলে, “কি করবো সুনু।”
দিয়া অভির নাকের ওপর নাক ঘষে মিষ্টি করে বলে, “প্রেম একটু লুকিয়ে চুরিয়ে করতে হয়, বুঝলে বাবু।”
অভি নাক কুঁচকে হেসে বলে, “তোর রূপে তো পাগল হয়ে গেছি রে...” বলেই দিয়াকে টেনে কোলের ওপর বসিয়ে নেয়। মুখের মধ্যে দিয়ার কানের লতি নিয়ে আলতো চুষে মিহি কণ্ঠে বলে, “আজকে তোমার গ্রে সাইড আর দেখা হল না।”
“গ্রে সাইড” এর কথা কানে যেতেই অভির কঠিন বাহুপাশে ভীষণ ভাবে কেঁপে ওঠে দিয়া। ইসস ছেলেটা ওর কানের লতি যেভাবে চুষে দিল তাতেই দিয়ার অঙ্গে অঙ্গে কাঁপুনি দিয়ে এলো। প্রেমঘন মিহি কণ্ঠে বলে, “দুষ্টু শয়তান, একদম না...” বলতে বলতে প্রেমের আবেগে গলা মিহি হয়ে আসে।
বাহুডোর আরো শক্ত করে কোমল দিয়াকে আলিঙ্গনে আস্টেপিস্টে বেঁধে বলে, “কেন না, এই তো খোলা আকাশ আছে, এইখানে দেখাতে দোষ?”
নাআআহহহহহহ... কি ভীষণ দুষ্টু রে বাবা, বলে কি। দিয়া মিহি ধমক দিয়ে বলে, “ওরে শয়তান তোমার গ্রে সাইড তাহলে এটা নাকি?”
অভির কান গরম হয়ে যায়। ক্রমাগত দিয়ার নড়নের ফলে কোমল উষ্ণ নিতম্বের পেষনে শুয়ে থাকা অজগর ফণা তুলে দাঁড়িয়ে পরে। বারেবারে প্রেমিকার উষ্ণ নরম পাছার খাঁজে ঘষা খেয়ে দপদপানি শুরু করে দেয় কঠিন পুরুষাঙ্গ। ওর তীব্র কামঘন স্বপ্ন, নির্জন বালুচরে অথবা নির্জন মাঠে খোলা আকাশের নিচে একাকী প্রেমিকার সাথে কামঘন সঙ্গমে মেতে ওঠা।
নিতম্বের খাঁজে অভির কঠিন লিঙ্গের ধাক্কা বুঝতে পেরে কেঁপে ওঠে দিয়া। কামঘন কণ্ঠে বলে ওঠে দিয়া, “আহহহহহহ... প্লিজ এবারে ছাড়ো, এরপর আর... নাহহ খুব মারবো কিন্তু বুবু...”
কথাটা শেষ করতে দেয় না অভি, গলার ওপর হাত চেপে নিজের দিকে দিয়ার মাথা বেঁকিয়ে দিয়ে রসালো গোলাপি ঠোঁটে আবার ঠোঁট চেপে ধরে। কতক্ষন এইভাবে চুম্বনে আবদ্ধ ছিল তার আর খেয়াল থাকে না। পাগলের মতন একে ওপরের ঠোঁট চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দেয়।
বেশ কিছু পরে অভির তীব্র প্রেম দংশন থেকে নিজেকে মুক্ত করে লাজুক হেসে বলে, “ঠোঁট জোড়া খেয়ে ফেললে যে।”
দিয়াকে আলিঙ্গনপাশে বেঁধে বলে, “যা বাবা, যেটা আমার সেটা তো আমি খাবো।”
দিয়া, ইসসস করে ওঠে। হেসে ফেলে অভির কথা শুনে, “আচ্ছা বাবা, যখন ইচ্ছে তখন খেও।” ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে এবারে সত্যি অনেক রাত হয়ে গেছে। ন’টা প্রায় বাজে। অভিকে বলে, “এবারে কি?”
অভি মাথা দুলিয়ে উত্তর দেয়, “এবারে আর কি। বাড়ি যেতে ইচ্ছুক।”
অভির বুকের কাছে এসে, বোতাম গুলো আঙ্গুল দিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে বলে, “বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছে না সোনা।”
অভি হেসে বলে, “আচ্ছা, ঠিক আছে। চলো দেখি কোথায় নিয়ে যাওয়া যায়।”
অভির কথা শুনে দিয়া নেচে ওঠে, “কোথায় নিয়ে যাবে?”
অভি মুচকি হেসে বলে, “চলো না দেখি কোথায় যাওয়া যায়।”
দিয়ার ঠোঁটে দুষ্টুমির এক হাসি খেলে যায়, বুকের রক্তে চুড়ান্ত হিল্লোল দেখা দেয়। ইসস, ছেলেটা কোথায় নিয়ে যাবে? একা একা, নির্জন কোন এক কামরায়, একা অভি একা দিয়া। যেমন ভাবে এই খোলা জায়গায় ওর দেহপল্লব আদর করে ভাসিয়ে দিয়েছে, একা পেলে না জানি কি আর করবে। দিয়াকে নিয়ে বাইকে চড়ে বসল অভি। আসার সময়ে যেভাবে উলটো করে জ্যাকেট পড়েছিল, সেইভাবেই জ্যাকেটটা পরে নিল। দিয়া অভিকে দুই হাতে আস্টেপিস্টে পেছন থেকে জড়িয়ে নিজের কোমল দেহ, পীনোন্নত কোমল স্তন জোড়া অভির চওড়া পিঠের ওপর চেপে ধরে চুপচাপ বসে রইল।
অভির মাথায় অন্য মতলব। রাতের অন্ধকার কেটে মেঠো পথ ধরে এগিয়ে চলে বাইক। এবোড় খাবোড় রাস্তার দুলুনিতে দিয়ার কোমল উষ্ণ স্তন জোড়া আরো বেশি করে অভির পিঠের ওপর চেপে বসে। পিঠের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত দিয়ার দেহের ভার অভিকে পাগল করে তোলে। বড় রাস্তায় এসে বাইক চালিয়ে দেয় বারাসাতের দিকে।
বারাসাতের দিকে যেতেই দিয়া অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, “কোথায় যাচ্ছি?”
অভি মুচকি হেসে বলে, “আরে বাবা, যেখানেই যাবো সেই তো বারাসাত পেরিয়েই যেতে হবে।”
দিয়াও মাথা দুলায়, হ্যাঁ সেটা বটে। কোলকাতার দিকে যেতে হলে বারাসাত পেরিয়েই যেতে হবে। আবার অভিকে জাপটে ধরে প্রেমের আলিঙ্গনে নিজেকে ডুবিয়ে নেয়। দিয়ার হুঁশ নেই অভি কোথায় নিয়ে চলেছে, চোখ বুজে শুধু সেই রাতের স্বপ্নে মশগুল হয়ে যায়। দিয়ার বাড়ির গলির মুখে বাইক দাঁড় করায় অভি। শীতের রাতে গলিটা একটু নির্জন হয়ে গেছে।
দিয়ার বাড়ির গলির সামনে বাইক দাঁড় করিয়ে কাঁধ ঝাঁকিয়ে দিয়াকে বলে, “এই যে এসে গেছি।”
চোখ খুলে বাড়ির গলির সামনে বাইক দাঁড়াতে দেখে দিয়া রেগে যায়, অভির পিঠে দুমাদুম কয়েকটা কিল মেরে অভিমান করে বলে, “এই ছিল তোমার মনে?”
অভি হেসে ফেলে, “মিষ্টি সোনা সাড়ে ন’টা বাজে। এমন কচি খুকির মতন বায়না করতে নেই।”
একটু অভিমান, একটু বিরহ বেদনা দিয়ার বুকের মধ্যে ভর করে আসে। বাইক থেকে নেমে দুম করে অভির হাতে হেলমেট ধরিয়ে দিয়ে বলে, “যাও তোমার সাথে আড়ি।”
অভি হেসে ফেলে, “যা বাবা, একদিনেই প্রেম করলে আর সেইদিনেই আড়ি?”
মুখ ফুলিয়ে রমণী বলে, “হ্যাঁ আড়ি, একশো বার আড়ি। এমন ধোকেবাজ ছেলের সাথে কি কেউ প্রেম করে নাকি?”
দিয়ার হাত ধরে কাছে টেনে বলে, “আচ্ছা বাবা, টুয়েন্টিফিফথ ডিসেম্বর না হয় থারটি ফার্স্ট ডিসেম্বরে সারা রাত পারটি করবো।”
অভির কথা শুনে দিয়া চোখ জোড়া চকচক করে ওঠে, “সত্যি বলছো?”
অভি মাথা দোলায়, “হ্যাঁ।”
ঠোঁট কুঁচকে হাওয়ায় চুমু ছুঁড়ে মিষ্টি হেসে বলে, “ইউ আর মাই সুইট সুইট বুবু সোনা।”
অভি দিয়ার হাত দুটো ধরে বলে, “রাতের বেলা বেশি দুষ্টুমি কর না যেন।”
কথাটা শুনে দিয়া ভীষণ লজ্জা পেয়ে যায়। এমন একটা ভান করে যেন কিছুই জানে না আর অভির কাছে এসে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে, “কিসের দুষ্টুমি গো?”
অভি ভুরু কুঁচকে শয়তানি এক হাসি দিয়ে বলে, “আমি সব জানি, আমার লেপে...”
কথাটা কানে যেতেই লজ্জায় দিয়ার কান গাল লাল হয়ে যায়। অভির কাছ ঘেঁসে বুকের ওপর আলতো কিল মেরে বলে, “তুমি না, বড্ড শয়তান।” একটু এদিক ওদিক তাকিয়ে অভির গালে ছোট একটা চুমু খেয়ে দৌড় লাগায় বাড়ির দিকে। যেতে যেতে অভির দিকে হাত নাড়িয়ে বলে, “ডিনারের পরে ফোন করব।”
দিয়া বাড়ির দরজা পর্যন্ত না যাওয়া পর্যন্ত অভি গলির মুখে দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর বাইক চালিয়ে বাড়ি ফেরে অভি। সারাটা রাস্তা ওর মনের মধ্যে শুধু দিয়া আর দিয়া। প্রথম প্রেমের জোয়ারে ভেসে চলে অভির হৃদয়। বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত দশ’টা বেজে যায়। বাড়ি ফিরে দেখে যে তখন বড়মা খায়নি, ওর জন্য বসে আছে।
অভিকে দেখে দীপাদেবী প্রশ্ন করেন, “এত রাত হয়ে গেল একটা ফোন করে দিতে পারতিস।”
বড়মাকে ফোন করার কথা একদম মনে ছিল না অভির তাই মাথা চুলকে অপরাধীর মতন এক হাসি হেসে বড়মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “সরি।”
দীপাদেবী ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে সস্নেহে জিজ্ঞেস করেন, “কিছু খেয়েছিস কি বাইরে?”
অভি মাথা নাড়ায়, “না।”
দীপাদেবী মাতৃসুলভ এক মিষ্টি ধমক দেন ছেলেকে, “কি যে করিস না। এতক্ষন না খেয়ে ছিলি?”
অভি একটু হেসে উত্তর দেয়, “না মানে ওই জমির দিকে গেছিলাম তাই আর কোথাও খাওয়া হয়নি।”
দীপাদেবী রান্নাঘরে যেতে যেতে ছেলেকে বলেন তাড়াতাড়ি যেন জামা কাপড় ছেড়ে হাত মুখ ধুয়ে খেতে চলে আসে। খাওয়া দাওয়ার পর অভি ল্যাপটপ খুলে বসে পরে, এবারে চাকরি খোঁজা বড় দরকার, না হলে বড়মা কিছু করতে পারবেন না। চাকরির বিভিন্ন ওয়েবসাইট খুঁজে খুঁজে নিজের রিসিউম আপলোড করে দেয়, সেই সাথে বেশ কয়েকটা কোম্পানি খুঁজে এপ্লিকেসান ইমেল করে দেয়। রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে পারটির প্লান করে। সবার আগে দেবশিস বাবুকে ফোন করে জানতে হবে যে বাড়ি পাওয়া যাবে কি না, যদি দুই দিনের মধ্যে একদিনও ফ্লাট খালি না পায় তাহলে পারটি করতে পারবে না। ঝন্টুকে ডাকবে কি ডাকবে না সেই দ্বিধায় পরে যায়। ওদের কি এখনি জানানো উচিত? জানালে ক্ষতি নেই। অনিমেশ কে ডাকবে ভেবে রেখেছে, চাকরি পেয়ে অনিমেশ নতুন প্রেম করছে। অভির মন একটু পরে আনচান করে ওঠে, মোবাইল ফোন কেন বাজে না? বাড়ি গিয়ে দিয়ার কি হল? খাওয়ার পর একটা ফোন করতে পারে না নাকি? এপাশ ওপাশ খুঁজে পেতে ফোন খুলে দেখে যে ফোনে চারজ নেই, কখন চারজ চলে গেছে জানতেই পারেনি। মেরেছে রে, যদি দিয়া ফোন করে থাকে আর ফোন না পায় তাহলে কপালে দুঃখ আছে। ফোন চারজে লাগানোর মিনিট তিনেক পরেই দিয়ার ফোন এলো।
ফোন তুলেই গালাগালি শুরু, “কোথায় মরতে গিয়েছিলে? ফোনে চারজ দিতে পারো না?”
অভি হেসে ফেলে, “না মানে মনেই ছিল না ফোনের কথা।”
দিয়া, “হুম বুঝলাম। খাওয়া হল...”
অভি, “হ্যাঁ, তোমার?”
দিয়া, “আচ্ছা, আমরা কি সেদিন ডিস্কোথেক যাবো?”
বেশি ভিড় অভির একদম পছন্দ নয়, সেদিনে দিয়াকে শুধু নিজের মতন করেই পেতে চায় তাই উত্তর দেয়, “না দিয়া, ডিস্কোথেক নয়।”
দিয়া মুখ ব্যাজার করে বলে, “যা, তাহলে? আমি ভাবলাম ডিস্কো অথবা নাইটক্লাবে নিয়ে যাবে, সারারাত উদ্দোম নাচানাচি করব, খুব ড্রিঙ্ক করব আর মস্তি করব ভেবেছিলাম।”
অভি হেসে ফেলে, “আমার বেশি ভিড় পছন্দ নয়। তা তোমার ইচ্ছে হলে যেতে পারি।”
দিয়া মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে, “সে ডিস্কো হোক আর ফাঁকা মাঠ হোক, তুমি পাশে থাকলে সব জায়গায় যেতে পারি।”
কথাটা শুনে এক ভীষণ ভালোলাগায় অভির বুক ভরে আসে, “আমি দেখছি কোন বন্ধুর খালি ফ্লাট পাওয়া যায় কি না, তাহলে বেস্ট হবে।”
কথাটা শুনে দিয়ার চোখ জোড়া চকচক করে ওঠে, “আচ্ছা, দুষ্টু ছেলে, খালি ফ্লাটে পারটি করবে? কে কে যাবে? লেখাকে ডাকবে?”
অভি একটু চিন্তা করে বলে, “ঝন্টুকে কি এখনি জানাবো, সেটাই একটা প্রশ্ন।”
দিয়া মিষ্টি হেসে বলে, “লেখা যদি কাল ফোন করে আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করে তাহলে আমি কিন্তু কিছুই লুকিয়ে রাখতে পারবো না।”
অভি হেসে ফেলে, “আচ্ছা বাবা, তাহলে ঝন্টুকে ডেকে নেবো। আর দেখি আমার কয়েকজন বন্ধুরা হয়ত আসতে পারে।”
দিয়া প্রশ্ন করে, “আমি কি আমার এক বান্ধবীকে ডাকতে পারি?”
অভি, “হ্যাঁ নিশ্চয় ডাকতে পারো, তবে যারাই আসবে তাদের কিন্তু রাতে থাকার জায়গা দিতে পারবো না বলে দিলাম।”
দিয়া গলা নামিয়ে দুষ্টুমি ভরা কণ্ঠে বলে, “কেন কেন, আমার সাথে তুমি কি করবে?”
অভির কান লাল হয়ে যায় দিয়ার ফিস ফিস কন্ঠ শুনে, তাই দিয়াকে একটু খেপানোর জন্য বলে, “কেউই রাতে থাকবে না। পারটি শেষে যে যার বাড়ি ফিরে যাবে, তুমি তোমার বাড়ি আমি আমার বাড়ি।” বলেই হেসে ফেলে।
এইভাবেই ইত্যাদি মিষ্টি মধুর আলাপে বেশ কিছু সময় কেটে গেল।
সেদিন ডিনারে দিদিভাইয়ের সাথে দেখা করতে যাওয়ার কথা। এর মাঝে দিন দুই অভির আর দিয়ার সাথে দেখা করা হয়নি। অভির দেখা করার ইচ্ছে একদম ছিল না সেটা নয়, তবে তিন দিনের মধ্যে সবার কাছেই এইভাবে জানাজানি, যেন সবকিছু খুব তাড়াতাড়ি ঘটে চলেছে এটা ভেবেই আর অভি দিয়ার সাথে দেখা করতে যায়নি। বাড়ির কাজ নিয়ে আর এই চাকরির কল নিয়েই ব্যাস্ত ছিল। যে কটা চাকরির কল আসে, সব বাইরের না হয় মারকেটিং এর। বেশ চিন্তায় পরে যায়, এইভাবে বেশি দিন বসে থাকতে একদম ভালো লাগে না, মনে হয় যেন অকর্মণ্য হয়ে পড়েছে। বড়মা হাল ছাড়েন না, ছেলের শুকনো মুখ দেখে ছেলেকে আস্বস্থ করে বলেন যে সব কিছুর একটা সময় হয় তখন হয়, অভি যে একদম না খুঁজে বসে আছে সেটা নয়।
সেদিন সকালে দিদিভাই ফোন করেছিল ডিনারের জন্য, আর সেই সাথেই অভি দিয়াকে জানিয়ে দিয়েছিল। দিয়া উভয়সঙ্কটে পরে যায়, অভির কথা অমান্য করলে অথবা ওর দিদিভাইয়ের সাথে দেখা না করলে খুব খারাপ হবে, কিন্তু সেই সাথে এইভাবে দেখা করাটা কি ঠিক হবে? কয়েকদিন আগেই অভির মা যেমন ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছিলেন তাতে বেশ ভাবনায় পরে গিয়েছিল। অভির দিদি আবার কি জিজ্ঞাসা করবে সেটাই চিন্তা। তবে এই বিয়ের কয়দিনে ওর দিদিকে বেশ হাসিখুশি বলেই মনে হল। মনে তো হয় না ওদের বিপক্ষে কিছু বলবে। অনেকক্ষণ ভাবনা চিন্তা করার পরে দিয়া মেনে যায় অভির দিদির সাথে দেখা করার জন্য। অভি জানিয়ে দেয় বিকেল পাঁচটার মধ্যে ওকে নিতে আসবে। অভির ফোনের পর থেকেই দিয়া ব্যাস্ত হয়ে পরে। আগেরবারের মতন দিয়ার গলির বাইরে পৌঁছে দিয়াকে ফোন করার কিছুক্ষনের মধ্যে দিয়া বেড়িয়ে আসে। সেদিন আর বেশি দেরি করেনি তবে হলদে রঙের সালোয়ার কামিজে ভারী সুন্দর লাগছিল দিয়াকে।
বাইকে উঠে বসতেই প্রশ্নের ঝড়, “দুইদিনে কি দেখা করার সময় পাওনি? এত কি কাজ তোমার? আমার কথা একদম মনে পড়ে না তাই না?”
অভি হেসে ফেলে, “আরে বাবা, কাজ ছিল।”
দিয়া ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “এমন কি কাজ? অফিসে এখন জয়েন করোনি। এরপর তো অফিস করলে আমাকে ভুলেই যাবে।”
অভি হেসে ফেলে, “না রে বাবা।”
পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা আমাকে কেমন লাগছে বললে না তো?”
অভি মুচকি হেসে বলে, “খুব সুন্দরী লাগছে।”
দিয়া মুখ বেঁকিয়ে বলে, “ওই আমি জিজ্ঞেস করলাম তাই বললে।”
অভি মহা মুশকিলে পরে যায়, “তুমি সবসময়ে সুন্দরী, সোনা।”
কথাটা শুনে দিয়ার একটু মন খারাপ হয়, মেয়েরা নিজেদের সৌন্দর্যের পরিমাপ যদি প্রেমিকের কাছে না শুনতে পারে তাহলে তাদের ঘুম আসে না। মুখ বেঁকিয়ে অভিকে আলতো ধাক্কা মেরে বলে, “যাও আর কথা বলবো না তোমার সাথে।”
অভি মনে মনে হেসে ফেলল, বুঝতে পারলো যে ললনার মান অভিমানের পালা এবার থেকে সামলাতে হবে, তৈরি থাকতে হবে অনেক কিছুর জন্য।
বেশ কিছু পরে দিয়া জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা তোমার দিদি আমাকে কি কি জিজ্ঞেস করবে?”
অভি উত্তর দেয়, “তুমি ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছও নাকি? দিদিভাই দিল্লী চলে যাবে তাই তার আগে একবার শুধু দেখা করতে চেয়েছে।”
দিয়া হেসে ফেলে, “না বাবা, বড্ড ভয় করে, যেভাবে সেদিন মাসিমা আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে দিয়েছিলেন কি বলব।”
অভি হেসে ফেলে, “আরে বাবা সেই সব একদম ভেবো না। দিদিভাই এমন কিছুই জিজ্ঞেস করবে না।”
দিয়া হাসে, “হ্যাঁ সেটা বুঝে গেছি যে তোমার দিদিভাই। তোমরা ভাই বোন দুইজনেই সমান, খুব কম কথার মানুষ।”
হ্যাঁ সেটা সত্যি, দিদিভাই চেনা জানা মানুষ ছাড়া বেশি কথা বলে না। অভি ছোট এক উত্তর দেয়, “হুম”
শীতকালে বাইকে বসে ঘুরতে যাওয়া একটা বড় সমস্যা, ঠান্ডা হাওয়ায় শরীর কাঁপিয়ে দেয়। আর ছেলেটা যেরকম ঠান্ডা স্বভাবের, ভাবতে ভাবতে দিয়া আপনমনে হেসে ফেলে। একবার হাতের নাগালে পেলে, এই ঠান্ডা বরফকেও গলিয়ে দেবে। দিয়াই চুপ করে বসে থাকার মেয়ে নয় তাই কথা শুরু করে, ওদের কলেজের গল্প, ছোট বেলার গল্প। বাইকে আওয়াজে আর মাথায় হেলমেট থাকার ফলে, অর্ধেক কথা অভির কানে যায়, অর্ধেক যায় না। তবে দিয়ার নরম উষ্ণ আঙ্গুল ওর পেটের ওপরে যেভাবে দুষ্টুমি করছে সেটা ভালো ভাবেই টের পেয়ে যায়। বাইকে ওঠার সময়েই দিয়ার আদেশে জ্যাকেট উলটো করে পরে নিয়েছিল, তাতে অভিকে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরতে বেশ সুবিধে হয়েছিল দিয়ার।
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
পর্ব পাঁচ। রাগ অনুরাগ (#7-#32)
ওহ ক্যালক্যাটাতে শিতাভ্র আর দিদিভাই ওদের জন্য অপেক্ষা করছিল। দিয়াকে দেখতে পেয়েই মনামি হাত তুলে কাছে আসতে বলে।
মনামি দিয়াকে হেসে জিজ্ঞেস করে, “কিরে ডুবে ডুবে জল খেয়ে নিলি কেউ জানতে পারল না?”
দিয়ার গালে লাগে লজ্জার লালিমা, অভির পাশে দাঁড়িয়ে একটু হেসে বলে, “তোমার ভাই যা মুখচোরা আর কি বলবো।” দিয়ার সাথে মনামিও হেসে ফেলে।
শিতাভ্র মনামির পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল, অভিকে দেখে হেসে বলল, “তুমি বেশ ডুবে ডুবে জল খাও মনে হচ্ছে?”
অভি হেসে ফেলে, “না বেশি ডুবে ডুবে জল খেতে পারিনা, শ্বাস আটকে যায়।”
কথাটা শুনেই সবাই হেসে ফেলে। দিয়ার সাথে দিদিভাইয়ের মেলামেশা দেখে অভির বেশ ভালো লাগে। দিদিভাইয়ের সামনে দিয়ার সেই চঞ্চল ভাবটা নেই, সেটা দেখেও অভির বেশ ভালো লাগে। দিন তিনেকের মধ্যে সবার কাছে ওদের এই ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে যাবে সেটা আশা করেনি, তবে যদি সেই রাতে বড়মায়ের কাছে ধরা না পড়ত তাহলে কোনদিন দিয়াকে মুখ ফুটে কিছু বলতে পারতো না। হয়ত এই আফশোশ সারা জীবন বুকের মধ্যে বয়ে বেড়াতে হত অভিকে। দিদির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে দেয় অভি। কথায় গল্পে ওদের খাওয়া দাওয়া হয়। অভির বাড়িতে বলা ছিল যে ঘুরতে বেরোবে, কিন্তু দিদিভাইয়ের সাথে দেখা করবে সেটা জানায়নি। বড়মায়ের আপত্তি ছিল যে দিল্লী যাওয়ার আগে যেন অভি আর ওর দিদির সাথে দেখা না করে। কিন্তু দিদিভাইয়ের আবদার, দিল্লী যাওয়ার আগে দিয়ার সাথে একবার দেখা করার সেটাও অমান্য করতে পারে না।
শিতাভ্র আর মনামি চলে যাওয়ার পরে, রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে রাস্তার পাশে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছিল অভি আর দিয়া। অভির বাজু শক্ত করে ধরে গা ঘেঁসে দাঁড়িয়ে ছিল। দিয়ার গায়ের মিষ্টি গন্ধ আর উষ্ণ পরশে অভির বুকের মধ্যে এক অনাবিল আনন্দের সঞ্চার হয়। মনে হয় এখুনি একে কোথাও ভাসিয়ে নিয়ে যায়। রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়াতে বেড়াতে প্রায় রাত আট’টা বেজে গেল। অভির ইচ্ছে ছিল যদি তাড়াতাড়ি বের হওয়া যায় তাহলে দিয়াকে নিয়ে ওদের মাঠের ওখানে যেতে। কোলকাতায় প্রেম করার জন্য ফাঁকা জায়গা পাওয়া খুব বিরল ব্যাপার। ভিক্টোরিয়া অথবা সেন্ট্রাল পার্ক এই সব জায়গায় যেতে একদম ভালো লাগে না, প্রচন্ড ভিড়ে কেমন যেন নিঃশ্বাস আটকে যায় ওর। মনে হয় সবকিছুই এত খোলামেলা যে কাছের মানুষটাও দুরে চলে গেছে। দিয়ার ডান হাতের আঙ্গুল অভির হাতের আঙ্গুলের সাথে পেঁচিয়ে যায়। অভির হাতের থাবা গ্রাস করে নেয় দিয়ার নরম চাঁপার কলি আঙ্গুল গুলো। আঙ্গুলের সাথে আঙ্গুল পেঁচিয়ে, অন্যহাতে অভির বাজু শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে থাকে রাস্তার পাশে।
অভির বুকের কাছে মাথা এনে নিচু গলায় জিজ্ঞেস করে, “তুমি এত চুপ ছিলে কেন?”
অভি হেসে উত্তর দেয়, “কোথায় চুপ ছিলাম?”
দিয়া হেসে ফেলে, “হ্যাঁ জানা আছে। একদিন তোমার মাথাটা ফাটিয়ে দেখতে ইচ্ছে করে যে কি চলছে।”
অভি হেসে গলা নামিয়ে বলে, “সুনু...”
ডাকটা শুনে দিয়া প্রায় গলে যায়, অভির পাশে আরো নিবিড় হয়ে এসে, “হুম...”
অভি দিয়ার চকচকে চোখের নীলচে মণির দিকে তাকিয়ে বলে, “মাথায় তো অনেক কিছুই থাকে। চাকরির চিন্তা, বাড়ির চিন্তা, তারপর...”
কথাটা মাঝখানেই আটকে দেয় দিয়া, “সেসব সবার থাকে, তুমি সত্যি করে বলতো কাকে নিয়ে এত ভাবো?”
দিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখে যে সেই চোখে জোড়া একটু ছলছল। যদিও অভির প্রথম প্রেম তবুও এই চোখের এই ভাষা অভির অজানা নয়। দিয়ার কাঁধে হাত রেখে কাছে টেনে নেয়, “আমি চুপ থাকি বলে এই নয় যে সব সময়ে কারুর চিন্তা করি। মাথায় তো সানি লিওন থেকে সানিয়া মিরজা” বুকের বাঁ দিকে দিয়ার মাথা চেপে বলে বলে, “কিন্তু তাদের জায়গা তো আর বুকের বাম দিকে নয়, তাই না মিষ্টি।”
কথাটা শুনে ছলছল চোখে ঠোঁটে লাজুক মিষ্টি হাসি নিয়ে অভির দিকে তাকায়, “হ্যাঁ গো, এত ভালোবাসো আমাকে?”
গাড় বাদামী রসালো ঠোঁটের আড়ালে দুপাটি মুক্ত সাজানো দাঁতের হাসি দেখে অভির বুকে দোলা লাগে। মাথা দুলিয়ে বলে, “সঠিক ভাবে এর পরিমাপ জানি না গো...”
দিয়া একটু আদুরে গলায় আবদার করে, “এই শোনো না।”
ভীষণ ভাবেই ওই ঠোঁট জোড়া আহ্বান করছে অভিকে। দিয়ার ঘন উষ্ণ শ্বাসের ঢেউ, সেই সাথে ওই দুই চোখে প্রেমের তীব্র আহ্বান, একা পেলে দিয়াকে উড়িয়ে নিয়ে যেত। বহু কষ্টে সেই চুম্বনের আকর্ষণ দমিয়ে দিয়াকে জিজ্ঞেস করে, “কি?”
দিয়ার কণ্ঠে আদুরে সুর, “এইখানেই কত দেরি হয়ে গেলো।”
অভির মন খারাপ, সত্যি ওহ ক্যালক্যাটা থেকে বের হতে হতে আট’টা, দিয়াকে বারাসাতে পৌঁছাতেই দশ’টা বেজে যাবে। ক্ষুন্ন মনে অভি বলে, “আমি ভেবেছিলাম কোথাও একটু বসব।”
অভির হাত খুব জোরে জড়িয়ে ধরে বলে, “আজকে তোমাকে একদম ছাড়তে ইচ্ছে করছে না গো। মনে হচ্ছে তোমাকে জড়িয়ে ধরে সারা রাত এইভাবে কোথাও বসে থাকি। তোমার বুকে মাথা রেখে চোখ বুজে চুপচাপ পরে থাকি।”
ইচ্ছেটা অভির মধ্যেও প্রবল, কিন্তু ইচ্ছে থাকলেই সব কিছু করা সম্ভব হয় না। বুকের কাছে দিয়ার মাথা, বাজুর ওপর কোমল উষ্ণ পরশ অভির দেহে তরল প্রেমের বন্যা বইয়ে দেয়। দুষ্টু মিষ্টি চোখ জোড়া ভীষণ ভাবেই ওর মুখের দিকে তাকিয়ে। বাইক পারকিঙ্গের জায়গাটা একটু অন্ধকার। সেই আধো আলো আঁধারে দিয়ার দিকে নিস্পলক নয়নে তাকিয়ে থাকে অভি। ভীষণ নতুন লাগে মেয়েটাকে। বাঁকা কালো সরু ভুরু, ফোলা নরম গাল দুটো চকচক করছে, মনে হয় একটু আদর করে টিপে ধরে। রেস্টুরেন্ট থেকে বেরনোর আগে ওয়াসরুমে গিয়ে চুল আঁচরে আর সামান্য প্রসাধন করে নিয়েছিল মনে হয়, সব মেয়েরাই করে, মনে মনে হেসে ফেলে অভি। নাকের ডগাটা চকচক করছে, খুব ইচ্ছে করছে নাকের ডগায় একটা ছোট চুমু খায়। হাল্কা লালচে ঠোঁট জোড়া ভীষণ ভাবেই টেনে ধরে অভিকে। মসৃণ গ্রীবা, কানে লম্বা দুল, সব মিলিয়ে দিয়াকে অপূর্ব দেখায়।
অভির দৃষ্টিতে প্রেমের আগুন দেখে দিয়া লাজুক হেসে বলে, “এই একদম ওইভাবে আমার দিকে তাকাবে না।”
অভি জিজ্ঞেস করে, “কেন?”
দিয়া চোখ নামিয়ে বলে, “তোমার চোখের ধাঁধায় হারিয়ে যাই গো।” ওই নিস্পলক দৃষ্টির আগুনে গলতে শুরু করেছিল দিয়ার দেহ, দিয়ার বুকের গহীন কোনা।
দিয়ার দিকে একটু ঝুঁকে বলে, “ইসসস, এইভাবে লজ্জা পেলে, খুব করে একটা চুমু খেতে ইচ্ছে করছে।”
বাইকের পারকিং একটু অন্ধকার, চঞ্চলমতি দিয়া ঠোঁটের ডগায় একটা দুষ্টু মিষ্টি হাসি দিয়ে অভির দিকে মুখ তুলে ঠোঁট গোল করে বলে, “খাও না, কে বারন করেছে।”
দিয়ার কপালে ঠোঁট ছুইয়ে বলে, “এই খানেই দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি? বাড়ি যাবে না?”
কপালে অভির ভিজে উষ্ণ ঠোঁটের পরশে দিয়া চোখ বন্ধ করে নেয়। যেন কতদিন, যেন এক অনন্ত কাল পরে অভির সাথে দেখা। অভি, দিয়ার কাঁধে হাত রেখে একটু ঘন করে নেয় নিজেদের। আশপাশের বেশ কয়েকজন ওদের দিকেই তাকিয়ে।
দিয়া চোখ মেলে অভির জ্যাকেট টেনে বলে, “চলো” মিচকি হেসে বলে, “আগে জ্যাকেটটা উলটো করে পরো না হলে...”
হেসে ফেলে অভি, “আচ্ছা বাবা”
বাইকে উঠে শরীরের সব শক্তি দিয়ে পেছন থেকে অভিকে দুই হাতে জাপটে ধরে। ইএম বাইপাস ধরে হুহু করে বাইক চালিয়ে দেয়। শীতকালের কনকনে ঠান্ডা হাওয়া আরো বেশি করে শীতল করে দেয় দুটি প্রান। দুই দিন পরে দেখা, তাও আবার বেশির ভাগ সময় এইখানে আসতে যেতে বাইকেই কেটে গেল, ভেবেছিল কোথাও বসবে, অভির কাঁধে মাথা রেখে হাত নিয়ে খেলা করবে, বুকের উষ্ণতা ছাপিয়ে একটু মিষ্টি করে চুমু খাবে ওই সিগারেট খাওয়া পোড়া পুরু ঠোঁটে। যদিও এতদিন সিগারেটের গন্ধ’টা সহ্য হত না দিয়ার, তবে এই একদিনেই কেমন যেন মানিয়ে নিতে শিখে গেছে। দিয়ার অনেক কথা বলার ছিল, ফোনে ঠিক ভাবে সব কিছু বলা যায় না। অভি ফোনের মধ্যে কেমন যেন ফরমাল হয়ে যায়, কেমন আছো, কি খেলে এই সব টুকিটাকি কথাবার্তা ছাড়া বিশেষ কোন কথা এই দুই দিনে হয়নি। ওর বান্ধবী গুলো ঘন্টার পর ঘন্টা নিজেদের বয়ফ্রেন্ডদের সাথে ফোনেই চুটিয়ে আড্ডা মেরে যায়। অভির পিঠের ওপর দিয়ার সুগোল নরম স্তনের উষ্ণ চাপ ধিরে ধিরে বাড়তে শুরু করে। চঞ্চল দিয়ার দুষ্টু কোমল আঙ্গুল গুলো অভির কোমরের কাছে, পেটের ওপর নড়াচড়া করে।
দিয়াকে অসম্ভব রকমের চুপ থাকতে দেখে অভি জিজ্ঞেস করে, “আমার মিষ্টি এত চুপ করে থাকলে একদম ভালো লাগে না।”
দিয়া এতক্ষন অভির পিঠের ওপর নিজের শরীরের ভার দিয়ে এক অনাবিল ভালোলাগার সমুদ্রে ভেসে গিয়েছিল। অভির গলার আওয়াজে সম্বিত ফিরে পেয়ে বলে, “না গো এমনি।”
অভি, “আমার মিষ্টি কথা বলবে, হাসবে তবেই ভালো লাগে।”
মিষ্টি হাসে দিয়া, “আচ্ছা তাই নাকি?” অভির কানেকানে আব্দারের সুরে বলে, “এই শোনো না, তুমি গোঁফ রাখবে?”
হেসে ফেলে অভি, “হটাত এমন আবদার কেন?”
দিয়া, “ম্যানলি লাগে বুঝলে...” বলে ওর কাঁধে একটা ছোট চাপড় মারে।
অভি মাথা দোলায়, “আচ্ছা রাখব, আর কিছু?”
ঘাড়ের ওপর নাক ঘষে বলে, “হ্যাঁ, আরো অনেক কিছু চাই।”
অভি প্রশ্ন করে, “আর কি চাই আমার মিষ্টির?”
দিয়া, “সব সময়ে এইভাবে জড়িয়ে ধরে থাকতে চাই।”
হেসে ফেলে অভি, “আচ্ছা, বেশ।” উষ্ণ রসিকতা করে বলে, “আর আমার কিছু আবদার আছে সেটা রাখবে?”
দিয়া জিজ্ঞেস করে, “কি?”
অভির মাথায় কিছু একটা দুষ্টু ইচ্ছে ছিল, কিন্তু সেটা না বলে বলল, “তুমি নাকে একটা নাকছাবি পড়বে?”
দিয়া হেসে ফেলে, “উম্মম্ম... এটা আমার অনেক দিনের শখ, তুমি বলেছ আমি নিশ্চয় পড়ব।”
রাস্তায় ভীষণ জ্যাম, আজকাল সব মানুষের কাছেই গাড়ি, রাস্তায় মানুষের চেয়ে গাড়ির সংখ্যা বেশি। যশোর রোড পৌঁছাতেই এক ঘন্টা লেগে গেল। বড় রাস্তায় একটা বড় হোটেল দেখে অভি জিজ্ঞেস করে, “কিছু খাবে?”
দিয়া মাথা দোলায়, “আইসক্রিম খাবো।”
অভি হেসে ফেলে, “কোন আইসক্রিম?”
দিয়া প্রথমে কথাটা ঠিক ধরতে পারে না তাই ভুরু কুঁচকে অভির দিকে দেখে বলে, “বাটারস্কচ কোন।”
অভি হেসে ফেলে, “আচ্ছা বেশ।”
দিয়া এবারে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কি বলতে চাইছ বলতো?”
অভি চাপা হাসি দিয়ে মাথা নাড়ায়, “না না কিছু না এমনি।”
এবারে দিয়া অভির আসল উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে পিঠের ওপর চাপড় মারতে মারতে বলে, “শয়তান ছেলে, খুব মারবো কিন্তু।”
অভিও হেসে ফেলে, “আরে বাবা, আমি তো এমনি এমনি জিজ্ঞেস করলাম।”
দিয়া, “হ্যাঁ জানি তুমি কি ভেবে জিজ্ঞেস করেছ।” আর দিন দশেক পরেই পঁচিশে ডিসেম্বর। দিয়া আইসক্রিম খেতে জিজ্ঞেস করে, “পারটির কথা কিছু চিন্তা করলে?”
অভি বেমালুম ভুলেই গিয়েছিল তাই মাথা চুলকে বলে, “না সেসব পরে প্লান করা যাবে।”
দিয়া চাপা ধমক দেয়, “আর কিন্তু দশ দিন বাকি। আমি কোনদিন নাইটক্লাবে যাইনি, আমাকে কিন্তু নাইটক্লাবে নিয়ে যেতে হবে।”
দিয়ার উত্তেজনা দেখে অভি হেসে ফেলে, যদিও ভিড় বিশেষ পছন্দ নয় কিন্তু এর হাসিটা অনেক দামী। রাতের আঁধার, নারী পুরুষের উন্মত্ত নাচানাচি, এক নতুন অভিজ্ঞতা, এই সব ভেবেই সায় দিয়ে বলে, “আচ্ছা নিয়ে যাবো।”
অভির কথা শুনে দিয়া নেচে ওঠে, “সত্যি, আমি তো ভেবেছিলাম যে তুমি আবার না করে দেবে।”
দিয়ার চকচকে চোখের দিকে দেখে উত্তর দেয়, “তোমার নরম মিষ্টি ঠোঁটের হাসিটা আমার কাছে অনেক দামী তাই আর না করতে পারলাম না।”
দিয়া নাক কুঁচকে অভির গা ঘেঁসে দাঁড়িয়ে বলে, “অমূল্য, ইসসস, সেটা তো তোমার কাছে।”
গোলাপি জিব দিয়ে ধিরে ধিরে আইসক্রিম কোন চাটে আর বড় বড় ভাসা ভাসা নীলচে আয়ত চোখে একবার অভির দিকে তাকায়। অভির দৃষ্টি, দিয়ার জিবের দিকে নিবদ্ধ। মসৃণ মরালী গ্রীবাতে চকচক করছে একটা সরু সোনার চেন, কামিজের সামনে উঁচিয়ে উন্নত দুই ভারী স্তনের মাঝে এসে দোল খায় চেনের লকেট। কামিজের সামনের দিকটা একটু খানি কাটা, যদিও স্তনের খাঁজ অতটা ভালো ভাবে দেখা যায় না তবুও অভির চোখ যেন খুঁজে নেয় সেই স্তন বিভাজিকার সৌন্দর্য। গলার নিচ থেকে, মসৃণ উপরিবক্ষ অনাবৃত, কোমল ত্বকের ওপরে আলোর ঝলকানি দেখে হারিয়ে যায় অভি। দিয়ার চোখ অভির চোখের দৃষ্টি অনুসরন করতেই কেঁপে ওঠে অজানা উত্তেজনায়। ইসস, এইভাবে তখন থেকে কি দেখে যাচ্ছে? ইচ্ছে করছে, অভির বুকের কাছে দাঁড়িয়ে নিজেকে চেপে ধরতে।
ঠোঁটে দুষ্টু মিষ্টি হাসি মাখিয়ে অভিকে জিজ্ঞেস করে, “এই ভাবে কি দেখছ?”
এইভাবে দিয়া কাছে ধরা পরে যাওয়াতে একটু লজ্জায় পরে যায় অভি। দিয়ার স্তন বিভাজিকা থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে যায় নীলচে চোখের দিকে, “না কিছু না।”
আইসক্রিম খেতে খেতে অভির সামনা সামনি দাঁড়ায়। অভি বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়েছিল, দিয়া অভির সামনে দাঁড়িয়ে ওর দিকে ঝুঁকে পরে, “এইভাবে দেখো না প্লিজ...” গলাটা আবেগে ধরে আসে দিয়ার। প্রচন্ড কাতুরে হয়ে ওঠে হৃদয়। কেন তাড়াতাড়ি সময় পেরিয়ে যায়?
বাঁ হাতে দিয়ার কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে আনে অভি। বুকের ওপর কোমল স্তন চাপা পড়তেই উষ্ণ স্তন জোড়া কামিজের ভেতর থেকে ছলকে আসার যোগাড় হয়। রাত প্রায় সাড়ে ন’টা তাও এই জায়গায় মানুষের ভিড়। দুই শরীর ধিরে ধিরে এক হতে শুরু করে। দিয়া আইসক্রিম খাওয়া থামিয়ে অভির দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে থাকে। বড় রাস্তায় বাসের আওয়াজ, ট্রাকের আওয়াজ গাড়ির আওয়াজ, কিছুই আর যেন কানের মধ্যে যায় না। বাঁ হাতে খামচে ধরে অভির জামার সামনেটা, টেনে নামাতে চেষ্টা করে অভির মাথা। অভির চোয়াল কেঁপে ওঠে, উষ্ণ কমনীয় দেহপল্লব ওর দেহের সাথে একেবারে মিশে গেছে। বুকের ওপরে দিয়ার হৃদয়ের ধুকপুকানি বেশ বুঝতে পারে। নিজের স্তন জোড়া পিষে ধরে অভির প্রসস্থ ছাতির ওপরে। কঠিন ছাতির পরশে দিয়ার কোমল স্তন জোড়া একটু একটু করে গলতে শুরু করে দেয়, সেই সাথে বুকের রক্তে মাতন লাগে। চোখের তারায় ধিরে ধিরে প্রেমের রঙ লাগে। পায়ের বুড়ো আঙ্গুলে ভর দিয়ে অভির মুখের দিকে নিজেকে ঠেলে তুলে দেয় দিয়া। ওর পিঠ চেপে ধরে নিজের দিকে শক্ত করে টেনে ধরে অভি। নরম গোল পেট তলপেট সব কিছু মিশে যায় অভির দেহের সাথে। জামা কাপড় ভেদ করে দুই প্রেমঘন যুবক যুবতীর দেহের মাঝে উষ্ণ ধারার আদান প্রদান শুরু হয়ে যায়।
মিহি গলায় ডাক দেয় দিয়া, “অভি...”
গলার আওয়াজে হারিয়ে যায় অভি, “মিষ্টি... তুমি ভারী সুন্দরী গো...”
দিয়ার দেহ অবশ হয়ে আসে, আইসক্রিম কোনটা আলগা হয়ে যায় হাত থেকে। অভির ছোঁয়ায় অসম্ভব জাদু, অনির্বচনীয় আকর্ষণ, সেই টানে সারা না দিলে সারারাত ঘুম হবে না দিয়ার, কিন্তু আসেপাশে লোকের ভিড়। একটু দুরন্তপনা, একটু লজ্জা মিলিয়ে মিশিয়ে আলতো করে অভির গালে ঠোঁট ছুইয়ে দেয়। “উম্মম্ম...”
গালে নরম ভিজে ঠোঁটের পরশ পেতেই আরো বেশি করে দিয়াকে কাছে টেনে ধরে। জনবহুল এলাকা না হলে এতক্ষনে দিয়াকে কোলে তুলে ভিজে রসালো ঠোঁট জোড়া চুম্বনে চুম্বনে নাজেহাল করে দিত। অভি মাথা নিচু করে ছোট চুম্বনটাকে দীর্ঘায়িত করে নিয়ে। ততক্ষনে দিয়ার হাত থেকে আইসক্রিম কোন পরে গেছে, অভির জামা টেনে ধরে ঠোঁটের কোনা কামড়ে ধরে। দিয়ার দেহের শিরা উপশিরা মিলনিচ্ছায় উন্মুখ হয়ে ওঠে।
নিরুপায় অভি দিয়ার চুম্বনের সাড়া দিতে না পেরে কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে, “দুষ্টুমিটা করেই ফেললে...”
হেসে ফেলে দিয়া, “ওই ভাবে তাকিয়ে থাকলে কি আর সামলানো যায় বলো দেখি?”
অভি দিয়াকে নিজের সাথে পিষে ধরে বলে, “এইভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবে, বাড়ি যাবে না।”
এতক্ষন পরে কানের কাছে কেউ জোরে হর্ন মারতেই ওদের সম্বিত ফিরে আসে। দিয়া লাজুক হেসে বলে, “আচ্ছা চলো...”
বাকি রাস্তা কারুর মুখে কোন কথা নেই, নিস্তব্ধ রাতে, একাকী বাইকে জড়াজড়ি করে বসে থাকাতেই অনেক বেশি আনন্দ। দিয়াকে যখন বাড়ি পৌঁছে দেয় তখন রাত প্রায় সাড়ে দশ’টা। গলির সামনে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়েছিল অভি, কিছুতেই দিয়াকে ছেড়ে বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছিল না সেদিন। দিয়া গলির শেষ প্রান্তে গিয়ে নিজের বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে ছিল, একভাবে দেখে যায় অন্যপ্রান্তে দাঁড়ানো অভির দিকে। হাতের ইশারায় বলে, তুমি যাও। এদিকে অভিও বলে, আগে তুমি বাড়িতে ঢোক তারপর। দিয়া মাথা নাড়িয়ে মিষ্টি হেসে বলে, না আগে তুমি যাও তারপর। অগত্যা অভিকে চলে আসতে হয়।
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
পর্ব পাঁচ। রাগ অনুরাগ (#8-#33)
খাওয়া দাওয়া শেষ, বিছানায় গড়াতে গড়াতে রাত বারোটার মতন বেজে গেল। দেরি করে বাড়ি ফেরার জন্য বড়মায়ের কাছে মৃদু বকুনি শুনতে হল। ঠিক সময়ে বাড়ি ঢুকিস না, একবার ফোন করে বলতে পারতিস। সত্যি অভি, এটা অন্যায়, ভীষণ অন্যায়। বড়মা না খেয়ে ওর জন্যে বসে ছিল। বিছানায় শুয়ে একবার ফোন খুলে দেখল, দিয়ার ফোন এখন আসেনি। এতক্ষনে বার কতক ফোন করে নেয়, কি হল মেয়েটার, একটু চিন্তায় পরে গেল। একবার রিং করল দিয়াকে, কোন উত্তর এলো না। চোখ বুজে দিয়ার লালচে গালের লালিমার মাঝে হারিয়ে যায়, নরম রসালো ঠোঁটের মাঝে চিকচিক করা দাঁতের হাসিতে হারিয়ে যায়। মিনিট দশেক পরে আবার ফোন করে অভি, এবারেও ফোন তোলেনা দিয়া, ফোন এক নাগারে বেজে গেল। চোখে ঘুম আসেনা, মন ভীষণ ভাবেই উতলা হয়ে পরে। বাড়িতে নিশ্চয় বকা খেয়েছে, এতরাত করা সত্যি ঠিক হয়নি। অভি ছেলে হয়ে দেরি করে বাড়ি ফিরেছে তাতেই বড়মা বকা দিয়েছেন আর দিয়া এক মেয়ে, এদেশে মেয়েদের এখন অতটা স্বাধীনতা দেওয়া হয়নি। আর থাকতে না পেরে ফোন নিয়েই বাইরে বেড়িয়ে গেল অভি, একটা সিগারেট খুব দরকার। দিয়ার ফোন না আসা পর্যন্ত ঘুমাতে পারবে না। রাত প্রায় সাড়ে বারোটা, আরো একবার ফোন করবে নাকি? না থাক, হয়ত বাড়িতে ঝামেলা হয়েছে, রাগ করে কিছু না খেয়েই হয়ত ঘুমিয়ে পড়েছে। সিগারেটে কষে দুই তিনটে টান মারলো, একবার মনে হল জামা কাপড় পরে বারাসাত চলে যায়, বেশি দুর নয় এই রাতে মিনিট দশেক লাগবে দিয়ার বাড়িতে পৌঁছাতে। রাগ করলেও দিয়া একাই ঘুমায়, অন্তত একটা ফোন করতেই পারতো।
রাত প্রায় একটা, ফোন বেজে ওঠে, স্ক্রিনে দিয়ার নাম দেখতে পেয়েই লাফিয়ে ওঠে অভি, “কি ব্যাপার একটা ফোন করতে পারো না?”
ওইপাশে দিয়ার গলায় একটু উদ্ভিগ্ন, “আরে বাবা বাড়িতে ঝামেলা হয়েছে।”
অভি ঠিক আন্দাজ করেছিল, “আমি এটাই ভয় পাচ্ছিলাম জানো। তোমাকে বলি কিন্তু তুমি কিছুতেই...”
দিয়া ওইপাশ থেকে ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “কথা না শুনে একদম জ্ঞান মারতে যাবে না বুঝলে।”
অভি থেমে যায়, “আচ্ছা কি হয়েছে বলো।”
দিয়া রাগত কণ্ঠে বলে, “দাদার সাথে ঝামেলা আরকি হবে। ও রাত বারোটা পর্যন্ত প্রেম করে বেড়াতে পারে, আড্ডা মেরে বেড়াতে পারে তার বেলায় কোন দোষ নেই। যত দোষ আমার নাকি?”
কথাটা ভীষণ ভাবেই সত্য, সেটাই বুঝাতে অভি বলে, “মানুষের মানসিকতা বদলাতে পারো না মিষ্টি।”
দিয়া ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “জ্ঞান দিতে এসো না একদম, আমার মাথা প্রচন্ড গরম আছে কিন্তু।”
অভি বুঝতে পারে যে দিয়া ভীষণ রেগে রয়েছে, কিছু একটা বলে শান্ত করতে না পারলে ভীষণ মুশকিল তাই নিজের বকা খাওয়ার কথা শুনায়, “মায়েদের চিন্তা হয় মিষ্টি, আমিও কিন্তু মায়ের কাছে বকা খেয়েছি।”
এই কথা শুনে দিয়াও হেসে ফেলে, “কি বলো, তুমিও বকা খেয়েছ?”
অভি হেসে উত্তর দেয়, “হুম...”
দিয়া, “কেন?”
অভি, “মায়ের মন, ফোন করিনি তাই।”
দিয়া, “ওহ, আমার কেস উলটো। দেরি করেছি বলে মা একটু বকাঝকা করেছিল, কিন্তু আসল ঝগড়া দাদাকে নিয়ে। রাত বারোটায় মদ খেয়ে বাড়ি ফিরে তোরপার শুরু, আমিও কি আর থামার মেয়ে নাকি? আমিও কষে শুনিয়ে দিলাম। আমি ওর খাই না, নিজের খরচ খরচা নিজেই আয় করি, আমি কেন চুপ থাকবো বলো?”
দিয়া বেশ গরম হয়েই আছে, এই মেয়েকে শান্ত না করতে পারলে মুশকিল, হয়ত অভির ওপরেই রাগ ঝেড়ে দেবে, তাই কথা ঘুড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, “খেয়েছ কি?”
অভির অভিসন্ধি বুঝতে পেরে দিয়া হেসে ফেলে, “হ্যাঁ, খাওয়ার ব্যাপারে আমি একদম দেরি করি না।”
অভি মস্করা করে বলে, “জানা আছে, আজকে কতটা খেলে সেটা দেখেছি।”
দিয়া হেসে ফেলে, “ওটা এমনি।” দিয়া গলা নিচু করে আবদার করে বলে, “এই শোন না, কাল একবার আসতে পারবে?”
অভি, “কেন কাল কি আছে?”
দিয়া মুখ ফুলিয়ে বলে, “ওহ না ডাকলে বুঝি দেখা করতে নেই?”
বেগতিক দেখে অভি উত্তর দেয়, “আচ্ছা বাবা কাল আসবো।”
দিয়া মুচকি হেসে বলে, “কাল একটু শপিং করব।”
অভি জিজ্ঞেস করে, “তোমার আর ব্রাইডাল আসছে না?”
দিয়ার গলায় ব্যাথার সুর, “না গো, এই সিজেনে বেশি পাইনি। এই মাসের শেষের দিকে দুটো ব্রাইডাল আছে ব্যাস আর নেই। আসলে কি জানো, যাদের বিউটি পার্লার আছে তারা অনেক পেয়ে যায়। আমার তো শুধু এই ফেসবুক আর ইন্সটাগ্রামে আলাপ পরিচিতি তাই বেশি পাই না।”
অভি, “তুমি একটা পার্লার জয়েন করতে পারো তো।”
দিয়া হেসে ফেলে, “না গো, পার্লার জয়েন করলেও অনেক ঝামেলা। নিজের থেকে যে কটা কাজ পাই সেই গুলোও করা যাবে না তাহলে ... একটা বিউটিসিয়ান কোর্স করব ভাবছি কিন্তু অনেক টাকার দরকার গো।”
টাকার দরকার সবার, সবাই বলে অর্থ অনর্থের মূল, কিন্তু অর্থ ছাড়া কিছুই চলে না এমন কি পেট চলে না। যদি অর্থ ছাড়া পেট চালাতে হয় তাহলে সুন্দরবনের জঙ্গলে গিয়ে বসবাস করতে হয়। অভি ছোট এক উত্তর দেয়, “হুম বুঝলাম।”
দিয়া হেসে বলে, “আমি বললাম বলে তুমি আবার টেন্সান নিও না। তুমি তো আবার সব কিছুতেই ভাবতে বসে যাও।”
অভি হেসে ফেলে, “কেন, তোমার চিন্তা কি আর আমার চিন্তা নয়?”
এই কয়েদিনেই দিয়া অভিকে ভালো ভাবেই চিনে গেছে, মনে হয় যেন অনেক দিনের পরিচয় শুধু মাত্র চোখের দেখা হয়নি এতদিন। দিয়া মনে প্রানে জানে, অভির মনের মধ্যে ওর চাকরি নিয়ে একটা কষ্ট চলছে, সেখানে আঘাত দিতে অথবা ওর কাছে কিছু চেয়ে ওকে হীন করতে একদম চায় না। দিয়ার বেশির ভাগ বান্ধবীরা হয় তাদের ভালো ঘরে বিয়ে হয়ে গেছে অথবা তারা খুঁজে খুঁজে বড় লোক ছেলেদের প্রেম করছে। দিয়া মানুষ খুঁজেছিল আর সেই মানুষ পেয়ে গেছে। হয়ত দিয়া যদি টাকার অঙ্ক বলতো তাহলে অভি নিশ্চয় চিন্তায় পরে যেত, কিছু করতে পারছে না ভেবে হয়ত নিজেকে নিজের কাছেই ছোট হয়ে যেত। অভিকে কারুর সামনে ছোট করতে দিয়া একদম চায় না, এমন কি অভি যখন আয়নার সামনে দাঁড়াবে তখন যেন নিজেকে ছোট বলে মনে না করে।
দিয়া লজ্জিত হয়ে আদুরে গলায় অভিকে বলে, “না গো আমার বুবুসোনা, আমি সেই ভাবে ভেবে বলিনি।”
অভি হাসে, “হ্যাঁ বুঝেছি।”
এখন একটা চাকরি পায়নি, লোকের চোখে বেকার ছেলে অভিনন্দন। বড়দি কিছু টাকা দিয়ে গিয়েছিল, এত দিন দিদিভাই ছিল ওর লক্ষ্মী, মাঝে মাঝে বড়মায়ের কাছে হাত পাততে হয়, তবে এবারে কিছু না হলে একদম চলছে না, যেখানে যা পাবে ঢুকে যাবে। কেউ জিজ্ঞেস করলে তখন বলতে হয় যে চাকরি খুঁজছে। আজকাল কলেজের ছেলেরা বড়লোক মেয়েদের দিকে দেখে আর মেয়েরা দেখে উপার্জন করা না হয় বড়লোক ছেলেদের দিকে। বেকার ছেলেদের প্রেম করার রোজগেরে মেয়েদের তো কথাই নেই, তাদের হাইফাই ছেলে না হলে পাতেই দেয়না। জোকায় ওর ব্যাচে যতগুলো মেয়ে ছিল, অধিকাংশ এনআরআইকে বিয়ে করেছে না হয় নিজেরাই বিদেশ চলে গেছে, কেউই দেশে নেই। দিয়া না হয়ে অন্য মেয়ে হলে হয়ত ওর মতন ঘরে বসা ছেলেকে প্রেমও করত না। অভিও বুঝে গিয়েছিল কি কারনে দিয়া ওর প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেছে, তাই চুপ করে যায়।
অভিকে একটু চুপ থাকতে দেখে দিয়া জিজ্ঞেস করে, “এই কি হয়েছে, চুপ করে গেলে কেন?”
অভি, “না কিছু না।”
দিয়া, “এই বাবু, এমন মন মরা হয়ে থাকে না। কি হয়েছে আমাকে বলবে না?”
অভি একটু হেসে বলে, “কিছু হয়নি তো।”
দিয়া, “আচ্ছা বাবা আর কিছু জিজ্ঞেস করব না।”
পরের দিন বিকেল চারটের আগেই দিয়ার বাড়ির গলির সামনে বাইক নিয়ে উপস্থিত হয়ে যায় অভি। যদিও জানে যে চারটেতে দিয়া বের হবে না। সকাল থেকে অন্তত দশবার ফোন করেছে, কখন আসবে কখন আসবে। অভি সিগারেট ধরিয়ে আপন মনেই হেসে ফেলে, চারটে থেকে সোয়া চারটে বেজে গেল এখন সুন্দরী ললনার দেখা নেই।
এমন সময়ে কাঁধে আলতো চাঁটি, “কটা সিগারেট খেলে?”
ঘাড় ঘুড়িয়ে দিয়ার দিকে তাকাতেই অভির চোখে তাক লেগে যায়। বৌভাতের রাতে দেবী একদম টকটকে লাল রঙ্গে সেজেছিল আর সেদিন দিয়া সেজেছে বারগ্যান্ডি লাল রঙ্গে। পরনে বারগ্যান্ডি রঙের চাপা জেগিন্স আর সেই রঙের ছোট হাতার একটা ফ্রিল শারট। কালো ভুরু জোড়া ভীষণ ভাবেই ধনুকের মতন বেঁকে, কানে দুটো পাথরের লম্বা দুল। রসালো মিষ্টি ঠোঁট জোড়া গাড় লাল রঙ্গে রাঙ্গানো, ভীষণ ভাবেই অভিকে উন্মাদ করে ডাক দেয়। চোখের তারায় ভাসমান দুষ্টু মিষ্টি হাসি। দিয়া চোখ দারুন আঁকে, চোখের কোনে কাজল একটু টেনে দিয়ে চোখ জোড়া আরো বেশি করে ফুটিয়ে তুলেছে। আঁটো জামাটা দিয়ার ঊর্ধ্বাঙ্গের ভাঁজে ভাঁজে ভীষণ ভাবেই খাপ খাইয়ে নিয়েছে। দেহের আঁকিবুঁকি ভীষণ ভাবেই স্পষ্ট। ভারী সুগোল স্তনের চাপের ফলে উপরের দুটো বোতাম হাঁসফাঁস করতে শুরু করে দিয়েছে। চাপা জামাটা নরম গোল পেটের আকার অবয়াব পরিস্কার ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে অভির চোখের সামনে। জামার নিচে আঁটো ব্রার ছাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, কাছ থেকে দেখলে ব্রার রঙ পর্যন্ত বোঝা যায়, টকটকে লাল রঙের ব্রা। ইচ্ছে করেই জামাটা জেগিন্সের মধ্যে গোঁজা। চাপা জেগিন্স দিয়ার কোমর থেকে গোড়ালি পর্যন্ত ঢেকে রেখেও যেন অনেক কিছু মেলে ধরেছে সবার সামনে। নরম গোল পেট ছাড়িয়ে গোল হয়ে ফুলে ওঠা কোমর, দুই মোটা সুগোল স্ফটিকের থামের মতন ঊরু জোড়ার মাঝের জায়গাটা ভীষণ ভাবেই উলটো ত্রিকোন আকার ধারন করে নিয়েছে। সেদিকে চোখ গেলেই ধক করে ওঠে অভির বুকের রক্ত। ইতরের মতন দিয়ার পায়ের মাঝের অঙ্গটাকে ফুটিয়ে তুলেছে জেগিন্সটা। ইসসস, একটু ফোলা মনে হল অভির, নাকি চোখের ভুল। দেহের অবয়াব আদিম যুগের বালির ঘড়ির মতন। দিয়াকে ঠিক মোটা একদম বলা চলে না, একটু বাড়ন্ত বললেই ঠিক। বাম হাতের গোল কব্জিতে বাঁধা একটা পাতলা ঘড়ি অন্য হাতের কব্জিতে একটা পাথরের চেন। কাঁধে ঝোলান চামড়ার ব্যাগটাও দিয়ার মতন সুন্দর। পায়ের দিকে নজর যেতেই বাঁ পায়ের গোড়ালিতে বাঁধা একটা খুব পাতলা কালো বিডের চেন দেখতে পেল। এটা আগে ছিল না, এটা আবার কি ধরনের নতুন সাজ। আপনমনেই অভি হেসে ফেলে দিয়ার পায়ের চেন দেখে। যত বার দিয়াকে দেখে ততবার যেন এক নতুন দিয়াকে খুঁজে পায় অভি। বিয়েতে এক অন্য সাজে সেজেছিল, বউভাতে সম্পূর্ণ ভিন্ন সাজ, প্রথম যেদিন দুইজনা একসাথে বেড়িয়েছিল সেদিনের সাজ ভিন্ন আর আজকের সাজ ভীষণ ভাবেই অন্য রকম।
নির্বাক অভির চোখের তারার চমক দেখে দিয়ার বুকের রক্ত চঞ্চল হয়ে ওঠে। ইসসস, এইভাবেই এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মেরে ফেলে দেবে। এত ইচ্ছে যখন তখন কোথাও নিয়ে কেন যায় না? ওই বলিষ্ঠ বাহুর মাঝে সেদিন যেভাবে মাঠের মাঝে জড়িয়ে ধরেছিল মনে হয়েছিল কুঁকড়ে ওই কোলের মধ্যে সেঁধিয়ে যায়।
চোখে একটু লাজুক লালিমা মাখিয়ে অভির বুকের কাছ ঘেঁসে এসে মিহি কণ্ঠে বলে, “এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গিলবে নাকি অন্য কোথাও যাবে?”
গেলার কথাটা কান যেতেই লজ্জায় পরে যায় অভি, এতক্ষন হ্যাংলার মতন দিয়ার দিকে তাকিয়ে ছিল, যেন কতদিন কোন মেয়ে দেখেনি। দিয়ার গলা শুনে সম্বিত ফিরে পায় অভি, “না মানে...”
হেসে ফেলে দিয়া, অভির হাত থেকে হেলমেট নিয়ে পায়ের বুড়ো আঙ্গুলে ভর দিয়ে একটু ঘুরে নেচে জিজ্ঞেস করে, “কেমন লাগছে গো আমাকে?”
দিয়ার দুষ্টুমি ভরা চোখের তারায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করে অভি বলে, “তোমাকে ভীষণ সুন্দরী লাগছে, সনু... মনে হচ্ছে” বলতে বলতে দিয়ার দিকে একটু ঝুঁকে যায় অভি।
দিয়া দু’কদম পেছনে সরে লজ্জা পেয়ে যায় বলে, “তুমি আমার দিকে ওইভাবে তাকাবে না, বুঝলে...”
বাইকে চড়ে দিয়াকে বলে, “তোমাকে ভীষণ ভাবে চটকে আদর করতে ইচ্ছে করছে দিয়া...”
কথাটা শুনে দিয়ার কমনীয় দেহলতায় কাঁপুনি ধরে যায়। ইসসস... সত্যি ওর ভীষণ ইচ্ছে করছে অভির কোলে ঝাঁপিয়ে পড়তে, লুকিয়ে যেতে ওই বুকের মধ্যে। লজ্জায় লাল হয়ে যায় দিয়া, “সত্যি বলছ?”
অভি কি আর উত্তর দেবে, ইচ্ছে করছে এখুনি দিয়াকে জড়িয়ে ধরে গালে মাথায় ঠোঁটে সব জায়গায় চুমু খায়, “ভীষণ ভাবে সত্যি, সনু...”
অভির গলার আওয়াজেই প্রেমের আবেগে অবশ হয়ে যায় দিয়ার কমনীয় দেহ। ওর দুই পা অবশ হয়ে যায় অভির প্রমাগুনে জ্বলে ওঠা দৃষ্টিতে। কাঁপা কণ্ঠে অভির নজর থেকে নিজেকে বাঁচাতে ওর পেছনে চলে যায়। অভির ঝলসানো দৃষ্টির সামনে বেশিক্ষন এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকা ওর পক্ষে একদম সম্ভব নয়। যেভাবে ওর দিকে তাকিয়েছিল, সেই তাকানোতেই দিয়ার মনে হয়েছিল যেন ওর সারা শরীরের রক্ত বুকের মধ্যে এসে জমা হয়ে গেছে। প্রতি বারের মতন বাইকের দুইপাশে পা দিয়ে অভির পেছনে উঠে বসে। বাইকে চেপে যেভাবে অভিকে পেছন থেকে জাপটে ধরেছিল দিয়া তাতে আশেপাশের লোকেও একটু তাকিয়েছিল ওদের দিকে। হেলমেট পরে অভির বগলের তলা দিয়ে হাত গলিয়ে দুই কাঁধ আঁকড়ে ধরে নিজেকে অভির পিঠের সাথে নিজেকে পিষে ধরে।
অভির পিটে নিজেকে মিশিয়ে দিয়ে বুঝতে পারলো যে ছেলেটা সেদিন আর গেঞ্জি পরে আসেনি। সেটা বুঝতে পেরেই দিয়া দুই হাতে আরো বেশি করে নিজেকে উজাড় করে চেপে ধরে পিঠের ওপরে। হাল্কা নীল রঙের শারট, কালো জিন্সে দারুন বেশ পুরুষালী দেখায় অভিকে। ওর কথা মতন দাড়ি কামালেও গোঁফ কামায়নি। দিয়ার নাকে ভেসে আসে ডেনিম আফটার শেভের সাথে সিগারটে মেশানো এক দামাল পুরুষালী মাতাল করে দেওয়া গন্ধ। এক গন্ধটা দিয়াকে প্রতিবার পাগল করে দেয়, তবে সেদিন অভির নাকের নিচের গজিয়ে ওঠা পুরু গোঁফ জোড়া আরো বেশি করে আকর্ষিত করে দিয়াকে। ছেলেটাকে দেখলে মনে হয় যেন ছাই চাপা আগুন, শুধু যেন দিয়ার ছোঁয়াতেই প্রকাশ পাবে।
গালের ওপর নরম গালের ছোঁয়া পেতেই অভির সারা দেহে এক অনির্বচনীয় শিহরণ বয়ে যায়। চোয়াল শক্ত করে দিয়াকে পিষে ফেলার ইচ্ছেটাকে দমন করে প্রশ্ন করে, “মহারানী কোথায় যেতে ইচ্ছুক।”
হেসে ফেলে দিয়া, “যেখানে তোমার ইচ্ছে...”
অভি, “তুমি নাকি শপিং করতে বেড়িয়েছিলে?”
দিয়া ফিক করে হেসে বলে, “ওটা তো বাহানা... আসল তো...”
অভি, “ওহ, তাই বুঝি।”
দিয়া, “হুম, আচ্ছা নাগের বাজার চলো।”
অভি, “অতদুর কেন? এখানেই তো শপিং করা যায়।”
দিয়া, “মাথা খারাপ নাকি? এখানে কে না কে দেখে নেবে, বাড়িতে কথা পৌঁছে যাবে।”
অভি বাইকে স্টারট দিয়ে বলে, “ওকে চলো।”
মিহি কণ্ঠে অভির কানে কানে বলে, “এই বুবু... তোমাকে আজকে ভীষণ হ্যান্ডু লাগছে জানো...” বলেই অভির গালে নিজের গাল আলতো করে ঘষে দেয়।
কানের কাছে উষ্ণ শ্বাস ঢেউ খেলে যেতেই অভির ঘাড় মাথা অবশ হয়ে যায়, “আমার মিষ্টি সুনু...” শুধু এইটুকু বের হতে পারল অভির ঠোঁট থেকে। ধমনীতে একটু উত্তপ্ত রক্তের দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়।
রিয়ারভিউ আয়নায় অভির চোখে চোখ রেখে মিষ্টি এক হাসি হেনেছিল। অভির ডান কাঁধের ওপরে থুঁতনি রেখে কানে কানে বলে, “এই শয়তান, সামনে দিকে তাকিয়ে বাইক চালাও।”
হেসে ফেলে অভি, “ওই ভাবে জড়িয়ে ধরলে বাইক চালাবো কি করে?”
সেই শুনে আরো বেশি করে নিজেকে উজাড় করে দেয় দিয়া। গেঞ্জি হীন পিঠের ওপর উষ্ণ কোমল স্তন জোড়ার উষ্ণ নরম স্পর্শে মাতাল হয়ে যায় অভি। পিঠের শিরদাঁড়া বেয়ে এক ঘন উত্তপ্ত লাভার শ্রোত বয়ে যায়। ওর পিঠের নিচের দিকে দিয়ার নরম গোল পেট চেপে গেছে, সারা পিঠে শুধু দিয়ার শরীরের কোমল উষ্ণ পরশ।
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
পর্ব পাঁচ। রাগ অনুরাগ (#9-#34)
নাগের বাজারের দিকে যেতে যেতে দিয়ার কথাতে ওদের বাড়ির সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতে পারলো অভি। দিয়াদের বাড়িটা ঠাকুরদার আমলের, শুধু নিচের তলা বানানো ছিল। নিচের তলা দুই ভাগে ভাগ হয়, একপাশে দিয়ার পরিবার অন্যপাশে জেঠু। ওপরের তলায়, দুই কাকা ছোট ছোট ফ্লাট বানিয়ে আছে। খুড়তুতো জ্যাঠতুতো মিলিয়ে ওরা প্রায় জনা দশেক ভাই বোন। দিয়ার দাদা সৈকত, বেড়াচাপায় একটা হেলথ সেন্টারে চাকরি করে। দাদার প্রেমিকা, পৌলমি বিরাটিতে থাকে, একটা নার্সারি স্কুলে চাকরি করে। আগে পৌলমিকে বেশ ভালো লাগতো, কিন্তু যেদিন থেকে বুঝতে পেরেছে যে বিয়ের পর আলাদা হয়ে যাওয়ার ইচ্ছে, সেদিন থেকে পৌলমিকে একদম দেখতে পারে না দিয়া। দাদার ইচ্ছে বিয়ে করার, কিন্তু বোনের বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত নিজে বিয়ে করতে পারছে না। বাড়িতে বাড়তি কোন ঘর নেই, নতুন কোন রুম তৈরি করার জায়গাও নেই। ওর দাদার আলাদা বাড়ি তৈরি করার অথবা বাড়ি ভাড়া করে চলে যাওয়ার ক্ষমতা এখন সেই ভাবে হয়নি। সেইজন্য ওর দাদা দিয়ার বিয়ের অপেক্ষায় আছে। দিয়ার গল্প শুনতে শুনতে অভি মনে মনে হেসে ফেলে, মেয়েটা এক মিনিটের জন্য চুপ করে থাকতে পারে না। তবে এই গলা না শুনলে মনে হয় কিছু যেন পায়নি, দিনটা যেন অসমাপ্ত থেকে গেল। কতদিন হল, মনে হয় দিন পাঁচেক হয়েছে শুধু মাত্র, তাও যেন মনে হয় কতদিনের চেনা।
সাতগাছি পেরিয়ে দিয়াকে জিজ্ঞেস করে, “এবারে কোথায়?”
দিয়া, “ওই মলের পারকিং এ বাইক পার্ক কর, তারপর ঘুরবো।”
অভি ওকে বলল, “তুমি এখানে দাঁড়াও আমি তাহলে বাইক পার্ক করে আসছি।”
বাইক থেকে নেমে দিয়া বলে, “ঠিক আছে আমি তাহলে ভেতরে থাকবো।”
বাইক থেকে নেমে, সারা শরীরে এক হিল্লোল তুলে এক প্রকার নাচতে নাচতে মলের দিকে এগিয়ে গেলো দিয়া। পেছন থেকে দিয়ার চলন দেখে অভির বুকের মধ্যেও উষ্ণ রক্ত নাচতে শুরু করে দেয়। চাপা জেগিন্স ভারী সুগোল নিতম্বের সাথে রঙের প্রলেপের মতন লেপটে গেছে। ভাগ্যিস জেগন্সের কাপড় একটু মোটা ধরনের না হলে হয়ত নিতম্বের সাথে এঁটে বসা প্যান্টির দাগটাও পেছন থেকে দেখা যেত। আজকাল অনেক মেয়েরা এত চাপা লেগিন্স পরে বের হয় যে, ওদের ভারী নিতম্বের ওপরে জেঁকে বসা প্যান্টির দাগ পেছন থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়। দিয়ার চলন, উচ্ছল প্রজাপতির মতন, এক লাল রঙের প্রজাপতি নিজের খেয়ালে বাতাসে উড়ে চলেছে। গেটের মধ্যে ঢুকে পড়ার আগে একবার ঘাড় ঘুড়িয়ে অভির দিকে তাকায় দিয়া। অভি তখন ওইখানে দাঁড়িয়ে দিয়ার চলে যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে ছিল। সেই দেখে দিয়া ভুরু কুঁচকে বিরক্তি প্রকাশ করে ইশারায় জানায়, তাড়াতাড়ি আসো না হলে কপালে দুঃখ আছে। মাথা নাড়াল অভি, মলের পারকিঙ্গে বাইক রেখে মলের মধ্যে ঢুকে পড়ল। কোথায় দিয়া, বলেছিল গেটের কাছেই কোথাও দাঁড়িয়ে থাকবে। মেয়েটা সত্যি মাঝে মাঝে কোথায় যে হারিয়ে যায়। কিছুক্ষন পরে দিয়া বেড়িয়ে এলো মেয়েদের ওয়াশরুম থেকে। হেলমেট পরে চুল এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল, সেই গুলো আবার আঁচরে, লম্বা চুল মাথার ওপরে একটা হেয়ারব্যান্ড দিয়ে আটকে নিয়েছে।
কাছে এসে অভির ডান হাত ধরে বলে, “চলো।”
অভি জিজ্ঞেস করে, “কোথায়?”
দিয়া মুচকি হেসে বলে, “দেখা যাক কোথায়। তবে মলের বাইরে চলো।”
অবাক হয়ে যায় অভি, “বাইক?”
দিয়া হেসে ফেলে, “ধ্যাত ছেলে, এখানে বাইক পার্ক করে অনেকে বাইরে শপিং করে।”
অভি, “হুম বুঝলাম।”
দিয়ার নরম আঙ্গুল অভির কঠিন আঙ্গুলের সাথে পেঁচিয়ে যায় ততক্ষনে। হাতের মধ্যে আলতো চাপ দিয়ে মিষ্টি করে বলে, “বুবু, এই সব বুদ্ধি আইআইটি তে শেখায় না, এই সব শেখার জন্য পাড়ার কলেজ আছে।” বলেই ফিক করে হেসে ফেলে।
অভি হেসে বলে, “তার জন্য তুমি আছো তো।”
দিয়া, “একদম শতকরা সঙ্গে আছি।”
কথা বলতে বলতে মল থেকে বেড়িয়ে পরে ওরা। পঁচিশে ডিসেম্বর আসতে আর দিন দশেক বাকি, রাস্তায় বেশ ভিড়, লোকজন কেনাকাটা করতে বেড়িয়েছে। বেশির ভাগ যুবক যুবতী, হাতে হাত রেখে প্রেমে মগ্ন। দুইজনেই বেশ ঘন হয়ে হাতে হাত রেখে এদিকে ওদিকে দেখতে দেখতে এগিয়ে চলে।
দিয়া জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা, দিদি কি কাল চলে যাবে?”
অভি, “হুম।”
দিয়া, “কখন ফ্লাইট?”
অভি, “বিকেলের ফ্লাইট।”
দিয়া, “আমি আসতে পারি সি অফ করতে?”
অভি হেসে ফেলে, “না এখুনি নয়। পাপা থাকবে, তার ওপরে শিতাভ্রর বাড়ির লোকজন থাকবে। এই অবস্থায় তোমার না আসাটা বেটার হবে।”
আবদারটা করার পরে দিয়া বুঝতে পারে যে এটা ঠিক হয়নি। ওদের ব্যাপারে এখন শুধুমাত্র অভির মা আর অভির দিদি জানে, ওইভাবে এয়ারপোর্টে গেলে সবাই জেনে যাবে বুঝে যাবে, সেটা যুক্তি সঙ্গত হবে না। দিয়া ছোট উত্তর দেয়, “আচ্ছা।”
অভি খানিক পরে জিজ্ঞেস করে, “লেখা বা ঝন্টু কি এরমাঝে তোমাকে ফোন করেছিল?”
ঝন্টুর নাম শুনেই দিয়ার চেহারার ভাব বদলে যায়। দিয়া চোয়াল চেপে সেই ভাব লুকিয়ে নিয়ে বলে, “হ্যাঁ গতকাল দুপুরের দিকে ঝন্টু ফোন করেছিল।”
অভি, “গতকাল এই কথা আমাকে বলনি তো?”
দিয়া, “না এমনি বলিনি।”
অভি প্রশ্ন করে, “কি হয়েছে আমাকে বলবে না?”
দিয়া মাথা নাড়ায়, “না কিছু হয়নি।”
দিয়ার শুকনো মুখ দেখে অভি বুঝতে পারে যে কিছু একটা হয়েছে আর সেটা দিয়া বলতে চাইছে না। লেখার সাথে দিয়ার খুব গভীর বন্ধুত্ত, তবে মাঝেমাঝে এই গভীর বন্ধুত্তেও চিড় ধরতে পারে, হয়ত কোন এক ভুল বোঝাবুঝি। দিয়ার চেহারায় হটাত করেই কালো মেঘের ছায়া অভিকে ভাবিয়ে তোলে।
একপ্রকার আধিকারের সুরেই জিজ্ঞেস করে দিয়াকে, “কি হয়েছে?”
দিয়া একটু বিরক্তি প্রকাশ করেই উত্তর দেয়, “বলছি তো কিছু হয়নি। আমার সব বিষয়ে তোমার এত প্রশ্ন কিসের?”
অভি দমে যায় কথাটা শুনে, “বেশ তাহলে। উত্তর যখন দেবে না তাহলে হাত ধরেছ কেন? একা একা চলতে পারো তো।”
দিয়া, “এখানে দাঁড়িয়ে কি ঝগড়া করবে নাকি?”
অভি, “আমি ঝগড়া করব বলে আসিনি, দিয়া।”
অভির হাতের মুঠো থেকে একটা ঝটকা দিয়ে দিয়া নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়। হাতটা ছাড়ানোর সময়ে বুকের মধ্যে ভীষণ কষ্ট হয়, আসলে অভিকে এই ফোনের ব্যাপারে জানাতে চাইছিল না। যতহোক লেখা ওর বান্ধবী মাত্র, কিন্তু অভির খুব কাছের আত্মীয়।
হাত ছাড়িয়ে হাঁটা থামিয়ে অভির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তুমি জেনে কি করবে?”
চোয়াল চেপে উত্তর দেয় অভি, “দরকার আছে। তোমার চোখ ভীষণ ভাবে কথা বলে, দিয়া। কিছু একটা তো হয়েছে সেটা বুঝতে পারছি।” দিয়া মাথা নিচু করে নেয়। অভি ওর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, “এইভাবে মাঝপথে হাত ছেড়ে দেবো বলে এই হাত ধরিনি, দিয়া।”
কথাটা ভীষণ সত্যি, দিয়ার শরীরের প্রতিটি শিরা উপশিরা এই কথার তাৎপর্য ভালো করে বোঝে। ক্ষনিকের জন্য দৃষ্টি বাষ্পীভূত হয়ে আসে, সেটা সামলে নিয়ে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, “ওই যে টাকা দিয়েছিল সেই নিয়ে আর কি।” অভি ভুরু কুঁচকে দিয়ার দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে। দিয়া বলে, “এখন পনেরো হাজারের মতন বাকি।” বলে থেমে যায়।
অভি জিজ্ঞেস করে, “সেটা জানি, তারপর?”
কাঁচুমাচু মুখ করে মাথা নাড়ায় দিয়া, “প্লিজ বুবু, আমি চাই না আমার জন্য তোমার আর ঝন্টুর মধ্যে কোন মনোমালিন্য হোক।”
কথাটা শুনে অভির চোয়াল কঠিন হয়ে যায়, “সেটা পরের কথা। আমি জানতে চাই তারপর কে কি বলেছে।”
গলা শুকিয়ে আসে দিয়ার, “কালকে জানো, ঝন্টু সেটা কথায় কথায় আমাকে একটু শুনিয়ে দিল।”
অভি ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে, “লেখা জানে এইসব?”
দিয়া মাথা নাড়ায়, “না মানে, লেখা শুধু এইটুকু জানে যে ঝন্টু আমাকে টাকা দিয়েছে। বাকি কিছু জানে না।”
অভি অবাক, “মানে? লেখা জানে না এমন কি করে হয়?”
দিয়া বুক ভিরে শ্বাস নিয়ে বলে, “কোথাও বসে কথা বলি?” অভির পাশ ঘেঁসে দাঁড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে মুখ কাচুমাচু করে বলে, “প্লিজ এইভাবে হাত ছেড়ো না।”
অভি চাপা কঠিন কণ্ঠে বলে, “এরপর যা জিজ্ঞেস করব তার সোজা উত্তর দেবে। না হলে...”
বাধ্য মেয়ের মতন মাথা দুলিয়ে অভির হাত নিজের হাতের মুঠোতে নিয়ে বলে, “আচ্ছা ঠিক আছে।”
অভি স্মিত হেসে দিয়ার ম্লান চেহারা দেখে বলে, “এই সুনু, আমি আছি তো।”
দিয়ার চোখ জোড়া ছলছল করে ওঠে, “জানি তো তাই মাঝে মাঝে বড্ড ভয় হয়।”
একটা রেস্টুরেন্তে বসে কোল্ড কফির অর্ডার দিয়ে দিয়া বলতে শুরু করে, “জানো, লেখা খুব নরম গোচরের মেয়ে। একটু চুপচাপ থাকতে ভালোবাসে, মনের মধ্যে কুটিলতা নেই। সহজে মানুষকে বিশ্বাস করে ফেলে। আমার এই মেকআপ আর্টিস্ট হওয়ার পেছনে ওর কিছু অবদান আছে। ওর বিয়ের পরে, ঝন্টুকে বলে আমার মেক আপ কেনার জন্য পঞ্চাস হাজার টাকা দিয়েছিল। আমি প্রথমে নিতে চাইনি, এক প্রকার জোর করেই লেখা আমাকে সেই টাকা দিয়েছিল। ও আমাকে দিয়েছিল বন্ধুত্তের খাতিরে, কন ধার হিসাবে নয়, তাই কোনদিন আমার কাছ ফেরত চায়নি। টাকাটা লেখা নিজে হাতে দেয়নি, দিয়েছিল ঝন্টু। টাকা পাওয়ার পরে আমি অবশ্য লেখাকে জানিয়েছিলাম যে ঝন্টু আমাকে টাকা দিয়েছে। তবে টাকা দেওয়ার আগে ঝন্টুর প্রচুর প্রশ্ন। কোথায় খরচ করবে, কি ভাবে খরচ করবে। ব্যাবসায়ি মানুষ, এমন প্রশ্ন থাকা স্বাভাবিক সেটা বুঝতেই পেরেছিলাম। সেই ভেবেই আমি ঠিক করেছিলাম যে আমি সব টাকা ফেরত দিয়ে দেবো। আমি চাইনি আমার জন্য লেখার মান সন্মান ওর শ্বশুর বাড়ির সামনে নিচু হয়ে যাক।” অভি চুপ করে দিয়ার কথা গুলো শুনে যায়। দিয়া হাতের নখ খুটতে খুটতে বলে, “এখন পনেরো বাকি। সেটা আর শোধ করতে পারছি না। কিছুতেই সেই ভাবে টাকা জমাতে পারি না, জানো। শুধু বিয়ের সিজেনে একটু বেশ কিছু আয় হয় আর বাকি গুলোতে সেইভাবে কিছুই আসে না। বাকি মাস গুলোর কথা ভেবে আমাকে খরচ করতে হয়। কিছু একটা কেনার আগে অনেক ভাবতে হয়। বাবার কাছে কতদিন এইভাবে হাত পাতা যায় বলো।”
অভি জিজ্ঞেস করে, “ঝন্টু কি বলেছে?”
দিয়া অভির দিকে তাকিয়ে খানিকক্ষণ চুপ থেকে উত্তর দেয়, “গতকাল দুপুরে ফোন করে বলে...”
অভি, “কি বলে?”
দিয়া, “এখন আসল ফেরত দিতে পারিনি, এরপর নাকি সুদ চাই।”
অভি ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে, “মানে?”
দিয়া অন্য দিকে মুখ ঘুড়িয়ে বলে, “জানি না।”
অভি হেসে ফেলে, “আরে হয়ত তোমার সাথে ইয়ারকি মেরেছে।”
দিয়া নিজের থমথমে চেহারায় হাসি ফুটিয়ে বলে, “হ্যাঁ তাই হবে।” একটু থেমে কোল্ড কফিতে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা তুমিও তো লেখার সাথে ইয়ার্কি ঠট্টা করো?”
অভি মুচকি হসে মাথা দোলায়, “হুম, ভীষণ ভাবেই করি। সম্পর্কে বৌদি তায় আবার আমার চেয়ে একটু ছোট আবার ঝন্টুর বৌ, সেই হিসাবে বেশ করি।”
ম্লান হাসে দিয়া, “আমিও প্রথমে ঝন্টুর ইয়ার্কি ঠট্টা ঠিক সেই ভাবেই ভাবতাম...” বলতে বলতে থেমে গেল দিয়া।
দিয়ার থমথমে চেহারা আর ম্লান হাসির অর্থ ভীষণ ভাবেই অভিকে ভাবিয়ে তোলে। ঝন্টুর ব্যাপারে ঠিক কি বলতে চাইছে দিয়া? মনের মধ্যে হাজার প্রশ্ন, সব না হলেও ঝন্টুর চরিত্র সম্পর্কে বেশ ওয়াকিবহাল, তবে বৌয়ের বান্ধবীর সাথে ইয়ার্কি ঠাট্টা চলতেই পারে। কিন্তু দিয়ার চোখের ভাষা অন্য কিছু একটা বলতে চাইছে।
অভি ওর থুঁতনি ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলে, “এখন ঝন্টুকে একটা ফোন করতে পারো?”
দিয়া চাপা আঁতকে ওঠে, “নাহ... তুমি পাগল হলে নাকি?”
অভি চোয়াল চেপে বলে, “তুমি ফোন কর, ও কি বলে আমি শুনতে চাই। স্পিকারে দেবে আর কল রেকরডিং করবে।”
একটু ইতস্তত করে দিয়া, তারপর ঝন্টুকে রিং করে। মোবাইল টেবিলে রেখে স্পিকার চালিয়ে দেয়। অন্যপাশ থেকে ঝন্টু একটু পরে ফোন উঠিয়ে বলে, “কি হল কি ব্যাপার?”
দিয়া ঠোঁটে মেকি হাসি মাখিয়ে বলে, “না এমনি। মানে লেখার ফোন পাচ্ছিলাম না তাই তোমাকে ফোন করলাম।”
ঝন্টুর কণ্ঠে একটু চটুল হাসি, “আচ্ছা, তাই নাকি? না কি আমার কথা মনে পরে গেল?”
ঝন্টুর হাসি শুনে অভির চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। দিয়া একবার অভির দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়, “যে রকম ভাববে সেটাই।” একটু থেমে বলে, “তুমি গতকাল সুদের কথা বলছিলে।”
ঝন্টু গলা নামিয়ে বলে, “হ্যাঁ, বল।”
দিয়া একবার অভির কঠিন চেহারার দিকে তাকিয়ে, মেকি চটুল হেসে ঝন্টুকে উত্তর দেয়, “হিসেব করলে কি, কতটা সুদ হয়?”
ঝন্টু নচু গলায় বলে, “ক্যাশ না কাইন্ড (নগদ না অন্যকিছু)?”
কথাটা কানে যেতেই অভির হাত মুঠো হয়ে যায়, ইচ্ছে করে এখুনি নৈহাটি গিয়ে ঝন্টুর কলার ধরে কানের গোড়ায় কষিয়ে একটা চড় দিতে। কোন মতে রাগ গিলে নেয় অভি। অভির রক্ত লাল চোখ দেখে দিয়ার ভয় হয়, ওর হাত চেপে ধরে শান্ত করে ঝন্টুকে উত্তর দেয়, “কি চাই তোমার?”
ঝন্টু চাপা হেসে উত্তর দেয়, “কি হিসাবে দিতে পারবে? আমার দুটোতেই চলবে।”
অভি ফোনের স্পিকার চেপে ধরে দিয়াকে ইশারা করে ঝন্টুকে জিজ্ঞেস করতে যে কাইন্ডে ঠিক কি চায় সেটা জিজ্ঞেস করুক। হাজার প্রশ্ন নিয়ে অভির দিকে তাকায়। অভি অভয় দিয়ে দিয়াকে সেই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে বলে। অভি জানতে চায় ঝন্টুর আসল অভিসন্ধি।
দিয়া মেকি চটুল হেসে ঝন্টুকে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা কাইন্ডে দিলে কি রকম কাইন্ড চাই তোমার?”
এই কথা শুনে ঝন্টুর জিবে যেন জল চলে এলো, “সত্যি বলছ?”
দিয়া অভির দিকে একবার তাকিয়ে ফোনের উত্তর দেয়, “হ্যাঁ...”
ঝন্টু চাপা হেসে বলে, “বেশ তো কবে দিতে চাও?”
দিয়া চোয়াল চেপে উত্তর দেয়, “কি চাও, কবে চাও খুলে বল?”
ঝন্টু, “এর পরের মঙ্গলবার হতে পারে?”
দিয়া জিজ্ঞেস করে, “কি হতে পারে?”
ঝন্টু একগাল হেসে বলে, “ন্যাকা সেজো না দিয়া। তুমিও জানো আমি কি চাই আমিও জানি তোমার মনের কি ইচ্ছে।”
দিয়া, “না, আমি ঠিক বুঝতে পারছি না তুমি কি বলতে চাইছ, একটু খুলেই বল না।”
ঝন্টু, “এই একটু কাছাকাছি আসা এই আর কি। তুমি তো এমনিতে কাছেই আসো না আজাকাল, টাকা দেওয়ার পরে একদম হাতের নাগালের বাইরে চলে গেছো।” দিয়া একটা মেকি হাসি দেয়। ঝন্টু বলে, “পরের মঙ্গলবার আমরা তাহলে এই এক নম্বর গেটের কাছের কোন হোটেলে মিট করতে পারি। তারপর সেখানে দুজনে মিলে একটু গল্প গুজব একটু হুইস্কি একটু মজা করব এই আর কি। ওহ, হ্যাঁ, তুমি প্লিজ একটা হট প্যান্ট নিয়ে এসো। উফফফ তোমার ওই মোটা মোটা থাই গুলো...”
এইভাবে অভির সামনে অন্য কেউ ওর শরীরের বর্ণনা দিচ্ছে কানে যেতেই দিয়ার কান লাল হয়ে যায়। অভির রক্ত চক্ষু দেখে দিয়া সঙ্গে সঙ্গে ঝন্টুকে থামিয়ে দেয়, “হ্যাঁ আমি সব বুঝে গেছি। দেখছি কি করা যায়...”
ঝন্টুর শেষ কথাটা শুনে অভি আহত ময়াল সাপের মতন ভীষণ ভাবেই ফুঁসতে শুরু করে দেয়। কথা গুলো যেন অভির কানের মধ্যে লাভা বইয়ে দেয়। ঝন্টুর এত বড় সাহস যে এই নোংরা ভাষায় দিয়াকে এইভাবে অপমান জনক কথাবার্তা বলবে? ওর চোয়াল কঠিন হয়ে যায়। দিয়া চোখ বুজে দুই হাতের মধ্যে অভির হাত দুটো শক্ত করে ধরে থাকে। চেহারায় কাতর মিনতি, এই তোমার মামাতো ভাইয়ের আসল রূপ। অভি মাথা ঝাঁকিয়ে চাপা গর্জে ওঠে, শালাকে আমি মেরে ফেলবো। দিয়া ওকে ক্ষান্ত করে, প্লিজ বুবুসোনা শান্ত হও। অভি চোয়াল চেপে ঝন্টুকে বলতে বলে যে ও টাকা দিয়ে দেবে। অভির একাউন্টে এই হাজার পঞ্চাসের মতন পরে রয়েছে, বড়দি কিছু দিয়ে গেছে, তার কিছু দিয়াকে দিয়ে দেবে।
লজ্জায় অপমানে দিয়ার কান গাল সারা চেহারা লাল হয়ে গেছে। ঝন্টুর সাথে বিন্দু মাত্র কথা বলার ইচ্ছে নেই তাও অভির কথা মেনে ঝন্টুকে বলে, “আচ্ছা পরের মঙ্গলবার তো হবে না, আমার একটা কাজ আছে। মানে বুঝতেই পারছো এখন পুরো বিয়ের সিজেন চলছে। প্রচন্ড ব্যাস্ত।”
ঝন্টু শীতল চাপা গলায় বলে, “অনেকদিন হয়ে গেল কিন্তু দিয়া...”
দিয়া, “সরি, সে আমি জানি, কিন্তু এই মাসে সত্যি খুব বিজি থাকবো। তোমার যদি নেহাত এখন চাই তাহলে ক্যাশ দেবো...”
ঝন্টু হেসে ফেলে, “আরে আরে কি হল, একদম আসতে পারবে না নাকি?”
দিয়া চাপা কঠোর কণ্ঠে উত্তর দেয়, “না গো, এই মাসে একদম সম্ভব নয়। তোমার ইন্টারেস্ট কত হয় বল, আমি যত তাড়াতাড়ি পারি শোধ করে দেবো।”
ঝন্টুর কণ্ঠে নিরুচ্ছাস যেন কিছু ওর নাগাল থেকে হাত ফসকে বেড়িয়ে গেল, “ওহ, আচ্ছা। তাহলে এই দশ হাজারের মতন হয়... কবে দিচ্ছো তাহলে?”
দিয়া, “একটু সময় দাও, এই মাসের মধ্যে পনেরো দিয়ে দেব। বাকিটা একটু পরে।”
ঝন্টু ছোট উত্তর দেয়, “ফারস্ট জানুয়ারির মধ্যে দিয়ে দিও তাহলে।”
দিয়া, “হুম, আচ্ছা আজকে রাখছি।”
ঝন্টু আহত কণ্ঠে হেসে বলে, “লেখাকে ফোন করবে না?”
দিয়া মেকি হেসে উত্তর দেয়, “হুম পরে করব।”
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
পর্ব পাঁচ। রাগ অনুরাগ (#10-#35)
ঝন্টুর ফোন রাখতেই গর্জে ওঠে অভি, “এই শালাকে কেটে ফেলে দেবো।”
দিয়া ওর হাত দুটো ধরে মিনতি করে, “প্লিজ বুবু, এমন কিছু কর না।”
অভি ভুরু কুঁচকে বলে, “দেখো দিয়া, তোমার ওপরে কোন আঘাত আমি সহ্য করব না, সে আঘাত যে কেউ করুক। তোমাকে টাকা দিয়েছে বলে তোমাকে কিনে নিয়েছে নাকি? ওই শালার গলার ওপর পাড়া দিয়ে ধড় থেকে মুন্ডু আলাদা করে দেবো।” দিয়া ভীষণ ভাবেই ভয় পেয়ে যায়। অভি বলে, “তুমি এখুনি লেখাকে ফোন করে সব জানিয়ে দাও।”
দিয়া চাপা আর্তনাদ করে ওঠে, “নাহহহহ”
অভি জিজ্ঞেস করে, “কেন না? লেখার জানা উচিত ওর বরের আসল চরিত্র। ... দেখো দিয়া...”
দিয়া মুখ কাঁচুমাচু করে বলে, “লেখা খুব ভেঙ্গে পড়বে গো।”
অভি দিয়ার হাত ধর বলে, “লেখার জন্য বড্ড চিন্তা হচ্ছে আর ঝন্টু তোমাকে এইসব ইশারা করল তার বেলায় কিছু নয়?”
দিয়া মাথা নিচু করে নরম সুরে বলে, “না মানে...”
অভি চোখ বুজে বেশ কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থাকে। কান গরম, কানের মধ্যে থেকে মনে হয় যেন ধোঁয়া বের হচ্ছে। লেখার সাথে বৌদি হিসাবে হাসি ঠাট্টা যে করে না সেটা নয়, ওর হাসি ঠাট্টা, ইয়ার্কি মশকরা সব কিছুই সবার সামনে, একটা মিষ্টতার ছোঁয়া ভালোলাগার ছোঁয়া যেখানে কোন কুটিলতা থাকে না, কাম ঘন্ধ থাকে না। বসিরহাটের সেই রাতের ঘটনা অকস্মাৎ ঘটে গিয়েছিল, সেই রাতের নিষিদ্ধ চুম্বনে কোন কুটিলতা ছিল না, কোন দুরভিসন্ধি ছল চাতুরি ছিল না, দুই জনের ভেতরেই নিষিদ্ধ অভিলাশের ছোঁয়া ছিল। কিন্তু দিয়ার সাথে ঝন্টু যেভাবে কথাবার্তা বলল তাতে ভীষণ ভাবেই এক দুরভিসন্ধির ছোঁয়া, এক ভীষণ কুটিল ছলের ধোঁয়া, ঝন্টুর কণ্ঠে টাকার পরিবর্তে নারী মাংসের ক্ষুধা, ভীষণ ভাবেই অভিকে আহত করে।
অভি ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “না মানে কি, না মানে? সেই ছোটবেলা থেকে ঝন্টুকে আমি চিনি। বিয়ের আগে যা করেছে সেটা আলাদা ব্যাপার। কলেজের দিনে অনেক প্রক্সি দিয়েছি...”
দিয়া ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করে, “মানে ?”
অভি চোয়াল চেপে বলে, “কলেজ থেকেই ওর অনেক বান্ধবী ছিল। মামার কাপড়ের দোকান, সেখান থেকে টাকা মেরে অনেক ফুর্তি করেছে সেই সময়ে। কিন্তু আমার গায়ে আগুন লাগলে আমি চুপ থাকবো না, সে যেই হোক না কেন।”
দিয়া ওর হাত দুটো ধরে বলে, “একটু শান্ত হও...”
অভি চোয়াল চেপে বলে, “কিসের শান্ত?”
দিয়া ওর কাঁধে মাথা রেখে নরম সুরে বলে, “জানো কত কিছু ভেবে এসেছিলাম... তুমি না এইসব জিজ্ঞেস করে মুড খারাপ করে দিলে...”
অভি দিয়ার দিকে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে বলে, “আচ্ছা, আমি মুড খারাপ করেছি? তুমি এই নিয়ে গুমড়ে থাকতে সেটা ভালো লাগতো কি?”
অভির ভালোবাসা দেখে দিয়ার চোখ জোড়া ছলাত ছলাত করে আসে, “তুমি...”
অভি বুক ভরে শ্বাস নিয়ে বলে, “আমি আছি, আমি ঝন্টুকে দেখে নেব আর বাকিটা আমার ওপর ছেড়ে দাও।”
অভিকে মাথা নিচু করে চুপচাপ চোখ বন্ধ করে বসে থাকতে দেখে দিয়ার ভীষণ ভয় হয়। ঠিক এটাই ভয় পাচ্ছিল, মনে প্রানে কাউকে নিজের এই সমস্যার মধ্যে জড়াতে চায়নি, আর তাই এখন পর্যন্ত লেখাকেও এই কথা জানায়নি দিয়া। আগে দিয়ার সাথে ঝন্টু বেশ হাসি ঠাট্টা করত, ইয়ার্কির ছলে অনেকবার অনেক কিছুই বলেছে। তবে সম্প্রতি অভির দিদির বিয়ের কয়েকদিন আগে থেকে ঝন্টুর কথাবার্তার ধরন বেশ পালটে যায়। যেন সব সময়ে একটু ভিন্ন ইশারা, চোখের মধ্যে একটা খিদে। এই ধরনের চাহনি, এই ধরনের হাতছানি ওকে প্রায় প্রত্যেকদিন সইতে হয়। এসবের থেকে নিজেকে নিপুণ ভাবে বাঁচাতে জানে দিয়া, অনেক বিয়ে বাড়িতে যেতে হয়, অনেকের সাথে মিশতে হয়। কিন্তু এইভাবে এই হাতছানি ওর সাধের বান্ধবী লেখার স্বামীর কাছ থেকে আসবে সেটা একটু ভাবিয়ে তোলে দিয়াকে। বিয়ের কটা দিন নিজেকে ঝন্টুর হাত থেকে নিপুণ ভাবেই বাঁচিয়ে গেছে, কিন্তু ফোনে যেভাবে গতকাল কথা গুলো বলল তাতে ভীষণ আহত হয়েছে, নিজেকে নিজের কাছে ভীষণ ভাবেই ছোট মনে হয়েছে, মনে হয়েছে যেন টাকার বিনিময়ে ঝন্টু ওকে কিনে নিতে চাইছে।
অভির হাত ধরে দিয়া মনতি করে বলে, “প্লিজ মাথা গরম কর না। আমি তোমার সঙ্গে আছি বা আমাদের এই ব্যাপারে ওরা কিন্তু কেউই জানে না।”
অভি খানিকক্ষণ দিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখে বলে, “আচ্ছা বেশ, আমি এই নিয়ে ঝন্টুর সাথে কিছু কথা বলব না। তবে এখন একটা ফোন করব ওকে।”
দিয়া ভয়ে কুঁকড়ে যায়, “কি বলবে?”
অভি ওকে অভয় দিয়ে বলে, “চিন্তা নেই, এমন কিছু বলব না যাতে আমাদের ব্যাপারে ওরা কিছু জানতে পারে। তবে ফোনটা করতে দাও...” বলে এক বাঁকা হাসি দেয় দিয়ার দিকে দেখে।
অভি নিজের ফোন থেকে ঝন্টুকে ফোন করে, “কি রে বাল কেমন আছিস? দিদিভাইয়ের বিয়ের পরে একবার ও ফোন করলি না যে?”
ঝন্টু হেসে ফেলে, “আর বলসি না, বহুত ব্যাস্ত। সামনে পঁচিশে ডিসেম্বর আর ফারস্ট জানুয়ারি। দোকান সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি রে।”
দিয়ার দিকে তাকিয়ে ঝন্টুকে হেসে উত্তর দেয়, “আচ্ছা আমার জানেমন কেমন আছে? অনেকদিন দেখা হয়নি? একদিন বাড়িতে আয়।”
ঝন্টু হেসে ফেলে, “হ্যাঁ ভালো আছে। আর তোর খবর বল?”
অভি, “আমার আর খবর কি, একা একা বসে নাড়াচ্ছি এই আর কি।” দিয়ার দিকে তাকিয়ে কণ্ঠে কপট সুর এনে বলে, “আরে ওই দময়ন্তীর কি খবর রে?”
দিয়া ভুরু কুঁচকে অভির দিকে হাজার প্রশ্ন নিয়ে তাকায়। অভি ইশারায় চুপ থাকতে বলে।
ঝন্টু হেসে ফেলে, “আরে কোন খবর নেই রে মালটার।”
মাল কথা শুনে দিয়ার ইশারা করে জানায় ঝন্টুর গাল ফাটিয়ে দেবে। অভি ওকে শান্ত করে ঝন্টুকে জিজ্ঞেস করে, “ওহ, আমি ভাবলাম একটু যদি...”
ঝন্টু হেসে ফেলে, “তুই বাল একা একা নাড়া, ও মেয়ে তোর টাইপের নয়।”
দিয়ার দিকে চোখ টিপে তাকিয়ে অভি হেসে ফেলে, “আমার টাইপের নয় মানে?”
ঝন্টু গলা নামিয়ে বলে, “মানে খুব চঞ্চল, খুব দুরন্ত টাইপের বুঝতে পারছিস তো কি বলছি।”
অভি দিয়ার দিকে চোখ টিপে হেসে ঝন্টুকে উত্তর দেয়, “হুম, ঠিক বলেছিস। লেখা একদম আমার টাইপের, শান্ত মিষ্টি... শালা আমার আগেই তুই উড়িয়ে নিলি।”
লেখার সম্বন্ধে “শান্ত আর মিষ্টি” উপমা শুনতেই দিয়া অভির বাজুতে একটা জোরে চিমটি কেটে চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করে, আচ্ছা বাবা, আমি মিষ্টি নই তাহলে? অভি, প্রেমিকাকে সান্ত্বনা দিয়ে ইশারায় জানায়, যে তুমি আমার মুয়াআহহহহহহ...
ঝন্টু হেসে ফেলে, “শালা আর কাউকে পেলি না শেষ পর্যন্ত আমারটাকে নিয়ে টানাটানি।”
অভি হাসে, “কেন তোর ইন্সিকিওর ফিল হচ্ছে নাকি?”
ঝন্টু হেসে দেয়, “বাল কিসের ইন্সিকিউরিটি রে? পিসি তোর জন্য মেয়ে খুজবে তাকেই বিয়ে করিস।”
দিয়ার দিকে দেখে, অভি চোয়াল চেপে হেসে দেয়, “চ্যালেঞ্জ করছিস নাকি?”
ঝন্টু, “কিসের?”
অভি, “লেখাকে পটানোর।”
ঝন্টু হাহা করে হেসে দেয়, “আমি জানি, তোর দ্বারা হবে না।”
অভি, “কি বলিস, লেখা মেরে দিল কা টুকরা।”
হেসে দেয় ঝন্টু, “তো?”
অভি, “মনে আছে আকাশের কথা।”
ঝন্টু, “হ্যাঁ, ওই যার পা ভেঙ্গে দিয়েছিলি তো।”
অভি, “হ্যাঁ। দিদিভাইয়ের জন্য যদি কারুর পা ভাঙতে পারি তাহলে বুঝতে পারছিস লেখার জন্য কি করতে পারি।”
ঝন্টু হেসে ফেলে, “কি আর করবি তুই, রাতে বাল ছিঁড়ে আঁঠি বাঁধবি আর কি।”
অভি চোয়াল চেপে হেসে বলে, “লেখার জন্য আমি কিন্তু তোকেও কেটে গঙ্গায় ভাসিয়ে দিতে পারি।”
অভির কথাটা রসিকতা ভেবেই ঝন্টু হেসে বলে, “যা যা, তুই বাল ছিঁড়ে আঁঠি বাঁধ গে যা।”
অভি হেসে বলে, “বেশ তবে তাই হোক, চ্যালেঞ্জ রইল কিন্তু।”
ফোন রেখে দিল অভি। দিয়া অভির চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করে যে এরপর কি করতে চলেছে। লেখার সাথে নোংরামো কিছু করলে তাহলে ঝন্টুর মধ্যে আর অভির মধ্যে তফাত কোথায়? একজন টাকার বিনিময়ে শরীর চেয়েছে, অন্যজনে চ্যালেঞ্জ হিসাবে ওর বান্ধবীকে কি বিছানায় চাইবে? না অভি এমন মানুষ নয়, যদিও মাত্র কয়েকদিনের চেনা পরিচিতি কিন্তু ছেলেটাকে দেখে এমন মনে হয়না।
অভির হাতের ওপর হাত রেখে জিজ্ঞেস করে, “তুমি লেখার সাথে কি করবে?”
দিয়ার আশংকিত চেহারা দেখে অভি হেসে ফেলে, “এই, আমি লেখার সাথে কিছুই করব না।”
দিয়া গভীর ভাবে অভির দুই চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তাহলে এই চ্যালেঞ্জ ?”
অভি মুচকি হাসে, “আমি অতশত ভেবে কাজ করিনা দিয়া। আমি একটু ইম্পালসিভ বলতে পারো, মাথায় হুট করে কিছু এসে গেলে তখন কি করব সেটা জানি না। ঝন্টুর এই ধরনের কথাবার্তা শুনে আমার মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল তাই লেখাকে নিয়ে এই চ্যালেঞ্জের কথা বললাম।”
দিয়া মাথা নাড়িয়ে ভাবনাগ্রস্থ হয়ে বলে, “সেটা তো বুঝলাম, কিন্তু তুমি কার পা ভেঙ্গে দিয়েছ?”
অভি এবারে হেসে ফেলে, “আরে সে অনেকদিন আগের কথা। দিদিভায়ের সাথে একটা ছেলে খুব খারাপ ব্যাবহার করেছিল তাই তার পা ভেঙ্গে দিয়েছিলাম।”
দিয়া অভির কথা শুনে বেশ কিছুক্ষন ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকার পর প্রশ্ন করে, “তাহলে এত কথা যে ঝন্টুর সাথে বললে সেটা কি কারনে?”
অভি খানিকক্ষণ চিন্তা করে বলে, “দেখো, সে সব নিয়ে এখন ভাবিনি, পরে দেখা যাবে।” দিয়ার চোখের দিকে তীক্ষ্ণ নজরে দেখে বলে, “তবে তোমার সাথে ঝন্টু যা করেছে তার খেসারত ওকে দিতে হবে।”
[+] 4 users Like ddey333's post
Like Reply
বহু বন্ধুদের মনে নিশ্চয় বহু প্রশ্ন ভিড় করেছে যে পিনুরাম এইভাবে কেন পালিয়ে গেল। আসলে পিনুরাম পালিয়ে যায়নি, আছে সাথেই আছে। গল্প লেখা তো আর আমাদের পেশা নয়, কর্মক্ষেত্র আছে, সংসার আছে, সেই সব সামলেই সময় পেলে দুই লাইন লিখতে বসতাম। সম্প্রতি সেই সময় টুকুর বড় অভাব ঘটেছে তাই দুঃখিত। এই জন্যে আমি গল্প লিখতে চাইনা, কারন কখন কি হয় সেটা কারুর হাতে থাকে না। ক্ষমা করে দেবেন বন্ধুরা!!!!!
[+] 4 users Like ddey333's post
Like Reply
(11-09-2020, 10:13 PM)Mr Fantastic Wrote: আরে লাভলি লাভলি, ফাটাফাটি, সেরা, পুরো জমে ক্ষীর, শো হাউসফুল, দুটো সিটি মেরে দিলাম  banana happy
দাদা আপনার উপর ভরসা করছি পিনুদা যতটা লিখেছেন আপনি ততখানি পোষ্ট করবেন। তারপর সম্পূর্ণ করার দায়িত্ব কলির কেষ্টকে দেওয়া হবে  Smile Shy

কলির কেষ্ট দাদা ,
এখান থেকে এবার আপনি শুরু করে দিন .......
শেষ করুন গল্পটা !!

Namaskar Smile Namaskar Smile
Like Reply
, dada nbakita taratari diben
Like Reply
(12-09-2020, 03:39 PM)ddey333 Wrote: কলির কেষ্ট দাদা ,
এখান থেকে এবার আপনি শুরু করে দিন .......
শেষ করুন গল্পটা !!

Namaskar Smile Namaskar Smile

Ekanei ki sesh??
Like Reply
(12-09-2020, 09:55 AM)ddey333 Wrote: বহু বন্ধুদের মনে নিশ্চয় বহু প্রশ্ন ভিড় করেছে যে পিনুরাম এইভাবে কেন পালিয়ে গেল। আসলে পিনুরাম পালিয়ে যায়নি, আছে সাথেই আছে। গল্প লেখা তো আর আমাদের পেশা নয়, কর্মক্ষেত্র আছে, সংসার আছে, সেই সব সামলেই সময় পেলে দুই লাইন লিখতে বসতাম। সম্প্রতি সেই সময় টুকুর বড় অভাব ঘটেছে তাই দুঃখিত। এই জন্যে আমি গল্প লিখতে চাইনা, কারন কখন কি হয় সেটা কারুর হাতে থাকে না। ক্ষমা করে দেবেন বন্ধুরা!!!!!
আপনি পিনুরাম!!!সত্যি আমি অভিভূত,,,
Like Reply
(13-09-2020, 07:21 AM)kunalabc Wrote: আপনি পিনুরাম!!!সত্যি আমি অভিভূত,,,

না ওটা স্বয়ং পিনুরামের বলা কথা, ddey দাদা পুরোটাই পোষ্ট করেছেন এখানে
Like Reply
(12-09-2020, 04:13 PM)S2929 Wrote: Ekanei ki sesh??

পিনুদা এতটা অবধিই লিখেছিলেন  Sad
Like Reply
(12-09-2020, 03:39 PM)ddey333 Wrote: কলির কেষ্ট দাদা ,
এখান থেকে এবার আপনি শুরু করে দিন .......
শেষ করুন গল্পটা !!

Namaskar Smile Namaskar Smile

OMG!! কিন্তু এটা কি করে সম্ভব !!?? পিনুরামের গল্প আমি শেষ করবো!! আমাকে নিয়ে একটু বেশি মশকারা করা হয়ে গেলোনা দাদা ??? banghead Namaskar

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

Like Reply




Users browsing this thread: 15 Guest(s)