Posts: 145
Threads: 8
Likes Received: 292 in 106 posts
Likes Given: 17
Joined: May 2020
Reputation:
34
03-07-2020, 11:29 AM
(This post was last modified: 03-07-2020, 11:34 AM by pnigpong. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
পর্ব এক। ডায়রির পাতা (#1-#1)
সকাল থেকে ঝিরঝির বৃষ্টিতে ঠিক ভাবে চোখ খুলতে ইচ্ছে করে না, মনে হয় যদি কেউ থাকত তাহলে বিছানায় চা দিয়ে যেত। এসিটা রাতে আর বন্দ করাই হয়নি, পাতলা কম্বলটা আরো টেনে নিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পরা ছাড়া আর কিছুই ভেবে পেল না। গত পরশুদিন অভিনন্দনের বাবা সপ্তাহ দুয়েকের জন্য অফিস টুরে গেছে তাই বাড়িটা একদম খালি, যা খুশি তাই করা যায়। বিশাল বিলাসবহুল ফ্লাট একদম ফাঁকা তাই দেয়াল গুলো মাঝে মাঝেই ওর গলা চেপে ধরে। এই বাড়িতে ঢুকলে মনে হয় যেন সোনার খাঁচায় বন্দি এক পাখী। মনে হয় যেন চারটে দেয়ালের ওপরে একটা ছাদ কোনমতে নিজেকে ঠেকা দিয়ে আছে। এই বিশাল ফ্লাটে বিলাসিতার কোন প্রকারের খামতি রাখেনি অভির জন্মদাতা, মিস্টার দেবাশিস চ্যাটারজি। খালি বাড়িতে আসার এমনিতে কোন ইচ্ছে ওর ছিল না, কিন্তু গতকাল ওর কলেজের বাল্য বন্ধু, অনিমেশ ওকে অনেক ধরল পারটি করবে তাই অনেক রাত পর্যন্ত তুমুল পারটি চলেছে বাড়িতে। অনিমেশ নতুন চাকরি পেয়েছে একটা বড় সফটওয়ার কোম্পানিতে সেই উপলক্ষে পারটি। মনিষা, দেবেশ, কমলিকা, অশোক, কাবেরি, ইন্দ্রজিত, অনুপমা অনেকেই এসেছিল। পারটি বলতে সেই মদ খাওয়া, গল্প গুজব আর বন্ধু বান্ধবীরা মিলে উদ্দম নাচানাচি। ওর বাড়ি খালি তাই ওর বন্ধুদের পোয়াবারো, যখন তখন পারটি করা যায়, মজা করা যায়। বাড়ি যখন খালি হল তখন বাজে প্রায় রাত দুটো, তখন আর কাউকে ফোন করা হয়ে ওঠেনি। তাও আধবোজা চোখ মেলে একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সাড়ে দশটা বাজে, এখন কাজের মেয়েটার দেখা নেই।
বালিশের কোন এক কোনায় মোবাইল হাতড়ে বের করে দেখে এক গাদা মিসকল। এতগুলো মিস কল হবে সেটা জানা কথা, গতরাত থেকে ফোন উঠায়নি অভি। বাবার ফোনের জন্য অত মাথা ঘামায় না, কিন্তু জ্যাঠতুতো দিদি, মনামির একগাদা মিস কল দেখে ঘুমের রেশটা এক ধাক্কায় কেটে গেল। এই সেরেছে, আজকে ওর কপালে অনেক দুঃখ আছে। জেঠিমা আর দিদি মিলে ওর পিঠের চামড়া তুলে ডুগডুগি বাজাবে। দিদিকেই ফোন করতে যাবে আর ঠিক সেই সময়ে দিদির ফোন এলো।
মনামি ওই পাশ থেকে রেগেমেগে চিৎকার করে ওঠে, “কি ব্যাপার রে তোর? গতরাত থেকে কোন পাত্তা নেই? পারটি করছিস কর তাই বলে একবার ফোন করবি না? আমি চিন্তা করে হন্যে হয়ে যাচ্ছি। বাড়ি আসার নাম নেই নাকি?”
ধরমর করে বিছানা ছেড়ে লাফিয়ে ওঠে অভি, “কি রে এত চিল্লাছিস কেন বলত, আমি এখুনি বেরুচ্ছি।”
মনামি চাপা স্বরে বলে ওঠে, “প্লিস সোনা তাড়াতাড়ি আয়, অনেক কথা আছে।”
দিদির গলাটা কেমন যেন শুকনো ঠেকে, “ঠিক কি হয়েছে বলত?”
মনামি চাপা স্বরে উত্তর দেয়, “তুই আয় তারপরে কথা।”
অনেক ছোটবেলায় মা মারা যাওয়ার পরে জেঠিমার কোলেই মানুষ হয়েছে, জেঠিমাকেই মা বলে জানে। মাকে ঠিক ভাবে মনে পরেনা ওর। মা মারা যাওয়ার কয়েক বছর পরে, ওর বাবা দ্বিতীয় বার বিয়ে করেন অভির কলেজের এক সুন্দরী শিক্ষিকা, ফাল্গুনী ম্যাডামকে। ফাল্গুনী ম্যাডাম ইংরেজি পড়াতেন। এই কলেজে যাওয়া আসা করতে করতে কখন যে ফাল্গুনী ম্যাডাম ওর মায়ের জায়গা দখল করে নিল সেটা আর টের পেল না। ফাল্গুনী ম্যডামের এই বাড়িতে পদার্পণ হতেই ওর জেঠিমা, দিপাদেবী বুঝে গিয়েছিলেন যে অভির ওই বাড়িতে সময় শেষ হয়ে এসেছে। মা মরা ছেলেটাকে নিজের দুই মেয়ের সাথেই বুকে টেনে নিয়েছিলেন। মনামি অভির থেকে এক বছরের বড় তাই দুইজনে যেমন একে অপরের পেছনে লাগে ঠিক তেমন একজন অন্যজন কে ছেড়ে থাকতে পারে না। বড়দি শর্বাণী, অভি আর মনামির চেয়ে প্রায় বছর আটেকের বড়। অনেক আগেই বড়দির বিয়ে হয়ে গেছে, জামাই বাবু, নীলাদ্রি মুখারজি খুব বড় এক কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার, মুম্বাই থাকেন।
বিছানা ছেড়ে বাথরুমের দিকে এগোতে এগোতে অভি জিজ্ঞেস করে, “তুই সত্যি বলত কি হয়েছে?”
মনামি উত্তরে বলে, “পাপা আমার জন্য ছেলে দেখছে। ছেলের বাড়ি থেকে আজকেই আমাকে দেখতে আসবে।”
এই খবর শুনে অভির আকাশ থেকে পড়ার জোগাড়, “হটাত, কোন বলা নেই কওয়া নেই আজকেই আসবে মানে?”
মনামি শুষ্ক গলায় উত্তর দেয়, “গতকাল রাত্রে বলে ওঠ ছুড়ি তোর বিয়ে, কি করব বল। তুই পাপাকে জানিস, আমার কোন কথা শুনল না।”
অভি বাথরুম থেকে বেড়িয়ে জামা কাপড় পড়তে পড়তে জিজ্ঞেস করে, “দিদিভাই জানে?”
মনামি উত্তর দিল, “আর বলিস না, সব কল কাঠি দিদিভাই ওই মুম্বাই বসে নাড়িয়েছে।”
অভি, “মানে?”
মনামি, “জিজুর দুর সম্পর্কের কেমন একজন আত্মীয় হয় এরা। পাপাকে ভালো ভাবে চিনিস, কুলিন ', না হলে হবে না।”
অভি চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করে, “তাহলে কি হবে? তোর কি ইচ্ছে?”
মনামি খেপে ওঠে, “ধ্যাত, এক রাতে কিছু চিন্তা ভাবনা করা যায় নাকি, তার ওপরে তুই পাশে নেই কার সাথে শলা পরামর্শ করব বলত। মাকে শুধু একবার বললাম যে এখুনি বিয়ে করব না, সেই শুনে আমার দিকে তেড়ে এলো, বলল আমার বয়স বেড়ে যাচ্ছে এর পর ছেলে খুঁজে পাবে না, ইত্যাদি ইত্যাদি। তুই সোনা প্লিস তাড়াতাড়ি আয় না হলে আমার মাথা কাজ করছে না।” শেষের দিকে কথা গুলো বলতে বলতে মনামির গলাটা ধরে আসে।
দিদিকে কোন মতে প্রবোধ দিয়ে বলে, ““আচ্ছা আমি সব ঠিক করে দেব।” কি যে ঠিক করবে সেটা নিজেই জানে না। জেঠুর বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস ওর নেই অথবা বাড়ির কারুর নেই।
এই বিশাল বিলাস বহুল ফ্লাটটা অভিদের, তাও ওর নিজের বাড়ি বলতে জেঠুর বাড়ি ছাড়া আর কোন বাড়িকে ভাবতে পারেনা। অভির জেঠু প্রনবেশ বাবু, চট্টোপাধ্যায় কুলীন গোঁড়া ব্রহ্মন পরিবার, ওদের মতন অত ধনী না হলেও মফস্বলে তার পৈতৃক বড় বাড়ি। সরকারি চাকুরেরত প্রনবেশ বাবু, তাঁর ভাইয়ের এই দ্বিতীয় বিয়েতে অমত ছিল। দেবাশিস দ্বিতীয় বার বিয়ে করার পরে, দুই ভাইয়ের মধ্যে মনোমালিন্য হয়, সেই থেকে দুই ভাইয়ের মধ্যে মুখ দেখাদেখি এক প্রকার বন্ধ। এক প্রকার জোর করেই অভিকে নিজের কাছে নিয়ে চলে আসেন। গোঁড়া কঠোর হলেও মা মরা ছেলেটাকে ফেলতে পারেন নি। নিজের কোন ছেলে নেই তাই অভিকেই নিজের ছেলের মতন দেখেন। এই রকম এক বরষায় ওর জেঠিমা ওর হাত ধরে এই বিলাস বহুল ফ্লাটের কবল থেকে ওকে মুক্ত করে নিজের আঁচলে ছায়ায় টেনে নিয়ে আসে। জেঠিমার আঁচল ধরে যেদিন বেড়িয়ে এসেছিল এই বিলাস বহুল ফ্লাট থেকে, সেদিন ক্ষনিকের জন্য চোখের কোনায় জলের রেখা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু জেঠুর বাড়িতে পা রাখতেই, দিদিদের ভালোবাসা ওর চোখের জল মুছে ঠোটে হাসি ফিরিয়ে নিয়ে আসে। ধনবান কি শুধু টাকা পয়সায় চেনা যায়, সেই আসল ধনী যে রোজ রাতে নিশিন্ত মনে ঘুমাতে পারে। তবে এই ফ্লাটে অভির ঘুম বিশেষ আসেনা, আসে জেঠুর বাড়িতে নিজের ছোট ঘরের মধ্যে।
এক প্রকার ঝাঁঝিয়ে ওঠে মনামি, “হ্যাঁ, তুই কি না ঠিক করে দিবি। যা শয়তান ছেলে, পাপার সামনে তোর মুখ থেকে আওয়াজ বের হয় না।”
ম্লান হেসে দিদিকে জিজ্ঞেস করে, “কি করব বল, ওই বাঘের সামনে আমরা ত তুচ্ছ খাদ্য ন্যায়।” বলে ফেলেই দিদি আর ভাই দুইজনেই হেসে ফেলে, “আচ্ছা বাবা, সত্যি বলত তোর কি ইচ্ছে?”
ম্লান হাসি দিয়ে উত্তর দেয় মনামি, “ঠিক জানি না রে। সত্যি কারের প্রেম ত আমার কপালে কোনদিন জুটল না তাই কপাল ঠুকে দেখা যাক কি হয়।”
মনামি দেখতে ভীষন সুন্দরী, সেই নিয়ে অভির খুব গর্ব আর সেই সাথে একটু হিংসে। যেই ওর দিদির সাথে অন্য ছেলেরা কথা বলে তখন খুব হিংসে হয় তাদের ওপর। মনে হয় এই বুঝি ওর দিদিকে ওর কাছ থেকে কেউ কেড়ে নিয়ে চলে গেল। পড়াশুনাতে বরাবর দুই ভাই বোন খুব ভালো। বটানি তে এমএসসি করার পরে চাকরি করতে চেয়েছিল মনামি, একটা কলেজে চাকরিও পেয়েছিল কিন্তু বাড়ি থেকে অনেকদুর তাই আর চাকরি করা হয়ে ওঠেনি ওর, বাড়ির কেউই অতদুরে মেয়েকে ছাড়তে নারাজ, বিশেষ করে অভি। তবে মনামির নিজেরও বিশেষ একটা ইচ্ছে ছিল না অতদুরে সবাইকে ছেড়ে চাকরি করতে। কলেজে কলেজে পড়া কালীন মনামির চারপাশে প্রচুর ছেলেরা ঘুরে বেড়াত, তবে বিশেষ কেউই কাছে ঘেঁষতে সাহস পেত না, এক অভির ভয়ে আরেক ওর জেঠুর। তবে কলেজে পড়াকালীন মনামি খুব কাছাকাছি একজন এসেছিল, সেটাকে ঠিক প্রেম অথবা ভালোবাসা বলা চলে না। এই একটু ঘোরাফেরা, সিনেমা দেখা আড্ডা মারা। শান্তনুর সাথে মনামির সম্পর্ক যে বেশিদিন ঠিকবে না সেটা অভি আর মনামি দুইজনে ভালভাবেই জানত। যদিও শান্তনু ভালবাসত মনামিকে, তাও ওর বাড়ির অবস্থা জানার পরে দুইজনেই একে অপরের কাছ থেকে সরে দাঁড়ায়। কলেজ ছাড়ার পরে আর তেমন ভাবে কারুর সাথে মেলামেশা করেনি মনামি।
অভি জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা, ছেলের কি নাম কি করে কিছু জানিস? পাপা কিছু বলেছে নাকি তোকে ধরে বেঁধে কানা খোড়া ল্যাংড়ার সাথে বেঁধে দিচ্ছে?”
খিলখিল করে হেসে ফেলে মনামি, “তুই পারিস বটে। বললাম ত জিজুর দুর সম্পর্কের আত্মীয়। বাড়ুজ্যে ',, শিতাভ্র ভট্টাচারজি, ইঞ্জিনিয়ার দিল্লীতে থাকে একটা পাব্লিক সেক্টরে চাকরি করে।”
হেসে ফেলে অভি, “তাহলে আর কি, ঝুলে পড়। দিদিভাই মুম্বাই, বিয়ের পর তুই চলে যাবি দিল্লী, শালা আমি এখানে বুড়ো বুড়িকে নিয়ে থাকব আর কি।”
মনামি ওকে বলে, “তুই তাড়াতাড়ি বাড়ি আয়, ওরা বিকেলে আসবে আর তুই নেই, কাজ নেই নাকি? ওইদিকে মা সকাল থেকে আমার ওপর চিল্লিয়ে যাচ্ছে।”
অভি প্রশ্ন করে, “বড়মা তোর ওপর কেন চেল্লাছে শুনি?”
মনামি খেপে উঠে বলে, “তোকে গতকাল রাতে নাকি আমি ফোন করিনি, তাই। বাড়ির ছেলে বাড়িতে থাকবে না সেটা হতে পারে নাকি? বাড়িতে লোকজন আসবে অনেক কাজ পরে রয়েছে। পাপা তাও বিশু আর সুবল কে দিয়ে মাংস মিষ্টি ইত্যাদি আনিয়েছে।”
হেসে ফেলে অভি, “বড়মা পারে বটে সত্যি। বাড়ির ছেলে বাড়িতেই ফিরবে রে। আমি এখুনি বেরোচ্ছি।”
মনামি একটু চাপা স্বরে ওকে জিজ্ঞেস করল, “এই দেখ, তোর বন্ধু অনিমেশ চাকরি পেয়ে গেল, সেই শুনে পাপা কিন্তু আমাকে হাজার কথা শুনিয়েছে। তোর মাথা আমি খেয়েছি, তুই শুধু বাড়ির অন্ন ধ্বংস করছিস, এই সব...” কথাটা বলেই হেসে ফেলে মনামি, “চাকরি করবি কবে?”
সত্যি ত, ওর এখন চাকরি করার বয়স হয়ে গেছে। পঁচিশটা বসন্ত ইতিমধ্যে পার করে ফেলেছে। ওর বন্ধুদের মধ্যে একজন বিয়েও করে ফেলেছে গত বছর। ইচ্ছে করলেই যে কোন কোম্পানি ওকে লুফে নেবে। আইআইটি খরগপুর থেকে বিটেক করেছে, তারপরে জোকা থেকে এমবিএ, উচ্চ বিদ্যা অর্জনে কোন খামতি রাখেনি। ক্যাম্পাসিঙ্গের সময়ে বেশ কয়েকটা কোম্পানি থেকে ডাক পেয়েছিল, তবে দিদিকে ছেড়ে জেঠিমাকে ছেড়ে এই শহরের বাইরে কোথাও যেতে নারাজ অভিনন্দন। কোটি টাকার চেয়েও দামী এই দুইজনার স্নেহ ভালোবাসা। অভির এই উচ্চ বিদ্যার পুরো টাকাটা ওর বাবাই দিয়েছিল। প্রনবেশ বাবু জানতেন যে অভিকে অত টাকা খরচ করে পড়াতে পারবে না। ছেলেকে এমনিতে কোনদিন দেখেননি কিন্তু এই উচ্চ শিক্ষার সময়ে অর্থ সাহায্য করেছিলেন দেবাশিস বাবু।
বাড়ির দরজায় তালা লাগাতে লাগাতে উত্তর দেয়, “তুই যেদিন বলবি সেদিন জয়েন করব, চিন্তা নেই। তার আগে বাপের টাকা কিছুদিন ধ্বংস করতে দোষ কোথায় রে।” বলেই হেসে ফেলে, “আচ্ছা ফোন রাখছি, আমি কিন্তু বেড়িয়ে পরেছি।”
এই ঝমঝম বৃষ্টি রেনকোটেও কতটা মানবে বলা মুশকিল। বাড়িতে গাড়ি আছে, ড্রাইভার ও আছে, কিন্তু অভি গ্যারেজ থেকে বাইকে স্টারট দিল। পকেটটা একবার দেখে নিল, বাড়ির চাবিটা, ফোন, মানিব্যাগ সব ঠিক মতন নিয়ে নিয়েছে। বাইকে বেরিয়ে একবার নিজেদের ফ্লাটের দিকে তাকিয়ে হুস করে বড় রাস্তা ধরে বেড়িয়ে পরে। ওদের বাড়ি থেকে ওর জেঠুর বাড়ি পৌঁছাতে অন্তত এক ঘন্টা লেগে যাবে।
Posts: 145
Threads: 8
Likes Received: 292 in 106 posts
Likes Given: 17
Joined: May 2020
Reputation:
34
পর্ব এক। ডায়রির পাতা (#2-#2)
মুষলধার বর্ষা ওর রেনকোট কে হারিয়ে দিয়ে সম্পূর্ণ কাকভেজা করে ছাড়ল। বাড়িতে ঢোকার আগে একটা সিগারেট খেলে বড় ভালো হত, কিন্তু পকেট হাতড়ে দেখল যে সিগারেট প্যাকেট ভিজে চুপসা হয়ে গেছে। হরিদার দোকান থেকে এক প্যাকেট সিগারেট কিনে নিল, সেই সাথে একটা সিগারেট ধরাল অভি। শনিবারের দিন, শহরতলী এলাকা, এই বৃষ্টিতে দুপুরে রাস্তায় লোকজন বেশ কম। সবাই হয়ত বাড়িতে ইলিশ ভাজা আর সোনা মুগের খিচুড়ি খেতে ব্যাস্ত। সিগারেটটা তাড়াতাড়ি শেষ করে বাড়ির দিকে পা না বাড়ালে ওর কপালে অনেক দুঃখ।
বাইকে স্টারট দিতে যাবে ঠিক তখন ওর পিঠে এক থাবর দিল কেউ, “তুই শালা এইখানে সিগারেট মারছিস।” পেছন ঘুরে তাকিয়ে দেখে ওর মামাত দাদা, অরিন্দম ছাতা মাথায় আর হাতে দইয়ের হাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে।
অভি হেসে বলে, “আরে ঝন্টুদা, তোরা কখন এলি?”
অভির পেছনে উঠে বসল ঝন্টু, বাইকে বসে উত্তর দিল, “এই একটু আগেই এসেছি, বাবা মা ও এসেছে।”
অভি ঘাড় বেকিয়ে শয়তানি হাসি হেসে জিজ্ঞেস করে, “মেরে দিল কা টুকরা আয়ি ক্যা? (আমার বুকের টুকরো কি এসেছে?)”
বাইকের পেছনে এক হাতে ছাতা, অন্য হাতে দইয়ের হাড়ি নিয়ে বসতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল ঝন্টুকে। তাও অভির মশকরার উত্তরে কপট ঝাঝিয়ে ওঠে, “শালা তুই নিজেরটা খুঁজে নে না, আমার পাতে এত নজর কেন তোর?”
বলেই দুই ভাই হাহা করে হেসে ফেলে। মামা নরেন্দ্রনাথের নৈহাটিতে খুব বড় কাপড়ের দোকান ধনী ব্যাবসায়ি, নৈহাটির নামকরা একজন ব্যাক্তি। অরিন্দম বিশেষ পড়াশুনা করেনি, কোনমতে স্নাতক হয়েই বাবার দোকানে বসে গিয়েছিল। অভির “দিল কা টুকরা” অর্থাৎ অরিন্দমের সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী স্বাতিলেখার কথা হচ্ছিল। কলেজ শেষ করেই বিয়ে হয়ে গেছে স্বাতিলেখার, অভির চেয়ে বয়সে দুই বছরের ছোট এবং সম্পর্কে বউদি তাই খুব পেছনে লাগে অভি। স্বাতিলেখা একটু মুখচোরা লাজুক স্বভাবের মেয়ে তার জন্য অভি আরো বেশি করে স্বাতিলেখার পেছনে লাগে। বাড়ি যাওয়ার রাস্তাটাতে বড্ড কাদা, বারেবারে বাইকের চাকা ডুবে যায়, এমত অবস্থায় বাইক চালান খুব মুশকিল, তাও কোনোরকমে বাড়ি পউছাল দুইজনে।
মনামি বাইকের আওয়াজ শুনে বারান্দায় দৌড়ে এসে নিজের মায়ের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে, “মাগো, তোমার বাঁদর কাক ভেজা হয়ে এসেছে।”
ঝন্টু পেছন মুচকি হাসি দিয়ে বলে ওঠে, “আমিও কিন্তু এসেছি সেটা দেখতে পাচ্ছিস না?”
মনামি ঝন্টুর উদ্দেশ্যে কপট রাগ দেখিয়ে বলে, “ভাগ কুত্তা, তুই এই বেরিয়েছিস আর ভাই অনেক আগে বেড়িয়েছে।” অভির ভিজে চুলগুলো আরো এলোমেলো করে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে, “তুই না বড্ড শয়তান ছেলে জানিস।” দিদির দিকে একভাবে তাকিয়ে মাথা দুলায় অভি। “তাড়াতাড়ি বাথরুমে ঢুকে স্নান সেরে নে তারপরে অনেক কাজ আছে।”
বসার ঘরে ঢোকা মাত্রই চোখ গেল সোফার দিকে। জেঠু আর মামা বসে গম্ভীর আলোচনায় ব্যাস্ত। ওদের দেখতে পেয়ে প্রনবেশ বাবু গম্ভীর কণ্ঠে বলে ওঠেন, “চাটুজ্যে বাবুর এখন সময় হল বাড়ি আসার? কবে তোর কান্ডজ্ঞান হবে বলত। কাজের নামে কিছু নেই সব সময়ে শুধু গায়ে হাওয়া...”
দীপাদেবী পেছন থেকে স্বামীর উদ্দেশ্যে ঝাঁঝিয়ে ওঠেন, “আরে বাবা, ছেলেটা কাকভেজা হয়ে এসেছে আর বাড়িতে পা রাখতে না রাখতেই তোমার জ্ঞান দেওয়া শুরু।” অভির উদ্দেশ্যে কপট রাগ দেখিয়ে বলেন, “যা তাড়াতাড়ি স্নান সেরে ফেল এই ভিজে জামা কাপড় পরে থাকলে আবার জ্বর আসবে।”
এমন সময়ে ওর কানে ভেসে আসে মধুর ছন্দের নুপুরের নিক্কন। অভি চোখ নাচিয়ে দিদির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে এই ধ্বনির আসল মালকিন কোথায়। মনামি দুষ্টুমি মাখানো হাসি দিয়ে নিজের ঘর দেখিয়ে দেয়। চুপিচুপি দিদির ঘরের মধ্যে ঢুকে দেখে লেখা জানালার বাইরে একভাবে তাকিয়ে পা নাচিয়ে এক মনে কোন এক অজানা সুর গুনগুন করে চলেছে। কচি গোলাপের মতন মিষ্টি দেখতে স্বাতিলেখা, এখন ওর নধর কচি দেহ থেকে বিয়ের গন্ধ ঠিক ভাবে যায়নি। অভির চকচকে চোখ দেখে ঝন্টু প্রমাদ গোনে, এই বুঝি ওর স্ত্রীর ওপর ঝাঁপিয়ে পরল।
কারুর কিছু বলার আগেই অভি জামা খুলে চুপিসারে পেছন থেকে লেখা কে জড়িয়ে ধরে গেয়ে ওঠে, “তু চিজ বড়ি হ্যায় মস্ত মস্ত তু চিজ বড়ি হ্যায় মস্ত মস্ত...”
অকস্মাত এই আক্রমনে কেঁপে ওঠে লেখা, ছটফটিয়ে ওঠে অভির কঠিন বাহুপাশে। কাতর চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বলে, “তুমি না সত্যি পারো বটে, ছাড় প্লিস ছাড়...”
ঝন্টু ততক্ষনে রান্নাঘরে দইয়ের ভাড় রেখে এসে গেছে। অভির দিকে দাঁত কিরমির করে তাকিয়ে বলে, “তুই শালা ছাড় আমার বউকে না হলে তোর টা কেটে দেব।”
হেসে ফেলে অভি, ঝন্টুর চোখে চোখ রেখে লেখার নরম ফরসা গালে নিজের দাড়ি না কামানো গাল ঘষে উত্যক্ত করে তোলে, “দেখ দেখ তোর বউ কেমন লাল হয়ে গেছে, তুইত শালা মাকাল ফল।”
মনামি ওদের কান্ড কারখানা দেখে হিহি করে হেসে ফেলে। দরজায় দাঁড়িয়ে দীপাদেবী ছেলের উদ্দেশ্যে বলে, “যা বাবা, তাড়াতাড়ি স্নানটা সেরে নে” জেঠিমার গলা কানে যেতেই লেখাকে ছেড়ে দাঁড়ায় অভি। “এখন সবাই না খেয়ে বসে আছে।” ভীষণ লজ্জায় পরে যায় লেখা, এক দৌড়ে স্বামীর পেছনে লুকিয়ে যায়।
মাথা চুলকাতে চুলকাতে জেঠিমার পাশ কাটিয়ে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায়। যেতে যেতে ভুরু নাচিয়ে দিদিকে নিজের ঘরে আসার জন্য ইশারা করে। মনামিও ভাইয়ের পেছন পেছন ওর ঘরের মধ্যে ঢুকে পরে। ভিজে জামা কাপড় ছাড়তে ছাড়তে ভাই বোনের মধ্যে কথাবার্তা শুরু হয়। কথায় কথায় অভি জানতে পারে, যে আজকে দিদিকে শিতাভ্র দেখতে আসবে না, শিতাভ্রর বাবা এবং আরো কয়েকজন অবিভাবক গোচরের লোক। দিদিভাই মুম্বাই থেকে দুই সপ্তাহ পরে আসবে, সেই সময়ে শিতাভ্র অফিসের ছুটি নিয়ে দি দুয়েকের জন্য এসে দেখা করে যাবে। মনামিকে নাকি ওদের আগে থেকেই পছন্দ, দশ বছর আগে শর্বাণীর বিয়ের সময় নাকি ওদের বাড়ির লোক ঠিক করে নিয়েছিল যে এই বাড়ি থেকেই বউমা আসবে। এবারের দেখতে আসাটা শুধু মাত্র আনুষ্ঠানিক। গতকাল সারা রাত এক অজানা অনুভুতি নিয়ে ঘুমাতে পারেনি মনামি। বাথরুমে ঢুকে কোনমতে মাথায় দুমগ জল ঢেলে বেড়িয়ে এলো অভি। মাথা মুছতে মুছতে দিদির কথা শুনে যায়। অনেক দুরের এক অজানা অচেনা দিগন্ত, বুকের ধুকপুকানি মাঝে মাঝেই সেই অজানা দিগন্তের আভাস মনে করে থেমে যায়। ভেবেছিল এই শহরেই কোথাও বিয়ে হবে, বাড়ির কাছাকাছি থাকবে, যখন তখন বাড়ি এসে মাকে, ভাইকে জ্বালাতন করতে পারবে। ওর কোন অসুবিধে হলে ওর ভাই এক দৌড়ে ওর কাছে চলে যেতে পারবে। স্বপ্নেও ভাবেনি যে সবাইকে ছেড়ে একদিন এতদুর যেতে হবে। দিদির ছলছল চোখের ভাষা এক অব্যাক্ত বেদনা ডেকে আনে অভির বুকে। অভির চুপ করে শুনে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই, সেটা দুইজনেই ভালোভাবে জানে। কথা গুলো বলার পর মনামির মনে হল যেন বুকের ওপর থেকে গত রাত থেকে যে ভারটা ছিল সেটা অনেকটাই হাল্কা হয়ে গেছে।
অভি দিদির দিকে এগিয়ে এসে কপালে কপাল ঠেকিয়ে জড়িয়ে ধরে, “চিন্তা করিস না, আমি আছি ত।”
“চিন্তা করিস না, আমি আছি ত” ছোট একটা বাক্য বুকে অনেক বল জুগিয়ে দেয়। সেই ছোটবেলা থেকে ভাই বোন একে অপরের সব কিছুতেই ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বড়মা’র কাছে মার খাওয়া থেকে, পাপার কাছে বকুনি খাওয়ার সময়, কিম্বা কলেজে কিছু হলে অথবা দিদিভাইয়ের সাথে ঝগড়া হওয়ার সময়ে। চোখ দুটো ভীষণ জ্বালা করে ওঠে মনামির, নাকের পাটা ফুলে ওঠে ভাইয়ের কথা শুনে। ম্লান ঠোঁটে হাসি মাখিয়ে বলে, “একটা বাজে, চল খেয়ে নিবি।”
ততক্ষনে বৃষ্টি অনেকটা ধরে এসেছে। মামা জেঠু ঝন্টুদা, সবাই খাবার টেবিলে বসে ছিল অভির অপেক্ষায়। এই বাড়ির নিয়ম, পুরুষের সাথে মহিলারা খেতে বসে না। পুরুষের খাওয়া হয়ে যাওয়ার পরেই মহিলারা খেতে বসেন। তবে অভি কোনদিন ওর জেঠুর সাথে খেতে বসত না, বরাবর দিদির সাথেই খেতে বসেছে। ওর জন্য বাকি সবাইকে অপেক্ষারত দেখে তাড়াতাড়ি খেতে বসে গেল। খেতে খেতে জানতে পারল যে শিতাভ্রর বাড়ি থেকে ওর বাবা, কাকা আর এক মামা আসবেন মনামিকে দেখতে। খাওয়ার পরে অভির খুব ইচ্ছে ছিল দিদির সাথে, ঝন্টুদার সাথে, লেখার সাথে বসে চুটিয়ে আড্ডা মারতে, কিন্তু জেঠুর ডাক পরাতে গুড়ে বালি পরে গেল। খাওয়া দাওয়া শেষে জেঠু অভিকে বসার ঘরে ডেকে নিয়ে গেল। প্রমাদ গুনল মনে মনে, মনামির বুক ও সমান তালে ঢিপঢিপ করতে শুরু করে দিল।
কাউচে বসে অভির দিকে তাকিয়ে প্রনবেশ বাবু বললেন, “দেখ বাবা, আমার বয়সে হয়েছে, এই সেপ্টেম্বরে আমি রিটায়ার করব, এইবার ত বাড়ির কথা একটু চিন্তা কর।” জেঠুর এই কণ্ঠস্বর এর আগে কোনদিন শোনেনি অভি। নির্বাক হয়ে গেল গুরু গম্ভীর মানুষটির ভেতরের মানুষটাকে দেখে। “বাড়ির একমাত্র ছেলে, এইবারে একটু দায় দায়িত্ব নেওয়া শুরু কর। বয়স ত কম হল না, পড়াশুনা কম করিস নি, জ্ঞান বুদ্ধি সবকিছুই আছে তোর কাছে।”
চুপ করে থাকে অভি, চাকরি করবে না সেটা একদম নয়। এইভাবে বসে থাকতে ওর নিজের ভালো লাগে না, কিন্তু যা চাকরির অফার আসে, সব কোলকাতার বাইরে, দিল্লী, না হয় ব্যাঙ্গালোর, না হয় পুনে, না হয় হায়দেরাবাদ। পাপাকে ছেড়ে, বড়মাকে ছেড়ে যেতে নারাজ।
অভি শুধু ছোট একটা উত্তর দেয়, “আচ্ছা ঠিক আছে, চাকরি খুঁজব।”
অভির উত্তর শুনে প্রনবেশ বাবু খানিকটা আসস্থ হন। কিছুক্ষন থেমে আবার বলতে শুরু করেন, “মছলন্দপুরের জমিটা বিক্রি করে দেব ভাবছি। কাল একবার আমার সাথে মছলন্দপুর যাস।”
প্রশ্ন করে অভি, “কেন, ওটাতে ত বেশ আম বাগান আছে, হটাত বিক্রি করবে কেন?”
কণ্ঠস্বর নামিয়ে নিয়ে এলেন প্রনবেশ বাবু, “তোর দিদির বিয়ের একটা খরচা ত আছে। কিছু না চাইলেও, কিছু ত দিতেই হবে।”
চোখ দুটো জ্বালা করে উঠল অভির, “পাপা, তুমি এত চিন্তা করছ কেন? এখন ওরা ত দেখতেও আসেনি তার আগেই এত জল্পনা কল্পনা করে কি লাভ।”
ম্লান হাসি দিলেন প্রনবেশ বাবু, “তৈরি না থাকলে কি করে চলবে বল। বারাসাতে বিঘা পনেরো ধানা জমি, ঐ আম বাগান আর এই ভিটে বাড়ি ছাড়া আর ত কিছু নেই আমার।” কিছুক্ষন থেমে বললেন, “এরপর অনেক কাজ আছে, তোর ঘাড়ে অনেক দায়িত্ব আসবে সেইগুল নিতে চেষ্টা কর।” মাথা দুলিয়ে অভি জানিয়ে দিল, সব রকমের দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। “আমি চোখ বোজার আগে এইযে জমি জমা গুলো এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সে গুলোর ব্যাবস্থা করে যাবো। এমনিতেই তুই এই সব ব্যাপারে কোনদিন কিছু দেখিস নি তাই এইসব রেখে কি লাভ বল।”
অভি ক্ষুন্ন মনে উত্তর দেয়, “পড়াশুনা করতে বাইরে পাঠিয়ে দিলে না হলে এই মধ্যমগ্রামেই থাকতাম আর সবকিছু দেখাশোনা করতাম। আমি ত চাইনি পাপা বাইরে যেতে।”
মাথা দোলান প্রনবেশ বাবু, “তুই যখন বললি, তাহলে আজকে একটা কথা তোকে বলি।” খানিকক্ষণ চুপ থেকে কিছু ভেবে আবার বলতে শুরু করলেন, “আমি সরকারি চাকরি করি আর এই জমি জমা। তোর আর মনির মাথা পড়াশুনায় খুব ভালো, আমার খুব খারাপ লাগত যে হয়ত তোদের বেশি পড়াতে পারব না। তোর ইঞ্জিনিয়ারিং এমবিএ পড়ার টাকা আর মনির হাইয়ার পড়াশুনার সব টাকা কিন্তু দেবাশিস দিয়েছে।” বুক ভরে শ্বাস নিলেন প্রনবেশ বাবু, অনেকদিনের জমানো এই কথাটা বুক থেকে নামিয়ে দেওয়ার পর অনেক হাল্কা বোধ করেন।
অভি কিছুক্ষন জেঠুর মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে, “তোমার ভাই এই সবকিছু আমাকে অনেক আগেই বলেছে।” ওর দিকে ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন প্রনবেশ বাবু। অভি থামেনা, “পাপা, আমি সব জানি অনেক কিছুই বুঝি।”
কাষ্ঠ হাসি হেসে উত্তর দিলেন, “তার মানে এই গোপন ব্যাপারটা আর গোপন নয়।”
অভি মাথা নাড়ায়, “না, এই সব ব্যাপার বড়মা জানে দিদিও জানে। আমরা সবাই সব কিছুই জানি, সবকিছুই বুঝি। কিন্তু কিছু ব্যাপারে আলোচনা না করাটা বাঞ্ছনীয় তাই আর কোনদিন সেইসব বিষয়ে আলোচনা করা হয়না।” জেঠুর কাছে সরে এসে বলে, “তুমি পিএফ লোন নাও, আমি চাকরি করে সেই টাকা শোধ করে দেব কিন্তু জমি বিক্রি করোনা।”
বহু বছর পরে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে প্রনবেশ বাবু হেসে উত্তর দিলেন, “ছেলেটা দেখতে দেখতে অনেক বড় হয়ে গেল।” একটু থেমে হেসে বলেন, “যা একটু রেস্ট নিয়ে নে, বিকেল ছ’টা নাগাদ ওরা আসবে। তুই ঝন্টুকে বলিস বাইক নিয়ে মোড়ের মাথায় চলে যেতে যদি ওরা বাড়ির রাস্তা ঠিক ভাবে না পায় তাই।”
আলোচনা শেষে সোফা ছেড়ে উঠে অভি উত্তর দেয়, “ঠিক আছে বলে দেব, তুমি এত চিন্তা কর না।”
প্রনবেশ বাবুও দাঁড়িয়ে পড়লেন ছেলের সাথে সাথে। কিছুক্ষন ভেবে জিজ্ঞেস করলেন, “হ্যাঁ রে, আমাদের বংশের আরো এক মেয়ে আছে, তাদের কি খবর?” একরাশ প্রশ্ন নিয়ে জেঠূর দিকে তাকায়। “সেই দশ বছর আগে শর্বাণীর বিয়েতে ফাল্গুনী ওর মেয়েকে নিয়ে এসেছিল তারপরে ওদের কোন খবর নেই।”
মাথা নাড়াল অভি, “আমার কাছেও নেই। বুঝতেই পারছ, তোমার ভাইয়ের সাথে তেমন কোন কথাবার্তা অথবা আলোচনা কিছুই হয় না। তারপর আবার এই ছয় মাস আগের এই সব ঝামেলায় আমি আর কিছুই জিজ্ঞেস করিনি।”
মাথা নাড়ালেন প্রনবেশ বাবু, “হুম... দেখিস যদি কোন খোঁজ খবর পাস, মনির বিয়েতে যদি আসতে পারে।”
মাথা দুলিয়ে উত্তর দিল অভি, “আচ্ছা দেখব খানে কি করা যায়।”
Posts: 68
Threads: 0
Likes Received: 16 in 13 posts
Likes Given: 9
Joined: Apr 2019
Reputation:
-1
Posts: 765
Threads: 29
Likes Received: 1,591 in 626 posts
Likes Given: 134
Joined: Dec 2019
Reputation:
98
দাদা, পিনুরাম দাদা গল্পটি শেষ করেনি . তাই আমার ব্যাক্তিগত মতামত যে গল্পটা পোষ্ট না করার.. এটা পিনুরাম দাদার জন্য রেখে দিন ! তাছাড়া অসমাপ্ত গল্প ফোরামের জন্য কাম্য নয়..!
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,992 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
পিনুরামের কলমে তৈরি আরো একটা মাস্টারপিস ! পিনুরামকে অসংখ্য স্যালুট।
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,992 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
(03-07-2020, 12:33 PM)Kolir kesto Wrote: দাদা, পিনুরাম দাদা গল্পটি শেষ করেনি . তাই আমার ব্যাক্তিগত মতামত যে গল্পটা পোষ্ট না করার.. এটা পিনুরাম দাদার জন্য রেখে দিন ! তাছাড়া অসমাপ্ত গল্প ফোরামের জন্য কাম্য নয়..!
দাদা এই গল্পটা আমরা অনেকেই পড়িনি, অসম্পূর্ণ হলেও তাই সই । ওঁনার গল্প মানেই অমৃতের সমান, সেই রসাস্বাদন থেকে বঞ্চিত হতে চাইনা।
আর পিনুরাম তো নিজে বলেছেন আর লিখবেন না, আমাদেরই দুর্ভাগ্য
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
Posts: 207
Threads: 0
Likes Received: 345 in 230 posts
Likes Given: 487
Joined: Apr 2020
Reputation:
19
Boss Pinuda plz come back
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,992 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
Posts: 145
Threads: 8
Likes Received: 292 in 106 posts
Likes Given: 17
Joined: May 2020
Reputation:
34
পর্ব এক। ডায়রির পাতা (#1-#3)
আলোচনা ছেড়ে মনামির ঘরে পা রাখা মাত্রই দিদি ওকে ধরল, “কি রে এত আলোচনা কি বিষয়ে?”
মাথা নাড়িয়ে একটু হেসে উত্তর দিল অভি, “না বিশেষ কিছু নয়। এই তোর বিয়ের ব্যাপারে কথাবার্তা এই আর কি।”
মনামি ভাইয়ে চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করে, “ব্যাস এইটুকু, না কি আরো কিছু আছে।”
দিদির প্রশ্নের উত্তরে বলে, “না রে আর কিছু নেই।” একটু থেমে হেসে বলে, “তুই বিউটি স্লিপ দিয়ে নে না হলে বিকেলে সুন্দর দেখাবে না।”
হেসে ফেলে মনামি, “তুই না সত্যি পাগল। আচ্ছা কাল কি তুই আর পাপা মছলন্দপুর যাচ্ছিস?”
ছোট একটা ধাক্কা খেল অভি, তাহলে দিদি দরজার পেছনে দাঁড়িয়ে ওদের সব কথা শুনেছে। মাথা চুলকে উত্তর দেয়, “তার মানে তুই আমাদের সব কথা শুনেছিস।” মাথা দোলায় মনামি, “হ্যাঁ” অভি বলে, “হ্যাঁ এমনি যাবো আর কি। তবে চিন্তা করিস না ওই জমি বিক্রি করব না।”
হেসে ফেলে মনামি, “কি করবি ওই আমবাগান নিয়ে? আমরা কেউই ত আর সেখানে যাই না।” কথাটা সত্যি বটে, রেখেও বিশেষ লাভ নেই। ভাগ চাষিরা বেশির ভাগ লাভের অংশ নিয়ে কেটে পড়ে। “আমি বলি কি, লোন না নিয়ে ওই জমি বিক্রি করে দে।”
অভি চোয়াল চেপে উত্তর দেয়, “তুই এই নিয়ে এত ভাবছিস কেন বল’ত, যা হবে দেখা যাবে। আর, তোর কাকা আছে ত।”
মাথা নাড়ায় মনামি, “না রে, আর টাকা চাইতে যাস না। আমাদের পড়াশুনা সময়ে টাকা দিয়েছে আবার এইবার চাইতে গেলে যদি কিছু ভেবে বসে।”
চোয়াল চেপে শুষ্ক হেসে উত্তর দেয়, “আমার সোনা দিদি, তুই এখন মানুষ চিনলি না রে।” একটু থেমে বুক ভরে শ্বাস নিয়ে বলে, “তোর কাকা অতটা ভালো মানুষ নয়, বুঝলি। নিজের ট্যাক থেকে টাকা দেয়নি। ঠাকুরদার রাজারহাটে কুড়ি বিঘা ধানা জমি ছিল। তোর কাকা যখন বাড়ি ছাড়ে তখন এই সম্পত্তির ভাগ নিয়েই ছাড়ে। নিউটাউন হওয়ার সময়ে যখন জমির দাম আকাশ ছোঁয়া তখন তোর কাকা ওই জমি বিক্রি করে কয়েক কোটি কামিয়েছে, বুঝলি। সেই টাকার থেকেই টাকা দিয়েছে তোর কাকা, নিজের ট্যাঁক থেকে এক পয়সা বের হয়নি।”
থমকে যায় মনামি, “বলিস নি ত এতসব ব্যাপার।”
ঝাঁঝিয়ে ওঠে অভি, “একদম মিথ্যে বলিস না, সেদিন তোকে সবকিছু ফোনে জানিয়েছিলাম। তোর কাকা মদের নেশায় যেদিন আমাকে এই সব বলল সেদিন রাতেই তোকে ফোন করেছিলাম। মনে আছে, সেদিন কেয়াদি বাড়িতে এসেছিল, তুই কেয়াদির সাথে আর সুমন্ত দার সাথে আড্ডাতে মজে ছিলিস।”
মাথা দোলায় মনামি, হ্যাঁ হয়ত সেইদিন ওর ভাই ওকে সবকিছু জানিয়েছিল, কিন্তু সেদিন ওর বান্ধবী এসেছিল বাড়িতে, হাসি ঠাট্টাতে ঠিক ভাবে কান দেয়নি ভাইয়ের এই আলোচনায়।
মনামি একটু হেসে বলে, “সরি রে।” একটু থেমে ভাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে মিষ্টি হেসে বলে, “তবে কি জানিস, আজ সত্যি তোকে আর পাপাকে এইভাবে বসে কথা বলতে আলোচনা করতে দেখে সত্যি খুব ভালো লাগছে। মা একদম অবাক হয়ে গেছিল পাপাকে আর তোকে এইভাবে দেখে।”
অভি হেসে ফেলে, “চাটুজ্জে বাবু আফিম খেয়েছে রে...” বলেই ভাই বোন হাসিতে ফেটে পরে।
মনামি একটু থেমে প্রশ্ন করে, “দেবীর ব্যাপারে কি বলছিল?”
অভি উত্তর দেয়, “না মানে বলছিল যদি তোর বিয়েতে আসতে পারে, এই আর কি।”
দেবী, দেবযানী চ্যাটারজি, দেবাশিস বাবু এবং ফাল্গুনীর একমাত্র কন্যে, সম্পর্কে অভির বোন তবে তার সাথে অভির কোনদিন সেই ভাব পরিচয় হয়নি। তবে দেবাশিস বাবুর মুখে শুনেছে যে পড়াশুনায় বেশ ভালো, এই বছর ভালো মার্কস নিয়ে কলেজ ফাইনাল পাস করে, সায়েন্স নিয়ে পড়ছে। ইচ্ছে আছে ডাক্তারি পড়ার, এর বেশি কোন খবর অভিনন্দনের কাছে নেই। থাকবে কি করে, দেবাশিস বাবুর আর ফাল্গুনী ম্যাডামের মধ্যে ছয় মাস আগে ডিভোর্স হয়ে গেছে আর সেই জন্য আবার নতুন করে অভির ডাক পড়েছে দেবাশিস বাবুর কাছে। আগে ওর সাথে কথাবার্তা একদম হত না, তবে জেঠিমার সাথে কথাবার্তা হত আর তাঁর কাছ থেকেই অভির খবরা খবর নিত।
সন্ধ্যের পর থেকেই বাড়িতে সাজসাজ রব। শিতাভ্রর বাড়ি থেকে অনেকজন এসেছিল মনামিকে দেখতে। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে বিয়ের দিন ঠিক করা হয়েছে। দুই সপ্তাহ পরে, মুম্বাই থেকে বড়দি আসবে, সেই সময়ে কয়েকদিনের ছুটি নিয়ে মনামির সাথে দেখা করে যাবে শিতাভ্র। পুজোর পর একটা ভালো দিন দেখে শিতাভ্রর বাড়ির লোক মনামিকে আশীর্বাদ করে যাবে ঠিক হল। এই খুশির জোয়ারের মাঝে বিরহের করুণ সুর বাঁধা, আনন্দের সাথে সাথে সেই করুণ সুর টাও মাঝে মাঝে সবার মধ্যে ধরা দিয়ে যায়। মনামি আর অভির অনুরোধে শেষ পর্যন্ত ঝন্টু আর স্বাতিলেখা ওদের বাড়িতে থেকে যায়। রাতের খাওয়ার পরে, ওপর তলায় অভির কামরায় জমিয়ে আড্ডা বসে।
অভি হেসে দিদিকে জিজ্ঞেস করে, “কি রে এবারে ত বিয়ের শানাই বাজবে, বুকের মধ্যে খই ফুটছে দেখ।”
ঝন্টু জিজ্ঞেস করে, “বড়দি কি শিতাভ্রর ফোন নাম্বার দিয়েছে?” মাথা দোলায় মনামি, “হ্যাঁ”
অভি চেচিয়ে ওঠে, “দে দে, ব্যাটা কে ফোন করে একটু জ্বালাতন করি।”
মনামি অভির পিঠে একটা আলতো চাপড় মেরে কপট রাগ দেখিয়ে বলে, “ধ্যাত শয়তান। এত রাতে ফোন করিস না, ঘুমিয়ে পড়েছে নিশ্চয়।”
মনামির গালের লালিমা দেখে লেখা হেসে বলে, “একি গো দিদিভাই, এখন দেখাই হল না কথা বার্তা হল না এর মধ্যেই এত টান কিসের? দাও না বাবা ফোনটা।” বলেই মনামির ফোন কেড়ে নিয়ে ঝন্টুকে দিয়ে দেয়।
ঝন্টু ফোন নাম্বার বের করে ফোন লাগিয়ে অভির হাতে ধরিয়ে দেয়। গলা খ্যাঁকরে আওয়াজ ভারি করে অভি বলে, “হ্যালো...”
ওই পাশ থেকে চোস্ত ইংরেজিতে উত্তর আসে, “মে আই নো হু ইজ ওন দ্যা লাইন? (আমি কি জানতে পারি কে বলছেন?)”
অভি, ফোন চেপে দিদির দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়, “তোর বর ত ইংরেজ মাইরি।” বলেই হেসে ফেলে। বহু কষ্টে হাসি থামিয়ে হিন্দিতে উত্তর দেয়, “তেরা বাপ বোল রাহা হু বে, ইতনে রাত কো ক্যা কর রহা হ্যায়? (তোর বাপ বলছি, এতরাতে কি করছিস?)”
রেগে যায় ফোনের অন্যপাশের লোক, “হু দ্যা হেল আর ইউ? (তুই শালা কে?)”
অভি হাসি দমিয়ে বলে, “বোলা ত তেরা বাপ। তু কিস লড়কি কে সাথ আজ রাত বিতা রাহা হ্যায় বে? (বললাম ত তোর বাপ বলছি। আজকে কোন মেয়ের সাথে রাত কাটাচ্ছিস?)”
মনামি মুখ কাচুমাচু করে অভির হাত থেকে ফোন কেড়ে নিতে চেষ্টা করে। লেখা আর ঝন্টু, হেসেই কুটপুটি খায়।
অইপাশ থেকে পরিস্কার বাংলায় আওয়াজ আসে, “ভাই তুমি যেই হও, প্লিস বলে ফেল কে। তোমার হিন্দি শুনে আমি আর থাকতে পারছি না। তুমি কি মনামির বাড়ির কেউ?”
হেসে ফেলে অভি, “হুম”
শিতাভ্র হেসে ফেলে, “অভিনন্দন?”
অভি উত্তর দেয়, “হ্যাঁ, আপনি ত দেখছি নামধাম সব জানেন।”
শিতাভ্র উত্তর দেয়, “না মানে আজকে বাবা মা গেছিলেন ত। তাই এই একটু আগে কথা বার্তা হচ্ছিল তোমাদের নিয়ে। আর হ্যাঁ, আমাকে অত আদিখ্যেতা দেখিয়ে আপনি বলতে হবে না।”
হেসে ফেলে অভি, “ঠিক আছে তাই হবে।”
মনামি অভিকে মারতে শুরু করে দেয়, “কি করছিস, রাখ ফোন রাখ।”
দিদির হাতে মার খেতে খেতে উত্তর দেয় শিতাভ্র কে, “এই দেখ তোমার হবু বউ কিন্তু দেখা হওয়ার আগেই আমাকে মারতে শুরু করে দিয়েছে...”
শিতাভ্র প্রচন্ড লজ্জায় পরে যায়, সেই সাথে মনামি। মুখ গম্ভীর করে ওর কাছ থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে বলে, “প্লিজ ভাইয়ের কথায় কিছু মনে করবেন না।”
শিতাভ্র উত্তর দেয়, “যাক তাহলে দেবীর আওয়াজ শেষ পর্যন্ত কানে পৌছাল।”
মনামির সাথে বেশ কিছুক্ষন শিতাভ্রর বারতালাপ চলে। এই নিয়ে ওদের সবার মধ্যে হাসির কলরব ওঠে। ফোনে কিছুক্ষন কথা বলার পরে, মনামি রেগে মেগে অভিকে দুমাদুম কয়েকটা কিল চড় মেরে হাত ঠান্ডা করে নিল। ওদের গল্প গুজব এপাশ ওপাশ অনেক কিছুই চলল বেশ কিছুক্ষন।
হটাত অভি সবাইকে থামিয়ে ঝন্টুকে বলল, “ঝন্টুদা, লেখার ওপরে কিন্তু আমার একটু অধিকার আছে।”
প্রমাদ গুনলো ঝন্টু, “মানে মানে...” লেখা এইদিকে লজ্জায় লাল।
অভি হেসে ফেলে, “লেখাকে কিন্তু তুই প্রথমে না করে দিয়েছিলি মনে আছে?”
ঝন্টুর কান লাল হয়ে গেল, “তুই শালা বোকাচোদা সেই কথা উঠালে মেরে ফেলব কিন্তু।”
মনামি উতসুক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার বলত?”
লেখাও উতসুক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছিল কি হয়েছিল, সত্যি করে বলত।”
অভি বলতে শুরু করে, “মামি আর বড়মা ত, লেখা কে দেখেই পছন্দ, মিষ্টি লাজুক কচি খুকিকেই ছেলের বউমা করবে। সেই রাতে ঝন্টুদা আর আমি লেখার ছবি দেখলাম, ঝন্টুদার একটু কেমন কেমন লাগলো ছবি দেখে। আমাকে বলল, যে ফটো তে সবাইকে সুন্দরী দেখায়। তবে ফটো দেখে আমি ত কাত হয়ে গেছিলাম, মিষ্টি কচি বউদি পাবো বলে।” ঝন্টুর কান লাল হয়ে ওঠে, লেখা এক দৃষ্টিতে স্বামীর দিকে তাকিয়ে। “পরের বার আমি আর ঝন্টুদা গেলাম লেখার বাড়ি। ঝন্টুদা চুপচাপ বসে, কথাবার্তা বেশি কিছু বলল না।”
মনামি জিজ্ঞেস করে, “তুই এইসব আমাকে কিছু বলিস নি যে?”
দিদির প্রশ্নের উত্তরে বলে, “সবকিছু বলতে হবে নাকি? এখন বলছি ত গল্পটা, শোন না তারপর কি হল।”
ঝন্টু মুখ কাচুমাচু করে অনুরোধ করে, “অভি এরপর কিন্তু আর একটা শব্দ বার করলে তোর জঙ্গলে আগুন ধরিয়ে দেব।”
অভি ঝন্টুর কথায় কান দেয় না, “আমি বুঝে গেলাম, এদের কিছু হবে না। আমি শুধু কথা বলে যাচ্ছি আর মাঝে মাঝে লেখা শুধু হুম না ইত্যাদি উত্তর দিচ্ছে, বেশির ভাগ উত্তর ওই সুমনা বউদি দিচ্ছিল। সিগারেট ধরানোর বাহানায় আমি বাইরে এলাম, বউদিকে বললাম যে এইবারে এদের একটু একা কথা বলতে দিন। বউদিও মাথা দুলিয়ে সায় দিল। বসার ঘরের বাইরে এসে, কথায় কথায় জেনে নিলাম লেখার ঘর কোনটা। সিড়ির পাশেই লেখার ঘর। আমার মাথায় শয়তানি বুদ্ধি চেপে বসল।” ঝন্টুর কান লাল, দুমদাম করে কিল চড় কয়েকটা কষিয়ে দিল অভির ওপরে। তাও অভি হাসি না থামিয়ে বলে, “আমার ফেরোমন চাই। শুধু দেখে কাজে দেবে না, ফেরোমন না হলে প্রেম আসবে না এদের মধ্যে। ছাদে গিয়ে সিগারেট খেয়ে এক সময়ে চুপিচুপি লেখার ঘরে ঢুকে পরলাম। বিছানার এক পাশে লেখার জামা কাপড় পড়েছিল, সম্ভবত সাজার আগে যে গুলো পড়েছিল সেই গুলোই ওইখানে রাখা ছিল। তার মধ্যে লেখার একটা লাল রঙের প্যান্টি দেখে হাত নিশপিশ করে উঠল।”
এই কথা শুনে লেখা লজ্জায় লাল হয়ে গেল। লজ্জা আর বিব্রত বোধে ঝন্টু ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “শুয়োর, গান্ডুচোদা ছেলে, আজকে তোর বাঁড়া কেটে গঙ্গায় ভাসিয়ে দেব।”
মনামি বেশ উতসুক কিন্তু ভাইয়ের এহেন অভদ্র আচরনে একটু ক্ষুদ্ধ হয়েই বলল, “তুই না সত্যি বড্ড শয়তান ছেলে। তাও বল না প্লিস, এর পর কি হল।”
অভিও বেশ মজা পেয়ে আবার বলতে শুরু করল, “ব্যাস আবার কি, আমি প্যান্টি পকেট বন্দি করলাম। তারপর বসার ঘরে ঢুকে দেখি দুইজনে সেই একভাবে চুপচাপ বসে, বিশেষ কিছু কথাবার্তা কেউই বলেনি।”
লেখার সারা চেহারা ঘেমে নেয়ে লাল হয়ে গেছে লজ্জায়, “তোমরা না সত্যি কি বলব, ভীষণ শয়তান তোমরা।” তাও উতসুক হয়ে ওঠে পুরো ঘটনা জানার জন্য, “তারপর কি করলে ওইটা নিয়ে?”
অভি হাসিতে ফেটে পরে, “ইসসস মেয়ের কান্ড দেখ, কি গো কচি ডারলিং, কিছু হচ্ছে নাকি?” লেখা লজ্জায় ঝন্টুর কোলের মধ্যে প্রায় সেঁধিয়ে যায়। অভি আবার বলতে শুরু করে, “রাতে বাড়ি ফিরলাম। গাড়িতে ঝন্টুদাকে জিজ্ঞেস করলাম, মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিল, এই মোটামুটি।” ঝন্টুর চোখ লাল হয়ে গেছে, কান থেকে ধোয়া বের হওয়ার অপেক্ষায় শুধু। “রাতে বেলা খাওয়ার পরে আমি আর ঝন্টুদা একটু হুইস্কি নিয়ে বসলাম ওর ঘরে। হুইস্কির বেশ কয়েক পেগ গেলার পর ঝন্টুদা বলল যে লেখার সব কিছুই ভালো কিন্তু মেয়েটা বড্ড কম কথা বলে। আমি উত্তরে বললাম, তোর ভালো ত, তোর বউ তাহলে বেশি কিছু ঝগড়া ঝাটি করবে না, একদম গরু।”
লেখা চোখ পাকিয়ে বলে ওঠে, “আচ্ছা আমি গরু নাকি?”
অভি হেসে ফেলে, “আরে ডারলিং এত খাড় খাচ্ছো কেন। এর পরের ব্যাপার শোন। আমি ঝন্টুদাকে বললাম যে আকর্ষণ সহজে আসে না। শরীরের গন্ধ হচ্ছে আসল আকর্ষণ করে। আমাদের দেহ থেকে ফেরোমন বের হয় যেটা আমাদের কাছের লোকেদের উত্তেজিত করে তোলে এবং সত্যি যদি আকর্ষণ তৈরি করতে হয় তাহলে লেখার গায়ের গন্ধ চাই তোর। ঝন্টুদা আমাকে প্রশ্ন করল, বিয়ের আগে গায়ের গন্ধ পাওয়া কি ভাবে সম্ভব। তিন পেগে ততক্ষনে আমাদের গলা বেয়ে নেমে গেছে। আমি পকেট থেকে লেখার প্যান্টি বের করে ঝন্টুদাকে ধরিয়ে দিলাম। ঝন্টুদা, লেখার প্যান্টি পেয়েই নাকে ডলে মাখিয়ে মুখে মাখিয়ে বার বার চুমু খেতে চুষতে শুরু করে দিল।” লজ্জায় লেখা আর অভির দিকে তাকাতে পারছে না। মনামির কান লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।
ভাইয়ের এই শয়তানির গল্প শুনে আরো বিব্রত বোধ করে বলে, “তুই এইবারে থামবি, না হলে মার খাবি কিন্তু।” ভাইয়ের কান টেনে ধরে বলে, “তুই সত্যি এত শয়তান জানতাম না।”
লেখা ঝন্টুর কানে কানে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা সত্যি বলত তোমরা এই সব করেছিলে?”
ঝন্টু মাথা দোলায়, “হ্যাঁ, ওই ব্যাটার শয়তানি আর কি বলব।”
লেখা জিজ্ঞেস করে, “তারপর কি হল?”
ঝন্টু লজ্জা কাটিয়ে কচি বৌ কে জড়িয়ে ধরে উত্তর দেয়, “রাত বাকি, বাত বাকি, বাকিটা বিছানায় শুনাবো কেমন।”
হাসতে হাসতে অভি চেঁচিয়ে ওঠে, “ও বোকাচোদা, সে গুড়ে বালি। সেদিন আমি যদি প্যান্টি না নিয়ে আসতাম তাহলে এই কচি জমিতে তুই তোর লাঙ্গল চালাতে পারতিস না। সুতরাং আজকে তুই সোফায় ঘুমা, আমি যাবো লেখার সাথে।”
মনামি কিঞ্চিত রেগে যায়, “অভি, বড্ড বেশি অভদ্রতামি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।” ঝন্টু আর লেখাকে বলে, “তোরা এই ঘরে শুয়ে পর, আমি ভাইকে নিয়ে নিজের ঘরে চললাম।” বলে অভির হাত ধরে আদেশ করে, “শুতে যাবি চল, আর একবার লেখার পেছনে লাগলে খুব রেগে যাবো কিন্তু।”
অভি বুঝতে পারল যে দিদি খুব রেগে গেছে। এত সব দিদির সামনে বলা উচিত হয়নি। চুপচাপ কথা না বাড়িয়ে দিদির পেছন পেছন ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে এলো। শুতে যাওয়ার আগে দিদিকে বলল, “তুই যা, আমি একটা সিগারেট খেয়ে আসছি।”
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,992 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
দারুন, ভাই বোন বউদির সাথে এরকম ননভেজ ইয়ার্কির মজাই আলাদা
Posts: 145
Threads: 8
Likes Received: 292 in 106 posts
Likes Given: 17
Joined: May 2020
Reputation:
34
পর্ব এক। ডায়রির পাতা (#1-#4)
মনামি ঢুকে গেল নিজের ঘরে। অভি বসার ঘরে কাউচে বসে সিগারেট ধরিয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে আকাশের দিকে দেখল। কালো মেঘে ঢাকা কিন্তু তাও সেই মেঘের ফাঁকে একফালি চাঁদ উঁকি মেরে রয়েছে। মন বড় উদাসিন হয়ে উঠল, বুকের ভেতরে এক অজানা শুন্যতা ভর করে এলো। বড়মায়ের হাত ধরে ঐ ফ্লাট থেকে বেড়িয়ে আসার পর, কোলকাতার কলেজ ছেড়ে দিল। মধ্যমগ্রামে যে কলেজে মনামি পড়ত সেখানে ভর্তি করিয়ে দিল জেটু। দিদির আর ভাইয়ের মধ্যে সেই থেকে এক বন্ধন গড়ে উঠল। বড়দি যেহেতু ওদের চেয়ে অনেক বড়, তাই সে বেশি মিশত না ওদের সাথে। মিশলেও কেমন যেন বড় বড় ভাব, যেটা অভি আর মনামির একদম ভালো লাগত না। কত মারামারি করেছে এই দালানে, কত মার খেয়েছে দিদির জন্য আর দিদিও কত মার খেয়েছে ওর জন্য। এই সব চিন্তা করতে করতে রাত গড়িয়ে যায় সেদিকে আর খেয়াল নেই।
রাত অনেক, ঘুমের মধ্যে পাশ ফিরে ভাইয়ের গায়ে হাত রাখতে গিয়ে বুঝতে পারে মনামি যে পাশের জায়গা খালি। এখন ঘুমাতে আসেনি ছেলেটা, কি যে করছে না। চোখ ডলে আড়ামোড়া খেয়ে উঠে বসে বিছানায়, গেল কোথায়? বিছানা ছেড়ে বসার ঘরে ঢুকে দেখে মাথা নিচু করে সোফায় চুপচাপ বসে অভি। ঘুমের রেশটা এক ধাক্কায় কেটে গেল, ভাইয়ের আঙ্গুলে সিগারেট দেখে আর ওইভাবে চুপচাপ থম মেরে বসে থাকতে দেখে। বুকের মাঝে এক আন্দোলন শুরু হয়ে যায়, এটাকে ছেড়ে সত্যি থাকা যাবে না।
অভির সম্বিত ভাঙ্গে মাথায় আলতো একটা চাটি খেয়ে। পেছনে তাকিয়ে দেখে দিদি দাঁড়িয়ে। মনামি ওকে জিজ্ঞেস করে, “এই ভাই এখন এইভাবে পাগলের মতন জেগে বসে আছিস?”
চোখের কোল মুছে ঠোটে হাসি টেনে উত্তর দেয়, “কিছু না রে। তুই হটাত উঠে এলি কেন?”
মনামি ওর পাশে বসে জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছে রে তোর?”
উত্তর দেয় অভি, “কিছু না রে।” দুর আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে, “দ্যাখ চাঁদটা বড্ড সুন্দর লাগছে, কেমন মেঘের মধ্যে উঁকিঝুঁকি মারছে।”
দুর আকাশের চাঁদের চাইতে ওর পাশে বসা ভাইয়ের চিন্তা বেশি। বুকের মাঝের ধুসর মেঘের আবরণ কাটানোর জন্য বলে, “এই শোন, তোর মনে পরে সেই ছোটবেলায় তুই আমার নতুন জামাটা ছিঁড়ে দিয়েছিলি?” বলেই হেসে ফেলে।
মাথা দোলায় অভি, সত্যি কত হিংসুটে ছিল তখন, “হ্যাঁ রে। তোর ভাই তখন কত হিংসুটে ছিল বলত।”
সেইবার পুজোতে দীপাদেবী একটা সুন্দর নীল রঙের ফ্রক কিনে দিয়েছিলেন মনামিকে আর অভিকে একটা লাল চেক জামা। নীল রঙটা ভাই আর বোনের দুইজনের খুব পছন্দের। অভি বায়না ধরে ওর নীল রঙের জামা চাই, আর মনামি ওকে খেপিয়ে বেড়াত, “তোর জামা হবে না, তোর জামা হবে না।” মনামির খুব ইচ্ছে ছিল অষ্টমীর দিনে ওই নতুন জামা পড়ে ঠাকুর দেখতে যাবে। ঠিক তার আগের রাতে অভি শয়তানি করে কাচি দিয়ে জামাটাকে দুই টুকরো করে কেটে দেয়। অষ্টমীর দিনে ঠাকুর আর দেখতে যাওয়া হল না, মনামির সেকি কান্না। বড়মা আর পাপা কিছুতেই থামাতে পারে না মনামিকে। দুই ভাই বোনের মধ্যে তুমুল ঝগড়া, মারামারি। পাপা সেদিন রাতে দড়ি দিয়ে বেঁধে বেদম পিটিয়েছিল। বড়মা টেনে বের করে এনেছিলেন, সারা রাত বসে পিঠের ওপরে মলম লাগিয়ে দিয়েছিলেন আর প্রনবেশ বাবুর মুন্ডপাত করেছিলেন। “ছেলেকে কেউ গরু বাঁধা করে এইভাবে মারে নাকি? তোমার আক্কেল জ্ঞান কি একদম নেই? মনামির অনেক নতুন জামা আছে, আর একটা ওই রকম জামা একটা কিনে দেওয়া যাবে, তাই বলে ছেলেটাকে এইভাবে মারবে?” সেই সময়ে অভির মার খাওয়া দেখে খুব আনন্দ পেয়েছিল, তবে পরে অবশ্য নিজের জমানো পয়সা থেকে ভাইকে ফুচকা খাইয়েছিল। অনেকদিন আগের এই ঘটনা।
মনে পরতেই দিদিকে এক ঘা মেরে দিয়ে বলল, “এটা তার বদলা নিলুম, তখন ত শুধু ফুচকা খাইয়ে পার পেয়ে গেছিলি।” বলেই ভাই বোন দুইজনে হেসে কুটোপুটি।
পাপার কাছে দুই ভাই বোনে কম মার খায়নি। তবে অনেক সময়ে দিদি ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল অভির সামনে, অনেক বার এমন গেছে অভি মনামির হয়ে মার খেয়েছে।
হাসি থামিয়ে মনামি বলে, “আচ্ছা আকাশের পা ভেঙ্গে দিয়েছিলি মনে আছে?”
অভি মাথা দুলিয়ে বলে, “আরে সে কথা কেন মনে থাকবে না।”
মনামি তখন ক্লাস টুয়েল্ভে পড়ে আর অভি ক্লাস ইলেভেনে। ভাই বোন একিই কলেজে পড়ত। মনামির তখন নতুন নতুন প্রেম করার বয়স। মনামি সায়েন্সের ছাত্রী কিন্তু অঙ্ক ক্লাসে গিয়ে প্রেমে পড়ল কমার্সের আকাশের সাথে। ছোটবেলার মিষ্টি প্রেম, তিরতির করে এগিয়ে চলেছে। কলেজের পরে বাইরে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাওয়া, গল্প করা। দিদির অদুরে দাঁড়িয়ে থাকত, সাথে না গেলে চলত না। মাঝে মাঝে খুব রেগে যেত মনামি, “তুই বাড়ি যা, আমি পরে আসব।” মাথা নিচু করে দিদির বকা খেয়ে বাড়ি ফিরত। বুঝত নতুন প্রেম করছে, একটু একাকী সময় চায় আকাশ আর মনামি।
সেদিন শুক্রবার, মনামি অভিকে বলল, কলেজ পালিয়ে কয়েকজন বন্ধু মিলে বারাসাতে সিনেমা দেখতে যাবে। অভি ক্ষুন্ন হয়ে জানিয়ে দিয়েছিল যে বড়মাকে সব বলে দেবে। অনেক কাকুতি মিনতি করে অভিকে একটা নতুন ব্যাট কিনে দেবে বলে রাজী করিয়ে নেয় মনামি। নতুন ব্যাট পাবে সেই শুনে বেশ খুশি, মনামিও খুশি, আসলে বন্ধুদের সাথে নয়, আকাশের সাথে সিনেমা দেখতে যাবে।
কলেজের পর বাড়ি ফিরে দেখে, দিদি বড়মাকে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদছে, জিজ্ঞেস করলে কিছুই বলে না কি হয়েছে। রাতের বেলা ভাই বোন শুতে যাওয়ার সময়ে আবার জিজ্ঞেস করে দিদিকে। তখন থাকতে না পেরে মনামি ওকে বলে যে, আকাশের সাথে সিনেমা দেখতে গিয়েছিল, সাথে আকাশের ও কয়েকজন বন্ধু মনামির ও কয়েকজন বন্ধু বান্ধবী ছিল। বেশ ভালো সিনেমা দেখছিল, কিন্তু ঠিক ইন্টারভালের আগে, মনামির বুকে হাত দেয় আকাশ। ওইভাবে ছোঁয়াটা একদম ভালো লাগেনি মনামির, একদম জামার ভেতর হাত দিয়ে আলতো চেপে ধরেছিল ওর নরম তুলতুলে বুক। হয়ত একা থাকলে এতটা আহত হত না। কিন্তু আহত হয়, যখন সিনেমা দেখে বেড়িয়ে আকাশের এক বন্ধু, আকাশ কে জিজ্ঞেস করে, “কি রে মালটা কতটা নরম?” কথাটা কানে যেতেই প্রচন্ড ভাবে আহত হয় মনামি, ওর মনে হল কেউ যেন ওকে রাস্তার মাঝে উলঙ্গ করে দিয়েছে। আকাশ কিছু বুঝে ওঠার আগেই সবার সামনে ঠাটিয়ে এক চড় কসিয়ে দেয় আকাশের গালে। এই ঘটনা শুনে অভির রক্ত টগবগ করে ফুটতে শুরু করে দেয়। আকাশকে হাতের কাছে পেলে মেরেই ফেলবে।
Posts: 145
Threads: 8
Likes Received: 292 in 106 posts
Likes Given: 17
Joined: May 2020
Reputation:
34
পর্ব এক। ডায়রির পাতা (#1-#5)
সন্তোষ স্যারের কাছে অঙ্ক পড়তে যেত আকাশ এবং অভি। ঠিক অভির আগের ব্যাচে আকাশ। অভি ঠিক করল আকাশকে মারবে। সেদিন পড়ার নাম করে বেড়িয়ে ঠিক আকাশের পাড়ার মুখে বন্ধুদের নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। কোচিং শেষ করে সাইকেলে পাড়ায় ঢোকার মুখে অভি আর ওর বন্ধুরা ঘিরে ধরল আকাশকে। তাড়াতাড়ি সাইকেল চালিয়ে পালানোর চেষ্টা করতেই একটা থান ইট উঠিয়ে সাইকেল লক্ষ্য করে ছুঁড়ে মারে। সাইকেল থেকে পড়ে যেতেই, আকাশ কে ঘিরে ধরে বেদম মারতে শুরু করে দেয়। পাশে যে ইটটা পড়েছিল সেটা দিয়ে আকাশের পায়ের ওপরে গায়ের সব শক্তি দিয়ে নিক্ষেপ করে। মুহূর্তের মধ্যে পা ভেঙ্গে যায়, ব্যাথায় প্রায় অজ্ঞান হয়ে যায় আকাশ। আসেপাশের লোকজন ছুটে না এলে সেদিন আকাশকে মেরেই ফেলত। মারামারি করে বীরদর্পে বাড়ি ফিরে আসে, দিদির চোখের জলের বদলা নিয়েছে। আকাশের বাবার কাছে সেই খবর পৌঁছে যায়। তৎক্ষণাৎ ছেলেকে নিয়ে হস্পিটালে ভর্তি করিয়ে সোজা প্রনবেশ বাবুর বাড়ি পৌঁছে অভির কান্ড কারখানা জানিয়ে দেন। প্রনবেশ বাবু খুব রেগে যান ছেলের কান্ড কারখানা শুনে। কিন্তু যখন আসল ঘটনা স্ত্রীর কাছ থেকে আর কন্যের কাছ থেকে শোনেন তখন আকাশের বাবাকে শাসিয়ে দেন যে এই রকম অকালকুষ্মাণ্ড ছেলেকে তাঁর পুত্র উচিত শিক্ষাই দিয়েছে। সব কথা জানার পরে প্রচন্ড আহত হন আকাশের বাবা, কিন্তু তাও বলেন যে ওইভাবে পা ভেঙ্গে দেওয়া উচিত হয়নি। আকাশের পায়ে মাল্টিপেল ফ্রাকচার হয়েছে, ছেলেটা হয়ত কোনদিন আর ঠিক ভাবে হাটতে পারবে না। প্রনবেশ বাবু ছেলের হয় ক্ষমা চেয়ে নিলেন আকাশের বাবার কাছে।
আকাশের বাবা চলে যাওয়ার পরে গুরু গম্ভীর কণ্ঠে অভিকে জিজ্ঞেস করেন, “এইসব কিছু আমাকে কেন জানাস নি অথবা ওর বাবাকে কেন বলিস নি?”
অভি চুপ করে দাঁড়িয়ে নিচু কণ্ঠে জবাব দেয়, “দিদির সাথে যে ওই রকম করবে তাকে মেরে ফেলব।”
সেই শুনে অগ্নিশর্মা হয়ে ওঠেন প্রনবেশ বাবু, “মেরে ফেলবি মানে?” বলেই বেল্ট খুলে বেদম মারতে শুরু করে দেন। পিঠে দাগ বসে যায় তাও চোখ থেকে এক ফোঁটা জল বের করে না। গুম মেরে দাঁড়িয়ে মার খেতে খেতে আবার বলে, “এবার ত শুধু পা ভেঙ্গেছি এরপর ওর মাথা ভেঙ্গে দেব।”
ভীষণ রেগে যান প্রনবেশ বাবু। “তোর আস্পর্ধা ত কম নয়, আবার মুখে মুখে কথা বলছিস?”
দীপা দেবী কিছুতেই শান্ত করতে পারেন না প্রনবেশ বাবুকে। “ছেলেটাকে কি তুমি মেরে ফেলবে নাকি? আচ্ছা বাবা ঘাট মানছি যে পা ভেঙ্গে দেওয়াটা ঠিক হয়নি কিন্তু তাই বলে মেয়েকে এমন করবে আর ও চুপ করে থাকবে।”
প্রনবেশ বাবু গর্জে ওঠেন, “আমি মরে গেছি নাকি? আমাকে বলতে পারত। আর তোমার মেয়ে, কলেজ যাওয়ার নাম করে প্রেম করে বেড়াচ্ছে। লজ্জা শরম বলে কিছু নেই, পড়াশুনার নামে লবডঙ্কা। একজন প্রেম করে বেড়াচ্ছে আরেকজন গুন্ডামি করে বেড়াচ্ছে। তোমার আস্কারা পেয়ে দিনে দিনে দুটোতে বাঁদর হচ্ছে।”
ভাইকে ওইভাবে মার খেতে দেখে আর থাকতে পারে না মনামি, শেষ পর্যন্ত চেঁচিয়ে ওঠে, “ভাই যা করেছে ঠিক করেছে, তুমি হলে কি করতে, দুটো বকাঝকা দিতে আর কি। ভাইকে ছেড়ে দাও না হলে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।”
অবস্থার সামাল দিতে অনেক চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত প্রনবেশ বাবুর হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন অভিকে। সারা পিঠে বেল্টের দাগ কেটে বসে গেছে, চোখ ফেটে জল বেড়িয়ে আসার জোগার তাও এক ফোঁটা জল ফেলেনি। সারা রাত ধরে বড়মার কোলে মুখ লুকিয়ে পড়েছিল। ছেলের পিঠের সেই দগদগে দাগ দেখে সেই রাতে দীপাদেবী রান্নাও করেননি, বুক ভেঙ্গে গিয়েছিল অভির ব্যাথা দেখে। নিজেও খাননি কাউকে খেতেও দেননি। সারা রাত বুকের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিলেন ছেলেকে। মনামিও সেইরাতে ঘুমায়নি, সারা রাত বসে ভাইয়ের পিঠে নারকেল দিয়ে হলুদ বেটে মাখিয়ে দিয়েছিল।
আকাশ আর কোনদিন সোজা হয়ে হাটতে পারেনি, এখন ক্রাচ নিয়েই হাটে। মাঝে মাঝে রাস্তায় দেখা হয় অভির সাথে, দেখা হলেই মাথা নিচু করে এড়িয়ে যায়।
মনামি হেসে ফেলে, “সত্যি রে কি দিন ছিল সেইসব।”
দিদির কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে। হেসে ফেলে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ রে, সত্যি রে বড্ড ভালো ছিল।”
ভাইয়ের রুক্ষ চুলে বিলি কাটতে কাটতে জিজ্ঞেস করে, “তুই চাকরি কবে করবি?”
অভি উত্তর দেয়, “জানিস ত যা পাচ্ছি সব কোলকাতার বাইরে। তবে তোর বিয়ে হয়ে গেলে কোলকাতাতে যা চাকরি পাবো তাতেই ঢুকে যাবো।”
মনামি ভাইয়ের চুল টেনে বলে, “কপালে উল্কি আঁকার নতুন ডিজাইন দেখে রাখিস কিন্তু।”
মনামির বান্ধবী কেয়ার বিয়েতে, কপালে আঁকার জন্য অভির ডাক পড়েছিল। মাথা নাড়ায় অভি, “সে ত অবশ্যই এঁকে দেব তবে এই বার প্রফেশানাল বিউটিসিয়ান ডাকব, ওই কেয়াদির মতন নয়।”
মনামি উত্তর দেয়, “হুম, বউভাতে ঠিক ভাবে সাজাতে পারেনি তার চেয়ে লেখার বিয়েতে যে মেয়েটা সাজিয়েছিল অনেক ভালো সাজিয়েছিল, তাকেই ডাকব কি বলিস।”
মাথা দোলায় অভি, “হ্যাঁ রে মেয়েটা লেখাকে বিয়েতে এবং বোউভাতে দুই দিনই দারুন সাজিয়েছিল।”
বলতে বলতে লেখার বিউটিসিয়ান বান্ধবীর কথা মনে পরে গেল। দময়ন্তী ঘোষ, বারাসাতে বাড়ি, লেখার কলেজের বান্ধবী। মনামি অথবা লেখার মতন ফরসা না হলেও, কাঁচা গমের মতন রঙ, বেশ সুন্দরী, টানাটানা মিষ্টি চোখ জোড়া ভীষণ কথা বলে। লেখার মতন মুখ চোরা নয়, বেশ মিশুকে হাসিখুশি মেয়ে। ঝন্টুর বিয়ের সময়ে কাজের মধ্যে ভীষণ ভাবে ব্যাস্ত থাকায় দময়ন্তীর সাথে ঠিক ভাবে পরিচয় করতে পারেনি। কাজের ফাঁকে মাঝে মধ্যে চোখে চোখে অব্যাক্ত কিছু টুকরো শব্দ হয়ত ছড়িয়ে গিয়েছিল ওদের মাঝে, তবে সেটা ওই বোউভাতের দিন পর্যন্ত সীমিত ছিল। তারপরে কোনদিন অভি কোন রকম চেষ্টা করেনি দময়ন্তীর সাথে আলাপ পরিচয় করার।
ভুরু নাচিয়ে কৌতুক স্বরে জিজ্ঞেস ভাইকে করে, “কি রে শয়তান হারিয়ে গেলি নাকি রে? প্রেমট্রেম কবে করবি?”
দিদির কোলে মাথা গুঁজে বলে, “না রে ভাই সে গুড়ে বালি। দিমাগে অনেকে থাকে কিন্তু বুকের মাঝে কাউকে জায়গা দেব না।”
মনামি হেসে ফেলে, “আচ্ছা তাঁর মানে মাথায় কেউ আছে তাহলে।”
মাথা নাড়ায় অভি, সত্যি ওর জীবনে তেমন কেউ নেই। দময়ন্তী শুধু মাত্র সেই কটাদিন ওর মাথার মধ্যেই ছিল, বুকের মধ্যে ঠাই দেয়নি কোনমতে, “মাথায় থাকলে কি আর তুই জানতিস না নাকি।”
সত্যি কথা, এই সব ব্যাপারে মনামিকেই আগে জানাবে। মুচকি হেসে ভাইকে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা বুঝলাম, তাহলে আমিই দিল্লী গিয়ে একটা সুন্দরী দেখে নিয়ে আসব।”
মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয় অভি, “না রে দিদিভাই, পারব না। আমার সবকিছু বড়মা থেকে শুরু আর তোকে দিয়েই শেষ, এই দুজনার মাঝে আমি কাউকে আনছি না।” কথাটা শুনে কেঁদে ফেলে মনামি। “বাইরের লোক কি আর বুঝবে বড়মাকে, তোকে, আমাকে? কেউ বুঝবে না রে।”
ভাইকে জড়িয়ে ধরে কান্না ভেজা কণ্ঠে বলে, “আমি এই বিয়ে করব না। আমি কাল পাপাকে বলব দিল্লীতে আমি বিয়ে করব না। এই কোলকাতায় আমার জন্য যেন ছেলে খোঁজে।”
কান্না ভেজা কণ্ঠে দিদিকে বলে, “নারে না করিস নে। পাপা বড়মা দিদিভাই সবাই এই সম্বন্ধে ভীষণ খুশি। হয়ত শিতাভ্র ভালো ছেলেই হবে। জীবনের প্রতিটা পদক্ষেপ একটা এডভেঞ্চার। তুই পা বাড়া আমি তোর পেছনে আছি।”
মনামি ভাইকে জড়িয়ে কেঁদে ফেলে, “তুই না একদম পাগল।”
মাঝ রাতে মাঝে মাঝে জল খেতে ওঠেন দীপাদেবী। ঘুম চোখে বিছানা থেকে উঠে বসে বসার ঘর থেকে আওয়াজ ভেসে আসতেই স্বচেতন হয়ে ওঠেন। চুপচাপ বসার ঘরে ঢুকে দেখে, মনামির কোলে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে কাঁদছে অভি। ভাই আর বোনের এই টান দেখে চোখ দুটো জলে ভরে এলো। চুপচাপ পেছনে দাঁড়িয়ে রইলেন কিছুক্ষন তারপর চোখের কোল মুছতে মুছতে নিজের বিছানায় ফিরে গেলেন।
ডায়রির পাতা গুলো পাল্টাতে পাল্টাতে কখন যে সকাল হয়ে আসে তার খেয়াল থাকে না।
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,992 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
Posts: 250
Threads: 1
Likes Received: 136 in 114 posts
Likes Given: 10
Joined: Apr 2019
Reputation:
8
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,992 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
Posts: 145
Threads: 8
Likes Received: 292 in 106 posts
Likes Given: 17
Joined: May 2020
Reputation:
34
পর্ব দুই। পাহাড়ি বলাকা (#2-#6)
সেই সকাল থেকে ঝির ঝির করে বৃষ্টি শুরু। অফিসের সেদিন শেষ দিন তাই না গেলেই চলত না। মনটা ভীষণ ভাবে ভারাক্রান্ত, এই ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টিতে সাধারণত মন ভালো হওয়ার কথা কিন্তু বুকের মধ্যে এক অজানা ভীতি ভর করে রয়েছে। দুপুরের দিকে বৃষ্টি একটু ধরে এসেছিল কিন্তু বিকেলে আবার ঝমঝমিয়ে নেমে এলো। বাকিদের আসার আগেই অফিসে পৌঁছে গিয়েছিল, কারন লাঞ্চের পরেই বেড়িয়ে যাবে। সবাই এক এক করে ওর কাছে এসে, থমথমে চেহারা নিয়ে এক ম্লান হাসি দেখিয়ে চলে যায়। ও জানে এই হাসির বেশির ভাগটাই মেকি। দামী কারপেটের নিচে যেমন ধুলো বেশি করে জমে থাকে ঠিক তেমন এদের হাবভাব। ড্রয়ার খুলে কাগজপত্র গুছিয়ে নিল ব্যাগের ভেতর। অফিসের ল্যাপটপটা জমা দিয়ে যেতে হবে, ল্যাপটপ ব্যাগ খুলে দেখে নিল নিজের কিছু নেইত। ফরসা কব্জিতে বাঁধা সোনার ঘড়িটা দেখল মিসেস নেহা সিনহা, দেড়টা বাজে এবারে বেড়িয়ে পড়লে ভালো হয়, এইভাবে খালি বসে থাকতে একদম ইচ্ছে করছে না। ডেস্কটা শেষ বারের মতন নিরীক্ষণ করে উঠে দাঁড়াল, লাঞ্চ নিয়ে আসেনি, বাড়িতে ফিরেই খাবে ঠিক করে এসেছিল।
উঠে দাঁড়াতেই সামনের ডেস্কে বসা, সুমনা জিজ্ঞেস করল, “কি গো নেহাদি, বেরোচ্ছ নাকি?”
ম্লান হেসে উত্তর দিল, “হ্যাঁ রে যাই।”
সুমনা বাইরে দেখে বলল, “বৃষ্টিটা কিন্তু বেড়ে গেছে, একটু থেমেই যাও না।”
ম্লান হেসে ব্যাগ হাতে উত্তর দিল নেহা, “নারে, গাড়ি আছে সঙ্গে অসুবিধে হবে না।”
সুমনা ওর কাছে এসে শুকনো মুখে বলে, “তোমাকে সত্যি খুব মিস করব।”
ওর হাত ধরে উত্তর দেয়, “আমি কোলকাতা ছেড়ে ত আর যাচ্ছি না রে, ইচ্ছে হলে আমার ফ্লাটে চলে আসিস। আসি রে, ভালো থাকিস।”
ছোট পায়ে সবার কাছ থেকে বিদায় জানিয়ে একবার একটা কাঁচে ঘেরা কেবিনের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। গত তিনদিন ওর নজর এড়ানোর জন্য সঞ্জীব অফিসে আসেনি। শুকনো একটা হাসি হেসে মাথা নাড়িয়ে বেড়িয়ে এলো অফিস থেকে। দরজায় দাঁড়িয়ে সিকিউরিটি গার্ড, বরেনকে বলে গাড়িটা নিয়ে আসতে। মাথা নাড়িয়ে হাত থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে নিল বরেন। বৃষ্টি না পড়লে নিজেই গাড়ি পর্যন্ত হেঁটে যেত, কিন্তু ছাতাটাও খুলতে একদম ইচ্ছে করছিল না নেহার। বরেন গাড়ি নিয়ে আসতেই দরজা খুলে উঠে বসে, বরেনের হাতে একটা পাঁচশো টাকার নোট ধরিয়ে বলে, “ভালো থেকো।” মাথা দুলিয়ে কৃতজ্ঞ ভরা এক হাসি দিল বরেন। গাড়ি স্টারট দিতেই মনে পড়ল বাড়ি পৌঁছে একবার রিতিকাকে ফোন করতে হবে। পার্ক স্ট্রিটের মোড়ে আবার জ্যাম, পেছনের গাড়িটা সমানে হর্ন বাজিয়ে চলেছে, একরাশ বিরক্তি নিয়ে সামনের গাড়িটাকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যেতে চেষ্টা করল। কল্লোলিনী তিলোত্তমা আজকে সত্যি ভেসে যাবে মনে হচ্ছে। জ্যাম কাটিয়ে, গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফিরতে বেশ সময় লেগে গেল, কি করা যাবে। শহরের রাস্তার যা হাল, বরষা হলেই জল জমে তাও আবার বেহালার মোড়ে ত সারা বছর জ্যাম থাকে। চুপচাপ নিজের ফ্লাটের দরজা খুলে ঢুকতেই মনে হল, চারপাশের চেনা লোকের ভিড়ে ও খুব একা।
ফ্লাটটা বিশাল বড় না হলেও ওর একার পক্ষে যথেষ্ট, দুই কামরার ফ্লাট, হলটা বেশ বড়। খুব সাধ করে নিজের হাতে কষ্টের টাকা দিয়ে সাজিয়েছে। ভাগ্য ভালো পাঁচ বছর আগে ফ্লাটটা কিনে রেখেছিল না হলে আজকে ওকে পথে বসতে হত। স্বপ্নের সোপান চড়তে চড়তে অনেক কিছুই পেছনে ফেলে এসেছে নেহা। শোয়ার ঘরে ঢুকে বিছানার ওপরে ব্যাগটা ছুড়ে মারল। সত্যি কি সব শেষ না এখন কিছু শক্তি বেঁচে আছে ওর দেহে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে নিরীক্ষণ করে নিজেকে। হেরে যাওয়া কখনই চলবে না ওর, তাহলে সারা পৃথিবী হাসবে ওকে দেখে, বিশেষ করে সঞ্জীব আর রুদ্র। পোশাক খুলে একটা পাতলা কামিজ চড়িয়ে বাথরুম থেকে পরিষ্কার হয়ে ফ্রিজ খুলে ভদকার বোতল হাতে নিয়ে নিল। খেতে একদম ইচ্ছে করছিল না। মাথার মধ্যে অনেকক্ষণ ধরেই ঝিমঝিম একটা ভাব ছিল সেটা কি আর কাটবে এই ভদকায় তাও এক ব্যার্থ প্রচেষ্টা। রান্না ঘরে ঢুকে, কাট গ্লাসে বেশ খানিকটা ভদকা ঢেলে একটু লেবুর রস আর আদা কুচি মিশিয়ে নিল। ছোট্ট একটা চুমুক দিয়ে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়াল। যেতে যেতে, বসার ঘরের দেয়ালে টাঙ্গানো ওর পুরানো দিনের ছবি গুলো দেখে একটু হাসি দেয়।
শোয়ার ঘরের কাঁচের জানালাটা মেঝে পর্যন্ত নেমে এসেছে, খুব সাধ করে দেয়াল ভেঙ্গে এমন জানালা বানিয়েছিল। আবার খুঁজতে হবে একটা চাকরি, হাতে টাকা বিশেষ নেই, যা আয় হয় তাঁর বেশির ভাগ এই গাড়ির ই.এম.আই আর ফ্লাটের ই.এম.আই দিতে দিতেই চলে যায়। এতদিন সেই অভাবটা বুঝতে পারেনি তবে আজকে খুব প্রখর হয়ে সামনে দেখা দিয়েছে। একবার পিয়াকে ফোন করলে হয়, কোথায় আছে। সেদিন ত বলছিল দুবাই না কোথায় যাওয়ার ছিল, চলে গেছে নাকি? আজ একটু একা থাকতে চায় নেহা, এতদিন ওর চারপাশে বহু মানুষের ভিড় ছিল। তার আগে অবশ্য একবার রিতিকাকে ফোন করাটা খুব জরুরী।
নেহা ফোনে রিতিকাকে জিজ্ঞেস করে, “হ্যালো বিজি আছো নাকি?”
রিতিকা হেসে উত্তর দেয়, “না গো বল কি খবর।”
নেহা প্রশ্ন করে, “ঐ তুমি সেদিন একটা মিডিয়া হাউসে চাকরির ব্যাপারে বলছিলে তার কি হল?”
রিতিকা কিছুক্ষন ভেবে উত্তর দিল চুকচুক করে খানিক ব্যার্থতা দেখিয়ে, “ও আচ্ছা ওইটা, তুমি আর সেই সময়ে কিছু বললে না আমিও আর জোর দেখালাম না। গত সপ্তাহে ওই পোস্টটা ফিল হয়ে গেছে গো।”
নেহা কি আর জানত, চার দিনে এত ঝড় বয়ে যাবে ওর জীবনে। আভাস ছিল ঠিকই কিন্তু এত তারাতাড়ি বিবাহ বিচ্ছেদ পর্যন্ত কথা চলে আসবে সেটা আঁচ করতে পারেনি।
তাও জিজ্ঞেস করে, “কিছু করা যায়না কি?”
রিতিকা কিছুক্ষন ভেবে উত্তর দিল, “এখন মারকেটিং এ একটা পোস্ট খালি আছে তবে নতুন জিএম নিযুক্ত হওয়ার পরেই ওই পোস্টে লোক নেবে।”
নেহা জিজ্ঞেস করে, “কবে জয়েন করবে নতুন জি এম?”
রিতিকা উত্তর দেয়, “সঠিক জানা নেই, তবে পরের মাসের মধ্যে হয়ে যাওয়া উচিত। বড় মানুষের বড় ব্যাপার, বুঝতেই পারছ, অত তাড়াতাড়ি কি আর পোস্ট ফিল হয়।” বলেই একটু হেসে দিল।
নেহা হাসি টেনে তাও বলে, “একটু দেখো প্লিজ, খুব দরকার।”
রিতিকা আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করে, “তুমি মারকেটিঙ্গে করবে?”
নেহা ম্লান হেসে বলে, “আসুবিধা নেই, কিছু না কিছু করে ফেলব, তুমি শুধু একবার রাস্তাটা ধরিয়ে দিও বাকিটা আমার ওপরে ছেড়ে দাও।”
রিতিকা ফোন রাখার আগে আস্বাস দেয়, “আচ্ছা আমি দেখছি কি করতে পারি।”
নেহার কোন কিছুই অবিদিত নয়, এই কর্পোরেট দুনিয়া আর উচ্চবিত্ত সমাজের সকল সোপান ওর চেনা। এমন এক দিনে ঠিক বত্রিশ বরষা আগে এই শহর থেকে অনেক দূরে এক ছোট শহরে ওর জন্ম। চোখের সামনে ভেসে ওঠে ছোট বাড়ি, বাড়ির পেছনে বহু দূরে সবুজে ঢাকা পাহাড় আর জঙ্গল। পাহাড়ের গায়ে চায়ের বাগান। ভীষণ ভাবে মনে পরে যায় সেই রাত, যার পর থেকে ওর জীবন একদম বদলে যায়। সেই ঘন কালো শীতের রাতে যে মেয়েটা বাড়ি ছেড়ে অজানার পানে ধেয়েছিল সে, নেহা সিনহা নয়, সে ছিল বাবা মায়ের বড় মেয়ে, নীলাঞ্জনা দস্তিদার। ফিরে যায়, চোদ্দ বছর আগের সেই রাতে। নিজের কিছু করার স্বপ্ন বুকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়েছিল এক পাহাড়ি বলাকা। স্বপ্ন পূরন কিছুটা হয়েছে তবে এখন অনেকটা পথ বাকি। এই চাওয়া আর পাওয়ার মাঝে কিছু গেছে খোয়া আর কিছু নতুন পাওয়া।
চোখ বুজে ভদকার গ্লাসে এক চুমুক দিয়ে হারিয়ে যায় সেই দিনে। বাইরে তাকালে আলো পর্যন্ত ফিরে আসে না। বাড়ির পেছনেই জঙ্গল, তার মধ্যে থেকে ভেসে আসে একটানা ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। অনেকক্ষণ সেই আওয়াজ শুনলেই যে কারুর ঘুম পেয়ে যায় কিন্তু এই কনকনে ঠান্ডায় ঘুম নেই ওর চোখে। শীতকাল, জানালার ফাঁক দিয়ে কনকনে ঠান্ডা হাওয়া ঢুকে কামরাটাকে আরো বেশি ঠান্ডা করে দেয়। বাড়ির সবাই অঘোরে ঘুমিয়ে, কিন্তু কিছুতেই আর মেয়েটার চোখে ঘুম নেই। এই বদ্ধ জীবন থেকে পালিয়ে যাওয়ার এক আকুল আকাঙ্ক্ষা ওকে অনেকদিন থেকেই তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল, সেই নীড় ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময়ে এসে গেছে। মাঝে মাঝেই শ্বাস বন্ধ করে কিছু একটা আওয়াজ এর অপেক্ষা করে। কেন যে এত দেরি করে ছেলেটা, এইদিকে রাত একটা বাজে। বারেবারে হাতে বাঁধা ঘড়ির দিকে তাকায়, সেকেন্ডের কাঁটাটা কিছুতেই দেড়টার কাছে পৌঁছায় না কেন? একটা সেকেন্ড মনে হয় যেন এক ঘন্টা।
বিছানার তলা থেকে ছোট ব্যাগটা বার করে আবার দেখে নিল নিজের জিনিসপত্র। হ্যাঁ, সব ঠিক আছে, নতুন জীবন শুরু করার জন্য যেটুকু অতি আবশ্যক সবকিছুই নিয়ে নিয়েছে। অনেক্ষন না অল্পক্ষন পরে ঠিক জানালার কাছেই একটা পাখীর ডাক শুনতে পেয়ে কান সজাগ হয়ে ওঠে। গায়ে ভারি জ্যাকেটা চাপিয়ে নিজেকে একবার আয়নার সামনে দেখে নেয়। পরনে কালো রঙের চাপা জিন্স, গায়ে গোলাপি একটা শারট, বেশ সুন্দরী দেখায় নিজেকে। পালিয়ে যাবে তাও বেশ সেজে গুজেই তৈরি, মনে মনে হেসে ফেলে নীলাঞ্জনা। ড্রেসিং টেবিলের ওপরে একটা দুই লাইনের চিঠি ছেড়ে যায় যাতে লেখা...
“প্রিয় মা, অনেক দিন থেকেই আমার মডেল হওয়ার স্বপ্ন, নিজের পায়ে দাঁড়ানো, স্বাধীন ভাবে কিছু করা। আমি সেই স্বাধীনতার খোঁজে চললাম, আমাকে খুঁজতে চেষ্টা কর না। যদি কোনদিন বড় হয়ে কিছু করতে পারি তবেই ফিরে আসব। ইতি তোমার পমু।”
বিছানায় ওর ছোট বোন ঘুমিয়ে কাদা। চুপিচুপি লেপ সরিয়ে বোনের কপালে ছোট্ট চুমু খেয়ে ছলছল চোখে দরজা খুলে বেড়িয়ে পরে অজানা এক দিগন্ত পানে। বাইকে বসা ছেলেটার পেছনে বসার আগে, শেষ বারের মতন নিজের বাড়িটা একবার দেখে নেয়। বিদায় এই বদ্ধ জীবন, বিদায় শিলিগুড়ি, বিদায় পাহাড়, বিদায় তিস্তা নদী, বিদায় ছোট্ট বোন নীলিমা, বিদায় বাবা মায়ের বড় মেয়ে আদরের “পমু”।
নীলাঞ্জনা ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করে, “এত দেরি করলি যে?”
ছেলেটা নীলাঞ্জনার সাজের বহর দেখে হেসে ফেলে, “তুই সত্যি একটা মেয়ে মাইরি। পালাবি তাও সাজতে ছাড়বি না।” নীলাঞ্জনার ও সেই শুনে হেসে ফেলে। ছেলেটা ওর প্রশ্নের উত্তর দেয়, “আরে বাবা এতক্ষন জেগে ছিল তাই বেরোতে পারছিলাম না। চল তাড়াতাড়ি বস।”
নীলাঞ্জনা বাইকে বসে জিজ্ঞেস করে, “এই রুদ্র, তোর ব্যাগ কোথায়?”
রুদ্র উত্তর দিল, “ঋষি আমার ব্যাগ নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে, তাড়াতাড়ি চল।”
হেসে ফেলে নীলাঞ্জনা, “আমি কি আর বাইক চালাবো নাকি, চালাবি তুই, তাড়াতাড়ি চল।” একটু থেমে জিজ্ঞেস করে, “সব ঠিক আছে ত?”
বাইকে স্টারট দিয়ে নীলাঞ্জনার গালে আলতো ঠোঁট ছুইয়ে উত্তর দেয়, “সব ঠিক, তুই চিন্তা করিস না। দেড়টা নাগাদ বিশুদার ট্রাক এসে যাবে। তুই সব গুছিয়ে নিয়েছিস ত?”
মাথা দোলায় নীলাঞ্জনা, “হ্যাঁ হ্যাঁ, আমি আমার সব জিনিস ভালো মতন গুছিয়ে নিয়েছি।”
রুদ্র জিজ্ঞেস করে, “টাকা পয়সা?”
নীলাঞ্জনা উত্তর দেয়, “তুই চিন্তা করিস না, নিজের যা জমানো ছিল সবটাই নিয়েছি।”
রুদ্র মাথা ঝোকাল, “ঠিক আছে তাহলে। ঋষি, বাইকের বদলে ত্রিশ হাজার দিয়েছে।”
বাইকটা চলতে শুরু করতেই কনকনে ঠান্ডা হাওয়া ওকে কাঁপিয়ে তোলে। উত্তাপ পাওয়ার জন্য, পেছন থেকে রুদ্রকে জাপটে ধরে নীলাঞ্জনা। পুরু জ্যাকেট ভেদ করে পেছনে বসা কচি মেয়েটার কোমল বক্ষ জোড়া অনুভব করেই শরীর গরম ওঠে। কানের পাশ দিয়ে সো সো করে হাওয়া কেটে বেড়িয়ে যায়, সেই সাথে নীলাঞ্জনার মনে হয় এই কনকনে বাতাসে ওর মুক্তির স্বাদ ভেসে বেড়াচ্ছে।
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,992 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
This new character sounds interesting
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,992 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
Posts: 250
Threads: 1
Likes Received: 136 in 114 posts
Likes Given: 10
Joined: Apr 2019
Reputation:
8
nice story. waiting for next episode
|