Thread Rating:
  • 32 Vote(s) - 3.22 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
মহানগরের আলেয়া
মহুয়া ওইদিকে বসে নেই, রুহিকে কোলে নিয়েই কাজে নেমে পড়ে। সব থেকে আগে একটা গাড়ি কিনতে হবে। দানা আর মহুয়া একটা কালো বি.এম.ডাবলু কেনে, দামী বিদেশী গাড়ি শক্তির সাথে সাথে বিত্তের পরিচয়। সামনের মানুষ দানার পোশাক পরিচ্ছদ, দানার গাড়ি দেখেই সর্ব প্রথম যাচাই করবে। এতদিন এম্বাসেডর ট্যাক্সি চালক দানা কোনোদিন স্বপ্নে ভাবেনি নিজের একটা কালো বি.এম.ডাবলু গাড়ি হবে। হাতে চাবি পেয়ে, মহুয়াকে জড়িয়ে ধরে প্রায় কেঁদে ফেলে।


গাড়ির পরে সব থেকে জরুরি টাকা। মহুয়ার নামে যে একশো কোটি টাকার শেয়ার আর বন্ড ছিল সেইগুলো বিক্রি করে প্রায় আড়াইশো কোটি টাকা হাতে আসে। অত টাকা পাবে সেটা আশাতীত তাই দুইজনে অবাক হয়ে যায়। নতুন কোম্পানির নাম, মেয়ের নামেই রাখা হয়, "রুহি বিল্ডারস প্রাইভেট লিমিটেড।" মহেশ বাবুর তদারকিতে কয়েকদিনের মধ্যে অফিসে লোকজন নিযুক্ত করা হয়। ছোট অফিস, দশ জনের মতন ছেলে মেয়ে নিয়ে কাজ শুরু করা হয়। মহুয়ার কাজ অফিসে গিয়ে বসা, কিছু না হোক মালিক চোখের সামনে থাকলে কাজ সবাই করে না হলে কেউ কাজ করে না। মহুয়া চায় না অফিসের অবস্থা "চাষা গেল ঘর লাঙ্গল তুলে ধর" এর মতন হোক। রুহি ছোট ছোট পায়ে সারা অফিস ঘুরে সবাইকে মাতিয়ে রাখে।

নিজের গাড়ি নিজেই চালায় দানা। আগে হলুদ রঙের ভাড়ার ট্যাক্সির স্টিয়ারিং হাতে থাকতো এখন নিজের কালো বি.এম.ডাবলুর স্টিয়ারিং। পোশাকে তেমন কিছু ফের বদল হয়নি, যদিও মহুয়ার ইচ্ছে দানা সুট পরুক কিন্তু সেটা দানার একদম ইচ্ছে নয়। একটা সামান্য ট্যাক্সি চালক কি আর সুট পরে? মহুয়া যত ওকে বুঝাতে চায় যে দানা আর সেই ট্যাক্সি চালক নয়। জেদি মহুয়া ওর জন্যে বেশ কয়েকটা সুট বানাতে দেয়।

সকালে রুহি আর মহুয়াকে অফিসে ছেড়ে দিয়ে মহেশ বাবুকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে দানা। মহেশ বাবু ওকে নিয়ে নিজের প্রোজেক্ট গুলো দেখান, কেমন ভাবে কাজ হয়, কার সাথে কি ভাবে কথা বলতে হয়। ভিতে বেশি সময় লাগে, একবার ভিত গড়ে উঠলে বাকি বিল্ডিং তাড়াতাড়ি নির্মাণ করা যায়। দানা মন দিয়ে মহেশ বাবুর কাছ থেকে এই ব্যাবসা সংক্রান্ত সব কিছু শিখে নেওয়ার চেষ্টা করে।

এখন এলাকার কোন বিল্ডারদের সাথে দেখা করা হয়নি দানার। বাপ্পা নস্করের সেক্রেটারি, ইন্দ্রনীল ওদের সাথে কথাবার্তা বলেছে কিন্তু কেউই ওদের জমি ওদের অর্ধ সমাপ্ত প্রকল্প দানাকে বেচতে নারাজ। একদিন দানা নিজেই মহেশ বাবু আর ইন্দ্রনীলকে সঙ্গে নিয়ে এলাকার এক নামকরা বিল্ডার, সুব্রতর অফিসে যায়। অফিসের সামনে কালো বি.এম.ডাবলু. দাঁড়াতেই সুব্রত অফিস থেকে বেড়িয়ে আসে। দানাকে আগে এই এলাকার উন্নয়নের জন্য দেখেছে তবে বিল্ডার হিসাবে পরিচয় তখন ছিল না। দানার সঙ্গে ইন্দ্রনীলকে সঙ্গে দেখে বুঝতে বাকি থাকে না যে দানা বাপ্পা নস্করের খাস লোক।

দানা অফিসে ঢুকে এদিক ওদিক তাকিয়ে সুব্রতকে জিজ্ঞেস করে, "আপনার আজকাল কাজ কেমন চলছে?"

সুব্রত দানাকে বসতে বলে, "দেখুন আমি জানি আপনি কেন এখানে এসেছেন।"

দানা সোজাসুজি সুব্রতকে প্রশ্ন করে, "কয় মাস হয়ে গেল আপনার কাজ বন্ধ, এক বছর হয়ে গেছে তাই না?"

অগত্যা সুব্রত মাথা দোলায়, "হ্যাঁ।"

দানা জিজ্ঞেস করে, "কত টাকা লোকসান হয়েছে আপনার?"

সুব্রত বাঁকা হেসে বলে, "তাতে আপনার কি দরকার?"

ইন্দ্রনীল ওকে বলে, "দেখুন মিস্টার সুব্রত, আমরা এইবারে চাঁদা অথবা প্রকল্পের অংশীদার হতে আসিনি। আপনার যত টাকা খরচ হয়েছে ঠিক সেই দামে দানা আপনার ওই অর্ধ সমাপ্ত প্রকল্প কিনতে চায়।"

সুব্রত একটু ভেবে বলে, "এই এক বছরে অনেক টাকা লোকসান হয়ে গেছে। জিনিস পত্রের দাম বেড়ে গেছে। দেখুন আমি ব্যাবসায় নেমেছি কিন্তু বাপ্পা নস্কর যদি কুড়ি পঁচিশ শতাংশ চায় তাহলে কি করে কাজ করি বলুন?"

ইন্দ্রনীল কিছু বলতে গেলে দানা ওকে থামিয়ে নিজে উত্তর দেয়, "মিস্টার সুব্রত, আমি জানি আপনি ব্যাবসা করতে এসেছেন। আপনার সামনে কয়েকটা বিকল্প রাখতে পারি। প্রথম বিকল্প, আমি আর আপনি মিলে মিশে কাজ করি। আপনার চল্লিশ শতাংশ থাকুক আমার ষাট তাহলে আপনিও টাকা কামাবেন। দ্বিতীয় বিকল্প, গায়ের জোরে আমি আপনার কাছ থেকে কম দামে প্রকল্প কিনে নেব আর তৃতীয়, আপনি এইভাবে বসে থাকুন আর পাঁচ বছরের জন্য। কেননা এর পরের নির্বাচনে আবার বাপ্পা নস্কর এই আসনে জিতবে এবং আমি জেতাবো।"

পরের নির্বাচনে দানা বাপ্পা নস্করকে সমর্থন করবে জেনে ইন্দ্রনীল সন্তুষ্ট। গায়ের জোরে কিনে নিতে পারে দানা সেটা ইন্দ্রনীলকে সাথে দেখেই বুঝে গেছিল সুব্রত। সুব্রত'র কপালে চিন্তার রেখা দেখা দেয়। অনেকক্ষণ ভাবনাচিন্তা করে সুব্রত দানাকে বলে, "জমি কিনতে এক কোটি টাকা লেগেছে আর এখন পর্যন্ত আরো এক কোটি জলে গেছে।"

এইবারে মহেশ বাবু মুখ খোলেন, সুব্রতকে বলেন, "আগে সাইট দেখবো তারপরে কাগজ পত্র দেখব। আপনি যেমন একটা দাম বলেছেন তেমনি আমরাও হিসাব নিরীক্ষা করে তারপরে মুল্য ধার্য করব।"

সুব্রত শেষ পর্যন্ত বলেন, "না মানে কয়েকদিন একটু সময় চাই। তবে আপনার প্রথম বিকল্প আমার বেশ লেগেছে।"

দানাও সেটা চায়, যদিও হাতে টাকা আছে তাও ওই অর্ধ সমাপ্ত প্রকল্প গুলো অংশীদারি হিসাবে কাজ করতে চায়। তাতে মাথা ব্যাথা বেশ কম, আগের মালিকের জানাশোনা লোকের দ্বারা কাজ করানো যাবে। নতুন লোক খোঁজার বালাই নেই। হাতে টাকা থাকলে বেশি প্রকল্পে কাজ করতে পারবে তাড়াতাড়ি টাকা আয় হবে।

কয়েকদিন পরে সুব্রতর সাথে সাথে আরও অনেকজন বিল্ডার প্রমোটার ওর সাথে দেখা করে। সবাইকে এক কথা বলে দানা, সবাই ওর কথায় সম্মতি জানায়। সেদিন ইন্দ্রনীল ছাড়াই দানা আর মহেশ বাবু ওদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করেন।

সেদিন দানা ওদের জিজ্ঞেস করে, "আপনাদের কি কারনে বাপ্পা নস্কর বাধা দিয়েছিল বলতে পারেন?"

সবাই মুখ চাওয়াচায়ি করে, দানা বাপ্পা নস্করের লোক ওর সামনে বাপ্পা নস্করের বিরুদ্ধে বলা উচিত হবে কি হবে না সেই নিয়ে ধন্দে পড়ে যায়।

দানা ওদের অভয় দিয়ে বলে, "বলুন না, সমস্যাটা কি হয়েছিল।"

সবার হয়ে সুব্রত উত্তর দেয়, "আমরা বেশির ভাগ আগে বিমান চন্দের রাজনৈতিক দল করতাম। গত বারে বাপ্পা নস্কর জেতার পরে ওকেও আমরা টাকা দেব বলেছিলাম। কিন্তু বাপ্পা নস্কর আমাদের কাছ থেকে কুড়ি থেকে পঁচিশ শতাংশ চেয়ে বসে। আমরা ছোট ছোট প্রকল্পে হাত দেই, কুড়ি পঁচিশ শতাংশ যদি একা ওকেই দেই তাহলে বাকিদের দিয়ে আমাদের কি বাঁচবে বলুন?"

বাপ্পা নস্করের দৌরাত্মের বিষয়ে দানা অবগত। দানা মাথা দোলায়, "সত্যি কথা।" একটু থেমে জিজ্ঞেস করে, "তাহলে আপনারা আমার প্রথম বিকল্প পথেই যেতে চান তাই তো?"

সবাই সম্মতি দেয়। দানা ওদের সাথে হাত মিলিয়ে জানিয়ে দেয় কাগজ পত্র তৈরি করতে। একবার কাগজ পত্র হাতে চলে এলে কাজ শুরু করতে পারে সবাই আর সেই সাথে দানাও ওদের সেই মতন টাকা দেবে।







চৌষট্টি ছক (#০২)

সঙ্গীতাকে ফ্রান্সে পাঠিয়ে দিয়েছে ওর বাবা মা। ইন্দ্রাণী শহর ছেড়ে নতুন জায়গায় চলে গেছে। যাওয়ার আগে ইন্দ্রাণী ওদের সাথে দেখা করে যায়নি, সেই নিয়ে দানা একটু মনঃক্ষুণ্ণ হলেও মহুয়া বুঝতে পারে কি কারনে ইন্দ্রাণী আর ওদের সাথে দেখা করেনি। ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ডরায়, মহুয়ার মনের অবস্থা ঠিক সেই রকম ছিল। কাজের চাপে কয়েকদিনের মধ্যেই ইন্দ্রাণীর কথা ভুলে যায় দানা আর মহুয়া স্বস্তির শ্বাস নেয়।

সঙ্গীতা ফ্রান্সে পৌঁছে দানার কাছে তথ্য প্রমান রেকর্ড করা চিপ পাঠিয়ে দেয়। সেই চিপ থেকে দানা, বাপ্পা নস্করের বিরুদ্ধে প্রচুর কারচুপির প্রমান পায়। সঙ্গীতা বেশ ভালো তদন্ত করেছিল, কবে কোন আমলাকে কত টাকা দিয়েছিল, কোন বিল্ডারকে খুন করেছিল, কোন কোন সরকারী কাগজে হেরফের করেছিল সবার নাম ধাম, তারিখ ইত্যাদি সব কিছু ওই চিপ থেকে উদ্ধার করে।

নাসির আর আকরাম খবর দেয় যে নয়না আবার কাজে যাওয়া শুরু করে দিয়েছে। নয়নার পেছনে ছায়ার মতন লেগে থাকতে নির্দেশ দেয় দানা। ওর নতুন ছবির কাজ পুরো দমে চলছে। কোনদিন খুব ভোরে শুটিংয়ে যায়, কোনোদিন সারাদিন স্টুডিওতে, তবে সমুদ্র আর সুমিতা ওর পাশ ছাড়ে না আর। নতুন ড্রাইভার রেখেছে, তবে সে শুধু ওর গাড়ি চালায় ব্যাস। একজন আলাদা করে দেহ রক্ষীও নিযুক্ত করা হয়েছে। ভীষণ ধূর্ত নয়না হয়ত টের পেয়ে গেছে যে দানা ওর ওপরে নজর রেখে চলেছে, তাই বিমানের সাথে দেখা সাক্ষাৎ আর বাপ্পা নস্করের সাথে দেখা সাক্ষাৎ কমিয়ে দিয়েছে।

নিজের কাজে নেমে দানা বেশ ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। বিকেলে অফিস থেকে মহুয়াকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে আবার কোথায় যেন নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। কোনোদিন জিজ্ঞেস করলে সদুত্তর পায় মহুয়া কোনোদিন পায় না। যেদিন পায় নান সেদিন রাতে ফিরলে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ লাগে বাড়িতে। ঠিক সময়ে ফিরলে মহুয়া দরজা খোলে আর অসময়ে ফিরলে কাজের মেয়ে এসে দরজা খুলে দেয়।

বসন্ত প্রায় শেষ, গ্রীষ্মের মুখে এসে পড়েছে মহানগর। সামনের বাগানে কোকিলের কুহু ধ্বনি রোজ সকালে শোনা যায়। আম বকুলের গন্ধে বাড়ি মম মম করে। বাগানটা একটা রাস্তা পেরিয়েই, মাঝে মাঝে মনে হয় একটু মাতাল হলে ভালো হত। রোজ রাতে মহুয়ার নেশায় বুঁদ হয় তবে রক্তে একটু সুরা চড়লে আরো ভালো হত। বাড়িতে মেয়ের সামনে মদ খাওয়া যায় না। সেদিন মদনার দোকানে বেশ আড্ডা মেরে সময় কাটিয়ে অনেক রাত হয়ে যায়।

মদনা আর কেষ্ট বারেবারে ওকে বলে, "বাড়ি যা, না হলে ম্যাডাম এই বারে ঝ্যাঁটা পেটা করবে।"

অনেকদিন পরে গলায় চোলাই পড়েছে তাই আর সেইসবে কান দেয় না দানা, "ধুর বাল একটু দাঁড়া এই যাচ্ছি।"

তাও এই যাচ্ছি এই যাচ্ছি করতে করতে রাত দশ’টা বেজে যায়। গাড়িতে উঠে মোবাইল খুলে দেখে প্রায় এক ডজন মিসকল, বুঝে যায় প্রিয়তমা খাপ্পা হয়ে আছে। এই রাতে মধ্য মহানগরে কি আর সেই ফুলের দোকান খোলা থাকবে? দেখা যাক কি হয়। মেয়ের জন্য একটা বড় চকোলেট কেনে। ওই নেশা গ্রস্থ অবস্থায় মধ্য মহানগরের ওই ফুলের দোকানে যায় দানা। বরাবরের মতন হলুদ ফুলের স্তবক চাই ওর। এতদিনে দোকানি ওকে চিনে গেছে। ওকে দোকানে ঢুকতে দেখেই হলুদ ফুলের স্তবক ধরিয়ে দেয়।

দোকান থেকে বের হতে যাবে দানা, দেখে সামনে সমুদ্র দাঁড়িয়ে। সমুদ্র ওকে দেখে ভুত দেখার মতন চমকে ওঠে। সেই সাথে দানার নেশার ঘোর কেটে যায়। রাত সাড়ে দশটা কিন্তু মধ্য মহানগর এলাকায় তখন লোকে লোকারণ্য। রাত যত ঘন হয়, তত এই শহর জেগে ওঠে। আর দশটা এগারোটা মানে মানুষের বিকেল। দানাকে অবশ্য একবার সমুদ্র আগেও ফোন করে ডেকেছিল, কিন্তু দানা জানিয়ে দিয়েছিল যে আর ওই মুখো হবে না। ফোনে গলার স্বর শুনে এইটুকু ধারনা হয়েছিল হয়ত ওরা ওর ওপরে অতটা ক্ষেপে নেই। হয়তো নিজেরাই বুঝতে পেরেছে যা কিছু হয়েছে সেই রাতে সব নয়নার প্ররোচনায় আর চূড়ান্ত নেশার ফলে হয়েছে। তবে নয়নার মনোভাব এখন বোঝা যায়নি। নয়না অতি ধুরন্ধর মহিলা ওর মনের কথা জানার জো কারুর নেই।

সমুদ্র দানাকে কাষ্ঠ হেসে জিজ্ঞেস করে, "কি ব্যাপার এত রাতে ফুল কিনতে বেড়িয়েছিস? এখন কাকে পাল দিচ্ছিস?"

সমুদ্রের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ভারী গলায় পাল্টা প্রশ্ন করে দানা, "নয়না, কেমন আছে?"

সমুদ্র চোরা হাসি দিয়ে বলে, "তুই শালা সেদিন ওই ভাবে নয়নার সাথে সেক্সে মেতে উঠলি, মেয়েটা এক সপ্তাহ বিছানা ছেড়ে উঠতে পারল না।"

দানার মস্তিকের সকল শিরা উপশিরা সতর্ক হয়ে ওঠে। নয়না কি সত্যি ওকে ক্ষমা করে দিয়েছে না এটা একটা চাল। তবে ওকে এই মেকি হাসির আড়ালে থেকেই আঘাত শুরু করতে হবে। বাঁকা হেসে সমুদ্রকে বলে, "এই শোন আমার হয়ে একটু নয়নার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিস। সেদিন না মদের ঝোঁকে একটু বেশি করে ফেলেছিলাম।"

সমুদ্র হাসি থামিয়ে গম্ভির কণ্ঠে ওকে বলে, "নয়না একবার তোর সাথে দেখা করতে চায়।"
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
প্রমাদ গোনে দানা কিন্তু ভয় পেলে চলবে না। সাহস নিয়ে সমুদ্রের কানের কাছে ফিসফিস করে বলে, "কেন রে, নয়নার গুদে আবার চুলকানি উঠেছে নাকি?"


ওই কথা শুনে ভুরু কুঁচকে দানাকে চোরা হাসি দিয়ে বলে, "তুই শালা সত্যি হারামির বাচ্চা। সেই যে গেলি আর দেখা পর্যন্ত করলি না বাড়া।"

হেসে ফেলে দানা, বুঝতে পারে যে ওর এই প্রমোটারির বিষয়ে নয়না অবগত নয় আর সেটা লুকাতেও চায় না, তাই সমুদ্রকে বলে, "আমি বিল্ডার প্রমোটারির ব্যাবসা শুরু করেছি, বুঝলি। কাজে খুব ব্যাস্ত হয়ে পড়েছি রে।"

সেই শুনে সমুদ্র অবাক হয়ে যায়, "তাই নাকি, কোথায় করছিস? তোর এলাকায়, বাপ্পা নস্কর জানে?"

দানা মাথা দোলায়, "হ্যাঁ রে ভাই, বাপ্পা নস্কর জানে এবং ভালো ভাবেই জানে।"

সমুদ্র খানিকক্ষণ ভেবে ওকে বলে, "যাই হোক নয়না একবার তোর সাথে দেখা করতে চায়। কবে তোর সময় হবে?"

দানা পাল্টা প্রশ্ন করে, "কেন দেখা করতে চায় নয়না?"

সমুদ্র চোরা হেসে ঠোঁট উল্টে উত্তর দেয়, "ওই জানে কেন দেখা করতে চায়।"

দানা হেসে ফেলে, "শালা আমাকে গরু পেয়েছিস নাকি? তুই জানিস না এটা হতেই পারে না রে।"

সমুদ্র মিচকি হেসে বলে, "আরে না না সেই সব কিছু নয়, তোর মাইনে বাকি পরে আছে সেটাই হয়তো দেবে। যাই হোক একদিন বাড়িতে আসিস।"

দানার ধারনা এখন নয়না, মহুয়া আর রুহির বিষয়ে জানে না। তাও নয়নার বাড়িতে গিয়ে দেখা করা ঠিক মনে হয় না। হয়ত দানাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে খুন করতে পারে, কিম্বা অন্যদিক থেকে আঘাত হানতে পারে। দানা সমুদ্রকে জানিয়ে দেয়, "ব্যাস্ত রে খুব তবে বাড়িতে নয় অন্য কোথাও দেখা করতে চাইলে করতে পারি।"

দানা আর দাঁড়ায় না, হলুদ ফুলের স্তবক নিয়ে সোজা নিজের গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। নিজের গাড়িতে ওঠার আগে একবার সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে দেখে। দানাকে একটা বিশাল কালো বি.এম.ডাবলুতে উঠতে দেখে, সমুদ্র বিস্ফোরিত চোখে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। দানা ওর দিকে একটা বাঁকা হাসি ছুঁড়ে গাড়ি নিয়ে বাড়ির দিকে যাত্রা শুরু করে।

আজ কপালে দুঃখ আছে। মদনার দোকান থেকেই বের হতে রাত দশটা বেজে গিয়েছিল, তার ওপরে আবার এইখানে সমুদ্রের সাথে দেখা হয়ে আরো দেরি হয়ে গেল। ফোন করলে ঝেড়ে কাপড় খুলে দেবে "পাপড়ি"। নেশা কেটে মাথার মধ্যে টানটান উত্তেজনা, নয়না কি কারনে দেখা করতে চায়। যদি রুহি আর মহুয়ার কিছু হয় তাহলে এই মহানগর জ্বালিয়ে দেবে। গাড়ি চালাতে চালাতেই আরও একবার মহুয়াকে ফোন করার চেষ্টা করে। কিন্তু অভিমানী মহুয়া ওর ফোন উঠায় না।

কলিং বেল বাজানোর আগে শ্বাস চেপে উত্তেজনা প্রশমিত করে নেয়। দেরি করলে ফিরলে যা হয়। যথারীতি কাজের মেয়ে এসে দরজা খুলে দেয়।

দানা এদিক ওদিক তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "তোর ম্যাডাম কোথায়?"

কাজের মেয়ে, মণি ওকে বলে, "দিদিমনি আর রুহি শোয়ার ঘরে।"

মহুয়ার গম্ভির কণ্ঠের আওয়াজ শুনতে পায় দানা, "মদনের দোকান থেকে’ত দশ’টা নাগাদ বেড়িয়েছিলে তাই না। এখন বারোটা বাজে আবার কার কাছে গিয়েছিলে?"

হিমশীতল কণ্ঠে বাঘিনী প্রশ্ন করেছে, দানার বুঝতে বাকি থাকে না যে ওকে এইবারে বেশ আয়েশ করে কেটে কুটে, তেলে ঝালে নুন লঙ্কা দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে খাবে ওর বাঘিনী। দানা ফুলের স্তবক নিয়ে শোয়ার ঘরে ঢুকে দেখে, বিছানায় আধা শোয়া মহুয়া, চশমার ওপর দিয়ে এক ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে প্রেয়সী। রুহি অনেক আগেই ঘুমিয়ে কাদা। দানার হাতে হলুদ ফুলের স্তবক দেখে আরো রেগে যায়। ভেবে পায় না এতরাতে কোথা থেকে ওই সুন্দর ফুলের স্তবক যোগাড় করে এনেছে।

অপরাধীর মতন কাঁচুমাচু মুখ করে মহুয়ার দিকে ফুলের স্তবক এগিয়ে দিয়ে বলে, "সরি পাপড়ি, দেরি হয়ে গেল।"

বুকের ওপরে হাতজোড়া ভাঁজ করে গম্ভির কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, "রাস্তায় কার সাথে দেখা হয়েছিল আবার? নয়না না ময়না?"

দানা চুকচুক করে হেসে ওঠে, "আরে শোন এক কান্ড।" তারপরে ওর পাশে এসে বসে বলে, "ফুলের দোকান থেকে বেড়িয়েই সমুদ্রের সাথে দেখা হয়েছিল।"

সেই শুনে ক্রোধ ভুলে আঁতকে ওঠে মহুয়া, "হঠাৎ কি ব্যাপার? ওরা কি আমাদের অনুসরন করছে।"

দানার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়, তাও মহুয়াকে প্রবোধ দিয়ে বলে, "জানিনা পাপড়ি।"

ঘুমন্ত রুহির গায়ে লেপটা আরও টেনে দিয়ে মহুয়া জিজ্ঞেস করে, "কি কথা হল ওর সাথে?"

দানা সব কিছু খুলে বলার পরে, দুইজনের কপালে চিন্তার রেখা দেখা দেয়। নয়নার সাথে কি দেখা করা উচিত না অনুচিত, এই নিয়ে কিছুক্ষণ শলা পরামর্শ চলে। যদিও সমুদ্রের ব্যাবহার বলছে নয়না ওর বিরুদ্ধাচরণ করবে না, তবুও সাবধানের মার নেই। মহুয়া ওকে পরামর্শ দেয় একবার দেখা করার জন্য, কি বলতে চায় নয়না। সেই সাথে এটাও বলে, যদি নয়না ওদের বিষয়ে জেনে গিয়ে থাকে তাহলে দানা যেন মাথা গরম না করে। চুপচাপ যেন নয়নার কথা মেনে নেয়। পরে বিষদে আলোচনা করা যাবে কি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। মহুয়ার উপদেশ দানার মনে ধরে যায়। বড় বুদ্ধিমতী, মহুয়া পাশে না থাকলে দানার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব হয়ে উঠত না।

বুদ্ধিমতী মহুয়া ওর কান টেনে বলে, "মাঝে মাঝে একটু বৌদের কথা শুনতে হয় বুঝলে।"

দানা ওকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে, "শোব কোথায়?"

মহুয়া, মেয়ের অন্যপাশে দেখিয়ে দেয়। দেরি করার শাস্তি। এমনিতে মহুয়া মাঝখানে শোয়, তবে যেদিন রাগারাগি হয় সেদিন শোয়ার জায়গা বদলে যায়। সেদিন রুহিকে ঢাল করে দানাকে অন্যপাশে ঠেলে দেওয়া হয়।

পরের দিন সকালে দানা, সমুদ্রকে ফোন করে জানিয়ে দেয় দেখা করার কথা। সেই শুনে সমুদ্র বলে, নয়না ওর সাথে বিমানের দেওয়া ফাঁকা বাড়িতে দেখা করতে চায়। দানা নারাজ, একাকী কোন জায়গায় দেখা করতে চায় না দানা। সমুদ্র একটু অবাক হয়ে যায়। সুচতুর দানা বলে ওই বাড়িতে ওদের একসাথে কেউ দেখে ফেললে দুইজনেই সমস্যায় জড়িয়ে পড়তে পারে। সমুদ্রকে বলে গাড়ি নিয়ে সোজা মোহনার দিকের বড় রাস্তা যেন ধরে। রাস্তার মাঝে কোথাও একটা জায়গায় ওরা দেখা করবে। মহুয়ার চোখে চাপা উত্তেজনা, বুকে চরম উৎকণ্ঠা, কি হবে কি হবে। দুই খানা পিস্তল কোমরে গুঁজে গাড়ি নিয়ে আর নাসির আকরামের সাথে বেড়িয়ে পড়ে দানা।

বড় রাস্তায় পড়তেই বেশ কিছু দুর গিয়ে সামনে নয়নার গাড়ি দেখতে পায়। সমুদ্র ওর গাড়ি গতরাতেই দেখেছে সুতরাং চিনতে ভুল হয় না পেছনের কালো গাড়ি টাকে। ফোন করে জানতে চায় কোথায় দেখা করতে চায় দানা, উত্তরে ওকে গাড়ি চালাতে নির্দেশ দেয়। সবে মাত্র শহর ছাড়িয়েছে, আশেপাশে এখন জন বসতি। একদম নির্জনে দেখা করতে চায়। বেশ কিছুদুর যাওয়ার পরে দুই পাশে ফাঁকা মাঠ দেখে দানা ওদের গাড়ি থামাতে নির্দেশ দেয়। দুইজনে গাড়ি ওই ফাঁকা মাঠের মধ্যে নামিয়ে দেয়। দুটো গাড়ি মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। দুটো পিস্তলের স্লাইড টেনে চেম্বারে গুলি ভরে নেয়। পেছনের সিটে বসে আকরাম আর নাসির আগে গাড়ি থেকে নামে। উলটো দিকের গাড়ি থেকে, সমুদ্র, গাড়ির ড্রাইভার আর ওর দেহরক্ষী নেমে পড়ে।

বুক ভরে শ্বাস নেয় দানা, সমুদ্র ফোন করে দানাকে, "কি রে কতক্ষণ আর গাড়িতে বসে থাকবি?"

দানা গাড়ি থেকে নেমে বাঁকা হেসে বলে, "আমি নেমে গেছি কিন্তু যে দেখা করবে সে কোথায়?"

ওইদিকে শুধু মাত্র ওর দেহরক্ষীর হাতেই একটা বন্দুক, এদিকে তিনজনের হাতেই পিস্তল কিন্তু লুক্কায়িত। চোখের ইশারায় আকরাম আর নাসিরকে তৈরি থাকতে বলে। দানা এগিয়ে যায় নয়নার গাড়ির দিকে। ওকে এগিয়ে আসতে দেখে, পেছনের দরজা খুলে নয়না বেড়িয়ে আসে। হাসিহাসি চেহারা, চোখে ছলনার লুকোচুরি। জ্যাকেট খানা গায়ের সাথে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে একটা সিগারেট ধরায় নয়না। দানাও একটা সিগারেট ধরিয়ে নয়নার চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে থাকে। নয়নার ঠোঁটে মিচকি ধূর্ত হাসি যেন ওকে জিজ্ঞেস করছে, "কি দেখছ এত?" দানা উত্তরে চোখ পাকায়, "পেছনে লেগ না তাহলে খুলি উড়িয়ে দেব!" সমুদ্রের কানেকানে কিছু একটা বলে দানার দিকে একপা একপা করে এগিয়ে আসে নয়না। দানা চোয়াল শক্ত করে সিগারেটে একটা লম্বা টান দেয়। তীক্ষ্ণ চোখে নয়নার পদক্ষেপ জরিপ করে বুঝতে চেষ্টা করে কি চায়।

নয়না ওর দিকে এগিয়ে এসে মৃদু হেসে হাত বাড়িয়ে বলে, "কেমন আছো?"

দানাও মৃদু হেসে ওর সাথে হাত মিলিয়ে উত্তর দেয়, "ভালো আছি। তোমার শরীর ঠিক আছে?"

নয়না হেসে মাথা দোলায়, "হ্যাঁ, তুমি যা অবস্থা করে গেছিলে তাতে সাতদিন আর উঠতে পারিনি।"

মাথা চুলকিয়ে হেসে ফেলে দানা, "ওই স্যাডোম্যাচোকিজম নিজেই চেয়েছিলে তাই না।"

বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে নয়নার লাল ঠোঁটে, "তাই বলে ওইখানে একদম পিস্তল গুঁজে দেবে কে জানতো, বলো?"

দুইজনেই হেসে ফেলে। দানার বুকে টানটান উত্তেজনা, এত ভালো করে কথা বলছে নয়না এই শান্তশিষ্ট ব্যাবহার কোন ঝড়ের পূর্বাভাস। কিছুতেই ধরতে পারছে না দানা। আসলে নয়না ওর কাছ থেকে কি চায়। নিজের প্রতি ;.,ের প্রতিশোধ না অন্য কিছু। কিন্তু যার ভেতরে প্রতিশোধের আগুন জ্বলে থাকবে সে কেন এত মিষ্টি করে ওর সাথে কথাবার্তা বলতে আসবে। তবে নয়না প্রচণ্ড ধূর্ত মহিলা, হাসিহাসি মুখেই খুনের পরিকল্পনা করতে পারে। দানা সজাগ হয়ে যায়।

সিগারেটে একটা লম্বা টান দিয়ে মৃদু হেসে নয়না ওকে বলে, "তুমি ডুবে ডুবে অনেক জল খাও তাই না?"

পেছন ঘুরে কালো বি.এম.ডাবলু. দেখে বলে, "কি বলে ডাকা যায় বলত তোমাকে? নোনাঝিলের মিস্টার বিশ্বজিৎ মন্ডল, না কালী পাড়ার দানা। এক লাফে অনেক ওপরে উঠে গেছ। লটারি পেয়েছো? তোমার সঠিক পরিচয় কি মিস্টার বিশ্বজিৎ মণ্ডল?"

সজাগ দানা নয়নার চাল বুঝতে চেষ্টা করে। ঠোঁটে বাঁকা হাসি টেনে বলে, "কি বলতে চাও নয়না।"

নয়না ওকে বলে, "দেখ দানা, তুমি যেমন আমার দুর্বলতা জানো, ঠিক তেমনি আমি তোমার দুর্বলতা জানি।"

উৎসুক দানার মাথা ঝনঝন করে ওঠে, "আমার বিষয়ে তুমি কি জানো?"

বুকের মধ্যে গরম রক্ত এলোপাথাড়ি ছুটে বেড়ায়। টানটান উত্তেজনায় শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসে।

নয়না বুক ভরে শ্বাস নিয়ে একটু থেমেথেমে বলে, "দেখো দানা, আমাকেও একটু গা বাঁচিয়ে চলতে হয়। তুমি আমার আর বিমানের সম্বন্ধে জানো ঠিক তেমনি আমিও জানি তোমার একটা সুন্দরী স্ত্রী আর একটা নিষ্পাপ কন্যে আছে।"
Like Reply
দানার চোয়াল কঠিন হয়ে যায়, হাত মুঠি করে নিজের চরম ক্রোধ গিলে নেয়। চোখের সামনে রুহি আর মহুয়ার ছবি ভেসে ওঠে, এটাই ভয় পেয়েছিল দানা। যেমন নয়নার ওপরে নজর রেখেছিল ঠিক তেমনি নয়না ওর ওপরে নজর রেখেছে। দানা চিবিয়ে চিবিয়ে বলে, "আমার পেছনে চর লাগিয়েছো তাহলে।"

নয়না ওর চোখের ওপরে চোখ রেখে বলে, "কি করব বলো, তুমি আমার অনেক কিছু জেনে ফেলেছো। নিজেকে বাঁচানোর জন্য ঢাল খুঁজতে আমাকে হতই তাই না? দেখো দানা, তোমাকে এখন খুব বিশ্বাস করি। এখন পর্যন্ত তুমি বাপ্পা নস্করকে আমার গোপন সম্পর্কের ব্যাপারে লাগিয়ে দাওনি। বিশ্বাস করোন আমি তোমাকে আঘাত করতে চাই না।"

লাল ঠোঁটে কামুকী হাসি দিয়ে, "কারন তুমি আমাকে সেই রাতে প্রচন্ড সুখের যন্ত্রণা দিয়েছিলে। উম্মম্ম এত সুখ পেয়েছিলাম যে শেষ পর্যন্ত অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম।"

দানা স্বস্তির শ্বাস নেয়, ধর্ষকামে নয়না আনন্দ পেয়েছে, সত্যি না মিথ্যে। তবে ওর চেহারা কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে নয়না ওর ওপরে ক্ষেপে নেই, ওকে এখন আগের মতন বিশ্বাস করে। তবুও সাবধান থাকতে হবে এই ধূর্ত চটুল নারীর থেকে। নয়না যেমন ওকে ব্যাবহার করতে চায় ঠিক তেমনি দানাও ওকে ব্যাবহার করতে চায়। দানা জানে, নয়না বাপ্পা নস্করকে খুন করতে চায়। কিন্তু বাপ্পা নস্করকে এখুনি সরাতে চায় না দানা।

বাপ্পা নস্কর ওর কোন ক্ষতি করেনি তাই নয়নাকে জিজ্ঞেস করে, "কি চাও তুমি?"

নয়না এদিক ওদিক তাকিয়ে গলা নামিয়ে বলে, "আমি কি চাই সেটা তুমি ভালো ভাবে জানো। তুমি এখন পর্যন্ত কিছু একটা ভেবেই বাপ্পা নস্করের কাছে মুখ খোলোনি। তাই না? এইবারে তুমি কি চাও সেটা আমি জানতে চাই।"

দানার মাথায় বুদ্ধি খেলে যায়, মোহন খৈতানের বিশাল বাজেটের অর্ধ সমাপ্ত প্রকল্প গুলো হাতে পেলে বাপ্পা নস্কর খুশি হয়ে যাবে। সেই সাথে বিমানের কাছে আসা যাবে। যতদূর ওর ধারনা, মৈনাককে নয়না খুন করেনি। হয়ত বিমান চন্দ নয় রমলা বিশ্বাস খুন করিয়েছে। সঙ্গীতার ভাঙ্গা হৃদয়ের প্রতিশোধ নিতে চায় দানা। কিন্তু খুব মেপে চাল চালতে হবে দানাকে। কারন বিরোধী পক্ষ সবাই ধূর্ত কুটিল মানুষ।

তাও দানা একবার জানতে চায়, "তুমি কি সঙ্গীতার প্রেমিককে খুন করেছ?"

বিস্ফোরিত চোখে নয়না আঁতকে ওঠে, "কি বলছো? না না, আমি কাউকে খুন করাইনি দানা। তুমি ওকে ;., করে ছেড়ে দিলে তারপরে আমি আর কোন খবর পাইনি। সঙ্গীতা কোথায় আছে আমি জানি না। বিশ্বাস করো দানা, আমি বুবাইয়ের নামে শপথ করে বলছি। সঙ্গীতাকে আমি একবার শুধু আঘাত করেছি আর করিনি কারন ও কারুর কাছে মুখ খোলেনি।"

দানা পাল্টা প্রশ্ন করে, "তুমি সঙ্গীতার ব্যাপারে আর কাকে জানিয়েছ? সত্যি বলো নয়না।"

বেশ কিছুক্ষণ ভেবে নয়না বলে, "ও হ্যাঁ, একবার কথায় কথায় বিমানকে বলেছিলাম ব্যাস আর কাউকে জানাইনি। বিশ্বাস করো দানা।"

মৈনাকের খুন দুইজনে করতে পারে, এক বিমান চন্দ দ্বিতীয় রমলা বিশ্বাস। বেশ কিছুক্ষণ ভাবনা চিন্তা করে দানা বলে, "আমি ব্যাবসা করতে নেমেছি নয়না। মোহন খৈতানের বড় বাজেটের বেশ কয়েকটা অর্ধ সমাপ্ত প্রকল্প এলাকায় পরে রয়েছে। সেই গুলো চাই আমার।"

নয়না আকাশ থেকে পরে, "কি বলছো তুমি? আরে বাবা, আমি কি করে মোহন খৈতানের ওই প্রকল্প গুলো তোমাকে দেবো? তুমি টাকা চাও আমি দিতে পারি। এক কোটি দুই কোটি পাঁচ কোটি বল আমি যোগাড় করে দেব। কিন্তু....."

দানা হেসে ফেলে, "নয়না, এক কোটি টাকা পকেটে নিয়ে আমি ঘুরে বেড়াই। তুমি যদি বাপ্পা নস্করকে সরাতে চাও তাহলে মোহন খৈতানের ওই প্রকল্প গুলো আমার চাই।"

নয়না মাথা নাড়ায়, "সম্ভব নয় দানা, কিছুতেই সম্ভব নয়। আমি মোহন খৈতানকে ঠিক তেমন ভাবে চিনি না।"

দানা মিচকি হাসে, "মিথ্যে কথা কেন বলছো। মোহন খৈতান, বিমান চন্দের বাল্যবন্ধু সেটা আশা করি ভালো ভাবে জানো।"

নয়না মাথা দোলায় "হ্যাঁ সেটা আমি জানি, কিন্তু....."

দানা নিজের পরিকল্পনা নয়নাকে জানায়, "তাহলে আমার কথা মন দিয়ে শোন। আমি এখন এই এলাকার বেশির ভাগ অর্ধ সমাপ্ত প্রোজেক্ট গুলো কিনে কাজ শুরু করেছি। তুমি বিমান চন্দকে বল, যদি মোহন খৈতান আমার নামে ওই অর্ধ সমাপ্ত প্রোজেক্ট গুলো করে দেয় তাহলে আবার কাজ শুরু করতে পারা যাবে। আমি আর মোহন খৈতান একসাথে মিলে কাজ করবো। এতদিনে মোহন খৈতানের অনেক টাকা লোকসান হয়ে গেছে, এরপরের নির্বাচনে যদি বাপ্পা নস্কর আবার চলে আসে তাহলে বুঝতেই পারছো আশা করি। তুমি একবার বিমানের কানে এই কথা উঠাও দেখো ও কি বলে। আমি হলফ করে বলছি, পরের দিন আমার সাথে দেখা করতে চাইবে।"

নয়না অবাক হয়ে যায় দানার পরিকল্পনা শুনে। ওর আসল উদ্দেশ্য ঠিক ধরতে পারে না তবে এই টুকু বুঝে যায় দানা গভীর জলের মাছ। এর গায়ে হাত দেওয়া যে সে কাজ নয়।

নয়না মিচকি হেসে দানাকে জিজ্ঞেস করে, "তোমার মেয়ে ভারী মিষ্টি, কি নাম?"

দানা স্মিত হেসে উত্তর দেয়, "রুহি।"

নয়না ওর সাথে হাত মিলিয়ে বলে, "এখুনি কথা দিতে পারছি না তবে আমাকে কয়েকদিন সময় দাও। আমি বিমান চন্দের সাথে আলোচনা করে তোমাকে জানাচ্ছি।"

গাড়িতে উঠেই দানা কপালে করাঘাত করে। দানা যেমন নয়নার ওপরে নজর রেখেছিল ঠিক তেমনি নয়না খুঁজে খুঁজে ওর দুর্বলতা জেনে ফেলেছে। রুহি আর মহুয়াকে আঘাত করলে দানা পাগল হয়ে যাবে। কিন্তু মহুয়াকে কি করে বুঝানো যায় এই কথা? দানার লাল চোখ দেখে আক্রাম আর নাসির কিছু জিজ্ঞেস করতে ভয় পায়। তীর বেগে গাড়ি চালিয়ে সোজা বাড়িতে পৌঁছায় দানা। ঘরে ঢুকে আগে রুহিকে কোলে নিয়ে অনেকক্ষণ চুপচাপ থম মেরে বসে থাকে। মহুয়া যত জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে দানা নিরুত্তর। ওর ছলছল রক্তমাখা চোখের চাহনি দেখে মহুয়ার বুঝতে দেরি হয় না যে নয়না ওদের বিষয়ে জেনে গেছে।

দানা ওকে বলে, "প্লিস পাপড়ি আমার কথা শোন, তুমি মেয়েকে নিয়ে আজমের চলে যাও।"

দানার পাশ থেকে চলে যেতে হবে শুনেই মহুয়ার বুক কেঁপে ওঠে। জোরে জোরে মাথা নাড়িয়ে বলে, "না না, আমি কোথাও যাবো না।" ওর কোল থেকে রুহিকে নিয়ে আঁকড়ে ধরে বলে, "তুমি ছাড়া আমাদের দেখার কেউ নেই। তুমি না থাকলে আমরা বেঁচে কি করব, জিত।"
Like Reply
দানা চুপচাপ অনেকক্ষণ বসে থাকে। মহুয়া ওকে নয়নার সাথে কি আলোচনা হয়েছে সেই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। দানা ওকে সব কিছু বিস্তারে জানিয়ে দেয়। মহুয়া ওকে বলে, "ঠিক আছে জিত। তুমি এইবারে চাল দিয়ে এসেছ দেখা যাক নয়না কি করে। তবে মনে রেখো ওই নয়না হচ্ছে আমাদের তুরুপের তাস।" ওর হাতখানি চেপে ধরে বলে, "শেষ দেখা দেখেই যাবো জিত।"


দানা দুইজন কে বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে। ছোট্ট রুহি কিছুই বুঝতে পারে না, কেন মায়ের চোখে ডাডার চোখে জল। তাই কচি হাত দিয়ে ওদের জড়িয়ে ধরে চুমু খায়।

ছোট অফিস কিন্তু এই কয়দিনে মহুয়া বেশ সুন্দর ভাবে সাজিয়ে নিয়েছে। একটা বড় কাঁচের দরজা দেওয়া কেবিনে মহুয়ার আর দানার বসার ব্যাবস্থা, যদিও বেশির ভাগ দিন মহুয়াকে একাই ওই কেবিনে কাটাতে হয়। কাজের মেয়ে মণিকে নিয়েই মহুয়া আফিসে আসে কেননা রুহি সাথে থাকে। এখন রুহিকে কলেজে ভর্তি করা হয়নি। তবে সকালে একটা প্লে কলেজে যায়, যেদিন ইচ্ছে হয় যায় যেদিন ইচ্ছে হয় যায় না। মহেশ বাবু ওদের অনেক সাহায্য করেছেন এই অফিসের ব্যাপারে, দানার সাথে ঘুরে ঘুরে অর্ধ সমাপ্ত প্রকল্প গুলোতে গিয়ে দেখাশুনা করার বিষয়ে আর কেনা বেচার বিষয়ে। মহেশ বাবুকে দানা নিজের কোম্পানিতে অংশীদার হতে অনুরোধ করেছিল কিন্তু মহেশ বাবু বেশি কতক ব্যবসায় আর মাথা গলাতে চান না।

বেশ অনেক গুলো অর্ধ সমাপ্ত প্রকল্প হাতে চলে আসে দানার। সবকটা প্রকল্পে অংশীদার হিসাবে কাজ শুরু করে দেয়। বাপ্পা নস্করকে জানিয়ে দেয় যে একবার এই প্রকল্প গুলো সম্পূর্ণ হলে, ওর নির্বাচনী প্রস্তুতির জন্য বেশ কয়েক কোটি টাকা দেবে। ইতিমধ্যে ইন্দ্রনীলের কাছ থেকে বাপ্পা নস্কর সব শুনেছে তাই দানার কথায় বিশ্বাস করে নেয়।

মহানগরের বুকে ঠাণ্ডা কমে এসেছে। কয়েক সপ্তাহ পরে রুহির জন্মদিন। মহেন্দ্র বাবুকে আমন্ত্রন জানিয়েছে, সেই সাথে সবাইকে। কেষ্টর ছেলে হয়েছে, দানা দেখা করতে গিয়েছিল। মহুয়ার খুব যাওয়ার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু সেই কালী পাড়ার বস্তি বলে দানা আর নিয়ে যায়নি। ওর গুমটিতে এখন তালা মারা, সেখানে আর যাওয়া হয়ে ওঠে না। বস্তির আর এলাকার খবরা খবর ঠিক পেয়ে যায় মদনা না হয় বলাইয়ের কাছ থেকে। ইন্দ্রাণী চলে যাওয়ার পরে শক্তি আর বলাইকে নিজের ব্যাবসায় লাগিয়ে দেয়।

সেদিন বিকেলে মহুয়া আর রুহিকে নিয়ে একটা বড় রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খেতে গিয়েছিল দানা। মহুয়া আর রুহিকে নিয়ে এই রেস্টুরেন্টে আগেও বেশ কয়েকবার এসেছে। বড় লোকেদের রেস্টুরেন্ট, উর্দি পরা দারোয়ান, উর্দি পরা বেয়ারা। খাওয়া দাওয়া শেষে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হতেই নয়নার সাথে মুখোমুখি। রুহি কোলে দানার পাশে মহুয়াকে দেখে মুচকি হেসে এগিয়ে আসে নয়না। নয়নাকে এগিয়ে আসতে দেখেই মহুয়ার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। প্রমাদ গোনে মহুয়া, এই মহিলা আবার কি চাল চালবে? বুকের মধ্যে টানটান উত্তেজনা নিয়ে সেটা বোঝার অপেক্ষায় মহুয়া। তপ্ত শ্বাসে দানার বাজু আঁকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে চশমার পেছন থেকে আপাদমস্তক জরিপ করে নয়নাকে। নয়নার বেশ পেছনে সুমিতা আর সমুদ্র দাঁড়িয়ে পড়ে।

নয়না মৃদু হেসে হাত বাড়িয়ে দেয় মহুয়ার দিকে, "কেমন আছেন মিসেস মন্ডল?"

চোয়াল চেপে ঠোঁটে মেকি হাসি টেনে আলতো হাত মিলিয়ে মহুয়া উত্তর দেয়, "ভালো আছি।"

নয়না ওদের দিকে দেখে দানাকে বলে, "তোমার সাথে একটু কথা ছিল। হাতে কি সময় আছে?"

ওর সামনে দাঁড়াতে একটুকু ইচ্ছে নেই তাই দানা উত্তর দেয়, "এখুনি ডিনার সেরে উঠেছি, ফোনে কথা হবে কেমন?"

মহুয়ার তীক্ষ্ণ চোখ নয়নাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। নয়না ওই আগুনে চাহনি দেখে বেশ বিবৃত বোধ করে। কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারে না দানার স্ত্রী ওকে এমন তীক্ষ্ণ চোখে কেন জরিপ করে চলেছে। নয়নাকে হাতের সামনে পেয়ে একটু নাচিয়ে নেওয়ার ইচ্ছেটা দমাতে পারল না দুষ্টু মিষ্টি মহুয়া।

নয়নার বিবৃত বোধ কাটিয়ে আর দানাকে অবাক করে মহুয়া বলে, "তবে ডেসার্ট আরো একবার খেতে আপত্তি নেই।"

এতক্ষণ একটা চাপা শ্বাস বুকের মধ্যে আটকে রেখেছিল নয়না। মহুয়ার নিমন্ত্রনে সেই শ্বাস ছেড়ে বলে, "খুব ভালো কথা, মিসেস মন্ডল। এইখানে আইসক্রিম খুব ভালো পাওয়া যায়।"

রেস্টুরেন্টে ঢুকতে ঢুকতে নয়নাকে মহুয়া জিজ্ঞেস করে, "আপনি কি বিমানের বিষয়ে আলোচনা করতে এসেছেন?"

নয়না অবাক হয়ে যায়, এত তাড়াতাড়ি মহুয়া ওকে প্রশ্ন করবে সেটা ভাবতে পারেনি। নয়না একবার দানার দিকে তাকায় একবার মহুয়ার দিকে তাকায়। তারপরে মৃদু মাথা দুলিয়ে বলে, "হ্যাঁ, কিন্তু মানে আপনি....."

মহুয়া মৃদু হেসে বলে, "আগে একটা আইসক্রিম খাই তারপরে শুনবো আপনার কথা।"

মহুয়ার মিষ্টি অথচ তীক্ষ্ণ কথাবার্তা দানাকে অবাক করে দেয়। এ নারী যেন মিছরির ছুরি। মহুয়া চোরা হাসি দিয়ে দানাকে চুপ করে থাকতে অনুরোধ করে। টেবিলে বসে রুহি আইসক্রিম খাওয়ার চেয়ে মাখতে ব্যাস্ত হয়ে যায়। সেই দেখে ওদের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ হাসাহাসি চলে। ওদের অদুরে একটা টেবিলে সমুদ্র আর সুমিতা বসে অপেক্ষা করে।

নয়না ওদের বলে, "আমি বিমান চন্দের সাথে আলোচনা করেছি। বিমান একবার দানার সাথে দেখা করতে চায়।"

নয়নাকে জানতে দেওয়া যাবে না যে মহুয়া ওর সম্বন্ধে অনেক কিছুই জানে তাই চোরা হেসে জিজ্ঞেস করে, "বিশ্বজিতের বিষয়ে কি বলেছেন আপনি বিমানকে? সবকিছু পরিস্কার না হলে বিশ্বজিৎ ফাঁদে পা দেবে না।"

"ফাঁদ" কথাটা একটু জোর দিয়েই বলে মহুয়া।

নয়না অবাক, কে এই নারী? খেলা যেন সেয়ানে সেয়ানে কোলাকুলি। ঠোঁটে মেকি হাসি টেনে বলে, "না না, বিশ্বাস করুন মিসেস মন্ডল। এইখানে কোন ফাঁদ নেই।"

মহুয়া মৃদু হেসে নয়নার চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করে, "বিমান চন্দ আশা করি ভালো ভাবেই জানে, বিশ্বজিৎ বাপ্পা নস্করের বিশ্বাসভাজন লোক। তাহলে এত সহজে কেন ওর সাথে দেখা করতে চাইবে? কিছু একটা আপনি বলেছেন। সেটা কি?"

ওই তীক্ষ্ণ চাহনি দেখে নয়না একটু দমে যায় কিন্তু পাল্টা হেসে জবাব দেয়, "আপনি সত্যি অনেক কিছু জানেন তাহলে।"

মহুয়া মাথা দোলায় "হ্যাঁ।"

নয়না বুঝে যায় এই মহিলার সামনে মিথ্যে বলে বেশি ক্ষণ লুকিয়ে থাকা সম্ভব নয়। তাই বলতে শুরু করে, "দেখুন মিসেস মন্ডল, আমি বিমানকে বলেছি যে দানা বাপ্পা নস্করের লোক হলেও আমার খুব বিশ্বাসী।" মহুয়া ঠোঁট টিপে হাসে ওই কথা শুনে। নয়না ওকে বলে, "আমি ওকে বুঝিয়ে বলেছি দানা আমাদের কথা মতন কাজ করবে। কারন জানতে চাইল ওকে বললাম মোহন খৈতানের প্রকল্পের বিষয়ে। মোহনের সাথে বিষদে আলোচনা করেছে বিমান। বাপ্পা নস্করের দৌরাত্মের ফলে ওর প্রকল্প গুলো অনেকদিন থেকেই বন্ধ পড়ে আছে।" দানা সেই সম্পর্কে অবগত। নয়না আরো বলে, "বিমানের কথা মোহন ফেলবে না, তবে আগে দানার সাথে দেখা করতে চায় বিমান তারপরে মোহনের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করিয়ে দেবে।"

সবকিছু শোনার পরে মহুয়া মেকি কাতর কণ্ঠে ওকে অনুরোধ করে, "মিস বোস, আপনি আমার একটা কাজ করবেন, প্লিস।"

নয়না ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে, "কি?"

মহুয়া চাপা হেসে বলে, "আমি ওদের আলোচনার রেকর্ডিং চাই আর সেটা আপনার পক্ষেই সম্ভবপর।"

নয়না বিস্ফোরিত নয়নে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে, মহিলা বলে কি? একেবারে জালে জড়িয়ে ফেলতে চায় নাকি? তাও মহুয়ার চোখে চোখ রেখে মৃদু হেসে নয়না বলে, "আপনি আমাকে বিশ্বাস করছেন না তাই তো। ঠিক আছে দেখি কি করতে পারি আমি।"

অতি সুচতুর চাল দিয়েছে মহুয়া, এক বারের জন্য নয়নাকে সন্দেহ করতে দেয়নি যে ওরা ওর বিরুদ্ধে জাল ফাঁদছে। নয়নার সাথে হাত মিলিয়ে মিষ্টি হেসে বলে, "আইসক্রিমের জন্য অনেক ধন্যবাদ, মিস বোস।" রুহিকে কোলে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে দানাকে বলে, "চল জিত, অনেক রাত হয়ে গেছে।"
Like Reply
চৌষট্টি ছক (#০৪)


এতক্ষণ যেন একটা শীতল যুদ্ধ চলছিল ওই রেস্টুরেন্টের টেবিলে। আশেপাশের অনেক লোকের দৃষ্টি ছিল ওদের টেবিলের ওপরে। বিশেষ করে অভিনেত্রী নয়নার জন্য। ওরা উঠে যেতেই অনেকেই নয়নাকে ছেঁকে ধরে। মহুয়া আর দানা আর পেছনে তাকায়নি। বুকের মধ্যে একটা ভালো লাগার মৃদু মলয় নিয়ে দানা আর মহুয়া বেড়িয়ে পড়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে।

গাড়িতে উঠেই মহুয়া খিলখিল করে হেসে ফেলে, "কেমন দিলাম বলো।"

দানা অবাক হয়ে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছুদিন আগে পর্যন্ত মাছি মারতে ভয় পেত মহুয়া আর এই কয়দিনে এত পরিবর্তন? সত্যি ভালোবাসা মানুষের হৃদয় বদলে দেয়, মনে এক দুরন্ত শক্তির সঞ্চার করতে সক্ষম হয়।

দানা গাড়ি চালাতে চালাতে ওকে জিজ্ঞেস করে, "তুমি ওইখানে ঠিক কি করতে চাইছিলে বলো তো?"

মহুয়া হেসে ওর হাত ধরে বলে, "পারলে কুটিকুটি করে কেটে ফেলতাম, কিন্তু মেয়েটাকে দিয়ে অনেক কাজ করানোর বাকি, তাই না। তাই ছেড়ে দিলাম। পরে অনেক কাজে আসবে এই মেয়ে। আমার কথা লিখে রাখো।"

দানা জিজ্ঞেস করে, "কি রকম কাজে আসবে?"

মহুয়া হেসে বলে, "আরে দেখো না, ঠিক সময়ে তোমার নিজের বুদ্ধি খুলে যাবে। আমার মন বলছে এর সাহায্যে আমরা রমলাকে ধরতে পারবো, আর রমলাকে ধরতে পারলে হয়ত কঙ্কনা আর নাসরিনের খবর পাওয়া যাবে। আস্তিনে একটা তাস থাকা ভালো। নাও নাও গাড়ি চালাও এইবারে। ওইদিকে পিন্টু আবার মণির পেছনে লাইন মারছে বুঝেছো।"

হেসে ফেলে দানা, ওর কাজের মেয়ের পেছনে যে পিন্টু লাগবে সেটা ভালো ভাবেই জানত। মেয়েটা কালো হলেও দেখতে শুনতে ভালো, পিন্টু এলেই আগ বাড়িয়ে জল দেয়, ওর চোখের সামনে বেশ ঘোরাঘুরি করে।

ঠিক পরেরদিন দুপুর নাগাদ নয়না দানাকে ফোনে জানায় একবার বিমানের সাথে দেখা করতে। দানা জিজ্ঞেস করলে নয়না জানিয়ে দেয় দুর গ্রামের বাগান বাড়িতে বিমান চন্দ দানার সাথে দেখা করতে চায়। এই মহানগরের বুকে দেখা সাক্ষাৎ করা বিপ্পজনক, পাছে বাপ্পা নস্করের কানে কথা চলে যায় সেই ভয়ে। বিকেলের দিকে আকরাম নাসিরকে সাথে নিয়ে দানা বেড়িয়ে পড়ে। বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে মহুয়া ওকে বারেবারে সাবধান করে দেয়। দেবুকে ফোন করে দানা, জানতে চায় বিমান চন্দ একা না সাথে কেউ আছে। দেবু ওকে জানায় যে বাড়ির মধ্যে বিমান চন্দ, নয়না, সমুদ্র ছাড়া আর কেউ নেই। সেই শুনে দানা স্বস্তির শ্বাস নেয়। ওর শুধু একমাত্র ভয় মহুয়া আর রুহিকে নিয়ে। এই দুইজনে যদি পাশে না থাকত তাহলে অনেকদিন আগেই খুনোখুনিতে নেমে পড়তো।

গ্রামের ওই নির্জন বাগান বাড়িতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যে হয়ে যায়। বুকের ভেতর টানটান উত্তেজনা, বাড়ির ভেতরে কি শুধু মাত্র তিনজন না আরো কেউ অন্য কোথাও লুকিয়ে আছে? দেবু নিশ্চয় বিমানের খাস লোক। ওকে কতটা বিশ্বাস করা যেতে পারে। সঠিক জানা নেই দানার। বড় বড় গাছের মাঝাখান দিয়ে গাড়ি চালিয়ে বাড়ির সামনে এসে পৌঁছায়। বাড়ির সামনে দুটো গাড়ি পাশাপাশি দাঁড় করানো। চিনতে অসুবিধে হয় না, একটা নয়নার অন্যটা বিমান চন্দের। ওর গাড়ির আওয়াজ শুনে সমুদ্র বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে। পকেটের পিস্তল দেখে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে দানা, পেছন পেছন আকরাম আর নাসির।

সমুদ্র এগিয়ে এসে ওদের তিনজনকে দেখে বলে, "শুধু মাত্র তুই ভেতরে ঢুকতে পারবি, আর কেউ নয়।"

দানা মৃদু হেসে বলে, "ওরা বাড়িতে ঢুকতে আসেনি রে। চল চল ভেতরে চল।" ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে ফিসফিস করে সমুদ্রকে জিজ্ঞেস করে, "কি রে, বিমানের কি মতিগতি রে?"

সমুদ্র বাঁকা হেসে বলে, "শালা কুত্তা, তুই এই কয়দিনে অনেক ঝানু মাল হয়ে গেছিস। যাই হোক বিমানের মতিগতি ভালোই আছে।" চোখ টিপে চোরা হেসে বলে, "বুঝতেই পারছিস পাশে নয়নাকে পেয়েছে।" দুইজনেই হেসে দেয় ওই কথায়।

যদিও এর আগে অনেক বার নয়নাকে নিয়ে এই বাড়িতে এসেছে, তবে দানা কোনোদিন ভেতরে ঢোকেনি। ছোট বাড়ি তাই বসার ঘর ছোট। একটা ছোট কাঁচের টেবিলের চারপাশে ছোট ছোট বেশ কয়েকটা সোফা। ওকে দেখেই নয়না আময়িক হেসে উঠে দাঁড়ায়। বিমানের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। বিমান আপাদমস্তক দানাকে জরিপ করে। কিছুদিন আগে এই ছেলেটা নয়নার গাড়ি চালাত আর আজকে ওকে পাশে বসিয়ে কথা বলতে হবে ভেবেই ওর চোখমুখ কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু নয়না যা বলেছে সেটা যদি দানা করতে পারে তাহলে অনেক লাভবান হবে। দানা অল্প মাথা নুইয়ে বিমানের সামনের একটা সোফায় বসে পড়ে। ওদের মাঝখানের সোফায় নয়না বিরাজমান।

বিমান সোজাসুজি দানাকে প্রশ্ন করে, "দেখ দানা, নয়নার কথা শুনেই তোমাকে ডাকা। আমি কি চাই সেটা আশা করি ভালো ভাবে জানো। আগে সেটা সম্পন্ন হোক তারপরে মোহনের সাথে আমি তোমার দেখা করিয়ে দেব।"

দানা জানে এইখানে ওর বস্তির মানসিকতা নিয়ে থাকলে চলবে না। ওকে এক ধুরন্ধর খেলোয়ার হতে হবে। চোয়াল চেপে বাঁকা হেসে বিমানকে বলে, "আপনি আগে মোহন খৈতানের অর্ধ সমাপ্ত প্রকল্প গুলো আমার নামে করান তারপরে বাপ্পা নস্করকে সরানোর ব্যাবস্থা আমি করবো।"

বিমান ধূর্ত এক হাসি দিয়ে বলে, "তোমার মতন হাজার হাজার মানুষ চড়িয়ে খাই। আগে তুমি তোমার কাজ করো, তারপরে আমি করবো।"

দানা হাত মুঠো করে সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। বিমান চন্দের দিকে হিমশীতল চাহনি দিয়ে বলে, "বাপ্পা নস্করকে সরানোর ইচ্ছে আমার নেই বিমান বাবু। তার দৌলতে আমার ব্যাবসা ভালোই চলছে। মাঝ পথে বাপ্পা নস্করকে উস্কিয়ে সেই ব্যাবসায় ক্ষতি আমি করতে চাই না।" নয়নার দিকে তাকিয়ে দাঁত পিষে বলে, "বাকিটা আমি কি করতে পারি সেটা নয়না আপনাকে ভালো করে বুঝিয়ে দেবে। আমি আসি কেমন।"

ওই চাহনি দেখে নয়নার বুক এক অজানা শঙ্কায় কেঁপে ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে দানার হাত ধরে বলে, "না না যেও না। বিমান করবে।" বিমানের দিকে ঝাঁঝিয়ে ওঠে নয়না, "তুমি কি করছো? এটা কেন বুঝতে পারছো না যে দানা আমার খুব বিশ্বাসী। সেদিন তোমাকে আর আমাকে একসাথে দেখার পরেও কিন্তু বাপ্পার সামনে এখন পর্যন্ত মুখ খোলেনি। বুঝতেই পারছো দানা আমার কথা কতটা মেনে চলে। তুমি মোহনের সাথে কথা বলো। ওকে বুঝাও, ওকে মানাও। এইভাবে প্রকল্প গুলো পড়ে থাকলে তোমার লোকসান মোহনের লোকসান। তার চেয়ে ওই প্রকল্প গুলো দানার নামে করে দিতে পরামর্শ দাও। বাপ্পা নস্কর ভাববে দানা তোমাদের হাতের মুঠোতে করে ফেলেছে। বাপ্পা নস্কর নিশ্চিন্ত হলেই দানা ওর ওপরে চরম আঘাত হানতে পারবে।"

মুখের সামনে হাত মুঠি করে বিমান অনেকক্ষণ চুপচাপ দানার দিকে তাকিয়ে চিন্তা মগ্ন হয়ে যায়। দানাও চুপচাপ বিমান চন্দকে আর নয়নাকে পড়ার চেষ্টা চালায়। ইষ্ট নাম জপ করে দানা, এইবারে ধরা পড়ে যাবে না তো এই দুইজনার কাছে। দুইজনেই একসাথে জালে উঠে গেছে। চোখে মুখে জয়ের ছোঁয়া, কিন্তু এই ভাবব্যাক্তি কিছুতেই ওদের সামনে দেখান যাবে না।

বেশ কিছুক্ষন পরে গলা খাঁকড়ে দানা বিমানকে জিজ্ঞেস করে, "কি ভাবলেন বিমান বাবু? হাত বাড়াবেন না আমি চলে যাবো। বুদ্ধিমতী নয়না কিন্তু সঠিক বুদ্ধি দিয়েছে। মোহন খৈতানের প্রকল্প গুলো আমার হাতে চলে এলে বাপ্পা নস্কর নিশ্চিন্ত হয়ে যাবে আমি ওর লোক আর তখনি ওকে আঘাত করার মোক্ষম সুযোগ চলে আসবে।"

বিমান চন্দ অনেক ভেবেচিন্তে দানার কাছ থেকে দুইদিনের সময় চায়। নয়নাকে বুদ্ধিমতী বলাতে খুব খুশি। মনে প্রাণে দানাকে ধন্যবাদ জানায়। গাড়িতে ওঠার আগে দানার পাশ ঘেঁসে দাঁড়িয়ে কানে কানে বলে, "তোমার স্ত্রী সত্যি ভারী সুন্দরী, তাই বলে কি আমাকে ভুলে যাবে?"

দানা মাথা নাড়িয়ে ওর গালে আলতো টোকা দিয়ে বলে, "ইসসস তুমি না সত্যি বড় মিষ্টি। যাই হোক পারলে এই আলোচনার রেকর্ডিংটা দিও।"

নয়না মিচকি হেসে মাথা দোলায়, "সমুদ্র সব রেকর্ড করেছে। তোমার চিন্তা নেই, দিয়ে দেব।" দানার হাত ধরে অনুরোধ করে, "একদিন বিকেলে মিসেস আর মেয়েকে নিয়ে আমার বাড়িতে এসো।"

দানা মাথা দোলায়, সময় করে একদিন আসবে। তবে মনের গভীরে এক শঙ্কা দেখা দেয়। নয়না এই হাসি হাসি চেহারার পেছনে কোন ষড়যন্ত্র লুকিয়ে সেটা কিছুতেই ধরতে পারে না। মনে মনে একটা জয়ের হাসি নিয়ে ওইখান থেকে বেরিয়ে পড়ে দানা।

বাড়িতে এসে মহুয়াকে সব খুলে বলতেই ওকে জড়িয়ে ধরে গালে একটা চুমু খায়। একে একে ওদের জালে জড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে সবাই, কিন্তু প্রশ্নের উত্তর এখন পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না। কঙ্কনা আর নাসরিনের খবরাখবর নেই, রমলা বিশ্বাস না বিমান চন্দ, কে মৈনাকের আসল খুনি সেটাও জানা যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত রমলার পেছনে চর নিযুক্ত করা হয়নি, রমলার দুর্বলতা শুধু মাত্র নয়না জানে কিন্তু ওকে বেশি চেপে ধরলে উলটো ফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

সেইদিন রাতে নয়না ওকে ফোনে জানায় যে বিমান রাজি আছে মোহনের সাথে দেখা করানোর জন্য আর মহুয়ার নির্দেশ অনুযায়ী ওদের আলোচনা সমুদ্র রেকর্ড করে নিয়েছে। পরের বার দেখা হলে সেই টেপ দিয়ে দেবে।
Like Reply
রুহির জন্মদিন, দিন দুয়েক আগে থেকেই আজমের থেকে মহুয়ার বাবা মা এসে গিয়েছিলেন। মহুয়ার বাবা মাকে দেখে দানা বেশ বিবৃত বোধ করে, জানে মহুয়ার বাবা মা রক্ষণশীল রাজস্থানি পরিবার। বিধবা মেয়ে আবার একটা প্রেম করছে আর বিয়ে ছাড়াই ওর সাথে আছে সেটা মেনে নিতে খুব কষ্ট হয়। লোকেশের খাঁচা থেকে মুক্তি পাওয়ার পরে আর দানার সাহচর্যে এই কয়দিনে মহুয়া অনেক বদলে গেছে। আজমেরের সেই ঘরের মধ্যে মুখ লুকিয়ে থাকা মেয়ে আর নেই সেই স্থানে দৃঢ় এক নারী দাঁড়িয়ে। মহুয়া পরিস্কার নিজের বাবা মাকে দানার বিষয়ে জানিয়ে দেয়, ওর রুহির "ডাডা"কে যেন এই নিয়ে যেন বিশেষ প্রশ্ন ওদের না করা হয়। 


সকাল থেকেই বাড়িতে লোকজন, লোকজন বন্ধুবান্ধব মানে সবাই দানার লোক, কালী পাড়ার মানুষ। মদনা, বলাই, মনা পিন্টু বাজারে ব্যাস্ত। বিকেলে মহেন্দ্র বাবু আসবেন, সাথে শঙ্কর আর রমিজ সপরিবারে আসবে। বাকি ছেলেরা ঘর সাজাতে ব্যাস্ত। পিন্টু আবার কাজের মেয়ে মণির পেছনে লাগতে ব্যাস্ত। কেষ্ট, রজনী আর সদ্যজাত পুত্রকে ওদের বাড়িতে রেখে দিয়ে ট্যাক্সি চালাতে বেরিয়ে যায়। অনেকদিন পরে সবাইকে একসাথে দেখে দানা বেশ খুশি। মহুয়ার কোন বন্ধু বান্ধবী নেই এই শহরে, বিয়ের পর থেকে একরকম গৃহ বন্দী হিসাবেই জীবন যাপন করে গেছে। দানার সঙ্গ পাওয়ার পরেই মুক্তির স্বাদ আস্বাদন করেছে। তাই ওর বন্ধু বান্ধবীরাই মহুয়ার কাছের লোক। ওকে বাঁচানোর সময়ে এরাই দানাকে সাহায্য করেছিল। ছোট ছোট পায়ে সারা ঘর মাতিয়ে রুহি নেচে বেড়ায়। জিজ্ঞেস করলেই উত্তর দেয়, "মাই হ্যাপি বার্ডে, মাই হ্যাপি বার্ডে।" বলে একটু নেচে নেয়।

সন্ধ্যের পরেই ঘর ভর্তি হয়ে যায় লোকজনে। মনা আর পিন্টু বসার ঘর, বেলুন, ফিতে আর ফুল দিয়ে খুব সুন্দর ভাবে সাজিয়ে দিয়েছে। মদনা মনে হয় শহরের কেকের দোকানে হত্যে দিয়ে বসে ছিল, চার থাক ওয়ালা একটা বিশাল সাদা ক্রিম কেক নিয়ে ঘরে ঢোকে। কেকের আকার রুহির অর্ধেক, কেক দেখে রুহিকে আর থামানো যায় না, এখুনি কেক খাবে বলে বায়না। বরুন, সুনিতা বৌদি আর ওদের ছেলে মেয়েকে নিয়ে কেষ্ট বিকেল বেলা দানার বাড়ি পৌঁছে যায়। মহেন্দ্র বাবুর জন্য সবাই অপেক্ষা করে। বেশ কিছু পরে শঙ্কর আর রামিজের পরিবারের সাথে মহেন্দ্র বাবু এসে যান।

কেক কেটে খাওয়ার চেয়ে বেশি মাখামাখি হয়, রুহি একটু খানি খেয়ে নিজেই মেখে সাদা পুতুল হয়ে বসে পরে। সেই নিয়ে খুব হাসা হাসি। মহেন্দ্র বাবু, দানা আর মহুয়াকে একসাথে দেখে বেশ খুশি।

মহুয়ার মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করে একটা দামী সুন্দর সোনার হার উপহার দেন আর বলেন, "এইবারে সোজা বিয়ে খেতে চাই বৌমা, পরেরবার যেন ওই সিঁথিতে সিন্দুর দেখি।"

মহুয়া লাজুক হেসে মহেন্দ্রবাবুকে বলে, "আপনার ছেলে দেরি করলে আমি কি করতে পারি বলুন।"

দানা মাথা চুলকায় এইবারে বিয়েটা সেরে ফেলতে হয়। চোখ পাকিয়ে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে জানিয়ে দেয় রাতে ওকে আর আস্ত রাখবে না একদম ফুঁড়ে বেড়িয়ে যাবে। দুষ্টুমি ভরা চোখের চাহনি দেখে মহুয়ার কান গাল লজ্জায় লাল হয়ে যায়।

শঙ্কর আর রমিজ ওকে একদিকে ডেকে নিয়ে গিয়ে বলে, "হ্যাঁ রে ফারহান কই?"

সত্যিই তো, এতক্ষণ ফারহানের কথা মনে ছিল না কারুর। সঙ্গে সঙ্গে দানা, ফারহানকে ফোন করে, "এই বানচোদ, গান্ডুচোদা কোথায় গাঁড় মারাচ্ছিস বে? এখুনি বাড়ি পৌঁছা না হলে তোর গাঁড় ফুটিফাটা করে দেব।"

ফারহান ঠিক দরজায় ছিল, পাশে জারিনা। ফোন ছেড়ে চেঁচিয়ে বলে, "কুত্তার বাচ্চা একটু আস্তে চিল্লা শালা।"

জারিনা আসবে এটা সবার আশাতীত, দানার মুখে জারিনার নাম শুনেছে শুধু, এইবারে চাক্ষুষ দেখে মহুয়া বেশ খুশি। যদিও ওদের দৈহিক সম্পর্কের ব্যাপারে সব জানে তবে এটাও জানে সেই সব শুধু কামের বশে দানা লিপ্ত হয়েছিল। ওর সঙ্গে থাকার পরে দানা অন্য কোন নারীর দেহ স্পর্শ করেনি।

জারিনা মহুয়াকে দেখে বলে, "তুমি সত্যি মিষ্টি দেখতে, তাই দানা আর আমার কাছে আসে না।"

দানা ছাড়া অন্য কারুর মুখে এই ধরনের কথাবার্তা শুনতে মহুয়া একদম অভ্যস্ত নয়। সঙ্গমের বার্তালাপ শুধু মাত্র প্রেমিকের মুখেই মানায় তাই জারিনার কথায় বেশ বিবৃত বোধ করে। সঙ্গে সঙ্গে ফারহান অবস্থার সামাল দেয়, "আরে না না, আজকাল দানা খুব ব্যাস্ত তাই দেখা সাক্ষাৎ একটু কমে গেছে।" জারিনার কান টেনে ফিসফিস করে বলে, "কোথায় কি বলতে হয় তাও কি শিখিয়ে দিতে হবে?"

জারিনা বুঝে যায় তাই জিব কাটে। ফারহান সবাইকে জানায় দুই মাস পরে ওদের নিকাহ। রুহির জন্মদিনেই সবাইকে নিমন্ত্রন জানিয়ে যাচ্ছে তবে পরে কার্ড দেবে সবাইকে। হাসি হইচই হট্টগোল মিলিয়ে মেলা বসেছে বাড়িতে। এত খেলনা আর পুতুল পেয়ে রুহি কি করবে ভেবে পায় না। জারিনা আর ফারহান ওর জন্যে একটা জোড়া সোনার বালা উপহার দেয়। দানা মানা করা স্বত্তেও ফারহান জোর করে রুহিকে ওই বালা পড়িয়ে দেয়।

এই হই হট্টগোলের মাঝে আবার শঙ্কর আর রমিজ দানাকে একপাশে ডেকে নিয়ে যায়।

দানা কারন জিজ্ঞেস করলে রমিজ ওকে বলে, "শোন, সঙ্গীতার সম্বন্ধে তোর সাথে জরুরি কথাবার্তা আছে।"

উৎসুক দানা জিজ্ঞেস করে, "কি ব্যাপার রমিজ ভাই?"

শঙ্কর ওকে বলে, "সঙ্গীতার মুখ থেকে সব কিছু শোনার পরে আমরা রমলা বিশ্বাসের ওপরে নজর রেখেছিলাম। সব কিছু তথ্য প্রমান হাতে আসার পরেই তোকে জানাবো ভেবেছিলাম। রমলা বিশ্বাসের একটা ছেলে আছে।"

দানা প্রশ্ন করে, "তাতে অসুবিধে কোথায়?"

শঙ্কর গলা নামিয়ে ওকে বলে, "ওই ছেলে রমলার কানীন পুত্র। বর্তমান রাজনেতা দুলাল মিত্রের ঔরসে ওই ছেলের জন্ম। রমলা যখন কলেজে পড়ত তখন দুলাল মিত্রকে ভালবাসত, সেই সময়ে ওই ছেলের জন্ম হয়। কিছু পারিবারিক কারনে দুইজনের আর বিয়ে হয় না কিন্তু রমলা ওই সন্তানের জন্ম দেয়। দুলাল মিত্র তখন সবে রাজনীতিতে ঢুকেছে, এই কালিমা ঢাকার জন্য ওরা ওই সদ্যজাত শিশুকে একটা অনাথালয়ে দিয়ে দেয়। দুলাল মিত্র পরে বিয়ে করে ওর বাবার চেনাশোনা একজনের সাথে আর রমলার বিয়ে হয়ে গেল অন্য একজনের সাথে। তবে ওরা দুইজনে ওই ছেলের ওপরে নজর রেখেছিল। বর্তমানে বেলপাহাড়ির এক আবাসিক কলেজে থেকে সেই ছেলে পড়াশুনা করে। এই ব্যাপার কাক পক্ষীতেও জানে না, না দুলালের স্ত্রী জানে না রমলার স্বামী জানে। ওই ছেলের পড়াশুনার খরচ খরচা সব কিছু দুলাল মিত্র দেয়। মাঝে মাঝে রমলা আর দুলাল ওই কলেজে গিয়ে ছেলের সাথে দেখা করে আসে তবে ছেলে এখন পর্যন্ত বাবা মায়ের আসল পরিচয় জানে না। যে অনাথালয়ে ছেলেটা বড় হয়েছিল সেইখানের অধ্যাপিকা শুধু এদের আসল পরিচয় জানে।"

দানা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, "তোমরা এত গোপন খবর জানলে কি করে?"

রামিজ বলে, "অনেকদিন থেকেই ওকে অনুসরন করছিলাম। একদিন দেখলাম রমলা, পরিবার ছাড়াই গাড়ি নিয়ে শহরের বাইরে ঘুরতে গেল। সন্দেহ হল আর আমরা পিছু নিলাম। মহানগর ছাড়িয়ে অনেকদুরে একটা হোটেলে দেখালাম রমলা বিশ্বাসের সাথে দুলাল মিত্র দেখা করলো। গভীর চক্রান্তের গন্ধ পেলাম, আর পেছন ছাড়লাম না। দুইজনে ওই অনাথালয়ে গেল সেই ছেলেটার সাথে দেখা করতে। বেশ বড় ছেলে, একদম মায়ের মতন দেখতে। ওকে দেখেই সবকিছু আমার সামনে পরিষ্কার হয়ে গেল।"

দানা বুক ভরে শ্বাস নেয়, তাহলে এই সেই দুর্বলতা যার কথা নয়না ওকে বলেছিল। এইবারে রমলাকে কোণঠাসা করা সহজ হয়ে যাবে। এইবারে মৈনাকের খুনির ব্যাপারে জানা যাবে, সঙ্গীতার চোখের জলের প্রতিশোধ নেওয়া যাবে।
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply
চৌষট্টি ছক (#৫)

মহুয়াকে সব কিছু খুলে জানাতে, মহুয়া ওকে সাবধান করে দেয়। রমলা বিশ্বাস আগে সাংবাদিক ছিল, বর্তমানে নয়নার কাছ থেকে মোটা টাকা হাতিয়ে নিজের একটা পত্রিকার সম্পাদিকা হয়েছে। মিডিয়া জগতে অনেক চেনাজানা, সেটা ইন্দ্রাণীর সাথে ওই পার্টিতে গিয়ে দানা বুঝেছিল। এর সাথেও বেশ মেপে চলতে হবে দানাকে। সারা রাত ধরে দুইজনে অঙ্ক কষে যায়, কি ভাবে রমলাকে বাগে আনা যায়। এই রমলা, নয়নাকে ইন্দ্রাণী আর দানার সম্পর্কের ব্যাপারে জানিয়েছিল তাই নয়না ওকে হুমকি দেওয়ার সাহস পেয়েছিল। তবে এই কানীন পুত্রের সংবাদ খুব গোপন, একবার এই খবর উজাগর হলে দুলাল মিত্রের নামে আর রমলার নামে কলঙ্ক রটে যাবে। এই খবর নিশ্চয় নয়না জানে আর এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়েই রমলাকে চেপে ধরে সঙ্গীতার খবর পায়। এই জারজ সন্তানকে ঢাল করেই রমলাকে ফাঁদে ফেলতে হবে। একবার এই ছেলেটার সাথে দেখা করা যাক।

ভোরের বেলায় দানা, রমিজকে ফোন করে বাড়িতে ডাকে, আর সেই আবাসিক কলেজে যাওয়ার ইচ্ছা ব্যাক্ত করে। মহুয়ার বুক চাপা উত্তেজনায় ভরে ওঠে, এক এক করে চারপাশে ফাঁদ পেতে চলেছে কিন্তু কখন কোনদিক থেকে ওদের ওপরে আঘাত আসবে সেটা এখন বুঝে উঠতে পারছে না। নয়না আঘাত করবেই, বিমানের কাজ শেষ হলেই নিশ্চয় দানাকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে। এইবারে রমলাকে আঘাত করলে রমলা নিশ্চয় চুপচাপ বসে থাকবে না পাল্টা আঘাত করবেই।

গাড়ি নিয়ে রামিজ আর শঙ্করকে নিয়ে দানা বেড়িয়ে পড়ে। মহানগর থেকে ওই পাহাড়ি আবাসিক কলেজ অনেকদুর। রাস্তায় দানা নিজের পরিকল্পনার সম্বন্ধে রমিজ আর শঙ্করের সাথে শলা পরামর্শ করে। রামিজ আর শঙ্কর উঁচিয়ে, হাতে পেলে যে কারুর মাথা ধড় থেকে নামিয়ে দেবে। কিন্তু দানা নিজেদের হাতে রক্ত মাখাতে নারাজ। ওইখানে পৌঁছাতে বিকেল হয়ে যাবে। পথে যেতে যেতে নয়নাকে ফোন করে রমলার ফোন নাম্বার জেনে নেয় দানা। প্রথমে নয়না কারন জিজ্ঞেস করলে, দানা বলে যেহেতু নয়নাকে ওর আর ইন্দ্রাণীর সম্পর্কে জানিয়েছিল তাই একবার রমলার সাথে কথা বলতে চায়।

সারাটা পথ তিনজনে পালা করে গাড়ি চালিয়ে বিকেল নাগাদ দুর পাহাড়ি কলেজে পৌঁছে যায়। রাতে আবাসিক কলেজ বন্ধ থাকায় কারুর সাথে দেখা সাক্ষাৎ করা হয়ে ওঠে না। সকালেই তিনজনে কলেজে গিয়ে ছেলেটার বিষয়ে জানতে চায়। অধ্যাপিকা কিছুতেই অনুমতি ব্যাতিত ছেলেটার সাথে দেখা সাক্ষাৎ করাতে নারাজ। দানা ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়, সঙ্গে সঙ্গে রমলাকে ফোন করে। অচেনা নাম্বার থেকে ফোন পেয়ে রমলা আগন্তুকের পরিচয় জিজ্ঞেস করে।

দানা মৃদু হেসে উত্তর দেয়, "আমি বিশ্বজিৎ মন্ডল ওরফে দানা, আশা করি এইবারে চিনতে পারছেন।"

রমলা হেসে উত্তর দেয়, "হ্যাঁ হ্যাঁ চিনতে পেরেছি। তুমি নয়নার....."

দানা বলে, "হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন। আমি এক সময়ে নয়নার গাড়ি চালাতাম।"

রমলা প্রশ্ন করে, "হঠাৎ কি মনে করে ফোন করা হল? ইসস তুমি না, ইন্দ্রাণীর কি খবর?"

দানার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়, বুঝতে বাকি থাকেনা এই মহিলাই নয়নাকে ইন্দ্রাণীর বিষয়ে জানিয়েছে। দানা কঠিন কণ্ঠে প্রশ্ন করে, "তুমি নয়নাকে সঙ্গীতার খবর দিয়েছিলে? সত্যি সত্যি উত্তর দাও।"

সরাসরি প্রশ্ন করাতে রমলা ঘাবড়ে যায়, কিন্তু সেই অনুভুতি লুকিয়ে কঠিন কণ্ঠে উত্তর দেয়, "আমি কাকে কি বলেছি তাতে তোমার কি দরকার। তুমি সামান্য একজন গাড়ির চালক, নিজের চরকায় তেল দাও।"

দানা পাল্টা আক্রমন করে রমলাকে, "দেখো রমলা, তুমি নয়নাকে সঙ্গীতার খবর দিয়েছিলে তাই আজ মৈনাক মারা গেছে। তুমি সঙ্গীতাকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলে ঠিক কি না বলো?"

রমলা দাঁতে দাঁত পিষে বলে, "কি যা তা বলছ তুমি? আমি কেন সঙ্গীতাকে মারার চেষ্টা করব? আমি মৈনাককে চিনিনা আমি কাউকে মারিনি।"

দানা ক্রুর হাসি দিয়ে বলে, "তুমি সঙ্গীতার সব খবর জানো রমলা, সোজা কথায় মানবে না তাহলে। জানো আমি এখন কোথায়?"

রমলা জিজ্ঞেস করে, "কোথায়?"

দানা জানায়, "আমি বেলপাহাড়ির আবাসিক কলেজে। তোমার ছেলে বেশ বড় হয়ে গেছে রমলা। শেষ কবে এসেছিলে দেখা করতে? আমি অনেক চকোলেট আর একটা ভিডিও গেম এনেছি ওর জন্যে। বলো তো ওর হাতে দেব না তোমার জন্য অপেক্ষা করবো?"

ওইপাশে রমলার শরীর রক্ত শুন্য হয়ে যায়, তাও দানাকে বলে, "কি যা তা বলছো তুমি, আমার কোন ছেলে নেই আমার শুধু দুই মেয়ে।"

দানা বাঁকা হেসে বলে, "ঠিক আছে তাহলে অধ্যাপিকার সাথে একবার কথা বলে নাও যাতে আমি একটু ছেলের সাথে দেখা করতে পারি।" বলে সামনে বসা অধ্যাপিকার হাতে ফোন ধরিয়ে দিতে যায়।

সঙ্গে সঙ্গে রমলা ওইদিক থেকে আঁতকে ওঠে, "না দানা প্লিস, আমি সব বলছি কিন্তু প্লিস ছেলের সামনে আমাকে ছোট করে দিও না দানা, আমি তোমার পায়ে পড়ি।"

দানা চিবিয়ে চিবিয়ে বলে, "আমি আগামী কাল বিকেল পর্যন্ত এইখানে থাকব, এর মধ্যে যদি এইখানে এসে দেখা করে যাও তাহলে ভালো না হয় যাওয়ার আগে তোমার ছেলের আসল পরিচয় বিশ্বের কাছে উজাগর করে দেব। একজন বড় সম্পাদিকার নামে কলঙ্ক। সামনে নির্বাচন সেই সাথে রাজনৈতিক দল নেতা দুলাল মিত্রের নামে কলঙ্ক।"

রমলা চাপা কণ্ঠে বলে, "তুমি ওইখানে অপেক্ষা করো দানা, আমি এখুনি গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ছি। রাতের মধ্যে আমি পৌঁছে যাবো প্লিস আমার ছেলেকে এর মধ্যে জড়িও না দানা আমি তোমার পায়ে পড়ি।"

দানা বাঁকা হেসে বলে, "ঠিক আছে, চলে এসো। আমি অপেক্ষা করে থাকবো।"

আঘাতটা একদম ঠিক জায়গায় লেগেছে। মৈনাকের খুনিকে হাতের সামনে পাওয়া যাবে। দানা এটাও জানে এতক্ষণে দুলাল মিত্রকে রমলা সব ঘটনা খুলে বলে দেবে আর নয়নাকে এই সব জানাবে। রমলার সব ক্রোধ নিশ্চয় নয়নার ওপরে পরবে কারন এই দুর্বলতার ফলে রমলা ওকে সঙ্গীতার খবর দিতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু নয়নাকে বেশি চাপ দিলেই ফেটে পড়তে পারে তাই রমলাকে সাবধান করে দেয়, "আর একটা কথা, নয়নাকে এই বিষয়ে কিছু জানাবে না, কারন নয়না আমাকে কিছুই বলেনি। আমি জানি তুমি নয়নার ওপরে সন্দেহ করেছ কিন্তু নয়না আমাকে তোমার ছেলের ব্যাপারে কোন খবর দেয়নি।"

রমলা কাঁপা কণ্ঠে উত্তর দেয়, "না না আমি কাউকে কিছু জানাবো না। তুমি ওইখানে অপেক্ষা কর আমি আসছি। তোমার সাথে আরও অনেক কথা আছে দানা। আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়ত এই শহর ছেড়ে চলে গেছ, কিন্তু সেদিন নয়নার পার্টিতে তোমাকে দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলাম।"

ঠিক কি বলতে চায় রমলা? ওর সাথে আর কি কথা থাকতে পারে প্রাক্তন সাংবাদিক, বর্তমান সম্পাদিকা রমলা বিশ্বাসের? রমলা কি মৈনাকের খুনের বিষয়ে কিছু আলকপাত করতে সক্ষম হবে? হতে পারে, সাংবাদিক মানুষ অনেক খবরা খবর রাখে রমলা। তবে নয়না কম যায় না, গুপ্তচর লাগিয়ে অনেক খবর বের করতে ওস্তাদ।

সন্ধ্যে নাগাদ রমলা বেলপাহাড়ি পৌঁছে যায়। রমলা একাই এসেছে, দানা নিজের হোটেলের ঠিকানা জানিয়ে দেয়। রমলা সেই হোটেলে একটা ঘর নেয় রাতের জন্য। রাতের খাওয়ার পরে দানা রমলাকে নিজের কামরায় ডাকে কথাবার্তা বলার জন্য। দানা চুপচাপ রমলার অপেক্ষায়, ওর কাছ থেকে অনেক কিছু জানার আছে, মৈনাকের খুনির সঠিক খবর এর কাছ থেকেই পাওয়া যাবে। রমিজ আর শঙ্করকে ওদের দেখা সাক্ষাৎ সবকিছু ক্যামেরা বন্দী করতে পরামর্শ দেয়। সেই মতন ঘরের এক কোনায় একটা ছোট ক্যামেরা লুকিয়ে রাখা হয়।

এই একদিনেই রমলা অনেক শুকিয়ে গেছে, ধীর পায়ে ঘরে ঢুকে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে। একদিকে রামিজ বসে অন্যপাশে শঙ্কর বসে মাঝ খানে দানা। দানা একটা সোফায় রমলাকে বসতে অনুরোধ করে।

রমলা এপাশ ওপাশ তাকিয়ে দানাকে জিজ্ঞেস করে, "কি চাও তুমি?"

কঠিন গম্ভির কণ্ঠে দানা প্রশ্ন করে, "প্রশ্ন আমি করবো, তুমি উত্তর দেবে। প্রথমে এটা বলো, কেন তুমি সঙ্গীতার সম্বন্ধে নয়নাকে জানিয়েছিলে? জানো তারপরে সঙ্গীতার সাথে কি হয়েছে? নয়নার বাড়িতে সঙ্গীতাকে বেঁধে ;., করা হয়েছে। ওর প্রেমিক মৈনাকের খুন হয়েছে। এইসব শুধু তোমার জন্য হয়েছে রমলা।"

রমলা আক্ষেপ করে মাথা দোলায়, "সত্যি বলছি দানা, সঙ্গীতার জন্য আমার সত্যি দুঃখ হচ্ছে। আমি আমার ছেলের নামে শপথ করে বলছি ওর ক্ষতি হোক সেটা কোনোদিন চাইনি আমি।"

কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে, "আমি জানি না তুমি আমার ছেলের সম্বন্ধে কার কাছ থেকে শুনেছো, কিন্তু নয়নাও এই গোপন খবর জানে।"

দানা চিবিয়ে চিবিয়ে রমলাকে বলে, "নয়নাকে এইসব থেকে দূরে রাখো রমলা। নয়না আমাকে কিছুই বলেনি, বিশ্বাস না করলে এখুনি ওকে ফোন করে জিজ্ঞেস করতে পারো।"

ওই হিমশীতল কণ্ঠস্বর শুনে রমলা কেঁপে ওঠে, "নয়না আমাকে কলঙ্কের হুমকি দিয়ে সঙ্গীতার খবর জানতে চায়। আমার কিছু করার ছিল না দানা, আমি ওকে দিতে বাধ্য হই। আমি সত্যি জানতাম না যে নয়না ওকে ;., করাবে। জানলে কোনদিন সঙ্গীতার খবর ওকে দিতাম না। বিশ্বাস করো দানা, অনেকদিন পর্যন্ত ওকে আমি ওকে লুকিয়ে রেখেছিলাম। আমি সঙ্গীতার খারাপ কোনোদিন চাইনি।"

ওর পার্টির কথা দানার মনে পরে যায়, রমলা মুখ খোলেনি নয়নার কাছে। তবে কে খুন করতে পারে মৈনাককে? ওকে অবাক করে রমলা বলে, "তবে আমি মনে হয় জানি মৈনাককে কে খুন করতে পারে।"

সঙ্গে সঙ্গে দানার রমিজ আর শঙ্করের দিকে তাকায়। দানা উৎসুক হয়ে ওঠে, "কে খুন করতে পারে। কি জানো তুমি?"

রমলা ওকে বলে, "সত্যি বলতে কি জানো। আমি কিছু গোপন খবর পেয়েছিলাম আর তার থেকেই অনেক কিছু জেনেছি।"

চাপা উত্তেজনায় দানার শ্বাস আটকে যায়। রমলা কণ্ঠস্বর নিচু করে বলে, "মিসেস কঙ্কনা দেবনাথ নামে ইন্দ্রাণীর এক বান্ধবী আমাকে একটা সিডি দিয়েছিল।"

কঙ্কনার নাম শুনতেই দানার শরীরের সকল ধমনী চাপা উত্তেজনায় টানটান হয়ে যায়। কঙ্কনা কি ভাবে রমলাকে চেনে?
Like Reply
রমলা ওকে বলে, "কঙ্কনা আমাকে যে সিডি দিয়েছিল তাতে প্রচুর গোপন কথোপকথন ছিল। কি ভাবে কঙ্কনা ওই সব কথাবার্তা রেকর্ড করেছিল সেটা আমার জানা নেই। তবে ওই সিডিতে আমি সিমোনের কথাবার্তা শুনেছি। কোন একজনকে ফোনে সঙ্গীতাকে খোঁজার আর তারপরে ওকে মেরে ফেলার পরামর্শ দিয়েছিল। আমি বুক ঠুকে বলতে পারি ফোনের ওইপাশের মানুষ বিমান চন্দ ছাড়া আর কেউ নয়। কারন সিমোনে, অত প্রান খুলে একমাত্র ওর স্বামীর বন্ধু বিমান চন্দের সাথেই কথা বলে, আর কারুর সাথে নয়।"

দানার মাথায় বিজলীর ঝিলিক খেলে যায়। মনে পরে যায়, ওর সাথে যেদিন সিমোনের প্রথম দেখা হয় সেদিন ফোনে কোন একজনকে ওই সাংবাদিককে খোঁজার আর মেরে ফেলার পরামর্শ দিয়েছিল। দানা জিজ্ঞেস করে, "ওই সিডিতে আর কার কার কথাবার্তা ছিল একটু বলতে পারো?"

রমলা ওর হাতে একটা সিডি ধরিয়ে বলে, "অনেক বিত্তশালী ক্ষমতাশালী মহিলাদের কথাবার্তা এতে রেকর্ড করা আছে। সিমোন খৈতান, রাগিণী ভৌমিক, নীলাঞ্জনা সেন, সুমিত্রা মল্লিক, কেতকী দাসগুপ্ত এমন অনেকের কথোপকথন আছে ওই সিডিতে।"

দানা বুঝতে পেরে যায় ওকে খুনের কারন কি হতে পারে, এটাও বুঝতে পারে কঙ্কনা ওকে জানায়নি কি ভাবে এই সব তথ্য যোগাড় করেছিল না হলে দানাকে হয়ত উল্টে চেপে ধরত রমলা। যে যে মহিলাদের নাম নিয়েছে রমলা, একসময়ে সবার সাথে সহবাস করেছে দানা। কঙ্কনা আর নাসরিন ওকে ব্যাবহার করে ওই বিত্তশালী ক্ষমতাশালী নারীদের অন্দর মহলে ঢুকে গেছিল। সাধারনত এই বড় লোকেরা, ড্রাইভার মালী চাকর পুরুষ বেশ্যা এদের মানুষ বলে গন্য করে না। এদের সামনেই অনেক সময়ে অনেক গোপন আলোচনা করে ফেলে, ভাবে এরা কাকে কি বলবে। সেই সুযোগ নিয়ে দানাকে ওই দুই নারী ব্যাবহার করে।

দানা চিবিয়ে চিবিয়ে রমলাকে প্রশ্ন করে, "তুমি এই কথোপকথন নিয়ে কি করলে?"

রমলা উত্তরে বলে, "আমি খবর বেচা কেনা করি দানা। এই রেকর্ড করা কথোপকথন খবর যোগাড় করতে আমার খুব কাজে আসে। মানে আমি কাউকে সরাসরি ব্ল্যাকমেইল করিনি, তবে মাঝে মাঝে ভেতরের খবর হাসিল করার জন্য এই সব লাগে।"

এতক্ষণ এতসব জটিলতা শুনে দানার মাথা ভোঁ ভোঁ করতে শুরু করে দেয়। শঙ্কর আর রমিজ সিগারেট খাওয়ার নাম করে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়। ওদের মাথায় এই সব কথাবার্তার কিছুই ঢোকেনা। তবে দানার সামনে সব অঙ্ক মিলে যায়। কি কারনে কঙ্কনা আর নাসরিন ওকে খুন করতে চেয়েছিল। কি কারনে বিমান চন্দ, সঙ্গীতাকে খুন করতে চেয়েছিল। সঙ্গীতা মারা যায়নি, তবে ওর প্রেমিক মৈনাক ওই দুর্ঘটনায় প্রান হারিয়েছে।

দানা পিস্তল বের করে গর্জে ওঠে, "তোমার জন্য মৈনাক আজকে এই পৃথিবীতে নেই।"

ওর গর্জন শুনে শঙ্কর আর রমিজ খোলা পিস্তল হাতে দৌড়ে ঘরে ঢুকে দেখে যে রমলা আতঙ্কে থরথর করে কাঁপছে আর দানা খোলা পিস্তল হাতে ওর দিকে উঁচিয়ে।

রমলা কাঁপা ভয়ার্ত কণ্ঠে বলে, "দেখো আমি যা যা জানি সব তোমাকে বলেছি প্লিস আমাকে প্রানে মের না। দেখ দানা, আমার কিছু হলে দুলাল মিত্র কিন্তু তোমাকে ছেড়ে দেবে না।"

দানা চোয়াল চেপে চেঁচিয়ে ওঠে, "শালী রেন্ডী কুত্তি, সঙ্গীতার চোখের জলের মাশুল কে দেবে? কোন দুলাল মিত্রকে আমি চিনি না বুঝলে রমলা। আমার গায়ে আঁচড় লাগলে আমি সবকিছু নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের কাছে চলে যাবো। এই সংবাদ মাধ্যমের দুনিয়ায় নিশ্চয় তুমি একা নও রমলা। তোমার বিপক্ষে অনেক সাংবাদিক সংস্থা নিশ্চয় মুখিয়ে আছে তোমাকে দমানোর জন্য। তাদেরকে খুঁজে বের করতে আমার সময় লাগবে না, মিসেস রমলা বিশ্বাস।"

রমলা হাত জোর করে প্রার্থনা করে, "তুমি যা বলবে আমি করতে রাজি আছি।"

দানা বুক ভরে শ্বাস নিয়ে রাগ প্রশমিত করে রমলাকে জিজ্ঞেস করে, "তুমি কঙ্কনাকে কি ভাবে চেন? কঙ্কনা কোথায় তুমি জানো?"

এতক্ষণ কথা বলার পরে রমলার গলা শুকিয়ে আসে, বোতল থেকে জল খেয়ে আবার বলতে শুরু করে, "আমি আগে থেকে কঙ্কনাকে চিনতাম না। তবে ওই পার্টিতে কঙ্কনা নিজেকে ইন্দ্রাণীর বান্ধবী হিসাবে আমাকে পরিচয় দেয়। আমিও ইন্দ্রাণীর সাথে ওর মেলামেশা দেখে বিশ্বাস করে নিলাম যে ওর বান্ধবী হয়ত ওর সাথেই এসেছে। সেই পার্টির প্রায় আড়াই তিন মাস পরে কঙ্কনা আর নাসরিন আমার কাছে একটা সিডি নিয়ে আসে। এসে আমাকে বলে যে ওর কাছে অনেক গোপন তথ্য আছে যা আমি খবরের জগতে কাজে লাগাতে পারি। তবে তার জন্য অনেক মোটা অঙ্কের টাকা চায়, পাঁচ কোটি টাকা। সবে নয়নার কাছ থেকে এক কোটি টাকা নিয়ে আমি পত্রিকা শুরু করেছিলাম। আমার হাতে অত টাকা ছিল না তাই অগত্যা ওদের আমার পত্রিকার শেয়ার দিয়ে দিলাম। ওই দুইজন আমার পত্রিকার কুড়ি শতাংশের অংশীদার।"

এইবারে কঙ্কনার ঠিকানা পাওয়া যাবে। এতদিন কঙ্কনা আর নাসরিনের ঠিকানা ছিল না, ফোনে ফোন করে পায়নি, ওদের ছবি পর্যন্ত দানার কাছে ছিল না। এই নিয়ে ইন্দ্রাণীর সাথে কোনোদিন কথা হয়নি তাই জানতে পারেনি। ভেবেছিল একদিন কোন ভাবে খুঁজবে, তবে সেটা রমলার হাত ধরেই ওর কোলে এসে পড়বে সেটা আশাতীত। ওকে খুন করতে চেয়েছিল ওই দুই ধূর্ত মহিলা, খুনের প্রতিশোধ নেবেই।

রমলাকে কঙ্কনা ও নাসরিনের ঠিকানা জিজ্ঞেস করাতে রমলা ওকে জানায়, "কঙ্কনা আর নাসরিন এই শহর ছেড়ে চলে গেছে।"

শুনে দানা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে, তাহলে প্রতিশোধ কি ভাবে নেবে? রমলা ওকে বলে, "অন্য শহরের ঠিকানা ফোন নাম্বার সবকিছু আমি জানি। কিন্তু তুমি কঙ্কনাকে কি ভাবে চেন?"

দানা বাঁকা হাসি দিয়ে সত্য গোপন করে বলে, "ইন্দ্রাণীর বান্ধবী অনেকদিন দেখা সাক্ষাৎ নেই তাই জিজ্ঞেস করলাম। একসময়ে বেশ জানাশুনা ছিল কঙ্কনা আর নাসরিনের সাথে। যাই হোক ওর ঠিকানা আর ফোন নাম্বার আমাকে দাও।"

রমলা ওকে কঙ্কনা আর নাসরিনের ঠিকানা আর ফোন নাম্বার দেয়। দুর পশ্চিমের শহরে চলে গেছে দুইজনেই, হয়ত ওদের স্বামী বদলি হয়ে গেছে তাই এই শহর ছেড়ে চলে গেছে। অতদুরে গিয়ে সরাসরি কঙ্কনা আর নাসরিনকে খুন করতে হবে ভেবেই দানা একটু চিন্তিত হয়ে যায়।

রমলা ওর চিন্তিত চেহারা দেখে বলে, "কঙ্কনা আর নাসরিন দুই মাস পরে আমাদের পত্রিকার বার্ষিক সম্মেলনে আসবে। তুমি চাইলে আমি দেখা করিয়ে দিতে পারি। ওই সময়ে ওদের নাকি আরো কিছু কাজ আছে, তাই প্রায় এক মাস মহানগরে থাকবে।"

ওই এক মাসেই যা করার করে ফেলতে হবে দানাকে। তবে সরাসরি খুনের দায়ে জেলে যেতে চায় না দানা। ঘরে সুন্দরী প্রেমিকা মহুয়া আর কচি শিশু রুহির কথা মনে পড়ে যায়। দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়, বড় কঠিন পরিস্থিতি বড় জটিল সবকিছু, তবে প্রতিশোধ দানা নেবেই। ওর ভালোবাসার খুনের প্রতিশোধ নিতে বদ্ধ পরিকর।
[+] 2 users Like Mr Fantastic's post
Like Reply
চৌষট্টি ছক (#০৬)

রমলার কাছ থেকে আর কিছু জানার নেই দানার, তবে সাবধান করে দেয়, যদি রমলা মুখ খোলে তাহলে দুলাল মিত্র আর রমলার কেলেঙ্কারির খবর, মহানগরের সব খবরের কাগজের শিরোনাম হয়ে যাবে। রমলাকে এটাও জানিয়ে দেয় ভবিষ্যতে কাজে লাগতে পারে। কিন্তু কি ভাবে কাজে লাগাবে সেটা একটু ভাবতে হবে। বেলপাহাড়ির কাজ শেষ, মহুয়ার মিষ্টি হাসি আর রুহির কচি হাসি ওকে ডাক দেয়। আর দেরি করে না দানা, সেই রাতেই রমিজ আর শঙ্করকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। আসার পথে দানা গুম মেরে বসে অঙ্ক কষে চলে, কি ভাবে কঙ্কনাকে আর নাসরিনকে হাতের মুঠিতে করবে। বাকি সবাইকে মোটামুটি জালে টেনে এনেছে দানা। শুধু মাত্র একে ওপরের সামনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া বাকি। বিমান চন্দ যে মৈনাককে খুন করেছে সেটা পরিস্কার হতেই দানার মাথায় রক্ত চড়ে যায়। নয়নার কথা মেনে বাপ্পা নস্করকে খুন করা ভুল পদক্ষেপ তার চেয়ে ভালো উল্টে বিমান চন্দ আর নয়নার মাঝে দ্বন্দ তৈরি করে দেওয়া। এক সাথে দুইজনেই পরস্পরের বিরুদ্ধে মারামারি করে মরবে। অথবা বাপ্পা নস্করের কানে বিমান চন্দের আর নয়নার গোপন সম্পর্কের কথা তুলে দেওয়া তাহলে দুইজন কে বাপ্পা নস্কর খুন করে দেবে। দানার কাজ হাসিল হয়ে যাবে। সঙ্গীতার চোখের জলের প্রতিশোধ আর মৈনাকের খুনের প্রতিশোধ একসাথে নেওয়া হয়ে যাবে। তবে সিমোনে খৈতানকে বাগে আনতে হবে, ওই সিমোনে খৈতান সকল নাট্যের নায়িকা। ওর ধূর্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী বিমান চন্দ লোক লাগিয়ে মৈনাককে খুন করেছে।

এই সব ভাবতে ভাবতে একসময়ে শহরে পৌঁছে যায় দানা। ভোরের আলো অনেকক্ষণ আগেই ফুটে গেছে। সকাল সকাল মহুয়ার ফোন, "কোথায় তুমি?"

দানা জানায়, "আমি একটু পরেই বাড়ি আসছি।"

মহুয়া অবাক হয়ে যায় ওর কথা শুনে, "রাতেই বেড়িয়ে পড়েছিলে নাকি গো?"

দানা উত্তর দেয়, "হ্যাঁ পাপড়ি। চোখের সামনে রুহির মুখচ্ছবি ভেসে ওঠার পরে বেল পাহাড়িতে আর থাকা গেল না। ওকে কোলে নেওয়ার জন্য মন ছটফট করছিল।"

ঘরে ঢুকেই আগে শোয়ার ঘরে ঢোকে দানা। ছোট্ট রুহি ঘুমে অচৈতন্য। মহুয়া ওইভাবে ওকে দেখে জিজ্ঞেস করে, "কি হল বলবে ত? এমন ঝোড় কাকের মতন কেন দেখাচ্ছে তোমাকে?"

দানা চুপচাপ রুহির পাশে ওকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে। রামিজ আর শঙ্কর মহুয়াকে রাতের বিস্তারিত খবর দেয়। মহুয়া বুঝতে পারে যে দানা বেশ ভয় পেয়ে গেছে, মেয়েকে আর ওকে কেউ আঘাত করলে দানা টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। সেই দৃশ্য দেখে মহুয়ার চোখে জল চলে আসে। কিন্তু দানা যে বদ্ধ পরিকর, প্রতিশোধ না নিয়ে কাউকে ছাড়বে না আর মহুয়া বদ্ধ পরিকর, দানাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না। এহেন উভয়সঙ্কট অবস্থায় কি করা যায়। দিনে দিনে ওদের শত্রু সংখ্যা বেড়েই চলেছে, কম হবার নাম করে না। প্রথমে কঙ্কনা আর নাসরিন, তারপরে রমলা বিশ্বাস। এরমাঝে নিশ্চয় নয়না, দুলাল মিত্র আর বিমান চন্দ ওর বিপক্ষে হয়ে গেছে। কিছুদিনের মধ্যে মোহন খৈতান আর সিমোন খৈতান ওর বিরুদ্ধে হয়ে যাবে। পাশে একমাত্র বাপ্পা নস্কর, তবে কতদিন?

দানার পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে মৃদু কণ্ঠে বলে, "কি হয়েছে জিত, আমাকে বলবে না?"

দানা ছলছল চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বলে, "প্লিস পাপড়ি তুমি এখান থেকে চলে যাও। রুহিকে নিয়ে তুমি আজমের চলে যাও।"

মহুয়া এটাই ভয় করছিল কিন্তু দানাকে একা ফেলে রেখে গেলে কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? একা দানা কি করবে? না মহুয়া ওকে কিছুতেই ছেড়ে যাবে না, মরতে হলে সবাই একসাথেই মরবে। পাশে থাকলে ওকে বুকে জড়িয়ে শক্তির জোগান দিতে পারবে।

চুপচাপ দানার মাথা বুকে করে অনেকক্ষণ বসে থাকার পরে মহুয়া ওকে জিজ্ঞেস করে, "আমি চলে গেলে তুমি শক্তি পাবে কোথা থেকে জিত? তুমি ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে ফাঁকা বাড়ি দেখে আরো মুষড়ে পড়বে।"

সেটা অবশ্য দানাও জানে, এই নারী ওর শক্তির উৎস। এতদিনে ওর বুকে কোন বল ছিল না। সেই বাজারে প্রথম মহুয়ার কাজল কালো ভাসা ভাসা চোখ দেখেই দানার বুকে সাহসের সঞ্চার হয়েছিল। আর তাই ওকে বাঁচানোর জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। জানত না কি হবে, হয়ত সবার মৃত্যু হতে পারত কিন্তু নির্ভয়ে দানা ওকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল আর সেটাই সত্যি।

মহুয়ার বুকের মাঝে মুখ ঘষে দানা মিহি কণ্ঠে বলে, "তুমি না একটা পাগলী মেয়ে বুঝলে।"

ওর অবিন্যাস্ত চুলের মধ্যে বিলি কেটে উত্তর দেয়, "পাগলে পাগল চেনে, আর শুয়োরে চেনে কচু। এইরকম কিছু একটা বাংলায় প্রবাদ আছে তাই না?" বলেই দুইজনে হেসে ফেলে। মহুয়া ওর গালে আলতো গাল ঘষে বলে, "আজকে আর কোথাও যেতে হবে না। সারারাত অনেক ধকল গেছে একটু ঘুমিয়ে নাও। কি খেতে চাও বলো।"

দানা হাসে, "তুমি আর কি খাওয়াবে, সেই রুটি আর ডাল। একটু মাছ মাংস হয় না বাড়িতে।"

মহুয়া ভুরু কুঁচকে ওকে বলে, "আচ্ছা প্রেম করার সময়ে জানতে না যে আমি নিরামিষ।"

দানা ওকে জোরে জড়িয়ে ধরে গালে অজস্র চুমু খেয়ে বলে, "নিরামিষ আর কোথায়, এমন সুন্দরীকে রোজ রাতে চটকে পিষে খাই আর কি নিরামিষ গো তুমি।"

ভালোবাসার রঙ ধরে যায় মহুয়ার চোখে, "ধ্যাত কি শুরু করেছে না দিন দুপুর বেলায়। নাও নাও স্নান সেরে ফেল, আর বিশ্রাম নাও।" তারপরে চোখ টিপে ফিসফিস করে বলে, "বিউটিসিয়ানকে ডাকব ভাবছি।"

মহুয়ার মসৃণ পুরুষ্টু লালচে ফর্সা ঊরু যুগল আর রোমহীন বগলের ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠতেই দানার ভেতরে কেমন যেন ছ্যাঁত করে ওঠে। মনে হয় এখুনি ওকে জড়িয়ে ধরে এইখানে সঙ্গমে মেতে ওঠে। বাধ সাদে রুহি সোনা, পাশেই ঘুমিয়ে আছে। ঘুম থেকে ওঠার সময় হয়ে গেছে, পাশে ডাডাকে দেখে একটু আদর করবে, চুল ধরে টেনে উঠাতে চাইবে। গতরাতে পাশে দেখেনি, তাই অনেক রাত পর্যন্ত জেগে ছিল।

মহুয়ার পাতলা নরম কোমর জড়িয়ে, নরম পেটের ওপরে কর্কশ গাল ঘষে উত্তেজিত করে বলে, "রাতে তাহলে জমবে ভালো।" চোখ টিপে উদ্ধত লিঙ্গের দিকে ইশারা করে বলে, "আইসক্রিম খাবে নাকি?"

মহুয়া প্রথমে কিছু বুঝতে পারে না তারপরে দানা যখন ওকে চক্ষের ইশারায় লিঙ্গ দেখায় তখন মহুয়ার কান লজ্জায় লাল হয়ে যায় সেই সাথে কিঞ্চিত রেগে যায়, "ছিঃ কি সব বলছ তুমি। না না...." বলতে বলতে লজ্জায় দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলে।

ওর রক্তিমাভা মাখানো ডিম্বাকৃতি মুখবয়াব দেখে দানা আর থাকতে পারে না। দুই হাতে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে নিজের ওপরে টেনে নেয়। বলিষ্ঠ বাহুপাশে বদ্ধ হয়ে মহুয়া নিজেকে সমর্পণ করে দেয়। নরম পাছার খাঁজে আটকা পড়ে যায় দানার উদ্ধত কঠিন লিঙ্গ। কঠিন লিঙ্গের পরশে সকাল সকাল মহুয়া, না চাইতেও কামোত্তেজনায় কেঁপে ওঠে।

দুই হাতে মহুয়ার নধর দেহ পল্লব পিষে ধরে গালে চুমু খেয়ে মহুয়াকে বলে, "এই এত লজ্জা কিসের।"

লজ্জায় মহুয়া ওর দিকে তাকাতে পারে না কিছুতেই, "ছাড়ো না প্লিস, মেয়ে উঠে পরবে।"

দানা ওর গালে গাল ঘষে বলে, "মেয়ে এত তাড়াতাড়ি উঠবে না।"

মিহি আদুরে কণ্ঠে বলে, "মণি এসে যাবে।"

দানা উত্যক্ত করে বলে, "আসবে না। মণি আসার আগে অন্তত দরজায় কড়া নাড়াবে।"

প্রেমঘন কণ্ঠে বলে, "আর সেই সময়ে যদি মাঝখানে পড়ে যাই তাহলে কি হবে? এ যাঃ সব মাটি।" বলেই খিলখিল করে হেসে ফেলে।

দানার লিঙ্গ কিছুতেই বাগ মানতে নারাজ। প্যান্টের ওপর দিয়েই দানার লিঙ্গ আলতো নাড়িয়ে দিয়ে মহুয়া বলে, "সোনা এখন ওইটা শান্ত কর। রাতে কাবাডি খেলবো, ঠিক আছে।"

মহুয়াকে ছেড়ে দিতেই বেশ কয়েকটা চড় চাপড় মেরে দানাকে ঠেলে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে সারা অঙ্গে মাদকতাময় ছন্দ তুলে পালিয়ে যায়। গতকাল থেকে অনেক ধকল গেছে এই শরীরের ওপরে আর শরীর সঙ্গ দিচ্ছে না। দানার চোখ জুরিয়ে আসে, রুহিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে।

দুপুরে ঘুম থেকে উঠে খাওয়া দাওয়া সারে। মনা আর পিন্টু, রুহিকে নিয়ে বেরিয়ে যায়। দানা একবার আড় চোখে মহুয়াকে শোয়ার ঘর দেখায়। মহুয়া চোখ পাকিয়ে ঠোঁটে দুষ্টু মিষ্টি হাসি মাখিয়ে জানিয়ে দেয়, কাবাডি খেলা রাতের আগে হবে না। দানা মাথা চুলকিয়ে অনুনয় বিনয় করে, বুক ধরে কাতর প্রার্থনা জানায়। রক্ত চঞ্চল হয়ে উঠেছে, সকাল বেলায় যেমন ভাবে জড়িয়ে ধরেছিল সেই আবেশ এখন ওর ঊরুসন্ধিতে লেগে আছে। লুঙ্গি পরা বাড়িতে মানা তাই শয়তান লিঙ্গ পায়জামার নিচেই ছটফট করে ওঠে।

মহুয়া ওর গালে আলতো চাঁটি মেরে বলে, "তুমি না....."

দানা ওর হাত ধরে কাছে টেনে বলে, "হ্যাঁ হ্যাঁ বলে ফেল, আমি কি।"

মহুয়ার চোখে রঙ লাগে, কঠিন থাবার মাঝে নরম কব্জি বাঁধা পড়ে যায়। হাত ছাড়াতে বৃথা চেষ্টা চালায়, ইচ্ছে করলে ছাড়াতে পার্ট কিন্তু সেই ইচ্ছেটা নেই, একটু দুষ্টুমি একটু ছোঁয়া পাওয়ার প্রবল ইচ্ছে জেগে ওঠে বুকের মধ্যে। ঠিক তখনি দরজায় কলিং বেল বেজে ওঠে।

দানা মিচকি হেসে ওর হাত ছেড়ে দিয়ে বলে, "এই যাত্রায় বেঁচে গেলে।"

কাজের মেয়ে দরজা খুলে মহুয়ার দুই বিউটিশিয়ানকে বাড়ির মধ্যে নিয়ে আসে। মল্লিকা আর সোনালী, মহুয়ার নিজস্ব বিউটিশিয়ান, ডাক দিলেই বাড়ি এসে পরিচর্যা করে যায়। তার জন্য ভালো টাকা দেয় মহুয়া। অবশ্য এর আগে এই দুইজন দানার অবর্তমানে বাড়িতে এসেছিল। সাধারণত দুপুরের পরে আসে আর তখন দানা বাইরে থাকে নিজের কাজে। দানা বুঝে যায় এইবারে ঘন্টা চারেকের জন্য প্রেয়সীর দেখা পাওয়া যাবে না।

অঙ্গে এক ছন্দময় হিল্লোল তুলে দুষ্টু মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে, "তুমি ওইখানে বসে থাকো আমি আসছি।"

দানা ওকে কাছে ডেকে কানেকানে বলে, "তোমার ওইখানের জঙ্গল পারলে একটু কামিয়ে নিও।"

মহুয়ার কান লাল হয়ে যায়, "ছিঃ আমি ওদের সামনে ওইসব খুলে দেখাই না।"

দানা ওকে আর একটু উত্যক্ত করে বলে, "পরশু দিন কিন্তু আমার মুখের মধ্যে চলে গেছিল।"

মহুয়ার মুখ লজ্জায় লাল, কি শয়তানি শেষ পর্যন্ত শুরু করেছে, "এই যে শোন, যেখানে সেখানে মুখ না দিলেই হয়। আমি কি তোমাকে ওইসব জায়গায় মুখ দিতে বলেছি?"

মহুয়ার নরম হাত জোড়া গালের ওপরে চেপে ধরে বলে, "ইসস তাহলে মধু কি করে চাটবো? রাগ করে না সোনা, রাতে বেশ সুন্দর করে কামিয়ে দেব।"

সেই অনেকদিন আগে একবার যোনি কেশ খুব যত্ন নিয়ে সুন্দর করে কামিয়ে দিয়েছিল তারপরে অবশ্য দানার ইচ্ছেতে কামানো হয়নি। সেই দৃশ্য ভাবতেই মহুয়ার গায়ে কামোত্তেজনার কাঁটা দিয়ে আসে, "যাও শয়তান, তোমার সাথে আর কথা বলবো না।"

মহুয়ার গালের রক্তিম আভা দেখে দানার লিঙ্গ ফুঁসে ওঠে। দানা ফিসফিস করে বলে, "চেরার দুইপাশে একদম মসৃণ করে কামিয়ে দেব আর বেদির ওপরে ছোট একটা গুচ্ছ রেখে দেব। বেশ সুন্দর লাগবে।"

উত্তেজিত কথার ফলে মহুয়ার শরীর ছটফট করে ওঠে। নিজেকে কোনোরকমে দানার হাত থেকে বাঁচিয়ে চোখ পাকিয়ে বলে, "রাতে আমার পাশে এস, এমন লাথি মারব না ওইখানে..... তখন বুঝবে ঠ্যালা।"

দানা হেসে ফেলে আর দুই বিউটিশিয়ানকে সঙ্গে নিয়ে মহুয়া ভেতরের ঘরে ঢুকে যায়। রুহি নেই বাড়িতে একটা সিগারেট ধরাতে পারে, তাই একটা সিগারেট ধরিয়ে টিভি খুলে বসে পড়ে। একবার ফারহানকে ফোন করলে হয়, ওর বিয়ে সামনে, অনেকদিন হয়ে গেল দেখা সাক্ষাৎ হয়নি। নাফিসা আর জারিনার দেহ পল্লবের ছায়াছবি চোখের সামনে ভেসে উঠতেই রক্ত চঞ্চল হয়ে ওঠে। পুরুষ মানুষ, পাশে প্রেমিকা থাকলেও নারী মাংসের লোভ শরীরের কোন এক কোনায় লুকিয়ে থাকবেই। বিয়ের পরে কি ফারহান ওর ভাবীজান নাফিসার সাথে শারীরিক সম্পর্ক চালিয়ে যাবে না বন্ধ করে দেবে? এতদিনে নিশ্চয় ফারহানের দাদা দুবাই থেকে এসে গেছে, নাফিসা রোজ রাতে তাবিশের কোলে বসে চরম কাম ক্রীড়া করছে। নগ্ন সুন্দরী নাফিসার দেহ যেন চোখের সামনে দেখতে পায় দানা, সেই সাথে লাস্যময়ী কচি সুন্দরী জারিনা। ভীষণ লাস্যময়ী দুই বোনের শারীরিক গঠন। ফারহান ভাগ্যবান, দুই বোনকে একসাথে এক বিছানায় ফেলে সঙ্গম সম্ভোগ করে। দানার মনে মাঝে মাঝে একটু এদিক ওদিকে নারী যোনির স্বাদ ভোগ করার সুপ্ত বাসনা জাগে বটে কিন্তু প্রেয়সীর মুখচ্ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠতেই বিরত হয়ে যায়।
Like Reply
ঘন্টা দুই এইভাবে বসে বসে কেটে যায়। নিঝুম বাড়ি, রুহিও নেই যে একটু ওর সাথে খেলা করবে। মনা আর পিন্টু কোথায় নিয়ে বেরিয়েছে কে জানে। বিকেলে মনে হয় মহানগরের অর্ধেক খেলনা ওর বাড়িতে এসে স্থান পাবে। আজকাল দানার চেয়ে বেশি মনা আর পিন্টুকে চেনে। আরো একটা সিগারেট জ্বালিয়ে ভেতরের ঘরের দিকে পা বাড়ায়। কি করছে এতক্ষণ মহুয়া, রমহীন পুরুষ্টু ঊরু যুগল দেখার প্রবল ইচ্ছে দমাতে পারে না। আর যদি সত্যি বস্ত্রহীন হয় তাহলে কথাই নেই, দুই বিউটিশিয়ানকে ঘর থেকে বের করে ঝাঁপিয়ে পরবে প্রেয়সীর ওপরে।

দরজায় আলতো টোকা মেরে দানা জিজ্ঞেস করে, "আসতে পারি কি?"

উত্তরের অপেক্ষা করে লাভ নেই, ঘরে শুধু মাত্র ওর প্রেয়সী ছাড়া আর কারুর পরিচর্যা হচ্ছে না। দরজা খুলে ঢুকতেই মহুয়াকে দেখে ওর মাথা গুলিয়ে যায়। সাদা নরম বিছানার ওপরে চিত হয়ে শুয়ে মহুয়া, একটা সাদা তোয়ালে দিয়ে বুক থেকে ঊরুসন্ধি পর্যন্ত মোরা, বাকি অঙ্গ অনাবৃত। চোখের ওপরে আবার শশা কেটে রাখা। একটি মেয়ে মহুয়ার মাথার কাছে বসে ওর হাত দুটি নিয়ে পরিচর্যা করতে ব্যাস্ত। নখের পরিচর্যা, নখ ঘষে রঙ লাগিয়ে দিচ্ছে। অন্য মেয়েটা পায়ের কাছে বসে পায়ের আঙ্গুলের পরিচর্যা করতে ব্যাস্ত। পায়ের আঙ্গুলের মাঝে আবার তুলো গোঁজা। বাপ রে, ওর সুন্দরী মহুয়াকে কি করেছে এই দুইজনে? মুখের ওপরে কি সব মাটি না কি প্রলেপ লাগিয়ে দিয়েছে, চুলেও কি সব মাখানো। সুন্দরী আর সুন্দরী নেই, পেত্নীর মতন দেখতে লাগছে মহুয়াকে।

দানা মিচকি হেসে বলে, "উফফ আর পারি না পাপড়ি। একদম শাকচুন্নির মতন দেখতে লাগছে তোমাকে।"

মহুয়া মুখ নাড়াতে পারে না, কিন্তু হাবভাব দেখে বোঝা যায় যে বেশ রেগে গেছে। চোখের ওপর থেকে শশা উঠিয়ে ওর দিকে কপট রাগত দৃষ্টি হেনে দরজা দেখিয়ে দেয়। দানা একপা একপা করে ওর দিকে এগিয়ে আসে। সুউন্নত স্তন যুগলের মাঝে বাঁধা তোয়ালের গিঁট কে ছাপিয়ে নিটোল স্তন জোড়া উচ্চ শৃঙ্গের মতন দাঁড়িয়ে। দানার হাত নিশপিশ করে ওঠে এখুনি ওই জোড়া নরম শৃঙ্গ হাতের মুঠোয় নিয়ে চটকাতে।

মহুয়ার শরীর কেঁপে ওঠে, এই শয়তানটা, এই মেয়েদের সামনেই না কিছু একটা করে বসে। বিশ্বাস নেই দানাকে, অন্তত এই ভালোবাসার দুষ্টুমিতে একদম বিশ্বাস নেই। যখন তখন শুরু করে দিতে পারে, রান্না ঘরে, বাথরুমে, সকালে চা খেতে খেতে।

অগত্যা মহুয়া চেঁচিয়ে ওঠে, "এক লাত্থি মারবো এইবারে কিন্তু। তুমি যাবে এইখান থেকে।"

ঠিক সেই সময়ে কাজের মেয়ে মণি এসে ওর হাতে ফোন ধরিয়ে বলে, "দাদাবাবু ফোন এসেছে।"
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply
চৌষট্টি ছক (#৭)


কি ব্যাপার এমন হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো মণি? কার ফোন? অনেকক্ষণ হয়ে গেছে মনা আর পিন্টু, রুহিকে নিয়ে বেড়িয়েছে। কিছু হলো না তো? তাহলে এই মহানগরের আর রক্ষে নেই, খোলা পিস্তল হাতে রাস্তায় নেমে পড়বে দানা।

ফোন দেখে স্বস্তি পায় দানা, নয়না ফোন করেছে, কিন্তু হঠাৎ? "হ্যালো, কি খবর?" দানা প্রশ্ন করে।

উত্তর আসে নয়নার, "কি করছ? খালি আছো না মিসেসের সাথে কিছু চলছে।" বলেই ফিকফিক করে হেসে ফেলে।

চোখের সামনে মহুয়ার শায়িত অর্ধনগ্ন দেহ পল্লব ওকে মাতাল করে তোলে। মিচকি হেসে উত্তর দেয়, "কিছু না বলো, কি হয়েছে।"

নয়না ওকে বলে, "একটু পরে আমার বাড়িতে আসতে পারবে। সন্ধ্যের পরে দিকে মোহনের সাথে দেখা করার ছিল।"

বুক ভরে শ্বাস নেয় দানা, নয়না যখন বাড়িতে ডেকেছে তাহলে ওর ওপরে নিশ্চয় সন্দেহ করেনি এখন। রমলা তাহলে নয়নাকে কিছুই বলেনি। কাউকে ওর অভিসন্ধির ব্যাপারে জানতে দেওয়া চলবে না। দানা উত্তর দেয়, "তুমি ঠিকানা বলো, আমি চলে যাবো।"

ফিকফিক করে হেসে নয়না বলে, "হ্যাঁ হ্যাঁ, বুঝতেই পারছি পাশে মিসেস আছে তাই না।"

দানা মিচকি হাসে, "তা আছে।"

নয়না বলে, "আরে না না সেরকম কিছু নয়। বুঝতেই পারছ এইসব আলোচনা শহরে থেকে করা যায় না। দূরে একটা গ্রামে, নদীর তীরে মোহনের একটা বাগান বাড়ি আছে সেখানে আলোচনা হবে। আমি বিমানকে বলে রেখেছি যে তুমি আমার সাথে আসবে।" গলা নামিয়ে কামুকী কণ্ঠে বলে, "আজ মিস্টার মন্ডলের গাড়িতে যেতে পারি কি?"

দানা বুঝতে পারে কোথায় ডাকা হয়েছে। যেখানে প্রতিবার সিমোনের সাথে সহবাস করত সেই দুর বাগান বাড়িতে ওদের আলোচনা সভা হবে। নয়না নিশ্চয় সিমোনের সম্বন্ধে অবগত নয় না হলে ওকে নিশ্চয় ইয়ার্কির ছলে কিছু একটা বলতো। বুক ভরে শ্বাস নেয় দানা, "ঠিক আছে সন্ধ্যে নাগাদ আমি তোমার বাড়িতে পৌঁছে যাবো।"

মহুয়া ওদের কথোপকথন শুনে জিজ্ঞেস করে, "কে ফোন করেছিল গো?"

দানা উত্তরে জানায়, নয়না ফোন করেছিল, বিমান চন্দ আর মোহন খৈতানের সাথে আলোচনা সভা আছে সন্ধ্যের পরে। ওর হয়তো আসতে অনেক রাত হয়ে যাবে। মহুয়াকে অভয় দিয়ে বলে, নয়না হাতের মুঠির মধ্যে সুতরাং ভয়ের কোন কারন নেই, বিমান ওর টিকি ছুঁতে পারবে না। এখন পর্যন্ত নয়না ওদের অভিসন্ধি আঁচ করতে পারেনি। ওর দেওয়া চাল মতন সবাই এগিয়ে চলেছে একপা একপা করে। চূড়ান্ত হামলা এখন বাকি। কাকে দিয়ে শুরু করা যায়? কঙ্কনা নাসরিনকে দিয়েই শুরু করতে চেয়েছিল কিন্তু ওদের আসার এখন অনেক দেরি। বিমান আর সিমোনকে দিয়েই খেলা শুরু করবে দানা। ধোপ দুরস্ত জামা কাপড় পরে তৈরি, মহুয়ার শখের দামী ছাই রঙের সুট পরে নেয়। কোমরে একটা পিস্তল গোঁজে অন্য পিস্তল পায়ের মোজাতে ছোট বেল্ট দিয়ে বেঁধে নেয়।

মহুয়া সাজ পরিচর্যা ছেড়ে খানিকের জন্য উঠে আসে। মুখে মাথায় তখন পর্যন্ত রঙ মাখানো। ছলছল চোখে ঠোঁট হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে ওকে বলে, "সাবধানে যাও জিত। বুকটা কেমন যেন করছে।" জড়িয়ে ধরতে যায় মহুয়াকে কিন্তু মানা করে দেয় প্রেয়সী, "না না, এই ফেস প্যাক আর রঙ তোমার সুটে লেগে যাবে।"

মহুয়ার হাত ধরে চুমু খেয়ে অভয় দিয়ে বলে, "কিছু হবে না, ওরা এখন পর্যন্ত কিছুই আঁচ পায়নি। আর হ্যাঁ আমি একবার মনা আর পিন্টুকে ফোন করে দিচ্ছি রুহিকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসবে।"

দানা বেড়িয়ে পড়ে নয়নার বাড়ির উদ্দেশ্যে। বের হওয়ার আগে মনা আর পিন্টুকে ফোন করে বাড়িতে ডেকে নেয়। নির্দেশ দেয় যতক্ষণ ও বাড়িতে না ফিরছে ততক্ষণ যেন বাড়িতেই থাকে। মনা আর পিন্টু কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়ি পৌঁছে যায়।

গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে নয়নার বাড়ির উদ্দেশ্যে। বুকের মাঝে চাপা টানটান উত্তেজনা, বিমান আর মোহনকে ওর চক্রান্তের বিষয়ে বেফাঁস কিছু বলা চলবে না, নয়নাকে ওর অভিসন্ধির সম্বন্ধে কিছু বুঝতে দেওয়া চলবে না।

অনেকদিন পরে এই বাড়িতে পা রাখতেই ওর মন চঞ্চল হয়ে ওঠে। সুন্দরী লাস্যময়ী অভিনেত্রীর কবলে প্রায় পড়েই গেছিল যদি না নয়না একটা ভুল চাল চালতো, ওই ইন্দ্রাণীর নাম না নিলে হয়তো ওর কথা মেনে বাপ্পা নস্করকে খুন করে দিত। তবে এখন ওর সামনে সব কিছু পরিস্কার, আগে মৈনাকের খুনের প্রতিশোধ, তারপরে নিজের খুনের প্রতিশোধ নেবেই।

কলিং বেল বাজাতেই কাজের মেয়ের স্থানে সুমিতা এসে দরজা খুলে দেয়। ছাই রঙের দামী সুট পরা দানাকে দেখে প্রায় চমকে ওঠে, একদম চেনা যাচ্ছে না যে এই দানা কয়েক মাস আগে ওদের গাড়ি চালাতো। দেখে মনে হয় বিশাল ক্ষমতাশালী এক ব্যাবসায়ী ওদের বাড়ির দরজায়। অদুরে নয়না বিস্ফোরিত নয়নে ওকে দেখে হেসে ফেলে। দানা বসার ঘরে ঢুকে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে, বিশেষ কিছুই বদলায়নি বাড়ির।

দানা জিজ্ঞেস করে, "তৈরি, যেতে পারি?"

নয়না একটা সাদা জিন্স আর একটা টকটকে লাল রঙের শার্ট পরেছে, ওপরে দুধ সাদা দামী ব্লেজার, গলায় একটা স্কার্ফ। অভিনেত্রী তাই সাজের বাহার আলাদা। নধর দেহের গড়ন অনেকটাই উপচে ফুটে উঠেছে চাপা পোশাকের ভেতর থেকে। নরম ঠিকরে বেড়িয়ে আসা পাছার খাঁজ দেখে দানার মন চঞ্চল হয়ে ওঠে। কতবার ওই নরম নিটোল পাছার খাঁজে কঠিন উত্তপ্ত লিঙ্গ ঘষে কামসুখ আস্বাদন করেছে দানা। উন্নত স্তন যুগল দেখে দুই হাত নিশপিশ করে, পারলে এখুনি স্তন জোড়া হাতের মুঠির মধ্যে নিয়ে চটকে পিষে দেয়। দানা মনে মনে হাসে, একা নিভৃতে নির্জন রাস্তায় আবার যদি হঠাৎ করে বুকের রক্ত চঞ্চল হয়ে ওঠে সেই পুরানো দিনের মতন তাহলে গাড়ির অবস্থা ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে। নয়নার পোশাক আশাক আর দেহের লাস্যময়ী কামুকতা ওকে হাতছানি দিয়ে বারেবারে ডাক দেয়। যদিও ওই ফাঁদে প্রথমেই পা দিতে নারাজ দানা তাও দেখা যাক এই পরিণতি কি হয়। মহুয়াকে একটা মেসেজ লিখে জানিয়ে দেয় ওরা যাত্রা শুরু করেছে।

দানার পাশে এসে দাঁড়িয়ে ওর হাত জড়িয়ে মিহি কণ্ঠে বলে, "আজকে তোমাকে দেখে সত্যি তোমার পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছে করছে। তোমাকে কি বলে ডাকবো ভেবে পাচ্ছি না, দানা না মিস্টার মণ্ডল?"

মনে মনে হাসে দানা, এই পোশাক আশাক বাহ্যিক আড়ম্বর দেখেই মানুষ চেনে মানুষে। খোলসের ভেতরে কি আছে সেটা দেখার প্রয়োজন কেউ মনে করে না। শুধু মাত্র ইন্দ্রাণী আর মহুয়া ওর অন্দর মহলে উঁকি দিয়েছিল তা ছাড়া আজ পর্যন্ত যত নারীর সংস্পর্শে এসেছে সবাই ওকে একটা খেলার পুতুল বলেই ভেবেছে। যখন ওর পকেটে টাকা ছিল না, পোশাকের ঠিক ঠিকানা ছিল না, চরিত্র গত দোষ থাকা সত্ত্বেও মহুয়া বুক ভরে ভালোবাসা দিয়েছে ওকে।

মৃদু হেসে নয়নাকে বলে, "আমি দুটোই।"

গাড়িতে উঠে নয়না ওকে জিজ্ঞেস করে, "আচ্ছা দানা, ষাট লাখ টাকার গাড়ি থাকতে, তুমি চল্লিশ লাখ টাকার গাড়ির ড্রাইভারি কেন করতে গেলে একবার বলতে পারো?"

দানা প্রশ্নের মোড় ঘুরিয়ে দেয়, "আজকে ভারী সুন্দর লাগছে তোমাকে।"

নয়না চোখ টিপে বলে, "কম হ্যান্ডসাম লাগছ না তুমি। সুটের রঙ কি মিসেসের পছন্দ?"

দানা মাথা দোলায়, "হ্যাঁ।"

নয়না বলে, "তোমার মিসেস যেমন সুন্দরী তেমনি মার্জিত সুন্দর রুচিবোধ আছে।"

গাড়ি কিছুক্ষণের মধ্যেই শহর ছাড়িয়ে বড় রাস্তা ধরে মাঠের মাঝ দিয়ে হুহু করে এগিয়ে চলে। চালকের আসনে দানা আর পাশে নয়না। অনেকক্ষণ দুইজনে পরস্পরকে শুধু মাত্র দেখে যায়, কিছু কথা নেই। দানা অঙ্ক কষতে ব্যাস্ত, কি ভাবছে নয়না? নিশ্চয় বাপ্পা নস্করকে খুন করার চক্রান্ত করছে। ওর মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে যায়, নয়নাকে আর বিমানকে হাতের মুঠোর মধ্যে করার জন্য ওর হাতে কোন ভুয়ো চক্রান্ত থাকা দরকার।

নয়নাকে জিজ্ঞেস করে, "কি এত ভাবছো দানা?"

দানা গাড়ি চালাতে চালাতে বলে, "না তেমন কিছু না। মোহন রাজি হবে তো, সেটাই একটু শঙ্কায় আছি।"

ওর হাতের ওপরে হাত রেখে বলে, "আমি ঠিক করিয়ে দেব চিন্তা করো না, দানা।"

কি করিয়ে দেবে? নয়না কি মোহনের সাথেও সহবাস করেছে? নিজের কাজ হাসিলের জন্য, করতেও পারে এই ধূর্ত কামুকী নারী। সন্ধ্যে অনেক আগেই নেমে গেছে। বিমানকে নয়না ফোনে জানিয়ে দেয় ওদের আসার কথা। বাড়ির সামনে গাড়ি দাঁড় করাতেই উর্দি পরা একজন লোহার দরজা খুলে দেয়। বাগান বাড়ির সামনের বাগানে একটা টেবিলের চারপাশে পাঁচখানা চেয়ার রাখা। বাগান আলোয় আলোকিত। রাজনৈতিক দল নেতা বিমান চন্দ, শিল্পপতি মোহন খৈতান আর তার সুন্দরী লাস্যময়ী স্ত্রী সিমোন খৈতান বসে। দামী কালো বি.এম.ডাবলু ঢুকতে দেখে একটু চমক খেয়ে যায় ওরা। নয়নাকে সাথে নিয়ে দানা গাড়ি থেকে নামে। বিস্ফোরিত চোখে দানাকে দেখে অবাক হয়ে যায় সিমোন। ক্ষণিকের জন্য চেহারা রক্ত শুন্য হয়ে যায়, যেন ভুত দেখেছে সামনে। সঙ্গে সঙ্গে অবস্থার সামাল দিয়ে দাঁড়িয়ে উঠে ওদের অভ্যর্থনা জানায়। এতদিন দানাকে খুব সাধারন মানুষ হিসাবেই গন্য করে এসেছিল সবাই, কিন্তু দামী সুট, কালো গাড়ি দেখে সেই সব কেটে যায়। দানা মনে মনে হেসে ফেলে, সত্যি এই জগতে বাঁচতে হলে অর্থ চাই, না হলে ক্ষমতা প্রতিপত্তি আসেনা, মানুষ মানুষকে চেনে না। প্রথম যেদিন বিমান দানাকে দেখেছিল সেদিন সামান্য একটা ড্রাইভার হিসাবে দেখেছিল, দ্বিতীয় বার সাক্ষাৎ এক ব্যাবসায়ী অতি সাধারন পোশাক, আর আজকের দানা একদম ভিন্ন। মোহন ওকে কি বলে সম্বোধন করবে ভেবে পায় না। আময়িক হেসে হাত বাড়িয়ে দেয় ওর দিকে।

নয়না ওদের চেহারার ভাব্ব্যাক্তি দেখে মনের কথা বুঝে বলে, "মিস্টার মন্ডলের সাথে কি এই বাগানে বসেই আলোচনা করা হবে?"

বিমান মৃদু হেসে মাথা দোলায়, "অসুবিধে থাকলে ভেতরে যাওয়া যেতে পারে।"

দানা অল্প হেসে বলে, "না না, এখানে বসতে আপত্তি নেই। নদীর হাওয়া বেশ ভালোই লাগছে।"

দানা এতক্ষণ সিমোনকে তীক্ষ্ণ চোখে জরিপ করে যাচ্ছিল। এই ভাবে দানাকে দেখতে পাবে হয়তো আশা করেনি, না অন্য কিছু। রক্ত শুন্য চেহারায় কোনোরকমে হাসি টেনে আনে সিমোন। মোহন নিজের স্ত্রীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। সিমোনের চোখে চোখ রেখে হাত বাড়িয়ে দেয় দানা। ওই কঠিন হাতের পরশ সিমোনের অজানা নয়, তাই হাত মেলাতে দ্বিধা বোধ করে সিমোন। হাত জোর করে ছোট্ট নমস্কার করে। দানা চোয়াল শক্ত করে মৃদু হাসে।

মোহন জিজ্ঞেস করে, "স্কচ নেবেন না ভদকা?"

দানা চেয়ারে বসে পাশের বেয়ারাকে বলে, "স্কচ অন রক্স।"

বেয়ারা মাংসের চপ কাটলেট আরও অনেক কিছু খাদ্য দ্রব্যের সাথে মদের গেলাস দিয়ে যায়। সিমোনের আশ্চর্য ভাব তখন ঠিক ভাবে কাটেনি আর সেটা নয়নার চোখ এড়ায় না। দানাকে একটু ঠেলে ইশারায় জিজ্ঞেস করে কি ব্যাপার। দানা মিচকি হেসে বলে ওর আশ্চর্য চকিত নয়নের ভাষার উৎস সম্পর্কে কোন ধারনা নেই
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply
কেনা বেচা নিয়ে আলোচনার শুরু মোহন করে, "মিস্টার মন্ডল। আপনি প্রায় পনেরোটা প্রকল্প একসাথে হাত দিয়েছেন তাই তো?"

দানা মৃদু হেসে মাথা দোলায়, "হ্যাঁ।"

মোহন জিজ্ঞেস করে, "কত টাকা বিনিয়োগ করেছেন?"

দানা উত্তর দেয়, "আড়াইশো কোটি টাকা।"

মোহন প্রশ্ন করে, "কি রকম অংশের শরিকানা আছে এই প্রকল্প গুলোতে?"

দানা উত্তর দেয়, "কোনটায় সত্তর তিরিশ, কোনটায় ষাট চল্লিশ। এইরকম ভাবেই আছে সব কয়টাতে।"

মোহন কিছুক্ষণ থেমে জিজ্ঞেস করে, "আমার কাছ থেকে কত চান সেটা বল।"

মদের গেলাসে চুমুক দিয়ে চোখে চোখ রেখে দানা উত্তর দেয়, "একশো শতাংশ চাই মিস্টার খৈতান।"

বিমান, সিমোন আর মোহন আঁতকে ওঠে, ছেলেটা বলে কি? মোহন হেসে ফেলে ওর কথা শুনে, "আপনার মাথা খারাপ হয়েছে নাকি মিস্টার মন্ডল। আমাদের সাথে আপনি মস্করা করতে এসেছেন নাকি?"

দানা বাঁকা হেসে বলে, "আপনার পথের কাঁটা বাপ্পা নস্কর, ভালো ভাবেই জানে আপনি আর বিমান চন্দ বাল্যবন্ধু। সুতরাং যতক্ষণ না বাপ্পা নস্কর বিশ্বাস করছে যে আমি আপনাদের সব কিছু হাতিয়ে নিয়েছি ততক্ষণ বাপ্পা নস্কর আমাকে কাজে নামতে দেবে না।"

বিমান চিবিয়ে চিবিয়ে দানাকে বলে, "তুমি বড় ধূর্ত, এইরকম চাল চালবে ভেবে পাইনি।"

দানা বাঁকা হেসে গম্ভীর কণ্ঠে উত্তর দেয়, "আপনার সামনে আমার প্রস্তাব রাখলাম ভেবে দেখবেন কি করতে চান। সম্পূর্ণ প্রকল্প হাতে না আসলে আমি কাজ করবো না।"

নয়নার দিকে তাকিয়ে বলে, "তুমি কি আমার সাথেই বাড়ি ফিরতে চাও না অন্য কেউ তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসবে?"

এত তাড়াতাড়ি দানা নিজের পক্ষে অটল হয়ে যাবে সেটা বিমান অথবা মোহন চিন্তা করতে পারেনি। ভেবেছিল একটু দর কষাকষি চলবে দানার সাথে, কিন্তু দানা যে প্রস্থান করতে উদ্যত। নয়না দেখলো এতে হিতে বিপরিত হতে চলেছে, দানাকে হাতে না রাখলে ওদের চক্রান্ত সফল হবে না কিছুতেই।

দানার হাত ধরে বসিয়ে বিমানকে বলে, "তুমি কি চাও দানা এখান থেকে চলে যাক? ও চলে গেলে তোমার পরের নির্বাচনে জেতার আশা ভরসা সব ওর সাথে এই গেট থেকে বেড়িয়ে যাবে।" মোহন আর সিমোনের দিকে তাকিয়ে বলে, "গত এক বছর ধরে আপনাদের প্রকল্প শুধু মাত্র ভিত দাঁড় করিয়ে আছে, আগামী পাঁচ বছর ওই ভিতে শ্যাওলা পড়ুক এই চান?"

বিমান বাঁকা হেসে দানাকে প্রশ্ন করে, "তুমি ঠিক কোন পক্ষের মিস্টার মণ্ডল? বাপ্পা নস্করের না আমাদের?"

দানা চোরা হেসে নয়নার দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়, "আমি আপনাদের মধ্যে কারুর পক্ষের নয় বিমান বাবু। আমি নয়নার পক্ষের।"

দানা ভালো ভাবেই জানে নয়নাকে মাথায় করে রাখলে এই ব্যাবসায়িক লেনদেন ঠিক ওর ঝুলিতে এনে ফেলবেই।







চৌষট্টি ছক (#০৮)

নয়নাকে বড় করে দেখাতেই বেশ খুশি হয়ে যায় তাই মোহনের দিকে তাকিয়ে বলে, "আপনি কি চান মিস্টার খৈতান? এই চাল কিন্তু আমাদের চক্রান্তের একটা খুব বড় অঙ্গ। যতক্ষণ না বাপ্পা নস্কর বিশ্বাস করছে যে দানা আমাদের বাগে ফেলেছে ততক্ষণ ও শান্তি পাবে না। যে মুহূর্তে ও বাপ্পা নস্করের অতি বিশ্বাসী হয়ে উঠবে ঠিক সেই মুহূর্তে আমরা চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেব।"

বিমান আর মোহন পরস্পরের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। দানা শ্বাস রুদ্ধ করে হাত মুঠি করে বসে থাকে। চাপা উৎকণ্ঠায় হৃদপিণ্ড ফেটে যাওয়ার যোগাড়।

সিমোন শেষ পর্যন্ত মুখ খোলে, "মিস্টার মন্ডলের শর্ত মানতে রাজি আছি তবে হ্যাঁ, তিনখানা ছোট প্রকল্প আছে সেইগুলো সব কুড়ি আশি করে দেওয়া হবে আর দুটো বড় আবাসন প্রকল্প আর একটা হোটেল প্রকল্প আছে সেই গুলো পঁয়তাল্লিশ পঞ্চান্ন করতে হবে। আপনি একটু ঝুঁকুন আমরাও একটু ঝুঁকি, ব্যাবসার তাই নিয়ম তাই না মিস্টার মন্ডল।"

সিমোনের ঠোঁটে মিস্টার মন্ডল শুনে দানা মনে মনে যারপরনাই আনন্দিত। একসময়ে এই নারী ওকে শুধু মাত্র পুরুষ বেশ্যা ভেবে যথেচ্ছ ভাবে সহবাসের পুতুল বানিয়েছিল আর আজকে দামী গাড়ি, দামী সুট পরা দেখে এক সন্মান দিয়ে সম্বোধন করছে।

দানা নিজের কথায় অটল থাকে, "আমি আড়াইশো কোটি টাকা নিয়ে ভালো আছি মিসেস খৈতান। বাপ্পা নস্কর পরের পাঁচ বছর থাকলে অচিরে ওই আড়াইশো কোটি টাকাকে এক হাজার কোটি টাকা করে নেব। বাকিটা আপনাদের হাতে ছেড়ে দিলাম আমি।"

নয়না বিমানের দিকে তাকিয়ে রাগত কণ্ঠে ফিসফিস করে বলে, "কতবার তোমাকে এক কথা বুঝাতে হবে?"

নয়নার হাতে আলতো চাপ দিয়ে শান্ত করিয়ে মোহনকে বলে বিমান, "দ্যাখ মনু, নয়নার বিশ্বাসী মানে বুঝতেই পারছিস তুই।"

সিমোনের ঠোঁটে বাঁকা হাসি খেলে যায় সেই সাথে দানার ঠোঁটেও বাঁকা হাসি খেলে যায়। বিমান বলে চলে, "তিনটে আবাসনের প্রকল্প আগে ওর নামে করে দে, বাকি গুলো না হয় পরে দেখা যাবে।" দানার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "খুশি মিস্টার মন্ডল?"

চেয়ারে হেলান দিয়ে পায়ের ওপরে পা তুলে ওদের দিকে তাকিয়ে বলে, "খুশি আমি আগেও ছিলাম এখন আছি। দরকার আমার নয় বিমান বাবু, দরকার আপনার। আমি আমার পক্ষ রেখেছি কিন্তু সুতরাং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আপনার হাতে।"

সিমোনে কিছুক্ষণ ভেবে বলে, "ঠিক আছে মিস্টার মন্ডল, পরশু দিনের মধ্যে কাগজ পত্র নিয়ে আমার উকিল আর সি এ আপনার অফিসে চলে আসবে। তিনখানা আবাসন প্রকল্প সম্পূর্ণ আপনার। বড় মাপের প্রকল্প গুলো পরে বিচার বিবেচনা করা যাবে।"

সিমোনে খৈতান, বিমান চন্দ এদের সবাইকে ধূলিসাৎ করতে চায় দানা। শুধু মাত্র কুড়ি কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে মাছি মেরে হাত গন্ধ করতে নারাজ। চোয়াল চেপে মৃদু হেসে সিমোনের দিকে তাকিয়ে বলে, "পনেরো কুড়ি কোটি টাকা দিয়ে মাছি মেরে হাত গন্ধ করতে রাজি নই মিসেস খৈতান। আপনার কাছে এক সপ্তাহ সময় আছে। দুই সপ্তাহ পরে বাপ্পা নস্করের নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু হবে। আমাকে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা দিতে হবে বাপ্পাকে। একবার ওই টাকা যদি আমি বাপ্পার খাতায় ঢালি তাহলে বুঝতেই পারছেন, পরের পাঁচ বছরে ওই টাকার বিশ গুন আমি উশুল করব।"

বিমান সিমোনে আর মোহন সবাই ভাবনায় পরে যায়। নয়না চুপচাপ বসে ওদের দেখে আর হাসে। দানা মনে মনে উৎফুল্ল, এইবারে সঠিক জায়গায় ঘা মেরেছে। এতে কাজ না হলে পরবর্তী পদক্ষেপের কথা ভাবা যাবে। মোহন আর বিমান ফিসফিস করে বেশ কিছুক্ষণ আলোচনা করে, কি করা যায়, দানা যে অটল।

শেষ পর্যন্ত মোহন মুখ খোলে, "আপনাকে কতটা বিশ্বাস করা যায়, মিস্টার মন্ডল?"

ওই কথা শুনে নয়না ঝাঁঝিয়ে ওঠে, "বিশ্বাস অবিশ্বাসের কথা কোথা থেকে আসছে এইখানে মিস্টার খৈতান?" বিমানের দিকে অভিমানী চাহনি দিয়ে বলে, "এখন ওকে বিশ্বাস করতে পারছ না? এতদিনে তোমাকে ছিন্নমূল করে ছেড়ে দিত বাপ্পা নস্কর বুঝলে।"

বিমান মৃদু হেসে মাথা চুলকিয়ে মোহনকে বলে, "নারে মনু, আর কিছু না হোক মিস্টার মন্ডলকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায়। তোকে পরে বিস্তারে জানাবো সেই সব।" তারপরে দানার দিকে হাত বাড়িয়ে বলে, "পরশু দিনের মধ্যে উকিল আর সি এ তোমার অফিসে সব কাগজ পত্র নিয়ে পৌঁছে যাবে।"

দানা ওদের বলে, "একটা কথা আছে, ওই কাগজে এটা যেন লিখতে ভুলবেন না যে দুশো কোটি টাকার বিনিময়ে আমি আপনার কাছ থেকে এই প্রকল্প গুলো কিনে নিয়েছি। বুঝতেই পারছেন, আয়কর বিভাগ এটা কিছুতেই মানতে চাইবে না যে আপনি আমাকে বিনা পয়সায় এত গুলো প্রকল্প এমনি এমনি দিয়ে দিয়েছেন। আয়কর ইত্যাদির চোখে ধুলো দিতে হলে এমন কিছু একটা করতে হবে।"

মোহন হেসে ফেলে, "খেঁকশিয়ালের মাথা আপনার মিস্টার মন্ডল। আচ্ছা তাই হবে কিন্তু দুশো কোটির বদলে দশ কোটি অন্তত আমি পেতে পারি।"

দানা হেসে বলে, "দশ কোটি কেন মিস্টার খৈতান, একবার বাপ্পা নস্কর সরে যাক। দুশো কোটির জায়গায় দুই হাজার কোটি আমাদের হাতে আসবে, অর্ধেক আপনার অর্ধেক আমার। আপনি প্রকল্প আমার হাতে দিয়ে খালাস। আসল কাজ আসল টাকা আমাকেই খাটাতে হবে তাই না?"

মোহন স্মিত হেসে মাথা দোলায়, "হ্যাঁ।" দানা, বিমান আর মোহনের সাথে হাত মেলায়।

সিমোনে আর দানার চোখে চোখে কথা হয়, "তুমি কে দানা?" চোখের উত্তরে দানা বলে, "পরে বলবো।" সিমোনে জিজ্ঞেস করে, "খুব ধূর্ত।" দানা উত্তর দেয়, "তুমি কম নও।"

সিমোনে মৃদু হেসে নয়নাকে বলে, "মিস্টার মন্ডলের সাথে তোমার বেশ খাতির আছে মনে হচ্ছে?"

দানার পাশ ঘেঁসে বসে নয়না উত্তর দেয়, "সে রকম কিছু নয় তবে একটু চেনাজানা আছে এই ব্যাস।" দানার কাঁধে আলতো চাপ দিয়ে বলে, "তাই না মিস্টার মণ্ডল?"

বুক ভরে ঠাণ্ডা নদীর বাতাস নেয় দানা। চূড়ান্ত আঘাত হানার আগের মুহূর্ত, কবে এদের বাগে ফেলতে পারবে আর সঙ্গীতার চোখের জলের প্রতিশোধ নিতে পারবে সেই প্রহর গোনে। রমলা আর নয়না যখন মৈনাককে খুন করেনি তখন নির্ঘাত বিমান চন্দ আর সিমোনে খৈতান ওকে খুন করেছে। সঙ্গীতাকে খুন করতে চেয়েছিল কিন্তু ওর প্রেমিক বেঘোরে প্রান হারায়। মেয়েটার চোখের জল এখন শুকায়নি ঠিক ভাবে। বিমান বন্দরে দেখা পর্যন্ত করতে যেতে পারেনি পাছে ওদের একসাথে কেউ দেখে ফেলে। চোয়াল চেপে, সামনে বসা সবার দিকে রক্ত চক্ষু হেনে তাকিয়ে থাকে দানা। নয়নাকে ছেড়ে দেবে না দুটো কারনে, ইন্দ্রাণীর নাম নিয়ে হুমকি দিয়েছে আর সঙ্গীতাকে ;., করাতে চেয়েছে।

ওকে হারিয়ে যেতে দেখে নয়না আলতো ধাক্কা মেরে জিজ্ঞেস করে, "কি হলো, কোথায় হারিয়ে গেলে? মিসেসের কথা মনে পড়লো, না মেয়ের কথা?"

সিমোন অবাক হয়ে দানাকে জিজ্ঞেস করে, "আপনার মেয়ে আছে?"

ওর হয়ে নয়না হেসে উত্তর দেয়, "হ্যাঁ, একদম ফুলের মতন সুন্দরী ছোট্ট পরী, রুহি।"

কাজ শেষ, বুকের ভেতরে এক বিজয়ীর জোয়ার ওঠে দানার। হাতের নাগালের মধ্যে সব শত্রু, শুধু মাত্র যদি কেউ ওকে এইখানে আসতে না দেখতো তাহলে সবাইকে এইখানে খুন করে চলে যেত দানা। না, নিজের হাতে রক্ত মাখাতে চায় না দানা, ছোট্ট রুহির কি হবে? ওর "ডাডা" একজন খুনি? ওর সুন্দরী প্রেয়সীর চোখের জল কে মুছাবে? দানা ঘড়ির দিকে তাকায়, দীর্ঘ আলোচনা পর্ব শেষ হতে হতে রাত দশটা বেজে যায়। ওইদিকে বেয়ারারা আবার রাতের খাবারের প্রস্তুতি নিচ্ছে। একবার মহুয়াকে ফোন করতে হবে, এতখনে নিশ্চয় চাপা উত্তেজনায় বিনিদ্র রজনী কাটাচ্ছে। বিমান আর মোহন কিছু শলা পরামর্শ করার জন্য, মদের গেলাস হাতে নিয়ে উঠে চলে যায়। নয়না আর সিমোন গল্পে ব্যাস্ত হয়ে পরে।

এর মাঝে দানা মহুয়াকে ফোন করে, "কি গো ঘুমালে নাকি?"

দানার কণ্ঠ স্বর শুনে স্বস্তি পায় মহুয়া, বুকের মাঝে বাঁধা রুদ্ধশ্বাস ছেড়ে বলে, "তুমি যেখানে গেছ সেখান থেকে না ফেরা পর্যন্ত আমি ঘুমাতে পারি? কি হল? সব ঠিক ঠাক না গোলমাল?"

দানা মৃদু হেসে বলে, "সব জালে।"

মহুয়া হেসে বলে, "এই না হলে আমার জিত।" বলেই ফোনে একটা দীর্ঘ চুম্বন একে দেয়। "তাড়াতাড়ি বাড়ি আসো। রাত দশ’টা বাজে।"

দানা জানায় এখন রাতের খাবার বাকি তারপরে বাড়ির পথ ধরবে।

সেই শুনে মহুয়া ওকে উত্যক্ত করার জন্য বলে, "হ্যাঁ হ্যাঁ, জানি জানি। নয়নাকে সঙ্গে নিয়ে গেছ। তুমি এক বাঘ আর ও এক বাঘিনী।" দুষ্টুমির হাসি দিয়ে বলে, "দেখো বাবা তোমরা মারামারি খামচা খামচি কর তাতে আসে যায় না তবে আমার গাড়ির যেন কিছু না হয়। গত সপ্তাহে কিন্তু সার্ভিসিং আর ড্রাই ওয়াশ করিয়েছি। যা করার ফাঁকা মাঠে সেরে আসবে।"

দানাও ওকে ক্ষেপানোর জন্য বলে, "নয়নাকে আজকে একদম ফুলটুসি মাল দেখাচ্ছে, ভাবছি ফাঁকা রাস্তায় একটু চটকে আদর করবো।"

মহুয়া রেগে কাঁই, "যদি গায়ে মেয়ের গন্ধ পাই তাহলে ছাল ছাড়িয়ে নুন মাখিয়ে চিবিয়ে খাবো কিন্তু।"

দানা হেসে জিজ্ঞেস করে, "কি খাবে শসা? সবুজ না গাঢ় বাদামী।"

দানার কথার অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝতে মহুয়ার একবিন্দু কষ্ট হয় না, কপট অভিমানী কণ্ঠে বলে, "আমি আজকে এত কষ্ট করে পরিচর্যা করলাম আর তুমি..... রাতে কিন্তু গেস্ট রুমে শুতে হবে জেনে রেখো।"

ওকে শান্ত করিয়ে বলে, "আচ্ছা বাবা আচ্ছা, নয়নাকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়েই তোমার কোলে ঝাঁপ দেব। রুহি কি করছে?"

রুহিকে ফোন ধরিয়ে দেয় মহুয়া। আদো আদো কণ্ঠে কিছুক্ষণ ডাডা আর রুহির বার্তালাপ হয়। অনেক পুতুল কিনেছে, "আইকিম" খেয়েছে, "আন্তেলের" সাথে নাচানাচি করেছে।

মহুয়া সাবধানে বাড়ি ফিরতে বলে। দানা ঘড়ির দিকে তাকায়, বাড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত একটা বেজে যাবে। এতটা পথ গাড়ি চালিয়ে ক্লান্তি বোধ করবে কিন্তু একবার মহুয়ার মিষ্টি চুমু পেলেই সব ক্লান্তি ভুলে মেতে উঠতে পারে। একটা সিগারেট জ্বালিয়ে বাকি সবার দিকে দেখে, কোথায় কে কি করছে। চোখের সামনে চার বিপক্ষকে একসাথে দেখে বেশ খুশি, সবাইকে মোটামুটি নিজের ফাঁসে আটকাতে পেরেছে। এইবারে জাল গুটিয়ে আনা বাকি। কিছুদিনের মধ্যে জাল গুটাতে শুরু করতে হবে। প্রথমে সিমোনে আর বিমান চন্দ, তারপরে নয়না।
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply
সিমোনকে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে দানা সতর্ক হয়ে যায়, নিশ্চয় অনেক কিছু জিজ্ঞেস করবে। পুরুষ বেশ্যা দানা কি ভাবে কোটিপতি ব্যাবসায়ি মিস্টার বিশ্বজিৎ মণ্ডল হয়ে উঠল। হাতের মদের গেলাস অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। নয়না অন্য দিকে চলে গেছে, বিমান আর মোহন তখন পর্যন্ত গুঢ় আলোচনায় ব্যাস্ত।


সিমোনের চোখে চোখ রেখে দানা এগিয়ে যায়। স্মিত হেসে হাত বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, "তুমি কেমন আছো?"

সিমোন দানাকে আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করে জিজ্ঞেস করে, "তুমি এখন এই শহরে আছো?"

প্রশ্ন শুনে দানা অবাক হয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে, "কেন আমি কোথায় যাবো?"

সিমোনে ভুরু কুঁচকে কিছু একটা ভেবে বলে, "না মানে, আমি যতদূর জানতাম তুমি শহর ছেড়ে চলে গেছ।"

দানার মাথার শিরা ওকে জানিয়ে দেয়, নিশ্চয় কঙ্কনা আর নাসরিন ওর ওপরে নজর রেখেছিল। কালী পাড়ার বস্তি কাউকে না বলেই ছেড়ে চলে গেছিল বেশ কয়েক মাসের জন্য। নিশ্চয় তার মাঝে কঙ্কনা আর নাসরিন ওর খোঁজ নিতে বস্তিতে লোক পাঠিয়েছিল। ওকে খুঁজে না পেয়ে নিশ্চিন্ত হয় কঙ্কনা আর নাসরিন, সেই খবর সিমোনেকে দেয়। কঙ্কনা আর নাসরিনের সাথে সিমোনে, রমলা, রাগিণী, নীলাঞ্জনা এমন অনেক ক্ষমতাশালী নারীদের যোগাযোগ রয়েছে সেটা দানা আগে থেকেই জানে। সিমোনকে চেপে ধরলে নিশ্চয় কঙ্কনার খবর পাওয়া যাবে সেটা আর বুঝতে বাকি থাকে না। কিন্তু এখুনি সিমোনকে চাপ সৃষ্টি করা মস্ত বড় ভুল। হাতের থেকে পাখী ফস্কে উড়ে চলে যেতে বাধ্য। আরো একটু রয়েসয়ে চাল খেলতে হবে ওকে।

দানা বাঁকা হেসে উত্তর দেয়, "তাই নাকি? না না, আমি এই মহানগরে ছিলাম।"

সিমোন আমতা আমতা করে বলে, "না মানে উড়ো খবর তাহলে। কিন্তু তোমাকে এই রূপে দেখতে পাবো আশা করিনি।"

দানা ভালো ভাবেই জানে এই রূপ অনেকের আশাতীত। শুধু মাত্র প্রেয়সীর জন্য এটা সম্ভব না হলে দানা হয়ত ভেসে যেত। কোনোদিন প্রতিশোধ নেওয়ার চিন্তা করত না। দানা একটা বেয়ারাকে ডেকে এক গেলাস মদ আনিয়ে নেয়। মদের গেলাসে চুমুক দিয়ে সিমোনের চোখে চোখ রেখে বলে, "এখন দেখতে পেলে। আরো বলো কি চলছে?"

সিমোন হেসে বলে, "তুমি প্রচন্ড কানিং (খুব ধূর্ত) তাই না? একদিকে বাপ্পা নস্করকে খেলাচ্ছো অন্যদিকে বিমানকে খেলাচ্ছো?"

দানার মাথা সঙ্গে সঙ্গে গরম হয়ে যায়, কিন্তু মেপে উত্তর না দিলে সিমোন ওর চাল বুঝতে পেরে যাবে। এখুনি কারুর সন্দেহ ভাজন হতে চায় না দানা। মিচকি হেসে নয়নার দিকে ইশারা করে বলে, "আমি না বাপ্পা নস্করের দলের, না বিমান চন্দের দলের। আমি নয়নার পক্ষের।"

চোখ পাকিয়ে চটুল হাসি দিয়ে বলে, "আচ্ছা তাই নাকি?" গলা নামিয়ে ফিসফিস করে বলে, "সাবধানে থেকো ওর কাছ থেকে। ও কিন্তু বিমানকেও খেলায়।"

দানা জানে তাও না জানার ভান করে বলে, "আচ্ছা তাই নাকি? এইবারে তাহলে তোমার কাছে শলা পরামর্শ নিতে আসবো।"

সিমোন হেসে বলে, "ঠিক আছে, আগে এই ব্যাবসায়ী লেনদেন হয়ে যাক। একদিন না হয় হারিয়ে যাওয়া দিন গুলো খোঁজা যাবে আর শলা পরামর্শ করা যাবে।"

দানা মিচকি হেসে বলে, "তোমার খাই খাই ভাব এখন সেই রকম আছে না একটু বেড়েছে?"

সিমোন কামুকী হাসি দিয়ে বলে, "তুমি নেই, কঙ্কনা নাসরিন চলে গেছে। খুঁজতে একটু অসুবিধে হয় তবে পেয়ে যাই।"

হুম, তাহলে রমলা সঠিক খবর দিয়েছিল। সিমোন মুখ ফসকে সেই কথা দানাকে জানিয়ে দিল শেষ পর্যন্ত। আর সঙ্গে সঙ্গে দানা কথার প্রেক্ষিতে প্রশ্ন করে, "তুমি কি জানো কঙ্কনা আর নাসরিন কোথায়?"

মুখ ফসকে ওদের নাম নিয়ে নেওয়াতে বেশ বিবৃত বোধ করে সিমোন। কিন্তু মুখের কথা হাতের ঢিল ছুঁড়লে পরে বড় মুশকিল। নিজে থেকে ফাঁদে পা দিয়েছে এইবারে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ছাড়া গতি নেই। ওর চোখে চোখ রেখে উত্তর দেয়, "না সঠিক জানা নেই, তবে যতদূর আমি জানি ওরা আর এই শহরে নেই।" কথায় কথা বাড়ে তাই সিমোন আর কথা না বাড়িয়ে দানাকে বলে, "চল ডিনার সেরে ফেলি। তুমি আবার নয়নাকে নিয়ে ফিরবে তাই তো?"

দানা মাথা দোলায়, "হ্যাঁ। তোমরা কি আজ রাতে এইখানে কাটাবে?"

সিমোন ফিক করে হেসে ফেলে, "ওই দুই বুড়ো মদ্দ আর মদ। হ্যাঁ আজ রাতে এইখানেই কাটাবো আমরা।"

রাতের খাবার দাবার শেষ হল আরও বেশ কিছু ব্যাবসায়িক আলোচনায়। মোহন চায় যত তাড়াতাড়ি এই প্রকল্প গুলোতে কাজ শুরু করতে। দানা জানিয়ে দেয়, কাগজ হাতে আসার পর দিন থেকেই কাজ শুরু হয়ে যাবে। একবার বাপ্পা নস্কর সরে যাওয়ার পরেই নিজের অংশ কেটে বাকি সব কিছু মোহনকে ফিরিয়ে দেবে। মনে মনে দানা জানে, একবার হাতের মুঠিতে এলে আগে এদের সবাইকে পিষে ধরবে তারপরে যা করার করবে। কাউকে এখুনি প্রানে মারার পরিকল্পনা ওর নেই। তবে সময় হলে চারজনকেই চির নিদ্রায় শুইয়ে দেবে। বাপ্পা নস্করকে খেপিয়ে লাভ নেই, অন্তত বাপ্পা নস্কর ওর কোন ক্ষতি করেনি।

বাড়ি ফেরার সারা পথ, নয়নার হাবিজাবি গল্পে কেটে যায়। কিছু কথা কানে ঢোকে কিছু ঢোকে না, ইচ্ছে করেই ঢুকায় না দানা। আর ওই ফাঁদে পা দিতে রাজি নয়। দানা ওকে বিশ্বাস করে সেটা জেনে নয়না ভারী উৎসাহিত। গাড়ি মধ্যেই গলা জড়িয়ে বেশ কয়েকটা চুমু খেয়ে নেয়। দানার সেদিকে বিশেষ ভ্রূক্ষেপ নেই, আগের দানা আর এই দানা অনেক আলাদা। সেটা কিছুক্ষণের মধ্যে ওর শান্ত রূপ দেখে টের পেয়ে যায় নয়না।

গাড়ি থেকে নামার আগে ওর হাত ধরে বলে, "এই দানা, একদিন মিসেস আর মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে এসো।"

দানা মৃদু হেসে বিদায় জানিয়ে বলে, "মিসেস মাঝে মাঝেই তোমার কথা বলে, নিশ্চয় আসবো।"

[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply
চৌষট্টি ছক (#৯)

বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়, প্রায় একটা। ততক্ষণে রুহি ঘুমিয়ে পড়েছে কিন্তু মহুয়ার চোখে কি আর ঘুম আসে? যতক্ষণ না দানা বাড়ি পৌঁছায় ততক্ষণ চোখের পাতা এক করতে পারে না কিছুতেই। বারেবারে বারান্দায় ঘর বাহির করে, কোথায় গেল এতরাতে? নয়নার বাড়ি থেকে এইখানে আসতে কি এত সময় লাগে নাকি? কলিং বেলের আওয়াজ শুনেই দৌড়ে যায়। হাসি হাসি মুখ করে দানা ঘরের মধ্যে ঢোকে। ঢুকেই মহুয়াকে আস্টেপিস্টে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে, মনে হয় যেন এক পক্ষ কাল পরে দুইজনে পরস্পরের সাথে দেখা করছে।

মহুয়া অভিমানী কণ্ঠে বলে, "এত রাত হল কেন তোমার?"

দানা কালিঝুলি মাখা হাত দেখিয়ে বলে, "আর বলো না, শালা এই একটু আগে গাড়ির টায়ার পাঞ্চার হয়ে গেল সেই ঠিক করতে শালা আরও আধা ঘন্টা বেড়িয়ে গেল।"

উৎকণ্ঠায় মহুয়ার বুক তখন কাঁপছিল, "কি হল তোমাদের আলোচনা? সিমোনে তোমাকে দেখে কি প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করল?" চোখ টিপে স্মিত হেসে বলে, "বাপরে নিশ্চয় চাঁদের হাট বসেছিল ওইখানে, হ্যাঁ? একপাশে নয়না অন্যপাশে সিমোন। কার সাথে কি কি করলে?"

দানা ওকে জড়িয়ে ধরে প্রবোধ দেয়, "আরে সিমোন আমাকে দেখে ভুত দেখার মতন চমকে উঠেছে। ভাবেনি আমি বেঁচে আছি।" তারপরে এক এক করে সবকিছু বলে মহুয়াকে।

শুনতে শুনতে চাপা উত্তেজনায় মাঝে মাঝে প্রশ্ন করে, "আচ্ছা ওরা কিছু টের পেয়ে যায়নি ত?"

দানা হেসে বলে, "কি যে বলো না তুমি? নয়নাকে একটু তুলে দিলাম ব্যাস। বিমান ওর গুদের মধ্যে বাসা বেঁধেছে। নয়নার কথা কি আর ফেলতে পারে বিমান। ঠিক সব কিছু হাতিয়ে নিল খানকী আর সোজা আমার পাতে দিয়ে দিল।"

মহুয়াকে কোলে তুলে দানা সোজা ওদের মিলনের ঘরে ঢুকে পড়ে। শরীর পরিচর্যা করে যেন শতগুন সুন্দরী হয়ে উঠেছে প্রেয়সী। টানা টানা ভুরু, রেশমি কালো ঘন চুল, শরীর থেকে মাদকতাময় আঘ্রান, দানা মাতাল। ঠিক ভাবে হাত মুখ ধোয়ার আগেই মহুয়াকে বিছানায় ফেলে ছিন্নভিন্ন করে দেয়। প্রেমিকের অধর সুধা আর হাতের পেষণে মহুয়া কামার্ত হয়ে ওঠে। পোশাক পরিত্যাগ করে ভালোবাসার খেলা শুরু করতে বেশি সময় লাগে না ওদের। বারেবারে দানা মহুয়াকে চরম সুখের শৃঙ্গে তুলে নিয়ে যায় আর এক আছাড় মারে। প্রেমে কাতর মহুয়া নিজেকে দানার দেহের সাথে বিলীন করে দেয়। একবার নিজে ওর ওপরে উঠে যায়, কখন ওর কোলে বসে ঊরুসন্ধির সাথে ঊরুসন্ধি ঘষে দামাল কাম রতিতে মগ্ন হয়। দুই কাম ক্ষুধার্ত কপোত কপোতী চরমে উঠে একে ওপরকে পিষে ধরে সুখের সাগরে ডুব দেয়।

পরের দিন থেকে আবার কাজ শুরু, অধীর প্রতীক্ষা, কবে মোহনের উকিল আর সি.এ. কাগজ নিয়ে আসবে। বাপ্পা নস্করের কাছে সব কিছু খুলে বলার পরে বাপ্পা আরো বেশি খুশি। এইবারে ওর বিরোধী পক্ষ একেবারে জালে ফেঁসে গেছে। দানা বাপ্পা নস্করের বিশ্বাসভাজন মানুষ হয়ে ওঠে। আজকাল কিছু হলেই দানার ডাক পড়ে। ইন্দ্রনীল অথবা নিতাইকে ঠিক খেপাতে চায় না দানা, ওদের হাতে রাখলে আগামী দিনে অনেক কাজ হাসিল করতে পারবে। প্রকল্পের কাজে ইন্দ্রনীল আর নিতাই লোকবল দিয়ে অনেক সাহায্য করেছে, যদিও তার জন্য দানা টাকা খরচ করেছে। ইতিমধ্যে কোন প্রকল্প সমাপ্ত হয়নি তাই বাপ্পা নস্কর ওর কাছ থেকে টাকা চাইতে দ্বিধা বোধ করে, কিন্তু নির্বাচনী প্রস্তুতি অতি শীঘ্র নিতে হবে।

পাঁচ দিনের মাথায়, মোহন নিজেই সি.এ. আর উকিলকে সঙ্গে করে দানার সাথে দেখা করে। মোহনের তুলনায় ওদের অফিস অনেক অনেক ছোট। মহেশ বাবুকে ডেকে নেয় দানা, উকিল সি.এ. সাথে করে আগে তাদের দিয়ে ওই প্রকল্পের কাগজ পত্র ঠিক আছে কি না দেখিয়ে নেয়। মাঝে মাঝে দানার উকিল আর মহেশ বাবু প্রশ্ন করে মোহন আর তার উকিলকে। এই সব আইনের মারপ্যাঁচ বিশেষ কিছুই দানার মাথায় ঢোকে না, তাই মহেশ বাবুর ওপরে সব ছেড়ে দেয়। মহেশ বাবু প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে সব কাগজ পত্র দেখে দানাকে বলে, "হ্যাঁ, সব ঠিক আছে। তুই সাক্ষর করে দে।"

মহেশ বাবু পড়ে জানিয়ে দেন যে দুশো কোটি টাকার বিনিময়ে মোহন খৈতান নিজের তিন খানা ছোট আবাসন প্রকল্প, দুই খানা বড় মাপের আবাসন প্রকল্প আর একটা পাঁচ তারা হোটেলের নির্মাণের প্রকল্প দানার কাছে বিক্রি করছে। মোহনের সাথে সাথে দানা মাথা নাড়ায়, "হ্যাঁ।"

সম্পূর্ণ লেনদেন আলোচনা সাক্ষর সব কিছু ক্যামেরা বদ্ধ করে দানা, ভবিষ্যতে অনেক কাজে লাগবে এই ভিডিও। মোহনের সাথে হাত মিলিয়ে সাক্ষর করে দেয় দানা। মোহন ওকে বারেবারে মনে করিয়ে দেয় ওর প্রতিশ্রুতি। দানা মিচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয়, শুধু মাত্র নয়না এর পরিচালিকা। নয়না ঠিক থাকলে দানাও ঠিক। সেই কথা শুনে মোহন বাঁকা হাসি দেয়। মোহন বেড়িয়ে যাওয়ার পরেই দানা চুপচাপ অনেকক্ষণ চেয়ারে বসে থাকে। বিশ্বাস করতে পারে না কিছুতেই যে সাড়ে পাঁচশো কোটি টাকা শুধু মাত্র এক ছলনাময়ীর মুখের কথায় ওর নামে করে দিয়েছে মোহন। এইবারে নিশ্চয় মোহন আর বিমান ওর পেছনে লেগে থাকবে। কতক্ষণে দানা নিজের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাপ্পা নস্কর নামক কাঁটাকে ওদের পথ থেকে চিরতরে সরিয়ে দেবে আর বিমান আর মোহন মিলে এই এলাকা শাসন করবে।

সেদিন বিকেলে বাড়িতে বসে রুহিকে নিয়ে ইংরেজি পড়াচ্ছিল দানা, "মা, বল এ ফর এপেল....."

রুহি মাথা নাড়ায়, "নান্না নান্না..... কারতুন দেখব।"

দানা শত চেষ্টা করে, সামনে একটা নার্সারি কলেজে এইবারে ভর্তি করিয়ে দিতে হবে, "বল সোনা, এ ফর এপেল।"

রুহি নাছোড়বান্দা, "আগে কারতুন তা-পয়ে।"

দানা রুহির সামনে হাতজোড় করে, "প্লিস মা শুধু এইটুকু পড়ে নে তারপরে কার্টুন দেখতে দেবো।"

রুহি ওর "ডাডা"র গালে চুমু খেয়ে আদর করে বলে, "প্লিস ডাডা, ইত্তু কারতুন তা-পয়ে।"

রুহিকে বকাঝকা করা দুরের কথা ওর সাথে এমন কি উঁচু গলায় কথা পর্যন্ত বলে না দানা, পাছে যদি কোনোদিন মহুয়া এটা ভেবে বসে যে হেতু রুহি দানার সন্তান নয় তাই ওর ওপরে স্নেহ কম। তবে মহুয়া মনে প্রাণে জানে, দানার রুহি অন্ত প্রান, বাবারা একটু মেয়েদের প্রতি বেশি সদয় হয়ে থাকে।
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply
কলিং বেলের আওয়াজ শুনে পড়াশুনা শিকেয় ওঠে রুহির। এইবারে "ডাডা" ওকে ছেড়ে দেবে আর রুহি মজাসে "কারতুন" দেখতে পারবে। স্টাডি থেকে মেয়েকে নিয়ে বেড়িয়ে দেখে ফারহান। অনেকদিন পরে দেখা, ইদানিং বাপ্পা নস্করের কাছে আসা যাওয়া কমে গেছে তাই দেখা সাক্ষাৎ কমে গেছে। মদনার দোকানে আর সেই আড্ডা আলোচনা সভা আর বসে না, শক্তি বলাই নিজের কাজে ফিরে গেছে, তবে নাসির আকরাম এখন নয়নার ওপরে নজর রেখে চলেছে। কখন কি ঘটে প্রত্যকে মিনিটের খবর দানার কাছে ঠিক সময়ে পৌঁছে যায়।

ফারহান ওকে দেখে হেসে বলে, "কি রে শালা" বলেই রুহিকে দেখে থেমে যায়।

এতদিনে "ডাডা"র বন্ধুরা ওর বন্ধু হয়ে গেছে। রুহি দৌড়ে ওর কাছে গিয়ে নালিশ করে, "ডাডা কারতুন দেত্তে দিত্তে না।"

ফারহান ওকে কোলে নিয়ে বলে, "আচ্ছা ডাডাকে বকে দেব।" তারপরে হেসে দানাকে বলে, "বেশ মেয়ে নিয়ে পড়াশুনা করছিস। ম্যাডাম কোথায় রে?"

মহুয়া ওর গলা শুনে বসার ঘরে ঢুকে প্রশ্ন করে, "কি ব্যাপার বিয়ে শাদি কবে তোমার?"

ফারহান হেসে উত্তর দেয়, "এই দুই সপ্তাহ পরে। আপনার কাছে একটা অনুরোধ আছে।"

মহুয়া আর দানা মুখ চাওয়াচায়ি করে, ওকে জিজ্ঞেস করে, "কি হয়েছে?"

ফারহান মহুয়াকে বলে, "এই একটু কেনাকাটা করতে সাহায্য করতে হবে আপনাকে। মানে আম্মি আর ভাবীজান ঠিক পেরে উঠবে না।"

মহুয়া হেসে বলে, "সে আর বলতে। আচ্ছা এখন বসো। কাল থেকে জারিনাকে নিয়ে তোমার বিয়ের বাজারে বেড়িয়ে পড়বো।"

মহুয়া কাজের মেয়েটাকে পানীয় আর খাদ্য নিয়ে আসতে বলে। ওরা বিয়ের গল্পে, জারিনার গল্পে মেতে ওঠে। বেশ কিছু পরে ফারহান দানাকে একপাশে ডেকে বলে, "এই একটু কথা ছিল রে তোর সাথে।"

দানা প্রশ্ন করে, "বল না কি হয়েছে?"

ফারহান এদিক ওদিক তাকায়, মনের মধ্যে বিশাল দ্বিধা বোধ। দানা ওর কাঁধ চাপড়ে অভয় দিয়ে মনের দ্বিধা কাটাতে অনুরোধ করে। ফারহান গলা নামিয়ে বলে, "কিছু টাকা ধার দিতে পারবি, মানে এই এক লাখের মতন। টাকা একটু কম পড়ছে রে।"

দানা হেসে ফেলে। ঠিক পেছনে মহুয়া দাঁড়িয়ে ছিল আর ওদের কথা শুনে ফেলে। মহুয়া হেসে ওকে বলে, "না গো ফারহান আমরা বড় গরীব মানুষ। আমাদের কাছে তোমাকে ধার দেওয়ার মতন টাকা সত্যি নেই।"

ফারহান কাঁচুমাচু মুখ করে একবার দানার দিকে তাকায় একবার মহুয়ার দিকে তাকায়। মহুয়া হেসে উত্তর দেয়, "তোমার বিয়ের খরচ পাতি আন্দাজ কত লাগবে?"

ফারহান নির্বাক হয়ে যায়, কি বলবে ভেবে পায় না। মহুয়ার দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি হটাত ঝাপসা হয়ে আসে। আমতা আমতা করে মহুয়াকে বলে, "না ম্যাডাম, এ কথা নয়, মানে।"

দানা ওর পিঠে কষে এক চাঁটি কষিয়ে বলে, "বোকাচোদ এই কথা বলতে তোর এত দেরি লাগে। শালা বের হ বাড়ি থেকে, কুত্তা এমন ঝ্যাঁটা পেটা করব বাল জারিনার....."

বাক্য শেষ করলো না, কারন পেছনে মহুয়া দাঁড়িয়ে। না হলে বলে দিত জারিনার যোনির মধ্যে ঢুকে পড়তে।

মহুয়া ওকে বলে, "আমি আরো একটা কথা ভেবেছিলাম।"

দানা আর ফারহান দুইজনেই ওর দিকে উৎসুক হয়ে তাকিয়ে থাকে। এই বিষয়ে দানার সাথে এতদিন কোন আলোচনা করেনি মহুয়া। মহুয়া হেসে বলে, "হানিমুনে মরিশাস যাবে না ব্যাঙ্কক যাবে?"

ফারহানের চোখ জোড়া উপচে আসে, "না না ম্যাডাম এটা আমি নিতে পারব না।"

মহুয়া হেসে বলে, "তুমি নাকি এক কালে জিতকে দুই হাজার টাকা ধার দিয়েছিলে? ভেবে নাও এই টাকা সেই ধারের সুদ।"

দানা স্মিত হেসে বলে, "ভাই তুই আমাকে যদি ধরে না আনতিস তাহলে এতদিনে আমি হারিয়ে যেতাম রে।"

মহুয়া সমস্বরে বলে, "স্টেসান থেকে ধরে নিয়ে এসেছিলে বলে আমি ওকে খুঁজে পেয়েছি ফারহান। প্লিস না করো না।"

ফারহান না করতে পারে না। মহুয়া একটা দুই লাখ টাকার চেক কেটে ফারহানের হাতে ধরিয়ে দেয়, ফারহান কি করবে বুঝতে পারে না, শেষ পর্যন্ত ওদের জোরাজুরিতে চেক পকেটে নিয়ে নেয়।

পরেরদিন সকালেই গাড়ি নিয়ে রুহিকে সঙ্গে নিয়ে মহুয়া বিয়ের কেনাকাটা করতে ব্যাস্ত হয়ে পরে। ফারহান আগে থেকেই জারিনাকে বলে দিয়েছিল মহুয়ার সম্বন্ধে তাই মুখ ফসকে কিছু বলে না, যদিও মহুয়া সব বিষয়ে জানে। দানা নিজের কাজে খুব ব্যাস্ত, কুড়ি খানা ছোট আবাসন প্রকল্পের কাজ একসাথে চলছে, সেই সাথে দুটো বড় আবাসনের কাজ আর একটা বড় পাঁচ তারা হোটেলের নির্মাণ। নিঃশ্বাস ফেলার সময় নেই ওর কাছে। মাঝে মাঝে মহেশ বাবুর কাছে যায়। মোহনের সাথে নিয়মিত দেখা সাক্ষাৎ হয়। তবে সেদিনের পরে সিমোনের সাথে দেখা হয় না আর। সিমোনের কাছে দানার পুরানো ফোন নাম্বার ছিল, তাই আর ফোন করতে পারে না। আর দানাও আগ বাড়িয়ে সিমোনেকে ফোন করেনি। পাছে ওদের মেলামেশা কারুর চোখে পড়ে যায়। তবে এখন বুক ঠুকে চলতে দ্বিধা বোধ নেই, যদি সিমোনের সাথে দেখা করার থাকে তাহলে ফোন করে নেবে। একে বারে মোহনের সামনেই দেখা করার সুযোগ শুধু মাত্র একটু গা বাঁচিয়ে চলা এই আর কি।

হোটেলের কাজের সাইটে দানা গিয়ে দেখে যে সিমোন উপস্থিত। কি ব্যাপার এইখানে কি করছে সিমোন? দানাকে দেখে অমায়িক হেসে এগিয়ে আসে। পাশেই স্বামী মোহন তাই দানা সংযত হয়ে যায়।

মোহনের সাথে হাত মিলিয়ে হেসে বলে, "কাজের অগ্রগতি নিয়ে সন্তুষ্ট, না আরো কিছু করব?"

মোহন হেসে উত্তর দেয়, "না না এই দুই সপ্তাহে অনেকখানি হয়ে গেছে দেখছি।"

দানা চারদিক দেখে মাথা নাড়ায়, ভিত আগে থেকেই তৈরি ছিল, পিলার তোলা শুরু হয়ে গেছে। মোহন গলা নামিয়ে বলে, "একবার আপনার সাথে একটু অন্য বিষয়ে আলচনা করার ছিল। কাল বিকেলে একটু সময় করে একবার আমাদের বাগান বাড়িতে আসবেন। শুধু আমি আপনি আর বিমান।"

দানা বুঝে যায় কোন দুরাভিসন্ধির বিষয়ে আলোচনা করবে মোহন। কাজ কর্ম সেরে বাড়ি ফিরতে রাত হয়ে যায়। বাড়ি ঢুকে দেখে এক মেলা বসেছে। ফারহান, নাফিসা, নাফিসার স্বামী তাবিশ, সবাই বাড়িতে উপস্থিত। বসার ঘরে মনা পিন্টু সেই সাথে শক্তি বলাই। ঘরের মাঝে টাল করে জামা কাপড়, নাফিসার জন্য তুঁতে রঙের দামী একটা শাড়ি, ফারহানের জন্য দামী সাদা রঙের শেরওয়ানি। দেখে মনে হল মহানগরের দোকান খালি করে দানার বসার ঘরে উপস্থিত। বিয়ের আনন্দে সবাই মেতে। পিন্টু আবার কাজের মেয়ে মণির সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছে। মনা অনেকগুলো বেলুন ফুলিয়ে ঘর ভর্তি করে দিয়েছে আর রুহি সেকি খেলা সেই বেলুন নিয়ে। এই ভিড়ে দানার চোখ খুঁজে বেড়ায়, কোথায় মহুয়া।

তৃষ্ণার্ত চাতকের মতন মুখ খানি করে ফারহানকে জিজ্ঞেস করে, "তোরা কখন এলি রে?"

হেহে করে হেসে ফেলে ফারহান, "অনেক ক্ষণ এসেছি রে। তোকে দেখে না ঝড়োকাকের মতন মনে হচ্ছে।"

রুহিকে জিজ্ঞেস করে দানা, "মাম্মা কোথায়?"

রুহির কানে কি আর সেই কথা যায়? বেলুন নিয়ে খেলতে ব্যাস্ত, ডাডা তখন কে চেনে। শুধু মাত্র রাতে ডাডাকে আর মাম্মাকে পাশে না পেলে মনে পরে তা ছাড়া সারাদিন মনা আর পিন্টু।

রুহির হয়ে নাফিস উত্তর দেয়, "জারিনার লেহেঙ্গা পছন্দ হচ্ছে না তাই এখন ঘুরছে। একটু আগে ফোন করেছিলাম, হয়তো এখুনি চলে আসবে।"

ফারহান ওকে টেনে একপাশে নিয়ে গিয়ে দুই হাত ধরে বলে, "বাড়া তোকে কি বলে ধন্যবাদ জানবো ভেবে পাচ্ছি না রে। ম্যাডাম পারলে সারা বাজার কিনে আনে।"

দানা বসার ঘর দেখে সেটা বুঝে গেছিল। মন ছটফট করছে মহুয়াকে দেখার জন্য। বিকেলে মোহন আর সিমোনের সাথে দেখা হয়েছে, একটা ভুয়ো চক্রান্ত ভাবতে হবে, না হলে কাল কি বলবে ওদের সামনে। মহুয়া না আসা পর্যন্ত বুকের মাঝে চাপা উত্তেজনা বজায় থাকে। এক ঘন্টা পরে, বাজার মাথায় করে জারিনা আর মহুয়া ঘরে ফেরে। ওদের হাতেও কাপড় জামার ব্যাগ। জারিনা নিজের পছন্দ মতন লাল রঙের লেহেঙ্গা কিনে বেশ খুশি।

ঘরে ঢুকেই মহুয়াকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায়, "আপনি সত্যি পারেন বটে।"

দানা অদুরে দাঁড়িয়ে মহুয়াকে দেখে যায়। নিয়মিত শরীর পরিচর্যা করার ফলে দিনে দিনে ওর যৌবনের ডালি ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে। শাড়ির পরতে পরতে ঢাকা নধর দেহ পল্লব ওকে কাছে ডাকে। দুই চোখের ভাষা, "কি হলো তোমার?" দানা মাথা দোলায়, "কিছু না। পরে বলবো।"

কেনা কাটা বাজার বিয়ের মাতামাতি অনেকক্ষণ চলে। এতজন লোকের খাওয়া দাওয়া, নাফিসা আর জারিনা রান্না ঘরে ঢুকে পড়ে। জানে মহুয়া নিরামিষাশী তাই রান্না নিরামিষ হয়।

রাতের খাওয়া পরে সবাই চলে যাওয়ার পরে দানা আর মহুয়া বসার ঘরে বসে। দানা জানায় বিকেলে মোহন আর সিমোনের সাথে দেখা হয়েছিল। আগামী কাল মোহনের বাগান বাড়িতে যেতে হবে। দানার বিশ্বাস মোহন আর বিমানের সাথে বাপ্পা নস্করকে খুনের চক্রান্ত করা হবে। দানার ভুমিকা এইখানে অনেক বড়, নয়নার বিশ্বাসভাজন ব্যাক্তি দানা। ওকে একটা ভুয়ো নিখুঁত চক্রান্ত তৈরি করতে হবে যাতে ওদের সন্দেহ না হয়। তবে আসল দিনের আগেই বাপ্পা নস্করকে সাবধান করে দেবে যাতে বাপ্পা নস্কর সেই জায়গা থেকে সরে যায়। তারপরে এই চক্রান্তের খবর বাপ্পা নস্করের কানে দিয়ে দেবে। ব্যাস, খেলা শুরু। বিমান, মোহন, সিমোন, নয়না একে একে সবাই ফাঁদে পড়ে যাবে। পারলে রমলার সাহায্যে এই চক্রান্তের খবর টিভিতে, খবরের কাগজের শিরোনাম করে দেবে।

মহুয়া জিজ্ঞেস করে, "এই গেল পরের কথা, কিন্তু কাল কি বলবে ওদের সামনে?"

দানা জানে না কি করবে তাই উত্তর দেয়, "কাল বিকেলে যেতে যেতে ভাবা যাবে।"
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply
চৌষট্টি ছক (#১০)

পরের দিন বিকেলে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে দানা। এখন পর্যন্ত কারুর সন্দেহের ঘেরে আসেনি দানা, তাই মহুয়া একটু নিশ্চিন্ত, তবুও ভয় লাগে ওর। রুহিকে রীতিমত কোলের মধ্যে আঁকড়ে রুদ্ধশ্বাসে ওকে বিদায় জানায়। মনা আর পিন্টু ওর সঙ্গ নিতে চায় কিন্তু দানা বারন করে দেয়। কারন এই চক্রান্ত শুধু মাত্র ওর একার, অন্য কাউকে নিয়ে গেলে ওদের সন্দেহ হয়ে যাবে।

চুপচাপ একা একা গাড়ি চালাতে চালাতে দানা নিজের ভুয়ো চক্রান্তের অঙ্ক কষে। ওদের এমন কিছু বলতে হবে যাতে ওরা সবাই দানার কথা বিশ্বাস করে নেয় আর নয়নাকে একটু মাথায় করে রাখতে হবে তাহলে ভবিষ্যতে অনেক কাজ হাসিল করতে পারবে। নয়নাকে জালে একদম শেষে জড়াতে চায় দানা। নারী মাংসের লোভে অনেক কাজ হাসিল হয় পৃথিবীতে আর সেটাই দানা ওকে দিয়ে করাতে চায়।

বাগান বাড়িতে ঢুকতেই বাগানে বিমান চন্দ আর মোহন খৈতান কে দেখতে পায়। ওকে দেখেই দৌড়ে একটা দারোয়ান ওর গাড়ির দরজা খুলে দেয়। দানা দারোয়ানের হাতে গাড়ির চাবি দিয়ে বাগানের মধ্যে হেঁটে এগিয়ে যায়। মোহন আর বিমানের সাথে হাত মেলায়। স্মিত হেসে কুশল আদান প্রদান, কাজের কথা ইত্যাদি চলে কিছুক্ষণ। দানার কাজে মোহন বেশ খুশি, এই কয়দিনে সুনিপুণ হস্তে কাজ এগিয়ে চলেছে। যদিও এর কৃতিত্ব, মহুয়া আর মহেশ বাবুর। ওরা পেছনে না থাকলে দানা কিছুই করতে পারত না। মহেশ বাবুর ব্যাবসায়িক বুদ্ধি আর মহুয়ার পরিচালনা। মেয়েরা একটা বাড়ি যেমন নষ্ট করতে পারে তেমনি এক পুরুষের জীবন তৈরি করতে পারে আর সেই মহামায়া রূপী নারী, মহুয়া।

মদের গেলাসে চুমুক দিয়ে বিমান ওকে জিজ্ঞেস করে, "আচ্ছা কি ভাবলে ওই ব্যাপারে?"

দানা খানিক চিন্তা করে উত্তর দেয়, "নয়না থাকলে একটু ভালো হত।"

বিমান আর মোহন হেসে ফেলে, "তুমি যে নয়না ছাড়া এক পা চল না দেখছি।"

দানা মুচকি হেসে বলে, "না না, সেটা নয় মানে ওর সাথে অনেকদিন আগে আলোচনা হয়েছিল তাই ও থাকলে একটু ভালো হত। যাই হোক নয়না যখন নেই তাহলে আর কি করা যাবে। আমার কাছে একটা পরিকল্পনা আছে একদম নিখুঁত। চারদিন পরে জঙ্গিঘাটে বাপ্পা নস্করের একটা পথ সভা আছে, আর তার তিনদিন পরে মনোহরপুরে একটা মিটিং মিছিল আছে। বাপ্পা নস্করকে মারতে হলে আড়ালে আবডালে মারলে হবে না। আজকাল পুলিসের তদন্ত অনেক আধুনিক হয়ে গেছে, ঠিক শুঁকে শুঁকে খুঁজে বের করবে। তাই খুন একদম সামনা সামনি ভিড়ের সাহায্যে করতে হবে। ভিড়ের মধ্যে মিলিয়ে গেলে ধরা অসম্ভব, কিন্তু একা একা কাউকে খুন করলে অনেক ছোট ছোট সুত্র অজান্তেই থেকে যায়। ভিড়ের আড়ালে সেই সুত্র হারিয়ে যাবে। ভিড়ের মধ্যে আমার লোক লুকিয়ে থাকবে। বাপ্পা নস্করের দলের পতাকা নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে ওর দিকে এগিয়ে যাবে। যেই বাপ্পা নস্কর গাড়ি থেকে নামবে ঠিক তখনি ওকে ঘিরে অনেক লোক দাঁড়িয়ে যায়। সেই ভিড়ের মধ্যে আমার লোক লুকিয়ে ওর বুক লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে ওইখান থেকে কেটে পরবে। চিন্তা নেই আওয়াজ হবে না, পিস্তলে সাইলেন্সার লাগানো থাকবে। যতক্ষণে বাপ্পা নস্করের জামা লাল হবে ততক্ষণে আমার ছেলে ওইখান থেকে পালিয়ে যাবে।"

বিমান আর মোহন মুখ চাওয়াচায়ি করে, "হুম খুব ভালো ষড়যন্ত্র ফেঁদেছে। তবে তোমার লোক তোমার বিশ্বাসী নাকি শেষ মুহূর্তে পালিয়ে যাবে?"

দানা হেসে বলে, "না না, খুব বিশ্বাসী ছেলেকে দিয়ে আমি কাজ করাবো। কাজ শেষ হওয়ার পর মুহূর্তে ওই ছেলে শহর ছেড়ে চলে যাবে। তবে প্রথম মিছিলে এই কাজ করব না, ওই দিন সবকিছু জরিপ করব। দ্বিতীয় মিছিলে ওর ওপরে হামলা করা হবে।"

বিমান মাথা দোলায়, "হ্যাঁ হ্যাঁ একদম ঠিক কথা। আগে থেকে ওর চাল চলন ভালো ভাবে জরিপ করে নিতে হবে।"

মোহন হেসে বলে, "তাহলে পরের সপ্তাহে একসাথে কাজ করা যাবে?"

দানা হেসে মাথা দোলায়, "সব ঠিক ঠাক থাকলে পরের সপ্তাহ কেন, যেদিন ওর চিতা জ্বলবে সেদিন আমরা এইখানে আগুন জ্বালিয়ে আয়েশ করে মেয়েদের নাচ দেখতে দেখতে কাজের কথা সারবো।"

মোহন আর বিমান একসাথে হেসে ফেলে দানার কথা শুনে। মোহন চোখ টিপে মিচকি হেসে দানাকে প্রশ্ন করে, "আপনি মিস্টার মন্ডল বড় রসিক মানুষ।"

দানা বাঁকা হাসে, হ্যাঁ অনেক রসিক, একসময়ে ওর বৌকে এই বাড়ির শোয়ার ঘরে অনেকবার সঙ্গম সম্ভোগ সুখ প্রদান করেছে আর সেই সাথে নয়নার সাথে কম বার সঙ্গম করেনি।

বিমানের কান একটু লাল হয়ে যায়, মোহনের কাঁধ চাপড়ে হেসে বলে, "তুই শালা হারামি। কাকে আনা যায় বলতো সেইদিন?"

দানা বলতে যাচ্ছিল নয়নাকে আনলে কেমন হয়? কিন্তু থেমে যায়। মোহন বলে, "দেখি একটা সুন্দরী মডেল আছে, বেশ ভালো নাচে মাইরি। বিশেষ করে ন্যাংটো নাচ বেশ ভালো ভাবেই করে।"

কাজ অনেকটাই হাসিল হয়ে গেছে, এইবারে আসল তথ্য জানতে হবে। কে আদেশ দিয়েছিল মৈনাককে খুন করতে, বিমান না সিমোন, আসল চক্রান্তকারী কে? দানা একটু চিন্তিত ভাব দেখায়। ওর চিন্তিত চেহারা দেখে বিমান জিজ্ঞেস করে, "কি হলো, কি এত ভাবছো?"

দানা মিচকি হেসে বলে, "না মানে, একদিন রাতে নয়নার বাড়িতে একটা চম্পাকলি মালকে খুব লাগিয়ে ছিলাম।"

বিমান কিছুক্ষণ চিন্তা করে হেসে বলে, "আচ্ছা আচ্ছা বুঝেছি। ওই সাংবাদিক মেয়েটার কথা বলছ তাই তো।"

বিমান তাহলে সঙ্গীতাকে চেনে, সঙ্গে সঙ্গে দানার মাথা গরম হয়ে যায়। চোখের সামনে সঙ্গীতার জল ভরা চোখ ভেসে ওঠে। বিমান হাসতে হাসতে মোহনকে বলে, "তোর মনে আছে মনু, ঐ যে কি নাম বেশ। শালীকে মারতে গেলাম, কিন্তু ওর পেছনে বসা ছেলেটা শেষ পর্যন্ত মরে গেল।"

মোহন একটু ভেবে বলে, "হ্যাঁ হ্যাঁ, সঙ্গীতার কথা বলছিস তাই তো?"

দানার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়, কোমরের পেছনে হাত দিয়ে পিস্তল চেপে ধরে। সারা শরীর দাউদাউ করে বিতৃষ্ণা আর ক্রোধে জ্বলে ওঠে, পারলে এইখানে ওদের খুন করে ফেলে। কোন রকমে মাথা ঠাণ্ডা করে জিজ্ঞেস করে, "কি রকম পরিকল্পনা করেছিলেন বিমান বাবু? আসল মানুষকেই মারতে পারলেন না।"

বিমান ওর দিকে তাকিয়ে বলে, "সত্যি বলতে কি জানো, সিমোনের পরিকল্পনায় খুঁত ছিল না। শালা ওই লরির ড্রাইভার সব কেচিয়ে দিল। আমরা ভেবেছিলাম যে ওরা বাইকে থাকবে আর পেছনে সঙ্গীতা বসে থাকবে। কিন্তু সেদিন বাইকে নয় সঙ্গীতার স্কুটিতে ওরা বেরিয়েছিল। ধাক্কা ঠিক জায়গায় মারা হয়েছিল, কিন্তু ফলাফল উল্টে গেল।"

দানার মাথার শিরা ফেটে পড়ার যোগাড়, মাথায় রক্ত উঠে যায়। আরো এক গেলাস মদ আনিয়ে ঢকঢক করে গিলে ফেলে। এই রক্ত চক্ষু যে ক্রোধের নয়, সুরার সেটা ওদের বুঝাতে হবে না হলে মুশকিল। চেহারায় মেকি হাসি ফুটিয়ে বলে, "মাল টা কিন্তু জম্পেশ ছিল আর যাই বলেন। সেদিন সারা রাত ধরে চুদেছিলাম জানেন।"

বিমান আর মোহন একসাথে অবাক হয়ে ওকে বলে, "আচ্ছা তাই নাকি? কোথায়?"

দানা হেসে বলে, "নয়নার বাড়িতে আবার কোথায়।"

মোহন ওর কাঁধ চাপড়ে চোরা হাসি দিয়ে বলে, "তাহলে সেই রাতে নয়নাকেও ডেকে নেওয়া যাবে কি বলেন মিস্টার মন্ডল। না না, অন্য কাউকে চাইলে বলে দেন, যোগাড় করে দেব।"
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply
মদ খেয়ে আরো কিছুক্ষণ গল্প গুজব করে বাড়ি ফিরে আসে দানা। বাড়িতে মহুয়া রুদ্ধশ্বাসে দানার অপেক্ষায়। মোহনের বাগান বাড়ি থেকে বেড়িয়েই দানা ফোন করে মহুয়াকে জানিয়ে দেয় সব ঠিক আছে। সেই শুনে মহুয়া স্বস্তির শ্বাস নেয়। বারেবারে এই রকম জালে পা দেয়, যদি কোনোদিন কোনোভাবে কারুর সন্দেহ হয়ে যায় তাহলে ওর রক্ষে নেই। ফিরে এসে রাতের খাওয়ার সময়ে মাহুয়াকে সব খুলে বলে। মহুয়া জিজ্ঞেস করে আসলে দানা কি করতে চায় সত্যি কি বাপ্পা নস্করের ওপরে হামলা করবে না শুধু মাত্র একটা নাটক রচনা করবে? দানা জানায়, বাপ্পা নস্করের ওপরে একটা নাটকীয় ভুয়ো হামলা করবে যাতে বিমানের সন্দেহের বাইরে থাকে। তবে আগে থেকে ফারহানের মাধ্যমে বাপ্পা নস্করকে সাবধান করে দেবে। সত্যি কারের নয় মিথ্যে গুলি চলবে আর সেটা অন্য কাউকে লাগবে। আর একবার এই হইচই শুরু হয়ে গেলে, বাপ্পা নস্করের কাছে চলে যাবে দানা, নয়নার আর বিমানের ছবি নিয়ে। খেপা বাপ্পা নিশ্চয় বিমান আর নয়নাকে শেষ করে দিতে উদ্যত হবে। তবে শুধু মাত্র বিমানের মৃত্যু হলে ভালো হয়। নয়নাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারলে ওকে দিয়ে মোহন আর সিমোনকে মারতে পারবে।

সকাল থেকে মেঘলা, বর্ষার ফলে আবাসনের কাজ বেশ ধীরে চলছে। ফারহানের বিয়ের প্রস্তুতি জোর কদমে। মহুয়া আজকাল অফিসে কম আর বাজারে বেশি যায়। রুহিকে কোলে নিয়ে জারিনা আর নাফিসাকে নিয়ে বিয়ের কেনাকাটা করতে ব্যাস্ত। বিয়ের কয়েকদিন আগে থেকে ফারহান ছুটি নেবে।

সেদিন দানা খুব ব্যাস্ত ছিল একটা আবাসনের কাজে। ওই মেঘলা আকাশ আর মাথায় বৃষ্টি নিয়েই প্রতিদিনের মতন জারিনা আর নাফিসাকে নিয়ে মহুয়া বেড়িয়ে পড়েছে বিয়ের কেনাকাটা সারতে। সেদিন আবার জঙ্গিঘাটে বাপ্পা নস্করের প্রথম নির্বাচনী পথ সভা। বাপ্পা নস্কর অবশ্য আগের দিন দানাকে ফোনে জানিয়েছিল ওর সাথে থাকার জন্য, কিন্তু নিজের নাম কোন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত করতে চায় না। আসলে বিমানকে এখুনি খেপাতে চায় না দানা তাই কাজের আছিলায় আর যায়নি। দুপুর গড়িয়ে বিকেল, চার ট্রাক ইট আসার কথা ছিল, এখন এলনা। ওইদিকে আগামী কাল শ্রমিকের মাইনের তারিখ, সি.এ. কে মহুয়া কি চেক কেটে দিয়েছে? প্রথমে সি.এ. কে ফোন করে জেনে নেয় দানা, মহুয়া সকালেই কেনাকাটা করতে বের হবার আগে চেক কেটে দিয়ে গেছে। একটু শান্তি পায়, কিন্তু ইটের ট্রাকের কি হল? সুপারভাইজারকে ডেকে একটু ধমক ধামক দিতে হবে না হলে চলছে না। মোহনের কাজ না হয় পরে করা যাবে কিন্তু বাকিদের কাজ গুলো ফেলে রাখলে চলবে কি করে?

ঠিক সেই সময়ে মহুয়ার ফোন। চাপা আতঙ্কে চেঁচিয়ে ওঠে ওইপাশ থেকে, "জিত তুমি কোথায়? এখুনি হস্পিটালে এস।"

দানা ভয় পেয়ে যায়, বুক কেঁপে ওঠে, কার কি হলো? চাপা উৎকণ্ঠায় জিজ্ঞেস করে, "রুহি ঠিক আছে? কার কি হয়েছে?"

মহুয়ার কণ্ঠস্বর থরথর করে কাঁপছে, "ফারহানের গুলি লেগেছে তুমি এখুনি হসপিটালে এসো।"

ওই কথা শুনে দানার গা হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়, কেষ্টর পরে ওর প্রিয় বন্ধু ফারহান। কে গুলি মারল ওকে? আজকে বাপ্পা নস্করের সাথেই ছিল ওই পথ সভায়। গাড়ি তীর বেগে হসপিটালে ছুটিয়ে দেয় দানা।

দৌড়াতে দৌড়াতে ওপরে উঠে সবাইকে খোঁজে। মনা আর পিন্টুকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়ে। ছোট্ট রুহি, মনাকে আঁকড়ে ধরে একরকম বুকের মধ্যে লুকিয়ে। চারপাশে এত লোক দেখে আতঙ্কে জড়সড় হয়ে গেছে রুহি। দানাকে দেখেই "ডাডা ডাডা" বলে কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কোনোরকমে মেয়েকে বুকের মধ্যে লুকিয়ে চারপাশ তাকিয়ে দেখে। পুলিস মানুষে লোকে লোকারণ্য। একপাশে ইন্দ্রনীল এবং বাপ্পা নস্করের দলের বেশ কয়েকজন লোক দাঁড়িয়ে। জারিনা মহুয়ার কোলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। দানা মহুয়াকে দেখে এগিয়ে আসে। মহুয়ার চেহারা লাল হয়ে গেছে, চোখ জোড়া ছলছল কিন্তু জল ফেলতে পারছে না কেননা কোলে অজ্ঞান জারিনা। বেদনায় নাফিসার চোখের জল উপচে পড়ছে।

মহুয়াকে জিজ্ঞেস করে কি ভাবে ওরা খবর পেল। মহুয়া জানায়, জারিনাকে নিয়ে কেনাকাটা করতে সকাল থেকেই ব্যাস্ত ছিল। দুপুরের পরে একটা রেস্টুরেন্টে বসে সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া করার সময়ে জারিনার কাছে ইন্দ্রনীলের ফোন আসে। সেই শুনেই ওরা দৌড়ে আসে হসপিটালে আর তারপরে দানাকে মহুয়া ফোন করে জানায়।

দানা ইন্দ্রনীলের কাছে যায়, "ফারহানের কি করে গুলি লেগেছে?"

ইন্দ্রনীল বলে, "ফারহানের বুকে আর কাঁধে গুলি লেগেছে।"

ইন্দ্রনীল পুরো ঘটনা খুলে বলে দানাকে। জঙ্গিঘাটে পথ সভা ছিল বাপ্পা নস্করের, ফারহান বাপ্পা নস্করের অনেকদিনের ড্রাইভার, বিশ্বাসী লোক। ওর সাথে সাথেই থাকে। অন্যদিন নিতাই সামনে বসে আর বাপ্পা নস্কর ইন্দ্রনীলের সাথে গাড়ির পেছনে বসে। তবে সেদিন পথ সভার জন্য সামনেই বসেছিল বাপ্পা নস্কর। গাড়ি মঞ্চের বেশ কিছুদূরে এসে থামে। গাড়ি থামতেই সামনে থেকে গাড়ির কাঁচ ভেদ করে দুটো গুলি এসে লাগে ফারহানের বুকে আর কাঁধে। ইন্দ্রনীল হলফ করে বলতে পারে ওই গুলি বাপ্পা নস্করকে খুন করার জন্য মারা হয়েছিল কিন্তু ফারহান বসে থাকায় ওই গুলি ফারহানের গায়ে লাগে। সঙ্গে সঙ্গে অন্য গাড়ি করে ফারহান কে হসপিটালে নিয়ে আসা হয়।

হাত মুঠি হয়ে যায় দানার। মাথার রক্ত টগবগ করে ফুটতে শুরু করে দেয়। প্রচন্ড বেদনায় শরীর কুঁকড়ে যায়, কেউ যেন ওকে একের পর এক চাবুকের আঘাত করে চলেছে। চক্রান্তের দিন আজকে নয় আর সেটা দানা করবে, বিমানের করার কথা ছিল না। বিমান নিজে থেকে চাল চালতে গেল কেন? ওর পুরো পরিকল্পনা ভেস্তে গেল। একবার বিমানকে হাতে পেলে খুন করে ফেলবে। এটা নিশ্চয় নয়নার চাল। দানার পরিকল্পনার সুত্রপাত নয়নার হাত ধরেই। সেদিন রাতে এই রকমের একটা পরিকল্পনা নয়না ওকে জানিয়েছিল।

দানা জিজ্ঞেস করে, "ফারহান এখন কোথায় আছে?"

ইন্দ্রনীল উত্তর দেয়, "অপারেশান থিয়েটারে নিয়ে গেছে। প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হয়ে গেছে, জানি না কি হবে।"

চাপা কণ্ঠে দানা গর্জে ওঠে, "ফারহানের কিছু হবে না। ওর কিছু হলে এই মহানগর আমি জ্বালিয়ে দেব।"

দানা জানতে চায় বাপ্পা নস্কর কোথায়? ইন্দ্রনীল জানায়, ওই পথ সভা কয়েক ঘন্টা পরে শুরু হবে তবে ইতিমধ্যে টিভি মিডিয়াতে বাপ্পা নস্কর তার বিরোধী পক্ষদের সাবধান করে দিয়েছে। চরম অস্বস্তিতে এদিক ওদিক পায়চারি করে দানা কিন্তু কিছুতেই স্বস্তি পায় না। ওর গায়ে কেউ যেন গরম ছ্যাঁকা দিয়ে চলেছে। মহুয়ার অবস্থা সঙ্গিন, একদিকে দানার রক্ত চক্ষু মাথা গরম কখন কি করে বসে তার নেই ঠিক। ওইদিকে জারিনা কেঁদে কেঁদে অজ্ঞান হয়ে গেছে। কয়েকদিন পরেই বিয়ে আর তার আগেই এই ঘটনায় জারিনা একদম ভেঙ্গে পড়েছে। সঙ্গীতার সাথে যা হয়েছিল সেটা জারিনার সাথে হতে দিতে পারে না। এর প্রতিশোধ নিতে হবেই আর আজ রাতেই নেবে। যা হবার হবে কিন্তু একটা একটা করে পিস্তলের সব গুলি নয়না আর বিমানের বুকে মাথায় নামিয়ে দেবে।

জারিনার জ্ঞান ফেরে, দানাকে দেখে ডুকরে কেঁদে ওঠে, "একি হলো আমার? ফারহান..... ফারহান....." বলে বার দুই আঁতকে উঠে আবার মহুয়ার কোলে ঢলে পড়ে।

দাঁতে দাঁত পিষে মহুয়ার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকে দানা। মহুয়া ওই চোখের ভাষা পড়ে ফেলে। দানার মাথায় রক্ত চড়ে গেছে। চারদিকে চাপা উত্তেজনা, সবাই শ্বাস আটকে অপারেশান থিয়েটারের সামনে দাঁড়িয়ে। রুহিকে কোলে নিয়ে নেয় দানা।

রুহি দানার ছলছল চোখ দেখে জিজ্ঞেস করে, "আন্তেলের কি হয়েছে, ডাডা?"
[+] 2 users Like Mr Fantastic's post
Like Reply
রুহির জন্য একটা রেপু দিলাম !!

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 1 user Likes Kolir kesto's post
Like Reply
(04-09-2020, 11:28 PM)Kolir kesto Wrote: রুহির জন্য একটা রেপু দিলাম !!

ধন্যবাদ দাদা, আর আদরের ছোট্ট রুহির প্রতি আমার এটাই বলার - কোনো চিন্তা নেই সব ঠিক হয়ে যাবে, দানা সাথে যখন তখন আর ভয় কি Smile
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply
এই নিষ্পাপ শিশুকে কি উত্তর দেবে দানা। মনা আর পিন্টুকে বলে, রুহিকে নিয়ে বাড়ি চলে যেতে। ততক্ষণে মদনা বলাই শক্তি আকরাম এরা সবাই খবর পেয়ে হস্পিটালে এসে যায়। শঙ্কর আর রমিজ, ফারহানের আম্মি আর দাদা তাবিশকে নিয়ে পৌঁছে যায়। আরও একবার কান্নার রোল ওঠে। জারিনা আর ফারহানের আম্মিজানের চোখের জল বাঁধ মানে না কিছুতেই।

রুহিকে নিয়ে মনা আর পিন্টু বেরিয়ে যায়। হাতের ঘড়ির কাঁটা আর চলে না। দুই ঘন্টা পরে অপারেশান থিয়েটারের দরজা খুলে যায়। আতঙ্কে আর বেদনায় সবাই উন্মুখ হয়ে ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে।

দানা সবার আগে ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করে, "কেমন আছে ফারহান?"

ডাক্তার উত্তর দেয়, "দুটো গুলি বের করে ফেলা হয়েছে তবে প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হয়ে গেছে। আগামী বাহাত্তর ঘণ্টার আগে কিছুই বলা মুশকিল।"

দানা চাপা গর্জন করে ওঠে, "বলা মুশকিল মানে? ফারহানকে বাঁচাতে হবে ডাক্তার, না হলে এই হসপিটাল এইখানে দাঁড়িয়ে থাকবে না।"

ওর ওই বেদনা যুক্ত, তীব্র হুঙ্কার শুনে সবাই কেঁপে ওঠে। শঙ্কর দেখে এ যে মহা মুশকিল, দানাকে শান্ত না করতে পারলে এখুনি ওই ডাক্তারের টুঁটি চিপে ধরবে। মহুয়া দৌড়ে এসে ওকে টেনে ধরে, "কি হয়েছে, পাগল হয়ে গেছ নাকি তুমি? ডাক্তার বাবু গুলি বের করে দিয়েছেন। বাহাত্তর ঘণ্টার আগে কিছু বলা যাবে না।"

নাকের পাটা ফুলে ওঠে, চোখ জ্বলে ওঠে, প্রচন্ড বেদনায় দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়, "বলা যাবে না মানে? বলতে হবে যে ফারহান উঠে দাঁড়াবে।"

মহুয়া ওকে জড়িয়ে ধরতেই দানা ভেঙ্গে পড়ে, "আমি জানি ফারহান তোমার কাছে কি। ওপর ওয়ালার ওপরে ভরসা রাখো সব ঠিক হয়ে যাবে।"

কিছুক্ষণ পরে চোখ মুছে দাঁতে দাঁত পিষে একবার সবার দিকে তাকিয়ে দেখে দানা। কাকে বিশ্বাস করা উচিত আর কাকে নয়, কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। নয়না আর বিমানের কোন দুরাভিসন্ধি নয়ত। জারিনা কেঁদে কেঁদে চোখ মুখ লাল করে ফারহানের আম্মিজানের কাঁধে মাথা দিয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে। পাশে নাফিসা, তাবিশকে জড়িয়ে ধরে নিস্তেজ হয়ে গেছে। শঙ্কর রমিজ সবার চোখে উৎকণ্ঠা। মহুয়ার চোখ জোড়া টলটল করছে, একটু টোকা দিলেই উপচে পরবে।

কোমরে গোঁজা পিস্তলে হাত চলে যায় দানার। দাঁতে দাঁত পিষে মহুয়ার কানে কানে বলে, "আমি একটু আসছি। ফারহানকে আই.সি.ইউ. তে নিয়ে যাওয়ার পরে তুমি বাড়ি চলে যেও।"

ওই রক্তচক্ষু দেখে মহুয়া বুঝতে পেরে ভয় পেয়ে যায়। হাত শক্ত করে ধরে বলে, "এখান থেকে একপা নড়বে না।"

দানা জোরে জোরে মাথা নাড়ায়, "আমার হাতে বাহাত্তর ঘন্টা নেই পাপড়ি। আজ রাতেই ওদের শেষ করে দেব।"

বাইরে তখন মুষলধারে বৃষ্টি, তাও সেই আকাশ ভাঙ্গা বৃষ্টি উপেক্ষা করে দানা বেড়িয়ে পড়ে। প্রকৃতি যেমন তান্ডবে মেতেছে, দানার মাথার রক্ত আজ তান্ডবে মেতেছে। মহুয়ার কাতর প্রার্থনা উপেক্ষা করে বেড়িয়ে পরে নয়না আর বিমানকে খুন করতে। ওর মাথায় খুনের নেশা, আজ রাতে নয়না বোস, বিমান চন্দ আর মোহন খৈতানের রক্ত পান না করা পর্যন্ত এই তান্ডবের নেশা থামবে না।

গাড়িতে উঠতে যাবে কি তখনি এক অজানা নাম্বার থেকে ফোন আসে ওর কাছে। ওইপাশের অজানা ব্যাক্তি ওকে প্রথমে জিজ্ঞেস করে, "তুই দানা?"

দানা গম্ভীর কণ্ঠে উত্তর দেয়, "হ্যাঁ।"

অচেনা কণ্ঠস্বর ওকে বলে, "আমি জানি ফারহানকে কে খুন করেছে। এক ঘণ্টার মধ্যে হিঙ্গলগঞ্জ ডকে একা চলে আয়।"

দানা কিছু বলার আগেই ফোন কেটে যায়। বারেবারে ওই নাম্বারে ফোন করে কিন্তু ওইপাশ থেকে কোন সারা শব্দ আসে না। এটা ঠিক কি হল ওর সাথে? বিমান আর নয়না আবার নতুন কোন চাল খেলছে? একা আসতে বলেছে মানে ওকে এইবারে ওকে মারার চক্রান্ত। পিস্তল দুটি ভালো ভাবে পরীক্ষা করে দেখে নেয়, চার খানা গুলি ভর্তি ম্যাগাজিন পকেটে। একবার ভাবে বাকিদের জানিয়ে দেবে, কিন্তু একাই মোকাবিলা করতে চায় সবার সাথে।




********** পর্ব তেরো সমাপ্ত **********
Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)