Thread Rating:
  • 24 Vote(s) - 3.17 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
চোরাবালি (কালেক্টেড)
#61
যাক, দ্বিধা কাটিয়ে পাপবোধ দূরে রেখে অভি আর লেখা পুনরায় স্বাভাবিক ছন্দে ফিরলো। এইজন্যই বলে নিশ্চুপ থাকলে দূরত্ব বাড়ে বই কমে না। 
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#62
(08-08-2020, 07:41 PM)Mr Fantastic Wrote: যাক, দ্বিধা কাটিয়ে পাপবোধ দূরে রেখে অভি আর লেখা পুনরায় স্বাভাবিক ছন্দে ফিরলো। এইজন্যই বলে নিশ্চুপ থাকলে দূরত্ব বাড়ে বই কমে না। 

আসলে এগুলো কখনো কখনো হয়ে যায়
কার দোষ আর কার নয় সেটা কেউ দেখে না আর উচিত ও নয়
একটা গোপন কথা ফাঁস করছি
আমার নিজের দাদার স্ত্রী মানে আমার বৌদি কে একবার জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খেয়েছিলাম
একদম সন্ধ্যা রায় এর মতো দেখতে
আমার পিঠে একটা ঘুসি মেরে হাস্তে হাস্তে চলে গেছিলো
কিন্তু আমরা কেউ কারো বিশ্বাস ভঙ্গ করিনি


Heart
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
#63
পর্ব তিন। সানাইয়ের সুর (#6-#16)

বাড়িতে পা রাখা মাত্রই, ঝন্টুর প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হল, “একটা আইল্যাস কিনতে এত দেরি লাগে নাকি?”
অভি কিছু উত্তর দেওয়ার আগেই, যে মেয়েটা মনামিকে সাজাতে এসেছিল, সে লেখার উদ্দেশ্যে বলে, “বাপরে বাপ, তোরা কি আইল্যাস একেবারে বানিয়ে আনলি নাকি রে?”
লেখা হেসে ফেলে মেয়েটার তাড়াহুড়ো দেখে, “পারি না বাবা, এই নে তোর আইল্যাস।”

মেয়েটার সাথে চোখাচুখি হতেই চোখ আটকে গেল অভির, ভীষণ উজ্জ্বল দুটো চোখ, চোখের মণি হাল্কা নীলচে রঙের। দেহের গড়ন একটু গোলগাল, তবে ভারিও বলা চলে না। পরনে একটা নীল রঙের চাপা শারট যার উপরের দুটো বোতাম খোলা, অনায়াসে বোঝা যায় যে জামার বাঁধনে হাঁসফাঁস করছে দুই নিটোল স্তন। কোমর একদম সরু না হলেও তবে দুই ভারি নিতম্বের তুলনায় একটু সরু। পেটের সাথে যেভাবে জামাটা লেপটে গেছে, তাতে নরম গোলাকার পেটের আকার অবয়াব ভালো ভাবেই ফুটিয়ে তুলেছে। লেখা অথবা মনামির মতন অতটা ফরসা নয়, তবে উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ ত্বক। চুল মনে হয় খাটো, বুঝতে পারা গেল না কারন মাথার ওপরে চুড়ের মতন করে একটা রাবার ব্যান্ড দিয়ে বাঁধা। পরনের কালো জিনস একদম স্কিন টাইট কোমর থেকে গোড়ালি, পুরো অঙ্গটাকেই ঢেকে রেখেছে ঠিকই কিন্তু অনেক কিছুই ফুটিয়েও তুলেছে সেই সাথে। যে ভাবে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে এসেছিল, অভির মনেই হয়েছিল সত্যি এক ঝড়, হাঁটার তালে এক তান্ডবের ছন্দ ছিল।

মেয়েটা লেখাকে নিয়ে একপ্রকার টানতে টানতে মনামির ঘরে ঢুকে যাওয়ার পর, ঝন্টু অভির দিকে দেখে ভুরু নাচিয়ে বলে, “ঝড় দেখলি?” বলেই হেসে ফেলে।
অভি জিজ্ঞেস করে, “এই ঝড়টা কে?”
ঝন্টু উত্তর দেয়, “আরে লেখার বান্ধবীরে আমার ভীষণ পেয়ারের শালি, দময়ন্তী।” অভির পাশে দাঁড়িয়ে কানেকানে বলে, “তিখি পিস, তোর টাইপের নয়।” বলেই হেসে ফেলে।
অভিও ভুরু নাচিয়ে হেসে ফেলে, “ও আচ্ছা বুঝলাম, তাহলে কি তোর টাইপের পিস নাকি?”
ঝন্টু চোখ টিপে হেসে বলে, “একদম ঠিক।”

এর মাঝে ফোন এলো যে, সোনারপুর থেকে শিতাভ্রের বাড়ির লোক বেড়িয়ে পড়েছে। তড়িঘড়ি করে ঝন্টু আর অভি বেড়িয়ে গেল। শিতাভ্রর বাড়ি থেকে লোকজন এসে গেল কয়েক ঘন্টার মধ্যেই, কিন্তু তখন মনামিকে সাজিয়ে আনা হয়নি। এই নিয়ে অভি ফোনে একবার দিদিকে ঝেড়ে দিল, এতক্ষন কি সাজ। শুধু ত আশীর্বাদ, এখন বিয়ে বৌভাত বাকি আছে। ওর বকাঝকার ফলে শেষ পর্যন্ত মনামিকে নিয়ে লেখা আর দিয়া চলে আসে। এর মাঝে যে দময়ন্তীকে চোখে পরেনি তা নয়, জিনস বদলে একটা তুঁতে রঙের শাড়ি পড়েছিল, শাড়িতে ভারি সুন্দরী লাগছিল ওকে। পিঠের ওপরে সাপের মতন দুলছে বেনুনিটা, কোমর ছাপিয়ে একদম নিতম্বের কাছে, তখন বুঝতে পারে যে সত্যি মেয়েটার মাথায় চুল আছে। চলনে ভীষণ এক মত্ততা, মুখে সব সময়ে যেন খই ফুটছে। বাড়ির সবার সাথেই বেশ ভালো ভাবেই মিশে গেছে দময়ন্তী যেন এই বাড়ির একজন। বরের বাড়ির লোকেদের আপ্যায়ন করা, মনামির পাশে পাশে থাকা, মাঝে মাঝে বড়মার কাজেও সাহায্য করা। হয়ত দময়ন্তী অনেক বেশি লোকজনের সাথে মেলামেশা করে তাই ওর স্বভাবটাই এই রকম। কাজের মাঝে মাঝে অভির সাথে চোখা চুখি হলে একটু হাসি ছাড়া বিশেষ কিছুই আদান প্রদান হয় না।  
ঝন্টুকে খাবারের দিকের তদারকি করতে দেওয়া হয়েছিল, তাও অভিকে মাঝে মাঝেই এদিক ওদিকে দৌড়াতে হয়। সারাদিন একটা ঝোড়ের মধ্যেই কেটে যায় অভির, দুই বাড়ির একসাথে আশীর্বাদ বলে কথা। আত্মীয় সজ্জন খেয়ে দেয়ে, সবাইকে বিদায় করতে করতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়ে যায়। ক্যাটারারের টাকা মেটান, যে বাড়ি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল তাদের টাকা মেটান ইত্যাদি। ভাড়া বাড়িটা প্রায় ফাঁকা হয়েই এসেছিল, অভি, ঝন্টু আর পাড়ার কয়েকজন ছেলেরা ছাড়া কেউ ছিল না। একটা সিগারেট ধরিয়ে টান দিয়ে একরাশ ধোঁয়া ছাড়তেই দিদির ডাক আসে। অভি জিজ্ঞেস করাতে বলে যে, দময়ন্তীকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে হবে, ঝন্টুর দেখা নেই। অভি, ঝন্টুকে একথা বলতেই, সে তড়িঘড়ি করে কোনমতে সিগারেট শেষ করেই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

বেশ কিছু পর আবার মনামির ফোন, “কি রে তোকে বাড়িতে আসতে বললাম, তুই এখন এলি না?”
অভি উত্তর দেয়, “কেন ঝন্টুকে পাঠালাম ত?”
মনামি একটু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে, “আমি তোকে ডেকেছিলাম, ঝন্টুকে নয়।”

সিগারেট ফেলে দিয়ে বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেয় অভি। বাড়িতে ঢুকে দেখে যে ঝন্টু তখন মুখ কাচুমাচু করে একটা বালতির মধ্যে পা ডুবিয়ে বসে। সেই দেখে হেসে ফেলল অভি, জিজ্ঞেস করাতে জানতে পারল যে দৌড়ে আসতে গিয়ে পা মচকে গেছে, ভীষণ ব্যাথা। ঝন্টুর সাথে চোখেই কথা হয়ে গেল, আর দৌড়া ওই ভাবে, শালা একটু ধিরে সুস্থে আসতে কি হয়েছিল, কেউই ত আর পালিয়ে যাচ্ছিল না। মনামি অভিকে অনুরোধ করে দময়ন্তীকে বাড়ি পৌঁছে দিতে। অভি একবার দময়ন্তীর দিকে তাকিয়ে দেখল, শাড়ি পরিহিত, হাতে ব্যাগ নিয়ে বাড়ি ফেরার অপেক্ষায়। পারতপক্ষে বিকেলটা একাই থাকতে চাইছিল, একদম একা, দিদির দিকে একবার ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে দেখল।

মনামি ওকে বলে, “ঝন্টুর পা মচকে গেছে, তুই দময়ন্তীকে বাড়িতে ছেড়ে দিয়ে আয়।”
অভি উত্তর দেয়, “সকাল থেকে অনেক দৌড়ঝাপ করেছি আর পারছি না, অন্য কাউকে বল।”
মনামি অভ্যেস বশত অধিকারের জোরেই অভিকে বলে, “অন্য কেউ নেই, তুই যা।”
চোয়াল শক্ত করে দিদির দিকে তাকিয়ে নিচু গলায় বলে, “হ্যাঁ হ্যাঁ, বুঝতেই পারছি, আমি’ত এখন ছাই ফেলতে ভাঙ্গা কুলো, তাই না।” বুক ভরে শ্বাস নিয়ে দময়ন্তীর দিকে দেখে ইশারায় আসতে অনুরোধ করে।

বাক্যের অন্তর্নিহিত অর্থ আশেপাশের কেউ বুঝতে না পারলেও মনামির কানে কথাটা খুব বেজেছিল। ছলছল চোখে ভাইয়ের দিকে এক ভাবে তাকিয়ে ছিল, যতক্ষণ না দময়ন্তী অভির বাইকের পেছনে উঠে বসে।

ওদের বিদায় জানাতে লেখা এগিয়ে আসে। দময়ন্তী মুখ চেপে মুচকি হেসে লেখাকে কানে কানে বলে, “হ্যাঁ রে তোর দেওরটা ত ভীষণ মুখচোরা মানুষ পরিচয়টা ত করিয়ে দিবি না হলে এতটা রাস্তা যাবো কি করে?”
অভি নিচু কণ্ঠে নিজের পরিচয়ে দিয়ে বলে, “লেখার দেওর, এর বেশি আর কি।”
উত্তরটা দময়ন্তীর খুব খারাপ লাগে, এতটা কাষ্ঠ উত্তর ঠিক আশা করেনি কারুর কাছে, “সেটা ত মিস্টার চ্যাটারজির পরিচয়, এখন কিন্তু অভিনন্দনের পরিচয় বাকি।”
বুক ভরে শ্বাস নিল অভি, “বাকিটা অন্য কোনদিন।”
অভি বাইকে স্টারট দিয়ে একবার পেছনে তাকিয়ে দেখে, মনামি তখন দাঁড়িয়ে দরজায়, ওকে দেখে আলতো হাত নাড়ায়।
দময়ন্তী আর সেটা দেখেনি। বাইক ছাড়তেই অভিকে বলে, “মধ্যমগ্রাম থেকে বারাসাত, অন্তত এই টুকু পথের মধ্যে বাকিটার কিছুটা ত জানা যেতেই পারে।”
অভি বুঝতে পারল, মেয়েটা অনেক কথা বলতে পারে, “হ্যাঁ, তা সত্যি।” এই বলে নিজের পরিচয় দেয়, নামধাম, কোথায় পড়াশুনা করেছে ইত্যাদি।
দময়ন্তী খিলখিল করে হেসে ফেলে, “ইন্টারভিউ দিচ্ছ নাকি তুমি?”
অভি কিছুক্ষন চুপ থাকার পর উত্তর দেয়, “আর কি জানতে চাও?”
দময়ন্তী জিজ্ঞেস করে, “তুমি বরাবর এত চুপচাপ মানুষ নাকি?”
অভি চাপা কণ্ঠে উত্তর দেয়, “না মানে...” একটু থেমে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা ঝন্টুর হটাত পা মচকালো কি করে বলতে পারো?”
দময়ন্তী খিলখিল করে হেসে ফেলে, “ওর কথা আর বল না, বড্ড লাফালাফি করছিল ব্যাস আর কি পা মচকে গেল।”
অভি মনে মনে ব্যাঙ্গাত্মক এক হাসি হাসে। বিয়ে বাড়ি থেকে বেরনোর সময় ঝন্টু খুব লাফালাফি করছিল যে দময়ন্তীকে নিয়ে পৌঁছে দেবে। বিশেষ কোন ভাব্ব্যাক্তি না দেখিয়ে দময়ন্তীকে জিজ্ঞেস করে, “তোমার বান্ধবীর বর, তোমাকে ছেড়ে দিয়ে আসতে পারল না বলে তোমার মন খারাপ করল না?”
দময়ন্তী খানিক চুপ করে অভির কথাটা বুঝতে সচেষ্ট হয়, “ঠেস দিয়ে বলছ নাকি?”
অভি মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয়, “না না, ঠেস দিয়ে কেন বলতে যাবো, এমনি জিজ্ঞেস করছি।”
দময়ন্তী কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে যায়। খানিকক্ষণ চুপ থেকে প্রশ্ন করে, “তোমার কথা আগেও লেখার মুখে শুনছি, জানো।”
কথাটা শুনে ধাক্কা খায় অভি, “মানে?”
দময়ন্তী হেসে ফেলে, “অত চমকে যাওয়ার কিছু হয়নি, লেখা তোমার ব্যাপারে খুব একটা খারাপ কিছু বলেনি।” প্রমাদ গোনে অভি, বেশি কিছু খারাপ বলেনি অর্থাৎ, একটু কিছু নিশ্চয় বলেছে। দময়ন্তী হেসে বলে, “লেখা আর আমি সেই কলেজ থেকেই খুব ভালো বন্ধু। ওর বসিরহাটের বাড়িতে অনেকবার গেছি, আবার অনেকদিন ও আমার বাড়িতেই থেকে গেছে।”
অভি স্বস্তির শ্বাস নিয়ে ছোট একটা উত্তর দেয়, “আচ্ছা”
দময়ন্তী অভির কাঁধের ওপর ভর দিয়ে কানের পাশে এসে ফিসফিস করে বলে, “তুমি নাকি বড্ড শয়তানি কর লেখার সাথে।”
অভি প্রমাদ গোনে, বসিরহাটের সেই রাতের কথা কি লেখা বলে দিয়েছে নাকি? কোন মতে বাইক সামলে, ঢোক গিলে জিজ্ঞেস করে, “কি এমন বলেছে শুনি?”
আচমকা এই ভাবে বাইক টালমাটাল হতেই দময়ন্তী খিলখিল করে হেসে ফেলে, “আরে বাবা তুমি সব কথায় এত টেন্সান নাও কেন বুঝতে পারি না। বান্ধবীর দেওর একটু রঙ্গ রসিকতা করার অধিকার এমনি থেকেই চলে আসে বুঝলে।”
অভি বুঝে যায়, সেই রাতের কথা কেউই জানে না, কিন্তু তখন ওর কারুর সাথে রসিকতা করার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে ছিল না তাই চুপ করে যায়। কিছুক্ষন চুপচাপ থাকার পর জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা একটা কথা বল, তুমি কি বরাবর এত দুরন্ত নাকি?”
দময়ন্তী হেসে ফেলে, “যা বাবা, আমার দুরন্তপনার কি এমন দেখলে যে এই কথাটা বললে?”
অভি উত্তর দেয়, “সেই তুমি বাড়ি ঢোকার পর থেকেই দেখলাম বেশ উড়ে বেড়াচ্ছ। বাড়ির সবার সাথে দিব্বি মিশে গেলে, দেখে মনেই হচ্ছিল না যে তুমি এই বাড়ির কেউ নও।”
দময়ন্তী একটু অভিমান করে উত্তর দেয়, “ও আচ্ছা এই ব্যাপার। আচ্ছা বাবা এরপরে একদম চুপ থাকবো, একদম স্পিক-টি-নট।”
অভি মাথা নাড়ায়, “না না আমি সেটা বলিনি।”
অভিমানী দময়ন্তী মুখ গোমড়া করে বলে, “হ্যাঁ হ্যাঁ জানা আছে, না বললেও বুঝতে পারি, আমার ওইভাবে সবার সাথে মেলামেশা তোমাদের ভালো লাগেনি এটাই বলতে চাইছ ত।”
কথাটা শুনে অভি ভীষণ বিব্রত বোধ করে, “না না আমি সেইভাবে বলতে চাইনি।”
একটুখানি অভিমানী গলায় বলে, “তাহলে কি বলতে চাইছ তুমি? আমি খুব বাচাল, গায়ে পরে আলাপ করতে যাই এই’ত?”
অভির বুঝতে বাকি রইল না যে ওর কথার ধরনটা ঠিক হয়নি, কিন্তু ঠিক কোথায় ভুল হল সেটাও বুঝতে পারল না। হয়ত বুকের মধ্যে কিছু একটা হারিয়ে যাওয়ার করুন সুরটা ভীষণ ভাবে ওর গলায় প্রকাশ পেয়ে গেছে। বেশ কিছুক্ষন দুইজনেই চুপ, শুধু বাইকের একটানা ভটভট আওয়াজ।
কিছুপর দময়ন্তী বলল, “লেখার ননদের বিয়ে তাই, না হলে অন্য কোথাও গেলে কি আর আমি ওইভাবে মেলা মেশা করি নাকি? বাকি জায়গায় ত যাও, সাজিয়ে দাও তারপর টাকা নিয়ে বেড়িয়ে এসো, কাজ শেষ।”
অভি ছোট একটা উত্তর দেয়, “আচ্ছা বেশ।”
দময়ন্তী কাঁধ দিয়ে আলতো করে অভির পিঠের ওপর ধাক্কা মেরে বলে, “তুমি সারাদিন এত চুপচাপ ছিলে কেন বলত? দিদির বিয়ে হয়ে যাবে তাই খারাপ লাগছে?”

অভি মাথা দোলায়, দিদির আশীর্বাদ হয়ে গেল, কয়েকদিন পরেই বিয়ে করে অনেক দূরে চলে যাবে। যদিও সারাদিন কাজের ব্যাস্ততায় সেই ব্যাথা ঢাকতে সক্ষম হয়েছিল, কারুর চোখেই ওর এই ব্যাথা ধরাও পরেনি হয়ত। কিন্তু এই পেছনে বসা মেয়েটার চোখে সেই ব্যাথা কিভাবে ধরা পরে গেছে সেটাই বুঝে উঠতে পারল না। হটাত করেই দময়ন্তীকে খুব কাছের মানুষ বলে মনে হল অভির।

অভির পিঠের ওপর ঝুঁকে খুব আস্তে আস্তে কানে কানে বলে, “অভিনন্দন, মেয়েদের এটাই ব্যাথার জায়গা। চেয়েও অনেক সময়ে পুরানো সম্পর্ক গুলোকে ঠিক সেইভাবে রাখতে পারে না আবার না চেয়েও অনেক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হয়।”

অভি চুপ করে যায় কথাটা শুনে, বুঝতে পারে দিদির ব্যাথা, কিন্তু অবুঝ এই মন টাকে শান্ত করাবে কি বলে। বাকিটা রাস্তা দুইজনেই চুপ করে থাকে। যশোর রোডের মোড় আসতেই অভি দময়ন্তীকে বাড়ির রাস্তা জিজ্ঞেস করাতে উত্তর দেয় যে নবপল্লীতে নামিয়ে দিলেই হবে। দময়ন্তীকে ওর বাড়ির সামনেই নামিয়ে দেয়। বাড়ির ভেতর যেতে অনুরোধ করে কিন্তু কাজের আছিলায় সেদিন আর ওর বাড়িতে যায় না। বাইক নিয়ে বড় রাস্তায় পড়তেই মনে হল বাড়িটা কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা হয়ে যাবে। একদম ইচ্ছে করছিল বাড়িতে ফেরার, মনে হচ্ছিল একবার সোজা মছলন্দপুর চলে যায়। আম বাগান যদিও বিক্রি হয়ে গেছিল, তাও সেই আম বাগানে একবার ফিরে যায়।
Like Reply
#64
পর্বটা কতটা যে ভালো লাগল বলে বোঝানো যাবে না। দময়ন্তী আর অভিকে নিয়ে কিছু একটা আশা করা যেতেই পারে। 
Like Reply
#65
Update next
Like Reply
#66
Update update !
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply
#67
Update. Please...
Like Reply
#68
কবে আসবে পরের পরবর্তী অংশ?
Like Reply
#69
পর্ব তিন। সানাইয়ের সুর (#7-#17)
পুজো শেষ, আশীর্বাদ শেষ, এবারে বিয়ের কেনাকাটা পুরোদমে শুরু হয়ে যায়। বড় জামাইবাবু, নীলাদ্রি মুম্বাই ফিরে গেলেও, বড়দি শর্বাণী তার ছেলে তিতাসকে নিয়ে থেকে যায়, একেবারে বিয়ের পরেই মুম্বাই ফিরবে। রোজ রাতে খাওয়ার পর জমিয়ে আড্ডা বসে, মনে হয় সেই পুরান দিন গুলো আবার ফিরে এসেছে বাড়িতে। ছোট বেলায় শর্বাণীর মধ্যে যে একটা বড় দিদি গোচের ভাব ছিল, যার জন্য মনামি আর অভির সাথে একটা দুরত্ব ছিল, সেই গুলো কাটিয়ে এই কয়দিনে তিন ভাই বোনের মধ্যে এক নতুন সম্পর্কের বন্ধন গড়ে ওঠে। মাঝে মধ্যেই লেখাও দলে জুটে যায়, আর তখন মেয়েদের দল ভারি হয়ে যায়।
সেদিন কোন এক কাজে অভির বাড়ি ফিরতে বেশ রাত হয়ে যায়। অন্যদিনের মতন শর্বাণীদি ভাতের থালা হাতে, পুত্র তিতাসকে খাওয়াতে ব্যাস্ত।
অভি চোখ টিপে হেসে ভাগ্নেকে বলে, “একা একা খাচ্ছিস লজ্জা করে না?” বলেই বড়দির কাছে গিয়ে আবদার করে, “আমিও খাবো।”
শর্বাণী মুচকি হেসে এক গাল ভাত অভিকে খাইয়ে দেয়, “এই নে, গেল, আমার গুষ্টির পিন্ডি চটকে গেল” বলেই হেসে ফেলে।
মনামি কাছে পিঠে কোথাও ছিল। বড়দির মুখে “গুষ্টির পিন্ডি” কথাটা শুনে দৌড়ে এসে আবদার করে, “ও একা কেন, আমাকেও দে।” বলেই হাঁ করে।
দীপাদেবী মাথা নাড়িয়ে হেসে বলেন, “দাঁড়া তাহলে আরো একটু ভাত নিয়ে আসি।”
ভাগ্নে তিতাস হাঁ করে একবার মাকে দেখে, একবার মাসির দিকে তাকায় একবার মামার দিকে তাকায়। অভিকে জিজ্ঞেস করে, “এইটা কেমন খাবার, মামু?”
এই “গুষ্টির পিন্ডি”র পেছনের কাহিনী মনে পড়তেই শর্বাণীর সাথে সাথে মনামির চোখ দুটো ভরে আসে। তখন শর্বাণী সবে কলেজ যেতে শুরু করেছে, আর মনামি আর অভি তখন স্কুলের গন্ডি পার হয়নি। রোজ সকালে বাড়িতে তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ লেগে যেত। প্রনবেশ বাবুর অফিস, দুই ছেলে মেয়ের স্কুল, বড় মেয়ে কলেজ যাবে। দীপাদেবী কিছুতেই ছেলে মেয়েকে ভাত না খাইয়ে পাঠাবে না, আর সকাল বেলাতে ভাত খাওয়া নিয়ে মনামি আর অভির ভীষণ ভাবে অরুচি। সবাই কেমন পাউরুটি খেয়ে যায়, কিন্তু দীপাদেবীর শাসন, ভাত না খেলে গায়ে লাগে না। রুটি, পাউরুটি টিফিনের খাবার, কিন্তু সকালে ভাত খাওয়া অনিবার্য। শেষ পর্যন্ত ভার পড়ত শর্বাণীর ওপর। শেষ পর্যন্ত একটা থালায় ভাত মেখে রাগে গজগজ করতে করতে দুই ভাই বোনের মুখের মধ্যে ভাতের গ্রাস ঠেসে দিত আর বলত, “আমার গুষ্টির পিন্ডি চটকে খা। তোদের জ্বালায় একদিন ও ঠিক ভাবে সেজেগুজে কলেজ যেতে পারি না।” খেতে না চাইলেই, এঠো হাতেই ভাই বোনের গালে সপাটে চড়। একটু বড় না হয়ে যাওয়া পর্যন্ত প্রায় প্রত্যেকদিন ওদের মুন্ডপাত করতে করতে বড়দি ওদের খাইয়ে দিত। শেষ কবে ভাই বোন কে এই ভাবে খাইয়ে দিয়েছিল সেটা মনে পরেনা, তবে সেদিন রাতের “গুষ্টির পিন্ডি” স্বাদ ভীষণ ভাবেই মিষ্টি ছিল।
বেশ কিছুদিন পর এক রাতে, প্রনবেশ বাবু আর অভি মিলে অতিথিদের তালিকা তৈরি করতে ব্যাস্ত ছিল। তখন কথা উঠল ফাল্গুনীর। এই আশীর্বাদের ঝামেলায় আর বিয়ের কেনা কাটার ঝামেলায় ফাল্গুনীর কথা কারুর মনে ছিল না। প্রনবেশ বাবু অভিকে বললেন যে একবার ফাল্গুনীর সাথে ফোনে কথা বলে বিয়ের নিমন্ত্রন পত্র যেন দিয়ে আসে। দশ বছর আগে বড়দির বিয়েতে ক্ষনিকের জন্য দেখা হয়েছিল তারপরে কোনদিন কথাবার্তা অথবা আলাপ পরিচিতিও হয়নি। অভি এই ব্যাপারে একটু ইতস্তত করছিল কিন্তু পাপার আদেশ অমান্য করতে পারেনি। বড়দির বিয়ের সময়ে এই সবের কোন ঝামেলা ছিল না। দেবাশিস বাবুকে তখন বড়মা ফোনেই নিমতন্ন করেছিলেন আর সেই সাথেই তখন ফাল্গুনী এসেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে, দেবাশিস বাবু আর ফাল্গুনীর মধ্যের সমীকরণ অনেক বদলে গেছে, তাই অভিকেই যেতে হবে নিমতন্ন করার জন্য। শেষ পর্যন্ত ইতস্তত ভাব কাটিয়ে, এক দুপুরে ফোন করল ফাল্গুনীকে। ফাল্গুনী প্রথমে চিনতে পারেনি অভিকে, না চেনার কথা কোনদিন ফোনে আওয়াজ শোনেনি অভির।
অভি ফোন করে জিজ্ঞেস করে, “হ্যালো, ফাল্গুনী ম্যাডাম আছেন?”
ফাল্গুনী ওইপাশ থেকে প্রশ্ন এলো, “কে বলছেন?”
অভি উত্তর দেয়, “আমি অভিনন্দন চ্যাটারজি বলছি।”
ফাল্গুনী আশা করেনি যে কোনদিন অভি তাঁকে ফোন করবে। একটু অবাক, খানিকটা ভীতি নিয়েই জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার হটাত করে ফোন করলে?”
ফাল্গুনী ম্যাডামের কণ্ঠের আড়ষ্ঠভাব কাটানোর জন্য স্মিত হেসে জবাব দেয়, “না মানে, দিদির বিয়ে তাই ফোন করলাম।”
ফাল্গুনী হেসে উত্তর দেয়, “ও আচ্ছা, বেশ ভালো। কবে বিয়ে? তুমি কেমন আছো, বাড়ির সবাই ভালো ত?”
অভি উত্তর দেয়, “হ্যাঁ, বাড়ির সবাই ভালো আছে। এই ডিসেম্বরেই বিয়ে। আজ বিকেলে কি বাড়িতে আছেন, তাহলে একবার যাবো।”
ফাল্গুনী বেশ উৎসুক হয়েই উত্তর দেয়, “হ্যাঁ হ্যাঁ, চলে এসো।” বলে নিজের ঠিকানা দেয়।
ফাল্গুনী ম্যাডামের বাড়িতে যাওয়ার আগে, বড়মা বললেন যে প্রথম বার ওদের বাড়িতে যাচ্ছে তাই হাতে করে কিছু নিয়ে যাওয়া উচিত। প্রণামীর জন্য প্রচুর শাড়ি কেনা হয়েছিল সেখান থেকে একটা দামী শাড়ি দিলেন। কিন্তু মুশকিল বাঁধল দেবযানীর জন্য, উঠতি বয়সের বর্তমান যুগের মেয়ে, ঠিক কি ধরনের জামা কাপড় পছন্দ হবে সেটা বলা মুশকিল, তাই দীপাদেবী বললেন যে দেবযানীর হাতে দুই হাজার টাকা দেয় আর বলে যেন নিজের পছন্দ মতন কিছু একটা কিনে নিতে।
যথা সময়ে, ঠিক সন্ধ্যের পরে অভি ফাল্গুনীর ফ্লাটে পৌঁছে যায়। কলিং বেল বাজানোর আগে ভীষণ বাধো বাধো ঠেকছিল অভির। সামনের দরজা যেন এক দুর্ভেদ্য দেয়াল, কত রকমের মানুষ, কত রকমারি সম্পর্কের বন্ধন। কখন আপনজন পর হয়ে যায় আর কখন অচেনা কেউ খুব আপন হয়ে যায়। এই দরজার ওইপাশের মানুষের সাথে অভির ঠিক কি ধরনের সম্পর্ক সেটাই ঠিক করে উঠতে পারে না। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে শেষ পর্যন্ত কলিং বেল বাজাল। ফাল্গুনী ম্যাডাম, দরজা খুলে স্মিত হেসে বেশ সমাদর করেই অভিকে ভেতরে আসতে বলেন। ফ্লাটটা বেশি বড় না হলেও বেশ ছিমছাম, সাজান গোছান।
সোফায় বসতে বলে অভিকে জিজ্ঞেস করেন, “তোমাকে সেই দশ বছর আগে শর্বাণীর বিয়েতে দেখেছিলাম।” বলে একটু হাসেন, যেন বলতে চাইছেন যে না দেখা দিলেই ভালো হত।
নিমন্ত্রিন পত্র ফাল্গুনী ম্যাডামের দিকে এগিয়ে দিয়ে উত্তর দেয় অভি, “হ্যাঁ। আগামী ডিসেম্বরে দিদির বিয়ে, বিয়েতে বড়মা আর পাপা কিন্তু বার বার করে আসতে বলেছেন আপনাদের।”
নিমন্ত্রন পত্রটা হাতে নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করে নিচু গলায় বললেন, “যাওয়ার ইচ্ছে ত খুব আছে, কিন্তু ঠিক বলতে পারছি না।”
অভি ফাল্গুনী ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে দেখল, ঠোঁটে হাসি কিন্তু চোখে ভাষায় এক অব্যাক্ত বেদনা। এই বাধার আসল কারন অভির বুঝতে বিন্দু মাত্র কষ্ট হল না, “আপনি সে নিয়ে চিন্তা করবেন না, সেসব বুঝেই বড়মা আপনাদের বিয়েতে আসতে বলেছে।”
স্বস্তির এক হাসি হেসে উত্তর দেন ফাল্গুনী, “তাহলে নিশ্চয় যাবো। আত্মীয় সজ্জন বলতে সেইভাবে কারুর সাথেই কোন বিশেষ সম্পর্ক নেই, আলাপ পরিচিতিও নেই। দেবীর ভালোই লাগবে।”
দেবী অর্থাৎ দেবযানী, সম্পর্কে অভির সৎ বোন, একটু ইতস্তত করে শেষ পর্যন্ত জিজ্ঞেস করে, “দেবযানী কোথায়, দেখছি না যে?”
ফাল্গুনী উত্তর দেয়, “টিউসানি গেছে, এই একটু পরেই চলে আসবে। সামনেই পরীক্ষা, তার ওপর আবার মেডিকেল এন্ট্রান্স এর জন্য আলাদা করে পড়াশুনা, খুব চাপ।” বলেই হেসে ফেলেন।
মাথা দোলায় অভি, “হ্যাঁ তা সত্যি।”
আবার কিছুক্ষন কারুর মুখে কোন কথা নেই, দুইজনেই মুক হয়ে প্রশ্ন আর উত্তর হাতড়ে বেড়ায়। এইভাবে চুপ করে বসে থাকতে অভির খুব খারাপ লাগে তাই বিদায় চায় অভি, “আজ তাহলে আসি, বিয়েতে আসবেন কিন্তু।”
ফাল্গুনী প্রচন্ড বিব্রত বোধ করে, “আরে না না, এত তাড়াতাড়ি কেন চলে যাবে। দেবী একটু পরেই চলে আসবে। একে বারে ডিনার করেই যাবে।” বলে রান্না ঘর থকে একটা ট্রেতে রকমারি খাবার নিয়ে উপস্থিত।
অভি একটা মিষ্টি তুলে খেতে খেতে হেসে ফেলে, “না না ডিনার না হয় অন্য দিন করব।”
ফাল্গুনী হেসে বলে, “আচ্ছা তোমার কথা বল, আজকাল কি করছ?”
অভি একটু হসে বলে, “এখন কিছু করছি না, এই দিদির বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর চাকরি করব।”
ফাল্গুনী একটু অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করে, “তোমার মতন এত মেধাবী ছেলে এখন বসে?” মাথা নাড়িয়ে বলে হেসে, “এটা একদম মানতে পারলাম না।”
অভি হেসে ফেলে, “না না ব্যাপারটা সে রকম নয়, আসলে কোলকাতার বাইরে যাবো না তাই।”
ফাল্গুনী বলে, “ওহ আচ্ছা। আমার একটাই মেয়ে, তবে ঠিক করে নিয়েছি যেখানে যেতে চায় যেতে পারে, ঘরের মধ্যে ধরে বেঁধে রাখব না।”
অভি মাথা দোলায়, “সেটা আলাদা ব্যাপার।”
কিছু পরেই কলিং বেল বেজে ওঠে। ফাল্গুনী অভিকে একটু হেসে বললেন, “দেবী এসে গেছে, দেখো তোমাকে দেখে খুব অবাক হয়ে যাবে।”
অভিও একটু হাসি দিল। দশ বছর আগের দেখা দেবযানী আর দরজা দিয়ে যে মেয়েটা ঢুকল সেই দেবযানীর মধ্যে আকাশ পাতাল তফাত। সাজগোজ চলন বলন অতি আধুনিক। উদ্ভিন্ন যৌবনা তরুণী, ঘাড় পর্যন্ত ঢেউ খেলান চুল, গায়ের রঙ ফরসার দিকেই। পরনে একটা কালো রঙের জিনসের ক্যাপ্রি আর গোলাপি ক্রপ টপ, কানে হেডফোন গোঁজা, পিঠে ব্যাগ।
বসার ঘরে বসা অভিকে ঠিক খেয়াল করেনি দেবী, তাই ঘরে ঢুকেই মায়ের ওপর আদুরে আবদার করে উঠল, “আমার কিন্তু একটা হাইহিল বুট চাই এইবার।”
মেয়ের হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে হেসে ফেলে, “এইত কয়েকদিন আগেই একটা বুট কিনলি।”
মায়ের গলা জড়িয়ে আদুরে কণ্ঠে বলে, “ওটা ত জাস্ট এঙ্কেল পর্যন্ত, স্মিতা থাই হাই বুট কিনেছে আমারও চাই, প্লিজ মা।”
ফাল্গুনী মেয়েকে হেসে বলে, “আচ্ছা বাবা সে না হয় হবে। এখন দেখ ত কে এসেছে, তোর দাদা, অভিনন্দন।”
অভি এতক্ষন দেবীর আর ফাল্গুনীর দিকেই তাকিয়ে ছিল। অভির দিকে দেখতেই নিমেষের মধ্যে ঠোঁটের হাসিটা মিলিয়ে গেল। আলতো মাথা দুলিয়ে অভিবাদন জানাল, “হাই।” চোখে বিষাক্ত এক চাহনি, এইভাবে হটাত করে কেন এসেছে।
দেবীর চোখের এই চাহনি অভিকে ভীষণ ভাবে নাড়িয়ে দেয়, আজকের এই দুই জনের মাঝের দুরত্ত্বের কারন অভিনন্দন নয়। যার কারনে এই দুরত্ত্ব সে এই দুই জনের বর্তমানের ধারে কাছেও নেই। অভি ম্লান হেসে দেবীকে অভিবাদনের প্রত্যুত্তরে মাথা দুলিয়ে বলে, “হাই, কেমন আছো?”
ভালো মন্দ কোন উত্তর না দিয়েই নিজের ঘরের মধ্যে ঢুকে পরে দেবী। পরিস্থিতি সামাল দিতে ম্লান হেসে অভির দিকে দেখে বললেন ফাল্গুনী, “এই পড়া থেকে এসেছে ত তাই একটু টায়ার্ড। তুমি বস আমি এখুনি আসছি।”
অভির বুঝে যায় বেশিক্ষন আর বসা ঠিক নয় তাই বলে, “না, আজকে না হয় আসছি পরে আবার দেখা হবে।”
ফাল্গুনী মাথা নাড়িয়ে বলেন, “না না তুমি বস, এখুনি যাবে কোথায়?” এই বলে দেবীর ঘরে ঢুকে গেলেন।
বেশ কিছু পরে ফাল্গুনী বেড়িয়ে এলেন দেবীর রুম থেকে, সাথে দেবী। বাইরের কাপড় বদলে বাড়ির কাপড়, তাতেও আধুনিকার ছোঁয়া স্পষ্ট। জিনসের শর্টস আর টি শার্ট। মোবাইল তখন হাতে, পুরোদমে বন্ধুদের সাথে নিশ্চয় মেসেজিং চলছে। অভির দিকে দেখে স্মিত এক হাসি দিয়ে একটা সোফায় বসে পরল। অভি কি বলবে, কি ভাবে আলাপ শুরু করবে কিছুই ভেবে পায় না। দেবী মাঝে মাঝেই মোবাইলে কি সব টাইপ করতে করতে ফিক ফিক করে হেসে চলেছে। ফাল্গুনী মেয়েকে একটু ঠেলে ইশারা করেন মোবাইল ছেড়ে অভির সাথে কথা বলতে।
বেশ কিছু পরে অভি প্রশ্ন করে, “তুমি মেডিকেলের জন্য তৈরি হচ্ছ?”
মোবাইল থেকে মাথা না উঠিয়েই উত্তর দেয় দেবী, “হুম।”
অভি বলে, “বিয়েতে এসো, ভালো লাগবে।”
মোবাইল থেকে চোখ উঠিয়ে তীক্ষ্ণ কণ্ঠে প্রশ্ন করে, “যাওয়াটা কি খুব জরুরী?”
ফাল্গুনী মেয়ের এহেন উত্তর শুনে একটু আহত হন। দেবীকে মৃদু ধমক দিয়ে বলেন, “এইভাবে কারুর সাথে কথা বলতে নেই, দেবী।”
মাথা নাড়িয়ে বাঁকা হেসে উত্তর দেয়, “আমার ওপর রাগ করে, অভিমান করে কি লাভ বল।”
দেবী আহত কণ্ঠে উত্তর দেয়, “রাগ অথবা অভিমান তার ওপরেই হয় যাকে আমরা চিনি। আপনাকে ত ঠিক ভাবে ...”
দেবীর কথাটা ফাল্গুনী কেড়ে নিয়ে আবার মৃদু ধমক দেন, “আচ্ছা, চেনা পরিচিতি ত হয়েই গেল এখন এইভাবে ধরে বসে থাকলে হবে।”
অভি হেসে দেবীকে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা বল, তোমার রাগ কমানোর জন্য কি চাই?”
এটা শুনে দেবীও হেসে ফেলে, “বেশ দারুন একটা লেহেঙ্গা চাই, দিদির বিয়ে বলে কথা।”
পরিবেশ সামান্য হতে বেশি দেরি আর হয় না, দেবীও বুঝে যায় যে দোষ আসলে কারুর নয়, শুধু মাত্র বিধির লিখনে এই দুরত্ত্ব। সেদিন অভি অবশ্য রাতের খাওয়ার জন্য থাকেনি বাড়ি ফিরে এসেছিল। তবে কিছুদিন পরে দেবীকে নিয়ে ফাল্গুনী ম্যাডামকে নিয়ে গড়িয়াহাট গিয়ে একটা দামী লেহেঙ্গা কিনে দেওয়া হয়েছিল। অভি নিমন্ত্রন করে আসার পর অবশ্য দীপাদেবী ফাল্গুনীকে ফোন করেছিলেন এবং সেই সাথে বলেছিলেন বিয়ের দিন সকালেই চলে আসতে। সত্যি, জীবন কত অদ্ভুত, হিসেব নিকেষ করে, অঙ্ক কষে পথ চলা যায় না, গা ভাসিয়ে দিতে হয় এই নদীতে। স্রোতের সাথে চলাটাই বাঞ্ছনীয়, শুধু মাত্র কান্ডারির মতন শক্ত হাতে দাঁড় ধরে রাখতে হয়। সবাই যে পেরে উঠবে সেটাও নয়, কেউ পারে কেউ পারে না।
[+] 3 users Like pnigpong's post
Like Reply
#70
পর্ব তিন। সানাইয়ের সুর (#8-#18)

দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে এলো, বাড়ি লোকে লোকারণ্য। দুরের যারা তারা একদিন আগেই পৌঁছে গেছে। আগের রাতে ঘুমাতে ঘুমাতে অনেক দেরি হয়ে গেছিল। ঝন্টু, অভি, অভির কয়েকজন বন্ধু আর বড় জামাই বাবু, নিলাদ্রী মিলে অনেক রাত পর্যন্ত অভির রুমে বসে মদ খেয়েছিল সেই সাথে হই হুল্লোড়। বাকিরা তখন ঘুমে কিন্তু অভিকে ডেকে তোলা হয়, আরে পুকুর থেকে জল আনতে যাবে এয়োস্ত্রীরা কিন্তু ফটোগ্রাফারের দেখা নেই যে। কোনমতে চোখ খুলে, ফোনে করেই ক্যামেরা ম্যানের মুন্ডপাত করল। চোখ বুজতে যাবে এমন সময় ভাগ্নে এসে ডাক দেয়, “মাম্মি তোমাকে ডাকছে, কি যেন গুষ্টির পিন্ডি খাওয়াবে।” তিতাসের কচি কণ্ঠে “গুষ্টির পিন্ডি” কথাটা শুনে খুব হাসি পেল অভির। চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে এলো ভাগ্নের সাথে। মনামির ঘরে ঢুকে দেখে, দধি মঙ্গলের জন্য এক গাদা মিষ্টি, চাল কলা মাখা ইত্যাদি নিয়ে মনামিকে খাওয়ান হচ্ছে। বড়দিকে দেখেই অভি হেসে বলে, “এই তোর গুষ্টির পিন্ডি মার্কা ভাষা অন্তত ওকে শিখাস না রে।”
অভি ব্যাস্ত হয়ে পরে কাজের মধ্যে, দুপুরের খাওয়া দাওয়ার তোড়জোড়, একদিকে বৃদ্ধি শুরুর কাজ ইত্যাদি। এক এক করে অতিথিদের আনাগোনা শুরু হয়ে যায়। ঝন্টুও এর মধ্যে দময়ন্তীকে নিয়ে চলে আসে। কিছুক্ষনের মধ্যে ফাল্গুনী দেবযানীকে নিয়ে উপস্থিত। চলনে বলনে সাজে দেবযানী অতি আধুনিকা। নতুন ফ্যাশানের ছেঁড়া ফাটা কালো রঙের জিনস, হাই বুট, কালো টপের ওপরে ছাই রঙের লম্বা শ্রাগ। এই বাড়ির কেউই ফাল্গুনীকে অথবা দেবীকে ঠিক ভাবে চেনে না, তাই সবার চোখে হাজার প্রশ্ন। বিশেষ করে ছেলেদের মধ্যে দেবীকে নিয়ে উতসুকতা একটু বেশি। এই সুন্দরী আধুনিকার পরিচয় কি। অভি এক সময়ে বসার ঘরে ঢুকে দেখে যে দেবী একা একা চুপচাপ বসে মোবাইলে ব্যাস্ত।
অভি জিজ্ঞেস করে, “কি রে তুই একা একা এই ভাবে বসে কেন রে?”
দেবী সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে আদুরে কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কোথায় ছিলে?”
অভি আলতো এক টোকা দেয় দেবীর মাথায়, “বিয়ের বাড়ির কাজ বুঝতেই পারছিস। তুই ভেতরে যাসনি কেন?”
দেবী মুখ ব্যাজার করে উত্তর দেয়, “কাউকে চিনি না ত?”
অভি হেসে ফেলে, “তুই পারিস বটে। যা ভেতরে যা, মেয়েদের মহল ওই দিকে।” বলে ওকে নিয়ে দিদির ঘরে পৌঁছে দেয়। বড়দির সাথে আলাপ করিয়ে দেওয়ার পরে, কিছুক্ষনের মধ্যে সবার সাথেই মিশে যায় দেবী।
ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে আসতেই ঝন্টু ওকে ধরে, “এই কচি মালটা কে রে?”
অভি নিজের কপাল চাপড়ে মাথা নাড়িয়ে হেসে উত্তর দেয়, “বাল চোদা ছেলে, ওটা আমার বোন, দেবযানী চ্যাটারজি।”
ঝন্টু দাঁত কিড়মিড় করে ওঠে, “শালা, এমন একটা বোন আছে জানতাম না’ত।” বলেই হেসে ফেলে।
অভিও রসিকতা করে উত্তর দেয়, “তোরটা এইবারে কেটে দিতে ইচ্ছে করছে।”
ঝন্টুও রসিকতা করে উত্তর দেয়, “কেটে দিলে তোর পেছনে গুঁজে দেব।” বলেই দুইজনে হাহা করে হেসে ফেলে।
কয়েকজন লোকের সাথে কাজের কথা চলছিল, এর মধ্যে লেখা দময়ন্তী আর দেবী ঝড়ের বেগে অভির কাছে উপস্থিত।
দেবী আবদার করে, “আমায় সাজাতে কিন্তু বিউটিসিয়ান চাই, কোন কথা শুনব না।”
লেখাও একি সুরে আবদার করে, “হ্যাঁ হ্যাঁ আলাদা বিউটিসিয়ান চাই।”
দময়ন্তী মাথা ঝাঁকিয়ে বলে, “এত গুলো মেয়েকে আমি একা সাজাতে পারব না, কিছু কর। শুধু মাত্র দিদিকে সাজাতে কিন্তু চার ঘন্টার মতন লেগে যাবে তারপরে আমার নিজের সাজ আছে।”
অভি মাথা চুলকে বলে, “আমি তাহলে তোমাদের সাজাতে বসি আর কি।”
দেবী নাছোড়বান্দা, “আমি কিছু জানি না, আমি আলাদা সাজবো।”
দময়ন্তীর দিকে তাকায় অভি, “কি করনীয়, ম্যাডাম?”
দময়ন্তী অভির কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলে, “ম্যাডাম নয়, আমি দিয়া।”
ঠোঁট চেপে হেসে ফেলে অভি, মাথা নুইয়ে সায় দিয়ে বলে, “আচ্ছা, তোমার কি চাই সেটা বল।”
দময়ন্তী উত্তর দেয়, “আমি আরো দুইজন বিউটিসিয়ানকে ডাকি, না হলে কিন্তু বিয়ে পর্যন্ত কারুর সাজ সম্পূর্ণ হবে না।”
এর মধ্যে শর্বাণীদি এসে যোগ দেয়, নিরুপায় অভি শেষ পর্যন্ত দময়ন্তীকে আলাদা বিউটিসিয়ান যোগার করার অনুমতি দিয়ে দেয়।
সকাল থেকে কাজের ব্যাস্ততায় দিদিভাইয়ের সাথে ঠিক ভাবে কথা হয়ে ওঠেনি। বেশ কিছু পরে লেখা এসে অভিকে ডেকে মনামির ঘরে ডেকে নিয়ে যায়। দিদির ঘরে ঢুকে দেখে, ইতিমধ্যে ওর সাজ শুরু হয়ে গেছে। মুখে বেস ফাউন্ডেসান মেখে বসে, চুল ও খানিকটা বাঁধা হয়ে গেছে। বাকি মেয়েরাও সাজতে বসে গেছে। আলাদা করে যে দুইজন বিউটিসিয়ানকে ডাকা হয়েছিল, তাদের একজন দেবীকে সাজাতে ব্যাস্ত অন্যজন শর্বাণীদিকে সাজাতে ব্যাস্ত। অভির মনে হল যেন বাড়িতে চাঁদের হাট বসেছে।
মনামি ওকে দেখে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করে, “খেয়েছিস?”
মাথা দোলায় অভি, “হ্যাঁ।”
মনামি ওর হাত দুটো ধরে বলে, “আমার কপালে এঁকে দিবি না?”
অভি স্মিত হেসে উত্তর দেয়, “দময়ন্তী আছে ত।”
মনামি মাথা নাড়ায়, “না, তুই কিন্তু কথা দিয়েছিলি।”
দিয়ার দিকে হাত বাড়িয়ে তুলি আর সাদা পেইন্ট নিয়ে নেয়। কপালে ভাইয়ের ছোঁয়া পেতেই মনামির দুই চোখ ভীষণ ভাবেই ছলছল করে ওঠে। কাঁপা হাতে দিদির কপালে আঁকতে শুরু করে। ছোট বেলায় চড়কের মেলায় ঠিক যেমন ভাবে ভাইয়ের জামা আঁকড়ে ধরে থাকত ঠিক সেই রকম ভাবেই মনামি ওর ভাইয়ের জামাটা আঁকড়ে ধরে থাকে, এই বুঝি ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে। মাঝে মাঝেই অভির নিঃশ্বাস থেমে যায়, চোয়াল শক্ত করে বুকের ভেতর থেকে ঠিকরে বেড়িয়ে আসা কান্নাটাকে কোন রকমে সংবরণ করে।
আঁকা শেষ করে দিদিকে বলে, “এবারে যাই।”
মনামি ওর হাত ধরে পাশে বসিয়ে বলে, “কোথায় যাবি, একটু বস না।”
অভি হেসে বলে, “ধ্যাত তুই না, মেয়েরা এখানে সাজতে বসেছে আমি এখানে থেকে কি করব?”
মনামি কাতর কণ্ঠে অনুরোধ করে, “জানি, প্লিজ পাঁচ মিনিট।”
অভি অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে উত্তর দেয়, “অনেক কাজ আছে রে। এখন ওই বাড়িতে ঢু মারতে যেতে হবে, কি রকম কি ব্যাবস্থা হল সেটা এখন দেখা হয়নি। সব কিছু ঝন্টুর ওপরে ছেড়ে দিলে হয় না।”
মনামির ভাইয়ের গালে হাত দিয়ে নিজের দিকে ফিরিয়ে ছলছল চোখ বলে, “মা আর পাপাকে দেখিস।”
মাথা দোলায় অভি, “হুম” বুকটা ফেটে যাওয়ার উপক্রম, তাও দিদির সামনে চোখের জল কোন রকমে সংবরণ করে নেয়। সবার সাজ ততক্ষনে থেমে গেছে, সবার চোখের কোনায় একটু জলের রেখা। কেমন যেন এক বেদনার সুর সবার বুকে বেজে ওঠে। সেই বেদনা কাটাতে রসিকতা করে অভি দিদিকে বলে, “এই দ্যাখ, সাজ ঘ্যাঁচে গেলে কিন্তু দিয়াকে আবার অনেক খাটতে হবে।”
রসিকতাটা এড়িয়ে ভাইয়ের হাত দুটো শক্ত করে ধরে ধরা গলায় বলে, “আমার ভাইটাকে একটু দেখিস রে...”
এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে দিদিও ভেঙ্গে পরবে অভিও ভেঙ্গে পরবে, সেটা ভেবেই অবস্থার সামাল দিয়ে স্মিত হেসে উত্তর দেয়, “তোরই ভাই, সর্বদা তোর পাশেই থাকবে তাতে অত আর দেখার কি আছে রে।”
অভির বুকের ভেতরটা কেঁপে ওঠে দিদিভাইয়ের চোখের জল দেখে, জানে বেশিক্ষন এইভাবে ঐ দুই ভাসা ভাসা চোখের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে নিজেকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারবে না। আর দাঁড়ায় না দিদির সামনে, ঘর থেকে বেড়িয়ে সবার অলক্ষ্যে চোখের কোল মুছে নেয়।
দিদির ঘর থেকে বেড়িয়ে ঝন্টুকে নিয়ে অভি সোজা বিয়ে বাড়িতে চলে যায়। মন্ডপের সাজ কতদুর সেটা তদারকি করতে হবে, বর যেখানে বসবে তার কি অবস্থা হল, দিদিকে নিয়ে যেখানে বসান হবে তার কি ব্যাবস্থা হল, বিয়ের জায়গা, ইত্যাদি। সোনারপুর থেকে মধ্যমগ্রাম, প্রায় ঘন্টা তিনেকের রাস্তা। অভি ফোন করে জেনে নিল যে বরের বাড়ি থেকে কখন বের হবে। সন্ধ্যে নামতেই, একজন দুজন করে অতিথি আসা শুরু হয়ে যায়। ঠাকুর মশাই বিয়ের জায়গা ঠিক করতে ব্যাস্ত হয়ে পরে। পাপা আর মামা বিয়ের জায়গার এক পাশে দুজনে বসে কথাবার্তা বলছিলেন। এবাড়ি ওবাড়ি, কাজের ঝামেলায় এখন ঠিক ভাবে স্নান করা হয়নি। একবার বাড়িতে যেতে পারলে ভালো হত, ঠিক সেই সময়ে বড়দি ফোন করে অভিকে একবার বাড়িতে আসতে অনুরোধ করে।
বাড়িতে ঢুকে দেখে যে দিদিভাইয়ের সাজ শেষ হয়ে গেছে। টকটকে লাল রঙের বেনারসি, গা ভর্তি সোনার গয়না আর ফুলের সাজে দিদিভাইকে ভীষণ অনন্যা দেখাচ্ছে। দিদিভাইয়ের কপালে ওর হাতেই আঁকা উল্কি গুলো ভীষণ ভাবে স্পষ্ট, দিয়া যেন প্রান ঢেলে সাজিয়েছে দিদিভাইকে। একবার মনে হচ্ছিল দিদিভাইকে শেষ বারের মতন জড়িয়ে ধরে কোলের মধ্যে লুকিয়ে যায়। বড়দিও সেজে গুজে তৈরি, দেবীকে লাল রঙের লেহেঙ্গাতে ভীষণ মিষ্টি দেখাচ্ছে। লেখার সাজ আর দিয়ার সাজ তখন বাকি, অন্য দুই বিউটিসিয়ান তখন ওদের সাজাতে ব্যাস্ত। এতদিন অভির ছিল দুই বোন, হয়ে গেল তিন। মনামির অনুরোধে শেষ বারের মতন দিদির ঘরে বসে তিন ভাই বোন একটা ছবি তোলা হল। বড়দি শেষ পর্যন্ত দেবীকেও ডেকে নিল ছবি তোলার সময়। চ্যাটারজি বাড়ির কনিষ্ঠ কন্যে, যদিও একদিনের পরিচয় মাত্র, কিন্তু সেই বা কেন বাদ থাকবে।
ছবি তোলার পরে অভি নিজের ঘরে চলে যায়, তাড়াতাড়ি স্নান সেরে জানা কাপড় পরে তৈরি হয়ে নেয়। এবারে দিদিকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়তে হবে, এর মধ্যেই দুই বার পাপার ফোন চলে এসেছে, আর কত দেরি। ওদের দেরি দেখে ঝন্টুও এসে গেছিল। দিদিভাইকে, বড়দি আর দেবীকে গাড়িতে করে পাঠিয়ে দিল বিয়ের বাড়িতে। দিদি বেড়িয়ে যেতেই বাড়িটা ভীষণ ভাবে ফাঁকা হয়ে গেল। দিদির চলে যাওয়াতে শুধু বাড়িটা নয়, অভির বুকের বেশ কিছুটা খালি হয়ে যায়। শীতের আকাশের দিকে তাকিয়ে বাইকে হেলান দিয়ে একটা সিগারেট ধরাল অভি। কিছুক্ষনের মধ্যে লেখাও সেজে গুজে উপস্থিত। লেখাও বেনারসি পড়েছে, মাথায় খোঁপা, যেন দ্বিতীয় বার বিয়ের পিঁড়িতে বসবে। ঝন্টুর পেছনে বাইকে বসে ওর দিকে হাত নাড়িয়ে বেড়িয়ে গেল, বলে গেল, তাড়াতাড়ি এসো। অভিও একটু রসিকতা করে লেখার দিকে একটা উড়ন্ত চুমু ছুঁড়ে দিল। সেটা দেখে ঝন্টু কপট কটমট করে অভির দিকে তাকিয়ে হেসে দিল।
অভিও বাইকে স্টারট দিতে যাবে এমন সময়ে ওর কাঁধে নরম এক হাতের ছোঁয়া। নাকে ভেসে আসে, মাদকতা ময় এক সুবাস। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে দিয়া ঠিক ওর পেছনে দাঁড়িয়ে। সঙ্গে সঙ্গে সিগারেট ফেলে ওর দিকে তাকায়। পরনে সমুদ্রের সবুজের রঙের একটা বেশ সুন্দর সুন্দর কাজ করা লেহেঙ্গা। কাঁচুলিটার পিঠের দিকে তিনটে পাতলা দড়ি দিয়ে বাঁধা। পিঠের দিক বেশির ভাগটাই অনাবৃত, মেরুদন্ডের খাঁজ যেন বক্র এক পাহাড়ি নদী। চোখের কোলে কাজল, চোখের আইল্যাস গুলো বেশ লম্বা, চাহনিতে ভীষণ এক আকর্ষণ। খোঁপা করে চুল বাঁধা কিছু অংশ বাকিটা বেনুনি করা, সাপের মতন চোওড়া পিঠের ওপর দোদুল্যমান। অপেক্ষাকৃত সরু কোমরে ছাপিয়ে, দুই ভারী নিতম্ব পর্যন্ত নেমে গেছে সাপের মতন বেনুনিটা। গোলগাল দেহের গঠনে ভীষণ ভাবেই মত্ততার এক ছাপ। দুই সুগোল বুক জোড়া, সামনের দিকে উঁচিয়ে হাতছানি দিয়ে কাউকে আহ্বান করছে। হাতে কানে গলায়, সম্পূর্ণ মুক্তের গয়নার সাজ। ওড়না কাঁধের একপাশে ঝুলে রয়েছে। গায়ের রঙ চাপা হলেও ত্বক ভারী মসৃণ, যেন আলো পিছল খেয়ে যাবে এই গালে। বুকের মাঝের শূন্যতা কাটিয়ে নিস্পলক চোখে আপাদমস্তক দিয়াকে নিরীক্ষণ করে। ভিজে চকচকে দুই ঠোঁট দেখে অভি কথা বলতে ভুলে যায়। আধো আলো আঁধারে মনে হল যেন কোন এক পরী ওর সামনে দাঁড়িয়ে।
দিয়া সলজ্জ ভঙ্গিমায় চোখ নামিয়ে মৃদু কণ্ঠে প্রশ্ন করে, “সবাই চলে গেলে আমাকে কে নিয়ে যাবে?”
স্মিত হেসে জবাব দেয় অভি, “বসে পর।”
অভির কাঁধে হাত রেখে বাইকে উঠে বসে, “দিদিকে ঠিক সাজিয়েছি ত?”
মাথা দুলিয়ে উত্তর দেয়, “ভীষণ ভাবেই ভালো, সে আর বলতে।”
বাইক স্টারট দিতেই ওর কাঁধ খামচে ধরে দিয়া, “একটু আস্তে চালিও।”
অভি প্রশ্ন করে, “কেন?”
দিয়া ওর কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে জবাব দেয়, “এমনি গো, খুব দেরি করতে ইচ্ছে করছে।” বলেই হেসে ফেলে।
অভি স্মিত হেসে উত্তর দেয়, “আচ্ছা তাই হবে।”
দিয়া ওকে প্রশ্ন করে, “তুমি ভালো জামা কাপড় কেন পড়লে না?”
খুব সাধারন দেখতে কিন্তু বেশ দামী জামা আর প্যান্ট পড়েছিল অভি, তাই হেসে বলে, “এই জামা প্যান্টে খারাপ কি?”
দিয়া উত্তর দেয়, “খুব সাদামাটা এটা, প্রচন্ড ফরমাল লাগছে। সুট পড়তে পারতে না হয় অন্তত একটা ব্লেজার।”
স্মিত হেসে জবাব দেয়, “কাজের মধ্যে কি আর ড্রেসের কথা মাথায় থাকে বল।”
ছোট এক জবাব দেয় দিয়া, “হ্যাঁ” বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থাকার পর প্রশ্ন করে, “সেদিনের পর আর ফোন করনি কেন?”
এবারে হেসে ফেলে অভি, “তোমার ফোন নাম্বার’ত আমার কাছে নেই।”
দিয়া একটু আঘাতের সুরে বলে, “বল যে আমার সাথে কথা বলার ইচ্ছে নেই। ইচ্ছে থাকলে নিশ্চয় যোগাড় করে নিতে।”
বড় এক নিঃশ্বাস ছেড়ে অভি উত্তর দেয়, “দিয়া, প্লিজ, অন্তত আজকে নয়।”
বেশ কিছুক্ষন দুইজনের মধ্যে কোন কথাবার্তা হয় না। বাড়ি থেকে বিয়ে বাড়ি, মিনিট পাঁচেকের পথ, দময়ন্তীর অনুরোধে সেই মিনিট পাঁচেক কে প্রায় পনেরো মিনিট পার করিয়ে দেয়।
বিয়ে বাড়িতে পৌঁছান মাত্রই লেখা ওদের দেখে প্রশ্ন করে, এই পাঁচ মিনিটের পথ, এই পার করতে এত সময়? বাইক থেকে নেমে আলতো মাথা নাড়িয়ে লেখার কানেকানে কিছু একটা উত্তর দিল দময়ন্তী। দুই জনেই ফিক করে অভির দিকে তাকিয়ে হেসে দিল। বিয়ে বাড়ি, বেশ শোরগোল, চারদিক ঘাড় ঘুরিয়ে একবার জরিপ করে নিল। দিদিভাইয়ের পাশে চুপ করে দেবী বসে আছে, কম বয়সী ছেলেদের মধ্যে দেবীকে নিয়ে বেশ কৌতূহল। লেখা, দিয়া আর ঝন্টুও এক কোনায় নিজেদের গল্পে বেশ মত্ত, ওদের সাথে অভির বেশ কিছু বন্ধুও যোগ দিয়েছে, দিদির বন্ধুরাও সেই দলে, দিয়া যেন সেখানে মধ্যমণি। প্রনবেশ বাবু বিয়ের জায়গায় বসে গেছেন, বিয়ের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। শিতাভ্রকে ততক্ষনে বরন কর নিয়ে আসা হয়ে গেছে বিয়ের জায়গাতে। বিয়ের লগ্ন আসন্ন, বুক ভরে শ্বাস নিল অভি, ঝন্টু আর কয়েকজনকে ডেকে নিল দিদির ঘরে, এবারে দিদিভাইকে পিঁড়িতে বসিয়ে নিয়ে আসতে হবে।
ওকে দেখেই ছলছল চোখে মনামি কাছে ডাকে বলে, “ভাইরে কেমন একটা যেন লাগছে।”
চোখ দুটো ভীষণ ভাবে জ্বালা করে ওঠে অভির, তাও স্মিত হেসে উত্তর দেয়, “পাগলি মেয়ে তুই।” তারপর পাশে দাঁড়ানো দেবীর দিকে তাকিয়ে রসিকতা করে বলে, “কি রে, কাউকে পছন্দ হল নাকি বল? একেবারে দিদিভাইয়ের সাথে বোনের বিয়েটাও এক মন্ডপে সেরে ফেলি, আমার খরচ বেঁচে যাবে।”
দেবী মিষ্টি হেসে বুক ফুলিয়ে উত্তর দেয়, “নো ওয়ান ইজ আপ টু মাই মার্ক, দাদাভাই (কেউই ঠিক আমার পছন্দের নয়)।”
“দাদাভাই” কথাটা শুনে ভীষণ অবাক হয়ে দেবীর দিকে তাকায়। দেবীর চোখে মুখে মিষ্টি এক হাসি, যেন খুব বড় এক যুদ্ধ জয় করে ফেলেছে এই এক বাক্যে। অভি ওকে কাছে টেনে মাথায় একটা চুমু খেয়ে বলে, “তোর জন্য সাত সমুদ্র পাড়ের রাজপুত্র খুঁজে আনব।”
পিঁড়িতে বসে ঘন ঘন নাক মোছে আর এপাশ ওপাশ তাকিয়ে সবাইকে একবার করে দেখে। সিঁদুর পড়ান পর্যন্ত দিদিভাইয়ের পেছনে ঢালের মতন ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে অভিনন্দন। উলু ধ্বনি আর হর্ষ ধ্বনির সাথে আঙটিতে সিঁদুর মাখিয়ে শিতাভ্র মনামির সিঁথিতে পরিয়ে দিল। সিঁথিতে যেমন পরিমাণের সিঁদুর, ঠিক সেই পরিমাণের সিঁদুর মনামির ফর্সা নাকের ডগা লালে লাল করে দেয়। সারা মুখমন্ডলে এক নতুন জীবনের আস্বাদের ছটা, ঠোঁটে ফুটে ওঠে এক জয়ের হাসি সেই সাথে দুই ছলছল চোখের ভাষায় অনেক কিছু ছেড়ে যাওয়ার গল্পে মাখা।
প্রনবেশ বাবু আর দীপাদেবীর কনিষ্ঠ কন্যে, অভিনন্দনের দিদিভাই মিস মনামি চ্যাটারজি, দুর নিবাসী কোন এক অচেনা শিতাভ্রের আঙটিতে মাখা সিঁদুরের আঁচড়ে নতুন নাম লিখে নেয়, মিসেস মনামি ভট্টাচারজি।
[+] 6 users Like pnigpong's post
Like Reply
#71
বিয়ের অনুষ্ঠান অসামান্য ভাবে বর্ণনা করেছেন পিনুরাম ! গল্প বলে মনেই হচ্ছে না। মিশ্র অনুভূতি প্রকাশ পেল সবার মধ্যে। 
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply
#72
Update update !!
Like Reply
#73
পর্ব চার। অনুভূতি (#1-#19)

শীতকালের সকালের ঘুমটা বেশ আয়েশ করে না নিলে খুব খারাপ লাগে। গতকাল দিদিভাইয়ের বিদায়ের পর বাড়ি একদম খালি হয়ে গেছে। মোবাইল খুলে দেখে যে ন’টা বাজে, গতকাল ঘুমাতে ঘুমাতে একটু রাত হয়ে গিয়েছিল, পাপার সাথে বসে সব হিসেব নিকেশ করতে করতে সময় চলে গেছিল। তার ওপর আবার ভাগ্নের সাথে একটু খুনসুটি মারামারি, কিছুতেই ঘুমায় না ছেলে। শেষ পর্যন্ত অভি, ভাগ্নে কে বগলদাবা করে নিজের ঘরে নিয়ে আসে। বিছানায় লেপের মধ্যে শুয়েও মামা ভাগ্নে মিলে মারামারি, সেই করতে করতেই রাত একটা বেজে গেছিল। ঘাড় ঘুরিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখে ভাগ্নে পাছা উল্টে লেপের মধ্যে গুটিশুটি মেরে একদম কাদা। নরম টোপা গালে দুটো চুমু খেয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে পরল। জামাটা গায়ে গলিয়ে বসার ঘরে ঢুকে দেখে যে, জামাইবাবু পেপার নিয়ে বসে মুখস্ত করছে। ব্রাসে পেস্ট নিয়ে দাঁত মাজতে মাজতে রান্নাঘরে উঁকি মেরে নিজের জানান দিয়ে দিল।
দীপাদেবী ওকে দেখে বললেন, “উঠে পড়েছিস? দাঁড়া চা বানাচ্ছি।”
মনামির ঘরে উঁকি মারে, দিদিভাই নেই কিন্তু বড়দি আছে। বোউভাতের পরের দিনের দুপুরে মুম্বাই ফিরে যাওয়ার ফ্লাইট, তাই ব্যাগ গুছাতে ব্যাস্ত। শর্বাণী ওকে ঘরের মধ্যে ঢুকতে দেখে হেসে জিজ্ঞেস করে, “সারা রাত খুব জ্বালাতন করেছে তাই না?”
হেসে ফেলে অভি, “ওর টিভি দেখাটা একটু কমা আর মাঝে মধ্যে একটু বাংলা শিখাস। বাপরে ঐটুকুর কত প্রশ্ন রে, স্পাইডারম্যান কি করে ফিস ফিস করে নেট ছাড়ে। হাল্কের রঙ গ্রিন কেন হল, ব্লু কেন হল না?” বলেই হেসে ফেলে।
শর্বাণী পার্স খুলে একটা খাম ভর্তি টাকা ওর হাতে ধরিয়ে বলে, “এটা রাখ, এটা তোর।”
খানিকটা অবাক হয়েই বড়দিকে প্রশ্ন করে, “এটা কি? এসব আমি নেব না।”
শর্বাণী মিষ্টি হেসে জবাব দেয়, “তোর অনেক খরচ জানি, চাকরি পেলে শোধ করে দিস, এখন রাখ।”
অভি মাথা নাড়িয়ে হেসে বলে, “আচ্ছা বাবা পরে দিস, এখন রাখ।”
শর্বাণী টাকাটা আবার নিজের ব্যাগে ঢুকিয়ে বলে, “দেবী খুব আবদার করছিল বৌভাতে যাবে। কি করে কি করা যায় বল’ত?”
অভি ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করে, “এত মহা মুশকিল ব্যাপার।”
শর্বাণীও চিন্তায় পরে যায়, “যত হোক, আমাদের বোন’ত, মেয়েটাকে দেখে বড় মায়া হয় জানিস।”
অভি একটু খানি মাথা চুলকিয়ে কিছু ভেবে উত্তর দেয়, “অসুবিধে নেই, গাড়ি হলদিরাম থেকে বাঁক নিয়ে নিউটাউন হয়েই যাবে, রাস্তা থেকে ওকে তুলে নিলেই হবে।”
শর্বাণী প্রশ্ন করে, “ফাল্গুনী কাকিমাকে বৌভাতে বলা হয়নি, ওদিকে কাকুকে বৌভাতে বলা হয়েছে।”
অভি উত্তর দেয়, “তাতে কি আছে, তোর কাকা আমাদের সাথে যাচ্ছে না, নিজের গাড়িতে যাবে, খাবে দাবে চলে আসবে। দেবী আমাদের সাথে যাবে আবার ফেরার পথে নামিয়ে দেব।”
শর্বাণী হেসে উত্তর দেয়, “মেয়েটা বড় খুশি হবে রে।”
অভি উত্তর দেয়, “হ্যাঁ, তুই ফোন করে দিস, ওকে রেডি থাকতে বলিস, যাওয়ার পথে উঠিয়ে নেব।”
দীপাদেবী রান্না ঘর থেকে অভিকে ডাক দেন, “হ্যাঁরে অভি, চা খেয়ে একটু দোকান যাস কিছু জিনিস আনার আছে। আচ্ছা, সকালের কি বানবো?”
অভি হেসে ফেলে, “আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছ, জামাইকে জিজ্ঞেস কর।”
নীলাদ্রী পেপার থেকে চোখ উঠিয়ে হেসে বলে, “দুর আমি এখন পুরানো মানুষ, এখন আর আমার কোন দাম নেই। এখন ত সবকিছু দিল্লী যাবে, নাড়ু যাবে, মালপোয়া যাবে, তালের বড়া। সব এখন পারসেল হবে দিল্লী।”
দীপাদেবী লজ্জা পেয়ে যান বড় জামাইয়ের কথায়, “না না, মুম্বাইও যাবে আমার নাতি খাবে’ত।”
নীলাদ্রী হেসে ফেলে, “দেখেছ দেখেছ, এখন নাতি, জামাই ত পুরানো মানুষ।”
অভিও দাঁত মেজে মুখ ধুয়ে চা খেয়ে বাজারে বেড়িয়ে যায়। বাইরের লোকজন আত্মীয় সজ্জন সবাই চলে গেছে। বউভাতে যাদের গাড়ি আছে তাদের বলা আছে যে সোজা সোনারপুর যেন পৌঁছে যায়, বাকিরা এইখানে চলে আসবে, সেইজন্য তিনটে ইনোভা ভাড়া করা হয়েছে। নৈহাটি থেকে মামা মামি আর লেখাকে নিয়ে ঝন্টু সোজা সোনারপুর চলে যাবে সেই কথাই হয়েছিল। তবে তার আগে দিয়াকেও পৌঁছে দিতে হবে দিদিভাইকে সাজানোর জন্য। শিতাভ্রর বাড়ি থেকে একটা বিইউটিসিয়ান ঠিক করা হয়েছিল কিন্তু দিদিভাইয়ের দিয়াকেই চাই। বাজারে যাওয়ার পথে যেতে যেতে অভি এই সব ভাবতে ভাবতে হেসে ফেলে, ঝন্টু সারাদিন ড্রাইভারি করেই কাটিয়ে দেবে।
দোকানে জিনিস কেনার সময়ে দিদিভাইয়ের ফোন এলো, “তোরা কখন আসবি রে?” গলাটা ভীষণ শুকনো, যেন কতদিন দেখা হয়নি।
অভি উত্তর দেয়, “এই ধর পাঁচটা নাগাদ বাড়ি থেকে বের হব, রাত আট’টার মধ্যে পৌঁছে যাবো।”
মনামি কাতর কণ্ঠে আবদার করে, “একটু তাড়াতাড়ি আসতে পারিস না?”
অভি ম্লান হেসে উত্তর দেয়, “গাড়ি বলা হয়ে গেছে’ত।”
মনামি কাতর কণ্ঠে অনুরোধ করে, “তুই বাইকে করে তিতাসকে নিয়ে একটু আগেই চলে আয় না প্লিজ।”
আগে যেখানে দিদির অধিকার ছিল, শাসন ছিল সেখানে দিদির গলায় এখন অনুরোধের সুর। ক্ষনিকের জন্য এক করুন সুর বেজে ওঠে বুকের মধ্যে।
মাথা দোলায় অভি, “আচ্ছা দেখছি রে, চলে আসব।” একদিনের ব্যাবধানে কত দুর হয়ে গেছে ওর দিদিভাই।
দিদির ফোন রাখতে না রাখতেই ঝন্টুর ফোন এলো, “কি রে কোথায় আছিস?”
অভি উত্তর দেয়, “এই দোকানে এসেছি।” তারপর হাসতে হাসতে রসিকতা করে বলে, “তুই আজকে ড্রাইভারি করেই মরবি ত রে।”
ঝন্টু ম্লান গলায় বলে, “সেটাই ভাবছি, এই একবার দিয়াকে নিয়ে সোনারপুর যাওয়া আবার ফেরো নৈহাটি আবার বাবা মাকে নিয়ে যাওয়া, প্রচন্ড চাপ হয়ে যাবে।”
অভি একটু ভেবে বলল, “তুই দিয়াকে বলে দে সোজা সোনারপুর পৌঁছে যেতে।”
ঝন্টু উত্তর দেয়, “ধ্যাত পাগল নাকি তুই? বারাসাত থেকে সোনারপুর ওই সাজের জিনিসপত্র নিয়ে কি করে যাবে? আচ্ছা তুই কটা গাড়ি বুক করেছিস?”
অভি উত্তর দেয়, “তিনটে, কেন?”
ঝন্টু একটু ভেবে বলে, “তাহলে ত দুপুরের দিকে একটা গাড়ি করে দিয়াকে ঐ বাড়ি পৌঁছে দেওয়া যায়।”
অভি একটু ভেবে উত্তর দেয়, “আচ্ছা ভেবে দেখি। আমি তিতাস কে নিয়ে হয়ত দুপুরেই বেড়িয়ে যাবো, যদি পারি ত বারাসাত ঘুরে দিয়াকে সাথে নিয়েই চলে যাবো।”
ঝন্টু প্রশ্ন করে, “দুপুরে যাবি মানে?”
অভি উত্তর দেয়, “না এমনি, দিদিভাই ডেকেছে তাই।”
ঝন্টু হেসে উত্তর দেয়, “আচ্ছা, তাহলে দেখিস ভাই, যেটা ভালো বুঝিস করিস, আমাকে একটু জানিয়ে দিস তাহলে। আমার পক্ষে দিয়াকে নিয়ে সোনারপুর যাওয়াটা কিন্তু খুব কঠিন তাই বললাম।”
অভি জিজ্ঞেস করে, “ওকে, জানিয়ে দেব, আচ্ছা দিয়ার নাম্বারটা দে।”
অবাক হয়ে ঝন্টু প্রশ্ন করে, “এতক্ষনে তুই ওর ফোন নাম্বার নিস নি?”
হেসে ফেলে অভি, “দরকার ছিল কি? তুই ত শালা প্রথম দিনে বললি যে আমার টাইপের মেয়ে নয়।”
ঝন্টু হেসে ফেলে, “বোকাচোদা ছেলে, তুমি পাঁচ মিনিটের রাস্তা পনেরো মিনিটে আসো আবার বলছ তোমার টাইপের মেয়ে নয়।”
মাথা নাড়িয়ে ম্লান হেসে উত্তর দেয় অভি, “নারে আমাদের রাশি নক্ষত্র খারাপ চলছে। যখনি একটু কথাবার্তা একটু আলাপ হয়, তখনি এমন কিছু বিষয় ওঠে যে আর ঠিক ভাবে কথাবার্তা জমে ওঠে না।”
হিহি করে হেসে ফেলে ঝন্টু, “শালা, তুই কি বিচিতে বিচুটি পাতা ডলে বসিস নাকি রে? রশি নক্ষত্রের বাল ছেঁড়। আজকে নিয়ে যা, ছাড় দিলাম, বারাসাত থেকে সোনারপুর, চার ঘন্টা।” দুইজনেই হেসে ফেলে।
দময়ন্তীর কথা মনে পড়তেই, বুক থেকে একটা শ্বাস বেড়িয়ে এলো। গায়ের রঙ চাপা হলেও সারা অঙ্গে ভীষণ এক উত্তেজক আবেদন আছে মেয়েটার, এক মাদকতা ময় ঝলকানি। কি করে স্বাতীলেখা আর দময়ন্তী বান্ধবী হল? একজন, সবুজ পাহাড়ের মতন ধির স্থির শান্ত, অন্যজন গভীর প্রশান্ত মহাসাগরের মতন উচ্ছল উদ্দাম। দিয়ার চোখ জোড়া ভীষণ ভাবেই কথা বলে, সব সময়ে ওর মধ্যে একটা অশান্ত দুরন্ত ভাব। হয়ত ঝন্টু ঠিক বলে, ওর সাথে হয়ত ঠিক মিলবে না। লেখার বান্ধবী হিসাবে বিয়েতে দিদিভাইকে সাজাতে এসেছে, ব্যাস এর বেশি আলাপ পরিচয়ের কি দরকার। কিন্তু বিয়ের দিনে মেয়েটা ওর পেছনে বসে হটাত করেই কেন বলল, “একটু আস্তে চালিও।” মনে মনে হেসে ফেলে অভি, মেয়েদের মনের ভেতর কখন কি যে চলে কে জানে। ঝন্টু মহা মুশকিলে ফেলে দিল, ইচ্ছে ছিল বাইকে করে মামা ভাগ্নে বেশ মজা করতে করতে সোনারপুর যাবে। দিয়াকে নিয়ে, তিতাসকে নিয়ে বাইকে করে বারাসাত থেকে সোনারপুর যাওয়াটা ওর পক্ষে না হলেও ছোট্ট তিতাসের জন্য খুব কষ্টকর হয়ে যাবে। একবার মহেশদাকে ফোন করে দেখতে হয়, যদি আলাদা গাড়ি পাওয়া যায় তাহলে বেশ ভালো হবে। মহেশদা জানিয়ে দিল যে একটা ওয়াগন-আর পাওয়া যাবে, এগারোটার মধ্যে বাড়িতে গাড়ি পৌঁছে যাবে।
বাজার করে বাড়িতে ঢুকতেই প্রশ্নের সম্মুখীন, বাইকে করে কি করে যাবি? অভি বুঝে গেল, দিদিভাই বাড়িতেও ফোন করেছে, সেটা অবশ্য স্বাভাবিক। অভি জানিয়ে দিল যে, মহেশ দাকে বলে গাড়ির ব্যাবস্থা করা হয়ে গেছে। তিতাস বেশ অবাক, কোন মাসির বাড়ি যাবে ঠিক বুঝতে পারে না। এটাই ত ওর মাসির বাড়ি, এটাই ওর মামার বাড়ি। ভাগ্নের প্রশ্নের উত্তরে হেসে ফেলে অভি, তোর মাসির বাড়ি পালটে গেছে। তিতাস কিছুতেই মানতে পারে না, বারেবারে মাকে প্রশ্ন করে, মাসির বাড়ি কি করে পালটায়? বিয়ের পর মেয়েদের কেই কেন বাড়ি ছাড়তে হয়, এই কচি ছেলেটার প্রশ্নের উত্তর কারুর কাছেই নেই।
*****
কোনদিন ভোরবেলা ওঠে না দময়ন্তী সেই নিয়ে রোজদিন মায়ের কাছে একটু বকুনি শুনতে হয়। দাদা বলে, দিন দিন কুঁড়ে হয়ে যাচ্ছে। ঘুম ভেঙ্গে গেলেও এই শীতের সকালে লেপ ছেড়ে বের হতে কারুর ইচ্ছে করে না। বাবা অফিসে বেড়িয়ে যাওয়ার আগে কয়েকবার ডাক দিয়ে গেছে। সবকিছু কানে গেছিল কিন্তু তাও চোখ খুলতে বড় আলিস্যি লাগছিল। বাড়িটা ছোট, অনেক পুরানো, ঠাকুরদার তৈরি। বাবার ভাগে নিচের তলার পশ্চিম দিকের দুটো ঘর, একফালি বারান্দা আর এক চিলতে রান্না ঘর পড়েছে। বারান্দাটা ঢেকে ঢুকে বসার ঘর তৈরি করা হয়েছে, দাদা সেখানেই শোয়। একটা ঘর ওর বরাদ্দ, তার জানালা খোলা বড় দায়, পাশের বাড়ির পায়খানা একদম ওর জানালার সামনে। দিনের বেলা সেই দুপুরের পরে একটু রোদ ঢোকে তাছাড়া একদম রোদ আসে না। শুধু মাত্র গ্রাজুয়েট করে চাকরি পাবে না সেটা বুঝে গিয়েছিল। অন্যদের সাজতে আর নিজে সাজাতে ওর খুব ভালো লাগত। তাই কলেজের দিন থেকেই নিজের চেষ্টায় মেকআপ করা শিখেছিল। স্বাতীলেখা, ওর প্রানের বান্ধবী, এই ব্যাপারে খুব সাহায্য করেছিল। বিউটিসিয়ান হিসাবে গত দুই বছরে, এই বারাসাতে আর আশেপাশের এলাকায় বেশ নাম করে নিয়েছে। বিয়ের মরশুমে মোটামুটি ভালোই টাকাই চলে আসে আর মাঝে মাঝে কোথাও কোন ফটোশুট হলে ডাক পরে সাজাতে তবে সেটা কালে ভদ্রে। খুব ইচ্ছে, নিজের একটা বিউটি পার্লার খুলবে কিন্তু সেই জায়গায়ও নেই সেই টাকাও নেই। নিজের খরচের জন্য অন্তত বাবার কাছে অথবা দাদার কাছে আর হাত পাততে হয় না।
কলেজে পড়ার সময়ে যে প্রেম করেনি সেটা নয়, তবে সেই গুলো ঠিক প্রেম বলে না। একটু ভালোলাগা ছাড়া আর বিশেষ কিছুই নয়। কলেজ শেষ, সেই ভালোলাগার দিন গুলোও শেষ। ওর বান্ধবীদের মধ্যে অনেকের বেশ তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে গেছে। এই গত বছর লেখার বিয়ে হল। সেই কলেজের ফারস্ট ইয়ার থেকে লেখার সাথে পরিচয়, আজকে প্রায় পাঁচ বছর হয়ে গেল, বেশির ভাগ কারুর সাথে যোগাযোগ না থাকলেও লেখার সাথে যোগাযোগ বরাবর ছিল। শুরুর দিকে ওর মেকআপের জিনিস গুলো বেশ কমদামী ছিল, যার জন্য অনেকে ঠিক ঠাক পারিশ্রমিক দিত না অথবা চাইতে পারত না। তবে বিয়ের পরে লেখা ঝন্টুকে বলে ওর জন্য দামী মেকআপের জিনিস কেনার টাকা দিয়েছিল। মফঃস্বল এলাকায় কলেজ শেষ করেই মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায়, দিয়ার একদম ইচ্ছে ছিল না তাড়াতাড়ি বিয়ে করার। মনের মতন মানুষ না পেলে দিয়া বিয়ে করবে না ঠিক করে নিয়েছিল। না, দিয়া ঠিক লেখার কথা ভাবছিল না, ভাবছিল সেই চেনা অথচ ভীষণ অজানা এক পুরুষের কথা।
[+] 3 users Like pnigpong's post
Like Reply
#74
#চোরাবালি
পর্ব চার। অনুভূতি (#2-#20)
না, দিয়া ঠিক লেখার কথা ভাবছিল না, যার কথা ভাবছিল তার সাথে ঠিক ভাবে পরিচয় হতে পারল না। প্রথম দেখা হয়েছিল লেখার বিয়ের সময়ে। কি ভীষণ একগুঁয়ে ছেলেরে বাবা, লেখার বিয়েতে ওরা সবাই গেট আটকে ছিল, দশ হাজার না দিলে গেট ছাড়বে না। ছেলেটাও তেমনি বলিহারি, গেটের সামনে চেয়ার টেনে বসে গেল, বলল, “আমার কাজ ছিল বরকে নিয়ে আসা, বর নিয়ে এসেছি এবারে মেয়ের বিয়ে দেওয়া না দেওয়া সেটা তোমাদের কাজ। দু’ হাজারের বেশি একটা নয়া পয়সা দেব না। ইচ্ছে থাকলে গেট ছাড়ো না হলে এখানেই আমরা বসে আছি।” শেষ পর্যন্ত বড়রা মধ্যস্ততা করে এবং সেই দুই হাজার টাকাই দিয়েছিল। পরে অবশ্য ঝন্টু ওদের পাঁচ হাজার দিয়েছিল। তবে বিয়েতে অথবা বউভাতে সেইবারে অভির সাথে পরিচয় হয়নি। কেমন যেন বট গাছের মতন সারাক্ষন ঝন্টুর পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল, যেন এই বুঝি ঝন্টুকে নিয়ে কেউ পালিয়ে যাবে। মনে মনে সেই কথা ভেবে হেসে ফেলে দিয়া।
কি ভেবে সেদিন রাতে, পাঁচ মিনিটের পথ পনেরো মিনিট করেছিল? এমন চুপচাপ মানুষ, জিজ্ঞেস করতে ভয় পেয়েছিল সেদিন। সেই রাতে ওর কানের কাছে “একটু আস্তে চালিও” আবদার করার সময়ে ওর নাকে ভেসে এসেছিল শিরা কুঁকড়ে দেওয়া পাগল করা বুনো এক গন্ধ। উফফফ, ওই গন্ধে পাগল হয়ে একবার মনে হয়েছিল ওই জামা খামচে ধরে, খুব ইচ্ছে করছিল ওই চওড়া পিঠে মাথা রাখতে। সেই বিয়ের রাতে, আধো আলো আধারিতে যেভাবে ওর দিকে তাকিয়েছিল মনে হয়েছিল যেন ওর শরীর গলিয়ে দেবে। দিক না ক্ষতি কি, এই ঠোঁট আজও কোন এক প্রথম চুম্বনের অপেক্ষায় চাতকের মতন তৃষ্ণার্ত। কতজন এলো, কতজন গেলো, কিন্তু কাউকে দেখে মনে হয়নি যে ঠোঁটে চুমু খাবে। ছেলেটা সত্যি বাকি পাঁচটা ছেলের থেকে বেশ আলাদা, একদম বরফের মতন ঠান্ডা। এত কম কথা কেন বলে? দিদির বিয়ে হয়ে যাচ্ছে বলে কোন ভাইয়ের মধ্যে এতটা শূন্যতা, কারুর মধ্যে সত্যি কি আসে? যে ছেলে নিজের দিদিকে এইভাবে ভালবাসতে পারে সে ছেলে সত্যি আলাদা মাটির তৈরি। ইসসস দিয়া, সত্যি তুই পাগল হয়ে গেছিস।
এমন সময়ে ফোন বেজে উঠল, অন্যপাশে লেখা, “কি মহারানী, এখন বিছানায় নাকি?”
ঘুম ঘুম চোখে হেসে ফেলে দিয়া, “হুম।”
লেখা বলে, “প্রায় দশ’টা বাজে আর কতক্ষন?”
দিয়া উত্তর দেয়, “এই ব্যাস আর কি। তোর বর আমাকে নিতে কখন আসবে?”
লেখা চুকচুক করে উত্তর দেয়, “নারে, একটু অসুবিধে আছে।”
দিয়া প্রশ্ন করে, “মানে?”
লেখা উত্তর দেয়, “নৈহাটি থেকে বারাসাত হয়ে তোকে দিয়ে এসে আবার বাবাকে মাকে নিয়ে যাওয়া, ও সারাদিন গাড়ি চালিয়েই মারা পড়বে।”
দিয়া একটু ভেবে চুকচুক করে বলে, “তা সত্যি, তাহলে কি করি বল। মেক আপের অনেক জিনিসপত্র, এই নিয়ে ট্রেনে যাওয়া খুব মুশকিল। এখান থেকে ট্যাক্সি যাবে না, ওলা উবের করলে অন্তত হাজার বারোশ টাকা লেগে যাবে যে।”
লেখাও কিছুক্ষন ভেবে উত্তর দেয়, “দেখি অভিকে ফোন করে, ওই কিছু একটা ব্যাবস্থা করতে পারে।”
দিয়া মুচকি হেসে জবাব দেয়, “তোর দেওর না ঘেঁচু কলা, কিছুই পারে না।”
লেখা মুচকি হেসে বলে, “তুই আর বলিস নে, বিয়ের রাতে পাঁচ মিনিটের জায়গায় পনেরো মিনিট করলি, আবার বলে ঘেঁচু কলা।” বলেই খিলখিল করে হেসে ফেলে।
দিয়া মুখ বেকিয়ে বলে, “সত্যি রে একদম ঘেঁচু কলা, কথাই বলে না।”
লেখা খিলখিল করে হেসে বলে, “বেশি ঘাঁটাতে যাস নে।”
দিয়া রসিকতা করে জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার? দেওর বেহাত হয়ে যাচ্ছে বলে হিংসে হচ্ছে নাকি?”
লেখা হিহি করে হেসে ফেলে, “ধ্যাত, আমার কেন হিংসে হতে যাবে রে।”
দিয়া আক্ষেপের সুরে বলে, “নারে, বড্ড ঠান্ডা পাব্লিক। দুইদিন বাইকে চাপলাম কিন্তু বরফ গলাতে পারলাম না।” গলা নামিয়ে বলে, “অন্য কেউ হলে, সেই রাতে কেস করে দিত।” বলেই খিলখিল করে হেসে ফেলে।
লেখা মুচকি হেসে উত্তর দেয়, “ও ভীষণ অন্য রকমের ছেলে।”
দিয়া উতসুক হয়ে প্রশ্ন করে, “কতটা অন্য রকম রে, গে নাকি?”
লেখা হিহি করে হেসে উত্তর দেয়, “ধ্যাত তোর যতসব উলটো পালটা কথা। তোর মুরোদ নেই, তাই এখন আঙ্গুর ফল টক।”
দিয়া রসিকতা করে জিজ্ঞেস করে, “ও বাবা, আঙ্গুর তাহলে মিষ্টি। কতটা চেখছিস একটু শুনি না।”
ভীষণ লজ্জা পেয়ে যায় লেখা, হটাত করেই বসিরহাটের সেই রাতের কথা মনে পরে যায়। মনের ভাব লুকিয়ে উত্তর দেয়, “ধ্যাত, তুই পারিস বটে। না না, সেই সব একদম নয়। তবে আমার বরের থেকে ভীষণ আলাদা।”
দিয়া উত্তর দেয়, “সেটা এই কয়দিনে বুঝতেই পেরেছি। তোর বর ত ভাদ্র মাসের কুকুর, সব সময়ে উঁচিয়ে রেখেছে।” বলেই হেসে ফেলে।
“কুকুর” কথাটা শুনে লেখা একটু আহত হয়ে যায়, “তোর সাথে কথা বলা সত্যি দুঃসাধ্য। এই আমি ফোন রাখছি। অভিকে বলে দেব তোকে ফোন করে নিতে।”
ঝন্টুকে লেখার চেয়ে বেশি চেনে দিয়া, তাই বান্ধবীর বিশ্বাসে আঘাত হানতে চাইল না। কথাটা ঘুরিয়ে দিয়ে মিষ্টি হেসে ক্ষমা চেয়ে বলে, “আরে আমার মিষ্টি সোনা এত খেপে যাচ্ছিস কেন।”
লেখা মৃদু ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “তুই একদম ওইভাবে বলবি না।”
দিয়া খিলখিল করে হেসে ফেলে, “আচ্ছা বাবা একদম বলব না, ক্ষমা দে। আচ্ছা, কাল রাতে কয়বার গুঁজেছে, সেটা ত বল?”
লেখা ভীষণ লজ্জা পেয়ে যায় তাও বান্ধবীর প্রশ্নের উত্তরে বলে, “যে কবার হোক তোর তাতে কি? তুই নিজের একটা যোগাড় করে নে।” দিয়ার মুখে কিছুই আটকায় না, না সেটা নয় তবে ওর সাথে দিয়ার বন্ধুত্তের সমীকরণ ভিন্ন।
দিয়া কম যায় না, “ঠিক আছে, এক দিনের জন্য ধার দে, তারপরে দ্যাখ।”
লেখা হেসে ফেলে, “ইসসসসস... কত শখ দেখো মেয়ের।”
দিয়া খিলখিল করে হেসে ফেলে, “জ্বলেছে জ্বলেছে, ঝাঁট জ্বলেছে।” বেশ কিছুক্ষন পর হাসি থামিয়ে প্রশ্ন করে, “মিস্টার চ্যাটারজিকে কি আমি ফোন করব নাকি তিনি আমাকে ফোন করবেন?”
লেখা হেসে ফেলে, “না না তোকে ফোন করতে হবে না, ওকেই বলে দেব তোকে ফোন করে নেবে।”
বিছানা ছেড়ে উঠে পরল দিয়া। বুক ভরে এক শ্বাস নিল দিয়া, লেখা এক বছর আগে মেকআপের জিনিস কেনার জন্য পঞ্চাস হাজার দিয়েছিল। ঝন্টু ব্যাবসায়ী মানুষ, টাকা দেওয়ার আগে হাজার প্রশ্ন করেছিল। দিয়া কারুর দেনা রাখতে চায়না, চায় না ওর বান্ধবী ওর জন্য শ্বশুর বাড়িতে কথা শুনুক। তাই সেই টাকার অনেকটাই ফেরত দিয়ে দিয়েছে লেখাকে। এখন প্রায় পনেরো হাজার বাকি আছে। শোধ করে দিতে পারলে মুক্তি। ঝন্টু বড় ফাজিল, মনে মনেই হেসে ফেলল দিয়া।
ফোনটা চারজে দিয়ে বাথরুমে ঢুকে পরল। কখন আবার অভির ফোন চলে আসবে, হয়ত দুম করেই গাড়ি পাঠিয়ে দেবে ওকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। গিজারটা চালিয়েই দিল, একেবারে স্নানটা সেরে নেওয়া ভালো। স্নান সেরে বেড়িয়ে মাকে জানিয়ে দিল যে রাতে ফিরতে দেরি হতে পারে, লেখার ননদকে সাজাতে সেই সোনারপুর যাবে। মাঝে মাঝেই কাজ শেষে বাড়ি ফিরতে রাত হয়ে যায়। পাড়ায় কানাঘুষো যে হয়না সেটা নয়, এদের খেয়ে দেয়ে কাজ নেই কার বাড়িতে কি হচ্ছে সেটা নিয়ে বেশি মাথা ঘামানো। মা আর দাদা মাঝে মাঝে একটু রেগে যায়, কি দরকার অত রাত করে বাড়ি ফেরা। বাবা সেটা বোঝে, বাবার বড় আদুরে মেয়ে তাই ঠিক পার পেয়ে যায়। আলমারি খুলে জামা কাপড় দেখতে বসে পরে, কি পড়বে ঠিক করে উঠতে পারে না। বিয়ের দিন লেহেঙ্গা পড়েছিল, আজকে একটা শাড়ি পড়বে, কিন্তু কোনটা।  
******
স্নানে ঢোকার আগে একবার দিয়াকে ফোন করা দরকার, “হ্যালো, দময়ন্তী?”
ফোনের স্ক্রিনে অভিনন্দন নামটা ভেসে উঠতেই, মনটা নেচে উঠল। তাও সেই উত্তেজনা আয়ত্তে এনে গম্ভীর কণ্ঠে প্রশ্ন করে, “হ্যাঁ, কে বলছেন?” পেটের ভেতর হাসিটা ভীষণ ভাবে ফেটে পড়ার যোগাড়।
অভি উত্তর দেয়, “আমি, অভিনন্দন।”
যদিও জানত যে ফোন করবে তাও রসিকতা করেই জিজ্ঞেস করে, “বাপ রে, সূর্য কি পশ্চিম দিক থেকে উঠেছে নাকি?”
অভি হেসে উত্তর দেয়, “না না, উঠতে চেয়েছিল কিন্তু আমি বারন করে দিলাম।”
জেনে বুঝেও এক না জানার ভান করে দিয়া, “তা, হটাত কি মনে করে?”
অভি উত্তর দেয়, “ঝন্টু হয়ত তোমাকে নিতে আসতে পারবে না।”
দিয়া মনে মনে হাসে কিন্তু গলায় একটা গম্ভীর ভাব এনে প্রশ্ন করে, “মানে, ইয়ারকি মারছ নাকি?”
মাথা নাড়ায় অভি, “না না ইয়ারকি মারছি না, সত্যি বলছি ঝন্টুকে ফোন করে দেখেতে পারো।”
দিয়া কম যায় না, কণ্ঠে একটু রাগ দেখিয়ে বলে, “কি মুশকিল ব্যাপার, তোমাদের আগে বলা উচিত। তাহলে কি করে যাবো?”
অভি উত্তর দেয়, “আমি গাড়ি এই বারোটা নাগাদ পাঠিয়ে দেব।”
দিয়ার খুব ইচ্ছে ছিল অভির পেছনে বাইকে বসে যেতে। শীতকালের দুপুর বেলায় মিষ্টি রোদ গায়ে মেখে অজানা এক মানুষের সাথে এতটা পথ পাড়ি দেওয়া। গাড়ি পাঠিয়ে দেবে শুনে মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল, বারাসাত থেকে সোনারপুর এতটা পথ একা যাবে, “ওঃ আচ্ছা, বেশ। তোমরা কখন যাবে?”
অভির একটু হাসি পেল, রসিকতা করে বলে, “আমাদের গাড়ি বিকেল পাঁচটা নাগাদ, এই ধর পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত হয়ে যাবে।”
যাওয়ার ইচ্ছেটা হটাত করে মরে গেল দিয়ার। একবার মনে হল লেখাকে ফোন করে বলে দেয় যে ওর শরীর খুব খারাপ যেতে পারবে না। কিন্তু তাহলে খুব খারাপ দেখাবে, বিষন্ন ভাবে উত্তর দেয়, “আমি একাই যাবো নাকি? আচ্ছা ঠিক আছে।” বলে ফোন রেখে দেয়।
খাটের ওপর ছড়ানো শাড়ি গুলো আর ভালো লাগে না। সেই রাতে যাবে, ঠিক ভাবে আর কথা হবে না, নিজেদের আত্মীয় সজ্জনদের নিয়েই ব্যাস্ত থাকবে অভি। এরপর কি আর কোনদিন দেখা হবে ওর সাথে?
শেষের দিকে দিয়ার গলায় বিষন্ন ভাব শুনে ওর মন কেমন করে উঠল। সত্যি কথাটা বললেই মনে হয় ভালো হত। খালি খালি মেয়েটাকে রাগিয়ে দিল। আজকের এই বোউভাতের রাতেই হয়ত শেষ দেখা, এরপর দিয়া কোথায় থাকবে ও কোথায় থাকবে কে জানে। স্নান সেরে, বড়দির দেওয়া ছাই রঙের সুট পরে নিল, সুটের নিচে গোল গলার কালো গেঞ্জি। শিতাভ্রদা ওকে একটা দামী টাইট্যানের মুনফেজ ঘড়ি দিয়েছিল, সেটা পরে নিল। বড়দি তিতাসকে সাজাতে ব্যাস্ত। ছোট্ট তিতাসের বেশ লাফালাফি, মামার সাথে গাড়ি করে কোন এক মাসির বাড়ি ঘুরতে যাবে। কিছুক্ষনের মধ্যেই গাড়ি চলে এলো। তিতাস কে কোলে নিয়ে বেড়িয়ে পরল। গাড়িতে উঠতেই, মামু ওই দেখ রেড কার। একটু পরে আবার, মামু আরো একটা রেড কার। ভাগ্নের লাল গাড়ি গোনার চেয়ে দিয়ার সাথে একবার দেখা হওয়াটা ভাবতেই মনে মনে হেসে ফেলে। চুপ করে ত সারা জীবন কাটিয়ে দিল, খড়গপুর অথবা জোকাতে থাকার সময়ে অনেক বন্ধু বান্ধবী হয়েছিল। অনিমেশ ছাড়া কারুর সাথে বিশেষ যোগাযোগ নেই, বেশির ভাগ বন্ধু বান্ধবী কোলকাতার বাইরে চলে গেছে। গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেই কানে ভেসে আসে একটা আওয়াজ, “একটু আস্তে চালিও।”
মনে মনে হেসে ফেলে অভি। ফোন করে দিয়াকে, “তুমি রেডি হয়েছ কি? আমরা প্রায় বারাসাত পৌঁছে গেছি।”
একটা সাদা মাটা সালোয়ার পরে তৈরি দিয়া। আবার ফোন বেজে উঠতেই বিষিয়ে গেল মন, “হ্যাঁ কি হয়েছে? গাড়ি কি এসে গেছে নাকি?”
হেসে ফেলল অভি, “হ্যাঁ ব্যাস আর পাঁচ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাবো।”
দিয়া ঠিক ভাবে না শুনেই উত্তর দেয়, “কি গাড়ি?”
অভি উত্তর দেয়, “সাদা ওয়াগন-আর।”
দিয়া বিষন্ন গলায় উত্তর দেয়, “আচ্ছা, ড্রাইভারকে বল গলির মুখে দাঁড় করাতে, আমি আসছি।”
অভি মুচকি হেসে বলে, “একটু তাড়াতাড়ি এস, তিতাস না হলে আমার চুল ছিঁড়ে খাবে।”
এবারে অবাক হওয়ার পালা দিয়ার, “মানে? তুমি এসেছ, সত্যি বলছ।”
অভি শেষ পর্যন্ত হেসে ফেলে, “হ্যাঁ রে বাবা, আমিও ভাগ্নে কে নিয়ে যাচ্ছি।”
অভি এসেছে ওকে নিতে, ভাবতেই বুকের রক্তে দোল লাগে, “সত্যি বলছ? আচ্ছা দাঁড়াও আমি এখুনি আসছি তোমাদের নিতে।” ভীষণ ভাবেই উত্তেজিত হয়ে যায় দিয়া।
দিয়ার উত্তেজনা দেখে অভির বেশ ভালো লাগে, “না না, আজকে আর বাড়ি যাবো না।”
দিয়া হেসে ফেলে, “তোমার কথা কে শুনছে।” কোন রকমে ফোন রেখে, বাড়ি থেকে দৌড়ে বেড়িয়ে যায় দিয়া।
[+] 1 user Likes pnigpong's post
Like Reply
#75
#চোরাবালি
পর্ব চার। অনুভূতি (#3-#21)
তিতাস কে গাড়িতে বসিয়ে, দরজা খুলে বেড়িয়ে একটা সিগারেট ধরায়। বুক ভরে শ্বাস নেয় অভিনন্দন চ্যাটারজি, কি করছিস তুই? উত্তর আসে, শুধু মাত্র বন্ধুত্ত্ব, ব্যাস আর কি। সবে মাত্র দুটো টান দিয়েছিল সিগারেটে। গলির বাঁকে, ত্রস্ত পায়ে দিয়াকে ওর দিকে আসতে দেখে মনে মনে হেসে ফেলে। হাত থেকে সিগারেট ফেলে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পরে। কিন্তু একি, হাতে ব্যাগ নেই, পরনে খুব সাদা মাটা একটা হলদে রঙের সালোয়ার কামিজ। ঘড়ি দেখল অভি, এখানেই সাড়ে বারোটা বাজে। এখন দিয়া তৈরি হয়নি, কখন বের হবে আর কখন পৌঁছাবে।
ওর সামনে এসে, ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলে, “তুমি না বড্ড শয়তান।”
অভি হেসে বলতে যাচ্ছিল, আমি কেন শয়তান হলাম।
কোন কথা শোনার অপেক্ষা করে না দিয়া। গাড়ির দরজা খুলে তিতাসকে কোলে তুলে বলে, “দুত্তু মিত্তি সোনা, একা একা বসে কি করছ?”
তিতাসকে কোলে নিয়ে একটু তফাত হয়েই দাঁড়ায়। চোখে সলজ্জ এক হাসি মাখিয়ে একটু গলার স্বরে দ্বিধাবোধ নিয়ে বলে, “তুমি দশ মিনিট দাঁড়াও আমি এখুনি তৈরি হয়ে আসছি।”
দিয়ার সলজ্জ হাসির অর্থ বুঝতে বেগ পেতে হয় না অভির, ওর গায়ে দামী সুট, হাতে দামী ঘড়ি দেখে নিশ্চয় বাড়িতে নিয়ে যেতে দ্বিধাবোধ করছে। দিয়ার মনের দ্বিধাবোধ কাটাতে উত্তর দেয়, “ও কিন্তু খুব দুষ্টু, তুমি ওকে একা রাখতে পারবে না কিন্তু।”
দিয়া তাও ওকে একটু হেসে বলে, “না না, আমি ঠিক পারবো।”
দিয়ার ভাসা ভাসা দুই চোখের নীলচে মণির দিকে তাকিয়ে বলে, “ইস হামাম মে হাম সব নঙ্গে হ্যায় দিয়া। (এই স্নান ঘরে আমরা সবাই ল্যাংটো)। এই সুট দেখে কি লাভ বল।”
হাসিটা মিলিয়ে যায় দিয়ার ঠোঁট থেকে, অভির মুখের দিকে তাকিয়ে তিতাসকেই কোলের মধ্যে খুব জোরে চেপে ধরে নিচু গলায় বলে, “তুমি আসবে একবারও বলতে পারলে না?”
অভি বলতে যাচ্ছিল, তাহলে কি আর সারপ্রাইজ দিতে পারতাম নাকি? সেটা না বলে, দিয়ার দিকে একটু ঝুঁকে মুচকি হেসে বলে, “এই হটাত করেই দিদিভাই আসতে বলল তাই ভাগ্নেকে নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম।”
অভির চাহনির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা দুটো কেমন যেন অবশ হয়ে আসে। কাঁপা কণ্ঠে উত্তর দেয়, “না মানে...” ঠোঁট জোড়া অল্প কেঁপে ওঠে, কি উত্তর দেবে দিয়া, ওযে সত্যি ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।
অভি ওর হারিয়ে যাওয়া ভাষা ধরে নিয়ে বলে, “চল, দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
এতক্ষন দিয়ার কোলে তিতাস চুপচাপ একবার মামার মুখের দিকে তাকায়, একবার যার কোলে আছে তার দিকে তাকায়। এই দুটোর মধ্যে কি যে চলছে কিছুই বুঝে উঠতে পারে না।
তিতাসকে কোলে করে দিয়া নিজের বাড়িতে ডেকে নিয়ে গেল। গলির শেষ প্রান্তে দিয়াদের বাড়ি। তিতাস বেশ মিশে গেছে দিয়ার সাথে, তুমি চকলেট খাও? তিতাস মাথা দুলিয়ে, হ্যাঁ খুউব। “মামা দুষ্টু?” “হুম, মামা ব্যাড বয়।” হেসে ফেলে দুইজনেই। ঘেরা দেওয়া বারান্দায় একটা তক্তপোশ পাতা, পাশে দুটো প্লাস্টিকের চেয়ার। অভিকে ঢুকতে দেখে, দিয়ার মা প্রশ্ন করেন, কে রে? গলা নামিয়ে অভির পরিচয় দিতেই ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে পরেন। অভি মাথা নুইয়ে অভিবাদন জানিয়ে অনুরোধ করে যেন ব্যাতিব্যাস্ত না হন। দিয়া, ওকে বসতে বলে ঘরের মধ্যে ঢুকে গেল। এর মাঝে দিদিভাইয়ের ফোন, তোরা বেরিয়েছিস কি? অভি উত্তর দেয়, বেড়িয়ে পড়েছে, দিয়াকে সাথে নিয়ে ঠিক সময়ে পৌঁছে যাবে।
বেশ কিছু পরে একটা ব্যাগ আর একটা বাক্স হাতে দিয়া বেড়িয়ে এলো, “চলো আমি তৈরি।”
তিতাস কে কোলে নিয়ে গাড়ির দিকে যাওয়ার সময়ে একবার আপাদমস্তক দিয়াকে দেখে নেয় অভি। দিয়ার গোলগাল দেহের ওপর লাল রঙের টপ সাথে কালো জিনস দারুন মানিয়েছে। লম্বা চুল একটা হাত খোঁপা করে বাঁধা, তাতে একটা কাঠের ক্লিপ গোঁজা। ইচ্ছে করেই দুকদম পেছনে হাঁটে, শয়তান মন, সুগোল দুই নরম নিতম্বের দুলুনি দেখে অভির বুকের রক্তে দোলা লেগে যায়।
আড় চোখে অভির দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেলে দিয়া, “কি হল এখন দেরি হচ্ছে না?”
ধরা পরে যাওয়াতে ভীষণ লজ্জায় পরে যায়, সঙ্গে সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাশাপাশি এসে বলে, “না মানে এই বদমাশ টাকে কোলে নিয়ে হাঁটা একটু মুশকিল।”
ভুরু উঁচু করে অবাকের সুর টেনে বলে, “ও আচ্ছা তাই নাকি? কিন্তু তোমার চোখ অন্য কোথাও ছিল।”
লজ্জা পেয়ে যায় অভি, “না আমি এই আশেপাশের জায়গা দেখছিলাম।”
গাড়ির দরজা খুলে ব্যাগ বাক্স রাখতে রাখতে দিয়া জবাব দেয়, “এটা শিমলা মানালি নয় যে আশেপাশে অনেক কিছু দেখার আছে।” বলেই ফিক করে হেসে দেয়।
অভি তিতাসকে কোল থেকে নামিয়ে গাড়িতে ঢুকিয়ে দিয়ে বলে, “তোমার সাথে সত্যি কথায় পারা যায়না।”
দিয়া কথার প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে দিয়ে ঠোঁট কেটে হেসে বলে, “অনেকটা রাস্তা, কত সময় লাগবে?”
গাড়িতে উঠে ড্রাইভারকে গাড়ি চালাতে নির্দেশ দিয়ে দিয়ার প্রশ্নের উত্তর দেয়, “কম করে ঘন্টা তিনেক।”
মাথা দোলায় দিয়া, “বেশ একটা আরাম করে ঘুম দেয়া যাবে কি বল।” বলেই জানালার বাইরের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দেয়।
অনেক কথা বলেছে দিয়া, এবারে একদম চুপ, সব কিছু কি সেই বলবে নাকি? অভি কি কোন সারা শব্দ করবে না? মোবাইলে হেডফোন লাগিয়ে কানে গুঁজে, সিটের ব্যাক রেস্টে মাথা এলিয়ে দিয়ে, জানালার দিকে ফিরে চোখ বুজে নেয়। হেডফোন শুধু মাত্র দেখানোর জন্য লাগিয়েছে, কোন গান চালায়নি, পাছে যদি অভি কোন কথা বলতে চায় আর যদি ওর কানে না পৌঁছায় সেই ভয়ে। ওর দুই কান সজাগ থাকে, কখন কিছু ত বলবে অভি। বুকের মধ্যে প্রবল উত্তেজনা, কিছু বল, কিছু বল। বাইক নিয়ে একা আসতে পারত, বেশ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে এতটা পথ একসাথে যেত। এই ভালোলাগা, এই আকর্ষণ, এই ভীষণ দোলা, একবারের জন্য অনুভব করতে চেয়েছিল।
অভি ভুরু কুঁচকে দিয়ার দিকে তাকায়, যাঃ বাবা, সত্যি ঘুমাবে নাকি মেয়েটা। কোলে বসে তিতাস জানালার বাইরে তাকিয়ে এক মনে এক এক করে গাড়ি, ট্রাক বাস ইত্যাদি দেখে চলেছে। গাড়ি চলছে, একাটানা ভ্রুম ভ্রুম ভ্রুরররর আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই নেই, মাঝে মধ্যে পাশের গাড়ির হর্ন। দুইজনে চুপচাপ, ভীষণ চুপচাপ। কিছুক্ষনের মধ্যে তিতাস মামার কোলের মধ্যে মাথা গুঁজে ঘুমিয়ে পরে। অভি, দিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখে, কানে হেডফোন গুঁজে চুপচাপ চোখ বুজে পরে রয়েছে। জিনসের জ্যাকেটের মধ্যে থেকে লাল টপের ভেতরে হাঁসফাঁস করা দুই সুউন্নত স্তন জোড়া ভীষণ ভাবেই উঁচিয়ে। হাল্কা শ্বাসের ফলে আর গাড়ির দুলুনিতে নরম স্তন জোড়া দুলে দুলে উঠছে। অভির চোখ আটকে যায়, দিয়ার গলায়, একটা ছোট তিল ঠিক গলার মধ্যি খানে। কি মেখেছে বলা মুশকিল কিন্তু গন্ধটা ভারী মিষ্টি, একবার মনে হয়েছে যে মসৃণ ঘাড়ে নাক গুঁজে দিয়ার গায়ের গন্ধে মাথা ডুবিয়ে উন্মাদ হয়ে যাওয়া। ভাবতে ভাবতে নিজের মনে হেসে ফেলে অভি। খুব জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে, কেন সেই রাতে আস্তে চালাতে বলেছিল।
দ্বিধা কাটিয়ে গলা খ্যাঁকরে প্রশ্ন করে, “ঘুমালে নাকি?”
কান বরাবর সজাগ ছিল, তাও না শোনার ভান করে চুপচাপ চোখ বন্ধ করেই পরে থাকে দিয়া।
অভি এবারে একটু জোর গলায় প্রশ্ন করে, “ঘুমিয়ে পড়লে নাকি?”
বলেছে, এইবারে সত্যি বলেছে। চোখ খুলে অভির দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়, “না মানে, অনেক লম্বা জার্নি তাই ভাবছিলাম একটু রেস্ট নিয়ে নেই।”
অভি হতাশ কণ্ঠে বলে, “ওহ আচ্ছা, বেশ। গত রাতে ঘুম হয়নি?”
দিয়া হেসে ফেলে, “না না, বেশ ঘুম হয়েছে, আমি খুব ঘুম কাতুরে। একটা বালিশ পেলেই হল ব্যাস।”
অভি প্রশ্ন করে, “সত্যি নাকি?”
ঘুমন্ত তিতাসের গালে আদর করে প্রশ্ন করে, “তোমার কাছ একদম ছাড়ে না, তাই না?”
অভি হেসে উত্তর দেয়, “না, এখানে এলে অথবা আমি যখন মুম্বাই যাই একদম আমার কাছ ছাড়ে না।”
আবার কিছুক্ষন দুইজনেই চুপচাপ, গাড়ির একটানা আওয়াজ, পাশের গাড়ির হর্ন। এক ঘেয়েমি কাটাতে দিয়া প্রশ্ন করে, “আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করব, একটু পার্সোনাল?”
অভি ভুরু কুঁচকে দিয়ার দিকে তাকায়, কি জিজ্ঞেস করতে চলেছে মেয়েটা। মনে মনে হেসে ফেলে, যেটা সবাই জিজ্ঞেস করে সেটাই হবে। এত পড়াশুনা করেও কেন বাড়িতে বসে অথবা তোমার কোন গারলফ্রেন্ড আছে?
দিয়া মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করে, “তুমি এত চুপচাপ কেন?”
একটা বড় নিঃশ্বাস ছেড়ে হেসে উত্তর দেয়, “কোথায় চুপচাপ, এই’ত কথা বলছি।”
দিয়া প্রশ্ন করে, “না মানে আগের দিন সেইভাবে কথাবার্তা বললে না।”
অভি উত্তর দেয়, “ওহ, সেটা ত কাজের ব্যাস্ততা।” বলে হেসে ফেলে, “ঝন্টুর বিয়ের কথা মনে আছে?”
খিলখিল করে হেসে ফেলে দিয়া, “বাপ রে সে কথা কি আর ভুলতে পারি নাকি?”
হাসিটা ভীষণ মন কাড়া, হাসির সাথে বুকের দুলুনি আরো বেশি করে মন কাড়ে অভির। “লেখা তোমার খুব ভালো বান্ধবী, তাই না?”
দিয়া উত্তর দেয়, “হ্যাঁ খুব।”
দিয়ার কাছ থেকে জানতে পারে যে লেখা একটু চুপচাপ স্বভাবের মেয়ে, সব সময়ে একটা স্বপ্নের ঘোরের মধ্যে থাকতে খুব ভালোবাসে, গল্পের বই পড়তে ভালোবাসে, গান গাইতে ভালোবাসে। অভি মাঝে মাঝে হ্যাঁ, হুম আচ্ছা এইসবেই জবাব দেয়। দিয়া ওদের কলেজের কথা বলে, জিওগ্রাফি অনার্স নিয়ে পড়েছে, কলেজ পালিয়ে সিনেমা দেখা, একটু বদমাশি করা ইত্যাদি। পড়াশুনাতে মোটামুটি ছিল, তাই শুধু মাত্র স্নাতক হয়েই খান্ত দেয়। বেশি পড়াশুনার একদম ইচ্ছ ছিল না দিয়ার। কলেজে থাকাকালীন খুব সাজতে ভালবাসত, সেই কথা বলতে গিয়ে একটু লজ্জা পেয়ে গেল। সেই সাজতে আর সাজাতে গিয়েই এই মেকআপ করা শিখে যায়। তারপর সেটা কেই নেশা আর পেশায় পরিনত করে। ইচ্ছে আছে কোনদিন নিজের একটা বিউটি পার্লার খুলবে। বিয়ে বোউভাতের মরশুমে বারাসাত, কাজিপাড়া, হৃদয়পুর মধ্যমগ্রাম এমন কি মাঝে মাঝে একনম্বর গেট থেকেও ডাক আসে। আজকাল মেয়েরা ভীষণ ভাবেই সাজে, পারটি তে গেলে, বিয়ে বাড়ি, বউভাত অন্নপ্রাশন, গৃহ প্রবেশ কিম্বা জন্মদিনের পারটি বাঙ্গালীর হুজুগের যেমন শেষ নেই ঠিক তেমনি সাজের বহরের শেষ নেই। অভি এক মনে দিয়ার কথা গুলো শুনে যায়, কত প্রাণবন্ত মেয়েটা। হলদে রঙের সালোয়ার পরে যে মেয়েটা প্রথমে বেড়িয়ে এসেছিল, সেই মেয়েটা আর এই লাল টপ কালো জিনস পরা মেয়েটা অনেক আলাদা।
কথা গুলো বলতে বলতে হটাত দিয়া বলে ফেলে, “জানো, লেখা আমার এই মেকআপের জিনিস কেনার জন্য এক বছর আগে পঞ্চাস হাজার টাকা দিয়েছিল।” একটু আনমনা হয়েই বলে, “বেশ কিছুটা শোধ করে দিয়েছি, পনেরো এখন বাকি। কারুর দেনা রাখতে ভালো লাগে না, বিশেষ করে বন্ধুত্ত্বের মাঝে টাকা পয়সা আনা একদম পছন্দ করি না।” শেষের দিকে দিয়ার গলায় একটু ব্যাথার সুর।
কারনটা জিজ্ঞেস করা উচিত না অনুচিত সেই দ্বিধাতে আর জিজ্ঞেস করল না অভি শুধু প্রশ্ন করল, “আচ্ছা?”
দিয়া মাথা ঝাঁকিয়ে কণ্ঠে উচ্ছলতা ফিরিয়ে এনে অভিকে জিজ্ঞেস করে, “বাঃ রে আমিই শুধু বলে যাবো নাকি? তুমি কিছু বল?”
অভি হেসে ফেলে, “কি বলব বল?”
দিয়া উত্তর দেয়, “যাঃ বাবা, তুমি না সত্যি মুখ চোরা।” বলেই হেসে ফেলে, “আচ্ছা তোমার পাহাড় ভালো লাগে না সমুদ্র?”
পাহাড় বলতে ছোট বেলায় দারজিলিং আর গ্যাংটক একবার গেছে। তবে বড়দির বিয়ের পর, বহুবার মুম্বাই গেছে, সেখান থেকে দমন দিউ গেছে কিন্তু গোয়া যাওয়া হয়ে ওঠেনি। তবে মুম্বাইয়ের সি-বিচ দেখে সেখানে লোকের ভিড় দেখে সমুদ্র বিশেষ ভালো লাগেনি ওর। আবার পাহাড় তেমন ভাবে টানে না ওকে। এখন ঠিক ভাবে বুঝতে পারেনি ওর কোনটা ভালো লাগে। উত্তরে বলে, “ঠিক জানি না, তবে সমুদ্রও দেখেছি আবার পাহাড় ও দেখেছি। একটা জায়গায় গেলেই হল।” বলেই হিহি করে হেসে ফেলে।
দিয়া অসন্তুষ্ট হয়ে বলে, “তুমি না যাতা লোক, পাহাড় দেখেছ আবার সমুদ্র দেখেছ কিন্তু বলতে পারো না কোনটা বেশি ভালো লাগে?”
অভি একটু হেসে বলে, “পাহাড় বা সমুদ্র নয়, আমার কি ভালো লাগে জানো?” দিয়া মাথা ঝাঁকিয়ে প্রশ্ন করে, কি? দিয়ার নীলচে চোখের মণির গভীরে তাকিয়ে উত্তর দেয়, “শুধু কোথাও হারিয়ে যেতে।”
এইভাবে একদম মুখের সামনে এসে উত্তর দেবে অভি সেটা ভাবতে পারেনি, দিয়া চোখের পলক নামিয়ে লজ্জা পেয়ে হেসে বলে, “ধ্যাত সেটা কোন জায়গা হল নাকি? আমি জায়গার কথা জিজ্ঞেস করছি আর তুমি হেঁয়ালি করছ। বল না, কি ভালো লাগে?”
অভি হেসে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা, তোমার কিরকম জায়গায় যেতে ভালো লাগে?”
দিয়া একটু চিন্তা করে উত্তর দেয়, “আমার না, সমুদ্র ভীষণ ভালো লাগে। পাইরেটস অফ দ্যা ক্যারেবিয়ান মুভি দেখেছ?” অভি মাথা দোলায়, হ্যাঁ। দিয়া বলে, “ঠিক অমন একটা কাঠের জাহাজ হবে, উত্তাল সমুদ্র হবে, কালো ঘন রাতে ভীষণ ঝড় হবে আর আমি জাহাজে কোন এক অন্তহীন সমুদ্র পাড়ি দেব।”
অভি হেসে ফেলে, “বাপ রে, তাহলে একটা পাইরেটের (জলদস্যুর) সাথে প্রেম কর আর কি।”
দিয়াও ঠোঁট কেটে মুচকি হেসে বলে, “জলদস্যু নয় একটা মাটির দস্যু হলেই হবে, ব্যাস।”
অভিও মাথা নাড়িয়ে হেসে ফেলে, “তুমি বেশ ফ্যান্টাসির দুনিয়ায় থাকতে ভালোবাসো তাই না?”
দিয়া ভাসা ভাসা নয়নে উত্তর দেয়, “রাতের বেলা, বন্ধ দরজা পেছনে একা একা বিছানায় শুয়ে, এই ফ্যান্টাসির দুনিয়াই বেশ ভালো লাগে। দিনের আলো বড় কঠিন, গো।”
অভি ম্লান হেসে বলে, “লাইফ একটা রোলার কোস্টারের মতন, যেমন উপরের দিকে যায় তেমন নিচের দিকে যায়, উলোট পালট হয়েই ঘোরা, সেটাই আসল ছন্দ। তখন তুমি ভয়ে চিৎকার করবে না আনন্দে লাফাবে সেটা তোমার ব্যাপার।”
দিয়া স্মিত হেসে উত্তর দেয়, “সত্যি বলেছ, তাহলে এই চুপচাপ মানুষের মধ্যে এক দার্শনিক লুকিয়ে আছে।”
হিহি করে হেসে ফেলে অভি, “না না, এটা ত কেউ একটা মেসেজ ফরোয়ার্ড করেছিল সেটা ঝেড়ে দিলাম, আমি কোন দার্শনিক নই বাবা।”
দিয়াও হেসে ফেলে অভির দিকে তাকিয়ে। এমন সময়ে তিতাস উঠে যায়। দুইজনে ব্যাস্ত হয়ে পরে তিতাসকে নিয়ে। গাড়ি ততক্ষনে রুবি হসপিটাল পেরিয়ে হুহু করে এগিয়ে চলেছে।
[+] 2 users Like pnigpong's post
Like Reply
#76
পর্ব চার। অনুভূতি (#4-#22)

বেশ কিছুক্ষনের মধ্যে গাড়ি গন্তব্য স্থানে পৌঁছে গেল। কনের বাড়ির লোক দেখে বিশেষ করে কনের ভাই এসেছে দেখে বেশ সমাদর করেই ভেতরে নিয়ে যাওয়া হল ওদের। মনামিকে ঘিরে শিতাভ্রর বাড়ির অনেকে একটা ঘরে বসে। তিতাস মাসিকে দেখেই খুব খুশি হয়ে লাফিয়ে চলে গেল। অভি দিদিভাইয়ের দিকে দেখে ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে, কি রে কেমন আছিস? সলজ্জ হাসি দেয় মনামি। আগে রাগে লাল হতে দেখেছে, সেখানে দিদিভাইয়ের গাল দুটো একটু লাজুক একটু অজানা অনুভূতিতে লালচে রঙ ধরেছে। দিদিভাইয়ের এই রূপ এর আগে কোনদিন দেখেনি।
দিদিভাইয়ের পাশে এসে কানে কানে জিজ্ঞেস করে, “কাল রাতে ঘুম হয়েছে?”
সলজ্জ হাসি দিয়ে অভির বাজুতে চাঁটি মেরে বলে, “মারব কিন্তু খুব।”
দিয়াকে দেখিয়ে বলে অভি, “এই নে, তোকে সাজানোর জন্য একদম পারসেল করে নিয়ে এসেছি।”
দিয়াও মনামির পাশ ঘেঁসে অভির দিকে তাকিয়ে সলজ্জ হেসে বলে, “জানো এতটা রাস্তা খালি পেটে নিয়ে এসেছে, কিছুই খাওয়ায়নি।”
মনামি বড় বড় চোখ করে ভাইয়ের দিকে দেখে বলে, “মাঝে কোথাও থামতে পারতিস?”
অভি হসে উত্তর দেয়, “পাঁচটা এইখানে বাজে, বুঝলি। দাঁড়ালে দেরি হত, তোকে কখন সাজাত? তার ওপর এখানে ত আর আমার কথা চলবে না।” বলে মাথা দোলায়। তিতাসকে নিয়ে দিয়াকে বলে, “তুমি শুরু করে দাও, না হলে সময়ে হবে না।”
দিয়া মুচকি হেসে বলে, “না না, বেশি সময় লাগবে না, ব্যাস ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে হয়ে যাবে।”
মনামিকে নিয়ে একটা ঘরে দিয়া চলে গেল সাজানোর জন্য, এদিকে শিতাভ্র ওকে এসে ডেকে নিয়ে গেল। অন্যপাশে, বাকিদের সাথে আলাপ পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য। শীতকালে সন্ধ্যে একটু তাড়াতাড়ি এসে পরে কোলকাতায়। শিতাভ্র আর ওর বন্ধুদের সাথে গল্প করে সময় কাটিয়ে দেয়। এর মাঝে একবার বাড়িতে ফোন করে খবর নেয়। বড়দি ফোনেই বলে, যে বেড়িয়ে পড়েছে এবং দেবীর সাজ দেখে মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার যোগাড়। অভি প্রশ্ন করাতে উত্তর দেয় যে একেবারে চাক্ষুস দেখে বুঝতে পারবে। অভি হেসে ফেলে।
প্রায় সাড়ে সাতটা নাগাদ, দিদিভাইকে সাজিয়ে তৈরি করে দিল দিয়া। নিজেও সেজে গুজে তৈরি, ভীষণ ভাবেই ভিন্ন সাজ। ছোট ছোট গাড় বাদামী রঙের গুটি দেওয়া কাঁচা হলুদ রঙের একটা সম্বলপুরি সিল্কের শাড়ি, ছোট হাতার গাড় বাদামী রঙের ব্লাউজ, যার পিঠের দিকটা বেশ কাটা। লম্বা চুল, একটা আলতো খোঁপা করে বাঁধা, তাতে একটা কাঠের হেয়ার ক্লিপ গোঁজা। হেয়ার ক্লিপের চেয়েও যেটা বেশি আকর্ষণীয় লাগে সেটা হচ্ছে খোঁপায় গোঁজা একটা লম্বা ঘাস ফুল। কানে গলায় কাঠের এবং পোড়া মাটির গয়না, কপালে একটা বড় হলদে আর তার মাঝখানে একটা ছোট বাদামী রঙের টিপ। এমনকি কব্জির ঘড়িটা পর্যন্ত বেশ ভিন্ন। দুই চোখ, ভীষণ ভাবেই টানাটানা করে আঁকা। ঠোঁট দুটো চেরি লাল রঙের লিপস্টিকে রাঙ্গানো, বেশ চকচক করছে। চোখের তারায় হাজার প্রশ্ন, অভির দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে, কেমন লাগছে গো? এই রূপ দেখে অভি বাক্যহারা হয়ে যায়, এইসাজ ভীষণ ভাবেই ভিন্ন প্রকৃতির, এইসাজ ঠিক যেন বউভাতের সাজ নয়, এইসাজ শুধু মাত্র ওর জন্য সাজা। গাড়ি তৈরি, দিদিভাইকে নিয়ে বাড়ির অন্য মেয়েরা ভাড়া করা বাড়িতে যেতে প্রস্তুত হয়।
দিয়া হাতের ইশারা করে অভিকে কাছে ডাকে, “এই যে, শুনছেন।”
অভি মুচকি হেসে গুটি পায়ে দিয়ার পাশে এসে দাঁড়ায়। নাকে ভেসে আসে, মিষ্টি মাতাল করা সুবাস। আঙ্গুলের সাথে আঙ্গুলের স্পর্শ হতেই এক উষ্ণ অনুভূতি খেলে যায় অভির হাতের শিরার ভেতর দিয়ে, “বলুন ম্যাডাম, কি করতে পারি।”
“তুমি কিছুই করতে পারো না” দিয়া বলতে গিয়েও কথাটা বলে না, “ব্যাগ গুলো কি একটু গাড়িতে রেখে দেবেন, প্লিজ?” খুব ইচ্ছে করছিল ডান হাতটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
অভি মাথা নুইয়ে হেসে উত্তর দেয়, “জো হুকুম।”
তিতাসকে দিয়ার কাছে রেখে, ব্যাগ নিয়ে এলো। দিয়া তিতাসকে কোলে করে গাড়িতে উঠে গেল। শিতাভ্রর বাড়ি থেকে বিয়ের বাড়ি যেতে বেশি সময় লাগলো না। বাড়ির মধ্যে ঢুকতেই দেবাশিস বাবুর সাথে দেখা। অভি ইশারা করে দিয়াকে অন্যত্র যেতে অনুরোধ করে, “তুমি চলো, আমি এই আসছি।” দিয়া মাথা দুলিয়ে তিতাসকে নিয়ে ঢুকে পরে বাড়ির মধ্যে।
দেবাশিস বাবু অভিকে জিজ্ঞেস করেন, “কেমন আছো?”
অভি মাথা দুলিয়ে উত্তর দেয়, “ভালো, কখন এলে?”
দেবাশিস বাবু উত্তর দেন, “এই একটু আগে।”
অভি প্রশ্ন করে, “মিডিয়া হাউসে জয়েন করবে বলছিলে, হয়ে গেছে?”
দেবাশিস বাবু উত্তর দেন, “হ্যাঁ। তোমার কি খবর বল?”
অভি উত্তর দেয়, “এই ব্যাস চলে যাচ্ছে আর কি। এইবার কয়েক জায়গায় ফোরসড এপ্লিকেসান দেব, দেখি কোথাও না কোথাও থেকে কল এসে যাবে।”
দেবাশিস বাবু একটু হেসে উত্তর দেন, “হ্যাঁ হ্যাঁ, তোমার প্রোফাইল দেখে যে কেউ লুফে নেবে। এই কোয়ালিফিকেশানের কেউই কোলকাতায় থাকে না।”
অভিও হেসে উত্তর দেয়, “দেখা যাক।”
দেবাশিস বাবু বলেন, “চল ভেতরে চল, একবার মনামির সাথে দেখা করে আসি।”
অভি ঘড়ি দেখে জিজ্ঞেস করে, “তাড়া আছে নাকি?”
দেবাশিস বাবুও ঘড়ি দেখে উত্তর দিলেন, “হ্যাঁ মানে একটু তাড়া আছে।”
অভি প্রশ্ন করে, “সবে সাড়ে সাত’টা বাজে, একটু পরেই বাড়ির সবাই চলে আসবে। একেবারে দেখা করেই যাবে।”
দেবাশিস বাবু স্মিত হেসে বলেন, “হ্যাঁ সেটা নিশ্চয় দেখা করেই যাবো। বউদি, দাদা কেমন আছেন?”
অভি উত্তর দেয়, “বাড়ির সবাই ভালো আছে। পাপা এই সেপ্টেম্বরে রিটায়ার করল, এখন বাগান নিয়ে পড়েছে। বাড়ির পেছনের আগাছা গুলো সাফ করে সেখানে বেগুন, টমেটো এই সব চাষ করবে।” বলেই হেসে ফেলে।
দেবাশিস বাবুও একটু হেসে বলেন, “হ্যাঁ, এই গাছ গাছালি নিয়ে দাদার সেই ছোটবেলা থেকেই বাতিক।”
অভি উত্তরে বলে, “হ্যাঁ, কাজের মানুষ, কিছু একটা নিয়ে থাকা ভালো।”
দেবাশিস বাবু জিজ্ঞেস করেন, “তোমার কোলে ওই ছোট বাচ্চাটা কে?”
অভি হেসে ফেলে, “আমার ভাগ্নে, তিতাস, বড়দির পুত্র। ওর মুখে ভাতে তোমরা কেউই এলে না।”
লজ্জা পেয়ে যান দেবাশিস বাবু, “না মানে, সেই সময়ে আমি একটু কাজের জন্য বাইরে গিয়েছিলাম।”
অভি বুঝতে পারল যে এই ব্যাপারটা এড়িয়ে যাওয়াটাই ভালো। তাই আর কথা না বাড়িয়ে দেবাশিস বাবুকে নিয়ে বাড়ির মধ্যে ঢুকে পরল।
হলের একদিকে একটা স্টেজের মতন তৈরি করে সেখানে দিদিভাইয়ের বসার জায়গা তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু দিদিভাই সেখানে বসে নেই, বেশ দিব্যি তিতাসকে কোলে করে সবার সাথে ঘুরে ঘুরে আলাপ পরিচয় গল্প করে বেড়াচ্ছে। অভির এটা দেখে বেশ ভালো লাগলো, ওই ভাবে মাটির পুতুলের মতন সাজিয়ে কাউকে বসিয়ে রাখা অভি একদম পছন্দ করে না। মনে হয় যেন সবাই পুজো প্যান্ডালে প্রতিমা দেখতে এসেছে। দিয়া একদিকে দাঁড়িয়ে ফোনে ব্যাস্ত, মাঝে মাঝেই এদিকে ওদিকে তাকিয়ে কাউকে খুঁজে বেড়াচ্ছে ওর দুই চোখ। অভিকে দেখতে পেয়েই যেন ধড়ে প্রান ফিরে পেল। ছোট পায়ে ওর দিকে এগিয়ে আসতেই, আঙ্গুলের ইশারায় অভি বারন করে দেয়, কারন পাশেই দেবাশিস বাবু দাঁড়িয়ে। দিদিভাইকে কাছে ডেকে তিতাসকে কোলে তুলে নিল অভি। দেবাশিস বাবুও ভদ্রতার খাতিরে মনামির কুশল জিজ্ঞেস করলেন। কিছু পরেই শোরগোল একটু বেশি বেড়ে গেল বাড়িতে, কনের বাড়ি থেকে আত্মীয়রা এসে উপস্থিত।
অভি আর মনামির মাঝে চোখাচুখি হল। মিষ্টি হেসে ইশারায় দিদিভাইকে সাবধান করে দিল, মাকে দেখে কাঁদিস নে যেন।
ভাইয়ের বাজুতে চিমটি কেটে উত্তর দেয় মনামি, না না কাঁদব না। বলতে বলতেই চোখের কোল মুছে নেয়।
দিদিভাই চলে যেতেই পিঠের ওপর দড়াম করে একটা কিল। বত্রিশ পাটি দন্ত বিকশিত করে ঝন্টু জিজ্ঞেস করে, “ফুল্টু ব্যাটিং করেছিস নাকি রে?”
হেসে ফেলে অভি, একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা দিয়াকে দেখিয়ে বলে, “না রে, এখন পিচে নামার সময় পাইনি।”
ঝন্টু আর লেখাকে দেখে দিয়া এগিয়ে আসে ওদের দিকে। লেখা দিয়াকে আপাদমস্তক দেখে হেসে বলে, “একি রে তোকে ভীষণ সুন্দর লাগছে।”
দিয়াও লাজুক হেসে উত্তর দেয়, “তুইও ত বেশ লাগছিস রে।”
চওড়া লাল পাড়ের, ধুসর রঙের তসরের শাড়ি বাঙালি আটপৌরে কায়দায় স্বাতীলেখার অঙ্গে জড়ানো। দুই কালো বাঁকা ভুরুর মাঝে লাল টিপ বিরাজমান, সর্বাঙ্গে ভারী সোনার গয়নায় বনেদী বাড়ির বাঙালি বৌমার সাজে সজ্জিত। ঝন্টুও লেখার শাড়ির সাথে মিলিয়ে একটা পাঞ্জাবী পায়জামা পড়েছে। লেখার সাজে এক ঐতিহ্যগত বনেদিয়ানা আর পাশেই দিয়া যার সাজে সমকালীন কমনীয়তা। দিয়া অভির পাশ ঘেঁসে দাঁড়াতেই, লেখার চোখে এক দুষ্টুমিষ্টি হাসি খেলে যায়। অভির দৃষ্টির অগোচরে দুই বান্ধবীর মধ্যে চোখের ভাষায় অনেক কথা হয়ে যায়। বড়দিকে দেখতে পেয়েই তিতাস ও হাত ছেড়ে পালিয়ে যায়।
লেখাকে নিয়ে দিয়া একটু তফাত যেতেই ঝন্টু অভির কানে কানে ফিসফিস করে বলে, “দেবী কে দেখেছিস?”
অভি ভুরু কুঁচকে মাথা নাড়ায়, “না, কি হয়েছে বল’ত? বড়দিও বলছে, তুইও বলছিস? দেবী কি এমন করেছে?”
ঝন্টু মাথা চুলকে একটু হেসে উত্তর দেয়, “না না, কিছু করেনি। তবে সত্যি বলছি...” বলে দরজার দিকে তাকায়।
দরজার দিকে লোকজনের একটু ভিড় ছিল, হটাত করেই সেই ভিড় সরে গেল। দেবীকে ঢুকতে দেখে সবাই পথ ছেড়ে দাঁড়ায়, যেন কোন দেশের মহারানী প্রবেশ করছে। ফর্সা, টুকটুকে দেবী, পরনে হলদে আর লাল রঙের ঠিক যেন আগুনের মতন রঙ, বিশাল ঘেরের বেশ লম্বা একটা কাঁধ বিহীন ইভিং গাউন। গাউনের নিচের দিকে অসংখ্য ছোট ছোট রুপোলী তারা খচিত। দুই কানে লম্বা ক্রিস্টালের দুল, গলায় কন্ঠ চাপা ক্রিস্টাল পাথরের একটা হার যার মাঝখানে নীল মণির মতন একটা পাথর জ্বলজ্বল করছে। দুই ফর্সা কব্জিতে চওড়া সাদা চকচকে পাথরের ব্রেসলেট। মাথার চুল পরিপাটি করে একটা সুন্দর খোঁপা করে বাঁধা, চুলের এক পাতলা গুচ্ছ কপাল বেয়ে বাম গালের ওপরে দোল খেয়ে বেড়াচ্ছে। টানাটানা চোখ দুটো ভারী সুন্দর করে আঁকা, চোখের পাতার ওপরে লালচে আইশ্যাডো। পিঠের পেছন দিয়ে, দুই হাতের মধ্যে জড়িয়ে একটা আগুনে লাল রঙের পাতলা ওড়নার মতন একটা কাপড়। বাঁ হাতে একটা লাল রঙের ক্লাচ ব্যাগ। দুই হাতে, লম্বা ঘেরের গাউন একটু তুলে নরম ছোট পায়ে হলের মধ্যে প্রবেশ করে। সর্বাঙ্গে এক সুচারু মার্জিত ভাবে ফুটে উঠেছে। বেশির ভাগ মানুষের দৃষ্টি দেবীর দিকে নিবদ্ধ। যদিও বিয়েতে অনেকেই দেখেছে তাও বউভাতের এই অনন্যা সাজে সবাই বাকরুদ্ধ। বাঙালির বিয়ে অথবা বউভাতে এইসাজে এই বাড়ির কেউই কাউকে কোনদিন দেখেনি তাই সবার চোখে এক প্রশ্ন এই মেয়েটার পরিচয় কি।
দাদাকে দেখে, মিষ্টি হেসে ডান হাত একটু তুলে আঙ্গুল নাড়িয়ে অভিবাদন জানায়, “হাই।”
অভি স্মিত হেসে দেবীকে কাছে ডাকে বলে, “তুই সত্যি আগুন ধরিয়ে দিবি দেখছি।” দেবীর কাঁধে হাত রেখে কাছে টেনে, মাথায় ঠোঁট চেপে বলে, “তোকে ভারী মিষ্টি দেখাচ্ছে।”
দেবী দাদার বুকের মধ্যে কুঁকড়ে গিয়ে উত্তর দেয়, “থ্যাঙ্কস, গত বছর বারথডেতে ড্যাড এটা সাউথ আফ্রিকা থেকে এনে দিয়েছে।” পারলে যেন দাদার কোটের মধ্যে ঢুকে যাবে। মিষ্টি হেসে নরম গলায় দাদাকে প্রশ্ন করে, “তুমি কেন আগে এলে?”
অভি উত্তর দেয়, “দিদিভাই ডেকেছিল তাই আসতে হল।”
দাদার কাছে একটু অভিমান সুরে অনুযোগ করে, “সকালে ফোন পাওয়ার পর আর স্কুল যাইনি। বাড়িতেই ছিলাম, একবার বলতে পারতে।”
অভি ওর কাঁধে হাত রেখে আদর করে উত্তর দেয়, “আমি কি করে জানবো বল।”
অভিমানীর অনুযোগ যেন আর শেষ হয় না, “আমাকে ফোন করলেই পারতে।” একবার এদিক ওদিক তাকিয়ে প্রশ্ন করে, “ড্যাড, এসেছে নাকি?”
মাথা দোলায় অভি, “হুম।”
অভি, দিয়া আর লেখার দিকে দেখিয়ে দেবীকে বলে, “যা, ওদের সাথে কথা বল, গল্প কর।”
দাদার একদম কোল ঘেঁসে দাঁড়িয়ে নরম কণ্ঠে উত্তর দেয়, “না গো, কেমন অকোয়ারড ফিল (বেমানান মনে) হচ্ছে।”
দেবীকে বুঝিয়ে বলে অভি, “এমন করলে হবে, বল। তুই এইভাবে আমার পাশ না ছাড়লে সবাই ভাববে মেয়েটার কি নাক উঁচুরে বাবা।”
দেবী দাদার দিকে তাকিয়ে বলে, “আচ্ছা বাবা, কিন্তু আমি ড্যাডের সামনে যাবো না।”
অভি উত্তরে বলে, “ঠিক আছে, তুই দিয়া আর লেখার পাশে পাশেই থাকিস।” এই বলে বুঝিয়ে সুঝিয়ে দিয়া আর লেখার কাছে পাঠিয়ে দেয়।
আলতো মাথা দুলিয়ে ছোট পায়ে লেখা আর দিয়ার সাথে গল্প করতে চলে যায় দেবী। তিনজনের দিকে তাকিয়ে দেখে অভি, তিন জনেই তিন সাজে অনন্যা।

[Image: 117870953-3271163296271239-2155538677769151534-n.jpg]
photo uploader free
[+] 3 users Like pnigpong's post
Like Reply
#77
Update..
Like Reply
#78
একটাই কথা বলার, জাস্ট সেরা ! এরকম লেখা অসাধারণ, লাখে একটা মেলে। কিন্তু পিনুরাম সবাইকে হতাশ করে হারিয়ে গেলেন !
Like Reply
#79
পরের পর্ব ???
Like Reply
#80
Please update
Like Reply




Users browsing this thread: 2 Guest(s)