Posts: 765
Threads: 29
Likes Received: 1,595 in 627 posts
Likes Given: 134
Joined: Dec 2019
Reputation:
98
পঞ্চম পরিচ্ছদ – মরুভুমি আর মরীচিকা
(#১০)
শনিবার বড়দা যথাসময়ে স্বপনের বাড়ি আসেন। এসেই উনি ভাস্করের সম্পরকে সব খোঁজ খবর নিতে শুরু করেন।
স্বপন – দেখুন বড়দা আমি ভাস্করকে চিনি। ওর বাড়ি নিয়ে প্রায় কিছুই জানি না।
বড়দা – তবে তুমি ওদের বিয়ে দিতে কেন চাইছ ?
স্বপন – ওর বাড়িতে সুধু ওর মা আছেন। ওর বাবা বেশ কিছু বছর আগে মারা গিয়েছেন। সেই সময় ভাস্করকে দুবাই ছেড়ে ফিরে আসতে হয়।
বড়দা – ভাস্কর দুবাইয়ে কি করত ?
মানসী – ও একটা গাড়ির ডিলার আলামুল্লাহ কোম্পানিতে আকাউন্টেসে কাজ করত।
বড়দা – তোমাকে কোন কথা জিজ্ঞাসা করিনি। তোমাকে যখন জিজ্ঞাসা করবো তখন উত্তর দেবে।
স্বপন – বড়দা বিয়েটা মানসীর
বড়দা – তাতে কি হয়েছে ? আমি আর তুমি ত সেই কথাই বলছি। ও শুধু চুপচাপ শুনে যাক।
স্বপন – ভাস্কর দুবাইয়ে যা চাকুরি করত তাতে খুব বেশি টাকা পয়সা জমাতে পারেনি। ফলে দেশে ফিরে আসার কিছুদিনের মধ্যেই সব টাকা ফুড়িয়ে যায় ।
বড়দা – এখন ওদের চলে কি ভাবে ?
স্বপন – অদের বাড়িটা ওর বাবার বানানো। দুটো ঘর ভাড়া দেওয়া আছে। সেই ভাড়ার পয়সা আর যখন যা কাজ পায় তাই করে।
বড়দা – তবে বিয়ে করে বউ কে কি খাওয়াবে ?
স্বপন – সে মানসীরও কিছু ইনকাম আছে।
বড়দা – বৌয়ের পয়সায় সংসার চালাবে ?
স্বপন – ক্ষতিটাই বা কি তাতে ?
বড়দা – এটা আমার কাছে ভাল লাগছে না
স্বপন – বড়দা আপনি বিয়ে করছেন না। রাঙ্গাদির বিয়ের কথা হচ্ছে। তাই আপনার ভাল লাগা বা না লাগার থেকে রাঙ্গাদির ভাল লাগার গুরুত্ব অনেক বেশি।
বড়দা – শুধু ভাল লাগা দিয়ে বিয়ে হয় না।
স্বপন – আর কি চাই ?
বড়দা – তুমি মাঝে মাঝে ছেলে মানুসের মত কথা বল। একটা ছেলের বংশের কথা কিছু জানি না। ওর কোন ইনকাম নেই আর ওর সাথে বোনের বিয়ে দেব !
স্বপন – আপনাদের কি বংশ মহিমা আছে ?
বড়দা – কি বলতে চাইছ তুমি ?
স্বপন – বড়দা রাগ করবেন না। আপনি একটা সরকারি কেরানী। আপনার বাবার কাগজের ব্যবসা ছিল। তার আগে আপনার পূর্ব পুরুষরা বাংলাদেশে চাষবাস করে দিন কাটাতেন। এর মধ্যে বিশাল কিছু মহান ঘটনা নেই। আর আমার মনে হয় ভাস্করের বংশ এর থেকে খুব বেশি আলাদা হবে না।
বড়দা – কিন্তু ছেলেটা বেকার।
স্বপন – আপনার যখন বিয়ে হয় তখন আপনারা সবাই মিলে দুটো ঘরে ভাড়া নিয়ে থাকতেন। আপনি ১৮৫ টাকা মাইনে পেতেন। তাও সুলগ্না বৌদির বাবা আপনার সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন।
বড়দা – সে উনি জ্ঞানী মানুষ, আমাকে দেখে বুঝেছিলেন আমার কি ক্ষমতা।
স্বপন – আপনাদের বাড়ি সুলগ্না বৌদির বাবার বানানো। কিন্তু ভাস্করের বাড়ি ওর বাবার বানানো।
বড়দা – তাতে কি হল ?
স্বপন – তাতে এই হল যে ভাস্করের সাথে রাঙ্গাদির বিয়ে দেওয়া যায়।
বড়দা – আমার মত নেই।
স্বপন – শ্রেয়সীর যার সাথে বিয়ে দিয়েছেন তার থেকে ভাস্কর অনেক ভাল ছেলে।
বড়দা – ঠিক আছে, ভাস্কর আসুক ওর সাথে কথা বলে দেখি।
স্বপন – বড়দা আমি দুঃখিত, অনেক আজে বাজে কথা খারাপ ভাবে বলেছি আপনাকে। আমার আপনাদের ছোট করার কোন উদ্দেশ্য নেই।
বড়দা – স্বপন আমি তোমার কথায় রাগ করি না। তুমি যা বলেছ সেসব ঠিকই বলেছ। কিন্তু আমার মাথা সেটা মেনে নিলেও মন মানছে না।
মানসী – কিন্তু দাদা আমি চাই ভাস্করকে বিয়ে করতে।
বড়দা – তুমি কি বোঝ ? তুমি ভাবছ যে তুমি অনেক বড় হয়ে গেছ। কিন্তু যতই বড় হও না কেন আমার থেকে বড় হতে পারবে না।
নিহারিকা চা জলখাবার দেয়। বড়দা খুশী মনে সেসব খেতে থাকেন। এর মধ্যেই ভাস্কর চলে আসে। স্বপন ভাস্কর আর বড়দার আলাপ করিয়ে দেয়।
বড়দা – ভাস্কর তুমি আমার বোন কে বিয়ে করতে চাও ?
ভাস্কর – হ্যাঁ দাদা
বড়দা – কেন চাও ?
ভাস্কর – ভাল লেগেছে তাই
বড়দা – তোমার তো কোন নিশ্চিত আয় নেই। কি ভাবে খাওয়াবে ?
ভাস্কর – সে আমরা দুজনে সব করে নিতে পারবো
বড়দা – তোমরা দুজনে ? তুমি একা পারবে না ?
ভাস্কর – এই মুহূর্তে একা সামলানোর ক্ষমতা নেই। কিন্তু আমি বলছি আর দু বছরের মধ্যে আমি ঠিক সেই ক্ষমতা অর্জন করবো।
বড়দা – এত দিন কেন পারনি
ভাস্কর – এতদিন জীবনের কোন লক্ষ্যই ছিল না। আর সামনে কোন লক্ষ্য না থাকলে কেউ দৌড়ায় না।
বড়দা – তুমি বলছ যে সব ছেলেই বিয়ের পড়ে দৌড়ানো শুরু করে !
ভাস্কর – না না সবাই তা নয়। কিন্তু আমি পারিনি সেটা আমার অক্ষমতা
বড়দা – এইসব কথা তুমি বলেছ মানসীকে ?
ভাস্কর – এর থেকে অনেক বেশি বলেছি। আমি কিছুই লুকাইনি মানসীর কাছে। আসলে আমি বিয়ে করতেও চাইনি। মানসী ভরসা দেওয়াতেই বিয়ে করতে চাই।
বড়দা এবার মানসীকে আলাদা ডেকে নিয়ে গেলেন।
বড়দা – তুই কি হিসাবে এই ছেলেটাকে বিয়ে করার জন্য পছন্দ করলি ?
মানসী – আমার ভাস্করকে খারাপ লাগেনি
বড়দা – খারাপ লাগেনি বুঝলাম, কিন্তু ভাল কেন লাগল ?
মানসী – দাদা এটা ভাল বা খারাপ লাগার জন্যে নয়। এটা বেঁচে থাকার জন্যে।
বড়দা – আমরা কি তোমাকে খুব কষ্টে রেখেছি ! তুমি কি আমাদের সাথে বেঁচে থাকবে না ?
মানসী – দাদা এই ভাবে তোমাদের বোঝা হয়ে কতদিন থাকবো ?
বড়দা – আমরা কেউ কি তোমাকে বোঝা বলেছি ?
মানসী – তোমরা কেউ আমাকে বোঝা বলবে না। আমি তোমাদের সাথে খুব ভালই আছি। কিন্তু এই ভাবে আর কতদিন ?
বড়দা – কিন্তু তাই বলে আমি তোমাকে যার তার সাথে বিয়ে দিতে পারি না।
মানসী – বড়দা, ভাস্করকে আমি চিনেছি। ওর সাথে খারাপ থাকবো না।
বড়দা – আমি যদি বিয়ে দিতে রাজি না হই ?
মানসী – তোমার অমতে বিয়ে করবো না।
বড়দা ফিরে এসে স্বপন কে বললেন যে উনি এই বিয়েতে রাজি নন।
স্বপন – কেন বড়দা ?
বড়দা – দেখো এতদিন আমি জানতাম যে তুমি মানসীর খুব ভাল বন্ধু। কিন্তু আমি ভাবতে পারিনি তুমি এই রকম সম্বন্ধ নিয়ে আসবে আমার বোনের জন্য।
ভাস্কর – দাদা আমার কোন খারাপ উদ্দেশ্য নেই
বড়দা – রাখ তোমার উদ্দেশ্য। একটা সাদা সিধে মেয়ে দেখে তোমার মনে হয়েছে পটিয়ে নিতে পারবে। তুমি জান যে তোমার মত অকর্মণ্য আর অপদার্থ ছেলেকে কোন মেয়েই পছন্দ করবে না। তাই আমার এই সরল বোনকে বোকা বানিয়েছ। কিন্তু তুমি জানতে না যে ওর একটা দাদা আছে। আমি তোমার মত ছেলের সাথে আমার বোনের বিয়ে দেব না।
স্বপন – বড়দা আপনার বোনের বিয়ে দেওয়া নিয়ে আমি জোর করতে পারি না
বড়দা – স্বপন আমি তোমার সাথে এ নিয়ে আর কোন কথা বলতে চাই না।
ভাস্কর – দাদা আপনার বোন আমার সাথে অসুখী হবে না।
বড়দা – রাখ তোমার সুখ। তুমি ভাল থাকার বোঝো কি ? তুমি কি ভেবেছ আমি বুঝিনা তুমি কি জন্যে মানসীকে বিয়ে করতে চাইছ ? তোমার আসল উদ্দেশ্য বুঝে ফেলেছি।
ভাস্কর – আপনি যা ভাবছেন তা নয়
বড়দা – আমি তোমাদের মত ছেলেদের বেশ চিনি। আমার বোনের সাথে কি করতে চাও আমি বুঝি না ? শরীরের গরম ঠাণ্ডা হয়ে গেলেই ওকে ছেড়ে চলে যাবে।
ভাস্কর – দাদা আপনি এইভাবে আমাকে বলতে পারেন না
বড়দা – রাখ তোমার কথা বলা। আমি তোমার নোংরা উদ্দেশ্য মেটানোর জন্য আমার বোনকে তোমার সাথে বিয়ে দেব না।
এরপর আর অনেক কথা হয়। কিন্তু বড়দা ওনার সিদ্ধান্ত বদলান না। স্বপন পরিস্কার বুঝতে পারে বড়দা আসলে বোনের বিয়েই দিতে চান না। মানসীর বিয়ে হয়ে গেলে অই বিউটি পার্লারের সব ইনকাম মানসী নিয়ে যাবে। বড়দার কাছে কিছুই আসবে না। সুতরাং বিয়ে না দেওয়াই ভাল। মুখে বলছিলেন বোনকে নিয়ে খুব চিন্তিত। কিন্তু আসলে বোনের পয়সা নিয়ে বেশী চিন্তিত। বোনের থেকে বোনের পয়সার গুরুত্ব অনেক বেশী। তাই বোনের বিয়ে দেবার কোন মানেই হয়না। তার জন্য স্বপনের রুড কথা গুলোও হজম করে নিলেন। কারন উনি বুঝতে পারছিলেন স্বপনের সাথে তর্ক করলে স্বপন থামবে না, বরং আরও গণ্ডগোল বেশী হবে। মানসীও ৪০ বছরের অভ্যেস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারেনি। ৪০ বছর ধরে বাবা আর দাদার আজ্ঞাবাহিনি হয়ে জীবন কাটিয়েছে। সেই জায়গা থেকে নিজে সিদ্ধান্ত নেবার সাহস পায় নি।
স্বপন জোর করতে চাইছিল কিন্তু নিহারিকা ওকে নিষেধ করে। আর স্বপন দেখে মানসী নিজেই যখন বড়দার বিরুদ্ধে জেতে সাহস পাচ্ছে না, তখন জোর করে বিয়ে দেবার ফল ভাল নাও হতে পারে। তাই সেস পর্যন্ত বিয়ে আর হয় না। বড়দা বাড়ি ফিরে যান। উনি ভেবেছিলেন মানসীকেও সাথে নিয়ে যাবেন কিন্তু মানসীর মনের অবস্থা দেখে ওকে স্বপনের কাছে আরও দুদিন থেকে যেতে বলেন।
পরদিন রবিবার। ভোর পাঁচটার সময় ভাস্কর এসে স্বপনের বাড়ির দরজা জরে নক করতে থাকে।
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!  Sad
•
Posts: 765
Threads: 29
Likes Received: 1,595 in 627 posts
Likes Given: 134
Joined: Dec 2019
Reputation:
98
(#-১১)
আগের রাতে মানসী সারারাত ঘুমায়নি। অনেকক্ষণ স্বপনের সাথে কথা বলেছে। মানসী কিছুতেই বুঝতে পারে না বড়দা ওর বিয়ে কেন দিতে চায় না। স্বপন ওকে বোঝায় যে বড়দা মানসীর পার্লারের আয় ছাড়তে চায় না। মানসীর একবার স্বপনের কথাই সত্যি মনে হয়। কিন্তু তারপরেই সেটা মেনে নিতে মন চায় না। ওর কাছে বা ওদের বাড়ির সবার কাছে বড়দা দেবতুল্য মানুষ। সব সময় উনি ওদেরকে রক্ষা করে এসেছেন। ও কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারে না বড়দা এত নিচু মনের হতে পারে।
রাতের খাবার পরে নিহারিকা বেশী ক্ষন জেগে থাকতে পারে না। তাই ও ছেলে মেয়ের কাছে ঘুমিয়ে পড়ে। মানসী আর স্বপন অনেক রাত পর্যন্ত কথা বলে। একসময় স্বপনও ঘুমিয়ে যায়। মানসী সারারাত জেগে জেগে ওর জীবন আর সেই জীবনে বড়দার ভুমিকার কথা ভেবে যায়। কিছু ঘটনায় ওর স্বপনের কথাই সত্যি মনে হয়। আবার ভাবে এই বড়দা না থাকলে ওরা কি করত। এই চিন্তা করতে করতে ভোরের দিকে ঘুমিয়ে যায়।
হটাত দরজায় নক করার শব্দে মানসীর কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে যায়। দেয়াল ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে সকাল পাঁচটা বাজে। দরজার নকের শব্দ একটু একটু করে বাড়তে থাকে। মানসী একবার ভাবে স্বপনকে ডাকবে। কিন্তু তারপর আর ডাকে না। আস্তে করে উঠে যায়, দরজার আইহোল দিয়ে দেখে ভাস্কর দাঁড়িয়ে। ততক্ষনে ভাস্কর দমা দম বাড়ি মারছে দরজায়। মানসী আর কিছু না ভেবে দরজা খুলে দেয়।
ভাস্কর টলতে টলতে ভেতরে ঢুকে সোফায় বসে পড়ে। মানসীও উদ্বিগ্ন হয়ে ওর পাশে গিয়ে বসে। ভাস্কর জড়িয়ে জড়িয়ে কথা বলছিল।
ভাস্কর – আমার পাশে বস না, খারাপ হয়ে যাবে
মানসী – এ কথা কেন বলছ ?
ভাস্কর – এ কথা আমি কখন বললাম, এতো তোমার রাজপুত্র দাদা বললেন। আমি খারাপ ছেলে, দু দিন তোমাকে ভোগ করে পালিয়ে যাবো। কোথায় গেল তোমার সেই মহান দাদা ?
মানসী – দাদা বাড়ি ফিরে গেছে
ভাস্কর – তুমি এখানে কি করছ ? আমাকে জ্বালাতে এসেছিলে, আর থাকার কি দরকার ?
মানসী – দেখো ভাস্কর আমার কোন ইচ্ছে ছিল না তোমাকে দুঃখ দেবার। কিন্তু আমি দাদার অমতে কিছু করতেও পারবো না।
ভাস্কর – দাদার অমতে কিছু করতে পারবে না তো আমার পেছনে লেগেছিলে কেন ?
মানসী – আমি তোমার পেছনে কবে লাগলাম! এটা তো দুজনেরই বাঁচার চেষ্টা ছিল।
ভাস্কর – তুমি তো বেঁচে থাকবে। কিন্তু আমি মরে যেতে যেতে তোমাকে দেখে ভেবেছিলাম বেঁচে যাব। কিন্তু তুমি মরিচিকা হয়েই থেকে গেলে। আমি পিপাসায় মরে যাবো।
মানসী ভাস্করকে জড়িয়ে ধরে।
মানসী – এইরকম কথা বোলো না। আমিও সে ভাবে বেঁচে থাকবো না।
ভাস্কর – কোথায় গেল তোমার ওই বোকাচোদা স্বপন ?
মানসী – স্বপনকে গালাগালি দেবে না
ভাস্কর – কেন দেব না ? ওই শালা শুয়োরের বাচ্চার জন্যেই এই অবস্থা আমাদের।
মানসী – স্বপন আমাদের বাঁচানোর চেষ্টাই করেছিল
ভাস্কর – কে বলেছিল ওকে এই বালের চেষ্টা করতে ? ডাকো স্বপনকে, শালার গাঁড় মেরে বৃন্দাবন না দেখালে আমার শান্তি হচ্ছে না।
মানসী – কেন আজে বাজে কথা বলছ ?
ভাস্কর – কেন বলবো না ? ওর জন্যেই এই অবস্থা। আর তোমার দাদা বলে কিনা আমি তোমাকে দুদিন চুদে পালিয়ে যাবো। বল আমি কি তোমাকে চোদার জন্যে ভালবেসেছি ?
মানসী – ছি ছি কি সব কথা বলছ ?
ভাস্কর – আমি তোমাকে ভালবেসেছি মানসী। আমি তোমাকে একদিনও চুদতে চাইনা। শুধু তুমি আমার সাথে থাকো, আমি বেঁচে যাবো।
মানসী – আমি তোমার সাথেই আছি।
ভাস্কর – কোথায় আছো আমার সাথে !
মানসী – আমি জেখানেই থাকি না কেন, আমার মন তোমার সাথেই আছে
ভাস্কর – তুমি সামনে না থাকলে তোমার মন দিয়ে আমি কি বাল ছিঁড়ব ?
মানসী – ভাস্কর, তুমি মদ খেয়ে আছো, এখন বাড়ি যাও। গিয়ে বিশ্রাম নাও। আমরা পরে কথা বলবো।
ভাস্কর – যখন দুঃখে আমার গাঁড় ফেটে যায় তখন একমাত্র মদ খেয়েই ঠিক থাকি। কিন্তু বাল কাল সারারাত মদ খেয়েও শান্তি পাইনি। তাই এই ভোরবেলা তোমার কাছে এসেছি।
মানসী – তুমি মদ খেলে আমি তোমাকে ভালবাসবো না,
ভাস্কর – তুমি সাথে থাকলে কোন শালা মদ খাবে ? তুমি থাকলে মদ খাবার দরকার হবে না।
মানসী – আমি আছি তোমার সাথে। একটু সময় দাও, আমি তোমার কাছেই ফিরে আসবো।
রাত্রে মানসী শুধু একটা হাতকাটা নাইটি পড়ে শুয়েছিল। ভেতরে কোন অন্তর্বাস ছিল না। মানসী যখন ভাস্করকে জড়িয়ে ধরে তখন ওর বুকের অনেকটাই উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছিল। ভাস্কর ওর বুকে মুখ গুজে দেয়। মানসীও কোন দ্বিধা না করে ওকে বুকে একটা ছোট বাচ্চার মত আশ্রয় দেয়। এতক্ষনের কথার মধ্যে দুজনের কেউই খেয়াল করেনি যে মানসীর নাইটি পুরো খুলে গেছে। মানসী ভাস্করকে নিজের বুকে আরও চেপে ধরে। ভাস্কর মানসীর দুই বুক ধরে মুখ গুঁজে চুপচাপ বসে থাকে।
স্বপনের ঘুম অনেক আগেই ভেঙ্গে গেছে। ও চুপচাপ মানসী আর ভাস্করের কথা শুনছিল। ইচ্ছা করেই ও ওদের সামনে আসেনি বা ওদের ভালবাসায় বাধা দেয়নি। ভাস্করকে মানসীর খোলা বুকে মুখ গুজতে দেখে স্বপন চলে যায়। স্বপন ফ্রেস হয়ে প্রায় আধঘণ্টা পরে মানসী আর ভাস্করের জন্য চা বানিয়ে নিয়ে আসে।
ভাস্কর তখনও একই ভাবে বসেছিল। মানসী স্বপনকে দেখে একটু লজ্জা পায়। ও ভাস্করকে উঠিয়ে বুক ঢাকতে চায়। ভাস্কর চোখ না খুলেই বলে, “তোমার এই সুন্দর বুক থেকে আমাকে কেন সড়াতে চাইছ?”
মানসী – স্বপন দেখছে আমাদের
ভাস্কর – দেখুক গিয়ে
মানসী – আমার জামা তুমি পুরো খুলে দিয়েছ। স্বপনের সামনে এভাবে থাকতে আমার লজ্জা লাগছে।
ভাস্কর হটাত সম্বিৎ ফিরে পায়। মানসীর বুক থেকে মুখ তুলে সোজা হয়ে বসে। মানসীর নাইটি তুলে ওকে ঢেকে দেয়।
স্বপন – ভাস্কর চা খাও
ভাস্কর – স্বপনদা আমাকে ক্ষমা করে দিন
স্বপন – তুমি কি করেছ যে তোমাকে ক্ষমা করবো !
ভাস্কর – সকালে নেশার ঘোরে আপনাকে অনেক গালাগালি দিয়েছি। আর তারপর এখন মানসীর সাথে এইভাবে ছিলাম। এই দুটো কারনেই ক্ষমা চাইছি।
স্বপন – ভাস্কর তুমি কিছু অন্যায় করোনি। আমি বুঝি তুমি কেন আমাকে গালাগালি দিয়েছিলে। আমি রাগ করিনি ভাই।
ভাস্কর – আমার মানসীর সাথে এই বসা উচিত হয়নি।
স্বপন – আমি ইচ্ছা করলে তোমাদের বাধা দিতে পারতাম। কিন্তু আমি কিছুই বলিনি। শুধু শুধু নিজেকে দোষী কেন ভাবছ ? রাঙ্গাদিও কোন বাধা দেয়নি। আর ভালবাসায় এটুকু সেক্স থাকতেই পারে।
ভাস্কর – দেখুন স্বপনদা আমি মানসীকে সেক্সের জন্যে ভালবাসিনা
স্বপন – সে আমি জানি। এখন চা খেয়ে বাড়ি যাও। আর মদ খেও না।
ভাস্কর – আমার মানসী বা মদ – দুটোর একটা চাই।
স্বপন – এই দেবদাসের মত কথা বোলো না। এখনকার দিনে দেবদাস হওয়া মানে হেরে যাওয়া।
ভাস্কর – তবে কি করবো ?
স্বপন – তুমি বড়দাকে বলেছ লক্ষ্য থাকলে তুমি দৌড়াতে পারো। এখন তোমার সামনে লক্ষ্য আছে। দৌড়াতে শুরু করো।
ভাস্কর – মানসী আর আপনি সাথে থাকলে আমি ঠিক দৌড়াতে পারবো।
স্বপন – এখন বাড়ি গিয়ে বিশ্রাম নাও, কাল থেকে দৌড়াতে শুরু কোর।
ভাস্কর – দাদা কাল থেকে কিছু শুরু করা যায় না। এতদিন আমি ‘কাল’ ‘কাল’ করেই বেকার হয়ে গেছি। মানসীর সঙ্গ পেয়েছি। আপনার সাপোর্ট পেয়েছি। আর কোন বিশ্রাম দরকার নেই। আমি আজ থেকেই দৌড়াবো।
স্বপন – ঠিক আছে যাও। আমার শুভেচ্ছা থাকল তোমাদের জন্যে।
ভাস্কর উঠে দাঁড়ায়। মানসীও সাথে উঠে দাঁড়ায়। ভাস্কর যাবার আগে মানসীকে কাছে টেনে নেয়।
মানসী – এই স্বপনের সামনে কি করছ ?
ভাস্কর – স্বপনদা আমি মানসীকে চুমু খেলে কোন অন্যায় হবে ?
স্বপন – আমি ভেতরে যাচ্ছি। তোমার মানসীকে তুমি যা ইচ্ছা করো।
স্বপন ভেতরে চলে যায়।
মানসী – স্বপন যা খুশী করতে বলেছে মানে তুমি যা খুশী করবে তা নয়।
ভাস্কর – না গো। আমি শুধু তোমায় একটা চুমু খাবো।
ভালবাসায় একটু তো বাধা পড়বেই। আমাদের দেশে খুব কম ভালবাসাই কোন বাধা বিঘ্ন ছাড়া সফল হয়েছে। যে ভালবাসা সহজেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বেশীরভাগ সময় সেই ভালবাসা আরও সহজেই ভেঙ্গে যায়। আমরা কেউ খারাপ দিন না দেখলে ভাল দিনের মহত্ব বুঝতে পারি না। চোখের জলে মন না ধুলে ভালবাসাকে বোঝা যায় না। যে একটু চোখের জল দেখেই পালিয়ে যেতে চায় সে আসলে ভালবাসে না। কাঁটা ছাড়া গোলাপ টেবিল সাজানোয় ভাল লাগে কিন্তু জীবনে সাফল্য আনে না।
ক’ ফোটা চোখের জল ফেলেছ যে তুমি ভালবাসবে
পথের কাঁটায় পায়ে রক্ত না ঝড়ালে কি করে এখানে তুমি আসবে
কটা রাত কাটিয়েছো জেগে
স্বপ্নের মিথ্যে আবেগে
কি এমন দুঃখ কে সয়েছ যে তুমি এতো সহজেই হাসবে
মানসী সবে এক রাত জেগে কাটিয়েছে। আর ভাস্কর এখনও পথ চলতেই শুরু করেনি। আরও কত রাত ওদের জেগে কাটাতে হবে কে জানে ! ভাস্কর আজ থেকে দৌড়ানো শুরু করছে। শুরু হলে পায়ের রক্ত ঝড়লে বোঝা যাবে ওদের স্বপ্ন সত্যির আবেগ না মিথ্যা আবেগে পূর্ণ !
পঞ্চম পরিচ্ছদ সমাপ্ত
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!  Sad
Posts: 765
Threads: 29
Likes Received: 1,595 in 627 posts
Likes Given: 134
Joined: Dec 2019
Reputation:
98
ষষ্ঠ পরিচ্ছদ – সবাইতো সুখী হতে চায়
(#০১)
আমরা সবাই সুখী হতে চাই। তবে সবার সুখের মাপকাঠি এক নয়। কেউ ভালবাসায় সুখ পায়। কেউ রাজা হয়ে সুখ পায়। কেউ ভালবাসার জন্যে ত্যাগ করে সুখ পায় আবার কেউ ভালবাসা ছিনিয়ে নিয়ে সুখ পায়। কেউ চুরি করে সুখ পায় আবার কেউ অন্যের জন্য জীবন দিয়ে সুখ পায়। যে যাই বলুক আসলে আমরা সবাই স্বার্থপর। আমরা যা করি নিজের সুখের জন্যেই করি।
যে ভালবাসা ছিনিয়ে নেয় সে শুধু নিজেই সুখ পায়। আর যে ভালবাসার জন্যে ত্যাগ করে সে পৃথিবীর চোখে হয়ত দুঃখ পায়, কিন্তু আসলে সেও ত্যাগ করে সুখ পায়। তবে তার নিজের সুখের সাথে সাথে অন্যরাও সুখী হয়। এই গল্পের মানসী ত্যাগ করে সুখ পায়। নিজের আসল সুখ বা স্বাচ্ছন্দের কথা একটুও ভাবে না। অন্য সবাই সুখী হলেই মানসী খুশী।
স্বপন নিজে সুখে থাকতে চায়। অন্যকেও সুখে থাকতে দিতে চায়। কিন্তু অন্যের সুখের জন্যে কোন ত্যাগ করতে রাজী নয়। ও সবাইকে সাহায্য করে বা করতে চায় কিন্তু নিজের প্রয়োজন বাঁচিয়ে। বড়দার সুখ শুধু টাকায়। সে নিজের উপার্জনের টাকা হোক বা অন্যের থেকে ম্যানেজ করে নেওয়া টাকাই হোক। ওনার লক্ষ্য টাকা ওনার ব্যাঙ্ক আকাউন্টে থাকবে আর তার জন্যে যা করার দরকার উনি করবেন।
ভাস্কর এখনও সুখ নিয়ে সেইরকম ভাবে চিন্তাই করেনি। মানসীর সাথে ভালবাসা বা চেনাশোনা হবার আগে ওর জীবন কালীপূজার ছুঁচো বাজির মত ছিল। ছুঁচো বাজিতে আগুন দিলে সেটা যেদিকে খুশী ধাওয়া করে। রকেট বাজির মত একটা নির্দিষ্ট দিকে যায় না। এতদিন ভাস্করের জীবনও তাই ছিল।
মানসী আবার আগের জীবনে ফিরে যায়। সকালে কলেজ, দুপুরের পর থেকে বিউটি পার্লার। একই গতানুগতিক জীবন। পার্লার এখন বেশ ভাল ভাবেই চলে। অনেক রেগুলার কাস্টমার আছে। বিয়ের মরশুমে বেশ কিছু বউ সাজানোর কাজও পায়। পার্লারের সেই প্রথম চারটে মেয়ের দু জন ছেড়ে চলে গেছে। তাদের জায়গায় নতুন মেয়ে যোগ দিয়েছে। পার্লারে মেয়েদের নাম সেই অলকা, নয়নিকা, বর্ণিকা আর লতিকাই আছে। গ্রাহকের কাছে সেগুলো শুধুই নাম। কিন্তু পারলারে সেই নামগুলো প্রকৃতপক্ষে ওদের ডেসিগনেশন হয়ে গেছে।
কিছুদিন হল দীপ্তি মাঝে মাঝে পার্লারে আসে। ও এখানে হিসাব রাখতে শুরু করেছে। প্রতিদিন কত আয় হচ্ছে আর খরচ হচ্ছে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব রাখে। দীপ্তি আসার পরে প্রথম মাসে দেখে সবার মাইনে আর পার্লার চালানর খরচ করার পরে প্রায় ১১ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। মানসী বড়দার কাছ থেকে মাসে মাত্র এক হাজার টাকা নেয়। বাকি টাকা তবে বড়দার কাছেই জমে। মানসী এবার বুঝতে পারে ওর বড়দাকে। তবু ওর সাহস হয়না বড়দাকে কিছু বলার। দীপ্তি আর লেখা দুজনেই ওদের রাঙ্গাদিকে বার বার বলে পার্লারের আয়ের টাকা ওর নিজের আকাউন্টে রাখতে। বলি বলি করে মানসী কোনদিনই সেই কথা বড়দাকে বলতে পারে না।
মানসী একদিন দুপুরে পার্লারে ঢুকতে যাবে, দেখে বাইরে ভাস্কর দাঁড়িয়ে। মানসী ওকে দেখে ভয় পেয়ে যায়। ও পার্লারে না ঢুকে অন্য দিকে হাঁটতে থাকে। ভাস্কর একটু ভ্যাবাচাকা খেয়ে যায়। একটু দাঁড়িয়ে ভাবে কি করা উচিত। তারপর মানসীকে ফলো করতে শুরু করে। মানসী বেশ কিছুটা গিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখে ভাস্কর ওর পেছন পেছন আসছে। বেলঘরিয়া ফিডার রোডের একদিকে বেশ খানিকটা ফাঁকা জায়গা আছে। সেখানে গিয়ে মানসী দাঁড়ায়। ভাস্করও একটু পরে ওখানে পৌঁছে যায়।
মানসী – তুমি এখানে কেন এসেছ ?
ভাস্কর – এখানে না আসলে তোমার সাথে দেখা করবো কি করে ?
মানসী – স্বপনের বাড়িতে পড়াতে যাও না ?
ভাস্কর – না পড়ানো ছেড়ে দিয়েছি।
মানসী – কেন ছাড়লে ?
ভাস্কর – ওখানে গেলেই তোমার কথা মনে পড়ে। আর তোমাকে না দেখে আমার মদ খেতে ইচ্ছা হয়। তাই স্বপন দাকে বুঝিয়েই পড়ানো ছেড়েছি।
মানসী – তবে এখন কি করছ ?
ভাস্কর – একটু কোন বসার জায়গা নেই এখানে ? এইভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কত কথা বলবো ?
মানসী – চলো আজ ওই চায়ের দোকানটাতে বসি।
একটা রাস্তার ধারের সাধারন চায়ের দোকানে গিয়ে বসে। দোকানে এক বুড়ি মাসি বসেছিল। সে ওদের যতক্ষন খুশী বসতে বলে, কিন্তু বিকাল চারটের মধ্যে উঠেও যেতে বলে। কারন সেই সময় ওখানের একটা কারখানার শিফট বদল হয় আর অনেক লোক চা খেতে আসে।
ভাস্কর মানসীর হাত ধরে বসে। মানসী মাসীকে বিস্কুট আর চা দিতে বলে। দুজনে দুজনের দিকে তাকিয়ে চুপ চাপ বসে থাকে। মিনিট দশেক পরে মাসী চা এনে ওদের পাশে রাখে।
মাসী – ও বাবারা চা খেয়ে নাও। এই রকম শুধু দেখলে কি হবে ?
ভাস্কর – হ্যাঁ মাসী চা খাচ্ছি।
মাসী – তা বাবা বয়েস তো হল, বিয়ে করে নিলেই পারো।
ভাস্কর – মাসী অনেক সমস্যা আছে।
মাসী – সে তোমরা জান তোমাদের সমস্যা
মানসী – কি করলে এই কিছু দিন ? কিভাবে দৌড়ানোর প্ল্যান করছ ?
ভাস্কর – যত চেনাশোনা লোক ছিল সবার সাথেই দেখা করেছি। আর তাতে একটা জিনিস বুঝেছি বয়েস চল্লিশ পেড়িয়ে গেলে তোমার যাই যোগ্যতা আর অভিজ্ঞতা থাকনা কেন চাকরি পাবে না।
মানসী – তবে কি করবে ?
ভাস্কর – ব্যবসা করতে গেলেও যে পুঁজি চাই সেটা আমার নেই।
মানসী – কেউ লোণ দেবে না ?
ভাস্কর – সে চেষ্টাও করেছি। ব্যাঙ্ক আমাকে লোণ দেবে না। বন্ধুরাও দেবে না। আসলে জান একটা ছেলে যখন বিপদে পরে তার কোন বন্ধু থাকে না।
মানসী – আমি তো আছি তোমার সাথে
ভাস্কর – সেই জন্যেই তো আবার দৌড়ানোর চেষ্টা করছি।
মানসী – কিসের ব্যবসা করার কথা ভাবছিলে ?
ভাস্কর – ক্যাটারিং – এর ব্যবসা করার কথা ভেবেছিলাম।
মানসী – হটাত এই ব্যবসার কথা মাথায় এল কেন ?
ভাস্কর – আমার জীবনে এখন তুমি ছাড়া আর একজনই আছে যে কিছু ভাল বুদ্ধি দিতে পারে।
মানসী – কে সে ?
ভাস্কর – কেন স্বপনদা
মানসী – ও তাই বলো।
ভাস্কর – একদিন স্বপনদার সাথে অনেকক্ষণ আলোচনা করলাম। তারপর ঠিক করলাম যদি পারি তবে নিজের ক্যটারিং চালু করবো।
মানসী – কিন্তু এখন কি ভাবে চালাবে ?
ভাস্কর – সেটাও একটা সমস্যা
মানসী – তুমি ভাব কি করা যায়। আমিও ভাবি আমি কি করতে পারি।
ভাস্কর – আমরা রোজ এখানে আড়াইটার সময় দেখা করবো।
মানসী – রোজ আসলে আমার পার্লারের ক্ষতি হবে। আমরা সপ্তাহে দুদিন এখানে দেখা করবো।
ভাস্কর – ঠিক আছে, আমি আবার পরশু দিন আসবো আর তার পরে প্রতি সোম আর শুক্রবার আমরা দেখা করবো।
মানসী – একটা শর্ত আছে
ভাস্কর – কি ?
মানসী – একদম মদ খাবে না
ভাস্কর – আমাকে চুমু খেতে দাও, তবে মদ খাবো না
মানসী – এখানে এই খোলা রাস্তায় ?
ভাস্কর – কেউ তো নেই এখানে
মানসী – মাসী আছে যে
মাসী – আমি দেখছি না। তোমরা তাড়াতাড়ি চুমু খেয়ে নাও।
ভাস্কর মানসীকে চুমু খেয়ে দু মিনিট জড়িয়ে ধরে থাকে। তারপর চলে যায়। মানসীও পার্লারে ফিরে যায়। ওর মনে খুশী, আনন্দ, চিন্তা, দুঃখ, টেনশন সব কটা অনুভুতি এক সাথে এসে হাজির হয়।
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!  Sad
Posts: 6,542
Threads: 21
Likes Received: 7,064 in 3,717 posts
Likes Given: 12,099
Joined: Feb 2020
Reputation:
240
It's always better late than never.
•
Posts: 765
Threads: 29
Likes Received: 1,595 in 627 posts
Likes Given: 134
Joined: Dec 2019
Reputation:
98
(#০২)
এর মধ্যে সৃজা গ্রাজুয়েশন পুরো করে। মানসী খুশীতে আটখানা। ভেবে পায় না কি করবে। সেদিন বড়দাকে বলে ও বাজারে যাবে। সৃজা যা যা খেতে ভালবাসে সব কেনে। কলেজে যায় না। সারাদিন সৃজার জন্যে রান্না করে। দুপুরে নিজের হাতে করে সৃজাকে খাইয়ে পার্লারে যায়। পার্লারে সেদিন যত গ্রাহক এসেছিল সবাইকে মিষ্টি খাওয়ায়। সব গ্রাহক একই প্রশ্ন করে।
গ্রাহক – কিসের জন্যে মিষ্টি খাওয়াচ্ছেন ?
মানসী – আমার মেয়ে বি.এ. পাস করেছে তাই
গ্রাহক – আপনার তো বিয়েই হয়নি
মানসী – আমার দাদার মেয়ে, কিন্তু বৌদি মারা যাবার পর থেকে আমিই বড় করেছি। তাই ও আমারও মেয়ে।
পরের রবিবার সৃজার পাস করার খুশীতে একটা ছোট পার্টি আয়োজন করা হয়। বড়দাই সব খরচ করেন। বড়দার খুব একটা ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু বাকি সবার চাপে পড়ে করতে হয়। বড়দার সব বোনের ফ্যামিলি নিমন্ত্রিত ছিল। স্বপন আর নিহারিকাও গিয়েছিল। সবাই একসাথে বসে হই হই করে গল্প শুরু করে।
এর মধ্যে শ্রেয়সী আর শ্যামলের একটা ছেলে হয়েছে। বাচ্চারা সবাই অন্য ঘরে ছিল। আর বড়দা তখনও এসে পৌঁছান নি, কোন একটা মিটিঙে গিয়েছেন। সবাই মন খুলে ইয়ারকি করছিল। মানসীর আরেক দিদির বর ছিলেন শ্রদ্ধা জামাইবাবু। খুব রসিক মানুষ।
শ্রদ্ধা জামাইবাবু – শ্রেয়সী তোমার বাচ্চা হলে কি খাওয়াতে ?
শ্রেয়সী – কেন দুধ খেত
শ্রদ্ধা জামাইবাবু – তোমার দুধ না গরুর দুধ ?
শ্রেয়সী – এটা আবার কি রকম প্রশ্ন ? সব বাচ্চা যা খায় আমার ছেলেও তাই খেত।
শ্রদ্ধা জামাইবাবু – না তোমার কাছে তো দুধ রাখার বেশী জায়গা নেই, ছেলের পেট ভরত ?
শ্যামল – হ্যাঁ হ্যাঁ দাদা ট্যাঙ্ক দেখতে ছোট হলে কি হবে ভেতরে জায়গা আছে।
শ্রেয়সী – জামাইবাবুর ঘরের ট্যাঙ্ক যেন অনেক বড় !
মানসী – তোমরা সবাই এই বাচ্চা মেয়েটার সামনে কি গল্প শুরু করলে ?
স্বপন – বাচ্চা মেয়ে আবার কে ?
মানসী – ওই যে তোমার কোলে বসে আছে, সৃজা।
স্বপন – একটা মেয়ে ১৮ বছর বয়েস হয়ে গেছে, বি. এ. পাস করে গেছে, তাও কি করে বাচ্চা থাকে !
মানসী – বাচ্চা নয় তো তোমার কোলে বসে কেন ?
সৃজা – আমি আমার পিসের কোলে সারা জীবন বসব। আমি বাচ্চা বেলাতে বসেছি, এখন বসি আর বুড়ি হয়ে গেলেও বসবো। তোমার কি ? হিংসা হচ্ছে ?
মানসী – আমার কেন হিংসা হবে !
সৃজা – তুমি কি ভেবেছ আমি কিছু বুঝি না ?
স্বপন – আমরা সবাই মেনে নিচ্ছি তুমি বড় হয়ে গেছ।
শ্রদ্ধা জামাইবাবু – সেদিন দীপ্তি কি করেছে জান ?
দীপ্তি – আমি আবার কি করলাম ?
শ্রদ্ধা জামাইবাবু – তোমাদের বাস স্ট্যান্ডের সামনেই তো আমার অফিস। সেদিন দুপুরবেলা দেখি দীপ্তি এসে বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়ালো। তখন ওখানে শুধু আর একটা ছেলে দাঁড়িয়ে ছিল, আর কেউ ছিল না। ছেলেটা দীপ্তিকে বলে যে বৌদি আপনি খুব সুন্দর দেখতে। দীপ্তি বলে তোমার বাড়িতে মা বোন নেই, আমার পেছনে কেন লাগছ। ছেলেটা বলে বাড়িতে আজ মা আর বোন দুজনেই নেই। দীপ্তি বলে তবে আর এখানে সময় নষ্ট করছ কেন, তোমার বাড়িতেই চলো।
দীপ্তি – জামাইবাবু মতেই ভাল হবে না বলে দিচ্ছি। সেদিন ওই ছেলেটা একটা বাড়ির ডিরেকসন জানতে চেয়েছিল।
শ্রদ্ধা জামাইবাবু – তাতে ওর সাথে যেতে কেন হবে ?
দীপ্তি – একটা বাচ্চা ছেলে, মাসির বাড়ি খুঁজে পাচ্ছিল না। আর আমি যা বলছিলাম সেটাও বুঝতে পারছিল না, তাই একটু দেখিয়ে দিতে গিয়েছিলাম।
শ্রদ্ধা জামাইবাবু – এখন তুমি রাস্তা দেখাতে গিয়েছিলে না অন্য কিছু দেখা দেখি করতে গিয়েছিলে সেটা আমরা কি করে জানব।
স্বপন – দীপ্তি ফিরে আসার পড়ে আপনার চেক করা উচিত ছিল।
শ্রদ্ধা জামাইবাবু – আমার তো আর সেই লাইসেন্স নেই ভাই। থাকলে কবেই চেক করে নিতাম।
লেখা – আপনি চেয়ে দেখুন না, দীপ্তি কিছু মনে করবে না।
দীপ্তি – তোমরা সবাই মিলে আমার পেছনে কেন লেগেছ ?
স্বপন – তোমার পেছন টা সব থেকে সুন্দর দেখতে তাই।
দীপ্তি – আমি আপনাদের কার সাথে কথা বলবো না।
শ্রদ্ধা জামাইবাবু – শুধু পেছন টা দেখিয়ো তবেই হবে।
সৃজা – আমি না তোমাদের এই গল্পটা ঠিক বুঝলাম না
স্বপন – আগের টা বুঝেছিলি ?
সৃজা – হ্যাঁআআআ, সেতো শ্রেপির একদম সমান তাই।
স্বপন – তুই এখনও পুরো বড় হসনি।
শ্রদ্ধা জামাইবাবু – না রে তুই বড় হয়ে গিয়েছিস, এবার তোর বিয়ে দিতে হবে। বিয়ে হলেই পরের গল্পটা বুঝতে পারবি।
স্বপন – এটা আপনি একদম ঠিক বলেছেন।
সৃজা – আমি রাঙ্গাপির বিয়ের আগে বিয়ে করবোই না।
স্বপন – সৃজা তোমার কোন ছেলে পছন্দের আছে ?
সৃজা – না পিসে সে আর পেলাম কই। আমার পছন্দের মত মানুষ ভগবান এক পিসই বানিয়েছেন, আর সেটা অনেক আগেই দখল হয়ে গেছে।
শ্রদ্ধা জামাইবাবু – সে আবার কে ?
সৃজা - এই যে আমার স্বপন পিসে। আমার ঠিক এইরকম একটা ছেলে চাই, তবে বিয়ে করবো।
মানসী – আমরা সবাই তোর পছন্দের ছেলে খুজে দেব
সৃজা – তুমি পারবে না।
মানসী – কেন পারবো না !
সৃজা – তুমি নিজের জন্যেই পেলে না, তো আমার জন্যে !
মানসী – আমি তোর জন্যে সব করতে পারি।
স্বপন – সৃজা এভাবে কথা বলে না। রাঙ্গাদিদি তোমার মায়ের মতন, আর মা মেয়ের জন্যে সব পারে। মা কে দুঃখ দেবে না।
সৃজা – না মানে আমি এমনি বলছিলাম।
সৃজা স্বপনের কোল থেকে উঠে গিয়ে মানসীর কোলে বসে আর ওকে জড়িয়ে ধরে রাখে। এমন সময় বড়দা ফিরে আসেন।
বড়দা – কি গল্প হচ্ছে ?
শ্রদ্ধা জামাইবাবু – সৃজা বিয়ে দেবার কথা হচ্ছে
সৃজা – বাবা আমি রাঙ্গাপির বিয়ের আগে বিয়ে করবো না
বড়দা – সেসব নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না
সৃজা – কেন চিন্তা করবো না ?
বড়দা – আমিও ঠিক করেছি তোমার এবার বিয়ে দিয়ে দেব
মানসী – হ্যাঁ দাদা ওর একটা ভাল ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দাও।
বড়দা – আমার ছেলে দেখা হয়ে গেছে। আমি আর শ্রদ্ধা গিয়ে দেখে এসেছি।
মানসী – তাই ? কি আনন্দের কথা। জামাইবাবু আমাদের বলেন নি কেন ?
শ্রদ্ধা জামাইবাবু – এই তো বড়দা বলে দিলেন।
এর পড়ে আড্ডা আর সেই ভাবে হয় না। একটু সিরিয়াস হয়ে যায়। বড়দা আবার বলেন যে একটা ছেলে মোটামুটি পছন্দ করেছেন। শ্যামবাজারের কাছে একটা কলেজের ভূগোলের প্রোফেসর, নাম মানব। পরের রবিবার মানবরা সৃজাকে দেখতে আসবে।
সৃজা – পিসে তুমি আসবে কিন্তু। তোমার পছন্দ না হলে ওই মানব হোক বা দানব হোক, আমি বিয়ে করবো না।
বড়দা – হ্যাঁ হ্যাঁ সেতো বটেই। স্বপনকে তো আসতেই হবে।
পরের রবিবার মানব আসে সৃজাকে দেখতে। মানব আর ওর বাবা মা সবারই মেয়ে পছন্দ হয়। স্বপন আসেনি সেদিন। স্বপনের মনে হয়েছিল বড়দা চান না ও থাকুক এর মধ্যে। মেয়ের কথায় আসতে বলেছিলেন। সৃজা একটু কিন্তু কিন্তু করছিল। কিন্তু বড়দার ডিসিসনের ওপর বেশী কথা বলতে পারেনি।
একটা শুভ দিন দেখে বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। বিয়েও হয়ে যায়। বিয়েতে স্বপন আর নিহারিকা গিয়েছিল। মানব ছেলেটাও বেশ ভাল ছেলে। বেশ ভদ্র আর অমায়িক ছেলে। ওদের বিয়ের মাস তিনেক পড়ে স্বপন আর নিহারিকা ওদের বাড়ি যায়। সৃজা আর মানব সুখেই সংসার করছে।
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!  Sad
Posts: 765
Threads: 29
Likes Received: 1,595 in 627 posts
Likes Given: 134
Joined: Dec 2019
Reputation:
98
(#০৩)
এবার দেখি মানসী আর ভাস্কর কি করছে।
এখন মানসী সপ্তাহে দুদিন ভাস্করের সাথে দেখা করে। সুখ দুঃখের কথা বলে। ভাস্কর অনেক চেষ্টা করে বনহুগলীতে একটা মিষ্টির দোকানে একটা কাজ জোগাড় করেছে। সেই কাজটা ও বেশ অভাবনীয় ভাবেই পেয়েছে। ভাস্করের বাড়ি উল্টোডাঙ্গায়। মানসীর সাথে বেলঘরিয়ায় দেখা করে দমদম চিরিয়ামোড় পর্যন্ত হেঁটে আসতো আর ওখান থেকে বাসে ফিরত। তাতে বাসের একটা মিনিমাম ভাড়ার টিকিট নিলেই হত। একদিন ওর শরীরটা একটু খারাপ ছিল, সকাল থেকে সেরকম কিছু খাওয়াও হয় নি। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। বনহুগলীতে একটা মিষ্টির দোকানের সামনের বেঞ্চে বসে পড়ে। একদম ঝিমিয়ে বসে ছিল।
কিছু পড়ে ওই দোকানের মালিক ওকে দেখেন। উনি একটা ছেলেকে বলে ওকে একটু জল দিতে। ভাস্কর জল খেয়ে একটু ধাতস্থ হলে দোকানের মালিক ওকে জিজ্ঞাসা করেন ওর কি হয়েছে। ভাস্কর বুঝতে পারে না ঠিক কি বলবে। উনি বলেন কিছু খেতে কারন ওনার মনে হচ্ছিল ভাস্করের খিদে পেয়েছে। ভাস্কর আর থাকতে না পেড়ে বলেই দেয় যে সকাল থেকে প্রায় কিছুই খায় নি। দোকানের মালিক ভূষণ বাবু একটু দয়ালু মানুষ। উনি জোর করেই ভাস্করকে দুটো মিষ্টি খাওয়ান।
তারপর কথায় কথায় জানতে পারেন ভাস্করের অবস্থা আর এটাও জানতে পারেন যে ভাস্করের বাবা ওনার বন্ধু ছিলেন। তারপর সেই ভূষণ বাবু ওনার দোকানে কাজ দেন। উনি বলেন যে মাইনে বেশী দিতে পারবেন না । ওনার বয়েস হয়েছে সব সময় দোকানে থাকতে পারেন না। ভাস্কর যদি বিশ্বাস আর ভরসার মর্যাদা রাখতে পারে তবে উনি কিছু সময় বিশ্রাম নিতে পারেন। তারপর দিন থেকেই ভাস্কর ওই কালিকা মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে কাজ করতে শুরু করে।
শুরুতেই ভাস্কর বলে দেয় যে সোম আর শুক্র বার ওর দুপুরের বিশেষ কাজের কথা। তাই শুধু ওই দুদিন ভূষণ বাবুকে দুপুরে দোকানে বসতে হবে। বাকি দিনগুলো ভাস্কর দেখাশোনা করবে। ভূষণ বাবু জিজ্ঞাসা করেন না ভাস্করের বিশেষ কাজটি কি।
পরদিন দুপুরেই ভাস্কর মানসীর পার্লারের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। মানসী এসে ওকে দেখে অবাক হয়। কোন কথা না বলে দুজনেই ওদের সেই মাসীর চায়ের দোকানে চলে যায়। ওখানে পৌঁছেই ভাস্কর মানসী জড়িয়ে ধরে প্রায় কোলে তুলে নেয়। মানসী ‘কি হল’, ‘কি হল’ বলে ওকে থামানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ভাস্কর থামে না। একটু পড়ে ভাস্কর মানসীকে কোল থেকে নামিয়ে আগের দিনের সব কথা বলে।
মানসী – ভাল খবরের কথা পড়ে শুনছি। আগে বলো তুমি কালকে কিছু না খেয়ে ছিলে সেটা আমার কাছে লুকিয়ে ছিলে কেন ?
ভাস্কর – তোমাকে বলতে চাইছিলাম না
মানসী – কেন শুনি ? আমার কি তোমার ওপর এটুকু অধিকার নেই !
ভাস্কর – না না তা কেন। আমি কতদিন ধরে শুধুই তোমার।
মানসী – তবে বাবুর এতো লজ্জা কিসের !
ভাস্কর – আমি জানি তুমি আমাকে ভীষণ ভীষণ ভালোবাসো। আর তাই তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি।
মানসী – আমাকে বললে আমার কষ্ট হত না। বরং তোমাকে কিছু খাইয়ে দিতাম।
ভাস্কর – তুমি খাইয়ে দিলে আমার শরীর খারাপ লাগত না, আর ওই দোকানেও বসতাম না। এই কাজ পাওয়াও হত না।
মানসী – সে যাই হোক, আজ বল আমার কাছে এইরকম কিছু আর লুকাবে না।
ভাস্কর – এই তোমার বুকে হাত রেখে বলছি আর কোন দিন কিছু লুকাব না।
মানসী – ঠিক আছে। এবার ওখানে কাজ মন দিয়ে করবে। কোন পাগলামো করবে না।
চায়ের দোকানের মাসী এই কয়দিন দুজনকে দেখছেন। উনি শুনে শুনে ওদের দুজনের সব কথাই জেনে গিয়েছেন। কখন যেন উনিও এই যৌবন পেড়িয়ে আসা প্রেমিক প্রেমিকাকে ভালবেসে ফেলেছেন।
মাসী – আজ আমি তোমাদের খাওয়াবো।
মানসী – কেন মাসী ?
মাসী – আমি তোমাদের এতদিন ধরে দেখছি। তোমাদের দেখে ভাবি আমাদের সমাজ কি ভাবে ভাল ভাল ছেলে মেয়েদের জীবন নষ্ট করে দিচ্ছে। আর আমি জীবন দিয়ে ছেলেকে মানুষ করলাম। সে এখন আমাদের ছেড়ে দিল্লিতে গিয়ে কাজ করে। আমাকে দেখা তো দুরের কথা, আমাকে নিয়ে ভাবেও না।
ভাস্কর – মাসী আপনার বাড়িতে আর কে আছে ?
মাসী – যতদিন তোমাদের মেসোমশায় বেঁচে ছিলেন, ওনার পেনসনে আমাদের চলে যেত। উনি চলে যাবার পড়ে পাড়ার ছেলেরা আমাকে এই চায়ের দোকান করে দিয়েছে। তাই বেঁচে আছি।
মাসী ওদের দুজনকে ডিমের অমলেট আর চা করে খাওয়ান। সেদিন অনেক বলাতেও কোন দাম নেন না। মানসী আর ভাস্কর একটু গল্প করে যে যার জায়গায় ফিরে যায়। আমাদের সমাজে এখনও ভূষণ বাবু আর মাসীর মত মানুষেরা আছেন বলেই এখনও আমরা বেঁচে আছি। না হলে বড়দা আর মাসীর ছেলের মত লোকেদের জন্যে আমরাও ডাইনোসরের মত বিলুপ্ত প্রজাতি হয়ে যেতাম। “অভাগা যেদিকে যায়, সমুদ্র শুকায়ে যায়” প্রবাদ বাক্যটা আসলে সত্যি নয়।
মানসী মানসিক ভাবে আগের থেকে অনেক ভাল আছে। ওর মনে হয় যেন ওর জীবন ধীরে ধীরে লক্ষ্যের দিকে পৌঁছে যাচ্ছে। শুধু ভেবে পায় না বড়দাকে ভাস্করের সাথে বিয়েতে কি ভাবে রাজী করাবে। একটা নতুন চিন্তা এসেছে ওর মাথায় কি ভাবে ভাস্করের ক্যাটারিং – এর ব্যবসা শুরু করানো যায়। প্রতি সোমবার আর শুক্রবার দুজনে দেখা হয়। কথা বলে, ভবিষ্যতের চিন্তা করে। কিন্তু শুধু কথাই হয় কোন সমাধান আর খুঁজে পায় না।
এক শুক্রবারে মানসী ফিডার রোড যাবার একটু পরেই দীপ্তি পার্লারে আসে। ওর সেদিন পার্লারে আসার কথা ছিল না। সাধারণত দীপ্তি দুপুর বেলা একটু ঘুমায়, সেদিন ঘুম আসছিল না আর তাই ভাবে একটু রাঙ্গাদির সাথে গল্প করবে। পার্লারে এসে দেখে রাঙ্গাদি নেই। পার্লারের মেয়েরা বলে যে মানসী কোথাও গিয়েছে।
দীপ্তি – বাড়ি থেকে বলে আসে পার্লার যাচ্ছি, কিন্তু এখানে আসেনি। কোথায় গেল ?
বর্ণিকা – মানসী দিদি প্রতি সোমবার আর শুক্রবার দেরি করেই আসেন
দীপ্তি – কখন আসেন ?
বর্ণিকা – চারটের পরে
দীপ্তি – ঠিক আছে
বর্ণিকা – কোন সমস্যা আছে ?
দীপ্তি – না না ঠিক আছে।
দীপ্তি মুখে ঠিক আছে বললেও মনে ভাবে ওর রাঙ্গাদির হলটা কি! রোজ দুটোর সময় বাড়ি থেকে বেরোয় কিন্তু সপ্তাহে দুদিন পার্লারে দেরি করে আসে। ও কাউকে কিছু না বলে বাড়ি ফিরে যায়। রাত্রে মানসী ফিরলেও কিছু বলে না।
পরের রবিবার সকালে স্বপন আর নিহারিকা ওদের বাড়ি আসে। স্বপন দুই বা তিন মাসে একবার জেঠিমা, মানে মানসীর মায়ের সাথে দেখা করতে আসে, আর দুপুরে মানসী পার্লারে যায় তাই সকালেই আসে। আর সেই সাথে মানসীর সাথেও দেখা হয়ে যায়। সেদিন জেঠিমার সাথে দেখা করে মানসীর ঘরে যায়। দীপ্তিও সেখানে বসে ছিল।
দীপ্তি – কি স্বপন দা আপনি তো শুধু মা আর রাঙ্গাদির সাথেই দেখা করেন। আমরাও যে আছি সেটা মনে রাখুন।
স্বপন – তোমার সাথে দিনের বেলায় দেখা করে তো কোন লাভ নেই আর রাত্রে আসা হয় না
দীপ্তি – ইচ্ছা থাকলে সবই হয়
স্বপন – সকালবেলাতেই তোমাদের নেহাকে চুদেছি, এখন আর তোমার সাথে করতে পারবো না
দীপ্তি – আমাকে দেখলে কি আপনার একটা কাজের কথাই মনে পরে ?
স্বপন – তা নয়, কিন্তু তোমাকে দেখলেই ইচ্ছা করে
মানসী – তোমাদের দুজনের কি আর কোন কথা নেই !
স্বপন – যার সাথে যেটা ভাল লাগে
দীপ্তি – স্বপন দা আপনার নাকের ফুটোয় চুল বেরিয়ে আছে
স্বপন – আমার নাকের ফুটো খোলা তাই দেখতে পারছ, তোমাদের ফুটো ঢাকা, কত চুল আছে কে জানে
দীপ্তি – আমারটায় চুল নেই, কেটে ফেলেছি।
স্বপন – কে কেটে দিল ?
দীপ্তি – পার্লারের অলকাকে ম্যানেজ করেছি
মানসী – তুই পার্লারে এই সব করেছিস ?
দীপ্তি – অলকা বেশ ভাল কামিয়ে দেয়, একা একা অতো ভাল করা যায় না।
মানসী – দেখ পার্লার আমার লক্ষ্মীর জায়গা, পুজার জায়গা। আর কোনদিন অইসব করতে পার্লারে যাবি না।
স্বপন – তা ঠিক দীপ্তি। তুমি অলকাকে বাড়িতে ডেকে তোমার গুদ সাজিও। পার্লারে গিয়ে করবে না।
এরপর মানসী একটু বাইরে গেলে দীপ্তি ওকে জিজ্ঞাসা করে মানসীর দুপুরের অনুপস্থিতি নিয়ে। স্বপন সবই জানত। কারন একদিন ভাস্কর ওকে গিয়ে সব কিছুই বলে এসেছিল। তবু স্বপন দীপ্তিকে সেসব কিছু বলে না।
স্বপন – আমি জানিনা গো
দীপ্তি – রাঙ্গাদি তোমাকে না বলে তো কিছু করবে না
স্বপন – এবার অনেকদিন পরে এলাম। আর রাঙ্গাদির ঘরে তুমি বসেছিলা। আমার সাথে একা একা কথা আর হল কোথায় ?
দীপ্তি – সেটাও ঠিক
স্বপন – তুমি এক কাজ কর, সোমবার রাঙ্গাদির পেছন পেছন যাও আর দেখো কোথায় যায়।
দীপ্তি – এটা বেশ ভাল বুদ্ধি দিয়েছ। কিন্তু তার পর তোমাকে জানাব কি ভাবে ?
স্বপন – কোন একটা বাহানা করে আমাদের বাড়ি এসো। তোমার কাছে শুনেও নেব আর তোমার সাথে আর একবার নুঙ্কু নুঙ্কু খেলাও হবে।
দীপ্তি – নেহা থাকবে তো
স্বপন – ও থাকবে তো কি হয়েছে ! ওকেও সাথে নিয়ে নেব।
দীপ্তি – যাঃ তুমিও ভীষণ বাজে ছেলে।
স্বপন – সে যাই হোক, তুমি কবে আসবে ?
দীপ্তি – আমি সোমবার রাঙ্গাদিকে দেখি। তারপর কোন জায়গা থেকে তোমাকে অফিসে ফোন করে দেব।
স্বপন – একটা কথা মনে রেখ
দীপ্তি – কি ?
স্বপন – নুঙ্কু খেলার থেকে রাঙ্গাদির সমস্যার হাল খুঁজে বের করা আমাদের বড় কাজ।
দীপ্তি – আমার কাছেও তাই।
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!  Sad
Posts: 765
Threads: 29
Likes Received: 1,595 in 627 posts
Likes Given: 134
Joined: Dec 2019
Reputation:
98
ষষ্ঠ পরিচ্ছদ – সবাইতো সুখী হতে চায়
(#০৪)
নিহারিকা আর মানসী একসাথে ফিরে আসে।
দীপ্তি – এবার আমি যাই
নিহারিকা – আমার বরের সাথে প্রেম করা হয়ে গেল ?
দীপ্তি – তোমার বরের সাথে দিনের বেলা বেশী মজা আসে না
নিহারিকা – আরেক দিন করবে নাকি ?
দীপ্তি – যাঃ তোমরা দুজনেই বহুত বাজে
দীপ্তি পালিয়ে যায়। মানসী স্বপনকে ভাস্করের সাথে যা যা হয়েছে সব জানায়।
স্বপন – অনেক কাকতালীয় ভাবে সব হয়ে গেল
মানসী – তা ঠিক
নিহারিকা – এগুলো সে হিসাবে কাকতালীয়ও নয়
মানসী – কেন ?
নিহারিকা – এগুলো ভগবানের নিজের প্ল্যান, আমাদের দিয়ে করিয়ে নেয়। রামপ্রসাদের গান আছে না ‘তোমার কর্ম তুমি কর মা, লোকে ভাবে করি আমি’। সব ওই ওপরওয়ালার ইচ্ছা।
মানসী – তুইও অনেক কিছু শিখে গেছিস !
নিহারিকা – তোর বন্ধুর সাথে এতদিন আছি আর কিছুই শিখবো না !
মানসী – আমি সত্যি খুব ভাগ্যবান যে তোর মত বোন পেয়েছি
নিহারিকা – আর তোর বন্ধু ?
মানসী – তোর কাছ থেকেই তো আমি আমার সব থেকে ভাল বন্ধুকে পেয়েছি।
নিহারিকা – এবার ভাস্করের দিকে বেশী মন দে
মানসী – আমার মন ওর দিকেও আছে। কিন্তু আমি জানি ভাস্করও আমাকে স্বপনের থেকে বেশী ভালবাসতে পারবে না।
স্বপন – কিন্তু তুমি ওকেই বেশী ভালবাসবে
নিহারিকা – স্বপন যতই তোর বন্ধু হোক না কেন, এখন থেকে তোর প্রতিমুহূর্তে ভাস্কর তোর সাথে থাকবে। তাই অকেই বেশী ভালবাসবি। ভাস্করের আর কেউ নেই। ও তোকে ছাড়া কিছু জানে না।
মানসী – তোকে বলেছে ?
নিহারিকা – যেদিন ভাস্কর স্বপনকে সব বলতে গিয়েছিল সেদিন আমার সাথেও অনেক কথা হয়েছিল।
মানসী – আমিও ভাস্করকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি। ওকে ছাড়া আর কিছু ভাবতেই পারি না।
এরপর স্বপন আর নিহারিকা সবার সাথে ব্রেকফাস্ট করে। মানসীদের বাড়িতে রবিবারের ব্রেকফাস্ট বেশ অন্যরকমের। গোটা গোটা সবজি দিয়ে বানানো খিচুড়ি। স্বপনের রবিবার সকালে ওদের বাড়ি যাবার আরেকটা কারন হল ওই খিচুড়ি খাওয়া।
পরদিন সোমবার মানসী বেরনোর পরেই দীপ্তি ওর পেছন পেছন যায়। ভাস্করকে দেখে কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই চিনতে পারে না। দীপ্তি আড়াল থেকে খেয়াল করে যে ওরা কি কি করে। ওর খুব ইচ্ছা করছিল ওরা কি বলছে সেটা শোনে কিন্তু কাছে যেতে পারে না ধরা পড়ে যাবার ভয়ে। একটু পড়ে দীপ্তি ওখান থেকে চুপ চাপ চলে আসে। কাউকে কিচ্ছু বলে না। বুধবার সৃজা আসে ওদের বাড়ি। দীপ্তি সৃজাকে সব বলে। ও আর কাউকে বলতে সাহস পাচ্ছিল না। সৃজা বলে যে শুক্রবারে ও দীপ্তির সাথে রাঙ্গাপির পেছন পেছন যাবে।
পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুরে দীপ্তি আর সৃজা ওই মাসীর দোকানে যায়। ওরা নিজেদের পরিচয় দেয়। কিন্তু মাসী কিছুতেই কিছু বলে না। দীপ্তি অনেক ভরসা দেবার পরে মাসী কিছু বলে।
মাসী – আমি বুঝিনা বাপু তোমাদের ব্যাপার স্যাপার। এতো বড় মেয়ে এখনও বাড়ি থেকে বিয়ে দেয়নি।
সৃজা – দিদা আমি বুঝি কিন্তু তোমাকে বলতে পারবো না
মাসী – তবে আমিও কিছু বলবো না
দীপ্তি – মাসী তুমি চাও কিনা রাঙ্গাদির বিয়ে হয়ে যাক
মাসী – রাঙ্গাদি আবার কে ?
দীপ্তি – মানসী দিদি কে আমরা সবাই রাঙ্গাদি বলি। আমি আর এই স্রিজাও চাই রাঙ্গাদির বিয়ে হয়ে যাক। কিন্তু আমাদের বাড়িতে একজন আছে সে চায় না।
মাসী – একজনের জন্যে আটকে আছে !
সৃজা – তিনিই সবার গার্জেন
মাসী – এ আবার কিরকম গার্জেন !
দীপ্তি – অনেক সমস্যা আছে মাসী।
তারপর মাসী যা যা দেখেছে ওদের বলে।
দীপ্তি – অনেক ধন্যবাদ মাসী। আমরা এবার ঠিক রাঙ্গাদির বিয়ে দিয়ে দেব।
মাসী – দেখো বাপু অইসব ধন্যবাদ তোমাদের মত বড় মানুসের ভাষা। আমরা গরিব লোক, আমরা কথা বুঝি না, আমরা শুধু মন বুঝি। মেয়েটাকে দেখে ভাল লাগে, তাই ওকে ভালবাসি। আর চাই ওর একটা হিল্লে হয়ে যাক।
সৃজা – আর ছেলেটা ?
মাসী – ছেলেটাও খুব ভাল। তোমাদের রাঙ্গাদিকে খুব খুব ভালবাসে।
সৃজা – ছোট কাকি এবার দেখো কেউ আটকাতে পারবে না আমাকে। রাঙ্গাপির বিয়ে দিয়েই ছাড়বো।
দীপ্তি – মাসী রাঙ্গাদিকে কিছু বলবেন না যে আমরা এসেছিলাম।
পরদিন শুক্রবার মানসী ভাস্করের সাথে দেখা করে, চা খেয়ে, চুমু খেয়ে উঠতে যাবে, দেখে সামনে সৃজা আর দীপ্তি দাঁড়িয়ে।
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!  Sad
Posts: 765
Threads: 29
Likes Received: 1,595 in 627 posts
Likes Given: 134
Joined: Dec 2019
Reputation:
98
(#০৫)
মানসী সৃজা আর দীপ্তিকে দেখে একটু থতমত খেয়ে যায়। কি করবে ভেবে পায় না। তারপর হেসে ওঠে।
মানসী – কি দেখতে এসেছিস তোরা ?
সৃজা – আমার রাঙ্গা পিসেকে দেখতে এসেছি
মানসী – সেটা আবার কে ?
দীপ্তি – বেশী নকশা করোনা, তুমি আমাদের কাছে লুকিয়ে রাখতে পারলে ?
সৃজা – রাঙ্গাপি এটা তুমি মোটেও ভাল করো নি।
মানসী – আমি করলাম টা কি !
দীপ্তি – এখনও লজ্জা ?
মানসী – লজ্জা কোথায় পেলাম !
সৃজা – (ভাস্করের দিকে তাকিয়ে) – এইযে পিসেমশায় তোমার নাম কি ?
ভাস্কর – আমার নাম ভাস্কর, কিন্তু আমি তোমার পিসেমশায় কি করে হলাম !
সৃজা – এটা আমার রাঙ্গাপিসি, তাই তুমি পিসেমশায়
ভাস্কর – এখনও বিয়ে করিনি
দীপ্তি – করোনি, কিন্তু করতে তো চাও। বিয়েতো একটা বাহানা মাত্র।
ভাস্কর – সেটা চাই, এখন তোমার রাঙ্গা দিদি চাইলেই হয়
সৃজা – কি রাঙ্গাপি তুমি একে বিয়ে করবে না ?
মানসী – আমি চাইলেই কি আর হবে ?
সৃজা – আমি আজকেই বাবাকে বলবো, দেখো তোমার ঠিক বিয়ে হয়ে যাবে।
মানসী – না না সোনা, বড়দাকে বলিস না। বড়দা একে পছন্দ করে না।
সৃজা – বাবা এনাকে জানলো কি ভাবে ?
মানসী – এই ভাস্করকেই দাদা স্বপনের বাড়িতে দেখেছিলো আর বিয়েতে মত দেয়নি।
দীপ্তি – সেতো আমরা জানি। কিন্তু এই ভাস্করদার সাথে তোমার যোগাযোগ আছে সেটা তো বলোনি !
মানসী – একদিন তোকে ঠিক বলতাম। কিন্তু সৃজা দাদাকে এখনই কিছু বলিস না।
সৃজা – এখন বলবো না তো কি তোমার বয়েস ৬০ হয়ে গেলে বলবো ?
মানসী – আমি পরে বলবো। এইসব তোকে ভাবতে হবে না।
সৃজা – তুমি কি বলবে বা করবে আমি জানি। বাবাকে বলতে গেলেই শাড়িতে হিসি করে ফেলবে।
মানসী – মারবো এবার তোকে
দীপ্তি – কিন্তু আমরা জানি তুমি বড়দাকে বলতে পারবে না
মানসী – আর একটু সময় দে ঠিক বলবো
সৃজা – তুমি চিন্তা করোনা পিসেমশায়, খুব তাড়াতাড়িই তোমাদের বিয়ে হয়ে যাবে।
রাত্রে বড়দা একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরেন। তারপর সব ভাই বোনরা ফিরলে সবাইকে একসাথে ডাকেন। সবাই আসলে উনি বলেন যে উনি এবার বিয়ে করতে চান।
মা (বড়দার) – এই বয়েসে বিয়ে করবি বাবা !
বড়দা – মা, সৃজার বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। সব ভাই বোনরাও দাঁড়িয়ে গেছে। আমার এখন আর কি কাজ। তোমার বৌমা মারা যাবার পর থেকে একাই আছি। ব্রততী আমার জন্যে ২০ বছর ধরে অপেক্ষা করছে। এবার ওর সাথে বিয়েটা করেই নেব।
মেজ ভাই – তুমি বিয়ে করলে আমার কোন আপত্তি নেই
ছোট ভাই – আমিই বা কি বলবো
মানসী – হ্যাঁ হ্যাঁ দাদা তুমি এবার বিয়ে করেই নাও। তুমি বিয়ে করলে খুব ভাল হবে।
সৃজা – তোমার সব কাজ হয়ে গেছে ?
বড়দা – কেন মা আর কি বাকি আছে ?
সৃজা – রাঙ্গাপির বিয়ে কে দেবে ?
বড়দা – মানসীর বিয়ে দিতে পারিনি কিন্তু ওর জন্যে বিউটি পার্লার করে দিয়েছি। ও তো বেশ ভালই আছে।
সৃজা – তোমার চোখ আছে ?
বড়দা – সে আবার কি ?
সৃজা – তোমার চোখ থাকলে দেখতে পেতে রাঙ্গাপি কেমন আছে। আর পার্লার তুমি করে দাও নি। আমার মায়ের পয়সা আর স্বপন পিসের বুদ্ধিতে হয়েছে।
বড়দা – যে ভাবেই হোক ঠিক তো চলছে।
সৃজা – কি ঠিক চলছে ? রাঙ্গাপি পার্লার চালায় আর তুমি মাসে দশ হাজার টাকা করে আয় করো। রাঙ্গাপির কি হয় ?
বড়দা – আমরা তো সবাই একসাথে থাকি। সবার পয়সা কি আলাদা ?
মানসী – সৃজা বাবার সাথে এইভাবে কেউ কথা বলে না।
সৃজা – বাবা যদি বাবার মত কথা বলে তবে আমার এইভাবে কথা বলার দরকার হত না।
মেজ ভাই – আমি সৃজার কথা সাপোর্ট করছি। আমরা দুই ভাই যে ব্যবসা করি তার সব পয়সা তো তোমাকে দেই না। সংসার চালানোর যতটা লাগে ততোটা দেই। তবে মানসীর সব পয়সা তুমি কেন নেবে ?
সৃজা – আমার কথা হল রাঙ্গাপির গত সাত বছরে পার্লার থেকে যত আয় হয়েছে সেই টাকা তুমি রাঙ্গাপিকে দিয়ে দেবে। আর রাঙ্গাপির বিয়ে দেবে। তার পর তুমি যা খুশী করতে পারো।
বড়দা – মানসী বিয়ে দেবার দায়িত্ব বাবার ছিল। কিন্তু সেটা দেবার আগেই উনি চলে গেছেন।
মেজ ভাই – দাদা তুমি এইকথা বলতে পারো না। বাবা থাকতেও আমাদের বিয়ের সব ব্যবস্থা তুমিই করেছ। আমাদের বা বাবার মত নাও নি।
বড়দা – তোমাদের অমতে তো বিয়ে দেইনি।
ছোট ভাই – আমরা সব সময় তোমার কথা শুনে চলি।
মানসী – তোমরা কি শুরু করেছো ? আমার কোন টাকা চাই না। দাদা তুমি বিয়ে করে নাও।
সৃজা – রাঙ্গাপি তুমি কি রকম মানুষ ? আমি তোমার মত আর কাউকে দেখিনি, যে নিজের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে না।
মা – আমার মানসী মোমবাতির মত, নিজে জ্বলে গিয়ে বাকি সবাইকে আলো দেয়। হ্যাঁ বাবা তুই মানসীর বিয়ে দিয়ে নিজে বিয়ে কর।
এই তর্ক বিতর্ক অনেক রাত পর্যন্ত চলে। কিন্তু কেউ বড়দাকে থামাতে পারে না। বড়দা বলে উনি পরের সপ্তাহেই রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করছেন। সেইভাবে নোটিশও দেওয়া হয়ে গেছে।
সৃজা – তবে তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।
মানসী – সৃজা বড় বেশী পেকে গেছ তুমি।
সৃজা – ঠিক আছে স্বপন পিসে আর শ্রদ্ধা পিসেকে ডাকো। ওদের সাথে কথা বল।
মা – না না জামাইদের এর মধ্যে ডাকতে হবে না।
মানসী – দাদা তুমি বিয়ে করে নাও। আমি সৃজাকে বুঝিয়ে দেব।
সৃজা – তুমি আমাকে বুঝিয়ে দেবে কিন্তু ভাস্কর পিসেমশায়কে কি বলবে ?
বড়দা – এই ভাস্কর কে ?
সৃজা – তুমি তো শুধু তোমার বউ নিয়ে পরে আছো। রাঙ্গাপি তোমার কাছে শুধুই কাজের মানুষ। তার ভালবাসার কোন খবর তোমার রাখার দরকার নেই।
বড়দা – মানসী কে এই ভাস্কর ?
মানসী – কেউ না দাদা। ও কথা ছাড়।
সৃজা – কেন ছাড়বে ? ভাস্কর পিসে হল সেই মানুষ যার সাথে স্বপন পিসে রাঙ্গাপির বিয়ে দিতে চেয়েছিল।
বড়দা – সেই অপদার্থ ছেলেটা ?
সৃজা – তোমার কাছে সবাই অপদার্থ ! তুমি পয়সা ছাড়া আর কিছু বোঝো নাকি !
মানসী – আঃ সৃজা, কি হচ্ছে টা কি ?
বড়দা – ওই ভাস্করের মত বেকার ছেলের সাথে আমার বোনের বিয়ে হতে পারে না।
সৃজা – গত কুড়ি বছরে তুমি একটাও সাকার ছেলে খুঁজে পাওনি।
বড়দা – খুজেছি, পাইনি
সৃজা – শ্রেপির জন্যে পেলে, আমার জন্যে পেলে, দেশের আরও কত জনের বিয়ে দিলে আর রাঙ্গাপির জন্যে ছেলে পেলে না। এটা বিশ্বাস করতে বল ? তুমি আসলে কোনদিন চাওনি রাঙ্গাপির বিয়ে হোক।
মা – কেন চাইবে না ?
সৃজা - ঠাম্মা তুমি সরল মানুষ, তুমি বুঝবে না।
মানসী – তোমাকে আর বোঝাতে হবে না।
সৃজা – তুমি কাল ভাস্কর পিসেকে নিয়ে এখানে আসবে। সবাইকে বলবে কবে বিয়ে করছ।
মানসী – না না তা হয় না।
বড়দা – মানসীর বিয়ে কিছুতেই ভাস্করের সাথে হবে না। আর মানসী ভাস্করকে বিয়ে করলে আমাদের সাথে কোন সম্পর্ক থাকবে না।
সৃজা – কেন ?
মানসী – সবাই দয়া করে চুপ করবে। আমি আর সহ্য করতে পারছি না।
মানসী উঠে চলে যায়। না খেয়েই শুয়ে পড়ে। সৃজা গিয়ে অনেক বার খাবার জন্য ডাকে কিন্তু মানসী ওঠে না। বাকি সবাইও যে যার মত ঘরে চলে যায়। দীপ্তি আর লেখা সবার কথাই শোনে কিন্তু ওরা কিছু বলে না। পরদিন দীপ্তি স্বপনকে অফিসে ফোন করে সব জানায়। স্বপন সব শোনার পড়ে বলে যে বড়দা বিয়ে করছে সেটা খুব ভাল কথা। দীপ্তি বলে যে শনিবারে ও সৃজা আর মানসীকে নিয়ে স্বপনের বাড়ি যাবে।
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!  Sad
•
Posts: 765
Threads: 29
Likes Received: 1,595 in 627 posts
Likes Given: 134
Joined: Dec 2019
Reputation:
98
ষষ্ঠ পরিচ্ছদ – সবাইতো সুখী হতে চায়
(#৬)
শনিবার সকালে ওরা তিনজনে স্বপনের বাড়ি যায়। মানসী যেতে চাইছিল না। কিন্তু সৃজা জোর করে নিয়ে যায়। স্বপন সেদিন আর অফিস যায়নি। স্বপনের বাড়ি পৌঁছেই সৃজা হাউ মাউ করে স্বপনের কাছে বাবার নামে নালিশ করতে শুরু করে। ও যে কি বলছিল স্বপন কিছুই বোঝে না। সৃজা থামলে স্বপন দীপ্তিকে বলে, “এবার বল কি হয়েছে ।”
সৃজা – এতক্ষন আমি কি বললাম
স্বপন – তুই হুর হুর করে কি বললি কিছুই বুঝলাম না
সৃজা – আমার ভীষণ রাগ হচ্ছে। কিন্তু তুমি ছাড়া আর কারো কাছে বলতে পারছি না
স্বপন – আমি কি তোর বাবাকে বকে দেব না তোর বাবা আমার কথা শুনবে
সৃজা – না তুমি বকবে না। কিন্তু জান বাবা শুধু তোমাকেই ভয় পায়।
স্বপন – হ্যাঁ দীপ্তি বলো ঠিক কি হয়েছে।
দীপ্তি সেদিন যা যা কথা হয়েছে সব বলে।
স্বপন – বড়দা বিয়ে করবে সেতো ভাল কথা
সৃজা – তোমার রাগ হচ্ছে না ?
স্বপন – কেন রাগ হবে ?
সৃজা – রাঙ্গাপির বিয়ে না দিয়ে নিজে আবার বিয়ে করছে !
স্বপন – রাঙ্গাদির বিয়ে দিচ্ছে না সেটা ওনার নিজের বিয়ের থেকে আলাদা
সৃজা – কেন আলাদা ?
স্বপন – বড়দা একটু দাদাগিরি করে, শুধু টাকা চেনে। সব মেনে নিলাম। কিন্তু উনি রাঙ্গাদির বিয়ে দেওয়া ছাড়া বাড়ির বাকি সব দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই না ?
মানসী – হ্যাঁ দাদা সব কিছুই করেছে
স্বপন – সৃজা তুই বল
সৃজা – হ্যাঁ সেসব করেছে
স্বপন – তোর বাবার কাছে সাহায্য চেয়ে পাসনি সেরকম কখন হয়েছে ?
সৃজা – না হয় নি
দীপ্তি – সে দিক থেকে বড়দা আমাদের বাড়ির সত্যিকারের গার্জেন।
স্বপন – ওনার কোন খারাপ অভ্যেস আছে ?
সৃজা – না, মদ বা সিগারেট খায় না।
স্বপন – মেয়েদের নিয়ে ঘোরে ?
সৃজা – আমরা দেখিনি বা জানিনা
স্বপন – সৃজা তোর কত দিন বিয়ে হয়েছে ?
সৃজা – এক বছর হল প্রায়
স্বপন – তুই মানব কে ছাড়া আর সেক্স ছাড়া থাকতে পারবি ?
সৃজা – বেশীদিন পারবো না
স্বপন – এখন সেক্স কেমন লাগে ?
সৃজা – খুব ভাল
স্বপন – বিয়ের আগে তোর সেক্স নিয়ে এই অ্যাডিকসন ছিল ?
সৃজা – বিয়ের আগে সেক্স জানতাম। কিন্তু তার কি মজা সেটা তো জানতাম না।
স্বপন – আর এখন
সৃজা – এখন সারাদিন মনে হয় কখন রাত্রি হবে আর মানবের কাছে যাবো। কিন্তু পিসে তুমি ভীষণ অসভ্য আমাকে দিয়ে কিসব বলিয়ে নিলে। আর আমার আসল কথা ভুলে গেলে।
স্বপন – না না ভুলিনি। এবার বল বড়দার কতদিন হল একা আছেন ?
সৃজা – মা প্রায় ২০ বছর হল মারা গেছেন
স্বপন – বড়দা এতদিন সেক্স ছাড়া আছেন
সৃজা – হ্যাঁ তাই
স্বপন – বড়দা চাইলে আগেও বিয়ে করতে পারতেন
মানসী – বড়দাকে অনেকে অনেকবার বলেছে বিয়ে করবার জন্যে। কিন্তু দাদা মেয়ের বিয়ে না দিয়ে কোন কিছু ভাবেন নি।
স্বপন – রাঙ্গাদি কোনদিন সেই ভাবে সেক্সের স্বাদ পায়নি। কিন্তু সৃজা আর দীপ্তি তোমরা পারবে ২০ বছর সেক্স ছাড়া থাকতে ?
দীপ্তি – না পারবো না
সৃজা – ভীষণ কষ্ট হবে
স্বপন – বাঘ রক্তের স্বাদ পেলে রক্ত ছাড়া থাকতে পারে না, সেটা বুঝিস ?
সৃজা – হ্যাঁ জানি
স্বপন – তোর বাবা তোর জন্যে এই ২০ বছর সেই কষ্ট করেছেন
সৃজা – হ্যাঁ মেনে নিচ্ছি বাবা আমার জন্যে খুব কষ্ট করেছেন
স্বপন – বড়দা এই মেয়েটাকে ১৫ বছরের বেশী ধরে জানেন আর ভালবাসেন। কিন্তু ওই ব্রততীও তোর বাবার কোথায় এতদিন বিয়ে না করে আছে।
সৃজা – তুমি কি করে জানলে ?
স্বপন – আমি আর নিহারিকা দেখেছি বড়দাকে ওই মেয়েটার সাথে।
মানসী – আমাদের বলো নি তো
স্বপন – কেন বলবো সবাইকে। ওনার পার্সোনাল জীবনে দখল দেবার কোন অধিকার আমার নেই
সৃজা – সত্যি পিসে আমরা কেউ এই ভাবে চিন্তা করিনি
দীপ্তি – কিন্তু বড়দা এতদিন রাঙ্গাদির বিয়ে কেন দেননি ?
স্বপন – আমার মনে হয় শুরুর দিকে সেটা সৃজাকে মানুষ করার জন্যে। বৌদি মারা যাবার পরে বড়দার কাছে দুটো অপশন ছিল, মানসী বা শ্রেয়সী – দুজনের একজন সৃজাকে দেখবে। উনিও জানেন যে শ্রেয়সী কোন কাজের মেয়ে না। তাই ওর বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। আর মানসীকে সৃজার দায়িত্ব দিয়েছেন।
দীপ্তি – কিন্তু আমি আর লেখা দিদি আসার পরে ?
স্বপন – তোমরা আসার পরে উনি জানতেন এক দিন না একদিন তোমাদের বাচ্চা হবে। আর তোমাদের নিজেদের বাচ্চা হলে তোমরা সেইভাবে সৃজার ওপর খেয়াল রাখতে পারবে না। তাই যতদিন না সৃজার বিয়ে হয় উনি নিজের সাথে সাথে মানসীকে আর ব্রততীকে বিয়ে করতে দেন নি।
সৃজা – পিসে সাংঘাতিক অ্যানালিসিস তোমার
দীপ্তি – কিন্তু এখন ?
স্বপন – এখন মানসীর টাকা। উনি আর সব কিছু ছাড়তে পারবেন, টাকা ছাড়তে পারবেন না।
সৃজা – সেটা তো অন্যায়
স্বপন – সেটা অবশ্যই ঠিক কাজ নয়। কিন্তু তার জন্যে ব্রততীকে বঞ্চিত করা ঠিক হবে না।
দীপ্তি – তবে আমরা কি করবো
স্বপন – মনের আনন্দে বড়দার বিয়ের জোগাড় করো
সৃজা – তারপর ?
স্বপন – দেখো রাঙ্গাদিদি অনেক বড় হয়েছে। আমি অনেক বার বুঝিয়েছি। এবার ওর নিজের স্বার্থ নিজে দেখার সময় এসেছে। রাঙ্গাদিকে ওর পয়সা নিজে চাইতে হবে বড়দার কাছে।
দীপ্তি – রাঙ্গাদি কোনদিন পারবে না। আমি কতদিন হিসাব করে দেখিয়ে দিচ্ছি ওর কত টাকা আছে বড়দার কাছে।
মানসী – আমার দাদা আমাকে কোনদিন ফেলে দেবে না
স্বপন – সেটা আমিও জানি। কিন্তু আমরা সবাই মানুষ, সবাইকে একদিন না একদিন যেতেই হবে। যেদিন বড়দা থাকবেন না তখন কি হবে তোমার ?
মানসী – তোমার কাছে এসে থাকবো।
স্বপন – সে এখনও থাকতে পারো। কিন্তু তোমাকে তোমার বোনের দয়ায় বেঁচে থাকতে হবে।
নিহারিকা – মোটেও না। আমি সেরকম নই।
স্বপন – জীবন টা গল্পের বই নয় যে লেখক লিখে দিলেন ওরা সুখে শান্তিতে সংসার করতে থাকল, আর সবাই সুখে থাকল। সত্যিকারের জীবনে অনেক কিছু হয়, যেটা দেখে আমাদের ভয় লাগে, হয়ত আমার সুখ নষ্ট হবে! আর আমরা সবাই সুখী হতে চাই। সুখের জায়গায় আমরা কেউ কোন কম্প্রোমাইজ করি না। তাই ভবিস্যতে কি হবে আর আমারাই বা কোন অবস্থায় কি করবো আমরা নিজেরাও জানি না।
সৃজা স্বপনকে জড়িয়ে ধরে। ওর বুকের মধ্যে মুখ চেপে থাকে অনেকক্ষণ। তারপর আবার উঠে বসে।
সৃজা – আর বলো
স্বপন – এতক্ষন এটা কি করলি ?
সৃজা – এটা আমাদের মাথাকে একটু ব্রেক দিলাম। আর তোমাকে ভালবাসা জানালাম। কিন্তু এই ভালবাসার ইংরাজি Love নয়, এই ভালবাসার ইংরাজি Gratitude.
স্বপন – সত্যি অনেক বড় হয়ে গিয়েছিস তুই
মানসী – সৃজা বুঝতে পারছিস আমি কেন স্বপনকে এতো ভালবাসি
সৃজা – সেই জন্যেই আজকে আমিও পিসের কাছেই এসেছি। আর কারো কাছে যাই নি।
দীপ্তি – কিন্তু রাঙ্গাদি কি কিছু বলবে বড়দা কে ?
স্বপন – না বললে নিজে ভুগবে। আমরা কি করবো !
সৃজা – আমরা সবাই চুপ চাপ থাকবো ?
স্বপন – দেখ রাঙ্গাদির বিয়ে দেবোই, আর ওই ভাস্করের সাথেই দেবো। ওদের আর একটু তৈরি হতে দে। বড়দার বিয়ের সাথে রাঙ্গাদির বিয়ের কোন সম্পর্ক নেই। রাঙ্গাদির বিয়ে যখন হবার ঠিক হবে।
দীপ্তি – ঠিক বলছ ?
মানসী – স্বপন যখন বলেছে তখন ঠিক হবে।
নিহারিকা – অনেক কথা হল। এবার সবাই জলখাবার খেয়ে নাও।
সৃজা – কি বানিয়েছ নেহাপি ?
নিহারিকা – আমি চাউমিন বানিয়েছি আর তোর পিসে চিলি চিকেন বল বানিয়েছে।
নিহারিকা সবাইকে খেতে দেয়। সৃজা খুব খুশী, মানসী আর দীপ্তিরও ভাল লাগে।
সৃজা – কি সুন্দর খেতে এই চিকেন বল। কিভাবে বানালে ?
স্বপন – কেন বলবো তোকে ?
সৃজা – বলো না প্লীজ, মানবকে বানিয়ে খাওয়াবো
স্বপন – হাড় ছাড়া চিকেন একটু সেদ্ধ করবি। একটু ছোলার ডাল ভিজিয়ে রাখবি। তারপর জল ঝড়িয়ে ডাল আর চিকেন একসাথে মিক্সিতে পিসে নিবি। তারপর কাঁচা ডিম আর পেঁয়াজ কুচি দিয়ে মাখাবি। গোল গোল বল করে অল্প ভেজে নিবি। তারপর যেভাবে চিলি চিকেন করিস সেইভাবে বানিয়ে নিবি, শুধু চিকেন এর জায়গায় এই চিকেন বল দিবি।
সৃজা – সোজা তো
স্বপন – আমি কখন বললাম কঠিন
দীপ্তি – শুনতে সোজা, করে দেখ না কত ঝামেলা হয়।
নিহারিকা – খাওয়া হলে চল একটু ঘুরে আসি।
সৃজা – কোথায় যাব ?
নিহারিকা – চল না গেলেই দেখতে পাবি। রাঙ্গাদি কোথায় ভাস্করের সাথে প্রেম করত সেই জায়গা দেখাবো।
জলখাবার হয়ে গেলে নিহারিকা ওদেরকে নিয়ে একটু ঘুরতে যায়। নিহারিকা শুধু দীপ্তি কে বলে ঘরে থাকতে।
নিহারিকা – না দীপ্তি বৌদি তোমাকে নিয়ে যাবো না।
দীপ্তি – আমি কি দোষ করলাম ?
নিহারিকা – স্বপন যাবে না, ও দুপুরের রান্না করবে। তুমি ওর সাথে থাকো।
মানসী – হ্যাঁ হ্যাঁ তুমি থাকো আর স্বপনের কাছে রান্না শেখো।
দীপ্তি – ঠিক আছে।
নিহারিকা ছেলে মেয়ে সৃজা আর মানসীকে নিয়ে চলে যায়।
দীপ্তি – চল স্বপনদা কি রান্না করবে দেখি
স্বপন – রান্না করা আছে
দীপ্তি – তবে নেহা যে বলে গেল তুমি রান্না করবে
স্বপন – নেহা আমাদের দুজনকে একসাথে থাকার সময় দিয়ে গেল
দীপ্তি – কেন ?
স্বপন – আমরা দুজন খেলা করবো তাই
দীপ্তি – যাঃ
স্বপন – বলেছিলাম না আমরা নুঙ্কু নুঙ্কু খেলবো
এরপর দুজনে সেই আদিম খেলায় মেতে ওঠে।
ওদিকে সৃজারা ঘুরে বেড়াচ্ছে।
সৃজা – এই দিকটা কি সুন্দর গো !
মানসী – হ্যাঁ খুব সুন্দর জায়গা।
সৃজা – মনে হচ্ছে অনেকগুলো লেকের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছি
মানসী – এই সব জায়গা অনেক অনেক আগে গঙ্গা নদীর রাস্তা ছিল। এখন নদী সরে গিয়েছে আর এই নিচু জায়গা গুলো জলে ভরে লেকের মত তৈরি হয়েছে। এগুলোকে ভেরী বলে।
সৃজা – এই সব তো আমরা ভূগোল বইতে পড়েছি। কিন্তু এই জায়গা বাড়ির এতো কাছে তা কোনদিন জানতাম না।
নিহারিকা – আমি ওইসব ভূগোল জানি না। কিন্তু আমারও এখানে ঘুরতে ভাল লাগে।
সৃজা – একদিন মানব কে নিয়ে আসবো। মানব ভূগোলের প্রোফেসর, কিন্তু আমার মনে হয় ও কখনও এই জায়গায় আসেনি।
ওরা প্রায় দু ঘণ্টা ঘুরে, রুবি হসপিটালের পাস থেকে গরম জিলাপি কিনে বাড়ি ফেরে। স্বপন আর দীপ্তির রান্না করা ততক্ষনে শেষ হয়ে গেছে। স্বপন আগের রাতে করা রান্না গুলো গরম করে সাজিয়ে রাখে।
সৃজা – কি ছোট কাকি কি রান্না করলে
দীপ্তি - মাছের ঝোল আর ভাত
সৃজা – এতে আবার নতুন কি হল
দীপ্তি – সব সময় যে নতুন কিছু হবে তার কোন মানে আছে ?
স্বপন – রান্না ঘরে গিয়ে দেখে নে কি কি রান্না করেছি
সৃজা রান্না ঘর থেকে ঘুরে আসে।
সৃজা – বাপরে কত কি রান্না করেছো ! এইটুকু সময়ে এতো রান্না কি করে করলে ?
নিহারিকা –কাল রাতে সব কিছু অর্ধেক করা ছিল।
সৃজা – ছোট কাকি বাড়ি গিয়ে পরে আবার এই সব রান্না করে খাওয়াবে
মানসী – ও রান্না করেছে নাকি
সৃজা – তো এতক্ষন কাকি কি করছিল ?
দীপ্তি – খেলা করছিলাম। এবার চান করে খেয়ে নাও। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবো।
সৃজা – সবে তো ১২ টা বাজে আর জলখাবার তো একটু আগেই খেলাম।
স্বপন – ঠিক আছে আয়, আমার পাশে বোস। গল্প করি।
ওরা দুপুরে খেয়ে চলে যায়। বাড়ি ফিরেই সৃজা ঘর পরিস্কার করতে লাগে।
লেখা – কি করছিস এখন ?
সৃজা – বাবা নতুন মা আনবে, এই নোংরা ঘর ভাল লাগবে না।
লেখা – সেদিন তো খুব আপত্তি ছিল, আজ কি হল ?
সৃজা – আমরা সবাই স্বার্থপর জান
লেখা – কে বলল ?
সৃজা – আমরা কেউ বাবার সুখ বা আনন্দের কথা কোনদিন চিন্তা করিনি। দেখো না এবার কিরকম আনন্দ করি।
লেখা – স্বপনের কাছ থেকে কি শুনে আসলি যে এত পরিবর্তন ?
সৃজা – সে তোমরা ছোট কাকি আর রাঙ্গাপির কাছে শুনে নিও
লেখা – তুই কি করবি ?
সৃজা – কাল নতুন মা আসবে। মা ঘোরে আসলে আমি আর মা রঙ্গিলা সিনেমার গানের সাথে নাচবো।
লেখা – বড়দা তোকে দেবে নাচতে ?
সৃজা – বাবাকেও নাচাবো।
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!  Sad
Posts: 765
Threads: 29
Likes Received: 1,595 in 627 posts
Likes Given: 134
Joined: Dec 2019
Reputation:
98
(#৭)
পরদিন বড়দা রেজিস্ট্রি করে ব্রততীকে ঘরে নিয়ে আসেন। কোন অনুষ্ঠান করেননি। কোন বোন বা ভগ্নীপতিকেও ডাকেননি। বড়দা ব্রততীকে নিয়ে নিজের ঘরে ঢুকতে দরজার কাছে যেতেই সৃজা ‘তনহা তনহা’ গান চালিয়ে দেয়।
বড়দা – এটা আবার কি গান চালিয়েছ ?
সৃজা – এখন আমি আর নতুন মা নাচবো এই গানের সাথে
বড়দা – এইসব অসভ্যতা করার বুদ্ধি কে দিল ?
সৃজা – দেখো বাবা এই একদিন তোমার পুরানো আইডিয়া ছাড়। তোমার সংস্কৃতি না কি সব বলো প্লীজ ভুলে যাও। কতদিন পরে একটা মা পেলাম, আজ একটু আনন্দ করতে দাও।
বড়দা – আনন্দ করবে করো কিন্তু এইসব গান কেন ?
সৃজা – এই রকম গান ছাড়া আনন্দ করা, নুন ছাড়া মাংস খাওয়ার মত।
ব্রততী – মেয়ে চাইছে যখন একদিন তোমার ভাবনা ভুলে গিয়ে মেয়ের সাথে নাচো।
বড়দা – আমি নাচবো ?
ব্রততী – নাচলে কি হবে ?
বড়দা – তুমি কি পাগল হলে ?
সৃজা – বাবা আমি তো পাগল হয়েছি
ততক্ষনে বড়দার দুই ভাই, মানসী, দীপ্তি আর লেখা মা কে নিয়ে ওখানে চলে আসে। গানের সাথে সৃজা নাচতে থাকে। একটু পরে সৃজা ব্রততীকে সাথে নাচে। একটু নাচার পরে ব্রততী সৃজাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে। আবার নাচতে শুরু করে। দীপ্তিও নাচতে শুরু করে। মানসী আর লেখা লজ্জায় নাচে না। এরপর সৃজা ব্রততীকে ছেড়ে বাবার হাত ধরে। আর হাত ধরে নাচাতে থাকে। বড়দা চরম অস্বস্তিতেও মেয়ের ইচ্ছায় সায় দেন। একসময় গান শেষ হয়।
বড়দা আর ব্রততী দুজনে মিলে মাকে প্রনাম করে।
মা – সুখী হও মা। ছেলে পুলে নিয়ে সুখে সংসার করো।
ব্রততী – মা আমার তো আর ছেলে মেয়ে হবার বয়েস নেই
মা – তোমার ছেলে মেয়ে হবে না !
বড়দা – তোমার এক মেয়ে তো আছে
ব্রততী – হ্যাঁ আমার ওই এক মেয়েই আছে। আর হবে না।
মানসী – ওইসব কথা ছাড়। এখন দুজনে পাশাপাশি বস। আমরা একটু ভাল করে দেখি।
তারপর সবাই একসাথে মিষ্টি খায়। বড়দা আর ব্রততী ঘরে ঢুকে যায়। সৃজা আর মানসী ওদের খাট ফুল দিয়ে সাজিয়ে রেখেছিল। এটাও বড়দা জানতেন না। মেয়ে আর বোনের কাজ দেখে বড়দা খুব আনন্দ পান।
বিয়ের কিছুদিন পরে দেখা যায় মা খুশী। বড়দার দুই ভাইয়ের সেরকম কোন মাথা ব্যাথা নেই। সৃজা দুদিন হই চই করে নিজের বাড়ি ফিরে গেছে। মানসীও খুব খুশী। শুধু দীপ্তি আর লেখা ঠিক খুশী না। ওদের অখুশির কারন হল ব্রততীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, আচার ব্যবহার, কথা বলার ধরণ সব কিছু।
দীপ্তি আর লেখা কোনোরকমে কলেজের গণ্ডি পেরিয়েছে। দেখতে একদম সাধারন। ওরা মানুষ হয়েছে নিম্ন মধ্যবিত্ত ব্যবসায়ী ফ্যামিলিতে। সেখানে ব্রততী ইংরাজি আর বাংলা দুটোতেই এম.এ. পাশ। রবীন্দ্রনাথ আর সেক্সপিয়ার দুজনকে নিয়েই অনেক জ্ঞান। ওর ফ্যামিলি বেশ উচ্চ মধ্যবিত্ত ফ্যামিলি। ব্রততীর চেহারা প্রায় সুস্মিতা সেনের মত। মুখ হয়ত সুস্মিতার মত অতো সুন্দর নয়। কিন্তু বেশ ভালো দেখতে। চলাফেরায় আর কথাবার্তায় একটা বেশ আভিজাত্য ফুতে ওঠে। দীপ্তি আর লেখা এটা ঠিক হজম করতে পারে না। ওরা ঠিক করে কথাই বলতে পারে না ব্রততীর সাথে। তারপর আবার ব্রততী রান্না বা ঘরের অন্যান্য কাজ সেভাবে করতে পারে না।
মানসীর কোন আসুবিধা হয় না। ওর বৌদিকে বেশ ভাল লাগে। ব্রততীরও মানসীকে ভাল লাগে। ব্রততীও ওকে ‘রাঙ্গাদি’ বলে ডাকলে মানসী আপত্তি করে।
মানসী – না না তুমি আমাকে রাঙ্গাদি কেন বলবে ?
ব্রততী – আমকে সবাই আম বলে, আপেলকেও সবাই আপেল বলে। তবে রাঙ্গাদিকে রাঙ্গাদি কেন বলবো না ?
মানসী – আমি তোমার থেকে ছোট বৌদি ?
ব্রততী – ছোট বড়র প্রশ্ন আসছেনা ভাই।
মানসী – আর আমি তো আম বা আপেল নই। আমিতো কালোজাম।
ব্রততী – কালোজাম না হয় মেনে নিলাম। কিন্তু কালোজাম খুবই সুন্দর দেখতে। খেতেও ভাল। আমার রাঙ্গাদি দেখতে কেমন সেটা আমি বুঝতে পারছি। খেতে কিরকম সেটা তোমার ভাস্কর বলতে পারবে।
মানসী – আমার ভাস্কর কে ?
ব্রততী – রাঙ্গাদি আমি সব জানি। তোমার বড়দা সবই বলেছে আমায়।
মানসী কোন উত্তর না দিয়ে চুপ করে থাকে।
ব্রততী – চিন্তা করোনা রাঙ্গাদি। আমি তোমার আর ভাস্করের বিয়ের ব্যবস্থা করবো।
মানসী কেঁদে ফেলে। ব্রততীকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে। ব্রততী মানসীর মাথায় হাত রাখে।
বড়দা মানুষ যেরকমই হোক, বৌ জোগাড় করতে ভাল পারে। মানসী অনেকদিন পরে ওর সুলগ্না বৌদির ছোঁয়া পায়।
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!  Sad
Posts: 765
Threads: 29
Likes Received: 1,595 in 627 posts
Likes Given: 134
Joined: Dec 2019
Reputation:
98
ষষ্ঠ পরিচ্ছদ – সবাইতো সুখী হতে চায়
(# ৮)
প্রায় ছয় মাস কেটে যায়। সংসার যেমন চলছিল সেইরকমই চলে। মানসীর এখন বাড়িতে প্রায় কোন কাজই নেই। ব্রততী অনেক প্রতিকুল অবস্থাতেও মানিয়ে নেবার চেষ্টা করে। দীপ্তি আর লেখা দাদার নতুন বৌকে কিছুতেই কাছে টানতে পারে না। যদিও ওরা ব্রততীর থেকে ছোট, তবু এই সংসারে এতদিন ওরাই সব কিছু দেখত। সেখানে ব্রততী কিছু করতে গেলে ওরা সব সময় কিছু না কিছু ভুল ধরে। শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়েছে সপ্তাহে একদিন ব্রততী সব রান্না করবে। সেদিন দীপ্তি আর লেখার ছুটি। বাকি দিন গুলো ব্রততী ঘর পরিস্কার করার তদারকি করবে। মানসী খুব শান্তিতে আছে। সারাদিন কলেজ আর পার্লার নিয়ে কেটে যায়। এখন সপ্তাহে তিনদিন ভাস্করের সাথে দেখা হয়। রাত্রে মাঝে মাঝে ব্রততীর সাথে গল্প করে।
এই ছয় মাসে ব্রততী বড়দার আগের বৌ বা সবার সুলগ্না বৌদিকে নিয়ে প্রায় সব কিছুই জেনে নিয়েছে। এই পরিবারে সবাই যাতে মেনে নেয় তাই নিজেকে সুলগ্নার মত করার চেষ্টা করেছে। আস্তে আস্তে ব্রততী বড়দার সব টাকা পয়সার খবর জেনে নেয়। একদিন রাতে ব্রততী বড়দাকে জিজ্ঞাসা করে মানসীর আয় নিয়ে।
(এখানে বড়দা যদিও ব্রততীর বড়দা নয়, ব্রততী ওনাকে অন্য নামে ডাকতো। আমি বড়দার নাম লিখতে চাই না বা অন্য নামও দিতে চাই না। তাও বড়দা বলেই লিখছি)।
ব্রততী – রাঙ্গাদির পার্লার থেকে কত আয় হয় ?
বড়দা – সে তুমি জেনে কি করবে ?
ব্রততী – কিছু করবো না। তবু জানা দরকার।
বড়দা – কেন ?
ব্রততী – আমার মনে হয় তোমার জীবনের সব কিছু জানারই অধিকার আমার আছে
বড়দা – সে তো আছেই। আমি তোমার কাছে কেন লুকাবো বল !
ব্রততী – তবে বল রাঙ্গাদির পার্লার থেকে মাসে কত আয় হয় ?
বড়দা – এখন মাসে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা আয় হয়। পুজোর সময়ে বা বিয়ের মরশুমে ২০ হাজারও হয়।
ব্রততী – সে টাকা দিয়ে তুমি কি করো ?
বড়দা – আলাদা করে কিছুই করি না। ওকে মাসে ১৫০০ টাকা দেই ওর হাত খরচের, বাকিটা সংসারেই খরচ হয়।
ব্রততী – তোমাদের এই তিন ভায়ের সংসার চালানোর দায়িত্ব কি রাঙ্গাদির ?
বড়দা – তা কেন, আমার বাকি দুই ভাইও টাকা দেয়।
ব্রততী – ১০ হাজার করে দেয় কি ?
বড়দা – না না ওত দেয় না।
ব্রততী – আর তোমার কোন খরচই নেই
বড়দা – না মানে ঠিক তা না।
ব্রততী – আমি বুঝতে পারছি। সবই বুঝতে পারছি।
বড়দা – কি ? কি বুঝতে পারছ ?
ব্রততী – এই যে রাঙ্গাদি সাদাসিধে ভাল মেয়ে বলে তোমরা যা ইচ্ছা তাই করছ।
বড়দা – ওর খাওয়া পড়া সব কিছুরই দায়িত্ব আমার।
ব্রততী – সব কিছুর দায়িত্ব তো নাও নি
বড়দা – কোন দায়িত্ব নেই নি ?
ব্রততী – বিয়ে দিয়েছ ?
বড়দা – সেটা করতে পারিনি
ব্রততী – নিজে দুবার বিয়ে করতে পারলে আর বোনের একবার বিয়ে দিতে পারলে না !
বড়দা – এখন তুমি কি চাও ?
ব্রততী – রাঙ্গাদির পার্লার কত দিন ধরে চলছে ?
বড়দা – প্রায় ১২ বছর।
ব্রততী – তুমি পার্লারের সব কিছু রাঙ্গাদির নামে করে দেবে।
বড়দা – ঠিক আছে করে দেবো।
ব্রততী – রাঙ্গাদির নামে ব্যাঙ্কে একটা আকাউন্ট খুলে দেবে। পার্লারের সব আয় ওইখানে রাখবে।
বড়দা – সে কি করে হবে ?
ব্রততী – কি করে হবে জানিনা। আমি যা বলছি তাই করবে। আর সংসারে তোমরা তিন ভাই যত করে দাও রাঙ্গাদি তার অর্ধেক দেবে।
বড়দা – কেন অর্ধেক কেন ?
ব্রততী – তোমাদের সবার বৌ ছেলে মেয়ে আছে। রাঙ্গাদি একা, তাই।
বড়দা – ঠিক আছে সে সব হয়ে যাবে।
ব্রততী – হয়ে যাবে না, সামনের রবিবার সব ভাই, বৌ, মাআর রাঙ্গাদির সামনে এই সব বলে বুঝিয়ে দেবে।
বড়দা – ঠিক আছে তোমার সব কথা মেনে নিলাম। এবার খুশী ?
ব্রততী – এখনও সব শেষ হয় নি
বড়দা – আবার কি বাকি আছে ?
এইবার ব্রততী যা বলল বাড়ির ওপর অ্যাটম ব্যোম পড়লেও বড়দা এতো চমকাতেন না।
ব্রততী – গত বার বছরের পার্লারের আয় বাবদ তুমি রাঙ্গাদিকে ১২ লক্ষ টাকা দেবে।
বড়দা – মানে ?
ব্রততী – আমি কি বলছি তুমি ঠিকই বুঝে পারছ ?
বড়দা – আমি এতো টাকা কোথায় পাবো ?
ব্রততী – আমি জানি তোমার কোথায় কত টাকা আছে।
বড়দা – এতো টাকা মানসীকে দিয়ে দিলে আমরা খাবো কি ?
ব্রততী – সে আমি কি জানি ! তুমি কি আমাকে রাঙ্গাদির আয়ের ভরসায় বিয়ে করেছো ?
বড়দা – না তা নয়, কিন্তু...
ব্রততী – দেখো আমি যে কোন অযৌক্তিক কথা বলিনি সেটা তুমি ভাল করেই জান।
বড়দা – না না তুমি যা বলেছ তা ঠিকই বলেছ
ব্রততী – তবে রাঙ্গাদিকে কবে দিচ্ছ ১২ লক্ষ টাকা ?
বড়দা – ও কি করবে এতো টাকা দিয়ে ?
ব্রততী – তোমার কি যায় আসে তাতে ? ওকে ওর মত চিন্তা করতে দাও।
বড়দা – আমি একা দেবো এতো টাকা ?
ব্রততী – সে তুমি দেখো, তুমি একা দেবে না ভাইদের কেও বলবে সেটা তোমার ওপর নির্ভর করছে।
বড়দা – মানে ?
ব্রততী – তোমার মুখে এতো মানে মানে ভাল শোনায় না। তুমি সব বুঝতে পারছ। ভাইদেরকে কিভাবে বোঝাবে টাকা দেওয়ার কথা সে তুমি জান। আমি ওর মধ্যে নেই।
বড়দা – বেশ সুবিধাবাদী তো তুমি
ব্রততী – কে কতটা সুবিধাবাদী সে তুমি ভাল করেই জানো। তুমি আমার স্বামী তাই আমার যা বলার তোমাকেই বলবো। এই বাড়ির যে দোতলার ঘর গুলো বানিয়েছ তার বেশীর ভাগ খরচ ওই রাঙ্গাদির টাকা থেকেই এসেছে। আমি তোমাকে ওই ওপর তলাটা রাঙ্গাদির নামে করে দিতে বলছি না। এই ওপর তলায় তোমরা তিন ভাইই থাকো। তাই তোমার ভাইরা এই টাকা শেয়ার করবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু একথা তুমি তোমার ভাইদের বোঝাবে।
বড়দা – আর কিছু ?
ব্রততী – না গো, আর কিছু চাই না তোমার কাছে।
বড়দা – একটা কথা বল, তুমি মানসীর জন্যে এতো কেন ভাবছ ?
ব্রততী – আমি মানসীর জন্যে ভাবছি না। আমি আমার নিজের সুখের জন্যে ভাবছি।
বড়দা – মানসীকে টাকা দিলে তোমার সুখ কি ভাবে আসবে ?
ব্রততী – দেখো আমরা সবাই স্বার্থপর। আমি তোমাকে ভালবাসি। আমি চাই তুমি সবার ওপরে থাকো। এই পরিবারে যে ভাবেই হোক তুমি তোমার সব দায়িত্ব পালন করেছো। শুধু রাঙ্গাদিকে ছাড়া।
বড়দা – তার কিছু কারন আছে।
ব্রততী – যাই কারন থাক, সেটা তোমার দরকার ছিল। রাঙ্গাদির নয়।
বড়দা – হয়ত তাই
ব্রততী – আমি যা যা করতে বললাম, তাতে তোমার সন্মান অনেক অনেক বাড়বে। আর বাড়িতে সবার মনে তুমি আরও বড় আসন পাবে। আর আমার স্বামীকে সবাই ভাল বললে সেটা আমারি সুখ।
বড়দা – বড়ই জটিল চিন্তা তোমার।
ব্রততী – এটাই সব থেকে সাধারন চিন্তা। তুমি যদি রাঙ্গাদিকে ১২ লক্ষ টাকা দিতে না পারো, আমি আমার সব গয়না বিক্রি করে দেবো। কিন্তু রাঙ্গাদিকে বঞ্চিত করে নিজে সুখে থাকতে পারবো না।
বড়দা – তুমি এতো চিন্তা করো আমার বোন, আমার সন্মান, আমার মা ভাইদের নিয়ে ?
ব্রততী – যেদিন তোমায় বিয়ে করেছি, সেদিন থেকেই তোমার সব কিছু তো শুধু তোমার বা আমার নয়। সবই আমাদের, তাই এই চিন্তা।
এরপর আরও অনেকক্ষণ ওদের দুজনের কথা চলে। তারপর একসময় দুজনেই ঘুমিয়ে যায়। বড়দার একটু দেরি হয়, কারন এতগুলো টাকার দুঃখ সহজে হজম করতে পারছিলেন না। ব্রততী ওর যুক্তি দিয়ে এমন ভাবে বুঝিয়েছে বড়দা কিছুই বলতে পারেন নি। মেনে নিয়েছেন কিন্তু মনে ঠিক নিতে পারেন নি।
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!  Sad
Posts: 765
Threads: 29
Likes Received: 1,595 in 627 posts
Likes Given: 134
Joined: Dec 2019
Reputation:
98
(# ৯)
পরের রবিবার বড়দা শ্রদ্ধা আর স্বপনকেও ডাকেন। শ্রেয়সী আর শ্যামলও আসে। ব্রততীর কথা অনুযায়ী সব কিছুই সবাইকে জানান। উপস্থিত কেউই বড়দার এই উদার মনোভাবের জন্যে প্রস্তুত ছিল না।
মানসী – না না আমি ওত টাকা নিয়ে কি করবো ?!
মা – কোথায় পাবি বাবা ওত টাকা ?
দুই ভাই – এতদিন ওই টাকা তুমি রেখেছ তাই ওকে টাকা তুমিই দেবে।
শ্রদ্ধা – এর থেকে ভাল কিছুই হতে পারে না।
শ্রেয়সী – আমাকে কিছু দেবে না ?
স্বপন – বড়দা আমি সব সময় ভাবতাম আপনি রাঙ্গাদিদি কে ভাল বাসেন না। আজ বুঝলাম আমি খুব ভুল ভাবতাম।
ব্রততী – রাঙ্গাদি কে রাঙ্গাদির টাকা ফেরত দিচ্ছে, এতে কোন মহত্ব নেই। এতদিন ওই টাকা তোমাদের দাদার কাছে ছিল। এখন রাঙ্গাদি অনেক ম্যাচিওর। নিজের টাকা সামলানোর ক্ষমতা আছে। তাই এবার থেকে রাঙ্গাদির পার্লারের সব দায়িত্ব, লাভ বা লোকসান রাঙ্গাদির।
মানসী – পার্লার আমিই সামলাবো। শুধু আমাকে পার্লারের হিসাব রাখার জন্যে দীপ্তির সাহায্য চাই।
দীপ্তি – রাঙ্গাদি আমি সব সময় তোমার সাথেই আছি।
মানসী – আর দীপ্তি এতদিন ওই পার্লারের জন্যে অনেক কিছু করেছে। দাদা যদি আমাকে ১২ লক্ষ টাকা দেয় তার থেকে অন্তত ২ লক্ষ টাকা দীপ্তির পাওয়া উচিত।
দীপ্তি – না না আমার কোন টাকা চাই না।
ব্রততী – রাঙ্গাদি ওই টাকা নিয়ে কি করবে সেটা রাঙ্গাদিই ঠিক করবে।
শ্রেয়সী – আমাকে কিছু দিবি না ?
শ্যামল – তুমি সব সময় টাকা টাকা করবে না। তুমি আজ পর্যন্ত কি করেছো ওই পার্লারের জন্যে যে তোমাকে টাকা দেবে ? আর আমার যে ‘আয়া সেন্টারের’ ব্যবসা সেটা বড়দা আর আমার স্বর্গীয় শ্বশুরের টাকা দিয়েই শুরু করেছি। তোমাকে দাদা অনেক দিয়েছে। আর কত দেবে !
শ্রেয়সী – না মানে আমি এমনি বলছিলাম।
শ্যামল – তুমি কেমনি বলছিলে সেটা আমিও বুঝি, বাকি সবাইও বোঝে।
ব্রততী – না না শ্যামল এভাবে বল না শ্রেয়সীকে।
শ্রেয়সী – দেখো না বৌদি সব সময় এইভাবেই আমাকে খোঁটা দেয়
শ্রদ্ধা – শ্যামল মোটেই তোমাকে খোঁটা দিচ্ছে না। ও তোমাকে সত্যি কথাটা জানাচ্ছে।
এইরকম আরও অনেক কথা দিয়ে ওদের আলোচনা চলতেই থাকে। কিছু পড়ে বড়দা ‘একটা মিটিং’ আছে বলে চলে যান। অভ্যেস মত স্বপন উঠে রাঙ্গাদির ঘরে যায়।
মানসী নিজের ঘরে ঢুকে চুপ করে বসে থাকে। খাটের ওপর বাবু হয়ে বসে দুই হাতের ওপর থুতনি রেখে ভাবতে থাকে। কখন স্বপন এসে বসেছে বুঝতেও পারেনি। চোখ থেকে একটু একটু জল গড়িয়ে পড়ছিল। স্বপন দেখে ওর রাঙ্গাদির চোখে জল কিন্তু কিছু বলে না। ও রাঙ্গাদির মুখের দিকে তাকিয়ে বসে থাকে। এমন সময় দীপ্তি আর নীহারিকা চা নিয়ে ঢোকে।
দীপ্তি – কি ব্যাপার রাধা কৃষ্ণের ? রাধার চোখে জল আর কৃষ্ণ তাকিয়ে রয়েছে !
মানসী দীপ্তির গলা শুনে চমকে ওঠে।
মানসী – চুপ কর মুখপুড়ি, সব সময় ইয়ার্কি। স্বপন তুমি কখন আসলে ?
স্বপন – দশ মিনিট হবে, তোমার চোখের জল দেখছিলাম
মানসী – আমি কাঁদছিলাম নাকি !
দীপ্তি – হ্যাঁ কাঁদছিলেই তো। চোখে হাত দিয়ে দেখো
মানসী চোখে হাত দিয়ে বলে, “এমা তাইতো, বুঝতেই পারিনি!”
স্বপন – কেন কাঁদছিলে রাঙ্গাদি ?
মানসী – কি জানি কেন কাঁদছিলাম
স্বপন – তবে কি ভাবছিলে এতো গভীর ভাবে ?
মানসী – আজকে আমি বাড়ি থেকে আলাদা হয়ে গেলাম
দীপ্তি – মোটেও তুমি আলাদা হলে না
মানসী – আলাদা ছাড়া কি হলাম ?
স্বপন – তুমি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা পেলে
মানসী – সেটা আবার কি বস্তু !
স্বপন – তুমি গত ১২ বছরেরও বেশী সময় ধরে পার্লার চালাচ্ছ। পার্লার থেকে আয়ও ভালই হয়। কিন্তু সেই লাভের টাকা তুমি খরচ করতে পারতে না।
মানসী – দাদা তো দেখত
দীপ্তি – এই মেয়ে কোনদিন বুঝবে না
স্বপন – আর কতদিন দাদার ওপর নির্ভরশীল থাকবে ? এবার তো বড় হও। নিজের কাজ নিজে দেখো।
মানসী – সেতো দেখছিই
স্বপন – এবার টাকাটাও সামলে রাখবে। লাভের টাকা কিভাবে কোথায় জমাবে না অন্য ব্যবসায় খাটাবে সেটা তুমি চিন্তা করবে।
মানসী – আমার যেন কিরকম স্বার্থপর বলে মনে হচ্ছে
স্বপন – দেখো এটা হল নিজের ভবিষ্যতের চিন্তা নিজের মাথায় নেওয়া। তোমাকে তো বাড়ির কাজের জন্যে টাকা খরচ করতে মানা করছি না। আমি শুধু বলছি তোমার আয় কিভাবে খরচ হবে সেটা তুমি ঠিক করবে। তোমার হয়ে বড়দা ঠিক করবে না।
মানসী – এইবার বুঝলাম। কিন্তু সেটা কি ঠিক হচ্ছে ?
স্বপন – এটাই ঠিক হচ্ছে, এতদিন ঠিক হয়নি।
নীহারিকা – দেখ রাঙ্গাদি তোর ভাই আর দুই দাদার কত আয় সেটা কি বাকিরা জানে ?
দীপ্তি – আমার মনে হয় না তোমার ভাই সব আয় ব্যায়ের হিসাব দাদাকে দেয়
স্বপন – দেওয়ার দরকারও নেই
দীপ্তি – আমিতো রাঙ্গাদিকে গত দু বছর ধরে এইটাই বোঝাতে চেয়েছি
নীহারিকা – হটাত বড়দা এতো উদার হয়ে গেল কেন !
স্বপন – আমার মনে হয় এটা নতুন বৌদির জন্যে হয়েছে
দীপ্তি – আমারও তাই মনে হয়। গত বুধবার রাতে বড়দা আর দিদি অনেক রাত পর্যন্ত কথা বলেছে।
মানসী – আর তুই বাইরে থেকে আড়ি পেতে শুনছিলি !
দীপ্তি – না না, আমি বাথরুমে গিয়েছিলাম
মানসী – রাতে আবার তোর বাথরুম যাবার দরকার কেন হয় ? তুই তো জলই খাস না !
দীপ্তি – আরে বাবা তোমার ভাই করার পরে গুদ ধুতে গিয়েছিলাম।
মানসী – সব সময় অসভ্য কথা !
স্বপন – আসল কথা বলো, রাঙ্গাদি অন্য কথা জিজ্ঞাসা করো না
দীপ্তি – বড়দার গলা শুনলাম “আমি এতো টাকা দিয়ে দিলে খাবো কি”
স্বপন – তারপর
দীপ্তি – দিদি বলে “নিজের যা আছে তাই খাবে”
স্বপন – তাই ভাবি বড়দার এতো পরিবর্তন কেন। তবে যা হয়েছে ভালই হয়েছে।
নীহারিকা – ভাল হয়েছে মানে ভীষণ ভাল হয়েছে।
স্বপন – তবে দেখো দীপ্তি, তুমি আর লেখা বৌদি যা ভাবো নতুন বৌদিকে নিয়ে সেটা ঠিক নয়
দীপ্তি – না না দিদি খুব ভাল। কিন্তু...
স্বপন – কিন্তু কি ?
দীপ্তি – আমাদের ভয় লাগে, ওইরকম কলেজের প্রোফেসরের মত থাকে, ঘরের দিদি বলে মনে হয় না।
নীহারিকা – যে ভাবেই থাক, তোমাদের জন্যে তো চিন্তা করে
দীপ্তি – সেটা কাল রাতে বুঝতে পারলাম
স্বপন – সেটা আমি প্রথম দিনই বুঝেছি আর তোমাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি।
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!  Sad
Posts: 6,542
Threads: 21
Likes Received: 7,064 in 3,717 posts
Likes Given: 12,099
Joined: Feb 2020
Reputation:
240
•
Posts: 765
Threads: 29
Likes Received: 1,595 in 627 posts
Likes Given: 134
Joined: Dec 2019
Reputation:
98
(#১০)
সোমবারে মানসী আর ভাস্করের দেখা হলে মানসী সব বলে ভাস্করকে। আরও বলে যে ওর মনে হচ্ছে ওর নতুন বৌদি আসাতে ওদের বিয়ে করতে আর কোন অসুবিধা হবে না। ভাস্কর মানসীর হাত ধরে বসে থাকে।
অনেকক্ষণ বসে থেকে ভাস্কর বলে যে ও আর অপেক্ষা করতে পারছে না।
মানসী – চলো তবে কালকেই বিয়ে করে ফেলি
ভাস্কর – তোমার দাদা মেনে নেবে ?
মানসী – দাদা মেনে নেওয়ার আগে অন্য কথা আছে ?
ভাস্কর – কি কথা ?
মানসী – আমরা দুজনে কি বিয়ে করতে প্রস্তুত আছি ?
ভাস্কর – আমারও ভয় লাগে। আর একটা কথা তোমাকে আগে বলিনি সেটা বলতে চাই।
মানসী – কি বল ?
ভাস্কর – আমি তোমাকে বিয়ে করলেও আমার বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবো না।
মানসী – কেন ? সে আবার কি কথা ?
ভাস্কর – সেটা আরেকটা সমস্যা
মানসী – কি সমস্যা সেটা বল
ভাস্কর – আমি ওই সমস্যা তোমাকে কি করে বলি সেটা ভেবে পাচ্ছি না।
ভাস্কর – ভীষণ লজ্জার ব্যাপার
মানসী – যতই লজ্জার কিছু হল একদিন না একদিন তো জানবোই। তাই আজই বলে ফেল।
ভাস্কর – ভুদেব কাকু
মানসী – সে আবার কে ?
ভাস্কর – ভুদেব কাকু বাবার বন্ধু ছিল। আমার বাবা বেঁচে থাকতেই সেই কাকুর সাথে আমার মায়ের একটা সম্পর্ক ছিল
মানসী – তোমার বাবা জানতেন ?
ভাস্কর – মনে হয় জানতেন, কিন্তু কোন কারনে কিছু বলতেন না বা বলতে পারতেন না
মানসী – তাতে এখন কি হয়েছে ?
ভাস্কর – ওই ভুদেব কাকু এখন রোজ রাতে এসে আমার মায়ের সাথে থাকে
মানসী – ওনার বিয়ে হয় নি ?
ভাস্কর – অনের বৌ অনেক আগেই ওনাকে ছেড়ে চলে গেছে। আমি তখন দুবাই থাকতাম। তাই সেসব ঠিক জানি না
মানসী – তোমার মাকে জিজ্ঞাসা করো নি ?
ভাস্কর – মা মানুষের সব থেকে শ্রদ্ধার জায়গা। আমার ইচ্ছা করে না মায়ের সাথে এইসব কথা বলতে।
মানসী – তোমার মা তোমার অযত্ন করেছে কখনও ?
ভাস্কর – না না মা আমাকে খুব ভালবাসে
মানসী – তবে আর অসুবিধা কোথায়
ভাস্কর – আমার ওই ভুদেব শুয়োরের বাচ্চাটাকে পছন্দ নয়
মানসী – বাবা মায়ের বন্ধুর সম্বন্ধে এইভাবে কথা বলতে নেই সোনা
ভাস্কর – সেই জন্যেই তো কিছু বলি না। মাও ওনার সাথে একটু শান্তিতে থাকে। তবে...
মানসী – তবে কি ?
ভাস্কর – ভুদেব কাকুর অন্য মেয়ে দেখলেই প্রেম জেগে ওঠে। উনি যেখানে থাকবেন সেখানে আমি তোমাকে নিয়ে যাবো না।
মানসী – আমাকে কেউ কিছু করতে পারবে না
ভাস্কর – সে পারুক আর নাই পারুক আমি তোমাকে বিয়ে করে ওখানে নিয়ে যাবো না।
মানসী – তবে আমরা বিয়ে করে থাকবো কোথায়
ভাস্কর – সেটাই তো সমস্যা
ওই চায়ের দোকানের মাসী ওদের সব কথাই শোনেন। মানসী বা ভাস্করও ওনার সামনে কিছু লুকায় না। তবে সাধারণত মাসী ওদের মধ্যে কোন কথা বলে না। সেদিন মাসী চুপ থাকে না।
মাসী – তোমাদের সমস্যার একটা সমাধান আছে আমার কাছে।
মাসী – দেখো বাবা আমি একা একা থাকি। আমার একটা ঘর খালিই পড়ে আছে। তোমরা ওখানে এসে থাকো।
মানসী – না না মাসী তা হয় না
মাসী – কেন মা, আমি তোমাদের কেউ না বলে আমার বাড়িতে থাকবে না ?
মানসী – না মাসী তা নয়, তবে...
মাসী – তবে কি ? তুমি কি ভাবছ আমি তোমাদের টাকা আছে শুনে থাকতে দিতে চাইছি ?
মানসী – ছি ছি মাসী সেইরকম ভাববো কেন !
মাসী – দেখো আমারও তো বয়েস হল, একা থাকি। একটু ভয় ভয় লাগে।
ভাস্কর – আপনার ছেলে এলে কোথায় থাকবে ?
মাসী – আমার ওই ঘর ছেলে বৌয়ের জন্যেই তোমার মেসোমশায় বানিয়েছিলেন। কিন্তু সেতো গত দশ বছরে একবারও আসেনি।
ভাস্কর – ভাড়া দিয়ে দেন না কেন ?
মাসী – একই ঘরের মধ্যে অচেনা কাউকে ভাড়া দিতে সাহস হয় না
মানসী – আমরাও তো অচেনা
মাসী – তোমরা অচেনা কেন হবে ? এতদিন ধরে দেখছি। মানুষ চিনতে সব সময় ভুল হয় না।
মানসী – তাও কেমন কেমন লাগছে। তবে মাসী ভাড়া নিতে হবে।
মাসী – দেখো ছেলে বৌয়ের জন্যে ঘর বানিয়েছিলাম। ওরা তো থাকল না, মেয়ে জামাইই না হয় থাকবে। আর মেয়ের কাছ থেকে কেউ ভাড়া নেয় নাকি !
মানসী আর ভাস্কর কি বলবে ভেবে পায় না। এই পৃথিবীতে যাদের ওরা নিজের বলে জানত তাদের প্রায় কারো কাছ থেকেই কোন সহায়তা পায়নি। আর যাদের কে চেনে না বা জানে না তাদের কাছ থেকেই অযাচিত ভাবে সাহায্য পেয়ে যাচ্ছে। ভাস্করের মুখ খুশীতে ভরে ওঠে। মানসী মেয়ে, আর মেয়েদের সুখে কেঁদে ফেলাটাই নিয়ম। তাই ও কেঁদে ফেলে আর মাসীকে জড়িয়ে ধরে।
মাসী – দেখো এই সংসারে সবাই সুখে থাকতে চায়। আমি আর তোমার মেসোমশায় ছেলেকে নিয়ে সুখেই ছিলাম। অনেক স্বপ্নও দেখেছিলাম। কিন্তু ছেলে বড় হয়ে নিজের সুখ বেশী করে দেখল, বাবা মায়ের সুখের কথা একটুও ভাবল না।
মানসী – আমরা থাকলে তোমার সুখ কেন হবে ?
মাসী – একা থাকলে পান্তা ভাতই খাই বা রাজভোগ খাই, সুখ আসে না। তোমরা সাথে থাকলে সেই সুখ পাবো।
মানসী – ঠিক আছে আমরা বিয়ে করে মাসী তোমার কাছেই আসবো।
মাসী – তোমরা কাল থেকে আমার দোকানে দেখা না করে, আমার বাড়িতে বসে গল্প করো।
মানসী – যাঃ তাই হয় নাকি, পাড়ার কে কি বলবে ?
মাসী – পাড়ার লোকে কি বলল তা নিয়ে তোমাদের চিন্তা করতে হবে না। তোমার পেছনে লোকে কি বলে সেটা তোমার সমস্যা হওয়া উচিত নয়। তোমরা ঠিক থাকলে বা পাপ না করলে লোকের কোথায় কি আসে যায় !
মাসী ওদেরকে নিয়ে গিয়ে বাড়ি দেখিয়ে দেয়। বেশ ছোট খাট সুন্দর দুটো ঘর। মাসী একা আর বয়েসের জন্যে ঠিক মত পরিস্কার করতে পারেন না। মাসী ঘরের একটা চাবি ভাস্করকে দিয়ে দেন।
মানসী – আমাকে মেয়ে বললে কিন্তু চাবি দিলে ওকে ?
মাসী – তোমাকে যেমন মেয়ে বলেছি, ভাস্কর কেও ছেলের মত ভাবছি।
ভাস্কর – তোমার ইচ্ছা হলে চাবি তুমি রাখ
মানসী – না রে বাবা, আমি এমনি বলছি। চাবি তুমিই রাখ। পারলে সময় করে এসে সব পরিস্কার করে রেখ।
ভাস্কর – আমি পরিস্কার করবো আর তুমি হাওয়া খাবে ?
মানসী – তুমি পরিস্কার করবে আর আমি সাজাবো। দুজনে মিলে আমাদের সুখ আর মাসীর সুখ বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করবো।
মাসী – আজ থেকেই আমি আর একা নই মা। আমি খুব সুখী।
পরের দিন থেকে ভাস্কর রোজ বিকালের দিকে এসে ঘরের সব কিছু পরিস্কার করে। মানসী সব সময় পার্লার ছেড়ে আসতে পারে না। তাও ওদের আগেকার মত সপ্তাহে তিনদিন আসে। ভাস্করের সাথে প্রেম করে আর সংসারের স্বপ্ন দেখে। ভাস্কর প্রথম দিনই বলে দেয় যে ওরা ওই ঘরে একা থাকলেও, যতদিন না বিয়ে হচ্ছে চুমু খাওয়া ছাড়া কিছু করবে না।
ষষ্ঠ পরিচ্ছদ সমাপ্ত
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!  Sad
Posts: 765
Threads: 29
Likes Received: 1,595 in 627 posts
Likes Given: 134
Joined: Dec 2019
Reputation:
98
সপ্তম পরিচ্ছদ – এই আমাদের পৃথিবী
(#০১)
কিছুদিন পরে মানসী আর ভাস্কর স্বপনের বাড়ি যায়। কিছুক্ষন গল্প করে। মাসীর বাড়ির কথা বলে। স্বপন আর নীহারিকা দুজনেই খুব খুশী হয়।
মানসী – স্বপন আমি অনেকদিন একটা কথা শুনে এসেছি
স্বপন – কি ?
মানসী – অভাগা যেদিকে চায়, সাগর শুকায়ে যায়
স্বপন – তাতে কি হল
মানসী – আমি এতদিন ভাবতাম আমিও অভাগা আর যেদিকেই যাই না কেন, কোন সমাধান পাই না।
নীহারিকা – স্বপন কে তো অনেকদিন আগেই পেয়েছ।
মানসী - আর স্বপন তো আমার মরুদ্যান। বাকি সব দিকে ধু ধু বালি দেখে এসেছি।
স্বপন – আজ কি আলাদা দেখলে ?
মানসী – আজ দেখছি ওই কথাটা ঠিক নয়। কোন না কোন দিকে জল ঠিক পাওয়া যায়।
স্বপন – আসলে কি জানো এতদিন তুমি আর ভাস্কর মরুভুমির মাঝে দাঁড়িয়ে সমুদ্র খুঁজেছ। তাই শুধু দু একটা মরুদ্যান খুঁজে পেয়েছ। জল পেতে হলে তোমাকে মরুভুমির থেকে বাইরে আসতে হবে সেটা তোমরা ঠিক বোঝো নি।
ভাস্কর – তবে আজ কি করে আমরা মরুভুমি থেকে বেরিয়ে আসলাম !
স্বপন – তোমরা দুজনেই একটা অদৃশ্য লক্ষন রেখার মাঝে আটকে ছিলে। আজ দুজনেই সেই গণ্ডি অগ্রাহ্য করে বেরিয়ে এসেছ। ইংরাজিতে একটা কথা আছে – You have to come out of the box. তোমরা এতদিন সেই বাক্সের ভেতরে বসে জীবন খুঁজেছ।
মানসী – তবে কি আমরা কোন সময়েই কোন গণ্ডির মধ্যে থাকবো না ?
স্বপন – দেখো নিষেধের সীমারেখা বা শৃঙ্খলার নিয়ম আর virtual বা কাল্পনিক লক্ষন রেখা একটা ভিত্তিহীন বাধা। যে সীতার মত অবলা নারী – তার পক্ষে সেই গণ্ডি পার হওয়া সম্ভব নয় বা উচিতও নয়। কিন্তু তুমি তো সেই আগেকার দিনের ‘অবলা নারী’ নও।
নীহারিকা – কিন্তু বাড়ির লোক আমাদের সেই ভাবেই দেখতে চায়।
স্বপন – আমাদের সেই বাধা শুরুতেই ভেঙ্গে দিতে হবে
ভাস্কর – এখন কি করবো আমরা ?
স্বপন – মান্না দের সেই গানটা মনে করো – “তুমি আর আমি আর আমাদের সন্তান, এই আমাদের পৃথিবী, তুমি সুর আমি কথা, মিলে মিসে হয় গান, এই আমাদের পৃথিবী।”
মানসী – মনে করলাম, তারপর ?
স্বপন – এবার তোমাদের পৃথিবী বানাতে লেগে পড়ো।
মানসী – তুমি আর আমি না হয় হল, সন্তান কোথায় পাবো ?
স্বপন – তোমরা তোমাদের পৃথিবী বানাও, আমি সন্তানের ব্যবস্থা করে দেবো ।
নীহারিকা – কি করে করবে ?
স্বপন – তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। সময় হলে ঠিক জানতে পারবে।
নীহারিকা – আমার বাবা মাঝে মাঝে তোমায় ভীষণ ভয় করে।
ওরা চারজনে মিলে অনেকক্ষণ আলোচনা করে। প্রথমেই বিয়ের তারিখ ঠিক করে।
মানসী – আমার বিয়ের তারিখ আমি ঠিক করবো !!??
স্বপন – তবে কে ঠিক করবে
মানসী – একবার দাদার সাথে কথা বলবো না ?
নীহারিকা –এই মেয়েটা সত্যি কোনদিন মানুষ হবে না !
স্বপন – তোমার দাদা তোমার বিয়ে দিতে চায় ?
মানসী – মনে হয় না
স্বপন – তোমার দাদা ভাস্কর কে পছন্দ করে ?
মানসী – একদম না
স্বপন – তোমার দাদাকে ভাস্করের সাথে বিয়ের কথা বললে দাদা রাজী হবে ?
মানসী – মনে হয় না
স্বপন – তবে নিজের রাস্তা নিজে বানাও। অন্যের বানানো রাস্তায় হাঁটার স্বপ্ন দেখো না।
ওদের বিয়ের তারিখ ঠিক হয় ২০১২ সালের ২২-শে এপ্রিল, রবিবার। আর দেড় মাস মত বাকি।
মানসী – কাকে কাকে নিমন্ত্রণ করতে হবে ?
স্বপন – একদম কাছের মানুষদের
মানসী – আর প্যান্ডেল ?
স্বপন – তুমি কি প্যান্ডেল করবে ?
মানসী – প্যান্ডেল ছাড়া বিয়ে কোথায় করবো ?
নীহারিকা – আমার বোনের যে ভাবে বিয়ে হয়েছে, ঠিক সেই ভাবে।
অপ্রাসঙ্গিক হলেও এখানে বলে রাখি স্বপন নীহারিকার বোনের বিয়ে একজন বাঙালি খ্রিস্টান ছেলের সাথে দিয়েছে। আর ওর বিয়ে রেজিস্ট্রি করে একটা হোটেলে হয়েছিল। স্বপন সেই রেজিস্ট্রার কে চিনতো, তাই ও বলে বিয়ের সব ব্যবস্থা ওই করবে।
মানসী – জানো আমার স্বপ্ন ছিল সুন্দর প্যান্ডেল করে, অনেক আলো জ্বালিয়ে, কয়েকশো লোকের মাঝে আমি হালকা লাল বেনারসি পরে ছাদনা তলায় বিয়ে করবো।
স্বপন শুনে একটু চুপ করে থাকে। তারপর মানসীর হাত দুটো নিজের বুকের মধ্যে চেপে ধরে কেঁদে ফেলে।
নীহারিকা – কি হল কাঁদছ কেন ?
স্বপন – আমি আমার সব থেকে প্রিয় বন্ধুর এই স্বপ্ন পুরন করতে পারবো না।
ভাস্কর হতভম্ব হয়ে যায়। মানসীও একটু অপ্রস্তুত হয়ে পরে। একটু সামলিয়ে নিয়ে ও স্বপনের হাত ছাড়িয়ে ওর মাথায় হাত রাখে।
মানসী – তুমি আমার বিয়ে দিচ্ছ এই অনেক বেশী। যে ভাবে সম্ভব সেই ভাবেই বিয়ে দাও। আমি তাতেই খুশী থাকবো। তুমি ছাড়া বাকি সবাই সহানুভুতি জানায়, কেউ এগিয়ে আসে না।
স্বপন – তবু আমি তোমার স্বপ্নের কথা মনে রাখবো।
ভাস্কর – আমি আমার মাকে জানিয়ে দিয়েছি আমার বিয়ের কথা।
মানসী – তাই ! শুনে মা কি বললেন ?
ভাস্কর – মা খুশিই হল। বলল যে উনি তো বিয়ে দিতে পারেন নি। তাই আমি যাকে পছন্দ করে বিয়ে করবো তাতে কোন আপত্তি নেই।
স্বপন – খুব ভাল কথা
ভাস্কর – মায়ের শুধু একটা ইচ্ছে আছে
মানসী – কি ?
ভাস্কর – আমরা যেন বিয়ে করে একবার বাড়ি যাই, মা তোমাকে বরন করবে। তারপর আমরা আমাদের যেখানে ভাল লাগে সেখানে গিয়ে থাকবো।
স্বপন – আমার মনে হয় মানসী বিয়ের পরে তিন রাত্রি তোমার বাড়ি থাকবে। তুমি মাকে বলে রাখবে সেই তিনদিন যেন তোমার সেই ভুদেব কাকু না আসেন।
ভাস্কর – সেটা খুব ভাল। আমি মা কে বলে দেখবো।
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!  Sad
Posts: 765
Threads: 29
Likes Received: 1,595 in 627 posts
Likes Given: 134
Joined: Dec 2019
Reputation:
98
(#০২)
তারপর ঠিক হয় ভাস্কর ওর বাড়ি থেকে খাট আর টেবিল চেয়ার নিয়ে আসতে পারবে। বাকি জিনিস পত্র মানসী কিনবে। আর এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই সব রেডি করে ফেলবে।
এর মধ্যে ভাস্কর খবর নিয়ে জেনেছে মাসীর চায়ের দোকানও মাসীদের কেনা জায়গায় বানানো। মানসী বলে বিয়ের পরে ওখানে একটা ছোট হোটেল চালু করা যায়। স্বপন বলে সেটা করতে গেলে অনেক কিছু লিগ্যাল কাজ করতে হবে। বিয়ের পরে ধীরে সুস্থে বসে সেসব প্ল্যান করা যাবে।
সেই রাতে ভাস্কর নিজের বাড়ি ফিরে যায়। মানসী স্বপনদের বাড়িতেই থেকে যায়। রাত্রে স্বপনের পাশে ঘুমায়।
স্বপন – আজকের পরে তোমার আর আমার সাথে ঘুমানো ঠিক হবে না
মানসী – কেন ?
স্বপন – ভাস্কর এটাকে ভাল ভাবে নাও নিতে পারে।
মানসী – ভাস্কর তোমার আর আমার সম্পর্ক ভাল ভাবেই জানে। আমি যে তোমাকে চুমু খাই সেটাও জানে।
নীহারিকা – ভাস্কর রাগ করে না
মানসী – তুই কি রাগ করিস ?
নীহারিকা – আমি তো স্বপন আর তোকে জানি। আর আমাদের মধ্যে সেক্স তো খোলামেলা।
মানসী – ভাস্কর আর আমার মধ্যে সেক্স নিয়ে কোন কথা হয় নি। কিন্তু ও আমার আর স্বপনের বন্ধুত্ব বেশ ভাল করেই বোঝে।
নীহারিকা – এতদিনে তুই ভাস্করের সাথে কোন সেক্স করিসনি ?
মানসী – আমরা শুধু চুমু খাই।
নীহারিকা – আর ?
মানসী – আর হাত ধরে বসে কথা বলি
নীহারিকা – ভাস্করের নুনু দেখেছিস ?
মানসী – ছি, না না ওইসব করিনি
নীহারিকা – কেন ?
মানসী – আমরা এখনও একে অন্যের শরীর দেখিনি
নীহারিকা – কেন ?
মানসী – আমরা যা দেখার বা করার সব বিয়ের পরে করবো।
স্বপন – খুব ভাল।
এরপর ওরা একসাথে ঘুমিয়ে পড়ে।
এর পরের মাস মানসী, ভাস্কর আর স্বপনের বেশ ব্যস্ততার মধ্যে কেটে যায়। ভাস্কর মাসীর বাড়ি পুরো পরিস্কার করে। আস্তে আস্তে ওর ঘরের যেটুকু ফার্নিচার আনতে পারে নিয়ে আসে। বাকি দু একটা জিনিস মানসীকে কিনতে হয়।
স্বপনের অফিসের অনেক পার্টি বা মিটিং হোটেল কেনিলওয়ারথ – এ হত। সেই জন্যে ওর ওই হোটেলে বেশ জানাশোনা হয়ে গিয়েছিল। স্বপন মানসী আর ভাস্করের বিয়ের আয়োজন ওই হোটেলেই অবিশ্বাস্য রকমের কম খরচে করে। অভিনব বিয়ের কার্ড বানানো হয়। হাতে লেখা কার্ড, তাতে লেখা,
আমরা দুজন আগামী ২২-শে এপ্রিল, রবিবার বিয়ে করছি। সেদিন সন্ধ্যেবেলা হোটেল কেনিলওয়ারথ – এ আমাদের বিয়ের সাক্ষী হিসাবে আসতে অনুরোধ করছি।
ইতি – ভাস্কর ও মানসী।
সব শুদ্ধ আমন্ত্রিতের সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ জন। মানসী ওর বন্ধুর মধ্যে শুধু কস্তূরীকে বলে। ভাস্কর ওর কোন আত্মিয়দের বলে না। শুধু দুজন বন্ধু, ভূষণ বাবু আর ওই দোকানের বাকি কর্মচারীদের বলে। মানসী বিয়ের কার্ড নিয়ে প্রথম যায় শ্রদ্ধা জামাইবাবুর কাছে।
শ্রদ্ধা – এ কি করেছ তুমি !
মানসী – কেন জামাইবাবু ?
শ্রদ্ধা – নিজের বিয়ের কার্ড নিজে লিখেছ ?
মানসী – সব কিছুই তো আমরা দুজনেই করছি
শ্রদ্ধা – বড়দা কিছু করছে না ?
মানসী – দাদা এখনও জানেই না যে আমার বিয়ে
শ্রদ্ধা – কে কে জানে ?
মানসী – স্বপন, নেহা আর দীপ্তি জানে।
শ্রদ্ধা - কেনিলওয়ারথ তো বেশ দামী হোটেল !
মানসী – আমি জানি না, সেসব স্বপন ব্যবস্থা করেছে
শ্রদ্ধা – তোমার সাহস আছে বলতে হবে, বড়দাকে না জানিয়ে সব করছ।
মানসী – দাদা তো এতো বছরে আমার বিয়ে দিল না, তাই নিজে নিজেই সব করতে হচ্ছে।
শ্রদ্ধা – আমার আশীর্বাদ আর শুভেচ্ছা সব সময় তোমার জন্যে আছে।
তারপর কার্ড সৃজা আর মানস কে দেয়। সব শুনে সৃজা খুব খুশী। দীপ্তি আর লেখাকে কার্ড দিলে ওরা দুজনেই বলে যে ওরা কি পর যে কার্ড দিয়ে নিমন্ত্রণ করছে।
মানসী – আমার বিয়ে তো আমি নিজে করছি, দাদারা তো দিচ্ছে না, তাই।
দীপ্তি - লেখা দিদি জানে না কিন্তু আমি তো তোমার সাথেই আছি
লেখা – তুই জানতিস
দীপ্তি – আমি গত দু বছর ধরে জানি। ওর ঘরের সব ফার্নিচার আমার সাথেই কিনেছে
লেখা – তোমার আবার আলাদা ঘর হচ্ছে নাকি ?
মানসী – সব জানাবো সময় হলে।
লেখা – হ্যাঁ বুঝেছি, এই মুখপুড়িটাই তোমার আপন আর আমি তোমার পর।
মানসী – না বৌদি তা নয়। আসলে তুমি ঘরের কাজে থাকো, দীপ্তি আমার সাথে পার্লারে থাকে, তাই ওকে নিয়েই সব কিছু করেছি।
লেখা – কিন্তু আমি কার্ড নেবো না। তুমি যখন বড়দাকে কার্ড দেবে তখন বাকি দুই ভাইকেও দিও।
ভাস্কর যায় স্বপন কে কার্ড দিতে।
ভাস্কর – দাদা, আপনিই সব কিছুর হোতা, তাও আপনাকেই নিমন্ত্রণ করছি।
স্বপন – আমি তোমাদের একটু গাইড করছি শুধু, সব কিছু তো তোমরাই করছ
এরপর মানসী গিয়ে ওর মাকে সব জানায়।
মা – তুই দাদাকে বলিস নি ?
মানসী – দাদা তো ওকে পছন্দই করে না
মা – দাদা যাকে পছন্দ করে না তাকে বিয়ে করার কি দরকার !
মানসী – মা দাদাকি আমার বিয়ে দেবে
মা – সে ঠিক, তুই যা ভাল বুঝিস কর। স্বপন জানে ?
মানসী – স্বপনই তো প্রথম থেকে আছে আমার সাথে
মা – স্বপন সাথে থাকলে কোন চিন্তা নেই। তুই ভাল থাকবি তো ?
মানসী – সেই আশাই তো করছি।
মা – আমার আশীর্বাদ থাকলো, তুই ঠিক সুখী হবি।
মানসী – মা আমি এখনই খুব সুখী।
বিয়ের আগের রবিবার মানে ১৫-ই এপ্রিল সকালে সবাই একসাথে বসলে মানসী গিয়ে বড়দাকে কার্ড দেয়। দীপ্তি আর লেখা ভয়ে ভেতরে আসে না, দরজার বাইরে থেকে উঁকি দিয়ে দেখে। দীপ্তি ফিসফিস করে লেখাকে বলে, “এতদিনে রাঙ্গাদির সাহস হয়েছে”।
বড়দা – কিসের কার্ড !
মানসী – আমার আর ভাস্করের বিয়ের
বড়দা – তুমি বিয়ে করবে ?
মানসী - হ্যাঁ
বড়দা – অনেক বড় হয়ে গেছ তো !
মানসী – দাদা আমার বয়েস ৪৯ হচ্ছে, আর সেটা মনে হয় নিজে সিদ্ধান্ত নেবার জন্যে যথেষ্ট।
বড়দা – কিন্তু ভাস্কর ছাড়া আর কাউকে পেলে না ! আর সব ঠিক করার আগে আমার বা মায়ের অনুমতি নেবার দরকার মনে করলে না !
মানসী – আমি নিজে বিয়ে করছি, তাই তোমার অনুমতি নেবার দরকার আছে বলে মনে করিনি
বড়দা – এরপর কিছু হলে আমি কিছু জানিনা।
ব্রততী – রাঙ্গাদিদি তো তোমাকে কিছু জানতে বলে নি
বড়দা – তুমি এর মধ্যে কেন কথা বলছ ?
ব্রততী – তোমার বোন, আমারও কিছু হয়। আমিও রাঙ্গাদিদিকে ভালবাসি।
বড়দা – এই রকম একটা অপদার্থ ছেলেকে বিয়ে করবে, সেটাকে সাপোর্ট করছ। এই তোমার ভালবাসা ?
ব্রততী – তোমার বোঝার কোন দরকার নেই আমার ভালবাসা কিরকম সেটা জানার
বড়দা – কিন্তু এই বিয়েতে আমার মত নেই
মানসী – দাদা আমি তোমার মত জানতে চাইনি, শুধু বিয়েতে এসে আশীর্বাদ করতে বলছি
বড়দা – আমার মত নেই, তাই আসবোও না আর আশীর্বাদ দেবার কোন প্রশ্নই নেই।
মানসী – কিন্তু সামনের রবিবার আমরা বিয়ে করছি।
বড়দা – আমি এই বিয়ে হতে দেবো না
মানসীর বাকি দুই ভাই কিছুই বলে না। বড়দা ওদের জিজ্ঞাসা করে ওদের মত। দুই ভাইই মানসীকে সাপোর্ট করে। ওরা দুজনেই বলে ওরা তো মানসীর ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনদিন চিন্তা করেনি, তাই ওর বর্তমানেও কোন বাধা দেওয়া উচিত নয়।
বড়দা – তোমরা বুঝতে পারছ না
মেজ ভাই – আমার বোঝার দরকারও নেই
ছোট ভাই – আমাদের কি করতে বল ?
বড়দা – আমি জানতে চাই না তোমরা এই বিয়ে সাপোর্ট করছ কি করছ না। তোমরা আমি যা বলবো তাই করবে।
ছোট ভাই – তুমি যা বলবে আমাকে সেটা করতেই হবে।
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!  Sad
•
Posts: 765
Threads: 29
Likes Received: 1,595 in 627 posts
Likes Given: 134
Joined: Dec 2019
Reputation:
98
(#০৩)
২২-শে এপ্রিল হোটেল কেনিলওয়ারথ এর বেসমেন্টে একটা হল ঘর প্রচুর আলো দিয়ে সাজানো হয়েছে। মাঝখানে একটা ছাদনা তলাও বানানো হয়েছে। স্বপন মানসীকে একটা হালকা লাল বেনারসী কিনে দিয়েছে। নীহারিকা ভাস্করকে একটা শেরওয়ানী দিয়েছে। প্রায় সবাই এসে গিয়েছে। লেখা আর দীপ্তি ওদের মা কে নিয়ে এসেছে। সৃজা আর মানব এসেছে। শ্রদ্ধা জামাইবাবুও এসেছে। মাসী আর ভূষণ বাবু এসেছে। নীহারিকা মানসীকে নিয়ে হলে আসে। স্বপন ম্যারেজ রেজিস্ট্রার কে নিয়ে আসে।
স্বপন মানসীকে বলে যে মানসীর বিয়ে করা নিয়ে যে স্বপ্ন ছিল তার যতটা পুরন করা সম্ভব সেটা করার চেষ্টা করেছে। মানসী ধীরে ধীরে বলে, “তুমি আমার সব স্বপ্নই পুরন করে দিয়েছ বন্ধু।”
সবার শুভেচ্ছা আর আশীর্বাদের মধ্যে মানসী আর ভাস্কর ছাদনা তলায় আসে। ভাস্করের হয়ে ভূষণ বাবু আর স্বপনের মেয়ে সাক্ষী হবে। তখন স্বপনের মেয়ের বয়েস ২১ হয়ে গেছে আর ভাস্কর ওর মাস্টারমশায় ছিল। মানসীর হয়ে স্বপন আর মাসী সাক্ষী হবে। হাতে ঠাণ্ডা পানীয় নিয়ে সবাই অপেক্ষা করছে। হাতে মালা নিয়ে নীহারিকা আর কস্তূরী অপেক্ষা করছে সই করার পরে মালা বদল করানোর জন্যে।
এমন সময় চারজন পুলিশ নিয়ে বড়দা হলে ঢোকেন। একজন পুলিশ অফিসার গম্ভীর স্বরে বিয়ে বন্ধ করতে বলে।
স্বপন এগিয়ে এসে বিয়ে বন্ধ করতে বলার কারন জিজ্ঞাসা করে। শ্রদ্ধা জামাইবাবু স্বপনের পাশে দাঁড়ান কিন্তু কোন কথা বলেন না। পুলিশ অফিসার বড়দাকে দেখিয়ে জানান যে উনি অভিযোগ করেছেন যে ওনার বোন মানসীকে কিডন্যাপ করে ভাস্কর জোর কোরে বিয়ে করছে।
স্বপন মানসীকে ডাকে।
স্বপন – ওনাকে জিজ্ঞাসা করুন এই মেয়েটিই ওনার বোন কি না ?
পুলিশ – এই মেয়েটি আপনার বোন ?
বড়দা – হ্যাঁ, এই আমার বোন মানসী
স্বপন – এবার মানসীকে জিজ্ঞাসা করুন ও কার কথায় বিয়ে করতে এসেছে
পুলিশ – আপনি কি নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করছেন না কারো প্ররোচনায় বিয়ে করছেন ?
মানসী – আমি মানসী, ৪৯ বছর বয়েস, সাবালিকা হয়ে গিয়েছি অনেক বছর আগে। আর এই বিয়ে আমি আমার ইচ্ছায় করছি। এই যে এই ভাস্করের সাথে বিয়ে করছি।
স্বপন – এই যে এখানে ওই বড়দার আর মানসীর মা আছেন, ওনাকে জিজ্ঞাসা করুন ওনার মত আছে কিনা এই বিয়েতে।
পুলিশ – একটা ৪৯ বছরের মেয়ের জন্যে তার কোন অভিবাবকের অনুমতি দরকার হয় না।
স্বপন – তাও তো ওর দাদার কথায় আপনারা এসেছেন
পুলিশ – কেউ যদি থানায় গিয়ে কোন রিপোর্ট করে, আমরা আসতেই পারি।
স্বপন – খুব ভাল কথা, এসেই যখন পরেছেন তখন ওই বড়দার মায়ের মত জেনে যান।
মানসীর মা এসে পুলিশ অফিসার কে বলেন যে এই বিয়ে ওনার অনুমতি নিয়েই হচ্ছে আর ওনার বড় ছেলের মাথায় কোন গণ্ডগোল আছে তাই একটা সুস্থ সম্পর্ক নিয়ে এইসব উটকো ঝামেলা করছে।
বড়দা – না না অফিসার ওই ছেলেটি এই সবাইকে বোকা বানাচ্ছে
স্বপন – এই ম্যারেজ রেজিস্ট্রার কে জিজ্ঞাসা করুন, এরা কবে বিবাহের নোটিশ দিয়েছেন
রেজিস্ট্রার – অফিসার, এরা ৩০ দিনেরও বেশী আগে নোটিশ দিয়েছে আর সেই সুবাদে ৩০ দিন আগের আনন্দবাজারে বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়েছে। ওনার যদি আপত্তি থাকতো ওনার সেই বিজ্ঞাপনের বিপক্ষে আবেদন করা উচিত ছিল।
অফিসার – আমি দুঃখিত আপনাদের এই শুভ অনুষ্ঠানে বাধা দেবার জন্যে। আপনারা বিয়ের কাজ চালু করতে পারেন।
বড়দা – আপনারা বুঝতে পারছেন না কত বড় সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে মেয়েটার।
অফিসার – আপনি তো আচ্ছা লোক মশায় ! বোনকে ৪৯ বছর বয়েস পর্যন্ত বিয়ে না দিয়ে ঘরে রেখে দিয়েছিলেন কিসের ধান্দায় কে জানে। আপনাকে দেখে তো ভদ্রলোক বলেই মনে হয়। কিন্তু আপনার মনে এইরকম নোংরা উদ্দেশ্য কেন ! আর যদি বেশী কিছু বলেন তখন আমরা আপনাকে পুলিশকে ভুল তথ্য দেবার অপরাধে গ্রেপ্তার করবো।
ততক্ষনে হোটেলের ম্যানেজার এসে গিয়েছেন। উনিও বড়দাকে বেশ কড়া করে তক্ষুনি চলে যেতে বলেন, না হলে ওনাদের মত হোটেলে অকারণে পুলিশ আনার জন্যে মানহানির মামলা করবেন, আর তার ক্ষতি পুরন ১০ লক্ষ্য টাকার কম হবে না।
দশ লক্ষ টাকার কথা শুনেই বড়দা কারো সাথে কোন কথা না বলে পালিয়ে যান। পুলিশ অফিসারও সবার কাছে আর একবার ক্ষমা চেয়ে ওনার দল নিয়ে চলে যান। ওরা চলে গেলে স্বপন সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করে। আর ওই রাতে বড়দার কাজ নিয়ে কোন আলোচনা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করে।
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!  Sad
Posts: 765
Threads: 29
Likes Received: 1,595 in 627 posts
Likes Given: 134
Joined: Dec 2019
Reputation:
98
(#০৪)
এরপর প্ল্যান মতই বিয়ে হয়। প্রথমে রেজিস্ট্রার মানসী আর ভাস্করকে দিয়ে শপথ গ্রহন করান। তারপর বাকি সবাইকে দিয়ে সই করান। স্বপন জিজ্ঞাসা করে যে শুধু চার জনের সই থাকলেই তো হয়। রেজিস্ট্রার বলেন যেহেতু ওই দাদা কোন ঝামেলা করতে পারে তাই এতো লোকের সই থাকলে আর কোন আইনি সমস্যা থাকবে না।
এরপর ছাদনা তলায় দাঁড়িয়ে দুজনে শুভদৃষ্টি করে আর মালা বদল করে আর মাঝখানে ছোট্ট আগুন জ্বালিয়ে তার চারপাশে একে অন্যের হাত ধরে সাতবার ঘোরে। বাকি সবাই চারপাশ থেকে ওদের ওপর ফুল ছড়িয়ে দেয়। মিউজিক সিস্টেমে “মালা বদল হবে এই রাতে” গানটাও বাজান হয়। মানসী আর ভাস্কর এসে মাকে প্রনাম করে। মাসী আর ভূষণ বাবুকেও দুজনেই প্রনাম করে।
তারপর মানসী এসে স্বপনকে জড়িয়ে ধরে। কান্না ভরা গলায় বলে, “তোমার জন্যে আমি এতদিনে বিয়ে করতে পারলাম।”
স্বপন – আমি খুব খুশী হয়েছি আজকে তোমায় দেখে।
দীপ্তি – আজ সত্যি সত্যি রাঙ্গাদিদি বড় হয়ে গেছে। আমরা ভাবতেই পারিনা যে রাঙ্গাদি এই ভাবে কথা বলবে।
ভাস্কর – আমিও স্বপনদা আর বাকি সবার কাছে কৃতজ্ঞ।
শ্রদ্ধা জামাইবাবু – তোমাদের কাউকে করো ওপর কৃতজ্ঞ থাকতে হবে না। আমরা সবাই খুশী। আমাদের সবার শুভেচ্ছা আর বড়দের আশীর্বাদ তোমাদের সাথে আছে। তোমরা সুখী হও।
এরপর রাত্রের খাবার খেয়ে যে যার বাড়ি ফিরে যায়। স্বপন আর নিহারিকা, মানসী আর ভাস্করকে নিয়ে ভাস্করের বাড়ি পৌঁছে দেয়। ভাস্করের মা মানসীকে বরণ করেন। উনি খুশী না দুঃখিত সেটা ওনার মুখ দেখে বোঝা যায় না। স্বপন বোঝে ভাস্কর আর ওর মায়ের মধ্যে কিছু একটা সমস্যা আছে। কিন্তু সেই সময় কিছু বলে না।
স্বপন আর নিহারিকা যাবার সময় মানসী বলে, “আমার স্বপ্নের থেকেও সুন্দর ভাবে আমাদের বিয়ে হল।”
পরদিন সকালে বড়দা ওখানকার দুই পার্টি অফিসেই যান আর ওনার বোনের বিয়ে নিয়ে পার্টি থেকে কিছু করানোর চেষ্টা করতে। যেহেতু বড়দা ওখানকার ব্যবসায়ী সমিতি আর অন্য কিছু সংস্থার সাথে জড়িত ছিলেন তাই দুই পার্টিতেই ওনার অনেক জানাশোনা। কিন্তু দুই পার্টিই পরিস্কার বলে দেয় ওই বয়েসের ছেলে মেয়ে নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করলে কোন পার্টি বা কোন আইন তাতে বাধা দিতে পারে না। আমার মনে হয় এরপর উনি এলাকার কিছু “দাদা” টাইপের লোকের সাথেও কথা বলেছিলেন, কিন্তু সেখানেও কিছু করতে পারেন নি।
ওনার আপত্তির একটাই কারন ছিল আর সেই কারন হল মানসীর টাকা আর পার্লার। মানসী যদি বিয়ে না করে বাড়িতেই থাকতো তবে কোন না কোনদিন বড়দা ওর কাছ থেকে টাকা গুলো নিয়ে নিতেন। আর বিয়ের পরে উনি ওই টাকায় কোন নজর দিতেই পারবেন না সেটাই ওনার কষ্টের প্রধান কারন।
বুধবার সকালে সৃজা আর দীপ্তি মানসীর বেসির ভাগ জামা কাপড় আর জিনিস পত্র নিয়ে যায় মাসীর বাড়িতে।
বড়দা – এইসব নিয়ে কোথায় যাচ্ছ
সৃজা – রাঙ্গাপির জিনিস রাঙ্গাপিকে দিতে যাচ্ছি
বড়দা – কে বলেছে তোমাদের এই কাজ করতে ?
সৃজা – কেউ বলেনি। আমি নিজের ইচ্ছায় করছি
দীপ্তি – এই সব রাঙ্গাদির জিনিস, তাই ওর কাছেই থাকা উচিত
বড়দা – তোমারও খুব সাহস বেরে গেছে দেখছি, আমার মুখের ওপর কথা বলছ
সৃজা – কেউ তোমার মুখের ওপর কথা বলছে না। আমি ভেবে পাচ্ছি না তুমি কেন এই ঝামেলা করছ
ব্রততী – আমি তোমাকে আগেও বলেছি এই সব মেনে নিতে। তোমার জন্যে আমি ওর বিয়েতে গেলাম না। তুমি ভাই দুটোকেও যেতে দিলে না। আর কি চাও তুমি ?
বড়দা – আমি কি চাই সেটা তুমি বা তোমরা বুঝবে না।
ব্রততী – আর কেউ বুঝুক বা না বুঝুক আমি সব বুঝতে পারছি। আর তুমি যদি নিজের সন্মান রাখতে চাও সে নিয়ে কোন কথা বল না।
সৃজা আর দীপ্তি আর কোন কথা না বলে মাসীর বাড়ি চলে যায়। দুপুরের পরে নিহারিকা ওদের দুজনের সাথে গিয়ে মানসীর নতুন ঘর ফুল দিয়ে সাজিয়ে দেয়। মাসী খুব খুশী। মাসীর মনে আনন্দের খই ফুটছে। যেন ঘরে নিজের মেয়ে জামাই আসবে। আমরা আমাদের নিজের লোকজনের কাছ থেকে অনেক কিছু আশা করি। যখন তাদের থেকে কিছু পাই না তখন দুঃখ হয়। আর অজানা অচেনা কারো থেকে যদি একটুও কিছু পাই আমাদের খুব বেশী আনন্দ হয়, কারন সেই খুশী অযাচিত ও অপ্রত্যাশিত।
মাসীর কাছেও এই মানসী আর ভাস্কর এক বছর আগে কেউ ছিল না। মাসী মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিলে জীবনের বাকি কটা দিন একা একাই কাটাবেন। সেখানে একটা মেয়ে জামাই পেয়ে গিয়েছেন। ওনার তো আনন্দ হবেই। উনি যদি স্বার্থপরের মত ভাবতেন আমার ঘরে ওদের কেন থাকতে দেবো, তবে কিন্তু এই আনন্দ পেতেন না। আমরা সবাই অকারণে জীবনের এই ভাল দিকটা না ভেবে প্রতিপদে স্বার্থপর হয়ে যাই আর নিজেই নিজের দুঃখের কারন হই।
মানসী আর ভাস্করের কাছেও ব্যাপারটা একই রকমের। ওদের কাছেও মাসীর এই সাহায্য অপ্রত্যাশিত। ওরাও ভাবতে পারতো আমাদের খরচে মাসীর ঘর কেন সাজাবো। মানসী স্বপনকেও বলেনি যে মাসীর ঘরকে বাসযোগ্য করতে ওকে কত টাকা খরচ করতে হয়েছে। ও কোন কিছু না ভেবে, নিজের মাসী আর নিজের বাড়ি ভেবেই খরচ করেছে।
স্বপন বুধবার সন্ধ্যে বেলায় গিয়ে মানসী আর ভাস্করকে ওদের নিজের ঘরে নিয়ে আসে। ঘর দেখে দুকনেই কোন কথা বলতে পারে না।
মানসী – তুমি আর কত আনন্দ দেবে আমাকে ?
স্বপন – আমি এর কিছুই করিনি। যা করার এই সৃজা, দীপ্তি আর নিহারিকা করেছে।
সৃজা – না রাঙ্গাপি তোমার জিনিসপত্র আমি আর কাকি এনেছি। ফুল দিয়ে ঘর সাজানোর বুদ্ধি এই পিসের।
মানসী – আমি কি বুঝি না কে কি করতে পারে আমার জন্য।
স্বপন – আমি আমার সবথেকে প্রিয় বন্ধুর জন্যে এটুকু ভাববো না!
ভাস্কর – দাদা হতে পারে আপনি বন্ধুর জন্যে ভেবেছেন। কিন্তু একজন বাবার দায়িত্ব পালন করেছেন।
স্বপন আর নিহারিকা মাসীর হাতে মানসী আর ভাস্করকে দিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। সেই রাত থেকে ওদের দুজনের নতুন জীবন শুরু হয়।
পরিশিষ্ট
আজ দুবছরের একটু বেশী হল ওদের বিয়ে হবার। সুখেই আছে। বড়দা আর কোন ঝামেলা করেনি। বিয়ের কিছুদিন পরে মানসী ভাস্করকে নিয়ে মায়ের সাথে দেখা করতে গিয়েছিল। বড়দা ওদের সাথে কথাও বলেছেন। ভাস্কর কথা বললেও মানসী যতটা সম্ভব দাদাকে এড়িয়ে গিয়েছে।
স্বপন ওদের কে বলেছে একটা ছেলে বা মেয়ে দত্তক নিতে। ওরা একটা কালো মেয়ে দত্তক নিতে চায়। সেই নিয়ে মাদার টেরেসার সংস্থায় কথাও বলেছে। আর দু এক মাসের মধ্যেই মেয়ে পেয়ে যাবে।
মাসী ওনার দোকানে জায়গাটা মানসী আর ভাস্করের নামে লিখে দিয়েছেন। ভাস্কর ওখানে রেস্টুরান্ট বানাচ্ছে। মাসীর ছেলে এখনও আসেনি।
আসুন আমরা সবাই প্রার্থনা করি যেন মানসী আর ভাস্কর বাকি জীবনটা সুখে শান্তিতে কাটিয়ে দিতে পারে।
*********সমাপ্ত*********
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!  Sad
Posts: 6,542
Threads: 21
Likes Received: 7,064 in 3,717 posts
Likes Given: 12,099
Joined: Feb 2020
Reputation:
240
মাঝবয়সে এসে বিয়ে করলো ! এটা একটা দৃষ্টান্ত বটে।
•
|