Thread Rating:
  • 9 Vote(s) - 2.78 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance কাজল নদী Written By Tumi_je_amar
#1
Heart 
শুরু করার আগে



কাজল নদীর জলে,
ভরা ঢেউ ছল ছলে,
প্রদীপ ভাসাও কারে স্মরিয়া।

সোনার বরণী মেয়ে,
বলো কার পথ চেয়ে,
আঁখি দুটি ওঠে জলে ভরিয়া।।


আমাদের এই কাহিনী একটা মেয়েকে নিয়ে। ওর চোখ সব সময় জলে ভর্তি থাকে। বাইরে থেকে সেই জল হয়ত সবসময় দেখা যায় না, কিন্তু মনের অতলে সেই চোখ সব সময় জলেই ভর্তি থাকে। অপরের গানের কথা অনুসারে সে সোনার বরণী মেয়ে নয়। ওর গায়ের রঙ আকদম কষ্টি পাথরের মত কালো। ও কারো কথা স্মরন করে কোন নদী বা খালের জলে প্রদীপ ভাসায় না। ও জীবনে কেউ আসেই নি যে তাকে স্মরন করবে বা প্রদীপ ভাসাবে। সে প্রদীপ ভাসায় মনের নদী তে, কল্পনার প্রদীপ। সেই প্রদীপের আলোয় খুঁজে বেড়ায় জীবনের মানে।


এই মেয়েটিকে আমি ভীষণ কাছের থেকে চিনি। আমি ওর মনের সুখ দুঃখ সবই জানি। আমি নিজে অনেক চেষ্টা করেছিলাম ওর জীবনে প্রদীপ জ্বালাতে। আমি নিজে জ্বালাতে পারিনি কারন ওর সাথে আমার পরিচয় হয় আমার বিয়ের পরে। এই কাহিনী সেই মেয়েটিকে নিয়ে। এই কাহিনির সব চরিত্র হয়ত সত্যি নয়, তথাপি সব ঘটনা গুলো সত্যি। এই কাহিনী দিয়ে আমি বোঝাতে চাই আমাদের কলকাতার বাঙালি সমাজের এক অংশ আজও সেই আশাপূর্ণা দেবীর “সুবর্ণলতা”-এর যুগেই পড়ে আছে। এই কাহিনীতে সেক্স হয়তো সেই ভাবে আসবে না।

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 1 user Likes Kolir kesto's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#2
প্রথম পরিচ্ছদ - উদাসী হাওয়া
(#০১)

মানসী উদাস হয়ে আকাশের চাঁদ দেখছিল। ওর মনে পড়ছিল সেদিন কলেজে ওর সাথে বাকি ছেলে মেয়েরা, যাদের ও বন্ধু বলে জানতো তারা কিভাবে ওর সাথে কথা বলছিল। 

মানসী চার বোন আর তিন ভাইয়ের মধ্যে সব থেকে ছোটো। ছোটো ছেলে বা মেয়েরা সাধারণত সব থেকে আদরের হয়। কিন্তু যে বাড়ীতে আটটা ছেলে মেয়ে সেখানে মনে হয় সেরকম হয় না। তাই মানসী শুধু আরেকটা মেয়ে ছিল। ওর মায়ের বিয়ের হয়েছিল অনেক ছোটো বয়সে। তারপর ২৫ বছর ধরে উনি ওনার স্বামীকে ছেলে মেয়ে উপহার দিয়ে গিয়েছেন। ওর বাবা বাংলাদেশ থেকে এসে শিয়ালদহ অঞ্চলে ৩০ টাকা দিয়ে দুটো ঘর ভাড়া করে থাকতেন, প্রেস আর কাগজের ব্যবসা করতেন। ওনার জীবনে একটাই লক্ষ ছিল কিভাবে পয়সা উপার্জন করা যায়। উনি বড় ছেলের বিয়ে দিয়েছেন এক বিশাল বড়লোকের মেয়ে সুলগ্নার সাথে। সেই বিয়েতে বেলঘরিয়াতে ১০ কাঠা জায়গা সহ বেশ বড় একটা বাড়ি পেয়েছেন। তাই ওনারা সপরিবারে শিয়ালদা ছেড়ে ওই বেলঘড়িয়ার বাড়িতেই থাকেন। মানসী তখন এইটে পড়ত। কলেজে পড়তে পড়তেই ওর আরও দুই দিদির বিয়ে হয়ে যায়। প্রত্যেকের একটা বা দুটো করে বাচ্চাও হয়ে গিয়েছিল। 

এখন মানসী প্রথম বর্ষ বাংলা অনার্সের ছাত্রী। ওর খুব ইচ্ছা ছিল সায়েন্স নিয়ে পড়বে কিন্তু ওর বড়দা রাজী হননি। কারন সায়েন্স পড়ানোর খরচ অনেক বেশী। সুলগ্না বৌদি অনেক বোঝানর চেষ্টা করেছিল কিন্তু বড়দা মেনে নেন নি। দুবছর আগে মানসী মাধ্যমিক ৮২% নম্বর নিয়ে পাস করলে বড়দা আর সুলগ্না বৌদির মধ্যে কথা হয়েছিল।

- তুমি কি চাও না তোমার বোন কিছু করে নিজের পায়ে দাঁড়াক ?

- তুমি কি ভেবেছ সায়েন্স পড়ালেই দাঁড়িয়ে যাবে ?

- তাও সায়েন্স পরলে সুযোগ অনেক বেশী।

- কিন্তু সায়েন্স পড়ালে মাসের খরচ একটু বেশী, টিউশনি দিতে হবে, আবার উচ্চ মাধমিক পাস করলে ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চাইবে। অত খরচ করতে পারব না আমি।

- তোমাকে খরচ করতে হবে না। তোমার বোন আমারও বোন। আমার টাকা থেকে খরচ করে অকে পড়াবো ও যা পড়তে চায়।

- দেখো তোমার বাবা তোমাকে আমার হাতে তুলে দিয়েছেন, তাই তোমার সব দায়িত্ব আমার। সেখানে তোমার টাকা আর আমার টাকার মধ্যে কোন তফাৎ নেই।

- তার মানে কি আমি আমার ইচ্ছা মত কিছুই করতে পারব না ?

- তোমার ইচ্ছাতেই তো সব হয়। শুধু আমার সন্মতি দরকার হয়। এই সবই তো তোমার।

এরপরে সুলগ্না বৌদি আর কিছু বলেনি। সুলগ্না বৌদি বড়লোকের মেয়ে হলেও ওনার মধ্যে কোন অহঙ্কার ছিল না। উনি সবাইকে সাথে নিয়ে চলতেন। ছোট বড় ভেদাভেদ করতেন না। অন্যদিকে বড়দা বাইরে থেকে দেখাতেন উনি সবার সাথে আছেন কিন্তু এটাও বুঝিয়ে দিতেন যে উনি সব থেকে বড়। ওনার বিরুদ্ধে কেউ কিছু করলে উনি সেটা মেনে নেবেন না। উনি সবাইকে এটাও বুঝিয়ে দিতেন যে ওনার অনেক পয়সা (আসলে ওনার বৌয়ের পয়সা)। 

মানসীর বাবা শুধুই ব্যবসা দেখতেন আর চিন্তা করতেন কিভাবে আরও পয়সা বানান যায়। তাই বড়দা যা যা করতেন উনি তাকে সমর্থন করতেন। দুজনের উদ্দেশ্য একই ছিল। মানসীর মা ছিলেন একদম শরত চন্দ্রের উপন্যাসের গ্রামের মায়ের মতন। শুধু উনি শহরে থাকতেন। রান্না করা, সবাইকে খাওয়ানো আর সবার স্বাস্থের কথা ছাড়া আর কিছু চিন্তা করতেন না। মানসীর দুই অবিবাহিত দাদা উচ্চ মাধমিক কোনোরকমে পাশ করার পর ওর বাবার ব্যবসা দেখত। মানসীর অবিবাহিতা দিদিও প্রায় সেইরকম। পড়াশুনাও করেনি, কোন কাজও করে না। নামে মাত্র গান শেখে। 

যাই হোক এতক্ষন মানসীর বাড়ির সবার পরিচয় দেওয়া হল। এবার আমাদের গল্পে ফেরা যাক। সেদিন যখন কলেজে গিয়েছিল মানসী তখন সেই দিন তা অন্য সব দিনের মতই সাধারন একটা দিন ছিল। কিন্তু এখন আর মানসীর তা মনে হচ্ছে না।

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 1 user Likes Kolir kesto's post
Like Reply
#3
(#০২)

মানসী বুদ্ধিমতী মেয়ে। পড়াশুনাতেও ভাল। ঘরের সব কাজই করতে পারে। রান্নাও ভালই করে। সমাজের হিসাবে ওর একটা জায়গাতেই সমস্যা আছে। ওর গায়ের রঙ খুব কালো। বাড়ীতে মায়ের আদরের মেয়ে আর সুলগ্না বৌদির ভালবাসার ননদ হলেও কলেজে কোন বন্ধু নেই। মানসী এতদিন ক্লাসের অনেককেই বন্ধু ভাবত। আজ ওর সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। যেহেতু ও পড়াশুনায় ভাল ছিল প্রায় সব শিক্ষক বা শিক্ষিকারাই ওকে ভাল চোখে দেখতেন। যদিও কেউ ওকে কোন বেশী সুবিধা দিতেন না বা প্রশ্রয় দিতেন না। কিন্তু কেউই ওকে তিরস্কার করার সুযোগ পেতেন না। 

ক্লাসের প্রায় পনেরো জন ছেলে মেয়ে, যাদের মানসী এতদিন বন্ধু বলে জানত, সবসময় ওর সাথেই ঘুরত। সাথে না বলে বলা যায় ওর পেছন পেছন ঘুরত। মানসী যা বলে সব কথা শুনত। একসাথে আড্ডা দিত। ওর সব থেকে কাছের ছিল কস্তূরী, শিলা, অমিত আর অসীম। সেদিন বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস ক্লাসে বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস, গোবিন্দদাস নিয়ে আলচনা হচ্ছিল। গোবিন্দদাসের দুটো কবিতা নিয়ে সেদিন অনেক কথা হয়।

১।
মন্দির বাহির কঠিন কপাট।
চলইতে শঙ্কিল পঙ্কিল বাট।।
তঁহি অতি দূরতর বাদল দোল।
বার কি বারই নীল নিচোল।।
সুন্দরী কৈছে করবি অভিসার।
হরি রহ মানস সুরধুনী পার।।
ঘন ঘন ঝন ঝন বজর নিপাত।
শুনইতে শ্রবণে মরম মরি জাত।।
দশ দিশ দামিনী দহই বিথার।
হেরইতে উচকই লোচনভার।।
ইথে যদি সুন্দরি তেজবি গেহ।
প্রেমক লাগি উপেখবি দেহ।।
গোবিন্দদাস কহ ইথে কি বিচার।
ছুটল বাণ কিয়ে নয়নে নিবার।।

২।
সই , কেমনে ধরিব হিয়া ? 
আমার বঁধুয়া আন বাড়ি যায় 
আমার আঙ্গিনা দিয়া! 
সে বঁধু কালিয়া না চায় ফিরিয়া , 
এমতি করিল কে ? 
আমার অন্তর যেমন করিছে 
তেমনি হউক সে! 
যাহার লাগিয়া সব তেয়াগিনু, 
লোকে অপযশ কয় , 

ওই ক্লাসের পড়ের ক্লাস অফ ছিল। দুপুর বেলা বাইরে ভীষণ রোদ, তাই ছেলে মেয়েরা ওই ক্লাসে বসেই আড্ডা দিচ্ছিল।

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 1 user Likes Kolir kesto's post
Like Reply
#4
(#০৩)

ওই ক্লাসের পড়ের ক্লাস অফ ছিল। দুপুর বেলা বাইরে ভীষণ রোদ, তাই ছেলে মেয়েরা ওই ক্লাসে বসেই আড্ডা দিচ্ছিল। 

কস্তূরী – রাধা আর কৃষ্ণের প্রেম নিয়ে কেন যে এত সাহিত্য বুঝিনা

অমিত – কৃষ্ণ সেইরকম কিছু বলত না, রাধাই ওর ওপর ফিদা হয়ে গিয়েছিলো

শিলা – রাধা কি করে যে ওই কুচকুচে কালো রঙের একটা ছেলেকে পছন্দ করলো কে জানে

অসীম – ছেলেদের কালো ফর্সা হয় না। তোর রাধা যদি কালো হত আর কৃষ্ণ ফর্সা হত তবে ওদের প্রেমও হত না আর এত সাহিত্যও হত না।

মানসী – একটা ছেলে আর একটা মেয়ের মধ্যে বন্ধুত্ব বা ভালবাসা গায়ের রঙ দেখে হয় না

কস্তূরী – কিন্তু আমি বুঝলাম না গোবিন্দদাস শেষ লাইনটা কেন বলেছে

শিলা – কোন লাইনটা ?

কস্তূরী - ছুটল বাণ কিয়ে নয়নে নিবার

মানসী – দেখ ধনুকের থেকে বাণ ছেড়ে দিলে যেমন ফিরে আসে না। টিউবের থেকে টুথপেস্ট বের করার পরে যেমন ফেরত দেওয়া যায় না। সেইরকম রাধা রানীর মন কৃষ্ণের সাথে আটকে গেছে। সেটা আর ছাড়ানো যাবে না। প্রেম একবার হয়ে গেলে আর ফিরে আসা যায় না।

অমিত – বেশ সুন্দর উদাহরন দিয়ে বুঝিয়ে দিলি মাইরি

শিলা – পরের কবিতায় যা লিখেছে সেই রকম হলে আমারও দুঃখ হয়

অসীম – কি রকম ?

শিলা - সই , কেমনে ধরিব হিয়া ? আমার বঁধুয়া আন বাড়ি যায়, আমার আঙ্গিনা দিয়া!

কস্তূরী – তোর সাথে কে করে ওইরকম ?

শিলা – কেন এই অসীম হতচ্ছাড়াটা

কস্তূরী – অসীম তো তোকে ভালবাসে ?

শিলা – বাল ভালবাসে, শুধু আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে ওই পেত্মিটার পেছন পেছন ঘোরে

অমিত – পেত্নি আবার কে ?

শিলা – কেন এই মানসী, কালো পেত্নি

অমিত – ছিঃ তুই এই ভাবিস ! ও আমাদের বন্ধু না ?

শিলা – বন্ধু ! নেহাত মানসী পড়াশুনায় একটু ভাল তা না হলে ওর সাথে আমি জীবনে কথাই বলতাম না।

কস্তূরী – আমিও তো কালো

শিলা – তুই মোটেই ওর মত কালো নয়

অসীম – এই আলোচনা এখন না করলেই নয় ?

শিলা – আমি তোর আর অমিতের মত পেছনে বলি না। যা ভাবি সেটা সামনা সামনিই বলি

কস্তূরী – তাও চুপ কর প্লীজ

মানসী – না না ওকে বলতে দে, ওরা কি ভাবে সেটা জানা দরকার।

শিলা – ওই অসীম তোকে এত পাত্তা দেয় সেটা শুধু তোর কাছ থেকে তোর সুলগ্না বৌদির বানানো নোটস গুলো নেবে বলে।

অসীম – মোটেই না। আমি আর অমিত মানসীকে বন্ধু হিসাবেই দেখি।

শিলা – ওই অমিতের কথা আর বলিস না

অমিত – আমি আবার কি করলাম ?

শিলা – তুই অসীমকে কি বলেছিস আমি জানি

মানসী – কি বলেছে

কস্তূরী – কিচ্ছু বলেনি। ছেড়ে দে ওইসব ফালতু কথা।

মানসী – ছাড়তে হবে না, আমিও শুনি আর জানি আমার বন্ধুরা আমাকে নিয়ে কি ভাবে

শিলা – অমিতের ধান্দা তোর কাছ থেকে নোটস নেওয়া। আর তোকে বন্ধুত্বের জালে ফাঁসিয়ে তোর শরীরটাকে ভোগ করা।

কস্তূরী – ছিঃ

অমিত – মোটেও না

শিলা – একদম মিথ্যা কথা বলবি না। তুই বলিসনি অসীমের কাছে “মানসীর বুক দুটো দেখেছিস? একদম ডাঁসা পেয়ারা, কিন্তু ফজলি আমের সাইজের। পরীক্ষা হয়ে গেলে একদিন ওকে পটিয়ে মস্তি করবো। তারপর ওই কালো ভুতকে আর চেনারও দরকার হবে না”। কেউ বন্ধুদের শরীর দেখে !

কস্তূরী – ছিঃ অমিত ছিঃ, তোকে আমার বন্ধু বলে ভাবতেও গা শিরশির করছে

অমিত – দেখ সেদিন অসিমের সাথে কথায় কথায় বলে ফেলেছিলাম। মানসী বিশ্বাস কর আমি আসলে এইরকম ভাবি না।

মানসী - ছুটল বাণ কিয়ে নয়নে নিবার

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 1 user Likes Kolir kesto's post
Like Reply
#5
(#০৪)

মানসী আর বসে থাকেনি। কাঁদেও নি। একবার কান্না এসেছিলো কিন্তু নিজেই নিজেকে সামলিয়ে নেয়। যাদের ও বন্ধু ভাবতো তারাও যে এত নিচু মনের সেটা ও বুঝতে পারেনি। ও মনে মনে শিলাকে ধন্যবাদ দেয় সবার মুখোস খুলে দেবার জন্য। শিলা হয়তো সুন্দরি বলে অহংকারী। কিন্তু সত্যি কথা বলার সাহস রাখে। অসীম বা অমিতের মত গিরগিটি নয়। ওই ঘটনার পরে মানসী যখন চলে আসছিল, কস্তূরীও ওর সাথে চলে এসেছিলো। কস্তূরী ওকে কিছু বোঝাতে চাইছিল, কিন্তু তখন মানসীর শোনার মত মানসিকতা ছিল না। কস্তূরী নিজে সুন্দরী নয় বা ওর ফিগারও ছেলেদের চোখে আকর্ষণীয় নয় তাই কস্তূরী মানসীর দুঃখ বোঝে। ও সেদিন কস্তূরীকে পরে কথা বলবে বলে একাই বাড়ি ফিরে আসে। এই সন্ধ্যে বেলায় আকাশে চাঁদ কে একা দেখে ও এইসব কথাই ভাবছিল। 

ও ভাবছিল চাঁদ তো কত সুন্দর কিন্তু তবুও এত বড় আকাশে একা। যখন একাদশীতে চাদের আল কম থাকে তখন চাঁদের চারপাশে সব তারারা ভিড় করে থাকে। পূর্ণিমাতে চাঁদের রূপ সম্পূর্ণ বিকশিত হলে কোন তারাই ঈর্ষায় চাঁদের কাছে আসে না। কিন্তু মানসীর ওই চাঁদের মত রূপ নেই। তাই একাদশী বা পূর্ণিমা কখনোই ওর চারপাশে কেউ থাকে না। ওকে সবাই কয়লার মত বাইরে ফেলে রাখে। আগুন জ্বালানোর জন্য ঘোরে নিয়ে আসে। আগুন শেষ হয়ে গেলে ছাই করে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়।

একসময় ভাবছিল কি হবে এই জীবন রেখে কিন্তু ওর মা আর সুলগ্না বৌদির কথা মনে আসে। ভাবে কখনো হয়তো সুলগ্না বৌদির মত মানসিকতার কোন একটা ছেলে ওকে দেখবে আর পছন্দ করবে। মানসী নিজেও নিজের জীবনকে খুব ভালবাসে। আর ও কাপুরুষ নয় যে জীবন থেকে পালিয়ে যাবে। ও ভেবে নেয় ও এই লড়াই চালিয়ে যাবে। ও বোঝে যে ও প্রায় একাই ওর দলে কিন্তু প্রতিজ্ঞা করে যে ও কখনো পিছু হটবে না। ওর “Gone with the wind” সিনেমার স্কারলেটের কথা মনে পড়ে। যেখানে স্কারলেট বলেছিল, “আমি আর ক্ষিদেতে কাঁদবো না”। মানসীও চাঁদের দিকে হাত বাড়িয়ে নিজের মনে প্রতিজ্ঞা করে “আমিও আর কালো বলে ভেঙ্গে পড়বো না”। 

একসময় আকাশের ভাঙ্গা চাঁদ মেঘে ঢেকে যায়। মানসী তাও ছাদেই দাঁড়িয়ে থাকে। ভাবতে থাকে কি ভাবে মেঘের আড়াল থেকে বেড়িয়ে আসবে। 

সুলগ্না বৌদি মানসীকে কোথাও দেখতে না পেয়ে ছাদে চলে আসে। বৌদি জানত যে মানসীর মন খারাপ হলে ও ছাদে এসেই চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকে।

সুলগ্না – আমার রাঙা দিদির কি হয়েছে আজকে ?

মানসীকে ওর বাড়ীতে সবাই রাঙা পিসি, রাঙা মাসি বা রাঙা দিদি বলে ডাকে। তাই ওর বৌদিও ওকে রাঙা দিদি বলে।

মানসী – কিছু হয়নি গো, এমনি চাঁদ দেখছিলাম।

সুলগ্না – আমি জানি আমার এই দিদি কোনদিন চাঁদ দেখতে আসে। কে কি বলেছে তোমাকে ?

মানসী ওর বৌদির কাছে কিছু লুকায়না। সেদিন কলেজের বন্ধুদের সাথে যা যা হয়েছিল সব কথা বলে দেয়।

সুলগ্না – এতেই এত মন খারাপ হয়ে গেল ? কটা ছেলে মেয়ে তোমাকে কিছু উল্টোপাল্টা কথা বলেছে। ওই কথাগুলোই ওদের নীচতার পরিচয় দিয়েছে। তুমি তাতে মন খারাপ কেন করবে ?

মানসী – আমি ওদের কথার জন্য মন খারাপ করছি না

সুলগ্না – তবে মন খারাপ কিসে হল !

মানসী – আমার নিজের ওপর রাগ হচ্ছে। আমি কিভাবে ওদের আমার বন্ধু ভেবেছিলাম। কেন আমি মানুস চিনতে পারিনি !

সুলগ্না – তাতেই বা কি হয়েছে ! তুমি এখনও শিখছ। এইসময় দু একটা ভুল হতে পারে। সেই ভুলের জন্য মন খারাপ না করে সেখার চেষ্টা কর।

মানসী – সেটাই ভাবছিলাম

সুলগ্না – চল এবার খেয়ে নেবে।

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 1 user Likes Kolir kesto's post
Like Reply
#6
(#০৫)

মানসী পরদিন কলেজ যায়। তারপর দিনও যায়। রোজই কলেজ যায়। ও নিজেকে একটুও বদলায় না। মানে নিজের মনে অনেক বদল আনে। তবু ওর তথাকথিত বন্ধুদের সাথে ওর ব্যবহার বদলায় না। ও এখন খোলা মনে বুঝতে চেষ্টা করে কে কে ওকে এক্সপ্লয়েট করছে। আর কে কে ওর সত্যি কারের বন্ধু। কিছু ছেলে মেয়ে কোনদিকেই ছিল না। একমাত্র কস্তূরীকে দেখে ওর মনে হয় শুধুই বন্ধু। একদিন সেই কস্তূরীর সাথে ওর কথা হচ্ছিল।

কস্তূরী – তুই একটুও বদলালি না

মানসী – কিসে বদলাতে বলছিস

কস্তূরী – এই যে যাদের তুই বন্ধু ভাবতিস, ওরা তোকে কি ভাবে সেটা জানার পরেও তুই ওদের সাহায্য করিস 

মানসী – ওরা আমাকে বন্ধুর মত দেখে না, কিন্তু আমিতো ওদের আমার বন্ধুই ভাবি

কস্তূরী – সে আবার হয় নাকি ! বন্ধুত্ব কখনো একতরফা হয় না

মানসী – সে ঠিক। ওরা আমাকে কি ভাবে তাতে আমার কি আসে যায়। আমি আমার মতই ভাববো।

কস্তূরী – অদ্ভুত মেয়ে তুই !

মানসী – কার যেন লেখায় একটা কথা পড়েছিলাম, মনে হয় বিবেকানন্দ বলেছিলেন।

কস্তূরী – কি ?

মানসী – সে উত্তম না বলে তুমি উত্তম কেন হইবে না। 

আরেকদিন ওদের মধ্যে কথা হচ্ছিল।

কস্তূরী – তুই এত কালো বলে তোর খুব দুঃখ না ?

মানসী – আমি কালো বলে আমার কোন দুঃখ নেই

কস্তূরী – এই যে সবাই তোকে কালো বলে নাক সিটকায়, তোর খারাপ লাগে না ?

মানসী – আমি কালো বলে আমার খারাপ লাগে না। বা আমি কালো বলে আমার কোন দুঃখ নেই।

কস্তূরী – তোর একটুও দুঃখ নেই !

মানসী – আমার দুঃখ আমার বন্ধুদের জন্য। ওরা এখনও মানুষ চিনতে পারে না। ওরা জানে না কার কাছ থেকে কি আশা করতে হয়। 

কস্তূরী – আর সবাই এখনও তুচ্ছ গায়ের রঙকে বেশী মর্যাদা দেয় !

প্রথম পরিচ্ছদ সমাপ্ত

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 1 user Likes Kolir kesto's post
Like Reply
#7
দ্বিতীয় পরিচ্ছদ – আলোর ঝলক

(#০১)

এই সময় এক রবিবারে মানসীর আলাপ হয় স্বপনের সাথে। মানসীর খুড়তুতো বোন হল নিহারিকা, ডাক নাম নেহা। স্বপন নেহার বয় ফ্রেন্ড। বয় ফ্রেন্ড মানে বিয়ে একদম ঠিক, তাই দুজনেই দুজনের সব আত্মীয়র বাড়িতেই যায়। নেহা মানসীকে রাঙাদিদি বলে। তাই স্বপনও ওকে রাঙ্গাদিদি বলেই ডাকে। ওর সেই প্রথমবার কোন ছেলেকে দেখে মনে হয় এই ছেলেটা আমার বন্ধু হলে খুব ভাল হত। ঠিক সেই মুহূর্তেই স্বপন বলে,

স্বপন – আমি তোমার বন্ধু হলাম রাঙাদিদি।

মানসী হকচকিয়ে যায়। চট করে কিছু উত্তর দিতে পারে না। 

স্বপন – কি গো দিদি চুপ করে গেলে কেন ? আমাকে বন্ধু হিসাবে পছন্দ হল না ?

মানসী – আমার মত কালো মেয়েকে তোমার মত সুন্দর দেখতে ছেলে কিভাবে বন্ধু করবে ?

স্বপন – কালো ! সেটা আবার কি জিনিস ?

মানসী – কেন আমাকে উপহাস করছ ? তুমি ঠিকই বুঝেছ আমি কি বলছি।

স্বপন – দেখো রাঙাদিদি, আমি কারো গায়ের রঙও দেখিনা বা চেহারাও দেখিনা বন্ধুত্ব করার আগে। আমি শুধু মন দেখি। আর তোমার সাথে কথা বলে বা নিহারিকার কাছে তোমার সম্পর্কে যা শুনেছি তাতে তোমাকে দেখার আগেই বন্ধু করে নিয়েছি। এখন তুমি মেনে নিলেই হল।

মানসী – দিদি আবার বন্ধু হয় নাকি।

স্বপন – দেখো তোমার বয়স আমার সমানই হবে। যদিও সবাই বলে মেয়েদের বয়েস নিয়ে কথা বলতে নেই, আমি সেসব মানি না। কিন্তু নিহারিকা তোমাকে দিদি বলে, তাই আমিও তোমায় দিদি বলছি। কিন্তু আসলে আমরা বন্ধু।

মানসী – ঠিক আছে স্বপন আমরা বন্ধু।

স্বপন হাত বাড়িয়ে দেয়। মানসী একটু ইতস্ততঃ করে ওর হাতে হাত মেলায়। বড় হবার পড়ে এই প্রথম কোন ছেলে ভালবেসে ওর হাতে হাত রাখে। মানসীর শরীর শিউরে ওঠে। স্বপন হাত মিলিয়েই থেমে থাকে না। মানসীকে জড়িয়ে ধরে। মানসীর শরীর অসার হয়ে যায়। ও স্বপনের কোলে শরীর ছেড়ে দেয়। স্বপন একটু ভয় পেয়ে ওকে ধরে পাশের সোফাতে বসিয়ে দেয়। নেহা গিয়ে মানসীর মাথাত হাত বুলিয়ে দেয়।

নেহা – কিরে রাঙা দি কি হল

মানসী – নারে মাথাটা কেমন করে উঠল

নেহা – ও এইরকমই, যে মেয়েকে ভাল লাগবে তাকেই জড়িয়ে ধরে

মানসী – তুই কিছু বলিস না ?

নেহা – না রে ও মনের থেকে একদম পরিস্কার। ও তোকে কোন খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে জড়িয়ে ধরেনি।

মানসী – সেটা আমিও বুঝেছি।

মানসী নিজের মনে বলে আমি স্বপনের আলিঙ্গনের সঠিক মানে বুঝলেও আমার শরীর সেটা বোঝেনি। তারপর উঠে দাঁড়ায় আর স্বপনের হাত ধরে নিজের বুকের মধ্যে চেপে ধরে। 

মানসী – আজ থেকে তোমাকে আমি আমার সব থেকে প্রিয় বন্ধু হিসাবে দেখব।

স্বপন – ওইরকম বেহুঁশ মত হয়ে গেলে কেন ?

মানসী – সেটা আজ থাক। পরে কোনদিন বলব।

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 1 user Likes Kolir kesto's post
Like Reply
#8
(#০২)

মানসী ভাবে একটা ছেলে ওকে কালো বলে নাক শিঁটকালো না আর ও এইরকম মন দিয়ে ফেলল! তারপর ভাবে বোন নিহারিকার ভাগ্য কি ভাল, যে স্বপনের মত ছেলে পেয়েছে। ইস্* যদি ওর ভাগ্যে স্বপন আসতো। একবার একটু হিংসা হয় বোনের জন্য। তারপরেই নিজে নিজেকে তিরস্কার করে। বোনকে ও খুব ভাল বাসে। সেই বোনের বন্ধু যে কিনা বোনকে বিয়ে করবে, তার দিকে চোখ দিচ্ছে। ছিঃ মানসী ছিঃ – আবার নিজেকেই ধিক্কার দেয়। আবার ভাবে আর একবার যদি স্বপন বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরত। কি শান্তি ওর বুকের মধ্যে হারিয়ে যেতে। স্বপনের হাত যখন নিজের দুই বুকে চেপে ধরেছিল ওর মন চাইছিল স্বপন ওর বুক দুটোকে দুমড়ে মুচড়ে দিক। কিন্তু স্বপন এত ভাল ছেলে যে ওইসবের কোন লক্ষণই দেখাল না। স্বপন এখন মা বাবার সাথে কথা বলছে। স্বপন ফেরার সময় ওকে নিজেই জড়িয়ে ধরবে। ওর বুকের মধ্যে নিজের বুক দুটো চেপে ধরবে। স্বপন ভাববে বন্ধু ভেবে জড়িয়ে ধরেছি। বাকি সবাইও তাই ভাববে। ও নিজেও তাই ভাববে। শুধু ওর শরীর অন্য কিছু ভেবে নেবে। বুঝতে পারে নিজের মনে বড় বেশী স্বপন স্বপন করে ফেলছে। তাড়াতাড়ি বৌদির কাছে পালিয়ে যায়।

সুলগ্না – কি হল আমার রাঙা দিদির ?

মানসী – কিছু না

সুলগ্না – নেহার বয় ফ্রেন্ড খুব ভাল ছেলে

মানসী – (লজ্জা লজ্জা মুখ করে) হ্যাঁ খুব ভাল ছেলে

সুলগ্না – তুমি লজ্জা পাচ্ছ কেন ?

মানসী – কই না তো, লজ্জা পাচ্ছি না তো।

বলতে বলতে মানসীর গলা লজ্জা আর কান্না মিশে ধরে যায়।

সুলগ্না – এই রাঙা দিদি কি হল

মানসী আর নিজেকে সামলাতে পারে না। বউদিকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। সুলগ্না একটু ভাবে তারপর বুঝতে পারে মানসীর মন।

সুলগ্না – কিন্তু রাঙা দি স্বপন নেহার বন্ধু, ওর সাথে বিয়ে করবে।

মানসী – হ্যাঁ সেটা জানি

সুলগ্না – কিন্তু ওকে দেখে তোমার মনে কি হল !

মানসী – এই প্রথম কোন ছেলে আমার সাথে এত ভাল ভাবে ব্যবহার করলো।

সুলগ্না – তা ঠিক। কিন্তু তাতে কি হল !

মানসী – স্বপন যখন আমাকে জড়িয়ে ধরল তখন আমার মনে হল আমি স্বর্গে পৌঁছে গিয়েছি। এই ভাবে ভালবেসে কেউ আমাকে ছোঁয় নি।

সুলগ্না – তুমি কি এই একটুতেই স্বপন কে ভালবেসে ফেললে ?

মানসী – সেইরকমই মনে হচ্ছে। যদিও আমি জানি ও নেহার বন্ধু। ও আমাকে ওইরকম কিছু ভাবে নি। কিন্ত ওর আলিঙ্গনে গিয়ে আমার মন জানলেও, শরীর মানতে চায় নি।

সুলগ্না – ও কিছু নয়। এটা সাময়িক ব্যাপার। তুমি ওকে বন্ধু হিসাবেই দেখবে।

মানসী – আমি সেটা বুঝি। তাই তোমার কাছে পালিয়ে এলাম, নিজেকে সামলিয়ে নেবার জন্য।

সুলগ্না – ভগবান তোমার জন্যেও ঠিক এইরকম একটা ছেলে বানিয়ে রেখেছেন। কোন না কোন দিন ঠিক তার খোঁজ পেয়ে যাবে।

মানসী – তোমার আশীর্বাদ থাকলে সব সম্ভব।

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 1 user Likes Kolir kesto's post
Like Reply
#9
#০৩)

স্বপন থাকতো রাঁচিতে। নিহারিকা থাকতো কলকাতায়। সুলগ্না বৌদি স্বপন কে বলে পরের বার কলকাতায় আসলে কাছে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যেতে।

স্বপন – আমার কি সেই ভাগ্য হবে আপনাদের সবাইকে নিয়ে বেড়াতে যাব ?

নিহারিকা – পরের বার স্বপন আসলে আমরা একসাথে দক্ষিণেশ্বর যাব।

সুলগ্না – খুব ভাল হবে। কি মানসী যাবে তো সপনের সাথে দক্ষিণেশ্বরে ?

মানসী – (আস্তে করে) হ্যাঁ যাব

স্বপন – আমার বন্ধু আমার সাথে যেতে চাইবে না সেটা হয় না কি ?

সুলগ্না – তুমি নেহার সামনে ওর দিদিকে নিয়ে ঘুরতে যেতে চাইছ ?

স্বপন – নিহারিকাও তো সাথে থাকবে। আর রাঙা দিদি তো বন্ধু। অনেক সময় বন্ধুর দাবী প্রেয়সীর থেকে বেশী হয়।

সুলগ্না – না না আমাদের নেহার থেকে মানসীকে বেশী ভালবাসতে হবে না।

নিহারিকা – ও যাকে খুশী ভালবাসুক, আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবে না।

সুলগ্না – তোমাদের দেখে খুব ভাল লাগে। আশীর্বাদ করি তোমাদের ভবিষ্যৎ সুখের হোক। 

পরের মাসে স্বপন কলকাতায় আসলে নিহারিকার সাথে বৌদিদের ঘরে যায়। স্বপন যাবার সাথে সাথে সুলগ্না আর মানসী ওর জন্য চা জল এনে গল্প করতে বসে। এমন সময় সেই বিখ্যাত বড়দা আসেন। বড়দা মানে সুলগ্না বৌদির বর। 

বড়দা – কি গল্প হচ্ছে এখানে ?

সুলগ্না – এ হচ্ছে স্বপন, নেহার বন্ধু।

বড়দা – কি খব স্বপন, কেমন আছ।

স্বপন – ভালই আছি বড়দা। 

বড়দা – কত দিন থাকবে এবার ?

স্বপন – কাল রাঁচি ফিরে যাব

বড়দা – তোমাদের বিয়ে করবার প্ল্যান কবে ?

স্বপন – মোটামুটি এক বছর পরে। 

বড়দা – মানসী তুই কি করছিস এখানে ?

সুলগ্না – স্বপন মানসীকেও বন্ধু বানিয়েছে

বড়দা – সে আবার কি করে হয় !

সুল্গনা – সব হয়, তুমি ওইসব বুঝবে না।

স্বপন – বড়দা আপনি এইসব ছোটো খাট ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। আমি নিহারিকাকে বিয়ে করবো। আমি জানি এই বাড়িটাও নিহারিকার বাড়ির মতই। তাই এই বাড়ির সন্মান আমারও দায়িত্বের মধ্যে পরে। রাঙা দিদিকে বন্ধু বলেছি। তাই রাঙা দিদির ভাল মন্দের খেয়াল আমি অতি অবশ্যই রাখব।

বড়দা – না না আমি কিছুই চিন্তা করছি না। ঠিক আছে তোমরা গল্প করো। আমার আবার একটু একটা মিটিঙে যাবার আছেবড়দা চলে যাবার পর সুলগ্না, মানসী আর নেহাকে নিয়ে স্বপন বের হতে যায়। কিন্তু সেই সময় আরেকটা মেয়ে আসে। এসেই হৈচৈ করতে শুরু করে।

সুলগ্না – এই যে স্বপন তোমার আরেক বন্ধু এসে গেছে

স্বপন – কে ইনি ?

শ্রেয়সী – আমি শ্রেয়সী, তুমি কে ?

স্বপন – আমি স্বপন

শ্রেয়সী – সে তো বুঝলাম। কিন্তু এখানে কোন সম্পর্কে এসেছ ?

স্বপন – আমি মানসীর বন্ধু।

শ্রেয়সী – তোমার সাহস তো কম নয়, মানসীর বন্ধু আবার আমাদের বাড়িতেও এসেছ ?

স্বপন – তোমাদের বাড়ি এসেছি, একটু আগে বড়দার সাথে গল্প করেছি আর এখন এদের নিয়ে দক্ষিণেশ্বর বেড়াতে যাচ্ছি। তুমি কি যাবে আমাদের সাথে ?

শ্রেয়সী – তুমি মানসীর বন্ধু, ওকে নিয়েই বেড়াতে যাও। পৃথিবীর সবাইকে নিয়ে যাবার কি দরকার ?

সুলগ্না – শ্রেয়সী তোমার এই সমস্যা, তোমার সবার সাথেই লড়াই করা চাই।

শ্রেয়সী – কেন আমি কি করলাম ?

সুলগ্না – স্বপন আসলে নেহার বন্ধু। স্বপন নেহা কে বিয়ে করবে। এর আগের বার এসে মানসীকে বন্ধু বানিয়েছে। তাই এবার সবাইকে নিয়ে বেড়াতে যাবে।

শ্রেয়সী – তবে আমিও যাব।

স্বপন – এবার কি মনে হচ্ছে আমার সাথে বন্ধুত্ব করা যায় ?

শ্রেয়সী – এখন তো সাথে ঘুরতে যাই। পরে চিন্তা করে দেখব বন্ধুত্ব করা যায় কি না।

স্বপন – তাই হোক।

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 1 user Likes Kolir kesto's post
Like Reply
#10
# ৪

সবাই একসাথে বেরোয়। স্বপন ট্যাক্সি করে যেতে চাইছিল। কিন্তু সুলগ্না বৌদি ট্যাক্সি করে যেতে চান না। 

সুলগ্না – দক্ষিণেশ্বর তো এইটুকু দুর তা আবার ট্যাক্সি করে যাবার কি দরকার !

স্বপন – আমি দুই বান্ধবী, প্রেয়সী আর সবার থেকে আপন বৌদিকে নিয়ে বেড়াতে যাব তাই আবার বাসে ? তা হয় না।

মানসী – না না বাসে করে গেলেই হবে

শ্রেয়সী – স্বপন যখন ট্যাক্সি করে নিয়ে যেতে চাইছে তখন বাসে করে যাবার কোন মানেই হয় না।

নিহারিকা – আমরা ট্যাক্সি করেই যাই

মানসী – শুধু শুধু পয়সা নষ্ট

স্বপন – আমার দুই বন্ধুর জন্য না হয় একটু পয়সা খরচ হল

সবাই ট্যাক্সি করেই যায়। 

এখানে মানসীর দিদি শ্রেয়সীর একটু পরিচয় দেই। শ্রেয়সীও কালো মেয়ে। পড়াশুনা – শ্রেয়সী বলে সেটা আবার কি জিনিস। কোন মানুষ বেঁচে থাকতে পড়াশুনা কেন করবে! বাবার পয়সা আছে, বিয়ে দিয়ে দেবে। হেসে খেলে সিনেমা দেখে এখনকার জীবন কাটিয়ে দেব। বিয়ের পরে দেখা যাবে। ওর ফিগার অভাবনীয় – ৩০-৩০-৩৪। ভগবান ওইরকম একটা মেয়েই বানিয়েছিলেন। তার ওপর শ্রেয়সী ভীষণ স্বার্থপর ছিল। শুধু নিজেরটাই বুঝত। তার উপর শুচিবাই মেয়ে। একটা ভাল গুণ ছিল মানে সবাই সেই গুণকে ভাল বলে। খুব ঠাকুরে ভক্তি। সিনেমা দেখা, ঘুরে বেড়ানোর পরেই ওর প্রধান কাজ ছিল পুজা করা। আর বলত গান শেখে। যেই ওর গান শুনেছে সেই বলেছে ভালই গায় কিন্তু আরও একটু শিখতে হবে।
যাই হোক সবাই মিলে দক্ষিণেশ্বরে যায়। গিয়ে পুজা দেয়। তার পর সবাই গঙ্গার ধারে গিয়ে বসে। এই ঘটনার সময় কাল হল ১৯৮৭ সাল। তখন দক্ষিণেশ্বর এখনকার থেকে অনেক আলাদা ছিল। বিকালে গঙ্গার ধারে এখনকার মত ভিড় হত না। স্বপন সবার জন্য আইসক্রিম কেনে।

শ্রেয়সী – তুমি আমাদের বেড়াতে নিয়ে এসে শুধু আইসক্রিম খাওয়াবে ?

স্বপন – আর কি খাবে বল ?

মানসী – না না আর কিছু খাওয়াতে হবে না। আমরা পুজো দিতে এসেছি, সেটা হয়ে গেছে। এবার বাড়ি চল।

সুলগ্না – কেন রাঙা দিদি স্বপনের সাথে বসে গল্প করতে ভাল লাগছে না ?

শ্রেয়সী – স্বপন তো শুধু নেহার হাত ধরে আছে

সুলগ্না – কারো হাত ধরার অধিকার অর্জন করতে হয়। শুধু শুধু কেউ তোমার হাত ধরবে না।

স্বপন – সত্যি তো আমি আমার বন্ধুদের ছেড়ে শুধু নিহারিকার হাত ধরে আছি।

স্বপন গিয়ে মানসীর হাত ধরতে চায় কিন্তু মানসী লজ্জায় হাত ছারিয়ে দূরে দুরেই থাকে। শ্রেয়সী এসে স্বপনের হাত ধরে। স্বপন এক হাতে নিহারিকার হাত ধরে থাকে আর এক হাত শ্রেয়সী ওর বুকের মধ্যে চেপে রাখে। কিন্তু শ্রেয়সীর পুরো সমতল বুকে হাত রাখলে কোন ছেলের মনেই কোন প্রতিক্রিয়া হয় না। স্বপনেরও হল না। যাই হোক কিছু সময় ওই ভাবে বসার পড়ে শ্রেয়সী আবার বলে খিদে পেয়েছে। 

মানসী – তোর পেটে আছে টা কি ? শুধু খাই খাই !

সুলগ্না – শ্রেয়সী একটু বদলাও নিজেকে

শ্রেয়সী – স্বপনের সাথে আবার ফর্মালিটি করার কি আছে ? ও তো আমাদের বন্ধু বলেছে।

সুলগ্না – ও তোমাকে বন্ধু বলেছে কিন্তু তুমি কি ওকে বন্ধু বলে মেনে নিয়েছ ?

শ্রেয়সী – হ্যাঁ ও আমার বন্ধুই তো

মানসী – তোর ধান্দা শুধু কারো ঘাড় ভেঙ্গে আনন্দ করা

শ্রেয়সী – তাতে খারাপ কি দেখলি ? আমার জন্য তো তোরাও মজা করিস।

নিহারিকা – এই শোনো তুমি সবার জন্য এগরোল নিয়ে এস।

স্বপন – হ্যাঁ নিয়ে আসছি

শ্রেয়সী – চল আমিও যাই তোমার সাথে।

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

Like Reply
#11
# ৫

শ্রেয়সী স্বপনের হাত ওর বুকের মধ্যে ধরে রোল কিনতে যায়।

স্বপন – এই ভাবে আমার হাত ধরেছ সব লোকে কি ভাববে ?

শ্রেয়সী – কেন কি হয়েছে ?

স্বপন – কিছু না

শ্রেয়সী – আমার বন্ধুর হাত আমি কি ভাবে ধরব, সেটা লোকের ভাবার ওপর নির্ভর করে না।

স্বপন – তাও শালীনতা বলে একটা জিনিস আছে

শ্রেয়সী – যাও আমি বুঝতে পাড়ছি। আমার বুক একদম সমান বলে তোমার ভাল লাগছে না। এই যদি আমার জায়গায় মানসী হত ওর বুকে তুমি নিজের ইচ্ছায় হাত রেখে দিতে

স্বপন – দেখো আমি এই ভাবে কথা বলতে বা শুনতে অভ্যস্ত নই। আমি কোন মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব ওর গায়ের রঙ বা বুকের মাপ দেখে করি না। আমার কাছে তুমিও যা, মানসীও তাই।

শ্রেয়সী – সরি বাবা, ভুল হয়ে গেছে। কিন্তু আমার তোমার হাত এইভাবে ধরতে ভাল লাগছে।

স্বপন – সে ঠিক আছে, কিন্তু তোমার নেহার এটা ভাল নাও লাগতে পারে

শ্রেয়সী – ছাড় তো, নেহা তো আর এখন দেখছে না।

স্বপন – ভীষণ দুষ্টু মেয়ে তুমি। 

দুজনে মিলে রোল কেনে। শ্রেয়সী সবার জন্য ডবল ডিমের রোল বানাতে বলে। রোল কিনে ফেরার সময় আর শ্রেয়সী আর ওইভাবে হাত ধরে না।

সুলগ্না – কি ব্যাপার শ্রেয়সী তুমি স্বপনের হাত ধরে আসছ না !

শ্রেয়সী – স্বপনের পছন্দ নয় যে আমি ওর হাত ধরি

স্বপন – আমি কখন বললাম সেই কথা ?

শ্রেয়সী – সব কথা বলতে হয় না

মানসী – তুই নিশ্চয় স্বপনের হাত বুকের মধ্যে চেপে ধরে ছিলিস ?

শ্রেয়সী – তা না তো কিভাবে হাত ধরব ?

মানসী – আমি তো চিনি তোকে। আর এখন স্বপনকেও চিনি।

শ্রেয়সী – আমি একটু স্বপনের হাত আমার বুকে রেখেছি তো কি হয়েছে ?

সুলগ্না – তুমি কি কখনো বড় হবে না ? নেহাই বা কি ভাববে ?

নিহারিকা – শ্রেদিদি তুমি বাড়ীতে গিয়ে স্বপনের হাত, মুখ যা খুশী ধরে থেকো। কেউ কিচ্ছু বলবে না। এখানে সবার মধ্যে ওইভাবে হাত ধর না।

সুল্গনা – ওকে যা খুশী ধরতে বলছ ? তুমি জানো না নাকি ওকে ?

নিহারিকা – হ্যাঁ জানি। শ্রেদিদি আমার স্বপনের যা খুশী ধরতে পারে আমি কিচ্ছু বলব না। একদিন ধরলেই কি আর আমার থেকে পালিয়ে যাবে ?

শ্রেয়সী – আমি মোটেও কিছু উলটো পাল্টা জিনিসে হাত দেব না। 
সুলগ্না – আচ্ছা নেহা তোমার আর স্বপনের ভালবাসা কি ভাবে শুরু হল ?



নিহারিকা – একদিন ও আমাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলো যে আমি ওকে বিয়ে করতে রাজী আছি কি না ?



সুলগ্না – তুমি কি বললে ?



নিহারিকা – আমি যদি তোমার ডাকে সাড়া নাই দেব তবে আর আজ ডাকলে কেন এসেছি !



সুলগ্না – এ আবার কি রকম



নিহারিকা – ওই রকমই



সুলগ্না – স্বপন তুমি নিহারিকা কে প্রপোজ কেন করলে ?



স্বপন – দেখো আমি নিহারিকাকে প্রথম দেখি যেদিন ওর দাদার সাথে ওদের বাড়ি যাই



সুলগ্না – তুমি ওর দাদাকে চেন ?



নিহারিকা – ও আর দাদা একসাথে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছে



সুলগ্না – কি করতে গিয়েছিলে ওদের বাড়ি ?



স্বপন – বাবা তুমি তো পুরো বিশদ জানতে চাও ?



সুলগ্না – তোমার সাথে আমার ননদের বিয়ে হবে আর তোমাকে জানবো না ?



স্বপন – আচ্ছা ঠিক আছে। আমি আর ওর দাদা ব্যাঙ্গালর যাচ্ছিলাম। আমার বাড়ি বেশ দূরে তাই অফিস থেকে ওদের বাড়ীতে খেয়ে ত্রেন ধরি।



সুলগ্না – তারপর ?



স্বপন – তারপর আর কি ! আমি গেলে নিহারিকা আমাকে খেতে দেয়। ও এত যত্ন করে খাওয়ায় যে আমার মনে হয় যে মেয়ে একটা অচেনা ছেলেকে এত যত্ন করতে পারে, সে নিজের ভালবাসার লোককে অনেক বেশিই খেয়াল রাখবে। তাই বলতে পারো আমি স্বার্থপরের মত নিজের সুবিধার জন্য ওকে ভালবেসেছি।



সুলগ্না – তোমরা বুঝলে স্বপন নেহাকে কেন ভালবাসে ?



মানসী – নেহা খুব ভাল মেয়ে। ও সবাইকে ভালবাসে।



স্বপন – এটাই এখন সমস্যা আমার কাছে



সুলগ্না – কেন ভাই ?



স্বপন – এরপরেও যদি আরও কাউকে যত্ন করে খাওয়ায় আর সেও ভালবেসে ফেলে ?



নিহারিকা – মোটেই না, আমি সবাইকে অতো খাতির করি না



সুলগ্না – তবে স্বপনকে এত যত্ন করেছিলি কেন ?



নিহারিকা – আমার ওকে দেখে ভাল লেগেছিল তাই। 



মানসী – নেহা নিজে ভাল তাই ওর ভাল ছেলে খুঁজে পেটে অসুবিধা হয়নি।



শ্রেয়সী – আমি বাবা বুঝি না, শুধু খেতে দেবার মধ্যে এত যত্ন, ভালবাসা কোথা থেকে আসে ! প্লেটে করে সামনে খাবার দেবে, ব্যাস হয়ে গেল। 



সুলগ্না – সেটাই যদি বুঝতে তবে তোমার দুনিয়া আলাদা হত।



শ্রেয়সী – দরকার নেই আমার বোঝার। আমি যেরকম তাতে যদি কোন ছেলের ভাল লাগে তো ঠিক আছে। আর না হলে বাবা যার সাথে বলবে আমি বিয়ে করে নেব।



মানসী – না রে দিদি জীবনে স্বপনের মত একটা ছেলের ভালবাসার খুব দরকার আছে। তুই কোনদিন বুঝলিই না ভালবাসা কাকে বলে।



শ্রেয়সী – যেন তুই খুব বুঝিস !



মানসী ঠিক বুঝেছিল ভালবাসা কি জিনিস। কিন্তু শ্রেয়সী সেটা জানত না বা ওর সেটা বোঝার ক্ষমতাও ছিল না। আরও কিছু সময় দক্ষিণেশ্বরে থেকে ওরা বাড়ি ফিরে আসে। স্বপনরা আর বেশী বসে না। ও নিহারিকাকে ওর বাড়ি পৌঁছে দিয়ে নিজের বাড়ি ফিরবে। ও যাবার সময় মানসীকে জড়িয়ে ধরে। মানসীও মনে মনে এই মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছিল। 



সুলগ্না – স্বপন খুব ভাল কাটল আজকের বিকাল টা।



স্বপন – আমারও খুব ভাল লেগেছে।



শ্রেয়সী – মানসীর সব থেকে ভাল লেগেছে।



নিহারিকা – আমার ও রাঙা দিদিকে খুব ভালবাসে।


শ্রেয়সী – মানসীও

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 1 user Likes Kolir kesto's post
Like Reply
#12
দ্বিতীয় পরিচ্ছদ – আলোর ঝলক

(#০৬)

মানসীর জীবন একই ভাবে কেটে যায়। কলেজের তথাকথিত বন্ধুরা একই ভাবে থাকে। মানসী এখন আর কারো সাথে বেশী কথা বলে না। মাঝে মাঝে শুধু ওর কস্তূরীর সাথে কথা হয়। 

কস্তূরী মোটামুটি পয়সাওয়ালা ঘরের মেয়ে। ওর মা নেই, বাবার কাছে মানুষ। মা অনেক ছোটো বেলায় চলে গিয়েছেন। ওর বয়স প্রায় কুড়ি হলেও চেহারা ১২ বছরের মত। একদম রোগা, তার মধ্যে ছোট্ট দুটো বুক। খুব সুন্দর গায়ের রঙ। বাবা ওকে রোজ মাছ, মাংস, কাজু বাদাম, আলমন্ড সব কিছু খাওয়ায়। কিন্তু কস্তূরীর গায়ে মাংস লাগে না। কস্তূরীকেও প্রায় কোন ছেলেই পাত্তা দেয় না। একদিন কস্তূরী আর মানসী গল্প করছিল।

কস্তূরী – দেখ তোর ফিগার আছে কিন্তু গায়ের রঙ নেই

মানসী – তাতে কি হয়েছে ?

কস্তূরী – আর আমার গায়ের রঙ আছে কিন্তু কোন ফিগার নেই।

মানসী – আমার গায়ে একটা রঙ আছে আর তোরও কিছু না কিছু ফিগার আছে।

কস্তূরী – কিন্তু আমাদের যা যা আছে, মানে যে কম্বিনেশনে আছে সেটা ছেলেদের পছন্দ নয়।

মানসী – নয় তো কি যায় আসে।

কস্তূরী – কিচ্ছু যায় আসে না ! তুই কি বস্তু দিয়ে তৈরি ?

মানসী – আমি এই সব ছেলেদের আমার যোগ্য হিসাবে গণ্যই করি না।

কস্তূরী – তবে তুই কোন ছেলেদের পছন্দ করিস ?

মানসী – আমি স্বপনকে ভালবাসি, মানে স্বপনের মত ছেলে পছন্দ করি।

কস্তূরী – কে এই স্বপন ?

মানসী – আমার খুড়তুতো বোন নেহার বয়ফ্রেন্ড। দু বছর পরে বিয়ে করবে। 

কস্তূরী – তোর বোনের বয়ফ্রেন্ড তো তোর কি ?

মানসী – তুই স্বপন কে দেখিস নি। ওর সাথে কথা বললে তুইও ওর প্রেমে পরে যাবি।

কস্তূরী – কি এমন রাজপুত্রের মত চেহারা স্বপনের ?

মানসী – ওর চেহারা এমন কিছু নয়। বেশ ফর্সা, কিন্তু একটু ভুঁড়ি আছে। লম্বাও বেশী না।

কস্তূরী – তবে কেন প্রেমে পড়বো ?

মানসী – তুইও তো আকাট ছেলে গুলোর মত কথা বলছিস। স্বপন কোন মেয়ের মধ্যে গায়ের রঙ বা ফিগার দেখে না। ও বন্ধু ঠিক করে মন দেখে।

কস্তূরী – তাই আবার হয় না কি ? মন আবার কি করে দেখে !

মানসী কস্তূরীকে বলে ওর স্বপনের সাথে যে দুবার দেখা হয়েছিল তার কথা। স্বপন ওকে জড়িয়ে ধরলে ওর মনে যে আলোড়ন উঠে ছিল তার কথা। 

মানসী – তুই আমার বোনকে দেখিস নি 

কস্তূরী – কোন বোন ? নেহা ? না না ওকে কখনও দেখিনি।

মানসী – না আমি বলছি আমার বোন শ্রেয়সীর কথা।

কস্তূরী – না ওকেও দেখিনি। কেন কি হয়েছে ?

মানসী – আমার বোনের গায়ের রঙ আমার মতই আর ফিগার তোর মত।

কস্তূরী – বাপরে, ওকে কোন ছেলে পছন্দ করবে !

মানসী – তার ওপর শ্রেয়সী নিজেকে হেমামালিনি মনে করে।

কস্তূরী – তো কি হয়েছে ?

মানসী – সেই স্বপন শ্রেয়সীর সাথে যে ভাবে কথা বলে বা ওর আবদার মেনে নেয়, তুই দেখলে অবাক হয়ে যাবি। 

কস্তূরী – আমি তো শুনেই প্রেমে পরে যাচ্ছি। আমার সাথে একবার আলাপ করিয়ে দে প্লীজ।

মানসী – স্বপন নেহাকে প্রানের থেকে বেশী ভালবাসে। ও নেহা ছাড়া অন্য কোন মেয়ের দিকে কোন খারাপ ভাবে তাকাবেই না।

কস্তূরী – না না আমিও খারাপ ভাবে কিছু চাইছি না। আমি শুধু একবার ওইরকম ছেলেকে দেখতে চাই।

মানসী – স্বপন রাঁচিতে থাকে। মাসে একবার কলকাতায় আসে। ওর বাবা, মা আর নেহাকে দেখতে। এইবার আসলে আমি বলব। 

সেই সময় টেলিফোন কম থাকলেও, মানসী আর নিহারিকা দুজনের ঘরেই ফোন ছিল। মানসী নিহারিকার সাথে কথা বলে স্বপনের পরের বারের আসার দিন শুনে নেয়। আর দুজনে মিলে বেলুর মঠে যাবার প্ল্যান করে।

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 1 user Likes Kolir kesto's post
Like Reply
#13
(#৭)

পরের মাসে স্বপন কলকাতায় এলে নিহারিকা ওকে নিয়ে বেলুর মঠে যায়। দুজনে গঙ্গার ধারে বসে কথা বলছিল তখন আগের প্ল্যান অনুযায়ী মানসীও কস্তূরীকে নিয়ে ওখানে ওদের সাথে দেখা করে। 

স্বপন – আমার কি ভাগ্য যে এখানে আমার বন্ধুর সাথে দেখা।

মানসী – কেমন আছ স্বপন ?

স্বপন – আমি খুব ভাল, তুমি বা তোমরা কেমন আছ ?

মানসী – আমরাও ভাল আছি। আর দেখো এ হচ্ছে কস্তূরী, আমার সাথে আমার ক্লাসে পড়ে। 

স্বপন – আমি স্বপন, মানসীর বন্ধু।

স্বপন হাত বাড়িয়ে দেয় কস্তূরীর দিকে। কস্তূরী একটু ইতস্তত করে হাত মেলায়।

স্বপন – তোমাকে আমি বারবি বলে ডাকবো।

কস্তূরী – বারবি ? সেটা আবার কিরকম নাম ! আর কেনই বা আমাকে বারবি বলবেন ?

স্বপন – বারবি হল পৃথিবীর সব থেকে বিখ্যাত পুতুলের নাম।

কস্তূরী – পুতুলের আবার এইরকম নাম হয় নাকি !

স্বপন – আমেরিকায় হয়। ১৯৫৯ সাল থেকে বারবি বিক্রি হয়। এখন ভারতেও পাওয়া যায়। আমি বা তুমি যখন ছোটো ছিলাম তখন এইসব ছিল না।

কস্তূরী – তো আমার নাম বারবি কেন দেবেন ?

স্বপন – আমার সাথে কেউ ‘আপনি’ করে কথা বললে আমি তার বন্ধু হই না।

কস্তূরী – ঠিক আছে ‘তুমি’ করেই বলব তোমাকে।

স্বপন – বারবির চেহারা একদম তোমার মত। বারবির গায়ের রঙ তোমার মত আর ফিগারও তোমার মত। দুনিয়ার বেশীর ভাগ ইয়ং মেয়ে তোমার মত চেহারা পাওার জন্য তপস্যা করে।

কস্তূরী – তাই !

স্বপন – হ্যাঁ গো তাই। আর আমি রাঙা দিদির কাছে শুনেছি তুমি মোটা হতে পারছ না বলে তোমার খুব দুঃখ।

কস্তূরী – তোমার কাছে লুকাব না। সত্যি স্বপন দা, আমার খুব খারাপ লাগে। 

স্বপন – কি খারাপ লাগে ?

কস্তূরী – সব ছেলেরাই আমাকে আর মানসীকে দেখে নাক সিটকায়। ওর রঙ নেই নলে আর আমার চেহারা নেই বলে। 

স্বপন – সেটা ওই ছেলেদের সমস্যা, তোমাদের মত বন্ধু মিস করছে। তোমার কি যায় আসে ?

কস্তূরী – আমাদের কোন বন্ধু নেই

স্বপন – সে কারোরই নেই। যে সব ছেলে মেয়ে রঙ বা ফিগার দেখে বন্ধুত্ব করে তারা আসলে বন্ধুত্বর মানেই জানে না। তারা সুবিধাবাদী, ফোকটে যা পাওয়া যায় সেটা নেবার জন্য বন্ধুত্বের ভান করে। 

কস্তূরী – তবে বন্ধু কি করে পাব ?

স্বপন – তোমাকে ভগবান যেটা দেন নি সেটা নিয়ে দুঃখ না করে যা যা দিয়েছেন সেটা নিয়ে আনন্দ করো। কিছু জিনিস বা কোয়ালিটি আমরা চেষ্টা করে অর্জন করতে পারি, সেটার চেষ্টা করো। যেটা অর্জন করা যায় না সেটা নিয়ে মাথা ঘামাবার দরকার নেই।

কস্তূরী – কি অর্জন করা যায় আর কি অর্জন করা যায় না ?

স্বপন – গায়ের রঙ অর্জন করা যায় না। ফিগার কিছুটা যায় কিন্তু হাইট অর্জন করা যায় না। লেখাপড়া অর্জন করা যায়, বন্ধু অর্জন করা যায়, বাবা মা অর্জন করা যায় না। 

নিহারিকা – এত সিরিয়াস আলোচনা করছে কেন তোমরা ?

কস্তূরী – না না ঠিক আছে, আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাইছিলাম এই কথাগুলো শোনার জন্যই।

স্বপন – তুমি আমার সাথে দেখা করতে চাইছিলে ? জানতাম না তো !

নিহারিকা – আমি তোমাকে বলিনি। রাঙা দি আমাকে বলেছিল। তাই আমি এখানে তোমার সাথে আসার প্ল্যান করেছিলাম।

স্বপন – আমার বৌ টা বড় দুষ্টু

মানসী – ও এখনও তোমার বৌ হয় নি

স্বপন – আমার কাছে নিহারিকা প্রথম দিন থেকেই আমার বৌ। সামাজিক স্বীকৃতির অপেক্ষা করছি শুধু।

কস্তূরী – কি ভাল গো তুমি !

স্বপন – কি ভাল দেখলে বারবি ?

মানসী – তুমি বুঝবে না তোমার কি ভাল গুণ আছে

স্বপন – তোমরা বুঝতে পার ?

মানসী – না হলে তোমার সাথে বন্ধুত্ব করি ?

স্বপন – নিহারিকা বোঝে না গো

নিহারিকা – না বুঝি না, এমনি এমনি তোমার সাথে থাকি !

স্বপন – আমার সাথে থাকো কিন্তু এখনও আমাকে একটাও হামি খেতে দাও নি

নিহারিকা – সেসব সামাজিক স্বীকৃতির পরে হবে

স্বপন – সেইজন্যেই তো বলি যে তুমি এখনও আমাকে পুরো বিশ্বাস করো না

নিহারিকা – বিশ্বাস করি, কিন্তু ভয় লাগে

মানসী – নেহা তোর এটা উচিত নয়, স্বপন তোকে এত ভালবাসে আর তুই কিনা ওর থেকে দূরে থাকিস !

নিহারিকা – এইসব কথা পরে হবে, এখন অন্য কিছু বল।
আমাদের গল্প মানসীকে নিয়ে। তাই আমরা স্বপন আর নিহারিকার জীবনে কি ভাবে কি হয়েছিল বা ওরা কবে চুমু খেয়েছিল তার মধ্যে যাব না। সেদিন ওরা চারজনে আরও অনেকক্ষণ গল্প করে। কস্তূরীও স্বপনের বন্ধু হয়ে যায়। সেদিন বেলুর মঠ থেকে ফেরার পরে মানসী আর কস্তূরী অনেক সময় চুপ করে থাকে। স্বপন ওদের কে Positive Thinking আর Positive Attitude-এর কথা বলেছিল। ওরা সেটা নিয়ে কিছু কথা বলে। 


কস্তূরী – সত্যি রে আমরা যা নেই সেটা নিয়েই বেশী ব্যস্ত, যা আছে সেটা দেখি না

মানসী – স্বপনের সাথে চেনা হবার পর থেকে আমি সেটা দেখতে শুরু করেছি

কস্তূরী – চল আজ থেকে আমরা আর দুঃখ করবা না। আমাদের যা আছে তা আরও কিভাবে ভাল করা যায় সেই চেষ্টা করবো।

মানসী – ঠিক আছে। কাল আমি তোর কি কি গুণ আছে সেটা বলব। আর তুই আমার গুনের কথা বলবি।

কস্তূরী – তথাকথিত দোষের কথা একটুও বলব না বা চিন্তা করবো না। 

ওরা দুজনেই নিজেদেরকে বদলিয়ে নেবার চেষ্টা করে। নিজেকে বদলাবো ভাবলেই বদলানো অতো সহজ নয়। দুজনেই আস্তে আস্তে ওদের পুরানো বন্ধুদের থেকে দূরে সরে আসে। কিছু ছেলে মেয়ে খুঁজে পায় যারা ওদের মত করেই চিন্তা করে। কিন্তু সেই সংখ্যা খুবই কম। জীবন চলতে থাকে। 

আগেই বলেছি কস্তূরী একটু পয়সা ওয়ালা ঘরের মেয়ে। ও বাবাকে বলে তিনটে বারবি পুতুল কেনে। বাব্র কাছে জিদ করে সেই পুতুলের মত ড্রেস বানায়। ওর বাবা একটু আপত্তি করছিল কিন্তু কস্তূরী ওর পিসিকে বলে সব ম্যানেজ করে। ওর পিসি ওর বাবাকে বোঝায় যে মেয়েটার শরীরে আছেটা কি যে দেখা যাবে ! নিউ মার্কেটের দর্জিদের কাছ থেকে কস্তূরীর নতুন ড্রেস বানানো হয়। কস্তূরী যেদিন প্রথম সেই ড্রেস পড়ে কলেজে আছে ছেলেদের মধ্যে হৈচৈ লেগে যায়। কিন্তু কস্তূরী বা মানসী তাতে পাত্তা দেয় না।

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 1 user Likes Kolir kesto's post
Like Reply
#14
(#০৮)

মানসী কস্তূরীকে জিজ্ঞাসা করে ওর ওইরকম ড্রেস পড়ার কারন। কস্তূরী বলে যে ও যে বারবি পুতুলগুলো কিনেছে তাতে পুতুল গুলো যা পড়ে আছে, খুব সেক্সি দেখাচ্ছে। তাই ও ওইরকম ড্রেস বানিয়েছে। আর ওই ড্রেস পড়ে ওকে অনেক সেক্সি দেখাচ্ছে। 

কস্তূরী – দেখ এই জামায় আমার ছোটো বুক দুটোও বেশ ফুটে উঠেছে।

মানসী – তুই কি এই রকম শরীর দেখানো জামা পড়বি ?

কস্তূরী – দেখ এই জামায় আমার বুকের দুই শতাংশও দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু যা দেখা যাচ্ছে তাতে সব ছেলেরা তাকিয়ে আছে, আরও কি আছে যদি দেখা যায়

মানসী – কিন্তু আমার এটা পছন্দ নয়

কস্তূরী – তুই আর আমি বন্ধু, কিন্তু তা বলে আমাদের চাওয়া পাওয়ার ইচ্ছা এক হবে তার কোন মানে নেই। তাই না ?

মানসী – সেটা হয়তো ঠিক

কস্তূরী – আমি সব সময় চাইতাম ছেলেগুলো আমার পেছনে মৌমাছির মত ভন ভন করে ঘুরুক। এতদিন ওরা আমাকে দেখত না, তাই আমি ওদের পেছন পেছন ঘুরতাম। স্বপনদার দেখানো রাস্তায় আমি বুঝে গেছি আমাকে কি করতে হবে। 

মানসী – তোর যা ইচ্ছা কর। কিন্তু আমি তোর মতো করব না।

কস্তূরী চাইত সেক্সি দেখাতে। ওর শরীর বাঙালি হিসাবে সেক্সি ছিল না। ও হীনমন্যতায় ভুগত। কিন্তু এখন ও ঠিক রাস্তা পেয়ে গিয়েছিলো। অনেকেই হয়তো ওর এই ইচ্ছাটাকে অনৈতিক বা অশালীন বলবে। তথাপি সেই আদিকাল থেকেই মেয়েরা সুন্দর করে সাজতেই ভালবাসে। সেটাকে কেউ অশালীন বলে না। মেয়েদের সাজের একমাত্র কারণই হল ছেলেদের আকর্ষণ করা। অনেক নারীবাদী মহিলা হয়তো এই কথা মেনে নেবে না। কিন্তু যে মেয়ে সেজে গুজে বাইরে বেড়িয়েছে তাকে জিজ্ঞাসা করলে ওর সাজের আর কোন যুক্তি সঙ্গত কারন দেখাতে পারবে না। আগেকার দিনের গৃহবধূরা সারাদিনের কাজের পর সাজগোজ করত। ওরা সাজের পড়ে বাইরে যেত না। ওদের সাজের কারন ছিল দিনের শেষে ওদের স্বামীরা বাড়ি ফিরে যেন ওদের পছন্দ করে। সেখানেও সাজের উদ্দেশ্য একই। একটা মেয়ে বা মহিলা শাড়ি ব্লাউজ পড়ে বেড়িয়েছে, ব্লাউজের নিচে আর শাড়ীর ওপরে প্রায় দশ ইঞ্চি জায়গা উন্মুক্ত, তাও সেটা ভদ্র পোশাক। আর একটা মেয়ে সব ঢাকা পোশাক পড়েছে শুধু ০.০০২ ইঞ্চি বুকের খাঁজ দেখা যাচ্ছে – সেটা অশালীন পোশাক। ৯০ শতাংশ স্বচ্ছ শাড়ী দিয়ে তরমুজের মত বুক নামে মাত্র ঢাকা – সেটা সভ্য পোশাক। ঢিলে চুড়িদারের ওপর ওড়না না নিলে সেটা অশালীন পোশাক। বাঙালি সমাজের সভ্য পোশাকের সংজ্ঞা বোঝা ভীষণ কঠিন। 

ছেলেরাও যে পোশাক পড়ে তার একমাত্র উদ্দেশ্য যেন মেয়েরা ওকে হি-ম্যান আর স্মার্ট ভাবে। তাই কস্তূরী যা করেছে সমাজের কাছে ঠিক না হলেও, ওর নিজের কাছে একদম সঠিক ছিল। ওর উদ্দেশ্যও সফল হয়। কলেজে যে সব ছেলেরা ওর দিকে তাকিয়েও দেখত না, তারাই এখন সবসময় ওর সামনে পেছনে ঘুর ঘুর করে। কিন্তু কস্তূরী কাউকেই সেরকম পাত্তা দেয় না। মাঝে মাঝে দুস্টুমি করে ছেলেদের সামনে ঝুঁকে পড়ত। ঘরের জানাল থেকে একটা রুটির টুকরো বাইরে ছুঁড়ে দিলে যেমন অনেকগুলো কাক ঝাপিয়ে পড়ে, সেইরকম কস্তূরী ঝুঁকে পড়লেই দশ পনেরোটা ছেলে হামলিয়ে পড়ত। কিন্ত কস্তূরী ঝুঁকে পড়লেও প্রায় কিছুই দেখা যেত না। আর কস্তূরীও দশ সেকেন্ডের বেশী ওইভাবে থাকতো না। মুচকি হেসে উঠে ওখান থেকে চলে যেতমানসী কস্তূরীর খেলা দেখত, উপভোগ করত। নিজে কিছু করার সাহস ছিল না। আর ও ওইভাবে ছেলেদের আকৃষ্ট করতেও চাইত না। ও চাইত যে ছেলে ওর মন দেখে এগিয়ে আসবে তাকেই বন্ধু বলে মেনে নেবে। কিন্তু মানসীর দুর্ভাগ্য যে কোন ছেলেই ওর গায়ের কালো রঙের কাল্পনিক(virtual) প্রাচীর ভেদ করে কাছে আসতেই চাইল না। আরও অদ্ভুত ব্যাপার হল মানসীর সে নিয়ে কোন আক্ষেপও ছিল না। 

প্রায় তিন চার মাস পড়ে মানসী আর কস্তূরী, স্বপন আর নেহার সাথে দেখা করে। সেদিন ওরা চিড়িয়াখানায় যায়। কস্তূরীকে দেখেই স্বপন প্রায় চেঁচিয়ে ওঠে। কস্তূরী কোন দ্বিধা না করেই স্বপনকে জড়িয়ে ধরে। 

স্বপন – আমি একি দেখছি !

কস্তূরী – কেন স্বপনদা কি হল 

স্বপন – তুমি তো পুরো পুরি বারবি ডল লাগছ !

কস্তূরী – আমার এখনকার প্রায় সব পোশাকই বারবির স্টাইলেই বানানো।

মানসী স্বপনকে বলে কস্তূরীর পরিবর্তনের কথা। স্বপন আর নেহাও হেঁসে ওঠে কস্তূরীর কাণ্ড কারখানা শুনে। 

স্বপন – কিন্তু বারবি তুমি এইভাবে সঠিক বন্ধু কি ভাবে খুঁজে পাবে?

কস্তূরী – যে ভাবে তোমাকে পেয়েছি, সেই ভাবেই পাব।

স্বপন – আমি তো তোমার সাথে বারবি ডলের পোশাক দেখে বন্ধুত্ব করিনি

কস্তূরী – সেটাই তো বলছি। যে ছেলে আমাকে এই পোশাকেও দেখে আমার বুকের দিকে না তাকিয়ে মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলবে সেই আমার বন্ধু হবে।

স্বপন – কিন্তু আমি যে একটু একটু তোমার বুকের দিকে তাকাচ্ছি !

কস্তূরী – তুমি আমার দিকে যে ভাবেই তাকাও না কেন, বন্ধুই থাকবে

নেহা – কেন কেন, স্বপনের বেলায় তোমার নিয়ম আলাদা কেন ?

কস্তূরী – নেহা স্বপন দা আমাকে আমার আসল রূপে দেখে বন্ধু করেছে। তাই স্বপনদার কথা আলাদা।

মানসী – আজ স্বপন তোকে দেখে আমার কথা ভুলেই গেছে !

স্বপন – না গো রাঙা দিদি তোমাকে কখনো কি ভুলতে পারি!

স্বপনের খেয়াল হয় সেদিন দেখা হবার পর থেকে ও শুধু কস্তূরীকে নিয়েই কথা বলেছে। স্বপন সেই মুহূর্তে কিছুই বলে না। নেহা বলে চিড়িয়া খানায় এসেছে যখন, তখন একটু বাঘ ভাল্লুক দেখা উচিত। স্বপন বলে যে আগে আইসক্রিম খাবে। নেহা কোন কিছু না বলে আইসক্রিম কিনতে চলে যায়।

মানসী – হটাৎ তোমার আইসক্রিম খাবার ইচ্ছা হল যে !

স্বপন – দেখো আমি জীবনের প্রথম আইসক্রিম খেয়ে ছিলাম এই চিড়িয়াখানায়।

কস্তূরী – তাই ? কেন তোমাদের পাড়ায় বা কলেজের সামনে আইসক্রিম পাওয়া যেত না !

স্বপন – আমি গ্রামের ছেলে। আমাদের গ্রামের চারিদিকে ৫ বা ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোথাও কারেন্ট ছিল না। আইসক্রিম কোথা থেকে পাব ? 

মানসী – আর নেহাও সেটা জানে, তাই না !

স্বপন – নিহারিকা আমার প্রায় সব কিছুই জানে। আমি চিড়িয়া খানায় এলেই আগে আইসক্রিম খাই।

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 1 user Likes Kolir kesto's post
Like Reply
#15
(#০৯)

আইসক্রিম খাবার পড়ে ওরা জীব জন্তু দেখতে শুরু করে। স্বপন মানসীর হাত ধরে। মানসীও প্রথমে খেয়াল করে না। কিছুক্ষন ঘোড়ার পরে সেটা বুঝতে পেরে স্বপনের হাত ছেড়ে দিতে চায়।

স্বপন – কেন আমার হাত ধরতে ভাল লাগছে না ?

মানসী – না না তা না

স্বপন – তবে হাত ছেড়ে দিতে চাইছ কেন ?

মানসী – নেহার সামনে আমি তোমার হাত ধরলে নেহার খারাপ লাগবে

নিহারিকা – না রে আমি খারাপ ভেবে নেব না। একটা বন্ধু আরেকটা বন্ধুর হাত ধরতেই পারে।

স্বপন মানসীর হাত ছেড়ে দিয়ে ওর কাঁধের ওপর দিয়ে হাত রেখে জড়িয়ে ধরে। মানসীর বাহু স্বপনের বুকের ওপর। মানসী স্বপনের হৃদপিণ্ডের ধুক পুক অনুভব করে। একটু লজ্জা লাগলেও ও নিজেকে সরিয়ে নিতে পারে না। নিজেকে স্বপনের বুকের ওপর ছেড়ে দেয়। স্বপন ওকে জড়িয়ে ধরে একটু চলার পরে অনুভব করে মানসী কেমন যেন অসার ভাবে চলছে। ও ঘুরে দাঁড়িয়ে মানসীকে ছেড়ে দিতেই, মানসী বেসামাল হয়ে পরে যেতে যায়। স্বপন কোন কিছু না ভেবে মানসীকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে। মানসী স্বপনের বুকের মধ্যে মাথা রেখে হারিয়ে যেতে চায়। স্বপন আস্তে করে মানসীকে বসিয়ে দেয়। পাশে নিজে বসে ওর মাথা নিজের কোলের মধ্যে নিয়ে নেয়। নিহারিকা জলের বোতল থেকে জল নিয়ে মানসীর মুখে চোখে ছিটিয়ে দেয়। কস্তূরী বোঝে মানসীর কি হয়েছে তাই ও কিছুই করে না, শুধু দেখে যায়।

কিছু পরে মানসী স্বাভাবিক হয়। লাফিয়ে উঠে পরে স্বপনের কোল থেকে। চুপ চাপ বসে থাকে। নিহারিকা জিজ্ঞাসা করে ওর কি হয়েছিল। মানসী কোন উত্তর দেয় না। স্বপন ওর হাত ধরে পাল্ স্ দেখার জন্যে। মানসী ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করে।

নিহারিকা – কি হয়েছে তোর রাঙা দি !

মানসী – আমি খুব খারাপ মেয়ে

নিহারিকা – কে বলল তুই খারাপ মেয়ে ? স্বপন কিছু বলেছে নাকি ?

মানসী – স্বপন কিছু বলেনি। ও কেন কিছু বলবে আমাকে!

নিহারিকা – তবে কাঁদছিস কেন ?

মানসী কিছু না বলে ফোঁপাতে থাকে। এতক্ষনে স্বপন বুঝতে পারে মানসীর অসার হবার কারন আর কাঁদার কারন। ওর মনে পড়ে প্রথম দিনও মানসী অসার হয়ে গিয়েছিলো। স্বপন ধীরে ধীরে মানসীর মাথা নিজের বুকে টেনে নেয়। মানসীও কিছু না বলে ওর বুকে মাথা রাখে। নিহারিকা কিছু জিজ্ঞাসা করতে গেলে স্বপন ওকে ইসারাতে চুপ করতে বলে। কস্তূরী নিহারিকাকে ডেকে ওখান থেকে উঠে যায়কস্তূরী নিহারিকাকে বোঝায় মানসীর মানসিক দ্বন্দের কথা। নিহারিকার কাছে এটা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ছিল। নিহারিকা একবার ভাবে স্বপন কি চায়। ও ভাবে স্বপন যদি মানসীকে বিয়ে করতে চায় তবে ও ওদের রাস্তা থেকে সরে দাঁড়াবে। পরমুহূর্তে চিন্তা করে স্বপন মানসীকে বন্ধু হিসাবেই দেখে, মানসীর ভালবাসা একতরফা। ও ঠিক করে এটা নিয়ে পরে স্বপনের সাথে আলোচনা করতে হবে। আগে দেখা যাক স্বপন কি করে এই অবস্থায়।

ওদিকে মানসী একটু ধাতস্থ হবার পরে স্বপনের বুক থেকে উঠে পরে। 

স্বপন – রাঙা দিদি তুমি আমাকে ভালোবাসো তাই না ?

মানসী – আমি জানি তুমি নেহাকে ভালোবাসো। তুমি আমাকে বন্ধুর মতো ভালোবাসো।

স্বপন – তবে ?

মানসী – যেদিন তুমি আমার দিকে প্রথম বন্ধুত্বের হাত বাড়ালে সেদিনই তোমাকে ভালবাসেছি। ভালবাসা কোন বাধা, বিপত্তি, সম্পর্ক, বর্তমান, ভবিষ্যৎ কিছুই মানে না। আমি জানি তুমি আর নেহা একে অন্যকে ভীষণ ভালোবাসো। কিন্তু আমার মন কে সামলাতেই পারি না।

স্বপন – কিন্তু আমি তো তোমাকে বন্ধু ছাড়া অন্য কোন ভাবে নিতে পারবো না গো দিদি।

মানসী – আমি চাইও না তুমি নেহাকে ছেড়ে আমাকে ভালোবাসো।

স্বপন – তবে আমার কাছে এলেই তুমি ওইরকম নিস্তেজ হয়ে পড় কেন ?

মানসী – আমার মনকে অনেক করে বুঝিয়েছি যে তুমি আমার বন্ধু। কিন্তু এই পোড়ার শরীর সেটা বুঝতে চায় না। যেই তুমি আমাকে জড়িয়ে ধর আমার শরীরে শিহরন শুরু হয়ে যায়। তখন আর থাকতে পারি না।

স্বপন – এতো বড় সমস্যায় ফেললে দিদি আমাকে

মানসী – তুমি প্লীজ আমাকে দিদি বল না

স্বপন – আমি সব সময় তোমাকে দিদি বলেই ডাকবো। সেটা তোমার পক্ষেও ভাল হবে।

মানসী – হয়তো তাই

স্বপন – তোমার কি আমার বুকে আসলে ভাল লাগে ?

মানসী – লজ্জা দিও না আমাকে 

স্বপন – না না সত্যি বল

মানসী – ভীষণ ভাল লাগে।

স্বপন – তবে এস আমার বুকে, আমি নিহারিকাকে বুঝিয়ে দেব

মানসী – কি বোঝাবে ?

স্বপন – ওকে যাই বোঝাই, তুমি আমার বুকে মাথা রেখে নিজের মন আর শরীর কে বলে যাও যে স্বপন শুধুই তোমার বন্ধুস্বপন আবার মানসীকে নিজের বুকের মধ্যে টেনে নেয়। ততক্ষনে নিহারিকা আর কস্তূরী ফিরে আসে। নিহারিকাকে দেখে মানসী উঠে বসতে যায়। নিহারিকা ওকে বাধা দেয় আর ওর পাশে গিয়ে বসে।

মানসী – নেহা আমি ভীষণ খারাপ মেয়ে, বোনের প্রেমিকের দিকে চোখ দিয়েছি।

নিহারিকা – রাঙা দি এই ভাবে কথা বলবি না

মানসী – স্বপন তোকেই ভালবাসে।

নিহারিকা – আমি সেটা ভাল করেই জানি

মানসী – কিন্তু আমি কি করবো বুঝতে পারি না

নিহারিকা – তোকে কিছু করতে হবে না। স্বপনের বুকে মাথা রেখে আদর খা।

মানসী – যাঃ তাই হয় নাকি

নিহারিকা – এখন তো আদর খা, পরে দেখা যাবে কি হবে।

ওরা চারজনে বসে অনেক গল্প করে। চিড়িয়াখানা দেখার কথা আর কারো মনেই থাকে না। স্বপন নিহারিকাকে বলে ওর আর মানসীর মধ্যে কি কি কথা হয়েছে। নিহারিকা মানসীকে বলে যে ওর স্বপনের বুকে বা কোলে মাথা রেখে যত খুশী আদর খেতে পারে। ও স্বপন আর ওর রাঙাদি দুজনকেই ভালবাসে। তাই ওরা দুজন কিছু করলে ও কিছুই মনে করবেনা। স্বপন বুঝতে পারে ওর মানসীর সাথে বেশী দেখা করা টা ঠিক হবে না। কিন্তু সে নিয়ে ও মানসী বা নিহারিকাকে কিছুই বলে না। 

স্বপন ভাবে যে ওর আর নিহারিকার মধ্যের প্রেম মানসীর সামনে বেশী করে বোঝাতে হবে।

স্বপন – জানো রাঙা দিদি তোমার নেহা সেদিন আমাকে হামি খেতে দিয়েছে

কস্তূরী – কোথায় হামি খেয়েছ ?

স্বপন – ওদের বাড়ির ছাদে

কস্তূরী – আরে সেই কোথায় না, ওর শরীরের কোথায় চুমু খেলে ?

স্বপন – আপাতত ঠোঁটে চুমু খেয়েছি, আর কোথাও চুমু খাবার অনুমতি দেয়নি

নিহারিকা – আরও চাই ?

স্বপন – চাই তো

নিহারিকা – সেসব বিয়ের পরে

স্বপন – আমিও এখন চাইছি না

শেষ বিকালে ওরা উঠে পড়ে চিড়িয়াখানা থেকে। ট্যাক্সি নিয়ে বাড়ি ফেরে। আগে নিহারিকার বাড়ি তাই স্বপন আগে ওকেই পৌঁছে দেয়। মানসী আর কস্তূরী ওখান থেকে একা একাই চলে যেতে চাইছিল। কিন্তু নিহারিকা বলে স্বপন ওদের বাড়ির ওপর দিয়েই যাবে। আর স্বপন যদি মানসীদের পৌঁছে দেয় ও কিছু মনেই করবে না। বরঞ্চ পৌঁছে না দিলেই রাগ করবে। মানসীদের বাড়ির কাছে পৌঁছালে মানসী মেন রোডেই নামিয়ে দিতে বলে। ও চাইছিল না সেদিন স্বপন ওদের বাড়ি যাক। মানসীরা নেমে গেলে স্বপন কস্তূরী আর মানসী দুজনকেই জড়িয়ে ধরে। আর মানসীর ঠোঁটে আলতো করে চুমু দেয়।

কস্তূরী – এটা ভাল করলে না

স্বপন – কেন ? মানসীর ভাল লাগে নি ?

মানসী – যাঃ

কস্তূরী – আমি কেন বাদ যাব ?

স্বপন – এর পরের দিন তুমি

কস্তূরী – না গো এমনি বলছি। আমি আমাকে চুমু খাবার ছেলে ঠিক খুঁজে পেয়ে যাব।


দ্বিতীয় পরিচ্ছদ সমাপ্ত 

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 1 user Likes Kolir kesto's post
Like Reply
#16
The spellings have got disturbed..
Like Reply
#17
স্বপনদার লেখা অনেক গল্পের মধ্যে এটা অন্যতম ভালো।
Like Reply
#18
(02-07-2020, 12:34 PM)Mr Fantastic Wrote: স্বপনদার লেখা অনেক গল্পের মধ্যে এটা অন্যতম ভালো।

হা দাদা ,অনেকে দেখলাম এটার অনুরোধ করেছে থ্রেডে তাই দিলাম Namaskar

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

Like Reply
#19
তৃতীয় পরিচ্ছদ – কালবৈশাখী

(#০১)

একসময় মানসীর কলেজ শেষ হয়। ১৯৮৭ সালের শেষের দিকে ওর রেজাল্ট বের হয়। মানসী ৭১% নম্বর নিয়ে বাংলায় গ্রাজুয়েশন পাশ করে। মানসীর ইচ্ছা ছিল এম.এ. পড়বে। কিন্তু দাদা খরচ করতে রাজী হয় না। আর ওর বাবা বলেন মেয়েদের বেশী পড়ে কি হবে।

সুলগ্না বৌদি বড়দাকে অনেক বলেন মানসীকে এম. এ. পড়তে দেবার জন্য। কিন্তু বড়দা বা মানসীর বাবা কিছুতেই মেনে নেন না। মানসীর বাবা বলেন বেশী পড়াশুনা করে মেয়েদের কাজই বা কি ! তার থেকে বিয়ে দিয়ে দাও। চার পাঁচটা বাচ্চা হোক। ছেলে মেয়েদের মানুষ করুক। ব্যস হয়ে গেল।

সুলগ্না বৌদি মানসীকে কোন একটা কলেজে কাজ জোগাড় করতে বলে। এই সময় কস্তূরী মানসীকে সাহায্য করে। কস্তূরী ওর বাবাকে বলে একটা প্রাইভেট কলেজে মানসীর জন্য বাংলা শিক্ষিকার কাজ জোগাড় করে দেয়। একদিন মানসী কলেজ থেকে ফিরলে সুলগ্না বৌদি ওকে ডাকে। বৌদি মানসীকে একটা কাগজ দেয় আর বলে সাবধানে লুকিয়ে রাখতে। 

মানসী – এটা কি বৌদি ?

সুলগ্না – এটা এক লক্ষ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট – এর কাগজ। তোমার নামে করেছি। তুমি পাশ করেছ তাই উপহার দিলাম। 

মানসী – তা বলে এতো টাকা ! আর বৌদি আমি টাকা দিয়ে কি করবো ?

সুলগ্না – এই টাকা যে আমি তোমাকে দিলাম সেটা তোমার দাদা, বাবা, মা কাউকে বলবে না।

মানসী – কিন্তু কেন ?

সুলগ্না – দেখো তোমার কোন দাদাকেই আমার ভরসা হয় ন। যে যার নিজের স্বার্থ বোঝে। তুমি সাধা সিধে মেয়ে, নিজের স্বার্থ একটুও বোঝো না। তোমার কি হবে সে নিয়ে কেউ ভাববে বলে আমার মনে হয় না। এই টাকাটা রাখ, সময়ে অসময়ে কাজে লাগবে।

মানসী ওর বৌদিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে। মানসী বুঝত যে কেউ ওকে নিয়ে সেরকম চিন্তা করে না। কিন্তু নিজের জন্য কিছু আদায় করে নেওয়া ওর ধাতে নেই। ও জানত যে ওর বৌদিই শুধু ওর জন্য চিন্তা করে, তা বলে এতোটা মানসীও আশা করতে পারেনি। ও কাগজগুলো বৌদির কাছেই রেখে দিতে চায়, বলে যে ও পরে নিয়ে যাবে। কিন্তু সুলগ্না বৌদি তাতে রাজী হয় না। জোর করে মানসীকেই দিয়ে দেয়। 

স্বপনের সাথেও অনেকদিন দেখা হয় নি। ও একটু ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, এদিকে বেশী সময় দিতে পারে না। কিন্তু মানসী বুঝতে পারে স্বপন ইচ্ছা করেই আসে না। এর জন্য মানসী নিজেকেই দায়ী করে। স্বপনকে কোন দোষ দেয় না। আর কোন মেয়ে যাকে ভালবাসে, তার দোষ থাকলেও দোষ দেখে না। তাই এক্ষেত্রে মানসী বোঝে ওরই দুর্বলতার কারণে স্বপন আসে না। ও ভাবে একবার নিহারিকার সাথে কথা বলবে। 

কাকতালীয় ভাবে স্বপন আর নিহারিকা তার পরেরদিন ওদের বাড়ি আসে। স্বপন মানসীকে পাশ করার উপহার দিতে এসেছিলো। স্বপন ওকে একটা কৃষ্ণের মূর্তি উপহার দেয়। সবাই বলে শুধু কৃষ্ণ কেন, রাধা কোথায় গেল?

স্বপন বলে যে ও রাধাকে খুব একটা পছন্দ করে না। যে মামীমা নিজের স্বামীকে ভুলে ভাগ্নের পেছনে ঘুরে বেড়ায় তাকে আর যাই হোক ভক্তি করা যায় না। 

শ্রেয়সী এই নিয়ে তর্ক করতে যাচ্ছিল কিন্তু বড়দা থামিয়ে দেন। 

বড়দা – আমরা এই বিষয় নিয়ে এখানে আলোচনা করবো না। স্বপনের শুধু কৃষ্ণ পছন্দ তাই ও সেটা উপহার হিসাবে নিয়ে এসেছে। মানসী এটা নিয়ে তোমার পুজার আসনে রেখে দাও। 

স্বপন – বড়দা আপনি কি একটু রাগ করেছেন ?

বড়দা – না ভাই। তোমার চিন্তাতে অনেক যুক্তি আছে। কিন্তু এখানে কারো তোমার কথার তাৎপর্য বোঝার মতো ম্যাচিওরিটি নেই।

স্বপন – মানসী বোঝে

বড়দা – আমার মনে হয় আমার বোন দের আমি তোমার থেকে একটু বেশী দিন ধরে জানি।

স্বপন আর কথা বাড়ায় না। বড়দার অনেক বুদ্ধি। উনি বোঝেনও সব কিছু। শুধু নিজের ইগো আছে সেটা বোঝেন না। স্বপনও বড়দার সাথে বেশী কথা বলে না। বড়দা একটু পরে “আমার একটা মিটিং আছে” বলে চলে যান।

স্বপন মানসীদের সাথে ওদের ছাদে যায়। ওদের ছাদটা খুব সুন্দর। ছাদ ভর্তি তবে ফুলের গাছ। সব বড়দা দেখাশোনা করে। ততক্ষনে নিহারিকা কস্তূরীকে ডেকে এনেছে। কস্তূরীর বাড়ি ওদের বাড়ির কাছেই। কস্তূরী আসলে স্বপন ওকে একটা বারবি ডল উপহার দেয়। কস্তূরীও বি এ পাশ করেছিল। 

শ্রেয়সী জিজ্ঞাসা করে ওর জন্য স্বপন কি এনেছে। স্বপন বলে যে যেদিন শ্রেয়সী বিএ পাশ করবে সেদিন উপহার দেবে। শ্রেয়সী মনঃক্ষুন্ন হয়ে নিচে চলে যায়। 

নিহারিকা বলে স্বপনের কিছু একটা উপহার শ্রেয়সীর জন্যেও আনা উচিত ছিল।

স্বপন – আমি যদি আজ শ্রেয়সীর জন্য কোন উপহার আনতাম তবে মানসী আর কস্তূরীর কৃতিত্বকে ছোটো করে দেখা হত।

নিহারিকা – তোমার সাথে তর্ক করাই বৃথা

স্বপন – অন্য সময়ে শ্রেয়সীর জন্য কিছু উপহার নিয়ে আসলেই হবে।

সেদিন কিছুক্ষন গল্প ওরে স্বপন চলে যায়। ও মানসী বা কস্তূরী কাউকেই জড়িয়ে ধরে না। শুধু হাত মিলিয়ে বিদায় নেয়। যাবার সময় মানসীকে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে বলে যায়।

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 1 user Likes Kolir kesto's post
Like Reply
#20
(#০২)

এর দুদিন পরেই সকাল বেলা সুলগ্নার খুব জ্বর। বড়দা প্যারাসিটামল খাইয়ে দেন। 

মানসী – দাদা একবার ডাক্তার দেখালে হত না ?

বড়দা – কিচ্ছু হয়নি। এক ঘণ্টা পরেই ঠিক হয়ে যাবে।

বড়দা অফিসে চলে যান। শ্রেয়সীর এইসব নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই। ও সকালে পুজা করে গান শিখতে চলে যায়। মানসী বলে ও কলেজে যাবে না, বৌদির পাশে থাকবে।

সুলগ্না – না না, আমার কিচ্ছু হবে না। তোমার নতুন চাকরি, এই সময় কামাই করো না।

মানসী আরও এক ঘণ্টা সুলগ্নার পাশে থাকে। ওর জ্বর একটু কমলে মানসী কলেজে যায়। কলেজে যাবার আগে ও নিহারিকাকে ফোন করে দেয়। সেদিন নিহারিকা ফ্রী ছিল, তাই ও চলে আসে। সারাদিন সুলগ্নার জ্বর একবার কমে আবার বেড়ে যায়। নিহারিকা বোঝে কিছু একটা গুরুতর সমস্যা হয়েছে। ও রাঁচিতে স্বপনের সাথে ফোনে কথা বলার চেষ্টা করে, কিন্তু তখনকার দিনের আমাদের দেশের টেলিফোন ব্যবস্থা সেই চেষ্টাকে সফল হতে দেয় না। ও সুলগ্না কে একবার প্যারাসিটামল দেয়। কিন্তু পাঁচ ঘণ্টার কম সময়ে সেটাও দেওয়া যায় না। ও সুলগ্নার কপালে জলপট্টি দেয়, মাথা ধুইয়ে দেয়। কিন্তু বাড়ীতে আর কেউ ছিল না যাকে নিয়ে ডাক্তার ডাকতে পারে।

বিকালে মানসী ফেরে। ও ফিরেই সুলগ্নার অবস্থা দেখে বড়দার অফিসে খবর দেয়। বড়দা যখন বাড়ি পৌঁছায় সুলগ্না তখন পুরো পুরি অজ্ঞান হয়ে শুয়ে আছে।

বড়দা এসেই হৈচৈ চেঁচামেচি শুরু করে দেয়। কেন ওনাকে খবর দেওয়া হয়নি। কে খবর দেবে সেটা চিন্তা করেন না। উনি সুলগ্না বৌদিকে সামনের একটা নারসিং হোমে নিয়ে যান। সেই নারসিং হমের ডাক্তার বলেন কিছু পরীক্ষা করতে হবে কিনবে ওই নারসিং হোমে সেই পরিক্ষার ব্যবস্থা নেই। ডাক্তার বলেন কোন বড় নারসিং হোমে নিয়ে যেতে, কারন প্রাথমিক ভাবে ওনার খুব একটা সুবিধা জনক লাগছে না। 

বড়দা বাইরে এসে একটু খবর নেন কোন নারসিং হোম ভাল কিন্তু কম খরচের। অনেক চিন্তা ভাবনা করে মানিকতলার একটা নারসিং হোমে নিয়ে যান। খুব একটা সস্তা নারসিং হোম নয় কিন্তু ওনার কাছে আর কোন উপায় ছিল না। ওখানে সুলগ্না বৌদিকে সাথে সাথে ভর্তি করে আর রক্ত আর আনুসঙ্গিক পরীক্ষা করতে দিয়ে দেয়। চিকিৎসাও শুরু করে।

সুলগ্না বৌদির জ্ঞ্যান ফিরে আসে।

সুলগ্না বৌদি জ্ঞান ফিরতেই চারদিকে তাকিয়ে দেখে কে কে আছে। তখন মানসী আর নিহারিকা বৌদির কাছে ছিল। বড়দা ডাক্তারদের সাথে কথা বলছিলেন।

সুলগ্না – রাঙা দিদি আমি না থাকলে আমার মেয়েকে দেখো
মানসী – তুমি থাকবে না মানে ? এমনি জ্বর হয়েছে, কিছু একটা ইনফেকশন হয়েছে। দুদিন অ্যান্টিবায়োটিক খেলে আর বিশ্রাম নিলে ঠিক হয়ে যাবে।

নিহারিকা – বৌদি তোমার কি শরীর খুব খারাপ লাগছে ?

সুলগ্না – না এখন ভালই লাগছে। কিন্তু আমার মন বলছে আমি আর বাঁচব না।

নিহারিকা – তোমার কিচ্ছু হয়নি। খাটা খাটুনি বেশী করো, কোন বিশ্রাম নাও না, তাই এইরকম শরীর খারাপ লাগছে।

সুলগ্না – তা হলেই ভাল।
মানসী – বড়দাকে ডাকি ?

সুলগ্না – তোমাকে যে টাকা দিয়েছি, সেটা ঠিক করে রাখবে। এই নিহারিকা জানল, আর কেউ যেন না জানে।

মানসী – এমন করো না, তোমার কিচ্ছু হয়নি।

সুলগ্না – নেহা আমি না থাকলে তুমি তোমার দাদাকে আর একটা বিয়ে করতে বল। না হলে আমার মেয়েকে কে দেখবে ?

নিহারিকা – আচ্ছা সে দেখা যাবে।

সুলগ্না – তোমার বড়দাকে ডাকো। 

মানসী গিয়ে বড়দাকে ডেকে আনে। বড়দা এসে মুখ কালো করে সুলগ্না বৌদির মাথার কাছে বসেন। বৌদির হাত দুটো নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে চুপ করে বসে থাকেন। চোখ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা জল গরিয়ে পড়ে। 

সুলগ্না – কাঁদছ কেন ?
বড়দা – কিছু না, এমনি

সুলগ্না – তোমাকে কোনদিন কাঁদতে দেখিনি, তাই অবাক লাগছে

বড়দা – তোমার যে কোনদিন এই রকম শরীর খারাপ হতে পারে সে কথাটাই কোনদিন ভাবিনি।

সুলগ্না – ডাক্তার কি বললেন

বড়দা – কিছু বলেনি এখনও, মনে হয় সব ঠিক আছে

বড়দা কথা বলতে বলতে কেঁদে ফ্যালেন। মানসী, নিহারিকা বা সুলগ্না সবাই বোঝে যে বড়দা সত্যি কথা বলছেন না। 

সুলগ্না – আমার অসুখের সময় তুমি যদি এভাবে ভেঙ্গে পড় তবে বাকি সবাইকে কে দেখবেদেখবে
মানসী আর নিহারিকা ওদের দুজনকে একা রেখে বাইরে যায়। বাইরে মানসীর এক জামাইবাবু ছিলেন। উনি বলেন যে বৌদিকে আর ফেরানো যাবে না। 

মানসী – কি হয়েছে বৌদির ?

জামাইবাবু – খুবই খারাপ খবর

নিহারিকা – কি ?

জামাইবাবু – কাউকে বলবি না আর একটুও কাঁদবি না

মানসী – ঠিক আছে, কিন্তু তুমি বল বৌদির কি হয়েছে ?

জামাইবাবু – লিউকিমিয়া বা ব্লাড ক্যানসার। একদম শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।

মানসী আর নিহারিকা চেঁচিয়ে ওঠে আর কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। জামাইবাবু বা আর যারা ছিল তারা এসে ওদের শান্ত করে। জামাইবাবু ওদের বোঝায় যে বৌদি যেন না জানে। তবে যে কদিন বেঁচে আছেন সে কটা দিনও শান্তিতে থাকবে না।

ওরা দুজন বাইরে এক কোনায় চুপ করে বসে থাকে।


বড়দা এসে ওদের আবার ডেকে নিয়ে যায়, সুলগ্না বৌদি ওদের ডাকছে তাই।

সুলগ্না – তোমাদের দেখে বুঝতে পাড়ছি ভয়ানক কিছু একটা হয়েছে


নিহারিকা – না না বৌদি বাইরে একজন রুগি কে দেখে খুব খারাপ লাগছিলো, রাঙা দিদি তো সেই রুগি কে দেখে কেঁদেই ফেলেছে।


সুলগ্না – আমি তোদের বৌদি। আমি তোদের কে অনেক বেশী জানি।

মানসী – হ্যাঁ বৌদি নেহা সত্যি বলছে।

সুলগ্না – আছা ঠিক আছে। স্বপনের সাথে দেখা হল না। নেহা স্বপনকে দেখে রাখবে। খুব ভাল ছেলে আর তোমাকে খুব ভালবাসে।


নিহারিকা – সে নিয়ে তুমি চিন্তা করো না।

সুলগ্না – মানসী আমার মেয়েকে দেখো।

বড়দা – বেশী কথা বল না

সুলগ্না – হ্যাঁ গো আমার খুম পাচ্ছে। একটু ঘুমাবো।

জামাইবাবু গিয়ে ডাক্তারকে ডেকে আনেন। ডাক্তার সবাইকে বাইরে যেতে বলে। ডাক্তার বাবু একটু পড়ে বেড়িয়ে এসে বলেন যে যে কাছা কাছি আছে সবাইকে ডেকে একবার সুলগ্না বৌদির সাথে দেখা করিয়ে দিতে। তখন প্রায় রাত দশ টা বাজে। মানসীর বাকি দাদা দিদিরা কাছেই ছিল। যারা ছিল সবাই গিয়ে বৌদির সাথে কথা বলে আসে। রাত্রি সাড়ে দশটায় বৌদি ঘুমিয়ে পড়ে।

সেই ঘুম আর ভাঙ্গেনি। ভোর চারটে নাগাদ ঘুমের মধ্যেই সবাইকে ছেড়ে চলে যান।

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 1 user Likes Kolir kesto's post
Like Reply




Users browsing this thread: