Thread Rating:
  • 26 Vote(s) - 3.46 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance ভালবাসার রাজপ্রাসাদ Written By Pinuram
#41
রম্ভার বাঁশি

দু’দিন পরে সকাল বেলায় এক অপ্রত্যাশিত ফোন এল। বাবা মা দুজনেই কাজে বেড়িয়ে গেছেন, অভি কিছুক্ষণের মধ্যে কলেজের জন্য বের হবে। ঠিক এমন সময়ে ফোন বেজে ওঠে।

ওপার থেকে তুলির গলা, "একদম ভুলে গেছ না আমাকে?"

অভি, "না ভুলবো কেন, সবে মাত্র দু’দিন কেটেছে।"

তুলি, "তুমি আমার সাথে দেখা করতে পার?"

অভি, "মানে? কোথায়?"

তুলি, "মানে বাইরে কোথাও। তুমি ভবানিপুর মেট্রো স্টেসানে আসতে পার, ঠিক দুটো নাগাদ আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করে থাকব গেটের কাছে।"

অভি, "ঠিক আছে, আসব।"

কলেজে গিয়ে অরুনাকে অরুনিমার কথা বলল। সব শুনে অরুনা রেগে গেল অভির উপরে, "তুই একটা শয়তান কুত্তা। তোর কোন বোধ জ্ঞান নেই, শুচিস্মিতার কি হবে?"

অভি মজা করে বলল, "অয়ান ডে ম্যাচ দেখা যাক না কি হয়। ক্রিকেটে যারা টেস্ট ম্যাচ খেলে তারা কি অয়ান ডে খেলে না?"

অরুনা রেগে গিয়ে বলল, "অভি, জীবন কিন্তু ক্রিকেট খেলা নয়, একটু সিরিয়াস হ।"

অভি ওর দিকে চোখ টিপে বলল, "আরে বাবা দাবার ছক সাজান, ঘুটি এগিয়ে গিয়েছে, পরের চাল আমার। আমাকে দেখতে হবে এই খেলার শেষ কোথায় কেননা আমি বুঝতে পারছি যে এর পেছনে অন্য কোন গুড় মতলব আছে আমি তাঁর শেষ দেখতে চাই।" বিশেষ কিছু খোলসা করে না বলে বলল, "সাপ আর ঈগলের খেলা, অরুনা, দেখা যাক কে যেতে।"

অরুনা জিজ্ঞেস করে, "কে সাপ আর কে ঈগল?"

অভি, "অবশ্যই আমি ঈগল।"

তর্জনী তুলে ওকে সাবধান করে বলে অরুনা, "অভি, আগুন নিয়ে খেলিস না। খুব সাঙ্ঘাতিক কিছুর গন্ধ পাচ্ছি আমি। তুই যদি হাত পুড়িয়ে আমার কাছে আসিস তাহলে কিন্তু আমি তোর পিঠের চামড়া নামিয়ে দেব, তারপরে অবশ্য ওই পিঠে আবার বারনল লাগিয়ে দেব।"

দাবার ছকে ঘুঁটি বসানো, চাল একদিকে চেলে দিয়েছে, এখন অভির অপেক্ষায়। অভি ঠিক সময়ে মেট্রো স্টেসানে পৌঁছে যায়। তুলি ওর জন্য অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে আছে। পরনে সাদা জিন্স নীল টপ, জিন্স টা যেন তুলির কোমরের নিচে চামড়ার সাথে লেপটে আছে, টপের অবস্থা সেই রকম। কাঁধে একটা ব্যাগ, দেখে মনে হল কলেজ পালিয়ে এসেছে।

অভি ওকে জিজ্ঞেস করল, "কি কলেজ পালানো হয়েছে নাকি? তা কোথায় যেতে চাও?"

তুলি ওকে দেখে হেসে বলল, "রবীন্দ্র সরবোর যাবে?"

অভি, "নাহ, অসব জায়গায় আমি যাই না, শুধু জোড়ায় জোড়ায় ছেলে মেয়েরা বসে থাকে ওখানে, আমার কেমন বিরক্ত বোধ হয় ওই সব জায়গায়।"

তুলি, "ত বন্ধুদের সাথে তুমি কোথায় যাও?"

অভি, "কফি হাওস না হলে এস্প্লানেড না হলে ফ্লুরিস। তুমি কোথায় যেতে চাও বল?"

তুলি, "নন্দন যাবে?" সারা টা বিকেল ওরা দু’জনে নন্দনে গল্প করে কাটিয়ে দিল। অভি খুব সন্তর্পণে নিজের কথা চেপে গেল, গল্প কিছু এদিক ওদিক বিষয়ে চলল।

ঘন্টা থেকে দিন কেটে গেল। অভির আর তুলির মাঝে এক নতুন সম্পর্ক তৈরি হল। রাতে অভি চিন্তা করে যে কি চায় তুলি, কিন্তু তুলি যেন খুব সতর্ক মেয়ে, ওর চাল অভিকে বুঝতে দেয় না আর অভিও নাছরবান্দা, প্রন করেছে যে এই সম্পকের শেষ কি। তুলির বাঁশির শুর অভিকে মোহিত করে দিয়েছে, অভি অজান্তেই কখন যে নিজেকে ধরা দিয়ে দিয়েছে সেটা আর টের পায়না। অভি ওর ব্যাপারে বেশ কিছু কথা জানতে পারল, যেমন তুলি গান শুনতে খুব ভালবাসে, সমুদ্র আর বিচ ভালবাসে, ইংরাজি রোম্যান্টিক সিনেমা ভালবাসে। অভির ও গান ভাললাগে, সেই শুনে একদিন তুলি ওকে একটা সোনি অয়াকম্যান উপহার দিল। মান্না দের গান অভির খুব প্রিয়, অভি বেশির ভাগ সময়ে অয়াকম্যানটা কলেজের ব্যাগে রেখে দিত।

কলেজে অরুনার সাথে দেখা হলেই অরুনা হেসে জিজ্ঞেস করত ওর কথা। অরুনা দিনে দিনে অভির চালচলনে পরিবর্তন দেখে মনক্ষুণ্ণ হয়ে যায়। মাঝে মাঝে অরুনার অভির ওপরে খুব রাগ হয়, কিন্তু অভির মেজাজ দেখে কিছু বলে না।

একদিন অভি অরুনাকে বুঝাতে চেষ্টা করে, "দ্যাখ ভাই, আমি অরুনিমার পেছনে পরে নেই, চিন্তা করিস না।"

অরুনা ওর দিকে প্রশ্ন ভরা চাহনি নিয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "তুই নিজেকে জিজ্ঞেস করে উত্তর দিচ্ছিস ত?"

অরুনার চোখের চাহনি যেন অভিকে ভেতর থেকে নাড়িয়ে দিল, "তুই বুকের ওপরে হাত রেখে আমাকে উত্তর দে, আমি বিশ্বাস করে নেব।"

অভি পারেনা বুকে হাত রেখে উত্তর দিতে, তাও অরুনাকে শান্ত করার জন্য বলে, "দ্যাখ আমি পরীকেই ভালবাসি। পরীর প্রতি আমার ভালবাসায় কোন ভাটা পরেনি। আমি শুধু এই খেলার শেষ দেখতে চাই, আমি জানতে চাই ওদের মাথায় কি চলছে।"

অরুনা, "কেন তোর জেনে কি হবে?"

অভি, "দ্যাখ, আমি আগেই সুব্রত আর মৈথিলীকে জানিয়েছিলাম যে আমি একজন কে ভালবাসি। সেটা জানার পরেও ওরা আমাকে তুলির সাথে দেখা করতে বলে। আমি হলফ করে বলতে পারি যে তুলিও জানে যে আমি একজন কে ভালবাসি। সবকিছু জানার পরেও যে তুলি আমার সাথে খেলে যাচ্ছে তার আমি শেষ দেখব না? এর পেছনে সুব্রত বা মৈথিলীর হাত আছে, সেটা আমি জানতে চাই।"

অভি খুব চেষ্টা করে মৈথিলীর ব্যাপারে জানার জন্য, কিন্তু চালাক মেয়ে তুলি, ঘুণাক্ষরেও অভিকে ওদের অভিপ্রায় জানায় না। একদিন অভি আর থাকতে না পেরে সোজা তুলিকে চুরনির কথা জিজ্ঞেস করে।

অভি, "তুলি, তোমাকে যখনি আমি চুরনির কথা জিজ্ঞেস করি, তখনি তুমি এড়িয়ে যাও আমার প্রশ্ন। কেন?"

তুলি, "তুমি দিদির ব্যাপারে কেন জানতে চাও? ওর ত বিয়ে হয়ে গেছে।"

অভি একবার ভাবে যে তুলিকে বলে সেই রাতের ঘটনা কিন্তু চেপে যায় অভি।

তুলি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে এক দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করে, "তোমার কি দিদিকে খুব পছন্দ হয়েছে।"

একি প্রশ্ন করল, জোরে মাথা নাড়ায় অভি, "না না না... একদম না।"

তুলি চোখ টিপে বলে, "সত্যি করে বল, দিদিকে তোমার খুব পছন্দ?"

অভি, "এই প্রশ্ন কেন করছ? আমি এমনি চুরনির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করছি, আর কিছু না। যেদিন তোমাকে তোমার বাড়িতে ছেড়ে এসেছিলাম সেদিন তুমি বলেছিলে যে তুমি আর চুরনি খুব ক্লোস রিলেসান সেয়ার করো, তাই আমি জিজ্ঞেস করলাম।"

তুলি, "তাহলে তুমি আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে জানতে চাও?" চোখ টিপে তুলি উত্তর দিল, "হ্যাঁ আমাদের দুজনে মাঝে খুব কাছের এক সম্পর্ক আছে। আমরা দুজনে সব কিছু ভাগ ভাগ করে নেই।"

চশমার পেছন থেকে অভি ওদের মাঝের সম্পর্কের ব্যাপারটা বুঝতে চেষ্টা করে।

তুলি, "ওইরকম করে কেন দেখছ। বললাম ত চুরনি আমার দিদি আর ও আমাকে ওর সব কথা বলে আর আমি ওকে আমার সব কথা বলি। দুজনের মাঝে আমরা কিছুই লুকিয়ে রাখি না।"

অভি, "হুম বেশ ভাল কথা, জেঠতুত খুড়তুত বোনেদের মধ্যে এই রকম সম্পর্ক খুব কম দেখেছি।"

তুলি এর চেয়ে বেশি আর কিছু জানায় না অভি কে।

অভি সামনে বসা গোলাপের কুঁড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে। দৃষ্টি বারে বারে ওর বুকের দিকে চলে যায়, পাতলা হলেও বেশ সুন্দর গঠন তুলির। দেখে মনে হয় যেন, নব্য অঙ্কুরিত এক ধানের শিষ, এখন দলিত হয়নি কারুর ছোঁয়ায়। ঠোঁটে সর্বদা এক মিষ্টি হাসির প্রলেপ লাগান থাকে, দু’চোখ যেন অত্যধিক কথা বলে।

চুরনিকে দেখতে অনেক আলাদা। চুরনির চেহারা অনেক বেশি নধর আর কামনাময়ি। অভি ওর কামুক চিন্তায় চুরনিকে নগ্ন করে পড়িয়ে দেয় সুব্রতর দেওয়া সেই লাল রঙের বিকিনি। খোলা চোখের সামনে চুরনির ছোট্ট লাল বিকিনি পরিহিত আকর্ষণীয় শরীর দেখতে পায়। মাথার মধ্যে যেন কামনার আগুন দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে। না অভির মনে চুরনির প্রতি কোন ভালবাসা নেই আছে শুধু কামনার আগুন, চুরনিকে নিংড়ে নেবার প্রচন্ড লিপ্সা।

হটাত তুলি অভিকে জিজ্ঞেস ক্করে, "আচ্ছা একটা কথা মাকে বলবে?"

অভি, "কি কথা।"

তুলি, "আমাকে তোমার কেমন মনে হয়?"

অভি ওদের দু বোনের কাউকেই ভালবাসে না, মনের মধ্যে একটা প্রচন্ড খিদের উদ্রেক হয়, এই দুই কামতারিত নারীর যৌবন সুধা পান করার জন্য। মনের ভাব অতি সন্তর্পণে লুকিয়ে নেয় অভি।

চোখে চোখ রেখে মিথে বলে অভি, "হুম মানে হ্যাঁ একটু, কিন্তু ভবিষ্যতের কথা জানি না।"

ওর কথা শুনে হাসি ফুটে ওঠে তুলির ঠোঁটে, "বর্তমান টাকে আনন্দে বাঁচ অভি, ভবিষ্যৎ কে দেখেছে।"

ওদিকে অরুনা বুঝতে পারে অভির আর তুলির মাঝের সম্পর্ক। নিজেকে ধিরে ধিরে অভির কাছ থেকে দুরে সরিয়ে নেয় অরুনা। অভিকে দেখে খুব কষ্ট হয় ওর, কিছুতেই কথা শুনছে না অভি। পরী রাতের বেলা স্বপ্নে দেখা দেয় কিন্তু আজকাল সেই স্বপ্ন যেন অনেক দুরের মরিচিকার মতন মনে হয় অভির।

তুলির সাতে দেখা হওয়ার প্রায় দিন বারো কেটে গেছে। এক মঙ্গলবারে তুলি রাতে অভিকে ফোন করে।

তুলি, "হ্যালো অভি।"

অভি, "হ্যাঁ বল, কিছু জরুরি আছে নাকি?"

তুলি, "না মানে হ্যাঁ। কাল বিকেলে আমি বাড়িতে একটা ছোট্ট পার্টি দিচ্ছি। তাই আমি চাই যে তুমিও এস আমার পা+টিতে।"

অভি, "কি খুশিতে পার্টি।"

তুলি, "কিছু না, এমনি এমনি পা+টি। তুমি আমি আর আমার কিছু কাছের লোকজন।"

কেন তুলি একা নয় বাড়িতে, কেন তুলিকে একা পেতে পারেনা, একবার একবার একা পেলে কি করবে অভি। না আর ভাবতে পারে না অভি, ও যেন এক অতল অন্ধকার গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে দিনে দিনে।

অভি, "তুমি একা নিশ্চয় থাকবে না, তাই ত?"

তুলির হাসি কানে আসে, "তুমি কি চাও আমি বাড়িতে একা থাকি?"

অভি, "না মানে আমি চাই না, এমনি জিজ্ঞেস করলাম।"

তুলি, "তাহলে গুড নাইট, ভালো থেক। কাল বিকেলে ঠিক পাচটায় আমার বাড়িতে। তোমাকে আমি নিরাশ করব না, তোমার স্বপ্ন পূরণ হবে।"

রাতের খাবার পরে ছাদে একা একা দাঁড়িয়ে থাকে অভি। একমনে আকাশ দেখে, বসন্তের আকাশে মেঘ কিছু কিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। দূর আকাশের কোলে একটা ছোট্ট নৌকা দেখতে পেল, নৌকাটি একটা ছোট্ট দ্বিপের দিকে বেয়ে আসছে। সেই দ্বীপের তীরে এক মোহময়ি নারী একটা গাছের গুঁড়ির ওপরে বসে খুব সুন্দর বাঁশি বাজাচ্ছে। বাঁশির সুর ওকে যেন এক অধভুত মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে। যে নৌকা চালাচ্ছে সে অভির দিকে তাকাল, অভি অবাক হয়ে গেল নিজেকে নৌকায় দেখে। দিগন্তের দিকে তাকাল অভি, আকাশে চাঁদ এবং সূর্য দুটোই পশ্চিম আকাশে দিগন্তের কোলে হারিয়ে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দুটো খগোল বস্তুর আলো বড় ম্লান, অভির নৌকা যত ওই দ্বিপের কাছে যায়, আলো যেন আরও ম্লান হয়ে আসে।
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#42
সর্পকন্যের হাতছানি


বাস থেকে নামল অভি, বুকের মাঝে যেন দুমদুম করে কেউ কিল মারছে। তুলির বাড়ির দিকে যত এগোয় তত যেন ওর হৃদপিন্ড কিল মারে ওর বুকের পাঁজরে। মাথা ঝিনঝিন করে অভির, একটা সিগারেট ধরায়, লম্বা একটানে আগা থেকে অনেক টা জ্বলে ওঠে। বুক ভরে ধোঁয়া নিয়ে কিছুক্ষণ বুকের মধ্যে রেখে ছেড়ে দেয়। মাথার ঝিম ভাব যেন একটু কম মনে হয়। সূর্য অনেক আগে পশ্চিমে ঢলে গেছে। রাস্তার আলো একে একে করে জ্বলে উঠছে। রাস্তায় ধিরে ধিরে লোকের ভির বাড়ছে, কারুর বাড়ি ফিরে যাবার তাড়া, কারুর বিকেলের বেড়ানোর পালা, কেউ দোকানে যাচ্ছে। কল্লোলিনী কোলকাতা নিজের মহিমায় রুপের ছটা বিচ্ছুরন করছে।

কলিং বেল বাজাতেই তুলি এসে দরজা খুলল। তুলিকে সামনে দেখে অভি থ। গাড় বাদামি রঙের ঠোঁটে এক অনির্বচনীয় কামনার হাসি। আজ যেন ওকে আগের থেকে বেশি সুন্দরী আর লাস্যময়ী দেখাচ্ছে। পরনের পোশাক ওর ফুটন্ত শরীরকে ঢেকে রাখার চেয়ে যেন বেশি করে উন্মুক্ত করে তুলে ধরেছে। পরনে একটা ছোটো নীল রঙের স্কার্ট, জানুর মাঝে এসে ফুরিয়ে গেছে। পায়ের গোড়ালি থেকে দৃষ্টি উঠতে শুরু করল অভির, বাঁকা পায়ের গুলি যেন চকচক করছে, তারপরে মসৃণ পেলব জানু স্কার্টের নিচে ঢুকে পড়েছে। নাভির অনেক নিচে বাঁধা স্কার্ট এর বেল্ট, পেটের পাশে একটু মেদের মতন ফুলে উঠেছে, আর তাঁর জন্য নাভির চারপাশের গোল পেট যেন একদলা মাখনের মতন দেখাচ্ছে। নিতম্ব বেশ পুরুষ্টু কিন্তু একটু ছোটো, বয়সের সাথে সাথে বেড়ে উঠবে। ঊর্ধ্বাঙ্গে হাতকাটা বুকে আটা সাদা রঙের গেঞ্জি। নরম বুকের সাথে লিপ্টে আছে আর সুগোল বক্ষ দুটি কে যে ফুলইয়ে দিয়েছে। দুই বক্ষের যেন ছোটো দুই শৃঙ্গ এবং তার ওপরের নুড়ি পাথরের মতন অঙ্গটি বেশ ভালো ভাবে বোঝা যাচ্ছে। মানস চক্ষে অভি দেখতে পায় যে ওর ঊর্ধ্বাঙ্গে ওই গেঞ্জির নিচে কোন অন্তর্বাস নেই। চাপা গেঞ্জি ওর বুকের সাথে এঁটে বসার দরুন বক্ষ বিভাজন যেন ঠিকরে সামনের দিকে বেড়িয়ে পড়েছে। তুলির গায়ের মাদকতা ময় ঘ্রান অভিকে মাতাল করে তুলেছে।

তুলি এই মোহময়ি রুপ দেখে অভির ভেতরের সিংহ পুরুষটি মাথা চাগিয়ে উঠল। এক হাত কোমরে আর এক হাতে একটা গ্লাস নিয়ে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে তুলি, ওর দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।

তুলি, "ওইরকম ভাবে আমাকে কি দেখছ? ভেতরে আসবে না আমাকে এখানে দাঁড়িয়েই গিলবে?"

তুলির গলার আওয়াজ পেয়ে অভি যেন জেগে উঠল, এতক্ষণ কি ও স্বপ্ন দেখছিল? না ওই ত তুলি ওর সামনে, কোমর দুলিয়ে চালে এক ছন্দ তুলে হেঁটে চলেছে। হাঁটার তালে তালে, স্কার্ট টা ফুলে ফুলে উঠছে আর কোমল নিতম্বের ওপরে দুলছে। অভির বুকের ভেতর টনটন করে উঠল ওই দৃশ্য দেখে, থাকতে পারছে না অভি, মনে হল এই যেন তুলিকে জড়িয়ে ধরে দু’হাতে, নিংড়ে নেয় ওর কোমল অধরা যৌবন আর পিষে ফেলে নিজের নিচে। খাবলে, পিষে, নিংড়ে, চুষে একাকার করে দেয় ওর কোমল শরীরটাকে। স্কার্ট বার বার নিতম্বের ওপরে দুলছে, অভির একবার মনে হল যেন দুই নিতম্ব দুই হাতের থাবায় নিয়ে টিপে দেয়। গলার কাছে যেন কামলিপ্সা দলা পাকিয়ে উঠল অভির।

অভি কি করছে, রম্ভার বাঁশির তালে তালে এক কালো অন্ধকার গুহার মধ্যে প্রবেস করছে। মোহাবিস্ট অভির মাথায় কি ঠিক কি ভুল কিছুই বোঝার ক্ষমতা থাকে না।

বসার ঘরে ঢুকে তুলি ওকে সোফার ওপরে বসতে বলে, হটাত করে ওর দিকে ঘুরে তাকায় তুলি আর হাতে নিয়ে যায় অভির বুকের ওপরে। অন্য হাতে যে গ্লাস থাকে তাঁর পানীয় ছলকে ওঠে আর অভির জামা ভিজিয়ে দেয়।

তুলি আঁতকে ওঠে, "ইস আমি বড় দুঃখিত। উফ একি হয়ে গেল। দাড়াও দাড়াও, তুমি শার্ট খুলে দাও আমি ধুয়ে আয়রন করে দিচ্ছি তোমার শার্ট।"

অভি ওর বাঁশির তালে তালে দুলছে। বসার ঘরের চারদিকে চোখ বুলিয়ে নেয় অভি, পন্ডিত শিব কুমার শর্মার সন্তুর বাজছে। ঘরের মধ্যে নীলাভ আলো জ্বলছে। গলা শুকিয়ে গেছে অভির, তুলির মোহময় মাধুর্য দেখে।

ঠোঁট লালায় ভিজিয়ে তুলিকে জিজ্ঞেস করল অভি, "তুমি ত বলেছিলে যে তুমি একা নও, কিন্তু কাউকে ত দেখছি না। আমার সাথে কি খেলা খেলছ তুমি?"

তুলি ওর দিকে জিব বের করে এক মাদকতা ময় হাসি দিয়ে উত্তর দেয়, "তুমি ভীতু নও নিশ্চয়, তাই না অভিমন্যু। আমি তোমাকে বলেছিলাম যে আমি একা থাকব না, সুতরাং আমাকে ভয় কিসে, সাথে কেউ আছে চিন্তা নেই। জামা খুলে সোফায় বস, অভিমন্যু।"

জামা খুলে তুলির হাতে ধরিয়ে দিল অভি। তুলির কামতারিত দৃষ্টি যেন অভির বুকের পরে আগুনের ছেঁকা দিয়ে দিল। অভির ঊর্ধ্বাঙ্গে শুধু হাতকাটা গেঞ্জি। সোফায় হেলান দিয়ে বসে পড়ল অভি। শার্ট টা হাতে নিয়ে ধিরে ধরে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল তুলি। বেড়িয়ে যাবার আগে, ওর দিকে ফিরে তাকাল তুলি, তর্জনী ঠোঁটের কাছে এনে একটা ছোট্ট চুমু ছুঁড়ে দিল অভির দিকে। চোখের ভাষা যেন ওকে পুড়িয়ে দিচ্ছে বাসনার আগুনে।

তুলি, "চমকের জন্য তৈরি থাক অভিমন্যু।"

অভি ঘরের চারদিকে চোখ বুলায়। বসার ঘরখানি বেশ সাজান গুছান, দেওয়ালে বেশ কয়েকটা পেন্টিং ঝুলছে, এক দিকের দেওয়ালে একটা বিশাল কাঁচের আলমারি, তাঁর মধ্যে বই থাকে থাকে সাজান। বেশ কিছু কাপ প্লেট সাজান, বসার ঘরের একদিকে খাবার ঘর, খাবারের টেবিলের ওপরে একটা ফলের ঝুরি রাখা, তাঁর মধ্যে বেশ কিছু ফল রাখা। অভি বসে আছে লম্বা সোফার এক দিকে, দুদিকে ছোটো সোফা রাখা। সোফার সামনে একটা ছোটো কাঁচের টেবিল। কাঁচের টেবিলের নিচে কারপেট পাতা। অভি যেখানে বসে আছে তার ঠিক সামনে একটা ঘর, ঘরের দরজায় একটা পর্দা ঝুলছে, মৃদু মন্দ বাতাসে সেই পর্দা দুলছে। মনে হয় তুলির ঘর ওটা।

মাথা ঘুরিয়ে অন্য দিকে দেখল অভি, ঠিক যেখানে বসে আছে তাঁর পেছনে আর একটা ঘর। সেই ঘরের দরজায় একটা পর্দা ঝুলছে। বাকি ঘরে আলো জ্বলছে না কিন্তু পেছনের ঘরের ভেতর থেকে এক ধিমে আলোর আভাস আসছে। সামনের টেবিলে, তিনটে গ্লাস আর এক বোতল ভদকা। পাশে একটা কাঁচের বাটিতে কাজু, কিসমিস, খেজুর আখরোট রাখা। পাশে একটা ছোটো থালায় আদা আর লেবু, তাঁর সাথে স্যালাড সাজান।

অভি চুপ করে একের পর এক ঘটনা বলি অনুধাবন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিছু পরে আরেকটা সিগারেট ধরাল অভি, বুক ভরে একটান দিল সিগারেটে, যত টা ধোঁয়া এক বারে নেওয়া যায় ফুস্ফুসের মধ্যে সব নিয়ে নিল। ধোঁয়া ছাড়তেই দেখতে পেল যে তুলি ওর দিকে ধিরে ধিরে হেঁটে আসছে।

অভি হাতের মুঠি করে মুখের সামনে নিয়ে এক শয়তানি হাসি হাসল। তুলির চোখেও দুষ্টুমির হসি যেন ওকে তারিয়ে বেড়াচ্ছে।

অভি তুলিকে জিজ্ঞেস করল, "তুমি বাড়িতে একা, তাই ত। বাড়িতে আর কেউ আছে বলে আমার মনে হয় না। তোমার বাবা মা কোথায়, অরুনাভ কোথায়?"

তুলি কিছু না বলে অভির সামনে কাঁচের টেবিলের ওপরে বসে পরে। পাদুটি জড় করে অভিরে পায়ের ফাঁকে ঠেলে দেয়। অভির পুরুষ সিংহ মাথা চাগিয়ে টনটন করে ওঠে, নাভির কাছে চিনচিন করে ওঠে। তুলির স্কার্ট আরও উপরে উঠে গেছে, জানুর অধিকাংশ অভির চোখের সামনে মেলে ধরা। দুই পেলব জানু একত্রিত। সামনে ঝুঁকে তুলি অভির জানুর ওপরে হাত রাখে। তুলির তন্বী শরীরের থেকে যেন কামনার আগুনের হল্কা নির্গত হয়, অভি টের পায় সেই আগুনের তাপ। অভির ঠিক চিবুকের নিচে তুলির অনাবৃত বক্ষ বিভাজন, অভি চোখ সরাতে পারছে না ওই নরম বলয়ের ওপর থেকে।

তুলি ফিসফিস করে অভির ঠোঁটের ওপরে উত্তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে উত্তর দেয়, "বাবা মা মামার বাড়ি গেছে, আজ রাতে কেউ বাড়ি ফিরবে না।"

তুলি অভির জানুর ওপরে হাত বুলাতে শুর করে, হাঁটু থেকে জানুর মাঝখান অবধি। অভির নাভির তলদেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে, সারা শরীরে কেউ যেন জ্বলন্ত লাভা ঢেলে দিয়েছে।

অভির কি করা উচিত, ঠোঁটের সামনে যে মদিরা মাখা ঠোঁট মেলে রয়েছে, সেখানে কি চুমু দেবে অভি, না নিজেকে সংবরণ করে খেলার পরিণতি দেখবে। অভি শেষ পর্যন্ত নিজেকে সামলে নিল, ওই গাড় বাদামি রসভরা ঠোঁটে চুমু দিল না।

হটাত করে তুলি ওর দান হাতের পাঁচ আঙ্গুল মেলে ধরল অভির মুখের ওপরে আর ধিরে ধিরে আঙ্গুল বুলিয়ে দিল সারা চেহারায়। কোমল আঙ্গুলের স্পর্শে অভির শিরায় উপশিরায় কামাগ্নির দাবানল দাউদাউ করে জ্বলে উঠল। অভির সিংহ যেন মাথা ফুঁরে বন্ধনের ভেতর থেকে প্রবল ভাবে বেড়িয়ে আসার চেষ্টা করছে।

তুলি মধু ঢালা স্বরে বলে, "এক বার বলো তুমি আমাকে ভালোবাসো।"

নিজের অজান্তেই অভি বুক চিৎকার করে উঠল, "হ্যাঁ তুলি হ্যাঁ, সত্যি তোমাকে আমার খুব ভালো লাগে।" কিন্তু কই, অভির ঠোঁটত নরল না, গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বের হল না। অভি হতবাক হয়ে সোফায় বসে রইল, গলা যে ওর শুকিয়ে গেছে, কথা বলার ক্ষমতা টুকু হারিয়ে ফেলেছে।

তুলি, "কি চাও তুমি আমার কাছ থেকে? একটা ড্রিঙ্ক বানিয়ে দেব কি?"

স্থানুর মতন মাথা নাড়ল অভি, হ্যাঁ, ওর গলা শুকিয়ে কাঠ, গলায় পানীয় ঢালতেই হবে। কান মাথা কামের তাড়নায় উত্তপ্ত। পান্টের সামনের দিক ফুলে উঠেছে, পরিষ্কার ভাবে সিংহের অবয়াব পরিস্ফুটিত হয়ে উঠেছে।

তুলি কাঁচের টেবিল থেকে উঠে পরে কারপেটের ওপরে হাঁটু গেড়ে বসে পরে। অভি দুহাত মুঠো করে সামনে ঝুঁকে, মাথা হাতের ওপর দিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকে। ভাবতে থাকে যে ও কেন নিজেকে এত টেনে ধরে রেখেছে, ওর সামনে উন্মুক্ত মদিরার পেয়ালা তাও অভি কেন সেই সুরা পান করছে না, কে ওকে সেই সুরা পান করতে বিরত করছে। বন্ধ চোখের সামনে অভির কামুক মন ধিরে ধিরে তুলিকে নগ্ন করল আর সুধা পান করল।

অভি এই খেয়ালে ডুবে, এমন সময়ে এক অতি পরিচিত সুরেলা আওয়াজ কানে এল, "হাই, কেমন আছো?"

ধিরে ধিরে মাথা তুলল অভি, এই আওয়াজ চেনা কিন্তু কার? তুলির নয়, বা পরীর নয়।

সামনের দরজার দিকে চোখ গেল অভির। দরাজায় অভির জন্য আরও কিছু চমক প্রতীক্ষা করছিল। হাঁ করে তাকিয়ে থাকে অভি, চোখের সামনে চুরনির নধর কামত্তেজক শরীর। পরনে একটা হাঁফ হাতা সাদা শার্ট, সামনের অধিকাংশ বোতাম খোলা, গায়ে আর কিছু নেই।

হতবাক অভি হাত মুঠি করে কামড়ে ধরে, স্বপ্নেও ভাবেনি যে চুরনি এখানে থাকতে পারে। ধিরে ধিরে ও পুরো মতলব টা বুঝতে পারল। এই দুই কামনাতারিত নারী, ওকে ওদের রুপের জালে জড়িয়ে নিয়েছে। ওদের বাজানো বাঁশির তালে অভি পা পড়ছে। অভি যেন নিরুপায় স্থানুর মতন বসে হাঁ করে চুরনির দিকে তাকিয়ে।

চুরনির পরনে শার্ট খানা জানুর খাঁজ পর্যন্ত এসে নেমেছে। কোমরের থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত সম্পূর্ণ অনাবৃত, পেছনে সুডৌল নিতম্ব সম্পূর্ণ অনাবৃত। লাস্যময়ী রুপে দাঁড়িয়ে চুরনি, একপায়ে পুর ভর দিয়ে আরেক পা একটু আগে বাড়িয়ে। ডান হাত মাথার ওপরে তোলা, দরজার কাঠ ধরে নিজেকে হেলান দিয়ে রেখেছে, আর বাঁ হাত ভাঁজ করে কোমরে রাখা। মাথার চুল খোলা, বাঁ কাঁধের ওপর দিয়ে সামনে এসে নরম বুকের ওপরে দোল খাচ্ছে। উন্নত বুক দুটি জামার ভেতরে যেন মারামারি করছে, নিজেদের ওই বস্ত্রের বাঁধন থেকে ছাড়ানোর জন্য। পীনোন্নত বুকজোড়া অর্ধ অনাবৃত, বক্ষ বিভাজনের মস্রন ত্বকের ওপরে ঘরের আলো পেছল খেয়ে পড়ছে যেন। জামার ভেতর থেকে ঠিকরে বেড়িয়ে আসা উন্নত বুকের ওপরে কোন অন্তর্বাস নেই, বুকের ওপরে দুটি নুড়ি পাথর যেন জামা ফুঁরে ওর দিকে তাকিয়ে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। অভির দৃষ্টি নেমে আসে সরু কটিদেশে, তাঁর পরে ফুলে ওঠা নিতম্বদেশ। সবকিছু যেন ওর হাতের তালুর মতন মেলে ধরা ওর চোখের সামনে। অভির শরীরে বারংবার তরিত প্রবাহ বয়ে চলে। কামুকতার চরম দাবানলে ঝলসান চুরনি এক জানুর সাথে আরেক জানু মৃদু মৃদু ঘষে দেয়। ঘর্ষণের ফলে জামা আরও কিছু ওপরে উঠে আসে জানুসন্ধির কাছে। অভির কামুক চোখ যেন দেখতে চেষ্টা করে যে চুরনি নিচে কোন অন্তর্বাস পড়েছে কিনা।
Like Reply
#43
অপরাধ স্বীকার

মর্মাহত, পরাজিত অভি একাকী রাস্তা দিয়ে হাঁটতে থাকে, কি করনীয় কিছু বুঝে উঠতে পারে না। চোখ জ্বালা করছে কিন্তু সে চোখে জল আসে না, সব জল যেন শুষে নিয়েছে ওর বিবেক। কি পাপ করে ফেলেছে অভি, প্রেয়সীর প্রেম সরিয়ে রেখে এক বিষকন্যার হাতছানির ডাকে সারা দিয়েছে। কোথায় গেলে নিজের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে পারবে সেই কথা ভাবে।

ঘড়ি দেখল, রাত সাড়ে আটটা বাজে, বাড়ি ফেরার মন নেই। সারা রাত যেন এই রাস্তায় কাটিয়ে দিলে ভাল হয়। বুকের ভেতরে সেই সাহস টুকুও নেই যে অরুন্ধুতি বা শুচিস্মিতার সম্মুখিন হতে পারে। নিজের ওপরে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে অভি, এতদিন মা ওকে বলতেন যে তুই ত একটা অকাঠ মূর্খ ছেলে, আজ সেই কথা যেন সত্যি হয়ে দাঁড়াল। পরী কি কোনদিন ওকে ক্ষমা করতে পারবে?

বাড়িতে ফোন করল অভি, মাকে জানাল যে রাতে দেবাশিসের বাড়িতে থেকে যাবে, প্রক্টিকালের কিছু কাজ বাকি। মায়ের কাছে দেবাশিসের ফোন নাম্বার নেই, তাই মা খবর নিতে পারবেন না যে অভি রাতে কোথায় ছিল। ঢাকুরিয়া থেকে বাসে চেপে এসপ্লানেড চলে এল।

এস্প্লানেড এসে শহিদ মিনারের নিচে অনেকক্ষণ চুপ করে বসে রইল। রাতের অন্ধকার ঘনিভুত হয়ে আসে অভির চারপাশে। লোকজনের কোলাহল যেন অভির কাছে বিষাক্ত হয়ে ওঠে। আসে পাশের সব লোকজন যেন অভির চেয়ে অনেক খুশি আর শান্তিতে দিন জাপন করছে, সব ব্যাথা সব বেদনা যেন অভির একার। না অভি বাকিদের কথা চিন্তা করল না, নিজের কিথা চিন্তা করল অভি। কত বড় নিচ আর হীন প্রকৃতির ছেলে সে। সেই অন্ধকার রাতে ওর পশ্চাত্তাপ শোনার জন্য ওর পাশে কেউ নেই।

একটা সিগারেট ধরিয়ে পাশের একটা চায়ের দুকান থেকে চা খেল। ট্রাম স্ট্যান্ড থেকে হাঁটতে হাঁটতে বাস স্ট্যান্ডের দিকে এগতে থাকে। রাস্তা পার করার পরে অভি লক্ষ করে যে ফুটপাথে একটা লোক বসে আছে, গায়ে ছেঁড়া জামা মাথার চুল উস্ক খুস্ক। অভির ওকে দেখে মনে হল যেন ওই লোকটা পাগল অথবা ভিখারি। হয়ত অতীত জীবনে কোন পাপের শাস্তি পেয়ে ওই লোকটার বর্তমান অবস্থা পাগলের মতন। অভির মনে হল যেন চোখের সামনে নিজের ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছে। কিছু দুরে দাঁড়িয়ে অভি একমনে লোকটাকে দেখতে থাকে। ওই পাগল প্রকৃতির লোকটা অভিকে লক্ষ্য করে।

হাত বাড়িয়ে ভিখে চায় অভির কাছে, "আল্লাহ র নামে কিছু দিয়ে দে বাবা, আল্লাহ তোর ভালো করবেন।"

অভি ধিরে ধিরে লোকটার দিকে এগিয়ে একটা দশ টাকার নোট বের করে ওর হাতে দেয়। লোকটা নোটের দিকে তাকায় একবার আর একবার অভির মুখের দিকে তাকায়। কিছু পরে লোকটা অভিকে বলে,

"তু বদর নেহি জো শামস সে রোশন হো। (তুই চাঁদ নয় যে সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়)
তু বদর নেহি জো শামস সে রোশন হো। (তুই চাঁদ নয় যে সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়)
তু উন সিতারো মে হ্যায় (তুই আকাশের সবথেকে উজ্জ্বল নক্ষত্র )
জো ভটকে রুহ কো রাহ দিখায়ে (যে হতাশা পূর্ণ লোকেদের পথ দেখায়)
রেহেনুমা বন আউর আপনে কলব কি পুকার সুন" (নিজের ভেতরের আওয়াজ শুনে জেগে উঠে অন্যদের পথ দেখা)

ওই লোকটা এবারে মনে হল না যে উনি কোন পাগল লোক। মাথা নত করল অভি অনার সামনে, হাত তুলে আশীর্বাদ করলেন সেই ফকির।

ফকিরের কথা শুনে অভি চিন্তা করে দেখল, না ওকে পরাজিত সৈনিকের মতন পালিয়ে গেলে চলবে না, লুকিয়ে থাকলে চলবে না, ওর প্রেয়সীর ডাক ওকে সেই বিষকন্যার কবল থেকে মুক্ত করেছে। দেরি হয়ে যাবার আগেই ওকে ওর প্রেয়সীর সামনে নিজেকে আত্ম সমর্পণ করতে হবে, জানাতে হবে সব ঘটনা। বুকের ভেতরের ঘা থেকে একমাত্র ওর প্রেয়সী পারবে ওকে মুক্ত করতে।

বাইরের এক পি.সি.ও থেকে কল্যাণী কে ফোন করল অভি, ঘড়িতে তখন রাত ন’টা।

অভি, "হ্যালো অভিমন্যু? আমাকে চিনতে পারছো?"

কল্যাণী এত রাতে অভির ফোন পেয়ে খুব অবাক হয়ে যায়। গ্রামের দিকে বেশির ভাগ লোকজন তাড়াতাড়ি শুয়ে পরে, ওরাও শুয়ে পড়েছিল। কল্যাণী, "হ্যাঁ হ্যাঁ, তোমার কথা কি করে ভুলবো। তুমি ত এখন বেশ তাজা, পরী ত সবসময়ে তোমার কথা বলে। তা এত রাতে ফোন করেছ, কি ব্যাপার?"

অভি কাতর সুরে বলে, "আমার পরীর সাথে কথা বলা খুব দরকার, কিন্তু ফোনে নয়।"

কল্যাণী, "তাহলে কি করে?"

অভি, "তুমি দিদাকে কিছু একটা বলে ওকে তোমার বাড়িতে ডেকে আনতে পার?"

কল্যাণী দুষ্টু হেসে উত্তর দেয়, "কেন কেন, বাসন্তি পুজো পর্যন্ত অপেক্ষা করা যাচ্ছে না, যে এখুনি পরীকে চাই? শয়তান ছেলে..."

অভির গলার আওয়াজ ভারী হয়ে আসে, "না কল্যাণী অইসব নয়। দয়া করে পরীকে ডেকে আনতে পারো?"

কল্যাণী অভির গলার আওয়াজ শুনে বুঝতে পারে ওর মনের ব্যাথা, "তুমি এখন কোথায়?"

অভি, "আমি এখন এসপ্লানেড বাসস্টান্ডে, আমি শেষ বাসে তোমার বাড়ি আসছি।"

কল্যাণী, "ঠিক আছে আমি দেখি কি করে পরীকে নিয়ে আসতে পারি। সাবধানে এস আর দিপঙ্কর বাসস্টান্ডে তোমার জন্য অপেক্ষা করবে খানে।"

অভি ওকে প্রান থেকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাসে উঠে পরে। অন্ধকার রাত কেটে বাস এগতে শুরু করে। বসিরহাট যত কাছে আসে, অভির বুকের আলোড়ন যেন তত চাগিয়ে ওঠে। কানের মধ্যে মাথার মধ্যে যেন কেউ দামামা বাজায়। চিন্তা করে পায় না যে ওর সব কথা শুনে পরীর প্রতিক্রিয়া কি হবে।

রাত প্রায় বারোটা নাগাদ অভি বসিরহাট পৌঁছায়। দিপঙ্কর ওর জন্য দুটি সাইকেল নিয়ে অপেক্ষা করছিল। ওকে দেখে একটু চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করে, "ব্যাপার কি বলতো, এত রাতে শুচিস্মিতাকে ডেকে পাঠালে?"

অভির কথা বলার মতন মনের অবস্থা ছিল না, "আমি কিছু অসুবিধায় পড়েছি আর তাই পরীর সাথে একটু সেই ব্যাপারে কথা বলার দরকার তাই পরীকে চাই।"

কল্যাণীদের বাড়ি পৌঁছে অভি লক্ষ্য করল যে পরী আর কল্যাণী উৎসুক নয়নে ওর পথ চেয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে। অভিকে দেখেই পরী দৌড়ে এসে ওর জামার কলার খামচে জল ভরা চোখে জিজ্ঞেস করে, "ছোটো মায়ের কি হয়েছে?"

ছোটমায়ের প্রতি ওর এত ভালবাসা দেখে, অভির চোখ ফেটে জল আসে, "তুমি কে?"

অভি নিজেকে সামলে উত্তর দেয়, "তোমার ছোটো মা আর বাবু ভালো আছেন।"

বুকের ভেতর থেকে যেন এক বড় পাথর নেমে যায় পরীর।পরী, "তাহলে তোমার কি হয়েছে? অরুন্ধতির সাথে কি ঝগড়া হয়েছে?"

মাথা নাড়ায় অভি, না ওর সাথে ঝগড়া হয়নি, অরুনা ভাল আছে। পরী হেসে জিজ্ঞেস করে, "তাহলে কি চুরি ডাকাতি করেছ নাকি না কাউকে খুন করেছ?"

গালের ওপরে হাত বুলিয়ে পরী ওর মুখের দিকে ভাল করে তাকায়। পরী লক্ষ্য করে যে অভির দু’চোখ ছলছল করছে আর ঠোঁট জোড়া তিরতির করে কাঁপছে। পরী ওই চোখ দেখে বুঝতে পারে যে অভির মনের মধ্যে এক বিশাল ঝড় দানা বেঁধে আছে।

পরী ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে, "আমার কথা খুব মনে পড়ছিল তাই তুমি আমার সাথে দেখা করতে এসেছ তাই না?"

অভি, "আমি তোমার সাথে একটু একা কথা বলতে চাই।"

অভি ধরা গলার আওয়াজ শুনে পরী বুঝতে পারে যে, যাই ঘটেছে সেটা বেশ সঙ্গিন। অভির মনের ভেতরে যে এক বিশাল ঝড় দানা বেঁধেছে আর সেটা যে অভিকে কুরে কুরে শেষ করে দিচ্ছে সেটা বুঝতে পরীর দেরি হয় না। পরী কল্যাণীর দিকে তাকাল। কল্যাণী বলল যে ওরা ওদের শোবার ঘরে যেতে পারে, কেউ ওদের কিছু বলবে না। কল্যাণীরা অন্য ঘরে শুয়ে পড়বে।

পরী অভিকে টেনে ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। অভির দিকে উৎসুক চোখে তাকিয়ে থাকে পরী। সামনে এসে বুকের কাছে হাত জড় করে দাঁড়িয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করে যে কি হয়েছে অভির। অভি কলেজের ব্যাগ বিছানার ওপরে ছুঁড়ে ফেলে পরীর সামনে হাঁটু গেড়ে মাথা নিচু করে বসে পরে।

ধরা গলায় বলে ওঠে, "আমি পাপ করেছি পরী।"

পরী বিশ্বাস করতে পারে না অভির কথা, আঁতকে ওঠে, "কি?" পরী ওর চুলের মুঠি ধরে অভির মুখ ওপর দিকে করে, সোজা চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, "কি বলতে চাইছ?"

অভির দুগাল দিয়ে চোখের জল গড়িয়ে পরে, চাপা সুরে বলে,"অরুনিমা..."

পরী যেন নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারেনা। চুলের মুঠি ছেড়ে দিয়ে চিবুকে আঙ্গুল স্পর্শ করে জিজ্ঞেস করে, "অরুনিমা কি? কি করেছ ওর সাথে?"

অভি, "মৈথিলী ও ছিল..."

আঁতকে ওঠে পরী, "না" ধুপ করে বিছানার ওপরে বসে পরে। বুকের মধ্যে এক বিশাল ঝড় শুরু হয়ে যায়, "আমি বিশ্বাস করি না।"

ঘরের মধ্যে নিস্তব্ধতা নেমে আসে। পরীর চোখে দুখের নয়, রাগে চোখ ফেটে জল আসে। কান আর গাল গরম হয়ে যায় ওর, রাগে কাঁপতে থাকে পরী।

চিৎকার করে ওঠে অভির দিকে, "ওদের সাথে কি করেছ তুমি?"

অভি, "আমি কিছু করিনি..."

চিৎকার করে ওঠে পরী, "একদম মিথ্যে কথা বলবে না আমার সামনে, কি করেছ ওদের সাথে সত্যি করে বল? কিছুই যদি করনি তাহলে এত রাতে আমার কাছে কেন এসেছ?" তারপরে বুক ফেটে কান্না বেড়িয়ে আসে পরীর, "হাঁ ভগবান, আমি যাকে ভালবাসি সেই কেন আমার সাথে এই রকম করে? আমি ছোটো ছিলাম আমার বাবা কে ভগবান নিয়ে নেন। আমার দিদিরা আমাকে সারা জীবন কষ্ট দিয়ে গেছে, আমার মা আমাকে ছোটো বেলায় ঠিক করে দেখেনি। ছোটো মা যে আমাকে দেখেছিল, তাকেও ভগবান আমার থেকে দুরে সরিয়ে নেয়। চব্বিশ বছর পরে আমি আমার ভালবাসা খুঁজে পেলাম তোমার কাছে আর? পরের সপ্তাহে তোমার জন্মদিন, আমি কত স্বপ্ন দেখেছিলাম যে তোমাকে আমি চমক দেব। আমার ভালবাসা কি এত কম, এত ছোটো, যে এক বারের জন্যেও তোমার আমার কথা মনে পরেনি?"

পরীর প্রশ্নের উত্তর অভির কাছে নেই। প্রথম পদক্ষেপ অভি নিয়েছিল সেই বিষকন্যের দিকে। অরুনা বারবার করে বারন করা সত্তেও অভি কান দেয় নি ওর কথায়। ঘরের প্রচন্ড নিস্তব্ধতা দুজন কেই কুরে কুরে খেয়ে চলেছে।

ধরা গলা অভি জিজ্ঞেস করে, "আমার ওপরে কি তোমার আস্থা আছে?"

বিভ্রান্ত পরী ওর ভেজা চোখ নিয়ে অভির চোখের দিকে তাকায়, "তোমার ওপরে আস্থা ... কিন্তু মৈথিলী আমার বৌদি।"

পরী বিছানা থেকে নেমে এসে অভির সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পরে। অভির মুখ হাতের মধ্যে আঁজলা করে নিয়ে, চোখে চোখ রেখে বলে, "অভি আমার ভালবাসা একদিনে, এক মুহূর্তে এসেছে। সুব্রতদার বিয়ের রাতে, উঠানে তোমাকে প্রথম বার দেখে কেন জানিনা আমার মনে হয়েছিল যে তুমি সেই মানুষ।"

অভি কলেজের ব্যাগের দিকে দেখিয়ে বলে, "ওর মধ্যে একটা ওয়াকম্যান আছে, ওটা চালাও সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।"

পরী ওয়াকম্যান হাতে নিয়ে একবার চালায়, পুরোটা শোনে, নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারেনা পরী, বার বার চালিয়ে শোনে।

কপালে করাঘাত করে মাথা নাড়িয়ে অভিকে বলে, "এটা কি, অভি? আমি যা শুনছি সেটা কি ঠিক শুনছি?"

অভি, "এটাই সত্যি।"

দু’জনে অনেকক্ষণ ধরে চুপ করে বসে থাকে। অভির বুকের মধ্যে ধুকপুকানি বেড়ে চলে, পরী সব শুনে কি প্রতিক্রিয়া করবে। পরী ওয়াকম্যান শুনে থ হয়ে বসে, বাড়ির নতুন বউ, ওর ছোটো বৌদি শেষমেস এই রকম এক নিচ নারী?

মাথা নাড়ায় পরী, "আমার বৌদি শেষ পর্যন্ত আমার সাথে এই রকম করতে পারল? বিয়ের পরেও কি করে তোমার সাথে ওই রকম ব্যাবহার করতে সাহস করে? আমি কিছুতেই কিছু বিশ্বাস করতে পারছি না।"

অভি পরীর বিভ্রান্ত জল ভরা চোখের দিকে ম্লান হেসে বলল, "চুরনি জানে না যে আমি তোমাকে ভালবাসি।"

অবশেষে পরী চোখের জল মুছে হেসে দিল, "তুমি না একটা মস্ত গাধা, কিন্তু তুমি আমার গাধা।"

অভির গালের ওপরে আলতো করে চাঁটি মেরে দেয়।

অভি পরীর হাত ধরে ফেলে, "আউচ, আমাকে মারলে কেন?"

পরী, "এই চাঁটি ওদের দিকে পা বাড়ানোর জন্য।"

হাত ছাড়িয়ে অভির গালে আরেক থাপ্পর মারে পরী, এবারে আগের চেয়ে জোরে। অভি চমকে যায়, পরীর দিকে তাকায়।

পরী একটু রেগে গিয়ে বলে, "এটা অরুন্ধতির নাম নেওয়ার জন্য। তুমি অন্য কারুর নাম নিতে পারতে।"

মাথা চুলকে মাথা নিচু করে উত্তর দিল অভি, "তখন আমার মাথায় কিছু আর আসছিল না, পরী।"

পরী অভির মুখখানি আঁজলা করে নিয়ে আস্তে করে কপালে চুমু খায়, "এটা আমার ভালবাসা আর আস্থার জন্য যে তোমাকে আমি আবার কাছে ফিরে পেয়েছি।"

অভি পরীর কোমর জড়িয়ে ধরে বুকের মধ্যে মুখ লুকিয়ে নেয়। অভির মনের ভেতরে এক অনাবিল শান্তি, শেষ পর্যন্ত পরী ওকে ক্ষমা করে দিতে পেরেছে। পরী ওর মাথার চুলে হাত বুলিয়ে আদর করতে থাকে।

কিছু পরে পরী ওকে জিজ্ঞেস করে, "তুমি বিকেল থেকে কিছু খাওনি, তোমার খিদে পেয়ে থাকবে নিশ্চয়।"

অভি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, "তুমি কে? তুমি কেন আমাকে এত ভালোবাসো?"

অভির চোখ থেকে চশমা খুলে গালের ওপরে জলের দাগ মুছে উত্তর দেয়, "তুমি যে আমার সেই ছোট্ট রাজকুমার। দেখি কিছু খাবার পাওয়া যায় কিনা।"

পরীকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অভি বলে, "আমার খিদে নেই পরী, শুধু তুমি আমার কাছে থাকো তাহলেই হবে।" বুকের মাঝে, গলায় আলতো করে নাক ঘষতে শুরু করে দেয় অভি। পরী ওর পিঠের ওপরে আদর করে হাত বুলিয়ে দেয়, মাথার চুলে আঙ্গুল দিয়ে আঁচরে দেয়, ঠিক যেন মা তার ছেলেকে সস্নেহে আদর করছে।

কিছুক্ষণ অভিকে আদর করার পরে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে, "খিদে পেয়েছে, খেয়ে নাও নাহলে এবারে সত্যি সত্যি মার খাবে, আর অরুন্ধুতির ফোন নাম্বার আমাকে দাও, আমি ওর সাথে কথা বলতে চাই।"

অভি, "কেন?"

পরী, "তুমি আবার জিজ্ঞেস করছ, কেন? যেন তুমি জানো না তুমি কি করেছ। আমি ওকে ফোন করে সব জানাব তুমি কি কি করেছ।"

অভি কাতর মিনতি করে পরীর সামনে, "প্লিস অরুনাকে বোলো না। ও আমাকে মেরে ফেলবে তাহলে।"

পরী, "তোমার একটু মার খাওয়া প্রয়োজন। ওই ঠিক করবে তোমাকে আমি নয়।"

পরী দরজা খুলে অভির জন্য খাবার আনতে বেড়িয়ে গেল। চুপ করে বসে থাকল অভি। কিছু পরে কল্যাণীর সাথে পরী খাবারের থালা নিয়ে ঘরের মধ্যে ঢোকে। কল্যাণীকে দেখে অভির বুক কেঁপে উঠল, ওর মান সন্মান সব যেন মাটিতে মিশে গেছে।

কল্যাণী ওকে দেখে হেসে বলল, "তুমি কি রকম মানুষ..."

পরী ভাতের থালা নিয়ে অভির পাশে মাটিতে বসে পরে। আলু সিদ্ধ ভাত আর ডাল দিয়ে ভাত মেখে অভিকে ঠিক বাচ্চা ছেলের মতন খাওয়াতে শুরু করে।

কল্যাণী পরীর খাওয়ান দেখে হেসে বলে, "পরী, তুই ওকে আদরে বাঁদর করে দিবি।"

পরী ওর দিকে হেসে উত্তর দেয়, "আমি ওর খেলার পুতুল আর ও আমার ছোট্ট রাজকুমার।"

অভিকে খাওয়ানর পরে, অভির মুখ আঁচল দিয়ে মুছিয়ে দেয়।

কল্যাণী জিজ্ঞেস করে অভিকে, "ঠিক কি হয়েছে?"

পরী অভিকে বিছানায় উঠে যেতে বলে আর কল্যাণীর দিকে তাকিয়ে ওদের একটু একা ছেড়ে দিতে অনুরধ করে।

পরী, "প্লিস, সব কথা জানতে চাস না। যে টুকু বলেছি সেটাই ঠিক। আমাকে ভুল বুঝিস না কল্যাণী, আমি চাইনা ও হেনস্থা হক। অনেক ঝড় গেছে ওর উপর দিয়ে, একটু শুতে দে ওকে।"

কল্যাণী ওদের দিকে দুষ্টু হেসে বলে, "তোদের কে একা ছেড়ে ত যাচ্ছি। এত কান্না আর এত আদর খাওয়ার পরে আবার যেন কিছু করে বসিস না যেন।"

কল্যাণীকে ঠেলে ঘর থেকে বের করে দেয় পরী অনুরধ করে যে ওদের কে যেন সাড়ে পাচটায় উঠিয়ে দেওয়া হয়। প্রথম বাসে অভিকে ফিরে যেতে হবে, বাড়ির কেউ অভিকে যদি দেখে ফেলে তাহলে বিপদ হয়ে যাবে। কল্যাণী বলল যে ও দিপঙ্করকে বলে দেবে যাতে অভিকে সকাল বেলায় বাসস্টান্ডে ছেড়ে আসে।

পরী ঘরের লাইট বন্ধ করে ছোটো লাইট জ্বালিয়ে অভির পাশে শুয়ে পরে। ওর দিকে ফিরে, অভির মাথ বুকের কাছে নিয়ে আদর করে। অভি পরীর কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের দিকে টেনে নেয়।

পরী ওর কানে কানে বলে, "এবারে আমাকে পুর ঘটনা একদম প্রথম থেকে বলো ত।"

মুখ উঁচু করে পরীর গভীর কালো চোখের দিকে দেখে অভি, কপালে কপাল ঠেকিয়ে অভির মুখের দিকে দেখল পরী। অভি পরীর কাছে কিছুই লুকালো না, সব কথা সত্যি সত্যি করে বলে দিল। সব কথা শুনে পরী বিস্ময়ে মাথা নাড়ায়। দুজনে অকেঙ্কক্ষণ চুপ করে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকে। একে অপরকে জড়িয়ে আলিঙ্গনের উষ্ণতায় নিজেদের কে ডুবিয়ে দেয়।

অভির নাকের ওপরে পরী ওর নাক ঘষে কানে কানে বলে, "মহাভারতের অভিমন্যু অনেক বীর এবং সাহসী ছিলেন, কিন্তু কেন হেরে গেছিলেন জানো? কেননা মহাভারতের অভিমন্যুর কাছে এই শুচিস্মিতা ছিল না। আমার ছোট্ট সোনার কাছে সর্বদা তার পরী আছে, সে কখন হেরে যেতে পারে না।"

আবেগে দুচোখ বন্ধ করে নিয়ে অভির ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে পরী। প্রেমের নিবিড় আলিঙ্গনে এঁকে অপরকে প্রাণপণে জড়িয়ে ধরে। সারা রাত দুজনে দুজনকে চুপচাপ জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকে, আদরের যেন শেষ নেই আর। পরীর গভীর কালো চোখের মাঝে নিজেকে হারিয়ে যেতে দেখে অভি।

পুব আকাশে নতুন ঊষার ছটা। বাইরে পাখিদের কিচির মিচির কিছু পরে আকাশ বাতাস মাতিয়ে তোলে। এক নতুন সকাল এক নতুন দিন নিয়ে আহ্বান জানায় পরী আর অভিকে। দূর থেকে এক বাউল ভিখারি গান গায়, সেই গানের মিটে সুর ঘরের মধ্যে ভেসে আসে...

"রাই জাগো রাই জাগো শুখো শারি বলে
রাই জাগো রাই জাগো শুখো শারি বলে
কত নিদ্রা যাও গো রাধে শ্যাম নায়রের কোলে।
রাই জাগো রাই জাগো শুখো শারি বলে..."
Like Reply
#44
চতুর্থ অধ্যায়ঃ দিবস রজনীর গল্প

জলপরীর আগমন

এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ শেষ। বসন্তের বাতাসে খুশির আমেজ। আজ বাসন্তি পুজোর দশমী। গত কয়েকদিন ধরে মা বেশি খুশি, বাবাও বেশ খুশি, পরী বাড়ি আসছে। বুকের ভেতরে এক কোনে অভি নিজের খুশি দমন করে রেখেছে, ভেতরে খই ফুটলেও সেটা জাহির করার ক্ষমতা নেই। খুশিতে বুক ফেটে গেলেও জানানোর অধিকার নেই অভির। শেষ পর্যন্ত সেই দিন এসে গেল, পরী সবসময়ের জন্য ওর কাছে, ওর পাশে থাকবে।

গত সপ্তাহে ওর জন্মদিন ছিল, কিন্তু কোন চমক ছিল না যেটা অভি ভেবেছিল। হ্যাঁ অরুনা মাঝ রাতে ফোন করে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছিল আর দুপুরে পরী ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছিল। কোন চমক না পাওয়াটাই যেন সব থেকে বড় চমক ছিল অভির জন্য।

কলেজ শেষ, এপ্রিলের পুরো মাস টাই ফাইনাল পরীক্ষার পড়ার জন্য ছুটি। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ফাইনাল পরীক্ষা শুরু। পড়াশুনা বেশ জোর কদমে চলছে। বাবা মা অফিসে বেড়িয়ে যাবার পরে, অরুনা আর পুবালি ওর বাড়িতে আসে পড়ার জন্য। একসাথে পড়ার মজা আলাদা, কিছুটা গল্প কিছু পড়া কিছু আড্ডা মারা। অরুনার অভির সাথে যে নিকট সম্পর্ক বাবা মায়ের তাতে কোন আপত্তি নেই কেননা অরুনার বাবা, ব্যানারজি কাকু বাবার বন্ধু। বাবা মা এই ভ্রান্তি তে আছেন যে অরুনা, তালুকদার বাড়ির বউমা হয়ে আসছে। এই কথা অভি আর অরুনা দুজনেই ভাল ভাবে জানে এবং এখুনি সেই ভ্রান্তি ভাঙ্গার জন্য কেউই তৈরি নয়। অরুনা সমুদ্রনিলকে ভালবাসে আর অভি পরীকে। ওদের দুজনের বাড়ির কেউই জানে না সেই কথা।

মা কলেজে বেড়িয়ে যাবার আগে অভিকে জানিয়ে যায় যে বিকেলে মায়ের সাথে পরী আসছে তাই অভি যেন বিকেল বেলা বাড়িতেই থাকে। অরুনার আর পুবালির সাথে যেন কোথাও বেড়িয়ে না যায়। না বললেও হত, অভি মনে মনে বলল। মা বেড়িয়ে যেতেই তিন জনে হেসে কুটপুটি।

অরুনা অভির দিকে চোখ টিপে বলে, "কিরে আজ শুচি দি আসছে, শেষমেশ কুত্তাটা তার কুত্তি পেয়েই গেল কি বল।"

অরুনা পরীকে শুচিদি বলে ডাকতো কেননা পরী অরুনার চেয়ে চার বছরের বড়। অরুনা প্রথমে বলেছিল যে অভির বউকে ও নাম ধরেই ডাকবে কিন্তু যেহেতু পরী ওর চেয়ে বড় তাই সন্মান বলে একটা কথা আছে আর সেই জন্য অরুনা শুচিদি বলে ডাকে।

অরুনা, "কি করবি আজ রাতে?"

অভি, "তোর কি মাথা খারাপ নাকি রে? এক ছাদের নিচে থেকে আমি কি খাল খুঁড়ে কুমির আনব? বাবা মা টের পেয়ে গেলে আমাদের দুজনকে আস্ত রাখবে না।"

অরুনা, "হুম সেটা বুঝলুম। আমাদের বাবা মাও যে ভ্রান্তিতে আছে সেটা এখুনি ভাঙ্গার দরকার নেই রে। আমিও বাবাকে বলতে ভয় পাচ্ছি সমুদ্রনিলের কথা, জানিনা বললে কি হবে।"

পুবালি যথারীতি চুপচাপ মেয়ে, ওদের কথা শুনে শুধু হাসি ছাড়া আর কিছু বিশেষ কথাবার্তা বলে না।

অভি ওকে জিজ্ঞেস করল, "তোর নাকের ব্যাথা কি রকম আছে রে?"

পুবালি, "আছে ওই একরকম। তবে মাঝে মাঝে কপালের মাঝখান টা বেশ ব্যাথা করে।"

অরুনা ওর মাথায় টোকা মেরে হেসে বলে, "এই মেয়ে যতদিন না কারুর সাথে ঠিক করে মিশবে ততদিন ওর মাথার ব্যাথা সারবে না।"

আড্ডায় মেতে ওঠে অভি আর অরুনা, সেই দেখে পুবালি একটু রেগে যায়। পুবালি ওদের বলে, "তোরা যদি আড্ডা মারিস তাহলে আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আয়।"

অরুনা নাক কুঁচকে বলে, "আরে বাবা একটু মজাও করতে দিবি না। দেখ আজ শুচিদি আসছে আর সেইজন্য ও কত খুশি।"

সেদিন আর পড়াশুনা হল না, সারাদিন ধরে আড্ডা মেরে টি.ভি দেখে কাটিয়ে দিল। অভি অরুনাকে থেকে যেতে বলেছিল যতক্ষণ না পরী আসে। অরুনা বলে যে পরীর সাথে এই রকম ভাবে দেখা করবে না, ও পরীর সাথে বাইরে কোথাও দেখা করতে চায়।

বিকেলে অরুনা আর পুবালি চলে যাবার পরে, অভি নিজে চা বানিয়ে টি.ভি র ঘরে বসে মা আর পরীর জন্য অপেক্ষা করে। কলিং বেল বাজতেই অভি দৌড়ে নিচে নেমে যায়। দরজা খুলে দেখে যে মা আর পরী দাঁড়িয়ে।

বুদ্ধিমতী পরী মায়ের সামনে মনের খুশি লুকিয়ে মাথা নিচু করে হেসে অভিকে অভিবাদন জানায়, "কেমন আছো অভিমুন্যু? পড়াশুনা ঠিকঠাক চলছে ত?"

মাথা নত করে অভিবাদন জানায় অভি, বুকের মধ্যে খুশির বান ডেকেছে, কিন্তু মায়ের সামনে ঠিক করে প্রকাশ করা যাচ্ছে না, দুজনেই দুজনার মনের অবস্থা বুঝে নিয়ে মুখ টিপে হাসে। সিঁড়ি দিয়ে চড়ার সময়ে অভি পরীর দিকে তাকায়। পরীর প্রিয় পোশাক, শাড়ি, শাড়ি ছেড়ে পরী যেন আর কিছু পড়তে জানে না। আকাশী রঙের শাড়িতে পরীকে বেশ সুন্দরী দেখাচ্ছে। সিঁড়ি চড়ার সময়ে অভি লক্ষ্য করল যে পরীর পায়ে রুপোর নুপুর, হাঁটার সময়ে মৃদু ছনছন আওয়াজ করছে আর সেই আওয়াজ যেন অভির বুকে এসে মাতিয়ে তুলছে। পরী মাঝে মাঝে পেছনে তাকায় আর মুখ টিপে হাসে, বুঝতে পারে যে অভি ওর দিকে দেখে পাগলের মতন হয়ে যাচ্ছে, এত কাছ থেকেও যে পরীকে জড়িয়ে ধরতে পারছেনা। মাঝে মাঝে অভির চোখ দেখে লজ্জা করছে কেননা অভি ওর চলন আর ওর কোমরের দোলা দেখে পাগল হয়ে যাচ্ছে। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে পরী লজ্জা টাকে কোনরকমে বুকের ভেতরে লুকিয়ে নেয়।

অভি ওর ব্যাগ আর সুটকেস পরীর ঘরের মধ্যে নিয়ে যায়, পরী ওর পেছন পেছন ঘরের মধ্যে ঢুকে পরে। ঘরে ঢুকেই পরী হাত বাড়িয়ে অভিকে কাছে ডাকে। অভির মুখে হাসি যেন আর ধরে না। পরী প্রায় অভিকে জড়িয়ে ধরতে যাবে এমন সময়ে মা ডাক দেয়, "অভি শোন, দুধ আনতে একটু বাজার যা। পরী রাতে দুধ খাবে।"

অভি দাঁত দাঁত চিপে পরীর দিকে তাকায়, মাথা নাড়িয়ে ইশারা করে যে, কি ভুল সময়ে মা ডাক দিলেন।

পরীর কানে কানে এসে বলে, "তোমার দুধের কি দরকার শুনি তোমার নিজের থাকতে..."

লজ্জায় পরীর কান নাক লাল হয়ে যায়। আলতো করে অভিকে এক থাপ্পর মেরে বলে, "একদম শয়তানি করবে না। ছোটো মার কথা শুনে তাড়াতাড়ি বাজার যাও নাহলে কিন্তু আমি চিৎকার করে ছোটমাকে বলে দেব যে তুমি আমাকে খেপাচ্ছো।"

অভি আরও খেপিয়ে তোলে পরীকে, "কি বলবে ছোটো মাকে?"

পরী যেন আরও রেগে যায় ওর কথা শুনে, "বের হও ঘর থেকে আমি জাপা কাপড় বদলাবো।"

অভি ওকে খেপাতে ছাড়ে না, "আমার জন্য তৈরি হয়ে থেক কিন্তু।"

শেষমেশ পরী থাকতে না পেরে চেঁচিয়ে ওঠে, "ছোটো মা, অভি বাজার যাচ্ছে না আমাকে খেপাচ্ছে..."

অভির দিকে ভুরু নাচিয়ে ইশারা করে, বেশ হয়েছে, ঠিক হয়েছে।

মা ওদিকে চেঁচিয়ে অভিকে বললেন, "কি রে মেয়েটা এই এসেছে আর তুই ওর পেছনে লেগেছিস। তাড়াতাড়ি বাজার যা।"

অভি বাজারে বেড়িয়ে গেল, একরকম যেন হাওয়ায় উড়ছে অভি। বাজার থেকে দুধ কিনে একরকম দৌড়তে দৌড়তে বাড়ি ফিরল।

বাড়িতে ঢুকে দেখে পরী জামা কাপড় বদলে নিয়েছে। অভি হাপাতে হাপাতে বাড়িতে ঢুকে মাকে দুধের প্যাকেট দিয়ে পরীর দিকে তাকায়। গায়ে একটা হালকা গোলাপি রঙের নাইট গাউন, ফর্সা ত্বকের সাথে বেশ মানিয়েছে। মা পরীর জন্য আগে থেকেই কিনে রেখেছিল। পরীকে বেশ তরতাজা দেখাচ্ছিল, রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে মায়ের সাথে চা বানাচ্ছিল। রান্না ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে পরীর রুপ সুধা পান করে অভি। একবার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে, চোয়াল শক্ত করে নিজেকে সামলে নেয় আর মনে মনে হাসে, কি সুন্দরী দেখাচ্ছে একবার নিরিবিলিতে পেলে হয়। পরী মাঝে মাঝে কাঁধের ওপর দিয়ে অভির দিকে তাকায় আর হাসে। বুঝতে কষ্ট হয় না যে নির্লজ্জের মতন অভি ওর যৌবন পান করছে। অভির চোখ দেখে নাকের ডগা লাল হয়ে ওঠে, মায়ের চোখ লুকিয়ে ঠোঁট কামড়ে সামলে নেয়।

মা অভির দিকে তাকিয়ে বললেন, "এখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস? তোর ঘরে যা গিয়ে পড়াশুনা কর। কিছুদিন পরে পরীক্ষা আর তোর কোন হুঁশ জ্ঞান নেই নাকি। খাওয়ার সময়ে গল্প করা যাবে। চা হয়ে গেলে পরী তোকে দিয়ে আসবে খানে।"

মায়ের কথা শুনে অভি একটু মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে পরে। পরী ওর মুখে দেখে বুঝতে পারে ওর মনের অবস্থা।

পরী, "তুমি পড়তে যাও আমি কিছু পরে চা দিয়ে আসব।"

অভি, "না আমার চা এখুনি চাই তারপরে আমি পড়তে যাব।"

মা বললেন, "ঠিক আছে বসার ঘরে গিয়ে বস চা দিচ্ছি।"

বসার ঘরে গিয়ে টি.ভি চালিয়ে বসল অভি, কিন্তু টি.ভির কিছুই ভাল লাগছে না। টি.ভি প্রোগ্রামের জায়গায় বারে বারে পরীর মুখ ভেসে আসছে। কিছু পরে পরী ওর জন্য চা নিয়ে বসার ঘরে ঢোকে। একটু ঝুঁকে চা দিতে গিয়ে অভির চোখের সামনে ওর বক্ষ বিভাজন অনাবৃত হয়ে পরে। অভির নির্লজ্জ দৃষ্টি পরীর বক্ষ বিভাজনে কেন্দ্রীভূত। পরী ওর চোখের চাহনি দেখে মাথা নাড়ায়, কি নির্লজ্জের মতন তাকিয়ে আছে।

চায়ের কাপে চুমুক দিয়েই চেঁচিয়ে ওঠে অভি, "চায়ে এক ফোঁটা চিনি হয় নি।"

মা ওদিকে রান্না ঘর থেকে বলেন যে চায়ে চিনি দিয়েছেন।

পরীও থেমে থাকে না, "একদম মিথ্যে কথা বলবে না, চায়ে আমি নিজে চিনি দিয়েছি।"

অভি পরীর দিকে চায়ের কাপ বাড়িয়ে দিয়ে বলে, "এক চুমুক দিয়ে দেখ বুঝতে পারবে কত চিনি দিয়েছ।"

পরী অভির মুখ দেখে বুঝতে পারে যে অভি কি চায়। লাজুক হেসে অভির হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে চায়ে চুমুক দেয়। ঠোঁটে দুষ্টুমির হাসি মাখিয়ে চায়ের কাপ অভিকে ধরিয়ে দিয়ে নিচু সুরে বলে, "এবারে চিনি হয়েছে। এখন পড়তে যাও।"

পরীর ঠোঁটের সেই দুষ্টু মিষ্টি হাসি অভির হৃদয় তোলপাড় করে তোলে, এক অধভুত অনুভুতির পরশ মাখিয়ে চলে যায়। সামনে বই খোলা কিন্তু অভির পড়ায় মন নেই, খোলা বইয়ের পাতায় শুধু পরীর কাজল কালো চোখ আর ঠোঁটের দুষ্টু মিষ্টি হাসি ভেসে আসে। পায়ের নিচে মেঝে আর তার নিচেই পরী এই কথা চিন্তা করে যেন অভির মন চঞ্চল হয়ে ওঠে। চুলের এক গুচ্ছ বারে বারে পরীর বাঁ গালের ওপরে এসে চুমু খায় আর বাঁ হাতের আঙ্গুল দিয়ে পরী সেই চুলের গুচ্ছ সরিয়ে দেয় গালের ওপর থেকে, সেই মনোরম দৃশ্য বারে বারে অভির বইয়ের পাতার ওপরে ভেসে আসে আর ওর পড়াশুনা শিখেয় ওঠে। এত কাছে থাকা সত্তেও পরীকে নিজের মতন করে জড়িয়ে ধরতে পারছে না, ওর গায়ের মিষ্টি গন্ধ বুকের মধ্যে নিতে পারছে না। প্রেমের এই ব্যাথা যেন অভিকে কুরে কুরে খেয়ে ফেলে।

রাতে খাবার টেবিলেও বিশেষ কথা বার্তা হয় না, পরী ওর সামনে বসে তাও দুজনের মধ্যে অনেক দুরত্ত। দুজনের বুকের মধ্যে উত্তাল তরঙ্গ দোলা খায় কিন্তু ওদের এবার থেকে অনেক অনেক বেশি সাবধান হয়ে পা ফেলতে হবে। বাবা মা দুজনেই এক ভ্রান্তির মধ্যে আছেন যে অভি অরুনাকে ভালবাসে আর সেই ভ্রান্তি টাকে ঢাল বানিয়ে রাখতে হবে যতদিন না ঠিকঠাক ভাবে অভি নিজের পায়ে দাঁড়ায় আর তার কঠিন বাবা মায়ের সম্মুখিন হতে পারে।

রাতের খাওয়ার পরে অভি তিন তলায় নিজের ঘরে চলে যায়। এপ্রিল মাসে, কোলকাতায় একটু গরম পড়তে শুরু করেছে। শুতে যাবার আগে জামা কাপড় ছেড়ে শুধু একটা হাফ প্যান্ট পরে হাত মুখ ধুয়ে নিল। বিকেলে পড়া হয়নি, কিছু বাকি আছে সেটা ভাবছে রাতে শেষ করে নেবে। বই খুলে টেবিলে বসে পড়ল, কিন্তু কিছুক্ষণ পরে আবার পরীর লাল ঠোঁটের মিষ্টি হাসি ওকে পাগল করে দিল।

বেশ কিছুক্ষণ পরে মাথার মধ্যে এক ঝিমুনি ভাব চলে আসে। বাইরে ঘন কালো রাত, আসে পাশের বেশির ভাগ বাড়ির আলো বন্ধ হয়ে গেছে। রাত সাড়ে বারোটা বাজে, জানালা দিয়ে বাইরের রাতের আকাশের দিকে তাকাল, আকাশে বাঁকা চাঁদ, ঠিক যেন পরীর হাসি। টিউব লাইট নিভিয়ে দিয়ে টেবিলে ল্যাম্প জ্বালিয়ে নিল অভি। ল্যাম্পের মৃদু হলদে আলো যেন ঘরের মধ্যে এক স্বপ্নরাজ্য বানিয়ে তোলে।

এমন সময়ে পরী চুপিচুপি ওর ঘরের মধ্যে ঢুকে অভির গলার দুপাস থেকে হাত বাড়িয়ে খালি বুকের ওপরে রাখে, আর সেই মিষ্টি পরশে অভির স্বপ্নের শৃঙ্খলা ভেঙ্গে যায়। নাকে ভেসে আসে পরীর গায়ের মিষ্টি গন্ধ, জুঁই ফুলের সুবাস। চোখ বন্ধ করে বুক ভরে পরীর আঘ্রান বুকে টেনে নেয়, ঘাড়ের পেছনে পরীর নরম উষ্ণ বুকের স্পর্শে ধিরে ধিরে অভির শিরা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অভির মাথার ওপরে পরী মৃদু গাল ঘষতে শুরু করে। পরীর অনাবৃত উপরি বক্ষ অভির ঘাড়ে ঘষা খেয়ে আগুনের ফুল্কি বের হয়ে যায় যেন। পরী অভির তপ্ত ত্বকের অনুভুতি বুকের ওপরে অনুভব করে মৃদু কেঁপে ওঠে। অভি পরীর হাত হাতে নিয়ে ঠোঁটের কাছে এনে চুমু খায়। দু জনে অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরে থাকে একে অপরকে। প্রেমের নিস্তব্ধতা বেশ মধুর মনে হয় ওদের।

মৃদুকনে পরী ওর কানে কানে বলে, "আই মিসড ইউ!"

ঘোরান চেয়ার ঘুরিয়ে পাতলা কোমর দুহাতে জড়িয়ে পরীকে কাছে টেনে নেয় অভি। কাঁধের ওপরে হাত রেখে মাথার চুল আঁকড়ে ধরে অভির মাথা নিজের নরম বুকের ওপরে চেপে ধরে। অভি ওকে আরও নিবিড় করে নিজের কাছে টেনে নেয়। পরীর গোল নরম পেট অভির নগ্ন বুকের ওপরে পিষে যায়, চিবুক চেপে ধরে কোমল বুকের খাঁজে। মাথা উঁচু করে অভি ওর গভীর আবেগ মাখানো চোখের দিকে তাকায়। সারা শরীরের শক্তি দিয়ে পিষে দেয় পরীর নরম শরীর, যেন পারলে পরীকে নিজের ভেতরে করে নেবে। ঠোঁটে লেগে থাকে এক অনির্বচনীয় মিষ্টি হাসি, আধ খোলা ঠোঁটের মাঝে মুক্ত বসান দাঁতের পাটি উঁকি মারে। পরী ওর দিকে তাকিয়ে থাকে আর অভির তপ্ত হাতের পরশে নিজেকে সমর্পণ করে দেয়। সারা মুখে পরীর উষ্ণ নিস্বাসের ঢেউ খেলে বেড়ায়। নিস্বাসের ফলে, পরীর বুক আর পেট কেঁপে ওঠে আর অভির বুকের ওপরে যেন ঢেউ খেলে যায়।

অভি ফিসফিস করে পরীকে জানায়, "তুমি যখনই আমাকে এই রকম ভাবে জড়িয়ে ধরো তখনি আমি পাগল হয়ে যাই তোমার জন্য।"

পরী ফিসফিস করে উত্তর দেয়, "রতনে রতন চেনে আর শূয়রে চেনে কচু।"

বলেই হেসে ফেলে।

অভি, "মানে আমি স্বর্ণকার তাই ত?"

পরী, "না তুমি আমার ছোট্ট শূয়র ছানা।"

অভি, "আর তাঁর মানে তুমি একটা কচু।"

দুজনেই হেসে ফেলে। পরী চোখের দিকে তাকিয়ে দেখে যে অভির চোখের চশমা পালটে গেছে।

পরী, "তোমার আগের চশমার কি হল? এটা দেখি নতুন।"

অভি দুষ্টুমি করে পরীর বুকে নাক ঘষে বলে, "তোমার জন্য ত আমার নতুন চশমা নিতে হল।"

পরী একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, "আমার জন্য? মানে, আমি কি করলাম?"

অভি, "বাঃ রে যেন তুমি কিছু জানো না। সেই রাতের ঘটনার পরে তুমি অরুনাকে ফোন করে সব বলে দিলে। আর সেইদিন কলেজে আমার চশমা গিয়ে পড়ল মেঝেতে।"

পরী উৎসুক হয়ে অভিকে জিজ্ঞেস করে, "কলেজে কি হয়েছিল?"

অভি, "সে অনেক কথা।"

পরী, "বল আমাকে তাহলে।"

অভি, "হুম, তুমি সকাল সকাল অরুনাকে ফোন করে সব জানিয়ে দিলে। আমি কলেজে পৌঁছলাম, দেখি অরুনা খুব চুপচাপ। একদম আমার সাথে কথা বলছে না, গম্ভির মুখ করে মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকাচ্ছে। লাস্ট পিরিওড পর্যন্ত আমার সাথে কোন কথা বলল না, আমি খুব মর্মাহত হলাম ওর ব্যাবহার দেখে। শেষ পর্যন্ত থাকতে না পেরে আমি পুবালিকে জিজ্ঞেস করলাম যে অরুনার কি হয়েছে, কেন ও আমার সাথে কথা বলছে না। পুবালি মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিল ওর কাছে কোন খবর নেই, আমি চুপ। লাস্ট পিরিওড শেষ। পুবালি আমাকে চুপ করে বসে থাকতে বলল, আমিও চুপ করে বসে থাকি নিরুপায় হয়ে। অরুনা বারে বারে আমার দিকে কটমট করে তাকায় আর চোখ দেখে মনে হয় যেন এই আমাকে গিলে ফেলবে। ক্লাস থেকে সবাই বেড়িয়ে গেল, ক্লাসে শুধু আমরা তিন জন বসে। অরুনা আমার দিকে তাকাল, সিট ছেড়ে উঠে আমার দিকে এগিয়ে এল। আমার বুকের ধুকপুকানি শত গুন বেড়ে গেছে।"

"পুবালিকে বলল ক্লাসের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিতে। পুবালি কিছু না বুঝতে পেরে হতবাক হয়ে অরুনার দিকে তাকিয়ে থাকে, অরুনা চেঁচিয়ে ওকে দরজা বন্ধ করতে বলে। ওর গলায় ওই বাঘিনীর মতন আওয়াজ শুনে আমার ত হয়ে গেছে আত্মারাম খাঁচা ছাড়া। আমার সামনে ক্ষিপ্ত বাঘিনীর মতন দাঁড়িয়ে অরুনা, আমাকে কড়া গলায় বলল উঠে দাঁড়াতে। আমি নিরুপায় হয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে পড়লাম। কিছু না বলেই আমার গালে সপাটে এক চড় কষিয়ে দিল অরুনা। চড় খেয়ে আমার গাল লাল হয়ে যায়, কান মাথা গরম হয়ে যায়। নাকের ওপর থেকে চশমা মাটিতে পরে কাচ ভেঙ্গে যায়। আমি গালে হাত বলাতে থাকি, গাল খুব জ্বালা করছিল। আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি যে অরুনা আমাকে অত জোরে চড় মারতে পারে।"

"রাগে ওর ঠোঁট কাঁপতে শুরু করে, দুচোখ রাগে চিকচিক করতে শুরু করে। তারপরে আমার দিকে চেঁচিয়ে বলে, কি করে তুই ভুলে যাস শুচিদির কাছে যে প্রতিজ্ঞা করেছিলিস? শূয়র, কুকুর, তুই একটা নোংরা ছোটো লোক। তোকে আমি এতদিন ধরে অনুশুয়ার কাছ থেকে আগলে রাখলাম আর তুই কিনা শেষ পর্যন্ত দুই নিচ মেয়েছেলের কবলে গিয়ে পড়লি? তোর একবারের জন্যেও শুচিদির কথা মনে পড়লনা? তোর বুকের মধ্যে হৃদয় বলতে কিছু আছে না সেটাও নেই? শুধু মেয়েদের সাথে বিছানায় শুতে পারলে যেন তোর প্রানে শান্তি হয় তাই না? সব পুরুষ মানুষ এক তাই আমার ধারনা ছিল, কিন্তু তোকে দেখে একবারের জন্যেও মনে হয়েছিল যে আমি ভুল। কিন্তু তুই কুকুর আমার সেই বিশ্বাস ভেঙ্গে দিলি।"

"পুবালি কিছুই বুঝতে পারছিল না কি ঘটেছে। ও হতবাক হয়ে আমাদের দুজনকে দেখে যাচ্ছে। আমার মুখে কোন কথা নেই, আমি কি উত্তর দেব অরুনাকে, আমি পাপ করেছিলাম আর তার শাস্তি আমাকে পেতেই হত। অরুনা আমাকে বলল, তুই একবারের জন্যেও শুচিদির কথা ভাবিসনি, শুচিদির বুক ফেটে যেতে পারে সে কথাও তুই ভাবিসনি।"

"আমি মেঝের দিকে তাকিয়ে, দু চোখ দিয়ে টসটস করে জল গরাচ্ছে আমার। আমি চোখ বন্ধ করে মনে মনে মা ধারিত্রিকে প্রার্থনা করে চলেছি যে মা ধারিত্রি দ্বিধা হও, আমাকে নিজের কোলে টেনে নাও। অরুনা আমার চিবুকে আঙ্গুল স্পর্শ করে আমার মাথা উঠিয়ে দেয়। আমার চোখের জল দেখে রাগ কিছুটা কমে যায় ওর। আমাকে চোখ খুলে ওর দিকে তাকাতে বলে।"

"আমি জল ভরা চোখ নিয়ে ওর দিকে তাকাই। আমাকে বলল, তুই একটা মস্ত বড় কুকুর, কিন্তু খুব ভাল কুকুর যে শেষ পর্যন্ত শুচিদির মান রেখেছে, আর সেই জন্যেই আমি তোর ওপরে রাগ করেও করে থাকতে পারলাম না রে। কুত্তা, তুই ত সব পয়সা ওই নিচ মেয়েছেলেদের পেছনে খরচ করে দিয়েছিস, আমি জানি তোর কাছে চশমা ঠিক করার মতন পয়সা নেই। আমার সাথে লালবাজার চল, ওখানে অনেক চশমার দোকান আছে।ওর কথা অমান্য করার সাধ্য আমার ছিল না আর আমার নতুন চশমা হল। বাড়িতে মা জিজ্ঞেস করলেন যে আমার চশমা কি হল, আমি জানালাম যে কলেজে পড়ে ভেঙ্গে গেছে তাই নতুন বানানো হয়েছে।"

পরী অভির সব কথা শুনে চুপ করে থাকে। দুজনেই অনেকক্ষণ চুপ। কিছু পরে পরী বলল, "আমি অরুনার সাথে দেখা করতে চাই, কবে দেখা করাচ্ছ?"

অভি, "আরে বাবা, আজ সারাদিন অরুনা আর পুবালি আমার বাড়িতেই ছিল। আমি ওকে বলেছিলাম থেকে যেতে যাতে তোমার সাথে দেখা হয়, কিন্তু ও আমাকে বলল যে ও তোমার সাথে বাইরে কোথাও দেখা করতে চায় যাতে তোমাদের দেখা হওয়া স্মরণীয় হয়ে থাকে।"

পরী মৃদু মাথা নাড়াল, কানের সোনার দুল নড়ে উঠল আর মৃদু হলদে আলোয় ঝকমক করে উঠলো। পরী, "কি চিন্তা করছে অরুনা?"

অভি পরীর বুকে নাক ঘষে, "আমি কি করে জানব বলো।"

অভি ঠোঁট ছোটো গোল আকার করে গরম নিঃশ্বাস ছাড়ে পরীর বুকের খাঁজের ওপরে। উষ্ণ নিঃশ্বাস পরীর বুকে কম্পন জাগিয়ে তোলে, অভির শক্ত বাহু পাশে পরী কেঁপে ওঠে। ও মাথা নিচু করে অভির কপালে কপাল ঠেকিয়ে কপোত কুজনের সুরে বলে, "আমাকে কি দাঁড় করিয়েই রেখে দেবে?"

অভি ওকে আরও জোরে চেপে বলে, "না সোনা, আমি কেন তোমাকে দাঁড় করিয়ে রাখব। আমি তোমার এ বাড়ি তোমার, তুমি যেখানে খুশি বসতে পারো।"

পরী, "তুমি যদি আমাকে না ছাড়ো তাহলে আমি বিছানায় বসে তোমার সাথে গল্প করব কি করে?"

অভি, "বিছানায় কেন হানি, আমার কোলে বস।"

পরী ঠোঁটে দুষ্টু মিষ্টি হাসি মাখিয়ে বলে, "আর আমি যদি তোমার কোলে বসি তাহলে তুমি আমার কি করবে?"

অভি, "আমি কি করব, কিছুই করব না।"

পরী, "তুমি বলতে চাও যে তুমি কিছু করবে না আর আমি তোমাকে বিশ্বাস করে নেব?"

অভি, "হ্যাঁ বিশ্বাস করে নাও, যদি না চাও বিশ্বাস করতে তাহলেও আমার কিছু করার নেই।"

অভি ওর বাহুপাসের বাঁধন আলগা করে। পরী একটু সরে অভির কোলের ওপরে বসে পরে, দুপা ডান দিকে করে আর বাঁ হাতের ওপরে পিঠ দিয়ে। অভি বাঁ হাত ওর পিঠের ওপরে দিয়ে ওর ভার নেয় আর ডান হাতে পরীর পাতলা কোমর জড়িয়ে ধরে। পরী ডান হাতে অভির গলা জড়িয়ে ধরে থাকে আর বাঁ হাত দিয়ে ওর কাঁধে আলতো করে রেখে দিয়ে আরাম করে অভির কোলে বসে। অভির অনাবৃত জানুর ওপরে পরীর পাতলা কাপরে আচ্ছাদিত কোমল নিতম্ব, মৃদু চাপে দুজনেই যেন সাগরে ভেসে যায়। অভির বাঁ হাতের অবাধ্য আঙ্গুল পরী ডান বক্ষের কোমল ঢিবির ওপরে মৃদু মৃদু চাপ দেয়। পরী গভীর চোখে অভির দিকে তাকায়, মৃদু উত্তেজনায় নাকের ডগা লাল হয়ে ওঠে।

মাথ উঁচু করে মিষ্টি লাল ঠোঁটের কাছে ঠোঁট নিয়ে আসে অভি। পরী চোখ বন্ধ করে নিয়ে ঠোঁট খুলে অভির ঠোঁট জোড়ার ওপরে গভীর এক চুম্বন এঁকে দেয়। অভি ওর ওষ্ঠ ঠোঁটের মধ্যে নিয়ে আলতো করে চুষতে শুরু করে, পরী অভির অধর ঠোঁটের মাঝে নিয়ে মৃদু চাপ দেয়। ঠোঁটে ঠোঁটে আগুন জ্বলে ওঠে। অভির বাহুপাশ আরো দৃঢ় করে ধরে পরীর কোমর, পরীর কোমল বুক পিষে যায় অভির অনাবৃত বুকের ওপরে। প্রবল অনুরাগে দুজনের শরীর থেকে প্রেমের স্ফুলিঙ্গ নির্গত হয়। বাঁ হাতে অভির কাঁধ চেপে ধরে ঠোঁট জোড়া আর পিষে দেয় অভির ঠোঁটের ওপরে। মুখ অল্প খুলে অভির মুখের ভেতর থেকে হাওয়া চুষে নেয়। অভির মুখের ভেতর শুকিয়ে যায়, আর অভি জিব ঢুকিয়ে দেয় পরীর ঠোঁটের ভেতরে। জিবের ডগা পরীর মাড়ির ওপরে আলতো করে বুলিয়ে দেয়। সেই অধভুত অনুভুতির স্পর্শে পরীর শরীর শক্ত হয়ে ওঠে। নিঃশ্বাস ধিরে ধিরে উত্তপ্ত হয়। বুকের মাঝে যেন হাপর টানছে কেউ।

অভি আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পরীকে কোলের ওপরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দেয়। পরীর নরম বুক চেপটে যায় অভির নগ্ন বুকের ওপরে। অভির মনে হয় যেন কেউ ওর বুকের ওপরে তপ্ত মাখনের প্রলেপ লাগিয়ে দিয়েছে। অবাধ্য ডান হাতের আঙ্গুল পরীর উন্নত বুকের নিচে চেপে ধরে। পরী অনুভব করে অভির আঙ্গুল ওর বুকের ঠিক নিচে ধিরে ধিরে ওর বুকের কাছে এগিয়ে চলেছে। আসন্ন উত্তেজনায় ডান কাঁধের ওপরে নখ বসিয়ে দেয় পরী। চুম্বনে চুম্বনে প্রেমাবেগে উত্তপ্ত কপোত কপোতী যেন ঠোঁটের যুদ্ধে লিপ্ত হয়, কে কাকে বেশি ভাল করে চুমু খেতে পারে তার পরীক্ষা শুরু হয় যেন। কেউ কারুর ঠোঁট ছেড়ে দিতে নারাজ।

ঠোঁটের খেলা বেশ কিছুক্ষণ চলার পরে পরী চোখ খুলে ওর দিকে তাকায়, দুজনের বুকের মাঝে উত্তেজনায় শ্বাস ফুলে ওঠে। অভির কান প্রচণ্ড আবেগে লাল হয়ে যায়। প্রবল আকাঙ্খায় পরীর সারা শরীর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরী আধবোজা চোখে অভির চোখের দিকে তাকায়।

কোনোক্রমে অভি শ্বাস নিতে নিতে ফিস ফিস করে বলে, "আমি তোমাকে অনেক অনেক মিস করেছি, হানি।"

পরী মৃদুকনে উত্তর দেয়, "আমিও সোনা, তোমাকে অনেক মিস করেছি।"

অভি ওর মুখের ওপরে মৃদু উষ্ণ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, "সোনা আমার ভেতরের আগুন টের পাচ্ছ কি?"

পরীর গালে প্রেমের লালিমা লেগে, মৃদু মাথা নাড়ায় পরী, হ্যাঁ, ও অভির উত্তপ্ত কঠিন আগুনের পরশ নিজের নিচে অনুভব করতে পারছে, নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে মনের উচ্ছাস দমন করে নেয়।

ডান হাত পরীর হাতুর নিচে দিয়ে নিয়ে গিয়ে পরীকে পাজাকোলা করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় অভি। পরী ওর কাঁধে মুখ লুকিয়ে নেয়। অভি ওকে কোলে উঠিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়। পরীর নরম আঙ্গুল অভির নগ্ন বুকের ওপরে কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করে, আগুনের ফুল্কি নির্গত হয়ে আঙ্গুলের ছোঁয়ায়। দুজনের চোখ নিশ্চুপ হয়ে কথা বলে, একে ওপরের মনের অবস্থা জানিয়ে দেয়, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের যেন এক প্রেমাবেগের সেতু বন্ধন তৈরি হয়।

অভি ওর কোমরের দুপাসে হাত রেখে ঝুঁকে পরে পরীর মুখের ওপরে, আরও একবার ওই লাল মিষ্টি ঠোঁটে চুমু দেবার জন্য। পরী দুষ্টুমি করে গড়িয়ে বিছানার আরেক পাশে চলে যায় আর পেটের ওপরে শুয়ে পরে বুকের ওপরে বালিস চেপে ধরে। সারা মুখের ওপরে চুল ছড়িয়ে পরে, মনে হয় যেন মেঘে চাঁদ ঢেকে গেছে। ওর মিষ্টি হাসি যেন অভিকে উত্তক্ত করে তোলে।

পরী, "আমি জানতাম যে তুমি আবার আমার সাথে দুষ্টুমি শুরু করবে।"

প্রেমচ্ছাসের ফলে শ্বাস বর্ধিত হয় পরীর, পিঠে ধিরে ধিরে ওঠা নামা করতে থাকে। অভি ওর দিকে তাকায়, উঁচু হয়ে ওঠা কাঁধ, বেকে নেমে আসে পাতলা কোমরে আর তারপরে বেকে ফুলে যায় পুরুষ্টু নিতম্বে ঠিক যেন সারা শরীর সাগরের এক মস্ত ঢেউ। অভি পরীর দিকে চার হাত পায়ে এগিয়ে যায়, পরী বাঁ হাতের আঙ্গুল মেলে ধরে অভির মুখের ওপরে আর ঠেলে দেয় অভিকে। অভি পরীর হাতের তালুতে ঠোঁট চেপে ধরে।

পরী ফিসফিস করে বলে, "অভি, হানি, আর আমাকে উত্তক্ত কোরো না, আমার আবেগ আর জাগিয়ে তুলো না, প্লিস।"

অভি বলে, "কেন বেবি? আমি যে বিগত তিন মাস ধরে অভুক্ত, আমার ভেতরে রক্ত টগবগ করে ফুটছে তাঁর সাথে তোমার রক্তও ফুঠছে। কেন দুরে সরে থাক, প্লিস কাছে এসে আমাকে বুকে টেনে নাও।"

পরী, "আমি তোমার অবস্থা বুঝতে পেরেছি হানি, কিন্তু..."

অভি।, "কিন্তু কি... বেবি? তুমি আমাকে তিন মাস ধরে অপেক্ষা করিয়ে রাখলে আর আজ এতদিন পরে মিলিত হচ্ছি আর তুমি কিনা বলছ দুরে সরে থাকতে?"

অভি পরীর ওপরে শুয়ে বিছানার সাথে চেপে ধরে। পরী ওর বুকের ওপরে হাত রেখে নিজেকে কিঞ্চিত বাঁচানোর চেষ্টা করে। অভির শক্তির কাছে না পেরে, অভিকে জড়িয়ে ধরে উলটে যায়। অভি নিচে আর পরী ওর বুকের ওপরে। অভি পরীর কোমর শক্ত করে ধরে থাকে, উত্তপ্ত শলাকা পরীর কাপরে ঢাকা তলপেটের নিচে ধাক্কা মারে। পরীর শরীর গরম হয়ে ওঠে অভির কঠিন শলাকার ধাক্কায়। দাতে দাঁত পিষে নিজেকে প্রানপন সামলে নেয় পরী। অভির বাহুপাস থেকে এক ঝটকায় নিজেকে মুক্ত করে বিছানা ছেড়ে উঠে পরে।

পাশে বসে অভির বুকে হাত রেখে বলে, "অভি, আমাকে পেতে হলে তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে। তোমার পড়াশুনায় ক্ষতি হোক সেটা আমি চাই না। আমি তোমার পড়াশুনা বাধা হতে আসিনি সোনা। পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তুমি আমাকে ছুঁতে পর্যন্ত পারবে না। পরীক্ষা শেষ হয়ে যাক তাঁর পরে তোমার সব স্বপ্ন আমি পূরণ করে দেব।"

হেরে যায় অভি, মৃদু মাথা নাড়িয়ে হেসে বলে, "মেনকা বিশ্বামিত্রের ধ্যান ভঙ্গ করেছিল, আর আমি ত এক ছোটো মানুষ মাত্র, আমি কি করে নিজেকে ঠিক রাখবো।"

পরী ওর মুখের ওপরে ঝুঁকে নাকে নাক ঘষে বলে, "অভি আজ থেকে আমি আর মেনকা নয়, আমি তোমার মা ধরিত্রি।"

আলতো করে কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে মাথার নিচে বালিস টেনে অভিকে চোখ বন্ধ করতে আদেশ দেয়। অগত্যা অভি চোখ বন্ধ করে নেয়, পরী ওর চুলে হাত বুলিয়ে ঘুম পারিয়ে দিয়ে নিচে নেমে যায়।
Like Reply
#45
অপ্সরা দেবাঙ্গনার সমাবেশ

অভির সীমানার মধ্যে পরীর পদক্ষেপ অভিকে উমত্ত করে তোলে। পরীর ঠোঁটের মিষ্টি হাসি, চোখের চোরা চাহনি, কোমর দুলিয়ে চলন, মধুর সুরে কথন, সব যেন কেমন স্বপ্ন বলে মনে হয় অভির। কিন্তু শক্ত পরী, নিজেকে অভির দুষ্টু হাতের নাগালের বাইরে রখতে সক্ষম হয়। প্রথম প্রথম পড়াশুনায় মন বসে না, কিন্তু পরীর কড়া শাসনের সামনে শেষ পর্যন্ত অভিকে মাথা নত করতে হয়। মাঝে মধ্যে একটু আলতো ঠোঁটের ছোঁয়া বা একটু নরম আঙ্গুলের স্পর্শ অভির গালে। দৃঢ়সঙ্কলপ পরী, যতদিন না পরীক্ষা শেষ হচ্ছে ততদিন নিজেকে ওর হাতের নাগালের বাইরে রাখবে।

দিন কয়েক পরে, এক সকালে অরুনা অভির বাড়িতে ফোন করে। অভি বসার ঘরে বসে খবরের কাগজ পড়ছিল, আর মা কলেজ যাবার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন। পরী ফোন ধরে, অভি কান পেতে ওদের কথা শুনতে চেষ্টা করে কিন্তু শুধু হাসি আর ফিসফিস ছাড়া কিছুই কানে গেল না। মা বেড়িয়ে যাবার আগে পরীকে বাড়ির কি কি করতে হবে সব নির্দেশ দিয়ে গেল আর বলে গেল অভি যেন নিজের ঘর থেকে না বের হয়।

মা বেড়িয়ে যাবার পরে অভি নিজের ঘরে যাবার জন্য পা বাড়াল। পরী সকাল সকাল উঠে স্নান সেরে পুজো দেওয়া হয়ে গেছে। পর্দা সরিয়ে বসার ঘরে ঢুকল পরী, ঘর যেন ওর গায়ের রঙ্গে একটু আলোকিত হয়ে উঠল। সারা চেহারায় এক বিশুদ্ধতার আলোক ছটা বিচ্ছুরিত হচ্ছে। পরনে লাল পাড় হাল্কা হলুদ রঙের শাড়ি আটপৌরে ভাবে পরা গায়ে ছোটো হাতার লাল কাঁচুলি, পরীর সৌন্দর্য যেন শত গুন বর্ধিত করে তুলছে। মাথার চুল হাত খোঁপায় ঘাড়ের ওপরে বাঁধা, সদ্য স্নাত তাই ভিজে চুলের ডগা থেকে কিছু জল ওর শাড়ির পিঠের কিছু অংশ ভিজিয়ে দিয়েছে। সামনে যেন এক দেবী প্রতিমা দাঁড়িয়ে। হাতে কয়েক গাছা সোনার চুরি, হাত নাড়ার সময়ে টুং টাং করে বেজে ওঠে।

পরী অভির দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলে, "অরুন্ধুতি ফোন করেছিল।"

অভি, "হ্যাঁ তা জানি। তুমি যে রকম ভাবে কথা বলছিলে তাতে অন্য পাশে অরুনা ছাড়া আর কেউ হতে পারে না।"

পরী, "আমার সাথে আজ দেখা করতে চায়।"

অভি, "কোথায়?"

পরী, "আমাকে শুধু বলল যে নাগেরবাজারে যেন আমরা ওদের জন্য অপেক্ষা করি।"

অভি, "দাড়াও আমি ওকে কল করে জেনে নেই কোথায় নিয়ে যেতে চায়।"

পরী, "না তুমি ওকে কল করবে না, ও তোমাকে বলতে বলেছে যে আমাকে নিয়ে নাগেরবাজার যেতে, ব্যাস।"

অভি, "ওকি তোমাকে জানিয়েছে যে আমরা তারপরে কোথায় যাচ্ছি?"

পরী খিলখিল করে হেসে ফেলে, "কেন নিজের এত সুন্দরী বান্ধবীর ওপরে এতটুকু বিশ্বাস নেই তোমার?" পরী তখনো পর্দা ধরে দাঁড়িয়ে, অভির দিকে তাকিয়ে হাসছে।

অভি, "তুমি পর্দার পেছনে কেন নিজেকে লুকিয়ে রেখেছ, বেড়িয়ে এস পুরটা।"

পরী, "আমার কি মাথা খারাপ হয়েছে নাকি, যে তোমার সামনে বেড়িয়ে আসব। তুমি কখন কি করে বস তার কোন ঠিক আছে নাকি।"

অভি কপাল চাপড়ে বলে, "যাঃ বাব, একদম বদমাশ মেয়ে তুমি।" কিন্তু অভি উঠে দাঁড়ায়, এবারে সত্যি পরীর দিকে এগোনোর জন্য।

পরী দৌড়ে নিজের ঘরে চলে যায় আর দরজা বন্ধ করে দরজার ফাঁক দিয়ে অভির দিকে দেখতে থাকে।

পরী, "তুমি স্নান সেরে জামা কাপড় পরে আস তাড়াতাড়ি। অরুনা বলেছে দশটা নাগাদ ও নাগেরবাজারে আমাদের জন্য অপেক্ষা করে থাকবে। আমি চাই না তোমার জন্য আমাদের দেরি হোক।"

অভি জিজ্ঞেস করল, "তুমি কি পড়বে।"

পরী উত্তর দিল, "কেন, সবসময়ে যা পরি তাই পড়ব, শাড়ি।"

তাড়াতাড়ি স্নান সেরে বেড়িয়ে এল অভি। পরী শাড়ি পড়বে তাই ওকে তার সাথে সামঞ্জন্স্য রেখে পায়জামা পাঞ্জাবী পরে নিল না হলে ঠিক ভালো দেখাবে না। প্রেয়সীর চলন বলন আর পোশাকের রুচিশীলতায় কেউ বলতে পারবে না যে পরী গ্রাম থেকে আসা এক মেয়ে। পরীর পরনে সবুজ পাড়ের ঘিয়ে রঙের তাঁতের শাড়ি, আঁচলে ছোটো ছোটো ফুল আঁকা। শাড়ির সাথে মিলিয়ে সবুজ রঙের ছোটো হাতার গায়ের কাঁচুলি। চেহারায় প্রসাধনির চিহ্ন নেই তা সত্তেও গোলাপি ঠোঁটে জোড়া বেশ মিষ্টি দেখাচ্ছে আর গালে গোলাপি লালিমা মাখা। কপালে দুই বাঁকা ভুরুর মাঝে একটা ছোট্ট সবুজ রঙের টিপ, চোখের কোলে কাজল। গলায় একটা সরু সোনার হার ঠিক উপরি গলার নিচ পর্যন্ত নেমেছে। ডান দিকের এক চুলের গুচ্ছ গালের ওপরে দোল খায়। পরীর অপরূপ সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে তাকিয়ে থাকে অভি, যেন লক্ষ্মী প্রতিমা।

এই বিশুদ্ধতার প্রতিমার রুপ চোখ দিয়ে দেখার। অভি ওর কাছে এসে দাঁড়িয়ে ওর মুখ আঁজলা করে হাতে ধরে মুখে নিজের দিকে তুলে ওর গভীর চোখের দিকে তাকায়। ছোট্ট করে কপালে একটা চুমু খায় অভি, প্রেমের আবেগে নয়, সস্নেহের চুম্বন এঁকে দেয়।

পরী লাজুক হেসে বলে, "আমরা কি যেতে পারি?"

অভি মাথা নাড়ায়, "হ্যাঁ মা ধরিত্রি, সর্বদা আপনার পেছন পেছন আছি।"

অরুনার কথা মতন অভি আর পরী ট্যাক্সি করে নাগেরবাজার পৌঁছে যায়। ওদের জন্য যেন আরও এক চমক অপেক্ষা করে ছিল।

গত তিন বছরে প্রথম বার অভি অরুনাকে শাড়ি পড়তে দেখে। অরুনার পরনে হাল্কা সবুজ রঙের শাড়ি। নাকে সোনার ফ্রেমের চশমা, মুখে কোনদিনই প্রসাধনী করে না, তাই সেদিনও ছিল না বিশেষ। অভি একটু দুরে দাঁড়িয়ে ওর সেই দেবী প্রতিমা দেখতে থাকে। অভি পরীর দিকে তাকায় অরুনা কে দেখে। পরীকে দেখে অরুনা দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে। এঁকে অপরকে এর আগে কোনদিন দেখেনি তাও কেন জানিনা মনে হল অভির যে দুজন যেন দুজনকে আগে থেকেই চিনত। পরী অরুনাকে জড়িয়ে ধরে কপালে একটা ছোট্ট চুমু খায়। অভি কিছু দুরে দাঁড়িয়ে দেখে ওর জীবনের দুই দেবী সমান প্রতিমা, একজন অভির চোখের মণি আরেক জন ওর হৃদয়। পুবালি চুপ করে দাঁড়িয়ে ওদের দেখে আর মিটিমিটি হাসে। অভি পুবালিকে জিজ্ঞেস করে যে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে অরুনা, পুবালি মাথা নাড়িয়ে হেসে অরুনাকে দেখিয়ে বলে যে সেটা একটা চমক।

অরুনা পরীকে দেখে হেসে বলে, "শুচিদি আমি অভিকে ঈর্ষা করতে ইচ্ছে করছে গো। আমি যদি মেয়ে না হয়ে ছেলে হতাম তাহলে নিশ্চয় তোমার প্রেমে পড়তাম।"

পরী একটু লাজুক হেসে আদর করে ছোট্ট একটা চাঁটি মারে অরুনার গালে। অভি অরুনাকে জিজ্ঞেস করে যে ওরা কোথায় যাচ্ছে। অরুনা উত্তর দেয় যে দক্ষিণেশ্বর কালি মন্দির।

অভি অবাক হয়ে যায়, "কি? শেষ মেশ দক্ষিণেশ্বর? না।"

অরুনা, "তুই যেতে না চাইলে যাস না, কিন্তু আমরা মেয়েরা অখানেই যাবো।" এই বলে পরীর হাত ধরে হাটা দিল।

অগত্যা অভি, পুবালির দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে ওদের পেছন পেছন চলতে শুরু করল।

ট্যাক্সির পেছনের সিটে বসে মেয়েরা পাখীর মতন কিচিরমিচির শুরু করে দিল। পুবালি যথারীতি চুপ মাঝে মধ্যে একটু আধটু কথা বলছে, আর অভি অগত্যা চুপ, ওকে কেউ কথা বলতে দিলে ত বলবে।

অরুনা পরীকে জিজ্ঞেস করে, "আচ্ছা শুচিদি, তুমি এই পাগলটার প্রেমে পড়লে কি করে?"

পরী আয়নায় অভির দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে উত্তর দেয়, "ব্যাস যেন হয়ে গেল, যেদিন প্রথম এক দুজনকে দেখেছিলাম সেদিন কেন জানিনা মনে হয়েছিল যে ও শুধু আমার জন্যে এই পৃথিবীতে এসেছে।"

অভি চুপ করে সামনের শিতে বসে ওদের কথা শুনে যায়, পেছন থেকে পরী ওর মাথার পেছনে এক ছোট্ট চাঁটি মারে।

অরুনা খিলখিল করে হেসে বলে, "উম, কি রোম্যান্টিক ব্যাপার। ও পাগলের অনেক সাহস যে তোমাকে নিয়ে একা একা ওই দুর্গম পাহারে ঘুরতে গেছে, বাপরে ভাবলেই যেন গায়ে কাঁটা দেয় আমার। কেউ ত ভাবতেই পারেনা একা একা যাবার কথা, তায় আবার এমন এক জায়গায় যেখান কার নাম আমি আগে ত শুনিনি। তুমি ওই পাগলের সাথে গেলে কি করে?"

পরী হেসে অরুনাকে জিজ্ঞেস করে, "কেন সমুদ্রনীল তোকে কোথাও নিয়ে যায় না?"

অরুনা একটু ম্লান হেসে উত্তর দিল, "না গো শুচিদি, ও পুবালির মতন একটু মুখচোরা স্বভাবের, অভিমন্যুর মতন পাগল বা দুঃসাহসী ছেলে নয়। এ পাগলা ত যেখানে সেখানে ভিড়ে যায়। তুমি ওকে সামলাও কি করে?"

পরী কিছু উত্তর দেয় না, শুধু একটু হাসে অরুনার দিকে তাকিয়ে।

অরুনা, "জানো, যখন কলেজে এসেছিল, তখন যেন পাথরের মূর্তি ছিল। আমরা সবাই ওকে একটু এড়িয়ে চলতাম কেননা খুব গম্ভির ছিল আর আমরা সবাই ওকে নাক উঁচু বলে ভাবতাম। যেদিন আমার বোনকে বাঁচাল সেদিন আসল বিহারী বেড়িয়ে পড়ল ওই গম্ভির মুখোশের পেছন থেকে।"

পরী হেসে অরুনাকে বলে, "তোর মুখে ওই পাগলটার জন্য এত প্রশংসা কেন রে? ওর কথা ছাড় সমুদ্রনীলের কথা বল।"

ওদের কিচিরমিচির চলতে থাকে অনবরত। দক্ষিণেশ্বর পৌঁছে দেখে যে সেদিন মন্দির বেশ খালি। সপ্তাহের মাঝে এসেছে বলে মন্দির প্রাঙ্গনে ভিড় বিশেষ নেই। অভি ভাবল পুজোটা তাহলে একটু ভালো করেই দেওয়া যাবে। পুজো শেষে ওরা সবাই আবার গল্পে মেতে ওঠে।

অভি ওদেরকে পেছন থেকে দেখে, একজন ওর ভালবাসা আরেক জন ওর বান্ধবী। অভি আর পুবালি ওদের পেছন পেছন হাঁটছিল। অভি পুবালিকে ওর নাকের ব্যাথার কথা জিজ্ঞেস করে।

পুবালি অভির মুখের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে পরে, "মাঝে মাঝে জানিস খুব ব্যাথা করে, মাথাটা যেন খুব ভার হয়ে আসে। মাঝে মাঝে মনে হয় যেন আমি মরে যাব।"

অভি, "ডাক্তার কি বলছে।"

এর মাঝে অরুনা ওদের দিকে পেছন ফিরে তাকায়, অভি ওকে দেখে একটু হাসে।

পুবালি, "ডাক্তার আমাকে পরীক্ষা দিতে বারন করেছে, বলেছে মাথায় যেন কোন রকমের চাপ না নেই। একটা এম.আর.আই স্কান করাতেও বলেছে, আমার কিছু যেন মনে হচ্ছে।"

অভি চমকে ওঠে, "এত সব কবে ঘটে গেল? একবারের জন্য আমাকে জানাসনি ত?"

পুবালি, "দুদিন আগে আমি বাথরুমে পরে যাই আর নাক থেকে আবার রক্ত বের হতে শুরু করে।"

অভি, "আমাকে জানাসনি কেন?"

পুবালি, "তোকে কেন আবার জ্বালাতন করা, বাড়িতেই ত ছিলাম সবাই কাছে ছিল তাই আর তোকে জানান হয় নি।"

অভির বুকে থেকে এক দীর্ঘনিঃশ্বাস বেড়িয়ে পরে। পুবালি মাথা নিচু করে মন্দির প্রাঙ্গনের লাল মেঝের দিকে তাকিয়ে থাকে। অভি লক্ষ্য করে যে পুবালির নাকের ওপরে একফোঁটা চোখের জল। অভি চমকে যায় পুবালির চোখে জল দেখে। অভি একবার পরী আর অরুনার দিকে তাকায়, দুজনেই হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা দূর এগিয়ে গেছে, দুজনেই গল্পে মশগুল।

পুবালি কান্না ভেজা গলায় অভিকে বলে, "আমাকে একটা কথা দিবি? অরুনাকে বলিস না যেন।"

অভি ওর কাঁধে হাত রাখে, "তোর কি হয়েছে?"

পুবালির গলার আওয়াজ শুনে বুকের ভেতর ককিয়ে এক অজানা ব্যাথা শুরু হয়ে যায় অভির।

পুবালি অভির দিকে জল ভরা চোখ নিয়ে তাকিয়ে বলে, "ডাক্তার জানিয়েছে যে আমার নাকের আর চোখের শিরা গুলো যে গুলো মাথার সামনের দিকের সাথে কানেক্টেড সেগুলোর অবস্থা ভালো নয়।"

ঠোঁট কেঁপে ওঠে পুবালির, "আমার হাতে খুব কম সময়, অভি। আমার কিছু হয়ে গেলে, সমুদ্রনীলকে বলিস অরুনাকে দেখার জন্য।"

পুবালির কথা শুনে মনে হল যেন একটা বিশাল ঢেউ অভির বুকের ওপরে আছড়ে পড়ল আর তছনছ করে দিল ওকে। পরী আর অরুনার দিকে তাকাল অভি, ওরা হাঁটতে হাঁটতে অনেক দুরে চলে গেছে। অভি নিরুপায় হয়ে মন্দির প্রাঙ্গনে দাঁড়িয়ে, ভাগ্য বিধাতার একি পরিহাস। দুহাতে পুবালিকে জড়িয়ে ধরে, মনে হয় যেন ওর সব ব্যাথা বেদনা যদি নিতে পারত তাহলে নিয়ে নিত নিজের বুকে। পুবালি পাথরের মূর্তির মতন দাঁড়িয়ে ওর বুকের ওপর মুখ গুঁজে কেঁদে ফেলে।

অভির সম্বিৎ ফেরে যখন অরুনা ওর পিঠের ওপরে আলতো করে এক চাঁটি মারে।

পরী অভির জল ভরা চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, "কি হয়েছে তোমার?"

অভি পুবালিকে কথা দিয়েছে অরুনাকে বলা বারন তাই কথা ঘুরিয়ে বলল, "ও কিছু না, পুবালি সেই প্রথম দিনের কথা মনে করে একটু ইমোসানাল হয়ে পড়েছিল এই যা।"

অরুনা কিছুই বুঝতে পারল না ওদের মনের ব্যাথা, পুবালিকে হেসে বলল, "এই পাগলি, ওই কথা চিন্তা করে তোরা ইমোসানাল হয়ে পড়লি?"

অরুনা অভির দিকে তাকাল কিন্তু ওর মনের মধ্যের যে ঝড় বইছে সেটা অনুধাবন করতে পারল না। পরী অভির চোখে ঝরের পূর্বাভাস দেখে ঠাণ্ডা হয়ে যায়। ওই চোখের আড়ালে যেন অনেক কিছু লুকিয়ে রেখেছে অভি। পরী চোখের ইশারায় ঘটনার কথা জিজ্ঞেস করাতে অভি চোখ টিপে পরীকে চুপ করে যেতে ইশারা করে।

অরুনা, "ওই বারো শিবের মন্দিরের এক কোনায় একটা গাছ আছে। লোকেরা বলে ওখানে গিয়ে যদি সুত বাঁধে তাহলে নাকি মনস্কামনা পূরণ হয়। চল না আমরাও গিয়ে আমাদের মনের কথা চেয়ে ওখানে সুত বাধি?"

পরী অরুনার কোথায় হেসে ফেল আর ওরা সবাই মিলে যায় ওই গাছের দিকে। জীবনে প্রথম বার অভির যেন এক ভিখারির মতন নিজেকে মনে হল, ভগবানের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে অভি নিজের জন্য কিছু চাইবে।

অনেকক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকার পরে অভি মনে মনে চাইল, "আমি অরুন্ধুতি আর পুবালিকে আমার আর শুচিস্মিতার বিয়ের সময়ে সবার মাঝে যেন হেসে খেলে বেড়াতে দেখতে পারি।" অভি জানেনা ভগবান ওর মনের কথা শুনলেন কিনা, কিন্তু অভি প্রানপন চাইল যাতে ওর সেই ইচ্ছে পূরণ হোক।
Like Reply
#46
অশ্রুহীন বিদায়


বি.এস.সি ফাইনাল পরীক্ষা গত সপ্তাহে শেষ হয়েছে। বিগত দুমাস ধরে প্রেয়সী পরী যেন মা ধরিত্রির রুপ ধারন করেছিল। সর্বদা চোখে চোখে রেখেছিল অভিকে। ওকে নিজের ঘর ছেড়ে রাতের বেলায় বসার ঘরে পড়তে বসতে নির্দেশ দিয়েছিল, যাতে চোখে চোখে রাখতে পারে। সেই কয়দিন পরী নিজেকে এক নিয়ন্ত্রিত মহিলা বানিয়ে তুলেছিল ঠিক তাঁর ছোটমায়ের মতন। অনেক রাত কেটে গেছে যে অভি পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়ত আর পরী ওর মাথার নিচ থেকে বই নিয়ে গুছিয়ে রেখে দিত আর গায়ের ওপরে চাদর ঢেকে দিত। অনেক রাত কেটে গেছে, পরী ওর সামনে বসে এক নয় খবরের কাগজ পড়ত না হলে কোন উপন্যাস নিয়ে বসে থাকত। যাতে অভির ঘুম না পায় সেই জন্য সময়ে সময়ে কফি বানিয়ে আনত। কফি খাইয়ে দিয়ে শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ মুছিয়ে দিত, কিন্তু একবারের জন্যেও গায়ে হাত লাগাতে দিত না। অভি মাঝে মাঝেই বকা খেত অপটিক্সের বা মেকানিক্সের জন্য। মা প্রথম কয়েকদিন ওদের ওপরে একটু নজর রেখেছিলেন, মনে হয় মা কিছু আচ করেছিলেন। কিন্তু যখন দেখলেন যে পরী শুধু সামনে বসে উপন্যাস পরে আর টেবিলে কফির সরঞ্জাম তখন মায়ের সন্দেহ দূর হয়ে যায়। পরীর আর অভির ভেতরের কথা মা টের পায়না।

পরী সেই প্রথম রাতের চুম্বনের পরে নিজের চারদিকে এক উঁচু দেয়াল গড়ে তোলে, অভির সাধ্য ছিলনা সেই কঠিন দেয়াল টপকে প্রেয়সী পরীর কাছে পৌঁছানর, সামনে সবসময়ে যেন মাতৃময়ি মূর্তি শুচিস্মিতা দাঁড়িয়ে থাকত। পরী একেবারে বঞ্চিত করেনি অভিকে, মাঝে মাঝে সস্নেহে কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিত কিম্বা ঘুম ঘুম পেলে মাথায় চাঁটি মেরে জাগিয়ে দিত কিম্বা রাতে ঘুম না আসলে মাথার চুলে বিলি কেটে ঘুম পারিয়ে দিত। অভির বুঝতে কষ্ট হয়না যে ওকে অনেক কিছু করতে হবে জীবনে যদি পরীকে নিজের করে নিতে হয়। এই পৃথিবী টাকা চেনে আর চেনে সামাজিক পদমর্যাদা, এই দুটি না পেলে অভি পরীকে ছিনিয়ে নিতে পারবে না ওর কঠোর বাবা মায়ের শৃঙ্খলা থেকে। শেষ পর্যন্ত মা ধারিত্রি জয় লাভ করেন মেনকার কাছে।

দিনটা, 22শে মে, 2001. বাড়ির সবার খাওয়া দাওয়া শেষ। অভি বসার ঘরে বসে টি.ভি. তে ওর প্রিয় সিনেমা "Gone with the wind" দেখছে। বাড়ির কারুর ইংরাজি সিনেমা বিশেষ পছন্দ নয় তাই অভি একা একা বসে সিনেমা দেখছিল। গ্রীষ্মকাল কোলকাতায় চেপচেপে গরম, মাথার ওপরের পাখা বনবন করে ঘুরছে। পরী মায়ের সাথে রান্না ঘরে কিছু কাজে ব্যাস্ত আর বাবা রাতের শোয়ার জন্য বিছানা তৈরি করছিলেন।

রাত প্রায় সাড়ে দশটা বাজে, তখন ফোন এল। বাবা ফোন তুলে কথা বললেন। কিছু পরে ফোন রেখে বাবা বসার ঘরে ঢুকলেন। বাবার থমথমে মুখ দেখে অভির বুকের মাঝে এক সংশয়ের উদ্রেক হয়। অভি বাবাকে জিজ্ঞেস করে যে কার ফোন এসেছিল।

বাবা, "ব্যানারজি কাকু তোকে এখুনি বেলে ভিউ ক্লিনিকে ডেকেছে।"

ব্যানারজি কাকু মানে অরুনার বাবার ফোন, সেই শুনে অভির আর কিছু বুঝতে বাকি রইল না। এক পলকের মধ্যে পুবালির কান্না ভেজা চোখের কথা মনে পরে গেল। পা থেকে মাথা পর্যন্ত কেঁপে উঠল অভি। পরী আর মা বাবার কথা শুনে রান্না ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে এসে বাবার পেছনে দাঁড়িয়ে। পরী অভির দিকে তাকাল, অভির চোখ দেখে পরীর বুঝতে বাকি রইল না যে ঘটনা কি ঘটে গেছে।

কোনোরকমে জামা কাপড় পরে অভি বেড়িয়ে যাবার জন্য প্রস্তুত, এমন সময়ে বাবা অভিকে ডাক দিয়ে বললেন যে পরীও যেতে চায়। অভি মায়ের দিকে তাকাল, পরী জামাকাপড় পরে তৈরি যাবার জন্য। ও ওর ছোটমায়ের দিকে জল ভরা করুন চোখে তাকিয়ে অনুরধ করে অভির সাথে যাবার জন্য। মা পরীর চোখ দেখে বুঝলেন যে পরীকে আটকানো সম্ভব হবে না।

ট্যাক্সিতে পরীর কে জড়িয়ে ধরে থাকে অভি, পরীর অনুধাবন করতে অসুবিধে হয় না যে একটা বিশাল বড় ঝড় আকাশের কোনায় জমে এসেছে। রাত প্রায় সাড়ে এগারটা নাগাদ ওরা নারসিং হোমে পৌঁছায়। ভেতরে ঢুকে দেখে ব্যানারজি কাকু, কাকিমা, পুবালির বাবা মা আর অরুনা দাঁড়িয়ে। পরীকে দেখে ডুকরে কেঁদে ওঠে অরুনা। পরী অরুনাকে জড়িয়ে ধরে চেয়ারে বসিয়ে দেয়।

অভি ব্যানারজি কাকুর কাছে গিয়ে পুবালির কথা জিজ্ঞেস করে জানতে পারে যে, বিকেল বেলা সবাই চা খেতে ব্যাস্ত ছিল। পুবালি নিজের ঘরে নিজের আলমারি গুছাতে ব্যাস্ত ছিল। আল্মারির মাথায় কোন জিনিস ছিল যার জন্য ও একটা টুলের ওপরে দাঁড়িয়ে সেটা নামাতে চেষ্টা করছিল। কোথা থেকে একটা মাকরসা দেখে পুবালি আঁতকে ওঠে আর টুল থেকে পরে যায়। আলমারির হাতল মাথায় লাগে আর নাক থেকে রক্ত বের হতে শুর হয়। প্রথমে পাশের ডাক্তার ডেকে রক্ত থামানর ব্যাবস্থা করে, কিন্তু রক্তক্ষরণ বন্ধ হয় না। ডাক্তার রক্তের সাথে পুঁজ বের হতে দেখে পুবালিকে নারসিং হোমে ভরতি করতে বলেন। নারসিং হোমে নিয়ে আসা হয় পুবালিকে আর সঙ্গে সঙ্গে অপারেশান শুরু করে দেওয়া হয়।

অভি বাড়িতে ফোন করে বাবা মাকে সব জানায়। বাবা খুব চিন্তিত কেননা ব্যানারজি কাকু বাবার বন্ধু। বাবা পরীকে আর অরুনাকে দেখার জন্য বলেন। অভি লক্ষ্য করে যে অয়েটিং হলের এক কোনায় সমুদ্রনীল দাঁড়িয়ে। অরুনার বাবা মা জানেন না সমুদ্রনীলের ব্যাপার তাই সমুদ্রনীল ওদের সামনে আসতে পারছিল না আর অরুনার সাথে দেখা করতে পারছিল না। অভি ধিরে ধিরে সমুদ্রনীলের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে যে ও ব্যাপার টা জানল কি করে। সমুদ্রনীল জানায় যে অরুনা ওকে ফোন করে জানিয়েছে, কিন্তু এখানে এসে বাড়ির সবাইকে দেখে ও আর অরুনার কাছে যেতে পারছে না।

অভি পরীর দিকে তাকিয়ে অরুনাকে নিয়ে আসতে বলে। অরুনা অনেক আগেই সমুদ্রনীলকে লক্ষ্য করেছিল কিন্তু বাবা মায়ের জন্য কাছে যেতে পারেনি। পরী অরুনাকে নিয়ে ওদের কাছে আসে। অরুনা সমুদ্রনীল কে জড়িয়ে ধরে ভেঙ্গে পরে।

পরী অভিকে বলে, "এখান থেকে চলে এস, ওদের কে কিছুক্ষণ একা ছেড়ে দাও।"

অভি উত্তর দেয়, "তুই অরুনাকে একা ছেড়ে যেওনা, সেটা ঠিক হবে না। এখানে কেউ সমুদ্রনীলের কোথা এখনো জানেনা তাই ওকে একা ছেড়ে গেলে হিতে বিপরিত হতে দেরি হবে না। তুমি ওদের কাছেই থাক আমি যাই কাকুর কাছে।"

প্রত্যকে মুহূর্ত যেন এক এক বছর মনে হচ্ছিল অভির, সময় যেন আর কাটতে চায় না। উৎকণ্ঠায় সবাই দাঁড়িয়ে। পুবালির বাবা মা খুব চিন্তিত, তাদের একমাত্র মেয়ে আজ অপারেশান টেবিলে শুয়ে, প্রহর গুনছে।

সমুদ্রনীল কিছু পরে অভিকে ডেকে বলল যে ও সারা রাত হস্পিটালে থাকতে পারবে না কারন কেউ ওকে দেখে ফেললে অরুনা মুশকিলে পরে যেতে পারে। অভির সেই কথা ঠিক বলে মনে হল, অভি জানাল যে কিছু খবর থাকলে সমুদ্রনীল কে জানিয়ে দেবে। পরী অরুনার পাশে বসে ওকে জড়িয়ে ধরে সান্তনা দিতে চেষ্টা করে।

ধরা গলায় পরী অরুনাকে সান্তনা দেয়, "আরে তুই এত কাঁদছিস কেন, পুবালির কিছু হবে না, চিন্তা নেই। শুধু নাক থেকে রক্ত পড়ছে সেটা অপারেশান করলে ঠিক হয়ে যাবে।"

অভি মনে মনে ভগবান কে ডেকে ওর মনের কথা জানায়, জানেনা ভগবান ওর কথা শুনলেন কিনা তাও শেষ বারের মতন হাত জোর করে প্রার্থনা জানায় তাঁর কাছে। ব্যানারজি কাকু সবাইকে এক বার জিজ্ঞেস করলেন যে কেউ চা খাবে কি না, কেউই অপারেশান থিয়েটারের সামনে থেকে নড়তে নারাজ। অভি পুবালির মায়ের কাছে এসে জিজ্ঞেস করে, কিন্তু ওর মা জানালেন যে মেয়ের যতক্ষণ না কোন খবর আসছে ততক্ষণ তিনি নড়বেন না।

প্রায় সকাল চারটের সময়ে ডাক্তার বেড়িয়ে এল অপারেসান থিয়েটার থেকে। সবাই উন্মুখ হয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে, কি খব্র দেন ডাক্তার। অরুনা চোখ বন্ধ করে পরীর হাত শক্ত মুঠির মধ্যে ধরে বসে থাকে।

ডাক্তার জানালেন, "ব্রেনের সামনের দিকের ভেইন্স গুলো খতিগ্রস্থ হয়ে গেছে। আমরা চেষ্টা করছি ঠিক করার জন্য কিন্তু এখন কিছু বলা যাচ্ছে না। পুবালি ধিরে ধরে কোমায় চলে যাচ্ছে। জ্ঞান ফেরা না পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না। পরের বাহাত্তর ঘন্টা আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ, আমরা কিছু পরে ওকে আই.সি.ইউ তে নিয়ে যাব।"

পরীর দিকে তাকাল অভি, পরীর চোখে জল, অরুনা পরীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে যেন পরী ওর শেষ সম্বল। অভি ওদের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পরে অরুনার হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে নেয়। পরী অরুনার পিঠের ওপরে হাত বুলিয়ে সান্তনা দেবার চেষ্টা করে।

অরুনা ব্যাথায় ককিয়ে ওঠে, তিরতির করে কেঁপে ওঠে ঠোঁট জোড়া। ওর মুখে দেখে প্রায় ভেঙ্গে পরে অভি, কিন্তু ভাংলে চলবে না ওকে।

অরুনা ধরা গলায় অভির কাছে কাতর মিনতি করে, "একবার, একবার তুই আমার বোনকে ফিরিয়ে এনেছিলিস। কথা দে আবার ওকে ফিরিয়ে আনবি।"

দাতে দাঁত পিষে নিজেকে সামলে নেয় অভি।

পরী মৃদু বকুনি দেয় অরুনাকে, "কি যা তা বলছিস তুই, পুবালির কিছু হবে না। তুই ওকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে পারবি আর কিছু দিনের মধ্যেই।" অভির দিকে তাকিয়ে বলে, "তুমি গাধার মতন চুপ করে আছো কেন? কিছু বলো?"

অরুনাকে কিছু বলতে যাবে ঠিক সেই সময়ে ব্যানারজি কাকু এসে জিজ্ঞেস করলেন যে ওরা বাড়ি যেতে চায় কিনা। অভি জানাল যে ও হস্পিটালে পুবালির বাবার সাথে থাকবে আর বাকি মেয়েদের নিয়ে বাড়ি চলে যেতে।

পরী অভিকে বলে, "তোমার মনে হয় যে অরুনা এখান থেকে নড়বে?"

অরুনা দিকে তাকায় অভি, অরুনা মাথা নাড়ে, হসপিটাল থেকে যেতে নারাজ যতক্ষণ না পুবালি চোখ খুলে তাকায়। অভি পুবালির মায়ের কাছে যায়, মায়ের মন বাঁধ মানে না, তিনি কিছুতেই নড়বেন না।

অভি পরীর দিকে তাকিয়ে বলল, "তোমার দায়িত্ব যে ব্যানারজি কাকুর সাথে বাড়ির মেয়েদের নিয়ে বাড়ি ফেরা। আমি আর পুবালির বাবা এখানেই থাকছি। তোমরা স্নান সেরে খাওয়া দাওয়া করে পরে এস। তুমিও সারা রাত জেগে, কিছুই খাওনি।"

পরী কেঁদে ওঠে, "আমাকে ত বলে দিলে, কিন্তু আমি কি করে পুবালির মাকে নিয়ে যাব সেটা একবার বলে দাও। ওই মায়ের একমাত্র মেয়ে যে আই.সি.ইউ তে।"

অভি পরীকে এক কোনায় নিয়ে গিয়ে বলে, "প্লিস ওদের নিয়ে যাও এখান থেকে। আমি জানি কি ঘটবে।"

পরী হাজার প্রশ্ন নিয়ে অভির মুখের দিকে তাকায়, "কি বলতে চাও তুমি?"

অভি, "পুবালি আগে থেকে জানত যে ওর হাতে আর বেশি দিন নেই। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের কথা মনে আছে তোমার? আমাকে জড়িয়ে ধরে ছিল পুবালি? সেদিন ও আমাকে বলেছিল যে ওর যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে আমি যেন ওর হয়ে সমুদ্রনীলকে বলি অরুনাকে দেখতে।"

পরী অভির হাত শক্ত করে ধরে বলে, "তুমি আমাকে এত দিন এই কথা জানাও নি কেন?"

অভি, "আমি ওকে কথা দিয়েছিলাম যে আমি ওই কথা কাউকে জানাব না, তাই বলিনি।"

পরী, "আজ তাহলে সেই প্রতিজ্ঞা তুমি ভেঙ্গে দিলে? কি মানুষ তুমি?"

অভি, "পরী, আমি শুধু এই দুঃসময়ের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে চাইছি আর কিছু না।"

পরী অভিকে জড়িয়ে ধরে বুকের মধ্যে মুখ লুকিয়ে কেঁদে ফেলে। ওকে সান্তনা দেবার মতন ভাষা খুঁজে পায়না অভি।

কিছু পরে পরী ওর মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "তুমি খুব শক্ত তাই না, কোন দিন চোখের জল ঝরাও না যে?"

অভি, "পরী, আমার এখন চোখের জল ঝরানোর মতন সময় নেই।"

পরী, "অরুনা আর পুবালির মাকে কি করে সামলাবে?"

অভি, "সময়ের সাথে সব কিছু সামলে নেয়, পরী। সময় খুব বড় মলমের কাজ করে।"

পরী অভির জামা ছেড়ে অরুনা আর পুবালির মায়ের কাছে গিয়ে বসে। অভি ওদের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পরে পুবালির মায়ের হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে নেয়। পুবালির বাবা, ব্যানারজি কাকু অভির দিকে তাকিয়ে থাকে।

অভি, "পুবালি এখন আই.সি.ইউ তে, সে মত অবস্থায় এখানে বসে থাকা টা বোকামো। আমি আর কাকু এখানে আছি, তুমি মেয়েদের নিয়ে ব্যানারজি কাকুর সাথে বাড়ি যাও, স্নান সেরে খেয়ে দেয়ে চলে এস। এর মাঝে পুবালির জ্ঞান ফিরে এলে তোমাকে জানিয়ে দেব তুমি চলে এস।"

অভির কথায় পুবালির বাবা আর ব্যানারজি কাকু সায় দিলেন। ব্যানারজি বললেন যে যাবার পথে পরীকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে যাবেন। ব্যানারজি কাকু মেয়েদের নিয়ে চলে যাবার পরে সমুদ্রনীলকে ফোন করে ডেকে নিল অভি। পুবালি বাবা মাথা নিচু করে বসে, অভির কাছে টাকে সান্তনা দেবার মতন কোন ভাষা নেই। সময় যেন থেমে গেছে ওদের সামনে।

অভি বাবাকে ফোন করে জানিয়ে দিল যে ব্যানারজি কাকুর সাথে পরী বাড়ি ফিরছে। বাবা জিজ্ঞেস করলেন যে যদি পরী আবার নারসিং হোমে যেতে চায় তাহলে কি করবে? অভি জানাল যে যদি পরী আসতে চায় তাহলে ও বাবাকে ফোন করে দেবে আর বাবা যেন কোন গাড়ির বন্দবস্ত করে দেয় যাতে পরী নারসিং হোমে আসতে পারে। বাবা জানালেন যে তিনি ব্যানারজি কাকুর সাথে কথা বলে নেবেন পরীর যাওয়ার ব্যাপারে।

পরের ছয় ঘন্টা যেন ওদের কাছে ছয় যুগের মতন মনে হয়। অভি আর পুবালির বাবা অতি উৎকণ্ঠায় অপেক্ষা করে থাকে কিছু ভাল খবরের জন্য। বিকেল প্রায় চারটে নাগাদ, বাড়ির সবাই নারসিং হোম পৌঁছে যায়। অরুনাকে দেখতে না পেয়ে অরুনার দাদাকে অভি ওর কথা জিজ্ঞেস করে জানতে পারে যে, ব্যানারজি কাকু অরুনাকে নিয়ে অভিদের বাড়িতে গেছে পরীকে নিয়ে আসতে।

কিছু পরে অভি লক্ষ্য করে যে অরুনা আর পরী নার্সিং হোমে ঢুকছে, পেছনে ব্যানারজি কাকু। অরুনার মুখ থমথমে যেন ওর ওপর দিয়ে এখুনি বিশাল এক ঝড় বয়ে গেছে। পরী অভির কাছে এসে পুবালির খবর জিজ্ঞেস করে, অভি মাথা নাড়িয়ে জানায় যে এখন কোন খবর ডাক্তার জানায় নি। অরুনা ওর মায়ের পাশে গিয়ে চুপ করে বসে থাকে, পরী অরুনার পাশে বসে যায়। অরুনা একবার পরীর দিকে তাকায় থমথমে চোখ নিয়ে।

ঠিক সাড়ে পাঁচটা নাগাদ, আই.সি.ইউ থেকে ডাক্তার বেড়িয়ে এসে পুবালির বাবাকে ডাকেন। সবাই ডাক্তারের দিকে উৎকণ্ঠায় তাকিয়ে থাকে। শেষ খবর আসে, পুবালি ব্যানার্জি, এক নিস্পাপ ফুল, খুব লাজুক মেয়ে, জীবনে হয়ত একটা মাছিও মারেনি পুবালি, সেই মিষ্টি মেয়ে যে কোনদিন কলেজে কারুর সাথে উঁচু গলায় কথা পর্যন্ত বলেনি, ঝগড়া করা ত দুরে থাক। শুভঙ্কর ব্যানা+জি আর মালা ব্যানার্জির একমাত্র কন্যা সন্তান আর এই পৃথিবীতে নেই।

চাপা ক্রন্দনের রোল জেগে ওঠে চার পাশে। বুক ফেটে কান্না বেড়িয়ে আসে মায়ের বুক থেকে। পরীর চোখে জল, অরুনাকে জড়িয়ে ধরে। অরুনা পরীকে প্রাণপণে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ গুঁজে পরে থাকে।

অভি চোয়াল শক্ত করে, হাত মুঠি করে কপালে জোরে এক কিল মারে। বুক ফাটিয়ে চিৎকার করে ভগবানের দিকে তাকিয়ে, "শেষ পর্যন্ত আমার কথা রাখলে না তুমি।" বার বার জিজ্ঞেস করে ভগবানকে "এই পৃথিবীতে অনেক দুস্করমিরা আছে, তাদের ছেড়ে কেন এক ফুলের মতন নিস্পাপ মেয়ে কে কোলে ডেকে নিল? তোমার যদি সত্যি কান থাকে তাহলে তুমি আমার কাতর প্রার্থনা শুনতে পারতে, কিন্তু হায় বিধাতা, আমার প্রার্থনা শোনার কেউ নেই।"

পরী কিছু পরে অভির পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে, "অরুনার দিকে তাকাও।"

অরুনার দিকে তাকায় অভি, অরুনা পাথরের মতন বসে নিস্পলক চোখে মেঝের দিকে তাকিয়ে। চেহারা ভাবলেশহীন, চোখে কোন ভাষা নেই, দু’চোখ যেন কাঁচের তৈরি।

বাবাকে ফোন করে খবর দেয় অভি, বাবা তখন অফিস থেকে বের হবেন। অভি বাবাকে সোজা নার্সিং হোমে এসে পরীকে বাড়ি নিয়ে যাবার জন্য অনুরধ করল, "তুমি ওকে বাড়ি নিয়ে যাও, এখানে থাকাটা ওর ঠিক হবে না। ভাগ্যের পরিহাস যা ঘটবার সেটা ত ঘটেই গেছে। ওকে বাড়ি নিয়ে যাও বাড়িতে মায়ের কাছে ঠিক থাকবে।"

বাবা জিজ্ঞেস করলেন অভিকে, "তোর কি খবর, কাল রাত থেকে ত কোথাও যাসনি। বাড়ি ফিরবি কখন?"

অভি, "এখুনি কিছু বলতে পারছি না, দেখি কাল সকালে বাড়ি ফিরব।"

অভি পরীকে বলল, "তোমার বাবু কিছুক্ষণের মধ্যে এখানে আসছে, তাঁর সাথে তুমি বাড়ি ফিরে যাও।"

পরী অভির কলার চেপে ধরে বলে, "আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না।"

অভি, "বুঝতে চেষ্টা করও, পরী। আমার বাড়ি যাবার এখন কোন ঠিক ঠিকানা নেই। সত্যি কথা বলতে এখন অনেক কাজ আছে এইখানে।"

পরী, "তাহলে আমি অরুনার সাথে থাকব।"

অভি, "না তুমি ওর সাথে থাকবে না।"

পরী চেঁচিয়ে ওঠে, "কেন?"

অভি, "কাল রাত থেকে অনেক কান্নাকাটি করেছ তুমি, আর নয়। তুমি যদি ওর সাথে ওদের বাড়িতে যাও, সেখানে গিয়েও আবার কান্নার রোল শুরু হবে, তাঁর থেকে ভালো কথা বলছি তুমি বাড়ি যাও। তুমি একটু বিশ্রাম নাও বাড়ি গিয়ে তোমার ছোটমায়ের কাছে।"

পরী চাপা স্বরে বলে, "অরুনাকে দেখেছ? চোখের পাতা পড়ছে না ওর, পাথর হয়ে গেছে মেয়েটা। ও যদি না কাঁদে তাহলে খুব বড় আরেকটা বিপদ হবে। আমাকে ওর কাছে থাকতে দাও।"

অভি, "আমি দেখি কি করতে পারি, কিন্তু তুমি এখন বাড়ি যাবে। অরুনার সাথে ওর বাবা মা আছেন ওকে দেখার জন্য, এখানে আমি কিছু পরে ব্যাস্ত হয়ে যাব তখন তোমাকে দেখার কেউ থাকবে না।"

সবার সামনে এক নতুন সমস্যা দেখা দিল, অরুনা। ও যদি না কাঁদে বা কিছু না বলে তাহলে আরেক বিপদ ঘনিয়ে আসতে দেরি হবে না।

কিছু পরে অভি আর অরুনার দাদা একটা গাড়ির ব্যাবস্থা করে ফিরে এল। বাড়ির দিকে পুবালির শেষ যাত্রা।

পুবালির দেহ যখন ওদের সামনে আনা হয়, তখন অরুনা চুপ করে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। ধিরে ধিরে পুবালির গালে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, মনে হয় যেন ডাকছে পুবালিকে চোখ খোলার জন্য, কিন্তু ওর গলা থেকে কোন আওয়াজ বার হয় না। একবারের জন্যেও অরুনার চোখের পাতা পরে না বাঁ ঠোঁট কাপে না। নিস্পলক ভাবে চেয়ে থাকে পুবালির বন্ধ চোখের দিকে। ধিরে ধিরে পুবালির মুখের ওপরে ঝুঁকে পরে, কপালে ছোটো একটা চুমু খায় আর গলায় হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে। পাথরের মতন গলা জড়িয়ে পরে থাকে অরুনা। অরুনার এই ব্যাবহার দেখে সবার বুকের ভেতরে এক নতুন ভয় জাগে। অভি পরীর দিকে তাকিয়ে ইশারা করে অরুনাকে উঠানোর জন্য। পরী অরুনার পাশে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে ওর পিঠে হাত রাখে। পরীর হাতের ছোঁয়া পেয়ে অরুনা ভাবলেশহীন চাহনি নিয়ে তাকায় পরীর দিকে। চোখে জল নেই, চেহারায় কোন বিকার নেই, অরুনা যেন এক পাথরের মূর্তি হয়ে গেছে। পরীর সাথে চুপ করে উঠে গিয়ে চেয়ারে বসে পরে।

কিছু পরে বাবা পৌঁছে যান নারসিং হোমে আর পরীকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। ব্যানার্জি কাকু বললেন যে এবারে ওদের বাড়ির দিকে যাত্রা করা উচিত।

বাড়ি নিয়ে যাওয়া হল পুবালির দেহ। সাদা ফুলে আর মভ রঙের শাড়িতে সাজান হল পুবালিকে। পুর সময়াটা অরুনা চুপ করে পুবালির দেহের পাশে বসে থাকে। পুবালির প্রাণহীন হাত নিজের হাতে নিয়ে আঙ্গুলে হাত বুলিয়ে দেয়। দেখে মনে হয় যেন এই ওর বোন আবার জেগে উঠে ওর সাথে কথা বলবে। কিন্তু হায় বিধাতা, পুবালি যে চির নিদ্রায় মগ্ন।

বাড়ি থেকে যখন ওকে নিয়ে বের হবে সবাই, তখন অভি লক্ষ্য করে কলেজের বন্ধুদের। বিদায়ের শেষ ক্ষণ উপস্থিত। পুবালির অন্তিম যাত্রা। বাড়ি জুড়ে কান্নার রোল জেগে ওঠে, অরুনাকে জড়িয়ে ধরে অরুনার মা কেঁদে ওঠেন। কিন্তু অরুনা নিস্পলক চোখে তাকিয়ে থাকে পুবালির মুখের দিকে, চোখে জল নেই, অতি শিতল সেই চোখের চাহনি। অভি এবং বাকিরা পুবালিকে কাঁধে করে বাইরে নিয়ে আসে। অরুনা চুপ করে বাড়ির গেট পর্যন্ত ওদের সাথে আসে তারপরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে যতক্ষণ পুবালিকে গাড়িতে তোলা না হয়। তারপরে অরুনা ফিরে যায় বাড়ির মধ্যে, নিজের ঘরে ঢুকে পরে বিছানায় শুয়ে পরে। বাড়ির বেশির ভাগ মহিলাদের নিমতলা শ্মশান ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয় না।

নিস্পাপ ফুলের কুঁড়ি, পুবালি ব্যানারজির নস্বর দেহ আগুনে জ্বলে পঞ্চভুতে বিলীন হয়ে যায়। সেইদিন অভি তাঁর জীবনের সবথেকে মর্মস্পর্শী দৃশ্য চোখের সামনে দেখে, স্নেহ ভরা বুকে নিয়ে এক পিতা তাঁর চোখের মণি একমাত্র কন্যের মুখাগ্নি করছেন। ভগবানের কাছে কাতর আবেদন জানায় অভি, যেন কোন পিতাকে তাঁর কন্যার মুখাগ্নি না করতে হয়।

সমুদ্রনীল আর অভি চুপচাপ দুজনে গঙ্গার তীরে বসে রাতের আকাশের তারা দেখতে থাকে।

সমুদ্রনীল অভিকে জিজ্ঞেস করে, "অরুনা যদি কিছু প্রতিক্রিয়া না দেখায় তাহলে কি হবে? ও ত পাগল হয়ে যাবে, আরও বড় কোন বিপদ ঘটবে।"

অভি, "তুই ওকে ভালোবাসিস, তোকেই কিছু করতে হবে।"

সমুদ্রনীল, "আমি কি করতে পারি, তুই ওকে আমার চেয়ে ভাল করে চিনিস। পুবালির পরে শুচিদি ওর সব থেকে কাছের মানুষ। যদি কিছু করতে পারিস সেটা তোরাই করতে পারিস।"

অভি চারদিকে একবার তাকিয়ে দেখে যে ওদের কেউ দেখছে কিনা। পরিবারের বাকি লোকজন, কিছু দুরে একটা ছাওনির তলায় বসে। একটা সিগারেট ধরিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে ওঠে অভি,

"তুমি আমার জীবনের অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছ, আমার আঁকা, আমার কবিতা, আমার লেখা। তুমি আমার জীবনের সব থেকে ভাল বন্ধুর বোনকে তার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছ। তুমি আমার কাছ থেকে আর কি চাও? শেষ বারের জন্য তোমার সামনে প্রার্থনা করছি যে আমার ভালোবাসা আমার কাছ থেকে কেড়ে নিওনা। যদি সেটাও চলে যায় তাহলে আমি জানব যে এই জগতে ভগবান বলে কিছু নেই, আছে শুধু পাথরের এক মূর্তি। শুধু একবারের জন্য প্রমান কর যে তুমি সত্যি আছো।"
Like Reply
#47
সুকৌশল প্রতিজ্ঞা

যত দিন যায়, অরুনার শারীরিক অবস্থার অধঃপতন হয়। সেই দিনের পর থেকে অরুনা কারুর সাথে কথা বলেনি, একদম চুপ করে গেছে, ভাবলেশহীন চেহারা, দুচোখ যেন কাঁচের তৈরি। দিন রাত পুবালির ঘরের মধ্যে কাটায়, প্রকাশহীন নয়নে চেয়ে থাকে টেবিলে ছড়ানো বই গুলর দিকে, পুবালির আল্মারির দিকে যেখানে পুবালি জামা কাপড় রাখত, ফটোর অ্যালবাম হাতে নিয়ে ওদের ছোটো বেলার ছবি দেখে। অরুনা পুবালির চেয়ে মাত্র তিন মাসের বড়, ছোটো বেলা থেকে হরিহর আত্মা ওরা দু’জনে, যেখানেই যেত বা যা কিছু করত, দু’জনে একসাথে করত। শুধু একজন একটু চঞ্চল আরেকজন শান্ত প্রকৃতির মেয়ে ছিল।

অভি মাঝে মাঝেই ওদের বাড়ি গিয়ে অরুনার খবরা খবর নিত। পরীর সাহসে কুলায় না যে অরুনার অভিব্যাক্তিহীন চোখের সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর। পরী নিজেই এত আঘাত পেয়েছিল যে নিজেকে একটা কচ্ছপের খোলের মধ্যে লুকিয়ে নিয়েছিল, ওর ছোটো মা ওর পাশে না থাকলে একদম ভেঙ্গে পড়ত।

পুবালির কাজের দিনে অভিদের যাওয়ার কথা। পরী কান্না শুরু করে, যে ও কিছুতেই ওই বাড়ি যাবে না, কিছুতেই ও অরুনার সামনে দাঁড়াতে পারবে না। মা আর অভি অনেক বুঝাতে চেষ্টা করে পরী কে কিন্তু পরী অটল, ও যাবে না।

শেষ পর্যন্ত বাবা ওকে বললেন, "দেখ সোনামা, আমাদের জীবন একটা নদীর মতন, নদী যেমন চলতে চলতে অনেক বাঁক অনেক বাধার সম্মুখিন হয়, তেমনি আমাদের জীবনেও অনেক বাঁধা বিপত্তি আসে, কিন্তু নদীর জল কি আর থেমে থাকে মা, সেত নিজের খেয়ালে বয়ে চলে সাগরের পানে। আমি তোকে পুবালিকে ভুলে যেতে বলছি না, আমি তোকে শুধু একটা অনুরধ করব যে জীবন কারুর একার জন্য থেমে যায় না। ইংরাজিতে একটা কথা আছে সোনামা, Rolling stone gather no moss. তুই যদি জীবনের সাথে পা মিলিয়ে না চলিস তাহলে তুই পিছিয়ে পড়বি। সেই দিনের পর থেকে তুই অরুনার সাথে একবারের জন্যেও দেখা করিস নি। ভালো মেয়ের মতন চোখের জল মুছে আমাদের সাথে ওদের বাড়ি চল সোনামা।"

পরী দরজা বন্ধ করে বুক ফাটীয়ে চেঁচিয়ে ওঠে, "আমি বুঝি না কেন এই সব আদিখ্যেতা দেখানো? পুবালির চলে যাওয়া কেন লোক খাওয়ান? কোন বৃদ্ধ যদি জেতেন তাহলে আমি নিজেকে বুঝাতে পারতাম। কিন্তু ফুলের মতন নিস্পাপ, নিস্কলঙ্ক মেয়ের চলে যাওয়ায় এই সব কেন?"

বাবা, "দেখ মা, আমরা মানুষ, আমরা সামাজিক প্রাণী। এই সমাজের কিছু নিয়ম কানুন আছে, এই সমাজে থাকতে হলে আমাদের সেই নিয়ম, কানুন মেনে চলতে হয় নাহলে আমরা মানুষ বলে গন্য হব না।"

বাবার কথা শুনে, পরী দরজা খোলে, মা ওকে জড়িয়ে ধরে সান্তনা দেয়। বেশ কিছুক্ষণের মধ্যে ওরা সবাই ব্যানারজি কাকুর বাড়ি পৌঁছে যায়। এক মুহূর্তের জন্যেও পরী ওর ছোটমায়ের কাছ ছাড়ে না।

ওদের বাড়ি পৌঁছানর পরে, অভি ওপরে উঠে পুবালির ঘরের মধ্যে ঢোকে। যথারীতি, অরুনা চুপচাপ শুয়ে পুবালির বিছানার ওপরে। চুপ করে দরজায় দাঁড়িয়ে অভি ওর দিকে তাকিয়ে থাকে, ভেতরে গিয়ে ওকে কিছু বলার সাহস পায় না অভি। কিছু পরে, অরুনার মা ওকে ডেকে নিয়ে যান নিচে। বলেন যে অভির সাথে ওদের কিছু কথা আছে।

নিচে নেমে এসে দেখে যে একটা ঘরে বাড়ির সব লোক জন জড় হয়েছে। ব্যানারজি কাকু, কাকিমা, বাবা মা, পরী, পুবালির বাবা মা। অভি ঘরের মধ্যে ঢুকতেই সবাই ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।

ব্যানারজি কাকু একবার বাবার দিকে তারপর অভির দিকে তাকিয়ে বলে, "অরুনার শারীরিক আর মানসিক সাস্থের দিনের পরদিন অধপতন হয়ে চলেছে, আর আমরা খুব চিন্তিত তাঁর জন্য। আমরা ওকে সাইকিয়েট্রিস্ট দেখিয়েছি, ওষুধ ও দেওয়া হচ্ছে কিন্তু ও কোন কথা না বলা পর্যন্ত বা কোন কিছু প্রকাশ না করা পর্যন্ত ডাক্তার জানিয়েছেন যে মানসিক অবস্থা আরও ভেঙ্গে পড়বে।"

অভি হাঁ করে সবার দিকে চেয়ে থাকে, ওরা সবাই অভিকে এই সব কথা কেন বলছে, কিছুই বুঝতে পারছে না অভি। পুবালির মায়ের গলা ধরে আসে কান্নায়, "অভিমন্যু আমি এক মেয়ে হারিয়েছি, আমার আর শক্তি নেই আরেক মেয়ে হারানর।"

অভি পরীর দিকে তাকায়, ইশারায় জিজ্ঞেস করে যে কি চলছে? পরী ইশারায় উত্তর দেয় যে এসব ওর মাথায় কিছুই ঢুকছে না।

অরুনার মা অভির দিকে তাকিয়ে বলেন, "অভিমন্যু, আমরা সবাই জানি যে তুমি অরুন্ধতিকে ভালোবাসো।"

অরুনার মায়ের কথা যেন অভির বুকে এক শক্তিশেল বানের মতন এসে গেঁথে। কান মাথা গরম হয়ে যায় অভির, ভাবাবেগে চোখ ফেটে জল বেড়িয়ে আসে। চোয়াল শক্ত করে নিজেকে সামলে পরীর দিকে তাকায়। পরী মায়ের চেয়ারে পেছনে দাঁড়িয়েছিল, প্রানপন শক্তি দিয়ে চেয়ারের পেছনটা ধরে থাকে। বুক ফেটে যায় ওর, ওই কথা শুনে।

অরুনার মা, "তুমি যদি আমার মেয়েকে ফিরিয়ে আনতে পার, তাহলে তুমি যা চাইবে তাতে আমাদের কোন আপত্তি থাকবে না।"

অভির পায়ের তলার মাটি যেন সরে গেল, চোয়াল শক্ত করে, চোখ বন্ধ করে বুকের মাঝের উত্তাল তরঙ্গ টাকে শান্ত করার প্রানপন চেষ্টা চালিয়ে গেল। কেউ যেন ওর মাথায় তরল আগুন ঢেলে দিয়েছে, "কি বলছে কাকিমা? এটা কি করে সম্ভব? দুঃস্বপ্নেও এই পাপের কথা ও চিন্তা করেনি। হ্যাঁ, সবার মনের ভেতরে এক ভ্রান্তি ছিল আর সেটা ওরা একদিন কাটিয়ে দেবে তাও ঠিক করেছিল, কিন্তু তাঁর আগেই এই সব?"

ও জানে যে পরী এই কথা শুনে, মরমে মরে যাচ্ছে। চোখ খুলে পরীর দিকে তাকিয়ে দেখে যে পরী নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে প্রাণপণে নিজের মনকে সামলানোর প্রবল চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে পরী, চেহারায় ফুটে উঠেছে এক অব্যাক্ত বেদনার ছাপ, সেই বেদনা ওই ঘরের কেউ টের পেলনা শুধু একমাত্র অভি ছাড়া। পরীর বুকের মধ্যে যেন এক স্টিম ইঞ্জন দউরাচ্ছে যেন, চোখের বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। দুঃখে বেদনায় কান নাকের ডগা লাল হয়ে উঠেছে পরীর।

পরী ছাড়া বাকি সবাই অভির উত্তরের প্রতীক্ষায়। অভি সবার মুখের দিকে একবার তাকায়, নিরুপায় আজ বীর অভিমন্যু, জানেনা ওর প্রতিজ্ঞার ফল ওদের জীবন টাকে কোথায় নিয়ে যাবে, কিন্তু অভি সবার মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবে যে কিছু একটা পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, সবার আশা ভরশা এভাবে ভেঙ্গে দেওয়া ঠিক হবে না। অভিমন্যুর অভি বুকের ভেতর থেকে বলে ওঠে, "ভেবে চিন্তে পদক্ষেপ নেবে অভিমন্যু, তোমার ভালোবাসা আর তোমার স্নেহ আজ দুজনের পরীক্ষা, আজ দুজনেই তোমার সামনে হাত পেতে দাঁড়িয়ে।"

হাঁটু গেড়ে অরুনার মায়ের সামনে বসে পরে অভি, অরুনার মায়ের হাত নিজের হাতে নিয়ে বলে, "আমি কথা দিচ্ছি যে আমি তোমার মেয়েকে তোমার কোলে ফিরিয়ে দেব।"

আড় চোখে পরীর দিকে তাকায় অভি। পরীর দুচোখ শক্ত করে বন্ধ, মাথা নিচু। মুখে দেখে মনে হচ্ছে যেন বুক এখুনি ফেটে যাবে। প্রাণপণে চোখের জল আর বুকের অভিব্যাক্তি লুকিয়ে রেখেছে পরী। অভি যেন ঘরের মধ্যে পরীর হৃদয় ভাঙ্গার আওয়াজ শুনতে পায়। সবার চোখে, পরী অরুনার জন্য চোখের জল ঝরাচ্ছে, কিন্তু একমাত্র অভি ওর মনের অবস্থা জানে, কেন পরীর বুকের মধ্যে এই উত্তাল তরঙ্গ আছড়ে পড়ছে। রাগে, দুঃখে বেদনায়, পাথরের মতন দাঁড়িয়ে থাকে পরী।

অভি একবার মাথা নিচু করে মেঝের দিকে দেখে অরুনার মাকে বলে, "আমাকে কথা দাও যে আমি যা চাইব তাই যেন তোমরা মেনে নাও।"

ব্যানারজি কাকু ওর কাছে এসে কাঁধে হাত রেখে বলে, "তুমি যা চাইবে সেটা তুমি পাবে, আমরা সবাই মেনে নেব। আমি আজ সবার সামনে তোমাকে কথা দিচ্ছি।"

সবার সামনে অভি প্রতিজ্ঞা করে দিল কিন্তু জানেনা যে সেই প্রতিজ্ঞার ফলাফল, ওদের দুজনের জীবনকে কোন মোড়ে নিয়ে যাবে। নদী কোন খাতে বইতে চলেছে, কিছুই জানে না, পরীর আর অভির সম্পর্কের কি হবে জানে না, সবকছুই এক বিশাল অনিশ্চয়তার মধ্যে যেন ডুবে গেল। পুবালিকে প্রতিজ্ঞা করেছিল যে সুমদ্রনীল যেন অরুনাকে দেখে, সেই প্রতিজ্ঞা অভি কি করে পূরণ করবে, জানে না।

বাড়ি ফিরে যাবার আগে অভি পুবালির ঘরে যায় অরুনাকে দেখার জন্য। অরুনা এক রকম ভাবে বিছানায় শুয়ে এমন কি পাশ ফিরে দেখেওনি যে কে এল কে গেল। বুক ফেটে কাঁদতে ইচ্ছে করে অভির, কিন্তু সেই ভাঙ্গা বুকের কান্না কেউ শুনতে পায় না।

বাড়ি ফেরার সময়ে সারা রাস্তা কারুর মুখে কোন কথা ছিল না, বাবা মা অভি পরী, সবাই চুপ। সবার মনের মধ্যে এক সংশয়ের দানা বেঁধে উঠেছে, বাবা মায়ের চিন্তা অন্য খাতে। অভির মাথায় অন্য চিন্তা, কি করে পরীর প্রতি ওর ভালোবাসা রক্ষা করবে আর একদিকে ব্যানারজি কাকু দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে।

বাড়ি ঢুকেই পরী নিজেকে ঘরের মধ্যে বন্ধ করে বিছানায় লুটিয়ে পরে কান্নায় ভেঙ্গে পরে। বাবা মা শুতে চলে যান, অভি নিরুপায় হয়ে কিছুক্ষণ বসার ঘরে বসে থাকে তারপরে ছাদে নিজের ঘরে চলে যায়।

ঘুম আসে না অভির, ছাদের মেঝেতে বসে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে তারার মিটিমিটি চাহনি দেখতে থাকে। মাথা যেন খালি হয়ে গেছে, কিছুই ভাবার শক্তি নেই যেন। কয়েক দিনে আগে পূর্ণিমা ছিল তাই চাঁদ বেশ বড় দেখাচ্ছিল। সেই চাঁদও যেন ওর কাছে কাঁদছে, আকাশের তারার ঝিকিমিকি যেন ম্লান হয়ে এসেছে ওর বুকের বেদনার সামনে। অভির মনের মধ্যে উদ্দম ঝড় বয়ে চলে, "এ আমি কি করেছি? কি করে আমি আমার প্রতিশ্রুতি আর ভালোবাসা রক্ষা করব? আমি পরীর কাছে কথা দিয়েছি যে ওকে ছেড়ে আমি যাবো না, ওদিকে পুবালি কেও কথা দিয়েছি যে সমুদ্রনীলের হাতে অরুনার হাত তুলে দেব। আবার ব্যানারজি কাকুর কাছেও প্রতিজ্ঞা করেছি যে অরুনাকে ফিরিয়ে দেব ওদের বুকে। কিন্তু কি করে হবে, একসাথে এত গুলো প্রতিশ্রুতি রক্ষা।"

মাথার নিচে দুহাত ভাঁজ করে ছাদের ওপরে শুয়ে পড়ল অভি। অল্পক্ষণ না অনেকক্ষণ জানে না, ওর চিন্তনের শৃঙ্খলা ভং হয় মৃদু পদক্ষেপের শব্দে। পরী ওর পাশে এসে বসে, জল ভরা ব্যাথা মাখানো চোখ নিয়ে তাকায় অভির মুখের দিকে। কেঁদে কেঁদে পরীর কাজল কালো চোখ দুটি জবা ফুলের মতন লাল হয়ে গেছে।

কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে অভিকে জিজ্ঞেস করে, "তুমি ওইরকম একটা কথা দিতে গেলে কেন?"

অভি চুপ, উত্তর দেবার ভাষা নেই অভির কাছে। পরী ওর বুকের ওপরে লুটিয়ে পরে চাপা চেঁচিয়ে ওঠে, "অভি কথা বলো, কেন এই প্রতিজ্ঞা করতে গেলে তুমি? আমার ভালোবাসা কি কিছুই নয় তোমার কাছে? কেন আমার বুক ভেঙ্গে দিলে?"

অভি পরীকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে। পরী মুখ তুলে ওর বেদনা ভরা চোখের দিকে তাকায়, "তুমি কি একটি বারের জন্যেও আমার কথা ভেবে দেখলে না? আমি তোমাকে ছেড়ে কি করে থাকব, অভি?"

অন্ধকার আকাশের মাঝে পুবালির চোখ ভেসে ওঠে। পুবালি নেমে এসে অভির কানে কানে বলে, "তুই আমাকে কথা দিয়েছিলিস আর শুচিদি কেও কথা দিয়েছিলিস। তুই কারুর হৃদয় ভেঙ্গে দিতে পারিস না, অভি। তুই আজ মহাভারতের অভিমন্যুর মতন চক্রবুহ্যের মাঝে পরে গেছিস। কুরুক্ষেত্রর যুদ্ধে মহাভারতের অভিমন্যুর হার হয়েছিল, কিন্তু আমার অভিমন্যু হারতে পারে না। উঠে দাঁরা অভি, যুদ্ধ কর নিজের সাথে আর ততক্ষণ যুদ্ধ কর যতক্ষণ তুই তোর কারযে সফলতা প্রাপ্তি ঘটে।"

অভি পরীর মুখ হাতের মাঝে আঁজলা করে নিয়ে কপালে ছোটো একটা চুমু খায়। পরী অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে অভির মুখের দিকে, বুঝতে চেষ্টা করে যে অভির বুকের ভেতরে কি চলছে।

অভি, "তুমি কি ভেবেছিলে? যে আমি অরুনাকে বিয়ে করব?"

মাথা নাড়ায় পরী, "হ্যাঁ, আমি তোমার কথা শুনে তাই ভেবেছিলাম। তুমি অরুনার মুখ দেখে আর সবার চাপের সামনে মাথা নত করে শেষ পর্যন্ত হয়ত অরুনাকে কাছে টেনে নেবে। আমি জানি যে এক সময়ে অরুনার প্রতি তোমার কিছু দুর্বলতা ছিল।"

অভি, "পরী, আমি তোমাকে আর শুধু তোমাকেই ভালবাসি। তুমি ছাড়া এই বুকে আর কেউ স্থান নিতে পারে না, পরী।"

পরী, "তাহলে তুমি ওই রকম কথা দিলে কেন?"

অভি মৃদু হেসে বলে, "আমার মাথায় এক পরিকল্পনা এসেছে, যাতে করে সবার মন রক্ষা হবে।"

পরী অবাক হয়ে অভির মুখের দিকে চেয়ে থাকে।

অভি বলে, "অরুনাকে নিয়ে বেড়াতে যাবো আমরা, আমাদের সেই পুরানো জায়গায়। একটা নতুন পরিবেশ, নতুন জায়গায় আশা করি অরুনা ভালো হয়ে যাবে। ওকে শুধু ওর চারপাশের চাপা অবস্থা থেকে বের করা দরকার আর একটু স্নেহের ছোঁয়া দরকার যাতে ওর বুকের ভেতরে যে ব্যাথার পাথর জমে আছে সেটা গলে যায়।"

অভির কথা শুনে পরী চোখ বড় বড় করে অভির দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করে ওর পরবর্তী পদক্ষেপ। অভি বলে, "আমার যতদূর ধারনা যে আমাদের সাথে গেলে ওর মনের অবস্থা ফিরে আসবে। ওকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার পরে আমি ব্যানারজি কাকুকে ওর আর সমুদ্রনীলের সম্পর্কের কথা বলব। ব্যানারজি কাকু আমাকে কথা দিয়েছেন যে আমার কথা তিনি শুনবেন, সুতরাং আশা করি তিনি মর্মাহত হবেন না এবং আমার কথা রাখবেন। এই ভাবে সবার কাছে করা প্রতিজ্ঞা রক্ষা হবে। শুধু একটা কথা, আমাদের সম্পর্কের কথা কাউকে এখুনি জানানো হবে না, কেননা এটা ঠিক সময় নয়। আমার হাতে আরো সময় দরকার পরী, আমাকে চাকরি পেয়ে দাঁড়াতে হবে যাতে আমি বাবা মায়ের সমকক্ষ হয়ে তাদের সম্মুখিন হতে পারি, আর যা আমার নিজের তা আমি দাবি করতে পারি।"

প্রায় একপক্ষ কাল পরে, পরীর মুখে হাসি দেখে অভি অভিভূত হয়ে গেল। এতদিন পরীর মনে শুধু অরুনার জন্য চিন্তা ছিল আর আজ অভির প্রতিজ্ঞা ওকে মৃতপ্রায় করে দিয়েছিল। অভির ঠোঁটের ওপরে আলতো করে ঠোঁট চেপে ধরে বলে, "তুমি কে?"

পরীর মধুঢালা স্বর পুনরায় শুনে অভির মন গলে গেল, ক্ষণিকের জন্যে ওর মনে হয়েছিল যে পরীকে হারিয়ে ফেলছে।

অভি ওর কোমর জড়িয়ে বুকের কাছে টেনে নিল, পরী যেন ওর উষ্ণ ছোঁয়া পেয়ে অভির বুকে গলে গেল। অভি ওর কানে কানে বলে, "মনে আছে একদিন তুমি আমাকে বলেছিলে যে তুমি আমার মন্ত্রী বুদ্ধিদাত্রি। আজ আমি তোমাকে বলছি, যে আমি তোমার মন্ত্রী, তোমার বুদ্ধিদাতা, আমি তোমার কার্ত্তিক, আমি বটবৃক্ষ তোমাকে ছায়া দেবার জন্য আর আগলে রাখার জন্য, আমি তোমার সস্নেহময় পিতা আর রতিক্রিয়ায় আমি কামদেব।"

পরীর চোখ ভাবাবেগে চিকচিক করে ওঠে। অভি ওকে জড়িয়ে ধরে নিজের শরীরের ওপরে টেনে নেয়। একে ওপরের আলিঙ্গন বদ্ধ হয়ে খোলা আকাশের নিচে শুয়ে থাকে। ওদের নিবিড় প্রেমালিঙ্গনের সাক্ষী হয় আকাশের চাঁদ আর ঝকমকে তারা।

একটু চিন্তা করার পরে অভি বলল, "কিন্তু এর মধ্যে একটা সমস্যা আছে, পরী।"

পরী, "কি সমস্যা আবার উদয় হল?"

অভি, "আমি অরুনাকে নিয়ে বেড়াতে যাব সেটা ঠিক আছে কিন্তু আমাদের সাথে যদি তুমি যাও তাহলে তোমার সন্দেহ বাতিক ছোটো মায়ের মনে সন্দেহের উদ্রেক হবে আর তোমাকে বাড়িতে আটকে রাখবে। সেই সমস্যার একটা সমাধান আছে আমার কাছে, তুমি কল্যাণী আর রানীকে ফোন করে বল, আমাদের সাথে ঘুরতে যেতে। তারপরে তুমি তোমার ছোটো মাকে জানাও যে তুমি রানী আর কল্যাণীদের সাথে হিমাচল প্রদেশ ঘুরতে যেতে চাও এবং সাথে অরুনাকে নিয়ে যেতে চাও। তাহলে তোমার ছোটমা তোমাকে বারন করবে না এবং ব্যানারজি কাকুও তোমাকে বারন করবে না কারন তিনি জানেন যে তুমি অরুনাকে খুব স্নেহ করো। যখন অরুনা তোমার সাথে যাবে তখন সবাই আমাকেও তোমাদের সাথে যেতে বলবে, ব্যাস সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।"

নাকের ওপরে নাক ঘষে পরী মৃদুকনে বলে ওঠে, "আমি যে তোমাকে কত ভালবাসি বলে বুঝাতে পারব না অভি..."

অভি দেখল যে পরী হয়ত ভাবাবেগে এখুনি চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় করে দেবে তাই ঝট করে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ওর ভাবাবেগ প্রেমের আবেশে বদলে দেয়। কিছু পরে নিজেকে অভির ঠোঁট থেকে মুক্ত করে লাজুক হেসে বলে, "তুমি না খুব শয়তান ছেলে।"

মাথা হেলায় অভি, "উম্মম হানি, আমি তোমার বুদ্ধিদাতা মন্ত্রী।"

মাথা নাড়িয়ে অভির সারা মুখে চুলের পরশ ছড়িয়ে দেয় পরী। মখমলের মতন চুলের পরশে প্রেমাবেগে চেপে ধরে পরীকে নিজের বুকের কাছে। পরীর কোমল বুক জোড়া অভির নগ্ন বুকের ওপরে পিষ্ট হয়ে যায়। পরীর কোমল পিঠের ওপরে হাত বুলাতে শুরু করে দেয় অভি, শিরদাঁড়ার ওপর দিয়ে নখের আলতো আঁচর কেটে দেয় মাঝে মাঝে। ওর ছোটো নরম গোল পেট অভির নগ্ন পেটের ওপরে মাখনের মতন লেপে যায়। দুজানু জোড়া করে অভির জানুর ওপরে রেখে দেয় পরী। অভি ধিরে ধিরে হাত নিয়ে যায় সুগোল নিতম্বের ওপরে, আলতো করে চেপে ধরে কোমল নারী মাংস। উত্তপ্ত হাতের চাপে পরীর বুকের মাঝে কামনার আগুন জ্বলে ওঠে, শরীর গরম হয়ে ওঠে প্রেমের নিবিড় আলিঙ্গন পাশে।

তপ্ত নিঃশ্বাসে অভির মুখ ঝলসে যায় প্রায়, পরী মাথা নিচু করে অভির কাঁধে মুখ গুঁজে দিয়ে ঘাড়ে কানে চুমু দিতে থাকে। গালে গাল ঘষে বারবার। মৃদু ঘর্ষণের ফলে দুই শরীরে আগুনের ফুল্কি ছিটকে যায়। অভির বুকে কামনার উত্তাল তরঙ্গ দোল খায়, প্রেয়সীর কাছে আত্মসমর্পণ করার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে। বাম হাতে পরীর মাথার চুল মুঠি করে ধরে মাঝে মাঝে আঁচরে দেয়। বুকে যেন কামনার বিশাল ঝড় শুরু হয়ে যায়।

অভি দুই পা একটু ফাঁক করে দেয়, পরীর জানু অভির মেলে ধরা পায়ের ফাঁকে গলে যায় আর অভি চেপে ধরে পরীর শরীর। প্রেমের আলিঙ্গনে এতই বিভোর দুই কপোত কপোতী যে ওরা ভুলেই গেছে যে ওরা তখন খোলা আকাশের নিচে।

গ্রীষ্ম কালের মৃদুমন্দ বাতাস ওদের বুকের আগুন যেন আরও জ্বালিয়ে তোলে। মিলে মিশে একাকার হয়ে থাকে দুই শরীর।

অভি ওর কানে কানে বলে, "বেবি..."

পরী ফিসফিস করে বলে, "ম্মম্মম্মম...... কি হল"

অভি ওর সুগোল নরম নিতম্ব চেপে ধরে বলে, "আমারা কি সেলিব্রেট করব?"

নিতম্ব চেপে ধরে পরীর নিম্নাঙ্গ টেনে ধরে নিজের তপ্ত কঠিন সিংহের ওপরে। পরী নিজের নিচে অভির তপ্ত শলাকার স্পর্শ পেয়ে মোচর দেয়। শরীরের মোচরের ফলে বারে বারে অভির সিংহ গিয়ে ধাক্কা মারে পরীর নারীত্বের দোরগোরায়। পরীর বক্ষোপরি তপ্ত নুড়ি অভির নগ্ন বুকে আঁচর কাটতে থাকে, পুড়িয়ে দেয় যেন অভির ত্বক। অভি থাকতে না পেরে চেপে ধরে ওর পুরুষ সিংহটিকে পরীর ঢাকা নারীত্বের দোরগোড়ায়। পরী মৃদুসুরে ককিয়ে ওঠে। প্রেমের দুধ সাগরে ডুব দেবার প্রস্তুতি আসন্ন। অভির মোচর আর চাপের ফলে পরী সিক্ত হয়ে ওঠে, কিছু টা ঘামে কিছুটা প্রেমে।

অভি আবার জিজ্ঞেস করে, "সোনা, আমার এবারে সেলিব্রেট করি?"

পরী ওর কাঁধ থেকে মাথা না উঠিয়ে কানে কানে বলে, "এত কিছু করে, আমার ভেতরে আগুন জ্বালানর পরেও তুমি জিজ্ঞেস করবে, শয়তান ছেলে।"

অভি দুষ্টুমি করে বলে, "ভদ্রলোকেরা সবসময়ে জানান দিয়ে ঘরে ঢোকে সোনা, আর তুমি ত আমার স্বর্গের অপ্সরা, তোমাকে না জানিয়ে কি করে..."

পরী, "উম্মম... কত আমার ভদ্রলোক। কিন্তু খোলা আকাশের নিচে নয়।"

অভি, "আমাদের কেউ দেখতে পাবে না বেবি।"

পরী, "শয়তান ছেলে, আমার কি লজ্জা করে না নাকি। এই রকম খোলা জায়গায় কি মানুষে এসব... ধুত তুমি না..."

পরী মাথা তুলে তাকায় অভির বাসনা তারিত চোখের দিকে। চিবুকের ওপরে চিবুক রাখে পরী, আলতো করে জিব বের করে চেটে দেয় অভির ঠোঁট। আধবোজা ঠোঁটের ভেতর থেকে উষ্ণ নিঃশ্বাস স্নান করিয়ে দেয় অভির সারা মুখ।

অভি সিনহটিকে মোচর দিয়ে পরীর জানুসন্ধিতে পিষে দিয়ে বলে, "আমি আর থাকতে পারছিনা বেবি। আমাকে তুমি তোমার আলিঙ্গন থেকে অনেক দিন হতে বঞ্চিত করে রেখেছ। আমার ভেতরে বাঁধ আজ যেন ভেঙ্গে যাবে তোমার কোমল ছোঁয়ায়, তোমাকে আমার সাথে মিলিয়ে নেব আজ এই রাতে।"

অভির হাত নিচে নেমে যায়, পরীর গায়ের কাপড় ধিরে ধিরে টেনে উঠাতে শুরু করে। গ্রীষ্মের মৃদু বাতাস পরীর নগ্ন পায়ের গুলির ওপরে বয়ে যায়। আরও ওপরে টানে পরীর রাত্রিবাস, জানুর মাঝে মৃদু বাতাস ছুঁয়ে যায়।

পরী চাপা চেঁচিয়ে ওঠে, "শয়তান ছেলে... এখানে নয়।"

অভি ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুরে যেতে চেষ্টা করে, কিন্তু পরী সর্ব শক্তি দিয়ে অভিকে ছাদের মেঝের সাথে চেপে ধরে থাকে। পরী মৃদু সুরে বলে, "তুমি যদি আমার সাথে এই খোলা আকাশের নিচে... তাহলে কিন্তু আমি তোমার সাথে কোনদিন কথা বলব না।"

আস্তে করে পরীকে জড়িয়ে ধরে উঠে পরে অভি, পরী ক্ষণিকের জন্যেও অভির গলা ছারেনা। পরীকে কোলের ওপরে উঠিয়ে নিজের ঘরের মধ্যে ঢুকে বিছানায় শুইয়ে দেয়।

আলো জালাবার জন্য হাত বাড়ায় অভি, পরী চেঁচিয়ে ওঠে, "একদম আলো জ্বালাবে না কিন্তু।"

অভি, "কেন কি হল? আমি আমার পরীকে একবার পুরোপুরি দেখতে চাই।"

বিছানার চাদরে নিজেকে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে নেয় পরী, ঠিক যেন মিশরের মমির মতন দেখায় ওকে। দুষ্টু হেসে পরী অভির দিকে তাকিয়ে বলে, "হ্যাঁ এবারে আলো জ্বালাতে পার তুমি, আমি এই বিছানার চাদর গা থেকে নামাব না।"

দু’চোখ প্রেমের আবেগে চিকচিক করে ওঠে, ঠোঁটে লেগে কামনার তপ্ত আগুন। অভির সারা শরীরে ঘাম দেয়, সিংহ মাথা উঁচু করে নিজের জানান দেয়, বারে বারে ভেতর থেকে গর্জে ওঠে। গালের টোল যেন উত্তপ্ত লাভার ছোঁয়া পেয়ে লাল হয়ে উঠেছে।

অভি আলো জ্বালিয়ে পরীর দিকে এগিয়ে যায়, "তুমি তাহলে আমার সাথে খেলা করতে চাও, দুষ্টু মেয়ে।"

অভি ওর পায়ের দিক থেকে বারে বারে চাদর টেনে নিতে চেষ্টা করে আর বারে বারে পরী পা ছুঁড়ে ওকে আটকে দিতে চেষ্টা করে। অভি বিছানার ওপরে চরে যায় আর পরী ঘুরে শুয়ে পরাতে গায়ের থেকে চাদর সরে যায়। সুযোগ বুঝে শয়তানি করে পরীর কাপড় জানু ওপরে উঠিয়ে দেয়, পেলব মসৃণ জানুর ওপরে অভির উত্তপ্ত চোখের চাহনি যেন ফোস্কা ফেলে দিতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে পা ঢেকে দিয়ে খিলখিল করে হেসে ওঠে পরী। অভি আর থাকতে পারেনা আর শেষ পর্যন্ত ঝাঁপিয়ে পরে প্রেয়সীর ওপরে, পরী সঙ্গে সঙ্গে হাত বাড়িয়ে আলো নিভিয়ে দেয় আর সারা ঘর অন্ধকারে ঢেকে যায়। জানালা দিয়ে চাঁদের নির্মল আলো ওদের বিছানার ওপরে খেলা করে ওদের উষ্ণ শরীর স্নান করিয়ে দেয়।

ঘামে নাকের ডগা চাঁদের আলোয় চিকচিক করে, পরীর মুখ দেখে অভি নিজেকে আর দুরে সরিয়ে রাখতে পারে না। ওর ওপরে উঠে গিয়ে, দেহের দুপাসে হাত রেখে শরীরের নিচের অংশ পরীর ওপরে চেপে ধরে। পরীও শয়তানি করে জানু চেপে ধরে যাতে অভি ওর পায়ের ফাঁকে নিজেকে নিয়ে যেতে না পারে। অভি ঝুঁকে পরে পরীর মুখের ওপরে, পরীর দু হাত উঠে আসে অভির কাঁধের ওপরে আর ওর মাথা টেনে নিচে নামিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে। ঠোঁটের মধুতে ভরিয়ে দেয় অভি পরীর সারা মুখ, জিবের ডগা ঢুকিয়ে দাঁতের পাটির ওপরে আলতো করে বুলিয়ে দেয়। পরী আর যেন নিজেকে দুরে সরিয়ে রাখতে পারেনা অভি কামাগ্নির পরশ থেকে, ধিরে ধিরে জানু মেলে ধরে আহবান জানায় অভিকে। অভি নিম্নাগ চেপে ধরে পরীর নারীসুখের ওপরে। চুম্বন টিকে না থামিয়ে পরী চাদর টেনে দেয় ওদের গায়ের ওপরে। ওর যে ভীষণ লজ্জা। একে ওপরকে বাহু পাশে বেঁধে ফেলে ওরা।

শরীরের যত রমকুপ ছিল সবকটা উন্মুক্ত হয়ে ওঠে প্রেমের আগুনে, ধিরে ধিরে একে ওপরের হাত ধরে সুখের সাগরে ডুব দেয়। প্রেমের সেই সুন্দর স্বর্গ উদ্যানে ঘুরে বেড়ায়। রতিক্রীড়া শেষে অভির মনে একটা বেদনা থেকেই যায় যে প্রেয়সীর সম্পূর্ণ রুপ দর্শন সে আজও মন ভরে দেখতে পারল না।
Like Reply
#48
লাহুল স্পিতি ভ্রমন (#01)

অভির সুকৌশল পরিকল্পনা অনুযায়ী, ওরা দুজনে একদম মেপে মেপে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়। সর্বপ্রথম পরী কল্যাণী আর রানী কে ফোন করে পরিকল্পনার কথা জানায়। ওদের যে হেতু এখন কোন সন্তান নেই তাই ওরা সব শুনে পরীদের সাথে যেতে রাজি হয়। তারপরে পরী ব্যানারজি কাকুকে বাড়িতে ডাকে। ইচ্ছে করেই অভি সেই দিন বাড়িতে থাকে না। পরী, ব্যানারজি কাকুকে বুঝিয়ে রাজি করে যে ও অরুনাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে চায়, যাতে অরুনার মনের পরিবর্তন হয়। বাবা মা ওর কথায় খুব খুশি হয়ে মত দেন। অভি বাড়ি ফেরার পরে বাবা ওকে সব ঘটনা জানিয়ে বলেন যে মেয়েদের সাথে যেতে, যেহেতু বাড়ির কেউ পরীর বান্ধবীদের ভাল ভাবে চিনত না। সবকিছু অভির আর পরীর সুকৌশল পরিকল্পনার মতন হতে থাকে।

অভি ঠিক করে যে এবারে ও আরও দুরে যাবে। পুরো লাহুল স্পিতি উপত্যকা ঘুরবে, পরীকে নিজের অভিপ্রায় জানাতে পরী খুশিতে নেচে ওঠে। সবকিছু ঠিক হয়, যাবার দিন ঠিক হল যে ওরা জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতে বেড়িয়ে পড়বে। পুর ট্রিপ করতে প্রায় চোদ্দ দিনের মতন লেগে যাবে। যাবার আগে অভি ভালো করে সেই জায়গার বিষয়ে পড়াশুনা শুরু করে দেয়, কোথায় কি ভাবে যাবে, কোথায় থাকবে সব খুটিনাটি তথ্য যোগাড় করে ফেলে। পরীকে পুরো ঘোরার রাস্তা এবং সব কিছু তথ্য জানায়। ওরা নিউ দিল্লী থেকে কাল্কা হয়ে সারাহান, রেকংপিও হয়ে সোজা নাকো চলে যাবে। তারপরে নাকো থেকে এবারে আগে যাবে ওরা, তাবো, কাজা হয়ে কুনযুম পাস। তারপর রহতাং পাস হয়ে মানালি ঢুকে, মান্ডি হয়ে দিল্লী ফিরবে। পরীকে ভালো করে বুঝিয়ে দেয় ভ্রমণের পরিকল্পনা যাতে ও দিপঙ্কর কে বুঝিয়ে বলতে পারে। কেননা, অভির বাবা মা দিপঙ্করকে জিজ্ঞেস করবে যে ওরা কোথায় যাচ্ছে এবং সেই জায়গার সম্বন্ধে আরও তথ্য জিজ্ঞেস করতে পারে।

লোকজনকে কথা বুঝানোর ক্ষেত্রে পরী খুব পটু তাই দিপঙ্করকে বুঝিয়ে উঠতে ওর বেগ পেতে হল না, এবং সাথে সাতে ছোটো মাকেও হাতের মুঠিতে করে নিল।

ওদিকে অরুনার স্বাস্থ্য কিছুটা উন্নতি হয়েছে, কিন্তু মনের ভাব সেই এক, কেউ ওকে কথা বলাতে পারল না বা পুবালির ঘর থেকে বের করতে পারলনা। ব্যানারজি কাকু যখন ওকে জানালেন যে পরী ওকে নিয়ে ঘুরতে যেতে চায় তখন শুধু মাত্র মাথা নাড়িয়ে সায় দেয় অরুনা। সেই ভাবলেশ হীন অভিব্যাক্তি দেখে পরীর হৃদয় কেঁদে ওঠে।

অভি ওর পুরানো বন্ধু সুপ্রতিমদা কে ফোন করে, "এই সুপ্রতিমদা কেমন আছিস?"

সুপ্রতিমদা, "কিরে শয়তান, এত দিন পরে মনে পড়ল। তুই শালা কাজ না থাকলে মনে করিস না। বল এবারে আবার কাকে নিয়ে কোথায় প্লান করেছিস। শালা এবারে যদি দিল্লী এসে উড়ে পালিয়ে যাস তাহলে তোকে আর আস্ত রাখবো না।"

অভি, "নারে ভাই, এত রেগে যাস না। এবারে আমরা সাত জনের একটা গ্রুপ সেই হিমাচলে ঘুরতে যাব ভাবছি। তাই তোকে ফোন করে জানালাম। তুই আমাদের জন্য একটা ছোটো বাসের যোগাড় করে দিতে পারিস? এবারে কারন একটু অন্য ধরনের, এবারে আমি আমার এক বন্ধুকে নিয়ে যাচ্ছি আর তার অবস্থা আমি তোকে পরে জানাব।" অভি সুপ্রতিমদাকে অরুনার পুরো ঘটনা জানাতে, ও রাজি হয়ে যায়।

শেষ পর্যন্ত ঠিক হয় যে অরুনা, অভি আর পরী প্লেনে করে দিল্লী পৌঁছাবে আর দিপঙ্কর, কল্যাণীরা রাজধানি এক্সপ্রেসে করে দিল্লী পৌঁছে যাবে।

সুপ্রতিমদা দিন তিনেক পরে অভিকে ফোন করে, "শোন ভাই, আরও দুজন যদি তোদের সাথে যেতে চায় তাহলে কি নিবি?"

অভি জিজ্ঞেস করে, "কে কে যাবে?"

সুপ্রতিমদা হেসে উত্তর দেয়, "আমি আর আমার বান্ধবী।"

সুপ্রতিমদার কথা শুনে অভি অবাক, যে ছেলে শুধু চরে খেত আজ সে ছেলের মুখে অন্য কথা, "তুই জাবি আর আমি না করতে পারি নাকি। তা শেষ পর্যন্ত তুই টেস্ট ম্যাচ খেলার পিচ পেয়েই গেলি বল। তোর বউ কি দেখতে সেক্সি রে?"

সুপ্রতিমদা, "শালা নিজের একটা ব্যাটিং পিচ আছে না সেখানে গিয়ে ব্যাটিং কর না, আমার পিচের কথা তোর জেনে কি হবে।"

অভি, "রেগে যাচ্ছিস কেন রে তুই।"

সুপ্রতিমদা, "আচ্ছা শোন এবারে, আমি একটা ইনোভা ঠিক করেছি আর আমার ত টাটা সাফারি আছে। আমাদের কাছে তাহলে দু দুটো ড্রাইভার থাকবে, আর আমার ড্রাইভার বল্বিন্দারকে ত তুই আগে থেকে চিনিস। এবারে আমি ভাবছি কি যে আমি আর তুই আমার টাটা সাফারিতে আমাদের বউ নিয়ে যাব, বাকিরা ইনোভাতে যাবে। তুই ড্রাইভ করতে জানিস আমিও জানি সুতরাং গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যেতে বিশেষ অসুবিধে হবে না। আর তুই যে সব জায়গার কথা আমাকে শুনালি সেসব জায়গায় আমি কোনদিন যাইনি, রিতিকা ত সব কথা শুনে খুব খুশি। তোর বউয়ের সাথে আমার বউয়ের দেখা হয়ে যাবে।"

অভি, "হুম্মম্ম... তাহলে তোর বউয়ের নাম রিতিকা, বেশ মিষ্টি নাম রে। তা তওর মনের মতন ত?"

সুপ্রতিমদা, "বোকা... এসে দেখে যা একবার। আর শালা একবার যদি কিছু কমেন্ট মেরেছিস রিতিকাকে দেখে তাহলে তোর টা কেটে তোর হাতে ধরিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেব।"

অভি, "গুরু বিয়ে হয়নি আর এখন থেকেই এত আগলে রাখছিস।"

সুপ্রতিমদা, "বোকা... ছাড় অসব কথা, এবারে বল কবে দিল্লী আসছিস।"

অভি, "পরের রবিবার, সকালের ফ্লাইট, ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স আই.সি.264।"

যাবার দিন কাছে চলে আসে। ব্যাগ গুছানোর পালা প্রায় শেষ। ব্যাগে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছাড়া গরম জামাকাপড় নেওয়া হয়। যে জায়গায় যাচ্ছে সেখানে ঠাণ্ডা ভীষণ। অভি পরীকে জিন্স নিতে বলে, পরী প্রথম প্রথম নারাজ হয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত অভির কারত মিনতির সামনে হেরে যায়। এরই মাঝে পরী অরুনার বাড়ি গিয়ে ওর ব্যাগ গুছিয়ে দিয়ে আসে, অরুনার মানসিক অবস্থার কনো পরিবর্তন হয় না। অরুনা যেমন চুপ ছিল সেইরকমই আছে, আর সেটাই সবার চিন্তার বিষয়। ব্যানারজি কাকু পরীর ব্যাবহারে ভীষণ খুশি। পরী জানতে চায় যে অভি কি করে অরুনার মানসিক সাস্থ্যের উন্নতি করাবে, অভির কাছে উত্তর দেবার মতন কোনো পরিকল্পনা থাকে না, শুধু এই টুকু জানায় যে কিছু একটা হয়ে যাবে, হয়ত নতুন জায়গায় গিয়ে বা অচেনা মানুষদের সাথে মিশে অরুনার মানসিক পরিবর্তন ঘটতে পারে বলে অভির ধারনা।

কল্যাণী দীপঙ্কর রা একদিন আগেই ট্রেনে চেপে দিল্লীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যায়।

বাবা আর ব্যানারজি কাকু অনেক চেষ্টা চরিত্র করে প্লেনের টিকিট এক্সিকিউটিভ ক্লাসে কাটে। যাবার দিন বাড়ির সবাই এয়ারপোর্টে ওদের ছাড়তে এসেছিলেন। অরুনা নিজের খেয়ালেই ছিল, পাথরের পুতুলের মতন নড়াচড়া করছিল। অরুনার মা আর অভির মা দুজনের চোখে জল এসে গেছিল অরুনার অবস্থা দেখে। ব্যানারজি কাকু অভিকে আবার মনে করিয়ে দেন ওর প্রতিজ্ঞার কথা, এবারে অভি হেসে জানায় যে ও ওর কথা রাখবে, এবং অরুনাকে ঠিক করেই ফিরিয়ে নিয়ে আসবে।

প্লেনে অরুনা আর পরী পাশাপাশি বসে, করিডোরের অন্য দিকে অভি। অরুনা জানালার ধারের সিটে বসে হাতের ওপরে মাথা রেখে একমনে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকে। পরী একটা সুন্দর সবুজ রঙের সালোয়ার পড়েছিল। পরী প্রথম বার প্লেনে চাপে কিন্তু সেই উৎসাহ ছাপিয়ে ওর মনের ভেতরে অরুনার চিন্তা বেশি করে ভর করে। সকালের খাবার দিয়ে যায় এয়ারহোস্টেস, পরী খাবারের বহর দেখে অভির দিকে তাকায়। অভি ওকে জানায় যে ও এক্সিকিউটিভ ক্লাসে ভ্রমন করছে। পরী অরুনার দিকে তাকায়, অরুনা ভাবলেশহীন চোখে জানালার বাইরে তাকিয়ে মেঘ দেখতে থাকে। পরী ওর কাঁধ ছুঁয়ে আলতো করে নারা দিতে, অরুনা পরীর দিকে খালি চোখ নিয়ে তাকায়। সেই চোখের চাহনি দেখে পরীর আত্মা যেন ককিয়ে কেঁদে ওঠে। পরী পাউরুটির এক টুকরো ছিঁড়ে তাতে মাখন লাগিয়ে ওর ঠোঁটের কাছে ধরে। অরুনা একটু খানি মুখ খুলে মুখের মধ্যে পাউরুটির টুকরো নিয়ে নেয়। পরী ওর চোখের দিকে তাকিয়ে কোনোরকমে চোখের জল সংবরণ করে আরও একটা টুকরো খাওয়াতে যায়।

অরুনার ঠোঁট কেঁপে ওঠে, "শুচিদি, ঠাণ্ডা লাগছে।"

অরুনার ঠোঁটের ওই তিনটি শব্ধ যেন অভির আর পরীর কানে মধুর মতন মনে হয়। পরী নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে মমতাময়ী হৃদয়ের খুশির জল চেপে রাখে। জল ভরা চোখ নিয়ে একবার অভির দিকে তাকায়। অভির দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে, এয়ারহোস্টেস কে অনুরধ করে একটা কম্বলের ব্যাবস্থা করে। পরী দুই সিটের মাঝের হাতল উঠিয়ে দিয়ে, অরুনার মাথা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে। পরীর মমতাময়ী স্পর্শে অরুনার চোখে জল চলে আসে।

দুহাতে পরীকে জড়িয়ে ধরে বলে, "শুচিদি আমার খুব ঠাণ্ডা লাগছে।"

পরী ওর গালে হাত রেখে সান্তনা দিয়ে বলে, "অরুনা আমি তোর কাছে আছি। তোর আর ঠাণ্ডা লাগবে না।"

এয়ারহোস্টেস কম্বল দিয়ে গেলে, অভি অরুনার গায়ে কম্বল জড়িয়ে দেয়। পরী ওকে জড়িয়ে ধরে ওর মাথা নিজের বুকের ওপরে চেপে ধরে। অরুনা পরীর বুকে মাথা গুঁজে ফুফিয়ে ওঠে, বুকের মাঝের অন্তহীন বেদনা দুগাল বেয়ে বয়ে চলে অবিরাম ধারায়। ওর চোখের জলে পরীর বুক ভিজে যায়, কিন্তু একবারের জন্যেও পরী ওকে কাছছাড়া করে না।

পরী অভির দিকে তাকিয়ে বলে, "তুমি খেয়ে নাও।"

অভি বলে, "ওকে কিছু বলো?"

পরী, "না, ওকে কাঁদতে দাও। ওর ভেতরের সব জমানো ব্যাথা সব দুঃখ চোখের জল হয়ে বেড়িয়ে যাক। তাতে ওর মন অনেক হালকা হবে। যে অরুন্ধতি দিল্লী পৌঁছাবে সেই অরুন্ধতি অনেক বদলে যাবে কোলকাতার অরুন্ধতির থেকে।"

অরুনা কেঁদে কেঁদে শেষ পর্যন্ত পরীর কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরে। পরী ওর ঘুমন্ত মাথা কোলের ওপরে নিয়ে আস্তে আস্তে মাথা গালে হাত বুলিয়ে দেয়। অরুনা পরীর কোলে ঠিক একটা বাচ্চা মেয়ের মতন ঘুমিয়ে থাকে, চেহারায় এক অনাবিল শান্তির ছায়া।

প্লেন ধাক্কা মেরে দিল্লী এয়ারপোর্টে নামে। ঝাঁকুনির জন্য অরুনার ঘুম ভেঙ্গে যায় আর পরীর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দেয়। পরী ওর মুখখানি আঁজলা করে নিয়ে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আবেগে প্রায় চোখে জল চলে আসে। আঙ্গুল দিয়ে অরুনার গালে জলের দাগ মুছিয়ে দিয়ে কপালে ছোটো একটা চুমু খায়। প্লেন থামলে ব্যাগ হাতে নিয়ে নামার উদ্যোগ করে অভি, পেছনে অরুনা আর পরী।

অরুনা অভির কাঁধ আলতো করে ছোঁয়, অভি পেছন দিকে তাকায়। অরুনার ঠোঁট মৃদু কেঁপে ওঠে, "এই বিহারী আমরা কোথায় যাচ্ছি রে?"

শেষ পর্যন্ত অভির অনুপম দেবী প্রতিমা কথা বলল। অভির বুকের বাঁধ ভেঙ্গে গেল ওর গলার আওয়াজ শুনে। ওর মনে হল যেন হারিয়ে যাওয়া বহুমুল্যবান রত্ন আবার ফিরে পেয়েছে। অরুনার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে মাথার ওপরে চুমু খায়। অভিকে শান্তনা দেবার জন্য পরী আলতো করে পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়।

অরুনার ঠোঁটে আবার হাসি দেখে পরী আর অভি যেন স্বস্তির শ্বাস নেয়। পরীকে পেয়ে অরুনা যেন সেই পুরানো দিন ফিরে পেল। দুজনেই মেতে ওঠে গল্পে, অভি বিশেষ কান দেয় না মেয়েদের গল্পে। পরীকে বলল যে বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দিরে যে ওরা দিল্লী ঠিক ভাবে পৌঁছে গেছে। পরী জিজ্ঞেস করে যে ব্যানারজি কাকু যদি ওর কথা জিজ্ঞেস করে ত কি উত্তর দেবে পরী, সেই শুনে অভি বলল যে ব্যানারজি কাকু কে বলে দিতে যে ও পরে বাড়িতে ফোন করবে। অভি চলে গেল কনভেয়র বেল্ট থেকে বাকি ব্যাগ নিতে, আর পরী আর অরুনা চলে গেল ফোন করার জন্য। বারবার মাথা ঘুরিয়ে অভি ওদের দিকে লক্ষ্য রাখে যাতে কোথাও হারিয়ে না যায়। অরুনার জন্য এটা প্রথম বার নয় যে ও দিল্লী এসেছে, কিন্তু অরুনার মানসিক অবস্থা এখন সেই পুরান অবস্থায় নেই ও এখন পরীর ওপরে নির্ভর।

ব্যাগ নিয়ে তৈরি অভি, কিছু পরে পরী আর অরুনা ফোন সেরে ওর কাছে চলে আসে। অভি জিজ্ঞেস করাতে পরী জানায় যে ও দুই বাড়িতে ফোন করে সব জানিয়ে দিয়েছে। বাড়ির সবাই খুব খুশি যে অরুনা আবার কথা বলছে। অরুনা পরীর হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকে আর অভির দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি করে হাসে।

অভি অরুনাকে জিজ্ঞেস করে, "কাকুর সাথে কথা বলেছিস?"

অরুনা ওকে হেসে উত্তর দেয়, "জানিনা তুই বাবা মা কে কি বলছিস, কিন্তু আমার কথা শুনে ওরা খুব খুশি। শুচিদি ও মায়ের সাথে কথা বলেছে, সবাই তোর কথা খুব জিজ্ঞেস করছিল।"

অভি, "ঠিক আছে, এবারে চল। এতক্ষণে হয়ত রাজধানি এক্সপ্রেস দিল্লী পৌঁছে গেছে আর সুপ্রতিমদাও হয়ত আমাদের জন্য বাইরে অপেক্ষা করছে।"

বাইরের দিকে হাঁটতে শুরু করে ওরা। অরুনা পরীকে জিজ্ঞেস করাতে, পরী ওকে পুরো ঘটনার বিবরন দেয় যে কি ভাবে অভির সুকৌশল পরিকল্পনায় এই সব সম্ভব হয়েছে। সব কথা শুনে অরুনা অবাক হয়ে যায়।

অরুনা অভির কাছে এসে চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করে, "তুই আমার জন্য এত সব করেছিস?"

অভি হেসে ফেলে, ওর মাথায় ছোট্ট চাঁটি মেরে উত্তর দেয়, "ধুর তোর জন্য করতে যাবো কেন আমি। আমি তিন জনের কাছে তিনটে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, সেই প্রতিজ্ঞা রক্ষা করার জন্য এই সব পরিকল্পনা।"

পরী ঠোঁট জোড়া ছোটো গোল করে অভির দিকে একটা চুম্বন ছুঁড়ে দেয়। অরুনা তর্জনী দিয়ে চোখের কোল মুছে পরীর হাত জড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ক্ষণিকের জন্যেও যেন ও পরীকে কাছ ছাড়া করতে চায় না।

ওরা বাইরে বেড়িয়ে দেখল যে সুপ্রতিমদা একজন সুন্দরী মেয়ের সাথে দাঁড়িয়ে, ওদের জন্য গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে। মেয়েটির বেশ সুন্দরী দেখতে, পরনে সাদা জিন্স আর বাদামি রঙের টপ, গায়ের সাথে এটে আসে পরনের পোশাক। শরীরের প্রতিটি বাঁক পোশাকের নিচে ভালোভাবে ফুটে উঠেছে। চুল ঘাড় পর্যন্ত, মাথার পেছনে বাঁধা একটা ছোট্ট পনি টেলের মতন। চোখ মুখ বেশ মিষ্টি, কালো কালো চোখ দুটি একটু ছোটো, পরীর মতন অচ বড় নয় কিন্তু বেশ চঞ্চল। অভি দেখে মৃদু হেসে দেয়, এটা হয়ত দিল্লীর ফ্যাসান। অভি একবার পরী আর মেয়েটিকে মনে মনে তুলনা করে কে বেশি সুন্দরী, কিন্তু অভির মনের ভেতরে পরীর বাস, তাই আর বেশি কিছু ভাবতে পারল না অভি।

সুপ্রতিমদা ওদের কে দেখে অভির দিকে এগিয়ে এসে হাত মেলায়। পরী আর অরুনা উৎসুক চোখে সুপ্রতিমদাকে দেখে। সুপ্রতিমদা অভির পাশে দুটি মেয়ে কে দেখে বিভ্রান্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে, "এর মধ্যে কে শুচিস্মিতা?"

পরী আর অরুনা দুজনেই ওর প্রশ্ন শুনে হেসে ফেল। অভি হেসে কিছু উত্তর না দিয়ে সুন্দরী মেয়েটার দিকে এগিয়ে গিয়ে নিজের পরিচয় দেয়, "আমি অভিমন্যু তালুকদার আর তুমি নিশ্চয় রিতিকা চতুর্বেদী।"

রিতিকা হেসে বলে, "হ্যাঁ আমি জানি তোমাদের কথা। আমি ওর কাছে থেকে তোমাদের হস্টেলের কথা অনেক শুনেছি। গত বার তুমি দিল্লী এসেই পালিয়ে গেলে দেখা না করে। ও আমাকে বলেছে যে তুমি নাকি তোমার বান্ধবীকে নিয়ে একা একা কোন এক দুর্গম পাহাড়ি জায়গায় বেড়াতে গেছিলে। হুম তুমি শুধু মাত্র সাহসী বললে ভুল হবে তুমি দুঃসাহসী ছেলে। এবারে বলত এদের মধ্যে কে শুচিস্মিতা?"

অভি পরীদের দিকে হেসে রিতিকাকে উত্তর দেয়, "আন্দাজ করো, তবে তোমার কাছে একটাই সুযোগ।"

রিতিকা পরীকে দেখিয়ে বলে অভির দিকে হেসে বলে, "ওই যে সবুজ রঙের সালোয়ার পরে আছে সেই শুচিস্মিতা।"

রিতিকা এগিয়ে যায় পরীর দিকে। তিন জনে মেয়ে এসে অপরকে সংবর্ধনা জানিয়ে মিশে যায়। মেয়েদের নিজেদের মধ্যে মিশতে বেশি সময় লাগেনা আর ওদের গল্প শুরু হয়ে যায়। সুপ্রতিমদা অভির দিকে তাকিয়ে হেরে যাওয়ার হাসি দেয়। অরুনার চেহারায় পুরান হাসি দেখে পরী একবার অভির দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে, মাথা নাড়ায়।

সুপ্রতিমদার গাড়ি চেপে ওরা সবাই সি.আর.পার্কের ওর বাড়ির দিকে যাত্রা শুরু করল। সুপ্রতিমদা গাড়ি চালাচ্ছে আর অভি পাশে বসে, মাঝখানের সিটে বসে তিন জন মেয়ে যেন পাখীর মতন কিচিরমিচির শুরু করে দিয়েছে।

সুপ্রতিমদা অভিকে জিজ্ঞেস করে, "হ্যাঁ রে আমরা কখন দিল্লী থেকে রওনা দেব?"

অভি সুপ্রতিমদাকে জিজ্ঞেস করে, "আরে তুই নিউ দিল্লী রেলস্টেসানে কাউকে পাঠিয়েছিস কল্যাণীদের বাড়ি আনার জন্য।"

সুপ্রতিমদা, "হ্যাঁ রে বাবা, বল্বিন্দার ওদের আনতে চলে গেছে। আমি ওর হাতে একটা প্লাকারডে দিপঙ্করের নাম লিখে দিয়েছি, খুঁজতে কোন অসুবিধে হবে না।"

অভি, "ভাবছিলাম ত যে দুপুরে খাওয়ার পড়েই বেড়িয়ে পড়ব কিন্তু এখন ভাবছি কিছু তাবু আর বাকি সরঞ্জাম নিয়ে গেলে হয়।"

সুপ্রতিমদা আঁতকে ওঠে, "শয়তান ছেলে, আগে বলতে পারিস না। বোকা... এখন দুপুরে কি করে হবে?"

অভি, "না না দুপুরে নয়, রাতে বের হব আমরা। এদের বাড়িতে রেখে, আমি আর তুই টেন্টের খোঁজে বের হয়ে যাব।"

সুপ্রতিমদা, "হটাত করে তোর মাথার প্লান বদলে কেন গেল।"

অভি পিছনে ঘুরে একবার অরুনার দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়, "অরুনা যখন প্লেনে উঠেছিল তখন ওর মানসিক অবস্থা এখন যা দেখছিস তখন এই রকম ছিলনা। ওকে হাসতে দেখে আমি ভাবলাম কি আছে আবার কবে যাওয়া হবে ঠিক নেই, চল কাম্পিং করে আসি।"

সুপ্রতিমদা, "এখানে কেউ কিন্তু কাম্পিং করতে জানে না।"

অভির মুখে কাম্পিঙ্গের কথা শুনে পরী আর রিতিকা পেছন থেকে চেঁচিয়ে ওঠে, "এটা কি রকম হল? আগে থেকে কিছু বলা নেই কওয়া নেই, হটাত করে তোমরা সব প্লান বদলে দেবে কি করে হবে, আমরা খেলবো না।"

অভি ঘাড় ঘুরিয়ে ওদের দিকে দেখে বলে, "আরে ভদ্রমহিলা, ঘুরতে গিয়ে যদি কিছু আডভেঞ্চার না হয় তাহলে মজা কি?"

রিতিকা পরীকে জিজ্ঞেস করে যে ওরা কোথায় ঘুরতে যাচ্ছে। পরী ওকে পুর পরিকল্পনা জানায় আর জায়গার বিবরন দেয়। পরীর নাকো পর্যন্ত ঘোরা তাই সেই পাহাড়ের বিবরন দিতে বিশেষ অসুবিধে হয় না। পরীর মুখে স্পিতির গল্প শুনে অরুনা আর রিতিকা দুজনেই খুব উত্তেজত হয়ে ওঠে।

সুপ্রতিমদার বাড়িতে কল্যানিরা আগেই পৌঁছে যায়, পরী গাড়ি থেকে নেমে ওদের দেখে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কল্যাণীকে। বাড়িতে পাঁচটা মেয়ে যেন গল্পে মেতে ওঠে, ওদের দেখে মনে হল যেন একদল সুন্দরী পাখি একসাথে বসে কিচির মিচির শুরু করে দিয়েছে। খাওয়ার পরে অভি দীপঙ্কর আর রামানুজ কে বাড়িতে বিশ্রাম নিতে অনুরধ করে ওরা দুজনে বেড়িয়ে যায় কাম্পিঙ্গের সরঞ্জাম ভাড়া করতে।

কাম্পিঙ্গের সরঞ্জাম যোগাড় করতে করতে প্রায় ঘন্টা তিনেক লেগে যায়। দুটি বড় টেন্ট নেওয়া হয় আর একটা ছোটো টেন্ট নেওয়া হয়, সাথে নেওয়া হয় স্লিপিং ব্যাগ, দড়ি, মাদুর ইত্যাদি। সরঞ্জাম গাড়ির পেছনে রেখে বাড়ির দিকে যাত্রা শুরু করে।
Like Reply
#49
অভি, "বস, একটু ওষুধের দোকানে দাঁড়াতে হবে আর বেশ কিছু সিগারেট কিনতে হবে।"

ওষুধের দোকানে দাঁড়ানোর কথা শুনে সুপ্রতিমদা বুঝতে পারে যে অভি কি কিনবে, হেসে বলে "বোকা... না নিয়েই বেড়িয়ে পরেছিস?"

অভি হেসে ফেলে, "শালা এত ঝামেলার মধ্যে কিনতে ভুলে গেছি।"

সুপ্রতিমদা, "আবে শুয়র, চিন্তা করিস না, আমার কাছ থেকে ধার নিয়ে নিস।"

অভি, "বোকা... মাঝ পথে যদি ফুরিয়ে যায় আর আমরা কন্ট্রোল না করতে পারি তাহলে শালা ন’মাস নিয়ে ফিরতে হবে কিন্তু।" দুজনেই হেসে ফেলে।

সুপ্রতিমদা, "তোর বউ খুব সুন্দরী আর তোর বান্ধবী দুজনকেই দেখতে বেশ সুন্দরী।"

অভি, "নজর দিস না যেন, দুজনেই এনগেজড কিন্তু।"

সুপ্রতিমদা, "তোর ত শালা ওখানে মাথা, সুন্দরী কে সুন্দরী বলেছি তাতেই গা জ্বলে গেল যেন তোর।"

অভি, "রিতিকাকে কোথায় পেলি?"

সুপ্রতিমদা, "আরে নেহেরু প্লেসে একটা টেকনিকাল কনভেন্সান ছিল, সেখানে ওর সাথে দেখা হয়। ওখানে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে ছিল, ব্যাস আর কি, তিন মাস প্রেম আর তারপর সব ঠিকঠাক।"

ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ আর বাকি জিনিস কিনে বিকেল পাচটার মধ্যে বাড়ি ঢুকে যায়। মেয়েরা জামা কাপড় বদলে বেশ আরাম করে বসে গল্প করছিল। রিতিকার পোশাক দেখে দীপঙ্কর আর রামানুজের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। রিতিকার পরনে হাল্কা গোলাপি রঙের আঁটো স্লাক্স আর সাদা হাত কাটা গেঞ্জি। ওর গায়ের কাপড় যেন ওর পেলব কমনীয় শরীরের একপ্রস্ত রঙের প্রলেপের মতন সেটে। সুগোল নিতম্বের ওপরে অন্তর্বাসের স্পষ্ট দাগ বোঝা যাচ্ছে। অভি ওই দেখে একবার দিপঙ্করদের দিকে আর চোখে তাকায় আর সুপ্রতিমদাকে চোখ টিপে ইশারা করে। পরী, অভির মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে যে কি এত মন দিয়ে দেখছে। পরী, দীপঙ্কর আর রামানুজের দিকে তাকিয়ে ওদের চোখের চাহনি দেখে মৃদু রেগে যায়। একটু বিরক্ত হয়ে মেয়েদের নিয়ে অন্য ঘরের মধ্যে ঢুকে পরে।

অভি আর সুপ্রতিমদা শেষ বারের মতন বেড়াতে যাবার পুর পরিকল্পনা একবার পুনরালোচনা করে নেয়। অভি পরীকে ডাক দেয় ওদের সাথে বসে বেড়াতে যাবার কথা বলার জন্য। এবারে ঠিক করা হয় যে কে টিম লিডার হবে, সবাই এককথায় অভির নাম নেয়, তারপরে ক্যাশিয়ারের কথা ওঠে, সবার চোখ পরীর দিকে।

পরী চেঁচিয়ে ওঠে, "না না, আমি পয়সার হিসেব রাখতে পারব না।"

সুপ্রতিমদা পরীকে মজা করে বলে, "রানীরা সুখে দুঃখে সর্বদা রাজার পাশে থাকে, তাহলে এখন কেন পিছিয়ে যাচ্ছও? এর পরে ত সপ্তপদি বাকি আছে, তখন কি করবে?"

লাজুক হেসে সুপ্রতিমদার দিকে তাকায় পরী। রিতিকা সুপ্রতিমদাকে বলে, "ঠিক আছে অনেক হয়েছে ওর পেছনে লাগা, ওই ক্যাশিয়ার হবে।"

গাড়ির ব্যাপারে কথা উঠলে অভি জানায় যে কল্যাণীদের জন্য ইনোভা আর সুপ্রতিমদার গাড়িতে ওরা যাবে। কল্যাণীদের গাড়ি বল্বিন্দার আর আরেক ড্রাইভার চালাবে, আর অভি আর সুপ্রতিমদা নিজেদের গাড়ি চালাবে।

অরুনা অভির কথা শুনে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, "কিরে তুই আবার গাড়ি চালাতে কবে থেকে শিখলি?"

পরী ওকে গত বারের কথা জানায়।

অভি দিপঙ্করের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "তোমরা কি ড্রিঙ্ক করো?"

দুজনেই ওদের বউয়ের দিকে তাকায়। কল্যাণী বিরক্তি ভরা চোখ নিয়ে দিপঙ্করকে ইশারায় বারন করে। পরী একবার কটমট করে অভির দিকে তাকায়, অভি সেদিকে দেখেও না দেখার ভান করে। পরী ওর ভাব দেখে হাল ছেড়ে দেয়।

সুপ্রতিমদা ওদের দিকে হেসে বলে, "আরে ভাই, ঘুরতে গিয়ে এই রকম বাঁধনে থাকতে কি কারুর ভালো লাগে নাকি।" তারপরে অভির দিকে তাকিয়ে বলে, "বোতল কোথায়? কিনেছিস নাকি তুই?"

অভি মাথা নাড়ায়, "না রে কিনিনি, যাবার পথে আম্বালা থেকে কিনে নেব।"

সুপ্রতিমদা বিরক্ত হয়ে বলে, "বোকা...শূয়র, তুই একবারে সব কথা বলতে পারিস না।"

অরুনা অভির দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, "তুই কবে থেকে ড্রিঙ্ক করা শুরু করলি রে?"

পরী ওকে সুব্রতর বিয়ের সময়ের অভির কান্ডকারখানা শুনায়, ওই শুনে সবাই হেসে ফেলে। গল্প আবার চলতে শুরু করে। সুপ্রতিমদা আর অভি বিয়ারের ক্যান নিয়ে গলায় ঢালতে থাকে আর বাকিরা কোল্ডড্রিঙ্কস হাতে নিয়ে নেয়।

কিছু পরে পরী অভিকে বাইরে ডেকে বলে, "বাড়ি ফিরে ছোটোমা, বাবু আর ব্যানারজি কাকু কে কি বলবে কিছু ভেবেছ কি?" পরীর ধরা গোল শুনে অভির ওর কাঁধে হাত দেয়। পরী থাকতে না পেরে অভিকে জড়িয়ে ধরে বুকের ওপরে মুখ গুঁজে ভয়ে কেঁপে ওঠে, "আমার জানো, মাঝে মাঝে খুব ভয় করে, জানি না কি হবে।"

অভি ওর মাথায় ঠোঁট চেপে ধরে বলে, "কিছু হবে না, ভয় নেই, আমি আছি।"

অরুনা পরীকে বেড়িয়ে যেতে দেখে কিছু পরে কল্যাণী কে নিয়ে বাইরে আসে। এসে দেখে যে পরী অভিকে জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে। পরী ওদের দেখে অভিকে ছেড়ে দাঁড়ায় আর চোখের কোল মুছে নেয়। অরুনা প্রশ্নভরা চাহনি নিয়ে পরীর দিকে তাকায়। পরী মাথা নাড়িয়ে জানায় যে কিছু হয়নি। অরুনার সে কথা বিশ্বাস হয় না, পরীকে জিজ্ঞেস করে, "সত্যি যদি কোন কিছু না হয়ে থাকে তাহলে তুমি কাঁদছ কেন?"

অভি ওকে নিশ্চিন্ত করে বলে, "তুই এসব চিন্তা ভাবনা ছেড়ে আনন্দ কর, বুঝলি।"

রাত ন’টা নাগাদ ওরা সবাই সেই দূর পাহাড়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। সবাই বেশ হাল্কা জামাকাপড় পরে, রিতিকা একটু বেশি হাল্কা জামা কাপড় পরে। সুপ্রতিমদা আর অভি বারমুডা আর টিশার্ট গায়ে গলিয়ে নিয়েছে। দিল্লী ছাড়ার আগে ওরা পাঁচ বোতল ভদকা আর পাঁচ ক্যারেট বিয়ারের ক্যান কিনে নিয়েছিল, পরী তাতে একটু বিরক্ত হয়ে উঠেছিল, কিন্তু যেহেতু সবাই আনন্দে মেতে তাই অল্প সাবধান করে দিয়েছে অভিকে। সুপ্রতিমদার গাড়িতে মাঝের সিটে রিতিকা আর অরুনা বসে আর ওরা দুজনে বিয়ার পেছনে বসে, নতুন ড্রাইভার আমজাদ গাড়ি চালাচ্ছিল। পরী অভিকে বলে যে ও রাত টুকু কল্যাণী আর রানীদের সাথে ইনোভায় যাবে যাতে ওরা নিজেদের পৃথক না ভাবে। পরীর কথায় বল্বিন্দার ওদের গাড়ি চালায়।

অরুনা যথারীতি চুপচাপ বসে, রিতিকা আর ওরা বেশ গল্পে মেতে ওঠে। দিল্লী ছাড়িয়ে বেড়িয়ে পরতেই গাড়ি দ্রুত গতিতে ধেয়ে চলে, সামনে ইনোভা আর পেছনে সাফারি। বিয়ারের ফলে অভি আর সুপ্রতিমদার নেশা লাগে, বেশ একটু ঝিমঝিম পায়। অভি সুপ্রতিমদাকে বলে যে একটা সিগারেট দরকার। কিছু দূর গিয়ে গাড়ি থামায় বল্বিন্দার। দু’জনেই গাড়ি থেকে নেমে একটা করে সিগারেট ধরিয়ে টান দেয়।

অরুনা এর মধ্যে নেমে এসে অভিকে বলে, "আমার ঘুম ঘুম পাচ্ছে। আমাকে ওই ইনোভায় পাঠিয়ে দিবি, প্লিস?"

অভি, "তোর ঘুম পাচ্ছে ত এখানে ঘুমিয়ে পর না।"

অরুনা অভির মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, "আমার ভালো লাগছে না, আমি শুচিদির কাছে যাবো।"

একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে অরুনার ঝাপসা হয়ে আসা চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, "ঠিক আছে আমি ওকে এই গাড়িতে আস্তে বলব খানে।"

বল্বিন্দার গাড়ি ছুটিয়ে দিল, কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা সামনের গাড়িকে ধরে ফেলল। গাড়ি থামিয়ে অভি পরীকে ওদের গাড়িতে আসতে বলে।

পরী কারন জিজ্ঞেস করাতে অভি একটু বিরক্ত হয়ে বলে, "আমাদের গাড়িতে এসে অরুনাকে সামলাও, ওর আবার মন কেমন করছে। ওকে সামলানোর দায়িত্ব তোমার, আমাকে যদি এই রকম অবস্থায় ফেলে যাও তাহলে দেখে নিও।"

পরী গাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসে ওদের গাড়িতে চেপে যায়। অরুনাকে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে, অরুনা চুপ করে ওর মুখের দিকে জল ভরা চোখ নিয়ে তাকিয়ে থাকে। পরীর বুঝতে দেরি হয় না যে ওর মনে আবার সেই পুরানো বেদনা জেগে উঠেছে। পরী ওর মাথা জড়িয়ে ধরে বুকের ওপরে, কিছুক্ষণের মধ্যেই অরুনা ওর কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরে।

অভি দুই ড্রাইভারকে সোজা চায়েল নিয়ে যেতে নির্দেশ দেয়। সুপ্রতিমদা আর অভি সাফারির পেছনের সিটে বসে ঘুম লাগায়।

সকাল সাড়ে দশ’টা নাগাদ ওরা চায়েল পৌঁছে যায়। ছোট্ট শহর চায়েলের উচ্চতা বেশি নয়, চারদিকে সবুজে ঢাকা পাহাড়। চায়েলের আবহাওয়া বেশ মনোরম, চারদিকে উঁচু উঁচু পাইন, কেদার, শাল দেবদারুর বন। হোটেলে ওরা দুটো রুম নিয়ে নেয় একটু বিশ্রাম নেবার জন্য। সারা রাত ধরে ড্রাইভার গাড়ি চালিয়েছে তাই ঠিক করা হল যে দুপুরে খাওয়ার পরে ওর চায়েল ছেড়ে বের হবে।

দুপুরে একটু তাড়াতাড়ি খেয়ে দেয়ে আবার বেড়িয়ে পরে সবাই। এবারে অভির হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং, পাশে পরী। সুপ্রতিমদা, রিতিকা আর অরুনা পেছনের সিটে বসে। পরীর মুখে সবাই সেই জায়গার গল্প শুনছে মন দিয়ে। পরীর বর্ণনা শুনে সবাই মুগ্ধ, রাস্তা ঘাটা যেন পরীর এত চেনা যে মনে হয় ও এখানে সবসময়ে ঘুরতে আসে।

পরী অভিকে জিজ্ঞেস করে, "আচ্ছা আমরা কি শতদ্রু নদীর তীরে দাঁড়াবো?"

অভি, "না এবারে নয়, কল্পা বাঁ রেকং পিও পৌছাতে দেরি হয়ে যাবে, বেবি।"

পরী, "ভিমাকালি মন্দিরে নিয়ে যাবে না?"

অভি, "বেবি, কি করে হবে? আমাদের হাতে সময় কম।"

পরী একটু মনমরা হয়ে বলে, "কেন সময় কম, আমাদের হাতে ত অনেক সময় আছে। তাহলে চলো না আজ রাতে চিতকুলে থেকে যাই আমরা।"

কথা বলতে বলতে গাড়ি চালাতে অসুবিধে হচ্ছিল অভির, চেঁচিয়ে ওঠে পরীর দিকে, "তুমি কি আবার চিতকুলে গিয়ে গতবারের মতন ঝগড়া করতে চাও?"

পরী খিলখিল করে হেসে অভির গালে টোকা মেরে বলে, "না সোনা, এবারে আর ঝগড়া করব না। কিন্তু বাকিদের কথা বলতে পারছিনা, অভি।"

সুপ্রতিমদা অভিকে জিজ্ঞেস করে, "কিরে, আমরা কি শেষ পর্যন্ত চিতকুল যাচ্ছি নাকি?"

পরী অভির হয়ে উত্তর দিল, "হ্যাঁ হ্যাঁ, আমরা চিতকুল যাচ্ছি। আমাদের হাতে অনেক সময় আছে আমরা আরামসে চিতকুলে দুই দিন কাটাতে পারি।" পরী অভির দিকে মিষ্টি হেসে চোখ টেপে।

রিতিকা আর সুপ্রতিমদা একসাথে বলে ওঠে, "কিন্তু চিতকুল ত আমাদের পথে ছিলে না, তাহলে?"

পরী, "কেন তোমরা ছেলেরাই ত বলেছিলে যে, ঘুরতে গিয়ে যদি এডভেঞ্চারের গন্ধ না পাও তাহলে ঘোরা আর ঘোরা কি। চলো এক নতুন দুর্গম জায়গায়, সেটাও এক রকমের এডভেঞ্চার বইকি।"

অরুনা অভিকে জিজ্ঞেস করে, "হ্যাঁ রে, তোরা কেন চিতকুলে গিয়ে ঝগড়া করেছিলিস?"

পরী পেছনে অরুনার দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচিয়ে উত্তর দেয়, "ধৈর্য ধর আর দেখ। চিতকুল পৌঁছে সব বুঝতে পারবি আমরা কেন ঝগড়া করেছিলাম।"

পরীর সেই শয়তানি হাসি আর চোখের ভাব দেখে অভির যেন ভেতরটা গলে গেল। সেই দুষ্টু হাসি ওকে মনে করিয়ে দিল সেই পুরানো দিনের কথা।

গাড়িতে তেল ভরানোর জন্য ওরা জিওরিতে থামে। সবাই গাড়ি থেকে নেমে একটু হাটাহাটি করে, এতক্ষণ বসে বসে সবার পা ধরে গেছে। সবাই পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে দেখতে মুগ্ধ হয়ে যায়। হাইওয়ের পাশ দিয়ে শতদ্রু নদী বয়ে চলেছে। গতবারের চেয়ে এবারে রাস্তার অবস্থা একটু যেন ভালো। তেল ভরানোর পরে সুপ্রতিমদার সাথে গিয়ে, পরী পয়সা মিটিয়ে দিল।

অরুনা আর রিতিকা অভির কাছে এসে জিজ্ঞেস করে, "হ্যাঁ রে সত্যি কি আমরা চিতকুলে যাচ্ছি?"

অভি ম্লান হেসে উত্তর দেয়, "আমাকে জিজ্ঞেস করে কি লাভ আছে। তোমরা কি জানো না যে প্রানীদের মধ্যে মানুষ হচ্ছে সব থেকে বিপ্পজন্নক আর মানুষের মধ্যে তোমরা, মেয়েরা সব থেকে মারাত্মক। তোমাদের কথা না মানলে ত মহাভারত উলটে দেবে, তাই না।"

সুপ্রতিমদা পরীকে জিজ্ঞেস করে যে কখন ওরা চিতকুল পৌঁছাবে, পরী অভির দিকে তাকায়। অভি ঘড়ি দেখে অনুমান করে যে চিতকুল পৌছাতে ওদের রাত আটটা বেজে যাবে।

পরীকে বলে, "তুমি রাস্তার অবস্থা জানো, তা সত্তেও কেন ওদের নিয়ে চিতকুল যাবার জন্য জেদ করছ, সোনা?"

পরী অভির একদম কাছে এসে, বুকের ওপরে হাত রেখে মুখ উঁচু করে নেয়। ওর উষ্ণ নিঃশ্বাস অভির সারা মুখের ওপরে বয়ে যায়, মিষ্টি লালা ঠোঁটের কাতর আহবান অভি প্রত্যাখান করতে পারে না। পরীর কোমর জড়িয়ে ঠোঁট নামিয়ে নিয়ে আসে আর পরী ওর চোখের দিকে তাকিয়ে মধুর সুরে বলে, "আমার একটা কথা রাখবে না, সোনা?"

অভি ঠোঁট নিচে নামিয়ে বলে, "এটা কিন্তু ব্লাকমেইল করা হচ্ছে বেবি।"

অভি পরীর ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াতে যায়, পরী সবার দিকে চেঁচিয়ে বলে ওঠে, "আমরা চিতকুল যাচ্ছি।"

বলেই অভির হাতের বাঁধন ছেড়ে বেড়িয়ে যায়। অভির দিকে মিষ্টি হাসি ছুঁড়ে ইশারায় বলে, "ওই চুমুটা পাওয়ার জন্য তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে, সোনা।"

গাড়িতে উঠে অভি, চিতকুলের হোটেলের ম্যানেজারের ফোন নাম্বার খুঁজে টাকে ফোন করে জানিয়ে দিল পাঁচটা রুম বুক করার কথা। ম্যানেজার রাতের খাবারের কথা জিজ্ঞেস করাতে অভি বাকি সবাই কে জিজ্ঞেস করে রাতের খাওয়ার ব্যাপারে। সবাই আঁতকে ওঠে যে বিকেল বেলায় রাতের খাবার। পরী ওদের জানায় যে চিতকুল পৌঁছতে পৌঁছতে অনেক রাত হয়ে যাবে আর যেখানে যাচ্ছে সেখানে গিয়েই বুঝতে পারবে কেন রাতের খাবারের কথা এত তাড়াতাড়ি অর্ডার দেওয়া হচ্ছে।

রকছাম ব্রিজ পৌঁছতে সন্ধ্যে নেমে এল। অভি মনে মনে একটু ভয় নিয়েই পরীর দিকে তাকাল, পরী হেসে ওকে আসস্থ দেয় যে এবারে ও আর রাগবে না। অরুনা গাড়ি দাঁড় করাতে অনুরধ করে নিচে নেমে নদী দেখতে চায়। গাড়ি দাঁড়াতেই সবাই নেমে নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে থাকে। এর মাঝে সুপ্রতিমদা অভির কাছে এসে জিজ্ঞেস করে যে ওর গাড়ি চালাতে অসুবিধে হচ্ছে কিনা। অভি হেসে বলে যে পরী যতক্ষণ ওর পাশে আছে ততক্ষণ ওর শরীরে ক্লান্তি আসতে পারেনা।

সুপ্রতিমদা ওর মাথায় চাঁটি মেরে বলে, "শালা, আজ রাতে তাহলে এক প্যাকেট কন্ডম শেষ করবি।"

অভি, "এমন বলছিস যেন তুই হাতে ধরে নাড়াবি। শালা তুই কি থেমে থাকবি নাকি?" সিগারেট জ্বালিয়ে দুজনেই হেসে ফেলে।

বল্বিন্দার এর মাঝে এসে জিজ্ঞেস করে অভিকে যে ওই রাস্তায় চালাতে পারবে কিনা। রাত ঘনিয়ে আসে, অভি বড় এক নিঃশ্বাস নিয়ে বলে যে ও চালাতে পারবে। চারদিকে অন্ধকার নেমে আসে, অভির পাশে সুপ্রতিমদা বসে। খুব সাবধানে গাড়ি চালাতে শুরু করে অভি, সঙ্কীর্ণ পাহাড়ি রাস্তায় রাতের অন্ধকারে গাড়ি ধিরে ধিরে উঠতে শুরু করে। কিছু দুরে দুরে অন্ধ বাঁক, সামনে থেকে কোন গাড়ি না আসাতে গাড়ি চালাতে বিশেষ অসুবিধে হয় না। পাথুরে রাস্তায় গাড়ি দোল খায়, অরুনা আর রিতিকার ভয়ে দম বন্ধ হয়ে আসে। পরীর দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকায় দুই মেয়ে, জিজ্ঞেস করে যে ওরা ঠিক রাস্তায় যাচ্ছে কি না। পরী ওদের অভয় প্রদান করে, আয়নায় অভির দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসে, মনে পরে যায় প্রথম বার যখন পরী এখানে এসেছিল তখন ও ঝগড়া করেছিল অভির সাথে।

রাত সাড়ে আটটা নাগাদ ওর সবাই চিতকুল পৌঁছে যায়। গাড়ি সোজা হোটেলে নিয়ে যায় অভি। ম্যানেজার পরী আর অভিকে দেখে চিন্তে পেরে যায় আর ওদের থাকার জন্য রুম দেখিয়ে দেয়। ম্যানেজার জানায় যে রাতের খাবার একদম তৈরি, ওরা যেন খাওয়ার আগে একটু খবর দেয়।
Like Reply
#50
লাহুল স্পিতি ভ্রমন (#02)


সবার মুখে একই কথা, ঠিক জায়গায় এনেছেত ওদের? হোটেলের বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার, কোথাও আলোর চিহ্ণ মাত্র নেই, কিছুই দেখা যায় না, চারদিকে শুধু উঁচু উঁচু কালো পাহাড় আর দুরে কয়েকটা ছোটো ছোটো কুঁড়ে ঘরের থেকে আসা আলো। রানী আর কল্যাণী অভিকে জিজ্ঞেস করে যে ও ঠিক জায়গায় এসেছে কিনা। পরী ম্যানেজারের সাথে রুম নিয়ে দরদাম করছিল, ওদের কথা শুনে অভির দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে। সেই হাসে অভিকে নিয়ে যায় পুরানো স্মৃতিতে, পরীর মুখেও গতবার সেই একি প্রশ্ন ছিল। অভি কল্যাণীকে অভয় দিয়ে বলে, সকাল হলেই বুঝতে পারবে জায়গার আসল মর্ম। রাতের খাওয়া একটু দেরি করেই শেষ হয়। অরুনার জন্য আলাদা রুম নেওয়া হয়, পরী তাতে একটু চিন্তিত।

পরী অরুনাকে জিজ্ঞেস করে, "কিরে একা শুতে পারবি ত?"

অরুনা হেসে উত্তর দেয়, "ঠিক পারব, আমি আর কচি খুকি নই।"

পরী অরুনাকে ওর ঘরে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে গায়ের ওপরে চাদর টেনে দেয়। অরুনা চোখ বন্ধ না করা পর্যন্ত পরী ওর পাশে বসে থাকে। অরুনা ঘুমিয়ে পড়ার পরে পরী আর অভি নিজেদের রুমে চলে আসে।

অভি কাপড় বদলে নিয়ে বিছানার ওপরে ডায়রি খুলে বসে পরে সারা দিনের খরচ খরচা লেখার জন্য। পরী জামা কাপড় বদলে নেবার জন্য বাথরুমে ঢুকে পরে। কিছু পরে পরী বাথরুম থেকে বেড়িয়ে আসে আর ওকে দেখে অভির সব অঙ্ক গুলিয়ে যায়।

পরী ওর দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, "মনে আছে প্রথম রাতের কথা আর প্রথম ঝগড়া।"

অভির মুখ হাঁ, পরীর পরনে গোলাপি রঙের পাতলা রাত্রিবাস। যদিও পরনের কাপড় গোড়ালি পর্যন্ত কিন্তু ওর কাঁধ অনাবৃত আর ওর পেলব দেহের সাথে লেপটে থাকে কাপড়। প্রেয়সীর শরীরের প্রত্যেক বাঁক ওর লুব্ধ চোখের সামনে উন্মুক্ত যেন, উন্নত বক্ষের মাঝে ছোটো নুড়ি পাথর শোভা পায়। সুগোল বক্ষ জোড়া যেন হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকছে। বক্ষ বিভাজনের অধিকাংশ অনাবৃত আর ঘরের মৃদু আল যেন ফর্সা মসৃণ ত্বকের ওপরে পিছলে যাচ্ছে। দু বাহু আর কাঁধ অনাবৃত, মাথার চুল খোলা, ঠোঁটে মাখা দুষ্টু মিষ্টি হাসি। পীনোন্নত বক্ষ যুগলের পরে দেহের আকার পাতলা হয়ে নেমে আসে নরম গোল পেট, তাঁর মাঝে সুগভীর নাভিদেশ পরিষ্কার বোঝা যায়, পাতলা আভরনের নিচে। গোল পেটের নিচে তোলপেট একটু ফুলে উঠে বেঁকে নেমে যায় জানুসন্ধির দিকে। অভির চোখ আটকে যায় জানুসন্ধির দিকে, দুই জানু যেন মসৃণ গাছের গুঁড়ি। পরী আয়নার সামনে বসে পরে, অভির দিকে তাকায় আর হাসে। অভির মাথার সব অঙ্ক গুলিয়ে যায় পরীর অপরূপ ভুগলের সামনে। অভির সিংহ কেশর ফুলিয়ে ওঠে, পরীর নজর চলে যায় ঢেকে থাকা কঠিন সিংহের দিকে। গাল লাল হয়ে ওঠে পরীর, রাতের কথা ভেবে। বুকের মাঝে উত্তাল প্রেমের ঝড় বইতে শুরু হয়। অভি পাগল হয়ে যায় দেখে যে পরীর ওই রাত্রিবাসের নিচে কোন অন্তর্বাস নেই।

মধু ঢালা সুরে অভির দিকে চোরা চাহনি দিয়ে বলে, "ওখানে বসে বসেই কি আমাকে মেরে ফেলবে? কিছু কি বলবে না?"

পরীর গলার সুর শুনে সম্বিৎ ফেরে অভির, "উফ, তুমি না একদম রসে ভরা, পরী। আমি ত আজ রাতে তোমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে মরেই যাব।"

পরী লাজুক হেসে বলে, "মনে আছে সেই রাতে ঝগড়ার কথা।"

অভি মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয়, "রাতের ঝগড়ার কথা ত মনে নেই কিন্তু সকালের সেই মিলনের ছবি আমার বুকে আঁকা আছে।"

বিছানার একদিকে সরে গিয়ে পরীর ঠিক পেছনে এসে বসে অভি। পা ফাঁক করে পরীকে নিজের কোলের ওপরে টেনে নেয়। পরীর কোমল নিতম্ব অভির জানুর ভেতরের দিকে স্পর্শ করে, অভি জানু চেপে ধরে পরীর দুপাসে। কোমরের দুপাসে হাত দিয়ে পরীকে জড়িয়ে ধরে পেটের ওপরে চেপে ধরে হাত। নরম পেটে অভির হাতে গলে যায়। অভি ওর ডান কাঁধে মাথা রেখে গালে গাল ঘষে। পরী আয়নায় নিজেদের আলিঙ্গন দেখে আবেগে কেঁপে ওঠে, চোখে চোখ রেখে পরী মিসিত হাসি দেয় অভির দিকে।

চুল আঁচড়ানোর পরে সামনে ঝুঁকে ক্রিম নেয় হাতে মাখার জন্য, আর পরীর ঝকার ফলে ওর সুগোল নিতম্বের নিচে পিষে যায় অভির সিংহ। পরী ওর কোমল নিতম্বের খাঁজে অভির তপ্ত শলাকার স্পর্শ পেয়ে কামনার আগুনে মৃদু কেঁপে ওঠে। কোমরে মোচর দেয় আর তাঁর ফলে অভির সিংহ গেঁথে যায় ওই দুই কোমল নিতম্বের খাঁজে। পরী আর যেন থাকতে পারে না, সারা শরীরে কামনার আগুন ধিকধিক করে জ্বলে ওঠে। অভির তপ্ত শ্বাস ওকে পুড়িয়ে দেয় আর নিচে চেপে থাকা তপ্ত শলাকা ওর শরীরে যেন ফস্কা ফেলে দেয়। অভি আয়নায় ওর চোখের দিকে কামনার আগুন নিয়ে তাকায়।

পরী ওর চোখে কামনার আগুন দেখে আর পিছিয়ে থাকতে না পেরে বলে, "এত তাড়াহুড়ো কেন করছ? আমাকে লোসান লাগাতে দাও তারপরে আমি তোমার।"

অভির হাত উঠে আসে পরীর উন্নত বক্ষের নিচে, আলতো করে চাপ দেয় বুকের নিচের ভাঁজ। গালে গাল ঘষে অভি, উষ্ণ ত্বকের ঘর্ষণের ফলে প্রেমের আগুনের ফুল্কি ছুটতে দেরি হয় না। গাল লাল হয়ে যায় পরীর।

অভি ওর কানে কানে বলে, "লোসান লাগিয়ে কি করবে? আমি ত আজ তোমার সারা শরীরে চুমু খাব, বেবি।"

পরী মৃদু রাগ ব্যাক্ত করে বলে, "শয়তান ছেলে, আমি তোমাকে আমার ঠোঁট আর গাল ছাড়া কোথাও চুমু খেতে দেব না। ভুলেও ভেব না যে তুমি যেটা করতে চাইছ সেটা পেয়ে যাবে।"

অভির লিপ্সা আরও বেড়ে যায়, আঙ্গুল দিয়ে চাপ দেয় পরীর বুকের নিচের বাকে। কাঁধের ওপরে থেকে সামনে ঝুঁকে বুকের মাঝের গভীর খাঁজ দেখে পাগল হয়ে যায় অভি। অপরূপ বক্ষ বিভাজন যেন উপচে পড়ছে পরনের জামার ওপর থেকে। কামনাতারিত অভির চোখের সামনে দোল খায় পরীর বক্ষ। আরও জোরে দুবাহু মাঝে পরীর দেহ চেপে ধরে টেনে নেয় যেন এবারে নিজের দেহের সাথে মিলিয়ে নেবে ওর মাখনের মতন নরম শরীর। সিংহ এবারে নিজের জানান দেয় আর নিতম্ব বিভাজনের মাঝে আটকে যায়। ওদের সারা শরীরে কামনার আগুন কিলবিল করতে শুরু করে দেয়। অভির ডান হাত নিচে নেমে যায় তলপেটের ওপরে, মৃদু চেপে ধরে নরম তুলতুলে তলপেটের মাংস। শ্বাসের গতি বেড়ে যায় আর পরীর উন্নত বুক জোড়া সাগরের ঢেউয়ের মতন ওঠা নামা করে।

পরী ওর খোলা পিঠের ওপরে অভির পেশি বহুল নগ্ন ছাতির পরশ অনুভব করে। ভুলে যায় হাতে পায়ে লোসান লাগাতে। পীনোন্নত বুক জোড়া উপচে প্রায় বেড়িয়ে আসে রাত্রিবাসের ওপরের দিক থেকে। মাথা পেছিন দিকে হেলিয়ে অভির গালে গাল ঘষতে শুরু করে। দুহাত পেছনে এনে, অভির মাথার পেছনে নিয়ে চুল মুঠি করে ধরে নেয়। ঠোঁট জোড়া অল্প ফাঁক করা আর সেই ফাকের ভেতর থেকে তপ্ত শ্বাসের ঝড় বয়। অভি বাম হাতে পরীর এক বক্ষ নিয়ে আলত আলতো চাপ দেয়া শুরু করে, অন্য হাতে পরীর তলপেটে ওপরে ঠিক জানু সন্ধির কাছে চেপে ধরে। প্রেমের তপ্ত আলিঙ্গনে বদ্ধ হয়ে ককিয়ে ওঠে পরী।

অভি ওর ডান কানের লতি ঠোঁটের মাঝে নিয়ে আলতো করে চুষে দেয়। অভি মনপ্রানে চায় যে আজ রাতে প্রেয়সীর উন্মুক্ত যৌবন সুধা চোখ দিয়ে পান করবে আর পরী যখন আলো বন্ধ করতে বলেনি তাহলে পরীর মনেও সেই ইচ্ছে আছে যে অভি ওর রুপশুধা দেখুক দুচোখ ভরে। বুভুক্ষু অভি চেপে ধরে পরীর নরম তুলতুলে বুক, পিষে দেয় নারী মাংস কঠিন থাবার মাঝে। অন্য হাত পৌঁছে যায় নারীতের দোরগোড়ায়, আলতো করে আঙ্গুল দিয়ে চাপ দেয় সেই গুহার ওপরে।

পরী শক্ত করে চোখ বন্ধ করে শীৎকার করে ওঠে। অভি ফিসফিস করে পরীকে অনুরোধ করে, "সোনা আমার একটা কথা রাখবে?"

পরী থাকতে না পেরে মৃদু সুরে বলে, "তোমার কোন কথা আমি রাখিনি সোনা।"

অভি আঙ্গুল নিয়ে যায় পরীর জানুর মাঝে আর আলতো করে চাপ দিয়ে বলে, "এখানের বাগান ছেটে ফেল, সোনা।"

পরী মৃদু চেঁচিয়ে ওঠে, "না আআআআআ...... শয়তান ছেলে কোথাকার।"পরী দুজানু চেপে ধরে যাতে অভি আর ওর জানু মাঝে আঙ্গুল দিয়ে খেলা করতে না পারে। পরীর কোমল নিতম্বের চাপে অভির সিংহের অবস্থা যায়যায়। তলপেটে থেকে আগুন নিচে নেমে, বারে বারে গর্জে ওঠে সিংহ।

অভি জিজ্ঞেস করে, "কেনো বেবি?"

পরী, "কেন মানে? এইসব কেউ করে নাকি?"

অভি, "কে বলছে যে এইসব করে না?"

পরী, "তুমি জানলে কি করে, যে মেয়েরা করে।"

অভি, "আমি ছবিতে আর অইসব সিনেমাতে দেখেছি।"

লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে পরী, "ছাড়ো আমাকে, তুমি ভীষণ শয়তান।"

পরীকে আরও আঁকড়ে ধরে অভি, আর বারংবার দেহের মোচরের ফলে অভির সিংহ বারেবারে নিতম্বের খাঁজের মাঝে ঘর্ষণ খায়।

ঠিক সেই সময়ে দরজায় আওয়াজ হয়। থতমত খেয়ে ওঠে অভি আর পরী। সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে অভির আলঙ্গন থেকে মুক্ত করে উঠে বসে। কাপড় আর অবিন্যস্ত চুল ঠিক করে নেয়। অভি কোনোরকমে মাথা উঠিয়ে থাকা সিংহ টিকে শান্ত করার চেষ্টা করে। পরী ওর দিকে একটা তোয়ালে ছুঁড়ে দেয় নিজেকে ঢাকার জন্য। অভি পরীর দিকে পরাজিত প্রেমিকের মতন তাকিয়ে হাসে, পরী ওর দিকে দুষ্টু হেসে ইশারা করে, তোমার যেমন শয়তানি ইচ্ছে, ঠিক হয়েছে এবারে।

অভি শ্বাস সামলে আর নিজেকে ঢেকে পরীকে প্রশ্ন করে, "এত রাতে কে হতে পারে?"

পরী গায় একটা ওড়না জড়িয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যায়, "অরুনা হতে পারে না কেননা আমি ওকে ঘুম পারিয়ে দিয়ে এসেছিলাম।"

অভি কোমরে তোয়ালে জড়িয়ে দরজা খুলে অবাক হয়ে যায় সামনে অরুনাকে দেখে। ওর দুচোখ জলে ভরা লাল হয়ে ফুলে উঠেছে। সারা মুখ থমথমে, বুকের ভেতরে যেন এক ঝড় বইছে। পরী ওর থমথমে মুখ দেখে অভিকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে অরুনাকে ঘরের মধ্যে টেনে নেয়।

জিজ্ঞেস করে অরুনাকে, "কি হয়েছে তোর?"

পরীর হাতের ছোঁয়া পেয়ে গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পরে অরুনার, "তোমার কাছে শুতে দেবে, শুচিদি?"

পরী অভির দিকে হতাশার চাহনি দিয়ে মৃদু হাসে, অভি বোকার মতন দাঁড়িয়ে মাথা চুলকায়। অরুনাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে গায়ের ওপরে কম্বল্টা ভাল করে টেনে দেয়। অভির দিকে ফিরে একটা শার্ট হাতে দিয়ে অনুরধ করে যে অরুনার ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়তে।

অভি পরীকে জিজ্ঞেস করে, "তুমি কি আসবে?"

পরী ম্লান হেসে উত্তর দেয়, "আগে অরুনার অবস্থা দেখি তারপরে ভেবে দেখব, সোনা।"

অরুনা ওদের দিকে ঝাপসা চোখে তাকিয়ে ছিল, কাঁপা গলায় পরীকে বলে, "আমি জানি আমি তোমাদের অনেক অসুবিধায় ফেলছি, কেন তুমি আমাকে তোমাদের সাথে এনেছ? আমাকে না আনলেই পারতে।"

পরী ওর পাশে বসে আদর করে গালে চাঁটি মেরে বলে, "একদম এই সব কথা বলবি না।"

অভির দিকে তাকিয়ে বলে, "দাঁড়িয়ে আছো কেন, যাও।"

বুকের মাঝে একটু হতাশা নিয়ে ম্লান হেসে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল অভি। ভাবছে যে, একটা সিগারেটের সাথে এক ক্যান বিয়ার হলে ভাল হত।সুপ্রতিমদার রুমের দরজায় টোকা মারল অভি। কিছু পরে সুপ্রতিমদা দরজা খোলে, ওর অবস্থা অভির মতন, ঊর্ধ্বাঙ্গ খালি, কোমরে তোয়ালে জড়ানো, তোয়ালের নিচ থেকে সিংহ বাবাজি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ঘরের মধ্যে ইচ্ছে করেই উঁকি মারে অভি, লক্ষ্য করল যে রিতিকা কম্বলে নিজেকে নাক পর্যন্ত ঢেকে নিয়েছে। মাথার চুল অবিনস্ত, চোখ জোড়া প্রেমের আগুনে চিকচিক করছে, গাল লাল।
[+] 1 user Likes sorbobhuk's post
Like Reply
#51
অভি দেঁতো হাসি হেসে জিজ্ঞেস করল, "তোদের কি ডিস্টার্ব করে দিলাম নাকি?"

সুপ্রতিমদা ক্ষেপে গিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে, "বোকা... শুয়োর, কুত্তা হারামি, রাত দেড়টায় দরজায় নক করে জিজ্ঞেস করছিস যে ডিস্টারব করলাম নাকি? শালা তোর কি চাই এত রাতে?"

রিতিকা ওদিকে ফিকফিক করে হাসছে, সুপ্রতিমদার রাগ দেখে আর অভির অবস্থা দেখে।

মাথা চুলকায় অভি, "না মানে..."

সুপ্রতিমদা, "বোকা... মানে কি... তোর কি কন্ডম চাই?"

অভি, "না রে বোকা..., আমার বিয়ার চাই।"

সুপ্রতিমদা, "বিয়ারের ক্যারেট গাড়িতে।"

অভি, "তাহলে গাড়ির চাবি দে।"

সুপ্রতিমদা, "গাড়ির চাবি বলবিন্দারের কাছে। বোকা... এখন যা এখান থেকে আর আমাদের একটু শান্তিতে শুতে দে।"

অভি মুখ বাড়িয়ে রিতিকার দিকে চোখ টিপে বলে, "ডারলিং, তোমার রাতের ঘুম হয়ে গেছে।"

অভির মুখে ওই কথা শুনে রিতিকা লজ্জায় লাল হয়ে গিয়ে কম্বলের নিচে মুখ ঢেকে নেয়।

সুপ্রতিমদা অভির ওপরে চেঁচিয়ে ওঠে, "বোকা... এখান থেকে যা না হলে মেরে ফেলব তোকে।"

বল্বিন্দারে কাছ থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে এক ক্যান বিয়ার নিয়ে অরুনার রুমে ঢুকে গেল। একটা সিগারেট ধরিয়ে টানতে লাগল আর এক হাতে বিয়ারের ক্যানে চুমুক দিতে থাকে। পরীর জন্য অধির অপেক্ষায় সময় যেন আর কাটেনা। বেশ খানিকক্ষণ কেটে যাওয়ার পরেও যখন দেখে যে পরী আর আসেনা, তখন রুম থেকে বেড়িয়ে পরীর রুমে যায়। রুমের দরজা আলতো করে ভেজান দেখে দরজা ঠেলে ঢুকে পরে রুমের মধ্যে।

বিছানায় একটা কম্বলের নিচে পরী শুয়ে আর একটা কম্বলের নিচে অরুনা। পরী ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে আর অরুনা ওর বুকের কাছে মাথা রেখে শান্তির নিদ্রা জাপন করছে। অরুনা পরীর বুকের কাছের জামা শক্ত করে মুঠিতে ধরে যেন ছারলেই যদি পালিয়ে যায় সেই ভয়ে সর্ব শক্তি দিয়ে আঁকড়ে ধরে পরীর রাত্রিবাস। অভি দুজনার মুখের দিকে তাকাল, পরীর স্নেহময়ি মূর্তি দেখে মন অনাবিল আনন্দে ভরে গেল। পরীর মুখের ওপরে ঝুঁকে পরে গালে একটা ছোট্ট চুমু খেলা আর অরুনার মাথায় কপালে হাত বুলিয়ে দিল। দরজা বন্ধ করে ঘর থেকে বেড়িয়ে গিয়ে অরুনার রুমে ঢুকে শুয়ে পড়ল অভি।

পরের দিনের বেশির ভাগ সময়ে সবাই চিতকুল ঘুরেই কাটিয়ে দেয়। সকালে খেতে বসে কল্যাণী আর রিতিকা অভিকে প্রশ্ন করে যে কি ভাবে ও এই জায়গার কথা জানে, তাঁর উত্তরে অভি জানায় যে বেশ কিছু বই আর ম্যাপ পড়াশুনা করে ও এই জায়গার কথা জেনেছে।

অরুনার গলায় মৃদু রাগ, "এটাকে সাহসী বলে না বুঝলি, এটা পাগলামি, শুচিদিকে নিয়ে এই রকম একটা জায়গায় আসা। এই জায়গা ত মনে হয় পৃথিবী থেকে বাইরে।"

পরী সবার দিকে হেসে বলে, "আর এই জন্যেই প্রথম রাতে আমাদের ঝগড়া হয়েছিল।"

অভি পরীকে ক্ষেপানোর জন্য বলে, "আরে পরেরদিন সকালে কি হয়েছিল?"

পরী লাজুক হেসে অভিকে আদর করে চাঁটি মারে। ওর মুখের লালিমা দেখে কারুর বুঝতে অসুবিধে হয় না যে সকালের কি ঘটেছিল।

তাও রিতিকা পরীকে ছাড়ে না, জিজ্ঞেস করে, "হ্যাঁ হ্যাঁ, কি হয়েছিল পরেরদিন সকাল বেলায়, শুনি।"

পরী অভির দিকে তাকিয়ে নিচু সুরে বলে, "নাও এবারে ম্যাও সামলাও..."

অভি রিতিকার দিকে চোখ টিপে বলে, "ডারলিং, কাল রাতে তুমি যা করছিলে, সেটাই ওর সাথে সেদিন রাতে হয়েছিল।"

রিতিকার গাল লাল হয়ে ওঠে লজ্জায়, খাবার প্লেটের দিকে তাকিয়ে যেন ফাঁক খোঁজে একটু মুখ লুকানোর জন্য।

সকালের খাওয়ার পর্ব শেষে, পরী মেয়েদের নিয়ে বিয়াস নদীর দিকে যায়। ছেলেরা হোটেলের সামনের ফাঁকা জায়গায় বসে চারপাশের পাহাড় দেখে আর সিগারেট টানতে টানতে গল্প করে। হোটেলের সামনে থেকে নদীর তীর বেশ পরিশাক্র দেখা যায়, দূর থেকে লক্ষ্য করে যে মেয়েরা বেশ মজা করছে। সুপ্রতিমদা আর দীপঙ্কর অভিকে পরবর্তী জায়গার কথা জিজ্ঞেস করে। অভি জানায় যে পরবর্তী স্থান, নাকো। আগামিকাল সকাল সকাল ওদের বেড়িয়ে পড়তে হবে তবেই রাতের আগে নাকোতে পৌঁছে যাবে ওরা। মেয়েরা বেশ খানিখন পরে নদীর ধার থেকে ঘুরে হোটেলে ফিরে আসে।

দুপুরের খাওয়ার সময়ে পরী অভিকে বলে, "গ্রীষ্ম কালে পাহাড় আরও সুন্দর হয়ে ওঠে, চারদিক সবুজে ঢাকা, শিতকালের চেয়ে একদম আলাদা সৌন্দর্য। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ যে আমাকে দুই ঋতুতেই এখানে এনেছ।"

অভি, "সব তোমার জন্য হানি, তোমার সেই অদৃশ্য চিঠি না পেলে এখানে কোনদিন আসা হতনা।"

অরুনা ওদের কথাবার্তা শুনে অভিকে জিজ্ঞেস করে, "অদৃশ্য চিঠি? সেটা কি?"

অভি ওকে সেই চিঠির কথা বলে আর এই জায়গার আসার সেই পরিকল্পনার গল্প বলে। অভি মজা করে বলে যে ওর হবু বউয়ের শিখিয়ত্রি না হয়ে গোয়েন্দা হওয়া উচিত।

বিকেলে হোটেলের ম্যানেজার অভিদের জিজ্ঞেস করে যে রাতে বনফায়ার করতে চাই কিনা। বনফায়ারের কথা শুনে পরী আর রিতিকার চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে, এক কথায় সব মেয়েরাই নেচে ওঠে রাতের বনফায়ারের কথা শুনে। রাতে বনফায়ারের চারপাশে গোল করে সবাই বসে, মাঝে কাঠের আগুন জ্বলছে। পরী চেয়ারে বসে, ওর পায়ের কাছে অভি বসে ওর কোলে মাথা রেখে। পরী অভির চুলে আদর করে দেয়। পরীর একপাসে অরুনা অন্য পাশে রিতিকা। রিতিকার পায়ের কাছে সুপ্রতিমদা বসে ওর কোলে মাথা রেখে। অরুনার দিকে মাথা ঘুরিয়ে তাকায় অভি, অরুনার মুখে হাসি ফুটে উঠেছে, আবার সেই পুরানো অরুনাকে দেখতে পেয়ে অভির মন আনন্দে ভরে ওঠে। অভি নিস্পলক চোখে তাকিয়ে থাকে আগুনের লাল হলদে আলোয় আলোকিত অরুনার হাসিহাসি মুখের দিকে। পরী অভির দৃষ্টি অনুসরন করে অরুনার দিকে তাকায়।

পরী অভিকে জিজ্ঞেস করে, "অরুনা এখন অনেকটা ভাল আছে। তবে আরও কিছু সময় লাগবে ওর মনের অবস্থা ঠিক হতে, চিন্তা করোনা ধিরে ধিরে সব ঠিক হয়ে যাবে।"

পরীর কোলের ওপরে মুখ ঘষে বলে, "সত্যি তোমাকে যে কি করে ধন্যবাদ জানাবো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।"

অভির চুলে বিলি কেটে বলে, "আমাকে কেন ধন্যবাদ জানাবে? তোমার কষ্ট কি আমার কষ্ট নয়?"

অভি মুখ তুলে ওর গভীর কালো চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, "তাহলে কি আজ রাতে আমরা সেলিব্রেট করছি?"

চুলের মাঝে আঙ্গুল দিয়ে আঁচড়াতে আঁচড়াতে বলে, "না হানি, এখন ওর মানসিক অবস্থা ঠিক নয়। তোমার চেয়ে আমাকে ওর বেশি দরকার, একটু বুঝতে চেষ্টা করো সোনা।"

অরুনা ওদের কথা শুনে ফেলে জিজ্ঞেস করে, "এই তোরা কি বলছিস রে?"

পরী আদর করে ওর গালে চাঁটি মেরে বলে, "কিছু না, তুই আনন্দ কর, আমরা একটু আসছি।"

পরী অভিকে টেনে তুলে হোটেলের মধ্যে নিয়ে গিয়ে বলে, "গতকাল রাতে, অরুনা পুবালিকে স্বপ্নে দেখে যে ও ডাকছে। ভয়ে আঁতকে ওঠে ও, আর সেইজন্য আর ঘুম আসেনা। কাল অনেক রাত পর্যন্ত আমাকে আঁকড়ে ধরে কেঁদেছিল, আমাকে একদম ছাড়ছিল না। অনেকক্ষণ ধরে ওকে আমি শান্তনা দেই আর বুঝাই, তবে গিয়ে ওর চোখে ঘুম আসে। এমত অবস্থায় কি করে ওকে আমি একা ফেলে দেই বল?"

অভি পরীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, সারা চেহারায় যেন এক মাতৃময়ি রুপের আলক ছটা বিচ্ছুরিত হয়। রাতে সবাই তাড়াতাড়ি ঘুমাতে চলে যায়, কারন সকাল সকাল উঠে বেড়িয়ে পড়তে হবে নাকোর দিকে। পরী অরুনাকে নিয়ে ওদের ঘরে ঢুকে যায়। দরজা বন্ধ করার আগে অভির দিকে আদর করে ম্লান হেসে বলে, "ব্যাস আর কিছু দিন হানি। তোমার ওর বেশি জরুরি আমাকে কাছে পাওয়া। আমি জানি তুমি বুঝে নেবে।" অভি বুকের কাছে হাত এনে চেপে ধরে জিজ্ঞেস কর, "তুমি কে? তুমি কোন সময়ে স্নেহময়ি মাতৃ মূর্তি আবার কোন সময়ে আমার প্রেয়সী সুন্দরী। কি করে তুমি এত রুপ ধারন করো?"

পরীর গালে আদর করে অভি, "আই লাভ ইউ।"

পরী ওর ঠোঁটে আলতো করে চুমু খেয়ে বলে, "মনে আছে তুমি আমাকে কথা দিয়েছিলে যে এই পাহাড়ের মাঝে আমার জন্য একটা কুঁড়ে ঘর বানয়ে দেবে।"

মাথা নাড়ায় অভি, ওর সেসব কথা বেশ ভালো করে মনে আছে।
পরদিন সকাল আট’টার মধ্যে খাওয়া সেরে অভিরা বেড়িয়ে পরে নাকোর উদ্দেশ্যে। গাড়ির চালক সুপ্রতিমদা, পাশে বসে ওর প্রেয়সী, রিতিকা। অভি পরী আর অরুনা পেছনে বসে। একসময়ে রিতিকা সুপ্রতিমদার কল ঘেঁসে বসে গালে আলত করে চুমু খায়।

অভি সেই দেখে রিতিকাকে খেপিয়ে বলে, "রিতু ডার্লিং, সুপ্রতিমদার গিয়ার বদলাতে যেও না।"

সুপ্রতিমদা চেঁচিয়ে ওঠে, "বোকা... চুপচাপ পেছনে বসে থাক।"

গালাগালি শুনে সবার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। পরী ভাবতেই পারেনি ওদের মুখ থেকে এইরকম সব গালাগালি বের হবে। রিতিকার মুখ লাল হয়ে যায় লজ্জায়, সুপ্রতিমদার কাছ থেকে সরে, লজ্জা লুকাতে জানালার বাইরে দেখে।

পোয়ারিতে থামে গাড়িতে তেল ভরানর জন্য। ইনোভা ওদের গাড়ির ঠক সামনে। রেকংপিও পার হবার পরেই পাহাড়ের রঙ বদলাতে শুরু করে। এতক্ষণ দুপাশে সবুজ ঘাসে বাঁ গাছে ঢাকা পাহাড় ছিল, পিওর পরে পাহাড়ের রঙ হয়ে যায় ধুসর। ব্রিজ পার হবার পরেই চারপাশে ন্যাড়া পাহাড়, কোথাও ঝুরঝুরে পাথর রাস্তার ওপরে পরে। সুপ্রতিমদার গাড়ি চালাতে একটু অসুবিধে হচ্ছিল, এবড়খাবর রাস্তার ওপরে গাড়ি যেন ঢেউয়ের মতন দোল খায়। শতদ্রু নদী রাস্তার একপাশ দিয়ে নিজের মনে বয়ে চলে। পরী অভির কাঁধে মাথা রেখে বসে, অভি একহাতে পরীর কোমর জড়িয়ে ধরে থাকে। অরুনা চুপ করে জানালার বাইরে তাকিয়ে ভয়ঙ্কর কঠিন সৌন্দর্য দেখে।

অরুনা কিছু পরে অভির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "হ্যাঁরে একটা কথা বলবি আমাকে? পঞ্চাস ক্যান বিয়ার আর পাঁচ বোতল ভদকা এনেছিস। তোরা দুজনে কি সারাটা রাস্তা গলায় ঢালতে ঢালতে যাবি?"

অভি নির্লজ্জের মতন মাথা নাড়িয়ে বলে, "হ্যাঁ।"

অরুনা বিরক্ত হয়ে ওঠে, "যাচ্ছেতাই মানুষ তোরা..."

সুপ্রতিমদা অরুনা কথা শুনে ফেলে চেঁচিয়ে ওঠে, "আরে, আমি ত বিয়ারের কথা একদম ভুলে গেছিলাম, তোমার কথা শুনে মনে পরে গেল। এবারে ত এক এক ক্যান মারতেই হয়।" অভিও মাথা নাড়ায়, "হ্যাঁ।"

পরী ওকে আদর করে মারতে শুরু করে দেয়।

কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা খাব ব্রিজ পৌঁছে যায়। ইনোভা সামনে দাঁড়িয়ে, কল্যাণী আর রানীরা গাড়ি থেকে নেমে চারপাশের পাহাড় দেখছে। একদিক দিয়ে শতদ্রু নদী একদিকে স্পিতি নদী এখানে মিশেছে। রিতিকা ওদের দেখে সুপ্রতিমদাকে গাড়ি দাঁড় করাতে অনুরধ করে।

সুপ্রতিমদা গাড়ি দাঁড় করাতেই গাড়ি থেকে সবাই নেমে পরে। সামনে রাস্তার অবস্থা দেখে সুপ্রতিমদা একটু থমকে যায়। ব্রিজের ওপারে পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি, মাথার ওপরে ছাদের মতন ঝুলে আছে পাহাড়, একপাশ দিয়ে বয়ে চলেছে উত্তাল তরঙ্গিণী স্পিতি নদী। ব্রিজের নিচে, স্পিতির আর শতদ্রুর জল মিলেমিশে যেন যুদ্ধে রত। অভি গাড়ির পেছনে গিয়ে দুটি ক্যান বিয়ার নিয়ে একটা সুপ্রতিমদার হাতে ধরিয়ে দেয়। পরী মেয়েদের নিয়ে স্পিতির দিকে হেঁটে নেমে যায়। দুরে দেখা যায়, নাকোর খাড়া রাস্তা। পাহাড়ের গা বেয়ে এঁকে বেঁকে উঠে গেছে। সুপ্রতিমদা পরীর কাছে গিয়ে রাস্তার কথা জিজ্ঞেস করে। দুরে দাঁড়িয়ে অভি পরী কে দেখে, বেশ ভালো ভাবে রাস্তার ভয়ঙ্কর সৌন্দর্যের বর্ণনা দেয়।

সুপ্রতিমদা অভির দিকে তাকিয়ে বলে, "গুরু এই রাস্তায় আমি গাড়ি চালাচ্ছি না, এক নয় তুই না হয় বলবিন্দার কে বল।"

অভি চালকের সিটে বসে পরে। গাড়ি অতি সন্তর্পণে আঁকা বাঁকা চড়াই চরতে শুরু করে। সুপ্রতিমদা অভির পাশে বসে বারেবারে জানালার বাইরের দৃশ দেখে আর থমকে যায়। বুকের মাঝে দুরুদুরু নিয়ে রিতিকা আর অরুনা পরীর হাত চেপে ধরে দম বন্ধ করে বসে থাকে।

সুপ্রতিমদা অভিকে জিজ্ঞেস করে, "এই জায়গা কি করে খুঁজে বের করেছিস তুই? এই জায়গা’ত মনে হয় পৃথিবীর বাইরে।"

নাকো তে ওরা দুই দিন থাকে, সবাই নাকোতে বেশ আনন্দ করে। শুধু অভির রাত কাটে সিগারেট আর বিয়ারের ক্যান নিয়ে, ইচ্ছে থাকলেও অরুনার মুখ দেখে পরীর কাছে যেতে পারেনা।

অভিরা নয় জন ছাড়া নাকোতে কোন ভারতীয় পর্যটকের দেখা পাওয়া যায়নি, বেশির ভাগ পর্যটক বিদেশি। কিছু ভারতীয় ছিল তারা বাইকে করে লাহুল স্পিতি ঘুরতে বেড়িয়েছিল।

একদিন বিকেল বেলায়, অভিরা সবাই মিলে নাকোর বৌদ্ধ মঠের মাঠে বসে সবাই সূর্যাস্ত দেখছিল। পরী ওর পাশে কাঁধে মাথা রেখে চুপচাপ বসে থাকে, আনমনা হয়ে যায় দুজনেই, সূর্যাস্তের লাল কিরন ওদের যখন স্নান করিয়ে দেয়। পরী ফিসফিস করে ওর কানে মনে করিয়ে দেয় সেই রাতের উপহারের কথা। সেই স্মৃতির রোমন্থনে অভির গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে, সুমধুর সেই স্মৃতি, পরীকে জড়িয়ে ধরে সারা মুখে তপ্ত চুম্বন এঁকে দেয়।

নাকোর শেষ রাতে, অভি আর সুপ্রতিমদা আকাশ দেখতে বের হয়, হাতে ভদকার বোতল, ভেবেছিল দুরে হেলিপ্যাডের কাছে গিয়ে, দুজনে মিলে একটু নিরিবিলিতে সুখে পান করবে। ঠিক সেইসময়ে রিতিকা দৌড়াতে দৌড়াতে ওদের সাথে এসে যোগ দেয়। অভিকে জিজ্ঞেস করে যে সুপ্রতিমদাকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছে, অভি আকাশের দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বলে, আকাশ গঙ্গা দেখাতে নিয়ে যাচ্ছে। মেঘহীন, দূষণহীন স্বচ্ছ আকাশে লক্ষ কোটি তারার সমাবেশ, আকাশগঙ্গা তারামন্ডল দেখে ওরা অবাক হয়ে যায়। অভি দেখল যে এর পরে রিতিকাকে নিয়ে গেলে ওদের ভদকা পানে ব্যাঘাত ঘটবে তাই একবার রিতিকাকে ফিরে যেতে অনুরধ করে। রিতিকা জানায় যে সব মেয়েরা ঘুমিয়ে পড়েছে, পরী অরুনাকে নিয়ে অনেক আগেই ঘরে ঢুকে পড়েছে, ওর একা একা কি করবে তাই অগত্যা ওদের সাথে। সুপ্রতিমদা অভির দিকে একটু কটমট করে তাকায়, সেই রাতে বেচারা ভদকা বোতোলেই বন্ধ থেকে যায়।

বৃহস্পতিবার সকাল বেলায় খাওয়াদাওয়া করে অভিরা বেড়িয়ে পরে কাজার উদ্দেশ্যে। গাড়ির চালক আবার সুপ্রতিমদা। নাক থেকে বেড়িয়েই রাস্তা বেশ সুন্দর দেখে সুপ্রতিমদার আর অভির মন খুশিতে ভরে যায়। কিছুদুর গিয়েই আসে মালিং টপ, সমুদ্রতল থেকে বারো হাজার ফুট উচ্চতায়, আশেপাশের পাহাড় যেন ওর নিচে পরে রয়েছে। রাস্তা অতি সঙ্কীর্ণ, সামনে থেকে দুটি বিদেশি পর্যটক সাইকেলে চেপে ওদের দিকে আসে। সুপ্রতিমদা ওদের থামিয়ে সামনের রাস্তার কথা জিজ্ঞেস করে। রাস্তার অবস্থা মোটামুটি, ওরা ঘুই নামে একটা ছোটো গ্রামে ঘুরতে গেছিল, সেখান থেকে আসছে ওরা। সেই গ্রামটা নাকি অনেক সুন্দর, ঠিক যেন পাহাড়ের কোলে পটে আঁকা ছবির মতন আর মাঝখান থেকে একটা অতি ক্ষুদ্র জলধারা বয়ে চলেছে। সেই শুনে সব মেয়েরা উতফুল্লে চেঁচিয়ে ওঠে যে ওরা ঘুই যাবে। অভি আর সুপ্রতিমদা ম্যাপ খুলে ঘুইয়ের অবস্থান দেখে নেয়।

তারপরে সুপ্রতিমদা জানায়, "আমরা সবাই ঘুই যাবো, তারপরে কাজা।"

সেই কথা শুনে রিতিকা সুপ্রতিমদার ওপরে ঝাঁপিয়ে পরে ঠোঁটে চুমু দিয়ে বলে, "মেরা দিল কা রাজা, অনেক ধন্যবাদ।"

মালিং ছাড়িয়েই কিছু দূর যেতে সামনে রাস্তার ওপরে দিয়ে একটা ছোটো ঝরনা বয়ে যেতে দেখে। সেই দেখে সবাই ভয়ে আঁতকে ওঠে, একপাসে গভীর খাদ, খাড়া হয়ে নিচে নেমে গেছে স্পিতি নদীর তীরে, অন্য পাশে ধুসর পাহাড়ের ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে জলধারা। একটাই রাস্তা সামনে।

সুপ্রতিমদা গাড়ি থামিয়ে অভির দিকে তাকিয়ে বলে, "গুরু আমি গাড়ি চালাচ্ছি না, এটা অসম্ভব ব্যাপার। বারো হাজার ফিটের ওপরে রাস্তায় এই জল, তাঁর ওপর দিয়ে গাড়ি? মাথা খারাপ নাকি?"

মেয়েরা গাড়ির ভেতরে ভয়ে চুপ করে বসে। অরুনা আঁতকে ওঠে, "আমি আর আগে যাবো না, তুই আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে চল।"

পরী আদর করে বকুনি দেয় অরুনাকে, "ধুর, এইরকম ভয় পেলে হয় নাকি, আমরা সবাই আছি, তোর সাথে।" অভির দিকে একটু ভয় নিয়ে, কিন্তু মনে প্রবল সাহস নিয়ে তাকিয়ে বলে, "অভি, গাড়ি চালাও।"

বুক দুরদুর করে ওঠে অভির, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। দাঁতে দাঁত পিষে, পরীর দিকে তাকিয়ে মনের শেষ শক্তিটুকু সঞ্চয় করে চালকের সিটে বসে পরে অভি।

রিতিকা আর অরুনা ভয়ে কুঁকড়ে গেছে। রিতিকা বলল, "আমরা গাড়ি থেকে নেমে গেলে ভাল হবে, অন্তত কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়ে চালাতে পারবে অভি। আমরা পায়ে হেঁটে ঝরনা পার করে নেই, ও সাবধানে গাড়ি চালিয়ে আসুক।"

পেছনে ইনোভার থেকেও সবাই নেমে গেছে। আমজাদ অভির কাছে এসে একবার জিজ্ঞেস করে যে গাড়ি চালাতে পারবে কিনা। মাথা নাড়ায় অভি, গাড়ি চালাবে। বল্বিন্দার আর অভি ছাড়া দুই গাড়ি থেকে সবাই নেমে পায়ে হেঁটে ঝরনা পার করে দাঁড়ায়।

অভির বুকের মাঝে দামামা বাজতে শুরু করে, চোখ বন্ধ করে বুক ভরে এক শ্বাস নিয়ে গাড়ি চালু করে দেয়। গাড়ি প্রথম গিয়ারে নিয়ে, অতি সন্তর্পণে ঝরনার ওপরে নামিয়ে দেয় অভি, কপালের ঘাম নাক বেয়ে নেমে আসে। অবশেষে গাড়ি ঝরনা পার হয়ে যায় আর সবার সবাই দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বাঁচে।

পরী দৌড়ে এসে গাড়িতে উঠে অভিকে জড়িয়ে প্রাণপণে ধরে বলে, "আমার সাহসী ছোট্ট রাজকুমার।"

তারপর গাড়ি নিচে নামতে শুরু করে।

অরুনা অভিকে বলে, "অনেক ঘোরা হয়েছে, আমি কোনদিন এখানে আসব না। এটা ঘোরার জায়গা নাকি? কি সাঙ্ঘাতিক আর ভয়ঙ্কর রাস্তা ঘাটরে বাবা। জায়গায় জায়গায় আবার রাস্তার ওপর দিয়েই ঝরনা বয়ে চলেছে।"

রিতিকা সুপ্রতিমদাকে জড়িয়ে ধরে বলে, "হানি, আমরা হানিমুন করতে এখানে আসব।"

পরী হেসে ওকে জিজ্ঞেস করে, "এখন কি হানিমুন করছ না?"

সবাই পরীর কথা শুনে হেসে ফেলে, রিতিকা লজ্জায় লাল হয়ে যায়।

কিছুদুর চলার পরে ওরা ঘুই যাবার রাস্তা দেখতে পায়। রাস্তা অতি সঙ্কীর্ণ, একটা গাড়ি যেতে পারে, একপাসে উঁচু খাড়া পাহাড়, অন্য পাশে একটা সরু নামহীন পাহাড়ি নদী, বড় বড় পাথরের ওপর দিয়ে নেচে নেচে এগিয়ে চলেছে মহনার পানে। দুপুর প্রায় একটা নাগাদ ওরা ঘুই পৌঁছে যায়। খুব ছোটো একটি গ্রাম, চারদিকে উঁচু খাড়া পাহারে ঘেরা।

ওদের গাড়ি ঢুকতে দেখে কোথা থেকে একটা ছোটো ছেলে দৌড়ে আসে। অভিদের জিজ্ঞেস করে যে ওরা মামি দেখতে এসেছে কিনা। ছেলেটার কথা শুনে সবাই অবাক, এই রকম এক জন বিরল জায়গায় মামি? সুপ্রতিমদা গাড়ি থেকে নেমে ছেলেটাকে মামির কথা জিজ্ঞেস করাতে জানা যায় যে গ্রামের শেষ প্রান্তে একটা ছোটো মন্দির আছে। সেখানে এক বৌদ্ধ মুনির মমি রাখা আছে। সেই মমি নাকি ছোঁয় হাজার বছরের পুরান আর প্রাকৃতিক উপায়ে সংরক্ষিত। ওদিকে ইনোভা থেকে দীপঙ্কর নেমে এসে সুপ্রতিমদা কে জিজ্ঞেস করে জায়গার ব্যাপারে। সুপ্রতিমদা ওকে মমির ব্যাপারে জানায়। সবাই সেই মমির কথা শুনে টাকে দেখতে উৎসুক হয়ে ওঠে।

গ্রামের শেষ প্রান্তে সেই বৌদ্ধ মুনির মন্দিরে হলুদ আর সাদা সিল্কের কাপরে ঢাকা কাঁচের বাক্সে রাখা মমি। সেই মমি দেখে সবাই বিস্ময়ান্বিত হয়ে যায়। সবাই কিছুক্ষণ ওখানে দাঁড়িয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আনন্দ নেয়। অভির শরীরে যেন আর শক্তি নেই তাই বল্বিন্দারকে অনুরধ করে গাড়ি চালানর জন্য।

ফিরে যাবার কথা শুনে অরুনা ছাড়া সব মেয়েরা চেঁচিয়ে ওঠে, "এখান থেকে আমরা কোথাও যাব না, আজ রাতে এখানে থাকব।"

দীপঙ্কর আর সুপ্রতিমদা মেয়েদের বুঝাতে চেষ্টা করে যে ঘুই খুবই ছোটো জায়গা, এখানে হোটেল বা থাকার কোন জায়গা নেই, এমনকি এখানে খাবার জায়গাও নেই, সেই মত অবস্থায় এখানে থাকা যেতে পারেনা।

অভিকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পরী বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে, "তুমি কি চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকবে?" বাকিদের দিকে দেখে বলে, "আমরা আজ রাতে এখানে থাকব।"

অভি ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারে যে এখানে থাকার বাঁ খাওয়ার কোন ব্যাবস্থা নেই। অভি হতাশা নিয়ে সবার দিকে তাকায়।

কল্যাণী অভিকে কিছু বলতে না পেরে দিপঙ্করের ওপরে চেঁচিয়ে ওঠে, "টেন্ট কেন এনেছ, শুধু দেখানর জন্য?"

দীপঙ্কর অসহায়ের মতন অভির দিকে তাকায়, তাঁবুর ব্যাপার ওর পরিকল্পনায় ছিল না।

অরুনা অভির কাছে এসে মৃদু সুরে বলে, "প্লিস অভি, দেখ সব মেয়েরা থাকতে চাইছে, ওদের কথা ভেবে থেকে যা।"

অরুনার মিষ্টি মুখের কাতর আহবান অভি প্রত্যাখান করতে পারলনা, শেষ পর্যন্ত সবাইকে জানিয়ে দিল যে রাতে ওরা টেন্টে থাকবে। পরী সেই ছোটো ছেলেটাকে দুশো টাকা দিয়ে তাবু খাটানোর জায়গা আর কিছু কাঠের ব্যাবস্থা করতে অনুরধ করে।

সেই ছোটো নদী পার করে একটা সমতল ভুমিতে তাঁবুর জায়গা ঠিক করা হয়। ছেলেরা কোনোরকমে তাবু খাটায়, সারাদিন ওরা ঘুই ঘুরে বেড়ায়। মেয়েরা নদীর সেই হীম শিতল জলে অনেকক্ষণ ধরে মজা করে। রাতের বেলায় তাঁবুর সামনে আগুন জ্বালিয়ে খোলা আকাশের নিচে সবাই বসে গল্প করে। এই রকম ভাবে রাত কাটানোর সবার কাছে এক নতুন অভিজ্ঞতা। অভির জীবনের সব থেকে স্মরণীয় দিন, একদিকে পরীর আনন্দ আর অন্যদিকে ওর দেবী, অরুনার মুখে হাসি, ওর কাছে যেন পৃথিবীর সব খুশি একত্রিত হয়ে গেছে।

আগুনের চারদিকে সবাই মাটিতে বসে। পরীর কোলে হেলান দিয়ে অভি ভদকার গ্লাসে চুমুক দিতে থাকে। ওদের ঠিক সামনে অরুনা বসে। বাকি তিন জোড়া বেশ আনন্দ করছে।

এমন সময়ে রিতিকা বলে, "একটু গান করলে বেশ ভাল হয়, কি বল সবাই?"

ওর কথা শুনে অভি বলে, "হ্যাঁ হ্যাঁ, আমার প্রেমিকা দারুন গান গায়, ওই সব থেকে আগে গান গাইবে।"

পরী মাথা নাড়িয়ে বলে ওঠে, "না না, আমি গান গাইতে যাবো না, গ্রামের লোকেরা আমার গান শুনে আমাদের মারতে আসবে।"

কল্যাণী পরীকে বলে, "বেশি দাম দেখাস না, আমি জানি তুই খুব সুন্দর গান গাস।"

অনেক অনুরধ করার পরে পরী অভির দিকে তাকিয়ে গান ধরে,

"এই জীবন ছিল নদীর মতন, গতি হারা দিশা হারা।
এই জীবন ছিল নদীর মতন, গতি হারা দিশা হারা।
ওগো তোমার আকাশ দুটি চোখে, আমি হয়ে গেছি তারা,
ও ও ও আমি হয়ে গেছি তারা...
ওগো তোমার আকাশ দুটি চোখে, আমি হয়ে গেছি তারা,
আগে ছিল শুধু পরিচয়, পরে হল মন বিনিময়,
শুভ লগ্নে হয়ে গেল শুভ পরিণয়
শুভ লগ্নে হয়ে গেল শুভ পরিণয়
আজ যখনি ডাকি জানি তুমি দেবে সারা,
আজ যখনি ডাকি জানি তুমি দেবে সারা।
এই জীবন ছিল নদীর মতন, গতি হারা দিশা হারা।........."

গানের শেষে অভি পরীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে গভীর এক চুম্বন এঁকে দেয়। সবাই গান শুনে আপ্লুত হয়ে যায়।

রিতিকা সুপ্রতিমদার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "আমি না শুধু জীবন, নদী, আকাশ, তারা এই শব্ধ গুলো বুঝতে পেরেছি, বাকি গানের কি মানে? যাই গেয়ে থাক না কেন, বড় মিঠে এই গান।"

সুপ্রতিমদা ওকে গানের মানে বুঝিয়ে দিতে, রিতিকা পরীর দিকে দেখে কৃতজ্ঞতায় মাথা নোয়ায়।

পরীর গানের শেষে সবাই অরুনাকে অনুরধ করে গান গাইতে। লাজুক অরুনা মৃদু চেঁচিয়ে ওঠে, "না না না, আমি গান টান জানি না।" সবাই ওর স্বাস্থের কথা জানে তাই অরুনাকে কেউ বিশেষ চাপ দিল না। সুপ্রতিমদা রিতিকাকে গান গাইতে অনুরধ করে।

অরুনা এমন সময়ে অভির দিকে তাকিয়ে বলে, "আমি গান গাইব।" অভি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে লক্ষ্য করে যে ওর চোখ দুটি চিকচিক করছে। অভি ঠিক বুঝতে পারেনা কি হল, সারাদিন ত ঠিক ছিল অরুনা।

অরুনা গেয়ে ওঠে,

"মেরা চন্দা হ্যায় তু, মেরা সুরজ হ্যায় তু,
ও মেরি আখো কা তারা হ্যায় তু,
জিতি হু ম্যায় ব্যাস তুঝে দেখ কর,
ইস টুটে দিল কা সাহারা হ্যায় তু,
মেরা চন্দা হ্যায় তু, মেরা সুরজ হ্যায় তু..."

গান শুনে অরুনার চোখের চিকচিক দেখে, অভির বুক কেঁপে ওঠে আবেগে, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনা অভি, গাল বেয়ে একফোঁটা জল গড়িয়ে পরে। পরী অভিকে জড়িয়ে ধরে আদর করে চোখের জল মুছিয়ে দেয়।

পরী গালে আলতো করে ঠোঁট চেপে বলে, "ধুর বোকা, তোমরা দুজনো আবেগে যে এত ভেসে যাবে জানতাম না ত।"

রিতিকার বুঝতে দের হয় না যে আবেগের বাতাস আবহাওয়া কে ভারী করে তুলেছে। মনের মধ্যে আনন্দের জোয়ার এনে গেয়ে উঁচু সুরে ওঠে,

"ছোরো সনম কাহে কা গম, হাসতে রহো, খিলতে রহো,
ছোরো সনম কাহে কা গম, হাসতে রহো, খিলতে রহো,
মিট জায়েগা সারা গিলা, হামসে গলে মিলতে রহো,
ছোরো সনম কাহে কা গম, হাসতে রহো, খিলতে রহো, "

অভি ওর গান শুনে ওর দিকে হেসে বলে, "ডারলিং গলে মিলতে রহো ত বলে দিলে, আমাকে একবার জড়িয়ে ধরবে না।"

রিতিকা ওর দিকে তাকিয়ে হেসে উত্তর দেয়, "শয়তান, তোমাকে কেন জড়িয়ে ধরতে যাব আমি?"

হাঁটুর ওপরে ভর দিয়ে অরুনার কাছে গিয়ে অরুনাকে জড়িয়ে ধরে ওর চোখের জল মুছিয়ে দেয়।

অনেক রাত পর্যন্ত সবাই আনন্দে আর গল্প গুজব করে। রাতে ম্যাগি আর আলু সেদ্ধ খাওয়া হয়। রাতের খাবার পরে, সবাই তাঁবুর মধ্যে ঢুকে পরে নিজের নিজের স্লিপিং ব্যাগের মধ্যে। অভি আর সুপ্রতিমদা খোলা আকাশের নিচে, নিভু নিভু আগুনের সামনে ভদকা নিয়ে বসে পরে।

পরী ওদের দিকে বিরক্তি ভরে চেঁচিয়ে ওঠে, "তোমার দুটি মাতাল কি সবসময়ে মদে ডুবে থাকবে?"

অভি পরীর দিকে তাকিয়ে মিনতি করে, "বেবি, এই বোতলটা শেষ করেই আসছি।"

অভির কথা শুনে রিতিকা চেঁচিয়ে ওঠে, "তোমরা তোমাদের ওইটা নিজেদের পেছনে ঢুকিয়ে নিও, আমাদের কাছে আর আসতে হবে না।"

রিতিকার মুখে গালাগালি শুনে সবাই হেসে ফেলে। শেষ পর্যন্ত ভদকা শেষ হয় না, অভি একটান মেরে বোতল ফেলে দেয় নদীর জলে।

পরের দিন সকালে উঠতে সবার দেরি হয়ে যায়। ঘুম থেকে উঠে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে বেড়িয়ে পরে পরবর্তী স্থানের উদ্দেশ্যে, কাজা। মাঝ পথে ওরা তাবো নামের এক জায়গায় থেমে দুপুরের খাওয়া সেরে নেয়। তাবোতে খুব সুন্দর এক বৌদ্ধদের মঠ আছে যা প্রায় হাজার বছরের পুরানো। কাজা পৌছাতে প্রায় বিকেল হয়ে যায়। হোটেল পেতে ওদের বিশেষ অসুবিধে হয় না। কাজায় যে হোটেলে ওরা ওঠে সেটা বেশ ছোটো কিন্তু খুব সুন্দর, মাঝ খানে একটা ছোটো বাগান আছে।

রাতের খাওয়ার পরে অভি পরীকে জিজ্ঞেস করে যে পরী ওর সাথে রাত কাটাবে কিনা। উত্তরে পরী একটু বিরক্তি প্রকাশ করে বলে, "এত উতলা হচ্ছ কেন বলতো? আমি ত তোমার কাছে সারা জীবন থাকব। ওর মানসিক অবস্থার কথা একটু ভেবে এই কটা দিন সবুর করে যাও।"

অগত্যা অভির চোখের সামনে অরুনার শীতল মুখবয়াব ভেসে ওঠে, কিছু বলতে পারেনা পরীকে। ম্লান হেসে মাথা নাড়িয়ে ঘরে ঢুকে পরে, সিগারেট আর বিয়ারের ক্যান নিয়ে।

এই ভয়ঙ্কর সুন্দর হীম শীতল মরুভুমির মাঝে, কাজা একটি মরুদ্যানের মতন, বড় শহর। এখানে বেশ কিছু দোকান আর হোটেল আছে। আসে পাশে দেখার অনেক ছোটো ছোটো জায়গা আছে। স্পিতি নদীর তীরে কাজা শহর, স্পিতি নদী এখানে অনেক চওড়া, কিন্তু নদিতে বিশেষ জল নেই, ছোটো ছোটো জলধারা বয়ে চলেছে ফাঁকা নদীর মাঝখান থেকে।

পরদিন সকালে উঠে অভিরা কাজা ঘুরতে বের হয়। শহরের বাইরে একটি বৌদ্ধদের মঠ আছে, সেখানে যায় ওরা। সেখান থেকে ওরা যায় কি নামের এক মঠে, বেশ উঁচু উই ঢিপির মতন পাহাড়ের ওপরে অবস্থিত কি মঠ।

কি মঠে যাওয়ার পথে একটা বৃদ্ধাশ্রম দেখিয়ে পরী অভিকে বলে, "আমরা যখন বুড়ো বুড়ি হয়ে যাব, তখন আমাদের সব কিছু বিক্রি বাটা করে, যত দিন না ভগবান আমাদের আলাদা করে ততদিন এখানে থাকব।"

অভি আদর করে গালে গাল ঘষে উত্তর দেয়, "উম্ম, রানির যা ইচ্ছে তাই হবে।"

রিতিকা সামনের সিটে বসে ওদের কথা শুনে ফেলে। পিছন ফিরে তাকিয়ে পরীকে বলে, "তোমরা দুজনে একদম এক প্রান এক আত্মা। সুপ্রতিম যদি আমাকে একটু ওইরকম করে ভালবাসত।"

বলে, সুপ্রতিমদার গালে আদর করে একটা ছোটো চাঁটি মারে। সুপ্রতিমদা ওর হাতে চুমু খেয়ে নেয়।

কি মঠের পরে, ওরা আরও ওপরে চরতে শুরু করে। এই রাস্তা নাকি, ভারতের সব থেকে উঁচু গ্রাম, কিব্বের পর্যন্ত যায়। কিব্বের সমুদ্রতল থেকে প্রায় চোদ্দ হাজার ফিট উচ্চতায়, একটি ছোটো গ্রাম। সেখানে একটি অতি ছোটো মঠ আছে আর সেই মঠে খুব অল্প সংখ্যক সাধু থাকেন। মঠে ঢুকে দেখে যে একজন বৌদ্ধ সাধু পুজো করছেন আর সেই বৌদ্ধ মন্ত্র সবার মনের মধ্যে এক অনাবিল শান্তির ভাব এনে দেয়।

কিব্বেরে একটি ছোটো হোটেলে অভিরা দুপুরের খাওয়া সেরে নেয়, সারাদিন কিব্বেরে কাটিয়ে বিকেলের দিকে কাজা ফিরে আসে। বিকেলে হোটেলে ফিরে চা খাওয়ার সময়ে অরুনা পরীকে বলে যে ও রাতে একা শুতে পারবে।

অরুনা, "আমার সত্যি খুব খারাপ লাগছে তোমাদের মাঝখানে এসে। আমি ঠিক আছি শুচিদি, আজ রাত থেকে আমি একা শুতে পারব।"

অভি অরুনার কথা শুনে পরীর দিকে ভুরু নাচিয়ে বলে, "বড়ে দিনো কে বাদ, বে বতনোকো ইয়াদ, পরী আয়ি হ্যায় আয়ি হ্যায়, পরী আয়ি হ্যায়।"
Like Reply
#52
স্পিতির তীরে জুঁই ফুল


রাতের খাবার টেবিলে পরী অভির কানে কানে বলে, "আজ রাতে যদি ড্রিঙ্ক করেছ তাহলে কিন্তু আমার কাছে শুতে দেব না বলে দিচ্ছি।"

অভি কাতর মিনতি করে, "প্লিস হানি, একটা ছোটো করে, তারপরে আমি তোমার আলিঙ্গনে ধরা দেব।"

পরী বিরক্ত হয়ে বলে, "কে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, আমি না ভদকা?"

অভি, "অবশ্যই তুমি, বেবি।"

পরী, "তাহলে, খাওয়ার পরে সোজা ঘরে চলে আসবে, না সিগারেট না ভদকা।"

নাক কুঁচকে কাতর মিনতি জানায় অভি। পরী রেগে গিয়ে ওর দিকে লাল চোখ করে বলে, "যা ইচ্ছে করো গিয়ে, আমি চললাম শুতে।"

তাড়াতাড়ি খাওয়া সেরে, রিতিকা আর অরুনাকে নিয়ে ঘরের দিকে চলে যায়। যাওয়ার আগে রিতিকা সুপ্রতিমদার দিকে কটমট করে তাকিয়ে জানিয়ে যায় যে পরীর মতন ওর অভিপ্রায় একই। কল্যাণীরা খাওয়া শেষ করে ওদের দিকে তাকিয়ে হেসে শুতে চলে যায়।

সুপ্রতিমদা অভির দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচিয়ে বলে, "ভায়া, বেড়াল রেগে গেলে কিন্তু মাটিতে আঁচর কাটে।"

অভি, "ত কি হয়েছে, বেড়াল মারতে হলে গায়ে শক্তি ত চাই নাকি।"

সুপ্রতিমদা, "তোর বেড়াল কিন্তু আমার বেড়ালের চেয়ে বেশি রেগে আছে রে। রাতে তোর হালত খারাপ করে দেবে।"

অভি, "আমার ম্যাও আমি সামলে নেব শালা, তুই তোর ম্যাও কি করে সামলাবি তাই ভাব।"

অভি নিজেকে বলে যে, প্রেয়সীকে উত্যক্ত করে লাভ নেই। ঘরের মধ্যে মৃদু নীলচে আলো ঘরে একটা অপরূপ রোম্যান্টিক শোভার আবহাওয়া তৈরি করেছে। পরী কম্বল গায়ে বিছানায় শুয়ে পড়েছে। দরজার দিকে মুখ ফিরে অভির জন্য অপেক্ষা করে একপাসে হয়ে শুয়ে আছে পরী, ঠোঁটে লেগে আছে এক অধভুত মিষ্টি হাসি। ডান হাত ভাঁজ করে মাথার নিচে রাখা, উন্মুক্ত মসৃণ ফর্সা হাত। মাথার চুল মাথার পেছনে হাত খোঁপায় বাঁধা বালিশের ওপরে এলিয়ে পরে আছে। ঘরের মৃদু নীলচে আলো ওর ত্বকের ওপর যেন পিছলে যাচ্ছে। বাম হাত মুঠি করে কম্বলটিকে আঁকড়ে ধরে আছে উন্নত বুকের কাছে। কম্বলে ঢাকা দেহের অবয়াব দেখে মনে হয় যেন সাদা সমুদ্রের ওপরে এক মত্ত ঢেউ। উঁচু কাঁধ, সরু হয়ে নেমে এসেছে পাতলা কোমরে তারপরে ফুলে উঠেছে সুগোল নিতম্বদেশ। বাম পা ডান পায়ের সামনে রাখা, যার জন্য দেহের অবয়াব দেখে মনে হয় যেন এক জলপরী শুয়ে অভির দিকে প্রেমাগ্নির চাহনি নিয়ে তাকিয়ে।

নাকের ডগা লাল, গাল গোলাপি। মুখে প্রসাধনির লেশ মাত্র নেই, কানে দুল নেই, হাতে চুরি নেই। কাজল কালো, বাঁকা ভুরু জোড়া যেন ওকে উত্যক্ত করে জিজ্ঞেস করছে, কি ওই রকম ভাবে দেখছ? কোমল লাল ঠোঁট জোড়া অল্প খোলা, তার মাঝে ঝিলিক মারে মুক্ত সাজান দাঁত। চেহারায় এক সুন্দর আলক ছটা।

অভির নাকে ভেসে আসে পরীর মাদকতাময় জুঁই ফুলের সুবাস। সেই সুবাস সারা ঘরের বাতাসে ছড়িয়ে আছে আর অভিকে মাতাল করে তুলেছে। অভি পরীর চোখের ভাষা বুঝতে চেষ্টা করে, "প্রেয়সী কি বাঘিনীর মতন ক্ষিপ্ত, না মাছরাঙার মতন অপেক্ষা করছে মাছ ধরার জন্য?"

অভি বিছানার পায়ের দিকে বসে, ওর দিকে তাকিয়ে পায়ের ওপরে হাত রাখে। কম্বলের ওপর দিয়ে, বাম পায়ের গুলির ওপরে আদর করে দেয়।

পরী গম্ভির সুরে ওকে বলে, "তাড়াতাড়ি হাত পা ধুয়ে শুতে এস, আমি খুব ক্লান্ত, আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।"

গম্ভির গলার আওয়াজ শুনে অভি একটু ঘাবড়ে যায়। পরী বালিশের ওপরে মাথা গুঁজে চোখ বন্ধ করে নেয়। অভি ভাবে, "একি হল? প্রেয়সী কেন ওর সাথে ভালো করে কথা বলছে না?"

সামনে ঝুঁকে পরে জুতো খুলতে যায় অভি, পরী পেছন থেকে ওর শিরদাঁড়ার নিচে পায়ের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে মৃদু খোঁচা মারে। নখের আঁচরের অনুভুতি অভির শরীরে বিদ্যুতের শিহরণ ছড়িয়ে দেয়। অভি মাথা ঘুরিয়ে পরীর দিকে তাকায়, পরী সঙ্গে সঙ্গে কম্বলের মধ্যে পা টেনে নিয়ে চোখ বন্ধ করে পরে থাকে। অভি কম্বলের নিচের দিক পায়ের ওপর থেকে সরিয়ে দিয়ে পায়ের পাতার তলায় তর্জনী দিয়ে আঁচর কেটে দেয়। পরী মোচর দিয়ে উঠে, খিলখিল করে হেসে ফেলে।

অভি ওর হাসি শুনে বিছানার ওপরে লাফ দিয়ে উঠে পরীকে বলে, "আমার সাথে দুষ্টুমি করা হচ্ছে, বেবি?"

পরী ওর বুকের ওপরে পা রেখে ঠেলে দিয়ে বলে, "তাড়াতাড়ি বাথরুমে গিয়ে পরিষ্কার হয়ে এস।"

অভি, "তারপরে?"

পরী, "তারপরে আর কি, তারপরে ঘুমিয়ে পড়ব।"

অভি হাফ প্যান্ট হাতে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে পরে। প্রেয়সীর হাসি আর গালের লালিমা ওর ভেতরের জমে থাকা প্রেমের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। প্রেয়সীকে বিছানায় বেশিক্ষণ অপেক্ষায় রাখা উচিত নয়। চোখের উষ্ণ লালিমার ছটায় অভির বুঝতে দেরি হয়নি যে চাতকের ন্যায় প্রেম বারির জন্য অপেক্ষা করছে প্রেয়সী। যেন এক জলপরী সমুদ্র থেকে উঠে এসে ওর বিছানায় শুয়ে প্রেম বারির জন্য কাতরাচ্ছে। কোনোরকমে স্নান সেরে, দাড়ি কামিয়ে বাথরুম থেকে বেড়িয়ে আসে অভি। ঘরে ঢুকে অবাক হয়ে যায়, বিছানায় পরী নেই।

দরজা অল্প খোলা, কম্বল এলোমেলো হয়ে পরে আছে বিছানার ওপরে। অভি ঠিক বুঝে উঠতে পারেনা, হল টা কি? এত রাতে পরী ওকে একা ছেড়ে আবার কোথায় চলে গেল। ঘরের বাল্ব জ্বালিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যায় বাইরে দেখতে যে গেল কোথায় পরী।

যেই মাত্র দরজা খুলেছে, তখনি পরী অভিকে পেছন থেকে এসে কোমরের দুপাস দিয়ে হাত বাড়িয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। নগ্ন পিঠের ওপরে চেপে ধরে নরম বুক। বুকের ওপরে রাখে হাতের তালু, পিঠের শিরদাঁড়ার ওপরে চেপে ধরে গাল। উষ্ণ দেহের স্পর্শে মনে হয় যেন পরীর মাখনের মতন পেলব শরীর ওর পিঠের ওপরে গলে মাখামাখি হয়ে যাচ্ছে। অভি দরজা বন্ধ করে সামনে ঝুঁকে, পরীকে পিঠের ওপরে তুলে নেয়। পরী ওর পিঠের ওপরে ভার দিয়ে মাতি থেকে পা ভাঁজ করে তুলে নেয়।

প্রেমঘন সুরে কানে কানে বলে, "খুঁজে পেলে না ত আমাকে।"

অভি, "ছিলে কোথায়?"

পরী ওর বাম বুকের ওপরে হাত চেপে বলে, "আমি এখানে ছিলাম, তুমি দেখতে পাওনি।"

বিছানার দিকে হেঁটে যায় অভি, পরী ওর পিঠের ওপরে ঠোঁট চেপে ধরে চুমু খেতে শুরু করে। তপ্ত ঠোঁটের পরশে অভির দেহে বিদ্যুতের সঞ্চার হয়। বাঁ দিকে একটু ঝুঁকে পরে, পরীকে বিছানার ওপরে শুইয়ে দেয় অভি। পরী বিছানার পায়ের দিকে বসে, পেছন দিকে ঝুঁকে যায় কুনুইয়ের ওপরে ভর দিয়ে। তার ফলে পীনোন্নত বুক জোড়া হিমালয়ের সুউচ্চ শৃঙ্গের মতন আকাশের পানে ঠেলে ওঠে। পরীর পরনে সিল্কের স্লিপ, কাঁধ, উপরি বক্ষ, বুকের খাঁজের অধিকাংশ অনাবৃত। পরনের রাত্রিবাস অনেক ছোটো, কোনোক্রমে শুধু মাত্র জানুর মাঝ পর্যন্ত নেমে এসেছে। জানুর মসৃণ ত্বকের ওপরে ঘরের আলো পিছল খেয়ে পড়ছে। সেই দৃশ্য দেখে অভির সিংহ ভেতরে ভেতরে মাথা উঁচু করে জেগে ওঠে, তলপেটের কাছে যেন তরল আগুন দলা পাকিয়ে মোচর দেয়। পরী অনুধাবন করে অভির তপ্ত চাহনি, যেন ওর অনাবৃত জানু, বুক, কাঁধ জ্বালিয়ে দিচ্ছে। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে প্রেমঘন চাহনি নিয়ে তাকায় উদ্দাম অভির দিকে। অভি পরীর দিকে ঝুঁকে পরে ওর নরম কোমর হাতের মাঝে চেপে ধরে। কোমল নারী মাংস তপ্ত আঙ্গুলের স্পর্শে যেন গলে যায়।

অভি নিজের শরীর টেনে নিতে চায় পরীর দেহের ওপরে, কিন্তু পরী ওর ডান পা ভাঁজ করে অভির বুকের ওপরে চেপে ধরে। পরীর হাঁটু অভির চিবুক ছুঁয়ে যায় আর পায়ের পাতা অভির নাভির কাছে ছুঁয়ে যায়। অধভুত সেই স্পর্শে অভির সারা দেহে কাঁটা দিয়ে ওঠে। অভি যত চেষ্টা করে পরীর দিকে ঝুঁকতে, পরী ততই যেন ঠেলে দেয় অভিকে, দুজনে যেন প্রেমের এক খেলায় মেতে ওঠে। দুজনের চোখে ঝরে প্রেমের ঘন তরল আগুন।

পরীর রাত্রিবাস জানু ছাড়িয়ে কোমর পর্যন্ত উঠে আসে। সুগোল ফর্সা ডান নিতম্ব অনাবৃত হয়ে যায় ঠেলাঠেলির খেলায়। পরী রাতে শোয়ার সময়ে অন্তর্বাস পড়তে ভালবাসেনা, অভির মাথায় সেই চিন্তা আসতেই অভির চোখ চলে যায় পরীর জানুসন্ধির দিকে। রাত্রিবাস উঠে গেছে ঠিকই কিন্তু অতি সন্তর্পণে ঢেকে রেখেছে পরীর জানুসন্ধির নারীঅঙ্গ। প্রেমের মত্ত ক্রীড়ায় দুজনের শ্বাস বর্ধিত হয়ে ওঠে। অভি ঠেলে দেয় পরীর ডান জানু, পরীর উন্নত বুকের ওপরে।

পরী দুষ্টু হেসে জিজ্ঞেস করে, "ওই রকম ভাবে কি দেখছ, সোনা?"

অভি, "আমি আমার জলপরীকে দেখছি, যে সাগর থেকে উঠে আমার বিছানায় শুয়ে আমার প্রেমের জন্য কাতরাচ্ছে।"

পরী বড় বড় চোখ করে অভির মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, "তাহলে দেরি কেন করছ? জলপরীকে কোলে তুলে আবার সাগরের জলে ছেড়ে দাও।"

অভি, "সাগরের জলে যে অনেক ভয়ঙ্কর মাছ আছে। আমি ত আমার জলপরীকে বুকের মাঝে রাখতে চাই।"

অভির পেটের ওপরে পরীর কোমল নিতম্বের ছোঁয়া লাগে, সেই সুখের স্পর্শে অভির মনে যেন ওর আগ্নেয়গিরি এখুনি ফেটে পড়বে। অভি ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে, "এই স্লিপ টা কবে কিনেছ, আগে দেখিনি ত।"

পরী, "অনেক দিন আগে কিনেছি, সেই এপ্রিলে যখন তোমার বাড়িতে এসেছিলাম।"

অভি ওর শরীরের ওপর থেকে ভার হাল্কা করে আর সেই সঙ্গে সঙ্গে পরী পেটের ওপরে মাথা নিচু করে বিছানার ওপরে শুয়ে পরে। নরম বালিস আঁকড়ে ধরে মুখ লুকিয়ে নেয় তুলোর মধ্যে। কামনার আগুনে জ্বালায়, শ্বাসের গতি বেড়ে যায়, দ্রুত ওঠানামা করে পরীর পিঠ, যেন বুকের মাঝে এক বিশাল ঝড় বয়ে চলেছে।

সিল্কের সেই ছোটো রাত্রিবাস পরীর সুগোল নিতম্ব ঢেকে রাখতে পারেনা। নরম সুগোল দুই নিতম্ব আর নিতম্বের মাঝের গভীর সরু খাঁজ পুরপুরি অভির কামতারিত চাহনির সামনে অনাবৃত। নিম্নাঙ্গে পরনে কোন অন্তর্বাস নেই।

অভি পরীর মেলে ধরা পায়ের দুপাশে হাত রেখে সামনের দিকে ঝুঁকে পরে, বাম পায়ের গুলির ওপরে তপ্ত শ্বাস ছাড়ে। ডান হাত নিয়ে যায় পরীর অনাবৃত ডান পায়ের গুলির ওপরে আর ধিরে ধিরে আদর করতে শুর করে, পায়ের গোড়ালি থেকে হাঁটুর পেছনের ভাঁজ পর্যন্ত। আদরের ছোঁয়ায় পরীর উত্তপ্ত শরীর মোচর দিয়ে ওঠে, মৃদু শীৎকার ওঠে ওঠে পরী।

অভি মুখ নামিয়ে আনে পরীর জানুর পেছনে, রাত্রিবাস না সরিয়ে কাপড়ের ওপর দিয়ে, জিবের ডগা দিয়ে বৃত্তাকারে ভিজিয়ে দেয় পরীর নরম নিতম্ব। ভিজে ওঠা রাত্রিবাস লেপটে যায় পরীর তপ্ত নিতম্বের ত্বকের ওপরে, বারংবার কেঁপে ওঠে কোমল নিতম্ব দুটি। আলতো করে চেপে ধরে ঠোঁট পরীর নিতম্বের ওপরে।

পরী মৃদু কনে শীৎকার করে ওঠে, "ম্মম্মম্মম্মম......... অভি... সোনা..."

অভি মাথা উঠিয়ে দেখতে চেষ্টা করে পরীর মুখের দিকে, পরী মাথা গুঁজে রাখে বালিশের ওপরে। নিতম্বের ওপরে ছোটো ছোটো চুমুতে ভরিয়ে দিয়ে অভির ঠোঁট উঠে আসে, শিরদাঁড়ার শেষ প্রান্তে, যেখানে শিরদাঁড়া আর নিতম্ব মিলেছে। ঠোঁট চেপে ধরে শিরদাঁড়ার শেষ প্রান্তে, ভিজিয়ে দেয় রাত্রিবাসের কাপড় মুখের লালায়। নগ্ন বুকের নিচে চেপে ধরে কোমল নিতম্ব, পিষে দেয় পরীকে বিছানার সাথে আর বুকের নিচে। পায়ের পাতার ওপরে পরী অনুভব করে অভির তপ্ত শলাকা। কামনায় প্রজ্বলিতে দেহ মুচরে ওঠে কঠিন পরশ পেয়ে। অভির বুকের নিচে যেন প্রেয়সীর সাপের মতন শরীর বারে বারে মোচর দেয় আর অভির শলাকাকে বারেবারে উত্যক্ত করে তোলে।

পরী অভির নামে ঠোঁটে এনে মৃদু শীৎকার করে ওঠে, "অভিইইইইই... আমাকে মেরে ফেললে যে হানি..."

বিছানার ওপরে চেপে ধরা বুক, দুপাশ থেকে ফেটে বেড়িয়ে পরে, পরীর মুখ তখন বালিসে গোঁজা। রাত্রিবাস পিঠের দিকে অর্ধেকটা উন্মুক্ত, পুরো কাঁধ আর পিঠের অধিকাংশ অনাবৃত, লিপ্সা মাখানো অভির চোখের সামনে।

অভি আরও ঝুঁকে পরে পরীর পিঠের ওপরে চুমু দিতে শুরু করে। ঘাড়ের নিচ থেকে শুরু করে, শিরদাঁড়ার ওপর দিয়ে যে টুকু অনাবৃত, সেই টুকু অংশে চুমুতে ভরিয়ে দেয় অভি, আর জিবের ডগা দিয়ে বৃত্তাকারে দাগ কেটে দেয়। তপ্ত শ্বাসে পরীর সারা দেহে কাটা দিয়ে ওঠে। ভিজে গেছে পিঠ অভির তপ্ত লালায়। মাঝে মাঝে অভি পরীর পিঠের নরম মাংস দাঁতের মাঝে নিয়ে আলত করে কামড়ে দেয়, জিব পুর বের করে চেটে দেয় শিরদাঁড়া। পরীর মুখ লাল, গায়ে ঘাম। অভির জিবে লাগে নোনতা স্বাদ।

বাম কুনুইয়ের ওপরে ভর দিয়ে পরীর বাম দিকে শুয়ে পরে অভি, কুনুই ছুঁয়ে যায় পরীর বাম বক্ষের পাশে। ডান হাতে পরীর মাথার চুলের বাঁধন খুলে দেয়। মুঠি করে ধরে নেয় পরীর মাথার পেছনের চুল আর ধিরে ধিরে নখের ডগা দিয়ে আঁচরে দেয় মাথা। পরী পাগল হয়ে ওঠে অভির উষ্ণ আদরের ছোঁয়ায়।

অভি সামনে ঝুঁকে মরালী গরদানে তপ্ত শ্বাস ছাড়ে। পরীর কোমরের ওপরে অভি ওর ডান পা উঠিয়ে দেয়, হাঁটু দিয়ে চেপে ধরে নিতম্ব আর পায়ের পাতা দিয়ে বুলিয়ে দেয় জানুর পেছন দিকে। ধিরে ধিরে অভির পা, জানু থেকে ওপরে উঠে যায় আর রাত্রিবাস সরে যায় নিতম্বের ওপর থেকে। পরী ওর বাম নিতম্বের পাশে অভির তপ্ত শলাকার পরশ অনুভব করে, মনে হয় যেন কঠিন কোন গুঁড়ি ওর কোমলতাকে চেপে ধরে পেষণ করছে।

ঘাড়ের পেছনে ঠোঁট চেপে ধরে অভি। চোখ দুটি শক্ত করে বন্ধ করে মাথা ওঠায় পরী, চিবুক রাখে বালিশের ওপরে আর বিছানার মাথার দিকে মুখ। ঠোঁট জোড়া অল্প খোলা, আর সেই তপ্ত ঠোঁট জোড়ার ভেতর থেকে তপ্ত শ্বাস বয়ে চলে অবিরাম। ঘাড়ের পেছনে দাঁত দিয়ে আলতো করে চেপে দেয় অভি। দাঁতের আদরের পরশে পাগল হয়ে ওঠে পরী। বুকের ওপরে শক্ত কফ্রে চেপে ধরে বালিশ, যেন নরম তুল দিয়ে ভরিয়ে দেবে কোমল উন্নত বুক জোড়া।

পরী এবারে তপ্ত শ্বাস ছেড়ে শীৎকার কর ওঠে, "আআআআআ... তুমি যে আমাকে একদম পাগল করে দিলে অভি..."

পরীর মাথার পেছনে নাক ডুবিয়ে চুলের ঘ্রান বুকে টেনে নেয়। নগ্ন বুক চেপে ধরে পরীর অনাবৃত পিঠের ওপরে। কানে কানে বলে, "বেবি, তুমি এত রসাল, যে আমি তোমার সারা শরীর চুমু খেলেও সেই রস ফুরাবে না। তোমার দেহের প্রতি রোম কুপের থেকে নির্গত রস যে কত মধুর তা বলে বুঝাতে পারবনা বেবি।"

পরী, "আমি ত একটা কুঁড়ি ছিলাম সোনা, তোমার ছোঁয়ায় আমি সিক্ত ফুটন্ত রসে ভরা হয়ে উঠেছি।"

অভি, "আলো কি বন্ধ করে দেব, বেবি?"

পরী, "আমি জানিনা, তোমার যা ইচ্ছে করে সেটা করও। আজ আমার কিছু বলার নেই অভি। আজ তুমি আগের থেকে অনেক অনেক বেশি দুষ্টুমি করছ, সোনা।"

ডান হাত দিয়ে পরীর ডান কাঁধ থেকে রাত্রিবাসের পাতলা বাঁধন নামিয়ে দেয়। কাঁধ একটু নড়িয়ে অভিকে সাহায্য করে যাতে রাত্রিবাস খুলে আসে। চিবুক দিয়ে বাম দিকের রাত্রিবাসের বাঁধন নামিয়ে দিতেই পরীর শরীর মোচর দিয়ে ওঠে। অভির মাথায় খেলে যায় যে আজ রাতে ও তাঁর প্রেয়সীর অপরূপ দেহ সুধা দুচোখ ভরে পান করার সুযোগ পাবে, অনেক দিন ধরে অভির অভিপ্রায় আজ রাতে সফল হবে। আসন্ন সুধা পানের চিন্তায় যেন বুকের মাঝে উত্তাল ঢেউ দোলা দেয়।

ফিস ফিস করে পরীকে জিজ্ঞেস করে, "সোনা আর কি সুধা লুকিয়ে আছে তোমার দেহে?"

অভির আঙ্গুল পরীর বাজুর ওপরে আলতো করে আঁচর কাটে। মৃদু কনে বলে পরী, "তুমি যা চেয়েছিলে, সেই বাগান আমি পরিষ্কার করে দিয়েছি।"

কথাটা বলতে গিয়ে পরীর কান লাল হয়ে যায় লজ্জায়, চোখ দুটি লজ্জায় আরও শক্ত করে চেপে নেয়। গাল লাল, সারা শরীর যেন আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ওই কথা বলার সময়ে। অভি চাপা চেঁচিয়ে ওঠে, "উউউউউ... বেবি..."

পরী শেষ পর্যন্ত অভির কথা রেখে জানুমাঝের কুঞ্চিত ঘাসের বাগান পরিষ্কার করে দিয়েছে। ডান হাত দিয়ে পরীর নিতম্বে আলতো করে চাঁটি মারে অভি, মৃদু হাতের চাপে, নরম মাংসে ঢেউ খেলে যায়।

কানের কাছে মুখ নামিয়ে বলে, "দুষ্টু পরী আমাকে আজ রাতে সত্যি সত্যি মেরে ফেলবে যে।"

পরী প্রেমের ঘোরে ককিয়ে বলে, "তোমার ছোঁয়ায় আমি পুরো পাগল হয়ে গেছি, আমি আর তোমাকে কি মারব, সোনা।"

অভি নিতম্বের দিকে দেখে একবার তারপরে, ধিরে ধিরে রাত্রিবাস উঠিয়ে দেয় নিতম্বের ওপর থেকে। ধিরে ধিরে ঘরের আলোয় অনাবৃত হয় কোমল সুগোল ফর্সা নিতম্ব। মসৃণ ত্বকের ওপরে যেন আলো পিছলে যায়। আঙ্গুলের নখ দিয়ে বৃত্তাকারে আঁচর কাটে নরম নিতম্বের ত্বকের ওপরে। বারে বারে কেঁপে ওঠে সুপুষ্ট নিতম্ব দুটি আর ঢেউ খেলে যায় নরম মাংসের ওপরে। পরী আর থাকতে না পেরে বালিশে ঠোঁট চেপে অভির নাম ধরে ডাকে। অভির নিখের ছোঁয়ায় নিতম্বের কাপুনি যেন আরও বেড়ে যায়, মনে হয় যেন বৃষ্টিতে ভিজে এক জোড়া নরম খরগোস ঠাণ্ডায় কাঁপছে।

অভি বিছানা থেকে নেমে পরীর পায়ের কাছে বসে পরে, রাত্রিবাস নিচের থেকে টেনে নামিয়ে দেয়। পরী শরীরকে আলতো করে মুচরে, অভিকে সাহায্য করে গায়ের থেকে কাপড় খানি খুলে ফেলতে। অভির চোখের সামনে পেটের ওপরে শুয়ে প্রেমের আগুনে থরথর কাপে প্রেয়সীর উন্মুক্ত দেহ পল্লব। পা জোড়া এঁকে ওপরের সাথে শক্ত করে চেপে ধরা, মনে হয় যেন মাঝখান থেকে একটি ঘাসের পাতাও যেতে পারবে না। প্রেমের কাপনে বানংবার দেহের ওপরে ঢেউ খেলে যায়। অভি এই প্রথম বার প্রান প্রেয়সীকে জন্মদিনের পোশাকে দেখে। এই কামার্ত দেহ পল্লব যে কোন মুনি ঋষির ধ্যান ভঙ্গ করে দিতে পারে।

অভি পরীর দুপা ধরে ধিরে ধিরে চিত করে শুইয়ে দেয়। পরী মাথার বালিস শক্ত করে ধরে থাকে, অতিব লজ্জায় দুচোখ চেপে বন্ধ করা। অভির চোখ যায় পীনোন্নত বুকের দিকে। হিমালয়ের সুউচ্চ শৃঙ্গের মতন বুক জোড়া আকাশের দিকে উঁচিয়ে, আর শৃঙ্গ ওপরে বসে থাকা তপ্ত গাড় বাদামি রঙের নুড়ি। সেই বুকের দিকে চোখ গেল অভির, বুকের মাঝের উত্তাল তরঙ্গকে শান্ত করে নেয় অভি, প্রেমের সাগরে ডুব দেওয়ার আগে আরও কিছু খেলা বাকি তাঁর প্রেয়সীর সাথে। দৃষ্টি চলে যায় ফর্সা কোমল বুকের দিকে, ব্রিন্তের চারদিক থেকে নেমে আসে অতিব হাল্কা নীলচে আর লালচে শিরা উপশিরা।

বুকের নিচ থেকে নাভি পর্যন্ত সরু হয়ে নেমে আসে মধ্যচ্ছদা, যেন কোন সরু পাহাড়ি নদী, সেই নদী যেন নাভিদেশে এসে মিশে গেছে। গোল পেটের নিচে একটু ফুলে উঠে অতিব সুন্দর বাঁক নিয়ে নেমে গেছে ফোলা তলপেট। উত্তেজনায় কাঁপছে পরীর তলপেট। পরী যেন আর থাকতে পারছে না অভির উত্তপ্ত চাহনির সামনে, বারে বারে শরীর মুচরে উঠছে।

অভির দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত হয় জানুসন্ধিখনে। পরীর জানুসন্ধি ফুলে বেঁকে হারিয়ে গেছে চেপে ধরা দুই জানুর মাঝে। অতিব যত্নে সাজান সেই নারীত্বের সুখের দোরগোড়া, রোমের লেশ মাত্র নেই।

পরনের কাপড় খুলে ফেলে অভি, কঠিন সিংহ অবশেষে ছাড়া পেয়ে লাফিয়ে ওঠে। অভি ঝুঁকে পরে পরীর জানুর ওপরে আর জিবের ডগা দিয়ে বৃত্তাকারে আদর করতে থাকে জানুর ওপরে। ধিরে ধিরে ঠোঁট ওপরে নিয়ে আসে অভি।

পরীর অর্ধ ফাঁক করা ঠোঁটের ভেতর থেকে বেড়িয়ে আসে একটা আওয়াজ, "আআআআ... পারছিনা... সোনা..."

বাম পা ভাঁজ করে নেয় পরী আর নারীসুখের গহ্বর অভির দৃষ্টির সামনে উন্মুক্ত হয়ে যায়। অভির নাকে ভেসে আসে জোরালো এক ঘ্রান, জিবের ডগা পরীর জানুর মাঝে নিয়ে আদর করে চেটে দেয়।

চোখের সামনে উন্মুক্ত পরীর সুখের স্বর্গদ্বার। এত সুন্দর করে পরিষ্কার করে রেখেছে যে, সেই দ্বার দেখে মনে হয় যে, উল্টান একটি ত্রিভুজের মাঝে অতিব সরু এক নদী।

সেই গোলাপ ফুলের পাপড়ির কোমলতা বুঝতে অভির দেরি লাগেনা। প্রেমের বারিতে সিক্ত হয়ে উঠেছে দুই পাপড়ি আর অল্প অল্প বেড়িয়ে সিক্ত করে তুলেছে বাইরেটা। পরীর সারা শরীর কেঁপে ওঠে এই ভেবে যে অভির আগুন ঝরান চাহনি ওর নারীত্বের দোরগোড়ায় কেন্দ্রীভূত আর পুড়িয়ে ওকে ছারখার করে দিচ্ছে। অল্প ঠোঁট খুলে তপ্ত শ্বাস ছাড়ে পরীর নারীত্বের ওপরে, পরীর দেহ প্রচন্ড ভাবে কেঁপে ওঠে তপ্ত শ্বাসের পরশে। কামাতুর অভির চোখের সামনে সেই মালভূমির দ্বার অল্প অল্প কাঁপতে থাকে।

অভি দু’হাত বাড়িয়ে বুকের ওপরে নিয়ে এসে, থাবা মেলে দুই বক্ষ হাতের মুঠোয় নিয়ে আলতো করে পিষে দেয়। হাতের তালুর নিচে চেপে ধরে তপ্ত শৃঙ্গের নুড়ি। পরী, বুকের ওপরে অভির উত্তপ্ত হাতের পেষণে কামপাগল হয়ে ওঠে। অভি ঝুঁকে পরে জানু মাঝে, জিব বের করে চেপে জানুমাঝের ধরে সিক্ত মালভুমি, চেটে নেয় পরীর মধু।

কামপাগল পরীর শরীরে তীব্র কামনার আগুন ঝলসে যায়। থাকতে না পেরে বালিসে মাথা দাপাতে শুরু করে পরী। পরীর দেহ ধনুকের মতন বেঁকে ওঠে, উঁচু হয়ে ওঠে বুক আর পেট, মাথা বেঁকে নিচে নেমে আসে। দু’হাত দেহের দুপাশে ছড়ান, বিছানার চাদর মুঠিতে খাচে ধরে। ধিরে ধিরে জিব দিয়ে পরীর মধু চাটতে শুরু করে অভি, মাঝে মাঝে সেই সরু ঝরনা ধারার ফাটলে জিব ঢুকিয়ে দিয়ে পাগল করে তোলে পরীকে। বারংবার কেঁপে কেঁপে উঠে তীব্র শীৎকার করে ওঠে পরী, সারা শরীরে বিন্দু বিন্দু ঘামের দানা ফুটে ওঠে, বেঁকে, মুচরে, দুমড়ে যায় পরীর কোমল নধর দেহ পল্লব। বারেবারে মাথার পেছন দিয়ে বালিসে মারে।

অভি ওর মালভূমির ঝরনা ধারা ছেড়ে, পরীর সিক্ত কমনীয় দেহ পল্লবের ওপরে উঠে আসে। পরী জানু ফাঁক করে আহবান জানায় অভির উত্তপ্ত কামাতুর দেহ খানি। মালভুমির ঝরনা ছেড়ে অভির সিক্ত জিব উঠে আসে ওপরে, ঠিক ওর নাভিদেশের কাছে গোল করে জিবের ডগা বুলিয়ে দেয়, আদরের চোটে পাগল হয়ে ওঠে পরী। জিবের ডগা দিয়ে নাভির ভেতর চেটে দেয় আর অভি দাঁত ফাঁক করে আলতো কামর বসিয়ে দেয় নাভির ওপরে থলথলে পেটে।

পরী ওর ঠোঁটের ওপরে পেট চেপে ধরে শীৎকার করে ওঠে, "সোনা, আমাকে আর পাগল করো না, আমি মরে যাব যে।"

পরীর কাতর শীৎকার উপেক্ষা করে ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরে পরীর নাভিদেশ। ক্ষণিকের জন্যেও পরী চোখ খোলেনা, অভি জানে চোখ খুলে প্রেমের খেলা খেলতে ওর আরও সময় লাগবে।

জানুমাঝে অভির তপ্ত কঠিন পুরুষ দন্ড মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে, পরীর জানুমাঝের কোমল মাংসে বারেবারে ধাক্কা মারে। পরী অনুধাবন করে যে অভির তপ্ত শলাকা ওর নারীসুখের দোরগোড়ায় প্রবেশ করার জন্য উন্মুখ হয়ে প্রতীক্ষা করছে। দুই হাঁটু ভাঁজ করে দুপাশে মেলে ধরে পরী, অভি নিজের নিচের অঙ্গ চেপে ধরে পরীর জানুমাঝে। পরীর দেহ পল্লবের দুপাশে হাত দিয়ে ভর করে সামনে ঝুঁকে জিবের ডগা দিয়ে পরীর মধ্যচ্ছদার ওপর দিয়ে বুলিয়ে দেয়, সাথে সাথে মুখের লালা ভিজিয়ে দেয় তপ্ত ত্বক। পরী ঠোঁট জোড়া ছোটো গোল আকার করে, শ্বাস নিতে থাকে, ঘাড় বেঁকে গেছে পেছনের দিকে। উমত্ত পরী, জানু দিয়ে চেপে ধরে অভির শরীর আর পা উঠিয়ে আনে অভির কোমরের উপরে। শিরদাঁড়ার ওপরে গোড়ালি দিয়ে চাপ দেয় আর অভির কঠিন শলাকার সম্পূর্ণ বহিরাঙ্গ পিষে যায় পরীর সিক্ত পাপড়ির ওপরে। পরী পা দিয়ে অভির কোমর চেপে ধরে বারেবারে আহবান জানায় ওর দেহ কে গ্রহন করতে, ওকে পাগল করে দিতে, নিয়ে যেতে সুখের স্বর্গোদ্যানে।

অভির কঠিন শলাকার মাথা কোমল সিক্ত নারীসুখের পাপড়ি মাঝে ছুঁয়ে যায়, অল্প ফাঁক হয়ে যায় পাপড়ি জোড়া। ক্ষীণ প্রবেশ করে অভি পরীর শরীরে। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে পরী। অভি সামনে ঝুঁকে পরে ডান বুকের কঠিন নুড়ি দাঁতের মাঝে নিয়ে নেয়, প্রথমে আলত করে দাঁতে চাপ দেয় অভি, কিছু পরে ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরে কোমল সুগোল বক্ষ আর চুষে নেয় মধুর নুড়ি। পরীর হাত উঠে আসে অভির মাথার ওপরে, দশ আঙ্গুলে খামচে ধরে মাথার চুল, মাথা চেপে ধরে নরম বুকের ওপরে। জানু মাঝে পরী বুঝতে পারে যে অভির শলাকা কিঞ্চিত ওর সুখের গুহার ভেতরে প্রবেশ করেছে।

অভির মাথা আরও এগিয়ে যায়, চলে আসে পরীর মুখের ওপরে। গোলাপের পাপড়ির মতন লাল ঠোঁট চেপে ধরে ঠোঁট দিয়ে, নিচের ঠোঁট ঠোঁটের মাঝে নিয়ে চুষে দেয় অভি। পরীর সারা মুখে অভির তপ্ত শ্বাস বয়ে যায়। পরী ওর নিচের ঠোঁট নিজের থথের মাঝে নিয়ে আলতো কামর বসিয়ে দেয়। জিব বের করে ঠোঁটের ওপরে বুলিয়ে দেয় অভি। পেশি বিহুল বুকের নিচে পিষে যায় কোমল তুলতুলে বক্ষ জোড়া। হাতের ওপরে হাত বুলিয়ে দুহাতের দশ আঙ্গুল মিলে যায়, দুজনেই হাত চেপে ধরে একে ওপরের, সাপের মতন পেচিয়ে যায় একে ওপরের আঙ্গুল।

শেষ পর্যন্ত পরী আর থাকতে না পেরে, কোমরে মোচর দিয়ে ঠেলে উপরে অথাবার চেষ্টা করে আর সেই সময়ে অভিও ওর ডাকে সারা দেয়। মিলেমিসে একাকার হয়ে যায় দুই দেহ। নারীসুখের দ্বার খুলে যায়, আহবান জানায় উম্মত্ত কঠিন সিংহকে, থেমে থাকেনা অভির সিংহ, ধিরে ধিরে প্রবেশ করে পরীর জানুমাঝের সুখের দ্বারের ভেতরে। মাখনের মাঝে যেন এক তপ্ত ছুরি কেতে ঢুকে পরে। সিক্ত দেয়াল চেপে ধরে শলাকার ত্বক, উষ্ণ মধু ভিজিয়ে দেয় কঠিন অঙ্গ।

পরী অভির নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে থাকে যতক্ষণ অভির সিংহ প্রবেশ করে ওর ভেতরে। গলে মিশে একাকার হয়ে যায় দুই কপোত কপোতী, ধিরে ধিরে বিচরন করে সুখের স্বর্গোদ্যানে। বারে বারে সুখের হরিত মালভুমির ওপরে ঘুরে বেড়ায় দুজনে, একে ওপর কে সাপের মতন জড়িয়ে ধরে সারা বিছানার ওপরে গড়াতে থাকে।

অভির চুরান্ত সময়ে পরীর বুকের ওপরে দাঁত বসিয়ে দেয়, পরী ওর পিঠে দশ আঙ্গুলের নখ দিয়ে আঁচর কেটে দেয়, পিঠের ত্বক আঁচরে যায়। অভির বারি মিলিত হয় পরীর সুধার সাথে। অনেক দিনের উন্মুখ অপেখার পরে অভির প্রেয়সী, প্রানের জুঁই ফুল স্বমহিমায়, ফুটে ওঠে স্পিতি নদীর তীরে।
Like Reply
#53
বীরের প্রত্যাবর্তন


কোমরের নিচে সজোর এক লাথির চোটে অভির ঘুম ভেঙ্গে যায়, ঘুম ঘুম চোখ খুলে দেখে সামনে সুপ্রতিমদা দাঁড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিচ্ছে।

সুপ্রতিমদা, "কিরে বোকা... উঠে পড়। সবাই ধাঙ্কার যাবার জন্য তৈরি আর আমাদের টিম লিডার নাক ডেকে ঘুমচ্ছে।"

অভি ঘুম চোখ রগড়ে সুপ্রতিমদাকে জিজ্ঞেস করে, "পরী কোথায়?"

সুপ্রতিমদা, "শালা, সারা রাত ধরে তুমি তোমার পেরেক গুঁজে যাবে আর ভাবছ যে সকাল বেলায় ও তোমার পাশে থাকবে? বোকা... ওঠ..."

মাথা চুলকে সুপ্রতিমদার দিকে হেসে বলে, "বোকা... তুই যেন হাতে নিয়ে নাড়াচ্ছিলি, তুই কি পেরেক গুঁজিসনি মাখনের মধ্যে?"

দুজনেই হেসে ফেলে গত রাতের কথা ভেবে। সুপ্রতিমদা বলে, "পাঁচটা মেয়েই সকালে উঠে পরে, হাঁটতে গেছে স্পিতির দিকে।"

অভির গায়ে কোন কাপড় নেই, সুপ্রতমদার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। সুপ্রতিমদা মেঝে থেকে অভির প্যান্ট তুলে ছুঁড়ে মারে অভির মুখের ওপরে। শয়তানি হেসে বলে, "উঠে পর এবারে বোকা... তাড়াতাড়ি তৈরি হয়েনে, স্রে আটটা বাজে, এতক্ষণে মনে হয় মেয়েরা এসে গেছে।"

তাড়াতাড়ি মুখ ধুয়ে স্নান সেরে, জামা কাপড় পরে ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে অভি। বাইরের ঘাসের বাগানের ওপরে টেবিল পেতে ওদের সকালের খাওয়ার ব্যাবস্থা করেছে হোটেলের ম্যানেজার। আজকে ওরা ধাঙ্কার মঠ ঘুরতে যাবে। খাবার টেবিলে পরীর দিকে তাকায় অভি, পরী ওর উল্টো দিকে রিতিকা আর অরুনার মাঝে বসে। পরনে দুধ সাদা একটা সালোয়ার কামিজ আর তাঁর ওপরে গাড় নীল রঙের কার্ডিগান। সকালে উঠে স্নান সেরে নেওয়া ওর অভ্যেস, সদ্য স্নাত পরীকে দেখতে ঠিক এক দুধ সাদা অপ্সরার মতন লাগছে। দুপাশের, সুন্দরী নারী দের এক জন যেন মহামায়া আরেক জন শকুন্তলা। পরী মেয়েদের সাথে গল্প করে আর মাঝে মাঝে অভির দিকে আর চোখের তাকিয়ে হাসে।

চেহারায় এক অধভুত সুন্দর লালিমার ছটা। ভুরু নাচিয়ে পরীর দিকে ইশারায় জিজ্ঞেস করে, "কেমন আছো, দুষ্টু সোনা?"

শয়তানি করে জিব বের করে অভি আর প্লেটে থাকা চাটনি চেটে নেয়। অভির শয়তানি হাসি আর প্লেট চাটা দেখে পরীর বুঝতে অসুবিধে হয় না যে ওকি বুঝাতে চাইছে, লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে পরীর মুখ।

অভি ইশারায় জানায়, "তোমার মধু ভারী মিষ্টি, বেবি!"

সকালের খাওয়া শেষে অভির পরীকে অনুরধ করে জিন্স পড়ার জন্য। পরী নারাজ, জিন্স পড়তে, বলে যে অতে নাকি শরীরের প্রত্যেক আঁকিবুঁকি ভালো করে বোঝা যায় তাই লজ্জা করে ওর। বুঝিয়ে উঠতে পারে না অভি যে ওই পোশাকে পরীকে খুব আকর্ষণীয় দেখাবে। ওর কথা শুনে লজ্জায় কান লাল হয়ে যায়।

রিতিকা পরীর কাছে এসে কানে কানে বলে, "তোমার ফিগার এত সুন্দর, তোমাকে জিন্স আর টপে মারাত্মক দেখতে লাগবে, সবাই দেখে পাগল হয়ে যাবে।"

পরী ফিসফিস করে অভিকে জিজ্ঞেস করে, "তোমার কি ইচ্ছে?"

ডান হাত কাঁধে রেখে পরীকে বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে অভি, দুজনে ঘরের মধ্যে ঢুকে পরে। ঘড়ে ঢুকেই অভি পরীকে পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কানের লতি চুষে নেয় ঠোঁটের মাঝে।

পরী মোচর দিয়ে ককিয়ে বলে, "উফ, ছাড়ো ছাড়ো, এখন আর শয়তানি করোনা, ধাঙ্কার যেতে হবে, দেরি হয়ে যাবে।"

অভি পরীকে বাহুপাশ থেকে মুক্ত না করেই জিজ্ঞেস করে, "সকালে আমাকে একা ছেড়ে কেন পালিয়ে গেছিলে?"

পরী চোখ বন্ধ করে মাথা পেছন দিকে হেলিয়ে দেয়, "তোমার চোখের দিকে তাকাতে আমার খুব লজ্জা করছিল, তাই আমি সকালে বেড়িয়ে পড়েছিলাম বাকিদের সাথে।"

পেটের ওপরে হাত চেপে, গালে গাল ঘষে কানে কানে বলে, "আই লাভ ইউ, পরী।"

পরী মৃদু সুরে ককিয়ে ওঠে, "ম্মম্মম্মম্মম... ছাড়ো আমাকে, না হলে কি করে জিন্স পড়ব?"

অভি পরীকে ছেড়ে দেয়, পরী আলমারি থেকে জিন্স আর মভ রঙের টপ বের করে বাথরুমে ঢুকে পরে। বাথরুমে ঢোকার আগে অভির দিকে একটু বিরক্তি, একটু দুষ্টু হাসি নিয়ে তাকিয়ে জিব বের করে ভেঙ্গিয়ে দেয়। অভি ওর দিকে তাকিয়ে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে যে ওকে জিন্সে আর চাপা টপে প্রচন্ড আকর্ষণীয় দেখাবে। অভির দিকে হাত তুলে চাঁটি মারার ইশারা করে পরী, "শয়তান কোথাকার।" দরজা বন্ধ করে দেয়।

একটা সিগারেট জ্বালিয়ে প্রেয়সীর অপেক্ষা করে। জিন্স আর টপ পরে বাথরুম থেকে বেড়িয়ে আসে পরী, পরীর সেই রুপ দেখে অভির মুখ হাঁ হয়ে যায়। সিগারেট টানা ভুলে নিস্পলক চোখে দেখতে থাকে পরীকে। কোমরের নিচে ত্বকের সাথে চেপে বসে জিন্সের মসৃণ কাপড়। কোমরের নিচের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ যেন উন্মচিত, না, জিন্সের কাপড়ের পেছনে ঢাকা বটে, কিন্তু অভির চোখে যেন সেই কাপড় ফুঁরে সব কিছু দেখতে পায়। সামনে জানুমাঝে ছোটো চেন, যেন নারীসুখের দোরগোড়ার এক অধভুত অবয়াব ধারন করেছে। অভি যেন চোখ ফেরাতে পারেনা, পরীর দেহ পল্লব থেকে। পরনের টপ, পরীর শরীরে যেন দ্বিতীয় ত্বক, দেহের অবয়াব যেন অতি পুরাতন বালির ঘড়ির মতন।

মাথার ওপরে জাপানি পুতুলের মতন করে খোঁপা বাঁধা, খপার মধ্যে দুটি ছোটো ছোটো কাঠি গোঁজা। কানে মুক্তোর দুল, ঠোঁটে গাড় বাদামি রঙ, চোখের কোলে কাজল। সবমিলিয়ে পরীকে দেখে মনে হচ্ছে যে স্পিতির তীরে আগুন লাগানোর জন্য প্রস্তুত হয়েছে আজ।

অভি ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে দুহাতে জড়িয়ে ধরে পরীকে। অভির তপ্ত চোখের চাহনি দেখে লজ্জায় লাল হয়ে গিয়ে অভির বুকে মুখ লুকিয়ে ফিসফিস করে বলে, "আমার না খুব লজ্জা করছে, সোনা। আমি বাইরে যাবো না।"

মাথার ওপরে ঠোঁট চেপে ধরে জিজ্ঞেস করে, "কেন বেবি?"

বুকের ওপরে দাঁত দিয়ে আলতো কামর কেটে পরী বলে, "তোমার চোখ দুটি যেন আমাকে পাগল করে দিচ্ছিল, যেন আমার গায়ে কোন কাপড় নেই।"

ঠিক সেইসময়ে দরজায় টোকা মেরে রিতিকা ঘরের মধ্যে ঢুকে পরে। পরী আর অভিকে দৃঢ় আবেগের আলিঙ্গনে বদ্ধ থাকতে দেখে রিতিকা বাইরে যাবার জন্য পা বাড়ায়। পরী অভির বুক আলতো করে ঠেলে দিয়ে আলিঙ্গন থেকে নিজেকে মুক্ত করে রিতিকাকে জিজ্ঞেস করে যে কি খুঁজতে এসেছে।

রিতিকা পরীকে একবার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে থ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, তারপরে দৌড়ে গিয়ে পরীকে জড়িয়ে ধরে বলে, "আমি ছেলে হলে নিশ্চয় তোমার প্রেমে পরে যেতাম।"

রিতিকা অভির দিকে চোখ টিপে বলে, "এক দিনের জন্য তোমার বউকে দেবে আমায়?"

রিতিকার দেহের গঠনও খুব সুন্দর আর কমনীয়। পরনে গাড় নীল রঙের আঁটো জিন্স আর সাদা শার্ট। অভি বেশ কিছুক্ষণ রিতিকার দিকে তাকিয়ে থাকে, বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে ভাবে চোখের সামনে এই দুই সুন্দরী আজ স্পিতির তীরে আগুন জ্বালিয়ে দেবে।

অভি পরীর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পরে বাম হাত নিজের হাতে নিয়ে ছোটো একটা চুমু খায়। তারপরে গেয়ে ওঠে,

"আমি জামিনী তুমি শশী হে ভঠিচ্ছ গগন মাঝে,
মম সরসীতে তব উজ্বল প্রভাত, বিম্বিত যেন লাজে,
আমি জামিনী তুমি শশী হে ভঠিচ্ছ গগন মাঝে,......"

পরীকে সঙ্গে নিয়ে রিতিকা ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল, পেছন পেছন অভি। অরুনাও পরীকে জিন্সে দেখে অবাক। অরুনা পরীর দিকে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে বলে, "তুমি সত্যি পরী, শুচিদি। তুমি যা পর তাই তোমাকে মানায়।"

পরী নতুন বউয়ের মতন লজ্জা পেয়ে যায় অরুনার কথা শুনে।

সুপ্রতিমদা ওর কাছে এসে মৃদু সুরে বলে, "লজ্জাবতি লতা, গালের লালিমা বিয়ের রাতের জন্য বাঁচিয়ে রাখো। এখন প্রান খুলে আনন্দ কর, ডার্লিং।"

কল্যাণী আর রানীও পরীকে জিন্সে দেখে অবাক, জীবনের প্রথম বার পরী অইরকমের পোশাক পড়েছে।

কিছুপরেই অভিরা ধাঙ্কার মঠের দিকে রওনা দেয়। গাড়ির চালক সুপ্রতিমদা, পাশে বসে রিতিকা। অরুনাকে নিয়ে পরী আর অভি পেছনে বসে।

কাজা থেকে ধাঙ্কার বেশ কিছু দুরে। ধাঙ্কার মঠ, উঁচু পাহাড়ের মাথায়। পাহাড়ের অধিকাংশ ঝুরঝুরে হয়ে ঝরে গেছে, পুরানো মঠের বেশির ভাগ অংশ খতিগ্রস্থ হয়ে গেছে। দূর থেকে সেই পাহাড় দেখলে মনে হয় যেন উঁচু এক উইয়ের ঢিবি। খুব কম বৌদ্ধ সাধু বসবাস করে পুরানো মঠে, একটি নতুন মঠ রাস্তার পাশে তৈরি করা হয়েছে। দুপুরের খাওয়া ওরা ধাঙ্কারে সেরে নেয়।

অভি আর সুপ্রতিমদা রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার কে কাজার আগের রাস্তার খবর জিজ্ঞেস করে। ম্যানেজার জানায় যে কাজা ঠেলে লোসার নামক একটি গ্রাম পর্যন্ত রাস্তা মোটামুটি ভালো, তারপরে ঠিক রাস্তা বলে কিছু নেই। আগের রাস্তা পাথর, বালি আর ঝরনায় ঢাকা, সুউচ্চ হিমালয়ের বুক চিড়ে রাস্তা, খুব ভয়ঙ্কর আর অতিব সুন্দর। কাজা থেকে মানালি, আরাইশ কিলোমিটারের মতন আর পুর রাস্তা একদিনে পার করতে হবে। কারন মাঝপথে থাকার কোন জায়গা নেই, আছে শুধু পাহাড় আর গভীর খাদ। রাস্তার মাঝে প্রচুর চড়াই উতরাই আছে আর কুঞ্জুম পাস নামক একজায়াগয় চড়াই পনেরো হাজার ফিটের ওপরে।

সবাই অভির দিকে তাকায়, এমন কি পরীও তাকায়, যেন ওই রাস্তার জন্য অভি দায়ী।

মাথার ওপরে হাত ছুঁড়ে সবার মনে উৎসাহ জাগাতে চেঁচিয়ে বলে, "আরে বাবা, চিয়ার আপ। ভগবান তোমাদের একটা জীবন দিয়েছে, আনন্দ করও, খুশিতে মন ভরিয়ে নাও গুরু। যতক্ষণ অভিমন্যু সাথে আছে, তোমাদের কোন ভিয় নেই।"

অরুনা অভির দিকে চেঁচিয়ে বলে, "হ্যাঁ, সে কথা ত শুধু শুচিদির জন্য, বাকিদের কি?"

অরুনাকে ক্ষেপানোর জন্য অভি বলে, "তোকে না হয় এখান থেকে ছুঁড়ে সমুদ্র নীলের কোলে ফেলে দেব, তাহলে ত খুশি? এবারে হাস হাস..."

ঠিক করা হল যে বিকেলে কোথাও না বেড়িয়ে সবাই হোটেলে বিশ্রাম করবে, কাল খুব ভরে রওনা দেবে কাজা থেকে। ধাঙ্কার থেকে কাজা ফিরতে ফিরতে বিকেল চারটে বেজে যায়। ফেরার পথে মেয়েরা দীপঙ্কর আর রামানুজ বাজারের কাছে নেমে গেল। অরুনা আর পরী জানাল যে ওরা বারিতে ফোন করতে চায়। অভি পরীকে বলল যে ওর ছোটমায়ের সাথে ও কথা বললেই হবে, পরী একটু বিরক্তি বোধ করে। রিতিকা আর বাকি মেয়েরা একটু কেনাকাটা করবে। ইনোভা ওদের জন্য রেখে সুপ্রতিমদা আর অভি হোটেলে ফিরে আসে।

কাজায় শেষ দিন। সূর্য ডোবার পরে, পরী অভিকে অনুরধ করে নদীতে ঘুরতে যেতে। অরুনা ওর ঘরে বসে রানী আর কল্যাণীর সাথে গল্প করছিল। পরী চাইছিল যে ওরা একটু একা একা ঘুরতে যাক, অভির ও একি অভিপ্রায়। হোটেলে থেকে বের হতে যাবে তখন রিতিকার সাথে দেখা, রিতিকা ওদের জিজ্ঞেস করাতে, পরী জানায় যে ওরা নদীর দিকে ঘুরতে যাচ্ছে আর রাতে খাওয়ার আগে ফিরবে। সেই শুনে রিতিকা সুপ্রতমদাকে ডাক দেয় আর অভিদের সঙ্গে বেড়িয়ে পরে। হোটেল থেকে বেশ দুরে নদী, সুপ্রতিমদা অতি সন্তর্পণে গাড়ি সেই পাথুরে রাস্তার ওপরে দিয়ে, নদী গর্ভে নামিয়ে দেয়।

সূর্য ডুবে গেছে, পশ্চিমের আকাশ কমলা রঙের। পায়ের তলায় কুলুকুলু বয়ে চলেছে স্পিতি নদী। কোথাও হাঁটু, কোথাও গোড়ালি পর্যন্ত জল। নদী গর্ভ ছোটো ছোটো গোল গোল পাথরে ঢাকা। নদী অনেক চওড়া হলেও জল নেই তাতে, মাঝে মাঝে অতি সরু জলধারার রেখা।

দুই রমণীর পরনে জিন্স আর টপ, যেন ওদের নধর কমনীয় দেহ পল্লবের সাথে আঠার মতন সেটে। অভি আর সুপ্রতিমদা গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে বিয়ারের ক্যান হাতে নিয়ে অল্প অল্প চুমুক দেয়। দুই কপোতের দুই প্রেয়সী জলে নেমে ঘুরে বেড়ায় আর জল নিয়ে খেলা করে। দূর থেকে অভি আর সুপ্রতিমদা দাঁড়িয়ে ওদের খেলা দেখে। মনে হয় যেন জল ছেড়ে উঠে দুই সুন্দরী মৎস্যকন্যা ওদের সামনে কেলি করছে। কিছু পরে সুপ্রতিমদা নদীর তীরের দিকে গিয়ে কিছু কাঠ আর শুকনো ঝোপ ঝার উপড়ে নিয়ে আসে।অভি জিজ্ঞেস করাতে উত্তর দেয় যে আগুন জ্বালাবে, কেননা কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া থেকে বাঁচতে হবে। আকাশের লালিমা ধিরে ধিরে কমে আসে, আস্তে আস্তে ওদের চারদিকে অন্ধকার নেমে আসে। স্পিতির গর্ভে শুধু মাত্র ওর চারজন, দুরে শহরের ছোটো ছোটো আলো দেখা যায়, মাথার ওপরে পরিষ্কার আকাশ।

সুপ্রতিমদা আগুন জ্বালায়, রিতিকা আর পরী গাড়ির বনেটের ওপরে বসে পরে। রিতিকার পাশে সুপ্রতিমদা ওর কোমর জড়িয়ে ধরে আছে আর রিতিকা ওর গলা। পরী অভির কাঁধে মাথা রেখে চুপ করে বসে, অভির হাত পরীর কোমরে। দুই জোড়া কপোত কপোতী প্রেমালিঙ্গনে আবদ্ধ। সবার দৃষ্টি দুরে পশ্চিমে উঁচু পাহাড়ের দিকে, দুরে বরফে ঢাকা পাহাড়।

রিতিকা উদাস সুরে বলে, "এখানে আসা উচিত হয়নি।"

গলা যেন একটু ধরে এসেছে ওর।

সুপ্রতিমদা ওকে জিজ্ঞেস করে, "কেন বেবি? সামনে ত খুব সুন্দর দৃশ্য।"

রিতিকা সুপ্রতিমদার গলা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ধরা গলায় বলে ওঠে, "কাল আমরা কাজা ছেড়ে চলে যাবো, আর আজ এই সুন্দর সূর্যাস্ত আমার বুকের ভেতরে কেন জানিনা উদাসিন ভাব এনে দিয়েছে, আমার খুব কান্না পাচ্ছে।"

অভি পরীর চোখের দিকে তাকায়, কি বলতে চায় প্রেয়সীর কাজল কালো আঁখি। পরী কাঁধে মাথা গুঁজে ধরা গলায় বলে, "এই কাজা যেন আমার জায়গা, এই সূর্যাস্ত আমার বুকের মাঝে এক অন্তহীন উদাসীনতা তৈরি করেছে। আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলো, আমি হোটেলে ফিরে যেতে চাই।"

"হটাত করে কি হল এই সুন্দরী দুই নারীর হৃদয়ে?" অভি ভাবে। নারী মাতৃময়ি ধরিত্রীর আরেক রুপ। নারী এই পৃথিবীকে জীবনের মলয় দিয়ে জিবন্ত করে তোলে, নারী হৃদয়ের স্নেহের পরশে এই পৃথিবী অপরূপ সুন্দর হয়ে ওঠে। ওদের প্রেয়সী সেই মাতৃময়ি ধরিত্রীর আরেক রুপ, ওদের হৃদয়ে নারী স্নেহ মায়া মমতা আছে। ওরাই এই পৃথিবীর হৃদয় ঠিক মতন বুঝতে পারে, আর সেইজন্য সেই সন্ধায় ওদের চোখে জল।

অভি সুপ্রতিমদাকে বলে, "চল রে, হোটেলে ফিরে যাই। কাল সকাল সকাল উঠে আবার মানালির দিকে যাত্রা শুরু করতে হবে, বিকেলের মধ্যে মানালি পৌছাতে হবে।"

সারা সন্ধ্যে দুই রমণী খুব চুপচাপ হয়ে যায়, বুকের মাঝে যেন কাজা ছেড়ে যাওয়ার বিরহ সুর বাজে।

পরদিন মঙ্গলবার, সকাল সকাল অভিরা বেড়িয়ে পরে কাজা থেকে। এবারে যেন এক নিরুদ্দেশের দিকে যাত্রা। সবার মুখে একই কথা, রাস্তা কি রকম হবে। হোটেলের ম্যানেজার বার বার করে সাবধান করে দিয়েছে যে যে রাস্তা দিয়ে ওরা যাচ্ছে, সেই রাস্তা অতি জনবিরল, কিছু ঈগল পাখি আর গাধা বাঁ শেয়াল ছাড়া মানুষ জনের চিনহ খুঁজে পাওয়া যাবে না। ওরা যেন কোথাও বেশি দেরি না করে, না হলে মানালি পৌছাতে রাত হয়ে গেলে মাঝ পথে তাকার কোন জায়গা পাবে না।

গাড়ির চালক অভি, পাশে যথারীতি পরী বসে। অরুনাকে মাঝখানে বসিয়ে পেছনে রিতিকা আর সুপ্রতিমদা। রিতিকা জিন্স পড়েছিল তাই পরীকেও অনুরধ করেছিল জিন্স পড়তে। পরী ধুসর রঙের জিন্স পরে, গায়ে ভারী সাদা জ্যাকেট। রিতিকা কে ওর হাল্কা নীল জিন্স আর লম্বা কালো জ্যাকেটে বেশ মানিয়ে গেছে।

অভি গাড়ি চালাতে চালাতে মাঝে মাঝে আয়নায় অরুনার দিকে তাকায়। অরুনার মন বেশ হাল্কা, অনেক বিপদ অনেক বেদনা কাটিয়ে নিজেকে ঠিক করে নিয়েছে। ওর মুখে সেই হাসি পুরানো হাসি দেখে স্বস্তির শ্বাস ফেলে অভি। তবে সেই পুরান চঞ্চল অরুনা যেন এখন কোথাও লুকিয়ে আছে, সেই অরুনা যে কিনা অভিকে মারত, বোকত সেই অরুনাকে ফিরে পেতে এখন অনেক সময় লাগবে।

গাড়িতে সবাই বেশ গল্প গুজবে মেতে ওঠে। লোসার পর্যন্ত পিচের রাস্তা কিন্তু একটু এবর খাবর। লোসারের পুলিস চেক পোষ্ট পার করেই আর যেন রাস্তা নেই, রাস্তা যেন পাহাড়ের মাঝে কোথাও হারিয়ে গেছে, তার জায়গায় ওদের সামনে এক পাথরে ঢাকা পথ। গাড়ি বারে বারে দোল খায়, একবার এদিক একবার ওদিকে বেঁকে যায় গাড়ি। অভির চোয়াল শক্ত, খুব ধিরে ধিরে গাড়ি চালায়। একদিকে উঁচু পাহাড়, একদিকে নেমে গেছে গভীর খাদ। এখানে মানুষ হারিয়ে গেলে তার মৃত্যু নিশ্চিত। চারিদিকে ছড়িয়ে ভয়ঙ্কর সুন্দর হিমালয়, কোথাও পাহাড় থেকে ঝরনা গড়িয়ে পড়ছে রাস্তার ওপরে, কোথাও পাহাড় ঝুরঝুরে হয়ে রাস্তার ওপরে ধসে যাচ্ছে। পথে মানুষের চিনহ মাত্র নেই, প্রাণী বলতে কিছু বন্য গাধা আর শেয়ালের দেখা পায়। মাথার ওপরে গাড় নীল আকাশ, কিছু ঈগল উড়ে বেড়ায় ওই নীল আকাশের বুকে। কিছু দুরে বরফে ঢাকা পর্বত শৃঙ্গ। সবাই হাঁ করে জানালার বাইরে চেয়ে থাকে আর দেখে হিমালয়ের ভয়ঙ্কর সৌন্দর্য। ওদের কেউ ভাবেনি যে হিমালয়কে এত কাছ থেকে ওরা কোনদিন দেখতে পাবে।

পরী যেন এর মধ্যে এডভেঞ্চারের গন্ধ পায়, অতি উতসাহে চেঁচিয়ে ওঠে, "উফ, কি মারাত্মক জায়গা। আমি এই জায়গার সাথে প্রেমে পরে গেছি অভি। আমার প্রেমিক সত্যি এক অসাধারন মানুষ, শুধু ওই পারে এই রকম জায়গা খুঁজে বের করতে।"

অরুনার ভয়ে বুক কেঁপে ওঠে রাস্তা আর আশপাশ দেখে, ভয়ার্ত চোখে অভিকে বলে, "এটা কি একটা ঘোরার জায়গা? মানুষ ছাড়, এমন কি পশু পাখীর দেখা মেলা ভার এখানে। তোর আর শুচিদির মতন পাগলদের জন্য এই জায়গা।"

অরুনার কথা শুনে সবাই হেসে ফেলে, পরী ওকে অভয় দেয়।

রিতিকা সুপ্রতিমদাকে বলে, "উফফ... সত্যি পাগল করে দেওয়া জায়গা এটা। তোমার বন্ধু যদি এখানে না নিয়ে আসতো তাহলে হয়ত আমরা কোনদিন এখানে আসতাম না, আর কোনদিন এই ভয়ঙ্কর সুন্দর দৃশ্য দেখতেও পেতাম না। দূর থেকে হিমালয় দেখে চলে যেতাম। এর জন্য অভিকে আর পরীকে সত্যি ধ্যনাবাদ জানানো উচিত।"

সুপ্রতিমদা অভির দিকে মজা করে বলে ওঠে, "বোকা... কোথা থেকে এই রকম জায়গার খবর পেলি রে তুই? শালা আমার যদি কিছু হয়ে যায় এখানে তাহলে শালা রিতিকা মা হওয়ার আগেই বিধবা হয়ে যাবে রে।"

রিতিকা লজ্জায় সুপ্রতিমদার কাঁধে মুখ লুকিয়ে নেয়। পরী অভির কাছে এসে গলা জড়িয়ে ধরে। গালে আঙ্গুল ছোঁয়াতেই অভি ব্রেক কষে দেয়, নরম আঙ্গুলের স্পর্শ অভির মন বিচলিত করে দেয়, গাড়ি চালাতে অসুবিধে হয়। গাড়ি ব্রেক কষতেই সবাই ঝটকা দিয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে পরে।

সুপ্রতিমদা পরীকে বলে, "ডারলিং, অভির গিয়ার বদলাতে যেওনা এখানে, আমরা কিন্তু পেছনে বসে আছি।"

পরী লজ্জায় লাল হয়ে যায় কিন্তু অভির গালে ছোটো চুমু খেয়ে নেয়।

আরও কিছু দূর চলার পরে অভির গাড়ি এক সমতল ফাঁকা জায়গায় চড়ে। কুঞ্জুম পাস, সমুদ্রতল থেকে পনেরো হাজার ফুট উঁচুতে। চারপাশের দৃশ্য মন মুগ্ধ করে দেয়। চারপাশে বরফে ঢাকা উন্নত শৃঙ্গ, কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া ওদের চারপাশে বয়ে চলেছে। একদিকে ছোটো একটি উঁচু ঢিপি, তার পরেই একটা বৌদ্ধ স্তুপ। কুঞ্জুম পাস পৌছাতে ওদের দুপুর এগারটা বেজে গেল। কুঞ্জুম পাস পৌঁছে, বৌদ্ধ স্তুপের কাছে এসে গাড়ি থামায় অভি, পেছনের গাড়িও এসে থামে। সবাই গাড়ি থেকে নেমে পরে।

গাড়ি থেকে নেমেই পরী দৌড়ে এসে অভির ওপরে ঝাঁপিয়ে পরে, শক্ত করে গলা জড়িয়ে ধরে। অভি ওর কোমরের নিচে হাত দিয়ে, আঁকড়ে ধরে পরীর শরীর আর টেনে মাটি থেকে হাওয়ায় উঠিয়ে দেয়। পরী ঝাপ দেয় উপরে আর মাথার ওপরে আকাশের দিকে দু’হাত ছড়িয়ে আনন্দে চিৎকার করে ওঠে, "আই লাভ ইউ অভিমন্যু।"

পরীকে দেখে মনে যেন হিমালয়ের পাহাড়ি ঈগল পাখি তাঁর বিশাল দুই ডানা মেলে অভির কোলে দাঁড়িয়ে।

ওর আনন্দের চিৎকার শুনে সবাই অবাক হয়ে ওদের দিকে তাকায়। অরুনা মৃদু হেসে বৌদ্ধ স্তুপের দিকে চলে যায়।

পরীর বুকে থেকে আনন্দের এক শ্বাস বেড়িয়ে আসে। মুখ নিচু করে দুহাতের তালুর মাঝে অভির মুখ আঁজলা করে ধরে গভীর চাহনি নিয়ে অভির চোখের দিকে তাকায়। পরীর উষ্ণ শ্বাস অভির সারা মুখের ওপরে বয়ে চলে। ঠোঁট লেগে থাকে মিষ্টি হাসি, চোখে প্রেমের জল চিকচিক করে। আলতো করে ঠোঁট ফাঁক করে মাথা নামিয়ে অভির ঠোঁটের ওপরে চেপে ধরে ঠোঁট। অনাবিল আনন্দে ভেসে যায় দুই প্রান।

রিতিকা ওদের দেখে খিলখিল করে হেসে অভিকে বলে, "প্রেমের জোয়ারে ভেসে এখানেই কিছু শুরু করে দিওনা যেন।"

চুম্বনের ফলে পরীর শ্বাস বর্ধিত হয়ে ওঠে কিন্তু রিতিকার কথা শুনে ওরা দুজনেই সম্বিৎ ফিরে পায়, ওদের চারপাশে লোকজন আছে যে, না হলে ওরা প্রেমের জোয়ারে ভেসেই যেত। পরীকে কোল থেকে নামিয়ে অভি রিতিকার দিকে শয়তানি হাসি দেয়।

রিতিকা সুপ্রতিমদা কে বলে, "হানি, আমরা টেন্ট এনেছি তাই না? আজ রাতে আমরা এই খোলা, অন্তহীন শূন্যতার মাঝে থেকে যাই না কেন?"

পরী ওর কথা শুনে লাফিয়ে ওঠে, অভিকে নিজের অভিপ্রায় জানায় যে ও রাতে এখানে থাকতে চায়। অভি আর সুপ্রতিমদা দুজনকেই বুঝাতে চেষ্টা করে যে ওই জায়গায় রাত কাটানো অসম্ভব ব্যাপার। কোথাও কিছু নেই, চারদিকে শুধু উঁচু উঁচু বরফে ঢাকা পাহাড়। নিকটবর্তি লোকালয় লোসার প্রায় ষাট সত্তর কিলোমিটার দুরে। ওদের কথা শুনে ক্ষিপ্ত বাঘিনীর মতন রেগে ওঠে রিতিকা আর পরী।

কল্যাণী আর দীপঙ্কর জানায় যে ওরা থাকতে পারবে না। সুপ্রতিমদা রিতিকার চোখ দেখে আর আশেপাশের জায়গা দকেহে ঠিক করে উঠতে পারছে না, পরাজিত সৈনিকের মতন অভির দিকে তাকায়। অভি পরীর দিকে তাকিয়ে শেষ পর্যন্ত ঘোষণা করে যে রাত ওরা কুঞ্জুম পাসে কাটাবে।

দীপঙ্কর আর রামানুজ অভির কাছে এসে জানায় যে ওরা থাকতে পারবে না। ওদের ট্রেনের টিকিট আগে থেকে কাঁটা আছে আর ওরা বাড়ি থেকে বলে বেড়িয়েছে যে ওরা বারো দিনের মতন ঘুরতে যাবে। অভি, পরী আর অরুনার হাতে অঢেল সময়, ওদের বাড়ি ফেরার বিশেষ তাড়া নেই কেননা ওদের প্লেনের টিকিটে ফিরে যাবার দিন লেখা নেই। ওরা যে কোনদিন ফিরতে পারে।
Like Reply
#54
রিতিকা সুপ্রতিমদার দিকে তাকায়। সুপ্রতিমদা মুখ কাচুমাচু করে কিছু বলতে যাবার আগেই রিতিকা ঝাজিয়ে ওঠে, "আমি জানি তুমি অফিসে কি কাজ কর। মানালি গিয়ে বস কে একটা ফোন করে দেবে যে শরীর খারাপ ব্যাস। আমি তোমার আর কোন কথা শুনতে চাই না, আমি রাতে এখানে টেন্টে থাকব।"

পরী বেঁকে বসে আছে যে রাতে কুঞ্জুম থাকবে। সব মিলিয়ে এক ধন্দের মধ্যে পরে গেল সুপ্রতিমদা আর অভি। দীপঙ্কররা থাকতে চাইছে না আর ওদিকে ওদের প্রেয়সীরা থাকতে চায়।

শেষ পর্যন্ত পরীর মাথায় একটা সুন্দর উপায় আসে। পরী বলে, "আমাদের কাছে দুটো গাড়ি আছে আর দুটো ড্রাইভার আছে। কল্যাণী আর রানীরা, ইনোভা নিয়ে আমজাদ কে নিয়ে চলে যাক, তাহলে আমরা আরও কিছুদিন এই জায়গায় ঘুরতে পারব।"

অভি মাথা নাড়ে, পরীর মাথার বুদ্ধির তারিফ করতে হয়। রিতিকা পরীকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খেয়ে বলে, "সত্যি তুমি না থাকলে আমাদের টিম হ্যাবা টিমলিডারের যে কি হত ভগবান জানে।"

অরুনার দিকে তাকাল অভি, জানতে চায় ওর অভিপ্রায় কি। অরুনা মৃদু হেসে বলে, "আমার কি কোন উপায় আছে না থেকে?"

অভি মজা করে বলে, "একটা আছে। তোকে এখান থেকে ছুঁড়ে দিচ্ছি, তুই সোজা সমুদ্রনীলের কোলে গিয়ে বসে পড়বি।"

অরুনা হেসে উত্তর দেয়, "ঠিক আছে তাহলে, আমি তৈরি, তুই আমাকে ছুঁড়ে দে দেখি।"

শেষ পর্যন্ত ঠিক হল, কল্যাণীরা ইনোভা নিয়ে চলে যাবে আর অভিরা আরও কয়েকটা দিন এই দুর্গম স্থানে কাটিয়ে বাটি ফিরবে। আমজাদ আর বল্বিন্দারকেও পাঠিয়ে দেওয়া হল, ঠিক হল যে গাড়ি অভি আর সুপ্রতিমদা ভাগ করে চালিয়ে নেবে। কল্যাণীদের বিদায় জানিয়ে সবাই মিলে বৌদ্ধ স্তুপের কাছে মাটিতে বসে পরে।

পরপর তিনটে সাদা বৌদ্ধ স্তুপ, পাশাপাশি সাজান, দেখে মনে হয় যেন শীতল মরুভুমির মাঝে এক মরুদ্যান। কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে, ভারী জ্যাকেট টাও যেন সেই ঠাণ্ডা হাওয়াকে দমিয়ে রাখতে পারছেনা। জ্যাকেট ফুঁরে যেন হাওয়া ওদের শরীরে তীরের মতন বিঁধছে। রিতিকা সুপ্রতিমদার বুকের কাছে জড়সড় হয়ে বসে। একপাসে অরুনা আরেক পাসে পরীকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকে অভি। পৃথিবীর সব থেকে ধনী মানুষ অভিমন্যু, একপাসে ওর হৃদয় আরেক পাসে ওর চোখের মণি।

মাথার ওপরে সূর্য, এবারে এখান থেকে যাত্রা শুর করা উচিত। পরী অভিকে জিজ্ঞেস করে যে কোথায় যাচ্ছে, অ জানায় যে আগে কোন ভালো ক্যাম্পিঙের জায়গা দেখে ওরা তাবু ফেলবে। সুপ্রতিমদা গাড়ি চালাতে শুরু করে। কিছু দূর গিয়ে বাতাল নামে এক জায়গায় একটা ছোটো দোকান দেখতে পেয়ে ওরা অবাক হয়ে যায়। সেখান থেকে কিছু খাবার দাবার কেনা হয়। পরী দোকানের মালিককে জিজ্ঞেস করে যে এখানে লোক জন আসে কি আদৌ? লোকটা জানায় যে গ্রীষ্ম কালে বেশ কিছু পর্যটক এই পথে আসে আর মাঝে মাঝে একটা বাস আসে মানালি থেকে কাজা। লোকটা দুরে একটা পাহাড় দেখিয়ে ওদের বলে যে ওই পাহাড়ের অপাসে একটা ছোটো কিন্তু খুব সুন্দর, চন্দ্রতাল নামে একটা হ্রদ আছে। অভি লোকটাকে জিজ্ঞেস করে রাতের থাকার কোন ভালো জায়গার কথা। লোকটা জানায় যে কিছু দুরে নাকি একটা সরকারি রেস্ট হাউস আছে, তবে সেখানে কেউ থাকবে কিন জানেনা, সেই রেস্ট হাউসের বাগানে ওরা ক্যাম্পিং করতে পারে। সবাই খুব খুশি হয়ে যায় যে শেষ পর্যন্ত একটা নিরাপদ জায়গার খোঁজ পাওয়া গেছে।

ছত্রুর সেই সরকারি রেস্ট হাউসের বাগানে অভিরা তাবু খাটায়। ওখানকার কেয়ার টেকার ওদের সাহায্য করে কাঠ, জল আর কিছু খাবার দাবার যোগাড় করতে। টেন্টের সামনের দৃশ্য মন মুগ্ধকর, পায়ের নিচে খাদ আর সেই খাদের মাঝ দিয়ে বলে চলেছে পাহাড়ি স্রোতস্বিনী চন্দ্রা নদী। নদীর ওপর তীরে কিছু উঁচু পাহাড়, বরফে ঢাকা। কয়েকটা পাহাড়ের গা বেয়ে বরফ নেমে এসেছে নদীর তির পর্যন্ত। সমুদ্রতল থেকে ওরা অনেক উঁচুতে উঠে এসেছে, এখানে বায়ুর ঘনত্ব বেশ কম।

কনকনে ঠাণ্ডা রাতে, আগুন জ্বালিয়ে ওরা পাঁচ প্রান আগুনের চারদিকে বসে গল্প করে। চারপাশে যেন ঠাণ্ডা হাওয়া এক উন্মত্ত যুদ্ধে মেতেছে। হু হু করে হাওয়া যেন ওদের উরিয়ে নিয়ে যাবার জন্য প্রস্তুত, পরী অভির দিকে তাকায়, ওদের মনে পরে যায় চিতকুলের প্রথম রাতের কথা।

রাতের খাওয়া তাড়াতাড়ি সেরে, রিতিকা আর সুপ্রতিমদা একটা বড় টেন্টে ঢুকে পরে। অরুনা ছোটো টেন্টে নিজের স্লিপিং ব্যাগের মধ্যে ঢুকে পরে। খোলা আকাশের নিচে বসে থাকে অভি আর চেয়ে থাকে মাথার ওপরে তারাদের দিকে। পরী ওর পাসে একটা স্লিপিং ব্যাগে নিজেকে বন্দি করে ওরা মেলে ধরা পায়ের ওপরে মাথা রেখে শুয়ে থাকে। কিছু পরে অভি ওর পায়ের ওপরে চুম্বনের স্পর্শ পায়, চেয়ে দেখে পরী ওর জানুর ওপরে ঠোঁট চেপে ধরেছে। পরীর মাথার ওপরে হাত এনে অভি ওর চুল আঁচরে দেয় আর গালে আদর করতে শুরু করে। সামনের দিকে ঝুঁকে পরে পরীর মুখের ওপরে, পরী গভীর চোখে অভির দিকে তাকায়। অভি অল্প ঠোঁট খুলে ঠোঁট নামিয়ে আনে পরীর ঠোঁটের ওপরে।

চুম্বন দেবার আগেই কাঁধের ওপরে আলতো ছোঁয়ায় অভি চমকে ওঠে। পেছন ফিরে দেখে যে অরুনা ওর দিকে তাকিয়ে। পরী উঠে বসে আর অরুনার দিকে জিজ্ঞাসু চোখ নিয়ে তাকায়। অরুনা অভির বাঁ দিকে বসে পড়ে।

অরুনা অভিকে জিজ্ঞেস করে, "সত্যি কথা বলবি আমাকে? তুই আমার বাবা মা কে কি বলে এনেছিস?"

পরী আর অভি একে ওপরের মুখ চাওয়া চায়ি করে। ওরা যেন নিজেদের ভাষা হারিয়ে ফেলছে, কি উত্তর দেবে অরুনার প্রশ্নের। অরুনা কাঁপা গলায় ওদের কে বলে, "তোরা দুজনে আমার বাবা মাকে কিছু একটা বলছিস যেটা আমার কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছিস।"

পরী অরুনাকে জড়িয়ে ধরে আদর করে বলে, "আমরা তোর বাবা মা কে এই টুকু অনুরধ করেছিলাম যে যাতে অনারা আমাদের সাথে তোকে ঘুরতে যেতে দেয়, ব্যাস।"

অরুনার দু’চোখে জল চিকচিক করে আসে, বিশ্বাস করতে পারে না পরীর কথা, "না, তুমি আমাকে মিথ্যে কথা বলছ, শুচিদি।"

পরী অভির দিকে তাকায়। অভি অরুনাকে জিজ্ঞেস করে, "কি জানতে চাস তুই?"

অরুনা চেঁচিয়ে ওঠে, "আমি তোর কাছে সত্যি কথা জানতে চাই। কেন বার বার আমার মা আমকে জিজ্ঞেস করছিল যে তুই আমার ঠিক মতন খেয়াল রাখছিস কি না? কেন জিজ্ঞেস করছিল? বল, কেন?"

অভি মাথা নিচু করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে, কি উত্তর দেবে অরুনার প্রশ্নের। পরী ঠোঁট চেপে, আলতো হেসে বলে, "সত্যি হচ্ছে যে তুই এখন আমাদের সাথে আছিস আর তুই আবার হাসছিস। তোকে আমরা ফিরে পেয়েছি সেটাই সত্যি।"

অরুনা থাকতে না পেরে কেঁদে ফেলে, "কেন কেন, তোমরা আমাকে সত্যি কথা বলছ না।"

পরীর চোখ ছলছল করে ওঠে, নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে নিজেকে সামলে নেয় বুদ্ধিমতী মেয়ে। অরুনা পরীর জ্যাকেটের কলার শক্ত করে ধরে ওর জল ভরা চোখের দিকে তাকায়।

পরী বুক ভরে লম্বা শ্বাস নিয়ে বলে, "তাহলে তুই সত্যি জানতে চাস। তোর বাবা মা আর অভির বাবা মা তোদের আসল সম্পর্কের কথা জানে না, জানে যে তোরা একে ওপরের খুব কাছের মানুষ। তোর শরীর যখন খারাপ হতে শুরু করে, তুই যখন পাগলের মতন প্রায়, তখন বাড়ির সবাই মিলে অভিকে ধরে তোকে কিছু করে হোক, ফিরিয়ে আনার জন্য। তোর মা ওর হাত ধরে অনুরধ করে যে তাঁর মেয়ের মুখে হাসি ফুটিয়ে দিলে অভি যা চাইবে তাই পাবে। নিরুপায় হয়ে আর তোর মুখের দিকে চেয়ে, অভি কথা দেয়। অভি পুবালি কেও কথা দিয়েছিল যে তোর আর সমুদ্রনীলের ভালোবাসা যেন বৃথা না যায়। ওর অবস্থা, একদিকে খাদ একদিকে পাহাড়, কি করবে কিছু না ভেবেই কথা দিয়ে দিয়েছিল।"

অরুনার দুচোখ বেয়ে অবিরাম ধারায় অশ্রু বয়ে চলে। পরী বলতে থাকে, "আমি জানি না, কি করে ওর মাথায় এক উপায় আসে, তোকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার। তোর মুখে হসি ফুটে উঠেছে, সেটাই অনেক বড় পাওনা। কোলকাতা ফিরে গিয়ে ও ব্যানারজি কাকুকে তোর আর সমুদ্রনীলের সম্পর্কের কথা জানিয়ে দেবে, কেননা, ব্যানারজি কাকু ওকে কথা দিয়েছেন যে ও যা বলবে ব্যানারজি কাকু তাই মেনে নেবেন।"

অভি চশমা খুলে চোখের কোল মোছে। এমন সময়ে অভির মাথার পেছনে রিতিকা একটা ছোট্ট চাঁটি মারে। মাথা ঘুরিয়ে পেছনে দেখে যে রিতিকা আর সুপ্রতিমদা দাঁড়িয়ে। সুপ্রতিমদা আবেগপ্রবন হয়ে অভিকে বলে, "আমরা অরুনার চিৎকার শুনে বেড়িয়ে এসে এই ট্রিপের আসল উদ্দেশ্য শুনে অবাক হয়ে যাই।"

রিতিকা অভির পিঠের কাছে বসে ওর গলা জড়িয়ে ধরে পরীর দিকে তাকিয়ে বলে, "ভগবান যেন কাউকে এই রুকম হৃদয় না দেয় না হলে তোমার অভি আর তোমার থাকবে না সবার হয়ে যাবে। বড় অমুল্য এই অভি। আমার আর কিছু বলার ভাষা নেই তোমাদের।"

সব কথা শুনে অরুনা আর থাকতে না পেরে পরীর বুকে মাথা গুঁজে কেঁদে ফেলে। বারে বারে কেঁদে উঠে বলে, "তোর এটা করা ঠিক হয়নি রে, তোর এটা করা ঠিক হয়নি। এখন তোর আর শুচিদির কথা সবাই জেনে যাবে। তুই আমার জন্য এত কেন করতে গেলি, অভি।"

অভি, "ভবিষ্যতের কথা ভালো ভাবে দেখতে হবে। এখনো পর্যন্ত আমাদের কথা কেউ জানেনা আর আমাদের সেই রকম করেই থাকতে হবে পরের দুই বছর। এর মাঝে আমাকে একটা ভালো চাকরি পেতে হবে আর পরী ওর মাস্টার্স শেষ করবে। তারপরে বাবা মায়ের সামনে দাঁড়াতে পারব আর কিছু বলতে পারব। অরুনা তুই চিন্তা করিস না।"

সুপ্রতিমদা, "অভি, তুই এক কাজ কর, দিল্লী চলে আয়, এখানে অনেক আই.টি কম্পানি আছে তোর চাকরি আমি করিয়ে দেবো।"

অভি, "নারে, পরী আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবে না, আমাকে ওর সাথে থাকতেই হবে। আমাকে কোলকাতায় চাকরি খুঁজতে হবে যতদিন না পরীর পড়াশুনা শেষ হয়।"

সুপ্রতিমদা, "পরী ওর মাস্টার্স দিল্লীতে করতে পারে।"

অভি, "না রে, সেখানেও এক বাধা আছে, সেটা তুই বুঝবি না। আমার মা আর পরী, খুবই এঁকে ওপরের অনুরক্ত, ওদের দুজন কে ছারানো বড় মুশকিল হয়ে যাবে। মা পরীকে কিছুতেই কাছ ছাড়া করবে না। ওর ছোটো মায়ের আর ওর মাঝে এক অদৃশ্য বন্ধন আছে যেটা পৃথিবীর কোন শক্তি খন্ডন করতে পারে না, এমন কি আমিও নয়।"

ছত্রুর সেই রাত বড় আবেগময় রাত হয়ে ওঠে সবার জন্য। কারুর চোখে ভালবাসার জল, কারুর চোখে প্রেমের জল, কারুর চোখে কৃতজ্ঞতার।

পরদিন সকালে অভিরা মানালির উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ে। গ্রীষ্ম কালে মানালি যে খুব ভিড় ভর্তি হবে সেটা ওদের অজানা নয়। সুপ্রতিমদা গাড়ি চালাচ্ছিল। গতকাল রাতের আবেগ ময় সময়ের পড়ে, সবাই আবার আনন্দে মেতে উঠেছে। সবাই উচ্চ হিমালয়ের দৃশ্য দেখতে দেখতে আর এবর খাবর রাস্তার ওপরে দোল খেতে খেতে এগিয়ে চলে। বিকেলের মধ্যে রহটাং পাস পৌঁছে যায় ওরা। বেশ কিছুক্ষণ ওরা রোহতাং পাসে বসে থেকে হিমালয়ের পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। অবশেষে রোহতাং পাস পেরিয়ে এসে ওরা মানুষের দর্শন পায়। এতক্ষণ পরে লোকজন দেখতে পেয়ে যেন ওদের ধড়ে প্রান ফিরে আসে। অরুনার দিকে তাকায় অভি, অরুনা যেন লোক দেখে খুব খুশি।

অভি ওকে মজা করে বলে, "কিরে এবারে ভিড় দেখে খুশি ত?"

মানালির দিকে রোহতাং পাসে গাড়ি থেকে আবার নামে। মেয়েদের চেহারায় যেন আনন্দ আর ধরে না। মানালির দিকের রোহতাং পাসে লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেল যে মানালিতে খুব ভিড়, হোটেল পাওয়া একটু মুশকিল হতে পারে। অভির মুখ শুকিয়ে এল, কি করা যায় এবারে। একটা ফেরিওয়ালা ওদের জানাল যে, মানালি থেকে কিছু দুরে নাগর নামে একটা জায়গা আছে, ছোটো আর সুন্দর, মানালি থেকে বেশি দুরেও নয়, সেখানে কিছু হোটেল ওরা পেয়ে যাবে। অভি ভেবে দেখল, যেহেতু ওদের কাছে গাড়ি আছে সুতরাং নাগরে হোটেলে থেকে ওরা সহজেই মানালি ঘুরে যেতে পারে। এই পর্যন্ত যত জায়গায় ওরা ঘুরে এসেছে, তাঁর তুলনায় মানালিতে অনেক গরম। সবাই গায়ের থেকে গরম জামা কাপড় খুলে ফেলে।

নাগর পৌঁছতে ওদের একটু দেরি হয়ে যায়, তাঁর কারন মানালিতে খুব ভিড় ছিল। তবে নাগরে হোটেল পেতে ওদের বিশেষ অসুবিধে হয় না। নাগর, কুলু এবং মানালির মাঝে খুব ছোটো এক শান্তি পূর্ণ জায়গা। কিছু হোটেল আর কিছু দোকান পসার আছে সেখানে। হোটেলে নিজেদের ব্যাগ রেখে রাতের খাওয়া তাড়াতাড়ি সেরে ফেলে ওরা।

পরী আর অরুনা বলে যে ওদের বাড়িতে ফোন করতে হবে। অভি পরীকে বলে যে ছোটমায়ের সাথে ওর কথা বললেই হবে। পরী বিরক্ত হয়ে ওঠে কেননা বেড়াতে আসা পর্যন্ত ওই ছোটমায়ের সাথে কথা বলে গেছে, অভি একবারও বাড়ির সাথে কথা বলেনি।

পরী ওর ছোটমাকে ফোন করে জানায় যে ওরা ভালো ভাবে ঘুরে এসেছে আর নাগর নামে এক জায়গায় পৌঁছে গেছে। মা মনে হয় পরীকে জিজ্ঞেস করে যে কবে ফিরবে, পরী অভির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে সেই প্রশ্ন। অভি জানায় যে সম্ভবত রবিবারের মধ্যে ওরা কোলকাতা ফিরে যাবে। মা পরীকে অনুরধ করে অভির স্তাহে কথা বলার জন্য। পরী অভিকে ফোন ধরিয়ে দেয়।

মা, "হ্যালো, কেমন আছিস?"

অভি, "ভালো আছি, তোমাদের কি খবর?"

মা, "আমরা সবাই ভালো। অরুন্ধুতির কি খবর?"

অভি, "ও খুব ভালো আছে, বেশ আনন্দে আছে আর মজা করছে। আমাদের এই বেড়ানটা ওর পক্ষে বেশ ভালোই হয়েছে। ব্যানারজি কাকুকে জানিও যে অরুনা ঠিক আছে।"

মা, "অরুন্ধুতিকে ফোন দে।"

অভি অরুনাকে ফোন দেয়, মা অরুনার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলার পড়ে অরুনা আবার ফোন অভির হাতে ধরিয়ে দেয়।

মা, "আমার কিছু বলার আছে।"

অভি, "কি বলো?"

মা, "তুই তো বলেছিলি যে তোদের বেড়ান বারো দিনের, তাহলে তোরা রবিবার কেন ফিরবি?"

অভি, "আমার, অরুনার বা পরীর বাড়িতে কোন কাজ নেই তাই আমি ভাবলাম একটু ঘুরে বেড়িয়ে ফিরি, কেন দেরি করে ফিরলে কি কোন অসুবিধে আছে?"

মা, "না মানে, তোর ইন্দ্রানি মাসি কয়েক দিন আগে ফোন করেছিল, আমাদের বম্বে ডেকেছে। তাই আমি ভাবছিলাম যে পরীকে নিয়ে বম্বে যাবো।"

অভি, "তুমি যাবে বম্বে পরীকে নিয়ে তা আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছ, পরীকে সোজা জিজ্ঞেস করে নাও ও যেতে চায় কিনা।"

মা, "তুই যদি শুক্রবার ফিরে আসিস তাহলে নিয়ে যেতে পারি না হলে নয়। সেই জন্যেই তোকে জিজ্ঞেস করা। আমি ভালো করে জানি যে পরীর যাওয়ার হয়ত ইচ্ছে নেই কিন্তু যদি তুই শুক্রবার ফিরিস তাহলে হয়ত আমি বলে কয়ে রাজি করাতে পারব। আমরা শনিবারের রাতের প্লেনে বম্বে যাচ্ছি।"

অভি পরীকে জিজ্ঞেস করে যে ও বম্বে যেতে চায় কিনা, পরী মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় যে বম্বে যাবে না ও।

অভি, "না ও বম্বে যেতে চাইছে না। তোমরা কত দিনের জন্য বম্বে যাচ্ছও?"

মা, "আগামি সাত দিনের জন্য। পরীকে ফোন দে।"

অভি পরীকে ফোন ধরিয়ে দেয়, বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পরে পরী ফোন রেখে দেয়। তারপরে অরুনা ওর বাড়িতে ফোন করে কুশল জানিয়ে দেয়।

হোটেলের ঘরে ঢুকে পরীকে অভি জিজ্ঞেস করে যে ওর ছোটমা কি বলল। পরী জানায়, "আমরা সময় মতন পৌঁছাবো না শুনে ছোটমা মনঃক্ষুণ্ণ। আমি ভাড়াটের কাছে চাবি রেখে যেতে বলে দিয়েছি। ছোটমা বলছিল যে গ্রামের বাড়ি চলে যেতে, সেটাই ভালো হবে, এপ্রিলের পড়ে মায়ের সাথে দেখা হয়নি আর তুমিও অনেকদিন আমাদের বাড়ি যাওনই। ছোটমা মনে হয় চায় না যে আমরা একা একা বাড়িতে থাকি। আমরা রবিবারের মধ্যে যদি কোলকাতা ফিরে যাই তাহলে সোমবার সকালে বসিরহাট চলে যাবো।"

অভি, "কেন বসিরহাট কেন যেতে হবে? আমরা বাড়িতেই ত দুজনে থাকতে পারি, তাতে অসুবিধে কোথায়?"

পরী, "ছোটমা নিশ্চয় মাকে আগে থেকে জানিয়ে দেইয়ে থাকবে যে আমরা আসব।"

অভি একটু গম্ভির হয়ে যায় গ্রামের বাড়ি যাওয়ার কথা ভেবে, "তুমি বুঝতে পারছ না পরী, গ্রামের বাড়ি গেলে কি হবে।"

পরী, "কি হবে, অসুবিধে কোথায় আমার বাড়িতে যাওয়ার? আমি আমার মায়ের বাড়ি যাবো, তুমি তোমার দিদার বাড়ি যাবে তাতে অসুবিধে কি?"

অভি মাথা নাড়ায়, "পরী পরী পরী, অসুবিধে দিদাকে নিয়ে বা বাড়ি নিয়ে নয়, সোনা। অসুবিধে সুব্রত আর মৈথিলী কে নিয়ে।"

পরী বেমালুম ভুলে গেছিল সেই ঘটনা। কপালে করাঘাত করে বলে, "উফ ভগবান, আমি একদম ভুলে গেছিলাম সেই কথা। যাই হোক, আমি জানি তুমি কি করেছ আর তুমি কোন ভুল করনি। যদি কেউ কিছু করে থাকে তাহলে ওরা করেছে। ভয় ওদের পাওয়া উচিত।"

হেসে বলে পরী, "আর বেশি কিছু হলে আমার কাছে তুরুপের তাস রাখা আছে, সেই ক্যাসেট টা।"

অভি গম্ভির হেসে উত্তর দেয়, "বেশ দারুন খেলা জমবে তাহলে।"

পরী ওকে সাবধান করে বলে, "মনে রেখো, আমি কিন্তু এই সব বিষয়ে কিছু জানিনা, সুতরাং ওদের সামনে আমি তোমার পাশে দাঁড়াতে পারবো না। যদিও আমি মার্চের পরে ওদের সাথে বিশেষ কথা বলিনি।"

অভি পরীর টোপা গাল টিপে আদর করে বলে, "মিষ্টি সোনা।"

পরী ঠোঁট গোল করে চুমুর ইশারা করে বলে, "অনেক আদর হয়েছে, তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে শুতে এস।"

অভি মাথা নুইয়ে বলে, "যথাআজ্ঞা মহারানী।"

পরের দিন অভিরা মানালি ঘুরে বেরাল। মানালি বিয়াস নদীর তীরে এক ছোটো উপত্যকা, চার পাসে উঁচু উঁচু পাহাড়ে ঘেরা। মানালি খুব সুন্দর এক পাহাড়ি জায়গা, কিন্তু অভির আর পরীর মানালি দেখে ঠিক পছন্দ হল না, যে জায়গা থেকে ঘুরে এসেছে সেই জায়গার পরে মানালি ঠিক মনে ধরল না। হাডিম্বা মন্দির আর একটা শিবের মন্দির ঘুরে দেখল।

বিকেলবেলা মেয়েরা কেনাকাটা করতেই ব্যাস্ত হয়ে যায়। জুন মাসে কলেজ কলেজের ছুটি তাই মানালিতে পর্যটকের ভিড়। পরী বাড়ির সবার জন্য কিছু কিনে নেয়, ছোটমার আর দিদার জন্য শাল, ওর বউদিদের জন্য স্টোল। ওকে জিজ্ঞেস করে যে কি কিনতে চায়, অভির সেই রেকং পিওর কথা মনে পরে গিয়ে হাসি পেয়ে যায়। কেনাকাটা সেরে সন্ধের দিকে নাগর ফিরে আসে ওরা।

পরী আর অরুনা কাসেলের কাছে গাড়ি থেকে নেমে পরে, ওদের বলে যে ওরা কিছু কেনাকাটা করে ফিরবে। অগত্যা অভি একা একা হোটেলের ঘরে বসে ওদের জন্য অপেক্ষা করে।

অনেক ক্ষণ হয়ে যায়, কিন্তু পরী আর অরুনাকে ফিরতে না দেখে অভি সুপ্রতিমদার ঘরে গিয়ে ঢোকে। ঘরে ঢুকে দেখে যে সুপ্রতিমদা বিয়ার সাথে সিগারেট টানছে। বিছানার ওপরে বসে পরে অভি, সুপ্রতিমদা ওকে এক ক্যান বিয়ার দেয় আর একটা সিগরেট জ্বালায় অভি। রিতিকার কথা জিজ্ঞেস করাতে সুপ্রতিমদা বলে যে বউ স্নান করতে ঢুকেছে।

সুপ্রতিমদা, "তোর বউ কোথায়?"

অভি্, "শপিং শপিং আর শপিং..." দুজনেই হেসে ফেলে।

সুপ্রতিমদা জিজ্ঞেস করে অভিকে, "কালকের কি প্লান?"

অভি উত্তর দেয়, "কাল, মান্ডি স্বারঘাট হয়ে দিল্লী ফিরে যাওয়া। বেশি দেরি হলে মান্ডি না হয় স্বারঘাটে থেকে যাবো আমরা।"

সুপ্রতিমদা, "শেষ পর্যন্ত আমাদের বেড়ান শেষ হল বল। বাপরে তুই যে যে জায়গা ঘুরিয়ে দেখালি মাইরি। আমি অনেক পাহাড় ঘুরেছি, মানালি, ফাগু, চায়েল, ডালহউসি, সব ঘুরেছি, ওদিকে নইনিতাল বল কউসানি বল, আবার পুবে দারজিলিং বা সিকিম বল, সব জায়গা ঘুরেছি কিন্তু শালা এই জায়গার মতন কোন জায়গা দেখিনি। সব জায়গায় হাজার হাজার লোক আর আমরা এই জায়গায় কোন লোকজন খুঁজে পেলাম না। সত্যি অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা।"

বুক ভরে সিগারেটের ধোঁয়া টেনে একটু দার্শনিক উত্তর দেয় অভি, "গুরু, যে কোন জায়গা ভালো লাগে, যদি মনের মতন সাথি থাকে পাশে।"

সুপ্রতিমদা হেসে বলে, "বাঃবা তোর মধ্যে যে কবি কবি ভাব আর একটা দার্শনিক লুকিয়ে আছে জানতাম না ত।"

অভি, "রাতের খাওয়ার কি ব্যাবস্থা।"

সুপ্রতিমদা, "আমি মানালি আগেও এসেছি..."

চোখ টিপে অভি জিজ্ঞেস করে, "ওয়ান ডে পিচ নিয়ে খেলতে এসেছিলি?"

সুপ্রতিমদা অভিকে চুপ করতে বলে, "আরে জোরে বলিস না, রিতিকা কিছু জানে না কিন্তু ওইসব ব্যাপারে।"

অভি, "ছাড় না, টি.ভি র আওয়াজে কিছু শুনতে পাবে না।"

সুপ্রতিমদা টি.ভি’র আওয়াজ একটু জোর করে দিয়ে ওকে বলে, "গুরু, অয়ান ডে পিচে খেলে মজা আছে আনন্দ বাঁ শান্তি নেই। তুই বল হাঁকালি, ক্যাচ হবে না ছয় হবে জানিস না। আসল খেলা হচ্ছে টেস্ট পিচে।"

অভি, "কটা পিচে খেললি তুই?"

সুপ্রতিমদা হেসে বলে, "দুটো অয়ান ডে খেলেছি রে, তারপরে টেস্ট ম্যাচ।"

অভি, "রিতিকা কে জানাস নি কেন? যাকে ভালবাসিস তার কাছে হৃদয় খুলে রাখতে হয় রে।"

সুপ্রতিমদা, "ছাড় না পুরানো কথা।"

অভিকে একবার পরী বলেছিল, সেই কথা অভি সুপ্রতিমদাকে বলে, "অতীত ঠিক অতীত নয়। আমাদের অতীতকে ভুলে যাওয়া উচিত নয়, অতীতের কাছ থেকে আমরা অভিজ্ঞতা অর্জন করি, ভবিষ্যতের সিঁড়ি তৈরি করি। বর্তমান যদি সঠিক না হয় তাহলে কোন এক সময়ে কিন্তু আমাদের অতীত আমাদের তাড়িয়ে বেড়াবে।"

সুপ্রতিমদা বিরক্ত হয়ে ওঠে, "বোকা... জ্ঞান মারতে যাস না, দারু গেল শালা। তুই কি মদ ঢাললেই দার্শনিক হয়ে যাস নাকি?"

কথা অন্য খাতে বয়ে যায়, গল্পে দুজনে মেতে ওঠে।

হটাত বাথরুমের দরজা খুলে রিতিকা তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বেড়িয়ে আসে। ওকে দেখে সুপ্রতিমদার আর অভির মুখ হাঁ হয়ে যায়। দুজনের চোখ বড় বড় হয়ে যায়, নিস্পলক চোখে তাকিয়ে থাকে রিতিকার দিকে।

সাদা তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে থাকে রিতিকা, সর্বাঙ্গে একটি সুতা পর্যন্ত নেই। সারা গায়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলের ফোঁটা। দেখে মনে হয় যেন এক মৎস্যকন্যে সবে সাগরজল থেকে উঠে এসে ওদের সামনে নিজেকে মেলে ধরেছে। অভি বিস্ফুরিত নয়নে রিতিকার নধর পেলব দেহের অপরূপ রুপ সুধা পান করে।

মুখখানি দেখে মনে হচ্ছে যেন সদ্যস্নাত ম্যাগ্নলিয়া ফুল, সূর্যের আলোয় উজ্জ্বল হয়ে ফুটে উঠেছে। মাথার চুল পরীর মতন লম্বা নাহলেও ঘাড় পর্যন্ত নেমে এসেছে। ভিজে চুলের থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে। ছোটো গোল কাঁধ, ঢেউ খেলে উঠেছে উন্নত বক্ষ জোড়ায়। দেহের অবয়াব যেন অতি প্রাচিন বালির ঘড়ির মতন। ত্রুটিহীন নিটোল বক্ষ যুগলের ওপরে দুটি গাড় বাদামি নুড়ি সাজানো। কিছু ক্ষুদ্র জলের ফোঁটা ওই বৃন্তের কাছে লেগে তারপরে গড়িয়ে পড়েছে নিচের দিকে। পীনোন্নত বক্ষ যুগল যেন ঠেলে বেড়িয়ে এসেছে ওর শরীরের থেকে আর হাতছানি দিচ্ছে সামনে বসে থাকা দুই বুভুক্ষু হায়নার দিকে।

মধ্যচ্ছদা যেন স্পিতি নদী, বুকের নিচ থেকে নেমে গেছে ছোটো গোল পেটের দিকে, হারিয়ে গেছে সুগভীর নাভির ভেতরে। পাতলা কোমর আর তাঁর নিচে ফুলে উঠেছে সুডৌল নিতম্ব। নিতম্ব জোড়া বেশ পুরুষ্টু আর তলপেট টাও বেশ মান্সল আর ফোলা। ঠিক তলপেটের নিচের দিকে অভির দৃষ্টি যায়, দুই নমনীয় নধর জানু, সদ্য স্নাত হওয়ার ফলে ত্বকের ওপরে ঘরের আলো পিছল খেয়ে যায়। তলপেটের বাম দিকে বেশ নিচে একটা ছোটো কালো তিল। নাভিদেশ থেকে বেশ কয়েকটা সরু জলের ধারা নেমে এসেছে তলপেটের ওপরে দিয়ে গড়িয়ে হারিয়ে গেছে জানুমাঝের উপদ্বীপে।
Like Reply
#55
রিতিকা ওদের দেখতে পায়নি কারন ও মাথা মুছতে ব্যাস্ত ছিল। চলনের ফলে নিতম্ব জোড়া বেশ দুলে দুলে উঠছিল, জানুমাঝের উপদ্বীপে ওপরে দিকে অতি যত্নে সাজান একটি ছোটো বাগান। একটু সরু ধারা যেন ওর সুন্দর ত্রিকোনা উপদ্বিপের মাঝখান থেকে নিচের দিকে বয়ে চলেছে। বাগানে জলের ফোঁটা লেগে, মনে হচ্ছে যেন শরতের ঘাসের আগায় শিশির রেখা।

রিতিকা অপার রুপ দেখে অভি আর সুপ্রতিমদা হাঁ হয়ে তাকিয়ে থাকে। কান লাল হয়ে উঠেছে অভির, গলা শুকিয়ে গেছে রিতিকাকে দেখে, মাথার মধ্যে থেকে যেন দুচোখ ঠিকরে বেড়িয়ে যাবে মনে হচ্ছে।

রিতিকা আপনমনে মাথা মুছতে মুছতে সুন্দর কোন গান গুনগুন করতে থাকে। কিছু পরে সুপ্রতিমদা কে বলে, "হানি, আমার গাউন টা দেবে প্লিস।"

রিতিকার গলার আওয়াজ পেয়ে সুপ্রতিমদার আর অভির ঘোর কেটে যায়।

অভির যেন হাতে পায়ে প্রান ফিরে আসে, অস্ফুট চিৎকার করে ওঠে, "যাঃ শালা।"

বলেই এক লাফে রুমের দরজা ঠেলে বেড়িয়ে যায়। সারা গায়ে বিয়ার পরে যায়।

রিতিকা হকচকিয়ে যায় অভির গলার আওয়াজ শুনে, কোন রকমে গায়ে তোয়ালে জড়িয়ে একলাফে বাথরুমে ঢুকে পরে। বাথরুমের দরজার পেছন থেকে রিতিকা ওদের দিকে চেঁচিয়ে ওঠে, "ফা... ইউ ব্লাডি শূয়র। অভি রুমে ছিল সেটা আগে জানাতে পারনি?"

সুপ্রতিমদা তোতলাতে তোতলাতে বলে, "বেবি তুমি যে জন্মদিনের পোশাকে বেড়িয়ে আসবে তা কি আর জানতাম?"

রিতিকা ভেতর থেকে চেঁচিয়ে ওঠে, "আমি কি করে জানব যে অভি রুমের মধ্যে আছে? তোমরা দুজনে যা জোরে টি.ভি চালিয়েছ, তাতে ঘাটের মড়া জেগে যাবে।"

অভি দরজা থেকে চেঁচিয়ে রিতিকাকে বলে, "আমি দুঃখিত, রিতিকা।"

রিতিকা অভির দিকে চিৎকার করে ওঠে, "বের হ, রুম থেকে শয়তান ছেলে, না হলে এখুনি মেরে ফেলব।"

দরজা বন্ধ করে বেড়িয়ে এসে অভি নিজের রুমে ঢুকে পরে। পরী আর অরুনার দেখা নেই, চুপ করে বিছানার ওপরে বস বিয়ারের ক্যানে চুমুক দেয় আর চোখের সামনে ভেসে ওঠে রিতিকা অনাবৃত অপরূপ দেহ পল্লব। অভির পেটের মধ্যে তরল আগুন জ্বলে ওঠে সেই মনোরম আকর্ষণীয় দৃশ্য মনে পরাতে। কিছু পরে পরী ফিরে আসে, অভি ওর দিকে বুভুক্ষু হায়নার মতন চোখ নিয়ে তাকিয়ে থাকে। ভেতরের সিংহ যেন গর্জে উঠেছে রিতিকার শরীর দেখে।

পরী ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে জিজ্ঞেস করে, "আমার দিকে ওই রকম ভাবে কেন তাকিয়ে আছো? এক মিনিট্বের জন্যেও কি আমি তোমার থেকে দুরে থাকতে পারব না?"

গোলাপি রঙের স্কার্ট আর সাদা ফ্রিল শার্টএ পরীকে খুব আকর্ষণীয় দেখাচ্ছে, গলায় একটা স্টোল জড়ানো। অভি ওর দিকে উঠে গিয়ে পেটের ওপরে হাত রেখে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। পরীর পেছনে নিজেকে চেপে ধরে অভি। পরী হাতের ব্যাগ বিছানার ওপরে ছুঁড়ে ফেলে দেয় আর নিজের কোমল গোলায় অভির কঠিন সিংহের পরশ অনুভব করে।

আদর করে জিজ্ঞেস করে অভিকে, "কি হল তোমার?"

অভি, "কিনা না সোনা। তোমাকে খুব মিস করছিলাম আমি। এত দেরি করলে কেন?"

পরী, "আরে বাবা, আমরা কাসেলে গেছিলাম। জানো কাসেল্টা খুব সুন্দর, অকানে আবার একটা রেস্টুরেন্টও আছে।"

পরী পেছন দিকে মাথা হেলিয়ে অভির গালে গাল ঘষে দেয়। অভির নাকে ভেসে আসে পরীর গায়ের জুঁই ফুলের গন্ধ, পাগল করে তোলে অভির হৃদয় কে।

পরী, "প্লিস আমাকে ছেড়ে দাও সোনা, আমি খেতে যাবার আগে একবার স্নান করব। এখানে বড় গরম।"

অভি, "উম্মম... ছাড়তে পারি যদি তুমি আমাকেও স্নান করার জন্য সঙ্গে নাও।"

পেটের ওপরে অভির চেপে ধরা হাতের ওপরে চাঁটি মারে পরী, একটু বিরক্তি সুরে বলে, "না, আমি জানি তুমি বাথরুমে ঢুকে আমার সাথে দুষ্টুমি শুরু করে দেবে। কেন সবসময়ে তোমার মাথায় দুষ্টুমির করার চিন্তা ঘোরে?"

অভি ওর কানে কানে বলে, "উম্মম... সোনা, আমি তোমার আকর্ষণীয় দেহের হাতছানি থেকে নিজেকে দুরে সরিয়ে রাখতে পারি না যে, তাই ত মনে হয় যেন তোমাকে নিয়ে সবসময়ে উম্মত্ত খেলায় মেতে উঠি।"

পরী একটু গম্ভির হয়ে যায়, "অভি, এই চিন্তাধারা ভালো লক্ষণ নয়। প্রেমের সিঁড়ি তে রতিখেলা শুধু মাত্র একটা ধাপ, সেই ধাপ যেন বুভুক্ষু খিদে না হয়ে ওঠে। যেদিন মানুষের মাথায় সেই খিদে চড়ে যাবে সেদিন মানুষ ভয়ঙ্কর জানোয়ারে পরিবর্তিত হয়ে যাবে, আর ভয়ঙ্কর জানোয়ারের হৃদয়ে প্রেম ভালবাসার লেশ মাত্র থাকে না, অভি। নিজেকে সামলাও, আমি চাই না আমার অভি বুভুক্ষু জানোয়ার হয়ে উঠুক।"

পরীর ওই কথা শুনে অভির বুভুক্ষু আগুন নিভে যায়, সেই স্থানে হৃদয়ে এক অনাবিল প্রেমের আলো ছড়িয়ে পরে। ঘাড়ের ওপরে আলতো চুমু খেয়ে পরীকে আলিঙ্গন থেকে মুক্ত করে দেয়। পরী ওর জামাকাপড় নিয়ে বাথরুমে ঢুকে পরে স্নান সেরে নিতে।

কিছু পরে সুপ্রতিমদা ওদের ঘরে এসে টোকা মেরে খেতে যাওয়ার জন্য ডাক দেয়। অভি মনে মনে প্রস্তুতি নেয় কি করে রিতিকার সামনে যাবে, অভির কান লাল হয়ে ওঠে। পরীকে জানায় যে ও খেতে যাবে না। সুপ্রতিমদা বুঝতে পারে অভির মনের উত্তেজনা আর সেই দেখে হেসে ফেলে।

সুপ্রতিমদা পরীকে বলে, "রিতিকা ও খাবার খেতে যাচ্ছে না। পরী, তুমি নাহয় একবার গিয়ে দেখ কি হয়েছে।"

পরী উৎসুক হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকে, তারপরে সুপ্রতিমদা কে জিজ্ঞেস করে, "এদের দুজনের হটাত করে কি হয়ে গেল যে দুজনেই খেতে যাচ্ছে না?"

সুপ্রতিমদা অভির লাল মুখ দেখে আর থাকতে না পেরে হেসে ফেলে। অভি ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকে লজ্জা লুকানোর জন্য। পরী কিছু বুঝতে না পেরে দুজনার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।

সুপ্রতিমদা মাথা চুলকে পরীকে জানায়, "আমি আর অভি আমার রুমে বসে বিয়ার খাচ্ছিলাম আর এমন সময়ে রিতিকা স্নান সেরে বাথরুম থেকে বেড়িয়ে পরে। ব্যাপারটা হল যে রিতিকা তখন একদম বার্থডে পোশাকে ছিল।"

সুপ্রতিমদার কথা শুনে পরী আর হাসি ধরে রাখতে পারেনা, পেট চেপে হাসতে হাসতে বিছানার ওপরে গড়িয়ে পরে।

অভি মৃদু চেঁচিয়ে ওঠে ওদের দিকে, "আমি লজ্জায় মরে যাচ্ছি যে কি করে রিতিকার সামনে যাবো আর তোমারা হাসছ?"

পরী হাসতে হাসতে বলে, "আমার শয়তান সোনা, সুপ্রতিমদার ভালবাসার মেনকাকে একদম নিস্কলঙ্ক রুপে দেখে ফেলেছে তাই আমি আর হাসি থামাতে পারছি না।"

কোন রকমে হাসি থামিয়ে, "আচ্ছা বাবা, আমি রিতিকার কাছে গিয়ে দেখছি।"

রিতিকা কিছু পরে পরীর পেছনে মুখ লুকিয়ে ঘোর থেকে বেড়িয়ে আসে। অভির অন্য দিকে মুখ করে তাকায়, রিতিকার চোখে চোখ রাখতে পারছে না অভি। লজ্জায় লাল রিতিকা চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। সুপ্রতিমদা আর পরী ওদের মুখের ভাব দেখে হেসে কুটপুটি খায়। অরুনা কিছুই বুঝতে না পেরে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে সবার মুখ চাওয়াচায়ি করে।

সুপ্রতিমদা ওদের নিয়ে যায় একটা ইটালিয়ান রেস্টুরেন্টে। রিতিকা লাজানিয়ারর অর্ডার দেয় সাথে গ্রিল ট্রাউট মাছ। এর আগে অভিরা কোন দিন ইটালিয়ান খানা খায়নি, পরী রিতিকাকে সেই লাজানিয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে। রিতিকা ওদের কে বুঝিয়ে দেয়। অভি আর সুপ্রতিমদা সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল রিতিকার লজ্জা কাটেনা, পরীর পেছনে দাঁড়িয়ে থাকে। পরী শেষ পর্যন্ত রিতিকার লজ্জা কাটানোর জন্য একরকম টেনে ঠেলে দেয় সুপ্রতিমদার দিকে।

হেসে বলে, "আমরা সবাই পূর্ণবয়স্ক, এই রকম ভাবে লজ্জা পেলে হয়? যা হয়েছে, হটাত করেই না হয়ে গেছে।"

বলেই সুপ্রতিমদা আর পরী ওদের দিকে বিদ্রুপে হেসে ওঠে।

রাতের খাওয়ার সময়ে সুপ্রতিমদা জানায় যে ওরা ডিসেম্বরে বিয়ে করবে। পরী আর অভিকে নিমন্ত্রন জানায়। রিতিকার দিকে তাকায় অভি, রিতিকা সুপ্রতিমদার কোল ঘেঁসে বসে থাকে আর জুলুজুলু চোখে ওর দিকে তাকায় একবারের জন্য।

সুপ্রতিমদার দিকে উপহাস করে বলে, "কিরে শেষ পর্যন্ত গাধার টুপি পরছিস তাহলে?"

পরেরদিন সবাই একটু দেরি করেই ঘুম থেকে ওঠে। ওদের বেড়ানোর শেষদিন, সবার মন খানিক বিষণ্ণ। সুপ্রতিমদা গাড়ি চালায় আর অভি পাশে বসে। বিকেলের মধ্যে ওরা মান্ডি পৌঁছে যায়। সুপ্রতিমদা মেয়েদের জিজ্ঞেস করে যে রাতে মান্ডি থেকে যাবে কিনা না সোজা বাড়ি। মেয়েরা প্রথমে একটু দনামনা করে থাকার জন্য, অভি জানায় যে গাড়ি চালাতে ওর কোন অসুবিধে নেই। চন্ডিগড় পৌছাতে ওদের সন্ধ্যে হয়ে যায়। সুপ্রতিমদা একবার অভিকে জিজ্ঞেস করে গাড়ি চালানর ব্যাপারে, অভি মানা করে দেয়। শেষ পর্যন্ত সুপ্রতিমদা গাড়ি চালায়, প্রায় রাত দুটো নাগাদ ওরা দিল্লী পৌঁছে যায়।

পরের দিন সবাই সুপ্রতিমদার বাড়িতে বিশ্রাম করে। রবিবার সকালের প্লেনে ওরা সবাই কোলকাতা ফিরে যাবে।

দিল্লী পৌঁছে পরী ওর ছোটমাকে ফোন করে জানিয়ে দেয় ওদের খবর, অরুনাও বাড়িতে ফোন করে দেয়। ব্যানারজিকাকু জানায় যে তিনি এবং অরুনার মা, এয়ারপোর্টে ওদের জন্য অপেক্ষা করে থাকবেন।

এর মাঝে অভি সমুদ্রনীলকে ফোন করে এয়ারপোর্টে আসতে বলে। সমুদ্রনীল কি বুঝল, জানেনা কিন্তু জানাল যে ও এয়ারপোর্টে ওদের জন্য অপেক্ষা করে থাকবে।

রবিবার সকালে, যথারীতি মেয়েদের চোখে বিদায়ের জল, মন ভারী। সুপ্রতিমদা অভির হাত ধরে বলে, "তুই না এলে আমি কিন্তু বিয়ের পিঁড়িতে বসব না। তোর আর পরীর আসা চাই-ই-চাই।"

প্লেনে চড়ে অভি আরেকবার অরুনাকে ওর মতলবের কথা জানায়, "প্লেন থেকে নেম, অরুনা আমার একদম পাশে হাটবে, যেন কেউ কোন সন্দেহ না করে, পরী আমাদের পেছনে হাটবে। আমি ব্যানারজি কাকু আর কাকিমা কে সব কথা খুলে বলব, আমি বলব যে তিনি আমাকে কথা দিয়েছিলেন যে আমার কথা রাখবেন।"

পরীর বুক দুরুদুরু করে ওঠে, অরুনা ভয়ে ভয়ে পরীর দিকে তাকায়। পরী নিজের মনের ভাব লুকিয়ে হেসে ওকে জড়িয়ে ধরে আশস্থ করে, বলে যে সব ঠিক হয়ে যাবে। ব্যাগ হাতে নিয়ে গেটের দিকে হাঁটতে শুরু করে ওরা। দূর থেকে দেখতে পায় যে ব্যানারজি কাকু আর কাকিমা অধির অপেক্ষায় ওদের জন্য দাঁড়িয়ে। অভি ভিড়ের মধ্যে সমুদ্রনীলকে খোঁজে, সমুদ্রনীল ভিড়ে এক কোনায় সবার চোখ বাঁচিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল, অভি ওকে ইশারায় অপেক্ষা করতে বলে। উৎকণ্ঠায় অরুনার চোখে জল চলে আসে, বুকের মাঝে ঝড় ওঠে, বাবা মা সত্যি কথা জানতে পেরে কি রকম প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করবেন। অভি পিঠের ওপরে হাত বুলিয়ে আসস্থ করে অরুনাকে, নিচু গলায় জানায়, "কোন চিন্তা করিস না, মাথা ঠাণ্ডা রাখ, আমি সব ঠিক করে দেব।"

অরুনা কাকিমার দিকে তাকাল তারপরে অভির দিকে। মেয়ের মুখে হাসি দেখে কাকিমার চোখে আনন্দের জল, ব্যানারজি কাকুর মুখে স্বস্তির হাসি। কাকিমা বারে বারে চোখ মোছেন। অভি অরুনাকে একটু ঠেলে দিয়ে বলে, "কাকিমা কাঁদছে, জড়িয়ে ধরবি না? আমি শেষ পর্যন্ত আমার কথা রেখেছি, আমি তাদের মেয়েকে তাদের কোলে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি, যা তুই।"

পরী অভির মুখের দিকে আত্মবিশ্বাস নিয়ে তাকায়, বুক ভরে ওঠে গর্বে, যেন এক যুদ্ধ জয় করে ফিরছে ওর প্রানের ছোটো রাজকুমার। অরুনা দৌড়ে গিয়ে কাকিমার কোলে ঝাঁপিয়ে পরে কেঁদে ফেল। কাকিমা আর ব্যানারজি কাকু মেয়ের মুখে হাসি দেখে আপ্লুত হয়ে ওঠেন।

ব্যানারজি কাকু অভির কাছে এসে জড়িয়ে ধরে বলে, "আমি তোমাকে কৃতজ্ঞতা জানাবার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা অভিমন্যু। তুমি যা চাইবে আমি তোমাকে এখুনি দিয়ে দেব। ভদ্রলোকের এক কথা, অভিমন্যু।"

অভি ব্যানারজি কাকুর আলিঙ্গন থেকে নিজেকে মুক্ত করে, গভীর জলে ঝাপ দেওয়ার আগে বুক ভরে এক শ্বাস নেয়। পরীর দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় একবার, পরী মৃদু মাথা নুইয়ে ইশারা করে তাঁর সাধের রাজকুমার কে, "এগিয়ে চলো রাজকুমার, তুমি বিজয়ী হবে।"

অভি, সমুদ্রনীলকে ইশারায় কাছে ডাকে। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে অভি ব্যানারজি কাকুকে বলে, "আমি অরুনার খুব ভালো বন্ধু মাত্র। কিন্তু ওর মনের মানুষ আমি নয়" সমুদ্রনীলের দিকে দেখিয়ে বলে, "আমার বন্ধু, সমুদ্রনীল অরুন্ধতিকে ভালবাসে।"

অভির কথা শুনে ব্যানারজি কাকু অবাক হয়ে যায়, নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারেনা। অরুনা কাকিমাকে প্রাণপণে জড়িয়ে ধরে, কাকিমা অরুনার মুখের দিকে অবিশ্বাসের দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে।

ব্যানারজি কাকু মাথা দোলায়, "না না, এ হতে পারে না। এ কি করে সম্ভব, আমরা ত জানি যে তুমি অরুনাকে ভালোবাসো।"

অভি, "হতে কেন পারেনা, সমুদ্রনীল ভালো ছেলে, প্রেসিডেন্সি তে রসায়নে মাস্টারস করছে আর অরুনাকে খুব ভালবাসে।"

ব্যানারজি কাকু, "কিন্তু তোমার বাবা মা?"

অভি, "আপনি আমাকে কথা দিয়েছিলেন যে আমি যা বলব সেটা আপনি মেনে নেবেন।"

ব্যানারজি কাকু অভিকে জড়িয়ে ধরে মাথায় ঠোঁট চেপে জিজ্ঞেস করে, "তুমি কে বাবা?"

অভি নিজেকে ছাড়িয়ে বলে, "আপনি আমার কথা রাখছেন তাহলে।"

ব্যানারজি কাকু, "হ্যাঁ, রাখছি।"

সমুদ্রনীলকে কাছে ডেকে ওর হাতে অরুনার হাত দিয়ে দুজন কে বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে অভি। ধরা গলায় ওদের বলে, "পুবালির কাছে আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম তোদের এক সাথে দেখব বলে, আজ আমি সেই কথা রেখেছি।"

অরুনার কান্না থামছিল না, পরী ওকে জড়িয়ে ধরে শান্ত করে।

ব্যানারজি কাকু অভিকে জিজ্ঞেস করে, "তোমার বাবা মা, তারা ত এই ভেবে বসে আছেন যে আমার মেয়ে তাদের বাড়ির বউমা হয়ে আসছে। তাদের কি করে বুঝাবে যখন তারা এই সত্যি জানবে।"

অভি, "আপনাকে আরও একটা কথা দিতে হবে আমাকে। আমি যতদিন আপনাকে বলতে না বলব, ততদিন আপনি আমার বাবা মাকে কিছু জানাবেন না।"

কাকিমা অভির কাছে এসে, গালে মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, "তোমার হৃদয় অনেক বিশাল, তোমার হৃদয় সোনার তৈরি, আর সেটাই হচ্ছে অসুবিধে। আমি কথা দিচ্ছি, তুমি যতদিন আমাদের বলতে না বলবে, আমরা তোমার বাবা মাকে কিছু জানাব না। আমি ভগবানের কাছে প্রান দিয়ে প্রার্থনা করব, তুমি যা চাও তাই যেন জীবনে পাও।"

পরী আর অরুনাকে যেন এঁকে ওপরের কাছে থেকে ছাড়িয়ে আনা যাচ্ছিল না। অরুনা অভির গালে আলতো চাঁটি মেরে বলে, "তোরা দুজনে আমার জীবনের সব থেকে মুল্যবান মানুষ।"

বাড়ি ফেরার পথে, পরী চুপ করে অভির গা ঘেঁসে বসে বারে বারে চোখ মোছে। অভি পরীকে জড়িয়ে ধরে আদর করে।

পরী অভির মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, "আমার প্রানের ছোট্ট রাজকুমার আজ বিজয়ী হয়ে ফিরছে। আই লাভ ইউ, অভিমন্যু।"
Like Reply
#56
দাবার ৬৪ ছক (#01)

মা রবিবার রাতেই ফোন করে জানিয়ে দেন যে তাঁরা ঠিক মতন বম্বে পৌঁছে গেছে আর ওদের বেড়ানোর খবরা খবর জিগাসাবাদ করেন। পরী ছোটমাকে জানিয়ে দেয় যে পরেরদিন, সোমবার, ওরা সকাল সকাল গ্রামের বাড়ি চলে যাবে। রাতে পরী মাংস রান্না করে।

অভি পরীকে জিন্স পড়তে অনুরধ করে। পরী আঁতকে উঠে বলে, "তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি? গ্রামের সবাই আমার দিকে হাঁ করে চেয়ে থাকবে তাহলে, যেন কোন ভুত দেখছে।"

অভি, "তাহলে কি পড়বে তুমি?"

পরী, "শাড়ি না হয় সালোয়ার কামিজ।"

অভি, "ওয়াকম্যান নিতে ভুলে যেওনা যেন।"

পরী, "ও নিয়ে চিন্তা করোনা।"

অভি আদর করে ওর গাল টিপে দিয়ে বলে, "আমার ছোট্ট পরী।"

পরেরদিন সকাল সকাল দুজনে তৈরি হয়ে পরীর গ্রামের বাড়ির দিকে রওনা হয়ে যায়। দিদার বারি পৌছাতে প্রায় ঘন্টা তিনেক লেগে যাবে। পরী একটা লম্বা সাদা রঙের স্কার্ট পরে আর সাদা ফ্রিল শার্ট। একে ফর্সা তাঁর ওপরে সাদা রঙের পোশাকে ঠিক যেন দুধে স্নাত এক অপরূপ মূর্তি। কোলকাতায় গ্রীষ্ম কালে বড় ঘাম দেয়, তবে বাস চলার দরুন হাওয়ার জন্য কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যায়। ওরা সেই বেড়ানোর গল্পে মেতে ছিল, লাহুল স্পিতির গল্প। পরী দুষ্টুমি করে ওকে রিতিকার স্নানের কথা মনে করিয়ে দিয়ে খেপিয়ে তোলে। অভি আদর করে মাথার পেছনে চাঁটি মারে। পরী বেশ ঘেমে যায় আর পিঠের দিকের শার্টএর কাপড় গায়ের সাথে লেপে যায়। পাতলা কাপড় ভিজে উঠে ভেতরের গাড় নীল অন্তর্বাসের ছবি ফুটে ওঠে। আসেপাশের লোকেদের নজর যেন পরীর চওড়া পিঠের ওপরে নীল অন্তর্বাস দেখে ওকে চোখ দিয়েই যেন গিলে ফেলে। অভি ওর গলায় জড়ানো স্টোল পিঠের ওপরে ঢেকে দেয়।

বিরক্ত হয়ে ওঠে অভি, "তোমাকে কি এই শার্ট টাই পড়তে হত?"

পরী, "কেন?"

অভি, "ঘামে তোমার পিঠ ভিজে গেছে, খেয়াল আছে?"

পরী, "তুমি কি আমাকে কিছু বলেছিলে যে তোমার কি পছন্দ? কিছুই ত বলনি যখন আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম।"

অভি, "কেন, কাল রাতে তুমি বলেছিলে যে তুমি নাকি শাড়ি না হলে সালোয়ার পরে আসবে। এই বাসের মধ্যে শুরু হয়ে যেওনা যেন আবার।"

পরী, "বাহ রে, তুমি কিছু একটা পছন্দ করে দিতে পারতে, সেটাই পড়তাম। সেবেলায় ত কিছু করনি।"

অভি ওর কানে কানে বলে, "যাই হোক, তুমি না সাদা ড্রেসে দারুন দেখাচ্ছ, জানো।"

পরী, "হয়েছে, যাই হোক ভালো লাগল যে তুমি আমার পিঠ ঢেকে দিয়েছ।"

বসিরহাট পৌছাতে পৌছাতে দুপুর হয়ে গেল। মাথার ওপরে তপ্ত সূর্য ওদের যেন পুড়িয়ে ছারখার কর দেয়। বাসস্টান্ড থেকে রিক্সা নিয়ে বাড়ির দিকে যাত্রা করে। রিক্সা অনেক আমের কাঁঠালের বাগানের ভেতর দিয়ে চলতে শুর করে। কোথাও দুপাশে সবুজ ধানের খেত। বাতাসে যেন আম কাঁঠালের তীব্র মাদকতা ময় গন্ধ ছড়িয়ে। পরী তাঁর জন্মস্থানে প্রায় তিন মাস পরে ফিরছে। বাচ্চা মেয়ের মতন খিলখিল করে হেসে ওঠে বার বার, অভিকে বোঝায় কি করে কাঁচা আম আর সরষের তেল দিয়ে মাখিয়ে খেতে হয়।

অভি আদর করে বলে, "হ্যাঁ কাঁচা আম হয়ত খুব ভাল লাগবে খেতে, কিন্তু তোমার ঠোঁটের চেয়ে মিষ্টি নয়।" লাজুক হেসে ফেলে পরী অভির মুখে প্রেমের কথা শুনে।

দিদা ওদের জন্য উঠানে বসে অপেক্ষা করছিল। রিক্সা থামতেই পরী দৌড়ে গিয়ে দিদাকে জড়িয়ে ধরে। অনেক দিন পরে মা মেয়ের মিলন দেখে অভির মন খুশিতে ভরে ওঠে। অভি ব্যাগ হাতে নিয়ে গিয়ে দিদাকে প্রনাম করে। দিদা ওর মাথার চুল ধরে উঠিয়ে কপালে চুমু খায়। অভি দিদাকে জড়িয়ে ধরে।

দিদা হেসে বলেন, "এই ছাড় ছাড়, আমার বুড়ো হাড় ভেঙ্গে যাবে যে। এখন কি আর তুই সেই ছোটো অভি আছিস নাকি যাকে কোলে করে আমি রাজা রানীর গল্প, পরীর গল্প, ভুত পেত্নির গল্প বলতাম।"

অভি, "তুমি সেই একই আছো দিদা। আজ রাতে আমাকে সাত ভাই চম্পার গল্প শুনাবে?"

পরী দিদাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছিল তাই দিদা ওর মুখের অভিব্যাক্তি দেখতে পারছিল না, পরী ওর দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হেসে দেয়।

দিদা হেসে বলে, "ভেতরে আয় রে ছেলে। তাড়াতাড়ি স্নান সেরে নে। আমি এখন খায়নি তোদের জন্য বয়সে আছি। মেঘনা আর মৈথিলী না খেয়ে বসে। সুমন্ত মাঠে গেছে বিকেলে ফিরবে। বাকিরা অফিস থেকে বিকেলে ফিরবে।"

মৈথিলীর নাম শোনা মাত্রই অভির চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে, ওর কঠিন মুখ দেখে পরী বুঝতে পারে অভির বুকের উত্তাল ঝড়। চোখ টিপে ইশারায় জানায়, "চিন্তা করোনা, আমি আছি।"

পরীকে দেখে মেঘনা এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে। রান্না ঘরের দরজার ফাঁক থেকে মৈথিলী উঁকি মেরে ওদের দিকে তাকায়। পরী ওকে হাত নাড়িয়ে বাইরে ডাকে। অভির সাথে চোখা চুখি হয়ে যায় মৈথিলীর, লাল হয়ে ওঠে ওর কান, লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয় মৈথিলী। পরী একবার অভির দিকে তাকায় তারপরে মৈথিলীর দিকে এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। আসেপাশের কেউ মৈথিলীর বাঁ অভির মনের অবস্থা বুঝতে পারে না।

দুপুরে খাওয়ার সময়ে দিদার সাথে অনেক গল্প হয়ে, দিদা মায়ের কুশল মঙ্গল জিজ্ঞেস করেন। পরী বেড়ানোর কথা দিদাকে জানায়। সবাই পরীর মুখে বেড়ানোর গল্প শুনে অভিভূত হয়ে যায়।

খাওয়ার পরে অভি মেয়েদের গল্পে থাকে না, মাঠের দিকে হাটা দেয়। দিগন্ত পর্যন্ত বিস্তৃত সবুজ ধানের খেত। আম কাঁঠালের বাগানের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে থাকে অভি। বাগানের শেষে পুকুর পাড়ের দিকে পা বাড়ায় অভি। পুকুরের এক কোনে অভির পোঁতা আমের গাছ। গাছের ওপরে তাকিয়ে দেখে যে আমের বোল ফুটেছে আর কাঁচা আম ঝুলছে গাছে। আম দেখে অভির খুব খেতে ইচ্ছে হয় তাই গাছে চেপে একটা কাঁচা আম ছিঁড়ে একটা ডালে বসে আম খেতে শুরু করে দেয়। আম গাছের ডালে বাঁদরের মতন ঝুলে থাকে কিছুক্ষণ। গ্রীষ্মের মৃদু বাতাসে অভির ঘুম পেয়ে যায়, গাছের ডালে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পরে অভি।

ঘুম ভাঙ্গে দিদার ডাকে। অভি চোখ খুলে দিদার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে যে দিদা ওকে কি করে খুঁজে পেল। দিদা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, "নাতির খবর দিদা জানবে না ত আর কে জানবে।" পশ্চিম আকাশে দিকে সূর্য ঢলে গেছে। দিদা ওকে বলে, "তুই এখানে থাকবি সেটা জানতাম, কিন্তু তুই যে বাঁদরের মতন গাছের ডালে ঝুলে ঘুমিয়ে পড়বি সেটা ভাবিনি। নেমে আয়, সন্ধ্যে হয়ে গেছে। বাড়ির সবাই তোকে খুঁজছে।"

অভি গাছ থেকে নেমে এসে দিদাকে জড়িয়ে ধরে বলে, "তুমি কিন্তু আমাকে কথা দিয়েছ যে রাতে আমাকে গল্প বলবে। আমার সোনা দিদা।"

দিদা, "আমি বুড়ি হয়ে গেছি, চুল পেকে গেছে, দাঁত পড়ে গেছে, চোখে ছানি, আর তুই আমার সাথে মশকরা করছিস?"

অভি, "কে বলেছে তুমি বুড়ি হয়ে গেছ?"

দিদা আর অভি বাড়ির দিকে হাটা লাগায়, পেছনে পশ্চিম দিগন্তের আড়ালে সূর্যি ডোবে। পুব আকাশে ঘনিয়ে আসে রাতের অন্ধকার। সন্ধ্যে হয়ে এসেছে গ্রামের আকাশে বাতাসে। দুরে কোথাও কোন বাড়ি থেকে শঙ্খের আওয়াজ শোনা যায়। গ্রামের কোন বধু তুলসি তলায় সন্ধ্যে প্রদিপ দিচ্ছে। বাতাসে ধুপ ধুনর গন্ধ যেন, অভির মন আনমনা হয়ে যায়। দিদার সাথে পুজোর ঘরে গিয়ে দিদার পেছনে বসে যায়।

সন্ধ্যে প্রদিপ দেওয়ার পরে দিদা ওর দিকে তাকিয়ে বলে, "ছোট্ট কুট্টি ছিলিস তুই, আর ঠিক এই রকম ভাবে সন্ধ্যে প্রদিপের সময়ে আমার পেছনে বসে থাকতিস। পুজো শেষ হলে তুই ছোটো ছোটো হাত বাড়িয়ে মিষ্টি আর প্রসাদ চাইতিস।"

অভি ডান হাত বাড়িয়ে দেয় দিদার দিকে, "আজ আমাকে প্রসাদ দেবে না দিদা?"

অভির মুখের দিকে তাকিয়ে চোকের কোনে জল চলে আসে দিদার। ঠাকুরের থালা থেকে প্রসাদের মিষ্টি তুলে অভির মেলে ধরা হাতে দেয়।

প্রসাদ খেতে খেতে নিচে নেমে আসে অভি। শশাঙ্ক মামা, সুমন্ত মামা ফিরে এসেছেন নিজের নিজের কাজ থেকে। সুব্রত কে দেখা গেল না, ওদের সাথে। বাড়ির বারান্দায় বসে সবাই মিলে গল্প শুরু করে দেয়। অভির মন থেকে থেকে পরীর খোঁজ করে, কিন্তু পরীর দেখা নেই।

কিছু পরে মেঘনা মুরি, সরষের তেল আর পেয়াজ নিয়ে আসে ওদের জন্য। শহরের লোক মুড়ির স্বাদ ভুলে গেছে, তারা বিকেলে চায়ের সাথে পাউরুটি খায় বা কেক খায়। অভির জিবে বাড়ির ভাজা মুড়ি যেন অমৃতের মতন মনে হয়। মুড়ি খেতে খেতে অভির মন আনন্দে ভরে ওঠে, কত কাল পরে মুড়ি খাচ্ছে অভি।

কোথা থেকে দুষ্টু দৌড়ে আসে ওকে দেখে। ছোটো দুষ্টু, অনেকদিন পরে ওর পরী পিসির সাথে দেখা হয়েছে। চোখে মুখে যেন হাজার প্রশ্ন নিয়ে অভির দিকে তাকিয়ে থাকে, শিশু হৃদয়।

দুষ্টু, "তোমাকে অভি কাকু বলে ডাকবো?"

শশাঙ্ক মামা ওর কথা শুনে হেসে ফেলে, দুষ্টু কে বলে যে অভি ওর কাকু নয় ওর দূর সম্পর্কের দাদা হয়। বিশ্বাস করে না দুষ্টু, দাদা কি এত বড় হয় নাকি?

দুষ্টু, "না, তোমরা মিথ্যে কথা বলছ আমাকে। দাদার কি এত বড় হয় নাকি? দাদার চোখে চশমা থাকে না। আর দাদা যদি হল তাহলে পরী পিসি কে নাম ধরে ডাকে কেন?" ওর শিশু হৃদয়ের প্রশ্ন শুনে সবাই হেসে ফেলে। দুষ্টু অভিকে জিজ্ঞেস করে, "তুমি গল্প জানো? ভুত পেত্নির গল্প, রাজা রানীর গল্প?"

অভি, "হ্যাঁ আমি অনেক গল্প জানি।"

দুষ্টু, "আজ রাতে আমায় গল্প বলবে?"

অভি, "নিশ্চয় বলব, তবে তাঁর আগে তোকে কলেজের পড়াশুনা শেষ করতে হবে, তাই ত।"

দুষ্টু, "ঠিক আছে, আমি পড়াশুনা করে নেই, তারপরে কিন্তু আমাকে গল্প শুনাতে হবে। শুয়ে পরোনা যেন।" বলেই ওর মায়ের কাছে দৌড়ে চলে গেল কলেজের পড়াশুনা শেষ করতে।

অভি লক্ষ্য করল যে বাড়ির মাঝে দেয়াল উঠে গেছে, সবার আলাদা আলাদা রান্না ঘর। দিদা সুমন্ত মামার সাথেই থাকেন। বাড়িতে লোকজন এলে তবে একসাথে খেতে বসা হয়, না হলে সবার উনুন আলাদা। অনেকদিন পরে সুমন্ত মামার স্ত্রীকে দেখতে পেল অভি। ভদ্রমহিলা খুব নরম হৃদয়ের মানুষ, বেশি লেখাপড়া করেননি তাই বিয়ের সময়ে তাঁর উপস্থিতি কম ছিল, আর সেই জন্য তার দিকে অভির নজর যায়নি। মামি কে দেখতে মা দুর্গার মতন, লাল পাড় সাদা শাড়ি আটপৌরে ভাবে পরে আছেন, কপালে বড় সিঁদুরের টিপ, সেই মাতৃময়ি মূর্তি বাড়ির সব বউমাদের থেকে আলাদা, যেন মন্দিরের দেবী।

অভি ছাদে উঠে গিয়ে একটা সিগারেট ধরায়। কিছু পরে পরী আর দুষ্টু ওর পেছনে এসে দাঁড়ায়। পরী ওর কাঁধে আলত করে টোকা দেয়। ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখে দুষ্টুকে কোলে করে পরী ওর পেছনে দাঁড়িয়ে। পরী ওর দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হেসে ফেলে, চোখের ভাষায় জিজ্ঞেস করে, "আমাকে মিস করছিলে?"

পরী ওকে বলে, "রাতে সবাই কিন্তু তাড়াতাড়ি খেয়ে নেয়। সবাইকে সকাল সকাল উঠতে হয় এখানে। সুমন্তদা ভোরবেলা মাঠে চলে যায়, আর বাড়ির বউমাদের বাড়ির কাজ থাকে। দেরি না করে ঠিক সময়ে নিচে খেতে চলে এসো।"

দুষ্টু তাঁর শিশু সুলভ গলায় বলে, "তুমি আমাকে গল্প না বলে শুয়ে পড়ো না কিন্তু?"

অভি ওদের কাছে গিয়ে দুষ্টুর মাথার চুলে বিলি কেটে পরীর চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, "আজ রাতে আমি তোকে একটা চোরের গল্প শুনাব, যে একটা সুন্দরী পরীকে চুরি করে পাহাড়ে পালিয়ে যায়।"

দুষ্টু, "এই রকম গল্প ত আগে শুনিনি, আমি ত শুধু রাজা রানীর গল্প শুনেছি।"

পরীর চোখে লাজুক হাসি, নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে, প্রেমের আবেগে দুচোখ চিকচিক করে ওঠে।

দুষ্টুর ছোট্ট নাকের ওপরে নাক ঘষে অভি ওকে বলে, "এটা একটা নতুন গল্প।"

আর ঠিক সেই সময়ে দুষ্টুর চোখ এড়িয়ে পরী আলতো করে অভির গালে চুমু খেয়ে নেয়।

পরী, "সিগারেট শেষ করে নিচে নেমে এস, খাবার বাড়া হয়ে গেছে মনে হয়।"

পরী দুষ্টুকে কোলে করে নিচে নেমে যায়, অভি ওর পেছনে আসে।

নিচে নামার সমেয়ে অভি পরীকে জিজ্ঞেস করে, "আমি কোন ঘরে থাকব?"

পরী পেছনে তাকিয়ে উত্তর দেয়, "তুমি রাতে আমার ঘরে শুয়ে পরো, আমি রাতে মায়ের সাথে শুয়ে পরবো।"

রাতের খাওয়ার সময়ে অভি লক্ষ্য করল যে ডাইনিং টেবিলে ছেলেদের বসার জায়গা করা হয়েছে আর কাঁসার থালা, বাটিতে খাবার বাড়া হয়েছে। অভির মনে হল, ডাইনিং টেবিলের সাথে কাঁসার থালা মানাচ্ছে না, দিদাকে অনুরোধ করে মাটির ওপরে পিঁড়ি পেতে বসতে দিতে। ওর কথা শুনে সবাই একটু অবাক হয়ে যায়।

শশাঙ্ক মামা ওকে বলে, "তুমি সহরে থাক, তাও তুমি মাটির খুব কাছের মানুষ।"

মাটির ওপরে পিঁড়িতে বসে খাওয়া শুরু করে, অভির পাসে দিদা হাত পাখা নিয়ে বসে। আতিথিয়েতা দেখে অভি আপ্লুত হয়ে ওঠে। দিদাকে জিজ্ঞেস করে, "এত ব্যাবস্থা কেন, আজ কি কোন উৎসব আছে বাড়িতে?"

দিদা, "আমার হারানো নাতি আমার কাছে ফিরে এসেছে, এর চেয়ে বড় উৎসব কি হতে পারে।"

বড় মামি আর পরী খাবার বেড়ে দিচ্ছিল, মেঘনা খাবার এগিয়ে দিচ্ছিল রান্না ঘর থেকে আর মৈথিলী রান্না ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে ছিল চুপ করে। অভিদের সাথে সুব্রতও খেতে বসে ছিল কিন্তু এক কোনায়, খাবার সময়ে খুব চুপচাপ ছিল সুব্রত। পরী ওকে জানাল, পুকুরের মাছ, ক্ষেতের চাল আর ডাল, বাড়ির গরুর দুধ, যা খাবার তৈরি তাঁর বেশির ভাগ ওদের বাড়ির। জীবনের প্রথম বার অভির মনে হল এই রকম ভাবে ওকে কোন আত্মীয় আদর করে খাইয়েছে।

খাবার পরে পরী ওকে নিজের ঘরে নিয়ে যায়। বিছানার ওপরে বসে পরীর কোমর জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নেয় অভি। পরী আদর করে ওর গলা দুহাতে জড়িয়ে ধরে, মিষ্টি হেসে ওর মুখের দিকে তাকায়। অভি নিস্পলক চোখে ওর কাজল কালো চোখের পানে তাকিয়ে থাকে।

পরী ফিসফিস করে বলে, "আমাকে ছাড় এবারে, খেয়েদেয়ে মায়ের সাথে শুতে যেতে হবে আমাকে।"

অভি, "একটা ছোট্ট চুমু দিয়ে যাও আমাকে।"

পরী মৃদুকনে বলে, "আগে খেয়ে নেই তারপরে দেখব।"

আরও কাছে টেনে নেয় অভি, নাকে ভেসে আসে এক অজানা ঝাঁঝাল ঘ্রান। ভুরু কুঁচকে তাকায় পরীর দিকে। পরী ওর কানেকানে বলে, "আমার সাইকেল শুরু হয়েছে।"

অভি, "মানে? সেত তিনদিন পরে হওয়ার কথা।"

পরী অবাক হয়ে যায় অভির কথা শুনে, মাথায় একটা গাট্টা মেরে জিজ্ঞেস করে, "শয়তান ছেলে, তুমি আবার অইসব দিন গোনো নাকি?"

অভি পরীর নাকে নাক ঘষে দেয়, "তোমার নাড়ীর খবর যে আমাকে রাখতে হয় সোনা। যাই হোক বাড়ি ফিরে গায়নকলজিস্ট দেখাতে হবে।"

অভি মাথা উঁচু করে পরীর ঠোঁটের দিকে ঠোঁট এগিয়ে নিয়ে যায়। পরীর ঠোঁট নিচে নেমে আসে, আলতো করে ছুঁয়ে যায় দু’জোড়া ঠোঁট। ঠিকভাবে চেপে ধরার আগেই দুষ্টু দৌড়ে ঘরে ঢুকে পরে আর ওদের ওপরে যেন একটা বাজ পরে। সঙ্গে সঙ্গে দুজনে পৃথক হয়ে দাঁড়ায়।

দুষ্টু এক লাফে বিছানায় উঠে অভির বালিশের পাসে একটা বালিস নিয়ে শুয়ে পরে। খিলখিল করে হেসে অভিকে আব্দার করে বলে, "এবারে সেই চোর আর পরীর গল্প বল।"

পরী অভির দিকে চোখ টিপে ইশারা করে, "নাও এবারে সামলাও, আমি চললাম।" দুষ্টুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, "অভি কাকু কে বেশি বিরক্ত করিস না কিন্তু।"

পরের দিন এগারটা নাগাদ অভি বড় মামির রান্না ঘরে ঢোকে। বড় মামি একটা থালায় ভাত আর একটা বাটিতে ডাল বাড়ছিলেন। অভি মামি কে জিজ্ঞেস করে যে কার জন্য খাবার নেওয়া হচ্ছে। সুমন্ত মামার জন্য মাঠে খাবার নিয়ে যেতে হয় মামি কে তাই মামি খাবার বাড়ছেন। অভি মামির সাথে মাঠে যাবার জন্য জেদ ধরে। মামি ওর কথা শুনে অবাক হয়ে বলেন যে এই দুপুর রোদে ও যেতে পারবে না।

অভি, "বুকে ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা থাকলে, গ্রীষ্মের রোদ চাঁদের আলোর মতন মনে হয় মামি।"

মমতা ভরা হাসি নিয়ে বড় মামি বলেন, "তুমি সত্যি দুষ্টু ছেলে, চলো তাহলে।"

দিদা আর পরী ওকে জিজ্ঞেস করে কোথায় যাচ্ছে, উত্তর দেয় অভি যে সুমন্ত মামার জন্য খাবার দিতে বড় মামির সাথে মাঠে যাচ্ছে। পরী একটু মাথা নাড়ায়, হে ভগবান, কি ছেলেরে বাবা।

যেতে যেতে অভি বড় মামি কে জিজ্ঞেস করে, "তোমার কোন ছেলে পুলে নেই তাই না?"

ব্যাথিত হয়ে ওঠেন মামি, "হ্যাঁ, শারিরিক কিছু অসুবিধে আছে তাই।"

অভি, "সুব্রতর বিয়ের সময়ে তোমাকে দেখিনি কেন?"

বড় মামির চোখের কোনে চিকচিক করে ওঠে, "আমি গেঁয়ো চাষার বউ, তোমার ইন্দ্রানি মাসি বাঁ চন্দ্রানি মাসির মতন বড়লোক নই আমি, আমার বর চাষা, শশাঙ্ক বাঁ সুব্রতর মতন পড়াশুনা করতে পারেনি।"

অভি বড় মামি কে মাঠের মাঝে দাঁড় করিয়ে বলে, "কে বলেছে তুমি গরিব মানুষ? তুমি ত এ বাড়ির দেবী অন্নপূর্ণা। ছাড় অসব কথা, মামার কাছে চলো।"

শাড়ির আঁচলে চোখের কোল মুছে অভির দিকে তাকিয়ে ম্লান হাসেন বড় মামি। আরও কিছু দূর হাঁটার পরে অভি বড় মামি কে জিজ্ঞেস করে, "তুমি পরীকে খুব ভালোবাসো তাই না।"

মাথা নাড়ায় বড় মামি, "হ্যাঁ, বাড়ির ছোটো মেয়ে, আর আমি আমার ছোটো বেলা ওর মধ্যে দেখতে পাই তাই।"

অভি, "পরী চলে গেছে বলে দুঃখ হয়, তোমার?"

বড় মামি, "না দুঃখ বিশেষ হয় না, যখন ভাবি যে এই পাঁক থেকে বেড়িয়ে গেছে তখন মন হালকা হয়ে যায়।"

অভি, "আমার বাড়ির দরজা তোমার জন্য সর্বদা খোলা, তুমি যখন চাইবে আমার বাড়িতে এসে পরীর সাথে দেখা করে যেও।"

বড় মামি, "পরীর জন্য মাঝে মাঝে দুঃখ হয়, সেই ছোটো বেলা থেকে ওর দিদিদের কাছে বকুনি খেয়ে বড় হয়েছে, তখন দুঃখ হয় এই ভেবে যে এই মেয়েটার কপালে আর কি আছে। বুকের মাঝে অনেক ব্যাথা লুকিয়ে রেখেছে পরী, ওর মিষ্টি হাসির পেছনে অনেক বেদনা লুকিয়ে আছে। এই প্রথম বার ওর মুখে এক শান্তির হাসি দেখছি, সেই ব্যাথা বেদনা যেন আর নেই ওর বুকে। জানিনা, কত দিন ওই হাসি, ওই আনন্দ পরীর সাথে থাকবে।"

অভি, "আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, আমি পরীর মুখের হাসি ম্লান হয়ে যেতে দেব না।"

বড় মামি কি বুঝলেন, জানেনা, তবে অভির দিকে তাকিয়ে সুন্দর হাসি দিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বললেন, "আমার জন্য নয়, ওর জন্য যেন কথাটা মনে রেখ।"

ক্ষেতের মাঝখান দিয়ে হেঁটে চলে অভি আর বড় মামি। কথায় কথায় বড় মামি, বাড়ির খবর জানান, ক্ষেতের আলু পটল চিনিয়ে দেন, আরও অনেক কিছু।

সেদিন বিকেলে, খাবার পরে দুষ্টু ওর কাছে দৌড়ে এসে জিজ্ঞেস করে যে অভি মাছ ধরতে জানে কিনা। অভি অবাক ওর কথা শুনে, মাথা নাড়ায় অভি, "না রে আমি কোনদিন মাছ ধরিনি।"

দুষ্টু একটু দুঃখ পায়, "ঠানু বলল যে তুমি নাকি ছোটো বেলায় সুব্রত কাকার সাথে পুকুরে গিয়ে মাছ ধরতে।"

অভি, "ঠিক আছে, একবার চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে।"

দুষ্টু লাফিয়ে ওঠে আনন্দে, অভি কাকুর সাথে মাছ ধরতে যাবে।

পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে অভি দুষ্টুকে জিজ্ঞেস করে, "হ্যাঁরে আমাদের ত ছিপ নেই, কি করে মাছ ধরব?"

দুষ্টু দুষ্টু এদিক ওদিকে তাকিয়ে হেসে বলে, "এখানে কেউ আসবে না এখন, আমরা পুকুরে নেমে মাছ ধরব।"

অভি হেসে ফেলে ওর কথা শুনে, "ধুর বোকা ছেলে, জামা কাপড় ভিজে যাবে ত।"

দুষ্টু খিলখিল করে হেসে ওঠে, "না না, আমরা জামা কাপড় খুলে পুকুরে ঝাপ দেব।"

অভি আর দুষ্টু চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়, কেউ ওদের দেখছে না ত। তারপরে দুজনেই জামা কাপড় খুলে শুধু মাত্র জাঙ্গিয়া পরে দাঁড়িয়ে থাকে। দুজনেই দুজনকে দেখে হেসে ফেলে। অভি এক লাফে জলে ঝাপ দেয়। দুষ্টু আম গাছে চড়ে, একটা বাঁকা ডাল থেকে পুকুরে ঝাপ দেয়।

দুষ্টু অভিকে বলে, "তুমি পুকুর পাড় থেকে ঝাপ দিচ্ছ কেন? গাছের ডাল থেকে ঝাপ দাও আরও মজা লাগবে।"

অভি, "গাছের ডাল থেকে কি করে?"

দুষ্টু আবার আম গাছে চড়ে যায়, তারপরে ঝাপ লাগায়, বুকের কাছে হাঁটু ভাঁজ করে নিয়ে জলের মধ্যে ঝপাং করে পরে যায়। ওর দেখাদেখি অভিও গাছে উঠে ডাল ধরে ঝুলে জলে ঝাপ দেয়। পুকুরে নেমে বেশ কিছুক্ষণ ওরা খালি হাতে মাছ ধরার চেষ্টা করে, কিন্তু মাছ ওদের নাগালে আসে না, বার বার পিছলে পালিয়ে যায়।

দুষ্টু ওকে একটা উপায় বলে, "জামা দিয়ে একটা জাল বানিয়ে আমরা মাছ ধরলে কেমন হয়।"

অভি মাথা নাড়ায়, "ভালো হয়।"

জামায় গিঁঠ বেঁধে, জাল বানিয়ে অনেক চেষ্টা করার পরে একটা মাছ ওদের জামায় ধরা পরে। অভি মাছ টাকে দুষ্টু হাতে দেয়। জল থেকে বেড়িয়ে মাছ খাবি খেতে থাকে, বারে বারে পিছলে যায় দুষ্টু ছোটো ছোটো হাতের মুঠি থেকে। দুষ্টু আরও শক্ত করে ধরে থাকে মাছ।

কিছু পরে উদাস হয়ে মাছের দিকে তাকিয়ে বলে, "মাছটা বড় খাবি খাচ্ছে কাকা, জলে ছেড়ে দেই একে।"

অভি ওর ভেজা চুলে আঁচড় কেটে বলে, "ছেড়ে দে।"

দুষ্টু মাছটা জলের মধ্যে ছেড়ে দিতেই হাত ফস্কে মাছ সাঁতরে পালিয়ে যায়।

পুকুর পাড়ে বসে থাকে দুষ্টু আর অভি যতক্ষণ না ওদের জাঙ্গিয়া শোকায়। ওদিকে পশ্চিম আকাশে সূর্য ঢলে পড়েছে।

দুষ্টু শিশু সুলভ গলায় অভিকে জিজ্ঞেস করে, "পরী পিসি কে আমার কাছ থেকে কেন নিয়ে গেছ তুমি?"

অভি ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "কে বলেছে যে আমি তোর পরী পিসিকে নিয়ে গেছি?"

দুষ্টু, "হ্যাঁ ত, তুমি নিয়ে গেছও ত। পরী পিসি এখন তোমার বাড়িতে থাকে যে।"

অভি হাসি থামাতে পারে না, "আমার বাড়িতে থাকে পরী পিসি, তাঁর মানে এই নয় যে আমি তোর পরী পিসিকে নিয়ে গেছি।"

দুষ্টু উৎসুক হয়ে তাকিয়ে থাকে অভির মুখের দিকে, "বাঃ রে, তুমিই ত নিয়ে গেছ। এই দেখ না, সুব্রত কাকার সাথে মৈথিলী কাকি যেমন আমাদের বাড়িতে এসে থাকে, এখন এটাই ত কাকির বাড়ি, তাই না।"

অভি উত্তর দেবার ভাষা খুঁজে পায় না, এই নিষ্কলঙ্ক নিশপাপ শিশু হৃদয়কে কি বলে বুঝাবে।
Like Reply
#57
দাবার ৬৪ ছক (#02)

অভি ওর মাথার চুল আঁচড়ে বলে, "পরী পিসি কে খুব মনে পরে, তাই না?"

অভির কোল ঘেঁসে বসে দুষ্টু, "হ্যাঁ, পরী পিসিকে খুব মনে পরে আমার। আমার সাথে খেলত, আমাকে খাইয়ে দিত, আমার চুল আঁচরে দিত, স্নান করিয়ে দিত আমাকে। ঘুম না পেলে গান গেয়ে ঘুম পারিয়ে দিত পরী পিসি। পিসি চলে যাবার পরে আমার খুব একা একা লাগে।"

বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে সেই ছোট্ট ছেলেকে, "তোর পরী পিসি কোথাও যায় নি।"

ছোটো বুকের বাম দিকে আদর করে হাত রেখে অভি ওকে জানায়, "তোর পরী পিসি সর্বদা এখানে থাকবে।"

দুষ্টু ওর কথা শুনে মিষ্টি হেসে জিজ্ঞেস করে, "পরী পিসির সাথে দেখা করার জন্য আমি তোমার বাড়ি যেতে পারি?"

অভির গলা ধরে আসে, "হ্যাঁ বাবা, তুই যখন খুশি আমার বাড়িতে আসতে পারিস। সারা জীবন আমার বাড়ির দরজা তোর জন্য খোলা।"

আনন্দের আবেগে দুষ্টু ওর গলা জড়িয়ে ধরে শক্ত করে, "তুমি না আমার সব থেকে ভালো কাকু, অভি কাকু।" নিশকলঙ্ক নিষ্পাপ সেই মিষ্টি হাসি দেখে অভির মন আনন্দে ভরে ওঠে।

সূর্য বেশ খানিখন আগেই ডুবে গেছে। মাথার ওপরে পাখীর কিচির মিচির, বাসায় ফিরে যাওয়ার তাড়া সবার। জামা কাপড় শুকিয়ে গেছে ওদের। জামা কাপর পরে বাড়ি ফিরে আসে ওরা, সারাটা পথ, অভির হাত আঁকড়ে ধরে থাকে দুষ্টু। বাড়িতে ঢুকেই পরী কে দেখে লাফিয়ে কোলে চড়ে যায় আর কানে কানে কিছু বলে। পরী অভির দিকে উৎসুক চোখে তাকিয়ে দুষ্টুর কথা শুনে হেসে ফেলে।

পরী ওকে বলে, "হ্যাঁ রে, তুই যখন তখন আমার বাড়িতে আসতে পারিস।"

বাড়িতে অভির উপস্থিতি যেন আবহাওয়াকে ভারী করে তুলেছে। বিশেষ করে সুব্রত আর অভির মধ্যে যে একটা মনমালিন্য চলছে সেটা দিদা আর সুমন্ত মামার চোখ এড়ায় না। এক বিকেলে সুমন্ত মামা আর অভি বারান্দায় বসে মুড়ি আর চা খাচ্ছিল, সুমন্ত মামা ওকে জিজ্ঞেস করেন, "তুমি সুব্রতর বিয়ের সময়ে ওর সাথে সারা রাত ছিলে, তাই না?"

চায়ের কাপে ছুমুক দিয়ে অভি জানায়, "হ্যাঁ ছিলাম।"

সুমন্ত মামা, "তোমাদের মধ্যে কি হয়েছে, তোমরা দুজনে এঁকে ওপরের সাথে ঠিক করে কথা বলছ না কেন? বউমাকেও তোমার সামনে বের হতে দেখলাম না, কি ব্যাপার?"

অভি ভেবে পায় না কি উত্তর দেবে। চা মুড়ি খাওয়া ভুলে যায় অভি, কিছুক্ষণ মামার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, বুঝতে চেষ্টা করে যে মামা কত টুকু খবর জানেন।

তারপরে অভি চালাকি করে উত্তর দেয়, "হয়ত আমার কোন কথায় একটু বোঝার ভুল হয়ে থাকবে, আমি আমার দিকে থেকে ঠিক আছি। অপেক্ষা করছি ও কখন আমার সাথে কথা বলে। যদি কিছু ভুল বোঝা বুঝি হয়ে থাকে তাহলে নিজেদের মধ্যে পরিষ্কার করে নেওয়া ভালো।"

সুমন্ত মামা মাথা দোলায়, "ঠিক কথা, এখুনি ওকে ডেকে কথা বলা যাক।"

তারপরে সুমন্ত মামা চেঁচিয়ে সুব্রত কে ডাক দেয়, "সুব্রত বারান্দায় আয় একবার, তোর সাথে কিছু কথা আছে।"

সুমন্ত মামার আওয়াজ শুনে হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে আসে সুব্রত, এসেই দেখে দাদার পাসে অভি বসে। ওকে দেখে কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সুব্রত। দু’চোখে ভয় আর বিতৃষ্ণা। গলা শুকিয়ে এসেছে সুব্রতর, ধির পায়ে সুমন্ত মামার কাছে এসে দাঁড়ায়।

ভয়ার্ত গলায় মাথা নিচু করে সুমন্ত মামাকে জিজ্ঞেস করে সুব্রত, "কি হয়েছে দাদা?"

সুমন্ত মামা একবার অভির দিকে তাকায় তারপরে সুব্রতর দিকে তাকিয়ে বলে, "তুই অভির সাথে কথা বলছিস না কেন? তোদের মধ্যে কোন মনোমালিন্য হয়েছে নাকি?"

অভি অনুধাবন করে যে এখুনি সুব্রতকে বিব্রত করা বিচক্ষণের কাজ নয়। অভি সুব্রতর দিকে এগিয়ে গিয়ে কাঁধে হাত দিয়ে হেসে বলে, "কিছু হয়নি, তাই না মামা। সব ঠিক আছে।"

সুমন্ত মামার দিকে তাকিয়ে বলে, "সুব্রত হয়ত সময় পায়নি কথা বলার, নতুন নতুন বিয়ে হয়েছে তাই, বউকে নিয়ে ব্যাস্ত আছে।"

অভির কথা শুনে সুব্রতর বুকের থেকে এক বিশাল পাথর সরে যায়, স্বস্তির শ্বাস নেয় সুব্রত। কৃতজ্ঞতা ভরা চোখ নিয়ে অভির দিকে তাকিয়ে ওখান থেকে চলে যায়।

কিছু পরে সুমন্ত মামা অভিকে জিজ্ঞেস করেন, "পরী তোমাদের বাড়িতে ঠিক আছে ত?"

অভি সুমন্ত মামার দিকে তাকিয়ে বলে, "আমার বাড়ি আর কোথায়, এখন ত ওটা পরীর বাড়ি। মাকে ছোটো মা বলে ডাকে বাবা কে বাবু।"

সুমন্ত মামা, "আমি কাউকে ঠিক ভাবে দেখতে পারিনি সেই সময়ে। কি করব, বাবা মারা যাওয়ার পরে, আমাকেই কাজে নামতে হয় পেটের ভাত যোগাড় করার জন্য। আমি যখন সময় পেলাম মাথা তুলে তাকানোর, ততদিনে আমার সেই মিষ্টি ছোট্ট বোন অনেক বড় হয়ে গেছে। মাথা তুললাম বটে, কিন্তু আমার কথা আর কেউ শোনেনা। এই পৃথিবী কাঁচের ঝকমকি তে উজ্জ্বল, অভি। আসল হীরের মর্যাদা বোঝে না, আসল হীরে ত চমকায় না, না কাটা পর্যন্ত শুধু একটা সাদা পাথর মাত্র। কিন্তু কাঁচ, কাটা হোক, বা আস্ত হোক, সর্বদা চমকায়।"

অভি, "এসব কথা কেন বলছ মামা?"

সুমন্ত মামা, "তোমার মা, উলুপি দি আর আমাদের পরিবার। আমাদের মাঝে রক্তের বিশেষ কোন সম্পর্ক নেই হ্যাঁ, অনেক দূর সম্পর্কের দিদি হন উলুপিদি। এই বাড়িতে থাকতেন কেননা তুমি তখন অনার পেটে আর অনার কলেজ এখানে তাই। সেই সম্পর্ক না থাকার পরেও তিনি যা করেছেন সেই সময়ে আমাদের নিজের কোন আত্মীয় আমাদের জন্য করেনি।"

অভি, "মামা, ছাড়ো অসব কথা, পরী এখন ভালো আছে, আনন্দে আছে।"

সুমন্ত মামা, "হ্যাঁ ওর মুখের হাসি দেখে মনে শান্তি লাগে। তবে ভয় হয়, কতদিন ওই হাসি ওর মুখে থাকবে।"

অভি, "কেন? হাসি কেন চলে যাবে, এই রকম কেন ভাবছ তুমি?"

সুমন্ত মামা, "মেয়ে হয়ে জন্মেছে, একদিন না একদিন বিয়ে করে পরের বাড়ি চলে যাবে। কে জানে, ভাগ্য বিধাতা কি লিখে গেছে ওর কপালে।"

অভি, "ওর মুখে হাসি ফুটুক, এটা তুমি চাও, এইত।"

সুমন্ত মামা মাথা নাড়ায়, "হ্যাঁ।"

অভি বলে, "ও যেখানে আছে এখন বড় ভালো আছে, শান্তিতে আছে। তুমি চিন্তা করোনা, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।"

সুমন্ত মামা, "অভি, এই পৃথিবী বড় নিষ্ঠুর।"

অভি, "মামা আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, আমি যতদিন ওর পাশে আছি ততদিন ওর কিছু হতে দেব না।"

মামা কি বুঝল জানেনা, ম্লান হেসে অভিকে বললেন, "কতদিন, কতদিন থাকবে ওর পাশে, তুমি? এক না এক দিন ত বিয়ে করে ওকে চলে যেতে হবে।"

মনে মনে বলে অভি, "না মামা, পরী কোনদিন আমার চোখের সামনে থেকে যাবেনা, তুমি একবার বল, আমি কোনদিন ওকে আমার চোখের সামনে থেকে সরিয়ে দেব না।"

সুমন্ত মামাকে মজা করে বলে, "মামা, চিন্তা করোনা, পরী কোথাও যাবে না, সর্বদা তোমার ছোটো বোন, তোমার বুকের কাছেই থাকবে। যেখানেই থাকুক না কেন, বড় সুখে থাকবে ও।"

একদিন রাতে, অভি ছাদে উঠে সিগারেট টানছিল। মাথার ওপরে অন্ধকার, গাড় নীল আকাশের বুকে অজস্র নক্ষত্র জ্বল জ্বল করছে। গীষ্মের রাতের দখিনা বাতাস ওর মন বিচলিত করে তোলে। বাড়ির সবাই হয়ত এতক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে, সময় প্রায় মধ্যরাত্রি। অভি দিগন্তের দিকে তাকায়, দিগন্তে কালো কালো নারকেল গাছ যেন ভুতের মতন মাথা দুলিয়ে ওকে কাছে ডাকে। পাশে কোথাও কোন বাঁশ ঝাড়ের ভেতর থেকে শেয়ালের ডাক শোনা যায়। বাড়ির পাশের ঝোপ থেকে একটানা ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। দুরে রাস্তার মোড়ে একটা কুকুর ডেকে ওঠে মনে হয় বিড়াল দেখে তাড়া করেছে কুকুরটা।

সিগারেট শেষে, অভি সিঁড়ির দিকে পা বাড়াতেই সামনে পরীকে দেখে অবাক হয়ে যায়। আকাশের বাঁকা চাঁদের মৃদু আলোয় পরীর সুন্দর মুখ যেন গাঁদা ফুলের মতন দেখায়। পরী ওর দিকে হেসে বলে, "কি রে দুষ্টু ছেলে, ঘুম আসছে না?"

অভি পরীর মাথার চুল মুঠি করে ধরে নিয়ে নিজের দিকে টেনে আনে, "শয়তান হাড়গিলে, তোরও ত ঘুম আসছে না।"

ছাদে উঠে, ছাদের এক কোনে পরীকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। নরম পেটের ওপরে আদর করে অভি আর পেছনে মাথা হেলিয়ে ওর হাত দুটি ধরে দাঁড়িয়ে আদর খায় পরী। অনেকক্ষণ ধরে এঁকে অপরকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে রাতের আকাশের অপরূপ দৃশ্যে হারিয়ে যায়।

মৃদুকনে বলে পরী, "এত রাতে ছাদে কি করছিলে?"

গালে গাল ঘষে উত্তর দেয়, "তোমার ও ত ঘুম আসছিল না, কেন জেগে?"

পরী, "সিঁড়ি তে তোমার পায়ের শব্দ শুনে দেখতে এলাম তুমি কি করছ।"

অভি, "মিথ্যে বোলনা সোনা, পায়ের শব্দে তোমার ঘুম ভাঙ্গেনি। তুমি আগে থেকেই জেগে ছিলে, তাই না?"

পরী ওর বাঁধা হাতের মাঝে ওর দিকে মুখ ফিরিয়ে বুকের ওপরে হাত রেখে চোখের দিকে তাকায়। পরীর চোখের দিকে তাকিয়ে অভির মনে সংশয় জাগে, পরীর দু’চোখে সংশয়ের ছায়া। অভি ভুরু কুঁচকায় পরীর দিকে তাকিয়ে, "কি হল?"

পরী উত্তর দেয়, "মৈথিলী তোমার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করছিল। আমাকে কিছু বলতে চাইছিল, কিন্তু কিছু কারনে বলতে পারছিল না।"

অভি, "পুরো ব্যাপারটা বলবে কি আমাকে?"

পরীকে নিবিড় করে টেনে নেয় বুকের কাছে, "তোমার মনে ভেতরে এত চাপা উত্তেজনা কেন?"

পরী কাঁপা গলায় উত্তর দেয়, "তোমার আর সুব্রতদার ব্যাবহারের জন্য আমি চাপা উত্তেজনায় ভুগছি। তুমি কি নিজে বুঝতে পারছ না, তুমি আসার পর থেকে এক বারের জন্যেও ওরা দুজনে তোমার সামনে আসেনি।"

দীর্ঘ এক শ্বাস ছেড়ে বলে, "ওরা আমার সামনে আসেনি ত আমি কি করতে পারি তাঁর জন্য।"

পরী অভির চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, "তুমি নিজে গিয়ে ওদের সাথে কথা বলতে পার ত।"

অল্প বিরক্ত হয়ে ওঠে অভি, বাহুর বাঁধন আলগা করে নেয় পরীর কোমরের থেকে, "আমি কেন আগ বাড়িয়ে কথা বলতে যাবো? আমি যদি আগ বাড়িয়ে ওদের সাথে কথা বলতে যাই তাহলে মনে হবে যেন আমি দোষী। আমি ত কিছু করিনি।"

পরী ওর আলিঙ্গন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে একটু দুরে দাঁড়িয়ে ওকে বলে, "মেঘনা বৌদি আর মা, তোমাদের দুজনের মধ্যের এই ব্যাবধান নিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করছিল। আমি কি উত্তর দেব ওদের?"

আরও একটা সিগারেট জ্বালায় অভি, বুক ভরে ধোঁয়া নিয়ে, "মৈথিলী তোমাকে কি বলেছে বাঁ কি বলতে চেয়েছে?"

পরী, "কিছু একটা বলতে চেষ্টা করছিল আমাকে, তবে কিছু না বলে শুধু আমাকে বলল যে, অভিকে বলে দিও আমি খুব অনুতপ্ত। আমি ওকে জিজ্ঞেস করি যে কি ঘটনা ঘটেছে। তাঁর উত্তর আমাকে শুধু বলল যে ও তোমার সামনে আসতে পারবে না। ওর মুখের পরিতাপের ছায়া ছিল।"

পরীর কথা শুনে মাথা গরম হয়ে যায় অভির, "কি দরকার ছিল ওর ঘরে যাওয়ার?"

পরী বিরক্ত হয়ে ওঠে অভির বকুনি শুনে, "আমি কি করতে পারি। আমাকে ত দেখাতে হবে যে আমি কিছু জানিনা। তুমি কেন কিছু না বুঝেই চেঁচাতে শুরু করে দাও আমার ওপরে?"

অভি দেখল যে প্রেয়সী রেগে উঠেছে, হাত ধরে কাছে টেনে নেয় পরীকে, "ঠিক আছে যেকোন একদিন রাতে আমার সাথে দেখা করতে বল। আর হ্যাঁ, ওয়াকম্যানটা আনতে ভুলবে না, আর তুমি আমার সাথে সেখানে উপস্থিত থাকবে।"

পরী ওর মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "আমি কেন? তুমি ওদের সাথে কথা বলবে, হয়ত আমি থাকলে ওরা ঠিক ভাবে খুলে কথা বলতে পারবে না।"

অভি দাঁতে দাঁত পিষে বলে, "ওই বেশ্যা মেয়েছেলেটা আমার সামনে কাপড় খুলে দাঁড়াতে পারে আর তোমার সামনে কথা বলতে পারবে না? আমি ওই শুয়োর টাকে আর ওর নিচ বউকে উচিত শিক্ষা দেব, চিরকাল মনে রাখবে।"

পরী অভির গালে আদর করে চাঁটি মেরে বলে, "আরে এত রেগে যায় না, মাথা ঠাণ্ডা করও আর শুতে চলো।" অভির ঠোঁটে চুমু খেয়ে দুজনে শুতে চলে আসে।

দিদার বাড়িতে অভিদের বেড়ানোর দিন ফুরিয়ে আসে। বাবা মা রবিবার সকালের প্লেনে বম্বে থেকে ফিরে আসছে। শনিবার বিকেলের মধ্যে বাড়ি ফিরে যেতে হবে। কোলকাতা ফিরে যাবার ঠিক আগেরদিন, দিদা ঠাকুর ঘরে বসে সন্ধ্যে প্রদিপ দিচ্ছিলেন ঠাকুর কে। অভি চুপিচুপি এসে দিদার পেছনে বসে পরে। দিদা খুব মন দিয়ে একটা ধার্মিক বই পড়ছিলেন। সন্ধ্যে প্রদিপের আলোয় দিদার চোখের কোল চিকচিক করতে দেখে। বুকের মাঝে মোচর দিয়ে ওঠে অভির, দিদার ব্যাথা ভরা চোখ দেখে, ছোটো মেয়ের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ব্যাথা। পুজো শেষে দিদা বুঝতে পারেন যে অভি ওর পেছনে বসে আছে। ঘাড় ঘুরিয়ে অভির দিকে স্নেহ সুলভ দৃষ্টি তে তাকিয়ে দেখলেন।

সেই কুড়ি বছর আগেকার অভিকে যেন দেখতে পায় দিদা। অভি হাত বাড়িয়ে ধরে, "প্রসাদ দেবে না আমাকে?"

দিদা ওর দিকে মিষ্টি হেসে জিজ্ঞেস করেন, "কখন এলি তুই?"

অভি, "অনেক আগে। তুমি বই পড়তে এত ব্যাস্ত ছিলে তাই তোমাকে ব্যাঘাত করিনি।"

অভির হাতে সন্দেশর প্রসাদ দিয়ে জিজ্ঞেস করেন, "হ্যাঁরে, পরী তোদের বাড়িতে ঠিক করে থাকে ত?"

অভি, "তোমরা সবাই ওই রকম প্রশ্ন করও কেন বলত? ওটা ওর আরও একটা বাড়ি, এখানে যা করে ওখানেঅ তাই করে। তুমি ওর জন্য এত চিন্তা কেন করছ?"

দিদা ম্লান হেসে জিজ্ঞেস করেন, "কাল তোরা চলে যাবি। আবার কবে আসবি?"

অভি হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলে, "তোমার মেয়ের বাড়িতে যাবার জন্য তোমাকে জানিয়ে যেতে হবে নাকি? তুমি যখন খুশি যেতে পার। আমার মাও ত তোমার মেয়ের মতন।"

দিদা মাথা নাড়ায়, "না রে, উলুপি আমার মেয়ে নয় আমার বোনের মতন।"

অভি দিদাকে শান্তনা দেয়, "আহ দিদা ছাড়ো না ওই সব কথা, অন্য কিছু বলো।"

হেসে ফেলেন দিদা, "এই বুড়িটার কাছ থেকে আর কি চাস তুই?"

হাঁটু গেড়ে দিদার সামনে বসে পরে অভি, দিদার কুঁচকানো চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, "আমি একদিন এসে তোমার পুতুল চাইব।"

দিদা বুঝতে পারেনা অভির কথা। ঠাকুরের সিংহাসনে রাখা পিতলের লক্ষ্মী ঠাকুরের দিকে দেখিয়ে বলে, "কোনটা, এটা?"

হেসে ফেলে অভি, "দিদা, এটাও হতে পারে, অন্য কোন পুতুলও হতে পারে।"

দিদা মাথা নাড়িয়ে অভির মাথার চুলে হাত বুলিয়ে বলেন, "তুই কি যে হেঁয়ালি করছিস আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা। কিন্তু তুই যা চাইছিস সেটা যদি আমার সাধ্যের মধ্যে থাকে তাহলে আমি তোকে দিয়ে দেব। আমার অমুল্য রতন তুই।"

"দিদা, আমি তোমার মেয়ে, শুচিস্মিতাকে ভালবাসি, আমি তোমার কাছে সেই মোমের পুতুলের আব্দার করছি দিদা, দেবে আমাকে তোমার সাধের পুতুলের হাত।" না সে কথা অভির ঠোঁটে আসেনি, বুকের মাঝে থেকে গেছিল সেদিন, কোনদিন সেই কথা দিদাকে বলতে পারেনি অভিমন্যু।

খাওয়ার পরে পরী ব্যাগ ঘুছাতে ব্যাস্ত হয়ে পরে। অভি পেছন থেকে দেখে পরী কে আর মাঝে মাঝে খুনসুটি করে আদর করে দেয় পরীকে। ব্যাগ গুছান কম আর ছোটো বেড়াল ছানার মতন মারামারি করে বেশি। ব্যাগ গুছানোর পরে দিদার সাথে পরী শুতে চলে যায়।

অভির চোখে ঘুম আসেনা তাই বিছনায় বসে শরৎচন্দ্রের শ্রীকান্ত পড়তে বসে। ঠিক সেই সময়ে পরী দরজায় টোকা দিয়ে বিচলিত চোখে ঘরের মধ্যে ঢুকে পরে। ঢুকেই বালিশের তলায় কিছু একটা গুঁজে দেয়। অভি জিজ্ঞেস করাতে, ইশারায় জানায় যে বালিশের তলায় ও ওয়াকম্যান টা লুকিয়েছে। অভি জিজ্ঞেস করে এত বিচলিত কেন দেখাচ্ছে ওকে।

পরী উত্তর দেয়, "সুব্রত আর মৈথিলী তোমার সাথে কথা বলতে চায়।"

অভি ইশারায় বলে যে ওদের ভেতরে ডাকতে। রাত অনেক, বাড়ির সবাই শুয়ে পড়েছিল। সুব্রত মাথা নিচু করে ঘরের মধ্যে ঢুকে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকে। অভি ওর মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে যে কি বলতে চাইছে সুব্রত, মাথার মধ্যে রক্ত চড়ে গেছে ওর মুখ দেখে, কান গরম হয়ে গেছে অভির, রাগে।

সুব্রত মুখ নিচু করে মিনমিন সুরে বলে, "আমরা তোমার সাথে একা কিছু কথা বলতে চাই।"

দাঁতে দাঁত পিষে চশ্মার ওপর দিয়ে সুব্রতর দিকে তাকায় অভি। পরী একবার সুব্রতর দিকে তাকায় তারপর অভির দিকে তাকিয়ে ঘর থেকে বের হতে যায়। অভি ওকে থাকতে ইশারা করে, বিছানায় বসতে বলে। সুব্রতর দিকে তাকিয়ে রাগত সুরে বলে, "যা কিছু বলার আছে পরীর সামনে বল।"

সুব্রত চুপ করে থাকে। বালিশের নিচে হাত ঢুকিয়ে চুপি চুপি ওয়াকম্যান চালিয়ে দেয় অভি। গভমির সুরে দাতেদাত পিষে সুব্রতকে বলে, "চুপ কেন? কি বলার আছে বল?"

সুব্রত অভির দিকে তাকায় আর চাপা স্বরে বলে, "তোমার সাথে একা কথা আছে আমাদের। পরীর সামনে সে সব কথা বলা যাবে না।"

বিছানা ছেড়ে সুব্রতর সামনে উঠে দাঁড়ায় অভি, পরী কে নিজের পেছনে দাঁড় করিয়ে সুব্রতকে বলে, "পরী কোথাও যাবেনা। তোমার যা কিছু বলার আছে তোমাকে পরীর সামনেই বলতে হবে। কোন কিছু বোকাম করার চেষ্টা কোরো না।"

পরী অভির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, বুকের মাঝে দুরুদুরু করতে শুরু করে। পেছন থেকে অভির কাঁধ খামচে ধরে থাকে। পরীর তপ্ত শ্বাস ওর কাঁধ পুড়িয়ে দেয়।

কিছু পরে সুব্রত ওকে বলে, "যা কিছু ঘটে গেছে সব কিছু একটা বড় ভুল বুঝাবুঝির কারনে ঘটে গেছে।"

অভি রাগে কাঁপতে কাঁপতে সুব্রতর দিকে তর্জনী উঁচিয়ে বলে, "ভুল বোঝা বুঝির জন্য হয়েছ, মশকরা করার জায়গা পাওনি তুমি? কোন কিছু ভুল বোঝা বুঝি হয়নি, তুমি আর তোমার বেশ্যা বউ মিলে খুব মেপে জকে চাল খেলেছিলে। তুমি আগে থেকেই জানতে তোমার বউ কি করতে চলেছে আর তুমি ওকে বারন করনি, কেন করনি? তোমার বউ কোথায়, ডাকো ওকে?"

অভির মুখে বেশ্যা শুনে সুব্রত রেগে যায়, দাঁতে দাঁত পিষে অভির দিকে তাকায়। অভি ওর দিকে হাত মুঠি করে চাপা গর্জন করে ওঠে, "বেশি কিছু বললে এক ঘুসিতে নাক ফাটিয়ে দেব। শালা, তোমার মাথা দেয়ালে ঠুকে যাবে।"

সুব্রত চাপা স্বরে বলে, "তুমি আগে আমার বউয়ের দিকে পা বাড়িয়েছ। তুমি গান গেয়েছিলে আমার বউকে দেখে, সেটা ভুলে গেছ এখন?"

ঘাড় ঘুরিয়ে পরীর দিকে তাকায় অভি, তারপরে সুব্রতকে বলে, "আমি তোমার বউয়ের জন্য গান গাইনি। আর যদি গেয়ে থাকি, তাহলে মজা করে গেয়েছিলাম, তুমি মজাও বোঝনা? সত্যি কথাটা বল তো বাপু, তোমার বউ আমার পেছনে কেন পড়েছিল? এমনি এমনি ত এই সব হয়নি, এর মধ্যে কোন গুড় চাল লুকিয়ে আছে।"

সুব্রতর উত্তর অভি আর পরীকে কাঁপিয়ে দিল, শুনে ওদের বুক ঘৃণায় রিরি করে ওঠে। সুব্রত বলে ওদের কে, "বিয়ের কিছু দিন পরে মৈথিলী আমাকে আর অরুনিমাকে একসাথে দেখে ফেলে। অরুনিমা মৈথিলী কে বোঝায় যে এমন কোন মানুষের সাথে ও প্রেম করবে যাতে মৈথিলী নিজেও নিজের শরীরের ক্ষুধা মিটাতে পারে। যাতে আমাদের চারজনের মধ্যেই এই সব ঘটনা সিমিত থাকে।"

ওর কথা শুনে পরী ঘৃণায় থাকতে না পেরে অভির কাঁধের মাংসে নখ বসিয়ে দেয়। রাগে দুঃখে ওর চোখে জল এসে যায়, অভির পিঠের ওপরে কপাল ঠুকতে থাকে। সুব্রত আরও জানায় যে, "যখন তুমি গান গাইলে বা মৈথিলীর দিকে একটু ওই রকম ভাবে তাকালে তখন আমরা ভাবলাম যে তোমাকে আমাদের দলে টেনে নেই। কিন্তু আমরা মানুষ চিনতে বড় ভুল করে ফেলি। তুমি যাকেই ভালোবাসো, তাকে যে তুমি ভুলে যাও নি, সেটা অনেক বড়।"

সব কথা শুনে অভির মনে হল যেন, সুব্রতর মাথা ধরে দেয়ালে ঠুকে দেয়। চাপা গর্জন করে জিজ্ঞেস করে, "তোমার বউ কোথায়?"

সুব্রত, "দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে।"

অভি, "ভেতরে ডাকো।"

সুব্রত মৈথিলীকে হাত ধরে টেনে ঘরের মধ্যে নিয়ে আসে। মৈথিলীর দু চোখ বেয়ে অবিরাম জলের ধারা বয়ে চলে, মাটির দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকে মৈথিলী, মনে মনে মা ধরিত্রির কাছে প্রার্থনা জানায় যে "মা তুমি দ্বিধা হও, আমাকে তোমার কোলে টেনে নাও।"

সেই পরিতাপের অশ্রু অভির মন গলাতে পারেনা। বালিশের নিচে হাত ঢুকিয়ে ওয়াকম্যানটা বের করে এনে, সুব্রতর নাকের নিচে নাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, "জানো এটা কি?"

অভি, ওয়াকম্যান চালিয়ে ওদের সব কথা শুনিয়ে দেয়। স্বামী, স্ত্রীর দুজনের বুক শুকিয়ে যায় ভয়ে, সারা শরীর রক্তশূন্য হয়ে যায়, মনে হয় যেন চোখের সামনে নিজেদের মৃত্যু কে দেখছে।

সুব্রত কেঁদে ফেলে প্রায়, অভির হাত ধরে কাকুতি মিনতি করে, "দয়া করে আমার সাথে ওই রকম করোনা। আমার জীবন ধ্বংস হয়ে যাবে, আমরা মারা পড়ব।"

অভি হাথ ছাড়িয়ে নিয়ে সুব্রতকে জিজ্ঞেস করে, "একটা কারন বল, কেন আমি করব না।"

ঘরের মধ্যে মধ্য রাতের নিঝুমতা নেমে আসে, কারুর মুখে কোন কথা নেই। অভি অধির অপেক্ষা করে থাকে সুব্রতর উত্তরের জন্য। অনেকক্ষণ চুপ থাকার পরে অভি ওদের বলে, "তোমাকে আমার একটা কাজ করতে হবে।"

ভয়ে স্বামী স্ত্রী অভির দিকে তাকায়, আবার কি করতে বলে ওদের, সেই চিন্তায় মরমে যেন মরে যায়।

পরীর দিকে তাকায় অভি, তারপরে সুব্রতদের দিকে তাকায়। বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয় অভি, ওকে কিছু একটা পদক্ষেপ নিতে হবে, "সেই রাতে আমি যে গান গেয়েছিলাম, সেটা পরীকে দেখে গেয়েছিলাম। তোমার বিয়ের রাতে আমি থেকে গেছিলাম শুধু মাত্র পরীর জন্য। আমি পরীকে খুব ভালবাসি। তুমি ভালো ভাবে জানো, যে আমাদের পরিবারের মধ্যে কোন রক্তের সম্পর্ক নেই। কিন্তু যেহেতু আমার মা ওকে মেয়ের মতন দেখে আর পরী আমার চেয়ে দু বছরের বড়, সুতরাং আমাদের বিয়ের ব্যাপারে কোন বাড়ি মত দেবে না। সবাই আমাদের ভালোবাসা কে উপেক্ষা করবে। তোমার হাতে দু বছর আছে। পরী মাস্টার্স শেষ করবে আর ইতিমধ্যে আমাকে একটা ভালো চাকরি খুঁজতে হবে। এই দুই বছরের মধ্যে তোমাদের কে দুই বাড়িকে বুঝিয়ে রাজি করাতে হবে। কি করে করবে, আমি জানি না, তবে আমি ফল চাই। আমি যদি ওকে না পাই, তাহলে তোমাদের জীবন আমি নরক বানিয়ে দেব। দিদাকে আর সুমন্ত মামাকে সব বলে দেব, আমি রানাঘাটের মৈথিলীর বাড়ি চিনি, আর ঢাকুরিয়ায় অরুনিমার বাড়িও চিনি। সুতরাং আমার সাথে কোন রকমের চালাকি করার চেষ্টা করবে না।"

পরী অভির কথা শুনে কেঁপে ওঠে, "কি বলছে ও, কেন বলছে?"

হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে, "তোমার মাথার ঠিক আছে ত? কি বলছ তুমি?"

পরীর দিকে দেখে হেসে বলে, "আমি যা বলেছি ওদের সেটা করতে হবে, না করে ওদের আর কোন রাস্তা নেই, সোনা।" সুব্রত আর মৈথিলী যেন নিজেদের কান কে বিশ্বাস করতে পারছিল না যে অভিমন্যু, শুচিস্মিতাকে ভালবাসে, হাঁ করে ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে ওরা দুই স্বামী স্ত্রী।

অভি ওদেরকে বলে, "এতে অবাক হবার কিছু নেই, আমি ওকে ভালোবাসি। এখন যাও আমার ঘর থেকে, আমি বিশ্রাম নেব। আর হ্যাঁ, তোমার ওই শয়তান বউকে বেঁধে রেখ যেন, না হলে আমি কিন্তু তোমাদের জীবন নরক বানিয়ে দেবো।"

মাথা নিচু করে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে যায় সুব্রত আর মৈথিলী, যাবার আগে প্রতিজ্ঞা করে যায় যে অভির কথা ওরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে।

সুব্রত বেড়িয়ে যাবার পরেই পরী অভির গালে সপাটে এক চড় মেরে চাপা চিৎকার করে ওঠে, "তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে?"

অভির চোখের চশমা উড়ে বিছানার ওপরে গিয়ে পরে। অভি ওর হাত ধরে শান্তনা দেয়, রাগে কাঁপতে শুরু করে পরী। অভি পরীকে বুকের কাছে টেনে এনে বলে, "এত রাগ করছ কেন? আমার সাথে যেমন চাল চেলেছে আমি ও একই রকম চাল চেলেছি।"

পরী অভির বুকের ওপরে কিল মেরে ককিয়ে ওঠে, "একি করলে তুমি? এখন আমাদের কথা সবাই জেনে যাবে আর সর্বনাশ হয়ে যাবে।"

অভি, "কিছুই হবে না সোনা, বিশ্বাস করো। আমাদের কথা কাক পক্ষীতেও টের পাবে না, ওরা আমাদের কথা কাউকে জানাবে না, কেননা আমাদের হাতে ওদের প্রান ভ্রমর আটকে আছে।"

বুকের মাঝে মুখ লুকিয়ে প্রাণপণে জড়িয়ে ধরে অভিকে। অভি ওর পিঠে হাত বুলিয়ে আদর করে দেয়। বুকের ওপরে ঠোঁট চেপে আলতো চুমু খায় পরী, মৃদুকনে অভিকে জানায়, "আমি তোমাকে ভালোবাসি, সোনা, তোমাকে না পেলে আমি সত্যি মরে যাবো।"

বুকের মাঝে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পরীকে, মাথার ওপরে ঠোঁট চেপে চুমু খেয়ে বলে, "সোনা ভয় পেও না, আমি আছি। আমি আমার ভালবাসার জন্য যা কিছু ক্করতে রাজি আছি। এভরি থিং ইস ফেয়ার ইন লাভ এন্ড অয়ার।"

দুজনে আলিঙ্গনবদ্ধ হয়ে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে, তারপরে পরী ওর ঠোঁটে চুমু খেয়ে শুতে চলে যায়।

পরদিন, শনিবার, অভি আর পরী কোলকাতার বাড়িতে ফিরে আসে। বিদায়ের ক্ষণ বড় বেদনাময় হয়ে ওঠে। সবাই জল ভরা চোখে পরীকে বিদায় জানায়। সময় কারুর জন্য অপেক্ষা করে থাকেনা, ওদের এক সময়ে বিদায় নিতেই হত। সারাটা সময়, পরী বাড়ির কথা আর ঘুরে বেড়ানোর কথা বলে নিজের মনের বিদায়ের ব্যাথা টাকে দুরে করে রাখে। বিকেলে বাড়ি পৌঁছে অভি ওকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যায়। সন্ধ্যে নাগাদ অভির মা, ফোন করে জিজ্ঞাসাবাদ করেন ওদের কথা।

রাতের খাওয়া শেষ, পরীর ডিভানে শুয়ে, আর ওর পেটের ওপরে মাথা রেখে অভি শুয়ে শুয়ে সত্যজিৎ রায়ের "কাঞ্চনজঙ্ঘা" সিনেমা দেখছিল। অভির বাঁ হাত বুকের কাছে রেখে আঙুল নিয়ে খেলা করছিল পরী আর মাঝে মাঝে ওপরে চেপে ধরে চুমু খেয়ে দিচ্ছিল।

পরী অভিকে জিজ্ঞেস করে, "তুমি বাড়ির সবার ওপরে কি জাদু করেছ?"

অভি জিজ্ঞেস করে, "আমি জাদু? কেন জিজ্ঞেস করছ?"

পরী মৃদু হেসে উত্তর দেয়, "জীবনের প্রথম বার দেখলাম বড় বউদিকে রান্না ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে এসে কোন আত্মীয় কে বিদায় জানাতে। এই প্রথম বার বড়দা মাঠে না গিয়ে আমাদের যাবার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। দুষ্টু দৌড়ে এসে কোলে চেপে আমাকে জিজ্ঞেস করে যে আমি ওকে কবে নিয়ে আসব কোলকাতায়। এর আগেও দিদিরা যখন বাড়ি থেকে বিদায় নিত, তখন কেউ কাঁদত না, কিন্ত আজ সবার চোখে জল ছিল। কি জাদু করেছ তুমি সবার ওপরে?"

অভি পরীর হাত টেনে ঠোঁটের ওপরে চেপে ধরে বলে, "সোনা, পরী, আমি কারুর ওপরে কোন জাদু করিনি। জীবনটাই একটা বড় দাবার ছক। বত্রিশটা সাদা ছক আর বত্রিশটা কালো। দাবায় কেউ সৈনিক, কেউ ঘোড়া, কেউ গজ, তোমাকে সবসময়ে মেপে চাল চালতে হয় সোনা, না হলে হেরে যাবে। তোমাকে কাছে পাওয়ার জন্য আমি যা কিছু করতে রাজি, পরী।"

পরী অভির চোখে তাকিয়ে বলে, "আমি দাবা খেলা জানিনা, অভি, আমি শুধু জানি যে আমি তোমাকে ভালোবাসি, ব্যাস। তোমাকে ছাড়া আমি যে বাঁচতে পারবোনা, অভি।"
Like Reply
#58
দিবস, রজনীর খেলা


জুন মাসের শেষ। একদিন রাতের খাওয়ার সময়ে অভি বাবা মাকে জানায় যে পরেরদিন ওর কিছু ইন্টারভিউ আছে। একটা চাকরি বড় জরুরি অভির পক্ষে। ছোটোবেলা থেকে অভি বাবা মার কাছে শুনে এসেছে যে বাবা মা ওর জন্য অনেক পয়সা খরচ করেছে আর তাঁর সঠিক ফলাফল অভি তাদের দিতে পারেনি। বাবা মায়ের ভরতসনা শুনে শুনে অভির মন বিষিয়ে গেছে, অন্যদিকে পরীর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ওকে সমাজের সমকক্ষ হয়ে দাঁড়াতে হবে না হলে কেউ ওর আওয়াজ শুনবে না।

রাতের খাওয়ার পরে, বসার ঘরে বসে টি.ভি দেখছিল। পরী ওকে দুধ দেবার জন্য ঢুকে ওকে জিজ্ঞেস করে, "কাল কোথায় কোথায় ইন্টারভিউ আছে?"

অভি, "অনেক জায়গায় পাঠিয়েছিলাম শুধু দু জায়গা থেকে ডাক এসেছে। পি.ডাব্লু.সি আর এন.আই.আই.টি থেকে কল এসেছে। কাল ক্যামাক স্ট্রীট যাবো, দেখি কি হয়।"

সোফায় ওর পাসে বসে, অভির মাথার চুলে বিলি কেটে বলে, "আমার বিশ্বাস তুমি কিছু না কিছু তে পেয়ে যাবে। কিন্তু অভি, রেসাল্ট না পাওয়া পর্যন্ত ত কেউ তোমাকে চাকরি দেবে না। একটু অপেক্ষা করো, গ্রাজুয়েসানের রেসাল্ট বের হওয়া পর্যন্ত।"

অভি, "না পরী, আমাকে কোন রকমে একটা চাকরি পেতেই হবে। যা পাব তাতেই ঢুকে যাবো আমি।"

পরী, "এত উতলা হচ্ছ কেন? আর দুই মাস বাকি রেসাল্ট বের হতে, তারপরে ইন্টারভিউ দাও। এখন তোমাকে কেউ চাকরি দেবে না অভি, গ্রাজুয়েসান ডিগ্রি চাই ই চাই।" পরী ঠিক কথাই বলেছিল। ওর দিকে হেসে বলে, "কাল এমনি এমনি বের হবে? শুধু আমি আর তুমি, খালি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াব দুজনে। এখন তোমার শহর, কোলকাতাকে ঘুরিয়ে দেখাওনি কিন্তু।"

অভি, "হাঃ কোলকাতা আমার শহর নয়, আমি এখানে বেশি সময় থাকিনি। এই শহরেকে ঠিক নিজের বাড়ি বলে মেনে নিতে কষ্ট হয় আমার।"

পরী, "ঠিক আছে বাবা। কাল আমি তোমার সাথে ইন্টারভিউর জায়গায় যাবো, তারপরে না হয় দুজনে কোথাও বেড়াতে যাবো, হল। এখন মাথা ঠাণ্ডা করে ঘুমাতে যাও।"

অভি, "আমার সাথে এসো না প্লিস।"

পরী, "কেন?"

অভি, "আমি এমনিতেই অনেক উত্তেজিত কালকের ইন্টারভিউর ব্যাপারে, তুমি সাথে থাকলে আমার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাবে। তাঁর চেয়ে বরং তুমি বাড়িতে থাক, আমার ইন্টারভিউ শেষ হলে আমি ফোন করে দেব, তুমি ট্যাক্সি নিয়ে তিনটে নাগাদ নন্দনে চলে এস। একসাথে, মুভি দেখব, স্প্লিবারগের সিন্ডলারস লিস্ট।"

পরী নাক কুঁচকে বলে, "ইস, ইংরাজি সিনেমা? ধুর আমি ইংরাজি সিনেমা দেখিনা, একে ত কিছু বুঝিনা। তুমি আমাকে যদি হিন্দি অথবা বাংলা সিনেমা দেখাতে চাও তাহলে আসতে পারি।"

ঠিক তখনি মা ওদিক থেকে পরীকে শুতে যেতে বলে। অভি টি.ভি বন্ধ করে নিজের ঘরে চলে যায়। যাবার আগে পরীর দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলে, "আমি কিন্তু কাল তোমার জন্য নন্দনে অপেক্ষা করব। আসা না আসা তোমার ব্যাপার।"

পরদিন, ইন্টারভিউর পরে অভি নন্দনে অনেকক্ষণ পর্যন্ত পরীর জন্য অপেক্ষা করে। পরীর দেখা না পেয়ে, অভি মর্মাহত হয়ে পরে। মাথায় রাগ চড়ে যায় অভির, সাথে সাথে মনে ভয় ঢোকে। কিছু হয়নি ত ওর, কোলকাতায় নতুন, একা একা ট্যাক্সি চেপে ঠিক ভাবে পৌছাতে পারবে ত নন্দনে। পরীর যদি কিছু হয় তাহলে মা ওকে কেটে গঙ্গার জলে ভাসিয়ে দেবে। শেষ পর্যন্ত বাড়িতে ফোন করে পরীর খবর নেওয়ার জন্য। পরী ফোন তোলে, আর অভি রেগে যায় এই ভেবে যে শেষ পর্যন্ত পরী ওর কথা রাখল না।

অভি ফোনে পরীর ওপরে চেঁচিয়ে ওঠে, "আমি তিন ঘন্টা ধরে তোমার জন্য নন্দনে অপেক্ষা করছি আর তুমি বাড়িতে বসে কি করছ?"

পরী বিরক্তির সুরে উত্তর দেয়, "একদম চেঁচাবে না আমার ওপরে।"

অভি থামেনা, "তুমি আসবেনা, সেটা সকালে জানিয়ে দিলেই হত। অত আদিখ্যেতা দেখানর কি ছিল? আমি তোমার জন্য তাহলে নন্দনে অপেক্ষা করে থাকতাম না।"

পরী, "তোমাকে অপেক্ষা করতে কে বলেছিল, আমি কি বলেছিলাম? আমি ত তোমাকে আগে থেকেই বলে দিয়েছিলাম যে যদি তুমি আমাকে হিন্দি বা বাংলা সিনেমা দেখাও তাহলে আমি তোমার সাথে যেতে রাজি আছি।"

অভি, "তার মানে তুমি আসছ না তাই তো। আমি এতক্ষণ তোমার জন্য এখানে দাঁড়িয়ে আর তুমি এখন বলছ যে তুমি আসবে না।"

পরী, "আমি আগেই বলেছি যে আমার ওপরে ওই রকম ভাবে চেঁচাবে না।"

অভি, "আমি কিছু জানিনা, আমি আরও এক ঘন্টা তোমার জন্য এখানে অপেক্ষা করব। একটা ট্যাক্সি নিয়ে চলে আস।"

পরী, "তুমি কি আমাকে আদেশ করছ তোমার সাথে সিনেমা দেখতে যেতে? আমি আসছি না, তোমার যা ইচ্ছে তাই করো।" এই বলে ফোন রেখে দেয়।

অভি অনেকক্ষণ এদিক ওদিকে ঘুরেফিরে একটা সিনেমা দেখে শেষ পর্যন্ত বাড়ি ফিরে যায়। সিনেমায় অভির মন বসেনা, সামনের পর্দায় সিনেমা চলতে থাকে কিন্তু মাথার মধ্যে পরীর ওপরে খুব রাগ হয়। সন্ধ্যের পরে বাড়ি পৌঁছে দেখে যে বাবা অফিস থেকে ফিরে এসেছেন। পরী চেহারা অস্বাভাবিক ভাবে শান্ত, মনের মধ্যে যেন অশান্তির মেঘ জমে উঠেছে, অভির সাথে ঠিক ভাবে কথা বলছেনা পরী। বসার ঘরে বসে টি.ভি চালায় অভি। কিছু পরে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকে ধুপ করে ওর সামনে চায়ের কাপ রেখে ওর দিকে বিরক্তি ভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকায়। অভি চোখ তুলে তাকাতেই, মুখ ঘুরিয়ে রান্না ঘরে চলে যায়। অভি জল খাওয়ার ছুতো করে রান্না ঘরে ঢোকে।

গলা নামিয়ে পরীকে জিজ্ঞেস করে, "কথা বলছ না কেন আমার সাথে?" পরী কিছু সবজি কাটছিল, পেছন ফিরে ভুরু কুঁচকে বিরক্তি ভরা চোখ নিয়ে অভির দিকে তাকায়, যেন জিজ্ঞেস করে, "কি চাই তোমার?" অভি ওকে, ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখে, "হা ভগবান, কেন মরতে আমি প্রেয়সীকে রাগাতে গেলাম?" হাত বাড়িয়ে ছুঁতে যাবে পরীকে, ঠিক সেই সময়ে বাবা অভিকে ডাক দেন।

বাবা, "তোর ইন্টারভিউ কেমন গেল?"

অভি, "মোটামুটি গেছে।"

বাবা, "কোথায় গেছিলি?"

অভি, "এন.আই.আই.টি, ক্যামাক স্ট্রীট।"

বাবা, "ব্যাঙ্কিং, ডাব্লু.বি.সি.এস এই সবে চেষ্টা করিস না কেন? কোন সরকারি চাকরি দেখ।"

অভি তখন রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে, পরী ওর দিকে তাকিয়ে ইশারা করে, "ওই রকম ভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাও এখান থেকে।"

বাবা থেমে থাকেন না, নিজের ঘর থেকেই অভির ওপরে বকতে শুরু করেন, "সারা জীবন তো তুই আমাদের কথাই শুনলি না, নিজের মতন চলে গেলি। কত টাকা পয়সা খরচ করে তোকে পড়ালাম, কিন্তু কি রেসাল্ট করলি তুই? এমনি কি আই.আই.টি বা জয়েন্ট পেলি না। কি চাস তুই? তুই ভাল করে জানিস কি করে তোকে কলেজে ভর্তি করেছি সেখানেও মন দিয়ে যদি একটু পড়াশুনা করতিস। পড়াশুনা করতে চাস, না ভ্যাগাবন্ডের মতন ঘুরে বেড়াতে চাস?"

শুরু হল অভিকে বাক্য বাণে বেঁধা। কিছু পরে মা কলেজ থেকে ফিরে অভিকে জিজ্ঞেস করেন ইন্টারভিউর কথা, মাকে জানায় যে ওরা বলেছে রেসাল্ট বের হবার পরে আসতে। রান্না ঘরের দরজায় তখন দাঁড়িয়ে অভি, একদিকে মা অন্যদিকে বাবা, দুজনে মিলে ওকে বকতে শুরু করে দেন। প্রথমত, ইন্টারভিউ ভালো যায়নি, তারপরে পরী আসেনি নন্দনে, তারপরে বাবা মায়ের বকুনি, মাথা যেন আর ঠিক রাখতে পারে না অভি।

চেঁচিয়ে ওঠে সবার ওপরে, "আমাকে একটু কি একা একা বাঁচতে দেবে?"

শেষ পর্যন্ত থাকতে না পেরে রেগে মেগে নিজের ঘরে চলে যায়।

পশ্চিম আকাশে বর্ষা কালের ঘন কালো মেঘ, অভির বুকের ভেতরে দুখের কালো মেঘ জমে ওঠে। আলমারির এক কোনা থেকে একটা কাঠের বাক্স বের করে অভি, কলেজে পড়ার সময়ে এক বন্ধু ওকে উপহার দিয়েছিল। কাঁচের ছোটো ছোটো গুলি ভর্তি সেই কাঠের বাক্সে, ছোটো বেলায় হস্টেলে থাকতে গুলি খেলত অভি। সব গুলি গুলো বিছানার ওপরে ছড়িয়ে দিয়ে, ওর ওপরে শুয়ে পরে, নিজের সেই হারানো ছোটো বেলা ফিরে পেতে চায়। বালিশে মুখ গুঁজে পরে থাকে, বুকের মাঝে অব্যাক্ত এক বেদনা। কিন্তু সময়কে যে কেউ ধরে রাখতে পারেনা, চেষ্টা করেও ফিরে পাবেনা ওর সেই বাল্যকাল বা ওর মনের সেই অব্যাক্ত ইচ্ছে গুলো। রাতে মা খেতে ডাকতে আসেন, অভি চুপ করে বালিসে মাথা গুঁজে পরে থাকে। একবার ভাবে হয়ত মা বা পরী ওর জন্য রাতের খাবার নিয়ে আসবে, কিন্তু কেউ ওর জন্য খাবার নিয়ে আসে না।
Like Reply
#59
না খেয়ে শেষ পর্যন্ত বিনিদ্র রজনী কাটায় অভি, সকালের দিকে ঘুম পায়। সকালেও কেউ ওকে ডাকতে আসেনা। অনেক দেরি করে ঘুম ভাঙ্গে অভির, চোখ খুলে ঘড়ি দেখে, এত খনে বাবা মা কাজে বেড়িয়ে গেছেন। বাইরে তাকিয়ে দেখে, বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি নেমেছে। বাড়িতে শুধু অভি আর পরী, চুপচাপ নিচে নেমে লক্ষ্য করে যে নিজের ঘরের বিছানার ওপরে বসে পরী। জানালার বাইরে একমনে তাকিয়ে আছে আর জানালার বাইরে গাছের ওপরে বৃষ্টির জল পরা দেখছে। চুপ করে বসে, হাঁটু ভাঁজ করা, হাঁটুর ওপরে থুতনি রাখা, দু’চোখে অব্যাক্ত কোন বেদনা ছলকে পড়ছে। ধিরে ধিরে ওর পাসে গিয়ে বসে অভি। লক্ষ্য করে যে, গাল বেয়ে চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে। পরী নিজের খেয়ালে এতই মগ্ন ছিল যে বুঝতেই পারেনি যে অভি ওর পাসে এসে বসেছে। পরীর কাঁধে হাত রাখতেই পরী নিজের সম্বিৎ ফিরে পায়। জল ভরা লাল চোখে অভির দিকে তাকায়, সারা চেহারায় এক ব্যাথা ফুটে উঠেছে পরীর, বুকের ভেতরে যেন কোন বেদনা ওকে দুমড়ে মুচরে একাকার করে দিয়েছে।

অভি চিন্তিত হয়ে ওকে জিজ্ঞেস করে, "কি হয়েছে, তোমার?"

মাথা নাড়ায় পরী, "কিছু না।"

অভি, "ওইরকম ভাবে বসে আছো কেন?"

বুকের ভেতরে যেন দামামা বাজতে শুরু করেছে।

আবার মাথা নাড়ায় পরী, "কিছু হয়নি, বলছি তো।"

পায়ের দিকে তাকিয়ে বিছানার ওপরে নখ দিয়ে খোঁটে। দু’কাঁধে হাত রাখে অভি, পরীর হাঁটুর কাপড় চোখের জলে ভিজে উঠেছে।

বেদনার চাপা চিৎকার করে ওঠে অভির দিকে, "তোমরা সবাই স্বার্থপর। আমার আশেপাশের সব মানুষ স্বার্থপর।"

চুবুকে আঙুল দিয়ে মাথা তুলতে চেষ্টা করে অভি, ঘাড় শক্ত করে রাখে পরী। বার বার অনুরোধ করে, কি হয়েছে জানাতে, পরী কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে, বাইরে অঝোরে শ্রাবনের ধারা।

শেষে ধরা গলায় বলে, "যখন ছোটো ছিলাম, আমাকে চন্দ্রানিদির কাপড় পড়তে হত। ওর বই আমাকে পড়তে হত। আমার জন্য কোনদিন নতুন বই কেনা হত না, আমি কোনদিন কোন নতুন জামা কাপড় পাইনি। মায়ের কাছে নতুন জামা চাইতেই মা অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে থাকতেন। বড় হলাম আমি, বড় বৌদি আমাদের বাড়ি এলেন। সেই প্রথম আমি পুজোর সময়ে নতুন জামা পাই, বড় বৌদি আমায় নতুন জামা কিনে দেয়। ইন্দ্রানিদি আর চন্দ্রানিদির বিয়ে হয়ে গেল। ওরাই আমাদের বাড়ির খরচ উঠাত। সুমন্তদা শুধু মাত্র এক চাষি, বাকি দুই দাদাও ছোটো ছোটো, কেউ তখন কোন টাকা অর্জন করে না। আমি বাড়ির ছোটো তাই সবাই নিজেদের মতামত আমার ওপরে চাপিয়ে দিতে চাইত।"

দু’চোখে অবিরাম শ্রাবনের ধারা বয়ে চলে পরীর, অভি ওর মাথায় হাত দিয়ে আদর করতে যায়। বিরক্ত হয়ে পরী ওর হাত সরিয়ে দেয়। পরী থামে না, "আমি আরও বড় হলাম। কোনোরকমে আমার পড়াশুনা করান হল। দিদিরা আমার বিয়ের জন্য মেতে ওঠে। মা আর সুমন্তদা আমার বিয়ের কথা শুনে প্রথমে বাধা দেন। ইন্দ্রানিদি ওর দেওরের সাথে আমার বিয়ের ঠিক করে, আমি তখন ক্লাস টুয়েল্ভে পড়ি। শশাঙ্কদা বিয়েতে মত দেননা, আমাকে গ্রাজুয়েসানে ভর্তি করে দেন। গ্রাজুয়েসানের শেষ শশাঙ্কদা আমার বিয়ের ঠিক করে মেঘনা বউদির এক খুড়তুত ভাইয়ের সাথে। সারা জীবন সবাই মিলে আমার ওপরে নিজেদের মতামত চাপিয়ে দেয়, একবারের জন্য কেউ আমাকে আমার মনের কথা জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন বোধ করেনি। আমি কে? আমি কি একটা জ্যান্ত পুতুল নাকি? সবার কথা সারা জীবনভর আমাকে শুনে যেতে হবে? আমার নিজের কি কখন কোন মতামত থাকতে পারেনা? ছোটমাকে শেষ পর্যন্ত ডাকা হয় আর তুমি এলে আমার জীবনে। আজ তুমিও আমার ওপরে চেঁচিয়ে উঠলে শেষ পর্যন্ত। আমি কি তোমাদের সবার হাতে একটা কাঠের পুতুল নাকি? সবাই যা বলবে তাই আমাকে মেনে নিতে হবে। আমার নিজের কোন চাহিদা থাকতে পারেনা? ছোটবেলা থেকে দিদিরা, তারপরে দাদাদের, আর এখন তোমার কথা মানতে হবে আমাকে? আমার কি হৃদয় বলতে কিছু নেই? আমার কি নিজের কিছু ইচ্ছে থাকতে পারেনা, অভি?"

পরীকে কাছে টেনে কপালে কপাল ঠেকিয়ে ক্ষমা চায় অভি, "আমি দুঃখিত পরী, ক্ষমা করে দাও।"

অভিকে ঠেলে সরিয়ে দেয় পরী, "তারমানে তুমি যদি জানতে যে আমার খারাপ লাগবে তাহলে তুমি করতে না, তাই ত? তুমি নিজে থেকে একবারের জন্য ভেবে দেখেছ কি, যে আমি তোমার সাথে যখন ওই অজানা জায়গায় গেছিলাম তখন আমার মনের অবস্থা কি ছিল? একবারের জন্য নিজে ভেবেছ কি, যে তুমি অরুনিমার সাথে কি করছ, সেটা আমি জানতে পারলে আমার মনে কি প্রতিক্রিয়া হবে? না, তুমি নিজে থেকে একবারের জন্যেও ভাবোনি। তোমাকে না বললে তুমি ভাবতে পার না, কেন? অভি কেন? তোমরা সবাই স্বার্থপর, শুধু নিজেদের কথাই ভাবো।"

কি বলবে অভি, ভাষা যেন গলার কাছে দুমড়ে আটকে থাকে, কোনোক্রমে উত্তর দেয়, "অরুনিমা একটা ভুল মাত্র, পরী।"

চিৎকার করে ওঠে পরী, "ও, ভুল। পুরুষ মানুষ ভুল করলে ভুল নয় সেটা পুরুষত্ব আর মেয়েরা করলে সেটা ছেনালিপনা, তাই না? কেন এইরকম আলাদা মনের ভাব, অভি?"

অভি পরীর মাথা বুকের ওপরে চেপে ধরে, ডুকরে কেঁদে ফেলে পরী, "পরী, প্লিস, ক্ষমা করে দাও, প্লিস। আমি প্রতিজ্ঞা করছি জীবনে কোনদিন আমি তোমাকে আঘাত করবো না। কখনই না, পরী। আমি তোমাকে সব দুঃখ কষ্ট থেকে অনেক অনেক দুরে রাখব, দুহাতে আগলে রাখবো তোমাকে।"

বুকের কাপড় দু’হাতে আঁকড়ে ধরে কেঁদে ভাসিয়ে দেয় অভির বুক। পরীর পিঠে হাত বুলিয়ে শান্ত করে অভি, "দেখ, আর কেঁদো না, নাহলে এবারে আমি কিন্তু কেঁদে ফেলব। একটি বারের জন্য হাসও, পরী। দেখ, আমি তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তোমাকে কোনদিন কিছু করতে বলব না, তোমাকে জিন্স পড়তে বলব না, তোমাকে ইংরাজি সিনেমা দেখতেও বলব না। যেখানে তোমার ইচ্ছে হবে না সেই জায়গায় পর্যন্ত যাবো না আমি।"

ওর কথা শুনে চোখের জল মুছে তাকায় অভির দিকে, "কে বলেছে তোমাকে যে আমি জিন্স পড়তে ভালোবাসি না? আমি তোমার জন্য কাজাতে পড়েছিলাম না।"

পরীর মুখে হাসি দেখে অভি স্বস্তির শ্বাস নেয়, "যাক বাবা, বাঁচালে। তা দুপুরে কি রান্না করেছ?"

পরী বিছানার ওপরে ঠেলে ফেলে দেয় অভিকে, "সকাল থেকে এত মন খারাপ ছিল যে রান্না ঘরে ঢুকতে মন করেনি তাই কিছুই রান্না করিনি। ছোটমা বাবু চলে যাওয়ার পরে এখানে বসে বসে শুধু বৃষ্টি দেখেছি। খুব একা মনে হচ্ছিল তখন, জানো।"

অভি ওর হাত ধরে টান দেয় আর পরী ওর বুকের ওপরে পরে যায়, "কে বলেছে তুমি একা? আমি আছি যে তোমার সাথে।"

অভির বুকের ওপরে হাত রেখে, থুতনি রাখে বুকের ওপরে, ওর চোখের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে থাকে পরী। অভি ওর কোমর জড়িয়ে ধরে থাকে শক্ত করে। অভি চোখ টিপে জিজ্ঞেস করে, "সিনেমা দেখতে যাবে?"

বুকের ওপরে আদর করে চাঁটি মেরে বলে, "মাথা খারাপ নাকি, তোমার সাথে আবার সিনেমা দেখতে যাওয়া। রান্না করতে হবে না? দুপুরে খাবে কি?" কোনোরকমে অভির দৃঢ় আলিঙ্গন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে রান্নাঘরে চলে যায়।

অভি বিছানায় শুয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকে। মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে, জানালার সামনের জামরুল গাছের পাতায় টপটপ করে বৃষ্টির জল পড়ছে, সামনের কার্নিশে একটা চরুই পাখি জুবুথুবু হয়ে বসে, মাঝে মাঝে পাখা ঝেরে গায়ের জল শুকিয়ে নিচ্ছে। অভি বুকের ওপরে হাত বোলায়, ঠিক যেখানে ওর প্রেয়সী আদর করে চাঁটি মেরে গেছে, মনে হয় যেন সেই নরম আঙ্গুলের ছোঁয়া এখন লেগে।

"এই এখন পরে পরে কি ভাবছ? খাবার তৈরি, চলে এসো।"

খাবার ঘর থেকে পরী ওকে ডাক দেয়।

খাবার ঘরে ঢুকে পরীকে বলে, "আমি এখন স্নান করিনি, বেবি।"

কাছে এসে পেছনে আদর করে এক লাথি মেরে বলে, "তাড়াতাড়ি স্নান সেরে এস, খিদেতে আমার পেট জ্বলছে।"

অভি ওর পেছনে আদর করে চাঁটি মেরে বলে, "আমি কিন্তু তোমার পেছনে লাথি মারব না, অমন রসাল মন্ড একেবারে কামড়ে খেয়ে নেব।"

খিলখিল করে হেসে ফেলে পরী, অভিকে ঠেলে ঢুকিয়ে দেয় বাথরুমের ভেতরে।

বাবার আদেশ অনুসারে কিছুদিন পরে অভি ব্যাঙ্কিং পরীক্ষার আর অন্য কিছু সরকারি চাকুরির পরীক্ষার ফর্ম কেনার জন্য বারি থেকে বের হবার উদ্যোগ করে। সেদিন সকাল থেকেই আকাশ গুমোট বেঁধে, যেকোনো সময়ে বৃষ্টি নামতে পারে। কোলকাতায় একবার বৃষ্টি নামলে ধরতে অনেক সময় লাগে। এমন সময়ে পরী এসে জিজ্ঞেস করে যে কোথায় যাচ্ছে ও। অভি জানায় যে কলেজস্ট্রিট যাবে ফর্ম কেনার জন্য, পরী ও ওর সাথে বের হবার জন্য জেদ ধরে।

অভি ওকে বুঝিয়ে বলে, "দেখ, আকাশ গুমোট বেঁধে বৃষ্টি যেকোনো সময়ে নামতে পারে। তুমি বাড়িতে থাক, আমি কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ফিরে আসব।"

বিষাদের ছায়া নেমে আসে পরীর চেহারায়, "সারাদিন একা একা বারি বসে কি করব আমি? কোথাও যেতে পারিনা। আমি যদি তোমার সাথে যাই তাহলে তোমার কি অসুবিধে হবে? আমাকে আজ পর্যন্ত কলেজ স্ট্রীট নিয়ে গেলে না।"

অভি ওর বিষণ্ণ চেহারা দেখে শেষ পর্যন্ত মত দেয়, "ঠিক আছে বাবা, তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও।"

তাড়াতাড়ি কাপড় পরে বেড়িয়ে এল পরী, দেখে মনে হল যেন কোলকাতার রাস্তায় আগুন ধরাবে। গাড় নীল রঙের স্কার্ট, জানু পর্যন্ত চেপে বসা তাঁর নিচে ঘাগরার মতন ফুলে উঠেছে। পরনের কাপড় চেপে বসে পরীর কোমরের নিচের অংশ যেন ফুটে বেড়িয়েছে। গায়ে আঁটো গোলাপি জামা, গলায় গাড় নীল স্টোল, নিজের অপরূপ যৌবন ঢেকে রাখার জন্য গায়ের ওপরে জড়িয়ে নিয়েছে। মাথার চুল একপাসে সিথে করে আঁচড়ান, ঘাড়ের কাছে আলতো এক খোঁপায় বাঁধা। কানে দুটি ক্রিস্টালের লম্বা দুল। হাঁ করে তাকিয়ে থাকে অভি, ওর গাড় বাদামি রঙের ঠোঁটের দিকে। চুম্বনে চুম্বনে ভরিয়ে দিতে ইচ্ছে করে ওই মধুর ঠোঁট জোড়া।

অভির চোখে ভালবাসার তীব্র চাহনি দেখে লাজুক হেসে বলে, "দেখছ কি ওইরকম ভাবে?"

অভি কথা হারিয়ে ফেলেছে যেন, "যেতেই হবে, তুমি ত মেরে ফেললে আমাকে, পরী।"

লজ্জা পেয়ে যায় অভির কথা শুনে, "উফ, বাবা, আর পারি না। চাবি নাও, তালা দাও আর তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে পরো।"

কলেজ স্ট্রীট দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ওরা পরীক্ষার জন্য কিছু বই আর চাকরির ফর্ম কেনে। সেটা পরী প্রথম বার কলেজ স্ট্রীট যাওয়া, আসে পাশের শত শত বইয়ের দোকান দেখে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে ও। সরু সরু রাস্তা, তাঁর ভেতরেও বইয়ের দোকান দেখে অবাক হয়ে যায়। ওদিকে আকাশে মেঘ বেশ একটু জমে আসে। পরী অভিকে জিজ্ঞেস করে, কত বইয়ের দোকান হবে এখানে? ওকে উত্যক্ত করার জন্য অভি উত্তর দেয় যে প্রায় আট হাজার ছয়শ বাইশ খানা বইয়ের দোকান।

অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে অভির মুখের দিকে, "সত্যি, তুমি গুনেছ?"

অভি হাসি চাপতে পারেনা, "বিশ্বাস করছ না ত, ঠিক আছে গুনে দেখ তাহলে।"

তখন পরী বুঝতে পারে যে অভি ওকে বোকা বানিয়েছে আর সেই রাস্তার মাঝেই ছাতা পেটা শুরু করে অভিকে, "শয়তান ছেলে আমার বোকা বানানো হচ্ছে।"

বাঁ হাতে কাঁধ জড়িয়ে ধরে বলে, "আহ, দারুন, না না তুমি বোকা নও। তুমি কি করে আমার কথা বিশ্বাস করে নিলে সেটাই প্রশ্ন।"

ফর্ম কেনা শেষ, ও অভিকে জিজ্ঞেস করে, "ফর্ম কেনা হয়ে গেছে ত, এখন কি করা যায়?"

অভি জিজ্ঞেস করে, "কফি হাউস যাবে?"

পরী, "না গো, আমি তোমার ওই অরুনা বাঁ সমুদ্রনীলের মতন আতেল নই গো।"

ঠিক সেই সময়ে বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়, আর কোলকাতার বৃষ্টি, একেবারে মুষলধারে নেমে আসে ওদের ওপরে। ঠিক সেই সময়ে বউবাজারের দিক থেকে একটা ট্রাম আসতে দেখে ওরা। পরী ট্রামের দিকে দেখিয়ে অভিকে বলে চড়ে যেতে। অভির জন্য না দাঁড়িয়ে দৌড়ে গিয়ে ট্রামে লাফিয়ে উঠে পরে আর অভির দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে। অগত্যা অভি দৌড় লাগিয়ে পরীর পেছন পেছন ট্রামে চড়ে যায়। পরীর ওই বাচ্চা সুলভ আচরন দেখে অভির মনে দোলা লাগে।

ট্রামে উঠে ওর গালে আদর করে চাঁটি মেরে বলে, "কোন ধারনা আছে কি এই ট্রাম কোথায় যাচ্ছে?"

খিলখিল করে হেসে দেয় পরী, "না একদম নয়। জেনে কি হবে তুমি আছো ত আমার সাথে, ব্যাস।"

কন্ডাক্টার কে জিজ্ঞেস করাতে জানতে পারে যে ট্রাম শ্যাম্বাজার যাবে। হাতিবাগানের কাছে এসে গেছে ট্রাম। পরী বাইরে তাকিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে, "এই নামো নামো নামো..."

অবাক হয়ে যায় অভি, "কেন কি হল?"

পরী অভির জামা টেনে ধরে বাইরে দেখায়, "দেখ, দর্পণে হটাত বৃষ্টি চলছে, চলো না দেখি।"

অভি নাক কুঁচকে বলে, "ধুর বাবা, বাংলা সিনেমা।"

অভির হাত ধরে টেনে কন্ডাক্টার কে ট্রাম থামাতে বলে, "অ দাদা দারান।" অভিকে বলে, "চলো না, প্লিস। তুমি যদি আমাকে এই সিনেমা দেখাও তাহলে আমি তোমার সাথে ওই চাই পাশ ইংরাজি সিনেমা দেখতে যাব। কি নাম সেই ইংরাজি মুভি টার।"

মুখ বেঁকায় অভি, "সিন্ডলারস লিস্ট।"

পরী, "আচ্ছা বাবা, যারই লিস্ট হোক, আমি দেখতে যাবো, কথা দিচ্ছি। যতক্ষণ তুমি পাশে আছো ততক্ষণ আমার কোন চিন্তা নেই।"

শেষ পর্যন্ত আকাশের বৃষ্টি আর প্রান প্রেয়সীর দৌলতে অভিকে বাংলা সিনেমা, "হটাত বৃষ্টি" দেখতে হয়। সিনেমা দেখে বাইরে বেড়িয়ে দেখে যে আকাশ কালো, বৃষ্টির ধারা অবিরাম ঝরে চলেছে, আর বৃষ্টির চোটে কোলকাতার রাস্তা ঘাটের কথা আর নাই বাঁ জানানো হল আলাদা করে। চারদিকে জলে থই থই। ওদের কাছে একটা ফোল্ডিং ছাতা, মুষলধার বৃষ্টি বাগ মানেনা, কিন্তু দাঁড়িয়ে বৃষ্টি ধরার অপেক্ষা করার জো নেই। বাবা মা বাড়ি পৌঁছানর আগে বাড়ি পৌছাতে হবে না হলে, আবার কখন আগ্নেয়গিরি ফেটে লাভা নির্গত হবে তাঁর নেই ঠিক। বৃষ্টি তে ভিজে গেছে পরী আর গায়ের কাপড় খুব বাজে ভাবে ত্বকের সাথে লেপটে রয়েছে। চারিদিকে হায়নার চোখের আড়াল করে ছাতা দিয়ে পরীকে আগলে রাখে অভি। গায়ে স্টোল টা ভালো করে জড়িয়ে নিতে বলে। শেষ পর্যন্ত একটা ট্যাক্সি চেপে বাড়ি ফেরে।

বাড়ি ফিরে দেখে যে বাবা বাড়ি পৌঁছে গেছেন। বুকের মাঝে ধুকপুকানি বেড়ে যায় শতগুন। বাবা জিজ্ঞেস করাতে অভি উত্তর দেয় যে, পরীক্ষার ফর্ম কিনতে কলেজ স্ট্রীট গেছিল। বাকি উত্তর পরী দেয় যে, রাস্তায় অরুনার সাথে দেখা হয়ে যায় তাই দেরি হয়ে যায় ওদের। কিছু পরে কাপড় বদলে নিচে এসে দেখে যে মা বাড়ি ফিরে এসেছেন। পরী ঘন ঘন হাচি দিচ্ছে। মা পরীকে জিজ্ঞেস করে যে কেন এত হাচি দিছে। পরী জানিয়ে দেয় যে ওরা কলেজ স্ট্রীট গেছিল অভির ফর্ম কন্তে সেখানে অরুনার সাথে দেখা হয়ে যায় তাই দেরি হয় আর সেই সময়ে বৃষ্টি নামে আর ওরা ভিজে যায়। মা শাল এনে ওর গায়ে জড়িয়ে কপালে হাত দিয়ে দেখে যে মেয়ের গায়ে জ্বর।

অভির দিকে কটমট করে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "তোর কোন জ্ঞান বুদ্ধি নেই। মেয়েটার শেষ পর্যন্ত জ্বর হয়েছে।"

অভি হাঁ, পরীর জ্বর হয়েছে তার জন্য মা ওকে দায়ী করছেন, ঠিক বুঝতে পারে না। বাবা নিজের ঘর থেকে বলেন, "হাদা ছেলেটা, এই বৃষ্টিতে পরীকে নিয়ে কলেজ স্ট্রীট যাবার কি দরকার ছিল।"

অভি, "ছাতা নিয়ে গেছিলাম আমরা।"

মা রেগে মেগে বলেন, "ওকে নিয়ে যাবার কি দরকার ছিল তোর?"

ওর সামনে ছোটো মা অভিকে বকুনি দিচ্ছে, ছোটোমায়ের কথা শুনে পরীর মনে বড় আঘাত লাগে। পরী অভির পখ নিয়ে ছোটমাকে কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু অভি আঙুল নাড়িয়ে ওকে চুপ থাকতে ইশারা করে। পরী ব্যাথা ভরা চাহনি দেয় অভির দিকে। পরীকে ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে অভিকে ডাক্তারের কাছে নাম লেখাতে বলে।

বাবার বন্ধু, বাড়ির ডাক্তার, রাতে পরীকে দেখে যান আর কিছু ওষুধ লিখে দেন। বলেন যে কিছু না শুধু একটু সর্দি জ্বর হয়েছে, কিন্তু মেয়ের জ্বর দেখে পরীর ছোটমা অতি বিচলিত হয়ে ওঠেন। অভি মাকে বোঝানোর চেষ্টা করে যে শুধু মাত্র একটু সর্দি জ্বর হয়েছে, অতে চিন্তা করার কিছু নেই, কিন্তু মায়ের মন মানেনা। রাত বেড়ে চলে, পরীর জ্বর বেড়ে যায়। দরজার ফাঁক থেকে দেখে যে পরী জ্বরের তাপে কাঁপছে আর মা ঠায় ওর মাথার কাছে বসে জল দিয়ে কপাল ধুয়ে দিচ্ছেন। সারা রাত জ্বরের বেদনায় কাতরায় পরী, মাথার কাছে মা বসে থাকেন, চিন্তায় ঘুম আসেনা, ওদিকে বসার ঘরে জেগে বসে অনুতপ্ত অভি, দু’চোখে ঘুম নেই। সকালের দিকে পরীর জ্বর কমে আর একটু ঘুমাতে পারে পরী। ওদিকে অভি শুধু মাত্র দূর থেকে দেখে ব্যাথায় কাতরানো হৃদয়কে, মায়ের সামনে ওর কাছে গিয়ে মাথায় হাত বোলানোর উপায় পর্যন্ত নেই।

সকাল বেলায় মা অভিকে বলেন যে, পরীর জ্বর একটু কমেছে, মা কলেজ যাচ্ছেন, অভি যেন সারাদিন বাড়িতেই থাকে। অভিকে না বললেও পরীকে ছেড়ে ও কোথাও যেত না। বাবা মা চলে যাওয়ার পরে, পরীর ঘরে ঢোকে। আপাদমস্তক চাদরে ঢাকা। পাশে বসে ঝুঁকে ওর ঘুমন্ত মুখের দিকে এক ভাবে চেয়ে থাকে। আদর করে গালে মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দেয়। গালের লালিমা যেন নেই, একরাতের জ্বরে যেন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। গায়ে জ্বর না থাকলেও, বিছানা ছেড়ে ওঠবার শক্তি টুকু ছিলনা ওর। চুপ করে আদর করে হাত বুলিয়ে দেয়, নিজের খাবার কথা ভুলে গিয়ে। মা আদেশ দিয়ে গেছেন সময় মতন ওষুধ খাওয়াতে পরীকে। বিছানা ছেড়ে উঠে ওর জন্য খাবার আনতে যায়, আর হাতে টান পরে। ঘুরে দেখে পরী ওর দিকে তাকিয়ে কষ্টে হেসে মৃদু সুরে বলে, "একটু বসে যাও।"
Like Reply
#60
ওর হাসি হাসি চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, "একটু কিছু খেয়ে নাও তারপরে ওষুধ খেতে হবে। আজ আমি আর কোথাও যাচ্ছি না, তোমার কাছেই থাকব সারাদিন।"

বিছানা মাথার দিকে বালিশ দিয়ে পরীকে উঠিয়ে বসিয়ে দেয়, গলা পর্যন্ত টেনে দেয় গায়ের চাদর। রুটি দুধ মেখে খাওয়ানোর জন্য নিয়ে আসে। অভি ওকে মুখ ধুতে বলে, পরী অনুনয় সুরে বলে, "না।"

অভি মৃদু বকুনি দেয়, "মুখ না ধুলে হবে? যা বলছি তাই করো।"

তোয়ালে ভিজিয়ে চোখ মুখ মুছিয়ে দেওয়ার পরে খাইয়ে দেয়। হাত মুখ মুছিয়ে দেওয়ার পরে যেন পরীর একটু ভালো লাগে, গালের লালিমা যেন কিঞ্চিত ফিরে আসে।

"ভালো লাগছে?" ওকে জিজ্ঞেস করে। শুধু মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয়, ঠিক আছে। খাওয়ানোর পরে ওষুধ খাইয়ে দেয়।

অভি পরীকে বলে, "মাথা ধুইয়ে গাঁ হাত, মুছিয়ে দেই ভালো লাগবে।"

পরীকে বাথরুমে ঢুকিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করে সাহায্য করতে হবে নাকি, পরী দরজা বন্ধ করে জোর গলায় বলে, "না।" অভি ওর কথা শোনে না, গরম জল করে এনে হাত পা মুখ মুছিয়ে দেয়, পরী বারবার অনুনয় করে, পায়ে যেন হাত না দেয়। হাত পা ধোয়ানর পরে, পরীর শরীর বেশ হালকা লাগে।

"রবীন্দ্রনাথের সাজাহান পড়ে শোনাবে আমাকে?"

অভির কাছে আব্দার করে।

অভি বিছানায় উঠে বসে, পরী গায়ের ওপরে চাদর টেনে ওর বুকের ওপরে মাথা রেখে শুয়ে পরে। বাম হাত দিয়ে পরীকে জড়িয়ে ধরে, এক হাতে খুলে ধরে রবীন্দ্রনাথের সঞ্চয়িতা। সাজাহান কবিতার কিছু অংশ পড়ে শোনানর চেষ্টা করে অভি। পরী ওর বাংলা কবিতা পড়া শুনে হেসে ফেলে, "থাক অনেক পড়ে ফেলেছ, আর কবিতার পিন্ডি চটকাতে হবে না।"

অভি নিরুপায় হয়ে পরীকে জানায়, "তুমি জানতে যে আমার বাংলা খুব সুন্দর, তাও আমাকে পড়তে বললে কেন?"

হেসে উত্তর দেয় পরী, "দেখতে চেয়েছিলাম তুমি সত্যি বাংলা পড়তে পারো কিনা।"

মাথার ওপরে চুমু খেয়ে বলে, "হাঁ ভগবান।"

মাথার ওপরে ঠোঁটের পরশ পেয়ে বুকের কাছে আরও জড়সড় হয়ে বসে বলে, "শক্ত করে জড়িয়ে ধরোনা আমায়।"

অভি বই ছেড়ে, দু’হাতে নিবিড় আলিঙ্গনে বেঁধে ফেলে পরীকে। বুকের কাছে যেন লেপটে যায় পরী।

অভি ওর কানে কানে বলে, "আমি হিন্দিতে তোমার জন্য কবিতা লিখেছি, শুনবে?"

পরী মাথা নোয়ায়, "হ্যাঁ।" অভি আবার বলে, "হিন্দি তে কিন্তু।" পরী জানায়, "প্রেমের কি ভাষা হয় নাকি, তুমি বলবে আমি ঠিক বুঝে নেব।"

ডায়রিতে কি লিখেছিল, একবার চোখ বন্ধ করে মনে করে নেয় তারপরে ওর হিন্দি কবিতা শোনায়। কবিতা শোনার পরে পরী অভির দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসে, দুহাতে ওর গলা জড়িয়ে ধরে। মুখ উঁচু করে অভির ঠোঁট ছুঁতে যায়। পরীর ঠোঁট ছোঁয়ার বদলে ওর মাথার ওপরে ঠোঁট চেপে ধরে অভি।

অভি, "তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাও, তারপরে আমাদের অনেক কিছু ভাবতে হবে, সোনা।"

পরী, "আমাকে তোমার বুকের কাছে লুকিয়ে নাও, অভি।"

বুকের ওপরে মাথা চেপে ধরে অভি বলে, "তুমি এখানেই থাকবে পরী, সবসময়ে এখানে থাকবে।"

দিন দুই পরে পরীর জ্বর সেরে গেলে অভি "সিন্ডলারস লিস্ট" দেখতে যাবার কথা বলে। পরী এক উপায় বের করে এবারে যাতে ওরা ধরা না পরে। অভিকে বলে যে ওরা বাবু, ছোটমা বেড়িয়ে যাবার পরেই সিনেমা দেখতে বেড়িয়ে পড়বে আর ওদের ফিরে আসার আগেই বাড়ি ফিরে আসবে। সুকৌশল পরিকল্পনা, যেমন ভাবা তেমনি কাজ, কিন্তু বাদ সাধে বর্ষা কাল। তাই আর সেদিন যাওয়া হয়ে ওঠে না।

কিন্তু পরদিন যেই বাবা মা বেড়িয়ে যান কাজে, ঠিক তারপরেই অভি তৈরি হয়ে নেয়। আকাশের দিকে তাকিয়ে পরীকে অনুরধ করে যে ও যেন বৃষ্টির জন্য তৈরি থাকে আর সেই মত কাপড় পরে। কিন্তু লাজুক সুন্দরী পরী, শাড়ি ছাড়া যেন জগতে ওর কাছে আর কোন সুন্দর পোশাক হয় না। যথারীতি হাল্কা গোলাপি রঙের শিফন শাড়ি আর ছোটো হাতার কাঁচুলি পরে বেড়িয়ে এল। ফর্সা গায়ের রঙ আর তাঁর সাথে শাড়ির রঙ বেশ মিলিয়েছে। লাল ঠোঁট, চোখের কোলে কাজল, কপালে ছোটো গোলাপি টিপ সব মিলিয়ে অভির সেদিন মনে হয়েছিল যে, সিনেমা না হয় আর কোন একদিন দেখা যাবে আজ পরীকেই দেখি। হাতে ধরে কালো ক্লাচ ব্যাগ আর বাঁ হাতের সরু কব্জিতে সোনার টাইটান ঘড়ি, ছোটমা কয়েকদিন আগেই কিনে দিয়েছে। হাঁটু গেড়ে ওর সামনে বসে পরে দুহাতে জড়িয়ে ধরতে যায় পরীকে, মিষ্টি হেসে পরী ওকে বলে, "না, একদম কোন শয়তানি না, চল বেড়িয়ে পরি।"

উঠে দাঁড়িয়ে এক হাতে কোমর জড়িয়ে ধরে অভি, অন্য হাতের তর্জনী দিয়ে চিবুক ছুঁয়ে সুন্দর মুখখানি ওপরে তোলে। অভির বুকের ওপরে হাত রেখে জামা ধরে নেয়, প্রেমঘন গভীর কালো চোখে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।

অভি, "তুমি এত সুন্দর কেন, পরী?"

পরী, "সৌন্দর্য সবসময়ে যে দেখে তাঁর চোখে লুকিয়ে থাকে। সুন্দরী আমি নয়, তোমার দৃষ্টি, তোমার চাহনি আমাকে সুন্দরী করে তুলেছে, অভি।"

সারা রাস্তা পরী ওর একদম পাসেপাসে ছিল, একবারের জন্য ও যেন ওকে আলাদা করতে মন করছিল না অভির। নন্দনে তাড়াতাড়ি পৌঁছে গেল। আকাশে কালো মেঘের খেলা শুরু হয়ে গেছে, বৃষ্টি যেকোনো সময়ে নামতে পারে।

পরী ওকে জিজ্ঞেস করে, "সিনেমাটা কি ধরনের?"

অভি উত্তর দেয়, "সত্য ঘটনা অবলম্বে এই সিনেমা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে এক জার্মান ইহুদী প্রায় এক হাজার ইহুদীদের হিটলারের অত্যাচার থেকে বাঁচায়।"

অস্ফুট চেঁচিয়ে ওঠে পরী, "তুমি আমাকে হরর সিনেমা দেখাতে এনেছ? কেউ কি তার গার্লফ্রেন্ড কে নিয়ে এইরকম সিনেমা দেখতে যায়?"

অভি হেসে ওঠে, "না বেবি, হরর সিনেমা নয়, এট।"

পরী, "তুমি আস্ত পাগল, এটা হরর নয়ত কি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধরে কাহিনী তারপরে আবার সত্য ঘটনা অবলম্বনে, তাঁর মানেই ত ভয়ের গল্প, দুখের গল্প।"

অভি অনেক নাম শুনেছে ওই সিনেমাটার তাই ওকে দেখতে হবেই, কোনোরকমে পরীকে রাজি করায় সিনেমা হলে ঢুকতে। শেষ পর্যন্ত ওর কাতর মিনতির সামনে পরী হার মানে। নন্দনে খুব মানুষ সেইদিন ওই সিনেমা দেখতে এসেছিল, একে বর্ষাকাল তার ওপরে একটু অন্যধরনের সিনেমা বলে হলে লোকসংখ্যা কম। পরী ওর ডানদিকে বসে কাঁধে মাথা রেখে চুপ করে সিনেমা দেখতে থাকে।

সিনেমায় এক দৃশ্য ছিল যে, রাল্ফ ফিয়েন্স এক সকালে কাঁধে বন্দুক নিয়ে নিজের রুম থেকে বেড়িয়ে বারন্দায় দাঁড়ায়। তারপরে সেই বন্দুকের নল তাক করে সামনের জেলের খোলা জায়গার দিকে, যেখানে অনেক ইহুদী মজুর কাজ করছিল। একটা ছোটো ছেলে কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে একটা ছোটো ঘরের সিঁড়িতে বসে একটু বিশ্রাম করছিল। রালফ ফিয়েন্স তাঁর দিকে বন্দুক তাগ করে সেই ছোটো ছেলেটার মাথার মধ্যে গুলি চালিয়ে দেয়, প্রানহীন রক্তাক্ত দেহ লুটিয়ে পরে মাটির ওপরে। সেই দৃশ্য দেখে পরী ভয়ে চিৎকার করে ওঠে। অভির বুকের জামা খামচে ধরে বুকের ওপরে মুখ লুকিয়ে ফেলে।

পরী, "না না না, আমি এইরকম বীভৎস সিনেমা দেখতে পারব না। আমাকে এখানে থেকে নিয়ে চল, আমি আর এই সিনেমা দেখব না, প্লিস নিয়ে চলো আমাকে।"

অভি মিনতি করে, "বেবি, এটা শুধু একটা মুভি।"

পরী মুখ না উঠিয়েই বলে, "সত্য ঘটনার অবলম্বনে তৈরি, আমি আর দেখতে পারবোনা।"

অভি, "প্লিস বেবি।"

পরী বিরক্তি ভরা চাহনি নিয়ে ওর দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে বলে, "তুমি কেমন ধারা মানুষ? প্রেমিকরা তাদের প্রেমিকাদের নিয়ে কোথায় রোম্যান্টিক সিনেমা দেখতে যায় আর তুমি কিনা তোমার প্রেমিকা কে নিয়ে এই রকম উধভট একটা বেদনাদায়ক সিনেমা দেখাতে এনেছ।"

অভি, "ওকে বাবা, কি চাও তুমি? দেখতে চাও না চলে যেতে চাও?"

পরী, "না আমি আর এই সিনেমা দেখতে চাই না। আমাকে প্লিস এখান থেকে নিয়ে চলো।"

সিনেমার মাঝখানেই ওরা হল ছেড়ে বেড়িয়ে এল, অভির মন খারাপ হল বটে কিন্তু পরীকে দুঃখ দিয়ে সিনেমা দেখতে মন চাইল না। আকাশের দিকে তাকিয়ে পরী লক্ষ্য করল যে ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করেছে।

অভির দিকে ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে বলে, "অভি, বৃষ্টি নামলো বলে, কি করব? আমার শাড়ি ভিজে যাবে যে?"

অভি, "বারি ফিরে যাই চলো।"

বারির ফিরে যাবার কথা শুনে পরীর মন খারাপ হয়ে গেল। পরী ওকে বলল, "একদিনের জন্যও ঠিক করে বের হতে পারিনা। চলো না সেই আইস্ক্রিম পার্লারে যেখানে অরুনাকে নিয়ে গেছিলে।"

অভি আর পরী, ট্যাক্সি চেপে আউট্ট্রাম ঘাটের স্কুপ আইসক্রিম পার্লারে চলে আসে। পরীকে নিয়ে সেই একই জায়গায় বসে অভি, যেখানে অরুনাকে নিয়ে বসেছিল। পরী বড় কাঁচের জানালার বাইরে তাকিয়ে গঙ্গার দিকে একমনে তাকিয়ে থাকে, আকাশ কালো, জল কালো, মাঝে দিগন্তের দিকে একটু খোলা আকাশ, নয়নাভিরাম দৃশ্য।

পরী হেসে ওর দিকে তাকিয়ে বলে, "এই রকম রোম্যান্টিক জায়গা থাকতে তুমি কিনা আমাকে নিয়ে সিন্ডলারস লিস্ট দেখতে গেছ, কি মানুষ তুমি, অভি?"

পরীর কাঁধে মাথা রেখে চুপ করে বসে থাকে অভি, পরী আইস্ক্রিম খেতে খেতে মাঝে মাঝে ওর মাথার গাল ঘষে দেয়। বাইরে ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু করে দিয়েছে। পরী ওকে বলে যে এবারে বারি ফেরা উচিত। তাড়াতাড়ি আইস্ক্রিম শেষ করে ট্যাক্সি চেপে বাড়ি পৌঁছায় ওরা। বাড়িতে কেউ ফিরে আসার আগেই বাড়ি ঢুকে পরে। সারাটা রাস্তা দু’জনে বেড়াল ছানার মতন মারামারি করেতে থাকে, পরী ওকে খেপিয়ে তোলে যে প্রেমিকা কে নিয়ে কেউ কি ওই রকম উধভট সিনেমা দেখতে যায়, আর অভি রেগে যায় কেননা ওই সিনেমাটা ওর খুব প্রিয়।

দরজা খুলে পরী সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠে, পেছনে অভি। হাল্কা গোলাপি রঙের সিফন শাড়িটা যেন আস্টেপিষ্টে কমনীয় দেহের সাথে লেপে গেছে। ফুলে ওঠা নিতম্বের দোলা দেখে অভির মন নেচে ওঠে, শাড়ির আঁচল একদিক থেকে সিঁড়িতে পরে পরীর পেছন পেছন ধাওয়া করছে যেন। অভি শাড়ির আঁচল টেনে ধরে আর আঁচল ওর বুক থেকে খসে যায়। আচমকা অভির এই ব্যাবহারে পরী চমকে ওঠে, শাড়ির অপর প্রান্ত ধরে মিনতির সুরে অভিকে বলে, "সোনা, প্লিস ছেড়ে দাও।"

অভি ওর কথায় কান না দিয়ে শাড়ির আঁচল টেনে ধরে সিঁড়ির দেয়ালের ওপরে চেপে ধরে পরীর কমনীয় দেহ। বুক থেকে আঁচল খসে গেছে, কাঁচুলি অনাবৃত উন্নত বক্ষ যুগল যেন কাচুলির ভেতর থেকে ঠেলে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। অভি নিজেকে আর সামলাতে পারে না। অভি নিজের শরীর ওর দেহের ওপরে চেপে ধরে। লজ্জা পেয়ে যায় পরী, হাত উঠে আসে বুকের ওপরে, ঢেকে নিতে চায় নিজের লজ্জা। শ্বাসের ফলে উন্নত বক্ষ ওঠা নামা করে আর মনে হয় যেন এই ফেটে পড়বে। অভি দু’হাত নিয়ে যায় অনাবৃত কোমরে, মৃদু চাপ দিতে শুরু করে পেটের দুপাশের নরম তুলতুলে নারী মাংস। প্রেমিকের হাতের ছোঁয়ায় পরীর শ্বাস উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অভির কামনা ভরা চোখের সামনে পরীর মুখ। দু হাতে অভির জামার কলার মুঠি করে ধরে আর ওর প্রেমঘন চোখের দিকে তাকায়। লাল ঠোঁট জোড়া অল্প খোলা, অভির সারা মুখের ওপরে তপ্ত কামনার শ্বাস বয়ে যায়। অভির সিংহ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে।

প্রকাশ্য দিবালোক সিঁড়ির জানালা দিয়ে ওদের ওপরে পরে, পরী লজ্জায় লাল হয়ে ওকে বলে, "প্লিস সোনা এখানে নয়।"

অভির ভেতরে যেন এক ক্ষিপ্ত হায়না জেগে ওঠে, চেপে ধরে নিজের তলপেট পরীর তলপেটের ওপরে। কঠিন শলাকার পরশ বুঝতে দেরি হয় না পরীর। ঠিক তলপেটের ওপরে কঠিন অভি, মৃদু শীৎকার করে ওঠে পরী, "আহহহ... প্লিস সোনা এখানেই আমাকে পাগল করে তুলো না... প্লিস হানি..."

ঠোঁট চেপে ধরে ওই রসালো ঠোঁটে জোড়ার ওপরে, থামিয়ে দেয় পরীর শীৎকার, মুখের ভেতরে টেনে নেয় পরীর শ্বাস আর লালার মধু। পরী দুহাতে ওর মাথা আঁকড়ে ধরে। কম্পিত উন্নত বক্ষ যুগল, অভির প্রসস্থ বুকের ওপরে লেপে যায় মাখনের মতন, পরী যেন গলে গিয়ে প্রলেপ লাগিয়ে দেয় নিজেকে। তীব্র কামনার আগুনে পরী অভির নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে দাঁতের মাঝে আর আলতো আলতো চাপ দিতে শুরু করে। কামরের সেই স্পর্শ অভিকে উন্মাদ করে তোলে, হাত নামিয়ে নিয়ে আসে পরীর কোমল সুগোল নিতম্বের ওপরে আর চেপে ধরে দুই নারী মন্ড কঠিন থাবার মাঝে। নখ বসিয়ে দেয় শাড়ির ওপরে দিয়ে আর পিষে ধরে কোমল নারী মাংস। দুহাতে চেপে ধরে পরীকে মাটি থেকে উঠিয়ে নেয়, পরী নিজের ভার অভির ওপরে ছেড়ে দেয় আর দুহাতে ওর গলা জড়িয়ে ধরে। কোলে তুলে বসার ঘরে ঢুকে ডিভানের ওপরে ছুঁড়ে দেয় পরীর কমনীয় শরীর। ডিভানে শুয়েই পরী ওর আঁচল গুটিয়ে নিয়ে বুকের কাছে জড় করে ধরে মিনতি করে অভির কাছে, "প্লিস এখুনি শুরু করো না সোনা, বাবু যেকোন মুহূর্তে বাড়ি ফিরে আসবে।"

এক টানে জামার বোতাম খুলে ফেলে অভি, জামা ছুঁড়ে ফেলে মাটিতে। প্রেমিক অভি লালসার লেলিহান শিখায় জ্বলে এক বুভুক্ষু হায়নার ন্যায় হয়ে উঠেছে। হিংস্র চোখে ক্ষুধার্ত দানবের মতন তাকিয়ে থাকে পরীর দিকে। বিছানার ওপরে চড়ে পরীর দিকে এগিয়ে যায় আর পরী ওর চোখের ভাষা দেখে ভয়ে দেয়ালের দিকে পিছিয়ে যায়। এ কোন অভিমন্যু, এত ওর প্রানের অভি নয়, কেঁপে ওঠে পরীর বুক। ওর পা ধরে টান মারে অভি, এক লাথি মারে অভির বুকের ওপরে। অভির হাত পৌঁছে যায় শাড়ির গিঁটের ওপরে, নাভির চারদিকের নরম মাংসে নখ বসিয়ে খামচে ধরে। পরী বারংবার অভিকে শান্ত হতে কাতর মিনতি জানায় কিন্তু ক্ষুধার্ত অভি উন্মাদ হয়ে উঠেছে। পেটের ফর্সা ত্বকের ওপরে নখের আঁচরে লাল হয়ে ওঠে।

পরী চিৎকার করে ওঠে ক্ষিপ্ত নাগিনীর মতন, "আমাকে ছেড়ে দাও অভি। আমার লাগছে।"

কি হয়েছিল সেদিন অভির, কিছুই জানে না, কোন কারন নেই তাও পরীর ওপরে যেন ওকে খুবলে খাবার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। পরীর চিৎকারে অভির সম্বিৎ ফেরে, ওর চোখের দিকে তাকিয়ে দেখে, পরীর গাল বেয়ে প্রচন্ড বেদনার অশ্রু গরাচ্ছে। ডুকরে কেঁদে ওঠে পরী, কম্পিত ঠোঁটে ধিক্কার জানায়, "ছেড়ে দাও আমাকে, তুমি আমার অভি নও।"

অভি তাও ছাড়েনা পরীকে, ওর কাতর মিনতি অভির কানে পৌঁছায় না। বুকের কাঁচুলি হাতের মুঠির মধ্যে নিয়ে একটান মারে আর পরপর করে ছিঁড়ে ফেলে হালকা গোলাপি রঙের বক্ষ আভরন। ভেতরের অন্তর্বাস সরে যায় বুকের অপর থেকে। বাম হাতে চেপে ধরে পরীর কোমল অনাবৃত বক্ষ।

বুকের আভরন ছিঁড়ে যেতেই, মর্মাহত পরী প্রাণপণে চিৎকার করে ওঠে, "দূর হয়ে যাও তুমি, তুমি কিছুতেই আমার অভিমন্যু হতে পার না, তুমি একটা জানোয়ার।"

এক হাতে বুকের কাপরে বুকের ওপরে কোন রকমে গুটিয়ে, ডান হাতে সজোরে এক থাপ্পর লাগিয়ে দেয় অভির গালে। চোখের চশমা খুলে মেঝেতে পরে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। অভি ওর বুক ছেড়ে দেয়। পরী আবার এক থাপ্পর কষিয়ে দেয় অভির গালে। আবার চিৎকার করে ওঠে ওর দিকে, "তুমি একটা জানোয়ার, তুমি পশু হয়ে গেছ অভি। আমি যে অভিমন্যু কে চিনতাম সেই অভি তুমি নও, আমার চোখের সামনে থেকে চলে যাও, অভি। দূর হয়ে যাও, আমি তোমাকে ঘৃণা করি।"

থাপ্পর খেয়ে অভির গাল লাল হয়ে যায়, ওর পশু সুলভ ঘোর কেটে যায়। চোখ বন্ধ করে পায়ের কাছে মাথা নিচু করে পরে যায়। কোনোরকমে গায়ের কাপড় বুকের কাছে গুটিয়ে নিয় কেঁদে ফেলে পরী। অভি আর ভাবতে পারেনা, কি হয়েছিল ওর, কেন ওর মধ্যে হটাত করে এক বুভুক্ষু হায়না জন্ম নিয়েছিল? উত্তর নেই অভির কাছে।

দেয়ালে মাথা ঠুকে কাঁদে পরী, "কেন কেন, তুমি আমার সাথে এই রকম ব্যাবহার করলে? কেন?"

পরিতাপের জল অভির চোখে দিয়ে গড়িয়ে পরে। পরীর পায়ের ওপরে মাথা রেখে কেঁদে ফেলে অভি, ফর্সা পা ভিজে যায় অভির চোখের জলে। অনেকক্ষণ ধরে দুজনে কাঁদে, পরীর কাছে ভর্তসনা জানাবার ভাষা নেই আর অভির কাছে ক্ষমা চাইবার ভাষা নেই। বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। অনেক পরে পরী কোন রকম নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে, নিজের ঘরে ঢুকে যায় আর দরজা বন্ধ করে দেয়। পরিতপ্ত অভি দেয়ালে মাথা ঠোকে বারবার। বারংবার নিজেকে প্রশ্ন করে, "কেন অভিমন্যু কেন, তুমি তোমার প্রেমিকার সাথে এই জানয়ারের মতন ব্যাবহার করলে।"

উত্তর নেই অভির কাছে।

ভাগ্যবশত অভির কাছে আরও একটা চশমা ছিল। বাবা মা ফিরে আসার পরে, সারা বিকেল ওরা একে ওপরে দিকে তাকাতে পারেনি। দুজনেই অবিশ্বাস্যভাবে চুপ করে যায়। কান্নার জন্য পরীর চোখ মুখ লাল হয়ে যায়। মা পরীকে কারন জিজ্ঞেস করাতে, পরী জানায় যে বিকেলে একটু বেশি ঘুমিয়ে পড়েছিল তাই চোখ মুখ লাল।

কোনরকম রাতের খাবার খেয়ে শুতে চলে যায় অভি। সারা রাত ঘুমাতে পারেনা অভি, ওর কানে পরীর কান্না বার বার ধাক্কা দেয়, "তুমি একটা জানোয়ার, তুমি পশু হয়ে গেছ অভি। আমি যে অভিমন্যু কে চিনতাম সেই অভিমন্যু তুমি নও।"

সকালে অভির দেরি করেই ঘুম ভাঙ্গে। নিচে নেমে দেখে যে বাবা মা কাজে বেড়িয়ে গেছেন, ঘরের মধ্যে কোথাও কোন আওয়াজ নেই, সারা বাড়ি যেন অস্বাভাবিক ভাবে নিস্তব্ধতার আঁচলে মোড়া। চুপ করে বসার ঘরে গিয়ে বসে, দেয়াল গুলো যেন ওর দিকে রেগে মেগে তাকিয়ে আছে, মাথার ওপরের ছাদ যেন ওর ওপরে হুমড়ি খেয়ে পড়বে। দরজা জানালা যেন ওকে বারংবার ধিক্কার জানাচ্ছে যে ও একটা নোংরা বীভৎস বুভুক্ষু জানোয়ার। টি.ভি চালায় অভি, কিন্তু সেই টি.ভির আওয়াজ ওর কান পর্যন্ত পৌঁছায় না।

কিছু পরে পর্দার আড়ালে পরীর পায়ের আওয়াজ শুনে চমকে ওঠে। বসার ঘরের পর্দা সরিয়ে পরী চায়ের কাপ নিয়ে ঘরে ঢুকে ওর দিকে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। লজ্জায় আর পরিতাপে অভি মাথা তুলে তাকাতে পারেনা। মুখ নিচু করে পাথরের মতন সোফায় বসে থাকে চুপ করে। কিছু পরে মাথা উঠিয়ে পরীর দিকে তাকায়। পরী ওর দিকে জল ভরা চোখে তাকিয়ে থাকে। সামনে এসে টেবিলের ওপরে সায়ের কাপ রেখে ওকে জিজ্ঞেস করে, "কাল কি হয়েছিল তোমার?"

ওর গলার আওয়াজ শুনে আর থাকতে পারেনা অভি। পরীর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ওর কোমর জড়িয়ে ধরে পেটের ওপরে মুখ লুকিয়ে নেয়। কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে, "আমি জানিনা পরী, আমি সত্যি জানি না আমার কি হয়েছিল।"

পরী ওর মাথা নিজের দিকে তুলে ধরে আবার জিজ্ঞেস করে, "কি হয়েছিল তোমার?"

চিকচিক করছে পরীর চোখ, ঠোঁটে লেগে মৃদু হাসি। অভির হৃদয় যেন কেউ মুঠির মধ্যে করে নিয়ে মুচরে দেয় আর বিবেক ওকে ধিক্কার জানায়। আবার জিজ্ঞেস করে পরী, "আমার অভি ত ওইরকম ছিল না। তুমি কেন আমার সাথে হায়নার মতন ব্যাবহার করলে সত্যি বলোতো?"

কেঁদে ফেলে অভি, "আমি সত্যি বলছি পরী, আমি জানিনা কেন আমি কাল তোমার সাথে ওইরকম ব্যাবহার করেছিলাম। এই শেষবারের মতন আমাকে ক্ষমা করে দাও পরী।"

পরী সোফায় বসে অভির মুখ দুহাতে আঁজলা করে ধরে ওর চোখের দিকে তাকায়। আঙুল দিয়ে গালের জলের দাগ মুছিয়ে বলে, "তুমি একটা ভীষণ শয়তান ছেলে।" নাকে নাক ঘষে বলে, "তুমি একটা জানোয়ার, একটা পশু তুমি।"

চোখের থেকে চশমা খুলে টেবিলের ওপরে রেখে দেয়। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে অভির ঠোঁটের কাছে এনে ধরে, ওকে চা খেতে বলে। অভি ওর কোমর প্রাণপণে জড়িয়ে ধরে ওকে মিনতি করে বলে, "আমার এই ব্যাবহারের জন্য তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবেনা ত?"

হেসে ফেলে পরী, "কি করে যাই বলো, তোমাকে ছেড়ে? তুমি শয়তান, তুমি পশু হতে পারো, কিন্তু তুমি যে গাধা একটা। আমাকে ছাড়া তুমি জীবনে এক পা ও চলতে পারবে না। আমি কি করে আমার সেই ছোট্ট রাজকুমার কে ছেড়ে চলে যাই বলো ত? আমি ত তাকে ছেড়ে যেতে পারিনা। ওই কথা কখন মুখে আনবে না, যে আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যাবো। এবারে চা খেয়ে নাও।"

অভির ঠোঁটের কাছে চায়ের কাপ ধরে চা খাইয়ে দেয়। চা খাওয়ানোর পরে বাইরে তাকিয়ে দেখে যে ঝিরঝির বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টির দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে অভিকে বলে, "বাইরে দেখ, মেঘের দেবতারা আকাশ থেকে আমাদের আশীর্বাদ করছেন। চলো না ছাদে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে মজা করি।"

পরী অভির হাত ধরে ধরে টানতে টানতে ছাদে নিয়ে গেল। ওর মুখের হাসি ফিরে এসেছে দেখে অভির মরা গাঙ্গে জোয়ার এল যেন। ছাদে উঠেই ওর হাত ছেড়ে দৌড়ে গিয়ে ছাদের মাঝে দাঁড়িয়ে পরে, বৃষ্টির মাঝে। চোখ বন্ধ করে মাথা উঁচু করে, হাত দুটি দুপাশে ছড়িয়ে যেন বৃষ্টিকে আহবান জানায় ওকে ভিজিয়ে দেওয়ার জন্য। অভি হাসে আর পরী দিকে তাকিয়ে থাকে। পরনের কাপড় ভিজে গিয়ে কোমরের নিচ থেকে পুরো অঙ্গে লেপটে গেছে। পরী যেন শিশিরে ভেজা জুঁই। লম্বা ঘন কালো চুল বেয়ে টপ টপ করে জল বেয়ে চিবুকের নিচে গিয়ে অল্প জমে ওঠে তারপরে টপ টপ করে নিচে পড়তে থাকে। সামনে দাঁড়িয়ে যেন স্বর্গের অপ্সরা মেনকা, এই যেন সাগর জলে স্নান সেরে ওর চোখের সামনে উঠে এসেছে।

চোখে মুখের জল মুছে অভির দিকে তাকিয়ে জোরে ডাক দেয়, "কি হল, ওখানে দাঁড়িয়ে কেন? এখানে এস।"

মৃদু হেসে অভি উত্তর দেয়, "ভুলে গেছ? কয়েক দিন আগেই কিন্তু তুমি জ্বর থেকে উঠছ।"

খিলখিল করে হেসে ফেলে পরী, "না না ভুলিনি, আবার পড়লে তুমি আছো ত আমাকে দেখার জন্য।"

মাথা নাড়ায় অভি, "তুমি শুধরবে না তাই না।"

অভি বৃষ্টির মধ্যে, ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। পরী ওর চোখে দেখে বুঝতে পারে যে অভি কি করতে চলেছে, দু পা পেছনে সরে যায়। অভি আবার দু’পা ওর দিকে এগিয়ে যায় আর পরী আবার দু’পা পিছিয়ে যায়, এ যেন এক বিড়াল আর ইঁদুরের খেলা। অভির চোখে দুষ্টুমির হাসি, একবার হাতে পেলে হয় পরী।

পরী ওর চোখের হাসি দেখে এক দৌড়ে অভির ঘরে ঢুকে পড়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। অভি মাথা দোলায়, "দুষ্টু মেয়ে, কত লুকোচুরি খেলবে আমার সাথে।"

বন্ধ দরজার অন্য পাশ থেকে পরী জোরে বলে ওঠে, "এস না, দেখি কেমন ধরতে পারো।"

দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকে পড়ে অভি, পরী বিছানার পাসে দাঁড়িয়ে তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে থাকে। চোখে মুখে সেই পুরানো হাসি।

অভি ওর হাসি দেখে জিজ্ঞেস করে, "শয়তান মেয়ে, আমার ভেতরে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে তারপরে আবার দুরে ঠেলে দেওয়া হয় কেন?"

পরী ওকে উলটো প্রশ্ন করে, "সবসময়ে কি তোমার শয়তানি করার ইচ্ছে জাগে? কখন কি আমাকে একটু জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে না, একবার অন্তত্ত আদর করে জড়িয়ে ধরে আকাশের দিকে চেয়ে থাকতে। তুমি জড়িয়ে ধরলে মনে যেন এক অনাবিল শান্তির ছায়া নেমে আসে, আমি নিরুদ্বেগে তোমার কোলে মাথা রেখে যেন ঘুমিয়ে পড়তে পারি।"

পরীর কথা শুনে অভির মন ভারী হয়ে যায়, পরিতাপ ঢেকে দেয় ওর হৃদয়কে। অভি ওর দিকে দু’পা এগিয়ে যায়, পরী বলে ওঠে, "আমি কিন্তু একদম ভিজে গেছি, একদম কাছে আসবে না।"

অভি হাত ভাঁজ করে মাথার ওপরে বাড়ি মারে, পরীর দিকে এগতে আর সাহস করেনা। ভারাক্রান্ত মনে জিজ্ঞেস করে, "তাহলে তুমি আমাকে ক্ষমা করনি, তাই ত?"

বিছানার ওপরে ভিজে তোয়ালে ছুঁড়ে ফেলে অভির সামনে এগিয়ে আসে। অভির কলার ধরে উঁচু হয়ে নাকে নাক ঠেকায়। অভির নিস্পলক কাতর চোখের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলে, "তুমি ত ক্ষমার যোগ্য নও। তবে একটা শর্তে ক্ষমা করতে রাজি আছি, যদি তুমি আমার ছবি আঁকো।"
Like Reply




Users browsing this thread: 3 Guest(s)