Thread Rating:
  • 26 Vote(s) - 3.46 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance ভালবাসার রাজপ্রাসাদ Written By Pinuram
#1
Heart 
ভালবাসার রাজপ্রাসাদ
Written By Pinuram
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#2
Disclaimer : এই কাহিনীর কিছু চরিত্র এবং ঘটনা কাল্পনিক, কিছু চরিত্র এবং ঘটনা বাস্তব। পুরানো হলুদ কিছু পাতা নিয়ে আবার করে সামনে আসা, এক নতুন ভাবে পরিবেশন করা এই গল্প।



ভুমিকাঃ

এই জীবন ছিল নদীর মতন গতি হারা দিশা হারা
ওগো তোমার আকাশ দুটি চোখে আমি হয়ে গেছি তারা।
ওগো আমি হয়ে গেছি তারা,
ওগো তোমার আকাশ দুটি চোখে আমি হয়ে গেছি তারা।
আগে ছিল শুধু পরিচয় ,পরে হল মন বিনিময়
আগে ছিল শুধু পরিচয় ,পরে হল মন বিনিময়
শুভ লগ্নে হয়ে গেল শুভ পরিণয়
আমি যখনি ডাকি জানি তুমি দেবে সারা
এই জীবন ছিল নদীর মতন গতি হারা দিশা হারা
ওগো তোমার আকাশ দুটি চোখে আমি হয়ে গেছি তারা।





প্রথম অধ্যায়ঃ প্রথম প্রেম

নিমন্ত্রন

সন ২০০০, শীতকাল ঠিক দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে হাতছানি দিচ্ছে। নভেম্বর মাসের ঠাণ্ডা শীত তখন ঠিক মতন পড়েনি। । বাইশটা বসন্ত পেরিয়ে, অভিমন্যু তখন কলেজের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র। আবছা কুয়াশা মাখা মিষ্টি রোদ আর ঘাসের ডগায় শিশিরের চিকমিক যেন মন টাকে ব্যাকুল করে তোলে এক অজানা আনন্দের খোঁজে। দিনটা ছিল রবিবার। অভিমন্যু বসার ঘরে বসে আপনমনে খবরের কাগজ’টা পড়ছিল, না ঠিক পড়ছিল নয়, দেখছিল আর গরম চায়ে সুরত সুরুত করে চুমুক দিচ্ছিল। ওর মা রান্না ঘরে রান্না করছিলেন আরে বাবা বাজারে গেছিলেন।

ঠিক সেই সময়ে কলিং বেল বেজে ওঠে। মা বললেন এক বার দেখতে, হয়ত পেপারওয়ালা মাসের টাকা নিতে এসেছে। অভি দৌড়ে নিচে গিয়ে দেখে যে দরজায় একজন মধ্য বয়স্ক ভদ্রলোক এবং এক ভদ্রমহিলা দাঁড়িয়ে। অভি তাদের কাউকেই চেনেনা।

ভদ্রলোক অভি কে জিজ্ঞেস করলেন, "তোমার মা বাড়িতে আছেন?"

মাথা নাড়িয়ে জবাব দেয় অভি যে মা বাড়িতে আছেন। ভদ্রলোক নিজের পরিচয়ে বললেন যে তিনি মায়ের দূর সম্পর্কের ভাই হন। অভি ওদেরকে বাড়ির মধ্যে আসার জন্য বলল এবং বসার ঘরে বসতে বলে মাকে ডাকতে গেল।

মা বসার ঘরে ঢুকে অবাক, "আরে শশাঙ্ক, কি ব্যাপার? অনেক দিন পরে। এটা তোর বউ, মেঘনা? ভাল ভাল, তা অনেক দিন পরে কি মনে করে আসা হল?"

কথাবার্তায় জানা গেল যে, শশাঙ্ক অভির মায়ের খুব দূর সম্পর্কের ভাই হন। তাঁরা তিন ভাই, তিন বোন। ছোটো ভাই সুব্রতর বিয়ে উপলক্ষে নিমন্ত্রন করতে এসেছে। কথাবার্তার পরিপ্রেক্ষিতে জানা গেল যে, শশাঙ্কর ছোটো বোন তখন অবিবাহিতা আর তাঁরা এক উপযুক্ত পাত্রের খোঁজে করছেন। তাঁরা সবাই গ্রামের বাড়িতে এক যৌথ পরিবারে থাকে, গ্রামের নাম বসিরহাট। অভি’র মা একজন শিক্ষিকা, মায়ের স্কুলও বসিরহাটে। মা যখন স্কুলের চাকরি শুরু করেন তখন তিনি ওদের বাড়িতে থাকতেন। অভির জন্মের বছর দুই আগে, মায়ের ছোটো মাসি, শশাঙ্কের মা, এক কন্যে সন্তানের জন্ম দেন। মায়ের ছোট্ট কুট্টী বোন, শুচিস্মিতা। মায়ের মুখে অভি তার কথা অনেক শুনেছে, কেমন করে অভি কে নিয়ে সারাদিন খেলে বেড়াত শুচিস্মিতা।

অভিমন্যুর যখন দুষ্টুমি করার বয়স হল এবং স্কুল যেতে শুরু করল তখন অভির বাবা মা, কলকাতা চলে আসেন। অভির মনে সেই ছোটো বেলার কোন কথাই মনে নেই। সব তাই যেন এক স্বপ্ন ধোঁয়াটে।

অভির মা অভিকে বললেন যে, শুচিস্মিতা বাড়ির ছোটো মেয়ে সেই জন্য সব থেকে দুষ্টু ছিল। ওর চেয়ে শুধু অভি ছোটো ছিল তাই অভিকে নিয়ে ওর যত খেলাধুলা চলত। টানতে টানতে নিয়ে যেত আমের বাগানে, পুকুর পাড়ে, ধানের ক্ষেতে। অভি ছিল তার জলজ্যান্ত খেলার পুতুল, যাকে নিয়ে ওর সারাদিন কেটে যেত শুধু খেলায়।

গ্রামে সবারই বড় এবং যৌথ পরিবার হয়ে থাকে। শশাঙ্কের দেরও যৌথ পরিবার এবং ওদের এক ছেলে, নাম নীলাঞ্জন, ক্লাস ফোরে পড়ে।

মা শশাঙ্কের নিমন্ত্রন স্বীকার করলেন আর জানালেন যে তাঁরা সবাই সুব্রতর বিয়েতে যাবেন।
Like Reply
#3
প্রথম দেখা

বিয়ের দিন ছিল দিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। এক সুন্দর সকালে ওরা বেড়িয়ে পড়ল মায়ের মাসির বাড়ি, বসিরহাটের উদ্দেশ্যে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাস কোলকাতা ছেড়ে, ধান খেতের মাঝ দিয়ে ছুটে চলতে লাগল। অভি জানাল্র পাশে বসে পুরান স্মৃতি রোমন্থন করার প্রবল চেষ্টা চালিয়ে গেল। কেমন দেখতে হবে সেই শুচিস্মিতা যে ওকে কোলে নিয়ে ছোটো বেলায় অনেক খেলা করেছে, শীতের রাতে ওকে জড়িয়ে ধরে ঠাণ্ডা থেকে বাঁচিয়েছে। এই সব ভাবতে ভাবতে অভি একসময়ে ঘুমিয়ে পড়ল।

অভি’র ঘুম ভাঙ্গল মায়ের ডাকে, "এই ওঠ। বসিরহাট এসে গেছে প্রায়। এর পরের স্টপেজে আমাদের নামতে হবে।"

বাস থেকে নামার পরে মা জানালেন যে শশাঙ্কর বাড়ি বড় রাস্তা থেকে প্রায় মাইল দুই তিন ভেতরে, এতটা রাস্তা হাটতে হবে তবে গিয়ে গ্রামে পৌঁছান যাবে। অভি জিজ্ঞেস করল যে কোন রিক্সা পাওয়া যায় কিনা।

প্রতিউত্তর অভির বাবা বললেন যে, "ব্যাটা, গ্রামের হাওয়া বাতাসে অনেক অক্সিজেন। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে নে, এই সুদ্ধ হাওয়া বাতাস কোলকাতায় পাবি না। এখানে তুই মাটির অনেক কাছে আছিস, হেঁটে চল।"

বাবার কথা তো আর অমান্য করা যায় না, অগত্যা অভি হাঁটতে শুরু করে।

রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে মা ওকে শুচিস্মিতার গল্প শুনালেন। সেই শুনে অভির মনে শুচিস্মিতাকে দেখার এক প্রবল ইচ্ছে জেগে উঠল।

অনেকক্ষণ হাঁটার পরে ওরা সবাই মায়ের মাসির বাড়ি পৌঁছে গেল। বাড়িটা বিশাল। মায়ের মেসোমশাই বেশ বড় চাষা ছিলেন, অনেক জমি জমা ছিল এককালে। অনেকদিন আগেই তিনি দেহরক্ষা করেছেন। মেসোমশাই মারা যাবার পরে, বড় ভাই সুমন্ত পরিবারের দায় দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেন। সংসারের জোয়াল কাঁধে পরাতে তিনি আর বেশি পড়াশুনা করতে পারলেন না, তিনি চাষ বাস করে বাকি ভাই বোনেদের পড়াশুনা করিয়েছেন এবং বোনেদের বিয়েথা দিয়েছেন।

বাড়িতে ঢোকা মাত্রই মনে হল যেন এক জন সমুদ্রের মাঝে এসে পড়েছে অভি। চারদিকে লোকজনের হইহুল্লর, চেঁচামেচি, দৌড়া দউরি লেগে আছে। অভি সেই পরিবেশে একদম নতুন, কাউকেই সে চেনে না। মায়ের মাসিমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল মা। ঝুঁকে প্রনাম করল অভি। দিদু পরিবারের সবাইকে ডেকে অভির পরিবারের সাথে সবার আলাপ করিয়ে দিল। অভির চোখ থেকে থেকে শুচিস্মিতাকে খোঁজে, তার কোন দেখা নেই। অভির বুকের ভেতরটা ধুকপুক করছে, জিজ্ঞেস করবে কি করবেনা যে শুচিস্মিতা কোথায়, জিজ্ঞেস করাটা বাতুলতা হতে পারে সেই ভয়ে জিজ্ঞেস করল না অভি। মা মেঘনা কে শুচিস্মিতার কথা জিজ্ঞেস করলেন। হাঁফ ছেড়ে বাঁচল অভি। মেঘনা উত্তর দিলেন যে যেহেতু শুচিস্মিতা বাড়ির সব থেকে ছোটো মেয়ে তাই ছোটবেলা থেকেই অনেক চঞ্চল। ওর বাড়ির বিয়ে হয়ত কোথাও ওর বান্ধবীদের সাথে ঘুরছে বা আড্ডা মারছে।

ঠিক সেইসময়ে ওদের পাশ দিয়ে একদল মেয়ে গল্প করতে করতে আর ফুল হাতে নিয়ে কোথাও যাচ্ছিল। মেঘনা ওদের মধ্যে একজন কে ডাক দিল, "পরী এই দিকে শোনো। উলুপি দি ডাকছে তোমাকে।"

মেয়েদের দলের মাঝ থেকে একটি সুন্দরী তরুণী এগিয়ে এল। লাল ঠোঁটে লেগে আছে মনমোহক হাসি। মেয়েটি ঝুঁকে মায়ের পায়ে প্রনাম করল। অভির মা, দু’হাতে জড়িয়ে ধরল মেয়েটিকে। তারপর মেয়েটির চিবুক ছুঁয়ে আদর করে কপালে একটা চুমু খেলেন।

মাতৃ সুলভ স্বরে বললেন, "পরী! আমার ছোট্ট মেয়েটা অনেক বড় হয়ে গেছে। অনেক দিন তোকে দেখিনি রে।"

অভি নিস্পলক চোখে মেয়েটির সৌন্দর্য সুধা পান করে চলেছে। মেয়েটির গায়ের রঙ বেশ ফর্সা যেন একটু আলতা ছোঁয়ান। পরনে একটি ছোটো হাতার হালকা গোলাপি রঙের জমকালো সালোয়ার কামিজ পড়েছে। মাথার লম্বা ঘন কালো চুল একটা হাত খোঁপা করে ঘাড়ের কাছে আলত করে বাঁধা। খোঁপায় জুঁই ফুল গোঁজা, আর সেই জুঁই ফুলের গন্ধে চারপাশ মাতোয়ারা করে তুলেছে। শীতের মিষ্টি রদ্দুর যেন ওর ত্বকের ওপরে পেছল খাচ্ছে। ডিম্বাকৃতি মুখাবয়াব, হাসলে দু’গালে টোল পরে, আর তাতে যেন হাসিটার সৌন্দর্য আরও শত গুন বেড়ে যায়। মেয়েটির রুপে মোহিত হয়ে যায় অভিমন্যু, হাঁ করে চেয়ে থাকে ওর দিকে।

পরী একবার অভির হাঁ করা মুখের দিকে চেয়ে, মাকে প্রশ্ন করল, "এটি তোমার পুত্র অভিমন্যু, তাই না?"

মা মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলেন, "হ্যাঁ। তোর মনে আছে, ছোটো বেলায় তুই এর সাথে খেলতিস। তুই যেখানে যেতিস, তোর সাথে একেও টেনে নিয়ে যেতিস।"

পরী অভির দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে মাকে জিজ্ঞেস করল, "বাঃবা, অভিমন্যু তো অনেক বড় হয়ে গেছে।"

অভির দিকে তাকিয়ে এক মিষ্টি হাসল পরী। সেই হাসি দেখে অভির বুকের ভেতরের রক্ত ছলকে উঠল। আওয়াজ শুনে মনে হল যেন ওর কানে কেউ মধু ঢেলে দিয়েছে।

মাকে জড়িয়ে ধরে পরী বলল, "উলুপিদি, আমার না খুব তাড়া আছে। আমি এখন যাচ্ছি, পরে তোমাদের সাথে কথা বলব।" তারপরে অভির দিকে তাকিয়ে বলল, "তুমি আমাকে পরী বলে ডাকতে পার। আমাকে বাড়ির সবাই পরী বলেই ডাকে। আমার এখন খুব তাড়া আছে, আমি তোমার সাথে পরে দেখা করব।"

মেঘনা পরীকে বলল, "তোমার কোন তাড়া নেই, পরী। তুমি শুধু আড্ডা মেরে বেড়াবে আর কিছু না।"

পরী মেঘনাকে জড়িয়ে ধরে বলল, "অঃ বৌদি, এইত সময় আমার আড্ডা মারার আর মজা করার।"

তারপরে পরী ওর বান্ধবীদের সাথে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেল। অভি নিস্পলক চোখে পরীর চলে যাওয়ার দিকে চেয়ে রইল। নাসারন্ধ্রে তখন শুধু জুঁইয়ের গন্ধ মম-মম করছে।

অভির মা অভিকে বললেন যে ঘুরে ফিরে সবার সাথে আলাপ পরিচয় করে নিত। নিজেরা চলে গেলেন ভেতরে। অভি একা একা কি করবে ঠিক ভেবে পেল না। একেবারে নতুন পরিবেশ নতুন মানুষজন, কাউকেই ও চেনেনা।

এক কাপ কফি নিয়ে ছাদে উঠে গেল অভি। পড়ন্ত দুপুরের রোদে ছাদের ওপরে একা একা ঘুরতে ঘুরতে এক কোনায় দাঁড়িয়ে গ্রামের শোভা দেখতে লাগল।হটাত করে চোখ গেল নিচে উঠানে। সেই মেয়েদের দল উঠানে দাঁড়িয়ে আড্ডা মারছে। পরী কে দেখতে ঠিক এক রাজকুমারীর যেন সখী পরিবেষ্টিত হয়ে রয়েছে সেই রকম লাগছে। অভির চোখ আবার যেন পরীর শরীরের আঁকিবুঁকি মাপার জন্যে আনচান করছে। পরীর গঠন যেন প্রাচিন এক বালি-ঘড়ির মতন। তিন তলার ছাদ থেকে অভি পরীর রুপ ব্যাস এইটুকুই দেখে মন শান্তি করতে হল।

পরীর অপরূপ সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে প্রেমে পরে গেছে অভি। এক অদৃশ্য চুম্বকীয় শক্তি বাঁ ভাললাগা যেন ওকে পরীর দিকে টানছে। কিছু পরে মেয়েদের দলটি উঠান ছেড়ে অন্য দিকে চলে গেল।
[+] 1 user Likes sorbobhuk's post
Like Reply
#4
বিমোহিত সৌন্দর্য

অভি পুনরায় পরীর চিন্তায় হারিয়ে গেল, যদি পরী ওর সাথে দেখা করতে না আসে? কিন্তু না আসার ত কোন কারন খুঁজে পাচ্ছে না। অভি’ত পরীর আত্মীয় হয় মাত্র, দেখা করতে আসা বা কথা বলা দৃষ্টিকটু নয়।

সূর্যি পশ্চিম আকাশের দিকে ঢলে চলেছে। বাড়ির সকলে নিজেদের সাজসজ্জা নিয়ে ব্যাস্ত। বিয়ে বলে কথা তাই সবাই নিজেদের কে নিখুত করে তুলতে তৎপর। অভি বরযাত্রী। অভি জানতে পারল যে কনের বাড়ি বসিরহাট থেকে অনেক দূর, রানাঘাট নামক এক জায়গায়, বাসে প্রায় ঘন্টা চারেক লাগবে যেতে। বিয়ের লগ্ন মাঝ রাতে।

বাঙ্গালীর প্রিয় পোশাক ধুতি পাঞ্জাবী। সাধারনত অভি ধুতি পাঞ্জাবী পরেনা, কিন্তু খুব কাছের কারুর বিয়ে হলে ধুতি পাঞ্জাবী পরে। অভি একটি ধাক্কা পাড়ের ধুতি আর তসরের পাঞ্জাবী পরে। গায়ে জড়িয়ে নেয় ঘিয়ে রঙের কাশ্মিরি শাল। এই জন সমুদ্রে অভিকে একদম আলাদা লাগছে ওর পোশাকের জন্য। এককোনে দাঁড়িয়ে থাকে অভি, চারদিকে সাজ সাজ কোলাহল।

সূর্যি পশ্চিম দিগন্তে পাটে চলে গেছে। বিয়ে বাড়ি সহস্র আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে। বিয়ের ভিড়ে অভি আবার একা সাথে শুধু পরীর মুখাবয়াব চোখের সামনে ভেসে বেড়াচ্ছে। এমন সময়ে হটাত করে কেউ অভির পাঞ্জাবির হাতা ধরে টান মারে। পেছন ঘুরে তাকিয়ে দেখে একটা বাচ্চা ছেলে ওর পেছনে দাঁড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি করে হাসছ।

অভি ওকে জিজ্ঞেস করে, "কি হল?"

ছেলেটি উত্তর দিল, "আমি নীলাঞ্জন। সবাই আমাকে দুষ্টু নামে ডাকে, আমি তোমার শশাঙ্ক মামার পুত্র।"

অভি হাত বাড়িয়ে হাত মেলায় দুষ্টুর সাথে, "তোমার সাথে দেখা করে বেশ ভাল লাগল।"

দুষ্টু উত্তর দিল, "আমার ছোটো পিসি, পরী, তোমাকে উঠানে ডাকছে।"

অভি ওকে জিজ্ঞেস করে, "কেন ডাকছে?"

ওদিকে মনে তখন ওর নাচন ধরেছে!

দুষ্টু একটি শয়তানি হাসি হেসে বলে, "দেখা করে নিজেই জিজ্ঞেস করে নিও কেন ডাকছে।"

এই বলে দুষ্টু পালিয়ে গেল।

অভি উঠানের দিকে পা বাড়াল। প্রত্যেক পদে ওর বুকের ধুকপুকানি শতগুন বেড়ে গেছে, হৃদয়টা যেন পাঁজর ফেটে বেড়িয়ে আসার চেষ্টা করছে। সেই শীতের রাতে অধির ব্যাকুলতায় অভির ঘাম দিয়ে দিল।

উঠানে পা রাখতেই অভি দেখতে পেল যে পরী আর কিছু মহিলাদের সাথে দাঁড়িয়ে গল্প করছে। সেই মহিলাদের মাঝে অভির মা ও বর্তমান। মাকে দেখে অভির বুকটা বেলুনের থেকে হাওয়া বেড়িয়ে যাওয়ার মতন চুপসে গেল।

মা ওকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করল, "এদিকে আয়। সারা দিন কোথায় ছিলিস তুই?"

পরী ওর দিকে দুষ্টুমি মাখা হাসি নিয়ে জিজ্ঞেস করল, "হ্যাঁ অভিমন্যু, সারাদিন কোথায় ছিলে?"

ওই হাসি দেখে, অভির মনে হল বলে ফেলে, "তোমার খেয়ালে ডুবে ছিলাম সারাদিন।"

মা ওকে জানিয়ে দিলেন যে বাস বিকেল ছ’টার মধ্যে ছেড়ে যাবে, যেখানেই থাকুক না কেন অভি যেন ঠিক সময়ে বাসে উপস্থিত থাকে।

পরী অভির পাশে এসে ওর মাকে বলল, "কোন চিন্তা করোনা উলুপিদি। ছোটো বেলায় ওকে যেমন দেখতাম ঠিক তেমনি করে দেখব আমি।"

পরীর দিকে তাকাল অভি। পরীর পরনে কালো রঙের জমকালো শাড়ি তাতে সোনালি সুতোর ভারী কাজ। রুপ দেখে মনে হল যেন আকাশ থেকে একটুকরো তারা মাটিতে নেমে এসেছে। পাশে দাঁড়িয়ে অভির বাজুতে হাত ছোঁয়াল পরী। হাতের ছোঁয়ায় অভির সারা অঙ্গে যেন বিদুত্য খেলে গেল। অভির নাকে পরীর সেই মনমাতান জুঁইয়ের গন্ধে ভরে উঠল। ওর দিকে তাকিয়ে দেখল ওর মুখ। টিয়ে পাখীর মতন নাক, টানা টানা কাজল কালো দুই চোখ, দুই ভুরু যেন কালো দুই চাবুক। ঠোঁট জোড়া যেন রসাল কোন ফল।

অভির দিকে তাকিয়ে পরী ইশারা করল ওর সাথে হাঁটতে। নির্বাক হয়ে এতক্ষণ অভি শুধু পরীকে দেখে যাচ্ছিল, ওর কথা শুনে হতবাকের ন্যায় ওর পাশাপাশি হাঁটতে শুরু করল।

পরী ওকে জিজ্ঞেস করল, "তোমার কি ছোটবেলার কোন কথাই মনে নেই?"

নির্বাক অভি মাথা নাড়ল, "না নেই।"

পরী, "তুমি নাকি পড়াশুনায় বেশ ভাল।"

অভি আবার মাথা নাড়ল, "হুম।"

পরী, "তোমাকে না এই ধুতি পাঞ্জাবিতে দারুন হ্যান্ডসাম দেখাচ্ছে। তুমি কি সবসময়ে ধুতি পাঞ্জাবী পর?"

নির্বাক অভি আবার মাথা নাড়ল, "না"।

কথা কি বলবে অভি ওত বাক শক্তি হারিয়ে শুধু পরীর কথা শুনে যাচ্ছে।

পরী, "আমি গ্রাজুয়েসান ফিসিক্সে করেছি। শুনলাম তুমিও নাকি ফিসিক্সে গ্রাজুয়েসান করছ?"

অভি আবার মাথা নাড়ল, "হ্যাঁ।"

পরী, "আমি আরও পড়তে চাই। আমার মা আমার বিয়ের জন্যে ছেলে দেখছে। আমি অনেক বলে কয়ে উলুপিদিকে ডাকিয়েছি। উলুপিদি হাইয়ার পড়াশুনা করে এখন স্কুলে চাকরি করেন। উনি যে স্কুলে চাকরি করেন সেই স্কুলে আমি ছোটো বেলায় পড়তাম। আমি আশা করে আছি যে তোমার মা আমার মাকে বলে বুঝাবে যাতে আমি আগেও পড়াশুনা করতে পারি আর উলুপিদির মতন আমিও স্কুলে টিচার হতে চাই।"

অভি চুপচাপ মাথা নাড়িয়ে ওর পাশাপাশি হাঁটতে থাকে। পাশাপাশি হাঁটার ফলে মাঝে মাঝে পরীর হাত অভির হাতের সাথে ছুঁয়ে যাচ্ছে, মাঝে মাঝ আঙ্গুল গুলির একে ওপরকে ছঁচ্ছে। আঙ্গুলের সেই কোমল স্পর্শে অভির শিরদাঁড়ায় যেন বিদ্যতু খেলে যায়। বারে বারে অভির নজর পরীর মুখের দিকে চলে যায়।

পরী, "তোমার মাকে আমি সব বুঝিয়ে বলেছি। উলুপিদি বলেছেন যে ঠিক সময়ে আমার মাকে সব বুঝিয়ে বলবে যাতে আমার মা আমাকে আগেও পরাশুনার জন্য বারন না করে। আমি জানি যে আমার মা তোমার মায়ের কথা উপেক্ষা করতে পারবে না। আমি মায়ের মুখে শুনেছি যে তোমার মা নাকি আমাকে নিজের মেয়ের মতন ভালবাসত আর আমার মা তোমার মায়ের সব কথা শুনত। সেইসব দিন চলে গেছে, আর আমাদের মাঝের ব্যাবধান অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু কিছুদিন আগে তোমার মায়ের কথা উঠতে আমার মায়ের চোখে জল চলে আসে। আজও আমার মা উলুপিদির কথা মনে করে শ্রদ্ধায় মাথা নত করে। সেইসব শুনে আমার মনে হল যে আমি যদি উলুপিদিকে আমার মনের কথা খুলে বলি আর উলুপিদি যদি আমার মাকে বলে তাহলে আমার মা তোমার মায়ের কথা ফেলতে পারবে না।"

অভির দিকে তাকিয়ে পরী জিজ্ঞেস করে, "তোমার কি মনে হয় অভিমন্যু? মা আমাকে পড়াশুনা করতে দেবে?"

নির্বাক অভি আকাশের দিকে তাকিয়ে তারা গুনতে চেষ্টা করল, কি উত্তর দেবে, ওর কানে ত একবর্ণ ও কথা ঢোকেনি।

পরী একটু রাগত ভাবে বলল, "কি হল অভিমন্যু? তখন থেকে শুধু আমিই কথা বলে যাচ্ছি। তোমার কি জিব নেই নাকি না বোবা তুমি। তখন থেকে শুধু গরুর মতন মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিচ্ছ যে। কিছু’ত উত্তর দেবে নাকি?"

আকাশের দিকে তাকিয়ে অভি বুক ভরে এক নিঃশ্বাস নিল। বুকের মধ্যে সাহস জুগিয়ে দুম করে বললে ফেলল, "পরী তুমি ভারী সুন্দরী।" কথাটা বলে ফেলেই চোখ বন্ধ করে নেই অভি, এই বুঝি পরী ওর গালে সপাটে এক চড় কসিয়ে দেয়।
পরী ওর কথা শুনে ওর হাত ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে পরে। অভির দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, "তুমি তার মানে আমার কোন কথাই শোনোনি, তাইত। তুমি একদম শয়তান ছেলে, মনে মনে আবার আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা হচ্ছে?"

অভির হাতে সজোরে একটা থাপ্পর মেরে বলল, "তুমি না খুব শয়তান।"

অভি মনের মধ্যে সাহস সঞ্চয় করে পরীর দিকে তাকিয়ে বলল, "না সেই কথা নয়। আমি তোমার কথা সব শুনেছি কিন্তু তুমি ভারী সুন্দরী দেখতে, পরী।"

পরী লাজুক হেসে উত্তর দিল, "দুষ্টু ছেলে, যাই হক, থ্যাঙ্কস ফর দা কমপ্লিমেন্টস।"

অভি জিজ্ঞেস করল, "তোমার বান্ধবীরা কোথায়, তুমি তাদের সাথে কেন নয়?"

পরী উত্তরে জানাল যে, ওর বান্ধবীদের বউভাতে নিমন্ত্রন করা হয়েছে। যেহেতু পরী বাড়ির সবার ছোটো সেইজন্য এই ভিড়ে ওরও খুব একা একা লাগছে।

অভির মন ব্যাকুল হয়ে উঠল, একটু খানি পরীর ছোঁয়া পাওয়ার জন্য হাত বাড়াল পরীর দিকে। ঠিক সেই সময়ে অভির মা ওদের কে ডাক দিলেন, বললেন যে বাস ছাড়ছে ওরা যেন বাসে উঠে পরে। কপালে করাঘাত করল অভি, "ধুর বাবা, এই সময়ে কি মাকে ডাক দিতে হত, একটু পরে ডাক দিলে হত না।"

পরী বুঝতে পারে অভির মনের কথা, বুঝতে পারে যে অভি ওর দিকে হাত বাড়াচ্ছিল। ওর দিকে তাকিয়ে চোখে মুখে দুষ্টুমি ভরা এক হাসি দিয়ে বলল, "আমি অপেক্ষা করে থাকব কিন্তু......"

এই বলে অভিকে ওখানে একা ছেড়ে বাসের দিকে দৌড়ে চলে গেল।
[+] 1 user Likes sorbobhuk's post
Like Reply
#5
প্রথম চুম্বন


বাস ভর্তি বরযাত্রী, মা বাবা, মামা মাসি আরও অনেক আত্মীয় সজ্জন। কোলাহলে বাসের ভেতরে থাকা দায়। অচির উৎসুক আঁখি ওই ভিড়ে শুধু পরীকে খুঁজে বেড়ায়। কিছু পরে দেখতে পায় যে পরী শেষের দিকের একটা সিটে বসে ওর জন্য অপেক্ষা করছে।

ওকে দেখেই জোরে ডাক দেয় পরী, "এদিকে অভিমন্যু। আমি একটা সিট রেখে দিয়েছি তোমার জন্য।"

অভি সুবোধ গাধার মতন মাথা নাড়িয়ে ওর পাশের সিটে গিয়ে বসে পরে। পরী জানালার দিকে বসে আর পাশে অভি। ভিড় ভর্তি বাস লোকজনের জন্যে গরম হয়ে ওঠে। সবাই যেন তারস্বরে চিৎকার করছে। কিছু পরে বরযাত্রীদের বাস রানাঘাট উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।

রানাঘাট পৌঁছতে অনেক দেরি, সেইজন্য অভির মা প্রস্তাব দিলেন যে একটু নাচ গান হয়ে যাক। সবাই মায়ের কথা শুনে সম্মতি জানাল। কিন্তু প্রশ্ন উঠল যে শুরু কে করবে। বড়রা প্রস্তাব দিলেন যে ছোটোরা আগে শুরু করুক।

অভি আর পরী পাশাপাশি বসে, একজনের বাজু আরেক জনের বাজুর সাথে ঘসা খাচ্ছে। পরী বারে বারে এক প্রশ্নমাখা চোখ নিয়ে অভির দিকে তাকিয়ে দেখছ, কিন্তু মুখে কিছু বলছে না। অভির মনের ভেতরে যেন সমুদ্রের উথাল পাথাল ঢেউ বয়ে চলেছে, অকি কোন এটম বম্ব ফেলেছে নাকি, না চুপ করে থাকাটাই নিরাপদ।

বাসের সামনে থেকে কেউ ডাক দিল, "পরী কোথায়, পরী। অনেকক্ষণ পরীর আওয়াজ শোনা যাচ্ছেনা, কি ব্যাপার। পরীর’ত এই রকম হবার কথা নয়।"

অভি মুখ নিচু করে পরীর কানে কানে বলল, "পরী, কি হয়েছে? আমি কি কিছু ভুল করে ফেলেছি? আমি ক্ষমা চাইছি যা ভুলে করেছি তার জন্যে। দেখ সারা বাসের লোক তোমাকে খুঁজছে, পরী।"

পরী অভির মুখের দিকে গভীর দৃষ্টিপাত করে উত্তর দিল, "আমি ভেবেছিলাম যে তুমি আমার কথা গুলো শুনেছ, কিন্তু তুমি আমার কোন কথাতেই কান দাও নি। তুমি বোঝো না, আমি পড়াশুনা করতে চাই।"

অভি, "আই আম সরি, পরী। আমি সত্যি বলছি যে আমি তোমার সব কথা শুনেছি। এবার প্লিস একটু হাসো, দেখ সবাই তোমাকে খুঁজছে পরী, উত্তর দাও।"

পরীর চোখ টলটল করে উঠল, কিন্তু ও অনেক বুদ্ধিমতী মেয়ে। মনের অবস্থা লুকিয়ে রাখার মতন যথেষ্ট বুদ্ধি রাখে।

চিৎকার করে উত্তর দেয়, "পরী এখানে..." পরী উঠে দাঁড়িয়ে অভির দিকে তাকিয়ে বলল, "আমাকে একটু যেতে দেবে নাকি?"

বাসের সিট একদম চাপা, যাবার জায়গা কম। পরীকে একটু কুঁকড়ে বের হতে হল। ওর মসৃণ পিঠ অভির বাজুতে স্পর্শ করল, চিবুক ছুঁয়ে গেল শিরদাঁড়ার ওপরে। মসৃণ ত্বক যেন মাখন। অভি হাত দিয়ে পরীর পাতল কোমর ধরে ওকে বের হতে সাহায্য করে। নিরাভরন ত্বকের ওপরে অভির গরম হাতের স্পর্শে পরী একটু কেঁপে ওঠে। অভি দুষ্টুমি করে পরীর উন্মুক্ত পেটের ওপরে আলতো করে চাপ দেয়। অভির সারা শরীরে বিদ্যুৎ খেলে যায়।

নাক কুঁচকে অভির দিকে তাকিয়ে বলে, "একটু সবুর কর অভিমন্যু, আমি এখুনি আসছি।"

বরযাত্রী ভরা বাস, রাতের ঘন অন্ধকার কেটে দ্রুত গতিতে গন্তব্য স্থলের দিকে দৌড়ে চলেছে। আত্মীয় সজ্জনের কোলাহলে বাস মুখরিত। পরীর সাথে সাথে অনেক লোক ওর চারদিকে নাচ গান শুরু করে দিল। পরী ওদের ভিড়ে হারিয়ে গেল। না ঠিক নয়, বারে বারে পরী আড় চোখে অভির দিকে তাকিয়ে দেখে। চোখ ইশারায় কাতর আহ্বান জানায় ওর সাথে অংশ গ্রহন করতে। কিন্তু অভি একটু ঘরকুন প্রকৃতির ছেলে, বাইরের মানুষের সাথে মিশতে ওর একটু সময় লাগে। অনেকক্ষণ নাচার পরে সবাই ক্লান্ত হয়ে সিটের ওপরে এলিয়ে পরে। যাত্রীদের মধ্যে কেউ প্রস্তাব দেয় গানের খেলা খেলার।

পরী গান বাঁধে, "পিয়া তু আব ত আজা... শোলা সা মন দেহকে আকে বুঝা যা..."

গান গাইতে গাইতে বারে বারে অভির দিকে তাকায় পরী।

পরীর চোরা চাহনি বাসের অনেকের লোকের চোখে পরে যায়। অভির মা বাবার মনে সেইরকম কিছু উদয় হয় না।

অভি ওর গান শুনে আর চুপ করে বসে থাকতে পারেনা। বুক ভরে, একটা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে সাহস জুগিয়ে গেয়ে ওঠে, "তুঝে দেখা ত ইয়ে জানা সনম, প্যার হোতা হ্যায় দিওানা সনম..."

ওর গান শুনে পরী অবাক হয়ে যায়। বাসের বাকি লোকের মুখে প্রশ্ন ওঠে কে এই ছেলেটা আগে ত কোনদিন দেখিনি?

পরী ওদের উত্তর দেয়, "এ অভিমন্যু।" অভির মায়ের দিকে দেখিয়ে বলে, "উলুপিদির ছেলে।"

বড়রা মাকে বলে, "কিরে উলুপি তোর ছেলে যে অনেক বড় হয়ে গেছে।"

এই সব কথাবার্তার মাঝে পরী ওর পাশে এসে দাঁড়ায়। পরী প্রস্তাব দেয় যে যেহেতু গানের খেলা চলছে সুতরাং সবাই নিজের নিজের সিটে বসে গান গাইতে পারে। অভির মন নেচে ওঠে, অনেকক্ষণ পরে ও আবার পরীর পাশে বসার সুযোগ পাবে।

পরী অভির কাঁধের ওপরে ভর দিয়ে ওর পেছনে সিটের ওপরে হাঁটু গেড়ে বসে পরে। কোমল বক্ষ যুগল অভির ঘাড়ের ওপরে পিষ্ট হয়। অভির মাথার ওপরে নিজের চিবুক রেখে গলার দু পাশ দিয়ে সামনের দিকে হাত নামিয়ে দেয় পরী।

গানের খেলা আবার শুরু হয়ে যায়। মাঝে মাঝেই পরী ওর সরু সরু আঙ্গুল দিয়ে অভির চুলে বিলি কাটতে থাকে। আরামে অভির দু’চোখ বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম। অভির মা একবার আড় চোখে ওদের লক্ষ্য করে।

কিছু সময় যাবার পরে একে একে সবাই ক্লান্ত হয়ে পরে, একে একে গান বন্ধ হয়ে যায়।

পরী সবাইকে জিজ্ঞেস করে, "কি হল, আর কি কেউ গান টান গাইবে না?"

অভির মা উত্তর দেয়, "না পরী, আর নয়। সবাই ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। সাড়ে ন’টা নাগাদ আমরা রানাঘাট পৌঁছে যাব, কিছু ক্ষণ রেস্ট নিয়ে নাও নাহলে বিয়ে বাড়িতে সবার চোখ মুখের অবস্থা খারাপ দেখাবে।"

মা স্কুলের শিক্ষিকা, তার গম্ভির গলার আওয়াজে কেউ কোন উত্তর না দিয়ে চুপ করে রইল।

পরী অভির পাশে জানালার দিকের সিটে আরাম করে বসে পড়ল। রাতের অন্ধকার কেটে এগিয়ে চলে বাস। সবাই চুপ, শুধু মাত্র বাসের ইঞ্জিনের শব্দ কানে আসে। পরী অভির ডান কাঁধে মাথা রেখে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকে। সাজ নষ্ট হয়ে যাবার ভয়ে পরী কোন শীতের কাপড় আনেনি। জানালার ফাঁক দিয়ে ঠাণ্ডা হাওয়ায় মাঝে মাঝে পরী কেঁপে ওঠে, অভি নিজের গায়ের শাল খানি খুলে ওর গায়ে জড়িয়ে দেয়।

শাল পরানোর সময়ে কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করে, "এত চুপ কেন, পরী?"

পরী ওর দিকে বড় বড় চোখ করে উত্তর দেয়, "থ্যাঙ্কস। আমার এমনিতে একটু ঠাণ্ডা লাগছিল।" হেসে বলে, "আমি কি বোকা, শীত কালেও কোন ঠান্ডার কাপড় আনিনি।"

অভি মজা করে ওর সাথে, "না না, তুমি শুধু বোকা নও, তুমি একটি সুন্দরী বোকা মেয়ে।"

পরী লাজুক হেসে বলে, "ধুর দুষ্টু ছেলে, দূর হ।"

অভি, "কিছু জিজ্ঞেস করতে পারি কি তোমাকে?"

পরী, "কি?"

অভি, "তোমার কলেজের কথা..."

পরী, "এই একরকম গেছে কলেজ। সেই রকম কিছু বলার মতন নেই।"

অভি, "তোমার কি কোন বয় ফ্রেন্ড আছে?"

প্রশ্নটা শুনে জিজ্ঞাসু চোখে তাকাল অভির দিকে, "এই কথা কেন জিজ্ঞেস করছ?"

প্রশ্নটা করে মাথা উঠাল পরী, অভির চেহারা আর পরীর চেহারার ব্যাবধান কমে এসেছে। একে ওপরে উষ্ণ নিঃশ্বাস ওপরের মুখের ওপরে অনুভব করতে পারছে।

অভির গলা শুকিয়ে এল, বাধও বাধও হয়ে উত্তর দিল, "না মানে এমনি জিজ্ঞেস করলাম। তুমি যা সুন্দরী তাতে তোমার একাধিক বয়ফ্রেন্ড থাকা কোন অসম্ভব ব্যাপার নয়।"

নাক কুঁচকে দুষ্টু হেসে পরী বলল, "আমি যেন কিছু জ্বলার গন্ধ পাচ্ছি মনে হচ্ছে? অভি, আমি কিন্তু সম্পর্কে তোমার মাসি হই, সেটা মনে থাকে যেন।"

"অভি" নিজের নাম ছোটো করে পরীর ঠোঁটে শুনে অভিমন্যুর হৃদয় নেচে ওঠে।

দীর্ঘশ্বাস নিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয় অভি, "না না, আমি কেন ঈর্ষান্বিত হব।"

কিন্তু মনে মনে অভি সেই অচেনা অজানা লোকের ওপরে ঈর্ষা বোধ করে।

পরী, "না গো। আমার কোন বয় ফ্রেন্ড নেই। আমার অনেক বন্ধু ছিল তাদের মধ্যে অনেক ছেলে বন্ধুও ছিল কিন্তু কাউকে মনে ধরেনি জানও। আজ পর্যন্ত, সেই রকম কাউকে পাইনি যাকে মন দিতে পারি।"

অভি, "তার মানে তুমি তোমার হৃদয়ের সব জানালা দরজা বন্ধ করে রেখেছ, এই তো।"

বাঁকা হাসি হাসে পরী, "না ঠিক তা নয়। আজ পর্যন্ত আমি পাইনি এটা বলতে চাই।" অভি কিছু বুঝতে না পেরে ওর মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। ঠোঁটে দুষ্টুমিরে হাসি মেখে উত্তর দিল, "ধুর বোকা ছেলে। আজ পর্যন্ত পাইনি বলেছি, এখন পর্যন্ত পাইনিত বলিনি।"

কথা শুনে মাথা ঘুরে গেল অভির, মানে পরী কি বলতে চায়? পরীও ওর প্রতি আকৃষ্ট? ওর কথার মানে বুঝে অভির বুকের মাঝে দুমদাম আওয়াজ শুরু হয়ে যায়।
নিজেকে একটু সামলে নিয়ে জিজ্ঞেস করে অভি, "আচ্ছা একটা কথা বল পরী। তুমি আজ বিকেলে আমাকে তোমার কথা গুলো বলতে গেলে কেন?"

পরী, "জানি না কেন, অভি। আমার মনে হল তাই তোমাকে বলে ফেললাম। এবারে একটু চুপ করবে কি, আমি একটু রেস্ট নেব।"

অভি ডান হাতে পরীর পাতলা কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে নিল। অভির কাঁধে মাথা গুঁজে চোখ বন্ধ করে চুপ করে রইল পরী। অভির নচ্ছার আঙ্গুল গুলো, পরীর কোমরের পাশের উন্মুক্ত পেটের ওপরে আদর করতে থাকে। বাসের নিস্প্রভ আলোয় পরী কে ঠিক স্বর্গের অপ্সরার মতন দেখাচ্ছে।

বেশ কিছুক্ষণ পরে সামনের দিকে থেকে কেউ জানিয়ে দিল যে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই বাস বিয়ে বাড়ি পৌঁছে যাবে।

অভি পরীর কাঁধে হাত রেখে জাগাতে চেষ্টা করে, "পরী ওঠও। আমরা কিছুক্ষণের মধেই বিয়ে বাড়ি পৌঁছে যাব।"

পরী, "উম্মম... এত তাড়াতাড়ি কেন, আমাকে একটু ঘুমুতে দাও না... প্লিস..."

কিছুক্ষণের মধ্যেই বাস বিয়ে বাড়ির সামনে পৌঁছে গেল। অভির মা ওদের সিটের সামনে এসে পরীকে ওঠাল। সেই সময়ে অভি বুঝতে পারল যে ওর মা পরীকে ঠিক নিজের মেয়ের মতন ভালবাসে।

মা বললেন, "পরী সোনা মা আমার, উঠে পর, আমাদের নামতে হবে।"

মায়ের গলা শুনে পরী নড়েচড়ে বসল, আরামোড়া ভেঙ্গে মুখচোখ কচলে হাতের ব্যাগ খুলে মেকআপ করতে শুরু করল। বাস থেকে সবাই নেমে গেছে, বাসের মধ্যে শুধু অভি আর পরী। পরী নিজের মেকআপ নিয়ে ব্যাস্ত।

অভি উঠে দাঁড়াল, পরীর দিকে তাকিয়ে দেখল একবার, বুকের মাঝে যেন একটা ফেরারি চলছে। ওর দিকে ঝুঁকে পড়ল অভি। মাথার ওপরে গরম নিঃশ্বাস অনুভব করে মুখ তুলে তাকাল পরী। চার চোখ এক হল, পরীর দু’চোখ চকচক করছে এক অজানা আশঙ্কায়। অভি, সারা শরীরের শেষ শক্তিটুকু একত্রিত করে চোখ বন্ধ করে ঠোঁট নামিয়ে আনল পরীর কপালের ওপরে। পরীর উষ্ণ কপালের ওপরে ভিজে ঠোঁটে একটি ছোট্ট চুমু খেয়ে এক লাফে বাস থেকে নেমে পড়ল অভি। ভয়ে আর পেছন দিকে তাকাল না।
[+] 1 user Likes sorbobhuk's post
Like Reply
#6
মেঘ রোদ্দুর (#01)



অভি বাস থেকে নামতেই ওর মা ওকে এককোনে ডেকে নিয়ে যায়। মায়ের ডাক শুনে অভির ত আত্মারাম খাঁচা ছাড়া হয়ে যাবার যোগাড়। বুকের মাঝে এক ঝড় ওঠে, মা কি বুঝতে পেরে গেল নাকি ওর আর পরীর হৃদ্যতা?

মা অভিকে বললেন যে রাতের খাবার যেন তাড়াতাড়ি খেয়ে নেয় অভি, বরযাত্রী নিয়ে বাস ফিরে যাবে রাত এগারোটার মধ্যে। অভিকে জিজ্ঞেস করলেন যে ও কি করতে চায়, থাকতে চায় না বরযাত্রীর দের সাথে ফিরে যেতে চায়। ওর অনেক দিনের সখ বাঙালি বিয়ে দেখার, তাই অভি জানিয়ে দেয় যে ও রাতে থাকবে এবং পরের দিন বরের সাথে বাড়ি ফিরবে। মা সম্মতি দিয়ে দিলেন।

কনের বাড়িতে বরযাত্রী পৌঁছান মাত্রই চারদিকে হইহই রব উঠল, বর এসেছে বর এসেছে। বিয়ে বাড়ির ভিড়ে আবার অভি একা। এখানে পরীকে খোঁজা বোকামো। পরীর ছোটো দাদার বিয়ে আর সে মজা করবে না সেটা ভাবা উচিত নয়। ওই আত্মীয় সজ্জনের মাঝে পরী কোথাও হারিয়ে আছে। অভি বিয়ের মণ্ডপে একা বর, সুব্রতর সাথে বসে। ব্রাহ্মণ মন্ত্র পরে চলেছে।

মাঝে মাঝে পরীর দেখা পায় অভি, এদিক ওদিক নাচা নাচি করছে, এমন দেখাচ্ছে যেন খুব ব্যাস্ত।

ওর অর্বাচীন ব্যাস্ততার মধ্যেই পরী একবার অভির কাছে আসে, অভির বুক ধুকপুক করছে, এই বুঝি কিছু বলে ফেলে। পরী ওর দিকে না তাকিয়েই বলে "এই কি গো, এই রকম গাধার মতন একা বসে কেন? এস না আমার সাথে।"

অভিও ওর দিকে তাকাতে পারছে না, গলা শুকিয়ে এসেছে অভির। তোতলাতে তোতলাতে উত্তর দিল, "না মানে, তোমার সাথে সবসময়ে মহিলারা থাকেন, আর মহিলাদের সঙ্গ আমার একটু অস্বস্তিকর।"

পরী, "ঠিক আছে তাহলে, একা একা বসে ঠাক এখানে। যাই হক জানিয়ে গেলাম যে ডিনার খেতে ভুলে যেও না যেন। সবাই কিন্তু খাবার পরে চলে যাবে, শুধু মাত্র সুব্রতদার কয়েক জন বন্ধুরা রাতে থাকবে।"

অভি, "আমি রাতে থাকছি, মা আমাকে পারমিসান দিয়ে দিয়েছে।"

পরী এতক্ষণ পরে কৌতূহলী চোখ নিয়ে অভির দিকে তাকাল, "তুমি কি বলতে চাও যে আমিও রাতে থাকব?"

অভি, "সেটা তোমার ব্যাপার, পরী।"

পরী ওর কথা শুনে ঝাঁঝিয়ে উঠল, "ঠিক আছে, তোমাকে আমি দেখে নেব, আর তুমি অচিরেই জানতে পারবে আমি কি করতে পারি।" রেগে মেগে অখান থেকে চলে গেল পরী।

রাতের খাবার পরে বরযাত্রী ফিরে যাবার জন্য তৈরি। অভি ওদের সাথে বাসের কাছে দাঁড়িয়ে। পরী ফিরে যেতে নারাজ।

অভির মা বারংবার পরীকে বঝাতে চেষ্টা করে চলেছেন, "পরী, কোন মেয়েছেলেরা রাতে এই বাড়িতে থাকছে না। সেই মত অবস্থায় কিকরে তোমাকে আমি রেখে যাই বল। মাসিমা কি বলবে?"

পরী মাকে জড়িয়ে ধরে আদর করে বলে, "কেন, তুমিও ত একসময়ে আমাকে নিজের মেয়ের মতন ভালবাসতে। তুমি অনুমতি দিলে ত আর কোন কথা থাকে না। প্লিস প্লিস প্লিস, আমাকে রাতে থাকতে দাও।"

মা শেষ পর্যন্ত পরীর আব্দারের কাছে মাথা নোয়াল। অভিকে কাছে ডেকে বলল, "এই ছেলে, পরী রাতে এখানে থাকবে। ওর দিকে নজর রাখিস। ওর যদি কিছু হয় তাহলে আমি তোকে আস্ত রাখব না।"

পরী রাতে থাকবে যেনে অভির মন খুশিতে ভরে উঠল। বাধ্য ছেলের মতন মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিল যে ও পরীর খেয়াল রাখবে। পরী মায়ের গলা জড়িয়ে আদর করে বলল, "আমার সোনা দিদি – মা। আমি ভাল করে থাকব একদম দুষ্টুমি করব না।"

বরযাত্রী প্রস্থান করার পরে অভি আবার বিয়ের মন্ডপে গিয়ে বসে পড়ল। পরী আবার ভিড়ের মধ্যে কোথাও হারিয়ে গেল। অভি মাঝে মাঝেই দেখা পায় যে পরী ওর শালখানি গায়ে জড়িয়ে এদিক ওদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ওর চলন দেখে অভির মনের ভেতরটা আকুলি বিকুলি করে উঠল, মনে হচ্ছিল যেন এই উঠে গিয়ে জড়িয়ে ধরে আর ওই রাঙ্গা ঠোঁটে শত চুম্বন এঁকে দেয়।

ধিরে ধিরে রাত গভীর হতে থাকে। কনের বাড়ির অনেক লোকজন চলে গেছে। বরের বাড়ি থেকে শুধু সুব্রতর দুই বন্ধু, সুব্রতর বড় দা, সুমন্ত মামা আর অভি আর পরী। বিয়ের লগ্ন মাঝ রাতে, ধিরে ধরে লগ্নের সময় ঘনিয়ে আসছে।

এর মধ্যে কোন এক সময়ে পরী চুপিচুপি এসে অভির পাশে এসে গা ঘেসে দাঁড়ায়। হাতের ওপর হাতের স্পর্শ, মাঝে মাঝে কোমল আঙ্গুলের ছোঁয়া। কিন্তু কেউই কারুর দিকে তাকায় না, দু’জনেই চুপ করে দাঁড়িয়ে হোমের আগুনের দিকে এক ভাবে তাকিয়ে থাকে।

এরই মাঝে একজন মহিলা এসে পরীকে জিজ্ঞেস করে যে ও শুতে যেতে চায় কিনা। বরযাত্রীর জন্য আলাদা করে রাতে থাকার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। পরী মাথা নেড়ে জানিয়ে দেয় যে ও শুতে যেতে চায় না।

অভি ওকে জিজ্ঞেস করল যে একটু হাটা যেতে পারে কিনা। কিছু উত্তর না দিয়ে চুপচাপ অভির পাশে হাঁটতে শুরু করল পরী। দু’জনে অন্ধকার রাস্তা ওপর দিয়ে হাঁটতে শুরু করে। শীতের রাত, নিজেকে গরম রাখার জন্য অভির শালটা গায়ের ওপরে জড়িয়ে রেখেছে। দুই হাত বুকের কাছে আড় করে, মাটির দিকে তাকিয়ে চুপ করে অভির পাশে হেঁটে চলেছে। দুজনেই একদম চুপ কারুর মুখে কোন কথা নেই। এই নিস্তব্ধতা বড় হ্রদয় বিদারক হয়ে দাঁড়ায় দু’জনার পক্ষে। অভি ভাবতে থাকে যে কাউকে ত শুরু করতে হবে।

কিছু দোনামোনা ভাব নিয়ে জিজ্ঞেস করল, "এত চুপ করে কেন পরী? কিছু কি হয়েছে?"

গলা কেঁপে ওঠে পরীর, "তুমি বলতে চাও যে কিছুই হয়নি।"

অভি, "আমি কি করলাম?"

পরী, "তুমি এই বলতে চাও যে তুমি কিছুই করনি। জান আমি যেন একটা বিদ্যুৎ ঝটকা খাই। আমি অনেকক্ষণ চুপ করে বসে ছিলাম সিটের ওপরে, নড়বার শক্তি টুকু হারিয়ে ফেলেছিলাম আমি, আর তুমি বলছ যে তুমি কিছু কর নি?"

কাঁপা গলায় বলল অভি, "না মানে, হটাত করে কেন জানিনা খুব ইচ্ছে হল..."

পায়ের দিকে তাকিয়ে হেঁটে চলেছে পরী, "চোখের সামনে সবকিছু কালো অন্ধকার হয়ে গেছিল। এমন টি মনে হয়েছিল যেন আমি বিদ্যুৎস্পষ্ট হয়ে স্থাণুবৎ হয়ে গেছি।"

রাস্তার মাঝে পরীর কাঁধে হাত রেখে ওর সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল অভি। মাথা নিচু করে পরীর মুখের দিকে তাকাল। তর্জনী দিয়ে পরীর চিবুক স্পর্শ করে উঁচু করে নিল ওর মুখ। পরীর দু’চোখ বন্ধ, অজানা এক আশঙ্কায় তিরতির করে কাপছে দু ঠোঁট। দু’চোখের বড়বড় পাতা কাপছে তার সাথে। গায়ের শালখানি আরও আস্টেপৃষ্টে নিজের গায়ের সাথে জড়িয়ে ধরল পরী। অভির ঠোঁট ধিরে ধরে নেমে এল, পরীর লাল ঠোঁটের কাছে। প্রেয়সীর গরম নিঃশ্বাস সারা মুখের ওপরে ঢেউ খেলে বেড়াচ্ছে। বুকের ভেতরে যেন হাপর টানছে। এক অনাবিল প্রত্যাশায় বুক কাপছে পরীর, নিঃশ্বাসে ঝরে পড়ছে আগুন। নাকে নাক ঠেকল প্রথমে। ডিসেম্বরের সেই শীতের রাতেও নাকের ডগায় ঘামের ফোঁটা অনুভব করল দু’জনেই। দুজনের ঠোঁট তিরতির করে কাঁপছে। ঠোঁটের মাঝে একচিলতে ব্যাবধান। এত কাছে আসার পরেও যেন সাহস কুলিয়ে উঠতে পারছে না অভি, কোন কিছু বলার ভাষাও যেন হারিয়ে ফেলেছে।

এক গভীর নিঃশ্বাস ছেড়ে, কাজল কালো দুচোখ খুলল পরী। চোখে জল টলমল করছে। নাকের ডগা লাল হয়ে উঠেছে। অবশেষে দুজনের মাঝের নিস্তব্ধতা ভাঙলও পরী। অশ্রু ভরা নয়নে অভির দিকে তাকিয়ে কম্পিত স্বরে বলে উঠল, "না অভি না। আমি পারব না অভি। আমার চোখের সামনে থেকে দূর যাও।"

কথাটা বলেই বিয়ে বাড়ির দিকে দৌড়ে চলে গেল।

সেই শীতের রাতে একা অন্ধকার রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে অভিমন্যু তালুকদার। বড় একা মনে হল নিজেকে, মনে হল কেউ নেই তার পাশে। একটা সিগারেট জ্বালিয়ে খুব বড় এক টান দিল। আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজেকে জিজ্ঞেস করল, "আমি কে, আমি কি, কে এই অভিমন্যু?"

বুকের কোন এক কোণ থেকে উত্তর এল, "তুমি বিধ্বস্ত পরাজিত এক নাবিক!"

চোখে জল চলে এল অভির, নিজের মনকে বুঝাতে চেষ্টা করল যে চোখের জল সিগারেটের ধোঁয়ার জন্য এসেছে, কিন্তু পাপী মন মানতে চায় না সে কথা। অস্ফুট চিৎকার করে উঠল অভি, "না আমার কোন অধিকার নেই কাউকে আঘাত করার। শুচিস্মিতা কে আঘাত দেবার কোণ অধিকার আমার নেই।"

যা কিছু ঘটে চলেছে বা ঘটে গেছে তা হয়ত ঘটা উচিত হয়নি। ওরা কি কোন পাপ করেছে? এই সমাজ ওদের দুজনকে সাংসারিক জীবনের বন্ধনে হয়ত বাঁধতে দেবে না ওদের দুজন কে। কিছু সম্পর্ক এই সমাজের কাছে অপবিত্র।

মাথা নিচু করে এই সব ভাবতে ভাবতে বিয়ে বাড়ির দিকে হাটা দিল অভি। এক সময়ে দূর থেকে কেউ অভি কে ডাক দিল। মাথা তুলে তাকিয়ে দেখল সুব্রতর কোণ একজন বন্ধু অভিকে বিয়ের মন্ডপে ডাকছে। বিয়ের পালা শেষ, সবাই খেতে বসবে তাই অভির খোঁজ পড়েছে।

বিয়ের মন্ডপে প্রবেশ করে অভি দেখতে পেল যে পরী মন্ডপের এক কোনায় চুপ করে বসে। থমথমে চোখ মুখ নিয়ে নিস্পলক দৃষ্টিতে এক ভাবে তাকিয়ে রয়েছে নিভে যাওয়া হোমের আগুনের দিকে। ফর্সা নাকের ডগা গোলাপের মতন লাল হয়ে উঠেছে। খানিক দূর থেকে অভি বুঝতে পারল যে ওর চোখের পাতা ভিজে, পিঠের ওঠা নামা দেখে বুঝতে পারল যে ফুঁফিয়ে ফুফিয়ে কঁদছে পরী।

বড় ধাক্কা খেল অভি, কেন পরী কাঁদছে? এত একদম ভাল কথা নয়, কেউ জানতে পারলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
[+] 2 users Like sorbobhuk's post
Like Reply
#7
প্রত্যাবর্তন


নবীন ঊষার সাথে সাথে এক নতুন দিনের আগমন ঘটে পরী আড় অভির জীবনে।

একে একে কনের বাড়ির লোকজন জাগতে শুরু করেছে। সেই ভিড়ে পরী আবার হারিয়ে গেল। সুমন্ত মামা অভির কাছে এসে জিজ্ঞেস করল যে রাতে কোথায় ছিল। উত্তরে অভি জানিয়ে দিল যে সারা রাত ও বিয়ের প্যান্ডেলে বসে কাটিয়ে দিয়েছে। সেই শুনে মামা হেসে ওকে হাত মুখ ধুয়ে নিতে বলল। জানিয়ে দিল যে কয়েক ঘন্টা পরে বড় কনে কে নিয়ে বসিরহাটের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে। ধিরে ধিরে বিয়ে বাড়ির লোকজন জেগে উঠে মেতে উঠেছে।

গ্রামের হাওয়ায় এক বিশুদ্ধতার আমেজ, বুক ভরে সেই বিশুদ্ধ বাতাস বুকের মাঝে টেনে নিল অভি। কোলকাতায় এই বাতাস পাওয়া বড় কঠিন ব্যাপার। কিছু পরেই বরযাত্রীদের সকালের খাওয়ার ব্যাবস্থা হয়ে গেল। অভির চোখ থেকে থেকে শুধু পরীকে খুঁজে বেড়ায়, কিন্তু খুজলে কি হবে সেই কন্যের দেখা নেই।

সবে মাত্র খেতে বসেছে অভি, ঠিক এমন সময়ে মাথার পেছনে চাটি মারে পরী।

অভি "আউচ" করে পেছন ঘুরে তাকিয়ে দেখে রাতের পরী আর নেই। যে দাঁড়িয়ে সে যেন তরতাজা এক ফুল, সদ্য শিশিরে স্নান সেরে ওর কাছে দাঁড়িয়ে।

অভিমানি সুরে বলে, "আমাকে ছেড়েই খেতে বসে গেলে? লজ্জা করে না তোমার।"

অভি, "বাঃরে তোমার দেখা নেই। আড় আমার কি খিদে পায় না নাকি।"

পরী, "কাউকে কি আমার কথা জিজ্ঞেস করা যেত না নাকি।"

অভি, "আচ্ছা বাবা মাফ কর। এবারে বসে পরত, খেয়ে নাও। পেটে কিছু পরেনি বলে মনে হয় মাথাটা একটু গরম।"

প্রাতরাশ সেরে পরী চলে গেল কনের কাছে। বিদায়ের সময় বর্তমান। এই সময়টা অভির একদম ভাল লাগে না। কান্না কাটি একদম সহ্য করতে পারে না ও। বাড়ির ভেতরে ক্রন্দনের রল উঠেছে, সেই শুনে বুঝে গেল যে কনে বিদায় নিতে সময় লাগবে।

অভি চুপ করে উঠানের এককোণে দাঁড়িয়ে থাকে। ঠিক সেই সময়ে পাঞ্জাবির হাতায় টান লাগে, পেছনে তাকিয়ে দেখে যে পরী ওর পেছনে মুখ লুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দুই হাতে অভির হাত খানি শক্ত করে ধরে ঘন ঘন পিঠের ওপরে নাক ঘষছে। মনে হল যেন চোখের জল আটকানোর প্রবল চেষ্টা করে চলেছে।

অভি, "আরে বাবা, বোকা মেয়ে কাঁদে নাকি। তোমার বৌদি তোমার বাড়ি যাচ্ছে আবার কি চিন্তা।"

ফুঁপিয়ে ওঠে পরী, "তুমি বুঝবে না।"

বাঁ হাতে ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁধের গোলায় আলতো করে হাত বুলিয়ে অভি ওকে আসস্থ করতে চেষ্টা করে। পরী তখন অভির ঘিয়ে রঙের শাল খানি জড়িয়ে।

ফিরে যাবার জন্য দুটি গাড়ি প্রস্তুত।

পরী চোখ মুছে নিচু স্বরে বলে, "আমাকে বউদির গাড়িতে যেতে হবে। তুমি ওর বন্ধুদের গাড়িতে যেও। আমার সাথে গেলে কারুর নজরে চলে আসব আমরা।"

কিছুক্ষণের মধ্যেই কনে কে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হল গাড়ি। অভি চাপল সুব্রতর বন্ধুদের গাড়িতে আর পরী অন্য গাড়িতে। অভি সামনের সিটে চুপ করে বসে, পেছনে সুব্রতর বন্ধুরা বসে। দুই বন্ধু নিজেদের মধ্যে কথা বার্তা বলছিল, অভি বিশেষ কান দেয়নি ওদের কথাবার্তার মধ্যে। একসময়ে ওর কানে ভেসে আসলো শুচিস্মিতার নাম।

একজন, "কাল রাত থেকে শুচিস্মিতা কেমন যেন আলদা আলাদা মনে হচ্ছে।"

দ্বিতীয় জন, "হ্যাঁ রে, ঠিক বলেছিস। আমারো সেটাই মনে হয়েছে। এমনিতে খুব হাসি খুশি থাকে মেয়েটা কিন্তু কাল রাতে বেশ গম্ভির ছিল। অনেক ক্ষণ ধরে ওর কোন পাত্তা পাইনি।"

একজন, "ব্যাবহার টা কেমন যেন লাগল আমার, কি ব্যাপার কিছু জানিস নাকি?"

অপর জন, "জাঃ বাবা আমি কি করে জানব।"

অভির দিকে একজন প্রশ্ন করে, "তুমি উলুপি ম্যাডামের ছেলে তাই না।"

মাথা নাড়িয়ে জবাব দেয় অভি, "হ্যাঁ" ওদিকে বুকের ভেতরে আশঙ্কায় কাপুনি ধরে, পরী আর ওকে একসাথে দেখে ফেলেনি ত ওরা, দেখে ফেললেই এক কেলেঙ্কারি কান্ড হয়ে যাবে।

একজন, "ভাই তোমার মা আমাদের স্কুলের টিচার। আমাদের পড়াতেন আর খুব কড়া ম্যডাম ছিলেন।"

হেসে ওঠে অভি, "বাড়িতেও ভীষণ কড়া আমার মা।"

দ্বিতীয় জন, "সুব্রত তোমার মামা হন তাই না?"

অভি, "হ্যাঁ, কিন্তু মায়ের চেয় অনেক অনেক ছোটো ওরা।"

এর মধ্যে একজন একটা সিগারেট জ্বালিয়ে অভির দিকে বাড়িয়ে দেয়, "তুমি কলেজে পড় তার মানে সিগারেট খাওয়া চলে তোমার। আরে লজ্জা পেও না আমরা তোমার মামার বন্ধু হলে কি হবে, আমাদের দাদা বলে ধরে নিও।"

অভি, "না, আমি কাল রাত থেকে সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি।"

একজন হেসে বলে, "কনের বাড়ির কাউকে মনে ধরে নিয়েছ নাকি। আচ্ছা তুই ড্রিঙ্ক করো?"

মাথা নাড়ায় অভি, "হ্যাঁ, তবে ভদকা আর রাম।"

একজন, "তাহলে বেশ জমবে। আজ রাতে বাড়ি ফিরে একসাথে বসা যাবে তাহলে। তুমিও চলে এসে আমাদের সাথে।"

কথা বার্তার পরিপ্রেক্ষিতে জানা গেল যে একজনের নাম সমির আর একজনের নাম মৃগাঙ্ক। দুজনেই সরকারি চাকুরিরত এবং অবিবাহিত। এও জানা গেল যে সুব্রতর নাকি প্রেম বিবাহ আর কনের নাম মৈথিলী। মৈথিলীর বয়স পরীর মতন কিম্বা পরীর চেয়ে একদু মাসের ছোটো বড় হবে। সুব্রত আর মৈথিলী দেখা কোন এক পারিবারিক অনুষ্ঠানে হয়েছিল, সেই থেকে দু’জনের মাঝে প্রেম হয়। পরে সুব্রতর বড় দাদার মৈথিলীকে দেখে পছন্দ হয় এবং সুমন্ত মামা মৈথিলীর বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব করেন। এই ভাবে এই দুই প্রেমিক যুগল বিয়ের বন্ধনে বেঁধে যায়।

অভি মনে মনে ভাবে, "আমি খালি হাতে এসেছিলাম কিন্তু অনেক কিছু নিয়ে যাচ্ছি। আমার ভালবাসা, আমার পরী।"
[+] 3 users Like sorbobhuk's post
Like Reply
#8
তমসা উদ্ঘাটন (#01)


বাড়ির সবাই নববধুকে বরন করে নেবার জন্য আগে থেকেই দরজায় উপস্থিত ছিল। অভির মা, দিদা, মেঘনা এবং আরও অনেকে। গাড়ি থেকে নেমে অভি লক্ষ্য করল যে পরী আর মৈথিলী দুজনের মধ্যে বেশ হৃদ্যতা গড়ে উঠেছে। পরীর হাসিখুসি মুখ দেখে অভির বেশ ভাল লাগল। উৎসুক নয়নে অভি তাকিয়ে ছিল পরীর দিকে কখন একবার চারচোখ এক হয়। মায়ের দিকে গুটি পায়ে এগিয়ে গেল অভি। বাবা এককোণে দাঁড়িয়ে ছিলেন, অভি কে দেখে কাছে ডাকলেন। কনের বাড়ির কুশল মঙ্গল আর রাতের কথা জিজ্ঞেস করলেন। অভি মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিল যে রাতে কোন অসুবিধা হয়নি।

মৈথিলীকে বরন করার পরে, পরী ওকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করল। বাড়িতে ঢুকে পড়ার আগে চোরা চাহনি দিয়ে গেল অভির দিকে।

কিছু পরে মৃগাঙ্ক এসে অভিকে ওদের সাথে যেতে বলল। মৃগাঙ্কর বাড়ি দিদার বাড়ির কাছেই। অভি উত্তরে জানাল যে ও জামা কাপড় বদলে ওদের সাথে ওদের বাড়ি যাবে।

বাড়ি ঢোকা মাত্রই মা জিজ্ঞেস করলেন যে ওর শালটার কি হল। অভি জানিয়ে দিল যে রাতে পরীর খুব ঠাণ্ডা লাগছিল তাই ওর শাল পরী নিয়ে নিয়েছে। মা ওর কথা শুনে খুশি হয়ে বললেন যে ভাল কাজ করেছিস। বাথরুমে ঢুকতে যাবে অভি, ঠিক এমন সময়ে পরী এসে মাকে জড়িয়ে ধরল। মায়ের কাঁধের পাশ থেকে অভির দিকে দুষ্টু মিষ্টি হেসে মায়ের গালে চুমু খেল। মা পরীকে এক মৃদু বকুনি দিয়ে বলল রাতের জামাকাপড় বদলে নিতে।

পরী মাকে জিজ্ঞেস করল যে মা ওর মায়ের সাথে কথা বলেছেন কি না। মা উত্তর দিলেন যে রাতের বেলা সবকিছু মিটে যাবার পরে তিনি দিদার সাথে পরীর ব্যাপারে কথা বলবেন।

পরী আদর করে মায়ের গালে চুমু খেয়ে বলল, "তুমি আমার খুব ভাল দিদি। আজ থেকে আমি তোমাকে ছোটমা বলে ডাকব।"

মা ওর গালে আদর করে বলল, "তুই মা, চিরকাল আমার চোখের মনি ছিলিস। কতদিন তোকে দেখিনি। আয় কাছে বস, তোকে দুচোখ ভরে একবার দেখি।"

অভি, বাথরুমের দরজায় দাঁড়িয়ে মা মেয়ের আদর দেখতে থাকে। মা ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, "কিরে কি দেখছিস? চুপিচুপি মা মেয়ের কথা শুনছিস?"

পরী মায়ের কোলে মাথা রেখে বিছানায় শুয়ে পড়ল। মা ওর চুলে বিলি কাটতে থাকে আর ছোট্ট বিড়ালের মতন পরী মায়ের আদর খেতে থাকে।

মা মেয়ের অতিরিক্ত প্রেম আর সহ্য হল না অভির। জামা কাপড় বদলানর জন্য বাথরুমে ঢুকে গেল। বেশ খানিকক্ষণ পরে বাথরুম থেকে বেড়িয়ে দেখে, পরী মায়ের কোলে মাথা গুঁজে কাঁদছে আর মায়ের চোখেও জল। অভি মাকে জিজ্ঞেস করল যে কি হয়েছে। মা কিছু উত্তর দিলেন না, শুধু বললেন চলে যেতে।

ঠিক সেই সময়ে বাইরে থেকে মৃগাঙ্কর ডাক শুনে অভি ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল। ঘরের মধ্যে ক্রন্দন রত অভির ভালবাসার দুই প্রতিমা, এক মা এক পরী। মৃগাঙ্কর বাড়ির দিকে যেতে যেতে অভি ভাবতে চেষ্টা করে যে কি কারনে মা আর পরী কাঁদতে পারে। ওর মাথায় কোন কারন খুঁজে পেলে না। মৃগাঙ্ক জানাল যে কিছুক্ষণের মধ্যেই সুব্রতও ওদের সাথে ড্রিঙ্ক পার্টিতে যোগদান করবে।

মৃগাঙ্কর বাড়ি পৌঁছে অভি লক্ষ্য করল যে সুব্রত আগে থেকেই বাড়িতে উপস্থিত। তিন তলার ঘরে মদের আসর বসেছে, সমির বারটেন্ডার, সবাই কে গ্লাসে মদ ঢেলে দিচ্ছে। সমির, মৃগাঙ্কর সুব্রতর আর অভির মাঝে শুধু মাত্র সুব্রতর বিয়ে হয়েছিল, বাকিরা অবিবাহিত। হাসি ঠাট্টা মজা মিলিয়ে মদ্য পান চলতে লাগল। সমির বেশ পটু হাতে গ্লাস ধরিয়ে দিচ্ছে ওদের কে। সুরার নেশা সুব্রতর আর মৃগাঙ্কর রক্তে লেগে গেছে।

মদের ঝোঁকে মৃগাঙ্ক বলে ফেলল, "গুরু, আমি শুচিস্মিতাকে ভালবাসি।"

সুব্রত ওর কাধ চাপড়ে বলল, "বোকা... তুই ত একটা মস্ত গাধা। এতদিন চুপ করে ছিলিস।"

কথা শুনে অভির মনে হল যেন কেউ ওর কানের ওপরে গরম সিসে ঢেলে দিয়েছে। গ্লাসে চুমুক দিতে ভুলে গেল, এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মৃগাঙ্কর দিকে, "শালা বলে কি?"

মৃগাঙ্ক সুব্রতকে বলল, "তোর বড়দার ভয়ে ত আমি কিছু বলতেই পারিনি।"

সুব্রত, "বড়দা আমাদের বাবার মতন। বড়দা যতই রাগি হক না কেন, একদম নারকেল আমার বড়দা। ওপরটা শক্ত কিন্তু ভেতরটা একদম নরম আর জলে ভর্তি।"

মৃগাঙ্ক, "ঠিক আছে তাই হবে। আমি তাহলে তোর বড়দার সাথে কথা বলব।"

মৃগাঙ্কর কথা শুনে অভির মনে হল যেন টেনে এক চড় কসিয়ে দেয় মৃগাঙ্কের গালের ওপরে, "শালার কিনা আমার প্রেমিকার ওপরে নজর?" কোন রকমে নিজেকে সামলে নিয়ে, এক ঢোকে পুর গ্লাসটা গোলায় ঢেলে দেয়। রক্তের সাথে মদ মিশে গিয়ে মাথা ঝিনঝিন করে ওঠে।

সুব্রত অভির দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বলে, "এই ছেলে, এই অভিমন্যু। কিছু বল..."

ধুক করে ওঠে অভির বুক। হাতের সামনে ছিল রামের বোতল, একটানে ছিপি খুলে নিয়ে কিছুটা গোলায় ঢেলে নিল। দাতে দাঁত পিষে জিজ্ঞেস করল, "আমার কি বলার আছে?"

সুব্রত ওর দিকে হেসে উত্তর দিল, "যা কিছু। তোমার কথা, তোমার গার্লফ্রেন্ডের কথা।"

ওর কথা শুনে যেন অভির প্রানে বাতাস এল, "যাক সুব্রত আমাদের সম্পর্কের কথা কিছু জানে না।"

হেসে জবাব দিল অভি, "না আমার কোন গার্লফ্রেন্ড নেই। কলেজের সবাই খালি বই পড়া মাগি।"

ওই কথা শুনে সবাই হেসে ফেলে।

মৃগাঙ্ক নাছরবান্দা, "ভাই সুব্রত, আমি শুচিস্মিতাকে বিয়ে করব।"

ওর কথা শুনে সুব্রত বলল, "সে গুড়ে বালি। পরীর মাথায় নিশ্চয় কিছু একটা চলছে আর সেই জন্য"

অভির দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বলল, "ওর মা, আমাদের উলুপিদি আমার বিয়েতে এখানে এসেছেন। আমি খুব ভাল ভাবে বুঝতে পারছি যে আজ কালের মধ্যে এক বিশাল ঝড় আসবে বাড়িতে। আর সেই ঝড়ে অনেক কিছু বদলে যাবে। আমার ছোটবেলার কথা বিশেষ কিছু মনে নেই তবে মায়ের মুখে শুনেছি যে উলুপিদি আমাদের সংসার টাকে নিজের সংসারের মতন করে ভালবাসতেন, বিশেষ করে পরীকে। বাবা মারা যাওয়ার পরে উলুপিদি আমাদের সংসারটাকে টেনে ছিলেন। আমরা সবাই তখন খুব ছোটো। আমাদের ভাত কাপড়ের যোগাড় তিনি করেছিলেন সেই সময়ে। অনেক জল গড়িয়ে গেছে, অনেক দিন কেটে গেছে। আমাদের মধ্যে নিশ্চয় কিছু একটা ঘটে ছিল যার জন্য আজ পর্যন্ত উলুপিদি আমাদের বাড়িতে আর পা রাখেননি। আমি হলফ করে বলতে পারি যে উনি যখন এ বাড়িতে পা রেখেছেন তখন বিশাল কিছু একটা ঘটতে চলেছে।"

অভির মাথা থেকে মদের ঘোর কেটে গেল। কথা বলার মধ্যে সুব্রত গ্লাস নিচে রেখে দিয়েছে। দু’চোখ লাল, কিঞ্চিত জলে টলটল করছে চোখ। সামির দেখল পরিবেশ বেশ সঙ্গিন হয়ে উঠছে। একথা সেকথা বলে পরিবেশটাকে একটু হালকা করতে চেষ্টা করল সমির। কিন্তু সুব্রত থামতে নারাজ, ওর রক্তে যেন আগুন লেগেছে।
[+] 1 user Likes sorbobhuk's post
Like Reply
#9
তমসা উদ্ঘাটন (#02)



অভির হাত ধরে জিজ্ঞেস করল, "কেন এসেছে তোমার মা?"

এই প্রশ্ন শুনে সবাই অভির দিকে তাকিয়ে। অভি কি উত্তর দেবে ভেবে পেলনা, চুপ করে থাকে।

সুব্রত, "আমাকে বলতে দে। আমি হলফ করে বলতে পারি যে আমাদের ফ্যামিলির মধ্যে যা কিছু ঘটেছে তার জন্য আমার দিদিরা ইন্দ্রানিদি আর চন্দ্রানিদি দায়ী। বড় লোকের বাড়িতে বিয়ে হয়ে যাবার পরে দেমাকে ওদের পা আর মাটিতে পরে না। অতীতে যারা আমাদের সাহায্য করেছিল তাদের সবাই কে ওরা ভুলে গেছে। উলুপিদি যে কারনেই হক আজ আমাদের বাড়িতে এসেছেন, আমি তার পাশে আছি।"

অগত্যা অভিকে শেষ পর্যন্ত মুখ খুলতে হল, "মা পরীর জন্য এ বাড়িতে এসেছেন। পরী এম.এস.সি পড়তে চায় এবং মায়ের মতন টিচার হতে চায়। কিন্তু তোমার ফ্যামিলির দিক থেকে অনেক বাধা আছে বিশেষ করে তোমার দিদিদের কাছ থেকে।"

সুব্রত অভির পিঠ চাপড়ে উত্তর দেয়, "আরে কোন চিন্তা করোনা। পরী যা চায় তা করবে। আমি আজ পর্যন্ত চুপ করেছিলাম কিন্তু আজ আমি মুখ খুলব। আজ দিদিরা আমাকে থামিয়ে রাখতে পারবে না।"

ঠিক সেইসময়ে দুষ্টু দৌড়ে এসে জানায় যে সুব্রতর আর অভির বাড়িতে ডাক পড়েছে। বাড়িতে খাবার ঘরে কিছুর আলোচনা চলছে। ওর মুখে এই কথা শুনে সুব্রতর আর অভির নেশার ঘোর একদম কেটে গেল। দু’জনে একে ওপরের মুখ চাওয়া চায়ি করে দৌড় লাগাল বাড়ির দিকে।

খাবার ঘরে ঢুকে দেখে বাড়ির সব বড়রা একত্রিত। বাবা, মা তার পাশে দিদা, তার পাশে ইন্দ্রানি মাসি আর চন্দ্রানি মাসি। ওদের সাথে ওদের স্বামিরাও উপস্থিত। তার পরে সশাঙ্ক মামা আর মেঘনা বসে। সব শেষে বসে আছেন সুমন্ত মামা। পরী, মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মায়ের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।

ইন্দ্রানি, "দেখ উলুপিদি, আমাদের পরিবারের কেউই গ্রাজুয়েশান করেনি তাও আমরা পরীকে পড়িয়েছি। পরীর বিয়ের বয়স হয়ে গেছে, এবারে ওর বিয়ে করা উচিত। আমরা ওর জন্যে ছেলে খুঁজছি। এতে ক্ষতি কি? দেখ, আমাকে আর চন্দ্রানিকে, আমাদের বিয়ে ঠিকঠাক বাড়িতে হয়েছে।"

মা, "আমি শুধু এইটুকু বলতে চাই যে, পরী যদি হাইয়ার পড়াশুনা করতে চায় তাতে ক্ষতি কি?"

চন্দ্রানি ঝাজিয়ে ওঠে, "না করবে না। ওর বয়সে আমার বিয়ে হয়ে বাচ্চা হয়ে গেছিল।"

সুব্রত, "উলুপিদি যা বলছেন ঠিক বলছেন। পরীকে হাইয়ার পড়াশুনা করতে দেওয়া উচিত।"

ওর কথা শুনে সবাই হতবাক হয়ে ওর দিকে তাকাল। ইন্দ্রানি আর চন্দ্রানি হয়ত ভাবতে পারেনি যে সুব্রত এর মাঝে কথা বলতে পারে।

শশাঙ্ক, "তুই চুপ কর সুব্রত। এই সব ব্যাপারে তুই কথা বলিস না।"

চন্দ্রানি, "তোর মতামত কি কেউ জানতে চেয়েছে? তুই চুপ করে থাক।"

সুব্রত, "কেন আমি চুপ করে থাকব কেন? আমি কি এই পরিবারে কেউ নই?"

ঘরের পরিবেশ বেশ গরম হয়ে উঠেছে। অভি পরীর দিকে তাকিয়ে দেখল, পরীর চোখে জল। দিদা এক বার পরীর দিকে তাকাল। পরী মা'কে শক্ত করে ধরে আছে যেন কেউ ওর প্রাণ টাকে ওর কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে পালিয়ে যেতে চাইছে।

দিদা সুমন্ত কে জিজ্ঞেস করলেন, "তোর কি মতামত?"

সুমন্ত উত্তর দিলেন, "আমার মনে হয় পরীকে পড়াশুনা করতে দেওয়া উচিত। এর মাঝে আমরা পরীর জন্য ছেলে খুঁজি, এমন ছেলে যে কিনা পরীকে বিয়ের পরেও পড়াশুনা করতে দেয় আর ও যেন ভবিষ্যতে চাকরি করতে পারে।"

পরী জোরে মাথা নাড়ায়, "না আমি বিয়ে করব না। তোমরা সবাই চাও যে আমি এখান থেকে চলে যাই।"

মা পরীকে শান্ত হতে বললেন।

ইন্দ্রানি মাকে জিজ্ঞেস করলেন, "এতদিন পরে আমাদের পারিবারিক ব্যাপারে নাক গলাতে কেন এসেছ?"

দিদা ইন্দ্রানিকে এক বকুনি দিয়ে বললেন, "তুই চুপ কর, আর কোনদিন এইরকম ভাবে উলুপির সাথে কথা বলবি না। আমি শশাঙ্ককে বলেছিলাম উলুপিকে নিমন্ত্রন করতে।"

ইন্দ্রানি থামতে নারাজ, "আমরা দুই বোন এই পরিবারের জন্য অনেক কিছু করেছি। উলুপিদি কি করেছে আমাদের জন্য যে আজ উলুপিদি সতেরো বছর পরে আমাদের পারিবারিক ব্যাপারে কথা বলতে এসেছে?"

ওর কথা শুনে মনে হল যেন কেউ ঘরের মধ্যে একটা অ্যাটম বম্ব ফেলে দিয়েছে। সবাই চুপ। মায়ের দু’চোখ দিয়ে যেন আগুন ঝরে পড়ছে।

গুরু গম্ভীর স্বরে বলে উঠলেন মা, "আমি কি করেছি না করেছি সেটা জিজ্ঞেস করিস না। আমি এখানে শুধু মাত্র পরীর জন্য এসেছি আর আমি তোদেরকে আমার কথা মানিয়ে ছাড়বো। জানতে চাস আমি কি করেছি এই পরিবারের জন্য?"

দিদা কেঁদে উঠে মাকে থামতে বললেন, "উলুপি দোহাই আমার, তুই চুপ কর। আমি পরীকে পড়াশুনা করতে দেব, কিন্তু তুই চুপ কর।"

মা রাগে কাঁপতে কাঁপতে বললেন, "তোরা কি জানিস? তোদের কি আর মনে আছে? মেসোমশাই মারা যাবার সময়ে পরী কোলের বাচ্চা আর অভি আমার পেটে। তোদের দেখার কেউ ছিলনা, তোরা সবাই ছোটো ছোটো। মাসিমা সবসময়ে কাঁদত, কি হবে ওনার পরিবারের। সুমন্ত স্কুল ছেড়ে দেয়, ধান কলে কাজ নেয় যাতে তোদের মুখে দু গ্রাস ভাত জোটে। আমার জীবনের সেই পাঁচ বছর আমি এই পরিবারকে দিয়েছি। আমার আয় আমার ভালবাসা সব কিছু। তোদের খাওয়া পরা তোদের জামা কাপড়। আজ তোরা একসাথে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছিস সেটা আমার ওই পাঁচ বছরের জন্য।"

দিদা মায়ের হাত ধরে কাতর মিনতি করেন, "দয়া করে চুপ কর, উলুপি।"

পরী নিস্পলক চোখে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে। সমানে গাল বেয়ে চোখের জল গড়িয়ে চলেছে। অভি আর সুব্রত একে অপরের মুখ চাওয়া চায়ি করে। মায়ের কথা শুনে কারুর মুখে কোন কথা নেই।

মা, "ওই অভির সাথে, বুকের রক্ত আর দুধ দিয়ে আমি পরীকে বড় করেছি। তোরা সবাই বলতিস যে পরী অভিশপ্ত বলে দূর দূর করতিস, কেননা ওর জন্মাবার পরেই মেসমশাই দেহ রাখেন। আমি বুক কেটে দু টুকরো করে দিয়েছিলাম যাতে পরী বাঁচে।"

সুব্রত চুপ করে মায়ের পায়ের কাছে গিয়ে বসে পরে। ঘরের মধ্যে সবার চোখে জল। ইন্দ্রানি চন্দ্রানি আর তাদের স্বামীরাও হতবাক। বাবা এর মাঝে চেয়ার ছেড়ে উঠে চলে গেলেন নিজের মনের অভিব্যাক্তি লুকানোর জন্য।

মা, "যদি আমি বুক কেটে দেখাতে পারতাম তাহলে আজ সেটাও তোদের দেখিয়ে দিতাম আমি। পরী আমার মেয়ে নয় কিন্তু আমার মেয়ের চেয়ে অনেক বেশি। আমি এখানে তোদের জন্য আসিনি। আমি জানি তোরা সবাই এখন বড়লোক হয়ে গেছিস, পয়সার দেমাকে মাটিতে তোদের পা পরেনা।"

পরী আর দিদা সমানে কেঁদে চলেছে, অভির ও দু’চোখ জ্বালা করছে কিন্তু ছেলে বলে সবার সামনে কাঁদতে পারছে না।

মা, "কাল, বিয়ে বউভাত শেষ হয়ে যাবার পরে, আমি পরীকে নিয়ে কোলকাতা চলে যাব। আমি ওর এডমিশান কোলকাতা উনিভারসিটি তে করাব এবং ওর পরাশুনার দায়িত্ব আমার। তোদের কোন পয়সা আমার চাইনা আর আমি তোদের কোন কথার ধার ধারিনা।"

মায়ের বুক থেকে এক দীর্ঘশ্বাস নিঃসৃত হল। পরী মায়ের পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে মায়ের কোলে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে শুরু করে দিল। শশাঙ্ক আর সুমন্ত দুজনেই উঠে গিয়ে মায়ের পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম করল। অভির মনে হল যেন একটা বিশাল পারিবারিক নাটক শেষ হল এইমাত্র। চারদিকে যেন চোখের জলের ছড়াছড়ি।

অবশেষে সুমন্ত বললেন, "উলুপিদি যা বলেছেন ঠিক বলেছেন। পরীর ওপরে আমাদের চেয়ে বেশি অধিকার উলুপিদির আর তাঁর অধিকার আছে পরীকে নিয়ে যাওয়ার। আমরা সবাই ভুলে গেছিলাম যে উলুপিদি আমাদের পরিবারের জন্য কি করেছিলেন।"

কিছুক্ষণ থেমে সবার দিকে একবার দেখে বললেন, "কাল বাদে পরশু, আমি এই বাড়ির ভাগ করব। এই বাড়ি সাত ভাগে ভাগ হবে।"

ইন্দ্রানি জিজ্ঞেস করল, "সাত ভাগে কেন? আমরা তো ছয় ভাই বোন?"

যেন একটা সিংহ গর্জে উঠল, "তুই একদম চুপ করে থাকবি। ছয় ভাগ আমাদের ছয় ভাই বোনের আর এক ভাগ মায়ের। মা যাকে ইচ্ছে তাকে দিয়ে যাবেন।"

শশাঙ্ক সুমন্তর কথায় সায় দিলেন।

সুমন্ত, "আমি চাইনা এই কথা এই চার দেওয়ালের বাইরে যাক। কাল সুব্রতর বউভাত, আমি চাইনা ওর বউভাত মাটি হক। কথা শেষ, আর যেন এই নিয়ে বাড়িতে কোন কথা ওঠে না।"

এই সব তর্ক বিতর্কে অনেকটা সময় কেটে গেছে। অভি, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল, রাত ন’টা বাজে।
[+] 1 user Likes sorbobhuk's post
Like Reply
#10
শুভরাত্রি (#01)


অভি আর সুব্রত দুজিনেই দাঁড়িয়ে পড়ল। ইন্দ্রানি আর চন্দ্রানি তাদের স্বামীদের নিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল।

সুব্রত, "ভাই অভি, বড় মাথা ঝিমঝিম করছে। একটু গলায় ঢাললে বড় ভাল হত।"

সুব্রতর সাথে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে এল অভি। ঘরের মধ্যে শুধু দিদা, মা আর পরী। পরীর মুখে আবার হাসি ফুটে উঠেছে। মাকে জড়িয়ে ধরে মায়ের কোলে মাথা রেখে আদর খাচ্ছে। অভির মন পরীর মুখে হাসি দেখে আবার ভাল হয়ে গেল। বুকখানি খুশিতে নাচতে শুরু করে দিল, পরী তাহলে ওর সাথে ওর কাছে কোলকাতায় থাকবে।

অভি আর সুব্রত ছাদে উঠে গেল। ওখানে আগে থেকেই সমির আর মৃগাঙ্ক উপস্থিত ছিল, দু’জনে এক কনে বসে মদ খাচ্ছিল। সুব্রতকে দেখে সমির জানতে চাইল যে কি হয়েছে।

সুব্রত অভির পিঠ চাপড়ে বলল, "এর মা একজন জলজ্যান্ত দেবী।"

পানীয় গলায় ঢালতে ঢালতে ওদের কাছে সুব্রত বিকেলের পুরো ঘটনার বিবরণ দিল। ঠিক সেই সময়ে নিচ থেকে কেউ খেতে ডাক দিল। অভি নিচে নেমে লক্ষ্য করল যে বাড়ির মধ্যে যে বিষণ্ণতার ছায়া পড়েছিল সেটা আর নেই। সবার মুখে আবার হাসি ফুটে উঠেছে। চন্দ্রানি মাসি আর ইন্দ্রানি মাসি ও বেশ হাসি হাসি মুখ নিয়ে বসে আছে। অভি, পরী বা মাকে কোথাও দেখতে পেল না। মেঘনা কে জিজ্ঞেস করাতে জানতে পারল যে মা আর পরী নতুন বউ, মৈথিলীর ঘরে আছে।

ইন্দ্রানি মাসি অভির পিঠে হাত রেখে বলল, "আজকের বিকেলে যা ঘটেছে তার জন্য আমি দুঃখিত। রাগের মাথায় উলুপিদিকে আমি অনেক কিছু বলে ফেলেছি। মা'কে বলিস পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিতে।"

সুব্রত অভির হয়ে উত্তর দিল, "দিদি, তুই নিজে উলুপিদির কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিস, সেটাই ভাল হবে। আমি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি যে উলুপিদি তোকে ক্ষমা করে দেবেন।"

অভি মাথা নাড়িয়ে সায় জানাল তারপরে বাবার কথা জিজ্ঞেস করল। ইন্দ্রানি মাসি জানাল যে বাবাকে আগেই খেতে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতখনে বাবা হয়ত ঘুমিয়ে পড়েছেন। অভিকেও ওদের সাথে খেতে বসতে বলল। অভি অনার কথা অমান্য করতে পারল না। ডাইনিং টেবিলের একধারে ইন্দ্রানি মাসি, অভি আর সুব্রত খেতে বসে গেল।

এমন সময়ে সবার চোখ গেল সিঁড়ির দিকে। অভি তাকিয়ে দেখে যে মা আর পরী নতুন বউ, মৈথিলীকে সাথে নিয়ে নেমে আসছে। মৈথিলীর পরনে টকটকে লাল রঙের শাড়ি আর পরী একটা গাড় নীল রঙের সালোয়ার পড়েছে। অভি মনে মনে তুলনা করতে চেষ্টা করল যে কে বেশি সুন্দরী, পরী না মৈথিলী? না ওর পরী বেশি সুন্দরী। এই সব কোলাহল, গলজগের পরে পরীর ফুটফুটে মুখে হাসি দেখে অভির মন খুশিতে ভরে গেল। সেই পুরান উচ্ছল পরী আবার ফিরে এসেছে।

অভি সুব্রতর কাধ চাপড়ে বলল, "ভায়া দারুন যোগাড় করেছো। মৈথিলী ব্যাপক দেখতে।"

সুব্রত, "হেই, আমি তোমার মামা আর সেই সম্পর্কে মৈথিলী তোমার মামি হন। ও আমার হয়ে গেছে, একদম ওর দিকে তাকাবে না।"

অভি, "ধুর, কে মামা? একসাথে বসে দারু গেলার সময়ে মামা ভাগ্নে মনে ছিল না?"

ইন্দ্রানি মাসি কথাটা শুনতে পেয়ে অভির কান ধরে টান দিয়ে জিজ্ঞেস করে, "কি! তোমরা দু’জনে ছাদে বসে মদ খাচ্ছিলে?"

অভি, "না না মাসি, আমরা শুধু কফি খাচ্ছিলাম।"

ইন্দ্রানি, "হুম আমার নাক কিন্তু খুব শার্প বুঝলে..."

মা মৈথিলী কে চেয়ার টেনে খাবার টেবিলে বসতে বললেন। মা, পরী আর মৈথিলী ঠিক অভির উলটো দিকে বসে। সুব্রতর সামনে মৈথিলী, অভির সামনে পরী আর মায়ের সামনে ইন্দ্রানি মাসি। বসতে গিয়ে সামনের দিকে একটু ঝুঁকে পরে পরী, অভির নজর চলে যায় পরীর উন্নত বুকের খাজের মাঝে। কোমল বুকের খাঁজ দেখে অভির বুকটা ধুক করে ওঠে। গলা শুকিয়ে যায় কয়েক মুহুরতের জন্য। ফর্সা ত্বকের ওপরে ঘরের আলো যেন পিছল খেয়ে যাচ্ছে।

মা সুব্রতর দিকে তাকিয়ে বলল, "আজকে রাতে তোরা দু’জনে একসাথে শুবি না। কাল থেকে তোদের দিন শুরু।"

খাওয়া দাওয়া শুরু। কিছু পরে অভি ওর পায়ের ওপরে কারুর পায়ের নখের আঁচর অনুভব করল। থালা থেকে পরীর দিকে মুখ তুলে তাকাল অভি, পরী ওর দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি করে হাসছে। টেবিলের নিচে, নখ দিয়ে অভির পায়ে গভীর আঁচর কাটতে থাকে। সেই আঁচরের স্পর্শে অভির সারা শরীরে বিদ্যুৎ তরঙ্গ খেলে বেড়ায়। পরীর চোখে মুখে দুষ্টুমির হাসি। পরীর নখ পা ছাড়িয়ে হাঁটুর কাছে এসে ঘোরাফেরা করছে। অভি দাতে দাঁত পিষে কোন রকমে নিজেকে সংবরণ করে রেখেছে। অগত্যা অভি চুপ করে খাবার গেলা ছাড়া আর কিছু করার শক্তি নেই।

সুব্রত বলল, "কাল অভিকে, ধুতি পাঞ্জাবিতে খুব হ্যান্ডসাম দেখাচ্ছিল। আমার ত একসময়ে ভয় ধরে গেছিল যে বর কে, আমি না অভি? মৈথিলী না ওর গলায় মালা দিয়ে দেয়।"

নতুন বউ, মৈথিলী ওই কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে উঠল। অভির কান লাল হয়ে গেল ওর কথা শুনে। মৈথিলী মায়ের দিকে লাজুক চোখে তাকাল।

পরী হেসে মৈথিলীকে আলতো ধাক্কা মেরে বলল, "বিয়ে হয়ে গেছে আর সেই উপায় নেই, বুঝলে। গত পরশু পর্যন্ত উপায় একটা ছিল ওর গলায় মালা দেবার, এখন সে গুড়ে বালি। আর অভির দিকে নজর দিও না যেন।"

পরীর কথা শুনে সবাই হেসে ফেলল। মৈথিলীর লজ্জা দেখে মা ওকে মৈথিলীকে খ্যপাতে বারন করল। রাতের খাবার পর্ব অনেক হাসি অনেক কথা নিয়ে শেষ হল। সবাইকে পুনরায় খুশি দেখে অভির মন ভাল হয়ে গেল। এতক্ষণ যেন বাড়িতে এক গুমোট হাওয়া বইছিল। মা আর ইন্দ্রানি মাসিকে একসাথে দেখে খুশি হল অভি। খাবার পরে ইন্দ্রানি মাসি মাকে একটা ঘরে ডেকে নিয়ে গেল। অভি বুঝতে পারল যে আরেক চোট কান্না কাটির পালা শুরু হবে। এই বঙ্গ মহিলাদের চোখে যেন মা গঙ্গা বসবাস করেন।

খাবার পরে অভি হাত ধোয়ার জন্য বাথরুমে ঢুকে গেল আর ঠিক পেছন পেছন পরীও ঢুকল হাত ধুতে। পরী ওর কানে কানে বলল, "আধ ঘন্টা পরে ছাদে থেকও।" একবার চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখে নিল অভি, অদেরকে কেউ দেখছে কিনা। তারপরে হটাত করে পরীকে জড়িয়ে ধরল। এক হাত দিয়ে ঘাড় খানি নিজের মুখের কাছে টেনে নিল আর এক হাতে কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে নিল অভি। ওর এই অকস্মাৎ আচরনে ঘাবড়ে গেল পরী। বুকের ওপরে হাত রেখে ঠেলে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করে, কিন্তু অভির আলিঙ্গন বড় দৃঢ়, নিজেকে ছাড়াতে পারল না পরী।

ডান হাতে ওর কোমর জড়িয়ে আরও নিবিড় করে নিয়ে বলল, "প্লিস প্লিস প্লিস, একটা ছোট্ট কিসি দাও না। অনেক ক্ষণ থেকে আমি তোমার গন্ধ পাইনি সোনা।"

আঁতকে উঠলো পরী, "কি করছ তুমি? ছাড় আমাকে, যে কেউ চলে আসতে পারে।"

অভি অনুনয় সুরে বলে, "পরী শুধু একটা ছোট্ট কিস।"

পরী, "না না এখন নয়, প্লিস ছেড়ে দাও। বলেছি ত আধ ঘন্টা পরে ছাদে থেক।"

অভি, "আধা ঘন্টা অনেক বেশি পরী। অতক্ষণ আমি বেঁচে থাকতে পারব না। শুধু একটা ছোট্ট চুমু দিয়ে যাও।"

পরী, "তুমি না একদম যাকে বলে, বল্গাহীন গরু। দেখ সোনা, সবুরে মেওয়া ফলে, তাই আমাকে এখন যেতে দাও, কথা দিচ্ছি আমি আধ ঘন্টার মধ্যে ছাদে তোমার সাথে দেখা করব।"

দু’হাতে পরীর পাতলা কোমর জড়িয়ে ধরে আরও কাছে টেনে নেয়। পরী দুহাতে অভির গলা জড়িয়ে ধরে। কোমল বক্ষ আলত করে চাপ দেয় অভির প্রসস্থ বুকের ওপরে। পরীর হৃদয়ের ধুকপুকানি অনুভব করতে পারে নিজের বুকের ওপরে। পরীর বুকের মাঝে যেন এক ঝড় উঠেছে, কাজল কালো চোখ তুলে তাকায় অভির দিকে। সময় যেন থমকে দাঁড়িয়ে পরে। নাকের ডগায় নিজের নাক ঘষে দিল পরী। মুখখানি উচু করে নিজের ঠোঁট নিয়ে আসে অভির ভিজে ঠোঁটের কাছে। অভি ওই লাল ঠোঁটের আহ্বান উপেক্ষা করতে পারেনা, নিজের ঠোঁট দিয়ে ছুঁতে যায় পরীর ভিজে ঠোঁট।

ঠিক সেই সময়ে মেঘনা ডাক দেয়, "পরী, কোথায় তুমি?"
Like Reply
#11
শুভরাত্রি (#02)


দু’জনে ওপরে যেন বিদ্যুৎ ঠিকরে পড়ল। ঝট করে একে অপরের আলিঙ্গন থেকে মুক্ত করে সরে দাঁড়াল। বাথরুম থেকে বেড়িয়ে যাবার আগে অভির হাতের মধ্যে একটা রুমাল গুঁজে দিয়ে ফিসফিস করে বলল, "আমি না আসা পর্যন্ত আমার গন্ধ নিও।"

পরী ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ভাঙ্গা হাসি দিল আর ইশারা করল যেন ছাদে থাকে। আলতো করে মাথা নেড়ে সায় দিল অভি।

পরী মেঘনা কে বলল, "এই তো আমি, কি হয়েছে, ডাকছো কেন?"

অভিকে পরীর পেছন পেছন বেড়িয়ে আসতে দেখে, ভ্রুকুটি নিয়ে ওদের দিকে তাকায় মেঘনা। পরী মেঘনার চোখের চাহনি দেখে বুঝতে পেরে বলে, "ওই রকম ভাবে দেখছ কেন? বাথরুমে কি করে মানুষে। আমরা হাত ধুতে গেছিলাম আবার কি।"

মেঘনা পরীকে মৈথিলীকে সঙ্গে নিয়ে ওর ঘরে যেতে বলে গেল। অভি কিছুক্ষণ এদিক ওদিক তাকিয়ে সুব্রতকে খোঁজার চেষ্টা করল, কিন্তু সুব্রতর দেখা পাওয়া গেলনা। অভি চন্দ্রানিকে সুব্রতর কথা জিজ্ঞেস করতে, চন্দ্রানি জানাল যে মৃগাঙ্ক এসে সুব্রতকে ওদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে গেছে। চারদিকে তাকিয়ে দেখল অভি, বাড়ির বেশির ভাগ লোকজন শুয়ে পড়েছে।

কিছু যখন আর করার নেই তখন কি করে অভি, এই ভেবে ছাদের দিকে পা বাড়াল। একতলার সিঁড়ি দিয়ে যাবার সময়ে যে ঘরে মৈথিলী রাতে থাকবে সেই ঘরের দিকে চোখ পড়ল অভির। পা টিপে টিপে পর্দার আড়ালে এসে দাঁড়িয়ে ঘরের মধ্যে দেখতে চেষ্টা করল অভি। ঘরের মধ্যে পরিকে দেখতে পেল আর কাউকে পেল না। পরী একবার দরজার দিকে তাকিয়ে দেখতে চেষ্টা করল যে কেউ দাঁড়িয়ে আছে কিনা। একবারের জন্য ওর মনে হল কেউ যেন দরজার আরালে দাঁড়িয়ে ওদের কথাবার্তা শুনছে। বিছানা থেকে উঠে দরজার দিকে এগিয়ে এল। অভি দেখল এযে ধরা পরে যাবার উপক্রম, তাড়াতাড়ি ছাদে পালিয়ে গেল।

ছাদে উঠে এককোণের রেলিঙ্গের ওপরে বসে পড়ল অভি। মাথার ওপরে শীতকালের ঘন নীল আকাশ। ঠান্ডা হিমেল হাওয়া বইছে দূর মাঠের দিকে থেকে। বাড়ির পেছনের আমের বাগান যেন অনেক গুলো ভুতের মতন একা একা দাঁড়িয়ে আছে। দুরে তাল আর নারকেল গাছ গুলো যেন হাওয়াতে মাথা দুলিয়ে ওকে কাছে ডাকার হাতছানি দিচ্ছে। আকাশের দিকে তাকাল অভি, ঘন নীল আকাশ যেন একটা বিশাল পর্দা আর তার ওপরে কেউ যেন সহস্র কোটি হীরের টুকরো ছড়িয়ে দিয়েছে। কিছুদিন আগেই অমাবস্যা গেছে, আকাশে বাঁকা এক চিলতে চাঁদ।

রেলিঙ্গে বসে বাইরের দিকে পা করে দিগন্তের দিকে মুখ করে চুপচাপ বসে থাকে অভি। ঘন কালো অন্ধকারের মধ্যে ওর চোখের সামনে ভেসে ওঠে পরীর সুগভীর বক্ষ বিভাজন। মন আনচান করে উঠল সেই দৃশ্য মনে করে, মনে হল যেন হাত দিয়ে আলতো করে ছুঁয়ে দেয় ওই বক্ষ বিভাজন, নাক মুখ ঢুকিয়ে দিয়ে ঘষে দেয় পরীর বুকে। অন্ধকারের বুক চিড়ে যেন পরীর গভীর কালো চোখ ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে।

চুপিচুপি ছাদে উঠে আচমকা অভির কাঁধে হাত রাখে পরী। মধুঢালা গলায় বলে, "কি ভাবছে আমার ছোট্ট রাজকুমার?"

পেছন দিকে মাথা হেলিয়ে দেয় অভি, কাঁধের দুপাশ থেকে হাত গলিয়ে অভির মাথা নিজের বুকের ওপর চেপে ধরে পরী। পাতলা পাতলা আঙ্গুল দিয়ে অভির মাথার চুলে বিলি কাটতে থাকে আর কপালে ছোটো চুমু খায়।

ফিসফিস করে বলে অভি, "তোমার কথা ভাবছিলাম আমি।"

কাঁধে মাথা নামিয়ে গালে গাল ঘষে দেয় পরী। অভির মনে হল যেন কেউ ওর গালে চন্দনের প্রলেপ লাগিয়ে দিয়েছে। কানের কাছে ভ্রমরের মতন গুঙ্গন করে, "আমার রাজকুমার আমাকে সারা রাত ঠিক এইরকম ভাবে জড়িয়ে ধরে থাকে যেন। আমি চাই না এই রাত কখন শেষ হক।"

অভি ওর দিকে ঘুরে পা ফাঁক করে বসল। দু’পায়ের ফাঁকে পরীকে টেনে নিল। পরী ওর গলা জড়িয়ে ধরে অভির মাথা নিজের বুকের ওপরে চেপে ধরল। অভির চিবুক পরীর কোমল বক্ষের ওপরে চেপে গেল। বুক ভরে টেনে নিল পরীর মাদকতাময় ঘ্রান। নিবিড় করে পরীর কোমর জড়িয়ে ধরল অভি। জামা কাপড় বদলে নিয়েছে পরী, ওর পরনে একটা সিল্কের নাইটড্রেস, গায়ে অভির শাল।

পরীর বুকের ধুকপুকানি কান পেতে শুনল অভি। কোমল আঙ্গুল দিয়ে মাথার চুলে বিলি কাটতে কাটতে জিজ্ঞেস করে পরী, "আমার বুকের মাঝে কি শুনছো?"

অভি, "হুম্মম্ম..." বুকের মাঝে দুষ্টুমি করে নাক ঘষে দিল অভি।

পরী, "প্রত্যেক হার্টবিট শুধু তোমার নাম বলছে।"

অভি জিজ্ঞেস করে, "আচ্ছা একটা কথা বলবে, সবসময়ে আমার শালটা গায়ে জড়িয়ে থাক কেন বলতে পার?"

পরী, "তোমার গায়ের গন্ধ পাই। মনে হয় যেন তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে আছো। শালটা গায়ে থাকলে আমার বড় নিরাপদ লাগে মনে হয় যেন তুমি আমার কাছে আছো, তাই এটা আমি সবসময়ে কাছে রাখি।"

অভি লক্ষ্য করল যে পরীর গলায় একটা মোটা সোনার হার। হার খানি দেখে চিনতে পারল অভি, ওটা ওর মায়ের হার। পরীর মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, "এই হার তুমি কোথায় পেলে?"

কালো চোখের গভীর চাহনি অভির বুকের ভেতর পর্যন্ত পুড়িয়ে দিল, "ছোটোমা দিয়েছে আমাকে।"

ছোটোমা, শেষ পর্যন্ত ওর মাকে পরী ছোটোমা বলে ডাকতে শুরু করেছে।

অভির করতল পরীর পিঠের ওপরে ঘুরতে থাকে, আদর করতে থাকে পরীর মসৃণ পিঠ। দু’হাতে আঁজলা করে তুলে ধরে অভির মুখ। প্রেমের গভীর চাহনি পরীর দুচোখে মাখা।

প্রেমঘন স্বরে বলে, "অনেক অনেক দিন পরে আজ মনে হচ্ছে যেন আমাকে ভালবাসার কেউ আছে। শক্ত করে জড়িয়ে ধর আমাকে, অভি। আমি তোমার কাছ থেকে কোথাও যেতে চাইনা।"

অভি, "এই রকম করে কেন বলছ। বাড়ির সবাই তোমাকে খুব ভালবাসে।"

পরী, "আর বুঝিয়ে কি হবে আমাকে। আজ আমি আমার সত্যি টুকু যেনে ফেলেছি যে কে কত ভালবাসে আমায়।"

অভি, "আমি তোমার জন্য থাকব, পরী।"

ওর কথা শুনে কেঁপে উঠল পরী, "আমি জানিনা ভবিষ্যতে কি হবে। আমাকে মিথ্যে কথা বলে ভুলাতে চেষ্টা করোনা।"

কপালে কপাল ঠেকাল পরী, নাকের ডগার সাথে নাকের ডগা। চোখ দুটি একটু ভাসাভাসা। আলতো করে ভিজে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল অভির ঠোঁটের ওপরে। একত্রিত হল দুই জোড়া ঠোঁট, কোন কামাগ্নির জ্বলায় নয়, এ যেন এক অনাবিল আনন্দের ঢেউ। কিছুটা যেন শান্তির হিমেল বাতাস, চিরন্তন প্রেমের আভাস। ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে কতক্ষণ ওরা ওই ভাবে ছিল তাঁর ইয়াত্তা নেই। সময় যেন থমকে দাঁড়িয়ে পরে ওদের চারপাশে। ধিরে ধিরে যেন ওরা নিজেদের খুঁজে পায়, পরী ওর কাঁধে মাথা গুঁজে দেয় ফুফিয়ে ওঠে। অভি ওর পিঠের ওপরে হাত বোলাতে শুরু করে।

কান্না থামানর জন্য পরীকে আসস্থ করে বলে, "কাঁদছ কেন সোনা? কেঁদো না প্লিস। দেখ কাল তুমি আমাদের সাথে, তোমার ছোটোমায়ের সাথে আমাদের বাড়ি যাচ্ছও। সেখানে আমি থাকব, তোমার ছোটোমা থাকবে।"

কিছুক্ষণ পরে মাথা উঠাল পরী, গোলাপি গাল বেয়ে সরু জলের দাগ। মুখখানি আঁজলা করে নিয়ে, বুড় আঙ্গুল দিয়ে জলের দাগ মুছিয়ে দিল অভি।

পরী, "আমার মা, মৈথিলী, মেঘনা বৌদি সবাই মিলে ছোটোমা'কে অনুরধ করেছে যাতে আমি আরও কিছু দিন ওদের সাথে থাকি। আমি কাল তোমার সাথে যেতে পারছি না, অভি।"

অভি, "ঠিক আছে। কয়েক মাস পর থেকে’ত তুমি আমার সাথে থাকবে। এ নিয়ে চিন্তা করোনা আর মন খারাপ করেনা। দেখ এখন তুমি তোমার ছোটো মাকেও পেয়ে গেছ।"

বিষণ্ণ চেহারায় আবার হাসি ফুটে উঠল।

অভি, "এই ত সোনা মেয়ে।"

বুকের ওপরের অনাবৃত অংশে নাক ঘষে দিল অভি। বক্ষ বিভাজনের মাঝে নাক ডুবিয়ে জোরে নিঃশ্বাস নিল, বুক ভরে পরীর গায়ের গন্ধ বুকের মধ্যে টেনে নিল। আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল বুকের ওপরে। উষ্ণ ঠোঁটের স্পর্শে কেঁপে ওঠে পরী।

বারংবার কেঁপে মৃদু কন্ঠে বলে, "উম্মম্মম্মম্মম... কি করছ তুমি?" অভির মাথা নিজের বুকের ওপরে শক্ত করে চেপে ধরে থাকে। অভির জিব বুকের অনাবৃত অংশে চেটে দেয়। কম্পিত স্বরে ককিয়ে ওঠে পরী, "আমার কাতুকুতু লাগছে যে, থামো না প্লিস..."

নাইট ড্রেসের ওপর দিয়ে সারা পিঠের ওপরে হাত বুলাতে থাকে অভি, পিঠ থেকে কোমর পর্যন্ত। রুক্ষ চুলের ওপরে গাল ঘষতে থাকে পরী। সারা শরীরে প্রেমের আগুন জ্বলে ওঠে। অভির হাত নেমে আসে পরীর কোমল নিতম্বের ওপরে। একটি গোল নিতম্ব হাতের থাবায় নিয়ে পিষে দেয় অভি। নাক দিয়ে তখন আগুন ঝরে পড়ছে।

উষ্ণ শীৎকার করে ওঠে পরী, "উম্মম্মম্ম... অভি, প্লিস ছাড়, কেউ এসে যাবে সোনা।"

অভি, "কেউ ছাদে আসবে না, সোনা।"

পরী, "ছোটো মা চলে আসবে।"

অভি, "তোমার ছোটো মা এতক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে।"

পরী, "মেঘনা আমাকে খুঁজতে খুঁজতে ছাদে চলে আসবে।"

অভি, "মেঘনাও এতক্ষণে শুয়ে পড়েছে সোনা।"
[+] 1 user Likes sorbobhuk's post
Like Reply
#12
শুভরাত্রি (#03)



পরী, "বাড়ি ভর্তি লোক জন, অভি। কেউ না কেউ আমাদের দেখে ফেলতে পারে। প্লিস বেবি ছেড়ে দাও আমাকে।"

পরী কাতর স্বরে মিনতি করে কিন্তু অভির মাথা নিজের আলিঙ্গনের কবল থেকে মুক্ত করে না, শক্ত করে চেপে রাখে বুকের ওপরে। অভির নিষ্ঠুর হাতের থাবা, পরীর কোমল গোলগাল নিতম্ব দুটিকে পিষে ফেলতে থাকে। পাগলের মতন অভির মাথার ওপরে গাল ঘষে পরী। দীর্ঘ থেকে দীর্ঘায়িত হয় পরীর নিঃশ্বাস, প্রেমের আগুন ঝরে নিঃশ্বাসে।

ককিয়ে ওঠে পরী, "বেবি প্লিস আমাকে ছেড়ে দাও, আমি আর পারছিনা।"

অভির মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে যায়, বক্ষ বিভাজনের মাঝে মুখ ঢুকিয়ে চুমু খাবার চেষ্টা করে। বক্ষের কোমল তুলতুলে নারী মাংসের ছোঁয়ায় অভির শরীরে যেন বিদ্যুৎ তরঙ্গ প্রবাহিত হয়।

পরী, "সোনা না...... কোরো না এই রকম... আমি মরে যাব সোনা... কি যে হচ্ছে না, সারা শরীরে..."

প্রগাড় আলিঙ্গনে বদ্ধ এক জোড়া কপোত কপোতী, সময়ের বাঁধ যেন ওদের কাছে নেই। আশেপাশের ব্যাপারে অবিদিত, দুজন দুজনাকে জড়িয়ে ধরে ভেসে চলেছে প্রেমের ভেলায়। অভির কামুক হাতের তালু পরীর নিতম্বদ্বয় পেষণ করে চলেছে। নিতম্ব হাতে নিয়ে বুঝতে পারে যে নাইট ড্রেসের নিচে পরীর নিম্নাঙ্গে কোন বস্ত্র নেই। অভির সিংহ কেশর ফুলিয়ে উঠেছে, পরী সিংহের অবয়াব নিজের পেটের ওপরে উপলব্ধি করতে পেরে কেঁপে ওঠে। অভির শয়তানি একটু বেড়ে যায়, খিপ্ত সিংহটিকে পরীর জানু মাঝে চেপে ধরে। নিজের জানু মাঝে অভির খিপ্ত সিংহের ধাক্কা অনুভব করে পরী মৃদু শীৎকার করে ওঠে। কামাগ্নিতে জ্বলে ওঠে দুই প্রান। মাথার চুল ছিঁড়ে দেবার পালা, এমন ভাবে খামচে ধরে অভির মাথা।

পরী, "আমাকে পাগল করে দিচ্ছ অভি। আমার বুকের মাঝে কি যেন হচ্ছে... উফফফ... না... আর পারছিনা সোনা..."

ঠিক যেই সময়ে দুই তৃষ্ণার্ত প্রান প্রেমের খেলায় মগ্ন, সেই সময়ে মেঘনা নিচে থেকে পরীকে ডাক দেয়। মেঘনার গলা শুনে দুজনে এঁকে অপরকে ছেড়ে দাঁড়ায়। দুজনেই হাঁপাতে থাকে, বুকের মাঝে যেন কামারের হাপর টানছে।

পরী দুষ্টুমি মাখানো হাসি দিয়ে বলে, "দেখলে ত, আমি বলেছিলাম না যে মেঘনা বৌদি আমাকে খুঁজতে খুঁজতে ছাদে চলে আসবে।" তারপরে গলার স্বর উঁচু করে উত্তর দেয় মেঘনাকে, "হ্যাঁ কি হয়েছে, আমি ছাদে।"

মেঘনা ছাদে উঠে এসে দুজনার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, "এই অন্ধকার রাতে, একা একা ছাদে কি করছ?"

পরী, "কিছু না। অনেক দিন পরে দেখা পেলাম তাই দু’জনে গল্প করছিলাম।"

সিঁড়িতে আরও একজনের পায়ের আওয়াজ শোনা গেল। কিছু পরে সুব্রত এসে মেঘনার পেছনে দাঁড়াল।

সুব্রত অভির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, "কি ভায়া, ছাদে কি করছ? আমি তোমাকে সারা বাড়ি খুঁজে খুঁজে হন্য হয়ে গেলাম আর তুমি ছাদে?"

মেঘনা পরীকে বলল, "বদমাশ মেয়ে, নিচে যাও। মৈথিলীর ঘুম পেয়েছে, তোমাকে ওর সাথে শুতে হবে।"

মেঘনা পরীকে কে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেল। যাবার আগে চোরা চাহনিতে এক চোরা হাসি ছুঁড়ে গেল অভির দিকে।

সুব্রত অভির কাঁধে হাত রেখে বল, "ভায়া, দু বোতল ওল্ড মঙ্ক যোগাড় করেছি। উঠোনে বসে চলবে নাকি রাতে?"

অভি উত্তরে বলে, "ধুর কি যে বল, কেউ দেখে ফেললে?"

সুব্রত, "আরে বাবা মাঝ রাতে কে আর আমাদের দেখবে। সবাই খেয়ে দেয়ে টেঁসে গেছে।"

উঠোনে বউভাতের মেরাপ বাঁধা, দুজনে ছাদ থেকে নেমে উঠোনের প্যান্ডেলে ঢুকে পড়ল। বাড়ির অধিকাংশ লোকজন শুয়ে পড়েছে, সারা বাড়ি নিস্তব্ধ, গুটিকয়েক আলো ছাড়া সারা বাড়ি অন্ধকারে ঢেকে।

সুব্রত গ্লাসে রাম ঢেলে একটা গ্লাস অভির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে, "আজ যেন বেশ একটু ফুরফুরে লাগছে। এই দুই দিন যেন ঝড় বয়ে গেল।"

অভি মাথা নেড়ে জিজ্ঞেস করল, "ত তুমি কি করে খুঁজে পেলে তোমার স্বপ্নের সুন্দরীকে।"

সুব্রত জানাল যে এক পারিবারিক অনুষ্ঠানে ওদের দেখা হয়েছিল, সেইখানে থেকে দুজনের মধ্যে প্রেম শুরু হয়। একদিকে রাম এক দিকে গল্প, সমান তালে চলতে থাকে। ও আগে মৈথিলীকে প্রপোস করতে চেয়েছিল, কিন্তু বড়দার ভয়ে আর করেনি।

অভি, "তা ম্যানেজ করলে কি করে?"

সুব্রত, "আমি মেঘনা বউদিকে সব জানাই। তারপরে একদিন দুষ্টুর জন্মদিনে ওদের ডাকা হয়। সেখানে বড়দা মৈথিলীকে দেখে পছন্দ হয়। তারপরে মেঘনা বৌদি আর শশাঙ্ক দা মৈথিলীর বাবা মাকে বিয়ের প্রস্তাব জানায়।"

অভি, "হুম বেশ ইন্টারেস্টিং ব্যাপার।" রক্তে ততক্ষণে মদের নেশা। "কাল রাতে বিড়াল মারছ তাহলে। ত হানিমুনে কোথায় যাওয়া হচ্ছে?"

সুব্রত, "হুম কাল রাত্রি..." হেসে ফেলল সুব্রত "হানিমুনে গোয়া যাব ঠিক করেছি।"

অভি, "হ্যাঁ গোয়া হানিমুনের জন্য একদম ভাল জায়গা।"

সুব্রতর কাধ চাপড়ে বলে, "মৈথিলীকে দারুন দেখতে।"

সুব্রত, "খালি সুন্দরী? আর কিছু না? বল আমার বউ দারুন সেক্সি!"

শিরায় শিরায় রক্তের চেয়ে বেশি যেন সুরা চলাচল করছে। গলার আওয়াজ জড়িয়ে আসছে দুজনারই "এটা আমাদের সেকেন্ড হানিমুন। আসল হানিমুন ত কবেই সেরে ফেলেছি আমরা।"

অভি, "তাই নাকি?"

সুব্রত, "হ্যাঁ ভাই। আমার বউ খুব মিষ্টি আর খুব সেক্সি। তুমি তোমার কথা বল, কেউ আছে নাকি মনে মনে?"

অভি, "না আমার মনে কাউকে নেই। তবে হ্যাঁ আমার স্কুলের ফিসিক্স ম্যাডামকে আমার খুব ভাল লাগত। সেও দারুন সেক্সি, একটু শর্ট হাইটের, কিন্তু খুব সুন্দরী ছিলেন। আমি ওনার ক্লাসে ঠিক ভাবে পড়াশুনা করতে পারতাম না, খালি ওনাকে দেখে যেতাম।"

সুব্রত, "তারপরে কি হল?"

অভি, "তারপরে কি হবে?"

সুব্রত, "ধুর পাগলা, আমি শুনেছি কলকাতার ম্যাডামরা ছাত্রদের সাথে অনেক কিছু করে।"

অভি, "না না, ওই রকম কিছু ঘটেনি বাবা। তবে হ্যাঁ অনার রুপ দেখে আমার ফিসিক্স পড়া বেড়ে যায় আর আমি গ্রাজুয়েসানে ফিসিক্স নিয়ে পড়াশুনা শুরু করি। তা তোমাদের প্রথম হানিমুন কোথায় হয়?"

সুব্রত, "আমরা শান্তিনিকেতন ঘুরতে গেছিলাম।"

মদের নেশায় চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে দুজনেরই, কিন্তু গলায় রাম ঢালা ছারেনা কেউ। অভির চোখ বুজে আসে। সুব্রত ওর পিঠে থাপ্পর মেরে বলে, "আজ আমার জীবনের সব থেকে বড় দিন আর তুমি ঝিমিয়ে পড়ছ? তুমি আমার সব থেকে ভাল বন্ধু।"

অভি চিৎকার ওঠে, "ধুর শালা, আমার মাথা ঘুরছে।"

সুব্রত, "আজ আমি পাগলা ঘোড়া, আমার ঘোড়ি চাই, আমার ঘোড়ি ওই ওপরে ঘুমুচ্ছে।"

সুব্রত টলতে টলতে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল, চিৎকার কর উঠল, "আমি যাচ্ছি আমার প্রেমিকার কাছে।"

অভি হাত বাড়িয়ে সুব্রতকে ধরে চেয়ারে বসিয়ে দিল, "আজ রাতে নয়, বসে পর ভায়া।"

ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ল সুব্রত, "চূর্ণই কে আমার কাছে নিয়ে আস।"

অভি, "এই চূর্ণই টা আবার কে?"

সুব্রত, "আমার সুন্দরী বউয়ের ডাক নাম চূর্ণই। আমাকে ছেড়ে দাও আমি চুরনির কাছে যাব।"

অভি, "না একদম নড়বে না"

টলতে টলতে আবার সুব্রত চেয়ার ছেড়ে উঠতে চেষ্টা করে, অভি আবার এক ধাক্কা মেরে ওকে চেয়ারে বসিয়ে দেয়।

অভি, "ভাই একরাতের ব্যাপার, কোন রকমে কাটিয়ে দাও, কাল থেকে তোমার চূর্ণই তোমার কাছে।"

"ঠিক আছে" এই বলে হেঁড়ে গলায় গান ধরে সুব্রত, "মেরি জান মেরি জান মুরগি কে অন্ডে..."

অভি, "ধুর শালা, এ আবার গান নাকি। আমার গান শোনো তবে।"
"সেদিন দুজনে হেগে ছিনু বনে,
ছুছবার জল ছিল না
বিচুটি পাতায় পোঁদ মুছেছিনু
সে জ্বলুনি আজ গেল না গেল না..."

সুব্রত, "উরি বাস... দারুন গান গুরু... জ্বলুনি আজ গেল না..."

উঠে দাঁড়িয়ে সুব্রত বলল, "এবারে আমার রামায়ন শোনাব......"
"ওয়ান্স আপ অন আ টাইম, রাম গেল বনে...
হটাত করে কাঠ পিঁপড়ে কামড়ে দিল ধোনে...
রাম তখন ডাকতে লাগল সীতা সীতা সীতা...
সীতা তখন উলঙ্গ হইয়া পড়িতেছিল গীতা...
রাম তখন ডাকতে লাগল জাম্বু জাম্বু জাম্বু...
জাম্বু তখন বাবার পোঁদে ঢুকাচ্ছিল বাম্বু...
রাম তখন ডাকতে লাগল হনু হনু হনু...
হনু তখন সেওড়া গাছে খুচাচ্ছিল নুনু...
রাম তখন ডাকতে লাগল লক্ষণ লক্ষণ লক্ষণ...
লক্ষণ তখন সীতার দুগ্ধ করিতেছিল ভক্ষণ...
অতঃ রামচন্দ্র কথা..."

ওরা দুজনে হাসতে হাসতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল, তারপরে কারুর কিছু মনে নেই কি হলো।
[+] 1 user Likes sorbobhuk's post
Like Reply
#13
খুঁজে পাওয়া বাল্যকাল


দু’জনে কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিল তাঁর ঠিকানা নেই। অভির চোখ খলে যখন কেউ ওর মাথার পেছনে সজোরে এক চাটি মারে। ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে যে ইন্দ্রানি মাসি ওর দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে। পায়ের দিকে কিছু দুরেই মাটিতে পরে আছে সুব্রত।

ইন্দ্রানি মাসি ওদের দিকে রেগে বলে, "শূয়োর কোথাকার। তোদের কোন হুস জ্ঞান নেই? সবাই তোদের কে হন্যে হয়ে খুঁজছে আর তোরা এখানে পরে পরে ঘুমাচ্ছিস?"

অভি পা দিয়ে ঠ্যালা মেরে সুব্রত কে জাগিয়ে দেয়। সুব্রত মাথা চুলকাতে চুলকাতে চোখ খুলে দেখে যে ইন্দ্রানি মাসি ওর দিকে রেগে মেগে তাকিয়ে।

অভি, "সরি মাসি। মানে আমরা কাল রাতে একটু বেশি হয়ে গেছিল।"

চেয়ারে রাখা মদের বোতল আর গ্লাসের দিকে ইন্দ্রানি মাসির চোখ যায়। তাড়াতাড়ি গায়ের শালটা চেয়ারের ওপরে ফেলে দিয়ে ওগুলো ঢেকে দেয়। ওদিকে মন্ডপের দিকে পায়ের আওয়াজ শোনা যায়, কেউ আসছ। ইন্দ্রানি মাসি জানিয়ে দেয়, "অভি আর সুব্রত সারা রাত প্যান্ডেলে রাত কাটিয়েছে।"

মা, দিদা, পরী, মৈথিলী সবাই প্যান্ডেলের দিকে দৌড়ে আসে। মা আর দিদা দু’জন কে বেশ ভাল বকুনি দেবার পরে চলে যায়। মৈথিলী সুব্রতকে টানতে টানতে বাড়ির মধ্যে নিয়ে যায়।

পরী অভির কাছে এসে জিজ্ঞেস করে, "এই ঠাণ্ডার রাতে এখানে কি করছিলে তোমরা?"

সদ্যস্নাত পরীকে দেখতে ঠিক শিশিরে ভেজা জুঁই ফুলের মতন দেখাচ্ছে, সারা গা থেকে মন মাতান এক সুবাস বের হচ্ছে।

অভি, "না কিছু না, কাল রাতে একটু বেশি হয়ে গেছিল এই আর কি..."

আড় চোখে দেখল অভি, ইন্দ্রানি মাসি কাজের লোককে ডেকে বোতল আর গ্লাস পরিষ্কার করে নিতে বলল।

বাড়িতে ঢোকা মাত্রই যেন হাজার চোখ অভিকে খেয়ে ফেলার জন্য উদগ্রীব। বাবা আর সুমন্ত মামা যেন পারলে ওকে খেয়ে ফেলে।

পরী ওকে টানতে টানতে একটা ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে দিল। ঠেলে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়াল। অভির এলোমেলো চুলে বিলি কাটতে থাকে পরী। ঘরের পর্দা যে দেওয়া নেই সেদিকে কারুর খেয়াল নেই। অভি ওর পাতলা কোমর জড়িয়ে ধরে।

ক্ষমা চায় অভি, "সরি পরী। কাল রাতের জন্য ভেরি সরি।"

মমতা মাখান হাসি দিয়ে উত্তর দেয়, "ঠিক আছে, আমি ত কিছু বলিনি। ছেলেরা দুষ্টুমি করবে না ত কে করবে।"

অভি, "তুমি তাহলে আমার ওপরে রাগ করনি, আমার সুইট পরী।"

মায়ের দেওয়া হারটা অভির হাতে দিয় বলে, "এটা আমাকে পড়িয়ে দেবে কি?" এই বলে অভির দিকে পেছন করে দাঁড়িয়ে পড়ল। ঘাড়ের ওপরে হাত খোঁপা টাকে আলতো করে ঘাড় থেকে সরিয়ে দিল অভি। মরালী গ্রিবার মতন ফর্সা ত্বক, অভির হাত কিঞ্চিত কেঁপে ওঠে। হার পরানোর আগে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয় ওই ঘাড়ের ওপরে।

উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়া পেয়ে কেঁপে ওঠে, "কি করছ? আবার দুষ্টুমি। কেউ এসে পরবে, এস টাকে ঠিক করে লক করে দাও।"

ঘাড়ের কাছে এস টাকে লক করে মসৃণ ত্বকের ওপরে হাত বুলিয়ে দিল অভি। বেড়াল ছানার মতন মিউ মিউ করে উঠল পরী। অভি আবার দু’হাতে ওকে জড়িয়ে ধরল।

জিজ্ঞেস করল, "রাতের বেলায় কি পড়ছ?"

মাথা নাড়াল পরী, "জানি না, তুমি বলে দাও কি পড়ব।"

অভি, "তুমি অনেক সুন্দরী, তুমি যা পরবে তাতেই তোমাকে সুন্দরী দেখাবে। তুমি যে আমার সত্যিকারের পরী।"

পরী ঠেলে অভিকে বাথরুমের দিকে ঢুকিয়ে দেয়, "যাও তাড়াতাড়ি স্নান সেরে আস। তোমার গা থেকে বোটকা গন্ধ বের হচ্ছে।"

ঠিক সেই সময়ে ইন্দ্রানি মাসি ঘরের মধ্যে ঢোকে। ইন্দ্রানি মাসিকে দেখে দু’জনে একটি তফাত দাঁড়ায়। ইন্দ্রানি মাসি পরীকে বলে যে অভির মা নাকি ওকে খুঁজছে। পরী ইন্দ্রানি মাসি কে জিজ্ঞেস করল যে কেন ওর ছোটো মা ওকে ডেকেছে। মাথা নাড়িয়ে ইন্দ্রানি মাসি জানাল যে কারন জানেন না। পরী কিছু পরে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল। বেড়িয়ে যাবার আগে, ঘাড় ঘুরিয়ে অভির দিকে তাকাল। ডান হাতের তর্জনী টা ঠোঁটের কাছে এনে, আঙ্গুলের ডগায় ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে, একটা ছোট্ট চুমু ছুঁড়ে দিয়ে চলে গেল।

ইন্দ্রানি মাসি, "দিদি জামাই বাবু তোমার ড্রিঙ্কসের কথা জানে?"

অভি সিলিং এর দিকে তাকিয়ে থাকে অনেকক্ষণ, "না গো জানে না।" তারপরে বলে, "সরি মাসি, তবে থ্যাঙ্কু ওই সময়ে যা করেছ।"

ইন্দ্রানি মাসি, "যাও বাথরুমে ঢুকে স্নান সেরে নাও।"

তাড়াতাড়ি বাথরুমে ঢুকে পড়ল অভি। তাড়াতাড়ি স্নান সেরে নিতে হবে। আজ একটা মাত্র দিন, পরীকে কাছে পাওয়ার, আজ বিকেল বেলায় অভিকে কোলকাতা ফিরে যেতে হবে। কোনো রকমে স্নান সেরে নিচে নেমে দেখে যে মা অথবা পরী কেউই নেই। বাড়ির লোকজন কে জিজ্ঞেস করে মায়ের কথা, একজন উত্তর দিল জানেনা। বারান্দার দিকে হেঁটে গিয়ে দেখে যে দিদা ইন্দ্রানি মাসি কে আর মেঘনা কে কিছু নির্দেশ দিচ্ছে। পাশে গিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে অভি। ওদের কথা শেষ হয়ে যাবার পরে দিদাকে মায়ের কথা জিজ্ঞেস করে। ওর মন বলছে, মা যেখানে থাকবে পরীও সেখানেই থাকবে। পরীও চাইছে ওর বেশির ভাগ সময় ওর ছোটো মার কাছে কাটুক।

দিদা অভি কে বলল, "তোর মা পরীকে জিজ্ঞেস করেছিল যে পরী বিকেল বেলায় কি জামা কাপড় পরবে। পরী জানায় যে হয়ত শাড়ি বা সালোয়ার। তোর মায়ের ঠিক পছন্দ হয়নি তাই তোর মা আর বাবা পরীকে নিয়ে বারাসাত গেছে সপিং করতে। ফিরতে ফিরতে বিকেল চারটে বেজে যাবে।"

অভির খুব রাগ হল, পরী ওকে না জানিয়ে চলে গেল? একবার হাতের কাছে পেলে হয়।

দিদা অভি কে পাশে বসতে বলে ওর ছোটো বেলার কথা শুনাতে লাগল, "তুই ছোটো বেলায় খুব দুষ্টু ছিলিস। সারা বাড়ি হামাগুরি দিয়ে বেরাতিস আর পরীও তখন অনেক ছোটো, ও তোর পেছন পেছন ঘুরে বেড়াত। সুব্রত তোদের থেকে কিছু বড়, তোকে নিয়ে সুব্রত বাড়ির পেছনের পুকুর পাড়ে নিয়ে গিয়ে মাছ ধরত। তোরা দু’জনে ছোটো ছোটো ছিপে মাছ ধরতিস আর তারপরে সেই মাছ গুলো আবার পুকুরের জলে ছেড়ে দিতিস। চল আমার সাথে তোকে কিছু দেখানর আছে আমার।"

গল্পের মাঝে অভি লক্ষ করল যে একটা গড়ি এসে উঠানে দাঁড়িয়েছে। গাড়ি থেকে বেশ কিছু মহিলারা নামলেন। দিদা আর অভি ওদের কে লক্ষ না করে বাড়ির পেছন দিকে হাটা দিল। বহু বছর পরে অভি সেই বাল্যকালের খেলার জায়গায় ফিরে এসেছে। দু’পাসে আম কাঁঠালের বাগান, তার মাঝে পায়ে হাঁটার সরু রাস্তা এঁকে বেকে এগিয়ে চলেছে।
কিছু দূর যাবার পরে দিদা ওকে পুকুর দেখিয়ে বলে, "এই সেই পুকুর, তোর হয়ত কিছুই মনে নেই।"

মাথা নাড়ায় অভি, "না গো দিদা, আমার কিছুই মনে নেই।"

অভির হাত ধরে পুকুরের এক কোনায় নিয়ে যায়। একটা আমের গাছ দেখিয়ে অভিকে ছুঁতে বলে গাছের গুরি।

দিদা, "এই গাছটা দেখছিস। তুই তখন কথা বলতে শিখেছিস। একদিন সকাল বেলা আমি পুজো সেরে উঠেছি আর তুই দৌড়াতে দৌড়াতে আমার কাছে এসে আমাকে হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে আসিস এখানে। গাছ দেখিয়ে বলিস যে তুই একটা আমের গাছ পুঁতেছিস।"

দিদা অভির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, "ছুঁয়ে দ্যাখ, কত বড় হয়ে গেছে তোর পোঁতা আম গাছ। আজও আমার বাগানের সেরা আম গাছ এটা।"

অশ্রু ভরা চোখে অভির দিকে তাকিয়ে বলে, "আমারও বয়েস হয়েছে, তোর মায়েরও বয়স হয়েছে। তোর মা এতদিন কি করে এই সব বুকের মাঝে লুকিয়ে রেখেছিল জানিনা।"

পুকুর পাড়ে বসে পরে দিদা আর অভিকে পাশে বসতে বলে, "উলুপি আমাদের জন্য অনেক করেছে। আমরাই ওকে ভুল বুঝলাম রে।"

অভি দিদকে জড়িয়ে ধরে বলে, "দিদা, আবার কেন ওই সব কথা শুরু করছ?"

কান্না ভেজা চোখে দিদা বলল, "নাঃ রে। একটি মেয়ে, দুই মায়ের মাঝে, সময়ের ব্যাবধানে দূর হয়ে গেল।"

ঠিক সেই সময়ে ইন্দ্রানি মাসি এসে পড়ল। ওদের দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। দিদা ইন্দ্রানি মাসিকে জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে? উত্তর ইন্দ্রানি মাসি বলল যে মেয়ের বাড়ি থেকে লোকজন এসেছে আর দিদাকে খুঁজছে।

বাড়ি পৌঁছাতেই দিদাকে সব আত্মীয় সজ্জনেরা ঘিরে ধরল। অভি আবার সেই ভিড়ে একা হয়ে পড়ল।
[+] 1 user Likes sorbobhuk's post
Like Reply
#14
নতুন মুখ


অভির খুব একা একা লাগছিল, থেকে থকে রাগ হচ্ছিল মায়ের ওপরে, কেন পরীকে নিয়ে শপিংএ চলে গেছে, কেন একবার ওকে জানাল না। শপিং ওর ভাল লাগে না, তবুও পরীর সঙ্গ ত পেত। ঠিক সেই সময়ে দুষ্টু ডাক দেয়, বলে যে সুব্রত ওকে ওর ঘরে ডাকছে।

ঘরে ঢুকে দেখে যে একটি নতুন মুখ। একটি তন্বী তরুণী মৈথিলীর পাশে বসে। সুব্রত ওকে দেখে কাছে ডেকে মেয়েটার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। মেয়েটি ওর খুড়তুত শালি, অরুণিমা। অরুণিমা দক্ষিণ কোলকাতায় থাকে, বি.এ ফার্স্ট ইয়ার পড়ছে। কথাবার্তা শুনে মনে হল যেন, অভির সাথে অরুনিমার পরিচয় কোন এক গুড় কারনে করতে চাইছে ওরা।

অরুনিমার দিকে তাকাল অভি, সবে মাত্র গোলাপের কুঁড়ি, বয়স আন্দাজ এই উনিশ কি কুড়ি, দেখতেও ভাল। ওর দিকে বড় বড় চোখ নিয়ে তাকাল। অভি সুব্রতর কাঁধে হাত রেখে বলল, "মামা আমার এখন ঠিক ভাল লাগছে না, আমি একটু একা থাকতে চাই।"

মৈথিলীর দিকে তাকাল অভি, মাথা নিচু করে শ্রদ্ধা জানাল। মৈথিলী ওর এই আচরনে হেসে ফেলল। অভি মজা করে বলল, "চুর্নি, তোমাকে দারুন দেখতে। তোমার সাথে আমার আগে দেখা হওয়ার দরকার ছিল।"

ওর কথা শুনে মৈথিলীর লজ্জায় কান লাল হয়ে গেল, রেগে মেগে সুব্রতর দিকে তাকাল। চুর্নি নামে শুধু মাত্র সুব্রতই ওকে ডাকে। অভি সুব্রত কে আসস্থ করে বলল, "ভায়া তোমার বউয়ের দিকে আমি নজর দিচ্ছি না চিন্তা নেই।"

অভি ঘর থেকে বেড়িয়ে নিচে নেমে গেল। এক কাপ কফি নিয়ে আবার ছাদে উঠে গেল। খালি ছাদে দাঁড়িয়ে নীল আকাশের দিকে চেয়ে থাকল অভি। এক কোনায় দাঁড়িয়ে দু’হাত ছড়িয়ে বুক ভরে গ্রামের শুদ্ধ বাতাস ভরে নিল বুকের ভেতরে।

কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে ভাবতে থাকে ওর আর পরীর সম্পর্ক। পরী ওর কে হয়? মায়ের দুর সম্পর্কের বোন। হ্যাঁ, সত্যি, কিন্তু রক্তের ত কোন সম্পর্ক নেই, মায়ের নিজের বা কাছের বোনও নয়। মায়ের ছোটো দাদুর, ছোটো মেয়ের, ছোটো মেয়ে হচ্ছে পরী। কেনই বা ওদের প্রেম এই সমাজ বা ওর বাবা মা মেনে নেবে না? শুধু মাত্র এই কারনে যে পরী ওর থেকে দু’বছরের বড় বলে? বয়সের ব্যাবধান কি এতই বড় যে ওর বাবা মা ওদের সম্পর্ক মেনে নেবে না? কিছুতেই মনকে শান্তনা দিতে পারলনা অভি, এই ভালবাসা অবৈধ হতে পারেনা। ওরা দু’জনেই প্রাপ্ত বয়স্ক, দু’জনের বুকের মাঝে একটি হদপিন্ড আছে। কেই বা বুঝবে? মা না দিদা? এ ভালবাসা যে বড় মুধুর। ভালবাসা মানুষের মনে কি দরজায় টোকা মেরে আসে? না জানিয়ে আসে। প্রেমে মন মজে গেলে, বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যায়, রাতে ঘুম আসে না, সবসময়ে খোলা চোখের সামনে শুধু প্রেমিকার কাজল কালো দু’নয়ন খেলে বেড়ায়। এইসব ভাবনা চিন্তায় ডুবে যায় অভি।

ওর চিন্তনের রেশ কাটল এক মিষ্টি আওয়াজ শুনে, "তোমাকে নিচে খেতে ডেকেছে।" ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল অভি, পেছনে অরুনিমা দাঁড়িয়ে।

অভি, "হুম চল, আমি ত খাবার কথা একদম ভুলে গেছিলাম। ত কে তোমাকে পাঠাল আমাকে ডাকতে? তোমার দিদি না জামাইবাবু?"

অরুনিমা, "দিদি জামাইবাবু খেতে বসবে তাই তোমাকে ডাকতে বলল।"

নিচে নামতে নামতে অরুনিমা ওকে জিজ্ঞেস করল, "তুমি কলকাতার কোথায় থাক?"

অভি, "আমি উত্তর কোলকাতায় থাকি, তুমি ত মনে হয় দক্ষিণ কোলকাতায় থাক, তাই না?"

অরুনিমা, "হ্যাঁ, ঢাকুরিয়া।"

অভি একনজর দেখল অরুনিমাকে, পাতল গঠন গায়ের রঙ ফর্সা। পোশাক আসাক বেশ রুচিশীল। টকটকে লাল রঙের শাড়ি পড়েছে, পিঠ বিহীন ব্লাউস গায়ে, পিঠের ওপরে দুটি সুতা দিয়ে বাঁধা।

অরুনিমা, "তুমি কলেজের ফাইনাল ইয়ারে?"

অভি, "হ্যাঁ।"

অরুনিমা, "তারপরে?"

অভি, "তারপরে মানে?"

অরুনিমা, "না মানে কলেজের পরে কি? হাইয়ার স্টাডিস করবে না চাকরি করবে?"

মাথা চুলকায় অভি, এই মেয়েটা ওকে এতসত প্রশ্ন কেন করছে। উত্তর দিল, "আমাকে চাকরি করতে হবে। আমি একটা প্রাইভেট সংস্থা থেকে কম্পিউটার শিখছি।"

অভি অরুনিমাকে জিজ্ঞেস করল, "তুমি ভবিষ্যতে কি করতে চাও?"

অরুনিমা একটু ভাবুক হয়ে বলল, "আমি কিছু করতে চাই না।"

পরীর একদম উলটো স্বভাবের মেয়ে অরুনিমা।

খাবার টেবিলে শুধু মাত্র দুটি চেয়ার খালি, অগত্যা অভিকে অরুনিমার পাশেই বসতে হল। মৈথিলী আর সুব্রত ওদের উলটো দিকে বসে। ওদেরকে পাশাপাশি বসতে দেখে, মৈথিলী সুব্রতর কানেকানে কিছু বলল, সুব্রত একবার অভির দিকে তাকিয়ে হেসে দিল। ওই হাসি দেখে অভি বুঝতে পারল যে ওরা কি করতে চাইছে। নিজের মনে হেসে ফেলল অভি, "কি অদ্ভুত প্রস্তাব।"

খাবার সময়ে খুব চুপচাপ ছিল অভি, ওর মনটা পরে আছে কখন পরী আসবে সেই চিন্তায়।

খাবার পরে সুব্রত অভিকে ডেকে এক কোনায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল যে ওর কি হয়েছে, ও এত চুপচাপ কেন। অভি চেপে গেল যে, পরীকে খুব মনে পড়ছে, উত্তর দিল যে, দিদা ওকে ওর ছোটো বেলার কথা মনে করিয়ে দেওয়াতে ওর মন খারাপ লাগছে।

সুব্রত, "তুমি অরুনিমাকে নিয়ে একবার বাগানে বা পুকুর পাড় থেকে ঘুরে আসতে পারত? অরুনিমা বেশ সুন্দরী মেয়ে, হয়ত তোমার মনে ভাল লেগে যেতে পারে।"

অভি ম্লান হেসে উত্তর দিল, "কেন চেষ্টা করছ?"

সুব্রত, "কেন কি হল? এইরকম একটা সুন্দরী মেয়েকে দেখে তোমার মনের ভেতরে কিছু হচ্ছে না? আমি যদি েই কথা আমার কোন বন্ধুকে বলতাম ওরা ত হুমড়ি খেয়ে পড়ত অরুনিমার ওপরে। এক কাজ কর, তুমি ছাদে যাও আমি ওকে ছাদে পাঠিয়ে দিচ্ছি।"
Like Reply
#15
বিস্ময়

ছাদে উঠে অভি চেয়ে থাকে দুরের মাথের দিকে, ধানের খেতের ওপরে নির্মল বাতাসে কচি কচি ধান হাওয়াতে মাথা দোলাচ্ছে। মাথার ওপরে শীতকালের সূর্যি, ধিরে ধিরে পশ্চিম আকাশের দিকে পা এগিয়ে দিয়েছে। পরীর কোন দেখা নেই। বুকের মাঝে এক অনির্বচনীয় ব্যাথা জেগে উঠল, গত তিনদিন ওর জীবনের সব অঙ্ক গুলিয়ে দিয়েছে। খালি হাতে এসেছিল এই বিয়ে বাড়িতে, কিন্তু ফিরে যাবার সময়ে নিয়ে যাচ্ছে বুক ভরা ভালবাসা। ভগবানের কাছে এর থেকে বেশি আর কিছু চাওয়ার নেই ওর। কিছু পরে বিয়ে বাড়ি আবার আত্মীয় সজ্জনের কোলাহলে মুখরিত হয়ে উঠবে। কোলকাতা ফিরে যাবার আগে হয়ত পরীর সাথে আর একা একা দেখা করা যাবেনা। রাতের খাবার পরে, ওরা ফিরে যাবে কোলকাতা। কেন মরতে রাতে রাম খেতে গেল। যদি না খেত তাহলে ও পরীর সাথে, মায়ের সাথে শপিঙে যেতে পারত। এই সব ভাবতে ভাবতে এক সময়ে চোখে জল চলে আসে অভির। ঝনঝন করে উঠল মাথা, মনে হল যেন কানের কাছে কেউ কাঁচের গ্লাস ভেঙ্গে দিয়েছে।

"কি হয়েছে তোর?"

মনে হল যেন অনেক দূর থেকে কেউ ডাক দিচ্ছে অভিকে। সম্বিৎ ফিরে পেয়ে তাকিয়ে দেখল যে মা ওকে ডাকছে। চোখের জল লুকিয়ে তাকাল মায়ের দিকে, লক্ষ্য করল পরী মায়ের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। মা অভির কাছে এসে কাঁধে হাত রেখে আবার জিজ্ঞেস করল, "তোর কি হয়েছে?"

কোন উত্তর দিতে পারল না অভি। ভাবলেশহীন ভাবে তাকিয়ে থাকে পরীর দিকে। ওই চোখ দেখে পরীর চোখ ফেটে জল চলে আসে, ঠোঁট কামড়ে নিজেকে সামলে নেয়। বুঝতে পারে অভির মনের বেদনা। মা বললেন, "নিচে সবাই আমাকে জিজ্ঞেস করছে যে কি হয়েছে তোর?"

পরী ধিরে ধিরে মায়ের কাছে এগিয়ে এসে বলল, "ছোটোমা তুমি নিচে যাও, আমি ওকে দেখছি।"

মা, "হ্যাঁ দ্যাখ কি হয়েছে ওর, আর তাড়াতাড়ি নিচে চলে আয় তোরা।"

অভি জিজ্ঞেস করল মাকে, "তোমরা শপিঙে গেলে আমাকে বলে যেতে পারতেত?"

পরী বুঝতে পারে যে প্রশ্নটা ওর ছোটো মাকে নয়, অভি প্রশ্নটা ওকে করেছে। মা উত্তর দিলেন, "তুইত কোনদিন শপিঙে জাস না তাই তোকে বলা বৃথা। যাই হক, পরীর জন্য কিছু কেনা হয়েছে আর পরীও তোর জন্য কিছু কিনেছে, নিচে এসে একবার দেখিস। হয়ত তোর ভাল লাগবে।"

মা নিচে যাবার আগে জিজ্ঞেস করলেন, "রাতে কি আবার ধুতি পাঞ্জাবী পরবি না স্যুট?"

পরী ওর কানে কানে বলল, "রেমন্ডের সুট টা পর, আমি তোমার জন্য একটা টাই কিনে এনেছি।"

মা চলে যাবার পরেই, পরী ওর মুখখানি আঁজলা করে নিয়ে বলল, "সরি বাবা, আমি কি বুঝেছিলাম যে তোমার এত কষ্ট হবে?" কপালে চুমু খেয়ে বলল, "বাচ্চা ছেলের মতন কাঁদে। শক্ত কবে হবে? তুমি এইরকম হলে আমার কি হবে? একবারও ভেবে দেখেছ?" হাত ধরে নিচে টেনে নিয়ে গেল পরী, "একদম সেই ছোট্ট বাচ্চার মতন, এতদিনে একদম বড় হওনি। চোখ মোছও আর তাড়াতাড়ি জামা কাপড় পরে নাও। খুব বড় সারপ্রাইস দেব তোমাকে।"

অভি ওর দেওয়া সেই সিল্কের রুমাল টা বের করে চোখ মুছে নিয়ে জিজ্ঞেস করল, "সারপ্রাইস টা কি?"

পরী, "বাঃ রে, বলে দিলে কি আর সারপ্রাইস থাকে! বলব না যাও, যখন দেব তখন দেখে নিও।"

নিচে নেমে দেখল যে বাড়ির সবাই সাজতে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে। মায়ের ঘরে দু’জনে ঢুকে গেল। ওর মা আগে থেকেই বিছানার ওপরে ধুসর রঙের সুট টা বের করে রেখেছিল, আর তার ওপরে একটা নীল স্ট্রাইপ দেওয়া টাই রাখা। নীল রঙ অভির পছন্দের রঙ, টাই দেখে খুব পছন্দ হল অভির। মনে হল একবার পরীকে জড়িয়ে ধরে ওর টোপাটোপা গালে চুমু খায়, কিন্তু ঠিক সেই সময়ে মা ঘরে এসে পরাতে ওর আর চুমু খাওয়া হল না। মা পরীকে বললেন মৈথিলীর ঘরে যেতে ওকে সাজাতে লোক এসেছে, তাঁর তদারকি করতে। ঘর থেকে বেড়িয়ে যাবার আগে পরী ওকে একটা চোরা চুমু ছুঁড়ে দিয়ে যায়, চোখের ভাষায় যেন বলে গেল, "আমার জন্য নিচে অপেক্ষা কোরও।"

সন্ধ্যে নেমে এসেছে, সানাই বাজতে শুরু করেছে। বউভাতের বাড়িতে সাজ সাজ রব, আলোয় আলোকিত বাড়ি। সুট পরে কিছুক্ষণের মধ্যে বেড়িয়ে পরে অভি। অনেক লোকের চোখ আবার ওর দিকে। সুব্রত কাছে এসে কানে কানে বলে, "গুরু আবার কি দিয়েছ।" সুব্রতকে খুব বেশ সুন্দর দেখাচ্ছিল ওর কালো পাঞ্জাবীতে।

অভি সুব্রতর কাধ চাপড়ে বলে, "মামা, আজ রাত তোমার রাত কিন্তু চুরনির ওপরে যেন বেশি চাপ দিও না। বেস্ট উইসেস ফর হানিমুন। আমি সত্যি ভাগ্যবান যে তোমার বিয়ে এটেন্ড করতে পেরেছি।"

সুব্রত, "না, আমি সত্যি ভাগ্যবান যে তোমরা আমার বিয়েতে এসেছ।"

অভি, "এই তিন দিনে, এখানে এসে অনেক কিছু ফিরে পেলাম আর অনেক কিছু নতুন করে পেলাম। হারিয়ে যাওয়া আমাদের ছেলেবেলা, আমার পোঁতা আম গাছ, পুকুর পাড় যেখানে আমি আর তুমি মাছ ধরতাম আর তারপরে সেই মাছ গুলো আবার জলে ছেড়ে দিতাম।"

সুব্রত, "কবি কবি ভাব, তুমি কবি না টেকনিকাল?"

ঠিক সেই সময়ে অরুনিমা অভির কাছে এসে বলল, "হুম, দারুন দেখাচ্ছে তোমাকে। অনেক মেয়ের মাথা ঘুরে যাবেত।"

ওর কথা শুনে সুব্রত হেসে ফেলল, অভিকে ওর সাথে যেতে বলল।

অরুনিমা, "তোমাকে খাওয়ার পরে কত খুজলাম কোথাও দেখতে পেলামনা।"

অভি, "কেন খুজছিলে আমাকে?"

অরুনিমা, "এমনি খুজছিলাম। কি করব আমার বয়সের কেউ ছিল না তাই খুব বোর ফিল করছিলাম।"

অভি জিজ্ঞেস করল, "হাটবে নাকি?"

অরুনিমা, "আপত্তি নেই।"

অভি, "ভিড় অনেক সময় বর বোরিং হয়ে যায় তাই না?"

দু’জনে উঠোনের দিকে হাঁটত শুরু করল। ওদেরকে একসাথে হাঁটতে দেখে অনেকের চোখ গেল ওদের দিকে। ইন্দ্রানি মাসির ওদের দিকে তাকিয়ে হেসে বুঝিয়ে দিল, "ভাল ভাল"

অরুনিমা, "তুমি বড় চুপচাপ প্রকৃতির ছেলে, তাই না?"

অভি, "হ্যাঁ তা বটে। ব্যাপারটা হচ্ছে ঠিক মতন লোক না পেলে ঠিক কথা বলতে ইচ্ছে করেনা।"

অরুনিমা, "ঠিক বলেছ, মনের মতন মানুষ না পেলে ঠিক কথা বলে আনন্দ হয় না।"

অভি, "তাঁর মানে আমি ত অনার্ড, তুমি আমার সাথে কথা বলছ।"

অভির কথার পরে দুজনেই হেসে ফেলল। কথা বার্তায় ওই জানতে পারল যে, অরুনিমার একটা ছোটো ভাই আছে, স্কুলে পড়ে। ওর বাবা সরকারি চাকুরিরত, রাইটার্স বিল্ডিঙে চাকরি করেন। গল্প করতে করতে ওরা অনেক দূর চলে এসেছিল, অভি পেছনে তাকিয়ে বলল যে ওদের এবারে ফেরা উচিত।

অরুনিমা, "আর একটু হাটলে হত না?"

কিছু দূর আরও এগিয়ে যেতেই অরুনিমা জিজ্ঞেস করল, "আমি তোমাকে একটা পারসনাল কথা জিজ্ঞেস করতে পারি?"

অভি, "হ্যাঁ জিজ্ঞেস করতে পার।"

অরুনিমা, "না মানে, তোমার নিশ্চয় কোন গার্লফ্রেন্ড নেই তাই না?"

অভি ঠিক এটাই ভয় পাচ্ছিল।

অভি মনের ভাব লুকিয়ে উত্তর দিল, "না মানে আমার কোন ফুল টাইম গার্লফ্রেন্ড নেই।"

অরুনিমা, "হুম তার মানে খালি ফ্লার্টিং করা হয়।"

অভি, "না না, আমার অত সময় নেই যে ফ্লা+টিং করব। আমার অনেক বন্ধু বান্ধবী আছে তবে বিশিষ্ট কোন বান্ধবী নেই আমার।"

ছোটো একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো অরুনিমা, মনে হল যেন বুকের মাঝে এতক্ষণ কিছু চেপে ধরে ছিল, অভির কথা শুনে সেই পাথরটা বুকের ওপর থেকে সরে গেল। অভি মনে মনে হাসতে থাকে, "পাগলি মেয়ে, আমি আমার ভালবাসা পেয়ে গেছি।"

দুজনেই চুপচাপ বাড়ির দিকে হাটা শুরু করল। বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছে অরুনিমা বলল, "আমরা দুজনেই কোলকাতায় থাকি, একবার দেখা করা যায় কি?"

মাথা নাড়লো অভি, যাবে কোনদিন ওর বাড়িতে। চলে যাবার আগে অভির হাতে একটা কাগজ গুঁজে দিয়ে ইশারা করল যেন ফোন করে। কাগজটা দেখে মাথার চুলে আঙ্গুল দিয়ে আঁচড়াল অভি, মনে মনে হেসে ফেলল, "কি যে হচ্ছে।"

পরী পেছন থেকে এসে ওর কাঁধে একটা টোকা দেয়, "কি ব্যাপার কি চলছে? কিছুর গন্ধ পাচ্ছি মনে হচ্ছে যেন?"

অভি পরীর পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে অবাক হয়ে গেল। পরীর পরনে একটি সুন্দর তুঁতে রঙের লেহেঙ্গা তার ওপরে রুপলি সুতোর ভারী কাজ, ফর্সা গায়ের রঙের সাথে বেশ মানিয়েছে ওর লেহেঙ্গার রঙ। চুল খোঁপা করে বাঁধা, কিছু জুঁই ফুল গোঁজা খোঁপায়। ললাটে একটি বড় তুঁতে রঙের টিপ, কানে লম্বা সোনার দুল, গলায় মায়ের দেওয়া সোনার হার। কবজিতে ছঞ্ছন করছে দু গাছা তুঁতে আর গাড় নীল রঙের কাঁচের চুরি। দু’গালের টোল দেখে মনে হল যেন এখুনি গালে চুমু খায়। কাচুলি আর কোমরের মাঝে অনাবৃত ছোটো গোল পেট আর তাঁর মাঝে সুগভীর নাভিদেশ। বড় বড় কালো চোখে অভির অবাক মুখের দিকে তাকিয়ে পরী।

একটু নেচে ঘুরে অভিকে জিজ্ঞেস করল, "কেমন দেখাচ্ছে আমাকে?"

অভি মন্ত্রমুগ্ধের মতন পরীর দিকে তাকিয়ে থাকে, "আমি যে এখন হার্ট ফেল করব সোনা।"

ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল পরী, "অরুনিমার চেয়েও সুন্দরী?"

"হুম, কোথাও কিছু জ্বলছে মনে হচ্ছে?" গালে আলতো করে টোকা মেরে বলে অভি।

একটা ধাক্কা মেরে উত্তর দেয় পরী, "আমি ছাড়া কারুর দিকে তাকালে আমি কিন্তু চোখ গেলে দেব, বুঝলে।"

তর্জনীর ডগায় ছোট্ট চুমু খেয়ে বলে, "পাগল নাকি।"

পরী, "এই কি করছ, ছোটো মা আসছে, দেখতে পাবে যে।"

অভি, "সরি।"

মা কাছেই ছিলেন, পরীকে দেখে ডাক দিলেন। পরী দৌড়ে মায়ের কাছে চলে গেল। মা ওকে জড়িয়ে ধরে ওর কপালে চুমু খেল। অভি দূর থেকে মা আর পরীকে দেখতে থাকে। ইন্দ্রানি মাসি ওর কাছে এসে বলে, "আজ পরীকে শান্ত করতে মুশকিল হবে।"

অভি ইন্দ্রানি মাসিকে একটা ঘরের মধ্যে নিয়ে গিয়ে ওর পায়ের কাছে বসে পরে। ইন্দ্রানি মাসির হাত দুটো হাতের মধ্যে নিয়ে বলে, "তুমি ত ওর বড়দি, তোমার চোখে যদি জল আসে তাহলে ওকে কি করে আটকাবে তুমি?"

ফুঁপিয়ে ওঠে ইন্দ্রানি মাসি, "এত বছর শুধু ওকে দোষ দিয়ে গেছি আমরা।" এই বলে কাঁদতে শুরু করে ইন্দ্রানি মাসি।

অভি ইন্দ্রানি মাসির চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলল, "চোখ মোছো মাসি। আজ না তোমার ভাইয়ের বউভাত, এই রকম আনন্দের দিনে কেউ কাঁদে নাকি?"

ঠিক সেই সময়ে মেঘনা ঘরে ঢুকে ওদের কে দেখে বলল, "সারা বাড়িতে হচ্ছে টাকি, এক জায়গায় পরী, মা আর উলুপিদি কাঁদছে আর একদিকে তোমার। আমি ত পাগল হয়ে যাব।"

অভি ইন্দ্রানি মাসিকে শান্ত করে ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে। অনুরিমা এসে ওকে ডেকে নিয়ে যায় বলে যে ওর জামাইবাবু, সুব্রত ফটো তলার জন্য ওদের ডেকেছে। লোকেরা খেতে বসে গেছে, ধিরে ধিরে রাত গভীর হচ্ছে।

পরীর মুখে হাসি দেখে আসস্থ হল অভি, যাক কান্না কাটির পালা তাহলে শেষ। ওকে দেখতে পেয়ে ডাক দিল পরী। দুই বান্ধবীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। দু’জনেরই বিয়ে হয়ে গেছে। অভি ওকে জিজ্ঞেস করল, "ঠিক আছো?" কোন উত্তর দিল না, শুধু একটু ম্লান হাসল।

অভি, "দেখি বাবা মা কোথায়, খেতে বসতে হবে।"

পরী, "এত তাড়াতাড়ি? আমার সাথে খেতে বসবে না?"

সুব্রত ওদের কে ফটো তুলতে ডেকে নিয়ে গেল।
Like Reply
#16
বিদায় চুম্বন


ফটো তোলার পরে পরী ওকে বলল, "একটু হাটবে আমার সাথে?"

পরী অভিকে নিয়ে বাড়ির পেছন দিকে চলে এল। দু’জনে হাত ধরাধরি করে আম বাগানের ভেতর দিয়ে হাঁটতে শুরু করে। গভীর কালো অন্ধকার ওদের চারপাশে। পরী অভির বাঁ হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে, বাঁকা চাঁদের আলোয়, পরীকে দেখে মনে হল যেন স্বর্গের অপ্সরা মাটিতে নেমে এসেছে।

অনেকক্ষণ চুপ করে থাকার পরে পরী জিজ্ঞেস করল, "আজকেই তোমাকে চলে যেতে হবে?"

মাথা নাড়ায় অভি, "হ্যাঁ, সোনা।"

পরী, "আর একটা দিন থেকে গেলে হত না?"

অভি, "একটা দিন থাকলেও কোন পরিবর্তন হত না। কালকেও তুমি এই কথাই বলতে।"

রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে পরী ওর দিকে ঘুরে ওর গলা জড়িয়ে ধরে। বুকের ওপরে মাথা রেখে চুপ করে দাঁড়িয়ে পরে। অভি ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওর মাথার ঘ্রান বুকে টেনে নেয়।

পরী, "এতদিন কাছে ছিলে না, অনেক কিছু জানতাম না, ভাল ছিলাম আমি। দু’দিনে এসে আমার জীবন টাকে..."

কথা শেষ করতে পারলনা পরী, অভি ওর মুখখানি আঁজলা করে নিয়ে ঠোঁটের ওপরে ঠোঁট চেপে ধরল। দু’জনের কেউই সেই চুম্বন টিকে খন্ডন করতে নারাজ। বেশ কিছুক্ষণ পরে পরী ওর বড় বড় চোখ খুলে তাকাল অভির মুখের দিকে। অভি ওর ঠোঁট ছেড়ে প্রথমে ওর চোখের পাতায় আলতো করে চুমু খেল, তারপরে ধিরে ধিরে ওর গালে, কানের লতিতে চুমু খেল। দু’হাতে ওর উন্মুক্ত পিঠের ওপরে বিচরন করছে, শিরদাঁড়ার ওপরে নখ দিয়ে আঁচর কেটে দিল অভি। নখের আঁচরে কেঁপে ওঠে পরী। নিঃশ্বাস ঘনিভুত হতে থাকে। কাধ ছেড়ে পরীর হাত অভির মাথার ওপরে, দশ আঙ্গুল দিয়ে আঁচরে দেয় অভির চুল। গলায়, চিবুকে শত সহস্র চুম্বনের বন্যা বইয়ে দেয় পরী। পীনোন্নত বক্ষ অভির প্রশস্ত বুকের ওপরে পিষ্ট হয়ে যায়। ওর কোমলতা অনুভব করে অভি, সারা শরীরে বিদ্যুৎ তরঙ্গ প্রবাহিত হতে থাকে।

দুষ্টু অভি মুখ নামিয়ে আনে পরীর বুকের ওপরে। বুকের ওপরের অনাবৃত অংশে চুম্বনে ভরিয়ে দেয়। পরীর স্বাসে প্রেমের আগুন ঝরতে থাকে, শক্ত করে অভির মাথা চেপে ধরে বুকের ওপরে। দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বুকে ভরে টেনে নেয় পরীর শরীরে মধুর সুবাস। পরীর পেছন দিকে মাথা হেলিয়ে দেয়, বুকের মাঝে যেন বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে, উন্নত বক্ষ যুগল থেকে থেকে ওঠা নামা করছে। অভির নচ্ছার হাত পরীর পুষ্ট নিতম্বের কোমল বলয়ের ওপরে, পিষ্ট করতে থাকে। পরী চোখ বন্ধ করে অস্ফুট শীৎকার করে ওঠে। ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পরে অভি। পাতলা কোমর জড়িয়ে ধরে, সুগভীর নাভির ওপরে আলতো করে চুমু খায়। উষ্ণ ত্বকের ওপরে অভির ভেজা ঠোঁটের পরশ পেয়ে কেঁপে ওঠে পরী। অভি তাও থামেনা, ওর পেটের ওপরে নাভির চারদিকে সহস্র চুম্বনে ভরিয়ে তোলে।

পরী প্রেমে ককিয়ে ওঠে, "আমি পাগল হয়ে যাব অভি। আর ওইরকম ভাবে চুমু খেও না সোনা।" অভি ওর কোথায় কোন কান দেয়না। ঠোঁট নাভির নিচে নামতে চায়, পরী বুঝতে পেরে ভীষণ ভাবে কেঁপে ওঠে। আরও জোরে শীৎকার করে ওঠে, "না...... সোনা..."

দু’পা জবাব দিয়ে দেয়, ধপ করে অভির কোলে বসে পরে পরী। বুকের ওপরে মাথা গুঁজে বলে, "আর পারছিনা সোনা, আর পাগল করোনা প্লিস..."

দু’জনে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ বসে রইল আম বাগানের ভেতরে। চারদিকে ঝিঝি পকার আওয়াজ আর রাতের ঘন অন্ধকার। আকাশে বাঁকা চাঁদ যেন ওদের দেখে মিষ্টি মিষ্টি হাসছে। এই প্রথম পরীর মনে হল যে নিস্তব্ধতাও কত মধুর প্রেমময় হতে পারে।

কতক্ষণ ওরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে বসেছিল জানা নেই, পরী অভিকে বলল, "আমাদের হয়ত কেউ খুঁজতে পারে এবারে বাড়ি যেতে হয়।"

অভি, "হুম... কিন্তু আর একটি চুমু..."

পরী, "না একদম দুষ্টুমি নয়, তুমি আমাকে পাগল করে ছেড়ে দিয়েছিলে।"

হাতে হাত রেখে বাড়ির দিকে রওনা দিল দুজনে। পেছন দরজা দিয়ে চুপচুপ বাড়ি ঢুকে পরী আগে দেখে নিল কেউ আছে কিনা, কাউকে না দেখতে পেয়ে অভিকে ভেতরে আসতে বলল। তারপরে ওর দিকে চোখ টিপে পরী ওর বান্ধবীদের কাছে চলে গেল।
[+] 1 user Likes sorbobhuk's post
Like Reply
#17
অশ্রুভরা বিদায়

সময় খুব তাড়াতাড়ি এগিয়ে চলেছে। বাবা অভির কাছে এসে খেতে ডেকে নিয়ে গেলেন। দিদা ওদের জন্য আলাদা করে খাবার ঘরে খাবারের ব্যাবস্থা করেছিলেন। ওদের খাবার সময়ে সবাই ওদের চারপাশে দাঁড়িয়ে ছিল। ইন্দ্রানি মাসি এসে মাকে একবার অনুরধ করল আর এক রাত কাটিয়ে যেতে। মা জানালেন যে কাল মায়ের স্কুল আছে, বাবাকে অফিস যেতে হবে।

খাবার পরে দিদা মাকে ডেকে নিয়ে গেল ঘরের মধ্যে। অভি বুঝতে পারল যে কান্নার পালা শুরু। বাবা ওকে ডেকে নিয়ে গেল বারান্দার দিকে।

বাবা জিজ্ঞেস করলেন, "বিয়ে কেমন কাটল?"

অভি মাথা নাড়ল শুধু।

বাবা, "তুই ওপরের রুমে শিফট হয়ে যাস কাল থেকে, পরী আমাদের পাশের রুমে থাকবে।"

অভি আবার মাথা নাড়ল, "ঠিক আছে।"

ধিরে ধিরে রাত বাড়ছে, আত্মীয় সজ্জন অনেকে চলে গেছেন। বাবা জানালেন যে উঠানে ওদের জন্য গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। ঘড়ির দিকে তাকালেন বাবা, রাত প্রায় এগারোটা বাজে। ওকে বললেন ভেতর থেকে ওদের মালপত্র নিয়ে এসে গাড়িতে রাখতে। মাথা নিচু করে পায়ের দিকে তাকাল অভি, পরীকে ছেড়ে যেতে হবে এবারে ভেবে বুকের ভেতরটা চিনচিন করে উঠল। কিছু পরে ভেতর দিকে পা বাড়াল।

খাবার ঘরে দিদা মায়ের হাত দুটি ধরে বসে আছে, দু’জনার চোখে জল। ইন্দ্রানি মাসি আর মেঘনা পাশে দাঁড়িয়ে, ওদের চোখেও জল। সুব্রত ওদের মালপত্র কাজের লোককে দিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে দিল। মৈথিলী চুপ করে দিদার পাশে দাঁড়িয়ে দিদার পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। এর মাঝে পরীর কোথাও দেখা নেই। এমন সময়ে চন্দ্রানি এসে অভিকে জানাল যে পরী ওপরের রুমে নিজেকে বন্ধ করে দিয়েছে, দরজা খুলছে না। দিদা ওর কথা শুনে আবার মাকে থেকে যেতে বলল।

মা বললেন, "আজ না হয় কাল আমাকে যেতে তো হবেই। কাল গেলেও তুমি কাঁদবে ত আজ কেন নয়।"

মাকে চন্দ্রানি বলল যে, পরী দরজা খুলছে না। মা ইন্দ্রানি মাসি কে নিয়ে দৌড়ে গেল ওপরে। সাথে সাথে সুব্রত আর অভিও দৌড়ে গেল। মা দরজায় টোকা দিয়ে পরীকে দরজা খুলতে বললেন, কিন্তু ভেতর থেকে কোন সারা শব্দ নেই।

মা আবার ডাক দিলেন, "পরী, সোনা মা আমার দরজা খোল।"

তাও দরজা খোলে না পরী। দু’জনেই ভয়ে অভি আর সুব্রতর দিকে তাকাল।

ওদিকে দিদা এসে গেছেন, দিদাও দরজায় ধাক্কা দিয়ে পরীকে দরজা খুলতে বলে, কিন্তু ভেতর থেকে কোন সারা না পেয়ে সবাই উদ্ভিগ্ন হয়ে ওঠে।

দিদা কেঁদে অথেন, "পরী, দোহাই মা আমার, দরজা খোল।"

সুব্রত আর অভি একে ওপরের মুখ চাওয়াচায়ি করে। দরজার পেছনে পরী না কিছু অঘটন ঘটায়। সুব্রত দউর দিল ছাদের দিকে, পেছন পেছন অভি। অভি কে জিজ্ঞেস করল সুব্রত যে পাইপ বেয়ে নিচে নামতে পারবে কিনা। অভির মাথায় তখন রক্ত চরে গেছে, কিছু আর ভাবতে পারছে না। মাথা নেড়ে বলল ও সব কিছু করতে রাজি। পাইপ বেয়ে দু’জনে জানালার কার্নিশে নেমে গেল। জানাল দিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে যা দেখল তাতে অভির রক্ত জল হয়ে গেল। বিছানার ওপরে সংজ্ঞাহীন লুটিয়ে পরী।

অভি দৌড়ে গিয়ে পরীর মাথা কোলে তুলে নিল, পরী নড়ছে না। থমকে গেল অভি, বুকের কাছে কান নিয়ে এসে দেখল যে বুকটা ধুকপুক করছে। অভি হাতের কাছে একটা গ্লাসে জল ছিল, সেটা পরীর মুখের ওপরে ছিটিয়ে দিল। সুব্রত তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দিল। মা দিদা সবাই ঘরের মধ্যে ঢুকে পরলেন। দু’জনের মধ্যে কারুর কান্না আর থামে না।

কিছু পরে পরী চোখ খুলে চারপাশে তাকায়। ওকে ঘিরে সবাই দাঁড়িয়ে। মা ওকে কোলে নিয়ে চোখের বাঁধ ভেঙ্গে দিলেন।

মা, "পাগলি মেয়ে, এইরকম কেউ করে। কোনদিন আমার সামনে দরজা বন্ধ করবি না।"

মাকে জড়িয়ে ভেঙ্গে পড়ল পরী, "প্লিস যেও না..."

মা ওর মুখ আঁজলা করে নিয়ে সান্তনা দিলেন, "তুই আমার সোনা মা না? বোকা মেয়ের মতন কেউ এই রকম করে কাঁদে নাকি? একটু হাস মা, আজ আমাকে ছেড়ে দে।"

কান্না কাটির পালা আরেক প্রস্থ শুরু হবে দেখে অভি আর সুব্রত ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়। নিচে নেমে দেখে যে মৈথিলী আর অরুনিমা বসে আছে। কিছু পরে মায়ের সাথে পরী নিচে নেমে আসে। পরী তখন মায়ের গলা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

অভি সুব্রত আর মৈথিলী কে জড়িয়ে ধরে বলল, "মামা চুর্নি কে দেখ। আর বেস্ট উইসেস ফর হানিমুন। পরে গল্প শুনব।"

মায়ের কান্না দেখে মনে হল যেন কেউ অনার বুকের একটুকরো কেটে রেখে দিয়েছে। বাবা মাকে ধরে গাড়িতে উঠে গেলেন। অভি ইন্দ্রানি মাসি কে প্রনাম করতে গেল, ইন্দ্রানি মাসি ওকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠে বলল, "ভাল থাকিস।"

অভি একবার পরীর দিকে তাকাল, ওর চোখ দুটি লালা হয়ে গেছে, মৈথিলী ওকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে। অভি বুক ভরা শূন্যতায় একবার সবার দিকে তাকিয়ে গাড়িতে উঠে গেল।

গাড়ি ছেড়ে দিল। ঠাণ্ডার রাত কেটে গাড়ি এগিয়ে চলল। পেছনের সিটে মা চুপ করে বাবার হাত ধরে বসে। অভি চুপ করে সামনের সিটে বসে। কিছু পরে চোখ বন্ধ করে নিল অভি। বন্ধ চোখের সামনে পরীর অশ্রুভরা লাল দু’নয়ন ভেসে উঠল। ওই দু’চোখ যেন ওকে বলছে, "আমি আজ থেকে প্রত্যেক মুহূর্তে তোমার কথা মনে করব।"

কাঁদতে পারল না অভি।
Like Reply
#18
দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ হিম-আঁচলের ছায়ায়

অদৃশ্য চিঠি

দিন চলে যায়, সবাই নিজের নিজের কাজে ব্যাস্ত হয়ে পরে। অভির মন থেকে পরীর কথা মুছে যায় না, কলেজে, বাড়িতে সবসময়ে ওর শুধু পরীর কথা মনে পরে। মা জানালেন যে পরী বাসন্তি পুজোর পরে, মানে এপ্রিল মাসের শেষের দিকে বাড়ি আসবে। এর মধ্যে অভি ঘর বদলে নিয়েছে, ছাদের ঘরে ওর বর্তমান বাসস্থান। নিচের ঘর ছেড়ে দিয়েছে পরীর জন্য। মা পরীর ঘরটাকে সাজাতে ব্যাস্ত, অনেকদিন পরে হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে বুকে পাবে। অভির কোন বোন নেই, তাই পরীকে দিয়ে মা সেই কন্যের সাধ মিটিয়ে নিতে চায়।

মা বাবা দু’জনেই অভির ওপরে বেশ কড়া। হয়ত বা মা একটি মেয়ে চেয়েছিলেন কিন্তু তার পরিবর্তে ভগবান ওদেরকে একটি ছেলে জন্ম দিয়েছে। খাবার টেবিলেও মায়ের মুখে পরীর কথা। মাঝে মাঝে মায়ের পরীর প্রতি অতিরিক্ত ভালবাসা দেখে অভির মনে জ্বালা ধরে যেত কিন্তু সেই জ্বালা মিটে যেত যখন ভাবত যে কিছু দিন পরে পরী ওর কাছে থাকবে।

অনেক দিন দেখা হয়নি পরীর সাথে, গ্রামের বাড়িতে কোন টেলিফোন নেই যে পরীর সাথে কথা বলবে। মাঝে মাঝে অন্ধকার রাতে যখন পরীর কথা মনে পড়ত তখন ও পরীর দেওয়া সিল্কের রুমাল টা বের করে নাকের সামনে ধরত, চেষ্টা করত পরীর গায়ের গন্ধ শোঁকার। মুখের ওপরে রুমাল বুলিয়ে নিয়ে অনুভব করত পরীর হাতের মিষ্টি ছোঁয়া।

একদিন বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে মা ওকে জিজ্ঞেস করেন যে দিদার বাড়িতে বিয়ের সময়ে কিছু ছেড়ে এসেছে কিনা। মাথা নাড়াল অভি, ওর মনে নেই কিছু ছেড়ে এসেছে কিনা। মা ওর হাতে একটা জামা ধরিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করেন যে এটা কি ওর জামা নাকি। জামা দেখে চিনতে পারে অভি। মা জানালেন যে, পরী অনার সাথে দেখা করতে স্কুলে এসেছিল আর এই জামাটা আর একটা খাম মায়ের হাতে দিয়েছিল। মা জানালেন যে খামটা খালি।

রাতের বেলা অভি জামাটা পরে নিল এই ভেবে যে পরীর হাতের ছোঁয়া আছে ওর জামার ওপরে। হাতে নিয়ে খাম’টা দেখল অভি, পুরানো ভারতীয় ডাকের হলদে রঙের খাম, ভেতর টা খালি।

পরের সারাদিন মাথার মধ্যে খালি খামের ব্যাপার চিন্তা করে গেল, কি পাঠাতে পারে খালি খামে। রাতের বেলা আবার খাম খানি হাতে নিয়ে এদিক ওদিক করে দেখতে চেষ্টা করল, যে খালি খাম ওকে কি বলতে চাইছে। কিন্তু কোন উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না অভি। নাকের কাছে ধরল খাম খানি, একটু যেন জুঁই ফুলের গন্ধ মাখা। হ্যাঁ, এটা পরীর গন্ধ কিন্তু তাঁর সাথে আর একটা গন্ধ নাকে এল অভির, লেবুর গন্ধ।

মাথায় বিজলি খেলে গেল অভির, ওর হাতে পরীর লেখা এক অদৃশ্য চিঠি। অভি খাম খানি ঠোঁটে ছোঁয়াল, পরী সত্যি অনেক বুদ্ধিমতী মেয়ে, এমনি এমনি কি আর ফিসিক্স নিয়ে পড়েছে। ওর ত স্পাই হওয়া উচিত, টিচার নয়। সযত্নে খামের চারপাশ খুলে ফেলল, তারপরে একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে খাম খানি মোমবাতির আলোর সামনে ধরল। চিঠির লেখা আস্তে আস্তে ফুটে উঠল,

"আমার বুকের ধুকপুক...
ছোট্ট সোনা রাজকুমার।
তোমার শাল গায়ে দিলে এখন আমি তোমাকে আমার চারপাশে খুঁজে পাই। শীতের রাত গুলো বড় নিষ্ঠুর আর খুব লম্বা মনে হয়। তোমার কথা চিন্তা করতে করতে রাতে ঘুম আসেনা চোখে। তোমার সেই প্রথম চুম্বন টি এখন আমার কপালে লেগে আছে। একদিন এলে আমার সাজান বাগানে আর আমাকে উপড়ে দিয়ে তছনছ করে চলে গেলে।
আমি এমন একটা জীবন চাই যেখানে শুধু তুমি থাকবে আমার পাশে, আর কেউ না।
আমি ভবিষ্যৎ দেখতে চাইনা, শুধু তোমার পাশে থেকে একটু বাঁচতে চাই। জীবনের প্রতি মুহূর্ত তোমার পাশে, তোমার আলিঙ্গনে বদ্ধ হয়ে কাটিয়ে দিতে চাই আমি। আমার অতীতকে ভুলে, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করে শুধু বর্তমানে তোমাকে নিয়ে বাঁচতে চাই।
আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করে থাকব, কাল বাদে পরশু, দুপুর এগারটায় আমার সাথে বারাসাত রেল স্টেসানে দেখা কর।
গুড বাই হানি।
ফর এভার ইওরস, তোমার বুকের পাঁজর, পরী।"

কাল বাদে পরশু, মানে কালকে। অভি অধির ব্যাকুলতায় সারা রাত ঘুমাতে পারল না। অনেক দিন পরে পরীর সাথে দেখা হবে।

জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ, কোলকাতায় ঠাণ্ডা বেশ ভাল ভাবে পড়েছে। প্রাতরাসের টেবিলে চুপচাপ খেয়ে নিল অভি। মা ওকে জিজ্ঞেস করলেন যে পরীকে কিছু বলতে হবে কিনা, কেননা মা আজ দিদার সাথে দেখা করতে যাবেন। মায়ের কথা শুনে মাথায় বাজ পড়ল অভির। আজ যে পরী ওর সাথে দেখা করতে বারাসাত আসবে। মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিল যে কাউকে কিছু বলার নেই।

সময়ের বেশ কিছুক্ষণ আগেই অভি রেল স্টেসানে পৌঁছে গেছিল। অধির ব্যাকুলতায় দাঁড়িয়ে অভি, কখন ওর পরী আসে। থাকতে না পেরে শেষ পর্যন্ত প্লাটফরমের ওপরে পায়চারি শুরু করে দিল। বুকের মাঝে হৃদপিন্ডটি যেন দুমদুম করে কিল মারছে পাঁজরের ওপরে। বারে বারে শুধু ঘড়ি দেখে, সময় যেন আর কাটেনা। মনে মনে একবার ভাবে, পরী আসবে’ত?

বেশ কিছুক্ষণ পরে লক্ষ্য করল যে, পরী ওর দিকে দৌড়ে আসছে। ওকে দেখতে পেয়ে যেন চাতকের প্রানে জল চলে এল।

পরীর পরনে আকাশী নীল রঙের শাড়ি আর একটা লম্বা জ্যাকেট গায়ে। চুলের কিছু অংশ গালের ওপরে নাচছে। মাথা নাড়ল অভি, কি মেয়ে সবসময়ে শুধু শাড়ি পরে থাকে।

দৌড়ে আসার ফলে পরী হাঁপাচ্ছিল, তাঁর ফলে ওর উন্নত বখদ্বয় বারে বারে ফুলে উঠছিল। ওকে দেখে শান্ত হতে বলে অভি, "কি হল দউরাচ্ছিলে কেন?"

পরী, "সরি বাবা, একটু দেরি হয়ে গেল।"

পরী ওর হাত জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করল, "ছোটো মা কেমন আছে?"

অভি মাথা নেড়ে জানাল যে ওর ছোটো মা ভালোই আছেন। আজকে ওর সাথে দেখা করার কথা।

পরী, "যাঃ ছোটমা আজকে আমার বাড়ি যাবে? আমার সাথে ত দেখা হবে না।"

অভি, "কি করে হবে? আচ্ছা কি বলে বাড়ি থেকে এসেছ?"

পরী, "আমি বলেছি যে আমি এক বান্ধবীর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।" অভির দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল পরী, "আমার সাধের বান্ধবী... হে হে..."

অভি ওকে জানাল যে মা ওর জন্য ঘর ঠিক করে রেখেছে। মা খুব খুশি যে পরী অনার সাথে থাকতে আসছে।

পরী অভির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, "যাক বাবা তুমি তাহলে শেষ পর্যন্ত আমার চিঠিটা পেয়েছ। আমি ত তোমার সাথে দেখা করার জন্য মরে যাচ্ছিলাম। তুমি সত্যি অনেক ব্রিলিয়ান্ট, সোনা।"

অভি, "আমি না তুমি? চিঠি টা কে লিখেছে? আমি ত স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি যে তুমি আমাকে এই রকম একটা চিঠি লিখবে। বাপরে তোমার ত টিচার নয় স্পাই হওয়া দরকার।"

পরী, "তাহলে বল তোমার হার্ট কত ইন্টেলিজেন্ট।"

পরীর হাসি মুখ দেখে অভির মনে হল যেন এখুনি ওকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায়, কিন্তু দিনের আলোয় আর রেল স্টেসানে এই রকম ব্যাবহার বাঞ্ছনীয় নয়।

অভি, "কোথাও যেতে চাও?"

পরী, "হ্যাঁ, চলো না একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসি। তোমার সাথে অনেক কথা বলার আছে।"

অভি, "হুম, ইন্টারেস্টিং, কি আবার ভুত মাথায় চাপালে?"

রেস্টুরেন্টে ঢুকে একটা কনার টেবিলে বসে পড়ল ওরা। অভি জানাল ওর কাছে বেশি পয়সা নেই। পরী বলল, ও থাকতে অভি যেন পয়সার চিন্তা না করে, যখন সময় আসবে তখন চিন্তা কোরও, তাহলেই হবে।

পরী, "এই তোমার মনে আছে, বউভাতের দিনে আমার দুই বান্ধবীর সাথে আলাপ করিয়ে দিয়েছিলাম?"

অভি মাথা নাড়ায়, "হ্যাঁ মনে আছে।"

পরী, "ওরা জানুয়ারির লাস্ট উইকে মানালি যাচ্ছে পুর এক সপ্তাহের জন্য, আমিও যাবো ওদের সাথে।"

অভি, "ত কি বলতে চাও?"

পরী, "তোমাকেও আমার সাথে যেতে হবে।"

অভি, "ঠিক আছে, আমি বাবা মা কে কিছু করে ম্যানেজ করে নেব। আমার যেতে বিশেষ অসুবিধা হবে না, কিন্তু তোমার বান্ধবীরা জানে যে আমি তোমার দিদির ছেলে, আর একবার তোমার ছোটো মা বা দিদা জানতে পারলে আমাদের অবস্থা কি হবে সেটার ধারনা আছে কি?"

"না না সেটা নয়। আমি শুধু তোমার সাথে যেতে চাই, যেখানে শুধু তুমি আর আমি থাকব।" কাতর চাহনিতে তাকাল অভির দিকে, "প্লিস সোনা না কোরও না।"

মাথা চুলকে অভি বলল, "ঠিক আছে, হাওড়া স্টেসান থেকে আমি তোমাকে তুলে নেব তারপরে দেখা যাবে কোথায় যেতে পারি।"

পরী, "না গো, সে গুড়ে বালি। সুব্রতদা আমাদের সবার টিকিট কেটেছে। সেই জন্য আমরা সবাই হাওড়া কাল্কা মেলে চেপে একদম কাল্কা যাচ্ছি।"

অভি, "ওকে দেখি হিমাচলে কোন কোন জায়গায় যাওয়া যায়।"

পরী, "আমি জায়গার কথা জানিনা, সেটা তোমার ব্যাপার। আমি শুধু তোমার পাশে থাকতে চাই, ব্যাস।"

কিছু পরে খাবার চলে আসে, পরী ওর মুখের মধ্যে চামচ দিয়ে খাবা ঢুকিয়ে দেয়।

অভি, "আমি কি এখন বাচ্চা ছেলে নাকি?"

পরী, "চুপ একদম, এখন তুমি আমার কাছে বাচ্চা। সেই ছোট্ট রাজকুমার আমার।"

অভি দুহাত জোড়া করে বলে, "হয়েছে মা জননি।"

পরী, "এবারে বল কি করে ট্রিপ প্লান করবে?"

অভি, "দাড়াও কিছুক্ষণ ভাবতেত দেবে নাকি? এই বললে এই যেন হয়ে গেল।"

পরী, "ঠিক আছে ঠিক আছে, ভাব ভাব..."

অভি, "আমি তোমার জন্য কাল্কা স্টেসানে দাঁড়িয়ে থাকব, তারপরে কি হবে সেটা দেখা যাবে। তুমি কি করে তোমার বান্ধবীদের টুপি পরাবে সেটা তুমি ভেবে নিও। বাকি প্লান, এখন আমার মাথায় কোন প্লান নেই।"

পরী, "উফফফফ... ভেবেই আমার সারা গায়ে কাটা দিচ্ছে। আমি আর তুমি, একসাথে এক অজানা অচেনা জায়গায়।"

অভি ওর চিবুকে আঙ্গুল দিয়ে নাড়িয়ে বলে, "সোনা, তোমার বান্ধবীরা জানে কি যে তুমি প্রেমে পরেছ?"

পরী, "হ্যাঁ ওরা একটু একটু ধরে ফেলেছে, কিন্তু কেউ জানে না যে ছেলেটা কে আর তুমি ওদের সামনে এস না যেন। তোমাকে ওরা চেনে আর ছোটো মাকে ও চেনে। আমাদের একসাথে দেখে ফেললে কিন্তু... আমি যদি বলি যে আমি কাল্কা থেকে অন্য দিকে যাব, তাহলে ওরা জানতে চাইবে আমি কোথায় যাচ্ছি আর কার সাথে যাচ্ছি। সেই সব ভেবে চিন্তে কাজ কোরো কিন্তু।"

অভি ওর কাঁধে আলতো করে ধাক্কা মেরে জিজ্ঞেস করল, "তোমার মাথায় কি কিছু আসছে?"

পরী, "আমি তোমাকে রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছি, এবারে তুমি কি করে আমাকে নিয়ে যাবে সে চিন্তা তোমার।"

অভি পরীকে বলল যে সেই সময়ে হিমাচল প্রদেশে অনেক ঠাণ্ডা পড়বে, ও যেন ভাল সীতের জামাকাপড় নিয়ে বেড়াতে বের হয়। সবসময়ে যেন শাড়ি পরে না, শীতের দেশে শাড়ি চলেনা। পরী জানাল যে ওর কাছে ভাল জ্যাকেট আছে আর ও ত আর জিন্স পরে না তাই সালোয়ার নিয়ে যাবে।

নুডুলস খেতে খেতে অভি জিজ্ঞেস করল যে সুব্রতর হানিমুন কেমন কাটল। ওদের হানিমুন ভালোই কেটেছে, পরী আরও জানাল যে, ইন্দ্রানি মাসি ওকে বম্বে যেতে বলেছে। অভি জিজ্ঞেস করল যে পরী বম্বে যেতে চায় কিনা, তার উত্তরে পরী বলল সেটা পরের কথা, ভবিষ্যতে দেখা যাবে পরী বম্বে যাবে কিনা। ওর মাথায় এখন শুধু ছোটমা আর ও এম.এস.সি করতে চায় তারপরে ওর ছোটমা র মতন স্কুলে পড়াতে চায়। এইসব গল্প করতে করতে অনেক সময় চলে গেল।

পরী ঘড়ি দেখে বলল, "এবারে আমাকে যেতে হবে যে।"

অভি, "একটা গুডবাই কিস দেবে না?"

পরী, "না সোনা, আমি তোমাদের মতন শহুরে লোক নই যে দিনের আলতে রাস্তার মাঝে সবার সামনে তোমাকে কিস করব।" একটা দুষ্টু মিষ্টি হেসে বলল, "তোমাকে এই গ্রামের মেয়েকে নিয়ে থাকতে হবে।"

রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে ওরা বাস স্টান্ডে পৌঁছে গেল। বাসের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে ওরা।

অভি ওকে জিজ্ঞেস করল, "আমাকে বিশ্বাস কর?"

ওর প্রশ্ন শুনে চমকে গেল পরী, "হটাত এই রকম প্রশ্ন?"

অভি, "আমি বেড়াতে যাবার জন্য কিছু না কিছু ব্যাবস্থা করব, যাতে এই ট্রিপ টা সারা জীবন মনে থাকে।"

পরী ওর হাত জড়িয়ে বলে, "আমি জানি অভি। আমি তোমার জন্য কাল্কা স্টেসানে অপেক্ষা করে থাকব।"

ওর বাস এসে গেল। বাসে উঠে পড়ল পরী। জানালার পাশে সিট পেয়ে গেল। বাস ছেড়ে দেবার আগে, পরী তর্জনী টা ঠোঁটের কাছে এনে, একটা ছোটো চুমু খেয়ে অভির দিকে নাড়িয়ে দিল। বাস ছেড়ে দিল। বাস’টাকে যতক্ষণ দেখা গেল ততক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল অভি তারপরে উলটো দিকের বাসে চেপে বাড়ি ফিরে এল।
[+] 1 user Likes sorbobhuk's post
Like Reply
#19
অপরিজ্ঞাত যাত্রা (#01)

কিছুদিন পরে অভি দেখল যে ওর চোখে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। চোখের ডাক্তার দেখিয়ে চশমা নিল অভি। ওর চোখে চশমা দেখে মায়ের চিন্তা একটু বেড়ে গেল, মৃদু বকুনিও শুনতে হল ওকে, নিজের যত্ন নেয় না খালি রাত জেগে টি.ভি দেখা। প্রথম প্রথম চশমা নিয়ে একটু অসুবিধা হত, পরে ঠিক হয়ে গেল|

অনেক কিছু পরিকল্পনা করতে হবে। বাবা মাকে কি বলে বের হবে তাঁর চিন্তা, কোথায় যাবে, কি করে যাবে তাঁর চিন্তা, পরীকে কি করে ওর বান্ধবীদের কবল থেকে বার করবে তাঁর চিন্তা। ওর এক সিনিয়ার বন্ধু, সুপ্রতিমদা দিল্লীতে থাকে। নয়ডার কোন এক বড় আই.টি কম্পানিতে চাকরি করে। একদিন ওকে ফোন করল অভি, জানাল যে ও হিমাচল ঘুরতে যেতে চায়, একটা গাড়ির ব্যাবস্তা করে দিতে হবে। সুপ্রতিমদা জানাল যে অভি ওর টাটা সাফারি নিয়ে ঘুরতে যেতে পারে, আরও জিজ্ঞেস করল যে কাকে নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছে, একা একা না কেউ স্পেসাল থাকবে সাথে। সুপ্রতিমদা জানতে চাইল যে বাবা মা জানেন কিনা ওর প্রেমের ব্যাপারে। অভি বলল যে, দেখা হলে সব জানাবে, কিন্তু গাড়ি ওর কাল্কাতে চাই। সুপ্রতিমদা বলল, যে অনেক দিন পরে ওদের দেখা হবে সুতরাং দিল্লীতে যদি ও দেখা না করে তাহলে ও গাড়ি দেবে না।

অভি হেসে ফেলল, "ঠিক আছে বাবা আমি তোর সাথে দিল্লীতে দেখা করব, কিন্তু গাড়ি ঠিক করে রাখিস।"

সুপ্রতিমদা, "তুই ব্যাটা ডুবে ডুবে কি জল খাচ্ছিস সেটা না যেনে আমি তোকে গাড়ি দেব না। গাড়ি পেতে হলে দিল্লীতে নাম তারপরে গাড়ি।"

অভি, "ঠিক আছে তাই হবে।"

বেশি দিন বাকি নেই, পরিকল্পনা টাকে বেশ ভাল করে ভাবতে হবে আবার। কাল্কা না এবারে দিল্লী যেতে হবে। একদিন রাতে খাবার টেবিলে অভি জানাল যে ও ঘুরতে যেতে চায়। একা একা আগেও ঘুরতে বেড়িয়েছে ও, তাই বাবা মার কাছ থেকে অনুমতি পেতে বিশেষ অসুবিধা হল না। বাবা জিজ্ঞেস করলেন যে কোথায় যেতে চায়। অভি জানাল যে ও হিমাচল প্রদেশে ঘুরতে যেতে চায়। বাবা প্রস্তাব দিলেন যে মানালি তে এখন বরফ পড়বে, ও যদি বরফ দেখতে চায় তাহলে মানালি, কুলু সিম্লা ঘুরতে যেতে পারে। অভি বলল যে ও এমন এক জায়গায় যেতে চায় যেখানে মানুষের যাতায়াত কম। বাবা খুব ঘুরেত ভালবাসেন। বাবা আই.এ.এ.আই এর(দমদম এয়ারপোরট অথরিটি) উচ্চ পদস্থ অফিসার। একদিন বাবা হিমাচলের ম্যাপ নিয়ে এলেন। ম্যাপ দেখে জানালেন যে অভি সাঙলা ভ্যালি তে চিতকুল নামে এক জায়গায় ঘুরতে যেতে পারে। ওখানে মানুষের আগমন খুব কম আর শীত কালে জায়গাটা একদম খালি থাকবে। অভি এই জায়গার নাম আগে কোনদিন শোনেনি, তাও যেতে রাজি হল এই ভেবে যে জায়গাটা একদম নিরিবিলি।

ব্যাগ ঘুছাতে শুরু করে দিল অভি, শীতের জামাকাপড় আর ঘুরতে যাবার সরঞ্জাম। মা প্রথমে একটু মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন, কিন্তু অভি অনাকে শান্তনা দিয়ে বলে, ও আগেও একা একা ঘুরতে গেছে তাই যেন চিন্তা না করে। এবারে চিন্তা হচ্ছে পরীকে কি করে কাল্কা স্টেসান থেকে ওর বান্ধবীদের কবল থেকে বের করা যায়। যাবার আগে আর দাড়ি কামালো না, গাল ভর্তি গোঁফ দাড়ি, চোখে চশমা, একদিন আয়নায় নিজেকে দেখে চিনতে পারল না অভি। ছদ্মবেশ টা বেশ ভাল লাগল অভির। মা ওকে দেখে রেগে গিয়ে দাড়ি কাটার জন্য বললেন।

চিতকুলে একা অভি আর পরী থাকবে, হয়ত আর কোন লোকজনের দেখা পাবে না। রাত একসাথে এক ঘরের মধ্যে কাটাবে, অভির মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেল। কামনার আগুনে পুড়ে অভি আর পরী শুধু মাত্র যে চুম্বনে বা আলঙ্গনে থেমে থাকবে না সেটা অনুধাবন করতে অসুবিধে হল না। অভি সেই মিলন রাতের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে নিল। যত দিন এগোয় অভির বুকের ধুকপুকানি বেড়ে চলে, পরীর সাথে একা একা ঘুরতে যাওয়ার কথা ভেবে, প্রথম মিলনের রাতের কথা ভেবে, কি করে প্রেমে ভালবাসায় পরীকে ভরিয়ে তুল্বে সেই কথা ভেবে রাত আর কাটতে চায় না।

যাবার আগেও মা বললেন ওকে দাড়ি কাটতে, মাকে বলল যে দিল্লী নেমে ও সুপ্রতিমদার বাড়িতে যাবে সেখানে স্নান খাওয়া দাওয়া সেরে তবে গাড়ি নিয়ে হিমাচলের যাত্রা করবে। যাবার আগে বাবা ওর হাতে একটা খাম দিয়ে বললেন যে ওতে হাজার আটেক টাকা আছে।

অবশেষে এল ঘুরতে যাবার দিন। দুপুরের ফ্লাইটে চেপে অভি দিল্লীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করল। রবিবার ভোররাতেই পরী কাল্কা স্টেসানে পৌঁছে যাবে। অভির বিশ্বাস যে পরী ওর জন্য অপেক্ষা করবে, কিন্তু পরী যে জানেনা যে অভি প্লেনে করে দিল্লী আসছে।

দিল্লী নেমে সুপ্রতিমদার সাথে দেখা হল। সুপ্রতিমদার বাড়ি চিত্তরঞ্জন পার্কে, ওর বাড়িতে দুপুরের খাবার খেয়ে একটু বিশ্রাম করে নিল। গল্পের ছলে সুপ্রতিমদা ওর ভালবাসার কথা জানতে চাইল। পরীর কথা বলল সুপ্রতিমদা কে কিন্তু অতি সতর্কতা করে অভি পরীর আর মায়ের সম্পর্ক এড়িয়ে গেল।

সুপ্রতিমদা অবিবাহিত, অভি ওকে জিজ্ঞেস করল, "তুই আর কত দিন একা একা থাকবি? এবারে বিয়ে টা ক্করে ফেল।"

সুপ্রতিমদা, "ধুর বাবা বিয়ে করে কি হবে, টাইম পাসের জন্য ত পাওয়া যায় রে।" দুজিনেই হেসে ফেলল।

সুপ্রতিমদা, "তাহলে চিতকুল যাচ্ছিস? কোথায় সেটা?"

অভি, "হিমাচলের এক কোনায়, সাঙলা ভ্যালি নামে এক ভ্যালিতে।"

সুপ্রতিমদা, "মানালি বা ডালহউসি যেতে পারতিস।"

অভি, "না পরীর বান্ধবীরা মানালি যাচ্ছে, পরীর ইচ্ছে আমরা এমন এক জায়গায় যাই যেখানে কেউ থাকবে না। অনেক ভেবে চিন্তে এই জায়গাটা বেছেছি।"

সুপ্রতিমদা বলল যে ওর ড্রাইভার বল্বিন্দার অভির সাথে যাবে। বেশ মিশুকে লোক, ভাল ড্রাইভার আর ঘুরতেও ভালবাসে। অভি বা পরীর কোন চিন্তা করার দরকার নেই। সুপ্রতিমদা আরও বলল যে দিল্লী থেকে কাল্কা প্রায় ঘন্টা আটেকের রাস্তা, বিকেল বিকেল বেড়িয়ে পড়তে পারলে মাঝ রাতের মধ্যে কাল্কা পৌঁছে যাবে। রাতের বেলা ড্রাইভ করাটা যদিও একটু মুশকিল হতে পারে, একে শীতকাল রাস্তায় রাতে কুয়াশা হতে পারে আর ট্রাক বা বাস ত আছেই। অভিকে জিজ্ঞেস করল যে পর্যাপ্ত গরমের পোশাক এনেছে কিনা।

বিকেল বেলায় অজানার পানে যাত্রা হল শুরু। দিল্লী থেকে গাড়ি ছাড়ল বিকেল ছটার মধ্যে, ঘন্টা দুয়েক পরেই গাড়ি দউরাতে শুরু করল হাইওয়ে ধরে। এক মিনিট পার হচ্ছে আর অভির ধুকপুকানি বেড়ে চলেছে, সকাল বেলায় দেখা হবে পরীর সাথে। অভি বল্বিন্দর কে বলল যে ও গাড়ি চালাবে। বল্বিন্দর ওকে সাবধান করে বলল যে রাতে কুয়াশা আর ট্রাক দেখে যেন গাড়ি চালায়। অভি বলল যে পাহাড়ে ও গাড়ি চালাতে পারবেনা কিন্তু সমতলে ওর হাত নিখুঁত।

সনেপত পেরনর পরে বল্বিন্দার ওকে গাড়ির স্টিয়ারিঙে বসতে দিল। অভি স্টিয়ারিঙে বসেই গাড়ি ছুটিয়ে দিল, কিছুক্ষণের মধ্যেই কাটা আশি ছাড়িয়ে একশো। বল্বিন্দার বলল যে ওর শুধু মাত্র দু’বোতল চাই তাহলেই ওর পারিশ্রমিক হয়ে যাবে। আম্বালাতে থেমে ওরা এলকোহল কিনে নেবে এই ঠিক হল।

বল্বিন্দার ওকে জিজ্ঞেস করল, "স্যারজি, ভাভি জি কি করেন?"

"ভাভিজি" কথাটা শুনে মনে মনে হেসে ওঠে অভি, "ভাভি জি এই সবে কলেজ থেকে পাশ করেছে।"

বল্বিন্দার, "ট্রেন কাল্কা স্টেসানে কখন পৌঁছাবে?"

অভি, "হাওড়া কাল্কা মেলে আসছে ভাভিজি। সম্ভবত সকাল চারটে কি সাড়ে চারটেতে পৌছবে।"

বল্বিন্দার, "কাল্কা মেল, তাহলে লেট করবে স্যারজি, চিন্তা নেই আপনি আস্তে চালান।"

অভির মন মানে না, যদি ট্রেন আগে এসে পৌঁছে গিয়ে থাকে, যদি পরী ট্রেন থেকে নেমে ওকে দেখতে না পায়, তাহলে কি করবে। অভি বল্বিন্দার কে বলে, "না আমি কোন ঝুঁকি নিতে চাই না। আমি আগেভাগে স্টেসানে পৌছাতে চাই, তাতে যদি আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তা আমি দাঁড়িয়ে থাকব।"

ঠাণ্ডার অন্ধকার রাত কেটে গাড়ি সো সো করে এগিয়ে চলে অচেনা গন্তব্য স্থলের পানে। জানে না অভি কোথায় যাচ্ছে, অভি কোনদিন হিমাচলে আগে আসেনি আর পরীও কোনদিন পাহাড় দেখেনি। সো সো করে ট্রাক বাস কে টপকে গাড়ি কুয়াশা আর অন্ধকার কেটে ঝড়ের গতিতে এগোচ্ছে। একটানা গাড়ি চালিয়ে অভির মাঝে একটু ঝিম ধরে গেল, রাত দশ’টা নাগাদ, মাঝখানে এক জায়গায় থেমে বল্বিন্দার আর অভি একটু চা খেয়ে নিল।

গাড়ি আবার চলতে শুরু করল। কুয়াশা দেখে বল্বিন্দার ওকে আস্তে চালাতে বলল। গাড়ি ধিরে ধিরে চালাচ্ছে অভি। বল্বিন্দার ওকে বলল যে আম্বালা পৌঁছে যেন ফ্লাই অভারে না চড়ে। ফ্লাইঅভারের নিচ দিয়ে সহরে ঢুকে ওরা দু বোতল এলকোহল কিনে নিল।

বল্বিন্দার, "স্যারজি, আমরা অনেক তাড়াতাড়ি পৌঁছে যাব’ত। আপনি পিঞ্জোর পর্যন্ত চালিয়ে নিয়ে যান তারপরে আমি চালাব খানে।"

অভি জানাল যে আগে কোনদিন এদিকে আসেনি তাই ও রাস্তা ঘাট চেনেনা। বল্বিন্দার বলল যে সিমলা পর্যন্ত রাস্তা ওর চেনা, তারপরে না হয় লোকজন কে জিজ্ঞেস করে রাস্তা যেনে নেওয়া যাবে। আম্বালা ছাড়িয়ে গাড়ি এন.এইচ.1 ছেড়ে এন.এইচ.22 ধরল। পিঞ্জোর ছাড়াতেই বল্বিন্দার গাড়ি চালাতে শুরু করল। পাসের সিটে বসে অভি চোখ বন্ধ করে মাথা পেছন দিকে হেলিয়ে দিয়ে একটু বিশ্রাম নিল।
Like Reply
#20
অপরিজ্ঞাত যাত্রা (#02)


বন্ধ চোখের সামনে শুধু মাত্র প্রেমিকার কাজল কালো আঁখি যুগল। বহুদিন পরে পরীকে বুকের কাছে পাবে, অধির হয়ে ওঠে অভি। ওর ঠোঁটে এখন লেগে আছে পরীর ঠোঁটের মিষ্টি ছোঁয়া, নাকে লেগে আছে পরীর গায়ের সুমিষ্ট সুবাস। যখনি হাসত পরী, ওর দু’গালে টোল পড়ত আর সেই টোল খাওয়া গাল দেখে পাগল হয়ে যেত অভি, বারে বারে মনে হত যেন ওই গালে চুমু খায়। মাঝে মাঝে যখন ওর চুলের গোছা গালের ওপরে খেলে বেড়াত তখন আঙ্গুল দিয়ে পরী ওই দুষ্টু চুলের গোছাটা কানের পাশে উঠিয়ে দিত। কত মিষ্টি দেখতে লাগত পরীকে। একবার নিজের কথা ভাবল অভি, গাল ভর্তি দাড়ি গোঁফ, চোখে চশমা, মাথায় কালো টুপি, চিনতে পারবেত পরী? হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয়ই চিনে নেবে। এত শত ভাবতে ভাবতে এক সময়ে ঘুমিয়ে পড়ল অভি।

বল্বিন্দার ওকে ধাক্কা মেরে জাগিয়ে তোলে, "স্যারজি স্যারজি, ট্রেন এসে গেছে।"

চোখ মুখ ডলে উঠে পড়ল অভি, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে যে, সকাল আটটা বাজে। মৃদু বকুনি দিল বল্বিন্দারকে, "কি যে কর বল্বিন্দার, আমাকে আগে জাগিয়ে দেবে ত।"

বল্বিন্দার, "স্যারজি আমরা ত রাত তিনটে নাগাদ কাল্কা পৌঁছে গেছিলাম। আপনি ঘুমাচ্ছেন দেখে আর আপনাকে উঠালাম না। স্টেসানে গিয়ে খোঁজ নিলাম যে ট্রেন লেট।"

অভি চোখে মুখে জল দিয়ে উঠে পড়ল। মাথায় কালো টুপি’টা পরে নিয়ে প্লাটফরমের দিকে পা বাড়াল। প্লাটফরমে ঢুকে লক্ষ্য করল যে পরী আর দু’জন মহিলার সাথে দাঁড়িয়ে। উৎসুক নয়নে অভিকে খুঁজছে, কোথায় অভি, বলেছিল যে কাল্কা স্টেসানে ওর জন্য অপেক্ষা করবে। একটা লম্বা সাদা জ্যাকেট গায়ে দিয়ে পরী, একটু মোটা লাগছে দেখেত। চোখমুখ দেখে মনে হল যেন সারা রাত ঘুমোয় নি, চোখ দুটি ফোলা ফোলা। অভি আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল পরীর দিকে। বুকের মাঝে ধুকপুকানি যেন শত গুন বেড়ে গেছে। ধরা পরে গেলে একদম কেলেঙ্কারি অবস্থা হয়ে যাবে। একটু পরে অভির দিকে তাকাল পরী, ওর চোখের দিকে তাকাতেই অভি ওর রুমাল টা বের করে ঠোঁটের সামনে ধরল। রুমাল দেখে পরীর মুখে যেন আর হাসি ধরে না। ধিরে ধিরে এগিয়ে এল অভির দিকে আর জড়িয়ে ধরল অভির হাত। ওর বান্ধবীরা আর তাদের স্বামিরা ওদের দিকে তাকাল।

অভি দাঁড়িয়ে থাকা দুই ভদ্রলোকের দিকে হাত বাড়িয়ে নিজের পরিচয় দিল, "আমি অর্জুন, বম্বে থাকেন ইন্দ্রানি বৌদি তাঁর দেওর। আমরা হয়ত আগে মিট করিনি তাই না।"

খুব গম্ভির আওয়াজে পরীকে জিজ্ঞেস করল, "তোমার জার্নি কেমন গেল?"

দুই বান্ধবী পরীর দিকে তাকিয়ে হতবাক, কে এই মানুষ, কেনই বা এর কথা এতদিন লুকিয়ে ছিল ওদের কাছ থেকে? পরী অভির দিকে চেয়ে মিটিমিটি হাসে, ও কি জানত কে কোন অর্জুন আসবে ওকে নিতে। পরী হাসি থামাতে না পেরে একটা জোরে চিমটি কেটে দিল অভির হাতের ওপরে।

কথা বলে জানা গেল বান্ধবীদের নাম আর পরিচয়। একজনের নাম কল্যানি তার স্বামী দিপঙ্কর আরেক জনের নাম রানী তাঁর স্বামির নাম রামানুজ। দিপঙ্কর আর রামানুজ গ্রামে পারিবারিক ব্যাবসা করেন। অভি ওদের কে আসস্থ করে বলল যে পরী ওর সাথে ভাল থাকবে।

কল্যানি, "শুচিস্মিতা কাল সারা রাত ঘুময়নি। ওর মনের ভেতরে যেন খই ফুটছিল কখন তোমার সাথে দেখা হবে। যাই হক যেখানে তোমারা জাচ্ছ সেই জায়গাটার নাম কি? খুব রোম্যান্টিক তোমারা একা একা এক অজানা অচেনা জায়গায় ঘুরতে যাচ্ছ। এক কাজ কর আমাদের সাথে ঘুরতে পার ত?"

রানী, "হ্যাঁ হ্যাঁ, আমাদের সাথে চল।"

পরী দেখল এযে বড় বিপদ, "না না, অর্জুন নিশ্চয় কিছু না কিছু আগে থেকে ভেবে রেখেছে।" অভির বাজুতে চিমটি কেটে বলল, "আমাদেরত আগে থেকেই হোটেল বুক করা আছে, তাই না অর্জুন? আর দেরি কেন চলো না।"

পরীর ব্যাগ হাতে নিয়ে অভি স্টেসান থেকে বেড়িয়ে পড়ল, পেছন পেছন বাকিরাও ওদের সাথে এল। পরী, দুচোখে হাজার প্রশ্ন নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে, প্রাণপণে বুকের মধ্যে জমে থাকা হাসি টিকে দাতে দাঁত পিষে চেপে ধরে আছে। কথা বার্তার মাঝে জানা গেল যে কল্যাণীদের আগে থেকেই হোটেল এবং গাড়ি ঠিক করা। দিপঙ্কর অভিকে জায়গার কথা জিজ্ঞেস করতে অভি জানাল যে ওরা চিতকুলে নামে একটা জায়গায় বেড়াতে যাবে। সিম্লার আগেই কান্দাঘাট নামে এক জায়গা থেকে ওরা অন্য রাস্তা নেবে না হলে ওদের সাথে সিমলা যেতে পারত। অভি ওদের জিজ্ঞেস করল যে ওরা কবে ফিরবে, সেই মতন আবার পরীকে স্টেসানে পৌঁছে দিতে হবে। দিপঙ্কর জানাল যে ওরা পরের রবিবার ট্রেন ধরবে, কল্যানি বার বার করে পরীকে বলে দিল যে যেখানেই যাক না কেন রবিবারের মধ্যে যেন কাল্কা পৌঁছে যায়। অভি ওদের আসস্থ করে উত্তর দিল যে ওদের বান্ধবী ঠিক হাতেই থাকবে ওর জন্যে যেন কেউ কোন চিন্তা না করে।

বল্বিন্দার পরীর ব্যাগ নিয়ে গাড়িতে রাখে। গাড়ি দেখে ওর সবাই একটু অবাক হয়ে যায়। অভি জানায় যে ও প্লেনে করে আগের দিন দুপুরে দিল্লী পৌঁছে রাতের বেলা গাড়ি নিয়ে কাল্কা পৌঁছেছে।

রানী পরীকে একটু ধাক্কা মেরে বলে, "তুই ত মাইরি ডুবে ডুবে জল খাস। সারাটা রাস্তা আমাদের কিছুই জানালি না যে তোর অর্জুনের কাছে গাড়ি আছে।"

পরী অভির দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসে, ওই বা কি জানত কি নাম হবে, কোথায় যাবে, কি করে যাবে। কিছুই ত জানত না, তাই ত অধির ব্যাকুলতায় সারাটা রাত ঘুমায়নি, জেগে শুধু ভেবেছে অভির কথা।

বাকিদের বিদায় জানিয়ে ওরা গাড়িতে চেপে পড়ল। বল্বিন্দার পটু হাতে গাড়ি চালাচ্ছে। সিওয়ালিক পাহাড়ের সরু রাস্তা ধরে এঁকে বেকে গাড়ি চলেছে। পেছনে ওরা দুজনে বসে। গাড়িতে চেপেই পরী হাসিতে ফেটে পড়ল, যেন এতক্ষণ ওর বুকে ওর হাসি আর খুশি একসাথে জমা হয়ে একটা পাথর হয়েছিল।
পরী, "বাপরে বাপ, আমি স্বপ্নেও ভাবিনি যে তুমি এইরকম করতে পার। তোমার চশমা কবে হল? এটা কি সত্যি না মিথ্যে চশমা? এত দাড়ি গোঁফ কেন? এগুল কি আসল না নকল?"

অভি, "তুমি থামলে আমি কিছু বলতে পারি।"

পরী, "ঠিক আছে বাবা, আমি চুপ, তুমি বল।"

অভি ওকে পুর ট্রিপের পরিকল্পনা বলল, কি করে বাবা মাকে গল্প বলে বেড়ানোর ব্যাপারে রাজি করাল, কি করে সুপ্রতিমদাকে ফোন করে গাড়ির ব্যাবস্থা করল, সব কিছু। সব শুনে পরী ওকে জড়িয়ে ধরে দাড়ি ওয়ালা গালে একটা চুমু খেল।

কিছু পরে গাড়ি কান্দাঘাট ছাড়িয়ে একটা ছোটো রাস্তা ধরে পাহাড় চরতে শুরু করল। চারপাশে উঁচু উঁচু পাইন, শাল, দেবদারুর বন। রাস্তা কুয়াশায় ঢাকা, বল্বিন্দার খুব আস্তে আস্তে গাড়ি চালাচ্ছে। আকাবাঁকা পথ ধরে গাড়ি এগতে থাকে, বাইরে কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে, গাড়িতে হিটার চালান।

পরী অভির বাঁ দিকে বসে ওর হাত খানি শক্ত করে বুকের কাছে ধরে রেখেছে। একটা লম্বা সাদা জ্যাকেট গায়ে। বড় বড় চোখে জানালার বাইরে দেখছে। অভি ওর গালে আঙ্গুল ছুঁইয়ে একটু আদর করল।

পরী, "উম্মম্ম... আমি কোনদিন পাহাড় দেখিনি। আমার মনে হচ্ছে আমি যেন স্বপ্ন দেখছি। আমি এই ঘুম থেকে উঠতে চাই না, পাছে আমার স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়।"

পরী অভির কাঁধে গাল ঘষে দেয়।

অভি, "এই দেখ আমি তোমার পাশেই আছি। এটা স্বপ্ন নয়, পরী, আমি সত্যি তোমার পাশে।"

অভি ওকে আরও নিবিড় করে জড়িয়ে ধরে বুকের কাছে, গালে গাল ঘষে দেয় অভি।

পরী, "উম্মম্ম... দুষ্টু ছেলে, ছাড়ও ছাড়ো, ওইরকম ভাবে গাল ঘোসো না, তোমার দাড়িতে লাগছে।"

"ঠিক আছে বাবা, আমি দাড়ি কামিয়ে ফেলব খানে।" পরীর হাত হাতে নিয়ে ঠোঁটের কাছে এনে আঙ্গুলে চুমু খায়।

পরী, "উফফফ আমার যে কি ভালো লাগছে না... কি বলব" পরী অভির হাথ বুকের ওপরে চেপে ধরে বলে, "দেখো দেখ বুকের ভেতর টা কেমন জোরে জোরে ধুকপুক করছে।"

অভি দুষ্টুমি করে ওর বুকের ওপরে হাত বুলিয়ে দেয়। পরী মৃদু রেগে গিয়ে হাতের ওপরে একটা আলতো থাপ্পর মেরে বলে, "এই দুষ্টু ছেলে ছাড়ো।"

কিছু পরে বলে, "একটু ফ্রেস হতে পারলে ভাল হত।"

অভি, "ঠিক আছে, একটু পরে আমরা চায়েল পৌঁছে যাব সেখানে একটা রুম নিয়ে নেব। স্নান সেরে আবার বেড়িয়ে পড়ব।"

কিছু পরেই গাড়ি চায়েল পৌঁছে গেল। বল্বিন্দার গাড়ি থামিয়ে পরীকে বলল, "ভাভিজি চায়েল এসে গেছে।"

পরী বিশেষ হিন্দি বোঝেনা, তবে বল্বিন্দারের মুখে ভাভিজি কথাটা বুঝে গেল। অভিকে জিজ্ঞেস করল, "আমাকে ভাভিজি বলে ডাকছে কেন? আমার লজ্জা করছে।"

অভি, "আরে বাবা লজ্জা পেওনা। ও তোমাকে আমার সাথে দেখেছে ত ভাভি বলবে না ত কি বলবে। চিন্তা কোরও না, ও সুপ্রতিমদার অনেক দিনের ড্রাইভার, খুব বিশস্ত লোক।"

চায়েল পৌঁছে ওরা একটা হোটেল নিয়ে নিল। হোটেলের কামরায় ঢুকে অভি দুষ্টুমি করে পরীকে জিজ্ঞেস করে, "পরী, আতে সময় খুব কম। চলো না একসাথে দু’জনে বাথরুমে ঢুকে স্নান সেরে নেই।"

লজ্জায় লাল হয়ে উঠল পরী, মৃদু ধমক দিল অভিকে, "না... বদমাশ কি শখ এক লাত্থি মারব।"

স্নান সেরে একটু বিশ্রাম নিয়ে ওরা বেড়িয়ে পড়ল। পরীকে দেখতে একদম সদ্য ফোটা তাজা গোলাপের মতন দেখাচ্ছে। সাদা একটা আটো সালোয়ার পড়েছে, তাঁর ওপরে ওর সাদা জ্যাকেট, ঠিক যেন সাদা গোলাপ ফুল। দু’কানে দুটি মুক্তোর দুল, টলটল করে দুলছে। চায়েল ছাড়িয়ে আবার যাত্রা শুরু। কুয়াশা কেটে হাল্কা রোদের আভাস দেখা দিল। শীতকালের সূর্য যেন চাঁদের আলো ছড়াচ্ছে। অভি দাড়ি গোঁফ কামিয়ে নিয়েছে যাতে পরীর চুম্বনে কোন কষ্ট না হয়। বল্বিন্দার নিপুন হাতে গাড়ি চালাচ্ছে, আঁকা বাঁকা পথ ধরে গাড়ি পাহাড়ে উঠছে।

পরী জিজ্ঞেস করল যে কতক্ষণ লাগবে চিতকুল পৌঁছতে, অভি মাথা নাড়াল, ঠিক জানে না। বল্বিন্দার ওদের কথা শুনে উত্তর দিল যে, হোটেলের ম্যানেজার কে ও জিজ্ঞেস করে রাস্তা যেনে নিয়েছে, আরও ঘন্টা দশেক লাগবে চিতকুল পৌঁছতে। গাড়ি কিছুক্ষণের মধ্যে ফাগু ছাড়িয়ে আবার এন.এইচ.22 ধরল।

পরী অভির কাঁধে মাথা রেখে জানালার বাইরে অবাক হয়ে তাকিয়ে পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখে চলেছে। বাম হাতে অভি ওকে জড়িয়ে ধরে, পরী ওর হাতের আঙ্গুল নিয়ে খেলা করছে।

কারুর মুখে কোন কথা নেই, দু’জনেই চুপ করে বসে একে ওপরের আদর খেয়ে চলেছে। কিছু পরে নারকান্ডা এল, তারপরে গাড়ি নিচে নামতে শুরু করল। কিছু দূর যাবার পরে গাড়ি একটা নদীর পাশ দিয়ে চলতে শুরু করল। পরী পাহাড়ি নদী দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকল।

"উম্ম... কি সুন্দর ছোট্ট নদী। কি নাম নদীটার" পরী অভি’কে জিজ্ঞেস করল।

অভি, "সম্ভবত সাটলুজ নদী।"

পরী, "মানে বাঙ্গালয় শতদ্রু তাই ত?"

অভি, "তাই হবে।"

পরী বল্বিন্দার কে গাড়ি দাঁড় করাতে বলল, নদীর পাড়ে গিয়ে নদীর জল ছুঁতে চায়। অভি বলল যে বাইরে খুব ঠাণ্ডা আর নদীর জল হিমের মতন হবে। পরী ওর কথায় কান দিলনা। জোর করে বল্বিন্দার কে গাড়ি থামাতে বলল। গাড়ি থামা মাত্রই গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে এক দৌড়ে নদীর পাড়ে।

পরী ওর দিকে চিৎকার করে জিজ্ঞেস করল, "তুমি আসছ না আমি নদীতে ঝাপ দেব?"
Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)