Posts: 420
Threads: 9
Likes Received: 434 in 312 posts
Likes Given: 217
Joined: Jan 2019
Reputation:
20
অপরিজ্ঞাত যাত্রা (#03)
অগত্যা অভিকে ওর পেছন পেছন গাড়ি থেকে নেমে যেতে হল। ততক্ষণে পরী, রাস্তার পাশ থেকে নদীর দিকে নেমে গেছে। বেশ পটীয়সীর মতন টাল সামলে পাথরের ওপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে তীরে চলে গেছে। ঝুঁকে পরে নদীর জল ছিটিয়ে দিল অভির দিকে।
হিম শীতল জল ওর হাতের আঙ্গুল যেন জমিয়ে দিল, "বাপরে কি ঠাণ্ডা, আঙ্গুল গুলো যেন কেটে বেড়িয়ে গেল।"
অভি, "আমি আগেই তোমাকে সাবধান করে দিয়েছিলাম, তুমি ত আমার কোন কথা শুনবে না।"
পরী, "ধুর তুমি একদন রোম্যান্টিক নও।"
অভি, "পরী গাড়িতে ওঠো, চিতকুলে ও একটা নদী আছে।"
পরী খুশিতে নেচে উঠে বলল, "তাই নাকি? আমাকে আগে বলনি কেন। চলো তাহলে।"
অভি, "কিছু জিনিস ধিরে ধিরে প্রকাশ পাওয়া ভাল।"
পরী, "ঠিক আছে তুমি যদি সত্যি কথা বলছ তাহলে রাগ করব না। কি নাম বললে যেন জায়গাটার?"
অভি মৃদু বকুনি দেয় পরীকে, "বোকা মেয়ে, চিতকুল।"
গাড়ি আবার ওদের নিয়ে ছেড়ে দিল। রাস্তার পাশ দিয়ে পাহাড়ি নদী ওদের সাথে সাথে চলতে থাকে। আকাশ নীল, মাঝে মাঝে তুলোর মতন পোজা পোজা সাদা মেঘের ভেলা। দু’পাসে সবুজে ঢাকা ছোটো বড় পাহাড়। কোথাও কোথাও আপেলের বাগান। কিছুক্ষণের মধ্যে ওরা রামপুর পৌঁছে গেল। ওখানে ওরা দুপুরের খাবার সেরে নিয়ে আবার যাত্রা শুরু করল। খাবারের পরে অভির খুব ইচ্ছে করছিল একটা সিগারেট খায়, একবার পরীর দিকে তাকাল অভি, দেখতে পারলে মাথা খেয়ে ফেলবে তাও একটা সিগারেট জ্বালাল।
পরী ওর দিকে কটমট ক্রে তাকিয়ে বলল, "আবার সিগারেট ধরেছ।"
অভি কাতর চোখে অনুমতি চাইল, এই ঠান্ডায় একটা সিগারেট। পরী কিছু না বলে, মুখ ভার করে গাড়িতে উঠে গেল। অভি দেখল যে, সিগারেটের চেয়ে ওর মুখের হাসি অনেক বেশি মুল্যবান। আধা খাওয়া সিগারেটটা ফেলে দিয়ে গাড়িতে চেপে বসল।
অভি, "দেখো আমি সিগারেট ফেলে দিয়েছি, এবারে হাসো একটু।"
গাড়ি রামপুর ছাড়িয়ে এগতে শুরি করে। পরীর ঘুম ঘুম পাচ্ছিল। অভি সিটের এক কোনায় সরে গিয়ে ওকে শুতে বলল, অভির কোলে মাথা রেখে পরী ঘুমিয়ে পড়ল। অভি নিস্পলক চোখে ওর ঘুমন্ত মুখের দিকে চেয়ে রইল। রাস্তার অবস্থা বদলে গেছে, বল্বিন্দার নিপুন হাতে খুব মন দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। অভি একবার সামনে দেখে, নিচে ঝুঁকে পরীর গালে আলতো করে একটা চুমু খেল। গালের ওপরে অভির ঠোঁটের পরশ পেয়ে আরও গুটিশুটি মেরে ওর হাথ খানি বুকের ওপরে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিশ্চিন্ত হয়ে শুয়ে পড়ল। অভি পরীর গায়ের উষ্ণতা হাতের ওপরে অনুভব করল। কিছুপরে জিওরিতে বল্বিন্দার গাড়ি থামিয়ে পেট্রল ভরে নিল।
গাড়ি থামতেই পরী জেগে গেল, "আমরা দাঁড়িয়ে কেন?"
অভি, "তেল ভরার জন্য।"
পরী, "আমি কতক্ষণ ঘুমিয়েছি।"
অভি, "বেশিক্ষণ ঘুময় নি তুমি আবার ঘুম লাগাতে পার।"
পরী, "আর কতক্ষণ লাগবে চিতকুল পৌঁছতে?"
অভি পেট্রোল পাম্পের লোকটাকে জিজ্ঞেস করে যেনে নিল যে চিতকুল পৌঁছতে এখন ঘন্টা চারেক লাগবে। লোকটা আরও জানিয়ে দিল যে, সামনে কারছাম ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তা মটামুটি তারপরে রাস্তার অবস্থা খারাপ। বল্বিন্দার ওর কথা শুনে উত্তর দিল, "স্যারজি চিন্তা করবেন না একদম। আমি ঠিক আপনাদের নিয়ে যাব।"
পরী বিশেষ হিন্দি বোঝে না তাই অভিকে জিজ্ঞেস করল যে বল্বিন্দার কি বলল ওকে। অভি জানাল যে রাস্তার অবস্থা হয়ত ভাল না কিন্তু বল্বিন্দার ভরসা দিয়েছে যে গাড়ি চালাতে ওর কোন কষ্ট হবে না। ঘড়ি দেখল অভি, আরাইটে বাজে, মানে চিতকুল পৌঁছতে পৌঁছতে সন্ধ্যে হয়ে যাবে।
জিওরি ছারতেই পরী বলল আর ঘুমাবে না, জেগে থেকে এখন শুধু পাহাড় দেখবে। কারছাম পৌঁছতেই সূর্যি ডুবে গেল। পাহাড়ে তাড়াতাড়ি সন্ধ্যে নেমে এল। কারছামে ওরা লক্ষ্য করল যে দুটি নদী এসে মিশেছে। একটার জলের রঙ একটু ঘোলাটে একটা একদম পরিষ্কার তুঁতে রঙের।
পরী তুঁতে রঙের জলের নদী আগে কোনদিন দেখেনি। ওরা নদী দেখে বিস্ময়ান্বিত। অভিকে জিজ্ঞেস করল, "এই নদীর নাম কি?"
অভিও কোনদিন তুঁতে রঙের জল দেখেনি, ও বল্বিন্দার কে গাড়ি থামাতে বলল। গাড়ি থামতেই ওরা নেমে নদীর পাড়ে গেল। পরী ওকে জিজ্ঞেস করল, "এই নদীর নাম কি? এই নদী কি আমরা চিতকুলে পাব?"
অভি মাথা নাড়ল, "হ্যাঁ এই নদী তুমি চিতকুলে দেখতে পাবে। সম্ভবত এই নদীর নাম বিয়াস, চিন থেকে আসছে এই নদী।"
কারছাম ব্রিজ পার করে, এন.এইচ.22 ছেড়ে ওরা চিতকুলের রাস্তা ধরল। রাস্তায় বড় বড় পাথর আর রাস্তাটা খুব নির্জন। আসেপাসে লোকজনের দেখা নেই নেই কোন গাড়ি ঘোড়া। বাইরে কনকনে ঠান্ডা হাওয়া বইছে। অভি পরীকে জড়িয়ে ধরে বসে। বাইরের আলো কমে এসেছে আগেই তাই বল্বিন্দার গাড়ির লাইট জ্বালিয়ে দিল। পরী অভির দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকাল।
অভি ওকে আসস্থ করে বলল, "অযথা ভয় পেওনা।"
পরী ওর গালে আলতো করে চুমু খেয়ে বলল, "তুমি আছো ত তাহলে আর ভয় কিসের। আমি শুধু এটা ভেবে অবাক হচ্ছি যে তুমি এই রকম জন বিরল জায়গার খোঁজ পেলে কি করে?"
অভি ওকে আদর করে উত্তর দেয়, "তুমি আমার পাশে থাকলে আমি ত বিশ্ব জয় করে নেব, সোনা।"
ওর গালে একটা চুমু খেয়ে বলল পরী, "আমার সোনার ছোট্ট রাজকুমার।"
সাঙলা পার হতেই ঘন অন্ধকার ওদের ঢেকে নিল। এবড় খাবড় রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালাতে বল্বিন্দারের একটু অসুবিধে হচ্ছিল। অভি জিজ্ঞেস করাতে উত্তর দিল যে ঠিক আছে সব। পরী অভির দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকাল। বাইরে কোন আলো দেখা যায় না, ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঢাকা দু’পাস। কোথায় পাহাড় আর কোথায় রাস্তা কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। অভি পরীকে ভয় পেতে বারন করল।
কিছু পরে অভিকে মৃদু বকুনি দিয়ে বলল, "আমাদের যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে কেউ জানতেও পারবে না।"
অভি ওকে আসস্থ করে, "উল্ট পালটা কিছু বোলো না, আমাদের কিছু হবে না পরী।"
পরী রেগে সিটের এককোণে সরে গিয়ে বসল। উতকন্ঠায় পরী চুপ করে বসে, জানালা দিয়ে বাইরের অন্ধকার দেখতে থাকে। অভি পরিস্থিতি হাল্কা করার জন্য ওকে জিজ্ঞেস করল, "বাইরে অন্ধকারে কি দেখছ?"
কিছু উত্তর দিল না পরী, ওর দিকে একবার কটমট করে তাকিয়ে আবার বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকল। ভয়ে ওর মুখ শুকিয়ে গেছে, বুকের ধুকপুকানি শত গুন বেড়ে গেছে। অভি প্রথম বার এই জায়গায় এসেছে, ওই বা কি করে জানবে যে রাস্তার অবস্তা ওই রকম খারাপ হবে। অভি ও উতকন্ঠায় বসে, কতক্ষণে গন্তব্য স্থানে পৌছবে। পরী গম্ভির মুখ করে একদম চুপ করে বসে।
আরও প্রায় ঘন্টা খানেক পরে ওরা চিতকুল পৌঁছে গেল। ঘুটঘুটে অন্ধকার চারপাশে, কিছু দুরে কিছু আলো টিমটিম করে জ্বলছে। পরীকে গাড়িতে বসিয়ে রেখে অভি নেমে গেল হোটেলের খোঁজে। বাইরে কনকনে ঠান্ডা হাওয়া যেন যুদ্ধ জুড়েছে। বেশ কিছুক্ষণ খোঁজার পরে রাস্তার একদম শেষে একটা হোটেলের সন্ধান পেল অভি। ম্যানেজার জানাল যে হোটেল একদম ফাঁকা, এই ঠাণ্ডায় কেউ এখানে ঘুরতে আসেনা। একটা রুম ভাড়া নিয়ে নিল অভি। পরী সেই যে সাঙলা থেকে গুম মেরে বসে আছে, হোটেলে ঢোকা পর্যন্ত কোন কথা বলল না।
Posts: 420
Threads: 9
Likes Received: 434 in 312 posts
Likes Given: 217
Joined: Jan 2019
Reputation:
20
অপ্রত্যাশিত রজনী
হোটেলের রুম টা বেশ বড়সড়, দু’দিকের দেয়ালে বড় বড় কাঁচের জানালা, তার ওপরে ভারী পর্দায় ঢাকা। হোটেলের লোক ওদের জিনিস পত্র রুমে রেখে চলে যাবার পরে অভি দরজা বন্ধ করে দিল। রুমের মধ্যে দু’খানা হিটার জ্বলছে। অভি পরীকে জিজ্ঞেস করল যে রুমটা পছন্দ হয়েছে কি না। উত্তরে পরী ওর দিকে একটু মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিল যে ঠিক আছে। গায়ের জ্যাকেট টা খুলে এক এক ব্যাগ খুলতে শুরু করল পরী। ব্যাগ থেকে জিনিস পত্র বের করে আলমারিতে সাজিয়ে রাখতে শুরু করল। অভি বিছানায় বসে পেছন থেকে পরীকে একমনে দেখে চলেছে। খোলা চুল পিঠের ওপরে নাচছে। পেছন থেকে ওকে দেখতে ঠিক প্রাচিন বালির ঘড়ির মতন লাগছে, চওড়া কাঁধ সরু হয়ে নেমে এসেছে পাতলা কোমর, তারপরে ফুলে উঠেছে প্রসস্থ নিতম্ব। ওর মূর্তিময়ি সৌন্দর্য উপভোগ দেখতে থাকল অভি। একবার মনে হল যেন পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে পরীকে। মাঝে মাঝে চুড়ির ছনছন আওয়াজ গুঞ্জরিত হচ্ছে ঘরের মধ্যে। বারে বারে বাম পাশের চুলের এক গোছা ওর গালের ওপরে এসে পড়ছে আর বাঁ হাতের তর্জনী দিয়ে বারে বারে ওই চুলের গোছা টাকে কানের পেছনে করে দিচ্ছে।
শেষ পর্যন্ত অভি আর থাকতে না পেরে চুপিচুপি পরীর পেছনে এসে দাঁড়াল। দু’হাতে পেছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরে আলতো করে ঘাড়ে একটা চুমু খেল। আচমকা অভির ঠোঁটের পরশ পেয়ে একটু কেঁপে উঠল পরী। ঘাড়ের ওপর দিয়ে শীতল চাহনি দিল অভির দিকে। অভি তাও ওকে ছেড়ে দিল না, জড়িয়ে ধরে থাকল।
পরী ওর দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ঠাণ্ডা গলায় বলল, "ছাড়ো আমাকে। আমি বাথরুম যাব।"
ওই গলার আওয়াজ শুনে অভি বুঝতে পারল যে বিশাল একটা ঝড় আসছে। পরী একটা হাল্কা গোলাপি রঙের নাইট ড্রেস আর একটা ভারী গাউন নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল। বেচারা অভি নিরুপায় হয়ে বিছানায় গিয়ে বসে পড়ল। নিজের জামা কাপড় বদলে একটা ট্রাক সুট পরে নিল। কিছু পরে পরী বাথরুম থেকে বেড়িয়ে এসে অভিকে হাত মুখ ধুয়ে নিতে বলল।
অভি ওর গম্ভির কাঁদো কাঁদো চেহারা দেখে জিজ্ঞেস করল, "কি হয়েছে তোমার? এত চুপচাপ কেন? আমার সাথে কি কথা বলতে নেই?"
পরী ওর দিকে লাল চোখে তাকিয়ে বলল, "বাথরুমে ঢোকো, তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নাও আমি ততক্ষনে খাবারের অর্ডার দিয়ে দিচ্ছি।"
অভি, "ঠিক আছে কিন্তু একটু বলবে কি কেন এত চুপচাপ তুমি?"
পরী ওকে ঠেলে বাথরুমে ঢুকিয়ে দিল। হাত মুখ ধুয়ে বাইরে বেড়িয়ে দেখে যে পরী একটা চেয়ার নিয়ে জানালার পাশে বসে বাইরের অন্ধকার দেখছে। পুর ঘরের বাতাস যেন পরীর সাথে কাঁদছে। ওর চেহারার গুমোট ভাব যেন ঘরের দেয়ালে ছড়িয়ে পড়েছে। অভির সামনে সেই হাসি খুশি পরী নেই, কোথায় যেন হারিয়ে গেছে সেই পরী। টেবিলে ওদের রাতের খাবার সাজান। চুপ করে রাতের খাওয়া সেরে নেয় ওরা। অভির মনে ভয় ঢুকে পরে। পরী যদি এইরকম ভাবে গুম মেরে বসে থাকে, থাকলে ত ঘোরার আনন্দ টা মাটি হয়ে যাবে।
খাবার পরে গায়ের ভারী গাউন টা খুলে বিছানায় উঠে পরে পরী। লেপটা বুক পর্যন্ত টেনে নিয়ে বিছানার মাথার দিকে হেলান দিয়ে কটমট চোখে তাকায় অভির দিকে।
অভি বিছানার পায়ের দিকে বসে ওকে জিজ্ঞেস করে, "কি হয়েছে তোমার, কিছু বলবে কি?"
পরী রেগে গিয়ে উত্তর দেয়, "কি হয়েছে আমার? বাইরে একবার দেখেছ? একবিন্দু আলো দেখা যায় না কোথাও, চারদিকে শুধু ঘুটঘুটে অন্ধকার। এখানে কিছুই নেই, না একটা রেস্টুরেন্ট আছে, না একটা দোকান আছে, না কোন বর বাড়ি আছে। এমন কি এখানে কোন লোকজন ও নেই।"
অভি, "দেখ পরী, আমি তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে চেয়েছিলাম। আমিও এই জায়গায় নতুন, প্রথম বার এসেছি।"
পরী, "এখানে একটা দোকান ও নেই।"
অভি, "দোকান দিয়ে কি করবে তুমি?"
পরী, "দোকান দিয়ে মানুষে কি করে, জানো না। শপিং করব আবার কি করব। যারাই ঘুরতে যায় তারাই শপিং করে।"
অভি, "তুমি তাহলে এখানে শপিং করার জন্য এসেছ।"
পরী, "না মানে শুধু মাত্র শপিং নয়। কিন্তু বাইরে দেখ, কোথাও কিছু দেখতে পাওয়া যায় না শুধু অন্ধকার ছাড়া। তুমি বলেছিলে যে এখানে নাকি একটা নদী আছে, কোথায় সেই নদী?"
অভি, "বাইরে অন্ধকার তাই তুমি নদী দেখতে পাচ্ছ না।"
পরী, "অভি, তুমি এখান কার রাস্তা দেখেছ। রাস্তা অরে বাব, রাস্তা নেই বললেই চলে। এবর খাবর আর পাথরে ঢাকা কি সাঙ্ঘাতিক রাস্তা এখান কার। এখানে কি মানুষে আসে?"
অভি আর মাথা ঠিক রাখতে পারে না। শেষ পর্যন্ত শুরু হল ওদের ঝগড়া বা প্রেম রাগ। রেগে গিয়ে পরীকে বকে দেয়, "আমি কি করে জানব যে রাস্তা ওই রকম হবে?"
পরীও রেগে গিয়ে উত্তর দেয়, "অভি তুমি নিশ্চয় জানতে।"
অভি, "হাঁ ভগবান, পরী আমি সত্যি জানতাম না।"
পরী, "তোমার সাথে না এসে কল্যানি আর রানির সাথে মানালি ঘুরতে গেলে ভাল হত।"
অভি, "হ্যাঁ তাই করতে। কেন করনি তাহলে?"
কেঁদে ওঠে পরী, "তুমি ভাল করে জানো আমি কেন ওদের সাথে যাইনি আর কেন আমি তোমার সাথে এসেছি। আর এখন..."
অভি, "এখন কি এখন..."
পরী, "এখন কি? দেখ কোথায় এনেছ আমাকে। কোন ক্রমে একটা হোটেল খুঁজে পাওয়া গেছে তাতে আবার কোন লোক নেই। কেউ যদি রাতে আমাদের কিছু করে দেয় তাহলে বাড়ির কেউ খবরও পাবে না। কেউ জানে না আমরা এই রকম একটা সাঙ্ঘাতিক জায়গায় ঘুরতে এসেছি, যেখানে আসেপাসে দেখার কিছুই নেই।"
অভি চিৎকার করে ওঠে, "চুপ কর পরী, আমাদের কিছুই হবে না।"
কেঁদে উত্তর দেয় পরী, "আমি শুধু চেয়েছিলাম তোমার সাথে আমার প্রথম বেড়ানো টা চিরস্মরণীয় হয়ে থাক।"
বারে বারে চোখের জল মুছতে থাকে। সেই চোখের জল দেখে অভির মাথা আরও গরম হয়ে যায়।
অভি বকুনি দিয়ে বলে, "আমার সামনে কুমিরের কান্না একদম কাঁদবে না।"
চিৎকার করে ওঠে পরী, "অভি, একদম আমার সাথে ওই রকম ভাবে কথা বলবে না। কাল সকালে আমাকে সিমলা পৌঁছে দিয়ে আসবে। আমি জানি কল্যানিরা কোন হোটেলে উঠেছে, আমি কল্যাণীদের সাথে ঘুরতে যাব।"
অভি, "ঠিক আছে কাল সকালে আমি তোমাকে সিমলা পৌঁছে দিয়ে আসব।"
গলা পর্যন্ত লেপ টেনে নিয়ে উলটো দিকে ফিরে শুয়ে পড়ল পরী। বালিসে মাথা গুঁজে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করে দিল। অভি মাথা চাপড়াল, শেষ পর্যন্ত একি ঘটে গেল। এই রকম ত ও চায়নি।
যথাসম্ভব মিষ্টতা এনে পরীকে শান্তনা দেবার চেষ্টা করল অভি, "প্লিস কেঁদো না। আমি একটু বাইরে যাচ্ছি।"
ফুফিয়ে উঠে বলল, "যাও যাও, আমি জানি তুমি বাইরে কেন যাচ্ছ। তুমি সিগারেট খাবে এই ত। আমাকে লুকিয়ে তুমি ব্যাগে করে সিগারেট প্যাকেট নিয়ে এসেছ আমি দেখেছি। একে বারে সবকটা সিগারেট খেয়ে মর গিয়ে। দূর হয়ে যাও আমার সামনে থেকে।"
অভি, "দোহাই চুপ করে থাক।"
পরী, "আমার সামনে থেকে চলে যাও, আমাকে একটু একা ছেড়ে দাও।"
অভির সিগারেট টা খুব দরকার ছিল তাই সিগারেট ধরিয়ে বাইরে চলে এল। বাইরে এসে ভাবতে থাকল, কি করে জানবে যে জায়গাটা এই রকম জনবিরল স্থান হবে? অভিও প্রথম বার এসেছে এই জায়গায় পরী ও প্রথম বার।
"অভিমন্যু তোমার উচিত হয়নি শুচিস্মিতাকে কাঁদানোর। এই ভ্রমন যাত্রা বিশেষ সুখদায়ক হবে না অভিমন্যু। সব মেয়েই চায় তাঁর প্রেমিকের সাথে মিলনের প্রথম রাত চিরস্মরণীয় হয়ে থাক, কিন্তু তুমি শুচিস্মিতাকে কাঁদিয়ে ঠিক করনি, অভিমন্যু। তোমাকে এই পরিস্থিতির সামাল দিতে হবে না হলে শুচিস্মিতা তোমাকে সারা জীবন ক্ষমা করবে না।"
অভির মাথার মধ্যে থেকে কেউ ওকে এই সব কথা বলে গেল। বাইরে কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া যেন তুমুল যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে। হয়ত বা বাইরে তুষার পাত হচ্ছে।
ঘরে ঢুকে দেখল যে পরী ঘুমিয়ে পড়েছে। ট্রাক সুটের জ্যাকেট টা খুলে লেপের নিচে ঢুকে গেল অভি। পরীর দিকে সরে গিয়ে একটু ঝুঁকে পরীর ঘুমন্ত মুখখানি দেখতে চেষ্টা করল। সুন্দর মুখখানির ওর চুলের গোছার নিচে ঢেকে পড়েছে। আলতো করে আঙ্গুল দিয়ে চুলের গোছা টা সরিয়ে দিল মুখের ওপরে থেকে। একটা সরু জলের রেখা চোখের কোন থেকে বেয়ে নাকের ডগা পর্যন্ত গিয়েছে, বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে আলতো করে জলের দাগটা মুচে দিল। অভির উত্তপ্ত নিঃশ্বাস পেয়ে একটু কেঁপে উঠল পরী। অভি আলতো করে ওর বাঁকা ভুরুর ওপর দিয়ে আঙ্গুল বুলিয়ে দিল। ঝুঁকে পরে ওই গোলাপি নরম গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল। তারপরে আদর করে ওর নরম গালের ওপরে নাকের ডগা দিয়ে ঘষে দিল। পরী গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ওর কোমরে হাত রেখে ওকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ল অভি। পেটের ওপরে অভির বলিষ্ঠ হাতের স্পর্শ পেয়ে মৃদু কেঁপে উঠল পরী, ওর হাতখানি বুকের কাছে এনে আরও জোরে শক্ত করে বুকের ওপরে চেপে ধরল। শরীরের সাথে শরীর মিলিয়ে দিয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ল ওরা।
Posts: 420
Threads: 9
Likes Received: 434 in 312 posts
Likes Given: 217
Joined: Jan 2019
Reputation:
20
তুষারে অগ্নিপাত
এলোমেলো রুক্ষ চুলের মধ্যে নরম আঙ্গুলের স্পর্শে অভির ঘুম ভেঙ্গে গেল। চোখ মেলে চেয়ে দেখল সামনে পরীর হাসি মাখা মিষ্টি চেহারা। বিছানার ওপরে ওর পাশে বসে পরী ওর দিকে মিষ্টি হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে। অদ্ভুত এক মধুর আলোর ছটা যেন ওর সারা মুখে মাখা। বেশ খানিকটা ঝুঁকে পড়ার জন্য অভির বুকের ওপরে ওর ঘন কালো চুল খেলা করছে। পরীর মিষ্টি হাসি দেখে অভির বুকের ভেতরে গত কাল রাতের পাথরটা যেন সরে গেল। চেয়ে দেখল ঘরের মধ্যে সকালের মিষ্টি রোদের খেলা। বিশাল জানালার পর্দা গুলো একদিকে সরান, মনে হয় পরী বাইরের শোভা দেখছিল। ওর দিকে চেয়ে একটু হাসল অভি। পরী ওর মুখের ওপরে ঝুঁকে ওর কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল। ঝুঁকে পড়ার ফলে অভির চিবুক পরীর উন্নত বক্ষে স্পর্শ করল।
"উঠে পড়ো সোনা।"
মৃদু নাকে নাক ঘষে দিল পরী তারপরে আলতো করে ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে একটা সুন্দর চুমু খেল। অভি ওর মুখের ওপর থেকে চুলের গুচ্ছ সরিয়ে দিয়ে মাথা টা আরও কাছে ঠেনে নিল যাতে চুম্বন টা আরও নিবিড় হয়ে যায়। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে রইল দুজনে কিছুক্ষণ।
পরী, "কাল রাতের জন্য ক্ষমা করে দাও।"
অভি বিছানায় উঠে বসল। পরীর হাত দুটি হাতের মধ্যে নিয়ে ক্ষমা চাইল, "না হানি, আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমার উচিত হয় নি তোমার ওপরে ওই রকম ভাবে চিৎকার করার। সত্যি বলছি আমাদের এখানে আসাই উচিত হয়নি।"
পরী, "হ্যাঁ তুমি আমার ওপরে চিৎকার করেছিলে ঠিকই, কিন্তু এই জায়গাটার ব্যাপারে আমি ভুল ছিলাম। কাল রাতে আমি যা বলছি তার জন্য সরি।"
অভি মজা করে জিজ্ঞেস করল, "তাহলে তোমাকে কখন সিমলা পৌঁছে দেব?"
পরী দু’হাতে অভির গলা জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বলল, "আমি অন্য কোন জায়গার কথা জানিনা কিন্তু পৃথিবীতে যদি কোথাও স্বর্গ বলে কিছু থাকে তাহলে সেটা এখানে আছে।"
অভি ওর পাতলা কোমর জড়িয়ে ধরে কোলের ওপরে টেনে নিল। অভির জানুর ওপরে পরীর কোমল নিতম্বের স্পর্শে ওর সারা শরীরে শিহরণ খেলে গেল। পরী ওর অর্ধশায়িত বুকের ওপরে নিজেকে সঁপে দিল। পরনে রাতের হালকা গোলাপি হাত কাটা নাইট ড্রেস। বক্ষের অধিকাংশ অনাবৃত, অভির চোখ গেল পরীর গভীর বক্ষ বিভাজনের দিকে। পরীর নরম গালে নাক ঘষে দিল অভি।
পরী মৃদু স্বরে বলল, "উম্মম্মম্ম... এই জায়গাটা দারুন সুন্দর।"
অভি, "আমি জায়গাটার কথা ত জানি না হানি, কিন্তু তোমার গালের লালিমা আমাকে পাগল করে তুলেছে। তোমার ঠোঁট দুটি ভারী মিষ্টি খেতে।"
অভির বাঁ হাত পরীর নরম গোল পেটের ওপরে বিচরন করতে থাকে। আঙ্গুল দিয়ে নাভির চারদিকে আলতো করে আঁচর কেতে দেয় অভি। পরীর কোমল নিতম্ব অভির তলপেটের ওপরে চেপে বসে। সেই নরম উষ্ণ স্পর্শে অভির সিংহ মাথা উঁচু করতে শুরু করে। পরীর পীনোন্নত বক্ষ যুগল পিষ্ট হয়ে যায় অভির প্রসস্থ বুকের ওপরে। অভির মুখের ওপরে পরীর গরম শ্বাসের ঢেউ খেলে বেড়ায়। আদর খাওয়ার ফলে পরীর শ্বাসে আগুন লাগে, প্রেমের আগুন ধিকিধিকি করে জ্বলতে শুরু করে দিয়েছে পরীর বুকের মাঝে। অভি ওর কাঁধের মাঝে মুখ গুঁজে ঘাড়ের ওপরে ঠোঁট আর জিব দিয়ে আলতো করে চেটে দেয়। আস্তে আস্তে অভির ঠোঁট, ঘাড় ছাড়িয়ে কানের লতির ওপরে চাটে। মুক্তোর কানের দুলের সাথে কানের একটা লতি ঠোঁটের মাঝে নিয়ে আলতো করে চুষে দেয় অভি। পরী ঘনঘন কেঁপে ওঠে কানের ওপরে ঠোঁটের স্পর্শে। অভির হাত পরীর পেটের ওপরে বিচরন করতে করতে ধিরে ধিরে উপরের দিকে উঠতে শুরু করে। পরী বুঝতে পারে যে অভির হাত আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ওর পীনোন্নত বক্ষ পিষ্ট করে দেবে। তীব্র বাসনার ফলে চোখ বন্ধ করে নেয় পরী, আধ খোলা ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে অস্ফুট এক শীৎকার দেয়। বুকের মাঝে যেন বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়েছে, পরীর উন্নত বক্ষ যুগল বারে বারে ঢেউয়ের মতন ওঠা নামা করতে শুরু করে। অভির হাত ঠিক পরীর বক্ষের নিচে পৌঁছে যায়। পরী আসন্ন বক্ষ পেষণের আশঙ্কায় আধ খোলা চোখ অভির মুখের দিকে তাকাল। হাত দুটি শক্ত করে ধরে রইল যাতে অভি ওর বুকের ওপরে হাত দিতে না পারে। মৃদু মাথা দোলালো পরী, "না" কিন্তু ঠোঁটে লেগে তীব্র কামনার হাসি। অভি ওর দিকে প্রশ্ন নিয়ে তাকাল।
লাজুক হেসে ফিসফিস করে বলল, "আমার লজ্জা করছে।"
শক্ত করে জড়িয়ে ধরে উত্তর দিল অভি, "এখানে আমি আর তুমি ছাড়া আর কেউ নেই।"
ঘাড়ের ওপরে মুখ গুঁজে, গলা জড়িয়ে মাথা নাড়িয়ে ফিসফিস করে বলল, "না না না... এই দিনের আলোতে তোমার ওই আগুনে চোখের সামনে আমার খুব লজ্জা করছে..."
অভি ওর কথা শুনে হেসে ফেলল, "আমার সামনে তোমার লজ্জা কিসের?"
পরী, "আমি লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছি আর তুমি হাসছ? তুমি না খুব বদমাশ ছেলে জানো।"
অভি, "ওকে, তুমি লজ্জা পেলে আর কি কি হল মনের মধ্যে সেটা একটু খুলে বলবে না।"
পরী মাথা না উঠিয়ে ফিসফিস করে বলল, "তুমি না ভীষণ শয়তান। আমি কিছুতেই বলব না আমার বুকের ভেতরে কেমন লাগছিল।"
অভি ওর পিঠের ওপরে হাত বোলাতে বোলাতে আবার জিজ্ঞেস করল, "একবার বলো না সোনা, শুনি না তোমার কেমন লাগছিলো"
পরী ওর কথা শুনে মৃদু চিৎকার করে উঠল, "যাও বলব না, তুমি না একটা মস্ত শয়তান আর কিছু না।"
অভির আঙ্গুল পরীর পিঠের ওপরে ওর শিরদাঁড়ায় আঁচর কাটতে থাকে। আঙ্গুল দিয়ে ঘাড় থেকে পিঠের নিচে কোমর পর্যন্ত বারে বারে আঁচর কেটে দেয়। থেকে থেকে পরীর সারা শরীর কেঁপে ওঠে বারংবার। অভির ঘাড় থেকে কিছুতেই মাথা ওঠায় না পরী।
কানে কানে বলে, "অভি, আমার খুব খিদে পেয়েছে।"
দুষ্টুমি করে উত্তর দেয় অভি, "এত যদি খিদে পেয়েছে তাহলে আমাকে খেয়ে নাও না কেন।"
অভির মাথার পেছনে আলতো করে থাপ্পর মেরে বলে, "সত্যি বলছি আমার খিদে পেয়েছ, আর দুষ্টুমি কোরোনা।"
এই বলে অভির তীব্র আলিঙ্গন থেকে নিজেকে কোন রকমে মুক্ত করে উঠে পড়ল পরী। কামনার এক সুন্দর হাসি সারা মুখে লেগে আছে, চোখ দুটি যেন প্রেমের আগুনে জ্বলছে ধিকিধিকি করে। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে বুকের মাঝের আগুন টাকে প্রাণপণে যেন দমিয়ে রেখেছে। অভি কে হাত ধরে টেনে উঠিয়ে দিল বিছানা থেকে, ব্রাসে পেস্ট লাগিয়ে দিয়ে বাথরুমের মধ্যে ঠেলে ঢুকিয়ে দিল। অভির অনুধাবন করতে বিশেষ বেগ পেতে হল না যে সকালের রোদ এই ঘরের মধ্যে কিছুক্ষণের মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে দেবে।
তাড়াতাড়ি বাথরুম থেকে বেড়িয়ে এল অভি, ওর যে আর তর সইছে না পরীকে কাছে পাওয়ার। কাল রাতের ঝড় আজ সকালের রোদে সম্পূর্ণ ভাবে মুচে গেছে। বেড়িয়ে এসে লক্ষ্য করল যে পরী বিশাল কাঁচের জানাল্র পাশে বসে বাইরের দিকে একমনে তাকিয়ে পাহাড়ের অকৃত্রিম সৌন্দর্য উপভোগ করছে। ওর গায়ে অভির শাল। অভিকে দেখে কাপে চা ঢেলে দিল পরী। ওর পাশে একটা চেয়ার টেনে বসে পরী কে ওর কোলের ওপরে বসিয়ে দিল। পরী আরাম করে অভির কোলের ওপরে বসে এক হাতে ওর গলা জড়িয়ে ধরল। অভি এক হাতে পরীর কোমর জড়িয়ে ধরে বসল। অভির নচ্ছার হাত খানি পরীর কোমল পেটের পাশে আলতো করে কাতুকুত দিল।
পরী ওর দিকে মিষ্টি রেগে তাকিয়ে বলল, "এখন নয় অভি, তুমি না সত্যি একটা শয়তান।"
অভি, "ছোট্ট একটা কিস ব্যাস..."
পরী অভির কপালে ছোট্ট একটা চুমু খেয়ে বলে, "তোমাকে ছোটো বেলায় যেই রকম করে খাইয়ে দিতাম সেই রকম করে খাইয়ে দেই।"
অভি ওর নরম বুকের কাছে মুখ ঘষে জিজ্ঞেস করে, "কি খাওয়াবে আমার পরী?"
একটু নড়ে বসল পরী, মৃদু রেগ গিয়ে বলল, "ধুত ছেলে আগে খাও তারপরে দেখা যাবে" এই বলে ওর মুখের সামনে স্যান্ডউইচ এনে ধরল।
স্যান্ডউইচ খেতে খেতে পরী জানালার বাইরের দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখাল। এই প্রথম বার জানালার বাইরে, দিনের আলোয় ভালো করে জায়গা টাকে দেখল অভি। হোটেলের সামনে অনেক খানি খালি জায়গা, সাদা বরফে ঢাকা। বাঁ দিকে একটি উঁচু পাহার উঠে গেছে, সেখানে কোন গাছ পালা নেই শুধু ছোটো ছোটো ঘাস আর বরফ। সামনের বরফে ঢাকা জায়গা টার একদম শেষে একটা সুবিশাল তুষারে ঢাকা পর্বত শিখর। ডান দিকে বেশ কয়েকটা উঁচু উঁচু পাহাড়, অনেক গাছ সেখানে। প্রায় সব গাছের মাথা বরফে ঢাকা। দুই পর্বত শ্রেণির মাঝ খান দিয়ে কুলু কুলু শব্দে একটি ছোট্ট পাহাড়ি নদী বয়ে চলেছে। নদীর নাম বাপ্সা। অভি এবং পরী দু’জনেই জীবনের প্রথম বরফ দেখল আর বরফে ঢাকা পাহাড় দেখল।
পরী দূর তুষারে ঢাকা শৃঙ্গ টিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বলল, "খুব সুন্দর জায়গা তাই না।"
অভি, "কাল রাতে এই জায়গার কত গুণগান করেছিলে তার কি হল।"
পরী, "শুধু আমি, তুমিও ত জানতে না জায়গাটা কি রকম দেখতে।"
অভি, "হ্যাঁ তা বটে, কিন্তু..."
পরী মিষ্টি হেসে বলল, "রাতে কথা ভুলে যেতে চাই অভি। এক নতুন সকালের সাথে এক নতুন শুরু।"
গল্প করতে করতে ওরা সকালের খাওয়া শেষ করল। পরী ওর কোলে বসে ওকে খাইয়ে দিল আর নিজে খাবারের সাথে অভির মিষ্টি আদর খেতে থাকল। ওর মুখে শুধু চিতকুলের সৌন্দর্যের জয়গান। খাওয়ার শেষে পরীর কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে নিল, পরী ওর মুখ খনি আঁজলা করে নিয়ে আলতো করে নাকে নাক ঘষে দিল।
মিষ্টি করে ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলল, "আমাকে এখানে নিয়ে আসার জন্য খুব বড় একটা থ্যাঙ্ক ইউ।"
অভি ওর ডান হাত হাতে নিয়ে, কোমল আঙ্গুলের ওপরে ঠোঁট ছোঁয়াল, এক এক করে আঙ্গুল গুলো মুখে পুরে চুষে দিল। একদম আঙ্গুলের গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত।
পরী ম্রিদুকনে বলে উঠল, "আবার দুষ্টুমি শুরু করে দিয়েছ।"
আঙ্গুল চোষার ফলে পরীর কমনীয় শরীর বারে বারে শিহরিত হয় যেন শরতের বাতাসে ধানের মাথা আন্দোলিত হচ্ছে। অভি ওর গায়ের শাল খানি খুলে ফেলল, পরী বাঁ হাতে অভির গলা জড়িয়ে ধরে ওর মাথা বুকের ওপরে টেনে নিল। কোমল বুকের উষ্ণতায় মুখ ডুবিয়ে দিল অভি। হাত ছেড়ে পরীর পেটের ওপরে হাত দেয়, বৃত্তাকারে বারে বারে গোল পেটের মসৃণ ত্বকের ওপরে হাত বলাতে থাকে। মাঝে মাঝে কিঞ্চিত টিপে ধরে নরম মাংস। অশান্ত ডান হাত পরীর পিঠের ওপরে বিচরন করে, ঘাড় থেকে নিতম্বের কাছে। মাঝে মাঝে ওর বাঁকা শিরদাঁড়ার ওপরে নখের আঁচর দেয় অভি। অভি মাথা নিজের বুকের ওপরের থেকে উঠিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে পরী। প্রথমে আলতো ঠোঁটের ছোঁয়া ক্রমশ তীব্র চুম্বনে পরিনত হয়। জিবের ডগার সাথে জিব লাগে। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে পরী, অভির সারা শরীরে কাটা দেয়।
অভি পরীর জানুর ওপরে হাত রাখে, হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত হাত বুলাতে থাকে মসৃণ পেলব জানুর ওপরে। জানু ধরে ভাল করে টেনে নেয় কোলের ওপরে। পরীর কোমল পুরুষ্টু নিতম্ব অভির তলপেটে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। পরী ওর কোমল নিতম্বের মাংসের ওপরে অভির উত্তপ্ত সিংহের ছোঁয়া বুঝতে পারে। আদরের গতি ক্রমশ বেগ পায়, পরীর শ্বাসে কামনার আগুনের হল্কা। অভি পরীর জানুর ওপরে হাত চেপে ধরে, ছুঁতে চেষ্টা করে জানু মাঝে নারী সুধার কাছে। পরী চুম্বন টিকে বন্দ করে ওর চোখের দিকে তীব্র বাসনাময় চাহনি নিয়ে তাকায়।
এই প্রথম বার অভি তাঁর প্রেম নিবেদন করল, "আমি তোমাকে ভালবাসি, পরী।"
পরীর কামাগ্নিতে ঝলসান চাহনি অভির বুকের মাঝে হিল্লোল শুরু করে দেয়, "এত দিন আমি শুধু এই শোনার জন্য অপেক্ষা করে ছিলাম, অভি।" প্রেমঘন ম্রিদুকনে বলে, "এই তিনটে শব্দ বলতে এত দেরি করলে কেন অভি?"
অভি ওর মুখের ওপরে আগুনের হল্কা ছড়িয়ে দিয়ে বলে, "আমি তোমাকে কাছে পাবার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছি পরী। আমি তোমাকে বড্ড ভালবেসে ফেলেছি।"
চোখের কোন চিকচিক করে ওঠে পরীর, নিচু কম্পিত সুরে বলে, "অভি, আমি তোমাকে খুব ভালবাসি। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না অভি।"
অভি জিভ বের করে পরীর অধরের ওপরে আলতো করে বুলিয়ে দেয়।
পরী, "আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধর অভি, আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে চাই না।"
ওর কথা শুনে অভির মনের ভেতরে প্রেমের আগ্নেয় গিরি গুরগুর করে উঠল। দু’জনেই বুঝতে পারল যে সম্ভাবিত মিলনের সময় কাছে এসেছে। অভি পরীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল যেন পৃথিবীর অন্তিম কাল নিকটে আর পরী একমাত্র মানুষ যে অভিকে ওই অন্তিম সময় থেকে বার করতে পারবে। পরী ওর বলিষ্ঠ বাহুপাসে নিজেকে সম্পূর্ণ রুপে সঁপে দিল।
অভি ওর কানে কানে বলল, "আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না পরী।"
পরী, "কথা দাও আমাকে যে আমাকে ছেড়ে দেবে না, আমাকে এই বিশাল নিষ্ঠুর পৃথিবীর মাঝে একা ছেড়ে যাবেনা। কথা দাও অভি।"
অভি, "আমি কথা দিচ্ছি পরী, আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাব না।"
দুজনে এঁকে অপরেকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে থাকে, একজন আরেকজনকে মিষ্টি আদরে করতে থাকে।
অভি মৃদুকনে পরীর কানে কানে বলে, "তুমি কি এইরকম ভাবে সারা দিন আমার কোলে চুপ করে বসে থাকবে, কিছুই কি বলবে না?"
পরী, "তোমার ভালবাসা আর আদর দিয়ে আমার হৃদয়টা পরিপুরন করে নিতে চাই আমি।"
অভির বুকের ওপরে তর্জনীর নখের আঁচর কেটে লিখে দেয় পরী, "আই লাভ ইউ।" অভি পরীর কানে কানে বলে, "আই লাভ ইউ টু হানি।"
পরী তারপরে ওর বুকের ওপরে নখ দিয়ে নিজের নাম লিখে দেয়, "শুচিস্মিতা!"
নিজের বুকে পরীর নামের দাগ অনুভব করে শিহরিত হয় অভিমন্যু।
"উম্মম কি মিষ্টি লাগছে তোমাকে..."
অভি পরীর ঘাড়ে হাত রেখে ওর মুখখানি আবার নিজের মুখের কাছে টেনে নেই, চেপে ধরে ঠোঁট জোড়া পরীর কোমল অধর ওষ্ঠের ওপরে। কামর বসিয়ে দেয় পরীর ঠোঁটের ওপরে, কেঁপে ওঠে পরী, অভির দাঁত ওর ঠোঁট জোরে কামড়ে ধরে। উন্নত বক্ষ পিষ্ট হয়ে যায় অভির প্রসস্থ বুকের ওপরে, কোমল উত্তপ্ত বক্ষের নরম মাংস লেপ্টে যায় অভির বুকের সাথে। পরীর ঘাড়ের থেকে সারা পিঠে হাত বলাতে থাকে অভি, পাতলা গায়ের কাপড় পরীর শরীরের কোমলাতে আর উষ্ণতাকে ঢেকে রাখতে পারেনা। কামনার স্ফুলিংগ যেন পাতলা কাপড় ফুঁরে বেড়িয়ে আসতে চেষ্টা করে। আধাখোলা ঠোঁটের মাঝে পরী ওর জিব বের করে অভির জিব চেটে দেয়, জিবের ডগা ঠোঁট ছাড়িয়ে নাকের ওপরে বিচরন করতে থাকে।
অভি মৃদুকনে বলে, "আমি তোমার সকাল প্রেমের আগুনে ভরিয়ে তুলবো।"
পরী ওর দিকে কাজল কালো নয়নে তাকিয়ে যেন জিজ্ঞেস করল, "আর কি করে ভরিয়ে তুলবে অভি?"
অভি পরীকে পাঁজাকোলা করে কোলে তুলে নিল, পরী ওর গলা জড়িয়ে ধরে থাকল। একবারের জন্য প্রেমের আলিঙ্গনে কোন ভাটা পড়তে দিল না দুজনে। অভি পরীকে যেই না বিছানার ওপরে বসিয়ে দিল, দুষ্টু পরী মিষ্টি হেসে পেছনে সরে গিয়ে নাক পর্যন্ত লেপটা টেনে নিজেকে ঢেকে নিল। এক টানে গায়ের গেঞ্জি খুলে ফেলল অভি। অভির প্রশস্ত ছাতি দেখে কেঁপে উঠল পরী। বুকের মাংস পেশি যেন পরীকে হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকছে। অভি পায়ের দিকে লেপ টেনে পরীকে লেপ থেকে বের করে নিতে চেষ্টা করে। পরী জোরে মাথা নাড়ায়, চোখ মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেছে, নাকের ফুটো বড় হয়ে গেছে পরীর, নাকের থেকে গরম নিঃশ্বাস নির্গত হতে থাকে। প্রেমের আগুনে দু চোখ চিকচিক করছে।
মৃদু শীৎকার দিয়ে অভির নাম ডেকে উঠল পরী, "অভিইইইই... না..."
"কি হল?"
আবার লেপ টানতে চেষ্টা করে অভি। পরী মাথা নাড়ায়, "না লেপ ছারব না, আমার লজ্জা করছে অভি। তুমি কেন গেঞ্জি খুলে ফেলেছ অভি, কি করবে আমার সাথে?"
অভি ওর পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে পরে, লেপের ভেতরে হাত দিয়ে পরীর বাঁ প্যে হাত রাখে, আস্তে আস্তে করে পায়ের পাতার ওপরে হাত বোলায়। মসৃণ কোমল ত্বকের ওপরে উত্তপ্ত হাতের ছোঁয়ায় পরী কেঁপে ককিয়ে ওঠে। আস্তে আস্তে লেপটা টেনে গায়ের থেকে সরিয়ে দেয় অভি। হাত জোড়া করে বুকের কাছে নিয়ে আসে পরী, প্রেমের আগুনে ঝলসানো চোখে দেখে অভিকে। অভি ওর পায়ের পাতা বুকের ওপরে চেপে ধরে, আলতো করে বুকের ওপরে যেখানে হৃদপিন্ডটি আছে সেখানে চেপে ধরে। তারপরে পায়ের ফর্সা বুড়ো আঙ্গুল টিকে মুখের মধ্যে নিয়ে চুষে দেয়। পায়ের ওপরে অভির ভেজা ঠোঁটের পরশে আর চুপ করে থাকতে পারে না পরী।
বুকের ওপরে হাত চেপে শীৎকার করে ওঠে পরী, "সোনা আমাকে মেরে ফেললে যে... অভি উফফফ..."
বাঁ হাত দিয়ে পরীর পায়ের ওপর থেকে কাপড় সরিয়ে দিল অভি, ধিরে ধিরে ফর্সা পায়ের মসৃণ বাঁকা পায়ের গুলি দিনের আলতে বেড়িয়ে পড়ল। পরী অভির কবল থেকে নিজের পা বাচানর চেস্টায় পা খানি টানতে চেষ্টা করল, কিন্তু অভি শক্ত করে পা খানি ধরে রয়েছে। অভি হাতের পাতা দিয়ে পায়ের গুলি আস্তে আস্তে করে আদর করতে থাকে, হাতের পাতায় অনুভব করে যে পরীর গায়ে কাটা উঠেছে, উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পরীর মসৃণ ত্বক। শরতের মিষ্টি হাওয়ায় দোলা খাওয়া গাছের পাতার মতন কাঁপতে থাকে পরী। থেকে থেকে মৃদু শীৎকার করে ওঠে পরী। দু’চোখ চেপে বন্ধ করা, লজ্জায় সারা মুখ লাল, বুকের কাছে দুহাত জোড়া করে চেপে ধরা।
পরী শীৎকার করে বলে ওঠে, "অভি প্লিস এবারে যদি তুমি আমার পা না ছাড় তাহলে আমি মরে যাবো সোনা।"
অভি ওর কথায় কান না দিয়ে ঝুঁকে পরে পায়ের পাতার ওপরে ঠোঁট ছোঁয়ায়, জিব বের করে চেটে দেয় আঙ্গুল থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত। আর থাকতে না পেরে, বিছানায় শুয়ে পরে পরী, পেটের ওপরে শুয়ে বালিসে মুখ গুঁজে দেয়। পিঠ ওঠা নামা করতে থাকে ভীষণ ভাবে, বুকের মাঝে যেন বিশাল ঢেউ বারংবার আছড়ে পড়ছে যেন। অভি বিছানায় উঠে ওর পাশে শুয়ে পরে।
ধিরে ধিরে পিঠের ওপর থেকে লেপ সরিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে। লম্বা চুল পরীর চওড়া পিঠের ওপর থেকে সরিয়ে দেয়। পরী বালিস টাকে খামচে ধরে তার ওপরে মুখ গুঁজে পরে থাকে, আসন্ন ভালবাসার আশঙ্কায়। অনাবৃত পিঠের ওপরে নখের আঁচর কেটে দেয় অভি, কাঁধের গোলায় আঙ্গুল রেখে পরীর গায়ের কাপড়ের পাতলা স্ট্রাপ টা সরিয়ে দেয়। সরু স্ট্রাপ কাঁধ থেকে নেমে আসে বাজুর ওপরে কিন্তু শুয়ে থাকার জন্য জামা খুলতে পারেনা অভি।
মাথা উঁচু করে পরী, চিবুক বালিশের ওপরে, দু’চোখ বন্ধ, হাত দুটি মাথার দুপাসে ভাঁজ করে রাখা। অভি ওর মসৃণ পিঠের ওপরে ঝুঁকে পরে শিরদাঁড়ার ওপরে চুমু খায়। উত্তপ্ত ত্বকের ওপরে ভিজে জিবের ডগা দাগ কেটে দেয়। অভির মনে হয় যেন ফুটন্ত ত্বকের ওপরে ওর জিব লেগেছে।
পরী ভেজা জিবের ছোঁয়া পেয়ে কেঁপে উঠে মৃদুকনে বলে, "আমাকে মেরে ফেললে যে সোনা। আমার সারা শরীরে কিছু হচ্ছে যেন সোনা..."
অভির তলপেটের নিচ থেকে আগ্নেয় গিরির লাভা ফুটতে শুরু করে দেয়। অভির সিংহ মাথা উঁচু করে নিজের অস্তিতের জানান দেয়। পরীকে নিজের ওপরে টেনে তোলে অভি। অভির বুকের ওপরে উঠে নিজেদের কে লেপের নিচে ঢেকে নেয় পরী। দিনের আলতে ওর চোখ খুলতে প্রচন্ড লজ্জা করে। পরীর সামনের সারা শরীর অভির শরীরের ওপরে, বুকের সাথে বুক লেপটে গেছে, পেটের সাথে পেট, জানুর সাথে জানু আর অভির সিংহ থেমে থাকতে পারেনা। অভির মাথার দু দিকে হাত ছড়িয়ে মুখের ওপরে মুখ নিয়ে আসে পরী। অভি নিচের দিক থেকে ওর কাপড় উঠিয়ে দেয় হাঁটু পর্যন্ত।
পরী দুই জানু ফাঁক করে অভির কোমরের দুপাসে ফেলে দেয়। নরম তলপেটের ওপরে অভির পুরুষ সিংহের মৃদু ধাক্কা ওর সারা শরীরে কামনার তীব্র আলোড়ন তোলে।
কুনুয়ের ওপরে ভর দিয়ে পরী নিজের ঊর্ধ্বাঙ্গ চেপে ধরে অভির বুকের ওপরে, মুখ খানি অভির মুখের সামনে, চোখ বন্ধ। অভি ওর জিব বের করে পরীর ঠোঁটের ওপরে বুলিয়ে দেয় আবার। কপাল নামিয়ে কপালের সাথে ঠেকায় পরী, নাকের ডগার সাথে নাক ঘসা খায়, চিবুকের সাথে চিবুক। অভির নখ পরীর পিঠে গেঁথে দেয়।
অভি ওকে চোখ খুলতে বলে, মৃদু মাথা নাড়ায় পরী, "না... অভি... আমার লজ্জা করে..."
সারা মুখে কামনার তীব্র ছটা। বুকের মধ্যে তব্র আলোড়ন, নরম বক্ষ পিষে যায় অভির নগ্ন ছাতির মাংস পেসির ওপরে। মাথার পেছনের চুল মুঠি করে ধরে মাথা তুলে ধরে অভি, মরালির ন্যায় গলার ওপরে ঠোঁট আর আলতো করে দাঁত বসিয়ে দেয় অভি।
পরী শীৎকার করে ওঠে, "পারছিনা... অভি... সোনা আমার..."
ফিসফিস করে অভি বলে, "আই লাভ ইউ পরী।"
ধিরে ধিরে চোখ খোলে পরী, যেন পদ্ম ফুল পাপড়ি মেলে ধরেছে। ঠোঁট জোড়া তিরতির করে কাঁপছে, থেকে থেকে কাঁপছে চোখের পাতা, দু’চোখ চিকচিক করছে প্রেমের বন্যায়, "কি করছ অভি, এত শয়তানি লুকিয়ে ছিল তোমার মধ্যে..."
অভি দুষ্টুমি সুরে বলে, "আর অবুঝের মতন কথা বল না সোনা, যেন তুমি কিছুই জানো না"
পরী, "তোমার শয়তানি আমাকে পাগল করে তুলেছে অভি। আমার হৃদয় টা এখুনি ফেটে পড়বে অভি।"
বুকের ওপরে পরীর বুকের ধুকপুক বুঝতে পারে, মনে হয় যেন খুব জোরে একটা রেল গাড়ি দৌড়চ্ছে। অভি ওকে বলে, "আমার বুকের ওপরে তোমার বুকের শব্দ শুনতে পাচ্ছি সোনা। তুমি আমার কি বুঝতে পারছ বল?"
তলপেটের ওপরে অভির সিংহ গর্জন করে চলেছে বারে বারে, সেটা অনুভব করে পরী বলে, "শয়তান ছেলে..... বলব না।"
অভি ওর মাথা ছেড়ে হাত নামিয়ে আনে পরীর পুরুষ্টু নিতম্বের ওপরে, থাবার মধ্যে পিষে ফেলে দুই নিতম্বের কোমল নারী মাংস, চেপে ধরে পরীর তলপেট নিজের লৌহ কঠিন সিংহের ওপরে।
একটা উত্তপ্ত নিঃশ্বাস ওর মুখ থেকে বেড়িয়ে পরে, "আহহহহ..."
নিতম্বের ওপরে অভির হাত বারে বারে খিমচে ধরে, শক্ত হয়ে ওঠে অভি, সিংহ বড় জ্বালাতন করছে তাঁর সাথে হাতের মাঝে পরীর কোমল নিতম্ব। আগুন নির্গত হতে থাকে দুজনার ক্ষুধার্ত শরীর থেকে। প্রেমের ক্ষীরোদ সাগরে দুজনে সম্পূর্ণ রুপে নিমজ্জিত। ধিরে ধিরে পরীর কাপড় উঠিয়ে দিল কোমরের ওপরে, চেপে ধরল সিংহ কে পরীর কোমল জানু মাঝে। কেঁপে উঠল পরী, নারী সুধার দোরগোড়ায় অভির সিংহের পরশ পেয়ে। সেই ভীষণ ঠাণ্ডায় দুজনের শরীর থেকে ঘাম ছুটছে। গায়ের কাপড় কিছুক্ষণের মধ্যে আর শরীরের ওপরে থাকে না, কোথাও যেন উধাউ হয়ে যায়।
ওকে জড়িয়ে ধরে পালটি খায় অভি, পরী নিচে আর অভি তার ওপরে। পেলব মসৃণ জানু ফাঁক করে পরী আহ্বান জানায় অভিকে, পা দুটি উঠে আসে অভির পায়ের ওপরে। দুহাতে খিমচে ধরে অভির মাথার চুল।
ধিরে ধিরে দু’জনে প্রবেশ করে প্রেমের স্বর্গোদ্যানে। বিয়াস নদীর তীরে মিলন ঘটে দুই তৃষ্ণার্ত কপোত কপোতীর। কেউই যেন সেই মিলন টাকে শেষ করতে চায় না, বারে বারে এঁকে ওপরে কে ঠেলে নিচে করে দেয়। ঘুরতে থাকে সারা বিছানার ওপরে। প্রথম মিলনের ক্ষণ একে অপরকে ভরিয়ে দিতে প্রয়াস করে। এই মধুর মিলন ওদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। কিছু মিষ্টি ব্যাথা আর প্রচুর অনির্বচনীয় সুখের রেশ টেনে একে অপরকে ভালবাসায় ভরিয়ে দেয়।
বাইরে কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে আর ঘরের ভেতরে সবে মাত্র আগ্নেয় গিরি থেকে লাভা নির্গত হয়েছে। জানালার নিচে বরফে ঢাকা। বাইরে সূর্যের মিষ্টি রোদ সারা আকাশে নেচে বেড়াচ্ছে। ঘরের ভেতরে, বিছানার ওপরে শীতকালের মিষ্টি রোদ খেলে বেড়াচ্ছে।
অভির ডান পাশে শুয়ে পরী, দুজনের গায়ের ওপর লেপ। ধবধবে সাদা বিছানার ওপরে শুয়ে আছে দু’জনে। অভির বুকের ওপরে পরীর মাথা, অভির পা আটকে আছে পরীর দুই জানুর মাঝে। অভি আদর করে পরীর পিঠে হাত বলাতে থাকে। পরী ওর বুকের ওপরে নখ দিয়ে আদর করে আঁচর কাটতে থাকে, মাঝে মাঝে ও নিজের নাম আর অভির নাম লিখে দেয় অভির প্রসস্থ বুকের ওপরে। পরীর মাথার চুলে নাক ডুবিয়ে বুক ভরে পরীর ঘ্রান নিয়ে নেয়। সারা টা সময়ে পরী একটি বারের জন্যও লেপটাকে ওদের শরীর থেকে সরাতে দেয় নি।
অনেকক্ষণ পরে মৃদু সুরে পরী বলে, "তুমি না একদম যা তা... খুব শয়তান ছেলে, আমাকে আছড়ে পিষ্টে পাগল করে তুলেছিলে..."
অভি, "কেন কি হল?"
পরী মুখ না উঠিয়েই বলে, "তুমি জানতে এই সব হবে তাই তুমি আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলে তাই না?"
অভি ওর কথা শুনে হেসে ফেলল, পরী আলতো করে একটি থাপ্পর মারে ওর বুকের ওপরে। আবার অভি ওর পিঠের ওপরে আঁচর কা্টে। পরী মৃদু কেঁপে ওঠে, "আবার শয়তানি... কোরও না প্লিস... এই ত করলে। আবার সুড়সুড়ি দিচ্ছ।"
কিছু পরে পরী বলে, "জানো অভি, জায়গাটা সত্যি খুব সুন্দর।"
অভি, "হ্যাঁ, তবে তোমার চেয়ে সুন্দর এই পৃথিবীতে আর কিছু নেই সোনা। তুমি কত নরম, কত তুলতুলে আর কত সিক্ত, আমি ত প্রায় মরে গেছিলাম তখন..."
ওর কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে পরী, বুকের ওপরে মুখ গুঁজে ছোটো একটি চুমু খেয়ে বলে, "চুপ করবে তুমি, একদম অইসব কথা বলবে না। আমার খুব লজ্জা করে অভি।"
ওর কথা শুনে বুকের আরও কাছে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পরীকে। পরী ফিসফিস করে বলে, "কত সুন্দর হত, ওই রকম উঁচু উচু গাছের মাঝে আমাদের একটা ছোট্ট বাড়ি হত। সামনে একটা ছোট্ট বাগান থাকত, সেই বাগানে আমি গোলাপ, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা ফুলের গাছ লাগাতাম। উঠানে একটা দোলনা থাকত আর রোজ বিকেল বেলায় সন্ধ্যের সূর্যকে বিদায় জানাতে জানাতে আমরা দু’জনে দোলনায় ঝুলতাম।"
অভি, "খুব সুন্দর পরী।"
পরী, "রোজ সকালে আমি তোমার জন্য চা নিয়ে আসতাম আর সকালে সূর্য কে আহ্বান জানাতাম ওই বাগানে বসে। পায়ের নিচে বিয়াস নদীর জল খেলে বেড়াত।"
অভি, "চা খেতে হলে টাকার দরকার, পরী।"
পরী মৃদু রেগে বুকে নাক ঘষে বলে, "যাও তুমি না একদম রোম্যান্টিক নও, আমি তোমার সাথে কথা বলব না।"
অভি, "সরি পরী, আমি তোমার সুখের স্বপ্ন টাকে ভেঙ্গে দিলাম বলে।"
আবার কিছুক্ষণ দু’জনে চুপ, খালি একে ওপরের আদর খেয়ে চলেছে। পরী ওকে জিজ্ঞেস করে, "অভি আমরা কি পুরোটা সময় এখানে থাকব না আর অন্য কোথাও বেড়াতে যাবো।"
অভি দুষ্টুমি করে উত্তর দেয়, "এই সাত দিনের কথা ত জানিনা সোনা, তবে আমি তোমার আলিঙ্গনে এই রকম ভাবে শুয়ে থাকতে চাই আর তোমাকে নিয়ে সারাক্ষণ খেলা করতে চাই।"
পরী এবারে আর বুকের ওপরে থাপ্পর না মেরে সোজা গালের ওপরে আলতো করে থাপ্পর মেরে বলে, "যাও শয়তান, আমি তোমার সাথে একদম কথা বলব না। আমাকে ছেড়ে দাও এবারে, তুমি সবসময়ে দুষ্টুমি করতে থাক।"
পরী যত নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে অভি ওকে আরও জোরে জড়িয়ে ধরে। জড়াজড়ি তে আবার মনে হল যেন দুজনের শরীরে আগুন ধরে গেল। পরী অভির সিংহের অস্তিত্ব নিজের জানুর ওপরে অনুবভ করতে পারল।
অভি পরীকে জিজ্ঞেস করল, "তুমি কি অন্য কোথাও যেতে চাও না এখানে থাকতে চাও?"
পরী, "এই জায়গাটা বড় সুন্দর, অভি। কিন্তু আসেপাশে যদি আরও কোন জায়গা থাকে তাহলে যেতে অসুবিধা কোথায়?"
অভি, "হুম... তাহলে দেখতে হবে এর আসেপাসে আর কি দেখার জায়গা আছে।"
পরী, "আই রিয়ালি লাভ ইউ অভিমন্যু।"
অভি, "উম্মম সোনা আই লাভ ইউ টু মাচ হানি।"
আবার দু’জনে জড়াজড়ি করে শুয়ে থাকল, কিছুক্ষণ পরে পরী মাথা তুলে বলল, "অভি..."
অভি, "কি?"
পরী, "এবারে আমাকে ছাড়, আমি স্নান করব।"
অভি, "যাও কে বারন করেছে।"
পরী, "না এই রকম ভাবে নয়।"
পরী হাত বাড়ায় নিজের জামার দিকে, অভি ওর জামা হাতের মধ্যে নিয়ে টেনে ধরে।
পরী, "প্লিস দিয়ে দাও সোনা।"
অভি, "রুমে আর কেউ নেই, এই রকমে চলে যাও।"
পরী, "আমার লজ্জা করে অভি, প্লিস আমার জামা দিয়ে দাও।"
অভি, "না দেব না।"
পরী ওর গালে থাপ্পর মেরে বলে, "সোনা প্লিস দিয়ে দাও না হলে..."
অভি, "না হলে কি..."
পরী, "না দিলে আমি কিন্তু আর আমাকে ছুঁতে পর্যন্ত দেব না।"
অভি, "আমি ছিনিয়ে নিতে জানি আমার জিনিস..."
পরী, "আর কি ছিনিয়ে নেবে তুমি, আমি ত সেইদিন থেকে শুধু তোমার হয়ে গেছিলাম।"
অভি, "কোন দিন?"
পরী, "বিয়ের রাতে বাসে আমার কপালে চুমু খেলে সেদিন থেকে, সেই ক্ষণ থেকে..."
অভি মিটিমিটি করে হাসতে থাকে, পরী আস্তে আস্তে বিছানা থেকে নেমে গেল। নেমে যাবার আগে লেপের ভেতরেই পরী গায়ে জামা গলিয়ে নিল। অভি উঠে বসল বিছানার ওপরে, পরী ওর মুখের ওপরে ঝুঁকে কপালে একটা ছোটো চুমু খেল। তারপরে চালে মত্ত ছন্দ তুলে নিজের জামাকাপড় নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল। বাথরুমে ঢোকার আগে, ডান হাতের তর্জনী ঠোঁটের কাছে এনে, তর্জনীর ডগায় আলতো চুমু খেয়ে, অভির দিকে নাড়িয়ে দিয়ে চলে গেল।
Posts: 420
Threads: 9
Likes Received: 434 in 312 posts
Likes Given: 217
Joined: Jan 2019
Reputation:
20
পরবর্তী অভিযান
সাঙলা উপত্যকার একদম শেষ প্রান্তে একটি ছোট্ট গ্রাম চিতকুল। চিতকুলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যে কোন মানুষকে বিমুগ্ধ করে দেবে। হোটেলের সামনে খালি ঘাসের মাঠ, তারপরে তুষারের ছিটে। বিয়াস নদীর বাঁ দিকের তীরে উঠেছে কিছু ছোটো ছোটো পাহাড়, সারা পাহাড়ের গায়ে বিশাল বিশাল পাইন দেবদারু আর শাল গাছ। মাথার ওপরে সূর্য কিন্তু রোদে যেন তেজ নেই, কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে নদীর দিক থেকে। সামনে কিছু দুরে বরফে ঢাকা একটি উঁচু পর্বত শৃঙ্গ। নদীর ডান দিকে উঠে গেছে একটি ঘাসে ঢাকা ন্যাড়া পাহার, পাহাড়ের মাথায় একটি গাছ যেন কঠোর পাহাড়ের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে। চিতকুলে বিশেষ বড় কোন হোটেল নেই, কিছু ছোটো ছোটো কাঠের বাড়ি আর কিছু ছোটো ছোটো দোকান। গরম কালে এখানে কিছু পর্যটক ঘুরতে আসে কিছু শীতকালে এই দুর্গম স্থানে কেউ ঘুরতে আসে না। আই.টি.বি.পি. র একটি ছাওনি আছে চিতকুলে। চিতকুল গ্রাম থেকে অনেক দুরে চিনের সীমানা শুরু, তার ওপরে তিব্বেত শুরু। পর্যটক শুধু মাত্র ওই ছাওনি পর্যন্ত যেতে পারে তার আগে আর কাউকে যেতে দেওয়া হয় না।
অভি আর পরী বিয়াস নদীর তীরে হাতে হাত রেখে ঘুরে বেড়াতে থাকে। পরীর পরনে তুঁতে রঙের শাড়ি, গায়ে ভারী সাদা জ্যাকেট আর গলায় শাল জড়িয়ে। কানে সোনার দুল, তাতে আবার দুটো পান্না জড়ানো।পরী ওর হাত বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে ওর দিকে মিটিমিটি করে হাসে। হাসিতে দু’গালে টোল পরে, আর সেই টোল দেখে অভির মনে হয় পরী যেন ঠিক স্বর্গের এক অপ্সরা। বারে বারে একটি চুলের গোছা ওর বাঁ গালের ওপরে চলে আসে আর বারে বারে পরী, বাঁ হাতের তর্জনী দিয়ে গোছা টাকে কানের ওপরে করে দেয়।
দুপুরের খাওয়ার সময়ে পরী নিরামিষ খেল। অভি ভাবল যে হয়ত জার্নির জন্য পরী নিরামিষ খেয়েছে, খাওয়ার ব্যাপারে বিশেষ কিছু জিজ্ঞেস করল না অভি। গল্প করতে করতে ওরা একে ওপরের ব্যাপারে অনেক কিছু জেনে নিল। পরীর প্রিয় রঙ তুঁতে। রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়তে আর শরৎচন্দ্রের ছোটো গল্প পড়তে খুব ভালবাসে। অভির প্রিয় লেখক শরৎচন্দ্রে। পরীর প্রিয় উপন্যাস শরৎচন্দ্রের "শ্রীকান্ত", গান ভালবাসে পরী, সেটা অভি বিয়ের দিনে দেখেছে যে পরী বেশ ভাল গান গায়। অভি ওর মুখের দিকে একমনে তাকিয়ে থাকে আর পরী ওর গল্প বলতে থাকে। অভি লক্ষ্য করল যে চিবুকে একটা ছোটো কাটা দাগ। অভি ওকে দাগটার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করাতে পরী জানায় যে ছোটো বেলায় একবার আম গাছে আম পাড়তে গিয়ে গাছ থেকে পরে যায় আর ওর চিবুক কেটে যায়। আরও অনেক গল্প করল দু’জনে মিলে।
বল্বিন্দার ওদেরকে জিজ্ঞেস করল যে ওরা আর কোথাও যাবে কিনা। অভি জানাল যে সেইদিন ওরা আর কোথাও বের হবে না। হোটেলের ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করাতে জানতে পারল যে, বেশ কিছু দুরে কারছাম ব্রিজ, তারপরে একটি জায়গা আছে নাম কল্পা। কল্পার নিচে রেকং পিও তে ওরা কেনাকাটি করতে পারে। পরীর চোখ চিকচিক করে উঠলো কেনাকাটির নাম শুনে। রেকং পিওর পরে স্পিতি উপত্যকা, হিমালয়ের মাঝে একটি হিমশীতল মরুস্থান। রাস্তা ঠিক থাকলে ওরা নাকো যেতে পারবে। পরী ওর দিকে তাকাল, অভি বুঝতে পারল যে পরী নাকো যেতে চায়। নাকো সমুদ্রতল থেকে প্রায় বারো হাজার ফুট উঁচুতে, সেখানে হিমের মতন ঠাণ্ডা পড়বে জানিয়ে দিল ম্যানেজার। পরীর নাক যেন কোন দুঃসাহসিক অভিযানের গন্ধ পেল, অভিকে আলতো ধাক্কা মেরে বুঝিয়ে দিল যে নাকো যেতে চায়।
খাবার পরে আবার ওরা নদীর তীরে গিয়ে বসে। পরীকে কোলে করে একটা বড় পাথরের ওপরে বসে অভি। অভির হাত বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে থাকে।
পরী, "নদিটা যেন গান গাইছে, জানো?"
অভি ওর মুখের দিকে চেয়ে বলে, "ধর আমরা যদি আর ফিরে না যাই। কেউ জানেনা আমরা এখানে আছি, সবাই ভাববে যে আমরা কোথাও হারিয়ে গেছি।"
বুকের ওপরে মাথা রেখে উত্তর দিল, "জীবন কোন পটে আঁকা ছবি নয়, অভি। আমাদের দু’জনেরই পরিবার আছে, যারা অধির উৎকণ্ঠায় আমাদের ফেরার পথ চেয়ে বসে আছে।"
অভি একটু ম্লান সুরে বলে, "মাঝে মাঝে আমার মনে হয় যে মা আমাকে একদম ভালবাসে না।"
চোখ তুলে ওর ম্লান মুখের দিকে তাকায় পরী, জিজ্ঞেস করে, "এই রকম কথা কেন বলছ?"
অভি, "মা বাবা আমার প্রতি সারা জীবন ভীষণ কড়া, তারপরে তুমি এলে মায়ের জীবনে। আজকাল ত মা সবসময়ে শুধু তোমার কথাই বলে।"
মিষ্টি হেসে পরী ওকে শান্ত করার চেষ্টা করে, "সব মা তার সন্তানকে ভালবাসে অভি। আমার ছোটো মা খুব ভাল, অভি, আর তুমি আমাকে ঈর্ষা করো?"
অভি, "আমি জানি উনি তোমার ছোটো মা, কিন্তু মা সবসময়ে যেন ভালবাসা কে পয়সা দিয়ে বিচার করে। সবসময়ে আমাকে শোনাতে ছাড়ে না যে আমার পেছনে কত খরচ করেছেন। আমার পেছনে যে হেতু উনি টাকা খরচ করেছেন সেহেতু আমি ওদের কথা সর্বদা শুনব এই চান তারা।"
পরী বুঝতে পারল অভির মনের কষ্ট, সুন্দর স্বরনালী সন্ধ্যে টাকে নষ্ট করতে মন চাইল না পরীর। ও কথা ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করল, "আচ্ছা, অভি, আমরা পুরো সময়টা কি এখানে ঘুরে কাটিয়ে দেব?"
ওর কথা শুনে অভি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উত্তর দিল, "মহারানী যেখানে আজ্ঞা করবেন সেখানে যাওয়া যাবে। আপনি যদি আগে যেতে চান তাহলে তাই হবে। আজ সোমবার, আমরা এখানে দুই রাত আরও কাটাতে পারি, মাঝে একদিন রেকংপিও তে গিয়ে তোমার কেনাকাটা ও সারা যাবে। তারপরে বুধবার নাগাদ আমরা বেড়িয়ে পড়ব নাকোর উদ্দেশ্যে। সেখানে শুক্রবার পর্যন্ত কাটিয়ে, শনিবার ফিরে আসব। কাল্কা পৌঁছনর আগে মাঝে কোথাও রাত কাটিয়ে দেব। রবিবার আমরা কাল্কা পৌঁছে যাব ঠিক তোমার ট্রেন ছাড়ার আগে। কেমন লাগল আমার পরিকল্পনা।"
পরী ওর কথা শুনে হাতের ওপরে চুমু খেয়ে বলে, "উম্মম্ম দারুন পরিকল্পনা। তোমার মাথা সত্যি দারুন।"
কিছুক্ষণের মধ্যেই সূর্য ডুবে গেল, শীতের সন্ধ্যে আর পাহাড়ের কোলে অন্ধকার, খুব তাড়াতাড়ি ওদেরকে আচ্ছন্ন করে ফেলল। নদীর তির ছেড়ে ওরা হোটেলে ঢুকে পড়ল। হোটেলের রুমে কোন টি.ভি. নেই তাই বিকেল বেলা চুপ করে বসে গল্প করা ছাড়া আর কিছু করার থাকেনা। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাপমান শূন্যর নিচে চলে গেল, রুমের ভেতরে দু দুটি হিটার জ্বলছে তা সত্তেও ঠাণ্ডা যেন বেড়েই চলেছে। পরীর ঠোঁটে হাসি লেগে আর চিতকুলের কথা।
কিছু পরে ম্যানেজার ওদের রুমে এসে রাতের খাবারের কথা জিজ্ঞেস করল, রাতে কি খাবে ওরা, চিকেন না মাটন। পরী জানাল যে ও নিরামিষ খাবে। সকালে নিরামিষ খেয়েছে আবার রাতে নিরামিষ খাবে শুনে অভির কেমন যেন খটকা লাগল।
পরী কে জিজ্ঞেস করল অভি, "দুপুরে নিরামিষ খেয়েছ সেটা না হয় বুঝলাম যে জার্নির ধকল গেছে তাই, কিন্তু রাতে নিরামিষ?"
পরী সুন্দর একটি হাসি দিয়ে উত্তর দিল, "তোমার জন্য অভি। সোমবার শিবের ব্রত রাখব আজ থেকে, সেই দিন পর্যন্ত রাখব যেদিন..."
কথাটা বলতে গিয়ে গলা ধরে এল পরীর, দু’চোখ একটু জলে চিকচিক করে উঠলো।
অভি ওকে জড়িয়ে ধরে বলল, "যাঃ বোকা মেয়ে, এর জন্য কাঁদে নাকি... ধুর আমি ত তোমার পাশে আছি।"
রাতের খাওয়ার শেষে পরী একটা হাল্কা নীল রঙের স্লিপ পরে নিল, ঠাণ্ডার জন্য গায়ে ভারী গাউনটা চড়িয়ে নিল। ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে মুখে রাতের প্রসাধনি মাখতে থাকে আর মাঝে মাঝে আয়নায় অভির দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে। অভি পেছন থেকে দেখে পরীর নধর শরীর টিকে। পিঠের ওপরে ঢেউ খেলা কালো চুলের রাশি নেমে এসেছে কোমর পর্যন্ত। চওড়া পিঠ ক্রমশ সরু হয়ে আসে পাতলা কোমরে তারপর ফুলে ওঠে। ত্বকের সাথে যেন লেপটে আছে পাতলা স্লিপ টা। পরীর অঙ্গের প্রতিটি বাঁক, প্রতিটি রেখা যেন ফুটে উঠেছে কাপড়ের ভেতর থেকে। ওই দৃশ্য দেখে বুকের ভেতর টা কেমন যেন করে উঠল অভির, মনে হল যেন দৌড়ে গিয়ে ওই পিঠের ওপরে চুমু খায়। ঠোঁট দুটি চুম্বনের ইশারা করে একটা ছোট্ট চুমু ছুঁড়ে দেয় ওর দিকে আর অভি সেটা লুফে নিয়ে বুকের ওপর চেপে ধরে। আঙ্গুল নাড়িয়ে পরীকে তাড়াতাড়ি শুতে আসতে আহ্বান জানায়। পরী মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয়, "সোনা একটু সবুর কর।"
এমনিতে অভি ডায়রি লেখে না, তবে ওর কাছে একটা খুব পুরানো ডায়রি আছে যেটাতে ও ছোটো বেলায় কবিতা বা ছোটো ছোটো গল্প লিখত। অভি সেই ডায়রিটা সঙ্গে এনেছিল, ভেবেছিল পরীর সাথে এই ভ্রমন কাহিনী লিখে রাখবে ওই ডায়রিতে। যখন ওরা বুড়ো হয়ে যাবে, তখন দুজনে মিলে একসাথে বসে পড়বে ওই ডায়রি আর এই সব সুন্দর দিন গুলর স্মৃতি চারন করবে।
প্রসাধনি শেষে, গায়ের গাউনটা খুলে ওর পাশে শুতে চলে এল পরী। অভির বাঁ দিকে শুয়ে ওর বুকের ওপরে মাথা রেখে ওর বাজু জড়িয়ে ধরল। বাজুর ওপরে অভি পরীর কোমল বুকের পরশ অনুভব করল।
পরী ওকে লিখতে দেখে জিজ্ঞেস করল, "কি লিখছ অভি?"
অভি, "আমাদের এই ভ্রমন কাহিনী লিখছি।"
পরী, "তুমি সাধারণত ত ডায়রি লেখ না, তাহলে?"
অভি, "হ্যাঁ আমি ডায়রি লিখি না ঠিকই, কিন্তু কেন জানিনা মনে হল এই ভ্রমন কাহিনী টা লেখা দরকার। মনে হল যে যখন আমাদের বয়স হয়ে যাবে, তখন হয়ত আমরা এই ডায়রি পরে এই সুন্দর ভ্রমনের কথা স্মৃতিচারণ করব।"
"তুমি খুব মিষ্টি" কিছু থেমে, বুকের ওপরে আঁচর কেটে বলে, "আচ্ছা আমার যখন বুড়ো হয়ে যাব, তখন আমাকে নিয়ে এখানে আসবে তুমি? আমি যদি তখন তোমাকে বলি যে এখানে আমার জন্য একটা কুঁড়ে ঘর বানিয়ে দাও তাহলে তুমি সেটা বানিয়ে দেবে?"
ডায়রি লেখা শেষ করে অভি ওকে জড়িয়ে ধরল। স্লিপের সামনের অংশ অনেকটা কাটা থাকার ফলে পরীর উন্নত বক্ষ যুগলের অধিকাংশ অনাবৃত ছিল, আর অভি ওর বাজুতে উষ্ণ ত্বকের স্পর্শ অনুভব করছিল। হাত দিয়ে পরীর কোমরের কোমলতা নিয়ে আদর করছিল অভি আর মাঝে মাঝে ওর নরম নারী মাংস টিপে দিচ্ছিল। মৃদু পেষণে পরীর শরীরের উত্তাপ ধিরে ধিরে বেড়ে উঠছিল। পরী ওর খালি বুকের ওপরে নখের ডগা দিয়ে আঁচর কাটতে থাকে, মাঝে মাঝে নাম লিখতে থাকে বুকের শক্ত পেশির ওপরে।
পরী, "মাঝে মাঝে আমার ছোটো বেলার কথা মনে পরে। তুমি হামাগুরি দিয়ে সারা বাড়ি বেড়াতে আর আমি তোমার পেছন পেছন দৌরাতাম। তারপরে যখন একটু বড় হলে তখন আমি তোমাকে টেনেটেনে নিয়ে যেতাম আমার সাথে।"
চুলের মধ্যে নাক গুঁজে বুক ভরে পরীর গায়ের গন্ধ নিল অভি। চুলের কিছু গোছা ওর মুখের ওপরে পড়েছিল, আঙ্গুল দিয়ে সরিয়ে দিল অভি যাতে চাঁদ টাকে আরও ভাল করে দেখা যায়।
পরী, "একদিনের কথা আমার খুব মনে আছে। তুমি সবে হাঁটতে শিখেছ আর আমি তোমাকে নিয়ে সারা বাড়ি খেলে বেড়াতাম, তোমার সাথে যেন আমার কত গল্প হত। সেই সব মাথামুণ্ডু হীন গল্প। একদিন আমি তোমাকে টানতে টানতে নিয়ে গেছিলাম পুকুর পারে, আমি একটা পুতুলের ঘর বানিয়েছিলাম সেটা তোমাকে দেখাব বলে। তুমি তখন ছোটো ছিলে, কিছুই বুঝতে না, তুমি এক লাথি মেরে আমার সেই পুতুলের ঘর ভেঙ্গে দিলে। আমি তাঁর স্বরে চেঁচিয়ে কান্না শুরু করে দিলাম আর তোমাকে মারতে শুরু করলাম। তুমিও মাটিতে বসে কান্না জুড়ে দিয়েছিলে। ইন্দ্রানিদি আমাদের কান্না শুনে দৌড়াতে দৌড়াতে পুকুর পাড়ে আসে আর তোমাকে কোলে তুলে আমাকে খুব বকতে শুরু করে দেয়। আমাকে ছেড়ে দিয়ে তোমাকে কোলে নিয়ে ইন্দ্রানিদি বাড়ির মধ্যে চলে যায়, আমি একা একা ওখানে বসে কাঁদতে থাকি। ছোটো মা সেই দিন কলেজ যাননি, আমার কান্না শুনে দৌড়ে আমার কাছে আসে আর আমাকে কোলে তুলে নেয়। আমাকে সান্তনা দিয়ে বলেন যে যখন আমরা দু’জনে বড় হব আর বুঝতে শিখব, তখন তুমি আমার জন্য একটা পুতুলের ঘর বানিয়ে দেবে। আমি কান্না থামিয়ে ছোটো মাকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খাই।"
অভি, "হুম বুঝলাম যে তোমার ছোটো মা তোমাকে খুব ভালবাসে।"
পরী গলা একটু ধরে আসে, চোখ তুলে অভির মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, "অভি আমাকে আমার সেই পুতুলের ঘর বানিয়ে দেবে, যেখানে শুধু আমরা দু’জনে থাকব?"
পরীকে জড়িয়ে ধরে উত্তর দিল, "আমি তোমার সেই পুতুলের ঘর বানিয়ে দেব।"
অভি জানেনা এই প্রেমের কি পরিণতি হবে, কিন্তু পরীর কাজল কালো চোখে জল দেখে অভি কথা দিয়ে দিল। ইট কাঠ পাথর দিয়ে মানুষ বাড়ি বানাতে পারে কিন্তু ঘর বানাতে মানুষের ভালবাসার দরকার পরে আর অভির বুকের কাছে ওর ভালবাসা শুয়ে। দু’জনে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ল।
পরের দু’দিন কেটে গেল চিতকুলে ঘুরে আর একে অপরের বাহু পাশে। বিনা বাধায় ওরা প্রেমের উদ্যানে কপোত কপোতীর মতন উড়তে থাকে। দু’জনের মনে মিলনে কোন বাধা থাকে না। লাজুক পরী কিন্তু একবারের জন্যেও অভিকে ওর সুন্দর শরীর দর্শন দেয়নি। প্রত্যেক মিলনের সময়ে গায়ে লেপ ঢাকা থাকত, অভি কোনমতেই পরীর লজ্জা খন্ডন করতে পারেনি। সময়ের সাথে দু’জনের মনে হল যেন দুজনের বুকের মাঝে হৃদয়ের মধ্যে এক আত্মা বইছে, শরীর আলাদা কিন্তু এক প্রান। অভি তৈরি সারা পৃথিবীর সাথে লড়াই করে পরীকে জিতে নেবার জন্য। প্রত্যেক সকালে যেন এক নতুন পরী বিছানা থেকে ওঠে। প্রত্যেক বার যখন পরী ওর দিকে তাকিয়ে হাসে তখন যেন মনে হয় যে হাসিটা কত নতুন কত মিষ্টি। চোখের চাহনি যেন আগের চেয়ে বেশি করে প্রেম ঝরিয়ে ওর দিকে তাকায়। আদর যেন আগের চেয়ে বেশি নিবিড় বেশি ঘন। বারে বারে যখন ওরা মিলন সাগরে ডুব দেয় তখন মনে হয় যেন পরীর আগের চেয়ে বেশি উত্তপ্ত আর বেশি সিক্ত। অভি যেন প্রত্যেক বার আগের চেয়ে বেশি কঠিন আর বেশি উত্তপ্ত হয়ে যায়। চুম্বনে যেন আগের চেয়ে বেশি তিব্রতা, কামনার আগুন যেন প্রত্যেক বার নতুন করে জ্বলে ওঠে। বারে বারে পরীকে জড়িয়ে ধরে যেন পিষে ফেলে বুকের সাথে মিশিয়ে নিতে চায়। শরীরের থেকে নির্গত ঘাম আর মধু মিশে একাকার হয়ে যায়।
বৃহস্পতি বার সকাল বেলা ওরা চিতকুল থেকে রওনা দেয় নাকোর পথে। অভি পরীকে বলে দিল যে নাকো তে হয়ত চিতকুলের চেয়ে বেশি ঠাণ্ডা পড়তে পারে, কিন্তু পরী নাছরবান্দা, নাকো সে যাবেই। কিছু পরে গাড়ি কারছাম ব্রিজে পৌঁছে গেল। বিয়াস নদীর তুঁতে রঙের জল দেখে পরী অভিভুত, আগের বার যখন দেখেছিল তখন সন্ধ্যে নেমে এসেছিল। এবারে দিনের আলোতে নদীর জল দেখে পরী বেশ খুশি।
সূর্যের আলোয় একটু যেন তেজ। বল্বিন্দার তাঁর পটু হাতে গাড়ি চালাচ্ছে। আঁকা বাঁকা পথে গাড়ি পাহাড়ের গা বেয়ে এগিয়ে চলেছে। কিছু পরে ওরা পোয়ারি পৌঁছে গেল। পোয়ারি তে জানতে পারল যে অটাই শেষ পেট্রল পাম্প সুতরাং বল্বিন্দার গাড়ি থামিয়ে তেল ভরে নিল। দুপুর এগারটা নাগাদ ওরা রেকং পিও পৌঁছে গেল। রেকং পিও পাহাড়ের কোলে বেশ সাজান গোছান একটি ছোটো শহর। দোকান পসার দেখে পরীর মন চঞ্চল হয়ে উঠল, ওর অনেক কেনাকাটা করতে হবে। বিশেষ করে ছোটমা’র জন্য আর দিদার জন্য কিছু কিনবে।
একটি দোকানে দাঁড়িয়ে কিছু স্টোল দেখতে দেখতে পরী অভিকে জিজ্ঞেস করে, "এই টা কেমন দেখতে?"
মাথা নাড়াল অভি, "হ্যাঁ ভালো দেখতে, তোমার গায়ের রঙের সাথে বেশ মানাবে।"
স্টোলটা গাড় নীল রঙের ওপরে সোনালি সুতোর কাজ করা ছিল। পরীর সেটা দেখে হয়ত ঠিক পছন্দ হল না, মাথা নেড়ে নাক কুঁচকে বলল, "না গো ভাল নয়।"
তারপরে আরও কিছু স্টোল দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল সেগুলো কেমন। বেচারা অভি প্রত্যেক টি দেখে আর মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয় যে ভালো দেখতে। মেয়েদের কেনা কাটার ব্যাপারে ও অনভিজ্ঞ।
পরী ওর দিকে রেগেমেগে তাকিয়ে বলে, "তুমি একদম আমার দিকে দেখছ না। যা দেখাই তাতেই খালি গাধার মতন মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলছ। কিছু একটা বল কোনটা কিনব।"
অগত্যা অভি একটা স্টোল দেখিয়ে বলে, "এটা কেনো।"
সেটাও পরীর পছন্দ হয় না, অভি শেষ পর্যন্ত রেগে গিয়ে বলে, "কিনবে তুমি, পড়বে তুমি। আমি কি করে তোমার মনের কথা জানব, কোনটা তোমার ভাল লাগবে আর কোনটা মন্দ? যা ইচ্ছে হচ্ছে কিনে নাও নিজের জন্য।"
পরী একটু রেগে যায়, কোন রকমে একটা স্টোল কিনে নেয় নিজের জন্য। অভিকে বলে মায়ের জন্য কিছু কিনতে। অভি জানায় যে ওর কেনা কাটা বিশেষ ভাল লাগে না। যে কবার ও বেড়াতে গেছে কোন বার কারুর জন্য কিছু কিনে নিয়ে যায়নি।
পরী ওকে বলে, "অভি স্বভাব পাল্টাও, এবারে আমি এসে গেছি। কোথাও বেড়াতে গিয়ে যদি আমার জন্য কিছু না নিয়ে আস তাহলে কিন্তু ঘরে ঢুকতে দেব না।"
হেসে ফেলে অভি, "ওকে বাবা, তোমার কথা আলাদা। তোমার জন্য কিনব না সেটা কি হতে পারে।"
পরী, "হ্যাঁ হ্যাঁ, অনেক হয়েছে, এখুনি তার একটা ছোটো নমুনা দেখিয়ে দিলে।"
কেনা কাটা সেরে পরীকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে বসতে বলে কোথাও চলে গেল। পরীর জন্য একটা ছোটো বুদ্ধের মূর্তি কিনল আর সেটা নিজের জ্যাকেটের পকেটে লুকিয়ে রাখল। নাকো পৌঁছে ওকে অবাক করে দেবে অভি।
রেকং পিও তে দুপুরের খাবার সেরে ওরা যাত্রা শুরু করল নাকোর দিকে। বল্বিন্দার জানাল যে ঘন্টা তিন চার লাগবে রেকং পিও থেকে নাকো পৌঁছতে। কিছু পরে স্পিলো নামে একটি জায়গার পরে পাহাড়ের রঙ বদলে গেল। আগে দুপাসের পাহাড় ছিল সবুজে ঢাকা, কোথাও ঘাস কোথাও গাছ। কিন্তু এখন দুপাসের পাহাড় ন্যাড়া, ধুসর রঙ। রাস্তার অবস্থা বিশেষ ভালো নয়। রাস্তার বড় পাথুরে আর ভঙ্গুর, কোথাও কোথাও রাস্তা একপাস ভেঙ্গে নিচে শতদ্রু নদীতে মিশে গেছে। একদিকের পাহাড় থেকে ঝুরঝুর করে নুড়ি পাথর আর বাল ঝরে পড়ছে। বল্বিন্দার খুব সাবধানে সেই ভঙ্গুর সাঙ্ঘাতিক রাস্তা দিয়ে অতি সাবধানে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
Posts: 420
Threads: 9
Likes Received: 434 in 312 posts
Likes Given: 217
Joined: Jan 2019
Reputation:
20
27-02-2019, 04:55 PM
(This post was last modified: 27-02-2019, 05:02 PM by sorbobhuk. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
পরী সিটের অপ্রএ পা তুলে আমার করে অভির গা ঘেঁসে বসে আছে আর জানালার বাইরের অধভুত সৌন্দর্য দেখে চলেছে। নিচের পাহাড় আর এখানকার পাহাড়ে অনেক বিসম্যতা। কিছু পরে ওদের গাড়ি খাব ব্রিজে পৌঁছে গেল। সেখানেও দুটি নদীর মিলন দেখে পরী অবাক হয়ে গেল।
অভিকে জিজ্ঞেস করল, "এই নদীর নাম কি?"
যে নদী টা শতদ্রু তে এসে মিশেছে সেই দিকে দেখিয়ে অভি জানাল, "ওটা স্পিতি নদী।"
অবাক হয়ে প্রশ্ন করে পরী, "তুমিত আগে এখানে কোন দিন আসনি, তাহলে এত সব জানলে কি করে? সত্যি বল, তুমি আগে এসেছিলে কিন্তু আমাকে জানাচ্ছ না।"
অভি, "না সোনা, আমি এখানে আগে কখন আসিনি, বিশ্বাস করও। আমি জানতাম যে তুমি আমাকে কয়েক হাজার প্রশ্ন করবে তাই আগে থেকে এই জায়গার ব্যাপারে পড়াশুনা করে এসেছিলাম।"
গালে চুমু খেয়ে বলল, "তুমি ভাব্লে কি করে যে আমি তোমাকে বিশ্বাস করব না। আমি নিজের চেয়ে বেশি তোমাকে বিশ্বাস করি ছোট্ট রাজকুমার।"
ওর আদরের ডাক শুনে অভি একটু রেগে যায়, "আমি এখন বর হয়ে গেছি, আর আমি তোমার সেই ছোটো রাজকুমার নই। আমাকে ওই নামে আর ডাকবে না।"
পরী, "তুমি বুড়ো হয়ে গেলেও আমি তোমাকে ওই নামে ডাকবো ছোট্ট রাজকুমার।"
অভি ওকে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে ফিসফিস করে বলে, "রাতের ওই খেলার পরেও তুমি আমাকে ছোট্ট রাজকুমার নামে ডাকতে চাও?"
পরী ওর গালে আলতো করে থাপ্পর মেরে বলে, "যাও তোমার সাথে কথা বলব না।"
আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অভি, "তুমি না সত্যি খুব মিষ্টি। এত মিষ্টি খেতে খেতে আমি বুড়ো হয়ে যাব তাও যেন শেষ হবে না।"
পরী লজ্জায় লাল হয়ে গেল, "তুমি শয়তানি করা ছারবে না আমি নদিতে ঝাপ দেব।"
অভি ওর ঠোঁটের সামনে ঠোঁট এনে বলে, "উম্মম... আমার পরী দেখি লজ্জা পায়।"
পরী ওর দিকে বড় বড় লাজুক চোখে তাকিয়ে বলে, "থাম অভি, আমরা গাড়িতে।"
অভি, "ওকে আমি থামবো, কিন্তু তার বদলে কি পাব?"
পরী, "বর্তমানে কিছু না, তবে পরে আমি ভেবে দেখব।"
খাব ব্রিজ পার করে গাড়ি একটি সরু রাস্তা দিয়ে পাহাড়ের গা বেয়ে উঠতে শুরু করে। রাস্তা বড় খাড়া, পাহাড়ের কোল কেটে তৈরি সেই রাস্তা। কোন কোন জায়গায়, মাথার ওপরে পাহাড়ের ছাদ তার নিচ দিয়ে রাস্তা। ওই অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে যায় পরী, এ কিরকমের রাস্তা, অভির বুকের ধুকপুকানিও একটুর জন্য বেড়ে যায়। কিন্তু পরীর মুখ দেখে নিজেকে শান্ত করে পরীকে জড়িয়ে ওকে ভয় পেতে বারন করে। পরী ওর বুকের কাছে এসে জড়সড় হয়ে বসে। কিছু দূর যাবার পরে রাস্তা খাড়া চরাই চরতে শুরু করে। পরীর সারা গায়ে কাটা দেয়।
পরী, "অভি, একি সাঙ্ঘাতিক সুন্দর রাস্তা। আমরা কি পাহারে চরে একবার থামব প্লিস, আমি নিচে দেখতে চাই একবার।"
বল্বিন্দার পরীর ভয় বুঝতে পেরে উত্তর দেয়, "ভাভিজি, বল্বিন্দার যতক্ষণ সাথে আছে ততক্ষণ চিন্তা করবেন না।"
পরী শুধু ভাভিজি কথাটা বুঝতে পারল, বল্বিন্দারের দিকে লাজুক চোখে তাকিয়ে হেসে দিল। পাহাড়ের ওপরে উঠে বল্বিন্দার গাড়ি থামাল। ওরা গাড়ি থেকে নেমে একদম ধারে গিয়ে নিচে স্পিতি নদীর দিকে দেখল। অনেক নিচে সরু একটা ময়াল সাপের মতন এঁকে বেকে বয়ে চলেছে স্পিতি নদী, জলের রঙ বড় ঘোলাটে। পরীর চোখ বিস্ময়ে বড় বড় হয়ে উঠেছে, সাথে সাথে অভি বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে কত নিচ থেকে ওরা উঠেছে।
পরী ওকে বলল, "জানো আমার কি মনে হয়, এখানে কোন টুরিস্ট আসে না বা লোকজন থাকে না।"
অভি মাথা নাড়ল, হ্যাঁ তাই মনে হচ্ছে। এতক্ষণ গাড়ি চলল কিন্তু রাস্তায় অন্য কোন গাড়ির দেখা পায়নি ওরা, না সামনে থেকে না পেছন থেকে। একবারের জন্য হলেও অভির মনে ভয় ভর করল, যদি এই নির্জন দুর্গম জায়গায় ওদের সাথে কিছু অঘটন ঘটে তাহলে কোন বাড়ির কেউ খোঁজ পাবেনা এমন কি হয়ত শরীরের শেষ অংশ টুকুও খুঁজে পাবে না।
নাকো ঢোকার আগে রাস্তার দুপাসে বেশ উঁচু উঁচু কাঠের থামে অনেক রঙ বেরঙের পতাকা বাঁধা, হাওয়ায় পতাকা গুলো পত পত করে উড়ছে। পরী জিজ্ঞেস করল যে ওই পতাকা গুলো কিসের, অভি জানত না ওই পতাকা গুলো কিসের জন্য বাঁধা, পরে হোটেলের লোককে জিজ্ঞেস করে জেনেছিল যে পতাকা গুলো বৌদ্ধ ধর্মের মানুষের জন্য। ওই পতাকা গুলর ওপরে বুদ্ধের বানী লেখা আছে।
নাকো পৌঁছতে পৌঁছতে প্রায় বিকেল চারটে বেজে গেছিল। নাকো অনেক উঁচুতে, চারপাসের পাহাড় যেন নাকোর পাশে বাচ্চা, ওরা যেন খুব উঁচু একটা ছাদে উঠে আসে পাশের পাহাড় দেখছে। দিনের পড়ন্ত আলোর সাথে সাথে চারপাসের কন কনে ঠান্ডা হাওয়া ওদের কাঁপিয়ে দিল। নাকোর উচ্চতায় চারপাশে গাছ পালা খুব কম, ওখানকার মানুষ কিছু টা কৃষি নির্ভর আর কিছু টা পরিব্রাজকের ওপরে নির্ভর। পরে ওরা জানতে পারে যে ওখানকার মানুষ, মটরশুঁটি, ফুলকপি, আলু ইত্যাদির চাষ করে।
শীতকালের সেই সময়ে হোটেল পেতে ওদের কোন আসুবিধা হল না, খুব সহজেই ওরা রুম পেয়ে গেল কেননা ওটা ভ্রমণের মরশুম নয় এবং এই জায়গায় খুব কম পর্যটক ঘুরতে আসে। অভি জিজ্ঞেস করল যে নাকোতে বরফ পাত হয় কিনা, ম্যানেজার জানাল যে বছর বছর বৃষ্টি হয় না এখানে ত বরফ কি করে পড়বে। কিন্তু শীতের সময়ে এখানে তাপমান শূন্যের চেয়ে অনেক নিচে নেমে যায়। ওদের কে সাবধান করে দিল যে রাতে যেন বাইরে না বের হয়, ঠান্ডার চোটে শরীর খারাপ হয়ে যেতে পারে। রুমের মধ্যে একটা কাঠের ফায়ারপ্লেস ছিল আর অনেক জ্বালানি কাঠ। এখানে বিজলি বাতির বেশ সমস্যা। একবার বিজলি চলে গেলে আসতে বেশ কয়েক দিন লেগে যায়।
অভি ঠিক করল যে রাতের খাবার পরে পরীকে সেই বুদ্ধের মূর্তিটা উপহার দিয়ে চমকে দেবে। কিন্তু এই উচ্চতা আর লম্বা রাস্তা পরী খুব ক্লান্ত করে দিয়েছে। বেচারা পরী রাতে ঠিক ভাবে কিছু না খেয়ে শুয়ে পড়ল। অভির মনে একটু ভয় ঢুকল, একদম কাছের শহর রেকং পিও, নাকো থেকে প্রায় ঘন্টা চারেকের রাস্তা, পরীর কিছু হলে বেশ মুশকিলে পড়তে হবে। অভি ওর সাথে প্রাথমিক কিছু ওষুধ পত্র এনেছিল, গায়ে ব্যাথার ওষুধ খেয়ে খেয়ে পরী লেপ মুরি দিয়ে শুয়ে পড়ল।
পরীর দাঁত ঠান্ডায় কাঁপতে লাগল, "অভি, আমার খুব শীত করছে।"
অভির একবার দুষ্টুমি করার মন হল, "দাড়াও আমি তোমাকে আবার গরম করে দিচ্ছি।"
পরী ওর মনব্রিতি বুঝতে পেরে চিৎকার করে ওঠে, "অভি না, আমি খুব ক্লান্ত, আমার শরীর খারাপ লাগছে। তুমি না ভীষণ শয়তান ছেলে।"
অভি, "দেখ আমি ত শয়তানি এখনো করিনি কিন্তু তোমার মাথায় শুদু দুষ্টুমির কথা ঘুরে বেড়ায়। তাহলে কে বেশি দুষ্টু মিষ্টি খেলা করতে ভালবাসে?"
"তোমার মাথায় সবসময়ে শুধু শয়তানি বুদ্ধি ঘোরে।" পরী ওর দিকে মৃদু রেগে গিয়ে, "তুমিই ত সবসময় ফাঁক খুঁজতে থাক কখন আমার সাথে একটু বদ্মাসি করবে। খালি আদর খাবার জন্য মন আনচান করে তোমার তাই না।"
পরীর শরীরে এই অবস্থা দেখে অভির একটু কষ্ট হল। ম্যানেজার কে বলে একটু সরসের তেল চাইল, মোমবাতির আলোতে তেল গরম করে ওর পায়ের পাতার ওপরে মালিশ করে দিতে শুরু করল।
অভি, "দেখ পরী, আমি কত ভাল, আমি তোমাকে কি শুধু ওই ভাবে গরম করার কথা বলেছি?"
হাতে তেল দেখে আর পায়ের ওপরে তেল মালিশ পেয়ে পরীর বেশ আরাম লাগল। আর পা ছারাল না পরী, ওর কোলে পা দিয়ে বলল, "তুমি ত আমার ছোট্ট রাজকুমার আমি জানি যে তুমি আমার খেয়াল রাখবে।"
অভি, "তোমার পায়ের পাতা গুলো কি নরম আর ফর্সা।"
অভি পা মালিশ করার পরে পরী কে বলল যে জামা খুলে শুয়ে পড়তে যাতে ও ওর পিঠের ওপরে তেল মালিশ করে দিতে পারে। পরী লজ্জা পেয়ে বলল যে, না ও জামা কাপড় খুলবে না, অভিকে ডাক দিল ওর পাশে এসে শুতে। অভি যত বার বলল যে ও কোন শয়তানি করবে না, কিন্তু পরী শুনল না। অগত্যা অভি লেপের মধ্যে ঢুকে পড়ল। পরী ওর গায়ের ওপরে লেপ টেনে দিয়ে ওর মাথা নিজের বুকের ওপরে রেখে শুয়ে পড়ল। অভি পরীর বুকে মুখ গুঁজে গায়ের গন্ধ নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
শুক্রবার সকাল, আগের দিনের থেকে রোদে খানিকটা তেজ বেড়েছে। পরিষ্কার আকাশে, ঝলমলে রোদের সাথে পরীর রাতের ক্লান্তি দূর হয়ে গেল। সকালের খাওয়া সারার পরে অভি ম্যানেজার কে জিজ্ঞেস করে জেনে নিল যে নাকো তে একটা সুন্দর বৌদ্ধ ধর্মের মন্দির আর মঠ আছে আর একটা ছোটো হ্রদ।
সারা সকাল ওরা নাকো ঘুরে বেড়াল। খুব ছোটো গ্রাম নাকো, ঘুরতে বেশি সময় লাগে না। নাকো হ্রদ বেশ ছোটো আর খুব সুন্দর। জলের রঙ সবুজ আর চারপাশে ছোটো ছোটো গাছে ভরা। দূর পাহাড়ের কোলে বেশ কিছু সাদা রঙের স্তুপ দেখে পরী অভিকে জিজ্ঞেস করল অগুলর ব্যাপারে। অভি অনেকক্ষণ তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করল যে ওই স্তুপ গুলো কি, তারপরে মনে পড়ল যে কলেজ থেকে একবার ওরা সাঁচি গেছিল ঘুরতে সেখানে ও বৌদ্ধদের স্তপ দেখেছে। অভি উত্তর দিল যে ওগুলো হয়ত বৌদ্ধ ধর্মের স্তুপ। পরী ওর কথা শুনে অবাক হয়ে গেল, ছেলেটা কি না জানে।
মিষ্টি হেসে বলল, "তুমি আমার অভিধান, তুমি এত খবর রাখো কোথায় সোনা।"
অভি পরীর বুকে আলতো করে টোকা মেরে বলে, "এখানে রাখি আর দরকার পড়লে বের করে নেই।"
বৌদ্ধদের মঠ খানি গ্রামের এক প্রান্তে, পাহাড়ের কোলে একটি সমতল ভুমির ওপরে স্থাপিত। অনেক ছোটো মঠ কিন্তু বেশ সুন্দর সাজান গোছান। অনেক পুরান এই মঠ, নতুন মঠের তাঁর পাশে, নতুন মঠের জন্য অস্ট্রিয়া সরকার টাকা দান করেছে। মঠের একদম শেষে নেমে গেছে খাড়া পাহাড়, নিচে স্পিতি নদীর তীরে। পাহাড়ের কোলে স্থিত নাকো গ্রাম ঘুরে ওদের মন হল যেন পটে আঁকা একটি ছোটো গ্রাম। এই রুক্ষ ভুমির মাঝে একটা ছোটো মরুদ্যান এই গ্রাম। আশেপাশের কোন পাহাড়ে কোন গাছ পালা নেই কিন্তু এই গ্রামে কিছু গাছ পালা আছে।
অভি দুরে উঁচুতে ওই স্তুপ গুলর দিকে দেখিয়ে পরীকে জিজ্ঞেস করল যে ওখানে যেতে চায় কিনা। পরী বলল যে যেখানে অভি ওকে নিয়ে যেতে চায় সেখানে নিশ্চিন্ত মনে ও যেতে রাজি। আবার কবে এখানে আসা হবে জানেনা তাই ওরা ঠিক করল যে জায়গাটা পুর ঘুরে দেখবে।
পাহাড় চরতে চরতে পরী ওকে জিজ্ঞেস করল, "আগামি গরমের ছুটিতে এখানে আবার আসব, তখন লম্বা ছুটি নিয়ে আসব।"
অভি ওকে জড়িয়ে ধরে বলল, "ঠিক আছে আসা যাবে।"
ওরা সমতলের মানুষ, পাহাড়ে এর আগে কোনদিন আসেনি, তাই দু’জনেই বেশ হাঁপিয়ে ওঠে। স্তুপ অনেক উঁচুতে, মাঝখানে একটু থামে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য। চারপাশে চেয়ে দেখে, ন্যাড়া পাহাড়, কিছু কিছু জায়গায় ছোটো ছোটো ঘাসে ভর্তি আর বাকি টা ধুসর পাথর। এদিকে বৃষ্টি বিশেষ হয় না, আর নাকো যেন এই ঠাণ্ডা মরুভুমির মাঝে একটা মরুদ্যান। পরীকে হাপাতে দেখে শেষ পর্যন্ত অভি ওর হাত ধরে টানতে শুরু করে।
অবশেষে স্তুপার কাছে পৌঁছে গেল। অভি আকাশের দিকে মুখ করে দু’হাত মুঠি করে মাথার ওপরে ছুঁড়ে চিৎকার করে উঠলো, "আই লাভ ইউ পরী..."
পরী অভিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল, পিঠের ওপরে মাথা রেখে গাল চেপে ধরল পিঠে। জ্যাকেটের ওপরে ঠোঁট চেপে ফিসফিস করে বলল, "আই লাভ ইউ অভিমন্যু।"
অভি ওর দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ওকে দুহাতে বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে, ওর গোল মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, "আমি সত্যি ভাগ্যবান, পরী। এই ট্রিপে তুমি আমার পাশে আছো, এই ট্রিপ টা আমার চিরকাল মনে থাকবে।"
পরী মুখ তুলে ওর দিকে তাকাল, অভি ওর মুখখানি আঁজলা করে হাতে নিয়ে ঠোঁট নামিয়ে আনল ওর লাল নরম ঠোঁটের ওপরে। পরী ওর জ্যাকেটের কলার মুঠোর মধ্যে নিয়ে, বুড়ো আঙ্গুলে ভর দিয়ে ঠোঁট নিয়ে গেল অভির ঠোঁটের কাছে। অভি পরীর পেছনে হাত দিয়ে চেপে ধরে, ওকে মাটি থেকে তুলে ধরল। অভির কাঁধে হাত রেখে নিজেকে আরও উঁচুতে উঠিয়ে নিল পরী। মাথা নিচু করে অভির ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট চেপে ধরল পরী। এক হাতে মাথার পেছনের চুল খামচে ধরল পরী। প্রেমের চুম্বন ক্রমে ঘনিভুত হয়ে ওঠে, প্রথমে শুধু ঠোঁট নিয়ে খেলা তারপরে পরী ওর জিবের ডগা দিয়ে আলতো করে চেটে দেয় অভির অধর। দু’হাতে পরীকে প্রাণপণে চেপে ধরে অভি, চুম্বন টিকে কেউ যেন আর থামাতে চায়না। হিমশীতল হিমালয়ের ক্রোরে দু’জনের ঠোঁটের মাঝে যেন আগুন জ্বলে ওঠে।
বেশ খানিকক্ষণ পরে পরী শ্বাস নেবার জন্য নিরুপায় হয়ে ঠোঁট ছেড়ে দেয়। অভি ওকে তখন কোলের ওপরে উঠিয়ে, পরী ওর দিকে লাজুক হেসে মিনতি করে মাটিতে নামাতে। অভি ওর কথায় কান না দিয়ে বুকের মাঝে চেপে ধরে মুখ, উত্তপ হয়ে ওঠে পরী। অভির মাথায় উষ্ণ নিঃশ্বাস ঢেউ খেলে বেড়ায়, দুহাতে ওর মাথা নিজের বুকের ওপরে চেপে ধরে।
অভি দুষ্টুমি ভরা হাসি নিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করে, "রুমে ফিরতে চাও?"
পরী ওর চোখের দুষ্টু শয়তানি চাহনি দেখে বুঝতে পারে ও কি বলতে চাইছে, লাল হয়ে ওঠে পরীর মুখ, মাথা নাড়ায় পরী, "না, তোমার কি সব সময়ে চুমু খাবার পরে ফুটবল খেলার ইচ্ছে জাগে নাকি?"
অভি ওর বুকের মাঝে নাক ঘষে বলে, "তুমি এত নরম যে আমি কিছুতেই নিজেকে সংবরণ করে রাখতে পারিনা। সবসময়ে মনে হয় তোমাকে নিয়ে..."
পরী, "ধুর... নামাও এবারে আমাকে, তোমার হাত ব্যাথা করবে।"
পাহাড় থেকে নিচে নামার সময়ে অভি ওর পেছনে হাত দিয়ে আলতো থাপ্পর মারে, পরী ওর দিকে মৃদু রেগে তাকিয়ে বলে, "তুমি না সত্যি একদম যা তা। যেন কিছুতেই সবুর নেই, আমি কি পালিয়ে যাচ্ছি নাকি? এই দিনের আলোতে এইরকম না করলে পারতে। আমি আর তোমার সাথে কথা বলব না।" এই বলে পরী হাসতে হাসতে এক দৌড়ে পাহাড় থেকে নিচে নেমে গেল। দুচোখ যেন ওর দিকে বলে গেল, "ধরতে পারলে ধর আমাকে।"
দুপুরের খাবার পরে দুজনে হোটেলের বারান্দায় বসে রোদের তাপ নেয়। অভি ওকে জিজ্ঞেস করল যে গ্রামে আর একবার হাটবে কিনা, পরী মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিল না, ও এখন আর ঘুরতে চায় না, চুপচাপ অভির পাশে বসে থাকতে চায়।
পরী অভিকে জিজ্ঞেস করে, "কাল আমরা কোথায় যাব?"
অভি, "কাল সকালে আমরা ফেরার পরথ ধরব। কালকের মধ্যে আমরা মনে হয় না সিমলা বা কাল্কা পৌঁছতে পারব তাই মাঝপথে কোথাও আমরা থেকে যাবো।"
ফিরে যাবার কথা শুনে পরীর মুখ শুকিয়ে গেল, চেয়ার থেকে উঠে অভির কোলে গিয়ে বসে পড়ল। দুহাতে গলা জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রেখে চুপ করে থাকে পরী।
হালকা হেসে ভাবাবেগে অভির কানে কানে বলে, "জানো, আমার এই সব এখনো কেন জানি না, সব স্বপ্ন স্বপ্ন মনে হচ্ছে। আমি যদি তোমাকে না পাই তাহলে কি হবে?"
অভি বুঝতে পারল যে পরী আবেগের বশে আবার না কান্না জুড়ে দেয় তাই কথা ঘুরিয়ে দিয়ে বলে, "আবার এই সব নিয়ে কথা কেন বলতে শুরু করলে। আবার যদি শুরু কর তাহলে কোলে তুলে লেকের মধ্যে ফেলে দেব।"
Posts: 420
Threads: 9
Likes Received: 434 in 312 posts
Likes Given: 217
Joined: Jan 2019
Reputation:
20
পরী হেসে ফেলে, "না আমাকে আর ফেলতে হবে না", অভির মাথা নিজের বুকের ওপরে চেপে ধরে মাথার চুলে গাল ঘষে দেয়। সারা বিকেল দু’জনে আলিঙ্গনে বদ্ধ হয়ে সূর্য ডোবা দেখে।
আলিঙ্গন এবং প্রেমের আদর, এই কনকনে ঠাণ্ডায় হোটেলের ঘরের মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে দেয় আবার। সন্ধ্যের পরেই বিজলি চলে যায়, অগত্যা ওদের কাঠের উনুন জ্বালাতে হয় ঘর গরম করার জন্য। হলদে লাল মিশান আলোতে সেই অন্ধকারে পরীকে যেন সোনার প্রতিমার মতন দেখতে লাগে।
রাতের খাবার পরে পরী গাউন খুলে একটা লাল রঙের নাইট ড্রেস গায়ে চড়িয়ে নেয়, লম্বা সেই নাইটড্রেস পরীর সারা অঙ্গ ঢেকে রাখে পায়ের গোড়ালি অবধি। কাপড় খুবই পাতলা থাকার দরুন পরীর অঙ্গের প্রতিটি সুন্দর বাঁক খুব নিখুঁত ভাবে প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠে ওই নাইটড্রেসের নিচ থেকে। অভি ওর কমনীয় সৌন্দর্যয় মুগ্ধ হয়ে আর থাকতে পারেনা, নিস্পলক চোখে ক্ষুধার্ত শিকারির মতন পান করে পরীর কমনীয়তা মাখান নরম শরীর। পরী ওর দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে যে অভি কি চায়, মিটিমিটি করে হাসে অভির দিকে আর রাতের প্রসাধনীর দিকে মন দেয়।
প্রসাধনি শেষে উঠে দাঁড়াল পরী, হাঁটু গেড়ে পরীর সামনে বসে পরে অভি, ওর আনা সেই ছোট্ট উপহার, বুদ্ধের ছোট্ট মূর্তি দেবার জন্য। পকেট থেকে বের করে ওর হাতের মধ্যে রেখে দেয় বুদ্ধ মূর্তির প্যাকেট।
পরী প্যাকেট টা হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করে, "এটা আবার কি?"
অভি ওকে ইশারায় বলে, খুলে দেখতে। আস্তে আস্তে প্যাকেটের মোড়ক খুলে বের করে ব্রোঞ্জের ছোট্ট বুদ্ধ মূর্তি। মূর্তি দেখে পরী অভিভুত হয়ে যায়। অভি ওর ডান হাত নিজের হাতে নিয়ে হাতের তালুতে চুমু খেয়ে বলে, "আই লাভ ইউ পরী।"
পরী হেসে উত্তর দেয়, "কিন্তু সোনা আমি যে তোমার জন্য কিছু কিনিনি।"
হাঁটু গেড়ে ওর দিকে হেটে যায় অভি, ওর পাতলা কোমর দুহাতে জড়িয়ে সুগভীর নাভির ওপরে ঠোঁট চেপে ধরে অভি। পরী ওর মাথার চুলে বিলি কেটে দেয়। কোমল পেটের ওপরে গাল আর ঠোঁট ঘষতে ঘষতে ফিসফিস করে বলে, "আমার উপহার ত আমি অনেক আগেই পেয়ে গেছি সোনা। আমার উপহার ত আমার বাহুপাসে বদ্ধ।"
টেবিলের ওপরে অভির দাড়ি কাটার রেজর ছিল, পরী ওটা হাতে নিয়ে নিল। অভি কিছু বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করে, "কি করছ?"
পরী ওর দিকে মিটি মিটি হেসে, নিজের বাঁ হাতের তর্জনীর ওপরে ফুটিয়ে দিল ব্লেড। রক্ত বেড়িয়ে এল কাটা আঙ্গুলের ডগা থেকে। হতবাক হয়ে গেল অভি, ওর দিকে চিৎকার করে বলল, "তুমি পাগল হলে নাকি? হটাত আঙ্গুল কাটতে গেলে কেন তুমি?"
অভি রক্ত বন্ধ করার জন্য, ওর আঙ্গুল মুখে নিয়ে চুষতে শুরু করল।
ধিরে ধিরে অভির সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল পরী, মুখের থেকে আঙ্গুল টেনে নিল এবারে। অভির চোখে চোখ রেখে গালে আলতো করে টোকা দিয়ে বলল, "আমি এটাই চাইছিলাম অভি। আমি চাইছিলাম আমার এক ফোঁটা রক্ত তোমার রক্তের সাথে মিশে যেতে, যাতে আমি তোমার কাছে না থাকলেও আমার কিছু তোমার কাছে সবসময়ে থাকে।"
আবেগে অভি আর চোখের জল ধরে রাখতে পারল না, গলার কাছে যেন কান্না টা দলা পাকিয়ে উঠল, খনিকের মধ্যেই চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে গেল। পরী ওর মুখখানি আঁজলা করে নিয়ে বুকের ওপরে চেপে ধরল, অভি দুহাতে ওর কোমর জড়িয়ে ধরল। ফুঁপিয়ে উঠল অভি, পরীর ভালবাসার ছোঁয়ায় চোখের বাঁধ ভেঙ্গে গেল।
পরী ওর পিঠের হাত বুলিয়ে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করে, অভি ঘন ঘন ওর বুকের ওপরে মাথা ঘষতে থাকে। পরী ওকে বলে, "এই পাগলা ছেলে এর জন্যে কাঁদে নাকি? তুমি না আমার ছোট্ট সে রাজকুমার যে আমার জন্য আমার পুতুলের ঘর বানিয়ে দেবে।"
বলতে বলতে আবেগে পরীর ও গলা ধরে আসে। কাঁপা গলায় বলে, "আমি ত তোমার কাছে আছি, কাঁদছ কেন। তোমার পরী তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না।"
ওর বুকের কাপড়ের ওপরে চোখ মোছে অভি। পরী ওকে জড়িয়ে ওর পিঠের ওপরে হাত বলাতে থাকে আর মাথার চুলে বিলি কাটতে থাকে। পরী মধু ঢালা সুরে বলে, "আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না অভি, আমি তোমাকে খুব ভালবাসি সোনা।"
কথা শুনে বুকের মাঝের মসৃণ ত্বকের ওপরে গাল ঘষে দেয় অভি, দু’জনের ত্বকের ঘর্ষণের ফলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দুই প্রান। পরীর কোমল বক্ষ পিষে দেয় মুখের ওপরে। নগ্ন ত্বকের ওপরে অভির উত্তপ্ত ঠোঁটের পরশে মৃদু ককিয়ে ওঠে পরী। ছোটো ছোটো চুমুতে পরীর উন্নত কোমল বক্ষের উপরি অংশ ভরিয়ে তোলে, ফর্সা ত্বকের ওপরে দাঁতের লাল দাগ দেখা দেয়। প্রেমে প্রজ্বালিত পরী আরও শক্ত করে অভির মাথা নিজের বুকের পরে চেপে ধরে, নিজের বুক দুটি ওর মুখের ওপরে পিষে দিতে চেষ্টা করে। পাতলা আভরনের ওপরে দিয়েই উন্নত বক্ষ যুগলের ওপরে নিপীড়ন শুরু করে দেয়। অভির বুকের মাঝে কামনার তীব্র আগুন জ্বলে ওঠে। কোমর থেকে হাত নেমে যায় পরীর কোমল নিতম্বের ওপরে, পিষে ফেলে পরীর নরম নারী মাংস নিজের থাবার মধ্যে। পরী থেমে থাকে না, মাথার ওপরে গাল ঘষতে শুরু করে আর চুলের মুঠি করে ধরে চেপে ধরে মাথা বুকের মধ্যে। যেন প্রাণপণে চাইছে ওর মাথা নিজের বুকের মধ্যে লুকিয়ে নেবার জন্য।
কামাগ্নির জ্বালায় পরী মৃদুকনে অভিকে বলে, "অভি আমাকে তোমার করে নাও, আমি আর পারছি না। আমাকে এত ভালবাসো যেন আজ আমাদের জীবনের শেষ রাত।"
আদর ঘনিভুত হয়ে ওঠে, উনুনের আগুন যেন ওদের শরীরের আগুনের চেয়ে ধিমে জ্বলছে। একে অপরকে প্রেম আর ভালবাসা দিয়ে ভরিয়ে তুললও। ধিরে ধিরে ওরা ভালবাসার ক্ষীরোদ সাগরে ডুব দেয়।
পরের দিন শনিবার, বেশির ভাগ সময় কেটে গেল রাস্তায়। সকাল সকাল নাকো থেকে বেড়িয়ে পড়ছে ওরা। খাব ব্রিজ পর্যন্ত পৌঁছতে বিশেষ অসুবিধা হয়নি। খাব ব্রিজ পৌঁছে পরী অভিকে জিজ্ঞেস করল যে ও গাড়ি থেকে নেমে একটা পাথর নিয়ে যেতে পারে কিনা। অভি ওকে সম্মতি দিল, পরী নেমে গেল স্পিতি নদীর তীরে, একটা ছোটো গোল পাথর কুড়িয়ে নিল। নাকো থেকে পোয়ারি পর্যন্ত বেশির ভাগ সময়ে পরী বিশেষ কথাবার্তা বলেনি, মাঝে মধ্যে শুধু একটু এদিক ওদিক কার কথাবার্তা ছাড়া। সারাটা সময় শুধু অভির হাত চেপে ধরে ছিল পরী। পোয়ারির পর থেকে রাস্তায় একটু কুয়াশা জমতে শুরু করে, আকাশ মেঘলা করে আসে। সূর্য মেঘের আড়ালে লুকিয়ে পরে, বাইরের আবহাওয়ায় যেন বিষণ্ণতার সুর বেজে ওঠে, সেই বিষণ্ণতা পরীর আর অভির বুকের মাঝে ছড়িয়ে পরে। এই পাহাড় এই স্পিতি, বাপ্সা আর শতদ্রু নদী যেন ওদের যেতে দিতে চাইছেনা। এই আকাশ বাতাস যেন বারে বারে কেঁদে উঠছে আর বলছে, "যেওনা তোমরা।"
পোয়ারি ছাড়াতেই পরী অভির কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল। অভি ওর ঘুমন্ত চেহারার পানে এক ভাবে চেয়ে থাকে আর দেখে ওর গোল মুখ। নিশ্চিন্ত মনে শুয়ে পরে পরী, অভির কাছ থেকে কেউ ওকে সরিয়ে নিতে পারবেনা।
জিওরি পৌঁছতে প্রায় সাড়ে তিন’টে বেজে গেল। কুয়াশা যেন আরও ঘনিভুত হয়ে পাহাড়ের কোল বেয়ে নেমে এসেছ রাস্তার ওপরে। কিছু দূর আরও চলার পরে রাস্তা আর দেখা যাচ্ছে না, এমন কুয়াশা ওদের ঘিরে এল। অভি বল্বিন্দারকে গাড়ি থামাতে বলল কেননা এই ঘন কুয়াশায় গাড়ি চালান খুব বিপ্পজনক। গাড়ি থামতেই পরী ঘুম থেকে উঠে পরে অভি কে জিজ্ঞেস করল যে ওরা সিমলা পৌঁছেছে কিনা। অভি জানাল যে রাস্তায় অনেক কুয়াশা সেই জন্য রাতে ওরা জিওরিতে থেকে যাবে। কাল সকালবেলা এখান থেকে সোজা কাল্কার উদ্দেশ্যে রওনা দেবে।
অভি গাড়ি থেকে নেমে আসেপাশের লোকজন কে জিজ্ঞেস করল যে এখানে থাকার কোন জায়গা আছে কিনা, জানতে পারল যে পাহাড়ের কিছু উপরে সাহারান নামে একটা জায়গায় হোটেল পাওয়া যাবে। অভি বল্বিন্দারের দিকে তাকাল, জিজ্ঞেস করল যে এই কুয়াশায় গাড়ি চালাতে পারবে কিনা। বল্বিন্দার মাথা নাড়িয়ে জানাল যে, একটু সাবধানে গাড়ি চালালে বিশেষ কোন অসুবিধা হবে না সাহারান পৌঁছতে। গাড়ির মধ্যে চেয়ে দেখল, পরী চোখে একটু ভয় ভয় ভাব।
অভি মাথা নেড়ে অভয় দিয়ে বলল যে, "কিছু চিন্তা কোরো না।"
পরী ওর দিকে হেসে উত্তর দিল, "তুমি কাছে থাকতে আমার ভয় কি।"
গাড়ি খাড়া চড়াই চরতে শুরু করে, চারদিকে কুয়াশা। রাস্তা খুব সঙ্কীর্ণ, দুপাসে গাছপালাতে ভর্তি, মাঝে মাঝে গাছপালা যেন রাস্তার ওপরে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। সাহারান পৌঁছতে আরও এক ঘন্টা লেগে গেল। ভিমাকালি মন্দিরের পাশেই ওরা একটা হোটেল পেয়ে গেল।
ঠাণ্ডা আর রাস্তার অবস্থার জন্য দু’জনেই বেশ ক্লান্ত। তাড়াতাড়ি রাতের খাবার শেষ করে অভি বিছানায় উঠে পড়ল। পরী ব্যাগ গুছাতে শুরু করল। অতি সাবধানে এক একটা জিনিস আলাদা আলাদা ব্যাগে রাখতে থাকে। দুই বাড়ির কেউ জানে না ওরা একসাথে ঘুরতে এসেছে তাই একজনের জিনিস যদি আরেক জনের ব্যাগের মধ্যে পাওয়া যায় তাহলে জানাজানি হবার ভয় আছে।
পরী অভিকে জিজ্ঞেস করল, "একখান থেকে কাল্কা পৌঁছতে কত সময় লাগবে?"
অভি, "মনে হয় ছয় ঘন্টা লেগে যাবে।"
পরী, "কাল দুপুরের খাওয়ার পরে তাহলে আমরা বেড়িয়ে পড়ব কি বলো?"
অভি, "ঠিক আছে।"
পরী খিলখিল করে হেসে জিজ্ঞেস করল, "তুমি রানী আর কল্যানির সামনে আমাকে কি করে ছাড়তে আসবে? সেদিন ত তোমার মুখে দাড়ি গোঁফ ছিল আজ ত নেই। কাল ওরা ত তোমাকে দেখে চিনতে পেরে যাবে, তখন কি করবে?"
অভি মাথা চুলকায়, এ কথা ত ও একবারের জন্য ভেবে দেখেনি। পরী, "আমার কাছে একটা উপায় আছে। ওরা হয়ত কাল্কা পৌছবে বিকেল ছ’টা কি সাত’টা, আর ট্রেন রাত সাড়ে এগারোটায়। ওরা হয়ত অয়েটিং রুমে থাকবে।"
অভি ওর দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করে ওর মতলব।
পরী, "তুমি গাড়ি স্টেসান থেকে অনেক দুরে দাঁড় করাবে যাতে ওদের নজর গাড়িতে না পরে। আমি তোমার আগে স্টেসানে ঢুকে যাবো আর ওদের বলব যে অর্জুন আমাকে স্টেসানের বাইরে ছেড়ে চলে দিল্লীর দিকে রউনা হয়ে গেছে। তুমি স্টেসানের বাইরে কোন চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে থেকো। কিছুক্ষণ পরে আমি কিছু একটা হক বলে ওদের কে নিয়ে বেড়িয়ে আসব আর আমাদের দেখা হবে।"
অভি হতবাক হয়ে শোনে পরীর মতলব, উচ্ছসিত হয়ে বলে, "পরী, তুমি ত খুব বুদ্ধিমতী মেয়ে, বাপরে। তুমি টিচার না হয়ে স্পাই হয়ে যাও সেটা আরও ভালো হবে।"
পরী নিজের মাথায় টোকা মেরে বলে, "তোমার পরীর মাথায় অনেক বুদ্ধি আর সেই জন্য আমি তোমার প্রেমে পড়েছি।"
অভি ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে পেটের ওপরে হাত বোলাতে শুরু করে দেয়, পরী বুঝতে পারে যে অভির দুষ্টু হাত বেশিক্ষণ নমর পেটের ওপরে থেমে থাকবে না, কিছু না কিছু বদমাশি শুরু করে দেবে। হাত চেপে ধরে বলে, "আমার পেট না হাতিয়ে বাকি মতলব টা শোনও। তুমি কাল্কা এসেছ একটা আই.টি কম্পানির ইন্টারভিইউ দিতে..."
•
Posts: 420
Threads: 9
Likes Received: 434 in 312 posts
Likes Given: 217
Joined: Jan 2019
Reputation:
20
অভি হেসে বলে, "সোনা পরী, কাল্কাতে কোন আই.টি. কম্পানি নেই। তুমি এটা বলতে পার যে আমি চণ্ডীগড়ে একটা ইন্টারভিউ দিতে এসেছিলাম আর তারপরে কিছু সময় হাতে ছিল তাই আমি সিমলা ঘুরতে আসি। সিমলা থেকে ফেরার পথে আমি কাল্কাতে চা খাওয়ার জন্য দাঁরাই আর সেখানে তোমার সাথে দেখা হয়ে যায়।"
পরী পেছনে হাত দিয়ে অভির মাথা নিজের কাঁধের ওপরে নিয়ে আসে আর গালে গাল ঘষে উত্তর দেয়, "দেখলে ত আমার সাথে থাকতে থাকতে তোমার মাথার বুদ্ধি খুলে গেছে। আমার সাথে থাকো তাহলে দেখবে তোমার মাথার মধ্যে যত গোবর আছে সব বুদ্ধিতে বদলে যাবে। বেবি এটাকে বলে ইন্ডাক্সান বলে, যেমন জল গরম হয় ঠিক সেই ভাবে, ফিসিক্স বেবি।"
অভি ওর গালে গাল ঘষে বলে, "পরী এখন অন্তত ফিসিক্স শুরু করে দিও না।"
পরী, "ঠিক আছে, ফিসিক্স না হয় শুরু করছি না কিন্তু তুমি যেন আদর করতে করতে শুরু হয়ে যেও না। আমার অনেক কাজ বাকি।"
পরীর কথায় কান দিল না অভি, আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল পেছন থেকে। নরম তুলতুলে পেট আরও জোরে চেপে ধরল নিজের ওপরে। নাক ঘষে দিল পরীর ঘড়ের ওপরে, ছোটো ছোটো চুমুতে ভরিয়ে দিল পরীর ঘাড় আর কানের লতি। আদর করতে করতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে অভি, পরী ওর উত্তেজনা টের পায়। প্রেমাবেগের বসে অভি বলে, "তুমি আমার মিষ্টি সোনা, তোমার পায়ের ধুলো নিতে ইচ্ছে করে আমার।"
পরী ওর হাত পেটের ওপরে চেপে ধরে যাতে ওর শয়তান হাত বেশি নিচে নামতে না পারে, ফিসফিস করে কানে বলে, "হ্যাঁ সত্যি ত আমার পায়ের ধুলো নেওয়া উচিত তোমার, আমি না তোমার থেকে দু বছরের বড়।"
অভি ওর কানেকানে বলে, "সত্যি তুমি আমাকে তোমার পায়ের ধুলো নিতে চাও? মনে আছে ত..."
সঙ্গে সঙ্গে পরীর নাকোর সাথের কথা মনে পরে যায়, পা দিয়েই শুরু করেছিল অভি আর শেষমেস কি হয়েছিল ওরা দু’জনেই জানে। পরী চিৎকার করে ওঠে, "ছাড়ো ছাড়ো, শয়তান ছেলে, না আমার পা ধরতে হবে না।"
পরী ওর আলিঙ্গনের পাশে নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করে আর অভি আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে থাকে। এই ছারান আর জরানোর খেলায় অভি নিজেকে চেপে ধরে পরীর পেছনে।
পরী মৃদু সুরে বলে, "প্লিস ছেড়ে দাও সোনা আমার, দেখ আমাকে ব্যাগ গুছাতে হবে।"
দু’জনেই আদরের মারামারি করে হাঁপিয়ে ওঠে। অবশেষে অভি ছেড়ে দেয় পরীকে কেননা সত্যি ওকে ঠিক করে মন দিয়ে ব্যাগ গুছাতে হবে না হলে জানাজানি আর তারপরে এক বিশাল যুদ্ধ। এত তাড়াতাড়ি কোন রকমের সমস্যার সম্মুখিন হতে চায় না ওরা। এখন ওরা ভবিষ্যতের সমস্যার কথা ভেবে দেখেনি বা ভেবে দেখার সময় পায়নি।
সারাদিনের যাত্রার ক্লান্তি আর তারপরে ব্যাগ গুছিয়ে আর ওদের শরীরে শক্তি থাকেনা। কোনো রকমে বিছানায় পরে দু’জনে ঘুমিয়ে পরে।
মধ্যরাতে একটা মৃদু কান্নার আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙ্গে যায় অভির। মাথার কাছে রাখা হাত ঘড়িতে দেখে রাত চারটে বাজে। ঘরের মধ্যে মৃদু নীল আলো জ্বলছে, ঘুম চোখে কিছু ঠাহর করে উঠতে পারেনা যে কান্নার আওয়াজটা কথা থেকে আসছে। পাশ ফিরে দেখে পরী ওর দিকে পিঠ করে শুয়ে আছে আর ওর পিঠ ক্রমাগত কাঁপছে। বুঝতে অসুবিধে হলনা অভির যে কান্নার আওয়াজটা পরীর বুকের মধ্যে থেকে আসছে।
পরীর দিকে ফিরে একটু উঠে ওর কাঁধ ছুঁল অভি, মুখের ওপরে ঝুঁকে দেখে দু চোখে বন্যা নেমেছে। কানের কাছে মুখ নামিয়ে জিজ্ঞেস করে পরীকে, "কাঁদছো কেন সোনা?"
ওর আওয়াজ শুনে পরী আরও ডুকরে কেঁদে ওঠে। দু’হাত মুখের কাছে মুঠি করে ধরা, আঙ্গুল কামড়ে কান্নাটাকে কোনো রকমে সামলে নিয়ে ধরা গলায় ওর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, "সত্যি আজ তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে?"
অভি ওর হাতে, পিঠে হাত বুলিয়ে শান্ত করতে চেষ্টা করে, আসস্থ করার জন্য ওকে বলে, "আরে পাগলি মেয়ে, ছোট্ট বাচ্চার মতন কাঁদে নাকি? আমি কি সত্যি তোমাকে ছেড়ে যাচ্ছি কোথাও? এপ্রিল মাসের শেষে, বাসন্তি পুজোর পরে আমার কাছেই চলে আসবে। আর ত মোটে দু’মাস বাকি।"
পরী কান্না ভেজা গলায় বলে, "দু’মাস মানে ষাঠ দিন বাকি, মানে এক হাজারেরও বেশি ঘন্টা, আমি কি করে তোমাকে ছেড়ে বাঁচবও?"
পরীর গোনা শুনে অভি হাসি থামাতে পারে না, ওকে বলে, "বেবি তুমি সত্যি একদম পাগলি মেয়ে। এত রাতে তুমি কি ঘন্টা গুনতে বসেছিলে যে কতদিন পরে আবার দেখা হবে?"
পরী ওর হাত বুকের ওপরে চেপে ধরে বলে, "তুমি আমার বুকের ব্যাথা বুঝতে পারছনা অভি।"
অভি ওর মুখের ওপরে নিজের মুখ এনে নাকের ডগায় নাক ঘষে আলতো করে তারপরে নাকের ডগা দিয়ে ওর গালের ওপরে জলের দাগ মুছে দেয়। পরী ওর বুকের ওপরে হাত রাখে, অভির প্রসস্থ বুকের নিচে আলতো করে পিষে যায় পরীর উন্নত বক্ষ যুগল। অভি ওকে জড়িয়ে ধরে আলতো করে আর নিজেকে নামিয়ে আনে পরীর বুকের ওপরে। পরী চোখ বন্ধ করে নিয়ে অভির গালে হাত বলাতে শুরু করে।
অভি ওর কানে কানে বলে, "থ্যাঙ্ক ইউ পরী, আমার জীবনে আসার জন্য।"
পরী ভালো ভাবে লেপটা ওদের ওপরে জড়িয়ে নেয়, ওর বুঝতে কষ্ট হয় না যে এই সকাল ওদের ভ্রমণের শেষ সকাল, এই ক্ষণ ওদের কাছে অনেক অনেক দামী। মিলনের ইচ্ছুক দুই প্রান একে অপরকে প্রাণপণে জড়িয়ে ধরে। অভির হাত নেমে যায় পরীর জানুর ওপরে। পরী জানু ভাঁজ করে অভি কে সাদর আহ্বান জানায় গ্রহন করার জন্য। পরীর ঘাড়ের ওপরে ঠোঁট চেপে ধরে অভি। উতপ্ত ত্বকের ওপরে ভেজা ঠোঁট যেন আগুনের ফুল্কি উদ্গিরন করে।
মৃদু শীৎকার করে ওঠে পরীর আধা খোলা ঠোঁট, "ম্মম্মম্মম্মম্ম... সোনা আমার... আমাকে পাগল করে দিচ্ছ তুমি..."
পরীর হাতের দশ নখ অভির কাঁধে বসে যায়, শিরদাঁড়ার ওপরে পরীর হাত বিচরন করতে শুরু করে, আবেগের বশে মাঝে মাঝে নখ বসিয়ে দেয় অভির কঠিন পিঠের পেশিতে।
অভি ওর জানুর ভেতরে নখ দিয়ে আঁচর কাটে, হাঁটু থেকে নখের দাগ জানুর সন্ধিখন পর্যন্ত নিয়ে যায় অভি। শীৎকার করে ওঠে পরী, "আআআআআআ... মেরে ফেললে আমাকে সোনা......"
অধভুত শিহরণ খেলে যায় পরীর সারা শরীরে আর থাকতে পরী নখ বসিয়ে দেয় অভির কাঁধে। অভির ঠোঁট নেমে আসে পরীর উপরি বক্ষে, জিবের ডগা দিয়ে গোল গোল দাগ কাটে ওর নগ্ন ত্বকের ওপরে। চিবুক দিয়ে সরিয়ে দেয় বুকের অপরের কাপড়, অনাবৃত পীনোন্নত বক্ষ যুগল ঘরের হালকা নীল আলো মনে হয় এই প্রথম দর্শন করল। পরী লজ্জা পেয়ে লেপটা আরও ওপরে টেনে ধরে যাতে অভি ওর নগ্নতা দেখতে না পারে। শত চেষ্টা করেও অভি লেপ টাকে গা থেকে সরাতে পারে না।
পরীর হাত নেমে আসে অভির কোমরে, ঠেলে নিচে নামিয়ে দেয় ট্রাক প্যান্ট। দু’হাতের থাবার মধ্যে শক্ত করে ধরে ফেলে অভির শক্ত নিতম্ব, টেনে ধরে অভির নিম্নাঙ্গ নিজের সিক্ত নারীত্বের ওপরে। সাপের মতন ফিস্ফিসিয়ে ওঠে পরী, "অভি আমাকে তোমার করে নাও, আমি তোমার আলিঙ্গনে আজ মরতে রাজি আছি, অভি।"
অভির কোমর একটু মোচর দেয়, দুহাত পরীর শরীরের দুপাসে দিয়ে ঊর্ধ্বাঙ্গ একটু উঁচু করে কামাগ্নি ভরা চোখে পরীর মুখের দিকে তাকায়। ওর মুখের উপরে তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বলে, "মরার সময় নেই পরী, আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালবাসি সোনা।"
হোটেলের রুমের আবহাওয়া উত্তপ্ত হয়ে ওঠে প্রেমিক যুগলের নগ্ন ত্বকের ঘর্ষণে আর মৃদুকনে। থেকে থেকে গুঞ্জরিত হয় ওদের মিলিত শীৎকার আর আদরের আওয়াজ। অভি নিজেকে নামিয়ে নিয়ে আসে পরীর সিক্ত গহ্বরে। মিলিত হয়ে যায় দুই ভালবাসায় ভরা প্রান।
Posts: 420
Threads: 9
Likes Received: 434 in 312 posts
Likes Given: 217
Joined: Jan 2019
Reputation:
20
বাঁধা চোখের জল
নবীন ভোরের নবীন ঊষা এক নতুন পরী আর অভি কে সাদর আহ্বান জানায়। দু’জনের মনে আর কোন পরিতাপ নেই। পরীর মুখের মিষ্টি হাসি আর উচ্ছলতা অভিকে যেন নিয়ে যায় এক নতুন দিগন্তে। দুপুরের খাওয়া একটু তাড়াতাড়ি শেষ করে নেয় ওরা, এবারে ফেরার পালা। সারাটা রাস্তা দু’জনে এদিক ওদিকের গল্প, ভ্রমণের গল্প করে কাটিয়ে দেয়। বল্বিন্দার ফেরার সময়ে সেই একই রাস্তা ধরে, ফাগু থেকে চায়েল হয়ে ছোটো রাস্তা।
পরী ওকে জিজ্ঞেস করে, "কালকে তোমার ফেরার ফ্লাইট কটায়?"
অভি, "আমি যদি আজ রাতে শুরু করি তাহলে কাল সকালের মধ্যে দিল্লী পৌঁছে যাব, দেখি যদি সকালের ফ্লাইটটা ধরতে পারি তাহলে দুপুরের মধ্যে বাড়ি না পেলে দুপুরের ফ্লাইট ধরব।"
পরী, "এই দুমাসে তুমি আমার বাড়ি আসবে?"
অভি, "কেন আসব না, নিশ্চয় আসবো।"
পরী, "বাসন্তি পুজোর পরে আমাকে নিতে তুমি আসবে?"
অভি, "সেটা ঠিক বলতে পারছি না পরী। আমার ফাইনাল পরীক্ষা মে মাসের শেষে। তোমার ছোটো মা আমাকে ছারবে কি না সন্দেহ আছে।"
পরী, "ছোটো মা কে আমার প্রনাম জানাবে ত?"
অভি, "সোনা মেয়ে, আমাদের যে দেখা হয়নি সেটা ভুলে যাচ্ছ কেন।"
পরী ওর গালে চিমটি কেটে বলে, "অঃ দেখ আমি ত এ সব গুলে খেয়েছিলাম। আমি ত ঘুরতে গেছি আমার বান্ধবীদের সাথে আর তুমি ত একা একা পাহাড়ে ঘুরে বেরাচ্ছ তাই না, দুষ্টু ছেলে?" তারপরে নাক কুঁচকে অভিকে খ্যাপানোর জন্য জিজ্ঞেস করে, "কি গো অভি, শীতের রাতে কাকে নিয়ে ঘুরে বেরিয়েছ তুমি?"
অভি ওর দিকে হেসে বলে, "তোমাকে একটা ভাল গল্প বানাতে হবে কল্যানির জন্য আর তোমার মায়ের আর ছোটো মা'র জন্য। সেটা ফেরার আগে ভেবে রেখ।"
পরী, "তাঁর জন্য ভাবতে হবে না। আমি খুব সুন্দর গল্প বলতে পারি ওদের কে এমন গল্প বলব যে ওরা মুগ্ধ হয়ে যাবে।"
অভি, "হ্যাঁ তোমার গল্পের কথা আর তোমার মাথার বুদ্ধি আমার চেয়ে বেশি আর কেউ জানে না।"
পরী, "ওই দেখ তোমাকে ত আমি একটা কথা বলতে ভুলেই গেছি।"
অভি, "বাপরে আরও কিছু বলার বাকি আছে নাকি তোমার?"
পরী, "না বাবা না, তুমি না সবসময়ে খালি খালি ওই সব কথাই ভাবো। তোমার মৃগাঙ্কের কথা মনে আছে, সুব্রতদার বন্ধু, এক সময়ে ও হাথ ধুয়ে আমার পেছনে পরে ছিল জানো।"
অভি মাথা নাড়ায়, "হ্যাঁ জানি।"
পরী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, "তুমি জানলে কি করে?"
অভি, "মনে আছে বউভাতের আগের দিন রাতে তোমার ছোটো মা আর বাকিদের মধ্যে তুমুল বাকবিতন্ড লেগেছিল। সেদিন রাতে আমরা মদ খেয়েছিলাম আর মদের নেশায় মৃগাঙ্ক আমাদের ওর মনের কথা বলে ফেলেছিল।"
ওরা তাড়াতাড়ি ছ’টার মধ্যেই কাল্কা পৌঁছে যায়। কাল্কা পৌঁছতে পৌঁছতে সন্ধ্যে ঘনিয়ে আসে। অভি বলবিন্দার কে দুরে গাড়ি রাখতে নির্দেশ দেয়, যাতে কারুর চোখে ওর গাড়ি না পরে। বলবিন্দার ওদের স্টেসানের সামনে নামিয়ে দিয়ে স্টেসান চত্তর থেকে বেশ কিছু দুরে গাড়ি দাঁড় করায়।
গাড়ি থেকে নেমে সব থেকে আগে অভি মাকে ফোন করে জানায় যে ও কাল্কা পৌঁছে গেছে, কাল সকালের মধ্যে ও দিল্লী পৌঁছতে পারলে সকালের ফ্লাইট ধরবে না হলে দুপুরের ফ্লাইট ধরে বাড়ি ফিরবে। তারপরে সুপ্রতিমদাকে ফোন করে জানিয়ে দেয় যে ফেরার পথে ওর সাথে আর দেখা হবে না কেননা অভি সোজা এয়ারপোর্ট চলে যাবে।
পরীর ব্যাগ হাতে নিয়ে ওরা হাঁটতে শুরু করে স্টেসানের দিকে। সারাক্ষণ পরী অভির হাত নিজের হাতের মধ্যে করে রাখে, মনে হয় যেন ছারলেই যদি পালিয়ে যায় অভি। স্টেসানের গেটে এসে অভি পরীর ব্যাগ পরীর হাতে ধরিয়ে দেয়। পরীর দু’চোখ ছলছল করে ওঠে।
অভি তর্জনী দিয়ে কপালে আলতো টোকা মেরে বলে, "বোকা মেয়ে কাঁদছ কেন। তাড়াতাড়ি ভেতরে যাও আর কল্যাণীদের সাথে দেখা করে তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে এস। আমি ওই চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে তোমার অপেক্ষা করব।"
শেষ বারের মতন দু’জনের আঙ্গুল এঁকে অপরকে ছুঁল। পরীর যেন পা আর চলছে না, অভি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে গেটের সামনে, যতক্ষণ না পরী ওই গেটের মধ্যে দিয়ে হারিয়ে গেল স্টেসানের ভিড়ে।
তিরিশ মিনিট যেন তিরিশটা বছর, অধির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে অভি, কখন ফিরে আসবে পরী। মনের মধ্যে এক অজানা আলোড়ন চলছে, ভেতরে কি হচ্ছে? কল্যানি ওকে কি জিজ্ঞেস করছে? পরী ওর বান্ধবীদের কে কি বলে বের হবে? আদৌ বের হতে পারবে কিনা? শেষ দেখা কি একবারের জন্য হবে না।
কিছুক্ষণ পরে অভি দেখতে পেল যে তিন জন মহিলা গেটের বাইরে হেঁটে আসছে, ভাল করে দেখে বুঝল যে ওর মধ্যে একজন পরী। অভির তৃষ্ণার্ত প্রানে যেন জল এল। আনমনে এদিক ওদিকে তাকাল পরী, একবার ওদের চারচোখ এক হল কিন্তু পরী ওর দিকে পাত্তা না দিয়ে আবার কল্যানির সাথে গল্প করতে শুরু করে দিল। ওই দেখে অভির বুকের ভেতরে হৃদপিন্ডটা যেন দুমদুম করে বাজতে শুরু করে দিল। উৎকণ্ঠায় গলা শুকিয়ে এল অভির, কি হতে চলেছে এবারে? আদৌ পরী ওর সাথে দেখা করবে ত?
বেশ কিছু সময় আরও চলে গেল, অভি ওদের দিকে আর চোখে তাকিয়ে থাকে, পরী কি করছে। পরী আড় চোখে একবার অভির দিকে তাকাল, চাহনি যেন বলছে, "সোনা একটু অপেক্ষা করো।"
কল্যাণীদের সাথে গল্প করতে করতে পরী হটাত করে কল্যানিকে ওর দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখাল। ওরা সবাই অভির দিকে এগিয়ে এল। অভি পরীর দিকে তাকিয়ে থাকে অবাক চোখে যেন ভুত দেখেছে। পরী ওর চোখের চাহনি দেখে হাসি থামাতে পারে না, শেষ পর্যন্ত ঠোঁট কামড়ে ধরে হাসি টিকে প্রাণপণে বুকের ভেতরে চেপে দেয়। পরী ওর দিকে চোখ টিপে অবাক সুরে জিজ্ঞেস করে, "আরে অভিমন্যু যে, এখানে কি করে?"
কল্যানি আর রানী ওর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে যেন ওরা কোনো ভুত দেখেছে। পরীর ঠোঁটে ওর পুর নাম শুনে দাতে দাঁত চেপে নিজের হাসিটিকে সংবরণ করে। অভিকে পরী যেমন শিখিয়ে দিয়েছে ঠিক সেই রকম উত্তর দিতে হবে না হলে রানী রাগ করবেন।
অভি উত্তর দেয়, "শুক্রবার চণ্ডীগড়ে একটা ইন্টারভিউ ছিল, সেটা সেরে দেখলাম যে হাতে বেশ সময় আছে তাই সিমলা ঘুরতে চলে এলাম। এই এখন দিল্লী ফিরব তা মাঝ পথে একটু বিশ্রাম নেবার জন্য এখানে চা খাওয়া।"
তারপরে পরীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "শুচিস্মিতা, তুমি এখানে কি করে?"
পরী হাসি চেপে নেয়, মনে মনে বুঝতে পারে যে যেহেতু ও ওর পুরো নাম ধরে ডেকেছে তাই অভিও ওর পুরো নাম নিয়েছে।
পরী কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু কল্যানি ওর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে উত্তর দিল, "আমরা সিমলা কুল্লু মানালি ঘুরতে এসেছিলাম আমাদের বরের সাথে আর শুচিস্মিতা ও আমাদের সাথে এসেছিল। আজ রাতে ফিরে যাচ্ছি।"
পরী কল্যানির দিকে কৃতজ্ঞ নিয়ে তাকাল। ওখানে দাঁড়িয়ে প্রত্যেক জন জানে যে কে কে মিথ্যে বলছে, তাও পরী আর অভি প্রাণপণে বুকের এক কোনে চেপে রাখে ফুটন্ত হাসি।
রানী অভি কে জিজ্ঞেস করল, "তুমি উলুপি ম্যাডামের ছেলে তাই না?"
মাথা নাড়ায় অভি, "হ্যাঁ।"
বুকের মাঝে ধুকপুকানি বেড়ে যায় অভির, রানী আর কল্যানী কি করে মাকে চেনে?
"তোমরা আমার মাকে চেন?"
কল্যানি উত্তর দেয়, "হ্যাঁ চিনি। আমরা ত সেই ছোটো বেলা থেকে বন্ধু, আমি আর পরী একই কলেজে পড়েছি যেখানে উলুপি ম্যাডাম পড়ান।"
পরী দেখল যে এবারে হয়ত ওরা অভিকে প্রশ্নের জালে জড়িয়ে ধরবে, ও কল্যাণী কে চুপ করতে বলে, "কি রে তুই, ওকে কি তোরা হিটলারের মতন প্রশ্ন জালে বিদ্ধ করবি নাকি?"
তারপরে অভির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "তোমার হাতে কি একটু সময় আছে? তুমি কি আমাদের ট্রেন ছাড়া পর্যন্ত থাকতে পারবে?"
রানী পরীকে বলে, "ও থাকতে যাবে কেন? ওর দেরি হয়ে যেতে পারে। আমাদের ট্রেন ছাড়তে ছাড়তে সেই মাঝ রাত, ও কি করে অত সময় আমাদের জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে? ওকে যেতে দে।"
পরী অল্প বিরক্তি হয়ে উঠল, অভির পাশে এসে দাঁড়িয়ে রানী কে বলে, "আমার ছোটো মা’র ছেলে, অনেকদিন পরে এই অচেনা জায়গায় দেখা হয়েছে। আমি যা বলব ও তাই করবে।"
রানী ওর কথা শুনে মৃদু রেগে গেল, "যা ভালো বুঝিস তাই কর, আমি ত শুধু ওর ভালোর জন্যে বলছিলাম। ওর যদি কোনও অসুবিধে না থাকে তাহলে আমার কি অসুবিধে হতে পারে?"
অভির বুঝতে দেরি হল না যে পরী রানীর কথায় আঘাত পেয়েছে, তাই কথা ঘুরিয়ে ওদের কে জিজ্ঞেস করল যে ওদের বরেরা কোথায় গেছে। কল্যাণী উত্তর দিল যে ওদের অয়েটিং রুমে ব্যাগ দেখার দায়িত্ব দিয়ে দু’জনে মিলে কোথাও আড্ডা মারতে বেড়িয়েছে। পরী ওর দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় জানিয়ে দিল যে, "আমাকে একা ফেলে যদি কোথাও যাও তাহলে দেখে নিও আমি কি করি।"
অভি ওর চোখের চাহনি দেখে ওর মনের ভাব বুঝতে পেরে মাথা নাড়িয়ে সায় দেয় যে, "আমি তোমাকে ছেড়ে যাচ্ছি না।"
কিছুক্ষণ পরে কোথা থেকে দিপঙ্কর আর রামানুজ উদয় হল। পরীকে দেখে দিপঙ্কর জিজ্ঞেস করল, "কি ব্যাপার, অর্জুন বাবুর সাথে হানিমুনে কোথায় কোথায় যাওয়া হয়েছিল?"
দিপঙ্করের কোথা শুনে পরীর মুখ লজ্জায় লাল হয়ে উঠল। কল্যানির দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে থাকে। কল্যাণী দিপঙ্করকে মৃদু ধাক্কা মেরে জানিয়ে দিল যে অভি ওখানে উপস্থিত। দিপঙ্কর অভিকে দেখে একটু অপ্রস্তুত বোধ করল। রামানুজ হাত বাড়িয়ে দিল অভির দিকে।
অভি ওদেরকে জিজ্ঞেস করল যে ওরা এই কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে চায় না কোথাও গিয়ে বসতে চায়। সবাই মাথা নেড়ে সায় দিল যে কোন রেস্টুরেনটে গিয়ে বসা যেতে পারে। সবাই রেস্তুরেন্টের দিকে হাঁটতে শুরু করে, পরী আর অভি বাকিদের পেছন পেছন হাঁটতে থাকে। পরীর মুখ গম্ভির, বুকের কাছে হাত আড় করে নিজেকে সামলে নিয়ে পায়ের দিকে তাকিয়ে অভির পাশাপাশি চুপ করে হাঁটতে থাকে।
পরীর মনের অবস্থা দেখে অভি একটু ঘাবড়ে যায় যে আবেগের বশে পরী কিছু না উলটোপালটা করে ফেলে। বুকটা টনটন করতে শুরু করে অভির, পরী এত কাছে থেকেও কত দুরে মনে হয়। সবার সম্মুখে ওকে জড়িয়ে সান্তনা দিতে পারছেনা অভি। বড় কষ্ট হয় পরীর ব্যাথিত চেহারা দেখে।
রেস্তুরেন্টে বসে সবাই গল্প করে কে কি রকম ভাবে ঘুরল। কিছু পরে অভি কল্যাণীকে জিজ্ঞেস করল, "আমরা যখন এত খোলা মেলা হয়ে গেছি ত একটা কোথা জিজ্ঞেস করতে পারি কি?"
কল্যাণী ওর দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল, "হ্যাঁ।"
পরীর দিকে চোরা চাহনি তে দেখে কল্যাণীকে জিজ্ঞেস করল, "এই অর্জুন টি কে?"
ওর প্রশ্ন শুনে কল্যাণী আর রানী একটু থমকে গেল, পরীর দিকে তাকিয়ে থাকে দু’জনে মনের মধ্যে চলতে থাকে যে সঠিক উত্তর দেবে কি দেবে না। পরী হালকা মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় যে ওরা অভিমন্যু কে অর্জুনের কোথা বলতে পারে।
কল্যাণী, "সত্যি বলতে শুচিস্মিতা আমাদের কে অর্জুনের ব্যাপারে বিশেষ কিছু ত জানায় নি তবে ওর মুখ থেকে যা শুনেছি তাতে মনে হল ও তোমার ইন্দ্রানি মাসির দেওর, পরীর খুঁজে পাওয়া ভালবাসার মানুষ। আমি ত এটা ভেবে অবাক হচ্ছি যে আমরা এত ভাল বান্ধবী তাও কেন আমাদের কাছ থেকে অর্জুনের কথা ও চেপে গেল।"
রানী পরী কে জিজ্ঞেস করল, "পরী কেই অর্জুনের কথা জিজ্ঞেস করতে দোষ কি।"
পরী অস্বাভাবিক ভাবে চুপ, বুকের মধ্যে যেন ছেড়ে যাওয়ার ব্যাথা ককিয়ে উঠছে বারে বারে। খুব ধির স্বরে উত্তর দিল, "আমরা দুজনে বেশ ভালো ঘুরেছি, ব্যাস এইটুকু এখন বলতে পারি। বাকি পরে শুনে নিস তোরা।"
গল্প করতে করতে অনেকটা সময় কেটে যায়। দিপঙ্কর ঘড়ি দেখে, "আরে দশটা বাজে যে।"
ওরা রাতের খাবার খেয়ে নিয়ে স্টেসানের দিকে পা বাড়ায়। পরী ওদের বলে যে ও কিছুক্ষণ আরও অভির সাথে কাটাতে চায়। কল্যাণী ওকে বাঁধা দেয় না। বাকিরা স্টেসানে ঢুকে পরে, বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে পরী আর অভি।
দুজনে চুপচাপ হাইওয়ের দিকে হাঁটতে থাকে। পরীর মুখের ওপরে ছেড়ে যাওয়ার ব্যাথার ছবি। মাঝ রাস্তায় অভি ওকে দাঁড় করিয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, "কি হল এত চুপ করে কেন আছো?"
পরী ওর দিকে জল ভরা চোখে তাকিয়ে বলে, "তুমি চলে যাও।"
অভি ওর কাঁধে হাত রেখে ওকে বুকের কাছে টেনে আনে। অভির হাতের ছোঁয়া পেয়ে পরী আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা। বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে কেঁদে ফেলে পরী। অভি ওর পিঠে হাত বুলিয়ে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করে, কিন্তু পরীর কান্না আর থামতে চায় না।
কান্না ভেজা গলায় অভিকে বলে, "সোনা তুমি চলে যাও, প্লিস। এই ঠাণ্ডার রাতে আমার ট্রেন ছেড়ে দেবে আর তুমি একা একা স্টেসানে দাঁড়িয়ে থাকবে। এই দৃশ্য আমার সহ্য হবে না, আমি ভেঙ্গে পড়ব অভি। আমাকে শান্ত করার জন্য আমার বান্ধবীরা আমার সাথে থাকবে কিন্তু তুমি? আমি চলে যাবার পরে তুমি কি করে থাকবে? আমি তোমার বুকের ওই ব্যাথা সহ্য করতে পারব না অভি, প্লিস তুমি এখুনি চলে যাও।"
অভি ওর মাথায় ঠোঁট চেপে ধরে বলে, "আমার জন্য চিন্তা কোরোনা, আমি ঠিক থাকব।"
পরী, "না তুমি চলে যাও। তুমি একা একা দাঁড়িয়ে আমার দিকে হাত নাড়াবে সেই দেখে আমি আরও ভেঙ্গে পড়ব অভি, প্লিস চলে যাও।"
অভি, "ঠিক আছে, দেখছি কি করা যায়।"
অভি ওর চোখের জল মুছে ওকে শান্ত হয়ে অনুরধ করে। তারপরে ওরা দু’জনে স্টেসানের দিকে হাটা দেয়। স্টেসানের বাইরে এসে দেখে যে কল্যাণী আর রানী ওদের পথ চেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পরীর চোখের পাতা ভিজে দেখে কল্যাণী উৎসুক হয়ে অভির দিকে তাকায়। অভি কি উত্তর দেবে ভেবে পায় না, কিছুক্ষণ মাথা চুলকে উত্তর দেয় যে পরী ওর ছোটো মার কথা মনে করে মন খারাপ হয়েছে তাই চোখে জল।
কল্যাণী ওর কথা ঠিক বিশ্বাস করতে পারল না। অভির দিকে একভাবে চেয়ে থাকে কল্যাণী। অভি বুক দুরদুর করে ওঠে, কল্যাণী কি কিছু বুঝতে পেরে গেছে? ওরা যা ভয় পাচ্ছিল সেটা ঘটে যায়। কল্যাণী অভির দিকে তাকিয়ে বলে, "মনে হচ্ছে কিছু অঙ্ক আমি মেলাতে পারছি না।"
অভির দিকে আঙ্গুল তুলে বলে, "আজ বিকেলে তোমাকে এখানে দেখে ঠিক অঙ্ক মেলে নি আমার। তোমার চশমা, ঠিক এই চশমা ছিল অর্জুনের চোখে তাই না। খুলে যদি বলি তাহলে অর্জুন নামে কেউ নেই, তুমি ছিলে শুচিস্মিতার সাথে। কি আমি ঠিক বলছি কি না?"
ওই কথা শুনে অভির মনে হল যেন কেউ ওর মাথার ওপরে গরম লাভা ঢেলে দিয়েছে। বুকের ভেতরে হৃদপিন্ডটা যেকোনো সময়ে ফেটে বেড়িয়ে আসবে এমন জোরে ধুকপুক করতে শুরু করে। পরী ওর দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টি তে তাকিয়ে থাকে, ওরা যে ধরা পরে গেছে। দু’চোখে বন্যা নামে, পরী ওর হাত শক্ত করে ধরে নেয়, কি হবে এবারে।
কল্যাণী পরীর মুখ দেখে সব বুঝতে পেরে যায়। পরীকে জিজ্ঞেস করে, "তোর সাথে অভিমন্যু ছিল তাই ত?"
পরী ওর দিকে জল ভরা চোখ নিয়ে তাকায়। সারা চেহারায় ফুটে ওঠে কাতর আবেদন।
কল্যাণী ওর মুখ দেখে মৃদু হেসে বলে, "চিন্তা নেই তোর। একথা কেউ জানবে না, পরী।"
ওরা সবাই মিলে অয়েটিং রুমের দিকে হাতা দিল। কল্যাণীর কথা শুনে দু’জনের বুকের ওপরে এতক্ষণ যে পাথর চাপা ছিল সেটা সরে যায়। অয়েটিং রুমে বসা, দিপঙ্কর আর রামানুজ ওদের দেখে একটু ঘাবড়ে যায়। রানী ওদের কে সব কথা বলে। কথা শুনে সবাই চুপ। অভির আর পরীর ধুকপুক করতে থাকে, কি হবে কি হবে।
রানী পরীর চিবুক আঙ্গুল দিয়ে নেড়ে হেসে বলে, "অরে মেয়ে চিন্তা করিস না। এই খবর আমাদের কাছে গোপনে থাকবে।"
সবাই মাথা নেড়ে সায় জানায় যে এই কথা ওরা কাউকে জানাবে না।
কল্যাণী পরীর পাশেই বসে ছিল, ওর জড়িয়ে ধরে বলল, "তুই এত চিন্তা করছিস কেন? ওকে ভালবাসিস বলে চিন্তা করছিস না তুই ওর চেয়ে বড় বলে চিন্তা করছিস। তুই সুন্দরী বুদ্ধিমতী মেয়ে আর ও একটা বুদ্ধিমান ছেলে। তোরা একে অপরকে ভালবাসিস, এতে পাপ কোথায়? তুই ওর সম্পর্কের মাসি হস তাই ভয়? তোদের কোন রক্তের সম্পর্ক নেই। ও তোর কে হয়? তোর মায়ের মামাত দিদির, সেজ মেয়ের ছেলে। তোদের সম্পর্ক অনেক অনেক দুরের, কেউ কাউকে চিন্তিস ও না। ওটা হয়েছে কেননা উলুপি ম্যাডাম তোর বাড়ির কাছের কলেজে পড়ান বলে তোদের পরিরবারে সাথে সম্পর্ক, তা না হলে তোরা কেউ কাউকে চিন্তস ও না।"
দিপঙ্কর অভির পিঠ চাপড়ে বলল, "ব্রাদার এত ভয় পাবার কি আছে? তুমি ত ভায়া আমার সব থেকে সুন্দরী শালি টাকে হাত করে নিলে আর তার সাথে একা একা কোন এক দুর্গম স্থানে ঘুরেও এলে। তোমার সাহসের বলিহারি।"
পরীর ওদের কে মন থেকে কৃতজ্ঞতা জানাল, "তোদের কি করে যে ধন্যবাদ জানাব আমি ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না রে।"
রানী ওদের দিকে তাকিয়ে দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করে, "তোরা দুটি শয়তান, সময় কেমন কাটালি?"
অভির দিকে চোখ মেরে জিজ্ঞেস করে, "তুমি আমার বান্ধবিকে বেশি ব্যাথা দাও নি ত?"
ওর কথা শুনে লজ্জায় পরীর মুখ লাল হয়ে গেল, অভির দিকে লাজুক মুখে তাকিয়ে মিটি মিটি করে হেসে ফেলল পরী। পরীর পুনরায় হসি মুখ দেখে অভির মন থেকে চিন্তার পাথর সরে যায়।
কল্যাণী পরীর গাল টিপে জিজ্ঞেস করে, "তোরা তাহলে বেড়াতে গিয়ে অনেক মজা করেছিস তাই না? আমি তোর চোখের হাসি দেখে বুঝতে পেরে গেছি সুতরাং আমার কাছে লুকিয়ে বিশেষ লাভ হবে না, পরী।"
চিন্তার মেঘ কেটে গেছ, ওরা সবাই আবার ঘোরার গল্পে মেতে উঠল, কে কি রকম কোথায় কোথায় ঘুরেছে তাঁর বর্ণনা করতে শুরু করে দিল। পরীর মুখে চিতকুলের বর্ণনা শুনে ওরা চারজনে অভিভুত। পরী অভির কাঁধে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরে থাকে ওর হাত। সময় খুব দ্রুত বয়ে চলে। স্টেসানের লাউডস্পিকারে ট্রেনের আগমনের ঘোষণা শুনে ওদের সময়ের কথা মনে পরে যায়।
দিপঙ্কর আর রামানুজ ট্রেনে উঠে ওদের সিটে নিজেদের ব্যাগ পত্র রাখে। পরী অভির হাত শক্ত করে দাঁড়িয়ে থাকে প্লাটফরমের ওপরে, ওকে ছাড়তে একদম মন চাইছে না। অভি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, কবে আবার দেখা হবে পরীর সাথে, কি করে ছেড়ে যাবে পরীকে। বুকের ভেতর টনটন করে ওঠে আসন্ন বিরহ বেদনায়। কল্যাণী পরীর কাঁধে হাত দিয়ে ইশারা করে বলে ট্রেনে উঠতে। পরী অভির হাত ছাড়তে চায় না।
কান্না ভেজা চোখে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, "আমি তোমাকে বলেছিলাম তুমি চলে যাও, তুমি আমার কথা শুনলে না। আমি তোমাকে বলেছিলাম। আমি তোমাকে একা ফেলে কি করে যাব অভি। আমি তোমাকে বার বার বলেছিলাম চলে যেতে, অভি।"
কল্যাণী পরীকে জড়িয়ে ধরে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করে। অভি ওর মুখ আঁজলা করে নিয়ে বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে গালের অপরের জলের দাগ মুছিয়ে দেয়। গালে অভির হাতের পরশ পেয়ে আরও যেন ডুকরে কেঁদে ওঠে পরী।
অভি, "প্লিস ছোটো বাচ্চার মতন কাঁদে না সোনা, আমি ঠিক আছি সোনা।"
কল্যাণী অভিকে জানায় যে ও পরীকে সামলে নেবে। অভি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ম্লান হাসে, বুকের ভেতরে বিরহের সুর বেজে ওঠে। ওর ভয় করে আবার যেন পরী অজ্ঞান না হয়ে যায়।
অভি, "আমি কথা দিচ্ছি যে এই দু’মাসে তোমার সাথে কিছু করে হক আমি দেখা করব।"
কল্যাণী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, "দু’মাস অনেক লম্বা সময়।" মাথা নাড়ায় অভি, "হ্যাঁ কিন্তু কি করা যাবে।"
কল্যাণী পরীকে নিয়ে ট্রেনের দিকে হাটা লাগায়। কল্যাণী ট্রেনে উঠে পরে। অভি একমনে দেখতে থাকে পরীকে। এমন সময় কল্যাণীর হাত ছাড়িয়ে পরী ঘুরে দাঁড়ায়, আর দৌড়ে এসে অভির বুকে ঝাঁপিয়ে পরে। অভি দুহাত দিয়ে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে পরীকে, যেন পৃথিবীর কোন শক্তি ওদের কে বিচ্ছিন্ন করেত না পারে। পরীর মাথার ওপরে ঠোঁট চেপে ধরে অভি। অভির বুকের ওপরে ঠোঁট চেপে ধরে পরী।
ট্রেনের হুইসেল বেজে ওঠে। পরীকে কোন মতে আলিঙ্গন থেকে মুক্ত করে। পরী দৌড়ে ওর বান্ধবীদের কাছে চলে যায়। ট্রেন ছেড়ে দেয়, পরী ওর দিকে জল ভরা চোখ আর ঠোঁটে হাসি নিয়ে তাকিয়ে থাকে। কল্যাণী ওকে জড়িয়ে ধরে থাকে। পরী ওর ডান হাতের তর্জনী ঠোঁটের কাছে এনে, তাঁর ডগায় একটা ছোট্ট চুমু খেয়ে অভির দিকে ছুঁড়ে দেয়। অভি পরীর ছোড়া সেই চুমু টা লুফে নিয়ে বুকের মধ্যে চেপে ধরে।
অভি ডান হাতের তর্জনী উঠায় ইশারা করে "আই" তারপরে বুড়ো আঙ্গুল আর তর্জনী মেলে ধরে, ইশারা করে "এল" শেষে মধ্যমা আর অনামিকা ফাঁক করে ইশারা করে "ইউ"।
ট্রেন ঘন কালো অন্ধকারে মিলিয়ে যায় কিছুক্ষণে মধ্যেই। অভি একা দাঁড়িয়ে থাকে খালি প্লাটফরমের ওপরে, বুক টা হুহু করে ওঠে। বাকি রাস্তা ওকে একা একা ফিরতে হবে, সাথে থাকবে না পরী। পকেট থেকে রুমাল টি বের করে একবার পরীর গায়ের গন্ধ মুখে মেখে গাড়ির দিকে পা বাড়ায়।
Posts: 420
Threads: 9
Likes Received: 434 in 312 posts
Likes Given: 217
Joined: Jan 2019
Reputation:
20
তৃতীয় অধ্যায়ঃ গঙ্গাবক্ষে জোয়ার ভাঁটা
জলপরীর স্বপ্ন
অভিমন্যু তালুকদারের পরিবার বেশ সচ্ছল। দমদমে ওদের বিশাল দু’তলা বাড়ি। একতলায় একটা মারয়ারি পরিবার ভাড়া থাকে। দু’তলায় তিনটে শোবার ঘর, একটি খাবার ঘর আর একটি বশার ঘর। তিন’তলায় একটি শোবার ঘর আছে। মায়ের হারিয়ে যাওয়া মেয়ে, পরীর জন্য, অভিকে ওর দুতলার ঘর ছেড়ে দিতে হয়। মায়ের মেয়ের চেয়ে ভাবি বউমা বলা ভাল, যদিও অভির মনে সংশয়ের দানা বাঁধা যে মা বাবা র সম্মতি পাওয়া অনেক অনেক কষ্টকর হবে। বাবার আদেশ অমান্য করা যায় না, দু’তলায় ঘর খালি থাকলেও অভিকে তিন তলার ঘর বরাদ্দ করা হয়।
কলেজের পরীক্ষা সামনে, পরাশুনায় ডুবে যায় অভিমন্যু। রোজ রাতের বেলা পরীর কাজল কালো চোখ ওর খোলা বইয়ের পাতায় ফুটে ওঠে। গালে পরীর ঠোঁটের পরশ অনুভব করে তখন। মন যেন কেমন করে ওঠে অভির। কাল্কা তে পরী যে চুমু ছুঁড়ে দিয়েছিল তাঁর কথা অভির বারে বারে মনে পরে যায়, সেই চুমু টাকে নিজের বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখে অভি। পড়তে বসে পড়ার দিকে মন থাকে না। রুমাল বের করে মাঝে মাঝে ঠোঁটের ওপরে বুলিয়ে পরীর স্পর্শ নিতে চেষ্টা করে, মুখের ওপরে মেলে ধরে রুমাল, অনুভব করতে চেষ্টা করে পরীর হাতের মিষ্টি ছোঁয়া। গ্রামের মেয়ে লাজুক পরী, মিলনের সময়েও একবারের জন্য নিজেকে অভির চোখের সামনে উন্মুক্ত করতে পারেনি।
দিনটা ছিল বৃহস্পতি বার, ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে। কোলকাতায় ঠাণ্ডা বেশ কমে এসেছে। আকাশে বেশ ঝলমলে রোদ উঠেছে। হাওয়ায় যেন ভালবাসা ঘুরে বেড়াচ্ছে। কলেজে যাবার আগে মা অভিকে জানাল যে বিয়ের পরে সুব্রত আর মৈথিলীকে নিমন্ত্রন করে খাওয়ানো হয়নি তাই আজ মা ওদের কে বাড়িতে ডেকেছে। অভির মন চঞ্চল হয়ে ওঠে, একবারের জন্য জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে যে পরী সাথে আসবে কিনা। কিন্তু কিন্তু করেও শেষ পর্যন্ত মাকে জিজ্ঞেস করে যে পরী সাথে আসছে কি না। মা জানালেন আসতেও পারে নাও আসতে পারে পরী। পরীর আসার ঠিক নেই শুনে অভির মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। কলেজে সারাদিন মনমরা হয়ে থাকে অভির। বারেবারে পরীর চোখ বইয়ের পাতার ওপরে ভেসে ওঠে।
রাতে ফিসিক্স পেপারের কোচিং ক্লাস ছিল তাই অভির বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়। মনমরা হয়ে বাড়ি ফিরে কলিং বেল বাজায় অভি। কলিং বেলের আওয়াজ শুনে মা বারন্দা থেকে দেখলেন যে কে এসেছে।
দরজা খুলল কেউ, সামনে পরীকে দেখে হাঁ হয়ে গেল অভি। বাঁ পা চউকাঠের ভেতরে কিন্তু তারপরে আর পা ওঠে না অভির।
অভির বিস্ময়ান্বিত মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে পরী। চিবুকে আঙ্গুল দিয়ে ওর খোলা মুখ বন্ধ করে দিল, হেসে বলল, "মাছি ঢুকে যাবে যে!"
অভি হাঁ করে তাকিয়ে পরীর রুপ দেখে। অনেক দিন পরে পরীকে যে নতুন করে দেখছে অভি। ফর্সা কপালে, দুই বাঁকা ভুরুর মাঝে নীল রঙের টিপ। লম্বা ঘন কালো চুল খোলা, বাঁ কাঁধের ওপরে থেকে সামনের দিকে নেমে এসেছে। চুলের কিছু অংশ মুখখানি কিছুটা ঢেকে রেখেছে যেন চাঁদ লুকিয়ে আছে কালো মেঘের আড়ালে। পরনে আঁটো গাড় নীল রঙের কামিজ, বুকের নিচ থেকে ফুলে উঠে একদম হাঁটু পর্যন্ত নেমে গেছে ঘাগরার মতন। হাসিতে গালে টোল পড়েছে আর অভির ওই হাসি দেখে মনে হল যেন এখুনি পরীকে জড়িয়ে ধরে ওর লাল লাল গালে চুমু খায়।
পরী ওর মুখ বন্ধ করে চোখের পাতার ওপরে আঙ্গুল রেখে বলে, "আমার দিকে ওইরকম ভাবে তাকিয়ে থেকো না, আমার ভেতর টা কেমন করে উঠছে, অভি।"
অভি দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে পরীকে জড়িয়ে ধরতে যায়। পরী ওকে আলতো ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে বলে, "কি করছ? বাড়িতে সবাই আছে যে। দেরি দেখলে এখুনি ছোটো মা ডাক দেবে।"
চালে মত্ত ছন্দ এনে অভির কবল থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে তরতর করে সিঁড়ি বেয়ে উঠে যায় পরী। অভি কিছুক্ষণ ওকে পেছন থেকে দেখে, তারপরে আবার হাত বাড়িয়ে ধরতে চেষ্টা করে। পরী দৌড়ে ওর হাতের নাগালের বাইরে চলে যায়। বার বার পেছনে তাকিয়ে হাসে আর দুচোখ যেন ওকে হাতছানি দিয়ে ডেকে বলে, "ধরতে পারলে আমি তোমার।"
বসার ঘরে ঢুকে অভি দেখল যে বাবা মা সুব্রত মৈথিলী বসে চা খাচ্ছে আর গল্প করছে।
সুব্রত ওকে দেখে বলে উঠল, "কি মামা কেমন আছো?"
মৈথিলীর দিকে তাকিয়ে মাথা নোয়ায় অভি। মৈথিলীর চোখে চোখ রেখে উত্তর দেয়, "মামা আমি ভাল, তোমার খবর বল?"
নতুন বউ মৈথিলী কে দেখতে ভারী সুন্দর লাগছে, পরনে কাঁচা হলুদ রঙের শাড়ি। এই বার বেশ কাছ থেকে দেখছে মৈথিলীকে, বিয়ের সময়ে তো ঠিক করে দেখে ওঠা হয়নি নতুন বউকে। গায়ের রঙ পরীর মতন অত ফর্সা না হলেও ফর্সা বলা চলে মৈথিলীকে। বেশ খানিকক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থাকে অভি। সুব্রত ওর কাঁধ চাপড়ে ওর কলেজের খবরাখবর জিজ্ঞেস করে। অভি মাথা নেড়ে উত্তর দেয় যে সব ঠিক চলছে।
মা জানালেন যে ওদের আনতে গিয়ে পরী ও বায়না ধরে যে আসবে তাই মা ওকেও সাথে নিয়ে আসে। মায়ের কথা শুনে পরী চোরা চাহনিতে অভির দিকে তাকায়, "দেখলে ত আমার বুদ্ধি।"
সামনে পরী মায়ের সাথে বসে। পরী মাকে জড়িয়ে ধরে আদর খাচ্ছে। পরীর মুখে অনাবিল আনন্দ, যেন অনেক দিন পরে ও হারিয়ে যাওয়া খেলনা খুঁজে পেয়েছে।
মা ওদেরকে শোনাতে লাগ্লেন যে পরীর ঘর টাকে মা কি রকম করে সাজিয়েছেন। সব ঘরের জন্য নতুন পর্দা কেনা হয়েছে, পরীর যে রঙ ভালো লাগে সেই রঙের বিছানার চাদর কেনা হয়েছে। এমনকি ঘরের দেয়ালের রঙ পর্যন্ত পরীর পছন্দের রঙ্গে রঙ করেছে মা। অভির সেই কথা ঠিক সহ্য হল না, মায়ের যেন সব কিছু বাড়িয়ে বলার স্বভাব। অভি পরীর দিকে তাকিয়ে দেখল, ধিরে ধিরে পরী জানতে পারবে ওর ছোটো মা কি রকম মানুষ। অভি মাথা ব্যাথার ছল করে অখান থেকে উঠে, তিন তলায় নিজের ঘরে চলে এল।
মায়ের সবকিছু যেন বারাবারি করে বলার স্বভাব। নিজে কি করেছে না করেছে যেন সবাইকে ঢাক পিটিয়ে না বললে শান্তি হয় না মায়ের। অভির প্রতি ভালবাসা বাঁ স্নেহ যেন মা সবসময়ে পয়সা দিয়ে মাপে। মাঝে মাঝেই শোনাতে ছারে না যে যেহেতু বাবা মা ওর পড়াশুনার জন্য অনেক পয়সা খরচ করেছে সুতরাং ওকে ভাল রেসাল্ট করতেই হবে। জয়েন্ট পায়নি বলে ওর মুন্ডুপাত করতে ছারেনি মা। এই সব ভাবতে ভাবতে চুপ করে টেবিলের পাশে বসে থাকে অভি। এমন সময়ে দরজায় কেউ টোকা মারে।
অভি ভাবে পরী হয়ত দেখা করতে এসেছে, কিন্তু ঘুরে দেখে যে দরজায় সুব্রত দাঁড়িয়ে। সুব্রত ওকে জিজ্ঞেস করে, "কি মামা কি ব্যাপার? সব কিছু ঠিক ত।"
অভি ওর দিকে হেসে উত্তর দেয়, "মামা সব ঠিক।"
সুব্রত ওকে জিজ্ঞেস করল, "আজ রাতে পারটি করা যাবে কি?"
অভি উত্তর দিল, "হ্যাঁ মামা, করা যাবে। কিন্তু তুমি কি এনেছ না আমাকে নিয়ে আসতে হবে?"
সুব্রত, "না মামা আমি আনিনি, তোমাকে যোগাড় করতে হবে।"
অভি, "ঠিক আছে যোগাড় হয়ে যাবে চিন্তা কোর না।"
সুব্রত, "উলুপিদি জানতে পারবে না ত? জানতে পারলে..."
অভি ওকে আসস্থ করে, "না মামা জানতে পারবে না। রাতের বেলা কেউ উপরে আসে না। আমরা চাইলে সারা রাত ধরে গল্প করতে পারি। এই টুকু স্বাধীনতা মা আমাকে দিয়েছে যে আমার ঘরে কন বন্ধু এলে মা আমার ঘরে আসেন না। আর যাই হক, সকালে কলেজে যাবার সময়ে আমি সব বোতল নিয়ে বাইরে ফেলে দেব।"
•
Posts: 420
Threads: 9
Likes Received: 434 in 312 posts
Likes Given: 217
Joined: Jan 2019
Reputation:
20
অভি মাকে বলল যে ও আর সুব্রত একটু বাইরে যাচ্ছে। মৈথিলী আর পরী ওদের দু’জনার দিকে সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকাল।
মৈথিলী সুব্রতর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, "কোথায় যাওয়া হচ্ছে? যেখানেই যাচ্ছ বেশি দেরি করবে না, খাওয়ার আগেই চলে আসবে।"
সুব্রতর হয়ে অভি উত্তর দিল, "চিন্তা করও না আমি তোমার বর কে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছি না। আমরা খাওয়ার আগেই ফিরে আসব।"
পরী মৈথিলী কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে অভির দিকে তাকিয়ে বলল, "আমি জানি তোমরা কোথায় যাচ্ছ।"
অভি বুঝতে পারল যে পরী বুঝে গেছে তাই চুপ করার জন্য ওকে ধমকের সুরে বলল, "ঠিক আছে হয়েছে, এবারে ভেতরে যাও তুমি।"
অ্যালকোহল কিনতে বেড়িয়ে গেল ওরা। বাস স্টান্ডের কাছে একটা দোকানে পেয়ে যেতে পারে না পেলে খান্না না হয় দমদম স্টেসানের কাছে যেতে হবে।
সুব্রত ওকে জিজ্ঞেস করল, "আচ্ছা মামা তুমি অরুনিমার ওপরে কি জাদু করেছ? বারবার তোমার কথা জিজ্ঞেস করে।"
অভি মাথা চুলকায়, অরুনিমা কে অরুনিমা? তারপরে মনে পরে, হ্যাঁ সুব্রতর শ্যালিকা অরুনিমা, দক্ষিণ কোলকাতায় থাকে, বউভাতের দিন দেখা হয়েছিল।
সুব্রত ওর মুখ দেখে বলে, "কি মামা, অরুনিমাকে ভুলে গেলে? আমার সেই সুন্দরী শ্যালিকা, বউভাতের দিনে দেখা হয়েছিল তোমার সাথে।"
অভি, "হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে, অরুনিমার কথা।"
সুব্রত, "কি মামা, তুমি আমার অমন সাধের শালিকাকে ভুলে গেলে। ও তোমার কথা কত জিজ্ঞেস করেছিল।"
অভির অসব কথা ঠিক পছন্দ হয় না, তাই কথা ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করে, "মামা তুমি বল তোমার হানিমুন কেমন গেল। হানিমুনে গিয়ে চুরনির সাথে কি কি খেলা করলে।"
সুব্রত, "মামা গোয়া দারুন জায়গা। শীতকালে ত আরও সুন্দর মামা। অইসব রোদে ঢাকা বিচ আর তাঁর ওপরে বিকিনি পরা মেয়েছেলেরা। মামা কি যে বলব, চোখের যে কি সুখ, বলে বুঝাতে পারব না।"
অভি, "ত তুমি বউকে ছেড়ে ওই বিকিনি পরা মেয়েদের দেখছিলে?"
সুব্রত, "মামা, বিউটি দেখা ভাল, টাচ না করলেই হল।"
অভি, "তাঁর মানে কি চুরনি সুন্দরী নয়?"
সুব্রত, "না না না আমার মানে সেটা নয়..."
সুব্রত শুরু করল ওদের হানিমুনের গল্প। দমদম থেকে ওরা অ্যালকোহল কিনে নিয়ে বাড়ির দিকে ফেরা শুরু করল। ফেরার পথে আবার সুব্রতর মুখে অরুনিমার কথা।
সুব্রত, "অরুনিমা আমাকে বলেছিল যে ও নাকি তোমাকে ওর ফোন নাম্বার দিয়েছে আর তুমি নাকি এক বারও ফোন করনি?"
অভি, "মামা আমি একদম ভুলে গেছিলাম ওর কথা ত আমি কি করে ওকে ফোন করব। যাই হক ও অত বার করে আমার কথা কেন জিজ্ঞেস করছিল?"
সুব্রত, "আরে মামা, না জানার ভান কোরনা একদম। তুমি ওকে কি জল খাইয়েছ সেটা তুমি জানো।"
অভি ওকে মজা করে বলল, "মামা আর একবার অরুনিমার সাথে পরিচয় করিয়ে দাও তারপরে দ্যাখ তোমার শালির অবস্থা কি করি।"
সুব্রত জোরে হেসে ফেলল, "মামা অরুনিমা তোমার সাথে দেখা করার জন্য পাগল। আমি তোমার ফোন নাম্বার ওকে দেইনি এই ভেবে যে তুমি কি ভাববে তাই। যাই হক আমি তোমার কথা অরুনিমার কাছে পৌঁছে দেব।"
বাড়ি ফিরে দেখল, যে খাবার তৈরি। মা জানালেন যে পরী মায়ের সাথে শোবে। পরীর ঘরে সুব্রত আর মৈথিলী বাবার জায়গা গেস্ট রুমে। খাবার পরে সুব্রত আর অভি তিন তলায় অভির ঘরে চলে যায়, ড্রিঙ্ক পার্টি শুরু করার জন্য।
অভি আর সুব্রত মুখমুখি বিছানার ওপরে বসে। অভি বিছানার ওপরে খবরের কাগজ পেতে দেয় তার ওপরে বোতল আর গ্লাস রাখে। সুব্রত প্রথম পানের গ্লাস তৈরি করে অভির হাতে ধরিয়ে দেয়।
অভি, "চিয়ারস ফর হানিমুন মামা।"
সুব্রতর কিছুক্ষণ পরেই নেশা চরে যায়, "কি জায়গা মামা, কি যে বলব।"
অভি, "তুমি মামা শুধু বিচ আর বিউটি দেখেছ? তোমার চুরনির বিউটি দেখনি?"
সুব্রত, "চুরনি চুরনি চুরনি... আমার স্বপ্নের সেক্সি বউ।"
অভি, "আমি জানি তোমার সেক্সি বউ, তারপর কি হল?"
সুব্রত, "মামা হানিমুনে তুমিও গোয়া যেও।"
অভি মনে মনে বলে, "আমার সমুদ্র সৈকত পছন্দ করে না, পাহাড় পছন্দ করে। হানিমুন ত আমরা পাহারে কাটিয়ে এসেছি।" অভি ওকে বলে, "না মামা, আমার পাহাড় পছন্দ, আমি আমার বউকে নিয়ে হানিমুনে পাহাড়েই যাবো।"
গল্প চলতে থাকে, রাত এগারটা বেজে যায় গল্প করতে করতে। কলকাতার ফেব্রুয়ারি মাসের শীত বড় মিষ্টি। কিন্তু আজ মদের নেশায় আর মৈথিলীর রুপ যেন ওর শরীর গরম করে দিয়েছে। গ্লাসের শেষ পানীয় টুকু গলায় ঢেলে দেয় অভি। চোখের সামনে এক কমনীয় নারী মূর্তি ভেসে ওঠে, কে ও পরী না মৈথিলী?
Posts: 420
Threads: 9
Likes Received: 434 in 312 posts
Likes Given: 217
Joined: Jan 2019
Reputation:
20
সুব্রত আর অভি দুজনের নেশা আজ ঠিক ঠাক, নিজেদের আয়ত্তে আছে এখন, বউভাতের আগের দিনের রাতের মতন চুরান্ত অবস্থায় এখন পৌঁছায়নি ওরা। কিছুক্ষণ পরে দুজনেই চুপ, যেন আর কিছু বলার নেই। এক এক চুমুক গ্লাসে দিতে দিতে এঁকে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে লাল লাল চোখে।
ঠিক সেই সময়ে দরজায় আওয়াজ হয়। মৈথিলী দরজার পাল্লা ঠেলে ঘরের মধ্যে ঢুকে পরে, পেছন পেছন পরী।
মৈথিলী বোতল আর গ্লাস দেখে আঁতকে ওঠে, "কি হচ্ছে এ সব। আমি ত ভাবছিলাম যে তোমারা এমনি গল্প গুজব করছ, ঘুণাক্ষরে ও ভাবতে পারিনি যে তোমরা দারুর বোতল নিয়ে বসবে, সেই রাতের কথা মনে নেই তোমাদের?"
নেশায় ঢুলু ঢুলু অভির চোখের সামনে দুই সুন্দরী নারী দাঁড়িয়ে। মৈথিলীর পরনে একটা হালকা বেগুনি রঙের টু’পিস নাইটড্রেস। কোমরের কাছে বেল্ট দিয়ে বাঁধা থাকার দরুন উন্নত বুখ দুটি যেন ফুলে উঠেছে। ভেতরের নাইটড্রেস টা মনে হয় হাতকাটা এবং ছোটো। মাঝে মাঝে অপরের অংশের ফ্লাপ খুলে যাওয়ার দরুন মসৃণ পা বেড়িয়ে পড়ছে। মাথার চুল খোলা, চোখে যেন আগুন। কটমট করে সুব্রতর দিকে তাকিয়ে আছে। পরী ওর পেছনে দাঁড়িয়ে পরনে সাদা রঙের পাতলা একটা নাইট ড্রেস। পরীর পেলব শরীরের সাথে লেপটে রয়েছে গায়ের কাপড়। পরী পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে রয়েছে মৈথিলীর কোমর আর ওর কাঁধের ওপরে থুতনি রেখে মিটিমিটি করে অভির দিকে তাকিয়ে হাসছে। অভির নেশার চোখে ঠাহর করতে পারছে না যে এই রাতে কাকে বেশি সুন্দরী দেখাচ্ছে, পরী না মৈথিলী। পরী মত্ত চোখের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে দুষ্টুমি ভরা হাসি দেয় আর জিব দিয়ে অপরের ঠোঁট চেটে নেয়। অভির হৃদয় ব্যাকুল হয়ে ওঠে পরীর ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য। সুব্রত মৈথিলীর দিকে ক্ষুধার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে, সুযোগ পেলে যেন ঝাঁপিয়ে পড়বে মৈথিলীর ওপরে আর কুটিকুটি করে ছিঁড়ে খাবে ওর কমনীয়তা। পরী যেহেতু মৈথিলীর বুকের নিচে হাত দিয়ে থাকে তাই মৈথিলীর বুক দুটি অস্বাভাবিক রুপে সামনের দিকে ঠেলে ওঠে। সুব্রত আর অভির দু’জনের সেই উন্নত বক্ষ দেখে শিরায় শিরায় উত্তেজনার আগুন ছড়িয়ে পরে।
অভি ওদের রুপ লাবন্য দেখে আর থাকতে পারে না। পরীর হাসি যেন ওর বুকের মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। এত কাছে থাকা সত্তেও পরীকে জড়িয়ে ধরতে পারছেনা অভি, ওর ওই লাল লাল গালে চুমু খেতে পারছে না। শেষ পর্যন্ত অভি ওদের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে দু’হাত মৈথিলীর দিকে ছড়িয়ে দিয়ে, দু’চোখ পরীর চোখের ওপরে নিবদ্ধ করে গান গেয়ে ওঠে,
"এয়সে না মুঝে তুম দেখো...
সিনে সে লগা লুঙ্গা...
তুমকো মেয় চুরা লুঙ্গা তুমসে...
দিল মে ছুপা লুঙ্গা..."
ওর গান শুনে মৈথিলী একটু থমকে যায়। দুজনেই লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে। পরী বুঝতে পারে যে গান টা অভি ওর জন্য গেয়েছে, কিন্তু লজ্জায় মৈথিলী নিজের মুখ দুহাতে ঢেকে নেয়। সুব্রত লাফিয়ে নেমে পরে বিছানা থেকে আর অভির কান ধরে উঠিয়ে দেয়।
সুব্রত, "আবে কুত্তা, আমার বউকে লাইন মারা হচ্ছে?"
অভি মনে মনে বলে, "মামা আমি তোমার বউকে কেন লাইন মারতে যাব। আমার বউ যে তোমার পেছনে দাঁড়িয়ে, আমি গান ত আমার বউয়ের জন্য গেয়েছি।"
কিন্তু সুব্রতর সাথে মজা করার জন্য বলে, "মামা চুরনি কে দেখে আর থাকতে পারলাম না মামা, আচমকা গান টা বুক থেকে বেড়িয়ে গেল।"
সবাই হেসে ওঠে ওর কথায়। তারপরে সবাই বসে পরে বিছানার ওপরে। মৈথিলী সুব্রতর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে আর সুব্রত মৈথিলীকে জড়িয়ে ধরে থাকে। জড়াজড়ি করার ফলে মৈথিলীর পরনের কাপড় হাটুর ওপরে উঠে আসে আর মসৃণ বাঁকা পায়ের গুচ্ছ নেশাগ্রস্ত অভির চোখের বেড়িয়ে পরে। সেই দৃশ্য দেখে অভির গালার কাছে উত্তেজনা দলা পাকিয়ে যায়। সুব্রতর আদরের চটে মৈথিলীর চোখ কিঞ্চিত বন্ধ হয়ে আসে। পরী আর অভি জানে যে ওদের সামনে ওরা প্রেমিক প্রেমিকা নয় তাই ওরা দুজনে একটু দুরে দুরে বসে। পরীর মনে অভির মুখ দেখে বড় কষ্ট হয়, এত কাছে থাকা সত্তেও ও ওর কোলে মাথা রেখে শুতে পারছে না। হৃদয়ের ভেতর টা যেন কেঁদে ওঠে পরীর। শুধু দুজন দুজনার দিকে চোরা চাহনিতে প্রেম নিবেদন ছাড়া আর কিছু করতে পারে না।
মৈথিলী অভিকে বলে, "অভিমন্যু তুমি আমার বরকে মাতাল বানিয়ে ছাড়লে।"
অভি, "আরে চুরনি, আমার সাথে দেখা হওয়ার আগে থেকে তোমার বর ড্রিঙ্ক করে।"
মৈথিলী ওর কথা শুনে সুব্রতর দিকে কটমট করে তাকায়, এই যেন খেয়ে ফেলবে। সুব্রত বিব্রত বোধ করে, মৈথিলীকে শান্ত করার জন্য বলে, "না গো, আমি একদম ড্রিঙ্ক করি না, এই শুধু বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান হলে করে ফেলি।"
মৈথিলী, "আজ বিশেষ কোন অনুষ্ঠান আছে শুনি?"
সুব্রত, "বাঃ রে, আজকে ত বেশ বড় দিন। উলুপিদি আমাদের নেমন্তন্ন করেছে, অভিমন্যুর সাথে দেখা হল, আমাদের হানিমুন ভাল কেটেছে... আরও কত কিছু আছে বেবি।"
অভি, "পিনেঅয়ালে কো পিনে কা বাহানা চাহিয়ে, মাতালের শুধু মাত্র একটা ফাঁক দরকার, চুরনি।"
পরী আর মৈথিলী দুজনেই অভির কথা শুনে হেসে ফেলল। মৈথিলী সুব্রতকে বলল, "আর গলায় না ঢেলে আমার সাথে শুতে এসো তাড়াতাড়ি।"
মৈথিলীর দিকে দেখল অভি, মৈথিলী একটু বিরক্তি ভরা চোখে সুব্রতর দিকে তাকিয়ে।
অভি ওকে খ্যাপানর জন্য বলল, "রাতের জন্য তর সইছেনা চুরনি? রাতে শোবে না জেগে কাটাবে?"
ওর কথা শুনে মৈথিলীর মুখ আবার লজ্জায় লালা হয়ে ওঠে। পরী বিরক্ত হয়ে অভিকে বকে, "তুমি চুপ করবে না হলে আমি কিন্তু তোমাকে মেরে ফেলব।"
অভি পরীর দিকে ফিরে মাথা নুইয়ে ইশারায় জানায়, "তোমার হাতে মরার জন্য আমি কবে থেকে তৈরি।"
সুব্রত মৈথিলীকে অনুনয় করে, "প্লিস প্লিস প্লিস, আর একটা গ্লাস, ব্যাস তারপরে আমি তোমার বাহুতে।"
পরী অভিমান করে অভির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "তোমরা গিলবে ওই সব আর আমরা কি আঙ্গুল চুষব?"
সুব্রত, "আরে না না, তোরা কোক খেতে পারিস।"
কোকের বতলের দিকে তাকিয়ে দেখল যে বোতল খালি। পরী খালি বোতল টা ওদের নাকের সামনে নাড়িয়ে বলল, "আমরা কি খালি জল খাব? তা হবে না।"
সুব্রত অভিকে জিজ্ঞেস করল, "মামা কি করা যায়, এই রাতে এদের জন্য কিছু যোগাড় করতে হবে যে না হলে আমি ত রাতে শুতে পারব না মামা।"
অভি আবার গেয়ে উঠল,
"কভি নেহি পর শকতা মেয়খানে মে তালা...
কভি নেহি পর শকতা মেয়খানে মে তালা...
এক দো চার নেহি সারা শহর হ্যায় পিনে ওয়ালা..."
কবিতা শুনে সুব্রত বলে উঠল, "অয়াহ অয়াহ... কেয়া বাত হ্যায়, তাহলে যাও মামা এক লিটার কোক নিয়ে এস।"
রাত সাড়ে বারটা বাজে, অভি একবার ঘড়ি দেখল একবার পরী কে দেখল। তারপরে দৌড়ে বেড়িয়ে গিয়ে বাস স্টান্ডের কাছে একটা দোকান থেকে এক বোতল কোক কিনে আনল।
হাপাতে হাপাতে সিঁড়ি চরে ছাদে উঠে লক্ষ্য করে যে পরী খালি ছাদের দাঁড়িয়ে, আকাশের দিকে মুখ করে একমনে তারা দেখছে। আকাশে বাঁকা চাঁদ, মেঘের আড়ালে মাঝে মাঝে লুকোচুরি খেলছে।
পরীর হাত বুকের কাছে ভাঁজ করা। সেই অন্ধকার রাতের মৃদু আলোতে পরীকে যেন স্বর্গের অপ্সরার মতন দেখাচ্ছে। পরনের পাতলা কাপড় ওর ত্বকের সাথে লেপ্টে রয়েছে, কাঁধ অনাবৃত। হাত আর কাঁধের মসৃণ ত্বকের ওপরে রাতের মৃদু আলো পিছলে যাচ্ছে যেন। চওরা পিঠের পরে পরীর পাতলা কোমরের দিকে অভির ক্ষুধার্ত চোখ গেল। ঠিক পাতলা কোমরের নিচে ফুলে উঠেছে কোমল নিতম্ব। পরনের কাপড় এত পাতলা যে পরীর শরীরের প্রতিটি বাঁক ফুটে উঠে ওর ক্ষুধার্ত চোখের সামনে উন্মুক্ত। মাথার চুল খোলা, হাওয়ায় উড়ে মাঝে মাঝে ওর সুন্দর মুখের ওপরে চলে আসছে। পরীর কোমল শরীর দেখে অভির মাথার মধ্যে কামনার আগুন জ্বলে ওঠে। বুকের মাঝে প্রবল ইচ্ছে জাগে যে এখুনি ওকে বাহুপাসে নিয়ে মত্ত খেলায় রত হয় অভি।
পা টিপে টিপে পরীর পেছনে গিয়ে দাঁড়ায় অভি। হৃদয় ওকে সাবধান করে, "কি করতে চলেছ অভি, সময় ঠিক নয়।"
পরী রাতের আকাশ দেখতে এত বিভোর ছিল যে টের পায় না যে অভি ওর পেছনে দাঁড়িয়ে। অভির মাথা ওকে থামতে বারন করে, বলে, "কি বোকা তুমি। তোমার প্রেমিকা একা একা দাঁড়িয়ে তোমার সামনে আর তুমি বোকার মতন চেয়ে দেখছ? যাও জড়িয়ে ধর।"
অভি ওর পেছনে দাঁড়িয়ে আস্তে করে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ নামিয়ে গোল কাঁধে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়। আচমকা কারুর ঠোঁটের পরসে পরী চমকে ওঠে, তারপরে পেছনে মাথা হেলিয়ে অভি কে জিজ্ঞেস করে, "কখন এলে?"
অভি ওর পেটের ওপরে হাত রাখে, আর আলতো করে পেটের নরম মাংসে চাপ দেয়। ধিরে ধিরে অভির হাত পেটের নিচে নামতে শুরু করে। তলপেটের ঠিক নিচে আর জানুসন্ধির ঠিক ওপরে বাঁ হাত রাখে অভি। ডান হাত পরীর বুকের মাঝখান থেকে নিয়ে গলা ধরে পেছন দিকে চেপে নেয় যাতে ওর গাল অভির গালে লাগে। পরী ওর উত্তপ্ত বাহুপাশে বদ্ধ হয়ে প্রেমের আবেগে কেঁপে ওঠে।
অভি মৃদুকনে ওর কানে কানে বলে, "অনেকক্ষণ আগে সোনা। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তোমাকে দেখছিলাম কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর নিজেকে সাম্লাতে পারলাম না, সোনা।"
পরী মৃদু শীৎকার করে ওঠে, "ম্মম্মম্মম... কি করছ কি? সুব্রতদা আর মৈথিলী তোমার রুমে আছে।"
ধরা পরে যেতে পারে এই ভয়টা যেন অভিকে আরও পাগল করে তোলে। আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পরীকে আর কানের লতিতে চুমু খেতে শুরু করে। ধিরে ধিরে ওর নরম গালে গাল ঘষতে থাকে অভি, ত্বকের ঘর্ষণের ফলে দু’জনের শরীর থেকে আগুনের ফুল্কি বের হয়ে শুরু করে দেয়। অভির শয়তান হাত পরীর পুরুষ্টু নিতম্বের ওপরে খেলা করতে শুরু করে। কাপড়ের ওপর থেকে ছুঁয়ে বুঝতে পারে যে পরীর নাইটড্রেসের নিচে কিছুই পরেনি। সেটা ভেবেই অভির মাথার মধ্যে বাসনার রক্ত টগবগ করে ফুটে ওঠে। হাতের মধ্যে পিষে ফেলে একটা নিতম্ব বলয়। পরী থাকতে না পেরে চোখ বন্ধ করে নেয়, হাত পেছনে নিয়ে অভির চুলে মুঠি করে ধরে। অভি ওর নিতম্বের খাজের মধ্যে নিজের কঠিন সিংহ টিকে চেপে ধরে। পরী উত্তপ্ত সিংহের স্পর্শে কেঁপে ওঠে বারংবার।
অভি পরীর কানে কানে জিজ্ঞেস করে, "সত্যি বলত, তুমি আমার জন্য এখানে দাঁড়িয়ে ছিলে, তাই না?"
পরী প্রেমঘন মৃদুকনে উত্তর দেয়, "অভি আমার সারা শরীর কিছু হচ্ছে, অভি আমাকে ছেড়ে দাও প্লিস। ওরা যদি বেড়িয়ে আসে তাহলে আমরা খুব বিপদে পরে যাব।"
অভি, "তাহলে একা একা এখানে দাঁড়িয়ে ছিলে কেন?"
পরী, "তুমি চলে গেলে, আমার খুব একা লাগছিল। ওরা দুজনে প্রেম শুরু করে দিল তাই ওদের ছেড়ে দিয়ে আমি বাইরে চলে এলাম।"
অভি, পরীর বুকের কাছে হাত রেখে আলতো চেপে জিজ্ঞেস করে, "চাঁদের দিকে তাকিয়ে কি ভাবছিলে তুমি?"
পরী, "সেই প্রথম চুম্বনের কথা মনে পরে গেছিল আমার। এখন আমার কপালে তোমার ঠোঁটের ছোঁয়া লেগে আছে।"
অভির বাঁ হাত, তলপেটের নিচে নেমে যায়, জানুসন্ধির মাঝে নিয়ে যায় আঙ্গুল। চেপে ধরতে চেষ্টা করে পরীর নারীত্বের দ্বার। পরী বুঝতে পারে অভির বদ মতলব, ঠিক সময়ে হাত চেপে উঠিয়ে নিয়ে আসে পেতের ওপরে।
সাপের মতন ফোঁস করে ওঠে পরী, "শয়তান ছেলে, প্লিস কোরো না ওই রকম।"
অভি ছাড়তে চায়না পরীকে আর পরী কাকুতি মিনতি করে অভির কাছে, "প্লিস ছেড়ে দাও সোনা, মৈথিলী চলে আসবে... ম্মম্মম্মম... আহ... কি করছ কি... ছাড় না প্লিস..."
অভি কাকুতি করে, "একটা ছোটো চুমু দিলে আমি ছেড়ে দেব।"
পরী, "এখন না প্লিস, কিন্তু কথা দিচ্ছি যে তোমার স্বপ্ন পূরণ করব।"
অভির হাত পরীর উন্নত বুকের ওপরে উঠে আসে, আলতো করে আঙ্গুল বুলিয়ে দেয় পরীর নরম বুকের ওপরে।
পরী আবার ফোঁস করে ওঠে, "তুমি শুনবে না তাই না। কেউ যদি বাইরে এসে আমাদের এই রকম অবস্থায় দেখে ফেলে না তখন জানবে কি বিপদ হবে।"
অভি, "আমি তোমাকে ছেড়ে দেব, কিন্তু কথা দাও যে আমার গুডনাইট কিস খুব মিষ্টি হবে।"
পরী, "কথা দিচ্ছি অভি... এবারে ছাড়ো।"
পরী কোনোরকমে অভির উত্তপ্ত আলিঙ্গন থেকে অনিচ্ছা সত্তেও নিজেকে মুক্ত করে চুল আর কাপড় ঠিক করে নেয়। অভির দিকে তাকায় দুষ্টুমি ভরা হাসি নিয়ে। অভি নিজেকে সামলে নেয়। পরী বন্ধ দরজায় আলতো টোকা মারে আর গোল খাকরে জানান দেয় যে ওরা উপস্থিত।
পরী, "আমরা আসতে পারি কি?"
সুব্রত, "আরে এস এস, অভি এত তাড়াতাড়ি চলে এল যে?"
সুব্রতর কাঁপাকাঁপা গলার আওয়াজ শুনে ওদের বুঝতে বিশেষ অসুবিধে হল না যে সুব্রত আর মৈথিলী বেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল আদরের খেলায়। ঘরের মধ্যে ঢুকে দেখে যে, মৈথিলী সেই সুব্রতর কোলে মাথা রেখে শুয়ে আর টুপিস নাইটড্রেসের অপরের অংশ টি মাটিতে লুটিয়ে। গায়ে ভেতরের পাতলা নুডল স্ট্রাপ স্লিপ হাঁটু পর্যন্ত নেমে এসেছে কোনোরকমে। মৈথিলীর শরীরের কমনীয় বাঁকের সাথে এমন ভাবে লেপ্টে আছে গায়ের কাপড় যেন দেখে মনে হচ্ছে যে কিছুই পরেনি মৈথিলী, ত্বকের ওপরে যেন হালকা বেগুনি রঙ করা। অভির দৃষ্টি চলে যায় উন্নত বুকের ওপরে। ঊর্ধ্বাংশ অনেকটা অনাবৃত, দু’বুকের মাঝের বিভাজন অনেকটা দেখা যাচ্ছে, দৃষ্টি নেমে গোল পেটের ওপরে, সুগভীর নাভির অবয়াব বেশ ভালো ভাবে ফুটে উঠেছে পাতলা স্লিপের ভেতর থেকে। সরু কোমরের পরে ফুলে উঠেছে পুরুষ্টু নিতম্ব, আর তারপরে পেলব জানুদ্বয়। স্লিপ টা এতই পাতলা যে অভির বুঝতে একটুও কষ্ট হলনা যে মৈথিলী ওই স্লিপের ভেতরে কিছুই পরেনি।
সুব্রত অভিকে জিজ্ঞেস করল, "কোক পেয়েছ?"
অভি মাথা নাড়ল, "হ্যাঁ মামা কোক পেয়েছি, এখন কি?"
অভি একবার মৈথিলীর মুখের দিকে তাকাল আর একবার সুব্রতর মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, "গল্প করতে চাও না শুতে যেতে চাও?"
মৈথিলী নিচু গলায় উত্তর দেয়, "একটু কোক খেলে ভাল হত।"
অভি পরী আর মৈথিলীকে দু গ্লাসে কোক ঢেলে দিল। সুব্রতকে জিজ্ঞেস করল, "মামা আরও এক পেগ হয়ে যাবে নাকি?"
সুব্রত, "মামা খুব বলছ, আমার ত একটা চাই ই চাই।"
মৈথিলীর দিকে তাকিয়ে শয়তানি হেসে অভি বলে, "আজ রাতে তোমার কপালে ভীষণ দুঃখ আছে চুরনি।"
সুব্রত কে জিজ্ঞেস করে, "ঠিকঠাক আছো ত নাকি?"
সুব্রত মৈথিলীর নরম পেটের ওপরে হাত বুলিয়ে উত্তর দেয়, "হ্যাঁ মামা একদম ঠিক,ব্যাস শোয়ার আগে এক পেগ মারব।"
অভি, "জো হুকুম জাহাপনা।"
এই বলে গ্লাসে মদ ঢালতে শুরু করে অভি। একটা গ্লাস ধরিয়ে দেয় সুব্রতকে, নিজে ছোটো ছোটো চুমুক দেয় গ্লাসে।
সুব্রত, "হ্যাঁ তা আমাদের গল্প কোথায় থেমে ছিল।"
অভি, "সেটা ঠিক মনে নেই আমার।"
সুব্রত, "অহ হ্যাঁ, আমাদের হানিমুনের কথা। তুমি মামা গোয়া যেও কিন্তু।"
পরী ওর কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে যায় কিন্তু বুদ্ধিমতী মেয়ের মতন নিজের লজ্জা টাকে আড়াল করে লাজুক দৃষ্টিতে অভির দিকে তাকায়। অভি ওর গালের লালিমা দেখে বুঝতে পারে যে পরীর মনে সেই পুরান চিতকুলের ছবি ভেসে উঠেছে আর হৃদয় সিক্ত হয়ে উঠেছে। অভি দেখল যে সুব্রত একবার হানিমুনের কথা শুরু করলে থামতে চাইবে না আর পরী আরও লজ্জা পাবে। কিন্তু শয়তানি বুদ্ধি খেলে গেল অভির মাথায়, একটু মৈথিলী কে নিয়ে মজা করার জন্য।
অভি, "হ্যাঁ মামা গোয়া কেন, অন্য জায়গা কেন নয়?"
সুব্রত, "আরে মামা গোয়ায় সুন্দর সুন্দর রোদে ঢাকা বিচ, বিশাল নীল সমুদ্র। সমুদ্র তীরে লম্বা লম্বা নারকেল গাছ, অপরূপ সুন্দর মামা, গোয়ার সমুদ্র সৈকত।"
অভি, "আর কি আছে?"
মৈথিলী সুব্রতর দিকে দুষ্টুমি ভরা চোখে তাকায়, সুব্রতর নেশা যেন একটু চরে গেছে বউয়ের গালের ছোঁয়ায়, "মামা আর কি বলব, বিকিনি পরা সব মেয়ে, সমুদ্রে স্নান করছে, সেই দৃশ্য আর কি ভোলা যায় মামা... উফফফ..."
মৈথিলী লজ্জা পেয়ে সুব্রতর জানুতে থাপ্পর মেরে বলে, "তুমি কি ফরেনার দের দেখছিলে?"
সুব্রত, "সত্যি বলছি মামা, ফরেনার দের যা গঠন ভারতীয়দের মানায় না বিকিনি তে। আর ভারতীয়রা খুব কম বিকিনি পরে ঘুরে বেড়ায় মামা।"
পরীর দিকে তাকাল অভি, লজ্জায় গাল লাল হয়ে গেছে। লুকিয়ে লুকিয়ে অভির হাতের কাছে হাত এনে আলতো করে আঙ্গুলে আঙ্গুল থেকায় পরী। অভির হাতে পরীর আঙ্গুলে পরশ পেয়ে যেন ঝলসে ওঠে। পরী ওর দিকে তাকিয়ে চোখের ভাষায় মিনতি করে, "দয়া করে থামাও ওকে না হলে কিন্তু আমি চলে যাব।"
মৈথিলী উঠে বসে আর আদর করে এক থাপ্পর লাগিয়ে দেয় সুব্রতর গালে। গালে থাপ্পর খেয়ে সুব্রত মিউমিউ করে ওঠে কিন্তু বলতে ছাড়ে না, "আরে বাবা আমি কি ভুল বলছি নাকি? ভারতীয় মহিলাদের সাহস নেই ওইরকম সব বিকিনি পরে সি বিচে ঘুরে বেড়ানোর।"
পরী মৈথিলীর চোখ দেখে বুঝতে পারে যে মৈথিলী কিছু লুকাচ্ছে তাই ওকে জিজ্ঞেস করে, "কি ব্যাপার মৈথিলী, তোমার মুখ দেখে মনে হচ্ছে যে তোমার কিছু বলার আছে?"
মৈথিলী জোরে মাথা নাড়িয়ে বলে, "না না আমার কিছু বলার নেই, ও বড় লজ্জার ব্যাপার আমি বলতে পারব না।"
সুব্রত মৈথিলীর সরু কোমর জড়িয়ে আদর করে ওর কানে কানে বলে, "ডারলিং তুমি না বললে কি আমি বলে দেব?"
অভি বুঝতে পারল যে ওরা গোয়ায় কিছু একটা করেছে যার জন্য মৈথিলী এত লজ্জা পাচ্ছে বলতে। অভি উৎসুক হয়ে উঠলো ঘটনা জানার জন্য আর মৈথিলী কে জিজ্ঞেস করল, "আরে বাবা আমরা এখন বন্ধুর মতন হয়ে গেছি আর লুকিয়ে কি হবে চুরনি, বলে ফেল।"
মৈথিলী জোরে মাথা নাড়ায় আর সুব্রতর কাঁধের পেছনে চেহারা লুকিয়ে নেয়, "না না আমি বলতে পারব না।"
সুব্রত ওর মদের গ্লাস মৈথিলীর ঠোঁটের কাছে এনে বলে, "এক সিপ নিয়ে নাও সোনা দেখবে সব গলগল করে বের হচ্ছে।"
পরী অভির দিকে চোরা চাহনি নিয়ে তাকায় আর মিটিমিটি হাসে।
মৈথিলী সুব্রতর চোখের পানে গভীর ভাবে তাকিয়ে হটাত করে গেয়ে ফেলে,
"আরে দো ঘুট মুঝে ভি পিলা দে সরাবি
দেখ ফির হোতা হ্যায় কেয়া...
আরে দো ঘুট মুঝে ভি পিলা দে সরাবি..."
পরী ওর দিকে চোখ টিপে জিজ্ঞেস করে, "কি দুষ্টুমি করেছ তোমারা?"
মৈথিলী সুব্রতর গাল দু’আঙ্গুল দিয়ে টিপে বলে, "এই দুষ্টু শয়তানটা আমার জন্যে একটা ছোট্ট লাল রঙের বিকিনি কিনেছিল, আর আমাকে জোর করে একদিন পড়িয়েছিল ওই বিকিনি। আমি বিকিনি পরে বিচে গেছিলাম।"
কথাটা বলেই মৈথিলী লজ্জায় লাল হয়ে যায় আর সুব্রতর কাঁধে মুখ লুকিয়ে নেয়। সুব্রতর হাত উঠে আসে মৈথিলীর চওড়া পিঠের ওপর, মৃদু ভাবে হাত বোলাতে থাকে পিঠের ওপরে। সুব্রত ওর বউয়ের লাজুক মুখ দেখে হাসিতে ফেটে পরে, অভির দিকে তাকিয়ে যেন বলতে চায়, "মামা তোমার বউকেও ওইরকম বিকিনি পরিয়ো দারুন লাগবে মামা।"
অভি পরীর দিকে তাকায়, পরী বুঝতে পারে পভির মনের ভাব। লজ্জায় পরীর মুখ লাল হয়ে ওঠে। অভি জানে যে পরী মরে গেলেও কোনদিন সর্বসম্মুখে ওই রকমের ছোট্ট পোশাক পরে বের হবে না।
অভি যেন ওর নেশাগ্রস্থ চোকের সামনে মৈথিলীর কমনীয় পেলব শরীর টিকে লাল বিকিনি পরে দেখতে পায়। দুই উন্নত সুগোল বক্ষ যেন সেই ছোটো পোশাকের মধ্যে থেকে ফেটে বেড়িয়ে আসছে। পুর পেট অনাবৃত, গোল পেটের মাঝে সুগভীর নাভিদেশ, তারপরে ফুলে উঠেছে তলপেটে আর পুরুষ্টু নিতম্বদ্বয়। ছোটো লাল রঙের কোটি আভরন মৈথিলীর নারীত্বের দোরগোড়ায় এঁটে বসে আছে। সুডৌল নিতম্ব বিভাজনের মাঝে ওই ছোটো আভরন হারিয়ে গেছে আর নরম নিতম্ব যেন ওর চোখের সামনে অনাবৃত। খোলা চোখের সামনে এই ছবি অভিকে পাগল করে তোলে। একবারের জন্য ভাবতে চেষ্টা করে যদি ও নিজে মৈথিলীকে ওই পোশাকে দেখতে পেত তাহলে কি করত। আর ভাবতে পারে না অভি।
সুব্রতর গ্লাস খালি হয়ে এসেছে, সাথে সাথে অভিও গ্লাসের বাকি পানীয় টুকু গলায় ঢেলে নেয়। সুব্রত অভির ফাঁকা গ্লাস দেখে জিজ্ঞেস করে যে আর একটা গ্লাস হবে নাকি, সেই শুনে পরী আর মৈথিলী দু’জনে চেঁচিয়ে ওঠে, না।
সুব্রত অভিকে জিজ্ঞেস করে, "মামা কাল আমরা একটা সিনেমা দেখতে যাব, তুমি আমাদের সাথে যাবে নাকি?"
অভি মাথা নাড়ায়, "না মামা কাল আমার ইলেক্ট্রিকালের প্র্যাক্টিকাল আছে আমি যেতে পারব না মামা। আমি গেলে আমার প্র্যাক্টিকাল পার্টনার আমাকে মেরে ফেলবে।"
অভি পরীর দিকে তাকিয়ে মৃদু মাথা নাড়িয়ে ইশারায় জানায় যে, ও দুঃখিত যে ওদের সাথে সিনেমা দেখতে যেতে পারবে না বলে।
মৈথিলী ওকে বলে, "ঠিক আছে সেটা না হয় হল না, কিন্তু শনিবার আমরা ঢাকুরিয়ায় অমল কাকুর বাড়ি যাব, সেখানে তোমাদের দু’জনকেই যেতে হবে।"
অভি জিজ্ঞেস করে, "কে অমল কাকু?"
মৈথিলী, "অরুনিমার বাবা, আমি কিছু জানিন, তুমি আমাদের সাথে যাচ্ছও।"
পরী ওর দিকে কিছুটা বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আর মৈথিলী ওর দিকে উৎসুক ভাবে তাকিয়ে। বড় দো’টানার মাঝে পরে যায় অভি, কিছু একটা বলে খান্ত করতে হবে মৈথিলীকে আর পরীকে পরে বোঝানো যাবে।
অভি, "ঠিক আছে, শনিবারের কথা শনিবারে দেখা যাবে।"
রাত অনেক হয়ে গেছে, সুব্রত মৈথিলীকে সঙ্গে করে বেড়িয়ে যায় অভির ঘর থেকে। পরী ওদের পেছন পেছন বেড়িয়ে যেতে থাকে। অভি দেখল পরী যে ওর কথা রাখছে না তাই পেছন থেকে পরীর কাঁধে হাত রাখে, ইশারায় বলতে চায় যে তুমি তোমার কথা রাখছ না। পরী কাঁধের ওপর থেকে ওর দিকে মিষ্টি করে তাকায়। সুব্রত আর মৈথিলী কিছুটা এগিয়ে গেল। পরী একটু দাঁড়িয়ে রইল তারপরে ওর দিকে তাকিয়ে ডান হাতের তর্জনী ঠোঁটের সামনে এনে ডগায় আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে ওর দিকে নাড়ে, অভি সেই ছুঁড়ে দেওয়া চুম্বন টাকে বুকের ওপরে মেখে নেয়।
ভগ্ন হৃদয়ে পরীর দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে চোখের ইশারায় বলে, "তুমি কথা দিয়েছিলে পরী।"
পরী মাথা নেড়ে চোখের ইশারায় জানায়, "এটা নিয়ে সন্তুষ্ট থাক সোনা।"
এই বলে পরী ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।
অভি বিছানার ওপরে শুয়ে পরে, গায়ের ওপরে লেপ টেনে নেয়। ওপরের দিকে তাকিয়ে থাকে অভি, চোখের সামনে ভেসে ওঠে পরীর লাল ঠোঁট আর মিষ্টি হাসি। চোখ বন্ধ হয়ে যায় অভির।
কিছু নরম জিনিস যেন ওর কপালে ছুঁয়ে যায়। ঘুম ঘুম চোখ খুলে তাকায় অভি, চারদিকে তাকিয়ে দেখে যে ও একটা বিশাল কৃষ্ণচুড়া গাছের নিচে বসে আছে। গাছের সবুজ পাতা রক্ত লাল ফুলের নিচে ঢেকে গেছে, পাতার জায়গায় শুধু লালা ফুল দেখা যাচ্ছে। গাছ থেকে একটা ফুল ওর কপালের ওপরে এসে পরে। ওর চারদিকে কৃষ্ণচুরার লাল ফুল ছড়িয়ে। চারদিকে তাকিয়ে দেখে অভি, গাছটা একটা ছোটো পাহাড়ের ওপরে, আর সবুজ ঘাসে ঢাকা সেই পাহাড়। সামনের দিকে চোখ যায় অভির, ঘাসে ঢাকা পাহাড় নেমে গেছে সমুদ্র তীরে। ঘন নীল সমুদ্র অবিস্বাস ভাবে শান্ত, এসে মিশেছে পাহাড়ের পাদদেশে। মাথার ওপরের আকাশের রঙ ও ঘন নীল, এক ফোঁটা মেঘের দেখা নেই। দিগন্তের দিকে তাকায় অভি, কোথায় যে সমুদ্র শেষ হয়েছে আর কোথায় যে আকাশ শুরু হয়েছে সেটা ঠিক বোঝা যায় না।
অভি নিজের দিকে তাকায়, পরনে ওর প্রিয় ঘিয়ে রঙের তসরের পাঞ্জাবী আর ধাক্কা পাড়ের ধুতি। ওর সেই ডায়রিটা ওর বুকের ওপরে আধা খোলা অবস্থায় রাখা আর ওপর হাত সেই ডায়রির ওপরে। দিগন্ত থেকে একটা তীব্র সাদা আলো ওর দিকে ধেয়ে আসে। আলোর রস্মি সমুদ্র তীরে এসে থেমে যায়। সেই আলোর ছটা থেকে একটা ছয় ঘোড়ায় টানা একটা বাঁকা চাঁদ বেড়িয়ে আসে। ঘোড়া গুলো অধভুত সুন্দর দেখতে, সবার মাথার ওপরে একটা শিঙ। একটা সুন্দরী জলপরী ওই বাঁকা চাঁদের ওপরে বসে, ওর লম্বা ঘন কালো চুল হাওয়ায় উড়ছে। চুলের দু’গোছা কাঁধের ওপর দিয়ে সামনে এসে জলপরীর উন্নত বুক দুটি ঢেকে রেখেছে। সেই উন্নত বক্ষের নিচে চোখ যায় অভির, সুন্দর নরম গোল পেটের মাঝে সুগভীর নাভিদেশ, তাঁর নিচে ফুলে উঠেছে সুডৌল নিতম্ব। কোমরের নিচে পায়ের জায়গায় মাছের লেজ। কোমরের নিচে শরীরের নিম্নাগ সোনালি আর রুপলি রঙের মাছের আঁশে ঢাকা। ছয় ঘোড়া বাঁকা চাঁদ টিকে টেনে নিয়ে আঁশে অভির কাছে। জল পরীর মুখের দিকে লক্ষ্য করল অভি, এযে তাঁর প্রেমিকা পরীর মুখবয়াব। পরী ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসে, দু’হাত ওর দিকে বাড়িয়ে দেয় আলিঙ্গনে আহ্বান জানায় অভিকে। কাজল কালো চোখ দুটি বড় বড় হীরের মতন জলজল করছে। হাসিতে গালে টোল পড়েছে। চুলের এক গোছা ওর বাঁ গালের ওপরে এসে পড়েছে, দেখে মনে হল যেন চাঁদ এক চিলতে মেঘের আড়ালে লুকচুরি খেলে বেড়াচ্ছে। অভি জলপরী, পরীর দিকে তাকিয়ে হাসল আর উঠে চলে গেল ওর দু’বাহুর মাঝে। অভিকে জড়িয়ে ধরল পরী, পরীর প্রেমের আলিঙ্গনে অভি হারিয়ে গেল।
Posts: 420
Threads: 9
Likes Received: 434 in 312 posts
Likes Given: 217
Joined: Jan 2019
Reputation:
20
দেবীকথা-অরুন্ধতি
অভির কলেজ ওর বাড়ি থেকে বেশি দুরে নয়। কলেজে সবার একটা ডাক নাম থাকে, অভির ডাক নাম "বিহারী", তার কারন অভি ওর পরাশুনার বেশির ভাগ সময় বিহারে কাটায়। দেওঘরে হস্টেলে থেকে অভি কলেজ আর হাইকলেজ পড়েছে।
অভির কলেজ পৌঁছতে দেরি হয়ে যায়, প্রথম পিরিওড, অপ্টিক্সের, করতে পারেনা অভি। লাঞ্চ ব্রেকের পরে প্রাক্টিকাল ক্লাস। প্রাক্টিকাল ক্লাসে ঢুকে পরে অভি, বই খুলে একমনে পড়তে শুরু করে। এখনো কেউ আসেনি ক্লাসে। খোলা বইয়ের পাতায় পরীর চোখ আর হাসি দেখতে থাকে অভি। অভির গতকাল রাতের কথা মনে পরে যায়, কেমন জলপরীর মতন পরী ওর বাহুপাসে কাঁপছিল, আর অভি ওর কোমল শরীর টাকে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে ছিল। বারেবারে নিজের গাল ঘষে অভি, যেখানে পরী গাল ঘষে দিয়েছিল।
এমন সময়ে ওর বাঁ বাহুতে টান পরে, "কিরে ওর নাম কি?"
অভির মুখ থেকে আপনা হতেই পরীর নাম বেড়িয়ে যায়, "পরী।"
নাম বলার সঙ্গে সঙ্গে অভির ঘোর কাটে, মাথা ঘুরিয়ে দেখে ওর দিকে মিটিমিটি করে হাসছে ওর সব থেকে ভাল বান্ধবী, অরুন্ধতি, ওর প্রাক্টিকাল পারটনার আর ক্লাসের সব থেকে ভাল মেয়ে।
অরুন্ধতি ওর দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, "শেষমেশ বিহারী প্রেমে পড়ল। হুম গাধা ছেলে!"
মৃদু ধাক্কা দিয়ে জিজ্ঞেস করে, "পরীর সাথে কত দিন থেকে প্রেম চলছে? আর আমাকে একবারও জানাস নি তুই?"
অরুন্ধতি ব্যানারজি, অভি ওকে মিষ্টি করে ডাকে অরুনা। অরুনা ওর হতবাক বোকা বোকা মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে। অভি অনেক সযত্নে পরীর নাম বুকের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিল, কিন্তু আজ ধরা পরে গেল ওর প্রিয় বান্ধবীর হাতে!
অভি মাথা নাড়ায়, "না না না, কে পরী, আমি কোন পরীকে চিনি না।"
মাথার পেছনে আলতো করে একটা থাপ্পর মারে আরুনা, "আমার কাছে মিথ্যে কথা বলছিস? তোর চোখ বলছে যে তুই প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস আর তুই কিনা চিনিস না পরীকে?"
ধরা পড়ার পরেও অভি মানতে নারাজ, "না রে সত্যি বলছি আমি কোন পরীকে চিনি না।"
অরুনা, "মানতেই পারলাম না যে অভি প্রাক্টিকাল ক্লাসে এই রকম ভাবুক হয়ে বসে থাকতে পারে।"
শেষমেশ অভিকে স্বীকার করতে হয়, "আচ্ছা বাবা আমি তোকে প্রাক্টিকাল ক্লাসের পরে সব বলব।"
অরুনা মৃদু চিৎকার করে ওঠে, "না, আমি এখুনি সব শুনতে চাই।"
জামা ধরে টানতে শুরু করে অরুনা, "চল না ক্লাস বাঙ্ক করি।"
অভি, "মানে? আমি তোর জন্য শুধু প্রাক্টিকাল ক্লাস করতে এসেছি আর তুই কিনা ক্লাস বাঙ্ক করার কথা বলছিস।"
অরুনা ওর জামা টেনে তুলে দেয়, "অহ, তুই আমার জন্যে যখন প্রাক্টিকাল ক্লাস করতে এসেছিস তাহলে আমি তোকে যেখানে নিয়ে যাব সেখানে চল। আর সত্যি যদি তুই না যাস তাহলে কিন্তু আমি সত্যি রাগ করব।"
অগত্যা অভি দাঁড়িয়ে পরে, কিন্তু তাও অরুনা কে জিজ্ঞেস করে, "প্রাক্টিকালের কি হবে?"
অরুনা, "ধুর বাবা প্রাক্টিকাল নিয়ে চিন্তা করিস নাত। আমার বাড়িতে ব্রেড বোর্ড আর মাল্টিমিটার সব আছে। আমরা পরে করে নেব। তুই চল আমার সাথে, আমি আর তর সইছেনা।"
অরুনা অভির জামা টানতে টানতে ক্লাস থেকে বেড়িয়ে গেল। ওদের দিকে বাকিরা তাকিয়ে, বিশেষ করে সুকোমল আর অনুসুয়া।
পুবালি দৌড়ে অরুনার কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, "এই তোরা কোথায় যাচ্ছিস রে? প্রাক্টিকাল ক্লাস করবিনা তোরা?"
অরুনা একবার অভির দিকে তাকিয়ে পুবালিকে উত্তর দিল, "না রে আমরা একটু বের হচ্ছি। আমি তোকে সবকিছু বাড়িতে গিয়ে বলব আর তুই ঠিক করে প্রাক্টিকাল ক্লাস টা করিস।"
কলেজ থেকে বেড়িয়ে অরুনা ওকে জিজ্ঞেস করল, "কি রে কোথায় যেতে চাস?"
অভি, "আর কোথায় যাব বল, চল কফি হাউসে গিয়ে বসি আর কি।" দুজনে পাশাপাশি হাঁটতে শুরু করল।
অরুন্ধতি ওর বাবা মার দ্বিতীয় সন্তান, দমদম এয়ারপোর্টের কাছে ওদের বাড়ি। অরুনার বাবা আর অভির বাবা দু’জনেই এয়ারপরট অথরিটি তে চাকরি করেন। অরুনাদের একান্নবর্তি পরিবার বাবা কাকা সবাই মিলে এক বিশাল বাড়িতে থাকে। পুবালি অরুনার খুরতুত বোন, একি বয়স। অরুনা বেশ মিষ্টি দেখতে, চোখে চশমা আর চোখ দুটো যেন সবসময়ে কথা বলে। খুব চঞ্চল আর হসিখুসি প্রকৃতির মেয়ে অরুনা কোন সময়ে বুকের ভেতরে কন কথা লুকিয়ে রাখে না, যা মনে আসে তাই লোককে বলে দেয়। এই জন্যে যেমন ওর বন্ধুর সংখ্যা বেশি তেমনি শত্রুর সংখ্যাও বেশি। পুবালি ঠিক উল্টো প্রকৃতির মেয়ে, খুব চুপচাপ আর সংযত একটু লাজুক। কারুর সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলে না। সারাদিনে হয়ত দুটো কি তিনটে কথা বলে অন্যদের সাথে।
হাঁটতে হাঁটতে ওরা শিয়ালদা পৌঁছে গেল। অরুনা অর দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠল, "কিরে গাধা, চুপ করে কেন আমি তোর পরীর কথা সব শুনতে চাই, যদি তুই চুপ করে থাকিস তাহলে কিন্তু আমি চিৎকার করে লোক জড় করে বলব যে এই ছেলেটা আমার সাথে অপব্যাবহার করছে।"
অভি ওর দিকে মিনতির সুরে বলল, "প্লিস ওই রকম করিস না, আমি তোকে সব বলছি।"
অভি ওর গল্প শুরু করল, কি করে পরীর সাথে সুব্রতর বিয়েতে দেখা হয়েছিল, কপালে প্রথম চুম্বনের কথা, পরী আর ওর সম্পর্কের কথা। মায়ের সাথে পরীর সম্পর্কের কথা। ওকে জানাল যে পরী কিছুদিন পরে ওদের বাড়িতে থাকতে আসছে।
সব শুনে অরুনা আঁতকে ওঠে, "বলিস কি রে? তিন মাস ধরে তোদের প্রেম চলছে আর আমি কিছু জানি না। শয়তান ছেলে কেন তুই এত কথা আমার কাছ থেকে লুকিয়ে ছিলিস বলত। কুত্তা, শূয়র..."
মাঝ রাস্তায় অরুনা অভিকে মারতে শুরু করে।
রাজাবাজার থেকে বাঁ দিকে বাঁক নিয়ে ওরা শিয়ালদা স্টেসানের দিকে হাঁটতে শুরু করে। সামনে ফুচকা ওয়ালা দাঁড়িয়ে, টাকে দেখে অরুনা ওকে জিজ্ঞেস করে যে ফুচকা খাবে কিনা। অভি মাথা নাড়ায়, "হ্যাঁ"
অরুনা, "ঠিক আছে বাকি গল্প কফি হাউসে গিয়ে সুনব।"
অরুনার সারা মুখে একটা দুষ্টু মিষ্টি হাসি ছড়িয়ে থাকে। অভিকে একটু আনমনা দেখে জিজ্ঞেস করে, "আজ কি প্রব্লেম তোর যে তুই এত আনমনা?"
অভি, "কাল পরী আমার বাড়িতে এসেছে।"
অরুনা, "তুই একটা বড় কুত্তা। পরীকে ছেড়ে তুই প্রাক্টিকাল ক্লাস করতে এসেছিস? যাই হক তুই না এলে আমি ত জানতেও পারতাম না তাই না।"
তারপরে ওর দিকে প্রশ্নের জাল ছুঁড়ে দেয় অরুনা, "আচ্ছা, পরীকে দেখতে সুন্দরী? কি পড়াশুনা করেছে? তুই কবে ওর সাথে আমার দেখা করাবি?"
অভি ওর মাথায় চাঁটি মেরে উত্তর দেয়, "আরে বাবা দাঁড়া দাঁড়া। বাসন্তি পুজোর পরে পরী যখন আমার বাড়িতে থাকতে আসবে তখন তোর সাথে দেখা করাব, চিন্তা নেই তোর।"
তর্জনী উচিয়ে বলে অরুনা, "কথা দিচ্ছিস?"
অভি, "হ্যাঁ বাবা কথা দিচ্ছি, তোকে না দেখিয়ে আমি কোথায় যাব রে।"
ওরা ফুচকা খাওয়ার পরে আবার হাঁটতে শুরু করে, ফ্লাইঅভার পার করে কলেজ স্ট্রিটের দিকে চলতে থাকে।
অরুনা, "তাহলে বিহারী শেষ পর্যন্ত প্রেমে পড়ল।" খিলখিল করে হেসে বলে, "আমি এক সময়ে ভাবতাম তোর কপালে কোন মেয়ে জুটবে না। তোর যা তিরখি মেজাজ আর যা মুখ।"
"তিরিক্ষি মেজাজ, হ্যাঁ তা বটে" ম্লান হাসি হেসে অরুনা কে বলল, "এই মেজাজ আমাকে আমার চার পাশের পৃথিবী দিয়েছে রে।"
অরুনা দেখল অভি আবার ভাবুক হয়ে উঠেছে, "এই ছেলে, অসব কথা ছাড়। তোর চোখে জল দেখলে আমার খুব কান্না পায়। তোর মুখে হাসি দেখে আমি সত্যি খুব খুশি। আমি সত্যি পরীর সাথে দেখা করে ওকে অনেক বড় ধন্যবাদ জানাব যে তোর মুখে আবার হাসি ফুটিয়ে তুলেছে।"
অভি, "এই সমুদ্রনীল কে ডেকে নেব কফি হাওসে?"
সমুদ্রনীল, অরুনার বন্ধু, অরুনার প্রেম। কোলকাতা বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে রসায়নে মাস্টার্স করছে। গত বছর অক্টবরে ওদের দেখা হয় কোন কলেজ অনুষ্ঠানে আর তারপর থেকে প্রেম। সমুদ্রনীল বেশ ভাল ছেলে। যেদিন সমুদ্রনীল অরুনাকে প্রোপস করে, সেদিন অভি সমুদ্রনীল কে বলেছিল যে যদি কোন দিন অরুনার চোখে জল দেখে তাহলে ও সমুদ্র কে আস্ত রাখবে না, কেটে গঙ্গার জলে ভাসিয়ে দেবে ওকে।
Posts: 420
Threads: 9
Likes Received: 434 in 312 posts
Likes Given: 217
Joined: Jan 2019
Reputation:
20
ওরা দু’জনে কফি হাউসের দিকে হাঁটতে থাকে। অভির মনে পুরান স্মৃতি জেগে ওঠে, অরুন্ধতির স্মৃতি আর ওর নিজের জীবনের কথা। কলেজে দেরিতে ঢোকে অভিমন্যু তাই বাকিদের চেয়ে ও বছর দুই বড়। ছোটো বেলায় হস্টেলে মানুষ, কলেজের পড়াশুনা ও দেওঘরের এক কলেজ থেকে পড়ছে। ক্লাস ইলেভেনে একবার ফেল করে আর এক বছর নষ্ট হয় জয়েন্ট আই.আই.টি পরীক্ষা দেবার প্রস্তুতি নেবার সময়ে। বাবা মায়ের খুব চাপ ছিল যে ছেলে কে ইঞ্জিনিয়ার বানাবে। সবসময়ে অভিকে কথা শুনাত যে যেহেতু ওর পরাশুনার পেছনে বাবা মা অনেক টাকা খরচ করছে তাই ওকে জয়েন্ট পেতেই হবে, ভালো রেসাল্ট করতেই হবে। ছোটো বেলা থেকে অভিমন্যুর খুব শখ ছিল যে বড় হয়ে ও একজন নামী চিত্রকার হবে। ক্লাস টেন পাশ করার পরে ও শান্তিনিকেতনে পড়তে চেয়েছিল, কিন্তু বাবা মা বাধ সেধে ছিলেন। বলেছিলেন যে এত পয়সা ওরা অভির পেছনে খরচ করেছে শুধু ওকে চিত্রকর বানানোর জন্য নয়, ওকে জয়েন্ট পেয়ে ইঞ্জিনিয়ার হবার জন্য। বহু রাত কেটে গেছে, বাবা মায়ের সাথে ঝগড়া করে অভি রাতে ঘুমায়নি। ক্লাস ইলেভেনে ওকে একরকম জোর করে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে হয়েছে, যেটা ওর বিশেষ ইচ্ছে ছিল না। টুয়েলভ পাশ করার পরে অভি আই.আই.টি আর আই.এস.এম এ পায় কিন্তু অভির মাথায় রোখ চেপে যায় যে ও ইনঞ্জিনিয়ার হবে না। অনেক লড়াই যুদ্ধ করার পরে ও শেষমেশ ফিসিক্স নিয়ে কলকাতার এক কলেজে ভর্তি হয়।
আড়াই বছর আগে অভি যখন কলেজে পড়তে আসে, তখন কোলকাতা শহর ওর কাছে এক নতুন জায়গা। হ্যাঁ কোলকাতায় জন্ম ওর হয়েছিল কিন্তু পড়াশুনার জন্য ওকে বাইরে থাকতে হয়েছিল। প্রথম প্রথম ওর কলকাতার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে একটু অসুবিধে হয়েছিল। কথাবার্তা বলার ঢঙ্গে বেশি হিন্দি আর ইংরাজি শব্দ বের হত, যার জন্য ওর ক্লাসের বাকিরা ওকে বাইরের মানুষ বলে গন্য করত। বন্ধু বলতে কম ছিল, বিশেষ কোন দরকার না থাকলে কেউ ওর সাথে কথা বলত না বা অভিও কারুর সাথে বিশেষ কথা বলত না।
কলেজে দেখা হয় অনুশুয়া চ্যাটার্জি, এক সুন্দরী মেয়ে খুব ভাল নাচত অনুশুয়া। নাচ সেখার জন্য অনুশুয়ার শরীরের গঠন বেশ পাতলা আর দেখতে ভারী মিষ্টি লাগত। অভি অনুশুয়ার রুপ দেখে ওর প্রেমে পড়ে যায়। ওদের দুজনার মধ্যে বন্ধুত গড়ে ওঠে। অভি অনুশুয়াকে ওর জীবনের অনেক কথা বলে, ওর হেরে যাওয়ার কথা, মনের ব্যাথা, সব কিছু বলে আর সেটাই সে জীবনের সব থেকে বড় ভুল করে ফেলে একজন কে বিশ্বাস করে মনের কথা বলার। সুন্দরী অনুশুয়াকে ওর পাশে দেখে অনেকে বন্ধুতের হাত বাড়িয়ে দেয় অভির দিকে। কলেজের প্রথম বছরের ডিসেম্বরে অভি অনুশুয়াকে প্রোপোস করে, কিন্তু অনুশুয়া ওকে প্রত্যাখান করে দেয়, কারন বলে যে ও হেরে যাওয়া মানুষের সাথে সম্পর্ক রাখতে চায় না, ও ভীতু তাই আই.এস.এম পেয়েও ছেড়ে দিয়েছে। আরও জানায় যে ওর কথাবার্তা বাঙ্গালীর মতন নয় তাই ওদের সম্পর্ক বন্ধুতের বেশি কিছু হতে পারে না। ভেঙ্গে পরে অভি, আবার একা এই চেনা মুখের ভিড়ে, নিজেকে আর খুঁজতে চেষ্টা করে না। পেছনের বেঞ্চে বসে থাকত অভি আর ভাঙ্গা হৃদয় নিয়ে তাকিয়ে থাকত অনুশুয়ার দিকে।
অরুন্ধতি আর পুবালি খুব অধ্যয়নশীল আর বুদ্ধিমতী, তাদের অনেক বন্ধু বান্ধবী ছিল। আর অরুন্ধতি যেহেতু খুব হাসিখুশি মেয়ে তাই ওর চারপাশে অনেক লোকেরা জড় হয়ে থাকত। অনুশুয়া অভির কথা ক্লাসে বলে বেড়ায়, অভিকে সবার সামনে নিচে নামিয়ে দেয়। অভিমন্যু খুব অসহায় বোধ করে, পাশে কোন বন্ধু না থাকার জন্য।অভি অনুশুয়াকে বোঝাতে চেষ্টা করে যে ওর জন্ম কোলকাতায় কিন্তু পড়াশুনার জন্য বাইরে থাকতে থাকতে ওর কথাবার্তার শুর বদলে গেছে। অনুশুয়া মানল না আর, বলল যে হেরে যাওয়া মানুষের সাথে ও কোনরকমের সম্পর্ক রাক্তে চায় না। শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দেয় অভি। কিছুদিন পরে ওই অনুশুয়া ওর ক্লাসের এক বন্ধু সুকোমলের সাথে ঘুরে বেড়ায় হতে পারে অভিকে ঈর্ষার বাণে জর্জরিত করার জন্য। অভি প্রথম প্রথম ঈর্ষান্বিত হয়, কিন্তু পরে মন কে প্রবোধ দেয় যে অনুশুয়ার মতন সুবিধাবাদী মেয়ে ওর জন্য নয়। ধিরে ধিরে স্বাভাবিক হয়ে যায় সবকিছু কিন্তু অনুশুয়ার সাথে ওর সম্পর্ক আর স্বাভাবিক হয় না।
কলেজের দ্বিতীয় বর্ষ, সেপ্টেম্বরের একদিন। লাঞ্চের সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে, ক্লাসে অরুন্ধতি আর পুবালি বসে আছে। অভি ওদের অনেক পেছনে বসে একটা বাংলা উপন্যাস পড়ছে। হটাত করে সবাই চুপ, একটা কান্নার মতন গোঙানি আওয়াজ গেল অভির কানে। অভি বই থেকে মুখ তুলে তাকিয়ে দেখে যে অরুন্ধতি পুবালির পিঠে হাত বোলাচ্ছে আর পুবালি মাথা নিচু করে কাঁদছে। পুবালির নাক থেকে অসম্ভব রকমের রক্ত বের হচ্ছে। পুবালি যন্ত্রনায় ককিয়ে উঠছে বারে বারে আসে পাশের ছেলেরা শুধু দেখা ছাড়া আর নির্দেশ দেওয়া ছাড়া কিছু করছে না। সত্যি বাঙ্গালীর রক্ত, মাথা গরম হয়ে গেল অভির। অভি দৌড়ে যায় অরুন্ধুতির কাছে, গিয়ে জিজ্ঞেস করে যে পুবালির কি হয়েছে। অরুন্ধুতি ওর দিকে চোখে জল নিয়ে তাকায়। পুবালির মাথা উঁচু করে ধরে অভি, গায়ের জামা খুলে চেপে ধরে পুবালির নাক। বাকিদের চিৎকার করে একটা এম্বুলেন্স ডাকতে বলে। পুবালি কে পাজা কোলা করে হাতের মধ্যে তুলে নেয় অভি, জামা আর গেঞ্জি রক্তে ভেসে যাচ্ছে। পুবালি ওর কোলে অজ্ঞান হয়ে যায়। অরুন্ধতির চোখে জল, পুবালির মাথাটা কোনরকমে ধরে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই এম্বুলেন্স এসে পৌছয়, অভি ওদের কে নিয়ে এম্বুলেন্সে উঠে হস্পিটাল নিয়ে যায়। সবার মুখে এক কথা যে কি হয়েছে পুবালির, ওদের দিকে তাকিয়ে অভি বলে যে পুবালির বাড়িতে খবর দিতে।
হস্পিটালে গিয়ে জানা যায় যে পুবালির নাকের আর কপালের মাঝে একটা ছোট্ট টিউমার আছে আর সেটা ফেটে গিয়ে রক্ত বেড়িয়ে পড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে পুবালিকে অপারেসান থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। অরুন্ধতি আর অভি উৎকণ্ঠায় অপারেসান থিয়েটারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। অরুন্ধুতি সমানে কাঁদতে থাকে, অভির কাছে ওকে সান্তনা দেবার মতন কোন ভাষা থাকে না। মনে মনে অভি কলেজের বন্ধুদের মুন্ডপাত করে যাচ্ছিল, কেউ একবারের জন্য এগিয়ে এসে পুবালিকে হস্পিটাল নিয়ে যাবার কথা ভাবেনি, তাঁর চেয়ে কিনা জ্ঞান দিতে ব্যাস্ত ছিল সবাই। অরুন্ধতিকে একটা চেয়ারে বসিয়ে ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে অভি, ওর হাত দুটি নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে শান্তনা দেবার চেষ্টা করে। কিছুক্ষণের মধ্যে ওদের কলেজের বন্ধুরা হসপিটাল পৌঁছে যায়, সাথে সাথে পুবালির বাবা মা ও হস্পিটাল পৌঁছে যায়। কলেজের সবাই ওদের কে জিজ্ঞেস করে যে পুবালির কি হয়েছিল, অরুন্ধতি সবার দিকে একটু রেগে তাকিয়ে থাকে তারপরে কাকু কাকিমা কে সব কথা বলে। অভি খালি গেঞ্জি পরে বসে, গেঞ্জির বেশির ভাগ রক্তে ভিজে গেছে। চোয়াল শক্ত হয়ে উঠেছে অভির, ছেলেরা ওর কাছে এসে জিজ্ঞেস করে যে পুবালির কি হয়েছে। অভি উত্তরে জানায় সব ঘটনা।
Posts: 420
Threads: 9
Likes Received: 434 in 312 posts
Likes Given: 217
Joined: Jan 2019
Reputation:
20
অপারেসান থিয়েটারের সামনে সবাই দাঁড়িয়ে, কিছুক্ষণ পরে ডাক্তার এসে জানায় যে, পুবালি বর্তমানে বিপদমুক্ত, কিছু দেরি হলে হয়ত টিউমারের রক্ত ওর মাথার ভেতরে চলে যেত আর মাথার শিরা উপশিরা গুলোকে খতিগ্রস্থ করে দিত। পুবালির বাবা মা আর অরুন্ধতির বাবা মা অভির দিকে কৃতজ্ঞ ভরা চোখে তাকায়। অরুন্ধতি দৌড়ে এসে অভিকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পরে। সেই কান্না বেদনার কান্না ছিল না, সেই কান্না কৃতজ্ঞতার কান্না ছিল, যেহেতু অভি ওর প্রানের বোন পুবালিকে আবার ওর কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে তাই। অভির মনে হল বিগত চোদ্দ বছরে কেউ ওকে ভালবাসায় বা কৃতজ্ঞতায় ওই রকম ভাবে জড়িয়ে ধরেনি। সারা জীবন ধরে বাবা মার কাছে ধিক্কার শুনে গেছে যে ও জীবনে কিছু করতে পারল না। অভির চোখে জল এসে যায়। অরুন্ধতির বাবা ওকে বাড়িতে আসতে বলে কিন্তু অভি ওদের জানায় যে অন্য কোনদিন ওদের বাড়িতে আসবে সেদিন আর যায় না। খুব ক্লান্ত লাগছিল অভির। অরুন্ধতির বাবা ওকে একটা টিশার্ট কিনে দেয়, কেননা তখন পর্যন্ত অভির গায়ে রক্ত মাখা গেঞ্জি ছিল।
হসপিটাল থেকে অভি মাথা উঁচু করে বেড়িয়ে এল, মনে হল যেন জীবনে খুব বড় কাজ করেছে, ও আর সেই ভীতু হেরে যাওয়া অভি নয়। সেই প্রথম বার অভির মনে হল যে ওর চারপাশের পৃথিবী টা কত অন্ধকার ময় আর কত সুবিধাবাদী মানুষে ভরা। বাকি কলেজের বন্ধুরাও ওর পেছন পেছন হস্পিটাল থেকে বেড়িয়ে আসে। অভিকে ডাকে কফি হাউসে যাবার জন্য। অভি ওদের মানা করে দেয়। অভি হটাত করে দেখে যে অনুশুয়া ওর দিকে দৌড়ে আসছে আর হাতের ইশারায় ওকে দাঁড়াতে বলছে। অভি ওর দিকে তাকায় মাথা নাড়িয়ে ওকে ক্ষমা করে দেবার ইশারা করে, সামনে যে বাস আসে তাতে অভি উঠে পরে। একসময়ে অভির চোখে যে হেরে যাওয়ার চাহনি ছিল সেটা ও অনুশুয়ার চোখে দেখতে পায়। ভগবানকে মাথা তুলে ধন্যবাদ জানায় অভি, তিনি যা করেন সবার ভালোর জন্য করেন।
তারপরে বেশ কিছুদিন অরুন্ধতি আর পুবালি কলেজে আসেনা, অভির ও আর ওদের বাড়ি যাওয়া হয় না কেননা ও চেনেনা ওদের বাড়ি বা ওর কাছে অরুন্ধুতির ফোন নাম্বার ও নেই যে ফোন করে পুবালির খবর জেনে নেবে। এমন একদিনে, অভি চুপ করে ক্লাসে বসে। অরুন্ধতি ক্লাসে ঢোকে, সবার চোখ অরুন্ধতির দিকে চলে যায়, সবার মুখে এক প্রশ্ন পুবালি কেমন আছে। অরুন্ধতি বিরক্তি ভরা চোখে সবার দিকে তাকায়, যেন বলতে চায় যে তোদের জানা কোন অধিকার নেই।
অভির দিকে হেঁটে এসে কাঁধ নাড়িয়ে বলে, "এই বিহারী, আমার সাথে চল।"
অভি ওকে জিজ্ঞেস করে, "কোথায়।"
অরুন্ধুতি, "বাবা তোকে বাড়িতে ডেকেছে।"
এই বলে ওর জামা ধরে টানতে টানতে ক্লাস থেকে বের করে নিয়ে আসে।
অরুন্ধতির বাড়ি যাবার পথে অভি পুবালির কথা জিজ্ঞেস করে জানতে পারে যে পুবালি এখন ভালো আছে আর গতকাল বিকেলেই হস্পিটাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়িতে এসেছে। তাই ও অভিকে বাড়ি নিয়ে যেতে কলেজে এসেছে। অভি ওকে জিজ্ঞেস করে যে ও ওকে ফোন কেন করেনি।
অরুন্ধতি জবাবে বলে, "আমার কাছে ত তোর ফোন নাম্বার নেই।"
অভি, "তুই কোনদিন চাসনি।"
অরুন্ধতি, "জীবনের এই প্রথম আমি সব থেকে বড় ভুল করেছি।"
অভি, "কি ভুল?"
অরুন্ধুতি, "মানুষ চিনতে ভুল করেছি, বন্ধু চিনতে ভুল করেছি।"
অভি, "ধুর বোকা, সবাই কিছু না কিছু ভুল করে ফেলে, ছাড় অসব কথা।"
অরুন্ধুতি কিছু পরে ওকে জিজ্ঞেস করে, "হ্যাঁ রে তোর বাবার নাম কি অর্জুন তালুকদার?"
অভি চমকে যায়, "হ্যাঁ কিন্তু তুই কি করে জানলি?"
অরুন্ধুতি, "আমি এইটুকু জানতাম যে কাকু এয়ারপোর্ট অথরিটি তে চাকরি করেন আর আমার বাবাও করেন। আমার বাবা যখন তোর নামধাম আমাকে জিজ্ঞেস করল তখন আমি বললাম যে আমি তো কাকুর নাম জানিনা। বাবা আমকে তোর কাছে কাকুর নাম জিজ্ঞেস করতে বলেছে।"
অভি, "হুম... আচ্ছা তোর বাবা মানে ব্যানারজি কাকু। ওকে এবারে বুঝেছি।"
দিন যায় ওদের বন্ধুত প্রগাঢ় হয়ে ওঠে। ক্লাস ফাকি দিয়ে কলেজ স্ট্রিটে ঘোরা, গ্লোবে সিনেমা দেখা, এস্প্লানেড বা পার্ক স্ট্রিটে কোন রেস্টুরেন্টে খাওয়া বা নন্দনে আড্ডা মারা। পুবালি খুব শান্ত প্রকৃতির মেয়ে তাই বেশির ভাগ দিন ওরা দু’জনে ঘুরে বেড়াত এদিক সেদিক। কোলকাতায় অভি নতুন, অরুন্ধতি ওর গাইডের কাজ করত যেন। কলেজের বাকিরা ওদের এই বন্ধুত্ত টাকে অন্য চোখে দেখে, সবার মুখে এক কথা, অরুন্ধতি অভির প্রেমে পড়েছে আর সেই কথা ওদের কানে আসে, ওরা দু’জনে খুব উপভোগ করে বাকিদের সংশয়। কেউ ভাবতে পারে না যে একটা ছেলের আর একটা মেয়ের মধ্যে প্রেম প্রীতির থেকেও ভালবাসা এক অন্য ধরনের হতে পারে, বন্ধুত্তের ভালবাসা থাকতে পারে।
অভির বাবা যেহেতু অরুন্ধতির বাবার অফিস কলিগ তাই ওদের বাড়িতে অভির যেতে কোন বাধা থাকেনা। অভির বাবা মা আর অরুন্ধতির বাবা মায়ের মধ্যেও সেই একি ধারনা জাগে যে অভি অরুন্ধতিকে ভালবাসে আর ওর মায়ের কোন বাধা থাকে না অরুন্ধতিকে বউমা করে ঘরে আনতে। অভি আর অরুন্ধতি দু’জনে ওদের চারদিকের ভুল ধারনা টাকে খুব উপভোগ করে আর হাসে।
পুবালি আর অরুন্ধুতি সবসময়ে অভিকে অনুশুয়ার কাছ থেকে আগলে রাখত, কিছুতেই অনুশুয়াকে অভির কাছে আসতে দিত না। একদিন ওরা তিনজনে মিলে পার্ক স্ত্রিটের ফ্লুরিসে বসে খাচ্ছিল তখন পুবালি অরুন্ধতিকে বলে, "জানিস, কাল অনুশুয়া তোর কথা আর অভিমন্যুর মাঝের সম্পর্কের কথা জিজ্ঞেস করছিল।"
ওরা দু’জনে হেসে উঠে জিজ্ঞেস করে যে পুবালি কি উত্তর দিয়েছে।
পুবালি, "আমি বলেছি যে তোরা খুব ভাল বন্ধু ব্যাস আর কিছু না।"
অরুন্ধতি পুবালিকে আলতো করে চাঁটি মেরে বলে, "বোকা মেয়ে ওকে বলবি ত যে আমরা প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি। ধুত বোকা, এখন আবার অনুশুয়া ওর পেছন পেছন আসতে চাইবে।"
অরুন্ধতি অভির দিকে তাকিয়ে বলে, "মাগি টার পেছনে আর গেছিস ত আমি তোর ঠ্যাং ভেঙ্গে দেব।"
হেসে ওঠে অভি, মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় যে ন্যাড়া বেলতলায় একবার যায়।
ঠিক দুর্গাপুজার আগে, অরুনা আর অভি আউট্ট্রাম ঘাটের, স্কুপে বসে গল্প করতে থাকে। দুজনে আইস ক্রিম খেতে খেতে সামনের কাঁচের জানালা দিয়ে পড়ন্ত সূর্যের আলোয় আলোকিত লাল নদীর জল দেখতে দেখতে হারিয়ে যায়। অভি একমনে অরুনার দিকে তাকিয়ে থাকে, সেই প্রথম বার অভির মনে হয় যে অরুনা ওর কত কাছের মানুষ। অরুনার চোখ দুটি খুশিতে চকচক করছে যেন। খুব বড় একটা নিঃশ্বাস নিয়ে অভি অরুনার কাঁধে হাত রাখে।
অরুনা অভির হাতের স্পর্শে আইসক্রিম খাওয়া থামিয়ে অভির মুখের দিকে তাকায়, চোখের চাহনি দেখে অভির মনের ভাব বুঝতে পারে অরুনা, কিন্তু তাও জিজ্ঞেস করে, "কিরে আমার দিকে ওই রকম ভাবে দেখছিস কেন রে?"
হাত সরিয়ে নেয় অভি, হেসে ফেলে, "কিছু না এমনি।"
গভীর ভাবে অভির দুচোখের দিকে তাকায় অরুনা, "আমার কাছে থেকে কিছু লুকাতে পারবি না রে। তুই চুপ থাকলে কি হবে তোর চোখ দুটো যে অনেক কথা বলে।"
অভি ওকে হেসে জিজ্ঞেস করে, "আচ্ছা তাহলে তুই বল আমার চোখ কি বলছে?"
অরুনা ওর গাল টিপে বলে, "তুই যা ভাবছিস আমিও সেটাই ভাবছি।"
অভি ওর দু’হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে নেয়। অরুনা বলতে থাকে, "আমি চাই না আমাদের সম্পর্ক একটা বাঁধনের জোরে নষ্ট হক। বহু দিন পরে আমাদের মনে হবে যে আমাদের কোন বন্ধু হত যাকে আমরা আমাদের মনের কথা বলতে পারি, যেগুলো হয়ত আমরা আমাদের সাথি কে বলতে পারব না সেগুল আমরা এঁকে অপরকে বলব। আমি আমার সব থেকে ভাল বন্ধুকে হারাতে চাই না অভিমন্যু।"
এইসব ভাবতে ভাবতে ওরা কফি হাউসে পৌঁছে যায়। অরুনা ওর বাজুতে চাঁটি মেরে বলে, "কিরে সারা রাস্তা এত চুপ মেরে গেলি কেন? তুই কি পরীর খেয়ালে আবার হারিয়ে গেলি নাকি?"
অভি মাথা চুলকে বলে, "নারে, আমি ত তওর কথা আর আমাদের বন্ধুত্তের কথা ভাবছিলাম।"
অরুনা ওকে আলতো করে থাপ্পর মেরে বলে, "আহা, ছেলের ভাব দেখ, ভেতরে যেন টালা ট্যাঙ্ক ভরে উঠেছে। হ্যাঁ রে তোর পরীর কথা আমাকে বলতে হবে সেটা মনে থাকে যেন নাহলে কিন্তু আমি তোকে ছিঁড়ে খাবো। যাই হক পরীর ভাল নাম কি?"
অভি, "শুচিস্মিতা মন্ডল।"
অরুনা, "শুচিস্মিতা, মানে যার হাসি শুদ্ধ, বাহ রে নিশ্চয় পরীর হাসি খুব সুন্দর হবে।"
লাজুক হেসে অভি উত্তর দেয়, "হ্যাঁ রে পরীর হাসি খুব মিষ্টি। ও যখন হাসে তখন দু’গালে টোল পরে আর হাসিটা যেন আরও বেশি মিষ্টি হয়ে যায়।" অভি যেন ওর চোখের সামনে পরীর হাসি মাখা মুখ দেখতে পায়।
কফিহাউসে বসে অভি পরীর গল্প শুরু করে, কি করে অভি ওকে নিয়ে হিমাচলে ঘুরে এসেছে। সব শুনে অরুনা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে অভির দিকে, বাবা ছেলের কি সাহস।
অরুনা কফির কাপে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করে, "ত অসুবিধে টা কোথায়?"
অভি মাথা নাড়ে, "আমাদের মধ্যে ত কোন অসুবিধে নেই।"
অরুনা, "ধুর বোকা ছেলে, আমি জানি যে তোদের মধ্যে কোন অসুবিধে নেই, কিন্তু তোর মনের ভেতরে একটা গভীর সংশয় বা ভয় দানা বাধছে তাই না।"
অভি অবাক হয়ে অরুনার দিকে তাকিয়ে বলে, "তুই জানলি কি করে।"
অরুনা ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলে, "আমি তোকে তোর চেয়ে বেশি জানি বুঝলি রে। তুই ভাবছিস যে কাকু কাকিমা তোদের সম্পর্ক মেনে নেবে না, কেননা পরী তোর চেয়ে দু’বছরের বড় আর কাকিমার সাথে পরীর সম্পর্ক। কাকিমা কে বুঝাতে অনেক কষ্ট হবে কেননা কাকিমা খুব কড়া প্রকৃতির মহিলা।"
অসহায় ভাবে অভি ওর দিকে তাকিয়ে থাকে, "আমি জীবনে অনেক কিছু হারিয়েছি। এই নিষ্ঠুর পৃথিবী আমাকে অনেক কঠিন করে দিয়েছে। পরীকে পাওয়ার জন্য আমি আকাশ পাতাল এক করে দেব।"
অরুনা, "অত শত ভাবিস না। আমি কাকু কাকিমা কে বুঝাতে আপ্রান চেষ্টা করব। তুই শুধু বসে কফি খা কুত্তা।"
অভি অরুনার হাসি মুখ দেখতে থাকে, অরুন্ধুতি ওর কাছে যেন দেবী প্রতিমা, ওর সব থেকে ভাল বন্ধু। জীবনের কিছুর বিনিময়ে ও অরুনার হসি মুখ হারাতে চায় না।
Posts: 420
Threads: 9
Likes Received: 434 in 312 posts
Likes Given: 217
Joined: Jan 2019
Reputation:
20
মাতৃময়ী মূর্তি
কফি হাউস থেকে বাড়ি ফিরতে অভির দেরি হয়ে যায়। বাড়ি ফিরে দেখে যে সবাই বসার ঘরে বসে চা খাচ্ছে। বাবা নিজের ঘরে বসে অফিসের কাজ নিয়ে ব্যাস্ত। মা পরীর মাথা কোলে করে নিয়ে ডিভানের ওপরে বসে আছে আর পরীর চুল আঁচড়ে দিচ্ছে। পরী ছোট্ট বিড়ালের মতন মায়ের আদর খাচ্ছে। লম্বা সোফায় মৈথিলী আর সুব্রত বসে। অভি ঘরে ঢুকে ছোটো সোফার ওপরে গিয়ে বসে পরে। মা ওকে জিগ্যেস করলেন যে দেরি কেন। উত্তর অভি জানাল যে প্রাক্টিকাল ক্লাসের জন্য দেরি হয়ে গেছে। মা ওকে বললেন যে আগামি কাল সুব্রত আর মৈথিলী ঢাকুরিয়া যাবে মৈথিলীর কাকার বাড়িতে, অভি কেও সঙ্গে নিয়ে যেতে চায়। মায়ের কথা শুনে অভি পরীর দিকে তাকায়, পরীর চোখ ইশারায় বলে ওঠে "প্লিস যেও না" অভি মাকে জিজ্ঞেস করে যে কালকে মা আর পরী কোথায় যাবে। মা জানালেন যে পরীকে নিয়ে মা একটু কেনাকাটা করতে শ্যাম বাজার হাতিবাগান যাবে তারপরে পরীর জন্য গয়না কিনতে বউ বাজারে যাবে।
মৈথিলী অভির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "তুমি আজকে আমাদের সাথে সিনেমা দেখতে গেলে না, কাল কিন্তু না করতে পারবে না।"
অভি দেখল মা ও চাইছে অভি ওদের সাথে ঢাকুরিয়া যাক, কিন্তু বাধ সাধছে প্রেয়সী পরীর চোখ।
সুব্রত ওকে বলল, "মামা আমি কোন কথা শুনব না, কাল তোমাকে আমাদের সাথে যেতেই হবে।"
অভি দেখল যে বড় ফাঁপড়ে পরে গেছে, কিছু একটা বলে ওদের কে ক্ষান্ত না করলে অভির যে স্বস্তি নেই।
অভি পরীর দিকে তাকিয়ে চোখে চোখে একটু কথা বলে বাকিদের জানাল, "ঠিক আছে, শনিবার আসুক আমি জানাব আমি কি করব।" পরী ওর কথা শুনে মৃদু হেসে জানিয়ে দিল যে ও খুব খুশি।
মা পরী আর মৈথিলীকে নিয়ে রান্না ঘরে ঢুকে যায়। অভি নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায়। সুব্রত জিজ্ঞেস করে যে ও সাথে যেতে পারে কিনা। মাথা নাড়ায় অভি, জানিয়ে দেয় যে সুব্রতর জন্য ওর দরজা সবসময়ে খোলা।
সুব্রত ওর ঘরে ঢুকেই জিজ্ঞেস করে, "কি ব্যাপার বলত মামা, তুমি কি অরুনিমার প্রতি ইন্টারেস্টেড নও?"
মাথা চুলকালো অভি, কিছু একটা উত্তর দিতে হবে যাতে সাপ মরে কিন্তু লাঠি ভাংবে না। অভি বেশ কিছুক্ষণ চিন্তা করে উত্তর দেয়, "মামা আসল কথা হচ্ছে যে আমি একজনার প্রতি একটু ঝুঁকে আছি।"
সুব্রত চমকে গিয়ে বলে, "কি বলছ মামা, এ কথা ত আমাকে জানাও নি। কে সে? তুমি নাকি অরুনিমাকেও বলেছিলে যে তোমার কোন গার্লফ্রেন্ড নেই তাহলে?"
অভি, "মামা প্রেম কি আর বলে কয়ে আসে, এত হয়ে যায় হটাত করে। কার সাথে কি ভাবে হবে কেউ জানেনা। মামা প্রেম ত আর অঙ্ক নয় যে দুয়ে দুয়ে চার হবে। তুমিও ত প্রেম করে বিয়ে করেছ, তুমি ত বুঝবে মনের কথা।"
সুব্রত, "কিন্তু মামা, একতরফা প্রেম হলে যে মুশকিল। তা তুমি কি প্রোপস করেছ?"
অভি দেখল সত্যি কথা বলা বিপদ, অগত্যা অভি কে অরুন্ধতি কে টেনে নিয়ে আসতে হল। অভি বলল, "না মামা আমি এখনো প্রোপস করিনি তবে আমি জানি যে মেয়েটা আমাকে ভালবাসে।"
সুব্রত, "কে সে?"
অভি, "আমার কলেজের এক বান্ধবী।"
সুব্রত, "কবে প্রোপোজ করবে?"
অভি, "দেখি, ওর জন্মদিনে ভাবছি প্রোপস করব।"
সুব্রত মনে হল যেন একটু মনক্ষুণ্ণ হয়ে গেল অভির কথা শুনে, "অরুনিমা একটু আঘাত পাবে এই কথা শুনে। বিগত দু’মাস ধরে ও তোমার ফোনের আশায় বসে আছে। যাই হক একবার ফোন করে দেখ, তুমি ত তোমার বান্ধবিকে এখন মনের কথা বলোনি তাই ত। হয়ত অরুনিমার সাথে দেখা করলে তোমার মনের ভাব বদলে যেতেও পারে।"
অভি ওর দিকে তাকিয়ে হাসল, "ঠিক আছে আমি কথা দিচ্ছি যে আমি অরুনিমার সাথে দেখা করব, কিন্তু কাল হবে না। একটা কথা বল মামা, তুমি আর চুরনি কেন আমার পেছনে অরুনিমার জন্য পরে আছো?"
সুব্রত ওর দিকে তাকিয়ে একটা শয়তানি হাসি হেসে বলল, "ধিরে ধিরে সব জানতে পারবে মামা।"
অভি ঠিক বুঝতে পারল না যে সুব্রত হটাত করে এই রকম কথা কেন বলল, কি জানতে পারবে অভি, কি মতলব চলছে সুব্রতর মাথার মধ্যে? সুব্রতর হাসির মধ্যে যেন একটু শয়তানি বদ মতলবের ছোঁয়া রয়েছে।
ঠিক সেই সময়ে মৈথিলী দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে জানাল যে খাবার তৈরি আর মা ওদের কে খেতে ডাকছে। সুব্রত মৈথিলীকে দেখে বলল যে ও অভিকে অরুনিমার সাথে দেখা করার কথা বলেছে আর অভি রাজি হয়েছে যে অরুনিমার সাথে দেখা করবে, কিন্তু কাল দেখা করতে পারবে না, পরে দেখা করবে। সুব্রত আরো জানাল যে অভির কলেজে একটি বান্ধবী আছে যাকে অভি ভালবাসে আর ভবিষ্যতে প্রেম নিবেদন করতে চায়। মৈথিলী লাজুক নয়নে অভির দিকে তাকিয়ে খুব মিষ্টি করে একটা হাসি দিল, বাঁ হাতের কড়ে আঙ্গুল দিয়ে দাঁতের মাঝে চেপে ধরল। অভি ওর মন মাতান হসি দেখে চঞ্চল হয়ে উঠল, বুকের মধ্যে যেন ওই মত্ত হাসিটা একটা গভীর রেখা পাত করে গেল।
অভি মৈথিলীকে জিজ্ঞেস করল, "তুমি আমার দিকে ওই ভাবে তাকিয়ে হাসছ কেনও?"
"কিছু না, এমনি হাসছি।" অভিকে আপাদ মস্তক চোখ বুলিয়ে সুব্রতর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, "কি বলেছ ওকে?"
সুব্রত ওর দিকে তাকিয়ে একটা শয়তানি হাসি হেসে বলল, "আরে না না ডার্লিং, চিন্তা কোরো না। ও বলেছে ত যে অরুনিমার সাথে দেখা করবে, ব্যাস তারপর যা হবার সেটা সময়ের ওপরে ছেড়ে দাও।"
"খাবার তৈরি, নিচে এস"
এই বলে মৈথিলী ওর সুডৌল নিতম্ব মাছের মতন দুলিয়ে দরজা দিয়ে বেড়িয়ে গেল। অভির চোখ মৈথিলীর মত্ত চলনের ওপরে নিবদ্ধ হয়ে থাকল, চোখের সামনে মৈথিলীর সুডৌল নিতম্বের লয় যেন বুকের ভেতরে আগুন জ্বালিয়ে চলে গেল। ইচ্ছাকৃত ভাবে কি মৈথিলী ওই রকম ভাবে কোমর দুলিয়েছে? কি জানি। দরজা দিয়ে বেড়িয়ে যাবার ঠিক আগে, মৈথিলী ওদের দিকে ঘুরে তাকাল, চোখে যেন কামনার আগুন জ্বলছে, কিছু একটা বলতে চাইছে দু’চোখ ঠিক বুঝতে পারছে না অভি। অভির চোখ ওর মত্ত ছন্দময় নিতম্বের ওপরে, একটু যেন কেঁপে উঠল মৈথিলী, অভির চোখ যেন ওর পিঠ কোমর আর নিতম্ব জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাক করে দিচ্ছে। সুব্রতর দিকে চোখ টিপলও মৈথিলী। অভি একি করছে, বরের সামনে তার নতুন বিয়ে করা বউয়ের মত্ত চলন লম্পটের মতন দেখছে।
অভি যেন ধরা পরে গেল সুব্রতর কাছে, ওর কান গরম হয়ে ওঠে, কি করছে ও? মৈথিলী কেন ওই রকম ভাবে কোমর দুলিয়ে গেল? সুব্রতর কি মতলব? কি জানে কি আছে ভবিষ্যতে।
খাবার সময়ে পরীর সাথে বিশেষ কথাবার্তা হল না, সবার সামনে একটু দুরত্ত রেখে কথা বলতে হয়েছে দুজনকে। পরীর মন খুব আনচান করতে থাকে, সামনে অভি বসে কিন্তু কিছুতেই ছুঁতে পারছে না, একি বিড়ম্বনা বিধাতার। সামনে সুধার ভাণ্ডার তাও ভালবাসার পাত্র খালি, বারে বারে আর চোখে পরীর দিকে তাকায় অভি। মা জানালেন যে ওরা কাল দুপুরে শপিং করতে বের হবে। অভি ওদের কে বলল যে ও ঢাকুরিয়া যাবে না। অভির কথা শুনে পরীর মনে যেন খুশি আর ধরে না, চোখ জলজল করে ওঠে পরীর, বুকের মধ্যে খুশির জোয়ার আসে।
পরী শয়তানি করে মাকে বলে, "আচ্ছা ছোটো মা, আমাদের তো একটা গাধা লাগবে ব্যাগ ধরার জন্য, তাই না।"
অভি মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, "দেখ তোমার পরী আমাকে কি সব বলছে।"
পরী, "দেখ দেখ একটা গাধা কিনা মাংস খাচ্ছে।"
অভির খুব ইচ্ছে করছিল ওই গোলাপি গালে চিমটি কাটার জন্য। নিজেকে কোন মতে সামলে নিয়ে, "কুকুর, ভেড়া, ঢেঁড়স, কাক, হাড়গিলে..."
ওদের ঝগড়া দেখে সবাই হেসে ফেলল, মা ওদের দু’জনকে মৃদু বকুনি দিল, "তুই খেয়ে শুতে যা" পরীর দিকে তাকিয়ে বলল "আর তুই তাড়াতাড়ি কর, কাল সকাল সকাল উঠতে হবে।"
অভি খাওয়া শেষ করে মাকে বলল, "আমার শুতে দেরি হবে প্রাক্টিকালের কিছু কাজ বাকি আছে আমার।"
পরীর দিকে আড় চোখে তাকিয়ে ইশারায় বলে, "আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করব কিন্তু।"
প্রাক্টিকাল খাতা লিখতে লিখেত অনেক রাত হয়ে গেল, ঘড়ি দেখল অভি, রাত একটা বাজে। চোখ দুটো জ্বালা জ্বালা করছে, মাথাও একটু ব্যাথা ব্যাথা করছে। আঙ্গুল দিয়ে মাথায় আঁচর কাটে অভি, মনে পরে কতকাল পরীর ছোঁয়া পায়নি মাথার ওপরে, কি সুন্দর চুলে বিলি কাটে পরী আর অভি ওর কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ত। পরী আর এলনা তাহলে, এই ভেবে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে থাকল। কিছুতেই প্রেয়সি কে কাছে পাওয়া যাচ্ছে না, তবে এটা ভেবে মন খুশিতে ভরে গেল যে কাল মা আর পরীর সাথে কেনাকাটা করতে বের হবে। হ্যাঁ, পাশে হয়ত হাঁটতে পারবে না বাঁ জড়িয়ে ধরতে পারবে না, কিন্তু চোখের সামনে ত থাকবে পরী। পরীর গায়ের ঘ্রান কতদিন বুকের মধ্যে নিতে পারেনি, টেবলের ড্রয়ার থেকে রুমাল বের করে মুখের ওপরে মেলে ধরে অভি, গায়ের গন্ধ কিছু যেন এখন লেগে আছে রুমালে। এত কাছে পরী তবুও এত দুরে পরী, হাতের নাগালের বাইরে।
এমন সময়ে অভির অরুন্ধুতির কথা মনে পরে যায়, পরীকে জানান হয় নি অরুন্ধুতির ব্যাপারে। মনে ভেতরে একটা সংশয় জেগে ওঠে, অরুনার কথা শুনলে পরী কি ভাবে গ্রহন করবে অরুনাকে। অরুনা এই পৃথিবীতে ওর একমাত্র বন্ধু। পরীর কাছে থেকে অরুনাকে লুকিয়ে রাখা মস্ত বড় ভুল হবে, পরীকে জানাতে হবে অরুনার কথা কিন্তু সাবধানে।
Posts: 420
Threads: 9
Likes Received: 434 in 312 posts
Likes Given: 217
Joined: Jan 2019
Reputation:
20
দরজায় খুব মৃদু আওয়াজ হয়, হাওয়ায় মনে হয়, বাইরে বেশ মৃদুমন্দ বাতাস বইছে। ঠিক তারপরে কপালে ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে চোখ মেলে তাকাল অভি। ওর চোখের সামনে পরীর হাসি মুখ, কখন যে চেয়ারের পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে টের পায়নি। দু’কাঁধের ওপর দিয়ে হাত গলিয়ে বুকের ওপরে হাত রাখল পরী। মাথা পেছনে হেলিয়ে দিল অভি, পরী ওর কপালে চিবুক রেখে আবার একটা ছোট্ট চুমু খেল কপালে। পেছনে হাত বাড়িয়ে পরীর কোমর জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নেয়, ঘাড়ের ওপরে পরীর বুকের উষ্ণতা অনুভব করে।
পরী মৃদুকনে বলে, "আমার ছোট্ট রাজকুমার কি ক্লান্ত হয়ে পড়েছে?"
অভি, "হ্যাঁ সোনা, তা তোমার এত দেরি কেন হোলো?"
পরী, "তুমি তো বললে..."
অভি, "তোমার ছোটো মা কি ঘুমিয়ে পড়েছে?"
পরী, "হ্যাঁ বাবা অনেক আগে ঘুমিয়ে পড়েছে।"
অভি, "তাহলে এত দেরি কেন?"
পরী, "সুব্রত আর মৈথিলী জেগে ছিল তাই।"
অভি, "ওরা দুজনে কেন জেগেছিল সেটা তো বেশ জানো আর তুমি কি করছিলে তাহলে?"
পরীর গাল লাল হয়ে ওঠে, "ধ্যাত বাবা, ওরা কেন জেগেছিল সেটা যেন তুমি জানো না।"
পরী বুকের ওপরে আলতো করে চাঁটি মেরে বলে।
অভি পরীর কোমল নিতম্বের ওপরে হাত চেপে ধরে আর মৃদু মৃদু চাপ দেয়, কোমল নারী মাংসে। মাঝে মাঝে হাতের চাপ বেশ শক্ত হয়ে ওঠে, নখের আঁচর কাটে কোমল গোলকে। পরী ওর কোমল শরীরে অভির নখের আঁচরের স্পর্শ পেয়ে অভির বুকে হাত চেপে ধরে।
অভি পরীকে উত্যক্ত করার জন্য বলে, "ওদের কথা মনে মনে ভেবে তুমি কি করছিলে শুনি? তোমার গাল লাল হয়ে যায়নি ওদের আওয়াজ শুনে, দুষ্টু মেয়ে।"
পরী, "না বাবা ওরা যা আওয়াজ করছিল, আমি শেষ পর্যন্ত টি.ভি র আওয়াজ জোরে করে দেই।"
অভি, "মিথ্যে বোলোনা সোনা, তুমিও ওই আওয়াজ গুলো বেশ উপভোগ করছিলে তাই না।"
পরী লজ্জায় লাল হয়ে যায়, লজ্জা ঢাকার জন্য নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে। পরীর নরম পেছনে অভির হাত যেন থেমে থাকতে পারে না বারে বারে মুঠি মুঠি শরীরের অংশ নিয়ে হাত দিয়ে চাপে। হাতের তালুর নিচে অভি অনুভব করল যে পরীর গায়ের কাপড়ের নিচে কিছু নেই, সেটা ভেবেই মাথার মধ্যে কামনার আগুন চাগিয়ে উঠল অভির।
অভি মৃদু কন্ঠে পরীকে বলে, "ভেরি সরি সোনা আজ আমি তোমার সাথে সিনেমা দেখতে যেতে পারিনি।"
পরী, "সেটা ঠিক আছে, তার জন্য ত আমি রাগ করিনি। তোমার পরীক্ষা কাছে আসছে তোমার ভাল করে পড়াশুনা করা উচিত। দেখ আড়াইটে বেজে গেছে এবারে শুয়ে পরো।"
অভি চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে ওকে বাহুপাশে বেঁধে ফেলে। পরী ওদের দুজনের শরীরের মাঝে হাত এনে অভির বুকের ওপরে হাত রাখে, মুখ উঁচু করে অভির মুখের দিকে তাকায়। মাথা নিচু করে অভি আলতো করে পরীর কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায়।
কানে কানে বলে, "রাতে আমার সাথে এখানে শুয়ে পর।"
পায়ের বুড়ো আঙ্গুলের ওপর ভর দিয়ে ওর কপাল ছুঁতে যায় পরী। কল্পালে ঠোঁট দিয়ে চুমু খাবার পরে অভির ঠোঁটের ওপরে গরম নিঃশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলে, "না সোনা, তুমি আমার কোলে মাথা রেখে বিছানায় শুয়ে পরো, আমি তোমার চুলে বিলি কেটে দেই, দেখবে খুব আরাম লাগবে।"
পরী হাঁটু গেড়ে বিছানার ওপরে বসে পরে, অভি ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে। পরী খুব আদরে অভির চুলে বিলি কেটে দেয়। অভি ওর কোমর জড়িয়ে ধরে থাকে। দু’জনের বুকের ভেতর এক অনাবিল প্রেমের আলো বিছুরিত হয়, সেই প্রেমে কোন কামনার লেশ নেই, বাসনার লেশ নেই, এ যেন এক সুন্দর ধবধবে সাদা প্রেমের বন্ধন।
অভি, "পরী..."
পরী, "হুম বল।"
অভি, "সুব্রত আর মৈথিলী আমার সাথে অরুনিমার সম্পর্ক তৈরি করার জন্য উঠে পরে লেগেছে।"
পরী, "আমি জানি অভি, আর এও জানি সেই জন্য তুমি আজ ওদের বাড়ি যাচ্ছ না। তোমার ওপরে যে আমার অগাধ বিশ্বাস আছে অভি।"
অভি আজ বিকেলের কথা সব পরীকে জানাল, সুব্রত ওকে কি বলেছে, মৈথিলী ওর দিকে কেমন করে তাকিয়েছিল আর যা যা কিছু ঘটেছে সব কিছু পরীকে বলে দিল। পরী ওর কথা শুনে মিষ্টি হেসে জানিয়ে দিল যে ওর নিজের হৃদয়ের ওপরে মানে অভির ওপরে অগাধ বিশ্বাস যে অভি ওকে ছেড়ে কোনদিন যাবে না। কিন্তু সুব্রতর কথা শুনে মনে একটু সংশয় জেগে উঠলো পরীর, "আমি ত ঘুণাক্ষরে ও ওদের মতলব বুঝতে পারছিনা অভি, যাই হক দেখা যাক কি করতে চায় ওরা।"
পরী ওর দিকে একটু ঝুঁকে এল, অভি নাকের ওপরে নাক ঘষে বলল, "তুমি সত্যি অনেক সুন্দরী আর বুদ্ধিমতী, পরী।"
পরী, "আমি না তোমার চেয়ে দু বছরের বড়, তাই ত তোমার চেয়ে আমার মাথায় কিছুটা বেশি বুদ্ধি আছে।"
অভি ভাবল এবারে ওকে অরুনার কথা জানানো যেতে পারে, "পরী, আমি তোমাকে একটা সত্যি কথা বলতে চাই। আমি আজ প্রাক্টিকাল ক্লাস করিনি।"
আঁতকে ওঠে পরী, "মানে? কি করেছ তাহলে?"
অভি একটু চিন্তায় পরে যায়, তারপরে বলে, "আজ আমি আমার সব থেকে ভাল বান্ধবীর সাথে ছিলাম, তার নাম অরুন্ধতি ব্যানারজি।"
পরীর হাত থেমে যায়, চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে ফেলে পরী। বুকের মধ্যে হটাত করে কেউ যেন বাড়ি মেরে দিয়েছে। অভির কথা শুনে ক্ষণিকের জন্য বুক দুরুদুরু করে কেঁপে ওঠে, কি বলতে চাইছে অভি? হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে থাকে অভির মুখের দিকে। অভি ওর চোখের চাহনি দেখে পরীর মনে ভাব বুঝতে পারে। পরীর মনের ভেতরে এক উত্তাল তরঙ্গ আছড়ে পরে যেন, "কি করে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে ভাল বন্ধু হতে পারে? না সেটা ঠিক নয়, অভি কেন বলেনি আগে, কেন আমাকে এত বড় একটা ভ্রান্তিতে ডুবিয়ে রেখেছে?"
মাথা নাড়াল অভি, "কি দেখছ ওই রকম ভাবে আমার দিকে?"
পরী কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করে, "তুমি ত কোনদিন আমাকে জানাও নি যে তোমার কোন ভালো বান্ধবী আছে মানে গার্লফ্রেন্ড।"
অভি, "না পরী না, তুমি আমাকে ভুল বুঝেছ।" মাথা নাড়ে অভি, "অনেক বড় গল্প পরী, কিন্তু আজ তোমাকে আমি সেই গল্প বলব।"
অভি ওর জীবন কাহিনী পরীর সামনে মেলে ধরে। মায়ের কথা, বাবার কথা, সবসময়ে ওর ওপরে বাবা মায়ের চাপ, যেন পয়সাই সব। ভালবাসা কি ঠিক যেন বুঝে উঠতে পারেনি অভি। ছোটো বেলায় চাকরদের কাছে আর তারপরে হস্টেলে জীবনের বেশির ভাগ সময় অতিবাহিত হয়েছে। পরাশুনায় ভাল ছিল অভি, তাঁর সাথে সাথে ভাল আঁকত। মনে খুব ইচ্ছে ছিল যে বড় হয়ে খুব বড় এক চিত্রকর হয়। বাবা মাকে জানিয়েছিল মনের অভিপ্রায়, কিন্তু না তাদের কথা, যে ওদের পরিবারের কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, এমত অবস্থায় অভি যদি সামান্য এক চিত্রকর হয় তাহলে কি করে সবাই কে মুখ দেখাবে বাবা মা। মা কলেজের শিক্ষিকা, বাবা এয়ারপোর্ট অথরিটির বড় ম্যানেজার, এই অবস্থায় অভি কিছুতেই চিত্রকর হতে পারে না। এত পয়সা খরচ করে ওর বাবা মা ওকে সব থেকে ভাল কলেজে পড়িয়েছে আর অভি যখন ভাল ফল আনতে পেরেছে তাহলে ওকে বিজ্ঞান নিয়েই পড়তে হবে। উচ্চমাধ্যমিকেও ওকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে হল শেষ পর্যন্ত। পরী চুপ করে অভির কথা শোনে, কাহিনী বলতে বলতে অভির চোখের কোল যেন একটু চিকচিক করে আসে। ভেতরটা যেন ককিয়ে ওঠে বেদনায়। পরী আলতো করে অভির কপালে হাত বুলিয়ে দেয়, ওর কথা শুনে পরীর চোখের কোলেও জল চলে আসে।
কম্পিত স্বরে বলে, "আমি এ সব জানি, ছোটো মা আজ আমাকে তোমার কথা বলছিল।"
অভি চমকে ওঠে, "কি? মা তোমাকে এই সব কথা বলেছে?"
পরী, "হ্যাঁ সোনা। ছোটো মা তোমাকে বড় করার জন্য যা করেছে সেই সব বলেছে আর তুমি ছোটো মায়ের কথা একদম শোনো না তাই বলেছে। নদীর সবসময়ে দু’ধার দেখা উচিত না হলে নদীর কথা বোঝা দায় হয়ে ওঠে, তাই না। এখন বুঝেছি আমি তোমার কষ্ট, আমি ছোটো মা কে বুঝিয়ে বলব খানে। দেখ সোনা, মনের ঘা এমন ঘা যে ঠিক ত হয়ে যায় সময়ের সাথে কিন্তু একটা কাটা দাগ চিরদিনের জন্য রেখাপাত করে রেখে যায়। আমি আপ্রান চেষ্টা করব তোমার সেই দাগ মুছে দেবার জন্য।"
চোখের কোল মুছে অভি কে জিজ্ঞেস করে, "এবারে বল ত যা আমি জানি না। কে এই অরুন্ধতি ব্যানারজি?"
অভি ওর কলেজের গল্প বলতে শুরু করে, অনুশুয়ার কথা তারপরে পুবালির কথা। সবশেষে অরুনার কথা। সব কিছু শুনে পরী একটু ঝুঁকে অভির কপালে মিষ্টি করে একটি চুমু খেয়ে বলে, "তোমার দেবী, অরুনার সাথে কবে দেখা করাচ্ছ?"
অভি মৃদু হেসে বলে, "অরুনাও তোমার সাথে দেখা করতে চায়।"
ওর হাতদুটি বুকের ওপরে চেপে ধরে অভি।
পরী ঘড়ির দিকে দেখে চমকে ওঠে, "আরে সাড়ে চারটে বাজে যে।"
অভি ওর হাত টেনে বলে, "পরী, এই তোমার অভিমন্যু, তোমার সামনে খোলা বইয়ের মতন রাখা।"
পরী অভির মাথার নিচে একটা বালিস টেনে দিয়ে ওর পাশে বসে। নরম হাতে অভির গালের ওপরের জলের দাগ মুছে দেয়। আস্তে করে চোখ থেকে চশমা খুলে ভাঁজ করে মাথার পেছনে রাখে।
আলতো করে গালে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, "অতীত কখন ভুলতে নেই অভি, অতীত আমাদের ভবিষ্যতের সিঁড়ি, অতীত আমাদের অনেক কিছু শেখায়। জীবন একটি চক্রের মতন অভি, কোন একসময়ে হয়ত আমাদের অতীত আমাদের সামনে এসে দাঁড়াতে পারে, তখন আমরা দু’জনে মিলে এক সাথে তার সামনা করব। এখন একটু বিশ্রাম করও ছোট্ট সোনা, আজকে আবার শপিঙয়ে বের হতে হবে তাই না।"
অভির মাথা বুক একদম খালি হয়ে আসে, কে এই নারী? কে এই পরী, "তুমি কে?"
গলা ধরে আসে অভির।
পরী ওর মুখের ওপরে ঝুঁকে পরে, কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে উত্তর দেয়, "আমি তোমার পরী, বুদ্ধিতে তোমার মন্ত্রি, সুন্দরী আর ধনে আমি লক্ষ্মী, আমি ধরিত্রি তোমাকে বোঝার জন্য আর আমি তোমার মা তোমাকে ভালবাসা আর স্নেহে ভরিয়ে তোলার জন্য, শয়নে আমি রম্ভা আর মেনকা, আমি তোমার পরী।"
পরী ওর খোলা চোখের ওপরে আঙ্গুল রেখে চোখের পাতা বন্ধ করে দেয়। মিষ্টি গলায় বলে, "শুয়ে পরো ছোট্ট রাজকুমার আমার।"
Posts: 420
Threads: 9
Likes Received: 434 in 312 posts
Likes Given: 217
Joined: Jan 2019
Reputation:
20
অনধিকার প্রবেশ
মা ধাক্কা মেরে অভি কে ঘুম থেকে তুলে দিলেন, "এই ছেলে ওঠ, সাড়ে নটা বাজে আর কত ঘুমাবি।"
অভি, "আহ মা, আর একটু শুতে দাও না, আজ ছুটির দিন, আর একটু প্লিস।"
মা, "তোর বাবা অফিসে বেড়িয়ে গেছেন আর সুব্রত আর মৈথিলী সেই সকাল বেলায় ঢাকুরিয়া বেড়িয়ে গেছে। তুই যদি আমাদের সাথে শপিঙে যেতে চাস তাহলে উঠে পর না হলে তুই ঘুমতে পারিস। আমি কিন্তু তোর জন্য কোন রান্না করিনি।"
ঘুম চোখে অভির মনে পড়ল যে কেনা কাটা করতে বের হতে হবে, যদিও পছন্দ নয় তবুও যেহেতু পরী সাথে থাকবে তাই ওর যেতেই হবে। পরী পাশে না থাক কাছে ত থাকবে।
মা, "চা তৈরি, স্নান সেরে তাড়াতাড়ি নিচে আয়।"
অভি মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, "আর তোমার মেয়ে কি করছে? ও শুয়ে থাকলে কিছু না আর আমি শুয়ে থাকলে যেন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়।"
মা, "ওর কথা তোকে জিজ্ঞেস করতে হবে না। পরী অনেক সকালে উঠে স্নান সেরে পুজো দিয়ে রান্না ঘরে ঢুকে গেছে, ও লুচি ভাজচ্ছে, তোর মতন নয়, খালি পড়ে পড়ে ঘুমাতে পারলে যেন বেঁচে যাস।"
অভি মায়ের কথা শুনে মনে মনে হেসে ফেলল, "আমার সোনার পরী জানে কি করে ছোটো মায়ের মন জিততে হয়। মেয়ে নয় মা, তোমার ভাবি বউমা করে আনব আমি।"
স্নান সেরে দৌড়ে নিচে নেমে আসে, "টিং টিং টিং টিং ... পেটে আগুন জ্বলছে, ফায়ার ব্রিগেড চাই।"
অভি খুব খুশি, পরী লুচি রান্না করছে।
পরী রান্না ঘর থেকে জোর গলায় বলে, "চিল্লিয়ো না, চুপ করে বসার ঘরে বসো, আমি তোমার লুচি নিয়ে এখুনি আসছি।"
বসার ঘরের পর্দা সরিয়ে পরী ঘরে ঢুকল, মনে হল সকালের আলো যেন ওর সদ্যস্নাত রুপের কাছে ম্লান হয়ে গেল। ভেজা চুল ঘাড়ের ওপর দিয়ে বাঁ কাঁধের ওপর দিয়ে সামনের দিকে ফেলা। পরনে ঘিয়ে রঙের শাড়ি আর লাল ব্লাউস। চেহারায় যেন দেবী প্রতিমার মতন আলোর ছটা দিচ্ছে। কপালে ছোট্ট লাল সিঁদুরের টিপ, পুজোর টিপ মনে হল, দুই বাঁকা ভুরুর মাঝে শোভা পাচ্ছে। কানে সমার দুল তাতে আবার দুটি ছোটো ছোটো মুক্ত ঝুলছে। বাঁ গালের ওপরে সেই ছোট্ট চুলের এক গুচ্ছ দুলে বেড়াচ্ছে। গোলাপি ঠোঁটে কোন রঙ মাখা নেই তবুও কত গোলাপি আর নরম যেন গোলাপ ফুলের কুঁড়ি। কাজল কালো নয়নে অভির দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। পরীর ওই লক্ষ্মীর মতন রুপ দেখে অভি থমকে যায়। পরী যেন চোখের ইশারায় ওকে বলে, "অভি এই অপরূপ সুন্দরী ছোঁয়ার নয়, শুধুমাত্র দুচোখ ভরে দেখার।"
সামনে এসে টেবিলের ওপরে খাওয়ার থালা রেখে অভির মাথায় ছোট্ট চাঁটি মেরে ফিসফিস করে বলে, "আমার দিকে ওই রকম ভাবে তাকিয়ে থেক না, তাড়াতাড়ি লুচি তরকারি শেষ করো।"
অভি ওর মুখের দিকে নিস্পলক চোখে তাকিয়ে থাকে, চোখের পলক যেন পরে না। পরী মুখের সামনে মুখ এনে বলে "ওই রকম ভাবে দেখতে থাক যদি তাহলে কিন্তু আমি তোমার সাথে যাবো না।"
অভি যেন এতক্ষণ মোহাচ্ছন্নে ছিল, ওর কথা শুনে যেন সেই ঘোর কেটে গেল। হাঁ করে পরীকে জিজ্ঞেস করে, "তুমি কে?"
এক অদ্ভুত সুন্দর হাসি দেয় পরী, ফিসফিস করে বলে, "আমি তোমার পরী।"
উত্তর দিয়ে পরী ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।
প্রায় সাড়ে দশটা নাগাদ ওরা সবাই শপিঙ্গে বের হল। পরী খুব সুন্দর একটা গাড় নীল রঙের সালোয়ার কামিজ পরে। খুব সুন্দর দেখাচ্ছে পরীকে। মায়ের সাথে যেন পরী নয় একটা সুন্দর ময়ুর হেঁটে চলেছে আর অভি ওদের পেছন পেছন হাটছে। পরীর চেহারায় এক অনাবিল শান্তির ছটা, ও যে ছোটো মায়ের পাশে আর ভালবাসার কাছে আছে।
শপিং জিনিসটা অভির কোনদিন ভালো লাগে না তাও আবার মায়ের সাথে। দশটা দোকান ঘুরবে, একশ খানা শাড়ি নামিয়ে দেখবে তারপরে বলবে যে না ঠিক পছন্দ হচ্ছে না বলে আরও একটা দোকানে ঢুকবে। কিন্তু ওর সেই বিরক্তি আজ নেই কেননা ওর সাথে পরী আছে। প্রথমে ওরা শ্যামবাজারে গেল পরীর জন্য শাড়ি কিনতে। তিনটে শাড়ি কিনতে পৌনে ঘন্টা, বাপরে, মেয়েদের কেনাকাটা। প্রতিবার অভি যখনি পরীর দিকে তাকায়, পরী ওর দিকে ইশারা করে, "আর পাঁচ মিনিট" কিন্তু সেই পাঁচ মিনিট আর আসেনা, শাড়ি দেখা থামেনা। অভি মনে মনে বিরক্তি বোধ করে, আমার সাথে বের হলে আগে থেকে রঙ পছন্দ করে রাখবে তারপরে শাড়ি কিনতে বের হবে। কেনাকাটা চলতে থাকে, বিছানার চাদর, শাড়ি আরও অনেক কিছু। অভির সহ্য শক্তির আর বাহুর শক্তির যেন পরীক্ষা চলছে, শপিঙ্গের ব্যাগ গুলো ত ওর হাতেই।
পরী ওর ক্লান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে মাকে বলে, "দেখলে তো ছোটো মা, আমি বলেছিলাম না যে আমাদের ব্যাগ বওয়ার জন্য একটা গাধার দরকার ছিল।"
মা অভির ক্লান্ত চেহারা দিকে তাকিয়ে মিনতির সুরে বলল, "ব্যাস আর কয়েক ঘন্টা অভি।"
"বাপরে..... আরও কয়েক ঘন্টা!" মায়ের কথা শুনে অভির মাথায় যেন বাজ পড়ল।
অভি, "শোনো মা, তোমার মেয়ে যদি আর একবার আমাকে গাধা বলেছে তাহলে কিন্তু আমি ওকে এক লাত্থি মারব আর সব ব্যাগ ফেলে দেব। ওকে বারবার গাধা গাধা বলতে বারন করও।"
পরী অভিকে খ্যাপানোর জন্য আবার বলে, "গাধ গাধা গাধা, একশ বার বলব গাধা।"
অভি মাকে বিরক্তি হয়ে বলল, "আচ্ছা কি দরকার পরীর জন্য অত শাড়ি কিনে? ওর ত হাজার গন্ডা কেন কয়েক লক্ষ শাড়ি আছে। তুমি না পরীকে লাই দিয়ে মাথায় তুলছ।"
অভির কথা শুনে মা বিরক্ত হয়ে ওঠেন, "তোর যদি ভালো না লাগে তাহলে তুই বাড়ি চলে যা।"
পরী দেখল মা ছেলের মধ্যে আবার তুমুল কিছু একটা শুরু হতে দেরি লাগবে না। দু’জনের তিরিক্ষি মেজাজ। পরী ছোটো মায়ের হাত ধরে শান্ত করে দিল আর অভির দিকে তাকিয়ে ইশারা করল শান্ত হবার জন্য। বাজুতে পরীর হাতের স্পর্শ পেয়ে মা শান্ত হয়ে গেল। শ্যামবাজারে কেনাকাটা শেষ করার পরে হাতিবাগান থেকে পরীর জন্য সালোয়ার কামিজ কেনা হল। মা মৈথিলীর জন্য একটা দামী সিল্কের শাড়ি কিনল আর সুব্রতর জন্য রেমন্ডের সুটের কাপড়। অভি ওই দেখে একটু বিরক্ত হল, পরীর জন্য কিনছো কেন সুব্রত মৈথিলীর জন্য অত দামী উপহার কেনার কি মানে।
অভি মা'কে জিজ্ঞেস করল যে সুব্রত আর মৈথিলী, ঢাকুরিয়া থেকে কখন ফিরবে, মা জানালেন যে ওরা বিকেল ছ’টার মধ্যে ফিরে আসবে আর বাবাও সম্ভবত ততক্ষণে বাড়ি ফিরে আসবেন।
অভির খুব ক্লান্ত লাগছিল, কিন্তু পরীর হাসি মুখ চোখের সামনে দেখে অভির সব ক্লান্তি দূর হয়ে গেল। প্রায় আড়াইটে নাগাদ মা পরীকে জিজ্ঞেস করলেন যে খিদে পেয়েছে কি না। অভি ভেবে পেলনা কি হল, ওযে সাথে আছে সেটা যেন মা বেমালুম ভুলে গেছে, হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে পেয়ে। পরী ওর দিকে তাকিয়ে অভির মনের কথা বুঝতে পারল, একটু ব্যাথা ভরা হাসি দিয়ে মনটাকে শান্ত করতে অনুরধ করল পরী।
Posts: 420
Threads: 9
Likes Received: 434 in 312 posts
Likes Given: 217
Joined: Jan 2019
Reputation:
20
মা পরীকে জিজ্ঞেস করল, "অনেক তো শাড়ি সালোয়ার কেনা হল, তুই জিন্স পরবি?"
মায়ের কথা শুনে পরী আর অভি দু’জনেই হতবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। বুঝতে চেষ্টা করে যে মা কি বলতে চাইছে। পরী যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না, ওর ছোটো মা ওকে জিন্স কিনে দেবে?
মা ওদের হতবাক মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, "ওই রকম ভাবে তোরা আমাকে দেখছিস কেন? আজকালকার ফ্যাসান এটা, সব মেয়েরাই জিন্স টপ পরে। কিছুদিন পরে তুই ইউনিভারসিটি যাবি তখন তুই পড়তে পারিস।"
রাস্তার মাঝে পরী মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে, "তুমি সত্যি আমার আদরের ছোটো মা। কিন্তু ছোটো মা, আমি ত কোনদিন জিন্স পড়িনি? আমি জানি না আমাকে জিন্স পড়লে মানাবে কি না।"
মা, "আরে বোকা মেয়ে, সবকিছুর একটা প্রথম বার বলে কিছু আছে তো। আর তোকে ভালোই লাগবে দেখতে। তুই চাস কি না তাই বল।"
পরী অভির দিকে তাকায়, মায়ের চোখ লুকিয়ে ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে, "কি গো কিনবো?"
অভি ওর দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হেসে ইশারায় জানায় যে জিন্স টপ পড়লে পরীকে দারুন দেখাবে, একদম যাকে বলে সেক্সি। পরীর চোখে লজ্জার লালিমা লাগে, চোখ নিচু করে নেয়।
মা, "ঠিক আছে তাহলে। বউবাজার আবার অন্যদিনে হবে। আজ চল নিউমারকেট না হলে ট্রেসার আইলান্ড, সেখানে তোর জিন্স টপ কেনা যাবে।"
পরী মায়ের দিকে কাতর চোখে তাকিয়ে বলল, "ছোটো মা আমার খুব খিদে পেয়েছে।"
অভির আর পরীর দিকে তাকিয়ে মা বললেন, "ঠিক আছে চল, আমিনিয়ায় আমরা দুপুরের খাবার খেয়ে নেব খানে তারপরে ট্রেসার আইলান্ডে যাব।"
আমিনিয়ার মাটন বিরিয়ানি খেতে খেতে মা অভি আর পরীর দিকে তাকিয়ে বললেন, "তোদের দুজন কে আমার কিছু বলার আছে। আজ দেখলাম একটু সময় আছে তাই বলি।"
দুজনেই একে ওপরের মুখ চাওয়া চায়ি করে। বুকের ভেতর একটু দুরুদুরু শুরু হয়ে যায়, মা কি বলতে চলেছেন সেই ভেবে। পরীর চোখ যেন বলতে চাইছে অভিকে, "কি বলবে?"
মা, "পরী, অভি, আমাদের যা আছে তা আমাদের পরে তোদের দু’জনের হবে। মানে তোদের দুজনের মধ্যে সমান ভাগ হবে।"
মায়ের কথা শুনে অভির মাথা গরম হয়ে গেল, "এখন বলার কি দরকার ছিল?"
মা, "না মানে তোকে জানিয়ে রাখলাম এই আর কি। পরে বিস্তারিত কথা বলব তোদের সাথে। তুই হয়ত ভেবে বসবি যে মা পরীকে সব দিয়ে দিচ্ছে তাই একটু বলা আর কিছু না।"
অভি রেগে গেল, "তোমার সম্পত্তি তুমি নিজের কাছে রাখো। খুব সম্পত্তি আর পয়সার জোর দেখাও তাই না।"
মা, "ওই রকম ভাবে কেন বলছিস তুই, আমি শুধু তোদের কে জানিয়ে রাখলাম।"
পরী দেখল যে অভির আর ছোটো মায়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হতে চলেছে, কেউ একজনকে শান্ত না করতে পারলে মহা মুশকিলে পরে যাবে। অভির দিকে মিনতির দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে শান্ত হতে অনুরোধ করে আর মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলে, "ছোটো মা, এই সব কথা এখন থাক, এই সব কথা বলার অনেক সময় পরে আছে।"
অভি বিরক্তি ভরা দৃষ্টি তে মায়ের দিকে তাকিয়ে চুপ করে গেল। পরী ওকে ইশারা করল "রেগে যেও না প্লিস।"
ট্রেসার আইলান্ডে ঢুকে পরী অভিকে জিজ্ঞেস করল, "তুমি সত্যি আমাকে জিন্স পরা দেখতে চাও?"
অভি পরীকে একবার জিন্স আর টপে মনের আঁখিতে দেখে নিয়ে দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে বলে, "তোমাকে টাইট জিন্সে আর টপ পড়লে যা দেখাবে না, কিযে বলব, একদম দারুন সেক্সি লাগবে।"
পরী লাজুক হেসে মায়ের চোখ এড়িয়ে অভির হাতে চাঁটি মারে, "ধুত শয়তান!"
পরীর জন্য খান চারেক জিন্স আর বেশ কিছু টপ কেনা হল। ট্রেসার আইলান্ড থেকে যখন ওরা বের হল ততক্ষণে সূর্য পশ্চিমে অস্ত গেছে। ট্যাক্সির পেছনে বসে মা আর পরী গল্প করছে। অভি চুপ করে সামনে বসে, মাঝে মাঝে আয়নায় পরীর চোখের সাথে চোখাচুখি হয়ে যাচ্ছে।
বাড়িতে ওদের জন্য কিছু অজ্ঞাত বিস্ময় অপেক্ষা করেছিল। বাড়িতে ঢুকেই পরী আর অভি অরুনিমা কে দেখে চমকে যায়। লম্বা সোফায় অরুনিমা মৈথিলীর পাশে বসে চা খাচ্ছিল। ওদের দেখে অরুনিমা লাফিয়ে উঠে পরীকে জড়িয়ে ধরে। ক্ষণিকের জন্য অভির মনে বিরক্তি ভাব জাগে। পরীর মাথা ক্ষণিকের জন্য গরম হয়ে যায় অরুনিমাকে দেখে কিন্তু খুব সংযত ভাবে মনের ভাব লুকিয়ে মিষ্টি হেসে অরুনিমাকে জড়িয়ে ধরে।
পরী, "বাপরে অনেক দিন পরে দেখা, সেই যে সুব্রতদার বিয়ের সময়ে এসেছিলে তারপরে ত আর দেখাই দিলে না।"
অরুনিমার দৃষ্টি অভির মুখের দিকে নিবদ্ধ।
অরুনিমা পরীকে বলে, "আমি যখন চুরনিদির মুখে শুনলাম যে তুমিও এসেছ তাই আর থাকতে পারলাম না চলে এলাম তোমার সাথে দেখা করতে।"
অভি মনে মনে ভাবল, "কি শয়তান মেয়েরে বাবা, অকাট মিথ্যে কথা বলে দিল।"
অরুনিমা অভির দিকে ঠোঁটে এক সুন্দর হাসি মাখিয়ে মৃদু মাথা হেলালো। মাও দেখি অরুনিমা কে দেখে খুব খুশি, মৈথিলীকে ধন্যবাদ জানাল যে অরুনিমাকে সাথে এনেছে বলে। অভির মনে যেন খই ফুটছে, বাড়িতে তিন তিন টে সুন্দরী, সন্ধ্যে মাটি যাবে না হয় রাত রঙ্গিন হবে, কিছু একটা ত হবেই।
অভি ওদের কে বলল যে ও খুব ক্লান্ত সারাদিন কেনা কাটা করে তাই নিজের ঘরে যাচ্ছে। পরী আগেই নিজের ঘরে ঢুকে পড়েছে ওর জিনিস পত্রের ব্যাগ নিয়ে। বসার ঘর থেকে বেড়িয়ে যাবার আগে অভি একবার অরুনিমার দিকে তাকাল। অরুনিমার দৃষ্টি অভির দিকে নিবদ্ধ যেন একটু কাতর আশা নিয়ে বসে আছে।
অরুনিমার পাতলা গঠন, মৈথিলীর মতন সুখবর্ধক নধর কাঠামো নয়, বা পরীর মতন অত সুন্দরী নয়, তবুও সারা শরীরে এক অধভুত লাবন্য ছড়িয়ে আছে, যা কারুর নজর সহজে এড়ায় না। সিঁড়ি দিয়ে ওপরে চড়ার সময়ে অভি ভাবে, আজ রাতে এই ছাদের নিচে যেন চাঁদের হাট বসেছে, একজন তন্বী প্রনয়কৌতুকী, একজন আবেদনাময়ি, একজন জলপরীর ন্যায় সুন্দরী। অভি নিজের মাথায় চাঁটি মারল, কি উলটো পাল্টা ভাবছে অভি, পরীর চোখে ও ঈর্ষার আগুন দেখেছে।
হাত মুখ ধুয়ে নিচে এসে মাকে বলল যে ওর চা যেন ওপরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মা জানালেন যে কেউ ওর চা নিয়ে ওপরে দিয়ে আসবে। ঘর থেকে বেড়িয়ে যাবার আগে পরীর দিকে তাকাল, পরী ডিভানে বসে কেনা কাটার গল্পে ব্যাস্ত। ক্ষণিকের জন্য অভির সাথে চোখাচুখি হয়ে গেল, চোখ যেন বলে উঠল, সাবধান অভি।
অভি নিজের ঘরে ঢুকে প্রাক্টিকাল খাতা খুলে বসে পড়ল। অনেক কিছু লেখার বাকি, ওদিকে যদি সোমবারে না নিয়ে যায় খাতা তাহলে অরুনা ওর মাথা খেয়ে ফেলবে। ঠিক সেই সময়ে দরজায় টোকা পরে। অভি ভাবল যে হয়ত মা বাঁ পরী ওর জন্য চা এনেছে তাই হসি মুখ নিয়ে দরজার দিকে তাকায়, কিন্তু মৈথিলী কে ট্রে নিয়ে ঢুকতে দেখে অবাক হয়ে যায়।
অভি হাঁ করে মৈথিলীর নধর অবয়াব দেখতে থাকে, দু’চোখে এক অধভুত হসি, সে হাসির মানে অভি খুঁজে পায় না। মৈথিলী ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, অনুধাবন করতে চেষ্টা করে অভির মনের অভিপ্রায়। অভির দৃষ্টি মৈথিলীর পীনোন্নত বুকের ওপরে নিবদ্ধ হয়ে যায়। মৈথিলীর পরনে গত রাতের টু-পিস নাইটড্রেস। ইচ্ছে করে যেন ঘরে ঢোকার আগে কোমরের বাঁধন খুলে দিয়েছে মৈথিলী। ভেতরের স্লিপ যেন বুকের ওপরে এটে বসে, উপরি বক্ষের অধিকাংশ অনাবৃত, বুকের বিভাজন পরিষ্কার অভির চোখের সামনে মেলে ধরা। ভেতরের স্লিপটা ওর শরীরের সাথে লেপটে আছে, যেন ওর কমনীয় শরীরে এক রঙের প্রলেপ মাখান। ফোলা গোল পেটের মাঝে সুগভীর নাভি ফুলের মতন ফুটে রয়েছে, সরু কোমরের পরেই ফুলে রয়েছে ইন্দ্রিয়ঘন পুরুষ্টু নিতম্ব। ভেতরের স্লিপ, জানুর মাঝে এসে শেষ হয়ে গেছে, পেলব মসৃণ জানুর ওপরে ঘরের আলো পেছল খেয়ে পড়ছে। অভির কান মাথা জৈবিক ক্ষুধায় গরম হয়ে উঠল। মৈথিলী টেবলের ওপরে চায়ের ট্রে রেখে ওর চুলের ওপরে আলতো বিলি কেটে দেয়। অভি ওর আচরনে হতবাক হয়ে যায়, কে এই নারী, কি তার অভিপ্রায়, নিচে তাঁর স্বামী বসে আর সে অভির সামনে এমন ভাবে মেলে ধরেছে নিজেকে, কেনও? উত্তর খুঁজে পায় না অভি।
কানের কাছে মুখ এনে মৈথিলী জিজ্ঞেস করে, "আমি কি এখানে একটু বসতে পারি?"
অভির নাকে মৈথিলীর গায়ের সুবাস যায়, অভি যেন এক স্বপ্নের ঘোরের মধ্যে রয়েছে। মাথা নাড়ায় অভি, গলা শুকিয়ে এসেছে ওর, কথা বলার শক্তি যেন হারিয়ে ফেলেছে।
মৈথিলী বিছানায় উঠে ওর দিকে ফিরে কাত হয়ে শুয়ে পড়ল। শরীরে যেন ঢেউ খেলে উঠেছে। জানুর মাঝে স্লিপ টা খুব নিষ্ঠুর ভাবে মৈথিলীর নারিত্তের সাথে লেপটে রয়েছে। মৈথিলী যেন ইচ্ছে করেই নিজেকে ঢেকে রাখার কোন প্রবণতা দেখাল না। হাটুর মাঝ থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত অনাবৃত। সারা অঙ্গে একবার চোখ বুলিয়ে নিল অভি, ত্বকের সাথে লেপটে থাকা পাতলা কাপড়ের নিচে কোথাও কোন দাগ দেখতে পেল না। অভির মানসচোখ বুঝে নিল যে মৈথিলী কাপড়ের নিচে কোন অন্তর্বাস পরেনি। একবারের জন্য মনে হয় যে ঝাঁপিয়ে পরে মৈথিলীর কামত্তেজক নধর শরীরের ওপরে আর ছিঁড়ে কুটে খেয়ে নেয় ওর যৌবন রস। মন বলছে যে, যদি অভি ওর দিকে হাত বাড়ায় তাহলে মৈথিলী থেমে থাকবে না, হয়ত নিজেকে সঁপে দেবে অভির বাহু পাশে। কিন্তু দাতে দাঁত চেপে নিজেকে সংবরণ করে অভি।
মৈথিলী ওকে জিজ্ঞেস করল, "তুমি কি অরুনিমাকে এড়িয়ে যাচ্ছো?"
অভি মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিল, "কই না ত, আমি কাউকে এড়িয়ে যাচ্ছি না। আজ আমি খুব ক্লান্ত ছিলাম আর সোমবারে প্রাক্টিকাল আছে তাই আমি ঘরে চলে এসেছি।"
মাথা নাড়াল মৈথিলী, "ঠিক আছে।"
মৈথিলীর চোখ অভির চোখের দিকে নিবদ্ধ, অনাবৃত মসৃণ জানুর ওপরে হাত বলাতে থাকে আর ওর দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসতে থাকে। মাঝে মাঝে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে এক অদ্ভুত হাসি দেয় অভির দিকে তাকিয়ে। অভির বুকের মাঝে আলোড়ন শুরু হয়ে যায়।
মৈথিলী ওকে জিজ্ঞেস করে, "তোমার নাকি এক বান্ধবী আছে?"
অভি, "হ্যাঁ আছে।"
মৈথিলী, "কি নাম?"
অভি, "আমার কলেজের বান্ধবী, নাম জেনে কি করেবে?"
মৈথিলী চোরা হাসি দিয়ে বলে, "ধ্যাত দুষ্টু ছেলে, মিথ্যে কথা বলছ, কলেজে তোমার কোন বান্ধবী নেই।"
শেষ পর্যন্ত ওর দেবী কে এই ঘোলা জলের মধ্যে টেনে আনতে হবে ভেবে মাথা গরম হয়ে যায়। দাতে দাঁত পিষে উত্তর দেয় অভি, "অরুন্ধতি, আমার বান্ধবীর নাম।"
মৈথিলী, "প্রোপোজ করও নি কেন?"
"অরুনা আমি খুবই দুঃখিত রে, আমি তোকে এই ঘোলা জলে টেনে এনেছি" অভির মন কেঁদে ওঠে, অভি গম্ভির সুরে উত্তর দেয়, "সময় চাই, এখন সময় আসেনি তাই প্রোপোজ করিনি।"
মৈথিলী, "তোমার মনে হয় না যে তোমার ভবিতব্য তোমাকে অন্য কোথাও নিয়ে যেতে পারে?"
অভি, "মানে?"
মৈথিলী, "মানে, তুমি তোমার বান্ধবীকে এখন প্রোপোজ করনি আর আমার বোন তোমার জীবনে চলে এল, তাহলে?"
অভি, "তাহলে?"
মৈথিলী, "তাহলে কি, অরুনিমার সাথে কথা বলে দেখ, ভাল মেয়ে আমার বোন।"
অভি, "আর তারপরে?"
মৈথিলী, "তারপরে আর কি নিজেকে ছেড়ে দাও নদীর সাথে, দেখ নদীর জল কোথা থেকে কোথায় গড়ায়।"
চোখ দুটি জ্বলজ্বল করে ওঠে মৈথিলীর, ঠোঁটে কামনার এক চিলতে হসি লেগে।
নিজেকে বাচানর জন্য অভি প্রশ্ন করে, "সুব্রত জানে যে তুমি আমার ঘরে এসেছ?"
দুষ্টুমি ভরা হাসি নিয়ে, নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে মাথা নাড়ায় মৈথিলী, "হ্যাঁ, সুব্রত জানে আমি এখানে এসেছি। এমন কি বাড়ির সবাই জানে যে আমি তোমাকে চা দিতে এসেছি।"
অভি ভাবল যে, অরুনিমা বা পরী যদি ওর ঘরে চা দিতে আসত তাহলে হয়ত বাবা মায়ের একটু খটকা লাগত, কিন্তু কেউ মৈথিলী কে সন্দেহ করবে না।
অভি মনে মনে ভাবল, দেখা যাক এই আগুনের খেলা কোথায় নিয়ে যায়, ঠোঁটে এক শয়তানি হাসি দিয়ে বলে, "আমি তোমার বোনের সাথে দেখা নিশ্চয় করব।"
মৈথিলী অভির কথা শুনে, বিছানা থেকে দাঁড়িয়ে পরে। টেবিলের একদম পাশে এসে ওর গা ঘেঁসে দাঁড়িয়ে সামনে ঝুঁকে পরে। নরম তুলতুলে বক্ষ অভির ঘাড়ের ওপরে চেপে যায়, ঝুঁকে পড়ার জন্য, নিতম্ব পেছনের দিকে ফুলে ওঠে। অভি নিজেকে আয়ত্তে রাখে, মনের গভিরে ওই নিতম্বে হাত দিয়ে পিষে ফেলার ইচ্ছে টাকে দমন করে দেয়। ঘাড়ের কাছে চেপে থাকা বুকের বিভাজনে যেন মুখ ঘুরালেই চেপে যাবে, অভির মনে হয় ওই নরম বক্ষ দুটি হাতের মধ্যে নিয়ে চিপে পিষে নিংড়ে নেয়, ওর কামনার শরীর টিকে মেঝের ওপরে চেপে ধরে সব রস পান করে নেয়। অভির সারা শরীরে যেন বিদ্যুৎ তরঙ্গ খেলা করে চলেছে। মৈথিলী অভির চুলে বিলি কাটে। অভির সারা শরীরের পেশি শক্ত হয়ে যায়, কোনক্রমে নিজেকে প্রাণপণে আয়ত্তে রাখতে আপ্রান চেষ্টা করে যায়।
মৈথিলী ওর মুখ অভির কানের কাছে এনে ফিসফিস করে বলে, "মনে থাকে যেন, আমাকে কথা দিয়েছ যে তুমি অরুনিমার সাথে দেখা করবে।"
কথা বলার সময়ে মৈথিলীর নাকের ডগা অভির কানের লতি ছুঁয়ে যায়, অভির বুকের ভেতরে কামনার আগুন দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে, চিৎকার করে যেন বলতে চায়, "চুরনি, তোমার লাল কোমল ঠোঁট আমি চুম্বনে চুম্বনে ভরিয়ে দিতাম, আমি তোমার পরিনের কাপড় ছিঁড়ে কুটিকুটি করে, তোমার দুই নরম তুলতুলে স্তন চেপে পিষে একাকার করে দিতাম আর তোমার নধর পুরুষ্টু নিতম্বে চাঁটি মেরে পিষে লাল করে দিতাম। তোমাকে মেঝেতে শুয়ে তোমার জানু ফাঁক করে তোমার সব মধু পান করে নিতাম আর তোমার কমনীয় শরীর টাকে নিয়ে আছড়ে পিছরে মত্ত খেলায় খেলতাম আমি। ততক্ষণ খেলে যেতাম যতক্ষণ আমাদের দুজনের শরীরের সব রস এঁকে অপরকে ধুয়ে না দিত, তোমাকে শেষ করে দিতাম আর নিজেও তোমার মধুর আলিঙ্গনে শেষ হয়ে যেতাম।"
কিন্তু অভির গলা অস্বাভাবিক রকমে শুকিয়ে গেছে, কোন আওয়াজ বের হল না গলা থেকে।
কোমরে এক মত্ত ছন্দ তুলে অভির মাথা আর মন নিয়ে খেলা করে বেড়িয়ে গেল মৈথিলী। দরজা দিয়ে বেড়িয়ে যাবার আগে, অভির দিকে তাকিয়ে বলল, "তুমি মনের মধ্যে যা যা বলেছ, আমি সব শুনে ফেলেছি মিস্টার অভিমন্যু তালুকদার।"
অভি হতবাক হয়ে চেয়ারে বসে থাকে, নড়ার শক্তি টুকু হারিয়ে ফেলেছে অভি।
Posts: 420
Threads: 9
Likes Received: 434 in 312 posts
Likes Given: 217
Joined: Jan 2019
Reputation:
20
মেনকার রথ
সকালের রোদ বড় মিষ্টি, মৃদু মন্দ বাতাসে বইছে, বাতাসে ঠাণ্ডার লেশ নেই। সকালের খাওয়ার পরে বাড়ির মধ্যে যেন কান্নার আভাস ওঠে। পরী আর তাঁর ছোটো মা, দু’জনের চেহারায় ভারী বেদনার ছায়া। মা পরীকে নিয়ে নিজের ঘরে বসে, পরী চুপ করে ব্যাগ গুছাচ্ছে আর মাঝে মাঝে চোখের কোল মুছছে।
অভি ওদের পেছনে দাঁড়িয়ে দেখে কিছুক্ষণ, তারপরে মায়ের আর পরীর কাঁধে হাত রেখে জড়িয়ে ধরে বলে, "এত দুঃখ কিসের জন্যে?"
দুজনেই অভির দিকে ব্যাথা ভরা দৃষ্টিতে তাকায়, দুজনেই বাক্যহীন। মাকে বলল, "মা, তোমার পরী তোমাকে ছেড়ে ত যাচ্ছে না, এই বাসন্তি পুজোর পরে ও ত তোমার কাছেই আসছে। আর তুমি ত যখন ইচ্ছে দিদার বাড়ি যেতে পারো।"
মা অভির গালে আদর করে বলে, "বাবা, এখন বাবা হওনি ত তাই বলছ। বাবা মা হলে বুঝতে আমার কষ্ট।"
পরী মায়ের দিকে জল ভরা চোখে তাকিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে, "তুমি আমাকে কথা দিয়েছ যে কলেজের পরে আমাদের বাড়ি আসবে আমার সাথে দেখা করতে।"
মা পরীর মুখ আঁজলা করে নিয়ে মাথায় চুমু খেয়ে বলল, "হ্যাঁ মা আমি তোর সাথে দেখা করতে যাব।"
সারা বাড়িতে যেন এক ব্যাথার ছায়া। মৈথিলীর আচরন আমুল বদলে গেছে কাল রাত্রের ঘটনার পরে। অভি যত বার ওর দিকে তাকায়, মৈথিলী ওর সাথে চোখ মেলায় না।
সুব্রত অভির কাছে এসে বলে, "মামা আসছি, আমাদের বাড়িতে এসো।"
অভি উত্তর দিল, "দিদাকে আমার প্রনাম দিও", পরীর দিকে তাকিয়ে সুব্রতকে বলল, "আর আমাকে যেতে ত হবেই।"
মা অভিকে ওদের কে বাস স্টান্ডে ছেড়ে আসতে বললেন, আর তারপরে অরুনিমাকে ওর বাড়ি ছেড়ে আসতে বললেন। অরুনিমা মায়ের কথা শুনে অভির দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসল।
বাস স্টান্ডে দাঁড়িয়ে আছে অভি আর পরী, দু’জনে নিরুপায়, সর্বসমক্ষে কেউ কাউকে ঠিক ভাবে বিদায় পর্যন্ত জানাতে পারছে না। বড় ব্যাথা নিয়ে দুজনে একে অপরকে দেখে যায়। পরীর চোখ ছলছল, বাস এসে গেল।
শেষ পর্যন্ত পরী ওর কাছে এসে নিচু গলায় চোখ টিপে বলল, "ভাল ভাবে পড়াশুনা কোরো, তোমার জন্য না করলেও আমার জন্য ভালো রেসাল্ট কোরো, আর অপ্টিস্কের বইটা ভাল করে দেখবে।"
বাসে উঠে পড়ার আগে বাকিদের চোখ এড়িয়ে হটাত করে বাঁ হাতের তর্জনী ঠোঁটের ভিজিয়ে অভির গালে লাগিয়ে দিল। অভি হাত বাড়িয়ে পরীকে ছুঁতে চেষ্টা করল, কিন্তু ততক্ষণে পরী বাসে উঠে পরে। বুকের ভেতরটা কেমন যেন কেঁদে ওঠে অভির। নিজের গালে পরীর লালা লেগে, বড় মধুর সেই অনুভব। সুব্রতদের পেছনের সিটে জানালার ধারে বসে পরী, বাস ছেড়ে দেওয়ার আগে, বাঁ হাতের তর্জনী ঠোঁটের কাছে এনে, ডগায় একটা আলতো চুমু খেয়ে অভির দিকে ছুঁড়ে দেয়। বাস ছেড়ে দেয়, অভি ওর ছুঁড়ে দেওয়া চুমুটা হাওয়া থেকে টেনে নিয়ে পকেটের মধ্যে পুরে নেয়।
বাড়ি ফিরে সোজা নিজের ঘরে গিয়ে অপ্টিস্কের বই খোলে। পরীর চোখ টেপার ইশারা, অভি নিশ্চিত যে পরী অপ্টিস্কের বইয়ের পাতায় কিছু রেখে গেছে। বইয়ের ভেতর পনের নাম্বার পাতায় খুব ছোটো অক্ষরে লেখা।
"মিস ইউ, ছোট্ট রাজকুমার। কল্যাণীর ফোন নাম্বার xxx-xxxx। ফোন কোরো, আমি অপেক্ষা করে থাকব।"
সেই একটা ছোটো লাইন অনেক কিছু অভির কাছে, সারা ঘরের মধ্যে যেন পরীর গন্ধ আর ছোঁয়া খুঁজে পেল অভি।
অরুনিমা ফিরে যাবার জন্য তৈরি। মা অভিকে বললেন যে ওদের বাড়ি গিয়ে যেন ওর ভদ্রতার খাতিরে ওর বাবা মায়ের সাথেও দেখা করে আসে।
ট্যাক্সি তে পাশাপাশি বসে, অভি অরুনিমার দিকে তাকাল। পরনে একটা হাঁটু পর্যন্ত সাদা জিন্স আর গাড় নীল রঙের টাইট টপ। জিন্স টা যেন অত্যধিক ভাবে ওর কোমরের নিচের অঙ্গের সাথে আঠার মতন লেপটে আছে আর টপের অবস্থাও সেই একি রকমের। গোলাপের কুঁড়ি যেন অভির পাশে বসে। মাঝে মাঝে অভির চোখ চলে যায় ওর ফুটন্ত শরীরের দিকে, অরুনিমা ওর পাশে বসে ওর দিকে আময়িক হাসে। অনেকক্ষণ দুজনে চুপ চাপ, অভির মনে পরীর কাছ থেকে বিচ্ছন্ন হওয়ার বেদনা যেন এক দমকা হাওয়ায় উড়ে গেল।
অরুনিমা, "তুমি কি আমাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছ?"
অভি ওর দিকে তাকিয়ে বলল, "কই না ত।"
অরুনিমা, "তাহলে এত দিনে আমাকে ফোন কেন করলে না?"
অভি, "হুম, তোমার দেওয়া কাগজ টা আমার সুটের পকেটে ছিল, আর বিয়ে থেকে আসার পরে মা সুট টা ড্রাই ক্লিনিঙ্গে দিয়ে দিল তাই তারপরে কাগজ টা হারিয়ে গেল। কিন্তু..."
অরুনিমা, "কিন্তু কি?"
অভি, "কিন্তু তুমি আমার ফোনের অপেক্ষায় কেন ছিলে?"
অরুনিমা, "কেন ভদ্রতার খাতিরে কি একবার ফোন করতে নেই? তুমি কেমন ভদ্রলোক অভিমন্যু কেমন করে মহিলার মন জয় করতে হয় তাও জানো না?"
অভি মনে মনে বলে, "আমাকে শিখাতে যেও না, কেমন করে মেয়েদের মন জয় করতে হয়।"
অভি ওর দিকে তাকিয়ে সামান্য হাসল। অরুনিমা ওর পাশে সরে এসে বসল। কাঁধে কাঁধ ছুঁয়ে গেল, বাজুর সাথে ওর বাজু। দু’হাত কোলের ওপরে জড় করে রাখা। অরুনিমা ওর দিকে তাকিয়ে হাসে, অভি ওই হাসি দেখে হেরে যায়।
অভি, "আচ্ছা বাবা তুমি জিতলে।"
অরুনিমার চোখে আহবানের মৃদুহাসি, "কি জিতলাম, শুধু একটা ফোন কল, তাও ভদ্রতার জন্য?"
অভি, "তুমি আমাকে চেন না, আমি কে, আমি কি।"
মিষ্টি হেসে অরুনিমা অভির দিকে হাত বাড়িয়ে বলল, "সবকিছু কখন না কখন জীবনে প্রথম বার হয়, তাই না। আমাদের চেনা পরিচয় হতে দোষ কি? আমি অরুনিমা, আমাকে তুমি তুলি বলে ডেক।"
অভি ওর হাত হাতে নিয়ে করমর্দন করল। অরুনিমার যেন হাতটা টেনে নেওয়ার ইচ্ছে নেই, রেখে দেয় অভির হাতের ওপরে। অভির মাথায় শয়তানি বুদ্ধি খেলে গেল, দেখা যাক এই সেদিনের মেয়ে কি করতে পারে। একটু অভিনয় করেই দেখা যাক, জল কত দূর গড়ায়।
অভি, "তুমি আমার নাম ভাল করে জানো।"
কিছুক্ষণ ওর চোখের দিকে একভাবে তাকিয়ে বলল, "তুলি আমি জানি তুমি গতকাল কেন আমার বাড়িতে এসেছিলে।"
অরুনিমা ধরা পরে গেছে এমন ভান করে একটু লজ্জা পেয়ে গেল। অভির দৃষ্টি অরুনিমার ঠোঁটে, নাকে আর মুখের দিকে নিবদ্ধ।
অরুনিমা কিছুক্ষণ পরে অভিকে জিজ্ঞেস করে, "কাল রাতে খাওয়ার সময়ে তুমি খুব চুপচাপ ছিলে, কেন কারন কি?"
দীর্ঘশ্বাস ছারল অভি, "মা আর পরীকে কাঁদতে দেখে মন একটু খারাপ হয়ে গেছিল তাই চুপচাপ ছিলাম আমি।"
অরুনিমার পরের প্রশ্ন বান অভিকে বিঁধে দিল, "কাল রাতে তোমার ঘর থেকে ফেরার পরে চুরনিদি খুব চুপচাপ ছিল? কি ব্যাপার।"
অভি অরুনিমার চোখের দিকে তাকাল, বুঝতে চেষ্টা করল যে অরুনিমা কি জানে গত কাল রাতের ঘটনা। গম্ভির আওয়াজে উত্তর দিল, "ওকে জিজ্ঞেস করে নিও, আমি কি করে বলব।"
অরুনিমা নিচের ঠোঁট কামড়ে দুষ্টুমি হাসি দিয়ে বলল, "আমি আমার দিদি কে চিনি।"
অভি অবাক হয়ে গেল উত্তর শুনে, এবারে ওর কি কর্তব্য। অরুনিমা বলল, "আমার বড়দি, আমি বিগত আঠার বছর ধরে চুরনিদি কে চিনি।"
চিবুকে হাত রেখে ভাবতে শুরু করে অভি, দুই বোনে মিলে কি করতে চলেছে। ট্যাক্সি তখন শিয়ালদা রেল স্টেসান পার করে এ.যে.সি বোস রোড ধরে এগোচ্ছে।
অরুনিমা, "গত পাঁচ বছরে আমি চুরচনিদি কে খুব ভাল ভাবে চিনেছি, বিশেষ করে সুব্রত জিজুর সাথে দেখা হওয়ার পরে। আমাদের মধ্যে বয়সের ব্যাবধান থাকতে পারে, চুরনিদি পঁচিশ আর আমি উনিশ কিন্তু আমরা দুজনে খুব কাছের মানুষ। আমার দিদি সত্যি খুব মিষ্টি আর সুন্দরী আর জিজুর ত কথাই আলাদা। ওরা দুজনেই আমাকে খুব ভালবাসে।"
না অভি ওর কথার কোন মাথামুন্ডু খুঁজে পাচ্ছে না, কি বলতে চাইছে অরুনিমা।
অরুনিমা, "ওরা দুজনেই আমার সম্পর্কের ব্যাপারে খুব চিন্তিত, ওরা চাইত যে এমন কারুর সাথে আমার সম্পর্ক হোক যে ওদেরও খুব কাছের আর চেনা জানা লোক হবে।"
অভি এতক্ষণে কিছু বুঝে উঠতে পারল, "আচ্ছা তাই আমাকে নিয়ে টানাটানি।"
গাল লাল হয়ে গেল অরুনিমার, হেসে ফেলল, "হ্যাঁ তাই।"
অভি ওকে জিজ্ঞেস করল, "তুমি তোমার দিদির ব্যপারে আর কিছু বলতে চাও আমাকে?"
অরুনিমা, "আগে তুমি বলো যে গতকাল রাতে কি হয়েছে? চুরনিদি কেন চুপ ছিল কিন্তু ওর চোখ দেখে মনে হচ্ছিল যে মনের মধ্যে খই ফুটছে? তুমি যদি আমাকে বলো তাহলে আমি জানাব চুরনিদির ব্যাপারে।"
"হুম তাহলে খেলা শুরু হয়ে গিয়েছে, সাপ আর বেজির খেলা। দেখা যাক এই খেলায় কে যেতে আর কে হারে" আপনমনে বলল অভি, "আমি সাধারন বাঙালি ছেলে নই যা তুমি ভাবছ। আমি কিন্তু আগুনে ঝাপ দেবার জন্য সবসময়ে তৎপর, সুতরাং আমার সাথে খেলার আগে যাচাই করে নেবে একটু যে আগুনের খেলা কার সাথে খেলছ।"
না, অভি অরুনিমাকে সাবধান করে নি, নিজের মনে বলেছে। দাতে দাঁত পিষে অরুনিমাকে গম্ভির স্বরে উত্তর দিল, "এত জানার ইচ্ছে থাকলে তোমার চুরনিদিকে জিজ্ঞেস করে নিও।"
গাড়ি ঢাকুরিয়ার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। অভির আর ইচ্ছে করল না যে অরুনিমার বাড়িতে যায়, তাই ওর দিকে তাকিয়ে বলল, "যদি কিছু মনে না কর তাহলে আজ আর তোমার বাড়ি যাব না, তোমাকে বাড়ির সামনে ছেড়ে দিয়ে আমি ফিরে যাব।"
একটা দুষ্টুমিষ্টি হাসি হেসে অরুনিমা বলে, "তুমি যদি আমার বাড়ি না আস তাহলে আমি তোমার মাকে ফোন করে বলে দেব যে তুমি আমাকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে চলে গেছো। সেটা কি ভাল হবে?"
উত্তরে অভি হেসে বলে, "ব্লাকমেল করছ আমাকে?"
"দেখা যাক কি হয়, হাত না পুড়লে হল।" মনে মনে ভাবল অভি।
বাড়িতে গিয়ে ছাড়তে হল অরুনিমাকে, দেখা করতে হল অরুনিমার বাবা মায়ের সাথে। অরুনিমার পরিবার বেশ সচ্ছল আর রুচিসম্পন্ন। চা খেতে খেতে গল্পের মাঝে জানা গেল যে অরুনিমার এক ভাই, আরুনাভ ক্লাস এইটে পড়ে। অরুনিমার বাবা রাইটারসে চাকরি করেন আর মা গৃহবধু। মৈথিলী অরুনিমার জেঠুর মেয়ে, কলেজের পড়াশুনা ঢাকুরিয়া থেকে করেছে আর সেই সময়ে তুলি আর চুরনি এঁকে ওপরের কাছাকাছি এসেছে। চুরনি তুলি কে নাকি খুব ভালবাসে।
Posts: 420
Threads: 9
Likes Received: 434 in 312 posts
Likes Given: 217
Joined: Jan 2019
Reputation:
20
বিদায় নেবার সময়ে, তুলি অভিকে ছাড়তে রাস্তা পর্যন্ত আসে। অভি ট্যাক্সিতে চড়ার আগে তুলিকে বলে, "এবারে খুশিত, এই যে আমি তোমার বাড়ি এসেছি।"
তুলি মাথা নাড়ায়, "হ্যাঁ খুশি, কিন্তু এটা নিশ্চয় আমাদের শেষ দেখা নয়, তুমি চুরনিদিকে কথা দিয়েছ।"
অভি, "সত্যি কথা বলতে কি জান, আমি তোমার মন ভাঙ্গতে চাই না।"
তুলি হটাত করে ওর হাত ধরে ফেলে, "কে বলেছে যে তুমি আমার মন ভেঙ্গে দেবে? আমি ত শুদু একটা সুযোগ চাই তোমার কাছে নিজেকে মেলে ধরার জন্য।"
ট্যাক্সিতে চেপে গেল অভি, জানালার কাছে এসে তুলি ফিসফিস করে বলল, "তোমার জন্য অনেক কিছু লুকিয়ে রেখেছি আমি, তোমার সব স্বপ্ন পূরণ করে দেব।"
শেষের কথা ঠিক অনুধাবন করতে পারল না অভি, গাড়ি ছেড়ে দিল। মনের মধ্যে উত্তাল তরঙ্গ দোলা দিচ্ছে, চুরনি তুলি, তুলি চুরনি, কি করতে চলেছে ওর সাথে। না বেশি কিছু ভাবতে পারছে না অভি, শেষমেস হাল ছেড়ে দিয়ে ভাবল, আগুন যখন সামনে জ্বলছে তাতে ঝাপ দিয়েই দেখুক না জ্বলে কি না।
|