Thread Rating:
  • 27 Vote(s) - 3.37 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মৌ কথা কও by Raunak_3
#21
-              কেন...
-              যদি কখোনো বুঝতে না পারি...
-              ওকে বলবি সেটা...
-              বলেছি...
-              বুঝেছে?
-              চুপ করে থেকে বলেছিল...
বাকি কথাটা আর শোনা হয়নি, বোনের ফোনটা বেজে উঠলে দৌড়ে গিয়ে নিয়ে এসে ফিসফিস করে দিদি বলেছে...এই নে...ফোন করেছে...
 
কোলকাতা থেকে সবার যাওয়ার জন্য দুটো মার্সিডিজ বেঞ্জের সুপার লাক্সারী এসি বাস বুক করা আছে। সাথে নিজেদের গাড়ী ছাড়াও আরো গোটা চারেক গাড়ি ভাড়া নেওয়া হয়েছে কখন কি কাজে লাগে ভেবে। বাঁকুড়ার রাস্তায় মার্সিডিজ এর মতো বড় গাড়ী নিয়ে যাওয়ার অসুবিধা থাকায় ওদিকের জন্য আছে তিনটে কার আর দুটো ছোট এসি বাস যাতে মামাবাড়ীর ওদিক থেকে সবাই ঠিকমতো যাওয়া আসা করতে পারে। দুটো হোটেল পুরো বুক করা আছে যাতে বিয়েতে যারা আসবে রাত্রে থেকে যেতে পারে। আজ বিয়ে, অরিত্ররা পৌঁছে গেছে দুপুর বারোটা নাগাদ। ওদিক থেকে ওরা চলে এসেছে আরো সকালে। বিকেল চারটে নাগাদ রুপসা মৌকে সাজানোর তদারকি করতে করতে দাদাভাই এর খোঁজে এসে ওর স্বভাব মতো পেছনে লেগে বলেছে... কি রে আর একবার দেখা করে এলি না যে? ওদিকে তো একজনের চোখ সারাক্ষন কাউকে যেন খুঁজে বেড়াচ্ছে। অরিত্র একাই ছিল, একটু আগে শুভ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের সুপারভাইজারদের সাথে বসে সব কিছু ঠিকঠাক আছে কিনা দেখতে গেছে। এক গাদা মেয়ে সারাক্ষন ঘিরে বসে থাকলে কি করে দেখা করতে যাবো বলাতে রুপসা হেসে ফেলে বলেছে বিয়ের দিনে কনেকে মেয়েরা ঘিরে থাকবে না তো কি তোকে ঘিরে থাকবে? তারপরেই একটু চিন্তা করে নিয়ে বলল...দেখছি কি করা যায়। কিছুক্ষন পরেই রুপসার ফোন...দাদাভাই, এক্ষুনি চলে আয় ২১৫ নম্বর রুমে...কাউকে কিছু বলিস না বুঝলি...
 
ভেতরে শুধু মৌ আর রুপসা, ও আসতেই রুপসা কাছে এসে চুপি চুপি বলল... এই রুমটা অনেক কষ্টে ব্যাবস্থা করেছি বুঝলি...তোরা কথা বল...আমি একটু ওদিক থেকে ঘুরে আসছি। কোথায় যাবি তুই, থাক না এখানে বলাতে রুপসা চোখ টিপে দিয়ে বলল... তুই সত্যি একটা বুদ্ধু। ওকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে রুপসা কেটে পড়লে অরিত্র মৌয়ের দিকে তাকালো... চুপ করে মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে...এক পা এক পা করে আস্তে আস্তে কাছে গিয়ে দাঁড়ালে গেলে ও মুখ তুলে তাকালো... একেই তো এত মিষ্টি মুখ, তার উপরে এত সুন্দর সাজিয়েছে যে চোখ ফেরানো যাচ্ছিল না... দুহাতে ওর মুখটা তুলে ধরে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে অরিত্র নিচু স্বরে বলল...এই, চলো...পালাই। মৌ অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল... কোথায়? ‘চলো পালিয়ে গিয়ে কোনো মন্দীরে বিয়ে করে নিবলাতে মৌ সারা মুখে মিষ্টি হাসিতে ভরিয়ে নিয়ে বলল... কেন...আর দেরী সহ্য হচ্ছে না বুঝি? উত্তর এলো...কি করে সহ্য হবে...এখোনো ৫৫ ঘন্টার উপরে বাকি ...কি করে সময় কাটবে বলোতো? ও আর কি উত্তর দেবে, ওরও তো আর ভালো লাগছে না... নেহাত সবাই আছে সাথে আর তাই সময়টা কেটে যাচ্ছে... না হলে এক একটা মুহুর্ত এক একটা ঘন্টার সমান হয়ে যেত ভেবে মুখ টিপে হাসি ভরা মুখে ওর দিকে তাকিয়ে থেকেছে কিছু না বলে আর তাই দেখে একজনের ইচ্ছে হয়েছে সেই মিষ্টির কিছুটা শুষে নিতে...
বিয়ের আগে শেষ চুমু, এতো সহজ়ে কি ছাড়া যায় নাকি...মন ভরে নরম তুলতুলে ঠোঁট দুটো থেকে মিষ্টি হাসি শুষে নিতে নিতে সময়ের কথা কে মনে রাখতে চায়... নিজেকে ওর হাতে সঁপে দিয়েছে আর একজন, সে ভালো করেই জানে যত সময় না ও নিজে থেকে ছাড়বে কিছু করার নেই...আর এমনিতে ইচ্ছেও কি আছে নাকি ওর বুকের ভেতর থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে... ইচ্ছে না থাকলেও এক সময় ছাড়তে হল, এতক্ষনে হয়তো সবাই খোঁজাখুজি শুরু করে দিয়েছে ওকে। মৌ ওকে জড়িয়ে ধরে থেকেই অস্ফুট স্বরে বলল...দুষ্টু দাদার বিচ্ছু বোন। অরিত্র বুঝতে না পেরে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলে ও হাসি মুখে বলল... এই জন্যই ছোড়দি কিছুতেই লিপস্টিক লাগাতে দিচ্ছিল না। তাই,তাহলে আর একবার? বলাতে ও হাসি মুখে আস্তে করে বলল... না বললে কি তুমি শুনবে?
 
বিয়ের কাজ শুরু হতে আর ঘন্টাখানেক বাকি আছে। বর কনে দুজনেই তৈরী হয়ে বসে আছে কখন ডাক আসে। অরিত্রর অফিস কলিগদের কেউ কেউ কনেকে বিয়ের আগেই দেখে এসে পেছনে লেগেছে। কেউ বলেছে...আর তো মনে হয়না অফিস আসবি তো অন্য কেউ বলেছে...এবার থেকে কি পার্মানেন্টলি বাড়িতে থেকেই কাজ করবি নাকি? একজন তো হাসতে হাসতে বলেই ফেলল...এমন বৌ ছেড়ে কোন আহাম্মক অফিস করে...আমি হলে তো চাকরী ছেড়ে দিয়ে বাড়ীতেই কিছু একটা খুলে ফেলতাম...
ওদিকে কনেকেও ঘিরে বসে সমান তালে নিজেদের ভেতরে মেয়েলী হাসি ঠাট্টা চলছে। শুভ বড়দির ছেলেকে কোলে করে নিয়ে এসে মৌয়ের পাশে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলল...এই দেখো আমাদের নিতবরকে কেমন সুন্দর করে সাজিয়ে নিয়ে এসেছি...তোমার কোন বোন একে বিয়ে করবে ঠিক করে ফেলো এখুনি, এমন ছেলে কিন্তু আর পাবে না। সত্যিই ওইটুকু বাচ্চাকে ধুতি পাঞ্জাবীতে ভীষন ফুটফুটে দেখাচ্ছে। মিষ্টি আর মামন দিদির পাশেই ছিল, কেউ কেউ ওদের ভেতরে কাউকে নিতবরের সাথে বিয়ে দেওয়া হবে বলে মজা করলে দুজনেই এক সাথে রাজী হয়ে গেছে...মিষ্টি আবার এক কাঠি উপরে, বেশ মজা করে বলেই দিল ও বরকে কোলে করে নিয়ে গিয়ে কলেজে দিয়ে আসবে রোজ আর দুষ্ঠুমি করলে ভালো করে ঠ্যঙ্গাবে...সবাই মিলে ওই শুনে এমন হাসাহাসি শুরু করেছে যে বেচারা নিতবর এতজন অচেনা লোকজনের মাঝে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে মৌয়ের কোলে মুখ লুকিয়ে ফেললে কেউ একজন বলে ফেলল...ও মা, নিতবর তো দেখি মামীমাকেই বিয়ে করতে চাইছে...ইশ, কি হবে এবারে বেচারা মামার...
 
শুভদৃষ্টির সময়ে রুপসা উঠে এসে হৈ চৈ করে উঠে বলল... এই মৌ চোখ সরাবে না একেবারে...ভালো করে ছবি তোলা হবে। অরিত্র ওর চোখে চোখ রেখে মনে মনে ভাবছিল আমাদের শুভদৃষ্টি তো সেদিনই হয়ে গেছে যেদিন বিকেলে পড়ন্ত সুর্যের কনে দেখা আলো মুখে নিয়ে তুমি এক দৃষ্টে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে...সেদিনই তো আমি তোমাকে আমার সর্বস্ব দিয়ে বসেছিলাম। এই দাদাভাই, কি রে স্বপ্ন দেখছিস নাকি...চল হয়ে গেছে, আর তাকিয়ে থাকতে হবে না, পরে দেখিস আবার। রুপসার কথা শুনে সম্বিত ফিরে এল, পাশ থেকে পুবালী হাসি মুখে বলল... উঃ রুপসা...তুই ও না...কখন বলিস তাকিয়ে থাক আর কখন বলিস চোখ নামাতে...মাথা খারাপ করে দিবি নাকি ওদের...
 
প্রায় ঘন্টা দুয়েক বাসর জাগার পর সবাই এক এক করে শুতে চলে গেছে। মামন আর মিষ্টি ওখানেই জড়াজড়ি করে ঘুমিয়ে পড়েছে দেখে আর ওদেরকে ডাকা হয়নি শুতে যাবার জন্য। সবাই চলে যাবার পর রুপসা বিল্টুকে সাথে করে নিয়ে বেরিয়েছে। ওর নাকি একটু হাঁটতে ইচ্ছে করছে ঝিরঝিরে বৃষ্টির ভেতরে। এত সময় পরে দুজনে একা হতে পেরে আরো কাছাকাছি চলে এসেছে। মৌ অরিত্রকে কোলে মাথা রেখে শুতে বললে সে বলেছে আমিও তো ভাবছিলাম তুমি আমার কোলে মাথা রেখে শুলে মাথায় হাত বুলিয়ে দেবো...দুজনের চাওয়াটা রাখতে গিয়ে ওরা ঠিক করে নিয়েছে কিছুটা সময় করে এ ওর কোলে মাথা রেখে শোবে যাতে দুজনের ইচ্ছেটাই থাকে। প্রথমে যেহেতু মৌ বলেছে তাই অরিত্রকে শুতে হয়েছে ওর কোলে। কথা খুব একটা কিছু না বললেও চুপ করে এ ওর দিকে তাকিয়ে থাকাতেও যে কত সুখ সেটা ওরাই ভালো জানে। একটু পরে অরিত্র ঘাড় ঘুরিয়ে মিষ্টিরা ঘুমোচ্ছে কিনা দেখে নিয়ে পাশ ফিরে ওর কোমরটা জড়িয়ে ধরলে মৌ একটু ঝুঁকে এসে আস্তে করে বলেছে এই, ওরা যদি উঠে পড়ে? কোনো জবাব না দিয়ে নিজেকে আরো ওর বুকের কাছাকাছি নিয়ে এসে চুপ করে থেকে বোঝালো...উঠলে উঠুক, আমার এখন এভাবেই তোমাকে কাছে পেতে ইচ্ছে করছে। শুনবে না যখন আমি আর কি করবো, আমারও কি ভালো লাগছে না ভেবে ও নিজেই ওকে আরো কাছে টেনে নিয়ে বুকে চেপে ধরে আস্তে করে বলেছে...এবারে ঠিক আছে? উত্তরে শুধুমাত্র উমমম...আওয়াজে বোঝা গেল বলতে চাইছে তুলতুলে নরম স্পর্শে ও কতটা খুশী...এর থেকে বেশী কিছু চাওয়ার মতো হ্যাংলামি ও এখন করবেই না জানা ছিল, তবুও আরো একবার সেটাই বুঝে গিয়ে আর একজন চোখের পলক না ফেলে তাকিয়ে থেকেছে একেবারে নিজের মতো করে পেয়ে যাওয়া ওর জীবনের সব থেকে দামী জিনিষটার দিকে...
 
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাসি বিয়ে সারা হয়ে গেলে দুর্গাপুর থেকে ফিরে ভবানীপুরের বাড়ীতে এক প্রস্থ বরনের পালা ছিল। জেঠিমারা আগেই ফিরে এসে তৈরী হয়েছিল। সবকিছু মিটে গেলে মা বাবার ঘরে দুজনে মিলে গিয়ে মালা পরিয়ে প্রনাম করে এসেছে। ওই সময়টা ওদের সাথে কেউ ছিল না। ফিরে আসতে গিয়ে মৌয়ের ডাক শুনে ও থমকে দাঁড়িয়ে গেলে হাতটা ধরে আলতো ভাবে চেপে ধরে জিজ্ঞেস করল...কই তুমি তো কিছু বললে না মা বাবাকে? কি বলবো বলে একটু অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলে মৌ হাসি মুখে বলল...আগেকার দিনে সেই বলতো না যে মা, এই নাও তোমার বৌ এনে দিলাম। অরিত্র ওর কথা শুনে ওর হাত ধরে একটু দূরে সরে এসে আস্তে করে বলল...কে বলেছে তুমি আমার বৌ? তাহলে কি জিজ্ঞেস করাতে উত্তরের জায়গায় প্রশ্ন করা হয়েছে যারা প্রেম করে তাদের কে কি বলে? প্রশ্নটা শুনে একজন বুঝে গেছে ও কি বলতে চেয়েছে আর তাই হাসি মুখে জিজ্ঞেস করেছে সারা জীবনের জন্য? হু, তাছাড়া আবার কি বলে আরো কিছু বলতে গিয়েছিল অরিত্র, দরজার বাইরে কারুর পায়ের আওয়াজ পেয়ে থেমে গিয়ে ওর হাতটা ছেড়ে দিয়ে বলল...চলো...পরে বলব।
 
দুপুরের খাওয়াটা সেরে নিয়ে সামান্য কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে বেরিয়ে এসেছে ওরা। বাড়ী এসে পৌঁছতেই রুপসা, মামন আর মিষ্টিকে নিয়ে তাড়াতাড়ি করে নেমে চলে গেল এমন একটা ভাব করে যেন ওদের কত কাজ আছে। সারা রাস্তা গল্প করতে করতে এলেও বাড়ী পৌঁছবার কিছুটা আগে ওদের চোখে চোখে ইশারায় কথা বলতে দেখে মৌ জিজ্ঞেস করেছিল কি হয়েছে। মিষ্টি ফিক করে হেসে ফেলে বলেছে ও, আমাদের গোপন ব্যাপার...বলা যাবেনা এখন। ওদের গোপন ব্যাপারটা কি বোঝা গেল একটু পরেই। বরন করার পর বাড়ীতে ঢুকতে যেতেই দেখা গেল ওরা তিন জনে দরজা আটকে দাঁড়িয়ে পড়েছে। রুপসা অরিত্রর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল...বৌকে নিয়ে বাড়ীতে ঢুকতে দেবার আগে বোনকে কিছু দিতে হয় জানিস তো...না দিলে কিন্তু ঢুকতে দিচ্ছি না। অরিত্র ওর কথা শুনে মুখটা বেশ গম্ভীর করে বলে দিয়েছে আমি কেন দেব? যা কিছু খরচ সবই তো দাদু আর জেঠুদের দেওয়ার কথা। দাদাভাইয়ের না দেবার কারন শুনে রুপসা সজোরে মাথা নেড়ে বলল না না এটা নিয়ে কোনো কথাই হয়নি...তুই যাকে খুশী জিজ্ঞেস করে নিতে পারিস আমার কথা বিশ্বাস না হলে। অরিত্র এবারে হেসে ফেলে বলেছে আচ্ছা ঠিক আছে, সে না হয় তোকে কিছু দেওয়া যাবে কিন্তু মিষ্টি আর মামন আবার এখানে কেন? ওরা তো যতদুর জানা আছে যাকে আটকেছিস তার বোন...
-              ও মা তুই কি রে দাদাভাই, পুরো বিয়েটাই তো মিলিয়ে মিশিয়ে হতে দেখলাম। কে যে কোন পক্ষের বোঝাই যায়নি...
হ্যাঁ বুঝেছিবলে অরিত্র পার্স থেকে একটা এক টাকার কয়েন বের করে রুপসার হাতে দিয়ে বলল এই নে, ভাগ করে নিস...
এক টাকার কয়েন, তাও আবার তিন ভাগ করতে হবে শুনে ওরা তিন জনে হইচই করে উঠলে অরিত্র মুখটা শুকনো করে বলল আমার আর বেশী কিছু দেবার ক্ষমতা নেই এখন...বুঝলি। বুঝতেই পারছিস, এখন অনেক খরচের ব্যাপার আছে...
ওদের ভাই বোনের কান্ড দেখে সবার হেসে ফেলা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না। রুপসা মৌয়ের হাত ধরে হাসি মুখে বলল...দেখলে তো তোমার বরটা কি হাড় কিপ্পুস...যাকগে, কি আর করা যাবে...চলে এসো...
 
দেখতে দেখতে আরো একটা দিন কেটে গেছে, আজ বৌভাত। আকাশের মুখ দুপুরের পর থেকে গোমড়া হয়ে থাকলেও বৃষ্টি এসে আর ঝামেলা পাকায়নি। দিদান বলে দিয়েছিল ওদের দুজনকে আজ এক সাথেই খেতে হবে। এমনিতে বর্ষাকাল আর এই ধরনের অনুষ্টান বাড়ীতে শেষের দিকে খেতে বসার জন্য বড্ড অপেক্ষা করতে হয়, তার জন্য হয়তো ন-টার ভেতরেই নিমন্ত্রিতরা সবাই এসে যাওয়ায় ওদিকটা মিটিয়ে নিয়ে রুপসা তাড়া লাগিয়েছে যাতে দশটার ভেতরে ওদের খাওয়া হয়ে যায়। ওর আবার ফিরে গিয়ে বৌদির পেছনে অনেক সময় দিতে হবে। এমনিতে অসুবিধা ছিল না, সময় মতো সবকিছু যাতে সেরে ফেলা যায় তার জন্য বসিয়ে খাওয়াবার সাথে সাথে অনেকটা জায়গা জুড়ে বুফেরও ব্যাবস্থা থাকায় কাউকে আর অপেক্ষা বা খেতে বসার জন্য হুড়োহুড়ি করতে হয়নি। একেবারে প্রায় নিঁখুত ব্যাবস্থার জন্য পুরো বাহবাটা শুভরই পাওনা ছিল। শুভকে যারা চেনে তারা আবার মজা করে ওকে বলে গেছে তাদের ছেলে বা মেয়ের বিয়েতে যদি ও দায়িত্ব নিতে পারে।
 
ওদের খাওয়া হয়ে গেলে রুপসা মৌকে নিয়ে ফিরে এসেছে, সমস্ত মেকআপ নিজের হাতে তুলে দিয়ে আবার নতুন করে সাজিয়েছে। সেই বিকেলের বাসি মেকআপ নাকি চলবে না। নতুন করে সাজালেও এবারে আর বেশী কিছু করেনি। যতটা সম্ভব হাল্কা ভাবে সাজিয়ে দিয়ে বলেছে বড্ড যেন সাজানো সাজানো লাগছিল, এখন বেশ ফ্রেস দেখাচ্ছে। মৌ গা ভর্তি গয়না খুলে ফেলতে চাইলে রুপসা কানে কানে বলেছে উঁ হুঁ এখন নয়, ওগুলো তোমার বর নিজের হাতে এক এক করে খুলবে। ছোড়দি কি বলতে চেয়েছে বুঝতে পেরে ও লজ্জা পেয়ে রুপসার হাতে ছোট্ট করে একটা চিমটি কেটে বলেছে উমমম ছোড়দি, তুমি না একটা যাচ্ছেতাই। রুপসা ওর কথায় হেসে ফেলে নিচু গলায় আরো একবার পেছনে লেগে বলেছে যাচ্ছেতাই যা হবার তা তো শুরু হবে আজ রাত থেকে...বুঝেছো...এতদিন কিছু করেনি বলে কি ভেবেছো আজ ছেড়ে দেবে...
 
ওরা তাড়াতাড়ি ফিরে এলেও অরিত্র বৌভাতের ওখানেই ছিল। সব কিছু সামলে দিয়ে ও ফিরে এলে রুপসা তাড়া লাগিয়েছে তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে আসার জন্য। ফটো তোলার ব্যাপার আছে সবার সাথে। ফটো তোলার পর এক এক করে বড়দের প্রনাম করে আশীর্বাদ নেওয়া হয়ে গেলে রুপসা মিষ্টি আর মামনকে সাথে নিয়ে শুতে গেছে। যাবার আগে কানে কানে বলেছে এই, মৌকাল সকালে কিন্তু আমাকে সব বলা চাই। ভাগ্যিস মিষ্টি আর মামন একটু দূরে ছিল, ওরা শুনতে পেলে যে কি হোতো কে জানে। সেই কখন থেকে ছোড়দি থেকে থেকেই পেছনে লেগে যাচ্ছে, বারে বারে ও লজ্জা পাচ্ছে দেখে যেন ওর পেছনে লাগা আরো বেড়ে যাচ্ছে দেখে ও আর এবারে লজ্জা পায়নি, নিজেও ওর পেছনে লেগে বলেছে ইস, আমি কেন বলতে যাবো? তুমি তোমার হার্ট থ্রবকে জিজ্ঞেস করে নিও সে তার ফুলশয্যার রাতে কি কি করেছে...
 
অরিত্র স্নানে গেছে একটু আগে। এখন আর ওদের ঘরে কেউ নেই। মৌ চুপ করে জানলার পাশে দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিল। একটু আগেই এক পশলা ভারী বৃষ্টি হয়ে গেছে। ঘরের মৃদু আলো তেরছা ভাবে মাধবীলতার ভেজা পাতা গুলোর উপরে পড়ায় কি সজীব আর প্রানবন্ত দেখাচ্ছে। বৃষ্টি ভেজা ঠান্ডা হাওয়া এসে ভেজা পাতাগুলোর সাথে সাথে গাছটাকে কি কাঁপিয়ে দিয়ে যাচ্ছে? ওর শরীরের মৃদু কাঁপুনিও কি একই রকম নয়? আর একটু পরেই একজন আসবেওকে মন প্রান ভরে আদর করবেওকেও করতে হবে অনেক অনেক আদর। মনে পড়ে গেল দিদির ফিসফিসিয়ে বলা ছোট্ট দুটো কথা…’লেগেছিল’…ভালো। সেদিন লজ্জায় আর বেশী কিছু জিজ্ঞেস পারেনি দিদিকে কিন্তু এইটুকু বুঝেছিলভালো লাগাটা কতোটা সুখের হলে ওইভাবে কেউ বলতে পারে। ভাবতে গিয়ে লজ্জায় যেন মরে যেতে ইচ্ছে করছিলও যদি আলো না নেভাতে চায়যদি বলে আমি তোমাকে দেখবোতাহলে? ভাবতেই পারছিল না কি হবে। আচ্ছা ঠিক আছে, যদি না চায় তো তাই হোকআজ না হয় কাল তো ও দেখবেইতাই না? তারপরেই মনে হয়েছে, ইশ, না...আজ কিছুতেই নয়, ও হয়তো চাইবে কিন্তু বুঝিয়ে বললে নিশ্চয় কথা রাখবে। চুপ করে দাঁড়িয়ে নিজের মনে নানান কথা ভাবতে ভাবতে কখন ও ফিরে এসেছে বুঝতে পারেনি, পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ রেখে জিজ্ঞেস করেছে আমার মৌমি সোনা কি এত ভাবছেজানতে পারি’?
-              উমমপারো
-              লো...
-              তোমার কথা...
-              কি?
-              উঁ হুঁ...বলবো না...
-              তাই?
-              হু...আচ্ছা তুমি আমাকে কি বলে ডাকলে জেনো?
-              মৌ-মি...
-              আচ্ছা...
-              কেন বলোতো?
-              কি জানি...
-              তোমাকে তো সবাই মৌ নামে ডাকে...তাই না...
-              হু...
-              ওই নামে শুধু আমি ডাকবো তোমাকে...
-              আচ্ছা...
-              নামটা কেমন বললে না তো...
-              ভালো তো...আমারই নামের কিছুটা...
-              হু...
-              সবার সামনে কি বলে ডাকবে?
-              আগের মতোই...
-              আচ্ছা...
 
বাইরে আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে দেখে দুজনে মিলে জানলার একেবারে কাছে চলে গেছে...চুপ করে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে মুগ্ধ চোখে বৃষ্টি দেখতে দেখতে মাঝে মাঝে যখনই হাওয়ার ঝাপটার সাথে বৃষ্টির ছাঁট এসে চোখে মুখে পড়েছে...শিউরে উঠে কে কার গায়ে ঘেঁষে গিয়ে অকারনে হেসেছে বোঝেনি। শুধু বৃষ্টি দেখতে গিয়ে মুগ্ধ হওয়া নাকি আজ একেবারের জন্য দুজনে কাছাকাছি আসার খুশিতে নিজেদেরকে ভরিয়ে তোলা তা ওরাই জানে। নিজেরাই জানে না কত সময় চলে গেছে। শুধু সময়ের কথা কেন আজ বাকি কিছু নিয়েও ভাবার নেই। মন যা চাইছে তাই আজ ওরা করে যাবে। মন ভরে গেলে তারপরে না হয় শরীরের কথা ভাবা যাবে, তাড়ার কি আছে...এই রাত তো শুধু দুজনার। আরো কিছুক্ষন কেটে গেছে, একজনের হাত ধরে কেউ জানলার বাইরে নিয়ে যেতে চাইলে সেও নিজেও হাত এগিয়ে দিয়েছে। দুজনে মিলে বৃষ্টির ফোঁটায় হাত ভিজিয়ে নিতে নিতে কখোনো এ ওর মুখে জলের ছিটে দিয়েছে। তাতে কেউ এই... ভীষন ঠান্ডাবললে অন্যজন হাসিমুখে কাছে টেনে নিয়ে বুকে চেপে ধরে নিজের উষ্ণতায় তাকে ভরিয়ে দিতে চেয়েছে। তারপরেই একজনের ইচ্ছে হয়েছে একটু অন্য রকমের দুষ্টুমি করার...পেছন থেকে আগের মতোই বুকে জড়িয়ে ধরে কানে কানে বলেছে চোখ বুজে থাকতে। চোখ বুজে চুপ করে ওর বুকের ভেতরে থেকে বোঝার চেস্টা করেছে ও কি করতে চাইছে কিন্তু পারেনি হয়তো। ওদিকে অন্যজন হাত ভরে বরফ ঠান্ডা বৃষ্টির জল নিয়ে এসে এক এক ফোঁটা করে ওর গালের পাশে ফেলতে শুরু করেছে। ও ঘাড় কাত করে বুকের উপরে মাথা রেখে থাকায় সেই জলের ধারা গালের উপর থেকে গলার পাশ দিয়ে গড়িয়ে চলে গেছে আস্তে আস্তে আরো নীচে...আঁচলের আড়ালে... বুকের আরো গভীরে। ঠান্ডা লাগলেও ও তখোনো চোখ বুজে থেকে শিউরে উঠতে উঠতে মন প্রান ভরে চেয়েছে ওর দুষ্টুমি উপভোগ করতে। যখন আর পেরে ওঠেনি তখন কোমরে বেড়ী করে রাখা ওর হাতে হাত চেপে ধরে নিজেকে সামলে নিতে নিতে অস্ফুট স্বরে বলেছে...এই, আর না...
 
রাত আস্তে আস্তে বাড়ছে। দুষ্টুমি শেষ তখনকার মতো, এবারে ওকে দুহাতে করে কোলে তুলে নিয়ে এসে শুইয়ে দিয়ে তাকিয়ে দেখতে দেখতে একজন বলেছে খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে...
-              তাই?
-              হু...
-              আলোটা নিভিয়ে দেবে?
-              কেন লজ্জা করছে?
চোখে চোখ রেখে অস্ফুট স্বরে উত্তর এসেছে জানি না
-              অস্বস্তি?
-              উঁ হুঁঅন্য কিছু
-              আচ্ছা...
আলো নেভানো হয়ে গেলে ও ফিরে এসেছে। চুপ করে বুকে মুখ গুঁজে শুয়ে থাকতে দেখে মৌ ওর মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলল এইশুনছো’…
-              উঁলো...
-              চুপ করে আছো...
-              এমনিভালো লাগছে
-              তাই?
-              হু, তোমার ঘুম পাচ্ছে না তো?
-              উঁ হুঁ
 
আবার কিছুক্ষন চুপচাপঅরিত্র ওর ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে আলতো ভাবে ছুঁয়ে থেকে বললতুমি একদিন জিজ্ঞেস করে ছিলে না আমি কেন এমন...কেন কাছে আসতে চাইতাম না...
-              হু
-              শুনবে?
-              আজ থাকপরে...
-              কেন?
-              এখন তো কাছে আছো...নাই বা জানলাম এখুনি...
-              আচ্ছা...
-              তুমি আমাকে একদিন জিজ্ঞেস করেছিলে নাআমাকে কেউ হ্যাঁ বলিয়েছে কিনা?
-              হু...
-              শুনবে?
-              বলো...
-              রাগ করবে না তো?
-              উঁ হুআমি কি আমার সোনার উপর রাগ করতে পারিতাও আবার আজ এইদিনে?
-              ঠিক তো?
-              হঁ...
-              তোমার ডাইরিটা...
-              কি?
-              লুকিয়ে লুকিয়ে পড়েছি পুরোটাইওখান থেকেই তো জেনেছিলাম তুমি আমাকে কতোটা ভালোবাসো
-              তাই কি সেদিন আমার কাছে এসেছিলে?
-              উ হু
-              তাহলে?
-              জানো তো, ওখান থেকে ফিরে আসার পরেও অনেকবারই ভেবেছি চলে যাবো কোনো মেয়েদের হোস্টেলেকিন্তু তোমাদের এত ভালোবাসা ছেড়ে যেতে হবে ভেবে কান্না পেয়ে যেত। আবার তোমাকেও বলতে না পেরে আরো খারাপ লাগতোকি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম নাতারপর ভাবলামতুমি তো ভালোবাসতে কিন্তু জানি না এখোনো তাই কিনাতাই ভেবেছিলাম যদি তুমি দাদুদের কথা ভেবে বিয়ে করতে রাজী হয়ে যাওতাহলে আমি কষ্ট হলেও চলে যাবার একটা কারন খুঁজে পাবো...
অরিত্র ওর আস্তে আস্তে করে সময় নিয়ে বলা কথাগুলো শুনে একটু সময় চুপ করে থেকে বলল... আমাকে তো বলতে পারতে
-              আমি তো নিজেই পিছিয়ে গিয়েছিলামতারপর সবকিছু বোঝার পরও তোমাকে এড়িয়ে যেতাম আগের কথা ভেবেকিভাবে আবার বলবো তোমাকে যে আমি আবার ফিরতে চাই
-              তা ঠিক...
-              তুমি যদি না সেদিন নিজের থেকেই বলতে তাহলে হয়তো অন্য কিছু হতে পারতো
-              আমার অনেক আগেই বলা উচিত ছিল, আমিও তো পারিনি..
 
আবার কিছুক্ষন চুপচাপ। কি যেন ভাবতে গিয়ে মৌ জিজ্ঞেস করল এই, তুমি এখন আর ডাইরী লেখো না?
-              হু...লিখি তো...
-              নতুন ডাইরী?
-              উঁ হু...ল্যাপটপে...ভেবেছিলাম, পুরোনোটা পেয়ে গেলে...
-              ইশ, ফেরৎ দিয়ে দিলে তোমাকে আর এত কষ্ট করতে হতো না...
-              ঠিক আছে, সময় করে ও আমি লিখে নেবো...
 
আবার কিছুটা বিরতি, ওই নিয়েই হয়তো ভাবছিল দুজনে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে অরিত্র বলল...ভাগ্যিস ডাইরি লেখার অভ্যেসটা ছিল...তাই না...
-              হু...না হলে হয়তো অন্য কিছু হতে পারতো...
-              সেটাই...
-              ভাবলেই না আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে এখোনো...
- আমারও
- কাল সকালে তোমাকে ডাইরিটা দেবো...কেমন
-              কোথায় আছে ডাইরিটা?
-              লুকিয়ে রেখেছি...ভেবেছিলাম তোমাকে বলার পরই ফেরৎ দেবো...
-              আচ্ছা...
-              জানো তো, আমিও এখন লিখি...
-              আমাকে পড়তে দেবে না?
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#22
-              উঁ হুঁ...
-              কেন?
-              উমম না...কি সব লিখেছি...
-              বারে, তুমি যে আমার সব গোপন কথা জেনে নিয়েছো...
-              আচ্ছা...হাসবে না তো...
-              উঁ হু...
 
আরো কিছুক্ষন কেটে গেছে। অনেকগুলো অজানা কথা জানতে পেরে বা বলতে পেরে দুজনেই খুশী যদিও খুব একটা যে জানার দরকার ছিল তাও নয়তবুও ভালোই হয়েছে, আর কোনো প্রশ্ন নেই কারুর বুকের ভেতরে। মন ভরে গেলে শরীরের কথা মনে পড়েছে একে অপরকে আদর করতে করতে, একটু একটু করে এগিয়ে গেছে অন্য এক সুখের খোঁজে। মনের খোঁজ তো আগেই পাওয়া হয়ে গিয়েছিল, অন্য সুখের খোঁজ করতে গিয়ে একে অপরের শরীরকে বোঝাটাও জরুরী থাকায় সময় নিয়েছে নিজেদের মতো করে, তাড়াহুড়ো করতে চায়নি কেউই......তারপর এক সময় দুটো পরিশ্রান্ত শরীর তৃপ্ত মনে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে বোঝেনি।
 
একজনের ঘুম ভেঙ্গেছে আগে। সারা শরীর যেন তখোনো অবশ হয়ে আছে সুখের আবেশে। বেশ কিছুক্ষন ঘোরের ভেতরে শুয়ে থাকার পর কোনোরকমে তাকিয়ে দেখলো ও তখোনো গভীর ঘুমের ভেতরে, কখন ঘুমের ঘোরে দুজন দুজনের থেকে দুরে সরে গেছে জানেনা... কাছে যেতে ইচ্ছে করলেও যদি ওর ঘুম ভেঙ্গে যায় ভেবেও আস্তে করে কাছে এসে ওর গা ঘেঁষে শুয়ে থাকতে থাকতে আবার চোখ বুজে এলো। আধো ঘুম আধো জাগরনের ভেতরে থেকে ভাবছিল কাল রাতের কথা...নিজেই জানে না কখন ওর মুখে এক চিলতে হাসি তো কখনও বা সুখের অভিব্যাক্তি। সবটুকু মনে না পড়লেও কিছু কিছু মনে পড়ে যাচ্ছে...নিজের মুখে না বলতে পারলেও ও যেন কি করে বুঝে যাচ্ছিল আমি কি চাইছিলাম ভাবতে গিয়েও বুঝতে পারলো না কি করে ও বুঝতে পারছিল। অনেক কিছুই মনে পড়ে যাচ্ছিল কিন্তু শেষের দিকে কি হয়েছিল ভাবতে গিয়েও মনে করতে পারলো না, কি করে মনে পড়বে...ও কি আর সজ্ঞানে ছিল নাকি থাকা সম্ভব ছিল...
 
ঘুম জড়ানো গলায় ওর মৌমি ডাক শুনে উঁ বলে সাড়া দিয়ে অপেক্ষা করছিল কি বলে শোনার জন্য। ডেকেও কিছু না বলাতে বুঝলো ও আবার ঘুমিয়ে পড়েছে হয়তো। নামটা মিষ্টি নাকি ওর মুখে শুনতে মিষ্টি লাগছে ভাবতে গিয়ে নিজের মনেই বারে বারে মৌ-মি উচ্চারন করতে করতে ভালো লাগায় বুক ভরে উঠলে ওরও ইচ্ছে হচ্ছিল ওকেও কিছু একটা নামে ডাকতে যেটা শুধু ওরই জন্য কিন্তু অনেক ভেবেও কিছু ঠিক করতে না পেরে নিজের অজান্তেই একটু জোরে বলে ফেলেছে ধ্যাত, আমি একটা কি যেন। কারুর হাত কিছু যেন খুঁজতে খুঁজতে এগিয়ে এসে ওকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিতে চাইলে নিজেই আস্তে করে তার বুকের ভেতরে ঢুকে গিয়ে চুপ করে থাকলে সে জিজ্ঞেস করেছে কি ভাবছিলে? কই কিছু না তো বললে জিজ্ঞেস করেছে এই যে বললে ধ্যাত, আমি যেন একটা কি। ভাবছিলাম তোমাকে কি নামে ডাকবো শুনে অরিত্র কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল তুমি আমাকে নাড়ুগোপাল বলে ডাকতে পারো...
-              ধ্যাত, কি বিচ্ছিরি...
-              খুব বিচ্ছিরি?
-              হু...
-              তাহলে?
-              থাক, পরে ভাববো...
-              আচ্ছা...
-              ঘুম হয়েছে?
-              উ হু...
-              কেন?
-              আবার ইচ্ছে করছিল...
-              কি?
-              খেতে?
-              কি?
-              তোমাকে...
-              রাক্ষস কোথাকার...
-              তাই?
-              হু, রাক্ষসই তো...তবে বেশ ভা-লো...
-              ভালো...তোমার ঘুম হয়েছে?
-              না...
-              কেন?
-              ভয়ে...
-              কিসের?
-              রাক্ষসের...
-              এই যে বললে রাক্ষসটা নাকি ভালো ছিল...
-              ওটাই তো ভয়ের...
-              কেন?
-              খেতে চাইলে না বলতে পারবো না যে...
 
দুজনে মিলে আবোল তাবোল বকে যেতে যেতে ঘড়ির মৃদু আওয়াজে একজনের খেয়াল হয়েছে এবারে ওঠা উচিত... স্নান করতে হবে, ওকে তুলে বিছানাটা ঠিক করতে হবে, না হলে আর কেউ লাগুক না লাগুক ছোড়দিটা তো আছেই তার জন্য। এই, ছাড়ো...বললে উত্তর এসেছে আমি কি তোমাকে আটকে রেখেছি নাকি?
-              ইস, কে জড়িয়ে ধরে আছে আমাকে শুনি...
-              ও তো তোমার সেই ভা-লো রাক্ষসটা...
-              হু, বুঝেছি...এই যে ভালো রাক্ষস... ছাড়ো...
 
আচ্ছা এসোবলে সেই ভালো রাক্ষসটা ওকে ছেড়ে দিতে গিয়েও আবার কাছে টেনে নিয়ে বলেছে মুখটা একবার আয়নায় দেখে নিয়ে তারপর বাইরে যেও...কেমন। কথাটা শুনে ও কি বলতে চেয়েছে বুঝতে পেরে লজ্জায় সারা গা শিরশির করে উঠল। তারপরেই মনে পড়ল ও তো একা নয়...আমিও তো...তাহলে তো শুধু আমার মুখটা আয়নায় দেখলে হবে না...
উঠে যাওয়ার আগে এই, দেখি তো বলে ওর দিকে ভালো করে তাকাতে গিয়ে আবছা আলোতেও বুঝলো...ওর মুখে, গলায়, বুকে...আর কোথায় কোথায় লেগেছে কে জানে। ইশ, এই জন্যই ছোড়দিটা সিঁথিতে সিঁদুর লাগিয়ে দিতে গিয়ে বলেছিল এই যাঃ...অভ্যেস নেই তো, বুঝতে পারিনি...একটু বেশী হয়ে গেল। যাকগে, আজ থাক...কাল থেকে না হয় একটু ছুঁইয়ে দেবে...বুঝেছো...
 
দেখতে দেখতে বর্ষা চলে গিয়ে এসেছে শরৎ...উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই এসেছে শীত। তারপর বসন্ত কবে যেন এসে চলে গেছে, ফিরে এসেছে আরো একটা গ্রীষ্ম। এতগুলো দিন যেন স্বপ্নের ভেতরে থেকে কেটে গেছে। কিভাবে যে দিনগুলো এসেছে আর গেছে বোঝার জায়গায় ওরা ছিল না। সবাই নাকি বলে ওরা মেড ফর ইচ আদার। একজনকে ছাড়া অন্যজনকে নাকি ভাবাই যায় না। না বললেও অবশ্য কোনো ক্ষতি ছিল না... কে কি বললো তাতে ওদের কি যায় আসে...ওরা দুজনে দুজনায় মশগুল থেকেই খুশী...
 
সারা দুপুর কাটফাটা রোদ ছড়িয়ে সুর্য এখন মুখ লুকিয়েছে ঘন কালো মেঘের আড়ালে। আকাশে বাতাসে কালবৈশাখীর আভাস, চারদিক থমথম করছে। যে কোন মুহুর্তেই ঝড় শুরু হবে হবে করছে। হাতে হাত লাগিয়ে ছাদের টব গুলোকে নামিয়ে দেওয়া হয়ে গেলে শুক্লাদি নীচে গেছে। ঝড় ওঠার আগে জানলাগুলো আটকে না দিলে আবার সারা বাড়ী ধুলোয় ভরে যাবে। মৌ একা একা দোলনাতে বসে নদীর দিকে তাকিয়ে ছিল...মনটা খুব একটা ভালো নেই। না থাকার কারন আর কিছুই নয়...অরিত্র বাড়ীতে নেই, অফিসের কাজে বাইরে আছে।
 
এই দোলনাটা আগে ছিল না...এই তো গত বছর পুজোর পর লাগানো হয়েছে...শুধু দোলনাটা নয়, তার সাথে মানানসই একটা ছাউনিও আছে...প্রকৃতির সাথে একাত্ম হতে চেয়ে একা একা বসে থাকলেও কিভাবে সময় কেটে যায় বোঝাই যায় না। দেখলে মনে হবে যেন এক টুকরো একটা বাগান...ছোট্ট একটা চারদিক খোলা কুঁড়ে ঘর...আর তার মাঝে এই দোলনাটা...কতদিন মাঝ রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়ার পর ওরা দুজনে এসে এখানে বসে গল্প করেছে...কখোনো বা শুধুই দুজনে দুজনের সান্যিদ্ধ উপভোগ করেছে চুপ করে বসে থেকে...
 
পরের দিন দুপুরের পর থেকে মৌয়ের জ্বর এসেছে, সাথে গা হাত পা ব্যাথা। একটা ট্যাবলেট খেয়ে নিয়ে কাউকে কিছু না বলে চুপ করে শুয়ে ছিল ও, সামান্য জ্বর হলেও বলতে গেলেই তো আবার সবাই চিন্তায় পড়ে গিয়ে ওকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়বে। ভেবেছিল বিকেলে অরিত্র ফিরে আসার আগে জ্বর কমে যাবে হয়তো, তেমন কিছু তো নয়...বৃষ্টিতে ভিজে সামান্য সর্দি জ্বর। কাল বিকেলে একা একা ছাদে বসে থাকতে থাকতে মনটা খুব উদাশ হয়ে গিয়েছিল...এমনিতেই ও বাড়ীতে নেই, মনটা একেবারেই ভালো ছিল না... তার উপরে দুপুরের গায়ে জ্বালা ধরানো গরমের পর মরশুমের প্রথম বৃষ্টি...ও আজ বাড়ীতে থাকলে দুজনে মিলে বৃষ্টিতে ভিজতাম ভাবতে গিয়ে আরো যেন মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল...ওর কথা ভাবতে ভাবতে কখন উঠে গেছে বুঝতে পারেনি হয়তো...কেমন যেন একটা ঘোরের ভেতরে থেকে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বেশ কিছুক্ষন পর শুক্লাদির ডাকে ফিরে তাকিয়ে লজ্জা পেয়ে গিয়েছিল...
 
অরিত্র বাড়ী ফিরে এসে জোর করে ডাক্তার দাদুর কাছে নিয়ে গিয়ে দেখিয়ে নিয়ে এসেছে। যাওয়ার আগে সামান্য জ্বরে এত চিন্তা করার কি আছে বলতে গেলে মৃদু বকুনি খেয়েছে ওর কাছে কাছে। দাদু দিদানরা আদর করে ওকে বকে দেয় অনেক সময় কিন্তু তাতে ওর কিছু মনে না হলেও অরিত্র কেন বকে দিল ভেবে অভিমানে বুক ভরে গিয়েছিল...
 
ডাক্তার দাদুর ওষুধ খেয়ে রাতে জ্বর কিছুটা কমে গেলেও পুরোপুরি নেমে যায়নি, তার উপরে আবার বেশ কিছুটা দুর্বলতাও ছিল। অরিত্র ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ঘুমিয়ে পড়েছে ভেবে আস্তে করে উঠে বসেছে। জ্বর একেবারে না কমে যাওয়ায় কিছুটা হলেও চিন্তা ছিল। আজকাল আবার সামান্য জ্বর থেকেও কতকিছু হচ্ছে শোনা যায়। এখুনি না শুয়ে পড়ে আরো কিছুক্ষন দেখে না হয় ঘুমোবে ভেবে রিডিং লাইটটা জ্বালিয়ে একটা বই পড়ার কথা ভাবতে ভাবতে মৌয়ের ডাকে সাড়া দিতে হল...ও ঘুমোয় নি, দুর্বলতা থাকায় সাড়া ছিল না দেখে অরিত্র ভেবেছিল ও ঘুমিয়ে পড়েছে। কাছে সরে গেলে মৌ ওর হাতটা বুকে জড়িয়ে ধরে কি যেন বলল দেখে মুখ নামিয়ে জিজ্ঞেস করেছে কষ্ট হচ্ছে কিনা। আস্তে করে শুধু না বলে ও চুপ করে থাকলে অরিত্র ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ঘুমোবার চেস্টা করতে বললেও ও শোনেনি...এমনিতেই শরীর খারাপের জন্য গলা ভারী হয়েছিল...অভিমানী গলায় বলেছে... না, ঘুমোবো না...তুমি বকলে কেন আমায়...তোমার কথা ভাবতে গিয়েই তো ভিজতে ইচ্ছে হয়েছিল...
ওর অভিমান ভাঙ্গাতে আদর করতে হয়েছে... অনেক কথা বলতে হয়েছে... বুকে মাথা রেখে ও চুপ করে থেকে শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়লেও অরিত্র ঘুম আসছিল না...অভিমান ভাঙ্গাতে পেরে ওর ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে বুকের ভেতরটা ভালো লাগায় ভরে উঠল...দুটো দিন মাত্র দুজন দুজনকে কাছে পায়নি...তাতেই যেন মনে হচ্ছিল কতদিন পরে দেখা হয়েছে...কত যেন কথা জমে আছে বুকের ভেতরে...
 
বালিশের পাশে রাখা ডাইরিটা আগে খেয়াল করেনি...কি মনে করে হাতে নিয়েছে... দেখবো কি দেখবো না করেও প্রথম পাতার দিকে তাকিয়েছে... ঝরঝরে মুক্তোর মত গোটা গোটা হাতের লেখা... দু চারটে লাইন পড়েই বুঝতে পারলো এটা শুধু ডাইরী বললে ভুল হবে...এটা ওর ওর মনের আয়না......কোনো কিছুই গোপন করা নেই...পাতা গুলো উলটে যেতে যেতে এক জায়গায় চোখ আটকে গেল...
 
ফিরে এলাম আবার...
অনেক দিন ডাইরী লেখার সময় পাইনি...কি করে লিখবো বলো...এখন তো আর আমি একা নই...আমাদের বিয়ে হয়ে গেল...তারপর আমরা গেলাম হানিমুনে...ফিরে এসে আবার এখানে ওখানে যাওয়া...সময়ই পাইনা...দাদু দিদানরা তো আছেই...সাথে আছে একজন খুব দুষ্টু...দুপুরে যখন লিখতে বসি... শুধু তার কথা মনে পড়ে যায়...কাল সারাদিন কি করলাম...কি কি হয়েছে...কিছুই মনেই পড়তে চায় না...তবুও জোর করে লিখতে শুরু করছি আজ থেকে...এই, শোনো না...পড়তে গিয়ে হাসবে না কিন্তু...জানোই তো আমার লজ্জা করে...তাই তো তোমায় দিই না পড়তে...কখোনো বা যদি তোমার হাতে আমার ডাইরীটা পড়ে গেছে দেখেছি...তোমার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে ছিনিয়ে নিতে চেয়েছি...তুমি ইচ্ছে করেই আমার সাথে খুনসুটি করে যাও...দেবো দেবো করেও দিতে চাওনা...আমি কি জানি না নাকি, কেন তুমি ওরকম করো...আসলে তোমার তখন আমাকে কাছে পেতে ইচ্ছে করে তাই তুমি...ইশ, না...না...শুধু তো তুমি নয়...আমারও তো তোমার ছোঁয়া পেতে ইচ্ছে করে... আচ্ছা থাক এখন ওসব কথা...এবারে লিখি...কেমন...
 
আমাদের প্রথম রাত...ফুলশজ্জা...
আমাদের প্রথম রাতের কথা লিখতে গিয়ে পারলাম না...ওই রাতটা কি সত্যি নাকি স্বপ্ন ছিল বুঝতে পারছি না...মনে করে করে লিখতে গিয়ে শিউরে উঠছি...তোমাকে কাছে পেতে ভীষন ইচ্ছে করছে...ধ্যাত...থাক...পরে কখোনো লিখবো...তার থেকে বরং পরের দিন থেকে শুরু করি.....
 
আবার কাছে পেলাম তোমায়...
আমাদের ফুলশজ্জার পরের দিন দুপুর...বাড়ীতে আত্মীয় স্বজনরা থাকায় ছেলেদের আগেই খাওয়া হয়ে গিয়েছিল...বাকি ছিলাম আমরা মেয়েরা... খেতে বসে গল্প করতে করতে দেরী হয়ে গিয়েছিল আমার ফিরে আসতে...তুমি ঘুমিয়ে পড়েছিলে দেখে আর ডাকিনি, ফিরে এসে ছোড়দির সাথে গল্প করছিলাম...মনটা পড়ে ছিল তোমার কাছে...খুব ইচ্ছে করছিল তোমাকে একবার দেখে আসি। লজ্জায় যেতে পারছিলাম না...জানোই তো তোমার বোন কেমন বিচ্ছু...পেছনে লেগে মাথা খারাপ করে দেয়। তারপর কি হয়েছে বলোতো...আমরা সবাই মিলে ছাদে যাচ্ছিলাম...মিষ্টিরা সামনে, আমি আর ছোড়দি পেছনে...আমাদের শোয়ার ঘরের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ছোড়দি আমার হাতটা ধরে ইশারা করেছে ভেতরে যেতে...আমি লজ্জায় মুখ নীচু করে নিয়ে মাথা নেড়ে বলেছিলাম...না থাক...ছোড়দি জোর করে আমাকে ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়ে দরজাটা টেনে দিতে গিয়ে বলেছিল...আমি উপরে আছি...দেখা করে চলে এসো... তারপর... ছোড়দি চলে গেছে বুঝে গিয়ে আমি এক পা এক পা করে তোমার দিকে এগিয়ে এসেছি...তুমি কোল বালিশটা বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমোচ্ছিলে...তোমার ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে থেকে বুকের ভেতরে কেমন যেন একটা করছিল...ভীষন ইচ্ছে করছিল তোমাকে আলতো করে চুমু দিই...আদর করি...এত কিছু ইচ্ছে করলেও চুপ করে দাঁড়িয়েছিলাম...কেউ যদি এসে যায় ভেবে লজ্জায় কিছু করতে পারছি না আবার ওদিকে সময়ও চলে যাচ্ছে...এখুনি আমাকে আবার ফিরে যেতে হবে ভেবে বুঝতে পারছিলাম না কি করবো...না থাক, এখন যাই ভেবে ফিরে আসবো বলে দরজার কাছে ফিরে এসে কি মনে করে পেছন ফিরে তাকিয়েছি তোমার দিকে... তুমি তাকিয়ে ছিলে আমার দিকে...তোমার চোখে চোখ আটকে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম মন্ত্রমুগ্ধের মতো...তারপর...তোমার দুচোখের নীরব ডাকে সাড়া না দিয়ে থাকতে পারিনি...ত্রস্ত হরিনীর মতো দৌড়ে এসে কোনো কিছু না ভেবেই ঝাঁপ দিয়েছিলাম তোমার বুকে...তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে ছিলে...আমিও হয়তো তাই করেছিলাম...কে কাকে বুকে চেপে ধরে পিষে ফেলতে চেয়েছিলাম জানি না...তারপর হয়তো খেয়াল হয়েছিল আমাকে দেখতে না পেলে ভাইবোনেরা কেউ ফিরে আসতে পারে। আস্তে করে বলেছিলাম ...এই ছাড়ো। ছাড়ার ইচ্ছে একেবারেই নেই তো ছাড়বে কেন ভেবে হয়তো তুমি বলেছিলে...একটু তো ঘুমিয়ে নিতে পারতে। ইচ্ছে তো করছিল তোমার পাশে থাকতে, ওরা না ছাড়লে কি করবো ভেবে বলেছিলাম ...কেন, আজ রাতেও ঘুমোতে দেবে না...আবার দুষ্টুমি করবে? তুমি কি বলেছিলে যেন...ও হ্যাঁ...তুমি বলেছিলে হু, করবোই তো...তোমার কথা শুনে আমি বলেছিলাম...ইস, কোরবোই তো...এত আদর করলে আর ছাড়তে ইচ্ছে করবে নাকি তোমাকে? তুমি বলেছিলে ...না ছাড়তে ইচ্ছে করলে ছাড়বে না... সবাই কি ভাববে বলোতো বললে তুমি বলেছিলে... সে যা ভাবে ভাবুক... আমার কি...
ঠিকই তো...তোমার কি...তুমি তো আমাকে ছাড়া আর কিছু জানো না...বোঝো না...জানতেও চাও না...বুঝতেও চাও না...
 
অরিত্র মন দিয়ে ওর লেখা পড়তে পড়তে ভালোলাগার রেশ বুকে নিয়ে কিছুক্ষন বসে থাকার পর ওর কপালে হাত দিয়ে দেখলো আগের থেকে ঠান্ডা, জ্বর একটু কমেছে বুঝে মুখ নামিয়ে কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে আবার পড়তে শুরু করেছে...
 
মধুচন্দ্রিমা
 
সত্যিই কি মিষ্টি শব্দটা...দুটো সুখী হৃদয়ের নিজেদের ভেতরে একাত্ম হয়ে গিয়ে নিজেদেরকে নতুন করে জানার...নতুন করে চেনার.......একে অপরকে বোঝার আর এক নাম....... ম-ধু-চ-ন্দ্রি-মা...
জানি, আমার মতো সুখ সবাই পায় না...সবাই তো আর তোমার মতো ভালবাসতে জানে না আর ভালোবাসা পেতে জানে না। হ্যাঁ, ঠিকই তো ভালোবাসতে গেলে ভালোবাসা নিতেও জানতে হয়...তাই না?
জানো তো...একটু একটু করে আমাদের যাওয়ার সময় যত এগিয়ে আসছিল...আমার বুকের ভেতরে কেমন যেন এক অদ্ভুত অনুভুতিতে ভরে উঠছিল...ঠিক কিসের অনুভুতি আমাকে জিজ্ঞেস করলেও বলতে পারবো না...সেই অনুভুতি শুধু নিজে অনুভব করা যায়...মুখ ফুটে কাউকে বলা হয়তো যায় না...এতদিন তোমাকে একভাবে দেখার পর...বোঝার পর... সবেমাত্র তোমার ভেতরের আসল মানুষটাকে বুঝতে শুরু করেছি...তোমার সব কিছুই যেন একেবারে নতুন ভাবে আমার কাছে ধরা পড়ছে একটু একটু করে...নতুন করে চেনার ঠিক সেই মুহুর্তে তোমাকে একেবারে নিজের মতো করে কাছে পাওয়ার ইচ্ছেটা যেন আমাকে অস্থির করে তুলছিল...ইশ, না না...তুমি আবার হয়তো ভাবছো যে আমি শুধু ওইসবের কথা ভেবে অস্থির হয়ে পড়ছিলাম...উঁ হু...কথাটা একেবারে সত্যিও নয় আবার একেবারে মিথ্যেও নয়...তোমার কাছে নিজেকে বিলিয়ে দেবার ভেতরে যে কি সুখ তা কি আমি বুঝি না... নাকি চাই না...সাথে সাথে তোমাকে আরো বেশী করে জানার ইচ্ছেটাও ছিল...মনটা ছটপট করে উঠতো...তুমি আর আমি একেবারে নিজেদের মতো করে একে অপরকে কাছে পেলে...তুমি কি করো...কিভাবে আমাকে দেখতে চাও...কিভাবে পেতে চাও জানার জন্য... সাথে সাথে আমাকেও কি করতে হবে ভাবতে শুরু করেছি...আমারও তো তোমাকে অনেক কিছু দেওয়ার ছিল...আমি যেমন তোমাকে জানতে চাইছি তেমনি তুমিও তো আমাকে আরো বুঝতে চাইতে...তাই না...
 
দেখতে দেখতে আমাদের যাওয়ার দিন এসে গিয়েছিল...আমরা দুজনে এক বৃষ্টির দুপুরে পৌঁছেছিলাম গোয়া। ভেবেছিলাম আর পাঁচটা হোটেলের মতোই হবে আমাদের হোটেল...সমুদ্রের দিকে মুখ করে আর পাঁচটা হোটেলের মতোই একটা বিল্ডিং... জানো তো কি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম ওখানে পৌঁছে...চারিদিকে শুধু সবুজ...কিছু চেনা আর কিছু না জানা কতরকমের গাছ, কোনটা ফুলে ভরা, কোনটায় শুধু পাতা...তার মাঝে মাঝে ছোট ছোট ছবির মতো সুন্দর এক একটা কটেজ...আমাদের কটেজটা একেবারে উপরের দিকে ছোট্ট একটা টিলার উপরে...বেশ কিছুটা নীচে সমুদ্রের নীল জল...এতদুর থেকে ঢেউগুলোও যেন কত ছোট দেখাচ্ছে... ভেতরে ঢুকে আরো একবার অবাক হবার পালা...এত সুন্দর সাজানো গোছানো...ছবিতে দেখেছি এর আগে কিন্তু ভাবতেই পারিনি তুমি আমাকে নিয়ে আসবে এরকম একটা জায়গায়। আমাকে অবাক হয়ে যেতে দেখে আরো কাছে টেনে নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলে আমার পছন্দ হয়েছে কিনা... তোমার বুকে মাথা রেখে চুপ করে থেকে বুঝিয়েছিলাম আমার ভীষন পছন্দ হয়েছে...আর তার থেকেও বড় কথা তুমি সাথে থাকলে এই পৃথিবীর যে কোন জায়গাই আমার কাছে স্বর্গের চেয়েও সুন্দর...
 
বিশ্বাসই হচ্ছিল না শুধু তুমি আর আমি...আর কেউ কোথাও নেই...কোনো কিছু ভাবার নেই। দুজনে মিলে যখন যা ইচ্ছে হয়েছে তাই করেছি...সময়ের কথা কে মনে রাখবে বলো... এক একটা মুহুর্ত যেন এক একটা স্বপ্নের টুকরো। তুমি চাওনি সেই স্বপ্নের টুকরো গুলোকে শুধুমাত্র শরীরের কথা ভেবে গুঁড়িয়ে দিতে..ঘন্টার পর ঘন্টা কিভাবে কেটে যেত বুঝতেই পারতাম না...কখোনো বা পাশাপাশি বসে থাকা...কখোনো বা হাত ধরাধরি করে হেঁটে যাওয়া, সব কিছুতেই যেন আমরা খুশী ছিলাম। তোমার আমাকে নিবিড় করে চাওয়ার সেই সব মুহুর্ত গুলো যেন আজও আমার মনে গেঁথে আছে। আমার সব থেকে ভালো কি লেগেছিল জানো? তুমি একবারের জন্যও চাওনি আমার স্বাভাবিক স্বভাবে কিছু পরিবর্তন আসুক...তুমি চেয়েছিলে তোমার মৌমি সোনা সেই আগের মতোই একটু নরম...একটু লাজুক থাকুক...আমি তোমার অনেক কাছের হয়ে গেলেও যেন থাকে কিছু অদেখা...অচেনা...তুমি মুখে কিছু না বলেও বুঝিয়েছিলে সবই যদি দিনের আলোর মতো পরিস্কার হয়ে যায় তাহলে কি আর দেখতে চাওয়ার ইচ্ছেটা থাকবে? থাক না একটু আড়াল...
 
একদিন তুমি আমাকে সাজিয়েছিলে নিজের মতো করে... গলায় পরিয়ে দিয়েছিলে গুলঞ্চ ফুলের মালা, চুলে গুঁজে দিয়েছিলে আরো দুটো ফুল...শুধু কি তাই? হাতেও ছিল ফুলের বালা। তুমি আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছিলে...আয়নায় নিজেকেই নিজে চিনতে পারছিলাম না...ঠিক যেন আমি কোনো স্বল্পবাস দ্বীপবাসীনি... লাজুক মুখে চুপ করে মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলাম... আমার অবাধ্য চোখ দেখতে চাইছিল তোমাকে..নিজের অজান্তেই মুখ তুলে তাকিয়েছিলাম... তুমি চোখের পলক না ফেলে তাকিয়ে ছিলে আমার দিকে...ভাবছিলাম, দুষ্টুটা এখন কি কিছু ভাবছে নাকি শুধুই দেখে যাচ্ছে? না না...শুধু তো দেখছে বলে মনে হচ্ছে না...ওর চোখ দুটো যেভাবে বুজে আসছে মাঝে মাঝে তাতে তো মনে হচ্ছে যেটুকু আবরন আছে আমার শরীরে তা না থাকলে কি হোতো তাই ভাবছে। ইস, কি অসভ্য...না, আমি আর পারছি না এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে...কেমন যেন শিহরন জাগছে... পা দুটো থরথর করে কেঁপে উঠছে...তুমি হয়তো বুঝেছিলে আমাকে...কোলে তুলে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দিলে পাশ ফিরে যেতে চেয়েছি, না...কিছুতেই দেখতে দেবো না তোমাকে... ওইভাবে আবরনের আড়ালে থেকেও নিরাবরন হয়ে যেতে তোমার মনের ক্যমেরায়...শুনবে নাকি তুমি আমার কথা...চুমু দিতে দিতে তোমার একটা দুষ্টু হাতটা কোথায় যেন ঘোরা ফেরা করছিল...আঃ, ইস...উমমম...না-আ...করে বাধা দিলে শুনছেটা কে? আমার নাকের পাটা নাকি ফুলে ফুলে উঠছিল, ফর্সা মুখে রক্ত জমে গিয়ে নাকি আরো মিষ্টি দেখাচ্ছিল...চোখ খুলে রাখতে না পেরে তোমাকে নিজের উপরে টেনে নিয়ে আশ্লেষ ভরা গলায় বিড়বিড় করে কি বলেছি নিজেই জানি না... তারপর? কি জানি তারপর কি হয়েছিল...তুমি কি আমাকে আর কিছু মনে রাখার সুযোগ দিয়েছিল?
 
আরো একটা রাতের কথা কি ভুলতে পারবো নাকি কখোনো? মাঝ রাত কখন পেরিয়ে গেছে জানিই না... আমাদের কটেজের সামনের বাগানে দোলনায় আমরা দুজনে...তোমার বুকে মাথা রেখে আমি শুয়েছিলাম...আকাশে ঘন মেঘ...মাঝে মাঝে উল্টোপাল্টা হাওয়া এসে চারদিকের গাছগুলোকে নাড়িয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছিল। পাশের নারকেল গাছ থেকে একটা ডাবের কুশি খসে পড়ল একটু দুরেই... দোলনায় তোমার বুকে মাথা রেখে শুয়ে থাকতে থাকতে একবার মুখ তুলে ভালো করে তোমার বুকে নিজেকে আটকে রেখে শুয়ে থাকতে থাকতে মনে হচ্ছিল...নাই বা গেলাম আজ শুতে...এখানেই থেকে যাই না আজ রাতটা... এক ফোঁটা দু ফোঁটা করে বৃষ্টি জল গায়ে এসে পড়ছে...পড়ুক না...কি আসে যায় তাতে...
আস্তে আস্তে বৃষ্টির জোর বাড়ছে...একটু কি শীত শীত করছে? তাই হবে হয়তো...দুরের গার্ডেন লাইটের আবছা আলো বৃষ্টি ভেদ করে এতদুর আসছে না ঠিক...আলো আঁধারের লুকোচুরি আর ঝমঝম বৃষ্টির জলে ভিজতে ভিজতে দুই প্রেমিক হৃদয় চুম্বনে চুম্বনে ভরিয়ে দিচ্ছে একে অপরকে...কোথায় আছে বোঝার কিছু আছে কি? দোলনাতে চুপচাপ শুয়ে থাকা যায়...আদর করা যায় কিন্তু তার থেকে বেশি কিছু? কখন আমাকে বুকে তুলে নিয়ে তুমি গার্ডেন চেয়ারে চলে এসেছে বোঝার দরকার হয়তো ছিল না...তারপর? তারপর তোমার সেই পৃথিবী ভোলানো ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে তুলেছিলে...আমিও পারিনি নিজেকে আটকে রাখতে...আমাদের আকাঙ্খার উত্তাপে বৃষ্টির ফোঁটা আমাদের শরীরকে আর ভেজাতে না পেরে হয়তো বাস্প হয়ে ফিরে যাচ্ছিল... হয়তো জ্ঞান হারিয়েছিলাম তোমার আমার সেই ভালোবাসার স্ত্রোতে ভেসে যেতে যেতে...তারপর একটু একটু করে আমি ফিরে পেয়েছিলাম আমাকে...তুমি আমাকে বুকে আগলে রেখেছিলে...কি যে হয়েছিল তারপর কে জানে আমার...এই খোলা আকাশের নীচে তুমি আমাকে ভালোবেসেছ ভাবতে গিয়ে কিছুতেই যেন মেনে নিতে পারছিলাম না...কিভাবে যে টাওয়েলটা গায়ে জড়িয়ে ফিরে এসেছিলাম কে জানে...তুমি ফিরে এলে আমার পেছনে পেছনে...ভীষন অভিমান হচ্ছিল যখন তুমি আমার দিকে তাকিয়েছিলে দুষ্টুমির হাসিতে তোমার মুখ ভরিয়ে...ভাবছিলাম...না তাকাবো না তোমার দিকে...অসভ্য, জংলী একটা ভুত...ছি ছি...লজ্জা নেই...যদিও এত রাতে ওখানে কেউ থাকার কথা নয়...তবুও কেউ দেখেছে কিনা কে জানে ভাবতে ভাবতে শুনলাম এই, সোনা...তাকাও প্লিজ...তোমার অনুনয়ের গলায় বলা কথাগুলো শুনেও আমি জেদ করে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে ছিলাম...তুমি আমার সামনে এসে দাঁড়ালে...আমাকে বোঝাবার চেস্টা করলে...আমি কি পারবো বলো তোমার কথা ফেরাতে...সবকিছু ভুলে গিয়ে তোমার হাতের বাঁধনে নিজেকে সমর্পন করেছিলাম ...আবার সেই সুখের মুহুর্ত গুলোর কথা মনে পড়ে গেলে আর নিজেও কি করেছি মনে পড়ে গেলে লজ্জা পেয়ে গিয়ে বুকে মুখ লুকিয়ে ফেলে শুনলাম এই, চলো স্নান করে আসি। বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলেছিলাম...উমম না...এক সাথে না...তুমি আবার দুষ্টুমি করবে। আমি না না করলে কি হবে...তুমি কি শুনবে নাকি? ঠিক সেই আমাকে কোলে করে তুলে নিয়ে গিয়েছিলে... এত সময় বৃষ্টিতে ভেজার পর ভীষন শীত করছিল...তোমার বুকের ভেতরে কেঁপে কেঁপে উঠছিলাম আমি...দুজনে মিলে থেকে উষ্ণ জলের ধারায় ভিজতে ভিজতে অনুভব করেছিলাম তোমার আকাঙ্খার উষ্ণতা...একটু একটু করে সেই উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়েছিল আমার সারা শরীর মনে...আবার আমরা দুজনে হারিয়ে গিয়েছিলাম দুজনায়...
 
আর পারছি না গো লিখতে আজ...পরে আবার লিখবো ভাবতে গিয়ে মনে পড়ে গেল সেই গানটার কথা... আজ তবে এইটুকু থাক... বাকি কথা পরে হবে’...
 
আমার আকাশ
 
উমম...আ-মা-র আ-কা-শ...আচ্ছা বলোতো...আমার আকাশ...এটার মানে কি? হুম...কি এত ভাবছো বলোতো...ইশ...বলতে পারলে না তো? আচ্ছা শোনো...আমার আকাশ মানে হচ্ছে...তু-মি...শুধু তুমি। জানোতো...তুমি আমাকে যখন মৌ-মি বলে ডেকেছিলে...তোমার মুখে যেন আরো মিষ্টি লাগছিল শুনতে...তখনই আমার ইচ্ছে করছিল...তোমাকেও এমন একটা নামে ডাকবো যা শুধু তুমি আর আমি ছাড়া আর কেউ জানবে না। অনেক ভেবে ভেবেও কিছুতেই ঠিক করতে পারছিলাম না কি নামে তোমাকে ডাকা যায়। ভীষন খারাপ লাগতো...কাঁদতে ইচ্ছে করতো। আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে তুমি ভাবতে হয়তো আমার মন খারাপ... বার বার জানতে চাইতে কি হয়েছে..তোমাকে বলতে পারতাম না কেন আমার মন খারাপ...আরো খারাপ লাগতো।
 
তারপর অনেকদিন কেটে গেছে... একদিন সন্ধের মুখে ছাদে দাঁড়িয়ে আছি একা একা...সূর্য অস্ত গেছে অনেক আগেই...পুর্নিমার মিষ্টি চাঁদের আলোয় চারদিক ভেসে যেতে শুরু করেছে...তোমার কথা ভাবতে ভাবতে দেখছি আকাশের বুকে নাম না জানা এক নিঃসঙ্গ পাখীর উড়ে যাওয়া... মুগ্ধ চোখে তার উড়ে যাওয়া দেখতে দেখতে খুশীতে বুক ভরে উঠেছিল...ওই পাখীটার মতোই তো আমি... মনে পড়ে গেল তোমার লেখা কথাগুলো...সবাই যখন তোমাকে দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে বলেছিল তখন তো তুমি আমাকে ফেলে চলে আসোনি স্বার্থপরের মতো... কোনো কিছু না ভেবেই বুকে আগলে রেখেছিলে...নিয়ে এসেছিলে সাথে করে একটা অসহায় অজ্ঞান মেয়েকে... হারিয়ে যেতে দাওনি তাকে...আকাশের মতোই বিশাল হৃদয় নিয়ে তোমার বুকে আশ্রয় দিয়েছিলে...তাই তোমাকে আমার আকাশ ছাড়া আর কি নামে ডাকবো বলো...
 
 
তোমার ছোট্ট ইচ্ছে
 
বাড়ীতে শাড়ী, সালোয়ার কামিজ বা অন্য যা খুশী একটা পরলেই হয়... আর কারুর কোনো আপত্তি নেই তো কি হয়েছে তোমার তাতে ভীষন আপত্তি আছে তবে সেটা শুধু বিশেষ সময়ের জন্য...অন্য সময় যাই পরি না কেন তোমার কিছু বলার নেই...আমি নাকি যাই পরিনা কেন তাতেই আমাকে ভীষন সুন্দর দেখায়...কি জানি তাই হবে হয়তো...তোমার চোখেই তো আমি নিজেকে দেখতে পাই। শুধু তোমার ইচ্ছেতেই ছুটির দিনের সকালে স্নান করার পর শাড়ী পরতেই হবে আমাকে...না হলে যে তুমি আবার অভিমান করে বসে থাকবে। স্নান করে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শাড়ীটা ঠিক করে পরতে গিয়ে তাকাবো না ভাবতে ভাবতেও নিজের অজান্তে আড় চোখে তোমার দিকে তাকাবো...আমি তোমাকে ছেড়ে উঠে যাওয়ার পর তুমি তোমার পুরোনো সঙ্গীকে খুঁজে পেতে নিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে চুপ করে শুয়ে আছো দেখে নিজের কাজে মন দেবো। তোমার দিকে আর ফিরে না তাকালেও আমি জানি বুকের আঁচলটা সরিয়ে আবার ঠিক করে নেওয়ার সময়টুকুতে তুমি চোখের পলক না ফেলে তাকিয়ে থাকবে আমার দিকে। কি যে ভালোবাসো শুধু দেখে যেতে তা হয়তো শুধু তুমিই বোঝ। তুমি ভালোবাসো দেখে যেতে তাই হয়তো আমার যেন কিছুতেই ইচ্ছে করবে না তাড়াতাড়ি আঁচলটা ঠিক করে নিতে...তোমাকে দেখাবার অছিলায় বারে বারে মনে হবে...কোথায় ঠিক করা হল আমার বুকের আঁচল...শুধু কি তাই নাকি...হাঁটু ভাঁজ করে পা দিয়ে শাড়ির পাড় চেপে ধরে শাড়ীটাকে আরো কিছুটা নামিয়ে দেওয়া দেখতে নাকি তোমার এত ভালো লাগে যে বলে বোঝাতে পারবে না। তারপর? তারপর...তোমাকে ওইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আমি কপট শাষন করার ভঙ্গীমাতে চোখ পাকিয়ে তাকালে নাকি তোমার ঠিক তখনই আমাকে কাছে পেতে ইচ্ছে করে...আর তাই আমাকে তারপর তোমার কাছে এগিয়ে যেতে হয়...কাছেই যখন এসেছি তখন কি আর এমনি এমনি চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকবো নাকি...তোমার চোখে চোখ রেখে কি যেন ইচ্ছে করবে আমার আর তাই তোমার আরো কাছে এসে আলতো করে একটা ছোট্ট চুমু দিতে হয়...তাতে তোমার ইচ্ছেটা আরো একটু বাড়বে...দুহাত বাড়িয়ে দেবে...তাই তো আমার নিজেকে সমর্পন করতে হবে তোমার দুহাতের বাঁধনে... তুমি আমার বুকে মুখ গুঁজে চুপ করে থাকবে...আমি শিউরে উঠতে উঠতে অস্ফুট স্বরে এই ছাড়ো বললে আরো বেশী করে মুখ গুঁজে দেবে বুকে...মুখ ঘষতে ঘষতে বলবে...উমমম...না ছাড়বো না...তারপরে আমাকে টেনে নেবে আরো কাছে... আমার বুকের আঁচল যেন তোমার ছোঁয়া পেয়ে নিজেই হারিয়ে যাবে একটু একটু করে...তুমি বুক ভরে আমার সদ্যস্নাত শরীরের সুগন্ধ নিতে নিতে আরো কিছু পেতে চাইবে...তোমার দুষ্টুমির সাথে আমি পেরে উঠবো না নাকি নিজেই ছাড়া পেতে চাইবো না কে জানে...কখন যে তোমার আমার মাঝের শেষ আবরনটুকু হারিয়ে যায় তুমিই জানো...তারপর তোমার দুষ্টু ঠোঁট দুটোর ছোঁয়া পেয়ে আমার নিজেকে হারিয়ে ফেলতে ফেলতে মনে হয়... ইশ, আর নয় এখন...ফিস ফিস করে বলি...এই...ছাড়ো...লক্ষী সোনা আমার... একবার নয় দুবার নয়...বারে বারে শুনেও তুমি আমাকে ছাড়তে চাও না...তারপর কি মনে করে নিজেই ছেড়ে দিয়ে দুষ্টুমি ভরা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে যেন বলতে চাইবে...তোমারও তো ভালো লাগছে তাই না? আমি লজ্জা পেয়ে গিয়ে তাড়াতাড়ি করে নিজেকে তোমার চোখের আড়ালে নিয়ে যেতে যেতে নিজের মনেই বলবো...লাগে তো ভালো...ভীষন ভালো... 
Like Reply
#23
ভয় করে
 
এই, জানো তো...মাঝে মাঝে আমার না ভীষন ভয় করে...অকারনে বুকের ভেতরটা কেঁপে ওঠে...তোমার অফিসে এত সুন্দর সুন্দর মেয়ে আছে ...তাদের সাথে তো তোমাকে দিনের অনেকটা সময় কাটাতে হয়... যতই সুন্দর হই না কেন আমি তো আর ওদের মতো এত স্মার্ট নই... আমি যদি একটু একটু করে তোমার কাছে একঘেয়ে হয়ে যাই ভেবে কান্না পেয়ে যায়... কি সব আবোল তাবোল ভাবি...একা একা চুপ করে থেকে ভাবতে ভাবতে ইচ্ছে করে তখুনি চলে যাই তোমার কাছে...এই, কিছু মনে করবে না...আমি জানি এসবের কিছুই হবে না...তুমি তো আর বাকি পাঁচজনের মতো নয়... এত সুখ কি সইবে আমার কপালে ভাবতে গিয়েও মনে হয়...এগুলো আমার দুঃস্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই নয়...তবুও, সব জেনেও কষ্ট পাই...তোমাকে হারানোর ভয়ে আরো বেশী করে তোমাকে ভালোবাসতে চাই...একদিন নাকি ঘুমের ঘোরে আমি কিসব বলে ছিলাম বিড়বিড় করে...তুমি পরের দিন সকালে আমার দিকে তাকিয়ে আছো দেখে জিজ্ঞেস করেছিলাম...কি হয়েছে, এমন করে তাকিয়ে আছো কেন? তুমি আমাকে কাছে টেনে নিয়ে বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থেকে আস্তে করে বলেছিলে ঘুমের ঘোরে আমি কি বলেছি...তারপর বলেছিলে... মৌমি...তোমার ভয় পাওয়ার মতো কিছু তো আমি করিনি...আমি তোমার কথা শুনে কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না...সত্যিই তো আমার কিছু বলার ছিল না, আমি তো জানি সব কিছু জেনেও আমি নিজেও জানিনা কেন আমি ভয় পাচ্ছি। আমাকে কেঁদে ফেলতে দেখে তুমি কি করবে বুঝতে পারছিলে না হয়তো...তারপর আমি নিজেই তোমাকে বলেছিলাম একটু একটু করে...তুমি চুপ করে থেকে শুনেছিলে আমার ভয়ের কথা... তারপর আমাকে আদর করে বলেছিলে পাগলী কোথাকার...আমার বুকের ভেতরের পাথরটা সরে গেছে ততক্ষনে...তোমার বুকে মাথা রেখে বলেছিলাম... জানি তো...
 
 
 
আমি তোমাকে ভালোবাসি
 
এই... জানো তো...আমার একটা কথা খুব জানতে ইচ্ছে করে...কি বলোতো? ধ্যাত, বলতে পারলে না তো?...আচ্ছা শোনো...আমার জানতে ইচ্ছে করে ... তুমি কি কখোনো আমি তোমাকে ভালোবাসিবলেছো কিনা বা আমি তোমাকে ওই কথাটা বলেছি কিনা। উঁ হু...না না...আমি এখনকার কথা আমি জিজ্ঞেস করছি না....আমরা যেদিন আবার দুজন দুজনকে ফিরে পেয়েছিলাম তারপর থেকে না আমি ...না তুমি ওই কথাগুলো একবারের জন্যও উচ্চারন করেছি...সেটা তো আমি জানিই...আমি তো তখনকার কথা বলছি, যখন আমি সবকিছু ভুলে গিয়েছিলাম...তোমাকে ছাড়া নাকি আর কিছু চাইতাম না...বুঝলে তো...জানো তো কতবার তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখেছি...তুমি তো কোথাও লেখোনি...আরো কত কিছু লিখেছ...আমার কথা যেখানেই লিখেছ...তোমার লেখা প্রতিটি অক্ষর যেন নীরবে বলে গেছে তুমি আমাকে কত ভালোবাসো...কই এটা তো লেখোনি...কেন বলোতো? আচ্ছা থাক... মুখে না বললে কি হয়েছে...তুমি আমাকে কত ভালোবাসো সে কি আমি বুঝিনা নাকি...তোমার দুচোখ আমাকে বলে দেয় তুমি কি চাও...তুমিও বুঝে নাও আমি কি চাই...এটাই তো ভালোবাসা...মুখে কিছু না বলেই কত কিছু বলা যায় তা আর কেউ বোঝে কিনা জানা নেই...আমি জানি তুমি বোঝো সেটা... আচ্ছা, আমরাই কি এই পৃথিবীর একমাত্র লাভ বার্ডস যারা নিজের মুখে বলেনি কথাগুলো...শুধু জানিয়েছে তাদের চোখের আর শরীরের ভাষায়? কি জানি, তাই হয়তো হবে...
 
চলে যেতে হবে একদিন
 
জানো তো, কয়েক দিন ধরে একটা কথা ভাবছিলাম, তোমাকে বলি বলি করেও বলা হয়ে ওঠেনি। আমাদেরও একদিন বয়স হবে, চলে যেতে হবে এই সুন্দর পৃথিবী, প্রিয়জন সবাইকে ছেড়ে... ভীষন কষ্টে বুকের ভেতরটা দলা পাকিয়ে ওঠে... না, চলে যেতে হবে তার জন্য নয় সেই কষ্ট...এসেছি যখন যেতে তো হবেই...তুমি বা আমি কেউ আগে চলে যেতে পারি সেটা ভেবেই কান্না পেয়ে যায়। কেমন যেন লাগে... যখন কাউকে বলতে শুনি যে সে তার খুব প্রিয়জনের আগে চলে যেতে চায়... আচ্ছা তুমি বলো...এটা কি ভীষন স্বার্থপরের মতো ইচ্ছে নয়? ভালোবাসার মানুষটাকে ছেড়ে কেউ একজন আগে চলে গেলে অন্যজনের কি কষ্ট হতে পারে সেটা কি বোঝে না যখন কথাগুলো বলে? আমার কি ইচ্ছে করে জানো...দুজনেই যদি এক সাথে চলে যেতে পারতাম...একদিন সবাই দেখতো তোমার বুকের ভেতরে আমি...দুজনেই চলে গেছি চির ঘুমের দেশে একসাথে...জানি না, পুনর্জন্ম বলে সত্যি কিছু আছে কিনা...না থাকলেই ভালো...আমরা দুজনে সেই চিরঘুমের দেশে থাকবো একসাথে...যেমন আছি এখন... জানি, ইচ্ছে থাকলেই হয় না সব কিছু...তবুও কি আমরা চাইতে পারি না...বলো...
 
 
রুপকথার গল্প
 
মাঝে মাঝে কি মনে হয় জানো... আমাদের জীবনটা ঠিক যেন রুপকথার গল্প। তুমি সেই রুপকথার রাজকুমার আর আমি রাজকুমারী। আচ্ছা...আমি যেন তোমার কি? ও হ্যাঁ, আমি তোমার সুইট প্রিন্সেস... তোমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ...আমাকে ছাড়া তুমি নাকি অসম্পুর্ন। আচ্ছা, আমিও কি তাই নয়...তোমাকে ছাড়া আমার কি কোনো অস্তিত আছে? না গো নেই...তুমিও জানো...আমিও জানি। এই রাগ করবে না কিন্তু...তোমার আদরের মৌমি...তোমার সুইট প্রিন্সেস কিন্তু শুধু তোমার নয়...সে যে এই পরিবারের সকলের চোখের মনি...তাকে দেখতে না পেলে ভালো লাগে না কারুর...তার কিছু হলে সবাই চিন্তায় পড়ে যায়...উতলা হয়ে ওঠে... না, আমি তোমার দিদান...তোমার দাদু...তোমার জেঠু, জেঠিমা...দিদি বলবো না...ওরা সবাই আমারও ঠিক ততটাই...যতটা তোমারও...সবাই এত ভালোবাসে যে নিজেকে সত্যিই সেই রুপকথার রাজকুমারীর মতো মনে হয়... তবে সেই রাজকুমারী মোটেও অহঙ্কারী নয়...একটু নরম...একটু লাজুক...তবে, একটু দুষ্টুমি যে নেই তা বলা যাবেই না। উঁ হু...সে মোটেও দুষ্টুমি করে না আর কারুর সাথে...সে দুষ্টুমি করে শুধুই তোমার সাথে...কি করবে বলো...তুমিই তো শিখিয়েছো তাকে। এই যাঃ... ভুল বললাম যে...তোমার রাজকুমারীর অহঙ্কার যে একটুও নেই তা তো নয়...নিশ্চয় আছে, তবে সেটা একেবারেই অন্য কারনে...আচ্ছা, কি কারনে বলতে পারবে? জানি তো, তুমি বলতেই পারবে না...আমিই একমাত্র জানি আমার অহঙ্কার কোথায়...আমার অহ্নকার তুমি... শুধু তুমি...আর কিছু নয়... তোমাকে পাওয়ার গর্বে যে আমার পা মাটিতে পড়তে চায় না...আমার কি দোষ বলো তাতে...
 
তুমি যখন অনেক রাত পর্যন্ত কাজ নিয়ে বসে থাকো...আমার ঘুম আসে না...চুপটি করে শুয়ে থাকি আর ভাবি কখন তুমি আসবে...আমার দিকে তাকালে নাকি তোমার কাজে ভুল হয়ে যায়...তাই তুমি আমার দিকে তাকাও না...উঁ হু...তুমি তাকাতে চাও না তা নয়...আমিই তোমাকে বারন করেছি। কাজে ভুল হয়ে গেলে তো তোমাকেই আবার ঠিক করতে হবে আর তাতে তো আরো বেশী দেরী হয়ে যাবে... তাই না। নিজেই তোমাকে বলেছি আমার দিকে তাকাতে না...আবার আমি নিজেই অভিমান করে বসে থাকি...কেন তুমি তাকালে না ভেবে...একবার তো তাকিয়ে দেখতে পারতে আমি কি করছি দেখার জন্য...কি এমন ক্ষতি হয়ে যেতো তাতে...আমি বললেই কি সব কথা শুনতে হবে নাকি...নিজেই আবার নিজেকে বোঝাই...মনে মনে হেসে ফেলে তোমাকে ভেঙ্গিয়ে দি...ভাগ্যিস তুমি আমাকে দেখে ফেলোনি কোনোদিন...না হলে হয়তো ভাবতে কি বিচ্ছিরি একটা পাগল মেয়ের পাল্লায় পড়েছো...তারপর তোমার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন চোখ বুজে আসে বুঝতে পারি না। কোনো কোনো দিন ঘুমিয়ে পড়ি তোমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে। বুঝতেই পারিনা তুমি কখন এসে শুয়ে পড়েছ...আমি ঘুমিয়ে পড়েছি দেখে আর ডাকোনি...তারপর যখন আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়...তুমি কিভাবে যেন বুঝতে পারো, আমার আরো কাছে চলে আসতে চাও...তোমার ছোঁয়া পেয়ে আবার অভিমানে বুক ভরিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে...না তুমি আমার কাছে আসবে না বলে তোমাকে দূরে ঠেলে দিতে চাই...জানি তুমি আমাকে তা করতে দেবে না......তোমার বুকে মুখ গুঁজে দিয়েও তোমাকে দূরে সরানোর মিথ্যে অভিনয় করে যাবো...তুমি ভালো করেই জানো আমিও পারবো না তোমাকে দূরে সরিয়ে রাখতে...চুপ করে থেকে আমার আদরের কিল খাবে...আমাকে আরো কাছে টেনে নেবে...একটু একটু করে আমি অভিমান ভুলে গিয়ে তোমাকে বকুনি দেবো...কেন তুমি দেরী করলে...তুমি চুপ করে শুনবে...তোমাকে চুপ করে থাকতে দেখে আমি আবার ছটপট করে উঠতে চাইবো...তুমি আমাকে...উঁ হু...তারপরেরটা আমি আর বলতে পারবো না...তুমি তো জানোই তারপর কি......
 
আচ্ছা, তুমি নিশ্চয় ছোটবেলায় ফেয়ারী টেলস পড়েছ...সব কিছুর শেষে কি যেন লেখা থাকে...উঁ হু...এবারে আর আমি বলবোই না...তোমাকেই বলতে হবে...সব কিছু কি আমাকেই বলতে হবে নাকি...
 
অরিত্র ওর মনের কথাগুলো পড়ে বেশ কিছুক্ষন চুপ করে বসে থাকল। ওর শেষ প্রশ্নটার উত্তর কি হতে পারে ভাবতে ভাবতে কপালে হাত দিয়ে দেখলো জ্বর একেবারেই নেই...ঠিকই ও বলেছিল...আমার কি এমনি এমনি জ্বর এসেছে নাকি...তোমার জন্যই তো আমার শরীর খারাপ... তুমি ফিরে এসেছো...আমার পাশে আছো... দেখবে আমি এমনিই ভালো হয়ে যাবো।
 
ভালোলাগায় বুক ভরিয়ে নিয়ে বেশ কিছুক্ষন চুপ করে বসে থাকার পর শুয়ে পড়ি ভেবে আলোটা নেভাতে গিয়েও থমকে গিয়ে থেমে যেতে হয়েছে। ওর হাতে ধরা ডাইরীটা দেখে কাজল কালো ডাগর দুটো চোখে যেন লজ্জার ছোঁয়া...নীরবে যেন বলতে চাইছে...ইশ, তুমি জেনে গেলে আমার মনের কথা? হাসি মুখে ওর দিকে তাকিয়ে আলোটা নিভিয়ে শুয়ে পড়লে কাছে এসে কাঁধে মাথা রেখে বুকের উপরে হাতটা রেখে আস্তে করে জিজ্ঞেস করল...এই, পুরোটা পড়েছ? অরিত্র ওর হাতের উপরে আলতো ভাবে চাপ দিয়ে বলল... শেষ না করে থাকতে পারলাম কই...
-              তাই?
-              হু...
-              কিছু বলবে না?
 
অরিত্র কয়েক মুহুর্তের নীরবতার পর পাশ ফিরে ওকে বুকে টেনে নিয়ে ফিসফিস করে বলল... একটা না বলা কথা বলতে আজ খুব ইচ্ছে করছে...
মৌ ওর বুকে মুখ গুঁজে অস্ফুট গলায় কি কথা জিজ্ঞেস করলে উত্তর এসেছে... আমি তোমাকে ভালোবাসি... ওর বলা ছোট্ট কথাটা শুনে বুকের ভেতরের খুশী যেন সারা শরীরে ছড়িয়ে গিয়ে ওকে কাঁপিয়ে দিয়ে যেতে চাইলে কাঁপা কাঁপা গলায় যেন বলতে চাইলো...আমিও তোমাকে ভালোবাসি... কথাগুলো ঠিক মতো শোনা না গেলেও যাকে বলা হয়েছে সে বুঝে গিয়ে ওর শরীরের শিহরন নিজের ভেতরে ছড়াতে চেয়ে চুপ করে থেকে নীরবে বলেছে...জানি...
 
আরো কিছু সময় কেটে গেছে নীরবতার ভেতর দিয়ে একে অপরকে অনুভব করায়...মৌ আস্তে করে জিজ্ঞেস করল... আমাদের রুপকথার গল্পের শেষে কি লেখা থাকবে বললে না তো...অরিত্র ওর মতোই আস্তে করে উত্তর দিল... The sweet princes marry a naughty boy & they happily lived ever after……

The End
Like Reply
#24
This story is posted as per request from ANI DAS.
pdf file has been posted by sorbobhuk https://drive.google.com/file/d/1s83h1W1...p=drivesdk
Like Reply
#25
এটা আমার পড়া অন্যতম সেরা গল্প। যেকোনো বিশেষণই যথেষ্ট নয় প্রশংসার জন্য। This writer is absolutely a legend. আমি তো সকল পাঠক-পাঠিকাদের জানাবো এই গল্পটা পড়ার জন্য।
[+] 2 users Like Mr Fantastic's post
Like Reply
#26
এই লেখকের লেখা অন্যান্য গল্পগুলো পোস্ট করার ব্যবস্থা করা যায় না কোনো ভাবে?
Like Reply
#27
Raunak-র লেখা অন্যান্য গল্পগুলোর নাম কেউ বলতে পারবেন ? 
Like Reply
#28
(21-10-2020, 07:08 PM)Mr Fantastic Wrote: Raunak-র লেখা অন্যান্য গল্পগুলোর নাম কেউ বলতে পারবেন ? 

তিস্তা তুমি অপাপবিদ্ধা  , বলে একটা ছিল , গল্পের নায়িকার নাম তিস্তা
কিন্তু ওটা সম্পূর্ণ করেননি উনি যদিও বেশ অনেকটাই লেখা হয়েছিল
দুর্দান্ত একটা মাস্টারপিস ছিল ওটা , অসম্ভব রকমের সুন্দর গল্প

Namaskar
Like Reply
#29
(22-10-2020, 10:44 AM)ddey333 Wrote: তিস্তা তুমি অপাপবিদ্ধা  , বলে একটা ছিল , গল্পের নায়িকার নাম তিস্তা
কিন্তু ওটা সম্পূর্ণ করেননি উনি যদিও বেশ অনেকটাই লেখা হয়েছিল
দুর্দান্ত একটা মাস্টারপিস ছিল ওটা , অসম্ভব রকমের সুন্দর গল্প

Namaskar

Link den
[+] 1 user Likes DEEP DEBNATH's post
Like Reply
#30
পুরোনো xossip এর এটা একটা "মাষ্টারপিস"!
[+] 1 user Likes ব্যাঙের ছাতা's post
Like Reply
#31
(03-01-2021, 10:54 PM)DEEP DEBNATH Wrote: Link den

দুঃখের বিষয় হলো গল্পটা শুধু xossip-এ ছিল। 
Like Reply
#32
(03-01-2021, 11:44 PM)ব্যাঙের ছাতা Wrote: পুরোনো xossip এর এটা একটা "মাষ্টারপিস"!

আমার কাছে সর্বকালের সেরা পাঁচ গল্পের মধ্যে অন্যতম - 1. ভালোবাসার রাজপ্রাসাদ (পিনুরাম)
2. Dawn at Midnight (পিনুরাম)
3. কোন কূলে যে ভিড়লো তরী (কামদেব)
4. মৌ কথা কও (রওনক)
5. জীবনের অপর পৃষ্ঠা (কামদেব)
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply
#33
(25-02-2019, 01:01 PM)pcirma Wrote: This story is posted as per request from ANI DAS.
pdf file has been posted by sorbobhuk https://drive.google.com/file/d/1s83h1W1...p=drivesdk

অস্থির গল্পটা  clps
সংগ্রহ করতে চাই কোনো একদিন পড়ার জন্য
এই লিংকটা ওপেন হয় না।
প্লিজ এই গল্পের গুগল ড্রাইভ লিংকটা দেন
Like Reply
#34
লেখক  এতোটাই আবেেগ   দিয়ে গল্প টা  লিখেছে, সব  চরিত্র গুলো  যেন  একদম  জীবন্ত  হয়ে  চোখের সামনে  ভেসে  উঠেছে।  মন  ভরিয়ে দেওয়া    অসম্ভব  সুন্দর।
 








PROUD TO BE KAAFIR  devil2


                                 
Like Reply
#35
(24-01-2022, 03:30 PM)Kallol Wrote: লেখক  এতোটাই আবেেগ   দিয়ে গল্প টা  লিখেছে, সব  চরিত্র গুলো  যেন  একদম  জীবন্ত  হয়ে  চোখের সামনে  ভেসে  উঠেছে।  মন  ভরিয়ে দেওয়া    অসম্ভব  সুন্দর।

কিন্তু এই সুন্দর সৃষ্টি টাকেও রেটিং নিচে নামাতে ভোলেনি ওই শুওরের বাচ্চাগুলো ... যারা রোজ রাতে নিজের মা অথবা বোনকে চুদে ঘুমোতে যায়

Like Reply




Users browsing this thread: 7 Guest(s)