Posts: 577
Threads: 3
Likes Received: 797 in 298 posts
Likes Given: 364
Joined: Feb 2019
Reputation:
64
(Update No. 156)
কিন্তু আজ থেকে বছর দেড়েক আগে তার জীবনে এমন আরেকটা ঘটণা ঘটেছিল যে তারপর থেকে তার পছন্দ অপছন্দগুলো অনেকটাই বদলে গেছে। তার ছেলে বিকি তার বন্ধুদের সাথে মিলে এমন একটা নাটকের অবতারণা করেছিল যে তারপর থেকে সে তার ছেলের বয়সী ছেলেদের সাথে সময় কাটাতেই সবচেয়ে বেশী সুখ পায়। কমবয়সী ছেলে গুলোর উৎসাহ উদ্দীপণা আর সম্ভোগ ক্ষমতা তাকে পাগল করে তুলেছে। সে এখন সবসময় উঠতি বয়সের ছেলে ছোকড়ার সান্নিধ্য পাবার জন্যেই উন্মনা হয়ে থাকে। আর তার ছেলে বিকি এ ব্যাপারে তার মাম্মিকে খুব সাহায্য করছে। এখন রাত ন’টার পর বাড়ি পৌঁছেই সবিতা তার ছেলে বিকিকে কাছে পায়। বিমল আগরওয়ালা রাতে বাড়ি ফিরে আসবার আগেই বিকি প্রায় রোজই তাকে ঘন্টা খানেক ধরে চরম তৃপ্তি দিয়ে থাকে। আর বিমল যেদিন রাতে বাড়ি ফেরে না, সে’রাতে তো বিকিই তার সারা রাতের শয্যাসঙ্গী হয়ে তার শরীরটাকে কানায় কানায় ভরিয়ে দেয়। সারাটা রাত তারা কাম-পাগল প্রেমিক প্রেমিকার মত কাটায়। সে এখন বলতে গেলে তার ছেলের যৌনক্রীতদাসী হয়ে পড়েছে। ছেলের ডাক পেলেই সে সারা বিশ্ব সংসারের সব কিছুই যেন ভুলে যায়। এতদিন তার স্বামী বিমলের কাছে সে কোন কিছুই গোপন করত না। কিন্তু ছেলে আর ছেলের বন্ধুদের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলবার কথাটা সে কিছুতেই তার স্বামীকে জানাতে পারেনি।
ফ্রুট স্যালাড আর কোল্ড ড্রিঙ্কস খেতে খেতে সবিতা এ’সব কথাই ভেবে যাচ্ছিল। রাত প্রায় পৌনে আটটা বেজে গেছে। আজ আর এমন কাউকে পাওয়া গেল না, যার সাথে ওপরের রুমে গিয়ে অন্ততঃ ঘন্টাখানেক সময় কাটানো যেত। আজ দিনটাই তার বলতে গেলে মাটি হয়ে গেল। ছেলে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবে শুনে সে খুব খুশী হয়েছিল। ভেবেছিল আজ হোটেলে আসবেই না। ছেলে তাকে হতাশ করেছিল বলেই অন্য কারো কাছ থেকে সাময়িক সুখের আশা করেই সে হোটেলে এসে পৌঁছেছিল। কিন্তু এখানেও হতাশা। ম্যানেজার বাবুর হাতেও কোন ডিল ছিল না। আর রাত আটটা প্রায় বাজতেই চলল। এর মধ্যে সে নিজেও কাউকে খুঁজে পেল না। কিন্তু সে চাইলে বিকির কোন এক বন্ধুকে ডেকে নিতে পারত। তার এক ডাকেই তারা যে কেউ ছুটে আসত। কিন্তু নিজের জীবনের কথাগুলো কেন যে আজই তার মনে পড়ল! ও’সব কথা ভাবতে ভাবতেই তো সময় প্রায় ফুরিয়ে এল। এখন আর বসে থেকেও কোন লাভ হবে না।
কোল্ড ড্রিঙ্কসের বোতলের শেষ তলানিটুকু গলায় ঢেলে সে নিজের ব্যাগটা হাতে নিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে যাবার মূহুর্তেই সবচেয়ে কাছের কেবিনটার পর্দা খানিকটা সরে যেতেই পর্দার ফাঁক দিয়ে কেবিনের ভেতরে রাকেশকে দেখতে পেয়ে সে অবাক হয়ে সেদিকে চেয়ে রইল। রাকেশ তার ছেলে বিকির বন্ধু। বিকিরই সমবয়সী। বন্ধুদের সাথে মিলে আর আলাদা একাও সবিতাকে সে বেশ কয়েকবার ভোগ করেছে। রাকেশের সাথে জীন্স টপ পড়া একটা মেয়েকেও সবিতা দেখতে পেল। যতটুকু দেখা যাচ্ছিল তাতে মনে হচ্ছিল মেয়েটা ভীষণ রকমের সেক্সি। তবে চেষ্টা করেও মেয়েটার মুখটা সে দেখতে পাচ্ছিল না। এক মূহুর্ত পরেই দেখতে পেল রাকেশ মেয়েটাকে আস্টেপৃস্টে তার বুকে জড়িয়ে ধরেছে। আর মেয়েটাও তাকে একই ভাবে দু’হাতে নিজের বুকে চেপে ধরে তার ঠোঁট দুটো নিজের মুখের ভেতর নিয়ে চুষে যাচ্ছে। মেয়েটার বুক আর শরীরের গঠণ সত্যিই খুব চমৎকার। এমন একটা মেয়েকে নিয়ে হোটেলের এই কেবিনে ঢোকবার মানে সবিতা ভালই জানে। আর সে এখন এটাও বুঝতে পারছে যে সে এই চেয়ারে এসে বসবার আগেই রাকেশ এ মেয়েটাকে নিয়ে ওই কেবিনে ঢুকেছে। ঘন্টা দুয়েকের মতই বুঝি হল। কিন্তু রাকেশ তো সবিতার মত বয়সের, ম্যাচিওরড মা টাইপ মহিলাদেরই বেশী পছন্দ করে বলেছিল। এ মেয়েটাকে দেখে তো তেমন বয়স্কা বা মা টাইপের বলে মনে হচ্ছে না।
তার ভাবনার মাঝেই রাকেশ কেবিনের দরজা দিয়ে বাইরে হলঘরে আসতেই সামনের টেবিলে বসে থাকা সবিতাকে দেখে সে অবাক হয়ে তার কাছে আসতে আসতে বলল, “আরে অ্যান্টি? আপনি এখানে? কারো অপেক্ষায় আছেন নাকি”?
সবিতা জবাব দেবার আগেই রাকেশের পেছন পেছন প্রায় সবিতার বয়সীই এক সাংঘাতিক সুন্দরী মহিলা তাদের কাছে এসে রাকেশের গা ঘেঁসে দাঁড়িয়ে পড়ে সবিতার দিকে ঈশারা করে জিজ্ঞেস করল, “রাকা বেটা, কি ব্যাপার? তুমি এনাকে চেনো নাকি”?
সবিতা বুঝতে পারল জীন্স টপ পড়া যে মেয়েটাকে সে খানিক আগে কেবিনের ভেতর রাকেশকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে দেখেছে, সে কোন কমবয়সী মেয়ে নয়। সে আসলে তারই মত সুন্দরী ও সেক্সী এক মা টাইপ মহিলা। পর্নের ভাষায় যাকে মিলফ বলে। কিন্তু শরীরটা তার একেবারে একজন সাতাশ আটাশ বছর বয়সী যুবতীর মত টসটসে।
রাকেশ ওই মহিলার কথার জবাবে বলল, “হ্যাঁ অ্যান্টি। তোমার মত ইনিও আমার আরেক অ্যান্টি। বিকির মাম্মি, মিসেস সবিতা আগরওয়ালা”।
ভদ্রমহিলাটি এবার খুব খুশী হয়ে সবিতার কাছে এসে বলল, “ওমা, তাই নাকি? বিকি রাকাদের মুখে আপনার কথা কত শুনেছি। ওরা সকলেই তো আপনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। আর সত্যি বলতে গেলে কি, ওদের কথা শুনে আমি মনে মনে আপনাকে হিংসেই করতাম যে আমার চাইতে ওরা আপনাকে বেশী পছন্দ করে। কিন্তু ম্যাডাম, সত্যি বলছি। আপনাকে দেখে আজ আমার মনের ভুল ভেঙে গেল। আপনি সত্যি সকলের মাথা ঘুরিয়ে দেবার মতই সেক্সী আর সুন্দরী”।
এ পরিস্থিতিতে অজানা অচেনা এক মহিলার সম্মুখে রাকেশের সাথে কোন কথা বলতে সবিতার ইচ্ছেই করছিল না। কিন্তু কিভাবে পরিস্থিতি সামাল দেবে, তাও যেন মাথায় আসছে না তার। এমন সময় হঠাতই রাকেশ সবিতার টেবিলের ওপর কিছুটা ঝুঁকে নিচু গলায় বলল, “অ্যান্টি, আপনি কি ফ্রি আছেন নাকি এখন”?
সবিতা রাকেশের দিক থেকে মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে চাপা গলাতেই জবাব দিল, “রাকেশ, প্লীজ আমাকে এখন ডিসটার্ব কোরো না বেটা। তোমরা বরং তোমাদের কাজে যাও। আমিও বাড়ি যাব এখন”।
রাকেশ কিছু বলে উঠবার আগেই পাশের মহিলাটি বলে উঠল, “কাম অন মিসেস আগরওয়ালা, আপনার বাড়ি যাবার সময় তো এখনও হয়নি। আটটাও তো বাজেনি এখনো? এখনো তো আরও এক ঘন্টা আপনি এখানে থাকতেই পারেন, মানে আমি যতদুর জানি, আপনার রুটিন তো সে’রকমেরই তাই না”?
মহিলার কথা শুনে সবিতার বুকটা কেঁপে উঠল। সে বুঝতে পারল যে রাকেশ বা তার বন্ধুদের কাছ থেকে এ মহিলা তার ব্যাপারে অনেক কিছুই শুনে বুঝে ফেলেছে। রাকেশকে এ পরিস্থিতিতেও সে সামলে নিতে পারত। কিন্তু জীবনে কোন মহিলার সাথে এভাবে তার মুখোমুখি হয়নি। একে কীভাবে সামলাবে তা তার মাথাতেই আসছিল না।
সবিতাকে চুপ করে থাকতে দেখে মহিলা তার কানের কাছে মুখ এনে বলল, “আপনার মত সেক্সী মহিলা আমি আগে আর দেখিনি মিসেস আগরওয়ালা। আপনার ছেলে আর তার বন্ধুরা যে কেন আপনার জন্যে এত পাগল, সেটা আমি আপনাকে দেখেই বুঝে গেছি। তাই একটা অনুরোধ করতে চাই আপনাকে। সেটা রাখবেন, প্লীজ”?
সবিতা ভেতরে ভেতরে আরেকবার কেঁপে উঠলেও কিছু না বোঝার ভাণ করে মহিলার মুখের দিকে তাকাল। কিন্তু মহিলার বদলে রাকেশ নিজেই সবিতার অন্য কানের কাছে মুখ এনে বলল, “আসলে অ্যান্টি, আমরা দু’জনে ওই কেবিনে বসে আমার মাম্মির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। মাম্মিই চেয়েছিল এই কামিনী আন্টির সাথে আর আমার সাথে একসঙ্গে থ্রিসাম খেলতে। আজ সেজন্যেই সে এই হোটেলে একটা রুম বুক করেছিল। কিন্তু দেখুন আমরা ছ’টার আগেই এখানে এসে পড়েছি, কিন্তু মাম্মির দেখা নেই। মিনিট দশেক আগে ফোন করে মাম্মি জানাল যে সে বাড়িতে আটকা পড়ে আছে। তোমার ছেলে বিকিই নাকি তাকে বাড়িতে আটকে দিয়েছে। বিকি তো কলেজ থেকে বেরিয়েই আমাদের বাড়ি গিয়েছিল। আসলে মাম্মিই বিকিকে ডেকে পাঠিয়েছিল। কিন্তু ও যে মাম্মির সাথে এতক্ষণ থাকবে সেটা আমরা কেউই আগে থেকে জানতাম না। বিকি চলে যাবার পর মাম্মি এখানে আসত। কিন্তু বিকি এখনও মাম্মিকে নিয়েই ব্যস্ত আছে। তাই মাম্মি আসতে পারছে না বলে আমরাও বেরিয়ে যাচ্ছিলাম”।
সবিতা একটু অবাক হলেও রাকেশের কথা অবিশ্বাস করতে পারল না। বিকি যে কারো সাথে শরিরী খেলায় ব্যস্ত ছিল তা সে পাঁচটার সময় যখন বিকিকে ফোন করেছিল, তখনই বুঝতে পেরেছিল। আর রাকেশের মা বিনীতাও তাকে আজ সকালেই ফোন করে বলেছিল যে সে রাকেশের সাথে আরও এক মহিলাকে সঙ্গে নিয়ে থ্রিসাম করতে যাচ্ছে আজ। কিন্তু তারা যে এ হোটেলেই আসবে সেটা সে বলেনি। বিনীতা আসলে সবিতাকেই নিতে চাইছিল তাদের টিমে। কিন্তু রাকেশের সাথে সবিতার সম্পর্ক থাকলেও কোন মেয়ে মহিলার সাথে সবিতা কখনো কিছু করেনি। তাই সে রাজি না হওয়াতে বিনীতা তাকে অনেক ভাবে অনুরোধ করেছিল যে সবিতা একবার অমন করেই দেখুক। একটা কমবয়সী ছেলে আর একজন পরিপক্ক মহিলার সাথে ও’সব করে এক অন্য ধরণের মজা পাওয়া যায়। সবিতারও এ ব্যাপারে পুঁথিগত অভিজ্ঞতা আছে। বিভিন্ন ইন্টারনেট সাইটে আর ব্লু ফিল্মের সিডিতে এমন অনেক ভিডিও আর ছবি সে দেখেছে। কিন্তু মনের মধ্যে কিছুটা ঔৎসুক্য জেগে উঠলেও সে নিজেকে অমন থ্রিসাম খেলা থেকে দুরেই রেখেছিল। তবে ছেলের পাল্লায় পরে থ্রিসামের অভিজ্ঞতাও তার ইতিমধ্যেই হয়ে গেছে। আর শুধু থ্রিসামই বা কেন, ছেলের ক্রীতদাসী হয়ে সে ছেলের বন্ধুদের সাথে পর্ন ভাষায় গ্যাংব্যাংও হয়েছে। তাতে কষ্ট বেশ হলেও তার ভালই লেগেছে। একটা নতুনত্বের স্বাদ পেয়েছিল। কিন্তু সে’সব ক্ষেত্রে অনেকগুলো ছেলের মধ্যে সে-ই একমাত্র মহিলা ছিল। জীবনের এতগুলো বছরের ভেতর সে কোনদিনই কোন মেয়ের সাথে সমকামিতায় অংশ নেয়নি। তাই মনের মধ্যে সামান্য কৌতূহল থাকা সত্বেও সে বিনীতার কথায় রাজি হয়নি। কিন্তু এ মূহুর্তে রাকেশ আর এই মহিলার মুখোমুখি হয়ে তার যে কী করা উচিৎ, কী বলা উচিৎ কিছুই যেন বুঝতে পারছিল না সে।
সবিতাকে চুপ করে থাকতে দেখে রাকেশ আবার তার কানে কানে বলল, “চলুন অ্যান্টি, আর সময় নষ্ট না করে এবার উঠুন তো। চলুন আমরা তিনজন মিলে আপনার রুমে যাই। আর ভাববেন না, ন’টার আগেই আমরা সবাই এখান থেকে বেরিয়ে যাব। আপনার রুটিনের কোনও হেরফের করতে হবে না। চলুন চলুন, আর দেরী করবেন না” বলে সবিতার হাত ধরে তাকে চেয়ার থেকে প্রায় টেনে ওঠালো।
সবিতা একবার অচেনা মহিলাটির দিকে দেখে করুন চোখে রাকেশে মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, “প্লীজ রাকেশ বেটা, অমন কোর না। আসলে আমি এই মূহুর্তে মানসিক ভাবে ঠিক প্রস্তুত নই। একটু বোঝার চেষ্টা কর বেটা। আমার শরীরটাও আজ ভাল নেই”।
এবার মহিলাটি আরেকপাশ থেকে সবিতার একটা হাত ধরে বলল, “আপনার শরীর মন দুটোই আমি ভাল করে দেব মিসেস আগরওয়ালা। আমি বুঝতে পারছি, আপনার মনে শুধু একটু সঙ্কোচ আছে। তবে কিচ্ছু ভাববেন না। আপনার রুমে পৌঁছোবার পাঁচ মিনিটের মধ্যে আপনার সব দ্বিধা, সব সঙ্কোচ আর লজ্জা আমি উড়িয়ে দেব। আর যদি তা না করতে পারি তাহলে ঠিক দশ মিনিট বাদেই আমরা বেরিয়ে যাব। আপনাকে কথা দিলাম”।
সবিতাকে আর কিছু বলবার সুযোগ না দিয়ে রাকেশ তাকে প্রায় ঠেলতে ঠেলতেই দোতলায় উঠবার সিঁড়ির দিকে নিয়ে যেতে লাগল। সবিতার যেন আত্মসমর্পন করা ছাড়া আর কিছুই করবার ছিল না। সে বুঝতে পেরেছিল রাকেশের হাত থেকে এ মূহুর্তে তার আর বাঁচবার কোন পথ নেই।
কিন্তু সত্যি কথাই বলেছিল রাকেশের সঙ্গী সেই অপরিচিতা মহিলা। সবিতার রুমে ঢুকবার সাথে সাথেই সে এমনভাবে সবিতার ওপর হামলে পড়ল, যে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই সবিতা কামোত্তেজনায় পাগল হয়ে উঠল। তার নিপুণ হাতের আর মুখের কারুকার্যে সবিতা কয়েক মূহুর্তের মধ্যেই নিজেকে হারিয়ে ফেলল। পরের সময়টুকুতে সবিতার মনে হয়েছিল যে এমন পাগল করা সুখ সে বুঝি আগে আর কোনদিন পায়নি। ন’টা বাজবার সাথে সাথে যখন সে রাকেশ আর ওই মহিলার সাথে রুম থেকে বেরিয়ে এল তখন তার শরীর আর মনের কোনায় কোনায় যেন হাজারটা জলতরঙ্গের রিনিঝিনি শব্দের অনুরণন হচ্ছিল। সব কিছু শেষ হয়ে যাবার পরেও সুখের এমন অদ্ভুত সুন্দর অনুভূতি তার জীবনে এই প্রথম পেল সে। তার শরীরটা যেন আর তার আয়ত্তে ছিল না। সেই অপরিচিতা কামিনী যেন তার শরীর মনের সবকিছুর দখল নিয়ে নিয়েছে। হোটেল থেকে বেরিয়ে আসবার সময়েও তার পদক্ষেপ স্বাভাবিক ছিল না। কামিনী আর রাকেশ দু’পাশ থেকে তাকে ধরে তার গাড়ি অব্দি পৌঁছে দিল।
*****************
সবিতার ভয় হচ্ছিল, তার শরীরের ভেতরে তখনও যে উথাল পাথাল করা সুখানুভূতির মূর্ছনা একনাগাড়ে বেজে যাচ্ছিল, তাতে করে সে গাড়ি ড্রাইভ করবার মত অবস্থায় আছে কি না। নিজের বোধবুদ্ধি হারিয়ে ফেলে সে কাঙালের মত কামিনীর একটা হাত নিজের দু’হাতের মধ্যে জড়িয়ে ধরে মিনতি ভরা গলায় বলে উঠল, “প্লীজ কামিনী। আমাকে ছেড়ে চলে যেও না। রাকেশ আর তুমি আমার সাথে আমার বাড়ি চল। সেখানে গিয়ে তোমরা দু’জনে মিলে আমাকে আরো একটু সুখ দিও। প্লীজ কামিনী”।
কামিনী সবিতাকে তার গাড়ির পেছনের সীটে বসিয়ে নিজে তার পাশে বসে সবিতার সারা শরীরে আদর করে হাত বোলাতে বোলাতে বলল, “সবিতা, তোমার নরম গরম শরীরটার সুখে আমিও তো প্রায় পাগলই হয়ে গিয়েছি। এখন মনে হচ্ছে আমার সাথে তোমার আরও আগে কেন পরিচয় হয়নি। আমারও তো মন চাইছে আমি আর রাকা তোমার সাথে আজ সারাটা রাত ধরে মজা করি। কিন্তু উপায় নেই গো। আমাদের আগে থেকেই আরো কিছু প্রোগ্রাম সেট করা আছে। এখন আমরা রাকাদের বাড়ি যাব। বিনীতাকে তো তোমার ছেলে বিকিই আটকে রেখেছিল। তাই আমাদের এখানকার প্রোগ্রামটা হয়নি। অবশ্য তোমাকে পেয়েও আমার বেশ লাভই হল। তোমার শরীরটা সত্যি অসাধারণ। এমন বয়সে এমন সুন্দর লোভনীয় শরীরের মহিলা চট করে খুঁজে পাওয়া যায় না। আমাকে তো তোমার নেশায় পেয়ে বসেছে। কিন্তু এখন আমাদের আগে থেকে ফিক্স করে রাখা দ্বিতীয় পার্টটা যে কমপ্লিট করতেই হবে ডার্লিং। রাকাদের বাড়ি থেকে বিনীতা আর রাকাকে নিয়ে আমরা আমার ফ্ল্যাটে যাব। রাকা তখন তার ল্যাপটপ আর ভিডিও ক্যামেরাটা সঙ্গে নেবে। রাকার ল্যাপটপে সব রকমের ব্লু ফিল্মের প্রচুর সুন্দর সুন্দর কালেকশন আছে। রাকাদের বন্ধুবান্ধবদেরও অনেক ভিডিও রেকর্ডিং সেখানে আছে। আর সেগুলো বাজারে কিনতে পাওয়া যায় যেসব সিডি, তার থেকেও অনেক বেশী উত্তেজক। ও’গুলো দেখতে দেখতে রাকা, আমি আর বিনীতা আবার থ্রিসাম শুরু করব। আর সেটারও লাইভ ভিডিও রেকর্ডিং করব। তারপর আমাদের নতুন ভিডিওটা দেখতে দেখতে আমরা তিনজন মিলে সারা রাত স্ফুর্তি করব আজ। তাই বুঝতেই পারছ, ইচ্ছে থাকলেও আজ আর তোমার সাথে মজা করতে পারছি না। তবে তুমি ভেবো না। তোমার ছেলে বিকি বোধহয় তুমি বাড়ি পৌঁছোবার আগেই তোমাদের বাড়ি পৌঁছে যাবে। সে নিশ্চয়ই তার মাকে হতাশ করবে না। আজ বরং তোমার ছেলের সাথেই বাকি সময়টা কাটাও। কিন্তু তোমার তো হার্টবিট এখনও যেমন ফাস্ট চলছে, তাতে এ অবস্থায় গাড়ি ড্রাইভ করা একেবারেই ঠিক নয়” বলেই রাকেশকে বলল, “রাকা বেটা, তুমি ফোন করে দেখ তো বিকি এখন কোথায় আছে। ও যদি কাছাকাছি কোথাও থেকে থাকে, তাহলে ওকে বল যে ও যেন এসে এখান থেকে গাড়ি ড্রাইভ করে সবিতাকে বাড়ি নিয়ে যায়। আমরা না হয় ততক্ষণ সবিতার সাথেই থাকি”।
রাকেশ ফোন করে যখন দেখল যে বিকি তার বাড়ি অভিমুখে রওনা হচ্ছে, তখন সে বিকিকে হোটেলের সামনে আসতে বলে দিল। তারপর সবিতার গাড়িটাকে স্টার্ট করে পার্কিং লটের কোনার দিকে একটা আধো অন্ধকার জায়গায় নিয়ে পার্ক করল। গাড়ির পেছনের সীটে সবিতাকে মাঝখানে রেখে কামিনী আর রাকেশ দু’পাশ থেকে তার তুলতুলে দেহটাকে নানাভাবে সুখ দিতে লাগল। সবিতা তাতে যেন শান্ত হবার বদলে আরও উত্তপ্ত হতে লাগল। প্রায় মিনিট পনের বাদে হোটেলের সামনে একটা অটো দাঁড়াতেই তার ভেতর থেকে বিকি বেরিয়ে এল। রাকেশ সাথে সাথে বিকিকে ডেকে উঠতেই বিকি গাড়ির কাছে এসে দাঁড়াল। তারপর পেছনের জানালা দিয়ে ভেতরের দিকে তাকিয়েই বলে উঠল, “ওয়াও। হোয়াট এ নাইস সীন” বলেই দুটো হাত একসাথে ভেতরের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে একহাতে কামিনীর আর অন্যহাতে তার মা সবিতার একেকটা স্তনভার খামচে ধরে বলল, “কি মাম্মি, আমার বন্ধুরা তোমাকে কেমন সুখ দিল? আর কামিনী আন্টির সাথে করে কেমন লাগল তোমার”?
ছেলের কাছে সবিতার লজ্জা তো অনেকদিন আগেই কেটে গেছে। ছেলের সাথে ওয়ান ওয়ান ছাড়াও ছেলে আর তার বন্ধুদের সাথে থ্রিসাম, ফোরসাম, গ্যাংব্যাং সবকিছুই করা হয়ে গেছে তার আগেই। তা সত্বেও এই মূহুর্তে ছেলের কথায় সবিতা লজ্জা পেয়ে নিজের মুখ নামালো। রাকেশ দরজা খুলে বাইরে বেরোতেই বিকি গাড়ির ভেতর ঢুকে তার মা-র বড়বড় স্তনভার দুটিকে টিপতে টিপতে তার ঠোঁটে চুমু খেয়ে বলল, “কাম অন মাম্মি। এতে লজ্জা পাচ্ছ কেন বল তো? তোমার মত সেক্সী স্মার্ট মহিলাকে এসব মানায় না। তোমাকে তো আমরা অনেক আগে থেকেই এমন থ্রিসাম, ফোরসাম করতে বলতাম। আমি জানতাম যে তুমি এতে খুব মজা পাবে। কিন্তু তুমি তো কিছুতেই রাজি হচ্ছিলে না। তাই তো আজ আমরা এভাবে প্ল্যান করে তোমাকে বোঝালাম যে এতে কেমন সুখ পাওয়া যায়। এবার তুমি বল তো? তোমার কেমন লেগেছে? তুমি কি সত্যি এনজয় করোনি কামিনী আন্টি আর রাকার সাথে থ্রিসাম করে”?
এবার সবিতা নিজের লজ্জা ঝেরে ফেলে বিকিকে চুমু খেয়ে জবাব দিল, “ও তোরা আগে থেকেই বুঝি এমন প্ল্যান করেছিলি? তাই বুঝি আগে থেকেই তাড়াতাড়ি ফিরে আসবি বলে আমাকে গরম করে রেখেছিলি”।
বিকি কামিনীর উঁচু বুকে মাথা চেপে ধরে তার মার বুকে হাত বোলাতে বোলাতে বলল, “হ্যাঁ মাম্মি। শুধু তোমাকে এ সুখ দেবার জন্যেই আমরা এভাবে প্ল্যান করেছি। আমার তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে আসার কথা, বাড়ি না এসে রাকেশদের বাড়ি চলে যাওয়া, কামিনী অ্যান্টি আর রাকার এখানে আসা, তোমার সাথে শেষ মূহুর্তে তাদের দেখা করা, তারপর তোমার রুমে গিয়ে থ্রিসাম করা, এ’ সব কিছুই আমরা আগে থেকে প্ল্যান করে সাজিয়ে নিয়েছিলাম। নইলে তোমাকে এমন থ্রিসামের খেলায় টানতে পারছিলাম না যে আমরা। কিন্তু তুমি বল তো? আমরা কি অন্যায় কিছু করেছি? নিজের মাম্মিকে সব রকম সুখ দেওয়াই তো ছেলের কর্তব্য, তাই না”? বলতে বলতে সবিতার একটা হাত টেনে নিজের দুই ঊরুর মাঝে চেপে ধরল।
সবিতাও লজ্জা ভুলে বিকির প্যান্টের ওপর দিয়েই তার পুরুষাঙ্গে চাপ দিয়ে বলল, “বেশ করেছিস বেটা। তুই সত্যি আমার সোনা বেটা। খুব এনজয় করেছি রে। সত্যি এমন সুখ বুঝি আমি আগে আর কখনো পাই নি। আমার তো এখন সত্যি কামিনীকে ছেড়ে যেতেই ইচ্ছে করছে না। ওদের সাথে আবার আমার অমন করতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু ওরা আমার কথা শুনছেই না। ওদের নাকি আরও কি কি প্রোগ্রাম আগে থেকেই ফিক্স করা আছে”।
বিকি হেসে বলল, “হ্যাঁ মাম্মি। আমি তো সবটাই জানি। বিনীতা আন্টিও রেডি হয়ে আছে। ওরা তিনজন মিলে কামিনী আন্টির ঘরে আজ সারা রাত স্ফুর্তি করবে। ব্লু ফিল্ম দেখবে, নিজেদের সেক্সের লাইভ রেকর্ডিং করবে আর সারা রাত মজা করবে। আর জানো মাম্মি, বিনীতা অ্যান্টি তোমাকে সাথে নিয়েও থ্রিসাম বা ফোরসাম করতে খুব আগ্রহী”।
সবিতার মাথায় যেন এবার হঠাৎ করেই এক উজ্জ্বল বিদ্যুতের ঝলকানি হল। নিজের লজ্জা সংযমের বালাই না করে সে বিকির হাতটা জোরে চেপে ধরে প্রায় উন্মাদের মত বলল, “আমিও যাব তাহলে। বিনীতা আজ সকালে আমাকে এ’কথা বলেছিল। কিন্তু আমি ওকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। এখন যখন আমার মনে আর কোন দ্বিধা নেই, তাহলে বিনীতাকে না করার তো কোন মানে নেই। ও কামিনী, আমাকে তোমাদের সাথে নেবে প্লীজ”।
কামিনী বিকি আর রাকেশের মুখের দিকে দেখে দুষ্টুমির হাসি দিয়ে বলল, “তুমি চাইলে তোমাকে সাথে নিতেই পারি সবিতা। কিন্তু ওখানে গিয়ে আমরা যা যা করবো, তুমি কি সেসব করতে পছন্দ করবে? মানে, ব্লু ফিল্ম দেখা, মদ খাওয়া, বিকির বন্ধুদের ভিডিও দেখা, নিজেদের মজা করার লাইভ রেকর্ডিং, তারপর নিজেদের ভিডিও দেখতে দেখতে সারা রাত ধরে মজা করা, এ’সবে তো তোমার আপত্তি থাকতে পারে। কারন তুমি তো এক ঘন্টা আগেও আজকের মত থ্রিসাম করতেই রাজী হচ্ছিলে না। আমি আর রাকা তো প্রায় জোর করেই তোমাকে বাধ্য করলাম। আর ওখানে তো আমরা তিনজন আগে থেকেই প্ল্যান করে রেখেছি। এখন তুমি যেতে চাইলে তো চারজন হয়ে যাবে। তখনও যদি তুমি আগের মত থ্রিসামই করতে চাও, তাহলে একজনকে তো চুপচাপ বসে থাকতে হবে”।
সবিতা যেন পুরোপুরি উন্মাদ হয়ে গেছে। এমনভাবে বলল, “না না, কাউকে চুপ করে বসে থাকতে হবে না। বিকিকেও আমাদের সঙ্গে নেব। তাহলে তো অসুবিধে হবে না। এক গ্রুপ থ্রিসাম করবে, আরেক গ্রুপ ওয়ান ওয়ান করবে। বদলাবদলিও করা যাবে। আর তোমরা যা যা করতে চাও, মানে ওই ব্লু ফিল্ম দেখা বা লাইভ ভিডিও করা বা দেখা, ড্রিঙ্ক করা, কোনকিছুতেই আমি আপত্তি করব না। প্লীজ কামিনী, প্লীজ”।
কামিনী এবার হেসে বলল, “তো বেটা বিকি, আমাদের এ প্ল্যানটাও তো সাকসেসফুল হল। রাকা বেটা, এবার গাড়ি স্টার্ট করে দে বেটা। তোর মা আমাদের দেরী দেখলে বেচইন হয়ে উঠবে। আজ রাত ভর আমরা মন খুলে স্ফুর্তি করব”।
রাকেশ গাড়ি স্টার্ট করতেই বিকি সবিতাকে বলল, “মাম্মি তুমি ড্যাডিকে ফোন করে বলে দাও যে তুমি আজ রাতে বাড়ি ফিরবে না। বিনীতা আন্টিদের বাড়ি যাচ্ছ, সেখানেই থাকবে। আর আমি খবর পেয়েছি ড্যাডিও আজ আবার ফার্ম হাউসে যাচ্ছে। তাই সে-ও বাড়ি ফিরবে না রাতে। তাই আমরা বাড়িতে না থাকলেও সে কিছু বুঝতেই পারবে না”।
সবিতা বিমলকে ফোন করে সেভাবেই জানিয়ে দিল। বিমলও জানালো সে এক সঙ্গিনীকে নিয়ে তাদের ফার্ম হাউসে যাচ্ছে, তাই সে-ও রাতে বাড়ি ফিরবে না। তবে সকাল আটটা নাগাদ সে বাড়ি আসবে।
(To be cont'd ......)
______________________________
•
Posts: 577
Threads: 3
Likes Received: 797 in 298 posts
Likes Given: 364
Joined: Feb 2019
Reputation:
64
(Update No. 157)
রাকেশদের বাড়ি থেকে ভিডিও ক্যামেরা, ল্যাপটপ, হুইস্কির বোতল আর রাকেশের মা বিনীতাকে নিয়ে পাঁচজন মিলে কামিনীর ফ্ল্যাট অভিমুখে চলল। সারা রাত জুড়ে ব্লু ফিল্ম দেখা-দেখি, ভিডিও করা করি, আর ড্রিঙ্ক করতে করতে সকলে মিলে উদ্যাম যৌনতায় মেতে উঠল। কে কখন কার সাথে মজা নিচ্ছিল তার যেন হদিশই ছিল না। ওয়ান-ওয়ান, থ্রিসাম, ফোরসাম, গ্রুপ, কোনকিছুই বাদ রইল না। কামের উন্মাদনায় আর মদের নেশায় কারুর যেন হুঁশই ছিল না। পূবের আকাশ ফরসা হয়ে আসবার সময় সকলেই যেন ক্লান্তিতে ভেঙে পড়ল। তখন দেখা গেল বেহুঁশ হয়নি শুধু কামিনী। সবাই গভীর ঘুমে তলিয়ে যাবার পর কামিনী পাশের রুমের আলমারি থেকে একটা এক্সটারনাল হার্ড ডিস্ক বের করে রাকেশের ল্যাপটপের সাথে জুড়ে দিল। তারপর ল্যাপটপে পুরনো নতুন যতগুলো লাইভ রেকর্ডিং-এর ফাইল ছিল, তার সবগুলোই নিজের হার্ড ডিস্কে কপি করে নিল। তারপর ল্যাপটপ শাট ডাউন না করেই হার্ডডিস্কটাকে আবার পাশের ঘরের আলমারিতে রেখে দিয়ে আবার এ ঘরে ফিরে এসে বিনীতার পাশে শুয়ে চোখ বুজল।
সবিতার সদ্য পরিচিত ওই অচেনা মহিলা কামিনী যে অমন অভূতপূর্ব সুখের অনুভূতির বিনিময়ে সবিতার কাছ থেকে কী নিয়ে গেল তা সে নিজে, তার ছেলে বিকি, রাকেশ, আর তার মা বিনীতা, কেউই কল্পনাও করতে পারল না।
***************
সেপ্টেম্বরের এক তারিখে নবনীতা বসাক গারমেন্টসে কাজে যোগ দিয়েছে। সীমন্তিনী একটা রিক্সাওয়ালাকে মাসিক চুক্তি করে দিয়েছে, রোজ বেলা সাড়ে এগারোটায় এসে সে নবনীতাকে বাড়ি থেকে নিয়ে যাবে। আর রাত আটটায় বসাক গারমেন্টস থেকে তাকে এনে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে যাবে। দুরত্বও খুব একটা বেশী নয়। সীমিন্তনীর কোয়ার্টার থেকে অটোরিক্সায় যেতে মাত্র মিনিট সাতেকের ব্যাপার। অবশ্য বাড়ি থেকে রওনা হয়ে নবনীতাকে বসাক গারমেন্টসের শো রুমে যেতে হয় না। বারোটা থেকে বেলা দুটো পর্যন্ত তাকে থাকতে হয় জয়া বসাকদের ফ্যাক্টরীতে। বাড়ি থেকে বেরোবার আগে লক্ষ্মী আর অর্চনা সাথে বসে নবনীতাকে খাইয়ে দেয়। সীমন্তিনীর মত লক্ষ্মী নবনীতাকেও দুপুরের লাঞ্চ প্যাক করে দেয়। ফ্যাক্টরীতে লাঞ্চ সেরেই নবনীতা সেখান থেকে বসাক গারমেন্টসের শো রুমে চলে যায়। দুরত্বও খুব বেশী নয়। হেঁটে গেলেও ছ’ সাত মিনিটের বেশী লাগে না। রাতে নবনীতাকে একা রিক্সায় চেপে ফিরতে হয় বলে সীমন্তিনী আগে থেকেই বসাক গারমেন্টসের মালিক জয়া বসাককে অনুরোধ করে রেখেছে, যাতে আটটার পর নবনীতাকে আর আটকে রাখা না হয়। জয়া বসাকও সীমন্তিনীকে আশ্বাস দিয়েছেন, আর সেই ভাবেই শো-রুমের ম্যানেজারকে নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন। তবে ঠিক ওই সময়েই নবনীতাকে যদি কোন গ্রাহককে সামলাতে হয়, তবে তো তার বেরিয়ে আসবার সময়ের একটু হের ফের হতেই পারে। সেটুকু তো মেনে নিতেই হবে। আর সীমন্তিনী রিক্সাওয়ালাটাকেও সে ভাবেই বলে রেখেছে। তাই নবনীতার আসা যাওয়ার ব্যাপার নিয়ে আর কোনও চিন্তা নেই। আজ নবনীতার চাকরির তৃতীয় দিন। গত দু’দিনই নবনীতা রাতে বাড়ি ফেরবার পর সীমন্তিনী আর অর্চনাকে বলেছে যে ফ্যাক্টরীতে আর শো-রুমে দু’জায়গাতেই কাজ করতে তার কোনও অসুবিধে হচ্ছে না।
দিনের কাজ শেষ হতে সীমন্তিনী গাড়িতে বাড়ি অভিমুখে আসতে আসতে ভাবল, মহিমার সব কথা শোনার আগে অব্দি নবনীতাকে নিয়ে তার একটা চিন্তা ছিল। সেক্স র*্যাকেটের ব্যবসা যারা করে তারা তাদের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কাউকে তাদের নাগালের বাইরে যেতে দেয় না। কেউ তাদের চক্র ছেড়ে বেরিয়ে যেতে চাইলে তারা তাদের ছল বল কৌশল সবকিছু প্রয়োগ করে তাকে নিজেদের কব্জায় রাখতে চায়। নবনীতাকে অমন একটা চক্র থেকে বের করে আনতে পুরোপুরি গোপনীয়তা বজায় রাখতে না পারলে যে কোন সময় নবনীতার বিপদ হতে পারে। এ’কথা ভেবেই সে পরিতোষের সাহায্য নিয়ে নবনীতাকে দুটো দিন একটা জায়গায় লুকিয়ে রেখেছিল। পরিতোষের লোকেরাই তাদের দু’জনকে আড়াল থেকে গার্ড করে হাওড়া ষ্টেশনে পৌঁছে দিয়েছিল। তারপর গোটা রাস্তায় সিভিল ড্রেসে পুলিশ এসকর্ট ছিল বলে তাদের আর কোন ঝামেলায় পড়তে হয়নি। কিন্তু ভয়টা ছিল এখানে এসে পৌঁছোবার পরের ব্যাপারে। ওই সেক্স র্যােকেটের কেউ যদি গোপনে নবনীতাকে ফলো করে এ জায়গায় চলে আসে, তাহলে যে কোন মূহুর্তে ওকে একা পেলেই তারা আবার তাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যেতে সমর্থ হবে। এ ব্যাপারটা নিয়েই সীমন্তিনী একটু চিন্তিত ছিল। কিন্তু নবনীতা যেদিন মহিমার ব্যাপারে সব কিছু খুলে বলল, আর তারপর সে নিজে যখন মহিমার সাথে কথা বলল, তখন তার মনের ভেতর থেকে এ ভয়টা অনেকটাই চলে গেছে। মহিমাকে ততটা ক্ষতিকারক বলে মনে হয়নি তার। পরে নবনীতার মুখে মহিমার আরও কিছু কথা শোনবার পর থেকে তার মনের আশঙ্কা এখন প্রায় নেই বললেই চলে। নবনীতার আসা যাওয়ার ব্যাপারে যে রিক্সাওয়ালাকে সীমন্তিনী ঠিক করে দিয়েছে, সে রিক্সাওয়ালাটা পুলিশের ইনফর্মার হিসেবে কাজ করে। পথে ঘাটে নবনীতার ওপর যদি কোন ঝামেলা নেমে আসে তবে ওই মূহুর্তে কী করতে হবে না হবে তা সীমন্তিনী আগে থেকেই খুব ভাল করে বুঝিয়ে দিয়েছে তাকে।
অফিস থেকে বেরোবার আগেই সীমন্তিনী বাড়িতে ফোন করে অর্চনাকে তৈরী হয়ে থাকতে বলেছিল। তাই কোয়ার্টারের সামনে এসে গাড়ি দাঁড়াতেই লক্ষ্মীর সঙ্গে শালোয়ার কামিজ পরিহিতা অর্চনা সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসল। গেটের বাইরে এসেই লক্ষ্মী বলল, “ও দিদিমণি, তুমি কি ঘরে না ঢুকেই এখন বাজারে যেতে চাইছ? হাতমুখ ধুয়ে চা জলখাবারটা তো খেয়ে যেতে পারতে”।
সীমন্তিনী অর্চনাকে গাড়িতে উঠতে বলে লক্ষ্মীকে বলল, “ওমা, আমি তো আগেই ফোন করে তোমাকে বলে দিয়েছিলুম লক্ষ্মীদি, যে আজ আমরা বাড়িতে জল খাবার খাচ্ছি না। তুমি কি তবু তা করেছ”?
লক্ষ্মী বলল, “না তা তো করিনি দিদিমণি। কিন্তু করতে আর কতক্ষণ লাগবে বল? তুমি হাত মুখ ধুতে ধুতেই আমি করে ফেলতে পারব”।
অর্চনা ততক্ষণে গাড়ির পেছনের সীটে বসেছে। সীমন্তিনী বলল, “তুমি নিজের জন্যে কিছু বানিয়ে খেয়ে নিও। আমরা নীতার ওখানে যাচ্ছি। নীতার মালিকই আজ তার সাথে বসে চা জলখাবার খাবার নিমন্ত্রন করেছে গো। তাই যাচ্ছি। তা বাজার থেকে কি আর কিছু আনতে টানতে হবে নাকি লক্ষ্মীদি”?
লক্ষ্মী জবাব দিল, “আমি তো বিকেলে গিয়ে প্রয়োজনীয় সব কিছু নিয়ে এসেছি দিদিমণি। আর কিছু আনবার নেই আপাততঃ”।
সীমন্তিনী বলল, “ঠিক আছে, আমরা তাহলে আসছি” বলে ড্রাইভারকে ঈশারা করতেই রামসিং গাড়ি স্টার্ট করল।
বসাক গারমেন্টসে ঢুকতেই অর্চনা আর সীমন্তিনী দেখতে পেল নবনীতা তার কাউন্টারের সামনে দাঁড়ানো দু’জন গ্রাহকের সাথে ব্যস্ত আছে। নবনীতাও তাদের দিকে তাকিয়ে একটু হাসল। বেশ বড়সড় শো রুম। ইউ শেপে মোট ন’টি কাউন্টার। ছ’টা কাউন্টারে সেলসম্যান, আর তিনটে কাউন্টারে তিনজন সেলসগার্ল। সীমন্তিনী অর্চনার হাত ধরে নবনীতার কাউন্টার আর তার পরের আরেকটা কাউন্টার পেরিয়ে গিয়ে একটা ফাঁকা কাউন্টারে গিয়ে দাঁড়াতে একজন সেলসম্যান এগিয়ে এল। সীমন্তিনী তাকে বলল, “ভাল রেডিমেড চুড়িদার সেট আর ভাল কোয়ালিটির সূতীর শাড়ি দেখাবেন”।
সেলসম্যানটা খুব বিনয়ের সাথে বলল, “আপনারা বসুন ম্যাডাম। আমি একজন সেলসগার্ল পাঠিয়ে দিচ্ছি এখানে” বলে লোকটা তার পাশের কাউন্টারের মেয়েটিকে এ কাউন্টারে পাঠিয়ে দিয়ে নিজে ওই কাউন্টারে বসা পুরুষ গ্রাহকদের দায়িত্ব নিল।
অর্চনা সীমন্তিনীর পাশের টুলে বসতে বসতে চাপা গলায় বলল, “ইশ, নীতাদির কাউন্টারে তো খদ্দের আছে। নইলে তাকে পেলেই ভাল হত”।
অর্চনার কথার জবাব দেবার আগেই সীমন্তিনী কাউন্টারে এসে দাঁড়ানো মেয়েটিকে বলল, “ভাল রেডিমেড চুড়িদার আর কটনের ভাল শাড়ি দেখান প্লীজ”।
দু’সেট চুড়িদার আর দুটো শাড়ি পছন্দ করতে সেলসগার্ল সেগুলো নিয়ে সামনের দিকে কাঁচে ঘেরা একটা কাউন্টারের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে সীমন্তিনীকে উদ্দেশ্য করে বলল, “আপনারা এদিকে আসুন ম্যাম”।
সীমন্তিনী আর অর্চনা সেই কাঁচে ঘেরা কাউন্টারের দিকে যাবার আগে নবনীতার কাউন্টারে কোন লোক নেই দেখে তার কাছে এসে দাঁড়াতেই অর্চনা খুশী গলায় বলে উঠল, “তোমাকে এ ইউনিফর্মে খুব সুন্দর লাগছে গো নীতাদি”।
নবনীতা অর্চনার হাত ধরে একটু হেসে সীমন্তিনীকে বলল, “শাড়ি আর চুড়িদার নিয়েছ সেটা তো দেখেছি। ভাগ্যিস আমার কাউন্টারে আসনি তোমরা। ওই সেকশনের প্রোডক্টগুলোর ব্যাপারে আমি এখনও পুরোপুরি শিখতে পারিনি। কিন্তু দিদি, তুমি যে তোমার অফিস ইউনিফর্ম পড়েই এসেছ? বাড়িতে যাও নি নাকি”?
সীমন্তিনী জবাব দিল, “বাড়ি গিয়েছিলাম শুধু অর্চুকে গাড়িতে তুলে নিতে। ভেতরে ঢুকিনি আমি। আর শোনো, তুমি খগেনকে ফোন করে বলে দাও যে আজ ওকে আর আটটার সময় আসতে হবে না। তুমি আমাদের সাথেই ফিরবে”।
নবনীতা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস বলল, “কিন্তু দিদি, আমার ছুটি হতে তো এখনও ঘন্টাখানেক দেরী আছে”?
সীমন্তিনী অর্চনাকে নিয়ে কাঁচে ঘেরা কেবিনটার দিকে যেতে যেতে বলল, “ও নিয়ে তুমি ভেবো না। তুমি শুধু ওকে ফোন করে কথাটা জানিয়ে দাও”।
কাঁচে ঘেরা কেবিনটার সামনে যেতেই ভেতরে বসা ম্যানেজার সীমন্তিনীকে বলল, “গুড ইভিনিং ম্যাম”।
সীমন্তিনীও তাকে গুড ইভিনিং বলতে সে বলল, “ম্যাম, আপনার মোট বিল হয়েছে সাত হাজার ন’শ ষাট টাকা। তা, ম্যাম, আপনি কি ক্যাশে........”?
ম্যানেজারের মুখের কথা শেষ হবার আগেই তার টেবিলের ওপর রাখা ইন্টারকমটা ঝিঁঝিঁ শব্দে বেজে উঠল। রিসিভার ওঠাতে ওঠাতে সে সীমন্তিনীর দিকে চেয়ে বলল, “এক মিনিট ম্যাম” বলে রিসিভার কানে লাগিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “ওকে, ম্যাম। ঠিক আছে। আমি তাই করছি”।
রিসিভার নামিয়ে রেখে সীমন্তিনীর দিকে তাকিয়ে বলল, “সরি ম্যাম, হিসেবটা একটু চেঞ্জ হবে। আমাদের মালিকের অর্ডারে আপনি ফাইভ পার্সেন্ট স্পেশাল ডিস্কাউন্ট পাচ্ছেন” বলে তার সামনের কম্পিউটারের সাহায্যে বিলের ডাটা ইনপুট গুলো মোডিফাই করতে করতে বলল, “আপনি তাহলে সাত হাজার পাঁচশ’ বাষট্টি টাকা দেবেন ম্যাম”।
সীমন্তিনী নিজের পকেট থেকে ডেবিট কার্ড বের করে ম্যানেজারের দিকে এগিয়ে দিল। ম্যানেজার সেটা নিতে নিতে বলল, “ম্যাম, আপনারা আমাদের মালিকের চেম্বারে চলে যান। উনি আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। আপনাদের কেনা জিনিসগুলো প্যাক করে আমি ওখানেই পাঠিয়ে দেব”।
ম্যানেজার ডেবিটকার্ডটা ফেরত দিয়ে পজ মেশিনটা সীমন্তিনীর দিকে এগিয়ে দিতেই সীমন্তিনী তার পিন নাম্বারটা বসিয়ে দিয়ে “থ্যাঙ্ক ইউ” বলে অর্চনার হাত ধরে শো-রুমের একপাশ দিয়ে উঠে যাওয়া সিঁড়ি বেয়ে দু’তলায় উঠতে লাগল অর্চনাকে সঙ্গে নিয়ে।
জয়া বসাক নিজের চেম্বারে সীমন্তিনী আর অর্চনাকে খুব আপ্যায়ন করে বসতে দিলেন। খানিক বাদে নবনীতাকেও সেখানে ডেকে পাঠানো হল। তারপর সকলে মিলে চা জল খাবার খেতে খেতে নানারকম কথা নিয়ে আলাপ আলোচনা করল। সীমন্তিনীর অনুরোধ মেনে নিয়ে জয়া বসাক নবনীতাকে সব রকম সাহায্য করতে প্রস্তুত হলেন। নবনীতাও কথা দিল, নিজে কাজ শেখার পাশাপাশি সে ফ্যাক্টরী আর শো-রুমের কাজে কোনরকম গাফিলতি করবে না। সীমন্তিনী নবনীতার কথা শুনে মনে মনে আশ্বস্ত হল। মনে মনে ভাবল, আর কোনও নতুন ঝামেলা দেখা না দিলে, নবনীতাকে নিয়ে আর ভাবনা করতে হবে না তেমন। অর্চনাও সীমন্তিনীর এখানে আসবার পর গত দশ এগারো দিনে বেশ চনমনে হয়ে উঠেছে। তার মুখশ্রীতে আর চেহারায় একটা উজ্জ্বল আভা ফুটে বেরোতে শুরু করেছে। সীমন্তিনীর ইচ্ছে, অর্চনাকে কম পক্ষেও মাস খানেক নিজের কাছে রাখবে। তাহলেই অর্চনা পুরোপুরি ভাবে সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারবে বলে তার ধারণা। কিন্তু রতীশ আর রচনার ওপর যে বিপদের ঝুঁকি নেমে এসেছে, তা অর্চনা জানে। ওদের ঝামেলা মেটবার আগে অর্চনাকে কালচিনি পাঠিয়ে দিলে ও সেখানে গিয়েও ব্যাপারটা নিয়ে উদ্বিঘ্ন থাকবে। ফোনে কথা বলবার সময় সে নিশ্চয়ই সীমন্তিনীর কাছ থেকে কি হল না হল এসব কথা জানতে চাইবে। আর তখন বাড়ির অন্য সকলেও ঘটণাটার আঁচ পেয়ে যাবে। সেটা সীমন্তিনীর একেবারেই কাম্য নয়। পরিতোষ বলেছে চল্লিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ দিনের ভেতরেই তার অপারেশন শেষ হবে। তারপর থেকে রতীশ আর রচনার ওপর আর কোনও বিপদের আশঙ্কা থাকবে না। সে হিসেব ঠিক হলে আর প্ল্যান মাফিক কাজটা সম্পন্ন হলে, অক্টোবরের ছ’ থেকে দশ তারিখের মধ্যে সব কিছু মিটে যাবে। ততদিন পর্যন্ত যদি অর্চনাকে তার কাছেই রেখে দিতে পারে, তাহলে কালচিনির বাড়ির সকলের কাছে রচনার বিপদের কথাটা লুকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।
ঘরে ফিরে আসবার পর অন্যান্য দিনের মত যখন তিনজন মিলে গল্প করছিল, তখন কথায় কথায় সীমন্তিনী বাজার থেকে কিনে আনা পোশাক গুলো বের করে একটা চুড়িদারের সেট অর্চনাকে, আরেকটা নবনীতাকে দিল। আর লক্ষ্মীকে ডেকে একটা শাড়ি তার হাতে দিল। আর অন্য শাড়িটা নিজের জন্য রেখে বলল, “সামনে পূজো আসছে। কখন কোথায় কিভাবে ব্যস্ত হয়ে পড়ি, তার তো কোনও ঠিক নেই। তাই আগে থেকেই তোমাদের সকলের জন্য এগুলো কিনে আনলাম আজ। তোমরা এ গুলো পূজোর সময় পড়বে”।
অর্চনা আর নবনীতা মৃদু আপত্তি করলেও সীমন্তিনীর উপহার না নিয়ে পারল না। অর্চনা সীমন্তিনীকে প্রণাম করতে চাইতেই সীমন্তিনী তাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “হয়েছে বোন। আর প্রণাম করতে হবে না। কিন্তু এবার আমি তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব। সত্যি সত্যি জবাব দেবে কিন্তু। মনে কোনও দ্বিধা রেখে জবাব দেবে না”।
অর্চনা জিজ্ঞাসু চোখে সীমন্তিনীর দিকে চেয়ে বলল, “কী কথা দিদিভাই”?
সীমন্তিনী বলল, “অর্চু, নীতা তো দিন তিনেক হল কাজে যেতে শুরু করেছে। আমিও তো সকাল ন’টা নাগাদ ঘর থেকে বেরিয়ে যাই। ফিরতে ফিরতে আমার সন্ধ্যে হয়ে যায়। দুপুর থেকে তো তোমাকে কেবল লক্ষ্মীদির সাথেই থাকতে হচ্ছে। তোমার কোন অসুবিধে হচ্ছে না তো তাতে বোন”?
অর্চনা বলল, “না দিদিভাই, আমার তো কোন অসুবিধে হচ্ছে না। দুপুরের খাওয়া শেষ হয়ে গেলে তো লক্ষ্মীদি সব সময় আমার সাথে বসে গল্প করে”।
সীমন্তিনী এবার বলল, “তাহলে আমি যদি তোমাকে এখানে পূজো অব্দি থাকতে বলি, তাহলে তুমি রাগ করবে না তো? মা বাবার জন্যে, ভাইয়ের জন্যে মন খারাপ করবে না তো”?
অর্চনা একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “পূজো অব্দি? তার মানে তো আরও প্রায় মাস দেড়েক”!
সীমন্তিনী একটু হেসে বলল, “হু, প্রায় তাইই হবে। পূজো তো এবার অক্টোবরের একুশ তারিখ থেকে শুরু হচ্ছে। অতদিন থাকতে চাইছ না তুমি”?
অর্চনা কয়েক মূহুর্ত চুপ করে মনে মনে কিছু একটা ভেবে নিয়ে বলল, “আমার জীবনটা যে তোমারই দান গো দিদিভাই। তুমিই যে আমার ভগবান। দেড় মাস কেন, তুমি চাইলে আমি সারাটা জীবন তোমার কাছে থাকতে রাজি আছি। আর মা, বাবা, ভাইয়ের জন্য মনই বা কেমন করবে কেন। তাদের সাথে তো আমি যখন খুশী তখনই কথা বলতে পারছি। সব খবরাখবর জানতে পারছি। গত সাতটা বছর আমি তাদের সাথে কথা বলা তো দুর, তারা কে কেমন আছেন, বেঁচে আছেন কিনা, সুস্থ আছেন কিনা এ খবরটুকুও জানতে পারতুম না। তোমার দয়াতেই তো সে দুঃসময়টা কেটে গেছে আমার জীবন থেকে। মা বাবা যদি আপত্তি না করেন, আর তারা যদি সুস্থ স্বাভাবিক থাকেন, তাহলে তোমার এখানে থাকতে আমার কোন অসুবিধেই হবে না। কিন্তু ছোট্ট একটা কথা আছে আমার। তোমায় সেটা রাখতে হবে”।
সীমন্তিনী অর্চনাকে একহাতে নিজের শরীরের সাথে চেপে ধরে বলল, “বলো কী শর্ত তোমার”?
অর্চনা সীমন্তিনীর কাঁধে নিজের মাথা হেলিয়ে দিয়ে বলল, “না গো দিদিভাই, শর্ত নয়। শুধু একটা ছোট্ট অনুরোধ। সেটা তুমি রাখবে”?
সীমন্তিনী অর্চনার কপালে আদর করে চুমু খেয়ে বলল, “বেশ, আগে শুনি তোমার অনুরোধটা কি। তারপর রাখতে পারি কি না সেটা ভেবে দেখব”।
অর্চনা সীমন্তিনীর একটা হাত জড়িয়ে ধরে বলল, “আমাকে তুমি আর ‘তুমি তুমি’ করে বলবে না। রচুকে ভালবেসে তুমি যেমন তুই তোকারি করে কথা বলো, সেটা শুনতে আমার খুব ভাল লাগে দিদিভাই। আমার খুব ইচ্ছে করে তোমার মুখ থেকে ওভাবে ডাক শুনতে। আমার এ অনুরোধটা রাখবেনা তুমি”?
ও’পাশ থেকে নবনীতাও প্রায় সাথে সাথে বলে উঠল, “হ্যাঁ দিদি। অর্চু একদম ঠিক বলেছে। তুমি যখন বৌদির সাথে ওভাবে তুই তোকারি করে কথা বল, সেটা শুনতে আমারও খুব ভাল লাগে গো। অবশ্য এটা তো আমরা সবাই জানি যে তোমার দাদাভাই আর তার স্ত্রী, মানে তোমার রচু সোনা, এরা দু’জন তোমার প্রাণ ভোমরা। তাদের জন্য তুমি সব কিছু করতে পারো। কিন্তু তুমি তো আমাদের জন্যেও কত কিছু করেছো এবং এখনও করে যাচ্ছ। আমরাও তো তোমার থেকে বয়সে ছোট। হ্যাঁ আমরা অবশ্য কেউই তোমার বৌদি নই সম্পর্কে। কিন্তু তাই বলে কি ‘তুমি তুমি’ বলে আমাদের এতটা দুরে রাখা ঠিক? আমারও যে খুব ইচ্ছে করে তোমার মুখ থেকে ও’রকম ডাক শুনতে”।
সীমন্তিনী এবার দু’হাতে দু’জনকে জড়িয়ে ধরে বলল, “ওরে দুষ্টুরা, তোমরা বুঝি দু’জনে মিলে আগে থেকে প্ল্যান করে এভাবে বলছ আমায়, তাই না”?
জবাবে তারা কেউই কোন কথা না বলে সীমন্তিনীর দু’কাঁধে দু’জন মাথা চেপে ধরে রইল।
সীমন্তিনী একসময় নিজেই বলল, “বেশ ঠিক আছে। তোদের যখন এমনটাই ইচ্ছে তাহলে এখন থেকে তোদের দু’জনকে তুই তোকারি করেই কথা বলব আমি। এবার খুশী তো”?
*********************
______________________________
•
Posts: 577
Threads: 3
Likes Received: 797 in 298 posts
Likes Given: 364
Joined: Feb 2019
Reputation:
64
(Update No. 158)
তিনজন মিলে কিছুক্ষণ রতীশ, রচনা, মহিমা, বিমল আগরওয়ালা আর পরিতোষের ব্যাপারে কথা বলার পর সীমন্তিনী নিজের মোবাইল থেকে কিংশুককে ফোন করল। কিংশুকের সাথে কথা বলার পর বিভাদেবীর সাথে কথা বলতে বলতে সীমন্তিনী বলল, “মাসি, অর্চুকে কিন্তু আমি পূজো অব্দি আমার এখানে রাখব। তুমি কিন্তু আপত্তি করবে না একদম”।
বিভাদেবী হেসে বললেন, “তোর কথায় আপত্তি কেউ করতে পারে রে মা? আমাদেরকে তো তুই তোর নিজের করেই নিয়েছিস সেই কবে থেকে। কিন্তু নিজের জন্মভিটের, নিজের পরিবারের লোকজনদের সাথে তো তুই দেখা সাক্ষাতই বন্ধ করে দিয়েছিস। কিন্তু তারাও তো তোর কোনও কথার অন্যথা করেন না রে মা। সকলেই তোর কথা মেনে চলেন। তবু কেন যে তুই .......। আচ্ছা থাক সে’সব কথা। তুই তো সেসব শুনতে ভালবাসিস না। তোর যদ্দিন খুশী অর্চুকে তোর কাছে রাখ। আমরা কেউ তাতে আপত্তি করব না। আমি তো শুধু ওকে পেটেই ধরেছি। বাঁচিয়ে তো রাখতে পারিনি। আমার মরে যাওয়া মেয়েটাকে তুইই তো বাঁচিয়েছিস মা। তাই অর্চুর ওপর তোর সব অধিকার আছে। তুই যা চাইবি তাইই হবে”।
সীমন্তিনী খুশী হয়ে বলল, “কথাটা মনে রেখ মাসি। অর্চুর ওপর আমার সবরকম অধিকার আছে, এমনই কিন্তু বললে তুমি। পরে যেন আবার অন্য কথা বোল না”।
ও’পাশ থেকে বিভাদেবী আবার বললেন, “শুধু মুখের কথা নয় রে মা। আর শুধু রচু বা অর্চুর কথাই নয় আমাদের এ বাড়ির সকলেই, এমন কি রচু আর ছোটজামাইও এ’কথাটা মন থেকে মানে। আর ওই যে বললি, অধিকার। সে অধিকার তো অনেক আগে তুই নিজেই অর্জন করে নিয়েছিস রে মা”।
সীমন্তিনী এবার একটু চটুল ভঙ্গীতে বলে উঠল, “আচ্ছা আচ্ছা হয়েছে। আর বেশী নিন্দেমন্দ কোর না আমার। কিন্তু শোনো মাসি, আমি সত্যি বলছি, অর্চু পূজোর আগ পর্যন্ত এখানেই থাকবে। তবে দুর্গাষষ্ঠীর আগেই ওকে কালচিনি পৌঁছে দেব। কিন্তু মেসো কোথায় গো? এখনও কি দোকানেই আছেন নাকি”?
বিভাদেবী জবাব দিলেন, “নারে মা। উনি একটু আগেই দোকান বন্ধ করে বাড়িতে এসেছেন। এই তো আমার পাশেই দাঁড়িয়ে আছেন তোর সাথে কথা বলবেন বলে। এই নে কথা বল”।
বিধুবাবুর সাড়া পেতেই সীমন্তিনী বলল, “মেসো, আমার প্রণাম নিও। তোমার শরীর কেমন আছে বল তো”?
বিধুবাবু জবাব দিলেন, “ভালই আছি গো মা। এখন আর আগের মত দৌড়ঝাঁপ করে যজমানদের বাড়ি বাড়ি ঘুরতে হচ্ছে না বলে বেশ ভালই আছি”।
সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “দোকান কেমন চলছে মেসো”?
বিধুবাবু বললেন, “দোকানও বেশ ভালই চলছে। এই তো গত পরশুদিন আলিপুরদুয়ার থেকে এক থোকে বেশ কিছু মাল কিনে এনেছি। পর্তাও বেশ ভাল পড়েছে। ওখানকার মহাজনেরাও বেশ সহযোগিতা করেছেন। কালচিনির মহাজনেরা যে দাম নিত তার চাইতে কম দামে পেয়েছি। এখন আমি কালচিনির বাজার দরেই জিনিস বেচতে পারব। খদ্দেররাও বেশ খুশী। তাই আমদানী আরও বাড়বে বলেই মনে হচ্ছে। আর আরেকটা ভাল খবর আছে। এখন আলিপুরদুয়ার থেকে জিনিস আনতে আমাকে নিজেও সেখানে যেতে হবে না। মহাজনদের ফোনে মালের অর্ডার দিলেই তারা নিজেরাই দু’দিনের মধ্যে সেসব একেবারে আমার দোকানে পৌঁছে দেবে। এতে করে আমাকে ব্যক্তিগত ভাবে সেখানে যেতেও হবে না, আর আমার যাতায়াত খরচাও বেঁচে যাবে”।
সীমন্তিনী শুনে বেশ খুশী হয়ে বলল, “এ তো খুব ভাল খবর মেসো। তোমার শারীরিক কষ্ট এতে আরও কম হবে। তবে, সব কিছু বুঝে শুনে ভালমন্দ বিচার করে কাজ কোর। কোন ব্যাপারে আটকে গেলে বা কিছু বুঝতে না পারলে আমাকে জানিও। আচ্ছা মেসো, তোমাকে যে আরেকটা কথা বলে এসেছিলুম, সে ব্যাপারে খোঁজ খবর করেছিলে কিছু”?
বিধুবাবু জিজ্ঞেস করলেন, “ওই রান্নাঘরটা নতুন করে বানাবার ব্যাপারে বলছ মা”?
সীমন্তিনী বলল, “হ্যাঁ মেসো, সে’কথাই বলছি। কোন মিস্ত্রীর সাথে আলাপ করেছিলে”?
বিধুবাবু একটু আমতা আমতা করে জবাব দিলেন, “হ্যাঁ মন্তিমা। এক রাজমিস্ত্রীর সাথে সেদিন এ ব্যাপারে কথা বললুম। সে বাড়ি এসে আমাদের রান্না ঘরটা দেখে পাকা পোক্ত করে বানাতে কত খরচ পড়তে পারে তার একটা আনুমানিক হিসেব দিয়ে গেছে। কিন্তু তার হিসেব দেখে তো আমার মাথা ঘুরে গেছে মা। ভিটে পাকা করে, হাফ ওয়াল দিয়ে, ওপরে সিলিং আর টিনের চাল দিয়ে বানাতে গেলেও প্রায় সাড়ে তিন লাখের মত খরচ পড়ে যাবে বলছে। আর কাজ শুরু করলে প্রায়শই আনুমানিক হিসাবের চেয়ে অনেক বেশী টাকা খরচ হয়ে যায়। সবে দোকানটা চালু করলুম। এখনই রান্নাঘরের পেছনে এতগুলো টাকা কি করে আর কোত্থেকে খরচ করব মা বলো? তাই আমি ভাবছি, এবার আর কিছু না করে সামনের বর্ষার আগে মেরামতি করেই না হয় কোনরকমে চালিয়ে নেব। তারপর না হয় সুযোগ সামর্থ্য অনুযায়ী ভেবে দেখা যাবে”।
সীমন্তিনী এবার বলল, “মেসো শোনো। টাকার জন্যে তুমি ভেবো না। আর ওই হাফ ওয়াল দিয়ে ওপরে সিলিং আর টিন দেবার কথাও ভেবো না। পুরোপুরি ভাবে আরসিসি ঘর বানাবার চিন্তা করো। আরও ভাল একজন রাজমিস্ত্রির সাথে আলোচনা করো। আর শুধু রান্নাঘরই নয়। তোমাদের থাকবার ঘর গুলোও ভেঙে ফেলে আরসিসি কনস্ট্রাকশন করবার ব্যাপারে ভাবো। আর ভূমিকম্প প্রতিরোধক ব্যাপারগুলোও করে ফেলতে হবে। সেভাবেই একটা হিসেব করে দিন পনেরোর মধ্যে আমাকে জানিয়ে দিও। যতই খরচ পড়ুক না কেন, সেসব নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না। তুমি শুধু ঘরগুলো তৈরী করবার সময় নিজে ভালমত দেখা শুনো কোর। বাকি ভাবনা আমাকে ভাবতে দাও। বুঝলে”?
বিধুবাবু সীমন্তিনীর কথা শুনে প্রায় চিৎকার করে উঠে বললেন, “এ কী বলছ মন্তিমা তুমি? থাকবার দুটো ঘর আর রান্নাঘর একসাথে করতে গেলে তো পনেরো কুড়ি লাখের মত খরচা পড়ে যাবে? না না এ তো আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারব না মা”।
সীমন্তিনী শান্ত গলায় বলল, “মেসো, আমার কথাটা তুমি বুঝতে পারছ না নাকি? আমি তোমাকে আগেই তো বললুম, সব ভাবনা চিন্তা আমার। তুমি শুধু দেখে শুনে কাজগুলো করাবে। আর তুমি সেটাই করবে, বুঝেছ? আর শুধু থাকবার দুটো ঘর আর রান্নাঘরই নয়। সেই সাথে পাকা বাথরুম আর টয়লেট বানাবার হিসেবও করবে। আর থাকবার ঘরগুলোকে দু’তলা ফাউন্ডেশন করতে হবে। যাতে প্রয়োজনে ভবিষ্যতে দু’তলায় রুম বানানো যায়। তবে তুমি যদি সে’সব না করো বা না করতে পারো, তাহলে আমি নিজেই সে ব্যবস্থা করব। তোমাকে শুধু কাজগুলোর তত্তাবধান করে যেতে হবে। আর তোমাদের সুবিধে অসুবিধের দিকে নজর রেখে ঘরগুলো তৈরীর ব্যাপারগুলোই শুধু দেখে যাবে”।
বিধুবাবু সীমন্তিনীর কথা শুনে যেন হতভম্ব হয়ে গেছেন। সীমন্তিনী ও’পাশ থেকে সাড়া না পেয়ে জিজ্ঞেস করল, “কি হল মেসো? শুনতে পাচ্ছ তো? কথা বলছ না কেন তুমি”?
এবার বিধুবাবু প্রায় ঘড়ঘড়ে গলায় জবাব দিলেন, “হ্যাঁ মা শুনতে তো পাচ্ছি। আর তুমি যা বললে তা বুঝতেও পারছি। কিন্তু আমার যে আর মুখ থেকে কোনও কথা সরছে না গো মন্তিমা। কী বলি তোমাকে বলো তো”?
সীমন্তিনী এবার বলল, “আচ্ছা মেসো শোনো। তোমাকে আপাততঃ আর কিচ্ছুটি বলতে হবে না। তবে এবার যা বলছি সেটা ভাল ভাবে বুঝে নাও। আমি সামনের এক সপ্তাহের মধ্যেই তোমার ওখানে লোক পাঠাচ্ছি। ওরা গিয়ে যা করতে চায় তাতে তোমরা বাঁধা দিও না। তবে তোমার কাছে গিয়ে কেউ যদি বলে যে আমি ওদের পাঠিয়েছি, তাহলে তুমি সাথে সাথে আমাকে ফোন করে জানাবে। তারপর আমি তোমায় বুঝিয়ে দেব, তোমায় কি করতে হবে। ঠিক আছে”?
বিধুবাবু প্রায় ভাঙা গলায় জবাব দিলেন, “আচ্ছা মা তাই হবে”।
এবার সীমন্তিনী ফোন রেখে দিতেই অর্চনা আর নবনীতাকে তার সামনে অবাক হয়ে বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করল, “ওমা, তোরা এভাবে আমার দিকে চেয়ে আছিস কেন? কি হল তোদের”?
অর্চনা কোন কথা না বলে সীমন্তিনীর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল। কিন্তু নবনীতা জিজ্ঞেস করল, “দিদি, তুমি মেসোকে যা বললে, সত্যিই কি তাই করবে? মানে, পরির মুখেই শুনেছি, তুমি খুব অনেস্ট পুলিশ অফিসার। ঘুষ নেওয়া তো দুরের কথা, কোনদিন কারুর কাছ থেকে একটা পয়সাও তুমি অন্যায় ভাবে উপার্জন করো না। এত টাকা তুমি কোত্থেকে যোগাড় করবে গো দিদি”?
সীমন্তিনী দুষ্টুমি ভরা হাসি হেসে বলল, “সব টাকা দেবে ওই বিমল আগরওয়ালা। আমার রচু সোনার ওপর যে ও কূ-নজর ফেলেছে, তার একটা ক্ষতিপূরণ তো ওকে দিতেই হবে। আর সেই ক্ষতিপূরণের টাকা থেকেই আমি এ’সব করব” বলেই দু’হাতে নবনীতা আর অর্চনার হাত ধরে বলল, “কিন্তু সাবধান। এ’কথা যেন এখন রচু বা অন্য কারুর কানে না যায়। কাউকে এখন কিচ্ছুটি জানানো চলবে না। কথাটা তোমরা দু’জন মনে গাঁট বেঁধে রেখো”।
অর্চনা এবারেও কোন কথা না বলে সীমন্তিনীর কোলে মুখ চেপে রইল। কিন্তু নবনীতা বলল, “বৌদি তো কালচিনির বাড়ি থেকেই জেনে যাবে যে তুমি মেসোকে কি কি বলেছ? তখন যদি আমাদের কাউকে বা তোমাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে, তখন আমরা কি বলব দিদি”?
সীমন্তিনী একটু হেসে বলল, “তখন মিথ্যে বলবি। বা বলবি যে আমরা কেউ কিছু জানি না। দিদি আমাদের কাউকে এ বিষয়ে কিছু জানায়নি”।
নবনীতা বলল, “বৌদিকে আমরা মিথ্যে বলব? আচ্ছা ঠিক আছে, তোমার নির্দেশে আমরা না হয় তাই করব। কিন্তু সে যদি তোমার কাছ থেকেই জানতে চায়? তখন কি তুমিও তাকে মিথ্যেই বলবে? কিন্তু বৌদি তো বিশ্বাস করে যে তার দিদিভাই কক্ষনো তাকে মিথ্যে কথা বলবে না”।
সীমন্তিনী জবাব দিল, “আমার রচু সোনাকে আমিও মিথ্যে বলব না। তবে আসল সত্যিটা কিছু দিনের জন্য গোপন করে যেতেই হবে ওর কাছে। আর আমি ওকে সেভাবেই সামলে নেব। আর জানিস, পুলিশের লোকেরাই বোধহয় সবচেয়ে বেশী মিথ্যেবাদী হয়ে থাকে। কিন্তু তোদের সকলের কাছে তো আমি পুলিশ নই। আমি যে তোদের দিদি। তাই তোদের কাছে মিথ্যে আমি কখনও বলব না। তবে কাজের স্বার্থেই কখনো কখনো কিছু কিছু কথা আমাকে চেপে যেতেই হয়। সেগুলো জানতে তোরা কখনও জোরাজুরি করিসনে ভাই। সময় হলে আমি নিজেই তোদের সে’সব বলে দেব”।
*********************
এবার নবনীতা আর কিছু বলার আগেই সীমন্তিনী তাকে জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা নীতা, তুই আমাকে একটা কথা বল তো। তুই নিজে ওই বদমাশ বিমল আগরওয়ালাকে কখনও দেখেছিস? বা তার সম্বন্ধে কিছু জানিস”?
নবনীতা জবাব দিল, “না দিদি। আমি তাকে কখনও দেখিনি। তবে বীথিকার মুখেই শুনেছি যে বিমল আগরওয়ালার স্ত্রীও নাকি সপ্তাহে দু’দিন ম্যাডামের ইনস্টিটিউটে যোগা থেরাপি করতে আসে। আর বিমল আগরওয়ালা নিজেও মাঝে মধ্যে ম্যাডামের কাছে আসে। এর চেয়ে বেশী আর কিছু আমি জানিনা”।
সীমন্তিনী এবার জিজ্ঞেস করল, “তোর কাছে বীথিকার নাম্বার আছে? তার সাথে কথা বলে তুই কি বিমল আগরওয়ালার ব্যাপারে আর কিছু খবরাখবর যোগার করতে পারবি”?
নবনীতা বলল, “বীথির নাম্বার তো আমার আগের মোবাইলে সেভ করা ছিল দিদি। কিন্তু সেটা তো তুমিই সেদিন নিয়ে নিয়েছিলে আমার কাছ থেকে। নাম্বারটা তো আমার ঠিক মনে নেই গো”।
সীমন্তিনী মনে মনে ভাবল, নবনীতার পুরনো মোবাইলটা সে পরিতোষের হাতেই দিয়ে এসেছিল, কিন্তু তার সিমটা নিজের কাছেই রেখেছিল। ভবিষ্যতে প্রয়োজন হতে পারে বলেই তেমনটা করেছিল সে। সেটা হয়তো এখনও তার ব্যাগেই আছে। মনে মনে এ’কথা ভেবে সে নবনীতাকে আবার জিজ্ঞেস করল, “তোর ফোনটা তো পরিতোষের হাতেই দিয়ে এসেছিলুম। কিন্তু বীথিকার নাম্বারটা কি তুই ফোনে সেভ করেছিলি? না সিমে”?
নবনীতা মুখটা কাঁচুমাচু করে জবাব দিল, “সেটা তো ঠিক মনে পড়ছে নাগো দিদি”।
সীমন্তিনী বলল, “আচ্ছা যাক, ছেড়ে দে ও’কথা। ফোনটা যখন সঙ্গে আনিনি, তখন আর মিছে ও নিয়ে ভেবে কোন লাভ নেই। অন্য কোনভাবে বিমলের সম্বন্ধে খোঁজখবর করতে হবে”।
****************
দক্ষিণেশ্বরের কাছাকাছি একটা জায়গায় একটা রেস্টুরেন্টের সামনে এসে অভি তার বাইক থামাল। একবার আশে পাশে চোখ বুলিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে সে বাইকের ইঞ্জিন বন্ধ করে বাইকটাকে রেখে রেস্টুরেন্টের ভেতর এসে ঢুকল। মাথা থেকে হেলমেট না খুলেই সে এক পাশের একটা খালি টেবিলে গিয়ে বসল। হাতে ঘড়ি নেই। তাই পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে সময় দেখল। দুপুর দুটো বেজে কুড়ি মিনিট। তার মানে হাতে এখনও মিনিট দশেক সময় আছে। একটা লস্যির অর্ডার দিয়ে সে রেস্টুরেন্টের সামনের দিকে চেয়ে রইল। একটু বাদে লস্যি দিয়ে যেতে সে আস্তে আস্তে খেতে খেতে ভাবতে লাগল পরিতোষের প্ল্যানের কথা। স্যার জানিয়েছেন বিমল যেদিন এখানে আসে সেদিন পুরো রাতের জন্যই আসে। তার সঙ্গে থাকে কোন না কোন রূপসী, তা সে যে কোন বয়সেরই হোক না কেন।
অভি মনে মনে ভাবল, এই কোটিপতি পয়সাওয়ালা লোকগুলো পয়সার জোরে গোটা পৃথিবীটাকে নিজের পৈতৃক সম্পত্তি বলে ভাবতে শুরু করে। আরে বাবা, তোদের পয়সা আছে, প্রতিপত্তি আছে, বেশ কথা। পয়সার জোরে ধরাকে সরা জ্ঞান করছিস, তাও নাহয় মেনেই নিলুম। সে পয়সার জোরেই তো শহরের নামী দামী বেশ্যা বা এস্কর্ট ভাড়া করে নিজেদের ক্ষুধা মেটাতে পারিস বাবা। তোদের ঘরের লোকেরা যদি তাতে বাঁধা না দেয় তাহলে বাইরের লোকেরা আর তোদের কী করতে পারে। কিন্তু ভদ্রঘরের মেয়ে বৌদের প্রতি নজর না দিলেই কি চলছিল না তোর। এবার বুঝবি ঠেলা। এবার বুঝতে পারবি কত ধানে কত চাল। জানিনা স্যার কিভাবে কী প্ল্যান করছেন। কিন্তু তোর মাথার ওপর সুতো দিয়ে কিন্তু খাঁড়া ঝোলাবার কাজ শুরু হয়ে গেছে। তবে সুতোটা কবে কেটে দেওয়া হবে, আর তার কোপটা তোর শরীরের ঠিক কোথায় এসে পড়বে সেটা তো শুধু স্যারই জানেন, আর জানেন ভগবান। তবে যেহেতু এবারের প্ল্যানের ফাইনাল স্টেজে একজন ডাক্তারও সামিল আছেন, আর সেও একজন সার্জেন, তাহলে মনে হয় কোপটা ঠিক তোর গলায় পড়বে না। তবে তোর শরীরের কোন একটা প্রত্যঙ্গ যে অকেজো হতে চলেছে সেটা নিয়ে আমার মনে একটুও সন্দেহ নেই। আর সেই প্রত্যঙ্গহানির সাথে সাথে তো তুই আরেক বিপদেও পড়তে যাচ্ছিস। অবশ্য তোর যা ক্ষমতা আর প্রতিপত্তি তাতে তুই হয়ত পরের বিপদটা কাটিয়েও উঠতে পারিস। কিন্তু স্যারের প্ল্যানও কিন্তু একেবারেই নড়বড়ে হবে না। জলের কুমীর আর ডাঙার বাঘের মুখ থেকেও বেঁচে ফেরা যায়। কিন্তু স্যারের থাবা থেকে বেঁচে যাওয়া... সেটা যে আজ অব্দি কেউ করতে পারেনি। অবশ্য এ’কথাটা তোর জানার কথা নয়। এ’কথা জানি আমরা, স্যারের নেটওয়ার্কের মেম্বাররা।
ঠিক আড়াইটের সময় জীন্স আর টিশার্ট পরা একটা লোক এসে ঢুকল। আর সে এসে সরাসরি অভির টেবিলে এসে একটা চেয়ারে বসতে বসতে বলল, “নমস্কার বাবু। দেখলেন তো? আমি বলেছিলাম না ঠিক কাটায় কাটায় আড়াইটেয় আপনার সামনে হাজির হব। দেখুন, এক মিনিটও এদিক ওদিক হয়নি”।
অভি শান্তভাবে বলল, “লস্যি খাবি”?
লোকটা একটু হেসে বলল, “তা একটু লস্যি খেলে বেশ ভালই লাগবে। যা গরম পড়েছে আজ”।
অভি হাত তুলে একটা বেয়ারাকে ডেকে আরেক গ্লাস লস্যি দিতে বলল। তারপর বেয়ারা চলে যেতে লোকটাকে বলল, “এবার বল, কাজগুলো ঠিকঠাক ভাবে কমপ্লিট করেছিস তো”?
লোকটা বলল, “বাবু, লাখু কোনও কাজের কন্ট্রাক্ট নিয়েছে, আর সে কাজ কমপ্লিট হয়নি, এমন রেকর্ড আজ অব্দি হয়নি। আপনি যেমন যেমন বলেছেন। ঠিক তেমন তেমন ভাবেই কাজ সেরে এসেছি। আপনি একেবারে নিশ্চিন্ত থাকুন”।
বেয়ারা এসে লস্যির গ্লাস দিয়ে চলে যাবার পর অভি জিজ্ঞেস করল, “গার্ডেরা কিছু টের পায়নি তো? আর জিনিসগুলো কারো চোখে পড়বে না তো”?
লাখু বলল, “গার্ড দুটোকেই মদ খাইয়ে আগেই ফ্ল্যাট করে দিয়েছিলাম বাবু। তারপর এসি সারাবার নাম করে মাস্টার বেডরুমের ছয়টা এঙ্গেল থেকে ছয়টা ক্যামেরা এমনভাবে সেট করে দিয়েছি যে আমি ছাড়া সেগুলো আর কারো চোখে পড়বে না। কাজ শেষ হয়ে গেলে আপনি নিজেও যদি সেখানে গিয়ে ওগুলো খুলে আনতে চান, তাহলে আপনার পক্ষেও কাজটা খুব সহজ হবে না, এ’কথা জোর দিয়ে বলতে পারি বাবু। আর ও’ঘরে যারা ঢোকে তারা কি আর দেয়ালের কোথায় কি আছে তা খুঁটিয়ে দেখবার সময় পায়? তারা তো তাদের কাজ কত তাড়াতাড়ি শুরু করবে, সে চিন্তাতেই মশগুল থাকে বাবু। হে হে হে”।
অভি নিজের গ্লাস খালি করে জিজ্ঞেস করল, “মালিক আবার কবে এখানে আসবে এখানে সে ব্যাপারে কিছু শুনেছিস”?
লাখু এক চুমুক লস্যি খেয়ে বলল, “গার্ড দুটো মালের নেশায় যা বলল তাতে তো মনে হল আজ রাতেই আসবে এক পরিকে নিয়ে। তবে বাবু, ওদের নেশাটা কিন্তু একটু বেশীই হয়েছিল। তাই সঠিক বলেছে কিনা, সেটা বাবু জোর দিয়েও বলতে পাচ্ছি না। কিন্তু আজই যখন এসিটা সারাই করে দিতে হবে বলে অর্ডার করেছে, তাতে মনে হয় আজ রাতেই আসতে পারে”।
অভি নিজের পকেট থেকে একটা মোটা খাম বের করে টেবিলের ওপর রাখতে রাখতে বলল, “এটা রাখ। বিশ আছে। এরপর যেদিন আবার জিনিসগুলো ওখান থেকে এনে আমাকে দিবি, সেদিন আরও বিশ পাবি। আর জিনিসগুলো পরীক্ষা করে যদি দেখি খুব ভাল রেকর্ডিং হয়েছে, তাহলে আরো দশ তোকে বখশিস হিসেবে দেব”।
লাখু খুশী হয়ে খামটা পকেটে পুরে বলল, “কিন্তু বাবু, জিনিসগুলো কবে খুলে আনতে হবে, সেটা তো বলেননি এখনও”?
অভি বলল, “সেটা তো আমিও ঠিক বলতে পাচ্ছি না এখন। তবে মনে হয় চার পাঁচ দিন লাগবে। সেটা আমি তোকে পরে জানিয়ে দেব। কিন্তু সেদিন তুই কী বলে আবার এই ফার্ম হাউসে এসে ঢুকবি”?
লাখু হেসে বলল, “সেটা আপনি আমার ওপরেই ছেড়ে দিন বাবু। আমি আজই সাহেবকে ফোন করে জানিয়ে দেব যে এসির এমন একটা পার্টস খারাপ হয়েছে যেটা আজ আমি সাথে আনিনি। তাই আমি টেম্পোরারি ভাবে চার পাঁচদিন চলবার মত একটা উপায় করে গেলাম আজ। আর চার পাঁচ দিনের মধ্যেই আমি আসল পার্টসটা এনে লাগিয়ে দেব। তাই আমার আসবার রাস্তা পরিষ্কার করে রাখব আজই। আপনি শুধু আমাকে জানিয়ে দেবেন, কবে আমাকে আসতে হবে”।
অভি মনে মনে একটু খুশী হলেও মুখে সেটা প্রকাশ না করে বলল, “ঠিক আছে। তুই তাহলে এবার এখান থেকে উঠে পড়। আমি আরও দশ মিনিট এখানে বসব”।
গ্লাসের বাকি লস্যিটুকু একচুমুকে শেষ করে “আসছি বাবু, নমস্কার” বলে লাখু চলে গেল।
______________________________
Posts: 577
Threads: 3
Likes Received: 797 in 298 posts
Likes Given: 364
Joined: Feb 2019
Reputation:
64
(Update No. 159)
মিনিট দশেক বাদে অভি রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে বাইক স্টার্ট করে একদিকে এগিয়ে চলল। প্রায় পাচ’শ গজ যাবার পরেই অভীষ্ট ফার্ম হাউসের সামনে এসে পৌঁছল। ফার্ম হাউসের গেটে বাইক দাঁড় করিয়ে সে হর্ন বাজাতে শুরু করল। কিন্তু গেটের ভেতর যতদুর চোখ যায় কাউকে দেখতে পেল না। কয়েকবার হর্ন বাজিয়েও কোন লাভ হল না।
একসময় বাইকের স্টার্ট বন্ধ করে বাইকটাকে রাস্তায় রেখেই সে গেটটাকে ভেতরের দিকে একটু ঠেলতেই গেট খুলে গেল। মাথায় হেলমেট সহই অভি একমূহুর্ত দেরী না করে ভেতরে ঢুকে পড়ল। গেট থেকে ফার্ম হাউসের মূল দরজা প্রায় একশ’ গজ দুরে। অভি অসম্ভব ক্ষিপ্রতায় সেদিকে এগিয়ে গেল। মূল দরজার পাশেই ফার্ম হাউসের দুটো গার্ডকে মরার মত পড়ে থাকতে দেখে সে আর এক মূহুর্তও দেরী না করে নিজের পকেট থেকে ছোট একটা চিপ আর খুব সরু আর ধারালো একটা ছুরি বের করল। একজন গার্ডের একটা জুতো তার পা থেকে খুলে একপাশে পড়েছিল। আর অন্য জুতোটা যদিও তার পায়েই ছিল, তবু সেটারও লেস খোলা। অসম্ভব ক্ষিপ্রতার সাথে খোলা জুতোটা হাতে নিয়ে সে ধারালো চাকুটা দিয়ে জুতোর তলার গোড়ালীর দিকে একটা জায়গায় ছুরিটার প্রায় ইঞ্চি খানেক ঢুকিয়ে দিয়ে একটা চ্যাপ্টা গর্তের মত ফাঁকের সৃষ্টি করল। তারপর প্রায় আধ ইঞ্চি লম্বা চিপটাকে সে ফাঁকের ভেতর দিয়ে গলিয়ে দিল। তারপর পকেট থেকে আরেকটা ছোট সলিউশনের টিউব বের করে জুতোর সোলের ফাঁকের ভেতর খানিকটা সলিউশন ঢুকিয়ে দিল। তারপর হাত দিয়ে চেপে ধরে ফাঁকটাকে ওপর নিচে চাপ দিতেই ফাঁকটা পুরোপুরি ভাবে জোড়া লেগে গেল। আরেক গার্ডের পা থেকে একটা জুতো খুলে সেটাতেও একই রকম ভাবে আরেকটা চিপ ঢুকিয়ে আবার সীল করে দিল। কয়েক সেকেন্ড সেগুলোর দিকে দেখে মনে মনে আশ্বস্ত হয়ে সে আবার খোলা জুতোটাকে আগের জায়গায় রেখে দিয়ে, চাকু আর সলিউশনের টিউবটা পকেটে পুরে নিয়ে ত্র্যস্ত পায়ে মেন গেটের দিকে এগিয়ে গেল। বিশাল লোহার গেটের কাছে এসে পকেট থেকে সে আরেকটা ছোট চিপসের মত জিনিস বের করে হাঁটু মুড়ে বসল। শার্টের পকেট থেকে সেলোটেপের রোল বের করে তার থেকে দু’ইঞ্চির মত একটা টুকরো কেটে নিল। গেটের সব চেয়ে নিচের হরাইজন্টাল চৌকো রডটার তলার দিকে চিপটাকে সেলোটেপ দিয়ে এমনভাবে সেঁটে দিল, যে বাইরে থেকে বিন্দুমাত্রও বুঝবার জো রইল না। একবার ভালো করে তাকিয়ে দেখেই সন্তুষ্ট হয়ে সে তড়িঘড়ি গেটের বাইরে এসে গেটটাকে আবার টেনে দিয়ে নিজের বাইক স্টার্ট দিয়ে ফেরবার পথ ধরল।
রেস্টুরেন্টটার কাছে এসে সে একটু থামল। পকেট থেকে মোবাইল বের করে মোবাইল সেটিং-এ ঢুকে সে কিছু খুটখাট করতেই মোবাইলে বিপ বিপ করে শব্দ হল দুটো। খুশী হয়ে মোবাইল পকেটে পুরে সে আবার বাইক চালালো ফেরার পথে।
***************
পরের দিন রাতে ডিনার শেষ করে নবনীতা আর অর্চনা তাদের ঘরে চলে যাবার সময় সীমন্তিনী তাদের দু’জনকে ফিসফিস করে বলল, “শোন, লক্ষ্মীদি কাজ শেষ করে নিজের ঘরে শুতে চলে গেলে তোরা চুপিচুপি আমার ঘরে চলে আসিস। কাজ আছে”।
নবনীতা আর অর্চনা সম্মতি জানিয়ে নিজেদের ঘরে চলে যাবার পর সীমন্তিনী নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে তার ব্যাগের ভেতর হাতরাতে হাতরাতে নবনীতার ফোনের সিমকার্ডটা খুঁজে পেল। তারপর সে ঘরের বড় আলোটা নিভিয়ে দিয়ে বিছানার পাশে সাইড টেবিলের ওপর রাখা টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে দিয়ে নিজের অফিসিয়াল মোবাইল থেকে সিম কার্ডটা খুলে নবনীতার সিমটা ভরে দিয়ে ফোন সুইচ অন করল। কয়েক মূহুর্ত বাদে মোবাইলের স্ক্রীনে মেনু ফুটে উঠতেই সে কন্টাক্ট ফোল্ডারে গিয়ে ঢুকল। আর প্রায় সাথে সাথেই বীথিকার কন্টাক্ট নাম্বারটা পেয়ে গেল। এবার সে তার নিজের পার্সোনাল মোবাইলে বীথিকার নাম্বারটা লিখে নিয়ে নবনীতার সিম ভরা মোবাইলটা সুইচ অফ করে দিল। তারপর নবনীতার সীমটা মোবাইল থেকে বের করে আবার নিজের ব্যাগের ভেতর ভরে রাখল। আর প্রায় ঠিক তখনই লক্ষ্মীর ঘরের দরজা বন্ধ করবার শব্দ কানে এল।
সীমন্তিনী নিজের অফিসের মোবাইলে আবার আগের সিমটা ঢুকিয়ে মোবাইল সুইচ অন করে বিছানা থেকে নেমে পা টিপে টিপে গিয়ে ঘরের দরজার লক খুলে দিয়ে দেয়ালের দিকের টেবিল থেকে ল্যান্ডলাইন ফোনটা এনে নিজের বিছানার ওপর রাখল। আর প্রায় সাথে সাথেই তার ঘরের দরজাটা সামান্য ফাঁক হয়ে গেল। নবনীতা চাপা গলায় প্রায় ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল, “দিদি, আমরা আসবো”?
সীমন্তিনী তাড়াতাড়ি দরজার কাছে এসে দু’জনকে ভেতরে ঢুকিয়ে নিয়ে ফিসফিস করে বলল, “আস্তে কথা বলবি সবাই। লক্ষ্মীদি যেন কিছু বুঝতে না পারে। যা তোরা বিছানায় গিয়ে বোস” বলে দরজা ভেতর থেকে লক করে দিল।
নিজের বিছানায় এসে সীমন্তিনী অর্চনার একটা হাত ধরে নিচু গলায় বলল, “অর্চু, নীতা এখন একজনের সাথে ফোনে কথা বলবে। কিন্তু এখন ফোনের স্পীকার অন করে কথা বলা যাবে না। লক্ষ্মীদি টের পেয়ে যেতে পারে। আমি তাকে এখন কিছু জানাতে চাইছি না। নীতা ফোনে কথা বলতে শুরু করলেই তুই কিন্তু একদম চুপ করে থাকবি। মুখ দিয়ে সামান্য একট শব্দও যেন না বেরোয়। আমিও কোনও কথা বলব না। তবে ফোনের সাথে একটা হেডফোন লাগিয়ে আমরা দু’জনে ওদের সব কথাই শুনতে পারব। কিন্তু মুখে কিন্তু টু শব্দটিও করা চলবে না, এটা মনে রাখিস” বলতে বলতে নিজের ব্যাগের ভেতর থেকে একটা বিশেষ ধরণের হেডফোন বের করে ল্যান্ডলাইন ফোনের এক পাশের একটা পয়েন্টের সাথে জুড়ে দিয়ে হেডফোনের একটা প্রান্ত অর্চনার কানে আর অন্য প্রান্তটা নিজের কানে লাগিয়ে দিল।
নবনীতা নিজের কৌতূহল চাপতে না পেরে জিজ্ঞেস করেই বসল, “কার সাথে কথা বলতে হবে আমাকে দিদি”?
সীমন্তিনী চাপা গলায় জবাব দিল, “বলছি, কিন্তু তার আগে শোন নীতা। তুই যে আমাদের ঘরে বসেই তার সাথে কথা বলছিস, এটা যেন সে কোনভাবেই বুঝতে না পারে। ফোনটা প্রথমে আমি করব। তারপর ও’পাশ থেকে সাড়া পেলে আমি রিসিভারটা তোর হাতে দেব। এমন ভাব করব যে আমি একটা পিছিও থেকে কথা বলছি। তুই যখন তার সাথে কথা বলবি, তখন ও’পাশ থেকে কে তোর সাথে কথা বলছে সেটা শুনলেই তুই চমকে উঠবি। হয়তো চেঁচিয়ে উঠতে পারিস। কিন্তু সেটা করা একেবারেই চলবে না। তাই আগে থেকেই তোকে জানিয়ে দিচ্ছি। ও’পাশে বীথিকা থাকবে। অবশ্য জানিনা, ও এখন ঘরেই আছে কি না। তবে ও যদি সত্যিই কলটা রিসিভ করে তাহলে তুই তোর ইচ্ছে মত তার সাথে কথা বলতে পারিস। তোর যা কিছু বলতে ইচ্ছে করে বলিস। আমি কোন কিছুতেই বারণ করব না। কিন্তু তুই এখন আসলে কোথায় আছিস সেটা ওকে জানাতে পারবি না। তুই যে আমার সাথে কলকাতা থেকে পালিয়ে এসে আমার এখানেই আছিস, এটাও বলতে পারবি না। আর আমার নাম ঠিকানাটাও তাকে বলবি না। মিথ্যে বলবি যে তুই এখন কাটোয়ায় আছিস। একটা গারমেন্টস কারখানায় কাজ করছিস। মন খুলে ওর সাথে কথা বলবি। তোর যা যা বলতে ইচ্ছে করে বলিস। কিন্তু ওর সাথে কথায় কথায় বিমল আগরওয়ালা আর মহিমা মালহোত্রার ব্যাপারে যতটুকু জানতে পারিস তার চেষ্টা করবি। দাদাভাই আর রচুর প্রতি মহিমার মনোভাব আর ব্যবহার কেমন, মহিমার মনে কি দাদাভাই আর রচুকে তার এসকর্টের ব্যবসায় নামাবার কোনও প্ল্যান আছে কি না, বিমল আগরওয়ালাকে বীথিকা চেনে কি না, বিমলের পরিবারে কে কে আছে। তাদের চালচলন ব্যবহার বা স্বভাব কেমন, তারা কোথায় কোথায় যায়, কি কি করে বেড়ায়, এ’সব সম্বন্ধে যত বেশী কথা জানতে পারিস সে চেষ্টা করবি। বুঝেছিস তো”?
নবনীতা সীমন্তিনীর একটা হাত নিজের হাতে নিয়ে বলল, “ঠিক আছে দিদি। আমি বুঝেছি। কিন্তু দিদি, এতসব ব্যাপারে কথা বলতে গেলে তো অনেকটা সময় লাগবে”।
সীমন্তিনী তাকে আশ্বস্ত করে বলল, “লাগুক, তাতে কি হল? হয়তো আমাদের সকলের ঘুমোতে একটু দেরী হয়ে যাবে, এর বেশী তো আর কিছু হবে না। কিন্তু আমার রচুসোনার বিপদ কাটাতে এ টুকু সাহায্য তুই আমাকে করবি না”?
নবনীতা সীমন্তিনীর হাতটা জোরে চেপে ধরে বলল, “ও’কথা বোল না দিদি। বৌদির সুরক্ষার জন্য পরি আর আমি সব সময় তোমার পাশে আছি”।
সীমন্তিনী বলল, “সেটা জানি বলেই তো তোকে আগে থেকে কিছু না জানিয়েই আমি এসবের প্ল্যান করেছি। কত কষ্ট করে বীথিকার নাম্বারটা যোগার করেছি। আচ্ছা শোন, কথা বলে আর সময় নষ্ট করছি না। আমি এবার ফোনটা করছি। সবাই চুপ করে থাকবি” বলে ল্যান্ডলাইন ফোন থেকে বীথিকার নাম্বার ডায়াল করল। কিন্তু বীথিকার তরফ থেকে সাড়া পাওয়া গেল না। ফোনটা বেজে বেজে একসময় টাইম আউট হয়ে গেল।
সীমন্তিনী দ্বিতীয় বার ডায়াল করতে যেতেই নবনীতা বলল, “এমনও হতে পারে যে ও এখন কাজেই ব্যস্ত আছে”।
দ্বিতীয় বার ডায়াল করেও কাজ হল না। এবারেও একই অবস্থা। সীমন্তিনী দেয়াল ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখল রাত প্রায় এগারোটা। নবনীতা চাপা গলায় বলল, “দিদি, হয়তো ও কাজেই ব্যস্ত আছে। ওকে তো মাঝে মধ্যেই হোল নাইট ডিউটি করতে হয়। আর হোল নাইট না হলেও রাত বারোটা একটা পর্যন্ত ডিউটি তো প্রায় সব দিনই করতে হয়”।
সীমন্তিনী আরেকবার ডায়াল করতে করতে বলল, “ঠিক আছে, একটু অপেক্ষা করে দেখাই যাক না”।
এবার ও পাশ থেকে সাড়া পাওয়া গেল। এক মেয়েলী কন্ঠ বলে উঠল, “হ্যালো, কে বলছেন”?
সীমন্তিনী নবনীতার দিকে ঈশারা করে বলল, “আমি কাটোয়ার একটা পিছিও থেকে বলছি। আচ্ছা আপনি কি মিস বীথিকা মল্লিক”?
বীথিকা ও’পাশ থেকে ‘হ্যাঁ’ বলতেই সীমন্তিনী আবার বলল, “আচ্ছা এই নিন, কথা বলুন” বলেই রিসিভারটা নবনীতার হাতে ধরিয়ে দিল। নবনীতা রিসিভার কানে লাগিয়েই বলে উঠল, “বীথি, আমি নীতা বলছি রে”।
ও’পাশ থেকে বীথিকা প্রায় চেঁচিয়ে উঠল, “নীতা, তুই? তুই কোত্থেকে বলছিস? আর এটা তোর কেমন ব্যবহার রে? বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেলি। এক মাসের ওপর হয়ে গেল তোর একটা খবর পর্যন্ত পাচ্ছি না আমরা। আমি আর ম্যাম তোর জন্যে কত চিন্তা করছি। কোথায় আছিস তুই? নাকি আবার ওই বদমাশটার খপ্পরে পড়েছিস? তোকে কি আবার আসানসোল নিয়ে গেছে ওরা”?
নবনীতা শান্ত গলায় বলল, “নারে বীথি, তেমন কোন ব্যাপার হয়নি রে। কিন্তু তোদেরকে কন্টাক্ট করবার সুযোগই আমি পাইনি রে। আমি জানি তোরা আমার কাছ থেকে কোন খবর না পেয়ে খুব চিন্তায় থাকবি। কিন্তু আসলে কি হয়েছে জানিস। মাস খানেক আগে আমি কোলকাতা ছেড়ে কাটোয়ায় চলে এসেছি। কিন্তু আসবার সময় পথে এক জায়গায় আমার মোবাইলটা হারিয়ে ফেলেছি। তুই তো জানিস আমার স্মৃতি শক্তি খুব কম। তোর বা ম্যাডামের নাম্বার আমার মনে ছিল না। মনে করবার অনেক চেষ্টা করেও তোর মোবাইলের দশটা নাম্বার কিছুতেই মনে পড়ছিল না আমার। প্রথম ছ’টা নাম্বার আমার মনে ছিল। সেই নাম্বারগুলোর সাথে আন্দাজে বাকি চারটে নাম্বার বসিয়ে তোকে রোজ এক একটা পিছিও থেকে ফোন করে যাচ্ছিলাম। আজ হঠাৎ করেই তোর সাথে যোগাযোগ হয়ে গেল”।
বীথিকা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “তুই কাটোয়ায় আছিস? ওখানে কবে গিয়েছিস আর কেন গিয়েছিস? তুই ভাল আছিস তো? তোর কোন বিপদ আপদ হয়নি তো নীতা”?
নবনীতা আগের মতই শান্ত স্বরে জবাব দিল, “আমি ঠিক আছি রে বীথি। বিপদ আপদ কিছু হয়নি। আর এখানে আমি এসেছি আগষ্টের এগারো তারিখেই। সেদিন সকালেই তোর সাথে আমার শেষ দেখা ও কথা হয়েছিল। কিন্তু বিশ্বেস কর বীথি, যখন আমি তোর ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম তখন আমি নিজেও জানতাম না যে আমি সেদিনই কলকাতা ছেড়ে চলে আসব। সেটা আগে থেকে জানা থাকলে আর অন্য কাউকে বলি বা না বলি তোকে অন্ততঃ জানিয়ে আসতাম। সেদিন আসলে আমার এক পুরনো পরিচিত বন্ধুর সাথে দেখা করতেই বেরিয়েছিলাম শুধু। কিন্তু ঘটণাচক্রে এমন একটা সুযোগ তখন হাতে পেয়ে গিয়েছিলাম যে ওই মূহুর্তেই আমাকে ডিসিশনটা নিতে হয়েছিল। আমার ওই বন্ধুর মাধ্যমেই কাটোয়ার একটা গারমেন্টস ফ্যাক্টরীর মালিকের সাথে আমার আলাপ হয়েছিল। আর আমার জীবনের সব কথা শুনে ভদ্রলোক আমায় সেদিনই তার গারমেন্টস ফ্যাক্টরীতে একটা চাকরি দেবার জন্য রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। তুই তো জানিসই বীথি, ইচ্ছেয় হোক আর অনিচ্ছেয় হোক, শুধু বেঁচে থাকবার জন্যেই আমাকে নিজের মান সম্মান ইজ্জত সবকিছু বিসর্জন দিতে হয়েছে। আমার ওই বন্ধুর পরিচিত সেই গারমেন্টস ফ্যাক্টরীর মালিক, খুবই সজ্জন এবং ভদ্রলোক। তিনি আমাকে বলেছিলেন যে যদি সৎ ভাবে জীবন কাটাতে চাই, তাহলে যেন সেদিনই বিকেলের ট্রেণে আমি তার সাথে কাটোয়া চলে যাই। তুই তো জানিস, সৎ ভাবে বাঁচবার লোভ আমার মনে সব সময়ই ছিল। তাই সেদিন ওই সুযোগ পেয়ে লোভটা আর সামলাতে পারিনি রে। তার কথায় আর আমার বন্ধুর পরামর্শে আমি সেদিনই তার সাথে চলে এসেছিলাম। ভেবেছিলাম ট্রেনে উঠে তোকে আর ম্যাডামকে ফোন করে কথাটা জানিয়ে দেব। কিন্তু চলতি ট্রেনের টয়লেটে ঢুকে মোবাইল হাতে নিয়ে তোকে ফোন করতে যেতেই হঠাৎ ট্রেনের ঝাকুনিতে সেটটা হাত থেকে ছিটকে টয়লেটের কমোডের ভেতর পড়ে গিয়েছিল। আর ট্রেনের টয়লেটে পড়া মানে যে কি সেটা তো তুই জানিসই। কোনভাবেই সেটা আর ফিরে পাবার সম্ভাবনা ছিল না। তাই তোকে আর ফোন করতে পারিনি। অবশ্য ওই ভদ্রলোক তার নিজের মোবাইল থেকে আমাকে ফোন করতে বলেছিলেন। কিন্তু নাম্বারটা আর কিছুতেই মনে করতে পারছিলাম না। তাই তো তোকে আর ফোন করে খবরটা জানাতে পারিনি আমি। নতুন একটা মোবাইল এখনও কিনে উঠতে পারিনি। তবে সেদিন থেকেই একের পর এক নাম্বার আন্দাজ করে বিভিন্ন পিছিও থেকে তোকে ফোন করে চলেছি একনাগাড়ে। শেষমেশ আজ তোকে পেলাম”।
এবার বীথিকা বেশ খুশীর গলায় বলল, “সত্যি বলছিস তুই নীতা? এখন থেকে তোর শরীরটাকে আর নোংড়া কামপিপাসু কোন লোকের হাতে তুলে দিতে হচ্ছে না? তুই এখন থেকে একটা ভদ্র মেয়ের মত বাঁচতে পারবি”?
নবনীতাও আবেগ ভরা গলায় বলল, “হ্যারে বীথি। এখন আর আমাকে সে’সব করতে হচ্ছে না। এই একটা মাস থেকে আমি সত্যি খুব ভাল আছি রে। আমাদের কারখানার আরেকটা মেয়ের সাথে একসাথে একটা ছোট্ট ঘর ভাড়া নিয়েছি। দুপুরের খাবার কারখানা থেকেই দেয়। সকালের ব্রেকফাস্ট আর রাতের খাবার নিজেদের ঘরেই খাই। বেতন পাচ্ছি মাসে আট হাজার। তিন হাজার টাকা ঘর ভাড়ার অর্ধেকটা আমাকে দিতে হয়। বাকি টাকায় একটু কষ্ট হলেও কোনমতে সামলে নিচ্ছি। আর ভাল করে কাজটা শিখে নিতে পারলে মালিক আমার বেতন বাড়িয়ে দেবে বলেছেন। তবে যেটুকু কষ্ট হচ্ছে, তা আগের কষ্টের তুলনায় প্রায় কিছুই না। তোর আমার মত মেয়েরা খুব আনন্দের সাথেই সেটুকু কষ্ট সহ্য করে নিতে পারবে”।
এবার বীথিকা একটু বিমর্ষ ভাবে বলল, “নারে নীতা। আমার বোধহয় আর এই নরক থেকে বের হওয়া সম্ভব হবে না রে। জানিস, বাবার অবস্থা এখনও যদিও একই রকমেরই আছে। পঙ্গু ভাইটা দিন পনেরো আগে রাস্তায় গাড়ির ধাক্কায় বেশ ভাল রকম জখম হয়েছে। ইন্টারনাল হেমারেজও কিছুটা হয়েছিল। এখনও হাসপাতালে আছে। কোমায়। কোন সেন্স নেই। সপ্তাহে সপ্তাহে সত্তর হাজার করে টাকা দিতে হচ্ছে হাসপাতালে। তাই নিজে আরও বেশী ক্লায়েন্ট নিতে শুরু করেছি। তবু কুলোতে পারছি না। ম্যাম নিজেই হাসপাতালের খরচের অনেকটাই বহন করছেন। তাই তো এখনও চালিয়ে যেতে পারছি। কিন্তু ম্যামেরও মন মেজাজ খুব একটা ভাল নেই। যদিও এ ব্যাপারে তিনি আমাকে এখন অব্দি কিছু বলেননি সরাসরি, তবে তার ভাবসাব দেখে আমার মনে হচ্ছে উনি বোধহয় এই এসকর্টের ব্যবসা ছেড়ে দেবার কথাই ভাবছেন। একদিন তো আমাকে জিজ্ঞেসই করলেন যে ‘বীথি, আমি যদি ব্যবসাটা পুরোপুরি তোমার হাতে তুলে দিই, তবে তুমি সামলাতে পারবে’? সেদিনই আমি বুঝে গেছি যে ম্যাম নিজেকে এই ব্যবসা থেকে পুরোপুরি ভাবে সরিয়ে নিতে চাইছেন। কিন্তু চিন্তা বেড়ে গেছে আমার। অবশ্য শুধু আমার কথাই বা বলছি কেন? তুই তো জানিসই নীতা, আমার মত অনেক মেয়ে মহিলাই ম্যাডামের কাছে উপকৃত। ম্যামের ওপরই তারা পুরোপুরিভাবে নির্ভরশীল। তারাও সবাই হয়ত বিপদে পড়বে। বাধ্য হয়ে তাদেরকে শহরের অন্যান্য এসকর্ট প্রোভাইডারদের কাছে যেতে হবে। আমাকেও হয়ত সেটাই করতে হবে। তাতে ঝঞ্ঝাট ঝামেলা অনেক বেশী পোয়াতে হবে। ম্যামের এখানে আমরা যত নিশ্চিন্ত, অন্যদের কাছে আমরা ততটাই অসুরক্ষিত হয়ে থাকব। আমাদের সুবিধে অসুবিধের কথা তারা কেউ ভাববে না। যত কষ্টই হোক না কেন, তাদের সব কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে। পান থেকে চুনটি খসলে আমাদের পিঠের ছাল চামড়া তারা তুলে নেবে। কিন্তু বাবা আর ভাইকে নিয়ে আমি তো একেবারে হাবুডুবু খাচ্ছি এখন থেকেই। ম্যাম যদি সত্যিই আমাদের সবাইকে ছুটি দিয়ে তার ব্যবসা বন্ধ করে দেন তাহলে আমাদের যে কী হবে সেটা ভেবেই ভয়ে হাত পা কাঁপতে শুরু করে রে। তুই বেঁচে গেছিস। এখান থেকে চলে গিয়ে ভাল একটা সুযোগ পেয়েছিস শুনে খুব ভাল লাগছে। এতদিনে মনে হয় তোর দুঃখের দিন শেষ হল। ম্যামও তোর জন্যে ভাবছিলেন। তিনিও তোর কথা শুনে খুব খুশী হবেন আমি জানি”।
নবনীতা জিজ্ঞেস করল, “সত্যি বীথি? ম্যাম খুশী হবেন বলছিস তুই? আমি তো ভেবেছিলাম যে ম্যাম আমার ওপর নিশ্চয়ই খুব রেগে আছেন”।
বীথিকা এবার বলল, “তুই ম্যামকে আর কতটুকু চিনিস নীতা? তুই তো কেবল মাস খানেকই ম্যামের সাথে কাজ করেছিস। আমি তো ম্যামের সবচেয়ে পুরনো স্টাফ। ম্যাম এ ব্যবসা শুরু করবার আগে বেশ আর্থিক চাপে পড়ে নিজেই শুধু কাস্টমার নিতে শুরু করেছিলেন। তখন তার কোন টিম বা এই এজেন্সী ছিল না। আমিই প্রথম ম্যামের টিম মেম্বার হয়েছিলাম। তারপর ধীরে ধীরে তার ব্যবসা যত ফুলে ফেঁপে উঠেছে ততই তার এজেন্সীতে ছেলেমেয়ের সংখ্যা বেড়েছে। এখনও আমিই ম্যামের সবচাইতে কাছের এবং সবচেয়ে বড় বিশ্বাসভাজন। ম্যামের ব্যবসার কথা আমি যতখানি জানি, এমন আর কেউ জানে না। তবে তোকে আগেও বলেছি আমি, আর তুই নিজেও দেখেছিস, ম্যাম কারো ওপর কোন ধরণের জুলুম করেন না। বরং সকলকে তিনি নানা ভাবে সাহায্যই করেন। কেউ ম্যামের ব্যবসা ছেড়ে যেতে চাইলে ম্যাম খুব খুশী মনে তাদের ছেড়ে দেন। তুই যদি চলে যাবার আগে ম্যামকে সব জানাতিস, তাহলে তোকেও তিনি হাসিমুখে ছেড়ে দিতেন। ছেড়ে তো দিতেনই, এমনও হতে পারত যে চলে যাবার সময় ম্যাম তোকে দশ বিশ হাজার টাকাও দিয়ে দিতেন। আজ আমি চলে যেতে চাইলে তিনি আমাকেও বাঁধা দেবেন না, আমি জানি। কিন্তু আমার যে উপায় নেই রে। ভদ্রভাবে বাঁচবার আর কোন পথই যে আমার নেই। ম্যাম ব্যবসা বন্ধ করে দিলে আমাকে অন্য কোন এসকর্ট প্রোভাইডারের কাছেই যেতে হবে। তাতেও কি আর আমি সংসার খরচ কুলিয়ে উঠতে পারব? রোজ হোল নাইট ডিউটি করলেও বাবা আর ভাইয়ের চিকিৎসার খরচ জোটাতে পারব না। কি যে হবে, কিছুই বুঝতে পাচ্ছি না। মাঝে মাঝে কি মনে হয় জানিস নীতা? মনে হয় বাবা আর ভাইকে বিষ খাইয়ে আমিও বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করি। কিন্তু মনে যে অতটা জোরও পাচ্ছিনা রে” বলতে বলতে বীথিকা কেঁদে ফেলল।
অর্চনা নিজের মুখ চেপে ধরে কান্না আটকাবার চেষ্টা করছে দেখে সীমন্তিনী প্রায় লাফ দিয়ে তার কাছে গিয়ে তাকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে কানে কানে ফিসফিস করে বলল, “চুপ অর্চু সোনা। কাঁদিস না বোন। বীথিকা শুনে ফেলবে”।
নবনীতাও বীথির কথা শুনে কেঁদে ফেলল। প্রায় মিনিট খানেক কেউ কোন কথা বলল না। তারপর নবনীতা কান্না ভেজা গলায় বলল, “বীথি, কাঁদিস নে ভাই। নিজেকে শান্ত কর। আমরা সকলেই বোধহয় আগের জন্মের কোন পাপের ফল ভোগ করছি রে। ভগবান সদয় হয়েছেন বলেই বুঝি আমি ওই দুনিয়া ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পেরেছি। তুইও হয়ত কোনদিন ভালভাবে বাঁচতে পারবি। ভেঙে পড়িস না বীথি”।
বীথিকাও নিজের কান্না সামলাতে সামলাতে বলল, “কথায় বলে ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। কিন্তু দ্যাখ, একটু ভালভাবে বেঁচে থাকবার ইচ্ছে তো আমাদের সকলের মনেই আছে। আমরা তো সবাই ভাল ভাবে সৎ ভাবে বাঁচবার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা করছি। কিন্তু উপায় কি আর খুঁজে পাচ্ছি আমরা? ভগবানকে অশেষ ধন্যবাদ তোকে এ পাপের জগৎ থেকে উদ্ধার করেছেন বলে। কিন্তু আমি বোধহয় আগের জন্মে তোর চেয়েও অনেক বেশী পাপ করেছিলাম রে নীতা। তাই আমার পাপের শাস্তি ফুরোবার আর কোন লক্ষণই দেখতে পাচ্ছি না আমি। এর ওপর ম্যাম যদি সত্যি নিজের ব্যবসা বন্ধ করে দেন, তাহলে যে কী হবে, তা ভাবলেও আমি শিউড়ে উঠি”।
নবনীতা বলল, “আচ্ছা বীথি, তোর কী মনে হয়? ম্যাম কি সত্যিই ওই ব্যবসা বন্ধ করে দেবেন”?
______________________________
Posts: 577
Threads: 3
Likes Received: 797 in 298 posts
Likes Given: 364
Joined: Feb 2019
Reputation:
64
(Update No. 160)
বীথিকা বলল, “সেটা অবশ্য আমিও সঠিক বলতে পাচ্ছিনা এখনই। তবে ম্যামের হাবভাব দেখে আমার তেমনই মনে হচ্ছে। আগের মত উৎসাহ উদ্দীপনা এখন আর তার মধ্যে নেই। করতে হয় বলেই করছেন, এমনই একটা দায়সারা ভাব লক্ষ্য করছি আমি। আসলে ম্যাম বোধহয় আমাদের কথা ভেবেই এখনও মনস্থির করতে পারছেন না। তিনি ব্যবসা বন্ধ করে দিলে আমার মত আরও প্রায় শ’খানেক মেয়ে মহিলা আর জনা পঞ্চাশেক ছেলে যে বিপদের মুখোমুখি হয়ে পড়বে, এটা তিনিও খুব ভালভাবেই জানেন। আর আমাদের ওপর কোন বিপদ কোন ঝামেলা নেমে আসুক এ তো ম্যাম কোনদিনই চাননি। এখনও সেটা চাইবেন না জানি। তাই হয়ত মনস্থির করতে পারছেন না। আসলে ম্যামের ব্যবসাটা সমাজ বা আইনের চোখে যতই নিন্দনীয় যতই ঘৃণ্য কাজ হোক না কেন, মানুষ হিসেবে ম্যাম তো সত্যিই চমৎকার। নইলে আমাদের মত মেয়েদের সুখে দুঃখে তিনি সবসময় আমাদের পাশে থাকতেন? একটা পরিস্থিতির শিকার হয়েই তিনি নিজে এ কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে একটা ছোট্ট চাড়া গাছ এত বড় হয়ে উঠেছে যে তার শিকর মাটির অনেক গভীরে পৌঁছে গেছে। আর তার ছায়ায় এখন প্রায় দেড়শ’ ছেলেমেয়ে বিশ্রাম নিতে পারছে। এখন সেই চাড়া গাছ এক মহীরুহতে পরিণত হয়েছে। সে গাছটাকে কি আর এত সহজেই উপড়ে ফেলা যায়? আর সে গাছটাকেই যদি এখন কেটে ফেলা হয়, তাহলে গাছটা তো মরবেই, তার সাথে দেড়শ’টা লোকের ওপর থেকে তার ছায়াও চিরদিনের জন্য সরে যাবে। ওই দেড়শ’টা লোক রোদের তাপের ঝলকানিতে ঝলসে যাবে। আর ঝড় বৃষ্টির তোড়ে একেবারে শেষ হয়ে যাবে। ম্যাম বোধহয় এ কথাটা জানেন বলেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। তবে গত মাস দুয়েকের ভেতর তিনি বেশ কয়েকবার ‘দুর ছাই, আর এসব ভাল লাগছে না’, ‘ছেড়ে দেব সব কিছু’, এমন ধরণের কথা বলে যাচ্ছেন। আমার সাথে ম্যাম এখনও ভাল ব্যবহার করলেও ইনস্টিটিউটের বরুন সুজয়দের সাথে আর আগের মত ব্যবহার করেন না। আগে যেমন সকালের ব্রেকফাস্ট খেতে খেতে নানা বিষয় নিয়ে সকলের সাথে হাসি ঠাট্টা করতেন, সে’সব আর এখন হয় না। বরুন সুজয়দের তাদের কাজের নির্দেশটুকু দিয়েই তিনি বিদেয় করে দেন। কেবলমাত্র রতীশ-দার সাথেই তিনি খুব আন্তরিক ব্যবহার করেন। আর আমি লক্ষ্য করে দেখেছি, রতীশ-দা যতক্ষণ ইনস্টিটিউটে থাকেন ততক্ষণ ম্যামও খুব চনমনে আর হাসিখুশী থাকেন। সাড়ে দশটা পৌনে এগারোটা নাগাদ রোজ রতীশ-দা চলে যাবার পরেই ম্যাম যেন কেমন মিইয়ে যান। তখন তাকে দেখে মনে হয় তিনি খুব মুষড়ে পড়েছেন কোন একটা ব্যাপার নিয়ে। গত ছ’টা বছর ধরে আমি ম্যামের সাথে আছি। আমার সাথে তিনি এমন সব কথা শেয়ার করেন, যা অন্য কারো সাথে করেন না। এতোটাই বিশ্বাস করতেন আমাকে। আমিও ম্যামের বিশ্বাসভঙ্গ করিনি কখনও। কিন্তু আমি অনেক চেষ্টা করেও ম্যামের কাছ থেকে এ ব্যাপারে কিছু জানতে পারিনি। মাঝে মাঝে তিনি আমার কাছে দুঃখ করেন যে এসকর্ট ব্যবসা শুরু করে তিনি খুব ভুল করেছেন। এ ব্যবসা আর চালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে না তার। কিন্তু ওই টুকুই। এর বেশী আর কিছু বলেন না আমাকে। আমি বুঝতে পাচ্ছি, তার মনের ভেতর খুব টানাপোড়েন খুব দ্বন্দ চলছে কিছু একটা নিয়ে। গত সপ্তাহেই তো আমাকে বললেন যে আমি তার পুরো ব্যবসাটা হাতে নিয়ে সামলাতে পারব কি না। তাহলে তো এটা পরিস্কারই বুঝতে পারছিস যে ম্যাম আর তার এসকর্ট ব্যবসা চালিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন না”।
নবনীতা বীথিকার কথা শুনে বলল, “আচ্ছা বীথি, ম্যাম যখন স্বেচ্ছায় অমন কথা তোকে বলছেনই, তাহলে তুইই তার কাছ থেকে ব্যবসাটা নিজের হাতে নিয়ে নে না। তাহলে তো তোরও আর টাকার জন্যে কোন ভাবনা থাকবে না। ম্যামের এজেন্সীতে যারা কাজ করে তাদেরকে নিয়েই তুই কাজ চালিয়ে যেতে পারবি। ম্যাম সকলের সাথে যেমন ব্যবহার করতেন, তুইও তাদের সাথে তেমন ব্যবহার করবি। তাহলেই তো হবে”।
বীথিকা এবার একটু হেসে বলল, “তুই ম্যামের সাথে আমার তুলনা করছিস নীতা? আমি তো তার পায়ের নখের যোগ্যও নই রে। ম্যাম কত উচ্চশিক্ষিতা, জানিস? এমকম এমবিএ পাশ। আর তার যেমন রূপ সৌন্দর্য, তেমন বুদ্ধিমত্তা। একটা কথা আছে, শুনেছিস তো? সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র। আর ম্যাম শুধু সুন্দরীই নন, অসম্ভব বুদ্ধিমতীও। বড় বড় ব্যবসায়ী, ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট, সরকারি অফিসার, উকিল, ব্যারিস্টার থেকে শুরু করে থানা, পুলিশ, মন্ত্রী, আমলা সব কিছু বলতে গেলে তার হাতের মুঠোয়। তাই তো তিনি নিশ্চিন্তে এ ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারছেন। কোথাও কোন ঝামেলা হলে এরা সকলেই ম্যামকে সে ঝামেলা থেকে নির্ঝঞ্ঝাটে বের করে নিয়ে আসে। ম্যামের স্বামী তো এ সবের বিন্দুবিসর্গও জানেন না। আর এত সব সোর্স আছে বলেই ম্যাম নির্বিঘ্নে এ ব্যবসা করে যেতে পারছেন। সেটা কি আর আমার মত একটা হেঁজিপেঁজি মেয়ের পক্ষে সম্ভব রে? একেবারেই সম্ভব নয়”।
এবার সীমন্তিনীর ঈশারায় নবনীতা জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা বীথি, তুই যে বলছিস ম্যামের ভেতরে এমন একটা ব্যবসা ছেড়ে দেবার ইচ্ছে জেগে উঠেছে, তার পেছনে কী কারন থাকতে বলে মনে হয় রে তোর”?
বীথিকা একটা শ্বাস নিয়ে বলল, “সেটাই তো ম্যাম আমাকে খুলে বলেননি এখনও। আর আমিও অনেক ভেবেও কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। কিন্তু একটা জিনিস আমি লক্ষ্য করেছি জানিস নীতা। ম্যাম যেদিন তোর ইন্টারভিউ নিয়েছিলেন তার দু’তিন দিন আগেই রতীশ-দা আমাদের যোগা ইনস্টিটিউটে জয়েন করেছিলেন। আর যেদিন থেকে রতীশ-দা আমাদের এখানে কাজ করতে শুরু করেছেন, সেদিন থেকেই ম্যাম কিছু কিছু নিয়ম কানুন পাল্টাতে শুরু করেছিলেন। যেমন ধর, আগে আমাদের ইনস্টিটিউটের কাজ শেষ হলে ম্যামের চেম্বারে বসেই এসকর্ট ব্যবসার ব্যাপারে সব রকম আলোচনা হত। ক্লায়েন্ট, এসকর্ট আর এজেন্টদের সাথে কন্টাক্ট করা, টাকা পয়সার লেনদেন, কাকে কখন কোথায় পাঠাতে হবে, এ সব কিছু ম্যাম তার চেম্বারে বসেই করতেন। তাই ইনস্টিটিউট বন্ধ করতে করতে বেলা বারোটা একটা বেজে যেত। কিন্তু রতীশ-দা জয়েন করার পর থেকেই ইনস্টিটিউটে আর এসব কাজ করা হয় না। নিচের তলায় ম্যামের একটা রেস্ট রুম আছে, যেটাতে তোর ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছিল, ম্যাম এখন সেখানে বসে এ কাজ গুলো করেন। আগে তার চেম্বারেই অনেক ক্লায়েন্ট, এসকর্ট আর এজেন্টরা এসে ব্যবসার কথা নিয়ে আলোচনা করত। রতীশ-দা আসবার পর আর সেসব হয় না। যার সাথে যা কিছু আলোচনা, যা কিছু পরামর্শ, সবই ম্যামের নিচের তলার ওই রেস্টরুমে করা হয়। আর যেদিন রতীশ-দা কাজে যোগ দিয়েছেন সেদিন থেকেই ম্যাম আমাদের কড়া নির্দেশ দিয়েছেন যে ইনস্টিটিউটের ভেতর আমরা নিজেদের মধ্যেও যেন এসকর্ট ব্যবসার কথা নিয়ে কোন আলোচনা না করি। আর ইনস্টিটিউটের আমরা সবাই ম্যামকে যেমন ম্যাম বলে ডাকি, রতীশ-দা তেমন করেন না। ম্যামের অনুরোধেই রতীশ-দা তাকে প্রথম দিন থেকেই বৌদি বলে ডাকেন। ম্যামও প্রথম দিন থেকে রতীশ-দাকে ভাই বলে ডাকেন। আর আমাদের বলেছেন যে রতীশ-দাকে সে নিজের দেবর বলে ভাবেন। তিনি রতীশ-দাকে খুব ভালও বাসেন। প্রথম মাসে রতীশ-দার আধা মাসের বেতন প্রাপ্য ছিল। ম্যাম তাকে পুরো একমাসের মাইনে দিয়ে দিয়েছিলেন। এমনকি রতীশ-দা কাজে যোগ দেবার আগেও তিনি রতীশ-দা আর তার স্ত্রী রচনার জন্য কোলকাতা থেকে আলিপুরদুয়ার যাবার এবং ফিরে আসবার জন্যে ট্রেনের রিজার্ভেশন করিয়ে দিয়েছিলেন। আর তার পর থেকেই ম্যামকে খুব শান্ত স্নিগ্ধ মনে হত। তখন থেকেই বুঝি তার ভেতর একটু একটু করে পরিবর্তন আসছিল। কিন্তু দিন পনেরো আগে থেকেই তার ভেতর আরেক ধরণের চেঞ্জ এসেছে। ম্যামকে খুব চিন্তিত আর খুব উদ্বিঘ্ন বলে মনে হচ্ছে। সব সময় যেন তার ভেতর একধরণের অস্থিরতা চলছে। সব সময় যেন কিছু একটা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় ভোগেন। আমি বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করেও তার কাছ থেকে কোন সদুত্তর পাই নি”।
নবনীতা এবার জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা বীথি, তোর মুখে তো এই রতীশ-দার নাম আমি আগেও শুনেছি। কিন্তু তাকে কখনও দেখিনি আমি। আচ্ছা এই রতীশবাবু লোকটা কেমন রে? তুই তাকে দেখেছিস? ম্যাম কি বরুন সুজয়দের মত রতীশবাবুকেও এসকর্ট ব্যবসায় নামিয়েছেন নাকি”?
বীথিকা সাথে সাথে জবাব দিল, “একেবারেই না রে নীতা। ম্যাম যে রতীশ-দাকে কতটা ভালবাসেন সেটা আর কেউ না জানলেও না বুঝলেও আমি জানি। রতীশ-দা যখনই ম্যামের মুখোমুখি হন, তখনই ম্যামের মুখে এমন একটা ছায়া ফুটে ওঠে, যেন তার সবচেয়ে আপনজন তার কাছে এসেছে। ম্যাম রতীশ-দাকে যে তার এসকর্ট ব্যবসায় কিছুতেই টেনে নেবেন না তা ম্যাম প্রথম দিনই আমাকে পরিষ্কার করে বলে দিয়েছিলেন। আর রতীশ-দার কথাই বা শুধু বলছি কেন? ম্যাম নিজে থেকে কাউকেই নিজের এসকর্ট ব্যবসায় টেনে আনেন না। যারা আসে তারা নিজেদের ইচ্ছেতেই আসে। আর ম্যাম যখন বুঝতে পারেন যে নিরুপায় হয়েই কেউ তার ওই ব্যবসায় নামতে চায়, ম্যাম শুধু তাদেরকেই নেন। সেটা তো তুই নিজেও দেখেছিস। ম্যাম কি তোকে কোনরকম প্রেসারাইজ করেছিলেন? একেবারেই না। বরং তোকে সে নানাভাবে বোঝাবার চেষ্টা করেছিলেন, যে এ কাজ ছাড়া তুই আর কিছু করতে পারবি কি না, তাই না? তবে হ্যাঁ, রতীশ-দা সত্যি খুব চমৎকার মানুষ। যেমন লম্বা তেমন তার গায়ের রঙ। আর তেমনই মিষ্টি কথা আর ব্যবহার। মুখে একটা অদ্ভুত ধরণের সারল্য আছে তার। এমন পুরুষ দেখলেই প্রায় সব মেয়েই তার প্রেমে পড়তে চাইবে। মেয়ে মহিলাদের খুব সম্মানের চোখে দেখেন। রতীশ-দা যেমন হ্যান্ডসাম, তার দেহের গঠণও তেমনই সুন্দর। এমন চেহারার কোন ছেলে এসকর্ট সার্ভিসে নামলে তার বাজার দর খুব হবে। ম্যামের ফিমেল ক্লায়েন্টরা দ্বিগুন তিনগুন টাকা খরচ করেও তাকে নিতে চাইত। আমি প্রথম যেদিন রতীশ-দাকে দেখেছিলাম, ম্যামকে সেদিন এ কথাই বলেছিলাম। কিন্তু ম্যাম, আমাকে এক ধমকে চুপ করিয়ে দিয়েছিলেন। আর বলেছিলেন রতীশ-দাকে নিয়ে এমন কথা আর যেন কখনও মুখে না আনি আমি। এতদিনে ম্যাম রতীশ-দার ওপর এতটুকুও আঁচ আসতে দেননি। বরং আমার তো মনে হয় ম্যাম রতীশ-দাকে তার ফিমেল ক্লায়েন্টদের কাছে থেকে পুরোপুরি আড়ালে রাখবার চেষ্টাই করেন। রতীশ-দার কাজ শেষ হলেই ম্যাম তাকে বাড়ি চলে যেতে নির্দেশ দেন। তাকে ইনস্টিটিউটে থাকতেই দেন না। যার ফলে যেসব এজেন্ট আর ক্লায়েন্ট ম্যামের কাছে আসে তারা রতীশ-দাকে দেখতে পায় না। আর রতীশ-দার স্ত্রী, রচনা ম্যাডামকেও আমি একদিন দেখেছি। ম্যামের অনুরোধে রতীশ-দার সাথেই তিনি এসেছিলেন একদিন আমাদের ইনস্টিটিউটে। মহিলা যে কী সুন্দর দেখতে রে নীতা, তোকে কী বলব? আমি তো হাঁ করে তার মুখের দিকে চেয়েছিলাম অনেকক্ষণ। অনেক সুন্দরী মেয়ে আছে, যাদের দেখে আমরা মেয়েরাও বলি বেশ খাসা মাল, বা দারুণ সেক্সি মেয়ে। কিন্তু রচনা ম্যাডামকে দেখে আমার তেমন কথা মনে হয়নি। তার সৌন্দর্যটা সম্পূর্ণ আলাদা ধরণের। কেমন যেন একটা দেবী দেবী ভাব আছে তার চেহারায়। ম্যাম তো তাকেও একেবারে নিজের ছোটবোনের মত ভালবাসেন”।
সীমন্তিনী নবনীতাকে আস্তে করে চিমটি কেটে শব্দ না করে শুধু মুখ ভঙ্গী করে ‘বিমল বিমল’ বলতেই নবনীতা ফোনে বলল, “আচ্ছা বীথি, হঠাৎ একটা কথা মনে হল রে। এখানে ক’দিন আগে একটা মেয়ে আমাকে কলকাতার একজনের নাম বলেছিল। সে নাকি খুব খারাপ লোক। আমার মনে হয় সে নামটা আমি তোর মুখেও শুনেছি। আচ্ছা, তুই কি বিমল আগরওয়ালা বলে কাউকে চিনিস বীথি? সে নাকি এক কোটিপতি প্রোমোটার। তাকে বা তার ফ্যামিলির কাউকে চিনিস তুই”?
বীথিকা জবাব দিল, “হু, চিনি তো। তিনি তো আমাদের ম্যামের বাঁধা ক্লায়েন্ট। অবশ্য আমাকেও ম্যাম দু’ একবার বিমল আগরওয়ালার কাছে পাঠিয়েছিলেন। তবে নিয়ম করে প্রতি মাসে দু’তিন দিন সে দিনের বেলায় ম্যামের কাছে আসে। তবে ঠিকই শুনেছিস তুই। লোকটা যেমন পয়সাওয়ালা তেমনই বদ। রোজ মেয়েমানুষ না হলে তার চলে না। ম্যাম নিজে তো রাতের বেলায় সার্ভিস দেয় না কাউকে। বিমল প্রতি মাসে দু’বার বা তিনবার ম্যামের কাছে এলেও রাতের বেলায় সে ম্যামকে পায় না। ম্যাম তো দুপুরের লাঞ্চের পর আর বাড়ি থেকে কোথাও বেরোনই না। আর তার নিজের বাড়িতে সে কোন ক্লায়েন্ট,এসকর্ট বা এজেন্টকে ঢুকতেও দেন না। এমনকি আমাকেও তিনি তার বাড়ি নিয়ে যাননি কখনো। তাই বিমলও ম্যামকে রাতের বেলায় পায় না। বিমলের ঘরে সুন্দরী স্ত্রী থাকা সত্বেও রোজ রাতেই তার পরনারীর সান্নিধ্যের প্রয়োজন হয়। তাই ম্যামের এজেন্সী থেকে বা অন্য কোনও সোর্স থেকে সে রোজ মেয়ে বা এসকর্ট যোগার করে মধ্যরাত্রি পর্যন্ত বাড়ির বাইরে স্ফুর্তি করে বেড়ায়। এমন কথাও শুনেছি যে তার অফিসেও ছ’ সাতটা সুন্দরী মেয়ে কাজ করে। সে তাদের সাথেও নিজের খেয়াল খুশী মত শারীরিক সম্পর্ক করে। দক্ষিণেশ্বরের ওদিকে তার একটা নিজস্ব ফার্ম হাউস আছে। সেখানেও সে মাঝে মাঝে এসকর্ট নিয়ে গিয়ে রাত কাটায়। আমি নিজেও একবার তার ওই ফার্ম হাউসে গিয়েছিলাম হোল নাইটের জন্যে। মেয়ে মানুষের শরীরের গন্ধ পেলেই একেবারে জানোয়ার হয়ে ওঠে বদমাশটা। টাকার জোরে ধরাকে সরা জ্ঞান করে। কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করতে করতে থানা পুলিশ থেকে শুরু করে কলকাতা আর দিল্লীর সমস্ত পলিটিকাল লিডার আর মন্ত্রীদের নিজের হাতের মুঠোয় করে নিয়েছে লোকটা। সুপ্রিম কোর্টের জজ, ব্যারিস্টার এমনকি দেশের চিফ জাস্টিস পর্যন্ত সে অনায়াসে পৌঁছে যেতে পারে। আর এত সোর্স আছে বলেই লোকটা দু’নম্বরী ব্যবসা করে প্রচুর পয়সা কামিয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর ধরে। সরকারি অফিসের নিচুতলার একজন বেয়ারা চাপরাশী থেকে শুরু করে স্টেট আর সেন্ট্রাল গভর্নমেন্টের মিনিস্টাররা পর্যন্ত বিমলের পয়সা খেয়ে তার সব কাজে সহযোগিতা করে থাকে। বিমলের কথায় তারা সবাই ওঠবস করে। তাই বিমলকে কেউ কোনভাবে আটকাতে পারে না। আমি এমনও শুনেছি যে ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্ট, এনফোর্সেমেন্ট ডিপার্টমেন্ট, সিবিআইয়ের মত সংস্থাও কয়েকবার বিমলের পেছনে লেগেও তার চুলের ডগাটি পর্যন্ত ছুঁতে পারেনি। উল্টে পরের মাস দু’ তিনেকের ভেতরেই তাদের সকলের ট্র্যান্সফার হয়ে গেছে এ শহর থেকে”।
______________________________
•
Posts: 577
Threads: 3
Likes Received: 797 in 298 posts
Likes Given: 364
Joined: Feb 2019
Reputation:
64
(Update No. 161)
নবনীতা বীথিকার কথা শুনে জিজ্ঞেস করল, “এতো পাওয়ারফুল আর জঘন্য রকমের বদ লোকটা”?
বীথিকা বলল, “বদ মানে? এমন বদের হাড্ডি আমি আর একটাও দেখিনি রে নীতা। আর বদ শুধু সেই নয় রে। তার বউ আর ছেলেও এক একটা বদের হাড্ডি। তার একমাত্র ছেলে বিকি কচি বয়সেই যত উচ্ছন্নে গেছে, তাতে মনে হয় সে তার বাপকেও একসময় ছাড়িয়ে যাবে। বড়লোকদের ছেলেদের আশে পাশে অনেক চামচে থাকে, সে তো জানিসই। বিকি তার চামচেদের সাথে নিয়ে রোজ বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সারা শহর জুড়ে বদমায়েশি করে বেড়ায়। নারী সঙ্গ নিতেও সে এই বয়সেই খুব পেকে গেছে। তবে তার পছন্দ হল তার মায়ের বয়সী মহিলারা। আর বিমলের বৌ? উচ্ছৃঙ্খল স্বামী আর ছেলের সাথে থাকতে থাকতে আর স্বামীর সোহাগ না পেয়ে সেও বেপরোয়া জীবন কাটাতে শুরু করেছে। দেখতে সবিতা আগরওয়ালা সুন্দরী হলেও, মুটিয়ে যাচ্ছে বলে আমাদের যোগা ইনস্টিটিউটে সপ্তাহে দু’দিন যোগা থেরাপি নিতে আসে। বরুন সুজয়দের সাথে সে খুব গা মাখামাখি করে। ম্যামের কড়া নির্দেশ আছে বলেই আমাদের ইনস্টিটিউটে এর বেশী কিছু আর করার থাকে না। তবে ম্যামের কাছে সে উঠতি বয়সের ছেলে এসকর্ট ভাড়া নিতে চাইত। কিন্তু তুই তো জানিসই ম্যাম কুড়ি বছরের নিচে মেয়ে আর পঁচিশ বছরের নিচের ছেলেদের নিজের ব্যবসায় ঢোকান না। তাই সবিতার চাহিদা ম্যাম মেটাতে পারবেন না বলে সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন। তারপর নেহাত নিরূপায় হয়েই সবিতা মাঝে মাঝে পঁচিশ ছাব্বিশ বছর বয়সী মেল এসকর্ট ভাড়া নেয়। তবে সে নিজে অন্য কোনও ভাবে আরও কম বয়সী কচি কচি ছেলে যোগার করে তাদের সাথেই স্ফুর্তি করতে ভালবাসে। তাদের বাড়ির কাছাকাছি একটা মাঝারি সাইজের হোটেলে সে প্রায় রোজই যায়। তার পছন্দের কোন ছেলে ছোকড়াকে পেলে সে ওই হোটেলের কোন একটা রুমে ঢুকে এক দু’ঘন্টা স্ফুর্তি করে। এসব আর কত বলব তোকে। তা তুই হঠাৎ এই বিমল আগরওয়ালার ব্যাপারে আমার কাছে জানতে চাইলি কেন রে? ওদিকেও কি বিমল কিছু করেছে না কি”?
নবনীতা এবার সামান্য একটু চমকে উঠলেও প্রায় সাথে সাথেই নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, “নারে বীথি, ঠিক তা নয়। আসলে, ক’দিন আগে আমাদের কারখানার একটা মেয়ের মুখেই ওই বিমল আগরওয়ালার কথা শুনেছি। তাদের পাড়ার এক মহিলা নাকি কলকাতায় আমাদের মতই এসকর্টের কাজ করে। ওই মহিলার মুখেই সে নাকি বিমলের নাম শুনেছে। দুপুরে ক্যান্টিনে খেতে খেতে সেদিন কথাগুলো বলছিল। কিন্তু বিমল আগরওয়ালা নামটা আমি যেন আগেও কোথাও শুনেছি বলে মনে হচ্ছিল। তাই তোকে জিজ্ঞেস করলাম এখন। তা আজ তোর কোন ডিউটি ছিল না”?
বীথিকা একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল, “তোকে তো আগেই বললাম। এখন আমি আগের চেয়ে অনেক বেশী ক্লায়েন্ট নিচ্ছি। দুপুরের পর থেকে আজও তিনজন ক্লায়েন্টের কাছে গিয়েছিলাম। তুই ফোন করার একটু আগেই ঘরে এসেছি। স্নান সেরে বাথরুম থেকে বেরোতেই তোর ফোন এল। তবে আজ পুরো রাতের বুকিং ছিল না বলেই তোর সাথে কথা হল”।
নবনীতা বলল, “হ্যাঁ আমি খানিকক্ষণ আগেও আরও দু’বার এই নাম্বারে ফোন করেছিলাম। কিন্তু তুই তখন সাড়া দিস নি। মনে হয় তুই তখন স্নান করছিলিস” বলতে বলতে সীমন্তিনীর দিকে চাইতেই সীমন্তিনী তাকে কথা শেষ করবার ইঙ্গিত করল।
ওদিক থেকে বীথিকা তখন বলে যাচ্ছে, “হ্যাঁ, তাই হবে হয়ত। কিন্তু তোর ফোন পেয়ে খুব ভাল লাগল রে নীতা। মাঝে মাঝে এভাবে ফোন করিস। আর শোন, আমার একটা অনুরোধ রাখবি ভাই”?
নবনীতা একটু অবাক হয়ে সীমন্তিনীর দিকে চেয়ে বলল, “এভাবে বলছিস কেন বীথি? বল না কি বলবি? আমার সাধ্যের মধ্যে হলে তোর কথা নিশ্চয়ই রাখব আমি”।
বীথিকা বলল, “দ্যাখ নীতা, আমাদের ম্যাম ভালই হোক আর মন্দই হোক, তিনি তো তোর বা আমার কোন ক্ষতি করেন নি, তাই না? এর আগে যারা ম্যামের এসকর্ট ব্যবসা ছেড়ে গেছে তারাও সবাই ম্যামকে খুব শ্রদ্ধার চোখে দেখে থাকে। তাই তারা ম্যামের এই অনৈতিক ব্যবসার ব্যাপারে অনেক কিছু জানলেও এই চক্র ছেড়ে বেরিয়ে যাবার পর তারা ম্যামকে কোনভাবে বিপদে ফেলেনি। ম্যামের কাজে জড়িয়ে পড়ে আমরা সকলেই তো সমাজের কাছে আর আইনের কাছে দোষী হয়ে গেছি। তাই আইন মাফিক ম্যামের সাথে সাথে আমরাও একই সমান শাস্তি পাবার উপযুক্ত। একটা সময় ম্যাম নিজের স্বার্থেই এ ব্যবসা শুরু করেছিলেন, সেটা তো সত্যি। কিন্তু এখন তার নিজস্ব স্বার্থ বলে আর কিছু নেই। পয়সারও তার অভাব নেই। তার স্বামীর ইলেকট্রনিক্সের ব্যবসা আর যোগা ইনস্টিটিউটের আয় থেকেই তাদের বাকি জীবনটা হেসে খেলে কাটিয়ে দিতে পারবেন তারা। বাইরের কেউ না জানলেও আমরা তো জানি, ম্যাম আমাদের মুখের দিকে চেয়েই এখনও এ কাজ করে চলছেন। তাই তার কাছে আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। আমাদের সারা গায়ে নোংড়া পাক লেগে থাকলেও আমাদের মনগুলো তো মরে যায় নি। আইনের চোখে সমাজের কাছে আমরা সবাই অপরাধী হলেও আমাদের বিবেক তো বিষিয়ে যায়নি। তাই আমরা কেউ কৃতঘ্ন হতে পারব না। ম্যামের ক্ষতি হোক, এমন কোন কাজ আমরা কেউ করবো বলে ভাবিও না। তুই যে নিজের গা থেকে এই নর্দমার পাক মুছে ফেলে গঙ্গাস্নান করে পবিত্র হবার চেষ্টা করে একটা স্বাভাবিক জীবন কাটাতে চাইছিস, তাতে আমি যেমন খুশী হয়েছি, ম্যামও ঠিক ততটাই খুশী হবেন। তাই তোকে অনুরোধ করছি ভাই, ম্যামের ব্যবসার কথা পাঁচ কান করে তাকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করিসনে। আমার এই অনুরোধটুকু রাখিস নীতা প্লীজ”।
নবনীতা সীমন্তিনীর দিকে চেয়ে থাকতে থাকতেই জবাব দিল, “এ’কথা কি তোকে বলতে হবে বীথি? আমি নিজেও কি ম্যামকে একই রকম শ্রদ্ধার চোখে দেখি না? তুই কিচ্ছু ভাবিস নে। আমি ম্যামকে কোন ভাবেই বিব্রত করব না। তবে ম্যামের নাম্বারটাও তো আমার মনে নেই। আমি নতুন মোবাইল কিনলে তোর কাছ থেকে ম্যামের নাম্বার চেয়ে নেব। তার সাথে কথা বলব। তুই তাকে আমার কথা বলিস। আর বলিস আমি তার শুভেচ্ছা আর আশীর্বাদ পেতে চাই। উনি যেন আমাকে আশীর্বাদ করেন। কিন্তু, আজ অনেকক্ষণ হল কথা বলছি রে। পিছিওর মহিলা বিরক্ত হয়ে আমার দিকে চেয়ে আছেন এখন। তাই আজ ছাড়ছি রে। গুড নাইট” বলেই ফোন নামিয়ে রেখে দু’হাতে মুখ ঢেকে হু হু করে কেঁদে ফেলল।
সীমন্তিনী কান থেকে হেডফোনের লিডটা খুলে ফেলে নবনীতাকে বুকে জড়িয়ে ধরে তার মুখটাকে নিজের কাঁধের সাথে চেপে ধরে তার পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে বলল, “কাঁদিস নে নীতা। বোন আমার। আমি তো জানিই, তোরা কেউই বোর্ন ক্রিমিনাল নোস। পরিবেশ, পরিস্থিতি আর অসহায়তাই তোদের সবাইকে বাধ্য করেছে এমন অপরাধের পথে নেমে আসতে। তুই কপালের দোষে তোর সব সহায় সম্বল হারিয়ে শুধু নিজে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার যোগার করতেই তো চেয়েছিলিস। কিন্তু সৎ পথে থাকবার অনেক চেষ্টা করেও কিছু করতে না পেরে বাধ্য হয়েই এ পথে নেমেছিস। আর বীথিকাও তো নিজেকে আর নিজেদের পরিবারের লোক গুলোকে বাঁচিয়ে রাখতেই শুধু এ’পথে এসেছে। সৎপথে থেকে তোরা যদি নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে পারতিস, তাহলে তোরা কেউই এ পথে আসতিস না। আর তোর মহিমা ম্যাম। বীথিকার কথাই যদি সত্যি বলে ধরি তাহলে সেও হয়ত একটা সময় কিছুটা চাপে পড়েই এ পথে নেমেছিল। সেটা হয়ত সে না করলেও পারত। সে হয়ত অন্য কোনভাবেও সে পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে পারত। কিন্তু সেটা না করে সে এমন একটা শর্টকাট রাস্তা খুঁজে নিয়েছিল, যা সমাজ এবং আইনের চোখে নিষিদ্ধ। সাময়িক একটা ভুলবশতঃই সে আজ এমন একটা পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে যে না পারছে নিজেকে এ ব্যবসা থেকে সরিয়ে নিতে, না পারছে বীথিকার মত অসহায় মেয়েগুলোকে আরও বিপদের দিকে ঠেলে দিতে। তাই তার মানসিকতাটাও কিন্তু চিরাচরিত একটা ক্রিমিনালের মানসিকতার মত নয়। তাছাড়া আমার রচুসোনা আর দাদাভাইয়ের তো সে কোন ক্ষতি করেনি। তার মনে শুধুই যদি অর্থের লালসা থাকত তাহলে দাদাভাই আর রচুকেও সে ছেড়ে দিত না। তাদেরকেও সে তার ওই নোংড়া ব্যবসায় টেনে নিতই। কিন্তু সে তো সেটা করেই নি, উল্টে রচু আর দাদাভাইকে সে ভালবেসে ফেলেছে। রচুর ওপর বিমলের মত একটা বদ লোকের নজর পড়েছে বলে নিজের সব অপরাধের কথা স্বীকার করে নিয়ে আমাকে সব কিছু খুলে বলেছে, শুধু মাত্র রচুকে বাঁচাতে। কোন অপরাধীর মনে এমন চিন্তা কি আসতে পারে? কিন্তু বোন, একটা দেশের আইন তো আর মুষ্টিমেয় কয়েকজনের কথা ভেবে বানানো হয় না রে। ভালমন্দ সমস্ত জনসাধারনকে এক পরিকাঠামোর ভেতরে রেখেই আইন তৈরী করা হয়। আর পুলিশ প্রশাসন আদালত সবাইকে সেই পথ ধরেই সবকিছু বিচার করতে হয়। কিন্তু আমি তো তোকে আগেই কথা দিয়েছি নীতা, যে অন্ততঃ এই বিমল আগরওয়ালার হাত থেকে রচুকে বাঁচাতে মহিমা বা বীথিকার ব্যাপারে আমরা যা কিছু জানতে পারছি, তার ওপর ভিত্তি করে আমি বা পরিতোষ কোনভাবেই তোর ম্যামকে হ্যারাস করব না। তোকে তো আমি ওই পাক থেকে বের করে আনতে পেরেছিই। আজ বীথির কথা শুনে আমার মনটাও ভেতরে ভেতরে কাঁদতে শুরু করেছে রে। আর অর্চুর দিকে চেয়ে দেখ। আমার কথায় মুখে কুলুপ এঁটে থাকলেও ওর চোখ দিয়ে জল বেরিয়েই চলেছে তখন থেকে। অসুস্থ বাবা আর পঙ্গু একটা ভাইকে বাঁচিয়ে রাখতে বীথিকা নিজের জীবনটাকে পুরোপুরি ভাবে বাজি রেখে কী অসম্ভব একটা লড়াইই না লড়ে চলেছে এতগুলো বছর ধরে। আমার যদি সামর্থ্য থাকত তাহলে ওকেও আমি আমার কাছে নিয়ে আসতুম। ওকে ভালভাবে বেঁচে থাকবার মত একটা সুযোগ করে দিতুম। কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব নয় রে। তবে এক পুলিশ অফিসার হিসেবে নয়, শুধু তোর দিদি হিসেবে বলছি নীতা। তোর ওই মহিমা ম্যাম আর তোর ওই বান্ধবী বীথিকা যদি ওই পথ থেকে সরে আসতে চায়, তাহলে আমি সাধ্যমত তাদের সাহায্য করব। তবে আমার মনে হয় মহিমা চাইলে খুব সহজেই সে পথ থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। কিন্তু বীথিকার পক্ষে সেটা কিন্তু একেবারেই সহজ হবে না। সৎ পথে থেকে ওর বাবা আর ভাইয়ের চিকিৎসার খরচ জোটানো ওর পক্ষে সত্যিই প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। তবে আমি একটা কথা মন থেকে খুব বিশ্বাস করি। বীথি যেমন বলল ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয় না, আমিও সেটা মানি। কিন্তু মনের ইচ্ছেটা বেঁচে থাকতে থাকতে যদি একটু সুযোগ আর সামর্থ্য জুটে যায়, তাহলে সব কিছুই হতে পারে। আর আমার মনে হচ্ছে বীথিকার ভাগ্যে সেই সুযোগ আর সামর্থ্যটুকু জুটছে না। তাই তার দুর্ভোগও কমছে না। কিন্তু সেই সাথে এটাও মনে রাখিস বোন, দুঃখ আর সুখ কোনটাই মানুষের জীবনে চিরস্থায়ী হয় না। পৃথিবীতে এমন কেউ নেই যার জীবনে দুঃখ বলতে কখনো কিছু ছিল না, নেই, বা থাকবে না। তেমনি এমনও কেউ নেই যার ভাগে ভগবান শুধু দুঃখই দিয়েছেন। এতদিন হয়ত হয়নি, বা আরও কিছুদিন হয়ত এভাবেই চলবে, কিন্তু চিরটা কাল বীথিকা শুধু কষ্টই পেয়ে যাবে, এটা হতেই পারে না। কোন না কোন সময় ওর জীবনেও সুদিন আসতে বাধ্য। আর আজ আমি বলছি, তুই ভবিষ্যতে সেটা মিলিয়ে নিস, দেখিস বীথিকাও এক সময় সুখের মুখ দেখবেই দেখবে। শুধু ওর মনের ভেতরের ইচ্ছেটাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তাই আমরা সবাই মিলে ভগবানের কাছে আজ থেকে এটাই প্রার্থনা করব, এই জীবনযুদ্ধে বীথিকা যেন হেরে না যায়। ওর মনের সদিচ্ছাটুকু যেন মরে না যায়। তুই এবার শান্ত হ’ বোন”।
নবনীতা সীমন্তিনীর আলিঙ্গন থেকে নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলল, “তুমি খুব ভাল গো দিদি। তুমি সত্যিই এক পরশমণি। তোমার হাতের সামান্য একটু ছোঁয়ায় যেন যাদুর শক্তি আছে। অর্চুর মুখে শুনেছি, মেসো তোমাকে মা অন্নপূর্ণা বলে ডাকেন। মেসো ঠিকই বলেন। এত দয়া যার মনে, সে অন্নপূর্ণা নয় তো আর কি”?
সীমন্তিনী বলল, “তবে তুই আমার নির্দেশ মেনে মিথ্যে কথাগুলো যে এভাবে এত সুন্দরভাবে গুছিয়ে বলেছিস, তা দেখে আমি অবাক হয়ে গেছি। আর সেজন্যে তোকে অনেক অনেক ধন্যবাদ নীতা”।
অর্চনা আর নবনীতাকে শান্ত করে তাদের ঘরে পাঠিয়ে দিয়ে সীমন্তিনী দেখল রাত একটা বেজে গেছে। পরিতোষকে ফোন করা দরকার। কিন্তু এতো রাতে করা একেবারেই উচিৎ নয়। বীথিকার মুখ থেকে নতুন নতুন এমন কিছু কিছু তথ্য জানতে পারা গেছে, যা পরিতোষকে জানানো উচিৎ। তাই বিছানা পরিষ্কার করে শুয়ে শুয়ে ভাবল, কাল অফিসে গিয়ে ফার্স্ট আওয়ারেই পরিতোষকে সে ফোন করবে।
******************
•
Posts: 577
Threads: 3
Likes Received: 797 in 298 posts
Likes Given: 364
Joined: Feb 2019
Reputation:
64
(Update No. 162)
পরদিন সকালে অফিসে এসেই প্রাথমিক কাজগুলো সেরেই সীমন্তিনী পরিতোষকে ফোন করল। পরিতোষ ফোন ধরেই বলল, “কি ব্যাপার মুন সোনা? আজও অফিস কামাই করছ নাকি তুমি”?
সীমন্তিনী বলল, “না পরি, আমি এখন অফিসে বসেই তোমাকে ফোন করছি। আসলে কাল রাত প্রায় একটা নাগাদ আমি টার্গেট থ্রির ব্যাপারে আরও কিছু ইনফর্মেশন কালেক্ট করেছি। সেটা জানাতেই এখন ফোন করছি”।
পরিতোষ বলল, “গ্রেট ডার্লিং গ্রেট। তোমার ভালবাসা আমি যত দেখছি ততই অবাক হচ্ছি। রাত একটা পর্যন্ত তুমি তোমার ভালবাসার মানুষের কথা ভেবে ইনভেস্টিগেশন চালিয়ে যাচ্ছ? আনবিলিভেবল। তা এমন কি ইনফর্মেশন কালেক্ট করেছ শুনি”।
সীমন্তিনী প্রয়োজনীয় সব কিছু খুলে বলবার পর পরিতোষ বলল, “রিয়েলি গ্রেট মন্তি সোনা। কলকাতা থেকে এত দুরে বসেও তুমি যে এতসব ইনফর্মেশন কালেক্ট করতে পেরেছ, তাতে অবাক হবার সাথে সাথে একটু গর্বিতও বোধ করছি আমি। তবে ডার্লিং, টার্গেট থ্রির ওপর আমি তো আগে থেকেই নজর রাখছিলাম। তাই দক্ষিণেশ্বরের ওদিকের ফার্ম হাউসের কথা, আইটি, সিবিআই, ইডির রেইডের ব্যাপারেও আমি আগেই জানতে পেরেছিলাম। আর টার্গেটের রিচ যে সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট আর সুপ্রীম কোর্ট পর্যন্তও আছে, এটাও জানতাম। তাই তো আগে থেকেই পুরো ব্লু প্রিন্টটাকে আমি অন্যভাবে বানিয়েছি। নইলে এমন পাওয়ারফুল একটা ক্রিমিনালকে কিছুতেই শায়েস্তা করা যাবে না। আর টার্গেটের ওয়াইফ আর ছেলের ব্যাপারেও আমার কাছে অনেক ইনফর্মেশন আছে। তবে তোমার কাছ থেকে কিছু নতুন রিপোর্ট পেলাম। কাজে লাগবে আমার। থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ”।
সীমন্তিনী তখন জিজ্ঞেস করল, “যতটুকু আমার পক্ষে সম্ভব সেটুকু তো আমি করবই পরি। আমি বেঁচে থাকতে আমার রচু সোনা আর দাদাভাইয়ের কিছু হলে আমাকে যে আত্মহত্যা করতে হবে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি আমি সেটাও করতে চাইনে। আরও কতকগুলো অসমাপ্ত কাজ হাতে আছে। সেগুলো শেষ করতে পারলে আমার মরতেও আপত্তি নেই”।
পরিতোষ একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “এমন নিগেটিভ কথাবার্তা বলছ কেন ডার্লিং। আমার মুন ডার্লিং তো এভাবে কখনো কথা বলত না”!
সীমন্তিনী একটু হেসে বলল, “সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছুই বদলায় পরি। আচ্ছা সে’কথা থাক। তুমি বলো তো ওদিকে তোমার অ্যাকশন প্ল্যান অনুযায়ী কাজ শুরু হয়ে গেছে কি”?
পরিতোষ বলল, “শুধু শুরু? আমার প্রথম স্টেজের কাজ অনেকটাই এগিয়ে গেছে। যে কাজটা করতে প্রায় পনেরো থেকে পঁচিশ দিন লাগবে বলে অনুমান করেছিলাম, সেটা অবিশ্বাস্য ভাবে দু’দিনের ভেতর কমপ্লিট হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে প্রথম স্টেজের কাজ আর কয়েকদিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। তারপর সেকেন্ড আর থার্ড স্টেজ। তবে প্রথম স্টেজের কাজটা পুরো হয়ে গেলে পরের দুটোতে আর খুব বেশী সময় লাগবে না। তবে তোমাকে আগে বলেছিলাম যে পুরো অ্যাকশনটা শেষ হতে পঁয়ত্রিশ থেকে চল্লিশ দিনের মত লাগবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে কুড়ি থেকে পঁচিশ দিনের মধ্যেই সবটা শেষ হয়ে যাবে। আর তোমার দাদাভাই আর বৌদির ব্যাপারেও একদম নিশ্চিন্ত থেকো”।
সীমন্তিনী পরিতোষের কথা শুনে আশ্বস্ত হয়ে বলল, “তোমার কান্ডকারখানা যত দেখছি, তত অবাক হচ্ছি আমি দিনে দিনে। সত্যি কিকরে পারো বলো তো? তবে এমন একটা খবর শোনাবার জন্যে তোমাকে আরেক বার ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তবে পরি, তোমার সাথে আরো দুটো ব্যাপারে পরামর্শ করতে হবে আমার। সেগুলো নিয়েই বরং কথা বলি। আচ্ছা পরি, সেদিন তুমি বলছিলে যে এবারের অপারেশনে বাজেটের চাইতে অনেক বেশী রিটার্ন তুমি আশা করছ। আর সেই বাড়তি ফান্ডটা নিয়ে কী করবে সেটা ডিসাইড করতে পারছ না। ঠিক বলছি তো আমি? না আমার বুঝতে কোনও ভুল হয়েছে”?
পরিতোষ বলল, “না, কোন ভুল হয়নি। ঠিকই বলছ তুমি। যদি পঞ্চাশও আদায় করি তাতেও প্রায় এগারো বারো লাখ সারপ্লাস হচ্ছে। কিন্তু এ ব্যাপারে তুমি কি বলতে চাও”?
সীমন্তিনী একটু নরম সুরে বলল, “যদিও জানি, এমন করাটা তোমার কাছে নীতিবিরুদ্ধ। কিন্তু পরি, কালচিনির বাড়ি ঘরের অবস্থা খুবই সংকটজনক। সামনের বর্ষায় হয়ত ভেঙেই পড়বে। রান্নাঘরটার অবস্থা তো খুবই শোচনীয়। থাকার ঘর দুটোও জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করতে হবে। কিন্তু আমি ভাবছিলুম, পঞ্চাশ বছর পুরনো ওই টিন দড়মার তৈরী ঘরগুলো রিপেয়ার না করে নতুন করে আরসিসি কনপ্সট্রাকশন করে দিলে খুব ভাল হত। কিন্তু তাতে তো অনেক ফান্ডের প্রয়োজন তাই না? আমার হাতে তো অত টাকা হবে না। আর মেসো নতুন ব্যবসা শুরু করেছেন। দোকানটা নাকি ভালই চলছে। কিন্তু ঘর বানাবার মত অবস্থা তো এখনও হয়নি। তাই ভাবছিলুম, ওই বাড়তি ফান্ডটুকু যদি ওই কাজে লাগাতে পারতুম তাহলে ভাল হত। কিন্তু এটাও জানি যে এটা তোমার নীতি বহির্ভূত। আমারও কথাটা তোমাকে বলতে একটুও দ্বিধা যে হচ্ছে না, তা নয়। আমি আসলে তোমার সাজেশানই চাইছি এ ব্যাপারে পরি”।
পরিতোষ একটুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “কালচিনির বাড়ি মানে তো বৌদির বাপের বাড়ি, তাই না মন্তি”?
সীমন্তিনী আস্তে করে জবাব দিল, “হ্যাঁ”।
পরিতোষ এবার জিজ্ঞেস করল, “দুটো বেডরুম আর একটা কিচেন। এটাই তো বানাতে চাইছ”?
সীমন্তিনী বলল, “হ্যাঁ প্রায় তাইই। কিন্তু সেটা তুমি ফ্ল্যাট বাড়ির মত কনস্ট্রাকশন হবে বলে ভেবো না। ওই পরিবেশে অমন ফ্ল্যাট টাইপ কনস্ট্রাকশন ভাল দেখাবে না। গ্রামের বাড়ি গুলো কেমন হয় এ ব্যাপারে তোমার নিশ্চয়ই আইডিয়া আছে। উঠোন, কলপার, উঠোনের একপাশে রান্নাঘর, অন্যদিকে থাকবার ঘর। ঢেকি ঘর ঠাকুর ঘর আলাদা থাকে। বাথরুম টয়লেট কোন ঘরের সাথে এটাচড করে বানানো হয় না। ও’গুলো সাধারণতঃ বাড়ির পেছনের দিকে থাকে। এমন টাইপের। থাকবার এক একেকটা ঘরের মধ্যে পার্টিশন করে আলাদা আলাদা দুটো বা তিনটে রুম করা হয়। তাই আমি ভাবছি, তাদের রুচি মতই দুটো থাকবার ঘর আর রান্নাঘরটা বানিয়ে দেব। আর পেছনে একটা পাকা বাথরুম আর টয়লেট বানিয়ে দেব। তবে খরচ খরচার ব্যাপারে সঠিক কোন ধারণা নেই আমার। অবশ্য আমি দিন দুয়েকের ভেতরেই লোক পাঠিয়ে একটা আনুমানিক বাজেট বানিয়ে নেব। কিন্তু .....”
সীমন্তিনীর কথায় বাঁধা দিয়ে পরিতোষ বলল, “শোনো মন্তি, আজ অব্দি এমন কাজ আমি কখনও করিনি। তবে তোমার বৌদির ওপর কূ-নজর ফেলার জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে কিছু টাকা আদায় করা যেতেই পারে। আর সেটাকে এ কাজে ব্যবহারও করাও যেতে পারে। তুমি এক কাজ করো। দিন সাতেকের ভেতর আমাকে এমাউন্টটা জানিয়ে দিও। আমি সেভাবে ব্যবস্থা নেব। ওকে”?
সীমন্তিনী নিজের প্রায় চেপে রাখা শ্বাস ছেড়ে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ পরি, থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ। আর আরো একটা কথা ছিল, তুমি কি খুব ব্যস্ত আছ নাকি”?
পরিতোষ বলল, “না ঠিক আছে, তুমি বলো”।
সীমন্তিনী বলল, “মহিমা মালহোত্রা সেনের প্রোজেক্টটা আমি হাতে নেব বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। খুব ভাল পটেনশিয়ালিটি আছে বলে মনে হচ্ছে। তুমি প্লীজ, আমাকে সাহায্য করো। আর তাকে কোনভাবে হ্যারাস করো না প্লীজ”।
পরিতোষ সীমন্তিনীকে আশ্বস্ত করে বলল, “ডোন্ট ওরি ডার্লিং। আমি তো আগেই তোমাকে এ ব্যাপারে বেস্ট অফ লাক উইশ করেছি। আজ তবুও বলছি, সব ধরণের সাহায্য আমার কাছ থেকে পাবে তুমি। আর ইনভেস্টিগেশনের জন্য আমাকে যদি তার কাছে যেতেও হয় সেটা আমি খুব কেয়ারফুলি করব। তাকে কোন ভাবেই আমি হ্যারাস করব না”।
সীমন্তিনী বেশ খুশী হয়ে বলল, “থ্যাঙ্কস এগেইন পরি। আরেকটা কথা ছিল”।
পরিতোষ হেসে বলল, “বেশ, সেটাও বলে ফ্যালো”।
সীমন্তিনী বলল, “তুমি যে ',, সে তো আমি জানিই। খুব সম্ভবতঃ তোমরা রাঢ়ী তাই না”?
পরিতোষ একটু অবাক হয়ে বলল, “হ্যাঁ তাই। কিন্তু এ’সব জেনে তুমি কী করবে”?
সীমন্তিনী হেসে বলল, “বারে ভুলে গেলে? আমি আর নীতা যে তোমার জন্য একটা সুন্দরী মেয়ে খুঁজছি তোমার সাথে তার বিয়ে দেবার জন্যে। মেয়ের বাড়ির লোকেরা ছেলের নাম গোত্র এসব তো জানতে চাইবেনই। তাই সেগুলো আমার জেনে রাখা দরকার। তোমাদের গোত্র কি”?
পরিতোষ বলল, “ভারদ্বাজ গোত্র। আর কিছু”?
সীমন্তিনী বলল, “কূমারী এবং একই সঙ্গে বিবাহিতা এবং বিধবা, অসম্ভব সুন্দরী, কিন্তু অল্প শিক্ষিতা, মাধ্যমিক পাশ, গৃহকর্মে নিপুণা, সুভাষিনী, সুমিষ্ট ব্যবহার, তোমার চেয়ে বছর সাতেকের ছোট। চলবে”?
পরিতোষ সরাসরিই জবাব দিল, “আমি তো তোমাকে আগেই বলে দিয়েছি ডার্লিং। আমার দুই প্রেমিকা যখন আমাকে হাড়িকাঠে ফেলবে বলেই স্থির করেছ, তাহলে সে হাড়িকাঠের গুণবিচার তারাই করবে। তুমি যাকে আমার গলায় ঝুলিয়ে দেবে আমি তাকেই মেনে নেব। কিন্তু তোমার কথার প্রথম অংশটা কেমন যেন বেখাপ্পা শোনালো আমার কানে। কূমারী.. আবার একই সঙ্গে বিবাহিতা এবং বিধবা ...! হাউ ইজ ইট পসিবল”?
সীমন্তিনী হেসে বলল, “সে’সব ক্রমশঃ প্রকাশ্য। তবে পরি, বিমল আগরয়ালার কাছ থেকে যে টাকাটা আদায় করা হবে, সেটা তুমি ফাইনাল কবে করবে”?
পরিতোষ জবাব দিলে, “সেটা আমাদের অপারেশনের ফার্স্ট স্টেজটা কমপ্লিট না হওয়া অব্দি করা যাবে না। আমি আশা করছি দিন সাতেকের মধ্যেই ফার্স্ট স্টেজের কাজটা শেষ হয়ে যাবে। আর সে’জন্যেই তোমাকে সাত দিনের মধ্যে কালচিনির বাড়ির এস্টিমেটেড কস্টটা জানাতে বললাম”।
সীমন্তিনী মনে মনে একটু ভেবে নিয়ে বলল, “আচ্ছা পরি, তুমি যে বললে, বিমল আগরওয়ালার কাছ থেকে দশ কোটি টাকাও তুমি আদায় করতে পারবে। সত্যি কি সেটা সম্ভব”?
পরিতোষ এক মূহুর্ত চুপ থাকবার পর জিজ্ঞেস করল, “তোমার যদি দশ কোটির প্রয়োজন হয় আমি সেটাও করতে পারব। কিন্তু আসলে কি ভাবছ তুমি বল তো ডার্লিং? তুমি যদি নিজের জন্য কিছু চাও সেটা কিন্তু আমি কিছুতেই মানব না। তবে বিমলের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন কারোর উপকারে যদি তোমার ফান্ডের প্রয়োজন হয় তাহলে সেটা আমি অ্যাকসেপ্ট অবশ্যই করব। কিন্তু ব্যাপারটা আমাকে খুলে বলো তো”?
সীমন্তিনী বলল, “না মানে এখনই সে ব্যাপারে কিছু বলতে চাইছি না। তবে একটা সম্ভাবনার কথা মাথায় এসেছে বলেই জিজ্ঞেস করলুম। আচ্ছা, দিন সাতেক সময় তো তুমি দিলেই আমাকে। এর মধ্যে আরেকটু ভেবে দেখি। তারপর তোমাকে জানাবো। আর আমি যে তোমার দীক্ষাতেই দীক্ষিত, সেটা কি তোমাকে আবার মনে করিয়ে দিতে হবে নতুন করে? আচ্ছা ছাড়ছি এখন। হ্যাভ এ গুড ডে” বলে ফোন কেটে দিল।
*****************
সেদিন লাঞ্চ আওয়ারে রচনার সাথে কথা বলার পর সীমন্তিনী স্থানীয় এক কনস্ট্রাকশন ফার্মের সাথে যোগাযোগ করে তাদের এক ইঞ্জিনিয়ারকে বিকেলের দিকে তার অফিসে এসে দেখা করতে বলল। বিকেলে ঠিক সময়েই দেবজিত অধিকারী নামে এক ইঞ্জিনিয়ার তার অফিসে এল। সীমন্তিনী তাকে সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে একটা আনুমানিক এস্টিমেট বানিয়ে দিতে অনুরোধ করল। ইঞ্জিনিয়ার সীমন্তিনীর সব কথা শুনে বলল, “ম্যাডাম, এটা করতে গেলে তো আমাকে আগে সাইটটা দেখতে হবে। কিন্তু আপনি যা বলছেন তাতে প্রোজেক্টটা তো এখানে হচ্ছে না। হচ্ছে কালচিনিতে। আমাকে তো তাহলে সেখানে গিয়ে সাইটটার ইনস্পেকশন করতে হবে। আর তাছাড়া এখান থেকে রাজমিস্ত্রী নিতে হলে খরচটা বেশী পড়ে যাবে। কারন এখান থেকে মিস্ত্রী, রাজমিস্ত্রী আর লেবাররা যারা ওখানে গিয়ে কাজ করবে, তাদের আলাদা করে টিএ দিতে হবে। তাই আমি ভাবছি এখানকার মিস্ত্রীদের দিয়ে কাজটা না করিয়ে আমরা যদি কালচিনির মিস্ত্রীদের দিয়েই কাজটা করাই তাহলে কিন্তু প্রায় লাখ দেড়েকের মত খরচ কম হবে। আর এতে কোনও অসুবিধেও নেই। কালচিনির বেশ কয়েকজন ভাল মিস্ত্রী আমাদের হাতেই আছে। তাদেরকে দিয়েই কাজটা করানো যাবে”।
সীমন্তিনী তার কথা শুনে বলল, “ওকে মিঃ অধিকারী। আপনি যদি আমাকে এমন আশ্বাস দেন, তাহলে আর আমার কিছু বলবার নেই। তাহলে আপনি ইনস্পেকশনে কবে যাচ্ছেন বলুন”।
মিঃ অধিকারী বললেন, “ম্যাম, আগামী পরশু দিন, বিশেষ একটা কাজে আমাকে কলকাতা যেতে হচ্ছে। দিন সাতেক সেখানে থাকতে হবে। ফিরে এসে আমি কালচিনি যাবার প্রোগ্রাম করতে পারি। তাই আট দশ দিন সময় কি আপনি আমাকে দিতে পারবেন”?
সীমন্তিনী জবাব দিল, “দেখুন মিঃ অধিকারী, কাজটা তো পূজোর পরেই হবে। কিন্তু এস্টিমেটটা যদি আপনি দু’ তিন দিনের মধ্যে আমাকে দিয়ে দিতে পারতেন, তাহলে খুব ভাল হত। মানে আমার ফান্ড ম্যানেজ করতে একটু সুবিধে হত”।
মিঃ অধিকারী বললেন, “ম্যাম, তাহলে তো আমাকে কালই কালচিনি যেতে হচ্ছে। কিন্তু আপনার পক্ষে কি কাল কালচিনি যাওয়া সম্ভব হবে”?
সীমন্তিনী বলল, “না মিঃ অধিকারী, কাল আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না ঠিকই। কিন্তু তাতে আপনার কাজে কোন ব্যাঘাত আসবে না। ও বাড়িতে আমার মাসি মেসো আছেন। আর ভাইও আছে, তবে সে হয়ত তার কলেজেই থাকবে। আমি ফোনে মেসোকে সব কিছু জানিয়ে দিচ্ছি। মেসো আপনার কাজে সবরকম সহযোগিতা করবেন। আমি একটা কাগজে তাদের বাড়ির ঠিকানা লিখে লোকেশানটা আপনাকে বুঝিয়ে দিচ্ছি। আপনি গিয়ে কাজটা সেরে আসুন। প্রয়োজন হলে আমাকে ফোন করবেন। তা আপনি সেখানে ক’টা নাগাদ পৌঁছবেন বলে আশা করছেন, আর ক’জন যাচ্ছেন? আমি সেভাবে তাদের বলে দেব”।
মিঃ অধিকারী বললেন, “আমি আমার এক অ্যাসিসট্যান্টকে সঙ্গে নিয়ে সকাল এগারোটা নাগাদ কালচিনি পৌঁছে যাব। ঠিকানা খুঁজে সে বাড়িতে পৌঁছতে পৌঁছতে হয়তো সাড়ে এগারোটা হয়ে যাবে। আপনি সেভাবেই তাদের বলে দিন। আমরা ইনস্পেকশনটা সেরে আসি। তারপর এস্টিমেট নিয়ে কথা বলা যাবে”।
সীমন্তিনী একটা কাগজে বিধুবাবুর নাম ঠিকানা লিখে দিয়ে আরেকটা কাগজে বাড়ির একটা নক্সা কেটে বুঝিয়ে দিল কোনদিকে কিভাবে কনস্ট্রাকশন করতে হবে। তারপর কাগজটা মিঃ অধিকারীর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “বাড়ির সামনেই মেসোর একটা মুদি কাম ষ্টেশনারী দোকান আছে। সেখানে গেলেই তার দেখা পাবেন। আপনারা সেখানে পৌঁছলে উনি আমাকে ফোন করবেন। তারপর আপনাদের নিয়ে বাড়ি যাবেন। কাজের ব্যাপার নিয়ে তাদের সাজেশান অবশ্যই নেবেন মিঃ অধিকারী, কিন্তু আপনার ফী বা বাড়ি তৈরীর কস্ট নিয়ে ওখানে কোনরকম কথা বলবেন না প্লীজ। সে’সব আমি মিটিয়ে দেব। আর ও’সব ব্যাপারে শুধু আমার সাথেই ডিসকাস করবেন, কেমন”?
মিঃ অধিকারী তাকে আশ্বস্ত করে চলে যাবার পরেই সীমন্তিনী কিংশুকের নাম্বারে ফোন করল। কিংশুক সাড়া দিতেই সে বলল, “ভাই, তুমি কি ব্যস্ত আছো”?
কিংশুক জবাব দিল, “না দিদিভাই, আমি তো একটা টিউশন শেষ করে বাড়ির দিকেই যাচ্ছি। তুমি বলো কী বলবে”?
সীমন্তিনী বলল, “তুমি তাহলে রাস্তার একধারে গিয়ে দাঁড়িয়ে আমার কথা শোনো ভাই”।
একটু বাদে কিংশুক বলল, “হ্যাঁ দিদিভাই বলো”।
সীমন্তিনী বলল, “ভাই শোনো। কাল বেলা এগারোটা থেকে সাড়ে এগারোটার ভেতরে মিঃ দেবজিত অধিকারী নামে এক ভদ্রলোক তার সঙ্গে আরেকজনকে নিয়ে মেসোর কাছে যাবেন। উনি একজন ইঞ্জিনিয়ার। রান্নাঘর আর থাকবার ঘর গুলো ভেঙে ফেলে সেখানে নতুন করে ঘর বানিয়ে দেবার ব্যাপারে উনি একটা ব্লু প্রিন্ট আর এস্টিমেট বানিয়ে দেবেন। আর সেটার জন্যেই তারা ওখানে যাচ্ছেন। তুমি হয়তো সে সময় বাড়িতে থাকবে না। তাই মেসোকে বোলো, ওনারা গিয়ে পৌঁছলে মেসো যেন কিছু সময়ের জন্য দোকান বন্ধ করে তাদের সাথে বাড়িতে গিয়ে সবকিছু দেখিয়ে দেন। আর তাদেরকে একটু চা মিষ্টি খাইয়ে দেবার ব্যবস্থা করেন”।
কিংশুক বলল, “বড়দিকে নিয়ে যাবার সময় অবশ্য তুমি বাবাকে এ’কথা বলে গিয়েছিলে। কিন্তু দিদিভাই, এসব কি তুমি এখনই করতে চাইছ? এতো টাকা কোত্থেকে আসবে এখনই”?
সীমন্তিনী শান্ত গলায় বলল, “কাজটা তো এখনই শুরু হচ্ছে না ভাই। হয়তো দেড় দু’মাস পরেই শুরু হবে। কিন্তু একটা হিসেব, একটা বাজেট আগে থেকে করে না রাখলে কাজটা করবার সময় অসুবিধেয় পড়তে হবে। আর তাছাড়া নতুন ঘর বানাতে গেলে মিউনিসিপালিটি অফিস থেকে একটা আগাম অনুমতি নিতে হয়। আর সেটা করবার সময় একজন ইঞ্জিনিয়ারের রিপোর্ট, কনস্ট্রাকশনের ব্লু প্রিন্ট, আর খরচের একটা এস্টিমেট ওই অফিসে জমা দিতে হয়। তাই এগুলো আগে থেকেই করতে হয়। আর টাকা পয়সা নিয়ে তোমরা একদম ভেবো না। মাসি মেসোকেও এ’কথা আমি তো আগেই বলে এসেছি। তাই ও নিয়ে আর মাথা ঘামিও না। কাল ওনারা গিয়ে পৌঁছলে মেসো যেন তাদেরকে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো বুঝিয়ে দেন”।
কিংশুক আবার বলল, “কিন্তু দিদিভাই, ......”
সীমন্তিনী তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “ভাই, আমি এখনও অফিসে আছি। তাই আর বেশী সময় ধরে কথা বলতে পাচ্ছি না। যদি সম্ভব হয় রাতে বা পরে তোমাদের সাথে কথা বলব। কিন্তু ব্যস্ততার কারনে হয়ত রাতে ফোন করার কথা মনেই থাকবে না। তাই এখনই তোমাকে কথাটা জানিয়ে দিলুম। বাড়ি গিয়ে মা বাবাকে সব বুঝিয়ে বোলো, কেমন? রাখছি” বলে ফোন কেটে দিল।
******************
•
Posts: 577
Threads: 3
Likes Received: 797 in 298 posts
Likes Given: 364
Joined: Feb 2019
Reputation:
64
(Update No. 163)
রাত প্রায় আটটা। বিমল আগরওয়ালার অফিস থেকে এক সুন্দরী তরুণী বেরিয়ে লিফটে চেপে নেমে এল। বিল্ডিং থেকে বাইরে এসে সে ডানদিকে কিছুদুর এগিয়ে যাবার পর নিজের হাতের মোবাইল থেকে একজনকে ফোন করল। কয়েক সেকেন্ড বাদে ও’পাশ থেকে সাড়া পেতেই তরুণী বলল, “হু, কোথায় আছিস তুই? আমি এইমাত্র অফিস থেকে বেরোলাম”।
তারপর কিছু সময় অন্যপ্রান্তের কথা শুনে বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ, তুই যেভাবে যেভাবে বলেছিলিস, ঠিক সেই সেই ভাবেই কাজ হয়ে গেছে। কিন্তু টাকাটা কখন দিবি আমাকে? ও যে বিকেল থেকে তিনবার আমাকে তাগাদা দিয়েছে। আমি ওকে কাল ফার্স্ট আওয়ারেই টাকাটা দেব বলে কথা দিয়েছি। কিন্তু তুই আমাকে না দিলে আমি কিভাবে ওকে পেমেন্ট করব বল তো”?
আবার কিছুক্ষণ ও’পাশের কথা শুনে মেয়েটি বলল, “ঠিক আছে। আমি তোর জন্যে ওই মোড়েই অপেক্ষা করছি। কিন্তু তাড়াতাড়ি আসিস প্লীজ। নইলে আমার বাড়ি যেতে যেতে অনেক দেরী হয়ে যাবে” বলে আবার কয়েক মূহুর্ত ও’দিকের কথা শুনে বলল, “ওকে ঠিক আছে। ছাড়ছি” বলে ফোন কেটে দিয়ে পাশের একটা গলির ভেতর ঢুকে এগিয়ে চলল। মিনিট পাঁচেক বাদে সে একটা তিন মাথার মোড়ে এসে দাঁড়াল। আর তার প্রায় মিনিট পাঁচেক বাদেই একটা ইন্ডিকা গাড়ি তার একদম পাশে এসে দাঁড়ালো। গাড়িটার সামনে বাঁদিকের দরজা খুলে যাবার সাথে সাথেই ভেতর থেকে এক পুরুষ কন্ঠ শোনা গেল, “উঠে পড়, কনি”।
মেয়েটা একমূহুর্ত দেরী না করে গাড়িতে উঠে ড্রাইভারের পাশের সীটে বসে দরজাটা বন্ধ করে দিল। গাড়ির ভেতরটা অন্ধকার। জানালার কালো কাঁচ ভেদ করে বাইরের আলো না এলেও সামনের দিক থেকে বাইরের আলো এসে তরুণী আর ড্রাইভারের গায়ে পড়ছে। ড্রাইভারের সীটে শেখরকে দেখা গেল। শেখর একসেলেটরে চাপ দেবার আগে পেছনের সীটের ওপর থেকে একটা ব্যাগ টেনে নিয়ে তার ভেতর থেকে একটা মোটা খাম বের করে মেয়েটার হাতে দিয়ে বলল, “এই নে, আগে এটা তোর ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখ। দশ হাজার আছে”।
খামটা নিয়ে নিজের ব্যাগে পুরে শেখরের মুখের দিকে একবার দেখে মেয়েটা বলল, “ভেতরের আলো জ্বালছিস না কেন শেখর”?
শেখর গাড়ি চালাতে চালাতেই জবাব দিল, “তোর সেফটির কথা ভেবেই আলো জ্বালাচ্ছি না। আরেকটু দুরে গিয়ে জ্বালব। কিন্তু তাতে কি তোর ভয় করছে কনি”?
কনি জবাব দিল, “তোকে ভয় পাব আমি? পুরনো কথা গুলো কি একেবারে ভুলে গেছিস। কলেজে থাকতে কিন্তু তুইই আমাকে ভয় পেয়ে আমার থেকে দুরে দুরে থাকতিস”?
শেখর বলল, “পুরনো কথা তুলে সময় নষ্ট না করে বল, সিদ্ধার্থর সাথে কেমন চলছে তোর? সব ঠিকঠাক চলছে তো”?
কনি বলল, “এমনিতে তো সব ঠিকঠাকই আছে। কিন্তু ইদানীং খুব তাড়া দিচ্ছে জানিস। বলে, আর আমাকে ছেড়ে থাকতে পারছে না। ওর বাবা মা নাকি বিয়ের জন্য প্রচুর প্রেসার দিচ্ছে। তাই ও-ও আমাকে প্রেসার দিচ্ছে। বলছে, সামনের আশ্বিনেই বিয়ে করতে চায়। কিন্তু আমি যে কিছুতেই ডিসিশান নিতে পারছি না। তুই তো জানিসই, প্রতি সপ্তাহে কম করেও দু’দিন মালিকের সাথে থাকতে হয় রাত দশটা এগারোটা অব্দি। আর সে কি শুধু থাকা? ওই জানোয়ারটা তার তিনমনি শরীরটা নিয়ে এমন ভাবে আমার শরীরটাকে ভোগ করে যে যখন আমাকে ফাইনালি ছেড়ে দেয়, আমি সাথে সাথে উঠে দাঁড়াতেই পারি না। প্রায় মিনিট দশেক হাঁপাতে হাঁপাতে তবে যেন শরীরে খানিকটা শক্তি ফিরে পাই। যখন অফিসের গাড়ি আমাকে আমার বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে যায়, তখনও হেঁটে বাড়িতে ঢুকতে অসুবিধে হয়। নেহাত বাড়ির লোকগুলো আমার উপার্জনেই খেয়ে পড়ে বেঁচে আছে, তাই তারা সব কিছু বুঝেও না বোঝার ভাণ করে থাকে। কেউ কিছু বলে না। যদিও সিদ্ধার্থ সবটাই জানে, আর সব জেনে শুনেও আমাকেই বিয়ে করবে বলে গো ধরে বসে আছে, কিন্তু তুইই বল শেখর বিয়ের পর শ্বশুর শাশুড়ির সামনে, স্বামীর সামনে অমন নোংড়া শরীর নিয়ে যাওয়া যায়? ও তো সব সময়েই বলে, এতে ওর কিছু এসে যায় না। কিন্তু আমি তো জানি, ওর কিছু এসে না গেলেও বাড়ির অন্যদের কাছ থেকে তাদের ঘরের বৌ হিসেবে যতটুকু সম্ভ্রম বা স্নেহ ভালবাসা আমার পাওয়া উচিৎ, সে টুকু কি তারা দিতে পারবে? কিছুতেই না। আর তার ফলে দিনে দিনে আমার ওপর তাদের সম্ভ্রম বা শ্রদ্ধা দুটোই কমতে শুরু করবে। আর বাড়তে থাকবে শুধু ঘৃণা আর বিতৃষ্ণা। আমার মা-বাবা নাহয় মুখ বুজে সব মেনে নিচ্ছেন। শ্বশুর শাশুড়ি কি সেভাবে মেনে নিতে পারবে সবকিছু? কিছুতেই না। তাদের জায়গায় আমি হলেও অমনটা করতে পারতাম না”।
শেখর বলল, “ভাবিস না। কিছুদিনের মধ্যেই একটা পরিবর্তন হবে। আর তখন বোধ হয় তোকে আর এভাবে ভুগতে হবে না”।
কনি বলল, “জানিনা কি হবে। পরিতোষ না কে যেন কী করতে চাইছে, সেটা তো কিছুতেই খুলে বলেনি প্রীতিদিকে। আমি তো প্রীতিদির কথায় রাজিই হতাম না। একবার যদি বস বুঝতে পারেন যে আমার জন্যে তিনি কোন বিপদে পড়তে চলেছেন, তাহলে তো সাথে সাথে আমার চাকরিটা তো চলেই যাবে। আর যে কোন মূহুর্তে আমার প্রাণটাও চলে যেতে পারে। কিন্তু প্রীতিদি আর আব্দুল ভাইয়ের কথাতেই আমি শুধু রাজি হয়েছি। প্রীতিদি তো বলছে যে মাস দেড়েকের ভেতরেই তার পরিতোষদা নাকি এমন কিছু করবেন যার পর আর আমাকে বসের সাথে এ সব কিছু করতে হবে না। তাই তো প্রাণের ঝুঁকি নিয়েও কাজটা করতে রাজি হয়েছি”।
শেখর মাঝারি গতিতে গাড়ি চালাতে চালাতে বলল, “তুই স্যারকে, মানে তোর ওই পরিতোষবাবুকে কতটুকু চিনিস তা আমি জানিনা। তবে আমি তাকে যতটা চিনি, তার পরিপ্রেক্ষিতে বলছি, একবার যখন স্যার তোর মালিকের পেছনে লেগেছে, তখন কিছু না কিছু তো হবেই। তবে এই মাস দেড়েক সময়টা কিন্তু খুব সতর্ক থাকবি তুই। আমাদের সাথে মিলে তুই যা কিছু করছিস তা যেন ঘুণাক্ষরেও কেউ জানতে না পারে। আর যাকে দিয়ে কাজটা করিয়েছিস, তাকেও সামলে রাখিস। বাকিটা স্যারের ওপরেই ছেড়ে দে”।
কনি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, “তোদের স্যার ওই পরিতোষ বাবুকে তো আমি চিনিই না। প্রীতিদি আর আব্দুল ভাইয়ের মুখেই তার কথা শুনেছি শুধু। আর সাবধান তো আমি থাকবই। কিন্তু কোনদিন তো এ’ধরণের কাজ আমি করিনি। তাই ভেতরে ভেতরে ভয়ও খানিকটা পাচ্ছি রে। থানা, পুলিশ, সিবিআই, এনফোর্সমেন্ট, অ্যান্টিকরাপশন ব্যুরো, কেউই বসের পেছনে লেগেও কিছু করতে পারেনি। উল্টে তারাই ভুগেছে। পরিতোষবাবুর মত সামান্য এক আইপিএস অফিসার আর কতটুকু কী করতে পারবেন? তবে প্রীতিদিকে আমি খুব বিশ্বাস করি। তার কথায় ভরসা করেই মনে একটু আশা জেগেছে। দেখা যাক কী হয়”।
শেখর বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথে বলল, “থানা পুলিশ, সিবিআই, এসিবি, ইডি এরা কেউ যে কিছু করতে পারেনি, তার পেছনে অনেক কারণ আছে রে কনি। কিন্তু স্যারের কাজের পদ্ধতিই আলাদা। জানিস? স্যারকে আমরা পুলিশ রবিনহুড বলি। স্যার কিভাবে কী করবেন তা শুধু তিনিই জানেন। তার প্ল্যানিং সম্বন্ধে আমরা কেউ কিছু জানিনা। আমাদের যেটুকু করতে হয়, তিনি শুধু সেটুকুই বলেন। তবে তিনি যে কেসে হাত দেন, সে কেসের সমাধা যে হবেই এ ব্যাপারে এক পার্সেন্টও সন্দেহ নেই। তুই ভাবিস না। প্রীতিদি যখন তোকে অমন কথা বলেছে, তার মানে সে স্যারের কাছ থেকেই কিছু হিন্টস পেয়েছে এ ব্যাপারে। আর সেটা যদি সত্যি হয়, তাহলে দেখে নিস ওই মাস দেড়েকের ভেতরেই কিছু না কিছু হবেই”।
কনি আবার একটা শ্বাস ছেড়ে বলল, “ভগবান করুন। তাই যেন হয়। আর কিছু হোক বা না হোক, বস আর আমাকে তার রেস্টরুমে বা ফার্ম হাউসে নিতে না চাইলেই আমি খুশী হব”।
শেখর হঠাতই বলল, “আচ্ছা, প্রীতিদি যে আরেকটা কাজের কথা বলেছিল তোকে, সেটা করেছিস কনি”?
কণি বলল, “হ্যাঁ ওটাও হয়ে গেছে। একটা পেন ড্রাইভের মধ্যে সবকিছু লোড করে রেখেছি। আর চাবির ডুপ্লিকেটগুলোও আমার ব্যাগেই আছে। কিন্তু জিনিসগুলো যে কার হাতে দেব এ ব্যাপারে তো প্রীতিদি বা আব্দুলভাই কেউই কিছু বলেনি আমাকে। তুই নিবি ও’গুলো? আসলে ব্যাগের মধ্যে পেন ড্রাইভ আর ডুপ্লিকেট চাবি গুলো নিয়ে চলাফেরা করতেও আমার খুব ভয় করছে রে। মনে হচ্ছে যে কোন সময় ধরা পড়ে যাব”।
শেখর একটা জায়গায় গাড়ির স্পীড কমিয়ে দিয়ে গাড়িটা রাস্তার বাঁ পাশে থামাতে থামাতে বলল, “সেটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। যার ভাবনা তিনিই ভাববেন” বলতে বলতেই গাড়িটা পুরোপুরি থেমে গেল।
জায়গাটা বেশ অন্ধকার। পেছনের দরজাটা হঠাৎ করে খুলে কেউ একজন গাড়ির পেছনের সীটে উঠতেই কনি প্রায় চেঁচিয়ে উঠল, “এই কে আপনি? এভাবে গাড়িতে উঠছেন কেন”?
শেখর সাথে সাথে চাপা গলায় বলল, “চুপ চুপ, চেঁচাস না কনি। ইনি স্যার”।
গাড়ি ততক্ষণে চলতে শুরু করে দিয়েছে আবার। কনি অবাক হয়ে ঘাড় ঘুড়িয়ে পেছনের দিকে দেখবার চেষ্টা করতেই পেছনের সীটের লোকটা আস্তে কিন্তু ভরাট গলায় বলল, “সামনের দিকেই তাকিয়ে থাক বোন। পেছনে তাকিও না। আমাকে ভয় পাবার কিছু নেই। আমি পরিতোষ। তোমার ব্যাগে যে পেন ড্রাইভ আর ডুপ্লিকেট চাবিগুলো আছে, সেগুলো বের করে আমার হাতে দাও প্লীজ”।
কনি কিছু বুঝতে না পেরে শেখরের দিকে চাইতেই শেখর হেসে বলল, “তোকে এইমাত্র বললাম না? যার ভাবনা তিনিই ভাববেন। স্যার নিজেই এসে গেছেন তার জিনিস নিতে। দিয়ে দে”।
কনি আর কোন কথা না বলে নিজের ব্যাগের ভেতর হাত ঢুকিয়ে পেনড্রাইভ আর দুটো ছোট ছোট প্যাকেট বের করে পেছনের দিকে এগিয়ে দিল। পরিতোষ জিনিসগুলো হাতে নিয়ে কনির মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, “মনে কোন গ্লানি রেখো না কনি। তুমি কোন অপরাধ করনি। এক পাপী অপরাধীকে শাস্তি দেবার ব্যাপারে তুমি আমাকে শুধু একটু সাহায্য করলে মাত্র। ঈশ্বর নিশ্চয়ই তোমার মঙ্গল করবেন। আর ঈশ্বর চাইলে আগামি মাসখানেকের ভেতরেই তোমার দুর্ভোগ শেষ হয়ে যাবে। আর রেস্টরুমের কথাগুলো কেবল শেখর আর প্রীতিদি ছাড়া আর কাউকে বলো না। ভাল থেকো বোন”।
কনি এবার প্রায় ফিসফিস করে বলল, “আপনি আমাকে বোন বলে ডাকলেন। আপনার কথা প্রীতিদির মুখে অনেক শুনেছি। কখনও চাক্ষুস দেখবার সুযোগ পাইনি আপনাকে। একবার একটু দেখতেও দেবেন না দাদা”?
পরিতোষ স্নেহমাখা গলায় বলল, “আশ্বিনের ভেতরেই যে তুমি রাহুমুক্ত হয়ে যাবে, সেটা তো এ মূহুর্তেই জোর দিয়ে বলতে পাচ্ছি না বোন। তবে আশ্বিনে না হলেও অঘ্রান মাসে তুমি নিশ্চিন্তে বিয়ের পিড়িতে বসতে পারবে। তোমার বিয়ের দিন আমি তোমার জন্যে উপহার আর আশীর্বাদ নিয়ে যাব। সেদিন আমায় নিশ্চয়ই দেখতে পাবে” বলেই শেখরকে উদ্দেশ্য করে বলল, “শেখর, তুই সামনের মোড়ে গাড়ি থামাস। আমি নেমে যাবার পর আর কিছুটা দুরে গিয়ে গাড়ির ভেতরের আলো জ্বালিয়ে দিস”।
পরিতোষ নেমে যাবার পর গাড়ি আবার চলতে শুরু করতেই কনি বলল, “কী অদ্ভুত লোক রে বাবা তোর এই স্যার? আর তুইও বুঝি এ জন্যেই গাড়ির ভেতরের আলো জ্বালাসনি, যাতে আমি তাকে দেখতে না পারি, তাই না শেখর”।
শেখর হেসে বলল, “ঠিক ধরেছিস তুই। কিন্তু তোর সুরক্ষার জন্যেই কিন্তু স্যার এমন নির্দেশ দিয়েছিলেন আমাকে। তুই যে স্যারকে চিনিস, স্যারের সাথে তোর যে যোগাযোগ আছে, স্যারের সাথে তুই যে এভাবে গাড়িতে দেখা করেছিস, এ কথাগুলো চিরদিন গোপন রাখতে হবে। কারন তুই না জানলেও স্যার ঠিকই জানেন যে বিমল আগরওয়ালার অনেকগুলো চোখ এ শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঘোরা ফেরা করছে। সেইসব চোখ থেকে পেনড্রাইভ আর চাবি লেনদেনের ব্যাপারটা গোপন রাখতেই উনি এভাবে অন্ধকারে এসে কাজটা সেরে গেলেন। তাতে কি তোর খুব রাগ হয়েছে নাকি”?
কনি বেশ শান্ত গলায় বলল, “না রে তা নয়। প্রথমে একটু চমকে গিয়েছিলাম ঠিকই। কিন্তু তার কথাগুলো শুনে বুকের ভেতরটা যেন কেমন হাল্কা হয়ে গেছে আমার। আর তুই বোধহয় দেখিস নি, তিনি আমার মাথায় হাত রেখেছিলেন। কেমন অদ্ভুত একটা স্নেহভরা পরশ পেলাম যেন। আমি যখন আমার দুর্ভাগ্যের কথা ভেবে ভেবে ঘরে বসি কাঁদি, তখন বাবা মাঝে মাঝে আমার মাথায় এভাবে হাত বুলিয়ে দেন। আচ্ছা শেখর, তুই তো পরিতোষদাকে খুব ভাল করে চিনিস। তিনি কি বিয়ে করেছেন নাকি রে? তার স্ত্রীকে দেখেছিস তুই”?
শেখর ঠাট্টা করে বলল, “এই সেরেছে রে। ভাগ্যিস তুই তার মুখ দেখিস নি। নইলে বেচারা সিদ্ধার্থের কপাল পুড়ত”।
কনি শেখরের বাম কাঁধে একটা থাপ্পড় মেরে বলল, “বদমাশ কোথাকার। আমি কি তোকে তাই বলেছি”?
শেখর হেসে বলল, “উঃ তোর হাতে কি জোর রে বাবা। আমার কাঁধটা নাড়াতেই পাচ্ছি না আর। কিন্তু তার স্ত্রীকে আর আমি কি করে দেখব বল? তিনি তো বিয়েই করেন নি। তার তো তিনকূলে কেউ আছে বলেই শুনিনি। তাদের পৈতৃক বাড়িতে তিনি একাই থাকেন। বাড়িতে কোন চাকর বাকর রাধুনী আয়া বলতে কেউ নেই। খাওয়া দাওয়া করেন হোটেলে রেস্টুরেন্টে। শুধু রাতটুকুই বাড়িতে থাকেন। সকালে নিজের হাতে চা বানিয়ে খেয়েই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন। আর রাত বারোটা একটায় ঘরে ফিরে বিছানায় শুয়ে পড়েন। এই তার দিনচর্চা। ও বাড়িতে বৌ হয়ে যে যাবে, তার কপালে দুর্ভোগ আছে। সারাদিন তাকে একা একা ঘরের কাজকর্ম করে যেতে হবে। অবশ্য তুইও তো প্রায় সারাদিনই বাইরে থাকিস। তোকে ওই বাড়িতে ভূতের মত বসে থাকতে হবে না। তবু সিদ্ধার্থের মত অত ভাল একটা ছেলেকে ছেড়ে স্যারের বৌ হবার কথা ভাবিস না”।
কনি এবার রাগত সুরে বলল, “শেখর ভাল হচ্ছে না কিন্তু বলে দিচ্ছি। আমি কিন্তু আবার মারব তোকে”।
শেখর হেসে বলল, “আচ্ছা আচ্ছা, আর কিছু বলছি না। তুই কি ঠাট্টাও বুঝিস না? স্যার তোকে বোন বলে গেলেন, সেটা কি আমি শুনিনি বলে ভাবছিস? কিন্তু কনি, যাকে দিয়ে ক্যামেরাগুলো লাগিয়েছিস, তাকে এই দশ হাজার টাকা দিয়ে বলিস কাজ হয়ে যাবার পর ক্যামেরা গুলো যখন আবার তোর হাতে ফেরত দেবে তখন সে আরও দশ হাজার টাকার বখশিস পাবে। আর তাকেও সাবধানে থাকতে বলবি। তার মুখ থেকেও যেন অন্য কেউ এ ব্যাপারে কিছু জানতে না পারে”।
কনি এবার স্বাভাবিক হয়ে বলল, “সে তো আগেই বলেছি। আর মনে হয় না, ও কাউকে কিছু বলবে। লোকটা খুব ভাল। আমাকে খুব স্নেহ করে। তুই ওকে নিয়ে ভাবিস না”।
শেখর গাড়ি রাস্তার বাঁ পাশে চাঁপাতে চাঁপাতে বলল, “ঠিক আছে। তুইও ভাল থাকিস। তবে তোর বিয়ের নেমন্তন্নটা পাঠাস কিন্তু”।
কনির বাড়ি থেকে প্রায় এক’শ গজ দুরে গাড়িটা থেমে যেতেই কনি অবাক হয়ে বলল, “এখানেই নামতে বলছিস? বাড়ির সামনে অব্দি নিয়ে যাবি না”?
শেখর এ’পাশ ও’পাশ দেখতে দেখতে বলল, “এখানেই নেমে যা তুই কনি। সাবধানের মার নেই। তবে ঘাবড়াস না। তুই বাড়িতে ঢুকে না যাওয়া পর্যন্ত আমাদের লোকেরা তোকে গার্ড করে যাবে। যা”।
কনি গাড়ি থেকে নেমে গেল। সামনের দিকে অনেকখানি এগিয়ে যাবার পর ও নিজেদের গলির ভেতর ঢুকে যাবার পর উল্টো দিক থেকে একটা লোককে আসতে দেখা গেল। লোকটা কনিদের বাড়ির গলির মুখে দাঁড়িয়ে রইল বেশ কিছুক্ষণ। তারপর শেখরের গাড়ির দিকে হাতের বুড়ো আঙুল দেখাল। শেখরও নিশ্চিন্ত হয়ে গাড়িটা ব্যাক করে উল্টোদিকে রওনা হল।
******************
______________________________
•
Posts: 577
Threads: 3
Likes Received: 797 in 298 posts
Likes Given: 364
Joined: Feb 2019
Reputation:
64
(Update No. 164)
বাইরের কম্পাউন্ডে গাড়ির আওয়াজ পেতেই অর্চনা ঘরের দরজা খুলে দরজাটা অল্প ফাঁক করে সীমন্তিনীকে গাড়ি থেকে নামতে দেখেই সে ছুটে বেরিয়ে এল। বারান্দা দিয়ে দৌড়ে গিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করতেই সীমন্তিনী চেঁচিয়ে বলল, “কি করছিস অর্চু, পড়ে যাবি তো। আস্তে আস্তে”।
অর্চনা ছুটে এসে সীমন্তিনীকে জড়িয়ে ধরে হাঁপাতে লাগল। সীমন্তিনীর একহাতে অফিসের ভারী ব্যাগটা। অন্য হাতে রচনাকে জড়িয়ে ধরে তার কপালে ছোট্ট একটা আদরের চুমু খেয়ে প্রশ্রয়ের সুরে বলল, “কি হচ্ছে এটা সোনা? তোর শরীরটা এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। এভাবে এতগুলো সিঁড়ি বেয়ে দৌড়ে নামতে আছে? আচ্ছা কি হয়েছে বল তো? একা ছিলিস বলে খুব খারাপ লাগছিল”?
অর্চনা সীমন্তিনীকে ছেড়ে তার হাত থেকে ব্যাগটা নিজের হাতে নিতে নিতে বলল, “আমি একদম ঠিক আছি গো দিদিভাই। তোমার ছোঁয়ায় আমি এখন পুরোপুরি সুস্থ। আচ্ছা চলো চলো, তাড়াতাড়ি আগে ভেতরে চলো তো”।
সীমন্তিনী অর্চনার হাত ধরে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে বলল, “কী, হয়েছেটা কি বলবি তো। এত খুশীর কারনটা কি”?
অর্চনা জবাব দিল, “কিচ্ছু না। তুমি ঘরে চলো। তুমি ফিরে এলে একসাথে খাব বলে আমি বিকেলে চা খাইনি। তাই আর কি”।
বারান্দায় উঠে লক্ষ্মীকে মিটিমিটি হাসতে দেখে সীমন্তিনী তাকে জিজ্ঞেস করল, “ওমা। তোমার আবার কি হল লক্ষ্মীদি? এভাবে হাসছ কেন”?
লক্ষ্মী হাসতে হাসতেই বলল, “বলা বারণ আছে গো দিদিমণি। তাই এখন কিচ্ছুটি বলতে পারব না। তবে তোমার এই পাগলী বোনটা আজ আমাকে বিকেলের খাবার বানাতে দেয়নি। তোমার জন্য সে নিজে হাতে আজ আলুর দম আর লুচি বানিয়েছে”।
সীমন্তিনী আর অর্চনা ততক্ষণে ড্রয়িং রুমের ভেতর এসে ঢুকেছে। লক্ষ্মী দরজা বন্ধ করতেই সীমন্তিনী অর্চনার হাত ধরে উচ্ছ্বসিত গলায় জিজ্ঞেস করল, “সত্যি অর্চু? আলুর দম করেছিস তুই? গুড়ো আলু দিয়ে”?
অর্চনাও খুশী ভরা গলায় বলল, “রচুর মুখেই শুনলুম যে তুমি গুড়ো আলুর দম খেতে খুব পছন্দ কর। কাল লক্ষ্মীদি বাজার থেকে অমন গুড়ো আলু এনেছে। তাই ঘরে ছিল বলে বানিয়েই ফেললাম। কিন্তু সেটার সাথে তো লুচি হলেই খেতে বেশী ভাল লাগে। তাই লুচির লেচি করে রেখে দিয়েছি। তুমি ফ্রেশ হতে হতে আমার লুচি ভাজাও হয়ে যাবে। যাও যাও, তাড়াতাড়ি স্নান সেরে এস”।
সীমন্তিনী নিজের ঘরের দিকে এগোতেই লক্ষ্মী অর্চনার হাত থেকে সীমন্তিনীর ব্যাগটা নিয়ে বলল, “যাও সোনাদি, আমাকে তো তুমি আগেই বারণ করেছ, তাই তুমি কয়েকটা লুচি বেলে ফেলো। আমি দিদিমণির ব্যাগটা ঘরে রেখে এসে তোমাকে সাহায্য করছি”।
মিনিট পনেরো পর সীমন্তিনী বাথরুম থেকে বেরিয়েই সোজা রান্নাঘরের দরজায় এসে দাঁড়িয়ে বলল, “তাহলে এটাই তোর খুশীর আসল কারন, তাই না অর্চু”? তার পড়নে একটা খুব সুন্দর ডিজাইনের নতুন নাইটি।
লক্ষ্মী অর্চনার ও’পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে লুচি বেলছিল। সে সীমন্তিনীর কাছে এসে ডানপাশ বামপাশ থেকে তাকে দেখতে দেখতে বলল, “ওমা দিদিমণি, কী সুন্দর লাগছে গো তোমাকে দেখতে”।
অর্চনা একটা লুচি থালায় রেখে গ্যাসের আঁচটা কমিয়ে দিয়ে সীমন্তিনীর কাছে এসে বলল, “মাপ টাপ ঠিকঠাক হয়েছে তো দিদিভাই? কোথাও বেশী টাইট বা লুজ হয়নি তো? আর ঝুলটা.. দেখি দেখি” বলতে বলতে সীমন্তিনীর কাঁধ ধরে তাকে এ’পাশ ও’পাশে ঘুরিয়ে দেখে আশ্বস্ত হয়ে বলল, “না ঠিকই আছে”। তারপর আবার নাইটিটার কাঁধের দিকে, বগল তলার দিকে আর কোমড়ের দিকে একটু টেনে টুনে বলল, “নাঃ, সব কিছুই ঠিক আছে। তোমার পছন্দ হয়েছে দিদিভাই? সত্যি কথা বলবে, একদম বানিয়ে বলবে না কিন্তু”।
সীমন্তিনী অর্চনার একটা কাঁধে হাত রেখে বলল, “খুব পছন্দ হয়েছে রে অর্চু। কিন্তু এ সবের মানেটা কি বল তো? আমার কি নাইটির অভাব আছে? যে তুই এমন একটা নতুন নাইটি কিনে এনেছিস। আর পয়সাই বা পেলি কোথায় তুই”?
তখন লক্ষ্মী বলে উঠল, “ওমা শোনো কথা? কিনতে যাবে কেন গো দিদিমণি? সোনাদি তো তোমার জন্যে এটা নিজে হাতে বানিয়েছে গো। তুমি আর ছোড়দি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবার পর নিজের ঘরে বসে লুকিয়ে লুকিয়ে এটা বানিয়ে যাচ্ছিল তিন চার দিন ধরে”।
সীমন্তিনী বিষ্ময় আর খুশী মিশ্রিত গলায় বলল, “সত্যি নাকি রে অর্চু? তুই নিজে হাতে এটা বানিয়েছিস? কিন্তু কি করে বানালি? আমার ঘরে তো সেলাই মেশিন নেই”?
অর্চনা হাসি হাসি মুখে বলল, “মা আমার ব্যাগে এ কাপড়টার সাথে সাথে সুচ, সুতো, বোতাম, হুক আর কাঁচিও ভরে দিয়েছিল। আর মেশিনের প্রয়োজন হয়নি। আমি হাতেই সেলাই করেছি”।
সীমন্তিনী এবার আরও অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “তুই নিজে হাতে এই পুরো নাইটিটা সেলাই করেছিস! তুই কাটিং টেলারিং-এর কাজ জানিস নাকি”?
অর্চনা খুশী খুশী মুখে জবাব দিল, “কিছু কিছু জানি দিদিভাই। কলেজে পড়বার সময়েই আমাদের পাশের বাড়ির এক বৌদির কাছে কিছুদিন শিখেছিলুম। তবে এত বছর বাদে বানাতে একটু ভয় ভয়ই করছিল। এখন চিন্তাটা দুর হল। কিন্তু তোমার পছন্দ হয়েছে তো দিদিভাই”?
সীমন্তিনী এগিয়ে এসে অর্চনাকে জড়িয়ে ধরে তার কপালে একটা চুমু খেয়ে বলল, “খুব খুব পছন্দ হয়েছে রে পাগলী। আমার জীবনে এমন সুন্দর উপহার আর আগে কখনও পাইনি রে বোন” বলতে বলতে কেঁদে ফেলল।
অর্চনাও সাথে সাথে সীমন্তিনীকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, “ওমা, তুমি কাঁদছ কেন দিদিভাই? কেঁদো না প্লীজ। আমার লক্ষ্মী সোনা দিদিভাই। চুপ করো”।
সীমন্তিনী অর্চনাকে ছেড়ে দিয়ে নিজের চোখ মুছতে মুছতে বলল, “এমন খুশী আমি বহু বছর পাইনি রে অর্চু। তুই জানিস? আমার মা-ও খুব ভাল কাটিং টেলারিং-এর কাজ জানতেন। আমার মনে আছে, আমি তখন খুব ছোট ছিলাম। বোধ হয় ক্লাস টু থ্রিতে পড়তাম। তখন মা নিজে হাতে সেলাই করে আমাকে একটা ফ্রক বানিয়ে দিয়েছিলেন। খুব পছন্দ হয়েছিল আমার সে ফ্রকটা। বাড়িতে সবসময় ওটাই পড়ে থাকতে চাইতাম আমি। কিন্তু তার কয়েক বছর বাদেই সেই ......” বলেই থেমে গেল।
নিজেকে সামলে কথাটা ঘুরিয়ে বলল, “আচ্ছা, তাহলে এটা মাসির প্ল্যান, তাই না? আর তুইও কাউকে কিছু না জানিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে এটা বানিয়েছিস আমাকে সারপ্রাইজ দিবি বলে তাই না”?
অর্চনা হেসে বলল, “হ্যাঁ গো দিদিভাই। তবে আমি নিজে হাতে এটা বানালেও, এটা কিন্তু মা-র ইচ্ছেতেই বানালুম। তুমি যেদিন মাকে বলেছিলে যে আমায় তোমার এখানে নিয়ে আসবে, মা সেদিনই বাজার থেকে এ কাপড়টা কিনে এনেছিলেন। আর আমাকে বলেছিলেন যে এখানে এসে তোমার পড়নের অন্য কোন নাইটির মাপে যেন আমি কেটে সেলাই করে দিই”।
সীমন্তিনী বলল, “আচ্ছা, বাকি কথা না হয় খেতে খেতে বলা যাবে। ভাজা লুচিগুলো তো ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। নিয়ে আয় তাড়াতাড়ি। আমি টেবিলে বসছি”।
সীমন্তিনী নিজের ঘর থেকে মোবাইলটা হাতে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে এসে বসতেই অর্চনা আর লক্ষ্মী মিলে দুটো প্লেটে খাবার সাজাতে শুরু করতেই সীমন্তিনী বলল, “লক্ষ্মীদি, তুমিও একসাথে বসে পরো”।
অর্চনাও বলল, “হ্যাঁ লক্ষ্মীদি, তোমার জন্যেও একটা প্লেট নিয়ে এস। তিনজনে একসাথে বসে খেয়ে নিই। তারপর না হয় চা করা যাবে”।
লক্ষ্মী মনে মনে খুশী হয়ে তার নিজের জন্যেও একটা প্লেট এনে রাখল টেবিলে। অর্চনা প্রত্যেকটা প্লেটে চার চারটে করে ফুলকো লুচি আর ছোট ছোট বাটিতে আলুর দম আর চামচ সাজিয়ে সবাইকে দিয়ে নিজেও সীমন্তিনীর পাশের চেয়ারে বসে পড়ল। প্রথম গ্রাস মুখে দিয়েই সীমন্তিনী চোখ বড় বড় করে অর্চনার দিকে চেয়ে বলল, “ইশ কি দারুণ বানিয়েছিস রে অর্চু। আহা, মনটা ভরে গেল আমার রে”।
লক্ষ্মীও বলল, “হ্যাঁ গো দিদিমণি, ঠিক বলেছ তুমি। সত্যি দারুণ লাগছে গো। আমার বৌদিমণির মতই এ সোনাদির হাতেও যাদু আছে গো”।
সীমন্তিনী বলল, “ঠিক বলেছ তুমি লক্ষ্মীদি। দুই বোনের হাতেই যাদু আছে। আর এ যাদুটা ওরা কার কাছ থেকে শিখেছে সেটা জানো? আমার মাসির কাছে। আজ আমার একদিনের কথা মনে পড়ছে। তুই জানিস অর্চু? রচু আর দাদাভাইয়ের বিয়ের পর ওদের ফুলশয্যার পরের দিন সকালে রচু জোর করেই বাড়ির সকলের জন্য এমন আলুর দম বানিয়েছিল। সবাই খেয়ে এত খুশী হয়েছিল যে বার বার করে চেয়ে নিচ্ছিল। শেষমেষ দেখা গেল রচুর ভাগেরটাও অন্য সবাই মিলে খেয়ে শেষ করে ফেলেছে। বেচারা রচু, আগের রাতের বাসি ছোলার ডাল দিয়ে লুচি খেয়েছিল শেষে”।
অর্চনা মিষ্টি হেসে বলল, “সে’কথা রচুর মুখেই শুনেছি দিদিভাই। কালচিনি হাসপাতালে যেদিন রতু-দা আর তোমাকে প্রথম দেখেছি, সেদিন রাতেই রচু আমাকে এ’কথাটা বলেছিল। আর তোমাদের বাড়ির অন্যান্য সকলের কথাও বলেছিল”।
সীমন্তিনী বলল, “দাঁড়া অর্চু, আগে একটু মাসির সাথে কথা বলে নিই। ভাই বোধহয় এখন বাড়িতেই আছে” বলে খেতে খেতেই কিংশুকের ফোনে ডায়াল করল। ও’পাশ থেকে কিংশুকের সাড়া পেতেই সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “ভাই, ওদিকের খবর কি বলো তো? মিঃ অধিকারী তো গিয়েছিলেন। কাজের কাজটা করে এসেছেন তো”?
কিংশুক বলল, “হ্যাঁ দিদিভাই। ওনারা দু’জন সব কিছু ঘুরে ফিরে দেখে মাপজোখ নিয়ে গেছেন। মা তাদেরকে মিষ্টি আর চা বিস্কুট দিয়েছিলেন। ওনারা তো বলেছিলেন যে নাগরাকাটাতে ফিরে তারা তোমার সাথে যোগাযোগ করবেন”।
সীমন্তিনী বলল, “হ্যাঁ ভাই আমার সাথে সন্ধ্যের ঠিক আগে আগেই তারা ফোনে কথা বলেছেন। তবে মিঃ অধিকারী কালই একটা জরুরী কাজে কয়েকদিনের জন্য কলকাতা যাচ্ছেন। সেখান থেকে ফিরে আমার সাথে ডিটেইলস আলোচনা করবেন। তা ভাই, মা কোথায় গো? তোমার আশে পাশে আছেন”?
কিংশুক জবাব দিল, “হ্যাঁ দিদিভাই, এই নাও মা-র সাথে কথা বলো” বলতেই বিভাদেবীর গলা শোনা গেল, “কেমন আছিস মা”?
সীমন্তিনীর গলাটা হঠাতই যেন বুজে আসতে চাইল। কিছু বলতে গিয়েও তার গলা দিয়ে যেন কথা ফুটে বেরোচ্ছিল না। চোখ দুটো জলে ভরে গেল। অর্চনা সেটা দেখেই নিজের চেয়ার থেকে উঠে পড়ে সীমন্তিনীকে জড়িয়ে ধরে বলল, “দিদিভাই, শান্ত হও। মা লাইনে আছেন তো। কথা বলো”।
ও’পাশ থেকে বিভাদেবীও চিন্তিত সুরে বললেন, “কি হয়েছে তোর মন্তি মা? তুই ঠিক আছিস তো”?
সীমন্তিনীর বুকের ভেতরটা কেমন জানি মোচড় দিয়ে উঠছিল। সে কোন মতে অনেক কষ্ট করে বলল, “আমার প্রণাম নিও মাসি” বলেই ফোনটা অর্চনার হাতে ধরিয়ে দিল।
অর্চনা ফোন নিয়ে লক্ষ্মীর দিকে ঈশারা করতেই লক্ষ্মী এসে সীমন্তিনীর পাশে দাঁড়িয়ে তাকে সান্ত্বনা দিতে লাগল। অর্চনা ফোনটা নিয়ে একটু দুরে সরে গিয়ে বলল, “মা, আজ নাইটিটা দিদিভাইকে দিয়েছি। তার খুব পছন্দ হয়েছে বলেছে। তাই তোমাকে প্রণাম জানালেন। কিন্তু তোমার সাথে কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছেন। কথা বলতে পারছেন না”।
ও’পাশ থেকে বিভাদেবী বললেন, “বুঝেছি রে অর্চু। মেয়েটা সকলের জন্য নিজের প্রাণপাত করে যাচ্ছে। কিন্তু নিজের মা বাবা নিজের বাড়ির সব লোকদের কাছ থেকে বহু বছর ধরে দুরে সরে আছে। বাড়ি আর বাবা মা-র ওপরে কিছু একটা অভিমান নিয়েই যে ও এভাবে সকলের থেকে দুরে আছে সেটা তো আন্দাজ করতেই পারি। কিন্তু ওর মনের কথা যে ও কাউকে খুলে বলে না। অনেক চেষ্টা করেও আমি কিছু জানতে পারিনি। রচুকে ও নিজের প্রাণের চেয়ে বেশী ভালবাসে। রচুকেও সেসব কথা কোনদিন বলে নি। তুই ওকে শান্ত কর। বুঝিয়ে সুঝিয়ে ঠাণ্ডা কর ওকে। আর ওকে বলিস যে ওর পাঠানো ইঞ্জিনিয়াররা এসে আমাদের বাড়ি ঘরগুলোর মাপজোখ নিয়ে গেছেন আজ দুপুরের দিকে। আমি ওর সাথে পরে কথা বলব’খন। আর তোর শরীর ঠিক আছে তো? আর নাইটিটা পড়ে ওকে কেমন লাগছে রে”?
অর্চনা বলল, “খুব ভাল মানিয়েছে মা দিদিভাইয়ের শরীরে। খুব ভাল লাগছে দেখতে। আচ্ছা আমি তাহলে এখন রাখছি মা” বলে ফোন কেটে দিল।
ততক্ষণে লক্ষ্মী সীমন্তিনীকে তার ঘরে নিয়ে গেছে। অর্চনা নিজের হাত ধুয়ে সীমন্তিনীর ঘরে গিয়ে লক্ষ্মীকে বলল, “লক্ষ্মীদি, তুমি একটু দিদিভাইয়ের কাছে বোসো। আমি চা বানিয়ে আনছি”।
লক্ষ্মী তাকে বাঁধা দিয়ে বলল, “না সোনাদি, তুমিই বরং দিদিমণির কাছে বসো, আমি চা করে আনছি”।
লক্ষ্মী ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে অর্চনা সীমন্তিনীর পাশে বসে তাকে একহাতে জড়িয়ে ধরে বলল, “মন খারাপ করো না দিদিভাই। মা তোমাকে আশীর্বাদ দিয়েছেন। কিন্তু দিদিভাই, তুমি যে ইঞ্জিনিয়ারকে কালচিনি পাঠিয়েছিলে তারা ফিরে এসে আর তোমার সাথে দেখা করেন নি”?
সীমন্তিনী একটা শ্বাস ছেড়ে নিজেকে সামলে নিতে নিতে বলল, “আসলে উনি কাল সকালেই দিন সাতেকের জন্য কলকাতা যাচ্ছেন। আর সে ব্যাপারেই একটু ব্যস্ত আছেন বলে আমার সাথে দেখা করতে আসেন নি। তবে ফোনে কথা বলেছেন। কলকাতা থেকে ফিরেই তিনি আমার সাথে দেখা করবেন”।
এমন সময়ে রচনার ফোন এল সীমন্তিনীর মোবাইলে। সীমন্তিনী ফোনে রচনার নাম দেখেই কলটা রিসিভ করে গলা পরিষ্কার করে বলল, “হ্যাঁ রচু, বল কি খবর”?
ও’পাশ থেকে রচনা বলল, “কি হয়েছে দিদিভাই? তোমার গলাটা এমন শোনাচ্ছে কেন গো”?
সীমন্তিনী গলাটা আরো একটু পরিষ্কার করে বলল, “নারে কিছু হয়নি। সবে অর্চুর হাতের লুচি আর আলুর দম খেলাম তো। ভাল করে জল খাইনি এখনও। তাই হয়ত তোর এমন মনে হচ্ছে। ও নিয়ে ভাবিস না। আমি অর্চু নীতা সবাই ভাল আছি। তোরা বিকেলের জলখাবার খেয়েছিস”?
রচনা বলল, “হ্যাঁ দিদিভাই। আমাদের জলখাবার খাওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু দিদিভাই, তুমি নাকি কালচিনির বাড়িতে এক ইঞ্জিনিয়ারকে পাঠিয়েছিলে? মা বললেন, তারা নাকি বাড়ি ঘরের মাপজোখ নিয়ে এসেছে। কি ব্যাপার গো”?
সীমন্তিনী জবাব দিল, “আরে তেমন কিছু সিরিয়াস ব্যাপার নয় রে পাগলী। আসলে সেদিন অর্চুকে নিয়ে আসবার সময় দেখলুম যে রান্নাঘরটাকে সারাই করা খুব দরকার, নইলে সামনের বর্ষায় সেটা ভেঙে পড়তে পারে। তাই আমি লোক পাঠিয়ে একটা এস্টিমেট বানিয়ে দেখতে চাইছি, সারাই করতে ঠিক কত টাকার দরকার হতে পারে”।
রচনা বলল, “শুধুই রান্নাঘর? তাহলে তারা থাকবার ঘরেরও মাপজোখ নিল কেন”?
সীমন্তিনী একটু রাগের ভাণ করে বলল, “সবটাই তো শুনেছিস তাহলে। তাহলে আমাকে আর জিজ্ঞেস করছিস কেন”?
রচনা অবাক হয়ে বলল, “ওমা তুমি রাগ করছ কেন দিদিভাই? আমি এমন কী জিজ্ঞেস করেছি তোমাকে? মা-র মুখে যা শুনলুম তাতে তো মনে হল তারা রান্নাঘর ছাড়াও থাকবার ঘর দুটো আর পেছনের কলতলা আর বাথরুম টয়লেটের মেজারমেন্টও নিয়েছে। কিন্তু এ’সব শুধু সারাই করবার জন্যে তো মনে হচ্ছে না। মা ঠিক বুঝিয়ে বলতে পারলেন না। কিন্তু আমার মনে হল তারা বুঝি পুরনো ঘর গুলো ভেঙে নতুন করে বানাবার প্ল্যান করছেন। কিন্তু এত টাকা কোত্থেকে আসবে সেটা বুঝতে পারছি না। সেটা জানবার জন্যেই তোমাকে জিজ্ঞেস করছি”।
এমন সময় লক্ষ্মী তিনকাপ চা নিয়ে ঘরে ঢুকল। সীমন্তিনী চায়ের কাপ হাতে নিয়ে এবার একটু হেসে বলল, “হু। আমার ধারণা একদম মিলে গেল। আমি জানতুম আমি তোকে আগে থেকে কিছু না জানালেও তুই পুরো ব্যাপারটাই জেনে যাবি। একদম সত্যি ধরেছিস তুই। থাকবার ঘর দুটো, রান্নাঘর, বাথরুম, টয়লেট আর কলতলাটা ভেঙে নতুন করে বানিয়ে দেব বলেই ভাবছি। কিন্তু আগে থেকে খরচের একটা আন্দাজ করে না নিলে কাজ শুরু করে পরে হয়ত বিপদে পড়তে হবে, তাই এখান থেকে একজন ইঞ্জিনিয়ারকে কালচিনি পাঠিয়েছিলাম। ওরা সব কিছু দেখে শুনে আমাকে একটা এস্টিমেট বানিয়ে দেবেন। তারপর দেখা যাক, কাজটা করে ফেলা যায় কি না। এবার বুঝেছিস তো”?
রচনা বলল, “কিন্তু তারা নাকি বলেছে দু’তলা করা হবে। এ তো প্রচুর টাকার ব্যাপার দিদিভাই। কোত্থেকে আসবে এত টাকা”?
সীমন্তিনী হেসে বলল, “বারে সেটা নিয়ে ভাবনার এত কী আছে? ভাই ছোট হলেও আমরা তিন তিনটে বোন তো আছি। আমরা সবাই মিলে সেটা ঠিক করে দিতে পারব দেখিস। আর তোকে এ নিয়ে মাথা ঘামাতে কে বলেছে শুনি? উদ্যোগটা যখন আমি নিয়েছি, তখন আমাকেই সামলাতে দে না”।
রচনা সীমন্তিনীর কথা বুঝতে না পেরে বলল, “আমরা তিন বোন মিলে মানে? আমি আর দিদি টাকা কোথায় পাবো? কী বলছ তুমি দিদিভাই? আসলে তুমি একাই সবটা সামলাবে সেটা কি আর আমি বুঝতে পাচ্ছিনা ভাবছ? কিন্তু দিদিভাই, সত্যি করে বল না গো, কত টাকা লাগবে আর কোত্থেকে সে টাকা পাবে তুমি”?
সীমন্তিনী শান্ত সুরে বলল, “ফাইনাল এস্টিমেটটা হাতে পেতে ক’দিন দেরী হবে। তবে মৌখিক হিসেবে মিঃ অধিকারী যা বললেন তাতে মনে হয় তিরিশ থেকে পঁয়ত্রিশ লাখের মত পড়বে। তবে দোতলা ঠিক বানানো হচ্ছে না। ফাউন্ডেশনটা দোতলা বাড়ির মত করে করা হবে, যাতে ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে যে কোন সময় ওপরে রুম বানানো যায়”।
রচনা বলল, “বাপরে! তিরিশ পঁয়ত্রিশ লাখ টাকা লাগবে! তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে দিদিভাই? এত টাকা তুমি কোথায় পাবে”?
সীমন্তিনী বলল, “আমার মাথা যে সত্যিই খারাপ তা কি এতদিনেও বুঝিসনি তুই? তোকে প্রথম দেখার পর থেকেই আমি কি পাগলামি শুরু করেছিলাম, সে’সব ভুলে গেলি? আচ্ছা, ও’সব কথা ছাড় তো। আমি তো তোকে বললুমই যে উদ্যোগটা যখন আমি নিয়েছি, তখন কি হবে না হবে সেটা আমি দেখব। তুই আমাকে একটা কথা বল তো? তোদের মহিমা বৌদির খবর কি? আর এসেছিল তোদের ফ্ল্যাটে”?
রচনা এক মূহুর্ত চুপ করে থেকে বলল, “হু বুঝেছি, তুমি কিছুতেই এখন সেটা আমাকে বলবে না। ঠিক আছে দিদিভাই। এক মাঘেই শীত যায় না কথাটা জানো তো? আমিও সেটা কখনো বুঝিয়ে দেব তোমাকে। তবে মহিমা বৌদি এর মধ্যে আর আমাদের এখানে আসেন নি। তিনি ভালই আছেন। তোমার দাদাভাইয়ের মুখে শুনলুম তোমার সাথে কথা বলে বৌদি নাকি খুব খুশী হয়েছেন”।
সীমন্তিনী বলল, “আচ্ছা রচু সোনা, লক্ষ্মীদি চা এনেছে। তোর সাথে কথা বলতে বলতে আমার চা ঠান্ডা হয়ে গেল। তুই একটু অর্চুর সাথে কথা বল ততক্ষণ। আর আজেবাজে কথা ভেবে নিজের দুশ্চিন্তা বাড়াস নে। আর অর্চু আমাকে আজ কেমন সারপ্রাইজ দিয়েছে সেটা ওর মুখ থেকেই শোন” বলে ফোনটা অর্চনার হাতে ধরিয়ে দিয়ে সে চায়ের কাপে চুমুক দিল।
অর্চনা সীমন্তিনীর জন্যে নাইটি বানানোর গল্প করতে লাগল রচনার সাথে। সীমন্তিনী অর্চনাকে উদ্দেশ্য করে বলল “অর্চু তোর কথা শেষ হলে লক্ষ্মীদিকে একটু ফোনটা দিস, আমি একটু সামনের বারান্দায় যাচ্ছি”।
______________________________
•
Posts: 577
Threads: 3
Likes Received: 797 in 298 posts
Likes Given: 364
Joined: Feb 2019
Reputation:
64
(Update No. 165)
বারান্দায় এসে চা খেতে খেতে পায়চারী করতে করতে সীমন্তিনী ভাবতে লাগল যে অর্চনার যদি পরিতোষের সাথে বিয়ে দেওয়া যায় তাহলে তো মন্দ হয় না। ঝোঁকের মাথায় পরিতোষের সাথে কথায় কথায় হুট করে তো সে বলেই দিয়েছিল কথাটা আগের দিন। পরিতোষও ',। ছেলে হিসেবে তার কোনও তুলনাই হয় না। নবনীতাও যদি এতে মত দেয় তাহলে পরিতোষের তরফ থেকে আর কোন সমস্যাই থাকবে না। এখন পরিতোষের বয়স প্রায় তিরিশ। আর অর্চনার বয়স এখন তেইশের ওপরে। সাড়ে ছ’ বছর বা সাত বছরের মত তফাৎ হবে দু’জনের মধ্যে। বয়সের পার্থক্যটা কি খুব বেশী হচ্ছে? না বোধহয়। আগেকার দিনে তো স্বামী স্ত্রীর মধ্যে পনেরো কুড়ি বছরের তফাৎও থাকত। এ যুগেও সাত আট বছরের তফাৎ হামেশাই দেখা যায়। আর ছেলে হিসেবে পরিতোষ যেমন চমৎকার তেমনই মেয়ে হিসেবে অর্চনাই বা কম কিসে? হাইট গড়পড়তা বাঙালী মেয়েদের চেয়ে বেশীই। গায়ের রঙ চমৎকার। দেখতেও খুবই সুন্দরী। বিয়ের পর পাঁচ বছর স্বামীর ঘরে কাটালেও সে স্বামীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক একেবারেই হয় নি। তাই সে এখনও কূমারী, ঘরকন্যার কাজে ওস্তাদ, রান্নার হাত চমৎকার, সংস্কারি, মিষ্টি ব্যবহার, রচনার মতই অর্চনার মধ্যেও কাছের সবাইকে আপন করে নেবার ক্ষমতা আছে। শুধু লেখাপড়ায় একটু কম। মাধ্যমিক পাশ। আর দুর্ভাগ্যক্রমে সে বিধবা। তবু পরিতোষ অরাজী হবে বলে মনে হয় না। অর্চনার মা বাবাও মনে হয় পরিতোষের মত একটা ছেলে পেলে একেবারেই আপত্তি করবেন না, এটা আশা করাই যায়। রচনা আর কিংশুকও বোধহয় আপত্তি করবে না। কিন্তু সবার আগে জানতে হবে অর্চনার মনের ইচ্ছে। অর্চনা রাজি হলে এ সম্পর্কে আর কোন বাঁধা থাকবে না। সীমন্তিনী একসময় ভেবেছিল যে রচনার মত অর্চনাকেও তাদের বাড়ির বৌ করেই নেবে। ভেবেছিল সতীশের সাথে অর্চনার বিয়ের কথা তুলবে। কিন্তু কিছুদিন আগেই সে জানতে পেরেছে যে সতীশ একটা মেয়েকে ভালোবাসে। বাড়ির লোকেদের সম্মতি পেলে সে ওই মেয়েকেই বিয়ে করবে। তাই সে সম্পর্কে কথা উঠিয়ে কোন লাভ হবে না। তাছাড়া ভালবাসার মর্য্যাদা দিতে সে জানে। সতীশকে তার ভালবাসার মেয়েটার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে অর্চনার সাথে বিয়ে দেবার কথা সে আর তাই মনেও আনতে পারছে না। কিন্তু পরিতোষ বা কালচিনির বাড়ির সকলেই যে তার কথা মেনে নেবে, এ ব্যাপারে সে মোটামুটি নিশ্চিত হলেও পরিতোষের তিনকুলে কেউ নেই, এ নিয়েই হয়ত অর্চনার বাবা মার মনে খানিকটা দ্বিধা হতে পারে। তবে সীমন্তিনী সেটুকু কাটিয়ে উঠতে পারবে একটু চেষ্টা করলে। কিন্তু সবার আগে জানা উচিৎ অর্চনার মনের কথা। ও যদি রাজি না হয়, তাহলে আর অন্য কারো সাথে এ ব্যাপারে কথা বলার কোন মানেই হয় না। আর অর্চনা যদি রাজী হয়, তাহলে সবার আগে আলোচনা করতে হবে রচনার সাথে। রচনা পরিতোষকে দেখেছে। পরিতোষের ব্যাপারে অনেক কিছুই সে জানে। এ’দিকে নবনীতা পরিতোষকে যত ভালভাবে চেনে, অর্চনাকেও সে কাছে পেয়েছে। অর্চনার আচার ব্যবহার সহ সব কিছুই সে জানতে বুঝতে পারছে। নবনীতা আর রচনা যদি মত দেয়, তাহলে অন্য সবাইকে রাজী করাতে তার খুব বেশী পরিশ্রম করতে হবে না। তবে সবার আগে কথা বলতে হবে অর্চনার সাথে। আর সীমন্তিনী মনে মনে ভাবল, আজ রাতেই নবনীতা ফিরে আসবার পর সে অর্চনার মতামতটা জানার চেষ্টা করবে।
আবার মহিমার কথাও তার মনে এল। বীথিকার মুখ থেকে যা জানা গেল সেটা যদি সত্যিই হয়, মানে মহিমা যদি তার ওই ব্যবসা সত্যি বন্ধ করতে চায়, তাহলে ধরে নিতে হবে যে আগে যা-ই ঘটে থাকুক না কেন, এখন অন্ততঃ মহিমার ভেতরে শুভবুদ্ধি জেগেছে। আর এই সুযোগেই তার ভেতরে জেগে ওঠা শুভ চাহিদাটাকে আরও উস্কে দিতে হবে। ব্যবসাটা ছেড়ে দেবার কথা ভেবেও সে সিদ্ধান্তটা নিতে পারছে না কেন, সেটা জানা খুব দরকার। প্রয়োজনে সে তাকে কিছু পরামর্শ দিতে পারে। ছোট খাটো সাহায্যও হয়তো সে করতে পারবে। নবনীতা আর বীথিকার কথা সত্যি বলে ধরলে মেনে নিতেই হয় যে মানুষ হিসেবে মহিমা খুবই ভাল। রতীশ আর রচনাও মহিমার সম্পর্কে একই রকম ধারণা পোষন করে। এমন একজন ভালো মনের মানুষকে একটা অসৎ পথ থেকে সৎ পথে নিয়ে আসবার কোন সুযোগ পেলে, সে সুযোগ একেবারেই হাতছাড়া করা যাবে না। আর ওদিকে পরিতোষের সাহায্যও তো সে পাবেই। মহিমার সাথেও আজ কালের মধ্যেই কথা বলাটা খুব দরকার।
*****************
নবনীতা রাত সওয়া আটটা নাগাদ বাড়ি ফিরতেই অর্চনার কথায় সীমন্তিনী নিজেই গিয়ে দরজাটা খুলে দিল। নতুন একটা নাইটি পড়া সীমন্তিনীকে দেখেই নবনীতা বলল, “ওমা, দিদি? এত সুন্দর নাইটিটা কোত্থেকে কিনলে গো? সেদিন তো আমাদের ওখান থেকে এটা কেনো নি”!
সীমন্তিনী দরজা বন্ধ করে হাসতে হাসতে বলল, “এটা তোদের বসাক গারমেন্টসের কালেকশান নয় নীতা। এটা অর্চু’স ডিজাইনস”।
নবনীতা প্রায় চেঁচিয়ে উঠে বলল, “কি? অর্চুস ডিজাইনস? মানে এটা অর্চু বানিয়েছে? সত্যি বলছ তুমি দিদি”? বলতে বলতে নাইটিটাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল।
সীমন্তিনী বলল, “তোর মত আমিও অবাক হয়ে গিয়েছিলুম। আর সারপ্রাইজটা কিভাবে দিয়েছে জানিস? আমার বাথরুমে রেখে দিয়েছিল। আমি যখন অফিস থেকে ফিরে এসে গাড়ি থেকে নেমেছি, অমনি অর্চু লাফিয়ে লাফিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল। তার এত খুশীর কারন কি জানতে চাইলে বলল, আজ সে বিকেলের চা না খেয়ে আমার জন্যে অপেক্ষা করছে। লক্ষ্মীদি বলল অর্চু আমাদের জন্যে লুচি আর আলুর দম বানিয়েছে”।
নবনীতা আরেকবার চমকে উঠে জিজ্ঞেস করল, “অর্চু লুচি আর আলুর দম বানিয়েছে? আমার জন্যে রেখেছো তো”?
সীমন্তিনী নবনীতার হাত ধরে তার ঘরের দিকে যেতে যেতে বলল, “তোর জন্যে রাখবে না এটা কি হতে পারে? কিন্তু পরের কথাগুলো শোন না। আমাকে তাড়াতাড়ি স্নানে যেতে বলে সে রান্নাঘরে ঢুকে গেল। রোজ তো লক্ষ্মীদি আমার সাবান টাওয়েল নাইটি আগে থেকেই বাথরুমে রেখে দেয়। আজও তাই রেখেছে বলে আমি আর কিছু না নিয়ে সোজা বাথরুমে ঢুকে গেলুম। স্নান সেরে গা মুছে হ্যাঙ্গারের দিকে হাত বাড়াতেই দেখি সেখানে এ নাইটিটা। প্রথমে একটু অবাক হলেও সাথে সাথেই বুঝতে পারলুম অর্চুর খুশীর আসল কারনটা কী। সেটা পড়েই বাথরুম থেকে বেরিয়ে সোজা রান্নাঘরে গিয়ে অর্চুর সামনে গিয়ে দাড়িয়েছিলুম”।
নবনীতাও বেশ খুশী হয়ে বলল, “বাঃ সারপ্রাইজটাও তো বেশ ভালই দিয়েছে। কিন্তু দিদি ডিজাইনটা কিন্তু সত্যি দারুণ। একেবারে ফাটাফাটি। কিন্তু অর্চু সত্যি এ’সব জানে”?
সীমন্তিনী নবনীতার বিছানার একপাশে বসে বলল, “শুধু ডিজাইন? কাটিংও নিজে করেছে। আর গোটা নাইটিটা সুচ সুতো দিয়ে নিজে হাতে সেলাই করেছে। ভাবতে পারছিস”?
নবনীতা আরও অবাক হয়ে বলল, “বলছ কি দিদি? অর্চু নিজে কাটিং টেলারিং ডিজাইনিং সব কিছু করেছে”?
সীমন্তিনী খুব উচ্ছ্বসিত ভাবে বলল, “তবে আর তোকে বলছি কি আমি? একেবারে উপর্য্যুপরি একের পর এক সারপ্রাইজ। ওই তো এসে গেছে, দ্যাখ”।
অর্চুকে ট্রে হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকতে দেখে নবনীতা কিছু একটা বলতে যেতেই, “অর্চু তাকে বাঁধা দিয়ে বলল, “আগে চট করে হাতমুখটা ধুয়ে এস তো নীতাদি। নইলে লুচিগুলো ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। খেতে খেতে যা বলার বলো”।
নবনীতা সাথে সাথেই বাথরুম থেকে হাত মুখ ধুয়ে এসে অর্চনার হাত থেকে থালা নিয়ে খেতে শুরু করল। খাবার মুখে দিয়েই সে ‘বাহ বাহ’ করে উঠল। সীমন্তিনী অর্চনার হাত ধরে নিজের পাশে বসিয়ে নবনীতাকে জিজ্ঞেস করল, “কিরে নীতা, কেমন লাগছে আলুর দমটা”?
নবনীতা মুখের মধ্যে গ্রাস পুরে রেখেই জবাব দিল, “উম্মম দারুণ বানিয়েছ অর্চু। মার্ভেলাস”।
সীমন্তিনী অর্চনাকে বলল, “অর্চু সোনা, লক্ষ্মীদিকে একটু গিয়ে বলে আয় আমাদের সকলের চা যেন সে এ ঘরেই নিয়ে আসে। আর তুইও কথাটা বলে এ ঘরে চলে আসিস। কথা আছে”।
লক্ষ্মীকে চায়ের কথা বলে অর্চনা ফিরে আসতেই সীমন্তিনী আবার তাকে নিজের পাশে বসিয়ে বলল, “অর্চু সোনা। তোকে এখন কতগুলো কথা বলব আমি। তুই কিন্তু জবাবে তোর মনের কথা বলবি, ঠিক আছে”?
অর্চনা একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “আমি তোমার কাছে নিজের মনের কথা না বলে মিথ্যে কথা বলব বলে ভাবছো দিদিভাই? এমন দিন যেন আমার জীবনে না আসে। কি বলবে বলো”?
সীমন্তিনী অর্চনার একটা হাত নিজের হাতে নিয়ে খুব মোলায়েম স্বরে জিজ্ঞেস করল, “দ্যাখ অর্চু। আমি তোকে পুরনো সব কথা ভুলে গিয়ে নতুন ভাবে জীবনটা কাটাবার কথা ভাবতে বলেছিলুম। আমি জানি, এখন তুই বাবা মা আর ভাইয়ের সাথে খুব ভাল আছিস। কিন্তু নিজের ভবিষ্যৎ জীবনের কথা কিছু ভেবেছিস কখনও”?
অর্চনা একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “ভবিষ্যৎ জীবনের কথা মানে? আমি তো তোমার কথা ঠিক বুঝতে পাচ্ছিনা গো দিদিভাই”?
সীমন্তিনী আগের মতই নরম সুরে বলল, “কেন রে? এ আবার না বোঝার কি আছে? আমি তো সহজ ভাষাতেই কথাটা জিজ্ঞেস করলুম। এখন বাড়িতে বাবা মা ভাইয়ের সাথে তুই যে খুব ভালো আছিস, সেটা তো আমরা সবাই জানি। কিন্তু এ তো হচ্ছে তোর বর্তমানের কথা। সকলেরই তো ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু কিছু চিন্তা ভাবনা থাকে। নীতা যেমন এতদিন লক্ষ্যভ্রষ্ট ভাবে ঘুরতে ঘুরতে এখন ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করছে। আমার পরামর্শটা মেনে নিয়ে ও ভবিষ্যতে নিজের একটা বুটিক কিংবা গারমেন্টসের কারখানা খুলবে। তোর ভবিষ্যতের কথা তো তোর মুখে কখনও শুনিনি আমি। তাই জিজ্ঞেস করছি, তুই কি কখনও তোর ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু ভাবিস না”?
নবনীতা খেতে খেতেই একবার ঘাড় ঘুড়িয়ে অর্চনা আর সীমন্তিনীর দিকে দেখে আবার খাবারে মন দিল। অর্চনা বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকবার পর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জবাব দিল, “দিদিভাই, ছোটবেলা থেকে আমরা তিন ভাই বোন শুধু দারিদ্রের ছবি দেখতেই অভ্যস্ত ছিলুম। তার বাইরে কোনও কিছু নিয়ে ভাববার বা কোনও স্বপ্ন দেখবার কথা আমি আর রচু কোনদিন ভাবতেও পারতুম না। ভাই তো তখন একেবারেই ছোট ছিল। ওইটুকু রত্তি একটা ছেলের কতটুকুই বা বোধশক্তি থাকতে পারে বলো? তবু ওই বয়সেই ভাইটাও যেন কিভাবে আমাদের দারিদ্রের কথা বুঝতে শিখে গিয়েছিল। আমরা সবাই জানতুম, বাবা মা আমাদের ঘরোয়া শিক্ষা যতই দিন না কেন, আমরা কেউই বেশীদুর লেখাপড়া করতে পারব না। না, এতে বাবার কোন দোষ ছিল না। আমাদের আর্থিক দুরবস্থার জন্যই বাবা সেটা করতে পারেন নি। মাধ্যমিক পাশ করবার পরেই বাবা নিরুপায় হয়ে আমার পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তারপর ঘটকের মিথ্যে কথায় ভুলে আমি সুখে থাকব আর ভাল সরকারি চাকুরে পাত্র পেয়েছে বলে, খুব তাড়াতাড়িই আমার বিয়ে দিয়ে দিলেন। রচুর কপালটা তুলনামূলক ভাবে কিছুটা ভাল নিশ্চয়ই ছিল। তাই তো আমাদের কলেজের প্রিন্সিপালের সাহায্যে সে বারো ক্লাস অব্দি পড়তে পেরেছিল। তারপর তোমার সাথে আমাদের বাড়ির সকলের পরিচয় হল। রচুর মুখে শুনেছি, তুমি ওকে কলেজে ভর্তি করে দিতে চেয়েছিলে। কিন্তু ও শ্বশুর বাড়ির সকলকে বিয়ের আগে থেকেই এমন ভালবেসে ফেলেছিল যে শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে জলপাইগুড়ি গিয়ে পড়তেও রাজি হল না। আসলে দিদিভাই, আমাদের দু’বোনের মধ্যে কেউই বোধহয় সেভাবে স্বপ্ন দেখতে শিখিনি গো। তাই তেমন কোন উচ্চাশাও বুঝি আমাদের দু’বোনের মনে কোনদিন জন্মায় নি। তবে তুমি যেভাবে আমাদের পরিবারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছ, তাতে ভাই এখন ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে শিখেছে। আর বাবাও আগের চেয়ে কত বেশী প্রত্যয়শীল হয়ে উঠেছেন এখন। যে লোকটাকে জন্মের পর থেকে শুধু দুর্ভাবনা ছাড়া আর কিছু করতে দেখিনি, সে লোকটাই এখন যেন কোন এক সঞ্জীবনীর সুধায় উদ্যমী হয়ে উঠছেন, নতুন নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। যে লোকটা সংসারের বোঝা সামলাতে না পেরে প্রায় কুঁজো হয়ে পড়েছিলেন, আজ তিনিই শিরদাঁড়া সোজা করে চলছেন, মন দিয়ে নতুন উদ্যমে ব্যবসা করে যাচ্ছেন। তার শরীর স্বাস্থ্যও আগের চেয়ে অনেক ভাল হয়ে উঠেছে। আর সে সঞ্জীবনী সুধা যে কী, তা আমাদের পরিবারের প্রত্যেকটা সদস্যই চিনতে পেরেছে। ভাই যদিও কিছু খুলে বলেনি এখনও, কিন্তু ও নিজেও যে কিছু একটা উদ্দেশ্যের দিকে স্থির দৃষ্টি রেখে এগিয়ে যাচ্ছে, এটাও বেশ ভালই বুঝতে পেরেছি। আর এটাও হয়েছে ওই সঞ্জীবনীর গুণেই। রচু সেই সঞ্জীবনীর ছোঁয়ায় কোনভাবে আগের চেয়ে বেশী আত্মবিশাসী হয়ে উঠেছে কিনা সেটা আমি ঠিক জানিনা। তবে সে সঞ্জীবনীই যে তার মন প্রাণ হৃদয় জুড়ে আছে, সেটা আমি একদিনেই বুঝে গিয়েছিলুম। সে সঞ্জীবনী তো আমাকেও আচ্ছন্ন করে ফেলেছে পুরোপুরি। কিন্তু আমার শিরদাঁড়াটাই বুঝি ভেঙে গেছে গো দিদিভাই। স্বপ্ন দেখবার, ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাববার দুঃসাহস কিছুতেই যেন করে উঠতে পারছি না আমি। আমি জানিনা আমার ভবিষ্যৎ কী। আমি জানিনা আগামীকাল আমার কী করা উচিৎ। আমি শুধু একটাই কথা জানি এখন। সে শুধু তুমি। তুমি আমাকে নতুন জন্ম দিয়েছ। তাই তুমিই আমার ভগবান, তুমিই আমার সব। অন্য আর কিচ্ছু আমি ভাবতেই পারিনা গো দিদিভাই”।
নবনীতা প্রায় ছুটে গিয়ে নিজের খালি থালাবাটি ডাইনিং টেবিলে রেখে আবার ছুটেই ঘরে এসে ঢুকল। লক্ষ্মীও ট্রেতে করে চার কাপ চা নিয়ে ঘরে এসে ঢুকল। সীমন্তিনী তখন অর্চনাকে বলছিল, “কিন্তু অর্চু, সেটা বললে কি হয় রে বোন। তোর আজ মনে হচ্ছে তুই খুব ভাল আছিস। কিন্তু পৃথিবীর সব কিছু যেমন পরিবর্তনশীল, তেমনি মানুষের জীবনেও সময়ে সময়ে কিছু পরিবর্তন অবধারিত ভাবেই এসে থাকে। চিরটা কাল কি আর একভাবে কাটে? তাই সকলকেই নিজ নিজ ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতেই হয়। আর তোকেও ভাবতে হবে”।
লক্ষ্মী সকলের হাতে চায়ের কাপ দিয়ে নিজের কাপটা হাতে নিয়ে নিচে মেঝেতে বসতে বসতে বলল, “হ্যাঁ গো দিদিমণি, তুমি একদম ঠিক বলেছ গো। এমন সুন্দর ফুটফুটে মিষ্টি একটা মেয়ে, সে সারাটা জীবন এভাবেই কাটিয়ে দেবে, এ তো ভাবাই যায় না। উনি নিজে যে মুখ ফুটে কাউকে কিছু বলতে পারবেন না, এটা তো আমি খুব ভালভাবেই বুঝে গেছি এ ক’টা দিনে। তুমিই কিছু একটা করো দিদিমণি”।
নবনীতাও প্রায় সাথে সাথেই বলে উঠল, “হ্যাঁ দিদি, আমিও কিন্তু লক্ষ্মীদির সাথে একমত। কতটুকুই বা অর্চুর বয়স বল তো? এই কচি বয়স থেকেই সারাটা জীবন উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে কাটিয়ে দেওয়া একেবারেই অসম্ভব। তবে ওর কথাতেই বোঝা যাচ্ছে, ওর ভেতর আত্মবিশ্বাসের খুব অভাব। তবে তার জন্য ওকে তেমন দোষও দেওয়া যায় না। ওকে যেভাবে কষ্ট যাতনা ভোগ করতে হয়েছে, তাতে ওর জায়গায় অন্য কোন মেয়ে হলে তারও হয়ত একই অবস্থা হত”।
তারপর অর্চুর হাতের ওপর নিজের একটা হাত রেখে বলল, “অর্চু, তোমাকে তো আমার জীবনের প্রায় সব কথাই খুলে বলেছি। আমি তো গত সাতটা বছরে রোজ রোজ কষ্ট পেয়ে গেলেও, কোনভাবে কোন রাস্তা খুঁজে না পেলেও, মনের এক কোনায় এ বিশ্বাসটুকু ধরে রাখতে পেরেছিলাম, যে একদিন না একদিন আমি ঠিক ওই ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসতে পারব। আর সে ইচ্ছেটা ছিল বলেই হয়ত আমি সেটা করতে পেরেছিলাম। কিন্তু সব শেষে যখন বেঁচে থাকার আর কোন রাস্তা খুঁজে না পেয়ে ম্যাডামের কাজে ঢুকলাম, তখন বুঝি আমার আত্মবিশ্বাসও টলমলে হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু ভগবানের অশেষ কৃপায় তার মাস খানেক বাদেই দিদি তখন আমার জীবনে এল। আর রূপকথার গল্পের মত, দিদির সোনার কাঠির ছোঁয়ায়, ওই একটা দিনেই আমার জীবনটা আমূল বদলে গেল। আর এখন আমার মনের প্রত্যয়, নিজের আত্মবিশ্বাস তো আরও অনেক বেড়ে গেছে। ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন সুন্দর কিছু স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। আর সে দিকেই লক্ষ রেখে এগিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। মনের মধ্যে একটা আলাদা তাগিদের অস্তিত্ব বুঝতে পারছি। তোমাকেও তো এমনি ভাবে কিছু একটা উদ্দেশ্য খুঁজে নিতে হবে ভাই। নইলে যে জীবনের কোন মানেই থাকে না”।
অর্চনা অসহায়ের মত বলল, “আমি যে সত্যি কিছু ভেবে উঠতে পারিনা গো নীতাদি। বিশ্বাস করো, আমি একটুও মিথ্যে বলছি না। তোমরাই বলে দাও না আমার কী করা উচিৎ”।
সীমন্তিনী এতক্ষণ ইচ্ছে করেই চুপ করে ছিল। এবারেও সে কোন কথা বলল না। কিন্তু লক্ষ্মী বলে উঠল, “সোনাদি, আমি তো মুখ্যুসুখ্যু মানুষ। অত সাজিয়ে গুছিয়ে কথা আমি বলতে পারি না। তবে গ্রামের মেয়ে বলে এটুকু জানি যে কোন চাড়া গাছ যদি নিজের ক্ষমতায় সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে না পারে, তাহলে সেই চাড়া গাছের মালিক একটা বাঁশকাঠি পুঁতে দিয়ে গাছটাকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে সাহায্য করে। গাছটা তখন সেই বাঁশকাঠির ওপর ভর করেই সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তোমার অবস্থাও কিন্তু অমন একটা ছোট চাড়া গাছের মতই। তোমারও অমন একটা সহায়ের দরকার। আর তাই আমি বলছি, তোমাকে আবার ভাল কোন একটা ছেলেকে বিয়ে করা উচিৎ”।
অর্চনা লক্ষ্মীর কথার কোন জবাব না দিয়ে চুপ করে মাথা নিচু করে রইল। তখন সীমন্তিনী নবনীতাকে বলল, “নীতা, তুই এ ব্যাপারে কিছু সাজেশান দিতে পারিস? না না, তোকে সেভাবে কোন দায়িত্ব নিয়ে কিছু করতে বলছি না। কিন্তু এখানে আমরা তিনজনই তো অর্চুকে খুব ভালবাসি। ও ভাল থাকুক, সুখে থাকুক, এটাই তো আমরা সবাই চাই, তাই না? লক্ষ্মীদি কিন্তু একটা ভাল পরামর্শ দিয়েছে বলেই আমি মনে করি। তোর মনেও তো এমন কোন কথা থাকতে পারে। তাই জিজ্ঞেস করছি”।
নবনীতা নিজের চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে বলল, “দিদি, লক্ষ্মীদির কথাটাকে কিন্তু আমিও সাপোর্ট করছি। আমার মনে হয়, অর্চুর ভেতর যখন আত্মবিশ্বাসের এতটাই অভাব আমরা বুঝতে পাচ্ছি, তখন ওকে অন্য কোনভাবে প্রেরণা দিয়েও বুঝি খুব একটা লাভ হবে না। ঘরের বৌ করে তুলতে ছেলের বাড়ির লোকেরা একটা মেয়ের মধ্যে যা কিছু পেতে চায়, তার সবকিছুই ওর মধ্যে আছে। শুধু ওর নামের পাশে একটা বাজে তকমা সেঁটে গেছে। বিধবা। ও যদি রাজি হয়, তাহলে আমরা খুঁজে পেতে এমন কোন ছেলে হয়ত পেতেই পারি, যে ওর গায়ে লেগে থাকা ওই তকমাটাকে একেবারেই গ্রাহ্য করবে না। আর স্বামীর সংসার করবার স্বপ্ন কোন মেয়ে না দেখে বলো তো? আর ও তো পুরোপুরিভাবে একটা ঘরোয়া মেয়ে। ওর বয়সও কম। ওর মনেও এমন একটা ইচ্ছে থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। হয়ত লজ্জায় কাউকে কিছু বলতে পাচ্ছে না। কিংবা একবার ওর জীবনে যে দুর্ভোগ এসেছিল, সে’কথা ভেবেই ও আর নতুন করে ও’রকম কোন স্বপ্ন দেখতে ভয় পাচ্ছে। তবে ও যদি একটু সাহস করতে পারে, তাহলে আমরা তিনজনে মিলে চেষ্টা করে ওর মনের ভয় দুর করে দিতে পারব। তাই আমিও কিন্তু সেটাই চাইছি। তবে সবটাই নির্ভর করছে মেইনলি ওরই ওপর। ওকে আগে মনস্থির করতে হবে। অবশ্য কালচিনির মাসি মেসো ভাই আর বৌদির মতামতেরও দরকার আছে। কারন অর্চু তো তাদেরই পরিবারের সদস্য”।
নবনীতা থামতে আর কেউ কোন কথা বলল না। কয়েক মূহুর্ত অপেক্ষা করে সীমন্তিনী অর্চনাকে একহাতে নিজের শরীরের সাথে চেপে ধরে জিজ্ঞেস করল, “কিরে, তুই আর কিছু বলবি”?
অর্চনা মাথা তুলে সীমন্তিনীর চোখের দিকে একবার দেখে আবার মাথা নিচু করে বলল, “আমি কি বলব দিদিভাই। আমি যে সত্যিই কিছু বুঝিনা গো। লক্ষ্মীদি আর নীতাদি যে’সব কথা বলল, তা তো ঠিকই। মাত্র ষোল বছর বয়সেই বিয়ের ইচ্ছে মনে না এলেও বাবার এবং পরিবারের ইচ্ছেয় বিয়েতে রাজী হয়েছিলুম। তখন মনে মনে একটা স্বপ্নও দেখতে শুরু করেছিলুম। ভেবেছিলুম শ্বশুর বাড়ি গিয়ে স্বামী, শ্বশুর শাশুড়ি আর ছেলেদেরকে খুব ভালবাসব। তাদের প্রিয়জন হয়ে ওঠার চেষ্টা করব। মা আমাদের দু’বোনকে সে শিক্ষাই দিয়েছিলেন। কিন্তু সেভাবে চেষ্টা করবার সুযোগটাই পাই নি। ফুলসজ্জার রাতেই বেহেড মাতাল হয়ে স্বামী হাতে মদের বোতল আর দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে ঘরে ঢুকে আমাকে তাদের গ্লাসে গ্লাসে মদ ঢেলে দিতে আদেশ করেছিল। তার মুখের মদের গন্ধেই আমার গা গুলিয়ে উঠছিল। ছোটবেলা থেকে এমন পরিবেশ কোথাও চোখে দেখিনি। তাই বোধহয় সামান্য ইতস্ততঃ করেছিলুম। আর তাতেই রেগে উঠে সে একটা লাঠি দিয়ে আমাকে পেটাতে শুরু করেছিল। তার সাথে হাত মিলিয়েছিল ছেলেদুটোও......” বলতে বলতেই কেঁদে ফেলল।
সীমন্তিনী অর্চনাকে বুকে চেপে ধরে বলল, “থাক অর্চু, ও’সব কথা আর মনে আনিসনে বোন”।
______________________________
•
Posts: 577
Threads: 3
Likes Received: 797 in 298 posts
Likes Given: 364
Joined: Feb 2019
Reputation:
64
(Update No. 166)
নবনীতা বলল, “দিদি, আমরা যতই ওকে ওই পুরোনো কথাগুলো ভুলে যেতে বলি না কেন, ওর পক্ষে যে সে’গুলো ভুলে যাওয়া একেবারেই সহজ কথা নয়, সেটা আমি নিজেকে দিয়েই বুঝতে পারি গো। মুখে বলে ফেলাটা খুবই সহজ। কিন্তু সত্যি সত্যি ওর পক্ষে কাজটা যে কতটা কঠিন সেটা আমি বুঝি। তবে নিজেকে দিয়েই বুঝেছি যে ওই কথাগুলো নিজের বুকের ভেতর চেপে না রেখে যদি কারো কাছে খুলে বলা যায়, তাহলে বুকের ভার কিছুটা হলেও হাল্কা হয়। তবু পুরোপুরি ভুলে যাওয়া বোধহয় যায় না। তাই তো আমি আমার সব কথা ওকে আর তোমাকে খুলে বলেছি। ওই দিনগুলো ভুলতে না পারলেও তাতে কিন্তু আমি খুব উপকৃত হয়েছি। এখন কথাগুলো মনে পড়লেও, আগের মত কষ্ট আর হয় না আমার। আর ওর্চুর কথাগুলো নিয়েও আমি অনেক ভেবেছি দিদি। কিন্তু হাজার ভেবেও একটা প্রশ্নের জবাব আমি কিছুতেই পাই নি। আচ্ছা দিদি, ওই বাদল আচার্যি আর ত্রিলোচন আচার্যির উদ্দেশ্যটা কী ছিল বলো তো? মেসোরা যে কোন রকম যৌতুক বা বরপণ দিতে পারবেন না, এ’কথা তো আগেই তাদেরকে বলে দিয়েছিলেন। আর বিয়ের পরেও তারা কিন্তু ছেলে পক্ষের দাবিদাওয়া বা যৌতুকের কথা নিয়ে অর্চুর ওপর কোন অত্যাচার করেনি। শ্বশুর বাড়ির কাছ থেকে কিছু নেবার চেষ্টাও করেনি কখনো। কিন্তু অর্চুকে বাপের বাড়ির কারো সাথে দেখা করতে দিত না তারা। আর অর্চু তেমন মেয়েও নয় যে স্বামী বা শ্বশুর বাড়ির অন্য লোকদের কথা মেনে চলবে না। আর ও তো খুবই শান্ত স্বভাবের মেয়ে। কারুর মুখে মুখে কথা বলা বা ঝগড়া করা এসব তো ও করতেই পারে না। বিনাদোষ ওকে শুধু মারধোর করত। এর পেছনে কী যুক্তি থাকতে পারে বলো তো”?
সীমন্তিনী নবনীতার কথার কোন জবাব দেবার আগেই অর্চু নিজেই বলে উঠল, “প্রথম পাঁচ বছর তো আমি নিজেও কিছু বুঝতে পারিনি নীতাদি। বিয়ের পর থেকে তো একটা দিনের জন্যেও আমি ওকে স্বামীর মত করে পাইনি। পাওয়া তো দুরের কথা, সকাল থেকে গভীর রাত অব্দি সে তো বাড়ির বাইরেই কাটাত। একটাও কথা বলার সুযোগ পেতুম না। বাড়ি ফিরত রাত বারোটা একটার পর। প্রথম প্রথম তো সে বাড়ি না ফেরা অব্দি আমি না খেয়ে তার অপেক্ষায় জেগে থাকতুম। কিন্তু সে বাইরেই বন্ধুদের সাথে সময় কাটিয়ে খেয়ে দেয়ে যখন বাড়ি ফিরত, তখন হাতে মদের বোতল নিয়ে এসেই ঘরে ঢুকত। তখন ছেলেরা ঘুমিয়ে না পড়লে তারাও তাদের বাবার সাথে আমার রুমে এসে ঢুকত। যে পাঁচটা বছর লোকটা আমার জীবনে ছিল, আমাকে সে শুধু একটা কথাই বলত। গ্লাসে গ্লাসে মদ ঢেলে দিতে। প্রথম দিকে দ্বিধা করতুম বলেই বোধহয় আমাকে মারতো। আমি অমনটাই ভেবেছিলুম। কিন্তু তারপর মারের হাত থেকে বাঁচতেই তার আদেশ শুনে আর দ্বিধা করতুম না। তার কথা মতই তিনজনের গ্লাস ভরে দিতুম। কিন্তু তাতেও নিস্তার পেতুম না। আমি গ্লাস ভরে দেবার পরেও একই ভাবে মারধোর করত। মুখে কিচ্ছুটি বলত না। মনে হত আমাকে না মারলে তার গলা দিয়ে বোধহয় ওই বিষ গুলো নামবেই না। কিছুই বুঝতে পারতুম না আমি, কোথায় কী ভুল করছি। আমি যদি জানতে চাইতুম যে আমি কী অন্যায় করেছি, কী ভুল করেছি, তার জবাবেও শুধু মারই খেতুম। মনে হত ওই লোকটা বুঝি ওই একটা কথাই শুধু বলতে শিখেছিল। কেন যে আমাকে সে ওভাবে মারত, কেন আমার সাথে আর অন্য কোন কথাই বলত না, এ’সব প্রশ্নের জবাব কোনদিনই পাইনি আমি। কিন্তু সে চলে যাবার পর অত্যাচারের ধরণ আর কারন একটু বদলে গিয়েছিল। অবশ্য সেটাও আমি অনেক পরে বুঝতে পেরেছিলাম” বলে একটু থামল। তার দু’চোখে বেয়ে অশ্রুর ধারা একনাগাড়ে বয়ে যাচ্ছে।
উদ্গত কান্নাকে চেপে রেখে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আবার বলল, “এ’কথাটা এতদিন অন্য কাউকে আর আমি বলিনি, বা বলতে পারো বলতে পারিনি। কোর্টেও বলিনি। রচুকেও বলিনি। কিন্তু আজ প্রথমবার তোমাদের সামনে বলছি দিদিভাই। লোকটা চলে যাবার পর শ্বশুর শাশুড়ি আর ছেলেরা একইভাবে আমার ওপর অত্যাচার করত। ছেলে দুটোও রোজ রাতে মদের বোতল নিয়ে আমার ঘরে আসত। আমিও আগের মতই তাদের গ্লাস ভরে ভরে দিতুম। কিন্তু এভাবে দু’ তিন মাস কাটতেই ছেলেরা অন্যভাবে জ্বালাতন করতে শুরু করেছিল। মদ খেয়ে মাতলামি করতে করতে তারা আমার গায়ে হাত দিতে শুরু করেছিল। ওদের মতিগতি সুবিধের নয় দেখেই সন্ধ্যের পর থেকেই আমি ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে রাখতুম। কিন্তু এভাবে রাতের উৎপাত বন্ধ করতে পারলেও দিনের বেলা যখনই ঘর থেকে বেরতুম তখনই আবার তাদের খপ্পরে পড়তুম। নিজের সতীত্ব বাঁচাতে তাই আমি দিনের বেলাতেও ঘর থেকে বেরনো বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছিলুম। মনে মনে ভেবেছিলুম, যা-ই হোক না কেন, ওই লম্পট ছেলেগুলোর কাছে কিছুতেই নিজের সতীত্ব বিসর্জন করব না আমি। তখন থেকেই বলতে গেলে না খেয়ে থাকতে হত আমাকে। শুধু বাথরুমে যাবার প্রয়োজন হলেই ঘর থেকে বেরোতাম। তাও বেরোতাম শুধু তখনই যখন বুঝতে পারতুম যে ছেলেরা বাড়ির বাইরে আছে। কিন্তু যখনই বেরোতাম তখনই শ্বশুর শাশুড়ির গালিগালাজ সহ্য করতে হত। তারাও মাঝে মাঝে মারধোর করত। মা বাবা ভাইদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব ছিল না। বাবা যে অনেকবার ও বাড়ি গিয়ে আমার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলেন, এ’কথা তো কালচিনি হাসপাতালের বেডে শুয়ে জানতে পেরেছি আমি। কিন্তু তখন আমি ভেবেছিলুম, এভাবে না খেয়ে না খেয়েই যেন আমি মরে যাই। কিন্তু সেটুকুও করতে পারিনি। না খেয়ে না খেয়ে শরীর যখন দুর্বল হতে শুরু করেছিল আমার, তখন বাথরুমে যাবার সময় বা ফিরে আসবার সময় শ্বশুড় শাশুড়ি দু’জনে মিলে জোর করে আমার মুখে মাঝে মাঝে খাবার ঠুসে দিত। আমাকে তারা না খেয়ে মরতেও দিতে চাইত না। তখন বুঝতে পারিনি। কিন্তু পরে একদিন যখন কালচিনি থানার ওসির কথায় শ্বশুর আমাকে থানায় নিয়ে গিয়েছিল, সেদিন থানার ওসির মুখে শুনেছিলাম যে আমার স্বামীর প্রভিডেন্ট ফান্ড আর পেনশনের টাকাগুলো সরকারি অফিস থেকে আমাকেই দেওয়া হবে। আর শ্বশুর নিজেরাই সে টাকাগুলো আত্মস্যাৎ করবার প্ল্যান করছে। তখন বুঝতে পেরেছিলুম যে আমি মরে গেলে তারা সে টাকাগুলো পাবে না। তাই আমাকে বাঁচিয়ে রাখাটা তাদের কাছে খুব জরুরী ছিল। সেদিন থানা থেকে বাড়ি ফিরে আসবার পর থেকে আমাকে আর তারা তেমন মারধোর করতেন না। কিন্তু মৌখিক গালিগালাজ একই রকম চলত। সরকারি অফিস থেকে সে টাকা আদৌ এসেছিল কি না, বা আমার শ্বশুর শাশুড়িই সে টাকা নিয়েছে কিনা, তা আমি আজও জানিনা। তবে তাদের অত্যাচার সইতে না পেরে আমি বেশ কিছু কাগজে আমার সই দিতে বাধ্য হয়েছিলুম। হয়ত তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়েছিল। আর খুব সম্ভবতঃ যেদিন তারা টাকাগুলো হাতে পেয়েছিল, সেদিন থেকেই তারা আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। খাবার দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। একটু জলও দিত না। শরীর আমার আগে থেকেই দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। চার পাঁচ দিন একেবারে নির্জলা থাকবার পর আমি বোধহয় সেদিন আমার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলুম। তারপর তারা কখন আমার ঘরে ঢুকেছিল, সেটা টেরই পাইনি। দুর্বল শরীরে প্রচণ্ড আঘাত পেয়েই একটু সময়ের জন্য আমার জ্ঞান ফিরেছিল। তখন দেখেছিলুম দুই ছেলে আর শ্বশুর শাশুড়ি মিলে আমাকে বেধরক মেরে যাচ্ছে। চিৎকার করবার চেষ্টা করেছিলুম। গলা দিয়ে খুব দুর্বল একটু গোঙ্গানীই শুধু বেরিয়েছিল। কিছু বলার আগেই আমি আবার অচেতন হয়ে পড়েছিলুম। তারপর আমার অচেতন দেহটাকে নিয়ে তারা কি করেছে জানিনা। এরপর যখন আমার জ্ঞান ফিরল, তখন আমি কালচিনি হাসপাতালে। ভাইকে আমার পাশে দেখেছিলুম। বাকি কথাটুকু পরে ডাক্তার সোম, মা-বাবা, ভাই আর থানার ওসির কাছ থেকে জানতে পেরেছিলুম” বলে থেমে গেল।
সীমন্তিনী তো আগে থেকেই অর্চনাকে জড়িয়ে ধরে বসেছিল। তার চোখও জলে ভিজে গেছে। লক্ষ্মীও কাঁদছিল। অর্চনা থামতেই লক্ষ্মী বলে উঠল, “ইশ এমন অমানুষও কেউ হতে পারে। কিভাবে এইটুকু একটা নির্দোষ মেয়েকে দিনের পর দিন এভাবে অত্যাচার করে গেছে। তুমি কেঁদো না সোনাদি। ভগবান আছেন তো। ওরা মরার পরে নরকেও বোধহয় জায়গা পাবে না” বলতে বলতে অর্চনার চোখের জল মুছিয়ে দিতে দিতে বলল, “আর কেঁদো না। দেরীতে হলেও ভগবান তোমার দিকে তার কৃপা দৃষ্টি তুলে তাকিয়েছেন। তাই তো তুমি এখন আমাদের সাথে আছ। ভগবানের আশীর্বাদে তোমার শরীর এখন সুস্থ হয়ে গেছে। এবার মনটাকে একটু শক্ত করো। তাহলেই তুমি ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবতে পারবে”।
এবার সীমন্তিনী বলল, “জানিস নীতা, পুলিশ অফিসার হিসেবে ক্রিমিনাল সাইকোলোজি নিয়ে আমাদের অনেক পড়াশোনা করতে হয়। কিন্তু এ ব্যাপারে আমি যতটুকু জানি তাতে বাদলকে আমি কোন ক্যাটাগরিতেই ফেলতে পারছিনা রে। এমন অদ্ভুত ধরনের মানসিকতার কথা আমি কোন বইয়ে পাইনি। আমার মনে হয় ও একটা মানসিক রোগী ছিল। মানসিক রোগী না হলে এমন অদ্ভুত যুক্তিহীন ব্যবহার সে করতে পারত না। কিন্তু অর্চু সোনা, দেখ যা হবার সেটা তো হয়ে গেছেই। এইটুকু জীবনে অনেক কষ্ট তুই পেয়েছিস বোন। কিন্তু ও’সব কথা নিয়েই সারাটা জীবন তো এভাবে বসে বসে কাটিয়ে দেওয়া যাবে না। তোর মনে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে। তোকে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হবে। আমরা তো সবাই তোর পাশে আছিই। যতরকম ভাবে সম্ভব আমরা সবাই তোর পাশে থাকব। তোর সামনে সারাটা জীবনই পড়ে আছে। সুখ, সাধ, আহ্লাদের কথা না হয় ছেড়েই দিলুম। ভাল ভাবে বেঁচে থাকবার মত একটা সিকিউরিটির তো খুবই প্রয়োজন। নিজে আরও পড়াশোনা করে একটা চাকরি বাকরি করতে পারলে তুই নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারতিস। তুই যদি চাস, তাহলে আমি সে ব্যবস্থাও করব। কিন্তু তোর ওপর আমি জোর করে কিছু চাপিয়ে দিতে চাই না বোন। তুই নিজেই কয়েকটা দিন ভাল করে ভেবে দেখ। তারপর তোর সিদ্ধান্তটা আমাকে জানাস। আমি তোর ইচ্ছে মতই কাজ করব। তুই যদি আবার কাউকে বিয়ে করতে চাস, তাহলে সেটাই খুলে বলিস আমাকে। আমি নিজে দায়িত্ব নিয়ে তোর বিয়ে দেব, এ’টুকু কথা আমি তোকে দিতে পারি”।
অর্চনা সীমন্তিনীর কোলে মুখ গুঁজে বলল, “পারব না গো দিদিভাই। আমি কিচ্ছুটি ভাবতে পারব না। ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাববার কোন ক্ষমতাই নেই আমার। মৃত্যুর মুখে থেকে বেঁচে ফিরে তোমাকে, মা বাবাকে ভাইকে কাছে পেয়েই আমি খুশী। আমি আর কিচ্ছু জানিনে গো। কিচ্ছু জানিনে”।
নবনীতা অর্চুর গায়ে হাত বোলাতে বোলাতে বলল, “দিদি, আমার মনে হচ্ছে এ’সব ব্যাপারে ভাববার মত ইচ্ছেটাই ওর ভেতরে নেই। ও ভেতরে ভেতরে পুরোপুরি ভেঙে গেছে। আমার মনে হয়, কালচিনির মাসি মেসোর সাথেই এ নিয়ে আলোচনা করা উচিৎ”।
সীমন্তিনী বলল, “হ্যাঁ, নতুন করে বিয়ে সাদির কথা ভাবতে গেলে তাদের সম্মতি তো নিতান্তই দরকার। অর্চুকে আমরা যতই ভালবাসি না কেন, ও তো তাদেরই মেয়ে। তাই তাদের মেয়ের ভবিষ্যতের ব্যাপারে শেষ সিদ্ধান্ত তো তাদেরকেই নিতে হবে। কিন্তু তাদের সাথে কথা বলার আগে, অর্চুর মনের কথাটা তো জেনে নেওয়া উচিৎ আমাদের, তাই না”?
অর্চু হঠাৎ করেই সীমন্তিনীর কোল থেকে মাথা উঠিয়ে বলল, “এ তুমি কি বললে দিদিভাই? তুমি আমার কেউ নও? আমার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত শুধু মা বাবাই নিতে পারেন? তুমি পারো না? এমন কথা তুমি বলতে পারলে দিদিভাই? কালচিনির হাসপাতালে আমি যে নতুন জীবন ফিরে পেয়েছিলুম, সেটা কার জন্যে? যে মায়ের পেটে আমি জন্মেছি, যে বাবার হাত ধরে চলতে শিখেছি, সেই অসহায় লোকগুলো তো আমি বেঁচে আছি না মরে গেছি, এ খরটুকুও নিতে পারেননি আগের সাতটা বছর ধরে। তুমি আমার খোঁজ পেয়েছিলে বলেই না থানার ওসিকে আমার ওপর নজর রাখতে বলেছিলে। আর তুমি তাকে অমন অনুরোধ করেছিলে বলেই না উনি আমার ব্যাপারে সজাগ ছিলেন। এ’সব কথা তুমি নিজে মুখে আমাকে না বললেও, থানার ওসি নিজেই আমাকে সে’সব কথা বলেছিলেন। আর সেই মূহুর্তেই আমি বুঝতে পেরেছিলুম, যে তোমার জন্যেই আমি মরতে মরতে বেঁচে ফিরে এসেছি। তাই হাসপাতালে ভাই আর রচু যখন তোমাকে চিনিয়ে দিয়েছিল তখন তোমাকে আমি প্রণাম করতে চেয়েছিলুম। খুব ইচ্ছে করছিল, যার দয়াতে আমি সেদিন নতুন জীবন ফিরে পেয়েছিলুম, তার পায়ে হাত দিয়ে একবার প্রণাম করতে। কিন্তু সেদিনও প্রণাম করতে না দিয়ে তুমি আমাকে তোমার বুকে টেনে নিয়েছিলে। আর সেদিন থেকেই আমি মনে মনে নিজেকে তোমার পায়ে সমর্পন করেছি। সেদিনই মনে মনে শপথ করেছি, তোমার উপদেশ ছাড়া কক্ষনো কিচ্ছু করব না। মা বাবা কোন কাজে সম্মতি দিলেও, তুমি যদি তাতে অসম্মত থাকো, তাহলে সে কাজ আমি একেবারেই করব না। তুমি যদি আমার ব্যাপারে কোন ভুল পরামর্শও দাও, আর সে পরামর্শ মত চলে আমি যদি মরেও যাই, তাতেও আমার কোন দুঃখ থাকবে না। তোমার দেখানো পথে যদি আমার মৃত্যুও আমার সামনে এসে দাঁড়ায়, আমি হাসিমুখে তাকে স্বীকার করে ......”
সীমন্তিনী অর্চনার মুখে হাত চেপে ধরে বলল, “ছিঃ বোন, অমন অলক্ষুনে কথা বলতে নেই। আর কক্ষনো এমন কথা মুখে আনবি না। আর কি বললি? আমি তোকে দয়া করেছি? না রে বোন। আমি তোকে কোন দয়া করিনি রে। আমি যে তোকে তার অনেক আগে থেকেই নিজের আরেকটা বোন বলে ভাবতুম রে। মাসি মেসো ভাই আর রচুর কষ্টের কথা ভেবেই আমি তোকে ওই আচার্যি বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে আসতে চেয়েছিলুম অনেক আগে থেকেই। আমি যদি কালচিনি থানায় থাকতুম তাহলে ওই ঘটণাটা ঘটতেই দিতুম না। তার আগেই তোকে যে ভাবেই হোক, আমি মাসি মেসোর হাতে তুলে দিতুম। তাই এ’কথা ভুলেও কখনো মনে আনবি না যে আমি তোকে দয়া করেছি। দয়া তো আমাকে করেছে রচু। আর আমাকে তাদের আরেকটা মেয়ে বলে স্বীকার করে নিয়ে মাসি মেসো আমাকে দয়া করেছেন। তাদের দয়ার ঋণ যে আমি সারা জীবনেও শোধ করতে পারব না রে। তোরা কেউ হয়ত কথাটা মানতে চাইবি না। কিন্তু আমার অন্তরাত্মা জানে আমি তোদের সকলের কাছে কতখানি ঋণী” বলতে বলতে সীমন্তিনীও কেঁদে ফেলল। আর অর্চনাও “দিদিভাই” বলে সীমন্তিনীকে আবার জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। ওদিকে লক্ষ্মীও নিজের আঁচলের খুঁট দিয়ে নিজের চোখ মুছে যাচ্ছিল। নবনীতার চোখেও জল।
নিজের চোখের জল মুছে পরিবেশ হালকা করতে নবনীতা বলে উঠল, “আচ্ছা তোমরা সবাই মিলে এভাবে কান্নাকাটি করলে আসল কাজটা কী করে হবে শুনি? আলোচনা করছিলুম অর্চুর ভবিষ্যৎ নিয়ে। আর তোমরা দু’জনেই একের পর এক অতীতের কথা তুলে ইমোশনাল কথাবার্তা বলে একে অপরকে শুধু কাঁদিয়েই যাচ্ছ। তার সাথে সাথে লক্ষ্মীদি আর আমাকেও কাঁদিয়ে ফেলছ। এটা কি কোনও কাজের কথা হল? লক্ষ্মীদি তুমি ওঠো তো। রান্নাঘরে গিয়ে রাতের খাবার কী বানাবে, বানাও গিয়ে। আর অর্চু, ছাড়ো তো দিদিকে। এদিকে আমার কাছে সরে এসে বোসো। বোন দিদিভাইয়ের প্রেম ভালবাসার প্রমাণ আর নতুন করে দিতে হবে না কাউকে। আমি তো কারো বোনও নই, দিদিভাইও নই। তাই এবার তুমি আমাকে বলো তো, আমরা যদি তোমার জন্যে একটা ভাল সচ্চরিত্র ছেলে খুঁজে পাই, তাহলে কি তুমি বিয়েতে রাজী হবে? না, আর কোন ইমোশনাল কথা চলবে না কিন্তু এখন। শুধু পরিস্কার ভাবে তোমার মনের কথাটুকুই শুধু বলো”।
লক্ষ্মী খালি চায়ের কাপ গুলো ট্রেতে উঠিয়ে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। অর্চনা সীমন্তিনীকে ছেড়ে সোজা হয়ে বসে বলল, “আমার মনের কথা একটাই নীতাদি। শুধুই দিদিভাইয়ের নির্দেশ মেনে চলা”।
নবনীতা এবার একটু দুষ্টুমি করে বলল, “তাই বুঝি? আচ্ছা বেশ। কিন্তু দিদি, তাহলে তো তোমার কাজটা খুব সহজ হয়ে গেল গো। ওই আমাদের বসাক গারমেন্টসের একটু ওদিকেই যে অন্ধ লোকটা বসে বসে রোজ ভিক্ষে করে, তার সাথেই তুমি অর্চুর বিয়ে পাকা করে দাও। লোকটা ভাল গান করে। গান করেই রোজ তিন চারশ’ টাকা কামায়”।
সীমন্তিনী নবনীতার কথা শুনে হেসে ফেলল। আর অর্চনাও ফিক করে হেসে বলল, “হ্যাঁ, দিদিভাই বললে, আমি তাকেই খুশী মনে বিয়ে করব”।
সীমন্তিনী তখন বলল, “কেন রে নীতা, আমার বোনটা কি এতই ফ্যালনা, যে ওর কপালে ওই ভিখিরিটা ছাড়া আর কেউ জুটবে না? ওর মত গুণী, রূপসী মেয়ে তুই আরেকটা খুঁজে বের কর তো দেখি। ওর জন্যে তো আমি সাত সমুদ্র পার থেকে এক রাজকুমারও খুঁজে আনতে পারব রে। শুধু ও রাজী হলেই হল”।
নবনীতা বলল, “আবার রাজী হতে বলছ ওকে? এইমাত্রই তো নিজে মুখেই সে’কথা স্বীকার করল”!
সীমন্তিনী এবার অর্চনার চিবুক ধরে তার মুখটাকে একটু তুলে ধরে তার চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করল, “কিরে? সত্যি বলছিস? আমি কাউকে খুঁজে আনলে, তুই সত্যি তাকে বিয়ে করবি”?
অর্চনা খানিকটা লজ্জায় সীমন্তিনীর কোলে মুখ গুঁজে বলল, “আমার মত একটা বিধবাকে বিয়ে করতে কে রাজি হবে দিদিভাই”।
নবনীতা অর্চনার মুখের ওপর ঝুঁকে বলল, “উহু, ওসব কথায় কাজ চলবে না। দিদি কাকে খুঁজে আনবে না আনবে সে নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না। তুমি শুধু পরিস্কার ভাষায় তোমার ‘হ্যাঁ’ কিংবা ‘না’ টাই জানিয়ে দাও। অবশ্য তোমার যদি ব্যক্তিগত ভাবে কোন পছন্দ অপছন্দ থেকে থাকে, তাহলে সে’সবও খুলে বলতে পারো”।
অর্চনা এক মূহুর্ত চুপ করে থেকে বলল, “কোন পছন্দ অপছন্দ নেই আমার। কোন শর্তও নেই। বিয়ে করব কি না, হবে কি না, তাও জানিনে। তবে আমি দিদিভাইয়ের কথাই মেনে নেব। দিদিভাই যা চাইবে আমি তা-ই মেনে নেব। তবে একটাই কথা শুধু বলার আছে। দিদিভাইয়ের কথায় মা বাবা ভাই আর রচুও যদি রাজি হয় তাহলে আমি আরও খুশী হব। কিন্তু খুব ভয় করছে গো নীতাদি। একবার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, সেটা ভেবেই নতুন করে স্বপ্ন দেখতে ......”।
নবনীতা মাঝ পথেই তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “ব্যস ব্যস হয়ে গেছে। তোমাকে আর কিছু বলতে হবে না। তবে মনের ওই ভয়টাকে একেবারে আমল দিও না অর্চু। তোমার দিদিভাই তোমার জন্যে অকাল কুষ্মাণ্ড কাউকে খুঁজে আনবে না। সে খুব ভেবেচিন্তে, খুব ভাল ভাবে পরীক্ষা করে তবেই কোন একটা সিদ্ধান্ত নেবে। আর আমি জানি দিদির সিদ্ধান্তে কোন ভুল হবেই না। দিদি, নাও, অর্চুর মনের কথা আমি খুঁচিয়ে বের করলুম। এবার তোমার কাজ তুমি করো”।
সীমন্তিনী অর্চনার কপালে একটা চুমু দিয়ে জিজ্ঞেস করল, “ঠিক বলছিস”?
অর্চনা সীমন্তিনীর কোলে মুখ গুঁজে সম্মতি জানিয়ে মাথা নাড়লো। সীমন্তিনী তখন বলল, “বেশ, আমি তাহলে মাসি, মেসো আর রচুর সাথে আগে কথা বলব। তারপর কোমড় বেধে নামবো। তবে নীতা, এ ব্যাপারে কিন্তু তোর সাহায্যেরও দরকার হতে পারে”।
নবনীতাও অর্চুর চিবুক ধরে নাড়িয়ে দিয়ে জবাব দিল, “সে আর বলতে দিদি? আমি তোমাকে পুরোপুরি সাহায্য করব। জান প্রাণ লড়িয়ে দেব আমাদের অর্চু সোনার জন্যে”।
*****************
(To be cont'd ......)
______________________________
•
Posts: 577
Threads: 3
Likes Received: 797 in 298 posts
Likes Given: 364
Joined: Feb 2019
Reputation:
64
(Update No. 167)
রাত সাড়ে ন’টা বেজে গিয়েছিল। নবনীতা সীমন্তিনীকে জিজ্ঞেস করল, “ও দিদি, আমার যে আর তর সইছে না গো। এবার তাহলে মাসি মেসোর সাথে কথা বলো। নাকি বৌদিকেই আগে ফোন করবে”?
সীমন্তিনী একটু একটু ভাবতে ভাবতে বলল, “আমি যে কোনটা ছেড়ে কোনটা করি, সেটাই তো ভেবে পাচ্ছিনা রে নীতা। একদিকে দাদাভাই আর রচুকে নিয়ে ভাবছি, একদিকে বাড়ি তৈরীর কথা ভাবছি, একদিকে পরিতোষের কাজ নিয়ে ভাবছি, একদিকে ভাইয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবছি, একদিকে বীথিকার কথা, একদিকে মহিমা বৌদিকে নিয়ে ভাবছি। এখন আবার অর্চুর ব্যাপারটা নিয়েও ভাবতে হবেই। তবে ভাইয়ের ভবিষ্যৎ পড়াশোনার ব্যাপারে মাস দুয়েক বাদে ভাবলেও চলবে। আর অর্চুর ব্যাপারেও তড়িঘড়ি করে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। অনেক ভেবে চিন্তে আমাদের এগোতে হবে। তাই এ দুটো ব্যাপার নিয়ে এখনই কিছু করতে চাইছি না আমি। এখন সবচেয়ে আগে আমাকে দাদাভাই আর রচুকে বিপদমুক্ত করা দরকার। আর এর সাথেই জড়িয়ে রয়েছে পরিতোষের কাজ। আর মহিমা বৌদির ব্যাপারেও আমাকে এখনই কিছু একটা ভাবতে হবে। দিন দুয়েকের ভেতরেই একটা প্ল্যান আমাকে বানিয়ে ফেলতে হবে। আর বাড়ি তৈরীর ব্যাপারটাও আমাকে একই সাথে প্ল্যান করে ফেলতে হবে। অবশ্য ফাইনাল না হলেও একটা আনুমানিক আন্দাজ মিঃ অধিকারী আমাকে দিয়েছেন। সেই মতে টাকার আয়োজনটা করতে পারলেই হয়ে যাবে। বাড়ির কনস্ট্রাকশনের কাজ তো পূজোর আগে আর করছি না। তাই ওটা নিয়ে এখন আর কিছু না ভাবলেও চলবে। আমাকে এখন সবচেয়ে আগে যে কাজটা করতে হবে, সেটা হল মহিমা বৌদির ব্যাপারটা। তাই আজকালের মধ্যেই তার সাথে একবার দেখা করতে পারলে খুব ভাল হত। কিন্তু সেটা করতে হলে তো আমাকে আবার কলকাতা যেতে হবে। সেটাও তো এ মূহুর্তেই সম্ভব হচ্ছে না। আর তার আগেও আমাকে মহিমা বৌদির ওই ব্যবসার ব্যাপারে আরও অনেক কথা জেনে নেওয়া দরকার। কিন্তু আমার সাথে তার পরিচয় তো সবে হল। ওই সমস্ত গোপন ব্যাপার সে কি আমার কাছে এত তাড়াতাড়ি খুলে বলতে চাইবে? ওদিকে পরিতোষও হয়ত তোর ম্যাডামের কাছে যেতে পারে কিছু ইনফর্মেশন নিতে। তাই বিমল আগরওয়ালার অপারেশন শেষ হবার আগেই মহিমা বৌদিকে নিয়ে আমার ফাইনাল প্ল্যানটা চক আউট করে ফেলা খুবই দরকার। আর সেটাই আমাকে এখন সবচেয়ে আগে করে ......”
মোবাইল বেজে উঠতেই সীমন্তিনীর কথা থেমে গেল। অর্চনা সীমন্তিনীর মোবাইলটা তার দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বলল, “রচু ফোন করেছে, নাও দিদিভাই”।
কিন্তু সীমন্তিনী ফোনটা না নিয়ে বিছানা থেকে নেমে বলল, “তুই কথা বলতে থাক অর্চু। আমি বাথরুমে না গিয়ে আর থাকতে পারছিনা। ওকে বলিস আমি ফিরে এসে কথা বলছি। তোরা দু’জন ততক্ষণ কথা বলতে থাক” বলতে বলতে বাথরুমের দিকে এগিয়ে গেল।
টয়লেটের কাজ সেরে বেসিনের সামনে এসে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ কিছু একটা নিয়ে ভাবল। প্রায় মিনিট সাতেক বাদে হাতমুখ ধুয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এল। তখন নীতা ফোনে রচুকে বলছে, “সে’কথাটা আমি বা অর্চু জানলেও তোমাকে এখনই সেটা বলব না বৌদি। আচ্ছা তুমিই বলো তো? এমন একটা সুখবর তুমি আমাদের মুখ থেকে শুনতে চাও? না তোমাদের দিদিভাইয়ের মুখ থেকে শুনতে চাও”?
ফোনের স্পীকার অন থাকাতে রচনার জবাবও শুনতে পেল সীমন্তিনী বিছানায় এসে বসতে বসতে। রচনা নবনীতার প্রশ্নের জবাবে বলছে, “কিন্তু তোমরাই তো বলছ যে দিদিভাই বাথরুমে আছেন। কতক্ষণ হয়ে গেল, উনি বেরোচ্ছেন না কেন গো? এই দিদি, তুই বাইরে থেকে দিদিভাইকে বল না যে আমি ফোন করেছি। এ’কথা শুনলেই উনি বেরিয়ে আসবেন দেখিস”।
সীমন্তিনীকে দেখে নবনীতা দুষ্টু দুষ্টু হাসি দিয়ে ফোনটা তার দিকে বাড়িয়ে দিল। সীমন্তিনী ফোনটা হাতে ধরে রেখেই জবাব দিল, “ডাকতে হবেনা রে রচু সোনা। আমি এসে গেছি। বল কি বলছিলিস? তার আগে বল তোরা দুটিতে কেমন আছিস”?
রচনা জবাব দিল, “আমরা সবাই ভাল আছি দিদিভাই। কিন্তু নীতাদি কী বলছিল বলো তো? কিসের সুখবর আছে আমার জন্যে”?
সীমন্তিনী বলল, “ও এই বদমাশদুটো তোকে বুঝি সব বলে দিয়েছে”?
রচনা বলল, “না দিদিভাই, তেমন কিছুই বলেনি। শুধু বলল তোমার কাছ থেকে আমি নাকি আজ একটা সুখবর পাবো। আর বলল যে তারা সেটা জানলেও তুমি আমাকে সেটা না বলা পর্যন্ত তারা আমাকে কিছু বলবেন না”।
সীমন্তিনী একটু হেসে বলল, “তুই কি চাস বল তো? তুই সত্যি আমার মুখ থেকে না শুনে সেটা নীতা বা অর্চুর কাছ থেকে শুনতে চাস”?
রচনা অধৈর্য হয়ে বলল, “আমি তো তোমার মুখ থেকেই সেটা শুনতে চাই। কিন্তু তুমি তো আধঘন্টা ধরে বাথরুমে গিয়েই বসে আছ”।
সীমন্তিনী হেসে বলল, “তুই যদি এই মূহুর্তে আমার হাতের কাছ থাকতিস, তাহলে তোকে মজা দেখাতুম। দুষ্টু মেয়ে। সাত মিনিটও লাগেনি আমার বাথরুম সেরে বেরোতে, আর তুই বলছিস আধঘন্টা ধরে ঢুকে বসে আছি”?
রচনা নিজের ভুল স্বীকার করে বলল, “আচ্ছা আচ্ছা, ঘাট হয়েছে আমার। এবার আসল কথাটা বলো তো”?
সীমন্তিনী বললো, “হ্যাঁ বলছি, কিন্তু দাদাভাইকেও তোর সাথে থাকতে বল। তুই কেঁদে ফেললে সে যেন তোকে সামলাতে পারে”।
রচনা বলল, “উঃ দিদিভাই, সুখবর শুনে কি কেউ কাঁদে? আমি কাঁদব না। আর তোমার দাদাভাইও আমার সাথেই বসে আছেন। আর আমাদের সব কথা শুনছেনও। এবার দয়া করে বলবে? সুখবরটা কী”?
সীমন্তিনী এবার বলল, “অন্য কেউ সুখবর শুনে হাসলেও তোর মত ছিঁচকাঁদুনে মেয়ে সবসময়ই সুখবর শুনে কাঁদে। আর এর প্রমাণ আমি আগেও বহুবার পেয়েছি। মনে করিয়ে দেব সে’সব কথাগুলো”?
রচনা এবার ধৈর্যের শেষ সীমায় পৌঁছে বলল, “ওহ, দিদিভাই, আমি সত্যি কিন্তু আর নিতে পারছিনে গো। থাক, তোমায় আর কিছু বলতে হবে না। তুমি বরং তোমার দাদাভাইয়ের সাথেই কথা বলো”।
সীমন্তিনী এবার জোরে হেসে বলল, “এতো রাগ করছিস কেন রচু সোনা। তোর আমার মধ্যে সম্পর্ক কি শুধু একটাই? আচ্ছা শোন, আমি আর নীতা আজ সন্ধ্যের সময় ঠিক করেছি যে আমরা আবার অর্চুর বিয়ে দেব”।
ওদিক থেকে বেশ কিছুক্ষণ কোন সাড়া পাওয়া গেল না। অর্চনা লজ্জায় নবনীতার পেছনে মুখ লুকালো। সীমন্তিনীও ইচ্ছে করেই চুপ করে থেকে নবনীতা আর অর্চনাকে দেখতে লাগল। অনেকক্ষণ পরে রচনা প্রায় ভেঙে যাওয়া গলায় জিজ্ঞেস করল, “কি বলছ তুমি দিদিভাই? তোমরা দিদির আবার বিয়ে দিতে চাইছ”?
সীমন্তিনী এবার বলল, “হ্যাঁ, আমি নীতা লক্ষ্মীদি সবাই এটাই চাইছি। তুই চাইছিস না”?
রচনা এবার খুব ভারী গলায় বলল, “কিন্তু দিদিভাই, এ কি সত্যি সম্ভব হবে? না, তুমি আমার সাথে মজা করছ? দিদি যে বিধবা গো”।
সীমন্তিনী এবার ধমকের সুরে বলল, “আজেবাজে কথা বলিসনে তো রচু। আমি একদম মজা করছিনা তোর সাথে। আর কী বলছিস তুই? বিধবা? অর্চু বিধবা? কিসের বিধবা রে? ওটা কি একটা বিয়ে ছিল? তুই জানিস? অর্চু শারীরিক ভাবে এখনও একটা কূমারী মেয়ে। ওই বাদল আচার্যি কি ওর স্বামী ছিল কখনও”?
রচনা এবার প্রায় কেঁদে ফেলে বলল, “জানি গো দিদিভাই। কালচিনি হাসপাতালেই দিদি আমাকে ওর ওই সাতটা বছরের প্রায় সব কথাই খুলে বলেছিল। আর দিদির ভবিষ্যৎ নিয়ে যে আমি কিছু ভাবিনি তাও নয়। কিন্তু দিদিভাই, সমাজ সংসারের চোখে তো ও বিধবাই। ', ঘরের বিধবাদের কি চট করে বিয়ে হয়? অন্ততঃ কোন ', ছেলে তো বিধবা মেয়েকে বিয়ে করতে চাইবেই না”?
সীমন্তিনী আবার মুখ ঝামটা দিয়ে বলে উঠল, “চুপ কর তো তুই। তুই কি দুনিয়ার সমস্ত লোকের মনের খবর জেনে বসে আছিস নাকি? ', হোক, অ', হোক, কোন একটা ভাল ছেলের সাথেই আমি অর্চুর বিয়ে দেব। এ আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। আর শোন রচু, তোকে একটা কাজ করতে হবে। আমি অনেক ক’টা কাজ নিয়ে একসাথে হিমশিম খাচ্ছি। কোনটা ছেড়ে কোনটা আগে করবো, সেটা ঠিক করতে পারছি না। তাই আমি চাই, তুই আগে দাদাভাইয়ের সাথে এ ব্যাপারে পরামর্শ কর। তারপর মাসি মেসোর সাথে কথা বল। মাসি মেসোকে যে করেই হোক রাজি করাতে হবে। অর্চুকে সারাটা জীবন আমি এভাবে কিছুতেই কাটাতে দেব না। আমার হাতের জরুরী কয়েকটা কাজ শেষ করে তারপর আমি এ ব্যাপারটা নিয়ে ফাইনালি কিছু একটা করবো। এই ধর আর দিন সাতেক পর আমি এদিকে মন দিতে পারব। কিন্তু আমি চাই এই সপ্তাহ খানেকের ভেতর তুই মা, বাবা, ভাই আর দাদাভাইয়ের সাথে ব্যাপারটা নিয়ে খুব ভালভাবে আলোচনা কর। আর তাদের কার কী মত, সেটা জানতে চেষ্টা কর। আর আমাকে জানাস। বুঝেছিস? এবার ফোনটা দাদাভাইকে দে”।
এবার ও’পাশ থেকে রতীশ বলল “হ্যাঁ মন্তি, আমি তোর সব কথাই শুনেছি। আমার মনে হচ্ছে তুই খুব ভাল একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিস। কিন্তু কালচিনির বাড়ির কার কি মত হবে জানিনা। তবে রচুর যে এতে কোন আপত্তি থাকবেই না, এটা ধরে নিতে পারিস। তোর পরামর্শ রচু মানবে না এ কি কখনও হতে পারে? আর তুই যেমন বললি, আমরা সেভাবেই কাল পরশুর ভেতরেই কালচিনির সকলের সাথে কথা বলব। আর তাদের মতামত তোকে জানাব”।
সীমন্তিনী এবার শান্ত গলায় বলল, “ঠিক আছে রে দাদাভাই। তা আমার ছিঁচকাঁদুনে সোনাটা কি করছে রে? আমি বকেছি বলে কাঁদছে নাকি”?
রতীশ জবাব দিল, “কাঁদছে তো বটেই। তুই তো ওকে ভাল করেই চিনিস। কিন্তু তুই ও নিয়ে ভাবিস নে। আমি ওকে সামলে নেব”।
সীমন্তিনী কিছু বলার আগেই ও’পাশ থেকে রচনাই কাঁদতে কাঁদতে বলল, “সকলের সবকিছুর দিকে তোমার নজর আছে। তুমি সকলের ভাল করতে চাও, করেও যাচ্ছ। কিন্তু যাকে আমি সবচেয়ে বেশী ভালবাসি, আমার সেই দিদিভাইয়ের ভবিষ্যৎ নিয়েই শুধু ভাবছ না তুমি। কেন দিদিভাই, তুমি কেন এমন করছ বলো তো? না চাইতেই তুমি একের পর এক কত কিছু করে যাচ্ছ আমাদের জন্যে, আমার মা বাবা ভাই বোনদের জন্যে। গত চারটে বছর থেকে আমি তোমার কাছে যে জিনিসটা চাইছি, সেটা আমায় দিতে চাইছ না কেন? নিজের জন্যে কি তুমি এখনও কিছু ভাববে না”?
রচনার কথার কোন জবাব না দিয়ে সীমন্তিনী রতীশকে জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা দাদাভাই, মহিমা বৌদির খবর কী রে? আর এসেছিলেন তোদের ওখানে”?
রতীশ জবাব দিল, “না বৌদি আর এরমধ্যে আমাদের ফ্ল্যাটে আসেননি। তবে রচুর সাথে রোজই অন্ততঃ একবার হলেও ফোনে কথা বলেন। আর আমার সাথে বৃহস্পতি বার বাদে সব দিনই তো দেখা হয় ইনস্টিটিউটে। উনিও বেশ ভালই আছেন। তবে ইদানীং ওনাকে বেশ চিন্তিত আর অন্যমনস্ক লাগে মাঝে মাঝে। মনে হয় কিছু একটা নিয়ে উনি ভীষণভাবে উদ্বিঘ্ন। কিন্তু জানতে চাইলে হেসে উড়িয়ে দিয়ে অন্য কথা পেড়ে বসেন”।
সীমন্তিনী আর কথা না বাড়িয়ে বলল, “আচ্ছা দাদাভাই। যে’কথাটা বললুম, সেটা নিয়ে আগে রচুর সাথে ফুরসতে বসে ঠান্ডা মাথায় আলোচনা করবি। তারপর মাসি মেসোদের সাথে আলাপ করে আমাকে জানাস। আর শোন। আমাকে এখনই আবার একটা দরকারী ফোন করতে হবে একজনকে। বেশী রাত হয়ে গেলে তাকে আর লাইনে পাব না। তাই এখন ছাড়ছি, কেমন”?
রতীশ তড়িঘড়ি বলল, “আচ্ছা সে ঠিক আছে মন্তি। কিন্তু অর্চুদি আর নীতাদি কেমন আছে রে? ওনারা দু’জনে ভাল আছেন তো”?
সীমন্তিনী তাড়াতাড়িই জবাব দিল, “হ্যারে দাদাভাই। ওরা দুজনেই ঠিক আছে। আচ্ছা পরে আবার কথা হবে” বলেই ফোন কেটে দিল।
******************
দেয়াল ঘড়ির দিকে দেখে সীমন্তিনী বলল, “ইশ দেরী হয়ে গেল রে। এখনই তো আবার লক্ষ্মীদি খেতে ডাকবে। আচ্ছা অর্চু, নীতা তোরা শোন। আমাকে একটা খুব জরুরী কাজ নিয়ে বসতে হবে এখনই। তাই আজ খাবার খেয়ে আমি সে কাজটা নিয়ে বসব। তোরা গিয়ে লক্ষ্মীদির সাথে হাতে হাত মিলিয়ে তাড়াতাড়ি খাবার টেবিল সাজিয়ে ফেল প্লীজ”।
কিছুটা তাড়াহুড়ো করেই সীমন্তিনী খাওয়া শেষ করে নিজের ঘরে যেতে যেতে বলল, “তোমরা সবাই সব কিছু গুটিয়ে গুছিয়ে শুয়ে পড়ো। আমি কাজে বসছি। কাল সকালে দেখা হবে, গুডনাইট” বলে নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। সবার আগে বিছানাটা পরিস্কার করল। ঘরের বড় আলোটা নিভিয়ে দিয়ে সাইড টেবিলের ওপরে রাখা টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে দিল। তারপর নিজের পার্সোনাল মোবাইল থেকে মহিমার নম্বর ডায়াল করল। মাত্র দু’বার রিং হতেই ও’পাশ থেকে মহিমার সাড়া পাওয়া গেল, “ইশ রোজ তোমার ফোনের আশায় বসে থাকি। কিন্তু আজ এগারো দিন পর তোমার ফোন পেলাম মন্তি। আচ্ছা আগে আসল কথাটা বলো তো? কোন উপায় খুঁজে বের করতে পেরেছ তুমি”?
সীমন্তিনী বলল, “উপায় যে খুঁজে বের করতে পেরেছি ঠিক তা নয় বৌদি। তবে অনেক রকম ভাবেই ভেবে ভেবে কয়েকটা উপায় বের করেছি ঠিকই। কিন্তু কোনটাই ঠিক পারফেক্ট হচ্ছে না। ওই লোকটা এতই ক্ষমতাশালী যে ওকে জব্দ করাটা অত সহজ কাজ নয় মোটেও। তবে আমি ইতিমধ্যেই দাদাভাই আর রচুর ওপর নজর রাখবার জন্যে কিছু সিকিউরিটির বন্দোবস্ত করেছি। আর বিমলের পেছনেও লোক লাগিয়েছি। ওর ব্যাপারে অনেক খবরাখবরও যোগার করেছি। লোকটার যে প্রচুর ব্ল্যাকমানি আছে সেটা জানতে পেরেছি। কিন্তু সরকারি বেসরকারি সমস্ত অফিসে লোকটার এতই প্রভাব আছে যে সিবিআই, ইডি, অ্যান্টিকরাপশন ব্যুরো পর্যন্ত তার পেছনে লেগেও তার কিচ্ছু করতে পারেনি। থানা, পুলিশ, কোর্টের উকিল ব্যরিস্টার এমনকি মিনিস্ট্রি লেভেলেও তার ভাল যোগাযোগ আছে। তাই অনেক ভাবে ভাবা সত্বেও কোনও প্ল্যানই পুরোপুরি নিখুঁত ভাবে সাজাতে পারছি না। তবে তুমি ভেবো না বৌদি। খুব শিগগীরই কোন না কোন উপায় ঠিক বের করে ফেলব। কলকাতায় আমার চেনাজানা কিছু লোকের মাধ্যমেই আমি তার ব্যাপারে খবরাখবর সংগ্রহ করছি। কিন্তু বৌদি লোকটার ব্যাপারে আরো অনেক খবর যোগার করতে হবে। নইলে তাকে কব্জা করা খুব মুস্কিল হবে। আমার বন্ধুবান্ধবেরা সে চেষ্টাই করছে। আমরা এটাও জানতে পেরেছি যে লোকটা প্রায় প্রতিদিনই মেয়েমানুষ নিয়ে স্ফুর্তি করে। আমরা তার সেসব খবরও পাচ্ছি। তার ব্যবসা, বাড়ি আর অফিসের ব্যাপারেও অনেক কিছু জানতে পারছি। প্রায় রোজই নতুন নতুন খবর আমার কাছে আসছে। তাই আশা করছি, খুব শিগগীরই আমরা একটা নিখুঁত প্ল্যান বানিয়ে ফেলতে পারব। আচ্ছা বৌদি, তুমি কি তার ব্যাপারে আর কিছু খবরাখবর দিতে পারো আমাকে? যে কোন ব্যাপারে”।
মহিমা একটু মনমরা হয়ে জবাব দিল, “জানি মন্তি, কাজটা তোমার পক্ষেও অতটা সহজ হবে না। বিমল সবদিকে আটঘাট বেঁধেই সব কিছু করে। তবে তুমি এত দুরে থেকেও এ’ কদিনেই যে তার সম্পর্কে এত খবরাখবর যোগার করেছ, সেটাও মুখের কথা নয়। আর তুমি যে রচু আর রতীশের ওপর নজর রাখবার জন্যে সিকিউরিটির বন্দোবস্ত করেছ সেটা শুনে আমি কিছুটা হলেও আশ্বস্ত হতে পারছি। আমার সব সময়েই ভয় হয় যে আমার অপেক্ষায় না থেকে বিমল বোধহয় অন্য কাউকে দিয়ে রচনাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাবে। কিন্তু তুমি এতসব করলে কী করে বলো তো”?
সীমন্তিনী বললো, “আমার পক্ষে তো আর কাজ ফেলে ওখানে যাওয়া সম্ভব নয় বৌদি। যা করছি, তা আমার জানাশুনো হিতৈষী আর বন্ধুবান্ধবদের সাহায্যেই করছি। আমার এক বন্ধু পুলিশে কাজ করে কলকাতায়। সেও এ ব্যাপারে আমাকে খুব সাহায্য করছে। ওহ, হ্যাঁ বৌদি, একটা কথা মনে পড়ল। সেটা তোমাকে আগে থেকেই জানিয়ে রাখি। আমার ওই পুলিশ অফিসার বন্ধু হয়ত তোমার কাছেও যেতে পারে বিমলের ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করতে। তুমি তাকে একটু সাহায্য করো”।
মহিমা এবার একটু দ্বিধাগ্রস্ত সুরে বলল, “পুলিশ অফিসার? এর মধ্যে আবার পুলিশকেও জড়িয়ে ফেলেছ তুমি মন্তি? কিন্তু তোমাকে তো আগেই বলেছি যে থানা পুলিশ সব বিমলের হাতের মুঠোয়। ওরা কেউ বিমলের কোন ক্ষতি তো করবেই না, উল্টে বিমলকে সাহায্যই করবে। বিমলের কাছ থেকে প্রত্যেক মাসে মাসে তারা নিয়মিত মোটা টাকার মাসোহারা পায়। ওরাই হয়তো বিমলকে সতর্ক করে দেবে যে তুমি বা আমি ওর বিরূদ্ধে কোনও ষড়যন্ত্র করছি। তখন উল্টে আমরাই বিপদে পড়ে যাব। আর তাছাড়া, আমি নিজেও তো একটা অপরাধমূলক কাজের সাথে যুক্ত আছি। তারা তো আমাকে নাজানি কতভাবে ইন্টারোগেশন করবে। তারা যদি আমার ব্যবসার ব্যাপারে কিছু জেনে ফেলে, তাহলে আমিও তো সমস্যায় পড়ে যাব ভাই”।
সীমন্তিনী মনে মনে হেসে বলল, “না গো বৌদি, এ নিয়ে তুমি একেবারেই কিছু ভেব না। এমন কিছুই হবে না। আমার ওই বন্ধু তোমাকে অন্য কোনভাবেই বিপদে ফেলার চেষ্টা করবে না। এ ব্যাপারে আমি ওকে খুব ভালভাবে বুঝিয়ে দিয়েছি। তোমাকে সে কোনভাবেই হ্যারাস করবে না। আমার দাদাবৌদির বিপদের কথা জেনেই তাদের সে বিপদ থেকে উদ্ধার করতেই তো তুমি আমাকে সব খুলে বলেছিলে। তোমাকে কি আমি বিপদে ফেলতে পারি? আমার ওপর সে বিশ্বাসটুকু রেখো। এবার তুমি বলো তো, বিমলের ব্যাপারে আর কিছু নতুন কথা কি তুমি আমাকে জানাতে পারো”?
মহিমা জবাব দিল, “রচুকে বিপদ থেকে বাঁচাতে যা যা বলা দরকার, তার সবকিছু আমি তোমাকে আগেই বলেছি মন্তি। নিজের গোপন ব্যবসার কথাও তোমাকে খুলে বলেছি। কিন্তু তুমি ঠিক কিভাবে ওকে ট্যাকল করবার কথা ভাবছ, তা তো জানিনে ভাই। তবে ওর সম্মন্ধে আমি আরও অনেক কিছুই জানি। যেমন বিমলের অফিসের রেস্ট রুম, যেখানে ও ওর অফিসের মেয়েগুলোর সাথে সময় কাটায়। আচ্ছা মন্তি, তুমি কি জানো? দক্ষিণেশ্বরের দিকে ওর একটা ফার্ম হাউস আছে। সেটার ভ্যালুয়েশন প্রায় এগার কোটি টাকা। ভোগ বিলাসের সব উপকরণই সেখানে মজুত আছে। সেই ফার্ম হাউসের গ্রাউন্ডফ্লোরে বিমলের মাষ্টার বেডরুম। সে বেডরুমে বিমলের একটা সিক্রেট আন্ডারগ্রাউন্ড চেম্বার আছে। সেটা অনেকটা ব্যাঙ্কের ভল্টের মত। একেবারে পরোপুরি ব্যাঙ্কের স্ট্রংরুমের টেকনিকে সেটা বানানো। ছোট বা মাঝারি ধরণের ডিনামাইট দিয়েও সেটা ভাঙা যাবে না। ওই চেম্বারের ভেতরে বিমলের একটা বিশাল বড় লোহার সেফ দেয়ালের সাথে ফিক্সড করা আছে। কোটি কোটি দু’নম্বরি টাকা আর তার লেনদেন সংক্রান্ত সব কিছু ডকুমেন্ট সে ওই সেফেই রাখে। একবার আমাকেও সেটা দেখিয়েছিল সে। আর ওই চেম্বারে ঢোকার এমন একটা অদ্ভুত সিস্টেম সে করে রেখেছে যে, সেটা আগে থেকে জানা না থাকলে কারুর পক্ষেই সে চেম্বার খোলা একেবারেই অসম্ভব। একবার ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্টের লোকেরা মাষ্টার বেডরুমটার তলায় কিছু একটা আছে বুঝতে পেরেও তার রাস্তা খুঁজে পায় নি। বিমল যেবার প্রথম আমাকে কুড়ি লাখ টাকা দিয়েছিল, তখন সে ওই চেম্বারের সেফটা থেকেই টাকা বের করে আমাকে দিয়েছিল। সেদিনই আমি সেটা দেখেছিলাম”।
সীমন্তিনী মনে মনে খুব উৎসুক হলেও স্বরে শান্তভাব রেখেই বলল, “অদ্ভুত সিস্টেম কি রকম”?
মহিমা বলল, “চেম্বারে ঢোকবার দরজাটা মাষ্টার বেডরুমের ভেতরে হলেও সে দরজাটা খুলতে আলাদা আলাদা চার জায়গায় চারটে স্টীলের নব ঘোরাতে হয়। প্রথম নবটা আছে গ্রাউন্ডফ্লোরে বিমলের মাষ্টার বেডরুমের সাথে এটাচড বাথরুমের ভেন্টিলেটরের ঠিক পাশে। সে নবটা ঘোরালে ভেন্টিলেটরে লাগানো কাঁচটা একদিকে সরে যায়। তাই সবাই ভাবে যে ওটা ওই ভেন্টিলেটরটা খোলা বা বন্ধ করবার কাজেই ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ভেন্টিলেটরের কাঁচটার সঙ্গে চেম্বারের প্রথম লকটাও খুলে যায়। দ্বিতীয় লকটা আছে তিনতলার একটা বাথরুমে। সেখানেও একই ভাবে স্টীলের নব ঘোরালে ওই ভেন্টিলেটরের কাঁচের সাথে সাথে সিক্রেট চেম্বারের দ্বিতীয় লকটাও খুলে যায়। কিন্তু প্রথম নবটা আগে থেকে ঘুরিয়ে না রাখলে দ্বিতীয় নব ঘোরালে শুধু ওই ভেন্টিলেটরের কাঁচটাই সরে যাবে। চেম্বারের দ্বিতীয় লকটা কিন্তু খুলবে না। একই সিস্টেমে আরও দুটো নব পরে ঘোরাতে হয়। তৃতীয় নবটা আছে দু’তলার বাথরুমের ভেন্টিলেটরের পাশে। যেটাতে ভেন্টিলেটরের কাঁচের সাথে চেম্বারের থার্ড লকটা খোলে। আর চতুর্থ নবটা আছে বিমলের মাষ্টার বেডরুমের পশ্চিম দিকের দেয়ালে। তবে সে নবটা এমনি এমনি ঘুরবে না। একটা চাবির সাহায্যে সেটা ঘোরাতে হয়। চাবিটা খুব একটা বড় নয়। ইঞ্চি দেড়েকের মত লম্বা আর চ্যাপ্টা। সেটা ঘোরালে দেয়ালের ভেতর সেট করে রাখা একটা আলমাড়ির পাল্লা খুলে যায়। সবাই ভাবে ওটা আলমারি খোলার নবই। কিন্তু আলমারির পাল্লা খোলার সাথে সাথে চেম্বারের ফোর্থ লকটাও খুলে যায়। এভাবে এক নম্বর দু’নম্বর করে সিরিয়ালি চারটে নবকেই ঘোরাতে হয়। সিকোয়েন্সটা মেইন্টেইন না করে উল্টোপাল্টা করে ঘোরালে শুধু ভেন্টিলেটরের কাচ কিংবা দেয়াল আলমারির পাল্লাই শুধু খুলবে। চেম্বারের লকগুলো একটাও খুলবে না। সঠিক সিরিয়ালে নবগুলো ঘোরালে যেমন চার নম্বর নবের পরে দেয়ালের আলমারির পাল্লা খোলার সাথে সাথে চেম্বারের চার নম্বর লকটা খুলে যায়, তখন সাথে সাথে পশ্চিম দেয়ালের কোনার দিকে দেয়ালের একটা বিশেষ অংশ পেছন দিকে হেলে পড়ে আস্তে আস্তে। গোড়াটা দেয়ালের গোঁড়ার ফ্লোরের সাথে সেঁটে থাকে আর মাথার দিকটা ভেতরে ঢুকে নিচের দিকে নেমে গিয়ে একটা ঢালু স্ল্যাবের মত হয়ে যায়। সে স্ল্যাবের ওপর দিয়ে নেমে গেলেই নিচের চেম্বারে পৌঁছে যাওয়া যায়। ওই চেম্বারে প্রায় সাত ফুট উঁচু আর অনেকটা চওড়া একটা বড় গোদরেজের সেফ আছে। সেটা কংক্রীটের দেয়ালের সাথে সেঁটে দেওয়া। সেফের পাল্লাটা ভীষণ ভারী। একজন পুরুষের শরীরের পুরোটা শক্তি প্রয়োগ করেই সেটা খোলা যায়। একটা প্রায় ছ’ইঞ্চি লম্বা চাবির সাহায্যে এটা খুলতে হয়। আর এ চাবিটা এবং ওই চার নম্বর নবের চ্যাপ্টা চাবিটা, দুটোই বিমল তার অফিসের লকারে রাখে। এর আগে একবার এনফোর্সমেন্ট ডিপার্টমেন্টের লোকেরা এসে নব গুলোর হদিশ পেলেও চেম্বারের দরজা তারা খুলতে পারে নি। হয়তো যে নবটা পরে ঘোরাবার কথা সেটা আগে ঘুরিয়েছিল, সিকোয়েন্সটা মেনটেন করেনি। তাই চেম্বারের দরজা খোলে নি। ভেন্টিলেটরের কাঁচ আর দেয়াল আলমারির পাল্লাই শুধু খুলেছিল। কিন্তু ওই আলমারিতে শুধু কিছু কাপড় চোপড়ই তারা দেখতে পেয়েছিল। তাই চেম্বারের খবর জানা থাকলেও, সেটাকে তারা আর খুঁজে বের করতে পারেনি। আর সেফটার অস্তিত্বও তারা জানতে পারেনি”।
______________________________
•
Posts: 577
Threads: 3
Likes Received: 797 in 298 posts
Likes Given: 364
Joined: Feb 2019
Reputation:
64
(Update No. 168)
সীমন্তিনী সাইড টেবিলের ওপর থেকে রাইটিং প্যাড আর কলম নিয়ে বলল, “বাপরে! এমন সব সিস্টেম করে রেখেছে? আগে ফার্স্ট ফ্লোরের বাথরুম, তারপর সেকেন্ড ফ্লোরের বা ......”।
ও’পাশ থেকে মহিমা সাথে সাথে বলে উঠল, “না না মন্তি, তুমি ভুল করে ফেলছ। অবশ্য এমন ভুলই হয়ত ইনকাম ট্যাক্স আর ইডির লোকেরাও করেছিল। কোনটা প্রথমে কোনটা পরে, তারা বুঝি সেটা ধরতে পারেনি। তুমিও একই ভুল করছ। প্রথম গ্রাউন্ডফ্লোর টয়লেট, তারপর সেকেন্ড ফ্লোরের টয়লেট, তারপর ফার্স্ট ফ্লোরের টয়লেট, আর সবার শেষ গ্রাউন্ডফ্লোরের পশ্চিম দেয়ালের আলমারি। এই হল সিকোয়েন্সটা। এই সিকোয়েন্সেই একটা একটা করে চারটে লক খুলবে। সিকোয়েন্সে ভুল হলে চেম্বারের কোন লকই খুলবে না। শুধু ওই ভেন্টিলেটরগুলোর কাঁচ কিংবা দেয়াল আলমারির পাল্লাটাই খুলবে। যার ভেতর আপত্তিজনক কিছুই রাখে না বিমল। এনফোর্সমেন্টের লোকেরা শুধু সেটুকুই দেখতে পেয়েছিল। তাই তার বিরূদ্ধে তেমন কোন চার্জই তারা আনতে পারেনি। আর সেফ বন্ধ করে বেরিয়ে আসবার সময় ঠিক উল্টো সিকোয়েন্সে সবটা করতে হয়। প্রথমে গ্রাউন্ডফ্লোরের আলমারির পাল্লা বন্ধ করবার নব ঘোরাতে হয়। তখন আলমারির পাল্লা বন্ধ হবার সাথে সাথে নিচে নেমে যাওয়া স্ল্যাবটা উপরে এসে দেয়ালের সাথে এমনভাবে সেঁটে যায় যে দেখে বোঝাই যায় না যে ওখানে অমন একটা মুভেবল স্ল্যাব থাকতে পারে। তারপর একে একে ফার্স্ট ফ্লোর, তারপর সেকেন্ড ফ্লোর আর সব শেষে গ্রাউন্ডফ্লোরের বাথরুম গুলোর ভেন্টিলেটরের কাঁচগুলো বন্ধ করবার নবগুলো উল্টোদিকে ঘোরাতে হয়”।
সীমন্তিনী তার রাইটিং প্যাডের লেখা গুলোর দিকে দেখতে দেখতে বলল, “সাংঘাতিক সিস্টেম বানিয়ে রেখেছে তো! এই সিকোয়েন্স গুলো মেনটেন না করলে তো কিছুতেই তাহলে ওই চেম্বার খুলতে পারবে না কেউ। কিন্তু বৌদি, তুমি যেমন বললে, সিকোয়েন্স গুলো কি ঠিক সে’রকমই? তোমার কি এতদিন আগে একবার দেখা সিকোয়েন্স গুলো ঠিক ঠিক মনে আছে? না, মানে বলছি কি, গুলিয়েও তো ফেলতে পারো তুমি”।
মহিমা বলল, “কোন কোন ফিল্মে এমন সব সিস্টেমে গোপনীয় জিনিস রাখার দৃশ্য তো দেখেছি। কিন্তু বাস্তব জীবনে অমন দৃশ্য আমি জীবনে ওই একবারই দেখেছি। তাই সিকোয়েন্সটা আমার খুব ভালভাবেই মনে আছে। একচুলও ভুল হচ্ছে না”।
সীমন্তিনী এবার আফসোসের সুরে বলল, “ইশ চাবিগুলো হাতে পেলে বদমাশটাকে অন্ততঃ সাত আট বছরের জন্যে জেলে পুরতে পারতুম গো বৌদি। কিন্তু আমি পড়ে আছি এখানে। আর চাবিগুলোই বা কি করে হাতে আনা যাবে জানিনা। তবে এটা তুমি খুব ভাল খবর দিয়েছ বৌদি। আচ্ছা বৌদি, বিমলের বাড়িতেও কি এমন কিছু লুকোনো জায়গা আছে”?
মহিমা বলল, “বিমলের সাথে আমার পরিচয় তো প্রায় ছ’ বছর আগে হয়েছে। আর তখন থেকেই সে আমার শরীরটা ভোগ করে আসছে। আমাকে সে খুব বিশ্বাসও করে। তাই হয়ত সেদিন তার ফার্ম হাউসের চেম্বারটা আমার সামনেই খুলেছিল। কারন ওর মনে এমন ধারণা অবশ্যই আছে যে ওর কোন ক্ষতি করবার কথা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারব না। আর তেমন কিছু করলে ও দু’মিনিটেই আমাকে এ পৃথিবী থেকে সরিয়ে ফেলতে পারবে। তবে ওর বাড়িতেও এমন কোন চেম্বার বা গোপন জায়গা কিছু আছে কি না, এ ব্যাপারে ও আমাকে কখনও কিছু বলে নি। থাকলেও থাকতে পারে। দু’নম্বরী টাকার যাদের অভাব নেই, লুকিয়ে রাখার মত জায়গাও তাদের একাধিক থাকতেই পারে। তবে আমি সত্যি ওর বাড়ির ব্যাপারে কিছু জানি না। আর আমি বেশ কয়েকবার ওর অফিসে আর ওই একবারই বিমলের ফার্ম হাউসে গেলেও কখনও ওর বাড়িতে ও আমাকে নিয়ে যায়নি। আর আমি জানি, ও অন্য যেসব মেয়েদের ভোগ করে তাদের কাউকেও সে তার বাড়িতে নিয়ে যায় না কখনও। যদি দু’এক ঘন্টার প্রোগ্রাম থাকে তাহলে কোন একটা হোটেলে টোটেলেই কাজ সেরে নেয়। সারা রাতের জন্য কাউকে নিলেই সে ওই ফার্ম হাউসে যায়। আর যখন ব্ল্যাকমানি বা গোপন দস্তাবেজ সেফে রাখবার প্রয়োজন পড়ে, তখন সে ফার্ম হাউসের মেন গেটে কয়েকজন সিকিউরিটি রেখে একা বাড়িতে ঢোকে। আমাকে অবশ্য সে পরেও আরও অনেক দিন তার ওই ফার্ম হাউসে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু স্বামীকে ঘরে রেখে বাইরে সারা রাত কাটানো সম্ভব নয় বলেই আমি আর কখনও সেখানে যাই নি। ওই একদিনই শুধু গিয়েছিলাম। তবে আমার এজেন্সীর অন্যান্য কয়েকজন মেয়েও ওর ফার্ম হাউসে অনেকবার গেছে। এখনও মাঝে মাঝে যায়। তবে তাদের কাউকে যে বিমল তার ওই সিক্রেট চেম্বার দেখাবে না, তা বলাই বাহুল্য”।
সীমন্তিনী মন দিয়ে মহিমার কথা শুনছিল। মহিমা থামতে সে জিজ্ঞেস করল, “তার মানে এখন আর তোমাকে ওর কাছে যেতে হয়না তাহলে”?
মহিমা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, “আমি তো সারা জীবনের জন্য আমার শরীরটা ওর কাছে বন্ধক রেখেছি ভাই। যতদিন বেঁচে আছি, ততদিন পর্যন্ত ওকে আমার শরীরটা দিতে আমি বাধ্য। তুমি জানো মন্তি, মাঝে মাঝে আমার মনে হয় ভগবান আমাকে এতটা সুন্দর করে সৃষ্টি না করলেই বুঝি ভাল হত। কিন্তু সেটা তো আমার হাতে নেই। যতদিন আমি বেঁচে থাকব, বা যতদিন আমার শরীরটাতে পুরুষদের আকর্ষণ করার মত সৌন্দর্য বা যৌবন থাকবে, ততদিন বিমলের হাত থেকে আমার পরিত্রান নেই। তবে তুমি যেটা ভাবছ, সেটা হলে তো আমিও খুব খুশী হতাম। কিন্তু রাতের বেলায় আমাকে ভোগ করবার সুযোগ দিচ্ছি না বলেই, ও আর আমাকে ওর ফার্ম হাউসে নিয়ে যাবার সুযোগ পায়নি। কিন্তু তার পরিবর্তে বিমল প্রতিমাসে দু’দিন বা তিনদিন ইনস্টিটিউটে এসেই আমাকে ভোগ করে”।
সীমন্তিনী অবাক হবার ভাণ করে বলল, “ইনস্টিটিউটে? মানে তোমার যোগা ইনস্টিটিউটে? কিন্তু তুমি তো বলেছিলে যে ইনস্টিটিউটে তোমার এ ব্যবসা সংক্রান্ত কোন কিছুই হয় না”!
মহিমা বলল, “হ্যাঁ সেটা ঠিকই। ইনস্টিটিউটে এ’সব কাজ একেবারেই হয় না মন্তি। কিন্তু বিমল যেদিন আসে তখন বেশীর ভাগ সময়েই আমি ইনস্টিটিউটেই থাকি তো। তাই ওভাবে বলেছি। আসলে আমার ইনস্টিটিউটের ঠিক নিচের ফ্লোরেই আমার আরো একটা রুম ভাড়া নেওয়া আছে। ওখানে বসেই আমি এ ব্যবসার ব্যাপারগুলো নিয়ে ডীল করি। আর বিমলও সেখানেই আসে। আর ওই রুমেই আমি বিমলের হাতে আমার শরীরটা তুলে দিই। ছ’টা বছর ধরে এমনই চলছে। কিন্তু আমি এখন ভেতরে ভেতরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। কিছুদিন ধরেই আমি ভাবছি, এ পাপের ব্যবসাটা এবার বন্ধ করে দেব। কিন্তু সেটা করলেও বিমলের হাত থেকে তো আমি ছাড়া পাব না। আর তাছাড়া যে মেয়েগুলো পেটের দায়ে পড়ে আমার কাজের সাথে যুক্ত হয়েছে, ওদের ওপরেও বিপদ নেমে আসবে। তুমি জানো মন্তি, ভাই, মানে তোমার দাদাভাই রতীশ আর রচনার সাথে পরিচিত হবার পর থেকেই আমার মনটা কেন জানিনা এ ব্যবসা থেকে আমাকে সরে আসতে বলছে”।
****************
সীমন্তিনী সুযোগ পেয়ে বলল, “আচ্ছা বৌদি, তোমার ওই ব্যবসা থেকে মাসে কত আয় হয় গো”?
মহিমা একটু হেসে বলল, “তার কি আর কোন ঠিক ঠিকানা আছে ভাই? ক্লায়েন্টদের ডিমান্ড যত বেশী হয় আমার আয়ও তত বেশী হয়। তবে কমপক্ষেও আঠারো থেকে বিশ লাখ তো হয়ই এক মাসে। অবশ্য, থানা পুলিশ উকিল আর কিছু এশটাব্লিশমেন্টের খরচা বাদ দিয়ে পনেরো ষোল লাখ তো কম করেও ঘরে আসে। বিভিন্ন ব্যাঙ্কে নামী বেনামী একাউন্টে সে’সব জমা করে রেখেছি। ঘরে তো আর বেশী টাকা রাখা সম্ভব হয় না। আর বিমলের মত অমন কোন চেম্বারও আমি বানাতে পারিনি। তাছাড়া ঘরে অত টাকা রাখলে অরিন্দমের কাছে ধরা পড়ে যাব”।
সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “অরিন্দম কে গো বৌদি”?
মহিমা হেসে বলল, “ও তোমাকে বুঝি অরিন্দমের কথা বলাই হয়নি তাই না? অরিন্দম, মানে অরিন্দম সেন আমার স্বামী। বিয়ের আগে দিল্লীতে আমরা এক কলেজে পড়তাম। তারপর আমরা একে অপরের প্রেমে পড়েছিলাম। এমবিএ শেষ হতেই মা-বাবার মতের বিরুদ্ধে গিয়েই আমরা বিয়ে করেছিলাম। আর তার পর পরই আমরা কলকাতা চলে এসেছিলাম। ও আমাদের মহিমা মালহোত্রা সেন যোগা ইনস্টিটিউটের একজন পার্টনারও। তবে ও কখনোই ইনস্টিটিউটে আসে না। ইনস্টিটিউট নিয়ে কোনও ভাবনাও ভাবে না। ও ওর নিজের ইলেকট্রনিক্সের ব্যবসা নিয়েই সর্বক্ষণ ব্যস্ত। আর ব্যবসাও যত বাড়ছে, ওর ব্যস্ততাও তত বাড়ছে। এমনিতে রোজ সকালে আর রাতে এগারোটা বা বারোটার পরেই আমাদের দেখা হয়। তবে বছর খানেক আগে থেকে ওকে মাঝে মাঝেই দিল্লী, ফরিদাবাদ আর চণ্ডীগড় যেতে হচ্ছে ব্যবসার কাজে। তাই এখন মাসের মধ্যে অন্ততঃ দশ থেকে বারোদিন সে বাইরেই থাকে। এই তো, আজও সে বাড়িতে নেই। ফরিদাবাদ গেছে। তাই তো তোমার সাথে নিশ্চিন্তে কথা বলতে পারছি”।
সীমন্তিনী এবার আসল কথায় আসতে বলল, “আচ্ছা বৌদি, একটা কথা বলব? যদি কিছু মনে না করো”।
মহিমা বলল, “আমি তো তোমার কাছে আমার লজ্জার কথাগুলো কিছুই গোপন করছি না ভাই। রতীশ বা রচনাকে আমি এ’সব কথা কিছুতেই বলতে পারব না। কিন্তু রচনাকে বাঁচাবার জন্যেই তোমার কাছে আমি সব কথা খুলে বলেছি। না বললে তোমাকে আমি কিছুতেই বোঝাতে পারতাম না যে ওর বিপদের কথা আমি কিকরে জানতে পারলাম। আর সত্যি বলছি মন্তি, রতীশ আর রচনার সাথে কথা বলে আমার খুব ভাল লাগে। তোমার সাথে কথা বলতেও আমার ভাল লাগছে। বুঝতে পারছি, এটা তোমাদের পারিবারিক শিক্ষা। তোমরা দু’ ভাই বোনই সত্যিই অসাধারণ। অচেনা মানুষকে অল্প সময়ের মধ্যেই তোমরা নিজের কাছে টেনে নিতে পার। তাই তো নিজের বিপদ আছে জেনেও কেন জানিনা আমার সব গোপন কথা তোমাকে খুলে বলছি। তোমার যা জানতে ইচ্ছে করে, নিঃসঙ্কোচে তা জিজ্ঞেস করতে পার ভাই”।
সীমন্তিনী বলল, “আচ্ছা বৌদি তুমি যে বললে, এ পাপের ব্যবসা তুমি এখন ছেড়ে দিতে চাইছ। সেটা কি সত্যি মন থেকে বলছ? মানে আমি বলতে চাইছি, যে ব্যবসা থেকে প্রতি মাসে পনেরো ষোল লাখ টাকা তুমি উপার্জন করছ, তেমন একটা ব্যবসা কি এত সহজেই ছেড়ে দিতে পারবে তুমি? তাতে তোমার কত টাকার লোকশান হতে পারে, একবার ভেবে দেখেছ”?
মহিমা জবাব দিল, “শুধু টাকার অঙ্কের দিকে দেখলে, বা আর্থিক লাভের কথা ভাবলে এমন ব্যবসা যে একবার শুরু করতে পেরেছে, সে আর ছেড়ে দিতে পারে না মন্তি। একটা সময় অবশ্য টাকা উপার্জন করবার জন্যেই আমি এ ব্যবসা শুরু করেছিলাম। ছেলেমেয়ে দুটোর অ্যাডমিশনের জন্য চল্লিশ লাখের মত টাকা আর অন্য কোনভাবে জোটাতে পারিনি। অরিন্দমের হাতেও তখন খুব সামান্যই ছিল। আর আমাদের যোগা ইনস্টিটিউটটাও তখন নতুন। খুব বেশী আয় হত না। তখনই বাধ্য হয়েই বিমলের ধার মেটাতে এ এসকর্ট ব্যবসাটা শুরু করেছিলাম। অবশ্য বিমলের কাছে নিজেকে বাঁধা দেবার আগেই আমি শরীর বিক্রি করতে শুরু করেছিলাম। কিন্তু বিমলের কাছ থেকে ধার নেওয়া টাকা ফিরিয়ে দেবার পরেও টাকা কামানোর লোভটা কমেনি। বরং দিনে দিনে যত লাভ হচ্ছিল ততই যেন টাকা কামানোর নেশাটা ধীরে ধীরে আরও চেপে বসেছিল আমার মনে। এখন যথেচ্ছভাবে টাকা খরচ করতে পারি আমি। বরং বলতে পার যে খুশী মত খরচ করেও আমার ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স কমছেই না। আমার আশেপাশে যারা থাকে, বা যে’সব গরীব দুঃখী মেয়েরা নিরুপায় হয়ে আমার এসকর্টের ব্যবসায় যোগ দিয়েছে, এদের যে কোনও প্রয়োজনে আমি যে কোন মূহুর্তে তাদের আর্থিক সাহায্য করতে পারি এবং প্রয়োজন হলেই তেমনটা করি আমি। কিন্তু তা সত্বেও আমার ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স বাড়তে বাড়তে এমন একটা জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে আমি যে কোন মূহুর্তে আট দশ কোটি টাকা খরচ করতে পারি। এখনও যত টাকা আমার হাতে আছে, তাতে আমাদের পরে আমাদের ছেলেমেয়েরাও বসে বসে আরামের জীবন কাটাতে পারবে। তবে আমি নিজেই সেটা চাই না। আমি তো নিজে একটা নষ্টা মেয়েই। মা বাবার ঘরে থাকতেই ছোট বয়স থেকেই নিজের শরীর বেঁচে পয়সা কামাতে শিখে গিয়েছিলাম। তবে এখন যখন মাঝে মাঝে পুরনো কথা গুলো নিয়ে ভাবি, তখন বুঝতে পারি, সেটার খুব একটা প্রয়োজনও ছিল না। তবে বিয়ের পর সত্যি সে’সব ছেড়ে দিয়েছিলাম। স্বামী সংসার সন্তানদের আঁকড়ে ধরেই বেঁচে থাকতে চেয়েছিলাম। আঠারো ঊণিশটা বছর বেশ ভালই ছিলাম। মা হিসেবে ছেলেমেয়েদের কতটা সুশিক্ষা দিতে পেরেছি, তা জানিনা। কিন্তু অরিন্দমের শিক্ষায় ছেলেমেয়েরাও খুব ভাল শিক্ষা পেয়েছে। তবে ওদের উঁচু স্তরের শিক্ষা দিতে গিয়েই আবার সেই পুরনো নর্দমাতেই গিয়ে পড়তে হয়েছিল আমাকে। ছেলেমেয়ে দুটো তো এখনও পড়াশোনা করছে। ওদের জীবন তো বলতে গেলে শুরুই হয়নি এখনও। তবু ওরাও যে কখনও কোন অসৎ উপায়ে টাকা উপার্জন করবার কথা ভাববে না, তা এখন থেকেই বুঝতে পারি। অরিন্দমের ব্যবসাতেও ওর পরিশ্রমে আর ভগবানের আশীর্বাদে এখন ভালই আয় হচ্ছে। ওর আয় থেকেই আমাদের সংসারের প্রয়োজনীয় সমস্ত খরচ অনায়াসে মিটে যায় এখন। যোগা সেন্টারের ব্যবসাটাও বছর চারেক আগে থেকে ভালই চলছিল। রতীশ কাজে যোগ দেবার পর আয় আরো বেড়েছে। বছর খানেক আগে থেকেই একটা চিন্তা আমার মাথায় এসেছে যে এ টাকাগুলো নিয়ে আমি শেষ পর্যন্ত করবটা কী? স্বামী ছেলে মেয়ে কাউকেই তো দিতে পারব না। কারন তারা যদি প্রশ্ন করে যে এত টাকা আমি কোথায় পেলাম, আর সে প্রশ্ন তো অবধারিত ভাবেই তারা করবে। কিন্তু তাদের প্রশ্নের জবাব তো আমি দিতে পারব না। আমি কাউকে নমিনি করে যেতেও পারব না। কারন আমি মরার পরেও টাকাগুলো পেলে স্বামী বা ছেলে মেয়ের মনে একই প্রশ্ন উঠবে। তখন হয়ত তাদের প্রশ্নের জবাব দেবার জন্য আমি থাকব না। কিন্তু কোটি কোটি টাকা দেখে তারা প্রত্যেকেই বুঝে যাবে যে এ’সব সৎপথের উপার্জন হতে পারে না। তাই যতদিন আমি বেঁচে থাকব, ততদিন যখের ধনের মত আগলে আগলে রাখতে হবে সেই টাকা গুলোকে। আর আমি মরে যাবার পর ও’গুলো ব্যাঙ্কে আনক্লেইমড ডিপজিট হিসেবেই হয়ত পরে থাকবে। তাতে আর কার কী কাজে লাগবে বলো? আজ যদি বিমল দশ কোটি টাকার বিনিময়ে রচনার ওপর থেকে তার কূ-নজর সরিয়ে নিতে রাজি হয়, তাহলে আমি আমার জমানো সব টাকা দিয়ে রচনাকে বিপদমুক্ত করতে এক মিনিটও ভাবতাম না। কিন্তু বিমল যে তাতে কিছুতেই রাজি হবে না এ তো আমি খুব ভালভাবেই জানি। তাই তো বারবার ভাবছি এ’সব এখন বন্ধ করে দেওয়াই ভাল। কিন্তু পাকাপাকিভাবে সে সিদ্ধান্তটাও নিতে পারছি না গো মেয়েগুলোর কথা ভেবে। তুমি জানো কি না জানিনা মন্তি, তবে এ শহরে আমার মত এমন ব্যবসা অনেকেই করে। তাদের আমরা বলি এসকর্ট প্রোভাইডার। সে’সব এসকর্ট প্রোভাইডারদের কাছে যে’সব মেয়েরা এসকর্ট হিসেবে কাজ করে, তারা একবার প্রোভাইডারদের খপ্পরে পড়ে গেলে সহজে আর সেখান থেকে বেরোতে পারে না। ভাল পথে চলবার সুযোগ পেলে তারা চালাকি করে বা পালিয়ে বাঁচতে চাইলে তাদের প্রোভাইডারদের পোষা গুণ্ডাদের হাতে খুন হয়ে যায়। ওই পথ থেকে বেঁচে ফিরে আসবার রাস্তা চিরতরে বন্ধ হয়ে যায় তাদের কাছে। কিন্তু আমার এজেন্সীতে যে’সব মেয়েরা কাজ করে তারা নিজেদের পেটের দায়ে পড়ে অথবা সংসারের চাপে পড়ে নিতান্ত নিরুপায় হয়েই আমার কাছে এসেছে। আসলে আমি প্রথম থেকেই যাকে তাকে আমার ব্যবসায় ঢোকাতাম না। ইন্টারভিউ নিয়ে যদি বুঝতে পারতাম যে তার সামনে আর অন্য কোন পথ খোলা নেই, তেমন মেয়েদেরই আমি কাজে নিতাম। অসৎ পথে উপার্জিত টাকা দিয়ে আমি কয়েকটা পরিবারের ভরণ পোষনের সংস্থান করে দিতাম। অসামাজিক কাজ করে সমাজের কয়েকটা দুঃস্থ পরিবারকে খাওয়া পড়ার সুযোগ করে দিয়ে নিজের মনের পাপবোধটাকে খানিকটা হাল্কা করতে চাইতাম। তাদের কারো ওপর আমি কোন রকম বাধ্য বাধকতার বোঝা চাপিয়ে দিই না। তাদেরকে কক্ষনও আমি নিজেদের ইচ্ছের বিরূদ্ধে কোন ক্লায়েন্টের কাছে জোর করে পাঠাঁই না। বরং একটা ডিল ফাইনাল করবার আগে তাদের সুবিধে অসুবিধের কথা আমি আগে জেনে নিই। তাদের যদি সামান্যও অসুবিধে থাকে, তাহলে তার পরিবর্তে আমি অন্য কোনও এসকর্ট পাঠিয়ে থাকি। তারা কেউ যদি চিরদিনের জন্যে এ রাস্তা ছেড়ে সৎ ভাবে জীবনযাপন করবার সুযোগ পায়, আমি কাউকে বাঁধা দিই না। বরং একটা মেয়ে ভাল পথে বাঁচবার সুযোগ পেয়েছে শুনলে আমি তাদের উৎসাহিতই করি। প্রয়োজন হলে তাদের আমি কিছু আর্থিক সাহায্যও করে থাকি। আর ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি তাকে যেন আর আমার কাছে ফিরে আসতে না হয়। এখন আমার ব্যবসাতে মোট আটচল্লিশ জন অমন মেয়ে মহিলা আছে। ছেলেও আছে জনা পঁচিশেকের মত। তবে ছেলেগুলোকে নিয়ে অত ভাবি না। কারন ওরা এ কাজে আসে মূলতঃ নারীসঙ্গ পাবার লোভে। আর সেই সাথে টাকা উপার্জনের সহজ একটা রাস্তা পেয়ে যায় বলে। আমি কাজ বন্ধ করে দিলেও তারা অনায়াসেই অন্যান্য প্রোভাইডারের কাছে গিয়ে কাজ করতে পারবে, বা তারা অন্য কোন কাজও করতে পারে। কিন্তু ওই মেয়েগুলো যদি আমাকে ছেড়ে অন্য প্রোভাইডারদের কাছে যায় তাহলে তারা বিপদে পড়বে। তাদের জীবনগুলোই বিপন্ন হয়ে যাবে। যেটা আমি মন থেকে মেনে নিতে পারছি না”।
মহিমা একটু থামতে সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “এমন এক অপরাধমূলক কাজেও যারা তোমার সঙ্গী, তুমি তাদেরকে তোমার ব্যবসার মূলধন করলেও মেয়েগুলোকে তুমি খুব ভালবাস, তাই না বৌদি”?
মহিমা একটু হেসে জবাব দিল, “এমন কথা শুনে কেউ না হেসে থাকতে পারবে না, তাই না মন্তি? পাপকাজে লিপ্ত থেকেও অন্যকে এমন ভাবে ভালবাসি, এ’কথা শুনলে সকলেই মনে মনে হাসবে, জানি। কিন্তু আসলে সেটাই সত্যি ভাই। তোমরা ভাবতেও পারবে না মন্তি, কত মেয়ে বিনা দোষে কতভাবে নির্যাতিতা হয়েই না এমন পথে নামতে বাধ্য হয়। একেক জনের একেক রকম কাহিনী। সে’সব কাহিনী তোমাকে সব খুলে বলতে গেলে রাতের পর রাত পেরিয়ে যাবে। জানো মন্তি, মাত্র মাস দেড়েক আগে একটা মেয়ে আমার কাছে এসেছিল। বেশ কয়েক বছর আগে মেয়েটার যেদিন বিয়ে ঠিক করা হয়েছিল, সেদিনই সে তাদের পাড়ারই কোন একটা ছেলের সাথে পালিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেই ছেলেটা আর তার এক বন্ধু মিলে মেয়েটাকে বেশ কয়েকমাস একনাগাড়ে রেপ করবার পর তাকে অন্য পুরুষদের কাছে ভাড়ায় খাটাতে শুরু করেছিল। অনেকদিন পর মেয়েটা কোনভাবে দুরের ওই জায়গাটা থেকে পালিয়ে কলকাতায় এসেছিল। কিন্তু তার বাড়ির লোকেরা তাকে আর নিজেদের সংসারে রাখতে রাজি হয় নি। মেয়েটা হাজার চেষ্টা করেও কোন সম্মানজনক কাজ খুঁজে না পেয়ে শেষে ভিক্ষে করতে শুরু করেছিল। কিন্তু রাতের বেলায় তাকে শুতে হত রেল ষ্টেশনের প্লাটফর্মে। সেখানেও রেলের কর্মচারি, রেল পুলিশ ছাড়াও কুলি মজুরেরা পর্যন্ত রোজ রাতে তার শরীরটাকে ভোগ করত। তারপর আর কোন উপায় না পেয়ে সে আমার কাছে এসেছিল। তার সব কথা শুনে আমি তাকে ফিরিয়ে দিতে পারিনি। তাকে কাজে রেখেছিলাম। অবশ্য ওই এসকর্টের কাজেই। কারন এ ছাড়া তাকে দেবার মত আর কোন কাজ আমার কাছে ছিল না। কিন্তু কয়েকটা দিন আমার সাথে কাজ করবার পরেই মেয়েটা হঠাতই কোনকিছু না বলে উধাও হয়ে গেল। কিন্তু সে’কথা থাক। আমার সঙ্গের আরেকটা মেয়ে নিজের প্যারালাইজড বাবা আর পঙ্গু একটা ভাইয়ের চিকিৎসা আর ভরণ পোষণের জন্য হাজার চেষ্টা করেও সৎভাবে বেঁচে থেকে উপার্জন করবার কোন রাস্তা না পেয়ে আমার কাছে এসেছিল। সত্যি কথায়, ও-ই প্রথম মেয়ে যে আমার ব্যবসায় যোগ দিয়েছিল। ক’দিন আগে মেয়েটার সেই পঙ্গু ভাইটা রাস্তায় গাড়ি চাপা পড়েছে। আজও সে হসপিটালে আছে। কোমায়। সপ্তাহে সপ্তাহে আইসিইউ-এর ভাড়াই দিতে হচ্ছে প্রায় সত্তর লাখ টাকা। তুমিই বলো, এ কী ওর পক্ষে সামাল দেওয়া সম্ভব? তাই হসপিটালের বিলটা আমিই দিচ্ছি সপ্তাহে সপ্তাহে। বাদবাকি যে’সব মেয়ে আছে প্রত্যেকেরই কোন না কোন কাহিনী আছে। সে’সব আর কত বলব তোমায়? কিন্তু এখন যদি আমি ব্যবসাটা বন্ধ করে দিই তাহলে এ মেয়েগুলোর কি হবে বুঝতে পারছ তুমি? জেনেশুনে অমন বিপদের মুখে আমি ওদের কী করে ফেলি বলো? তাই তো সিদ্ধান্তটা পুরোপুরি নিতে পারছি না। অবশ্য এ’সব ব্যবসা বন্ধ করে দিতে চাইলে আরও অনেক ধরণের সমস্যা দেখা দেবে। তবে সে’সব আমি সামলে নিতে পারব। সামলাতে পারব না শুধু এই অভাগী মেয়েগুলোর দুর্ভোগ আর আমার ওপর বিমলের দখল। ব্যবসাটা যদি শেষ পর্যন্ত ছেড়েও দিই, তবু বিমলের হাত থেকে নিস্তার আমি পাব না” ।
সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “কেন বৌদি, এ কাজ ছেড়ে দিলেও বিমল তোমায় ছাড়বে না কেন”?
মহিমা বলল, “বারে, তোমাকে সেদিন বললাম না? যে ছ’বছর আগে ওর কাছ থেকে টাকা ধার নেবার সময় ও আমার কাছে শর্ত রেখেছিল যে সে সারা জীবন সপ্তাহে দু’ তিনদিন করে ও আমার শরীরটাকে ভোগ করবে। আমিও যে সে শর্ত মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলাম। তাই আমি আর কোনদিনই বিমলের হাত থেকে ছাড়া পাব না। অন্ততঃ যতদিন আমরা দু’জন বেঁচে থাকব ততদিন, কিংবা যতদিন আমার শরীরের ওপর ওর লোভ থাকবে”।
সীমন্তিনী এবার বলল, “হু বুঝেছি বৌদি, বিমলের হাতে তুমি চিরদিনের জন্য বাঁধা পড়ে গেছ। কিন্তু বৌদি, তুমি এখন ব্যবসাটা নিয়ে মানসিকভাবে যতটা ভুগছো, তাতে তো মনে হয় এ ব্যবসা বন্ধ করে দিলে তুমি অনেক মানসিক শান্তি পাবে। অবশ্য বিমলের ব্যাপারটা থেকেই যাবে। তাই না বৌদি”?
মহিমা জবাব দিল, “সে তুমি ঠিকই বলছ মন্তি। বিমলের কাছ থেকে মুক্তি তো আমার পাবার সম্ভাবনাই নেই। পাবও না জানি। কিন্তু ব্যবসাটা ছেড়ে দিলেও অনেক শান্তি পেতাম। আমার এজেন্সীতে যে’সব মেয়ে কাজ করে, তাদের মধ্যে বীথিকা বলে একটা মেয়েরই সংকট খুব বেশী। ওই একটু আগে যার কথা বললাম তোমায়। মানে যার বাবা শয্যাশায়ী, আর ভাইটা পঙ্গু হয়ে হসপিটালে পড়ে আছে। আর ও-ই আমার এসকর্টদের মধ্যে সবচেয়ে পুরনো আর বিশ্বস্ত। তাই আমি একবার ভেবেছিলাম যে পুরো ব্যবসাটাই আমি ওর হাতেই ছেড়ে দেব। কিন্তু ও নিজেই সেটা সামলাতে পারবে না বলেছে। তাই তো আমি কোন রাস্তাই খুঁজে পাচ্ছি না”।
সীমন্তিনী বলল, “তার মানে তোমার এজেন্সীতে এখন মোট আটচল্লিশ জন মেয়ে মহিলা আছে, যারা বাধ্য হয়ে এ কাজ করছে, তাই তো”?
মহিমা বলল, “ঠিক তা নয় মন্তি। আজকের তারিখে আমার এজেন্সীতে একশ’র ওপরে মেয়ে মহিলা আছে। কিন্তু আমি এ কাজ ছেড়ে দিলে এই আটচল্লিশটা মেয়েই বেশী ভুগবে। অন্যদের তেমন ভোগান্তি হবে না। তবে এই আটচল্লিশ জন মেয়েই যে শুধু আমার ব্যবসায় জড়িত, ঠিক তা-ই কিন্তু নয়। এরা ছাড়াও আরও চল্লিশ পঞ্চাশ জন বিবাহিতা মহিলা আছে। এমনিতে তারা গৃহবধূ। এদের মাধ্যমে আমার ডাবল ইনকাম হয়। তবে তাদের নিয়ে আমার ভাবনার কিছু নেই। আমি কাজ ছেড়ে দিলেও তাদের একেবারেই কোন অসুবিধে হবে না”।
সীমন্তিনী ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করল, “এদের ব্যাপারটা ঠিক বুঝলুম না তো বৌদি। একদিকে তারা গৃহবধূ। আবার আরেকদিকে তাদের সাহায্যে তোমার ডাবল ইনকাম হয়, এটা কিভাবে সম্ভব"?
______________________________
•
Posts: 577
Threads: 3
Likes Received: 797 in 298 posts
Likes Given: 364
Joined: Feb 2019
Reputation:
64
(Update No. 169)
মহিমা একটু হেসে বলল, “মানুষের জীবন খুবই বিচিত্র জিনিস মন্তি। তোমার মত সহজ সরল একটা মেয়ে এ’সব হয়ত ভাবতেও পারবে না। কিন্তু সারা পৃথিবীতেই এমন স্ত্রী বা গৃহবধূর অভাব নেই, যাদের দেহের যৌবন বা শরীরের ক্ষিদে এখনও ফুরিয়ে যায়নি, কিন্তু তাদের স্বামীদের শরীরে বয়সের প্রভাবেই হোক বা অন্য যে কোন কারনেই হোক, তেমন যৌন ক্ষুধা থাকে না। তাই তারা আর আগের মত নিজেদের স্ত্রীদের প্রতি সেক্সুয়ালি এট্রাক্টেড থাকে না। ক্ষেত্র বিশেষে কারন আলাদা আলাদা হলেও, সন্তানরা বড় হয়ে গেলেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সেক্স রিলেশান আর আগের মত থাকে না। কিন্তু এদের মধ্যে প্রায় নাইনটি পার্সেন্ট মহিলার মধ্যেই শারিরীক ক্ষুধা থেকেই যায়। কারো কারো ক্ষেত্রে তো এ ক্ষুধা আগের চেয়েও বেশী হয়ে থাকে। তখন এমন পয়সাওয়ালা মহিলারা অনেকেই তাদের পছন্দের নানা বয়সের ছেলে ছোকড়া বা পুরুষের সাহায্যে নিজেদের যৌনক্ষুধা মেটাতে চায়। এখন ধরো এমনই একজন মহিলা, যার বয়স ধরো পঁয়তাল্লিশ থেকে পঞ্চাশ বছরের ভেতর, সে আমার কাছে একজন মেল এসকর্ট চাইল, যার শরীর স্বাস্থ্য ভাল হবে, অবিবাহিত, আর বয়স হবে কুড়ি থেকে পঁচিশের মধ্যে। আর তার জন্যে সে আমাকে ধরো কুড়ি হাজার টাকা দেবে। আবার আরেকদিকে একটা বাইশ তেইশ বছর বয়সী ভাল স্বাস্থ্যের এক অবিবাহিত পুরুষ আমার কাছে এমন একজন ফিমেল এসকর্ট চাইল, যার বয়স হতে হবে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশের মধ্যে। আর অন্যান্য স্পেসিফিকেশনগুলোও আমাকে বুঝিয়ে দিল যে অমন একজন মহিলাকে পেলে সে আমাকে কুড়ি হাজার দেবে। তখন আমি যদি দেখি ওই ছেলেটি যা চাইছে তা ওই মহিলার মধ্যে আছে। আবার মহিলাটিও যেমনটি চাইছে, ছেলেটি সে রকমেরই, তাহলে আমি তাদের দু’জনের মধ্যেই ডিলটা করে ফেলি। তখন এক ডীলেই আমি দু’তরফ থেকে মোট চল্লিশ হাজার টাকা পেয়ে যাচ্ছি। আর আমার এজন্সীর এসকর্টদের আমাকে যে কমিশন বা শেয়ার দিতে হয়, সেটাও আমাকে দিতে হয় না। তাই এমন ক্ষেত্রে আমার ইনকাম দ্বিগুণের চেয়েও বেশী হয় কখনো কখনো। ডাবল ইনকাম মানে এটাই। তবে ব্যবসা ছেড়ে দিলে এদের কাউকে নিয়ে আমাকে আলাদা ভাবে কিছু ভাববার দরকার নেই। তারা তাদের প্রয়োজন আগের মতই মিটিয়ে যেতে পারবে। শুধু মেডিয়েটর হিসেবে আমিই তাদের ডিলটায় থাকব না। তারা অন্য এজেন্সীর মাধ্যমেই সেটা করতে পারবে। আমার চিন্তা শুধু ওই আটচল্লিশ জন অসহায় নিরুপায় মেয়েগুলোকে নিয়েই”।
সীমন্তিনী এবার বলল, “এবার ব্যাপারটা বুঝলুম। কিন্তু বৌদি, তুমি যদি এ ব্যবসাটা ছেড়ে দেবার ব্যাপারে সত্যিই সিরিয়াস হও, তাহলে আমি কিন্তু তোমাকে একটা পরামর্শ দিতে পারি”।
মহিমা বেশ ব্যগ্রভাবে জিজ্ঞেস করল, “কী পরামর্শ মন্তি? বলো বলো”।
সীমন্তিনী ধীরে সুস্থে বলল, “দ্যাখো বৌদি, তুমি যদি ব্যবসাটা সত্যিই ছেড়ে দিতে চাও, আর তার পাশাপাশি অসৎ ব্যবসায় কামানো তোমার ব্যাঙ্কে জমানো টাকা গুলোও ভাল কাজে খরচ করতে চাও, তাহলে একটা ভাল পরামর্শ তোমাকে আমি দিতে পারি”।
মহিমা খুব খুশী আর আগ্রহের সাথে বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ মন্তি, আমি তো তোমাকে আগেই বললাম যে ওই টাকাগুলো নিয়ে আমি কী করব, সেটাও বুঝতে পাচ্ছি না। আমি ব্যবসার সাথে সাথে ওই টাকাগুলোও ছেড়ে দিতে রাজি আছি। কিচ্ছু চাই না আমার। শুধু আমার মেয়েগুলোকে যদি কোন বিপদের মুখে ফেলতে না হয় তাহলেই আমি খুশী। তুমি প্লীজ বলো না, কী তোমার সাজেশান”?
সীমন্তিনী শান্ত ভাবেই বলল, “বৌদি শোনো। তুমি তো ওই আটচল্লিশ জন মেয়ে মহিলার কথা ভেবেই কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছ না, তাই না? আমি তোমার কথাই মেনে নিচ্ছি যে ওরা কেউ সৎপথে থেকে পয়সা উপার্জন করতে পারেনি, তাই তোমার ব্যবসায় যোগ দিয়েছিল। আর আমার মনে হয় চাকরি বাকরি না পেলেও ওদের হাতে যদি তখন টাকাপয়সা থাকত, তাহলে নিজেরাই ছোটখাটো ব্যবসা ট্যবসা করে সৎপথে উপার্জন করতে পারত। হ্যাঁ, এটা মানছি যে, তাদের যতটুকু প্রয়োজন ছিল, ততটুকু উপার্জন হয়ত তারা করতে পারত না। কিন্তু এখন তুমি তো তাদের পরামর্শ দিতে পার, যে তারা এ কাজ ছেড়ে দিয়ে ভাল পথে নিজেরাই কোন ব্যবসা শুরু করুক। যে যেটা করতে চায়, তাই করুক। আর মেয়েরা তো খুব বেশী পড়াশোনা না জানলেও ডিজাইনিং, টেলারিং, বুটিক, বিউটি পার্লার, কসমেটিক্সের ব্যবসা, বিভিন্ন ধরণের কুটীরশিল্প, গারমেন্টসের ব্যবসা, আর্ট কলেজ, ঘরোয়া পদ্ধতিতে রান্নার মশলা বানানো এবং আরও কত কত কাজ করছে। আর যারা কিছুটা বেশী লেখাপড়া করেছে তারাও নানা ধরণের কাজ করতে পারে। প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছা আর সুযোগের। আর সুযোগ হচ্ছে ব্যবসা শুরু করবার একটা জায়গা আর মূলধন। কিন্তু সবার আগে দরকার তাদের নিজেদের মনে ভাল ভাবে ভাল কাজ করে বেঁচে থাকার ইচ্ছেটা। সেটা থাকলে আর সব বাঁধাই তারা কাটিয়ে উঠতে পারবে তোমার সাহায্যে”।
মহিমা সীমন্তিনীর কথা শুনে বলল, “হ্যাঁ তা অবশ্য ঠিকই বলেছ তুমি মন্তি। আজকাল মেয়েরা তো সব ক্ষেত্রেই কাজে নামছে। এদেরকেও একটু সাপোর্ট দিলে মনে হয় এরাও সকলেও কিছু না কিছু করে খেতে পারবে। তবে মনে মনে ভালভাবে থাকতে পারার ইচ্ছে কিংবা সৎপথে বাঁচবার ইচ্ছে কিন্তু এদের সবার মনেই আছে। কিন্তু মন্তি, ব্যবসা শুরু করবার মূলধন তারা কোথায় পাবে? ওরা একেকজন মাসে প্রায় একলাখের মত উপার্জন করে। তা থেকে নিজেদের এবং সংসারের সমস্ত প্রয়োজন মিটিয়ে কেউ কেউ হয়ত কিছুটা সেভিংসও করতে পারে। তবু নতুন একটা ব্যবসা খুলতে গেলে যত টাকার প্রয়োজন হতে পারে তত টাকা ওরা নিশ্চয়ই সঞ্চয় করতে পারে নি। অবশ্য সব ব্যবসাতেই যে শুরুতেই কোটি কোটি টাকা ইনভেস্ট করতে হয়, তাও তো নয়। কম মূলধন নিয়েও অনেক ধরণের ছোটখাটো কাজ শুরু করাই যায়। তবে নতুন একটা ব্যবসা খুলে বসলেই যে তারা সাকসেসফুল হবে সেটাও তো ধরে নেওয়া যায় না। ব্যবসা করতে হলে ব্যবসার টেকনিকের সাথে সাথে নিজেদের স্কিল আর পরিশ্রমেরও প্রয়োজন হয়। তবে মনের ভেতর অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকলে স্কিল আর টেকনিকও তারা কিছুদিনের মধ্যেই বুঝে বা শিখে উঠতে পারবে। আর নতুন একটা ব্যবসা খুললেই যে শুরু থেকেই সংসারের খরচ তারা মেটাতে পারবে, তাও নয়। একটা ব্যবসা দাঁড় করাতে গেলে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন হয়। অন্ততঃ ছ’টা মাস সময় তো লাগতেই পারে। এই ছ’টা মাস তারা যদি সংসারের খরচ জুগিয়ে উঠতে পারে, তবে পরের দিনগুলোর জন্যে আর ভাবতে হবে না। কিন্তু প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে তাদের মূলধন”।
সীমন্তিনী একটু হেসে বলল, “না বৌদি, আমি মনে করি, প্রথম ব্যাপারটা হচ্ছে সৎপথে থেকে ভাল কোন কাজ করবার মনের ইচ্ছা। নিজেদের মনের ভেতর সে তাগিদটা থাকতে হবে। আর মূলধন নিয়ে তাদের যে ভাবনা হবে, সে ভাবনার সমাধান তো তুমিই করে দিতে পার। তোমার ব্যাঙ্কে পড়ে থাকা টাকা থেকেই তুমি নাহয় তাদের মূলধনের যোগান দেবে। এতে করে একদিকে তোমার অসৎ উপায়ে কামানো টাকার যেমন সদ্ব্যবহার হবে, তেমনি অন্যদিকে মেয়েগুলো সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসে সমাজের সেবাও করতে পারবে। সমাজে মুখ উঁচু করে তারা চলতে ফিরতে পারবে। তবে তোমাকেও কিন্তু মনটাকে একটু শক্ত করতে হবে। শুধু ইমোশনালি সব কিছু ভাবলে হবে না”।
মহিমা বলল, “হ্যাঁ, তাই তো! এটা তো তুমি খুব সুন্দর একটা কথা বলেছ মন্তি! ব্যবসা শুরু করবার জন্য তাদের প্রত্যেককে দু’চার লাখ করে টাকা আমি দিতেই পারি। যাদের মূলধন একটু বেশী দরকার পড়বে, তাদেরকেও হয়ত আমি সাহায্য করতে পারব। আর সে টাকা তাদেরকে নয় সাহায্য হিসেবেই দেব আমি। কারো কাছ থেকে আমি সে টাকা আর ফিরিয়ে নিতে চাইব না কোনদিন। এভাবে আমি তো কখনও ভাবিই নি। ওদের ব্যবসার মূলধন যোগাবার মত যথেষ্ট টাকা তো আমার হাতেই আছে। যে টাকাগুলো ডিসপোজ করবার ব্যাপারে আমি কোন রাস্তাই খুঁজে পাচ্ছিলাম না, সে রাস্তাও পাওয়া গেল। কিন্তু আবার আমাকে মানসিক ভাবে শক্ত হবার কথা কেন বলছ তুমি বোন”?
সীমন্তিনী একটু হেসে বলল, “বৌদি, পৃথিবীতে যত লোক আছে, তাদের সকলেরই মানসিকতা এক রকমের হয় না তো? একেক জনের চিন্তা ভাবনা, ধ্যান ধারণা একেক রকমের হয়। তুমিই তো বললে, যে তারা একেকজন তোমার ব্যবসায় নেমে মাসে মাসে একলক্ষের মত টাকা কামায়। কিন্তু সৎপথে ছোটখাটো ব্যবসা করে তারা তো আর একলক্ষ টাকা মাসে উপার্জন করতে পারবে না। তাদের মাসিক আর্থিক আয় হয়ত দশ হাজার থেকে পনের হাজারের মধ্যে থাকবে। এ আয়েও কলকাতা শহরে একটা ছোট পরিবারের দিন সংকুলান হয়ে যেতে পারে। কিন্তু তাদের আয় তো অনেকটাই কমে যাচ্ছে। এটা তারা সবাই মেনে নিতে পারবে না হয়ত। তাই তোমার প্রস্তাবে তারা হয়ত অনেকেই রাজি হতে চাইবে না। তুমি তাদের সৎপথে চলার উপদেশ দিলেও তারা সকলেই যে তোমার উপদেশ মেনে নেবে, এতোটা কিন্তু আশা করো না তুমি। তুমি মনে মনে শুধু এ ভাবনা নিয়েই খুশী থাকতে চেষ্টা করবে যে ওই আটচল্লিশজন মেয়েকে তুমি সৎপথে চালাবার প্রয়াস করেছিলে। তোমার প্রয়াসকে যথাযথ সম্মান জানিয়ে কেউ যদি সত্যিই এভাবে ভাল পথে চলতে পারে, তবে তোমার প্রয়াস সার্থক হবার পাশাপাশি তারা নিজেরাও সমাজে ভালভাবে প্রতিষ্ঠা পাবে। আর এটা পুরোপুরি নির্ভর করবে তাদের ওপরেই। অন্ধকার জগত ছেড়ে আলোয় ফিরে আসবার মরিয়া ইচ্ছে তাদের মধ্যে থাকলে, তারা নিশ্চয়ই তাতে সফল হবে। কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ যদি তোমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে তোমার কাছ থেকে অর্থসাহায্য নিয়েও ভালভাবে চলতে না চায়, বা না পারে, তাহলে তুমি মনে দুঃখ পাবে। আর সেজন্যেই তোমার মনকে শক্ত করবার কথা বলছি। তোমাকে শুধু এ সান্ত্বনা নিয়েই থাকতে হবে যে তুমি তাদের ভাল পথে ফিরিয়ে আনবার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলে। তারা কেউ সত্যি সৎপথে ফিরে এল কি এলনা, তা নিয়ে তুমি কখনও ভাববে না। জানো তো, গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কী বলেছেন। তিনি বলেছেন “কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন, মা কর্মফলহেতুর্ভুর্মা তে সঙ্গোহস্ত্বকর্মিণি”। এর মানেটা জানো? এর মানে হচ্ছে, স্বধর্ম বিহিত কর্মে তোমার অধিকার আছে, কিন্তু কোন কর্মফলে তোমার অধিকার নেই। কখনও নিজেকে কর্মফলের হেতু বলে ভেবো না এবং কখনও স্বধর্ম আচরণ না করার প্রতিও আসক্ত হয়ো না। সোজা কথায় বলা যায়, কোন কাজের ফলের কথা না ভেবে সকলকে নিজের ধর্ম অনুসরন করে কাজ করে চলা উচিৎ। কাজটা করার দায়িত্ব যার যার, কিন্তু সে কাজের ফল কারুর ভোগ করতে চাওয়া উচিৎ নয়। কাজটা যে সে করেছে, এই তৃপ্তি নিয়েই সবাইকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। তাই বলছি, কেউ যদি তোমার এতটা সাহায্যের পরেও এমন দেহব্যবসা করেই যেতে চায় বা করে যায়, তাহলে তখন তোমাকে ভেবে নিতে হবে যে তাদের মনে সদিচ্ছার অভাব ছিল। তখন তারা তাদের জীবন নিয়ে কী করবে না করবে সেটা সম্পূর্ণভাবে তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। বেশী টাকা উপার্জনের লোভে তারা অন্য কোন প্রোভাইডারের কাছেও যেতে পারে, বা নিজেরাই আলাদা ভাবে এ পাপ ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারে। সেটা তো আর তুমি আটকাতে পারবে না। তবে সে’সব কথা জানতে পারলে তুমি দুঃখ পাবে। তাই তোমার মনকে শক্ত করে তুলতেই হবে। তুমি যে একটা ভাল প্রয়াস করেছিলে সেটা ভেবেই তোমাকে খুশী থাকতে হবে। বাকিটা নির্ভর করবে তাদের সদিচ্ছা আর প্রয়াসের ওপর”।
মহিমা সীমন্তিনীর কথার সত্যতা উপলব্ধি করতে পেরে বলল, “হ্যাঁ, এটাও তো তুমি ঠিকই বলেছ মন্তি। এতদিন তারা আমার কথামত চলেছে, তার কারন তারা জানত যে আমার কথামত চললেই তাদের আর্থিক লাভ হবে। কিন্তু ব্যবসা বন্ধ করে তাদেরকে আমার কাজ থেকে ছাড়িয়ে দিলে, প্রাথমিক অর্থ সাহায্যটা নিতে কেউই হয়ত আপত্তি করবে না। কিন্তু সৎপথে থেকে মাসে মাসে এক দেড় লাখ টাকা কামানো তো একেবারেই সম্ভব হবে না। তাই আমার দেওয়া টাকাটা তারা অন্য কোনভাবে ইনভেস্ট করে বা খরচ করে উড়িয়ে দিয়ে আগের মতই তারা আবার এমন ব্যবসায় নামতেই পারে। তখন কি আর তাদের আমি কোন বাঁধা দিতে পারব? না একেবারেই না। তুমি ঠিক বলছ মন্তি। আমাকে শুধু আমি কী করতে চেয়েছিলাম, বা কী করেছি, সেটা নিয়েই শুধু সন্তুষ্ট থাকতে হবে। ওরা সকলেই যদি আমরা যেভাবে চাইছি সেভাবে ভবিষ্যৎটা কাটিয়ে দিতে পারে, তাহলে আমার খুশীর সীমা থাকবে না। তবে কেউ যদি তা না করে আবার ওই অসামাজিক পথেই ফিরে যেতে চায়, তখন কষ্ট তো আমার হবেই। কিন্তু আমার তো আর কিছু করার থাকবে না। যারা ভালভাবে বাঁচতে চেষ্টা করবে তাদের ব্যবসার মূলধন কোনভাবে কমে গেলেও, আমি পরেও হয়ত তাদের কিছু আর্থিক সাহায্য করতে পারব। কিন্তু যারা মন থেকে সেটা চাইবেই না, তাদের আমি কী করে সৎপথে ফিরিয়ে আনব। তাই তোমার কথা মানা ছাড়া আমার সামনে আর দ্বিতীয় কোন পথ খোলা নেই। আমি তোমার সাজেশন মতই কাজ করব মন্তি। এ পাপের ব্যবসা করতে করতে আমি সত্যি এখন হাঁপিয়ে উঠেছি গো। আর ভাল লাগছে না। এবার আমাকে ওই নোংড়ার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে। তুমি সত্যি আমার বড় উপকার করলে গো ভাই”।
সীমন্তিনী বলল, “আমি শুধু তোমাকে একটা পরামর্শ দিলুম বৌদি। তুমি এতদিন ধরে এ ব্যবসা চালিয়ে গেলেও, এখন তুমি মনে মনে কিছুটা অনুতপ্ত। ভাল পথে ফিরে আসতে চাইছ বলেই তোমাকে এমন পরামর্শ আমি দিচ্ছি। এখন তুমি ঠাণ্ডা মাথায় আমার কথাগুলো ভাল করে ভেবে দেখ। তারপর সিদ্ধান্ত নিও”।
এমন সময় মহিমা প্রায় হঠাতই বলল, “আচ্ছা মন্তি, ভাইও তো একটা স্বপ্ন নিয়ে এখানে এসেছিল। কিন্তু সেটা পূরণ হবার আগেই বলতে গেলে ভেঙে গিয়েছিল। আজ ওর হাতে আর যোগা ইনস্টিটিউট তৈরী করবার মত ফান্ড নেই। একটা ভাল দেখে কমপ্লেক্স ভাড়া নিতেই তো তিন চার লাখ টাকা লেগে যাবে। তারপর সেন্টারটা ভালভাবে সেটআপ করতে গেলে আরও লাখ দুয়েকের মত খরচা পড়বে। তাই কম করেও পাঁচ লাখ টাকার প্রয়োজন তো পড়বেই ওর। আচ্ছা আমি যদি ওকে সাহায্য করি? মানে, আমার হাতে তো প্রচুর টাকা আছে। ওর সেন্টারটা পুরোপুরিভাবে সেটআপ করতে যত টাকার দরকার হয়, তার সবটাই যদি আমি ওকে দিয়ে দিই”?
সীমন্তিনী মনে মনে একটু চমকে উঠলেও স্বর শান্ত রেখেই জবাব দিল, “তুমি তোমার ইনস্টিটিউট থেকে দাদাভাইকে ছেড়ে দেবে বৌদি”?
মহিমা যেন একটু কষ্টের হাসির সাথে বলল, “ওকে আর রচনাকে তো আমি সারা জীবন আমার পাশে পেতে চাই বোন। রতীশ আমার ইনস্টিটিউটে জয়েন করবার পর থেকে আমার এখানে ট্রেনী সংখ্যা অনেক বেড়েছে। আর সেই সাথে সাথে বেড়েছে আমার আয়ও। এখন তো আমার তিনটে সেকশনে আর কোন জায়গাই নেই নতুন ট্রেনী নেবার। এ সপ্তাহেই দু’ তিন জনকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছি। আর এটাও জানি যে রতীশ আমার ইনস্টিটিউট ছেড়ে দিলে আমাদের ট্রেনীর সংখ্যাও কমে যাবে। আর্থিক ক্ষতিও হবে। তবু আমি চাই, ওর স্বপ্নটা পূরণ হোক। আর ওর স্বপ্নপূরণে আমি যতভাবে সম্ভব সাহায্য করব”।
সীমন্তিনী এবার আরও মিষ্টি করে বলল, “বৌদি, দাদাভাইকে নিয়ে এখনই তোমাকে কিছু ভাবতে হবে না। আর শোনো, দাদাভাইয়ের দু’লাখ টাকা লুট হয়ে গেলেও, পুলিশ ওই লোকগুলোকে ধরতে পেরেছে। আর তাদের কাছ থেকে টাকাটাও উদ্ধার করেছে। তবে বৌদি, দাদাভাইকে আমিই বলেছি যে সে যেন এখনই তোমার ইনস্টিটিউট ছেড়ে না দেয়। অন্ততঃ আরও দু’তিন মাস যেন ও তোমার ওখানেই কাজ করে। ওর চরম দুঃসময়ে তুমি যেভাবে ওর পাশে দাঁড়িয়েছিলে, তাতে করে এখনই যদি ও তোমার ওখান থেকে সরে আসে, তাহলে সেটা খুবই স্বার্থপরতা দেখানো হয়ে যাবে। তবে আমি তো আমার দাদাভাইকে নিজের চাইতেও বেশী চিনি। তাই আমি জানি দাদাভাই এমন কিছু করবার আগে তোমার সাথে কথা বলে তোমার পরামর্শ আর আশীর্বাদ নিয়েই তার নিজের যোগা সেন্টার খুলবার ব্যাপারে ভাববে। তুমি দাদাভাইকে আর রচুকে এত ভালবাস। রচুর বিপদের কথা জানতে পেরেই ছটফট করছ। তোমার মত হিতৈষী কলকাতায় আর কে আছে ওদের? তাই আমি চাই, ও তোমার ওখানে আরও দু’তিন মাস কাজ করুক। আর ওর নতুন সেন্টার শুরু করতে যে টাকার দরকার তা তো আমাদের হাতেই আছে। তবে তোমার কাছ থেকে এ ব্যাপারে টাকা না নিলেও, আমি চাইব, তুমি তোমার অভিজ্ঞতা দিয়ে ওকে সবরকম ভাবে সাহায্য করো। যোগা সেন্টারটা শুরু করতে কি কি করা দরকার তার সবকিছু ভালভাবে বুঝিয়ে দিও। তাহলেই আমি খুশী হব। আর ততদিনে আশা করি রচনার বিপদটাও কেটে যাবে। আর তুমিও তোমার মনের গ্লানি ঝেড়ে ফেলে দিয়ে খুশী মনে থাকতে শুরু করবে। কে জানে, ভগবান চাইলে ওই বিমলের হাত থেকেও মুক্তি পেয়ে যেতে পার। তবে তোমার ভালবাসা থেকে দাদাভাই আর রচুকে বঞ্চিত করো না। সবসময় পরম হিতৈষীর মত তুমি ওদের পাশে থেক। আমি এতদুরে থেকেও মনে মনে এ সান্ত্বনা নিয়ে খুশী থাকব যে আমার দাদাভাই আর রচু ওখানে একেবারে নিঃসঙ্গ নয়। তুমি দিদি হয়ে, বৌদি হয়ে আছ ওদের পাশে সব সময়। এ’টুকু সাহায্য করো তুমি ওদের”।
মহিমা এবার ভারী গলায় বলল, “মন্তি বোন আমার। তোমার সব কথা আমি রাখব ভাই। কথা দিচ্ছি তোমাকে। কিন্তু আমাকে এমন একটা পাপের রাস্তা থেকে সরিয়ে আনতে তুমি যেভাবে আমাকে পরামর্শ দিলে, সেভাবে যদি সত্যিই আমি এ পথ থেকে বেরিয়ে আসতে পারি, তাহলে তার জন্য আমি সারাজীবন তোমার কাছেও কৃতজ্ঞ থাকব ভাই। তবে একটা কথা আমি তোমাকে আজ দিচ্ছি। আমার চেষ্টার কোন ত্রুটি থাকবে না। কিন্তু জানো মন্তি? এই মূহুর্তে একবার তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে গো আমার। কিন্তু রচনার ওপর থেকে বিপদটা সরে না যাওয়া অব্দি আমি কিছুতেই যে কলকাতা থেকে বেরোতে পারব না ভাই। তাই বলছি, তুমি আর একবার এখানে এসো না ভাই। একবার তোমার মুখটা আমাকে দেখতে দাও”।
সীমন্তিনী মনে মনে আশ্বস্ত হয়ে বলল, “আসব বৌদি, নিশ্চয়ই আসব। রচুর মুখে শুনেছি তুমি খুব সুন্দরী দেখতে। এমন সুন্দরী বৌদিকে দেখার লোভ যে আমার মনেও আছে গো। তবে বৌদি, অফিস থেকে ছুটি পাওয়াটাই খুব সমস্যার ব্যাপার গো। তবে দেখি, সময় সুযোগ হলেই আমি একবার কলকাতা যাব। তবে আমি চাই যে তোমার সাথে আমার দেখা হবার আগেই তুমি যেন ওই পথ থেকে বেরিয়ে আসতে পার পুরোপুরি। আমার কাছ থেকে এ ব্যাপারে বা অন্য যে কোন ব্যাপারে পরামর্শ চাইলে বা কথা বলতে চাইলে, যে কোনদিন রাত এগারোটার পর আমাকে ফোন করো। তবে তোমার এজেন্সী ভেঙে দেবার ব্যাপারটা যত তাড়াতাড়ি সেরে ফেলতে পার ততই মঙ্গল”।
মহিমা এবার আরও ভারী গলায় বলল, “জানো মন্তি। বলতে গেলে খুব ছোটবেলা থেকেই আমি বিপথে চলে গিয়েছিলাম। আমার পরিবারের লোকেরাও সে’সব কথা জানত। কিন্তু আমাকে ভালো পথে ফিরিয়ে আনতে তারা কেউ কখনো চেষ্টা করেনি। তবে অরিন্দমের ভালবাসাতেই আমি সেই সময় নিজেকে বিপথ থেকে সরিয়ে আনতে পেরেছিলাম। কলকাতা আসবার পর কয়েকটা বছর সুখেই ছিলাম। কিন্তু নতুন করে বিপথে গেলাম ছেলেমেয়ে বড় হয়ে ওঠার পর। স্বামীর কাছে সম্পূর্ণভাবে গোপন রেখে আমি আবার নতুন করে দেহব্যবসায় নেমেছিলাম। কিন্তু রাতে স্বামীর পাশে শুয়ে সতী স্ত্রীর অভিনয় করতে করতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। আজ জীবনে প্রথমবার আমার জীবনে এমন কেউ এল যে আমাকে সৎপথে ফিরিয়ে আনতে চাইছে। তোমার পরামর্শ সত্যিই খুব ভাল। আমি তোমার কথামতই সবকিছু করবার চেষ্টা করব। নিজে পাপপথ থেকে বেরিয়ে আসবার পাশাপাশি আমার সঙ্গের মেয়েগুলোকেও সে’পথ থেকে সরিয়ে আনবার চেষ্টা করব। কিন্তু তুমি যেমন আমাকে অনুরোধ করলে রতীশ আর রচনার পাশে থাকতে, তেমনি আমিও তোমাকে সারাটা জীবন আমার পাশে আমার একজন হিতৈষী হয়ে থাকতে অনুরোধ করব। আমার এ অনুরোধটা রেখো ভাই, প্লীজ”।
সীমন্তিনী তাকে আশ্বস্ত করে বলল, “অবশ্যই থাকব বৌদি। তবে তোমাকে কিন্তু ওই পথ থেকে সরে আসতেই হবে। আর যতদিন না তুমি ও’পথ থেকে সরে আসছ, ততদিন কিন্তু আমাদের দেখা হবে না। এ’কথাটা মাথায় রেখেই যেভাবে যা করবার করো, কেমন? আচ্ছা বৌদি, কথায় কথায় অনেক রাত হয়ে গেল গো। আজ রাখছি, কেমন? ভাল থেক। আর ভাল চিন্তা করো। গুডনাইট”।
পরের দিন সকালেই অফিসে গিয়েই সীমন্তিনী পরিতোষকে ফোন করে বিমলের ফার্ম হাউসের চেম্বার আর মহিমার কাছ থেকে গত রাতে যা যা জানতে পেরেছে, তার সব কিছু খুলে বলল। বিমলের ফার্ম হাউসের ওই গোপন চেম্বার আর সেফ খোলার পদ্ধতি শুনে পরিতোষ ঠাট্টা করার ভঙ্গীমায় বলল, “মুন ডার্লিং, আমি যদি আজ এ দেশের রাষ্ট্রপতি হতাম, তাহলে তুমি অবশ্যই একটা রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেতে”।
******************
______________________________
•
Posts: 577
Threads: 3
Likes Received: 797 in 298 posts
Likes Given: 364
Joined: Feb 2019
Reputation:
64
(Update No. 170)
বিকি সন্ধ্যের আগেই বাড়ি ফিরে তার মা বাড়ি নেই দেখে একটু হতাশ হল। সে ভেবেছিল আজ বাড়ি ফিরে সন্ধ্যেটা সে তার মাম্মির সাথেই কাটাবে। মাম্মির সান্নিধ্য তার বড় ভাল লাগে। রাকার মাম্মি বিনীতা আন্টি, গুরজিতের মাম্মি সিমরন আন্টি, শমিতের মাম্মি আনারা আন্টি, আয়ানের মাম্মি অঞ্জলী আন্টি, পুষ্পকের মাম্মি পল্লবী আন্টি, শিবার মাম্মি শিল্পা আন্টি আর সুপার সেক্সী কামিনী আন্টি, এদের সকলকেই সে চুটিয়ে উপভোগ করে। সুখও পায় খুব। কিন্তু নিজের মাম্মির সাথে সেক্স করে সে যত সুখ পায় এতটা সুখ যেন কেউ তাকে দিতে পারে না।
নিজের ঘরে ঢুকে বইয়ের ব্যাগটা টেবিলের ওপর রেখেই সে তার পকেট থেকে মোবাইল বের করে তার মাম্মিকে ফোন করল।
কয়েকবার রিং হবার পর সবিতার সাড়া পেতেই বিকি বলল, “মাম্মি, কোথায় তুমি”?
সবিতা ও’পাশ থেকে বলল, “বেটা, আমি তো একটু আগেই হোটেলে এসেছি। তুই কোথায় আছিস”?
বিকি আদুরে অথচ হতাশ গলায় বলল, “ও মাম্মি, তুমি আজ এত তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গিয়েছ কেন বল তো। আমি তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরে এসেছি। গত দু’দিন তোমাকে কাছে পাইনি। আজ ভেবেছিলাম বাড়ি এসেই তোমাকে আমার ঘরে ডেকে নেব। কিন্তু এসে দেখি তুমি নেই। এখন আমি কি করি বলো তো”?
সবিতা আফসোশের সুরে বলল, “ইশ, বেটা, আমি তো সেটা বুঝতে পারিনি রে। তুই তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসবি জানলে আমি কি আর বেরিয়ে আসতাম? তুই জানিস না? তুই আমার কাছে থাকলে আর কিছুই আমি চাই না। গত দু’দিন তুই দেরী করে বাড়ি ফিরেছিস। তোর জন্যে অপেক্ষা করে করেও তোকে পাইনি আমি। আর তোর অপেক্ষা করতে করতেই আমি হোটেলেও আসতে পারিনি। দুটো দিন পুরো বেকার গেছে আমার। আজও তো আমি ভেবেছিলাম, তুই হয়তো আজও তোর কোন বন্ধুর মাম্মির সাথেই সন্ধ্যেটা কাটিয়ে ফিরবি। কিন্তু তুই যদি বাড়ি চলে আসবি বলেই ভেবেছিলি, তাহলে আমাকে আগে একটা ফোন করে দিলি না কেন বেটা? তোর ফোন পেলে আমি কি আর বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতাম, বল”?
বিকি নিজের ভুল বুঝতে পেরে বলল, “হাঁ মাম্মি, সেটা আমার ভুল হয়ে গেছে সত্যিই। কিন্তু এখন আমি কি করব বলো তো? পরশু বিনীতা আন্টির কাছে গিয়েছিলাম আর কাল পল্লবী অ্যান্টি আর অঞ্জলী অ্যান্টি দু’জনেই একসাথে আমার সাথে থ্রিসাম করতে চেয়েছিল। আমি তো তোমাকে সে’সব কথা বলেছি মাম্মি। আজও আনারা অ্যান্টি যেতে বলেছিল। কিন্তু দু’দিন তোমার সাথে কিছু করিনি বলে আমি আজ আর তার কাছে যাইনি। ভেবেছিলাম তোমার সাথে অন্ততঃ ঘন্টা দুয়েক সময় কাটাব আজ। কিন্তু এসে দেখি তুমিই বাড়ীতে নেই। ও’দিকে কাল আবার সিমরন আন্টির সাথে প্রোগ্রাম আছে আমার। আচ্ছা তুমি কি এখন তোমার রুমে আছো না রেস্টুরেন্টে বসে আছো”?
সবিতা জবাব দিল, “বেটা আমি একটু বিজি আছিরে এখন। এই মিনিট দশেক আগেই আমার রুমে এসেছি। ম্যানেজার বাবু বলল আজ প্রভজোত আমার রুমে আসবে ছ’টার সময়। আর সাড়ে সাতটা থেকে এক ঘন্টার আরও একটা ডিল আছে। তুই তো জানিসই হোটেলের সাথে আমার কেমন চুক্তি করা আছে। প্রভজোতের অপেক্ষাই করছি আমি এখন। তারপর আবার আরেক জনের সাথে এক ঘন্টা কাটাতে হবে। এখন এই অ্যাপয়েন্টমেন্টগুলো ক্যানসেল করে কি করে ফিরে যাই বল তো বেটা”?
বিকি অধৈর্য হয়ে বলল, “ওঃ ভগবান, সবে দশ মিনিট হল তুমি তোমার রুমে ঢুকেছ? আর তোমার পার্টনারও এখনো আসেনি। আর তার পরেও সাড়ে আটটা পর্যন্ত তুমি আরেকজনের সাথে করবে! তার মানে তো নটার আগে আর তুমি হোটেল থেকে বেরোচ্ছ না”।
সবিতাও আফসোশের সুরে বলল, “হাঁ বেটা, আমি ঘরে ঢুকে এক পেগ হুইস্কি খাচ্ছি। প্রভজোত হয়তো এখনই এসে পড়বে। তারপরেও আরো একটা ডিল পুরো করে তবেই আমি এখান থেকে বেরোতে পারব। তাই সাড়ে আটটা পর্যন্ত আমি এখানে বুকড”।
বিকি এবার খানিকটা রেগেই বলল, “তাহলে আমি এখন কি করব, সেটাও বলে দাও। এখন কি আমি আবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাব? আর যাবই বা কোথায় এখন”?
সবিতা ছেলেকে শান্ত করবার প্রয়াস করে বলল, “বেটা তুইই তো বললি আনারা তোকে চাইছিল আজ। এই সময়টুকু না হয় তুই আনারার কাছেই কাটা আজ। তুই তো আনারাকেও করে খুব সুখ পাস। আমি দু’ঘন্টা পরেই বাড়ি আসছি, তখন তুইও চলে আসিস। তারপর আমাকে তোর যেভাবে খুশী যতক্ষণ খুশী করিস। প্লীজ বেটা, একটু বোঝার চেষ্টা কর। সবেমাত্র ডিল ফাইনাল করে রুমে এলাম। এখন কি আর কাউকে ফিরিয়ে দেওয়া যায়”?
বিকি অশান্ত গলায় বলল, “আরে আনারা আন্টিকে আমি মানা করে দেবার পর সে শিবাকে তার বাড়িতে ডেকে নিয়ে গেছে। আর শিবার সাথে কাউকে শেয়ার করতে আমার ভাল লাগে না। ধুর, ভাল লাগে না। আজকের সন্ধ্যাটাই মাটি হয়ে গেল আমার”।
এবার সবিতা বলল, “আরে সুন বেটা। কামিনী একটু আগে আমাকে ফোন করে তোর ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করছিল। ও তোকে চাইছিল। তুই একবার ওকে ফোন করে দ্যাখ। যদি ওকে পাস তাহলে এই দুটো ঘন্টা ওর সাথেই কাটিয়ে আয়। আর নইলে শিবার বাড়িতে গিয়ে শিল্পার সাথে কাটা। আমি সাড়ে আটটা নাগাদ বাড়ি চলে আসব। তুইও ও’রকম সময়ে বাড়ি চলে আসিস। তারপর আমরা মা-বেটা মস্তি করব”।
বিকি এবার আদুরে গলায় বলল, “আরে ড্যাডিই তো ন’টার সময় বাড়ি চলে আসবে। তাহলে আমরা আর কি করে .........”
বিকির কথার মাঝপথেই সবিতা বলল, “আরে না রে বেটা, তোর ড্যাডি আজ সারা রাতেও বাড়ি আসবে না। সেও একজনকে নিয়ে দক্ষিণেশ্বর গেছে। আজ রাত ফার্ম হাউসেই কাটাবে সে”।
বিকি এবার আনন্দে প্রায় চেঁচিয়ে উঠে বলল, “তার মানে, আজ সারা রাত আমি তোমার চুদাই করতে পারব”?
সবিতা শান্ত গলায় বলল, “হাঁ বেটা। এইজন্যেই তো বলছি, এখন আমাকে পাচ্ছিস না বলে মন খারাপ না করে দুটো ঘন্টা কামিনী বা শিল্পার সাথে কাটিয়ে আয়। তারপর বাড়ি ফিরে এলেই আমাকে পাবি তো। আমরা দু’জনে আজ রাত ভর চুদাই করব। বুঝেছিস”?
বিকি এবার খুশী গলায় বলল, “ওকে মাম্মি, তাহলে আমি কামিনী অ্যান্টির সাথে কন্টাক্ট করছি। দেখি ওকে পাওয়া যায় কিনা। কিন্তু মাম্মি, আজ আমার মনটা শুধু তোমাকেই চাইছে। কামিনী আন্টিও বুঝি আজ আমাকে ঠাণ্ডা করতে পারবে না। আই নীড ইউ ভেরি ব্যাডলি টুনাইট। তোমার জন্যে আজ আমি খুব হর্নি হয়ে আছি। তুমি সাড়ে আটটার ভেতর কিন্তু ডেফিনিটলি বাড়ি চলে আসবে”।
সবিতা বলল, “বেটা কেন অবুঝের মত কথা বলছিস তুই বল তো? সাড়ে আটটা পর্যন্ত তো আমি এখানে বিজিই থাকব। তারপর আমার পার্টনারকে বিদায় দিয়ে একটু ফ্রেশ না হয়েই কি আমি এখান থেকে বেরোতে পারব? তারপর গাড়ি নিয়ে যেতেও তো পন্দ্রহ বিস মিনিট লেগে যায়। তুই এ’সব জানিস না? তাই বাড়ি যেতে যেতে ন’টা তো বেজেই যাবে। আর তুই তো জানিসই, তোকে কাছে পেলে আমার আর কিছুই চাই না। আচ্ছা, সুন বেটা। দু’দিন তোর সাথে কিছু করতে না পেরে আমারও ভাল লাগছে না। তোর অন্য কোনও বন্ধুকে আজ আর ডাকিস না। আমি তোকে আজ একা পেতে চাই। ঠিক আছে”?
বিকি জবাব দিল, “না মাম্মি, আজ আমার বন্ধুরা কেউ আর ফ্রি নেই। তাই আমি আজ রাতে তোমাকে একাই করব। রাতভর। ওকে মাম্মি, ছাড়ছি তাহলে। কামিনী আন্টির কাছ থেকে ঘুরে আসছি, বাই”।
সবিতা “ঠিক আছে বেটা। আর সুন, কামিনীকে আমি আমাদের বাড়িতে আসতে বলেছিলাম। ওকে বলিস আমি কাল দুপুরে ওর জন্য অপেক্ষা করব। বাই বেটা, সি ইউ” বলে ফোন কেটে দিল।
ফোন কেটে বিকি কামিনীর নাম্বার ডায়াল করতেই ও’পাশ থেকে কামিনীর মিষ্টি গলা ভেসে এল, “হাই বিকি ডার্লিং, তোমার ফোন পেয়ে খুব ভাল লাগল। কেমন আছ, বল”?
বিকি একটু মন খারাপ করে জবাব দিল, “খুব ভাল নেই অ্যান্টি। গত দু’ তিন দিন মাম্মির জন্য সময় দিতে পারিনি। আজ তাই তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে এসেছিলাম। ভেবেছিলাম, মাম্মির সাথে সময় কাটাব। কিন্তু আমি বাড়ি ফিরবার আগেই মাম্মি চলে গেছে তার হোটেলে। ফোন করে জানলাম সে মাত্র দশ মিনিট আগে একজন কাস্টমারকে নিয়ে রুমে ঢুকেছে। সাড়ে আটটার আগে ছুটি পাচ্ছে না। তাই তোমাকে ফোন করলাম। তা তোমার খবর কি বলো তো? তুমি কি ব্যস্ত আছ? মাম্মি বলল তুমি নাকি আমাকে খুঁজছিলে”।
ও’পাশ থেকে কামিনী কামুক গলায় বলল, “হ্যাঁ, তোমার ফোনে লাইন না পেয়ে তোমার মাম্মিকে ফোন করেছিলাম। কিন্তু উনি তো বললেন তুমি গত কাল আর পরশু তোমার বন্ধুদের মায়েদের সাথে এনজয় করেছ। তোমার মাম্মি তোমাকে গত দু’দিন খুব মিস করছিলেন। তাই আজও তুমি তোমার মাম্মির কাছে আসবে না ভেবেই সে বেরিয়ে গেছে। আর যাবে না-ই বা কেন বলো? তুমি কি জাননা তোমার মাম্মির ক্ষিদে কতটা? বেচারী দু’দিন তোমার অপেক্ষায় থেকে থেকে ড্যাম হাংগ্রি হয়ে আছে। সে যে আর উপোষ করে থাকতে পারছিল না। তাই তো সে নিরুপায় হয়ে আজ হোটেলে গেছে। আজ ছ’টা থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত সে বুকড। আমিও তো তোমাকে খুব মিস করছি। তোমাকে পাবার পর থেকে আমি যে তোমার জন্যেই মুখিয়ে থাকি সব সময়। তুমি আমাকে যেমন সুখ দিয়েছ এমন সুখ আজ অব্দি কেউ দিতে পারেনি আমায়। আজও তোমার কথা ভেবে ভেবে আমার শরীরটা অস্থির হচ্ছে বারবার। আমার গোটা শরীরটা তোমাকে পাবার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। খুব ইচ্ছে করছিল তোমার কচি শরীরটাকে আমার বুকের ওপর পেতে। তাই তোমাকে ফোনে না পেয়ে তোমার মাম্মিকে ফোন করেছিলাম। কিন্তু শুনলাম তুমি তার সাথেও নেই। আর এখন তোমার ফোন পেয়ে আমার মন খুশী হলেও শরীরে আবার নতুন করে কষ্ট হচ্ছে। এই ডার্লিং, চলে এসো না। একটা ফোরসাম সেশন হয়ে যাক। অনেক দিন ধরে এমন করিনি। প্লীজ, এসো না ডার্লিং”।
বিকি একটু চিন্তিত ভাবে বলল, “ও তার মানে, এখন তুমি অন্য আরো দু’জনের সাথে আছ? কে তারা? আমি কি তাদের চিনি? আমার কোনও বন্ধু নাকি”?
কামিনী সেক্সী গলায় জবাব দিল, “না তা নয়। তুমি হয়ত তাদের চিনবে না। আসলে তোমাকে না পেয়ে আমি নিজেকে ঠাণ্ডা করবার জন্যে খানিক আগেই একটা ডিপি নেব বলে ওদের দু’জনকে ডেকে এনেছি। তোমার মত বয়সেরই। সে নিয়ে তুমি ভেব না। তুমি চলে এস। আমি তোমাদের তিনজনকে একসাথে খুশী করতে পারব। তুমি এলে অনেক দিন বাদে একটা ট্রিপল নিতে পারব। আর গ্যারান্টি দিচ্ছি, ইউ উইল এনজয় ইট”।
বিকি এবার একটু উত্তেজিত ভাবে জিজ্ঞেস করল, “সত্যি বলছ? তারা কেউ আপত্তি করবেনা তো আমার সাথে তোমাকে শেয়ার করতে”?
কামিনী প্রায় সাথে সাথে জবাব দিল, “নট অ্যাট অল বিকি নট অ্যাট অল। তারা কেউ আপত্তি করবে না। আর আপত্তি করবেই বা কেন? আমি তো তাদের কাউকে ফাঁকি দিচ্ছি না বা ইগনোর করছি না। তোমরা তিনজনেই সমান সুযোগ পাবে। আমার শরীরের তিনটে ফুটো একসঙ্গে তোমাদের তিনজনকে দিয়ে সবাইকে সমান আনন্দ দেব। তাই, আর সময় নষ্ট না করে চলে এস তাড়াতাড়ি। তবে আমি তোমার কাছে যে জিনিসগুলো আগে চেয়েছিলাম সে জিনিস গুলো সঙ্গে নিয়ে এস প্লীজ”।
বিকি ঠিক বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করল, “কোন জিনিস গুলোর কথা বলছ ডার্লিং? ওঃ, তুমি কি আমাদের গ্রুপ সেক্সের ভিডিওগুলোর কথা বলছ”?
কামিনী অভিমানী সুরে বলল, “তুমি ভুলে গেছ ডার্লিং? এই তুমি আমাকে ভালবাস? আরে তোমাদের বন্ধুদের গ্রুপ সেক্সের ভিডিও তো রাকেশ আমাকে অনেকগুলো দিয়েছে। আমি তো তোমার মাম্মির ভিডিও গুলো চেয়েছিলাম। তোমার মাম্মি আর তুমি, ওয়ান অন ওয়ান, সবিতার ডমিনেশন, তার গ্রুপ সেক্স, তার ডিপি, টিপি, গ্যাংব্যাং, এ সবই তো চেয়েছিলাম। আমার খুব ভাল লাগে আমার মত রিয়েল মিলফদের রিয়েল ভিডিও দেখতে। একা সময় গুলোতে আমি খুব দারুণ এনজয় করি ওগুলো। তুমি না বলেছিলে এমন ভিডিও তোমার স্টকে আছে প্রচুর। সেদিন কি বলেছিলে আমাকে তা সব ভুলে গেছ? আমি কিন্তু তোমার কাছ থেকে এমন ট্রিটমেন্ট আশা করিনি ডার্লিং”।
কামিনীর অভিমানী গলা শুনে বিকি বলল, “ওঃ কামিনী ডার্লিং। এক্সকিউজ মি। কথাটা আমার মনেই ছিল না। আসলে গত দু’ তিনদিন আমার বন্ধুদের মায়েদের সাথে পার্টি করতে করতে এ কথাটা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। তবে ডোন্ট ওরি ডার্লিং। তোমার জন্য আমি আটটা সিডি কপি করে রেখেছি। আর তাতে আমার মাম্মির সব রকম ভিডিওই আছে। কথাটা শুধু আমার মন থেকে হারিয়ে গিয়েছিল। থ্যাংক্স ফর রিমাইন্ডিং মি। আমি ও’গুলো নিয়েই আসছি। উইদিন ফিফটিন মিনিউটস ইউ উইল বি ইন মাই আর্মস। ওকে ডার্লিং”?
কামিনী এবার আরো সেক্সী গলায় বলল, “আই লাইক দ্যাট। কাম সুন মাই ডার্লিং। আই এম ডাইং টু বি ইন ইয়োর আর্মস টু, ডাইং টু হ্যাভ ইউ ইনসাইড মাই অল হোলস। অ্যান্ড ইউ নো? দেয়ার উইল বি লট মোর ফানস টুডে। প্লীজ কাম ফাস্ট ডার্লিং। আই এম ওয়েটিং ফর ইউ হাংগ্রিলী। বাই, উম্মমুয়াহ”।
বিকিও “বাই আন্টি, সি ইউ সুন, উম্মমুয়াহ” বলে ফোনের স্পীকারে একটা চুমু খেয়ে নিজের রুমের ড্রয়ারের ভেতর থেকে একটা মোটা প্যাকেট বের করে প্যাকেটের ভেতর থেকে আট দশটা সিডি বের করে দেখে সন্তুষ্ট হয়ে প্যাকেটটা হাতে নিয়ে ঝড়ের বেগে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
মিনিট খানেক বাদেই বিকির বাইক ঝড়ের গতিতে বাড়ির গ্যারেজ থেকে বেরিয়ে গেল। বিকি কব্জি ঘড়িতে সময় দেখল। ছ’টা বেজে কুড়ি মিনিট। মনে মনে আগামী দেড় দু’ঘন্টার সুন্দর স্বপ্ন দেখতে দেখতে ঘন্টায় ষাট কিমি গতিতে বাইক চালাতে লাগল।
*****************
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,994 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
দুর্দান্ত গল্প, এরকম বাস্তববাদী অ্যাডাল্ট রহস্য-এডভেঞ্চার গল্প খুব কমই দেখা যায়
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,994 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
পরের পর্ব পড়ার তর সইছে না আর
Posts: 577
Threads: 3
Likes Received: 797 in 298 posts
Likes Given: 364
Joined: Feb 2019
Reputation:
64
(Update No. 171)
এসপি অফিসে মিটিং শেষ হতে হতে বেলা একটা বেজে গেল। সীমন্তিনী অফিস থেকে বেরিয়েই তার সঙ্গে আসা সিকিউরিটি আর অন্যান্য অফিসারের খাওয়া দাওয়া হয়ে গেছে শুনেই সকলকে নিয়ে রওনা হল। আগেই ঠিক করা ছিল ফেরার পথে কালচিনি হয়ে ফিরবে। দেড়টার একটু আগেই বিধুবাবুর বাড়ির সামনে পুলিশের গাড়ি দুটো এসে দাঁড়াতেই সীমন্তিনী তাকিয়ে দেখল বিধুবাবুর দোকান বন্ধ। গাড়ি থেকে নামবার আগেই কিংশুক ছুটে এসে সীমন্তিনীকে জড়িয়ে ধরে বলল, “এতক্ষণে এলে দিদিভাই? তুমি আসবে বলে আমি আজ তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে এসেছি”।
সীমন্তিনী কিংশুকের মুখটা দু’হাতে ধরে তার কপালে একটা চুমু খেয়ে বলল, “মিটিং শেষ হবার পর একটা মিনিটও সময় নষ্ট করিনি রে ভাই। আমার ভাইটাকে কতক্ষণে দেখব এই ভেবেই মনটা ছটফট করছিল। তা ভাই, মেসো নেই নাকি? দোকান বন্ধ দেখছি যে”?
কিংশুক সীমন্তিনীর হাত ধরে বাড়ির ভেতর ঢুকতে ঢুকতে বলল, “বাবা বাড়িতেই আছেন দিদিভাই। স্নান টান সেরে তোমার সাথে বসে খাবেন বলে অপেক্ষা করছেন। ওই তো দেখ”।
গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই ঘরের বারান্দায় বিধুবাবুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। বিভাদেবীও ছুটে এসে বললেন, “এসেছিস মা? আয় আয়”।
সীমন্তিনী বিভাদেবী আর বিধুবাবুকে প্রণাম করে বলল, “ও মাসি, রান্না হয়ে গেছে তো? আমার কিন্তু বড্ড ক্ষিদে পেয়েছে গো”।
বিভাদেবী হেসে বললেন, “হ্যাঁরে, রান্না হয়ে গেছে। আমি বাথরুমে জল ভরে রেখে সাবান তোয়ালে সব রেখে এসেছি। তুই ঘরে গিয়ে কাপড়টা পাল্টে চট করে স্নানটা সেরে আয়। ততক্ষণে আমার থালা বাড়া হয়ে যাবে। যা যা”।
সীমন্তিনী আর কথা না বাড়িয়ে অর্চুর ঘরে ঢুকে নিজের পোশাক ছেড়ে অর্চুর একটা নাইটি পড়ে পেছনে কলঘরে চলে গেল। তাড়াতাড়ি স্নান করে বেরিয়েই বিধুবাবু আর কিংশুককে সাথে নিয়ে রান্না ঘরের মেঝেতে পাতা আসনে বসে পড়ল। বিভাদেবী ভাতের থালা এগিয়ে দেবার আগেই সীমন্তিনী একটু অনুযোগের সুরে বলল, “মেসো এটা কিন্তু একেবারেই ঠিক করনি তোমরা। আমি আসছি বলে তোমরা সকলেই না খেয়ে বসে থাকবে”?
বিধুবাবু বললেন, “এমন সুযোগ কি আর কপালে রোজ রোজ জোটে মা? সেই কবে তোমার সাথে একসাথে খেয়েছি, মনে আছে তোমার? রচুর বিয়ের পরদিন ওকে বিদেয় করবার পর আমরা দু’ বুড়োবুড়ি একা থাকব বলে তুমি সেদিন এ বাড়িতেই থেকে গিয়েছিলে। সেই রাতে তুমি নিজে হাতে রান্না করে আমাদের দু’জনের পাশে বসে খেয়েছিলে। তারপর থেকে এই সাড়ে তিন বছরে অমন সুযোগ তো আর পাই নি মা। তাই আজ সুযোগ পেয়ে লোভটা আর সামলাতে পারলুম না”।
বিধুবাবুর মুখের মমতাভরা কথাগুলো শুনে সীমন্তিনীর মনটা যেন হু হু করে উঠল। ভেতর থেকে একটা কান্নার স্রোত যেন উথলে উঠে আসতে চাইছিল। নিজেকে প্রানপণে সংযত রাখবার চেষ্টা করল সে। তারপর বলল, “তুমি ভুলে গেছ মেসো। রচু আর দাদাভাই যেদিন অর্চুকে দেখতে এসেছিল, সেদিনও কিন্তু আমি তোমাদের সাথে এ’ঘরে বসেই পাত পেড়ে খেয়েছিলুম”।
বিভাদেবী সকলের সামনে থালা এগিয়ে দিতে দিতে বললেন, “হ্যাঁরে মা, তোর শরীর স্বাস্থ্য ঠিক আছে তো”?
সীমন্তিনী জবাব দিল, “হ্যাঁ গো মাসি। তোমাদের আশীর্বাদে খুব ভাল আছি। আর এখন দু’দুটো বোন আমার সাথে আছে। আমার কি আর আনন্দের সীমা আছে বলো”?
ওদের খাওয়া শুরু হতে বিভাদেবী বললেন, “ছেলেমেয়ে সুখে থাকলে মা বাবারাও সুখে থাকে। কিন্তু মা রে, তুই তো সকলের কথাই ভাবিস। এবার তো অন্ততঃ নিজের কথা একটু ভাব মা”।
সীমন্তিনী গলার গ্রাস গিলে বাঁ হাতে বিভাদেবীর একটা হাত ধরে বলল, “মাসি শোনো, আজ আমি বিশেষ একটা কথা বলার জন্য এখানে এসেছি। কিন্তু আমার হাতে খুব বেশী সময় নেই। তোমাদের এখান থেকে বেড়িয়ে আমাকে আবার এখানকার থানার ওসির সাথে দেখা করতে হবে। আট ন’দিন পরেই অর্চুর কেসটা নিয়ে কোর্টে হিয়ারিং হবে। তাই মিঃ রায়ের সাথে কিছু জরুরী আলোচনা করতে হবে। তাই এখন আর আজে বাজে কথা না উঠিয়ে আমাকে কাজের কাজটা করতে দাও না প্লীজ”।
বিভাদেবী একটু অবাক হয়ে বললেন, “কী বলতে এসেছিস তুই”?
সীমন্তিনী আরেক গ্রাস খাবার খেয়ে বলল, “আচ্ছা মেসো, তোমার শরীর স্বাস্থ্য তো আগের চেয়ে ভাল আছে। মাসি আর ভাইও ঠাকুরের কৃপায় ভাল আছে। অর্চুও অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। আর তোমাদের ছোট মেয়েও তো ঠিক আছে। তা অর্চুর ভবিষ্যৎ নিয়ে তোমরা কিছু ভেবেছ কি”?
বিধুবাবু সীমন্তিনীর কথা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, “অর্চুর ভবিষ্যতের কথা বলছ তুমি মা? বাবা হয়ে ওর ভবিষ্যৎ তো আমিই ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছি। আমি তো ওর জীবনটাই বর্বাদ করে ফেলেছি মাগো। ওর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাববার কোন অবকাশই তো আর রাখিনি আমি। মনে মনে আমি নিজেকে যে কতটা অপরাধী বলে ভাবি, তা কেবল আমিই জানি, আর জানেন আমার অন্তরাত্মা। আমার মনের ভেতর যে গ্লানি জমে আছে, তা আমৃত্যু আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাবে। এ গ্লানি নিয়েই আমাকে মরতে হবে জানি”।
বিভাদেবী এ’ কথা শুনে বললেন, “আঃ কী সব আবোল তাবোল বকছ বলো তো? খেতে বসে এমন সব অলক্ষুণে কথা বলতে আছে”?
এবার সীমন্তিনী দু’জনকে হাতের ঈশারায় থামিয়ে দিয়ে বলল, “অতীতের দুঃসময়ের কথা ভেবে বর্তমান আর ভবিষ্যতকে তো অবহেলা করা যায় না মেসো। অর্চু তো আমার থেকেও চার বছরের ছোট। সবে তেইশ পেরিয়েছে ও। সারাটা জীবনই তো ওর সামনে পড়ে আছে। আর তাছাড়া ও এমন তো কোন অপরাধ করেনি যে সারা জীবন ভর ওকে বিনা দোষে এ সাজা বয়ে যেতে হবে। হ্যাঁ এটা ঠিক যে আজ তোমরা ওর পাশে আছ। ভাই, রচু ওর পাশে আছে। আমি আছি। কিন্তু দেখো মাসি, সকলেরই তো দিনে দিনে দায়িত্ব বাড়তে থাকবে। দাদাভাই আর রচুর সংসারেও নতুন নতুন দায়িত্ব আসবে। ভাইয়ের ভবিষ্যতে হায়ার স্টাডিজ, চাকরি তারপর বিয়ে সংসার এসব দায়িত্ব তো অবধারিত ভাবেই আসবে। আজ তোমরা সবাই মিলে অর্চুকে যেভাবে আগলে রাখছ, চিরটা কাল কি তা পারবে? না পারা সম্ভব? তাই আমার মনে হয় ওর আরেকটা বিয়ে দেবার কথা ভাবা উচিৎ আমাদের”।
বিধুবাবু খাওয়া থামিয়ে অবাক হয়ে সীমন্তিনীর মুখের দিকে চাইলেন। বিভাদেবী অবশ্য অবাক না হয়ে ব্যথিত গলায় বললেন, “তুই যা বলছিস, তা তো পুরোপুরিই সত্যি রে মা। কিন্তু ', ঘরের বিধবা মেয়ের কি আর বিয়ে হয় রে মা”?
বিধুবাবুও বললেন, “হ্যাঁ মা। তুমি যা ভাবছ সমাজের চোখে যে সেটা বড় অপরাধ। সমাজে থেকে বিধবা মেয়ের বিয়ের কথা ভাবা, তাও ',ের বিধবা! এ যে স্বপ্নেও ভাবতে পারিনে মাগো। সমাজ যে আমাদের একঘরে করে দেবে মা”।
সীমন্তিনী একটু হেসে বলল, “মেসো, দিনকাল এখন অনেক পাল্টেছে। একসময় তো সদ্য বিধবাদের স্বামীর চিতায় সহমরণে যেতে বাধ্য করা হত। রামমোহন রায় বাল্য বিবাহ, সতীদাহ প্রথা বিলীন করবার জন্য আন্দোলন করে গেছেন। রানী রাসমনিও তাই করেছিলেন। অবশেষ সেই কূ-প্রথা তো ১৮২৯ সালে বৃটিশরাই আইন করে উঠিয়ে দিয়ে গেছে। অবশ্য আইন পাশ করবার সাথে সাথেই যে সে সব কিছু বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তা নয়। তবে স্বামীর মৃত্যুর পর যেসকল স্ত্রী সহমরণে যেত না তাদের প্রায় একঘরে করেই রাখার প্রথা চালু করেছিল সে যুগের সমাজের ঠিকেদারেরা। বিধবারা গায়ে কোন গয়না রাখতে পারবে না, কোন পুরুষের সামনে আসতে পারবে না, পরিবারের বাইরের কোনও পুরুষকে তাদের মুখ দেখানো বারণ, তাদের পান খাওয়া বারণ, মাছ, মাংস এবং সব রকম আমিষ খাওয়া বারণ, শাড়ী পড়া বারণ, মাথায় চুল ছোট করে কেটে রাখতে হবে, এমন এমন হাজারটা বিধিনিষেধ তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আর তাদের পূনর্বিবাহ? এ শব্দটা তো উচ্চারণ করাই মহাপাপ বলে ধরা হত সে যুগে। রানী রাসমনি আর রামমোহন রায়ের প্রচেষ্টায় আর ইংরেজ সরকারের দৌলতে সতীদাহ প্রথা বেআইনী ঘোষণা করা হলেও, পরবর্তী কালে স্ত্রী-শিক্ষা, বাল্য বিবাহ, এসব নিয়ে অনেক দিন ধরে অনেক স্তরে সমাজ সংস্কারের চেষ্টা করা হয়েছে। অবশেষে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রচেষ্টাতেই ১৮৫৬ সালে বিধবা পুনর্বিবাহ আইন প্রণয়ন হয়েছিল বৃটিশ যুগেই। কিন্তু তা সত্বেও সহজেই বিধবাদের বিবাহ আজও হয় না। বাল্য বিবাহ, পণ প্রথা এখনও অনেক সমাজে অনেক সম্প্রদায়ের মধ্যে আছে। স্ত্রী–শিক্ষা এখনও অনেক সম্প্রদায়ে নিষিদ্ধ বলে মনে করে। কিন্তু এখন বাংলার বড় বড় শহরে এসব প্রথা প্রায় বিলুপ্তই হয়ে গেছে। হ্যাঁ এটা ঠিক যে ছোট ছোট গ্রামে গঞ্জে এখনও স্ত্রী-শিক্ষা, বাল্য-বিবাহ, পণ-প্রথা, বিধবা বিবাহের মত ব্যাপারগুলো নিয়ে সমস্যা রয়েই গেছে। কিন্তু কলকাতা বা অন্য বড় বড় শহর গুলোতে গিয়ে দেখো তুমি, কে বিধবা, কে যে সধবা, তুমি আলাদা করে বুঝতেই পারবে না। সধবা স্ত্রীরাও তাদের স্বামী বেঁচে থাকা সত্বেও সধবার কোন চিহ্ন তারা নিজেদের শরীরে রাখতে চায় না। তাদের হাতে না আছে শাঁখা পলা নোয়া, না আছে তাদের সিঁথিতে বা কপালে সিঁদুরের বিন্দুমাত্র ছোঁয়া। উল্টে বিধবারাই আজকাল সোনার গয়না পড়ে, চুল ফুলিয়ে দামী দামী রঙিন শাড়ী পড়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেউ তাদের নিয়ে কোন মাথা ঘামায় না”।
একটু দম নিয়ে আবার বলল, “আর সমাজের প্রতাপ কি আর আগের যুগের মত আছে? সেটা থাকলে এটা কলিযুগের বদলে সত্য যুগ না হলেও ত্রেতা বা দ্বাপর যুগ হত। আজ সমাজে ভাল নিয়ম বলতে কিছু কি আর বাকি আছে? কাজেই সমাজের ব্যাপারে মাথা না ঘামানোই ভাল। আমি শুধু মানি যে আমাদের সবাইকে শুধু দেশের আইন কানুন মেনে চলা উচিৎ। আর বিধবা বিবাহ আইনের বিপক্ষে নয়। বরং আজ যদি কেউ বিধবা প্রাপ্তবয়স্কা মেয়ের বিবাহের বিরোধিতা করে, তাহলে সেটাই বরং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই আমি তোমাদের দু’জনকেই অনুরোধ করছি, তোমরা সমাজের কথা ভাবা ছেড়ে দাও। এ সমাজ কোনও বিধবার ভবিষ্যতের দায়িত্ব নেয় না। সামাজিক কোন বাধা বিপত্তি এলে তার মোকাবেলা করব আমি। তোমরা শুধু তোমাদের ওই কচি মেয়েটার কথা ভাবো না মেসো। আচ্ছা মাসি, তোমরা কি চাওনা অর্চুর ভবিষ্যৎ জীবনটা সুন্দর হোক? অর্চু যদি আবার একজনকে বিয়ে করে সুখে শান্তিতে সংসার করতে পারে, তাহলে তোমরাও কি সুখী হবে না”?
বিভাদেবী শাড়ির আঁচলে মুখে চেপে ধরে ফোঁপাতে ফোঁপাতে বললেন, “অমন কথা বলিস নে মা। কোনও মা বাবা কি চাইতে পারে তাদের ছেলে মেয়েরা দুঃখে দিন কাটাক”?
এমন সময় হঠাৎ কিংশুক পাশ থেকে বলে উঠল, “দিদিভাই, তোমার আশীর্বাদে আমি যদি ভবিষ্যতে আমার পায়ের তলার মাটিটা শক্ত করে তুলতে পারি, তাহলে এ’টুকু কথা তোমাকে আমি দিতে পারি যে আমার মা বাবা, ছোড়দি, বড়দি কাউকে আমি কোনদিন অবহেলা করব না। বড়দি যদি মা-বাবার কথা মত এভাবেই থেকে যায়, তবু আমার জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত সে আমার আদরের বড়দি হয়েই থাকবে। কিন্তু তবু আমি বলছি দিদিভাই, তুমি যেমন বলছ তাতে আমি তোমার সাথে সম্পূর্ণ একমত। সমাজ থেকে কোনও বাধা যদি আসেই, তবে তার মোকাবেলা আমি সাহসের সাথে করব। আমি তোমার পাশে আছি দিদিভাই”।
সীমন্তিনী একহাত দিয়ে কিংশুককে নিজের শরীরের সাথে চেপে ধরে তার কপালে গাল ঠেকিয়ে বলল, “এই নাহলে আমার ভাই? বেঁচে থাকো ভাই। ভগবান তোমাকে সৎ সাহস আর সুবুদ্ধি দিন। তুমি যেন জীবনের সবক্ষেত্রে সফল হও”।
বিধুবাবু এবার অনেকটা শান্ত স্বরে বললেন, “মন্তি মা। তোমার কথা অমান্য করার ইচ্ছে বা স্পর্ধা কোনটাই আমাদের কারুর নেই। কিন্তু মা সমাজের কথা না হয় ছেড়েই দিলুম। কিন্তু সাত বছর স্বামী শ্বশুরের ঘরে জীবন কাটিয়ে আসা একটা বিধবা মেয়েকে কোন ছেলে বিয়ে করতে চাইবে মা”?
এবার বিভাদেবী বললেন, “সমাজের রক্তচক্ষু নয় আমরা কোনভাবে সয়ে নেব রে মা। যদি কোনও ভাল স্বভাবের ইচ্ছুক ছেলে পেতাম, তবে সে দোজবর বা বয়স্ক হলেও আমরা আপত্তি করব না। এমনকি সে যদি অ',ও হয়, তবু আমরা অর্চুর ভবিষ্যতের কথা ভেবে মেনে নেব। কিন্তু অমন ছেলে পাব কোথায় রে মা”?
সীমন্তিনী শেষ গ্রাসটা গিলে বলল, “আচ্ছা সে’কথায় পরে আসছি। মেসো, তোমার মতামতটা আগে শুনি। তবে আগেই বলে রাখছি, আমি কিন্তু মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি যে অর্চুর আবার বিয়ে দেবই। আর ছেলে খুঁজে বের করব আমিই। তোমাদের কোন দায়িত্ব নিতে হবে না। অবশ্য ভবিষ্যৎ গণনা তো আমি জানিনে। তবে আপাতভাবে যতটুকু ভেবে দেখা যায় তা নিশ্চয়ই করব। অর্চু তো আমারও বোন। ও যাতে ভাল থাকে সুখে থাকে, সেটা তো আমারও কাম্য”।
বিধুবাবুর খাওয়াও শেষ হয়ে গেছে ততক্ষণে। সীমন্তিনীর প্রশ্ন শুনে তিনি বললেন, “তোমার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করবার ইচ্ছে বা স্পর্ধা কোনটাই যে আমার নেই তা তো আগেই বলেছি মা। আর তুমি যেমনটা বলছ, সত্যি সত্যি যদি তেমনটা বাস্তবে সম্ভব হয়, তাহলে সবচেয়ে খুশী তো আমি হব। মেয়েটার ইচ্ছের বিরূদ্ধে তাকে ওভাবে বিয়ে দিয়ে যে পাপ আমি করেছিলাম, তার প্রায়শ্চিত্ত করবার একটা সুযোগ তো অন্ততঃ পাব। আমার বুকের ভেতর যে জগদ্দল পাথরটা চেপে বসে আছে, সে পাথরটা তো অন্ততঃ সরে যাবে। আমার বুকটা হাল্কা হয়ে যাবে। আমি আর .......”
তাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়েই সীমন্তিনী বলে উঠল, “আচ্ছা মাসি, এবার তুমি খেতে বসে পড়ো তো। তোমার খাবার দেরী হয়ে যাবে। আমাদেরও হাত শুকিয়ে যাচ্ছে। হাত ধুয়ে এসে বাকি কথাগুলো বলছি। মেসো, ভাই চলো হাত ধুয়ে এসে আমরা আবার এখানে বসেই কথা বলি। মাসি তুমি থালা নিয়ে বসো”।
কলপাড় থেকে হাত মুখ ধুয়ে সবাই আবার রান্নাঘরে এসে বসতে সীমন্তিনী বিভাদেবীর পাশে বসে বলল, “মাসি শোনো, আমার এক বন্ধু আছে। সে পুলিশেই চাকরি করে। আমার চেয়ে বড় অফিসার। সান্যাল, রাঢ়ী ',। ভারদ্বাজ গোত্র। ত্রিশ বছর বয়স। ভাল স্বাস্থ্য। স্বভাব চরিত্র খুব ভাল। পরোপকারী। তবে ওর আত্মীয় স্বজন বলতে একেবারেই কেউ নেই। বাবা-মার একমাত্র সন্তান। ওর বাবাও পুলিশে কাজ করতেন। তবে খুব উঁচু পদে ছিলেন না। ওর মা ওর ছোটবেলাতেই মারা যান। ও নিজে আইপিএস হবার পর ওর নিজের পছন্দের এক মেয়ের সাথে ওর বাবা ওর বিয়ে মোটামুটি ঠিক করেছিলেন। কথা ছিল ওর আড়াই বছরের ট্রেনিং এর পরেই ওদের বিয়ে হবে। কিন্তু সে দিনটা ওদের জীবনে আসবার আগেই ওর বাবা মারা যান। ওর বাবার শ্রাদ্ধ শান্তি চুকে যাবার পর পরই যে মেয়েটার সাথে ওর বিয়ে ঠিক হয়েছিল, সে মেয়েটাকে কেউ বা কারা যেন বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। ও তখন হায়দ্রাবাদে ট্রেনিং এ। কলকাতার থানা পুলিশ অনেক খোঁজাখুঁজি করেও মেয়েটাকে আর উদ্ধার করতে পারেনি”।
সীমন্তিনী ইচ্ছে করেই নবনীতার নামটা উল্লেখ না করে, একটু দম নিয়ে আবার বলল, “এর প্রায় চার বছর পর ওর সাথে আমার দেখা হয়। আমি তখন হায়দ্রাবাদে ট্রেনিং এ। চাকরিতে আমার সিনিয়র হলেও ওর মিষ্টি স্বভাব দেখে ওর আমার সাথে বন্ধুত্ব হয়। সে বন্ধুত্ব আমাদের আজও অটুট আছে। তাই ওর স্বভাব চরিত্র সম্বন্ধে আমি খুব ভালো ভাবেই জানি। ছেলেটা খুবই সৎ এবং সাহসী। অন্যায়ের সঙ্গে কখনও আপোষ করতে দেখিনি ওকে আমি। আর যে কোনও সমস্যা সমাধান করবার অদ্ভুত শক্তি আর বুদ্ধি আছে ওর। সব দিক দিয়ে বিচার করলে ওর মত একটা ছেলেকে যে কোন মেয়েই স্বামী হিসেবে পেতে যাইবে। মাথার ওপর কোন অভিভাবক নেই বলেই ওর বিয়ে নিয়ে আর কেউ মাথা ঘামায় নি। তবে তোমাদের বা অর্চুর অপছন্দ করবার মত শুধু একটা ব্যাপারই আছে। স্বামী ছাড়া অন্য কোনও আত্মীয় পরিজন কিন্তু অর্চু সেখানে একেবারেই পাবে না। বিয়ের পর অর্চুকে কিন্তু ও বাড়িতে একাই থাকতে হবে বেশীর ভাগ সময়। কারন ও রাত দশটা এগারোটার আগে ঘরে ফিরতেই পারে না। তবে এখানে আরও একটা কথা আছে। অর্চু কিন্তু রচু আর দাদাভাইয়ের কাছাকাছি থাকতে পারবে। কারন, পরিতোষ মানে ওই ছেলেটা কলকাতাতেই থাকে। তাই রচু আর দাদাভাইয়ের সাথেও ও নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে পারবে”। একটু থেমে আবার বলল, “এবারে তোমরা তোমাদের মতামত বলো। আমি কিন্তু তোমাদের তিনজনের মতামতই চাই। তারপর রচু, দাদাভাই আর অর্চুর সাথে কথা বলব আমি”।
সীমন্তিনীর কথা শুনতে শুনতে বিভাদেবী খাবার খেতে ভুলে গিয়েছিলেন। চোখ বড়বড় করে সীমন্তিনীর কথাগুলো তিনি যেন গোগ্রাসে গিলছিলেন। এবার সীমন্তিনী থামতেই তিনি তারা দম বন্ধ হয়ে আসা শ্বাস ছেড়ে বলে উঠলেন, “কী বলছিস মা তুই? এ-ও কি সম্ভব? আমার অর্চুর কপালে কি এত সুখ লিখেছেন বিধাতা? আমি যে বিশ্বেসই করতে পারছিনে রে”।
কিংশুক বাবার পাশ থেকে উঠে এসে সীমন্তিনীর পাশে বসে তার একটা হাত নিজের হাতে ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে উচ্ছ্বসিত গলায় বলল, “সত্যি দিদিভাই? সত্যি বলছ তুমি? এমন একটা লোকই তো আমার আদর্শ গো। আমিও যে বড় হয়ে এমন সৎ এবং সাহসী হয়ে উঠতে চাই। অমন একটা জামাইবাবু পেলে আমি তো বর্তে যাব গো। তুমি দ্যাখো দিদিভাই। এমন একটা ছেলের সাথে বড়দির বিয়ে হলে আমি খুব খুশী হব। অবশ্য মানছি দিনগুলো বড়দিকে একা একা ঘরের ভেতর কাটাতে হবে। কথা বলার মত কাউকে তার পাশে পাবে না। কিন্তু ছোড়দি আর রতুদার সাথে তো তার মাঝে মধ্যে দেখা হবেই। আমার মনে হয় না বড়দি সেখানে কষ্ট পাবে। আমি রাজী আছি দিদিভাই। তুমি প্লীজ চেষ্টা করো, দেখো যদি আমাদের এ প্রয়াসটা সার্থক হয়”।
সীমন্তিনী বিভাদেবী আর কিংশুকের মনোভাব বুঝতে পেরে মনে মনে খুব খুশী হল। বিভাদেবী তার স্বামীর দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কিগো, তুমি কিছু বলছ না যে? তুমি কি রাজি নও নাকি”?
বিধুবাবু এতক্ষণ মাথা নিচু করে মনে মনে অনেককিছু ভাবছিলেন। তার চোখ দুটো জলে ভরে এসেছিল। এবারে স্ত্রীর কথায় মুখ তুলে হাতের চেটোয় চোখ দুটো মুছে গলাটাকে একটু পরিষ্কার করে বললেন, “কি বলব বিভু? তোমরা হয়ত বুঝতে পাচ্ছ না, কিন্তু আমি বুঝে গেছি আমরা আবার নতুন করে মা অন্নপূর্নার হাত থেকে আরেকটা বরদান পেতে চলেছি” বলে ওপরের দিকে চেয়ে হাতজোড় করে বললেন, “হে প্রভু, হে ভগবান, জানিনা, কোন জনমে এমন কী পূণ্য আমি কামিয়েছিলাম যে এই বুড়ো বয়সে এসে এমন এক অন্নপূর্ণা মার কোলে আমি আশ্রয় পেয়েছি। তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ প্রভু। আ হা হা” বলে দু’হাতে মুখ ঢেকে কেঁদে ফেললেন।
সীমন্তিনী বিভাদেবীর পাশ থেকে উঠে বিধুবাবুর পাশে বসে বলল, “মাসি, আমি মেসোকে নিয়ে তোমাদের ঘরে যাচ্ছি। তুমি চট করে খাওয়া শেষ করে ওখানে এসো। ভাই, চলো। আমরা ও ঘরে যাই” বলে বিধুবাবু আর কিংশুককে সাথে করে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেল। বিধুবাবুর ঘরে এসে তাকে বিছানায় বসাতে বসাতে সীমন্তিনী কিংশুককে বলল, “ভাই, বাবাকে একগ্লাস জল এনে দাও তো তাড়াতাড়ি”।
কিংশুক আবার ছুটে গেল রান্নাঘরের দিকে। সীমন্তিনী বিধুবাবুর পিঠে আর বুকে সস্নেহে হাত বোলাতে বোলাতে বলল, “ও মেসো, তুমি অধীর হয়ো না, শান্ত হও। আমিও তো তোমাদের আরেকটা মেয়ে। অর্চু তো আমারও বোন। আমার বোনটা যাতে সুখে থাকে, ভাল থাকে সেটা দেখা তো আমারও কর্তব্য। তুমি জানোনা মেসো, অর্চুকে আমাদের বাড়ির আরেকটা বৌ করে নিয়ে যাবার ইচ্ছেই আমার ছিল। তোমরা হয়ত জানো না, কিন্তু আমি জানি, রচু কলকাতা চলে যাবার পর আমাদের বাড়ির সকলেই যেন প্রায় নিষ্প্রাণ হয়ে গেছে। সবাই খাচ্ছে পড়ছে সব কিছু করছে। কিন্তু প্রত্যেকেই কেমন যেন ঝিমিয়ে পড়েছে। করতে হয় বলেই করছে, খেতে হয় বলেই খাচ্ছে, এমন একটা গা ছাড়া ভাব সকলের মধ্যে। সবাই যেন হাসতে ভুলে গেছে। অর্চুকে ফিরে পাবার পর থেকেই কথাটা আমি ভাবছিলাম। ওকেও যদি আমাদের বাড়ির বৌ করে নিয়ে যেতে পারতুম তাহলে আমাদের বাড়ির সবাই আবার নতুন করে উজ্জীবিত হয়ে উঠত। কিন্তু যেদিন জানতে পারলুম সতু একটা মেয়েকে ভালবাসে সেদিনই আমার সে স্বপ্নটা ভেঙে চৌচির হয়ে গিয়েছিল। তাই আমার মনের ভেতরের স্বপ্নের কথাটা আর কারো কাছে প্রকাশ করিনি। কিন্তু অর্চুর দিকটাও তো আমাকে দেখতে হবেই। তাই অনেক ভেবে পরিতোষের সাথেই ওর বিয়েটা দেব বলে ভাবলুম। তোমার আপত্তি আছে মেসো”?
______________________________
•
Posts: 577
Threads: 3
Likes Received: 797 in 298 posts
Likes Given: 364
Joined: Feb 2019
Reputation:
64
(Update No. 172)
বিধুবাবু সীমন্তিনীর কথার কোন জবাব দেবার আগেই কিংশুকের সাথে বিভাদেবী জলের গ্লাস হাতে ঘরে ঢুকে বললেন, “তুই কি ভাবছিস মন্তি, আমরা কেউ তোর কথা অমান্যি করতে পারি” বলে বিধুবাবুর মুখের কাছে জলের গ্লাসটা তুলে ধরে বলল, “নাও তো, একটুখানি জল খেয়ে নাও”।
বিধুবাবু দু’ঢোক জল খেয়ে নিতে বিভাদেবী শাড়ির খুট দিয়ে তার মুখ মুছিয়ে দিয়ে মমতাভরা গলায় বললেন, “ভগবানের অশেষ করুণাতেই তো আমরা এ মেয়েটাকে পেয়েছি। এবার শান্ত হয়ে ওকে তোমার মতামতটা জানাও। ও তো আবার থানাতেও যাবে বলছে। তাই ওকে আর খুব বেশীক্ষণ আটকে রাখা ঠিক হবে না। আরও কতটা পথ তো ওকে যেতে হবে”।
বিধুবাবু তার স্ত্রীর দিকে শান্ত চোখে চেয়ে বললেন, “আর বলার কি কিছু আছে গো? তুমি কি এতদিনেও এ মেয়েটাকে চিনতে পারলে না? ও সমস্ত আটঘাট বেঁধে সবকিছু মনে মনে সাজিয়ে নিয়েই তবে আজ ওর সিদ্ধান্তে শেষ শিলমোহরটা পড়াবে বলেই এসেছে। ভুলে গেছ? রচুর বিয়ের এক দেড় বছর আগে থেকে এ বাড়ি এসে ও কিভাবে আমাদের সবাইকে বশ করে সবকিছু গুছিয়ে নিয়েছিল? কাউকে কিচ্ছুটি বলার অবকাশ ও দিয়েছিল? আমাদের সঙ্গে যে বেয়াই মশাইদের পরিবারের মত অমন একটা সম্ভ্রান্ত এবং ভাল পরিবারের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, সেটা তো ওর জন্যেই। রচু তো সুখে আছে। ওকে ওর স্বামী আর শ্বশুর বাড়ির সকলেই খুব ভালবাসে। এর বেশী কিছু কি আমরা চেয়েছি কখনও? যতটুকু পেয়েছি সেটুকুও যে স্বপ্নাতীত। আজও আবার হয়ত সে’রকমেরই কোন ঘটণার অবতারনা হতে চলেছে। আজও আমাদের মুখ ফুটে কোন কথা বলার অবকাশ নেই। কিন্তু মন্তি মা, তুমি তো রচুর বিয়ের পর পরই হায়দ্রাবাদে গিয়েছিলে। আর তুমি বলছ সেখানে গিয়েই এ ছেলেটার সাথে তোমার পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয়েছে। তার মানে মা, আমি কি ধরে নিতে পারি যে তোমাদের ভেতরের এই বন্ধুত্বটা গত তিন বছর ধরেই অক্ষুণ্ণ অটুট আছে”?
সীমন্তিনী বিধুবাবুর একটা হাত নিজের হাতে ধরে রেখেই মিষ্টি হেসে জবাব দিল, “হ্যাঁ মেসো। তুমি একদম ঠিক বলেছ। হায়দ্রাবাদের ট্রেনিং শেষ হয়ে যাবার পর কর্মসুত্রে আমরা আলাদা আলাদা জায়গায় আছি ঠিকই। কিন্তু আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক এতে কমজোড় তো হয়ই নি। বরং দাদাভাই আর রচু কলকাতা যাবার পর আমাদের দু’জনের বন্ধুত্বটা আরও সুদৃঢ় হচ্ছে দিনে দিনে। তাই তো ওর সম্পর্কে আমি জোর দিয়ে এসব কথা বলতে পারছি নিশ্চিন্তে। আমি ওর ব্যাপারে যা যা তোমাদের বললাম তা একটুও বাড়িয়ে বলিনি কিন্তু মেসো”।
বিভাদেবী উৎসুক গলায় জিজ্ঞেস করল, “হ্যাঁরে, তার মানে রচু রতু ওরাও কি ছেলেটাকে চেনে”?
সীমন্তিনী হেসে বলল, “হ্যাঁ মাসি, চেনে। তবে আগে থেকে ওরা ওকে চিনত না। আগেরবার যখন আমি কলকাতা গিয়েছিলুম, মানে যখন আমি নীতাকে আমার সাথে নিয়ে এসেছিলুম তখন পরিতোষের সাথে রচুর আর দাদাভাইয়ের পরিচয় হয়েছে। তবে দাদাভাই বা রচু এটা এখনও জানেনা যে ওই পরির সাথেই আমি অর্চুর বিয়ে দেবার কথা ভাবছি। তবে দু’তিনদিন আগে আমি ওদেরকে জানিয়েছি যে অর্চুর আবার বিয়ে দেবার চেষ্টা করছি আমরা। আর ওদেরকেই তোমাদের সাথে প্রথম কথা বলতে বলেছিলাম। ওরা বোধহয় গত কাল বা পরশু রাতে তোমাদের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলেছে। কাল রচু ফোনে বলছিল যে তোমরা নাকি এ প্রস্তাবে রাজী হওনি”।
বিভাদেবী বললেন, “হ্যাঁরে মা, কাল দুপুরেই জামাই ঘরে আসবার পর ওরা আমাদের ফোন করেছিল। এ ব্যাপারেই কথা বলছিল। কিন্তু তোর মেসো বা আমি দু’জনেই অতটা তলিয়ে ভাবিনি তখন। তাই সমাজের ভয়েই ওদের বলেছিলাম যে আমরা আর অর্চুর বিয়ে দেবার ব্যাপারে কিছু ভাবছি না। আর তাছাড়া সে সামর্থ্যই বা কোথায় বল। কিন্তু তখন তো আমরা জানতুম না যে এ সবের পেছনে তুই আছিস”।
বিধুবাবু এবার সীমন্তিনীর মুখের দিকে চেয়ে প্রশ্ন করলেন, “ওই ছেলেটা, কি যেন নাম বললে? ও হ্যাঁ হ্যাঁ পরিতোষ সান্যাল। সে কি তোমার ওখানে বা অন্য কোথাও আমাদের অর্চুকে দেখেছে? অর্চুকে কি ওর পছন্দ হয়েছে”?
সীমন্তিনী জবাবে বলল, “না মেসো, অর্চু আর পরি ওরা কেউ কাউকে দেখেনি এখনও। অবশ্য আমার বন্ধু বলেই অর্চু আমার আর নীতার মুখে পরিতোষের কথা কিছু কিছু শুনেছে। কিন্তু এ’কথা আমি এখনও কাউকে জানাইনি যে পরির সাথে অর্চুর বিয়ে দেবার কথা আমি ভাবছি। তবে মেসো, একটা কথা কিন্তু আমি তোমাদের কাছে এখনও বলিনি। সেটা এবারে বলছি। যে মেয়েটাকে পরি ভালবাসতো, মানে যার সাথে ওর বিয়ে ঠিক হয়েছিল একটা সময়, সে মেয়েটা আমাদের নীতা, যে এখন আমার সাথে আছে”।
বিভাদেবী আঁতকে উঠে বললেন, “ওমা সেকি রে? নীতা তো খুব ভাল মেয়ে শুনেছি। তাহলে ছেলেটা ওকেই বিয়ে করছে না কেন”?
সীমন্তিনী এক সেকেন্ড চুপ করে থেকে বলল, “মাসি সে কথা বলতে গেলে আরও অনেকটা সময় লেগে যাবে। আজ অতকথা বলতে গেলে আমার আর ফিরে যাওয়াই হবে না। কিন্তু আমাকে যে আর আধঘন্টার ভেতরেই মিঃ রায়ের সাথে দেখা করতে হবে। তবে আপাততঃ এটুকু জেনে রাখো, অল্প কিছুদিন আগেই পরিতোষ অবশেষে সাত বছর বাদে ওকে খুঁজে পেয়েছে। তারপরেও এখনও ও মেয়েটাকে বিয়ে করতে রাজি আছে। কিন্তু নীতার জীবনে ওই সাতটা বছরে এমন এমন কতগুলো ঘটণা ঘটে গেছে যে ও আর পরিতোষকে বিয়ে করতে চাইছে না। আর সব কিছু জেনে আমিও ওকে সমর্থন করেছি। কিন্তু আমি আর নীতা দু’জনেই চাই যে পরি এবার বিয়ে থা করে সংসার শুরু করুক। তাই জোর করে পরিকে বিয়ে করতে রাজী করিয়েছি। এখন পরিস্থিতিটা এমন যে আমরা মেয়ে পছন্দ করে না দিলে পরিতোষ বিয়ে করবে না। তাই পরির বিয়ে দেবার দায়িত্বটাও আমিই কাঁধে তুলে নিয়েছি”।
বিধুবাবু এবার জিজ্ঞেস করলেন, “তা হ্যাঁরে মা, এই মেয়েটাকে নিয়ে ভবিষ্যতে আবার কোন গোল বাঁধবে না তো”?
সীমন্তিনী এবার মিষ্টি করে হেসে বলল, “সে সম্ভাবনা একেবারেই নেই মেসো। তোমরা তো নীতাকে দেখ নি। মেয়েটা সত্যিই খুব চমৎকার গো। বড্ড মিষ্টি স্বভাবের। মনের দিক থেকে খুব সৎ। অর্চু আর পরির সংসারে ও দুর থেকেই শুভেচ্ছা জানাবে চিরটা কাল। পরি আর অর্চুর উপকার ছাড়া অনিষ্ট ও কোনদিন করবে না। এ ব্যাপারে আমি একেবারে নিশ্চিত। নীতাকে নিয়ে এমন দুর্ভাবনা একেবারেই করতে হবে না তোমাদের। ওর সাথে তোমাদের একবার পরিচয় হলে, ও-ও দেখবে তোমাদের আরেকটা মেয়ে হয়ে উঠবে। আর হ্যাঁ, আরেকটা ভাল কথা মনে পড়েছে, শোনো। এবার পুজো শুরু হচ্ছে সামনের মাসের একুশ তারিখে। আমি অক্টোবরের বারো তারিখ থেকে চৌদ্দ তারিখ পর্যন্ত তিনদিনের জন্যে ছুটির দরখাস্ত করেছি। হয়তো পেয়ে যাব। তখন তোমরা তিনজন, মানে তুমি, মাসি আর ভাই, তোমাদের তিনজনকেই কিন্তু আমার ওখানে যেতে হবে এগারো তারিখে। বিকেলের দিকে গেলেও চলবে। কিন্তু না করবে না কিন্তু। আমি তাহলে কষ্ট পাব। দু’দিন থাকবে তোমরা সবাই আমার ওখানে। তখন তোমরা গিয়ে নীতার সাথে ভাল করে কথা বলে পরির ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হয়ে নিতে পারবে। আর শোনো আমাকে এখন উঠতেই হবে। তাই তাড়াতাড়ি আরও কয়েকটা কথাও আমি আজই তোমাদের বলে যাচ্ছি। মনে হয় পরি অর্চুকে বিয়ে করতে অরাজী হবে না। তাই তোমরা ধরেই রাখো যে সামনের অঘ্রান মাসেই মানে নভেম্বর বা ডিসেম্বরে বিয়েটা হবে। তবে ওই সময় কিন্তু তোমাদের এ বাড়ি থেকে বিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে না। কারন বাড়িতে তখন নতুন ঘর বানাবার কাজ চলতে থাকবে। ইচ্ছে আছে পুজোর পর পরই বাড়ি তৈরীর কাজটা শুরু করে দেব। আর বাড়ির কাজ তো দু এক সপ্তাহেই শেষ হবে না। কম করেও মাস ছয়েক সময় তো লেগেই যাবে মনে হয়। তাই পুজোর পর কাজ শুরু করলেও সামনের এপ্রিল বা মে মাসের আগে কাজ শেষ হবে না। কিন্তু পরি রাজি হলে বিয়েটা ততদিন ফেলে রাখা যাবে না। তবে ধরে রাখো, বিয়েটা মোটামুটি ফাইনাল। শুধু দিনক্ষন আর জায়গাটা পরে ঠিক করতে হবে। তবে মাসি, আমার একটা অনুরোধ কিন্তু তোমরা তিনজন অবশ্যই রাখবে। আমরা যে অর্চুর বিয়ের ব্যাপারে আজ এমন সিদ্ধান্ত নিলাম, সেটা কিন্তু এখনই কোন পাড়া প্রতিবেশী বা আর অন্য কাউকে জানাবে না। অর্চুকেও না। অর্চু তো আমার সাথেই থাকবে পুজো অব্দি। আমি ওকে সময় সুযোগ মত ব্যাপারটা জানাব। তোমরা যখন পুজোর আগে আমার ওখানে যাবে তার আগেই হয়ত আমি সব কিছু ফাইনাল করে ফেলতে পারব। তখনই নীতার সাথে কথা বলে তোমাদের মনের আশঙ্কা কেটে গেলেই অর্চুকে তোমরা সব কথা খুলে জানাতে পারবে। তখন আর আমি বাধা দেব না। তবে তার আগে অব্দি অর্চু, নীতা বা অন্য কেউ যেন এ ব্যাপারে কিছু না জানে। আমি নিজেই অর্চু আর নীতাকে সামলে রাখব। শুধু তোমরা ওদেরকে এ বিয়ের ব্যাপারে কোন কথা বলো না। আর সামনের সতের তারিখ অর্চুকে আমিই কোর্টে নিয়ে যাব। তোমরা ওটা নিয়ে ভেব না। ঠিক আছে”?
বিধুবাবু এতক্ষণ নির্বাক হয়ে থাকবার পর এবার বললেন, “তুমি আমাদের আর কত ঋণী করবে মা গো। রচুর বিয়ে, খোকার লেখাপড়া, আমার চিকিৎসা, ব্যবসা, অর্চুকে ফিরিয়ে আনা, ওকে সুস্থ করে তোলা, কোর্টের মামলা, এতসবের পর এখন আবার বাড়ি আর ....”
তাকে থামিয়ে দিয়ে সীমন্তিনী খাট থেকে উঠে বলল, “নাহ, আর বসবার উপায় নেই। আমাকে এবার যেতেই হবে” বলে পাশের অর্চুর ঘরে ঢুকে গেল।
মিনিট পাঁচেকের ভেতরেই নিজের ইউনিফর্ম পড়ে বারান্দা পেরিয়ে উঠোনে নেমে বলল, “ও মাসি, আমি তাহলে আসছি গো। তোমরা সবাই ভালভাবে থেক। আর ভাই ফোন করো”।
বিধুবাবু, বিভাদেবী আর কিংশুক সকলেই তখন উঠোনে নেমে এসেছে। কিংশুক সীমন্তিনীর কাছে এসে তার একটা হাত ধরে বলল, “ও দিদিভাই, এ সুখবরটা ছোড়দিকেও জানাতে বারণ করছ কেন গো তুমি”?
সীমন্তিনী কিংশুকের মুখে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে তার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলল, “ঠিক আছে ভাই, তোমার ছোড়দিকে তুমিই কথাটা জানিও। তবে এখন আমি বেরিয়ে যাবার অন্ততঃ আধ ঘন্টা পর তাকে জানিও। এখন আমি না বেরোলে ওসির সাথে আমার মিটিংটাই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কিন্তু তাকে বলে দিও সে যেন তোমার রতুদা ছাড়া আর কাউকে কিচ্ছুটি না বলে আপাততঃ। আমার বারণ রইল রাজগঞ্জের বাড়ির কারুর সাথে আর অর্চু বা নীতার সাথেও ওরা কেউ যেন আপাততঃ আর কোন কথা না বলে এ ব্যাপারে। এ’কথাটা বারবার রিপিট করে ভালমত বুঝিয়ে দেবে কিন্তু ভাই। তবে তোমার ছোড়দি আর জামাইবাবু অবশ্য একজনের সাথেই এসব নিয়ে আলোচনা করার অনুমতি পেতে পারে। বল তো, সে কে”?
কিংশুক সীমন্তিনীকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে বলল, “সে আমার দিদিভাই। ঠিক না”?
সীমন্তিনী হেসে কিংশুকের মাথায় আরেকটা স্নেহ-চুম্বন একে দিয়ে বলল, “ঠিক বলেছ, লক্ষ্মী সোনা ভাই আমার”।
বিভাদেবী একটা বেশ বড়সড় কৌটো সীমন্তিনীর হাতে দিয়ে বললেন, “এটা নিয়ে যা মা, তোরা সবাই মিলে খাস। কয়েকটা নাড়কেলের নাড়ু বানিয়াছিলুম তোদের দেব বলে”।
সীমন্তিনী কৌটোটা হাতে নিয়ে বিধুবাবুকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করল, “মেসো, তুমি তোমার ওষুধ পত্র ঠিক ঠিক সময় মত খাচ্ছ তো”?
বিধুবাবু বললেন, “হ্যাঁ মা, ও নিয়ে তুমি দুশ্চিন্তা কোর না। আমি একদম ঘড়ি ধরে সময় মিলিয়ে মিলিয়ে সব ওষুধ খাচ্ছি। এখন পুরোপুরি ভাল আছি”।
সীমন্তিনী মিষ্টি হেসে বিধুবাবু আর বিভাদেবীকে প্রণাম করে আর কিংশুককে আদর করে বাড়ি থেকে বেরোল।
******************
কালচিনি থানার ওসি মিঃ রায়ের সাথে আলোচনা সেরে সীমন্তিনীর গাড়ি যখন ফেরার পথ ধরেছে তখনই সীমন্তিনীর পকেটের ভেতর তার পার্সোনাল মোবাইলটা বেজে উঠল। পকেট থেকে মোবাইল বের করতেই স্ক্রীনে ‘রচুসোনা কলিং’ দেখে মুচকি হেসে কলটা রিসিভ করে ফোনটা কানে লাগিয়ে কিছু বলে ওঠার আগেই ওদিক থেকে রচনা প্রায় চেঁচিয়ে উঠে বলল, “ও দিদিভাই, ভাই এ’সব কী শুনলুম গো? সত্যি পরিতোষদার সাথে দিদির বিয়ে হবে? উঃ আমি যে ভাবতেই পাচ্ছিনা গো! আমার দিদির কপালে কি এত সুখ লেখা আছে! আমি যে শুনে বিশ্বেসই করতে পারছিনে গো দিদিভাই! ও দিদিভাই, তুমি কথা বলছ না কেন? তুমি কি এখনও কালচিনি থানাতেই আছ নাকি গো? সন্ধ্যে তো হতে চলল। নাগরাকাটায় কখন ফিরবে তাহলে? তোমাদের তো অনেক রাত হয়ে যাবে ফিরতে তাহলে! আঃ কথা বলছ না কেন তুমি”?
সীমন্তিনী শান্ত গলায় বলল, “ওরে পাগলী, তুই আমাকে কথা বলার সুযোগ দিলে তো কথা বলব। ঝড়ের বেগে তো তুইই একের পর এক কথা বলে যাচ্ছিস, প্রশ্ন করছিস। শোন, খুব ভাল সময়ে ফোনটা করেছিস তুই। এ কথাগুলো আমি লক্ষ্মীদি, নীতা বা অর্চুর সামনে বলতে চাইনে এখনই। আরেকপক্ষের মত না পাওয়া অব্দি কাউকে কিছু বলতে চাই না আমি। আর তুইও কিন্তু অর্চু বা নীতাকে এসব কথা একদম বলবি নে। আর, কালচিনি থানা থেকে একটু আগেই বেরিয়েছি আমরা। এখন গাড়িতে আছি। বাড়ির দিকে ফিরছি। আর হয়ত ঘন্টা খানেকের ভেতরেই পৌঁছে যাব। আর ভাই তোকে কি কি বলে থাকতে পারে, তার আন্দাজ আমি করতে পারছি। কিন্তু তুই কি শুধু ভাইয়ের সাথেই কথা বলেছিস? মাসি মেসোর সাথে কথা বলিস নি”?
রচনা আগের মতই উচ্ছ্বসিত গলায় বলল, “হ্যাঁ, মায়ের সাথেও কথা হয়েছে অনেকক্ষণ। কিন্তু বাবা তখন দোকানে চলে গিয়েছিলেন বলে তার সাথে আর কথা হয়নি। পরশু তো মা বাবা দু’জনেই আমাদের প্রস্তাব এককথায় নাকচ করে দিয়েছিলেন। তবে আমার বিশ্বাস ছিল তুমি তাদের ঠিক রাজী করাবে। আমি জানতুম মা বাবা কক্ষনো তোমার কথা ফেলতে পারবেন না। তুমি যে তাদের মা লক্ষ্মী, মা দুর্গা, মা অন্নপূর্না গো। উঃ কী যে আনন্দ হচ্ছে না দিদিভাই। তোমাকে এই মূহুর্তে বুকে জড়িয়ে ধরে খুব খুব করে আদর করতে ইচ্ছে করছে জানো”?
সীমন্তিনী বলল, “আচ্ছা আচ্ছা, তোর সে ইচ্ছে তো এখনই পূর্ণ হবার নয়। এখন বল দেখি যে ছেলেটার সাথে আমি অর্চুর বিয়ে দিতে চাইছি, তাকে তোর আর দাদাভাইয়ের পছন্দ কি না? কারন পরিকে তো তোরা দেখেছিস। আর ওর ব্যাপারে তোরা দু’জনেই অনেক কিছু জেনে গেছিস এতদিনে। আর এটাও জানিস যে আমি ওর ডার্লিং প্রেয়সী সুইটহার্ট আরও কত কি। আর এখন পর্যন্ত নীতাই যে ওর একমাত্র ভালবাসার পাত্রী, এ’কথাও তুই জানিস। এমন ছেলের সাথে তোর দিদির বিয়ে দিতে চাইবি তুই”?
রচনা বলল, “তোমাদের তিন দেবাদেবীর ইতিহাস তো আমি জানিই দিদিভাই। তবু বলছি দিদিকে যদি সত্যি পরিদা বিয়ে করতে রাজী হন, তাহলে তো ভাবতে হবে যে দিদি আগের জন্মে নিশ্চয়ই খুব পুণ্য করেছে। নইলে পরিদার মত একটা বর তো সব মেয়ের কাম্য। আর তোমাকে আমি আগে কখনো এ’কথা বলেছি কিনা মনে পড়ছে না। পরিদা আর নীতাদির ঘটণাগুলো শোনবার পর থেকে যখনই তার কথা মনে পড়ে তখন আমার খুব কষ্ট হয় গো। মনে মনে কবে যে আমি তাকে দাদার আসনে বসিয়ে ফেলেছি তা আমি নিজেও জানিনা। আমি রোজ ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করি যেন সে সুখী হয়। তার ছন্নছাড়া জীবনটা যেন একটা সুন্দর ছন্দে ফিরে আসে। দিদির সাথে বিয়ে হলে আমি নিশ্চিত জানি তার জীবনটাই আমূল পাল্টে যাবে। দিদি পরিদা দু’জনেই খুব সুখী হবে, এটাই আমার বিশ্বাস। তোমার দাদাভাইও আমার সাথে একমত”।
সীমন্তিনী রচনার কথা শুনে আশ্বস্ত হয়ে বলল, “তাহলে বোঝা গেল যে মেয়ের মা বাবা ভাই বোন ভগ্নীপতী সবাই এ বিয়েতে রাজী। এখন শুধু মিঞা বিবি রাজী হয়ে গেলেই আমার প্রচেষ্টা সার্থক হবে”।
রচনা হেসে বলল, “মিঞা তো আগেই তোমার ওপরেই সমস্ত দায়িত্ব ছেড়ে বসে আছে। আর বিবির কাছে তোমার কথাই তো বেদবাক্য এ তো আমরা সবাই জানি। আচ্ছা দিদিভাই, নীতাদি আর দিদিকে তো এখনও পরিদার কথা বলোনি। আর তোমার নির্দেশ আছে বলে আমিও তাদের আর কিছু জানাচ্ছি না। কিন্তু আমার তো মনে হয়না যে নীতাদি এ বিয়েতে কোন রকম বাধা দেবে। তাই বিয়েটা যে হচ্ছেই, এ ব্যাপারে আর আমার কোন সন্দেহ নেই। উঃ, তোমাকে যে কী বলে ধন্যবাদ দেব গো দিদিভাই”।
সীমন্তিনী এ’কথা শুনে বলল, “এই দুষ্টু, কি বললি? ধন্যবাদ? মারব এক চাটি”।
রচনা সাথে সাথে বলল, “সরি সরি দিদিভাই। কথাটা মুখ ফস্কে বেরিয়ে গেছে গো। প্লীজ কিছু মনে কোর না। লক্ষ্মী দিদিভাই আমার”।
সীমন্তিনী এবার মনে মনে হেসে বলল, “আচ্ছা হয়েছে হয়েছে। আর ন্যাকামি করতে হবে না। তবে শোন, আমি গ্রীন সিগন্যাল না দেওয়া পর্যন্ত কিন্তু রাজগঞ্জের কাউকে আর নীতা বা অর্চুকে কিন্তু কিচ্ছুটি বলবি না। আর পরিকেও না। আসলে অর্চুকে ফিরে পাবার পর থেকেই আমার মনের ভেতর একটা ইচ্ছে জেগে উঠেছিল রে। কিন্তু সে ইচ্ছে বোধহয় আর পূর্ন হবে না। তাই পরির ব্যাপারে ভাবছি। তবু ফাইনাল ডিসিশনটা নেবার আগে আরও কিছুটা অপেক্ষা আমাকে করতেই হবে। তাই আপাততঃ এ সম্মন্ধের সব কিছু আমি গোপন রাখতে চাইছি”।
রচনা তখন বলল, “ওঃ দিদিভাই আনন্দের চোটে তো আমি আরেকটা কথা ভুলেই গেছি গো। আচ্ছা মা বললেন যে মেজদাভাই নাকি কোন এক মেয়েকে ভালবাসে? সত্যি নাকি গো”?
সীমন্তিনী মনে মনে এ ভয়টাই করেছিল। সতুর ব্যাপারটা গোপন রাখতে বলেনি বিভাদেবীকে। রচনার প্রশ্নের উত্তরে তাই সে বলল, “ওঃ, মাসি তোকে কথাটা বলে ফেলেছেন! অবশ্য তার দোষ দেওয়া যায় না। তাড়াহুড়োতে আমিই তাকে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম যে সতুর কথাটাও সকলের কাছে আপাততঃ গোপন রাখতে হবে। আচ্ছা যাক, যা হবার তা তো হয়েই গেছে। শোন রচু, তুই দাদাভাইকেও বলে দিস সতুর ব্যাপারটা যেন রাজগঞ্জের বাড়িতে না জানায়। সতু সেদিন কথায় কথায় আমাকে কথাটা বলেছে। আর কেউ এ ব্যাপারে এখনও কিছু জানে না। তবে মেয়েটা কে, কেমন, কী করে এসব ব্যাপারে কিছু বলেনি আমাকে। কিন্তু জানিস রচু, আমি মনে মনে ভেবেছিলুম যে সতু একটা চাকরি বাকরি পেলেই ওর সাথে বিয়ে দিয়ে অর্চুকেও আমাদের বাড়ির আরেকটা বৌ করে আনব। কিন্তু সতুর মুখে ওর ভালবাসার পাত্রীর কথা শুনেই মনে হচ্ছে যে সেটা আর সম্ভব হবে না। কারন কারুর ভালবাসাকে আমি ছোট করে দেখি না কখনো। তবু আমি ব্যাপারটা একটু খতিয়ে দেখব। তারপরেই পরি আর অর্চুর ব্যাপারে ফাইনাল ডিসিশনটা নেব। বুঝেছিস তো”?
রচনা বলল, “বুঝেছি দিদিভাই। তবে মেজদাভাই তো ব্যাঙ্কের রিটেন টেস্টে কোয়ালিফাই করেই ফেলেছে। আর ভাইভা নাকি সামনের মাসেই হবে। ঠাকুরের আশীর্বাদে দেখো মেজদাভাই ঠিক চাকরি পেয়ে যাবে। তবে তার প্রেমিকার ব্যাপারে আমরা বা বাড়ির কেউ এখনও কিছু জানেনা। আজ দুপুরেও তো মামনির সাথে মেজমার সাথে অনেকক্ষণ কথা হল। কই, তারাও তো আজ অব্দি কেউ এ ব্যাপারে কিছু বলেন নি। আর তুমি যেটা বলছ, সেটা সত্যি হলে আমার খুশী তো দ্বিগুণ হত। কিন্তু মেজদাভাই যখন নিজেই কাউকে পছন্দ করে ফেলেছেন, তার পছন্দকে অগ্রাহ্য করে দিদির সাথে তার বিয়ে দিলে হয়ত সুখের চেয়ে অশান্তিই বেশী হতে পারে। তাই সেটা না করাই ভাল”।
সীমন্তিনী বলল, “হ্যাঁরে রচু, তুই একদম ঠিক বলেছিস। আর এটা ভেবেই আমি পরির দিকে ঝুঁকেছি। তবে সতু যে মেয়েটাকে ভালবেসেছে তার সম্মন্ধেও একটু খোঁজ খবর আমার করা উচিৎ। তাই একটু অপেক্ষা করছি। আর সেজন্যেই তোকে বলছি, সতুর ব্যাপার আর অর্চু-পরির ব্যাপার আপাততঃ সকলের কাছেই গোপন রাখতে হবে। তবে পরি যে অরাজী হবে না সে ব্যাপারেও আমার খুব একটা সন্দেহ নেই। তবু নীতা আর পরির মৌখিক সম্মতিটা নিতেই হবে। তবে সে নিয়ে তুই কিছু ভাবিস না। সেটা আমিই করে নেব। আর শোন, দাদাভাইকেও সবটা বুঝিয়ে বলিস, কেমন”?
রচনা বলল, “তোমার দাদাভাই তো আমার পাশে বসেই তোমার সব কথা শুনছেন দিদিভাই। তিনিই কি আর তোমার কথার অন্যথা করতে পারেন নাকি? তুমি ও নিয়ে ভেবো না দিদিভাই”।
এবার রতীশের গলা শোনা গেল, “হ্যাঁরে মন্তি, আমি সব শুনেছি। আর মনে হচ্ছে অর্চুদির ব্যাপারে তুই বেশ ভাল একটা সিদ্ধান্তই নিয়েছিস। তুই ভাবিস না। আমরা কেউ তোর নির্দেশ অমান্য করব না। কিন্তু সতুর ব্যাপারে যে কথাটা বললি, তাতে তো একটু চিন্তাই হচ্ছে রে। প্রেম করছে, সেটা কোন সমস্যার নয়। বাড়ির লোকেরা মেনে নিলে আর মেয়েটা ভাল হলেই হল। কিন্তু মেয়েটা কেমন সেটাই তো দেখার। আমাদের পরিবারের উপযুক্ত হলে তো চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু একান্নবর্তী এক পরিবারে মানিয়ে চলতে পারবে কিনা, শ্বশুর শাশুড়ি দেবর ননদদের ভালবাসতে পারবে কিনা সেটাই চিন্তার বিষয়। কিন্তু সেটা নিয়ে তো আমরা কিছু করতে পারব না। সেটা তো সকলের আগে সতুরই ভেবে দেখা দরকার ছিল। ও কি ভেবে সিদ্ধান্তটা নিয়েছে তা তো আর আমরা কেউ জানিনা। এখন বাড়ীতে বাবা কাকারা আছেন। যথাসময়ে তারাই বরং এ ব্যাপারটা যাচাই করে দেখুক। তোর কথার অন্যথা হয়ত বাড়ির কেউই করবে না। কিন্তু তারা নিজেরা কেউ কি তোর পরামর্শ চাইবেন”?
______________________________
SS_SEXY
•
Posts: 577
Threads: 3
Likes Received: 797 in 298 posts
Likes Given: 364
Joined: Feb 2019
Reputation:
64
(Update No. 173)
সীমন্তিনী বলল, “দাদাভাই তুই তো অভিমানীর মত কথা বলছিস রে। দ্যাখ বাড়ির কেউ তো এখনো এ ব্যাপারে কিচ্ছুটি জানে না। সতু তো কাউকেই কিছু জানায়নি। মেয়ের বাড়ির লোকেরাও ওদের ব্যাপারটা জানে কি না তাও আমি জানিনা। কিন্তু আমি যখন জানতে পেরেছি, মানে সতু নিজেই যখন আমাকে কথাটা জানিয়েছে, তখন কাউকে কিছু না বললেও আমাকে তো আমার ভাইয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই মেয়েটার ব্যাপারে খোঁজ খবর করা উচিৎ। আর আমাদের বাড়ির লোকেরা আমার পরামর্শ যে কেন যেচে চাইতে যাবে না, এর কারন আর কেউ জানুক বা না জানুক তুই তো খুব ভাল করেই জানিস দাদাভাই। কিন্তু এতে তাদের তো কোনও দোষ নেই রে। দোষ যে পুরোটাই আমার। আর অপরাধী যে আমিই এটা বুঝেই তো আমি নিজেকে শাস্তি দিয়ে যাচ্ছি রে বছরের পর বছর। তুই ও নিয়ে কেন অভিমান করছিস তাদের ওপর। বাড়ির সকলেই যে তোকে কতটা ভালবাসে তা কি আজ আমায় নতুন করে তোকে বলতে হবে রে? আর রচু তো ওবাড়ির সকলের চোখের মণি। তোরা দু’জন নেই বলে বাড়ির সবাই হাসতে ভুলে গেছে। আচ্ছা, ও সব কথা থাক এখন। সতুর ব্যাপারটাও আপাততঃ তোরা সবাই ভুলে থাক। আমার পক্ষে কতটুকু কি করা সম্ভব সেটা আমি দেখব। তুই শুধু এ ব্যাপারে আগ বাড়িয়ে কাউকে কিছু বলিস নে। আর শোন দাদাভাই, আমার অন্য ফোনে আরেকটা কল এসেছে রে ছাড়ছি এখন। রাতে কথা বলব। তবে অর্চু আর পরির ব্যাপারটা নিয়ে তোরা কিন্তু এখন আর কাউকে কিছু জানাস না প্লীজ। আচ্ছা ছাড়ছি রে এখন, বাই” বলে লাইন কেটে দিল।
ইচ্ছে করেই সীমন্তিনী ফোনটা কেটে দিল। কারন কথায় কথায় রতীশ এমন একটা প্রসঙ্গ তুলে ফেলেছিল, আর আবেগের ঘোরে সে নিজেও সে প্রসঙ্গ টেনেই কথা বলতে বলতে ভুলে গিয়েছিল প্রসঙ্গটা তার মনের গভীরতম স্থানে সমাধিস্থ করে রেখেছে সে বহু বছর আগে। সে প্রসঙ্গটা এখন সে নিজেই চিরতরে ভুলে থাকতে চায়। কিন্তু যে ব্যাপারটাকে সেই কোন ছোট্টবেলা থেকে সে তার মনের মণিকোঠায় সাজিয়ে তুলেছিল সে স্মৃতি যে আমৃত্যু সে ভুলতে পারবে না, এটাও সে ভালভাবেই জানে। তবু ভুলে থাকবার চেষ্টা তো তাকে করতেই হবে। সে বছরের পর বছর ধরে সে চেষ্টাই করে যাচ্ছে। নইলে অনেক ক’টা জীবনের সুখ শান্তি পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। সবার আগে এমন দুটো জীবন ছাড়খাড় হয়ে যাবে, যে দুটো জীবনই এখন সীমন্তিনীর প্রাণ ভোমরা।
********************
অফিস থেকে বেরোবে বেরোবে ভাবতেই পরিতোষের পার্সোনাল নাম্বারে ফোন এল। তার চেম্বারে আর কেউ নেই বলে সে কলটা রিসিভ করল। ও’পাশ থেকে বিপ্লবের কথা শোনা গেল, “স্যার একটা ইনফরমেশন দেবার ছিল”।
পরিতোষ উঠে দরজাটা ভেতর থেকে লক করে দিয়ে বলল, “হু, বল”।
বিপ্লব চাপা গলায় বলল, “টার্গেট থ্রির বাড়ির অপারেশনটা ওভার হয়ে গেছে। ডকুমেন্টগুলো আমার হাতে চলে এসেছে। কবে কখন দেব আপনাকে”?
পরিতোষ মনে মনে খুব খুশী হয়ে বলল, “গুড জব। আচ্ছা শোন, রাত ঠিক ন’টায় তুই ডকুমেন্টসগুলো সহ রেস্টুরেন্টের বাইরে কার পার্কিংএ আমার জন্য ওয়েট করবি। আমি ডিনার সেরে বেরিয়ে তোকে আমার গাড়িতে তুলে নেব। ওকে”?
বিপ্লব বলল, “ওকে স্যার। তাই হবে”।
পরিতোষ সাথে সাথেই আবার কিছু একটা ভেবে বলল, “আচ্ছা শোন। কিছুক্ষণ বাদে আমি শেখরকে ফোন করছি। তখন যা বলব তাই করিস। বাই” বলে ফোন কেটে দিল। অফিস থেকে বেরিয়ে গাড়ি হাকিয়ে দিল আব্দুলের গ্যারেজ অভিমুখে। গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে ভাবল, শেখর আর বিপ্লব কাজটা অবিশ্বাস্য কম সময়ে কমপ্লিট করে ফেলেছে। অবশ্য এতে সবচেয়ে বেশী ক্রেডিট কামিনীদির। কামিনীদের মত মেয়ে মহিলারা নিজেদের ইজ্জত আবরু সব কিছু বিলিয়ে দিয়ে নিজেদের কলঙ্কের পাকে ডুবিয়ে দিয়ে পরিতোষের কথায় সমাজকে কলঙ্ক মুক্ত করতে কত কিই না করছে। অথচ এরাও আইনের চোখে অপরাধী। পুলিশের হাতে ধরা পড়লে সমাজকে কলুষিত করবার অপরাধে এদের বছরের পর বছর জেল হাজত বাস করতে হবে। এবার এ মহিলাকে খুব ভাল একটা উপহার দিতে হবে। গাড়ি চালাতে চালাতেই নিজের গোপন ফোন থেকে সে শেখরকে ফোন করে বলল, “তোর ওই ফার্ম হাউসের অপারেশনের খবর কি রে? কদ্দুর এগোল ব্যাপারটা”?
শেখর বলল, “প্রোগ্রেস বেশ ভাল স্যার। ইনস্ট্রুমেন্টগুলো প্লান্ট করবার পর গত পাঁচদিনে খুব ভাল কাজ হয়েছে। দুটো এপিসোড রেকর্ডেড হয়েছে। মনে হয় সেটাই সাফিসিয়েন্ট হবে। তবে আপনি চাইলে সপ্তাহ খানেকের ভেতরেই আরও দু’ একটা এপিসোড নিশ্চয়ই রেকর্ড করা যাবে। কিন্তু স্যার, ওই সিক্রেট চেম্বারের হদিশটা এখনও ঠিক যোগার করে উঠতে পাচ্ছি না। তবে সে চেম্বারেও যে গত পাঁচদিনের মধ্যে দু’বার অ্যাকেসেস হয়েছে সেটা বুঝতে পারলেও, আর আমাদের সবগুলো ইনস্ট্রুমেন্টই খুব ভাল ফাংশন করা সত্বেও চেম্বারে ঢোকবার সিস্টেমটা কিছুতেই ধরা পড়ছে না। ওটা নিয়েই চিন্তায় আছি”।
পরিতোষ একটু স্বস্তির শ্বাস নিয়ে বলল, “আচ্ছা শোন, দুটো এপিসোড যখন রেকর্ড করতে পেরেছিস, তখন আর সময় নষ্ট না করে ইনস্ট্রুমেন্টগুলো এবারে খুলে নিয়ে আয়। আর দরকার নেই। আর আমার হাতে সময়ও বেশী নেই। চেম্বারের ব্যাপারে একটা সলিড লিড আমার হাতে এসে গেছে। তাই ওখানে সেকেন্ড অপারেশনে কোনও অসুবিধে হবে না। আর এ ব্যাপারে এসিবি আর ইডির অফিসারদের সাথেও আমার কয়েকটা বৈঠক হয়ে গেছে। তারাও আমার রিপোর্টে খুব খুশী হয়েছেন। আর এবারে তাদের অপারেশন সাকসেসফুল হবেই, এ ব্যাপারে তারা যথেষ্ট আশাবাদী। তাই তুই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওই ফার্ম হাউসের এপিসোড গুলোর সিডি রেডি করে ফ্যাল”।
শেখর বলল, “সেটা তো স্যার দু’ তিনদিনের মধ্যেই রেডি করে আপনার হাতে তুলে দিতে পারব। কোন প্রব্লেম হবে না”।
পরিতোষ বলল, “ঠিক আছে, তবে সেটাই কর। আর ব্যাপারটা পুরোপুরি সিক্রেট আছে তো? টার্গেট কোন কিছু আঁচ করতে পারেনি তো”?
শেখর জোর গলায় বলল, “একদম নিশ্চিন্ত থাকুন স্যার। আপনার প্ল্যানে কোনদিন কি কোনও ত্রুটি থাকে? আর ইমপ্লিমেন্টেশনেও পুরোপুরি সিক্রেসী মেইন্টেন করা হয়েছে। কাক পক্ষীটিও টের পায়নি। আপনার কাছেই তো সব শিখেছি স্যার। ও ব্যাপারে আপনি একদম নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন স্যার। আমাদের ওপর আপনার যে ভরসা আছে, সেটা আমরা কিছুতেই নষ্ট হতে দেব না”।
পরিতোষ বলল, “বেশ। তাহলে অফিসের আর ফার্ম হাউসের কাজটা তো সারা হয়ে গেল। তা হেল্পারদের পেমেন্টের ব্যাপারে কি বলেছিস”?
শেখর বলল, “সেটা নিয়েও ভাববার কিছু নেই স্যার। যারা আমাদের পার্মানেন্ট নেটওয়ার্কের বাইরের, অমন তিনজনকে পেমেন্ট করে দিতে পারব আমি। আর আমার গ্রুপে যারা আছে তারা তো আমাদের লোকই। এদের পেমেন্ট ফাইনাল অপারেশনের পরে দিলেই চলবে। কোনও তাড়া নেই এ ব্যাপারে। আপনি মিছে টেনশন নেবেন না”।
পরিতোষ বলল, “হু ঠিক আছে। তোদের কাছ থেকে এমন সাপোর্ট না পেলে আমি একা কি এসব কিছু করতে পারতাম রে? আচ্ছা শোন, আমি বিপ্লবকে একটু আগেই বলছিলাম যে ও যেন আমার সাথে রাত ন’টায় দেখা করে। লোকেশানও বলে দিয়েছিলাম। তুই বরং ওকে এখনই জানিয়ে দে যে আজ আমার সাথে দেখা করবার দরকার নেই। অফিসের ডকুমেন্টস তো আমার হাতে আগেই এসে গেছে। বাড়ির ডকুমেন্টস গুলো তো তোদের কাছে রেডিই আছে। আগামী দু’দিনের মধ্যে তোরা ফার্ম হাউসের সিডিগুলো রেডি করে ফ্যাল। তাহলেই তোদের কাজ কমপ্লিট হয়ে যাবে। পরশু আমার সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করিস। ইন দা মিন টাইম, অহেতুক সময় নষ্ট না করে আমি সেকেন্ড ফেজের অপারেশনের শিডিউলটা বানিয়ে ফেলি। বুঝেছিস”?
শেখর বলল, “ঠিক আছে স্যার, বেস্ট অফ লাক এন্ড গুড নাইট”।
পরিতোষও “গুড নাইট” বলে ফোন কেটে দিল। আব্দুলের গ্যারেজ সামনে দেখেই পরিতোষ গাড়ির গতি কমিয়ে গাড়িটাকে গ্যারেজের ভেতরে ঢুকিয়ে দিল। একটা ঘরের ভেতর থেকে আব্দুল প্রায় ছুটে বেরিয়ে এল। পরিতোষ গাড়ি থেকে নামতে না নামতেই আব্দুল উচ্ছ্বসিত কিন্তু চাপা গলায় বলল, “স্যার এদিকে আসুন” বলে পরিতোষের গাড়ির সীটের ওপর রাখা দুটো বড় বড় প্যাকেট হাতে নিয়ে পরিতোষকে একদিকে নিয়ে চলল। একটা নোংড়া দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আব্দুল আমতা আমতা করে বলল, “স্যার কেন যে আপনি ঘরে যেতে চাইছেন না ... এ ঘরটা তো খুবই নোংড়া। আপনি খবর দেবার পর তড়িঘড়ি কিছুটা পরিষ্কার করেছি, কিন্তু তবুও...... তবে পেছনে বেরিয়ে যাবার রাস্তাটা ঠিক আছে”।
পরিতোষ নিজের হাতঘড়িতে সময় দেখে বলল, “ও নিয়ে ভাবিস না। সাবধানের মার নেই, জানিস তো”? বলে আব্দুলের হাত থেকে একটা প্যকেট নিজের হাতে নিয়ে বলল, “আমি বেরিয়ে যাবার পর প্রীতিদিকে এ প্যাকেটটা দিবি। আর বলিস আমি ন’টা থেকে সাড়ে ন’টার ভেতর তোদের এখানে আসছি। আর যেটা বলেছিলাম সেটা রেডি আছে তো”?
আব্দুল চাপা গলায় বলল, “সব রেডি আছে স্যার। আপনি এ ঘরের পেছনের দিক দিয়ে বেরিয়ে যাবেন। গলি ধরে বাঁদিকে আশি ফুটের মত যাবার পর গলির পাশেই একটা বড় পাথর দেখতে পাবেন। সেখানে দু’মিনিট দাঁড়াবেন। তারপর হেলমেট পড়া দু’জন আপনাকে নিয়ে অন্য একটা গলিতে ঢুকে যাবে। ওরা কিন্তু বাংলা বোঝে না স্যার। ওদের সাথে হিন্দিতে কথা বলবেন। আমি ওদেরকে ভালভাবে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়েছি। ওদের সাথে এগিয়ে গেলে তিন মিনিটেই ও’দিকের বড় রাস্তায় পৌঁছে যাবেন। সেখানেই আপনার জন্য বাইক রাখা আছে। ওই দু’জন আপনাকে গার্ড দেবে। ওরা সব রকম ভাবে তৈরী হয়ে আছে। আর ফেরবার পথে এ রাস্তাতেই ফিরে আসবেন। আমি একঘন্টা বাদেই এ ঘরে এসে বসে আপনার অপেক্ষায় থাকব”।
পরিতোষ আব্দুলের কাঁধে থপথপিয়ে বলল, “প্রীতিদি যেন তার হাতের ওই স্পেশাল ডালটা অবশ্যই বানায়, বলে দিস। আমি আসছি” বলে ঘরের ভেতর ঢুকে গেল। আর আব্দুলও পরিতোষের দেওয়া ব্যাগটা হাতে নিয়ে উল্টোদিকে এগিয়ে গেল।
গ্যারেজের অফিস ঘরে এসে আব্দুল তার এক হেল্পারকে ডেকে বলল, “স্যারের গাড়িটা ভাল করে চেক করে দ্যাখ কোনও গড়বড় আছে কিনা। চাবি ওখানেই আছে। আর ভাল করে পরিষ্কার করে রাখ। আমি একটু ঘর থেকে আসছি” বলে পরিতোষের দেওয়া ব্যাগটা হাতে নিয়ে তার অফিস ঘরের পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল।
নিজের ঘরে এসে আব্দুল স্ত্রীর উদ্দেশ্যে হাক দিয়ে বলল, “কোথায় গেলিরে মেরে মুন্নে কি মা”?
ভেতরের একটা ঘর থেকে বছর পঁয়ত্রিশের মাঝারি গড়নের মহিলা বেরিয়ে আসতেই আব্দুল হাতের প্যাকেটটা তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “নে, স্যার তোর জন্যে কি পাঠিয়েছে দ্যাখ। আর সে রাত ন’টার দিকে আসছে। তোর হাতের ওই স্পেশাল মসুরি ডালটা বানাতে বলেছেন”।
এ’কথা শুনেই মহিলার চোখ মুখ আনন্দে যেন ঝলমল করে উঠল। আব্দুলের হাত ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলল, “সত্যি বলছ তুমি? ভাই এসেছে? ইশ কতদিন পর ওকে দেখব! গত বছর সেই রাখী পুর্ণিমার পর ওকে আর দেখিনি। ইশ, আমার যে কী আনন্দ হচ্ছে। কিন্তু হাতে তো বেশী সময় নেই গো। ভাই তো আর ঘন্টা দেড়েক বাদেই এসে পড়বে। না না, আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে রান্না শুরু করি গিয়ে। এই শোনো, খোকা এখন ঘুমুচ্ছে। সারাটা বিকেল সন্ধ্যে ছুটোছুটি করেছে। একটু আগে অনেক চেষ্টা করে ঘুম পাড়ালাম। নইলে ওর মামা যখন আসবে তখন ঘুমিয়ে পড়ত। তাই তুমি কিন্তু অন্য দিনের মত ওকে এখন আর জাগিও না। একটু ঘুমোতে দাও। ন’টার দিকে ওকে ওঠাব। তুমি বরং তোমার অফিসে গিয়েই বস এখন। আমি রান্নাটা সেরে ফেলি ততক্ষণে”।
আব্দুল স্ত্রীকে একহাতে জড়িয়ে ধরে বলল, “আরে পাগলী, তোর ভাই তোর জন্যে কি পাঠিয়েছে সেটা তো একটু দেখে যা”।
প্রীতি নিজেকে স্বামীর হাতের বাঁধন থেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলল, “ও’সব পরেও দেখা যাবে। পালিয়ে তো আর যাচ্ছে না। ভাইয়ের উপহারের ওপর আমার কোন লোভ নেই। লোভ আছে শুধু তাকে দুচোখ ভরে দেখার। আমি আগে ভাইয়ের খাবার আয়োজনটা সেরে ফেলি। খোকার ঘুম ভেঙে গেলে আবার ঝামেলা হবে” বলেই হঠাৎ ভাবুক গলায় বলল, “নিজের মায়ের পেটের ভাইটা তো আমার চোখের সামনে ছটফট করতে করতে মরল। প্রাণপণ চেষ্টা করেও তাকে হাসপাতাল অব্দিও নিয়ে যেতে পারিনি। ভগবানের অশেষ দয়ায় সেদিনই এ ভাইটাকে পেয়েছিলাম। নইলে তো আমার মরে যাওয়া ভাইটার সৎকারও করতে পারতাম না আমি। তারপর থেকে তো ওকেই আমার ভাই বলে মেনে আসছি। আর আমাকে রক্ষা করবার জন্যে ভাই কত কিছুই না করেছে। নোংড়া নর্দমা থেকে আমাকে উদ্ধার করেছে। তারপর তার দয়াতেই তো আমি তোমাকে পেয়েছি। তোমাকেও তো সে কোন জায়গা থেকে কোথায় উঠিয়ে এনেছে। আজ আমরা এই যে সুখের দিনটা দেখছি, ভাই আমাদের জীবনে না এলে এসব কি আমাদের কপালে জুটত”? বলতে বলতে প্রীতির চোখ দিয়ে ঝরঝর করে জলের ধারা বইতে লাগল।
আব্দুল প্রীতির চোখের জল মুছতে মুছতে বলল, “আরে পাগলী, স্যার যে তোর ভগবান আর আমার আল্লা রে। কিন্তু এখন এভাবে কাঁদলে তোর ভাইকে খাওয়াবি কি? তোর চোখের জলের শরবৎ”?
প্রীতি হঠাৎ সাবলীল হয়ে বলল, “ধ্যাত অসভ্য কোথাকার। আচ্ছা ছাড়ো এবার। আমি কিচেনে যাচ্ছি। আর শোনো, খোকা উঠে পড়লে কিন্তু এখন তুমি সামলাবে। রান্না শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি কিন্তু আর ওকে নিতে পারব না” বলতে বলতে ভেতরের একটা দরজার দিকে এগিয়ে গেল। আব্দুল পাশের একটা দরজা দিয়ে উঁকি মেরে দেখল খাটের ওপর বাচ্চাটা ঘুমোচ্ছে। পা টিপে টিপে সে ঘরের ভেতর ঢুকে খাটের ওপর হাতের প্যাকেটটা রেখে আবার নিঃশব্দে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে তার গ্যারেজের দিকে এগিয়ে গেল।
আর ওদিকে পরিতোষ ওই নোংড়া ঘরে ঢোকবার মিনিট পনের বাদে এক পাঞ্জাবীকে বেরিয়ে আসতে দেখা গেল ওই ঘরটার পেছনের দরজা দিয়ে। ট্রাডিশনাল পাঞ্জাবী পোশাকে কেউই তাকে চিনতে পারবে না এক আইপিএস অফিসার হিসেবে। পেছনের গলি বরাবর হাঁটতে হাঁটতেই কোমড়ে হাত দিয়ে রিভলবারের পজিশনটা দেখে নিল। আব্দুলের কথা মতই একসময় বড় পাথরটার কাছে এসে দাঁড়াল। ঠিক দু’মিনিট পরেই হেলমেট পড়া দু’জন লোক এসে তাকে ঈশারা করতেই সে তাদের অনুসরন করে এগিয়ে গেল। বড় রাস্তায় পৌঁছতেই সঙ্গের হেলমেট পরা লোকদুটোর একজন একটা চাবি পরিতোষের হাতে দিয়ে একটা বাইক দেখিয়ে বলল, “আপ ইস বাইক সে চলে যাইয়ে। হম দোনো পচাশ মিটারকি দুরি রখকর আপকো ফলো করেঙ্গে” বলে পকেট থেকে একটা ব্লুটুথ ডিভাইস পরিতোষের হাতে দিয়ে বলল, “আপকা ফোনকে সাথ ইয়ে জুড় লিজিয়ে। হমসে কন্টাক্ট বনা রহেগা”।
পরিতোষ নিজের পকেটের একটা নতুন মোবাইলের সাথে ব্লুটুথ সিঙ্ক্রোনাইজ করে ডিভাইসটাকে নিজের কানে ভাল করে সেট করে হাত ঘড়িতে সময় দেখল রাত সাতটা বেজে দশ। পকেটের বাকি দুটো মোবাইল সুইচ অফ করে বাইক স্টার্ট করে একবার পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখবার চেষ্টা করেও তেমন কাউকে দেখতে পেল না। ঠিক তখনই তার কানে লাগানো ডিভাইসে শুনতে পেল, “পিছে মুঢ়কে দেখনে কা জরুরত নহী হ্যায়। হম আপকে পিছে তৈয়ার বৈঠে হ্যায়। আপ নিশ্চিন্ত হোকর আগে বঢ়িয়ে”।
প্রায় আধঘণ্টা হাইওয়ে দিয়ে বাইক চালিয়ে আসবার পর বড় রাস্তা ছেড়ে একটা গলির ভেতর ঢুকে একশ মিটার যাবার পর পরিতোষ এক জায়গায় বাইক থামাল। সে বাইকটা রাস্তার পাশে ভাল মত পার্ক করতে করতে দেখল তাকে ফলো করে আসা দুটোর ভেতর একটা বাইক প্রায় পঞ্চাশ মিটার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। অন্য বাইকটা পরিতোষকে ছাড়িয়ে আরও পঞ্চাশ মিটার এগিয়ে গিয়ে থামল। পরিতোষ মনে মনেই এদের তারিফ না করে পারল না। এমন সময় আবার কানের ব্লুটুথে শোনা গেল, “আপ নিশ্চিন্ত হোকর অপনা কাম খতম করকে আইয়ে। হম ইয়েহি আপকা ইন্তেজার করেঙ্গে। ঔর বিল্কুল টেনশন মত লিজিয়ে। অভি তক সব ঠিক হ্যায়। আগে অগর কুছ হোগা ভি তো হম সম্ভাল লেঙ্গে। সির্ফ ইতনা ইয়াদ রখিয়ে কি অগর বাহার কিসি তরহ কি শোর শরাবা ধমাকা ইয়া ফায়ারিং কা আওয়াজ সুনাই দে তো কোই ভি বিল্ডিং সে বাহার মত নিকলিয়েগা। বাহার হম সব কুছ সম্ভাল লেঙ্গে। ঔর সব কুছ কা মতলব সব কুছ। আপকো জরুরত কে মোতেবিক ইনফরমেশন দে দিয়া জায়েগা। ওকে? অব আপ অন্দর চলে যাইয়ে। ঔর হাঁ, বিল্ডিং কে অন্দর ঘুসনে কে বাদ কান সে ব্লুটুথ হটা লিজিয়েগা ঔর ফোন সুইচ অফ কর লিজিয়েগা”।
পরিতোষ নিশ্চিন্ত হয়ে আধো অন্ধকার বিল্ডিঙের ভেতর ঢুকে গেল। অনেক ক’টা প্যাসেজের অলি গলি পেরিয়ে সে একটা দরজায় ঠক ঠক ... ঠক ঠক ঠক করে বিশেষ ভাবে টোকা দিল। প্রায় সাথে সাথেই ঘরের দরজাটা খুলে গেল। হাল্কা নীলাভ আবছা আলোয় ভরা ঘরের ভেতর ঢুকে পড়তেই দরজাটা আবার কেউ বন্ধ করে দিল। আবছা আলোয় চোখটা সয়ে যেতেই পাশে দাঁড়ানো লোকটাকে দেখতে পেল। সে লোকটা প্রায় ফিসফিস করে বলল, “এখানে আলো জ্বালানো বারণ আছে স্যার। আপনি আমার পেছন পেছন আসুন। আর কান থেকে ব্লুটুথ ডিভাইসটা খুলে পকেটে রেখে দিন, বেরিয়ে যাবার সময় আবার এখানে এসে ওটা লাগিয়ে নেবেন”।
পরিতোষ ব্লুটুথ ডিভাইসটা খুলে পাঞ্জাবীর পকেটে রেখে লোকটার পেছন পেছন এগোতে লাগল। একসময় একটা লিফটে ঢুকে তারা দুজন নীচের দিকে নামতে লাগল। বোঝাই যাচ্ছে আন্ডারগ্রাউন্ডে ঢুকে যাচ্ছে তারা। প্রায় মিনিট দুয়েক বাদে লিফট থামতে পরিতোষ আন্দাজ করল তারা গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে কম পক্ষেও পঞ্চাশ ষাট মিটার নিচে নেমে এসেছে। লিফট থেকে বেরিয়েই ঝকঝকে আলোয় ভরা একটা করিডোর দেখতে পেল। এবার পাশের লোকটার মুখের দিকে চাইতেই ঝকঝকে সিভিলিয়ান পোশাক পরিহিত এক যুবককে দেখতে পেল সে। প্রায় তারই বয়সী। যুবকটি পরিতোষের সাথে হ্যান্ডসেক করে বলল, “স্যার আমি অনির্বান দত্ত। এই কেসটা আমাকেই ফ্রন্টফুটে থেকে লিড করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আপনি আমার অফিসিয়াল ডেজিগনেশনটা প্লীজ জানতে চাইবেন না। সেটা ডিসক্লোজ করা আমাদের সার্ভিস রুলের বাইরে। আর এটাও জানিয়ে রাখি, অনির্বান দত্ত আমার আসল নাম নয়। বিভিন্ন কেসে আমাদের বিভিন্ন নামে পরিচিতি দিতে হয়। আপনার কাছে আমি তাই অনির্বান দত্তই। এবার আমি আপনাকে কনফারেন্স রুমে নিয়ে যাব। সেখানে অন্যান্য সবাই এসে গেছেন। তাদের সংগে পরিচিত হবার সময়েও এটা মনে রাখবেন যে তাদের আসল নাম পরিচয় আপনি জানতে পারবেন না। এ কেসটা শেষ হবার পরেই তাদের সকলের নাম আবার পাল্টে যাবে। আমারও তাই। এবারে চলুন। আমাদের মিটিং শুরু করা যাক। আসুন” বলে তাকে একটা বড় কনফারেন্স রুমের মধ্যে নিয়ে গেল।
প্রায় জনা তিরিশেক লোক সেখানে পরিতোষের জন্যই অপেক্ষা করছিল। বেশ কয়েকজনের কানেই ব্লুটুথ ডিভাইস লাগানো দেখা গেল। কয়েকজনের হাতে ওয়াকিটকিও দেখা গেল। তাদের সাথে পরিচয় পর্ব শেষ হবার পর কনভেনারের ঈশারায় মিটিং শুরু হল।
______________________________
|