Thread Rating:
  • 23 Vote(s) - 3.35 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance দিদির বান্ধবী যখন বউ (সম্পুর্ণ)
#41
We need big update bro.
Astroner
[+] 2 users Like astroner's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#42
পর্ব-১৪




দরজার তালা কোন রকমে খুলে, পুবালির ঘরের বিছানায় শুইয়ে দেয় বন্দনা কে, মাথার পেছনে দুটি বালিশ দিয়ে মাথাটা একটু উঁচু করে দেয়। গায়ে চাদর ঢাকা দেবার সময় বুকের ওপরে নজর পরে যায় স্যামন্তকের। বুকের নরম তুলতুলে উপরি অংশে আঁচরের দাগ, দাঁতের দাগ। চোয়াল শক্ত হয়ে যায় স্যামন্তকের, ঐ দেখে। হাত দিয়ে দেখবে কি দেখবে না ভেবে পায়না। বন্দনা ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে যে স্যামন্তক ওর দুই বুকের ক্ষত দেখছে। লজ্জায় লাল হয়ে যায় বন্দনা, নিজে থেকে চাদরটা টেনে বুক ঢেকে ফেলে। সেটা বুঝতে পেরে স্যামন্তক বেশ লজ্জায় পরে যায়।
স্যামন্তক বন্দনা কে জিজ্ঞেস করে “বাড়ির ফোন নাম্বারটা দাও, তোমার বাবাকে একবার জানানো উচিৎ। পরশু বেরিয়েছ না বলে, তারা অনেক চিন্তায় থাকবেন।”
“না, কি হবে জানিয়ে তাদের। আমি ঠিক হলে চলে যাবো এখান থেকে” ভয়ে আর গ্লানিতে ভরা বন্দনার চোখ ছলছল করে ওঠে “বাবা মা সবাই আমাকে বারবার বারন করেছিল, কারুর কথা আমি শুনিনি। আমার তো এই হবার ছিল।”
স্যামন্তক ওর পাশে বসে ওর মুখটা নিজের হাতের মধ্যে করে নিয়ে দুচোখে গভীর ভাবে তাকায়। সেই গভীর চাহনিতে বন্দনার মনে হয় যেন ওর বুকের অলিগলি সব কিছু যেন স্যামন্তক দেখতে পাচ্ছে। ওর হাতের উষ্ণ পরশে বন্দনার ক্ষত বিক্ষত গালে যেন এক কেউ চন্দনের শীতল প্রলেপ লাগিয়ে দেয়।
—“আমি আছি তো ভয় কিসের, ফোন নাম্বারটা দাও ফোন করে দেই, বাবা মা চিন্তায় আছেন। তাদের দিকটা তো একবার ভেবে দেখনি।”
মনের ভেতর থেকে কেউ যেন চিৎকার করে বলে “তুমি কে?” তারপরে বন্দনা বাড়ির ফোন নাম্বারটা স্যামন্তক কে দিয়ে দেয়।
“গুড গার্ল, এখন চুপ করে শুয়ে পড়। আমার অনেক কাজ আছে, দুপুরবেলা খাবার আগে ডেকে দেবো।” নাকের ওপরে আলতো করে ডান হাতের তর্জনীটা ছুঁয়ে ঘরের থেকে বেড়িয়ে যায় স্যামন্তক।
বন্দনা একপাশ ফিরে শুয়ে, স্যামন্তকের চলে যাওয়া দেখে। পর্দার আড়ালে চলে যেতেই মনটা বিষণ্ণ হয়ে ওঠে বন্দনার। বাইরে আকাশ যদিও পরিষ্কার তবু মনের ভেতরে গুমরে ওঠে ব্যাথা আর কান্না। নিজের ওপরে একটা বিকট ধিক্কার জন্মায়, যারা ওকে ভালবাসত তারা সবাই ওকে বারন করেছিলো, বন্দনা শোনেনি তাদের কথা। বাবা মা আর তার প্রানের বান্ধবী পুবালি, সবাই ওর চোখে বিষ হয়ে উঠেছিল। কিন্তু কেন নিরুপম ওর সাথে এত ছল করল, কেন সকাল থেকে একবারের জন্য ওকে বুঝতে দিলো না যে ওর মনে অন্য কিছু। ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে বন্দনা, বুকের ভেতরে এক অসীম শূন্যতা ভর করে। এই শ্রাবণেও ওর মনে হয় বৈশাখের দুপুরে এক বিশাল ফাঁকা মাঠের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে ও, মাথার ওপরে তপ্ত সূর্য কিরণ ঝলসে দিচ্ছে ওর মন শরীর আত্মা। দুমড়ে মুচড়ে নিঙরে কেউ যেন ওর বুকের মাঝে এক তীক্ষ্ণ ছুরি দিয়ে বারবার আঘাত করছে, মরতে চেয়েও মরতে পারছেনা বন্দনা। এই সব ভাবতে ভাবতে মাথাটা আবার ঝিম ঝিম করতে থাকে। ওপাশ ফিরে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখতে চেষ্টা করে স্যামন্তক কোথায়। ঘরে কি নেই, আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না যে। ওর মনের ভেতরে আর এক ভয় ভর করে, কত টুকু জানি আমি ছেলেটাকে যে ওর ওপরে আমার এত অগাধ বিশ্বাস। বিশ্বাস তো আমি নিরুপম কেও করেছিলাম, কিন্তু কি পেলাম। বিছানা ছেড়ে উঠে বসতে চেষ্টা করে বন্দনা। খোলা জানালা দিয়ে সকালের নরম রদ্দুর গায়ে এসে পড়ছে, যেন সদ্য স্নাত ঊষা ওকে আহ্বান করছে এক নতুন জীবনের গণ্ডীতে।
চুপ করে হাঁটু মুড়ে বিছানার ওপরে উঠে বসে বন্দনা, হাঁটুর ওপরে থুতনি রেখে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকে, সামনে বড় ফাঁকা মাঠ, লাল মাটি, ঐ দুরে জি টি রোড দিয়ে কত গাড়ির আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে। কাল রাতের বৃষ্টির পড়ে আকাশটা বড় বেশি পরিস্কার মনে হচ্ছে। রাস্তার পাশের বিপিন দেবদারুর গাছ গুলো যেন আজ একটু বেশি করে সবুজ, আলতো মাথা নাড়িয়ে বন্দনাকে যেন ডাকছে “বাড়ির ভেতরে বসে কেন, ঝড় তো কাল রাতে যা হবার হয়ে গেছে, দেখ আজ আমারা কেমন সবুজে ঢেকে আছি, তুই ও বেড়িয়ে পড়।”
“খেয়ে নাও, তার পড়ে ওষুধ খেতে হবে আর ড্রেসিং তা করতে হবে।” স্যামন্তকের গলা শুনে কেঁপে ওঠে বন্দনা। এতক্ষণ এত নিস্তব্ধ ছিল সারা বাড়িটা যে ও হারিয়ে গেছিলো সেই নিস্তব্ধতায়। ঘাড় ঘুরিয়ে মুখ উঁচু করে দেখে যে স্যামন্তক একটা বাটিতে দুধ আর কলা মেখে এনেছে, সাথে একটা প্লেটে দুটি ব্রেড।
কাঁপা হাতে স্যামন্তকের হাত থেকে বাটিটা নিয়ে, চুমুক দিয়ে খেতে থাকে দুধ টুকু। বুঝে গেছে বন্দনা, এই ছেলের সামনে ওর কোন জোর চলবে না। স্যামন্তকের মুখের দিকে তাকিয়ে দুধের বাটি খালি করে। ঠোঁটের ওপরে একটু দুধ লেগে থাকে, বাটিটা হাতে ধরাবার সময়, আঙ্গুল দিয়ে আলতো করে ঠোঁটটা মুছিয়ে দেয় স্যামন্তক। ঠোঁটের ওপরে ওর আঙ্গুলের পরশে কেমন যেন করে ওঠে ওর মুখের শিরা, কি বলবে কি করবে কিছু ভেবে পায়না বন্দনা। একভাবে দেখতে থাকে স্যামন্তককে।
“তোমার বাড়িতে ফোন করে দিয়েছি, তোমার বাবা মা বিকেলের মধ্যে চলে আসবেন, চিন্তা নেই তোমার।” স্যামন্তক বন্দনাকে জানায় “আমি বলেছি যে তুমি বাথরুমে পড়ে গিয়ে মাথা ফাটিয়েছ আর তারপরে তোমার জ্বর হয়েছে। সুতরাং সেটা যেন মনে থাকে। কি হয়েছে না হয়েছে তা আবার কাউকে বলতে যেওনা।”
বাবা মা আসবেন শুনে বন্দনার ভেতরে এক অদ্ভুত গ্লানিতে ভরে যায় কাঁপা গলায় কিছু বলার চেষ্টা করে “তুমি কে আমার।” গলা দিয়ে আওয়াজ বের হয় না।
“কিছু বলবে কি তুমি?” জিজ্ঞেস করে স্যামন্তক, তারপরে একটু মাথা চুলকে বলে “আমাকে যে ড্রেসিং করতে হবে।”
“আমি করে নিতে পারবো” একটা ছোট্ট হাসি হেসে উত্তর দেয় বন্দনা “আমি একটু বাথরুমে যাবো।”
“ঠিক আছে, আমি দিদির জামাকাপড় বের করে রেখেছি, পড়ে নিও, আর বাথরুমের দরজা বন্দ করবে না” বলে স্যামন্তক চলে যায় ঘর থেকে।
বাথরুমে ঢুকে আপন মনেই হেসে ফেলে বন্দনা “দরজা বন্দ করবে না, ধুর ছাই।” পরনের শাড়ীটা খোলা মাত্রই বেড়িয়ে পড়ে সারা শরীরের ক্ষত। বুকের ওপরে দাঁতের দাগ কেটে বসা, ঘাড়ের কাছেও দাঁতের দাগ, পেটে ওপরে, নাভির কাছে আঁচড়ের দাগ, শুকিয়ে কালো হয়ে আছে একটু জ্বলছে সেই সব ক্ষত। কপালে ডান দিকে কালশিটে পড়া, চোখের কোণে একটু রক্ত জমা। বাবা মা কি বাইরের দাগ গুলো দেখে বিশ্বাস করবে যে ও বাথরুমে পড়ে গেছিলো? মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধা, চুলে জট কিন্তু মাথায় তো আর জল দেওয়া যাবেনা। আস্তে আস্তে গায়ে জল ঢেলে পরিষ্কার হয়ে নেয়। তোয়ালে জড়িয়ে ঘরে ঢুকে দেখে, বিছানার ওপরে পুবালির সালোয়ার কামিজ, ড্রেসিং গাউন, মাক্সি সব রাখা। বন্দনা একটা মাক্সি পড়ে ধিরে ধিরে ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে ডাইনিং রুমের দিকে।
স্যামন্তক রান্না ঘরে একটা প্রেসার কুকারে ডাল চাল মিলিয়ে খিচুড়ি রান্নার তোড়জোড় করছিল বন্দনা ওকে দেখে হেসে বলে “তুমি কবে থেকে রান্না করতে জানো?”
“তোমাকে বাইরে কে আসতে বলেছে?” স্যামন্তক ওর দিকে একটু কড়া নজরে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে।
—“আর শুয়ে শুয়ে ভালো লাগছেনা তাই বাইরে এলাম।”
“সোফায় বস, আমি আসছি।” প্রেসার কুকারটা গ্যাসে চাপিয়ে কিছু সবজি কাটতে কাটতে বলে “দিদি ফোন করেছিলো, এখনো আমি কিছু জানাইনি।”
এতো বড় ঘটনাটা চেপে গেছে স্যামন্তক? ওর জন্য আর কার কার কাছে মিথ্যে কথা বলবে, স্যামন্তকের মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে “কেন চেপে গেলে? বলে দিতে পারতে সব, ও তো তোমার দিদি।”
মাথা না উঠিয়েই উত্তর দেয় স্যামন্তক “সব কথার একটা সময় আছে, আমি মিথ্যে বলিনি দিদিকে শুধু সময়ের অপেক্ষায় আছি। যখন সময় হবে তখন আমি দিদিকে জানাবো।”
মনে মনে বলে বন্দনা “এই সময়টাকেই তো ঠিক ভাবে ধরতে পারলাম না তাই তো আমার আজ এই অবস্থা।” ধিরে ধিরে সোফায় গিয়ে বসে পড়ে, মাথার পেছনটা একটু ব্যাথা ব্যাথা করছে, গা হাত পা ও ব্যাথা ব্যাথা করছে। চুপ করে সোফার ওপরে পা গুটিয়ে কুঁকড়ে বসে থাকে বন্দনা, নিজেকে নিজের কাছে খুব ছোটো মনে হয়। দুমড়ে ফুঁপিয়ে ওঠে বুক, বেড়িয়ে পরে রক্ত না সেটা জল হয়ে চোখ দিয়ে ঝরছে।
কিছুক্ষণ পরে স্যামন্তক এক কাপ কফি নিয়ে ওর পাশে একটা ছোটো সোফায় বসে পরে। ওর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে “শরীর কেমন আছে?”
বন্দনা মুখ তুলে তাকায়, এক ফোঁটা জল গাল বেয়ে গরিয়ে পরে। আস্তে করে মাথা নাড়িয়ে জবাব দেয় “ঠিক আছে।” তারপরে উলটো হাতে গাল মুছতে মুছতে জিজ্ঞেস করে “আমি খুব খারাপ মেয়ে তাই না।”
কথাটা শুনে স্যামন্তকের ভেতরে যেন এক প্রচণ্ড ধাক্কা লাগে, বুঝতে পাড়ে স্যামন্তক যে বন্দনা ভেতরে ভেতরে কতটা ভেঙ্গে গেছে। ছোটো সোফা থেকে উঠে ওর বাঁ পাশে বসে, হাতের কফি কাপটা টি টেবিলে ওপরে রেখে আস্তে করে ডান হাতটা ওর ঘাড়ের পেছন দিয়ে ডান কাঁধের ওপরে রাখে। বন্দনা জল ভরা চোখে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে “আমি জানতাম তুমি আসবে।” ডান কাঁধের গোলায় স্যামন্তকের শক্ত মুঠি ওকে টেনে নেয় বুকের ওপরে। চওড়া বুকে আছড়ে পরে বন্দনা, মাথা গুঁজে ফুঁপিয়ে ওঠে “আমি খুব খারাপ মেয়ে তাই না।”
মাথার ওপরে ঠোঁট চেপে ধরে স্যামন্তক, বাঁ হাতের তালু বন্দনার গাল স্পর্শ করে। স্যামন্তক ওকে নিজের বুকের মধ্যে লুকিয়ে নিতে চায় যেন আর বন্দনা প্রানপন চেষ্টা করে ঐ বুকের মাঝে নিজেকে বিলীন করে দিতে।
—“মানুষ খারাপ হয় না বন্দনা, খারাপ হয় তার কর্ম। তুমি ফিরে এসেছ সেটা অনেক বড় ব্যাপার।”
বন্দনার কান্না যেন আর থামতে চায় না, দু হাত দিয়ে ওর বুকের পেশীর আঁকড়ে ধরে, মনে হয় যেন কেউ যদি ছাড়াতে আসে তাহলে ওর আত্মা খাঁচা ছাড়া হয়ে যাবে। স্যামন্তক কোন বাধা দেয়না বন্দনাকে, মনের ভেতরে যত পাপ যত গ্লানি আছে সব ধুয়ে যাক। চোখের জলে বুকের অনেকটা ভিজে যায়। অনেকক্ষণ ধরে দুজনা দুজনকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকে। স্যামন্তক আস্তে আস্তে বন্দনার পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়, বাঁ হাত দিয়ে বন্দনার মুখটা তুলে ধরে। ভিজে চোখের পাতা, ছোটো ছোটো দুটি চোখ যেন কত আশা নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে। বন্দনার মনে হয় যেন, ঐ চশমার পেছনের দুটি চোখ ওকে টেনে নেবে। নাকের ওপরে আলতো করে নাকটা ঘষে স্যামন্তক, ঠোঁট জোড়া খুব কাছে। বন্দনা নিজের ঠোঁটের ওপরে স্যামন্তকের গরম প্রস্বাস অনুভব করতে পেরে কেঁপে ওঠে। তিরতির করে কেঁপে ওঠে নরম লাল ঠোঁট দুটি, যেন বলতে চায় তুমি এতো দুরে কেন। আস্তে করে, স্যামুন্তকের নিচের ঠোঁটটি বন্দনার ওপরে ঠোঁটের সাথে ছুঁয়ে যায়। আপনা হতেই বন্দনার দু চোখ বন্দ হয়ে যায়। স্যামন্তক ডান হাত দিয়ে জাপটে ধরে বন্দনার কাঁধ আর টেনে নেয় নিজের ওপরে, বাঁ হাত দিয়ে গাল ছুঁয়ে চেপে ধরে নিজের ঠোঁট ওর আধরে। বন্দনা হারিয়ে যায় ওর বুকের মাঝে, নিজের অধরটি স্যামন্তকের দুটি ঠোঁটের মাঝে পেয়ে। খুব নরম করে চুষতে থাকে স্যামন্তক ঐ দুটি ঠোঁট, যেন কোন গোলাপ পাপড়ি, বেশি জোরে চিপলে যেন ছিঁড়ে যাবে। জিবের ডগা দিয়ে মাঝে মাঝে যেন বন্দনার ঠোঁট দুটি নিজের মনের গভিরে আঁকতে চেষ্টা করে। সময় থমকে দাঁড়ায়, চুম্বনটি গভীর থেকে গভীরতর মনে হয়। বন্দনা দশটি আঙ্গুলের নখ দিয়ে স্যামন্তকের বুক খামচে ধরে। চেপে ধরে স্যামন্তক, নিজের প্রশস্ত বুকের ওপরে বন্দনার নরম সুগৌল বুকে যেন মাখনের মতন গলতে শুরু করে। বন্দনা চেপে ধরে ওর ক্ষত বিক্ষত বুক, আজ যেন কৃষ্ণের মস্তকের মণি ওর সব দুঃখ সব ক্ষত পূরণ করে দেবে উষ্ণ চন্দনের প্রলেপে। কার ঠোঁটে কার লালা মাখা সেটা ভুলে যায়। বন্দনার শরীরের ব্যাথা বেদনা যেন এক চুম্বনে সব মুছে গেছে, হৃদয়ের কোন কোণে যে টুকু গ্লানি আর ভীতি ছিল সেটা কর্পূরের ন্যায় উবে গেছে। নিজের নিঃশ্বাস ঘন থেকে ঘনতর হচ্ছে, তার সাথে সাথে বুঝতে পাড়ে যে স্যামন্তক ওর কোমরটা কত শক্ত করে জড়িয়ে ওর দিকে টেনে এনেছে। স্যামন্তক বন্দনাকে নিজের ওপরে জড়িয়ে ধিরে ধিরে সোফার ওপরে শুয়ে পরে।
বন্দনা ধিরে ধিরে নিজেকে ওর আলিঙ্গন মুক্ত করে ওর বুকে মাথা রেখে চোখ বন্দ করে থাকে। কারুর গলা দিয়ে কোন আওয়াজ নেই স্যামন্তক ওর পিঠের উপরে হাত বোলাতে থাকে। দুজনারই মনে হয়, মাঝে মাঝে এই নীরবতা ভারী সুন্দর হতে পারে। কিছুক্ষণ না অনেকক্ষণ, বন্দনা ওর বুকের ওপরে হাত দুটি ভাজ করে রেখে মুখ তুলে ওর দিকে তাকায় একটা দুষ্টু হেসে জিজ্ঞেস করে “কি করলে এটা?”
স্যামন্তক ওর ডান হাতের আঙ্গুল দিয়ে বন্দনার শিরদাঁড়ার ওপর থেকে নিচ অবধি বুলিয়ে দেয়, বন্দনা কেঁপে ওঠে নরম আঙ্গুলের ডগার স্পর্শে, নিজের ভরাট বুক দুটি পিষে ধরে ওর নিচের মানুষটির প্রসস্থ বুকের ওপরে।
—“দুষ্টুমি করছ?”
—“না করছি না, চিন্তা নেই।”
—“আমার না শরীর খারাপা তার ওপরে তুমি আমাকে ঐ রকম ভাবে সাজা দেবে?”
—“ঠিক আছে দেব না।”
—“কিন্তু একটু আগে কি করলে আমার সাথে?”
—“কি করলাম আবার?”
—“উঁহু যেন ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানেনা, একলা একটা অবলা নারী পেয়ে আমাকে চুমু খেলে।”
—“যেটা তুমি অনেক আগে শুরু করেছিলে সেটা আজ ফুল স্টপ লাগিয়ে দিলাম।”
“পাগল ছেলে একটা।” তারপরে একটু থেমে বিষণ্ণ গোলায় বলে “আজকেই চলে যেতে হবে আমাকে?”
“তোমার বাবা মা যদি আজ এসে পড়েন আর নিয়ে যেতে চান, তাহলে তো আমি বাধা দিতে পারিনা” স্যামন্তকের মনটা চুমু খাওয়ার পরে বেশ উড়ুউড়ু করছিলো, মনের বাতায়নে যেন এক দখিনা বাতাস বইছিল, বন্দনার এক কথায় সব প্রসন্নতা যেন আছড়ে পড়লো খরা বালুচরে।
“তুমি সত্যি বাধা দিতে পারনা?” বুকের মাঝে কেমন একটা মোচড় দিয়ে ওঠে বন্দনার “কেন পারনা?”
প্রেমঘন বাহুবেষ্টনী আর দৃঢ় করে স্যামন্তক নিজের বুকের উপরে বন্দনার পেলব কমনীয় শরীরটিকে জাপটে ধরে “ভয় কেন পাচ্ছ আমি আছি তো।”
কান্না ভেজা স্বরে বলে ওঠে বন্দনা “ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ডরায়, আমার তাই অবস্থা। কাউকে আর বিশ্বাস হয়না।”
বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে বন্দনার মুখের দিকে, উত্তর দেবার মতন ভাষা খুঁজে পায়না স্যামন্তক। এর কি উত্তর দেবে নিজেও জানেনা। বন্দনা বুঝতে পারে যে কথাটা বড় বেদনা দায়ক কিন্তু ওর এখন সব থেকে ভয় ওটাই, কাকে ও বিশ্বাস করে নিজেকে বিলিয়ে দেবে। না এবারে উঠতে হবে আর নয়। বন্দনা স্যামন্তকের আলিঙ্গন থেকে নিজেকে মুক্ত করে উঠে বসে।
“কখন আসবে বাবা মা?” জিজ্ঞেস করে বন্দনা।
নিজেকে বড় অপরাধী মনে হয়, কি বলে বন্দনা কে বঝাবে যে ও ভালবাসে “বিকেলের দিকে। তুমি ওষুধ খেয়ে নাও তারপরে তোমার ড্রেসিং করে দিতে হবে।”
উঠে পরে বন্দনা সোফা থেকে, পেছন দিকে তাকিয়ে দেখে স্যামন্তক চুপ করে ওর দিকে চেয়ে আছে উত্তরের আশায় আলতো হেসে বলে “আমি নিজের ড্রেসিং নিজে করে নিতে পারবো। যেখানে যা লাগানোর সেটা করে নেব।” এই বলে পুবালির ঘরে ঢুকে পরে। মনের ভেতরটা আজ কেমন মিলিত ভাবাবেগ আচ্ছন্ন, রাতের বজ্র বিদুত্য আর প্রবল ঝড়, সকালের মিষ্টি রোদে, প্রেমঘন চুম্বনে সিক্ত অধরওষ্ঠ, বুকের মাঝের ফাঁকা স্থান টিকে সিক্ত চুম্বনের প্রলেপে ভরিয়ে নিতে প্রবল হয়ে ওঠে মনটা, কিন্তু বিশ্বাস করা কঠিন। খাটের ওপরে দেখে ওষুধ গুলো পরে আছে তার সাথে একটি আন্টিসেপ্টিক মলম রাখা। হটাৎ করে মনে হল ওর পেছনে যেন স্যামন্তক দাঁড়িয়ে, ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে হ্যাঁ ছেলেটা দাঁড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
জিজ্ঞেস করে স্যামন্তক “লাগিয়ে নিতে পারবে ক্রিমটা?”
ক্রিমটা আর বাকি জামা কাপড় নিয়ে চুপ করে বাথরুমে ঢুকে যায় বন্দনা। স্যামন্তকের মনটা বড় বিষণ্ণ হয়ে যায়, আজকেই চলে যাবে বন্দনা, ওকে এখানে পরে থাকতে হবে আরও দিন পনেরো তারপরে চাকরি যেখানে হবে সেখানে চলে যেতে হবে। কলকাতায় কোন নামকরা আই.টি. কম্পানি নেই যেখানে চাকরি পেতে পারে।
দুপুরে খাবার সময় অতিরিক্ত ভাবে শান্ত ছিল বন্দনা, ফিরে আসা কেন যদি ছেড়ে যেতেই হবে? খিচুড়িটা মুখের মধ্যে তেতো লাগছে, বারেবারে কেন ওকে হারাতে হয় যাকে ও আঁকড়ে ধরে রাখতে চায়? গাল গড়িয়ে দু ফোঁটা জল পরে যায় থালায়। ঠিক সামনে বসে স্যামন্তক বন্দনার ভারাক্রান্ত চেহারা দেখে নিজের খাওয়া ভুলে যায়। চেয়ার ছেড়ে উঠতে যাবে স্যামন্তক এমন সময় বন্দনা বলে ওঠে “বসে থাকো আর উঠনা। শুধু একটি বারের জন্য কথা দাও ফিরে আসবে।”
স্যামন্তক মাথা নাড়িয়ে বলে “হ্যাঁ ফিরে আসবো।”
দুপুরের পরেই বন্দনার বাবা মা দুর্গাপুর পৌঁছে যান। মা মেয়ের কান্না দেখে স্যামন্তক চুপ করে থাকে। বন্দনার মা জিজ্ঞেস করেন স্যামন্তক কে “আচ্ছা বাবা, তুমি কি করে পেলে ওকে?”
স্যামন্তক একবার বন্দনার মুখের দিকে তাকিয়ে ওর মাকে উত্তর দেয় “ওতো গতকাল দুপুরে শান্তিনিকেতন যাবার জন্য তৈরি হচ্ছিলো সেই সময়ে বাথরুমে পরে যায় আর মাথা ফেটে যায়। তাই ওর যাওয়া হয়নি। কাল রাতে আমাকে বলে যে বাড়ি থেকে পালিয়েছে। তাই তো জোর করে ওর কাছ থেকে আপনাদের ফোন নাম্বার নিয়ে আপনাদের ফোন করা।” এতো বড় ঘটনাটা লুকিয়ে রেখে, অবান্তর অজুহাত দেবার পরে স্যামন্তক একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। বুকের ভেতরে অনেকক্ষণ থেকে একটা বড় পাথর পড়েছিল কি জিজ্ঞেস করবে, কি উত্তর দেবে ও। হোক না মিথ্যে কিন্তু মেয়েটাকে তো কারুর সামনে মাথা নিচু হয়ে থাকতে হবেনা, নিজের সামনে না।

সন্ধ্যের পরে বন্দনার বাবা মা ওকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়। স্টেশান পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে আসে স্যামন্তক। গাড়িতে চড়ার আগে পর্যন্ত বন্দনা ওর পাশ ছাড়তে চায়না। ট্রেনে উঠে পড়ার সময় স্যামন্তকের মুখটা খুব ছোটো হয়ে যায়। বন্দনার মনের ভেতরটা দুমড়ে ওঠে। জল ভরা চোখ আজ, দুরে চলে যাবার করুন সুর বেজে ওঠে বন্দনার বুকের মাঝে। ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুল আর কড়ে আঙ্গুল দিয়ে ফোনের ইশারা করে প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা স্যামন্তকের দিকে “আমাকে ফোন কোরো আমি অপেক্ষায় থাকবো।”
আজ আর পিছিয়ে থাকে না স্যামন্তক, হাত নেড়ে জানিয়ে দেয় “হ্যাঁ আমি করবো।”



চলবে.....
বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড 
http://biddutroy.family.blog
[+] 4 users Like Biddut Roy's post
Like Reply
#43
দারুণ দাদা
[+] 2 users Like Alvi Arman's post
Like Reply
#44
এই গল্পটা আগে পড়েছি। মনে হয় এটাও পিনুরাম কোনও একটা ছদ্মনামে লিখেছিল। শেষটা মনে নেই। খুব উপভোগ করছি এই লেখা।
[+] 2 users Like TumiJeAmar's post
Like Reply
#45
Keep posting boss.
Astroner
[+] 2 users Like astroner's post
Like Reply
#46
পর্ব-১৫



শূন্য ঘর, এতো দিন এই ফাঁকা ঘরে ছিল স্যামন্তক, এক দিনের জন্য মনে হয়নি ঘরটা কত খালি, আজ যেন বাড়ি ফিরে ঘরটা অতিরিক্ত খালি খালি মনে হয়। জানালা, দরজা, দেয়াল পর্দা সব যেন ওর থেকে দুরে মুখ করে বসে আছে। আজ আর ঘরের লাইটগুলো জ্বালাতে ইচ্ছে করল না। চুপ করে এক কাপ কফি বানিয়ে বারান্দায় বসে পড়লো। কত সময় কেটে গেলো মনে পড়েনা, ফোনের আওয়াজে নিজেকে ফিরে পায় স্যামন্তক।
“কিরে এতো বার করে ফোনটা বেজে গেলো উঠাচ্ছিস না কেন?” পুবালির ফোন।
বিষণ্ণ মন, ভারাক্রান্ত হৃদয় তাও নিজের ভাবটা লুকিয়ে রাখতে হবে। দিদিকে বললে কি মনে করবে সেটা একটা বড় প্রশ্ন এখন সময় আসেনি দিদিকে বলার “না রে আমি একটু ছাদে ছিলাম।”
গলার আওয়াজ চাপা, কিছু তো লুকচ্ছে ছেলেটা কিযে করে “তোর কিছু একটা হয়েছে, তুই আমাকে বলবি না?”
এক বার ভাবে বলে দেবে, কিন্তু কি বলবে দিদিকে, তাও সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে বলে “বন্দনা এসেছিলো বাড়ি থেকে পালিয়ে, নিরুপমের কাছে।”
“কি” আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করে পুবালি “কবে এসেছিলো?”
—“গত পরশু রাতে, ঐ যেদিন খুব ঝড় হচ্ছিলো আর তুই ফোন করেছিলিস।”
—“তারপরে কি হল?”
“চলে গেলো আবার কি হবে।” ব্যাস এইটুকু জানিয়ে দেয় স্যামন্তক, একেবারে মিথ্যে নয় তবে শুধু সত্যটা লুকিয়েছে।
বন্দনার বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়। বাবা মা মেয়েকে ফিরে পেয়ে বেশ খুশী আর তার সাথে এটা জেনে খুশী যে নিরুপমের সাথে ওর ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। বন্দনা খাওয়ার পড়ে নিজেকে নিজের ঘরের মধ্যে বন্দি করে নেয়, খুব ফাঁকা লাগে মনের ভেতরটা, এই দু’দিনে জীবনের স্রোতে অনেক ঝড় ঝঞ্ঝা পাড় করে এল। হটাৎ করে মনে হল, কত ভুল কত পাপ করেছে, সেই সব ভুল আর সেই সব পাপ আর কারুর ওপরে চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। ও ঠিক করে নেয় যে জীবনে আর কাউকে ভালবাসবে না, স্যামন্তক ও নয়। অনেক ভালো ছেলেটা, ঐ ঝড় মাথায় নিয়ে বোলপুর থেকে রাতে নিয়ে এসেছে, ফিরিয়ে দিয়েছে ওকে ওর বাবা মার কাছে। সব কিছু ঢেকে রেখে ওকে আবার করে জীবনে ফিরে যেতে বলেছে। কিন্তু কি করে ভুলবে সেই সুমধুর রস যেটা ওর আধর ওষ্ঠ তে লেগে রয়েছে। বারে বারে মনে পড়ে যায়, কত নিবিড় ভাবে জড়িয়ে ধরেছিল, এত আলতো করে চুমু টা খেয়েছিল যেন মনে হয়েছিল যে ওটা ওর ঠোঁট নয়। চুপ করে শুয়ে পড়ে বিছানায়, ভাবতে থাকে, কত জোরে জড়িয়ে ধরেছিল মনে হচ্ছিল যেন একটু হলে ও গলে যাবে আর স্যামন্তকের বুকের ওপরে মিশে যাবে। কি করছে ছেলেটা একা একা, নিশ্চয় ওর কথা মনে করছে, একবার ফোন তো করতে পারে করলনা তো এখন।
“এই জেগে আছিস নাকি” মা ডাক দেয় বন্দনা কে “স্যামন্তক ফোন করেছে?”
এক লাফে হ্রিদস্পন্দনটা যেন শত গুন বেড়ে যায় গলা কেঁপে ওঠে উত্তেজনায় “না ঘুমোই নি।” তাড়াতাড়ি করে ফোনটা ধরে “কি করছিলে এতক্ষণ?”
“নাথিং এজ সাচ, জেগে ছিলাম ঘুম আসছিল না তাই।” আওয়াজটা অনেক ফাঁকা ফাঁকা শোনায় “ঠিক করে পৌঁছে গেছ?”
“হ্যাঁ” উত্তর দেয় বন্দনা, বুকের মাঝে একটা তোলপাড়, সত্যি কি ও স্যামন্তকের আওয়াজ শুনছে? “কেন ঘুম আসছিল না?”
—“জানি না কেন, আজ ঘরটা অনেক ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।”
—“খেয়েছ?”
—“হ্যাঁ খেয়ে নিয়েছি।”
একটু মজা করে জিজ্ঞেস করে বন্দনা “সত্যি বলছ না কি ফাঁকা ঘরে না খেয়ে শুধু সিগারেট খেয়ে কাটাচ্ছ?”
বন্দনার গলা শুনে চারদিকে শূন্য ভাবটা অনেকটা কেটে যায়। একটা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে নিজের বুকের ওপরে হাত বোলায় স্যামন্তক ঠিক যেখানে বন্দনাকে জড়িয়ে ধরেছিল। ঠোঁট দুটি যেন মধু দিয়ে ভরা আর ঠিক যেন গোলাপের পাপড়ির মতন নরম। প্রথম বার বেশি জোরে চুষতে চায়নি, যদি ঠোঁট দুটি ছিঁড়ে যায়? কি বোকা ছেলে নিজেই হেসে ফেলে “তুমি কেন ঘুময় নি? অনেক তো ঝড় ঝক্কি গেছে।”
ফোনটা কানের সাথে চেপে ধরে চুপিচুপি বলে “জানিনা, এমনি এমনি ঘুম আসছিল না। পুবালি কি ফোন করেছিল?”
—“হ্যাঁ দিদিকে বলেছি?”
ভয় পেয়ে যায় বন্দনা, পুবালি কে বলে দিয়েছে? খুব রাগ হয় স্যামন্তকের ওপরে, ওযে কথা দিয়েছিল যে কাউকে কিছু বলবে না। একটু রাগত স্বরে বলে “সব বলে দিয়েছ? কথাটুকু রাখলে না আমার?”
—“রেগ না, আমি সে রকম কিছু বলিনি।”
“জানিনা কাকে কতটা বিশ্বাস করব আর।” একটু হতাশ সুরে বলে বন্দনা। সত্যি কাকে বিশ্বাস করবে আর কাকে নয়। চোখ বন্দ করে মনপ্রান সঁপে যাকে ভালবেসেছিল সে তো এতো বড় ধাক্কা দিল যে নিজের শিরদাঁড়া পর্যন্ত ভেঙ্গে গেছে। লোকের সামনে মুখ দেখানর শক্তি টুকু হারিয়ে ফেলেছে বন্দনা।
—“এ রকম ভাবে কথা বল না। আমি তোমার এই আওয়াজ শুনতে এতো রাতে ফোন করিনি।”
—“কিন্তু পুবালি কে এটা তো জানিয়েছ যে আমি বাড়ি থেকে পালিয়েছি।”
একটা বড় নিঃশ্বাস ছেড়ে উত্তর দেয় স্যামন্তক “হ্যাঁ, এটা আমাকে বলতে হত। দিদিকে আমি পুরো মিথ্যে কথা বলতে পারিনা। আমি সত্যিটা লুকিয়েছি, মিথ্যে কিছু বলিনি।”
তাহলে বন্দনা এবারে পুবালির চোখে অনেক নিচু হয়ে যাবে, পুবালি জেনে গেছে যে ও বাড়ি থেকে পালিয়েছে “ফোন রাখ, তুমি তোমার দিদিকে নিয়ে থাকো।” এই বলে ফোন রেখে দেয় বন্দনা।
মনটা বড় বিষিয়ে যায় স্যামন্তকের, দিদির কাছে আজ পর্যন্ত কিছু লুকায়নি। শ্যামলীর সাথে যখন ওর সম্পর্ক ছিল সেটা সব থেকে আগে দিদিকে জানায়, সম্পর্ক ভেঙ্গে যাবার পড়ে দিদি ওকে বুঝিয়ে আবার পড়াশুনাতে মন বসায়। আজ এমন কি বলেছে বন্দনার নামে যে মেয়েটা তিতিবিরক্ত হয়ে ফোন ছেড়ে দিলো? পুরো কথাটা পর্যন্ত শুনল না, দিদিকে একদিন না একদিন তো জানাতে হত।
বাড়ি ফিরে বন্দনা নিজেকে একটা শামুকের মধ্যে লুকিয়ে নেয়। একজন কে বিশ্বাস করে সব হারিয়েছে, আর একজন কে বিশ্বাস করতে চেয়েছিল কিন্তু সেটাও পারল না। মমতাশংকরের নাচের ট্রুপ ছেড়ে দেয় বন্দনা। বাবা মা কে একবার অনুরোধ করে যে ডিব্রুগড় ফিরে যাবে, সেখানে যে নাচের কলেজটা খুলেছিল সেখানে নাচ শেখাবে। বন্দনার কথা শুনে ওর বাবা মা খুবই মর্মাহত হয়ে পড়েন। অনেকবার বলে বুঝিয়ে উঠতে পারলেন না ওকে।
দুর্গাপুর থেকে চলে আসার পড়ে, স্যামন্তক বেশ কয়েক বার ফোন করেছিল। স্যামন্তকের গলার আওয়াজে কেমন যেন প্রতারণার ছায়া দেখতে পেত তাই আর নিজেকে খুঁজতে চেষ্টা করেনি। বাড়ি ছাড়া আর হল না বন্দনার বাবা মায়ের মুখ দেখে।
এর মাঝে স্যামন্তকের কলেজের রেসাল্ট বের হয়,ও জানে যে রেসাল্ট ঠিকঠাক হবে, সে নিয়ে অত মাথা ঘামায় না। যেটা ওর সব থেকে বেশি ছিন্তার বিষয় সেটা হচ্ছে একটা চাকরি পাওয়া। দিল্লি এবং পুনের ইন্টারভিউর উত্তর এখনো কিছু আসেনি, দু’বাড়ির ফোন নাম্বার দেওয়া আছে সব জায়গায়। ফোন করে কলেজের বন্ধুদের কাছ থেকে জেনে নেয় যে রেসাল্ট ঠিকঠাক হয়েছে। আনন্দিত মনে পূবালীকে ফোন করে জানিয়ে দেয় রেসাল্টের কথা। বন্দনাকে ফোন করেনা স্যামন্তক, এমনিতে মেয়েটা ভালো ভাবে কথা বলছেনা, দেখা না করে কিছু জানানো ঠিক হবে না।
একদিন বিকেল বেলা ফোন করে স্যামন্তক “হ্যালো, কেমন আছো?”
ভারী গলায় উত্তর দেয় বন্দনা “কি হয়েছে বল।”
“জেঠু জেঠিমা ফিরে এসেছেন, আমি কাল কোলকাতা ফিরে যাচ্ছি। বিকেলবেলা দেখা করতে পারি কি তোমার সাথে?” আওয়াজে বেশ উচ্ছাস ভরা, মনটা বেশ উৎফুল্ল স্যামন্তকের।
কেমন যেন হয়ে যায় বন্দনা, ভাবে কেন দেখা করবে ওর সাথে “কেন দেখা করবে আমার সাথে?”
আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করে স্যামন্তক “মানে? কি বলছ তুমি, কি হয়েছে তোমার? তুমি আমার সাথে দেখা করতে চাও না?”
এক বার ভাবে বন্দনা, ঠিক আছে এক বার দেখা করা যাক “ঠিক আছে কাল বিকেলে আমি দাঁড়িয়ে থাকবো বিড়লা মন্দিরের সামনে।”
আগস্টের প্রথম সপ্তাহ, কলকাতার আকাশে এখন কালো মেঘের ভিড়, কোন ঠিক নেই কখন নামে আর কখন ধরে। সকাল থেকে গুমোট মেরে আছে আকাশ, ধুসর মেঘে ঢাকা, সূর্য ঠিক ভাবে দেখা দিতে পারেনি।
সকালবেলা উঠে জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখে বন্দনা, আকাশের গুমোট মেঘের মতন ভরে যায় মনটা। গত পনেরদিনে একবারের জন্য ঘর থেকে বের হয়নি। এমনিতে কলকাতায় নতুন, রাস্তা ঘাট বিশেষ চেনেনা। শপিং বলতে মাঝে মাঝে গরিয়াহাট যাওয়া হয় মায়ের সাথে না হলে ট্রায়ঙ্গুলার পার্কে পাশে বাজার করতে যাওয়া। নাচের কলেজটা বাড়ির কাছেই ছিল * স্তান রোডের ওপরে।
বন্দনার মনে সেই উৎফুল্ল আর নেই, হারিয়ে গেছে চিরদিনের মতন। বিকেল ঠিক তিনটের সময় স্যামন্তক ফোন করে “আমি বের হচ্ছি আর আধ ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যাবো, তুমি রেডি তো?”
নিরস বন্দনা উত্তর দেয় “ঠিক আছে।” বন্দনার গলার আওয়াজে যেন দায় সারা ভাব।
স্যামন্তক বেশ জোর দিয়ে বলে “তোমার ইচ্ছে নেই সেরকম তাই তো, কিন্তু আমি দেখা করতে চাই, সুতরাং তুমি আসবে।”
একটু খানি রেগে ওঠে বন্দনা “তুমি আমার ওপরে জোর দেখাচ্ছ?”
“তাই যদি তোমার মনে হয়ে থাকে, তাহলে তাই। আমি বের হচ্ছি, আমি ওয়েট করে থাকবো, আসতে হয় এস না ইচ্ছে হলে আসবে না। পুরটাই তোমার ওপরে।” কথা বলতে বলতে কান গরম হয়ে যায় স্যামন্তকের, মেয়েটা সত্যি অকৃতজ্ঞ। এতো করে মন পাওয়া গেলনা। হতে পারে বন্দনা প্রবল বিষন্নতায় ভুগছে কিন্তু সেখান থেকে টেনে বের করার জন্য স্যামন্তক তো আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। না, দেখা না করলে মেয়েটা কে বার করা যাবেনা ওর মানসিক হতোদ্যম অবস্থা থেকে।
বন্দনা একটা সাধারন ঘিয়ে রঙের সালোয়ার কামিজ পড়ে বেড়িয়ে যায়। মাকে বলে যায় যে স্যামন্তক দেখা করতে আসছে। স্যামন্তক আসছে শুনে বন্দনার মা বলেন “একবার ছেলেটাকে বাড়ি নিয়ে আসিস।” শুনে বন্দনা একটু রেগে গিয়ে বলে “কেন তোমার মেয়েকে ফিরিয়ে দিয়েছে বলে পুজো করবে?”
বিড়লা মন্দিরের সামনে পৌঁছে দেখে স্যামন্তক বাইকে হেলান দিয়ে বসে আছে একটা সিগারেট ঠোঁটে নিয়ে। একটা সাদা সার্ট, হাতা গোটান আর গাড় নীল জিন্স পড়ে। ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত চোখ বোলায় বন্দনা, প্রায় পনেরো দিন পড়ে দেখা। বেশ পুরুষালী গড়ন, ভালো লম্বা, চোখে চশমা। এই পনেরো দিনে একটা জোড়া গোঁফ গজিয়ে গেছে নাকের নিচে। দেখেই মনে মনে হেসে ফেলে, পাগল করার মতন চেহারা বটে স্যামন্তকের। এক মনে রাস্তার দিকে তাকিয়ে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ছে আর আসে পাশের পথ যাত্রী গুলো কে বেশ মন দিয়ে দেখছে। বন্দনাকে এখন পর্যন্ত লক্ষ্য করেনি স্যামন্তক। নিজেকে ওর পাশে দাঁড় করিয়ে একবার ভাবতে চেষ্টা করে, বড় বেমানান লাগে ছবিটা। কেমন যেন ছন্ন ছাড়ার মতন সেজে এসেছে, মুখ টিপে হেসে ফেলে নিজের সাজ দেখে। এক দমকা বাতাসে বুকের ভেতর থেকে কালো গুমোট মেঘ উড়ে চলে যায় ঠিক তার সাথে এক গুচ্ছ চুল এসে ওর ডিম্বাক্রিত মুখমণ্ডল ঢেকে ফেলে। বাঁ হাত দিয়ে চুল সরাতে সরাতে এগিয়ে যায় স্যামন্তকের দিকে।
পেছন থেকে এসে, মাথায় আলতো করে ছাতা দিয়ে মেরে বলে “কি দেখছিলে?”
মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে পেছন ঘুরে তাকায় স্যামন্তক “ওঃ তুমি এসে গেছ। মেয়ে দেখছিলাম, এই মারোয়াড়ীদের যা পাছা কি যে বলব। যেন এক এক টা কলসি।”
হাসি থামাতে পারে না বন্দনা “তুমি নাকি আমার জন্য এসেছ আর এসে কিনা মেয়েদের ওইসব দেখছ?”
স্যামন্তক মুখটা বন্দনার মুখের খুব কাছে নিয়ে এসে হেসে বলে “দেখলে তো, ঐ মুখে হাসি ফোটানর জন্য কত কি করতে হচ্ছে।”
চোখ দুটি ছলছল করে ওঠে, কত ভুল বুঝেছে স্যামন্তককে, কত উল্টোপাল্টা কথা শুনিয়েছে, একবারও ফোনে ঠিক করে কথা বলেনি, সব সময় রাগ আর অভিমান করে কথা বলেছে তাও ছেলেটা দেখা করতে এসেছে, শুধু ওর মুখের হাসি দেখার জন্য। নাকের ডগা লাল হয়ে যায় বন্দনার, চোখ দুটি জ্বালা করতে থাকে। নিচের ঠোঁটটা ওপরের দাঁতের নিচে কামড়ে ধরে, জল টিকে গালের ওপরে গড়াতে দেয় না। স্যামন্তকের গভীর চাহনি ওর দু’চোখ ভেদ করে যেন ওর মাথার পেছনের খোঁপা দেখতে পাবে। ঐ দু’চোখের সামনে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে বন্দনা, আপনা থেকে মুখ নিচু হয়ে যায়।
“চল আগে বাড়ি যাই, তোমার মুড মনে হয় না আজ ঠিক আছে।” স্যামন্তক বলে বন্দনাকে।
“না পড়ে বাড়ি যাবে, মা এমনিতে তোমাকে নিয়ে একবার যেতে বলেছে।” বন্দনা বাইকের পেছনে উঠে বসে “চল কোথায় নিয়ে যেতে এসেছ।”
হেলমেটটা মাথায় চাপিয়ে এক কিকে বাইক স্টার্ট করে স্যামন্তক। বাঁ পাশে পা ঝুলিয়ে সামনের দিকে বেকে বসে বন্দনা। দু’হাতের নিচ দিয়ে নিজের দু’হাত গলিয়ে কাঁধটা জাপটে ধরে, সামনে ঝুঁকে নিজেকে স্যামন্তকের চওড়া পিঠের সাথে একত্রীত করে দেয়। স্যামন্তক পিঠের ওপরে বন্দনার নরম বুকের স্পর্শ অনুভব করে, তার সাথে অনুভব করে বাঁ কাঁধে থুতনি।
কানের কাছে মুখ নিয়ে বন্দনা নিচু স্বরে বলে “কি হল স্টার্ট করে কি এখানে দাঁড়িয়ে থাকবে না কোথাও নিয়ে যাবে?”
বুক ভরে একটা বড় নিঃশ্বাস নেয় স্যামন্তক, বন্দনাকে তাহলে শেষ পর্যন্ত খুশী করতে পেরেছে। জিজ্ঞেস করে “কোথায় যেতে চাও?”
বাইকটা ধিরে ধিরে হাজরা রোডের ওপরে চালাতে থাকে। থুতনি দিয়ে আলতো চাপ দেয় বন্দনা স্যামন্তকের কাঁধের ওপরে “আমি কি জানি কলকাতার, তুমি যেখানে নিয়ে যাবে সেখানে যাবো।”
—“এক কাজ করি, আকাশের অবস্থা তো ভালো নয়, চল আউট্রাম ঘাটে একটা স্কুপ আছে সেখানে।”
স্যামন্তকের ঘাড়ের পেছনে নিজের গাল চেপে ধরে বসে থাকে, শরীরের উষ্ণতাটুকু নিজের গালের মধ্যে শুষে নিতে চায়। ঘাড়ের ওপরে বন্দনার গরম নিঃশ্বাস আর নরম গালের স্পর্শানুভব, স্যামন্তক শরীরে এক শিহরণ ছড়িয়ে দেয়। কেউ যেন জ্বলন্ত লাভা ঢেলে দিয়েছে ওর ঘাড়ে পিঠে বুকে। চোয়াল শক্ত করে নিজেকে শাসন করে স্যামন্তক, বাছাধন বাইক চালাচ্ছ সাবধানে চালাও।
বন্দনার মাথার চুল এলোমেলো হয়ে মুখের ওপরে এসে পড়ে, কিছু উড়ে স্যামন্তকের ঘাড়ের ওপরে চলে আসে। বুকের মাঝে এই বিকেল পর্যন্ত যে কালো মেঘ জমে ছিল সেটা আর নেই, কোথায় উড়ে গেছে কে জানে। বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয় বন্দনা, খুব ইচ্ছে হয় দুই হাত দিয়ে পিষে ফেলতে। শার্ট ভেদ করে শরীরের উষ্ণতা যেন সারা বক্ষের ওপরে উপচে পড়ছে। ইচ্ছে করে একটু দুষ্টুমি করতে, সুগোল বক্ষ দুটি চেপে ধরে পিঠের ওপরে, দেখা যাক না ছেলেটার কত নিয়ন্ত্রণ আছে নিজের ওপরে। মাঝে মাঝেই ঘাড়ের পেছনে গাল ঘষে দেয়। চারদিকের ঠাণ্ডা হাওয়া আর যেন ঠাণ্ডা নেই, দুজনার শরীরের ঘর্ষণে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে চারদিক।
ঠিক রেস কোর্সের পাশে বাইকটা একটু ধিমে করে স্যামন্তক, মাথা ঘুরিয়ে পেছনে দেখে বলে “তখন থেকে শুধু বদমাইশি করা হচ্ছে, হ্যাঁ। একবার হাতে পাই সব দুষ্টুমি দেখিয়ে দেব।”
স্কুপের সামনে বাইক পার্ক করার সময় আকাশের দিকে তাকায় বন্দনা, ধূসর মেঘ একটু জমাট বেঁধে আসছে। একটু আগে পর্যন্ত জলীয় হাওয়া বয়ে আসছিল গঙ্গাবক্ষ থেকে, সেটা যেন থমকে গেছে। স্যামন্তকের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে বন্দনা “এই, বৃষ্টি আসবে না তো?”
মজা ছলে উত্তর দেয় স্যামন্তক “আচ্ছা মেয়ে তো তুমি, আমাকে কি বৃষ্টি জানিয়ে আসবে নাকি, যে আমি জানবো।”
ছাতা দিয়ে হাতের ওপরে মারে বন্দনা “ধুর, আমি তো আকাশ দেখে জিজ্ঞেস করলাম।”
ছাতার মার থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে হেসে বলে “আগে ঠিক কর কাকে জিজ্ঞেস করছ, আকাশকে না আমাকে?”
—“তোমার সাথে না, একদম কথা বলতে নেই।”
—“ও কে ম্যাডাম, কথা বলতে হবে না, ওপরে চলুন।”
স্যামন্তকের বাঁ হাতটাকে দু’হাত দিয়ে জড়িয়ে হাঁটতে থাকে বন্দনা। পশ্চিম দিকের কালো মেঘটা বড় সুন্দর দেখায়। দ্বিতীয় হুগলী সেতুর পেছনে আকাশটা যেন দু’ভাগ হয়ে গেছে। নিচে কালো জল, ওপরে কালো মেঘ, মাঝখানে সাদা দিগন্ত রেখা। আজ অনেক দিন পড়ে বন্দনা যেন প্রান ভরে খোলা হাওয়ায় শ্বাস নিচ্ছে। মনের অলিগলিতে যেন রক্ত কণা গঙ্গার ক্ষুদ্র তরঙ্গের ন্যায় ঢেউ খেলছে। ইস, বিকেলটা এক সময় শেষ হয়ে যাবে, যদি আর কিছুক্ষণ আগে আসতে বলত স্যামন্তককে, তাহলে আর একটু বেশি সময় বসতে পারত ওর সাথে। এর পড়ে তো আবার মা বলেছেন বাড়ি নিয়ে যেতে।
দু’তলায় উঠে বিশাল কাঁচের জানালার পাশে চেয়ার নিয়ে বসে পড়ে। স্যামন্তক নিচে আইস্ক্রিমের অর্ডার দিয়ে উপরে আসে। বন্দনা নিজেকে একবার দেখে আর স্যামন্তকেকে এক বার দেখে, ধুর কত বেমানান লাগছে ওর পাশে, কেন মরতে এতো রাগ পুষে রেখেছিলো কে জানে। সাদা শার্টে যা দারুন দেখতে লাগছে ছেলেটাকে, বন্দনা আর চোখে শুধু দেখে যাচ্ছে আর ভেবে যাচ্ছে, বৃষ্টিটা যেন বাড়ি ফেরার পড়ে আসে, তাহলে রাতে দেরি করে বাড়ি ফিরবে স্যামন্তক। চোয়াল, চিবুক যেন কেউ ছেনি দিয়ে ক্ষুদে তৈরি করেছে, ইস লোকজন আছে পাশে নাহলে জড়িয়ে ধরে এখুনি একটা চুমু খেয়ে নিত। আবার কেমন গোঁফ রেখেছে, ওটাকে কামিয়ে দিতে বলতে হবে নাহলে মুখের মধ্যে ঢুকে যাবে, নাঃ বেশ পুরুষালী দেখাচ্ছে ঐ ঘন কালো গোঁফ জোড়ায়। স্যামন্তকের বাম বাজুটা দু’হাতে জড়িয়ে বাঁ কাঁধে মাথা রাখে বন্দনা।
স্যামন্তক বাঁ দিকে মাথা হেলিয়ে ওর মাথার ওপরে গাল রাখে। মৃদু স্বরে জিজ্ঞেস করে “কি হল, কিছু বলবে না। কত তো রাগ অভিমান করে বসেছিল আমার সাধের নর্তকী।”
—“বাহ্: রে, তুমি সব কিছু পুবালিকে বলে দিলে তো আমি রাগ করবো না।”
—“তুমি তো কিছু ঠিক করে শুনবে না তার আগেই ফোনটা কেটে দেবে, তো আমি কি করি।”
—“কি বলেছ ওকে বল।”
—“আর সে নিয়ে কথা বলে কি বিকেলটা মাটি করবে?”
কাঁধের গোলায় ঠোঁট, নাক ঘষে মৃদু স্বরে বলে “না আজ আর রাগ করার মতন মুড নেই।”
—“উফফফ্* রাখি কোথায় এ মেয়েকে।”
—“যেখানে খুশী। এখন বলত পুবালিকে কি বলেছ?”
—“আমি শুধু বলেছি যে তুমি বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছিলে, ব্যাস বাকি আর কিছু জানাইনি। যেটা তোমার বাবা মা জানেন সেটাই দিদি জানে তার বেশি কিছু নয়। আমার মনে হয় না যে দিদি কোনদিন দুর্গাপুর এসে শান্তিনিকেতন গিয়ে খোঁজ নেবে। এবারে শান্তি?”
আইস্ক্রিম খেতে খেতে আর গল্প করতে করতে অনেকটা সময় কেটে যায়, দু’জনের কারুর আর হুঁশ থাকেনা। ঠিক যখন বাইরে ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু করে তখন দু’জনার মনে হয় যে বাড়ি ফিরতে হবে। বন্দনা, ছোটো ছোটো কাজল আঁকা ভীতি মাখা চোখে স্যামন্তকের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে “বাড়ি কি করে ফিরব?”
নিচে নেমে দেখে বাইরে ঝড় শুরু হয়ে গেছে তবে বৃষ্টি শুরু হয়নি। বন্দনাকে বাঁ’হাতে জড়িয়ে ধরে স্যামন্তক “ভিজে ভিজে ফিরব। যাচ্ছি তো তোমার বাড়িতে, সেটা অবশ্য বাবা মা জানেনা।”
একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে বন্দনা “মানে? তুমি বলে আসনি যে তুমি আমার বাড়ি আসছ?”
হেসে বলে স্যামন্তক “তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে? আমি যদি বলি যে আমি দিদির বান্ধবীর বাড়ি যাচ্ছি, তো সহজেই প্রশ্ন উঠবে যে বান্ধবীটি কে। যখন জানবে যে তার নাম বন্দনা, আমার বোন দুয়ে দুয়ে চার করে খবর দিয়ে দেবে বম্বে, ব্যাস।”
হেসে ফেলে বন্দনা “বাঃহ বা দিদিকে এতো ভয়।”
মৃদু হেসে উত্তর দেয় স্যামন্তক “ভয় নয় ঠিক, ও হচ্ছে আমার মা দুর্গা, আমার রক্ষাকবচ।”
হাজরা ছাড়াতেই বৃষ্টি নেমে আসে, বালিগঞ্জ ফাঁড়ি বেশি দুরে নয় তাই দাঁড়াতে বারন করে বন্দনা। খুব ইচ্ছে হয় ওর এই রকম ভাবে বৃষ্টিতে ভিজতে। সারা মুখে ঝাপটা মারে বিন্দু বিন্দু জলের ছাট, মাথার চুল কিছু ভিজে, কিছু গালের সাথে লেগে, কামিজটা ভিজে গেছে, জড়িয়ে ধরে থাকে স্যামন্তকের বুক পিঠ। ঠাণ্ডা বৃষ্টিতে যেটুকু উষ্ণতা শুষে নেওয়া যায় এই সময়ে।
বন্দনাকে বাড়ি নামিয়ে দিয়ে বেশিক্ষণ বসে না স্যামন্তক। একটু খানি গল্প করে উঠে পড়ে। দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসে বন্দনা, চৌকাঠ ধরে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে। দু’চোখ একটু খানির জন্য ছলছল করে ওঠে, এতো দিন পড়ে এলো, ধরে ঠিক রাখতে পারল না।
মৃদু স্বরে জিজ্ঞেস করে “কাল আসবে?”
কপালে কপাল ঠেকিয়ে নিচু গলায় উত্তর দেয় স্যামন্তক “ফোনে জানিয়ে দেব, এখন ঠিক করে বলতে পারছিনা।”
সিঁড়ি দিয়ে ল্যান্ডিংয়ের আড়াল হয়ে যাওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকে বন্দনা, তারপড়ে দরজা বন্দ করে দেয়। আজ মনটা বড় উৎফুল্ল, যেন হাতে আকাশ ধরতে পেরেছে বন্দনা।
ধিরে ধিরে দেখা করাটা নিয়মিত হয়ে গেছে, একদিন যদি না দেখা করতে আসে স্যামন্তক তাহলে যেন রাতে ঘুম ঠিক ভাবে আসে না। বাইকের পেছনে চেপে এস্প্লানেড, কলেজ স্ট্রিট থেকে শ্যামবাজার, হাতিবাগান পর্যন্ত চষে বের হয়।



চলবে.....
বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড 
http://biddutroy.family.blog
[+] 4 users Like Biddut Roy's post
Like Reply
#47
repu added.
waiting for next
[+] 2 users Like madhorse's post
Like Reply
#48
Next Update এর আশায় রইলাম। দারুন জমেছে। keep it up দাদা।
Astroner
[+] 1 user Likes astroner's post
Like Reply
#49
Reped You......waiting for next
[+] 1 user Likes nightangle's post
Like Reply
#50
পর্ব-১৬



দিল্লির পাশে গুরগাঁও এক বহু জাগতিক আই.টি. সংস্থা থেকে অফার লেটার আসে স্যামন্তকের। বাড়ির সবাই খুব খুশী, তার সাথে একটু দুঃখ হয় সবার, বাড়ির এক মাত্র ছেলে। পূবালী খুব খুশী হয়, কিন্তু মনে মনে চেয়েছিল যে ভাইয়ের বম্বে বা পুনেতে চাকরি হোক যাতে পাশে থাকতে পারে। স্যামন্তক ভাবে কি করে বন্দনাকে এই খবর টা দেওয়া যায়, যদি জানতে পারে যে দুরে চলে যাচ্ছে তাহলে মেয়েটা বড় ভেঙ্গে পড়বে। ফোন করে জানায় স্যামন্তক, যে আজ ওকে একটা খুব বড় সারপ্রাইস দেবে। সেই শুনে বন্দনার মন খুশী তে নেচে ওঠে। স্যামন্তক চুমু খেয়েছে কিন্তু এখন পর্যন্ত “আই লাভ ইউ” বলেনি। সেই তিনটি শব্দ শোনার অধীর আগ্রহে পরানে বাঁশি বেজে ওঠে। আজ তাহলে ওকে দিয়ে বলিয়ে ছাড়বে। কলেজের রেসাল্ট বের হয়ে গেছে তাও কিছু বলেনি, আজ ওর মাথা ভেঙ্গে সেই ট্রিট টা আদায় করতে হবে।
বন্দনা খুব খুশী, একটা গাড় নীল রঙের সালোয়ার কামিজ পরেছে। চোখের কোলে কাজল, ঠিক পূবালীর বিয়ের সময় যেমনটি করে তিনটে ফুটকি এঁকে দিয়েছিল থুতনিতে, ঠিক সেই রকম করে তিনটে ফুটকি এঁকে এসেছে আজ। মাথার পেছনের বেনুনীটাকে সাপের মতন নামিয়ে দিয়েছে পিঠের ওপরে। ডান হাতে অনেক গুলো কাঁচের চুড়ি, বেশ সুন্দর সেজেছে। টেবিলে স্যামন্তকের সামনে বসে এক মনে তাকিয়ে ছিল ওর দিকে। যত বার দেখে, প্রত্যেক বার যেন চশমার পেছনের চোখ দুটি কেমন যেন মাতাল করে দেয়। বন্দনাকে ট্রিট দিতে নিয়ে যায় পার্কস্ট্রিটের এক বড় রেস্টুরেন্টে।
স্যামন্তক অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে বন্দনার রূপসুধা পান করে। বুকের ভেতরে তীব্র ইচ্ছে জাগে, নিজের বাহুবেষ্টনীতে আবদ্ধ করে পিষে ফেলে ওর কমনীয় কোমল শরীরটি। চুম্বনে চুম্বনে জর্জরিত করে দেয় ওর গাল আর ঠোঁট। চোখের দৃষ্টি আটকে যায় থুতনিতে এসে, মেয়েটা ঠিক সেদিনের মতন তিনটে ফুটকি এঁকেছে। মাতাল চোখ একটু নিচে নামতেই থমকে যায়, আজ যেন উপরি বক্ষ একটু বেশি উন্মচিত, ভরাট বুকের মাঝের খাঁজটা যেন হাতছানি দিয়ে আহ্বান করছে। চনমন করে গরম হয়ে ওঠে বুকের রক্ত, দাঁতে দাঁত পিষে লোভ সংবরণ করে স্যামন্তক।
মুখ লাল দেখে বুঝতে পারে বন্দনা যে একলা পেলে হয়তো আজ পাগল করে তুলত স্যামন্তক। দৃষ্টি রেখা যেন আগুন ধরিয়ে দেয় ওর উন্মচিত কোমল বক্ষে। লজ্জায় লাল হয়ে যায় মুখ।
“কি দেখছ, ঐরকম ভাবে?” কাঁপা গলায় নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করে বন্দনা।
—“আজকে তুমি কি আমাকে পাগল করার জন্য এসেছ?”
আলতো হেসে উত্তর দেয় বন্দনা “হতে চাইলেও কিছু করার নেই।”
স্যামন্তক বন্দনার বাঁ হাতটা নিজের হাতে নিয়ে আলতো করে চুমু খায়। ভিজে ঠোঁটের পরশে, কেঁপে ওঠে বন্দনা, সারা শরীরে খেলে বেড়ায় এক অদ্ভুত শিহরণ। নখের ডগা থেকে কাঁধ অবধি হাতের সব রমকূপ গুলো যেন খুলে যায়। স্যামন্তক বন্দনার হাত চেপে ধরে ঠোঁটের ওপরে তারপরে আলতো করে অনামিকা নিজের মুখের মধ্যে পুরে দেয়। বন্দনার সারা শরীর দুমড়ে কেঁপে ওঠে, কুঁকড়ে যায় চেয়ারে বসে। ডান হাতটা মুঠি করে নেয়, আপনা থেকে চোখ বন্দ হয়ে যায়।
মৃদু প্রতিরোধ জানায় “প্লিস করনা এই রকম। ছেড়ে দাও, নাহলে মরে যাবো।” হাতটা যত টেনে নিতে চায়, তত যেন চেপে ধরে স্যামন্তক। অনামিকা ভিজে চুপচুপ হয়ে গেছে স্যামন্তকের মুখের রসে। আর থাকতে না পেরে ডান হাত দিয়ে নাকে একটা ছোট্ট ঘুসি মেরে বাঁ হাত ছাড়িয়ে নেয় বন্দনা। সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে, এযে এক অদ্ভুত শিহরণ জ্বালিয়ে দিয়ে চলে গেল। বন্দনার বুকের মাঝে, মিলনইচ্ছুক বহ্নিশিখা ধিক ধিক করে জ্বলে ওঠে।
“কেন ডেকেছ আজ আমাকে?” কোলের ওপরে নিজের অনামিকা নিয়ে খেলতে খেলতে স্যামন্তকের দিকে মিষ্টি করে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে। উত্তর শোনার অধীর ইচ্ছায়, মনের ভেতরটা তোলপাড় হয়ে ওঠে। বলে ফেল না একবার, এত সুন্দর করে সেজে এসেছে শুধু স্যামন্তকের জন্য। তাও কেন এতো দেরি করছে বলতে। একি, কেন হটাৎ করে মুখ নিচু করে বসে আছে। বুকের মাঝে এক চিলতে রক্ত ছলাৎ করে উঠল, তাহলে কি স্যামন্তক আবার প্রতারণা করবে ওর সাথে? ওকি এটা বলতে এসেছে। টান টান হয়ে যায় বন্দনা, মুখ নিচু করে বসে কেন স্যামন্তক, কিছু বলছে না কেন।
“কি হয়েছে তোমার, কিছু বলবে তো?” ব্যাকুল হয়ে জিজ্ঞেস করে বন্দনা, বুকের মাঝে রক্ত উথাল পাতাল হয়ে আন্দোলন করছে, উত্তর চাই এখুনি না হলে এই সাজ, এই শৃঙ্গার সব মিথ্যে। অধীর উদ্বেগে তাকিয়ে দেখে
স্যামন্তকের চোখের কোণে একফোঁটা জল চিক চিক করছে। মাথার মধ্যে রক্ত চলাচল বন্দ হয়ে যায়। কাঁদ কাঁদ গলায় জিজ্ঞেস করে “কি হয়েছে তোমার?” হাত দুটি চেপে ধরে। স্যামন্তকের হাত দুটি অত্যধিক ঠাণ্ডা মনে হয়। “আমি আর এখানে বসতে চাইনা আমাকে অন্য কোথাও নিয়ে চল যেখানে শুধু তুমি আর আমি। আমি জানতে চাই তোমার কি হয়েছে।”
হটাৎ করে এমন হয়ে গেল স্যামন্তক, এমনটি তো হবার কথা নয়। কিন্তু কি করে জানাবে যে দিল্লীতে চাকরি হয়েছে, কোলকাতা ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এই সংবাদ শুনে বন্দনা কি রকম প্রতিক্রিয়া দেখাবে সেটা একবার মনে মনে এঁকে নিতে প্রবল চেষ্টা করে স্যামন্তক। প্রানের নর্তকী ওর চেয়ে দেড় বছরের বড়, সুতরাং একটু বিচক্ষণ হবে নিশ্চয়। বন্দনা ঠিক বুঝবে যে দু’জনার ভালর জন্য, আগামি দিনের প্রস্তুতির জন্য ওকে যেতে হবে। বুক ভরে একটা বড় নিঃশ্বাস নেয় স্যামন্তক, ঠিক যেন গভীর সমুদ্রে ডুব দেওয়ার আগের প্রস্তুতি।
“আমি দিল্লির কাছে, গুরগাঁও একটা আই.টি. কোম্পানিতে চাকরি পেয়েছি, কাল বিকেলে ফ্লাইট।” এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে থাকে বন্দনার দিকে, প্রানের নর্তকীর প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য।
কথা শুনে একটু থমকে যায় বন্দনা, চুপ করে বসে থাকে, দশ দিন হয়ত ঠিক ভাবে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরতে পারেনি, এর মধ্যে চলে যেতে হবে ওকে। হাত দুটি গুটিয়ে নেয়, কাজলে আঁকা চোখ দুটি জলে ভরে যায়। চারপাসের লোকের আওয়াজ কান পর্যন্ত পৌঁছয়না বন্দনার। পৃথিবীটা হটাৎ করে অবিশ্বাসঃ ভাবে নীরব মনে হয়। মনে হয় ওর স্বপ্ন দ্বিতীয় বারের জন্য চুরমার হতে যাচ্ছে। নিঃশ্বাস নিতে ভুলে যায়, মাথা নিচু করে বসে থাকে, দু’চোখের কোল দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।
“আমি এখানে আর বসতে চাই না, আমি বাড়ি যাবো।” কাঁদ কাঁদ গলায় বলে বন্দনা।
—“কাবাবের অর্ডার দেওয়া হয়ে গেছে।”
—“তুমি খাও, আমার খেতে ইচ্ছে করছেনা।”
কাবাব আসার পড়ে, কোনও রকমে খুঁটে খুঁটে দু’এক টুকরো মুখে পুরে বন্দনা বলল “বাড়ি যাবো।”
স্যামন্তক মনের ভাব টা বুঝতে পারে, কিন্তু নিরুপায়, যেতে হবে এবং মানাতে হবে আকাঙ্খিতা কে। প্রানের রমণীর চোখে জল নিয়ে কিভাবে অত দুরে থাকবে।
সারাটা রাস্তা চুপ করে, বাইকের পেছনে বসে, স্যামন্তককে জাপটে ধরে থাকে বন্দনা। মনে কত আসা নিয়ে এসেছিল, স্যামন্তক আজ ওকে জানিয়ে দেবে কত ভালবাসে, তার বদলে শুনাল বিচ্ছেদের সংবাদ। এমন ভাবে আঁকড়ে ধরে থাকে যেন ছাড়াতে গেলে বন্দনার শরীর ছিঁড়ে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। বাড়ির সামনে বাইক থামানর পরে, নামার ইচ্ছে করেনা বন্দনার। এই রকম ভাবে জড়িয়ে ধরে যদি চলে যাওয়া যায় ওর সাথে, প্রানপন চেষ্টা চালায় নিজেকে ওর পিঠের সাথে মিলিয়ে দিতে, এক করে দিতে দুই শরীর। নিজেকে তরল করে নিয়ে ওর বুকে প্রলেপ হয়ে যেতে প্রবল ইচ্ছে করে।
মৃদু স্বরে বলে স্যামন্তক “বনা, বাড়ি এসে গেছে।”
ঠোঁট কামড়ে ধরে বন্দনা, এই প্রথম বার, একটি ছোট্ট দুষ্টু মিষ্টি নামে ডাক দিল স্যামন্তক, বনা। ফুঁপিয়ে ওঠে, ঘাড়ের কোলে মুখ গুঁজে কেঁদে ওঠে বনা “না নামবো না।”
—“প্লিস এই রকম ভাবে কাঁদেনা, বনা। আমি রোজ দিন ফোন করব, কথা দিচ্ছি।”
কলারে নাক চোখ ঘষে একাকার করে দেয়, চোখের কাজল শার্টের কলারে লেগে যায় “সত্যি বলছ?”
—“হ্যাঁ, এবারে নামো।”
ধিরে ধিরে নেমে সামনে এসে দাঁড়ায় বন্দনা। স্যামন্তক বাইক থেকে নেমে, ওর সামনে দাঁড়িয়ে বলে “ভেতরে চল।” ঠিক সিঁড়ির ল্যান্ডিং এ দাঁড়িয়ে বন্দনার হাত ধরে টান দেয় স্যামন্তক। আছড়ে পড়ে বন্দনা, স্যামন্তকের বুকের ওপরে, খামচে ধরে শার্টের সামনেটা। স্যামন্তক দু’হাতে বন্দনার পাতলা কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের প্রসস্থ বুকের ওপরে টেনে নেয়। স্যামন্তকের মাথাটা যেন অনেক ওপরে মনে হয়, শার্টের কলার ছেড়ে, দু’হাতের দশটা আঙ্গুল দিয়ে মাথার চুল খিমচে ধরে, নিজের ঠোঁটের ওপরে টেনে নেয় ওর মুখ। গোলাপের পাপড়ির মতন কোমল লাল ঠোঁট দুটি চেপে ধরে, আলতো করে একটা কামর বসিয়ে দেয় স্যামন্তকের নিচের ঠোঁটে। ভাবাবেগ উপচে পড়ে, মত্ত হরিণীর ন্যায় চিবোতে থাকে ঠোঁট, পাগল হয়ে যাবে বন্দনা। দীর্ঘ থেকে দ্রীঘায়িত করার প্রবল চেষ্টা চালায় বন্দনা, এই চুম্বন যেন শেষ না হয়, কবে আবার বুকের মাঝে ফিরে পাবে মনের মানুষ টাকে, জানেনা। চুম্বনে চুম্বনে জর্জরিত করে তোলে স্যামন্তক প্রান প্রেয়সীর অধর ওষ্ঠ, শুষে নেয় মুখ গহ্বরের সুধা।
অনেকক্ষণ ধরে দু’জনা জড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, তারপরে স্যামন্তক নিচু স্বরে বলে “আমাকে যেতে হবে, আর একদম কাঁদবে না, আমি কাল রাতে দিল্লি পৌঁছে ফোন করব। তুমি যেন এয়ারপোর্ট আসতে যেওনা তাহলে এক কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।” সিক্ত নয়নে বিদায় জানায় বন্দনা, তার হৃদয়টাকে যেন কেউ খুবলে নিয়ে যাচ্ছে চোখের সামনে থেকে।
সারা রাত ঘুমোতে পারেনা বন্দনা, বালিশ আঁকড়ে পড়ে থাকে। বুকের মাঝে তোলপাড় করে ওঠে রক্ত, আজ পর্যন্ত দু’জন এসেছে ওর জীবনে, দুজনেই কারন বশত দুরে চলে গেছে। এক জন চিরকালের জন্য, যেটা ভুলে যেতে চায়। এক জন কাল চলে যাবে, সেই কি পুরানো কালচক্র আবার ঘুরে ফিরে এক জায়গায় এসে দাঁড়াবে? আবার কি মানুষ চিনতে ভুল করেছে? স্যামন্তক যদি দিল্লী গিয়ে অন্য কাউকে দেখে ওকে ভুলে যায়, তাহলে আর বেঁচে থেকে কি লাভ? বিছানার এপাশ ওপাশ করতে করতে রাত কাটিয়ে দেয়।
বিকেল বেলা, বোর্ডিং পাস পাওয়ার পরে ফোন করে বন্দনা কে “বনা, আমি দিল্লী নেমেই ফোন করবো।”
ফোনে স্যামন্তকের গলার আওয়াজ শুনে মনটা ব্যাকুল হয়ে যায়। কানের সাথে প্রানপনে চেপে ধরে রিসিভারটা, একবার যদি বিদ্যুৎ হয়ে এই তার দিয়ে ওর কাছে চলে যেতে পাড়ত কত ভালো হত “আই উইল মিস ইউ ভেরি মাচ।” বলতে বলতে গলা ধরে আসে বন্দনার।
দিল্লী নেমেই ফোনে জানিয়ে দেয় বন্দনাকে যে ঠিক করে পৌঁছে গেছে। গুরগাঁওএ বেশ বড় একটি আই.টি. কোম্পানিতে চাকরি পায়। ওখানেই সেক্টর 32 তে কয়েক জন অফিস কলিগের সাথে একটা মেস ভাড়া করে থাকে। কোলকাতা থেকে দিদির প্রেসেন্ট করা বাইক নিয়ে এসেছিলো, তাই অফিস আর মেস জাতায়াত করতে কোন অসুবিধা হয় না। তবে এই প্রথম কলকাতার বাইরে এসে মানিয়ে নিতে একটু সময় লেগেছিল। বাজারে সবে নতুন রঙ্গিন স্ক্রিনওয়ালা মোবাইল ফোন এনেছে নোকিয়া। প্রথম মাসের মাইনে পেয়ে একটা মোবাইল ফোন কেনে।
দিদিকে ফোন করে জানায় নতুন মোবাইলের কথা “জানিস আজ মোবাইল কিনলাম।”
ভাইয়ের জন্য মনটা খারাপ লাগে। একা একা বাইরে থাকে, কি খায় কখন বাড়ি ফেরে। এতদিন তো কাকু কাকিমার কাছে আর ওর কাছে থেকে মানুষ হয়েছে। গলা ধরে আসে “কখন বাড়ি ফিরেছিস, কেমন আছিস? মেসে ঠিক মতন খেতে দেয়?”
গলা ভারী শুনে স্যামন্তক জিজ্ঞেস করে “কিরে, তুই এতো ইমোশানাল হয়ে গেলি কেন?”
ওপারে চোখের কোল মুছতে মুছতে পূবালী বলে “তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছেরে।” বলেই কেঁদে ফেলে।
স্যামন্তক বুঝতে পারেনা কি বলবে দিদিকে, কি বলে শান্ত করবে, মনের ভেতর থেকে মুচড়ে একটা কান্না বেড়িয়ে আসে। এর পড়ে যদি আবার বন্দনা কে ফোন করে বলে তাহলে মেয়েটা আবার গলে পড়বে।
বন্দনা নিজের জমানো টাকায় একটা মোবাইল কেনে, যদিও কলকাতায় মোবাইলের ওতটা চল হয়নি, তবে মোবাইল হাতে দেখলে লোকেরা বেশ সম্ভ্রান্ত বলে ভাবে। প্রথম মাসে প্রত্যেক দিন ফোন করত স্যামন্তক। কাজের চাপে সেটা ধিরে ধিরে কমে গিয়ে এক দিন বাদে বাদে হয়ে ওঠে। বন্দনা উতলা হয়ে পড়ে শুধু ফোন আসার জন্য। নিজে যদি ফোন করে তাহলে কোন কোন সময় কেটে দিত কাজের চাপে। রেগে আরো দু’দিন কথা বলা বন্দ থাকতো দু’জনার মাঝে। এই ভাবে মানে অভিমানে কেটে যায় মাস দুয়েক। দিদিকে এখন বন্দনার বিষয় জানায়নি, স্যামন্তক। একটা ভয়ে আছে মনে মনে, যে দিদি শুনলে কি প্রতিক্রিয়া দেখাবে। আগে অনেক বার বারন করেছিল বন্দনার পেছনে যেতে, তখন সময় ছিল ভিন্ন এখন সময় ভিন্ন।
ঠিক পুজোর আগে পূবালী ফোন করে একদিন রাতে “এই জানিস একটা ভাল খবর দেবার আছে তোর কাছে।”
একদিকে বন্দনার ফোন আসেনি দু’দিন ধরে, রেগে আছে ওর প্রানের বনা, কেননা পুজোতে বাড়ি যেতে পারছেনা বলে। সবে চাকরিতে ঢুকেছে, ছুটি পাওয়া মুশকিল। একটু খানি বিষণ্ণ সুরে জিজ্ঞেস করে “কি হয়েছে বল।”
আওয়াজ শুনে ধরে ফেলে পূবালী যে ভাইয়ের কিছু একটা হয়েছে, যেটা অনেক দিন ধরে চলছে, কিন্তু কিছুতেই মুখ খুলছে না। এবারে দিল্লী গিয়ে সব কিছু ভালো ভাবে জানতে হবে।
পূবালী বলে “তোর জামাইবাবুর দেরাদুন হেডঅফিসে ট্রান্সফার হয়েছিলো তো সেটা না নিয়ে দিল্লীতে পোস্টিং নিয়েছে। লক্ষীনগরে অফিস, এবারে তুই আমার কাছে থাকবি।” দিদির গলায় খুশির আবেগ।
খবরটা শুনে আনন্দে ফেটে পড়ে স্যামন্তক “সত্যি বলছিস? মার কাটারি এবারে সিতাভ্রদার মাথাটা বেশ ভালো করে খাব।”
—“হ্যাঁ সত্যি। পুজোর পড়ে আমরা সিফ্ট করছি। একটা ফ্লাট দেখে রাখিস তো, যেখান থেকে তোর অফিস আর সিতাভ্রর অফিস কাছাকাছি হবে।”
মাথা চুলকোয় স্যামন্তক “আরে, আমি তো গুরগাঁও থাকি আর সিতাভ্রদার অফিস তো পুরো উলটো দিকে। আমি মেসে ভালো আছি, তোর জন্য নাহয় নয়েডা তে ফ্লাট দেখে দেব।”
রেগে যায় পূবালী “পাগল নাকি তুই? আমি দিল্লী থাকব আর আমার ভাই আমার কাছে থাকবেনা? আমরা দিল্লীর ম্যাপ দেখেছি। শোন নেক্সট উইকে সিতাভ্র দিল্লী যাচ্ছে, সি.আর.পার্কে একটা ফ্লাট দেখিস। কম্পানি লিজ দেবে চিন্তা কি।”
পুজোতে বাড়ি ফেরা হয়নি স্যামন্তকের, তাই নিয়ে বন্দনার খুব মন খারাপ। এমনিতে ছেলেটা আজকাল একদিন পর পর ফোন করে, তবে হ্যাঁ, ফোন করলে অনেকক্ষণ ধরে কথা বলে, যেন সারা দিনের ডায়রি খুলে বসে পড়ে। ফোনে কথা না বললে যেন রাতের ঘুম হয় না। বন্দনা একরকম, সবকিছু ছেড়েছুড়ে ঘরে বসে, নাচে আর মন বসে না, কিছুতেই আর মন বসে না। বাবা মা বিয়ের কথা বললেই, বলে যে আর বিয়ে করবে না। সত্যি কথাটা জানানর আগে স্যামন্তকের উদেশ্যটা জানার প্রয়োজন। এক বিষয়ে নিশ্চিন্ত যে দিল্লী গিয়ে ভুলে যায়নি স্যামন্তক, কিন্তু অন্য কিছু তো হতে পারে যা পূর্বে ঘটেছিল ওর সাথে। মাঝে মাঝে কেমন ভয় ভয় করে বন্দনার, আর সেদিন স্যামন্তক শত কথা বলেও বুঝিয়ে উঠতে পারেনা ওকে।
ঠিক পুজোর পড়ে পূবালী আর সিতাভ্র দিল্লী সিফ্ট করে। কম্পানি লিজে বেশ বড় একটা, তিন বেডরুমের ফ্লাট ভাড়া নেয় দিল্লীর নামকরা এক বাঙালি পরিবেষ্টিত জায়গায়। সিতাভ্র একটা গাড়ি কিনে ফেলে, হুন্ডাই এসেন্ট। স্যামন্তক গুরগাঁও এর মেস ছেড়ে চলে আসে দিদির সাথে থাকতে। পূবালীর কাজ বেড়ে যায় রোজ সকালে দু’দুটো টিফিন, তারপর বাড়ির কাজ। ভাইটা এমনিতে নিজের ঘরটাকে যা নোংরা করে রাখে তাতে রোজ দিন ঝগড়া হয়। অফিস থেকে ফিরে জুত ছুঁড়ে একদিকে ফেলে, জামাটা কোনদিন সোফায় পড়ে থাকে, কোনদিন ডাইনিং টেবিলে। বাইকের চাবি খুঁজে খুঁজে কি হোল্ডারে ওকেই ঝোলাতে হয়। তারপরে আবার রাত জেগে ফিসির ফিসির করে কার সাথে কথা বলে কে জানে। ভাই প্রেম করবে সেটা ওর জানা, কিন্তু ওর কাছে থেকে লুকিয়ে, আগে কোনদিন এইরকম ভাব দেখেনি।
সন্দেহ হয় একদিন, রাতে ডাইনিং টেবিলে খেতে বসে জিজ্ঞেস করে “এই শামু, রাতে কার সাথে অত কথা বলিসরে তুই?”
ধরা পড়ে গেছে স্যামন্তক, কি করে বলে আমি তোর বান্ধবীর সাথে প্রেম করছি। সিতাভ্র একবার তাকায় স্যামন্তকের দিকে তারপরে খাবার দিকে মন দেয়, পারতপক্ষে ভাইবোনের কথার মাঝে আসতে চায়না। রোজ সকালে এক চোট মারামারি করে স্যামন্তক অফিসে বের হবে আর বিকেলে অফিস থেকে ফিরে দেখবে যে ভাইয়ের মাথায় তেল লাগাতে বসে গেছে দিদি। তাই সিতাভ্র বুঝে গেছে যে এদের দ্বারা কিছু হবে না, এরা মারামারি করে মাথা ফাটিয়ে নিজেদের ভালবাসা দেখায়।
স্যামন্তক আমতা আমতা করে উত্তর দেয় “কিছু না, আমার অফিস কলিগ।”
সিতাভ্র কানে কানে ফিস্ফিসিয়ে বলে “শালা, বলে দাও নাহলে সকাল বেলা আবার ঝ্যাঁটার বাড়ি খাবে।”
স্যামন্তক ভেবে কূলকিনারা পায়না, কি করে দিদির সামনে কথাটা পারবে যে বন্দনা কে ভালবাসে।
বন্দনাকে রাতে ফোন করে স্যামন্তক “বনা, দিদি কিছু আঁচ করেছে।”
আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করে বন্দনা “তো, একদিন তো জানাতে হবে নাকি।”
—“কি করে বলি সেটা আমি বুঝে পাচ্ছি না।”
—“সেটা তো আমার জানার নয়, আর তুমি আমার নামে যা বলেছ পূবালী কাছে তারপড়ে আমি কি করে ওকে ফোন করি বলত?”
রেগে ওঠে স্যামন্তক, কতবার করে বলেছে যে দিদিকে কিছুই জানায়নি তাও বনা শুনবেনা “কতবার বলেছি যে আমি কিছুই জানাইনি দিদিকে তাও তুমি শুনবে না তাই তো?”
একটু ক্ষুণ্ণ মনে বলে বন্দনা “আমি কিছু জানিনা। বাবা মা আমার জন্য ছেলে দেখছেন। সেটা মাথায় রেখে যা করবার করো। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে চাইনা।”
একটা বড় নিঃশ্বাস নেয় স্যামন্তক, কিছুতেই ভেবে কোন উপায় বার করতে পারেনা যে কি করে দিদিকে জানাবে “ওকে আমি দেখছি। গুড নাইট।”




চলবে....
বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড 
http://biddutroy.family.blog
[+] 2 users Like Biddut Roy's post
Like Reply
#51
just ausome hochhe
[+] 2 users Like Maa er dudh's post
Like Reply
#52
Repu Added.
Astroner
[+] 1 user Likes astroner's post
Like Reply
#53
টিচার যখন বউ এরম টাইপ এর কিছু আছে কি ?
[+] 1 user Likes cuck son's post
Like Reply
#54
অসাধারন, অনেকদিনপরে এতো সুন্দর একটা গল্প পেলা।
[+] 1 user Likes Dipankar's post
Like Reply
#55
পর্ব-১৭



নভেম্বর শেষ হবহব করছে, দিপাবলির পরপর দিল্লীতে ঠাণ্ডা পড়ে যায়, কলকাতার মানুষের জন্য এখানকার ঠাণ্ডা একটু বেশি মনে হয়। এর পরের মাসে পূবালী আর সিতাভ্রর প্রথম বিবাহ বার্ষিকী। কোলকাতা যেতে হবে, স্যামন্তককে দু’তিন বার বলে কোন লাভ হয়নি, ছেলেটার অফিস বড় বেখাপ্পা। এমন কাজের চাপ যে মাঝে মাঝে রাত দশটা, এগারটা বেজে যায় বাড়ি ফিরতে। ঐ ঠাণ্ডায় এতোটা রাস্তা বাইক চালিয়ে এসে কোন রকমে খেয়ে বিছানায় লুটিয়ে পড়ে। শুধু শনি রবি বার টা একটু সময় পায় ঠিক করে নিঃশ্বাস নেবার। সারাটা দিন ধরে সোফায় শুয়ে পড়ে পড়ে টিভি দেখে। পূবালী কিছু বলেনা, বেচারা ভাইটা গত একমাসে অনেক শুকিয়ে গেছে, আবার পরের মাস থেকে নাইট ডিউটি পড়বে, সারা ডিসেম্বর ধরে।
ঠিক ঐ রকম এক শনিবার সকালে স্যামন্তকের ফোন বেজে ওঠে। পূবালী ফোন তুলে নাম দেখে, বনা। নামটা দেখে থমকে যায় পূবালী, এই কি সে বন্দনা শুধু মাঝের দুটো অক্ষর বাদ আছে? মানে বন্দনা কি এখন ওর ভাইয়ের বনা? জল এতদুর গড়িয়ে গেছে আর কিছুই জানেনা পূবালী। মনটা একটু খারাপ লাগে প্রথমে, একজন এক সময় ওর সব থেকে প্রিয় বান্ধবী বন্দনা আর একজন চোখের মণি, ভাই।
ফোন তুলে জিজ্ঞেস করে “তুই কি বন্দনা?”
কেঁপে ওঠে কান, কেউ যেন টেনে এক চড় মেরেছে বন্দনার কানে এমন মনে হয়। থমকে যায়, গলা থেকে আওয়াজ বের হয় না। আবার জিজ্ঞেস করে পূবালী “তুই কি বন্দনা?”
বুক ভরে একটা নিঃশ্বাস নেয় বন্দনা, ভালবাসে স্যামন্তককে তাহলে সেটা বলতে এতো গলা কাঁপছে কেন আজ? উত্তর দেয় বেশ জোর গলায় “হ্যাঁ আমি বন্দনা।”
আঁচ একটা কিছু করেছিল পূবালী নামটা দেখে জানতে পেরে একটু খানির জন্য থমকে গেল “তোদের কি ব্যাপার?”
নির্বিকার গলায় উত্তর দেয় বন্দনা “কি ব্যাপার আবার, এমনি ফোন করেছি?”
—“এমনি ফোন করেছিস মানে? আমাকে তো এতদিনে একবারো ফোন করিসনি, তো সামুকে কেন?”
“তাহলে তোকে এখন কিছু জানায়নি।” জিজ্ঞেস করে বন্দনা।
“কি জানাবে” বুঝেও না বোঝার ভান করে পূবালী।
—“তুই কি জানতে চাস সেটা বল।”
—“আমি জানতে চাই কত দিন ধরে ফোনে চলছে।”
—“জুলাইয়ে, আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে ছিলাম।”
“হ্যাঁ, সামু আমাকে বলেছিল।“ তারপরে গলার আওয়াজ বদলে যায় পূবালির “তখন থেকে? কিন্তু তুইতো…”
“হ্যাঁ আমি তো………” হেসে ফেলে বন্দনা “পালিয়েছিলাম আর বেঁচে গেছি একরকম ভাবে।”
—“কি করে, কি হয়েছিল?”
পুরান সব কথা জানায় পূবালী কে। সেই বিভীষিকা ময় দুঃস্বপ্নে ভরা রাতের কাহিনী। বলতে বলতে চোখে জল এসে যায়। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারেনা পূবালী। ধুপ করে বসে পড়ে চেয়ারে, একবার চেয়ে দেখে স্যামন্তকের দিকে, একমনে সোফায় শুয়ে টিভি দেখে চলেছে। ভাইটা সত্যি কি দিয়ে তৈরি, ঠিক ভাবে বুঝে উঠতে পারেনা।
ধরা গলায় জিজ্ঞেস করে বন্দনা “কিরে আছিস না কেটে দিয়েছিস ফোন?”
উলটো হাতে চোখ নাক মুছে বলে “না, আছি। তোদের দু’জন কে কিযে বলি।”
হাসি কান্না মাখানো গলায় বলে বন্দনা “তোর সাথে এত দিন পরে কথা বলে সত্যি খুব ভাল লাগছে।”
“তুই তো একরকম হারিয়েই গেছিলি। আমি তো ভেবেছিলাম হয়তো কোনদিন আর কথা হবেনা।” তারপরে হেসে ফেলে পূবালী “শেষ পর্যন্ত আমি যা ভয় পেয়েছিলাম তাই হল। আমার ভাইটা শেষমেশ তোর প্রেমে পড়লো।”
—“যাঃ ঐ রকম ভাবে বলিস না, আমি পাগল হয়ে গেছি।”
—“হ্যাঁ তাতো বেশ বুঝতে পারছি। আমি ভেবেছিলাম যে তোর বরের সাথে মজা করব আর তুই কিনা, শেষমেশ আমার ভাই?”
—“আর বলিস না, কি খাইয়ে বড় করেছিলিস রে ভাইকে? কথায় কথায় শুধু দিদি দিদি করে?”
হেসে ফেলে পূবালী “আমাকে তো এখন কিছু জানায়নি রে।”
—“কি যে করি। এদিকে বাবা মা আমার জন্য ছেলে দেখছে আবার করে। আমি যত বার বলি, বল বল, কিছুতেই কিছু বলে উঠতে পারেনা। আমি তো সত্যি এবারে পাগল হয়ে যাব।”
—“আমি নেক্সট উইকে কোলকাতা যাচ্ছি, আমি তোর বাবা মায়ের সাথে দেখা করে সব বলে দেব চিন্তা নেই। আর আমার বাড়ি, সেটা একটু দেখে শুনে হ্যান্ডেল করতে হবে, এক মাত্র ছেলে তো তাই। তবে তুই এক কাজ কর, আজ রাতে ফোনে জোর ঝগড়া কর, বল যে দিদিকে দিয়ে ফোন করাও নাহলে তুই আর ওর সাথে কথা বলবিনা। ব্যাস তারপরে দেখি ছেলে কি করে।”
“মানে?” জিজ্ঞেস করে বন্দনা “আবার ঝগড়া, এমনিতে দেখা নেই কতদিন।”
“বাঃ বা মেয়ে দেখছি প্রেমের আগুনে জ্বলে পুড়ে মরছে।” একটু ঠাট্টার স্বরে বলে পূবালী।
“যাঃ বেশি বলিস না, তুই তো দু’মাস সিতাভ্র কে ছেড়ে ছিলিস, তখন কেমন লেগেছিল।” উলটো জবাব দেয় বন্দনা।
“আর বলিস কেন, পাগল হয়ে যাবার যোগাড় ছিল। রাত গুলো যেন আর কাটতো না। বিয়ের ছ’মাস পরে কি কেউ বউ ছেড়ে যায়?” বলতে বলতে মুখ লাল হয়ে যায় পূবালীর।
হেসে বলে বন্দনা “উম… তাহলে আমার অবস্থাটা বুঝতে পারছিস।” কত দিন পরে দুই বান্ধবীর মধ্যে সেই পুরান ভাবে কথা হচ্ছে।
—“তোকে তো তাও সামু একদিন পড় পড় ফোন করে আমি তো চাতকের মতন বসে থাকতাম, কি করব আই.এস.ডি তো আর রোজ রোজ করা যায় না। তুই তো আমার চেয়ে ভালো আছিস।”
—“হ্যাঁ তা আর বলতে। জানিস প্রায় চার মাস হয়ে গেল দেখা হয়নি।”
“বাপ রে, এতো প্রেমের বহর।” যদিও জিজ্ঞেস করতে একটু লজ্জা করে পূবালীর, কারন ছেলেটা তো ওর ভাই, কি করে গোপন কথা গুলো জিজ্ঞেস করবে “কি করি বলতো? তোর সাথে ঠিক করে মজা করতেও পারবোনা আর, বড় অদ্ভুত সমস্যায় ফেললি তোরা আমাকে।”
মন খোলা হাসি হাসে বন্দনা “আমি তো তোরটা জিজ্ঞেস করতে পারি। যাই হোক, তুই যা ভাবছিস ততদুর এগুইনি আমরা, চিন্তা নেই তোর।”
—“একবার হাতে পাই তোকে।”
—“চলে আয়। অনেক দিন দেখিনি তোকে, আর আমার শামু কে নিয়ে আসিস খালি হাতে আসিস না।”
—“ওহ, তুমি ওর বনা হয়ে গেছ আর ও তোমার সামু? বাঃ বা বেশ। কিন্তু ছুটি পাচ্ছেনা সেটাই মুশকিল, নাহলে আমার ফার্স্ট ম্যারেজ এনিভারসারি তে ঠিক যেত।”
খবর শুনে মন মড়া হয়ে পড়ে বন্দনা “জানিস কত দিন দেখিনি, মনটা কেমন করছে, এখন কি করেছে রে?”
—“কি আর করবে, সোফায় শুয়ে টিভি দেখছে। ছুটির দিনে ওর কাজ ওটাই।”
একটু খানি মন মড়া হয়ে যায় বন্দনা “জানিনা ভবিষ্যতে কি হবে।”
আশ্বাস দিয়ে বলে পূবালী “আরে ওত চিন্তা করছিস কেন? তুই ওকে ভালোবাসিস?”
উত্তর দেয় বন্দনা “হ্যাঁ”
—“ও তোকে ভালবাসে”
রিসিভারটা ঠোঁটের সামনে এনে নিচু গলায় বলে “বোধ হয় আমার চাইতেও বেশি করে আমাকে ভালবাসে।”
হেসে উত্তর দেয় পূবালী “তাহলে বাকি টুকু আমি ম্যানেজ করে নেব।”
ফোন রেখে দিয়ে সিতাভ্র কে সব কিছু জানায় পূবালী, সিতাভ্র একবার বসার ঘরে স্যামন্তকের দিকে তাকিয়ে পূবালীকে জিজ্ঞেস করে “কি বলছ? ছেলেটার পেটে পেটে এতো কিছু ছিল।” তারপরে ঠাট্টা করে বলে “ড্যাম সিট্*, আমি ভেবেছিলাম বন্দনার সাথে একটু মজা করবো, তা শালিটা একদম সব মাঠে মারা করে দিল।”
—“আমাকে সামু কিছু বলেনি এখন, তাই ভাবছি আমি কিছু জানাব না, দেখি কবে জানায় আমাকে।”
—“তো তোমার আইডিয়া টা কি, শুনি?”
চোখ টিপে উত্তর দেয় পূবালী “দেখতে পাবে।”
যথারীতি বন্দনাকে রাতে ফোন করে স্যামন্তক “হ্যালো কেমন আছ?”
সকালেই পূবালীর সাথে ফোনে কথা হয়ে গেছে, ফোন নাম্বার আদান প্রদান হয়ে গেছে দুই বান্ধবীর মাঝে। বুকের মাঝে একটা দুষ্টু হাসি বারবার করে ধাক্কা মারতে থাকে, একটু মজা করা যাক স্যামন্তকের সাথে “ভাল নেই একদম, আজ আমাকে দেখতে ছেলের বাড়ি থেকে লোকজন এসেছিল।” প্রানপন হাসিটাকে চেপে ধরে একটু রাগি গলায় বলে বন্দনা।
সংবাদটা শুনেই একটু বিচলিত হয়ে পড়ে স্যামন্তক, কি করবে কি করে বলবে দিদিকে। এই তো সবে চার মাস হয়েছে চাকরির এর মধ্যে যদি বিয়ে করতে হয় তাহলে তো বড় মুশকিল। আর বিয়ে কাউকে না জানিয়ে করতে চায় না, ওর মুখের দিকে বাবা মা, জেঠু জেঠিমা সবাই তাকিয়ে। আর দিদি তো হয়তো হার্টফেল করবে জানতে পারলে। একটু ভাবুক হয়ে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে “আচ্ছা আমি দেখছি কি করা যায়।”
ওদিক থেকে চিৎকার করে ওঠে বন্দনা “হ্যাঁ তুমি দেখে যাও, আর তোমার সামনে কেউ আমাকে বিয়ে করে নিয়ে যাক। তুমি আমার বিয়ে খেতে এসো হাতে একটা ফুলের তোড়া নিয়ে।”
রেগে ওঠে স্যামন্তক “তো আমাকে কি করতে বল, তোমাকে এখানে নিয়ে আসতে? এখুনি কিছু করা সম্ভব নয়, বনা। জাস্ট লেট মি থিঙ্ক।”
তর্জনীটা দাঁতের নিচে চেপে ধরে বন্দনা, পেটের ভেতরে হাসিটা ফেটে পড়ার যোগাড় আর পারছেনা ধরে রাখতে নিজেকে, একটা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে আবার রাগত স্বরে বলে “তুমি আজ, এখুনি পূবালী কে সব জানাবে।”
দেয়ালে প্রায় মাথা ঠোকার মতন অবস্থা স্যামন্তকের “না এখুনি নয়।”
“আমি কিছু জানিনা, আমি নেক্সট ফোন পূবালীর কাছ থেকে চাই নাহলে তুমি আর আমাকে ফোন কোরো না।” এই বলে ফোন কেটে দিয়ে হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ে বিছানায়।
স্যামন্তক মাথার চুলগুলো মুঠি করে ধরে বসে পড়ে বিছানায়। রাগে বিতৃষ্ণায় বালিশ টাকে দু’তিনটে ঘুসি মেরে দেয়। কেন মরতে প্রেম করতে গেছিল তাও আবার দিদির বান্ধবীর সাথে? অন্য কোন মেয়ে হলে তো এই সমস্যা দেখা দিত না, ঠিক জানিয়ে দিত দিদিকে, সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে যেত। এখন কি করবে, জানতে পারলে দিদি কি বলবে আর না জানালে বন্দনা কি করবে। একবার মনে হচ্ছিল জানিয়ে দেয় বন্দনাকে, বিয়ে করে ফেল যার সাথে বিয়ে দিচ্ছে, তারপরে আবার মনে হয় এবারে মেয়েটা নির্ঘাত মারা যাবে আর নিজে কি করবে? সারা রাত ঘুম হল না স্যামন্তকের।




চলবে....
বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড 
http://biddutroy.family.blog
[+] 4 users Like Biddut Roy's post
Like Reply
#56
সুন্দর আইডিয়া। এক্ষুনি দিদিকে সব কিছু জানিয়ে দাও।
Like Reply
#57
পর্ব-১৮



রাতে খাবার টেবিলে বসে পূবালীকে জিজ্ঞেস করে বন্দনা “সামু কটা নাগাদ বাড়ি ফেরে?”
“ওর ফিরতে ফিরতে ধর সকাল সাতটা আটটা বেজে যাবে।” তারপরে মুচকি হেসে বলে “মনে হচ্ছে না যে আজ তোর ঘুম হবে।”
মুখ লাল হয়ে যায় বন্দনার, সিতাভ্র একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বলে “তোমরা দুই বান্ধবী না হয় এক ঘরে শুয়ে পড় আর কি, ব্যাস রাতে কারুর ঘুমের দরকার পড়বে না।”
একটু খানি রাগ দেখিয়ে পূবালী উত্তর দেয় “ধুত কি সব উলটোপাল্টা বলছ তুমি।” তারপড়ে বন্দনার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে “তুই তো আগেও দিল্লী এসেছিস, তাই না?”

মাথা নাড়ায় বন্দনা “হ্যাঁ, মান্ডি হাউস বা হ্যাবিট্যাট সেন্টারে প্রোগ্রাম থাকতো মাঝে মাঝে।”
“আমার এটা প্রথম শীত দিল্লীতে” হেসে বলে পূবালী।
“তোমার আবার কবে থেকে শীত লাগে, শোবে তো সেইনাইটি খুলে আমাকে জড়িয়ে।” একটু খুঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে সিতাভ্র, পূবালী কে।
—“ধ্যাত, তুমি নিজের কাজে যাও তো। স্থান কাল না দেখে কথা বল।”
“বাঃ রে,আফটার অল শালির সামনে তো বলতেই পারি।” তারপরে বন্দনার দিকে তাকিয়ে বলে “তো শালাবাবু কত দুর এগিয়েছে? তোমরা দু’জনেই এক এক বড় খিলাড়ি।”
বন্দনার মুখ লজ্জায় লাল হয়ে যায় তার সাথে সাথে পূবালীর মুখটাও লাল হয়ে যায় লজ্জায়, যত হোক বন্দনার বয়ফ্রেন্ড, কিন্তু নিজের ভাইত। ভাইয়ের নামে ওই সব কথা শুনতে কি কারুর ভালো লাগে।
“ওকিস, নো প্রবলেম। আমি গেলাম শুতে।” তারপরে পূবালীর দিকে তাকিয়ে বলে “তোমাদের গল্প শেষ হলে এসো যদি আমাকে মনে পড়ে। নাহলে সকালে দু’জনকে কি অবস্থায় দেখব ভগবান জানে।”
পূবালী – “তুমি তো এখন গ্লাস নিয়ে বসে পড়বে, তা বেডরুমে যাচ্ছ কেন? এখানেই বসে খেতে পার তো?”
সিতাভ্র – “আমি হুইস্কি নিয়ে বসব এই সুন্দরী দুই নর্তকীর মাঝে, আর তারা খালি গল্প করবে সেটা কি করে হয়? নাচ দেখালে না হয় বসা যায়।”
পূবালী – “তার চেয়ে ভালো তুমি খাও আর রাতে আমাকে নিয়ে পাগলামি কর।“
বন্দনা দেখল ডাইনিং রুমের আবহাওয়া আস্তে আস্তে রোম্যান্টিক মুড নেবে কিছু পরে, তার চেয়ে ভালো স্যামন্তকের রুমে ঢুকে শুয়ে পড়া আর নব দম্পতিকে নিজের মতন ছেড়ে দেওয়া। এক বছর হয়ে গেছে আর প্রেমটা যেন উপচে পড়ছে। বন্দনা গায়ের ওভারকোট টাকে আরও বেশি করে জড়িয়ে নিয়ে পূবালীর দিকে তাকিয়ে বলে “এই আমি চললাম শুতে, তোরা এবারে নিজের ঘরে গিয়ে প্রেমালাপ কর।”
সিতাভ্র চোখ টিপে বন্দনাকে বলে “কাল সকালে তোমারটা আসবে, তারপরে দেখব, তুমি আমাদের কত সময় দাও। আর হ্যাঁ দরকার পড়লে আমার ড্রয়ারে কন্ডম আছে নিয়ে নিও।”
লজ্জায় লাল হয়ে যায় বন্দনা, ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। বক্স খাট, পূবালী বেশ সুন্দর করে রাখে নিজের বাড়ি ঘর। দরজার পেছনে কাপবোর্ড, ওতেই নিজের সুটকেস রেখেছে, ওতেই স্যামন্তকের জামাকাপড় রাখা। খুব ইচ্ছে হচ্ছিল একটা গেঞ্জি নিয়ে গন্ধ শোঁকার। আপনমনে হেসে ফেলে নিজের পাগলামির কথা ভেবে। কামরার সংলগ্ন বাথরুমে ঢুকে গিজার চালিয়ে দেয়, শোবার আগে একটু প্রসাধন করা প্রয়োজন। মুখে ফেসওয়াস মেখে পরিস্কার হয়ে নেয়। হাতে মুখে ময়েসচারাইজারটা মাখেতে মাখতে ভাবতে থাকে, গত দশ বারো দিনে কত শত বার ফোন করেছে স্যামন্তক, কিন্তু একবারের জন্যেও ফোন উঠায়নি। পূবালীর সাথে রোজ রাতে কথা হত, স্যামন্তক পূবালীকে বলতে সাহস জুগিয়ে উঠতে পারছে না। দু’এক বার নাকি বলার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু আমতা আমতা করে থেমে গেছে। এক বার তো বন্দনার নামে বেশ ভালো ভালো কথা শুনাতে শুরু করেছিল, যেই পূবালী ওকে জিজ্ঞেস করে যে “তুই কি বন্দনার প্রেমে পরেছিস?” সেই থেমে যায় স্যামন্তক আর কিছু না বলে খাওয়া ছেড়ে উঠে যায়।
হাতে নিভিয়া নিয়ে, গালে লাগাতে লাগাতে ভাবে, পূবালী বাবা মা কে তো রাজি করিয়ে নিয়েছে। বাবা তো রাজী ছিলেন না, একে স্যামন্তক ওর চেয়ে দেড় বছরের ছোটো, তারপরে সবে চাকরিতে ঢুকেছে। অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে বুঝিয়েছে ওর প্রানের বান্ধবী, পূবালী, ভাই নামকরা আই টি কম্পানিতে চাকরি করছে, ভবিষ্যতে আর উঁচু পোস্টে উঠবে, অনেক কিছু বলে বুঝিয়ে তবে বাবা কে রাজি করান গেছে। কিন্তু নিজের বাড়িতে এখন পুরপুরি বলেনি। ওর বাবা মা, ওর কাকু কাকিমা কে এখন সব কথা জানান হয়নি। শুধু এইটুকু বলে এসেছে যে পরের বছর ভাইয়ের বিয়ে দিতে চায়, ভাইয়ের জন্য বউ নিজেই খুঁজবে। যখন সবাই কারন জিজ্ঞেস করে তখন বলেছিল যে, ছেলেটা একা থাকে তাই বিয়ে দিয়ে দিলে ঠিক থাকবে। পূবালীর ভালোবাসার কথা বাড়ির সবাই অবগত, দিদি যদি ভাইয়ের জন্য কিছু করবে বলে ধরে নেয় তাহলে কারুর সাধ্য নেই সেটাকে অমান্য করার, তাই প্রাথমিক বাধা টা উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। আপনমনে হেসে ফেলে বন্দনা, প্রেম করতে আর সেটাকে ফলপ্রসু করতে কত ধান ভানতে হয়, তাও বাঁচোয়া যে একটা বান্ধবী ছিল পূবালীর মতন। বন্দনাকে দিল্লী নিয়ে আসার পরিকল্পনাও পূবালী আর সিতাভ্রর। পূবালী বলেছিল “আমার সাথে দিল্লী চল, বেশ একটা বড় সারপ্রাইস দেওয়া হবে সামুকে। তুই অনেক দিন একা পড়ে আছিস, আর ভাইও অনেক দিন একা পড়ে আছে। চল কিছুদিন আমাদের সাথে কাটিয়ে আসবি।” এক লাফে রাজি হয়ে যায় বন্দনা, “সেটা আর বলতে, এর বেশি দেরি হলে আমি আবার বাড়ি থেকে পালাতাম না।” বলেই হেসে ফেলেছিল বন্দনা।
দিল্লীতে ঠাণ্ডা কলকাতার থেকে সত্যি বড় বেশী। পূবালী শুধু ফোন করে জানিয়েছিল স্যামন্তককে, যে ওরা আজকে আসছে তবে এটা জানায়নি যে বন্দনাও সাথে আসছে। বিকেলবেলা যখন ওরা বাড়ি পৌঁছায় ততক্ষণে স্যামন্তক অফিসের জন্য বেড়িয়ে গেছে। ফিরতে ফিরতে সকাল, আজকাল নাকি নাইট ডিউটি চলছে। পাতলা মাক্সির ওপরে একটা ওভারকোট চাপিয়েছিল, সেটা শুতে যাবার আগে খুলে ফেলে। পূবালী আবার পাকামো করে নিজের একটা নুডল স্ট্রাপ মাক্সি পড়তে দিয়েছে, যাতে সকালবেলা স্যামন্তক একদম ভিরমি খায়। ডিম লাইটটা জ্বালিয়ে লেপের মধ্যে ঢুকে পড়ে বন্দনা। একটা বড় রকমের সারপ্রাইস দেবে কাল সকালে।



চলবে....
বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড 
http://biddutroy.family.blog
[+] 4 users Like Biddut Roy's post
Like Reply
#58
Darun golpo....
[+] 2 users Like SRK_999's post
Like Reply
#59
গরম খেতে খেতে শীত লেগে গেল যে।
Astroner
[+] 1 user Likes astroner's post
Like Reply
#60
মেয়েরা বেশ দুস্টু হয়
[+] 1 user Likes TumiJeAmar's post
Like Reply




Users browsing this thread: 2 Guest(s)