01-03-2020, 02:52 AM
(This post was last modified: 04-03-2020, 08:08 AM by Biddut Roy. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
এটি একটি রোমান্টিক প্রেমের গল্প। এই গল্পে কোন ইরোটিক কিছু নেই।
Romance দিদির বান্ধবী যখন বউ (সম্পুর্ণ)
|
01-03-2020, 02:52 AM
(This post was last modified: 04-03-2020, 08:08 AM by Biddut Roy. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
এটি একটি রোমান্টিক প্রেমের গল্প। এই গল্পে কোন ইরোটিক কিছু নেই।
01-03-2020, 02:57 AM
(This post was last modified: 04-03-2020, 08:09 AM by Biddut Roy. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
গল্প= দিদির বান্ধবী যখন বউ
লেখক- মেঘলা আকাশ পর্ব-১ শীত কাল, ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ। গুন গুন করছে ঠাণ্ডা, আকাশে ঝলমল রোদের কিরণে বাতাস বেশ গরমই আছে। সকাল থেকেই সারা বাড়িতে হইচই। সানাই বেজে চলেছে এক সুরে। বাড়িতে লোকের পা ফেলার মতন জায়গা নেই। বেশির ভাগ, আত্মীয় সজ্জন এসে গেছেন। স্যামন্তক একটা ট্রাক সুটের জ্যাকেট পরে, খাওয়ার জায়গার প্যান্ড্যাল টার তদারকি করতে ব্যাস্ত। আজ তার জ্যাঠতুত দিদি পুবালির বিয়ে। ছোটো বেলা থেকে ও আর দিদি খুবই ঘনিষ্ঠ ছিল। বড়দির পাঁচ বছর আগে বিয়ে হয়ে যায়। পুবালি ওর চেয়ে বছর দুই বড়। স্যামন্তক বাড়ির বড় ছেলে ওর দিদি নেই আর পুবালি বাড়ির ছোটো মেয়ে ওর কোনও ভাই নেই। সেই কারনে দুই ভাই বোনের মধ্যে এক নিবিড় ভালবাসা জন্মায় ছোটো বেলা থেকে। প্যান্ড্যালের তদারকি করতে করতে চোখের এক কোনে এক ফোঁটা জল চলে আসে স্যামন্তকের। দিদি চলে যাবে বিয়ে করে বম্বে। জামাই ওখানে এক তেল কম্পানির ম্যানেজার। স্যামন্তক সেন্ট জেভিয়ারস কলেজের ফিজিক্*স এর ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র, বয়স বাইশ। ওর দিদি পুবালির বয়স চব্বিশ, শান্তিনিকেতন থেকে নাচে স্নাতক। ছোটো বেলায় কত না শিমুল ফুল তুলেছে ও দিদির জন্য। পুবালি যখন কলকাতায় ওর কাকুর বাড়ি যেত তখন স্যামু এক দিনের জন্যও দিদির পাশ ছারত না। ছোটো বেলায় যখন ঘুমত তখন দিদির আঁচল নিজের মুঠির মধ্যে নিয়ে শুত ও পাছে রাতের বেলায় দিদি ফাঁকি দিয়ে চলে যায়। স্যামন্তক জানে যে দিদির সাথে আবার কবে দেখা হবে তার নেই ঠিক। স্যামন্তক থাকে কলকাতায় আর ওর জেঠুর বাড়ি দুর্গাপুরে। দিদি হয়তো আসবে ফিরে, ও হয়তো থাকবে না। আবার কবে ওর দিদির সাথে দেখা হবে সেটা তার জানা নেই। এমন সময় ওপর থেকে ডাক পরে স্যামন্তকের। জেঠিমা হাক পাড়ে—“শ্যামু শুনছিস বাবা। একদিকে একটু আসবি।“ না তাকিয়েই উত্তর দেয়—“কি হল দেখতে পাওনা আমি এখন ব্যাস্ত।” জেঠি জানে ওর মখ্যম অস্ত্র না ছারলে ও কারু কথা শুনবে না—“তোর দিদি তোকে ডাকছে।” দিদি ডাকছে মানে, ওর কাছে যদি যমরাজ ও এসে বলে “তোমায় নিয়ে যেতে এসেছি।” ও তাকে বলবে “একটু দাঁড়াও দিদি ডাকছে।” স্যামন্তক দৌড়াতে দৌড়াতে পুবালির কাছে এসে জিজ্ঞেস করে—“কি হয়েছে ডাকছিস কেন?” পুবালি এক ভাবে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে যে ছেলে হয়তো এক কোনায় লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদছিল। ও উঠে এসে স্যামন্তকের হাথ ধরে বলল—“তুই কি কাঁদছিলি?” জোরে মাথা নাড়ায় স্যামন্তক—“ধুর আমি কোথায় কাঁদছিলাম, তুই কি যে বলিস না। ছাড়, বল কি হয়েছে?” —“আমার এক বান্ধবী আসবে, তোকে তাকে আনতে স্টেশানযেতে হবে।” —“ধুর এই সময় আমি কেন যাবো, তুই অন্য কাউকে পাঠা না। আমি এখন কোথাও যেতে পারবোনা।” —“তুই যা না সোনা আমার লক্ষ্মী ভাইটি। তারপরে আমার মুখ এঁকে ও দিতে হবে।” জল ভরা চোখে তাকিয়ে থাকে স্যামন্তক পুবালির দিকে—“আমি তোর মুখ আঁকতে পারবোনা। প্লিস সেটা আমাকে করতে বলিস না।” মাথায় হাথ বুলিয়ে পুবালি ওকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে—“আমায় শেষ বারের মতন সাজিয়ে দিবি না।” পুবালি আর স্যামন্তক দুই জনের চোখে জল টলমল করে। পুবালির মা পেছনে দাঁড়িয়ে ওদের কথা শুনতে শুনতে আনমনে কেঁদে ফেললেন। পুবালি বলে—“আচ্ছা তুই যদি আমার বান্ধবী কে আনতে যাস তো তোকে আমি সেই টা আবার খেতে দেবো।” জড়িয়ে ধরে ও ওর দিদি কে—“সত্যি বলছিস?” মাথা নাড়ায় পুবালি “হ্যাঁ” হাসতে হাসতে ও দিদির কানে কানে বলে—“তোর বান্ধবী না বান্দরি যেই হোক, সুন্দরী দেখতে কি? আমি চিনবো কি করে বা ও আমায় চিনবে কি করে?” মাথায় গাঁট্টা মেরে পুবালি ওকে সাবধান করতে করতে বলে—“এই কিছু করতে যাস না যেন, ও আমার সব থেকে ভাল বান্ধবী।” —“নামটা তো বল আগে।” “বন্দনা, বন্দনা সরকার। আসাম থাকে, হাওড়া হয়ে আসছে।” বলে পুবালি ওর হাথে একটা ফটো ধরিয়ে দেয়। ফটোর দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পরে মাথা চুলকায় স্যামন্তক। দুই তিন বার বির বির করে বলে ওঠে “বন্দনা, বন্দনা হাঁ হাঁ তোর সাথে আরও ফটোতে দেখছি আমি।” ঠোঁট উল্টে বলে ও—“তুই আমার জন্যে তৈরি করে রাখিস আমি তোর বন্দনা কে আনতে চললাম।” স্যামন্তক বন্দনাকে স্টেশান থেকে আনতে বেরিয়ে যায়। গায়ে হলুদ হয়ে গেছে পুবালির। ও একটা কাঁচা হলুদ রঙের শাড়ী পরে ঘরে বসে নিজের ঘর টাকে শেষ বারের মতন দেখতে থাকে। আস্তে আস্তে ও রান্না ঘরে ঢোকে, একটা ছোটো কড়াই এ অল্প সুজি নিয়ে গ্যাস ওভেনে চাপিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ওকে রান্না ঘরে ঢুকতে দেখে, ওর মা কাকিমা সবাই হই ছই করে ওঠে “কি করছিস কি করছিস, আজ তোর বিয়ে আর তুই রান্না ঘরে?” চোখের কোল মুছতে মুছতে পুবালি ওদের দিকে তাকিয়ে বলে—“আমার ভাই আমার হাথের সুজি খেতে চেয়েছে, আমি কি সে টুকু বানিয়ে দিতে পারিনা।” ওর কথা শুনে কারুর মুখ থেকে কোনও আওয়াজ বের হয় না। বাড়ির সবাই জানে, দিদি যদি তার ভাইয়ের জন্যও কিছু করার মনস্থির করে তাহলে, কেউ বাধা দিতে সাহস পায় না। পুবালির মা, ওকে তাও একবার বলে—“তুই রেস্ট নে, আমি বানিয়ে দিচ্ছি। ও তো আর দেখতে যাচ্ছে না কে বানিয়েছে।” কান্না জড়ানো গলায় পুবালি বলে ওঠে—“ও না দেখলে ও কি হয়েছে, আমি তো জানি যে আমি বানাইনি। আমি ওকে খাওয়াবো কি করে? যাই হোক তোমরা কিছু বলতে এস না, লাভ হবে না।” ওর কাকিমা, স্যামন্তকের মা পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন, তিনি বলে উঠলেন—“দিদি ছেড়ে দাও ওকে, ও আজ কারু কথা শুনবেনা।” তারপরে পুবালির দিকে তাকিয়ে বলেন “করছিস কর সাবধানে করিস।” স্যামন্তক গাড়িতে বসে একমনে ভাবতে থাকে বন্দনার কথা, ভাবতে ভাবতে একটা সিগারেট জ্বালায় ও। বুক ভরে এক টান মারে সিগারেটে, তারপরে চোখ বন্ধ করে ভাবতে থাকে দিদির পাশে দাঁড়ানো সুন্দরী তন্বী তারুনির মুখ। গায়ের রঙ যদিও দিদির মতন অতটা ফর্সা নয় তবে শ্যাম বর্ণ বললেও একটু ভুল হবে। ডিম্বাকৃতি মুখবয়াব, বেশ মিষ্টি গাল দুটি, থুতনি তে এক ক্ষীণ কাটা দাগ সৌন্দর্য টাকে যেন বেশি বর্ধিত করে তোলে। চোখ দুটি ছোটো ছোটো হলেও যেন অনেক কথা বলে, ভুরু দুটি যেন কোনও পালের তুলি দিয়ে আঁকা। মাথা ভর্তি চুল, একটা খোঁপা করা, ঘাড়ের পেছনে এলিয়ে দেওয়া। পরনে একটা গেঞ্জি, ভরাট বুকের বেশির ভাগটাই ঢাকা। এক হাথে জড়িয়ে ধরে আছে পুবালি কে ফটো তে বুক পর্যন্ত ছবি, তাই বেশি কিছু দেখতে পারেনি ও। স্যামন্তক ভাবতে থাকে, যদি দিদির জায়গায় ও থাকতে পারত, নিজের অজান্তেই হেসে ফেলে ও। ওর স্টেশান পৌঁছতে একটু দেরি হল, রাস্তায় জ্যাম ছিল। স্যামন্তক দৌরতে দৌরতে প্লাটফর্মে ঢোকে। ঢুকে এদিক ওদিক খুঁজে বেড়ায়, কোথায় গেলো বন্দনা। একবার হাথের ফটোর দিকে তাকায় একবার চারদিকে তাকায়। এতো সুন্দরী তন্বী তরুনি, একা একা দাঁড়িয়ে থাকবে এটা ভেবেই ওর বুক টা কেমন একটা করে ওঠে। বন্দনা জানেনা ওকে কে নিতে আসছে, ও শুধু এই টুকুই জানে যে ওর জন্যে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকবে স্টেশানের বাইরে। এদিকে ওদিকে তাকায় বন্দনা, কেউ কি ওর খোঁজ করছে? কই কাউ কে দেখতে তো পায় না। স্যামন্তক হটাত দেখতে পায় বন্দনা কে, পরনে একটা হাল্কা নীল রঙের হাথ-কাটা আঁটো সালওয়ার কামিজ। গলার চারদিকে জড়ানো একটা নীল রঙের শাল পেছন থেকে বুকের ওপরে নেমে এসেছে। ছোটো ডিমের আকারের মুখ বয়াব, বেশ সুন্দরী দেখাচ্ছে। দু চোখে মাখা একটা মিষ্টি চাহনি। কপালে ছোটো একটা নীল টিপ, দুই ভুরুর মাঝে আঁকা। ভরাট বুক দুটি বন্ধন মুক্ত হবার অধির আগ্রহে অগ্র ভাগের সৌন্দর্য বর্ধিত করছে। মাথার চুল সাপের মতন একটা বেনুনি করা, পিঠের ওপরে দুলছে। পাতলা কোমরের পরে সুডৌল বলয় দ্বয়ের ওপরে এঁটে বসে কামিজটা, টান টান হয়ে বলয়ের আকার প্রস্ফুটিত করে তুলেছে। এক হাথে একটা ছোটো কালো ব্যাগ এবং একটা সুটকেস নিয়ে দাঁড়িয়ে। ডান হাথের কব্জি তে একটা সোনার ঘড়ি, বাম কব্জি তে কয়েকটা সোনার চুড়ি। বন্দনা লক্ষ্য করে, এক সুঠাম পুরুষ চোখে চশমা, মাথার চুল একটু এলোমেলো, পরনে একটা কালো রঙের পাঞ্জাবি তার দিকে হাসতে হাসতে এগিয়ে আসছে। একটু ইতস্তত করে বন্দনা। উচ্চতায় প্রায় পাঁচ ফুট দশ ইঞ্ছি খানিক হবে ছেলেটা। কোনও দিন আগে ও দেখেনি, এক অজানা অচেনা পুরুষ তার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে একটু ভয় পেয়ে যায় বন্দনা। স্যামন্তক ডান হাথ বাড়িয়ে বন্দনা কে আভিনন্দন জানায়—“তুমি নিশ্চয় বন্দনা।” ইতস্তত ভাবে বন্দনা মাথা নাড়ায়, ভেবে কুল পায় না কে এই ব্যাক্তি। বন্দনার ইতস্তত ভাব দেখে স্যামন্তক হাসি চাপতে পারেনা। ও হেসে ওঠে—“আমি পুবালির ভাই, স্যামন্তক। আমি তোমাকে নিতে এসেছি।” হাঁপ ছেড়ে, হেসে ওঠে বন্দনা—“বাঃবা আমি তো ভাবলাম কে না কে আমার দিকে ঐ রকম ভাবে তাকিয়ে নির্লজ্জর মতন হাসছে।” স্যামন্তক সুটকেসটা হাতে নিয়ে ওকে বলে—“চল তাহলে, দিদি তোমার জন্যও ওয়েট করছে। বেশি দেরি হলে দিদি আমাকে মেরে ফেলবে।” বন্দনা স্যামন্তকের দিকে একবার তাকিয়ে বলে—“তোমার কথা অনেক শুনেছি তোমার দিদির মুখে। দেখিনি তোমাকে কোনও দিন।” —“ব্যাস দেখা হয়ে গেলো, আবার কি।” —“তুমি সেন্ট জেভিয়ারসে পড়, তাই না?” “হ্যাঁ। আর তুমি তো নাচ শিখতে দিদির সাথে শান্তিনিকেতনে। আমি তোমাকে ফটো তে দেখেছি।” এই বলে স্যামন্তক ফটো টা বন্দনার হাতে ধরিয়ে দেয়। —“বাঃ বা, আমাকে ফটো নিয়ে খোঁজা হচ্ছিলো। জানতামনা যে আমি এতো ইম্পরট্যান্ট।” হেসে ওঠে স্যামন্তক—“আমার দিদির বান্ধবী যখন, তখন ইম্পরট্যান্ট না হয়ে হয় না। তা কখন বেরিয়েছ বাড়ি থেকে?” পাশা পাশি হাঁটতে হাঁটতে, ওদের হাথ দুটি মাঝে মাঝে ঠোকর খাচ্ছিল পরস্পরের সাথে। স্যামন্তক, বন্দনার নরম হাথের পরশে যেন একটা বিজলি বাতির আভাস পায়। বন্দনার গা থেকে, ঘাম এবং পারফিউমের মিলিত একটা মধুর গন্ধ স্যামন্তকের নাশিকা কে মাতাল করে তোলে। ঘাড়ের পাছনে একটু হাথ বুলিয়ে বন্দনা বলে—“আর বোলোনা, দুই দিন ট্রেনে। আমি আর পারছিনা, খুব টায়ার্ড হয়ে গেছি বুঝলে।” হাঁটতে হাঁটতে ওরা প্লাটফর্মের বাইরে চলে আসে। গাড়িটা দাঁড়িয়ে ছিল, বন্দনা কে গাড়িতে উঠতে বলে সুটকেস টা ডিকি তে রেখে দিল স্যামন্তক। একটা সিগারেট ধরাবে ভাবল স্যামন্তক, এই রকম একটা তন্বী নারীর পাশে বসে যেতে হবে এই ভেবেই ওর বুক টা কেমন যেন করে উঠলো। নারীর স্পর্শ আগে ও পায়নি সেই রকম নয়, কলেজে ওর অনেক বান্ধবী আছে। তাদের পরশ ও গায়ে মেখেছে। মাস তিনেক আগে পর্যন্ত ওর আর শ্যামলীর মধ্যে একটা এফেয়ার ছিল, অনেক কাছাকাছি ওরা এসেছে। শ্যামলী নিজেকে উন্মুক্ত করে দিয়েছে এবং স্যামন্তক তার আবেদনে সারাও দিয়েছে। কিন্তু শ্যামলীর চোখে একটা কামনার ক্ষুধা ছিল, মিষ্টতা বা মাদকতা ছিলনা। সেই কামিনি রূপ পাগল করে দিয়েছিল স্যামন্তককে, অবশেষে একদিন ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলো কোনও এক কারনে। বন্দনা রূপে একটা অজানা মিষ্টতা খুঁজে পেল স্যামন্তক, সেই মিষ্টতার সাথে একটা মাধুর্য লুকিয়ে ছিল বন্দনার চোখে মুখে। দেরি দেখে, বন্দনা বলে ওঠে—“আরে, আমরা যাবো কখন, দেরি হয়ে যাচ্ছেনা?” —“এই যাচ্ছি, একটা সিগারেট খেয়ে নেই তারপরে।” হেসে ওঠে খিল খিল করে বন্দনা, হাশিতে যেন দু পাটি দাঁত মুক্তর মতন ঝিলিক মারে গোলাপি ঠোঁটের আড়াল থেকে—“আমার সামনে সিগারেট খেতে লজ্জা করবে না তোমার?” কথাটা শুনে একটু লজ্জায় পরে গেলো স্যামন্তক, মাথা চুলকিয়ে সিগারেটটা ফেলে দেয়। বন্দনা কে জিজ্ঞেস করে—“তুমি কিছু খাবে নাকি? অনেক্ষন তো হল বেরিয়েছ?” মরালীর ন্যায় গ্রীবায় হাথ বুলিয়ে করুন চোখে তাকায় স্যামন্তকের দিকে বন্দনা—“গলাটা শুকিয়ে গেছে, একটা কোল্ড ড্রিংক পেলে বড় ভাল হতো।” —“বাঃ রে, দিদির বান্ধবী তায় এতো হেসিটেসান, বল্লেই পারতে আগে।” হেসে বলে বন্দনা—“এই তো বললাম এবারে তো এনে দেবে নাকি।” পাশের দোকান থেকে কোল্ড ড্রিংক কিনে বন্দনার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে—“এই নাও, তোমার তৃষ্ণা মেটানোর জন্য আর কি করতে পারি” বলতে বলতে একটা চোরা হাসি হাসে স্যামন্তক। বন্দনা ওর চোখের চাহনি দেখে একটু মজা পায়। বোতলে একটা বড় চুমুক দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচিয়ে বলে—“আর কি করতে পারো তুমি?” এটা ঠিক আশা করেনি স্যামন্তক, ও ভেবেছিল বন্দনা হয়তো লজ্জা পাবে এবং একটা লাজুক হাসি হেসে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকবে। যেটা হল সেটা একদম উলটো, বন্দনা ওকে লজ্জায় ফেলে দিল। “কিছুনা এবারে চলা যাক কি বলো।” স্যামন্তক জিজ্ঞেস করে বন্দনা কে। বন্দনা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। গাড়িতে উঠে পাশাপাশি বসে ওরা। স্যামন্তক বন্দনাকে জিজ্ঞেস করে—“আগেও তো এসেছ এখানে, তো আজ কেন একা আসতে পারলে না?” “একাই আসতাম আমি, পুবালি বলল ও গাড়ি পাঠাবে তাই” স্যামন্তকের দিকে না তাকিয়েই উত্তর দিল। —“তো তুমি আসামের কোথায় থাকো? তোমাকে দেখে তো অখমীয়া বলে মনে হয় না।” স্যামন্তকের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ায় বন্দনা—“বাবা চাকরি সুত্রে দিব্রুগরে থাকেন। আমাদের বাড়ি কৃষ্ণনগর। তুমি তো কলকাতায় থাকো তাই না?” বন্দনার দিকে আলতো মাথা নাড়িয়ে বলে—“হ্যাঁ” বন্দনা ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে স্যামন্তককে নিরীক্ষণ করতে থাকে, বেশ সুঠাম গড়ন, চওড়া কাঁধ, প্রসস্থ বুক। বুকের পেশি গুলো যেন পাঞ্জাবি ভেদ করে বেরিয়ে আসবে। হাথ দুটি দেখলে মনে হয় যেন দুটো লোহার মুদ্গল। কাউকে যদি ভুল বশত চাঁটি মারে তাহলে হয়তো দ্বিতিয় বার জল চাইবেনা। চশমার পেছনে লুকিয়ে থাকা বড় বড় দুটি চোখ ওকে যেন মেপে নিতে চাইছে। বন্দনার চোখ হটাত করে স্যামন্তকের সাথে মিলে যায়। চার চোখ এক হতেই বন্দনা লাজুক হেসে চোখ নামিয়ে ফেলে। গালে একটু উষ্ণত্বরা ভাব দেখা দেয় একি ভাবছে ও, নিভৃতে এক সুঠাম পুরুষের পাশে বসে কি ওর বর্তমান, নিরুপম কে ভুলে গেছে? ছি ছি, বন্দনা। নিজের মনেই হেসে ফেলে। সেই শান্তিনিকেতনে দেখা নিরুপমের সাথে, খুব ভাল আঁকে নিরুপম। দিল্লিতে বাড়ি, খুবই সম্পন্ন ঘরের ছেলে ও, মাঝে মাঝেই আসে ওর সাথে দেখা করতে ডিব্রুগরে। শান্তিনিকেতনের কত অলিগলিতে ওদের প্রেমের উপাখ্যান ছড়িয়ে আছে। বনেরপুকুরডাঙার পাশে কোপাই নদীর তীরে প্রথম মেলে ধরে বন্দনা, নিভৃতে খোলা আকাশের মাঝে নিজের মাধুর্য হারিয়ে ভেসে যায় ও এবং নিরুপম। তার পরে থেমে থাকার পথ ওরা আর খোঁজেনি। নিরুপম থাকতো একটা ঘর ভাড়া করে, আর সেই ঘরের মধ্যে তাদের খেলা চলত, দিন দপুর রাত। কখনও বিছানায়, কখনও মেঝেতে, কখনও রান্না ঘরে। সময় বা স্থান ভুলে তারা রতি ক্রীড়ায় মগ্ন থাকতো বেশির ভাগ সময়। বন্দনার বাবা মার ও নিরুপম কে বিশেষ পছন্দ নয়, এক কারন, ছেলেটা কেমন যেন লম্পট স্বভাবের। এক বার দেখেই বুঝে গেছিলো বন্দনার মা। মেয়েকে সাবধান করেছিলেন কিন্তু, বন্দনা তখন প্রেমের জোয়ারে গা ভাসিয়ে বয়ে চলেছে। যারাই তাকে সাবধান বানী শোনায় তাদেরি তার শত্রু বলে মনে হয়। পুবালিরও নিরুপমের স্বাভাব কোনোদিন ভাল লাগেনি। নিরুপমকে পুবালি ভাল চোখে দেখতে পারতোনা। সব সময় যেন চোখে একটা বাসনার ক্ষুধা মেখে তাকিয়ে থাকতো ও। ঐ চোখ দেখে অনেক বার সাবধান করেছে বন্দনাকে, কিন্তু বন্দনা কোনও কথা কানে দেয় নি, আজও পুবালির কথা ও শোনেনি। পুবালি বার বার বন্দনা কে সাবধান করেছে “দ্যাখ বন্দনা, একদিন ও অন্য কোনও মেয়ে দেখে তোকে ছেড়ে দেবে। ও শুধু মাত্র তোর দেহ টাকে নিয়ে খেলছে।” কান দেয়নি বন্দনা। সেই নিয়ে অনেক মনমালিন্য ঘটে পুবালির সাথে। অনেক দিন কথা বন্দ থাকে, তারপরে কলেজ শেষ হয়ে যায়। বন্দনা ফিরে যায় আসাম। ফোনে মাঝে মাঝে কথা হয়। তারপরে একদিন পুবালির বিয়ের নিমন্ত্রন পায় বন্দনা। সেই নিমন্ত্রন উপেক্ষা করতে পারেনা। ফোনে দুই বান্ধবির পুরনো ভালবাসা আবার জেগে ওঠে, সেই টানে হাজার মাইল পাড় করে বন্দনা উপস্থিত ওর প্রানের বান্ধবীর বিয়েতে। বন্দনা একভাবে গাড়ির বাইরে তাকিয়ে এই সব ভাবতে থাকে। অনেকক্ষণ ধরে কেউ কোনও কথা বলেনা, কারুরই বিশেষ কিছু বলার ছিলোনা। বন্দনা কে চুপ করে থাকতে দেখে, স্যামন্তক বলে—“কি ভাবছ বলত এতো, বেশ একটু আনমনা দেখাচ্ছে। কি হল।” হটাত করে স্যামন্তকের আওয়াজ শুনে চমকে ওঠে বন্দনা। মাথা ঝাঁকিয়ে বলে ওঠে—“কই কিছু নাতো।” “হুম… না মানে মুখটা কেমন কেমন লাগছিলো তাই জিজ্ঞেস করলাম” শ্যেন দৃষ্টি হেনে স্যামন্তক বন্দনাকে বলল। বন্দনা সারা মুখে জরিপ করার ন্যায় এক বার চোখ বুলিয়ে দেখতে চেষ্টা করলো স্যামন্তক কি ওকে ধরে ফেলেছে? না ওর মনের কথা স্যামন্তক কি করে বুঝবে। বন্দনা এক বার ভাবল, একটু খেলে দেখা যাক স্যামন্তকের সাথে, ক্ষতি কি, বেশি দূর এগবে না। একটু খানি ফ্লারট করতে তো পারেই ও। বিয়ে বাড়ি বলে ব্যাপার, আরও কত ছেলে থাকবে। গাড়ি বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। গাড়ি থেকে নামতে নামতে, পেছনে একবার ঘুরে দেখে বন্দনা, একটা মিষ্টি হেসে স্যামন্তকের ঘুম কেড়ে নিয়ে চলে যায়। স্যামন্তক ঐ হাসি দেখে আর থাকতে পারেনা, মনে মনে নেচে ওঠে “লরকি হাসি তো ফসি।” এমন একটা বিজয়ী ভাব নিয়ে তাকায় ও বন্দনার দিকে। ওপরে উঠতে উঠতে স্যামন্তক চেয়ে দেখে বন্দনার চলন। মত্ত হস্তিনির ন্যায় চাল, দদুল্যমান চালে পশ্চাৎ গোলায় ঢেউ লাগে। বেনুনি টা যেন এঁকে বেকে একটা সাপের ন্যায় দুলতে থাকে চওড়া পিঠের মাঝে। বন্দনা চলনের সাথে সাথে বিয়ে বাড়ির অর্ধেক পুরুষের মন যেন ছলক ছলক করে উঠছে। চলবে.....
01-03-2020, 03:00 AM
পর্ব-২
পুবালি বন্দনা কে দেখে দৌড়ে আসে। দুই বান্ধবীর প্রায় মাস ছয়েক পরে দ্যাখা। পুবালি জড়িয়ে ধরে বন্দনাকে—“কি রে মনে পড়ল তাহলে আমাকে।” নাক কুঁচকে বন্দনা বলে—“আমি তো আর ভুলিনি তুই ভুলে গেছিস আমাকে। আমি তো তোকে সব সময় মনে করি।” “যাক আর আদিখ্যেতা দেখাতে হবেনা। চল আমার ঘরে গিয়ে বসবি। অনেক রাস্তা পাড় করে এসেছিস।” পুবালি বন্দনার হাথ ধরে বলে। যেতে যেতে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে “ওর ব্যাগ গুলো নিয়ে আয়।” তারপরে বন্দনাকে জিজ্ঞেস করে “কি রে আমার ভাই তোকে বেশি হয়রান করেনি তো?” দিদির কথা শুনে, স্যামন্তক মাথা নিচু করে ফেলে। বন্দনা বেশ মজা পায় স্যামন্তকের লাজুক স্বভাব দেখে। পুবালিকে কানে কানে বলে—“তোর ভাইটা একটা মস্ত গাধা।” ভুরু কুঁচকে দিদি তাকায় ভাইয়ের দিকে, প্রশ্ন করে বন্দনাকে—“কি করেছে আমার ভাই? আমার ভাইয়ের মতন মানুষ হয় না।” বন্দনা হাসি চেপে রাখতে পারেনা আর—“না না তোর ভাই কিছু করেনি। যাই হোক এবারে বল দেখি, জামাই কোথাকার?” “ও বম্বেতে চাকরি করে। বিকেল বেলায় দেখতে পাবি।” তারপরে পুবালি স্যামন্তকের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে “এই একটু দেখে আসবি, বিউটিসিয়ান কখন আসবে?” একটু রেগে যায় স্যামন্তক—“ধুর এই তো এলাম, তোর বান্দরি কে নিয়ে, এই আমাকে আবার দৌর করাবি তুই। আমি আর যেতে পারবোনা তুই অন্য কাউকে পাঠা।” বন্দনা নিজের নাম ‘বান্দরি’ শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে—“কি কি আমি বান্দরি, তাহলে তুমি শেয়াল।” তিন জনেই হেসে ওঠে। পুবালি বেশ মজা পায় ওদের ন্যাকা ঝগড়া দেখে। কাতর মিনতি করে পুবালি, স্যামন্তককে—“লক্ষ্মী ভাইটি আমার, এক বার ফোন করে দ্যাখ অন্তত।” —“ওকে জো হুকুম আজ তো তেরা দিন হ্যায় না। তু জো বলেগি ওয় করনা পরেগা” স্যামন্তক যেতে যেতে এক বার ফিরে তাকায় বন্দনার দিকে। বন্দনা পুবালির সাথে গল্পে মশগুল। বুক ভরে এক নিঃশ্বাস নেয় স্যামন্তক, বিয়েতে কিছু একটা তো হবেই হবে। ফোন করতে যাবে কি এই সময় দেখে বিউটিসিয়ান এসে হাজির। পুবালির মা, তাকে নিয়ে পুবালির ঘরে ঢোকে। তার সাথে পুবালির আরও কিছু বান্ধবীরাও ঢোকে। স্যামন্তক আবার নিচে নেমে যায়, প্যান্ড্যালের এক কোনে দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট ধরায়। বিকেল হয়ে আসছে, দিদির বিয়ের লগ্ন মিনিটে মিনিটে কাছে আসছে। মণ্ডপটা শেষ বারের মতন দেখে, ওর নিজে হাথে সাজানো বিবাহ মণ্ডপ। স্যামন্তক খুব ভাল সাজাতে জানে, তাই দিদির মণ্ডপও ঐ সাজিয়েছিল। ওপরে পুবালির ঘরে বন্দনা ব্যাগ টা ছুঁড়ে ফেলে হাথ পা ছড়িয়ে বিছানায় এলিয়ে পরে। একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলে ওঠে—“মন পাখী তুই মেলে ডানা উড়লি গগন মাঝে, আমার তরীর নাই ঠিকানা, মন বসেনা কাজে।” পুবালি এক ভাবে তাকিয়ে বন্দনাকে বলে—“তুই নাই বা সেই সব কথা উঠালি।” ওর দিকে মুখ করে বাম হাথের ওপরে মাথাটা রেখে পুবালি কেবলে—“না রে আমি ঐ সব নিয়ে তোর সাথে কোনও বিবাদে যেতে চাইনা। তোর বিয়ে তে মজা করতে এসেছি মজা করবো।” পুবালির মা ওর সাজার সরঞ্জাম বের করে দিয়ে বলে “তারা তারি সাজতে বস” তারপরে বন্দনার দিকে দেখে জিজ্ঞেস করে “তুই কিছু খাবি তো? আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি তুই হাথ মুখ ধুয়ে নে।” মাকে চলে যেতে দেখে পুবালি দৌড়ে গিয়ে পেছন থেকে মাকে জড়িয়ে ধরে “মাগো…” বলে একটা কান্না ভেজান সুরে ডেকে ওঠে। থাকতে না পেরে কেঁদে ওঠে মায়ের মন। সাজার পালা শুরু, বিউটিসিয়ান বেস লাগিয়ে দেয় মুখে। পুবালি এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে কোথায় গেলো ওর ভাই। ও ছাড়া কেউ তো ওকে চন্দনে সাজাবে না। আধা সাজান অবস্থায় বেরিয়ে আসে ঘর থেকে। বন্দনা এবং বাকি মেয়েরা একটু কিন্তু কিন্তু করে ওঠে। বাইরে বেরিয়ে পুবালির চোখ খুজতে থাকে ভাইকে। লোকেরা জিজ্ঞেস করে “কি হল? কাকে খুঁজছ।” “শ্যামু কে দেখেছ কেউ?” বাড়ির চাকরটা কে বলে “এই দেখে আয়না শ্যামু কোথায়।” স্যামন্তক প্যান্ড্যালে বসে একমনে গল্প করতে থাকে আরও কিছু আত্মীয় সজ্জনের সাথে। বাড়ির চাকরটা দৌরতে দৌরতে এসে বলে “তোমাকে দিদিমনি ডাকছে।” দিদির ডাকে সারা না দিয়ে থাকা যায়না, বাকিদের বলে “আমি একটু দেখে আসছি, তোরা গল্প থামাস না।” ওপরে উঠে দেখে পুবালি আধা সেজে বসে আছে। স্যামন্তককে দেখে রেগে চেঁচিয়ে ওঠে—“কোথায় ছিলিস তুই? আমার মুখ আঁকবে কে? তোর কোনও চিন্তা নেই?” মাথা চুলকে চোরা হাসি হাসে শামু, দিদির দিকে দেখে বলে—“তুই আমার সুজি বানিয়েছিস কিনা আগে সেটা বল।” মাথা নাড়ায় পুবালি—“হাঁ বাবা।” চাকরটাকে রান্না ঘর থেকে সুজির বাটিটা আনতে বলে। বন্দনা এক ভাবে তাকিয়ে থাকে, ভাই বোনের দিকে। স্যামন্তকের সাথে একটু খুনসুটি করার ইচ্ছে জাগে—“ছেলে তো বড় হয়ে গেলো, দিদির আঁচল কবে ছাড়বে।” পুবালি, শ্যামুর মাথায় হাথ বুলাতে বুলাতে বলে—“আমার ভাই কোনও দিনও বড় হবেনা, চিরটা কাল আমার ছোটো ভাই হয়ে থাকাবে।” ঠোঁট উল্টে বন্দনা তিরস্কার স্বরে স্যামুকে বলে—“কিগো দিদির বিয়ের পরে কি করবে, কার আঁচল ধরবে? এই রকম ছেলেকে কে মেয়ে দেবে?” পুবালি একটু অভিমান ভরা চোখে বন্দনার দিকে তাকিয়ে বলে—“আমার ভাইটাকে তো ছাড়। ও এখনো অনেক ছোটো।” “ছোটো ছোটো বলেই ওকে মাথায় তুলে রাখলি। একটু যদি ছেড়ে দেখতিস তাহলে দেখতিস কত ধানে কত চাল।” বন্দনা স্যামন্তককে রাগাতে ছারেনা। বন্দনার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে থাকে স্যামন্তক। ড্রেস পাল্টে নিয়েছে ও। একটা গেঞ্জি আর ঢোলা একটা প্যান্ট পড়া। বুকের ওপরে লেখা “ডোন্ট মেস উইথ মি।” বন্দনার বুকের ওপরে নজরটা রেখে স্যামু বলে—“চাল থেকে ভাত কি করে বানাতে হয় আমি জানি, এক বার হাথে পাই সেটাও শিখিয়ে দেবো তোমাকে।” “বাঃ বাঃ ছেলে তো অনেক বড় হয়ে গেছে দেখছি।” বন্দনা ঠোঁট উল্টে কটাক্ষ সুরে বলে। স্যামু বন্দনার দিকে এগিয়ে যায় হটাত করে, বন্দনা দুই পা পিছিয়ে যায়। চোখ কুঁচকে তাকিয়ে থাকে স্যামুর মুখের দিকে, বুঝতে চেষ্টা করে, কি করতে চলেছে ও। সদ্য সাবান দিয়ে হাথ মুখ ধুয়ে আসা, বন্দনার গা থেকে বেশ একটা সুন্দর সুবাস স্যামুর নাকে লাগে। স্যামু অজান্তেই চোখ বন্দ করে একটা জোরে নিঃশ্বাস নেয়। পুবালি দেখতে থাকে হাঁ করে, তার ছোটো ভাই অনেক বড় হয়ে গেছে দেখতে দেখতে। বন্দনার কানের কাছে মুখ এনে স্যামন্তক বলে ওঠে—“দেবো নাকি ছাল ছাড়িয়ে, নুন মাখিয়ে…” বন্দনা ঠিক বুঝতে পারেনা স্যামন্তক কি বলতে চাইছে। একটু খানি থেমে স্যামন্তক বলে ওঠে “সশা…” বলেই ও হা হা করে হাসতে শুরু করে, ওর কথা শুনে পুবালিও হাসতে শুরু করে। বন্দনা একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ভাই বোন কে দেখতে থাকে। ভুরু নাচিয়ে পুবালি বন্দনা কে বলে—“কি রে আমার ভাই বলে কথা।” তারপরে স্যামন্তকের দিকে তাকিয়ে বলে “অনেক হল রে, এবারে আমায় সাজা।” চাকরটা ও দিকে সুজির বাটি নিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে। পুবালি ওর হাথ থেকে সুজির বাটি নিয়ে এক চামচ স্যামন্তকের মুখে দেয়। স্যামন্তক চামচিটা চেটে বলে—“তোর হাথের সুজি সব সময় ভাল খেতে। এবারে বসে পর। দেখি তোকে।” স্যামন্তক দিদি কে খাটের ওপরে বসিয়ে, সামনে বসে পড়ে। বাঁ হাথে পোস্টার কালার আর চন্দন মিলিয়ে, একটা সরু তুলি দিয়ে দিদির কপালে আঁকতে শুরু করে। এক এক করে ছোটো ছোটো নক্সা ফুটতে থাকে, শেষ বারের মতন সাজানো। বুক টা দুরু দুরু করে কাঁপতে থাকে পুবালির, প্রানের ভাইটার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে নিজের চোখে জল এসে যাই। অজান্তেই এক ফোঁটা জল ছলকে পড়ে পুবালির চোখ থেকে। স্যামন্তক, আস্তে করে দিদির চোখ মুছিয়ে দেয়। পুবালি এক চামচ করে সুজি খাওয়াতে থাকে আর ভাই তার আঁকি কাটতে থাকে কপালে। নিজের অজান্তেই বন্দনার চোখে জল এসে যায় ওদের দেখে। ধরা গলায় বলে ওঠে—“এই আমি কাপড় পড়তে যাচ্ছি। তোদের এই কান্না কাটি আমি আর দেখতে পারছিনা।” ও ভাবলও একটু খানি অন্তত মজা করা যাক স্যামন্তকের সাথে “পুবালির সাজানো হয়ে গেলে আমাকেও একটু সাজিয়ে দিয়।” স্যামন্তক ঘাড় ঘুরিয়ে বন্দনাকে দেখে চোখ টিপে বলে—“সুন্দরী গো দোহাই তোমার মান কোরোনা, আজ নিশিথে কাছে ডেকো, ভুলে যেও না।” বন্দনা স্যামন্তকের কথা শুনে নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরে, একটা চোরা হাসি হেসে বলে—“আমি দেখব খানে তুমি কত গভীর জলে থাকো।” পুবালি ছোটো করে একটা থাপ্পর মারে স্যামন্তকের মাথায়—“কাকে কি বলছিস একবার দেখে অন্তত বলিস।” —“বাঃ রে, তোর বান্দরি আমার সাথে মজা করতে পারে আর আমি করলেই যত দোষ।” বন্দনা, পুবালিকে বলল—“এই আমি একটু আসছি রে বাথরুম থেকে।” বলে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। বন্দনা বেরিয়ে যেতেই পুবালি স্যামন্তককে জিজ্ঞেস করে—“এই কি করছিস তুই?” অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে দিদির পানে—“কেন কি হল?” —“ওর একজন বয়ফ্রেন্ড আছে, যদিও তাকে আমার বিশেষ ভাল লাগেনা, তবুও ওকে কিছু বলা যাবেনা। ও প্রেমে পাগল। একদিন বুঝবে ঠেলা।” মাথা ঝাঁকিয়ে আসস্ত করে দিদিকে—“তুইও না, ছাড়রে ও সব কথা। আমি তো একটু মজা করছিলাম।” —“মজা করতে করতে কিছু মনে ধরে বসিস না যেন। মেয়েটা খুব ভাল ছিল, কিন্তু নিরুপমের সাথে মিশে কেমন যেন হয়ে গেছে।” —“ওকে বাবা, আমি কিছু করবোনা ব্যাস।” পুবালি হেসে বলে—“তোর জন্য একটা ভাল মেয়ে দেখে বিয়ে দেবো, চিন্তা করিসনা। বাড়ির একমাত্র ছেলে বলে কথা।” বড়দি হাঁক দেয় স্যামন্তককে—“কি রে তোদের সাজা হল? এতো কি করছিস তোরা।” ঘরে ঢুকে নিজের ছোটো বোন কে দেখে বলে “বাঃ বেশ সাজিয়েছে তো তোকে। আমার বিয়ের সময় এতো সুন্দর করে আঁকেনি ও।” তারপরে একটা গাঁট্টা মারে স্যামন্তকের মাথায় “তোর তো অনেক কাজ। তারা তারি বের হ।” দিদিকে সাজিয়ে ওঠার পরে, বেশ কিছুক্ষণ ধরে দিদির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে স্যামন্তক। পুবালি হাথ বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরে ভাইকে, কপালে ছোট্ট একটা চুমু খায়। তারপরে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে, স্যামন্তক। স্যামন্তক বেরিয়ে যাবার পরপরই বন্দনা ঢোকে। ঢুকে দেখে পুবালিকে সাজানো শেষ, কপালে আঁকা হয়ে গেছে। স্যামন্তককে দেখতে না পেয়ে পুবালি কে জিজ্ঞেস করে—“কোথায় গেলো তোর ভাইটা?” বিউটিসিয়ান পুবালি কে বাকি সাজ পরাতে ব্যাস্ত। সাজতে সাজতে পুবালি বন্দনা কে হেসে বলে—“আমার ভাইটা কে ছাড় তো, অন্তত। ওর পেছনে গিয়ে কি হবে।” হেসে ফেলে বন্দনা, পুবালির কথা শুনে—“কি যে বলিস, আমি তো এমনি মজা করছিলাম রে।” সন্ধ্যে নেমে আসে। দুর্গাপুরে শীতটা একটু বেশিই পরে। লোকজনের আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে। এক এক করে আত্মীয় সজ্জন, বন্ধু বান্ধব সবাই আসছে। বাড়ি, প্যান্ড্যাল সব আলোকিত হয়ে উঠেছে। সানাইএর সাথে গান, হইহল্লায় মুখোর হয়ে উঠেছে বিয়ে বাড়ি। স্যামন্তক একটা গাড় নীল জিন্স এর ওপরে একটা ক্রিম রঙের ব্লেজার চাপিয়েছে, নিচে একটা হাল্কা নীল রঙের টি-শার্ট। চোখে চশমা, চুলটা এলোমেলো হয়ে গেছে। বড় ব্যাস্ত স্যামন্তক। বাড়ির একমাত্র ছেলে, আত্মীয় সজ্জনের দেখাশুনা, কে এল, কে গেলো, কে খেতে বসেছে, কে কি খাবে। চিত্তরঞ্জনের পিসি নিরামিশ খাবেন, তার জন্যও রান্না ঘরে আলাদা রান্না করা আছে। বিউটিসিয়ানের কাজ শেষ হয়ে গেলে গাড়ির ব্যাবস্থা করে তাকে বাড়ি দিয়ে আসা। বাবা ওদিকে আবার কন্যাদান করতে বসবেন তার সব সররঞ্জাম দেখা। পুরুত এসে গেছেন অনেক আগেই, তাদের খাওয়া দাওয়ার ব্যাবস্থা। বরযাত্রী এক ঘণ্টার মধ্যে ঢুকে পরবে। জামাই বাবুর কিছু বন্ধুদের জন্য একটু সুরা পানের ব্যবস্থা করে রেখেছে এক কোনায়। তারা সিগারেট খেতে চাইলে তার পকেটে তিন প্যাকেট ক্লাসিক মাইল্ড রেখেছে। খাওয়ার জায়গার দরজায় দাঁড়িয়ে স্যামন্তক এক বার বিয়ের মণ্ডপের দিকে দেখে এক বার খাওয়ার জায়গার তদারকি তে লেগে পরে। “আরে মাসিমা অনেক দিন পরে দেখা, কেমন আছেন, আপনার ছেলেটা তো বেশ বড় হয়ে গেছে? কোন ক্লাস” “এই যে রতনদা তুমি একটু ওপরে গিয়ে মাকে বোলো দিদি কে নিয়ে তারা তারি আসতে। মোটামুটি লোকেরা আসতে শুরু করে দিয়েছে।“ “বেলা দি, তুমি আসতে পারলে? বাঃ বা, আমি তো ভাবছিলাম তুমি হয়তো মেয়েকে ছেড়ে আসতে পারবে না। ও মেয়ে ও এসেছে, ভাল ভাল, ওপরে যাও, দিদি একটু পরে আসবে নিচে।” “এই ঝন্তু ওপরে গিয়ে দ্যাখ দেখি একবার, পিসিমার রান্না টা হল কিনা। দেরি করে খেলে তো তার আবার পেটে গ্যাস হয়ে যাবে। হয়ে গেলে ওপরেই খেতে বসিয়ে দিস।” প্রায় পাগল হয়ে যাবার যোগাড়, তার মধ্যে দুটি ভাগ্নি মিলে মামাকে ধরেছে “মামা মামা, আমি গোলাপ ফুল নেবো। মামা প্লিস একটা গোলাপ দাও” তাদের শান্ত করতে গিয়ে দুটি গোলাপ যোগাড় করে দিতে হয় তাকে। ওদিকে পুবালি লাল রঙের বেনারসি শারী পরে, ফুলে আর সোনার গয়নায় ঢেকে তৈরি। শেষ বারের মতন নিজের ঘরটাকে দু চোখ মেলে তাকিয়ে থাকে। পা যেন আর চলতে চায়না, কেউ যেন পেরেক ঠুকে দিয়েছে মেঝেতে। বড়দি আর স্যামন্তকের মা মিলে, পুবালিকে আস্তে আস্তে বিবাহ মণ্ডপে নিয়ে আসে, পেছনে বন্দনা। বন্দনা একটা গাড় নীল রঙের সাউথ সিল্কের মেখলা পরেছে। কাঁচুলিটার পিঠ খোলা, তিনটে পাতলা দড়ি দিয়ে বাঁধা পেছনে, মেরুদণ্ডর খাঁজ যেন তীস্তা নদী। সুউন্নত, সুডৌল কুচ যুগল, কাঁচুলির অভ্যন্তরে যেন হাঁপিয়ে উঠছে, চাইছে যেন ঠিকরে বেরিয়ে পরতে। চুলে একটা খোঁপা বাঁধা, খোঁপায় একটা সুন্দর হাথির দাঁতের ক্লিপ। গলায়, হাথে, কানে হায়দ্রাবাদি মুক্তর সেট ঝলমল করছে। চোখে কাজল, ঠোঁটে গাড় মেটে রঙের লিপস্টিকের প্রলেপ। ডান কব্জিতে সোনার ঘড়ি। দেখে মনে হচ্ছে যেন কোনও স্বর্গের নর্তকী আজ নেমে এসেছে। চলনে যেন মত্ত হস্তিনির ছাপ, দোদুল্যমান নিতম্বের লয়ে অনেকের মুখ হাঁ হয়ে আছে। চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখে বন্দনা, ছেলেরা ওর দিকে বেশি করে তাকিয়ে। একটু বেশ মজা পায় বন্দনা, সবার অবাক চোখে তাকিয়ে থাকাটা বেশ উপলব্ধি করে তারিয়ে তারিয়ে। চলবে....
01-03-2020, 03:03 AM
পর্ব-৩
আত্মীয়দের ভিড় লেগে যায়, পুবালিকে দেখতে। ছেলেরা উঁকি ঝুঁকি মারতে থাকে, বন্দনার দর্শন পাবার জন্য। বাকি বান্ধবীদের সাথে বন্দনা বেশ মিলে যায়, গল্প করতে থাকে মন খুলে। মাঝে মাঝে এদিক ওদিক মাথা উঠিয়ে খুঁজতে থাকে স্যমন্তককে, কোথায় গেলো ছেলেটা। মনের কোনও এক কোনে যেন খালি এক দুপুর গড়িয়ে এসেছে, হটাত করে বড় ফাঁকা ফাঁকা লাগে বন্দনার। কেন লাগে নিজেই জানেনা, এতো লোকের মাঝে বন্দনা নিজেকে বেশ একা বোধ করে। বিয়ের লগ্ন আসন্ন। পুবালিকে পিড়িতে বসিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় বন্দনা, স্যামন্তককে দেখে। চোখা চুখি হতেই বন্দনা একটা মিষ্টি হাসি হাসে, যেন বলতে চায় “আমি আছি, আমাকে ও দেখো।” স্যামন্তক সামান্য একটু হেসে, অন্য দাদাদের সাথে পুবালিকে পিড়িতে বসিয়ে নিয়ে যায়। চারদিকে হই চই, বউ এসেছে এসেছে। স্যামন্তকের ঠাণ্ডা হাসি দেখে বন্দনার মনের কোনও এক কোনে একটা ছোটো কালো মেঘ জমে আসে হটাত করে। আনমনেই বন্দনা নিজের মাথায় চাঁটি মেরে বলে “কি রে পাগলী কি করছিস।” আবার ব্যাস্ত হয়ে পরে স্যামন্তক। রাত ঘনিয়ে আসছে, বরযাত্রীর খাওয়া দাওয়া, অথিতি আপ্যায়ন করতে করতে হাঁপিয়ে ওঠে ও। এক সময় বরযাত্রীর দিকে দেখা শুনা, একবার বিয়ের জায়গার দেখা শুনা। কপালে ঘাম ছুটছে। এমন সময় কেউ এসে ডাক দেয় স্যামন্তককে, দিদি ডাকছে। দাঁত কিরমির করতে থাকে “এই মেয়েটার আবার কি হল?” দিদি ডেকেছে বলে কথা, যেতে তো হবেই। গিয়ে দেখে কন্যাদান শুরু হবে। পুবালি স্যামন্তকের দিকে তাকায়, হাথ নাড়িয়ে ওর পাশে বসতে বলে। সামনে স্যামন্তকের বাবা বসে, তিনি ভাইঝির কন্যাদান করবেন। —“কি হয়েছে আবার তোর, ডাকছিস কেন?” চোখ ভেজা, ঠোঁটে হাসি নিয়ে পুবালি স্যামন্তককে বলে—“একটু বস না আমার কাছে, সেই সন্ধেবেলা থেকে কাজ, কাজ আর কাজ করে যাচ্ছিস, মুখটা শুকিয়ে গেছে একেবারে।” একটা চেয়ার টেনে পাশে বসে স্যামন্তক। ওদিকে, হাথে হাথ রেখে কন্যাদান পর্ব শুরু হয়ে যায়। বামনের মন্ত্র তার সাথে সাথে দিদির ঘন ঘন নাক মোছা, কেমন যেন হয়ে যায় স্যামন্তকের মনটা। পুবালির পিঠে হাথ রাখে স্যামন্তক, একটু যেন কেঁপে ওঠে ওর দিদি। ঘাড় ঘুরিয়ে কান্না ভেজা, হাসি হাসি চোখ নিয়ে তাকায়। বন্দনা খানিক্ষন এদিক ওদিক দেখে, এক কোনায় বসে পরে। পুবালির অন্য সব বান্ধবীরা এক এক করে চলে যাবার উপক্রম। এমন সময় পুবালির পিসতুতো দাদা, সুবিমল এসে বন্দনার পাশে বসে। বন্দনা একটা ছোট্ট হাসি হেসে নমস্কার জানায়। সুবিমল অনকক্ষণ ধরে বন্দনাকে জরিপ করছিল, কখন একটু একা পেয়ে আলাপ পরিচয় করবে এই সুন্দরী তরুণীর সাথে। বন্দনা বেশ বুঝতে পারে সুবিমল কেন ওর পাশে বসেছে। চোরা হাসি নিয়ে তাকায় বন্দনা সুবিমলের দিকে। সুবিমল বলে—“আপনি পুবালির বন্ধু?” আলতো করে মাথা নাড়ায় বন্দনা “হ্যাঁ।” —“আমি সুবিমল, পুবালির পিসতুতো দাদা, আসানসোল থাকি।” —“আচ্ছা, বেশ।” —“আপনাকে আগে তো দেখিনি, বড়দির বিয়েতে।” —“না তখন আমাদের পরিচয় হয়নি। আমি আর পুবালি শান্তিনিকেতনে এক সাথে নাচ শিখতাম।” —“ও আচ্ছা এবারে বুঝেছি। আমি তো ভাবছিলাম আপনি ওর কলেজের বান্ধবী।” বার্তালাপ বেশ অগ্রসর হতে থাকে, সুবিমল এবং বন্দনার মাঝে। কথার মাঝে বন্দনার চোখ থেকে থেকে স্যামন্তককে খোঁজে “গেলো কথায় ছেলেটা, এই লোকটা তো বড় হেজাচ্ছে।” কথা বলতে বলতে এক সময় বন্দনা সুবিমলকে বলে—“খই ফেলার সময় হয়ে এসেছে মনে হয়, চলুননা মণ্ডপের দিকে এক বার ঘুরে আসি। দেখে আসি কি হচ্ছে।” সুবিমল মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়, কিছু তো করার নেই। দুই জনে হাঁটতে হাঁটতে, বিয়ের জায়গায় পৌঁছয়। স্যামন্তক তখনও পর্যন্ত দিদির পাশ ছারেনি। বর কনে, আগুনের চারদিকে সপ্তপদি শেষ করে খই আগুনে ঢালছে। বন্দনা স্যামন্তককে দেখতে পেয়ে যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচে “যাক বাবা, বেঁচে যাবো এই লোকটার কাছ থেকে।” স্যামন্তক একমনে আগুনের দিকে তাকিয়ে বসে, একবার দিদি জামাইবাবুর দিকে দেখে, একবার জেঠিমার দিকে দেখে। বন্দনা স্যামন্তককে ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখে চমকে ওঠে, সাদা ব্লেজার আর নীল জিন্সএ ছেলেটাকে বেশ ভাল দেখতে লাগছে। ও কাছে এগিয়ে এসে স্যামন্তকের কাঁধে হাথ রাখে। স্যামন্তক একটু অন্যমনস্ক ছিল, তাই হাথের স্পর্শে চমকে ওঠে। কে রাখে কাঁধে হাথ? ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে বন্দনা ওর দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি চোখে হাসছে। স্যামন্তক একটা ক্ষীণ হাসি ফেরত দেয়, মনটা ঠিক ভাল নেই। “কি হল, কিছু বলছ না যে” বন্দনা জিজ্ঞেস করে স্যামন্তককে। আওয়াজ শুনে যেন ঘুম থেকে উঠলো স্যামন্তক, এই রকম একটা চাহনি নিয়ে তাকায় বন্দনার দিকে, বলে—“কই কিছু নাতো। এই বসে আছি এখানে।” একটু ঝুঁকে পরে বন্দনা ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলে—“তোমাকে কতক্ষণ ধরে খুঁজছিলাম আমি, কোথাও পাইনা। আমাকে কেমন লাগছে?” স্যামন্তকের নাকে ভেসে আসে বন্দনার গায়ের গন্ধ, মন মাতানো পারফিউমের সুবাসের সাথে সাথে গায়ের গন্ধটা বেশ লাগে। ঘাড় ঘুরাতেই স্যামন্তকের মাথার সাথে ঠোকর খায় বন্দনার মাথা। “উফফফফ…। কিযে করোনা তুমি।” মাথায় হাথ বুলাতে বুলাতে বলে ওঠে বন্দনা। ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখে স্যামন্তক, জরিপ করার ন্যায় গালে হাথ দিয়ে বলে—“হ্যাঁ সুন্দর দেখাচ্ছে। তবে আমাকে কেনও খুঁজছিলে সেটা বুঝতে পারলামনা।” একটু অভিমানের সুরে উত্তর দেয়—“শুধু এইটুকু ব্যাস?” —“আচ্ছা বাবা, একদম ফাটা ফাটি লাগছে তোমাকে, হয়েছে।” রেগে যায় বন্দনা, ঝাঁজিয়ে ওঠে—“বলতে হয় বোলো না হলে বোলো না। আমি চললাম।” স্যামন্তক বেগতিক দেখল, চারদিকে বাড়ির লোকজন, বাবা, মা, বড়দি, বোন, জেঠু, জেঠিমা। ও বুঝে পেলনা কি করবে। চোখ দিয়ে বন্দনাকে শান্ত হবার ইশারা করে। বন্দনা নাক কুঁচকে অভিমানি চাহনিতে তাকিয়ে থাকে স্যামন্তকের দিকে। চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে ওর পাশে। সুবিমল কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বন্দনাকে খেতে ডাকে। বন্দনা সুবিমলকে বলে যে ও পুবালির সাথে খাবে। কিছু করার নেই দেখে সুবিমল খেতে চলে যায়। বিয়ের পালা শেষ প্রায়, স্যামন্তক উঠে গিয়ে খাবার জায়গার তদারকি করতে যায়। অনেক রাত হয়ে গেছে, বাড়ির লোকজন ছাড়া বাইরের কোনও অথিতি নেই। শেষ পাতে বর কনে খাবে, বরের সাথে আসা কয়েক জন বন্ধুরা খাবেন আর স্যামন্তক এখনো খায়নি। স্যামন্তকের পেছন পেছন বন্দনাও চলে আসে। হাথটা ধরে ঝাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করে বন্দনা—“কই কি হোলও, বিকেল গড়িয়ে মাঝরাত হয়ে গেলো তোমার দেখা নেই কেন?” বন্দনা এতো কাছে দাঁড়িয়ে যে স্যামন্তকের ডান বাজুর সাথে ওর নরম মুলায়ম বুক ছুঁয়ে যায়। শক্ত মাংসপেশির পরশে বন্দনা নরম বুক একটু কেঁপে ওঠে, স্যামন্তকের বাজুতে যেন বিদ্যুৎ খেলে যায়। “আরে বাবা, আমি কি বিকেল থেকে বসে আছি নাকি যে তোমার গুনগান করবো। নিঃশ্বাস ফেলার সময় ছিলোনা আমার।” বন্দনার মুখপানে চেয়ে থেকে সান্তনা দেয়। এতো কাছে এতো সুন্দরী রমণীকে দেখে স্যামন্তকের বুকের মাঝে একটা ঝড় ওঠে। বন্দনার মুখ লাল হয়ে যায় স্যামন্তকের চোখের দিকে তাকিয়ে। ওর চাহনি যেন বুকের ধমনীর কোনো কোনা নাড়িয়ে দেয়। লাজুক হেসে ঠোঁট কামড়ে ধরে বন্দনা, নাকের অগ্রভাগ গরম হয়ে ওঠে। স্যামন্তক পকেট থেকে একটা পেন বার করে বন্দনার থুতনিটা ধরে ওপরে করে নিজের দিকে। বন্দনা কেঁপে ওঠে, থুতনিতে স্যামন্তকের আঙ্গুলের স্পর্শ পেয়ে। ভাসা ভাসা চাহনি নিয়ে তাকায় ওর দিকে। পেন দিয়ে বন্দনার থুতনিতে তিনটে ছোটো ছোটো বিন্দু এঁকে দেয় স্যামন্তক। নিজের অজান্তেই হাথ দুটি মুঠি হয়ে যায় বন্দনার, গাল, কান গরম হয়ে ওঠে। সারা মুখের ওপরে স্যামন্তকের উষ্ণ নিঃশ্বাস ঢেউ খেলতে থাকে। তির তির করে কেঁপে ওঠে বন্দনার দেহ পল্লব। ঠোঁট দুটি অল্প ফাঁক হয়ে যায় নিজের অজান্তেই। পদ্মের পাপড়ির মতন ঠোঁট গুলো কেঁপে ওঠে, যেন দখিনা বাতাসে বইছে। স্যামন্তকের আঙ্গুল থুতনি থেকে গালের ওপরে চলে আসে। আলতো করে বুড়ো আঙ্গুলটা বোলায় নরম গালে, একটু ঝুঁকে পরে বন্দনার ফাঁক করা ঠোঁটের দিকে। চোখের পাতা দুটি ভারি হয়ে আসে বন্দনার “একি হতে চলেছে, আমি কি করছি?” নিজেকে প্রশ্ন করে, উত্তর পায়না। স্যামন্তকের বুকের মাঝে মাথা চারা দিয়ে ওঠে আষাঢ়ের ঝড়। চোয়াল শক্ত করে নেয় নিজেকে সামলানোর জন্য। কতক্ষণ ওরা দুজনে একে অপরকে নিরীক্ষণ করছিলো ঠিক জানা নেই। সময় যেন থমকে দাঁড়িয়ে যায় দুজনার মাঝে। নিচু স্বরে বন্দনা কে বলে—“এবারে বেশি সুন্দর লাগছে।” স্যামন্তকের গলার স্বর শুনে সম্বিত ফিরে পায় বন্দনা। উষ্ণতার প্রলেপ মাখা মুখ নামিয়ে নেয়, চোখে চোখ রাখার মতন শক্তি হারিয়ে ফেলেছে ও। নিথর হয়ে মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে বন্দনা। স্যামন্তক কি করবে কিছু ভেবে পায়না। ওরা এতোটাই কাছা কাছি দাঁড়িয়ে যে, বন্দনার শরীরের উষ্ণতাটা পর্যন্ত স্যামন্তক উপলব্ধি করতে পারে। “কি হোলও এবারে তুমি কিছু বলছ না যে।” নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করে স্যামন্তক। হরিণীর ন্যায় মাথা দোলায় বন্দনা, বলে ওঠে—“কিছু বলার নেই আমার।” ধির পায়ে স্যামন্তকের কাছ থেকে দূরে সরে যায় ও। চোখের কোনে এক ফোঁটা জল চলে আসে বন্দনার, বুকের মাঝে এক অজানা আলোড়ন মাথা চারা দিয়ে ওঠে। দ্বিমত দেখা দেয় হৃদয়ের এক কোনে “এতো মিষ্টি করেতো নিরুপম কোনও দিন আমাকে সাজিয়ে দেয়নি বা দেখেনি।” স্যামন্তক বন্দনার চলে যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে, ভাবতে থাকে কিছু কি ভুল করে ফেললও, যদি ও দিদি কে বলে দেয় তাহলে দিদি ওর চামড়া গুটিয়ে দেবে। ইচ্ছে করে তো কিছু করেনি ও, বন্দনাই তো ওর কাছে এসেছিলো, ওকি যেচে বন্দনার পাশে গেছিলো? একটা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে, খাবার আয়োজন করতে চলে যায়। বন্দনা খাবার জায়গার এক কোনায় একটা চেয়ারে বসে পরে। বুকটা বড় ফাঁকা ফাঁকা লাগে বন্দনার। কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে দৃষ্টি। ও ভেবেছিল একটু মজা করতে, একটু ফ্লারট করতে ব্যাস। বাঁ পায়ের ওপরে ডান পা দিয়ে, ডান হাথের তালুতে থুতনিটা রেখে মনটাকে হারিয়ে ফেলে বন্দনা। ডিসেম্বরের মধ্য রাত্রেও ওর কান মাথা গরম হয়ে যায়। কে জানে কে ঠিক। “এ মন আমার হারিয়ে যায় কোনখানে, কেউ জানেনা শুধু আমার মন জানে, আজকে শুধু হারিয়ে যাওয়ার দিন, কেউ জানেনা শুধু আমার মন জানে।” সুবিমলের খাওয়া শেষ, ও বন্দনাকে খুঁজতে খুঁজতে খাওয়ার জায়গায় এসে দ্যাখে, বন্দনা চুপচাপ এক কোনে একটা চেয়ারে বসে কিছু একটা ভাবছে। সুবিমল বন্দনাকে জিজ্ঞেস করে—“কি হোলও হটাত করে এতো টা চুপচাপ হয়ে গেছো। কেউ কিছু বলল নাকি?” বন্দনা ওর দিকে তাকিয়ে বলে—“না না কিছু হয়নি আমার এমনি বসে ছিলাম। সবাই চলে গেছে তাই কি করবো ভাবছি।” ওদিকে বর কোনে কে নিয়ে খাবার জায়গায় বাড়ির লোকেরা চলে আসে। সবাই আবার খেতে ব্যাস্ত হয়ে পরে। বন্দনা পুবালির পাশে বসে যায়। স্যামন্তকের খাবার ইচ্ছেটা মরে যায়, পুবালির অনুরোধে ওর হাথ থেকে কিছু খেয়ে নেয়। খাওয়ার সময় পুবালি বন্দনার মুখ দেখে বুঝতে পারে যে কিছু একটা ঘটেছে বা ঘোটতে চলেছে। খাওয়ার পালা সেরে উঠে যাবার আগে পুবালি স্যামন্তককে জিজ্ঞেস করে যে বন্দনা এতো চুপ কেনো। স্যামন্তক মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় ও বন্দনার ব্যাপারে কিছু জানেনা। বন্দনা খাবার সময় খুব বেশি চুপ ছিল, পুবালিকেও কিছু জানাল না। পুবালি ওর চোখ মুখ দেখে বুঝতে পারল যে বন্দনার ভেতরে একটা ঝড় উঠেছে আর ও প্রান পন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেটাকে বন্দ করতে। খাবার পরে বন্দনা বাথরুমে ঢুকে পরে। আয়নার সামনে নিজের মুখটাকে অনেকক্ষণ ধরে দেখে। সত্যি কি ওর মধ্যে কিছু চলছে না ওটা ওর ভ্রান্তি। চোখে মুখে জলের ঝাপটা মেরে নিজেকে শান্ত করে চলে আসে বাসর ঘরে যেখানে পুবালি সিতাভ্র আর বাকিরা সবাই ছিল। ঘরে ঢোকার মুখে ওর বুক খুব জোরে ধুপ পুক করছিলো, ভেতরে তো স্যামন্তক বসে থাকবে, কি করে উর সাথে চোখ মিলিয়ে কথা বোলবে? কিন্তু ঘরে ঢুকে যখন দেখে যে স্যামন্তক নেই, তখন হাঁপ ছেড়ে বাঁচে বন্দনা যাক একটা প্রবলেম সল্ভ হল। রাতে বাসর জাগার পালা, বর কনে কাউকে ঘুমতে দেওয়া যাবেনা। খুব ইচ্ছে ছিল বাকি সবার সাথে বাসর জাগার, কিন্তু স্যামন্তক জানে যে বন্দনাও থাকবে সেখানে, ও আর চায়না আজ রাতে অন্তত বন্দনার সামনে আসতে। কাল সকালে দেখা যাবে। বাবা, মা, জেঠু, জেঠিমা এবং বাড়ির বাকি লোকজন শুয়ে পরে। এমনিতে সারা দিন খেটে খেটে স্যামন্তকের গা হাথ পা ব্যাথা করতে শুরু করে দিয়েছিলো। দিদির ঘরে বাসর বসবে, মানে ওকে মেজনাইনের ঘরে গিয়ে বিশ্রাম নিতে হবে। জামা কাপড় ছেড়ে একটা পায়জামা আর টিশার্ট পরে লম্বা হয়ে যায় বিছানায়। মনে মনে ভাবতে থাকে স্যামন্তক ওকি আকৃষ্ট হয়ে পরছে বন্দনার মিষ্টি আলেয়ায়। কি করে নিজেকে বেঁধে রাখবে ও, বন্দনা তো কারুর বাগদত্তা। ও চায়না কারুর প্রেম ভেঙে নিজের করার। এমনিতে পুবালি বার বার করে বলে দিয়েছে বন্দনার কাছ থেকে একটু দূরে থাকতে। পুবালি, জামাই সিতাভ্র, সুবিমল, সিতাভ্রর দুই বন্ধু, বন্দনা সবাই বেশ আরাম করে বসে গল্প করতে শুরু করে। দিদি এক বার খোঁজে ওর ভাইটা কোথায় গেলো? সুবিমল জানায় যে স্যামন্তক শুতে চলে গেছে। সেটা শুনে পুবালির মনটা খুব খারাপ হয়ে যায় “আমার ভাই আমার বাসর জাগবে না?” সুবিমল কে পুবালি বলে—“একটু গিয়ে দ্যাখনা, বলবি যে আমি ডেকেছি, দেখবি ঠিক চলে আসবে।” বন্দনা বলে ওঠে—“আমি গিয়ে দেখছি।” পুবালি একটুখানি দৃঢ় চোখে বন্দনার দিকে তাকায়, সেই চাহনি দেখে বন্দনা মুখ নিচু করে ফেলে। ও বলে ওঠে—“আমি কাপড়টা পাল্টে আসছি।“ বন্দনা বেরিয়ে যাবার পরে, সুবিমল স্যামন্তকের খোঁজে মেজনাইনের ঘরে ঢুকে দ্যাখে যে স্যামন্তক বিছানায় শুয়ে পরেছে। ওকে ধাক্কা দিয়ে জাগিয়ে তুলে বলে—“তোকে পুবালি ডাকছে আর তুই এখানে শুয়ে পরেছিস। কি ব্যাপার তোর তো এই রকম হবার কথা নয়।” স্যামন্তক চমকে ওঠে—“আরে তুমি কি করছও এখানে? আমি খুব টায়ার্ড ছিলাম তাই শুয়ে পড়েছি। একটু খানি রেস্ট নিয়ে যেতাম তো। তুমি গিয়ে বোলো আমি আসছি।” এই বলে স্যামন্তক সুবিমলকে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। কাপড় চেঞ্জ করে নেয় বন্দনা। পরনে একটা নাইট গাউন, তার ওপরে একটা শাল জড়িয়ে নেয় বন্দনা। পুবালির ঘরে ঢোকার আগে উঁকি মেরে দেখে নেয় যে স্যামন্তক এসেছে কিনা। স্যামন্তককে দেখতে না পেয়ে বুঝে যায় যে ও এখনো ওপরে শুয়ে আছে। পা টিপে টিপে, স্যামন্তকের ঘরে ঢোকে বন্দনা। ঢুকে দেখে যে ও চিত হয়ে শুয়ে, সিলিঙের দিকে তাকিয়ে আছে। গলা খাখরে জানান দেয় যে ও উপস্তিত। ঘাড় ঘুরিয়ে বন্দনার দিকে তাকায় স্যামন্তক। ওকে দেখেই চোয়াল শক্ত হয়ে যায়, ভাবতে থাকে কেন এসেছে? ধিরে ধিরে খাটের পাশে গিয়ে দাঁড়ায় বন্দনা। মৃদু আলোতে স্যামন্তকের মুখের ভাষা পড়তে প্রচেষ্টা চালায় বন্দনা। বুকের মধ্যে তুমুল ঝঞ্ঝা বইতে থাকে, নিজের অজান্তেই হাথ দুটি মুঠি হয়ে কোলের ওপরে চলে আসে। “কি দেখছ এই রকম ভাবে” বন্দনা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করে স্যামন্তককে। “কিছু না।” একটা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে ভাবতে থাকে স্যামন্তক, ওকি বলবে বন্দনাকে যে ওদের এতো কাছাকাছি আসা উচিত নয়, ওকি জানিয়ে দেবে যে বন্দনা কারুর বাগদত্তা ওর এই রকম করা উচিৎ নয়। মুক চাহনি থেকে সব বুঝে যায় বন্দনা, পুবালি ওকে নিরুপমের কথা বলে দিয়েছে। বন্দনা স্যমন্তকের পাশে বসে পরে, হাজার ভোল্টের বিজলি লাগার মতন ঠিকরে উঠে পরে স্যামন্তক। গম্ভির গলায় বলে ওঠে—“তোমার চলে যাওয়া উচিৎ, বন্দনা। দিদি, সিতাভ্রদা, সুবিমল সবাই তোমাকে খুঁজবে।” কাঁপা গলায় উত্তর দেয়—“তোমাকেও তো পুবালি ডাকছে, তুমি কেনও যাচ্ছ না?” —“তুমি চল আমি আসচ্ছি।“ —“তুমি গেলে আমি যাবো না হলে যাব না।” —“বন্দনা, আমার যাওয়ার সাথে তোমার যাওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই, সুতরাং তুমি আগে চলো আমি একটু পরে আসছি।” দাঁড়িয়ে পরে বন্দনা, হাসি কান্না সব কিছু ভুলে যায়, কি করবে বা কি করতে চায় মাথার মধ্যে সব গুবলেট হয়ে যায় ওর। দরজার দিকে যেতে যেতে স্যামন্তকের দিকে তাকিয়ে বলে—“আমি অপেক্ষা করে থাকবো।” দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাবার পরে, স্যামন্তকের মনে হল যেন তানপুরার সব তার গুলো ছিঁড়ে গেছে। ঝনঝন করে ওঠে মাথার ভেতরটা। নিজের ওপরে ক্ষোভ জন্মায়, একি করলো ও, এক জনের বাগদত্তার ওপরে জেনে বুঝে ঝুঁকে পড়ল? দিদির বারন ও শুনল না। কিন্তু ওর কি দোষ, বন্দনা তো ওর কাছে এগিয়ে এসেছিলো। কে এগিয়েছিল, ও নিজেই তো আগ বাড়িয়ে পেন দিয়ে থুতনিতে আঁকতে গেছিলো। বন্দনা কি বলেছিল ওগো আমাকে সাজাও। শত চিন্তা করে কুল পায় না, কে ঠিক কে ভুল। চলবে....
01-03-2020, 03:06 AM
পর্ব-৪
বিছানা ছেড়ে উঠে বাথরুমে গিয়ে, চোখে মুখে জলের ঝাপটা মারে স্যামন্তক। তারপরে দিদির ঘরের দিকে পা বাড়ায়। ঘরের মধ্যে সবাই কেমন যেন ক্লান্ত, ঘুম ঘুম ভাব সবার চোখে। পুবালি স্যামন্তককে দেখে চোখের ইশারা করে কাছে ডাকে। বন্দনা আড় চোখে স্যামন্তককে দেখতে থাকে আর সিতাভ্রর সাথে গল্প করতে থাকে। দিদির কাছে গিয়ে, কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে স্যামন্তক। পুবালি ওর চুলের মধ্যে বিলি কেটে দিতে থাকে। সিতাভ্র হেসে জিজ্ঞেস করে—“কি শালা বাবু, এখনি হাঁপিয়ে উঠলে। এখনো তো রাত পরে আছে।” স্যামন্তক বলে—“তোমাকে তো আর সারা দিন খাটতে হয়নি, এলে গাড়ি চেপে, বসে বিয়েটা করে ফেললে আর কি। কাজ শেষ, এবারে হনিমুনে গিয়ে মজা করবে। আমি শালা এখানে বাল ছিঁড়ে আঁঠি বাঁধবো আর কি।” ওর কথা শুনে সবাই হেসে ফেলে, পুবালি একটু লজ্জা পেয়ে যায় ভাইয়ের মুখ থেকে এইরকম মন্ত্যব শুনে। চুলের মুঠি ধরে টান মারে। অল্প রেগে বলে ওঠে—“কি যাতা বলছিস তুই।” “আউ লাগছে, ঠিকই তো বলেছি তাতে আবার কন্যের রাগ দেখো।“ দিদিকে রাগাতে ছারেনা স্যামন্তক। গল্প গুজব আবার চলতে থাকে। স্যামন্তক দিদির কোলে শুয়ে আদর খেতে খেতে চোখ বুজে আসে। বাকি সবাই বেশ ক্লান্ত, তাদের চোখেও ঘুমের লেশ পরতে থাকে। পুবালি সিতাভ্রর দুই বন্ধুদের দেখিয়ে স্যামন্তককে জিজ্ঞেস করে—“ওদের শোয়ার কি কিছু ব্যাবস্থা করেছিস?” মাথা নাড়ায়—“হ্যাঁ ওরা মেজনাইনের ঘরে গিয়ে শুয়ে পরতে পারে। সুবিমলদা নিয়ে যাবে আর কি।” —“আর বন্দনা কোথায় শোবে?” মাথা চুলকোয় স্যামন্তক, সুবিমল খুনসুটি করে বলে ওঠে—“ও তো আমাদের রুমেই শুতে পারে।” বন্দনার মুখ লাল হয়ে যায়, পুবালির দিকে তাকায় ও, সবাই হেসে ওঠে। পুবালি ভাইয়ের দিকে দেখে বলে—“একটা কিছু ব্যাবস্থা করে দিস, না হয় কাকিমার ঘরে শুয়ে পরবে।” স্যামন্তক সুবিমলকে বলে—“তুমি ওদের নিয়ে চলে যাও আমার ঘরে।” তারপরে বন্দনার দিকে তাকিয়ে বলে—“পাশের রুমে মা শুয়ে আছে, পাশে জায়গা থাকলে শুয়ে পর না হলে নিচে বড়দির রুমে ঢুকে পরো।” সুবিমল বাকি বন্ধুদের নিয়ে বেরিয়ে গেলো। পুবালি আর সিতাভ্র কে বলে গেলো না শুতে। ওরা জানে যে ওরা শুয়েই পরবে, রাত প্রায় আড়াইটে বাজে। পুবালি ভাইকে জিজ্ঞেস করে—“তুই কোথায় শুবি?” —“ধুর শালা আমি শুতে যাবো কেনো রে, আমি শুয়ে পরলে তো তোরাও শুয়ে পরবি।” —“লক্ষ্মী ভাইটি আমার, আমাকে একটু ঘুমতে দে।” বন্দনা চুপ করে তখনও পর্যন্ত বসে ছিল। পুবালি ওর দিকে দেখে বলে—“তুই বসে কেন, তুই যা।” “হ্যাঁ যাচ্ছি” বলে একবার স্যামন্তকের দিকে তাকিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে চলে গেলো। বাইরে বেরিয়ে কোথাও যাবার ইচ্ছে করলো না বন্দনার। চুপ করে সোফায় বসে টিভি দেখতে লাগলো। কি করবে, সব যেন তালগোল পাকিয়ে আছে মাথার মধ্যে। মনের কোণে জেগে ওঠে প্রশ্ন “হটাত করে ও আমার থুতনিতে আঁকতে গেলো কেন? আমি কি বলেছিলাম। আমি তো সামান্য একটু মজা করতে চেয়েছিলাম, তাই বলে একদম আমাকে নাড়িয়ে দেবে?” বন্দনা চলে যেতেই, পুবালি ভাইকে জিজ্ঞেস করে—“তুই শুধরাবি না, তাই না।” —“আমি কি করলাম?” —“বন্দনার পেছনে লেগেছিলি কেন?” —“যাঃ শালা। আমি কোথায় লাগলাম। সারাটা সন্ধ্যে আমি কাজে ব্যাস্ত ছিলাম, তারপরে তোর পাশে বসে ছিলাম তোর বিয়ে শেষ না হওয়া পর্যন্ত। আমি করলাম টা কি। যা মজা করার সেটা তো সুবিমলদা করলো।” ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে স্যামন্তকের মুখের দিকে—“ও.কে মেনে নিলাম। তুই একটা বালিস নিয়ে আমাদের পাশে শুয়ে পর। মুখটা অনেক শুকিয়ে গেছে তোর।” সিতাভ্র বলে ওঠে—“ওর মুখ কতটা শুকিয়েছে আমি জানিনা, তবে তোমার বার বার বলাতে ওর মুখ আরও শুকিয়ে যাবে।” “না রে আমি যাচ্ছি। সোফায় শুয়ে পোরবো। একটু পরেই তো সকাল হবে।” ঘড়িতে তখন সাড়ে-তিনটে বাজে। ঘর থেকে বেরিয়ে দেখে, বন্দনা সোফায় বসে টিভি চালিয়ে এন-জি-সি দেখছে। স্যামন্তক চুপ চাপ কিছুক্ষণ ধরে বন্দনাকে পেছন থেকে দেখতে থাকে। তারপরে আস্তে আস্তে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠে যায়। সিঁড়িতে পায়ের আওয়াজ পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখে স্যামন্তক ছাদে যাচ্ছে। ওর মনটা কেমন যেন করে উঠলো “আমি বসে আছি সেটা দ্যাখা সত্তেও ও কিছু না বলে চলে গেলো।” ভাবতে ভাবতে দেখে স্যামন্তক আবার নেমে আসছে ওর দিকে তাকাতে তাকাতে। চার চোখ এক হতেই, বন্দনা একটু আলতো হাসে। “তুমি শোবে না” বন্দনাকে জিজ্ঞেস করে স্যামন্তক। —“না আমার ঘুম পাচ্ছে না, তুমি ঘুমবে নাকি?” —“তুমি সোফাটা ছারলে আমি একটু দু চোখের পাতা এক করতাম।” অভিমানী সুর কেটে বন্দনা বলে—“আমাকে তাড়াতে চাও বলো।” স্যামন্তক একটু রেগে যায় ওর কথা শুনে—“আমি সেটা বলিনি। সব সময়ে, কথা গুলোর একটা ভিন্ন মানে ধরে নেওয়ার স্বভাব আছে না তোমার?” একটু ঝাঁজিয়ে বলে ওঠে বন্দনা—“আমি কোনো কথার কোনও মানে ধরে বসে নেই, বুঝলে।” —“ঠিক আছে বাবা। শুতে চাইলে নিচে বড়দির ঘরে চলে যেও, ঘরটা খালি আছে।” —“না আমি শুতে চাই না। তুমি তো ওপরে যাচ্ছিলে, নিচে নেমে এলে কেন?” “সিগারেট নিতে।” সিগারেটটা নেওয়া একটা বাহানা ছিল স্যামন্তকের, আসলে ও একবার বন্দনাকে দেখতে চাইছিলো তাই উঠে গিয়েও নিচে নেমে আসে। এদিকে ওদিকে হাতরে, ওপরে যেতে পা বাড়ায় স্যামন্তক। বন্দনা বলে ওঠে—“কি চললে নাকি, আমি যাবো সাথে?” ঘাড় ঘুরিয়ে বন্দনার দিকে তাকিয়ে বলে—“যাওয়া না যাওয়া তোমার ওপরে।” এই রকম একটা চাঁছাছোলা উত্তর পাবে আশা করেনি বন্দনা, কেমন যেন করে ওঠে ওর বুকের মাঝে—“আমি যাবো না, তুমি একাই যাও। আমি কি তোমার সাথে শত্রুতা করেছি যে আমার সাথে এই রকম ভাবে কথা বোলছো।” স্যামন্তক দাঁড়িয়ে পরে, ভেবে পায়না কি বোলবে বন্দনা কে। কথাটা বলার পরে নিজের ওপরে কেমন যেন রাগ হয়। আবার ঘুরে তাকিয়ে থাকে বন্দনার দিকে—“আচ্ছা চলো।” বন্দনা টিভি টা বন্দ করে, স্যামন্তকের পাশে এসে দাঁড়ায়। স্যামন্তক একটু খানি ঝুঁকে পরে হেসে বলে—“লেডিস ফার্স্ট, অল অয়েস আফটার ইউ ডিয়ার।” বন্দনার পেছন পেছন স্যামন্তক সিঁড়ি বেয়ে উঠতে থাকে। স্যামন্তক পেছন থেকে দেখতে থাকে বন্দনা চাল, একবারে জন্য মনে হয় ওর, এই অন্ধকার সিঁড়ি তে ওকে জড়িয়ে ধরে, তন্বী সর্পিল শরীর টাকে পিষ্ট করে দেয় নিজের বাহুর আলিঙ্গনে। নরম নরম ঠোঁট দুটি কে কামড়ে চুষে বন্দনার সব সুধা পান করে নেয়। নিঙরে শেষ করে দেয় যত মদিরা লুকিয়ে আছে বন্দনার অভ্যন্তরে। বন্দনা সিঁড়ি চড়তে চড়তে ভাবতে থাকে, নির্জন শীতের রাতে ওকে একা পেয়ে কি স্যামন্তক নিজেকে সামলে রাখবে? এক বারের জন্যও কি ও ঐ বাহুর আলিঙ্গনে বদ্ধ করে নিতে চাইবেনা? উত্তপ্ত পেশিবহুল বাহুর আলিঙ্গনে বদ্ধ হবার উন্মুখ আশঙ্কায় দুরু দুরু করে কেঁপে ওঠে বুক, নিজের অজান্তেই কান গরম হয়ে ওঠে। ও বেশ বুঝতে পারে যে স্যামন্তক ওর পেছনে হাঁটতে হাঁটতে ওর নিতম্বের দলুনি দেখছে। হটাৎ করে ওর মনে হয়, ওর পশ্চাৎ বলয়দ্বয়ের ওপরে কেউ গরম তেল ঢেলে দিয়েছে। সারা শরীর কেঁপে ওঠে উত্তেজনায়। এই রকম উত্তেজনা ওর কাছে যদিও নতুন নয় তবে সেটা অনেক পুরনো, অনেক দিন আগের, ধুলো পরে গেছে সেই স্মৃতিতে। আজ রাতের নিভৃত আন্ধকারে এই উত্তেজনাটাকে খুবই নতুন এবং আনকোরা মনে হয় বন্দনার। ঘাড় ঘুরিয়ে একবার স্যামন্তকের দিকে দেখে একটা মিষ্টি হাসি হাসে। চোখে লাগে আগুনের পরশ, ঝলকে ওঠে গালের লালিমা। বন্দনার চোরা চাহনি দেখে স্যামন্তকের চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে, বারংবার নিজেকে বলতে থাকে “এই কুজ্ঝটিকার আড়ালে এক মরীচিকা লুকিয়ে। সম্বরন করো নিজেকে নাহলে তপ্ত বালুচরে হারিয়ে ফেলবে।” নিশি বড় সুন্দর। রি-কল পার্কের সব বাড়ি ঘুমিয়ে আচ্ছন্ন। আকাশে তারা টিম টিম করে জ্বলছে। সামনে সিদু-কানহ ডহর, কেউ নেই কোথাও। পাশের মাঠে কত গুলো কুকুর একবার ডাক দেয়। কোনও এক গলি থেকে একটা বেড়াল করুন সুরে কেঁদে ওঠে। যেদিকে দু চোখ যায় সেদিকে শুধু নির্জন অন্ধকার। ঠাণ্ডা হাওয়ায়ে দুলতে থাকে গাছের পাতা গুলো, মাঝে মাঝে কেঁপে ওঠে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বিপিন দেবদারুর গাছ গুলো। দুরে জি-টি রোডের ওপর দিয়ে একটার পর একটা ট্রাক ছুটে যায়। গুম গুম আওয়াজে মাঝে মাঝে নিস্তব্ধ রাতের পরিবেশ খান খান হয়ে যায়। বন্দনা এক কোনায় দাঁড়িয়ে এই রাতের সৌন্দর্য সুধা পান করতে থাকে। ঠাণ্ডায় মাঝে মাঝে কেঁপে ওঠে, গায়ের শাল টাকে আরও জড়িয়ে ধরে, একটু উষ্ণতার জন্য। মনের কোনও চোরা গলিতে জেগে ওঠে স্যামন্তকের বাহুপাশে বদ্ধ হবার বাসনা। স্যামন্তক একটা সিগারেট জ্বালিয়ে একটু দুরে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে জি-টি রোডের দিকে। দুইজনে চুপচাপ, কারুর মুখে কোনও কথা নেই। বাতাসে সিগারেটের ধোঁয়া উড়ে বন্দনার নাকে লাগে। ঘাড় ঘুরিয়ে স্যামন্তকের দিকে তাকিয়ে একটা ম্লান হাসি হাসে ও। কি বলার আছে ওর ভেবে পায়না। স্যামন্তক একটু এগিয়ে যায় ওর দিকে, দুইজনের মধ্যে শীতল নীরবতা বড় কঠিন লাগে দুইজনেরই। নীরবতা কাটানোর জন্য স্যামন্তক প্রশ্ন করে—“কলকাতায় আসা হয়না তোমার?” —“সামনের বছর বাবা রিটায়ার করবেন, তারপরে আমরা শিফট হয়ে আসবো কলকাতায়। সাউথ ক্যালক্যাটায়, বালিগঞ্জ ফাঁড়ির কাছে একটা ফ্লাট দেখছেন বাবা। তোমাদের বাড়ি কোথায়?” —“এয়ারপোর্টের কাছে, লেকটাউন।” —“ফাইনাল ইয়ার তো তোমার, কি করবে এর পরে?” —“আই-টি জয়েন করবো ইচ্ছে আছে। এখানে তো সেই রকম কোনও কম্পানি নেই তাই দেখি দিল্লি বা ব্যাঙ্গালর বা পুনে শিফট করে যাবো।” “কলকাতা ছেড়ে চলে যাবে তাহলে?” উত্তর শুনে বুকটা যেন কেঁপে ওঠে বন্দনার তবুও একটু হাসে “আমি ফিরে আসছি কলকাতায় আর তুমি চলে যাবে?” ম্লান হেসে উত্তর দেয় স্যামন্তক—“নদীর জল কি এক জায়গায় বেঁধে থাকে, ধেয়ে যায় মোহনার পানে সাগরের সাথে মিলতে।” হেসে ওঠে বন্দনা, রাতের আঁধারে ঝিলিক মেরে ওঠে দু পাটি মুক্ত সাজানো দাঁতের সারি—“বাঃ বাঃ কবি লুকিয়ে আছে তোমার মধ্যে দেখছি? জানতাম নাতো এটা।” —“হ্যাঁ আছে অনেক কিছু লুকিয়ে, কেউ বোঝেনা তাই কাউকে আর বলিনা।” বন্দনার ভেতরে অনেকক্ষণ থেকে একটা প্রশ্ন উঁকি মারছিলো, থাকতে না পেরে জিজ্ঞেস করে—“তোমার একটা গার্ল ফ্রেন্ড আছে না?” প্রশ্নটা আশাতীত, নিজেকে সামলে নিয়ে স্যামন্তক উত্তর দেয়—“ছিল, এখন নেই। মাস তিনেক আগে ব্রেক-আপ হয়ে গেছে।” —“কেনও?” “কোনও এক কারনে, নাই বা শুনলে পুরনো কথা।” একটু থেমে ও জিজ্ঞেস করে “তোমার তো একজন বয়ফ্রেন্ড আছে তাইনা?” মাথা নাড়িয়ে জানান দেয় বন্দনা “হ্যাঁ” —“কি নাম?” —“নিরুপম, দিল্লিতে বাড়ি, এখন থাকে শান্তিনিকেতনে। ওখানে মাস্টার্স করছে আঁকা নিয়ে।” —“হুম, তো বিয়ে কবে করবে তোমরা?” “জানিনা। আমার বাবা মার মত নেই।” একটু অন্য মনস্ক হয়ে জবাব দেয়। একটা বড় টান দেয় সিগারেটে স্যামন্তক, ধোঁয়ার কয়েকটা রিং ছেড়ে জিজ্ঞেস করে—“ভালবাসে ও তোমাকে?” হটাৎ এইরকম প্রশ্নের সম্মুখিন হবে, বন্দনা কোনোদিন স্বপ্নেও আশা করেনি। সহস্র রজনী কাটিয়ে এই প্রশ্নটা এই রাতে ওর কাছে বড় কঠিন মনে হয়। সময় যেন থমকে দাঁড়ায়, চোখ দুটি ছলছল করে ওঠে বন্দনার। দিশা হীন ভাবে উত্তর হাতড়াতে থাকে নিজের বুকের মাঝে। আগে কোনোদিন তো ওর এই প্রশ্নের জবাব দিতে বাধেনি তবে আজ কেনও ও দ্বিধা বোধ করছে উত্তর দিতে। শালটাকে আরও জোরে জড়িয়ে ধরে বুকের উপরে, বুকের পাঁজরে হৃদয়টা কিল মারতে থাকে। চোখের পলক পরেনা, নিথর হয়ে তাকিয়ে থাকে স্যামন্তকের মুখের দিকে। বেশ কিছুক্ষণ পরে আস্তে করে মাথা নাড়িয়ে বলে—“হ্যাঁ নিরুপম আমাকে ভালবাসে।” স্যামন্তক ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে বন্দনার দিকে “এতো দেরি এই সামান্য প্রশ্নের?” আলতো করে ছোঁয় বন্দনার কাঁধ, নিচু স্বরে বলে—“শুতে যাও, আমি আমার উত্তর পেয়ে গেছি।” চলবে....
01-03-2020, 03:10 AM
পর্ব-৫
সকাল থেকে সারা বাড়ি মুখরা, শয্যা তুলুনি নিয়ে একচোট হয়ে গেছে সিতাভ্র আর স্যামন্তকের মাঝে। জামাইবাবু একশো এক টাকায় আটকে, স্যামন্তক নাছোড়বান্দা হাজার এক টাকা দিলে বিছানা ছেড়ে উঠতে পারবে না হলে নয়। সিতাভ্র অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টা চালিয়ে যায়, দাঁত ব্রুস করতে দেবার জন্যও উঠতে দেয়না, চা খাওয়া বা বাথরুম যাওয়া দুরের কথা। মা জেঠিমা একবার করে আবেদন করে গেলো “ছেড়ে দে তুই ওকে।” স্যামন্তক খ্যাঁকরে ওঠে “তোমার পকেট থেকে যাচ্ছে নাকি। চুপ করে থাকো।” পুবালির দিকে কাতর চোখে তাকিয়ে থাকে সিতাভ্র “কি করবো বলো, একটু বাঁচাও।” পুবালি হেসে বলে “শালা জামাই বাবুর মধ্যে আমাকে টানো কেন, নিজে কিছু করো।” বন্দনার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা দেখতে থাকে। শেষ মেশ শ্যালিকার দিকে তাকায় সিতাভ্র “হেল্প মি প্লিস।” স্যামন্তক কট মট করে তাকায় বন্দনার দিকে “কিছু বলতে এলে মাথা ভেঙে দেবো।” সিতাভ্র মজা করে বলে “ক্রেডিট চলবে কি? পোস্ট ডেটেড চেক দিচ্ছি পাঁচ হাজার টাকার নিয়ে নাও।” —“ক্যাশ ছাড় নাহলে বাথরুমে যেতে দেবো না।” —“এখানে করে দিলে কি ভাল হবে?” —“নিজেকে ধুতে হবে, বউ এখনো আমার হাতে।” —“রেখে দাও, সাতপাক তো দেওয়া হয়ে গেছে আবার কি চাই।” —“মানালি গিয়ে একা একা আঁঠি বেঁধো তাহলে।” পুবালির মুখ লাল হয়ে যায়—“তুই উলটো পাল্টা বলা ছারবি। এবারে আমি তোকে মারবো কিন্তু।” —“বর কে বোঝা, না হলে এখান থেকে কেটে পড়। বেশি বলতে যাসনা, এক রাত হোল না, পালটি মেরে যাচ্ছিস।” পুবালি কি করে, সিতাভ্র কে বলে—“দিয়ে দাও নাহলে ছারবেনা।” —“নেই তো কি কোরবো, কোথা থেকে এনে দেবো রে বাবা।” শেষ মেশ জেঠিমা ওকে শান্ত করায়। সিতাভ্রর দিকে তাকিয়ে বলে—“শাশুড়ির জন্যে পার পেয়ে গেলে, বম্বে গিয়ে বাকিটা উশুল করবো।” বাকিটা দিন কাজে কর্মে কেটে যেতে থাকে। স্যামন্তক বাড়ির কাজে ব্যাস্ত হয়ে পরে, বর কনে যাবে। ওদিকে প্যান্ড্যাল খোলা, খাওয়ার জায়গা সাফ করার লোকজন যোগাড়। সব হিসাব ঠিক করে রাখতে হবে, রাতে দিদি চলে যাবার পরে বাবা জেঠূর সাথে বসে হিসেব দিতে হবে। বাকি থাকে কনেযাত্রী যাওয়ার গাড়ি ঠিক করা। সিতাভ্রর কাকার বাড়ি বেনাচিতিতে, সেইখান থেকে বিয়ে হয়। রি-কোল পার্ক থেকে বেশি দুরে নয়। বন্দনা সারাক্ষণ পুবালির আসেপাশে থাকে, সুবিমলের কোন কাজ নেই বিশেষ। মাঝে মধ্যে এসে ওদের সাথে গল্প করে চলে যায়। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে ঘনিয়ে আসে। পুবালি আর সিতাভ্র এবারে যাবার পালা। কিছুক্ষণ পরে সারা বাড়িতে কনে বিদায়ের কান্নার রোল শুরু হবে। এমনিতেই সবার চোখে জল ছলছল করতে থাকে। এক এক করে আশীর্বাদ করে নব দম্পতি কে। বন্দনা পুবালির সাথে যাবে বেনাচিতি, রাতে থাকবেনা। সুবিমল বা অন্য কেউ ওকে আনতে যাবে। একটা সাধারন সালওয়ার কামিজ পরে, তার ওপরে একটা গাড় নীল রঙের কার্ডইগান চাপিয়ে নেয়। খুব বেশি সাজার ইচ্ছে করেনা, এমনিতে চারদিকের কান্নার রোল দেখে মনটা খারাপ হয়ে যায়। তারপরে ও ভাবতে থাকে যে পুবালি চলে যাবার পরে ও কার সাথে কথা বোলবে। কাল রাতের ঘটনার পরে স্যামন্তকও সকাল থেকে ঠিক ভাবে কথা বলছেনা। সুবিমল বা অন্য কারুর সাথে কথা বলতে হবে বা কিছু করে সময় কাটাতে হবে আরও দুই দিন। বউভাতের পরের দিন ওর ফিরে যাবার টিকিট। স্যামন্তক এই ফাঁকে চুপিচুপি ছাদে উঠে, জলের ট্যাঙ্কের ওপরে চড়ে বসে। ঐ কান্নার মধ্যে যাবার ওর কোনও ইচ্ছে নেই। অন্তত দিদির চোখের সামনে তো নয়ই। একটা সিগারেট ধরিয়ে, শুয়ে পরে। সন্ধ্যের আকাশে, এক এক করে তারারা ফুটে উঠছে। পাখী গুলো দিনের শেষে নিজের বাসায় ফেরার জন্য উড়ে চলেছে। বাতাসে একটা ঠাণ্ডার আমেজ বয়ে চলে। মাথার ওপরে পাখী গুলোর কিচির মিচির আওয়াজে ওর মনটা কেমন কেঁদে ওঠে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে পুরনো সব কথা। বড়দি ওদের দুজনার চেয়ে প্রায় সাত বছরের বড়। ছোটো বেলায় যখন বড়দি এক থালায় ভাত মেখে খাইয়ে দিত তখন দুই ভাই বোনের মধ্যে ঝগড়া লাগতো কে আগে খাবে সেটা নিয়ে। ছুটিতে এক নয় কলকাতায় যাওয়া হতো পুবালিদের নাহলে বাবা মা স্যামন্তককে নিয়ে চলে আসত দুর্গাপুরে। বাড়ির বাগানে একটা শিউলি ফুলের গাছ আছে, ছোটো বেলায় সেই গাছে ঝাঁকা দিয়ে কত শিউলি ফুল কুড়িয়েছে ওরা। পুবালি ভাইকে ‘কাক’ বলে খেপাত আর স্যামন্তক দিদিকে ‘হারগিলে’ বলে ডাকতো। ছোটো বেলায় দুজনেই অনেক রোগা পটকা ছিল। একবার দিদির পুতুল ঘর ভেঙ্গে দেয় তাই নিয়ে পুবালি মাথা ফাটিয়ে দেয় স্যামন্তকের। তার পরে মাথা থেকে রক্ত দেখে নিজেই কান্না জুরে দেয়। রক্ত থেমে যায় কিন্তু পুবালির কান্না কেউ আর থামাতে পারেনা। শেষ মেশ বড়দি পুবালিকে গল্প শুনিয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে চুপ করায়। স্যামন্তকের রাগ হয়, মার খেলাম আমি আর দিদি খেল আদর, ব্যাস এক দিন পুরো কথা বন্দ। দিদি নাচ শিখতে শান্তিনিকেতনে চলে যায়, অনেক বার গেছে দিদির সাথে শান্তিনিকেতন। কলেজে প্রথম যেদিন পা রাখে স্যামন্তক, সেই দিন পুবালি নিজের জমানো টাকা দিয়ে ভাইকে একটা বাইক কিনে দেয়। স্যামন্তক বলে—“চল ঘুরে আসি।” মাথায় হাথ বুলিয়ে পুবালি বলে—“আমাকে নিয়ে কেন, তোর গার্লফ্রেন্ড কে নিয়ে ঘুরতে যাস।” এক বছর পরে প্রথম শ্যামলীকে বসায় বাইকের পেছনে, রেড রোডের ওপর দিয়ে বাইক ছোটায় সেদিন। খুব খুশিতে ছিল সেদিন, ফোন করে জানায় দিদিকে—“জানিস আজ প্রথম কাউকে নিয়ে বাইক চালালাম।” পুবালি হেসে বলে—“অনেক বড় হয়ে গেছে আমার ভাইটা।” এই সব পুরনো কথা ভাবতে ভাবতে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে স্যামন্তক, চোখের জল বাঁধ মানেনা। এক এক করে সবাই আশীর্বাদ করে পুবালিকে, ঘন ঘন চোখ মুছতে থাকে। সবাই কে দেখতে পায়, বড়দি, জামাইবাবু, দুই বোনঝি, ছোটো বোন, কাকু কাকিমা বাবা, মা, সবাই আছে কিন্তু দিদির চোখ থেকে থেকে খুঁজতে থাকে ভাইকে। সুবিমল কে ডেকে বলে—“স্যামু কোথায় গেলো?” খোঁজ খোঁজ কোথায় স্যামন্তক, কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়না ছেলেটাকে। ওদিকে দেরি হতে থাকে যাবার। সুবিমল ছাদে গিয়েও খুঁজে পায়না। স্যামন্তক তো জলের ট্যাঙ্কের ওপরে শুয়ে। সুবিমল এবং বাড়ির অন্য লোকেরা হাঁক পারে—“স্যামন্তক স্যামন্তক।” সুবিমল নিচে এসে জানায় যে স্যামন্তককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পুবালিকে আর দেখে কে, আর ও নড়বে না। ভাই এলে তবে ও যাবে, ওদিকে স্যামন্তক ওপর থেকে সব শুনেও চুপ করে থাকে, দিদির সামনে যাওয়ার মতন শক্তি নেই। সুবিমল আবার একবার ছাদে এসে খুঁজে যায়, দেখে স্যামন্তক জলের ট্যাঙ্কের উপরে বসে। চেঁচিয়ে বলে—“কি করছিস ওখানে নেমে আয়, পুবালি যাচ্ছে তোকে খুঁজছে ও।” দুঃখ ঢেকে চেঁচিয়ে বলে স্যামন্তক—“বাল ছিঁড়ছি এখানে বসে। ওকে বোলো আমি নিচে যাবনা। বেনাচিতি বেশি তো দুরে নয়, রাতের বেলা দেখা করে আসবো। কিন্তু এখন আমি নিচে যাবনা।” সুবিমল নিচে এসে পুবালিকে জানায় যে স্যামন্তক ছাদে বসে, নিচে আসবেনা। পুবালির মনটা ককিয়ে ওঠে ব্যাথায় ‘ঠিক আছে রাতে ত যাবে, বেচারার কি যে অবস্থা হবে কে জানে।’ নিজেকেই সান্ত্বনা দেয়, বুঝতে পারে যে স্যামন্তক আসবেনা নিচে, অগত্যা কিছু বলার থাকেনা ওর। চোখে জল নিয়ে গাড়িতে চাপে, পাশে বন্দনা। স্যামন্তক চুপি চুপি নিচে নেমে এসে এক কোনে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে। গাড়িটা স্টার্ট নেয়, পুবালি দেখতে পায় ভাইকে। হাথে দিয়ে ইশারা করে ডাকে কাছে, গাড়ির স্টার্ট বন্দ হয়ে যায়। স্যামন্তক কাছে এসে পুবালির দিকে জল ভরা চোখে তাকিয়ে থাকে, কিছু বলেনা, একটু হাসে। পুবালি ওর মাথায় গালে হাত বুলায় হাসি কান্না মিলিয়ে ধরা গলায় বলে “রাতে আসিস কাজ শেষ করে” তারপরে ড্রাইভারকে গাড়ি চালাতে বলে। সিতাভ্রর কাকার বাড়িতে পৌঁছতে বেশি দেরি হয়না। সবাই নতুন বউকে বরন করতে ব্যাস্ত হয়ে পরে। সব কাজ কর্ম শেষ হয়ে যাবার পরে দুই বান্ধবী একটু একা সময় পায়। পুবালি বন্দনাকে জিজ্ঞেস করে—“কিরে তুই আজ এতো চুপচাপ কেনও সকাল থেকে? কেউ কি কিছু বলেছে।” হেসে বলে বন্দনা—“কই নাতো কিছুই তো হয়নি। সব ঠিক আছে। তোর জন্য মনটা খারাপ লাগছিলো তাই।” —“বেশ তো, এবারে তুই বিয়েটা করে ফেল আর দেরি করছিস কেনও?” —“বাবা মা নারাজ সেটাতো জানিসই, এই ভাবে কি করে করি তাই ভাবছি।” —“নিরুপম কি বলছে?” —“ও তো কিছুই বলছেনা। ও বলছে ওয়েট করো। এর বেশি ওয়েট করলে, বাবা আমার বিয়ে অন্য কারুর সাথে দিয়ে দেবে।” —“তুই যদি চাস তো আমি এক বার কথা বলতে পারি মাসিমা মেসোর সাথে।” —“আরে না না, আমি ঠিক করে নেবো।” —“তোকে কে নিতে আসছে? বড়দি কে কিছু বলে এসেছিস বা স্যামুকে গাড়ি পাঠাতে বলেছিস কি?” —“আমি জানিনা, আমি তো ভাবলাম কেউ না কেউ নিতে আসবে।” —“ঠিক আছে আমি ফোন করে জেনে নেবো খানে।” ফোন করে বলে স্যামন্তককে পাঠাতে, যাবার বেলায় ঠিক ভাবে কথাও বলতে পারেনি পুবালি ওর ভাইয়ের সাথে। ও ভাবতে থাকে, যদি চাকরি নিয়ে বম্বে যায় তাহলে বেশ ভাল হবে, বম্বে না হলেও কাছাকাছি যদি পুনেতে ও চাকরি পায় তাহলে ও হবে। তারপরে বন্দনা আর ও গল্প করতে করতে রাত হয়ে যায়। বন্দনা যখন জানতে পারে যে স্যামন্তক আসছে ওকে নিতে ওর কেমন যেন একটু লাগে “কেন ও আসছে, অন্য কাউকে পাঠাতে পারত তো। বড় মুশকিল সময়, মনকে বেঁধে রাখার।” পুবালি চলে যাবার পরে বাড়িটা বড় ফাঁকা ফাঁকা লাগে সবার। স্যামন্তক সব হিসাব নিয়ে বসে পরে ওপরের ঘরে। রাত বাড়তে থাকে, বড়দি স্যামন্তককে বলে—“এই ছেলে, যা এবারে ঐ বাড়ি, একবার দেখে আয় পুবালিকে আর বন্দনাকে নিয়ে আয়।” মাথা চুলকে স্যামন্তক বড়দি কে জিজ্ঞেস করে—“আমাকেই আনতে যেতে হবে?” —“আর কে যাবে?” —“সুবিমলদা কিম্বা অন্য কাউকে গাড়ি দিয়ে পাঠালে তো পারো।” —“গাড়ি আছে কি নেই তুই জানিস, যা করার তুই করবি। পুবালি ফোন করেছিলো তাই আমি তোকে মনে করিয়ে দিলাম যে মেয়েটাকে আনতে কাউকে যেতে হবে।” “আচ্ছা যাচ্ছি” বলে স্যামন্তক বেরিয়ে গেলো। গাড়ি সব চলে গেছে, পাশের বাড়ির কুনালের বাইক নিয়ে আনতে যেতে হবে। বাইরে অনেক ঠাণ্ডা তাই গায়ে একটা জ্যাকেট চাপিয়ে নিলো। হেলমেট পরে বাইকে স্টার্ট দিতে দিতে নিজের মনেই হেসে ফেলে স্যামন্তক। মিনিত কুড়ি লাগে, ফাঁকা রাস্তা দিয়ে বাইক হাঁকাতে। ঢুকেই দেখে সিতাভ্র বসার ঘরে বসে আরও সব লকজনের সাথে গল্প করছে। ওকে দেখে বলে—“কি হল শালা বাবু, দিদি কে ছেড়ে থাকা গেলো না?” হেসে বলে—“কাল রাতের পরে আমি দেখব কত বউ ছেড়ে থাকো।” তারপরে কানের কাছে ফিসফিস করে বলে “মানালিতে অনেক ঠাণ্ডা গুরু, রুম থেকে বাইরে বেশি বেরিওনা। কলকাতায় গিয়ে আমি একটা দারুন সারপ্রাইস প্রেসেন্ট দেবো তোমাকে, সঙ্গে নিয়ে যেও অনেক কাজে দেবে।” ভুরু কুঁচকে তাকায় শালার দিকে, স্যামন্তক হেসে চলে যায়। পুবালি স্যামন্তকের গলা শুনে বাইরে বেরিয়ে আসে, পেছনে বন্দনা। ভাইকে দেখে বলে ওঠে—“কিরে ছাদে গিয়ে বসে ছিলিস কেন তখন?” দিদিকে জড়িয়ে ধরে বলে—“তো কি করতাম, তোর প্যান প্যানানি দেখতাম নাকি দাঁড়িয়ে।” “একটু বসে যা।” পুবালি ওকে নিয়ে ঘরে ঢুকে গেলো। এমন সময় একটা সুন্দরী মেয়ে একটা প্লেটে কিছু মিষ্টি আর এক কাপ কফি নিয়ে ঘরের মধ্যে ঢোকে। পরনে একটা টপ এবং নিচে স্কার্ট। স্যামন্তক একবার আপাদমস্তক মেয়েটিকে নিরীক্ষণ করে। বয়সের অনুযায়ী শরীরের গঠনটা বেশ উন্নত। কাঁচা দেহ এখন পাকার অপেক্ষায়। গায়ের রঙ ফর্সা, নাক টিকালো, চোখ দুটি বেশ বড় বড়, চোখে মিটি মিটি হাসি নিয়ে তাকিয়ে থাকে স্যামন্তক আর পুবালির দিকে। মাথার চুল বেশি লম্বা নয়, ছোটো একটা পনি টেল বাঁধা। পরনের টপ টা, তরুণীর ঊর্ধ্বাঙ্গ এর প্রত্যেকটি আঁকা বাঁকা ঢেউ সুন্দর ভাবে মেলে ধরেছে। পুবালি আলাপ করিয়ে দেয়—“শকুন্তলা, তোর জামাই বাবুর খুড়তুতো বোন। এই বছর উচ্চ মাধ্যমিক দেবে। এই বাড়িটা এদের।” শকুন্তলা প্লেটটা স্যামন্তকের হাথে ধরিয়ে দিয়ে নতুন বউদির পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। দু চোখে লালিমা মাখা যেন ভোরের সূর্যি উঁকি মারছে। স্যামন্তক পুবালির দিকে তাকিয়ে হাসে, কানের কাছে ফিসফিস করে বলে—“সাঙ্ঘাতিক তো রে।” “তোর তো সবাইকে সাংঘাতিক বলে মনে হয়” মাথায় একটা থাপ্পর মেরে হেসে বলে পুবালি, “খেয়ে নিয়ে তারাতারি, বের হ অনেক রাত হয়ে গেছে।” পেছন থেকে বন্দনা মিটি মিটি করে হাসতে থাকে, ওকে হাসতে দেখে স্যামন্তক বলে ওঠে—“দাঁত কেল্লাচ্ছো কেনও? ফিরতে আমার সাথেই হবে, সেটা মনে আছে।” পুবালি বন্দনার দিকে তাকিয়ে বলে—“কি যে করিস না তোরা।” “কেন আমি কি করলাম?” বন্দনা জিজ্ঞেস করে পুবালি কে। “তুই কবে ফিরে যাচ্ছিস?” জিজ্ঞেস করার সময় পুবালির মুখটা একটু ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। “পরশু দিন, হাওড়া থেকে রাতে ট্রেন।” বন্দনা পুবালির হাথের ওপর হাথ রেখে উত্তর দেয়। “ঠিক করে থাকিস” তারপরে স্যামন্তকের দিকে তাকিয়ে বলে “আর দেরি করিস না, যা তোরা। আর হ্যাঁ, পারলে সকাল বেলা বন্দনাকে নিয়ে চলে আসিস।” “আমি আবার?” বন্দনা জিজ্ঞেস করে পুবালিকে। “আবার কবে তোর সাথে দেখা হবে তাতো জানিনা। তুই তো ডিব্রুগরে ফিরে যাবি, আমি চলে যাবো বম্বে।” বলতে বলতে পুবালির গলা একটু ধরে এলো। স্যামন্তক বেগতিক দেখে বলে—“চল আমরা বের হই, কাল সকালে ওকে আমি পৌঁছে দেবো খানে।” চলবে....
02-03-2020, 01:21 PM
পর্ব-৬
স্যামন্তক আর বন্দনা বেরিয়ে এলো বাড়ি থেকে। বাইকে স্টার্ট দিয়ে বন্দনাকে পেছনে বসতে ইশারা করে স্যামন্তক। বন্দনা বাইকের পেছনে চেপে বসলো, আলতো করে ডান হাথটা ওর কাঁধে রেখে নিজেকে ব্যালেন্স করে বসে একটু দুরত্ব রেখে। কারুর মুখে কোনও কথা নেই, দুজনেই চুপ। রাত তখন এগারোটা বাজে। জিটি রোড ধরে বাইক চালায় স্যামন্তক, সামনে থেকে পেছন থেকে শুধু ট্রাক আসা যাওয়া করছে। ভারি ট্রাকের ঘড়ঘড় আওয়াজে রাতের নিস্তব্ধতা খানখান হয়ে যাচ্ছে। চারদিকের হিমেল হাওয়া বন্দনার উষ্ণতা উরিয়ে নিয়ে যায়। ওর পরনের কার্ডিগান টা ডিসেম্বরের ঠাণ্ডা কে রুখে রাখতে পারেনা। পেছনে বসে কাঁপতে থাকে বন্দনা, তাও নিজেকে স্যামন্তকের সাথে জড়িয়ে ধরতে চায়না। দুজনের মাঝের শীতল নীরবতা, বন্দনার হৃদয়ে পেরেকের মতন ফুটতে থাকে। স্যামন্তক ভাবে, “যা হবার হয়ে গেছে একবারের জন্যও মাফ করে দাও।“ ইচ্ছে করেই একটু ব্রেক দেয় স্যামন্তক, আলতো করে স্যামন্তকের ডান কাঁধে চাপ দেয় বন্দনা, সামনের দিকে একটু ঝুঁক পরে কিন্তু নিজেকে বাঁচিয়ে নেয় বন্দনা ওর ওপরে পরে যাবার আগে। স্যামন্তক বেশ ভাল ভাবে বুঝতে পারে বন্দনার মনের আলোড়ন। গান্ধী মোড়ের কাছে এসে বাঁক নেবার আগে, স্যামন্তক বাইকটা আস্তে করে নেয়। বন্দনা তখনও চুপ করে বসে থাকে। একবারের জন্যও মনে হয় জিজ্ঞেস করে “কেনও থামাচ্ছো? সোজা বাড়ি চলো।“ বড় রাস্তা থেকে বাঁ দিকে মুড়ে বাইক থামিয়ে দেয় স্যামন্তক। বন্দনার নিজের চোয়ালটা শক্ত করে ফেলে একটু রাগ হয়। হেলমেটটা খুলে ঘাড় ঘুরিয়ে বন্দনার দিকে তাকায় এক করুন চোখে। বন্দনার চোখ দিয়ে তখন আগুনের ফুল্কি ঝরে পরে ওর চাহনি দেখে, মনে মনে বলে ওঠে “আদিখ্যেতা দেখাচ্ছ না দয়া দেখাচ্ছ তুমি আমার ওপরে? তুমি কি ভাব নিজেকে।” স্যামন্তক নিচু স্বরে বলে ওঠে—“আই এম সরি।” “সরি বললে সব শেষ হয়ে যায়, তাই না।” ঝাঁঝিয়ে ওঠে বন্দনা। “কি করতে হবে আমাকে বলো, আমি সেটা করবো।” কাতর স্বরে বলে স্যামন্তক। “আমার সাথে কি নরমাল ব্যাবহার টুকু করা যায়না? আজ সকাল থেকে তুমি আমার সাথে এমন বিহেভ করছও যেন আমি অচ্ছুত কন্যা” বলতে বলতে গলা ধরে আসে বন্দনার। নিজের অজান্তেই স্যামন্তকের ডান কাঁধটা খামছে ধরে “আমি কি এমন করেছি তোমার সাথে যে তুমি আমার সাথে ঐ রকম বিহেভ করছও?” বন্দনার ধরা গলা শুনে স্যামন্তকের মনটা কেমন গলে যায়। বাঁ হাতটা পেছনে বাড়িয়ে দিয়ে বন্দনার কোমরটা আলতো করে ছোঁয়। কোমরে স্যামন্তকের হাথের পরশ ও নিজের রাগটা ভুলে যায়, বুকের ভেতরটা একটু কেঁপে ওঠে, শিরশিরয়ে ওঠে ওর কোমল শরীর। “আচ্ছা বাবা নরমাল বিহেভ করবো আমি। আজকের ব্যাবহারের জন্যও ক্ষমা করে দাও, প্লিস। ভুলে যাও আমি রাতে যা বলেছি বা জিজ্ঞেস করেছি তোমাকে।” নিচু গলায় কাতর স্বরে বলে স্যামন্তক। “হুম, ঠিক আছে ভুলে যাবো, এক সর্তে, যদি কাল আমার সাথে পুবালির বাড়িতে সারাদিন থাকো” বন্দনা বলে। “কি যে বল না তুমি, সেটা কখন পসিবেল নয়। কাল বাড়িতে আমার অনেক কাজ, তত্ব সাজানো, কনেযাত্রীর গাড়ি, আর তুমি বল যে তোমার সাথে কাল থাকতে? মাথা টাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি তোমার?” গলায় অবিস্বাসের সুর, স্যামন্তকের। “যাও তাহলে আর কথা বলবো না।” অভমানি সুরে বলে বন্দনা, ডান হাত দিয়ে আলতো করে একটা চাঁটি মারে স্যামন্তকের মাথায়। —“আরে বাবা একটু বুঝতে চেষ্টা করো আমার অবস্থা।” —“তাহলে আমিও যাবনা।” —“সেটা তোমার আর দিদির ব্যাপার। তবে এখন যদি আমরা বাড়ির দিকে না যাই তাহলে আমরা ঠাণ্ডায় জমে যাবো।” ডান হাতটা কাঁধ থেকে নামিয়ে স্যামন্তকের কোমর জড়িয়ে ধরে বন্দনা, মনে মনে একটা কিন্তু নিন্তু ভাব থেকে যায়। বাঁ কাঁধের উপরে নিজের থুতনিটা রেখে নিচু গলায় বলে “চলো ঠাণ্ডা লাগছে।” হেসে ওঠে স্যামন্তক, পিঠের ওপরে বন্দনার শরীরের হাল্কা উষ্ণতা ওর শরীরের মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে দেয় “একদম পাগলী মেয়ে একটা তুমি।” বাড়ি পৌঁছেই দেখে বড়দি দাঁড়িয়ে ওদের জন্য। বড় বড় চোখ করে জিজ্ঞেস করে—“কিরে এতো দেরি হল কেনও তোদের, পুবালি ফোন করে জানাল যে তোরা নাকি অনেকক্ষণ হল বেড়িয়েছিস?” বন্দনা একবার স্যামন্তকের মুখের দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচিয়ে বড়দির পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে চোখ টিপে হাসতে থাকে। স্যামন্তক কি উত্তর দেবে ভেবে পায়না—“বাইক পানচার হয়ে গেছিলো তাই দেরি হোল।” অগত্যা একটা অজুহাত দেখাতে হোল। “তোরা কি খেয়ে এসেছিস ওদের বাড়ি থেকে?” বড়দি জিজ্ঞেস করে বন্দনাকে। “না খাইনি এখনো।” বন্দনা উত্তর দেয়। “তারাতারি খেয়েনে তোরা, সবার খাওয়া হয়ে গেছে” তারপরে বড়দি স্যামন্তকের দিকে তাকিয়ে বলল “পুবালিকে একটা ফোন করে দিস যে তোরা পৌঁছে গেছিস। কি যে করিস না তোরা।” বলে ভেতরে চলে গেলো বড়দি। দিদিকে ফোন করতেই, পুবালি ঝাঁজিয়ে ওঠে—“দেরি কেন রে তোর।” “টায়ার পানচার হয়ে গেছিলো তাই” একই অজুহাত দেখাতে হয় ওকে। “টায়ার পানচার না তুই পানচার। বাড়ির এক মাত্র ছেলে, আমার একটি মাত্র ভাই সেটা একটু মনে রাখিস। ধুর তোর সাথে আমার এখন কথা বলতেও ইচ্ছে করছেনা।” দিদির বকা শুনে স্যামন্তক কি বোলবে কিছু ভেবে পেল না। “আরে বাবা শোন তো আমার কথা, আমি কিছু করছি না বা কিছু ধরে বসিনি। আমি সব ঠিক করে নেবো, প্লিস তুই রাগ করিসনা সোনা মনা দিদি আমার।” একটু আব্দারের সুরে দিদি কে ঠাণ্ডা করার জন্য বলে স্যামন্তক। “ঠিক আছে ঠিক আছে, বিশ্বাস করলাম। যা করবি কর তবে যেন একটা দুরত্ব বজায় থাকে সেটা মাথায় রাখিস।” সাবধান বানী শুনিয়ে পুবালি ফোন রেখে দেয়। বন্দনা ড্রেস চেঞ্জ করে নেয়, একটা ঢোলা টি-শার্ট তার নিচে একটা লম্বা স্কার্ট। গায়ে একটা কালো রঙের শাল চাপিয়ে খাবার টেবিলে বসে পরে। স্যামন্তক হাত ধুয়ে খেতে বসে পরে। সবার খাওয়া দাওয়া আগেই শেষ, তাই ওরা দুজনে একা একা খেতে বসে টেবিলএ। চাকরটা খাবার রেখে যাবার পরে, বন্দনা থালাতে ভাত বেড়ে দেয়, তার সাথে ডাল তরকারি। স্যামন্তক চুপচাপ দেখতে থাকে বন্দনাকে, ঝুঁকে পরিবেশন করার সময় স্যামন্তকের নজর বন্দনার সুডৌল বুকের ওপরে পরে, নরম ময়দার তালের মতন বলদ্বয় দেখে ওর বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যায় এক মুহূর্তে “মেয়েটা নিশ্চয় নিচে কিছু পরেনি তাই এতো নরম বুক দুটি ফেটে বের হচ্ছে।“ বন্দনার চোখ হটাৎ করে স্যামন্তকের দিকে পরে, ওর নজরটা দেখে কান, গাল গরম হয়ে ওঠে বন্দনার “আমাকে পুড়িয়ে দেবে নাকি ঐ দৃষ্টি দিয়ে?” বন্দনার বুকের ওপরে এক আলোড়ন শুরু হয়ে যায়। চাদরটা একটু ভাল ভাবে জড়িয়ে নেয় বুকের ওপরে। স্যামন্তক চোখ নিচু করে ফেলে, ধরা পরে গেছে ও। মা একবার উঠে দেখে যায়, জিজ্ঞেস করে—“তোর তো এই ক দিন দেখা নেই।“ “হ্যাঁ, তোমার মেয়ের বিয়েটা তো গাছ থেকে আম পারার মতন করে হয়ে গেলো তাই তো।” মায়ের দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয় স্যামন্তক। “আমার পান শেষ। তোকে বলতে ভুলে গেছিলাম।” স্যামন্তকের মা স্যামন্তককে বলে। “রাত বারোটায় মাথা খারাপ কোরোনা তো, পান না খেয়ে আজ শুয়ে পরো কাল এনে দেবো।” রেগে গিয়ে স্যামন্তক মা কে উত্তর দেয়। খাওয়ার পালা শেষ হয়ে যাওয়ার পরে স্যামন্তক টিভি চালিয়ে দেখতে থাকে। সবাই যে যার ঘরে শুয়ে পরেছে, ওর ঘরটা খালি। বন্দনা কিছুক্ষণ রান্না ঘরে বাসন পত্র সিঙ্কে রেখে ওর ডান পাশে একটু দুরত্ব রেখে বসে পরে। কিছুক্ষণ পরে বন্দনা জিজ্ঞেস করে—“আমি শোবো কোথায়? কাল তো বড়দির ঘরে শুয়েছিলাম। তোমার যা দুটো দুষ্টু ভাগ্নি, বাবা রে বাবা। আজ আমি আর যাচ্ছি না ওখানে, আমার অন্য জায়গায় ব্যাবস্থা করো।” “আমার ভাগ্নি দুটি মিষ্টি, দুষ্টু তো অন্য কেউ।” চোখ টিপে বন্দনাকে খ্যাপানোর জন্য বলে। —“ও কে বাবা, ঠিক আছে আমি না হয় দুষ্টু। কাল তুমি কোথায় শুয়েছিলে?” —“সোফায়, আবার কোথায় শোবো, সুবিমলদা আর সিতাভ্রদার বন্ধুরা মিলে তো আমার রুম তা কব্জা করে নিয়েছিলো কাল রাতে।” “তাহলে আজ আমি তোমার রুমে শুয়ে পড়ি, প্লিস।” নাক মুখ কুঁচকে বন্দনা আবদার করে স্যামন্তকের কাছে। মাথায় যেন বাজ পড়ল স্যামন্তকের, “মেয়েটা বলে কি, আমার রুমে শোবে মানে?” ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে মিটি মিটি করে হাসে বন্দনার দিকে। চোখ নাচিয়ে বলে—“আর রাতে যদি ভুতে ধরে তখন টের পাবে।” পা দুটি গুটিয়ে সোফার উপরে গুটিসুটি মেরে বসে, হাত দুটি দিয়ে নিজের হাঁটু জড়িয়ে ধরে বন্দনা। হাঁটুর ওপরে থুতনি রেখে স্যামন্তককে বলে “ঠাণ্ডা টা বেশ জম্পেশ পরেছে কি বলো?” স্যামন্তক হাত দুটি কে ছড়িয়ে দেয় সোফার মাথার ওপরে, ডান বাজু বন্দনার পিঠের পেছনে আলতো করে ছুঁইয়ে দেয়। ছোঁয়া পেয়ে ভুরু কুঁচকে তাকায় ওর দিকে বন্দনা। স্যামন্তক ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে “কি হোলও?” স্যামন্তকের খুব সিগারেট খাবার ইচ্ছে করে, ও বন্দনার দিকে তাকিয়ে বলে “আমি সিগারেট খেতে ওপরে যাচ্ছি তুমি কি যাবে আমার সাথে?” বন্দনা মাথা নাড়িয়ে বলে—“চলো যাই এতো রাতে টিভি দেখে কি করবো। তুমি বললে নাতো আমি কোথায় শোবো।” চলবে....
03-03-2020, 01:48 PM
পর্ব-৭
সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে উঠতে স্যামন্তক বন্দনার সর্পের ন্যায় চলন দেখে একটা বড় নিঃশ্বাস নেয়, নিজের মনে মনে হাসে, কি যে করতে যাচ্ছিল। বন্দনা ওর দীর্ঘশ্বাস শুনে বুঝতে পারে ও কি ভাবছে, ও পেছন ফিরে হেসে বলে “এখন আর নিশ্চয়ই তুমি ঐ সব ভাবছনা।” দুই জনেই হেসে ফেলে, দু জনের মধ্যে যে শীতল টানাপোরেন চলছিলো সেটা আর নেই, দুই জনে বেশ বুঝে গেছে যে দুরত্বটা থাকা ভাল। ছাদের এক কোনায় দাঁড়িয়ে স্যামন্তক সিগারেট জ্বালায়, কয়েকটা ধোঁয়ার রিং ছেড়ে বন্দনার দিকে তাকায়। বন্দনা গায়ের চাদরটা আরও ভাল ভাবে জড়িয়ে ওর দিকে একটু সরে এসে গা ঘেঁসে দাঁড়ায়। “তুমি পুবালি কে খুব ভালোবাসো তাই না” জিজ্ঞেস করে বন্দনা। “হুম” মাথা নাড়ায় স্যামন্তক “বড়দি আমার চেয়ে ন বছরের বড় আর আমার বোন আমার চেয়ে দশ বছরের ছোটো, আমরা পিঠো পিঠি তাই।” —“তো সন্ধ্যে বেলা কোথায় উঠেছিলে?” “ওখানে আবার কোথায়।“ স্যামন্তক হেসে ফেলে, ট্যাঙ্কের ওপরে দিকে দেখায় “ছোটো বেলা থেকে ওখানে আমার লুকোবার জায়গা। কেউ খুঁজে পেতনা কেউ জানে না ওটা আমার লুকানর জায়গা। এই তোমাকে বললাম।” “বাপ রে আমি যে তোমার লুকোনোর জায়গা জেনে ফেললাম এবারে কি হবে।” খিল খিল করে হেসে বন্দনা জবাব দেয়। হাসি টা বড় মিষ্টি লাগে স্যামন্তকের “আর দরকার নেই আমার ওই খানে লুকানোর।” —“তুমি নিশ্চয়ই পুবালির সাথে অনেক বার শানিতিকেতন গেছো?” —“হ্যাঁ গেছি ওনেক বার, তবে তোমাকে তো দেখিনি দিদির সাথে কোনোদিন?” একটু আনমনা হয়ে যায় বন্দনা, আকাশের দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে বলে “নিরুপম কে ওর ভাল লাগে না, তাই অনেকদিন ধরে আমাদের মধ্যে কথা বন্দ ছিল। হয়তো তোমাকে একটা খারাপ মেয়ের সাথে আলাপ করিয়ে দিতে ইচ্ছে হয়নি তোমার দিদির, তাই আলাপ হয়নি।” স্যামন্তক একটু ঝুঁকে বন্দনার মুখ দেখতে চেষ্টা করে, মেয়েটা দেখছি বড় ভাবপ্রবন হয়ে পড়লো—“কি গো ইমোশানাল হয়ে পরলে নাকি, ধুর ছাড়ো ওসব কথা।” একটু তো চোখের পাতা ভিজে এসেছিলো বন্দনার, কিন্তু রাতের অন্ধকারে স্যামন্তক সেটা লক্ষ্য করেত পারে না। হাসি হাসি মুখ নিয়ে বলে—“না না আমি ইমোশানাল হয়ে পরিনি। কি কথা বলতে চাও বলও?” “আমি কি আর বলবো।” সিগারেটটা ফেলে দিয়ে, হাত দুটি মাথার ওপরে করে আড়ামোড়া নেয়। ঠাণ্ডা হাওয়াটা মুখে লাগতেই হটাৎ করে নিরুপমের মুখটা সামনে ভেসে ওঠে বন্দনার, একটু উষ্ণতা খোঁজে বকের মাঝে। ছোটো দুটি চোখে এক ঝলকানি দেখা দেয়। মনে পরে যায় ওর ঘণ্টার পর ঘণ্টা উন্মত্ত খেলায় নিজেদের হারিয়ে যাওয়া। মনটা কেমন ছটফট করে ওঠে, গাল দুটি গরম হয়ে যায়, নিচের ঠোঁটটি কামড়ে ধরে দাঁত দিয়ে। চাহনিটা কেমন ভাসা ভাসা লাজুক লাজুক হয়ে পড়ে। স্যামন্তক মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে বন্দনার মুখভাব বদলে গেছে, কেমন যেন ভাসা ভাসা স্বপ্নময়। একটু খোঁচানোর সুরে জিজ্ঞেস করে “কি মনে পরেছে এই ঠাণ্ডা রাতে, উম… দুষ্টুমি গুলোর কথা” মাথা না উঠিয়েই মাথা নাড়ল “তুমি না একটা…” স্যামন্তক ওর সুর শুনে বুঝতে পারে যে বন্দনা নিজেদের কেলির কথা ভাবছে। কেমন যেন ফাঁকা হয়ে ওঠে ওর বুকের মাঝে। চুপ করে যায়, আর কিছু জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করেনা। বন্দনা খানিকক্ষণ চুপ করে থাকে, কিছুই যেন বলার নেই আর। আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে একবার নিরুপম কে ফোন করলে হতো, হয়তো ওর মনের ভেতরে যে আলোড়ন চলছে সেটা কিছুটা থামত। বুক ভরে একটা নিঃশ্বাস নেই বন্দনা, নিঃশ্বাস নেবার ফলে ভরাট বুক দুটো যেন আরও ফুলে ওঠে। শিরশির করে ওঠে বুকের শিরা গুলো, নিচে কোনও অন্তর্বাস নেই, ঠাণ্ডায় কঠিন হয়ে ওঠে ওর দুটি বৃন্ত। অনেক ক্ষণ কারুর মুখে কোনও কথা নেই দেখে স্যামন্তক বন্দনা কে জিজ্ঞেস করে “শুতে যাবে কি?” স্যামন্তকের মুখের দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়—“হ্যাঁ চলো, কিন্তু আমি কোথায় শোবো?” —“আমার রুমে শুয়ে পরো, আমি কালকের মতন সোফায় শুয়ে যাবো।” বন্দনাকে মেজনাইনের রুমে ঢুকিয়ে দিয়ে স্যামন্তক সোফায় এলিয়ে দেয় গা। ঘুমে চোখের পাতা ভারি হয়ে আসে, মাথা ঝিম ঝিম করতে থাকে। বন্দনা ঘরে ঢুকে দেয়াল গুলো দেখতে থাকে, ও অনেক বার পুবালির বাড়িতে এসেছে কিন্তু এই ঘরটায় কোনও দিন আসেনি। এই ঘরটা বেশির ভাগ সময় বন্দ থাকতো, আজ ও বুঝতে পারল যে এটা স্যামন্তকের ঘর। দেয়ালের এক কোনে একটা কাঠের আলমারিতে গল্পের বইয়ে ঠাঁসা, শরত, রবিন্দ্রনাথ, সত্যজিৎ, সরবিন্দু, সমরেশ, সঞ্জিব আরও কত। আলমারিটা খুলে একটা খাতা পেল বন্দনা, খাতাটার পাতা ওলটাতে লাগলো, স্যামন্তকের লেখা। বাঙলায় লেখা কিছু কবিতা আর গল্প। কোনও কোনও জায়গায় লিখতে লিখতে কাটা কুটি করা তার সাথে ছোটো ছোটো স্কেচ করা। পাতা ওলটাতে ওলটাতে বিভোর হয়ে যায় বন্দনা, “কতো কি লুকিয়ে আছে এই ছেলেটার মধ্যে।” যত্ন করে আবার আলমারিতে রেখে দিয়ে শুয়ে পরে। সকাল থেকে আবার নিত্য কর্ম শুরু। আজ বউভাত, সুতরাং তত্ত্ব সাজানোর ব্যাপার আছে। সকাল বেলায় পুবালি একবার ফোন করে বাড়ির সবার সাথে কথা বলা হয়ে গেছে। স্যামন্তক সোফায় ঠিক করে ঘুমোতে পারেনি তাই সবাই জেগে যাবার পরে ও আবার দিদির ঘরে গিয়ে শুয়ে পরে। পুবালি বন্দনাকে বলে চলে আসতে, কিন্তু কে নিয়ে যাবে সেটা প্রশ্ন। বন্দনা দেখে যে স্যামন্তকের ওঠার কোন নাম নেই তাই অগত্যা সুবিমলকে বলে যে ওকে বেনাচিতি ছেড়ে আসতে। সুবিমল যেন চাঁদ হাথে পায়, এই রকম একটা হাসি হেসে বলে—“হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয়ই নিয়ে যাবো।” বেরনোর আগেও একবার পুবালির ঘরে ঢুকে দেখে যদি স্যামন্তক উঠে থাকে, না ছেলেটা বেহুঁশ হয়ে ঘুমচ্ছে। একটু মন খারাপ লাগে বন্দনার তাও সেটা কে নিজের চেহারায় না এনে সুবিমলের সাথে পুবালির বাড়ি চলে যায়। সুবিমলের একটু গায়ে পরে কথা বলার স্বভাব, সেটা নিয়ে বন্দনা আর কি করে। মাঝে মাঝে হ্যাঁ বা মাথা নাড়িয়ে বা একটু হেসে উত্তর গুলো দিতে হয়। পুবালি সুবিমলের সাথে বন্দনা কে দেখে একটু অবাক হয়, বন্দনার দিকে চোখ নাচিয়ে মিটি মিটি হেসে প্রশ্ন করে “কি রে কিছু হোলও নাকি।” ঠোঁট উল্টে বলে বন্দনা “ধুর ব্যাঙ, যার আসার ছিল সে তো নাক ডেকে ঘুমচ্ছে।” “তুই আর আমার ভাই।“ হেসে ওঠে পুবালি ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে “বড়দি আমাকে বলল তুই নাকি রাতে ওর ঘরে শুয়েছিলিস? কি ব্যাপার?” “আরে না না কিছু না।” কোনো রকমে নিজের লজ্জা টাকে লুকিয়ে নিয়ে উত্তর দেয়। তারপরে বলে “তোর ভাই তো কবি রে, কাল রাতে আলমারি তে একটা খাতা ছিল পড়লাম।” “কি!!! তুই ওর খাতা পড়ে ছিলিস?” বড় বড় চোখ করে তাকায় বন্দনার দিকে, কপালে চাপর মেরে বলে “কাউকে ও ওর খাতা ছুঁতে দেয় না এমনকি আমাকেও নয়। ও যদি ধরতে পারে তাহলে হয়েছে তোর আজ।” “কি করবে ও আমার” এমন একটা ভাব দেখায় বন্দনা যেন ও বীর মহিলা যুদ্ধ করতে প্রস্তুত। “খেয়ে ফেলবে তোকে।” হেসে বলে পুবালি। “তোরা মানালি কবে যাচ্ছিস?” জিজ্ঞেস করে বন্দনা। —“অষ্টমঙ্গলার এক দিন পরে কলকাতায় কাকুর বাড়িতে যাবো, ওখানে দু দিন থেকে ফ্লাইটে করে দিল্লি। কাকু ফ্লাইটের যাতায়াতের দুটো রিটার্ন টিকিট দিয়েছেন।” —“কাকু মানে, স্যামন্তকের বাবা?” “হ্যা বাবা, আমার একটাই কাকু। চল বাড়ির সবার সাথে আলাপ করিয়ে দেই। একটু পরে তো আবার উনুন ধরাতে যেতে হবে, বাপরে বাপ কে যে এতো সব নিয়ম কানুন বার করেছিলো” দুই বান্ধবী গল্পতে মজে যায়। স্যামন্তক ঘুমবে কি, বাড়ির লোকেরা তাকে ঠিক করে ঘুমোতে দিলে তো। একবার ভাগ্নি গুলো এসে মাথার ওপরে তাণ্ডব করে চলে যায় “মামা মামা, আজ মাসির মতন ফুলে সাজবো।”, একবার বড়দি এসে নাড়িয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করে “তত্ত্ব সাজানোর লোক তো এখনো এলো না রে।” ঘুম চোখে বলে “ফোন করে নাও নিজে”। জেঠিমা এসে বলে “বিকেলে যারা আসবে তাদের তো কিছু খেতে দিতে হবে রে, কিছু ব্যাবস্থা করেছিস কি?” চুল ছেঁড়ার পালা স্যামন্তকের, চেঁচিয়ে ওঠে “আমি কি একটু শান্তিতে শুতে পারবোনা।” তারপরে জেঠিমার দিকে তাকিয়ে বলে “সুবিমলদা এলে ওকে বাজারে পাঠিয়ো, লিস্টটা আমার জামার পকেটে আছে।” তারপরে বাবা এসে জিজ্ঞেস করেন “এই ছেলে বাস কটায় আসবে?” দাঁত কিড়মিড় করে বালিশের উপরে মুখ চেপে ধরে “ঘুমের হল চোদ্দ গুষ্টির তুষ্টি।“ তারপরে বাবার দিকে তাকিয়ে বলে “সন্ধ্যে সাতটায় আসবে, সাড়ে সাতটার মধ্যে বের হতে হবে।” ঘুম তো হলনা, কোনও রকমে মুখ চোখ ধুয়ে কাজে লেগে পরে। সারাটা দিন কাজে কর্মে কেটে যায়। দুপুরের পরেই ফোন আসে বন্দনার ওকে নিয়ে আসার জন্যে। যথারীতি সুবিমলদাকে একটা গাড়ি দিয়ে পাঠিয়ে দেয় স্যামন্তক বন্দনাকে নিয়ে আসার জন্য। বন্দনা স্যামন্তককে না পেয়ে একটু হতাশ হয় এক বার ভাবে “না কিছু নয় সব মনের ভ্রম।” বউভাতের রাতে পরার জন্য বন্দনা দুটো শাড়ী এনেছিল কিন্তু ঠিক করতে পারছেনা কোনটা পরেবে। মেয়েদের মহলে তো আর স্যাম্নতকে ঢুকতে পারবেনা, আজ তো আর পুবালি কে সাজানোর নেই যে স্যামন্তক আসবে। পুবালির ঘরে সব মেয়েদের ভিড়, সাজগোজের পালা। একবার স্যামন্তক কে জিজ্ঞেস করলে ভাল হতো কোনটা পরলে ভাল দেখাবে। ও ভাবতে থাকে ও কি ওর রুমে থাকবে, যা ব্যাস্ত ছেলে কোথায় যে থাকবে আর কোথায় নয় সেটা তো ও নিজেই জানেনা। তাও একবার দেখে আসতে দোষ কি যদি পেয়ে যায়, এই ভেবে শাড়ী দুটি হাতে করে নিয়ে স্যামন্তকের রুমে গিয়ে টোকা মারে দরজায়। “কে? আমি কাপড় পড়ছি।” স্যামন্তকের গুরু গম্ভির গলার আওয়াজ। যাক বাবা বাঁচা গেলো আছে তাহলে ভেতরে এই ভেবে কিছু না বলেই দরজা খুলে ঢুকে পড়লো। ঢুকেই দেখে হাঁ হয়ে যায় মুখ, চোখ দুটি বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে স্যামন্তকের দিকে। এই সদ্য মনে হয় গা হাত পা ধুয়ে কোমরে একটা তয়ালে জড়িয়ে ড্রেস করতে যাবে। খালি গা, বুকের মাংস পেশি গুলো যেন মাইকেলএঞ্জেলর খুদা পাথরের মূর্তি, বাইসেপ গুলো কঠিন, গায়ের রঙ তামাটে, বুকের মাঝে একটু লোম। দেখেই কেমন যেন ঝটকা খেল বন্দনা। স্যামন্তক ওর মুখের দিকে তাকিয়ে হতভম্ব, মেয়েটা কি করছে ওর রুমে। বন্দনার গালে লালিমার ছটা দেখে স্যামন্তক বুঝতে পারে তন্বী তরুণীর হৃদয়ের আলোড়ন। ও ভাবলও একটু মজা করা যাক বন্দনার সাথে, ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে “কি দেখছ ঐ রুকম ভাবে, দেখনি নাকি আগে।” স্যামন্তকের আওয়াজ শুনে খুব লজ্জায় পড়ে গেলো বন্দনা, তোতলাতে তোতলাতে দুটি শাড়ী দেখিয়ে জিজ্ঞেস করে “কোন শাড়ীটা পড়বো ঠিক করতে পারছিলাম না তাই জিজ্ঞেস করতে আসলাম।” কাছে আসে স্যাম্নতক, বন্দনার বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যায় কয়েক গুন। ওর হৃদয়টা যেন ফেটে বেরিয়ে আসবে বলে মনে হয়। স্যামন্তকের মুখের দিকে না তাকিয়ে নিজের হাতে রাখা শারীর দিকে তাকিয়ে থাকে “না মানে আমি জিজ্ঞেস করতে এসেছিলাম কোনটা পড়বো, এই ব্যাস।” স্যামন্তক দেখল ওর হাতের দিকে, হাত দুটি মৃদু কাঁপছে। একটা হাল্কা নীল সিফন শারী তাতে সাদা আর রূপোর জরির কাজ, আর একটা জলপাই রঙের শাড়ী। স্যামন্তকের নীল শাড়ীটা ভাল লাগলো, গায়ের রঙের সাথে বেশ মানাবে। একবার নিজের মাথার মধ্যে এঁকে নিতে চেষ্টা করে বন্দনাকে ঐ শারীর পরতে পরতে। এই রকম ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে ওর বেশ মজা লাগছিলো আর বন্দনার মুখের লাজুক উষ্ণতাটা কে বেশ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছিলো। নিচু স্বরে বন্দনার কাছে গিলে বলল “নীলটা পরো খুব সুন্দর দেখাবে।” স্যামন্তকের মনটা যেন আর ওর আয়ত্তে থাকতে পারছেনা, হাত দুটি নিশপিশ করছে যেন বন্দনাকে এখুনি জড়িয়ে ধরে হোক না ও কারুর কিন্তু এই একলা ঘরের মধ্যে ও তো আমার কাছেই এসেছে। ধিরে ধিরে ও বুঝতে পারে যে ওর নিঃশ্বাসে আগুন ধরেছে। মাথার সবকটা ধমনীতে ফুটন্ত রক্ত বইছে। সামনে দাঁড়িয়ে বন্দনা ভেজা পায়রার মতন কাঁপছে। বন্দনা নিজেকে লুকিয়ে ফেলার প্রানপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু স্যামন্তকের শরীর থেকে যেন এক অদৃশ্য চুম্বকীয় আকর্ষণে ও নোড়তে পারছেনা। ও নিচের দিকে তাকিয়েও বুঝতে পারে যে স্যামন্তক ওর মুখপানে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, ওর পেলব দেহ আর সৌন্দর্য সুধা দু চোখ ভরে পান করছে। ভরাট বুকে তুফান উঠে কাঁপতে শুরু করেছে। বন্দনা টের পায় যে স্যামন্তক হাত বাড়াচ্ছে ওর দিকে, আর থাকতে না পেরে বলে ওঠে “আমি যাচ্ছি কেউ এসে পরবে।“ সারা অঙ্গে এক অদ্ভুত শিহরন মাখিয়ে নিয়ে দৌড়ে নিচে নেমে যায় বন্দনা। হাঁপাতে হাঁপাতে নিচে নেমে বাথরুমে ঢুকে পড়ে। আয়ানায় নিজের মুখটা দেখতেও ওর লজ্জা করে। “না আমি মারা পড়বো, আর নয় ওর সামনে।” হতবাক স্যামন্তক ধুপ করে বসে পড়ে খাটে, কি হল কি করলো আবার ও না মাথা আর ঠিক থাকছে না মেয়েটা ওকে পাগল করে ছেড়ে দেবে। কিছুক্ষণ বসে থাকার পরে, গাড় বাদামি রঙের একটা সুট পরে বেরিয়ে গেলো, ঘরের মধ্যে আর ওর মনটা টিকছে না। বন্দনা হাল্কা নীল রঙের শাড়িটাই পড়লো, সিফনের শাড়ী তাই তার পেলব দেহটার ভাঁজে ভাঁজে জড়িয়ে গেলো শাড়িটা। সবকিছুই ঢাকা কিন্তু উজাগর করেছে এক নতুন বন্দনাকে, সুন্দরী তন্বী তরুণী, চোখের কোলে কাজল, আঁকা ভুরু যেন চাবুক। বুকের ওপরে আঁচল, পিনআপ করে নিলো যাতে খসে না পরে যায়। একটা ব্রোচ দিয়ে আঁচল টাকে ব্লাউসের সাথে আটকে দিল। ডান কাঁধে একটা শাল। ঘন লম্বা চুল আজ আর খোঁপা নয়, একটা বেনুনি করে সাপের মতন ঝুলিয়ে দিল ওর চওড়া পিঠের ওপরে। আজ শুধু ওর মুখটুকু ছাড়া বাকি সব ঢেকে রেখেছে শারীর ভাঁজে ভাঁজে। চলবে....
03-03-2020, 02:29 PM
এ তো পিনুরামের "ভালোবাসার রাজপ্রাসাদ" উপন্যাস থেকে অনুপ্রাণিত লেখা মনে হচ্ছে
03-03-2020, 03:47 PM
Oh!!!! Darun.... but abar choto update.....aktu baro update ki dawa jai na.....plssssss
04-03-2020, 08:06 AM
পর্ব-৮
বাস এসে গেছে, ওপরে উঠে একবার সবাইকে জানিয়ে দিয়ে চলে যায় যে বাস এসে গেছে। ছেলেরা তৈরি, মেয়েদের সাজার এখনো বাকি। বাসে এক এক করে সবাই বসার পরে ও স্যামন্তক বাসে চাপেনা। জেঠু জিজ্ঞেস করলেন “কিরে তুই কিসে যাবি” ও উত্তর দিল “আমি আসছি, বাইকে করে তোমরা যাও, তোমাদের আগেই পৌঁছে যাবো আমি।” স্যামন্তক আড় চোখে একবার বন্দনার দিকে তাকায়, তাহলে ওযে শারীটা পরতে বলেছিল সেটাই পরেছে। বড় বেশি পেঁচিয়ে যাচ্ছে ওর সম্পর্কটা, ওকে যেচে হাল্কা করতে হবে না হলে সবার চোখে পরে যাবে। বন্দনা বেশ ভাল ভাবে বুঝতে পারে যে ওর ঘরে ঢোকার আগে একবার জানানো উচিৎ ছিল যে ও ঢুকছে। সেটা না করে ও নিজেকে এবং স্যামন্তককে বেশ অসুবিধায় ফেলে দিয়েছে। এবারে নিজেকে ওর থেকে একটু দুরে রাখাই ভাল, একদিক থেকে ভালই হল যে ও বাসে যাচ্ছে না। বন্দনা নিজের মনকে শান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যায়। বাস ছেড়ে দেবার পরে ও অনেকক্ষণ চোখ বন্দ করে চুপচাপ বসে থাকে। স্যামন্তক আগেই বেনাচিতি পৌঁছে যায়। দিদি বেশ সুন্দর সেজেছে, একটা নীল রঙের বেনারসি শাড়ীতে ঢেকে বেশ টাবুর টুবুর হয়ে রাজরানির মতন একটা চেয়ারে বসে আছে। একা ভাই কে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে “কিরে তুই একা বাকিরা কোথায়?” —“আসছে পেছনে, আমি বাইকে এসেছি।” —“বাইকে কেনও?” আব্দারের সুরে বলে দিদিকে “তোকে একটু বেশি করে দেখব বলে” সিতাভ্র ওকে দেখে জিজ্ঞেস করে “কি রে শালা, বাকি রা কোথায়?” সিতাভ্র কে মজা করে বলে “বাকিদের দিয়ে কি হবে আজ, রাতটা তো তোমার গুরু।” তারপরে দিদির দিকে চোখ টিপে বলে “তোর খবর তো কাল সকালে নেবো রে। তুই যেমন আমারটা নিয়েছিলি।” পুবালির মুখটা এমনিতেই সাজানোর ফলে লাল ছিল, টার ওপরে আবার ভাইয়ের মুখে ঐ রকম কথা শুনে একদম রক্ত জবার মতন লাল হয়ে গেলো। একটু বকুনির শুরে বলে “তুই এখান থেকে যা নাহলে মারবো এবারে।” বাস পৌঁছে যায় কিছুখন পরে। বন্দনাকে নামতে দেখেই মজা করে বলে ওঠে “আজ প্রথম থেকেই বলছি যে দারুন লাগছে।” নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারেনা বন্দনা, ওতো ভেবেছিলো যে … স্যামন্তক বলে ওঠে “কি ভেবেছিলে আমি আর কথাই বলবনা তোমার সাথে, তাই তো।” বন্দনার ছোটো ছোটো চোখ দুটি বিস্ময়ে মাখা, কি বোলবে ভেবে পায়না হাঁ করে চেয়ে থাকে ছেলেটার দিকে, কি অধভুত ছেলে। ঠোঁট দুটি ফাঁকা দেখে নিচু স্বরে বলে স্যামন্তক “হাঁ বন্দ করো নাহলে মাছি ঢুকে যাবে, কিছু ভেবনা, আমি ঠিক আছি, পরে কথা বলবো।” লজ্জা পেয়ে যায় বন্দনা, লাজুক হেসে নিজের মনের আলোড়নটা মুছে ফেলে বলে “তোমাকে বোঝা বড় শক্ত।” নাকের ওপরে আলতো করে ডান হাতের তর্জনী ছুঁইয়ে স্যামন্তক বলে “দিদির কাছে যাও, সব ঠিক আছে।” মাথা নিচু করে হরিণীর মতন পালিয়ে যায় বন্দনা, যেতে যেতে একবার ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে স্যামন্তকের দিকে, এই ছেলেটা পাগল করে ছাড়বে সত্যি। চেহারাটাই পাল্টে যায় বন্দনার, সারা মুখে এক অদ্ভুত আলোর ছটা লাগে। গালের লালিমা যেন শত গুন বেড়ে যায়, ও যে নাক টা ছুঁয়েছে পরশটা যেন খুব মধুর লাগে। পুবালিকে দেখেই বলে ওঠে “কি রে দারুন লাগছে তোকে, আর তোর দোসর টা কোথায় একটু দেখি তাকে।” সিতাভ্র পাশেই ছিল, মজা করে বলে ওঠে “এমন একটা শালি হাত ছাড়া হয়ে যাবে।” “তুমি তো দেখলেই না আর কি করা যাবে বলও।” বন্দনা ওকে একটু খুঁচিয়ে বলে। সিতাভ্র বলে—“তোমার মনটা তো কারুর জন্য পরে আছে না হলে সাথে নিয়ে যেতাম মানালি।” —“আগে দেখি পুবালি কি রেস্পন্স দেয় তারপরে তোমাকে সুযোগ দেওয়া যাবে কিনা ভেবে দেখব।” —“বাপরে আগে যাচাই করবে তারপরে খেয়ে দেখবে।” পুবালি ওদের কথা শুনে কি বোলবে ভেবে পায়না। স্যামন্তকের সবার সাথে কথা বার্তা আলাপ পরিচয় করে, এক সময় মনে হয় যে দেরি হয়ে যাচ্ছে। এবারে খেয়ে নেওয়া উচিৎ। কন্যে যাত্রীর বাকিদের খাওয়া দাওয়া হয়ে গেছে, ওর বাবা একবার জিজ্ঞেস করে গেলো ওকে যে কখন খাবে ও। ও বলল পরে খাবে। বন্দনা ও পুবালির পাশেই বসে ছিল সারাটা সময় ওর ও খাওয়া হয়নি, ওদিকে সুবিমল ও তাকে ছিল যে বন্দনার সাথে খেতে বসবে। ঘুরতে ঘুরতে সুবিমল একবার পুবালির বসার জায়গাই এসে বন্দনাকে জিজ্ঞেস করে যে ও খাবে কি না। পুবালি ভুরু নাচিয়ে ইশারা করে “যা, কি করছিস।” অগত্যা যেতে হয়, যেতে যেতে ওর চোখ পরে স্যামন্তকের দিকে, গাড় বাদামি স্যুটে দারুন লাগছে ছেলেটাকে। একে বেশ লম্বা চওড়া, পেটানো শরীর তাতে ও যে ড্রেসই পরে তাতেই মানিয়ে যায়। ওকে ইশারায় করে জিজ্ঞেস করে “কি গো কখন খাবে?” স্যামন্তক হাত নাড়িয়ে বলে “চলো” খাওয়ার সময়ে কথা বার্তা অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে যায় দুইজনার মাঝে, কঠিন নীরবতা আর থাকেনা। রাতেও বাড়ি ফিরে যদিও বিশেষ কথা হয়না তবুও আজ আর সেই তিক্ততা ভাবটা নেই। দুপুরের আগেই বাড়ি খালি হয়ে যায়, যে যার নিজের বাসস্থানে ফিরে যায়। স্যামন্তক থেকে যায়, কেননা পুবালি সিতাভ্রকে নিয়ে অষ্টমঙ্গলার পরের দিন ওকে ফিরতে হবে কলকাতায়। দুপুরের খাওয়ার সময়, বন্দনার মনটা বড় ফাঁকা ফাঁকা লাগছিলো আবার ফিরে যেতে হবে নিজের ব্যস্ত জীবনে, ফিরে যেতে হবে ডিব্রুগড়ে। এই দুই দিনে অনেক কিছু পেয়েছে ও, অনেক নতুন আলেয়ার হাতছানি মাঝে মাঝে মনের কোন কোণে জেগেও উঠেছিল কিছু প্রশ্ন, সব প্রশ্নকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে হবে। বন্দনা স্যামন্তককে জিজ্ঞেস করে “আমাকে স্টেশানে ছেড়ে আসবে? ট্রেনের সময় তো হয়ে এলো।” —“ঠিক আছে” গাড়িতে যাওয়ার সময়েও বিশেষ কথা হয় না দু জনের মাঝে। কি বলবে কেউ কিছু ভেবে পায়না। দুজনেই আনমনা হয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকে। প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ট্রেনের অপেক্ষা করে। স্যামন্তক একটা সিগারেট জ্বালিয়ে ছোটো করে দুটি টান দিয়ে ফেলে দেয়, সিগারেটটা ও যেন তেতো লাগছে। এমন সময় বন্দনা ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আলতো করে হাসে। ঐ হাসি দেখে স্যামন্তকের মনের ভেতরটা কেমন যেন করে ওঠে মনে হয় যেন কি হারিয়ে যাচ্ছে ওর সামনে থেকে। নিচু স্বরে ওকে জিজ্ঞেস করে “ফোন করবে আমাকে?” ট্রেন প্লাটফর্মে ঢুকে পরে, চারদিকের লোক জনের চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হয়ে যাই। বন্দনা একটু উঁচু স্বরে জিজ্ঞেস করে “কি বলছও? একটু জোরে বলও আমি শুনতে পাচ্ছিনা।” কানের কাছে মুখ এনে স্যামন্তক জিজ্ঞেস করে “আমাকে ফোন করবে?” বুক কেঁপে ওঠে বন্দনার, চোখে কোণটা একটু ভিজে ওঠে। ঠোঁট দুটি কেঁপে ওঠে। ও বলে “আমাকে ভুলে যেও, আমি চললাম, ভাল থেকো। আর পুবালিকে জানিয়ে দিও যে আমি একদিন নিরুপমকেই বিয়ে করবো।” পেছন ফিরে আর তাকায় না বন্দনা, সুটকেসটা হাতে নিয়ে ট্রেনে উঠে পরে। ট্রেন ছেড়ে দেয়, স্যামন্তক দাঁড়িয়ে থাকে নিথর হয়ে, সারা পৃথিবীটা খেলো মনে হয়। সব কিছু যেন ছিনিয়ে নিয়ে চলে গেলো মেয়েটা। চলবে.....
04-03-2020, 08:46 AM
04-03-2020, 08:48 AM
04-03-2020, 09:16 AM
oh.....kono katha hoba na......superb.......
04-03-2020, 09:23 AM
আপনার লেখা অতুলনীয় ! আপনার সব গল্প পড়েছি || একটা !!কাকিমা যখন বউ || (বিধবা কাকিমা ) লিখবেন !! এক রোমান্টিক গল্প
05-03-2020, 02:02 AM
(04-03-2020, 09:23 AM)Love aunty Wrote: আপনার লেখা অতুলনীয় ! আপনার সব গল্প পড়েছি || একটা !!কাকিমা যখন বউ || (বিধবা কাকিমা ) লিখবেন !! এক রোমান্টিক গল্প ”মায়ের প্রেম বিবাহ” গল্পের ২য় পার্ট ”আমার প্রেম বিবাহ” আপনি দাদা এই গল্পটা পড়তে পারেন। এই পার্টে বিধবা কাকিমার সাথে প্রেম তারপর বিবাহ দেখানো হয়েছে। রোমান্টিক ও আছে সাথে। আর আপনার কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ দাদা। আশা করছি গল্পের সাথেই থাকবেন। |
« Next Oldest | Next Newest »
|