Thread Rating:
  • 53 Vote(s) - 3.38 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery কোন কূলে যে ভীড়লো তরী/কামদেব
           [৬২]


                ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল চোখ মেলে দেখল খাদিজা বুকে মাথা রেখে ঘমিয়ে আছে দেব আস্তে আস্তে মাথাটা নামিয়ে নীচ একটা বালিশ দিয়ে দিল।উলঙ্গ অবস্থাতে ফোন ধরে বলে,হ্যালো?আমি মিসেস সোম..উনি ঘুমোচ্ছেন,আপনি কে বলছেন? পুলক চ্যাটার্জি?না মানে...ও বুঝেছি ট্রেনে আপনার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন? হ্য বলুন.... .কিডিনিতে স্টোন? এখন কলকাতায়? আপনি লেকভিউ  চেনেন?..ওখানে ড.সোমের নাম করে ভর্তি করে দিলেই হবে। আচ্ছা- আচ্ছা এখন রাখি?
--মিসেস সোম একটু চা হবে?
খাদিজা বেগম দেবকে দেখে তার মানে ঘুমের ভান করে সব কথা শুনেছে?কাছে গিয়ে বলল,বাথরুম থেকে এসে চা করছি। তারপর ধোন ধরে নেড়ে দিয়ে বলল, এবার এটাকে আটকে রাখো,অনেক জ্বালিয়েছে কাল রাতে।
দেব তাকালো হেসে বলল,বাথরুম যাচ্ছো?শোনো একটা কন্টেনারে কিছুটা ইউরিন ধরে রাখো।
একটা শিশিতে কিছুটা মুত ধরে চোখে মুখে জল দিয়ে চা করতে গেল খাদিজা বেগম। পল্টূ লুঙ্গি পরে একটা সাদা কাগজে বেগমের নাম বয়স কি পরীক্ষা ইত্যাদি লিখে রাখে। বেগম চা নিয়ে দেবের দিকে এগিয়ে দিল,পল্টূ কাগজটা বেগমের হাতে দিতে দুমড়ে বাস্কেটে ফেলে দিল।
পল্টু অবাক হয়ে বলল,কি করলে ওটা প্রেসক্রিপশন?
কথার উত্তর না দিয়ে আলমারি খুলে একটা প্যাড দেবের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, খাদিজা নয় অঞ্জনা লিখবে অঞ্জনা সোম।
পল্টু অবাক তার নামে ছাপানো প্যাড।চোখ তুলে বলল,কখন করলে এসব?তুমি না থাকলে যে আমার কি হবে?
--একদম বাজে কথা না,আমি কলেজ বেরোবার পর তুমি একবার লেকভিউ থেকে ঘুরে আসবে।ইকবালকে বলে দেবো। আর ওর ব্যাপারটা তুমি দেখবে,বেচারি গরীব মানুষ।
--আর আমার ব্যাপারটা?পল্টূ জিজ্ঞেস করে।
খাদিজা বেগম দেবের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,দুষ্টুমি হচ্ছে? কাল সারারাত জ্বালিয়েছো।খাদিজা বেগম নীচু হয়ে ঠোট এগিয়ে দিল। পল্টূ চায়ের কাপ পাশে সরিয়ে রেখে বেগমের গলা জড়িয়ে ধরে গভীর চুম্বন করলো। কলিং বেল বাজতে খাদিজা বেগম দরজা খুলে দিল। একটি ছেলে বলল,স্যার ফোন করেছিলেন স্যাম্পেল নেবার জন্য।
পল্টূ বলল,ভিতরে এসো।
ছেলেটি ঢুকতে পল্টু বলল,অঞ্জু ওটা দিয়ে দাও।খাদিজা বেগম বাথরুম থেকে শিশিটা এনে ছেলেটির হাতে দিল।
--সন্ধ্যে বেলা আমি লেকভিউতে থাকবো।
--ওকে স্যার।ছেলেটি চলে গেল।
খাদিজা বেগম বলল,এবার তুমি স্নানে যাও। আমি রান্নাঘরে ঢুকছি ডিস্টার্ব করবে না।
পল্টূ বাথরুমে ঢুকে গেল।রান্না চাপিয়ে খাদিজা বেগম ছুরি নিয়ে স্যালাড কাটতে লাগল। দেবের জন্য তারও স্যালাড খাওয়ার অভ্যেস হয়ে গেছে। ফোন বাজছে।পল্টু বাথরুম থেকে বলল,অঞ্জু ফোন বাজছে।
--শুনতে পেয়েছি। খাদিজা বেগম ফোন ধরল।
--হ্যালো?হ্যা আমি..কেমন আছেন?অরিন্দম কবে যাচ্ছে?...তিনজন?আপনি ব্যবস্থা করুণ আচ্ছা আপনি তো অভিভাবিকা টাকা পয়সা আমি কি বলবো… আপনার এক্সপিরিয়েন্স নতুন ডাক্তার যা ভাল মনে করবেন দেব আপনার ছেলের মত কিছু একটা ঠিক করুণ।ও দুপুরে যাবে,রোজ যেমন যায়। না না খেয়েদেয়েই যাবে।হ্যা যাবো অরিন্দমকে সিঅফ করতে অবশ্যই যাবো। রাখছি?
ফোন রেখে খাদিজা বেগম রান্না ঘরে ঢুকে গেল। কিছুক্ষণ পর বাথরুম থেকে বেরিয়ে পল্টু জিজ্ঞেস করল,কে ফোন করেছিল?
--পার্বতী ম্যাম।তুমি গেলে ওখানে বসার ব্যাপারে আলোচনা করবেন।আর বললেন পরশুদিন তিন-চারটে কেস তোমাকে অপারেশন করতে হবে।টাকা পয়সার কথা আমি বললাম উনিই যেন ঠিক করেন।
--আমি যা বলতাম তুমি তাই বলেছো।
--আমি তোমার বউ তুমি কি বলবে তা আমি না জানলে কে জানবে?
--তুমি না থাকলে আমার কি হবে অঞ্জু?
--আবার সেই বাজে কথা? আমি কোথায় যাবো শুনি? এসব শুনলে আমার কত কষ্ট হয় তুমি জানো না?
খাদিজা বেগমের পিছন থেকে কাধের উপর দিয়ে গালে গাল রেখে বলল পল্টু।স্যরি আর বলবো না।আচমকা জামা তুলে খাদিজার লুঙ্গি সরিয়ে পেটে হাত রেখে চোখ বুজে কি যেন অনুভব করার চেষ্টা করে।খাদিজা বেগম চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে,জানে এ সময় কথা বলা ঠিক নয়। দেব এখন অন্য জগতে। একসময় জামা নামিয়ে দিয়ে বলল,অঞ্জু এ্যাম সিয়োর পজিটিভ।
--মনে হচ্ছে তুমি খুশি হওনি?
--খুশির কথা নয় আমি ভাবছি তোমার বয়সের কথা। এই বয়সে তুমি কি ধকল নিতে পারবে?
--তোমার সন্তানের জন্য আমি সব কষ্ট সহ্য করতে পারবো।
--কিন্তু আমার বউ?বউ ছাড়া আমার একদণ্ড চলবে না।
--আবার সেই কথা? এবার কিন্তু আমি রেগে যাচ্ছি।
দেবকে ছেড়ে যাবার প্রশ্নই উঠছে না।আজ সে পরিতৃপ্ত প্রথম দিকে বয়স নিয়ে খুতথুতানি থাকলেও এখন সব স্বাভাবিক।পরিচিত মহলে মৃদু গুঞ্জন উঠলেও সবার চোখ সওয়া হয়ে গেছে।ওর বন্ধু দিলীপ ওকে বৌদি বলে।খাদিজা বেগম স্থির করে ব্যাপারটা মিটলে আগের বাড়ীতে চলে যাবে।বিশাল বাড়ী সেখানে জড়িয়ে আছে দেবের শৈশবের স্মৃতি।ফ্লাটে নানা ঝামেলা নিজেদের বাড়ী হলে সেই সমস্যা এড়ানো যাবে।মনে পড়ল শ্রীময়ীর কথা,এবার বুঝবে তার আশঙ্কা ভুল।

 পল্টূ বই নিয়ে বসে। রান্না প্রায় শেষ ভাত চাপিয়ে দিয়ে স্নানে ঢুকে গেল খাদিজা বেগম। বাথরুমে ঢুকে লুঙ্গি খুলে পেটের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে,হাত বোলায়।
দেব বুঝতে পেরেছে,খাদিজা কিছু বলবে না।ও যা ভাল বোঝে করবে।  আজ সন্ধ্যেবেলা রিপোর্ট পাওয়া যাবে। দেব বলছে পজিটিভ গভীর আস্থা দেবের প্রতি,এখন মনে হচ্ছে আরো আগে হলে ভাল হত।দেবকে খাইয়ে কলেজ বেরিয়ে গেল খাদিজা বেগম।

 ভাইদের উৎপাতে যশবিন্দার দিল্লীর নার্সিং হোম ছেড়ে কলকাতায় পালিয়ে আসে।পরমিত ওর জ্যাঠতুতো ভাই কদিন ধরে পীড়াপিড়ি করছিল,চৌতালা না কে নাকি তার জন্য চণ্ডিগড়ে নার্সিং হোম করে দেবে। দিল্লীতে বসেই বিজ্ঞাপনটা চোখে পড়েছিল। পরমিত নিজের জ্যাঠতুতো ভাই হলেও ওকে বিশ্বাস নেই,স্বার্থের জন্য সব কাজ করতে পারে। ড্যাফোডিল নার্সিং হোমে গাইনি চেয়েছে। সেই উদ্দেশ্যে কলকাতায় আসা।একবার ভেবেছিল অঙ্গনের কাছে উঠবে কি ভেবে হোটেলে ওঠাই সমীচীন মনে করে।অঙ্গনকে তার ব্যক্তিগত ঝামেলায় জড়াতে চায় না।নার্সিং হোম চিনে পৌছাতে অসুবিধে হয়না।কয়েকজনকে দেখে বুঝতে পারে এরাও তারই মতো বিজ্ঞাপন দেখে এসেছে।সবাই পুরুষ একমাত্র মহিলা সেই।এক ভদ্রলোক টেবিল চেয়ার নিয়ে বসে আছেন কথা বলে  বুঝতে পারে একেই রিপোর্ট করতে হবে।যশ সমস্ত কাগজপত্র দিতে ভদ্রলোক তাকে সোফায় বসতে বললেন।
শেষে এসেছে একেবারে শেষে ডাক পড়ল।গাইনি ওদের মহিলা পছন্দ তাছাড়া দিল্লীতে একটা  রেপুটেড নার্সিং হোমে ছিল সেটাও কিছুটা সুবিধে করে দিয়েছে।একটা প্রশ্নে আটকে গেছিল।কেন আগের নার্সিং হোম ছেড়ে আসছে?যশ থমকে যায়।ওখানে কোনো প্রবলেম? যশ দ্রুত বলল,না স্যার।ঝট করে মুখে এসে গেল কলকাতায় রিলেশন--মানে--।ওকে বলতে হবে না বুঝেছি।উনিও কি একই প্রফেশন?যশ মৃদু হাসলো যা বোঝার তুমি বোঝো,তাকে কোনো ঝুট বলতে হয়নি। মনে হচ্ছে এখানে হয়ে যেতে পারে।পরমিতরা এখানেও হামলা করবে না তার নিশ্চয়তা কি?ঠিক খুজে বের করবে।যতদূর শুনেছে চৌতালা খুব মালদার পার্টি।বোনের সঙ্গে বিয়ে দিতে পারলে ওদের কিছু সুবিধে হবে।একবার ভাবে দেশে গিয়ে দাদীজানকে সব বলবে কিনা?দাদীজানকে সবাই ভয় পায়।      


 দেখতে দেখতে পুজো এসে গেল।পুজোর পর পৌর নির্বাচন।দীনেশবাবু জানেন এই কেন্দ্র মহিলা সংরক্ষিত হয়ে যাবে তিনি আর সুযোগ পাবেন না তাই হাত গুটিয়ে নিয়েছেন।অপালাই এখন সব দেখাশোনা করে,মানুষজনও দরকারে অদরকারে তার কাছেই আসে। সারাদিনের ব্যস্ততায় লক্ষণের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয় না,এখন দুপুর বেলা দুজনে পাশাপাশি শুয়ে বিশ্রাম করছে।লক্ষণ পিছন থেকে কাপড় তুলে অপুসোনার পাছা টিপে দিচ্ছে।বাইরে বলাই এসে ডাকাডাকি করে,অপুদি--অপুদি। অপালা উঠে জানলা দিয়ে মুখ বাড়াতে বলাই বলল,তাড়াতাড়ি এসো হেভি কিচাইন লেগে গেছে।
--কিসের কিচাইন?
--দেববাবুকে দুটো লোক আর একটা মেয়েছেলে ধরে যা-না তাই করছে।
অপালা শাড়ী জড়িয়ে বেরিয়ে পড়ল।তাকে দেখে জুটে গেল আরো কিছু ছেলে। দেববাবুকে দশ হাজার টাকা দিয়েছিল ঘর ভাড়ার অগ্রিম হিসেবে এখন বলছে ঘর ভাড়া দেবে না। অপালা মহিলার কাছে গিয়ে ভাল করে দেখে বলল,খুব চেনা চেনা লাগছে,আপনার নাম হেলেন না?
--না চায়না।মেয়েটি মুখ ঘুরিয়ে নিল।
--ঐ হল,আপনি পুব পাড়ায় ছিলেন না?
লোকদুটির হম্বিতম্বি থেমে গেছে।একজন বলল,দিদি ঠিক আছে ঘর ভাড়া দেবেন না এ্যাডভান্সটা তো ফেরত দেবেন।
--শুনুন চায়না এটা ভদ্রলোকের পাড়া এখানে ওসব ব্যবসা চলবে না।
--আমরা এ পাড়ায় থাকবো না কিন্তু টাকাটা মার হয়ে যাবে?
--কত টাকা?
--দশ হাজার কি স্যার মিথ্যে বলছি?
--শুনুন অতগুলো টাকা কেউ পকেটে নিয়ে ঘোরে না। বললেই হুট করে বের করে দেবে।কি দেববাবু কবে টাকা দেবেন?
--এখন পাঁচ হাজার আছে বাকীটা পরে দেবো। দেবব্রত বললেন।
--যান টাকাটা নিয়ে আসুন।শুনুন ভাই অভাবী মানুষ ঘর ভাড়া দেবে ভেবেছিলেন কোনো মজবুরি আছে হয়তো তাই দিতে পারছে ন না।
--দিদি উনি মনে হয় অন্য কাউকে দিবার মতলব করেছেন।
--আমি কথা দিচ্ছি ভাড়া দিলে আপনাদের দেবে কিন্তু এই চায়না টায়না চলবে না।
--কিন্তু বাকীটাকা?
দেবব্রত বাবু ঘর থেকে টাকা এনে অপলার হাতে দিলেন।অপালা জিজ্ঞেস করে,দেববাবু বাকী টাকা?
দূর থেকে পুলিশের গাড়ী আসতে দেখা যায়।লোকটি অপলার হাত থেকে টাকাটা নিয়ে বলল,ঠিক আছে আমরা আর একদিন এসে বাকী টাকা নেয়ে যাবো। ওরা দ্রুত চলে গেল। পুলিশের গাড়ী রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করে। তারপর একেবারে ভীড়ের কাছে এসে থামে। একজন কালো পোষাকপরা উকিল গাড়ী থেকে নামলেন,তারপর একজন অফিসার নেমে জিজ্ঞেস করেন, ড.সোমের বাড়ী এটা?
অপলা এগিয়ে গিয়ে বলল,আমি পার্টির নেতা আমাকে বলুন।
--পার্টির ব্যাপার নয় ঝামেলা করবেন না কাজ করতে দিন। কোর্টের অর্ডার বাড়ীতে কেউ থাকলে খালি করে দিন।
অপলা বুঝতে পারে এখানে থাকলে তার মর্যাদা থাকবে না।আশপাশে বেশ ভীড় জমে গেছে। লোকগুলো পুলিশের গাড়ি দেখে পালিয়েছে। তারও কেটে পড়া ভাল। দেবব্রতবাবু এগিয়ে বলেন, স্যার বউ মেয়ে নিয়ে এখন কোথায় যাবো?

--বাড়ীটা কি আপনার?
--আমার বোনের বাড়ী।
অফিসার ভদ্রলোক কি ভাবলেন তারপর জিজ্ঞেস করেন,মিসেস পার্বতী সোম আপনার বোন?
--আমার বোন মনোরমা সোম।
--আপনি বাড়ী খালি করুণ।সঙ্গে কিছু লোকজন ছিল তাদের বললেন,এই খালি করো।
দেবব্রত বলল,এ্যাই কেউ জগাদাকে খবর দেতো।
কেউ নড়ল না অসহায়ভাবে ভীড়ের দিকে তাকিয়ে কয়েক মুহূর্ত কি ভাবে তারপর  ঘরে গিয়ে বউকে বের করে আনলেন।বউকে বললেন, অপেক্ষা করো আমি এখুনি আসছি।
দেবব্রত কোথায় চলে গেল।ধীরে ধীরে ভীড় পাতলা হয়ে গেল।ডাইকরা আসবাব পত্রের মধ্যে মেয়ে নিয়ে বসে থাকে বাসন্তী।
বিকেলের দিকে খাদিজা বেগম কলেজ থেকে রিক্সায় ফিরলেন।দেব গাড়ি নিয়ে গেছে। সিড়ি দিয়ে উঠে তিনতলায় তার ফ্লাটের সামনে দেখল একজন লোক বসে আছে। খাদিজা বেগম জিজ্ঞেস করে,আপনি এখানে?
--আমি পল্টুর মামা।পল্টু নেই?
খাদিজা বেগম চিনতে পারে এই ভদ্রলোক দেবের মামা,হ্যা একবার নার্সিং হোমে দেখেছিল। খাদিজা বেগম বলল,ওর ফিরতে সন্ধ্যে হয়ে যাবে।আমি . আপত্তি না থাকলে ভিতরে অপেক্ষা করত পারেন।
দেববাবু ভিতরে ঢুকে সোফায় বসলেন। খাদিজা বেগম ঘরে গিয়ে চেঞ্জ করে বাইরে এসে জিজ্ঞেস করে,চা খেতে আপত্তি আছে?
--আপনি খেটে খুটে এলেন আবার চা?
--আমি আমার জন্য করবো।
--ঠিক আছে করুণ।
দেবব্রতবাবুকে চা দিয়ে নিজে এক কাপ নিয়ে সামনে সোফায় বসে খাদিজা বেগম জিজ্ঞেস করে,এমনি সব খবর ভাল তো?
দেবব্রত চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন,আর খবর,ঐ দক্ষিণী মেয়েছেলেটা আগে না্সিং হোমটা হাতিয়েছে এখন বাড়ীটার উপর নজর পড়েছে--।
--প্লিজ দেববাবু,আমি এভাবে কথা বলতে অভ্যস্থ নই। আমি শুনতে চাই না।আপনি চা খান।খাদিজা বেগম উঠে নিজের ঘরে চলে গেল।
দেবব্রত অপ্রস্তুত মনে মনে ভাবেন, ফ্লাট ছেড়ে আসার যন্ত্রণাটা ভুলতে পারেনি। পল্টু আসুক তাকেই সব বলবে।তার বোঝা উচিত ছিল এই নেড়ে মেয়েছেলেটা সুযোগ পেয়ে বদলা নেবেই। নেহাত দায়ে পড়ে এসেছেন না হলে এর মুখ দেখতে বয়ে গেছে। এখানে বসে কল্পনা করতে পারছেন মাল পত্তর পড়ে রয়েছে বাড়ীর বাইরে,মেয়েরা এতক্ষণে ফিরে এসেছে।বাসন্তী তাদের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে।পাড়ার লোকেরা ভীড় করে মজা দেখছে।
নীচে গাড়ীর হর্ণের শব্দ পাওয়া গেল।খাদিজা বেগম ঘর থেকে বেরিয়ে ব্যালকণিতে গেলেন। দেব ফিরেছে,ইকবাল দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছে।গাড়ী থেকে নেমে উপর দিকে তাকাল বেগমকে দেখে হাসি বিনিময় করে।পল্টূ ঘরে ঢুকে সোফায় মামাকে দেখে অবাক হয়ে বলে, কি ব্যাপার তুমি?
--একটা দরকারে এসেছি তোর কাছে।
--এক মিনিট।বলে ঘরে ঢুকে গেল।
খাদিজা বেগম তোয়ালে দিয়ে মুখের ঘাম মুছে দিল। তারপর জামা প্যাণ্ট খুলে লুঙ্গি পরিয়ে দিয়ে বলল,তুমি বোসো আমি চা দিচ্ছি।
--শোনো একটা কথা।মাম্মী এই চাবিটা দিলেন,আমাদের বাড়ী এখন ফাকা।এটা রেখে দাও।
--বসার ব্যাপারে কি কথা হল?
--তোমার সঙ্গে কথা বলে নিতে বলেছি।আর পরশু চারটে অপারেশন।তোমার মনে আছে ট্রেনে দেখা হয়েছিল উর্মিলা চ্যাটার্জি?
--আচ্ছা পরে শুনবো।তুমি যাও কথা বলো,উনি অনেকক্ষণ থেকে বসে আছেন।
কবে কখন বসবে তাও ঠিক করে দেবে বউ? খাদিজা বেগম মনে মনে হাসে। হায় খোদা একি দায়িত্ব তুমি দিয়েছো।
পল্টূ সবিস্তারে দেবব্রত বাবুর কাছে শুনল তারপর বলল,তুমি ওকে বলেছো? এতক্ষণ বসে না থেকে ওকে বলতে পারতে?এ্যাই অঞ্জু শোনো তো মামা কি বলছে?
হায় ভগবান শেষে কপালে এই ছিল?দেব বাবু ভাবেন। একটা বেজাত মেয়েছেলের কাছে দয়া ভিক্ষে করতে হবে? খাদিজা বেগম চা নিয়ে ঢুকতে পল্টু বলল,আমি কি একটু বিশ্রাম করতে পারি?
খাদিজা বেগম ব্যস্ত হয়ে বলল,হ্যা হ্যা তুমি চল।শোবার ঘরে নিয়ে গিয়ে বলল,চা খেয়ে শুয়ে বিশ্রাম করো।কতক্ষণ পর এলো কোথায় একটু সেবা যত্ন করবে তা না অবাঞ্ছিত অতিথি।
দেবব্রত বাবুর কাছে এসে বলল,কি হয়েছে বলুন,একটু প্রোলাইটলি বলবেন, বিশেষ করে মেয়েদের সম্পর্কে।
অনেক আশা নিয়ে এসেছিলেন এখন বুঝতে পারছেন ঘরের ছেলেই যদি বংশ মর্যাদা রাখতে না পারে ঈশ্বরের সাধ্য কি?নিরুপায় হয়ে সারাদিনের ঘটনা একের পর এক বলে গেলেন। মেয়েছেলেটার মুখ দেখে মনে হচ্ছে না শুনছে।ইকবাল ঢুকে বলল, মেমসাব এই ফাইলটা গাড়ীতে ছিল।
--হ্যা তুমি বোসো,চা খাবে তো?আর একটা কথা তুমি কাছাকাছি কোনো নার্সিং হোমে তোমার বিবিকে ভর্তি করে দাও।
--কিন্তু অত টাকা--।
--এত কথা বল কেন,বলছি ভর্তি করে দাও।
--জ্বি মেমসাব।
--দেববাবু একটু বসুন।
ঘরে ঢুকে দেবকে বলল,আমি একটু আসছি।তারপর সারা গায়ে হাত বুলিয়ে বুকে গাল রেখে বলল,ভাবছি একতলায় দূটো ঘর দেববাবুর জন্য খুলে দেবো।তোমার আপত্তি নেই তো?
--এসো কানে কানে বলি।
খাদিজা বেগম বুঝতে পেরেও কান মুখের কাছে নিয়ে গেল।পল্টূ জড়িয়ে ধরে ঠোট মুখে নিয়ে চুষতে থাকে।উম-উম করতে করতে ঠোট ছাড়িয়ে নিয়ে জিজ্ঞেস করল, এখন কেমন লাগছে?
--বেশ ভাল।
--খালি দুষ্টুমি।খাদিজা বেগম ইকবালকে চা দিয়ে চেঞ্জ করতে গেল।
দেবব্রত ভাবে এ এক আজব জায়গা শালা একটা ড্রাইভার তার সঙ্গে বসে চা খাচ্ছে। নাম শুনে মনে হচ্ছে এ ব্যাটাও নেড়ে।মহিলাকে পাড়ায় যেমন দেখেছিলেন ঠিক তেমনিই আছেন। বয়স তো কম হয়নি ছুকরির মত ছুটে বেড়াচ্ছে কেমন।রূপ আরো খোলতাই হয়ছে। এমন করছে যেন পল্টু ওর বিয়ে করা স্বামী। চাবি নিয়ে তৈরী হয়ে খাদিজা বেগম এসে বলল,চলুন।ওকে একা রেখে যাচ্ছি ক্লান্ত হয়ে সবে ফিরল,ইকবাল চলো।
[+] 6 users Like kumdev's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
প্রতিবার গল্প অন্য দিকে মোড় নিচ্ছে, দারুন ইন্টারেস্টিং হয়ে উঠছে
Like Reply
    [৬৩]



       ড.সোমের বাড়ীর নীচে যখন গাড়ী এসে থামলো সন্ধ্যা নামে নামে অবস্থা।খাদিজা বেগমের চোখে রোদ চশমা। ভীড়ের মধ্যে ছিল গজেন,চমকে ঊঠল ভদমহিলাকে কোথায় দেখেছে মনে করার চেষ্টা করে।চাবি দেববাবুকে দিতে তালা খুললেন। ভিতরে ঢুকে খাদিজা বেগম বলে,মালপত্র নিয়ে এই দুটো ঘরে রাখুন।তারপর ইকবালকে নিয়ে উপরে উঠে সব ঘরে তালা দিয়ে দিল। তারপর নীচে এসে দেববাবুকে বলল,আর কোনো ঘর ব্যবহার করবেন না।আর একদিন এসে ঘরদোর পরিস্কার করার ব্যবস্থা করে দিয়ে যাবো।বাইরে বেরোতে ভীড় থেকে এক মহিলা বের হয়ে জিজ্ঞেস করে, ছোড়দা আসে নাই?
খাদিজা বেগম বুঝতে চেষ্টা করে কি বলছেন মহিলা,ভীড় থেকে একজন বলল, মিতামাসী পল্টূদের বাড়ী কাজ করতো।
এবার চিনতে পারে খাদিজা জিজ্ঞস করে,মাসী কেমন আছেন?
--আর কেমন?ভাবলাম বুঝি ছোড়দা আসছে তাই ছুটতি ছুটতি আসলাম।কতদিন দেখিনা।
--আমি একদিন এসে নিয়ে যাবো ছোড়দাকে দেখে আসবেন।ব্যাগ থেকে পঞ্চাশ টাকা বের মিতার হাতে দিয়ে বলল,মাসী এটা ছোড়দা আপনাকে দিতে বলেছে, রাখুন।
মিতা উল্লসিত হয়ে বলল,ছোড়দা বলেছে?আমারে ভোলে নাই?যেমন মা তার তেমন বেটা।
গাড়ীতে উঠতে যাবে কোথা থেকে লক্ষণ এসে উপস্থিত।ম্যাম আমার উপর আপনি রাগ করেছেন?
খাদিজা বেগম হেসে বলল,ওমা রাগ করবো কেন?কলেজের কাছে ভাল ফ্লাট পেলাম ,চলে গেলাম।
--ম্যাডাম আমি বিয়ে করেছি,অপুকে ঠেলে এগিয়ে দিয়ে বলল, এই আমার ওয়াইফ।
রোদ চশমা খুলে খাদিজা বেগম বলল,একদিন দুটিতে আসুন আমার ওখানে আলাপ করা যাবে।
গাড়ী বেরিয়ে যাবারপর দিলীপ এল ভেবেছিল পল্টু এসেছে,এসে শুনল অধ্যাপিকা বোউদি।যাবো যাবো করে যাওয়া হয় না।বিয়ের দিন ঠিক হলে একবার যেতেই হবে।

বাসায় ফিরে অপলা জিজ্ঞেস করে,মেয়েছেলেটা কে,আপনে কি করিছিলেন?
লক্ষণ বিরক্ত হয় বলে,তুমি মেয়েছেলে মেয়েছেলে করবে নাতো।কদিন পর নির্বাচনে দাঁড়াবে ভদ্রভাবে কথা বলা শেখো।
--তালি কি বেটাছেলে বলবো?আপনে আমারে কথা বলা শিখাবেন না তো। অপলা রেগে যায়।
--জানো উনি কে?কলেজে পড়ান,বলবে মহিলা।
--আপনে উনার সাথে কি করিছিলেন বললেন না তো?
--উনি এখানে থাকতেন, . বলে ওর বদনাম করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। দেববাবু ছিল এর পিছনে।
--মোছলমান?ভারী সোন্দর দেখতে মোছলমানরা খুব সোন্দর দেখতি হয়।কিন্তু দেববাবুরেই তো ঘরে ঢুকয়ে দিয়ে গেলেন।
--শুধু দেখতে নয় মনটাও সুন্দর।আর শোনো মোছলমান-মোছলমান করবে না। লক্ষণ বলল।
--আপনেই তো বললেন না হলি আমি কি করে জানব হিদু না মোছলমান?
--আমি বলেছি .।দেখেছো কেমন ভদ্র?একেই বলে শিক্ষার গুণ।
কথাটা অপলার ভাল না লাগলেও কিছু বলল না। বাংলা দেশে সেও মেট্রিক পাস করেছিল।কবেকার কথা এখন সেসব ভাল মনে নেই।পুব পাড়া থেকে ছার্টিফিকেটটা একদিন নিয়ে আসতে হবে।

গজেন হাপাতে হাপাতে বাড়ীতে ঢুকে বলল,বৌদি সেই মহিলাকে দেখলাম। মঞ্জুলা দেওরকে অবাক হয়ে দেখে জিজ্ঞেস করে,কোন মহিলা?
--যার ফ্লাট আমরা কিনেছি।
মঞ্জুলার মনে পড়ল জিজ্ঞেস করল,সেই . মহিলা? এখানে কোথায় এসেছিলেন?
--ড.সোমের বাড়ী থেকে দেববাবুকে বের করে দিয়েছিল উনি আবার ঢুকিয়ে দিয়ে গেলেন।
--কোর্টের অর্ডার ছিল ওকে কেউ বাধা দিল না?
--অতশত জানি না গাড়ী থেকে নামলেন,তালা খুলে দিয়ে আবার গাড়ীতে উঠে চলে গেলেন। দেখলাম ভদ্রমহিলাকে সবাই খুব সমীহ করছিল।

ইকবালকে বিদায় করে খাদিজা বেগম তরতর করে উঠে এল নিজের ফ্লাটে। পল্টূ দরজা খুলে দিল। খাদিজা বেগম বলল, এতক্ষণ একা একা ছিলে খুব খারাপ লাগছে।
খাদিজা ঘরে ঢুকে কাপড় ছাড়তে  থাকে।
--যা হয়ে গেছে তা নিয়ে ভেবে লাভ নেই।এখন তো আর একা নই। পল্টূ বেগমের দিকে এগিয়ে গিয়ে বেগমের পেটের দিকে তাকিয়ে হাত পেটের উপর রাখে।
--কি হচ্ছে দাড়াও কাপড়টা ছেড়ে নিই।
কাপড় বদলে ফিরে আসে খাদিজা বেগম,নজরে পড়ে টেবিলে একটা খাম উপরে লেখা ড.অঞ্জনা সোম।
রিপোর্ট এসে গেছে? দ্রুত খাম তুলে বলল, তুমি বলোনি তো রিপোর্ট এসে গেছে?
পল্টূ গভীরভাবে বলে,আসতে না আসতে কি করে এমন খবর দেবো বলো?
মুহুর্তে ম্লান হয়ে গেল খাদিজা বেগমের মুখ বলল, তুমি যে বলেছিলে আই এ্যাম সিয়োর পজিটিভ?
--ভুল মানুষ মাত্রই হতে পারে।পল্টু বলল।
--আমি জানতাম এরকম কিছু একটা হবেই।খাদিজা বেগম খাম খুলে দেখল পজিটিভ, সোফায় বসে থাকা দেবের বুকের উপর ঝাপিয়ে পড়ে বলল,এ্যাই অসভ্য ছেলে,ইয়ার্কি হচ্ছে?দেবের ঠোট সবলে মুখে নিয়ে জিভ ঠেলে দিল মুখের ভিতর।
পল্টু বেগমকে জড়িয়ে ধরে টাল সামাবার চেষ্টা করে। খাদিজা বেগম বলল, আমি একেবারে ভয় পেয়ে গেছিলাম। আমি জানতাম খোদা মেহেরবান এত নিষ্ঠুর হবে না।
--কি পাগলামী হচ্ছে এই অবস্থায় এভাবে কেউ ঝাপিয়ে পড়ে?
খাদিজা বেগম নিজেকে সামলে নিল নিজের পেটের দিকে তাকিয়ে বলল,স্যরি।
পল্টু অবাক হয়ে দেখল যেন একটি বাচ্চার মত উচ্ছলিত অঞ্জনা জিজ্ঞেস করল, তোমার মা হওয়ার এত ইচ্ছে কখনো বলোনি তো?
খাদিজা বেগম চোখ নামিয়ে লাজুক গলায় বলল,যদি মেয়ে হতে বুঝতে পারতে। এ এক আদিম প্রবৃত্তি।
--ভুলে যেও না সন্তান পালন বিরাট এক ঝক্কি।
খাদিজা বেগম দেবকে বুকে চেপে বলল,সে আমি প্রতিদিন প্রতি পদে কি বুঝতে পারছি না?তারপর ছেড়েদিয়ে বলল,তুমি তো কিছু খাওনি,একটু বোসো আমি টিফিন করে আনছি।
খাদিজা বেগম ময়দা মাখতে মাখতে রান্না ঘর থেকে বলল,জানো লক্ষণবাবুর বউ দেখলাম আজ।দেখে মনে হল বেশ চালাক চতুর।
--তুমি দেখে বুঝতে পারো?
--সন্দেহ আছে? তোমাকে দেখে বুঝতে পারিনি?
আলু চচ্চড়ি আর লুচি একটু পরেই তো ভাত খাবে। প্লেটে খাবার দিয়ে বলল,আমি চা নিয়ে আসছি বলে খাদিজা বেগম রান্না ঘরে চলে গেল। পল্টু ভাবছে অতদুর থেকে এল আবার এই পরিশ্রম,একটা কাজের লোক রাখতেই হবে।পাড়ার খবর কিছুই শোনা হল না। দিলীপের সঙ্গে দেখা হয় নি? খাদিজা বেগম চা আর নিজের খাবার নিয়ে এসে দেবের সামনে বসে জিজ্ঞেস করে,কি ভাবছো বলতো?
--ভাবছি এ সময় রান্না বান্নার চাপ একটু কমাতে হবে।একজন সবসময়ের লোক রাখার কথা ভাবছি।
--তোমাকে বলা হয়নি মিতামাসীর সঙ্গে দেখা হল।তোমার কথা জিজ্ঞেস করছিল,আমি তোমার নাম করে ওকে পঞ্চাশটা টাকা দিতে খুব খুশি।
--অঞ্জু তুমি কিভাবে আমার ইচ্ছে টের পাও? মিতামাসী খুব ভালবাসতো আমাকে। তুমি মিতা মাসীকে বলতে পারতে একজন বিশ্বাসী লোক যদি দিতে পারে।তুমি কলেজ চলে যাবে আমিও থাকবো না।আজেবাজে লোক হলে মুস্কিল।
--তুমি কি ভাবছো আমি সব বুঝতে পারি,তোমাকে চিন্তা করতে হবে না কালকের কথা ভাবো,অপারেশন আছে। আমি রান্না ঘরে যাচ্ছি।
খাদিজাবেগম রান্না ঘরে গেল,বস্তুত খাদিজা বেগম অত্যন্ত খুশি।সারা শরীরের পেটটাই তার কাছে অন্যতম গুরুত্বপুর্ণ এখন। ভাবখানা প্রাণ গেলেও যেন পেটের কোনো ক্ষতি না হয়।

নীচের ঘরে মালপত্তর গুছিয়ে দেববাবু বললেন,বাসু এককাপ চা দেবে?
সকাল থেকে কম ধকল গেল না।এরকম অবস্থায় পড়তে হবে কোনো দিন ভাবেন নি। জগা উকিলের উপর সব রাগ পড়ে। বাসিন্তী চা নিয়ে এসে স্বামীর পাশে বসলেন। ভাড়াটিয়াটা বিদায় হয়েছে তার স্বস্তি।স্বামীকে জিজ্ঞেস করেন,কালো চশমা পরা ওই মেয়েলোকটা কে গো?
--ওর নাম খাদিজা বেগম,কলেজে পড়ায়।ছি-ছি-ছি বংশের নাম ডোবালো।
--উনি না এলে আজ সারারাত আমাদের রাস্তায় কাটাতে হত।বাসন্তীর চোখে কৃতজ্ঞতা।
--ও কে জানো?ও নাকি পল্টূর বউ।লোকের কাছে মুখ দেখাবার জো রইল না?
--খাদিজা বেগম মানে তো '.?
--তা হলে আর বলছি কি? তুই আর মেয়ে পেলি না?আমাকে বলতিস ওর চেয়ে হাজারগুণ সুব্দরী আমি ব্যবস্থা করে দিতাম।
বাসন্তী অবাক হয় এক ঝলক দেখেছিল মেয়ে মানুষটা সত্যিই সুন্দরী।স্বামীর রাগত মুখের দিকে তাকিয়ে সেকথা বলার ভরসা হল না।

রাতে পাশাপাশি শুয়ে খাদিজা বেগম বুঝতে পারে দেবের চোখে ঘুম নেই।পাশ ফিরে দেবের গায়ে হাত বুলিয়ে দেয়। জিজ্ঞেস করে,ঘুম আসছে না করবে?
--না থাক।
--ইচ্ছে করছে না?
--তা নয় পেটে চাপ লাগলে ক্ষতি হতে পারে।সংযত হওয়া ভাল।
খাদিজা বেগম মনে মনে হাসে,মুখে যাই বলুক সন্তানের প্রতি ধীরে ধীরে মায়া জন্মাচ্ছে। উপুড় হয়ে পাছা উচু করে বলল,নেও করো পেটে চাপ লাগবে না।
পল্টূ উঠে খাদিজা বেগমের প্রশস্ত পিঠে গাল রাখে। শীতল স্পর্শ ভাল লাগে। খাদিজা জিজ্ঞেস করল,ওখানেই ঘুমোবে নাকি?তাড়াতাড়ি করো আবার সকালে উঠতে হবে তো,কলেজ আছে না?
পল্টু পাছায় হাত রাখে খাজের ফাকের নীচে স্ফীত যোণীতে হাত দিয়ে বুঝতে পারে ভিজেভিজে।চেরার মুখে ল্যাওড়া ঠেকিয়ে  ঠেলতে থাকে।
খাদিজা বেগম অনুভব করে ধীরে ধীরে ঢুকছে তীব্র সুখানুভুতি ছড়িয়ে পড়ছে কোষে কোষে প্রতিটী রক্ত কণিকায়।উম-ম-উ-হু-হু-হু ঠোটে ঠোট চেপে সম্পুর্ণ ল্যাওড়া ভিতরে নিয়ে নিল।দেবের ল্যাওড়া একটু বড় প্রবেশ মুখে একটু ব্যথা লাগলেও ভিতরে ঢুকলে আর কষ্ট হয় না। তাগাদাদিল,নেও করো। অসুবিধে হলে চুল সামনের দিকে সরিয়ে দাও। ঘাড়ের থেকে চুলের গোছা সামনে সরিয়ে দিয়ে পল্টূ পাছা পিছন দিকে সরিয়ে ল্যাওড়া ভিতরে ইঞ্চি তিনেক রেখে আবার সম্পুর্ণ ভিতরে পুরে দিল।এত দ্রুত করছে কিন্তু খাদিজা কিছু বলে না এ সময় বলা ঠিক না।মুখ বুজে সহ্য করে। এইভাবে চুদতে চুদতে খাদিজার জল খসে গেল। উউউউ-হুউউহু করতে করতে খাদিজাবেগম জিজ্ঞেস করে, তোমার হয় নি?
চোদার গতি বাড়তে থাকে খাদিজা বেগম বুঝতে পারে দেবের বেরোবার সময় হয়ে গেছে।গুদের ঠোট দিয়ে ল্যাওড়া কামড়ে ধরে।দুহাতে চেপে ধরেছে দুহাত। ভিতরে উষ্ণ তরলের স্পর্শ পায়।তার মানে বেরোচ্ছে?--বেরোক, খাদিজা বেগম অপেক্ষা করে কখন দেব বের করে।আচল দিয়ে মুখ মুছে দিল,ঘেমে গেছে বেচারি। 
[+] 7 users Like kumdev's post
Like Reply
     [৬৪]



                 দিলীপের চাকরি বছর খানেক পর স্থায়ী হয়। রমিতার সঙ্গে বিয়ের দিন ঠিক হয়ে গেছে। রমেনবাবুর বাড়ী ভেঙ্গে যে ফ্লাট হচ্ছে দিলীপ সেখানে ফ্লাট নিয়েছে বিয়ের পর বউ নিয়ে সেখানে উঠবে। নিজেদের টালির বাড়ী কি করবে ঠিক করেনি। পল্টুকে নেমন্তন করতে গেছিল দেখা হয় নি। খাদিজা বেগম খুব যত্নআত্তি করেছে। কলেজ যায় না বাড়ীতেই থকে। ড.অনঙ্গদেব সোমের খ্যাতি উপার্জনের বাঁধ ভেঙ্গে দিয়েছে।বাঁধ উপচে হুড়হুড় করে অর্থ আসছে।বউকে দেখে বুঝতে পারে ওনার যাওয়া সম্ভব নয়। নাজমা নামে একজন মহিলা স্বল্প সময়ের জন্য থাকে।ঠিক কাজের লোক নয় চেনাশোনা। দিলীপকে বলল,যদি কোনো লোক পাওয়া যায়।
শীলাদেবী অসুস্থ হার্ট দুর্বল।ছেলেটাকেই সব সামলাতে হচ্ছে।ওর বাবারও বয়স হয়েছে কিছু করতে গেলেই দিলীপ বাধা দেয়,তোমাকে কিছু করতে হবে না। করতে হবে না বললেই হবে ছেলের বিয়ে বাবা কি করে হাত গুটিয়ে বসে থাকে?বিয়ে করে বউ নিয়ে ফ্লাটে তুলেছে কাল সারারাত দুই বোন ফ্লাটেই ছিল।সাত সকালে কোথায় গেল ছেলেটা?
কাল সারারাত রমিতার মুখ দেখেনি ফ্লাটে গিয়ে দেখল গিজগিজ করছে পাড়ার মেয়েরা ঘিরে বসে আছে রমিতাকে। দিলিপকে দেখে কে একজন বলল,ওই তো এসে গেছে যার চিন্তা করছিলে।
রমিতা মেয়েটিকে চিমটি কাটল।দিলীপ অপ্রস্তুত হয়ে বলে,আমি পরে আসছি।দেখি ওদিকে কতদুর কি হল? সিড়ি দিয়ে নামতে ক্যাটারারের ছেলেটার সঙ্গে দেখা হতে জিজ্ঞেস করল,সব ঠিক আছে তো?
--এবেলা কজন খাবে?
লক্ষণদাকে দেখে দিলীপ বলল,লক্ষণদাকে জিজ্ঞেস কর।
দিলীপের মনে পড়ল বৌদির কথা।মিতামাসীকে বলে যদি কিছু ব্যবস্থা করা যায়। বস্তির দিকে রওনা হল। মিতামাসীর জামাই মারা যাবার পর মেয়ে ললিতা দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে মায়ের সঙ্গে থাকে।ছেলে কলেজে পড়ে মেয়ে কলেজে। ললিতা লোকের বাড়ী কাজ করে ছেলে মেয়েদের দেখাশুনা করে দিদিমা। দিলীপ সব কথা খুলে বলল।মিতামাসী অবাক হুয়ে জিজ্ঞেস করে,ছোড়দার বউ পোয়াতি? তাহলি সামলাচ্ছে কি করে?
আলোচনা করে ঠিক হয় ললিতা যাবে কিন্তু মাঝে মাঝে এসে ছেলেমেয়েকে দেখে যাবে। দিলীপ স্বস্তিবোধ করে। রাতে পল্টু আসলে কথা বলা যাবে। পাড়ায় ফিরে আসতে শমিতা বলল,দিলীপদা তোমাকে বাবা খুজছে।
--একি তুমি?রমির কাছে কে আছে?
শমিতা ফিক করে হেসে বলল,তোমার বউ কচি খুকী নয় যে সব সময় আগলে আগলে রাখতে হবে?
--একটি চাটি দেবো,খুব পাকা হয়েছো?
--হি-হি-হি।তুমি দেখো বাবা কেন খুজছে? শমিতা পালিয়ে গেল।
দিলীপ উপরে ঊঠে দেখল জগমোহন উকিল তার অপেক্ষায় বসে আছেন। দিলীপকে দেখে বললেন,তুমি এসেছো?শোনো ফার্নিচারের দোকান থেকে ফোন করেছিল,মাল পত্তর কি ফ্লাটেই তুলে দেবে?
দিলীপ চিন্তা করে বলল,কদিন পরে ডেলিভারী দিতে পারবে না?
--না বাবা দেরী করা ঠিক হবে না।আজ পেমেণ্ট করতে হবে পেমেণ্ট করার পর ওরা আর পাত্তা দেবে না।অসুবিধে কি আছে প্যারিস হয়ে গেছে কেবল রঙ করা বাকী সরিয়ে সরিয়ে করে নিতে পারবে।
সুমিত্রা চা নিয়ে এলেন। দিলীপ বলল,এখন আবার চা নিয়ে এলেন মা? এবার বিশ্রাম করুণ।
--ছেলে মেয়ের জন্য করতে মায়েদের পরিশ্রম হয় না।সকাল থেকে দৌড়াদৌড়ি করছো এবার বসে একটু চা খাও।
সুমিত্রা চলে গেলেন না স্বামীর পাশে বসে বললেন,কি জানো বাবা আমার তো ছেলে নেই--।
--এসব কথা আজকে কি দরকার?জগমোহন আপত্তি করেন।
--তুমি সব কথায় কথা বলো কেন?শোন বাবা তুমি আমার শুধু জামাই না আমার ছেলের মত।
পরিবেশ বদলে যায়।সন্তানের জন্য মায়ের আকুলতা সুমিত্রার গলায়।একসময় খুব সদয় ছিলেন না কিন্তু সহজে মানুষ বদলে যায়।মনে পড়ল নিজের কথা যে জীবন যাপন করতো তাতে এ বাড়ীর ধারে কাছে আসার কথা ভাবতে পারতো না।পল্টুর সাহচর্যে জীবন তার একেবারে বদলে গেছে। অনায়াসে আজ সুমিত্রা দেবীর সন্তানের জায়গা নিয়ে নিয়ছে। দিলীপ চা শেষ করে সুমিত্রার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করল।

বাড়ীর সামনে গাড়ী এসে দাড়াতে শীলাদেবী সন্ত্রস্ত বোধ করে। কে এল আবার কোনো গোলমাল নয়তো?দিলীপকে নিয়ে তার চিন্তার শেষ ছিল না।এখন একেবারে অন্য মানুষ কিন্তু পুরানো কোনো কিছু আবার ভেবে স্বামীকে ডাকলেন,এই শুনছো দেখো তো কি ব্যাপার?গাড়ী থেকে নেমে পল্টূ একেবারে বাড়ীর মধ্যে ঢুকে বলল,আণ্টি কেমন আছেন?
আণ্টি?শীলাদেবী ভ্রু কুচকে অবাক হয়ে দেখেন।পল্টু বলল,চিনতে পারছেন না? আমি পল্টু দিলীপ কোথায়?
--চিনবো না কেন বাবা?তুমি একেবারে বদলে গেছো।তোমার মা যা করেছেন আমি কি করে তা ভুলবো বাবা?
--বিয়ে বাড়ীর একি ছিরি?
--বিয়ে হচ্ছে ফ্লাটে।এখানে বউ এনে কোথায় তুলবো?আজও বেঁচে আছি সে তোমার বাবার জন্যে। তোমাকে কোথায় বসাই?
পল্টু ইতিমধ্যে একটা পিড়ী নিয়ে মাটিতে বসে পড়েছে।শীলা তটস্থ হয়ে বললেন,এ কোথায় বসলে একেবারে পাগল। শীলাদেবী অতীতে হারিয়ে যান বলেন,তোমার মাকে সবাই ভাবতো অহংকারী পাড়ায় বেশি মিশতেন না।কিন্তু আমি তো জানি মানুষের প্রতি তার কতখানি দরদ ছিল।
বাড়ীর সামনে ধীরে ধীরে লোক জমতে থাকে।পল্টু বলল,আণ্টি একটু চা হবে?
--দেখো তো ছেলে কি বলে?তুমি বসো এক্ষুনি আমি চা নিয়ে আসছি।
পল্টু বসে বসে শৈশবে হারিয়ে যায়। অনেক বদলে গেছে বিশাল বিশাল ফ্লাট হয়েছে এসেছে নতুন নতুন লোক। সবাইকে চেনেও না।লক্ষণদা বিয়ে করবে কোনোদিন মনে হয় নি। পাড়া পাড়ার লোকজন নিয়ে তিনি সব কিছু ভুলে থাকতেন।সব পাড়াতেই এরকম এক-আধজন থাকে কারো বিপদে আপদে সব সময় অনাহুতভাবে হাজির, কোনো লাভ লোকসান যশ খ্যাতির হিসেব নিকেশ এরা করে না,মানুষের জন্য করায় যে আনন্দ সে টুকুতেই তারা তৃপ্ত,আলাদাভাবে ইতিহাস এদের মনে না রাখলেও সমাজে এদের পরোক্ষ অবদান কতটুকু বোঝা যাবে যেদিন এরা থাকবে না। এরাই সবাইকে বেধে রাখে এক গ্রন্থিতে।শৈশবের হাতছানি অনুভব করা যায় কিন্তু সেখানে ফিরে যাওয়া অসম্ভব।শীলা আণ্টি চা দিয়ে বললেন,দেখো তো বা কেমন হল?
পল্টু চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বলল,আণ্টি আর এককাপ চা হবে?
--কেন হবে না বাবা? শীলা আণ্টি চা আনতে গেলেন।পল্টূ উঠে বাইরে বেরিয়ে ইকবালকে ডেকে চায়ের কাপ ওর হাতে দিয়ে বলল,চা খেয়ে কাপটা ভিতরে দিয়ে যাবে।
জগমোহনের বাড়ী থেকে বেরিয়ে দিলীপের নজরে পড়ে তার বাড়ীর দিকে মনে হচ্ছে ভীড়। ওদিকে কি হল আবার? একটু এগিয়ে যেতে দেখল একটা গাড়ী দাঁড়িয়ে আছে। পল্টু নাকি কিন্তু এ সময়?কিছু হল নাতো?দ্রুত পা চালিয়ে বাড়ীর দিকে এগিয়ে গেল। ঐ তো বারান্দায় বসে মার সঙ্গে গল্প করছে পল্টূ। দিলীপকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে জড়িয়ে ধরে বলল,দিলীপ ওবেলা কিছু জরুরী অপারশন আছে। কিছু মনে করিস না,সংসার গুছিয়ে বোস একদিন আমরা দুজনে এসে পাত পেড়ে খেয়ে যাবো।
--বৌদি কেমন আছে?
--ভাল আছে,বেশি বয়সে প্রেগন্যান্সি যা হয়। তোর বউ কোথায় ?
--চল,তোকে নিয়ে যাচ্ছি।বুঝতে পারছি যাক তুই এসেছিস এতেই আমার ভাল লাগছে।
--আণ্টি আমি আসি?
--হ্যা বাবা আবার এসো।শুনেছি তুমি অনেক বড় ডাক্তার হয়েছো?
পল্টূ পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে বলল,আপনারা আশির্বাদ করলে আরো বড় ডাক্তার হবো।আসি।
বাইরে বেরিয়ে দিলীপকে জিজ্ঞেস করে,বেশিদুর হলে গাড়ীতে ওঠ।
--কাছেই রমেনকাকুর বাড়ী ভেঙ্গে ফ্লাট হয়েছে।
পল্টূ বলল,ইকবাল তুমি এসো।দিলীপের সঙ্গে হাটতে হাটতে ফ্লাটের নীচে আসতে একটি মেয়ে জিজ্ঞেস করল,পল্টূদা ভাল আছো?
পল্টূ দিলীপের দিকে তাকাতে দিলীপ বলল,রমিতার বোন শমিতা।
--মনে নেই কাধে তুলে কুল পাড়তে সাহায্য করেছিলে? শমিতা বলল।
বাচ্চা ছেলের মত উচ্ছসিত হয়ে বলল পল্টু,উঃ কতবড় হয়ে গেছো,চিনতেই পারিনি।
পল্টূ ঢুকতেই ভীড় সরে গেল।পল্টু কাছে গিয়ে বলল,জানো ওবেলা জরূরী কাজ পড়ে গেছে অঞ্জু বলল সকালেই দেখা করে এসো।পকেট থেকে একটা লাল বাক্স বের করে তার থেকে একটা হার বের করে রমিতার গলায় পরিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল,পছন্দ হয়েছে? অঞ্জু পছন্দ করে কিনেছে।
--কিছু খাবেন না? রমিতা জিজ্ঞেস করে।
--আণ্টির ওখানে চা খেয়েছি,আর একদিন আসবো।
--কথা দিলেন কিন্তু?
কথার মধ্যে লক্ষণদা এসে হাজির বলল,শুনলাম তুই এসেছিস? চল আমার ফ্লাটে একটূ চা খেয়ে যাবি।
দিলীপ বলল,আগে একটা জরুরী কাজ সেরে আসি,তারপর আসছি।
পল্টূ অবাক হয়ে তাকায় আবার কি জরূরী কাজ?দিলীপ বলল,একজন সবসময়ের লোক ব্যবস্থা করেছি তুই চল।
--করেছিস?তুই যা উপকার করলি,ইকবালের বউ মাঝে মাঝে আসে নার্সিং হোমে গিয়ে শান্তিতে কাজ করতে পারিনা।কোথায় যেতে হবে?
--গাড়ীতে ওঠ বলছি।লক্ষণদা যাবে?
তিনজনে গাড়ী নিয়ে মিতামাসীর বাড়ীর কাছে নামল। গাড়ীর শব্দে বেরিয়ে এল মিতামাসী। পল্টুকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করল। ললিতা ইতস্তত করছিল না বলে কাজ ছেড়ে চলে যাবে? লক্ষণদা বলল,তোমায় কিছু ভাবতে হবে না আমি বলে দেবো। ললিতাকে নিয়ে গাড়ী ফ্লাটের নীচে দাড়াতে পল্টূ বলল,বেশিক্ষণ বসবো না কিন্তু খালি এককাপ চা।
দিলীপ বলল,পল্টু আমি আসি অনেক কাজ পড়ে আছে।
--হ্যা হ্যা,বিয়ে ভালয় ভালয় মিটুক আমি ওকে নিয়ে আসবো।
দিলীপের উপরে লক্ষণদার ফ্লাট। ভিতরে ঢুকেই লক্ষণদা হাক পাড়ে,অপু একটু চা করো।
অপলা এসে কিছু বলতে গিয়ে পল্টুকে দেখে লক্ষণকে বলল,কোথায় ছিলেন আপনি? দিলীপের বাসায় সেই ডাক্তার আসছিল।
--তুমি দুই কাপ চা নিয়ে এসো।তারপর শুনছি তোমার কথা। লক্ষণদা মজা পায়।
অপলা চা নিয়ে এল।এই মানুষটা কেডা উনি কিছু বলে না।বলা নাই কওয়া নাই এইভাবে কেউ অপরিচিত মানুষ ঘরে ঢুকায়? পল্টু দ্রুত চা শেষ করে। লক্ষণদা বলল,পল্টু তোর বউদিকে একটু দেখতো।তুমি শুয়ে পড়ো।
অপলা হতবাক কি কয় লোকটা,কাপড় চোপড় চাপাদিয়ে শুয়ে পড়ল অপলা। পল্টু পেটের কাপড় সরায়,অপলার শরীর শির শির করে।গভীর মনোযোগ দিয়ে কাপড় কোমরের নীচে নামিয়ে হাত বোলায় পেটে। একসময় চোখ খুলে বলল পল্টু,ঠিক আছে।এত চিন্তা করছো কেন?
পল্টুকে এগিয়ে দিয়ে ফিরে আসতে অপলা জিজ্ঞেস করে,উনি সাধু না ফকির?চক্ষু বুজে মনে হল মন্ত্র পড়তেছিল।
--হ্যা-হ্যা-হ্যা।
--হাসেন ক্যান?
--পল্টু বড় ডাক্তার। আমারে খুব সম্মান করে।
--এই সেই ডাক্তার? আমারে বলেন নাই তো? রামো কি ভাবলো বলেন তো?

ললিতা পিছনের সিটে জড়োসড়ো বসে আছে।পল্টূ ড্রাইভারের পাশে বসেছে। পান্থনিবাসে যখন পৌছালো পল্টু খুব ক্লান্ত। ইকবালকে বিকেলে আসতে বলে ললিতাকে নিয়ে উপরে উঠে গেল।খাদিজা বেগম দরজা খুলতে পল্টু জিজ্ঞেস করে, নাজমা চলে গেছে?
--যাবে না?কটা বাজে খেয়াল আছে?আমি দেখতে পারি না বলে--।আরো কিছু বলতো কিন্তু সঙ্গে ললিতাকে দেখে থেমে যায়।
পল্টু ভিতরে ঢুকে বলল,এসো ললিতা।মিতামাসীর মেয়ে ললিতা তুমি দেখোনি।
খাদিজা অবাক হয়ে দেখে ললিতার বিধবা বেশ তারপর বলল,শোনো এই শাড়ী এখানে চলবে না।
ললিতার ধন্দ্ব লাগে মামীর বয়স মনে হয় মামার থেকে বেশি।খাদিজা বেগমের গলায় মমতার স্পর্শ পেয়ে মামীকে তার ভাল লেগে গেল। খাদিজা বেগম বলল,তুমি খেয়ে এসেছো?
--হ্যা আমি বাড়ী থিকে খেয়ে এসেছি।
--তাহলে বিশ্রাম করো।দেব খেতে এসো।
ললিতা অবাক হয়ে চারদিকে চোখ বুলায়।লোকে বলতেছিল মামী নাকি '., দেখে তো কিছু বোঝা গেল না।কি সোন্দর ব্যাভার।দেখতে লক্ষী প্রতিমার মত।
[+] 8 users Like kumdev's post
Like Reply
আপডেটের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
রেপু দিলাম।
Like Reply
                [৬৫]



                               ধীরে ধীরে সন্ধ্যে নামে।হোটেলের ঘরে বসে বসে একটাই চিন্তা, ড্যাফোডিলে হবে তো?কিন্তু পরমিতের কাছ থেকে কিভাবে নিষ্কৃতি পাবে।চণ্ডিগড় হতে দিল্লী পালিয়ে এসে মাসখানেক যেতে না যেতেই ঠিক খুজে বের করেছে। নার্সিং হোম থেকে বেরিয়ে নজরে  পড়ল পরমিত দাঁড়িয়ে আছে।মনটা বিরক্তিতে ভরে গেল।নিজের ভাই ভাবতে খারাপ লাগে।বোনের বিয়ের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।আসল মতলব কি জানতে বাকী নেই। কয়েক পা এগোতেই সামনে এসে দাড়ালো, চণ্ডিগড় ছেড়ে চলে এলি কেন?
--এখানে বেতন ভালো।
--কিছু শোচা কি নেহি?
যশবিন্দার বুঝতে পারে কি ব্যাপারে জিজ্ঞেস করছে।না বোঝার ভান করে জিজ্ঞেস করল,কোন ব্যাপারে?
--চৌতালাকে বারে মে?
--সাদিকে বারে কুছ শোচা নেহ।আভি আমার হাতে অনেক কাজ।
যশবিন্দার বুঝতে পারে দিল্লীতে বেশিদিন থাকা যাবে না। এদের হাত থেকে বাঁচতে তাকে পালাতে হবে।কোথায় পালাবে?তখনই কলকাতার কথা মনে পড়ে।অঙ্গনকে ফোন করবে না ভেবেও একবার ফোন করেছিল।কথা হয়নি অঙ্গন বাসায় ছিলনা এক মহিলা ধরেছিল। পরমিত যাবার আগে বলেগেছিল,নেক্সট উইক আমি আসছি।মনে মনে হাসল, এতদিনে নিশ্চয়ই বুঝে গেছে যশ ওখানে নেই।
হোটেল বয় এসে একটা চিঠি দিয়ে গেল।যশের মন আলোকিত, চিঠী না খুলেই যশবিন্দার বুঝতে পারে ড্যাফোডিলের থেকে এসেছে।


কোন ঘরে থাকবে ললিতা সব বুঝিয়ে দিল খাদিজা বেগম।ললিত গ্যাস জ্বালতে জানে আগে গ্যাসে রান্না করেছে। পল্টু একটা কাগজে লিখল লেকভিউ নীল কালিতে তার নীচে লাল কালিতে লিখল ড্যাফোডিল। ললিতাকে বুঝিয়ে বলল,যদি আমাকে কিছু বলার দরকার হয় তাহলে নীল কালিতে লেখা নম্বরে--তুমি পড়তে পারো?
ললিতা হেসে বলল,কেন পারবো না আমি ফাইভ পর্যন্ত পড়েছি।
--ভেরি গুড।নীল কালিতে লেখা নম্বর ঘুরিয়ে--।
--তোমারে ফোন করবো?
পল্টু দেখল ললিতাকে দেখে যেমন মনে হয়েছিল তা নয় বেশ স্মার্ট। পল্টু বলল,যদি দেখো মামীর কষ্ট হচ্ছে--।
--ব্যথা উঠলি?
--হ্যা ব্যথা শুরু হলে লাল কালিতে লেখা নম্বর ঘুরিয়ে বলবে ,ডাক্তার সোমের বাড়ী থেকে বলছি এ্যাম্বুলেন্স পাঠান।
--তাহলি কি হবে?
--এ্যাম্বুলেন্স এসে মামীকে নিয়ে যাবে।
--আমি সাথে যাবো না?
--তুমি তো যাবেই তার আগে দরজা বন্ধ করে দেবে।লাল কালির নম্বরে ফোন করে তারপর আমাকে ফোন করে বলবে কি হল না-হোলো?
--মামা কাগজটা ফোনের নীচে রেখে দাও নাহলি তাড়াতাড়ির সময় কোথায় খোজবো?
পল্টু কাগজটা ফোনের নীচে রেখে ঘরে ঢূকে দরজা বন্ধ করে দিল। খাদিজা বেগম বলল,তোমার কি মনে হয় আমি তখন বেহুশ হয়ে যাবো ঐসব আমি পারবো না?
--শিখিয়ে রাখতে দোষ কি? পল্টু বলল।
--আজ কোথায় অপারেশন লেকভিউ?
--হ্যা,এখন অন্য কোথাও যাচ্ছিনা।
পল্টু চেঞ্জ করে বেরোবার জন্য প্রস্তুত হয়। ইকবাল আসার সময় হয়ে এল। খাদিজা বেগম জিজ্ঞেস করল,তোমার মামার সঙ্গে দেখা হয় নি?
--অত সময় কোথায়?দিলীপ একটা উপকার করেছে।লক্ষণদা এসে তার বউকে দেখতে বলল।
--বউয়ের কি হয়েছে?
--লক্ষণদার বউ কনসিভ করেছে।
খাদিজা বেগম নিজের পেটে হাত বোলায়। কি করছে এখন ঘুমোচ্ছে? হায় আল্লা ওকে আলোর মুখ দেখা থেকে বঞ্চিত কোরনা।
নীচে গাড়ীর হর্ণ বাজল।খাদিজা বেগম ডাকল,ললিতা?
ললিতা চা নিয়ে ঢূকল।খাদিজা বেগম খুশি হয়ে বলল,এইতো একদিনেই কাজ শিখে গেছে।
--মামী সবাই বলে আমার নাকি খুব ব্রেন।ললিতা লাজুক গলায় বলল।
পল্টু হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ নিয়ে চুমুক দিয়ে বলল,বাঃ সুন্দর হয়েছে,তুমি করেছো?
--না মামী চা করে ফ্লাসে ভরে রেখেছিল।
--ফ্লাস না বল ফ্লাক্স।খাদিজা বেগম বলল।
ললিতা বলল,ফেলাকস।
পল্টু হেসে ফেলল,দেখে ললিতাও হাসতে থাকে।খাদিজা বেগমও না হেসে পারে না।

পুরানো বাড়ী থেকে খাট ছাড়া সব মালপত্তর ফ্লাটে আনা হয়েছে।দিলীপের মা আজকের রাত পুরানো বাড়ীতেই থাকতে চান। বউভাতে অনেককে বলা হয়েছে। অনেকেই পল্টুর খোজ করছিল।দিলীপকে একান্তে পেয়ে দেবব্রত জিজ্ঞেস করেন,পল্টু তার কথা কিছু বলছিল কিনা? খুব ব্যস্ত ছিল পল্টু সময় করে এসেছিল একটা প্রেজেণ্ট দিয়েই চলে গেছে। দিলীপের কথায় দেবব্রত স্বস্তি পায় না।একদিন ওর সঙ্গে দেখা করা দরকার। অপলা এসেছে দেখে বোঝা যায় সন্তান সম্ভবা। একটা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসেছিল সারাক্ষণ।জগমোহন তত্তাবধান করছিলেন দেখে বোঝার উপায় নেই উনি বরপক্ষ না কন্যাপক্ষ।সুমিত্রা মেয়ের পাশেই বসেছিলেন।

কয়েক দিন পরের কথা। ইকবাল এসে দেবকে নিয়ে গেছে।যতক্ষণ বাড়ীতে ছিল বেগমের সারা গায়ে হাত বুলিয়ে দিয়েছে। দেবের দিকে তাকিয়ে ভাবে,তার থেকে কত কম বয়স অথচ সেজন্য মনে কোনো আক্ষেপ নেই। যেই দেখে অবাক হয় বিশ্বাস করতে হোচট খায় দেব তার স্বামী।এখন যেন আরও বুড়িয়ে গেছে।যে আসবে তার মনেও কি প্রশ্ন জাগবে না বাবাকে দেখে?এক সময় মনে হয় এই বয়সে সন্তান ধারণ না করলেই পারতো।দেবকে খুব চিন্তিত মনে হচ্ছিল।
আল্লাহ পাক মেহেরবান একটা সন্তান কামনা কি অন্যায়? পেটটা অসম্ভব ফুলেছে। সন্তপর্ণে পেটের উপর হাত বোলায়। হাত ক্রমশ তলপেটের নীচে যোণীতে পৌছায়। শুকনো খটখট করছে। দেব বলছিল বয়স হলে যোণীর ইলাষ্টিটি ভাব কমে যায়।বাচ্চা বেরোতে খুব কষ্ট হয়। ললিতার সাড়াশব্দ নেই মনে হয় ঘুমোচ্ছে। তাকে সান্তনা দেয় মামী কোনো ভয় নাই প্রথম মেয়েটা হবার সময় খুব ভয় পেয়েছিল কিন্তু ছেলের সময় ফুচ করে বের করে দিয়েছে।জ্ঞান ছিল চোখের সামনেই বেরিয়েছে। অকালে মারা না গেলে আরো বের করতো। খাদিজা শুনেছে ওর স্বামী বরাবরই অসুস্থ ছিল ড.সোম ওকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। নিষেধ করেছিলেন কিন্তু ছেলের আকাঙ্খ্যায় বারণ মানে নি।
টেবিলের উপর সাজানো ফল নিজে কেটে খেতে ইচ্ছে করে না। অ্যানিমিয়া শোনার পর থেকে কাড়ি কাড়ি ফল আনা শুরু করেছে। ললিতা বলে,মামী পুয়াতি হলি সবার এনিমি হয়। শরীরের সব রক্ত শত্রুটা শুষে নেয়। অজ্ঞ মেয়েটার কথা শুনতে বেশ লাগে। সব ব্যাপারে কথা বলে ওর সরলতা ওকে এত সাহসী করেছে। মনে হচ্ছে ফোন বাজছে। খাদিজা বেগম ধীরে খাট থেকে নেমে ফোন ধরতে এগিয়ে যায়। শরীর খুব দুর্বল বোধ হয়। ললিতা ঘুম থেকে উঠে পড়েছে বলল,একী মামী তুমি উঠলে ক্যান আমি তো ধরতিছিলাম।
খাদিজা ফোন কানে নিয়ে বলল,হ্যালো?..হ্যা বলুন...না বাড়ীতে নেই।..আপনি কে বলছেন?...হ্যালো--হ্যালো?
--কে মামী?
--কি জানি?ফোন কেটে দিল।
খাদিজা বেগম মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছিল,দেওয়াল ধরে নিজেকে সামলে নিল। ললিতা বলল, এই জন্যি বললাম তুমার উঠতি হবে না। বললি শুনবা না,এখন খুব সাবধানে থাকতি হয়।
--তুই এত কথা বলিস কেন?সন্ধ্যে হয়ে এল,চা কর।
ললিতা এগিয়ে এসে খাদিজা বেগমকে ধরে ধরে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বলল, সব সময় নিজির বুদ্ধি খাটাবা না তো?
খাদিজা বেগম বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়ে হেসে বলল,তোর বুদ্ধিতে চলতে হবে?
ললিতার মুখ কালো হয়ে যায়। মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। খাদিজা বেগমের খারাপ লাগে জিজ্ঞেস করে,রাগ হয়ে গেল? আচ্ছা ঠিক আছে এবার থেকে তোর কথা শুনে চলবো। এবার চা কর।
ললিতা হেসে বলল,আগে ফল কেটে দিই?
--আগে চা কর,ভীষণ মাথা ধরেছে।
ফোনটা পাওয়ার পর থেকে মাথার মধ্যে একটা চিন্তা ঘুর ঘুর করতে শুরু করে। উপেক্ষা করার চেষ্টা করে তবু আবার ঘুরে ফিরে আসে। ললিতা চা নিয়ে এল।খাদিজা বেগমকে চা দিয়ে নিজে মেঝেতে বসে চা খেতে থাকে। পাশে ফলের ঝুড়ি আর ছুরি।
--তুই এত ব্যস্ত হচ্ছিস কেন?
--ফল সন্ধ্যের আগে খাতি হয়।
খাদিজা বেগম চায়ে চুমুক দিতে দিতে ভাবে দেব এখন কি করছে? ইদানীং বেশি দেরী করে না তাড়াতাড়ি ফিরে আসে। খাদিজা বেগম ললিতার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় জিজ্ঞেস করে, আচ্ছা ললিতা তোর স্বামী তোকে খুব ভালবাসতো?
ললিতা লজ্জায় লাল হয়। ফল কাটতে কাটতে বলে, কে জানে ভালবাসতো কিনা তবে কোনোদিন আমার গায়ে হাত দেয় নি। কি ভেবে ফিক করে হেসে ফেলে।
--হাসছিস কেন?
--কিছু না এমনি।জানো মামী ও ছেলো একদম পাগল।
--পাগল? কাজকর্ম করতো না?
--সেই পাগল না,আমার মেয়ে হবার পর লুকোয় লুকোয় আমার দুধ খাতো।ললিতা হেসে গড়িয়ে পড়ে আর কি।
খাদিজা বেগম লজ্জা পেল। কথা আর না বাড়তে দেওয়া ভাল।কি কথায় কি এসে পড়বে শেষে।ফল কেটে একটা প্লেটে করে এগিয়ে দিয়ে ললিতা রান্না করতে চলে গেল।
খেয়ে শুয়ে পড়লাম,রান্না ঘরে বাসনের শব্দ পাচ্ছি। প্রথম দিকে আমি লল্লিতাকে সাহায্য করতাম এখন দাঁড়িয়ে থাকলে মাথা ঘোরে।ও অবশ্য রান্না খারাপ করে না। কথায় বলে অলস মস্তিষ্ক শয়তানের বাসা। যত আজে বাজে চিন্তা আসছে।ঘুমিয়ে পড়েছিল ললিতার ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো। ললিতা বলল,মামা আসতিছে।
খাদিজা বেগমকে ধরে বসিয়ে দিল। বেল বাজতে দরজা খুলে দিল ললিতা। দেব জিজ্ঞেস করল,কেমন আছে তোর মামী?
--শরীর ভাল না।
খাদিজা বেগম বিরক্ত হয় বড় বেশি কথা বলে ললিতা। দেব ডাক্তার দেখে বুঝতে পারবে না,তোর অত ওস্তাদী করার কি দরকার। দেবকে দেখে মনে হল বেশ ক্লান্ত। কিছু করতে পারছে না ভেবে খুব খারাপ লাগে।
--অঞ্জু তোমার শরীর খারাপ লাগছে?পল্টু ঢুকে জিজ্ঞেস করল।
--ওর কথা বাদ দাওতো।তুমি বিশ্রাম করো।
--তুমি শুয়ে পড়ো দেখি। পল্টু ব্যাগের ভিতর থেকে প্রেশার মাপার যন্ত্র বের করল। খাদিজা বেগমের হাতে জড়িয়ে পাম্প করতে করতে পল্টুর কপালে ভাজ পড়ে। ললিতা পাশে দাঁড়িয়ে দেখে।
খাদিজা বেগম জিজ্ঞেস করে, প্রেশার খুব লো?
--তুমি ফল খাচ্ছো না?
--খাবো না কেন,এই তো সন্ধ্যে বেলা খেলাম।
--সকালে খেয়ে আপেল ধুয়ে মাথার কাছে রেখে দিলাম।যেমনকার তেমন পড়ে আছে। ললিতা অনুযোগের সুরে বলল।
--এ্যাই তোকে কি লাগানি ভাঙ্গানি করার জন্য রাখা হয়েছে? তুই এখান থেকে যা।
ললিতা চলে গেল। পল্টু গুম হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। খাদিজা বেগম জিজ্ঞেস করে,কি ভাবছো বলতো?
--অঞ্জু রোজ কত কঠিন কঠিণ সিদ্ধান্ত নিই কিন্তু নিজের বউয়ের বেলা কেমন দিশাহারা বোধকরি।
--তুমি চেঞ্জ করে আমার কাছে এসে বোসো দেখবে আমি একেবারে সুস্থ।
ললিতা রান্না ঘরে রান্না করছে। রান্না প্রায় শেষ শুধু ভাত হয়ে গেলে আজকের মত শেষ। মামা মামী গল্প করতেছে সে ভাবে মামী কত বড়,ঐটুক মামার বাচ্চা মামীর পেটে?
পেটে হাত বোলাতে বোলাতে পল্টু জিজ্ঞেস করল, অঞ্জু তোমার যদি মেয়ে হয় খারাপ লাগবে?
খাদিজা বেগম ছেলে না মেয়ে এভাবে ভাবে নি জিজ্ঞেস করে,কেন মেয়ে তোমার পছন্দ নয়?
--তুমি মেয়ে আমার মা মেয়ে অপছন্দ হবে কেন?
--আমি অতশত ভাবি না,একটা সন্তান হলেই আমি খুশি।যার মধ্যে  আমরা দুজনেই থাকবো। কিভেবে খাদিজা বেগম বলে,একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
পল্টু হেসে বলল, মেয়ের কথা কেন ভাবছি?
--তা নয়। আচ্ছা যশ বিন্দার কি কলকাতায় এসেছে?
--যশ? হঠাৎ যশের কথা কেন মনে এল?
--কলকাতায় কিনা তুমি বলো?
--শুনেছিলাম দিল্লীতে একটা নার্সিং হোমে আছে।ভবানীপুরে ওর অনেক রিলেটিভ থাকে আসতেও পারে। কেন বলতো?
পল্টুর মনে পড়ল দিল্লীর কথা।অনেক করেছিল একটা বাঙালী ছেলের জন্য। যশের মনটা উদার ইচ্ছে করলে তাকে বিপদে ফেলতে পারতো।মেয়েদের আসন পল্টুর মনে অনেক উপরে। সমস্ত ক্লেদ তারা নিজেরা গ্রহণ সমাজ সংসারকে তারা পরিপাটি
করে রেখেছে। এখন কেমন আছে বিয়ে-থা করে নিশ্চয়ই সংসারী হয়েছে।
খাদিজা জিজ্ঞেস করে,মেয়েটাকে তোমার কেমন মনে হয়েছে?
পল্টু হাসল তারপর কিভেবে বলে,আমাকে খুব সাহায্য করেছে।নতুন জায়গা দিল্লী কিছুই চিনি না জানি না--খুব চঞ্চল।
খাদিজা বেগম দেবের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বোঝার চেষ্টা করে।পল্টু বলল,সেদিনের ব্যাপারটা একটা এ্যাক্সিডেণ্ট বলতে পারো।যশও সেজন্য অনুতপ্ত বলেই মনে হয়।
ললিতা এসে জিজ্ঞেস করে,মামা খেতে দিই?
[+] 11 users Like kumdev's post
Like Reply
আপনার গল্পে মিলনদৃশ্যের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা বা উদ্দাম সঙ্গমের আতিশয্য হয়তো নেই, কিন্তু প্রত্যেক পর্বে ঘটনা পরম্পরা এমন ভাবে জাল বিন্যাস করে যা গল্পের মাত্রাকে এক অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেয়
[+] 5 users Like Mr Fantastic's post
Like Reply
মানবিকতায় ভরা আপডেট।
[+] 1 user Likes buddy12's post
Like Reply
(13-03-2020, 01:41 PM)Mr Fantastic Wrote: হ্যাঁ, এরপর পিনুরামকে পেলেই ব্যাস জমে যাবে

একদম।
Reply
তোমার লেখা যত বার পড়ি, কোথায় যেন হারিয়ে যাই।
[+] 5 users Like TumiJeAmar's post
Like Reply
        [৬৬]



                      সকালে খেতে বসে ভাত নাড়তে নাড়তে পল্টু গভীর চিন্তায় নিমগ্ন। গুরুত্বপুর্ণ অপারেশন আছে না গেলেই নয়। অঞ্জুকে রেখে ইচ্ছে করছে না যেতে।খাটে শুয়ে শুয়ে দেখছে খাদিজা বেগম,অবিন্যস্ত বেশবাস উঠে এসে জিজ্ঞেস করে, কি ভাবছো বলতো?
খাদিজা বেগমকে দেখে পল্টু উদবিগ্ন স্বরে বলে,ও হো তুমি আবার কেন উঠে এলে?
--শুয়ে শুয়ে দেখছি না এসে কি করবো? আল্লাহপাকের উপর ভরসা রাখো।
--ভাবছি কদিন ছুটি নিয়ে বাড়ীতে থাকবো।তুমি বোসো আমি মুখ ধুয়ে আসি।
পল্টু বেসিনে হাতমুখ ধুয়ে এসে বলল,চলো ঘরে চলো।
খাদিজা বেগমকে ধরে ধরে ঘরে নিয়ে যেতে বলল,আমাকে একটু আদর করো।খাদিজা বেগম মুখ তুলে ধরে পল্টু দরজার দিকে তাকিয়ে মুখ নামিয়ে আনে ঠোটে ঠোট রেখে জিভটা মুখে নিয়ে চুষতে লাগল। তারপর বলল,তুমি বিছানায় বসে খাবে।ললিতা
যা বলে তাই শুনবে।লক্ষ্মী হয়ে থাকবে।কাল থেকে আমি বাড়ীতে থাকবো।
নীচে গাড়ীর হর্ণ বাজে। ব্যালকণিতে গিয়ে দেখা দিয়ে ঘরে এসে পল্টু তৈরী হয়।
পার্বতী ম্যাডাম নীচে নেমেছেন সবাই তটস্থ। অফিসে গিয়ে জব ডিশট্রিবিউশন দেখে বললেন,এটা কি করেছেন?একজনের উপর এত লোড?
--পেশেণ্ট পার্টি সবাই ডাক্তার সোমকে চায় কি করবো বলুন?
--চাইলেই দিতে হবে? ট্যাক্টফুলি ম্যানেজ করতে হবে।ছেলেটা একেবারে বাবার মত মুখ বুজে কাজ করে যায়। পার্বতী ম্যাডাম উঠে দাঁড়িয়ে বলেন,পেশেণ্ট পার্টির কথায় নার্সিং হোম চলবে না।ডা.সোমের উপর লোড কমান। আর বলবেন বাড়ী যাবার আগে
যেন মাম্মীর সঙ্গে দেখা করে যায়।
পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে সুর্য। পল্টু হেলান দিয়ে বসে জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে। অঞ্জুর কথা ঘুরপাক খাচ্ছে মনে। কি করছে অঞ্জু?
ললিতা খাইয়ে ফল কেটে দিয়েছে মামীকে। খাদিজাবেগমের মুখ অরুচি কিছু খেতে ইচ্ছে করে না। নানা কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে।ললিতা ঘরে ঢুকে দেখল পাশে কাটা ফল,ঘুমিয়ে পড়েছে মামী। থালাটা নিয়ে বেরিয়ে গেল। না খেলে সে কি করতে
পারে। বাচ্চা মেয়ে হলে না হয় কথা ছিল।অবশিষ্ট ফল খেয়ে নিল কি করবে ফেলে দেবে?যার জন্য আনা তার চেয়ে বেশি খেতে হয় তাকে।নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ে। বাড়ী ছেড়ে এসেছে কতদিন,মনে পড়ে ছেলেমেয়ের কথা। মামাকে বললে পৌছে দেবে গাড়ী করে কিন্তু এই অবস্থায় ফেলে যায় কি করে? বাচ্চা হবার পর না হয় ঘুরে আসা যাবে ক-দিন। গাভীন হলে মেয়েদের শরীর একটু খারাপ হয় কিন্তু মামীর শরীর খুব ভেঙ্গেছে। মামার বয়স কম এই বয়সের রসের তেজ খুব বেশি হয়তো সেই তেজ মামীর শরীর নিতে পারছে না। মামা ডাক্তার মামাই ভাল জানে।
ড.সোম ঢুকতেই অপেক্ষমান রোগীর বাড়ীর লোকের মধ্যে শুরু হয়ে যায় ফিসফাস। পল্টু সোজা উপরে উঠে নিজের চেম্বারে ঢুকে পোষাক বদলায়। টেবিলের উপর পড়ে পাঁচটা ফাইল।টেনে নিয়ে চোখ বোলাতে থাকে। পাঁচজনের চার জনই মহিলা। অঞ্জুর কথা মনে পড়ল। পল্টু চোখ বন্ধ করে বারবার অন্যমনষ্ক হয়ে যাচ্ছে আজ।
ললিতার ঘুম ভাঙ্গতে মামীর ঘরে উকি দিল। খাদিজা বেগম ঘুমিয়ে আছে মাথার কাছে বালিশের পাশে একটা ফাইলে গুছিয়ে রাখা যাবতীয় প্যাথোলজিক্যাল টেষ্ট রিপোর্ট প্রেসক্রিপশন ইত্যাদি।ঘমোচ্ছে ঘুমোক চা করে ডাকলেই হবে।
রান্নাঘরে গিয়ে চায়ের জল চাপাল।মামীর বাচ্চাটা হলে নিশ্চিন্ত হওয়া যায়। বাড়ীতে চা পাতা চিনি দুধ একসঙ্গে দিয়ে ফোটাতো।মামী বলেছে এতে নাকি চায়ের বাস চলে যায়। জল গরম করে নামিয়ে তাতে চা পাতা দিতে হয়,মামী শিখিয়ে দিয়েছে। "ললিতারে"চিৎকারে বুকের মধ্যে ছ্যৎ করে ওঠে।গ্যাস বন্ধ করে ছুটে গেল ললিতা।মামী মেঝেতে পড়ে আছে বিছানা ভিজে গেছে।মেঝেতেও জল মামী বলল,ফোন কর।
কি করবে ললিতা দিশাহারা বোধ করে। কাপতে কাপতে ডায়াল করে,হ্যালো মামী...। খাদিজা বলল,বল ড.সোম।
--হ্যা হ্যা ড.সোম.. পেচ্ছাপের মত জল বেরোচ্ছে।আচ্ছা আচ্ছা।ফোন রেখে দিল।
ললিতা কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,মামী তুমার কষ্ট হচ্ছে?
--তুই মামাকে বল।
ললিতা আবার ফোন করে। লাইন পায় না,খাদিজা বেগম বলল,আবার চেষ্টা কর। বারবার কর।
--হাসপাতাল থেকে গাড়ী পাঠাচ্ছে তুমার শাড়ী ভিজে গেছে। আলমারি থেকে শাড়ী বের করে বলল,এইটা পরো।
ললিতা একটা ভিজে কাপড় এনে মেঝে মুছতে শুরু করে।
--আমি পারছি না তুই শাড়ীটা পরিয়ে দে।
ললিতা উঠে মামীকে শাড়ী পরাতে লাগল।শাড়ী পরানো হলে খাদিজা বেগম বলল,তুই ফোন কর।
নীচে গাড়ীর শব্দ হতে ললিতা ব্যালকনিতে গিয়ে উকি দিয়ে হাত নেড়ে ইশারা করে ভিতরে এসে ফোন করে,হ্যালো মামাকে দেন তো?জিভ কেটে বলে,ডাক্তার সোম.. আমি ললিতা..কিছু বলতি হবে না..ললিতা বললি হবে।
স্ট্রেচার নিয়ে দুটী লোক উপরে উঠে এসেছে। খাদিজা বেগমকে শুইয়ে নীচে নিয়ে গেল।ললিতা দরজায় তালা দিয়ে সঙ্গে গেল।
এ্যাম্বুলেন্স থেকে নেমে ললিতার চোখ ধাধিয়ে যায় কোথায় এল ,মামীকে নিয়ে উপরে চলে গেল। তারপর একটা ঘরে নিয়ে গেল ললিতা যেতে গেলে একজন বাধা দিল। কি করবে বুঝতে পারে না। একজন মেয়ে ডাক্তার এসে জিজ্ঞেস করল, মিসেস সোমের সঙ্গে কে এসেছেন?
ললিতা এগিয়ে যেতে বলল,কাগজপত্র কোথায়?
কি বলবে কিসের কাগজ পত্র?ডাক্তার মহিলা বলল,ড.সোমকে খবর দেওয়া হয়েছে? আপনি কে?
--আমি ললিতা।
--উনি আপনার কে?
--আমি কাজ করি।
--ও গড! তুমি কাগজগুলো নিয়ে আসতে পারবে?
ডাক্তার মহিলা একটা লোককে ডেকে বলল,ওর সঙ্গে যাও তো।একশো টাকা দিল। ট্যাক্সিতে পৌছে ললিতা চিন্তায় পড়ে যায় কি কাগজ নিতে হবে? খাটের উপর ফাইল দেখে মনে হল এটা হতে পারে। বালিশের নীচ থেকে একটা কাগজ বেরিয়ে আছে সেটাও ফাইলে ঢুকিয়ে নিল।
খাদিজা বেগমকে দেখছিলেন ড.চৌধুরি,আজ তিনি আসেন নি।সেজন্য ড.শেঠির অধীনে ভর্তি করা হয়।তিনি অসহায় বোধ করেন কেস হিষ্ট্রি কিছুই জানা নেই,ব্লাড গ্রুপ কি?তাকে সাহায্য করছেন ড.কাউর।ড.কাউর সবে যোগ দিয়েছেন,খাদিজা বেগমকে দেখে তিনি অতি আগ্রহী। ভেবেছিলেন ড.সোমের সঙ্গে দেখা হবে কিন্তু তিনি আসেননি,সঙ্গে এসেছে বাড়ীর কাজের লোক।গরজ করে টাকা দিয়ে বাড়ী থেকে কাগজ পত্র আনার ব্যবস্থা করেছেন।পেষেণ্ট ক্রমশ ঝিমিয়ে পড়ছে।পেশেণ্টকে রক্ত দিতে হবে।রক্ত দেবার জন্য চ্যানেল করে অপেক্ষা করছেন কাগজপত্র দেখে ব্লাড গ্রুপ জেনে নিয়ে ব্যবস্থা করবেন। এখন রক্ত নিয়ে ব্লাড গ্রুপ নির্ণয় করা সময়ের ব্যাপার। পেশেণ্ট হেচকি তুলছেন,ড.কাউর সিনিয়ারকে ডাকলেন। ড.শেটী দেখলেন বেবি বেরোতে চাইছে। ড.শেঠী বললেন,পুশ ম্যাডাম পুশ।
খাদিজা বেগম দাতে দাত চেপে সন্তানকে বের করার চেষ্টা করে। ড.শেঠী বললেন, প্লিজ ট্রাই--ট্রাই।লিটল মোর।
ড.কাউর ললিতাকে দেখতে পেয়ে বেরিয়ে এসে ললিতার কাছে থেকে ফাইল নিয়ে খুলতে একটা কাগজ মাটিতে পড়ে যায়।ললিতা কাগজটা তুলে ড.কাউরের হাতে দিল।কাগজটা একপলক দেখে ভাজ করে বুকে গুজে রাখলেন। কাগজ ঘাটতে ঘাটতে দেখলেন সব সুন্দর করে সাজানো। ড.চৌধুরির প্রেসক্রিপশন পর্যন্ত সযত্নে রাখা।ভিতর থেকে ড.শেঠীর উত্তেজিত গলা পাওয়া গেল,ড.কাউর--নার্স।
ড.কাউরকে দেখে ড.শেঠী বললেন,পেশেণ্ট সেন্স হারিয়েছে বেবি সিরিয়াস কণ্ডিশন, নার্স ফোরসেপ প্লিজ।
নার্স ফোরসেপ এগিয়ে দিতে বেবিকে টেনে বের করার চেষ্টা করেন। ড.কাউর পেশেণ্টের পেটে চাপ দিতে লাগলেন।এইভাবে টানাটানি করতে করতে বাচ্চাটা বেরিয়ে এল। বেশ বড় ফিমেল বেবি। কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করার পর বাচ্চা কেদে উঠল। দ্রুত নার্সের হাতে দিয়ে পেশেন্টের জ্ঞান ফেরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন ড.শেঠী। হাতের কজি হাতে ধরে নাড়ি পরীক্ষা করেন, ও মাই গড পেশেণ্ট সেন্সলেস।দৌড়ঝাপ শুরু হয়ে যায়।ড কাউর কব্জি ধরে বোঝার চেষ্টা করেন।


পল্টুর অপারেশন শেষ চেঞ্জ করে বেরোবার জন্য প্রস্তুত। একজন অফিস করমী এসে বলল,স্যার ম্যাডাম ললিতা আপনার খোজ করছেন।
--ম্যাডাম ললিতা? পল্টুর নামটা মনে মনে চিন্তা করছিল। কর্মচারিটি বলল,ললিতা বললে মামা বললেই বুঝতে পারবে।পল্টুর মনে আগুণ জ্বলে ওঠে লোকটির কলার চেপে ধরে বলল,স্কাউণ্ড্রেল এতক্ষণ বলেন নি কেন? তারপর লজ্জা পেয়ে 'স্যরি' বোলে দ্রুত সিড়ি দিয়ে নীচে নেমে গেল। গাড়ীতে উঠে বলল,ইকবাল ড্যাফোডিল নার্সিং হোম চলো।

[+] 5 users Like kumdev's post
Like Reply
দারুণ আপডেট দাদা চালিয়ে যান সাথে আছি।
Like Reply
    [৬৭]


                 গাড়ীতে বসে অভুতপুর্ব অনুভুতিতে আচ্ছন্ন হয় পল্টুর মন। হাত মাথার পিছনে দিয়ে নিজেকে এলিয়ে দিল।চোখ বন্ধ করে হারিয়ে যায় অন্য এক জগতে। সেই প্রথম দিন যেসিন অঞ্জুর সঙ্গে দেখা স্পষ্ট ভেসে উঠল চোখের সামনে সেই মুখ তাকিয়ে আছে তার দিকে।সেদিন ঘুণাক্ষরে টের পায় নি এভাবে জীবনে জীবন জড়িয়ে যাবে।বয়স ধর্ম কোনোকিছু বাধা হয়ে দাড়াতে পারে নি।কেমন করে সম্ভব হল? আজ বেরোবার আগে অঞ্জু বলেছিল,আমাকে একটু আদর করো। যদি বলতো আজ দরকার নেই নার্সিং হোম যাবার তাহলে হয়তো পল্টু যেতো না কিন্তু অঞ্জু বলেনি।ললিতার কথা রিসিভিং সেকশনে বলে রাখলে ওরা তাকে যথা সময়ে খবর দিত,কিন্তু বলে রাখেনি।এসবই হয়তো তার মর্জিতে। লোকে বোলে ড.সোমের হাতে জাদু আছে কিন্তু পল্টু জানে সব কিছুর অন্তরালে আছে এক অদৃশ্য জাদুকর যার নির্দেশে ঘটে চলেছে একের পর এক আমরা নিছক রঙ্গমঞ্চের কুশীলব। ভাসতে ভাসতে চলেছি কোন কূলে কোন ঘাটে গিয়ে হবে যাত্রাবসান কে বলতে পারে?মনে হয় এতক্ষণে ডেলিভারী হয়ে গেছে।ফ্যামিলি মেম্বার দুই থেকে তিন হল। ইকবালের ডাকে তন্দ্রা ভাঙ্গে,দরজা খুলে দাঁড়িয়ে  আছে।
নার্সিং হোমের সিড়িতে বসেছিল ললিতা।মামাকে গাড়ী থেকে নামতে দেখে উঠে দাড়াল। কি যেন বলতে চায় অথচ কিছুই বলতে পারে না। ললিতার মুখ চোখ দেখে সন্দেহ হয় তাহলে কি? বোবা দৃষ্টি মেলে তাকে সবাই দেখছে।মনের মধ্যে ভু-কম্পন অনুভুত হয়। নিজেকে সামলে নিয়ে এগিয়ে গেল। ললিতা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না গলায় আটকে থাকা একটা শব্দ ছিটকে বেরিয়ে আসে, মাম-ই-ই-ই।
পল্টু হাত তুলে তাকে বিরত করে জিজ্ঞেস করল,মামী কোথায়?
ললিতা সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে থাকে পিছনে পল্টু। সিড়ির উপর থেকে স্থির দৃষ্টিতে লক্ষ্য করে ড.যশবিন্দার। অনেক বদলে গেছে অঙ্গন। চোখ কান খোলা কিন্তু মন যেন কোন অন্য জগতে। এই অঙ্গন তার চেনা। উপরে উঠে যশবিন্দারের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,ড.চৌধুরি কোথায়?
--উনি আজ আসেন নি। ড.শেঠী এ্যাটেণ্ড করেছেন। যশবিন্দার বলল।
পল্টু মনে মনে ভাবে ড.চৌধুরি আজই এলেন না? এও তার কারসাজি সব পরিপাটি ভাবে সাজানো। ধীরে ধীরে ঘরের সামনে গিয়ে দাড়ালো।ভিতরে একটা টেবিলে শায়িত খাদিজা বেগম,আপাদ মস্তক সাদা কাপড়ে ঢাকা। ড.যশের ইশারায় নার্সরা বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। কাছে গিয়ে পল্টু মুখের কাপড় সরিয়ে অভিমাণী দৃষ্টিতে খাদিজা বেগমের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।যশবিন্দার অবাক হয়ে অঙ্গনকে দেখছে। পল্টু বলল,বাঃ বা বা বাআআআ..। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে খাদিজা বেগমের শরীরের উপর ড.অনঙ্গদেব সোম। যশবিন্দার জড়িয়ে ধরে তুলে দাড় করিয়ে বলল,অঙ্গন কণ্ট্রোল ইয়োরসেলফ।
যশবিন্দারের বুকে মুখ রেখে বলল,যশ আমাকে একা ফেলে চলে গেল। হাউ শি ক্যান সো?
যশবিন্দার একটা চেয়ারে পল্টুকে বসিয়ে দিয়ে বলল, আই ফিল ইউ ডিয়ার বাট ইউ নো উই আর হেল্পলেস।
কিছুক্ষণ চুপ করে কি ভাবে তারপর বলল,আই এ্যাম সরি যশ।যশবিন্দারকে অবাক হয়ে দেখে,জানো অঞ্জু বলছিল তুমি কলকাতায় এসেছো। কবে এলে?
--অনেক কথা পরে বলবো।
--আমি জিজ্ঞেস করলাম,অঞ্জু তোমার যশকে কেমন লাগে?
--কি বলেছিলেন?
--কিছু বলেনি এড়িয়ে গেছিল।
যশবিন্দার বুক থেকে কাগজ বের করে অঙ্গনের হাতে দিল।পল্টু দেখল সাদা কাগজে লেখা,yas is very pretty and beautiful--Anjona.
--এটা তুমি কোথায় পেলে?
--পরে বলবো, তোমার বেবি দেখবে না?
--বেবি? দেখেছো কেমন বিপদে ফেলে গেল? কি করে সামলাবো ওকে?
--আমি সামলাবো।তুমি এবার শেষ কাজটা করার ব্যবস্থা করো।
--তোমার তো  সংসার আছে --ওরা কি রাজি হবে?
--পরে সব বলবো।
ইকবালের বুঝতে বাকী থাকে না মেমসাব আর এই দুনিয়ায় নাই। সাহেবকে নিয়ে চিন্তা হল। মানুষটা বড় ডাক্তার হইতে পারে কিন্ত বড় সাদাসিধা। পল্টু নীচে নেমে গাড়ীর কাছে এসে দাঁড়ায়। ইকবাল এসে বলল,ডাক্তার সাব কি ভাবতেছেন?
--ইকবাল মেমসাব মারা গেছে শুনেছো?
--অনুমতি করলে একটা কথা জিজ্ঞাসা করি। মেমসাবরে দাহ করবেন না গোর দিবেন?
এই কথাটা পল্টুর মনে আসেনি। জিজ্ঞেস করে, কি করবো তাই ভাবছি।
--মেমসাব মাজারে যাইতেন। আমারে জিজ্ঞাসা করলে আমি বলবো গোর দিলে ভাল হয়।
--কিন্তু আমি তো নিয়ম কানুন কিছু জানি না ইকবাল।
--আপনেরে কিছু জানতে লাগবে না।আপনে একটু অপেক্ষা করেন,আমি সব ব্যবস্থা করে আসতেছি। ইকবাল গাড়ী নিয়ে চলে গেল।ললিতা এসে পল্টূকে উপরে ডেকে নিয়ে গেল। যশবিন্দারের চেম্বারে গিয়ে দেখল তার জন্য খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছে যশ।ললিতাকেও দিয়েছে।
খাদিজা বেগমের নাম এবং ইকবালের চেষ্টায় বেশ কিছু যুবক এগিয়ে এল।তারাই সমগ্র ব্যাপারটা দেখভালের দায়িত্ব নিল। কাশিপুর গোরস্থানে পৌছে পল্টু দেখল তার আগেই খাদিজা বেগমকে সেখানে আনা হয়েছে। উত্তর দক্ষিণ মুখী কবর খনন চলছে। ইমাম সাহেব তত্বাবধান করছেন। গোরস্থানের গেটের কাছে পল্টু বসে আছে বিধ্বস্থ ক্লান্ত।
অশোক আগরাআল এসেছে সঙ্গে শেখ সুকুর আলি সান্ত্বনা দিচ্ছে ডাক্তারবাবুকে। খাদিজা বেগমের স্বামী * শুনে শেষ মুহুর্তে বেকে বসে ইমামসাহেব,এই ব্যাপারে থেকে তিনি জাহান্নামে যেতে চান না।ইকবাল হাতে পায়ে ধরলেও ইমাম সাহেব সিদ্ধান্তে অটল।বড় মুখ করে বোলেছিল সব ব্যবস্থা করবে ইকবাল এখন কি বলবে ডাক্তার সাবকে? সুকুর আলিকে দেখে ইকবাল এগিয়ে যেতে সুকুর আলি জিজ্ঞেস করে,কিরে সব কাজ হয়েছে?

ইকবাল তাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে ইমামের কথা বিস্তারিত বলে।সুকুর আলি কবরের দিকে এগিয়ে গেল।ইমাম সাহেবকে দেখে বলল,সেলাম আলেকুম ইমাম সাহেব।
--আলেকুমাসলাম।আপনে?
ইকবাল বলল,এনারে চেনেন না? ইনি শেখ সুকুর আলি।
ইমাম নাম শুনে ঢোক গিলে বলেন,বিলক্ষণ আপনেরে কে না চিনে।
তোবা তোবা এই নাকি সুকুর আলি?ইমাম মাওলানা মাজহার উদ্দীন ইতিপুর্বে সুকুর আলিরে চোখে না দেখলেও তার খ্যাতি সম্পর্কে সবিশেষ অবগত। না জেনে কি ভুল করতে চলেছিলেন,খোদা মেহের বান এ যাত্রা বেঁচে গেলেন।
ড্যাবডেবিয়ে সুকুর আলিকে লক্ষ্য করেন,খাদিজা বেগমের দিকে তাকিয়ে সুকুর আলির চোখ ভিজে গেল।প্রফেসার ম্যাম খুব ভাল মানুষ ছিলেন। তার পরিচয় জেনেও তাকে অবজ্ঞার চোখে দেখেন নি।উনার কাছে কলেজে তার বিবি পড়েছে। সুকুর আলি ইমাম সাহেবকে বলল,ইমাম সাহেব এইবার কাম শুরু করেন।
--হ্যা হ্যা মিঞা করতেছি, ইমাম ইকবালকে বললেন,এই ব্যাটা উনার স্বামীরে ডাক।
পল্টু আসতে ইমাম সাহেব বললেন,আসেন ডাক্তার সাহেব।এই তোরা লাশ কবরে রাখ,মাথা উত্তর দিক করে রাখবি। সবাই ধরাধরি করে খাদিজা বেগমকে কবরে নামাতে গেলে পল্টু জড়িয়ে ধরে গালে গাল রেখে কেদে ফেলে।ইমাম সাহেব অবাক ডাক্তারের আচরণে, মানুষ মানুষরে এত ভালবাসে?ইমামের মনের উষ্মাভাব চলে যায়। লাশ কবরে রাখার পর ইমাম সাহেব বললেন,ডাক্তার সাহেব বলেন,বিসমিল্লাহি ওয়া আলা মিল্লতি রাসূলিল্লাহি।
পল্টু কি বুঝল কে জানে ইমাম সাহেব বললেন,আপনে আল্লাহ তায়ালার নামে দেহ সোপর্দ করলেন। এইবার মুঠীতে মাটি নেন,বলেন,মিনহা খালাকনাকুম। এই মাটি দিয়া সৃষ্টি করছিলেন।কবরে ফেলেন মাটি আবার একমুঠি মাটি নেন বলেন,ওয়া ফীহা নুয়ীদ কুম। আবার মাটিতেই দিয়া দিলাম। মাটি কবরে দিয়া আবার একমুঠি মাটি নেন বলেন,ওয়া মিনহা নুখরিজুকুম তারাতান উখরা। আবার মাটি হতেই ফিরে পাবো। মাটি কবরে ফেলেন।এইবার ভাই সব তুমরা কবরে মাটি চাপা দেও।
গাড়ীতে ইকবালের পাশে মাওলানা সাহেব বসলেন,পিছনে পল্টু আর ললিতা। ইকবাল নীরবে গাড়ী চালাচ্ছে।কারো মুখে কোনো কথা নেই। মাওলানা একসময় বললেন, ডাক্তার সাহেব এই দুনিয়ায় কোনো কিছু চিরকাল থাকে না। মনে কোনো দুঃখ রাখবেন না। আমার প্রথম বিবির ইন্তেকালের পর আমারও মনে খুব দুঃখ হয়েছিল। এখন আমার দুইটা বিবি,একটা গেলেও একটা থাকবো।
পল্টুর এইসব জ্ঞান উপদেশ ভাল লাগছিল না। কতক্ষণে এই মানুষটা থেকে মুক্তি হবে সেই চিন্তা করে। পল্টু জিজ্ঞেস করল,কোথায় যাবেন আপনি?
--দিন দুনিয়ার মালিক যেইখানে নিয়া যায়।মাওলানা বললেন।
--সাহেব আপনাকে নামিয়ে দিয়ে আমি উনাকে পৌছে দেবো।ইকবাল বলল।
ললিতার দিকে নজর পড়ে,সকাল থেকে খুব ধকল গেল ওর উপর দিয়ে। যশ খাইয়ে না দিলে এতক্ষণ অভুক্ত থাকতো। অঞ্জু থাকলে তাকে এত ভাবতে হত না। নার্সিং হোমে বলে এসেছিল কাল থেকে ক-দিন আসবে না,আর তার প্রয়োজন নেই। মেয়েটার কথা মনে পড়ল তার কি অপরাধ?জন্মে মায়ের দুধ পেল না। যশবিন্দার কিভাবে সামলাবে তাকে? শিখ পাঞ্জাবী হলেও সব নারীর মধ্যে একজন মায়ের বাস। যশ না থাকলে আজ কি যে হতো?তাড়াতাড়িতে ভাল করে দেখা হয়নি মেয়েটাকে। গতকাল আর আজেকের সঙ্গে কত পার্থক্য, কালকের পৃথিবী আর আজকের পৃথিবী যেন একেবারে আলাদা।  




                                   
[+] 7 users Like kumdev's post
Like Reply
Osadharon golper bunon...
Repu added...
Please try to complete it...
[+] 2 users Like Buro_Modon's post
Like Reply
Very sad
[+] 3 users Like Mr Fantastic's post
Like Reply
                 [৬৮]


            পান্থ নিবাসের সামনে গাড়ী দাড়াতে পল্টূ আর ললিতা নেমে পড়ল। মাওলানা মুখ বাড়িয়ে বলেলেন, ডাক্তার সাহেব সবারে একদিন চলে যেতে হবে আপনে শিক্ষিত মানুষ আপনাকে আমার বলা শোভা পায় না। পল্টু উপর দিকে তাকিয়ে দেখল উপর থেকে সবাই উকিঝুকি দিচ্ছে।ললিতাকে বলল,এতরাতে আর রান্না করতে হবে না। চল তোর জন্য দোকান থেকে খাবার কিনে নিই।
--মামা আমার ক্ষুধানেই,তুমি খেলে নিয়ে নেও।
--আমার কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না।তুই আমাকে এককাপ চা করে দিস।
সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে দরজার সামনে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে পল্টু।ললিতা জিজ্ঞেস করে,কি হল মামা?
--তোর মামী নেই ফাকা ঘরে ঢুকতে ইচ্ছে করছে না।
ললিতার চোখে জল এসে গেল বলল,মামা তুমি এরকম করলে আমার ভাল লাগে না।
দরজা খুলে ভিতরে ঢোকে পল্টূ বিহবল চোখ বোলায় চারদিকে।ললিতা তাড়াতাড়ি ঘরে ঢূকে বিছানার চাদর বদলে দিতে থাকে,খেয়াল হয় ফাইলটার কথা।নার্সিং হোমে রয়ে গেছে আনা হয়নি। পল্টুকে বলল,মামা বিছানার উপর একটা ফাইল ছিল মেয়ে ডাক্তারকে দিয়েছিলাম,আনা হয় নি।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে পল্টু বলল,আর ফাইল আসল লোকই চলে গেল।
--বালিশের নীচে একটা কাগজ ছেল সেইটাও আমি নিয়ে গেছিলাম।
--কি কাগজ?
--তা জানি না।ঐ কাগজটা ডাক্তার দিদি নিয়ে বুকে গুজে রাখল।
বুকে গুজে রাখল? পল্টুর মনে পড়ল যশ তাকে দেখিয়েছিল,ইংরেজিতে অঞ্জুর লেখা। এবার বুঝতে পারে কি ভাবে কাগজটা যশের হাতে পৌছালো?
বিছানা পরিস্কার করে ললিতা স্নান করতে গেল। ফোন বাজছে পল্টু গিয়ে ফোন ধরল, হ্যালো?..বলুন মাম্মী....।ওপাশ থেকে পার্বতী ম্যাম সমবেদনার কথা বলতে থাকেন। বলা শেষ হলে পল্টু বলল,এবার রাখি? ফোন রাখতে আবার বেজে উঠল। পল্টু ললিতাকে ফোন ধরতে বলে শিখিয়ে দিল,বলবি আমি শুয়ে পড়েছি। অনবরত ফোন বাজতে থাকে বাথরুম থেকে বেরিয়ে ললিতা ফোন ধরে বলে, শরীর ভাল না শুয়ে পড়েছেন।
অঞ্জু অন্য দিকে তাকিয়ে থাকলেও মনে মনে তার কথাই ভাবতো, নার্সিং হোমে শুয়ে ছিল এমন নির্বিকার তন্ন তন্ন করে খুজে কোথাও নিজেকে দেখতে পেল না পল্টু। এত সহজে বাঁধন ছিড়ে চলে যেতে পারলো? অভিমান হয় সেও আর তার কথা ভাববে না।
--মামা তুমি স্নান করে নেও আমি চা করতেছি।ললিতা এসে বলল।
কথাটা খারাপ বলেনি,এখন ললিতার নির্দেশে চলতে হবে। তোয়ালে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল পল্টু।বেশ ঝরঝরে লাগছে।ঘরে ঢুকে অঞ্জুর কথা মনে পড়ল। আলমারি খুলে এ্যালবামটা বের করে। হাসছে চোখে কালো চশমা। কি সুন্দর চোখ অথচ সব সময় ঢেকে রাখতো। ছবির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মন পাড়ি দেয় অতীতে। যশের নাম শুনে বিরক্ত হলেও বাইরে তার কোনো প্রকাশ ছিল না।কলেজ ছুটি নিয়ে নিজের গরজে দিল্লী সফরে সঙ্গী হয়েছিল।এতই যদি শঙ্কা তোমার তাহলে কোন ভরসায় একা ফেলে চলে গেলে?
ললিতা চা নিয়ে ঢুকল। চা দিয়ে সেও ছবি দেখতে থাকে। একসময় জিজ্ঞেস করে,মামী কি ., ছেল?
পল্টু চায়ে চুমুক দিতে গিয়ে থমকে থামে। . পরিবারে জন্মেছিল কিন্তু কি ছিল এখনো বুঝতে পারিনি।শুধু বুঝেছি অঞ্জু আমার নিঃশ্বাস আমার উদ্যম আমার প্রেরণা। ঈশ্বর আমাকে কিছুদিনের জন্য দিয়েছিল মেয়াদ শেষ হতে আবার ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। এসব কথা ললিতাকে বলা যায় না। পল্টু জিজ্ঞেস করল,তুই জানতিস না?
--কি করে জানবো আমারে কেউ বললি তো জানবো।আজ গোর দিল দেখেই জানলাম।
--তুই তো তবু জেনেছিস আমি আজও জানতে পারলাম না। ললিতা হা-করে তাকিয়ে আছে দেখে জিজ্ঞেস করল,তুই চা খাবি না?
--আমার চা আছে রান্না ঘরে।ললিতা চলে গেল।
মেয়েটাকে এখন খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। যতই হোক ও তো অঞ্জুরই মেয়ে।ওর কি অপরাধ? বেচারি জানতেই পারল না ওর মা নেই। কি করছে এখন,ঘুমোচ্ছে? যশকে বাড়ীতে নানা কৈফিয়ত দিতে হয়েছে। কার মেয়ে কোথায় পেল? কেনই বা সে নিয়ে এল? ললিতা ঢুকে বলল,মামা আমি শুয়ে পড়ছি? কোনো দরকার আছে?
--তুই মেয়েটাকে দেখেছিস?
--মামীর মেয়ে?ললিতার চোখ উদ্ভাসিত হয়ে উঠল বলল,কি সোন্দর পুতুলের মত দেখতে মাথা ভর্তি চুল পিট পিট করে চায়।ললিতার গলা ধরে এল,ও জানে না ওর মা নাই।
--ঠিক আছে তুই যা। পল্টু দরজা বন্ধ করে বালিশে মুখ গুজে হাউ-হাউ করে কেঁদে ফেলে। নিজেকে অপরাধী বলে মনে হয়।
রাত গভীর হয় ঘুমিয়ে পড়ে পল্টূ। ঘুমালে মন শান্ত হয়। ড্যাফোডিলের কোয়ার্টারে যশবিন্দারের চোখে ঘুম নেই। ফিডীং বোতল শিপার ইত্যাদি কিনে এনেছে। চুক চুক করে দুধ টানছে। মুগ্ধ হয়ে দেখে যশ। একসময় জামা খুলে স্তন বৃন্ত মুখে পুরে দিল।দুধ নেই তবু কি সুন্দর চুষছে।নিজের নামের সঙ্গে মিলিয়ে বাচ্চার নাম দিয়েছে জেসমিন।
দিন দশেকের উপর হয়ে গেল ভাইদের উপদ্রব থেকে বাঁচতে এখানে এসেছে। পরমিতের ট্রান্সপোর্টের ব্যবসা।বিজনেস পারটনার জ্ঞান প্রকাশ চৌটালার সঙ্গে তার বিয়ে দেবে।প্রচুর অর্থের মালিক সুশিক্ষিত মন তাকে মেনে নিতে পারে না।সেই সময় কাগজে বিজ্ঞাপনটা নজরে পড়ে। প্রথম কথা দিল্লী থেকে পালাতে হবে তাছাড়া মনের কোনে লুকিয়ে আছে কলকাতার প্রতি দুর্বলতা।সুযোগটা হাতছাড়া করে না। পরমিত আজ হোক কাল হোক ভবানীপুরে আসবেই তার খোজে। দুঃশ্চিন্তা আছেই কি বলে পরমিতকে নিবৃত্ত করবে?একটাই আশার কথা এটা দিল্লী নয় এখানে মস্তানি চলবে না।নিঃসঙ্গ প্রবাসে জেসমিন তার আশ্রয়।কেমন নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে কোনো চিন্তা নেই ভবিষ্যতের কথা ভেবে নেই কোনো উদবেগ।জীবনের এই মাসুমিয়ত কাল বড় পবিত্র। যতদিন মাসুমিয়ত থাকবে ঈশ্বর তোমাকে ছুয়ে থাকবে। কপালে চুমু খেয়ে শুয়ে পড়ল যশ।
নরম আলোয় ভরে গেল ঘর। পল্টু কি দেখছে? খাদিজা বেগম তার পাশে জড়িয়ে শুয়ে আছে। কোথায় ছিলে এতক্ষণ,ওটুকু মেয়েকে আমি একা একা কি করে সামলাবো। আহা যশকে দায়িত্ব দিয়ে তুমি চলে যাবে?মাটির নীচে তোমার খুব কষ্ট হয়েছে? পল্টু হাত দিয়ে ধরতে গেলে সরে যায় অঞ্জু। আমি ধরবো তুমি আমাকে ধরতে পারবে না।আমি মাঝে মাঝে আসবো আমার মর্জিমত। যশ ভেরি প্রেটি বিউটিফুল। না তুমি যাবে না,অঞ্জু--অঞ্জু--অঞ্জু....।
বাইরে থেকে ললিতা দরজা ধাক্কা দেয়, মামা দরজা খোলো,চা এনেছি।
ঘুম ভেঙ্গে যায় ধড়ফড় করে উঠে বসে পল্টু। বাইরে ললিতার গলা পেয়ে খাট থেকে নেমে দরজা খোলে। ললিতা চা নিয়ে ঢুকতে পল্টু বলল, এত বেলা হল ডাকিস নি? আমাকে বেরোতে হবে।
--ডাকিনি আবার?এই নিয়ে তিনবার আসলাম।
পল্টু চা বিয়ে জিজ্ঞেস করে,রান্না হয়ে গেছে?
--ভাত উবুড় দিলি হয়ে যাবে।
এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিল? মনের ভাবনা রুপান্তরিত হয়েছে স্বপ্নে। কাজের মধ্যে ডুবে যেতে হবে না হলে শান্তি নেই।
অঞ্জুকে স্পষ্ট দেখেছে চোখে সানগ্লাস ঠিক আগের মত।চা খেয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল।
রাত করে ঘুমিয়েছে কিন্তু এত বেলা অবধি পল্টু ঘুমোয় না।মাথায় শ্যাম্পু দিল সাবান মেখে স্নান করল। মাথার মধ্যে সব কেমন তালগোল পাকিয়ে আছে।রোগী দেখতে পারবে তো? পোষাক পরে তৈরী হয়ে খাবার টেবিলে বসে জিজ্ঞেস করে,আর কেউ ফোন করেনি তো?
--করেনি আবার? একজন মেয়েলোক আবার দুই-তিনবার ফোন করেছে।
পল্টু হেসে বলল,তুই কি বললি?
--ডাক্তারবাবুর শরীর ভাল না ওবেলা করবেন।
--ও বেলা বলার কি দরকার ছিল?
মাম্মী দেখা করতে বলেছিলেন আজ গিয়েই দেখা করবে।খাওয়া দাওয়ার পর বিশ্রাম করছে। সময় কাটতে চায় না অঞ্জু থাকতে কিভাবে কেটে যেত সময় বুঝতেই পারত না। সব সময় একটা মানসিক চাপ অস্থির করে তুলেছে। ইকবাল এসে ড.সোমকে নিয়ে গেছে।বেরোবার আগে তিনটের সময় চা করে দিয়ে শুয়ে পড়ে।ছেলে মেয়ের কথা মনে পড়ল।কতদিন দেখেনি তাদের এই অবস্থায় মামাকে একলা ফেলে যেতেও পারছে না। এইসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে। সন্ধ্যের মুখে কলিন বেল বাজতে উঠ বসল। মামার এত সকাল সকাল ফেরার কথা নয়।বাড়ীতে সে এখন একা,দরজা খুলবে কি না ভাবে। ফুটোয় চোখ লাগিয়ে দেখল কে একজন মহিলা,কোলে বাচ্চা।
বুইন নাতো? ললিতা দরজা খুলে দিতে ড.কাউর বাচ্চা কোলে ঢুকলেন।
--মামা তো বাড়ি নাই নাসিন হোমে গেছে।
--ফোনে বলল শরীর ভাল না।
--কি করবো মামা শিখায়ে দিছিল। আমার কোলে একটু দেবেন?সসঙ্কোচে জিজ্ঞেস করে ললিতা।
--ভাল করে হাত ধুয়ে এসো।
কথা না বাড়িয়ে ললিতা হাত ধুয়ে এসে বাচ্চাটা কোলে নিয়ে খুব খুশি। ড.কাউর ঘরে ঢুকে বিছানার উপর ছোট একটা বিছানা করলেন। ললিতাকে বললেন,এখানে শুইয়ে দাও।
অনিচ্ছে সত্বেও ললিতা শুইয়ে দিল।বাচ্চাটা ঘুমে অচেতন ললিতার ভাল লাগে না। নড়াচড়া না করলে ভাল লাগে?
ড.কাউর জিজ্ঞেস করলেন,তোমার রান্না হয়ে গেছে?
--এইবার করবো।
--তোমাকে করতে হবে না,আমি করছি।
একজন অপরিচিত মহিলা এসে খবরদারি করবে ললিতার পছন্দ নয়। কিন্তু মুখের উপর কিছু বলতেও পারছে না।
বিশেষ করে বুইনরে সঙ্গে করে এনেছে।নার্সিন হোমে মামীর জন্য খুব করেছে। তাকে বসিয়ে খাইয়েছে এসব কথা ভেবে ললিতা আর কিছু বলে না। মামা আসুক তখন যা বলার মামাই বলবে।
ড কাউরের ডাকে ললিতা রান্না ঘরে গিয়ে বলল,আমারে ডাকতিছেন?
--কি নাম তোমার?
--ললিতা।
--ভেরি নাইস নেম।কোথায় কি আছে আমাকে দেখিয়ে দাও।
ললিতা চাল ডাল মশলাপাতি বের করে দিল।ড কাউর বললেন,তুমি জেসমিনের কাছে যাও।
--ওর নাম জেসমিন দিছেন?
--হ্যা ভালো না?
ললিতা বোকার মত হাসে।ড কাউর বললেন,এটা একটা ফুলের নাম ছোটো ছোটো সাদা ফুল সেক্সি গন্ধ।যাও জেসমিন উঠলে আমাকে ডাকবে।
ড কাউর সবজি কাটতে থাকে,মনের মধ্যে নানা চিন্তা বিজ বিজ করে।অঙ্গনের রান্না ঘরে নিজেকে দেখবে কখনো দিমাগে আসেনি।পরমিত আসলে বুরবাক বনে যাবে।প্রাজী দেখবে তার বহিন মা বন গয়ী।মনে মনে হাসে।হোস্টেলে ফিরবে কিনা অঙ্গন আসলে ফয়শলা হবে।
[+] 8 users Like kumdev's post
Like Reply
চোখে জল এসে গেলো।
কিছু বলার ভাষা নেই।
[+] 2 users Like buddy12's post
Like Reply
       [৬৯]


              পার্বতী ম্যাডাম দুঃখ প্রকাশ করলেন। অনুরোধ করলেন ইচ্ছে করলে পল্টু তার কাছে এসে থাকতে পারে। বোঝালেন কেউ চিরকাল থাকে না।ড.অনলদেব সোম চলে যাবার পর তার অবস্থাও এরকম হয়েছিল তবু সেদিন ভেঙ্গে না পড়ে কঠোর হাতে সব দায়িত্ব সামলেছেন।বস্তুত অনেক বললেও কিছুই পল্টুকে প্রভাবিত করতে পারে না। মাম্মীর কাছে বিদায় নিয়ে বাড়ী ফেরার কথা ভাবতে তার মনে পড়ে শূণ্য ঘরের কথা।তবু অঞ্জু না থাকলেও সেখানে জড়িয়ে আছে তার স্মৃতি। সিড়ি দিয়ে নামতে ড.খান্নার সঙ্গে দেখা হল সহানুভুতি প্রকাশ করলেন। ম্লান হেসে পল্টু শুনে নীচে নামতে লাগল।
অফিস পেরোতে গিয়ে একজন এগিয়ে এসে বলল,স্যার আমি দুঃখিত কিছু বুঝতে পারিনি।
পল্টুর মনে পড়ল এই ভদ্রলোক তাকে ফোনের খবর দিয়েছিলেন।উত্তেজিত হয়ে পল্টু তাকে ভর্তসনা করেছিল।পল্টু লজ্জিত হয়ে বলল,আপনি কিছু মনে করবেন না,আমি আসলে--।
--না স্যার আমি কিছু মনে করিনি,মিসেস সোমের ব্যাপারটা জানতে পেরে আমার খুব খারাপ লেগেছে।
আবার মিসেস সোম?যে কথা ভুলতে চায় সে কথা কেন এরা মনে করিয়ে দেয়? এই সহানুভুতি সমবেদনা তার ভাল লাগে না।ড.শর্মা এসে জিজ্ঞেস করেন,আপনার ডিউটি শেষ?
পল্টুর জনপ্রিয়তা ড.শর্মার অপছন্দ।তিনি অনেক সিনিয়ার,তার ধারণা এই জনপ্রিয়তার পিছনে কারণ পল্টু ড.সোমের ছেলে।অবশ্য কে কি ভাবল পল্টুর কোনো মাথা ব্যথা নেই। আপন মনে কাজ করতে ভালবাসে। পল্টু হেসে বলল, হ্যা শেষ। ভেবেছিলাম আজ আসবো না।
--হুম।ড.শর্মা কি ভাবেন মনে মনে। আপন মনে বলেন, এক একজনের সমস্যা এক একরকম।
ড.শর্মার পারিবারিক কিছু সমস্যা আছে কানাঘুষোয় সে খবর পল্টুর কানেও এসেছে। প্রকৃত ব্যাপারটা কি পল্টু জানে না,জানার আগ্রহও নেই।
--ড.সোম আমি কি আপনাকে কিছুটা সঙ্গ দিতে পারি?
--আপনার গাড়ী?
--গ্যারেজে।আমি আজ ট্যাক্সিতে এসেছি।অবশ্য আপনার কোনো অসুবিধে থাকলে--।
--না না অসুবিধের কি আছে?আপনি তো এখন বাড়ী ফিরবেন না।
--বাড়ী?ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়?ড.শর্মা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।
সবাই জানে ফেরার পথে ড.শর্মা কোনো একটা বারে গিয়ে মদ্যপান করেন।পল্টুর মনে হয় মদ্যপানে কি দুঃখ ভোলা যায়?
গল্প-উপন্যাসে পড়েছে প্রেম প্রত্যাখ্যাত নায়ক মাতাল হয়ে কবিতা আওড়ায়। কিরন দিলীপকে পিকনিকে লুকিয়ে লুকিয়ে মদ খেতে দেখেছে। সেণ্ট্রাল এভিনিউতে কিছুটা গিয়ে ইণ্ডিয়ান হোটেলের কাছে ড.শর্মা বললেন, গাড়ী দাড় করাও।
ড.শর্মার সঙ্গে পল্টুও নামে গাড়ী থেকে।ড.শর্মা বললেন,থ্যাঙ্কস ড.সোম।
--কিছু মনে না করলে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
--ওঃ সিয়োর।ড.শর্মা হাসলেন।
--আপনি ড্রিঙ্ক কেন করেন?
ড.শর্মা অবাক হয়ে পল্টুকে দেখেন তারপর উদাস গলায় বললেন,দেয়ার আর মেনি কজেজ। রাস্তায় দাঁড়িয়ে কি বলবো?
--চলুন আজ আপনাকে আমি সঙ্গ দেবো।
চমকে ওঠেন ড.শর্মা একটু ইতস্তত করেন,মনে হল ড.শর্মা একটু বিব্রত।পল্টু বলল, অসুবিধে থাকলে নাই গেলাম,বাই।পল্টু গাড়ীর দরজা খুলে উঠতে গেল ড.শর্মা বললেন,ড.সোম প্লিজ না এলে দুঃখ পাবো।
দুজনে ইণ্ডিয়া হোটেলে একটা কেবিনে বসল। একটা বেয়ারা এসে বলল,সেলাম ডাক্তার সাব।
পল্টু বুঝতে পারে ড.শর্মা এখানে পরিচিত। ড.শর্মা বললেন,একটা ছোট আর একটা বড়।
--না দুটোই বড়।পল্টু বলল।
অবাক হয়ে পল্টুকে দেখেন তারপর বেয়ারাকে বললেন,চিকেন পকোড়া। বেয়ারা চলে গেলে জিজ্ঞেস করেন, ড.সোম আপনি তো ড্রিঙ্ক করেন না।
--আপনিও একদিন ড্রিঙ্ক করতেন না।আমার বাবা নিয়মিত ড্রিঙ্ক করতেন।
ড.সোম মেণ্টালি ডিস্টার্ব বুঝতে পারেন আর কিছু বললেন না ড.শর্মা।একসময় বললেন, মিসেস সোমের চলে যাওয়াটা ভেরি স্যাড।
--প্লিজ ড.শর্মা এখন সেসব থাক।
পল্টু চেষ্টা করে ভুলে থাকতে তবু কেন যে সবাই মনে করিয়ে দেয়। বেয়ারা ট্রেতে করে পানীয় পকোড়া দিয়ে গেল। স্বল্প আলো ছায়াময় রোমাণ্টিক পরিবেশ। একটুকরো পকোড়া মুখে দিয়ে চিবোতে থাকে।কয়েক চুমুক দেবার পর ড.শর্মা এক টুকরো পকোড়া মুখে দিয়ে বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন আমি আগে ড্রিঙ্ক করতাম না। ড্রিঙ্ক করতে আমার ভাল লাগে না আবার না খেয়ে থাকতে পারিনা।
পল্টুর কথা বলতে ভাল লাগে না চুপচাপ পান করতে থাকে। ড.শর্মা বললেন, অনেক ছেড়েছি ছাড়তে ছাড়তে আজ আমি একা আর কত ছাড়বো বলুন তো?
--একা? আপনার বউ আছেন সন্তান আছে--।
--জানেন ড.সোম বিয়ে করলে বউ পাওয়া যায় মনের মত সঙ্গী মেলে ভাগ্যে।
আবার অঞ্জুর কথা মনে পড়ল। ঈশ্বর তাকে একটা উপহার দিয়েছিল কিছুদিনের জন্য আবার ফিরিয়ে নিয়ে গেল। ফিরিয়ে যদি নিবি তাহলে দেবার কি দরকার ছিল পল্টু ভাবে মনে মনে। চোখের পাতা ভারী হয়ে এসেছে পল্টু জিজ্ঞেস করল, ড.শর্মা আপনার বাড়ীতে কে কে আছে?
--বউ আছে তার দুটো মেয়ে আছে।
--আপনার মেয়ে নয়?
--কে জানে আমার হতে পারে আবার নাও হতে পারে।শালা সোয়াইন।একটু নীরব থেকে ড.শর্মা আবার বলেন, জানেন ড.সোম আমরা হলাম ভদ্রলোক ভিতরে ক্ষত বিক্ষত হবো কিন্তু বাইরে শালা দাঁত কেলিয়ে থাকবো।
পল্টুর মাথা গুলিয়ে যায় নেশার জন্য এমন হচ্ছে নাকি? ড.শরমা কি সব ভুলভাল বকছেন?
বেয়ারা এসে বলল,স্যার মিসেস গিদোয়ানি।
--এসে গেছে?ড.শর্মা অসহায় বোধ করেন।
পল্টু বুঝতে পারে আর থাকা সমীচীন হবে না উঠে দাঁড়িয়ে বেয়ারাকে বিল দিতে বলে।ড.শর্মা বললেন,না না ড.সোম ইউ আর মাই গেষ্ট।ওকে গাড়ীতে তুলে দাও।
পল্টু বেয়ারাকে নিবৃত্ত করে বলল,আই এ্যাম ওকে। পল্টু বেরিয়ে যেতে মধ্য বয়সী এক মহিলা কেবিনে ঢুকে জিজ্ঞেস করে,লোকটি কে?আগে তো দেখিনি?
--ড.সোম ব্রিলিয়াণ্ট সার্জেন।কলকাতায় টপ বলতে পারো।
ইকবাল বুঝতে পারে সাহেব থোড়া পিয়া।পল্টু গাড়ীতে বসে বলল,ড্যাফোডিল চলো।
ললিতা বলল সুন্দর দেখতে হয়েছে।এমন ঝড় বয়ে গেল বাচ্চাটাকে ভাল করে দেখার সময় পায়নি।একজন আয়া রাখতে হবে।অবশ্য আয়া মায়ের বিকল্প হতে পারে না।অনাথ আশ্রমে বাচ্চারা মা  ছাড়া পালিত হয়।আজ মম থাকলে এত চিন্তা হতো না।ললিতা তো তার বাচ্চাদের পালন করেছে ও পারবেনা?মনের মধ্যে নানা প্রশ্ন ঘুর ঘুর করতে থাকে।
--সাব ডেফোডিল এসে গেছে।
পল্টু নামতে গিয়েও বসে পড়ে।এই অবস্থায় নার্সিং হোমের ভিতরে যাওয়া ঠিক হবে না।একটু ভেবে বলল,ইকবাল তুমি আমার কথা বলে বাচ্চাটাকে নিয়ে এসো।
ইকবাল চলে যেতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে।ঐ তো ইকবাল আসছে কিন্তু ওর কোলে তো বাচ্চা নেই।ইকবাল এসে বলল,ডাক্তার সাব বাচ্চা নিয়ে গেছে।
ডাক্তার সাব?তাহলে কি যশ?মাথা ঝিম ঝিম করে।মদ্যপান করা আজ ঠিক হয়নি।ঘড়ি দেখল বেশ রাত হয়েছে।কাল ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলা যাবে,ইকবালকে বলল,বাড়ী চলো।  

এত রাত হল অঙ্গন ফিরল না। যশ বিন্দার ললিতাকে জিজ্ঞেস করেন,তোমার মামা কি রোজ এত দেরী করে?
ললিতা বলল,নারসিন হোমে ফোন করেন।
যশ বিন্দার ফোন করে জানলেন সেখান থেকে বেরিয়ে গেছে। ললিতাকে বলল,তুমি খেয়ে নেও।
ললিতার অস্বস্তি হচ্ছিল কোনোদিন মামার আগে খায়নি তার উপর ডাক্তার দিদিমণি তাকে রান্না করতে না দিয়ে নিজে রুটি করেছে। দু-বেলা ভাত খাওয়ার অভ্যাস রুটি কেমন লাগবে কে জানে। কিন্তু আপত্তি বেশিক্ষণ টিকল না বাধ্য হয়ে ললিতা খেতে বসল।দিদিমণি নিজে তাকে পরিবেশন করলেন।ডাল দিয়ে কি একটা বানাইছেন খেতে ভালই লাগছে।লঙ্কা দিয়ে আচার পেঁয়াজ তড়কা রুটি দিয়ে ভোজ মন্দ লাগল না। ললিতা নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ল।

যশবিন্দার ঘরে গিয়ে জেসমিনকে ঘুম থেকে তুলে বলল, অনেক ঘুমিয়েছো এবার ওঠো না হলে সারারাত আমাকে জ্বালাবে।
বাচ্চাটি চোখ বড় করে যশবিন্দারের মুখের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিল। যশবিন্দার নীচু হয়ে চুমু খেয়ে বোলে, তোমার ড্যাড এখনো ফেরেনি আর তোমার হাসি হচ্ছে?
বাচ্চাটি কি বুঝল কে জানে ঠোট ফুলিয়ে কেদে ফেলে। ফিডিং বোতল মুখে ধরতে কান্না থেমে যায় চুক চুক দুধ টানতে থাকে। যশবিন্দার মুগ্ধ হয়ে দেখে,বুঝতে পারে ক্ষিধে পেয়েছিলদুধ শেষ হতে বোতল সরিয়ে নিল।জেসমিন ঠোট ফুলিয়ে কাদার উপক্রপম করতে ড কাউর জামার বোতাম খুলে মাই বের করে মুখে গুজে দিল।জেসমিনকে বা-হাতে ধরে ড কাউর শুয়ে থাকে।ড কাউরের চোখ লেগে আসে।
ললিতা বুইনের কান্না শুনতে পেয়েছে।ভাবল উঠে দেখতে আসবে,আবার চুপ হয়ে গেল। ঘুম আসছে না ললিতার,কখন মামা আসবে ভাবছে।এত রাত তো হয় না কোনো দিন।বুইন মনে হয় ঘুমিয়ে পড়েছে কোনো সাড়া শব্দ নেই। ললিতা উঠে ব্যালকণিতে গিয়ে দাড়ালো। রাস্তায় লোক চলাচল কমে এসেছে।এইভাবে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর দেখল নীচে গাড়ী এসে দাড়াল।মনে হয় মামা এল।  কলিং বেল বেজে উঠল,মনে হয় এল। ললিতা এসে দরজা খোলে উকি দিয়ে দেখল সিড়ির রেলিং ধরে ধরে মামা উঠছে।উপরে উঠে চোখাচুখি হতে পল্টূ হাসল।
ললিতা অবাক হয়,মামার কি শরীর খারাপ?  পল্টু দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকে গেল।নাকে গন্ধ যেতে ললিতা ভয় পেয়ে যায়।বস্তির বাবুলালকে দেখেছে মদ খেয়ে এসে বউরে পিটাতো।ভয়ে ভয়ে বলল,মামা খাতি দেব?
--তুই খেয়েছিস?
--আমার খাওয়া হয়ে গেছে--।
কথা শেষ হবার আগেই পল্টু বলল,আমি খাবো না তুই শুয়ে পড়।
দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতে ভুত দেখার মতো চমকে উঠল।নেশার ঘোরে ভুল দেখছে নাতো?একটা ফুটফুটে শিশু ঘুমিয়ে আছে যশবিন্দার জামা খোলা স্তন বেরিয়ে আছে।চোখ টেনে টেনে দেখতে থাকে,কি সুন্দর পবিত্র দৃশ্য।এক সময় খেয়াল হয়,এত রাতে যশ এখানে? এগিয়ে গিয়ে ঝুকে পড়ে শিশুটির দিকে, যশবিন্দার চমকে উঠে বলল, কৌন?
চোখ মেলে যশ অঙ্গনকে দেখে উঠে বসে।টের পায় অঙ্গন নেশা করেছে।খাট থেকে নেমে পল্টুকে ধরে সোফায় বসিয়ে জুতো খুলে দিয়ে বলল,খাবে এসো।
--আমার ক্ষিধে নেই,ঘুম পাচ্ছে।
যশবিন্দার চেঞ্জ করিয়ে জেসমিনকে বাচিয়ে খাটে শুইয়ে দিল। একটা প্লেটে রুটি তড়কা নিয়ে এল। রুটি ছিড়ে মুখের কাছে ধরে বলল,হা করো।
পল্টু হা করে।এইভাবে তাকে খাওয়াতে লাগল। চারটে রুটি খেয়ে ফেলল অথচ বলছিল ক্ষিধে নেই। যশবিন্দার নিজে খেতে বসেছে।অঙ্গন নেশা করেছে। এত রাত অবধি কোথায় ছিল সে?একেবারে হুশ এই এখন কথা বোলে কোনো লাভ হবে না। কাল সকালে কথা বলা যাবে। ভাইরা দিল্লী থেকে শীঘ্রী আসবে খবর পেয়েছে। ঘরে ঢুকে দেখল অঙ্গন ঘুমিয়ে পড়েছে। জেসমিনকে পাশে সরিয়ে অঙ্গনের পাশে শুয়ে পড়ে।একটা হাত এসে তার কোমরে এসে পড়ল। রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করে যশবিন্দার।অঙ্গন ঘুমায় নি? হাত দিয়ে তাকে টানছে, বুকের কাছে টেনে নিয়ে জড়িয়ে জড়িয়ে বলল,অ-ন-ন-উ?
যশবিন্দারের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।জানি না বাইগুরুর মনের কি ইচ্ছে।পাশে ঘুমোচ্ছে জেসমিন,মনে হয় তাকে চিনতে পারে।যখন কাঁদে যশবিন্দার কোলে নিলে চুপ করে যায়।জেসমিনকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে যশ।
ইকবালের মন ভাল নেই। গাড়ী গ্যারেজ করে বাড়ি ফিরে খাওয়া দাওয়া করে শুয়ে পড়ে। নাজমা পোয়াতি হবার পর মিলন বন্ধ আছে। চিত হয়ে শুয়ে আছে চুপচাপ। নাজমা অস্বস্তি বোধ করে। বাড়ী ফিরে সারাদিনের কত গল্প করে রাতে শুয়ে শুয়ে,আজ একদম চুপচাপ।নাজমা পাশ ফিরে কনুইয়ে ভর দিয়ে জিজ্ঞেস করে, আপনে কি ভাবতেছেন বলেন তো?
নাজমাকে বুকে তুলে নিয়ে ইকবাল জিজ্ঞেস করে, সাচা কইরা বলতো তুই আমারে ভালবাসিস?
--এইডা আপনে কেমুন কথা বলেন?
--ডাক্তার সাহেবরে দেখলি কষ্ট হয়।বিবিরে হারায়ে কেমন হয়ে গেছে,নেশা করে।
--কয়দিন ওইরম হয়।আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।
নাজমার কথা শুনে ইকবালের মনে হল তাকেও কি নাজমা এইরকম ভাবে? 
[+] 11 users Like kumdev's post
Like Reply
খুব সুন্দর আপডেট।
রেপু দিলাম।
Like Reply
দারুণ আপডেট
[+] 1 user Likes Alvi Arman's post
Like Reply




Users browsing this thread: 2 Guest(s)