Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
(Update No. 139)

সীমন্তিনী সাথে সাথে অর্চনাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, “অর্চু সোনা, তুমি এত উতলা হচ্ছ কেন বোন? তুমি কি জানোনা আমি বেঁচে থাকতে রচু আর দাদাভাইয়ের শরীরে একটা আঁচড়ও কেউ দিতে পারবে না। তুমি একদম দুশ্চিন্তা করো না বোন। ওরা দু’জনে যে আমার প্রাণ গো। আমি ওদের কাছ থেকে শারিরীক ভাবে এত দুরে আছি বলে ভাবছো তো তুমি? কিন্তু আজ তোমাকে জানিয়ে রাখছি, প্রতিটি মূহুর্তে আমি ওদের ওপর নজর রাখছি। তবে সেটা কিকরে করছি সে ব্যাপারটা জানতে চেও না বোন। সেটা বলতে একটু অসুবিধে আছে বলেই বলতে পারব না। তবে তুমি নিশ্চিন্ত থেকো এ ব্যাপারে”।

অর্চনা কয়েকটা মূহুর্ত সীমন্তিনীর দিকে চুপ করে তাকিয়ে থেকে বুকের ভেতর আটকে থাকা শ্বাস ছেড়ে তার একটা হাত আরেকহাতে জড়িয়ে ধরে বলল, “তুমি ঠিক বলছ দিদিভাই”?

সীমন্তিনী অর্চনাকে আগের মতই বুকে চেপে ধরে বলল, “হ্যারে সোনা। আর এটা শুধু আজ থেকে বা কাল থেকে নয়। ওদের বিয়ের আগেই যেদিন আমি প্রথম কালচিনি গিয়েছিলুম, সেদিন থেকে। আর আমার জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত আমি ঠিক একইভাবে রচু আর দাদাভাইয়ের ওপর নজর রেখে যাব। আমার কথা তুমি বিশ্বাস করতে পারো। আর এসব ব্যাপারে একেবারে দুশ্চিন্তা করো না কেমন? এবার নীতার সঙ্গে আমরা একটু আলোচনা করি। দেখি রচু বা দাদাভাইয়ের ওপর কোন বিপদ নেমে আসতে পারে বলে ভাবছে ও”।

অর্চনাকে শান্ত করে সীমন্তিনী নবনীতাকে জিজ্ঞেস করল, “হ্যাঁ নীতা এবার বলো দেখি, তুমি কী বলতে চাইছ”?

নবনীতা শান্ত স্বরে বলল, “দিদি, রতু-দা যদি ওই মহিমা মালহোত্রা সেনের যোগা ইনস্টিটিউটেই কাজ করে তাহলে কিন্তু বিষয়টা সত্যিই খুব চিন্তার”।

সীমন্তিনী বলল, “কলকাতায় বা অন্য অনেক বড় বড় শহরে যে বিউটি পার্লার, মেসেজ সেন্টার, জিম, ব্যায়ামাগার, যোগা সেন্টারে অনেক রকম কূকীর্তি হয়ে থাকে সেটা আমার অজানা নয় নীতা। তাই দাদাভাই কাজে ঢোকবার আগেই যখন আমাকে প্রথম মহিমার যোগা ইনস্টিটিউটের ব্যাপারে বলেছিল, আমি সেদিনই তাকে সতর্ক করে দিয়েছিলুম। আর তাকে বলেছিলুম সে যেন কোনও বন্ড বা মেয়াদী চুক্তি করে কাজে না ঢোকে। আর কাজে ঢোকবার পরেও সে যেন সব সময় সতর্ক থাকে। কোনকিছু বেচাল বুঝলেই সে যেন সঙ্গে সঙ্গে আমাকে জানায়, আর সাথে সাথে সেখানে কাজ করাও ছেড়ে দেয়। আমি শুনেছি, দাদাভাইকে মহিমা নাকি গ্যারান্টি দিয়ে বলেছে যে তার যোগা সেন্টারে কোনও রকম অনৈতিক কাজকর্ম হয় না। আর সে এমনও আশ্বাস দিয়েছে যে দাদাভাইয়ের যদি কখনও তেমন কোন সন্দেহ হয় তবে মহিমা তাকে যে কোনও সময় চাকরি ছেড়ে দিতে বাধা দেবে না। দাদাভাই সে ইনস্টিটিউটে জয়েন করেছে প্রায় দেড় মাস হতে চলল। এর মধ্যে যদি সে বেচাল কিছু দেখে থাকতো তাহলে সে আমাকে অবশ্যই জানাতো। তাছাড়া রচু আর দাদাভাই তো সবসময় মহিমার মিষ্টি ব্যবহারের কথাই বলে। মহিমা তাদেরকে খুব ভালবাসে বলেই জানিয়েছে ওরা। রচুকে নাকি সে ছোটবোন বলে ভাবে, আর দাদাভাইকেও সে নাকি একেবারে ছোটভাইয়ের মতই ভালবাসে। তাহলে তুমি সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করছো কেন, সেটা একটু খুলে বল তো”।

নবনীতা এবার অনেক সংযত গলায় বলল, “রতীশ-দা আর বৌদি যখন তোমাকে এভাবে বলেছেন তাহলে তো ধরাই যায় তারা এ ব্যাপারে এখনও অজ্ঞই আছে। কিন্তু দিদি, আমি যখন পরিতোষের বাড়িতে আমার সব কথা তোমাদের সকলের কাছে খুলে বলেছিলাম সেদিন আমি তোমাদের আমার এসকর্ট হবার কথাও বলেছিলাম। আমার এক বান্ধবী যে কিনা আগে থেকেই এক ম্যাডামের এজেন্সীতে এসকর্টের কাজ করত, তার মাধ্যমেই আমি তার ম্যাডামের কাছে গিয়ে তার এসকর্ট এজেন্সীতে যোগ দিয়েছিলাম। সেদিন আমি তোমাদের কাছে আমার সে বান্ধবী আর ওই ম্যাডামের নাম গোপন করে গিয়েছিলাম। তুমি আর পরিতোষ দু’জনেই পুলিশে কাজ করো। আমার চরম বিপদের দিনে যারা আমাকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করেছিল সেই লোক গুলোর কোন বিপদ হোক, এটা আমি চাই নি। তাই সেদিন তাদের নাম ঠিকানা আমি তোমাদের কাছে গোপন করে গিয়েছিলাম। কিন্তু আজ এমন একটা পরিস্থিতিতে পড়ে বলতে বাধ্য হচ্ছি দিদি। আমার ওই ম্যাডামই হচ্ছেন মহিমা মালহোত্রা সেন। যার সহায়তায় আমি নিজের শরীরেরর বিনিময়ে আমার বেঁচে থাকবার জন্যে পয়সা রোজগার করতাম”।
 

অর্চনা নবনীতার কথা শুনে চাপা চিৎকার করে উঠলে সীমন্তিনী তার হাত চেপে ধরে নবনীতাকে বলল, “বেশ তোমার কথা নাহয় মেনেই নিলুম যে তোমার ওই মহিমার ইনস্টিটিউটেই দাদাভাই কাজ করে। তা তুমি সে ইনস্টিটিউটে কখনো গিয়েছিলে? সে ইনস্টিটিউটেও কি এমন দেহ ব্যবসার কাজ চলে বলে তোমার মনে হয়? আর ওই মহিমার ব্যাপারে তুমি যতটুকু যা জানো তা আমাকে খুলে বলো, প্লীজ” এ’কথা বলতেই লক্ষ্মীকে চায়ের ট্রে নিয়ে আসতে দেখে সে হাত তুলে ঈশারায় নবনীতাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “দাঁড়াও, লক্ষ্মীদি চা নিয়ে এসেছে। আগে আমরা চা খেয়ে নিই”।
 

তিনজনেই চুপ করে লক্ষ্মীর হাত থেকে চা নিতে লক্ষ্মী আবার কিচেনের দিকে চলে যাবার পর নবনীতা খুব নিচু গলায় বলতে শুরু করল, “দিদি আমি নিজেও তো সেখানে খুব বেশীদিন কাজ করিনি। আমিও মাত্র মাস খানেকই ওই ম্যাডামের সাথে কাজ করেছি। তবে আমার বান্ধবী সেখানে অনেকদিন থেকেই কাজ করছে। ও ওই যোগা ইনস্টিটিউটেও অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করে, আবার তার পাশাপাশি ম্যাডামের এজেন্সীর এসকর্ট হিসেবেও কাজ করে। এখন তো আর গোপন রাখার কোন মানে নেই। তোমরা রতীশ-দার কাছ থেকেই তার নাম জেনে যাবে। তাই আর রাখঢাক না করেই বলছি, আমার সে বান্ধবীর নাম বীথিকা। বীথিকা মল্লিক। কিন্তু দিদি, আমি তোমার কাছে হাত জোড় করে প্রার্থনা করছি, আমার কথার ওপর ভিত্তি করে তোমরা বীথিকার কোনও ক্ষতি করো না প্লীজ। আমার চরম দুঃসময়ে ও-ই শুধু আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল। আর ও নিজেও এসকর্টের কাজ করে নিরুপায় হয়েই। ওর বাবা দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী। আর ওর এক ছোট ভাইও খুব ছোটবেলাতেই পঙ্গু হয়ে গেছে। তাই শুধু যোগা সেন্টারের অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে ও যা মাইনে পায় তাতে বাবা আর ভাইয়ের চিকিৎসার খরচ মিটিয়ে সংসার চালানো একেবারেই অসম্ভব। তাই ও বাধ্য হয়েই নিজের জীবনটাকে উৎসর্গ করে কেবল মাত্র বাবা আর ভাইয়ের চিকিৎসার খরচ মেটাবার জন্যেই ও’পথে নেমেছে”।

সীমন্তিনী তাকে আশ্বস্ত করে বলল, “যারা নিজের জীবন বাজি রেখে আত্মীয় পরিজনদের মুখে খাবার তুলে দেয়, তারা যতই হীন কাজ করুক না কেন, আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে মনে তাদের শ্রদ্ধাই করি নীতা। হ্যাঁ, আইনের রক্ষক হিসেবে অনেক সময়েই আমাদের মনের বিরূদ্ধে গিয়ে অনেক কিছু করতে হয়। কিন্তু তোমাকে আমি কথা দিচ্ছি, অন্ততঃ তোমার আজকের কথার ভিত্তিতে আমি বা পরিতোষ বীথিকার ওপর কোনও ক্ষতিকারক কিছু করব না। তুমি এ ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থেকো। এবার বাকি ব্যাপারগুলো আমাকে খুলে বলো”।
 

নবনীতা কয়েকবার বড় বড় শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করে বলল, “দিদি, মহিমা ম্যাডামের ওই যোগা সেন্টারটা দক্ষিণ কলকাতার একটা আটতলা বিল্ডিঙের ছ’তলায়। বেশ বড়সড় একটা কম্পাউন্ড। ওই বিল্ডিঙের ছ’তলাটার পুরোটা নিয়েই তার সে সেন্টার। আর বীথিকার মুখেই আমি শুনেছি যে ওই সেন্টারের যারা কর্মচারী, পুরুষ মহিলা নির্বিশেষে তারা প্রায় সবাই ম্যাডামের এসকর্ট এজেন্সীতে এসকর্টের কাজ করে কেবল মাত্র বাড়তি উপার্জনের জন্যে। ওই ইনস্টিটিউটে রতীশ-দা বাদেও আরও দু’জন পুরুষ ট্রেনার আছে। তাদের নাম বরুন আর সুজয়। তারাও ম্যাডামের এজেন্সীর মেল এসকর্ট। আর বীথিকার কথা তো আগেই বলেছি। বীথিকা ছাড়াও আরও একজন মহিলা কয়েকমাস আগে পর্যন্তও সে ইনস্টিটিউটের ট্রেনার হবার সাথে সাথে বীথিকারই মত ম্যাডামের এজেন্সীর ফিমেল এসকর্ট হিসেবে কাজ করত। তবে কয়েক মাস আগে সে অন্তঃসত্বা হয়ে পড়তেই ম্যাডামের কাজ থেকে ছুটি নিয়েছে। ডিসেম্বরের দিকে সে হয়ত আবার ম্যাডামের কাজে যোগ দেবে। এরা ছাড়াও কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে ম্যাডামের আরও অনেক মেল এবং ফিমেল এসকর্টরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, যারা ম্যাডামের যোগা সেন্টারের সাথে একেবারেই জড়িত নয়। বলতে গেলে প্রায় পুরো গ্রেটার কলকাতায় ম্যাডামের এমন প্রচুর এসকর্ট আছে। তবে ম্যাডামের যোগা সেন্টারের সাথে তাদের প্রত্যক্ষ্য বা পরোক্ষ কোনও রকম যোগাযোগই নেই। কিন্তু ম্যাডামের আয়ের আসল স্রোত এই এসকর্টের ব্যবসাই। তবে বীথির মুখেই শুনেছি যে সেন্টারের কর্মচারীরা প্রায় সকলেই ম্যাডামের এসকর্ট ব্যবসার সাথে জড়িত থাকলেও, ম্যাডামের কড়া নির্দেশেই তারা সেন্টারের ভেতরে ওই এসকর্ট ব্যবসা সংক্রান্ত কোন কথাই বলাবলি করে না। আর সেন্টারের ভেতরেও এই ব্যবসা সংক্রান্ত কোন কাজকর্ম হয় না। কারন এসকর্টরা ক্লায়েন্টের বাড়ি বা তাদের পছন্দের কোনও জায়গাতেই গিয়ে মিট করে। তবে ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ, তাদের সাথে লেনদেন এবং এসকর্টদের বিভিন্ন ক্লায়েন্টদের কাছে পাঠাবার কাজগুলো ম্যাডাম ওই ইনস্টিটিউটটার ঠিক নিচের তলাতেই তার নিজস্ব একটা প্রাইভেট রেস্ট রুম আছে, সেখান থেকে করেন। আমাকেও ইন্টারভিউয়ের জন্য তিনি ওই যোগা ইনস্টিটিউটের নিচের তলার ওই রুমটাতেই ডেকে পাঠিয়েছিলেন। তবে বীথির মুখেই শুনেছি যে বিশেষ কয়েকজন ক্লায়েন্ট যারা শুধু ম্যাডামের সাথে সময় কাটাতে আসে তাদেরকে ম্যাডাম তার ওই রেস্টরুমেই মিট করেন। নিজের এসকর্ট ব্যবসা সুচারু রূপে চালাতেই ম্যাডাম ওই সব ক্লায়েন্টকে সার্ভিস দিয়ে থাকেন”।

এতখানি একদমে বলে নবনীতা একটু সময় চুপ করে থেকে আবার বলল, “আমার মনে হয়, ম্যাডামের ওই পাঁচতলার রেস্ট রুম, বা বাইরের এসকর্ট ব্যবসার ব্যাপারে রতীশ-দা এখনও কিছু জানতে পারেননি। আর ম্যাডাম নিজে থেকে যে এ সমস্ত কথা তাকে জানাবেন না এ তো বলাই বাহুল্য। কিন্তু দিদি, রতীশ-দা নিজের অজ্ঞাতেই কেমন একটা বিপদসঙ্কুল জায়গায় গিয়ে পড়েছেন তা তো বুঝতে পারছ। আর তার মত সুন্দর হ্যান্ডসাম একজন পুরুষের যে ওই ধরণের কাজে কতটা ডিমান্ড আছে তা হয়ত তোমরা কল্পনাও করতে পারবে না, কিন্তু বীথির মুখে আমি সে’সব কথা শুনেছি। তাই আমার মনে হচ্ছে রতীশ-দা এখনও পর্যন্ত ম্যাডামের ওই কাজে জড়িয়ে হয়ত পড়েন নি। কিন্তু দিদি, আমার মন বলছে, রতীশ-দা সেখানে একদম সুরক্ষিত নন। তুমি প্লীজ কিছু একটা করো দিদি। রতীশ-দা আর বৌদিকে তুমি ওই ফাঁদে পড়া থেকে বাঁচাও। নইলে আজ বা হোক কাল, যে কোন সময় সর্বনাশ ঘটে যেতে পারে। রতীশ-দাকে তুমি এক্ষুনি বলে দাও যেন সে ম্যাডামের ওখানে কাজ ছেড়ে দেন। আর তার খোয়া যাওয়া টাকাটা যখন ফিরে পাওয়াই গেছে, তাহলে তার আর ম্যাডামের ওখানে থাকবার দরকার কি? তিনি তো নিজে আলাদা ভাবে নিজের একটা সেন্টার এখন খুলতেই পারেন, তাই না”?

নবনীতার সমস্ত কথা শুনে সীমন্তিনী খুব গভীরভাবে কিছু একটা ভাবতে লাগল। অর্চনা নবনীতার কথা শুনে খুব ভীত হয়ে পড়ল। সে সীমন্তিনীর একটা হাত আঁকড়ে ধরে প্রায় কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, “ও দিদিভাই, কি হবে গো? নীতাদির কথা শুনে আমার তো হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছে”।
 

সীমন্তিনী অর্চনার হাতে চাপ দিয়ে শান্ত গলায় বলল, “ভয় পাবার কিচ্ছু নেই অর্চু। আমি তোমাকে তো আগেই বলেছি যে দাদাভাই আর রচুর ওপরে কোনরকম বিপদ নেমে আসতে আমি দেব না। ওদের ওপর আমার সব সময় নজর আছে। এই যে আমি এখন তোমাদের সাথে এখানে বসে আছি, কিন্তু দাদাভাই আর রচুর ওপর আমার এই মূহুর্তেও নজর আছে। ওদের ওপর কোনও বিপদ আসবার আগেই আমি ঠিক সময়ে তা জানতে পারব। আর প্রয়োজন মত সব ব্যবস্থা নিতে পারব। তুমি উতলা হয়ো না বোন। তবে তোমরা দু’জনেই আমাকে একটু ব্যাপারটা ভেবে দেখতে দাও। কারন দাদাভাই বা রচু ওরা দু’জনেই আমার কাছে কোন কথা গোপন রাখবে না। আর নবনীতাও যে অমূলক কথা বলছে সেটাও হতে পারে না। তাই ব্যাপারটা নিয়ে আমাকে এখন একটু ভালভাবে ভেবে দেখা দরকার। নীতা বোন, তুমি একটু অর্চুকে নিয়ে তোমার ঘরে যাবে প্লীজ। আমাকে একটু একা থাকতে দেবে প্লীজ। তবে প্লীজ, আমাকে তোমরা কেউ ভুল বুঝো না। আর অর্চু, তোমাকে আরেকটা কথা বলছি। নীতার মুখে আমরা এখন যা কিছু শুনলুম, এ সবের কোন কিছুর খবরই যেন রাজগঞ্জ বা কালচিনির কেউ জানতে না পারে, এ’কথাটা মাথায় রেখো। আর শুধু তাদের কথাই বা বলছি কেন। রচু আর দাদাভাইও যেন এ ব্যাপারে কিচ্ছুটি জানতে না পারে আপাততঃ। কারন এ’সব খবরের বিন্দুমাত্রও যদি তারা কেউ জানতে পারেন, তাহলে তারা সকলেই চিন্তায় চিন্তায় পাগল হয়ে যাবেন। আমি চাই না সেটা হোক। যা ব্যবস্থা নেবার আমি তা নিশ্চয়ই নেব। আমার ওপর এ’টুকু ভরসা তো করতে পারবে, না কি? আমি আমার ভগবানের নামে শপথ করে বলছি দাদাভাই আর রচুর কোন বিপদ হতে আমি দেব না। নীতা, প্লীজ এবার তোমরা একটু তোমাদের ঘরে যাও। আর অর্চুকে বুঝিয়ে আরও কিছুটা শান্ত করবার চেষ্টা করো প্লীজ”।

নবনীতা বিছানা থেকে নামতে নামতে বলল, “হ্যাঁ দিদি, যাচ্ছি। তবে দিদি একটা ছোট্ট অনুরোধ রাখবে আমার”?

সীমন্তিনী প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তার দিকে চাইতেই সে আবার বলল, “দেখ দিদি, রাজগঞ্জ আর কালচিনির কাউকে না জানালেও আমরা তিনজন তো এ বিপদের কথা জানতেই পারলাম। আমরাও তো এখন থেকে দুশ্চিন্তা আর দুর্ভাবনায় থাকব। তাই বলছি দিদি, এ ব্যাপারে তুমি কী ব্যবস্থা নিচ্ছ তা কিন্তু আমাদের দু’জনের কাছে গোপন রাখবে না। বলো দিদি, আমার এ অনুরোধটা রাখবে প্লীজ”।

অর্চনাও সাথে সাথে বলল, “হ্যাঁ দিদিভাই, আমাদের তুমি সবকিছু জানিও এ ব্যাপারে। নইলে আমি কিন্তু পাগল হয়ে যাবো”।

সীমন্তিনী অর্চনাকে বুকে জড়িয়ে ধরে তার মাথায় আদর করে চুমু খেয়ে বলল, “বেশ, তোমাদের কাছে আমি এ ব্যাপারে কোনকিছু লুকোব না কথা দিলুম। কিন্তু তোমরা দু’জনও আমাকে কথা দাও, ঘাবড়ে গিয়ে দুশ্চিন্তা করে নিজেদের ক্ষতি তোমরা কেউ করবে না। আর এ ব্যাপারে আমরা তিনজন ছাড়া চতুর্থ কেউ যেন একেবারেই কিছু জানতে না পারে”।

অর্চনা সীমন্তিনীর দু’হাত ধরে বলল, “ঠিক আছে দিদিভাই। আমরা তোমায় সে কথা দিলাম। এই তোমাকে ছুঁয়ে শপথ করছি আমি”।

নবনীতাও সীমন্তিনীর হাতে হাত রেখে বলল, “হ্যাঁ দিদি, আমিও তোমাকে সে কথা দিচ্ছি” বলে অর্চনার হাত ধরে তাকে বিছানা থেকে নামাতে নামাতে বলল, “চলো অর্চু, আমরা আমাদের ঘরে যাই। দিদি সময় মত নিজেই আবার আমাদের ডেকে আনবেন। কিচ্ছু ভেবো না। চলো এসো”।
 

******************
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
(Update No. 140)

নবনীতা আর অর্চনা পাশের ঘরে চলে যেতে সীমন্তিনী একবার দেয়ালে লাগানো ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত সাতটা পঁয়ত্রিশ। রচনা বলেছিল রাত সাতটার পর মহিমাকে ফোন করতে। কিন্তু সীমন্তিনীর মন বলছে নবনীতার বলা কথাগুলো নিয়ে আগে ভাল ভাবে ভেবে দেখা দরকার। নবনীতা নিশ্চয়ই বানিয়ে বা বাড়িয়ে কিছু বলে নি। তাই রতীশকে নিয়ে তার দুশ্চিন্তা যথেষ্ট যুক্তিসংগত। কিন্তু রতীশ গত দেড় মাসের ভেতরে মহিমার ওপর একবিন্দু সন্দেহও প্রকাশ করেনি, তাহলে ধরেই নিতে হয়, নীতা যেমনটা বলছে, রতীশ মহিমার ওই এসকর্ট ব্যবসার বিষয়ে এখনও সত্যি কিছু জানে না। রচনাও তো মহিমাকে দেখেছে। সেও নাকি একদিন মহিমার ইনস্টিটিউটে গিয়েছিল। মহিমাও দু’দিন তাদের ফ্ল্যাটে এসে অনেকটা করে সময় কাটিয়ে গেছে। রতীশ খুব সহজেই সবকিছু সাদা বলে ধরে নেয়। কিন্তু রচনা তো যথেষ্ট বুদ্ধিমতী। মহিমার কাজে কথায় তার ওপর যে রচনার একটুও সন্দেহ হয়নি, এ তো বলাই বাহুল্য। কারন রচনার মনে তেমন কোনও সন্দেহের ছোঁয়া লেগে থাকলে সে সেটা সঙ্গে সঙ্গেই সীমন্তিনীকে জানাতো। আর নবনীতা যেমন বলল তাতে মহিমার ওই দেহব্যবসার কাজে শুধু মেয়েরাই নয় অনেক পুরুষও কাজ করে। বড় বড় শহরে অনেক ধনী ও বিত্ত পরিবারের এবং হাই সোসাইটির অনেক মহিলাই নিজেদের দাম্পত্য জীবনে যৌনতার সুখ হারিয়ে ফেলার পর বারমুখো হয়। এদের মধ্যে যাদের আর্থিক সংগতি কিছুটা কম, তারা অনেকেই তাদের পরিচিত সার্কেলের ভেতর নিজেদের চাইতে কমবয়সী বা সমবয়সী ছেলে বা পুরুষের সাথে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে তোলে। আর যাদের পয়সার অভাব নেই তারা কোন রকম বাধ্য বাধকতা বা বন্ধনে আবদ্ধ না হয়ে বিভিন্ন এজেন্সী বা দালালের মাধ্যমে সাময়িক যৌনসঙ্গী খুঁজে নিয়ে নিজেদের শারীরিক চাহিদা মিটিয়ে থাকে। রতীশের মত সুন্দর দেহ সৌষ্ঠবের অধিকারী এক পুরুষের ওপর তারা খুব সহজেই আকর্ষিত হবে, এ তো খুবই সহজবোধ্য ব্যাপার। রতীশের মত এক যুবককে নিজেদের শয্যাসঙ্গী করতে তারা অতিরিক্ত টাকাও খরচ করতে রাজী হবে। তাই মহিমা যদি চায় তাহলে রতীশকে কাজে লাগিয়ে প্রচুর অর্থ কামাতে পারবে সে। আর মহিমা তো রচনাকেও দেখেছে। রচনাকেও ভগবান এতোটাই রূপ সৌন্দর্য দিয়ে পাঠিয়েছেন যে তার মত মেয়ের ওপর কম বয়সী বেশী বয়সী সব পুরুষই আকৃষ্ট হবে। মহিমা কি রচনাকেও তার ওই ব্যবসায় টেনে নেবার অপেক্ষায় আছে? এ’কথা মনে হতেই সীমন্তিনীর শরীরটা থরথর করে কেঁপে উঠল। বুকের ভেতর কেমন একটা চাপা বেদনা হতে শুরু করল।
 

নিজেকে সংযত করে সীমন্তিনী আবার ভাবতে লাগল রচনা আর রতীশকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে অনেক প্রশ্ন করে তাকে জানতে হবে মহিমার আচার ব্যবহারে তাদের কখন কেমন মনে হয়েছে। পরিতোষ অবশ্য আগে থেকেই রতীশের ওপর নজর রাখছে। রতীশ ভোরবেলা ঘর থেকে বের হবার পর থেকে সে কখন কোথায় যায়, কতক্ষণ সেন্টারে থাকে, সেন্টার থেকে বেরিয়ে সে কোথায় যায় এসব কিছুর ওপরেই পরিতোষের নিজস্ব নেটওয়ার্কের লোকেরা নজর রাখছে। পরিতোষের কাছেও তো মনে হয় এমন কোন রিপোর্ট আসেনি। এলে পরিতোষ তাকে অবশ্যই জানাতো। তার মানে ধরে নেওয়া যায় যে রতীশ এখন পর্যন্ত এদিক দিয়ে নিরাপদে আছে। কিন্তু সে তো মহিমার নাগালের ভেতরেই আছে। নবনীতা যেমন ভাবছে তেমনই যে কোন সময় সে মহিমার ওই অনৈতিক ব্যবসার জালে জড়িয়ে পড়তে পারে। মহিমা গত দেড় মাসের ভেতরেও যে রতীশকে এ কাজে নামাবার চেষ্টা করেনি সেটাই একটা আশ্চর্যের বিষয়। আর একবার যদি রতীশ তার ওই জালে জড়িয়ে পড়ে তাহলে রচনাও বেশীদিন মুক্ত থাকবে না। সীমন্তিনীর একবার মনে হল পরিতোষের সাথে ব্যাপারটা নিয়ে এখনই আলোচনা করা দরকার। আবার পরক্ষণেই মনে হল নাহ এখনই সেটা করা ঠিক হবে না। তার নিজেকে আগে একটা পরিষ্কার ধারণা করে নিতে হবে পুরো ব্যাপারটা নিয়ে। আর মহিমার সাথেও আগে কথা বলে নিতে হবে। মহিমাই বা তার সাথে আলাপ করবার জন্য হঠাৎ করেই এত উতলা হয়ে উঠেছে কেন? সে সীমন্তিনীর কাছ থেকে কি আশা করতে পারে? অবশ্য মহিমার সাথে কথা বললেই সে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। তাই সীমন্তিনী মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল রচনাকে বা রতীশকে এ ব্যাপারে তো কিছু বলবেই না, এমনকি নিজের কাছে গোটা ব্যাপারটা কিছুটা পরিষ্কার করে নেবার আগে সে পরিতোষকেও কিছু জানাবে না। পরিতোষ তো রতীশের ওপর ভোর সাড়ে চারটে থেকে রাত এগারটা বারোটা অব্দি নজর রাখছেই। তাই এখনই বিচলিত হবার মত কিছু নেই।

এমন সময় ঘরের ল্যান্ড লাইন ফোনটা বেজে উঠল।নিজের ভাবনা ছেড়ে উঠে ফোনের রিসিভার হাতে নিতেই ওপাশে রচনার গলা শোনা গেল, “দিদিভাই কি করছ”?

সীমন্তিনী জবাব দিল, “তেমন কিছু না রে, একটা কাজের ব্যাপারেই একটু ভাবছিলুম। তা তুই হঠাৎ এ সময়ে ফোন করলি? কি ব্যাপার রে? কিছু হয়েছে”?

রচনা একটু অবাক হয়ে বলল, “ওমা, কী আবার হবে। আমি তো রোজই রাতের রান্না শেষ করে তোমাকে একবার ফোন করি। আজও তাই করছি। আর তুমি বলছ আমি অসময়ে .........”

দেয়াল ঘড়িতে রাত প্রায় ন’টা বাজতে চলেছে দেখতে পেয়েই সীমন্তিনী রচনাকে মাঝপথে বাঁধা দিয়েই বলল, “ওমা, সত্যি তো রে। রাত ন’টা বেজে গেছে! আমি তো খেয়ালই করিনি রে। সরি সোনা, আমাকে ভুল বুঝিস না বোন। আসলে একটা ব্যাপার নিয়ে মনে মনে এত ব্যস্ত ছিলুম যে ঘড়ির দিকে নজরই দিই নি” বলতে বলতে দরজার দিকে চোখ যেতেই দেখল নবনীতা আর অর্চনা তার ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে কৌতূহলী চোখে তাকিয়ে আছে। সে হাতের ঈশারায় তাদের ভেতরে আসবার ঈঙ্গিত করতেই রচনা ও’পাশ থেকে বলল, “সরি গো দিদিভাই। তুমি যে এখন ব্যস্ত থাকবে সেটা তো আমি ভাবিনি। রোজকার মতই আমি তোমার সাথে কথা বলব বলে ফোনটা করেছি”।

সীমন্তিনী ফোনের স্পীকার অন করে দিয়ে বলল, “আরে নারে পাগলী। আমার কোনও ডিস্টার্ব হয়নি। আর তুই ফোন করে ভালই করেছিস। জানিস অফিস থেকে ফেরার পর থেকে আজ অর্চুর সাথে গল্পই করতে পারিনি আমি। অর্চু আর নীতা ওদের ঘরে বসে কথা বলছে আর আমি আমার ঘরে আমার অফিসের কাজ নিয়ে ভাবতে ব্যস্ত। অবশ্য তুই সে জন্যে আমার ওপর একটু রাগ করতেই পারিস। তুই ভাবতেই পারিস যে আমি তোর দিদির প্রতি খুব একটা মনোযোগ দিচ্ছি না”।

রচনা সাথে সাথে বলল, “দিদিভাই ভাল হচ্ছে না কিন্তু। তুমি কিন্তু এবার আমাকে দুঃখ দিচ্ছ। আমার মা বাবা ভাই বোনকে তুমি কী চোখে দেখ, সেটা আমাকে আজ নতুন করে ভেবে দেখতে বলছ তুমি? আর তুমি বলছ অফিস থেকে ফিরে তুমি দিদির সাথে একটুও গল্প করোনি আজ। কথাটা আমি একদম বিশ্বাস করছি না”।

অর্চনা এবার সীমন্তিনীর গা ঘেঁসে দাঁড়িয়ে ফোনের মাউথপিচের সামনে নিজের মুখ নিয়ে বলল, “তুই একদম ঠিক বলেছিস রচু। আমি, নীতাদি আর দিদিভাই মিলে সাড়ে সাতটা অব্দি গল্প করার পর নীতাদি আর আমি আমাদের ঘরে চলে গিয়েছিলুম রে। দিদিভাই তোর সাথে দুষ্টুমি করছে”।
 

রচনা এবার অর্চনাকে উদ্দেশ্য করে বলল, “সেটা কি আর আমি বুঝিনি রে দিদি। তা হ্যারে দিদি। আজ মা বাবার সাথে কথা হয়েছে তোর”?

অর্চনা জবাব দিল, “হ্যারে, সবার সাথেই কথা হয়েছে। বাড়ির সকলেই ভাল আছে। আমিও খুব ভাল আছি। আচ্ছা তুই দিদিভাইয়ের সাথে কি কথা বলবি সেটা আগে সেরে নে”।

এবার রচনা বলল, “আচ্ছা দিদিভাই, তুমি কি বৌদিকে ফোন করেছিলে”?

সীমন্তিনী বলল, “নারে সোনা। তোর কথাটা আমার মনে ছিল ঠিকই কিন্তু একটা কাজ নিয়ে ভাবতে ভাবতে ফোন করার কথাটা খেয়ালই হয়নি রে। এখন তো রাত ন’টা বেজে গেল। আর এখন তো তোদের সাথে কথা বলার পর আমাকে আবার কালচিনি ফোন করতে হবে। হয়ত পরিতোষও ফোন করবে। তাই ভাবছি আজ আর তোর সেই বৌদিকে ফোন করব না। কাল সন্ধ্যের পর করব। আচ্ছা সে আমার ফোন না পেয়ে তোকে কি আবার সে’কথা জিজ্ঞেস করছিল না কি”?

রচনা বলল, “তুমি এটাও বুঝে ফেললে দিদিভাই? সত্যি গো। সাড়ে আটটা নাগাদ বৌদি ফোন করে বললেন যে উনি তোমার ফোনের অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু তুমি তখন অব্দি তাকে ফোন করনি। তাই কথাটা জিজ্ঞেস করলুম তোমাকে। বেশ তো। আজ যখন আর করতে চাইছ না তাহলে বরং কালই করো। বৌদি আবার ফোন করলে আমি তাকে সেভাবে বলে দেব। আর উনি ফোন না করলে তোমার ভাই কাল সকালে ইনস্টিটিউটে গিয়ে বৌদিকে বলে দেবেন’খন। আচ্ছা দিদিভাই, তোমার শরীর ঠিক আছে তো? কিছু হয়নি তো তোমার”?
 

সীমন্তিনী স্নেহমাখা গলায় জবাব দিল, “হ্যারে বাবা, আমি ঠিক আছি। কিচ্ছু হয়নি আমার। আচ্ছা দাদাভাই কোথায় রে? তাকে ফোনটা একটু দে তো, একটু কথা বলি”।

ও’পাশ থেকে রতীশ ‘হ্যা বল মন্তি’ বলতেই সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “দাদাভাই কেমন আছিস”?

রতীশ বলল, “ভাল আছি রে মন্তি। তুই, অর্চুদি, নীতাদি আর লক্ষ্মীদি তোরা সবাই ভাল আছিস তো”?

সীমন্তিনী ফোন সেটটা হাতে নিয়ে নবনীতার দিকে ঈশারা করতেই নবনীতা ফোনের গুটিয়ে রাখা তারটাকে খুলে দিল। সীমন্তিনী ফোন হাতে নিয়ে বিছানার দিকে যেতে যেতে বলল, “আমরা সবাই ভাল আছিরে দাদাভাই। আর জানিস? নীতার জন্য একটা কাজ ঠিক করে ফেলেছি। সামনের মাসের এক তারিখ থেকেই সে ওখানে যোগ দেবে”।
 

সীমন্তিনী বিছানায় বসে হাতের ঈশারায় নবনীতা আর অর্চনাকেও বিছানায় বসতে বলল। ওদিক থেকে রচনার গলা শোনা গেল, “ওমা, তাই দিদিভাই? খুব ভাল হয়েছে। তা কাজটা কিসের গো? নীতাদির পছন্দ হয়েছে”?

সীমন্তিনী বলল, “আমাদের এখানে একটা গারমেন্টস ফ্যাক্টরী আছে। সেখানে দু’ঘন্টা ও ডিজাইনিং আর টেলারিং-এর কাজ শিখবে। তারপর দুপুর দুটো থেকে রাত আটটা অব্দি ওই শোরুমে সেলস গার্ল হিসেবে কাজ করবে। আর তোর নীতাদির পছন্দ হয়েছে কিনা, সেটা তুই তার মুখ থেকেই শুনে নে। আমাকে তো তেমনভাবে এখনও কিছু বলেনি সে” বলে নীতার দিকে রিসিভারটা বাড়িয়ে দিতে নবনীতা বলল, “বৌদি, আমার প্রণাম নিও। দিদির সাথে থেকেই আমি কাজটা করার সুযোগ পাচ্ছি বলেই আমি খুশী। তা তোমরা দু’জন ভাল আছ তো বৌদি”?

রচনা বলল, “হ্যাঁ নীতাদি, ভালই আছি। তবে শোনো, ফোনে সব সময় প্রণাম নিও প্রণাম নিও কথাটা বোলনা তো। তুমি আমার থেকে অনেক বড়। তোমাকে আমি দিদি বলে ডাকি। তোমার কাছ থেকে আমি প্রণাম নিতে পারি”?
 

নবনীতা বলল, “আচ্ছা আচ্ছা বৌদি, ঠিক আছে আর বলব না। নাও, এবার দিদির সাথে কথা বল”।

সীমন্তিনী এবার বলল, “দাদাভাই, তুই শুনছিস তো? আচ্ছা তোর বৌদি হঠাৎ আমার সাথে কথা বলবার জন্যে এমন পাগল হয়ে উঠল কেন রে? কি ব্যাপার? তোর সাথে কি কিছু কথা কাটাকাটি বা আর কিছু হয়েছে”?
 

রতীশ বলল, “নারে মন্তি, সেসব কিছু নয়। বৌদি যে কেন তোর ফোন নাম্বার নিতে এতটা পীড়াপীড়ি করছিলেন, সেটা আমি নিজেও বুঝতে পারিনি রে। বরং একটু অবাকই হয়েছি। তোর কথা রাখতেই তাকে আমরা তোর কন্টাক্ট নাম্বার দিইনি। তার বদলে তাকে বলেছি যে তুই নিজেই তাকে ফোন করবি”।

সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “আজ সে কেন এসেছিল তোদের ফ্ল্যাটে? কোনও কাজ ছিল”?

রতীশ বলল, “না তো। কোনও কাজ ছিল না। আর কাজ থাকবেই বা কি? তার কয়েক ঘন্টা আগেই তো আমি সেন্টারে ছিলুম। তাকে বলেই বেরিয়ে এসেছিলুম। উনি তো হঠাতই বিকেলে এসে উপস্থিত। এসে বললেন যে এদিকে কোথাও নাকি কি একটা জরুরী কাজে এসেছিলেন। তাই রচুর সাথে দেখা করতে চলে এসেছেন। এমনি এটা সেটা নিয়ে গল্প করলেন। রচু তাকে প্রথমে শরবৎ পরে কফি বানিয়ে খাওয়ালো। তারপর চলে গেলেন”।
 

সীমন্তিনী আবার জিজ্ঞেস করল, “কি কি নিয়ে তোদের সাথে কথা বলল? তার সেন্টারের ব্যাপারে? না অন্য কিছু নিয়ে”?

রতীশ জবাব দিল, “নারে ইনস্টিটিউট নিয়ে কিছু বলেননি। আমাদের চেনাজানা পরিচিত বা আত্মীয় কেউ কলকাতায় আছে কি না। আমাকে আর রচুকে কে সবচাইতে বেশী ভাল বাসে, এইসব। যখন শুনলেন যে তুই আমাদের সবচেয়ে বেশী ভালবাসিস, আর ক’দিন আগেই তুই কলকাতা এসেছিলি, সেটা শুনেই উনি খুব অভিমান করেছিলেন যে আমরা তার সাথে তোর পরিচয় করিয়ে দিলুম না কেন। তখনই তোর ফোন নাম্বার চেয়ে বসলেন। তোর সাথে কথা বলবার জন্য উতলা হয়ে উঠেছিলেন। রচু তো তখনই তোকে একবার ফোন করেছিল। কিন্তু তুই রিসিভ করিস নি। তাই আমরা তোকে তার সাথে কথা বলার অনুরোধ করব বলে তাকে বিদেয় করেছি। ব্যস এটুকুই”।

সীমন্তিনী একটু চিন্তান্বিত ভাবে বলল, “এ ছাড়া আর কোনকিছু বলে নি”?

রতীশ জবাব দিল, “নারে মন্তি, আর তেমন কিছু তো বলেন নি। তা তুই এ ব্যাপারে এত প্রশ্ন করছিস কেন রে? তুই কি অন্য কিছু ভাবছিস না কি”?

সীমন্তিনী বলল, “না অন্য আর কি ভাবব। যাকে আমি চিনি না জানিনা, তার সম্বন্ধে আর অন্য কি ভাবব। আচ্ছা দাদাভাই, রচু আমাকে সন্ধ্যে সাড়ে সাতটার দিকে তাকে ফোন করতে বলেছিল। কিন্তু আমি তো আজ সন্ধ্যের পর অন্য একটা ব্যাপার নিয়ে একটু ব্যস্ত ছিলুম। তাই ফোন করে উঠতে পারিনি রে। আর এরপরেও কালচিনিতে একবার ফোন করতে হবে। আর কলকাতা থেকে পরিতোষও হয়ত একবার ফোন করতে পারে। তাই আজ বোধহয় আর তোর বৌদির সাথে কথা বলতে পারব না রে। যদি সে আবার তোদের আজ এ ব্যাপারে ফোন করে, তাহলে তাকে একটু বুঝিয়ে বলিস দাদাভাই। আর বলিস আমি কাল সন্ধ্যের পর তাকে নিশ্চয়ই ফোন করব, কেমন”?

রতীশ বলল, “ঠিক আছে মন্তি। সেটা আমরা বলে দেব। কিন্তু মন্তি, অর্চুদি কেমন আছে রে? তোর ওখানে এসে সে খুশি তো? ওষুধপত্র খাবার দাবার ঠিকঠাক মত খাচ্ছে তো রে”?

সীমন্তিনী অর্চনার দিকে একবার তাকিয়ে বলল, “হ্যারে দাদাভাই। অর্চু একদম ঠিক আছে। আর লক্ষ্মীদি ওর খাবার দাবার আর ওষুধপত্রের ব্যাপারে সর্বক্ষণ নজর রাখছে। তুই তাকেই জিজ্ঞেস কর না। ও তো আমার সাথেই আছে”।

অর্চনা হাতের ঈশারায় ‘না’ করতে ওদিক থেকে রতীশও বলল, “ঠিক আছে মন্তি। রচুর সাথে তো কথা হয়েছেই। আমি শুধু একটু তোর কাছ থেকে জানতে চাইছিলুম, সে সত্যিই ঠিক আছে কি না”।

সীমন্তিনীও আর কথা না বাড়িয়ে বলল, “আচ্ছা দাদাভাই, এবার রাখছি কেমন? নইলে কালচিনিতে ফোন করতে দেরী হয়ে যাবে। মাসি রোজ এমন সময়ে আমার ফোনের অপেক্ষা করেন। তাই ছাড়ছি এখন। রচু সোনা, তোরা দুটিতে এবার খাবার দাবার খেয়ে শুয়ে পড়, কেমন? গুড নাইট”।
 

সীমন্তিনীর সাথে সাথে নবনীতা আর অর্চনাও ফোনের কাছাকাছি এসে “গুড নাইট” বলতে ওদিক থেকে রতীশ আর রচনাও “গুড নাইট” বলল।

সীমন্তিনী প্রায় সাথে সাথেই কালচিনির বাড়িতে ফোন করে বিধুবাবু, বিভাদেবী আর কিংশুকের সাথে কথা বলল। অর্চুও তাদের সাথে সংক্ষেপে কথা বলে নিল।


*****************

ফোনের কথা শেষ হতে নবনীতা ফোনটাকে আবার ঘরের কোনায় যথাস্থানে রেখে দিয়ে ফিরে আসতেই অর্চনা উৎকণ্ঠিত গলায় জিজ্ঞেস করল, “ও দিদিভাই, কি বুঝছো গো? ভেবে চিন্তে কিছু বুঝতে পারলে কি”?

সীমন্তিনী অর্চনাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “অর্চু সোনা বোন আমার, তুমি এত ভাবছ কেন। আমি ঠাণ্ডা মাথায় ব্যাপারটা ভেবে দেখলুম, দাদাভাই আর রচুর ওপর এখনও তেমন কোনও বিপদ নেমে আসেনি। আর ওরা যে নিশ্চিন্তে আছে, ভাল আছে তা কি ওদের সাথে কথা বলে বুঝতে পারো নি তুমি? তবে নীতা আমাদের মহিমার ব্যাপারে সব খুলে বলে খুব ভাল করেছে” বলে নবনীতার একটা হাত ধরে বলল, “তুমি কথা গুলো খুলে বলাতে আমরা আগে থেকেই আরও সাবধান হতে পারব। তাই তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ নীতা” বলে নীতার হাতে একটা চুমু দিল।

অর্চনা তখন বলল, “আমার মনটাও এখন কিছুটা শান্ত হয়েছে দিদিভাই। তোমার বন্ধু পরিতোষবাবু যে রতু-দা আর রচুর ওপর নজর রাখছেন এ’কথা শুনেই আমার দুর্ভাবনা অনেকটা কমেছে। আর এখন ওদের সাথে কথা বলে ওরা ভাল আছে জেনে আরও স্বস্তি পেলাম গো”।

সীমন্তিনী নবনীতার দিকে একবার দেখে আবার অর্চনাকে বলল, “যে কথাটা আমি দাদাভাই আর রচুকেও আজ পর্যন্ত জানতে দিই নি, আজ তুমি সে’কথাটা জেনেই ফেললে? একদিক দিয়ে অবশ্য ভালই হয়েছে যে এতে তোমার দুশ্চিন্তা একটু কমেছে। কিন্তু বোন, আমার একটা অনুরোধ কিন্তু তোমাকে রাখতে হবে। বলো, রাখবে তো”?
 

অর্চনা বলল, “এমন করে বলছ কেন দিদিভাই। তুমি আমাকে অনুরোধ করবে কেন? তুমি তো শুধু আমাকে আদেশ আর পরামর্শ দেবে গো। বলো না কী করতে হবে আমায়”।

সীমন্তিনী মিষ্টি হেসে বলল, “একই কথা তোমাকে খানিক আগেও বলেছি। কিন্তু তখন প্রসঙ্গটা কিছুটা আলাদা ছিল। দাদাভাই আর রচু যে একটা বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে আছে, এ ব্যাপারটা আমরা নীতার কথাতেই তো জানতে পারলুম। তাই শুধু আমরা এই তিনজনই এখন পর্যন্ত শুধু ব্যাপারটা জানি। তোমাদের দু’জনকে আমি আগেই অনুরোধ করেছি, যে এ ব্যাপারটা যেন আমরা তিনজন ছাড়া আর কেউ জানতে না পারে। রাজগঞ্জ, কালচিনির কেউ যেন এসব কথা ঘূণাক্ষরেও জানতে না পারে। কথাটা কেন বলেছি সেটা তোমরা কেউ বুঝতে পেরেছো কি? দ্যাখো, দাদাভাই বা রচুর ওপর যে কোনও বিপদ নেমে আসুক না কেন, আমি তার মোকাবেলা করতে পারবো। আর এ কাজে পরিতোষই আমার সবচেয়ে বড় ভরসা। কিন্তু কলকাতার সব কিছু সামাল দিতে পারলেও রাজগঞ্জ আর কালচিনির এতগুলো লোককে আমি সামলাতে পারব না গো। আমাকে নিয়ে রাজগঞ্জের বাড়ির লোকেরা খুব বেশী কিছু ভাবেন না। তারা সকলেই জানেন যে ছোটবেলা থেকেই আমি তাদের সকলের কথা অগ্রাহ্য করে আসছি। আমি তাদের আয়ত্বের বাইরে। আমি তাদের বংশের কুলাঙ্গার। কিন্তু দাদাভাই আর রচুকে তো বাড়ির প্রত্যেকটা লোক ভালবাসে। বিশেষ করে আমার ছোটবোনটা, চন্দু। ও যে রচুকে কতটা ভালবাসে সে’কথা আমি তোমাদের বলে বোঝাতে পারব না। যেদিন থেকে রচু আমাদের বাড়ির বৌ হয়ে ও বাড়িতে এসেছে সেদিন থেকে ও যতক্ষণ বাড়িতে থাকত সবসময় যেন রচুর ছায়া হয়ে থাকতো। দাদাভাই আর রচু কলকাতা চলে যাবার পর ও প্রায় দু’দিন কোনকিছু খায়নি। কারুর সাথে কথা বলত না। শুধু ঘরে বসে কাঁদতো। কলেজ কিংবা টিউশনিতেও যেতে চাইত না। তার মুখে তখন শুধু একটাই কথা ছিল ‘আমার বৌমণিকে ফিরিয়ে এনে দাও’। তখন আমিও ওকে ফোনে কিছু বোঝাতে পারতুম না। আর বাড়ির প্রত্যেকটা লোক ওকে নিয়ে হিমশিম খেত। দাদাভাই আর রচুর বিপদের কথা শুনলে ওকে তো কেউ সামলাতে পারবেই না। আর বাড়ির অন্যান্য লোকগুলোও শুধু হাঁ হুতোস করতে শুরু করবে। কেউ কেউ হয়ত পাগলের মত কলকাতা ছুটে যাবেন। আর ওদিকে কালচিনির বাড়ির সকলেরই তো প্রায় পাগল হবার মত অবস্থা হবে। তাই আমি তোমাদের দু’জনকে অনুরোধ করছি, তোমরা যখন বাড়ির লোকদের সাথে কথা বলবে তখন কোনভাবেই যেন দাদাভাই আর রচুর ওপর বিপদের যে ছায়ার কথা আমরা জানতে পারছি, সেসব কথা যেন মুখ ফসকেও বের না হয়। এ জন্যেই তোমাদের দু’জনকে আমি অমন অনুরোধ করেছি”।

______________________________
[+] 2 users Like riank55's post
Like Reply
(Update No. 141)

কিছুক্ষণ থেকে সীমন্তিনী আবার বলল, “আর অর্চু, পরিতোষকে তো তুমি চেনো না। তবে নীতা ওকে খুব ভালমত চেনে। রচুও চিনেছে ক’দিন আগে। আর পরিতোষ দাদাভাই আর রচুর সব ব্যাপারেই আমার সাথে সব সময় পরামর্শ করে। কথাগুলো তুমি জানতে না। তোমার মনের দুশ্চিন্তা কম করতেই আমি নীতাকে ঈশারা করেছিলুম, তোমাকে পরিতোষের কথা বলতে। নইলে তোমার মনের ওপর আবার একটা নতুন চাপ পড়ত। যেটা আমি একেবারেই চাই নে। মাসিকে আমি কথা দিয়ে এসেছি যে তোমাকে এখানে এনে আমি পুরোপুরি সুস্থ করে তুলবো। তাই মহিমার ব্যাপারটাও আমি তোমাকে সাথে নিয়েই আলোচনা করলুম। নইলে তোমাকে লুকিয়ে নীতার সাথে কথা বলতে হত আমায়। তখন আমাদের দু’জনকে গোপনে কথা বলতে দেখে তোমার মনে হয়ত সন্দেহের সৃষ্টি হত। তোমার মনের ওপর একটা আলাদা চাপ পড়বার ফলে মানসিক ভাবে তোমার আরও ক্ষতি হত। তাই তোমাকে সাথে নিয়েই আলোচনাগুলো আমরা করেছি। তবে ব্যাপারটা যে এতটা সিরিয়াস সেটা তো ভাবতে পারিনি আমি আগে। আর ও’সব কথা শুনে বিচলিত হয়ে পড়াটা খুবই স্বাভাবিক। আর সেটা শুধু তুমি একা তো নও, আমার আর নীতারও প্রাথমিক ভাবে একই রকম দুশ্চিন্তা হয়েছিল। কিন্তু আমরা দু’জন তো জানি যে পরিতোষ সেখানে দাদাভাইয়ের ওপর সব সময় নজর রাখছে। তাই দুশ্চিন্তা হলেও আমরা ঘাবড়ে যাই নি। তুমি সেটা জানতে না। তাই নীতাকে ঈশারায় তোমাকে পরিতোষের ব্যাপারে জানাতে বলে ও’ঘরে পাঠিয়ে দিয়ে আমি ব্যাপারটা নিয়ে ভালমত একটু ভাবলুম। আর সবকিছু ভাল করে ভেবে আমার যা মনে হচ্ছে সে কথাও তোমাকে খুলে বললুম। তোমরা এখন বুঝতে পারছো তো দাদাভাই আর রচুর ব্যাপারে আমি একদম নিশ্চিন্ত কি করে আছি? আর এ ব্যাপারে আমরা যখন যা জানতে পারব, তার কোনকিছুই তোমার কাছে গোপন করব না। তাই মনের ওপর একদম চাপ নেবে না কেমন। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি ওদের কারুর কোন বিপদ হতে আমি দেব না”।

অর্চনা সীমন্তিনীর কোলে মুখ গুঁজে বলল, “তোমার কথা অক্ষরে অক্ষরে মানবার চেষ্টা করব দিদিভাই। বাবা বলেন তুমি মা অন্নপূর্ণা, মা বলেন তুমি মা দুর্গা। আর আমার কাছে তুমি যে আমার ভগবান গো”।

সীমন্তিনী অর্চুর মাথায় স্নেহের হাত বোলাতে বোলাতে বলল, “আমি তো তোমাদের সবাইকে আগেও বহুবার বলেছি এখনও বলছি আমি খুব খারাপ একটা মেয়ে। খুব স্বার্থপর। আমি শুধু আমার দাদাভাই, রচু আর তাদের আশেপাশের লোকগুলোকে ভাল রাখতে চাই গো। আচ্ছা সে’সব কথা ছেড়ে এখন আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা শোনো তোমরা দু’জনেই। আমি আরেকটা কি অনুরোধ তোমাদের দু’জনের কাছে করতে চাইছি সেটা ভাল করে শুনে বুঝে নাও। পরিতোষ যে দাদাভাইয়ের ওপর নজর রেখে যাচ্ছে, নীতা সেটা আগে থেকেই জানে। আজ তুমি জানলে। তবে, এ’কথা কিন্তু দাদাভাই বা রচু কেউ জানে না। আর রাজগঞ্জ ও কালচিনির বাড়ির কেউও তা জানে না। আর তাদের কাছে গোপন রেখেছি শুধু এই জন্যেই যে ওরা ব্যাপারটা জানতে পারলে সকলেই কিছুটা হলেও ঘাবড়ে যাবে। ওরা আর সহজ স্বাভাবিক থাকতে পারবে না। সকলেই ভাববে যে নিশ্চয়ই দাদাভাই বা রচু কোন বিপদের মধ্যে আছে। নইলে আমি তাদের ওপর নজর রাখছি কেন। আজ তুমি ব্যাপারটা জানলে বলে দাদাভাই আর রচুর ব্যাপারে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছো। কিন্তু বাড়ির লোকেরা বা রচু ওরা এ’কথা জানতে পারলে স্বস্তির বদলে তাদের শুধু দুশ্চিন্তাই হবে। তাই আগের অনুরোধটার সাথে আরেকটা অনুরোধ তোমাদের দু’জনকে করছি। এ সমস্ত কথাই যেন শুধু আমরা তিনজন আর পরিতোষের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে। রচু, দাদাভাই, আমাদের দু’বাড়ির কেউ আর অন্য কেউই যেন এ’সব কথা জানতে না পারে, এ ব্যাপারেও সব সময় সতর্ক থাকবে তোমরা। কারন আমরা তিনজন নিশ্চিন্ত থাকলেও ব্যাপারটা যদি ফাঁস হয়ে যায় তাহলে পরিতোষের কিন্তু একটা বড়সড় বিপদ হতে পারে। আমি সেটা হতে দিতে পারি না। দাদাভাইয়ের যে দু’লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়েছিল ওই রবিশঙ্কর নামের লোকটা, সে টাকা যে আমরা ফিরে পেয়েছি তাতে কলকাতা পুলিশ বা আমার নিজের কোন অবদান নেই। গোটা কাজটাই পরিতোষ নিজের বুদ্ধিতে করেছে। আমি শুধু তাকে রবিশঙ্করের নাম ঠিকানাটুকুই দিয়েছিলুম। একবার গড়িয়াহাট থেকে রচু আমার জন্যে একটা শাড়ি কিনে ফুটপাথে হেঁটে যাবার সময় এক ছিনতাইবাজ সে শাড়িটাকে ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। সৌভাগ্যক্রমে তখন ওদের ওপর নজর রাখছিল পরিতোষ স্বয়ং। সে ওই ছিনতাইবাজকে ধরে তার কাছ থেকে শাড়িটা উদ্ধার করে দশ মিনিটের ভেতর দাদাভাই আর রচুর হাতে তুলে দিয়েছিল। সে ব্যাপারটা অবশ্য যেদিন নীতার সাথে আমাদের পরিচয় হল সেদিন রচু জানতে পেরেছে। তবে পরিতোষ যে সর্বক্ষণ দাদাভাইয়ায়ের ওপর নজর রাখছে, এ’কথাটা রচুর কাছে আমরা তখনও খোলসা করিনি। শাড়ি ছিনতাইয়ের দিন ঘটণাটা নেহাতই কাকতালীয় ভাবে ঘটে গেছে বলেই বোঝানো হয়েছে। কিন্তু আবারও বলছি, এসব ঘটণা যদি অন্য কেউ জেনে ফেলে তাহলে পরিতোষের খুব বিপদ হতে পারে। পরিতোষের মত বন্ধু এ পৃথিবীতে আমার আর কেউ নেই। আমার জন্য ও কোনভাবে বিপদে পড়লে আমি নিজে কখনো নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না। তাই তোমাদের দু’জনের কাছে আমি অনুরোধ করছি, এসব কথা কখনো কারুর সাথে শেয়ার করবে না। কারুর কাছে না। এমনকি লক্ষ্মীদির কাছেও না। লক্ষ্মীদি আমাদের কাছের, আমাদের আপন লোক হলেও, নিজের অজান্তেই বাইরে কোথাও মুখ ফসকে এসব কথা কাউকে বলে ফেলতে পারে। তাই তোমরা দু’জনেই আমাকে কথা দাও, এসব কথা যেন শুধু আমাদের তিনজনের বাইরে আর কারো কানে না যায়। আর রচু আর দাদাভাইও যেন এ’সব কথা জানতে না পারে”।
 

নবনীতা আর অর্চনা দু’জনেই সীমন্তিনীর হাতে হাত রেখে কথা দিল যে তারা সীমন্তিনীর কথা মেনে চলবে। এবার অর্চনা বেশ সহজ চটুল ভাবেই সীমন্তিনীর একটা হাত তার বুকের সাথে চেপে ধরে বলল, “আমার ওপরেও যে নজর রেখেছিলে সে’কথা মা বাবা ভাইয়ের কাছেও একই কারনে তুমি গোপন করে গিয়েছিলে, তাই না দিদিভাই”?
 

সীমন্তিনী হেসে ফেলে বলল, “হ্যাঁ অর্চু। ঠিক একই কারনে। মাসি, মেসো, ভাই, দাদাভাই, রচু এদের সকলের কাছেই আমি গোপন রাখতে বাধ্য হয়েছিলুম। তারা একজন যদি আমার নজর রাখবার ব্যাপারটা জানতে পারত তাহলে অন্য সবাইও জেনে ফেলত। তাতে একদিকে যেমন কাজটা করতে আমার অসুবিধে হত, তেমনি অন্যদিকে সবাইকে এটা ওটা বলে বোঝাতে আমাকে মিথ্যে কথা বলতে হত। প্রয়োজনের খাতিরে কোন কথা লুকিয়ে যাওয়া এক কথা, আর মিথ্যে বলা আরেক কথা। এদের কাউকে কি আমি মিথ্যে কথা বলতে পারি, বলো? তাই নিরুপায় হয়ে কথাটা গোপন রাখতে হয়েছিল আমার”।

নবনীতা ব্যাপারটা বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করল, “তোমার ব্যাপারে দিদি এমন কি করেছিল অর্চু যা সবার কাছে গোপন রেখেছিল”?

অর্চনা নবনীতার দিকে চেয়ে বলল, “বলব নীতাদি। বলব তোমাকে। আজ তুমি তোমার জীবনের সবকথা আমায় খুলে বলে তোমার বুক যেমন হাল্কা করেছ, আমিও আমার সব কথা তোমায় খুলে বলবো। কিন্তু সাতটা বছরের গল্প অল্প কথায় তো সাড়া যাবে না। তাই আজ না হয় থাক। এখনই তো লক্ষ্মীদি খেতে ডাকবেন। সে’সব কথা তোমাকে কাল খুলে বলব, কেমন”?

সীমন্তিনী বলল, “বুকের ভেতরে চেপে রাখা কথাগুলো কাছের কোন মানুষকে খুলে বললে মন হাল্কা হয় বটে। কিন্তু নীতা, অর্চুর সব কথা শোনবার পর ওকে স্বাভাবিক রাখাটা কিন্তু তোমার দায়িত্ব হবে। ও যদি ঘটণাগুলো বলতে বলতে ইমোশনাল হয়ে পড়ে, কেঁদে ফেলে, তাহলে কিন্তু তোমাকে সামলাতে হবে”।

আর ঠিক তখনই লক্ষ্মী সবাইকে খেতে ডাকল।


****************

রাতের খাওয়া দাওয়া চুকে যাবার পর নবনীতা আর অর্চনা সীমন্তিনীকে গুডনাইট জানিয়ে তাদের ঘরে চলে যাবার পর সীমন্তিনী নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে ল্যান্ডলাইন ফোনটা হাতে নিয়ে বিছানায় বসে দেয়াল ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখল, রাত প্রায় এগারটা। এত রাতে অপরিচিত কাউকে ফোন করা মোটেই শোভনীয় নয়। কিন্তু মহিমার সাথে তার প্রথম কথা বলার ব্যাপারটা নবনীতা আর অর্চনার অজ্ঞাতেই করতে চেয়েছিল। যদিও এত রাতে মহিমা হয়তো জেগে না-ও থাকতে পারে। তবু একবার ট্রাই করে দেখবার কথা ভেবেই মোবাইলে রচনার পাঠানো এসএমএস-টা দেখে মহিমার ল্যান্ডলাইনের নাম্বার ডায়াল করল।

কয়েকবার রিং হতেই ও’পাশ থেকে সুন্দর মনমাতানো অদ্ভুত মিষ্টি কন্ঠের “হ্যালো” শুনেই সীমন্তিনী বলল, “হ্যালো, এক্সকিউজ মি, আমি কি মিসেস মহিমা মালহোত্রা সেনের সাথে কথা বলছি”?

মহিমা জবাব দিল, “হ্যাঁ আমি মহিমাই বলছি। আপনার পরিচয়”?

সীমন্তিনী বলল, “ম্যাডাম, আমি মন্তি। মন্তি ভট্টাচার্যি। নর্থ বেঙ্গল থেকে ......”

সীমন্তিনীর বলা শেষ না হতেই মহিমা ওপ্রান্তে এবার প্রায় চিৎকার করে উঠে বলল, “সত্যি বলছ? তুমি, সরি, মানে আপনিই কি রতীশের সেই বোন মন্তি যে ওকে সব চেয়ে বেশী ভালবাসে”? বলেই গলার স্বর খানিকটা চাপা করে বলল, “আপনি এক সেকেন্ড লাইনে থাকুন প্লীজ। আমি পাশের ঘরে গিয়ে আপনার সাথে কথা বলছি। প্লীজ, কিছু মনে করবেন না”।

সীমন্তিনী মহিমার চিৎকার করে ওঠায় একটু অবাক হলেও মিষ্টি করে বলল, “না না, ঠিক আছে ম্যাডাম। আসলে আমিই বড্ড অসময়ে ফোনটা করে বসেছি। আমি না হয় কাল সন্ধ্যে সাতটার পর আপনার সাথে কথা ..........”।
 

এবারেও সীমন্তিনীকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে মহিমা হা হা করে উঠে বলল, “না না মন্তিজী, আপনি প্লীজ ফোনটা কাটবেন না। আসলে আমার স্বামী আজ একটু টায়ার্ড বলে ও একটু তাড়াতাড়িই শুয়ে পড়েছে। তাই বেডরুমে বসে কথা বললে ওনার তো ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। সেজন্যেই আমি পাশের ঘরে এলাম। এবার আর কোন অসুবিধে নেই। আচ্ছা আপনি সত্যিই রতীশের বোন মন্তি ভট্টাচারিয়াই তো”?
 

সীমন্তিনী বলল, “হ্যাঁ ম্যাডাম, আমি রতীশের বোন মন্তিই। রচু, মানে রচনা, আমার বৌদি আমাকে আপনার নাম্বার দিয়ে বলেছিল সন্ধ্যে সাতটার পর আপনাকে ফোন করতে। কিন্তু বিশেষ একটা কাজে এত ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম যে কথাটা ভুলেই গিয়েছিলাম। তারপর নটার দিকে রচু আবার আমাকে ফোন করে মনে করিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু হাতের কাজটা শেষ না করে আর ফোনটা করে উঠতে পারিনি। কিন্তু বৌদি বলছিল, আপনি নাকি আমার সাথে কথা বলতে খুব ব্যগ্র হয়ে আছেন। তাই ঘুমোবার আগে ফোন করবার কথাটা মনে হতেই এতো রাত হয়ে যাওয়া সত্বেও ফোনটা করলাম। তবে আবারও বলছি ম্যাডাম। এমন অসময়ে ফোন করবার জন্য আমি দুঃখিত”।

মহিমা এবারেও বেশ ব্যগ্র ভাবে বলল, “না না মন্তিজী, আপনি একদম মন খারাপ করবেন না। আমি বিরক্ত তো একেবারেই হইনি। বরং এত রাতেও যে মনে করে ফোনটা করেছেন সেজন্য আমি খুব খুব খুশী হয়েছি। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ফোন করবার জন্য”।

সীমন্তিনী একটু কিন্তু কিন্তু করে বলল, “কিন্তু এতরাতে কাউকে ফোন করাটা তো একেবারেই ভদ্রোচিত ব্যাপার নয়। তাই একটু দ্বিধাবোধ হচ্ছে। আর দাদাভাইয়ের মানে রতীশের কথা বলছি আর কি। তার মুখে শুনেছি আপনি খুব ব্যস্ত মানুষ। তাই সারাদিন হয়ত কত খাটা খাটুনি করেছেন। আবার বিকেলের দিকে বরানগরেও গিয়েছিলেন। তাই আপনিও হয়ত টায়ার্ড। তাই ভাবছিলাম ....”

মহিমা এবার অনেকটা শান্ত স্বরে বলল, “শুনুন মন্তিজী। আপনি তো বুঝতেই পেরেছেন যে আপনার সাথে কথা বলতে আমি কতটা আগ্রহী ছিলাম। তাই আমার তরফ থেকে আপনার সাথে এত রাতেও অনেক সময় ধরে কথা বলতে কোন আপত্তি নেই। আমি কতটা ব্যস্ত কতটা টায়ার্ড এসব ফ্যাক্টর এখন কোন কাজ করবে না। কিন্তু আমি তো শুনেছি যে আপনিও খুব ব্যস্তসমস্ত মানুষ। আপনারও কি অনেক সময় ধরে কথা বলবার ধৈর্য আছে এখন”?

সীমন্তিনী মহিমার ব্যাকুলতা দেখে মনে মনে আবার অবাক হল। মুখে বলল, “ম্যাডাম, আপনার সাথে তো আজই আমার প্রথম আলাপ হচ্ছে। তাই আপনি যে আমার দাদাভাইকে নিয়েই কিছু বলবেন, সেটা তো আন্দাজ করতেই পারছি। আর দাদাভাইয়ের ব্যাপারে সারারাত ধরে কথা বললেও আমার কোন ক্লান্তি আসবে না। আপনি বলুন, কি বলবেন। দাদাভাই কি গর্হিত কোন কাজ করে ফেলেছে আপনার ওখানে”?

মহিমা এবার বলল, “না না মন্তিজী, সেসব কিছু নয়। আসলে .....” এটুকু বলে থেমে যেতেই সীমন্তিনী কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করবার পর বলল, “হ্যাঁ ম্যাডাম, বলুন। আর শুনুন, আমি তো শুনেছি যে আপনি আমার দাদাভাইকে নিজের ভাইয়ের মত স্নেহ করেন। আমার বৌদিকেও আপনি আপনার ছোটবোন বলে ভাবেন। তাই আমাকে মন্তিজীও বলবেন না বা আপনি আজ্ঞে করেও কথা বলবেন না। আপনি আমাকে শুধু আমার নাম ধরে তুমি করে বলুন। আমি তাতেই খুশী হব”।

মহিমা এবার আরও শান্ত গলায় বলল, “সত্যি তোমাদের বাবা মায়েরা তোমাদের সকলকে কি সুন্দর শিক্ষা দিয়েছেন। আর এটাও বুঝতে পারছি, তুমি সত্যি রতীশকে খুব ভালবাস। তবে মন্তি, আমি তোমার কথামতই তোমাকে তুমি করে বলছি। আমি যদিও বয়সে তোমার থেকে বেশ বড়, তবু তুমিও আমাকে যদি রতীশের মতই বৌদি বলে ডাকো আর রচনার মত তুমি করে বলো, তাহলে আমিও খুব খুশী হব”।

সীমন্তিনী গলায় হাসির ছোঁয়া এনে বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে, আমিও তোমাকে বৌদিই বলব। এবার বল তো আমার সাথে কোন জরুরী ব্যাপার নিয়ে কথা বলতে চাইছ তুমি”?

মহিমাও এবার খুশী হয়ে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ মন্তি। তবে শোন ভাই, তুমি যেটা ভাবছো যে রতীশের কোন কাজে আমি বুঝি অসন্তুষ্ট হয়েছি। তা কিন্তু একেবারেই ঠিক নয়। রতীশের ওপর আমার কোনও অভিযোগ নেই। ও তো আমার এখানে কাজে জয়েন করবার পর আমার সেন্টারের খুব সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে। ট্রেনী সংখ্যাও গত এক দেড় মাসে অনেক বেড়ে গেছে। আমার সেন্টারের মাসিক আয় প্রায় টুয়েন্টি পার্সেন্ট বেড়ে গেছে। সত্যি বলছি ভাই। সেজন্য রতীশের ওপর আমি কৃতজ্ঞ। রতীশকে নিয়ে আমি তোমাকে কিছু বলব না। আসলে কলকাতায় এসে রতীশ রচনা ওরা ওদের অজান্তেই ভীষণ একটা বিপদের সম্মুখীন হয়েছে। আর তার ব্যাপারে ওরা এখনও কিছুই জানতে বা বুঝতে পারেনি। সত্যি বলছি ভাই। আমি নিজেও যে খুব ভাল মহিলা তা নয়। কিন্তু আমি চাই না ওরা কেউ কোন বিপদে পড়ুক। আসলে ভাই, রতীশের মত এমন মিষ্টি স্বভাবের কোন ছেলেকে আমি আর আগে কখনও দেখিনি। আর তোমার বৌদি, রচনা। তার কথাই বা আমি কী বলি। আমার জীবনেও আমি রচনার মত মেয়ে আর একটাও দেখিনি। যেদিন ওকে প্রথম দেখেছি আমি সেদিন থেকেই আমার ভেতরে ভেতরে কিজানি একটা হচ্ছে। কোন কিছুতেই যেন স্বস্তি পাচ্ছিনা আমি। আর ওদের দুটিকে দেখে তো আমার মনে হয় সাক্ষাৎ শিব-পার্বতীকে দেখছি আমি। বারবার ওদের দুটিকে কাছে পেতে ইচ্ছে হয়। মনে হয় সব সময় ওই ছেলে মেয়ে দুটোকে আমি দু’হাতে আগলে রাখি। কিন্তু ওদের ওপর যে একটা বিপদের ছায়া ঘণিয়ে আসছে সেটা আমি জানতে পেরেছি আজ থেকে সাতদিন আগে। আর সেদিন থেকেই ওদেরকে বিপদমুক্ত করবার রাস্তা খুঁজে চলেছি। কারন আমি জানি রতীশ একটা স্বপ্ন নিয়ে এ শহরে এসেছে। ওর স্বপ্ন এখনও পূর্ণ হয়নি। আর আমিও রতীশকে আমার কাছেই রাখতে চাইছি। গত সাতটা দিন ধরে দিনরাত ভেবে আমি শুধু একটাই রাস্তা খুঁজে পেয়েছি। কিন্তু আমি নিজেও চাই না রতীশ সে রাস্তা অনুসরন করুক। কারন তাতে ওর স্বপ্নটাও যেমন স্বপ্নই থেকে যাবে, তেমনি আমিও ওদের দুটিকে আমার জীবন থেকে হারিয়ে ফেলব। আমার অর্থ প্রতিপত্তি যতটুকু আছে তার সবটা দিয়েও আমি ওদের ওপর নেমে আসা বিপদটাকে কাটিয়ে দিতে পারব না। আমার প্রাণটা বিসর্জন দিয়েও সেটা করা সম্ভব নয়। তাই আমি নিরূপায় হয়ে এমন একজনকে খুঁজছিলাম যে ওদের এ বিপদ থেকে বাঁচাতে পারবে। তাই আজ বিকেলে ওদের ফ্ল্যাটে গিয়ে ওদের সাথে নানা কথা বলে আমি বোঝবার চেষ্টা করছিলাম যে কলকাতায় ওদের হিতাকাঙ্ক্ষী বা আপনজন আর কেউ আছে কি না, যে বিপদে আপদে ওদের পাসে এসে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু বুঝলাম যে কলকাতায় ওদের আপন স্বজন বলতে আর কেউ নেই। আর তুমিই ওদের সবচেয়ে বেশী ভালবাস। তাই আর কোন উপায় না পেয়ে আমি তোমার সাথেই ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করতে চাইছিলাম। আর তাই তো তোমার ফোন পাবার জন্যে এতটা উদগ্রীব হয়েছিলাম আমি। তাই বুঝতে পাচ্ছ তো, রাত হয়ে গেছে কিনা, আমি টায়ার্ড কিনা, এসব আর কোনও ফ্যাক্টর নয়। তুমি যদি ক্লান্ত না হয়ে থাক তাহলে আমি ব্যাপারটা তোমার সাথে শেয়ার করতে চাই। আর তা এক্ষুনি করতে চাই”।
 

সীমন্তিনী মহিমার কথাগুলো শুনতে শুনতে একের পর এক অবাক হয়ে যাচ্ছিল। সে মনে মনে ভাবছিল যে সন্ধ্যের পর থেকে নবনীতার মুখে মহিমার কথা শুনে তার মনে হয়েছিল যে রতীশ বা রচনার ওপর মহিমার তরফ থেকেই কোনও বিপদ আসতে পারে। এখন তো দেখা যাচ্ছে ব্যাপারটা তা নয়। এখন তো তার মনে হচ্ছে মহিমা যতই খারাপ হোক না কেন, তার মনে এমন কোন দুরভিসন্ধি নেই। সে নিজেই তো সাতদিন আগে সে বিপদের আঁচ পাবার পর থেকেই দুর্ভাবনায় আছে। সে নিজেও তো রতীশ আর রচনাকে বাঁচাবার চেষ্টা করছে।
 

মহিমা থামতেই সীমন্তিনী বলল, “বৌদি, তুমি আমাকে নিয়ে ভেবো না একদম। যতটুকু বলেছ তা শুনেই আমার খুব চিন্তা হচ্ছে। তুমি ব্যাপারটা আমায় খুলে বলবে প্লীজ”।

মহিমা একটা শ্বাস ফেলে বললো, “মন্তি, তুমি যখন রতীশের এত প্রিয় বোন, তাহলে আমিও তোমাকে আজ থেকে আমার বোন বলেই ভাববো। কিন্তু মন্তি ওদের ব্যাপারে কথাগুলো খুলে বলার আগে তোমাকে আমার ব্যাপারে কিছু কথা বলা নিতান্তই প্রয়োজন। নইলে তুমি ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারবে না। কিন্তু বোন, আমার সে কথাগুলো যে নিতান্তই লজ্জার। তুমি আমাকে নিশ্চয়ই খারাপ বলে ভাববে। তুমি আমাকে খারাপ ভেবো বোন, তাতে আমার কিচ্ছু এসে যাবে না। কিন্তু যে করেই হোক ওদের বাঁচাবার চেষ্টা কর”।

______________________________
Like Reply
(Update No. 142)

সীমন্তিনী মহিমাকে আশ্বস্ত করে বলল, “বৌদি, কিছু ভেবো না তুমি। তুমি যখন আমার দাদাভাইকে আর বৌদিকে ভালবাসো, তোমার লজ্জার কথা অন্য কারুর সাথে আমি শেয়ার করবো না। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি”।

মহিমা এবার বলল, “ধন্যবাদ বোন। তবে শোনো, তুমি আমার ব্যাপারে রতীশ আর রচনার কাছ থেকে যতটুকু শুনেছ সেটাই আমার সম্পূর্ণ এবং একমাত্র পরিচয় নয়। আসলে রতীশ আর রচনা শুধু আমার একটা পরিচয়ই জানে। ওরাও আমার অন্য পরিচয়, আমার অন্য ব্যবসার কথা কিছু জানে না। আজ আমি নিজে তোমাকে সে’সব কথা বলতে চলেছি। তবে আগে তোমার কাছে একটা অনুরোধ করছি ভাই। আমার এ পরিচয়টা তুমি রচনা বা রতীশকে জানিও না প্লীজ। তাতে আমি ওদের কাছে খুব ছোট হয়ে যাবো। ওরা আমায় ঘৃণা করতে শুরু করবে। আমি সেটা সহ্য করতে পারবো না বোন। যেদিন আমি জানতে পারব যে রচনা আর রতীশ আমার ঘৃণ্য রূপটা জেনে ফেলেছে, সেদিন আমাকে আত্মহত্যা করতে হবে। থানা পুলিশ আইন আদালত নিয়ে আমার অতো দুশ্চিন্তা নেই। সেসব আমি কোন না কোন ভাবে ঠিক সামলে নিতে পারবো। কিন্তু আমার ভাই বোন দুটোর চোখে ছোট হয়ে আমি বেঁচে থাকতে পারবো না”।
 

সীমন্তিনী প্রবোধ দিয়ে বলল, “বৌদি, তুমি সেসব নিয়ে ভেবো না একদম। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, দাদাভাই আর রচু এসব কথা একেবারেই জানতে পারবে না। তুমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারো”।
 

মহিমা এবার বেশ কয়েক মূহুর্ত চুপ করে থেকে বলল, “শোনো বোন, আজ থেকে প্রায় ছ’ বছর আগে আমার যোগা ইনস্টিটিউটটা যে বছর শুরু করেছিলাম তখন আমার মেয়ের হায়ার এডুকেশনের জন্য এক থোকে অনেকগুলো টাকার প্রয়োজন হয়েছিল। আমার স্বামীর ইলেকট্রনিক্স গুডসের দোকানটাও তখন নতুন। তাতেও আয় খুব বেশী হত না। তখন নিরূপায় হয়ে শুধু মাত্র মেয়ের ভবিষ্যতের দিকে চেয়ে আমি স্বেচ্ছায় দেহব্যবসায় নেমেছিলাম। ভগবানের দয়ায় আমার শরীরটা যে কোন পুরুষ মানুষের কাছে কামনার বস্তু ছিল তখন। কিন্তু সেটা করেও প্রয়োজনীয় টাকা আমি যোগাতে পারছিলাম না। আহমেদাবাদে মেয়েকে যে ইনস্টিটিউটে ভর্তি করাতে চাইছিলাম, সেখান থেকে একটা নোটিস এসে হাজির হল। পনেরো দিনের মধ্যেই তাদের কাছে কুড়ি লক্ষ টাকা জমা দিতে হবে, নচেৎ তারা আমার মেয়ের অ্যাপ্লিকেশন রিজেক্ট করে দেবে। তখন দিনে তিন চারজন পুরুষের মনোরঞ্জন করেও আমি ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজারের বেশী রোজগার করতে পারতাম না। তাই নিরূপায় হয়ে এক কামুক ধনী ব্যবসায়ীর কাছে নিজেকে সারা জীবনের জন্য বন্ধক রেখে আমি তার কাছ থেকে কুড়ি লক্ষ টাকা অগ্রিম হিসেবে নিয়ে আমি মেয়েকে আহমেদাবাদে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলাম। আবার ঠিক তার দু’বছর বাদেই ছেলেকে ব্যাঙ্গালোরে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াবার জন্য আরো তেইস চব্বিশ লক্ষ টাকার প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। তখনও ওই ধনী কামুক লোকটার কাছ থেকেই আমি আরও পনেরো লক্ষ টাকা অগ্রিম নিতে বাধ্য হয়েছিলাম। কিন্তু ওই পঁয়ত্রিশ লক্ষ টাকার দেনার বোঝা কমাতে আমি নিজের সাথে সাথে অন্য আরও কয়েকজন মেয়ে মহিলার দালালী শুরু করি। বুঝতেই পারছ এ দালালীও দেহ ব্যবসারই। তাতে আমার আয় লক্ষণীয় ভাবে বাড়তে লাগলো। এইভাবে ধীরে ধীরে আমার একটা এসকর্ট এজেন্সী গড়ে উঠেছিল। আর থানা পুলিশ আইন আদালতের খপ্পড় থেকে বাঁচবার জন্যেও আমাকে নানান ব্যবস্থা নিতে হয়েছিল। পরের দু’বছরের মধ্যেই আমার হাতে প্রচুর পয়সা এসে গেল। সেই ধনী কামুক লোকটার কাছ থেকে নেওয়া সমস্ত টাকা আমি ফিরিয়ে দিতে পেরেছিলাম। কিন্তু টাকা ফিরে পেলেও সে আমাকে আমার অঙ্গীকার থেকে মুক্ত করেনি। তারপর থেকে আজ অব্দি সে সপ্তাহে তিনদিন নিয়মিত আমার শরীরটাকে ভোগ করে। আমাদের নতুন বাড়ি হল। পয়সার প্রাচুর্য এল। অর্থ প্রতিপত্তি বাড়তে লাগল। এক সময় নিজেকে অন্য পুরুষদের কাছে বিলিয়ে দেওয়াও কমলো। কিন্তু এখনও এমন কিছু কিছু ক্লায়েন্ট আমাকে নিজে এটেন্ড করতেই হয় যারা আমাকে ওই দেহব্যবসা চালিয়ে যেতে নানাভাবে সাহায্য করছে। আর রয়েছে ওই ধনী কামুক লোকটা যে আমার প্রয়োজনের সময় আমায় পঁয়ত্রিশ লক্ষ টাকা দিয়ে সাহায্য করেছিল। এদের সকলের কাছেই আমি কোন না কোন ভাবে কৃতজ্ঞ”।

একসাথে এতগুলো কথা বলার পর মহিমা থেমে একটু দম নিল। আর সীমন্তিনী মহিমার কথা শুনতে শুনতে নিজেই অবাক হয়ে যাচ্ছিল যে মহিমা নিজের জীবনের এত গোপনীয় কথাগুলো কেমন নির্দ্বিধায় সীমন্তিনীর মত এক আইপিএস অফিসারকে বলে যাচ্ছে! সীমন্তিনী চাইলে এক্ষুনি মহিমাকে পুলিশের জালে জড়িয়ে ফেলতে পারে। অবশ্য মহিমা যে সবদিকে আটঘাট বেঁধেই এ ব্যবসা চালাচ্ছে সে’কথাও তো তার কাছে গোপন করেনি। সত্যি মহিলার গাটস আছে, মানতেই হবে। তাকে অত সহজেই কাবু করা যাবে না। আর সেটা করতে গেলে হয়তো নিজেদের ডিপার্টমেন্টের এবং অন্য আরও অনেক সরকারি বেসরকারি রথী মহারথীর সাথে মোকাবিলা করতে হবে। তবে আপাততঃ আগে রতীশ আর রচনাকে বিপদমুক্ত করাই তার উদ্দেশ্য।

এমন সময় মহিমা ওদিক থেকে আবার বলল, “মন্তি, তুমি লাইনে আছো তো? আমার কথা শুনতে পাচ্ছো তো বোন”?

সীমন্তিনী সাথে সাথে জবাব দিল, “হ্যাঁ হ্যাঁ বৌদি, আমি তোমার সব কথাই শুনছি। কিন্তু এ সবের সাথে আমার দাদাভাই আর বৌদির সংযোগটা কী? আর তাদের ওপর বিপদ আসছেই বা কোনদিক থেকে”?

মহিমা বলল, “হ্যাঁ বোন, এখন সে কথাই বলবো। কিন্তু আগের কথাগুলো না বললে তোমাকে পরে যে কথাগুলো আমি বলতে যাচ্ছি সেটা বুঝতে তোমার কষ্ট হত। এবার শোনো। যে কামুক লোকটি আমাকে পঁয়ত্রিশ লক্ষ টাকা দিয়ে একসময় আমাকে সাহায্য করেছিল, গত সপ্তাহে সেই কোটিপতি লোকটি এক অদ্ভুত বায়না নিয়ে আমার কাছে এসেছিল। ওঃ, এ প্রসঙ্গে আর একটা কথা তোমাকে না জানালেই নয়। আমার যোগা ইনস্টিটিউটে রতীশ ছাড়াও বরুন আর সুজয় নামে দু’জন ট্রেনার আছে। আর আমার অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট বীথিকাও সেখানে কাজ করে। এই বীথিকা আর বরুন সুজয়ও আমার এসকর্ট এজেন্সীর এসকর্ট হিসেবে কাজ করে। তবে ওদের প্রত্যেকেরই এসব করার পেছনে পারিবারিক কিছু কিছু কারণ আছে। কেউই শুধুমাত্র টাকা কামাবার জন্যে এ কাজে নামে নি। আর শুধু ওরাই নয়, আমার এজেন্সীতে যত মেয়ে মহিলা এসকর্ট আছে, তারা সকলেই অন্য কোন উপায়ে পরিবারের ভরণ পোষন করতে না পেরে প্রায় বাধ্য হয়ে এবং নিজেদের ইচ্ছেয় আমার এসকর্ট সার্ভিসে যোগ দিয়েছে। আমি কাউকে জোর করে বা কোনভাবে ঠকিয়ে আমার ব্যবসায় নামাইনি আজ পর্যন্ত। তবে তুমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারো বোন। রতীশকে আমি এ কাজে ব্যবহার করবার কথা স্বপ্নেও ভাবি নি। আর ভগবান না করুন তেমন দুর্দিন কখনও যেন ওর ওপর নেমে না আসে। জীবনে অনেক পুরুষ মানুষের সাথে আমি শরীর নিয়ে ভালবাসার খেলা খেলেছি। কিন্তু সে’সব ছিল নেহাতই সেক্স। তার মধ্যে ভাব ভালবাসার কোনও ব্যাপার ছিল না। যেটা ছিল তা ছিল শুধু পয়সা কামানোর লোভ। ভালবেসেছিলাম শুধু একজনকেই। আমার স্বামী অরিন্দমকে। মা-বাবার অমত সত্ত্বেও তাকেই আমি বিয়ে করে তার সাথে চলে এসেছিলাম এই কলকাতায়। ছাব্বিশ বছর ধরে আমাদের দাম্পত্য জীবনে বেশ সুখেই আছি। বিয়ের পরের ঊণিশটা বছর স্বামী ছাড়া আমার জীবনে অন্য কোন পুরুষ ছিল না। কিন্তু খুব ছোট বয়স থেকেই আমি পকেটমানি উপার্জন করবার জন্যে দিল্লীতে অনেক ছেলে ছোকড়া আর সব রকম বয়সের পুরুষের সাথে সেক্স করতাম, আমাদের বিয়ের আগ পর্যন্ত। মেয়ের হায়ার এডুকেশনের জন্য যখন অতগুলো টাকার প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল তখন আবার আমি ছোটবেলার শেখা ওই সহজ রাস্তাতেই পা বাড়িয়েছিলাম। অবশ্য বছর দুয়েক আগে থেকেই আমি সে’সব কমিয়ে দিয়েছি। এখন শুধু আমি তাদের কাছেই নিজের শরীরটাকে তুলে দিই যারা এই এসকর্ট ব্যবসাটা চালিয়ে নিতে আমাকে নানাভাবে সাহায্য করে থাকে। তাদেরকে খুশী না রাখলে এই এসকর্ট ব্যবসা আর চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না। এমন একটা বাজে মেয়ের মুখে তুমি কথাটা শুনে অবাকই হবে। তোমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে জানি। তবু না বলে পারছিনা ভাই। রতীশকে প্রথম দিন দেখেই ওর শান্ত সুন্দর চেহারা আর সুমিষ্ট কথার মোহে পড়ে আমি ওকে আমার দেবর আর ছোটভাইয়ের মত ভালোবেসে ফেলেছি। আর রচনার কথা তো আগেই বলেছি। ওকে দেখবার দিন থেকেই আমি একটা মূহুর্তের জন্যেও ওকে ভুলে থাকতে পাচ্ছি না। রতীশকে কোনও ভাবেই আমি বিপথে যেতে দেব না” বলে এক মূহুর্ত থেমে আবার বলল, “আচ্ছা, সে যাই হোক, আমার সেই কোটিপতি ক্লায়েন্ট সেদিন এসে আমাকে বলল যে তার ভোগের জন্যে এমন একটা মেয়েকে জোগার করে দিতে হবে, যার স্বামী আমার ইনস্টিটিউটেই কাজ করে। আমি পরিষ্কার করে বলার অনুরোধ করতে সে তার পকেট থেকে আমাকে একটা ছবি বের করে দেখায়। তুমি শুনে চমকে যাবে মন্তি, ছবিটা রচনার”।

এ’কথা শুনেই সীমন্তিনী প্রায় চেঁচিয়ে উঠে বলল, “কী বলছ বৌদি? রচুর ফটো? ওই লোকটা রচুর ফটো কোত্থেকে পেল”?

মহিমা বলল, “আমার সেই ক্লায়েন্ট তো জানতো না যে আমি রচনাকে চিনি বা ইতিমধ্যেই রচনার সাথে একটা সুন্দর সম্পর্ক পাতিয়ে ফেলেছি। তাই সে ছবিটা দেখার সাথে সাথে আমিও ঠিক তোমার মতই চমকে উঠলেও তাকে বুঝতে দিই নি। কায়দা করে তার কাছ থেকে যতটুকু সম্ভব জানবার চেষ্টা করলাম। শুনলাম যে এর আগে আরেকজন দালাল টাকার বিনিময়ে রচনাকে তার হাতে তুলে দেবার চুক্তি করেছিল। কিন্তু সে দালালটা নাকি কিছুদিন আগে অন্য কোনও একটা কেসে ফেঁসে গিয়ে এখন জেলে আছে। তাই আমার সেই কোটিপতি ক্লায়েন্টের সে ইচ্ছে পূরণ হয়নি। কিন্তু সে জানতো যে ছবির ওই মহিলার মানে রচনার স্বামী রতীশ আমার ইনস্টিটিউটেই কাজ করে। আর সে নিশ্চয়ই ভেবেছে যে আমার ইনস্টিটিউটের অন্য ট্রেনারদের মত আমি রতীশকেও এসকর্ট ব্যবসায় নামিয়েছি। তাই তার ধারণা যে আমি খুব সহজেই রচনাকে তার হাতে তুলে দিতে পারবো। আর সে জন্যেই সে আমার কাছে এসেছিল। রাগে ক্ষোভে আমার বুকের ভেতরটা জ্বলতে থাকলেও মুখে হাসি এনে আমি প্রথমে তাকে বলেছিলাম যে আমি এসকর্টের ব্যবসা করি ঠিকই। কিন্তু কারুর ইচ্ছের বিরূদ্ধে আমি কাউকে এ ব্যবসায় টেনে আনি না। তাই তার কথা মেনে তার কাজ করে দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু সে আমাকে আশাতীত পয়সা দেবার লোভ দেখাতে আমি মনে মনে ভাবলাম, আমি যদি তার প্রস্তাবটা মেনে না নিই তবে সে অর্থের লোভ দেখিয়েই কাউকে না কাউকে এ কাজ করবার জন্যে ঠিক নিয়োগ করতে পারবে। আর এ শহরে এমন লোকেরও অভাব নেই মোটেও। তখন আমি তাকে বললাম যে ঠিক আছে, একটা সময় সে যখন আমার এতোটা উপকার করেছে, আর এখনও তার সাথে আমার বন্ধুত্বের সম্পর্ক আছে, তাহলে তার জন্যে সে কাজটা আমি হাতে নিতে রাজি আছি। কিন্তু যে মেয়েটাকে আমি চিনি না জানিনা, তার সাথে পরিচিত হয়ে তাকে আমার কথার জালে জড়িয়ে ফন্দি ফিকির করে বিমলের হাতে তুলে দিতে অনেকটা সময়ের প্রয়োজন। তখন সে লোকটা আমাকে ছ’মাস সময় দিল। এভাবে রচনার ক্ষতি করবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রচনাকে ছ’টা মাস বিপদ থেকে আগলে রাখতে আমি তার কথা মেনে নিয়েছি। কিন্তু সেদিন থেকেই ভাবছি, কি করে রতীশ আর রচনাকে এ বিপদ থেকে আমি পুরোপুরি ভাবে মুক্ত করতে পারি। গত সাতটা দিন ধরে ভাবতে ভাবতে আমি পাগল হয়ে গেছি বোন। কিছুতেই কোনও রাস্তা খুঁজে পাচ্ছি না আমি” বলতে বলতে মহিমা কেঁদে ফেলল।

সীমন্তিনীর মনের মধ্যেও তখন বিশাল ঝড় বইতে শুরু করেছে। তবু সে নিজেকে সংযত রাখতে রাখতে বলল, “বৌদি, এভাবে ভেঙে পড়ো না প্লীজ। আমাকে তোমার আর যা কিছু জানাবার আছে তা সবটা খুলে বলো। তুমি যে আমার দাদাভাই আর রচনাকে এভাবে ভালবেসে ফেলেছো সেজন্যে তোমার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আজ তুমি আমাকে কথাগুলো বলে খুব ভাল করেছ। এখন আমরা দু’জনে মিলে একসাথে চেষ্টা করতে পারব ওদের বিপদ থেকে মুক্ত করতে। তুমি প্লীজ শান্ত হও। আর তোমার বলার আর কিছু বাকি থাকলে সেসব খুলে বলো আমায়”।
 

মহিমা এবার খানিকটা ক্লান্ত স্বরে বলল, “আর কী বলবো ভাই তোমাকে। আমার অর্থ প্রতিপত্তি যতটুকু আছে তার সাহায্যে রতীশ আর রচনার ওপর নেমে আসা যে কোন সংকটের মোকাবিলা আমি করতে পারতাম। কিন্তু বিমল আগরওয়ালার বিরূদ্ধে গিয়ে আমি কিচ্ছুটি করতে পারবো না মন্তি। সে ক্ষমতা আমার নেই। কারন অর্থে প্রতিপত্তিতে আর বাহুবলে বিমল আমার চেয়ে অনেক অনেক ওপরে। ওর পেছনে লোক লাগিয়ে আমি একটা দিনও টিকতে পারবো না। ও যদি ঘূণাক্ষরেও বুঝতে পারে যে আমি রচনাকে বাঁচাবার জন্য ওর পেছনে লোক লাগিয়েছি, তাহলে সেদিনই সে আমাকে মেরে ফেলবে। আর রচনাকেও যে কাউকে দিয়ে কিডন্যাপ করে তুলে নেবে। আর শুধু তাই নয়। বিমল আমার এসকর্ট ব্যবসার ব্যাপারেও অনেক খবরই জানে। আমার সোর্স যতই থাকুক না কেন বিমল আমাকে ঠিক বিপদে ফেলতে পারবে। আমার হাতের লোককে দিয়েই ও আমাকে শেষ করে দিতে পারবে। তাই তো আমি এমন একজনকে খুঁজছিলাম যে রতীশ আর রচনার হিতৈষী। যে নিঃস্বার্থ ভাবে ওদের ভালোবাসে। কিন্তু ওদের সাথে কথা বলেই বুঝলাম, কলকাতায় ওদের এমন হিতৈষী আর কেউ নেই। পেলাম শুধু তোমার খোঁজ। তাই তো তোমার সাথে দেখা করবার জন্য বা কথা বলবার জন্য ছটফট করছিলাম আজ বিকেল থেকেই”।

সীমন্তিনী এবার জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা বৌদি, তুমি বিমল বিমল বলছিলে। এটা কোন বিমল গো? এক বিমল আগরওয়ালা তো দাদাভাইকে তোমার কাছে নিয়ে গিয়েছিলো সেই বিমল আগরওয়ালাই নাকি”?
 

মহিমা জবাব দিল, “হ্যাঁ ভাই, সেই বিমল আগরওয়ালাই। পেশাগত ভাবে সে একজন নামকরা বিল্ডার এবং প্রোমোটার। কোটি কোটি টাকার মালিক। কিন্তু অসম্ভব রকমের কামুক লোকটা। নিজের কাম চরিতার্থ করতে এমন কোনও কাজ নেই যা সে করতে পারে না। এবার বুঝতে পারছ তো রচনার ওপর কত বড় একটা বিপদের খাঁড়া ঝুলছে। এখন তুমিই একমাত্র যদি কোনও উপায় খুঁজে বের করতে পারো”।
 

সীমন্তিনী বলল, “বৌদি তোমার মুখে এতসব শুনে তো আমার মাথা ভনভন করছে গো। আমার হাত পা কাঁপতে শুরু করেছে। মাথা গরম হয়ে গেছে আমার। আমাকে ঠাণ্ডা মাথায় ভাল করে ভেবে দেখতে হবে বৌদি। তারপর তোমাকে জানাবো। আচ্ছা তুমি আমার আর কয়েকটা প্রশ্নের জবাব দেবে বৌদি”?

মহিমা ফোঁপাতে ফোঁপাতেই বলল, “জানা থাকলে নিশ্চয়ই উত্তর দেবো ভাই। বলো কী জানতে চাও”?

সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করলো, “তুমি কি দাদাভাই বা রচনাকে এসব ঘটণার কোনও হিন্টস দিয়েছো”?
 

মহিমা সাথে সাথে জবাব দিল, “না না মন্তি। আমি সে চেষ্টাই করিনি। কারন সেটা করলে ওই সহজ সরল ছেলেমেয়েদুটো যে ভীষণ ঘাবড়ে যাবে। ওরা ভয় পেয়ে নাজানি কি বোকামি করে ফেলবে। তাতে হয়তো হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে। তাই না”?

সীমন্তিনী বলল, “হ্যাঁ বৌদি, ঠিক বলেছ তুমি। ভালই করেছো যে ওদের কিছু জানতে দাও নি। আচ্ছা বৌদি আরেকটা কথা বল তো? বিমল আগরওয়ালা রচনার ছবিটা কোত্থেকে পেয়েছে সেটা কি আন্দাজ করতে পেরেছো”?

মহিমা বলল, “সেটা নিয়ে আমি খুব একটা ভাবিনি ভাই। তবে জানোই তো, আজকাল মোবাইলের যুগ। সকলের হাতে হাতেই মোবাইল। মোবাইলে ক্যামেরাও থাকে। রাস্তা ঘাটে যে কেউ ইচ্ছে করলেই যে কারুর ছবি তুলে নিতে পারে। আর বিমলের হাতের ওই ছবিটা দেখেও আমার মনে হয়েছিলো ওটা কোনও মোবাইলে তোলা ছবিই। তবে যতদুর মনে হয় আগে যে লোকটার সাথে বিমল রচনার ব্যাপারে চুক্তি করেছিল, সেই লোকটাই হয়তো কোথাও কোনভাবে ও ছবিটা তুলেছে। কারন বিমল নিজেই বলেছে যে ও এখনও রচনাকে চাক্ষুষ দেখে নি”।

সীমন্তিনীও মনে মনে তেমনই কিছু একটা ভেবে আবার জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা বৌদি, ছবিটা কি এখন ওই বিমল আগরওয়ালার কাছেই আছে”?

মহিমা বলল, “না মন্তি, ছবিটা এখন আমার কাছে আছে। বিমলের কাছ থেকে আমি সেদিনই ওটা চেয়ে নিয়েছিলাম। বুঝিয়েছিলাম যে সঠিক ভাবে মেয়েটাকে চিনতে ছবিটা আমার কাছে রাখা দরকার”।

সীমন্তিনী বলল, “ঠিক আছে বৌদি। আজ তো কথায় কথায় অনেক রাত হয়ে গেল। আজ আর বেশী রাত না করে আমরা বরং এখানেই আজকের কথা শেষ করি। তবে শোনো, অন্য কারুর সাথে এ ব্যাপারে আর কোনও কথা বোল না। আর আমি তোমাকে এখনই আমার পার্সোনাল মোবাইল নাম্বারটা এসএমএস করে দিচ্ছি। তুমি রচুর ওই ফটোটার একটা ছবি তুলে আমার মোবাইলে পাঠিয়ে দিও। আজ না পারলেও, কাল সকালে অবশ্যই পাঠাবে। তবে আমার মনে হয়, বিমল আগরওয়ালা যখন তোমার ওপর ভরসা করে কাজটা তোমার হাতে দিয়ে গেছে, তাহলে এই ছ’মাসের সময়সীমার ভেতরে সে আর অন্য কোনভাবে রচনার ওপর হামলা করবার চেষ্টা করবে না। তোমার কি মনে হয়”?

মহিমা বলল, “হ্যাঁ বোন, আমারও তাই মনে হয়। আর এ’কথা ভেবেই আমি মৌখিক ভাবে তার চাহিদা পূরণ করতে রাজী হয়েছি। তবে আমার ওপর বিমলের যদি কোন সন্দেহ না হয় তাহলে এ সময়সীমা পেরিয়ে যাবার পরেও আমি ওর কাছে হয়তো আরও খানিকটা সময় চেয়ে নিতে পারবো। ততদিনে তুমি প্লীজ কিছু একটা করো বোন”।

সীমন্তিনী বলল, “বেশ বৌদি, তুমি বিমলের সাথে সদ্ভাব রেখে চলো। ও যেন কোনভাবেই তোমার ওপর কোন সন্দেহ করতে না পারে। কিন্তু বৌদি, রচনাকে বাঁচাবার আর কোনও উপায় বা সম্ভাবনার কথা কি তোমার মাথায় এসেছে”?

মহিমা প্রায় কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, “নারে বোন। আমার মাথায় কিচ্ছু আসছে না। রতীশ আর রচনাকে কলকাতা ছেড়ে চলে যেতে বললেও ওরা যে পুরোপুরি বিপদমুক্ত হয়ে যাবে, সেটা ভাবা ভুল হবে। আর আমি নিজেও ওদেরকে আমার থেকে দুরে চলে যেতে দিতে চাই না। বরানগরের ফ্ল্যাট ছেড়ে দিয়ে অন্য কোথাও চলে গেলেও ওদের বিপদ কাটবে না। আমার নিজের বাড়িতে এনে তুললে ওদের সাথে সাথে আমিও বিপদে পড়বো” বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, “বিমলকে মেরে ফেলতে পারলেই একমাত্র ওদের পুরোপুরি ভাবে বিপদমুক্ত করা যাবে। কিন্তু সেটা তো আর আমার তোমার পক্ষে সম্ভব নয় ভাই। আমি যতই অনৈতিক ব্যবসায় লিপ্ত থাকি না কেন, কাউকে মেরে ফেলবার মত মানসিকতা বা সাহস কোনটাই আমার নেই ভাই। এখন আমি শুধু তোমার ওপরেই ভরসা করছি। হাতে কিছুটা সময় তো আছে। তুমি ভেবে চিন্তে একটা উপায় বের করতে পারলেই আমি খুশী। তাতে যদি আমার তরফ থেকে কোনও সাহায্যের দরকার পড়ে, সেটাও আমি সকলের কাছে গোপন রাখবার চেষ্টা করে ঠিকই করবো। আর সেটা যদি তুমি কোনভাবে করতে পারো ভাই, তাহলে আমি তোমার গোলাম হয়ে থাকবো চিরদিন” বলতে বলতে আবার কাঁদতে শুরু করলো।

সীমন্তিনী আবার তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল, “কেঁদো না বৌদি। তুমি আমাকে ব্যাপারটা জানিয়ে খুব ভালো করেছ। আমি দেখি কি করতে পারি। কিছু একটা উপায় তো বের করতেই হবে। তবে তোমাকে আমি এখনই আমার প্রাইভেট নাম্বারটা পাঠিয়ে দিচ্ছি। এ নাম্বারটা প্লীজ অন্য কাউকে জানাবে না। আর যদি আমাকে আর কোন কথা জানাতে চাও, তাহলে রাত এগারোটার পরেই শুধু ফোন করবে। অন্য সময় করো না। আমরা পরে এ ব্যাপারে আবার কথা বলবো। আজ অনেক রাত হয়ে গেছে। এবার একটু ঘুমোবার চেষ্টা করো কেমন? রাখছি তাহলে”?

মহিমা কান্না মাখা গলায় বলল, “ঠিক আছে বোন। তোমার নাম্বার আমি অন্য কাউকে দেবো না। কিন্তু ঘুম যে আমার সাতদিন আগে থেকেই পালিয়ে গেছে। এই সাতটা রাত আমি শুধু ভেবে ভেবেই কাটিয়েছি। তবে আজ তোমার সাথে কথা বলতে পেরে মনটা কিছুটা হলেও শান্ত হলো। দেখি আজ ঘুমোতে পারি কি না। তুমিও ভালো থেকো ভাই। আর আমার সাথে যোগাযোগটা রাখবে কিন্তু প্লীজ”।

সীমন্তিনী বলল, “হ্যাঁ বৌদি, তোমার সাথে আমার যোগাযোগ অবশ্যই থাকবে। তুমি আমার দাদাবৌদির জন্য এতো ভাবছো। আমি কি তোমাকে ভুলে যেতে পারি। তবে আজ আর কথা নয় প্লীজ বৌদি। গুড নাইট”।

ফোন সরিয়ে রেখে সীমন্তিনী জলের বোতল তুলে নিয়ে ঢকঢক করে বেশ কিছুটা জল খেয়ে বিছানায় গিয়ে বসল। মহিমার বলা কথাগুলো আবার মনে মনে আওড়াতে লাগল। রচনার বিপদের কথা শুনে তার মনটা সত্যি খুব বিচলিত হয়ে উঠেছে। মাথার ভেতরটা দপদপ করছে এখনও। এ অবস্থায় ঘুম কিছুতেই আসবে না তার। রাত বারোটা পেরিয়ে গেছে তখন। সীমন্তিনী ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে মোবাইলে সকাল সাড়ে ছটার এলার্ম সেট করে, ঘরের লাইট নিভিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়ল।
 

তখনও ঠিক ঘুম আসে নি। আচ্ছন্নপ্রায় অবস্থায় তার মনে হল মোবাইলে একটা শব্দ হল যেন। আর মনে হল কেউ যেন তার ঘরের দরজায় আস্তে আস্তে টোকা দিচ্ছে। “দিদিভাই, দিদি” বলে চাপা গলায় কেউ যেন ডাকছে তাকে। সীমন্তিনী আন্দাজ করল, নিশ্চয়ই অর্চনা আর নবনীতাই হবে। ওরা হয়তো কোন কারনে ওদের ঘর থেকে বেরিয়েছিল। আর সীমন্তিনীর ঘরে আলো জ্বলতে দেখেই হয়ত তারা জানতে চাইছিল এত রাতেও সীমন্তিনী জেগে আছে কেন। কিন্তু ঘুমের ওষুধের প্রভাবেই সে আর চোখ খুলে তাকাতে পারছিল না তখন। কয়েকমূহুর্ত বাদেই সে ঘুমিয়ে পড়ল।


****************
______________________________
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply
(Update No. 143)

দরজায় বেশ জোরে জোরে ধাক্কার শব্দে সীমন্তিনীর ঘুম ভাঙল। ঘুম ভাঙতেই দরজার বাইরে থেকে দু’ তিন জনের গলায় “দিদি, দিদিভাই, দিদিমণি” ডাক শুনেই সে ধরমর করে বিছানা থেকে নেমে গিয়ে প্রায় ছুটে গিয়ে দরজা খুলে দিল। দরজার বাইরে লক্ষ্মী, অর্চনা আর নবনীতাকে উৎকণ্ঠিত ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই সে অর্চনা আর নবনীতাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে বলে উঠল, “কি হয়েছে অর্চু সোনা? কি হয়েছে গো নীতা? তোমরা এত ঘাবড়ে গিয়েছ কেন? বল না কী হয়েছে? রচু কি ফোন করেছিল”?

নবনীতা আর অর্চনা দু’জনেই সীমন্তিনীর কথায় অবাক হয়ে গেল। একে অপরের মুখ দেখাদেখি করে অর্চনা সীমন্তিনীর কপালে আর গালে হাত বোলাতে বোলাতে বলল, “তুমি ঠিক আছ তো দিদিভাই? কিছু হয়নি তো তোমার”?

সীমন্তিনী একটু অবাক হয়ে বলল, “কই কিছু হয়নি তো আমার। কিন্তু তোমরা এমন করছ কেন বলো তো”?

এবার লক্ষ্মী বলে উঠল, “এতদিন ধরে তোমার এখানে কাজ করছি। কোনদিন তো তোমাকে বেলা ন’টা অব্দি ঘুমোতে দেখিনি। তুমি ঘুম থেকে ওঠোনি বলে এনারা দু’জনেও চা খায়নি। তুমি উঠছ না দেখে আমাদের তো দুশ্চিন্তা হচ্ছিল। কিন্তু তুমি নাকি রাতে অনেকক্ষণ জেগে ছিলে। তাই আমরা আগে তোমাকে ডাকিনি। ওদিকে বৌদিমণি তোমার ফোনে তোমাকে না পেয়ে সোনাদির মোবাইলে ফোন করে যখন শুনলেন যে তুমি এখনও ঘুম থেকে ওঠো নি, অমনি আমাকে ডেকে বকলেন। আর বললেন যে এক্ষুণি যেন যে করে হোক তোমাকে ডেকে তুলি। আর তুমি এমন ভাব করছ যেন কিচ্ছুটি হয় নি”।

সীমন্তিনী নবনীতা আর অর্চনাকে ছেড়ে দিয়ে পেছন ঘুরে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ন’টা কুড়ি। সেটা দেখেই সে বলল, “ইশ, কত বেলা হয়ে গেছে গো। কিন্তু আমি তো আমার মোবাইলে সাড়ে ছটার এলার্ম দিয়ে রেখেছিলুম! এলার্মটা কি তাহলে বাজে নি? ইশ দেখেছ, এখন আমি কি ছেড়ে কি করি বল তো? আমার যে সকাল সাড়ে নটায় অফিসে একটা জরুরী মিটিং আছে”।

অর্চনা এবার সীমন্তিনীর একটা হাত ধরে বলল, “ও দিদিভাই, তুমি আমার কথাটার জবাব দিচ্ছ না কেন গো? বল না, তোমার কিছু হয়নি তো? তুমি ঠিক আছ তো”?
 

সীমন্তিনী এবার অনেকটা স্বাভাবিক স্বরে অর্চনার হাত ধরে বলল, “আমার কিচ্ছু হয়নি গো সোনা। আমি একদম ঠিক আছি। শুধু ঘুমটাই দেরীতে ভাঙল আমার। আসলে কাল রাতে সত্যি আমার অনেকক্ষণ ঘুম আসছিল না। শেষে একটা স্লিপিং ট্যাবলেট খেয়ে ঘুমিয়েছিলুম। তাই বোধ হয় দেরী হল। আর গভীর ঘুমে ছিলুম বলেই হয়ত এলার্মের শব্দ বা ফোনের রিংটোনের শব্দও শুনতে পাই নি। সত্যি খুব লজ্জা লাগছে আমার এখন। কিন্তু আমি উঠিনি বলে তোমরাও চা না খেয়েই বসে থাকবে এটা কেমন কথা বল তো বোন। আচ্ছা, যা হয়েছে সব তো আমার জন্যেই হয়েছে। লক্ষ্মীদি তুমি চা বানাতে থাকো। আমি এক্ষুনি বাথরুম সেরে হাত মুখ ধুয়ে আসছি। আর শোনো, আমার সত্যি দেরী হয়ে গেছে। আমার জন্য তোমাকে আর এখন খাবার কিছু বানাতে হবে না। আমি চা খেয়েই বেরিয়ে পড়ব। অফিসের ক্যান্টিনেই কিছু একটা খেয়ে নেবো’খন। তোমরা তোমাদের জন্য খাবার বানিও” বলেই অর্চনাকে ছেড়ে প্রায় ছুটে বাথরুমে ঢুকে গেল।

আর প্রায় সাথে সাথেই নবনীতার হাতের ফোনটা বেজে উঠল। রচনার নাম দেখে নবনীতা কল রিসিভ করে বলল, “হ্যাঁ বৌদি, সব ঠিক আছে। তুমি ভেবো না। দিদি উঠেছে। এখন বাথরুমে আছে। কাল রাতে নাকি অনেক দেরীতে তার ঘুম এসেছিল, তাই তার উঠতে দেরী হয়ে গেছে” তারপর কিছুক্ষণ ওদিকের কথা শুনে আবার বলল, “না না বৌদি। তেমন কোন ব্যাপার নেই। দিদি ভালই আছে। আর সে হাতমুখ ধুয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলেই আমরা একসাথে চা খাবো। তবে দিদি বোধহয় সকালের খাবার না খেয়েই বেরিয়ে যাবে। বলছিল অফিসে নাকি সাড়ে নটায় কিছু জরুরী কাজ ছিল। তাই লক্ষ্মীদিকে খাবার বানাতে বারণ করল” আবার কিছুক্ষণ রচনার কথা শুনে বলল, “আচ্ছা বৌদি এই নাও অর্চুর সাথে কথা বলো” বলে ফোনটা অর্চনার হাতে দিল।

অর্চনা ফোন কানে লাগিয়েই বলল, “হ্যাঁ রচু, তুই ভাবিস নে। দিদিভাই ঠিক আছেন”।

রচনা বলল, “শোন দিদি, দিদিভাইয়ের এত দেরীতে ঘুম ভাঙ্গাটা আমার ভালো লাগছে না। নিশ্চয়ই কোন ব্যাপার আছে। তুই একটা কাজ করিস তো। দিদিভাইকে আজ অফিসে যেতে দিস না। আমি একটু বাদেই আবার তাকে ফোন করছি”।

অর্চনা আমতা আমতা করে বলল, “বারে এ তুই কেমন কথা বলছিস রচু? নীতাদি বা আমি কি আর দিদিভাইকে কোন কিছুতে বাঁধা দিতে পারি? সে অধিকার কি আমাদের আছে বল”?

রচনা একমূহুর্ত চুপ করে থেকে বলল, “অধিকার তো কেউ কাউকে দেয় না রে দিদি। সেটা তো নিজেদেরকেই অর্জন করে নিতে হয়। আমাদের ছোটবেলায় বাবা মা তো আমাদের এ শিক্ষাই দিয়েছেন। তুই কি তা ভুলে গেছিস? আচ্ছা শোন, তোরা যখন চা খেতে বসবি, তখন দিদিভাইকে বলিস তিনি যেন আমাকে তখনই একটু ফোন করেন। এ’টুকু তো তাকে বলতে পারবি”?

অর্চনা জবাব দিল, “ঠিক আছে, তা-ই বলবো”।

রচনা তখন “আচ্ছা ঠিক আছে, রাখছি তাহলে” বলে ফোন কেটে দিল।

নবনীতা আর অর্চনা ডাইনিং টেবিলে সীমন্তিনীর প্রতীক্ষা করছিল। খানিক বাদেই সীমন্তিনী এসে বসতে বসতে বলল, “লক্ষ্মীদি, তাড়াতাড়ি চা দাও গো। বড্ড দেরী হয়ে গেছে”।

লক্ষ্মী সবাইকে চা বিস্কুট এগিয়ে দিতেই অর্চনা বলল, “দিদিভাই, রচু তোমার সাথে কথা বলতে পারেনি বলে খুব উশখুস করছে। তুমি যখন বাথরুমে ছিলে তখন আবার নীতাদির মোবাইলে ফোন করেছিল। বলছিলাম কি, ওর সাথে একটু কথা বলে নাও না”।

সীমন্তিনী চা খেতে খেতেই বলল, “অর্চু সোনা, আমার সত্যিই খুব দেরী হয়ে গেছে গো আজ। সকাল সাড়ে নটায় এসপি অফিস থেকে কয়েকজন লোক আসবার কথা। তাদের সাথে আমার জরুরী একটা মিটিং আছে। সাড়ে ন’টা তো বেজেই গেছে। এখন রচুর সাথে কথা বলতে গেলে আমার আরো দেরী হয়ে যাবে বোন। আমি না হয় অফিসে যাবার পথেই ওকে ফোন .....”
 

তার কথা শেষ হবার আগেই সীমন্তিনীর রুমের ভেতর একটা মোবাইল বেজে উঠল। সীমন্তিনী চেয়ার ছেড়ে উঠে প্রায় ছুটে গিয়ে দেখে রচনার ফোন। কল রিসিভ করে ফোন কানে লাগাতেই রচনা জিজ্ঞেস করল, “তোমার কি হয়েছে দিদিভাই? রাতে ঘুম হয়নি কেন তোমার? তোমার শরীর ঠিক আছে তো”?

সীমন্তিনী আবার ডাইনিং রুমে আসতে আসতে বলল, “রচু সোনা। সোনা বোন আমার। তুই উতলা হোস নে। আমার কিচ্ছু হয়নি রে। আসলে কাল রাতে খেয়েদেয়ে শোবার আগে একটা ব্যাপার নিয়ে ভাবতে ভাবতে অনেক সময় কেটে গিয়েছিল। তারপর যখন ঘুমোতে গেলুম, তখন আর কিছুতেই ঘুম আসছিল না। শেষে একটা ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে শুয়ে পড়েছিলুম। তাই সকালের দিকে হয়তো ঘুমটা ভাঙে নি। এলার্মের শব্দ বা ফোনের শব্দেও ঘুম ভাঙেনি। তোর বকুনি খেয়েই লক্ষ্মীদি, অর্চু আর নীতাকে নিয়ে এসে আমার দরজায় ধাক্কা দিয়ে ডাকাডাকি করাতেই আমার ঘুম ভাঙল। এদিকে আজ সকাল সাড়ে নটায় আমার অফিসের একটা জরুরী মিটিং আছে বলেই তাড়াহুড়ো করে চা খাচ্ছি। অলরেডি দেরী হয়ে গেছে। তাই তুই ভাবিস না। আমি লাঞ্চ আওয়ারে তোকে ফোন করবো, কেমন”?

রচনা ও’পাশ থেকে বেশ জোরে বলে উঠল, “না দিদিভাই। আজ তুমি কিছুতেই অফিসে যাবে না। কাল রাতে তোমার ভাল ঘুম হয়নি। আজ ঘরে বসে একটু রেস্ট নাও। পারলে আরো একটু ঘুমিয়ে নাও। আমি তোমাকে দিব্যি দিচ্ছি। তুমি যদি আজ অফিসে যাও তাহলে কিন্তু আমি আজ সারাদিনে কিচ্ছুটি খাবো না এই বলে দিলুম”।

সীমন্তিনী অসহায় মুখ করে বলল, “একি করছিস রচু? তুই তো এর আগে কোনদিন আমাকে আমার অফিসিয়াল ডিউটি করতে বাধা দিস নি। আজ তোর কি হল হঠাৎ ? হ্যারে, তোরা ভাল আছিস তো। কোনও সমস্যা হয়নি তো তোদের? দাদাভাই কোথায়? সে ঠিক আছে তো”?

রচনার ভারী গলা শোনা গেল, “তোমার দাদাভাই রোজকার মতই সকাল সাড়ে চারটেতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেছেন। এখন তিনি নিশ্চয়ই তাদের ইনস্টিটিউটেই আছেন। আর আমাদের কারুর কিছু হয়নি। যদি কিছু হয়ে থাকে তো সেটা তোমার হয়েছে। আমি চাই তুমি আজ অফিসে না গিয়ে ঘরে বসে রেস্ট নেবে। ব্যস আর কিচ্ছু না। নইলে আমি তোমার নামে শপথ করে বলছি, আমি কিন্তু আজ সারাদিনে কুটোটিও দাঁতে কাটবো না বলে দিচ্ছি। আমি তখন বুঝবো যে আমার দিদিভাই আমাকে ভুলে গেছেন। তিনি আর আমাকে ভালবাসেন না” বলেই হঠাৎ করেই ফোন কেটে দিল।

সীমন্তিনী সাথে সাথে বলে উঠবার চেষ্টা করল, “রচু, শোন শোন, আমার কথাটা .....”। কিন্তু রচনা যে ফোনটা ততক্ষণে কেটে দিয়েছে এ’কথা বুঝতে পেরেই সে অর্চনা আর নবনীতার দিকে চেয়ে বলল, “কি মুস্কিল বল তো? কিছুতেই কথা শুনলো না। আমি আজ অফিসে গেলে সে নাকি আজ সারাদিন না খেয়ে থাকবে, এ’কথা বলেই লাইনটা কেটে দিল। এদিকে আমার যে আজ অফিসে না গিয়ে কোন উপায়ই নেই সে’কথাটাও বলবার সুযোগ দিল না”।

অর্চনা আর নবনীতা কোন কথা না বলে চুপ করে রইল। কিন্তু তারা দু’জনেই জানে রচনার কথা সীমন্তিনী কিছুতেই ফেলতে পারবে না। সীমন্তিনী কিছু সময় হতাশ ভঙ্গীতে বসে থাকবার পর উঠে নিজের রুমে গিয়ে ঢুকল। তারপর তার অন্য মোবাইলটা থেকে একটা নাম্বার ডায়াল করে ফোনটা কানে লাগাতে ও’পাশ থেকে সাড়া পেতেই বলল, “হ্যালো, শুনুন, আজ এসপি সাহেবের আমাদের এখানে আসবার কথা ছিল। কিন্তু আমি ........”

তার কথা শেষ হবার আগেই ও প্রান্ত থেকে জবাব এলো, “আমি সিকদার বলছি ম্যাম। কিন্তু ম্যাম, এসপি সাহেব তো এখানকার আজকের মিটিংটা পোস্টপন্ড করেছেন। আধঘণ্টা আগেই ডিসট্রিক্ট হেড কোয়ার্টার থেকে খবর পাঠিয়েছে যে গত রাতে জলপাইগুড়িতে একটা মার্কেট কমপ্লেক্সে বিরাট বড়সড় একটা ডাকাতির ঘটণা ঘটে গেছে। তাই এসপি সাহেব সকালে এখানে আসবার প্রোগ্রামটা ক্যানসেল করেছেন। আর পরবর্তীতে মিটিংটা কবে কখন হবে তা নাকি আগামীকাল বা পরশুর মধ্যে জানিয়ে দেবেন। খবরটা আপনাকে সাথে সাথে দিইনি বলে ক্ষমা করবেন ম্যাম। আসলে আমি ভেবেছিলাম যে আপনি হয়ত অলরেডি অফিসে আসবার জন্য বেরিয়ে পড়েছেন। তাই ভেবেছিলাম যে আপনি অফিসে এলেই কথাটা আপনাকে জানাবো”।

সীমন্তিনী চোখ বুজে একটা স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে বলল, “ও তাই নাকি? আর আমাদের এদিকের খবর কি? কোন আর্জেন্সীর খবর আছে কিছু? কোথাও কোন ডেপুটেশন পাঠাবার প্রয়োজন আছে কি”?

ও’পাশ থেকে সিকদার বলল, “না ম্যাম, এখনও অব্দি কোনও আর্জেন্সী বা ডেপুটেশন পাঠাবার কোন খবর নেই। তা আপনি যদি বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে না থাকেন তাহলে একটু দেরী করে এলেও কোন ক্ষতি নেই ম্যাম”।
 

সীমন্তিনী এবার আরো শান্তভাবে জবাব দিল, “না মিঃ সিকদার, আমি এখনও আমার কোয়ার্টার থেকে বেরোতে পারিনি। আসলে, গতকাল রাতে আমি প্রায় ঘুমোতেই পারিনি। সকাল প্রায় সাড়ে ন’টায় আমার ঘুম ভেঙেছে। শরীরে একটা আলসেমি ভাব আছে, আর মাথাটাও খুব ভারী ভারী লাগছে। কিন্তু সাড়ে ন’টার মিটিংটায় সময় মতো এটেন্ড হতে পারলাম না বলেই খুব চিন্তায় ছিলুম। তবে মিটিংটা পোস্টপন্ড হয়েছে শুনে খুব রিলিভড ফীল করছি এখন। কিন্তু মিঃ সিকদার, আপনি কি একটু হেল্প করতে পারবেন আজ আমাকে প্লীজ”?

মিঃ সিকদার বলল, “অবশ্যই ম্যাম। বলুন কি করতে হবে আমাকে”।

সীমন্তিনী বলল, “আসলে আমার শরীরটা একটু উইক লাগছে বলেই আমি একটু রেস্টে থাকতে চাইছি। যদি আপনি কাইন্ডলি আজকের দিনটা একটু সামলে নিতে পারেন, তাহলে ....”

তার কথা শেষ হবার আগেই সিকদার বলে উঠল, “ঠিক আছে ম্যাম, নো প্রব্লেম। আমি সব সামলে নেব। আপনি নিশ্চিন্তে রেস্ট নিন। তেমন প্রয়োজন হলে আমি আপনাকে ফোন করবো। কিন্তু ম্যাম, আপনার শরীরে ঠিক সমস্যাটা কেমন? মানে আমি জানতে চাইছি যে ডাক্তার বা কোনও ওষুধপত্রের দরকার হলে আমাকে বলুন। আমি পাঠিয়ে দেবার ব্যবস্থা করবো”।
 

সীমন্তিনী বলল, “না না মিঃ সিকদার। আপনি অতোটা ভাববেন না। আমার স্টকে কিছু মেডিসিন আছে। মনে হয় তাতেই কাজ হয়ে যাবে। আর নিতান্তই যদি কিছু প্রয়োজন হয় তাহলে আমিই আপনাকে খবর দেব। তবে আপনি যে আজকের জন্য অফিস সামলাবার দায়িত্বটা নিলেন, সেজন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। তবে কোন ইমারজেন্সী হলেই কিন্তু আমাকে জানাবেন প্লীজ। আচ্ছা রাখছি তাহলে, কেমন”?
 

ফোন রেখে একটা বড় করে দীর্ঘশাস ছাড়তেই অর্চনা আর নবনীতা ছুটে তার ঘরে ঢুকল। অর্চনা সীমন্তিনীকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে বলল, “আমি জানতুম দিদিভাই। রচুর কথা তুমি কিছুতেই ফেলতে পারবে না”।
 

অর্চনার একটা হাত ধরে স্মিত হেসে সীমন্তিনী বলল, “তোমার ছোটবোনটার জন্যে এবার আমাকে চাকরিটাই না খোয়াতে হয়। কী দুষ্টু মেয়ে রে বাবা। আমি অফিসে গেলে উনি সারাদিন উপোষ করে থাকবেন বলে আমার নামে দিব্যি কেটে বসলেন”।

অর্চনা সীমন্তিনীর গালে নিজের গাল চেপে ধরে বলল, “ও, এখন বুঝি সে শুধু আমার ছোটবোন হয়ে গেল। আর অন্য সময় সে তোমার ছোটবোন, তোমার বান্ধবী, তোমার বৌদি আর তোমার রচু সোনা, তোমার জীবন, তোমার মরন, তাই না”?

সীমন্তিনীও অর্চনার গালে নিজের গাল ঘসতে ঘসতে হেসে ফেলল। আর নবনীতা রুম থেকে বাইরে যাবার জন্য পা বাড়িয়ে বলল, “আমি তাহলে লক্ষ্মীদির সাথে হাতে হাত মিলিয়ে তাড়াতাড়ি সকালের খাবারটা বানিয়ে ফেলি গিয়ে”।
 

কিন্তু সে বেরিয়ে যাবার আগেই সীমন্তিনী বলল, “নীতা শোনো, লক্ষ্মীদিকে খাবার বানাতে বলে এসো তুমি। কিন্তু তুমি এখানে চলে এসো। তোমাদের সাথে আমার কিছু আলোচনা আছে। সেটা এখনই সেরে ফেলি”।

“ঠিক আছে দিদি” বলে নবনীতা বেরিয়ে যেতেই সীমন্তিনী অর্চনাকে জিজ্ঞেস করল, “হ্যাগো অর্চু, রচু তো রেগে মেগে আমার সাথে ঠিক মত কথাই বলল না। তা তোমাদেরকে কি কিছু বলেছে? মানে দাদাভাই আর ও ঠিকঠাক আছে তো”?
 

অর্চনা বলল, “হ্যাঁ দিদিভাই। ওরা দু’জনেই ঠিক আছে, ভাল আছে। রতু-দা রোজকার মতই আজও একই সময়ে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে গেছেন। রচুও সকালের খাবার খেতে খেতেই তোমাকে ফোন করেছিল। কিন্তু ফোনে তোমাকে না পেয়েই নীতাদির ফোনে ফোন করে আমাদের সাথে কথা বলল। তুমি ভেবো না। আর ও যখন জানতে পারবে যে তুমি আজ অফিসে যাও নি, তখন আনন্দে ঘরের মধ্যে নাচতে শুরু করবে। কিন্তু দিদিভাই, কাল রাতে তুমি অতো রাত পর্যন্ত জেগেছিলে কেন গো? রচু আর রতুদার কথাই ভাবছিলে বুঝি? আমরা শুয়ে পড়বার অনেক পর একবার জল নেবার জন্য বেরোতে দেখি তোমার ঘরে তখনও আলো জ্বলছে। জল নিয়ে ঘরে ফেরবার সময় দেখলুম তোমার ঘর অন্ধকার। ঘরে ঢুকে নীতাদিকে যখন বললুম, তখন নীতাদি আমাকে সাথে নিয়েই আবার তোমার ঘরের দরজায় এসে কড়া নাড়লো। আমিও তোমাকে ডেকেছিলুম। কিন্তু তোমার সাড়া না পেয়ে ফিরে গিয়েছিলুম। ভেবেছিলুম তুমি ঘুমিয়ে পড়েছো। সকালে এত বেলা পর্যন্ত তোমাকে ঘুমোতে দেখে আমরা সত্যিই ভাবনায় পড়ে গিয়েছিলুম, জানো”?

নবনীতাও তখন ফিরে এসে সীমন্তিনীর ঘরে ঢুকেছে। সীমন্তিনী নবনীতার একটা হাত ধরে তাকে নিজের অপর পাশে বসিয়ে বলল, “তুমি তো একসাথে কত কিছু জিজ্ঞেস করে ফেললে অর্চু। আমি কোনটা ছেড়ে কোনটার উত্তর দিই বলো তো? তবে রচু যখন আজ আমাকে ঘরেই আটকে দিল, তাহলে তোমাদের সাথে অনেক গল্প করবো এখন। নবনীতা তুমি আরেকটু ও’পাশে সরে বসো তো। আর দরজার দিকে খেয়াল রেখো। লক্ষ্মীদি যেন আমাদের কথার মাঝে হঠাৎ করে ঘরে এসে না ঢোকে। তাকে আসতে দেখলেই তুমি আমায় ঈশারা করবে, কেমন? নইলে সে আরেক পাগলামী শুরু করবে”।

নবনীতা সীমন্তিনীর দেখানো জায়গায় বসতে বসতে বলল, “কিন্তু দিদি, তোমার শরীর সত্যি ঠিক আছে তো? কোনও সমস্যা নেই তো”?
 

সীমন্তিনী দু’হাতে দু’জনের দুটো হাত একসাথে ধরে বলল, “কিচ্ছু ভেবো না তোমরা। আমি একদম ঠিক আছি। আমি যে আমার অফিসের সিকদারবাবুকে বললুম যে আমার শরীরটা ভাল নেই, সে’কথা শুনেই তো তোমরা এ’কথা বলছো? সেটা তো আমি মিথ্যে কথা বলেছি গো। রচুর দেওয়া দিব্যি আমি কি ফেলতে পারি বলো? আর কেন অফিসে যাচ্ছিনা আজ, সেটার তো একটা যুক্তিসংগত কারন দেখাতে হবে। আমি তো আর অফিসে এ’কথা বলতে পারব না যে আমার আদরের বোন আমাকে দিব্যি দিয়েছে বলেই আমি অফিস যাচ্ছি না। তবে সত্যি কাল রাতে মাথার ভেতরে এতকিছু চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল যে রাত একটা পর্যন্ত জেগে থাকবার পরেও মাথার ভেতরটা দপদপ করছিল। তখন বাধ্য হয়েই একটা স্লিপিং পিল খেয়ে শুয়ে পড়েছিলুম। একটু যখন আচ্ছন্ন আচ্ছন্ন ভাব এসেছিল, তখনি বোধ হয় তোমরা দুটিতে আমায় ডেকেছিলে। কিন্তু ঘুমের ওষুধের প্রভাবেই তখন আর চোখ খুলতে পারিনি। তাছাড়া তখন যদি আবার উঠে পড়তুম তাহলে বোধহয় আরও ঘন্টা দুয়েক আমাকে জেগে থাকতে হত। তাই তখন আমি খানিকটা ইচ্ছে করেই উঠিনি। আর ঘুমের ওষুধের প্রভাবে ঘুমিয়েও পড়েছিলুম। আজ ঘুমটা দেরী করে ভাঙতে যদিও তোমরা দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলে ঠিকই, কিন্তু সাত আটঘন্টা সলিড ঘুম হতে শরীরটা এখন বেশ ঝরঝরে লাগছে। এখন আর কোনরকম মাথা ভার বা অন্য কোন সমস্যা নেই। কিন্তু তোমাদের ভাবনায় ফেলে দিয়েছিলুম বলে তোমাদের কাছে আমি ক্ষমা চাইছি ভাই”।

অর্চনা আর নবনীতা হাঁ হাঁ করে কিছু একটা বলে উঠতেই সীমন্তিনী তাদের থামিয়ে শান্ত গলায় বলে উঠল, “প্লীজ নীতা, অর্চু। তোমরা আমাকে এখন এ ব্যাপারে আর কিচ্ছুটি বোল না প্লীজ। আমার মনের ভেতরটা যে এ মূহুর্তে কত খুশীতে ভরা, সেটা তোমরা বুঝতে পারবে না। তাই আর কিছু বলে আমার মনের সে খুশীটাকে নষ্ট করে দিও না তোমরা প্লীজ। জীবনের অনেকগুলো বছর শুধু দাদাভাইয়ের কাছ থেকে দূরে ছিলুম বলে অনেক কেঁদেছি। আমার চোখের জল মুছিয়ে একটু সান্ত্বনা দেবার মত কেউ আমার পাশে ছিল না। তারপর ভগবানের অশেষ কৃপায় রচু এল আমার জীবনে। সেদিন থেকেই দুরে থেকেও রচুর ভালবাসা আর আদর পেয়ে আমার জীবনটাই যেন বদলে গিয়েছিল। আর সেই রচুর মাধ্যমেই আমি অর্চু, মাসি, মেসো, আর ভাইকে পেয়ে আমার সব দুঃখ কষ্ট ভুলে গিয়েছি। রচু তো সকাল বিকেল রাতে ফোনে ফোনেই আমার সব খবর রাখে। ভালবাসায় আমার মন ভরিয়ে দেয়। প্রয়োজনে রাগ অভিমানও করে। কিন্তু ওর আদর আবদার ভালবাসা রাগ অভিমান কোনকিছুই আমি ফেলতে পারিনা। আজ নীতার মত আরেকটা মিষ্টি মেয়েকে আমার পাশে পেয়েছি। আর দ্যাখো, এখন তোমরা দু’জন কিভাবে আমায় আগলে আছো। রাতে আমার ঘুম ঠিক হয়নি ভেবে আমার জন্যে তোমরাও কত দুশ্চিন্তা করছো। এ কি আমার কম ভাগ্য বলো। ছোটবেলা থেকেই যে মেয়েটা মা-বাবার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত, যে মেয়েটা একদিন শুধু ভেতরে ভেতরে গুমড়ে গুমড়ে কাঁদতো, যাকে সান্ত্বনা দেবার মত কেউ তার পাশে ছিল না, আজ তোমাদের মত দুটো মিষ্টি মেয়ে কী ভালবাসায় আমাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছো। আর আমার রচু সোনা। আমার থেকে এত দূরে থেকেও কিভাবে আমার পাশে আছে দ্যাখো। আমাকে এ সুখটা একটু তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করতে দাও না। অন্য কোনও কথা বলে আমার মন থেকে এমন সুখের আবেশটুকু নষ্ট করে দিও না প্লীজ”।

অর্চনা আর নবনীতাও কোন কথা না বলে দু’পাশ থেকে সীমন্তিনীকে জড়িয়ে ধরে থাকলো। বেশ খানিকক্ষণ পরে অর্চনাই প্রথম কথা বলল, “রতু-দা আর রচুর কথা ভাবতে ভাবতে আমরাও তো কাল অনেকক্ষণ ঘুমোতে পারিনি দিদিভাই। তুমিও যে এ’ঘরে একা একা তাদের কথাই ভাবছিলে, এটা তো আমরাও জানতুম। কিন্তু প্রায় দু’ঘন্টা পরেও জল নিতে বেরিয়ে তোমার ঘরে আলো দেখে তোমাকে ডেকেছিলুম। কিন্তু তুমি ঘুমিয়ে পড়েছ বুঝতে পেরেই আমরা আর তোমাকে ডিসটার্ব করিনি। কিন্তু দিদিভাই, চরম স্বার্থপরের মতই একটা প্রশ্ন না করে যে আর থাকতে পারছি না গো। নীতাদির মুখে কাল যা সব শুনলুম, সে ব্যাপারে কতটা কি করতে পারব আমরা এতদুর থেকে, আর পরিতোষবাবুই বা কতটা কি করতে পারবেন, এ ব্যাপারে কিছু ভেবেছো কি”?


______________________________

Like Reply
(Update No. 144)

সীমন্তিনী এবার মিষ্টি করে হেসে বলল, “কাল রাতে তোমরা ঘুমোতে যাবার পর অনেক ব্যাপার ঘটে গেছে গেছে অর্চু। এখন আমি তোমাদের দু’জনকে সে’সব কথাই বলব বলে ভেবেছি। তবে তুমি একদম দুশ্চিন্তা কোর না বোন। রচু আর দাদাভাই ওরা একদম নিরাপদে আছে। একটা ঝামেলা অবশ্য হয়েছে যে ব্যাপারে ওরা কেউই কিছু জানতে বা বুঝতে পারেনি এখনও। তবে এ ঝামেলাও ঠিক মিটে যাবে। সব কথাই আমি তোমাদের খুলে বলব এখন। কিন্তু ওই রচু পাগলীটা তো এখনই আবার নীতার ফোনে ফোন করবে বলে মনে হচ্ছে। তাই সেটার জন্য একটু অপেক্ষা করি। ওর সাথে কথা বলা শেষ হতেই, তোমাদেরকে সব খুলে বলব। তবে তার আগে তুমি রান্নাঘরে গিয়ে লক্ষ্মীদিকে একটু বলে আসো, সে যেন আমার জন্যে আদা দিয়ে এক কাপ লিকার চা বানিয়ে আনে। আর তোমরা যদি এখন চা খেতে চাও, তাহলে সে’কথাও বলে এস”।

অর্চনা উঠতে উঠতে বলল, “আমি আর খাবো না এখন চা। নীতাদি, তুমি খাবে”?

নবনীতা বলল, “আমার জন্যেও দিদির মতই লিকার চা বানিয়ে দিতে বোলো একটু”।

অর্চনা রুম থেকে বেরোতে না বেরোতেই সীমন্তিনীর কথা সত্যি প্রমাণিত করে রচনার ফোন এল নবনীতার মোবাইলে। নবনীতা ফোনের দিকে দেখেই হেসে ফোনটা সীমন্তিনীর দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বলল, “নাও দিদি, কথা বল”।

সীমন্তিনী কল রিসিভ করে বলল, “বলো ঠাকুমা আমার”।

ও’পাশ থেকে অনেকক্ষণ সাড়া না পেয়ে সীমন্তিনী আবার বলল, “এখনও আমার ওপর এতটাই অভিমান করে আছিস সোনা, যে আমার ফোনে কল না করে তুই নীতার ফোনে কল করলি”?

ওদিক থেকে রচনার ফোঁপানির শব্দ পেয়েই সীমন্তিনী বললো, “রচু, সোনা বোন আমার। কাঁদিস নে প্লীজ। তুই হয়ত ভেবেছিলি যে আমি সত্যি অফিসে চলে গেছি। আর সে ব্যাপারে জানতেই তুই নীতাকে ফোন করেছিস, তাই তো? আরে পাগলী, আমি কি তোর কথা ফেলতে পারি রে? তুই তো জানিস তুই আমার কী। তবু ভাবছিস যে আমি তোর কথা অবহেলা করে অফিসে চলে যাবো”?
 

অর্চনা প্রায় ছুটে এসে ঘরে ঢুকতেই সীমন্তিনী ফোনের স্পীকার অন করে দিতেই রচনা কাঁদতে কাঁদতে বলল, “আমাকে ক্ষমা করে দাও দিদিভাই। না জেনে না বুঝেই আমি তোমার ওপর এমন অন্যায় আবদার করে বসেছিলুম। কিন্তু কী করব বলো তো? তুমি রাত একটা পর্যন্ত ঘুমোও নি। সকালে নীতাদি, লক্ষ্মীদি, দিদি সবাই মিলে ডেকেও তোমার ঘুম ভাঙাতে পারেনি, এসব শুনে দুশ্চিন্তা হবে না আমার বলো? ঘরে একা একা তখন থেকে আবোল তাবোল কত কিই যে আমার মনে আসছে, সে’কথা আমি কিকরে তোমাকে বোঝাবো। দুটো সান্ত্বনা দেবারও তো কেউ নেই আমার পাশে। একা একা শুধু চিন্তা করে মরছি আমি। শুধু একটা কথা ভেবেই এখনও পর্যন্ত নিজেকে সামলে রাখতে পেরেছি যে নীতাদি আর দিদি তোমার সঙ্গে আছে। কিন্তু তুমি একবারও ভেবেছো যে সকাল সকাল অমন খবর শুনে একা ঘরে আমার মনের কি অবস্থা হতে পারে” বলতে বলতে রচনা কেঁদেই ফেলল।

রচনার কান্না শুনে নবনীতা আর অর্চনার চোখেও জল চলে এল। সীমন্তিনী তাড়াতাড়ি বলল, “কাঁদিস নে বোন। শোন আমার কিচ্ছু হয়নি। আমি একদম ঠিক আছি। রাতে দেরীতে ঘুমিয়েছিলুম সেটা সত্যিই। কিন্তু দেরী করে ঘুম ভাঙতে ঘুমটা পুষিয়ে গেছে। এখন আমি একদম ঠিক আছি রে। কিন্তু জানিস, আজ সত্যি সাড়ে ন’টায় অফিসে একটা আর্জেন্ট মিটিং ছিল আমার। তাই যাওয়াটা নিতান্তই দরকারী ছিল। কিন্তু তুই ওভাবে আমার দিব্যি দিয়ে সারাদিন উপোষ থাকবি বলাতে আমি চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলুম। ভাগ্যিস, এসপি অফিস থেকেই সকালে অফিসে খবর পাঠিয়েছিল যে মিটিংটা পোস্টপন্ড করা হয়েছে। তাই তো তোর দিব্যি রাখতে আমাকে বাধ্য হয়ে অফিসে মিথ্যে কথা বলতে হল যে আমার শরীর অসুস্থ, আমি আজ আর অফিস যেতে পারছি না। কিন্তু রচু সোনা, এমন দিব্যি কিন্তু তুই আর কক্ষনো আমাকে দিবি নে। তুই জানিসনা, পুলিশ অফিসারেরা এভাবে যখন তখন নিজেদের মর্জি মত অফিস কামাই করতে পারে না। তাতে অনেকের অনেক রকম অসুবিধে হতে পারে”।
 

রচনা বলল, “আমি বুঝেছি দিদিভাই। আর কক্ষনো এমন করে বলব না। এবারকার মত আমায় ক্ষমা করে দাও প্লীজ”।
 

সীমন্তিনী এবার নরম স্বরে বলল, “তোর মত বুদ্ধিমতী মেয়ে যে তার ভুল বুঝতে পারবে, এটা কি আর আমি জানিনে ভাবছিস? আর মন খারাপ করে থাকিস নে বোন। শুনেছি দাদাভাই বেরিয়ে যাবার পর সকালের খাবার খেতে খেতেই তুই নীতাকে ফোন করেছিলি। আমাকে দিব্যি দেবার পর তো মনে হয় আর কিচেনে ঢুকিসই নি। যা এবার খুশী মনে গিয়ে দুপুরের রান্না চাপিয়ে দে। আর আমাকে নিয়ে একদম আজে বাজে কিছু ভাববি না কিন্তু। এখন কি আর আমি এখানে একা আছি? আমার আরো দুটো বোন আমার সাথে আছে না এখন। আমার আর চিন্তা কিসের? আমি তো এখন পরমানন্দে আছি। আচ্ছা, তুই কি এখন আর কারুর সাথে কথা বলবি”?

রচনা এবার অনেকটা স্বাভাবিক গলায় বলল, “না দিদিভাই, এখন রান্না শুরু করতে হবেই গো। তোমার দাদাভাই ফিরে আসবার আগেই তো রান্না শেষ করে ফেলতে হবে। তাই এখন আর কথা বলছি না তাদের সাথে। তুমি ভাল থেক। রাখছি”।
 

ফোনটা নবনীতার হাতে ফিরিয়ে দিতে দিতে সীমন্তিনী নিজের ভিজে ওঠা চোখের পাতা মুছতে লাগল। এমন সময় লক্ষ্মী ট্রে হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকে বলল, “ওমা দিদিমণি, তুমি কাঁদছ কেন গো? কি হল আবার”?

নবনীতা জবাবে বলল, “কিচ্ছু হয়নি লক্ষ্মীদি। বৌদির সাথে ফোনে কথা বলছিল তো তাই”।

লক্ষ্মী সকলের সামনে জলখাবার রাখতে রাখতে রাখতে বলল, “ও এই ব্যাপার? এ আর নতুন কি? এই দুই ননদ-বৌদির ভালবাসা দেখে মরে যাই আর কি। এনারা সুখেও কাঁদেন, দুঃখেও কাঁদেন। তা তোমাদের চা এখনই বানিয়ে আনছি। আগে এ খাবারটুকু তোমরা খেয়ে নাও। নইলে সব কিছুই ঠান্ডা হয়ে যাবে”।


(To be cont'd .....)
______________________________
Like Reply
(Update No. 145)

সকালের ব্রেকফাস্ট আর চা খাবার পর মহিমার সাথে গত রাতে যা যা কথা হয়েছে সীমন্তিনী তার সবটুকু নবনীতা আর অর্চনাকে খুলে বলল। সবটুকু শুনে অর্চনা আর নবনীতা দু’জনেই খুব ঘাবড়ে গেল।
 

অর্চনা শুকনো মুখে সীমন্তিনীকে বলল, “রচুর তো তবে ভারী বিপদ গো দিদিভাই। কি হবে বল তো”?

সীমন্তিনী তাকে একহাতে জড়িয়ে ধরে বলল, “তুমি ভেবো না অর্চু। আমি আছি তো। আমার ওপর তোমার ভরসা নেই? কিচ্ছুটি হতে দেব না রচুর। তুমি শুধু আমার কথাগুলো মেনে চলো। কাউকে কিচ্ছুটি জানাবে না। বাকি সব কিছু আমার ওপর ছেড়ে দাও। আমি বেঁচে থাকতে রচুর একটা চুলের ডগাও কেউ ছুঁতে পারবে না” বলে সে এবার নবনীতাকে বলল, “আচ্ছা নীতা, তুমি আমাকে একটা কথা বলো তো। দ্যাখো আমরা কেউ তো আর মহিমা বৌদিকে চিনি না। তুমি তার সাথে কিছুদিন কাজ করেছ। আর তোমার বান্ধবী বীথিকার কাছ থেকেও তুমি হয়ত তার ব্যাপারে কিছু কিছু কথা শুনে থাকতে পার। তোমার কি মনে হয় সে আমার কাছে কোনও মিথ্যে কথা বলেছে। কিংবা তার ব্যাপারে যেসব কথা আমি তোমাদের এখন বললুম, মানে সে আমাকে নিজের সম্মন্ধে যা কিছু বলেছে, সে সব কি তোমার কাছে অবিশ্বাস্য বলে মনে হচ্ছে”?

নবনীতা অনায়াসেই জবাব দিল, “না দিদি। আমার তেমন কিছু মনে তো একেবারেই হচ্ছে না। বরং এটা ভেবেই আমি অবাক হচ্ছি যে ম্যাডাম নিজে মুখে এ’সব কথা তোমাকে বলেছেন। তুমি যে একজন আইপিএস অফিসার, এ’কথা না জানলেও তার গোপন ব্যবসার ভেতরের এতসব কথা উনি স্বেচ্ছায় তোমাকে বলে দিলেন এটা ভেবেই কেমন যেন অবিশ্বাস্য অবিশ্বাস্য লাগছে আমার। কিন্তু বৌদি, আমি তার সম্মন্ধে যতটুকু জানি, তাতে আমি জোর দিয়ে বলতে পারি যে উনি হয়তো আরও কিছু কথা তোমার কাছে গোপন করেও যেতে পারেন। যেতে পারেনই বা বলছি কেন, নিশ্চয়ই গোপন করে গেছেন। তবে রচনা বৌদির ব্যাপারে যতটুকু তোমাকে বলা প্রয়োজন মনে করেছেন ঠিক ততটুকুই বলেছেন। এ ছাড়াও তার জীবনে গোপন অনেক কথাই হয়তো আছে। কিন্তু যতটুকু বলেছেন এতে কোনও মিথ্যে নেই। বীথির মুখে আমি এ’সবের অনেকটাই শুনেছি। অনৈতিক বা সমাজের কাছে নিন্দনীয় এবং অপরাধমূলক ওই ব্যবসা করলেও উনি কাউকে তার ইচ্ছের বিরূদ্ধে তার ব্যবসায় টেনে নামান না। আমি নিজেই তো তার সাক্ষী আছি। আমি যখন তার কাছে গিয়েছিলাম তিনি বারবার জানতে চেয়েছেন যে আমি বীথির বা অন্য কারুর প্ররোচনায় তার ব্যবসায় নামতে রাজি হয়েছি কি না। তিনি তো আমাকে এ’কথাও বলেছিলেন যে দু’তিন মাসের জন্য তিনি নিজে আমার থাকা খাওয়া পড়ার সমস্ত দায়িত্ব নেবেন। ওই সময়ের মধ্যে আমি যেন আবার ভদ্র সভ্য হয়ে বাঁচবার মত কিছু একটা কাজ খুঁজে নিই। আর বীথিকার মুখেই শুনেছি, যেসব মেয়ে মহিলা তার এজেন্সীতে কাজ করে তাদের সকলের প্রতিই তিনি খুব সহানুভূতিশীল। প্রত্যেকের সুবিধে অসুবিধের দিকে তার নজর থাকে। নানাভাবে তাদের সাহায্য করে থাকেন। কোন মেয়ে যদি ওই পথ ছেড়ে সৎ ভাবে নিজের জীবন কাটানোর কোনও সুযোগ পায়, তাহলে অন্যদের মত বাধা তো তিনি দেনই না, উল্টে তাকে সাহায্যই করেন। তাই ম্যাডামের কাছে যত মেয়ে মহিলা কাজ করে তারা সবাই ম্যাডামের খুব অনুগত। তারা কেউ ম্যাডামকে কোন রকম ঝুট ঝামেলায় ফেলতে চায় না। তার এজেন্সীতে যেসব ছেলে ছোকড়া কাজ করে তাদের ব্যাপারে আমি অত জোর দিয়ে কিছু না বলতে পারলেও, এটা আমি জানি যে যেসব মেয়েরা শুধুই শারিরীক ক্ষুধা আর কেবলই পয়সা কামাবার জন্যে এ’পথে আসতে চায়, ম্যাডাম তাদের কাউকে তার এজেন্সীতে সুযোগ দেন না। যেসব মেয়েরা অন্য কোন কিছু করতে না পেরে, অন্য কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে নিজের বা পরিবারের ভরন পোষনের জন্য এ পথে নামতে বাধ্য হয়, ম্যাডাম শুধু সে’সব মেয়েদেরই তার ওখানে সুযোগ দিয়ে থাকেন। আর তিনি শুধু নিজের উপার্জনটাকেই বড় করে দেখেন না। নিজের ক্ষতি স্বীকার করেও তার এজেন্সীর মেয়ে মহিলাদের সাহায্য করে থাকেন। তাই তার ব্যবসাটা যতই নিন্দনীয় হোক না কেন, ম্যাডাম কখনও কাউকে এক্সপ্লয়েট করে নিজের সিন্দুক ভরেন না। বরং বিপদে আপদে তিনি সকলের পাশেই দাঁড়ান। বীথিকার মুখে এমন অনেক ঘটণা আমি শুনেছি। আমাকেও কাজে নেবার সময় তিনি বলেছিলেন যে আমার ইচ্ছে হলে আমি যে কোন সময় তার কাজ ছেড়ে দিতে পারি। আর সে জন্যেই তুমি যখন আমাকে সঙ্গে নিয়ে আসবে বলেছিলে তখন আমি তাকে কথাটা বলে আসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি আর পরি কিছু একটা ভেবেই বোধহয় আমাকে সেটা করতে দাও নি। আমি যে তার কাজ ছেড়ে দিয়ে তাকে কিছু না বলে, কিছু না জানিয়েই তোমার সাথে চলে এসেছি, তাতে আমার মনে একটা গ্লানিভাব কিন্তু থেকেই গেছে। আমি যদি তাকে সবকিছু বলেই তোমার সাথে চলে আসতাম, তবুও উনি আমায় কিচ্ছু বলতেন না। হয়তো আমার ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য আমাকে শুভেচ্ছাই জানাতেন। তাই আমার মনে হয় না ম্যাডাম তোমাকে কোনও মিথ্যে কথা বলেছেন”।

সীমন্তিনী নবনীতার কথায় বেশ অবাকই হল। ছেলেমেয়েদের নিয়ে সেক্স র*্যাকেটের ব্যবসায় লিপ্ত থাকা এক মহিলা কি সত্যিই এতোটা সংবেদনশীল হতে পারে? এমনটা তো সে কোনও গল্প কাহিনীতেও পড়ে নি। এ কেমন ধরণের মহিলা? একদিকে সমাজ, পুলিশ, আইন আদালতকে ফাঁকি দিয়ে এতগুলো ছেলে মেয়েকে নিয়ে এমন অনৈতিক একটা ব্যবসা করে যাচ্ছে। অন্যদিকে অপরের দুঃখে পাশে থেকে তাদের সাহায্য করে যাচ্ছে!

এমন সময় অর্চনা বলল, “আচ্ছা দিদিভাই, মহিমা বৌদি কি রচুর সেই ছবিটা পাঠিয়েছে”?

সীমন্তিনী জবাব দিল, “আমি যখন স্লিপিং ট্যাবলেট খেয়ে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলুম তখন মোবাইলে একটা এলার্ট সাউন্ড হয়েছিল। বোধহয় পাঠিয়েছে, দাঁড়াও দেখছি” বলে নিজের পার্সোনাল মোবাইলটা হাতে নিয়ে মহিমার পাঠানো ফোল্ডারটা খুলে রচনার ছবিটা বের করেই বলল, “হ্যাঁ এই তো। এই দ্যাখো” বলে খুব মন দিয়ে ছবিটা দেখতে লাগল। নবনীতা আর অর্চনাও তার দু’পাশ থেকে রচনার ছবিটা দেখতে লাগল। ছবিটা যে কেউ মোবাইলেই তুলেছে সেটা সীমন্তিনী এক নজরেই বুঝতে পারল। হাল্কা গোলাপী কামিজ পড়া রচনার ছবিটা সত্যিই খুব সুন্দর লাগছিল দেখতে। ঘন সবুজ রঙের একটা ওড়না পড়ে আছে। রচনার পাশে ঘিয়ে রঙের শার্ট পড়া কেউ একজন আছে। তবে তার মুখ বা শরীরের কিছুই ছবির ফ্রেমে দেখা যাচ্ছে না। সীমন্তিনী খুব ভালভাবে ছবিতে রচনার পেছনের দিকের জিনিসগুলো দেখে বুঝতে পারল যে ছবিটা কোনও ট্রেণের কামরার ভেতরে তোলা। রচনার মাথার ওপর ট্রেনের কামরার ওপরের দিকের একটা বার্থের ছবি বেশ পরিস্কারই বোঝা যাচ্ছে। সে মনে মনে ভাবল, বিয়ের পর রতীশ আর রচনা হানিমুনে গিয়েছিল সাউথ ইন্ডিয়ায়। ট্রেনেই যাতায়াত করেছিল তখন। আর বাড়ি ছেড়ে কলকাতা চলে যাবার সময়েও তারা ট্রেনেই জার্নি করেছিল। এ ছাড়া রচনা তো অন্য কোনও সময় ট্রেন জার্নি করেনি। অন্ততঃ বিয়ের পর তো আর করেনি। কিন্তু ছবিতে রচনার কপালে আর সিঁথিতে সিঁদুরের ছোঁয়া স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে। তাহলে ওদের বিয়ের পর ট্রেণের কামরার ভেতরের এ ছবিটা কে কবে কখন তুলেছিল। আরও একটু ভাবতে তার মনে হল রচনার পাশে বসা লোকটার যে শার্টটা খানিকটা দেখা যাচ্ছে, এরকম একটা ঘিয়ে রঙের শার্ট সে হায়দ্রাবাদ ট্রেনিংএ থাকবার সময় রতীশকে পুজোর উপহার হিসেবে পাঠিয়েছিল। তাই মনে হচ্ছে রচনার পাশে ঘিয়ে শার্ট পড়ে রতীশই বসে ছিল তখন। তার মানে এটা তো পরিস্কার যে ছবিটা রতীশ তোলেনি। অন্য কেউ কামরার রচনাদের সীটের উল্টোদিকের সীটে বসে ছবিটা তুলেছে। তার হঠাতই মনে হল, রচনা আর রতীশ হানিমুনে গিয়েছিল ২০০৯ এর এপ্রিল মাসে। ওদের বিয়ের প্রায় মাসখানেক বাদে। আর সীমন্তিনী হায়দ্রাবাদ থেকে বাড়ির সকলের জন্য পূজোর উপহার পাঠিয়েছিল সে বছরের অক্টোবর মাসে। তাই রচনার পাশে বসা লোকটা যদি সত্যিই রতীশই হয়ে থাকে, তাহলে এটা ওদের হানিমুনের সময়কার ছবি হতে পারে না। তার ধারণা সত্যি হলে এটা ধরে নেওয়া যায় যে রচনা আর রতীশ যখন কলকাতা যাচ্ছিল তখনই ট্রেণে এ ছবিটা কেউ তুলেছিল। কিন্তু কে তুলে থাকতে পারে? হঠাতই রবিশঙ্করের কথা মনে পড়ল। কলকাতা যাবার পথে রবিশঙ্কর রচনা আর রতীশের সহযাত্রী ছিল। তাহলে রবিশঙ্করই কি এ ছবি তুলেছিল? তার পুলিশি মন বলছে এটা রবিশঙ্করই হবে। কিন্তু বিমল আগরওয়ালা তো রতীশকে বলেছিল যে সে রবিশঙ্কর নামে কাউকে চেনে না। তাহলে এ ছবি বিমলের হাতে কি করে যেতে পারে! সীমন্তিনী বুঝল তার ধারণা অনুযায়ী যদি রবিশঙ্করই এ ছবি তুলে থাকে তাহলে ধরে নিতেই হচ্ছে যে রবিশঙ্করের কাছ থেকেই বিমল এ ছবি পেয়েছে। আর তাহলে এটাও পরিস্কার যে বিমল আগরওয়ালা রতীশকে তখন মিথ্যে কথা বলেছিল। রবিশঙ্করকে সে নিশ্চয়ই চিনত। আর ওই চেনাজানার সূত্রেই বিমলের ওই কমপ্লেক্সের চাবি রবিশঙ্করের হাতে এসে থাকতে পারে। মহিমার ধারণা বিমল আগে রচনার ব্যাপারে যার সাথে কন্টাক্ট করেছিল, ছবিটা সে-ই দিয়েছে বিমলকে। তাহলে রবিশঙ্করই কি সে লোক? সে রতীশের দু’লক্ষ টাকা লুট করে নেবার পাশাপাশি রচনাকে বিমলের হাতে তুলে দিয়েও আরও কিছু পয়সা রোজগারের মতলবে ছিল? মহিমাকে বিমল তো এমন কথাও বলেছে যে সে আগে যে লোকটার সাথে রচনার ব্যাপারে কন্টাক্ট করেছিল সে লোকটা নাকি অন্য একটা কেসে ফেঁসে গিয়ে এখন জেলে আছে। রবিশঙ্করও তো এখন জেলেই আছে। তাহলে তো দুয়ে দুয়ে চার হয়ে যাচ্ছে। তবু একটা ব্যাপারে আরেকটু শিওর হতে পারলেই একেবারে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

সীমন্তিনী মোবাইলটা অর্চনার হাতে ধরিয়ে দিয়ে নিজে উঠে ল্যান্ডলাইন ফোন থেকে রচনাকে ফোন করল। রচনা ফোন ধরেই বলল, “হ্যাঁ বল দিদিভাই। আবার কী মনে করে ফোন করলে এখন”?

সীমন্তিনী হাল্কা ভাবে বলল, “অফিসে না গিয়ে ঘরে বসে আর সময় কাটতে চাইছে না রে। এতক্ষণ বকর বকর করে অর্চু আর নীতার মাথা খেয়েছি। এবার ভাবলাম, একটু তোর মাথাটা চিবিয়ে খাই। তা কি রান্না করছিস? রান্না হয়ে গেছে? না বাকি আছে”?
 

রচনাও হেসে জবাব দিল, “তুমি এ সময়ে ফোন করাতে আমারও যেন কেমন লাগছে গো দিদিভাই। মনে হচ্ছে তুমি নও, অন্য কারো সাথে কথা বলছি। আসলে এ সময়ে তো আমাদের কোনদিন কথা হয় না। তা যাই হোক, আমার রান্না প্রায় শেষের মুখে। ডাল, ভাজা, কচু শাক আর চিকেন বানিয়েছি আজ। শুধু ভাতটাই এখন বাকি আছে”।
 

সীমন্তিনী বলল, “অর্চু আর নীতার সাথে তোর কলকাতা যাবার সময় তুই যে কত কান্নাকাটি করেছিলি, কলকাতা অব্দি সারাটা রাস্তাই যে ট্রেনে বসে কেঁদেছিস, এসব গল্প করছিলাম রে। আচ্ছা রচু, তোর কি মনে আছে? তুই আর দাদাভাই সেদিন কোন রঙের কোন পোশাক পড়ে ট্রেনে উঠেছিলি”?

রচনা গলাটা একটু ভার করে জবাব দিল, “সে দিনটা কি আমি কোনদিন ভুলতে পারব দিদিভাই। সারাটা ক্ষণ বাড়ির লোকগুলোর কথা ভেবেছি আমি। বারবার চন্দুর কথা মনে হতেই আমার চোখ জলে ভরে যেত। তা সেদিন আমরা কী পোষাক পড়ে এসেছি সেটা দিয়ে এখন কি করবে তুমি”?

সীমন্তিনী বলল, “আরে এরমধ্যেই ক’দিন আগে সতুর সাথে ফোনে কথা বলছিলাম। সতু বলছিল তুই নাকি সেদিন গোলাপী রঙের কামিজের সাথে সবুজ শালোয়ার পড়েছিলি। আর দাদাভাই না কি ঘিয়ে রঙের শার্ট আর কালো প্যান্ট পড়েছিল। আমি নিজে তো সেখানে ছিলুম না। কিন্তু ওর কথা বিশ্বাস হয়নি আমার। আজ অর্চুদের সাথে কথা বলতে বলতে সে কথাটা মনে হতেই তোকে জিজ্ঞেস করছি। তা তোর কি মনে আছে সে’কথা”?

রচনা বলল, “মেজদাভাই একদম ঠিক বলেছে দিদিভাই। আমি সত্যিই হাল্কা গোলাপী রঙের কামিজ আর ডার্ক গ্রীন কালারের শালোয়ার পড়েছিলুম। আর তুমি আমাদের বিয়ের পর প্রথম পূজোয় হায়দ্রাবাদ থেকে যখন সকলের জন্যে পূজোর জামাকাপড় পাঠিয়েছিলে, তখন তোমার দাদাভাইয়ের জন্য যে ঘিয়ে রঙের শার্টটা পাঠিয়েছিলে, উনি সেদিন ওটাই পড়েছিলেন। আর সাথে পড়েছিলেন একটা কালো জীনসের প্যান্ট। কিন্তু মেজদাভাইয়ের এসব কথা মনে আছে শুনে বেশ অবাক হচ্ছি। বেশ উন্নতি হয়েছে তার, বলতে হবে কথাটা তাকে”।

সীমন্তিনী বলল, “হু আমার ভাইটার বেশ উন্নতি হয়েছে। নইলে তোদের বিয়ের আগে আমরা দু’জন যখন জলপাইগুড়িতে থাকতুম, তখন ও আগের দিন কি খেয়েছে সেটা আর পরের দিন মনে করতে পারত না। আর এখন দ্যাখ, প্রায় দু’মাস আগে তোরা সেদিন কে কি পড়েছিলিস, সেটা একেবারে ঠিক ঠিক বলে দিল। দু’শ টাকার বাজিটা হারলাম আমি। আচ্ছা সে যাক, দাদাভাই কি ঘরে ফিরেছে”?

রচনা বলল, “তার ঘরে ফিরতে ফিরতে তো বারোটা সাড়ে বারোটা হয়েই যায় দিদিভাই। তবে এখন বোধহয় তাদের ইনস্টিটিউট থেকে বেরিয়ে পড়েছেন। হয়তো রাস্তায় আছেন”।

সীমন্তিনী বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে রে রচু। রাখছি এখন। দুপুরে দাদাভাইয়ের সাথে কথা বলব’খন”।

ফোন কেটে দিয়েই সে সতীশের নাম্বার ডায়াল করল। সতীশ ফোনে সাড়া দিতেই সীমন্তিনী বলল, “ভাই, কেমন আছিস”?

সতীশ জবাব দিল, “ভাল আছি রে দিদি। একটা সুখবর আছে রে”।

সীমন্তিনী উৎসুক ভাবে জিজ্ঞেস করল, “কি সুখবর রে”?
 

সতীশ বলল, “কিছুদিন আগে ব্যাঙ্কের একটা রিটেন টেস্ট দিয়েছিলুম। কাল তার রেজাল্ট বেড়িয়েছে। আর আমি তাতে কোয়ালিফাই করেছি। এরপর ভাইভাতে অ্যাপিয়ার হতে হবে। সেটা হয়তো মাস দুয়েক বাদে শিলিগুড়িতে হবে”।

সীমন্তিনী বলল, “বাহ, সত্যি একটা ভালো খবর। তুই তো ব্যাঙ্কের চাকরীই চাস। তাহলে রিটেনে যখন কোয়ালিফাই করেছিস, এবার ভাইভার জন্যে ভালো করে প্রিপারেশন নিস। আর বাড়ির সবাই কে কেমন আছে রে”?

সতীশ বলল, “সবাই ভাল আছে রে দিদি। সবাই আগের মতই আছে, তবে দাদা আর বৌদিভাইকে এখনও সকলেই মিস করছে। কিন্তু চন্দুকে দেখলে তুই অবাক হয়ে যাবি। ও অনেক বদলে গেছে। আগে যেমন সব সময় ছুটোছুটি করত। পড়াশোনার চেয়ে খেলাধূলা বেশী করত, এখন ঠিক তার উল্টো। আগের চেয়ে এখন অনেক শান্ত হয়ে গেছে ও। খুব মন দিয়ে পড়াশোনা করছে। আগের মত খেলাধূলোও করতে চায় না। ও এখন ভাবে ওকে বৌদিভাইয়ের মত ব্রিলিয়ান্ট হতে হবে পড়াশোনায়। আর আশ্চর্যের ব্যাপার কি জানিস? এবারের হাফ ইয়ারলি পরীক্ষায় ও সেকেন্ড পজিশন পেয়েছে ক্লাসে। এর আগে তো টপ টেনের মধ্যেও থাকত না। কত চেঞ্জ হয়েছে বুঝতে পারছিস”?

সীমন্তিনী মনে মনে খুশী হয়ে বলল, “সত্যি খুব ভাল লাগল রে কথাটা শুনে। আসলে রচু বাড়ি থেকে চলে যেতেই বুঝি ও নিজেকে পাল্টে ফেলেছে। রচুই যে ওর চোখে পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা মেয়ে। তাই বোধহয় ও রচুকেই নিজের রোল মডেল করে নিয়েছে”।

সতীশ বলল, “হ্যারে দিদি, তুই একেবারে ঠিক বলেছিস। আমি দেখেছি, ওর পড়ার টেবিলে আর কলেজের ব্যাগে সব সময় বৌদিভাইয়ের ছবি রাখে। ছোটমা একদিন বলছিলেন, ও নাকি রোজ রাতে পড়তে বসবার আগে বৌদিভাইয়ের ছবির সামনে হাতজোড় করে চোখ বুজে কয়েক মিনিট কাটায়। তবে মেয়েটার মুখ থেকে হাসিটা যেন হারিয়ে গেছে রে দিদি। ও বোধহয় হাসতেই ভুলে গেছে এখন”।
 

সীমন্তিনী বলল, “সেটা নিয়ে ভাবিস নে ভাই। পূজোর সময় রচু বাড়ি এলেই ওর মুখে হাসি ফুটে উঠবে, দেখিস। আচ্ছা ভাই আমার একটা অনুরোধ তোকে রাখতে হবে”।

সতীশ জিজ্ঞেস করল, “কিসের অনুরোধ”?

সীমন্তিনী বলল, “আসলে ভাই আমি রচুকে আজ একটা মিথ্যে কথা বলেছি। বলেছি যে ক’দিন আগে তুই আমাকে ফোন করে রচু আর দাদাভাইয়ের ব্যাপারে এমন একটা কথা বলেছিস যা আমি বিশ্বেস করিনি। তুই আমাকে বলেছিলি যে ওরা কলকাতা যাবার দিন দাদাভাই ঘিয়ে রঙের শার্ট আর কালো রঙের জীনস পড়েছিল। আর রচু পড়েছিল হাল্কা গোলাপী রঙের কামিজ আর ডীপ গ্রীন কালারের শালোয়ার। আমি তোর কথা বিশ্বেস না করে তোর সাথে দু’শ টাকার বাজি ধরেছিলুম। আর তোর কথাই ঠিক ছিল বলে আমি বাজিটা হেরে গেছি। এ’কথাটুকুই শুধু বলতে হবে”।

সতীশ বলল, “বলতে হবে, সে না হয় বুঝলুম। কিন্তু কথাটা কাকে বলতে হবে সেটা তো বল”।

সীমন্তিনী বলল, “কেউ তোকে জিজ্ঞেস না করলে কাউকেই বলবার দরকার নেই। তবে আমার মনে হয় রচু তোর কাছে জানতে চাইবে যে এমন একটা বাজি তোর আমার মধ্যে হয়েছিল কি না। তখন রচুকে তুই বলিস যে কথাটা সত্যি। ওই কথাগুলো তুই আমাকে বলেছিলিস। আর আমি বাজি হেরে গেছি। তাই এখন আমার তোকে দু’শ টাকা দিতে হবে”।

সতীশ এবার আঁতকে উঠে বলল, “কি বলছিস তুই দিদি? বৌদিভাইকে আমি মিথ্যে বলব”?

সীমন্তিনী বলল, “প্লীজ লক্ষ্মী ভাই আমার কথাটা রাখিস। আর যে মিথ্যে কথায় কারো কোন ক্ষতি হয় না তেমন মিথ্যে বলাতে দোষের কিছু নেই। আমি ওকে মিথ্যে কথাটা বলেছি বলেই তোকে এ’কথা বলছি। আর তুই তো নিজে থেকে ওকে মিথ্যে বলছিস না। তুই তো জানিস, রচু যদি বুঝতে পারে যে আমি ওকে মিথ্যে কথা বলেছি, তাহলে ও কতটা দুঃখ পাবে। তুই যদি আমার অনুরোধ না মেনে ওকে সত্যি কথা বলে দিস তাহলে যে সেটাই হবে। তাই তো তোকে এ অনুরোধ করছি ভাই। আর তুই নিজেই ভেবে দ্যাখ না এতে তোর আমার, রচুর বা অন্য কারো তো কোন ক্ষতি হচ্ছে না। প্লীজ ভাই, আমার কথাটা রাখিস। তবে রচু যদি এ ব্যাপারে তোকে কিছু জিজ্ঞেস না করে তাহলে তো তোকে আর নিজে থেকে এমন কথা বলতে হবে না। ও জানতে চাইলেই শুধু তুই এটুকু মিথ্যে বলিস, আমার আর রচুর মুখের দিকে চেয়ে। প্লীজ ভাই”।

সতীশ আবার জিজ্ঞেস করল, “তা তুইই বা বৌদিভাইকে এমন একটা মিথ্যে কথা বলতে গেলি কেন রে দিদি”?

সীমন্তিনী অসহায় ভাব করে বলল, “জানিনে রে ভাই। এমনি কথায় কথায় বলে ফেলেছিলুম। কিন্তু ও যদি জানতে পারে যে আমি ওকে মিথ্যে বলেছি, তবে খুব দুঃখ পাবে রে। তাই তো তোকে এমন অনুরোধ করছি। প্লীজ ভাই, আমি তো একটা ভুল করে ফেলেছিই। কিন্তু তোর সাথে আমার এমন কোন ধরণের কথা হয়নি বলে রচুকে আর দুঃখ দিস না ভাই”।

সতীশ এবার হাল ছেড়ে দিয়ে বলল, “ঠিক আছে, তোর কথা এবারের মত মেনে নিচ্ছি আমি। কিন্তু প্লীজ দিদি, বৌদিভাইয়ের কাছে আর কখনও আমাকে মিথ্যে কথা বলতে অনুরোধ করিস না”।
 

সীমন্তিনী বলল, “আর কক্ষনো বলব না ভাই। আমি তোকে এ’কথা দিলুম। লক্ষ্মী ভাই আমার। কথাটা মনে রাখিস। আর ভালো থাকিস। হ্যারে, তোর মেজকাকু আর মেজোমা ভালো আছেন তো”?

সতীশ এক মূহুর্ত চুপ করে থেকে জবাব দিল, “হ্যাঁ ওনারা ও সূর্য্য ভাল আছে”।

সীমন্তিনী সাথে সাথে বলল, “ঠিক আছে রে সতু। রাখছি” বলেই ফোন কেটে দিল।।


*****************

নবনীতা আর অর্চনা এতক্ষণ অবাক হয়ে সীমন্তিনীর ফোনে কথা বলা শুনে যাচ্ছিল। ফোন নামিয়ে রেখে সীমন্তিনীকে নিজের চোখ মুছতে দেখে অর্চনা ছুটে তার কাছে এসে তার হাত ধরে বলল, “কাঁদছো কেন তুমি দিদিভাই। কার সাথে কথা বলছিলে তুমি? আবার অন্য কারো কিছু হয়েছে নাকি”?

সীমন্তিনী নিজের চোখের জল মুছে স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করতে করতে মুখে হাসি এনে বলল, “নারে বোন। কিচ্ছু হয়নি। অনেকদিন বাদে আমার এক ভাইয়ের সাথে কথা বললুম তো। তাই কেন যেন চোখে জল এসে পড়েছিল”।

নবনীতা তখন বলল, “কিন্তু দিদি তুমি বৌদির সাথে কথা বলবার সময় ও’সব কি বললে গো? বৌদিরা কলকাতা যাবার সময় কে কী পড়েছিল এ নিয়ে তো আমরা কোন কথাই বলিনি। আবার তুমি বৌদিকে বললে যে একজনের সাথে তুমি বাজি ধরে হেরে গেছ। পরে আবার তোমার কোন ভাইকে বললে যে সেও যেন বৌদির কাছে মিথ্যে কথা বলে। আমি তো এসবের মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না”।

সীমন্তিনী অর্চনাকে সাথে নিয়ে বিছানায় বসতে বসতে বলল, “নিজেদের কাজ হাসিল করতে পুলিশ অফিসারদের অনেক সময়ই এমন মিথ্যে কথা বলতে হয়। অনেক রকম অভিনয় করতে হয়। শুধু সত্যিটাকে খুঁজে বের করবার জন্যে। ও’সব নিয়ে তোমরা মাথা ঘামিও না। তবে তোমরা দু’জন যেহেতু আমার সঙ্গে আছো, তাই প্রয়োজনে আমার সাথে সাথে তোমাদেরকেও কিন্তু একটু অভিনয় করে যেতে হবে ভাই। তোমরা তো এতক্ষণে বুঝেই গেছ যে আমি রচুকে মিথ্যে কথা বলেছি একটু আগে। কিন্তু যে কথাগুলো রচুকে বলেছি সেগুলো যে সত্যি, এটা প্রয়োজন হলে তোমরাও ওকে বলবে। রচুকে বিপদমুক্ত করতে হলে আগে আমাদের জানতে হবে এমন একটা বিপদের সম্ভাবনা ওর ওপর এল কিভাবে? কোন দিক থেকে? আর এর পেছনে কে বা কারা আছে, এসব আমাদের জানতে হবে। তবেই না আমরা তার মোকাবিলা করতে পারব। রচুকে সরাসরি জিজ্ঞেস করলে ওর মনে সন্দেহের সৃষ্টি হবে। এমনিতেই ও খুব বুদ্ধিমতী মেয়ে। আমার প্রশ্নগুলো নিয়ে একটু ভাবলেই ও বুঝে যাবে দু’মাস আগে ওদের কলকাতা যাবার ব্যাপার নিয়ে আমি কেন হঠাৎ উঠে পড়ে লাগলুম। ওর মনে নিশ্চয়ই কোনও সন্দেহের উদয় হবে। তখন আমাকে বা তোমাদেরকে নানাভাবে প্রশ্ন করে ও ওর মনে জেগে ওঠা সন্দেহ দুর করতে চাইবে। তখন ওকে নিবৃত্ত করতে আমাদের হয়তো আরও অনেক মিথ্যে কথা বলতে হবে। তাই গোড়াতেই একটা মিথ্যে বলে ওর মনে যাতে কোন সন্দেহ দেখা না দেয় সে চেষ্টাই করলুম। অবশ্য তোমাদের মনে একটা প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, যে রচু সোনাকে আমি আমার প্রাণের চেয়েও বেশী ভালবাসি, তাকে আমি কেন মিথ্যে কথা বললুম এভাবে। আমার মনেও যে কষ্ট হয়নি তা নয়। কিন্তু রচুকে বিপদমুক্ত করতে মিছে কথা বলে ওর কাছ থেকে এ ইনফরমেশনটুকু নেওয়া খুব দরকার ছিল। নইলে আমি গোটা ব্যাপারটা ঠিক মেলাতে পারতুম না। কিন্তু এখন আমার কাছে সব ব্যাপার স্পষ্ট”।

অর্চনা জিজ্ঞেস করল, “কী বুঝতে পারলে দিদিভাই? বলবে না আমাদের”?
 

সীমন্তিনী হেসে বলল, “অন্ততঃ এ ব্যাপারে তো তোমাদের কাছে কিছু লুকোবো না অর্চু। কারন সেটা করলে তোমরা দু’জনেই নানারকম দুশ্চিন্তায় ভুগবে। তবে একটু ধৈর্য ধরো তোমরা ভাই। এক্ষুনি জানতে পারবে। তবে একটু আগে ফোনে ভাইকে আমি যে কথাটা বললুম, তোমাদের দু’জনকেও ঠিক একই কথা বলবো। দু’মাস আগে কলকাতা যাবার সময় দাদাভাই আর রচু কি পোশাক পড়ে গিয়েছিল সেটা জানতে আমি যে রচুকে মিথ্যে কথা বলেছি, সেটা কোনভাবেই রচুকে জানাবে না তোমরা। রচু যদি কখনো তোমাদের কাউকে এ ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করে তাহলে তোমরাও কিন্তু ভাইয়ের মত মিথ্যে কথাই বলবে। আর নিতান্তই যদি তা করতে না পারো তাহলে রচুকে বোলো যে তোমরা কেউ এ ব্যাপারে কিছু জানো না। তোমরা আমাকে ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করো” বলে নিজের হাত সামনে মেলে ধরল।

নবনীতা আর অর্চনা পরস্পরের দিকে দেখে নিজেদের হাত বাড়িয়ে সীমন্তিনীর হাতের ওপর রেখে বলল, “আমরা কথা দিলাম তোমাকে”।

______________________________
Like Reply
(Update No. 146)

এবার সীমন্তিনী নিজের পার্সোনাল মোবাইলটা হাতে নিয়ে বলল, “এখন আমি পরিতোষকে ফোন করছি। স্পীকার অন করে দেবো। তোমরা সব কিছু শুনতে পারবে। আর গোটা ঘটনাটা বুঝতে পারবে। কিন্তু মুখে একেবারে কুলুপ এঁটে শুনে যাবে। কেউ কোন শব্দ করবে না, প্লীজ” বলেই পরিতোষের নাম্বার ডায়াল করল।

পরিতোষের গলা শোনা গেল, “কি আশ্চর্য, এমন অসময়ে আমার অধরা রূপসী মুন ডার্লিং-এর ফোন? সব ঠিকঠাক আছে তো ডার্লিং”?

এমন সম্বোধন শুনে অর্চনা অবাক হয়ে নবনীতার মুখের দিকে চাইতেই নবনীতা তাকে ঈশারায় চুপ করে থাকতে বলল। সীমন্তিনী তখন বলছে, “আমি আজ অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি। বাড়িতেই আছি। একটা জরুরী ব্যাপারে তোমাকে এ’সময় ফোন করতে বাধ্য হলাম। কিন্তু তুমি কি ব্যস্ত আছো? আমার কথাটা সারতে কিন্তু অনেক সময় লাগবে”।

পরিতোষ তখন “এক সেকেন্ড ডার্লিং” বলে চুপ করে গেল। তারপর প্রায় আধ মিনিট বাদে আবার বলল, “আমার চেম্বারে কয়েকজন লোক ছিল। তাদের সরিয়ে দিলাম। এখন আমি একা আছি। এবার বল তো কি হয়েছে মন্তি? বনি আর তুমি ঠিক আছো তো। কোনও সমস্যা হয়নি তো”?

সীমন্তিনী বলল, “সমস্যা একটা হয়েছে পরি। তবে সেটা আমাকে বা নীতাকে নিয়ে নয়। কিন্তু আগে তুমি একটা কথা বলো তো। টার্গেট থ্রি সম্বন্ধে তোমার কাছ থেকে কোন আপডেট পাচ্ছি না কেন পরি? তুমি কি তোমার ভিজিল্যান্স সরিয়ে নিয়েছ সেখান থেকে”?

পরিতোষ অবাক গলায় বলল, “না তো। নজরদারি তো চলছেই। আমি রেগুলার ফিডব্যাকও পাচ্ছি। তবে তেমন কোন ইম্পরট্যান্ট আপডেট দেবার নেই বলেই তোমাকে কিছু বলিনি”।

সীমন্তিনী বলল, “এটা আমি সত্যিই তোমার কাছ থেকে আশা করিনি পরি। আমি তো ভেবেছিলুম যে তুমি কলকাতায় থাকতে আমার দাদাভাই আর রচু সোনাকে নিয়ে আমাকে কিছু ভাবতেই হবে না। তারা সর্বক্ষণ তোমার ভিজিল্যান্সে সেফ থাকবে”।

পরিতোষ আরও অবাক হয়ে বলল, “কী বলছ তুমি মন্তি! আমার লোকেরা তো ভোর চারটে থেকে রাত বারোটা অব্দি তোমার দাদাভাইয়ের ওপর নজর রাখছে। তারা তো পুরোপুরি সুস্থ ও নিরাপদ আছে। তবু তুমি এমন কথা বলছ”?

সীমন্তিনী বলল, “কারন না থাকলে এমন কথা তোমাকে নিশ্চয়ই বলতুম না আমি। আমার রচু সোনা যে বড় একটা বিপদের সম্মুখীন হয়ে রয়েছে। বিমল আগরওয়ালার টার্গেট হয়ে গেছে সে, সেটা তুমি জানতে পারনি এখনও”?
 

পরিতোষ এবার প্রায় চিৎকার করে উঠে বলল, “হোয়াট? কী বলছ তুমি মন্তি? রচনা বৌদি ওই বিল্ডার বিমল আগরওয়ালার টার্গেট? তুমি আমার সাথে ঠাট্টা করছো”?

সীমন্তিনী জবাব দিল, “এমন একটা সিরিয়াস কথা নিয়ে আমি তোমার সাথে ঠাট্টা করব বলে ভাবছ তুমি পরি? রচু আমার জান, আমার প্রাণ। একথা তুমি জানো না”?

পরিতোষ এবার দাঁতে দাঁতে চেপে চেপে বলল, “তুমি এমন কি শুনেছো তা আমাকে এক্ষুনি সব খুলে বল মন্তি প্লীজ। যদি তোমার কথা সত্যি হয়, তাহলে বিমল আগরওয়ালা খুব শিগগীরই এ পৃথিবী থেকে বিদেয় নেবে। প্লীজ আমাকে খুলে বলো”।

সীমন্তিনী শান্ত গলায় বলল, “না পরি, কোনও রকম এনকাউন্টার বা খুন খারাপি হোক, এটা আমি চাই না। অন্ততঃ এখনই সেটা চাইছি না আমি। তবে আমি যতটুকু ডিটেইলস জানতে পেরেছি, সে-সব তোমায় সংক্ষেপে জানাচ্ছি। তারপর অ্যাকশন প্ল্যান নিয়ে কথা বলা যাবে” বলে একটু থেমে আবার বলল, “শোনো পরি, বিমল আগরওয়ালার সাথে রবিশঙ্কর অনেক আগে থেকেই পরিচিত ছিল। হয়তো রবিশঙ্করকে ওই কমপ্লেক্সের চাবি বিমল আগরওয়ালা নিজেই দিয়েছিল। তবে রবিশঙ্করের উদ্দেশ্য শুধু দাদাভাইয়ের দু’লাখ টাকা লুটে নেওয়াই ছিল না পরি। ওর আরও একটা মারাত্মক দুরভিসন্ধি ছিল। সে গোপনে ওই বিমল আগরওয়ালার সাথে আরো একটা চুক্তি করেছিল। বেশ কিছু টাকার বিনিময়ে রচুকে সে বিমলের হাতে তুলে দেবে। রবিশঙ্কর অন্য কেসে ফেঁসে এখন জেলের ভাত খাচ্ছে। তাই বিমল অন্য আরেকজনের সাথে কন্টাক্ট করছে রচুর সর্বনাশ করবার উদ্দেশ্যে”।

পরিতোষ চমকে উঠে বলল, “আর ইউ শিওর মন্তি? তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে না তো”?

সীমন্তিনী শান্ত গলাতেই জবাব দিল, “আমি তো তোমারই শিষ্যা পরি। আমি হান্ড্রেড টেন পার্সেন্ট শিওর হয়েই তোমাকে এসব কথা বলছি। এ চুক্তিটা সম্ভবতঃ দাদাভাই আর রচু কলকাতা যাবার আগেই হয়েছিল। তবে যেদিন দাদাভাই আর রচু বাড়ি ছেড়ে কলকাতা রওনা হয়েছিল সেদিন রবিশঙ্করও তাদের সাথে ছিল। রবিশঙ্করই যে দাদাভাইকে ফ্ল্যাট আর ওই কমপ্লেক্স লিজে নেবার ব্যাপারে মধ্যস্থতা করেছিল তা তো তোমাকে আমি আগেই জানিয়েছিলুম। কলকাতা যাবার পথে কোন এক মূহুর্তে ট্রেণের মধ্যেই রবিশঙ্কর তার মোবাইলে রচুর এক বা একাধিক ছবি তুলে নিয়েছিল। সে ছবিগুলো সে বিমলকে দিয়েছিল। বিমল চরিত্রগত দিক দিয়ে একজন নারী মাংসলোভী। এমন হতে পারে যে বিমল সে ছবি দেখেই রচুকে পাবার জন্যে উতলা হয়ে উঠেছিল। আবার এমনও হতে পারে যে ওই ছবি দেখাবার আগেই রবি বিমলের সাথে চুক্তি করেছিল। রবি পুলিশের হাতে ধরা পড়ার ফলে বিমলের ওই অভিসন্ধি পূরণ হয়নি। আট দিন আগে বিমল অন্য আরেকজনের সাথে এ ব্যাপারে চুক্তি করেছে। কিন্তু এবার সে যার সাথে চুক্তিটা করেছে, ঘটণাচক্রে গতকালই কাকতালীয় ভাবে তার সাথে আমার যোগাযোগ হয়ে গেছে। আর পুরো ব্যাপারটা আমি সবে গতকাল রাতেই জানতে পেরেছি। আজ সকাল থেকে ব্যাপারটাকে বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে এনালাইসিস করাতে সব কিছু আমার কাছে পরিষ্কার হল। এই নতুন এজেন্টকে বিমল রচনার একটা ছবিটা দেখিয়েছে, যেটা রবিশঙ্কর ট্রেনের কামরায় তুলে তাকে দিয়েছিল আগে। দাদাভাইয়ের ফ্ল্যাটের ঠিকানা ও রচুর ছবিটা দিয়ে সে এজেন্টকে বিমল ছ’ মাস সময় দিয়েছে। আর সে এজেন্টও বিমলকে আশ্বাস দিয়ে কাজটা হাতে নিয়েছে। এটুকুতে আমার আর কোন সন্দেহের অবকাশ নেই”।

পরিতোষ এবার দাঁত কিড়মিড় করে বলল, “ওই হারামীর বাচ্চাটার দিন ফুরিয়ে এসেছে বলেই সে বৌদির পেছনে লেগেছে। তুমি কিচ্ছু ভেবো না মন্তি। আমি এখনই আমার স্পেশাল একটা টিম এ কাজে লাগাচ্ছি। কিন্তু বিমলের এই নতুন এজেন্টটা কে, সেটা তো বললে না”?
 

সীমন্তিনী একবার নবনীতার দিকে দেখে বলল, “অবশ্যই বলব পরি। তবে তার আগে আমি তোমাকে জানাতে চাই যে সে এজেন্ট নিজে এক ধরণের অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকলেও এমন ধরণের কন্টাক্ট নেবার কাজ সে আগে কখনও করেনি। আমি তো তোমারই শিষ্যা পরি। তোমার আর আমার আদর্শ তো একই। সেই এজেন্ট যদিও এক ধরণের অসামাজিক কাজে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছে, যদিও সে আমাদের দেশের আইন ভঙ্গ করছে, সে একেবারেই বোর্ন ক্রিমিনাল নয়। একটা সময় বিপাকে পড়েই সে এমন একটা অসামাজিক কাজ শুরু করতে বাধ্য হয়েছিল। আর কাজটা করতে করতে অনেকগুলো নির্দোষ নিপীড়িত অসহায় মানুষকে তার নিজের কাজের সাথে জড়িয়ে ফেলেছে। সে নিজেই এখন এ ব্যাপারে অনুতপ্ত। কিন্তু সে ওই অসামাজিক ব্যবসা ছেড়ে দিলে তার সাথে জড়িয়ে যাওয়া ওই নির্দোষ নিপীড়িতা মেয়েগুলোরই বেশী আর্থিক ক্ষতি হবে। তাই আমি অন্যভাবে ট্রিট করে তাকে ওই অন্ধকার জগত থেকে বের করে আনবো বলে ভাবছি। আশা করি তুমি আমার এ প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে”।

পরিতোষ এবার অনেকটা শান্ত স্বরে জবাব দিল, “আমি জানি মন্তি। আমার প্রিন্সিপল আর তোমার প্রিন্সিপল আলাদা কিছু নয়। তোমার কথার অর্থ আমি বুঝেছি। তবে তুমি যদি আমাকে অ্যাসুরেন্স দাও যে অমন একজন ক্রিমিনালকে তুমি অপরাধের জগত থেকে বের করে আনতে পারবে, তাহলে আমিও তোমাকে ফুল সাপোর্ট দেব। তুমি তার নাম ঠিকানা নিশ্চিন্তে আমাকে জানাতে পারো। আমি তোমাকে কথা দিলাম, তোমার এমন একটা শুভ প্রচেষ্টায় আমি তোমাকে কক্ষনো বাঁধা দেব না। আর যতদিন তোমার প্রচেষ্টা চলতে থাকবে ততদিন আমি নিজেও তার এগেন্সটে কোন স্টেপ নেব না। সে শুধু তোমার প্রোজেক্ট হয়েই থাকবে”।

সীমন্তিনী এবার একটা হাঁপ ছেড়ে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ পরি। আমার ওপর এমন ভরসা রাখছো বলে আমি সত্যিই থ্যাঙ্কফুল তোমার কাছে। তবে তার ঠিকানা তুমি আগে থেকেই জানো। তাই সেটা বলার আর প্রয়োজন হবে না। নামটাই শুধু বলছি তোমায়। তার নাম মিসেস মহিমা মালহোত্রা সেন”।

এবারে পরিতোষের গলা শুনে মনে হল না যে সে মহিমার নাম শুনে চমকে গেছে বা অবাক হয়েছে। সে খুব শান্ত স্বরে বলল, “সে তো তোমার দাদাভাই যে যোগা ইনস্টিটিউটে কাজ করেন সে ইনস্টিটিউটের মালিক। কিন্তু ওই যোগা ইনস্টিটিউটের ওপরেও তো আমি নজর রেখেছি। সেখানে অনৈতিক কোন কাজ হয় বলে তো খবর পাইনি এখনও। আর ইউ শিওর? বিমল এ কাজের জন্য মহিমাকেই কন্টাক্ট করেছে”?

সীমন্তিনী বলল, “হ্যাঁ পরিতোষ, আমি পুরোপুরি নিশ্চিত এ ব্যাপারে। আর তুমি হয়তো শুনে অবাক হবে যে মহিমা নিজে মুখে গতকাল রাতে এ’সব কথা বলেছে আমাকে। গত সাতদিন ধরে অনবরত ভেবেও সে রচুকে বাঁচাবার কোন রাস্তা খুঁজে না পেয়ে গতকাল দুপুর থেকে আমার সাথে যোগাযোগ করতে চাইছিল। অবশ্য সে এখনও জানে না যে আমি একজন পুলিশ অফিসার। সে আমাকে কেবলই দাদাভাইয়ের বোন আর রচুর হিতৈষী বলে ভেবে আমাকে পুরো ব্যাপারটা খুলে বলেছে। তার বেআইনি ব্যবসার কথাও সে নিজে মুখেই স্বীকার করেছে আমার কাছে। কোন বোর্ন ক্রিমিনাল তো এমনটা করতে পারে না। মহিমার সাথে বিমলের সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ঠ। একটা সময় বিমল নাকি তার খুব উপকার করেছিল। তাই সে সারাজীবন বিমলের অনুগত হয়ে থাকবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু মহিমা নিজে অসামাজিক ব্যবসা করলেও এ ধরণের কন্ট্রাক্টের কাজ সে কোনদিন করেনি। তাই প্রথমে বিমলের অফার নিতে স্বীকার করেনি সে। পরে কথায় কথায় যখন বিমল তাকে প্রচুর টাকা দেবার কথা বলছে তখন তার মনে হয়েছে যে সে যদি বিমলের কাজটা হাতে না নিয়ে তাকে ফিরিয়ে দেয় তাহলে বিমল হয়তো আরও বেশী টাকার লোভ দেখিয়ে অন্য কাউকে কাজটার দায়িত্ব দেবে। রচুকে মহিমাও খুব ভালবেসে ফেলেছে গত কয়েকটা দিনে। রচু বা দাদাভাইয়ের কোন ক্ষতি করবার কথা সে ভাবছে না। কিন্তু রচনার ওপর বিমলের কূনজর অন্ততঃ মাস ছয়েকের মত আটকে দিতে পারছে ভেবেই বিমলের কথায় রাজি হয়েছে। কিন্তু নিজে কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে আমার সাথে যোগাযোগ করেছে। তাই বুঝতে পারছ তো, এমন যার মানসিকতা, সে যত জঘণ্য কাজেই লিপ্ত থাকুক না কেন, একটু চেষ্টা করলেই তাকে মেইন স্ট্রীমে ফিরিয়ে আনা যাবে। আমি জানি এধরণের বহু প্রোজেক্ট তুমি সাকসেসফুলি হ্যান্ডেল করেছ। আমি এই প্রথম একটা সুযোগ পেলাম। আর তোমার শিষ্যা হয়ে এ কাজটা আমি করতে চাই। আর এ জন্যেই আমি চাইছি যে ইনভেস্টিগেশনের জন্য তোমাকে যদি তার কাছে যেতেও হয়, তুমি তাকে অন্য কোনভাবে হ্যারাসড কোর না প্লীজ। এই সিক্রেট প্রোজেক্টটা ডিল করতে প্লীজ বাঁধা দিও না আমাকে”।

পরিতোষ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকবার পর বলল, “তুমি যে আমার আদর্শকে পাথেয় করে একটা শুভ কাজে হাত দিতে চাইছো, এ’কথা শুনে আমার মনটা যে কতটা খুশীতে ভরে গেল, এ আমি তোমায় বলে বোঝাতে পারব না ডার্লিং। আমার তরফ থেকে বাঁধা তো উঠবেই না, বরং আমি তোমাকে বেস্ট অফ লাক জানাচ্ছি। আর আমি বুঝতে পাচ্ছি তোমার কাছ থেকে আজ যেমন রিপোর্ট আমি পেলাম, তাতে আর কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। তাই আমি আজ থেকেই ফুল ফোর্সে কাজ শুরু করে দিচ্ছি। তবে একটা কথা কিন্তু তুমি ভুল বলেছ ডার্লিং। এটাই তোমার নিজস্ব ফার্স্ট রিহাবিলিটেশন প্রোজেক্ট নয়। তোমার ফার্স্ট প্রোজেক্ট নিয়ে তুমি অলরেডি কাজ শুরু দিয়েছ, সেটা তো আমি জানিই। বনিই তো তোমার ফার্স্ট রিহেব প্রোজেক্ট। এটা তুমি বোধহয় ভুলেই গেছ। তাই মহিমা হবে তোমার সেকেন্ড রিহেব প্রোজেক্ট। বাই দা বাই, বনির ব্যাপারে ফারদার কোন ডেভেলপমেন্ট হয়েছে কি”?

সীমন্তিনী নবনীতার মুখের দিকে এক নজর দেখে জবাব দিল, “গতকালই তো তোমাকে লেটেস্ট ডেভেলপমেন্টের খবর দিয়েছি পরি। ও সামনের এক তারিখ থেকেই ওর নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছে। ওর ভেতর আমি একটা পজিটিভ এনার্জির আঁচ দেখতে পাচ্ছি। ও নিশ্চয়ই সফল হবে দেখো”।

পরিতোষ বলল, “তোমার ভেতরের পজিটিভ এনার্জিই ওর ভেতরে ইন্ডিউসড হচ্ছে ডার্লিং। এ আমি খুব ভালভাবেই বুঝতে পাচ্ছি। তোমার ছোঁয়ায় ওর জীবনের পুরনো সব কালিমা মুছে যাবে। নবনীতা সত্যিই এক নতুন নীতা হয়ে উঠবে এ ব্যাপারে আমার কোন সন্দেহ নেই। সে জন্য তোমার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তাই আদর আর কৃতজ্ঞতা বশতঃ তোমাকে একটা চুমু উপহার দিচ্ছি। আচ্ছা ও এখন ঠিক কোথায় আছে? তোমার সঙ্গেই? না পাশের ঘরে”?

সীমন্তিনী এবার একটু বিরক্ত হয়ে বলল, “আঃ, পরি সব সময় তোমার এ’সব ঠাট্টা ভালো লাগে বলো? আর এ মূহুর্তে নীতা আমার সাথেই আছে। আমাদের সব কথা শুনছেও। তোমার ফাজলামো নীতা বুঝতে পারলেও এ ঘরে এমন আরও একজন আছে যে তোমার এ’সব ফাজলামো শুনে ঘাবড়ে যাবে। তাই প্লীজ, মুখে লাগাম লাগাও”?

পরিতোষ এবার আবার অবাক হবার সুরে বলল, “সরি মন্তি। কিন্তু তোমার ঘরে এ মূহুর্তে নীতা ছাড়া আর কে থাকতে পারে বল? তোমার ওই লক্ষ্মীদি? না আর কেউ”?

সীমন্তিনী বলল, “না, লক্ষ্মীদি নয়। আমার আরেকটা বোন। যে আমার রচুসোনার নিজের মায়ের পেটের দিদি। বড়দিদি। ওর নাম অর্চনা”।

পরিতোষ বলল, “এগেন সরি মন্তি। আমি তো ব্যাপারটা বুঝতে পারিনি। এসমস্ত সিক্রেট আলোচনার সময়েও যে তোমার আশে পাশে অন্য কেউ থাকতে পারে, এ তো আমি ভাবতেই পারিনি। কিন্তু মন্তি, ব্যাপারটা তো বেশ রিস্কি হয়ে গেল। তোমার বৌদির দিদি এ’সব জেনে ফেলা মানে তোমার বৌদি আর তোমার দাদাভাইও জেনে যাবে। হয়তো তোমাদের বা তাদের বাড়ির লোকজনেরাও এসব ব্যাপার জেনে ফেলবে। আর তার ফলে আমার কাজটা কতটা কঠিন হয়ে যাবে, এটা তুমি ভাবোনি”?
 

সীমন্তিনী অর্চনার একটা হাত নিজের হাতে নিয়ে বলল, “সব ভেবে দেখেছি আমি পরি। তুমি সেটা নিয়ে ভেবো না। তোমার কাজে নতুন করে কোনও কঠিনতা আসবে না। নীতা আর অর্চু, দু’জনেই আমাকে ভালোবাসে। ওরা কেউ কোনভাবে আমাদের কাজে কোনরকম ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে না। ওরা দু’জনেই আমার কাছে শপথ করেছে, এ’সব ব্যাপার শুধু আমাদের এ চারজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। তাই রচু আর দাদাভাই এ’সবের কোন আঁচও পাবে না, আর ঘাবড়ে গিয়ে তোমার কাজকে কঠিন করে তোলার সুযোগও পাবে না। তুমি এ ব্যাপারে একেবারে নিশ্চিন্ত থাকতে পারো”।
 

পরিতোষ কিছুটা আশ্বস্ত হয়ে বলল, “বেশ, তুমি যখন সে ভরসা দিচ্ছ, তাহলে আর আমার বলবার কিছু থাকে না। তবু বলছি মন্তি। আমার নিজের কোন ভাই বোন নেই। কিন্তু ভাইবোনেদের মধ্যে যে কত মধুর কত মিষ্টি সম্পর্ক থাকতে পারে, তা কিছুটা হলেও আমি দেখেছি। তাই তিনি যখন এখন তোমার সাথেই আছেন, তোমার মাধ্যমেই তাকে একটা ছোট্ট কথা বলতে চাইছি। ম্যাডাম, মন্তির আর আমার সম্পর্কটা যে ঠিক কেমন সেটা হয়ত আপনি কিছুটা শুনে থাকবেন। আবার এমনও হতে পারে যে পুরোটা শোনেন নি। তবে যেটুকু শোনেননি, সেটুকুও হয়ত পরে জানতে পারবেন। আপনার ছোট বোন রচনাকে আমিও নিজের বৌদি বলেই ভাবি। ওনারা যেদিন কলকাতা এসেছেন তার দু’দিন পর থেকেই আমি তাদের অজ্ঞাতে তাদের ওপর নজর রেখে যাচ্ছি। আমি থাকতে মন্তির দাদাভাই আর বৌদির ওপর কোন বিপত্তি আসতে পারবে না বলেই আমি মনে করি। তবে মন্তির দাদাভাইয়ের টাকাটা লুট হবার আগে আমি তাদের ব্যাপারে কিছু জানতুম না। সে ঘটণাটা ঘটে যাবার পরেই মন্তি আমাকে তাদের কথা বলেছিল। তাই তার পর থেকেই আমি ওদেরকে চোখে চোখে রাখবার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু রচনা বৌদি বা মন্তির দাদাভাই যদি জানতে পারে যে তাদেরকে কেউ ফলো করছে, বা কেউ তাদের ওপর নজর রাখছে, তাহলে তারা খুব স্বভাবতই একটু ভীত হয়ে পড়বে। এতদিন আমরা গোপনে যে কাজটা করে এসেছি, সেটা এখন আপনার কাছে আর গোপন নেই। ছোটবোনের প্রতি স্নেহ বশতঃ বা ভাবুক হয়ে আপনি যদি কখনও মুখ ফস্কেও এসব কথা বলে ফেলেন, তাহলে কিন্তু আমাকে কাজটা করতে খুব কষ্ট পেতে হবে। তাই আমি আশা করব, এ ব্যাপারে আপনি প্লীজ খুব সতর্ক থাকবেন। আপনার ছোটবোন আর ভগ্নীপতির সুরক্ষার জন্যই আপনাকে এ অনুরোধটুকু করছি আমি। প্লীজ আমার অনুরোধটা রাখবেন”।

অর্চনা সীমন্তিনীর হাত আঁকড়ে ধরে করুন চোখে তার মুখের দিকে চেয়ে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাতেই সীমন্তিনী ফোনে বলল, “তোমার অনুরোধ সে রাখবে বলে কথা দিলো পরি। তুমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারো”।

পরিতোষ তারপর বলল, “বেশ, তাহলে এবার তুমি কি আর কিছু বলতে চাও মন্তি”?

সীমন্তিনী বলল, “আরো একটা ছোট্ট অনুরোধ আছে পরি। তুমি যদি মহিমাকে ইন্টারোগেশন কর, তাহলে দুটো কথা মাথায় রাখবে। আমার অফিশিয়াল আইডেন্টিটি মহিমার কাছে খোলসা কোর না। আর আমিই যে তোমাকে এসব ফিডব্যাক দিচ্ছি তা যেন মহিমা কোনভাবে জানতে না পারে। পারতপক্ষে তোমার সাথে যে আমার পরিচয় আছে, এটাও যেন সে জানতে না পারে। আমাকে যেন সে শুধুমাত্র রতীশ ভট্টাচার্য্যির ছোট বোন হিসেবেই জানে। এমন অনুরোধ কেন করছি, আশা করি তুমি তা বুঝতে পেরেছ”।

পরিতোষ বলল, “নিশ্চয়ই বুঝতে পারছি। আর তোমার এ অনুরোধও আমি রাখব। আর কিছু”?
 

সীমন্তিনী বলল, “আপাততঃ আর কিছু বলার নেই। তবে বিমল আগরওয়ালার ব্যাপারে যদি তোমার আর কিছু জানবার দরকার হয় তা আমাকে জানিও। আমি সে সব রিপোর্ট তোমায় দেবার চেষ্টা করবো। ওকে”?

পরিতোষ বলল, “ওকে মন্তি, হ্যাভ এ গুড ডে” বলে ফোন কেটে দিল।


*****************

সীমন্তিনীর সাথে কথা বলা শেষ হতে পরিতোষ একমনে গভীরভাবে অনেকক্ষণ ধরে চিন্তা করল। তারপর নিজের পকেট থেকে আরেকটা মোবাইল বের করে কাউকে ফোন করল। ও’পাশ থেকে সাড়া পেতেই সে বলল, “আব্দুল, আজ সন্ধ্যের পর তুই কি ব্যস্ত আছিস”?

ও’পাশ থেকে আব্দুল জবাব দিল, “নমস্কার স্যার। আজ সন্ধ্যেয় কাজ তো একটু আছেই। তবে আপনার ডাকের কাছে সে সব কিছুই না। আপনি বলুন, কোথায় ক’টার সময় আমাকে যেতে হবে”।

পরিতোষ বলল, “আজ রাত ঠিক আটটায় আমার দু’নম্বর আড্ডায় চলে আসবি। একটা নতুন কাজ করতে হবে। আর শোন, এ কাজে তোর টিম ছাড়াও একটা হাসপাতাল এবং বিশ্বস্ত একজন ডাক্তারের প্রয়োজন পড়বে। সার্জেন হলে ভাল হয়। ভরসা করবার মত এমন কোনও ডাক্তার তোর খোঁজে আছে নাকি রে”?
 

আব্দুল দু’সেকেন্ড চুপ থেকেই বলল, “কেন স্যার, বাইরে খুঁজতে হবে কেন? আমাদের দিব্যেন্দু ডাক্তারকে দিয়ে কাজ চলবে না? সেও তো সার্জেনই”।
 

পরিতোষের চোখ মুখ যেন হঠাতই চকচক করে উঠল। সে বলল, “ওঃ, ঠিক বলেছিস তুই আব্দুল। ওনার কথা তো আমি প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম রে। আচ্ছা উনি কোথায় আছেন এখন বল তো? তখন তো তিনি নাগের বাজারে থাকতেন”।

আব্দুল বলল, “স্যার, নাগের বাজারে তো তার বাড়ি। সে তো তখন দমদমের একটা নার্সিং হোমে কাজ করত। তিন চারদিন আগে ডাক্তার তার গাড়ি সার্ভিসিং করাতে আমার গ্যারাজে এসেছিল। তখন বলল যে সে এখন বাইপাসের ধারে একটা বড় প্রাইভেট নার্সিং হোমে আছে। আপনার কথাও জিজ্ঞেস করছিল সেদিন”।

পরিতোষ এবার জিজ্ঞেস করল, “আমি তো বোধহয় ওনার নাম্বারটাও হারিয়ে ফেলেছি রে। আচ্ছা তোর কাছে কি তার নাম্বার আছে”?

আব্দুল জবাব দিল, “হ্যাঁ স্যার আছে। আপনি বললে আমি এখনই তাকে ফোন করতে পারি”।

পরিতোষ বলল, “আচ্ছা বেশ, তবে শোন। তুই তার সাথে কন্টাক্ট কর। আর বল যে আমি আজ রাত আটটায় তার সাথে দেখা করতে চাই। যদি তিনি রাজী হন, তাহলে তুই আমার আড্ডায় আসবার আগে তার ওখানে যাবি। তাকে সঙ্গে নিয়ে আমার সাথে দেখা করতে আসবি। পারবি তো”?
 

আব্দুল বলল, “পারব না কেন স্যার। নিশ্চয়ই পারব। আপনি একদম নিশ্চিন্ত থাকুন এ ব্যাপারে। আপনার জন্য এ আব্দুলের জান হাজির আছে স্যার”।
 

পরিতোষ বলল, “তুই তাহলে তার সাথে কথা বলে নে। আর তিনি আসতে পারবেন কিনা সেটা আমাকে সন্ধ্যের আগেই ফোন করে জানাবি। ঠিক আছে”?

আব্দুল বলল, “ঠিক আছে স্যার। আমি সন্ধ্যের আগেই আপনাকে তা জানিয়ে দেব। আর কিছু”?

পরিতোষ বলল, “না এখন আর কিছু নয়। বাদবাকি সব রাতে আলোচনা করব। আচ্ছা আপ্রীত আর প্রীতিদি কেমন আছে রে”?

আব্দুল বেশ খুশী গলায় বলল, “ওরা সকলেই ভাল আছে স্যার। ছেলেটা দিনে দিনে খুব ছটফটে হচ্ছে। প্রীতিও খুব ভাল আছে। পরশু রাতেই তো বলছিল, যে এক মাসের মধ্যে সে তার ভাইকে দেখতে পায়নি”।

পরিতোষ বলল, “তাকে বলিস, আমি এ সপ্তাহেই একবার তার সাথে দেখা করব। কেমন”?

আব্দুল খুশীতে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলল, “সত্যি বলছেন স্যার। ঠিক আছে, আমি এখনই প্রীতিকে এ সুখবরটা শোনাচ্ছি। ও খুব খুশী হবে এ’কথা শুনে”।
 

পরিতোষ বলল, “ঠিক আছে রে আব্দুল। এখন ছাড়ছি তাহলে। সন্ধ্যের আগেই কিন্তু আমাকে ফোন করে কনফার্ম করবি”।

আব্দুল ‘হ্যাঁ’ করতেই পরিতোষ ফোন কেটে দিল। তারপর আবার চোখ বুজে একমনে কিছু একটা ভাবতে শুরু করল।

______________________________
Like Reply
(Update No. 147)

তারপর আবার কাউকে ফোন করে বলল, “শেখর, কোথায় আছিস তুই”?
 

ওপাশ থেকে শেখর বলল, “স্যার, আমি তো একটা কাজে চন্দননগর এসেছি। কিন্তু কি ব্যাপার স্যার”?

পরিতোষ জিজ্ঞেস করল, “কখন ফিরবি? রাত আটটায় আমার দু’নাম্বার আড্ডায় আমি তোর সাথে কথা বলতে চাই। আর শুধু তুই একা নোস। তোর বন্ধু বিপ্লবকেও সঙ্গে করে আনতে হবে। পারবি তো”?

শেখর একটু দোনামনা করে বলল, “রাত আটটায়? একটু জুলুম হয়ে যাবে। তবে স্যার ভাববেন না। আমি বিপ্লবকে নিয়ে ঠিক পৌঁছে যাব ওখানে। কিন্তু ব্যাপার কি স্যার? রবি আর অনুপমার ঝামেলা কি এখনও মিটতে বাকি আছে নাকি”?
 

পরিতোষ বলল, “না এটা একটা নতুন প্রোজেক্ট। তবে সে সব নিয়ে এখন কোন কথা নয়। সময় মত পৌঁছে যাবি কিন্তু”।

শেখর জবাব দিল, “অবশ্যই পৌঁছবো স্যার। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন”।
 

ফোন নামিয়ে রেখে আরও কিছুক্ষণ মনে মনে ভেবে টেবিলের ওপর থেকে তিনখানা মোবাইল নিজের পকেটে পুরতে পুরতে টেবিলে রাখা কলিং বেলে চাপ দিল। কয়েক সেকেণ্ড বাদেই একজন সেপাই ভেতরে ঢুকতেই সে তাকে বলল, “একটু মিঃ তরফদারকে ডেকে দাও তো তাড়াতাড়ি”।

সেপাইটা চলে যাবার কয়েক মিনিট বাদেই আরেকজন পুলিশ অফিসার ঘরে ঢুকতেই পরিতোষ নিজের ড্রয়ার লক করতে করতে বলল, “সরি মিঃ তরফদার। একটা আর্জেন্ট কাজে আমাকে এখনই বেরিয়ে যেতে হচ্ছে। আমরা যে আলোচনাটা অসম্পূর্ণ রেখেছি, সেটা আজ আর হচ্ছে না। কাল লাঞ্চের পর সেটা কন্টিনিউ করব। আপনি সবাইকে ওভাবেই জানিয়ে দেবেন। আর আমি বোধহয় আজ আর অফিসে ফিরে আসতে পারব না। আপনি এদিকটা সামলে নেবেন প্লীজ”।

রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ সেরে পরিতোষ সোজা নিজের বাড়ি এসে ঢুকল। রাইটিং প্যাড আর কলম নিয়ে বসল। কলমটা খুলেই আবার নামিয়ে রেখে তার পার্সোনাল মোবাইল থেকে আবার কাউকে ফোন করল। ও’পাশ থেকে সাড়া পেতেই সে বলল, “শোনো, উল্টোডাঙ্গায় আগরওয়ালা রিয়েল্টর্স নামে এক বিল্ডারের একটা অফিস আছে। তার আসল মালিক হচ্ছে মিস্টার বিমল আগরওয়ালা। বিকেল চারটের ভেতর ওই বিমল আগরওয়ালা এবং তার পরিবারের সমস্ত সদস্যদের নাম, বায়োডাটা আর ছবি আমার চাই। ব্যাপারটা এক্সট্রিমলি আর্জেন্ট। তাই কোনভাবে ফেল করলে চলবে না”।

ও’পাশের কথায় আশ্বস্ত হয়ে সে এবার কলম তুলে নিয়ে রাইটিং প্যাডে কিছু লিখতে শুরু করল। গভীর ভাবে চিন্তা করতে করতে এক এক করে তিনটে পাতা লেখা শেষ করে সে কলম নামিয়ে রেখে কাগজের লেখাগুলো আবার পড়ে দেখতে লাগলো। দু’ এক জায়গায় ছোট খাটো কারেকশন করে একসময় তার মুখে চোখে একটা আত্মবিশ্বাসের ছায়া ফুটে উঠল। কব্জি ঘড়ির দিকে একবার দেখে নিয়ে সে কিচেনে ঢুকে এক কাপ চা বানালো। চা খেতে খেতে কাগজের পাতাগুলো ভাঁজ করে শার্টের বুক পকেটে রেখে নিজের মোবাইলগুলো প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে নিল। চা খেয়েই সে আবার ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। ঘর লক করে নিজের গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট করবার আগে আবার পকেট থেকে মোবাইল বের করে একজনকে ফোন করে বলল, “কিরে ওদিকের সব ঠিকঠাক আছে তো”?

কয়েক সেকেণ্ড অপর পাশের কথা শুনে তাকে বেশ আশ্বস্ত মনে হলেও সে গম্ভীর গলায় বলল, “শোন, তোদের টিমে আরও তিনজনকে ঢুকিয়ে নে। অবজেক্ট এ-র ওপর একইভাবে ভিজিল্যান্স রাখবি। আর নতুন তিনজনকে স্পেশালি অবজেক্ট বি-র পেছনে লাগাবি। অবজেক্ট বি-র ওপর কোন ধরণের অ্যাটাকের আশঙ্কা আছে। সেটা কিডন্যাপিং হতে পারে বা ফিসিকাল অ্যাসল্টও হতে পারে। তাই তার ওপর টুয়েন্টি ফোর আওয়ার্স নজর রাখতে হবে। মনে রাখিস আমি টুয়েন্টি ফোর আওয়ার্সের কথা বলছি। সেভাবে ব্যবস্থা নিস। আর মনে রাখিস কোন রকম ফেইলিওর যাতে না হয়। অবজেক্ট এ আর বি দু’জনকেই সবরকম ভাবে সিকিওরড রাখতে না পারলে কিন্তু তোদের সবকটার এনকাউন্টার হবে। তোর টিমের একজনও কিন্তু রেহাই পাবে না। এটা মনে রাখিস”।

তারপর গাড়ি স্টার্ট করে সেন্ট্রাল কলকাতার দিকে চালিয়ে দিল।
 

সন্ধ্যের আগেই বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ আব্দুল ফোন করে জানালো যে ডঃ দিব্যেন্দুকে সঙ্গে নিয়ে সে রাত আটটায় পরিতোষের সাথে দেখা করছে।

বিট্টুদের বাড়ি পৌঁছতে পৌঁছতে পরিতোষের একটু দেরীই হল। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ সারতেই এমন দেরী হয়েছে। ঘুরপথে পায়ে হেঁটে সে বিট্টুদের বাড়ির পেছন দিকের রাস্তা দিয়ে গন্তব্যের দিকে এগোতেই তার পকেটের মোবাইলটা কেঁপে উঠল। ভাইব্রেশন মোডে ছিল। ফোন বের করে দেখে আব্দুলের ফোন। কল রিসিভ করেই বলল, “তোরা এসে গেছিস নাকি”?

ওপাশ থেকে আব্দুল বলল, “স্যার আমি আর ডাক্তারবাবু তো আপনার ঠিকানার সামনে দাঁড়িয়ে আছি মিনিট দশেক হল। আপনার ডাক পাচ্ছি না তো”।

পরিতোষ বলল, “কিছু মনে করিস না ভাই। একটা কাজে একটু আটকে পড়েছিলাম রে। এখুনি আসছি। আর একটা কথা বল তো। তোদের আশেপাশে আটাশ ত্রিশ বছর বয়সী দুটো ছেলেকে দেখতে পাচ্ছিস”?

কয়েক সেকেন্ড চুপ থাকবার পর আব্দুল চাপা গলায় বলল, “স্যার অমন বয়সের দুটো ছেলে আমাদের থেকে প্রায় কুড়ি মিটার দুরে দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। কোন ঝামেলার ব্যাপার না কি স্যার”?

পরিতোষ বলল, “না না। ওরা আমারই লোক। ওদেরকেও আমি ডেকে পাঠিয়েছি। ওদের একজনের নাম শেখর, আরেক জনের নাম বিপ্লব। তুই ওদের দু’জনকে তোর কাছে ডেকে নে। আমি ফোন করে দিচ্ছি এখনই। দরজা খুলে দেবে। তোরা চারজন ভেতরে ঢুকে পড়। আমিও মিনিট সাতেকের ভেতরেই আসছি” বলে ফোন কেটে দিয়েই সে বিট্টুকে ফোন করে বলল, “সামনের দরজাটা খুলে দে ভাই। ওখানে চারজন দাঁড়িয়ে আছে। ওদের পেছনের ঘরে এনে বসিয়ে তুই পেছনের গেটটা খুলে দিস। আমি পেছনের রাস্তা দিয়েই আসছি”।
 

ঠিক তার সাত মিনিটের মাথায় পরিতোষ বিট্টুদের পেছনের ঘরে গিয়ে ঢুকতেই শেখর, বিপ্লব, আব্দুল আর ডাঃ দিব্যেন্দু বড়ুয়াকে দেখতে পেল। আব্দুল হাতজোড় করে ‘নমস্কার স্যার’ বললেও চল্লিশ একচল্লিশ বছর বয়সী ডক্টর দিব্যেন্দু এগিয়ে এসে তার পায়ের দিকে ঝুঁকতেই পরিতোষ তাকে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, “না না ডক্টর বড়ুয়া, এ কি করছেন আপনি। প্রণাম টনাম একেবারেই নয়। আর আপনি তো আমার চেয়ে বয়সে বড়”।
 

ডক্টর দিব্যেন্দুও পরিতোষকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “কতদিন বাদে আপনার সাথে দেখা হল স্যার। প্রায় রোজই আপনার কথা মনে পড়ে। মনে হয় একবার ফোন করে আপনার গলার স্বরটা একটু শুনি। কিন্তু আপনার নির্দেশ অমান্য করবার সাহস কিছুতেই জুটিয়ে উঠতে পারিনি। আজ আপনার ডাক পেয়ে আর অপেক্ষা করতে পারছিলাম না”।

পরিতোষও দিব্যেন্দুকে কয়েক মূহুর্ত বুকে চেপে ধরে হাতের বাঁধন আলগা করে জিজ্ঞেস করল, “সত্যি, অনেকদিন বাদে দেখা হল আমাদের। তা কেমন আছেন ডক্টর? বৌদি কেমন আছেন? আর আপনার মেয়ে, কি যেন নামটা? ও হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে, আকাঙ্ক্ষা। ও কেমন আছে, কোন ক্লাসে পড়ছে এখন”?
 

দিব্যেন্দু পরিতোষকে ছেড়ে এক পা পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললেন, “আপনার আশীর্বাদে আমরা সবাই ভাল আছি স্যার। মেয়ে এখন ক্লাস এইটে পড়ছে। দীপা আর আকাঙ্ক্ষা দু’জনেই মাঝে মাঝেই আপনার কথা বলে। ওরা প্রায়ই আমাকে বলে আপনাকে নেমন্তন্ন করে আমাদের বাড়ি ডাকতে। কিন্তু ওরা তো আর জানেনা যে, আপনি নিজেই সে পথ বন্ধ করে রেখেছেন। সে’কথা তো আর ওদের বলতে পারিনে আমি। তাই এক বছর আগে পর্যন্ত আমি ওদেরকে বলতাম যে ঠিক আছে আজই ফোন করব। আর রাতে বাড়ি ফিরে বলতাম প্রচণ্ড কাজের চাপে আপনাকে ফোন করবার কথা মনেই ছিল না। দীপা তো আমার কাছ থেকে বারবার আপনার ফোন নাম্বার নিতে চাইত। তাই নিরুপায় হয়ে তখন আমার মোবাইল থেকে আপনার কন্টাক্টটাই ডিলিট করে ফেলতে হয়েছে আমাকে। তারপর থেকে মুখে বলি, নাম্বারটা আমি ভুলে গেছি। যদিও আসলে সেটা মনে আছে”।

পরিতোষ ডাঃ দিব্যেন্দুর হাত ধরে তাকে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিতে দিতে বলল, “খুব ভাল করেছেন ডক্টর। বসুন বসুন। আপনাকে তো আগেই বুঝিয়ে বলেছি, আমার সাথে পার্সোনালি দেখা করা বা ফোনে কথা বলা, কোনটাই আপনাদের পক্ষে সেফ নয়। আপনাদের স্বার্থেই আপনাকে অমন নির্দেশ দিতে হয়েছে। কিন্তু আজ বাধ্য হয়েই আপনাকে ডাকতে হয়েছে। এমন হঠাৎ আর জরুরী তলবে আপনার অসুবিধে হয়নি তো ডক্টর”?

দিব্যেন্দু সাথে সাথে বললেন, “না না স্যার। এ আপনি কী বলছেন বলুন তো? আমার পরিবারের চরম বিপদের দিনে আপনি যেভাবে আমাকে আর আমার পরিবারটাকে বাঁচিয়েছিলেন, তা তো আমরা সারা জীবনেও ভুলতে পারব না। আর আজ প্রায় দু’বছর বাদে আপনাকে মুখোমুখি দেখবার সুযোগ পেলাম। এ যে আমার কাছে কতটা খুশীর ব্যাপার তা বলে বোঝাবার মত ভাষা আমার নেই। কিন্তু আজ বাড়ি ফিরে আমি যে দীপা আর আকাঙ্ক্ষাকে কী বলব, সেটাই তো বুঝতে পাচ্ছিনা। ওরা যদি জানতে পারে যে আপনার সাথে আমার দেখা হয়েছিল, তবু আমি আপনাকে নিয়ে বাড়ি যাই নি, এর কী জবাব যে দেব আমি”?

পরিতোষ বলল, “কেন জানিনা, আকাঙ্ক্ষা মামনিকে দেখতে আমার মনটাও খুব চাইছে আজ। আপনি ওদেরকে বলবেন, আমি কিছুদিনের মধ্যেই ওদের সাথে দেখা করব। আচ্ছা, আপনি তো আব্দুলকে চেনেনই। ওদের দু’জনকে চেনেন না। তাই আপনার সাথে ওদের পরিচয় করিয়ে দিই। এ হচ্ছে শেখর, আর ও হচ্ছে বিপ্লব। এরা আমার ছোট ভাইয়ের মত। প্রয়োজনে আমাকে অনেক কাজে এরা সাহায্য করে। আর শেখর বিপ্লব, ইনি হলেন ডক্টর দিব্যেন্দু বরুয়া”।

দিব্যেন্দু শেখর আর বিপ্লবের সাথে হ্যান্ডসেক করতেই বিট্টু ট্রেতে করে পাঁচ কাপ চা আর কিছু বিস্কুট নিয়ে ঘরে ঢুকল। বিট্টু বেরিয়ে যেতে সকলে চা খাওয়া শুরু করল। খেতে খেতেই পরিতোষ তার শার্টের বুক পকেট থেকে ভাঁজ করা কাগজ গুলো বের করে দেখতে দেখতে বলল, “এবার আমাকে এমন একজনকে শায়েস্তা করতে হবে যার এ শহরে খুব প্রভাব প্রতিপত্তি আছে। কোটি কোটি টাকার মালিক সে। টাকার জোরেই সে অনেক ধরণের কূ-কর্ম করে যাচ্ছে দিনের পর দিন। আর টাকার জোরেই সে সব রকম কূকর্ম করা সত্বেও বহাল তবিয়তে রাজা বাদশার মত দিন কাটাচ্ছে। সবদিকে তার আটঘাট বাঁধা আছে। তাকে আইনের জালে জড়িয়ে ফেলাটা প্রায় অসম্ভব। আর তোমরা সবাই জানো, এ ধরণের অপরাধীকে আমি কিভাবে শায়েস্তা করি। আজ সে এমন একজনকে তার ফাঁদে ফেলবার চেষ্টা করছে, যে কিনা আমার খুব কাছের একজন মানুষ। কিন্তু আমি তো সেটা হতে দিতে পারিনা, তাই একটা অ্যাকশন প্ল্যান আমি বানিয়েছি। আর এ ব্যাপারেই তোমাদের সকলের সাহায্য আমার চাই”।

আব্দুল, শেখর আর বিপ্লব প্রায় একসাথেই বলে উঠল, “আমরা সবাই আমাদের সাধ্যমত আপনাকে সাহায্য করব স্যার”।

পরিতোষ এবার ডাঃ দিব্যেন্দুর দিকে তাকিয়ে বলল, “ডক্টরদের প্রফেশনকে আমি একটা নোবল প্রফেশন বলেই ভাবি ডক্টর বরুয়া। আর প্রত্যেকটা ডাক্তারকেই নিজেদের পেশার প্রতি সৎ এবং নিষ্ঠাবান হওয়া জরুরী। আজ একজন গৃহবধূকে এক মহা বিপদের হাত থেকে বাঁচাতে একটা অপারেশন শুরু করতে যাচ্ছি। আপনার কাছ থেকে এ ব্যাপারে বেশ বড়সড় একটা সাহায্যের আশা আমি করছি। তবে আপনার কাছ থেকে আমি যেটা চাইবো, সেটা আপনার মত সৎ এবং নিষ্ঠাবান একজন ডাক্তারের পক্ষে মেনে নেওয়া হয়তো সত্যিই খুব কঠিণ। আপনি তো জানেনই আইনের রক্ষক হয়েও আইনের বিধিনিষেধ অমান্য করে বাঁকা পথে আমি অনেক দোষীকে তাদের কৃতকর্মের জন্য শাস্তি দিই। অনেক নির্দোষকে বিপদমুক্ত করি। আর একাজে এদের মত ভাই বোনেরাই আমার শক্তি। দু’বছর আগে যেমন আমার নির্দেশে আব্দুলই তার দলবল নিয়ে আপনাকে বিপদমুক্ত করেছিল। আজ বিপদ এমন একজনের, যে আমার খুব কাছের মানুষ। বয়সে আমার থেকে অনেক ছোট হলেও সম্পর্কে সে আমার বৌদি। তাকে আমি ঠিক তেমনই শ্রদ্ধা আর ভালবাসার চোখে দেখি। যদিও তার পরিচয়টা আপনাদের কাছে খুলে বলতে একটু বাঁধা আছে, তবে আমার মনে হয় আপনারা কেউই এ ব্যাপারে আমার ওপর কোনরকম সন্দেহ করবেন না। আপনার সাথে আমার পরিচয় বছর দুয়েক আগে হয়ে থাকলেও আমার এ ধরণের কোন কাজে আপনার সাহায্যের প্রয়োজন এর আগে কখনও পড়েনি। আজই প্রথম। তাই আপনার কাছে জানতে চাইছি, একজন প্রচুর ক্ষমতাশালী সমাজের শত্রুকে শায়েস্তা করতে আপনার প্রফেশনাল এথিক্স আর আদর্শকে উপেক্ষা করে আপনি কি সত্যি পারবেন আমাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করতে”?

ডাঃ দিব্যেন্দু বললেন, “স্যার ডাক্তারদের কাজ অসুস্থ লোকদের সুস্থ করে তোলা। কিন্তু আমার মত অনেক ডাক্তার মার্সি কিলিং-এর মত কাজও করে থাকেন। আইনের চোখে আজও মার্সি কিলিং অপরাধ। কিন্তু পরিস্থিতি বিশেষে আমার মত অনেক ডাক্তার স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় এর সাথে জড়িয়ে পড়ে। কেউ কেউ হয়ত অর্থের বিনিময়েও এমন কাজে সহযোগিতা করেন। তবে আপনার কথায় মনে হচ্ছে মার্সি কিলিং-এর মত কোন ব্যাপার এটা নয়। আপনার আদর্শকে আমি মনে প্রাণে সাপোর্ট করি স্যার। আপনি আমার কাছ থেকে ঠিক কী ধরণের সাপোর্ট আশা করছেন সেটা তো এখনও জানিনা স্যার। তবু বলছি অপারেশন টেবিলে কাউকে মেরে ফেলা ছাড়া অন্য যেকোনও ধরণের সাহায্য করতে আমি প্রস্তুত”।

পরিতোষ প্রায় সাথে সাথেই আবার প্রশ্ন করল, “আমি যদি আপনাকে বলি সমাজের এক শত্রুকে চিরতরে পঙ্গু করে দিতে হবে, তাতে আপনি রাজি হবেন ডক্টর”?
 

ডাঃ দিব্যেন্দু পরিতোষের কথা শুনে চমকে উঠে বললেন, “কী বলছেন স্যার? একজনকে পঙ্গু করে ফেলতে হবে সারা জীবনের জন্য”? দিব্যেন্দুর সাথে সাথে ঘরের বাকি সবাইও এবার বেশ নড়েচড়ে বসল।
 

পরিতোষ সামান্য হেসে জবাব দিল, “পঙ্গুই যে করে ফেলতে হবে তা ঠিক নয়। ওটা নেহাতই একটা কথার কথা হিসেবে ধরতে পারেন। আমি শুধু আপনার মতামতটা জানতে চাইছি। আমার বৌদিকে নিরাপদ রাখতে, তাকে বিপদমুক্ত করতে, প্রায় এমন ধরণেরই একটা কাজে আপনার সাহায্য আশা করছি। কারন লোকটার প্রভাব প্রতিপত্তি আর্থিক শক্তি এতটাই যে কোনভাবেই তাকে আইনের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না”।

ডাঃ দিব্যেন্দু মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ ভেবে বললেন, “স্যার, আমি তো ঠিক বুঝতে পারছি না আপনি ঠিক কী করাতে চাইছেন। একটু খুলে বলা যায় না কি”?
 

পরিতোষ বলল, “এই মূহুর্তেই পুরোপুরি ভাবে খুলে বলাটা আমার পক্ষে সম্ভব নয় ডক্টর। তবে আমি আপনাকে একটা কাগজ দিচ্ছি। সেটা দেখে নিন। কাগজে যা লেখা আছে যদি আপনার পক্ষে তা করা সম্ভব হয়, তাহলে আমি আপনাকে পরে সব কিছু আলাদা ভাবে খুলে বলব। এদিকে আসুন। আমার পাশে দাঁড়িয়েই কাগজটা পড়ুন। আর এখানে যা লেখা আছে সে’সব শুধু নিজের মনের মধ্যে রাখবেন প্লীজ। মুখ ফুটে কোন কিচ্ছু বলবেন না। এ ঘরে এখন এই মূহুর্তে আর যারা আছে, তারা যেন কাগজে লেখা একটা বর্ণও জানতে বা আন্দাজ করতে না পারে। ও’ কথাগুলো কেবল আপনার আর আমার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখবেন। আমি চাইনা, অন্য কারো চোখে আপনি ছোট হয়ে যান। আমি আপনাকে আগেও বলেছি, এমন একটা কাজ করতে আপনার বিবেক হয়ত আপনাকে বাঁধা দেবে। তেমন হলে আমাকে শুধু আপনার অপারগতার কথাটুকুই জানিয়ে দেবেন। আমি আপনাকে কোনরকম জোর করব না। আপনার প্রত্যাক্ষানও আমি হাসি মুখে মেনে নেবো। শুধু মনে রাখবেন, আমার অত্যন্ত এক প্রিয়জনের প্রাণ সংশয়। তাকে বাঁচাতেই আমার এ প্রয়াস”।

ডাঃ দিব্যেন্দু শুকনো মুখে উঠে পরিতোষের পাশে এসে দাঁড়ালেন। পরিতোষ তার হাতে একটা কাগজ দিয়ে বাকি দুটো কাগজ আব্দুল আর শেখরের দিকে এগিয়ে দিয়ে তাদের বলল, “তোরাও দেখে নে, তোদের কাকে কী করতে হবে। কাগজে সব লেখা আছে। আর কোনরকম ডিসকাশন নয়। শুধু ‘হ্যাঁ’ কিংবা ‘না’ বলবি তোরা। আর নিজের কাগজে যা লেখা আছে তা অন্য কাউকে জানাবি না। এখান থেকে বেরিয়ে যাবার পর আমার অবর্তমানে তো নয়ই এমনকি আমার সামনে এলেও এক টিমের কাজের ব্যাপারে অন্য টিমকে কোনকিছু জানানো চলবে না। যার যেটা কাজ সে ব্যাপারে আলোচনা শুধু নিজের টিম মেম্বারদের সাথে করবি, আর আমার সাথে আলাদা ভাবে করবি তোরা। শেখর, তুই আর বিপ্লব একসাথে কাজটা করবি। কিন্তু আব্দুলের সাথে বা ডক্টর বড়ুয়ার সাথে কোন আলোচনা বা পরামর্শ করতে পারবি না। ঠিক তেমনি আব্দুল তুইও শুধু তোর টিমের লোকজন নিয়ে কাজটা করবি। আমি ছাড়া অন্য কারো সাথে কোন আলাপ আলোচনা নয়”।

আব্দুল, শেখর, বিপ্লব আর দিব্যেন্দু নিজের নিজের হাতের কাগজে চোখ বোলাতে লাগলো। সবাই চুপচাপ। ঘরে পিন স্টপ সাইলেন্স। প্রায় মিনিট দশেক বাদে আব্দুল প্রথম বলে উঠল, “নো প্রোব্লেম স্যার। হয়ে যাবে”।

মিনিট খানেক বাদে শেখর আর বিপ্লবও একই কথা বলল। ডাঃ দিব্যেন্দু তখনও তার হাতে ধরা কাগজের লেখাগুলো পড়ে যাচ্ছেন। আরও মিনিট দুয়েক বাদে তিনি বলে উঠলেন, “এ তো স্যার প্রায় ........”

পরিতোষ সাথে সাথে তাকে বাঁধা দিয়ে বলল, “প্লীজ ডক্টর। অন্য কোন কথা বলবেন না প্লীজ। এখন আমি শুধু আপনার ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ শুনতে চাই”।

ডাঃ দিব্যেন্দু পরিতোষের হাত ধরে বললেন, “হ্যাঁ স্যার। আমি রাজি”।

পরিতোষ এবার অনেকটা আশ্বস্ত হয়ে ডাঃ দিব্যেন্দুকে চেয়ারে বসতে বলল। দিব্যেন্দু চেয়ারে গিয়ে বসতেই পরিতোষ নিজের হাত সামনে বাড়িয়ে বলল, “এবার আপনারা সবাই ওই কাগজগুলো আমার হাতে ফেরত দিন”।

সবাই বিনা বাক্যব্যয়ে পরিতোষের হাতে কাগজগুলো ফিরিয়ে দিল। পরিতোষ কাগজগুলো ভাঁজ করে আবার নিজের পকেটে রেখে বলল, “আচ্ছা এবার শুনুন। ডক্টর বড়ুয়া, আপনি তো আমার সাথে এর আগে কোনও অপারেশন করেন নি। তাই আপনাকে অনেক কিছু বুঝিয়ে দিতে হবে আমার। আর সে সব আমি যথা সময়ে করব। তবে শেখর, বিপ্লব আর আব্দুল, তোরা তো বুঝেই গেছিস যে তোদের কাজটাতে মোট তিনটে স্টেজ আছে। প্রথম স্টেজের কাজ শেখর আর বিপ্লবের। তোদের কাজে তিনটে ফেজ আছে বলে তোদের কাজটাতেই সময় সবচেয়ে বেশী লাগবে। কিন্তু আমি জানি তোরা খুব স্মুথলিই কাজটা করতে পারবি। তবে আমি একমাসের মধ্যে তোদেরকে পুরো কাজটা শেষ করতে বলছি। দ্বিতীয় স্টেজে আব্দুলের কাজে দুটো আলাদা আলাদা পার্ট আছে। প্রথম পার্টটাতে সময় লাগবে ছ’ থেকে দশ দিন। আর পরের পার্টটা একদিনেই শেষ হয়ে যাবে। তবে শেখরদের ফেজের কাজ শেষ হবার পরেই আব্দুলের কাজ শুরু হবে। কিন্তু একমাস আব্দুলকে বসিয়ে রাখতে চাই না। তাই শেখর, তোরা চেষ্টা করবি তোদের প্রথম ফেজের কাজটা যেন দিন সাতেকের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। তোদের প্রথম পার্টের কাজ শেষ হলেই আব্দুল নিজের কাজ শুরু করতে পারবে। আর আব্দুল তার প্রথম পার্টের কাজ করতে করতে তোরা তোদের সেকেন্ড আর থার্ড পার্টের কাজটা করে ফেলবি। আর থার্ড স্টেজে ডক্টর বড়ুয়ার কাজ একদিনেই শেষ হয়ে যাবে। আর সেটা হবে আব্দুলের কাজের সেকেন্ড পার্ট শেষ হবার দিনই। ডক্টর, আপনার মনে হয়ত অনেক প্রশ্ন অনেক ভাবনা উঠছে। আপনাকে আমি আলাদা ভাবে সে’সব কিছু বুঝিয়ে দেব। তবে নিজের ওপর যেন বিপদ না আসে, এ ব্যাপারে আপনাকে কিন্তু সতর্ক থাকতেই হবে। তবে ঝুঁট ঝামেলা কিছু এলেও আমিই তার মোকাবিলা করব। এ ব্যাপারে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন। তাই আপাততঃ আপনাকে আর আমি কিছু বলছি না। তবে আব্দুল, শেখর, তোদের কি কিছু বলার আছে”?
 

শেখর বলল, “স্যার কাজ তো হয়ে যাবে। কিন্তু টার্গেটগুলোকে আমরা আইডেন্টিফাই করব কিভাবে, তা তো বললেন না। তাদের ছবি বা নাম ঠিকানা কিছু জানা না থাকলে তো একমাসের মধ্যে কাজটা শেষ করা মুস্কিল হবে স্যার”।
 

আব্দুল বলল, “স্যার আমারও একই কথা। টার্গেটের নাম ঠিকানা, আর সম্ভব হলে একটা ছবি যদি পেতাম, তাহলে সুবিধে হত”।

পরিতোষ বলল, “সেটা কি আর আমি বুঝিনা বলে ভাবছিস তোরা? আসলে এ জিনিসগুলো যোগার করতে করতেই আসতে আমার একটু দেরী হয়ে গিয়েছিল” বলতে বলতে নিজের শার্টের ভেতরে লুকিয়ে রাখা একটা মাঝারী সাইজের খাম বের করল।
 

খামটা খুলে ভেতর থেকে কয়েকটা ছবি বের করে তার থেকে বেছে বেছে তিনটে ছবি শেখরের হাতে দিয়ে বলল, “এই তোদের তিন টার্গেট। ছবির পেছনে ডিটেইলস লেখা আছে” বলে আব্দুলের হাতে আরো দুটো ছবি ধরিয়ে দিয়ে বলল, “এটা তোর টার্গেট আব্দুল। একটা সিঙ্গেল ছবি। আর অন্যটা তার পরিবারের ছবি। যদিও তার পরিবারের অন্য কেউ তোর টার্গেট নয়। তবু তার পরিবারের লোকগুলোকে চিনে রাখা দরকার বলেই দিলাম”।

ডাঃ বড়ুয়ার দিকে চেয়ে বলল, “আপনাকে আমি কোন ছবি দিতে চাইছি না ডক্টর। আপনার জীবনে এ ধরণের কাজ আপনি এই প্রথম করছেন। তাই আপনাকে যতটা সম্ভব নিরাপদে রাখা আমার কর্তব্য। তাই আপনাকে কোন ছবি দিচ্ছি না। অবশ্য ছবির তেমন প্রয়োজনও পড়বে না আপনার। আপনার নার্সিংহোমের পেশেন্ট হিসেবেই সে আপনার কাছে যাবে। আপনি শুধু পেশেন্টের ট্রিটমেন্ট করবেন। তবু শুধু আপনার কৌতূহল মেটাতে আপনি ওদের হাতের ছবিগুলো দেখে নিতে পারেন”।

ডক্টর দিব্যেন্দু কৌতূহলী হয়েই আব্দুলের পেছনে গিয়ে দাঁড়াল। পরিতোষ লক্ষ্য করল আব্দুলের মুখটা ক্রমশঃ যেন হিংসক হয়ে উঠছে। তাই সে আব্দুলকে উদ্দেশ্য করে বলল, “মাথা ঠাণ্ডা রেখে তোর টার্গেটকে ভাল করে চিনে নে আব্দুল”।


______________________________
Like Reply
 

(Update No. 148)

এমন সময় শেখর আর বিপ্লব নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করে কথা বলাবলি শুরু করল। পরিতোষ সেটা লক্ষ্য করে কিছু একটা বলতে যেতেই শেখর বলল, “স্যার, আমার পার্ট থ্রির একটা কাজ তো আগেই সেরে ফেলেছি আমরা। ওই অনুপমা প্রসাদের কেসের সময়”।

পরিতোষ চমতকৃত হয়ে বলল, “তাই নাকি? সত্যি বলছিস তো? তোদের কোন ভুল হচ্ছে না”?

এবার বিপ্লব বলল, “না স্যার, কোনও ভুল হচ্ছে না আমাদের। এই হারামীটাও তো অনুপমার কাস্টমার ছিল। কিন্তু ওই সিডিগুলো তো বোধহয় অনুপমার কেসের সাথেই নষ্ট করে ফেলা হয়েছে”।

পরিতোষ বলল, “ভাবিসনে, আমার কাছে তার কপি আছে। পাওয়া যাবে। তবে সেখানে তো হয়ত একটাই আছে। তোদেরকে তো প্রত্যেকের তিন চারটে করে সিডি বানাতে হবে আলাদা আলাদা ঘটণার। আর কাগজে যা পড়লি তেমন একটা তো লাগবেই। তোরা নতুন করে বানাবি। আর আগেরটাও আমি যোগাড় করে নেব। একটা বেশী হলে আর ক্ষতি কি”।
 

আলোচনা শেষ করে পরিতোষ ডক্টর দিব্যেন্দুর কন্টাক্ট নাম্বার নিজের পার্সোনাল মোবাইলে সেভ করে সকলকে বিদেয় করল। রাতে বাড়ি ফিরে শোবার আগে সীমন্তিনীকে ফোন করবার কথা ভাবতেই আব্দুলের ফোন এল, “স্যার, এত রাতে ফোন করছি বলে প্লীজ বিরক্ত হবেন না। আসলে যখন আমরা ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করছিলাম, তখনই কথাটা বলতে খুব ইচ্ছে করছিল আমার। কিন্তু আপনিই শিখিয়েছেন, সব কথা সবার সামনে বলা উচিৎ নয়। তাই তখন কথাটা আমি বলিনি। এখন বলতে চাইছি আপনাকে”।

পরিতোষ মনে মনে একটু হেসে মুখে বলল, “বেশ, বল কি বলতে চাইছিস”?

আব্দুল বলল, “স্যার এ ব্যাপারটা নিয়ে এত প্ল্যানিং করবার কি দরকার ছিল বলুন তো? ওই একটা মাত্র হারামীকে তো আমি দু’মিনিটেই পরপারে পাঠিয়ে দিতে পারি। আর আপনি তো ভালমতই জানেন স্যার, আব্দুলের এ’সব কাজের কথা কাক পক্ষীটিও টের পায় না। এতগুলো লোককে এতে জড়াবার কি কোনও প্রয়োজন ছিল, বলুন তো”?

পরিতোষ তাকে শান্ত করবার চেষ্টা করতে করতে বলল, “তুই যে কি জিনিস সেটা কি আর আমি জানি না রে আব্দুল? ওই লোকটার প্রভাব প্রতিপত্তি যতই থাকুক না কেন, তুই চাইলে যে কোনও মূহুর্তেই তার ভবলীলা সাঙ্গ করে দিতে পারিস। কিন্তু আমি যে সেটা চাইনা রে ভাই। তোরা যে আমার খুব ভরসার পাত্র রে। তার ওপর তুই আমার প্রীতিদির স্বামী। প্রীতিদির জীবনটা যে তোর জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে রে। আর এখন তো ওই দুষ্টু মিশটু আপ্রীতও তোর সাথে জড়িয়ে আছে। আমার কথায় নোংরা একটা লোককে খুন করে তুই কেন নিজের হাতটা নোংরা করবি বল তো? আর, একটা লোককে খুন করে ফেলা তো বড় কিছু ব্যাপার নয়। তোর কাছে সেটা হাতের তুড়ির মতই একটা ব্যাপার। কিন্তু তাকে বাঁচিয়ে রেখেই তাকে যদি অপরাধ করা থেকে আটকাতে পারি, তাহলেই তো আমাদের উদ্দেশ্য সিদ্ধি হয়। তাছাড়া ওই বদমাশটার কাছ থেকে টাকাও তো আদায় করতে হবে। নইলে এতগুলো লোককে তাদের পাওনাগন্ডা বুঝিয়ে দেব কি করে বল? তাই এত সবের প্ল্যানিং করতে হচ্ছে, যাতে আমার দুটো উদ্দেশ্যই সিদ্ধ হয়, আর তোদের কারো গায়ে এতটুকে আঁচও না লাগে। বুঝলি? তোকে যে কাগজটা পড়তে দিয়েছিলাম, সে কথা গুলো মাথায় রাখিস। আর ঠিক সেভাবেই কিন্তু কাজটা করবি। কোনরকম ব্যতিক্রম যেন না হয়। অবশ্য সঠিক সময়ে আমি নিজেই আবার তোকে সেসব মনে করিয়ে দেব। এবার মাথা ঠাণ্ডা করে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে পর। আমার শুধু ডাক্তারকে নিয়েই একটু চিন্তা হচ্ছে। তার তো এ ধরণের কাজের অভ্যেস নেই একেবারেই। সঠিক সময়ে ঘাবড়ে গিয়ে যদি কিছু উল্টোপাল্টা করে ফেলেন, তাহলেই সমস্যা হবে”।

আব্দুল এবার বেশ সংযত ভাবে বলল, “ও নিয়ে ভাববেন না স্যার। প্রয়োজন হলে তার কাজের সময়টায় আমিও তার কাছাকাছিই থাকবার চেষ্টা করব। আমি সব সামলে নেব স্যার”।
 

পরিতোষ শান্তভাবেই বলল, “আমি যে কাগজটা তোকে পড়তে দিয়েছিলাম, সেটা মনে হয় তুই ভালমতো পড়িস নি আব্দুল। সে কাগজে লেখা ছিল তোর কাজটা শেষ হবে সন্ধ্যে সাতটা থেকে সাড়ে সাতটার মধ্যে। আর ডঃ দিব্যেন্দুর হাসপাতাল থেকে প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার দুরে। তাই একই সময়ে দুটো দিক সামলাতে গেলে ওই মূহুর্তে তোর চারটে টিমের প্রয়োজন হবে। আর তাছাড়া সবচেয়ে বড় কথা হল, যেদিন তোর কাজটা শেষ হবে সেদিন সকাল থেকে রাত দুপুর অব্দি তুই নিজে তোর নিজের বাড়ি আর গ্যারেজ ছেড়ে এক পা-ও বাইরে যেতে পারবি না। তাই আর উল্টোপাল্টা অন্য কিছু না ভেবে মাথা ঠাণ্ডা রাখ। আর আমি যেভাবে প্ল্যান করেছি ঠিক সে ভাবেই কাজটা করবি। ডাক্তারকে আমি অন্যভাবে সামলে নেব। সেটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না”।
 

আব্দুলের সাথে কথা শেষ করে পরিতোষ সীমন্তিনীকে জানিয়ে দিল সে কাজে নেমে পড়েছে। পঁয়ত্রিশ থেকে চল্লিশ দিনের ভেতর অপারেশন কমপ্লিট হবে। সীমন্তিনী তাকে বলল, এ নিয়ে পরে আলোচনা করবে।
 

*****************
Like Reply
(Update No. 149)

পরের দিন সন্ধ্যে ছ’টার পর সীমন্তিনী অফিস থেকে বাড়ি ফিরল। নবনীতা দরজা খুলে দিতেই সে একটু অবাক হল। রোজ অফিস থেকে ফিরে এসে ঘরে ঢোকবার সময় অর্চনা আর নবনীতা একসঙ্গে এসে দরজা খুলে দেয়। অর্চনা আসবার পরের দিনটি থেকেই এটা যেন একটা অলিখিত নিয়ম হয়ে গেছে। আজ নবনীতাকে একা দরজা খুলতে দেখে সীমন্তিনী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “কি ব্যাপার নীতা? আজ তুমি একা দরজা খুললে! অর্চু কোথায়”?

নবনীতা দরজা বন্ধ করে ঘুরে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে সীমন্তিনীর কানে কানে ফিসফিস করে বলল, “ঝগড়া করছে গো দিদি। এসো দেখবে এসো” বলতে বলতে সীমন্তিনীর হাত ধরে তাদের ঘরের দিকে এগিয়ে গেল।

সে ঘরটার দরজার কাছাকাছি আসতেই শুনতে পেল, অর্চু বলছে, “ভাই, তুই দিনে দিনে যত বড় হচ্ছিস ততই কিন্তু দুষ্টু আর হিংশুটে হয়ে উঠছিস। তোরা বাড়ির সকলেই তো চার বছর আগে থেকে দিদিভাইকে পেয়েছিস। আমি কি তেমন পেয়েছি বল? আমি তো তখন জানতুমও না যে আমাদের পরিবারে এমন এক দিদিভাই এসেছেন। মাত্র দেড় মাস আগেই তো দিদিভাইকে আমার জীবনে পেলুম। আর আজ তার কাছে এসে দুটো দিন থাকছি বলেই তুই বলছিস যে আমি তোর কাছ থেকে দিদিভাইকে কেড়ে নিচ্ছি”?

ভাইবোনের ভেতর মিষ্টি ঝগড়া হচ্ছে বুঝতে পেরে সীমন্তিনীরও বেশ মজা লাগল। সে নবনীতার একটা হাত ধরে চুপ থাকবার ইঙ্গিত করে তাকে টেনে নিজের ঘরে এসে হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করল, “কতক্ষণ থেকে এমন ভাইবোনের ঝগড়া চলছে”?

নবনীতাও একটু হেসে চাপা গলায় বলল, “মিনিট দশেক তো হয়েছেই। ছ’টার সময় যে তার একটা ট্যাবলেট খেতে হবে সে’কথাও বুঝি ভুলে গেছে তোমার অর্চু সোনা। এই দ্যাখো তখন থেকে আমি তার ট্যাবলেটটা হাতে নিয়ে অপেক্ষা করছি কখন তাদের ফোন ঝগড়া শেষ হবে” বলে নিজের হাতের মুঠো খুলে দেখাল।

সীমন্তিনী নিজের কাঁধের ওপর থেকে ব্যাগটা নামিয়ে ঘরের কোনার টেবিলের ওপর রাখতে রাখতে বলল, “থাক, কিচ্ছু বোল না ওকে। এমন ঝগড়ায় কোন ক্ষতি নেই। বরং ভাই বোনেদের সাথে এভাবে ও যত খোলামেলা ভাবে কথা বলতে পারবে এখন, ওর পক্ষে সেটা ততই ভাল হবে। তুমি বরং ট্যাবলেটটা আমার হাতে দাও। আজ আমি ওকে খাইয়ে দেব। তুমি গিয়ে লক্ষ্মীদির সাথে হাত মিলিয়ে চায়ের বন্দোবস্ত করো”।

নবনীতা সীমন্তিনীর হাতে ট্যাবলেটটা দিয়ে হাসিমুখেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। সীমন্তিনী ঘরে পড়ার পোশাক হাতে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল। স্নান করে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে ভেজা ইউনিফর্ম গুলো বাইরের ব্যালকনিতে মেলে দিয়ে অর্চনার ট্যাবলেটটা হাতে নিয়ে তাদের ঘরে গিয়ে দেখল, কিংশুক আর অর্চনার মিষ্টি ঝগড়া তখনও চলছে। সীমন্তিনী পা টিপে টিপে অর্চনার পেছনে গিয়ে তার হাত থেকে মোবাইলটা ছিনিয়ে নিয়ে ফোনে বলল, “ব্যস, টাইম আপ হয়ে গেছে ভাই। এবার আমি এসে গেছি। তাই বড়দির সাথে কথা বলার পালা এবার আমার। তাই বাই বাই। তবে হ্যাঁ, থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ। আর একটা আদরের চুমু রইল তোমার জন্যে” বলে দু’ঠোট এক করে চুমু খেল শব্দ করে।

অর্চনা একটু লজ্জা পেয়ে সীমন্তিনীর হাত ধরে বলল, “ওমা, দিদিভাই! তুমি কখন এসেছ এ ঘরে”?

সীমন্তিনী ফোনটা অর্চনার হাতে দিতে দিতে বলল, “অনেকক্ষণ। এতক্ষণ তোমাদের দু’ভাইবোনের ঝগড়া শুনছিলাম। কিন্তু ম্যাডাম, শুধু ঝগড়া করলেই তো চলবে না। ছ’টার সময় যে একটা ট্যাবলেট খেতে হবে, সে’ কথা ভুলে গেলে চলবে? নাও, আগে এটা খেয়ে নাও তো লক্ষ্মী মেয়ের মত”।

অর্চনা ট্যাবলেটটা হাতে নিয়ে জলের বোতলের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল, “ভাইটা সত্যি দিনে দিনে খুব হিংশুটে হয়ে উঠছে গো দিদিভাই। মাত্র চারটে দিন হল আমি তোমার এখানে এসেছি। বলে কিনা আমি ওর দিদিভাইকে ওর কাছ থেকে কেড়ে নিচ্ছি। আমাকে কাছে পেয়ে তুমি নাকি ভাইকে আর ও বাড়ির আর সকলকে ভুলে যেতে বসেছো”।

অর্চনা ট্যাবলেট মুখে দিতেই নবনীতা ওদিক থেকে বলে উঠল, “দিদি, এসে পড়ো। চা জল খাবার এসে গেছে”।

সীমন্তিনী অর্চনার হাত ধরে ডাইনিং রুমে এসে চা খাবার খেতে বসলো। খেতে খেতে নবনীতা প্রশ্ন করল, “দিদি, কলকাতার আর কিছু নতুন খবর আছে? পরির সাথে আর কথা হয়েছে তোমার”?
 

সীমন্তিনী কিচেনের দিকে একনজর দেখে লক্ষ্মীকে কোন কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখে চাপা গলায় বলল, “হ্যাঁ, লাঞ্চ আওয়ারে কথা হয়েছে। রচুর ওপর নজর রাখবার জন্য আরও দু’তিনজন সিকিউরিটির ব্যবস্থা করেছে। ওরা চব্বিশ ঘন্টা রচুর ওপর নজর রাখবে। রচুদের ফ্ল্যাটের উল্টোদিকে একটা ঘরে ওরা রাতে থাকবে। সেখান থেকে রচুদের ব্যালকনিটা নাকি একেবারে পরিষ্কার দেখা যায়। সেখান থেকে আর ওদের ফ্ল্যাটের কাছেই রাস্তায় ডিউটি দেবে, রচু যদি কখনও একা বা দাদাভাইয়ের সাথেও কোথাও বের হয়, ওরা সবসময় তাদের পেছনে পেছনে থেকে ওদের গার্ড করে যাবে”।
 

অর্চনা জিজ্ঞেস করল, “আর ওই মাড়োয়াড়ি লোকটা? তাকে কিছু করা যাবে না”?

সীমন্তিনী আগের মতই শান্ত ভাবে জবাব দিল, “তার পেছনেও পরিতোষ লেগে গেছে। তবে কিভাবে কি করছে সেটা সে আমাকে খুলে বলেনি। আর আমি নিজেই জানি, ও কিভাবে কী করবে সেসব কথা পুরো খুলে আমাকে কখনোই জানাবে না। কিন্তু কাজ যে সে সমাধা করবেই, এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে এটা বলেছে যে আগামি পঁয়ত্রিশ থেকে চল্লিশ দিনের ভেতর সে এমন কিছু করবে যে তারপর থেকে রচুর আর কোনও বিপদের আশঙ্কা থাকবে না। আর আমি জানি, পরিতোষের কথা আর কাজে কোনও তফাৎ থাকে না। তাই আমিও বিশ্বাস করি রচনা দিন চল্লিশেক বাদে একেবারে বিপদমুক্ত হয়ে যাবে। আমাদের আর দুর্ভাবনার কিছু নেই। তুমিও একেবারেই দুশ্চিন্তা কোর না অর্চু”।

অর্চনা তবু বলল, “দিদিভাই আমি নিজের মনটাকে কিছুতেই বোঝাতে পারছি না গো। তোমার পরামর্শ মত কাউকে কিছু না বললেও আমার মনের ভেতরের দুশ্চিন্তা যে কিছুতেই কাটতে চাইছে না গো। বারবার মনে হচ্ছে ছুটে যাই রচুর কাছে”।
 

সীমন্তিনী অর্চনার একটা হাতের ওপর নিজের হাত রেখে বলল, “ক’দিন আগেই তো ওরা এসে তোমার সাথে দেখা করে গেল বোন। আর দু’মাস বাদেই তো পূজো। ওরা তো পূজোর সময় আসছেই। তখন তো তোমার সাথে দেখা হবেই। ততদিনে ওর ওপর নেমে আসা বিপদটাও কেটে যাবে। আমার ওপর ভরসা রাখো অর্চু। তবে ভগবানকে অশেষ ধন্যবাদ যে সময় থাকতে আমরা সব কিছু জানতে পেরেছিলাম। তবে এ ক্ষেত্রে ভগবানের চাইতেও বেশী ধন্যবাদ প্রাপ্য বোধহয় নীতার ম্যাডামের। উনি যদি ব্যাপারটা আমাকে খুলে না বলতেন, তাহলে তো বিপদটা ঘটে যাবার আগে পর্যন্ত কিচ্ছুটি জানতে পারতুম না”।

অর্চনা আবার কিছু একটা বলতে চাইতেই সীমন্তিনী তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “এখানে আর কোন কথা নয় অর্চু। নীতা তুমি আমাদের তিনজনের চা নিয়ে আমার রুমে চলে এস। আমরা ওখানে বসেই চা খাব”।

সীমন্তিনী টেবিল থেকে উঠে কিচেনের দিকে এগিয়ে গেল। লক্ষ্মীকে কাপে কাপে চা ঢালতে দেখে জিজ্ঞেস করল, “তুমি খাওনি লক্ষ্মীদি? ওদিকে ও’সব কি ঢেকে রেখেছো”?

লক্ষ্মী কাজ না থামিয়েই বলল, “ওটাই আমার খাবার গো দিদিমণি। তোমাদের চা টা দিয়েই খাবো”।

নবনীতা ডাইনিং টেবিল থেকে এঁটো থালা প্লেটগুলো এনে রান্নাঘরের সিঙ্কে রাখতে রাখতে বলল, “লক্ষ্মীদি, টেবিলটা পরিষ্কার হয়ে গেছে। এবার তুমি খাবার খেয়ে এগুলো ধুয়ে রেখো। চা আমি নিয়ে যাচ্ছি দিদির ঘরে। ওখানে গল্প করতে করতে সবাই খাবো”।

সীমন্তিনী আর অর্চনা আগেই সীমন্তিনীর ঘরে এসে তার বিছানায় বসে পড়েছিল। নবনীতা চা নিয়ে ঢুকতে ঢুকতে শুনলো অর্চনা সীমন্তিনীকে বলছে, “সত্যি গো দিদিভাই। নীতাদির মুখে তার ম্যাডামের কথা শুনে তো আমরা সকলেই ধরে নিয়েছিলাম যে ওই ম্যাডাম খুবই বাজে মহিলা। সে-ই রতু-দা আর রচুর সর্বনাশ করবে। কিন্তু কী আশ্চর্য দেখো? নিজে বিপথগামীনি হয়েও, আরও অনেক ছেলেমেয়েকে বিপথে নামিয়েও, রচুর ওপর বিপদ নেমে আসছে দেখে অমন বাজে স্বভাবের এক মহিলাও কেমন চঞ্চল কেমন উদ্বিঘ্ন হয়ে পড়েছে। সে নিজে কিছু করতে পারছে না বলে, তার সমস্ত পাপকর্মের কথা অবলীলায় তোমার মত এক পুলিশ অফিসারকে খুলে বলে তোমার সাহায্য চাইছে, এ ব্যাপারটা আমি ঠিক হজম করতে পারছি না গো। মনে হচ্ছে গল্পকথা। বাস্তবে কি এমন সত্যি হতে পারে দিদিভাই”?

সীমন্তিনী চায়ে একটা চুমুক দিয়ে বলল, “ইংরেজীতে একটা কথা আছে শুনেছ তো? ‘ট্রুথ ইজ স্ট্রেঞ্জার দ্যান ফিকশন’। কথাটা যে কতটা সত্যি, তার প্রমাণ আমরা পুলিশেরা মাঝে মধ্যেই পাই। এমন অনেক খুন জখম চুরি ডাকাতি রাহাজানির কেস আমাদের হাতে আসে, যা প্রায় অবিশ্যাস্য। প্রায় অলৌকিক এবং অবাস্তব। কিন্তু সে সবও যে সত্যি, সেটা আমরাই প্রমাণ করি। আমার এই তিন বছরের চাকুরি জীবনে এমন ঘটণা আমিও দেখেছি। তোমার নিজের জীবনেও তো এমনই কিছু ঘটেছিল দু’মাস আগে। তবে এই মহিমা ম্যাডাম আমাকেও সত্যি অবাক করে দিয়েছেন গো অর্চু। কোনরকম চাপে না পড়ে, কোনরকম বাধ্য বাধকতায় না জড়িয়েও শুধু এক প্রিয়জনকে বিপদমুক্ত করবার উদ্দেশ্যে তার সদ্য পরিচিত প্রায় অচেনা একজনের কাছে কিভাবে নিজের পাপ আর অপরাধের কথা সব স্বীকার করলেন! এমনটা সত্যি দেখা যায় না। অবিশ্বাস্য ব্যাপার”।

এবার নবনীতা বলল, “হ্যাঁ গো দিদি। এ ব্যাপারটা আমিও কিছু বুঝতে পারছি না। তবে অর্চুদি কিন্তু একটা কথা ভুল বলেছে। ম্যাডাম কিন্তু কাউকে বিপথগামী করে তাদের অনিচ্ছায় নিজের ওই ব্যবসায় টেনে আনেন নি। আর তার সাক্ষী তো আমি নিজেই। বীথিকার মুখেই শুনেছি এমন ব্যবসা আরো যারা করে, তারা সবাই নিজের নিজের পছন্দের নিয়ম বানিয়ে সবাইকে নিজেদের বশে, নিজেদের কাছে আটকে রাখতে চায়। তারা কাজ ছেড়ে চলে যেতে চাইলে তাদের পেছনে গুণ্ডা বদমাশ লেলিয়ে দেয়। প্রয়োজনে খুনও করে ফেলে। কিন্তু ম্যাডাম তো এমন কিছু করেন না। তার কাজ থেকে কেউ সরে যেতে চাইলেও ম্যাডাম তাকে একেবারেই বাঁধা দেন না। উল্টে তার সাধ্যমত সাহায্যই করেন। পরিতোষের সাথে কথা বলবার পর তুমি যখন আমাকে তোমার সাথে নিয়ে আসতে চাইছিলে, তখন তোমাদের মতের বিরূদ্ধে যেতে পারিনি আমি। কিন্তু আমি যদি ম্যাডামকে সব কিছু জানিয়েই তার কাজ ছেড়ে চলে আসতে চাইতাম, তাহলেও বোধহয় তিনি আমাকে আটকাতেন না। আর সেটা করিনি বলেই মনটা একটু খচখচ করছে আমার। তবে দিদি, তুমি পরিতোষকে ম্যাডামকে হেনস্থা না করবার যে অনুরোধ করেছ, তাতে আমি সত্যি খুব খুশী হয়েছি গো। জানি, ম্যাডাম একটা অনৈতিক কাজ করছেন। আইনের চোখে সেটা একটা অপরাধ। কিন্তু সে তো শুধু নিজের স্বার্থে এসব করেন না। আরও অনেকগুলো অসহায় মেয়ে মহিলাকে সংসার প্রতিপালনে সাহায্য করছে। আমার কথা, বীথির কথা তো তোমাদের সব বলেছি। কিন্তু শুধু আমরা দু’জনই নয়, ম্যাডামের কাছে যত মেয়ে বা মহিলা কাজ করে তারা সকলেই কেবলমাত্র পরিস্থিতির শিকার হয়েই এসব কাজ করছে। আর এতে ম্যাডাম শুধু তার সাধ্যমত তাদের সমর্থন আর সাহায্য দিয়ে যাচ্ছেন। মানবিকতার দিক দিয়ে দেখতে গেলে, তাকে তো সত্যিই একজন অপরাধী বলা যায় না, তাই না দিদি”?

সীমন্তিনী আনমনে জবাব দিল, “জানিনে রে ভাই। তবে দেশের আইন কানুনকে উপেক্ষা করাও তো একটা অপরাধ। সেই যুগে যদি এখনকার মত আইন ব্যবস্থা থাকত, তাহলে রামায়ন রচনা করবার আগেই দস্যু রত্নাকরের ফাঁসি হয়ে যেত। মহর্ষি বাল্মিকীর জন্মও যেমন হত না, তেমনি রামায়ন রচনাও হত না। আজকের যুগে কোন রত্নাকর কি আর বাল্মিকী হয়ে উঠতে পারবে, বলো”?

সীমন্তিনীর কথা শুনে কেউ কোন জবাব না দিলেও সে একা একাই প্রায় স্বগতোক্তির মত করে বলল, “কিন্তু পরিতোষের বিবেক বা চিন্তাধারা একটু অন্যরকম। ও অনেক অপরাধীকে আইনের হাতকড়া না পড়িয়ে তাদেরকে এ যুগের বাল্মিকী বানাবার চেষ্টা করেছে। আবার এমন অনেক অপরাধী যারা নিজেদের ক্ষমতা, অর্থ আর প্রতিপত্তির সাহায্যে আইনের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে বেরিয়ে আসে, তাদেরকে অন্যভাবে শাস্তি দেয়। আর অনেক ক্ষেত্রেই সফল হয়েছে। কিন্তু আইনের পরিভাষায় এমন কিছু করাটাও আইন বহির্ভূত ব্যাপার। এটাও এক ধরণের শাস্তি যোগ্য অপরাধ। তাই এসব কাজ খুব গোপনে, খুব চাতুর্য আর বুদ্ধিমত্তার সাথে করতে হয়। নইলে অন্যকে শোধরাতে গিয়ে নিজেই জেল হাজতে গিয়ে ঢুকতে হবে। তাই পরিতোষ কিভাবে কী করবে তার সবকিছু সে নিজের লোকদেরকেও খুলে বলে না। এমনকি আমাকেও বলে না”।

একটু থেমে নবনীতার একটা হাত নিজের হাতে টেনে নিয়ে সীমন্তিনী বলল, “তুমি তোমার ম্যাডামকে অপরাধী বলে ভাবো আর না ভাবো, তাতে কি এসে যায় নীতা। আইনের চোখে তো সে অপরাধী। আর আইনের ধারায় তার তো জেল হাজত হবারই কথা। আর এ কাজটা করতে হয় আমাদের মত পুলিশকেই। শুধু তার কথাই বা বলছি কেন। আইনের চোখে তুমিও তো একই সমান অপরাধী নীতা। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, কোন পরিস্থিতিতে পড়ে তুমি ও’ধরণের কাজ করতে বাধ্য হয়েছিলে, আদালতে সেটা একেবারেই বিচার্য নয়। আইনের চোখে তুমি সমাজকে কলুষিত করেছ, এটাই তোমার অপরাধ। আর এ অপরাধের শাস্তিই আদালত তোমাকে দিত। কিন্তু পরিতোষ আর আমি তো তোমাকে শুধু আইনের অপরাধী বলে ভাবি না। নিজের বিবেক আর মানবিকতাবোধের বশবর্তী হয়েই তো তোমাকে ওই অপরাধের জগৎ থেকে সরিয়ে নিয়ে এসেছি। আর তোমাকে ওই পাকে পড়তে আমি আর দেব না। জানিনে, পরিতোষের মত আমার ভেতরেও একজনকে বাল্মিকী করে তোলার মত ক্ষমতা আমার আছে কিনা। কিন্তু তুমি যদি আমার এ প্রচেষ্টায় আমাকে সাহায্য করো, তাহলে আমি নিশ্চিত যে তোমার আগামি জীবনটা সুন্দর আর সহজ হয়ে উঠবে। সমাজে তোমাকে আর মুখ লুকিয়ে থাকতে হবে না। মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারবে। তুমি শুধু আমাকে একটু সাহায্য কোর ভাই”।

নবনীতা সীমন্তিনীর কাঁধে মাথা রেখে কান্না ভেজা গলায় বলল, “আমি তোমার প্রচেষ্টায় কখনও বাঁধা হয়ে দাঁড়াব না দিদি। তোমার প্রতিটি নির্দেশ প্রতিটি উপদেশ আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করব। কথা দিলাম। কিন্তু দিদি ম্যাডামকে নিয়েও কি এমনই কিছু ভাবছ? না মানে, পরিতোষের সাথে কাল ফোনে যেসব বললে তুমি সে কথার পরিপ্রেক্ষিতেই এ কথাটা জিজ্ঞেস করছি। কিছু মনে কোর না”।
 

সীমন্তিনী নবনীতার হাতটা ধরে রেখেই বলল, “সেটা এখনই বলা সম্ভব হবে না নীতা। শুধু আমি চাইলেই কি হবে? তোমার ম্যাডামের নিজের মনেও এমন চাহিদা না থাকলে সেটা একেবারেই সম্ভব নয়। কিন্তু তুমি তার সম্বন্ধে অনেক কথা বললেও এ’কথা কিন্তু একবারও বলনি যে সে নিজেও এ ব্যবসা ছেড়ে দিতে চায়, বা তার নিজের মনেও এ ব্যবসা করছে বলে কোন লজ্জা বা গ্লানি আছে। সে নিজেও আমাকে অনেক কথা বললেও তার মনে এমন কোন ইচ্ছে আছে, সে’কথা কিন্তু বলেনি একবারও। তবে আমাদের রচুকে বিপদ থেকে মুক্ত করতে, নিজের কূকর্মের কথা যে এত সহজে আমার মত এক সদ্য পরিচিতাকে এমন ভাবে খুলে বলতে পারে, তার মনে কিছুটা হলেও নৈতিকতা আর বিবেক জেগে থাকবারই কথা। সেটাই আগে আমাকে ভাল করে বুঝে নিতে হবে। তারপর যদি বুঝতে পারি যে তোমার মত তার মনেও এমন অন্ধকার জগৎ ছেড়ে আসবার একটা ইচ্ছে আছে, তাহলে তাকেও আমি সাধ্যমত সাহায্য করবো। তবে তোমার ম্যাডাম যে রচু আর দাদাভাই দু’জনকেই খুব ভালবাসে, সেটা তো আগেও শুনেছিলুম, আর এবারেও তার নিজের মুখ থেকেই শুনতে পেলুম। তাই তাকে অপরাধের দুনিয়া থেকে সরিয়ে আনবার সুযোগ পেলে, সে সুযোগ আমি হাতছাড়া করব না, এটুকু তোমাকে বলতে পারি”।

অর্চনা এরপর বলল, “আচ্ছা দিদিভাই, আমার মনে আরেকটা প্রশ্ন আছে। তুমি রাগ করবে না তো”?

সীমন্তিনী সহজ গলায় জবাব দিল, “পাগলী মেয়ে। রাগ করব কেন? বলো কি জানতে চাও”?

অর্চনা তখন বলল, “রতু-দার ওপর নজর রাখবার জন্যে তো তোমার বন্ধু আগে থেকেই লোক লাগিয়ে রেখেছেন, এখন আবার রচুর এ বিপদের কথা জানতে পেরে তিনি আরও তিনজন লোক নিয়োগ করলেন। আচ্ছা দিদিভাই, এই লোকগুলো বিনে পয়সাতেই রতু-দা আর রচুর ওপর নজর রাখবে? এতে তাদের কী নিজেদের কোনও স্বার্থ আছে? যদি মেনেও নেই যে তারা তোমার বন্ধুর আদেশেই এ সব করছে, কিন্তু তাদেরও তো ঘর সংসার আছে। আর ঘর সংসার চালাতে তো তাদেরও টাকা পয়সার দরকার। তারা যদি দিনরাত রচু আর রতু-দার পেছনেই লেগে থাকে, তবে তারা সংসার খরচের টাকা কোত্থেকে কিভাবে যোগাড় করবে? আর যদি তাদের কোন টাকা পায়সা দিতেই হয়, তাহলে সেটা কে দেবে? তুমি? না তোমার সেই বন্ধুই? না কি রতু-দাকে দিতে হবে”?
 

সীমন্তিনী অর্চনার কথা শুনে মনে মনে বেশ অবাক হল। একেবারেই হেসে উড়িয়ে দেবার মত প্রশ্ন নয়। সীমন্তিনী নিজে পরিতোষকে এ বিষয়ে সরাসরি কিছু না বললেও, মনে মনে এই ভেবে আশ্বস্ত ছিল যে পরিতোষই সেটা মেটাচ্ছে। রবিশঙ্কর আর দিবাকরের কাছ থেকে প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশী টাকা আদায় করতে পেরেছিল পরিতোষ। যাদেরকে ওই কাজদুটোতে নিযক্ত করেছিল, তা হয়ত ওই আদায় করা টাকা থেকেই মিটিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এবারের কাজটায় তো অর্থ সমাগমের তেমন সম্ভাবনা নেই। রতীশের পেছনে তো এক দেড় মাস আগে থেকেই তিনজন সিকিউরিটি নিয়োগ করা হয়েছে। এবার আরও তিনজন সিকিউরিটি পার্সোনাল রাখা হচ্ছে। পরের তিনজনকে তো চল্লিশ পঞ্চাশ দিনের ডিউটির পারিশ্রমিক দিতে হবে। আর আগের তিনজনকেও তো হয়ত আরও মাস দুয়েক কাজে রাখতে হবে। এই ছ’জন লোকের পারিশ্রমিক তো কম হবে না। পরিতোষ কী করে সে সব মেটাবে? নাহ, পরিতোষের সাথে একবারও এদিকটা নিয়ে আলোচনা করা হয়নি বলে নিজেকে খুব স্বার্থপর বলে মনে হচ্ছে। বন্ধুত্বের দাবী নিয়ে রতীশ আর রচনার সুরক্ষার জন্য সে শুধু পরিতোষের ওপর একের পর এক অনুরোধ চাপিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এ কাজগুলো করতে যে কী পরিমান টাকা পয়সার প্রয়োজন হতে পারে, আর পরিতোষ কিকরে তার যোগান দেবে, এ’কথাটা তো তার মাথাতেই আসেনি। নাহ, সত্যি বড্ড ভুল হয়ে গেছে। পরিতোষের সাথে এ ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলা নিতান্তই প্রয়োজন। ভাগ্যিস, অর্চনা কথাটা তুলল।

সীমন্তিনীকে চুপ করে থাকতে দেখে অর্চনা ভাবল, সে বুঝি বেফাঁস কিছু বলে ফেলেছে। তাই সীমন্তিনীর একটা হাত ধরে সে মিনতি ভরা গলায় বলল, “কিছু মনে কোর না দিদিভাই। আমি হয়ত ভুল কিছু বলে ফেলেছি”।

সীমন্তিনী অর্চনার একটা হাত ধরে বলল, “না সোনা। তুমি ভুল কিছু বলো নি একেবারেই। খুবই যুক্তিপূর্ণ কথা বলেছো তুমি। কিন্তু অবাক হয়ে ভাবছিলুম, এ’কথাটা এতদিন আমার মাথাতেই আসেনি! আমার দাদাভাইয়ের ওপর দেড় দু’মাস হল নজর রাখা হচ্ছে, ওদের টাকাটা উদ্ধার করতে দু’ দুটো অপারেশন করতে হয়েছে পরিতোষকে তা আমি জানি। কিন্তু ওই দুটো অপারেশনে যে কত টাকা খরচ হয়েছিল, বা দাদাভাইয়ের ওপর যারা নজর রাখছে তাদের কত টাকা দিতে হয়েছে বা দিতে হচ্ছে, এসব আমি একবারও জানতে চেষ্টা করিনি। সব খরচ খরচা মিটিয়ে দাদাভাইয়ের জন্য মোট সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা রেখেছিল পরি, এ’টুকুই শুধু আমি জানি। কিন্তু যাদেরকে দিয়ে সে কাজগুলো করাচ্ছে, তাদেরকে যে কত টাকা দিতে হয়েছে, বা কত টাকা দেবার আরো প্রয়োজন আছে, এ কথাগুলো নিয়ে আমি ভাবিই নি। আমি শুধু কার্যসিদ্ধি হয়েছে শুনেই খুশী হয়েছি। ইশ, ছিঃ ছিঃ, সাংঘাতিক একটা স্বার্থপরের মত কাজ করে ফেলেছি গো। দাঁড়াও, আমি এখনই খবর নিচ্ছি” বলেই সে মোবাইল থেকে পরিতোষকে ফোন করল।

পরিতোষ ফোনে “হ্যালো মুন ডার্লিং। বলো, কোন নতুন ইনফর্মেশন কিছু আছে কি”? বলতেই সীমন্তিনী বলল, “না পরি, এখন তোমাকে জানাবার মত কোন আপডেট আমার কাছে নেই। উল্টে তোমার কাছ থেকেই কিছু জানতে চাইছি আমি। আসলে এ কথাটা আমার আরও অনেক আগেই তোমাকে জিজ্ঞেস করা উচিৎ ছিল। কিন্তু স্বার্থপরের মত শুধু নিজের উদ্দেশ্য সিদ্ধি করবার কথাই আমি ভেবে গেছি। সেজন্যে তোমার কাছে আমি আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। প্লীজ আমাকে ভুল বুঝো না। কিন্তু আমার প্রশ্নের জবাবটা এড়িয়ে যেও না প্লীজ”।

পরিতোষ একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “এভাবে কথা বলছ কেন তুমি ডার্লিং? এমন কী কথা তুমি জানতে ভুলে গেছ”?

সীমন্তিনী বলল, “দ্যাখো পরি, দিবাকর আর রবিশঙ্করের ব্যাপারে যে দুটো অপারেশন করা হয়েছিল, তাতে কত টাকা খরচ হয়েছিল, সেটা তো জানতেই চাইনি তোমার কাছে। তুমি আমায় বলেছিলে যে ওই দুটো অপারেশনে সব খরচ খরচা মিটিয়ে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা তোমার হাতে জমা হয়েছিল। সে টাকা থেকেই রচুর ফ্ল্যাটে টিভি, ফ্রিজ আর ডিশ কিনে দেওয়া হয়েছিল। আর বাকি চার লাখ সাতাত্তর হাজার টাকার পুরোটাই তো আমরা রচুর একাউন্টে জমা করে দিয়েছি। কিন্তু যাদের মাধ্যমে অপারেশনগুলো করা হয়েছিল তাদের কতটাকা দেবার কথা ছিল, কতটুকু দেওয়া হয়েছে, বা আরও কতটুকু দেবার আছে, এসবের কোন খবরই তো আমি নিই নি। তুমি কিকরে ব্যাপারটা সামলেছ বল তো? তোমার নিজের কাছ থেকে তোমাকে কিছু খরচ করতে হয়েছে নিশ্চয়ই? এছাড়া প্রায় মাস দুয়েক হল দাদাভাইয়ের পেছনে সিকিউরিটি রাখছ। এখন আবার রচুর জন্যেও আরও তিনজনকে রিক্রুট করতে হচ্ছে। এদের সবাইকেও তো তাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে হবে। আর এ তো দু’ চার হাজারের ব্যাপার নিশ্চয়ই হবেনা যে তুমি আমাকে কিছু না জানিয়ে নিজের পকেট থেকেই দিয়ে দেবে। আর যদি তেমন কিছু তুমি করেই থাকো, তাহলে সেটা তোমাকে রিইমবার্স করার দায়িত্ব তো আমারই। আমি কখনও এসব কথা তোমার কাছ থেকে জানতে চাইনি। আমার দাদাভাই আর রচুসোনা তোমার তত্ত্বাবধানে নিরাপদে আছে, ভাল আছে, এ খবর নিয়েই আমি স্বার্থপরের মত খুশী আছি। কিন্তু এসব করতে গিয়ে তোমাকে যে কতকিছুর মোকাবেলা করতে হচ্ছে, কত অর্থের যোগান দিতে হচ্ছে, একটি বারের জন্যও এসব ভেবে দেখিনি আমি। আজ কথাটা মাথায় আসতেই আমার খুব লজ্জা লাগছে। প্লীজ পরি, আমার এ প্রশ্নগুলোর জবাব দাও”।


______________________________
Like Reply
(Update No. 150)

পরিতোষ সীমন্তিনীর কথা শুনে অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “ওকে, তুমি লাইনে থাকো মন্তি। আমি আমার নোটবুকটা দেখে আসল হিসেবটা তোমাকে জানাচ্ছি। কিন্তু ডার্লিং, যে কথাটা এতদিন তুমি জানতে চাওনি, সেটা আজ হঠাৎ করেই জানতে চাইছ কেন বলো তো”?

সীমন্তিনী বলল, “সরি পরিতোষ, আর আমাকে লজ্জা দিও না প্লীজ। আমি তো স্বীকার করেই নিয়েছি যে আমি চরম স্বার্থপরের মত কাজ করেছি। কিন্তু এতদিন তো আমি একা ছিলুম। নিজে কোথায় ভুল ত্রুটি করছি তা দেখিয়ে দেবার মত কেউ আমার পাশে ছিল না। কিন্তু এখন আমার দু’পাশে দুটো বোন আছে। তাদের সাথে আলাপ করতে করতেই কথাটা উঠে এল”।

পরিতোষ এবার বলল, “হু, বুঝেছি। কিন্তু তোমার বোনদের বুঝিয়ে দিও যে এগুলো কিন্তু হাইলি রিস্কি ব্যাপার। সামান্য ভুল চুক হলেই কিন্তু আমার বড়সড় বিপদ হতে পারে। এ’কথাটা তাদের দু’জনকে বুঝিয়ে দিও প্লীজ। আর হ্যাঁ, তুমি যা জানতে চাইছ সে ব্যাপারে বলি। দিবাকরের কেসে খরচ হয়েছিল সাড়ে তিন লাখ। ওর কাছ থেকে আদায় হয়েছিল সাড়ে পাঁচ লাখ। নেট দু’লাখ আমার হাতে এসেছিল। আর রবির কেসে মোট খরচ হয়েছিল সাড়ে দশ লাখ। আদায় হয়েছিল চৌদ্দ লাখ। তাই সেখান থেকে নেট আমার হাতে এসেছিল সাড়ে তিন লাখ। এই দু’অপারেশন থেকে পাওয়া সাড়ে পাঁচ লাখের ভেতর তুমি যখন কলকাতায় এসেছিলে তখন মোট তিয়াত্তর হাজার খরচ করতে হয়েছিল। বাকি চার লাখ সাতাত্তর হাজার বৌদির একাউন্টে জমা দিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেটা তো তুমি জানোই”।

সীমন্তিনী অবাক হয়ে বলল, “তার মানে ওই দুটো অপারেশনে মোট চৌদ্দ লাখ টাকা খরচ হয়েছিল? বাপরে! এত টাকা তুমি কোত্থেকে কী করে যোগালে পরি”?

পরিতোষ এবার একটু হেসে জবাব দিল, “এ ধরণের আনঅফিসিয়াল অপারেশন শুরু করবার আগেই অনেক কিছু নিয়ে প্ল্যানিং করতে হয় ডার্লিং। প্রথমে ইনফর্মার কাজে লাগাতে হয়। মোডাস অপারেন্ডি ঠিক করতে হয়। তারপর দিন ক্ষণ তারিখ আর স্থান ঠিক করতে হয়। এরপর ঠিক করতে হয় ম্যান পাওয়ার। আর সবার শেষে বানাতে হয় বাজেট। আর এ বাজেট বানাতে সব রকম খরচ খরচার কথা ভেবে দেখতে হয়। অনেক সময় অনেক কিছু কিনতে বা ভাড়া নিতে হয়। কতজন ইনফর্মার কাজে লাগাতে হচ্ছে, তাদের কত দিতে হবে, কনভেয়ান্সের খরচ সব কিছু হিসেব করতে হয়। যাদেরকে একশনে লাগানো হয় তাদের বাইরেও অনেকের কাছ থেকে নানারকম সাহায্য নিতে হয়। তাদেরকেও রিমিউনারেশন বা উপহার হিসেবে অনেক কিছু দিতে হয়। নইলে তারা আমার কাজে আমাকে সাহায্য করতে যাবে কেন? দিবাকরের ওই কেসটাতে সব মিলে সাতজনকে রিক্রুট করা হয়েছিল। এছাড়া একজন দালালের সাহায্যও নিতে হয়েছিল। একটা গাড়ি ভাড়া করতে হয়েছিল দু’দিনের জন্য। গাড়ির মালিককে পঞ্চাশ হাজার দিতে হয়েছিল সেই জন্যে। আর তাই সব মিলিয়ে খরচ হয়েছিল সাড়ে তিন লাখ টাকা। কিছু কিছু অপারেশন এমনও হয় যে বাইরের সাপোর্টের প্রয়োজন হয় না। একাই সামলে নেওয়া যায়। যেমন ধরো নীতার কেসটা। ওকে কোনরকম ঝুঁট ঝামেলা ছাড়াই তুমি নিয়ে যেতে পেরেছ বলে বাইরের কাউকে কাজে লাগাতে হয়নি। কিন্তু তখন যদি দু’চারজনকে কাজে লাগাতে হত তবে তাদের তো টাকা পয়সা দিতেই হত। আর সে খরচটা কোত্থেকে কীভাবে আসবে, তারও রাস্তা খুঁজে বের করতে হত। সবটাই ডিপেণ্ড করে টাইপ অফ অপারেশন, প্ল্যানিং আর মোডাস অপারেন্ডির ওপর। যেমন রবিশঙ্করের কেসে দিবাকরের কেসের চেয়ে বেশী ম্যানপাওয়ারের প্রয়োজন হয়েছিল। আর আনুষঙ্গিক যাতায়াত খরচা, বুকিং এজেন্টের কমিশন, কিছু ক্যামেরা, কম্পিউটার ভাড়া, হোটেল খরচা, যাতায়াত খরচা, একটা ঘর ভাড়া, আরো অনেক রকমের খরচ করতে হয়েছিল। মেইন একশনে দুটো টিমের মোট এগারোজনকে অ্যাকশনে নামাতে হয়েছিল। আটজন ইনফর্মারকে কাজে লাগাতে হয়েছিল। তাই খরচ বেশী হয়েছিল। সাড়ে দশ লাখ টাকা। তবে অপারেশন শুরু করবার পর থেকে শেষ হওয়া অব্দি এর ওর কাছে ধার বাকি রাখতে হয়। কিছু হয়ত নিজের পকেট থেকেও খরচ করতে হয়। কিন্তু সব কিছুই র*্যানসমের টাকা থেকেই চুকে বুকে গিয়েছিল। বাজেট বানাবার পরেই র*্যানসমের এমাউন্টটা ঠিক করতে হয়। তবে দুটো কেসেই খরচ খরচা মিটিয়ে বেশ কিছু বাড়তি হয়েছিল। তাই তোমার দাদাভাই দু’লাখ টাকা খুইয়ে চার লাখ সাতাত্তর হাজার ফিরে পেলেন। তুমি এ নিয়ে আর ভেবো না। আমার কাছ থেকে একটা পয়সাও খরচ করতে হয়নি শেষ পর্যন্ত। আগের দুটো অপারেশনের ইতিহাস এটুকুই”।

পরিতোষের কথা শুনতে শুনতে নবনীতা, অর্চনা আর সীমন্তিনী অবাক হয়ে একে অপরের মুখের দিকে তাকাচ্ছিল বারবার। পরিতোষের কথা শেষ হতে সীমন্তিনী বুকে আটকে থাকা শ্বাস ছেড়ে বলল, “ইশ আমার জন্য তোমাকে কত কিছুই না করতে হচ্ছে পরি? আমি তোমার ওপর খুব জুলুম করে ফেলেছি, সেটা বুঝতে পারছি। কিন্তু আমার যে আর কোন উপায়ও ছিল না। কিন্তু পরি দাদাভাই আর রচুর ওপরে তুমি যে দুটো ভিজিল্যান্স টিম নিয়োগ করেছো, তাদেরকেও তো প্রচুর টাকা দিতে হবে। আর এবারে তো র*্যানসমের ব্যাপার নেই। তাহলে কী করে সামলাবে এতকিছু”?

পরিতোষ হেসে বলল, “ভেবো না ডার্লিং। সব সামলে নেব আমি। তবে এতদিন একটা ব্যাপার নিয়ে একটু চিন্তিতই ছিলাম আমি। তোমার দাদাভাইয়ের ওপর যারা নজর রাখছে, তাদের প্রত্যেককে দিনে তিন হাজার হিসেবে কন্টাক্ট করেছি। দেড় মাসের ওপর হয়ে গেল তারা ডিউটি দিচ্ছে। মাঝে মাঝে আমি তাদের কিছু কিছু পেমেন্ট অবশ্য করে যাচ্ছি। কিন্তু তাদের পুরো পাওনা গন্ডা মেটাবার ব্যাপারে একটু চিন্তা হচ্ছিলই। কিন্তু বিমল আগরওয়ালার কেসটা হাতে পেয়েই নিশ্চিন্ত হয়ে গেছি। আর এবারে অপারেশনের যা ব্লু প্রিন্ট বানিয়েছি তাতে তিনটে টিমের মোট আটাশ বা ত্রিশ জনকে অ্যাকশনে নামাতে হবে। তিনজন সিকিউরিটিকে চার মাসের আর অন্য তিনজনকে দু’মাসের বেতন দিতে হবে। পাঁচ জন ইনফর্মার আগে থেকেই কাজ করছে। আরও দু’একজনকে কাজে লাগাতে হবে। অনেক জিনিসপত্র ভাড়া করতে হবে। দু-তিনটে গাড়ি চার পাঁচটা বাইক আর একটা এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিতে হবে। সবকিছু মিলিয়ে বাজেট হচ্ছে প্রায় চল্লিশ লাখ টাকার মত। বিমল আগরওয়ালার কাছ থেকে চল্লিশ পঞ্চাশ লাখ তো ছাড়, দু’কোটি টাকাও আদায় করতে পারব। তাই টাকার যোগান নিয়ে কোন সমস্যাই নেই। মোট কথা, আমার সব কেসের মত এ কেসেও গঙ্গাজলেই গঙ্গাপূজো করব। তুমি ও নিয়ে একদম ভেব না”।

সীমন্তিনী এবার ঘাবড়ে গিয়ে বলল, “আমি আর ভাবতে পাচ্ছি না পরি। তোমার কথা শুনে আমার মাথা ঘোরাচ্ছে। চল্লিশ লাখ টাকা খরচ হবে! আর তুমি এর সবটাই আদায় করবে বিমলের কাছ থেকে”?

পরিতোষ একটু হেসে বলল, “এই জন্যেই তো আমি এতদিন এসব কথা তোমাকে বলিনি ডার্লিং। পয়সা ছাড়া এ দুনিয়ায় কিচ্ছুটি করতে পারবে না তুমি। তাই তো আমাদের মত লক্ষ লক্ষ পুলিশ অফিসার কেবল নিজেদের মাসিক বেতন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারে না। পরিবারের সকলের সব চাহিদা তারা পূরণ করতে পারে না। আর এ’জন্যেই তারা ঘুস খেতে শুরু করে। একটা মহৎ কাজ করতেও পয়সার প্রয়োজন হয়। আর আমি অফিসিয়াল ডিউটির বাইরে যা করছি, তাতে আমাকেও প্রচুর পয়সা খরচ করতে হয়। সে পয়সা আমি পাবো কোথায়? তাই প্ল্যানিং করে ওই অপরাধীদের কাছ থেকেই সেটা আদায় করে নিই। আর বিমল আগরওয়ালার পয়সার কোন অভাব নেই। এক দু কোটি কেন আমি চাইলে ওর কাছ থেকে দশ কোটি টাকাও আদায় করতে পারি। কিন্তু সেটার কোন দরকার নেই বলেই করছি না। আমার কাজের জন্য যতটুকু দরকার, তার কাছ থেকে ততটুকু পেলেই আমি খুশী। কিন্তু চল্লিশ লাখ টাকা তো আর র*্যানসম হিসেবে চাওয়া যায় না। চাইতে হবে পঞ্চাশ লাখ, নইলে এক কোটি। তাই পঞ্চাশ লাখই টার্গেট করে রেখেছি আপাততঃ। পরে দেখা যাক কী হয়। আর তুমি ওসব নিয়ে চিন্তা করে তোমার সময় আর শক্তির অপচয় কোর না প্লীজ। তুমি তোমার দু’পাশে দু’বোনকে নিয়ে আনন্দে থাকো। তাদেরকেও আনন্দে রাখো। আর আমাকেও ঠিকমত আমার কাজটা করতে দাও। নিজে রান্না বান্না না জানলেও, আমি একটা জিনিস ভাঁজতে জানি খুব ভাল মত। মাছের তেলে মাছ ভাজা। আচ্ছা, আর কথা নয়। একটা ফোন এসেছে অন্য মোবাইলে। তাই ছাড়ছি ডার্লিং এখন। গুড নাইট”।

সীমন্তিনী গুড নাইট বলবার আগেই লাইন কেটে গেল।
 

****************

মিসেস সবিতা আগরওয়ালা বেশ পরিপাটি করে সেজে গুঁজে বাড়ির গ্যারেজ থেকে নিজেই একখানা বিদেশী গাড়ি ড্রাইভ করে বাড়ি থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দুরে একটা মাঝারী সাইজের হোটেল কাম রেস্টুরেন্টে গিয়ে পৌঁছল বিকেল প্রায় ছ’টা নাগাদ। এই বিল্ডিংটার গ্রাউন্ড ফ্লোরে রেস্টুরেন্ট। আর দোতলা এবং তিন তলায় বোর্ডারদের ভাড়া দেবার জন্যে মোট চৌদ্দটা রুম আছে। ২০০৯ সালে দোতলার একদম কোনার দিকের একটা ডাবল বেডেড এসি রুম সবিতা মাসিক চুক্তিতে পাকাপাকি ভাবে ভাড়া নিয়ে রেখেছে। বিনিময়ে তাকে তখন মাসে মাসে পঞ্চাশ হাজার টাকা হোটেলে জমা দিতে হত। পয়সার তো তার আর অভাব নেই। ব্যাঙ্কে তার নামে নিজস্ব একাউন্ট আছে। আর তার স্বামী প্রতি সপ্তাহের শুরুতে সে একাউন্টে দু’লাখ টাকা করে জমা করে দেয়। ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে সে তার যখন যা প্রয়োজন হয় তুলে নেয়। আর এ টাকা খরচ করবার কোন হিসেবও কাউকে দিতে হয় না তাকে। অবশ্য তার কয়েক মাস বাদেই রুম ভাড়ার ব্যাপারটা বদলে গিয়েছিল।
 

পার্মানেন্ট গ্রাহক হবার সুবাদেই হোটেলের ম্যানেজারের সাথে সবিতার বেশ ভাল বন্ধুত্ব হয়েছে। তবে এ বন্ধুত্ব সাধারণ বন্ধুত্ব নয়। এ বন্ধুত্বের ভিত হচ্ছে আর্থিক দেনা পাওনা। হোটেলের ম্যনেজার সবিতার এক ছোটোখাটো লেভেলের অলিখিত এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। তবে এই আর্থিক লেনদেনের ব্যাপারটা কিন্তু তাদের দু’জনের মধ্যেই শুধু সীমাবদ্ধ নয়। ম্যানেজারের সাথে আসল লেনদেন হয় তৃতীয় কোন একজনের সাথে। সেখানে সবিতা শুধুই ম্যানেজারের এক মাধ্যম। ছোট হোটেল। তাই তার পসারও কম। লোকজনের ভিড়ও কম। তবে হোটেলের রেস্টুরেন্টে বেশ ভাল লোক সমাগম হয়।
 

রেস্টুরেন্টে ঢুকে সবিতা রোজকারের মত আজও প্রথমেই ম্যানেজারের কাঁচে ঘেরা কেবিনের দিকে এগিয়ে গেল। কেবিনের ভেতরে ঢুকে ম্যানেজারকে সে জিজ্ঞেস করল, “কোনও খবর আছে”?

ম্যানেজার সবিতার দিকে বিস্মিত চোখে চেয়ে জবাব দিল, “এ কি ম্যডাম? আপনি তো বলেছিলেন যে আজ আর ......”

সবিতা তাকে মাঝ পথেই থামিয়ে দিয়ে বলল, “ওটা আমার ভুল হয়েছিল। যেটা আশা করেছিলাম, সেটা হল না বলেই তো চলে এলাম। তা বলুন তো, কোনও খবর টবর সত্যিই কিছু আছে”?

ম্যানেজার স্মিত হেসেও একটু দ্বিধার সাথে জবাব দিল, “না ম্যাম, এখন তো তেমন কোনও খবর নেই। আসলে আপনার পছন্দের একজন হাতে ছিল ঠিকই। কিন্তু আপনি আসবেন না শুনেই তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। তাই আজ আপনি ফ্রি। তবে আপনার রুম সার্ভিসিং করা আছে”।

সবিতা একটু হতাশ হয়ে বলল, “একেবারেই কিছু নেই”?

ম্যানেজার আবার হেসে বলল, “একেবারেই যে নেই, তা ঠিক নয় ম্যাডাম। কিন্তু যা আছে, সে’সব যে আপনার পছন্দের তালিকায় পড়ে না”।
 

সবিতা একই রকম হতাশার সুরে বলল, “ওঃ, ঠিক আছে, আমি তাহলে রেস্টুরেন্টেই বসছি কিছুক্ষণ।” বলে কেবিন থেকে বাইরে বেরিয়ে এল।
 

রেস্টুরেন্টের ভেতরটা বেশ বড়সড়। খোলা হলঘরের ভেতর কুড়িটা গোলাকার টেবিল গ্রাহকদের জন্য পেতে রাখা। টেবিলের চারপাশ সুন্দর মখমলের কাপড় দিয়ে ঘেরা। প্রত্যেকটা টেবিলের চারপাশে চারটে করে সুদৃশ্য এবং আরামদায়ক চেয়ার। হলঘরের এক ধার বরাবর আটটা পর্দা ঘেরা ছোট ছোট কেবিন। প্রত্যেকটা কেবিনে ছোট্ট আয়তাকার একেকটা টেবিলের দু’পাশে দু’টো টু-সীটার সোফা। যেসব গ্রাহকেরা যুগলে এসে খাবার খেতে খেতে কিছুটা নিভৃতে রোমান্টিক মূহুর্ত কাটাতে চায়, এসব কেবিন গুলো তাদের জন্যই। বলাই বাহুল্য, বাইরের খোলা হলঘরের তুলনায় এই কেবিনগুলোতে বসে খেতে চাইলে গ্রাহকদের পকেট অনেক বেশী হাল্কা করতে হয়। এই মূহুর্তে সব ক’টা কেবিনের দরজাই পর্দা ঢাকা। তার মানে, সব ক’টা কেবিনেই এখন গ্রাহক আছে। অবশ্য সবিতা কখনোই এ’সব কেবিনে ঢোকে না। আসলে ঢোকবার প্রয়োজনই পড়ে না তার। কোন পছন্দসই সঙ্গী জুটলে সে দোতলায় নিজের ভাড়া করা রুমেই চলে যায় তাকে নিয়ে। আর খাবার দাবারের অর্ডার থাকলে বয় বেয়ারারা দোতলার ওই রুমেই সেসব পৌঁছে দেয়।

আজ যেহেতু ম্যানেজারের কাছে কোন সুখবর নেই, তাই সবিতা রেস্টুরেন্টের শেষ সাড়ির নির্দিষ্ট কুড়ি নম্বর টেবিলে তার নির্ধারিত সীটে এসে বসল। এমনটা এর আগেও বহুবার হয়েছে যে ম্যানেজার তাকে কোন সুখবর দিতে পারেনি। আর সে এমনিভাবে রেস্টুরেন্টের এই টেবিলে বসে থাকতে থাকতে নিজের প্রতীক্ষার অবসান ঘটাবার চেষ্টা করে গেছে। মাঝে মাঝে তার প্রতীক্ষার অবসান ঘটতো। আবার মাঝে মাঝে বিফল মনোরথ হয়ে ফিরেও যেতে হয়েছে তাকে। আজও তাকে অমন প্রতীক্ষাই করতে হবে। কে জানে তার প্রতীক্ষার আজ অবসান ঘটবে কি না। তবে সবিতার টেবিলের বাকি তিনটে সীটও এ মূহুর্তে খালি। রাগ হচ্ছে নিজের ছেলে বিকির ওপর। ছেলেটা কলেজ থেকে ফিরে বাড়িতেই এল না আজ। কে জানে কোথায় কার সাথে সময় কাটাচ্ছে। কিন্তু সকালে কলেজে যাবার আগে ছেলে মাকে কথা দিয়ে গিয়েছিল যে কলেজ থেকে সে আজ তাড়াতাড়িই ফিরবে। আর বাড়ি এসে তার মাম্মির সাথে অনেকটা সময় কাটাবে। ছেলে তার সাথে থাকলে সবিতার আর কিছুই চাই না। বছর দেড়েক আগে থেকে তাদের মা-ছেলের সম্পর্কটা একটা অন্য মাত্রায় পৌঁছে যাবার পর থেকেই ছেলের সান্নিধ্যে সবিতা স্বর্গসুখ পায়। ছেলে সকালে ওভাবে বলে যাবার পর সবিতা মনে মনে আশা করেছিল যে বিকি আজ তিনটে সাড়ে তিনটের ভেতরেই হয়তো বাড়ি ফিরে আসবে। অধীর আগ্রহে সে ছেলের প্রতীক্ষায় ছিল। কিন্তু পাঁচটা বেজে যাবার পরেও ছেলে বাড়ি ফিরলোনা দেখে সে ছেলের মোবাইলে ফোন করেছিল। তিন চারবার নো রেসপন্স হবার পর পঞ্চম বারে ছেলের সাড়া পাওয়া গিয়েছিল। ছেলে তখন হাঁপাতে হাঁপাতে তার মাকে বলেছিল যে সে এক বন্ধুর বাড়িতে বিশেষ একটা কাজে আটকে পড়েছে। বাড়ি ফিরতে ফিরতে তার আটটা ন’টা বেজে যেতে পারে। ছেলে বাড়ি ফিরছে না শুনে সবিতার মেজাজটা বিগড়ে গিয়েছিল। ছেলে যে কোন বিশেষ কাজে আটকে পড়েছে, সেটা সবিতার বুঝতে একেবারেই অসুবিধে হয়নি। ছেলের অশান্ত লয়বিহীন শ্বাস প্রশ্বাসই তাকে সে’কথা বুঝিয়ে দিয়েছে। নিজের অশান্ত মনটাকে শান্ত করতে তাই সে সেজেগুজে এখানে এসেছে। অবশ্য এখানে আসাটা তার নিত্যকার ঘটণা। রোজই সে বিকেল পাঁচটা নাগাদ এখানে আসে। কিন্তু ছেলে কলেজ থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে বলাতেই সে আজ তার অপেক্ষায় ছিল বাড়িতে। মনে মনে ভেবেছিল ছেলে যদি সত্যিই তার সাথে বিকেল আর সন্ধ্যেটুকু কাটায়, তাহলে আজ আর তাকে হোটেলে যেতে হবে না। সে’কথা ভেবেই সবিতা ম্যানেজারকে সকাল বেলাতেই জানিয়ে দিয়েছিল যে সে আজ হোটেলে আসছে না। কিন্তু শেষ মূহুর্তে তার আশায় ছেলে জল ঢেলে দিল বলেই তার মনটা বিরক্তি আর অস্বস্তিতে ভরে উঠেছিল। ছেলে আর এত তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরছে না, এটা বুঝেই দেরী হওয়া সত্বেও সে হোটেলে এসে পৌঁছেছে। কিন্তু ম্যানেজারের কথা শুনে তার মেজাজটা আরও বিগড়ে গেছে। ছেলের ওপর তার রাগ আরও বেড়ে গেল। নিজে তো কথা দিয়েও মায়ের কাছে এলই না, আবার তার পছন্দের একটা খাবারও তার হাত থেকে ফস্কে গেল।
 

পরিচিত বেয়ারাদের একজন তার টেবিলের পাশে এসে দাঁড়াতেই সে ফ্রুট স্যালাড আর কোল্ড ড্রিঙ্কসের অর্ডার দিল। আর মনে মনে বিগত কয়েকটা বছরে তার জীবনে কত পরিবর্তন এসেছে সে কথা ভাবতে লাগল।
 

খাবার সার্ভ হবার আগেই হোটেলের ম্যানেজার সবিতার কাছে এসে দাঁড়িয়ে খুব নিচু গলায় বলল, “ম্যাডাম রাত আটটা থেকে দু’ঘন্টার জন্যে একটা স্লট আছে। আপনার পছন্দের ক্যাটাগরি। নেবেন কি”?

সবিতা পরিষ্কার নিচু গলায় জবাব দিল, “আটটা থেকে দু’ঘন্টা? না ম্যানেজারবাবু, সেটা করতে পারব না। আপনি তো জানেনই যে আমি রাত ন’টার পর আর বাইরে থাকি না। একঘন্টার স্লট হলে ব্যবস্থা করুন। আর যদি দু’ঘন্টার জন্যেই চায়, তাহলে আটটার জায়গায় সাতটা থেকে শুরু করতে বলুন। আমি রাজি আছি”। ম্যানেজার আর কোন কথা না বলে নিজের কেবিনের দিকে চলে গেল।

ম্যানেজার চলে যেতে সবিতা ভাবতে শুরু করল নিজের অতীত জীবনের কথা। তার স্বামী বিমলকে সে বিয়ের অনেক আগে থেকেই চিনত। তার বাবার বন্ধুর ছেলে বিমল। কোটিপতি বাবার বিগড়ে যাওয়া ছেলে বিমল উঠতি বয়স থেকেই নারী মাংসলোভী হয়ে উঠেছিল। ছাত্র জীবন থেকেই সে বিভিন্ন বয়সী মেয়ে মহিলাদের সাথে শারীরিক সম্মন্ধে লিপ্ত ছিল। অবশ্য ওই সব নারী মহিলার মধ্যে সবিতা নিজেও ছিল। সবিতা যখন কলেজে সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্রী তখন থেকেই সে নিজেও মাঝে মাঝে বিমলের সাথে সেক্স করত। বিমলকে বিয়ে করবার স্বপ্ন সে কোনদিন দেখেনি। কারন সে আগে থেকেই জানত যে বিমল সবিতা ছাড়াও অনেক মেয়ে মহিলার সাথে সেক্স রিলেশনে আবদ্ধ। বিমল নিজেই তাকে বলত যে তার দেখা সমস্ত মেয়ে মহিলাদের মধ্যে সবিতাই সবচেয়ে সুন্দরী। কিন্তু কামকলার দিক থেকে সবিতা অতটা পরিপক্ক ছিল না। কিন্তু দুই পরিবারের চাপে পড়ে বিমল তাকেই বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিল। বিয়ের স্বপ্ন না দেখলেও কোটিপতির ঘরের ছেলের বৌ হতে সবিতাও আপত্তি করেনি। বিমল বিয়ের পরেও যে শুধু তার বৌকে নিয়ে খুশী থাকবে না, সে যে বিয়ের পরেও অন্যান্য মেয়ে মহিলার সাথে তার যৌন সম্পর্ক চালিয়ে যাবে, এ’সব কথা বিমল বিয়ের আগেই তাকে বলেছিল। তবে বিয়ের কথা যখন উঠেছিল তখন সবিতা পরিস্কার ভাবে বিমলকে জানিয়ে দিয়েছিল যে, বিমলের অন্য মেয়েদের সাথে যৌন সম্পর্ক সে মেনে নেবে যদি বিমল তাকে যৌনতা সহ অন্য সব দিক দিয়ে খুশী রাখবার প্রতিশ্রুতি দেয়। সে আরও পরিস্কার করে বলেছিল যে বিমল সারাদিন যেখানেই যার সাথে খুশী সেক্স করুক, রাতে ঘুমোবার আগে সবিতাকে পুরোপুরি ভাবে যৌনতৃপ্তি দিতে হবেই তাকে। বিমল সেদিন নিশ্চয়ই ভেবেছিল যে বিয়ে করবার মত এমন পাত্রী সে হাতে প্রদীপ নিয়ে সারা দেশ খুঁজেও দ্বিতীয় একটা কাউকে পাবে না। তাই হয়তো, কামকলায় অত পটু না হওয়া সত্বেও সবিতাকেই সে বিয়ে করেছিল সবিতার শর্ত মেনে নিয়ে। তাদের ফুলশয্যার রাতে বিমল তাকে ভোগ করতে করতে জানিয়েছিল, সেদিন দুপুরে সে তার এক বন্ধুর মা প্রমীলা আন্টির সাথে সেক্স করেছে। প্রমীলা আন্টির সাথে তার স্বামীর সেক্সের বিবরণ শুনতে শুনতে সবিতাও এক অন্য ধরণের উত্তেজনা উপভোগ করেছিল। তাদের বিয়ের পর প্রথম কয়েকটা মাস বেশ সুখেই কাটিয়েছিল সবিতা। রোজ রাতেই বিমলের সাথে তার শারীরিক মিলন হত। কিন্তু আগের মত গর্ভ নিরোধক উপায় অবলম্বন না করার ফলে বিয়ের এগারো মাসের শেষেই সে ছেলের জন্ম দিয়েছিল।
 

আর ঠিক তার পর থেকেই যেন তার জীবনটা ধীরে ধীরে পাল্টে যেতে শুরু করেছিল।
 
সবিতার বর্তমান বয়স পঁয়তাল্লিশের কাছাকাছি হলেও, আর বয়সের ভারে খানিকটা মুটিয়ে গেলেও তার চেহারার জৌলুস এখনও খুব একটা কমে যায় নি। দামী দামী বিদেশী ক্রিম আর লোশন ব্যবহার করবার ফলে তার গায়ের রঙ আর ত্বকের ঔজ্জ্বল্য এখনও অমলিন আছে। ছেলে হবার পর থেকেই তার শরীরটা ভারী হতে শুরু করেছিল। তখন থেকেই স্বামীর সাথে তার শারীরিক মিলন কমতে শুরু করেছিল। সপ্তাহে বা দু’সপ্তাহে একবার বিমলের সাথে তার মিলন হত। তবু প্রথমদিকে অতোটা চিন্তিত না হলেও চল্লিশে পৌঁছে যখন তার শরীরের ওজন পচানব্বই কেজি ছাড়িয়ে গিয়েছিল, আর পেটটা বেশ বেখাপ্পা রকমের উঁচু হয়ে উঠতে শুরু করেছিল, তখন থেকেই সে ভারী দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল। শরীরে মেদ আর চর্বির বেড়ে যাওয়াটা সে নিজেও বুঝতে পারছিল। আয়নার দিকে শরীরের ডান বা বাঁ দিক রেখে দাঁড়ালে তার স্ফীত পেট তার চল্লিশ ডি ডি সাইজের বুকের উচ্চতাকেও ছাপিয়ে যেতে শুরু করেছিল। দেখে মনে হত, সে বুঝি সাত বা আট মাসের গর্ভবতী। খুবই বিচ্ছিরি লাগত নিজের চোখেই। আর প্রায় তখন থেকেই সে স্বামীর সোহাগ পাওয়া থেকে পুরোপুরি ভাবে বঞ্চিতা। যদিও তারপর বিশেষ বিশেষ কিছু আয়ুর্বেদিক তেল এবং ওষুধ প্রয়োগ করে সে নিজের বুকের হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্য্য পুনরুদ্ধার করতে পেরেছিল। তার স্তনদুটো আগের চেয়েও অনেক বড় আর সুগঠিত হয়ে উঠেছিল। আর তার যৌনাঙ্গ তো আগের মতোই টসটসে ছিল। তার ছেলে বিকি তো তার পেট ফুঁড়ে বেরিয়েছিল। তাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সন্তানের জন্ম দিয়ে মায়েদের যোনি সুড়ঙ্গে যে শিথিলতা এসে থাকে, সবিতার যৌনাঙ্গে তেমনটা একেবারেই হয়নি। তবে শরীরে মাংস, চর্বি বেড়ে যাবার ফলে তার যৌনাঙ্গ তখন আরও তুলতুলে আরও স্ফীত হয়ে উঠেছিল। কিন্তু একদিকে তার বুক আর শরীর যেমন ভারী হয়ে উঠছিল, তার পাশাপাশি তার ফুলে ওঠা পেটটাও যেন আরও ফুলে উঠেছিল। আর তার শরীরের ওজনও সমান তালে বাড়ছিল।
 

তারপর থেকেই সে মহিমার যোগা ইনস্টিটিউটে যোগা থেরাপি নিতে শুরু করেছিল। আর বাড়িতেও একটা ট্রেডমিল কিনে নিয়েছিল। গত পাঁচ বছর ধরে নিয়মিত যোগা চর্চা আর ট্রেডমিল ব্যবহার করবার ফলে বর্তমানে তার শরীরের ওজন পঁচাশি কেজি। পেট আর তলপেটের অংশ পুরোপুরি সমতল না হলেও আগের মত আর সামনের দিকে অত বেশী উচিয়ে থাকে না। তবে মেদ আর চর্বির পরিমাণ অনেকটাই কমেছে। শাড়ি পড়লে এখন তার শরীরের বাঁক গুলো দেখতে বেশ ভালই লাগে। ব্লাউজ ব্রায়ের তলায় বুকের পিণ্ডদুটো পেটের তুলনায় অনেকটাই উঁচু হয়ে থাকে। তবে শালোয়ার কামিজ পড়লে তার স্ফীত পেটটা এখনও বেশ দৃষ্টিকটু লাগে। তাই বাড়ির ভেতরে নাইটি বা শালোয়ার কামিজ পড়লেও বাইরে গেলে সে এখন সব সময় শাড়ি পড়েই বেরোয়। কচি বুড়ো পুরুষেরা আবার তার দিকে লোভাতুর চোখে তাকাতে শুরু করেছে। এতে মনে মনে সে খুব খুশী হলেও, নিজের স্বামীকে আর আগের মত তার কাছে টেনে আনতে পারে নি। অবশ্য সেটা নতুন কিছু নয়। অনেক বছর আগে থেকেই তার স্বামী যে তার পরিবর্তে তূলনামূলক ভাবে বিভিন্ন কম বয়সী, বেশী সুন্দরী আর সেক্সি মেয়ে মহিলার সঙ্গলাভ করে আসছে, সে কথা সবিতার অজানা নয়। সবিতার হারিয়ে যাওয়া দৈহিক সৌন্দর্য যদিও এখন অনেকটাই ফিরে এসেছে, তবু বিমল আর তার প্রতি আগের মত আকৃষ্ট হয় না।

______________________________
[+] 3 users Like riank55's post
Like Reply
চালিয়ে যান দাদা। অস্মভব ভালো হচ্ছে। সাথে আছি।
Astroner
[+] 1 user Likes astroner's post
Like Reply
আপনার কাছে ss_sexy দিদির "আমি আমার স্বামী ও আমাদের যৌন জীবন" গল্পটার পুরোটা আছে?
Like Reply
(13-03-2020, 11:53 PM)astroner Wrote: চালিয়ে যান দাদা। অস্মভব ভালো হচ্ছে। সাথে আছি।

ধন্যবাদ দাদা।


(14-03-2020, 02:15 AM)dhakaboy Wrote: আপনার কাছে ss_sexy দিদির "আমি আমার স্বামী ও আমাদের যৌন জীবন" গল্পটার পুরোটা আছে?

পুরোটা হয়তো নেই। কিন্তু অনেকটুকই আছে। এটা শেষ হলে ওটা পোস্ট করবো নি যতটুক আছে।
Like Reply
(Update No. 151)

বিয়ের পর এতগুলো বছরে নিজের স্বামীকে সবরকম যৌন সম্ভোগের ছাড় দিলেও সবিতা নিজে কখনও পর পুরুষের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেনি। কিন্তু ছেলের যখন চৌদ্দ বছর অতিক্রান্ত হল তখন থেকেই তার শরীরের যৌনক্ষুধা যেন হু হু করে বাড়তে শুরু করেছিল। তখন পাশে শুয়ে থাকা স্বামীর নিস্তেজ শরীরটাকে নিয়েই সে নাড়াচাড়া করত। তাকে জাগিয়ে তুলতে চেষ্টা করত। নিজেই বিপরীত বিহারে সম্ভোগে লিপ্ত হতে চাইত। স্বামীর তরফ থেকে সাড়া না পেয়ে সে নিজেই উপযাচক হয়ে স্বামীর শরীরের ওপর উঠে সম্ভোগ করতে চাইত। কিন্তু ঘুম ভেঙে গেলেও বিমলের শরীর আসল কাজটার জন্য প্রস্তুত হত না। তার লিঙ্গের কাঠিন্যই আসত না। তখন একদিকে সবিতা নিজের শরীরের জ্বালায় ছটফট করত অন্যদিকে বিমল বিরক্ত হত। তখন থেকেই বিমল নিজেই দু’জনের বেডরুম আলাদা করে দিয়েছিল। কিন্তু সবিতার শারীরিক কষ্টের কথাও বিমল ঠিকই বুঝতে পারত।

বিমলের ভেতরেও কোন ঢাকঢাক গুড়গুড় নেই। সে সবিতাকে অনেক আগেই স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে যে স্ত্রীর সাথে সম্ভোগে সে আর একেবারেই তৃপ্তি পায় না। তাই সে রোজই কোন না কোন সুন্দরী সেক্সি মেয়ের সাথে পয়সার বিনিময়ে যৌনসম্ভোগ করেই বেশী সুখ পায়। সবিতা সেদিন মনে দুঃখ পেলেও সরাসরিই তার স্বামীকে জিজ্ঞেস করেছিল যে সে তাহলে কী করবে? তার দেহের যৌন ক্ষুধার পরিতৃপ্তি কিভাবে হবে? তার স্বামী তার প্রতি বিমুখ হবার পর থেকে তার নিজের কামক্ষুধাও যেন দিনে দিনে বেড়ে যাচ্ছিল। বিমলের কাছে জানতে চেয়েছিল সে’ ক্ষুধা সে কিভাবে নিবৃত্ত করবে? বিমল প্রথম দিকে সিঙ্গাপুর থেকে কয়েকটা ডিলডো এনে দিয়েছিল সবিতাকে স্বমেহনে তৃপ্তি পেতে। কিন্তু সে’সবে সবিতার ক্ষিদে মিটত না। তাই পরে বিমল খুব সরল ভাবেই তার প্রশ্নের উত্তরে বলেছিল, যে তাদের মধ্যে স্বামীস্ত্রীর সম্পর্ক আগের মতই থাকবে। বিমল অন্য কোন মেয়েকে বিয়ে করে তাকে নিজের ঘরে এনে তুলবে না। আর সবিতাকেও ডিভোর্স দেবার ব্যাপারে কখনোই ভাববে না। তবে সবিতা চাইলে বিমলের মতই সেও তার পছন্দসই ছেলে বা পুরুষের সাথে যৌন সম্ভোগ করতে পারে। পয়সা খরচ করলে এ কলকাতা শহরে সব কিছুই পাওয়া যায়। সক্ষম পুরুষ যৌনসঙ্গীরও যেমন অভাব নেই, তেমনি বিমলের পয়সারও কোনও অভাব নেই। সবিতার শারীরিক ক্ষুধা মেটাতে যত পয়সার প্রয়োজন হবে, তা বিমল দিয়ে যাবে। সবিতা স্বাধীনভাবে যে কারুর কাছ থেকে সঙ্গম সুখ নিতে পারে। বিমল এ ব্যাপারে কোনদিন কোন প্রশ্ন করবে না সবিতাকে। তবে বিমল সবিতাকে শুধু দুটো শর্ত মেনে চলতে পরামর্শ দিয়েছিল। প্রথম শর্ত, সবিতা যেন নিজেদের বেডরুমে অথবা নিজেদের বাড়িতে এসব কিছু না করে। বাড়িতে চাকর বাকর আয়া রাধুনীর অভাব নেই। তাদের একমাত্র ছেলেও তখন কৈশোর ছাড়িয়ে যৌবনে পা দিতে যাচ্ছিল। বাড়িতে সবিতা সেসব কাজ শুরু করলে বাড়ির চাকর বাকরেরা বা তাদের ছেলে বিকি ঠিকই বুঝতে পারবে। তখন তাদের মান সম্মান বলতে আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে না। তাই সবিতার যেদিন ইচ্ছে হবে সে বিমলকে বললেই বিমল বাড়ির বাইরে কোথাও সব কিছুর আয়োজন করে দেবে। আর দ্বিতীয় শর্ত ছিল, বিমল সবিতাকে কেবল নিজের যৌনকামনার নিবৃত্তির জন্যেই এমন ছাড় দিচ্ছে। তাই সবিতা একই পুরুষের সাথে রোজ রোজ মিলতে পারবে না। একেক দিন একেক জনের সাথে সময় কাটাতে হবে তার। কারো সাথে প্রেম ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবে না। বিমল যেমন অন্য কাউকে তার ঘরে এনে তুলবে না বলে কথা দিচ্ছে, তেমনই সবিতাকেও চিরদিন বিমলের স্ত্রী হয়েই থাকতে হবে। অন্য কোন ছেলে বা পুরুষকে সে বিয়ে করবার কথা ভাবতেই পারবে না। আর শরীরের ক্ষুধা মেটাতে গিয়ে হিতাহিত জ্ঞান শূণ্যা হয়ে সে নিজে যেন কখনো গর্ভবতী হয়ে না পড়ে। নিরুপায় সবিতার স্বামীর কথা মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। সেই থেকেই একই বিছানায় পাশাপাশি শুলেও তাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য জীবনের সুখ বলতে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকেনি। তবু স্বামীর পরামর্শে সে তখন থেকেই ব্যভিচারে লিপ্তা হয়নি। প্রথম প্রথম স্বমেহনের মাধ্যমেই তৃপ্তি পেতে চেয়েছিল। কিন্তু কথায় বলে না? একবার রক্তের স্বাদ পেলে বাঘিনী আর মাংস না খেয়ে থাকতে পারে না। তার অবস্থাও প্রায় তেমনই হয়েছিল। দিনে দিনে সবিতার দেহের তাড়নার মাত্রাও বাড়তে বাড়তে এমন একটা পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছিল, যে সে স্বামীর পরামর্শ মতই পর পুরুষের সাথে ব্যাভিচারের পথে পা না বাড়িয়ে থাকতে পারেনি। তবে প্রথমদিকে সে তার স্বামীর সাহায্য ও সহযোগিতাতেই পরপুরুষের সাহচর্য নিতে শুরু করেছিল। সবিতার যখন প্রয়োজন হত সে তার স্বামীকেই বলত। বিমলই কোন এজেন্সী থেকে বা অন্য কোন ভাবে কোনও গিগোলো বা পুরুষ বেশ্যা ভাড়া করে দিত। লোকেশানও ঠিক করে দিত কোন একটা হোটেল বা লজে। তবে তার কিছুদিন বাদে সবিতা নিজেই যখন সমস্ত আটঘাট বুঝতে শিখল, তখন থেকে তাকে আর বিমলের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হত না। সে নিজেই নিজের প্রয়োজন মেটাতে শিখে গিয়েছিল। মহিমার মাধ্যমেও সে মেল এসকর্ট নিতে শুরু করেছিল। বিমল প্রতি মাসের শুরুতেই সবিতার ব্যাঙ্ক একাউন্টে দেড় দু’লাখ টাকা জমা করে দিত। আর সে টাকা খরচ করেই সবিতা নিজের শারীরিক চাহিদা মেটাত। বিমল সবিতাকে যথেচ্ছ ভাবে যৌন কামনা চরিতার্থ করবার সুযোগ দিলেও প্রথম থেকেই স্ত্রীকে সাবধান করে বলে দিয়েছিল যে এসব ঘটণার কথা আর কেউ যেন জানতে না পারে কোনভাবেই। বিমলের তরফ থেকে এ নিয়ম এখনও একই রকম চললেও সবিতা কিন্তু সব কিছু সকলের কাছে গোপন রাখতে পারেনি।
 

প্রায় বছর খানেক এ’ভাবেই চলেছিল। কিন্তু তারপর লোকেশান নিয়ে তাকে প্রায়শঃই খুব ঝামেলা পোয়াতে হত বলে বিমলই বাড়ির কাছাকাছি বলে, এ হোটেলের দু’তলার ওই রুমটা পাকাপাকিভাবে সবিতার জন্য মাসিক চুক্তিতে ভাড়া নিয়েছিল। তারপর থেকে সবিতাকে আর জায়গা খুঁজে খুঁজে হয়রান হতে হত না। তার যেদিন ইচ্ছে হত, নানা সোর্স থেকে পুরুষ মানুষ ভাড়া করে এ হোটেলে চলে আসত। তবে দু’ তিন ঘন্টার বেশী সে কখনোই থাকত না। আর এখনও থাকে না।

কিন্তু অন্য এক অসুবিধে দেখা দিয়েছিল রুম ভাড়া নেবার মাস ছয়েক বাদে। সবিতা ওই রুমে কেন আসে তা হোটেলের বয় বেয়ারা ম্যানেজার আর স্টাফদের কাছে বেশীদিন গোপন রইল না। একদিন ম্যানেজার সবিতাকে তার কেবিনে ডেকে সরাসরি বলেছিল যে সবিতা তার হোটেলের রুমে এসে কি করে, তা এ হোটেলের কর্মচারীরা প্রায় সকলেই বুঝে ফেলেছে। তাই যে কোনও সময় সবিতা যে কোনও বিপদে পড়তে পারে। সে’কথা শুনে সবিতাও দৃঢ় ভাবে বেশ কড়া ভাষায় ম্যানেজারকে বলেছিল যে সে তার স্বামীকে না জানিয়ে এখানে আসে না। স্বামীর কাছে লুকিয়েও কিছু করে না। তাই তার ভয় পাবার কিছুই নেই। আর তার স্বামীর যতটুকু প্রভাব প্রতিপত্তি আছে, তাতে বাইরের কাউকে ভয় পাবারও তার কিছু নেই। যে কোন ঝামেলাই হোক, তার স্বামী ঠিক সামলে নেবে। রীতিমত মাসিক চুক্তি অনুযায়ী পয়সাও তারা দিয়ে যাচ্ছে। তাই সবিতা সেই হোটেলের একজন পার্মানেন্ট এবং মূল্যবান গ্রাহক। আর গ্রাহকের সুবিধে অসুবিধে দেখবার ভার হোটেল কর্ত্তৃপক্ষেরই।

হোটেলের ম্যানেজার সবিতার ঝাঁঝালো উত্তর শুনে তখন অনেকটা নরম সুরে বলেছিল, “ম্যাডাম, আপনি আমাকে ভুল বুঝবেন না। আপনার স্বামীকে এ শহরে কে না চেনে বলুন তো। তার প্রভাব প্রতিপত্তি অর্থ ক্ষমতা যে অপরিসীম তা কে না জানে। আমার মনে হয় আপনি আমার কথার আসল অর্থটা ঠিক বুঝতে পারেননি”।

ম্যানেজারের নরম সুর শুনে সবিতাও অপেক্ষাকৃত শান্ত ভাবে বলেছিল, “ঠিক আছে, তাহলে আরেকটু খুলে পরিষ্কার করে বুঝিয়েই দিন”।

ম্যানেজার তখন বলেছিল, “ম্যাডাম দেখুন, এ কথাগুলো মিঃ আগরওয়ালার সাথে করতে পারলেই খুব ভাল হত। কিন্তু তিনি তো আর এখানে আসেন না। আর ফোনেও এতসব কথা আলোচনা করা সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়ে আপনাকেই বলতে হচ্ছে। দেখুন ম্যাডাম, হোটেলের বোর্ডাররা তাদের রুমে নিজেদের বন্ধু-বান্ধব বা পরিচিত কাউকে আনতেই পারে। অনেকেই তাদের পছন্দসই পার্টনারের সাথে রাতও কাটায়। কিন্তু তারা তো এক দু’দিনের জন্য এসেই ওসব করে। দু’দিন থেকে তিন দিনের দিন তারা চলে যায়। কিন্তু আপনার মত কেউ তো আর পাকাপাকিভাবে রুম ভাড়া নিয়ে থাকে না। তাই তাদের কেউ কিছু বলবার সুযোগও পায় না। আপনি আমাদের হোটেলের পার্মানেন্ট কাস্টমার। তাই এখানকার বয় বেয়ারা স্টাফ সকলেই আপনাকে চেনে এবং আপনার ওপর বিশেষ নজর রাখে। তাই এতদিনে তারাও খুব ভালভাবে জেনে গেছে যে এখানে আসবার পেছনে আপনার মূল উদ্দেশ্যটা ঠিক কী। তারা অনেকেই এসব নিয়ে নানারকম গুজগুজ ফিসফাস কথাবার্তা বলে। আমরা কর্ত্তৃপক্ষের তরফ থেকে তাদেরকে নিবৃত্ত করবার চেষ্টা ঠিকই করি। কিন্তু ম্যাডাম, বোঝেনই তো এরা সবাই বিলো স্ট্যান্ডার্ড। শুধু মুখের কথায় এদের বাগে রাখা সম্ভব হয় না। তারজন্য প্রয়োজন হয় টাকা পয়সা। কিন্তু আপনার কাছ থেকে হোটেলের বিলের বাইরে তো আমরা কিছু নিতে পারি না। তাই আমাদের কাছ থেকেই এক্সট্রা কিছু খরচা হয়ে যাচ্ছে রেগুলার বেসিসে। তাই আমাদের মালিক পক্ষের নির্দেশে আপনার সাথে এ’সব নিয়ে কিছু পরামর্শ করে সমাধান বের করার চেষ্টা করব বলেই আপনাকে ডেকেছি আমি। দেখুন ম্যাডাম, আমরা তো কাউকেই কোনভাবে অসুবিধেয় ফেলতে চাই না। আর আপনার মত এমন একজন পার্মানেন্ট বোর্ডারের সামান্যতম অসুবিধেও হোক, এটা আমরা একদম চাই না। তাই আপনি যদি শান্ত হয়ে মন দিয়ে আমার কথাগুলো শোনেন, তাহলে আমরা এমন রাস্তা নিশ্চয়ই খুঁজে বের করতে পারব, যাতে সব দিকের সবকিছু সুন্দর ভাবে ট্যাকল করা যায়”।
 

সবিতা ম্যানেজারের সব কথা শুনে বলল, “আপনাদের স্টাফ বয় বেয়ারাদের মুখ বন্ধ রাখতে যে অতিরিক্ত খরচ আপনাদের করতে হচ্ছে, সেটা কি আমাকে ভরতে হবে? এটাই বলতে চাইছেন আপনি”?

ম্যানেজার তখন বলেছিল, “না ম্যাডাম, আমি আগেই বলেছি, আপনাদের কাছ থেকে আমরা সেটা নিতে পারিনা। আর তেমনটা করতেও চাই না। তবে এ ব্যাপারটার পাশাপাশি আরও দু’একটা ব্যাপার একসঙ্গে পাঞ্চ করে দিলে কিন্তু সুন্দর এক সমাধানের পথ বেরিয়ে আসতে পারে। আর তাতে আপনাকে একটা এক্সট্রা পয়সাও খরচ করতে তো হবেই না, বরং আপনার অনেক খরচ কমেও যাবে। আপনি যদি চান তাহলে সে’সব নিয়েই ডিসকাস করতে চাই”।
 

সবিতা শুনতে রাজী হলে ম্যানেজারবাবু অনেকক্ষণ ভেবে বলেছিল, “দেখুন ম্যাডাম, আপনি যখন আপনার রুমে কোন সঙ্গী নিয়ে ঢোকেন তখন তো হাল্কা কিছু খাবার বা ড্রিঙ্কসের অর্ডার করেই থাকেন। আর সেসব খরচ আপনার বিলের মধ্যেই ধরে দেওয়া হয়। কিন্তু ম্যাডাম, যাদেরকে নিয়ে আপনি রুমে ঢোকেন তাদেরকেও তো আপনাকে আলাদা করে কুড়ি পঁচিশ হাজার টাকা পেমেন্ট করতে হয়, তাই না? আবার ওদিকে বয় বেয়ারাগুলোর মুখ বন্ধ রাখবার জন্যে আমাদেরকেও কিছু উপরি খরচ করতে হচ্ছে যা আমরা কোন হিসেবে ঢোকাতে পারছি না। তাই হোটেলের তরফ থেকে আমি আপনাকে এমন একটা সাজেশান দিতে চাই, যেটা আপনি মেনে নিলে আমাদের ও আপনার দু’পক্ষেরই লাভ হবে”।

সবিতা মন দিয়ে ম্যানেজারের কথাগুলো শুনছিল। ম্যানেজার থামতেই সে বলেছিল, “তা বেশ, শুনি কি সাজেশান আপনার”?

ম্যানেজার বলল, “দেখুন ম্যাডাম, শুধু আমাদের হোটেলের কথাই নয়, প্রায় সব হোটেলেই বাইরে থেকে আসা অনেক পুরুষ বোর্ডাররাই দিনান্তে কাজের শেষে একটু আধটু রিল্যাক্স করতে চায়। তখন তারা অনেকেই পয়সার বিনিময়ে নারী শরীরের সান্নিধ্য চায়। অনেক হোটেলে তাদের নিজেদেরই কিছু কিছু মেয়ে বা মহিলা থেকে থাকে। বোর্ডারদের কাছ থেকে পয়সা নিয়ে তারা ওই সব মেয়ে মহিলাদের বোর্ডারদের কাছে সাপ্লাই করে। হোটেল কর্ত্তৃপক্ষ নিজেদের কমিশন বাবদ একটা ভালো পারসেন্টেজ রেখে বাকি টাকাটা ওই মেয়েগুলোকে দিয়ে দেয়। আমাদের হোটেলে অবশ্য অমন বাঁধাধরা মেয়ে মানুষ নেই। আর আমাদের হোটেল তো খুবই ছোট। সর্ব সাকুল্যে মোট চৌদ্দটাই রুম। আর সব বোর্ডাররাই যে অমন নারীসঙ্গ খোঁজে, তাও তো নয়। কিন্তু সিঙ্গল বেডেড রুমের বোর্ডারদের মধ্যে এমন চাহিদা কিন্তু ঠিকই আছে। আমাদের কাছে অনেক বোর্ডারই মাঝে মাঝে এমন অনুরোধ নিয়ে আসে। তখন বোর্ডারদের চাহিদা পূরণ করবার জন্যই সম্ভব মত আমরা বাইরে থেকে মেয়ে মহিলা এনে বোর্ডারদের ঘরে পাঠাঁই। কিছু কিছু বোর্ডার নিজেরাও নিজেদের পছন্দমত সঙ্গিনী নিয়ে আসে। কিন্তু বোর্ডারদের উদ্দেশ্য আর আপনার উদ্দেশ্য তো বলতে গেলে একই। মাঝে শুধু একটা লেনদেনের ব্যাপার থেকে যাচ্ছে। আমি জানি, টাকা পয়সা আপনার কাছে কোন ইস্যুই নয়। তবে আপনাকে নিয়ে আমরা যে অসুবিধের সম্মুখীন হয়েছি, তার একটা সমাধান কিন্তু এভাবে আমরা বের করতে পারি”।
 

সবিতা জিজ্ঞেস করল, “এভাবে মানে কিভাবে? সেটা একটু খুলে বলুন”।

ম্যানেজার বলেছিল, “ম্যাডাম, আপনি তো পুরুষ সান্নিধ্য পাবার জন্যেই আমাদের এখানে আসেন। আর সে জন্যে এক দু’ঘন্টার জন্যে আপনাকে কুড়ি থেকে চল্লিশ পঞ্চাশ হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এখন ধরুন, আপনি যদি আমাদের হোটেলের কোন বোর্ডারকে সঙ্গ দিতে পছন্দ করেন, তাহলে আপনাকে কিন্তু একটা পয়সাও খরচ করতে হবে না। মানে যদি আপনি তাদের রুমে যেতে রাজী হন, বা তাদেরকে যদি আপনার নিজের রুমেই নিতে চান, আর কি। তাহলে কোন সমস্যাই আর থাকে না। যে খুশী পাবার জন্যে আপনাকে কুড়ি থেকে চল্লিশ হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে, আপনি বিনে পয়সাতেই সে খুশী উপভোগ করতে পারবেন। আর আমাদের বোর্ডাররাও নিজেদের চাহিদা মেটাতে পারবে। আপনাদের দু’পক্ষের উদ্দেশ্যই পূরণ হয়ে যাবে। তবে তার বিপরীতে সেই বোর্ডারের কাছ থেকে আমরা দশ থেকে পনেরো বা কুড়ি হাজার টাকা নিতে পারব। মানে সে জানবে যে ওই টাকার বিনিময়েই সে আপনাকে পাচ্ছে। এখন ওই টাকা থেকে আমরা বয় বেয়ারা গুলোর মুখ বন্ধ রাখতে যা দরকার সেটা দিয়ে দিতে পারব। আমাদের নিজেদের ক্যাশ থেকে কিছু দিতে হবে না। হিসেবের বাইরে বাইরেই সব কিছু মিটে যাবে। আর তার পরেও আমাদের হাতে বেশ কিছু টাকা সারপ্লাস থেকে যাবে। আপনি চাইলে ওই টাকার একটা অংশ আমরা আপনাকে দিয়ে দেব। ধরুন ফিফটি পার্সেন্ট। বাকি ফিফটি পার্সেন্ট আমরা নেব। তারপর ধরুন, আপনার রুমে যেসব খাবার দাবার বা ড্রিঙ্কস সার্ভ করা হবে, সে বাবদও আমরা আপনার কাছ থেকে আলাদা করে কোন পয়সা নেব না। আমার কথাটা বুঝতে পারছেন তো ম্যাডাম। আরো সহজ ভাবে বলতে আপনি যদি আমাদের হোটেলের বোর্ডারদের সাথেই সময় কাটাতে রাজি থাকেন, তাহলে আপনার উদ্দেশ্যসিদ্ধির পাশাপাশি আপনি এক ঘন্টার জন্যে কম করেও পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকা উপার্জন করতে পারবেন। ওপরন্তু আপনাকে একটা পয়সাও খরচ করতে হচ্ছে না, কারণ খাবার আর ড্রিঙ্কসের বিলটা আমরা ছেড়ে দিচ্ছি। আপনাকে শুধু মাসিক ঘর ভাড়াটাই দিয়ে যেতে হবে। আর আমরাও একই সমান পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকা হিসেব বহির্ভূত ভাবে আমাদের হাতে পাচ্ছি। তার থেকে বয় বেয়ারাদের রোজ হিসেবে টাকা দিয়ে, আর আপনার রুমে সার্ভ করা খাবার ও ড্রিঙ্কসের পয়সা বাদ দিয়েও আমাদের হাতে কম করেও তিন থেকে সাত হাজার টাকা থেকেই যাবে। সেটা আমাদের উপরি লাভ। তাহলে ভেবে দেখুন, আপনি যা চাইছেন সেটা তো পাচ্ছেনই। উপরি হিসেবে পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকা নিজের ব্যাগে পুরে বাড়ি যেতে পারবেন রোজ। আর সবরকম খরচ খরচা চুকিয়ে বুকিয়েও আমাদের হাতেও তিন থেকে ছ’ সাত হাজার টাকা থেকে যাচ্ছে। সেটা আমাদের লাভ। আর বোর্ডারদের চাহিদাও মিটছে। এভাবে যদি আমরা একটা কন্ট্রাক্ট করে নিই তাহলে কিন্তু দু’পক্ষেরই আর্থিক লাভ হচ্ছে। আর বোর্ডাররাও খুশী হচ্ছে। এবার কি ব্যাপারটা পরিষ্কার করে বোঝাতে পেরেছি ম্যাডাম”?
 

সবিতা ম্যানেজারের কথাগুলো বেশ ভাল করে ভেবে দেখেছিল। তার কাছে গোটা ব্যাপারটা তখন পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। সে মনে মনে ভেবেছিল যে, সে যে সুখের আশায় এখানে আসে, সে সুখ পেতে তো তাকে এদিক ওদিকে নানাভাবে যোগাযোগ করে সঙ্গী খুঁজতে হয়। আর তাদেরকে নিয়ে রুমে ঢুকে বিছানায় ওঠবার আগেই তাদের হাতে কখনো দশ, কখনো পনেরো, কখনো বা কুড়ি হাজার টাকাও ধরিয়ে দিতে হয়। ম্যানেজারের কথায় রাজি হলে তাকে কোন পয়সা খরচ করতে হচ্ছে না। নিজের রুমে সার্ভ করা খাবার দাবারের পয়সাও তাকে পেমেন্ট করতে হবে না। তাকে এসকর্ট খুঁজে বেড়াতে হবে না। আর সবচেয়ে বড় কথা হল সঙ্গীদের টাকা দেবার বিপরীতে সে নিজেই টাকা পাচ্ছে। সেটাও তো একটা বিরাট ব্যাপার। তবে একটা কথাই তার মনে একটু খচখচ করছিল। এতদিন সে যা করে এসেছে, তা ছিল কেবলই তার কাম বাসনা চরিতার্থ করা। তার নিজের দেহের ক্ষুধা নিবৃত্তি। কিন্তু ম্যানেজারের কথায় রাজি হলে সে কাম চরিতার্থ করবার পাশাপাশি নিজের দেহটাকে বিক্রী করে পয়সা উপার্জনও করবে। তাহলে সে কি পুরোপুরি বেশ্যা হয়ে যাচ্ছে না?

আবার পরক্ষণেই তার মনে হয়েছিল, বেশ্যা হতে তার বাকিই বা আর কি আছে? বেশ্যা মানেই তো বারভোগ্যা নারী। যে নারীকে বারোজন পুরুষ ভোগ করে সে-ই তো বারভোগ্যা বা বারবণিতা। আর তার মানে তো বেশ্যাই। তাহলে সে তো সেই অর্থে অনেক আগেই বেশ্যা হয়ে গেছে। তাহলে আর ম্যানেজারের প্রস্তাবে রাজি না হবার আর কি কোন কারণ থাকতে পারে?
 

আবার আরেকটা চিন্তাও তার মনে এসেছিল। এখন সে নিজের পছন্দমত সঙ্গী নিয়েই সময় কাটায়। তখন কি আর সেটা সম্ভব হবে? ম্যানেজার তো তার হোটেলের যে কোনও বোর্ডারকেই তার কাছে পাঠাতে পারে। তার ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দের কোন মূল্যই থাকবে না তখন। বুড়ো হাবরা কুৎসিত কদাকার বোর্ডাররাও তাকে ভোগ করতে চাইতে পারে। ম্যানেজারের সাথে চুক্তিবদ্ধ হলে বোর্ডার পছন্দ না হলেও সে তাকে ফিরিয়ে দিতে পারবে না। আর অপছন্দের কোন পুরুষের কাছে নিজের শরীরটা তুলে দিতে তার একেবারেই ভাল লাগে না। কেমন যেন গা ঘিনঘিন করে তার। আসল সুখটা সে প্রাণ ভরে উপভোগ করতে পারে না।
 

আরেকদিক দিয়ে ভাবলে, এতে একদিকে সবিতার যেমন আর্থিক খরচ কমছে, অন্যদিকে সে কিছু অর্থ উপার্জনও করতে পারছে। সেদিক দিয়ে সবটাই তার লাভ। কিন্তু এ লাভের বিনিময়ে হোটেলের মালিক বা ম্যানেজারের সাথে কি তাকে আরেক চুক্তি করতে হবে? এ ব্যাপারে ম্যানেজার তখন অব্দি পরিস্কার করে কিছু খুলে বলে নি।
 

এ’সব কথা ভেবেই সবিতা বলেছিল, “ম্যানেজারবাবু, আপনার প্রস্তাব আমি মেনে নিতে পারি, যদি এতে কিছু কিছু হেরফের করতে রাজি থাকেন। তবে তার আগে আমাকে একটা কথা বলুন তো। এমন একটা চুক্তি করতে আমাকে কি আপনার সাথে বা আপনার মালিকের সাথে অন্য কোনভাবে আরও কিছু কন্ট্রাক্ট করতে হবে”?
 

ম্যানেজার বলেছিল, “আমি আপনার কথার মানেটা ঠিক বুঝতে পারলাম না ম্যাডাম। একটু খুলে বলবেন প্লীজ”?

সবিতা এক মূহুর্ত চুপ করে থেকে বলেছিল, “দেখুন ম্যানেজারবাবু, একটা চুক্তি করতে হলে কোনরকম লুকাছুপি না করে সব কিছু খোলাখুলি ভাবে আলোচনা করে নেওয়া দরকার। আপনি চুক্তিটার ব্যাপারে যতটুকু বলেছেন তাতে আমার লাভ ছাড়া কোনদিকে ক্ষতির কিছু আছে বলে মনেই হচ্ছে না। অবশ্য আপনাদের দিকেও তাই। তবু একটা জিনিস পরিস্কার করে জানতে চাইছি। আমার আর আপনাদের হোটেলের মধ্যে এমন একটা চুক্তি হলে আমাকে কি আলাদাভাবে আপনাকে বা আপনাদের মালিক পক্ষের কাউকে কোনভাবে খুশী করতে হবে? মানে আপনারা নিজেরাও কি কখনো আমার রুমে এসে আমার সাথে সময় কাটাতে চাইবেন? বা আমাকে আপনাদের পছন্দের কোন জায়গায় নিয়ে যেতে চাইবেন”?

ম্যানেজার একটা অমায়িক হাসি হেসে বলেছিল, “সত্যি ম্যাডাম, আপনি দেখতে যেমন সুন্দরী আর সেক্সী, ততটাই বুদ্ধিমতীও। তবে ম্যাডাম, আপনার মত এত সুন্দরী আর সেক্সী মহিলার সাথে সময় কাটাবার সুযোগ পেলে, কেউ কি আর দ্বিধা করবে ম্যাডাম? তবে আমাদের মালিক এ ব্যাপারে আমাকে আগেই স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন যে, তাতে যদি আপনার কোন আপত্তি থাকে তাহলে আমরা আপনাকে একেবারেই কোন চাপ দেব না
আমরা আমাদের আর্থিক লাভটা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকব। তবে আপনি, সুযোগ দিলে সে সুযোগের অবহেলাও আমরা করব না”। 

সবিতা তখন বলেছিল, “আরেকটা কথার জবাব আগে আমাকে দিন ম্যানেজারবাবু। আমি যদি আপনাদের শর্তে রাজি না হই, তাহলে কি আমাকে আপনাদের হোটেলের ওই রুমটা ছেড়ে দিতে হবে”?

ম্যানেজার সাথে সাথে হাঁ হাঁ করে উঠে বলেছিলেন, “না না ম্যাডাম, তা কক্ষনোই হবে না। এমন কথা তো আমি বলিই নি আপনাকে। আর আমরা সেটা চাইও না। আমি শুধু সবকিছুর বিনিময়ে দু’পক্ষেরই লাভ হবে বলেই এ’সব কথা বললাম আপনাকে। মানা না মানা সম্পুর্ণ আপনারই ব্যাপার। আমরা কোনরকম জোরাজুরি করব না। আমাদের কথামত এমন কন্ট্রাক্ট করতে না চাইলেও আপনি এখন যেমন আছেন, ঠিক তেমনই আমাদের হোটেলের পার্মানেন্ট গ্রাহক হয়েই থাকবেন। আর এখানে এসে যা করছেন, তা-ও নির্বিঘ্নে করে যেতে পারবেন। শুধু আমাদেরই একটু আর্থিক ক্ষতি হবে”।
 

সবিতা তারপর ম্যানেজারকে বলেছিল, “তবে শুনুন ম্যানেজারবাবু। আপনার কথা, ইচ্ছে আর অভিসন্ধি সব কিছুই এবার আমার কাছে মোটামুটি পরিস্কার। তবে ফাইনালি এ ব্যাপারে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলার আগে আমাকে আমার স্বামীর সাথে পরামর্শ করতেই হবে। কারন, তাকে না জানিয়ে আমি কখনোই কিছু করি না। তবে এ ব্যাপারে আমার কিছু পসন্দ নাপসন্দ আছে। আপনারা যদি আমার সে’সব পসন্দ নাপসন্দ মেনে নেন, তাহলে আমিও আপনাদের শর্তে রাজি হতে পারি। তবে ফাইনালি কন্ট্রাক্টটা আদৌ হবে কিনা সেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে আমার স্বামীর সম্মতি অসম্মতির ওপর। তাই, দুটো দিন সময় আমাকে দিতেই হবে। কিন্তু আপনি চাইলে আমি এখনই আমার শর্ত গুলো, মানে আমার পসন্দ আর নাপসন্দের ব্যাপারগুলো জানিয়ে দিতে পারি”।


_____________________________
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply
(Update No. 152)

ম্যানেজার জানতে চাইলে সবিতা পাকা ব্যবসায়ীর মত বলেছিল, “দেখুন ম্যানেজারবাবু, আপনারা যদি সত্যিই আমার সাথে ও’রকম কোনও কন্ট্রাক্ট করতে চান তাহলে আমার অনেকগুলো শর্ত আপনাদের মেনে নিতে হবে। কারন আমি একটা ভদ্র ও সম্ভ্রান্ত ঘরের বউ। কোনও প্রফেশনাল কলগার্ল বা বেশ্যা নই। তাই আমাকে অনেক ভেবে চিন্তে এটা করতে হবে। শর্তগুলো এক এক করে আমি বলছি আপনাকে। আপনি সে’সব শুনে বলুন আপনারা সে’ সব মেনে নেবেন কিনা। আপনারা রাজী হলে আমি আমার স্বামীর সাথে কথা বলে আপনাকে আমার ফাইনাল ডিসিশনটা জানাব। আমার প্রথম শর্ত হল, আপনার বোর্ডারদের বয়স আর শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে। আমি যাদের আমার রুমে ডেকে নিই, তারা সকলেই আমার পসন্দের। যেসব ছেলে বা পুরুষ আমার নাপসন্দ, আমি তাদের কখনও কোন সুযোগ দিই না আমার সাথে সময় কাটাবার। কিন্তু আপনাদের হোটেলের বোর্ডাররা কে কেমন হবে, তা তো আর আমি আগে থেকে জানতে পারব না। তাই তাদেরকে আমার পসন্দ হবে কিনা সেটাও আগে থেকে বলা সম্ভব নয়। কিন্তু আপনাকে তো তাদের সাথে ডীলটা আগেই করতে হবে। আপনিই বা কিকরে বুঝবেন লোকটাকে আমার পসন্দ হবে কি না। তাই এ ব্যাপারে আপনাকে মোটামুটি ভাবে জানিয়ে রাখি। আমি বিস থেকে পঁয়তালিশ বছর বয়সী সুস্থ সবল পুরুষদের পসন্দ করি। আর অসম্ভব মোটা ভুড়িওয়ালা পুরুষদের আমি সবচেয়ে বেশী নাপসন্দ করি। কাপড় চোপড় খুলে ফেললেই তাদের থলথলে ভুড়ির দিকে চোখ পড়লেই আমার ঘৃণা হয়। গা গুলিয়ে ওঠে। সেক্সের ইচ্ছেটাই মরে যায়। তাই মোটামুটি ভাবে ধরে রাখুন যে বিস আর পঁয়তালিশের মধ্যে হলেও অসম্ভব মোটা আর ভুড়িওয়ালা লোকের সাথে আমি একেবারেই সময় কাটাবো না। আপনি যদি তেমন কারো সাথে আগে থেকে ডীল করেও ফেলেন, তাকে দেখে আমার নাপসন্দ হলে আমি কিন্তু কোন ভাবেই তাকে এন্টারটেন করব না। তখন আপনার ডীল আপনি কিভাবে পুরো করবেন সে চিন্তা আপনার। আমাকে কিন্তু ওর মধ্যে কোনভাবেই টানতে পারবেন না। ব্যাপারটা যদি বুঝে থাকেন তবে আমি আমার পরের কথাটা বলি”।

ম্যানেজার বাবুর সম্মতি পেয়ে সবিতা আবার বলেছিল, “আমার দ্বিতীয় শর্তটাও হচ্ছে বোর্ডার নিয়েই। দেখুন, আপনি যার সাথে ডীল করবেন, তারা সত্যি সত্যিই আপনাদের হোটেলের কোনও বোর্ডার কি না, এ নিয়ে আমার কোন মাথাব্যথা থাকবে না। অবশ্য আপনি বলতে পারেন যে আপনাদের হোটেলের রেজিস্টার দেখেই আমি সেটা বুঝতে পারব। তবে সেটা করবার কোন প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করিনা। নিজেদের হোটেলের বোর্ডার ছাড়াও আপনি বাইরের লোকের সাথেও ডীল করতে পারেন। আমার তাতে আপত্তি কিছু নেই। তবে ডীল করার আগে তাদের একটা ছবি আমাকে দেখাবেন। কারন লোকটা আমার চেনা পরিচিতদের মধ্যে কেউ কিনা সেটা না জেনেই তো তাকে আমার রুমে ঢোকাতে পারব না। আর ছবি দেখেই আমি মোটামুটি বুঝতে পারব তাকে আমার পসন্দ হবে কিনা। সে ছবি অবশ্য কাগজের ছবিও হতে পারে বা নেটের কিংবা ক্যামেরা বা মোবাইলের ছবিও হতে পারে। আপনি তাদের সাথে কিভাবে কত টাকার ডীল করবেন সে ব্যাপারেও আমার কিছু বলার নেই। আপনি নিজে বা এ হোটেলের মালিক পক্ষের কেউ হলেও তাতে অসুবিধে নেই। তবে তাকে আমার অন্যান্য শর্তগুলোও মানতে হবে”।
 

একটু থেমে সবিতা আবার বলেছিল, “আমার তৃতীয় শর্ত হচ্ছে, আমার সাথে সেক্স করবার সময় সবাইকেই কিন্তু কনডোম ব্যবহার করতে হবে। এর অন্যথা হলে কিন্তু একেবারেই চলবে না। ডীল ফাইনাল করবার সময় এ’কথাটা সবাইকে ভাল করে বুঝিয়ে দেবেন। কনডোম ছাড়া আমি কাউকে এলাও করব না। আর আমার চতুর্থ শর্ত হচ্ছে আমি বিকেল পাঁচটা সাড়ে পাঁচটা থেকে রাত ন’টা অব্দিই শুধু এখানে থাকব। তাই কোন ডীল করবার সময় এ’কথাটা সব সময় মাথায় রাখবেন। আমি কিন্তু কোন পরিস্থিতিতেই রাত ন’টার পর এ হোটেলে থাকব না। তাই সন্ধ্যে সাতটা পেরিয়ে গেলে কখনোই দু’ঘন্টার ডীল করবেন না। দু’ঘন্টার ডীল করতে হলে তা আপনাকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে সাতটার ভেতরেই করতে হবে”।

আবার একটু দম নিয়ে বলেছিল, “আমার পরের শর্ত হচ্ছে, এমনও হতে পারে যে আমার জন্যে আপনি কোনও ডিল করতে পারলেন না। তখন দোতলায় নিজের ঘরে একা বসে থাকবার চাইতে আমি আপনাদের রেস্টুরেন্টের কোন একটা টেবিলের একটা সীটে বসে থাকব। সেদিন আমি ফ্রি থাকব। আর সম্ভব হলে নিজেই নিজের পসন্দের কাউকে ডেকে বা খুঁজে নেবার চেষ্টা করব। তেমন কাউকে পেলেই আমি রেস্টুরেন্ট ছেড়ে নিজের রুমে চলে যাব আমার পার্টনারকে নিয়ে। এক্ষেত্রে আনুষঙ্গিক দুটো কথাও এসে যাচ্ছে। সেটাও জানাচ্ছি আপনাকে। রেস্টুরেন্টের ভেতরের কাউকেই হোক বা বাইরে থেকে আমি কাউকে ডেকেই বা আনিনা কেন, আপনি কিন্তু তাদের সাথে ডিল সংক্রান্ত কোন কথা বলতে বা তাদের কাছ থেকে কোন রকম টাকা পয়সা চাইতে পারবেন না। কারন সে ডিলটা তো আপনারা করবেন না। করব আমি। আর আমি কিভাবে বা কোন কন্ডিশানে তাদের সাথে ডিল করব সে ব্যাপারে আপনারা কেউ কিছু বলতে পারবেন না। তাদের কাকে কত দিচ্ছি বা তাদের কার কাছ থেকে কি বা কত নিচ্ছি এ’সব ব্যাপারে আপনারা একেবারেই মাথা ঘামাতে পারবেন না। আর এ প্রসঙ্গেই বলছি, যে রেস্টুরেন্টের যে টেবিলে আমি বসব, সেই গোটা টেবিলটাই আমি আমার জন্য রিজার্ভড রাখতে চাই না। আমাকে শুধু একটা সীট দিলেই চলবে। সেটা ফাইভ টু নাইন শুধু আমার জন্যেই বরাদ্দ থাকবে। আমার অনুপস্থিতিতেও ওই সীটে বিকেল পাঞ্চটা থেকে রাত নটা পর্যন্ত আপনারা অন্য কোনও কাস্টমারকে বসাতে পারবেন না। তবে সে টেবিলের বাকি তিনটে সীটে আপনারা প্রয়োজন মত গ্রাহক বসাতে পারবেন। তাতে আমার কোন আপত্তি থাকবে না। আর আমার পরের শর্ত হচ্ছে, যদি আমি কোন কারনবশতঃ কোনদিন আসতে না পারি, আর যদি আপনি আগেই আমাকে নিয়ে কোন ডিল করে থাকেন, তাহলে সে’দিনের ডিলটা কিন্তু ক্যানসেল হয়ে যাবে। সেটা আপনাকে কোনভাবে ম্যানেজ করতে হবে। আমি কিন্তু তার জন্য কোনভাবে দায়ী হব না। তবে আপনারা যদি আমি আসবার আগেই কোনো ডিল ফাইনাল করে ফেলেন, তাহলে আমাকে ফোনে সে’কথাটা জানিয়ে দেবেন। আমি তখন চেষ্টা করব যাতে আপনাদের ডিলটা ক্যানসেল করতে না হয়। নইলে আপনাদের ডিল আর আমার ব্যক্তিগত ভাবে করা কোন ডিলের মধ্যে ক্ল্যাস হতে পারে। আমার পরবর্তী কন্ডিশন হচ্ছে, হোটেলের বয়, বেয়ারা বা অন্য কোন স্টাফ কিন্তু আমাকে কখনো চাইতে পারবে না। শুধু আপনাদের মালিক পক্ষের কেউ, আর আপনি ছাড়া আর কেউই কিন্তু আমার সাথে সেক্স করবার সুযোগ পাবেনা। আর যারা আমাকে নিয়ে রুমে সময় কাটাবে তারা হোটেলের রুমের বাইরে আমার সাথে সব সময় সম্মান প্রদর্শন করে কথা বলবে, আপনি বলে সম্বোধন করবে। কেউ যেন সর্বসমক্ষে আমাকে তুই তোকারি না করে বা অসম্মানসূচক কোন সম্বোধন না করে বা আপত্তিজনক কোন কথা না বলে। এ’কথাটা সবাইকে আপনি ভাল করে বুঝিয়ে দেবেন। আর আপনারা ম্যানেজার আর মালিক বাদেও হোটেলের সমস্ত স্টাফ এবং কর্মচারীকেও কিন্তু আমার সাথে অমন সুন্দর আর ভদ্র ব্যবহার করতে হবে। আপনাদের সাথে সেক্স করব বলেই আমাকে একটা সস্তার বেশ্যার মত ট্রিট করতে পারবেন না আপনারা কেউ। মনে রাখবেন আমি একটা সম্ভ্রান্ত এবং প্রতিপন্ন ঘরের হাউস ওয়াইফ। এদিকেও কিন্তু আপনাদের কড়া নজর রাখতে হবে। তাই লোকসমক্ষে সকলেই আমার সাথে কথা বলবার সময় শিষ্টাচার মেনে চলবে, এটাই আমি আশা করি। তবে রুমে ঢোকার পর যাদের সাথে আমি সময় কাটাবো তারা ওই রুম থেকে বেরিয়ে আসবার আগে পর্যন্ত যদি কেউ সেক্সের উত্তেজনায় আমার সাথে নোংড়া বা অশালীন কিছু কথাবার্তা বলে ফেলে, তবে সেটুকু আমি মেনে নেব, তবে কোনরকম গালিগালাজ বরদাস্ত করব না। আর সেক্সের সময় অনেক পুরুষই কামোত্তেজনায় সঙ্গিনীর ওপর শারীরিক অত্যাচার চালায় বা কিছু স্ল্যাং ভাষা ও শব্দের প্রয়োগ করতে ভালবাসে। টু সাম এক্সটেন্ট আমি তা মেনে নেব। কিন্তু বাড়াবাড়ি যেন কেউ কিছু না করে। আমার শরীরে তারা কোনরকম আঘাতের চিহ্ন যেন ছেড়ে না যায়, আর আমার পোশাক যেন না ছিঁড়ে ফেলে, এটা ডিল করবার সময় সকলকে ভালভাবে বুঝিয়ে দেবেন। কারন রাত ন’টার পর আমাকে একজন ভদ্র গৃহবধূর মতই হোটেল থেকে বেরিয়ে গিয়ে নিজে গাড়ি ড্রাইভ করে বাড়ি পৌঁছোতে হবে। আর আমার পরের শর্ত হচ্ছে, আমি তো রোজ বিকেল পাঁচটা সাড়ে পাঁচটা থেকে রাত ন’টা পর্যন্ত এখানে থাকব। মানে প্রায় সাড়ে তিন চার ঘন্টা। তাই আপনি রোজ এক ঘন্টার স্লটের ম্যাক্সিমাম চারটে ডিল অথবা দু’ঘন্টার স্লটের ম্যাক্সিমাম দুটো ডিলই করতে পারবেন। অবশ্য গ্রাহকের চাহিদা হিসেবে কিছু হেরফেরও হতে পারে। তবে স্লট এক ঘন্টারই হোক বা দু’ঘন্টার হোক, আমি কিন্তু দুটোর বেশী ডিল একদিনে অ্যাকসেপ্ট করব না। আর যদি ম্যাক্সিমাম হিসেবে এগোই, তাহলে চার ঘন্টার ডিউটির জন্য আপনার হিসেবানুযায়ী আমি একদিনেই চল্লিশ হাজার টাকা পেতে পারি। অবশ্য কোন কোনদিন কমও হতে পারে। আবার ডিল না হলে একেবারে কিছুই হবে না। তবে যদি ধরা যায় যে আমি লোয়েস্ট এভারেজে রোজ একটা করেও একঘন্টার ডিল সামলাই, তাহলে আমি দশ হাজার পাব একদিনে, আর আপনারা পাবেন ছ’ বা সাত হাজার টাকা। এটা একেবারে ন্যূনতম হিসেবে আসছে কিন্তু। মাসিক গড়পড়তা হিসেব নিশ্চয়ই এর থেকে অনেক বেশী হবে। আর এ হিসেবেই আমি মাসে যদি পঁচিশ ছাব্বিশ দিন ডিল সামলাই তাহলে প্রত্যেক মাসে আমি কম করেও আড়াই লাখ টাকা কামাতে পারব। আর আপনারা পাবেন দেড় লাখের ওপর। বেশ হ্যান্ডসাম এমাউন্ট, তাই না? কিন্তু আমার আর্থিক লাভের ব্যাপারটা কিন্তু আমার কাছে একেবারেই গুরুত্বহীন। তবে এ আর্থিক ব্যাপারটা কিন্তু পুরোপুরি ভাবে আমার স্বামীই ডিসাইড করবে। উনি যা বলবেন আমাকে এবং আপনাদেরকে সেটাই মেনে নিতে হবে। তাই এটা আপনাকে আমি আগামী দু’দিনের মধ্যে জানিয়ে দেব। আর আমার পরের শর্তটা হচ্ছে, যারা আমার সাথে সেক্স করতে চাইবে তাদের সকলকেই আমার রুমে আসতে হবে। আমি কারো রুমে বা অন্য কোথাও যাব না। আর এর পরের শর্ত হচ্ছে, কেউ আমাকে মদ বা অন্য কোন নেশা জাতীয় কোনকিছু খাওয়াবার জন্যে জোরাজুরি করতে পারবে না। আমার ইচ্ছে হলে আমি দু’ এক পেগ মদ খেতে পারি। তবে সেটা সম্পূর্ণ ভাবেই আমার নিজের ইচ্ছেয়। কেউ এ ব্যাপারে আমাকে কোনরকম প্রেসার দিতে পারবে না। আর পরের শর্তটা হচ্ছে, কেউ কোন ক্যামেরা বা মোবাইল নিয়ে আমার ঘরে আসতে পারবে না। আর সব শেষ শর্ত হচ্ছে, এক সময়ে শুধু একজনই আমার সাথে সেক্স করতে পারবে। দু’জন, তিনজন বা গ্রুপে কিছু করতে চাইলে আমি কিন্তু তাতে একেবারেই রাজী হব না। তবে আমি নিজে চাইলে যত জনকে খুশী আমার রুমে ডেকে নিতে পারি। আপনারা তাতে বাঁধা দেবেন না”।
 

ম্যানেজার তখন সবিতার সবগুলো শর্ত শুনে বলেছিল, “ঠিক আছে ম্যাডাম, আপনার কন্ডিশানগুলো ব্যক্তিগত ভাবে আমি মেনে নিতে রাজী আছি। আজ আপনার সাথে আমার যা কিছু আলোচনা হল, তা আমি আমার মালিক পক্ষকে আজই জানিয়ে দেব। আর তাদের মতামতটাও আপনাকে আমি যথা সময়ে জানিয়ে দেব”।
 

সে’রাতে বিমল আর বাড়িতে ফেরেনি। সে সবিতাকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছিল যে সে এক সঙ্গিনীকে নিয়ে তাদের ফার্ম হাউসে রাত কাটাবে। পরদিন সকাল প্রায় আটটায় সে বাড়ি এসেছিল। কিন্তু অফিসে আর্জেন্ট কাজ আছে বলে স্নান করে ব্রেকফাস্ট খেয়েই সে বেরিয়ে গিয়েছিল। তবে স্বামীকে ব্রেকফাস্ট খাওয়াতে খাওয়াতেই সবিতা হোটেলের ম্যানেজারের সাথে তার যা যা কথা হয়েছিল তা সবকিছু খুলে বলেছিল। বিমল সব শুনে বলেছিল যে সবিতার অন্য সব কন্ডিশানগুলো মোটামুটি ঠিকই আছে। কিন্তু সবিতাকে সে কোন টাকা পয়সা নিতে বারণ করেছিল। তার পরিবর্তে সে পরামর্শ দিয়েছিল যে সবিতাকে নিয়ে তারা যত টাকার ডীল করবে তার পুরোটাই যেন তারাই নিয়ে নেয়। বিনিময়ে শুধু প্রতি মাসে তাকে হোটেলের রুমের ভাড়া বাবদ যে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিতে হয়, সেটা যেন হোটেলের ম্যানেজার বা মালিক মাফ করে দেয়।

পরের দিন ম্যানেজারকে সে’কথা বলতেই ম্যানেজার এক কথাতেই সবিতার অনুরোধ মেনে নিয়েছিল। কারন তাতে তাদের আরও অনেক বেশী লাভ। প্রায় দ্বিগুণ। হোটেলের রুম ভাড়ার সাথে সাথে তার খাবার এবং রেস্টুরেন্টের টেবিল, কেবিন সহ অন্য সব কিছুর সুবিধাই তারা সবিতাকে ফ্রি অফ কস্ট করে দিয়েছিল। কিন্তু বুদ্ধিমতী সবিতার মনে হয়েছিল যে আরেকটা ব্যাপারে একটা নতুন শর্ত চাপিয়ে দেওয়া উচিৎ। হোটেলের ম্যানেজারের চোখে সে তার প্রতি লালসার ছাপ আগে থেকেই দেখতে পেয়েছিল। হোটেলের মালিক পক্ষের কাউকে সে দেখেছে কি না তা ঠিক মনে করতে পারছে না। এখন যখন ম্যানেজার বা মালিক জানতেই পারবে যে সবিতা কারো কাছ থেকে কোন পয়সা নেবে না, তাহলে তারা তো যে কোন দিন যখন তখন তার সাথে সময় কাটাতে চাইবে। যেদিন ম্যানেজার কোনও ডিল করতে পারবেন না, সেদিনই সবিতাকে ফ্রি পেয়ে তারা কেউ তাকে চেয়ে বসবে। এটা সবিতা ঠিক মেনে নিতে পারছিল না। তাই সে ম্যানেজারকে বলেছিল যে হোটেলের মালিক অথবা ম্যানেজারবাবু নিজে প্রতি মাসে একদিন শুধু একঘন্টার জন্যেই সবিতাকে ভোগ করতে পারবে।

সে’কথা শুনে ম্যানেজার একটু মনমরা হয়ে সবিতাকে জিজ্ঞেস করেছিল, “দু’জনে শুধু একদিন? তাও কেবল এক ঘন্টার জন্যে? একটু কি বাড়ানো যায় না এটা ম্যাডাম? আমরা তো আপনার আর সব শর্তই মেনে নিচ্ছি। নাকি আমরা কেউ আপনার পছন্দের তালিকায় পড়ি না”?

সবিতা হেসে বলেছিল, “তা নয় ম্যানেজারবাবু, আপনাদের মালিক পক্ষের কাউকে তো আমি বোধহয় দেখিইনি। তবে আপনার শরীর স্বাস্থ্য তো ঠিকই আছে। আর তাছাড়া আপনাদের মালিক পক্ষের ক’জন আমাকে চাইতে পারে, তাও তো আমি ঠিক জানিনা”।

ম্যানেজার তখন বলেছিল, “ম্যাডাম, আমার আসল মালিক যিনি তার বয়স প্রায় পঞ্চান্ন। এ হোটেলের ব্যবসায় তিনি এখন আর তেমন মাথা ঘামান না। তবে বয়সের দিক দিয়ে তিনি তো আপনার পছন্দের তালিকায় পড়ছেন না। তাই তার সাথে আপনার সময় কাটাবার প্রশ্ন তো আপাততঃ ওঠাতেই পারছি না। কিন্তু ম্যাডাম, তিনি কিন্তু এখনও এ’সব কাজে খুব দক্ষ। আই মিন ইট। আমার মনে হয় আপনি তাকে একবার চাক্ষুষ দেখলে হয়তো নিজেই নিজের সিদ্ধান্ত বদলে ফেলতেন। তবে তার কথা না হয় আপাততঃ ছেড়েই দিচ্ছি। তার ছেলে, যে এখন এই হোটেলের ব্যবসা দেখা শোনা করেন, তার বয়স প্রায় সাতাশ। একটু রোগা পাতলা চেহারার। মাত্র বছর খানেক আগেই সে বিয়ে করেছে। আর সত্যি বলতে, তার বৌও কিন্তু যথেষ্ট সুন্দরী। কিন্তু তা হওয়া সত্বেও আপনাকে তার খুব পছন্দ। তাই সে আপনার সান্নিধ্য পেতে খুব আগ্রহী। তাই আমি বাদে আপাততঃ আপনাকে শুধু মালিক পক্ষের একজনের সাথেই ও’সব করতে হবে। তাই বলছি, একটু কনসিডার করুন প্লীজ”।

সবিতা একটা মোহনীয় হাসি হেসে বলেছিল, “দেখুন ম্যানেজারবাবু, আমি যে কোন ডিলের জন্য একটা পয়সাও নিচ্ছি না, তাতে কিন্তু আপনাদের লাভ দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে, এটা মনে রাখবেন। তবে ঠিক আছে। এত করে যখন বলছেন তখন আপনার কথায় কিছুটা কনসিডারেশন আমি করছি। মাসে দু’দিন। তবে দু’জনেই দু’দিন করে চাইতে পারবেন না কিন্তু। মাসের প্রথম অর্ধেকে কোন একদিন আপনার মালিক আমাকে পাবে। আর দ্বিতীয়ার্ধে কোন একদিন আপনি আমাকে পাবেন। তবে সময় ওই এক ঘন্টাই থাকবে কিন্তু। এখন মানা না মানা আপনার ব্যাপার। তবে আমার আগে বলা সব কন্ডিশানই কিন্তু আপনাদের পুরোপুরি ভাবে মেনে চলতে হবে”।

ম্যানেজার তখন সবিতার কথা মেনে নিয়ে তার সাথে খুশী মনে হ্যান্ডশেক করে বলেছিল যে মালিক পক্ষের সাথে কথা বলে সে এই মৌখিক চুক্তিটি পাকা করে তাকে জানাবে।
 

সবিতাও হোটেল ম্যানেজারের দেওয়া প্রস্তাবটা নিয়ে তার স্বামী বিমলের সাথে পরের দিন বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছিল। বিমলও মোটামুটি ভাবে ম্যানেজারের কাছে রাখা সবিতার প্রস্তাবগুলো মেনে নিয়েছিল। কিন্তু পরের দিন সবিতা বিকেলে হোটেলে গিয়ে ম্যানেজারের সাথে দেখা করতেই ম্যানেজার তাকে বলেছিল “ম্যাডাম, আপনি কাইন্ডলি ওপরে আপনার রুমে চলে যান। আমরা দশ মিনিটের মধ্যেই আপনার রুমে গিয়ে কথা বলছি”।

সবিতা একটু অবাক হয়ে বলেছিল, “আপনারা মানে? আপনার সঙ্গে আরও কেউ আসবে নাকি”?

ম্যানেজার মুচকি হেসে বলেছিল, “ভাববেন না ম্যাডাম। আপনি যে আসল কাজের সময় শুধু একজনকেই এলাও করবেন, সেটা আমরা ভুলিনি। কিন্তু যে চুক্তিটা আমরা পাকা করতে চলেছি সেটা তো আপনার, আমার আর আমাদের মালিকপক্ষের ভেতর হবে। তাই তিন পক্ষের লোক বসেই তো সেটা ফাইনাল করতে হবে। আজ সেটাই হবে। মালিক পক্ষের লোক এসে গেছে। রেস্টুরেন্টের টেবিলে বসা সম্ভব নয়। আপনাকে আপনার ওই রুম ছাড়া অন্য কোথাও যাবার অনুরোধও করতে পারছি না। তাই আপনার রুম ছাড়া তো আর কোথাও এ’সব আলোচনা করা সম্ভব নয়। আমি আমার এখানে একজনকে বসিয়ে দিয়েই তাদের নিয়ে আপনার রুমে যাচ্ছি। আপনি তাই সেখানে গিয়ে একটু বিশ্রাম নিন। আমরা এখনই আসছি। প্লীজ। আর হ্যাঁ ম্যাডাম, আজ আপনার টিফিনটা আমাদের হোটেলের তরফ থেকে উপহার হিসেবে দেওয়া হবে”।

সবিতা আর কিছু না বলে “ওকে” বলে ওপরের তলায় যাবার সিঁড়ির দিকে যেতে যেতে ভেবেছিল, চুক্তির শুরুতেই বোধহয় তাকে সেদিনই হোটেলের মালিকের সাথে দেহসুখের আদান প্রদান করতে হবে। অবশ্য আজই তো আর ম্যানেজার নিশ্চয়ই তার ব্যাপারে কারো সাথে কোনও ডিল করেনি। সবিতা নিজেও কাউকে ডাকেনি। তাই মালিক বা ম্যানেজার কেউ তার সাথে করতে চাইলেও তার আপত্তির কিছু থাকবে না। রুমে ঢুকে প্রথমেই এসিটা চালিয়ে দিয়ে নিজের কাঁধের ব্যাগটা ড্রেসিং টেবিলের ওপরে রেখে দিয়ে সে বিছানায় বসে ভাবছিল, ‘ম্যানেজার লোকটার শরীর স্বাস্থ্য তো ঠিকই আছে। তার অপছন্দের তালিকায় পড়ে না। কিন্তু আগেরদিন ম্যানেজারই বলছিল যে মালিকের ছেলেটা নাকি রোগা পাতলা। কতটা রোগা হতে পারে? লিকলিকে পাতলা নাকি? আর তার আসল জিনিসটাও কি তার চেহারার মতই লিকলিকে হবে নাকি? ভেতরে নিয়ে সুখ হবে তো? ছেলেটার বয়স নাকি মোটে সাতাশ। আর বিয়েও করেছে সবে নাকি এক বছর হল। তার বৌও নাকি সুন্দরী। এমন সুন্দরী নতুন বৌকে ঘরে ফেলে রেখে অমন কমবয়সী একটা ছেলে তার মতো একজন বয়স্কা ও মোটা মহিলার জন্য পাগল, এ’ কথা ভাবতেও তার গর্ব হচ্ছে’।


______________________________
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply
(Update No. 153)

তার এমন সব ভাবনার মধ্যেই দরজায় নক হতে সবিতা তার পড়নের শাড়িটা ঠিকঠাক করতে করতে আগন্তুককে ভেতরে আসতে বলেছিল। দরজা খুলে দুটো বেয়ারা ভেতরে ঢুকে বেশ কয়েক রকমের স্ন্যাক্স, ফ্রুট স্যালাড আর জুশ আর মদের বোতল গ্লাস টেবিলে রেখে যাবার সময় জানিয়ে গিয়েছিল যে তাদের হোটেলের মালিক আর ম্যানেজার একটু বাদেই আসবে।
 

সবিতা রোজ এ সময় ফ্রুট স্যালাড আর জুশ ছাড়া আর কিছু খায় না। তার দেহসঙ্গীদের বারবার অনুরোধে মাঝে মধ্যে দু’ এক পেগ মদ খেলেও এতোসব খাবারের আয়োজন দেখে সে মনে মনে একটু অবাকই হয়েছিল। কিন্তু তাকে বেশী ভাববার সময় না দিয়েই বাইরে থেকে কেউ দরজায় নক করতেই সবিতা “ইয়েস, কাম ইন” বলতেই দরজাটা খুলে গিয়েছিল। আর সাথে সাথেই তিনজন পুরুষের প্রবেশ ঘটেছিল ঘরের ভেতরে। তাদের ভেতরে সবচেয়ে কমবয়সী রোগা মতন ছেলেটাকে দেখেই সবিতা বুঝে গিয়েছিল যে সে-ই মালিকের ছেলে। ছেলেটার সঙ্গে ম্যানেজার ছাড়াও বয়স্ক শক্ত পোক্ত চেহারার সাংঘাতিক হ্যান্ডসাম একজন ভদ্রলোককে ঢুকতে দেখে সবিতা মনে মনে বেশ অবাক হয়েছিল সেদিন। রীতিমতো জিম করা শরীর স্বাস্থ্য তার। কোট পড়া অবস্থাতেও বোঝা যাচ্ছিল চওড়া উঁচু বুকের ছাতি তার। আর পেট একেবারে সমতল। কোমড়টা পেটের চাইতেও শুরু। ক্যালেন্ডারে বা টিভিতে বডিবিল্ডারদের যেমন দেখতে লাগে, অনেকটা তেমনই তার শরীরের গঠণ। এ বয়সেও যে কোন মেয়ে মহিলার দৃষ্টি কেড়ে নিতে পারে সে।
 

ভেতরে ঢুকেই ম্যানেজার লোকটা অন্য দু’জনের সাথে সবিতার পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেছিল যে সুপুরুষ বয়স্ক ভদ্রলোকটি হোটেলের আসল মালিক হরদেব সিং ধানুকা। আর রোগা ছেলেটি তার ছেলে প্রভজোত সিং ধানুকা। বাপ আর ছেলে দু’জনেই এগিয়ে এসে সবিতার নরম মাংসল হাতটা নিজেদের হাতে নিয়ে প্রয়োজনের চেয়ে একটু বেশী সময় ধরেই করমর্দন করেছিলেন। সবিতাও মিষ্টি হাসি দিয়ে তাদের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে বুঝিয়ে দিয়েছিল যে তিনজনকে ঘরে ঢুকতে দেখেও সে মোটেও অখুশী হয়নি। ম্যানেজার লোকটি তার মালিককে বিছানাটার ওপরেই বসতে বলে তার ছোট মালিক প্রভজোতকে নিয়ে সোফায় বসতে সবিতাও বিছানার আরেক কোনায় বসেছিল। বাপ আর ছেলে দু’জনের দৃষ্টিই যে বারবার সবিতার উঁচু বুকের দিকে ঘুরে ফিরে আসছিল সেটা সবিতা খুব ভালভাবেই বুঝতে পারছিল। এতে মনে মনে সেও খুশীই হয়েছিল। আর তার কাছে এটাই স্বাভাবিক মনে হত। তার কাছে আসা সব বয়সী পুরুষরাই তার বিশাল উঁচু বুকের দিকে এভাবেই তাকায়, বা বলা ভাল, তাকাতে বাধ্য হয়। সবিতা নিজেও পুরুষদের চোখে এমন দৃষ্টি দেখতেই অভ্যস্ত। আর সে বরাবরই সেটা খুব উপভোগ করে।

একটা কুইন সাইজের বিছানা ছাড়া ঘরে বসবার মত শুধু একটা টু সিটার সোফাই ছিল। এক কোনায় ছোট্ট একটা ড্রেসিং টেবিল, আর দেয়ালের একপাশে ছোট একটা টেবিল। বিছানাটা ছেড়ে দিলে ঘরের ভেতর চারটে লোকের বসবার মত যথেষ্ট জায়গাও ছিল না। সবিতা সকলের সাথে হাসিমুখে পরিচয় করে নিজের ভারী বুকের ওপর শাড়িটা ঠিক করতে করতে বিছানার এক কোনায় চুপ করে বসে ছিল।

ম্যানেজার নিজেই তার দুই মালিক এবং তার নিজের জন্য হুইস্কির পেগ বানিয়ে মালিকদের হাতে দিয়ে আর সবিতাকে একটা জুশের গ্লাস দিয়ে সকলের হাতে কিছু স্ন্যাক্স তুলে দিয়ে আলোচনার শুরু করে সবিতাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিল, “ম্যাডাম, গত দু’ তিনদিনে আপনার আর আমার মধ্যে যাকিছু সব আলোচনা হয়েছিল তা আমি সবিস্তারে আমার মালিকদের জানিয়েছি। ওনারা দু’জনেই, শুধু দু’একটি বাদে, আপনার অন্য সমস্ত শর্তগুলোই মেনে নিয়েছেন। যে শর্তদুটো নিয়ে তাদের সামান্য একটু আপত্তি আছে, সেটা নিয়ে কথা বলতেই এনারা আজ এসেছেন। তবে সেটা আমি আর বলছি না। আমাদের মালিক হরদেব সিংজী আর প্রভজোত সিংজীই আপনাকে সে’টা বলবেন”।

সবিতা কিছু বলে উঠবার আগেই প্রভজোত তার বাবার দিকে তাকিয়ে বলেছিল, “পাপা, আমি কিন্তু সবিতাজীর যে কোন শর্তই মেনে নিতে রাজী আছি, এ’কথা তোমাকে আগেই বলেছি। সামনা সামনি কখনও সবিতাজীর সাথে আমার দেখা না হলেও, আমি অনেকদিন আগেই তাকে দেখেছি। আর তাকে দেখবার পর থেকেই তাকে পাবার জন্যে মনে মনে পাগল হয়ে উঠেছি। আর তুমি এটাও জানো যে ভাবনাও এতে রাজী আছে। তুমি তো আগে সবিতাজীকে দেখনি। তাই আমার মনের পরিস্থিতিটা হয়তো এতদিন বুঝতে পারো নি। এখন দেখতে পাচ্ছ তো সবিতাজী কি সাংঘাতিক রকমের সেক্সী। এবার আমার মনের অবস্থা আর ভাবনার কথাগুলো মাথায় রেখেই তুমি তার সাথে কথা বলো”।

হরদেব সিং তখন লোভাতুর চোখে সবিতার বুকের দিকে দেখতে দেখতে বলেছিলেন, “হাঁ বেটা। তুই ঠিকই বলেছিলি আমাকে। মিসেস আগরওয়ালা সত্যিই সাংঘাতিক রকমের সেক্সী। এ’রকম ভরপুর শরীরের আর ভদ্র পরিবারের এক মহিলাকে এমন ভাবে কাছে পাওয়া সত্যিই খুব ভাগ্যের ব্যাপার”।
 

সবিতা বাপ-ছেলের কথা শুনে মনে মনে খুব অবাকই হচ্ছিল। ভাবছিল, ‘এ লোকটা এ ছেলেটার বাবা? বাপ-ছেলেকে তো দুই ভাই বলে মনে হচ্ছিল। কিন্তু ছেলেটা তো কোনরকম রাখঢাক না করেই তার বাবাকে সবকথা বলছে!? বাবাকে নিয়ে ছেলে এসেছে তার সাথে সেক্স করবার জন্য আমার মত এক বয়স্কা সেক্সী মহিলার সাথে চুক্তি করতে!? আবার ছেলেও এমন, যে কিনা মাত্র বছর খানেক আগেই বিয়ে করেছে! আর ‘ভাবনা’ বলে একজনের উল্লেখ করল না? এই ভাবনাটা আবার কে? ছেলেটার বৌটা নাকি? হে ভগবান! এও কি সম্ভব’!? মনে মনে যথেষ্ট পরিমানে অবাক হলেও সে আবার পরক্ষণেই ভাবল, ‘তাতে তার নিজের কি এসে যায়? সবিতা নিজেই ছেলেটার সাথে সেক্স করতে রাজী হয়েছে। আর ছেলেটাও সবিতার সাথে সেক্স করবার জন্যে উতলা হয়েছে। তাদের দু’জনার মাঝে এ ব্যাপারে মোটামুটি চুক্তিও হয়েই গেছে বলা যায়। এখন এ ব্যাপারে ছেলেটার বাবা বা বৌ রাজী অরাজী যাই হোক না কেন, তাতে কি এসে যায়? পিতৃভক্ত ছেলে যদি তার বাবার অনুমতি নিয়েই তার সাথে খেলতে চায়, তবে তার এতে মাথাব্যথার কি আছে? আর ভাবনা বলে মেয়েটা যদি সত্যি ছেলেটার বৌই হয়, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। নতুন বৌ নিজেই তার নতুন বরকে অনুমতি দিচ্ছে অন্য মেয়েমানুষের সাথে স্ফুর্তি করতে। সংসারে অশান্তি হবার আর কোন সম্ভাবনা থাকবে না। সুখী ফ্যামিলী হয়ে সকলে মিলেমিশে থাকবে। অবশ্য একই রকমের অনুমতি তো সবিতার স্বামীও তাকে দিয়েছে। আর সবিতা সেভাবে খোলাখুলি অনুমতি না দিলেও তার স্বামীও যে তাকে অবহেলা করে অনেক মেয়ে মহিলাকে নিয়ে স্ফুর্তি করে, এ’কথা তো সে সবিতার কাছে কোনদিন গোপন করেনি। আর প্রথম দিকে খানিকটা মনঃকষ্ট হলেও সবিতাও তো পরে সে’সব মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। তাই তাদের স্বামী-স্ত্রীর ব্যাপারটাও তো প্রায় একই রকমের। সাংসারিক জীবনে তাদের কোনরকম উথাল পাথাল হয়নি। সমাজের চোখেও বিমল আর সবিতা যথার্থ স্বামি-স্ত্রী। তফাৎ শুধু এটুকুই যে এরা বাবা-ছেলে অন্যদের উপস্থিতিতেও সে’সব নিয়ে আলোচনা করতে দ্বিধা বোধ করছে না। আর বিমল আর সবিতা সকলের আড়ালে নিভৃতে নিজেদের বেডরুমে বসে এ’সব আলোচনা করে’।

আবার আরেকটা চিন্তাও তখন তার মনে এসেছিল। সে ভাবছিল, ‘ছেলেটা যে তার সাথে স্ফুর্তি করবেই, এটা তো পরিস্কার। কিন্তু ছেলেটার এমন সুপুরুষ বাবাকে দেখে, আর তার সামনেই বাবা ছেলে যেমন আলোচনা শুরু করেছে, তাতে তার মনে এমন একটা সন্দেহও দেখা দিচ্ছিল যে ছেলের সাথে সাথে এখন তার বাবাও সবিতার দেহটা উপভোগ করবার জন্যে কোন চুক্তি করতে চেয়ে না বসে। তার স্বামী বিমলের বয়স তখন পঞ্চাশ। ওই বয়সে সবিতার শরীরের ওপর থেকে তার লোভ কমে গেলেও, বিমলের যৌন ক্ষমতায় কোনও ঘাটতি ছিল না। আর এ লোকটা তো বিমলের থেকে মোটে পাঞ্চ বছরের বড়। পচপন বছর বয়সে অনেক পুরুষই পুরোপুরি ক্ষমতা সম্পন্ন থাকতে পারে। আর এনার তো শরীর স্বাস্থ্য খুবই চমৎকার। দেখতেও ভীষণ হ্যান্ডসাম। তবে আসল কাজে সত্যিই কতোটা ক্ষমতা সম্পন্ন হবে, তা অবশ্য যাচাই না করে বোঝা সম্ভব হবে না। কিন্তু তার স্বামীর বয়স পঞ্চাশ বলেই সবিতা সব সময় চাইত, তার স্বামীর চেয়ে কম বয়সী পুরুষদের সাথে স্ফুর্তি করতে। তাই সে আগেরদিন ম্যানেজারকে বলেছিল যে কুড়ি থেকে পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সী ছেলে পুরুষরাই তার পছন্দ। তবে ওই মূহুর্তে ছেলেটার বাবা হরদেব সিংকে দেখে তার মনে হচ্ছিল যে এমন সুন্দর দেখতে লোকটা যদি সেক্সুয়ালি সক্ষম হয়, তাহলে অন্ততঃ এর ক্ষেত্রে সে বয়সের ওই ঊর্ধসীমাটা ধর্তব্যের ভেতর আনবে না। আর হরদেব সিংএর চোখের দৃষ্টি দেখেও তার পরিস্কারই মনে হচ্ছিল, সেও সবিতাকে ভোগ করতে চাইবে। তবে এখনই তার সাথেও কোন চুক্তি করতে হলে, মনে কিছুটা সংশয় নিয়েই সেটা করতে হবে। আগে একবার পরীক্ষা করে দেখবার সুযোগ পেলে মন্দ হত না’।
 

সবিতা নিজেই বুঝতে পারছিল যে পঞ্চান্ন বছর বয়সী সুপুরুষ হরদেবজীর ওপর তার মনটা কেমন যেন তখন ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে আসছিল। আবার সেই সাথে সাথে আরেকটা কথাও তখন তার মনে এসেছিল, ‘প্রভজোত আর ম্যানেজার তো তার সাথে করবেই, সেটা আগেই ঠিক হয়ে গেছে। এখন আসল মালিকের সাথেও যদি অমন কিছু একটা বোঝাপড়া হয়েই যায়, তাহলে এমন হবে নাতো যে ম্যানেজার আর দুই বাপ বেটা, এই তিনজন মিলে একসাথে তার সাথে করতে চাইবে? ওই ব্লু ফিল্মের জগতে যাকে বলে ফোরসাম বা গ্যাংব্যাং? না না, অতোটা নির্লজ্জ সে হতে পারবে না। সে কোন পর্ণস্টার নয়। পেশাগত বেশ্যাও নয়। সে যা করে তা শুধু মাত্র নিজের সুখের জন্য। সুখ খুঁজতে এসে অত্যাচারিত হবার কোন ইচ্ছেই তার নেই। সে যা করে তা সে মন প্রাণ দিয়ে উপভোগ করতে চায়। তাই, হরদেব সিং চাইলে সে তার সাথেও করতে রাজী হতে পারে। কিন্তু একবারে একজন ছাড়া দু’জনকে সে কিছুতেই এলাও করবে না। এ তার একেবারেই নাপছন্দ। অবশ্য এ শর্তটা ম্যানেজারকে আগেই বলে দেওয়া হয়েছিল। আর একটা জিনিসও সবিতা পছন্দ করে না। সঙ্গীরা তার সাথে খারাপ ভাষায় কথা বললে তার খুব খারাপ লাগে। এমনিতে আসল কাজের সময় দু’একটা স্ল্যাং বলতে বা শুনতে তার যে খুব খারাপ লাগে তা নয়। কিন্তু গালিগালাজ দেওয়া কথা শুনলেই নিজেকে রাস্তা ঘাটে ঘুরে বেড়ানো সস্তা বেশ্যাদের মত মনে হয়। যে সুখ যে আনন্দের খোঁজে সে এ’সব করতে আসে, সেই সুখ আর আনন্দের রেশ যেন তার মন থেকে মুছে যায়। সে সব রকম কথাই শুনতে রাজী, তবে কোনও কুরুচিকর শব্দ শুনতে সে একেবারেই পছন্দ করে না। অবশ্য হোটেলের ম্যানেজারকে তার এ অপছন্দের কথাটাও ভাল করেই বুঝিয়ে দিয়েছিল তার। হোটেলের ম্যানেজার লোকটা আগা গোড়াই তার সাথে সৌজন্যতা বজায় রেখেই কথা বলে সব সময়। আর এরা ঘরে আসবার পর থেকে, এখন পর্যন্ত যা দু’ একটা কথা হয়েছে, তা বেশ ভদ্রোচিত ভাষাতেই বলেছে’।
 

এ’সব ভেবেই সবিতা নিজের মনের জড়তা ঝেরে ফেলে কোনও লাজলজ্জা না করেই বাপ ও ছেলে দু’জনের দিকে দেখে নিয়ে কিছু একটা বলতে যেতেই ছেলেটাই আবার বলে উঠল, “কি ব্যাপার পাপা? আন্টিজীকে দেখে তোমারও তো দেখছি বোলতি বন্ধ হয়ে গেল”।
 

হরদেব সিং ছেলের কথার জবাবে বলল, “ঠিক বলেছিস বেটা। সচমুচ আমার বোলতি বন্দ হয়ে গেছে রে। সবিতাজীকে দেখে তোর মাম্মির কথা মনে পড়ে গেল আমার। ঠিক এমনই ছিল তোর মাম্মি। সবিতাজী যদি শালোয়ার কামিজ পড়ত, তাহলে বিল্কুল তোর মাম্মির মত লাগত। সে’রকমই গায়ের রঙ, সে’রকমই হাইট, একই রকম বুকের ছাতি, এক রকমেরই বড় বড় চুচি দুটো। অবশ্য একটু বড়ও হতে পারে। আর দেখ, সবিতাজীর পেটটাও বিল্কুল তোর মাম্মির মতই। তোর মাম্মির পেটটাও কিন্তু এমনই দেখতে ছিল। তোর মাম্মিও যেমন একটা ছেলের মা ছিল, সবিতাজীও ঠিক তাই। সেও তো একটা আঠঠারহ সালের ছেলের মা। আমার মনে হয় সবিতাজীর শাড়ির ব্লাউজের নিচের জিনিসগুলোও তোর মাম্মির মতই হবে”।

প্রভজোত এক চুমুক মদ খেয়ে বলল, “পাপা, সে’সব তো ঠিক আছে। আর সত্যি কথা বললে, এই জন্যেই সবিতাজীকে আমার এত পছন্দ হয়েছে। কিন্তু পাপা, তোমার জন্যে কিন্তু সবিতাজী ‘অঙ্গুর খট্টা হ্যায়’। তোমার বয়স কিন্তু পঁয়তালিশ ছাড়িয়ে গেছে। সবিতাজীর পছন্দের লিস্টে কিন্তু তুমি পড় না। তাই মনে মনে বেশী স্বপ্ন না দেখে আসল কাজের কথাটা বলো”।
 

কী উদ্দেশ্যে সেদিন সেখানে সকলে উপস্থিত হয়েছিল, তা সকলেই জানতো। সবিতাও জানতো। কিন্তু তা সত্বেও হরদেবজীর কথা শুনে সবিতার একটু লজ্জাই লাগছিল। হরদেবজীর মুখ থেকে বের হওয়া প্রতিটি শব্দই যেন তার বুকে তরঙ্গের দোলা দিচ্ছিল। এর আগে তার সম্মুখে কোনও বাবা-ছেলেকে সে এভাবে তার শরীর নিয়ে কথা বলতে দেখেনি। এমন অভিজ্ঞতা তার জীবনে সেটাই প্রথম ছিল। তাই বুঝি লজ্জাটা বেশী লাগছিল তার। কিন্তু যে কাজের উদ্দেশ্যে তারা সকলে সেদিন জমায়েত হয়েছিল সেখানে লজ্জার কোনও জায়গা তো থাকবার কথা ছিল না। হোটেলের বড়মালিকের উপস্থিতিতে হোটেলের ম্যানেজার আর মালিকের ছেলে সবিতার সাথে সেক্স করবার জন্য চুক্তিবদ্ধ হতেই তো এসেছে। তাই আর অহেতুক সময় নষ্ট করবার ইচ্ছেও সবিতার ছিল না।
 

তাই নিজের মনের লজ্জা জড়তা কাটিয়ে সবিতা সকলের চোখের ওপর একবার চোখ বুলিয়ে গলা পরিস্কার করে সরাসরি জিজ্ঞেস করেছিল, “কি ব্যাপারে আপনাদের আপত্তি, শুনি”?

সবিতা যতক্ষণ মনে মনে এ’সব ভাবছিল, ততক্ষণ হুইস্কির গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে হরদেব অপলক চোখে সবিতার উদ্ধত বুকটাকে দেখে যাচ্ছিল। এবার সবিতা কথা বলতেই সে জবাব দিল, “আরে না না মিসেস আগরওয়ালা, এটাকে আপনি ঠিক আমাদের আপত্তি বলে ধরবেন না। আপনি যেসব শর্ত বলেছেন তার কোনটাতেই আমাদের কোন আপত্তি নেই। তবু আপনার দু’ একটা শর্ত নিয়ে আপনার সাথে আরেকটু পরিস্কার করে কিছু আলোচনা করব বলেই এসেছি আমরা। মানে অল্প কিছু হেরফের করবার ব্যাপারে। তবে আপনি তাতে রাজী না হলে আমরা কেউ কিছু বলব না। আপনার সব শর্তই আমরা মেনে নেব”।
 

সবিতা তখন বলেছিল, “আলোচনা করতে চাইলে করতেই পারেন আপনারা। আমার তাতে আপত্তি নেই। বলুন কি নিয়ে আলোচনা করতে চান? কোন শর্তে হেরফের করতে চান”?

হরদেব সিং কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে বলেছিল, “তার আগে আমি আরেকটা কথা বলে নিই সবিতাজী। আপনি একটা সম্ভ্রান্ত ঘরের বহু। শহর জুড়ে আপনাদের ফ্যামিলীর পরিচয় আছে। আপনার সম্মান সম্ভ্রম বজায় রাখবার জন্য আমরা চুক্তিবদ্ধ। আমাদের ধানুকা পরিবারটাকেও সকলে সম্ভ্রান্ত ও ভদ্র পরিবার বলেই মানে। এতক্ষণে আমার চোখ দেখে আর আমার কথা শুনে আপনি নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন যে আপনাকে আমার কতটা ভাল লেগেছে। আর অমন ভাল লেগেছিল বলেই ওই কথাগুলো আমি বলেছি। তাতে যদি আপনি লজ্জা পেয়ে থাকেন, বা অপমানিত বোধ করে থাকেন, বা আপনার যদি মনে হয়ে থাকে যে আমি কোনভাবে ভদ্রতার সীমা ছাড়িয়ে গেছি, তাহলে আমি সেজন্যে আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি। প্লীজ আমাকে ক্ষমা করে দেবেন”।

সবিতা প্রায় সাথে সাথেই বলেছিল, “না না, আপনার অমন ভাবার কোন কারন নেই। আপনার কথায় আমি কিছুই মনে করিনি হরদেবজী। বরং বলতে গেলে, এর আগে আর কেউ কোনদিন এত ভদ্র ভাষায় আমার রূপ সৌন্দর্যের এমন তারিফ করেছে বলে আমার মনে পড়ছে না। আর আপনি তো খারাপ ভাষায় আজেবাজে কিছু বলেন নি। ভদ্র ভাষায় আমার প্রশংসাই তো করেছেন। আর নিজের প্রশংসা শুনতে কার ভাল না লাগে, বলুন? আমারও তাই খারাপ লাগেনি। আপনি ও নিয়ে ভাববেন না। আর যে উদ্দেশ্যে আমরা সবাই আজ একসাথে হয়েছি, তাতে মন খুলে কথার আদান প্রদান করতে না পারলে তো কাজ হবে না। তবে আমি আশা করব, সব সময় আমাদের সমস্ত আলোচনা আর কাজই যেন এমন সংযত আর ভদ্র হয়”।

হরদেব সিং তার হাতের গ্লাসটা খালি করে গ্লাসটা ম্যানেজারের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে সবিতার দিকে তাকিয়ে বলল, “হ্যাঁ, ঠিক বলেছেন আপনি। আচ্ছা সবিতাজী, আপনার অনেকগুলো শর্তের মধ্যে প্রথম শর্তটা ছিল আপনি শুধু বিস থেকে পঁয়তালিশ সালের মধ্যের পুরুষদেরই এন্টারটেইন করবেন। তার মানে হচ্ছে বিস সালের কম আর পঁয়তালিশ সালের বেশী কোনও পুরুষের সাথে আপনি সময় কাটাবেন না। এই বয়সের লিমিট দুটো কেন রেখেছেন আপনি, বলুন তো? মানে আমি জানি যে পন্দ্রহ সোলহ থেকে ঊণিশ বিশ সালের কচি ছেলে ছোকড়ারা অনেকেই উমর দরাজ ম্যারেড আর হেলদি মহিলাদের সাথে মানে ধরুন তিশ পঁয়তিশ থেকে পঁচাস সালের মধ্যে এক দু’ বাচ্চার মায়েদের সাথে সময় কাটাতে খুব পছন্দ করে। আমরা তো তাহলে ওই ক্যাটাগরির কাস্টমারের সাথে আপনার জন্য ডিল করতে পারব না। আবার, অনেক পুরুষ মানুষই কিন্তু সাঠ পয়ঁসঠ সাল পর্যন্ত সেক্সুয়ালি পুরো ফিট থাকে। পয়ঁতালিশ থেকে সাঠ কিন্তু একটা বিশাল বড় রেঞ্জ। আর আমাদের হোটেলে ওই রকম বয়সের কাস্টমারের সংখ্যাই খুব বেশী। আমরা তো তাই ওইদিক দিয়েও অনেক লুজার হব। তাই বলছিলাম ওই এজ লিমিট দুটো ছেড়ে দিলে আমাদের অনেক লাভ হত। আর আপনাকে তো আগে থেকেই তাদের ছবি দেখিয়েই দেওয়া হবে। আপনার পসন্দ না হলে তো তাদের সাথে আমরা কোন ডিল ফাইনাল করবই না। ব্যাপারটা একটু ভেবে দেখুন না প্লীজ”।

সবিতা মন দিয়ে হরদেবের কথাগুলো শুনতে শুনতে নিজের জুসের গ্লাসটা শেষ করে ফেলেছিল। খালি গ্লাসটা টেবিলের ওপর রেখে দিয়ে সে আবার বিছানায় এসে বসতে বসতে বলেছিল, “দেখুন হরদেবজী। আমি তো কোনও কলগার্ল বা বেশ্যা নই। আমি যে পয়সার লোভে এ’সব করিনা, সেটা তো মনে হয় আপনি বুঝেই গেছেন। নইলে ম্যানেজারবাবু আমাকে যেমন অফার করেছিলেন সেটা আমি ফিরিয়ে দিতাম না। আপনারা যেমন নিজেদের লাভ লোকশানের কথা ভাবছেন, আমি কিন্তু সেভাবে ভাবি না, আর ভাবতে চাইও না। পয়সার কোন অভাব আমার নেই। আমার স্বামীর পয়সা প্রতিপত্তি এতটাই আছে যে সে চাইলেই আপনার এই হোটেলের মত দশটা হোটেল বানিয়ে ফেলতে বা কিনে নিতে পারে। আমি শুধু শরীরের সুখের জন্যেই এ’সব করি। একজনকে সুখ দিয়ে নিজেও ভরপুর সুখ নিয়ে আমার যৌবনটাকে পুরোপুরি ভাবে উপভোগ করি। ওই এঞ্জয়মেন্টটা না পেলে সবটাই আমার কাছে বেকার। আমার ছেলের বয়স এখন পন্দ্রহ। তাই ওই বয়সের মানে ওই পন্দ্রহ ষোল থেকে বিস বছরের বাচ্চাদের সাথে সেক্স করতে গেলে মনে হবে যে আমি আমার ছেলের বয়সী একটা ছেলের সাথে সেক্স করছি। সেই ফিলিংসটা আমি বোধ হয় এনজয় করব না। আর আমার স্বামীর বয়স এখন পঁচাশ। আর সে আরও পাঞ্চ সাল আগে থেকেই আমার সাথে সেক্স করা ছেড়ে দিয়েছে। তাই আমার মনে একটা ধারণা হয়েছে যে পয়ঁতালিশ সালের পর থেকেই পুরুষ মানুষের সেক্স পাওয়ার কমে যায়। তাই আমি পয়ঁতালিশ সালের ওপরের পুরুষদের সাথে সেক্স করতে চাই না”।

ম্যানেজার ততক্ষনে হরদেব সিংএর হাতে নতুন আরেকটা পেগ তুলে দিয়েছিল। হরদেব সিং সেই পেগে প্রথম চুমুক দিয়ে বলেছিল, “আমি আপনাকে আগেই বলেছি মিসেস আগরওয়ালা, যে আপনি আমাদের রিকোয়েস্ট না রাখলেও আপনার সাথে চুক্তি আমাদের ফাইনাল হবেই। আমার ছেলে আপনাকে এত পসন্দ করে বলেই আপনার সব কন্ডিশানই আমরা মেনে নেব। আমাদের ইনকাম কম হলেও আমরা আপনার সব শর্ত মানব। তবু বলছি, বিস সালের নিচের লিমিটটা না হয় মেনেই নিচ্ছি। তবে আপনার হাজব্যান্ড যে এই বয়সেই আপনার সাথে সেক্স করা ছেড়ে দিয়েছে, এটা শুনে সত্যিই খুব খারাপ লাগল আমার। মাত্র পঁচাশ সালেই একজন পুরুষের সেক্স পাওয়ার কমে যাওয়ার কথা নয়। অবশ্য এক্সেপশনাল কেসে বা বিমারির জন্যে এমন হলেও হতে পারে। সেজন্যে আপনার জন্য আমার দুঃখ হচ্ছে। আর বুঝতে পারছি যে এই জন্যেই আপনি এই পথে এসেছেন। আপনার শরীরে যে সেক্স এখনও ভরপুর আছে, আর আপনি সেটা মনপ্রাণ ভরে উপভোগ করেন, সেটা তো আপনাকে দেখলেই বোঝা যায়। আর আমি এটাও জানি যে এই বয়সে মহিলাদের সেক্সের ভুখ আগের থেকেও অনেক বেশী হয়ে থাকে। আমার ওয়াইফেরও অমন হয়েছিল। পয়ঁতিস সালের পর থেকেই ওর সেক্সের ভুখ আগের থেকে অনেকগুণ বেড়ে গিয়েছিল। তবে ওর কথা থাক। ওকে কোনদিন আপনার মত কষ্ট পেতে হয়নি। কিন্তু পয়ঁতালিস সালের ওপরে গেলেই যে পুরুষ মানুষের সেক্স পাওয়ার কমে যায়, আপনার এমন ধারণা কিন্তু একেবারেই ভুল। এই তো আমি তো আপনার সামনেই বসে আছি। আমার এখন পঞ্চান্ন সাল চলছে। আমাকে দেখে আপনার কী মনে হয়? আপনি কি ভাবেন আমার সেক্স পাওয়ার কমে গেছে”?

সবিতা সোজাসুজি হরদেবের শরীরটা দেখতে দেখতে জবাব দিয়েছিল, “এই বয়সে আপনার মত এমন সুন্দর স্বাস্থ্য কি আর সব পুরুষের থাকে হরদেবজী? আপনাকে তো হারকিউলিসের মত মনে হচ্ছে। কিন্তু এই বয়সে বেশীর ভাগ পুরুষ মানুষেরই শরীর স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে। আর শরীর স্বাস্থ্য ভেঙে গেলে তাদের সেক্স পাওয়ারও আর আগের মত কিছুতেই থাকতে পারে না। শরীর স্বাস্থ্য সুন্দর থাকলে, ফিজিক্যালি ফিট থাকলে, আর আপনার মত হলে, তাদের সেক্স পাওয়ার ঠিক থাকতেই পারে। তবে ঠিক আছে, এত করে যখন বলছেন আপনি, তাহলে আমি না হয় ওপরের লিমিটটা আরও দশ সাল বাড়িয়ে দিচ্ছি, পচপন। তবে আপাততঃ বিস সালের নিচের ছেলেদের আমি কনসিডার করছি না। কিন্তু বিস সালই হোক বা পচপন, আগে কিন্তু আমাকে সকলের ছবি দেখাতেই হবে। ছবি দেখে পসন্দ হলে তবেই আমি অ্যাকসেপ্ট করব। আর ছবি দেখে আমি কাউকে রিজেক্ট করলে আপনারা কোনরকম রিকনসিডার করবার অনুরোধ করবেন না। ঠিক আছে”?

হরদেব সিং মদের গ্লাসে আরেকটা চুমুক দিয়ে বলেছিলেন, “ও কে সবিতাজী, আপনার এ কন্ডিশানটা আমরা মেনে নিলাম। আপনি যে আমার একটা রিকোয়েস্ট পুরোটা না হলেও আধাআধি রাখলেন, সে জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ” বলে একটু হেসেই আবার বলেছিলেন, “তাহলে সবিতাজী, আমি কি ধরে নিতে পারি যে আমাকে আপনি রিজেক্ট করছেন না? মানে আমার উমর তো এখন পচপন সালই চলছে”।


______________________________

Like Reply
(Update No. 154)

সবিতাও মুচকি হেসে বেশ চালাকি করে তার কথার জবাবে বলেছিল, “হ্যাঁ তা ধরতে পারেন হরদেবজী। কিন্তু আপনি কিন্তু হোটেল পক্ষের লিস্টেই থাকবেন। সাধারণ কাস্টমারের লিস্টে কিন্তু আপনি পড়বেন না”।

হরদেব সিং তারপর খুশী মুখে বলেছিলেন, “থ্যাঙ্ক ইউ সবিতাজী। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমাকে না হয় আপনি হোটেল পক্ষের লিস্টেই রাখবেন। কিন্তু হোটেল পক্ষের লিস্টে তো আমার ছেলের নাম আর আমাদের এই ম্যানেজারের নাম আগে থেকেই ছিল। আগে দু’জন ছিল। তাই পন্দ্রহ পন্দ্রহ দিন করে মাসটাকে দু’ ভাগ করা হয়েছিল। এখন তাহলে কি করে ভাগ করা হবে, সেটা আপনিই ঠিক করুন”।

সবিতা এমন সম্ভাবনার কথা মনে মনে আগে থেকেই ভাবতে শুরু করেছিল। তাই হরদেবের কথার জবাবে সে বলেছিল, “তার মানে এটা পরিস্কার হয়ে গেল যে এই ম্যানেজারবাবু আর আপনার ছেলের সঙ্গে সঙ্গে আপনিও আমার সাথে মাসে অন্ততঃ একবার হলেও সেক্স করতে চাইছেন। কি তাই তো”?

হরদেব সিং তখন বলেছিলেন, “আপনি আমাকে তেমন সুযোগ দিলে আমি সত্যিই খুব খুশী হব মিসেস আগরওয়ালা”।

সবিতা তখন প্রায় সাথে সাথেই বলেছিল, “ও কে, নো প্রব্লেম। তাহলে অ্যাট বেস্ট পন্দ্রহ দিনের জায়গায় ওই স্ল্যাবটাকে দশ দিন করা যায়। এক তারিখ থেকে দশ তারিখ, এগারো থেকে বিশ, আর একুশ থেকে মাসের শেষ দিন পর্যন্ত। আপনাদের ইচ্ছে মত স্ল্যাবগুলো নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিতে পারেন আপনারা। তবে এখন যেভাবে ডিসাইড করবেন সে’ভাবেই কিন্তু স্ল্যাব মেইন্টেইন করে যেতে হবে বরাবর। মানে ধরুন, আপনি নিজে যদি আজ প্রথম স্ল্যাবটা পসন্দ করেন তাহলে কখনোই আর সেটা বদলে সেকেন্ড বা থার্ড স্ল্যাবে যেতে পারবেন না। আর অন্য দু’জনের ব্যাপারেও একই নিয়ম থাকবে। এখন যে থার্ড স্ল্যাবটা নেবে সে আর কখনোই ফার্স্ট বা সেকেন্ড স্ল্যাবে যেতে পারবে না। আর একটা কথা মনে রাখবেন। এক স্ল্যাবে একদিন হলেও একদিন পুরো নয় কিন্তু। একবার। দশদিনের মধ্যে যে কোনও একদিন শুধু একবার। আর একবার মানে শুধু একঘন্টার জন্যে। এতে যদি আপনারা রাজী না হতে পারেন, তাহলে আমি সরি। এর চেয়ে বেশী কনসিডার করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়”।
 

হরদেব সিং, প্রভজোত আর ম্যানেজার সকলেই সবিতার প্রস্তাব স্বীকার করে, চুক্তি পাকা হবার খুশীতে আরও এক এক পেগ মদ খেয়ে খুশীর উৎসব উদযাপন করবার পর ম্যানেজার ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। সবিতা তখন মনে মনে ভাবছিল, চুক্তি পাকা হলেও তার সেদিনের সময়টুকুতে শরীরের সুখ পাওয়া হল না। কথায় কথায় তখন রাত সাতটা পেরিয়ে গিয়েছিল। হাতে আর মোটে দেড় ঘন্টার মত সময় ছিল। এরা চলে যাবার পর আর কোন সঙ্গীও বোধহয় আর পাওয়া যাবে না। কিন্তু তার মনটা একটা পুরুষ দেহ পাবার জন্যে ভেতরে ভেতরে উতলা হয়ে উঠেছিল। একই বিছানায় একটু দুরে বসে থাকা পঞ্চান্ন বছরের সুপুরুষটা এরপর থেকে প্রতি মাসে একবার করে তার সাথে সেক্স করবে। সেই সাথে এই রোগা পাতলা ঢ্যাঙা ছেলেটা আর এই হোটেলের ম্যানেজারও প্রতি মাসে একবার করে তাকে শরীরের সুখ দেবে, ভেবেই তার শরীরের ভেতরটা চঞ্চল হয়ে উঠছিল। কিন্তু একে হাতে সময় কম, তার ওপর সেই সুপুরুষটির সাথে তার ছেলেও তখনও সবিতার রুমের ভেতরেই ছিল বলে, তার মন চাইলেও সে এ ব্যাপারে কথা ওঠাতে পারছিল না। কিন্তু তার শরীর মন দুটোই হরদেবকে ওই মূহুর্তে পাবার জন্য উন্মুখ হয়ে উঠেছিল।

সবিতার মনের এমন ভাবনার মধ্যেই দুই বাপ ছেলের মধ্যে চোখের ঈশারার মাধ্যমে এমন কিছু একটা আদান প্রদান হলেও, তা সবিতার চোখ এড়ায়নি। হঠাৎ হরদেবজী বলে উঠলেন, “সবিতাজী, আমাদের মধ্যে সব কথাই তো ফাইনাল হয়ে গেল। তবে এখন ছোট্ট একটা আর্জি করতে চাই আপনার কাছে। যদি আপনি অনুমতি দেন, তাহলে সেটা বলি”।

সবিতার মনের ভেতরের ময়ুরটা যেন হরদেবের এ’কথা শুনে বলে উঠেছিল ‘নাচ ময়ুরী নাচ’। মনের আশা বুঝি তার পূরণ হতে চলেছে ভেবে নিজেকে যথেষ্ঠ স্বাভাবিক রাখবার চেষ্টা করে বলেছিল, “হ্যাঁ, বলুন”।

হরদেব সিং তখন বলেছিলেন, “আসলে সবিতাজী, আমার বহু মানে প্রভজোতের ওয়াইফ আপনাকে একটু দেখতে চাইছিল। আসলে আপনার সাথে একটু আগে আমাদের যে চুক্তিটা হল, সেটাকে প্রভজোতের ওয়াইফও মেনে নিয়েছে। আর ও মেনেছে বলেই আমরা এটা করতে পারলাম। ওরা নিজেরা পসন্দ করে ভালবেসে বিয়ে করেছে। প্রভজোত যে ভারী ভড়কম শরীরের বয়স্কা মহিলাদের খুব পছন্দ করে সেটা ও আগে থেকেই জানত। ও নিজে বেশ দুবলা পাতলা বলে ও যে প্রভজোতকে ভরপুর মজা দিতে পারে না সেটাও ও জানে। সে জন্যে ওর দুঃখও খুব। কিন্তু ও দুবলা পাতলা হলেও খুবই সুন্দরী। তবে দেখতে যতটা খুবসুরত ওর মনটা তার থেকেও অনেক বেশী সুন্দর। অবশ্য এখনও ওকে অতটা সেক্সী বলে মনে হয় না আমার। তবে আমি জানি কয়েক বছরের মধ্যে ও প্রভজোতের মনের মত সেক্সী হয়ে উঠবে। সে চেষ্টাও ওর আছে। ও গুজরাটি হলেও এখানেই বোর্ন অ্যান্ড ব্রট আপ। আর আমাদের ফ্যামিলির সাথে খুব সুন্দর ভাবে মানিয়ে নিয়েছে। আমাকে আর প্রভজোতকে ও খুব ভালোবাসে। আর আমাদের দু’জনকে ভালোবাসে বলেই আমাদের মনের সব ইচ্ছা ও পূর্ণ করতে চায়। প্রভজোতের মুখে আপনার কথা শুনে, আর আপনি যে একটা ভদ্র ঘরের হাউসওয়াইফ এবং এক বাচ্চার মা, এসব শুনেই ও প্রভজোতকে পারমিশন দিয়েছে আপনার সাথে সেক্স করবার জন্য। কিন্তু ওর খুব দেখার ইচ্ছে আপনি কতটা সুন্দরী আর সেক্সী। সেজন্যেই ও-ও আজ আমাদের সাথে হোটেলে এসেছে। এখন অন্য একটা রুমে আছে। আপনার যদি আপত্তি না থাকে, তাহলে আমি ওকে একটু এখানে ডেকে আনি? আর কিচ্ছু না, ও শুধু আপনাকে একটু দেখতেই আসছে। অন্য কোন ব্যাপার নেই এর মধ্যে। আপনার আপত্তি নেই তো”?

সবিতা হরদেবের কথা শুনে অবাক হয়ে বলেছিল, “কিন্তু হরদেবজী, আমাদের চুক্তির শর্তগুলো তো ভুলে গেলে চলবে না। আমার রুমে একসময়ে শুধু একজনই থাকতে পারবে, এটাও কিন্তু চুক্তির একটা শর্ত। এখানে এতক্ষণ আলোচনার স্বার্থে আপনারা তিনজন ছিলেন বলেই আমি সেটা এলাও করেছিলাম। কিন্তু এখন তো আলোচনা শেষ হয়ে গেছে। এখনও যে আপনারা দু’জন এখানে বসে আছেন, সেটাও কিন্তু চুক্তির বাইরে হয়ে যাচ্ছে। ম্যানেজারবাবুর সঙ্গে আপনাদের একজনকেও চলে যাওয়া উচিৎ ছিল। শর্ত হিসেবে যে কোনও একজন থাকতেই পারেন। আর শুধু থাকাই নয়, আপনাদের তিনজনের মধ্যে যে কোন একজন এখন আমার সাথে সেক্সও করতে পারেন। কিন্তু সেটা না করে আপনি আরও একজনকে ডেকে আনতে চাইছেন। ব্যাপারটা কি ঠিক হচ্ছে? প্রথম দিনেই যদি চুক্তির শর্ত ভেঙে ফেলা হয় তাহলে সে চুক্তি কি আর টিকবে”?

সবিতার কথা শুনে হরদেব সিং শান্ত স্বরেই হাসিমুখে বলেছিল, “চুক্তির কোন শর্তই আমরা কখনোই ভাঙব না সবিতাজী। আপনি এখন যেটা বললেন, সেটাও চুক্তির একটা শর্তই। আমরা সেটা ভুলে যাচ্ছি না। তবে ভুলটা মনে হয় আপনিই করছেন। কারণ ওই শর্তটা তো তখন মানবার কথা যখন কেউ আপনার সাথে সেক্স করতে আসবে, তাই না? এখন তো আমরা কেউ সে’সব করতে যাচ্ছি না। আমার বহু শুধু আপনাকে একটু দেখতে চাইছে। আপনার সাথে পরিচিত হতে চাইছে। হয়তো আপনার সাথে দু’ একটা কথাও বলবে। এর বেশী তো কিছু নয়”।

হরদেব সিংএর কথার যুক্তি সবিতা নস্যাৎ করে দিতে না পেরে বলেছিল, “ওঃ, সরি। সত্যি, আমিই ভুল বলেছি। বেশ তবে ডাকুন তাকে। কিন্তু এটা কিন্তু শুধু এখনই হতে পারে। এর পর প্রভজোত যখন আমার সাথে সেক্স করতে আসবে তখন যেন ওর বিবি আবার ওর সাথে চলে না আসে”।

হরদেব সিং হেসে বলেছিল, “বিল্কুল, তাই হবে সবিতাজী” বলে তার ছেলের উদ্দেশ্যে বলেছিল, “বেটা, তুই ম্যানেজারকে ফোন করে বলে দে বহুকে এখানে পাঠাতে”।

প্রভজোত রুমের দেয়ালে ঝোলানো ইন্টারকমের দিকে এগিয়ে যেতে হরদেব সবিতার বুকের দিকে দেখতে দেখতে বলেছিল, “দেখেছেন তো সবিতাজী। আমরা সবাই কথায় কতটা পাক্কা। আমরা কেউ কিন্তু মোবাইল নিয়ে আপনার রুমে আসিনি”।

সবিতা তখন একটু দুষ্টুমি করে নিজের বুকের খাঁজে একটা আঙুল ঢুকিয়ে চুলকাতে চুলকাতে জবাব দিয়েছিল, “ধন্যবাদ হরদেবজী”।

প্রভজোত ইন্টারকমে কথা বলে তার বাবার দিকে তাকিয়ে বলেছিল, “আচ্ছা পাপা, আমাদের চুক্তিটা কবে থেকে লাগু হবে? মানে আজ কি আমরা কেউ সবিতাজীর সাথে সেক্স করতে পারব? সবিতাজী? আপনি কি বলেন”?
 

সবিতা মনে মনে একটু খুশী হয়ে বলেছিল, “আপনারা চাইলে আজ থেকেই চুক্তিটা লাগু হতে পারে। এখনও দেড় ঘন্টা আমার হাতে আছে। চুক্তির শুরু করাই যায়। তবে আজ তো ছাব্বিশ তারিখ। তাই চুক্তি হিসেবে এটা তিন নাম্বার স্ল্যাবে পড়ছে। তিন নাম্বার স্ল্যাবটা আপনারা কে নেবেন সেটা আপনারা ডিসাইড করুন আগে। তিন নাম্বার স্ল্যাব যে নেবে সে এখনই সাথে সেক্স করতে পারেন”।
 

প্রভজোত হরদেবের দিকে তাকিয়ে অনুনয় ভরা গলায় বলেছিল, “পাপা, আমি করি আজ? আসলে চুক্তিটা পাকা হয়ে গেছে বলে আমি সত্যি খুব এক্সাইটেড হয়ে আছি। প্লীজ পাপা”।

হরদেব হাতের ঈশারায় ছেলেকে শান্ত করে বলেছিল, “এক মিনিট সবুর কর বেটা। বহু কে আসতে দে। বহু যেটা বলবে আমরা সবাই তো সেটাই মেনে নেব বলে বহুকে কথা দিয়েছি না? সে কথাটা না রাখলে বহুরানী মনে কষ্ট পাবে না”?
 

হরদেব সিং এর কথা শুনে সবিতা মনে মনে আরও অবাক হচ্ছিল। এক ভদ্র পরিবারের বৌ তার শ্বশুর আর স্বামীকে বলে দেবে তারা কে কবে সবিতার সাথে সেক্স করবে!? কিন্তু বেশী কিছু ভাববার আগেই দরজায় নক হল। প্রভজোত উঠে গিয়ে দড়জা খুলে দিতেই একটি সুন্দরী মেয়ে ঘরে ঢুকেই প্রভজোতকে জড়িয়ে ধরে তার ঠোঁটে চুমু খেয়ে বলেছিল, “হাই জান, বলো কি খবর? তোমাদের কন্ট্রাক্ট ফাইনাল হয়েছে তো? না কি”?
 

প্রভজোতও মেয়েটির ঠোঁটে বেশ আবেগের সাথে চুমু খেয়ে বলেছিল, “হ্যাঁ ডার্লিং। প্রায় সব কিছুই ফাইনাল হয়ে গেছে। মাসে দুটোর জায়গায় এখন তিনটে স্ল্যাব হচ্ছে দশ দশ দিনের। শুধু একটা ব্যাপারেই ডিসিশান নেওয়া বাকি আছে। সেটা পাপা তোমাকে বলবে” বলে মেয়েটির হাত ধরে ঘরের ভেতরে আনতেই সবিতা মেয়েটাকে স্পষ্টভাবে দেখতে পেয়েছিল। জিনস আর টপ পড়া মাঝারি উচ্চতার মেয়েটিকে দেখে তার মনে হল মেয়েটির বয়স তেইস কি চব্বিশ হবে। মুখটা দারুণ সুন্দর দেখতে। অনেকটা দীপিকা পাডুকোনের মত। তেমনই স্লিম ট্রিম, বার্বি ডল টাইপের ফিগার মেয়েটার।

সবিতার ওপর চোখ পড়তেই মেয়েটা চোখ বড় বড় করে দম বন্ধ করে হাঁ হয়ে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকবার পর বলেছিল, “ওয়াও! আনবিলিভেবল! হোয়াট এ ফিগার!! কী দারুণ দেখতে”! বলেই আবার প্রভজোতের দিকে তাকিয়ে বলেছিল, “রাইট চয়েস হানি। একদম পারফেক্ট চয়েস। আমি জানি, আমি তোমাকে এতদিনে যে সুখ যে খুশীটা দিতে পারিনি, উনি তোমাকে ডেফিনিটলি সে সুখটা ভরপুর দেবেন” বলেই হরদেবজীর কাছে গিয়ে তার একটা হাত নিজের দু’হাতে ধরে বলেছিল, “পাপাজি, আপনার দুঃখের দিন শেষ হল বলে, আমি খুব খুব হ্যাপি। মাম্মিজী চলে যাবার পর থেকে আপনি আর আপনার ছেলে যে কতোটা কষ্টে ছিলেন, সে তো আমি জানিই। আমি নিজেও তো কম চেষ্টা করিনি আপনাদের দু’জনকে সুখী করতে। কিন্তু কি করব বলুন। আমি তো বরাবর চেষ্টা করেছি মাম্মিজীর মত হতে। এখনও লগাতার চেষ্টা করেই যাচ্ছি, যাতে আমার হাবির সাথে সাথে আমি আপনাকেও খুশী করতে পারি। কিন্তু এতদিনেও তো ওয়েট পুট করে উঠতে পারিনি। এখনও আমি মোটে ফিফটি টু। মাম্মিজী নিজে হাতে আমাকে সব কিছু শিখিয়ে গিয়েছিলেন। স্বামী আর শ্বশুরকে খুশী রাখবার সমস্ত টিপস আমাকে বুঝিয়েছিলেন। আমি সে’সব খুব মন দিয়ে শিখলেও নিজের শরীরটাকে মাম্মিজীর মত করে তুলতে পারিনি বলে আপনাদের কাউকে সেভাবে খুশী করতে পারিনি। সেজন্যে আমিও মনে মনে খুব ওরিড ছিলাম। আজ থেকে আমার মনে আর অত দুঃখ থাকবে না” বলতে বলতেই হঠাৎ থেমে গিয়ে কিছু একটা মনে পড়তেই আবার বলেছিল, “আচ্ছা পাপাজী, সবিতাজী তার এক নম্বর শর্তটাকে মোডিফাই করতে সত্যি রাজী হয়েছেন তো? প্লীজ পাপাজি, বলুন না। সেটা না শোনা অব্দি আমার মন শান্ত হবে না”।

হরদেব সিং তার পুত্রবধূকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে তার গালে আর ঠোঁটে চুক চুক করে কয়েকটা চুমু খেয়ে জবাব দিয়েছিল, “হাঁ বহুরানী, সবিতাজী বহুত মেহেরবানী করেছেন। প্রভজোত আর ম্যানেজারের সাথে সাথে উনি আমাকেও স্বীকার করে নিয়েছেন। এ’জন্যে আমি তার কাছে খুব কৃতজ্ঞ। অবশ্য তোর কাছেও আমরা বাপ বেটা দু’জনেই কৃতজ্ঞ থাকব সারা জীবন। তুই আমাদের এভাবে সাপোর্ট না দিলে, তোর মাম্মিজীকে হারাবার পর এমন সুখের কথা আমরা স্বপ্নেও ভাবতে পারতাম না। এখন শুধু আমাদের তিনজনের মধ্যে কে কোন স্ল্যাবে সবিতাজীর কাছে আসবে, সেটাই শুধু তুই ঠিক করে দে বহুরানী। তবে তার আগে চল বেটি, তোকে সবিতাজীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিই” বলে সবিতার দিকে তাকিয়ে বলেছিল, “সবিতাজী। এই লক্ষ্মী মেয়েটাই হচ্ছে আমার প্রভজোতের ওয়াইফ। আমার আদরের বহুরানী” বলেই মেয়েটার ঠোঁটে আরেকটা চুমু খেয়ে বলেছিল, “আর বহুরানী, ইনিই হচ্ছেন সেই সবিতাজী। যাকে দেখে প্রভজোত বেটা পাগল হয়ে উঠেছিল। আর আমিও যাকে দেখে আজ খুব খুশী হলাম। তুই সাপোর্ট দিয়েছিলি বলেই এ’সব হল”।
 

সবিতা মেয়েটার কথাবার্তা শুনে একের পর এক অবাকই হয়ে যাচ্ছিল। সে কিছু বলে ওঠবার আগেই মেয়েটা এগিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে সবিতার মাংসল ডান হাতটা নিজের হাতে নিয়ে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলেছিল, “হাই আন্টিজী। আমি ভাবনা” বলেই চোখ বড় বড় করে অবাক বিস্ময়ে বলে উঠেছিল, “ও মাই গড! কি নরম তুলতুলে হাত আপনার আন্টিজী”!

সবিতার মাংসল হাত দুটো সত্যিই খুব তুলতুলে। এটা সবিতা নিজেও জানত। সব পুরুষেরাই তাদের আসল জিনিসটাতে তার তুলতুলে হাতের স্পর্শ পেলে খুব বেশীক্ষণ নিজেদের ধরে রাখতে পারে না। ভাবনা সবিতার একটা হাত দু’হাতে ধরে টিপতে টিপতে অবিশ্বাস্য চোখে হাতটার দিকে দেখতে দেখতে বলেছিল, “ইশ, কী ভাল লাগছে আপনার হাতটা টিপতে আন্টিজী! মনে হচ্ছে মাখন দিয়ে তৈরী! ভেতরে যেন হাড় গোড় বলতে কিচ্ছুটি নেই। আর আমার হাতগুলো দেখুন। আঙুলগুলো কেমন কাঠি কাঠি, চেটোটা কেমন চ্যাপ্টা আর শক্ত। এমন হাতের ছোঁয়া কি আর পুরুষ মানুষের ভাল লাগে, বলুন”? বলেই প্রভজোত আর হরদেব সিংএর উদ্দেশ্যে বলেছিল, “হানি ডার্লিং, পাপাজী, এখন দেখা যাবে, আপনাদের ভেতর কত দম আছে। আন্টিজীর এমন নরম হাত যে কোন পুরুষের লন্ডকে দু’ মিনিটেই বমি করিয়ে ছাড়তে পারবে” বলেই আবার সবিতাকে জিজ্ঞেস করেছিল, “আচ্ছা আন্টিজী, আপনি সত্যি পাপাজীকে অ্যাকসেপ্ট করেছেন তো? আমার কেন জানিনা বিশ্বাসই হতে চাইছে না। আপনি বলুন না আন্টিজী, এটা সত্যি তো? আসলে আপনি তো আগে বলেছিলেন যে পয়ঁতাল্লিশের ওপরে কাউকে আপনি চান্স দেবেন না। পাপাজীর তো এখন পচপন চলছে। তাই জিজ্ঞেস করছি আর কি”।

ভাবনা ঘরে ঢোকবার পর থেকেই তার অনবরতঃ বিস্ফোরক কথা বার্তায় সবিতা বেশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছিল। এবার ভাবনার প্রশ্ন শুনে সে কোন রকমে জবাব দিয়েছিল, “হাঁ, আমি তাকে অ্যাকসেপ্ট করেছি”।
 

ভাবনা সাথে সাথে সবিতাকে ছেড়ে হরদেব সিংএর মুখটা দু’হাতে ধরে “কনগ্র্যাটস পাপাজী” বলে তার দু’গালে আর ঠোঁটে অনেকগুলো চুমু খেয়েই তাকে ছেড়ে দিয়ে আবার সবিতার পাশে বসে জিজ্ঞেস করেছিল, “থ্যাঙ্ক ইউ আন্টিজী। আমার পাপাজী আর হাবিকে যে আপনি আপনার এমন তুলতুলে শরীরটা উপভোগ করবার অনুমতি দিয়েছেন, এ জন্যে আমি আপনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকব। তবে আন্টিজী, আমি আপনাকে ভরসা দিচ্ছি। পাপাজীকে কনসিডার করলেন বলে আপনাকে কোনভাবেই আফসোস করতে হবে না। সেক্স পাওয়ারের দিক থেকে পাপাজী এখনও একটা ত্রিশ বছরের যুবকের মতই টগবগে আর তাজা আছে। আমি নিশ্চিত জানি যে উনি আপনাকে এতটাই সুখ দিতে পারবেন যে সুখ হয়তো এর আগে আর আপনি কখনও পাননি। আর এটা শুধু কথার কথা নয়। পাপাজী যখন প্রথমবার আপনাকে করবেন তখন আপনি নিজেই সেটা ভালভাবে বুঝতে পারবেন। আচ্ছা আন্টিজী, আমি তো শুধু আপনাকে একটু দেখব বলেই এসেছিলাম। আর এটাও জানি যে আজকের পর আমি আর বোধহয় কখনো আপনার কাছে আসতে পারব না। কিন্তু আপনার কথা শুনবার পর থেকেই আমার মনে অনেক কৌতূহল হয়েছে। আপনার কাছ থেকে কয়েকটা ছোট ছোট প্রশ্নের জবাব পেতে আমার খুব ইচ্ছে করছে। সে’গুলো জিজ্ঞেস করলে আপনি খারাপ পাবেন না তো”?

সবিতা এ প্রশ্নের কি জবাব দেবে না দেবে বুঝতে না পেরে মুখ ফস্কে বলে ফেলেছিল, “কী প্রশ্ন”?

ভাবনা সাথে সাথেই বলেছিল, “না আমি আপনার পরিবার বা ফ্যামিলি লাইফ নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করব না আন্টিজী। আমি জানি আপনি একটা করোরপতি, ভদ্র ও সম্ভ্রান্ত ঘরের হাউসওয়াইফ। আপনাকে তেমন কোনও প্রশ্ন করে আমি বিব্রত বা অসম্মানিত করতে চাই না। শুধু আপনার নিজের ব্যাপারেই দু’ একটা কথা জানতে চাই। যাতে করে আমি একটা আন্দাজ করতে পারি, আমার পাপাজী আর হাবি আপনাকে পেয়ে কতটা খুশী হতে হবেন। তবে তার আগে আমি আরেকটা ব্যাপার আপনার কাছে পরিস্কার করে দিতে চাই আন্টিজী। এতক্ষণে আমার কথাবার্তা বা আচার ব্যবহার দেখে আপনার মনে হয়তো অনেক প্রশ্ন উঠেছে। সেগুলো আগে একটু ক্লিয়ারলি আপনাকে বুঝিয়ে দিই”।

সবিতা ভাবনার এ প্রশ্নের কোন জবাব না দিয়ে চুপ করে থাকতেই ভাবনা বলল, “আমার মাম্মিজী মানে আমার সাসুমা, অনেকটা আপনার মতোই সুন্দরী আর সেক্সী ছিলেন আন্টিজী। আমার আর আমার হাবির মধ্যে চুড়ান্ত ভালবাসা থাকলেও ওকে আমি ওর মনের চাহিদা মত সেক্সুয়াল প্লেজারটা দিতে পারি না। অবশ্য সেটার জন্য আমি নিজে সেভাবে দায়ী নই। আমার শারীরিক গঠনটাই এর জন্যে দায়ী। ও যে ছোটবেলা থেকেই একটু বয়স্কা ও বাল্কি ম্যারেড মহিলাদের পছন্দ করে সেটাও আমি বিয়ের অনেক আগে থেকেই জানতাম। আমাদের দু’জনের মধ্যে ভালবাসার অভাব না থাকলেও, সেক্সের দিক দিয়ে আমি ওকে কোনদিনই পুরোপুরি সুখ দিতে পারিনি। আমরা বিয়ের আগেও সেক্স করেছি। তখনও আমি সেটা বুঝেছি। তাই ওকে বুঝিয়েছিলাম যে মনের ভালবাসায় ওকে ভরিয়ে দিতে পারলেও যতদিন না আমার চেহারার তেমন পরিবর্তন হবে ততদিন পর্যন্ত পুরোপুরি শরীরের সুখ আমি ওকে কিছুতেই দিতে পারব না। আর সেটা তো এক দু’ বছরের মধ্যেই সম্ভব হবে না। তাই ওকে বলেছিলাম আমাকে বিয়ে না করে ওর পছন্দের অমন কোন বাল্কি তুলতুলে মেয়েকে ও বিয়ে করুক। কিন্তু ও আমাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করতে রাজীই হল না। অবশ্য এর পেছনে আরেকটা কারন ছিল। ও যে এডাল্ট হবার পর থেকেই ওর মাম্মির সাথে মাঝে মধ্যে সেক্স করতো, সেটা আমি আগে থেকেই জানতাম। আর মেনেও নিয়েছিলাম। অন্য কোন মেয়ে হয়তো ওর আর ওর মাম্মিজীর সেক্স রিলেশনটা মেনে নিত না। তাই ও আমাকেই বিয়ে করেছিল। আমাদের বিয়ের আগেই মাম্মিজী পাপাজীর সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল। আমাকে তারা সকলেই খুব ভালবাসতেন। তাই পরিবারের সকলে মিলে মিশে থাকব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েই আমাদের বিয়ে দিতে রাজী হয়েছিলেন। আমিও সকলকে আগে থেকেই ভালবাসতাম। এনারা সকলেই খুব ভাল মানুষ। তাই আমিও আপত্তি করিনি। বিয়ের পর আমার হাবি যখন আমাকে ভরপুর সুখ দিয়েও নিজে সেক্সুয়ালি আনহ্যাপি থাকতে শুরু করেছিল, তখন আমিই ওকে মাম্মিজীর কাছে পাঠিয়ে দিতাম। মাম্মিজী ওকে ভরপুর সুখ দিতেন। আমিও দুঃখ পেতাম না, কারন আমার হাবি আর পাপাজী আমাকেও কখনও অখুশী রাখতেন না। আর তাছাড়া পাপাজীও আমাকে ভালবাসতেন। মাম্মিজী যখন আমার হাবির সাথে সেক্স করতেন তখন পাপাজীর সেক্সের প্রয়োজন হলেই আমি নিজেই তার কাছে চলে যেতাম। পাপাজীও আমাকে মাম্মিজীর মত করেই করতেন। হ্যাঁ, তারও পুরোপুরি সুখ হয় না আমাকে করে। তবু এতে আমাদের চারজনের কারোরই কোন আপত্তি ছিল না। আর মাম্মিজী তো আমাকে একদম হাতে ধরে শিখিয়ে দিয়েছিলেন সেক্সের সময় পার্টনারকে কি করে সুখী করতে হয়। এভাবে সকলে মিলেমিশেই সুখে দিন কাটাচ্ছিলাম আমরা। কিন্তু আমাদের বিয়ের মাত্র পাঁচ মাস বাদেই....” বলেই থেমে গিয়েছিল।


______________________________
Like Reply
(Update No. 155)

সবিতা দেখেছিল ভাবনার চোখ দুটো ছলছল করে উঠেছিল। ভাবনা কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে নিজের চোখের জল মুছে আবার বলতে শুরু করেছিল, “আমাদের বিয়ের মাত্র পাঁচ মাস বাদেই একদিন গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে যাবার ফলে মাম্মিজী আগুনে পুড়ে আমাদের ছেড়ে চলে যান। সেই থেকে আমাদের সংসারে যেন গ্রহণ লেগে গিয়েছিল। হাবি আর পাপাজীকে আমি সামলাতেই পারছিলাম না। মাম্মি তার জীবনের শেষ দিনটা পর্যন্ত তার স্বামী আর ছেলেকে সমান খুশীতে রেখেছিলেন। দু’জনকে সেক্সুয়ালি হ্যাপি রাখবার ইচ্ছে ও ক্ষমতা থাকা সত্বেও সেটা করতে পারছিলাম না আমি। মাম্মিজী আমাকে সব কিছু শিখিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সব জেনে বুঝেও, আর নানাভাবে চেষ্টা করলেও নিজের শরীরটাকে তো আর এত তাড়াতাড়ি মাম্মিজীর মত করে তুলতে পারব না আমি। তাই তাদের কাউকেই আমি প্রয়োজনীয় সুখটুকু দিতে পারি না। দু’ তিন মাস আগে থেকেই আমার হাবি আপনার কথা বলছিল। আমরা সকলে মিলে অনেক ভাবনা চিন্তা করবার পরই সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলাম। তাই আজ আমরা সকলে আপনার কাছে এসেছি। আপনাকে দেখে আমারও মনে হচ্ছে আমাদের মাম্মিজীর মত রোজ রোজ তারা আপনাকে না পেলেও মাসে অন্ততঃ একটা দিন আপনার সাথে সেক্স করেও তারা খুব সুখ পাবেন। অবশ্য যদি সম্ভব হত তাহলে আমরা পার্মানেন্টলিই আপনাকে আমার হাবি আর পাপাজীর সেক্স পার্টনার করে নিতাম। আর আপনিও যদি তাতে রাজী হতেন, তাহলে হোটেলের এই রুমটা আর রাখবার প্রয়োজন হতনা আপনার। রোজ বিকেলে আপনাকে আমরা আমাদের বাড়িতেই নিয়ে যেতাম। আর আপনাকে রোজই এক দু’ ঘন্টার জন্যে আমাদের মাম্মিজী বানিয়ে খুশী হতাম। একবার তো এটাও ভেবেছিলাম যে আপনি যদি আপনার হাজব্যান্ডকে পাকাপাকি ভাবে ছেড়ে দেন, মানে যদি তার কাছ থেকে ডিভোর্স নিয়ে নেন, তাহলে আমরা পাপাজির সাথে আপনার বিয়ে দিয়ে পাকাপাকি ভাবে আপনাকে আমাদের ফ্যামিলীতে আমার সাসুমা করে নিয়ে যাব। কিন্তু আপনি তো রোজ আলাদা আলাদা ছেলে পুরুষের সাথে সেক্স করতে পছন্দ করেন। আর আপনি আপনার হাজব্যান্ড আর ছেলেকে ছেড়ে আসতে চাইবেন না। তাই সবদিক ভেবে আমরা আপনার সমস্ত শর্তই মেনে নিয়েছি। মাসে অন্ততঃ একটা দিন তো আমার হাবি আর পাপাজী আপনার কাছে সুখ পাবেন। আপাততঃ শুরুটা এভাবেই হোক। ভবিষ্যতে কি হবে সেটা পরে দেখা যাবে”।

ভাবনার কথা শুনতে শুনতে সবিতা একের পর এক অবাক হচ্ছিল। তার বিশ্বাসই করতে কষ্ট হচ্ছিল, এমনটাও কি হতে পারে! এক সম্ভ্রান্ত প্রতিপন্ন ঘরে স্বামী, স্ত্রী, ছেলে আর ছেলের বৌ মিলেমিশে এভাবে সেক্স করে যেতে পারে!
 

ভাবনা একটু দম নিয়ে তখন আবার বলেছিল, “আমার চেহারা তো দেখতেই পাচ্ছেন আন্টিজী। সবাই বলে আমি নাকি খুব রূপসী, বার্বি ডলের মত সুন্দরী। কিন্তু আপনিই বলুন তো আন্টিজী, এমন রূপের কী দাম আছে, যে রূপে স্বামীকে মুগ্ধ করা যায় না? পরিবারের লোকগুলোকে নিজের সৌন্দর্যে আমি মুগ্ধ করতে পারি না, এ যে আমার কী কষ্ট তা তো কাউকে বলে বোঝাতে পারব না। আমাদের মাম্মিজী ঠিক আপনার মতই সেক্সী আর সুন্দরী ছিলেন। সাড়ে পাঁচ ফুট হাইট, আটত্রিশ সাইজের বুক, চুচিগুলো ডাবলডি কাপের, ভারী ও ঈষৎ ঝোলা চুচি দুটো, কোমড় ছিল ছত্রিশ, পাছার মাপ ছিল বেয়াল্লিশ, ওয়েট ছিল প্রায় একাশি কেজি। আর আমার দেখুন, হাইটে কম, পাঁচ ফুট চার, বুক মোটে বত্রিশ, ব্রা না পড়লেও একই রকম লাগে দেখতে। ঝুলে পড়া তো দুরের কথা, হাতে ভাল করে মুঠো করে ধরতেও পারে না এরা কেউ। কোমড় ছাব্বিশ, পাছা চৌত্রিশ, ওয়েট মোটে বাহান্ন, গায়ের রঙও মাম্মিজীর চেয়ে চাপা। এরা দু’জনেই তো মাম্মিজীর মত হেভি বডি পছন্দ করেন। আমার পক্ষে কি রাতারাতি অমন চেহারা পাওয়া সম্ভব? কিন্তু এদের কাউকেই আমি অখুশী দেখতে চাই না। তাই আমিও খুশী মনে আপনাদের মধ্যেকার এই চুক্তিটাকে মনে প্রানে সমর্থন করেছি। আমার খুব ইচ্ছে ছিল যে পাপাজি আর আমার হাবি যখন করবে তখন আমি বসে বসে দেখব তারা আপনাকে করে সুখে কেমন করে। কিন্তু আপনার কন্ডিশন আছে যে সেক্স করবার সময় একজন ছাড়া আপনার সাথে আর কেউ থাকতে পারবে না। তাই আমার সে ইচ্ছেটা কোনদিন তো পূরণ হবে না। তাই আমি এখন শুধু কয়েকটা প্রশ্ন করে আপনার জবাব নিয়ে ভেবে দেখতে চাই যে আমার হাবি আর পাপাজী আপনাকে পেয়ে কতটা খুশী হবেন। আর কিছুই নয়”।

মেয়েটার মানসিকতা অনুভব করেও সবিতা বুঝতে পারছিল না তার কী জবাব দেওয়া উচিৎ। মেয়েটা যে তার শারীরিক রূপ সৌন্দর্যের ব্যাপারেই কোনও প্রশ্ন করবে, তা সে বুঝতে পারছিল। সে কি সবিতার রূপ সৌন্দর্য যাচাই করে দেখতে চাইছে নাকি? এই ভেবে সে বলেই ফেলেছিল, “তুমি কি আমাকে ন্যুড দেখতে চাইছ? সরি, সেটা কিন্তু একেবারেই সম্ভব নয়, সরি”।
 

ভাবনা সাথে সাথেই জিভে কামড় দিয়ে বলেছিল, “না না আন্টিজী, একেবারেই তা নয়। আপনার মত সম্ভ্রান্ত ঘরের একজন হাউসওয়াইফ যে তাতে অপমানিত বোধ করতে পারেন, সেটা আমি বুঝি। আর আপনার শর্তগুলো পড়ে আমরা এটাও বুঝেছি যে একমাত্র একজনের সঙ্গে সেক্স করার সময় ছাড়া আপনি কাউকে আপনার ন্যুড বিউটি দেখান না। তাই এখনও আমি সে’কথা বলছি না। আমি শুধু আপনার মুখ থেকে শুনতে চাই যে আপনার শরীরের গঠণটা কেমন? মানে আপনার বডি মিজারমেন্ট গুলো”।
 

সবিতা মনে মনে একটু আশ্বস্ত হয়ে কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে পরিস্কার ভাবে বলেছিল, “আমার হাইট পাঞ্চ ফুট সাত ইঞ্চি, ওয়েট নাইনটি ফাইভ, ব্রা সাইজ চালিশ, কাপ সাইজ জি, চুচিগুলো যেমন বড় সেই অনুপাতেই ঝোলা, অনেকে দু’হাতেও আমার একেকটা চুচি পুরো কভার করতে পারে না, পেটের ঘের বেয়াল্লিস, কোমড় চুয়াল্লিস আর পাছার ঘের ছিয়াল্লিশ”।
 

সবিতার জবাব শুনতে শুনতে ভাবনার চোখ দুটো ধীরে ধীরে বড় হতে শুরু করেছিল। আর মুখটাও ধীরে ধীরে খুলে যাচ্ছিল। সবিতার কথা যখন শেষ হল তখন ভাবনার চোখ দুটো যেন কোটর থেকে প্রায় বেরিয়ে আসবার যোগার হয়েছিল। আর মুখের হাঁ এত বড় হয়ে গিয়েছিল যে তার ভেতর বোধহয় একটা আস্ত আপেলও ঢুকে যাবে। সবিতার কথা শেষ হতেই ভাবনা প্রভজোত আর হরদেবকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে আনন্দে চেঁচিয়ে উঠে বলেছিল, “দেখেছেন পাপাজী, আপনার বেটার পছন্দটা দেখেছেন তো? একেই বলে একেবারে রাইট চয়েস। আমার যে কী আনন্দ হচ্ছে। এ নিশ্চয়ই আমাদের মাম্মিজীর মেহেরবানি। আন্টিজীর চুচিগুলো তো মাম্মিজীর চুচির চাইতেও বড়। চালিস জি! আপনাদের খুব সুখ হবে। আর চুতের কথা উল্লেখ না করলেও আমি আন্দাজ করতে পারছি আন্টির চুতও খুব মজাদার, ডীপ আর ফোলা হবে। পাপাজী আন্টিজীকে করে খুব মজা পাবেন। আর থাইগুলো যে আমাদের মাম্মিজীর মতই মোটা আর ভারী হবে, এ তো তার শাড়ি সায়ার ওপর দিয়েই বোঝা যাচ্ছে। সত্যি অনেক ভাগ্য করে আমরা আন্টিজীকে পেলাম। আপনারা দু’জনেই আন্টির সাথে সেক্স করে খুব খুব সুখ পাবেন পাপাজী”।
 

হরদেব সিং ভাবনার গালে একটা চুমু খেয়ে বলেছিল, “হাঁ বহুরানী, আমারও তাই মনে হয়। কিন্তু আজ থেকেই যদি চুক্তিটা লাগু করতে হয় তাহলে তো মাসের তিনটে স্ল্যাবের কে কোনটাতে সবিতাজীর সাথে সেক্স করতে আসবে সেটা এখনই ফাইনাল করে ফেলা উচিৎ। কারন সবিতাজী তো নটার সময় তার বাড়ি চলে যাবেন। সবিতাজী রাজী আছেন আজ থেকেই শুরু করতে। আমাদের তিনজনের মধ্যে যে তিন নাম্বার স্ল্যাবে পড়বে সে তো আজই সবিতাজীর সাথে শুরু করে দিতে পারে। তো বহুরানী, তুইই বলে দে তো আমরা কে কোন স্ল্যাব নেব”?

ভাবনা এবার প্রভজোতকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে তার মুখের দিকে চেয়ে আরেকটা হাতে প্যান্টের ওপর দিয়ে ফুলে ওঠা প্রভজোতের পুরুষাঙ্গটাকে টিপতে টিপতে বলেছিল, “আমি জানি হানি, গত দু’ তিনটা মাস থেকে তুমি খুব উতলা হয়ে আছো আন্টিজীর জন্য। তুমিই আন্টিজীকে প্রথম করতে চাও। তোমার লন্ডটাও এখন শক্ত হয়ে গেছে আন্টিজীকে দেখে। কিন্তু আমার মনে হয়, এই মূহুর্তে কোন সিদ্ধান্ত নেবার আগে একবার পাপাজীর লন্ডের অবস্থাটাও একটু দেখে নেওয়া উচিৎ। আর সেটা তুমি নিজেই করে দেখ না ডার্লিং” বলতে বলতে ওই অবস্থাতেই প্রভজোতকে তার বাবার সামনে এনে দাঁড় করাল।

সবিতা বিস্ময়ে চোখ বড় বড় করে দেখেছিল, প্রভজোত হরদেবের সামনে এসে তার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠেছিল, “পাপা একটু উঠে দাঁড়াও তো”।

হরদেব সিংও কোন কথা না বলে চুপচাপ উঠে দাঁড়াতেই প্রভজোত নিঃসঙ্কোচে তার বাবার প্যান্টের জীপারটা টেনে নামিয়ে দিয়ে প্যান্টের ফাঁক দিয়ে তার ডান হাতটা ভেতরে ঢুকিয়ে দিল। সবিতা চমকের পর চমকে একেবারে হতবাক হয়ে গিয়েছিল। শ্বাসরুদ্ধ অবস্থায় তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিল প্রাপ্তবয়স্ক বিবাহিত একটা ছেলে নিজের স্ত্রীর আলিঙ্গনের মধ্যে থেকে তারই নিজের বাবার পুরুষাঙ্গটা নিয়ে প্যান্টের ভেতরেই নাড়াচাড়া করছে। কয়েক মূহুর্ত বাদেই প্যান্টের ফাঁক দিয়েই প্রভজোত তার বাবা হরদেব সিংএর বিশাল সাইজের পুরুষাঙ্গটাকে টেনে বের করে সেটাকে টিপতে টিপতে তার স্ত্রী ভাবনাকে ডেকে বলেছিল, “ভাবনা ডার্লিং, এদিকে দেখ, পাপার লন্ড তো প্রায় ফেটে যাবে বলে মনে হচ্ছে”।

ভাবনা তখন পেছন থেকে প্রভজোতকে জড়িয়ে ধরে নিজের ছোট ছোট সাইজের স্তনদুটো তার পিঠে রগড়াতে রগড়াতে প্রভজোতের কাঁধে নিজের গাল চেপে ধরে সুখ নিচ্ছিল। আর সবিতা দম বন্ধ করে চোখ বড় বড় করে হরদেব সিংএর প্যান্টের ফাঁক দিয়ে ইঞ্চি আটেক বেরিয়ে আসা খয়েরী রঙের বিশাল যন্ত্রটাকে দেখে ভেতরে ভেতরে সাংঘাতিক গরম হয়ে উঠেছিল। প্রায় ছ’ফুট দুরত্বে বসে থাকা সত্বেও হরদেব সিংএর পুরোপুরি ঠাটিয়ে ওঠা পুরুষাঙ্গটার গায়ে ফুলে ফুলে ওঠা শিরা উপশিরাগুলোও স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিল সবিতা । হরদেবের পুরুষাঙ্গের গোঁড়া আর তার অণ্ডকোষের থলিটা তখনও প্যান্টের আড়ালেই ছিল বলে সবিতা অনুমান করেছিল গোটা জিনিসটা ন’ ইঞ্চির কম কিছুতেই হবে না। তার স্বামী বিমলের জিনিসটাও মোটামুটি বড়ই। সাত ইঞ্চির একটু ওপরে। সেদিনের এক দেড় বছর আগে থেকে সে আলাদা আলাদা অনেক পুরুষাঙ্গ দেখে আসছিল। বিভিন্ন সাইজের অনেক পুরুষাঙ্গই সে নিজের ভেতরে নিয়েছিল ততদিনে। কিন্তু ততদিন পর্যন্ত আট ইঞ্চির বেশী লম্বা কোন পুরুষাঙ্গ সে চোখে দেখেনি। হরদেব সিংএর পুরুষাঙ্গটা প্যান্ট পড়ে থাকা অবস্থাতেই আট ইঞ্চির মত বাইরে বেরিয়ে এসেছিল। সবিতা ভেবেছিল, ‘গোড়ার দিকে নিশ্চয়ই আরও এক দেড় ইঞ্চির মত থাকবে নিশ্চয়ই। তাহলে সব মিলে এটা ন ইঞ্চির ওপরেই হবে’। আর মোটাও তো তেমনি। আর এতটাই ঠাটিয়ে উঠেছিল যে সেটা তিরতির করে কাঁপছিলও একটু একটু। আর প্রভজোত ঠিক ওই মূহুর্তেই তার বাবার বিশাল পুরুষাঙ্গটাকে দোলাতে শুরু করেছিল। সবিতার হঠাতই মনে হয়েছিল, তার যৌনাঙ্গের ভেতরেও যেন কাঁপুনি শুরু হয়েছিল। জীবনে অমন বিশাল কোন পুরুষাঙ্গ চাক্ষুষ দেখার অভিজ্ঞতা সবিতার সেটাই প্রথম ছিল। তার খুব ইচ্ছে করছিল তখনই ছুটে গিয়ে দুলতে থাকা সাপের ফনার মত জিনিসটাকে দু’হাতে মুঠো করে ধরতে। কিন্তু ঘরে ওই পুরুষাঙ্গটার মালিক ছাড়াও সে মূহুর্তে আরও দু’জন উপস্থিত ছিল বলে সে অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে চুপ করেই বসে থেকেছিল। কিন্তু তার শ্বাস প্রশ্বাস ধীরে ধীরে দ্রুত, দ্রুত থেকে দ্রুততর হচ্ছিল। গলাটাও যেন শুকিয়ে আসছিল।
 

কিন্তু সবিতাকে আরও অবাক করে দিয়ে তখন ভাবনা প্রভজোতকে ছেড়ে হরদেব সিংএর সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে নিঃসঙ্কোচে তার শ্বশুরের পুরুষাঙ্গটাকে দু’হাতে মুঠি করে ধরেছিল। তার একটা হাতের মুঠির ওপর আরেকটা হাতের মুঠি থাকা সত্বেও পুরুষাঙ্গের ডগাটা এক ইঞ্চিরও বেশী বাইরে রয়ে গিয়েছিল। সবিতার নিজের যৌনাঙ্গের ভেতর তখন উথাল পাথাল করতে শুরু করেছিল। কিন্তু তার চোখের তারা দুটো কিছুতেই ওই বিশাল জিনিসটার ওপর থেকে সরছিল না। তার মনে হচ্ছিল হরদেবের ওই সুবিশাল পুরুষাঙ্গে একটা অদৃশ্য চুম্বক ছিল যেন, যেটা তার চোখের তারা দুটোকে সেদিকেই টেনে রেখেছিল।
 

ভাবনা নিজের দুটো হাতকেই একসাথে তার শ্বশুরের পুরুষাঙ্গের গা বেয়ে ওঠানামা করতে করতে হঠাত করেই সবিতার দিকে তাকিয়ে বলেছিল, “আরে বাপ রে বাপ! দেখেছেন আন্টিজী, আপনাকে দেখে পাপাজীর লন্ডের কি অবস্থা হয়েছে! মাম্মিজী বেঁচে থাকতে এ’রকম হতে দেখেছিলাম। মাম্মিজী চলে যাবার পর কোনদিন পাপাজীর লন্ড এত শক্ত হতে দেখিনি আমি” বলেই মাথা নামিয়ে হরদেব সিংএর পুরুষাঙ্গের একদম ডগায় চুক শব্দ করে একটা চুমু খেল।

কমবয়সী একটা বিবাহিতা মেয়ে তার স্বামীর চোখের সামনে তার প্রায় বৃদ্ধ শ্বশুরের অবিশ্বাস্য পুরুষাঙ্গ নিজের হাতের মুঠোয় ভরে নিয়ে তার ডগায় চুমু খাচ্ছে দেখে সবিতা নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছিল না যেন। তা দেখে সবিতা একটা ঢোঁক গিলেছিল। তার গলার ভেতরটা যেন শুকিয়ে খড়খড়ে হয়ে উঠেছিল।
 

তার অবস্থা বুঝেই ভাবনা তার স্বামীকে বলেছিল, “ডার্লিং, আন্টিজীর বোধহয় গলা শুকিয়ে গেছে। তুমি তাকে এক গ্লাস জল দাও না প্লীজ”।
 

প্রভজোত একটা জলের গ্লাস তার দিকে এগিয়ে দিতেই সবিতা কাঁপা কাঁপা হাতে গ্লাসটা হাতে নিয়ে ঢকঢক করে পুরো জলটাই খেয়ে নিয়েছিল। তখন ভাবনা হরদেব সিংকে উদ্দেশ্য করে বলেছিল, “পাপাজী কন্ট্রোল ইয়োরসেলফ। আপনি তো সাংঘাতিক এক্সাইটেড হয়ে গেছেন। আপনার লন্ডের যে অবস্থা দেখছি, তাতে তো মনে হয় আন্টিজীর চুতের ভেতর ঢোকাতে না ঢোকাতেই আপনার মাল বেরিয়ে যাবে। আন্টিজী কেমন হেবি মাল তা তো বুঝতেই পাচ্ছেন। আর তার কাছে একটু আগেই আমি আপনার কত প্রশংসা করলাম। এখন আপনি তাকে ভরপুর সুখ দিতে না পারলে কিন্তু আপনার সাথে সাথে আমার মুখটাও নষ্ট হবে”।

হরদেব সিং তার নিজের ছেলের কচি বৌয়ের মাথায় হাত রেখে তার মুখটাকে নিজের পুরুষাঙ্গের ওপর চেপে ধরে বলেছিলেন, “চিন্তা করিস না বহুরানী। তুই কি আমার লন্ডের তাকত কতটা, জানিস না? কিন্তু তুই আর সময় নষ্ট না করে এখন আমাদের দু’জনের মধ্যে কে সবিতাজীকে করবে সেটা বলে দে লক্ষ্মী বহুরানী আমার। সবিতাজীর দেওয়া শর্তের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে, তুই কি সেটা বুঝতে পারছিস না?”।
 

ভাবনা সাথে সাথে উঠে দাঁড়িয়ে তার স্বামীর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে প্রভজোতকে বলেছিল, “ডার্লিং, তুমি তো নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ তোমার চেয়ে পাপাজীই এই মূহুর্তে বেশী হর্নি হয়ে উঠেছে। তাই আমার মনে হয় প্রথম সুযোগটা পাপাজীকেই দেওয়া উচিৎ। এমনিতেও উনিই আমাদের পরিবারের কর্তা, আমাদের গুরুজন। তাই তোমরা যদি আমাকেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে বল, তাহলে আমি বলব যে তুমি প্রথম স্ল্যাবটা নাও। ম্যানেজারবাবুকে দ্বিতীয় স্ল্যাবটা দিয়ে পাপাজী থার্ড স্ল্যাবটা নিক। তোমার এতে আপত্তি আছে”?

প্রভজোত মনে মনে সামান্য অখুশী হলেও ভাবনার গালে একটা চুমু দিয়ে বলেছিল, “তোমাকে আমি জী জান দিয়ে ভালবাসি ডার্লিং। আর তুমি দেখতেই পাচ্ছ আমার লন্ডের অবস্থা কি। আমার সত্যি এখনই আন্টিজীকে করতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু আমার জানের কথা কি আমি ফেলতে পারি বল? আর তোমার সাপোর্ট না পেলে এ’সব কি সম্ভব হত? আমার এতে কোন আপত্তি নেই। তুমি যা বলবে তাই হবে। তাহলে ডার্লিং, আমরা আর দেরী না করে বেরিয়ে পড়ি চল। আটটা বাজতে চলল। ন’টার সময়েই তো আন্টিজী চলে যাবেন। তাই আমাদের এখন বেরিয়ে যাওয়াই উচিৎ। পাপা আন্টিজীর সাথে সেক্স শুরু করুক। এখন আমরা সোজা বাড়ি যাব। আর বাড়ি গিয়েই আন্টিজী আর পাপাজীর চুদাইয়ের কথা ভাবতে ভাবতে আমরাও চুদাই করব”।

ভাবনা মুখের হাসিতে সম্মতি জানিয়ে স্বামীকে ছেড়ে তার শ্বশুরের কাছে গিয়ে তার দু’গাল ধরে ঠোঁটে চুমু খেয়ে বলেছিল, “আন্টিজীকে ভরপুর সুখ দেবেন পাপাজী। ওনার যেন কোনও কমপ্লেন না থাকে। বাই পাপাজী। হ্যাভ এ ভেরি গুড টাইম। বেস্ট অফ লাক”।

তারপর সবিতার কাছে এসে তার হাত ধরে তাকে বিছানা থেকে নামিয়ে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে তার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলেছিল, “আন্টিজী, একদম ভাববেন না। আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি, আপনি আজ খুব সুখ পাবেন। আমার আদরের পাপাজীকেও একই রকম সুখ দেবেন প্লীজ” বলে সবিতার গালে গাল ঘসে একটা চুমু খেয়ে ডান হাতে থামস আপ দেখিয়ে বলেছিল, “বেস্ট অফ লাক আন্টিজী, বাই” বলে তার স্বামীকে নিয়ে চলে গিয়েছিল।

সবিতার শরীরের ভেতরটাও তো অনেক আগে থেকেই উথাল পাথাল করতে শুরু করেছিল। প্রভজোত আর ভাবনা বেরিয়ে যেতেই সবিতা আর দেরী না করে দড়জাটা ভেতর থেকে লক করে দিয়ে হরদেবের সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিল, “আসুন হরদেবজী। আপনার যেভাবে খুশী আমাকে করুন” বলে তাকে দু’হাতে নিজের ভারী বুকের ওপর চেপে ধরেছিল।
 

পঞ্চান্ন বছরের এক প্রায় বৃদ্ধ সবল সুঠাম সুপুরুষ সেদিন সবিতাকে যে সুখ দিয়েছিল তাতে সে প্রায় উন্মাদ হয়ে উঠেছিল সেদিন। ঘড়ির কাঁটা কখন যে ন’টা পেরিয়ে গিয়েছিল সেদিকে দু’জনের কারো হুঁশ ছিল না। ন’টা পেরিয়ে যাবার পর এক সময় সবিতা নিজেই হরদেবের ওপরে চড়ে পাগলের মত বিপরীত বিহারে মত্ত হয়ে উঠেছিল। সেই দিন থেকে তার জীবনটা একটা নতুন খাতে বইতে শুরু করেছিল।
 

****************
______________________________
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply




Users browsing this thread: 3 Guest(s)