Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
#61
(Update No. 81)

রতীশ মনে মনে বেশ অবাক হল। দেরাদুনে থাকতে সে অনেক পাঞ্জাবী মেয়ে মহিলাকে দেখেছে। তাদের চালচলনে কেমন যেন একটা ঔদ্ধত্তের ভাব তার চোখে ধরা পড়ত। আর তাদের কথাবার্তাগুলোও কেমন কর্কশ বলে মনে হত তার। মিষ্টতার চিহ্নমাত্র খুঁজে পেত না সে। কিন্তু এই ভদ্রমহিলার এমন নরম মিষ্টি মোলায়েম স্বর শুনে তার ভাবতেই কষ্ট হচ্ছিল যে ইনি একজন পাঞ্জাবী মহিলা।

মহিমা হাত তুলে রতীশকে বাঁধা দিয়ে মিষ্টি হেসেই বলল, “বিমল আমাকে আপনার কথা সব বলেছে মিঃ ভট্টাচারিয়া। তাই আপনাকে আর আলাদা করে পরিচয় দিতে হবে না” বলে তার একটা হাত বাড়িয়ে দিল রতীশের দিকে। রতীশ ডানহাত বাড়িয়ে মহিমার হাত ধরে হ্যাণ্ডশেক করল।
 

মহিমা মিষ্টি করে হেসে বলল, “আচ্ছা মিঃ ভট্টাচারিয়া, আপনি কি সত্যি আমাদের ইনস্টিটিউটে ট্রেনার হিসেবে যোগ দিতে চাইছেন”?
 

রতীশ জবাব দিল, “হ্যা ম্যাডাম, সে জন্যেই তো এসেছি। বিমলজী তো আমাকে তেমনটাই বলেছিলেন”।
 

মহিমা আবার সুন্দর হেসে বলল, “হ্যা বিমল আমাকে সে’সব কথাও বলেছে। কিন্তু তবু আপনার মুখ থেকে আপনার উদ্দেশ্যটা জেনে নেওয়া তো দরকার। তা, আপনাকে দেখে তো মনে হয় আপনার বয়স খুব একটা বেশী নয়। বোধহয় ছাব্বিশ সাতাশ হবে তাই না”?

রতীশ বলল, “হ্যা ম্যাডাম কাছাকাছি। আমার এখন আটাশ চলছে”।
 

মহিমা বলল, “বিমল আমাকে বলেছিল যে আপনি নাকি দেরাদুন আর ঋষিকেশের কয়েকটা ইনস্টিটিউট থেকে যোগা ডিগ্রী নিয়েছেন। কথাটা কি সত্যি? আসলে আপনার মত এত কম বয়সের কাউকে কোন বড় যোগা ডিগ্রী নিতে দেখিনি বলেই কথাটা বলছি”।
 

রতীশ বলল, “ম্যাডাম আসলে আমি মাধ্যমিক পাশ করবার পরেই দেরাদুন কলেজে গিয়ে ইলেভেনে ভর্তি হয়েছিলাম। সেখানে হায়ার সেকেণ্ডারী আর গ্রাজুয়েশান কোর্সের পড়াশোনার পাশাপাশি যোগার কোর্সগুলো করেছিলাম। তাই আলাদা করে আর সময় দিতে হয়নি”।

মহিমা জিজ্ঞেস করল, “তা কি কি কোর্স করেছেন সেখানে”?
 

রতীশ নিজের হাতের ফাইলটা মহিমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “ম্যাডাম এ ফাইলে আমার সমস্ত সার্টিফিকেট আছে”।
 

মহিমা ফাইলটা খুলে বেশ কিছুক্ষণ ধরে ভেতরের সার্টিফিকেটগুলো খুব মন দিয়ে দেখতে লাগল। তার চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল যে ফাইলের ভেতর এমন কিছু সে দেখছে যা দেখবে বলে তার ধারণাই ছিল না। অনেকক্ষণ পর সে বিস্মিত চোখে রতীশের দিকে চেয়ে বলল, “আপনি হরিদ্বারের একটা নামকরা ইনস্টিটিউট থেকে যোগাশাস্ত্রী উপাধি পেয়েছেন? দেরাদুন আর ঋষিকেশের যে’সব যোগা সেন্টার থেকে ডিগ্রী নিয়েচ্ছেন সে সব সেন্টারেরও তো খুব নামডাক আছে। আর মাধ্যমিক পাশ করবার আগেও তো দেখছি দুটো জায়গায় যোগা মীটে ফার্স্ট হয়েছিলেন? আনবিলিভেবল! আর সেই সাথে ইকোনমিক্সে গ্রাজুয়েশন”!
 

রতীশ মহিমার এ’কথা শুনে বলল, “আসলে ম্যাডাম, ছোটবেলা থেকেই যোগার ওপর খুব আকর্ষণ ফীল করতাম আমি। সাধারণ পড়াশোনার চেয়ে যোগা করতেই আমার বেশী ইন্টারেস্ট ছিল। এখনও আছে”।
 

মহিমা ফাইলটা বন্ধ করতে করতে জিজ্ঞেস করল, “তা মিঃ ভট্টাচারিয়া, আপনি তো গ্রাজুয়েশন করেছেন টু থাউজেণ্ড ফাইভে। এতদিন কোন কাজ করেন নি”?

রতীশ জবাব দিল, “হ্যা ম্যাডাম, আমি টু থাউজেণ্ড সিক্স থেকেই আমাদের ওখানে হায়ার সেকেণ্ডারি কলেজে স্পোর্টস আর ইকমনিক্সের টিচার হিসেবে কাজ করেছি। গত মাসেই কলেজের চাকরিটা আমি ছেড়ে দিয়েছি। আমাদের কলেজের প্রিন্সিপ্যালের একটা সার্টিফিকেটও ওই ফাইলে আছে, দেখুন”।

মহিমা বেশ খুশী হয়ে বলল, “ওহ, দ্যাটস ভেরি নাইস টু হিয়ার। তা শুধু স্পোর্টস শেখাতেন? না যোগাও শেখাতেন”?

রতীশ বলল, “হ্যা ম্যাডাম, যোগাও শেখাতাম”।

মহিমা আরও খুশী হয়ে বলল, “তাহলে তো আরও ভাল কথা। যোগা কোচিং দেবার অভিজ্ঞতাও আপনার আছে” বলে কিছু সময় চুপ করে থেকে মনে মনে কিছু একটা ভেবে নিয়ে বলল, “আচ্ছা মিঃ ভট্টাচারিয়া, আপনার সব ডিটেইলস জেনে তো আমি খুব খুশী হয়েছি। আপনার মত এমন এক্সপার্ট একজন যোগা টিচার আমি অনেকদিন ধরে খুঁজছিলাম। আপনি যদি আমাদের এখানে কাজ করেন, তাহলে আমার পক্ষে খুবই ভাল হবে। কিন্তু তবু আমি আপনার কিছু যোগা ডেমনস্ট্রেশন দেখতে চাই। আপনার কি তাতে আপত্তি আছে”?
 

রতীশ জবাব দিল, “না ম্যাডাম, আপত্তি নেই আমার। কিন্তু এমন শার্ট প্যান্ট পড়ে তো সব কিছু দেখান সম্ভব হবে না”।

মহিমা বলল, “সে ব্যবস্থা হয়ে যাবে। আপনি আসুন আমার সাথে” বলে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বিমলকে বলল, “বিমল, ডোন্ট মাইন্ড প্লীজ। তোমাকে একটু একা বসতে হবে। এই ধর দশ পনের মিনিট, ওকে”?
 

বিমল বলল, “ওকে ওকে, নো প্রব্লেম। তুমি ওকে ভাল করে যাচাই করে নাও। পরে কিন্তু আমার কাছে কোন কমপ্লেন করতে পারবে না, সেটা মনে রেখ”।

রতীশ মহিমাকে অনুসরন করল। মহিমা নিজের চেম্বার থেকে বেড়িয়ে ছোট করিডোরে এসে ডানদিকের একমাত্র দরজাটা চাবি দিয়ে খুলে বলল, “আসুন মিঃ ভট্টাচারিয়া। আমাদের সেন্টারটা একটু দেখে নিন আগে”।
 

রতীশ মহিমার পেছন পেছন দরজাটা দিয়ে ঢুকে দেখল বিশাল একটা হলঘরকে প্লাইউডের পার্টিশান দিয়ে তিনটে ভাগ করা হয়েছে। আর পেছনের দিকে পরপর তিনখানা টয়লেট। আর উল্টোদিকে আরেকটা ছোট রুম দেখা গেল। সেটাও তালা বন্ধ। মহিমা সে রুমটা দেখিয়ে বলল, “এটা হচ্ছে আমাদের অফিস ঘর। এখানে একজন অফিস অ্যাসিস্টান্ট বসে সকাল সাতটা থেকে সাড়ে দশটা অব্দি। আর এদিকটাই হচ্ছে আমাদের ফ্রন্ট ডোর। ওই যে কলাপসিবল গেটটা দেখতে পাচ্ছেন। এ তিনটে পার্টিশানে তিনজন ট্রেনার সকাল ছ’টা থেকে আটটা অব্দি যোগা কোচিং দিয়ে থাকে। এ সময়টা হচ্ছে আমাদের জেনারেল সেশন। আর উল্টোদিকে ওই দিকটায় দেখুন চারখানা ছোট ছোট কেবিন দেখা যাচ্ছে। এখানে আমরা স্পেশাল ট্রেনীদের কোচিং দিয়ে থাকি। আপনার তেমন কোন অভিজ্ঞতা আছে কি না জানিনা। তবে কিছু কিছু বয়স্ক পুরুষ ও মহিলা নিজেদের শরীরকে ফিট রাখবার জন্যে কিংবা কোন রোগ থেকে মুক্তি পাবার জন্য বিশেষ বিশেষ কিছু যোগা এক্সারসাইজ করতে চায়। যোগা কোচিং নেওয়াটা এদের কাছে মুখ্য নয়। বরং বলা যায়, এদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যোগার মাধ্যমে নিজেদের শরীরকে সুস্থ রাখা বা রোগের হাত থেকে আরোগ্য লাভ করা। তাদেরকে অন্য সব কমবয়সী ট্রেনীদের সাথে একসাথে কোচিং দিতে অসুবিধে হয়। তাই তাদের জন্যে আলাদা করে ওই চারটে কেবিন বানানো হয়েছে। প্রত্যেকটা কেবিনে দু’জন ট্রেনীকেই শুধু একসাথে কোচিং করা সম্ভব। তবে এখন অব্দি দু’জনকে একসাথে কোচিং দেওয়া নিয়মিত ভাবে শুরু হয়নি। তবে প্রভিসনটা রাখা হয়েছে। ক্যান্ডিডেট তো অনেক আছে। ট্রেনারের সংখ্যা কম বলে অনেককেই ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হই। আর গত দু’মাস যাবৎ আমাদের একজন ফিমেল ট্রেনার লম্বা ছুটি নিতে বাধ্য হয়েছে। ওর অ্যাডভান্সড স্টেজ চলছে। তাই রুটিন সামলাতে কখনও কখনও দু’জন স্পেশাল ট্রেনীকে একসাথে এক একটা কেবিনে ঢুকিয়ে দিতে বাধ্য হই আমরা। এদিক দিয়ে আরেকটু এগিয়ে গেলেই টয়লেটগুলো দেখতে পাবেন, যেটা পেছনের দরজা দিয়ে ঢোকবার সময় ওদিক থেকে দেখতে পেয়েছিলেন। আর আমার চেম্বারের সামনে যে করিডোরটা আছে সেখানে তিনখানা রুম স্টোর রুম হিসেবে ব্যবহার করছি আমরা”।
 

রতীশ সব দেখে বলল, “বাহ, খুব ভাল অ্যারেঞ্জমেন্ট করেছেন ম্যাডাম”।
 

মহিমা একটা কেবিনের বাইরে নিজের জুতো খুলে রেখে রতীশকে নিয়ে কেবিনের দরজা খুলে ভেতরে গিয়ে ঢুকে বলল, “আপনি এখানেই একটু আমাকে ডেমনস্ট্রেশন দেখান”।

রতীশও নিজের জুতো খুলে কেবিনের ভেতর ঢুকে দেখল ছোট কেবিনটার ভেতর হসপিটালের বেডের মত সাইজের দুটো বিছানা। বিছানাগুলোর এক মাথার দিকে ছোট একটা টেবিল আর একটা ছোট ওয়ারড্রোব বসানো আছে। টেবিলের সাথেই একটা কাঠের স্ট্যাণ্ডের ওপর একখানা আয়না লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে টেবিলটাকে টেবিল হিসেবে কাজ করবার সাথে সাথে সেটাকে একটা ড্রেসিং টেবিল হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে। বিছানা দুটোর মাঝে মেঝেতে পাঁচ সাড়ে পাঁচ ফুট চওড়া আর বারো ফুটের মত লম্বা একখানা কার্পেট পাতা। আর সামনের বাঁ কোনায় একটা কাঠের চেয়ার।

রতীশ মনে মনে ব্যবস্থাপনার তারিফ না করে পারল না। কিন্তু আড়াই ফুট চওড়া আর প্রায় সাত বা সাড়ে ছ’ ফুটের মত লম্বা বিছানাদুটো কি জন্যে রাখা হয়েছে সেটা তার বোধগম্য হল না। তাই সে মহিমাকে বলল, “ম্যাডাম সব কিছুই তো বেশ ব্যবস্থা করা আছে দেখছি। কিন্তু এমন সরু সরু দুখানা বিছানা কেন রাখা হয়েছে এখানে”?
 

মহিমা হেসে বলল, “এখানে তো বয়স্ক আর অসুস্থ ট্রেনীদের কোচিং দেওয়া হয়। তারা বেশীর ভাগই শারীরিক সুস্থ থাকবার জন্য যোগা করতে আসে। কিন্তু ছোটবেলা থেকে তাদের যোগাচর্চার অভ্যাস না থাকার ফলে মিনিট দশ পনের বাদেই তারা টায়ার্ড হয়ে পড়ে। এ বিছানাগুলোয় তারা শরীরটা টান করে মাঝে মাঝে একটু বিশ্রাম নিতে পারে”।

রতীশ সে’কথা শুনে বলল, “হু, বেশ ভালভাবে ভাবনা চিন্তা করেই এ’সবের ব্যবস্থা করেছেন ম্যাডাম”।

মহিমা হেসে বলল, “বাকি কথা পরে জানতে পারবেন মিঃ ভট্টাচারিয়া। বিমল আমার চেম্বারে একা বসে আছে। আপনি এবার কিছু ডেমনস্ট্রেশন করে দেখান আমাকে। আপনার যেখানে করতে ইচ্ছে হয় করুন। তবে বিছানাগুলো তো খুব বেশী চওড়া নয়, তাই আমার মনে হয় আপনি কার্পেটের ওপর করলেই ভাল হবে। ভাববেন না, আপনার পোশাক নোংরা হবে না। সব কিছু আমরা সাফ সুতরো রাখি। আর এ জন্যেই কেবিনে এবং জেনারেল সেকশনেও জুতো পড়ে ঢোকা বারণ। তাছাড়া দু’দিন বাদে বাদে বিছানার সব কিছু বদলে দেওয়া হয়। কার্পেটও পরিস্কার করা হয়”।
 

রতীশ একটু ইতস্ততঃ করে বলল, “কিন্তু ম্যাডাম, এমনভাবে শার্ট প্যান্ট পড়া অবস্থায় ....”

মহিমা সিলিং ফ্যানের সুইচটা অন করে কোনার চেয়ারটাতে বসতে বসতে বলল, “আমাদের এখানে জেনারেল সেশনের ট্রেনীদের জন্য কস্টিউম প্রেস্ক্রাইব করা আছে। হাঁটু থেকে কোমর আর পাঁজর থেকে গলা অব্দি তাতে ঢাকা থাকে। আর ট্রেনাররা অনেকটা ট্র্যাক স্যুটের প্যান্টের মত একধরনের একটা প্যান্ট পড়ে স্যাণ্ডো গেঞ্জী পড়েই ট্রেনিং দিয়ে থাকে। কিন্তু অন্য ট্রেনারদের পোশাক আপনাকে পড়তে হবে না। আপনি বরং শুধু শার্টটা খুলে নিন। প্যান্ট আর গেঞ্জী পড়ে যতটুকু সম্ভব হয় ততটুকুই দেখান”।

রতীশ আর কোন কথা না বলে নিজের শার্টটা খুলে বিছানার ওপর রেখে উপবেশনাসন ভঙ্গীতে কার্পেটের ওপর বসে জিজ্ঞেস করল, “কী দেখাব ম্যাডাম? বিভিন্ন ধরণের যোগা থেরাপি দেখাব, না প্রাণায়াম, না যোগব্যায়াম যোগাসন দেখাব”?

মহিমা রতীশের সুগঠিতে শরীরটার দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে বলল, “সব কিছু দেখাতে গেলে তো অনেকটা সময় লেগে যাবে। তাছাড়া আমাদের তো আর যোগা কলেজ বা কলেজ নয়। পাঠ্যক্রমের কোর্স তো আর এখানে প্রয়োজন পড়ে না। আমাদের কাজ তো মেইনলি যোগা এক্সারসাইজ করানো। আপনি এক কাজ করুন মিঃ ভট্টাচারিয়া। দু’তিনটে প্রাণায়াম করে তারপর কয়েকটা যোগাসন দেখিয়ে দিন আমাকে”।

রতীশ চোখ বন্ধ করে প্রায় আধমিনিটের মত সুখাসনে বসে থেকে প্রথমে ভস্ত্রম প্রাণায়াম, কপাল ভারতী প্রাণায়াম, ব্রাহ্য প্রাণায়াম,অনুলোম বিলোম প্রাণায়াম আর ভ্রামরী প্রাণায়াম করল। তারপর কয়েক সেকেণ্ড বিরতির পর যোগাসন করতে শুরু করল। প্রথম প্রথম সিদ্ধাসন, পদ্মাসন, বালাসন, বজ্রাসন, সিংহআসন, দণ্ডাসন আর তুলাসন করল। এসব করতে শরীরের মাংসপেশী বা হাড়ে খুব একটা চাপ পড়ে না। কিন্তু শরীরটা সব রকম যোগাসন করবার জন্যে তৈরী হয়ে ওঠে। তারপর অর্ধনাবাসন, নাবাসন, পরিপূর্ণ-নাবাসন দিয়ে শুরু করে একে একে ভূজঙ্গাসন, ভেকাসন, উত্তানাসন, গরুড়াসন, গোমুখাসন, জানু-শীর্ষাসন, কর্নপীড়াসন, বকাসন, পদহস্তাসন, মৎস্যাসন, শশকাসন, উর্ধমুখশশকাসন, বিপরীতকরনি, ঊষ্ট্রাসন, কুক্কুটাসন, অধোমুখশ্বানাসন, নটরাজাসন করে কয়েক সেকেণ্ডের জন্যে থেমে মহিমাকে জিজ্ঞেস করল, “আরও কিছু দেখাব ম্যাডাম”?
 

মহিমা মন্ত্রমুগ্ধের মত রতীশের সুগঠিত শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ওঠানামা আর নড়াচড়া দেখে মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছিল। প্যান্ট আর স্যাণ্ডো গেঞ্জী পড়া রতীশের দেহসৌষ্ঠব দেখে সে রোমাঞ্চিত হয়ে উঠছিল। তার সাতচল্লিশ বছরের জীবনে সে বহু পুরুষের উলঙ্গ দেহ দেখেছে। নিজের দেহে যৌবন আসবার পর থেকেই নিজের মোহনীয় শরীরের মায়ায় প্রচুর পুরুষকে লুব্ধ করে তাদের সাথে প্রচুর পুরুষসঙ্গ করেছে। দেহসুখের আদান প্রদান করে নিজেও যেমন তৃপ্তি পেয়েছে, তেমনই সব পুরুষসঙ্গীকেও সে পুরোপুরি ভাবে তৃপ্ত করেছে। কিন্তু রতীশের মত এমন অপূর্ব দেহসম্পদ সে কোন পুরুষের শরীরে দেখে নি। ত্রিশ পঁয়ত্রিশ বছর আগে পুরুষের নগ্ন সৌন্দর্য দেখে তার শরীর মন যেমন চঞ্চল হয়ে উঠত, এখন আর কোন পুরুষকে দেখে তার দেহমন তেমন চঞ্চল হয়ে ওঠে না। কিন্তু এই মূহুর্তে রতীশের স্যাণ্ডো গেঞ্জীর ওপর দিয়ে তার ফুলে ওঠা বুক আর নগ্ন বাহুর মাংসপেশী দেখে তার শরীরটা শিরশির করে উঠল। শরীরের ভেতরের এমন চাঞ্চল্য সে বহুদিন অনুভব করেনি। তার মনে হচ্ছিল সে যেন তার ঊণিশ কুড়ি বছর বয়সে ফিরে গেছে। মগ্ন হয়ে রতীশের সুন্দর শরীরটাকে দেখতে দেখতে সে নিজের শরীরের ভেতরকার ভুলে যাওয়া পুরোন চাঞ্চল্যের শিরশিরানিটাকে প্রাণ ভরে উপভোগ করছিল। রতীশের প্রশ্নে তার ঘোর ভাঙল। একটু চমকে উঠলেও সে নিজেকে স্বাভাবিক রাখবার চেষ্টা করতে করতে বলল, “হ্যা, আরো একটু কঠিন আসন দেখান দু’ চারটে”।

রতীশ এবার একে একে অধোমুখবৃক্ষাসন, অষ্টবক্রাসন, চতুরঙ্গদন্ডাসন, চক্রাসন, ধনুরাসন, হলাসন, দ্বিপদশীর্ষাসন, দ্বিপদ বিপরীতপদণ্ডাসন, একপাদরাজকপোতাসন, একপাদ কৌণ্ডীন্যাসন, একপাদ শীর্ষাসন, কূর্মাসন, ময়ুরাসন, পদ্মপিন্যময়ুরাসন, কপোতাসন, পশ্চিমোত্তানাসন, শলভাসন, সর্বাঙ্গাসন, শীর্ষাসন, মুক্তহস্ত শীর্ষাসন, নিরালম্বসর্বাঙ্গাসন করে সবশেষে শবাসন ভঙ্গীতে মিনিট খানেক থেকে উঠে বসে মহিমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “হয়েছে ম্যাডাম? না আরও কিছু দেখাব”?
 

মহিমা ততক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়েছে। এখন তার চোখে মুখে বিস্ময়ের সাথে সাথে খুশীর ঝলকানি একেবারে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। এত রকমের যোগাসন একসাথে সে কোনদিন দেখেনি। সে প্রায় শ্বাসরুদ্ধ অবস্থায় রতীশের দিকে চেয়ে চেয়ে দেখছিল। রতীশের কথা শুনে সে জিজ্ঞেস করল, “আপনি আরও দেখাতে পারেন”?

রতীশ বলল, “নিশ্চয়ই ম্যাডাম। আমি তো মোটে পঞ্চাশটার মত আসন দেখালাম। খুবই অল্প অল্প সময় ধরে করলেও এতেই দেখুন প্রায় একঘন্টা সময় পার হয়ে গেছে। আরও তো অনেক ধরণের আসন আছে। আপনি চাইলে আমি সেসবও ডেমনস্ট্রেট করে দেখাতে পারি”।
 

মহিমা বলল, “ইশ আপনাকে আমি খুব কষ্ট দিয়ে ফেললাম মিঃ ভট্টাচারিয়া। কিন্তু আর আপনাকে কিছু করতে হবে না। আপনি একেবারে ঘেমে গেছেন। আপনি বরং এবার আমার চেম্বারে গিয়ে বিমলের সাথে একটু কথা বলুন। এখন তো সেন্টারে আর কেউ নেই। আমি এদিকের দরজাগুলো বন্ধ করেই আসছি”।

রতীশ প্যান্টের পকেট থেকে রুমাল বের করে নিজের ঘাড় গলা মোটামুটিভাবে মুছে নিয়ে শার্টটা পড়তে পড়তে কেবিন থেকে বেরিয়ে এল। তারপর পেছন দিকের দরজা দিয়ে আবার মহিমার চেম্বারে এসে ঢুকতেই বিমল জিজ্ঞেস করল, “বেশ লম্বা ইন্টারভিউ দিলেন দেখছি। তা কেমন দিলেন ইন্টারভিউ রতীশবাবু? আপনার ম্যাডামের পছন্দ হয়েছে তো”?
 

রতীশ বিমলের পাশের চেয়ারে বসতে বসতে বলল, “আমি তো যতটুকু দেখিয়েছি, আশা করি তাতে কোন ভুল হয়নি। তবে ম্যাডামের পছন্দ হয়েছে কিনা সেটা তিনিই ভাল বলতে পারবেন বিমলজী”।
 

বিমল বলল, “আমার মিসেসও এখানে সপ্তাহে দু’দিন করে এসে স্পেশাল ক্লাস অ্যাটেণ্ড করে। এখানে তিনজন ট্রেনার আছে। তবে একজন ফিমেল ট্রেনার বোধহয় এখন ছুটিতে আছে। তাই রেগুলার ক্লাস করতে পারছে না অনেকেই। স্পেশাল ট্রেনীদের এরা একা স্পেশাল কেবিনে ট্রিটমেন্ট দেয়। কিন্তু ট্রেনারের অভাবে মাস দুয়েক হল তাকে মাঝে মধ্যেই আরো একজনের সাথে ট্রিটমেন্ট নিতে হয়। তাতে আমার মিসেস ঠিক খুশী হয় না। আপনি এখানে জয়েন করলে সে সমস্যাটা বোধহয় আর থাকবে না”।

রতীশ বলল, “ম্যাডাম পুরো সেন্টারটা আমাকে ঘুরে ঘুরে দেখালেন। সবকিছু বেশ সুন্দর করে সাজানো গোছানো। বেশ ভাল লেগেছে আমার”।

এমন সময় মহিমা চেম্বারে ঢুকে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ বিমল। তুমি তো আমার কাছে একখানা হীরে এনে দিয়েছ বন্ধু। তোমার ক্যাণ্ডিডেট তো ফুল মার্ক্স পেয়েছে ইন্টারভিউতে”।

বিমল বলল, “হীরে না পাথর, সে বিচার তো তোমার মত জহুরীই করতে পারে। আমি তো আর এ’সবের কিছু জানিনা বা বুঝিনা। আমার নাম নিয়ে কেউ ওকে ঠকিয়েছে জেনেই আমার খারাপ লাগছিল। আর তোমার এখানেও যে একজন ট্রেনারের প্রয়োজন আছে সেটাও আমার জানা ছিল। আর রতীশবাবু যোগা নিয়ে কিছু একটা করবে বলেই এখানে এসে একটা চোট খেয়েছে। তাই তাকে তোমার কাছে নিয়ে এসেছি। তা তোমাদের সব কথা কি শেষ হয়ে গেছে? না আমাকে আরও অপেক্ষা করতে হবে আমার কাজের জন্য”?

মহিমা নিজের চেয়ারে বসে চুপ করে বিমলের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে বলল, “সরি বিমল, তোমাকে আর একটু অপেক্ষা করতেই হবে। মিঃ ভট্টাচারিয়ার সাথে আমার আরও খানিকক্ষণ কথা বলার আছে। তুমি অবশ্য একটা কাজ করতে পার। তুমি বোর ফিল করলে বরং আমার রেস্ট রুমে গিয়ে একটু অপেক্ষা কর। আমি আধঘন্টা পর তোমার সাথে বসছি, ওকে”?

বিমল বলল, “হ্যা ঠিক আছে। এখানে বসে বসে আমি বোর হব। তোমার রেস্ট রুমে গিয়ে একটু রেস্ট নেওয়াই ভাল হবে মনে হয়”।

মহিমা মিষ্টি করে হেসে নিজের ব্যাগের ভেতর থেকে একটা চাবি বের করে বিমলের হাতে দিতে দিতে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ বিমল”।

বিমল চাবিটা হাতে নিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে বলল, “তাহলে রতীশবাবু, আপনি ম্যাডামের সাথে বাকি কথাটুকু সেরে ফেলুন। কিন্তু আপনাকে ছুটি দেবার পর আপনি কি আমার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন এখানে”?
 

বিমলের কথার জবাবে রতীশ বলল, “না না বিমলজী। ম্যাডাম আমাকে ছুটি দিলে আমি চলে যাব। আপনি আমার জন্যে অনেক করেছেন। আর বিরক্ত করতে চাই না আপনাকে। আমি এখান থেকে মেট্রো ধরে চলে যাব। আপনি আপনার কাজ শেষ করেই যাবেন বরং”।
 

বিমল একবার মহিমার দিকে দেখে আবার রতীশকে বলল, “আমার কাজ শেষ হতে তো প্রায় ঘন্টাখানেক লেগে যাবে, তাই না মহিমা? এই একটা ঘন্টা আপনাকে এখানে একা বসিয়ে রাখলেও তো ভাল দেখাবে না”।


______________________________
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#62
(Update No. 82)

রতীশ আবার বলল, “না বিমলজী, আপনি একদম ভাববেন না প্লীজ। ম্যাডামের সাথ কাজ শেষ হলে আমি চলে যাব। আমার কোন অসুবিধে হবে না। আপনার কাজটা অসম্পূর্ণ রেখে আমি কি আপনাকে আমাকে পৌঁছে দেবার কথা বলতে পারি? ছিঃ ছিঃ, এত স্বার্থপর তো আমি হতে পারব না”।

বিমলজী চেম্বার থেকে বেরোতে বেরোতেও থেমে দাঁড়িয়ে বলল, “তবু আপনি কিছু মনে করবেন না রতীশবাবু। আপনাকে আমি সাথে করে এনে এখান থেকে একা ছেড়ে দিচ্ছি, ভাবতেও খারাপ লাগছে আমার। প্লীজ আমাকে ক্ষমা করে দেবেন” বলে বেরিয়ে গেল।

বিমল বেরিয়ে যেতেই মহিমা তার হাতের ঘড়ির দিকে একবার দেখে বলল, “তাহলে মিঃ ভট্টাচারিয়া, কি ভাবছেন? আমাদের এখানে কাজ করতে আপত্তি নেই তো আপনার”?
 

রতীশ একটু হেসে জবাব দিল, “ইন্টারভিউতে পাশ করেছি কি না, সেটাই তো জানিনা ম্যাডাম। আর আমাকে যদি আপনি কাজে রাখতে না চান, তাহলে আমি চাইলেই কি আর এখানে ঢুকতে পারব”?
 

মহিমা টেবিলের ওপর হাত রেখে একটু সামনের দিকে ঝুঁকে বলল, “ইন্টারভিউতে যে হান্ড্রেড পার্সেন্ট মার্ক্স পেয়েছেন, সে কথা তো বিমলের সামনেই বলেছি আমি। আমি বুঝতে পেরেছি, আমি যেমন একজন ট্রেনার খুঁজছিলাম আপনি তার থেকে অনেক অনেক ওপরে মিঃ ভট্টাচারিয়া। আপনাকে পেলে আমার খুব উপকার হবে। তাই আপনি মোটামুটি ধরে নিতে পারেন যে ইন্টারভিউতে আপনি পাশ করে গেছেন। কিন্তু ফাইনালি ‘হ্যা’ বা ‘না’ বলবার আগে আপনাকে আরো অনেক কথা বলার আছে আমার। আচ্ছা বিমলের মুখে শুনেছি আপনি বরানগরের দিকে কোথাও একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছেন। জায়গাটা তো এখান থেকে বেশ দুর। ট্যাক্সি বা অটোতে আসতেও প্রায় ঘন্টা খানেক লেগে যাবে। বাসে সময় আরও বেশী লাগবে। কিন্তু মুস্কিল হচ্ছে যে আমাদের এখানে জেনারেল সেশন স্টার্ট হয় সকাল ছ’টা থেকে। ছ’টা থেকে আটটা পর্যন্ত চলে। আমাদের অফিস এসিস্ট্যান্ট মেয়েটা, মানে বীথি, ও আসে সকাল সাতটায়। আর আমি সেন্টারে আসি সাড়ে সাতটা নাগাদ। কিন্তু ট্রেনারদের সকলকেই ছ’টার আগেই এখানে আসতে হয়। আপনি যদি এখানে জয়েন করেন, তাহলে আপনাকে তো ভোর অন্ততঃ সাড়ে চারটে পাঁচটার সময় বাড়ি থেকে বেরোতে হবে। অত সকালে তো মেট্রো পাবেন না। আর বরানগর থেকে দমদম এসে তবেই আপনি মেট্রো ধরতে পারবেন। তাতেও তো অনেকটা সময় লেগে যাবে। আর ও অঞ্চলে অত সকালে সিটি বাস চলতে শুরু করে দেয় কি না, সেটাও আমি ঠিক জানিনা। তাছাড়া সিটিবাস পেলেও যে রোজ ঠিক সময়ে এসে পৌছবেন, সেটাও একেবারেই আশা করা যায় না। কোন একটা অটো বা ট্যাক্সি ধরেই আপনাকে এখানে আসতে হবে। কিন্তু তাতে তো খরচও অনেক পড়বে। অটোতে এলেও তো কমপক্ষেও সত্তর আশি টাকা ভাড়া নেবে। ট্যাক্সিতে এলে তো আরও অনেক বেশী খরচ পড়বে। আর তাছাড়া বরানগর থেকে এদিকে আসতে হলে তো আপনাকে বেশ কয়েকটা অটো বদলে বদলে আসতে হবে। ডাইরেক্ট কোনও ট্যাক্সি বা অটো তো পাওয়া যাবে না। যাবার সময় অবশ্য অটো বা ট্যাক্সি না নিয়ে সিটি বাসে অথবা মেট্রোতে যেতে পারেন। সিটিবাসে সময় কিছুটা বেশী লাগলেও ভাড়া অনেক কম পড়বে। মেট্রোতে ভাড়া একটু বেশী হলেও সাত আট মিনিট পরপরই মেট্রো পেয়ে যাবেন। তাতে সময় সবচেয়ে কম লাগবে। তবু দমদম থেকে বরানগর অব্দি তো আর মেট্রো নেই। সেটুকু আপনাকে রিক্সা বা অটোতে যাওয়া আসা করতে হবে। আবার এদিকেও গড়িয়াতে আপনাকে মেট্রো থেকে নামতে হবে। তারপরে বাকি পথটুকু আবার অটোতেই আসতে হবে। তাই ধরে নেওয়া যায় যাতায়াত বাবদ রোজ আপনাকে বেশ কিছু অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হবে। আচ্ছা আমি একটা কথা ভাবছি মিঃ ভট্টাচারিয়া। আপনি এদিকে কাছাকাছি কোথাও একটা ফ্ল্যাটে চলে আসতে পারবেন না? প্রয়োজন হলে ফ্ল্যাট খুঁজে পেতে আমি আপনাকে সাহায্য করব”।
 

রতীশ বলল, “ম্যাডাম সেটা তো এখনই বোধ হয় সম্ভব হবে না। আমরা এ’ মাসের এক তারিখেই ওই ফ্ল্যাটে এসেছি। এক বছরের জন্য সেটা লিজ নিয়েছি। এই একটা বছর পার না হতেই সে ফ্ল্যাট ছেড়ে দেওয়া সম্ভব হবে না তো”।

মহিমা একটু ভেবে বলল, “হু, এদিকেও একটা প্রব্লেম আছে। আচ্ছা সে খরচের ব্যাপারটা যদি ছেড়েও দিই, আপনি কি মনে করেন, সেখান থেকে আসা যাওয়া করে আপনি এ কাজটা করতে পারবেন? দেখুন মিঃ ভট্টাচারিয়া। আপনাকে ঠিক সময়ে এসে কিন্তু পৌঁছতে হবে। ছ’টায় কিন্তু আপনাকে ক্লাসে ঢুকতেই হবে”।
 

রতীশ জিজ্ঞেস করল, “ম্যাডাম। এ ব্যাপারে দুটো কথা জিজ্ঞেস করতে পারি কি”?

মহিমা মিষ্টি করে হেসে বলল, “হ্যা হ্যা, নিশ্চয়ই। আপনার ফর্মাল ইন্টারভিউ তো শেষ হয়েই গেছে। আমরা এখন নিগোশিয়েশন স্টেজে এসে পৌঁছেছি। তাই আপনার যা কিছু জিজ্ঞেস করবার আছে, নিশ্চিন্তে সে’সব জিজ্ঞেস করতে পারেন”।
 

রতীশ জিজ্ঞেস করল, “আমার ডিউটি আওয়ার্স কী হবে? সকাল ছটা থেকে শুরু করে ক’টা পর্যন্ত আমাকে এখানে থাকতে হবে”?
 

মহিমা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে বলল, “সকাল ছ’টা থেকে আটটা কম্পালসারি জেনারেল সেশনে আপনাকে থাকতেই হবে। তারপর একঘন্টার একটা ব্রেক। তখন আমরা সবাই ব্রেকফাস্ট করি। এই ব্রেকফাস্ট আপনাকে সেন্টার থেকেই দেওয়া হবে। বাড়ি থেকে আপনাকে কিছু বয়ে আনতে হবে না, বা বাইরে কোথাও গিয়েও আপনাকে খেতে হবে না। ব্রেকফাস্টের পর সকাল ন’টা থেকে আপনাকে কেবিন ক্লাস নিতে হবে। কেবিন ক্লাস হয় ন’টা থেকে সাড়ে দশটা অব্দি। সেন্টারের কাজ এখানেই শেষ। তাই ধরে নিন, সকাল ছ’টা থেকে রেগুলার সাড়ে দশটা অব্দি আপনাকে সেন্টারে থাকতে হবে”।

রতীশ বলল, “ম্যাডাম ভোর পাঁচটায় রাস্তায় যদি অটো চলাচল শুরু হয়ে যায়, তাহলে হয়ত আমার আসতে অসুবিধে হবে না। কারন অত সকালে ট্র্যাফিক জ্যামে পড়ার সম্ভাবনা কম। এক ঘন্টায় এখানে পৌঁছে যেতে পারবো আশা করি। তবে আসা যাওয়ার ভাড়া তো দিতেই হবে। এছাড়া আর অন্য কোনও ব্যাপারে যদি আর কিছু বলতে চান.... মানে আপনার এ ইনস্টিটিউটের ব্যাপারে বা এখানে কাজ করতে হলে আমাকে কি কি শর্ত মেনে চলতে হবে, এই সব”।

মহিমা মিষ্টি করে হেসে বলল, “বলার তো অনেক কথাই আছে মিঃ ভট্টাচারিয়া। কিন্তু আমার হাতে সময় থাকলেও বিমল আবার ওদিকে আমার অপেক্ষায় বসে আছে। তাই কোনটা ছেড়ে কোনটা বলি, সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না। আচ্ছা আপনি কি আজ বিকেলে আমার সাথে একটু দেখা করতে পারবেন? ধরুন এই বিকেল ......”
 

কথার মাঝেই টেবিলের ওপর রাখা মহিমার মোবাইলটা বেজে উঠতে সে থেমে গিয়ে রতীশকে ‘এক্সকিউজ মি’ বলে ফোন কানে লাগিয়ে বলল, “হ্যালো কে বলছেন?..... ওহ মিঃ সরকার? হ্যা বলুন কি খবর?....... হ্যা সে তো আছেই, তা কবে চাইছেন? ...... পরশু সন্ধ্যেয়? ঠিক আছে আমি আপনাকে কাল সকালে কনফার্ম করব..... না না, তা নয়। আসলে আমার সেন্টার তো আজকের মত বন্ধ হয়ে গেছে। আমি তো ওর সাথে এখনই কথা বলতে পারছি না। ওর সাথে আমার কাল সকালেই দেখা হবে। আগে থেকে ওর কোন এপয়েন্টমেন্ট করা আছে কিনা সেটা না জেনে আপনাকে কী করে কনফার্ম করি বলুন? ..... হ্যা রেট তো সেটাই আছে। তবে ইন কেস, যদি ও যেতে না পারে তাহলে অন্য কাউকে পাঠাব কি”?

এরপর কিছুক্ষণ চুপ করে ওদিকের কথা শুনে হেসে উঠে বলল, “ওকে, মিঃ সরকার। আপনার টেস্ট তো আমার জানাই আছে। ঠিক আছে। একটা না একটা হয়েই যাবে। তবে আমি কাল দশটা নাগাদ আপনাকে কনফার্ম করছি ..... ওকে, থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ ফর কলিং মি। বাই”।

ফোন রেখে রতীশের দিকে চেয়ে মহিমা বলল, “হ্যা মিঃ ভট্টাচারিয়া। কী যেন বলছিলাম? ওহ, হ্যা মনে পড়েছে। কিন্তু নাহ, থাক। বিকেলে আসতে হলে আপনাকে আবার দু’ঘন্টা বাস জার্নি করতে হবে। আচ্ছা শুনুন। আমাদের এ মালহোত্রা সেন যোগা ইনস্টিটিউটটা চালু হয়েছে প্রায় বছর ছয়েক হল। আমি আর আমার স্বামী মিঃ অরবিন্দ সেন দু’জনে পার্টনারশিপে এটা চালাচ্ছি। কিন্তু আমার স্বামী এ সেন্টার নিয়ে একেবারেই মাথা ঘামান না। তার আলাদা ইলেকট্রনিক প্রোডাক্টসের ব্যবসা আছে। তিনি সে ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। এখানকার সব কিছুর ভার শুধু আমার ওপরেই। বর্তমান ডিমাণ্ড হিসেবে চারজন ট্রেনারের প্রয়োজন আমার। কিন্তু এখানে দু’মাস আগে পর্যন্ত তিনজন ট্রেনার ছিল। তবে তারা কেউই সত্যিকার যোগা টিচার নয়। অন্যান্য জায়গায় যোগা শিখে তারা এখানে ট্রেনার হিসেবে কাজ করছে। আমি নিজেই তাদের একটু শিখিয়ে পড়িয়ে নিয়েছি। কিন্তু আমাদের ট্রেনীরা আর বাইরের লোকেরা জানে যে তারা ট্রেইন্ড যোগা টিচার। একজন সত্যিকারের যোগা টিচার কখনও আমি খুঁজেই পাই নি কলকাতায়। ওই তিনজন ট্রেনারের মধ্যে একজন ছিল মহিলা। সে প্রেগনেন্সির জন্য গত দু’মাস থেকে সেন্টারে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত তো সে আসবেই না। আর ডিসেম্বরে ডেলিভারি হবার পরেও যে ও সাথে সাথে এখানে আসতে শুরু করবে, সেটাও আশা করছি না। এমনও হতে পারে যে ও হয়ত পার্মানেন্টলি কাজটা ছেড়েই দেবে। আর আমাদের জেনারেল সেশনের তিনটে সেকসন মিলে বর্তমানে ট্রেনী আছে প্রায় চল্লিশ জন। কবিতা আসা বন্ধ করে দেবার পর থেকে একটা সেকশন বন্ধই রাখতে হচ্ছে। বরুন আর সুজয়কেই সামলাতে হচ্ছে সবাইকে। তাই ওদের ওপর বেশ চাপ পড়ছে দেখেই আমি আরেকজন ট্রেনার খুঁজছিলাম। আপনার মত একজন ট্রেনার পেলে আমি অনেক নিশ্চিন্ত বোধ করব। আর সত্যি কথা বলতে গেলে, আপনার মত এমন এফিসিয়েন্ট টিচার আমি আগে কখনো দেখিনি। তাই আমি যে কোন প্রকারেই হোক আপনাকে কাজে নিতে চাই”।

একটু থেমে দম নিয়ে মহিমা আবার বলল, “ডিউটি আওয়ার্সের ব্যাপারে তো আগেই বলেছি। এবারে অন্য কথাগুলো বলছি। সব অফিসে সব সেন্টারেই সাপ্তাহিক ছুটি বলে একটা কথা থাকে। আমাদের দেশে বেশীর ভাগ অফিসেই রবিবারে সাপ্তাহিক ছুটি থাকে। কিন্তু আমাদের সেন্টার তো সপ্তাহে সাত দিনই খোলা রাখতে হয়। তাই ট্রেনাররা এক এক জন সপ্তাহের এক এক দিন ছুটি পায়। বরুনের সাপ্তাহিক ছুটি সোম বার। সুজয়ের মঙ্গলবার, আর কবিতার বুধবার। আপনি এখানে কাজে যোগ দিলে আপনাকে সাপ্তাহিক ছুটি দেওয়া হবে বৃহস্পতি থেকে রবিবারের মধ্যে যে কোন একদিন। সেটা আপনি পছন্দমত নিজে বেছে নিতে পারেন। আর এ ছাড়া প্রতি মাসে একদিন করে বছরে বারো দিন সবেতন ক্যাজুয়াল লিভ পায় সকলে। তবে এই ক্যাজুয়াল লিভ জমিয়ে রেখে একসঙ্গে নিতে চাইলেও কেউ একবারে চারদিনের বেশী ছুটি নিতে পারে না। সাপ্তাহিক আর ক্যাজুয়াল লিভ বাদে আমাদের এখানে আর কোন ছুটি কেউ পায় না। কোন কারনে হিসেবের ছুটি শেষ হয়ে যাবার পরেও কেউ যদি কাজে অনুপস্থিত থাকে, তাহলে প্রোরাটা বেসিসে তার বেতন থেকে টাকা কেটে নেওয়া হয়ে থাকে”।

আবার কিছু সময় থেমে সে বলল, “আর সরকারী অফিসের চাকরিতে যেমন প্রভিডেন্ট পেনশন গ্র্যাচুইটি ইত্যাদি থেকে থাকে, সে’সব জিনিস আমাদের এখানে কিছু নেই। যে যতদিন কাজ করবে, ততদিন বেতন পাবে। আর যেহেতু এটা আমার ব্যক্তিগত ব্যবসা এখানে অন্যান্য অফিসের মত কোন রুলস রেগুলেশনস নেই। তবে সব কিছুই হবে আমার কথামত। মানে আমি যাকে যা বলি, তাকে সেটাই করতে হয়। তবে আমার সাথে যারা কাজ করেছে বা এখনও করছে তারা সবাই জানে যে আমি কারুর মতের বিরুদ্ধে গিয়ে জোর করে কাউকে দিয়েই কিছু করাই না। আমার কথা বা আমার নির্দেশ মেনে চলতে কারুর অসুবিধে হলে কোনরকম বাদবিবাদে না গিয়ে তারা এখানকার কাজ ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে পারে। তেমন ক্ষেত্রে আমিও তাদের হাসিমুখে বিদেয় দিই। তবে সেক্ষেত্রে দু’মাস আগে রিজাইন করবার নোটিস দিতে হবে। এখানে কাজে জয়েন করবার আগে সবাইকেই একটা এগ্রিমেন্ট সাইন করতে হয়। সে এগ্রিমেন্টে এ’সব কথা লেখা থাকে”।

এইটুকু বলে নিজের হাতের ঘড়ির দিকে আরেকবার দেখে মহিমা বলল, “ইশ,আচ্ছা মিঃ ভট্টাচারিয়া, কিছু মনে করবেন না প্লীজ। আপনার সাথে আরও অনেক কথা বলবার আছে আমার। কিন্তু বিমল বেচারাকে আর কতক্ষণ বসিয়ে রাখি। তাই বলছিলাম কি, আমি একটু বিমলকে বলে আসছি। আপনি প্লীজ একটু বসুন” বলতে বলতে চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ল।
 

রতীশ বলল, “ঠিক আছে ম্যাডাম, আমি অপেক্ষা করছি”।

মহিমা বেরিয়ে যাবার পর রতীশ ভাবতে লাগল, সেন্টারটা ঘুরে ফিরে দেখে তার সত্যিই খুব ভাল লেগেছে। বেশ সাজানো গোছানো। সে নিজেও মনে মনে ভেবেছিল, এমনই সাজানো গোছানো একটা যোগা সেন্টার সে খুলবে। আর সকাল বিকেল দু’বেলা সেখানে যোগা ক্লাস চলবে। রচনা সারাটা দিন বাড়িতে একা একা বসে থাকে। বিকেলের দিকে সেও সেন্টারে এসে অফিসে বসতে পারবে। কিন্তু তার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল। রবিশঙ্করের মনের ভেতরের দুরভিসন্ধি সে ঘূণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি। সে ভেবেছিল বিদেশ বিভূঁইয়ে এসে রবিশঙ্করের মত পরিচিত একজনকে মাঝে সাঝে সাথে পেলে তার আত্মবিশ্বাসটা বাড়ত। কিন্তু কোত্থেকে কী হয়ে গেল। যার ওপর ভরসা করে সে কলকাতা এসেছিল সে লোকটাই কলকাতায় পা দেবার সাথে সাথেই তাকে প্রায় সর্বস্বান্ত করে দিশেহারা করে ছেড়েছে।
 

মহিমা নিজের চেম্বার থেকে বেরিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে লিফটে চেপে নিচের তলায় এসে করিডোর ধরে খানিকটা এগিয়ে গিয়ে একটা দরজায় নক করতেই দরজাটা খুলে গেল। মহিমা ভেতরে ঢুকেই দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে পেছন ফিরে দেখে বিমল শুধু জাঙ্গিয়া আর গেঞ্জী পড়ে বিছানায় বসে আছে। টিভিতে একটা ব্লু ফিল্ম চলছে। টেবিলের ওপর হুইস্কির গ্লাস বোতল। বিমলের জাঙ্গিয়ার সামনেটা বেশ উচিয়ে আছে। মহিমার বুঝতে অসুবিধে হল না, এটা ব্লু ফিল্মের প্রভাব। সে মিষ্টি করে হেসে বিমলের দু’পায়ের ফাঁকের মধ্যে দাঁড়িয়ে একটু ঝুঁকে বিমলের ঠোঁটে চুমু খেয়ে বলল, “বেশ মজাই তো করছ। আমি ভাবছিলাম তুমি বুঝি একা একা বোর হচ্ছ। কিন্তু তোমাকে আরো কিছুক্ষন অপেক্ষা করতে হবে ডার্লিং। আমি আধঘন্টা বাদে তোমার কাছে আসছি। প্লীজ ডোন্ট মাইণ্ড”।
 

বিমল দু’হাতে মহিমার কোমর জড়িয়ে ধরে তার পাছার দাবনা দুটো টিপতে টিপতে জিজ্ঞেস করল, “এখনও তোমার ইন্টারভিউ শেষ হয়নি? নাকি ইয়ং হ্যাণ্ডসাম একজনকে পেয়ে নিজের চেম্বারেই শুরু করে দিয়েছ”?
 

মহিমা বিমলের গালে একটা আদরের চাটি মেরে বলল, “কাম অন বিমল। তুমি জান যে সেন্টারে আমি কখনও এ’সব এলাও করি না। আর ও’সব তো সারা জীবনে অনেক করেছি ডার্লিং। এখন একমাত্র তুমি ছাড়া এই সাতচল্লিশ বছরের বুড়ি আর কোন ইয়ং ম্যানের কাছে যায় না। তোমার ডাকেই শুধু আমি সাড়া দিই এখন। তা এটা কি সঙ্গে করে এনেছিলে না কি”? বলে টিভির দিকে ঈশারা করল।

বিমল শালোয়ারের ওপর দিয়ে মহিমার অসম্ভব ভরাট আর উঁচু বুকে মুখ ঘসতে ঘসতে বলল, “আমি তো আগে থেকেই অনুমান করেছিলাম যে রতীশবাবুর সাথে তুমি আগে কথা সেরে নেবে। আর আমাকে একা একা বসে বোর হতে হবে। তাই এটা সাথে করেই এনেছিলাম। দেখে দেখে সময় কাটছে ভালই। অনেক দিন বাদে ব্লু ফিল্ম দেখার সুযোগ পাচ্ছি। তা তুমি রতীশবাবুকে বসিয়ে রেখে এলে কেন ডার্লিং? একবারে তাকে বিদেয় দিয়েই তো আসতে পারতে”।
 

মহিমা বলল, “দেরী হচ্ছে বলেই তোমাকে বলতে এলাম। আর কিছুক্ষণ সময় দাও ডার্লিং। আমি ওকে বিদেয় করে আসছি” বলে একহাত বাড়িয়ে বিমলের জাঙ্গিয়া সমেত তার ঠাটিয়ে ওঠা পুরুষাঙ্গটাকে মুচড়ে দিল।
 

বিমল জাঙ্গিয়ার ভেতর থেকে তার স্ফীত পুরুষাঙ্গটাকে হঠাৎ করে টেনে বের করে দিয়ে বলল, “এসেছই যখন, তখন একটু সাক করে দাও না ডার্লিং। কতদিন বাদে তোমাকে চুদব বলে এসেছি। ব্লু ফিল্ম দেখতে দেখতে বাড়াটা কেমন ঠাটিয়ে উঠেছে দেখছ”?
 

মহিমা চট করে হাঁটু গেঁড়ে বসে বিমলের পুরুষাঙ্গটাকে নিজের মুখে ঢুকিয়ে নিয়ে কয়েকবার চুসেই ছেড়ে দিয়ে বলল, “তোমার লণ্ড চুসতে চুসতে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে ডার্লিং। আমি বরং তোমার জন্য একটা নতুন কিছু দিয়ে যাচ্ছি। এ ছবিটা তো আগেও দেখেছ। আজ একটা রাজস্থানী ব্লু ফিল্ম দেখাচ্ছি। তোমার নিজের ভাষার ছবি। নিশ্চয়ই ভাল লাগবে তোমার” বলে টিভির দিকে এগিয়ে গিয়ে নিচের একটা ড্রয়ার থেকে একটা সিডি বের করে প্লেয়ারে লোড করে দিয়ে উঠে বলল, “তুমি এটা দেখতে থাক। খুব বেশী লম্বা ছবি নয় এটা। তিরিশ পঁয়ত্রিশ মিনিটের মত। এটা শেষ হতে হতে আমি চলে আসব। আসছি তাহলে। তুমি দরজাটা বন্ধ করে দাও” বলে ঘর থেকে বেরিয়ে এল।

নিজের চেম্বারে ঢুকেই মহিমা বলল, “সরি মিঃ ভট্টাচারিয়া। আপনাকে একা বসিয়ে রেখে চলে গিয়েছিলাম বলে আমাকে ক্ষমা করবেন”।
 

রতীশ নিজের ভাবনা থেকে সরে এসে চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে উঠে বলল, “ঠিক আছে ম্যাডাম। আমার কোন সমস্যা হয়নি। বিমলজীকে আমার জন্যই সেখানে একা একা বসে থাকতে হচ্ছে বলে আমারই ভাল লাগছে না”।
 

মহিমা নিজের চেয়ারে বসতে বসতে বলল, “ইটস ওকে, ওকে বুঝিয়ে এসেছি। আচ্ছা মিঃ ভট্টাচারিয়া শুনুন। আমাদের এখানকার নিয়ম কানুন তো মোটামুটি ভাবে বলা হয়ে গেছে। তবে আপনি একটা কথা শুনে রাখুন। কাজে যোগ দেবার সময় অফিসের নিয়মানুযায়ী আপনাকে কিন্তু একটা এগ্রিমেন্টে সই করতে হবে। সে এগ্রিমেন্টে ধরাবাঁধা কিছু রুলস এণ্ড রেগুলেশনস থাকবে। কিন্তু ওই এগ্রিমেন্টে এমন কথা লেখা না থাকলেও আপনি জেনে রাখুন, ছুটির ব্যাপারে বা ডিউটির ব্যাপারে যেসব কথা আপনাকে এতক্ষণ বলেছি, সেটা বাকি সকলের মত আপনার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে ঠিকই। কিন্তু এর বাইরেও আমি আপনার জন্য আরো কিছু সুযোগ সুবিধে দেব। আর ডিউটির ব্যাপারে আগে যেমন বলেছি, আপনাকে জেনারেল সেসন আর কেবিন ট্রেনীং ছাড়া আর কিছুই করতে হবে না। আমি আশা করছি আপনি আমার সেন্টারের জন্য একটা মূল্যবান এসেট হবেন। তাই আপনার জন্য ধরা বাঁধা নিয়মের বাইরে গিয়ে আমি আরো কিছু সুযোগ সুবিধে দেব। সে’সব পরে কখনো আমরা আলাপ করব। আপাততঃ যে কথাগুলো না বললে আপনার পক্ষে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে না সে’গুলোই বলছি। শুনুন মিঃ ভট্টাচারিয়া, এখানে অন্যান্য ট্রেনাররা মাসে মাসে পনের হাজার বেতন পায়। কিন্তু এ ইনস্টিটিউটের কাজটা তাদের কাছে একটা পার্ট টাইম জব। তারা আমার ইনস্টিটিউটের কাজ ছাড়াও আরও কিছু আউটডোর কাজের সাথে যুক্ত আছে, যা এ ইনস্টিটিউটের কাজের মধ্যে একেবারেই পড়ে না। আপনাকে তো শুধু সেন্টারের কাজের জন্য চাইছি আমি। আমার ধারণা শারিরীক অসুস্থতা রিকভারি করতে যেসব ট্রেণী আমাদের এখানে আসে, আপনি তাদের কেস স্টাডি করে সঠিক এক্সারসাইজ প্রেসক্রাইব করতে পারবেন। আর আমি চাইব আমাদের অন্যান্য ট্রেনারদেরও আপনি একটু টিপস দেবেন। কারন কোন কোন রোগের পেশেন্টকে কোন কোন আসন করাতে হয় আর কোন কোন আসন করানো ঠিক নয়, এসব ব্যাপারে তারা তো একেবারেই অজ্ঞ। কিন্তু আপনি সেটা সঠিক ভাবে বুঝতে পারবেন। তাই আমি চাই আপনি বরুন আর সুজয়কেও এ ব্যাপারে একটু শিখিয়ে পড়িয়ে দেবেন। তাই শুরুতেই আমি আপনাকে মান্থলি অন্যান্য ট্রেনারদের দেড়গুন স্যালারি দেব। আপনাকে মাসে মাসে বাইশ হাজার দেব। আর যেহেতু আপনাকে এতদুর থেকে আসা যাওয়া করতে হবে, তাই আপনাকে আলাদা করে চার হাজার টাকা আমি কনভেয়ান্স এলাওন্স হিসেবে দেব। তাহলে সব মিলিয়ে শুরুতে আপনি মোট ছাব্বিশ হাজার টাকা পাচ্ছেন মান্থলি। বাকি টুকটাক ব্যাপারে আমরা পরে নিগোশিয়েশন করে নিতে পারব। এবার আপনি বলুন। আপনি রাজি আছেন”?
 

রতীশ কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে থেকে বলল, “ম্যাডাম, আমি বর্তমানে যে পরিস্থিতির মধ্যে আছি তাতে আপনার অফার মেনে নেওয়াই উচিৎ আমার। কিন্তু ম্যাডাম, আমার বাড়ি তো নর্থ বেঙ্গলে। ট্রেণে যেতে প্রায় বারো ঘন্টা লেগে যায়। আর প্রতি মাসে বাড়ি না গেলেও বিশেষ বিশেষ অকেশানে বা পুজোর সময় আমাকে তো বাড়ি যেতেই হবে। আর একবার বাড়ি যেতে হলে আমাকে তো কম করেও চার পাঁচ দিনের ছুটির প্রয়োজন হবে”।

মহিমা একটু হেসে বলল, “মিঃ ভট্টাচারিয়া, আমি আপনাকে আগেই বলেছি, ধরাবাঁধা নিয়মের বাইরেও আমি আপনাকে কিছু কিছু অতিরিক্ত সুযোগ সুবিধে দেব। আপনি আমার কাছে যেমন স্পেশাল, তেমনি আমার তরফ থেকেও কিছু স্পেশাল কনসিডারেশনও পাবেন। শুধু আমাদের দু’জনের মাঝে লয়ালটিটা বজায় থাকতে হবে। তবে হ্যা, আপনি ভাববেন না যে লয়ালটি আশা করে আমি আপনার ওপর কোন রকম জোর জুলুম করব। আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি। আপনার ইচ্ছের বিরুদ্ধে আপনাকে কিছু করতে আমি বাধ্য করব না। আর যে লয়ালটির কথা বললাম সেটা যে একতরফা আপনার তরফ থেকেই রাখতে হবে তা নয়। আমিও একই সমান লয়ালটি বজায় রাখবার চেষ্টা করব। কিন্তু ট্রেনীদের যথার্থ ভাবে শিক্ষা এবং ট্রিটমেন্ট দেবার ব্যাপারে নিজের বিচার বুদ্ধি দিয়ে বরুন আর সুজয়কেও আপনি সাহায্য করবেন প্লীজ”।

রতীশ বলল, “ম্যাডাম, সে ব্যাপারে আমার বিরুদ্ধে আপনার কোন অভিযোগ হবে বলে মনে হয় না। কিন্তু ম্যাডাম, যদি অভয় দেন, আর যদি কিছু মনে না করেন, তাহলে আমার মনের একটা প্রশ্ন আপনাকে করতে চাইছি”।

মহিমা রতীশের কথা শুনে মিষ্টি হেসে বলল, “বেশ তো করুন না”।


______________________________
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply
#63
(Update No. 83)

রতীশ তবু একটু ইতস্ততঃ করে বলল, “প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করা হয়ত অনুচিতই হবে। কিন্তু এটা জানা আমার পক্ষে খুবই জরুরী। কিন্তু আপনি তাতে অসম্মানিত বোধ করতে পারেন। কিন্তু আমি সত্যি বলছি ম্যাডাম, আপনাকে অসম্মান করবার বিন্দুমাত্র ইচ্ছেও আমার নেই”।
 

মহিমা কয়েক মূহুর্ত রতীশের মুখের দিকে চেয়ে কিছু একটা ভেবে বলল, “আমার মনে হয় আমি কিছুটা আন্দাজ করতে পারছি। তবু আপনার মুখ থেকেই সেটা শুনতে চাই আমি। আপনি নির্দ্বিধায় প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করতে পারেন”।

রতীশ কাঁচুমাচু করে বলল, “ম্যাডাম, আমি শুনেছি যে কলকাতায় কিছু কিছু বিউটি পার্লার, ম্যাসেজ পার্লার এবং কিছু কিছু জিম আর ব্যায়ামকেন্দ্রে আসল কাজের আড়ালে কিছু কিছু অনৈতিক কাজও হয়ে থাকে। আপনার এ ইনস্টিটিউটে আশা করি তেমন কিছু হয় না বা হবে না, তাই না”?
 

মহিমা রতীশের প্রশ্ন শুনে বেশ কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে রইল। তারপর মুখ উঠিয়ে বলল, “মিঃ ভট্টাচারিয়া আপনি যে এমন একটা প্রশ্নই করবেন, সেটা আমি আন্দাজ করছিলাম। তবে আপনি ঠিকই শুনেছেন। এ শহরে অনেকেই ও’সব আসল ব্যবসার আড়ালে অনৈতিক কাজ করে থাকে। আর সেটা হচ্ছে সোজা কথায় দেহব্যবসা। তবে আপনি আমায় বিশ্বাস করতে পারেন। আমাদের এ ইনস্টিটিউটে তেমন ধরণের কোন কিছুই হয় না। আর ভবিষ্যতেও হবে না। আপনাকে দেখেই আমি বুঝেছি যে আপনি যথার্থ ভদ্রলোক। কোনও অনৈতিক কাজ আপনি কখনও করেন নি, আর কখনও করবেনও না। আমিও কাউকে ঠকিয়ে কিছু করি না। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। এখানে কাজ করতে করতে আপনি নিজেই সেটা বুঝতে পারবেন। তবু আপনার কথার জবাবে আপনাকে আশ্বস্ত করতে আমি এটুকু বলতে পারি যে যদি কখনও এ ইনস্টিটিউটে তেমন কিছু হয় বলে আপনার মনে হয়, তাহলে নিঃসঙ্কোচে আমাকে কথাগুলো খুলে বলবেন। আর তখন আমার জবাবে আপনি সন্তুষ্ট না হলে, আপনি স্বেচ্ছায় এখানকার কাজ ছেড়ে দিয়ে যাবেন। আর কথা দিচ্ছি, আমিও কোন প্রকার জোরাজুরি করব না আপনাকে”।

রতীশ মহিমার কথা শুনে মনে মনে ভাবতে লাগল, ছাব্বিশ হাজারে সে অনায়াসে সংসার চালাতে পারবে। আর মহিমা ম্যাডাম যত আন্তরিকভাবে তার সাথে কথাবার্তা বলছে তাতে সে মিথ্যে কিছু বলছে বলে মনে হয় না। কিন্তু একটা ব্যাপারে খটকা তার থেকেই যাচ্ছে। খানিকক্ষণ আগে মিঃ সরকার বলে কেউ একজন ম্যাডামকে যখন ফোন করেছিল তখন ম্যাডাম বলছিল যে সে মিঃ সরকারের পছন্দ অপছন্দ জানেন। আর তার পছন্দসই কাউকে না কাউকে পাঠিয়ে দেবেন। আবার রেট নিয়েও কথা বললেন। ব্যাপারটা তার ঠিক বোধগম্য হয়নি। ম্যাডাম কি ওই মিঃ সরকারের কাছে কোন মেয়ে পাঠাবার কথা বলছিল? অবশ্য তাকে তো শুধু ইনস্টিটিউটেই ডিউটি করতে হবে। তাই সে ভাবল যে বাইরের ব্যাপার নিয়ে তার মাথা না ঘামালেও চলবে। কিন্তু এখনই ‘হ্যা’ বলে দেওয়া ঠিক হবে না। দু’একদিন সময় চেয়ে নেওয়াই ভাল। রচনা আর মন্তির সাথে সব কিছু খুলে আলোচনা করে সিদ্ধান্তটা নেওয়াই ভাল হবে।
 

মহিমা রতীশের ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে জিজ্ঞেস করল, “মিঃ ভট্টাচারিয়া? কী ভাবছেন? আপনি কি রাজি নন”?
 

রতীশ একটু ম্লান হেসে জবাব দিল, “না ম্যাডাম, তেমন কিছু নয়। আসলে আমি সকালে সময় মত এখানে এসে পৌঁছতে পারব কিনা, মনে মনে সেটাই ভাবছিলুম। কিন্তু ম্যাডাম, কিছু মনে করবেন না। আমি এখনই আপনাকে পাকা কথা দিতে পারছি না। আমাকে দু’একটা দিন একটু ভেবে দেখবার সুযোগ দেবেন, প্লীজ”?
 

মহিমাও মিষ্টি করে হেসে বলল, “সত্যি কথা বলতে কি মিঃ ভট্টাচারিয়া, আমি তো মনে মনে চাইছিলাম যে আপনি কাল থেকেই কাজ শুরু করে দিন। তবে আপনি যখন দুটো দিন ভেবে দেখতে চাইছেন তাহলে বেশ। সে সুযোগ আমি আপনাকে দিচ্ছি। আচ্ছা একটা কথা বলব”?

রতীশ বলল, “হ্যা ম্যাডাম বলুন না”।

মহিমা আবার আগের মত মিষ্টি হেসে বলল, “আপনার বয়স মোটে আটাশ। আমি আপনার চেয়ে প্রায় ঊণিশ বছর বড়। আর আপনাকে মিঃ ভট্টাচারিয়া বলে ডেকে ভালও লাগছে না। তাই বলছি, আমি যদি আপনাকে আপনার নাম ধরে ডাকি, তাহলে আপনার আপত্তি আছে”?
 

রতীশ বলল, “না না ম্যাডাম, আপত্তি কেন হবে। আর তাছাড়া মালিক কর্মচারিকে আপনি আজ্ঞে করে কথা বললে সেটা ভালও শোনায় না। আপনি আমাকে ‘তুমি’ করে বলবেন”।
 

মহিমা খুশী হয়ে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ রতীশ। কিন্তু আমার মনেও একটা ইচ্ছে আছে। দেখ, অফিসে সবাই আমাকে ম্যাম বলে ডাকে। বাইরেও পরিচিতরা আমাকে ম্যাম, ভাবিজী এসব বলে ডাকে। আমার স্বামী বাঙালী। কিন্তু স্বামী ছাড়া বাড়িতে শ্বশুর বাড়ির তরফের আর কেউ নেই। অরিন্দমের কোন ছোট ভাই বোন থাকলে তারা হয়ত আমাকে বৌদি বলে ডাকত। বাঙালীদের বৌদি ডাকটা শুনতে খুব মিষ্টি লাগে আমার। কিন্তু ও নামে ডাকবার মত কাউকে পাই নি। তুমি আমাকে বৌদি বলে ডাকবে রতীশ”?

রতীশ একটু অবাক হয়ে মহিমার দিকে চাইল। মহিমার চোখে মুখের আকুতি দেখে সে অভিভূত হয়ে গেল। নিজেকে সামলে নিয়ে সে বলল, “ঠিক আছে ম্যাডাম। তাই না হয় ডাকব। কিন্তু অফিসের বাকিরা যদি তাতে আবার কিছু মনে করে”?
 

মহিমা উচ্ছ্বল ভাবে বলল, “কার কী বলার থাকতে পারে এ ব্যাপারে? আমি নিজেই তো তোমাকে ওভাবে ডাকতে বলছি। প্লীজ রতীশ” বলে হাত বাড়িয়ে টেবিলের ওপর রতীশের একটা হাত চেপে ধরল।

রতীশ হেসে বলল, “ঠিক আছে ম্যাডাম, তা-ই বলব”।

মহিমা রতীশের হাতটা ধরে একটু ঝাঁকি দিয়ে বলল, “না রতীশ, আর ম্যাডাম নয়। এখন থেকে বৌদি বলে ডাকবে”।
 

রতীশ বলল, “ঠিক আছে বৌদি। আজ থেকে আপনাকে বৌদিই বলব”।

মহিমা রতীশের হাত ছেড়ে দিয়ে নিজের চেয়ার থেকে প্রায় লাফ মেরে উঠে টেবিল ঘুরে রতীশের চেয়ারের কাছে এসে তার দু’কাঁধে হাত রেখে বলল, “ইশ, কি মিষ্টি লাগছে শুনতে। আরেকবার বল না রতীশ”।

রতীশ হেসে বলল, “বলছি তো বৌদি। বৌদি বৌদি, আপনি আজ থেকে আমার বৌদি। একদিক দিয়ে ভালই হল বৌদি। আমরা ছ’ভাই বোন। আমিই সকলের বড়। তাই বৌদি বলে ডাকবার মত কাউকে পাব না আমি। আপনাকে বৌদি বলে ডেকে আমার মনের সে সাধটাও পূর্ণ হবে”।

মহিমা খুশীতে উচ্ছ্বল হয়ে রতীশের দু’গাল হাত দিয়ে চেপে ধরে তার কপালে চুমু খেয়ে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ, থ্যাঙ্ক ইউ রতীশ। থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ। তোমার মুখে বৌদি ডাক শুনে আমার খুব ভাল লাগছে। আর শোনো, আমার এখানে কাজ করতে অরাজি হয়ো না প্লীজ। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি রতীশ। এখানে তোমার কোন অসুবিধে হবে না। তোমার সব ভালমন্দের দিকে আমি সব সময় নজর রাখব। তুমি আমাকে বৌদি বলে ডেকেছ। সে সুবাদে তুমি হচ্ছ আমার দেবর। আর দেবর তো ছোট ভাইয়ের সমতূল্য হয়ে থাকে, তাই না? আমিও তোমাকে ভাই বলে ডাকব। তুমি দু’দিন ভেবে দেখতে চাইছ, ভাবো। কিন্তু আমাকে ফিরিয়ে দিও না ভাই। প্লীজ রতীশ”।
 

রতীশ একটু অবাক হলেও মহিমাকে শান্ত করতে বলল, “আপনি শান্ত হয়ে বসুন বৌদি। একজন সামান্য কর্মচারির সামনে মালিকের এমন উতলা হওয়া কি শোভা দেয়”?

মহিমা নিজের মনের উত্তেজনা শান্ত করতে করতে আবার তার চেয়ারে গিয়ে বসে বলল, “সরি রতীশ। কিছু মনে কোর না ভাই। জীবনে প্রথমবার বৌদি ডাক শুনে আমি বোধহয় পাগল হয়ে উঠেছিলাম। তবে যে’কথাটা তুমি এইমাত্র বললে, সে’কথা আর কখনও মোটেও মুখে আনবে না। তুমি সামান্যও নও, আর নিজেকে আমার কর্মচারি বলেও ভেব না। তোমার কাজের বিনিময়ে তোমাকে আমি পারিশ্রমিক দিলেও আমাদের ভেতর বৌদি আর দেবরের সম্পর্কটাই থাকবে”।

রতীশ বলল, “ঠিক আছে বৌদি। এতে সরি বলবার তো কোন দরকার নেই। আর আমার বৌদি হবার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ”।

মহিমা টেবিলের ওপর ঢাকা দেওয়া গ্লাস থেকে একটু জল খেয়ে জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা রতীশ, তুমি কি বিবাহিত”?
 

রতীশ মাথা নিচু করে লাজুক স্বরে বলল, “হ্যা বৌদি, আমি তিন বছর আগে বিয়ে করেছি”।

মহিমা একটু দুষ্টুমি করে বলল, “হু... এবার বুঝেছি। তুমি নিশ্চয়ই বৌকে সাথে নিয়েই এসেছ কলকাতায় তাই না? বৌয়ের সাথে পরামর্শ করবে বলেই দু’দিন সময় চাইছ”?

রতীশ লাজুক হেসে বলল, “না বৌদি, ঠিক তা নয়। তবে হ্যা, আমার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়েই এসেছি আমি। আসলে আমি একটা অন্য প্ল্যান নিয়ে এখানে এসেছিলাম। কিন্তু ঘটণাচক্রে সেটা আর করতে পারিনি। তাই সব কিছু আরেকটু ভেবে সিদ্ধান্তটা নেব ভাবছি”।
 

মহিমা হেসে বলল, “বেশ, ভেবে দেখ। কিন্তু আমি তোমাকে হারালে খুব কষ্ট পাব। আচ্ছা আরেকটা কথা বল তো ভাই? বাবা হয়েছ? না এখনও তেমন প্ল্যান করনি”?
 

রতীশ একটু লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে বলল, “না বৌদি। এখনও তেমন কিছু হয়নি। আসলে আমি বিয়েও তো একটু তাড়াতাড়িই করেছি। আর আমার স্ত্রীর বয়স এখন মাত্র একুশ। ভেবেছিলুম এখানে এসে একটু এশটাব্লিশড হয়ে বসতে পারলেই বাচ্চা কাচ্চার কথা ভাবব। কিন্তু প্ল্যানটা তো ভেস্তে গেছে। দেখা যাক, এরপর কী হয়। কিন্তু বৌদি, ওদিকে যে বিমলজী আপনার জন্যা অপেক্ষা করছেন, সে কথা মনে আছে তো”?
 

মহিমা যেন সত্যিই ভুলে গিয়েছিল। হাত ঘড়ির দিকে দেখেই সে প্রায় আঁতকে উঠে বলল, “ওহ মাই গড! তোমার সাথে কথা বলতে বলতে বিমলের কথা তো আমি সত্যিই ভুলে গিয়েছিলাম। ওহ না না, বেচারাকে আর শাস্তি দেওয়া ঠিক হবে না। আচ্ছা রতীশ, তুমি বরং এখন এসো ভাই। তবে তোমার কন্টাক্ট নাম্বারটা আমাকে দেবে ভাই? তুমিও আমার নাম্বার নিয়ে নাও। তোমার মুখের বৌদি ডাক শোনবার জন্য ফোন করব আমি। তোমার বৌ আবার বিরক্ত হবে না তো”?
 

রতীশ নিজের নাম্বার বলে বলল, “আমার স্ত্রী কিছু মনে করবে না বৌদি”।

মহিমা রতীশকে নিজের মোবাইলের নাম্বার দিয়ে বলল, “তোমার মতামতটা একটু তাড়াতাড়ি জানিও ভাই। আর সেটা যেন নিগেটিভ না হয়। এসো তোমাকে বেরোবার রাস্তা দেখিয়ে দিচ্ছি”।
 

রতীশকে পিছনের লিফটে ঢুকিয়ে দিয়ে মহিমা দ্রুত পায়ে আবার নিজের চেম্বারে এসে ঢুকল। তারপর টেবিলের ওপরের জিনিসগুলো তাড়াতাড়ি ড্রয়ার আর আলমারিতে ঢুকিয়ে দিয়ে মোবাইল, ল্যাপটপ আর একটা এক্সটারনাল হার্ড ডিস্ক নিজের ব্যাগে ঢুকিয়ে ব্যাগ কাঁধে করেই চেম্বার থেকে বেরিয়ে চেম্বারের দরজায় তালা লাগিয়ে দিল। নিচের তলায় এসে নিজের রেস্টরুমের দরজায় নক করতেই দরজা খুলে গেল।
 

******************

মহিমার যোগা ইনস্টিটিউটের নিচের তলার এ রুমটায় রাত কাটাবার মত সবকিছুই আছে। তবে এখন অব্দি এ ঘরে পুরো রাত কাটাবার মত তেমন প্রয়োজন পড়েনি মহিমার। তবে ইদানীং তেমন প্রয়োজন না হলেও বছর দুয়েক আগেও কিছু বিশেষ বিশেষ দিনে তাকে রাত বারোটা একটা অব্দি এ’ঘরে কাটাতে হয়েছে। মাঝে মাঝে সে নিজে এখানে এসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে পারবে বলেই আলাদা করে এ রুমটাকে ভাড়া নিয়েছিল সে। কিন্তু কিছুদিন বাদেই এ রুমটা একটা বিশেষ কাজের জন্য ব্যবহৃত হতে শুরু করেছিল। এ যোগা ইনস্টিটিউটটা চালু করবার কয়েক মাস পরেই তার মেয়েকে আহমেদাবাদে পড়তে পাঠাবার সময় কুড়ি লাখ টাকার প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। তার স্বামী অরিন্দমের হাতেও এত পয়সা ছিলনা তখন। আর যোগা ইনস্টিটিউটটাও তখন নতুন। হাতে তেমন পয়সা ছিল না। কিন্তু ছেলেমেয়ের ভবিষ্যত সুরক্ষিত করে তুলতে সে যে কোন কাজ করতে প্রস্তুত ছিল। তখন মহিমার দেহে ভরপুর যৌবন। তার অপূর্ব সুন্দর একচল্লিশ বেয়াল্লিশ বছরের শরীরটাকে তখন মনে হত মাত্র ত্রিশ বত্রিশ বছরের টগবগে একটা সদ্যবিবাহিতা যুবতীর শরীরের মত। রাস্তাঘাটে বাজারে মলে সর্বত্র কচি বুড়ো প্রত্যেকে তার শরীরটাকে দেখলে চঞ্চল হয়ে উঠত। ভগবান তার দেহটাকে সাজাতে কোনরকম কার্পণ্য করেননি। ঐশ্বর্যে ঐশ্বর্যে শরীরটা একেবারে ভরপুর ছিল তার। দিল্লীর এক মধ্যবিত্ত পাঞ্জাবী পরিবারের মেয়ে হয়ে খুব ছোটবেলাতেই সে নিজের পকেটমানি উপার্জন করবার জন্য তাদের মহল্লার বেশ কিছু অর্ধবয়স্ক ও বয়স্ক পুরুষের সাথে গোপনে সময় কাটাত। পয়সার সাথে সাথে দেহসুখের নেশাতে সে তখন থেকেই মত্ত হয়ে উঠেছিল। কলেজে পড়াকালীন সময়েই সে চার পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে ঘন্টা খানেক সুখ দিত তার গ্রাহকদের। দিনে দিনে তার রূপ যৌবন যেন বেড়েই যাচ্ছিল। কলেজ জীবনে সে এক একজনের কাছ থেকে ঘন্টা খানেকের বিনিময়ে আট থেকে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে নিজের যৌন তৃষ্ণা আর বিলাসিতার খরচ মেটাত। তাই মেয়ের উচ্চশিক্ষার খরচ যোগাবার জন্য সে নিজের ঈশ্বরপ্রদত্ত দেহ সৌষ্ঠবকেই তার সহজ মূলধন করে ব্যবসায় নেমেছিল। তখন শুরুতেই বিমল আগরওয়ালা এ কাজে তাকে সবচেয়ে বেশী উপকৃত করেছিল। বিমল তার এক কথায় সে সময় কুড়ি লক্ষ টাকা ধার দিয়েছিল। সে টাকাতেই মেয়েকে আহমেদাবাদের নামকরা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করে দিতে পেরেছিল সে। তুখোড় ব্যবসায়ী বিমল আগরওয়ালা তো আর বিনাস্বার্থে তখন মহিমাকে অতগুলো টাকা দেয় নি। ওই আর্থিক সাহায্যের বিনিময় হিসেবে মহিমার লোভনীয় নারী শরীরটাকে সে সারা জীবনের জন্য নিজের ভোগের সামগ্রী করে নিয়েছিল। মহিমাও সেদিন স্বেচ্ছায় বিমলের শর্ত মেনে নিয়েছিল। তখন ঊণিশ বছরের বিবাহিত জীবন কাটাবার পরও তার স্বামী অরিন্দমের সাথে দাম্পত্য জীবনে আনন্দ উচ্ছ্বলতা কিছুটা কমে গেলেও তখনও স্বামীর সোহাগ সে ভরপুরই পেতো। কিন্তু তা সত্বেও তার নিজের দেহক্ষুধা তখন যেন আগের চেয়েও আরও বেশী প্রবল হয়ে উঠছিল। তাই একদিকে নিজের যৌনক্ষুধা অন্যদিকে আর্থিক প্রয়োজন মিটে যাচ্ছে বলে স্বামীকে পুরোপুরি ভাবে অন্ধকারে রেখেই সে বিমলের প্রস্তাব সহর্ষেই মেনে নিয়েছিল। আর তার পর থেকেই বিমলের মাধ্যমে নেতা, মন্ত্রী, উচ্চপদস্থ পুলিশ এবং সরকারী অফিসার আর শহরের সমস্ত নামী দামী শিল্পপতি আর ব্যাবসায়ীদের সাথে পরিচিত হতে আর তাদের মনোরঞ্জন করতে শুরু করেছিল। তখন থেকেই একটা ইন্টারনেট ওয়েব সাইটের মাধ্যমে বড় বড় শিল্পপতি, উচ্চপদস্থ সরকারী অফিসার আর কিছু রাজনৈতিক নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে সে নিজে দেহব্যবসা শুরু করেছিল। তার বছর দুয়েক বাদে ছেলেকে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াতে ব্যাঙ্গালোরে পাঠাবার সময়েও বিমল তাকে আরও পনের লক্ষ টাকা দিয়ে সাহায্য করেছিল। সে নিজে দেহ ব্যবসা শুরু করবার পর আরও কয়েকজন মেয়ে ও মহিলাকে সে এ কাজে ঢুকিয়েছিল। প্রথম এসেছিল বীথিকা। তার যোগা ইনস্টিটিউটের অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট। তারপর ধীরে ধীরে এ কাজে সদস্য সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছিল। পরের এক বছরের মধ্যেই বিমলের টাকাগুলো সে ফিরিয়ে দিতে পেরেছিল। বিমল তার কাছ থেকে সে টাকার কোনও সুদ নেয়নি। সেজন্য সে বিমলের প্রতি আজও কৃতজ্ঞ। তার পরিবর্তে ঋণশোধ করে দেওয়া স্বত্বেও তখন থেকেই বিমল প্রতি মাসে দু’তিন দিন এ ঘরটায় মহিমার যৌবনসুধা পান করে আসছে। অরিন্দমকে বিয়ে করবার পর থেকে ঊণিশটা বছর মহিমা স্বামী সংসার আর তাদের ছেলেমেয়েকে নিয়েই শুধু কাটিয়েছিল। স্বামী স্ত্রীর ভেতরে আর আগের মত যৌন উন্মাদনা ছিল না। হয়ত সে জন্যেই ছেলেমেয়ের পড়াশোনার জন্য টাকার প্রয়োজন মিটে গেলেও বিভিন্ন লোকের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করার ফলে ততদিনে আবার সে তার ছোটবেলার মত যৌনতার নেশায় নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। পয়সা উপার্জনটা তখন বড় কারণ না হলেও অনেক বছর বাদে পরপুরুষদের দেহের সান্নিধ্যের নেশাতেই মহিমা আবার তার ছোটবেলার নেশায় মেতে উঠেছিল। পরবর্তীকালে তার স্বামীর ব্যবসাতেও লক্ষ্যনীয় বৃদ্ধি হয়েছে। তাই টাকা উপার্জন করাটা আর মূখ্য কারন ছিল না। কিন্তু কুড়ি বাইশ বছর আগের নেশাটাই আবার নতুন করে তাকে আষ্টেপৃষ্টে জাকড়ে ধরেছিল যেন। এখন মহিমার হাতে পয়সার অভাব নেই। আর বয়সও বেড়ে যাবার ফলেই হয়ত শরীরের ক্ষিদেটাও কিছুটা ঝিমিয়ে এসেছে। কিন্তু ভগবান যেন তাকে অক্ষয় রূপ দিয়েই এ পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন। এই সাতচল্লিশ বছর বয়সেও তার শরীরের রূপ যৌবন এতটাই অমলিন আছে যে কচি থেকে বুড়ো সব পুরুষই তার শরীরটাকে ভোগ করবার জন্য তার এক কথায় নিজেদের সর্বস্ব মহিমার পায়ে বিলিয়ে দিতে রাজী হয়ে যায়। কিন্তু মহিমার ভেতরের আগের সেই সুতীব্র কামভাব কিছুটা থিতিয়ে আসছে বলেই এখন সে আগের মত নিজের শরীরটা আর অন্য পুরুষদের কাছে বিক্রী না করলেও তার অনৈতিক কাজটা নির্বিঘ্নে চালিয়ে নিয়ে যেতে কিছু রাজনৈতিক নেতা, উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মী আর পুলিশের বেশ কিছু বড়কর্তাদের খুশী রাখতে তাদের কাছে মাঝে মাঝে নিজের যৌবন সঁপে দিতে বাধ্য হয়। আর রয়ে গেছে এই বিমল আগরওয়ালা। বিমল যতদিন তাকে ভোগ করতে থাকবে, ততদিন মহিমাও বাধ্য থাকবে বিমলের ভোগ্যা হতে। আর তারা সকলেই তার যোগা ইনস্টিটিউটের নিচের তলার এ ঘরটাতেই তাকে ভোগ করে থাকে। তবে ইনস্টিটিউটটাকে সে তার দেহ ব্যবসার কাজে কখনোই ব্যবহার করেনি। সেটাকে সে কোনভাবেই কলুষিত করে তোলেনি।
 

মহিমা ঘরের ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করবার সাথে সাথে বিমল পেছন থেকে মহিমাকে জাপটে ধরে বলল, “কতক্ষণ ধরে আমাকে একা বসিয়ে রেখেছ সে কথা ভুলেই গেছ নাকি ডার্লিং”?

মহিমা বিমলের হাত থেকে নিজেকে ছাড়াবার চেষ্টা করতে করতে বলল, “সরি ডার্লিং। সত্যি বেশ দেরী করে ফেলেছি আমি। তবে ডোন্ট ওরি। তুমি আজ আমাকে একটা স্পেশাল হীরে এনে দিয়েছ। আমিও তোমাকে স্পেশাল ট্রিট দেব আজ। কিন্তু আমাকে কাঁধের ব্যাগটা তো রাখতে দাও”।

বিমল মহিমাকে জড়িয়ে ধরেই টেবিলের দিকে ঠেলতে ঠেলতে বলল, “তোমার যা খুশী কর। কিন্তু আমি আর তোমাকে একটা মূহুর্তও ছেড়ে থাকতে পারছি না ডার্লিং। কী সাংঘাতিক একটা ফিল্ম দেখিয়েছ আজ। শালা তিনবার হাত মেরেও লণ্ডটাকে আর শান্ত করতে পাচ্ছি না। তাড়াতাড়ি বার্থ ডে স্যুটটা পড়ে নাও তো ডার্লিং” বলতে বলতে মহিমার বড় বড় স্তনভার দুটিকে কামিজের ওপর দিয়েই দু’হাতে খাবলাতে খাবলাতে নিজের উত্থিত পুরুষাঙ্গটাকে মহিমার পাছার খাঁজে চেপে চেপে ধরতে লাগল।

মহিমা আর কোন কথা না বলে খানিকটা ধস্তাধস্তি করেই একে একে নিজের শালোয়ার কামিজ ব্রা প্যান্টি সব খুলে ফেলে পুরোপুরি নগ্না হয়ে বিমলের ভারী দেহটাকে ঠেলতে ঠেলতে বিছানার কাছে গিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে নিজের দু’পা ফাঁক করে দু’হাতে নিজের যৌনাঙ্গের পাপড়ি দুটো দু’দিকে টেনে মেলে ধরে বলল, “আয় শালা মারোয়ারীর বাচ্চা। চাট আমার চুত। ভিজিয়ে ওঠা তাড়াতাড়ি। তারপর ঢুকিয়ে দে তোর লণ্ড। কত চুদতে পারিস দেখি”।

**************
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply
#64
(Update No. 84)

রতীশ মহিমার ওখান থেকে বেরিয়ে এসে হাতঘড়িতে দেখে দুপুর বারোটা চল্লিশ। সামনের দিকে হাঁটতে হাঁটতে সে পকেট থেকে মোবাইল বের করে রচনাকে ফোন করল। দু’বার ফোনে রিং হতেই রচনার সাড়া পাওয়া গেল, “কি গো, কি খবর তোমার? কী হল? কেমন দেখলে”?

রতীশ রাস্তার একপাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে জবাব দিল, “হ্যা রচু, সব ঠিক আছে। আমি এই মাত্র সেখান থেকে বেরোলাম। এখন মেট্রো ধরব। বাড়ি গিয়ে সব কথা বলব। তবে এখান থেকে গিয়ে পৌঁছতে পৌঁছতে কতটা সময় লাগবে তা তো সঠিক জানিনা। বেলা দুটো নাগাদ পৌঁছতে না পারলে তুমি খেয়ে নিও”।

রচনা বলল, “বাবা, এত দুর নাকি? দেড় ঘন্টা লেগে যাবে ফিরতে? রোজ তোমাকে এতদুর অব্দি যেতে হবে সোনা”?
 

রতীশ বলল, “সোনা এখন আর কিছু জিজ্ঞেস করো না। রাস্তায় হাঁটছি এখন। বাড়ি ফিরে সব কথা খুলে বলব তোমায়, কেমন? আমার দেরী হলে তুমি কিন্তু না খেয়ে বসে থেক না সোনা”।
 

রতীশ বাড়িতে এসে পৌঁছল দুপুর দুটোর পর। ঘরে ঢুকেই রচনাকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করল, “তুমি বুঝি এখনও খাওনি, তাই না সোনা”?

রচনা স্বামীর বুকে মুখ ঘসতে ঘসতে বলল, “তোমাকে না খাইয়ে আমি কখনও খেয়েছি বল তো? যে আজ খাবো? তাছাড়া তেমন ক্ষিদেও তো পায় নি আমার। এবার তুমি এসে গেছ, দু’জন একসাথেই খেতে বসব”।

বেডরুমে ঢুকে রচনা স্বামীর শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে জিজ্ঞেস করল, “বাইরে আজ খুব গরম, তাই না গো? গেঞ্জীটা তো একেবারে ভিজে গেছে” বলে রতীশের ঘামে ভেজা গেঞ্জীর ওপর দিয়েই তার বুকে নাক ঘসতে লাগল। রতীশ জানে রচনা তার অল্প অল্প ঘামে ভেজা শরীরের ঘ্রাণ নিতে ভালবাসে। আজ তার মনটাও ভাল লাগছে। তাই রচনাকে বাঁধা না দিয়ে নিজের গা থেকে আধ খোলা শার্টটা খুলে চেয়ারের ওপর ছুঁড়ে দিল। তারপর নিজের পড়নের প্যান্টটাও খুলে চেয়ারের ওপর রাখল। রচনা রতীশের বুকে মুখ ঘসতে ঘসতে একহাত নিচে নামিয়ে জাঙ্গিয়ার ওপর দিয়েই রতীশের পুরুষাঙ্গটাকে আলতো করে ধরে বলল, “ইশ, জাঙ্গিয়াটাও দেখি ঘামে ভিজে একেবারে শপশপে হয়ে গেছে। চল, বাথরুমে চল। ঘাম গুলো মুছে ফেলা দরকার। নইলে গায়ে বসে যাবে, এসো” বলে রতীশকে ছেড়ে দিয়ে আলমারি খুলে ধোয়া গেঞ্জী আর পাজামা বের করে বিছানার ওপর রেখে দিয়ে রতীশকে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে পড়ল। ঘরে আর তৃতীয় প্রাণী বলতে কেউ নেই। তাই বাথরুমের দরজা বন্ধ করবার প্রয়োজন ছিল না। রতীশ নিজের গেঞ্জী জাঙ্গিয়া খুলে বাথরুমের এক কোনায় ছুঁড়ে ফেলে দিল। তারপর বেসিনের কল খুলে মুখে চোখে জল ছেটাতে লাগল। রচনা নিজের শরীর বাঁচিয়ে রতীশের কাঁধে পিঠে নাক ঘসতে ঘসতে পেছন থেকেই রতীশের নগ্ন পুরুষাঙ্গটাকে ধরে আদর করতে লাগল।
 

রতীশ ভাল করে মুখ ধুয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল, “ওটাকে রাগিয়ে দিও না সোনা। আমার যা ক্ষিদে পেয়েছে তার চেয়ে ও ব্যাটা অনেক বেশী ক্ষুধার্ত। সাত আট দিন ধরে উপোষ চলছে ওর, তা তো জানই”।
 

রচনা ভালবাসা মাখা গলায় বলল, “এখানে আসবার পর আজ প্রথম তোমাকে খুব রিলাক্সড মনে হচ্ছে সোনা। তাই একটু আদর করতে ইচ্ছে করছে। একটুখানি সুযোগ দাও আমাকে” বলে হাঁটু ভাজ করে বসে রতীশের তলপেটের নিচে আবার নিজের নাক চেপে ধরল। রতীশের পুরুষাঙ্গটা ফুলে ফুলে উঠতে শুরু করল। সে রচনার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলল, “আর কোর না সোনা আমার। আমার ওটা কিন্তু এবার ক্ষেপে উঠছে। আর ক্ষেপে উঠলে এটাকে শান্ত করতে কী করতে হবে, তা তো জানই”।
 

রচনা অনিচ্ছা সত্বেও দাঁড়িয়ে বলল, “না না, আগে তুমি খেয়ে নাও। সেই সকাল আটটা নাগাদ দুটো রুটি খেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলে তুমি। তোমার নিশ্চয়ই ক্ষিদে পেয়েছে খুব” বলতে বলতে একটা টাওয়েল ভিজিয়ে রতীশের পা থেকে গলা পর্যন্ত ভাল করে মুছিয়ে দিতে দিতে ফিসফিস করে বলল, “তোমাকে কত দিন পর নিশ্চিন্ত দেখাচ্ছে আজ সোনা। খুব আদর করতে ইচ্ছে করছে এখন আমার”।

রতীশ রচনার বুকে হাত বোলাতে বোলাতে বলল, “আমারও খুব করতে ইচ্ছে করছে। একবারটি করে নিই এস না”।

রচনা একটু অবাক হয়ে বলল, “কি করতে ইচ্ছে করছে তোমার সোনা? ক্ষিদে পায়নি না কি”?

রতীশ রচনার একটা স্তন শাড়ি ব্লাউজের ওপর দিয়েই চেপে ধরে বলল, “কি করতে ইচ্ছে করছে, সেটা এখনও বোঝ নি? তোমাকে করতে ইচ্ছে করছে”।

রচনা লজ্জা পেয়ে বলল, “ধ্যাত দুষ্টু কোথাকার। খালি আজে বাজে কথা না? তুমি না দিনে দিনে ...”

রচনার কথা শেষ হবার আগেই বেডরুমের ভেতর রতীশের মোবাইলটা বেজে উঠল। রচনা তা শুনে বলল, “নাও অনেক করাকরি হয়েছে। দেখ গিয়ে, নিশ্চয়ই তোমার মন্তি ফোন করেছে”।
 

রতীশ দু’হাতে রচনার দুটো স্তন টিপতে টিপতে বলল, “করুক গে। এখন আর ফোন ধরতে হবে না। পরে দেখব’খন। এই সোনা, এসোনা একটু করি। আমার সত্যি খুব ইচ্ছে করছে গো”।
 

রচনা রতীশের গা মোছাতে মোছাতে জিজ্ঞেস করল, “আগে খেয়ে নিলে ভাল হত না সোনা”?

রতীশ রচনার বুকের ওপর থেকে শাড়ির আবরণ সরাতে সরাতে বলল, “একটু পরে খেলে এমন কী ক্ষতি হবে সোনা? কিন্ত এ মূহুর্তে তোমাকে খুব ভালবাসতে ইচ্ছে করছে আমার। কতদিন ধরে তোমাকে ভাল করে ভালবাসতে পাচ্ছিনা। ভেবে দেখ তো”?

রচনা তবু বাঁধা দেবার চেষ্টা করে বলল, “এই ভর দুপুরে না খেয়ে না দেয়ে ও’সব করতে চাইছ? আমার যে খুব লজ্জা করছে গো”।

রতীশ বলল, “বারে, আমি তো তোমার স্বামী, এতে লজ্জার কি আছে সোনা? ঘরে তো আর কেউ নেই। প্লীজ লক্ষ্মীটি, শুধু একবার করব। সত্যি বলছি”।

ফোনটা ততক্ষণে বেজে বেজে থেমে গেছে। রচনা ভেজা টাওয়েলটার সাথে রতীশের গেঞ্জী আর জাঙ্গিয়া জলে ভিজিয়ে দিয়ে স্বামীর হাত ধরে বেডরুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল, “এসো তাহলে। করে নাও একবার”।

রতীশ রচনাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে স্ত্রীর বুকের স্তনভার দুটিকে টিপতে টিপতে বেডরুমের ভেতর এসে ঢুকল। রচনা বিছানার দিকে এগিয়ে যেতেই রতীশ বাঁধা দিয়ে বলল, “না সোনা এখানে নয়। আমার গায়ের ঘাম বিছানার চাদরে লেগে গেলে তোমারই কষ্ট বাড়বে। বসবার ঘরে চল”।

রচনা থেমে রতীশের মুখের দিকে চেয়ে তার কঠিন হয়ে ওঠা পুরুষাঙ্গটাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে চাপতে চাপতে বলল, “দুষ্টু কোথাকার। বেশ চল” বলে স্বামীকে জড়িয়ে ধরেই সামনের ঘরের দিকে এগিয়ে চলল।

রতীশ জিজ্ঞেস করল, “কনডোম নিতে হবে তো। একটু দাঁড়াও”।

রচনা স্বামীর পুরুষাঙ্গে চাপ দিয়ে বলল, “লাগবে না। পরশু থেকে আমার সেফ পেরিওড চলছে। সে জন্যেই তো এখন করতে চাইছি সোনা। কনডোম ছাড়া করবার সময় তুমি যখন ভেতরে ফেল, তখন আমার খুব সুখ হয়। কনডোম লাগিয়ে যখন কর, তখন সুখ পেলেও, মনে হয় যে কিছু একটা বোধ হয় বাকি থেকে গেল”।

রতীশ রচনার বুকের ওপর থেকে শাড়ির আস্তরন সরিয়ে দিয়ে তার ব্লাউজ খোলার চেষ্টা করতেই রচনা মৃদু ধমক দিয়ে বলে উঠল, “আহ, কি করছ সোনা? ঘরের জানালাগুলো খোলা আছে। ওগুলো তো বন্ধ করতে দাও আগে”।

রতীশকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে রচনা তাড়াতাড়ি বসবার ঘরের জানালা দুটো বন্ধ করে দিল। তারপর ঝটপট নিজের শরীরের সমস্ত আবরণ খুলে ফেলে রতীশের মুখোমুখি হয়ে একটা পা সোফার ওপর তুলে দিয়ে নিজের যৌনাঙ্গটাকে অনেকখানি খুলে দিয়ে বলল, “একটুখানি আংলি করে ভিজিয়ে দাও না সোনা”।

এমন সময় ফোনটা আবার বেজে উঠল। রচনা বলল, “দিদিভাইয়ের সাথে একটু কথা বলে নাও না সোনা। নইলে সে আবার রেসপন্স না পেয়ে চিন্তা করবে”।

রতীশ রচনার পাউরুটির মত স্ফীত যৌনাঙ্গে হাত বোলাতে বোলাতে জিজ্ঞেস করল, “তোমাকে একবার না করে আমি আর কিছুই করব না এখন। মন্তিকে পরে ফোন করে বলে দেব। এই, একটু চুসতে দেবে না”?
 

রচনা বলল, “এখন আমরা খুব বেশী সময় নিয়ে খেলব না সোনা। শুধু তুমি চাইছ বলেই করতে দিচ্ছি এখন। তাড়াতাড়ি একবার করে খেতে চল। খাওয়ার পর তোমার যতক্ষন খুশী যেভাবে খুশী সেভাবে করো। আমি তো আর বাঁধা দেব না তোমাকে”?
 

রতীশ রচনার গুপ্ত সুরঙ্গের ভেতর কয়েকবার আঙুল চালনা করেই বলল, “হ্যা সোনা, আমার সোনামনির তো মুখে জল এসে গেছে”।

ফোনটা আবার বেজে বেজে থেমে গেল। রচনা রতীশের পায়ের কাছে বসে দু’হাতে স্বামীর পুরুষাঙ্গটাকে ধরে আদর করতে করতে বলল, “আমার সোনাখোকাটাকে একটু স্নান করিয়ে নিই। সোনাখোকাটা যা মোটা। একটু ভিজিয়ে না নিলে ঢোকাতে খুব কষ্ট হয়” বলে বড় করে হাঁ করে রতীশের পুরুষাঙ্গটাকে নিজের মুখের ভেতর ঢুকিয়ে নিয়ে চুসতে পাগল। কিন্তু রতীশের বিশাল লম্বা মোটা পুরুষাঙ্গটা রচনার মুখে বেশী ঢোকে না। মোটে তিন ভাগের একভাগই রচনা মুখে নিতে পারে। মাথার দিকের এক তৃতীয়াংশ মুখের লালায় জবজবে করে নিয়ে নিচের বাকি অংশটা জিভ দিয়ে চাটতে লাগল। একেবারে গোড়া পর্যন্ত আখাম্বা জিনিসটায় ভাল করে লালা মাখিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে ঝুঁকে রতীশের ঠোঁট নিজের মুখের মধ্যে নিয়ে একটু চুষে জিজ্ঞেস করল, “আগে আমি তোমার কোলে উঠে করব সোনা”?

রতীশ দু’হাতে রচনার স্তনদুটো ধরে নিজের দিকে টানতে টানতে বলল, “হু বুঝেছি। এসো”।

রচনা রতীশের গলা জড়িয়ে ধরে তার কোমরের দু’পাশে পা রেখে স্বামীর লোহার মত শক্ত হয়ে ওঠা পুরুষাঙ্গের ওপর নিজের যোনিদেশ চেপে ধরে স্বামীর ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধরল। কিছুক্ষণ ঠোঁট আর জিভ চুষে একহাতে রতীশের মাথাটাকে নিচের দিকে খানিকটা টেনে নামিয়ে অন্য হাতে নিজের একটা নিটোল স্তন স্বামীর হাঁ মুখের ভেতর ঢুকিয়ে দিতেই রতীশ চুকচুক করে সেটা চুষতে লাগল। স্ত্রীর অন্য স্তনটা একহাতে ধরে মোলায়েম ভাবে টিপতে শুরু করল রতীশ।

মিনিট খানেক স্বামীকে নিজের স্তন চুষতে দেবার পর রচনা একহাতে রতীশের গলা জড়িয়ে ধরে অন্যহাতে রতীশের পরুষাঙ্গটাকে হাতের মুঠোয় উঁচিয়ে ধরে নিজের কোমরটাকে খানিকটা ওপরে তুলে নিজের যোনিমুখে রতীশের পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগটুকু ঢুকিয়ে দিয়ে একটা হাল্কা শীৎকার ছেড়ে দু’হাতে রতীশের গলা জড়িয়ে ধরে নিজের শরীরের ভার ছেড়ে দিতেই তার মুখ দিয়ে বেশ জোরে ‘আআহ’ করে আয়েশের শব্দ বেরোল। রতীশ আর রচনা দু’জনে দু’জনকে জড়িয়ে ধরল। রচনা নিজের স্তনভার দুটিকে স্বামীর বুকে রগড়াতে রগড়াতে নিজের জিভটাকে ঠেলে রতীশের মুখের ভেতর ঢুকিয়ে দিল। রতীশও তার স্ত্রীর জিভ চুষতে চুষতে রচনার পিঠের ওপর থেকে একটা হাত সরিয়ে নিয়ে নিজের বুকে লেপ্টে থাকা একটা স্তন ধরে টিপতে লাগল।
 

কিছুক্ষণ বাদে রচনা নিজের নিতম্ব ওঠানামা করতে শুরু করতেই বেডরুমের ভেতরে রচনার মোবাইলটা বেজে উঠল। কিন্তু এবারে কেউ আর সেদিকে কান দিল না। চোখ বুজে নিজের শরীরে স্বামীর বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ছোঁয়া মন প্রাণ ভরে উপভোগ করতে করতে রচনা মনে মনে ভাবল, বিয়ের পর গত তিন বছরে শ্বশুর বাড়িতে থাকতে দিনের বেলায় এমন সহবাস করার সুযোগ কখনও পায়নি সে। কিন্তু অনেক গল্পের বইয়ে নায়িকাদের মুখের সংলাপে জেনেছে যে দিনের বেলায় সেক্স করার মজাই নাকি আলাদা। বিয়ের পর মধুচন্দ্রিমায় উটি গিয়ে রতীশ প্রথম তার সাথে হোটেলের বিছানায় দিনের বেলায় সেক্স করেছিল। রচনার সেদিন খুব ভাল লেগেছিল। রচনার মাঝে মধ্যে খুব ইচ্ছে হত দিনের বেলায় ও’সব করতে। কিন্তু শ্বশুর বাড়ির একান্নবর্তী পরিবারে এমন কিছু করা একেবারেই সম্ভব হয়ে ওঠেনি। যেদিন কলকাতা আসবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, রচনা তখন থেকেই উতলা হয়েছিল দিনের বেলায় বন্ধ ঘরের ভেতর স্বামীর সাথে সেক্স উপভোগ করবার জন্য। কলকাতা আসবার পর থেকেই রবিশঙ্করের ঝামেলায় তারা দু’জনেই মন খারাপ করেছিল। বিমর্ষ মনে সেক্সের কথা তাদের কারুর মাথাতেই আসেনি। আজ রতীশকে খুশী দেখে তার মনের ময়ুরীও যেন নেচে উঠেছে। আর মন ময়ুরীর নাচের সাথে তালে তাল মিলিয়ে তার গোটা শরীরটাই এখন তার স্বামীর কোলের ওপর নাচছে। কিন্তু শরীরের অসম্ভব উত্তেজনায় তার সে নাচ আর বেশীক্ষন চলল না। মিনিট দশেক যেতে না যেতেই তার চরমতৃপ্তি হয়ে যেতেই সে স্বামীর বুকের ওপর ঢলে পড়ল।

রতীশও সেটা বুঝতে পেরেই আর কোন কথা না বলে স্ত্রীর যৌনাঙ্গের ভেতর নিজের পুরুষাঙ্গটাকে চেপে রেখেই রচনাকে দু’হাতে তুলে ধরে উঠে দাঁড়াল। রচনাও দু’হাতে স্বামীর গলা জড়িয়ে ধরে বলল, “সোনা, বেশীক্ষণ করতে পারলুম না গো। আমার বেরিয়ে গেছে। এবার তুমি নিজের সুখ নাও”।

রতীশ সোফার ওপর রচনাকে চিৎ করে ফেলে তার ওপর উঠে সনাতনী ভঙ্গীতে কোমর সঞ্চালন করতে শুরু করল। কুড়ি মিনিট স্তম্ভন করবার পর রতীশ নিজের শরীরের ভেতরের গরম বীর্যধারা স্ত্রীর যোনি গহ্বরে ঢেলে দিয়ে রচনার বুকের ওপর পড়ে হাঁপাতে লাগল। রচনাও আরো একবার রাগরস মোচন করে পরিপূর্ন ভাবে তৃপ্ত হয়ে স্বামীর ভারী শরীরটাকে নিজের ওপর চেপে ধরে রতীশের কাঁধে পিঠে নিতম্বে হাত বোলাতে বোলাতে বলল, “দিনের বেলায় প্রথম নিজেদের ঘরে করে খুব সুখ পেলাম গো সোনা। থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ। তোমার ভাল লেগেছে সোনা”?

রতীশ রচনার বুকে মুখ রেখে হাঁপাতে হাপাতেই জবাব দিল, “আমারও খুব ভাল লেগেছে সোনা। গত আট ন’দিনে তো সেক্সের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। এখন করে সত্যিই খুব সুখ পেলাম। দিনের বেলায় করতে সত্যি একটা অন্য ধরণের মজা পাওয়া যায়। তোমার মনে আছে সোনা? হানিমুনে গিয়ে উটির হোটেলে প্রথম তোমাকে দিনের আলোয় করেছিলাম”।

রচনা তৃপ্তি ভরা গলায় বলল, “সে দিনের কথাটা আমিও এখন মনে মনে ভাবছিলাম। উটিতে তুমি যখন করেছিলে তখন তো আমি এ’সব ব্যাপারে নতুন ছিলুম। তাই মন খুলে উপভোগ করতে পারিনি। কিন্তু পরে চেন্নাই আর ব্যাঙ্গালোরেও তো বেশ কয়েকবার করেছিলে দিনের বেলায়। তখন আমারও খুব ভাল লেগেছিল। কিন্তু গত তিন বছরে এমনভাবে দিনের বেলায় সেক্স করবার সুযোগ পাই নি। আজ তোমার সাথে করে একেবারে মন ভরে গেছে। তার ওপর সেফ পেরিওড চলছে বলে সবটাই ভেতরে পড়েছে বলে আরও ভাল লাগছে। ছেড়ে উঠতেই ইচ্ছে করছে না এখন”।

রতীশ রচনার একটা স্তনে হালকা করে কামড় দিয়ে বলল, “উঠতে হবে না। থাক এভাবেই। আরেকবার করব”।

রচনা রতীশের মাথায় চুমু খেয়ে বলল, “না সোনা, এখন আর নয় প্লীজ। এবার ওঠো। আগে খেয়ে নাও। তারপর তোমার ইচ্ছে হলে আবার করো। আমি তখন আর বারণ করব না। কিন্তু এখন আমায় উঠতে দাও লক্ষ্মী সোনা আমার”।

রতীশ রচনার ঠোঁটে চুমু খেয়ে তার শরীরের ওপর থেকে উঠে দাঁড়াল। রচনাও উঠে রতীশকে একটা চুমু খেয়ে বলল, “সোনা, তুমি দেখ তো কে ফোন করেছিল। একটু কলব্যাক করে কথা বলে নাও। আমি বাথরুম সেরে খাবার রেডি করি গিয়ে” বলে নিজের যৌনাঙ্গ বাম হাতে চেপে ধরে ডান হাতে শাড়ি ব্লাউজ ব্রা তুলে বাথরুমে ঢুকে পড়ল।
 

বাথরুমে পরিষ্কার হয়ে পোশাক পড়তে পড়তেই বুঝতে পারল রতীশ সীমন্তিনীর সাথেই কথা বলছে। বাথরুম থেকে বের হয়ে এসে রতীশকে বলতে শুনল, “ঠিক আছে রে মন্তি। তুইও এখন কাজে ব্যস্ত আছিস আর রচুও থালায় ভাত বেড়ে অপেক্ষা করছে। আমারও প্রচণ্ড ক্ষিদে পেয়েছে। তাই এখন আর কথা বলছি না। তোকে ছ’টা নাগাদ ফোন করে সব কথা খুলে বলব” বলে ফোন কেটে দিল।
 

*****************

রচনা সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালিয়ে ঠাকুর প্রণাম করে ঠাকুর ঘর থেকে বেরিয়ে বেডরুম পেরিয়ে ড্রয়িং রুমে ঢুকতেই তার মোবাইলটা বেজে উঠল। রচনা এখন ফোন ধরে কথা বলতে পারবে না ভেবে রতীশই কলটা রিসিভ করে বলল, “হ্যা মন্তি, বল। ঘরে কখন এসেছিস”?

সীমন্তিনী ও’পাশ থেকে বলল, “হ্যারে দাদাভাই, আধঘন্টা আগে এসেছি। তা রচু কোথায়? তুই ফোনটা ধরলি যে”?

রতীশ বলল, “ও ঘরে সন্ধ্যা প্রদীপ দেখাচ্ছে রে। তাই ফোনটা আমি ধরলাম। আচ্ছা কেমন আছিস বল তো তুই”?

সীমন্তিনী একটু অবাক হয়ে বলল, “কেনরে দাদাভাই? আমি তো ঠিকই আছি। এ কথা জিজ্ঞেস করছিস কেন”?
 

রতীশ বলল, “এমনি জিজ্ঞেস করছি রে। দুপুরবেলা রচুর ফোনে আমার ফোনে কয়েকবার কল করেও আমাদের সাথে কথা বলতে পারিস নি বলে রাগ করিস নি তো”?

সীমন্তিনী বলল, “দাদাভাই তুই কী রে? তোদের সাথে কথা হয়নি বলে আমি রাগ করব? তবে হ্যারে, একটু চিন্তা যে হচ্ছিল না তা নয়। নেটওয়ার্কের সমস্যা যে হয়নি সেটা তো ভালই বুঝতে পেরেছিলাম। তোরা কেউ ফোন না ধরতে মনে দুশ্চিন্তা হয়েছিল যে তোদের কারো কিছু হয়েছে কি না। তবে তুই ফোন করার পর চিন্তাটা দুর হয়ে গিয়েছিল। আচ্ছা দাদাভাই, ওই বিমল আগরওয়ালার বন্ধুর যোগা সেন্টারে গিয়েছিলিস তুই”?
 

রতীশ জবাব দিল, “হ্যারে মন্তি গিয়েছিলুম। কিন্তু বিমলজীর ওই বন্ধু একজন মহিলা। দেখে মনে হয়েছিল পঁয়ত্রিশ ছত্রিশ বছর বয়সী হবেন। কিন্তু উনি নিজেই বললেন তার বয়স সাতচল্লিশ। স্বাস্থ্য দেখেই বোঝা যায় যে যোগাচর্চা করেন। একজন পাঞ্জাবী মহিলা। নাম মহিমা মালহোত্রা সেন। আর তার ইনস্টিটিউটের নাম হচ্ছে মালহোত্রা সেন যোগা ইনস্টিটিউট। ভদ্রমহিলা খুবই অমায়িক ব্যবহার করলেন আমার সাথে। তিনি নিজে আমাকে তাদের গোটা কমপ্লেক্সটা ঘুরে ফিরে দেখালেন। খুব সুন্দরভাবে সেট আপ করেছেন। দেখে বেশ ভাল লেগেছে আমার। আর আমার ইন্টারভিউ নিয়ে এবং আমার সার্টিফিকেট গুলো দেখে খুব খুশী হয়েছেন। তিনি তো সরাসরি আমাকে কাল থেকেই কাজে যোগ দিতে বলছিলেন। কিন্তু আমি দু’ তিন দিন সময় চেয়ে নিয়েছি। রচুর সাথে আর তোর সাথে কথা না বলে আমি মত দিতে চাইনি”।

সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “সবকিছু দেখে শুনে কী মনে হল তোর? ওখানে কোন ধরণের অনৈতিক কাজকর্ম হয় বলে তোর মনে হয়েছে”?

ততক্ষণে রচনাও এসে রতীশের পাশে বসেছে। রতীশ একহাতে রচনাকে কাছে টেনে নিয়ে মহিমার ইনস্টিটিউটে যা যা দেখেছে, যা যা কথা হয়েছে, সে সব কিছু খুলে বলল। সব শুনে সীমন্তিনী বলল, “বাব্বা, তোর সব কথা শুনে তো মনে হচ্ছে ওই ভদ্রমহিলা বুঝি তোর প্রেমে পড়ে গেছে রে দাদাভাই”।

রতীশ লাজুক স্বরে মৃদু ধমক দিয়ে বলল, “ধ্যাত, অমন আজেবাজে কথা বলিসনে তো মন্তি। উনি আমার থেকে প্রায় ঊণিশ বছরের বড়। হ্যা, তাকে দেখে অত বয়স্কা বলে মনে না হলেও আমাদের মেজ মাসির মত বয়সী তিনি। তাকে নিয়ে এভাবে ঠাট্টা করিস না”।
 

সীমন্তিনী ঠাট্টা করে বলল, “হ্যা মেজমাসিও ও’রকম বয়সেরই হবেন। কিন্তু এই মহিমা মালহোত্রা তো তোকে দেবর বানিয়ে নিয়েছেন। আর তুইও তো তাকে বৌদি বলে ডেকেছিস। দেবর বৌদির মধ্যে কিন্তু বড় বড় শহরে অনেক কিছুই হয়। আমার রচু সোনার কপালটা পুড়িস না দাদাভাই”।
 

রতীশ এবার একটু বিরক্ত হয়ে বলল, “তুই থামবি? কোথায় ভাবছি তুই সব শুনে আমাকে পরামর্শ দিবি, তা নয়, তুই মহিমা বৌদিকে নিয়ে ঠাট্টা করতে শুরু করলি”।

______________________________
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply
#65
(Update No. 85)

সীমন্তিনী হেসে বলল, “আচ্ছা আচ্ছা দাদাভাই। আর ঠাট্টা করছি না। কিন্তু রচু এসব শুনে কী বলল বল তো”?

রতীশ জবাব দিল, “রচুকে তো আমি কিছুই বলিনি এখনও। এখন তোকে যা বলছি, ও সেটুকুই শুনছে পাশে বসে। তাই ওর সাথে পরামর্শ করা হয়নি এখনও রে”।
 

সীমন্তিনী একটু অবাক হয়ে বলল, “সেকি রে দাদাভাই? তুই তো বেলা দুটোর একটু আগেই ঘরে ফিরে এসেছিস। এই ঘন্টাচারেকের মধ্যেও ওকে কিছু বলিস নি? তোরা কি বিকেলে বাইরে কোথাও গিয়েছিলিস নাকি”?

রতীশ বলল, “নারে মন্তি। বাইরে কোথাও যাই নি। আসলে এ ক’টা দিন তো মনটা ভাল ছিল না। আজ মহিমা বৌদির ওখান থেকে আসবার পর মনটা খুব ভাল লাগছিল। তাই দুপুরে খাবার পরে বিছানায় শুয়ে গড়াগড়ি করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তাই রচুর সাথে আর এসব নিয়ে আলোচনা করতে পারিনি। কিন্তু সব শুনে তোর কেমন মনে হচ্ছে বল তো মন্তি? মহিমা বৌদির ওখানে কাজে যোগ দেব”?

সীমন্তিনী বলল, “দাদাভাই, তোর মুখে যতটুকু শুনলুম, তাতে তো মনে হয় তোর মহিমা বৌদি মানুষ হিসেবে মন্দ হবে না। তবু বলছি, উনি যদি তোকে কথা দেয় যে যোগা ট্রেনিং দেওয়া ছাড়া তোকে আর সেখানে অন্য কিছু করতে হবে না, তাহলে তুই কাজটা একসেপ্ট করে নিতে পারিস। কিন্তু চোখ কান খোলা রাখবি। আর তোর মহিমা বৌদিকে পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দিবি যে তুই কোনরকম মেয়াদী চুক্তি করবি না। আর নিজের ইচ্ছে মত তুই যে কোনদিন যে কোন সময় তার ওখানে কাজ করা ছেড়ে দিতে পারবি। উনি এমনটা বলতে পারেন যে তুই একবছর বা দু’বছরের ভেতর তার কাজ ছাড়তে পারবি না। আর ওই সময়ের মধ্যে কাজ ছেড়ে দিতে চাইলে তোকে কোন রকম ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এমন কোন শর্তে তুই রাজি হবি না কিন্তু। আর আরেকটা কথাও পরিস্কার করে বলে দিবি যে তুই ইনস্টিটিউটের বাইরে গিয়ে কাউকে কখনও যোগা ট্রেণিং দিবি না। এসব শর্ত মেনে নিয়ে ভদ্রমহিলা যদি তোকে কাজে নিতে চান, তাহলে ঢুকে পড় সেখানে। কিন্তু সব সময় এলার্ট থাকবি। তোর যদি কখনও কিছু দেখে বা শুনে মনে কোন সন্দেহ জাগে, তাহলে সেটা নিয়ে রচুর সাথে আলোচনা করবি। আর সাথে সাথে আমাকেও সবটা জানাবি। প্রয়োজন হলে কাজ ছেড়ে দিবি তখনই”।

রতীশ বলল, “ঠিক আছে, তাকে এভাবেই বলে দেব তাহলে”।

সীমন্তিনী বলল, “আচ্ছা দাদাভাই, এবার একটু রচুকে ফোনটা দে তো”।

রচনা মোবাইলের স্পীকার আগে থেকেই অন করে দিয়ে সীমন্তিনীর কথা শুনে যাচ্ছিল। এবার সে মুখটাকে মোবাইলের আরো একটু কাছে নিয়ে গিয়ে বলল, “হ্যা দিদিভাই, বল”।

সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা রচু, তোর জামাইবাবুর নামটা কি ছিলরে”?
 

রচনা একটু অবাক হয়ে বলল, “আমার জামাইবাবুর নাম? মানে দিদির বরের নাম জেনে তুমি কী করবে দিদিভাই”?

সীমন্তিনী বলল, “আমি কী করব সেটা তোকে ভাবতে বলেছি আমি? তুই শুধু তার নামটা বল তো”।
 

রচনা বলল, “জামাইবাবুর নাম ছিল বাদল আচার্যি”।

সীমন্তিনী আবার জিজ্ঞেস করল, “তোর মুখে তো শুনেছিলুম যে কালচিনির পাশেই একটা ছোট গ্রামে তোর দিদির শ্বশুর বাড়ি ছিল, তাই না”?
 

রচনা এবারেও কিছু বুঝতে না পেরে বলল, “হ্যা, তাই। কিন্তু তুমি এসব জানতে চাইছ কেন ? ও দিদিভাই আমার দিদির কি কিছু হয়েছে? তোমার এ’সব প্রশ্ন শুনে তো আমার বুক কাঁপছে গো”।
 

সীমন্তিনী বলল, “আরে নারে পাগলী মেয়ে সেসব কিছু নয়। আসলে সেদিন কালচিনি থানার ওসির সাথে আলাপ হল। কথায় কথায় জানতে পারলাম যে তাদের থানা থেকে নাকি অর্চনা আচার্যির একটা পুলিশ ভেরিফিকেশন চেয়ে পাঠিয়েছে শিক্ষা দপ্তর। তোর দিদির নাম যে অর্চনা সেটা তো আমি আগে থেকেই জানতুম। কিন্তু টাইটেলটা নিয়ে নিশ্চিত ছিলুম না। তাই তোকে জিজ্ঞেস করছি”।
 

রচনা এবার আরো ঘাবড়ে গিয়ে বলল, “দিদির নামে পুলিশ ভেরিফিকেশনের দরকার পড়ল কেন ? দিদি কী করেছে? আমার দিদি কখনও খারাপ কোন কাজ করতে পারে না। ও দিদিভাই, বলনা গো কী হয়েছে”?

সীমন্তিনী বলল, “আহ, এ পাগলিটাকে নিয়ে আর পারা যাচ্ছে না। আরে বাবা এ তো সামান্য একটা পুলিশ ভেরিফিকেশন হচ্ছে। তোর দিদিকে কেউ থানার লকআপে পুরতে যাচ্ছে না। তোর জামাইবাবু তো কলেজ টিচার ছিল। সরকারি কলেজের টিচার ছিল। তাই তার মৃত্যুর পর প্রভিডেন্ট, পেনশন যা কিছু সরকারের কাছ থেকে পাবার কথা সেসব তো তোর দিদিই পাবে। কিন্তু তোর জামাইবাবু জীবিত থাকতে বোধহয় তোর দিদিকেই নমিনি করে গিয়েছিল। তাই শিক্ষা দপ্তর নিশ্চিত হতে চাইছে যে তোর দিদিই বাদল আচার্যির বৈধ স্ত্রী কি না। তাই এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতেই তারা পুলিশ ভেরিফিকেশন চেয়ে পাঠিয়েছে। এটা এমন কিছু চিন্তার ব্যাপার নয়, বুঝেছিস”?

রচনা অনেকটা শান্ত গলায় বলল, “ও তাই বল। আমি তো ভাবছিলুম কি না কি। তার মানে জামাইবাবুর প্রভিডেন্ট, পেনশনের টাকা পয়সা সব দিদি পেতে চলেছে”?
 

সীমন্তিনী বলল, “হবার কথা তো সেটাই। সরকারি আইন হিসেবে তোর দিদিই সেসব পাবে। কিন্তু বাস্তবে তেমনটা হচ্ছে না। কাগজে কলমে সেটাই দেখানো হলেও ওই ওসি সাহেবের মুখে যা শুনলুম, তাতে মনে হচ্ছে তোর দিদি একটা পয়সাও পাবে না। সব কিছুই হাতিয়ে নেবে তার শ্বশুর ত্রিলোচন আচার্যি। আর আমার মনে হয় তোর জামাইবাবু মারা যাবার পর মেসোকে কখনও যে তোর দিদির সাথে দেখা করতে দেওয়া হত না, তার পেছনের একটা বড় কারন এটাই। আমি ওই ওসির কাছে যতটুকু শুনেছি, তাতে মনে হচ্ছে যে তোর দিদির শ্বশুর তোর দিদিকে দিয়ে কোন ধরণের অথোরাইজেশন অথবা পাওয়ার অফ এটর্নী লিখিয়ে নিয়েছে। আর সেটার ভিত্তিতেই ছেলের প্রভিডেন্ট পেনশন সহ আরো যা কিছু প্রাপ্য তা ত্রিলোচন আচার্যিই ক্লেইম করেছে সরকারের কাছে। কিন্তু সবটাই তোর দিদির প্রাপ্য”।

একটু থেমে সীমন্তিনী আবার বলল, “কালচিনি থানার ওসি আমার অনুরোধ মেনে তোর দিদিকে জিজ্ঞেস করেছিল যে শ্বশুর বাড়ির লোকেরা তাকে কোনভাবে কোন কিছুতে জোর করে সাইন করিয়ে নিয়েছিল কিনা। কিন্তু তোর দিদি নাকি বলেছে যে সে অনেক কাগজেই সই করেছে, কিন্তু শ্বশুর বাড়ির লোকেরা কোন রকম জোরাজুরি করেনি। কিন্তু আমার মত কালচিনি থানার ওসিও বুঝতে পেরেছে যে, তোর দিদি সত্যি কথা বলেনি। সে যদি সত্যি কথাটা পুলিশকে খুলে বলত তাহলে টাকাগুলো সে-ই পেত। কিন্তু সে নিজেই যদি না চায়, তাহলে পুলিশ আর কি করবে বল”?

রচনা ভারী গলায় বলল, “আমরা কেউই তো দিদির কোন খবর পাই না। বাবা কতবার দিদিকে একটুখানি চোখের দেখা দেখতে তার শ্বশুর বাড়ি গিয়েছেন। একবারও তিনি দিদির সাথে দেখা করতে পারেন নি। দিদির শ্বশুর শাশুড়ি প্রত্যেকবার বাবাকে নানা অ-কথা কূ-কথা বলে অপমান করে বাবাকে তাদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। আমিও তো কত বছর হয়ে গেছে দিদিকে দেখিনি। ও মরে গেলেও সে খবর বুঝি আমরা কেউ জানতেও পারব না” বলতে বলতে রচনা কেঁদে ফেলল।
 

সীমন্তিনী রচনাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল, “কাঁদিসনে রচু। কেঁদে কি কোন লাভ আছে বল? তোর দিদিকে দেখার সৌভাগ্য তো আমার হয়নি কখনও। কিন্তু তোদের বিয়ের আগেই তো তোদের সকলের মুখে তার কথা শুনেছি। তোদের দু’বোনের একটা ছবিও দেখিয়েছিলিস তুই আমাকে। মাঝে মাঝে আমার মনে হয়, একবার গিয়ে তোর দিদিকে দেখে আসি। আমি যদি কালচিনি থানায় পোস্টিং পেতাম তাহলে যে ভাবেই হোক তোর দিদিকে তার শ্বশুর বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে আসতুম। কিন্তু এখন আমি নিজে থেকে কিছু করতে গেলে সেটা কোনদিক থেকেই সমীচীন হবে না। কিন্তু মাঝে মাঝে তোর দিদিকে নিয়ে না ভেবেও পারিনা। তবে তোর দিদির সাথে যদি একটু ফোনেও কথা বলা যেত তাহলেও না হয় কিছু একটা ভেবে দেখতে পারতুম। কিন্তু সেটাও তো সম্ভব হচ্ছে না। তোর দিদির কোনও মোবাইলও নেই। তবু তুই ভাবিস না। আমি যতটুকু সম্ভব খবরাখবর রাখবার চেষ্টা করছি”।

রচনা নিজের চোখের জল মুছে বলল, “অনেক ভাগ্য করে তোমার মত একটা দিদি পেয়েছি। আজ সাত বছর বাদে কারুর মুখে দিদির কথা শুনতে পাচ্ছি। আচ্ছা ও দিদিভাই, ওই কালচিনি থানার ওসি ভদ্রলোক কি দিদির শ্বশুর বাড়ি গিয়েছিলেন? তিনি কি আমার দিদিকে দেখেছেন? আমার দিদি কেমন আছে, এ ব্যাপারে তোমাকে কিছু বলেছেন? বলনা গো দিদিভাই, আমার দিদি কেমন আছে”।
 

সীমন্তিনী জবাব দিল, “রচু রচু, সোনা বোন আমার। উতলা হোস না বোন। কিন্তু কালচিনি থানার ওসিকে আমি এ’সব ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করিনি রে। আসলে আমি তো শিওর ছিলুম না যে অর্চনা আচার্যিই তোর দিদি হবে। তবে আবার ওই ভদ্রলোকের সাথে যোগাযোগ হলে অবশ্যই জানতে চাইব”।
 

রচনা নিজেকে শান্ত করে বলল, “ও বুঝেছি। ইশ আমিও যদি আগে আমার জামাইবাবুর টাইটেলটা তোমাকে জানিয়ে দিতুম তাহলে তুমি অবশ্যই চেষ্টা করতে দিদির ব্যাপারে আরও কিছু খবর নিতে। তুমি আমার ভাই, মা বাবার জন্যে এতকিছু করছ। দিদির খবর নেবার সুযোগ পেলে সে সুযোগ তুমি নষ্ট করবে না জানি”।
 

সীমন্তিনী একটু ধমক দিয়ে বলল, “এই মেয়ে, তোর মা বাবা ভাই কি শুধু তোর একার? তারা আমার কেউ নয়? এমন কথা বললে কিন্তু আমি তোর সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দেব”।

রচনা জবাব দিল, “জানি গো দিদিভাই, জানি। কিন্তু যেটা সত্যি সেটা তো স্বীকার না করে এড়িয়ে যাবার উপায় নেই”।

সীমন্তিনী বলল, “খুব হয়েছে, আর আদিখ্যেতা করতে হবে না তোকে। রাখছি এখন”।

এ’কথা শুনেই রতীশ প্রায় সাথে সাথে বলে উঠল, “দাঁড়া দাঁড়া মন্তি। আমাকে আরেকটা কথা বল। শোন, বলছিলাম কি, তুই কি মহিমা বৌদির সাথে একটু কথা বলতে চাস? তাহলে আমি তাকে আগে থাকতেই বলে দেব”।

সীমন্তিনী জবাব দিল, “দাদাভাই, তুই তো গিয়ে সব ভালভাবেই দেখে এসেছিস। তাই আমার মনে হয় এখন তার সাথে আমার কথা না বললেও চলবে। তুই শুধু আমার কথাগুলো মনে রাখিস। আর তোর ওই মহিমা বৌদিকে সেভাবেই বলিস। আর শোন দাদাভাই, আমাকে দু’তিন দিনের জন্যে ডেপুটেশনে যেতে হবে। কালই এখান থেকে যেতে হবে। দার্জিলিং জেলার বর্ডারের কাছাকাছি এলাকায়। আর যেখানে আমার থাকবার ব্যবস্থা করা হয়েছে, সেখানে নাকি মোবাইল সিগন্যাল পাওয়া যায় না। তাই ফোনে হয়ত তোদের সাথে যোগাযোগ করতে পারব না। তোরাও ফোনে লাইন না পেলে ভাবিসনে। আমি এগারো তারিখে ফিরে এসেই তোদের ফোন করব”।

রতীশ সীমন্তিনীর কথার জবাব দেবার আগেই রতীশের মোবাইলটা বেজে উঠল। রতীশ দিদিভাইয়ের সাথে কথা বলছে দেখে রচনা রতীশের ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে মহিমা বৌদির ফোন। সে কলটা রিসিভ না করে ফোনটা রতীশের মুখের সামনে ধরতে রতীশ সীমন্তিনীকে বলল, “মন্তি, এখন ছাড়ছি রে। মহিমা বৌদি ফোন করেছেন আমার মোবাইলে। তোর সাথে পরে আবার কথা বলব’খন” বলে ফোন কেটে দিয়ে নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে কল রিসিভ করে তাড়াতাড়ি বলল, “সরি বৌদি। আমার বোনের সাথে আরেকটা ফোনে কথা বলছিলাম। তাই আপনার কলটা রিসিভ করতে একটু দেরী হল। কিছু মনে করবেন না”।

রচনা রতীশের গলা জড়িয়ে ধরে তার কানে ধরা মোবাইলের কাছে নিজের একটা কান পেতে রাখতেই রতীশ নিজেই ফোনের স্পীকার অন করে দিল। মহিমা তখন জিজ্ঞেস করছে, “তোমার আরো কোন ফোন আছে না কি? সেটার কথা তো বলোনি ভাই”।
 

রতীশ জবাব দিল, “না না বৌদি তা নয়। আমার একটাই ফোন। আমার বোন আমার স্ত্রীর ফোনে কলটা করেছিল। কিন্তু ও তখন ঘরে সন্ধ্যা প্রদীপ দিচ্ছিল বলে কলটা আমাকেই ধরতে হয়েছিল”।

মহিমা জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা রতীশ, আমি এ সময় ফোন করে তোমাকে ডিসটার্ব করছি না তো? তুমি ব্যস্ত থাকলে না হয় একটু পর কথা বলব”।

রতীশ বলল, “না না বৌদি। তেমন কিছু একেবারেই নয়। এখানে আমাদের ডিসটার্ব করবার মত আর কে আছে। তেমন কারুর সাথে তো জানাশোনাই হয়নি আমাদের এখনও। আমার বোন আর বাড়ির অনেকের সাথে ফোনে কথা বলেই সময় কাটাই বলতে গেলে। আপনি যা বলতে চাইছেন বলুন। কোনও অসুবিধে নেই”।
 

মহিমা একটু ইতস্ততঃ করে বলল, “ভাই, আজই মাত্র কয়েকঘন্টা আগে তোমার সাথে কথা হয়েছে। আর তুমি দুটো দিন ভেবে দেখতে সময় চেয়ে নিয়েছিলে আমার কাছ থেকে। তাই এখনই তোমাকে ফোন করাটা বুঝি একেবারেই উচিৎ হয়নি আমার”।

রতীশ জবাব দিল, “আপনি এমন ভাবে কেন বলছেন বৌদি? যা বলতে চান, বলুন না”।

মহিমা বলল, “ভাই, বলছিলাম কি, তুমি কি রচনার সাথে আলোচনা করেছিলে ব্যাপারটা নিয়ে”?

রতীশ জবাব দিল, “না বৌদি, সেটা এখনও করে উঠতে পারিনি। আসলে বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায় দুটো বেজে গিয়েছিল। স্নান করে খেয়েদেয়ে বিছানায় শুয়ে থাকতে থাকতে একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলুম। তাই সেটা করা হয়নি। রাতে আলোচনা করব”।
 

মহিমা উৎসুক ভাবে জিজ্ঞেস করল, “তাহলে কাল সকালেই তোমার মতামতটা জানতে পারব বলছো”?

রতীশ একটু আমতা আমতা করে জবাব দিল, “হ্যা বৌদি, মানে কাল না জানাতে পারলেও পরশু দিনের মধ্যেই আপনাকে জানিয়ে দেব। আসলে আমি তো একটা অন্য উদ্দেশ্য নিয়ে কোলকাতা এসেছিলুম। ভাগ্য সহায় না হওয়াতে সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছি। তাই মা, বাবা আর কাকুদের সাথে কথা বলে তাদের সবটা জানাতে হবে। তাই দুটো দিন সময় তো লাগবেই বৌদি”।
 

মহিমা এবার খানিকটা স্তিমিত স্বরে বলল, “ও আচ্ছা, ঠিক আছে। কিন্তু আমাকে নিরাশ করো না ভাই। আমি কিন্তু খুব আশা নিয়ে তোমার মুখ থেকে পজিটিভ রেসপন্স পাবার অপেক্ষা করছি। আমি তো তোমাকে সব রকম ভাবে কনসিডার করব বলে কথা দিয়েছি। তুমি চাইলে, তোমাকে আরও কিছু বেশী সুযোগ দেবার চেষ্টা করব। তুমি শুধু মুখ ফুটে আমাকে বল, তুমি কি চাও”।

রতীশ জবাবে বলল, “বৌদি আপনি আমাকে এভাবে লজ্জা দেবেন না প্লীজ। আপনি তো আগেই আমাকে অন্যান্যদের চাইতে অনেক বেশী সুযোগ সুবিধে দিতে রাজি হয়ে গেছেন। যে না চাইতেই সব কিছু দেবার জন্যে হাত বাড়িয়ে বসে থাকে, তার কাছে মুখ ফুটে আর কিছু কি চাওয়া যায় বৌদি। আপনি ও’সব নিয়ে ভাববেন না। আসলে বৌদি আমি এমন এক পরিবারের ছেলে যে এ পরিবারের পূর্ব পুরুষেরা কেউ তেমন মহাপুরুষ না হলেও, কেউ সমাজের বা দশের কোন ক্ষতি কখনও করেনি। শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতে তারা কখনও অন্য পরিবারের বা সমাজের কোন ক্ষতি করেনি। নিজেদের জীবিকার্জন করতে তারা আরও দশটা লোকের উপকারই করে গেছেন চিরকাল। তাই আমি যা কিছুই করি বা করতে চাই না কেন, তাতে আমার মা বাবা ও অন্যান্য গুরুজনদের সায় না থাকলে করা একেবারেই সম্ভব নয়। তাই দুটো দিন সময় চেয়ে নিয়েছি আপনার কাছ থেকে। আমিও নিজে পারতপক্ষে আপনাকে কোন নেতিবাচক উত্তর দিতে চাই না”।

মহিমা রতীশের কথা শুনে বেশ কিছু সময় চুপ করে থেকে বলল, “তোমার কথা শুনে খুব ভাল লাগল ভাই। আজকের যুগেও যে কোন ছেলের মধ্যে এমন চিন্তা ভাবনা থাকতে পারে, সেটা তোমাকে না দেখলে আমি কখনও বিশ্বাসই করতে পারতাম না। ধন্য তোমার পরিবার, আর ধন্য তোমার মা বাবা। যারা তোমাকে এমন শিক্ষা দিয়েছেন। তবে তোমার কথাটা শুনে আমি মোটামুটিভাবে আন্দাজ করতে পারছি, তোমার মনে কোন একটা সংশয় দানা বেঁধে আছে। আচ্ছা রতীশ, একটা কথা জিজ্ঞেস করব ভাই”?
 

রতীশ বলল, “হ্যা বৌদি বলুন না”।

মহিমা বলল, “আমরা যখন আমার চেম্বারে কথা বলছিলাম, তখন আমার কাছে একটা ফোন কল এসেছিল। মিঃ সরকারকে তখন ফোনে যা কিছু বলেছি, সেসব শুনেই কি তোমার মনে কোন সন্দেহ দানা বেঁধেছে”?

রতীশ একটু চমকে উঠে বলল, “না না বৌদি, তেমন কিছু নয়। আমার সঙ্গে তো আপনার কেবলমাত্র আজই পরিচয় হল। আর প্রত্যেকেরই একটা আলাদা আলাদা জগৎ থেকে থাকে। তাতে জানাশোনা আত্মীয় বন্ধু বান্ধব অনেকেই থেকে থাকে। চেনা পরিচিতরা তো আপনাকে ফোন করতেই পারে। তাছাড়া, ওই মিঃ সরকার কে, বা কী কারনে আপনাকে ফোন করেছিল, সেটা নিয়ে আমার মনে প্রশ্ন উঠবে কেন? না না, বৌদি সেসব কিছু নয়”।

মহিমা বলল, “আমি জানি রতীশ। মিঃ সরকারকে আমি ফোনে যেসব কথা বলেছি তা শুনে তুমি একটু চিন্তায় পড়ে গেছ। কিন্তু রতীশ, ওই মিঃ সরকার কিন্তু আমাদের যোগা ইনস্টিটিউটের ট্রেনী নন। তার সাথে আমার যোগা সেন্টারের কোনরকম যোগাযোগই নেই। সে আজ অব্দি কখনও আমাদের এই মালহোত্রা সেন যোগা ইনস্টিটিউটে আসেনি। আর তোমাকে তো আমি আগেই বলেছি, তুমি শুধু আমার এ ইনস্টিটিউটের কাজই করবে। ইনস্টিটিউটের বাইরে তোমাকে কখনও কোথাও কোন কাজে পাঠাব না আমি। তুমি আমার কাজে জয়েন করলে আমাদের ইনস্টিটিউটের স্ট্যাণ্ডার্ড উঁচু হবে, এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস। তাই মিঃ সরকারের সাথে আমার কী আলোচনা হয়েছে, এসব নিয়ে তুমি কিছু চিন্তা কোর না”।
 

রতীশ এবার বলল, “বৌদি ওসব নিয়ে আপনিও ভাববেন না। আমি বাড়ির লোকদের সাথে কথা না বলা পর্যন্ত সিদ্ধান্তটা নিতে পারছিনা বলেই দু’দিন সময় চেয়েছি। আমি আগামী পরশুর ভেতরেই আপনার সাথে যোগাযোগ করছি”।
 

মহিমা বলল, “ঠিক আছে রতীশ। তোমার জবাবটা জানবার জন্যে আমি ব্যগ্র হয়ে থাকব ভাই। ভাল থেকো। রচনাকে আমার ভালবাসা দিও। ছাড়ছি তাহলে”।
 

*************

রতীশ ফোন রেখে দিতে রচনা উঠে কিচেনে চলে গেল। কিছু পড়ে রতীশ কিচেনে উঁকি মেরে দেখল রচনা চা বানাচ্ছে। রতীশ ড্রয়িং রুমের ভেতর দিয়ে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়াল। রচনার সাথে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত সুন্দর সময় কাটাতে পেরে তার শরীর মন খুব ভাল লাগছিল। নিজের বিছানায় দিনের বেলায় রচনার মোহনীয় দেহের সূধা পান করে সে আজ খুবই তৃপ্তি পেয়েছে। খানিকক্ষণ বিশ্রাম নেবার পর আবার তার মনে একই ইচ্ছে জেগে উঠছে। কিন্তু কিচেনে স্টোভের সামনে কিছু করাটা রিস্কি। এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ পাশের ফ্ল্যাটে টিভির আওয়াজ শুনতে পেল। শুনে ভাবল, একটা টিভি কিনলে ভাল হত। রচনা বেচারি সারাটা দিন একা একা বাড়িতে সময় কাটায়। মহিমা বৌদির ইনস্টিটিউটে কাজে যোগ দিলে ভোর সাড়ে চারটেয় তাকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। ফিরতে ফিরতে সাড়ে এগারটা বারোটা বেজে যাবে রোজ। ঘরে একটা টিভি থাকলে রচনা সে সময় একটু টিভি দেখে সময় কাটাতে পারবে। আর সন্ধ্যের পর দু’এক ঘন্টা টিভি নিউজ শোনা তার নিজেরও একটা অভ্যাসের মত হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কলকাতা আসবার পর আর সেটা হয়ে উঠছে না। কটা দিন তো উৎকণ্ঠায় আর ঝামেলায় কেটে গেল। দুনিয়ার কোথায় কী হচ্ছে সে’সব কথাও তার মাথায় আসেনি। তবে রচনা পাশে থাকলে তার সময় এমনিতেই সুন্দর ভাবে কেটে যায়। কিন্তু রচনা যখন কিচেনে রান্নাবান্নার কাজ করে সে সময়টায় তার সময় যেন কাটতেই চায় না। রচনার ব্যস্ততার মধ্যেও সে মাঝে মাঝে কিচেনে ঢুকে রচনাকে নানাভাবে ডিসটার্ব করে। রচনা অবশ্য কখনোই সে সবের জন্য কিছু বলে নি। তবু ঘরে একটা টিভি থাকলে ওই সময়টুকু নিউজ শুনে রচনার কাজে ব্যাঘাত না ঘটিয়ে দেশের হালচাল জানতে পারা যেত।

চা জলখাবার বানিয়ে রচনা বসবার ঘরের টেবিলে সব কিছু এনে রতীশকে ডেকে বলল, “সোনা এস, চা জলখাবার এনেছি”।

রতীশ ড্রয়িং রুমে ঢুকে সোফায় বসতে দু’জন মিলে খেতে লাগল। খেতে খেতেই রতীশ বলল, “রচু, ভাবছি কাল একটা টিভি কিনে আনব। তোমার কী মত”?
 

রচনা বলল, “হ্যা, টিভি একটা তো কিনতেই হবে। কিন্তু সোনা এখনই কিনতে চাইছ? কোন একটা কাজ টাজ শুরু করে তার মাসখানেক পর কিনলে ভাল হত না? এখন কিনতে গেলে তো হাতে যেটুকু পয়সা আছে তার থেকেই কিনতে হবে। তাতে চাপ পড়ে যাবে না”?
 

রতীশ বলল, “একেবারে যে পড়বেনা তা নয়। হাতে তো প্রায় দেড় লাখের মতই আছে। টিভি আর ডিশ কিনতে কম করেও হাজার কুড়ি পঁচিশের মত খরচ তো পড়বেই”।

রচনা বলল, “তাহলে এখনই কেনার দরকার নেই সোনা। তবে তুমি যদি তোমার মহিমা বৌদির ওই সেন্টারে এ সপ্তাহেই জয়েন কর, তাহলে এ মাসের শেষে নাহয় টিভি কেনা যাবে। কিন্তু সোনা, দিদিভাই তো তার মত জানিয়েই দিয়েছেন। তা সত্বেও তুমি মহিমা বৌদিকে আরও দু’দিন বাদে মতামত জানাতে চাইছ কেন”?
 

রতীশ বলল, “আসলে রচু, মন্তিকে আমি সব কিছু খুলে বললেও একটা কথা তখন ওকে বলতে ভুলে গিয়েছিলুম। তখন সব কিছু বলতে বলতে এ কথাটা ঠিক মাথাতেই আসেনি। আসলে ওই ব্যাপারটার সাথে আমার কোন সম্পর্ক ছিল না বলেই হয়ত সেটা মনে হয়নি আমার। কিন্তু ব্যাপারটা নজরে আসবার পর থেকেই মনের ভেতর খচখচ করছিল। মহিমা বৌদি যখন ফোন করলেন, তখন আবার কথাটা মনে এসেছে”।
 

রচনা জিজ্ঞেস করল, “কী ব্যাপার, সেটা আমাকে বলবে না”?

______________________________
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply
#66
(Update No. 86)

রতীশ বলল, “তোমাকে বলব বলেই তো কথাটা ওঠালাম সোনা। শোনো। আমি যখন বৌদির চেম্বারে বসে তার সাথে কথা বলছিলাম, তখন তার মোবাইলে কোন এক মিঃ সরকার বলে একজন ফোন করেছিলেন। লোকটার কথা অবশ্য আমি কিছু শুনতে পাইনি। কিন্তু মহিমা বৌদি তাকে বলছিলেন যে সে কাউকে পরশু সন্ধ্যেয় ওই লোকটার কাছে পাঠিয়ে দেবেন। আর রেটের কথা বলছিলেন। বলছিলেন যে আগের রেটই আছে। আর এমনটাও বলছিলেন যে ওই লোকটার পছন্দ অপছন্দ বৌদির জানাই আছে। এ’সব কথা শুনে আমার মনে হয়েছিল যে ওই মিঃ সরকারের সাথে মহিমা বৌদি খুব ভাল ভাবেই পরিচিত আছেন। ওই কথাগুলো শোনবার পর থেকেই মনের ভেতরটা যেন কেমন করছে। আমার মন বলছে, বৌদি বোধ হয় কোন মেয়ে বা মহিলাকে পাঠাবার কথাই বলছিলেন। সেটা নিয়েই ভাবছি। অবশ্য বৌদি নিজেই আমাকে বলেছেন যে তিনি আমাকে ঠকাবেন না। তার ইনস্টিটিউটে অনৈতিক কাজ কিছুই হয় না আর ভবিষ্যতেও হবে না। আর এটাও বলেছেন যে কাজে যোগ দেবার পর যদি কখনও আমার তেমন কিছু মনে হয় তাহলে যেন তার কাছে খুলে বলি। আর তার জবাবে যদি আমি সন্তুষ্ট না হই, তাহলে আমি যে কোন সময় তার ওখানে কাজ করা ছেড়ে দিতে পারি”।

রচনা রতীশের কথা শুনে বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “সোনা, মহিমা বৌদি ওই লোকটাকে যেসব কথা বলেছেন তাতে তো মনে হয়, লোকটার কাছে কাউকে পাঠানোই হবে। তবে সেটা তুমি যেমনটা ভাবছো তেমনটা ঠিক না-ও হতে পারে। রেট, পছন্দ এসব শব্দ অন্যান্য কোন জিনিসের সাথেও সম্পর্কিত হতে পারে এমনটাও হতে পারে কোন লোকের মাধ্যমে তার কাছে তেমন কোন জিনিস পাঠানো হচ্ছে যা লোকটার পছন্দসই হবার সাথে সাথে যার দামের হেরফের হয়নি। হয়ত কোন হোম ডেলিভারির ব্যবসা করেন বা ওই ধরণেরই কোনকিছু। তবে লোকটা যে মহিমা বৌদির কাছ থেকে অমন জিনিস আগেও নিয়েছে, সেটা পরিস্কারই বোঝা যাচ্ছে। আবার তুমি যা ভাবছ তেমনটাও হতেই পারে। কিন্তু ওটুকু বার্তালাপ শুনেই এ ব্যাপারে নিশ্চিত কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছনো সম্ভব নয়। তবে বৌদি তোমাকে যা বলেছেন, তাতে আমার একটা কথা মনে হয়। আমার মনে হয়, তুমি যেমনটা ভাবছ, বৌদি তেমন কোন ধরণের দেহব্যবসার সাথে যুক্ত হলেও হয়ে থাকতে পারেন। তবে তার ওই যোগা ইনিস্টিটিউটে সে’সব কাজ বোধহয় হয় না। তাই সে জোর দিয়েই তোমাকে বলেছেন সে’কথা। আর তিনি যখন এ’কথাও বলেছেন যে ভবিষ্যতে যে কোন সময় তোমার তেমন সন্দেহ সত্যি হলে তিনি তার কাজ ছেড়ে চলে আসতে তোমাকে বাঁধা দেবেন না, তাহলে আমাদের ভাবনার কিছু আছে বলে মনে হয় না। তবে একটা কথা কিন্তু ঠিক। মহিমা বৌদি কিন্তু তোমাকে তার কাজে নিতে মরিয়া হয়ে আছেন। নইলে তুমি দু’দিন সময় চেয়ে নেওয়া সত্বেও বারো ঘন্টা পেরোতে না পেরোতেই তিনি তোমায় ফোন করতেন না আবার। তবে এর পেছনে তার অন্য কোন উদ্দেশ্য আছে কি না, সেটা তো সঠিক বোঝা যাচ্ছে না। সেটা নিয়েই ভাবনা হচ্ছে আমার”।

রতীশ রচনার পাশে গিয়ে বসে তাকে একহাতে জড়িয়ে ধরে বলল, “হ্যা, তিনি যে যেকোন প্রকারে আমাকে তার ইনস্টিটিউটে নিতে চান, সেটা তো তিনি লুকাবার চেষ্টাও করেননি। পরিষ্কার ভাবেই বলেছেন। তার ওখানে এখন আরও দু’জন ট্রেণার কাজ করছে। তাদের মধ্যে একজনের নাম বরুন, আর আরেকজনের নাম সুজয়। আরেকজন মহিলা ট্রেণার থাকলেও সে গত মাস দুয়েক ধরে ছুটিতে আছে। সন্তান সম্ভবা। তবে বাচ্চার জন্মের পরেও সে আর কাজে ফিরবে কিনা এ নিয়ে বৌদির মনে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আর এ তিনজনের কেউই প্রকৃত অর্থে যোগা টিচার নয়। তারা অন্যান্য যোগা সেন্টারে কিছুদিন যোগা ট্রেনিং নিয়ে বৌদির ইনস্টিটিউটে তারা ট্রেনিং দিতে শুরু করেছে। কিন্তু যোগা সম্বন্ধে তাদের সম্যক কোন ধারনাই নেই। বৌদির ওখানে অনেক বয়স্ক মহিলা পুরুষ স্বাস্থ্যজনিত কারনে যোগা করতে আসে। তাদের সবাইকে সব ধরণের যোগাসন করানো উচিৎ নয়। কিন্তু কোন ধরণের রোগীর কি কি যোগাসন করা বারণ, এসব ব্যাপারে তারা অনভিজ্ঞ। কিন্তু ছ’বছর ধরে মহিমা বৌদি এ ইনস্টিটিউট চালাচ্ছেন। এ’সব ব্যাপারে তিনি নিজেই হয়ত বরুন সুজয় ওদেরকে গাইড করে থাকেন। তবে মহিমা বৌদির ফিগার দেখে তিনি যে নিয়মিত যোগা চর্চা করেন সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত হলেও তিনি নিজেও কতটা এক্সপার্ট এ বিষয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তবে এটা ঠিক যে যোগের ব্যাপারে তিনি অনেক কিছুই জানেন। তাই আমার ইন্টারভিউ নিয়েই তিনি বুঝেছেন যে যোগা সম্বন্ধে আমার জ্ঞান কতটুকু। আর উনি চাইছেন আমি যেন বরুন আর সুজয়কেও ঠিক মত গাইড করি। তাই সে আমাকে অন্য সকলের চেয়ে বেশী পারিশ্রমিক আর বেশী সুযোগ সুবিধা দিতেও রাজি আছেন”।
 

রচনা রতীশের গালে হাত বোলাতে বোলাতে জিজ্ঞেস করল, “মহিমা বৌদি দেখতে কেমন গো সোনা? খুব সুন্দরী বুঝি”?

রতীশ রচনার গালে হাত বোলাতে বোলাতে বলল, “মহিমা বৌদি সত্যিই খুবই সুন্দরী সোনা। তবে এখন তো একটু বয়স হয়ে গেছে। উনি তো আমার বয়স শুনে নিজেই বললেন যে তিনি আমার থেকে ঊণিশ বছরের বড়। তার মানে তার বয়স এখন সাতচল্লিশের মত হবে। কিন্তু নিয়মিত যোগা চর্চা করেন বলেই বোধহয় তাকে দেখে পঁয়ত্রিশ ছত্রিশ বছরের মতই মনে হয়েছিল আমার”।
 

রতীশ থামতে রচনা স্বামীর গলা জড়িয়ে ধরে বলল, “শুধু এটুকু বলেই থেমে গেলে? তার চেহারা ছবির আরেকটু ডিটেইলস বর্ণনা দাও না। তার ফিগার কেমন, তার মুখ ঠোঁট চোখ এসব কেমন, তার বুক পাছা কোমড় এসব কেমন”?
 

রতীশ বলল, “বারে তিনি একটা প্রতিষ্ঠানের মালিক। তার কাছে আমি গিয়েছি চাকরির ইন্টারভিউ দিতে। আমি কি তার বুক পাছা কোমড় দেখতে গেছি না কি? আর তাছাড়া তুমি আমাকে অন্য কোন মেয়েকে ওই ভাবে দেখতে দেখেছ কখনও”?

রচনা রতীশের ঠোঁটের ওপর একটা চুমু খেয়ে বলল, “সে তো দেখেছি সোনা। তুমি রাস্তা ঘাটে যথেষ্ট সুন্দরী মেয়েদের দিকেও সেভাবে তাকিয়ে দেখ না। কিন্তু সব জায়গাতেই দেখেছি, কচি বুড়ি সব মেয়ে মহিলাই তোমার দিকে হাঁ করে চেয়ে থাকে। তারা তোমাকে দেখতে দেখতে মনে মনে কী ভাবে, সেটা একজন মেয়ে হবার সুবাদে আমি ভালই বুঝতে পারি। কিন্তু তোমার মহিমা বৌদিকে তো আমি দেখিনি। তার চোখের দৃষ্টি কেমন ছিল সেটা তোমার পক্ষেই বলা সম্ভব। কিন্তু আমি জানি তুমি তার চোখের দৃষ্টি পড়ে বোঝবার চেষ্টা করনি। তাই তো তার সম্মন্ধে আরো একটু ডিটেইলস জানতে ইচ্ছে করছে আমার”।

রতীশ রচনাকে পালটা প্রশ্ন করল, “আচ্ছা একটা কথার জবাব দাও তো সোনা। মন্তিও এভাবে বারবার ‘আমার মহিমা বৌদি’ ‘আমার মহিমা বৌদি’ বলছিল। আর তুমিও সেভাবেই বলছ। এর মানেটা কী? মহিমা বৌদি ‘আমার’ হতে যাবেন কেন? সারা পৃথিবীতে শুধু দু’জন মেয়েই আছে যাদের আমি ‘আমার’ বলে মনে করি। আর তাদের কথা তুমিও খুব ভালভাবেই জানো। তবু ‘আমার মহিমা বৌদি’ ‘আমার মহিমা বৌদি’ বলছ কেন তোমরা”?
 

রচনা রতীশের গলা জড়িয়ে ধরে তাকে আদর করতে করতে বলল, “তাতে তুমি রাগ করছ সোনা? আরে ওটা তো নেহাতই একটা কথার কথা। মহিমা বৌদিকে আমিও যেমন দেখিনি, দিদিভাইও তেমন দেখেন নি। তুমিই শুধু তাকে দেখেছ। আর সেখানে কাজ নিলে তোমার সাথে তার রোজ দেখা হবে। অনেকটা সময় তোমরা হয়ত একসাথে কাটাবে। তাই কথায় কথায় অমন ভাবে বলেছি আমরা। তুমি আমাদের কথাটাকে অন্যভাবে নিও না। আচ্ছা ঠিক আছে, আমি আর কখনও তোমাকে ওভাবে বলব না, ঠিক আছে? এবার আমি যা জানতে চাইছি, সেটা বল”।

রতীশ বলল, “মহিমা বৌদি সত্যিই খুব সুন্দরী সোনা। হাইটে প্রায় আমার আর মন্তির সমান সমান হবে। টিকোলো সোজা খাড়া নাক। গায়ের রঙ প্রায় তোমার মত হলেও তার ত্বকে একটা আলাদা লালচে আভা আছে। বিশেষ করে গালে। তবে মেয়েরা তো নানান ধরণের মেকআপ করে থাকে। তিনিও তেমন কিছু মেকআপ করেছিলেন কিনা জানিনা। তবে গোলাপী ঠোঁট দুটোর মত ডিপ না হলেও তার গালে আর চিবুকেও স্পষ্ট গোলাপী আভা দেখেছি। বুক পাছা আর কোমড় বা শরীরের অন্য কিছুর বর্ণনা দিতে পারব না। কারন ও’গুলো আমি লক্ষ্যই করিনি। তবে আমি দেরাদুনে থাকতে তো অনেক পাঞ্জাবী মেয়ে মহিলাকে দেখেছি। পাঞ্জাবী মেয়েরা গড়পড়তা হিসেবে রূপের দিক দিয়ে বাঙালী মেয়েদের চাইতে সুন্দরীই হয়ে থাকে। তবে এককথায় বলতে পারি মহিমা বৌদির মত রূপসী একশোটা পাঞ্জাবী মেয়ের মধ্যে হয়ত একটাই দেখা যাবে। কিন্তু তার বাহ্যিক রূপসৌন্দর্যটাই বড় কথা নয়। মহিমা বৌদিকে আমার অসাধারণ লেগেছে অন্য দিক থেকে। পাঞ্জাবী মেয়েদের মধ্যে কেমন একটা বেপরোয়া ভাব থেকে থাকে। এটা প্রায় সব পাঞ্জাবী মেয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। অবশ্য এটা একেবারেই আমার ব্যক্তিগত মতামত। আমি দেরাদুনে থাকতে তো প্রচুর পাঞ্জাবী ছেলে মেয়ে দেখেছি। ওদের ভেতর কেমন একটা উচ্ছৃঙ্খল ভাব আর ঔদ্ধত্ত আমার চোখে ধরা পড়ত। কিন্তু মহিমা বৌদিকে আমার সম্পূর্ণ অন্যরকম লেগেছে। তার মধ্যে ওই ঔদ্ধত্ত ভাবটা একেবারেই নেই। পাঞ্জাবী মেয়েদের গলার স্বরও আমাদের বাঙালী মেয়েদের মত এত মিষ্টি হয় না। কিন্তু মহিমা বৌদির কথায় আর গলার ভয়েসে অদ্ভুত সুন্দর একটা মিষ্টতা আছে। যেটা আমি আজ অব্দি কোন পাঞ্জাবী মেয়ের মধ্যে দেখিনি”।

রচনা বলল, “বারে, এমন কথা বলছ কেন। হিন্দি ফিল্মে তো অনেক পাঞ্জাবী মেয়ে মহিলা অভিনয় করে থাকে। তাদেরকে দেখে তো তেমন মনে হয় না একদম”।

রতীশ জবাব দিল, “আরে সেটা তো ওদের অভিনয় দেখে বলছ তুমি। কিন্তু বাস্তবে ওরা যখন স্বাভাবিক ভাবে কথা বার্তা বলে তখন ওদের কথা বলার স্টাইলটাই আলাদা হয়ে যায়। কেমন একটা রুক্ষ্ম শুষ্ক ভাব থাকে। উত্তর ভারতে তো সব জায়গায় পাঞ্জাবীদের দেখতে পাওয়া যায়। আর দিল্লীতে তো কোন কোন এলাকায় ৯০ শতাংশ পাঞ্জাবীর বসবাস। দিল্লীতেও আমি বহুবার গিয়েছি। সেখানেও দেখেছি। তাদের চেহারা ছবি দেখতে খুব সুন্দর লাগলেও তাদের কথার শব্দ কানে এলেই মনটা কেমন যেন বিতৃষ্ণায় ভরে উঠত আমার। আচ্ছা সে’কথা থাক। আমি তো আর এখানে কারুর সমালোচনা করছিনা। আমি শুধু এটাই বলছি যে আমার দেখা প্রচুর পাঞ্জাবী মেয়ে মহিলার মুখের কথাগুলো যেমন লাগত আমার, মহিমা বৌদির ভয়েস একেবারেই সে’রকম নয়। তার গলার ভয়েস খুবই সফট আর সুইট। প্রায় তোমার মত মিষ্টি গলা তার। আর কথাবার্তা যা কিছু হয়েছে, সে’সব তো আগেই শুনেছ। খুব আন্তরিক ভাবে হাসিমুখে আমার সাথে কথা বলেছেন। এর বেশী আর কিছু বলতে পারছি না”।

রচনা রতীশের কথা শুনে চুপ করে রইল অনেকক্ষণ। অনেকক্ষণ তার সারা না পেয়ে তাকে ঝাঁকি দিয়ে রতীশ বলল, “কী হল সোনা? কী ভাবছ”?

রচনা আগের মতই রতীশের গলা জড়িয়ে ধরে বলল, “না তেমন কিছু নয়। শুধু মনে মনে একটু ভয় হচ্ছে আমার”।

রতীশ রচনার মুখটা দু’হাতে ধরে তার চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করল, “কিসের ভয় সোনা”?

রচনা একটু হেসে বলল, “আমার মনে হয় মহিমা বৌদির ওখানে তোমার কাজ শুরু করে দেওয়াই উচিৎ। কিন্তু ভয়টা হচ্ছে, এমন সুন্দরী মিষ্টভাষিণী বৌদির কাছে থাকতে থাকতে যদি তোমার মন থেকে আমি হারিয়ে যাই”!
 

রতীশ রচনাকে সোফার ওপর চিত করে ফেলে দিয়ে এক ঝটকায় তার বুকের ওপর থেকে শাড়ি সরিয়ে দিয়ে ব্লাউজের ওপর দিয়েই রচনার বুকের স্ফীত মধুভাণ্ডদুটোকে খাবলে ধরে বলল, “তোমার কথার জবাব এবার মুখে না দিয়ে করে দেখাচ্ছি। রোজ ঘুমোবার আগে আর ভোরে ঘুম থেকে ওঠার পর এই রসালো বেল দুটো আমাকে খেতে না দিলে তোমার মুস্কিল আছে বলে দিচ্ছি। বাড়িতে থাকতে এমন সুযোগ মেলাই ভার ছিল। কিন্তু এখানে তো আর কোনও বাঁধা নেই। তাই রোজ নিয়ম করে খেতে দেবে কিন্তু”।

রচনা একটু ঢং করে বলল, “আমার শরীরের সবকিছুই তো তোমার সোনা। তোমার জিনিস তুমি খাবে। তাতে আমি অমত করব কেন। আর বাড়িতে অনেক লোকজন ছিল বলেই না একটু ভয় পেতাম। এখানে তো আর সে ভয় নেই। দুপুরে যখন চাইলে, তখনও তো দিয়েছি। আমি কি বারণ করেছি”?

রতীশ রচনার ব্লাউজের হুক খুলতে খুলতে বলল, “তখন দিনের বেলায় করে খুব ভাল লেগেছে আমার। এখনও চাই আমার। আমি ওপরের দিক খুলে নিচ্ছি। তুমি তোমার প্যান্টিটা খুলে দাও”।

রচনা একটু অবাক হয়ে বলল, “ওমা! এখনই আবার চাইছ নাকি? দুপুরেই না একবার করলে! রাতে আর কিছু করবে না”? বলতে বলতে নিজেই শাড়ি সায়া গুটিয়ে তুলে প্যান্টিটা খুলতে লাগল।

রতীশ ব্রার তলা থেকে রচনার স্তন দুটো টেনে বের করে খুব জোরে ডলতে ডলতে দুই স্তনের খাঁজে নাক মুখ ঘসতে ঘসতে জবাব দিল, “রাতেও করব আর এখনও করব। সত্যি খুব ইচ্ছে করছে। রাতে না হয় দু’বারের বদলে একবার করব। এখন একবার না করলে আমার শান্তি হবে না”।
 

রচনা রতীশের জোড়দার নিষ্পেষণে কাঁতরে উঠে বলল, “আআআ উঃ। মাগো। কী করছ সোনা। আমি কি পালিয়ে যাচ্ছি নাকি? একটু আস্তে করো না। তুমি যেভাবে আমার বুকের এ গুলোকে টিপতে ছানতে শুরু করেছ তাতে তো খুব অল্পদিনের মধ্যেই এগুলো বড় হয়ে ঝুলে পড়বে। তখন কি হবে”?

রতীশ একই ভাবে রচনার স্তন দুটো টিপতে ছানতে থেকে জবাব দিল, “এগুলো কি তোমার নাকি? এগুলো তো আমার নিজস্ব জিনিস। আর নিজের জিনিস আমি খুশী মত ব্যবহার করতে পারব না? আর তাছাড়া, এগুলো আরও বড় হলে বেশ ভালই হবে আমার। চুটিয়ে মজা নিতে পারব”।

রচনা স্বামীর দেহটাকে নিজের শরীরের সাথে চেপে ধরে বলল, “তাই বুঝি? আর সকলে আমার বুকের দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারবে যে আমার স্বামীই এগুলোকে চুসে ছেনে আর টিপতে টিপতে এত বড় করে দিয়েছে”।

রতীশ বলল, “সব স্বামীই তার স্ত্রীকে এমনিভাবে আদর করে। এতে লজ্জার কি আছে? বরং আমার তো মনে হয় এতে যে কোন স্ত্রীরই গর্ব হওয়া উচিৎ। তাদের স্বামীরা যে তাদের কত ভালবাসে তার সাক্ষ্য তাদের ভারী বুক আর পাছাই দিয়ে থাকে। বিয়ের পরেও যেসব স্ত্রীর বুক আর পাছার সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি হয় না, বুঝে নেবে তারা স্বামী সোহাগ থেকে বঞ্চিতা হয়ে থাকে। আর তাদের সংসারে শান্তিও থাকে না। কিন্তু এখন এ’সব তত্ত্বকথা থাক। পাদুটো ফাঁক কর তো। দেখি তোমার সোনাখুকি আমার সোনাখোকাকে তার ঘরে ডেকে নিতে প্রস্তুত হয়েছে কিনা” বলতে বলতে সে রচনার কোমড়ের দিকে মুখ নামাতে লাগল।

রচনা রতীশের মাথাটাকে একটু নিচের দিকে ঠেলে নিজে উঠে বসে বলল, “আমার সোনাখুকি তার ঘরের দরজা খুলে দিয়েছে। কিন্তু তোমার সোনাখোকা আমার সোনাখুকির ঘরে ঢোকবার আগে তাকে একটুখানি আদর না করলে তার যে বড় অভিমান হবে সোনা”।

রচনার মৃদু ধাক্কায় রতীশ সোফার ওপর চিত হয়ে পড়ল। রচনা ক্ষিপ্র হাতে রতীশের পাজামা জাঙ্গিয়া খুলে ফেলে রতীশের মস্ত পুরুষাঙ্গটার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।
 

পনের কুড়ি মিনিটের খেলা শেষে রতীশের ঘর্মাক্ত দেহটাকে নিজের ঘামে ভেজা বুকের ওপর চেপে ধরে রচনা ফিসফিস করে বলল,“থ্যাঙ্ক ইউ মাই ডার্লিং”।
 

****************
 
(To be cont'd ......)
______________________________
 
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply
#67
(Upload No. 87)

পরের দিন শঙ্কর বিকেল চারটে নাগাদ আবার সরজুর দোকানে এল। গত দু’দিনে অভি অনুপমার ছ’খানা সেশনের রেকর্ডিং করেছে। এখন অনুপমার ঘর থেকে ক্যামেরাগুলো খুলে আনতে হবে। অভিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রেকর্ডেড সেশনগুলো এডিটিং শুরু করতে। প্রত্যেকটা সেশনের আলাদা আলাদা সিডি বানাতে হবে। অভি আজ রাত থেকেই এডিটিং শুরু করবে। কিন্তু একটা বাইরের সেশন রেকর্ড করতেই হবে। এটা প্ল্যানের একটা বিশেষ অঙ্গ। তবে অভির জন্য অনুপমার একটা বুকিং করে দিতে পারলে তাকে আর কিছু করতে হবে না। অভি নিজেই নিজের পছন্দমত হোটেলে একটা উপযুক্ত রুম বুক করে নিজেই সেখানে ক্যামেরাগুলো ইনস্টল করে নিতে পারবে। কিন্তু আগে অনুপমার বুকিংটা করা যায় কি না সেটাই দেখতে হবে।
 

সরজুর দোকানে দু’জন গ্রাহক ছিল। শঙ্করকে দেখেই সরজু নমস্কার করে বলল, “আরে শঙ্কর ভাইয়া যে। আসুন আসুন। ও’দিক দিয়ে ভেতরে চলে আসুন”।

শঙ্কর দোকানের পাশের ছোট গলিটা দিয়ে ঢুকে সরজুর দোকানের পেছনের দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে জিজ্ঞেস করল, “কেমন আছেন সরজু ভাইয়া”?

সরজু একটা চেয়ারের ওপর থেকে কাপড় চোপর সরিয়ে বলল, “আপনাদের কৃপায় ভালই আছি শঙ্কর ভাইয়া। এখানে বসুন। আমি একটু কাস্টমার বিদায় দিয়ে আপনার সাথে কথা বলব। ব্যস, দু’মিনিট”।

দু’তিন মিনিট বাদেই সরজু এসে শঙ্করের পাশে একটা কাঠের টুলে বসে নিজের পকেট থেকে বিড়ির প্যাকেট বের করে শঙ্করকে একটা বিড়ি দিয়ে নিজেও একটা ধরিয়ে নিয়ে একটা টান দিয়ে জিজ্ঞেস করল, “হাঁ শঙ্কর ভাইয়া, বলুন। এই বিকেল বেলা হঠাৎ কী মনে করে”?

শঙ্করও বিড়িতে একটা টান দিয়ে মুচকি হেসে জবাব দিল, “আবার একটা টিকিট চাই, অনুপমা হলের”।

সরজু হেসে বলল, “আমি জানতাম শঙ্কর ভাইয়া। আসলে এটাই তো অনুপমা ভাবীর বাহাদুরি। একবার যে ওই হলে সিনেমা দেখেছে, সে বারবার যেতে চায়। আপনারও ভাল লেগেছে তাহলে”?

শঙ্কর বলল, “কী বলছেন সরজু ভাইয়া! পছন্দ হবে না মানে? অনুপমা ভাবী যা জিনিস! বাপরে! আমি তো এমন জবরদস্ত মেয়ে আর দেখিনি। তাই তো আজ আবার টিকিট নিতে এসেছি”।

সরজু হেসে বলল, “আমার কাছে টিকিট নিয়ে সবাই খুব খুশী হয়। আর আপনাকে তো আগের দিনই বলেছি যে আমার কাছে আজেবাজে সিনেমার টিকিট পাবেন না। অনুপমা হল আর বিন্দিয়া হল দুটো দেখেই সব পাবলিক খুশী হয়। একবার বিন্দিয়া হলেও গিয়ে দেখুন না। তবে আমার কথা বিশ্বাস হবে আপনার। বিন্দিয়া হলে আবার কাল থেকে ইস্পেশাল বোনাসও দিচ্ছে”।
 

শঙ্কর বলল, “সিনেমার সাথে আবার বোনাস! সেটা কী রকম”?

সরজু অনেকটা ঝুঁকে মুখটা শঙ্করের আরো কাছে এনে প্রায় ফিসফিস করে বলল, “বিন্দিয়া ভাবীর একটা মেয়ে আছে। তাকেও লাইনে নামাবার সময় হয়ে আসছে। দু’মাস বাদেই গুড্ডি হলের টিকিটও পাবেন এখানে। একেবারে ফ্রেশ। তাই এ দু’মাস বিন্দিয়া হলের ফিল্ম দেখার সাথে সাথে, গুড্ডির কিছু কিছু ঝলক দেখাতে শুরু করেছে বিন্দিয়া ভাবী। মানে ফিল্মের ট্রেলার আর কি। একবার গিয়ে দেখে আসুন না। এক টিকিটেই বিন্দিয়ার পুরো ফিল্ম দেখতে দেখতে গুড্ডির ঝলকটাও দেখে আসুন। আর গুড্ডি হলের প্রথম সিনেমা দেখার জন্য বোলিও লাগিয়ে আসতে পারবেন”।

শঙ্কর মনে মনে একটু ভেবে নিয়ে বলল, “সরজু ভাইয়া, আজ তো আমি অনুপমা হলের টিকিটই নেব। কিন্তু বিন্দিয়া হলের বোনাসটা ঠিক কেমন হবে, সেটা কি আপনার জানা আছে”?

সরজু জবাব দিল, “আরে শঙ্কর ভাইয়া, আপনি তো এ লাইনে নতুন নতুন এসেছেন, তাই ব্যাপারটা বুঝতে পাচ্ছেন না। আচ্ছা শুনুন। বিন্দিয়া ভাবী কতটা সেক্সী আর সুন্দরী, তা তো আপনাকে আগেই বলেছি। বিন্দিয়া ভাবীর মেয়ে গুড্ডিও এখন ধান্দা করবার জন্যে পুরোপুরি ফিট হয়ে উঠেছে। এদের নিয়মে কুমারী মেয়েরা যখন প্রথম কাস্টমার নেয় তখন নিলামের মত বোলি হয়ে থাকে। যে সবচেয়ে বেশী বোলি লাগাবে সেই পুরুষটাই সবার আগে ওই কুমারী মেয়েটাকে পাবে। আসলে কথাটা হল এ ব্যবসায় তো মেয়ে মানুষের অভাব নেই। পয়সা দিলেই পাবেন। কিন্তু কুমারী সীলওয়ালী মেয়ে তো আর যখন তখন পাওয়া যায় না। তাই কোন কুমারী মেয়ে লাইনে নামছে শুনলেই কাস্টমারেরা যার যার ক্ষমতা মত বোলি লাগাতে শুরু করে”।

শঙ্কর সরজুর কথা শুনে বলল, “ও, এই ব্যাপার? তাহলে বিন্দিয়া ভাবীও তার মেয়ের বোলি লাগাতে শুরু করেছে। তা, কবে থেকে গুড্ডির জন্য বোলি দেওয়া শুরু হয়েছে? আর কবে শেষ হবে”?

সরজু বলল, “কাল থেকে বোলি শুরু হয়েছে শঙ্কর ভাইয়া। দু’মাস চলতে থাকবে। কাল ষাঠ হজার বোলি উঠেছে। তবে সবে তো শুরু হল। রইস লোকেরা তো তিন চার লাখ পর্যন্ত বোলি দেয়। আর গুড্ডি যত খুবসুরত, ওর জন্যে তো চার লাখ টাকাও বোলি উঠতে পারে”।
 

শঙ্কর অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “কী বলছেন সরজু ভাইয়া? চার লাখ! এক রাতের জন্য এত টাকা দিতে কেউ রাজী হয়”?

সরজু বলল, “হাঁ শঙ্কর ভাইয়া, এমনই হয়। তবে সেটাও পুরো রাতের জন্য নয়। মাত্র একঘন্টার জন্যই শুধু। পছন্দসই জিনিস হলে বহুত রইস লোক এর থেকেও বেশী দিয়ে কুমারী মেয়েদের সীল ভাঙতে রাজী হয়”।

শঙ্কর আরো অবাক হয়ে বলল, “সত্যি বলছেন আপনি সরজু ভাইয়া? মাত্র এক ঘন্টার জন্যে এত টাকা খরচ করতে চায় লোকে”?

সরজু হেসে বলল, “এসব যার তার কাম নয় শঙ্কর ভাইয়া। বড় বড় পয়সাওয়ালা পুরুষেরাই এমন দাম দেয়”।
 

শঙ্কর জিজ্ঞেস করল, “তাহলে আমাকে বোলি লাগাতে বলছেন কেন সরজু ভাইয়া? আমার কি আর অত পয়সা আছে নাকি”?

সরজু হেসে বলল, “আরে শঙ্কর ভাইয়া, বোলি যে আপনি লাগাতে পারবেন না, তা তো আমিও জানি। কিন্তু একবার বিন্দিয়া হলে সিনেমা দেখতে গিয়ে গুড্ডির বোনাস ট্রেলারটা তো দেখতে পাবেন। বিন্দিয়া ভাবীর সাথে মস্তি করতে করতে তার মেয়ের নঙ্গা শরীরটা তো দেখতে পাবেন। একটু হাত টাতও লাগাতে পারবেন হয়তো। এতে আলাদা করে পয়সা দিতে হবে না আপনাকে। তাই তো বলছি, বোনাস। আসলে জিনিসটাকে ভাল করে না দেখতে পেলে কেউ কি আর বেশী বোলি লাগাবে নাকি? তাই এখন বিন্দিয়া ভাবীর টিকিট যারা নেয় তারা সবাই গুড্ডির শরীরের সবকিছু খুব ভাল মত দেখতে পাবে। কারুর ইচ্ছে হলে বোলি লাগাবে। নাহলে লাগাবে না”।

শঙ্কর বলল, “আচ্ছা সরজু ভাইয়া, আপনি আমাকে অনুপমা ভাবীর একটা টিকিটই দিন আজ। কাল বিকেলের। আপনি বুকিংটা করুন। তারপর আপনার সাথে আরো একটা আলাপ আছে” বলে নিজের পকেট থেকে দেড়শ’ টাকা বের করে সরজুর হাতে দিল।
 

সরজু টাকাটা পকেটে পুরে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “আপনি একটু বসুন শঙ্কর ভাইয়া। আমি দু’কাপ চায়ের অর্ডার দিয়ে আসি। তারপর কথা বলব” বলে বাইরে বেরিয়ে গেল।

মিনিট পাঁচেক বাদে নিজেই দু’কাপ চা নিয়ে ফিরে এসে শঙ্করকে এক কাপ দিয়ে বলল, “হাঁ শঙ্কর ভাইয়া, বলুন। আর কি কথা আছে”?

শঙ্কর চায়ের কাপে একটা চুমুক দিয়ে বলল, “তার আগে আমি আরেকটা কথা জানতে চাই সরজু ভাইয়া আপনি যে গুড্ডির কথা বললেন যে দু’মাস পর সে প্রথম কাস্টমার নেবে। এই দু’মাসে যে সবচেয়ে বেশী বোলি লাগাবে, সে-ই তো গুড্ডিকে প্রথম পাবে, সেটা তো বুঝলাম। কিন্তু আপনার এখানে এসেও কি লোকেরা বোলি লাগাচ্ছে নাকি”?

সরজু জবাব দিল, “আরে না শঙ্কর ভাইয়া। এই দু’মাসে যারা বিন্দিয়াভাবীর টিকিট নেবে, তারাই কেবল বোলি লাগাতে পারবে। আর জিনিস না দেখে কি কেউ বোলি লাগাবে নাকি? তাই বিন্দিয়া ভাবীর টিকিট নিলে এখন সবাই গুড্ডিকে দেখতে পারবে। দেখে পছন্দ হলেই তো বোলি লাগাবে। আর সে জন্যেই তো আপনাকে বললাম, বোলি না লাগালেও বোনাসটা তো পাবেন। আর আমার এখানে গুড্ডির টিকিট বিক্রী হবে ওর সীল ভেঙে যাবার পর। ওর সীল ভাঙবার দিন তো সে পাঁচ লাখও পেতে পারে। কিন্তু পরের দিন থেকে তো আর কেউ পাঁচ লাখ দিতে রাজী হবে না। তখন তার রেট ফিক্স করা হবে। আর তারপরেই আমি এখানে গুড্ডির টিকিট বিক্রি করব”।
 

শঙ্কর আবার কিছু জিজ্ঞেস করতে যেতেই পেছনের দরজার সামনে ভালো পোশাক পড়া একজন বয়স্ক লোক এসে দাঁড়াতেই সরজু তার হাতঘড়ির দিকে চেয়ে উঠে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, “আরে, হয়ে গেছে আপনাদের? পাঁচ মিনিট আগেই হয়ে গেছে তাহলে”?

বয়স্ক লোকটা একটা চাবি সরজুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে নিজের পকেটে হাত ঢোকাতে ঢোকাতে বলল, “হাঁ ভইয়া, আজ কে লিয়ে কাম খতম হো গয়া হ্যায়। ইয়ে লো” বলে তিনখানা একশ টাকার নোট সরজুর হাতে দিল। একটা খসখসে আওয়াজ শুনে শঙ্করের মনে হল, বয়স্ক লোকটার সাথে বুঝি আরও কেউ আছে। কিন্তু শঙ্কর তাকে দেখতে পাচ্ছিল না।
 

সরজু টাকাটা পকেটে পুরে বলল, “ঠিক হ্যায় বাবুজী। আপ সামনে কাউন্টার পর আ যাইয়ে। ম্যায় আপকে কপড়ে দেতা হু” বলে নিজেও কাউন্টারের সামনে গিয়ে দাঁড়াল।
 

বয়স্ক লোকটা পেছনের দরজা থেকে সরে গেল। কিন্তু কয়েক সেকেণ্ড বাদেই তাকে দোকানের সামনের কাউন্টারের ওদিকে দেখা গেল। তখন তার পাশে শালোয়ার কামিজ পড়া একটা মেয়েকেও সে দেখতে পেল। মেয়েটাকে বয়স্ক লোকটার মেয়ে বলেই মনে হল তার। বয়স খুব বেশী হলে আঠার ঊণিশ হবে হয়ত। সরজু কাউন্টারের ওপর কয়েকটা ইস্ত্রি করা জামা কাপড় রেখে লোকটার কাছ থেকে একটা কাগজ নিয়ে নাম্বার মিলিয়ে দেখে নিয়ে বলল, “দেখ লিজিয়ে বাবুজী। ইয়েহি থা না”?
 

লোকটা কাপড়গুলো দেখে সন্তুষ্ট হয়ে বলল, “হাঁ, ইয়েহি হ্যায়। ঠিক হ্যায়। প্যাক কর দো”।

সরজু একটা খবরের কাগজ দিয়ে কাপড়গুলোকে মুড়ে একটা প্যাকেটে ভরে এগিয়ে দিতেই লোকটা তার পকেট থেকে একখানা পঞ্চাশ টাকার নোট বের করে সরজুকে দিয়ে বলল, “হম পরসো ফির আয়েঙ্গে” বলে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কিরে, তাই তো? পরশুদিন বেলা তিনটের দিকে আসতে পারবি তো ওকে নিয়ে”?
 

মেয়েটা বলল, “হ্যা হ্যা আসব। ভাববেন না। আর শমিতাও আসবে” বলে শঙ্করের সাথে চোখাচোখি হতেই সে ফিক করে হাসল।
 

লোকটা “চলতা হু সরজু ভৈয়া” বলে পোশাকের প্যাকেটটা হাতে করে মেয়েটাকে সাথে নিয়ে একদিকে চলে গেল।
 

সরজু এসে আবার শঙ্করের কাছে বসতে শঙ্কর জিজ্ঞেস করল, “এরা আপনার কোন আত্মীয় বুঝি সরজু ভাইয়া”?

সরজু বিড়ির প্যাকেট পকেট থেকে বের করতে করতে জবাব দিল, “আরে না না শঙ্কর ভাইয়া। এরা আমার আত্মীয় টাত্মীয় কেউ নয়। আমার দোকানের কাস্টমার”।

শঙ্কর একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “কিন্তু ওরা তো মনে হল, পেছনের বাড়িটা থেকেই বেরোল। পেছনের বাড়িটা কার? আপনার নয়”?

সরজু একটু হেসে বলল, “আপনি কিছুই বোঝেন নি? পেছনের বাড়িটা তো আমারই। আর ওরাও আমার বাড়ি থেকেই কাজ শেষ করে বেরিয়ে এল। কিন্তু ওরা কেউই আমার রিস্তেদার নয়”।

শঙ্করের কাছে ব্যাপারটা পরিস্কার হল না। তাকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে সরজু দেশলাই কাঠি জ্বালিয়ে দু’জনের বিড়ি ধরিয়ে নিয়ে বলল, “ওই লোকটা একঘন্টার জন্যে আমার ঘরের একটা রুম ভাড়া নিয়েছিল। মেয়েটাকে নিয়ে মস্তি করল। এখন কাজ শেষ করে চলে গেল”।

শঙ্করের চোখ দুটো বিস্ময়ে বড় বড় হয়ে গেল। কোনরকমে ঢোক গিলে সে বলল, “তারমানে, এটাও আপনার আরেকটা ব্যবসা”?

সরজু বলল, “এই করেই তো খাচ্ছি শঙ্কর ভাইয়া। নইলে এ লন্ড্রীর ইনকাম আর কতটুকু? এতে তো জলের বিল আর বিজলীর বিলের পয়সাও মেটাতে পারিনা। সিনেমা হলের টিকিট বিক্রি আর এমন ঘর ভাড়া দিয়েই তো সংসার চালাবার খরচ জোটাতে পারি আমি”। একটু থেমে আবার বলল, “আর শুধু আমি নই শঙ্কর ভাইয়া, এই এলাকার সবাই এই ধন্দা করে। এই রাস্তার এদিকে ওদিকে দো মাইল পর্যন্ত যত দুকান আছে, সব দুকানের মালিক বলেন কর্মচারী বলেন প্রায় সকলেই এ’রকম ঘর ভাড়া, ছোকড়ি সাপ্লাই দিয়ে থাকে”।
 

শঙ্কর জিজ্ঞেস করল, “তা এরা কারা? এদের চেনেন আপনি”?

সরজু বলল, “নাম ধাম জানিনা। তবে ওই বুড়োটার ওই দিকের মার্কেটে একটা কাপড়ের দোকান আছে। আর মেয়েটার নাম স্মিতা। ও’দিকের একটা বস্তির মেয়ে। একটা কলেজে পড়ে। মাঝে মাঝে আমার এখানে আসে আলাদা আলাদা কাস্টমার নিয়ে। ওর আরো কয়েকজন বান্ধবীও মাঝে মাঝে আমার এখানে আসে ওদের কাস্টমার নিয়ে। আমি ঘন্টায় তিনশ টাকা হিসেবে ওদের রুম দিই”।

শঙ্কর বলল, “মেয়েটাকে দেখে তো ভাল ঘরের মেয়ে বলেই মনে হল। এরাও এসব ধান্দা করে”?

সরজু বলল, “শঙ্কর ভাইয়া, আপনি বাইরের চমক দমক দেখে ভুল করবেন না। ওই যে বাংলা ভাষার একটা কথা আছে না? চকচক করলেই সোনা হয় না। এরাও অনেকে প্রায় তেমনই। কাস্টমার ধরবার জন্য এরা ভাল ভাল পোশাক পড়ে, সুন্দর করে মেকআপ করে। কিন্তু এরা সবাই যে ধনী ঘরের বা ভদ্র ঘরের মেয়ে তা কিন্তু সব সময় ঠিক নয়। হাঁ, বড়লোক ঘরের কিছু কিছু মেয়েও শুধু মৌজ মস্তি করবার জন্যেই এসব করে। কেউ কেউ তো নিজেদের গাড়ি হাঁকিয়েও আসে। কিন্তু বেশীর ভাগ মেয়েই খুব গরীব ঘরের মেয়ে। পেটের দায়ে পড়েই এসব কাজ করে। আর আজ একটু আগে যে মেয়েটাকে দেখলেন, ওই মেয়েটাকে আমি চিনি। ওর সংসারে ওর একটা পঙ্গু ভাই ছাড়া আর কেউ নেই। ওই দিকে একটা বস্তিতে থাকে। দু’বছর আগে ওর বাবা মা একমাস আগে পরে মারা যায়। তখন মেয়েটা ক্লাস টেনে পড়ত। তারপর থেকে নিজের ভাইটাকে বাঁচিয়ে রাখতে আর নিজের পড়াশোনার খরচ চালাতে এসব কাজ করতে শুরু করেছে। আজ হয়ত দুটো পয়সা কামালো। আর শুনতেই তো পেলেন, ওই বুড়োটা পরসো দিন ওই মেয়েটার সাথে তার আরও এক বান্ধবীকে নিয়ে আসবে। হয়ত আমার এখানেই আসবে। আমার এখানে রুম না পেলে পেলে কোথাও যাবে। এই করেই ওদের জীবন চলে। তবে ওদের কাস্টমার ওরাই খোঁজে। ও’সবের ভেতর আমি থাকি না। আমি শুধু আমার ঘর ভাড়া দিয়েই খালাস। ছোকড়ি সাপ্লাই আমি ছেড়ে দিয়েছি”।

সরজুর কথা শুনতে শুনতে শঙ্করের বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে উঠল। বেঁচে থাকার লড়াই। একেক জন একেক ভাবে প্রতিনিয়ত সে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। শঙ্করকে চুপ করে থাকতে দেখে সরজু বলল, “কি হল শঙ্কর ভাইয়া? খুব চিন্তায় পড়ে গেলেন নাকি? আরে ছাড়ুন তো ও’সব ভাবনা। আপনি এমন কাউকে চাইলে আমি যোগার করে দিতে পারি। আমার কমিশন লাগবে না। শুধু ওদের পয়সা দিলেই চলবে। আর যদি আমার ঘরেই করতে চান তাহলে এক ঘন্টার জন্য তিনশ’ টাকা দিতে হবে” বলেই নিজের ঘড়ির দিকে দেখে বলল, “আর পন্দ্রহ মিনিট বাদে আরেকজন বেরিয়ে আসবে আমার ঘর থেকে। চাইলে কথা বলে দেখতে পারেন”।
 

শঙ্কর বলল, “না সরজু ভাইয়া, থাক। তবে আমার আরেকটা কথা বলার ছিল আপনাকে”।

সরজু বলল, “হাঁ হাঁ, আপনি যেন আরও কিছু একটা বলবেন বলছিলেন না? বলুন দেখি কি ব্যাপার”।

শঙ্কর নিজেকে প্রস্তুত করে বলল, “হ্যা সরজু ভাইয়া। বলছিলাম কি, আমার এক বন্ধু আমার মুখে অনুপমা ভাবীর কথা শুনে, তার একটা বুকিং নিতে চায়। পাওয়া যাবে কি”?

সরজু বলল, “বুকিং তো পাওয়া যাবে শঙ্কর ভাইয়া। কিন্তু আপনার বন্ধুর বুকিং তো আপনি করতে পারবেন না। আপনার ওই বন্ধুকেই আসতে হবে আমার কাছে। এটাই আমাদের ধন্দার নিয়ম। আসলে এ’সব ধন্দা তো গৈর কানুনি। তাই কার বুকিং কে করে যাবে। আর কে সিনেমা দেখতে যাবে, এসব তো ভাল করে যাচাই করে নিতে হয়। নাহলে তো থানা পুলিশের ঝামেলা হয়ে যেতে পারে যে কোন সময়”।

শঙ্কর একটু আমতা আমতা করে বলল, “ও তাই বুঝি? আসলে ও তো আরেক জায়গায় একটা হোটেলে উঠেছে। তাই এদিকে এসে আপনার সাথে দেখা করা ওর সম্ভব নয়। ও আবার বারো তারিখেই চলে যাবে। তাই পরশু দিন দিনের বেলায় অনুপমা ভাবীকে তার হোটেলে নিয়ে যেতে চাইছিল। দুপুর একটার পর থেকে চারটের ভেতর যে কোন এক ঘন্টার জন্য। আর আমাকে বলেছিল আপনার কাছ থেকে পরশুদিন দুপুরের পর যে কোন সময়ের জন্য একটা টিকিট বুক করতে। কিন্ত আপনাদের এ নিয়মটা তো আমার জানা ছিল না। তবে আপনি যখন বলছেন হবে না, তাহলে বরং থাক। আমি ওকে সেভাবেই বলে দেব। ও যদি পারে, তাহলে কাল এসে না হয় আপনার কাছ থেকে টিকিট নিয়ে যাবে। ঠিক আছে, সরজু ভাইয়া। ও কথা তাহলে থাক। আপনি আমার বুকিংটার কথা বলুন। কনফার্মেশনটা কখন পাব আমি”?

সরজু জবাব দিল, “আপনার জন্যে তো ভাবনা নেই। কনফার্মেশন কাল সকালেই পেয়ে যাবেন। তবে আপনি না এলেও চলবে। আমি ফোন করে আপনাকে কনফার্ম করে দেব। আর কোড নাম্বারটাও বলে দেব। সেটা নিয়ে ভাববেন না”।
 

শঙ্কর চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “ঠিক আছে সরজু ভাইয়া। আজ তাহলে উঠি আমি”।

সরজু তাকে বাঁধা দিয়ে বলল, “আরে শঙ্কর ভাইয়া, যাবেনই তো। তবু একটু বসুন না। আমি আরও এক এক কাপ চা নিয়ে আসছি। চা খেতে খেতে না হয়ে আরেকটু গল্প করে যাবেন। আসলে সকলের সাথে তো আর এভাবে কথা বলিনা আমি। তবে আপনার সাথে কথা বলে খুব ভাল লাগে বলেই বলছি। আপনি এক মিনিট বসুন। আমি এখনই আসছি” বলে আবার বাইরে চলে গেল।


______________________________
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply
#68
(Upload No. 88)

শঙ্কর আবার চেয়ারে বসে অভির বুকিংএর ব্যাপারে ভাবতে লাগল। কাল তাহলে একবার অভিকে নিয়ে এখানে আসতেই হবে। অনুপমাকে একবার ভোগ করতে না পারলে অভিকে সামলানো মুস্কিল হয়ে যাবে। কাজে ব্যাগরা দেবে। তাছাড়া পরশু দিন হোটেলের রেকর্ডিংটা করতে পারলে আর দু’দিনের মধ্যেই সিডিগুলো সব তৈরি হয়ে যেত। আর স্যারের হুকুম, দু তিন দিনের ভেতরেই এসাইনমেন্টটা কমপ্লিট করে ফেলতে হবে। নইলে সেকেণ্ড ফেজের অপারেশনের প্ল্যান করা যাবে না। তাই কাল অভিকে নিয়ে এখানে আসতেই হবে।

হঠাৎ একটা মেয়েলী গলার কথায় শঙ্করের ভাবনার সুতো ছিঁড়ে গেল। পেছনের দরজার বাইরে থেকে কেউ ডাকল, “সরজু ভাইয়া”।

শঙ্কর কাউকে দেখতে না পেয়ে পেছনের দরজার কাছে এসে দাঁড়াতেই দেখল সতের আঠার বছরের বেশ সুন্দরী একটা মেয়ে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে। শঙ্কর তাকে দেখেই বলল, “সরজু ভাইয়া তো একটু বাইরে গেছে। তুমি একটু বস। সে চা নিয়ে এখনই এসে পড়বে”।
 

মেয়েটা শঙ্করের পা থেকে মাথা পর্যন্ত নজর বুলিয়ে একটা চাবি বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “ওহ, সরি স্যার। কিন্তু এ চাবিটা তাকে দেবার ছিল”।

শঙ্কর হাত বাড়িয়ে বলল, “দাও, আমাকে দাও। আমি তাকে দিয়ে দেব’খন”।

মেয়েটা আর কিছু না বলে শঙ্করের হাতে চাবিটা দিয়ে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ স্যার”।
 

শঙ্কর চাবিটা হাতে নিয়ে জবাব দিল, “ঠিক আছে, আর কিছু বলতে হবে কি”?

মেয়েটা সুন্দর করে হেসে বলল, “না স্যার, আর কিছু বলতে হবে না। থ্যাঙ্ক ইউ স্যার” বলেই মেয়েটা পাশের সরু গলির মধ্যে দিয়ে রাস্তার দিকে এগিয়ে গেল।
 

উগ্র পারফিউমের গন্ধে শঙ্করের বুক ভরে গেল। শঙ্কর বাইরের দিকে এদিক ওদিক চোখ বুলিয়ে দেখল, আর কেউ নেই। সরজু ভাইয়া একটু আগে বলছিল যে তার বাড়ির ভেতর থেকে আরেক জুটি বেরিয়ে আসবে একটু বাদেই। এ মেয়েটাই কি সে? কিন্তু এর সাথে তো আর কেউ নেই। ছিমছাম চেহারার মেয়েটা দেখতে শুনতে বেশ ভালই। বয়স খুবই কম মনে হল। হয়ত এখনও কলেজের গণ্ডি পার হয়নি। এরও বেশভূষা দেখে সচ্ছল ভদ্র পরিবারের মেয়ে বলেই মনে হল তার। এও কি কোন পয়সার বিনিময়ে কোনও পুরুষের মনোরঞ্জন করতেই এখানে এসেছিল?
 

এমন সময়ে দোকানের সামনের কাউন্টারের দিক থেকে আরেক বার মেয়েলী গলা শোনা গেল, “স্যার, একটু এদিকে আসবেন, প্লীজ”।

শঙ্কর চেয়ার থেকে উঠে কাউন্টারের দিকে চেয়ে দেখতে পেল সেই মেয়েটাই কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। শঙ্কর কাউন্টারের কাছাকাছি গিয়ে বলল, “সরি, সরজু ভাইয়া না এলে তো আমি কিছু ডেলিভারি দিতে পারব না”।

মেয়েটা খুব সুন্দর করে হেসে বলল, “না স্যার, সে জন্যে নয়” বলে তার ব্যাগের ভেতর থেকে ছোট্ট একটা পার্স বের করে তার ভেতর থেকে চারশ টাকা বের করে বাড়িয়ে ধরে আগের মতোই মিষ্টি করে হেসে বলল, “আমি আর দেরী করতে পারছি না। এটা সরজু ভাইয়াকে দিয়ে দেবেন প্লীজ”।

শঙ্কর হাত বাড়িয়ে টাকাটা নিতে নিতে বলল, “কিন্তু সরজু ভাইয়াকে কি বলে টাকাটা দেব আমি”?

মেয়েটা বলল, “আপনি শুধু তাকে বলবেন যে বাবলী যাবার সময় এ চাবি আর টাকাটা দিয়ে গেছে, তাহলেই হবে। থ্যাঙ্ক ইউ স্যার” বলেই বাঁ দিকে চেয়ে অন্য কাউকে উদ্দেশ্য করে বলল, “আসুন স্যার”।

মেয়েটা রাস্তার দিকে হাঁটতে শুরু করতেই শঙ্কর দেখতে পেল একজন ত্রিস পঁয়ত্রিশ বছরের যুবক সেই মেয়েটার পাশাপাশি হেঁটে যাচ্ছে।
 

আর প্রায় ঠিক সাথে সাথেই পেছনের দরজা দিয়ে সরজু চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ঢুকে জিজ্ঞেস করল, “ওখানে কি করছেন শঙ্কর ভাইয়া। এদিকে আসুন। নিন, চা খান”।

সরজু শঙ্করের হাতে চায়ের কাপ তুলে দিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কেউ এসেছিল নাকি”?

শঙ্কর তার হাতে ধরা টাকা আর চাবিটা সরজুর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “হ্যা একজন কলেজের ছাত্রী এসেছিল। নাম বলল বাবলী। আপনি নেই দেখে আমার হাতে এ চাবি আর এই চারশ টাকা দিয়ে গেল আপনাকে দেবার জন্য। নিন”।

সরজু ভাইয়া জিনিসদুটো নিয়ে দোকানের একটা ড্রয়ারে রাখতে রাখতে বলল, “চারশ টাকা দিয়ে গেছে? তার মানে বিছানার চাদরটাকে নষ্ট করে গেছে”।

শঙ্কর আবার নিজের চেয়ারে বসতে বসতে জিজ্ঞেস করল, “বিছানার চাদর, মানে”?

সরজুও তার কাঠের টুলে বসতে বসতে বলল, “মানে আর কি? মস্তি করতে গিয়ে আমার বিছানার চাদরটাকে হয়ত ভিজিয়ে ফেলেছে, বা তাতে কোন দাগ ফাগ লাগিয়ে ফেলেছে। ওটাকে ধুতে হবে। তাই একশ টাকা বেশী দিয়েছে। কিন্তু মেয়েটা চলে গেল? আমি তো ভাবছিলাম। আপনার সাথে তার কথা একটু বলিয়ে দেব”।

শঙ্কর একটু হেসে বলল, “তার মানে, এ মেয়েটাও কাউকে সাথে করে এসে মস্তি করে গেল আপনার ঘরে”?

সরজু ভাইয়া বলল, “হাঁ, সেটাই তো। ওর কলেজের এক মাস্টারজীর সাথে এসেছিল আজ। বহত চালু মেয়ে আছে। বড়ে ঘর কি। সির্ফ মস্তি করতে আসে। একটু কথা বললেই বুঝতে পারতেন আপনি”।
 

শঙ্কর চা খেতে খেতে বলল, “থাক সরজু ভাইয়া। সকলের খবর নেবার আর কি দরকার আমার। আপনি আছেন, অনুপমা ভাবী আছে। এই আমার কাছে যথেষ্ট। তবে আমার বন্ধুর জন্য বুকিংটা করে যেতে পারলে ভাল হত”।

সরজুও চা খেতে খেতে বলল, “দেখুন শঙ্কর ভাইয়া, আমাদের এ বিজনেসের নিয়ম মাফিকই আমি কথাটা বলেছি আপনাকে। তবে শুনুন, আপনার ওপর আমার ভরোসা আছে। আপনি যদি বলেন যে কোন ধরণের ঝুট ঝামেলা হবে না, তাহলে আমি একটা টিকিট দিতে পারি। তবে কনফার্মেশনটা কিন্তু কাল সকালেই দিতে পারব। এর আগে কিন্তু পারব না”।

শঙ্কর মনে মনে আশান্বিত হয়ে জবাব দিল, “না না সরজু ভাইয়া। কোনরকম ঝুট ঝামেলা হবার তো কোন প্রশ্নই নেই। আমার ওই বন্ধু একটা হোটেলে উঠেছে। কাল ওর কাজ শেষ হয়ে যাবে। পরশু দিনের ট্রেনে রিজার্ভেশন হয়ে গেছে ওর। ট্রেন সন্ধ্যার সময় ছাড়বে। তাই অনুপয়া ভাবীর সিনেমা দেখেই ও চলে যাবে বলে ভেবেছে”।
 

সরজু বলল, “তবে একটা কথা আপনাকে রাখতে হবে। অনুপমা ভাবীকে আপনি এ ব্যাপারে কিছু বলবেন না। সে যদি জানতে পারে যে আমি কাস্টমারের সাথে কথা না বলেই টিকিট দিয়েছি তাহলে কিন্তু লফরা হয়ে যাবে”।

শঙ্কর সরজুর হাত ধরে বলল, “না না, সরজু ভাইয়া। আমি অনুপমা ভাবীকে এ ব্যাপারে কিছুই বলব না” বলে নিজের পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে দেড়শ টাকা সরজুর হাতে দিল।

সরজু টাকাটা পকেটে পুরে বলল, “হাঁ শঙ্কর ভাইয়া, অনুপমা ভাবীকে এই বুকিং নিয়ে আপনি কোন কথা বলবেন না। আর কনফার্মেশনটাও আমি আপনাকেই জানিয়ে দেব। সেটা আপনার বন্ধুকে আপনি জানিয়ে দেবেন, কিন্তু আপনার বন্ধুর ফোন নাম্বারটাও আমাকে দিয়ে যাবেন। কারন অনুপমা ভাবী আপনার বন্ধুর কাছে ফোন করে জেনে নেবে কখন কোথায় যেতে হবে তাকে”।
 

শঙ্কর অভির ফোন নাম্বার দিয়ে, আর চা খেতে খেতে আরও কিছু টুকটাক কথা বলে সরজুর দোকান থেকে বেরিয়ে এল।
 

***************

সন্ধ্যে প্রায় সাতটা। রোজ বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে সাড়ে ছ’টা সাতটা অব্দি মহিমা যোগা এক্সারসাইজ করে। আজও তার ব্যতিক্রম হয় নি। যোগা করে স্নান সেরে সে তার ল্যাপটপ আর মোবাইল দু’খানা হাতে নিয়ে তাদের ছাদে চলে আসে। তার ঘরের সারাক্ষণের কাজের ঝি কমলা তার আগেই ছাদে টেবিল চেয়ার পেতে দেয়। আর টেবিলের ওপর ব্রাণ্ডির বোতল, গরম জলের ফ্লাস্ক, মিনারেল ওয়াটারের বোতল আর গ্লাস রেখে যায়। মহিমা ছাদে উঠে নিজের মোবাইল দুটো চালু করে দেয়। সাড়ে পাঁচটা থেকে সাতটা অব্দি তার দুটো মোবাইলই সুইচ অফ করা থাকে। শুধু নিচের ঘরে ল্যাণ্ডলাইন ফোনটাই চালু থাকে। কিন্তু এ সময়টাতে তার স্বামী অরিন্দমও বাড়ি থাকে না। তাই কোনও ফোন এলে কমলাই সেসব রিসিভ করে। প্রয়োজনীয় কথাগুলো সে পড়ে মহিমাকে জানিয়ে দেয়। তারপর ছাদে এসে রাত সাড়ে আটটা অব্দি একটু একটু করে ড্রিঙ্ক করতে করতে নিজের মোবাইল গুলোতে বিভিন্ন জনের সাথে কথা বলে যায়। কখনো কখনো মহিমা রাত ন’টা অব্দি ছাদেই বসে থাকে।
 

সাতটা থেকে সাড়ে আটটা অব্দি কমলাও একটু বিশ্রাম নিতে পারে। এ সময়টায় তার মালকিন তাকে আর ডাকাডাকি করে না। আর এতবড় বাড়িতে তো আর কেউ নেই। মহিমা আর অরবিন্দের দুই সন্তান। এক ছেলে আর এক মেয়ে। মেয়েটা বড়। মেয়ে আর ছেলে দু’জনেই পড়াশোনার সুবাদে ব্যাঙ্গালোর আর আহমেদাবাদে চলে গেছে। কলেজের ছুটি ছাটা ছাড়া তারা আর এখানে আসে না। তাই পুরো বাড়িটাই প্রায় ফাঁকা। খুব বেশী বড় না হলেও ২৩০০ স্কয়ার ফুট এরিয়ার ওপর তিনতলা আধুনিক ডিজাইনের বিল্ডিংটার গ্রাউণ্ড ফ্লোরে কতগুলো দোকান আর গোডাউন ভাড়া দেওয়া আছে। দোতলায় ছেলে মেয়েদের আলাদা আলাদা বাথরুম এটাচ করা দুটো বেডরুম রুম আর স্টাডি রুম ছাড়াও ড্রইং রুম, কিচেন আর ডাইনিং রুম আছে। আর আছে একটা মাঝারি সাইজের একখানা হলঘর, আর দুটো কমন টয়লেট আর মেড সারভেন্টের থাকবার ঘর। আর তিনতলায় বিশাল কিচেন, পাশাপাশি দুটো বেডরুম, একটা বড় হলঘর, গেস্ট রুম আর একটা স্টোর রুম। ছাদের ওপরের পেছনের দিকটা জলের ট্যাঙ্কি ডিটিএইচ ডিশ, পাওয়ার সাপ্লাই জেনারেটর সেট আর এসির কিছু প্লান্ট বসানো আছে। লিফট বসানো হয়নি এখনও, তবে প্রভিসনটা রাখা আছে। যখন খুব বেশী প্রয়োজন হবে তখন বসাবে বলেই ভেবে রেখেছে। ছাদের সামনের দিকের অর্ধেকটা পুরোটাই ফাঁকা। আর খুব রুচিসম্মত ভাবে সুন্দর করে সাজানো। দোতলার আর তিনতলার বেডরুমে, ড্রইং রুমে, গেস্ট রুমে আর হলঘর গুলোতেও এসি বসানো আছে। ছাদের ওপরেও পুরোটাই কভার করা। তাই বৃষ্টির দিনেও থাকতে কোন অসুবিধে হয় না। বাড়িটা বানাবার সময় মহিমার ইচ্ছে ছিল ছাদটাকে সুন্দর করে সাজাবে। সকাল বিকেল দু’বেলা ছাদে যোগাচর্চা করবে বলেই এভাবে বানিয়েছিল। কিন্তু প্রথম প্রথম কিছুদিন সেটা করতে পারলেও বছর দুয়েক বাদে বাড়িটার উত্তর আর দক্ষিণ দিকে দুটো মাল্টিস্টোরিড বিল্ডিং গজিয়ে ওঠবার পর সে আর ছাদে যোগা এক্সারসাইজ করতে পারে না। আশে পাশের ফ্ল্যাট গুলো থেকে প্রচুর মানুষের উঁকিঝুঁকি তার ছাদের খোলা হাওয়ায় যোগাচর্চা করার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন তাই সে তিনতলার বড় হলঘরটাতেই যোগাচর্চা করে।
 

বাড়ির সবকিছু ঝাড়পোছ করে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখবার জন্য আর বাজার করবার জন্য একটা ছেলে আছে। তার ডিউটি সকাল আটটা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা অব্দি। তাই বিকেল সাড়ে পাঁচটার পর থেকে বাড়িতে শুধু কাজের ঝি কমলা আর মহিমা ছাড়া এখন আর কেউই থাকে না। মহিমা রোজ সন্ধ্যের সময় ছাদে এসে বসবার পর কমলা এ সময়টাকে পুরোপুরি ভাবে নিজের মত করে উপভোগ করে। সে ঘণ্টা দেড়েকের জন্য বাড়ির বাইরে চলে যায়। আর এ ব্যাপারে তার মালকিনও তাকে ছাড় দিয়ে রেখেছে। তাই এ বাড়িতে সে খুব সুখেই আছে।
 

রোজকার মত আজও কমলা ছাদের ওপর টেবিল চেয়ার সাজিয়ে টেবিলের ওপর ব্র্যান্ডির বোতল, গ্লাস, মিনারেল ওয়াটারের বোতল আর গরম জলের ফ্লাস্ক সাজিয়ে দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নামতেই সিঁড়ির মাঝপথে মহিমার সাথে তার দেখা হল। মহিমা কমলাকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করল, “তুই নিচের ফোনের রিসিভারটা নামিয়ে রাখিস। আর দু’তলার মেইন দরজা লক করে যাস। তা কতদুর যাবি আজ? দুরে কোথাও”?
 

কমলা বলল, “না গো বৌদিদি আজ গ্রাউণ্ড ফ্লোরেই যাব শুধু। আর ন’টার আগেই চলে আসব”।
 

মহিমা একটা সিঁড়ি ওপরে উঠে আবার থেমে দাঁড়িয়ে বলল, “যেখানেই যাস খেয়াল রাখিস। দোতলার দরজা খুলে রেখে যাবি না। তা আজ কার কাছে যাচ্ছিস? ওই সুখলালের কাছেই”?

কমলা একটু হেসে বলল, “না বৌদিদি, মাধব অনেকদিন থেকেই চাইছিল আমাকে। আজ ওর কাছে যাব বলেছি”।
 

মহিমা সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে উঠতে বলল, “ঠিক আছে। যে ভাবে বললাম, সেভাবে আগে তিনতলার ফোনের রিসিভারটা নামিয়ে রাখবি। দোতলার দরজা লক করবি। তারপর যাবি। আর সাড়ে আটটা থেকে ন’টার ভেতর ফিরে আসবি”।

ছাদে এসে চেয়ারে বসে ল্যাপটপটা চালু করে তার সাথে একটা এক্সটারনাল হার্ড ডিস্ক কানেক্ট করে দিল। তারপর মোবাইল দুটো সুইচ অন করে দিতেই রতীশের কথা মনে পড়ল। একবার ভাবল, একটা ফোন করা যাক ওকে। ছেলেটার মুখে বৌদি ডাকটা শুনতে বড় মিষ্টি লাগে তার। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হল, না ও হয়ত বিরক্ত হতে পারে। ওকে বিরক্ত বা বিব্রত করা ঠিক হবে না। ভাবতে ভাবতেই তার প্রাইভেট মোবাইলটা বেজে উঠল। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল মিসেস বক্সীর ফোন। কল রিসিভ করে স্পীকার অন করে ফোনটা টেবিলের ওপর রেখে বলল, “গুড ইভিনিং মিসেস বক্সী, কেমন আছেন বলুন”।

মিসেস বক্সীর কর্কশ গলার জবাব শোনা গেল, “গুড ইভিনিং মহিমা। কাল একজন এসকর্ট দিতে পারবে”?

মহিমা মুচকি হেসে মিষ্টি করে বলল, “কেন পারব না মিসেস বক্সী? আপনাদের খুশী করাই তো আমার কাজ। কিন্তু আপনি তো মেল ফিমেল দুটোই পছন্দ করেন। কাল কী চাইছেন”?

মিসেস বক্সীর জবাব, “কাল একজন মেল পাঠিও”।

মহিমা বলল, “ঠিক আছে স্পেসিফিকেশন বলুন”।

মিসেস বক্সী বলল, “তোমার কাছে তো আর টিন এজার এসকর্ট নেই। একটা টিন এজার পেলেই ভাল হত। তবে বিলো থারটিই যেন হয়। আর টিডিএইচ হলে ভাল হয়”।

মহিমা বলল, “ওকে মিসেস বক্সী। আমি একটু দেখে নিই। কে কে এভেইলেবল আছে। তারপর আপনাকে কলব্যাক করছি। তবে আপনার বাড়িতেই পাঠাব তো না অন্য কোথাও”?

মিসেস বক্সী জবাব দিল, “হ্যা হ্যা বাড়িতেই পাঠিয়ে দিও। বিকেল চারটে নাগাদ, ওকে”?

মহিমা বলল, “ওকে মিসেস বক্সী, আপনাকে আমি খানিকক্ষণ বাদেই কলব্যাক করছি”।

ফোন বন্ধ করে ল্যাপটপের এক্সটারনাল হার্ড ডিস্কের একটা ড্রাইভের একটা ফাইল খুলে সেটার দিকে চোখ বোলাতে বোলাতে ব্রাণ্ডির বোতলটা খুলে গ্লাসে একটুখানি ঢেলে নিল। তারপর ফ্লাস্ক থেকে খানিকটা গরম জল ঢেলে গ্লাসটা হাতে ধরে অনুভব করল কতটুকু গরম হয়েছে। তারপর মিনারেল ওয়াটারের বোতল থেকে খানিকটা জল মিশিয়ে এক চুমুক খেতেই মোবাইলটা আবার বেজে উঠল। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল ‘মিঃ কাপাডিয়া কলিং’।

মহিমা কল রিসিভ করে বলল, “হ্যা মিঃ কাপাডিয়া, গুড ইভিনিং। বলুন আমাদের এসকর্ট সার্ভিস কেমন লাগল? খুশী হয়েছেন তো”?
 

ও’পাশ থেকে কাপাডিয়ার গলা শোনা গেল, “ভেরি গুড ইভিনিং মিসেস সেন। আর অনেক অনেক ধন্যবাদ এমন সুন্দর একটা এসকর্ট দেবার জন্যে। শি ওয়াজ মার্ভেলাস। থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ”।

মহিমা মিষ্টি সুরে জবাব দিল, “ইটস মাই প্লেজার মিঃ কাপাডিয়া। আশা করি ভবিষ্যতেও আপনি আমাদের এমন সার্ভিস দেবার সুযোগ দেবেন”।

মিঃ কাপাডিয়া বললেন, “ভবিষ্যতের কথা ছাড়ুন মিসেস সেন। আমি তো আজই আবার ওই মেয়েটাকেই চাইছিলাম। কিন্তু আপনার কাছে তো একদিন আগে বুকিং না করলে কাউকে পাওয়া যায় না। তাই বলছিলাম কি, আগামী কালের জন্যেও ওই মেয়েটাকেই পাঠান না আরেকবার। রাত আটটা থেকে ন’টা। আগের জায়গাতেই”।

মহিমা বলল, “সরি স্যার। কাল আর পরশু দু’দিনই ওর রাতের এডভান্স বুকিং হয়ে গেছে। তাই ওকে তো দিতে পারছিনা। তবে আপনি চাইলে অন্য কাউকে পাঠাতে পারি”।

মিঃ কাপাডিয়া একটু থমকে গিয়ে বললেন, “ওকে পাওয়া যাবে না”?

মহিমা বলল, “হ্যা মিঃ কাপাডিয়া। আমি তো সে’কথাই বলছি। কাল আর পরশু দু’দিনই ও রাতের বেলা এনগেজড আছে। এডভান্স বুকিং হয়ে গেছে ওর। তবে আমার কাছে আরও অনেক ও’রকম এসকর্ট আছে। আপনি রাজি থাকলে আমি তাদের ভেতর কাউকে পাঠাতে পারি। রেট একই হবে। আর সার্ভিসও যে ভাল পাবেন সে ব্যাপারে আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি”।
 

মিঃ কাপাডিয়া একটু অখুশী গলায় বলল, “ঠিক আছে, তবে তা-ই পাঠান। তবে দেখবেন ম্যাডাম, আমাকে নিরাশ করবেন না। সার্ভিসটা যেন ভাল পাই”।

মহিমা জবাব দিল, “সে ব্যাপারে আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। আপনি কাল সকাল দশটা নাগাদ ফিসটা পাঠিয়ে দেবেন আমার অফিসে। আর আপনার ফিসটা পেলেই আমি আপনাকে কনফার্ম করব। ঠিক আছে মিঃ কাপাডিয়া”?

মিঃ কাপাডিয়া বললেন, “ওকে মিসেস সেন। আমি দশটার দিকেই আমার লোকের হাতে টাকাটা আপনার অফিসে পাঠিয়ে দেব। বাই”।

ফোন বন্ধ করে আরেক চুমুক ব্রাণ্ডি খেয়ে মহিমা মনে মনে ভাবল, দিনে দিনে মধ্যবয়সী মহিলা আর পুরুষ ক্লায়েন্টের সংখ্যাই বেশী হচ্ছে। আর সবাই চায় কচি কাঁচা ছেলে মেয়ে। কিন্তু মহিমা কুড়ি বছরের নিচের কাউকে নিজের কাজে সামিল করে না। কিন্তু মিসেস বক্সীর মত পয়তাল্লিশ থেকে পঞ্চাশ বছরের মহিলারা প্রায় সকলেই সতেরো আঠারো বছরের ছোকরাদের সান্নিধ্যই বেশী পেতে চায়। আর তার জন্যে তারা দু’ঘন্টার জন্য একলাখ টাকা দিতেও প্রস্তুত আছে। এরা সকলেই বিশিষ্ট ধনী পরিবারের গৃহবধূ। পঞ্চাশ ষাট বছরের স্বামীদের দিয়ে নিজেদের শরীরের জ্বালা শান্ত করতে পারেনা বলে স্বামীর অর্জিত টাকা খরচ করে, লোকনিন্দার হাত থেকে বাঁচতেই মহিমার মত এসকর্ট প্রোভাইডারের কাছ থেকে ছেলে এসকর্ট ভাড়া নিয়ে নিজেদের তৃপ্ত করে।

নিজের মাথা থেকে চিন্তা সরিয়ে দিয়ে সে ফোন তুলে কন্টাক্ট লিস্ট দেখে একজনকে ফোন করে বলল, “হ্যা বিনয়, তুমি কাল বিকেলে ফ্রি আছ? একটা কল এটেণ্ড করতে পারবে”?

ও’পাশ থেকে একটা ছেলের গলা শোনা গেল, “হ্যা ম্যাডাম, কাল বিকেলে আমার কোন এপয়েন্টমেন্ট নেই। আপনার কাছে কোন রিকুইজিশন আছে কি”?
 

মহিমা বলল, “হ্যা কাল বিকেল চারটেয় দমদমের একটা জায়গায় যেতে হবে। পারবে”?

বিনয় বলল, “হ্যা পারব ম্যাম। তবে ক্লায়েন্ট মেল না ফিমেল”?

মহিমা জবাব দিল, “ফিমেল, নিয়ার এবাউট ফর্টি নাইন ফিফটি। একটু মোটার দিকেই। ঠিক যেমনটা তুমি পছন্দ কর”।
 

বিনয় বলল, “ওকে ম্যাম”।

মহিমা বলল, “ওকে বিনয়। তুমি কাল এগারটার পর আমার অফিসে চলে এস। আমি তোমাকে ডিটেইলস বুঝিয়ে তোমার চার্জ দিয়ে দেব, ওকে”?

বিনয় বলল, “ওকে ম্যাম”।

______________________________
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply
#69
(Upload No. 89)

মহিমা ফোন কেটে দিয়ে আবার আরেক চুমুক ব্রাণ্ডি খেয়ে ভাবল, রতীশ কাজে যোগ দিলে তার অফিসে বসে তার বাইরের এসকর্ট ব্যবসার ক্লায়েন্ট এবং এসকর্টদের সাথে কথা বার্তা বলতে তাকে আরও একটু বেশী সাবধানী হতে হবে। এমনিতে তার ইনস্টিটিউটের প্রায় সকলেই তার এ ব্যবসায় জড়িত থাকলেও একমাত্র বীথিকাই এসব সম্মন্ধে বেশী জানে। আর মহিমা নিজেও বীথিকাকে সবচেয়ে বেশী বিশ্বাস করে। যোগা ইনস্টিটিউটটা পুরোপুরি এসকর্ট ব্যবসার বাইরে হলেও, সকাল দশটা থেকে এগারোটা বারোটা অব্দি সে তার অফিসের চেম্বারে বসেই এ ব্যবসার সাথে যারা যুক্ত তাদের সাথে দেখা করে। কিন্তু রতীশ কাজে যোগ দিলে তাকে একটু সাবধান থাকতে হবে, যাতে রতীশের চোখে এ’সব ব্যাপার ধরা না পড়ে। ইনস্টিটিউটের নিচের তলার ঘরটাকেই এ কাজে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু তাতে করে তাকে বারবার ওপরনিচে ওঠানামা করতে হবে। তার চেয়ে বরং টাইমিংটা একটু পিছিয়ে নিলেই বেশী ভাল হবে। রতীশের ডিউটি সাড়ে দশটায় শেষ হবে। তারপর ইনস্টিটিউট বন্ধ করে এগারটার পর থেকে এসকর্ট আর ক্লায়েন্টদের ডাকতে হবে। তার কাজের সময় কিছুটা বেড়ে গেলেও, এটাই ভাল হবে বলে ভাবল। রতীশকে সে মিথ্যে কিছু বলেনি। তার যোগা ইনস্টিটিউটটা একমাত্র যোগার কাজেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বরুন সুজয় বীথিকা কবিতা এরা তার এসকর্টের কাজে সামিল থাকলেও ইনস্টিটিউট চলাকালীন কেউই এসকর্ট ব্যবসার ব্যাপারে কোন কথা বলে না। তবু ইনস্টিটিউটের কাজ শেষ হয়ে যাবার পর মহিমা নিজের চেম্বারে বসেই তাদের সাথে কথা বলে। তাদের সাথে টাকা পয়সার লেনদেন করে। ক্লায়েন্টদের পাঠানো লোকগুলোর সাথে কথা বলে। রতীশের চোখে যাতে এসব ব্যাপার ধরা না পড়ে, সেজন্যে রতীশ ইনস্টিটিউট ছেড়ে বেরিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত এসব ব্যাপার নিয়ে কারুর সাথে কথা বলা বন্ধ করতে হবে।
 

খালি গ্লাসটাতে আরো একবার ব্রাণ্ডি আর গরম জল মিশিয়ে নিয়ে মহিমা আরেকজনকে ফোন করবে বলে ফোন ওঠাতেই ফোনটা বেজে উঠল। মোবাইলের দিকে চেয়ে দেখেই কল রিসিভ করে বলল, “হ্যা প্রিয়া ডার্লিং, কেম ছ”?

প্রিয়া প্যাটেল। গুজরাটি মহিলা। মহিমার সমবয়সী। অরিন্দমের এক গুজরাটি বন্ধুর স্ত্রী। তবে তার সন্তান একটি। মেয়ে। চেন্নাইতে পড়ে। প্রিয়া জবাব দিল, “আরে রাখ তোর কেম ছ। শালা না চুদিয়ে না চুদিয়ে চুতে জং ধরে গেল। আর তুই জিজ্ঞেস করছিস কেম ছ”?

মহিমা হাঃ হাঃ করে হেসে বলল, “আরে বাপরে! তুই তো দেখছি খিস্তি করতে শুরু করলি রে! কেন সঞ্জয় কি তোকে চোদা একেবারে ছেড়ে দিয়েছে নাকি আজকাল”?

প্রিয়া বলল, “আরে ওই শালা ভেরুয়ার কথা বলে আমার মুডটা খারাপ করে দিস না তো। গত একমাসের মধ্যে একটা দিনও আমার চুতে লণ্ড ঢোকায়নি জানিস? কাল রাতে আর থাকতে না পেরে নিজেই ওর ওপরে চড়াও হয়েছিলাম। কিন্তু তাও চুতের জ্বালা ঠাণ্ডা করতে পারলাম না। একঘন্টা হাত মেরে আর চোসাচুসি করার পরেও ওর লণ্ড শক্তই হল না। শেষে ওকে দিয়ে চুত চুসিয়ে চুতের রস বের করে ওর মুখে ঢেলে দিয়ে একটু ঠাণ্ডা হয়ে তবে ঘুমাতে পেরেছি। তুই কিছু একটা ব্যবস্থা কর না। তোর হাতে তো এমন অনেক পাকা খেলোয়ার আছে। কাল একজনকে জুটিয়ে দে না আমাকে”।
 

মহিমা বলল, “এভাবে কেন বলছিস? তোকে আমি কখনও ফিরিয়ে দিয়েছি? যখন চেয়েছিস তখনই তো তোকে দিয়েছি আমি। হ্যা অবশ্য মাস খানেকের ভেতর তুই কাউকে চাস নি। সেটা কি আমার দোষ? তুই না চাইলে কি আমি তোকে চোদার জন্য কোন এসকর্ট পাঠাতে পারি? তাকে দিয়ে চোদাবি তুই আর পয়সাটা কি আমি দেব”?

প্রিয়া বলল, “আচ্ছা আচ্ছা শোন। সঞ্জয় কয়েকদিনের বিজনেস ট্যুরে দিল্লী যাচ্ছে। কাল একজনকে পাঠা না”।

মহিমা একটু ভেবে বলল, “কালই চাইছিস? দাঁড়া একটু ভেবে দেখি, কে লাইনে আছে। আচ্ছা তুই কি বাইরে কোথাও যেতে রাজি আছিস”?
 

প্রিয়া জিজ্ঞেস করল, “বাইরে মানে? কলকাতার বাইরে? না না, ওসব পারবনা রে। কোলকাতার বাইরে গেলে তো দু’ তিন দিনের জন্য যেতে হবে। না না অত পয়সা খরচ করতে পারবনা রে। তুই শুধু একঘন্টার জন্যে আমাকে একটা ভাল মাল দে”।

মহিমা বলল, “না রে কোলকাতার বাইরে নয়। শোন, গড়িয়াহাটের একটা হোটেলে যেতে পারবি? রাত আটটা থেকে ন’টা একঘন্টার জন্যে”?

প্রিয়া বলল, “গড়িয়াহাটে যাবার কথা বলছিস? তা পারব। কিন্তু মালটা কেমন? চুদে সুখ দিতে পারবে তো? আর তার রেট কত”?

মহিমা বলল, “ভাল মাল রে। পাঞ্জাবী মাল। অনলি থার্টি ইয়ার্স ওল্ড। আনমেরেড। বেশ পাওয়ারফুল। টল এণ্ড হ্যাণ্ডসাম। তবে ডার্ক নয়। ভাল সুখ পাবি। আর তার সাথে ফ্রি ডিনারও। রেট টুয়েন্টি। বল রাজি আছিস”?
 

প্রিয়া বলল, “সত্যি বলছিস? তাহলে তো ঠিক আছে। কিন্তু অন্য কোন ঝামেলা টামেলায় ফেঁসে যাব না তো”?

মহিমা বলল, “আরে না না। আমার কাজে কখনও কোন ঝামেলা হয় না। আমি বেছে বেছে কাস্টমার নিয়ে থাকি তা তো তুই জানিসই। কিন্তু তোকে কিন্তু এট লিস্ট টেন মিনিটস আগে সেখানে পৌছতে হবে। আর কোন ভাবেই এটা কেনসেল করতে পারবি না। তাহলে ওর কাছে আমার প্রেস্টিজ পাঙ্কচার হয়ে যাবে”।

প্রিয়া তাড়াতাড়ি বলে উঠল, “না না। কেনসেল হবে না। তুই বুকিং কনফার্ম করে দে। আমি আধঘন্টার ভেতর তোর ওখানে আসছি পেমেন্ট নিয়ে”।
 

মহিমা বলল, “ঠিক আছে আমি এরেঞ্জমেন্ট করছি। তবে কোডটা কিন্তু কাল দশটার পরেই দিতে পারব। আর শোন তুই এখনই আসিস না আমার এখানে। আমি একটু ব্যস্ত আছি। তুই ন’টার পর আয়”।

প্রিয়া জিজ্ঞেস করল, “অরিন্দমদা লাগাচ্ছে নাকি তোকে? ভাল ভাল, মনের সুখে চোদা। শালা তোর মত কপাল যদি আমি পেতাম রে”?

মহিমা হেসে বলল, “তা নয় রে। তোর অরিন্দমদা বাড়ি ফেরে রাত এগারোটায়। আমি একটু অন্য কাজে ব্যস্ত আছি রে। তুই ন’টা থেকে সাড়ে ন’টার মধ্যে আসিস। রাখছি এখন”।

ফোন রেখে গ্লাসের পানীয় অনেকটা গলায় ঢেলে নিয়ে ভাবল, ভালই হল। মিঃ কাপাডিয়ার কাছে তাহলে প্রিয়াকেই পাঠিয়ে দেওয়া যাবে। প্রিয়াকে পেলে কাপাডিয়াও নিশ্চয়ই খুশী হবে। এক ডিলে পঁয়ত্রিশ হাজার এসে যাবে তার হাতে। আর কাউকে কিছু পেমেন্টও করতে হবে না।
 

এমন সময় ফোনটা আবার বেজে উঠল। তাকিয়ে দেখল রিয়ার ফোন। ফোন কানে লাগিয়ে বলল, “হ্যা রিয়া বলো। অ্যাসাইনমেন্টটা কমপ্লিট করেছ”?

রিয়া বলল, “হ্যা ম্যাম, একঘন্টার সার্ভিস দিয়ে আমি এইমাত্র রিলিজ হলাম। আর সবকিছু স্মুথলি হয়ে গেছে”।

মহিমা জবাব দিল, “থ্যাঙ্কস রিয়া। কাল কোনও অ্যাসাইনমেন্ট নেবে তুমি? একটা বুকিং আছে। তুমি রাজি থাকলে তোমাকে দিতে পারি সেটা”।

রিয়া বলল, “ম্যাম, কাল হয়ত আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। ইউনিভার্সিটিতে কাল আমার বিকেল চারটে অব্দি ক্লাস আছে। আর তারপর বাবাকে নিয়ে চেকআপে যাবার জন্য ডাক্তারের সাথে এপয়েন্টমেন্ট করা আছে। তাই কাল কোন অ্যাসাইনমেন্ট নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না ম্যাম”।

মহিমা মিষ্টি গলায় বলল, “ওকে নো প্রব্লেম। তা ডাক্তার কি সাজেশান দেয় সেটা জানিও আমাকে। আর শোনো, তুমি ডাক্তারকে বলে দিও ডোনার খুঁজতে। পয়সার জন্যে ভেব না। পয়সা যা লাগে তা আমি দেব। পরে যখন সম্ভব হবে তুমি আমাকে সেটা ফিরিয়ে দিও। আর আমাকে কোনরকম ইন্টারেস্টও দিতে হবে না তোমাকে”।

রিয়া বলল, “জানি ম্যাম। আগেও তো আপনি আমাকে কম সাহায্য করেননি। তাই তো আপনার কোন অর্ডার আমি অমান্য করি না। আপনি ঠিক সময়ে আগেরবার সাহায্য না করলে বাবাকে হয়ত বাঁচাতেই পারতাম না আমি। কিন্তু ম্যাম, কালকের অ্যাসাইনমেন্টটা ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছি বলে আমার ওপর রাগ করবেন না প্লীজ”।

মহিমা বলল, “ইটস ওকে রিয়া। আমি কিচ্ছু মনে করছি না। তুমি তো জানই অসৎ পথে টাকা কামালেও আমি কখনও কাউকে তার ইচ্ছে বিরুদ্ধে কিছু করতে বাধ্য করি না। আর তাছাড়া তুমিই বা আমার সাথে মিলে এসব করছ কেন? তোমার বাবাকে বাঁচিয়ে রাখতেই তো তুমি স্বেচ্ছায় এ লাইনে এসেছ। তাই বাবার ট্রিটমেন্টে অবহেলা করে তুমি আমার অ্যাসাইনমেন্ট ফুলফিল কর, এটা আমিও চাই না। আমি অন্য কাউকে অ্যাসাইনমেন্টটা দিচ্ছি। তুমি ভেব না। তবে কাল ডাক্তারের সাথে কী কথা হয় সেটা জানিও”।
 

রিয়া বলল, “ওকে ম্যাম, জানাব। থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ ম্যাম। ছাড়ছি” বলে কথা বন্ধ করল।
 

রাত সাড়ে আটটার ভেতর সাতখানা অ্যাসাইনমেন্ট বুক হল। রোজ সন্ধ্যের পর এই সময়টুকু তাকে নতুন অ্যাসাইনমেন্ট বুক করার কাজেই মূলতঃ ব্যস্ত থাকতে হয়। আর পরের দিন সকালে অ্যাসাইনমেন্টগুলো এলট করে কনফার্মেশন দিতে হয় এসকর্ট আর ক্লায়েন্টদের। এসকর্টদের সবাইকে ক্লায়েন্টের ডিটেইলস দিয়ে তাদের পাওনা গণ্ডা মিটিয়ে বিদেয় করতে হয়। আর অ্যাসাইনমেন্টগুলো কমপ্লিট করে এসকর্টরা তাকে নানা রকম ফিডব্যাক দিয়ে থাকে দিনের বিভিন্ন সময়ে। তবে সকাল সাড়ে পাঁচটা থেকে সাতটা আর বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে সন্ধ্যে সাতটা অব্দি তার দুটো মোবাইলই সুইচ অফ থাকে। সে সময়টুকু সে নিজের যোগাভ্যাসের জন্য রেখে দিয়েছে। মোবাইলের ঘড়ি দেখে বুঝল সাড়ে আটটা বেজে গেছে। কমলা এখনও ওপরে এল না। সে কি এখনও ফেরেনি? কমলা প্রায় রোজই এমন সময়ে বাড়ির বাইরে যায়। আর ফিরে এসে কমলা ছাদে আসবার পরই সে নিজের ঘরে ফেরে। কমলার কয়েকজন যৌন সঙ্গী আছে। তাদের সাথে সময় কাটাবার জন্যেই এ সময়টুকু তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রথম দিকে কমলা দোতলায় তার নিজের রুমেই লোক ঢোকাত। কিন্তু এটা জানবার পরেই সে কমলাকে পরিস্কার ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিল যে এ বাড়িতে ও’সব করা চলবে না। কমলার যৌনসঙ্গীদের সাথে মুখোমুখি করে আত্মমর্যাদার স্তরকে নিচে নামাতে চায় নি সে। তাই কমলাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাড়ির বাইরে গিয়ে করতে আদেশ দিয়েছে সে। আর রোজ যে সময়টা সে ছাদে বসে ক্লায়েন্টদের কল অ্যাটেণ্ড করে, ওই সময়টায় কমলার হাতেও কোন কাজ থাকে না বলে, ওই সময়টাতেই কমলাকে বাইরে যাবার ছাড় দিয়েছে সে।
 

কমলার সংসারে কেবল এক ছেলে ছাড়া আর কেউ নেই। ওর স্বামী বছর সাতেক আগে ওকে ছেড়ে ওদের বস্তিরই আরেকটা মেয়ের ঘরে থাকতে শুরু করেছে। সতের বছর বয়সে বিয়ে করে মাত্র আঠারো বছর বয়সেই সে মা হয়ে গিয়েছিল। এখন কমলার বয়স ঊণচল্লিশ। তার একুশ বছরের ছেলে একটা পানের দোকান চালায়। পাশের বাড়ির একটা নিঃসন্তান বিধবাকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে মাস ছয়েক আগে। মায়ের খোঁজ খবরও সে নেয় না। মহিমার এখানে কমলা তার অনেক বছর আগে থেকেই কাজ করত। মহিলা খুবই বিশ্বস্ত। তার ওপর চোখ বুজে বিশ্বাস করতে পারে মহিমা। ঘরদোর দেখা শোনা, রান্না বান্নার কাজ, লণ্ড্রীর ব্যাপার স্যাপার, ঘরের জিনিসপত্র কাপড় চোপর গোছগাছ করে রাখা সহ ঘরের সমস্ত কাজই সে করে। মহিমাকে কুটোটি পর্যন্ত নাড়তে হয় না। তবে দেহের ক্ষিদে তার এখনও ভরপুর আছে। শরীর স্বাস্থ্যও বেশ ভাল। আর মহিমার বাড়িতে আসবার পর ভাল খেয়ে পড়ে তার চেহারাটাও বেশ খোলতাই হয়েছে। গায়ের রং প্রায় কালো হলেও চেহারায় একটা জেল্লা এসেছে। আর বুক পেট কোমড় পাছা সবকিছুই পুরুষদের নজর কাড়ার মত। এখন তাদের গ্রাউণ্ড ফ্লোরের দোকানগুলোর বেশ কিছু মালিক বা কর্মচারির সাথে তার বেশ ভাব হয়েছে। আর এ বিল্ডিঙের আশেপাশের অনেক ছেলে ছোকরার সাথেও সে রাত আটটা থেকে ন’টা পর্যন্ত সময় কাটায়। যে সময়টায় বাড়িতে শুধু মহিমা ছাড়া আর কেউ থাকে না। এমনকি অন্য কাজের লোকটাও তখন থাকে না। আর মহিমা তো এ সময়ে দেড় দু’ঘন্টা ছাদেই কাটায়। আর তার স্বামী অরিন্দমও এ সময় বাইরেই থাকে।
 

****************

ছেলে মেয়েরা ব্যাঙ্গালোর আর আহমেদাবাদ চলে যাবার পর থেকে মহিমা নিজেদের বেডরুমের জানালা খোলা রেখেই ঘুমোতে শুরু করেছে। বছর চারেক আগে ছেলে ব্যাঙ্গালোরে চলে যাবার পর একদিন রাতে অরিন্দমের সাথে শরীরের খেলা খেলবার সময় মহিমা জানালার বাইরে কমলাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিল। সেদিন সে পরিস্কার বুঝতে পেরেছিল, কমলা তাদের স্বামী স্ত্রীর উদ্দাম যৌনতার খেলা দেখতে দেখতে নিজে স্বমেহন করে তৃপ্তি পেয়েছিল। তারপর দিন বিকেলে ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে গল্প করবার সময় মহিমা কমলাকে সে ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে কমলা প্রথম প্রথম অস্বীকার করলেও শেষ দিকে সত্যি কথাই বলেছিল। মহিমা জানতে চেয়েছিল, কমলা কারুর সাথে শরীরের খেলা খেলে কিনা। কমলা চুপ করে থাকলেও মহিমাই তাকে অভয় দিয়ে বলেছিল যে কমলা যে মাস খানেক আগে থেকে প্রায় রোজই সন্ধ্যের পরে কারো না কারোর সাথে সময় কাটায়, সেটা তার অজানা নয়। আর কমলাকে ছাড় দিয়ে বলেছিল, “লুকিয়ে চুরিয়ে যেভাবে যা করছিস, তাতে আমি আপত্তি করছি না। আমি জানি এ বয়সে পুরুষ মানুষের আদর ছাড়া মেয়েদের শরীর মন কোনটাই ভাল থাকে না। তবে কয়েকটা কথা মনে রাখিস। তুই যাদের সাথে ও’সব করিস তারা কেউ যেন আমার বাড়ির ভেতর না ঢোকে কোন দিন। নিজের ঘরে কাউকে ডেকে আনবি না। তাদের সাথে আমার যেন কখনো সামনা সামনি না হয়। তারা যেন জানতে না পারে যে আমি তোদের এ’সব জানি। আর নিজের পেট বাঁধিয়ে বিপদ ডেকে আনিস না। কোন রকম ঝুট ঝামেলা যেন না হয়। আর আমার ছেলে মেয়ে বা স্বামীর দিকে কোন নজর দিবি না। তারা কেউ যেন তোর এসব ব্যাপারের কোন কিছু জানতে না পারে”।

কমলা মহিমার পা ধরে বলেছিল, “ছিঃ ছিঃ বৌদিদি। এ তুমি কী বলছ? আমি কক্ষনো বড় সাহেব বা তোমার ছেলেমেয়েদের সাথে এসব করার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারব? না না বৌদিদি, তেমন কক্ষনও হবে না। আমি তোমার পা ছুঁয়ে শপথ করছি। আমি তোমার সব কথা মেনে চলব। কিন্তু তুমি আমাকে তাড়িয়ে দিও না বৌদিদি। তুমি তাড়িয়ে দিলে যে আমার আর মাথা গোঁজবার ঠাঁই হবেনা কোথাও”।
 

মহিমা নিজের পা ছাড়িয়ে নিয়ে বলেছিল, “থাক আর পা ধরতে হবে না। মুখে তো বলছিস স্বপ্নেও ভাবতে পারবি না। তবে রোজ রাতে পা টিপে টিপে আমাদের জানালার কাছে এসে দাঁড়াস কেন তাহলে বল? আর কাল রাতে তো আধঘন্টা ধরে আমাদের জানালার বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমাদের করাকরির সব কিছুই দেখেছিস। আমি জানিনা ভেবেছিস”?

কমলা আর তখন বলার মত কথা খুঁজে না পেয়ে মাথা নিচু করে বসে থেকেছিল। মহিমাই তখন আবার জিজ্ঞেস করেছিল, “কিরে কথা বলছিস না কেন এখন? আমি কি মিথ্যে কথা বলছি? দেখিসনি কাল তুই ও’সব”?

কমলা ভয়ে সিঁটিয়ে উঠে মহিমার পা জড়িয়ে ধরে বলেছিল, “আমাকে ক্ষমা করে দাও বৌদিদি। খুব ভুল করে ফেলেছি আমি। আর কক্ষনো এমনটা করব না। তোমাকে কথা দিচ্ছি আমি”।

মহিমা জিজ্ঞেস করেছিল, “তাহলে সত্যি কথাটা স্বীকার কর। দেখেছিলি তো”?
 

কমলা মাথা নিচু করে জবাব দিয়েছিল, “হ্যা বৌদিদি, দেখেছি। কিন্তু আর দেখব না”।

মহিমা আবার জিজ্ঞেস করেছিল, “পুরোটাই তো দেখেছিস, তাই না”?

কমলা আবার মাথা নিচু করে রেখেই মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানিয়েছিল। মহিমা তখন আবার প্রশ্ন করেছিল, “তুই কি এভাবে অন্যদের করাকরি দেখতে ভালবাসিস? আগেও অন্য কারুর দেখেছিস”?
 

কমলা জবাব না দিয়ে আগের মতই মাথা নিচু করে চুপ করে থেকেছিল। কিন্তু মহিমার ধমক খেয়েই স্বীকার করতে বাধ্য হয়ে বলেছিল, “হ্যা বৌদিদি। বস্তিতে থাকতে মাঝে মাঝে এর ওর ঘরে উঁকি মেরে এসব দেখতাম। কিন্তু তোমাদের এখানে আসবার পর অনেকদিন আর ও’সব করিনি”।

মহিমা তারপর জিজ্ঞেস করেছিল, “অন্যদের করাকরি দেখতে তোর ভাল লাগে”?

কমলা লজ্জায় মুখ নামিয়ে অস্ফুট স্বরে ‘হ্যা’ বলতে মহিমা জিজ্ঞেস করেছিল, “শুধু অন্যদের করাকরিই তুই দেখতি? না নিজেও কারুর সাথে করতে করতে অন্য কাউকে দেখাতি”?

কমলা লাজুক মুখে জবাব দিয়েছিল, “আমি যখন কারুর সাথে করতাম তখন অন্য কেউ দেখেছে কিনা জানিনা। আমার অজান্তে দেখে থাকতেও পারে। বস্তির ওই ভাঙা চোরা ঘরের যে কোন দিক থেকেই ঘরের ভেতরের প্রায় সবকিছুই তো দেখা যেত। কিন্তু অন্যদেরটা দেখতে আমার খুব ভাল লাগত”।
 

মহিমা তখন বলেছিল, “আচ্ছা, আমার দিকে তাকা। আর লজ্জা না করে আমার কয়েকটা কথার সত্যি সত্যি জবাব দে তো। বল দিবি তো? নইলে আমার বাড়ির কাজ তোকে ছাড়তে হবে”।

কমলা আবার মহিমার পা জড়িয়ে ধরে বলেছিল, “ও বৌদিদি, অমন কথা বলনা গো। আমি তো সত্যি কথাই বলছি তোমাকে। আর যা জানতে চাও তা-ও সত্যি বলব। তুমি যা করতে বলবে তা-ই করব। কিন্তু আমাকে তাড়িয়ে দিও না গো”।

মহিমা বলেছিল, “আমার কথার ঠিক ঠিক জবাব না দিলে তোকে ছাড়িয়েই দেব। আচ্ছা আগে বল তো বস্তিতে থাকতেও তুই নিজের স্বামী ছাড়াও অন্য কোন পুরুষের সাথে করেছিস”?

কমলা মাথা নিচু করে জবাব দিল, “বস্তিতে থাকতে বস্তির কয়েকজনের সাথে করেছি বৌদিদি। কিন্তু তোমাদের এখানে আসবার পর অনেকদিন কারুর সাথে কিছু করিনি। সত্যি বলছি বৌদিদি মাসখানেক আগে থেকেই নিচের দোকানগুলোর কয়েকজনের সাথে মাঝে মধ্যে করতে শুরু করেছি”।
 

মহিমা কমলাকে বাজিয়ে দেখবার জন্য জিজ্ঞেস করেছিল, “তোর ভয় করে না, এসব করতে? সবাই তো জানে যে তোর স্বামী তোকে ছেড়ে চলে গেছে। এখন যার তার সাথে এসব করে তোর পেটে যদি আবার বাচ্চা এসে যায়, তবে বাচ্চার বাপের সম্বন্ধে তুই কাকে কী বলবি? তখন তো বাইরের লোকেরা বলবে যে তুই যখন দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা আমাদের এখানেই থাকিস তখন অরিন্দম ছাড়া আর কে আর তোর সাথে ও’সব করবে? তখন আমাদের কী হবে ভেবেছিস”?

কমলা জিভে কামড় দিয়ে বলেছিল, “ছিঃ ছিঃ বৌদিদি, এমন ভেবোনা গো। এমনটা কোন দিনও হবেনা। তোমরাই তো আমার জীবনের সব গো এখন। তোমাদের কোনরকম অসম্মান করবার কথা বা তোমাদের বিপদে ফেলবার কথা আমি ভাবতেও পারি না। আর ভয় পেও না। পেটও আমার বাঁধবে না কখনো আর। তোমাদের মত লেখাপড়া না জানলেও মরদটা চলে যাবার পর থেকে যাদের যাদের সাথে ও’সব করেছি, তারা সবাই কনডোম পড়েই করে আমাকে। কনডোম ছাড়া কাউকে করতে দিই না”।
 

মহিমা বলল, “হু বুঝেছি, এখানে এসে এতদিন ধরে উপোষী থেকে থেকে তোর শরীরের জ্বালা বেড়েছে। তাই কারুর সাথে করতে না পেরে লুকিয়ে লুকিয়ে আমাদের করাকরি দেখতে শুরু করেছিস। এতে তোর খুব একটা দোষ নেই রে। মেয়েদের শরীরের জ্বালা যে কী জ্বালা সেটা আমিও বুঝি রে। তা তুই কি শুধু ছেলেদের সাথেই করেছিস? না মেয়েদের সাথেও করিস”?

কমলা জবাব দিয়েছিল, “বস্তিতে থাকতে দুটো কমবয়সী মেয়ের সাথে করতাম। ওদের বিয়ে হয়নি বলে শরীরের সুখ পেতেই আমার কাছে আসত। তবে তোমাদের এখানে আসবার পর আর সে’সবও কিছু হয়নি গো বৌদিদি”।

মহিমা অজ্ঞতার ভাণ করে বলেছিল, “আচ্ছা মেয়েরা মেয়েরা কিকরে করে রে? ছেলেদের মত ডাণ্ডা তো আর মেয়েদের থাকে না। তাহলে মেয়েদের ওই ফুটোটার ভেতরে কী ঢোকায়”?

কমলা এবার লজ্জা ছেড়ে খানিকটা বিজ্ঞের মত জবাব দিল, “সে তো ঠিকই। মেয়েদের শরীরেও যদি ও’রকম একটা করে ডাণ্ডা থাকত তাহলে বেশ হত। তবে বৌদিদি আঙুল ঠোঁট হাত মুখ পা আর জিভ দিয়ে করেই মেয়েরা খুব সুখ পায়। পুরুষদের সাথে করে যেমন সুখ পাওয়া যায়, তেমনটা না হলেও, এতেও একটা আলাদা ধরণের সুখ পাওয়া যায়। আমার তো বেশ ভালই লাগত। তবে মুখে সেটা আমি তোমাকে ঠিকমত বলে বোঝাতে পারবো না গো। তুমি যদি একবার কোন মেয়ের সাথে কর, তাহলেই বুঝতে পারবে কেমন মজা”।
 

মহিমা একটু লজ্জা পাবার ভাণ করে বলেছিল, “ধ্যাত, কী সব আজে বাজে কথা বলছিস? আমি এখন অন্য কোন মেয়েকে ডেকে আনব আমাকে সুখ দিয়ে মজা বোঝাবার জন্য? আমাদের বাড়ির আশেপাশে তো প্রায় বাজার। সব সময় লোকের ভিড়ে গিজগিজ করছে। কে কোত্থেকে আমার ঘরে একটা মেয়েকে ঢুকতে দেখবে। তারপর অরিন্দমের কানেও কথাটা চলে যাবে। তখন সংসারে অশান্তি শুরু হবে। না না বাবা, আমার ও’সবের দরকার নেই। আমি অরিন্দমকে নিয়েই সুখে আছি। ও তো রোজ রাতেই আমাকে করে। ঘুমোবার আগে বা ঘুম থেকে হঠাৎ জেগে উঠেও কখনো কখনো করে। আর মাঝে মাঝে ভোর বেলাতেও করে। তাতেই আমি খুশী”।

কমলা এবার মহিমার কাছে এসে তার হাঁটুর ওপর হাত রেখে জিজ্ঞেস করেছিল, “আচ্ছা বৌদিদি, আমি থাকতে তোমাকে অন্য কাউকে খুঁজতে হবে কেন? আমি কি দেখতে শুনতে এতই খারাপ? অবশ্য আমি দেখতে কালো, তোমাদের বাড়ির কাজের ঝি। আমার মত একটা বস্তির মেয়ের সাথে তোমার ওসব করতে বোধহয় ইচ্ছে করবে না। হাজার হলেও আমি তো আর তোমাদের মত লেখাপড়া জানা মেয়ে নই। কিন্তু বৌদিদি, গরীব ধনী, অশিক্ষিত শিক্ষিত, যা-ই বল না কেন, গুদের জ্বালা সব মেয়েরই একই রকম। আর তোমার গুদে যখন আমার মুখ পড়বে, তখন তোমার মন থেকেও এ’সব ভাবনা উবে যাবে একেবারে দেখে নিও”।
 

মহিমা বলেছিল, “না না কমলা, তা নয় রে। তুই তো দিনে দিনে খুব সুন্দরী হয়ে উঠছিস। তোর গায়ের রঙ ফর্সা না হলেও ছেলে ছোকরারা তোকে দেখে তোর শরীরের দিকে কিভাবে তাকিয়ে থাকে, তা কি আমি জানিনা? কিন্তু তুই এত কষ্ট না করে আশেপাশের ফ্ল্যাটে যেসব মেয়েরা কাজ করে, তাদের ঘরে গিয়েই তো করতে পারিস। তা না করে তুই আমাদের করাকরি দেখে নিজের ফুটোয় আঙুল ঢুকিয়ে নাড়বি”?

______________________________
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply
#70
(Upload No. 90)

কমলা তখন মহিমার একটা ঊরুতে হাত বোলাতে বোলাতে বলেছিল, “না গো বৌদিদি। তোমাদের এ বাড়িতে ও’সব করলে আমার সাথে সাথে তোমাদেরও বদনাম হবে। আশেপাশের বাড়ির ঝি গুলোর মুখ খুব পাতলা। যাকে তাকে বলে বেড়াবে। আমি কি তোমাদের বদনাম করতে পারি? আর তাছাড়া আরেকটা সত্যি কথা বলছি। তোমার আর বড়সাহেবের করাকরি দেখতে আমার খুব ভাল লাগে। কম ব্যাটাছেলেকে তো দেখিনি। অনেককেই অনেক মেয়েমানুষের সাথে করতে দেখেছি। কিন্তু বড়সাহেব তোমাকে যেমন দারুণ ভাবে করে এমন ভাবে কোন পুরুষকে আমি করতে দেখিনি কোনদিন। আর তোমাদের করাকরি দেখতে দেখতে আপনা আপনিই আমার ভোদার রস বেরিয়ে যায়। আমাকে কখনো কখনো তো আঙুলও চালাতে হয় না। এমনি এমনি দেখতে দেখতেই রস বেরিয়ে যায়”।

এতক্ষণ ধরে এমন রসালো কথাবার্তা বলতে বলতে মহিমার শরীর ততক্ষণে বেশ গরম হয়ে উঠেছিল। তার প্যান্টিটা ভিজে উঠেছিল। সে নিজে তার উঠতি বয়স থেকে অনেক পুরুষের সাথেই মস্তি করেছে। মেয়ে মেয়েরাও যে সমকামিতার খেলা খেলে তৃপ্তি পায়, এটাও তার অজানা নেই। কিন্তু সে নিজে কখনও তেমনটা করেনি, বা বলা ভাল তেমন প্রয়োজনই হয়নি। সে ভাবল, কমলার সাথে একবার তেমন করে দেখলে মন্দ হয় না। তাই কমলা তার ঊরুতে হাত দিলেও সে কিছু বলে নি তখন। সে এক পায়ের ওপর আরেকটা পা তুলে বসে নিজের দু’ঊরু দিয়েই নিজের স্ফীত যৌনাঙ্গটাকে খানিকটা চেপে ধরবার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কমলা সেটা ভালভাবেই লক্ষ্য করেছিল।

মহিমা রোজকার মতই সালোয়ার কামিজ পড়ে ছিল। কমলা পোশাকের ওপর দিয়েই মহিমার ঊরুতে হাত বোলাতে বোলাতে জিজ্ঞেস করেছিল, “ও বৌদিদি, তোমার তো মনে হয় গরম চেপে গেছে গো। এখন তো সবে বিকেল। বড়বাবু তো ফিরবে রাত এগারোটায়। কিন্তু তোমার তো এখনই পাল খাওয়া দরকার মনে হচ্ছে”।

পাঞ্জাবী ললনা মহিমা কমলার খাস বাংলা কথার মানে ঠিকমত বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করেছিল, “কিসের কথা বলছিস তুই? পাল খাওয়া মানে”?

কমলা একটু হেসে বলল, “ওমা, তুমি পাল খাওয়া বোঝ না বৌদিদি? আচ্ছা বেশ শোন, গাই গরুগুলোর যখন ভোদা কুটকুট করতে শুরু করে, তখন তাদের ষাঁড়ের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। ষাঁড়টা তখন প্রথমে গাইটার ভোদাটাকে চাটে। তাতেই বুঝে যায় যে গাইটা পাল খাবার উপযুক্ত হয়েছে কিনা, মানে গাইটা চোদা খেতে চাইছে কিনা। সে যখন বুঝতে পারে যে গাইটাও সেটা চাইছে, তখন গাইটার ওপর ঝাঁপিয়ে উঠে নিজের লম্বা ধোনটাকে গাইটার ভোদার মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে চুদতে শুরু করে। এটাই হল পাল খাওয়া। এখন যে তোমার ভোদাটাও কুটকুট করছে, সে আমি খুব ভালই বুঝতে পারছি। তা বলছি কি বৌদিদি। একবার আমাকে সুযোগ দিয়েই দেখ না। তুমি দেখ, আমি তোমাকে কেমন সুখ দিই। পছন্দ না হলে না হয় আর কখনো করব না। চল, তোমার ঘরে চল”।

শিক্ষিতা সুন্দরী সেক্সী মহিমা লেসবিয়ানিজমের সব কিছু সম্মন্ধেই অবহিতা ছিল। কিন্তু খুব কম বয়স থেকেই পুরুষদের সান্নিধ্য উপভোগ করতে পারছিল বলেই মেয়েদের ওপর তার কোন মোহ জন্মায়নি। উঠতি বয়সে সে ক্লাসের সবগুলো মেয়ের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরী ছিল। আর পুরুষের ছোঁয়ায় তার কচি নারী শরীরটা বয়সের তুলনায় সব দিক দিয়েই অনেক সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছিল। তখন সহপাঠিনী মেয়েরা অনেকেই তার বুক আর নিম্নাঙ্গে হাত দিয়ে টেপাটিপি করত। সেও কখনো সখনো তার বান্ধবীদের বুকে বা দু’পায়ের ফাঁকে হাত গুঁজে দিত। কিন্তু তার কোমল নরম হাত পুরুষদের শক্ত লিঙ্গ ধরেই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল। তাই মেয়েদের শরীরের নরম মাংসপিণ্ডগুলো চেপে সে খুব একটা তৃপ্তি পেত না তখন। তাই কারুর সাথে লেসবিয়ানিজমের সুখ নিতে তার ইচ্ছে করেনি। কিন্তু সেদিন কমলার সাথে কথা বলতে বলতেই তার মনটা যেন উন্মুখ হয়ে উঠেছিল সেই ভিন্ন ধরণের স্বাদটা একটু চেখে দেখতে। তাই কথাটা একেবারে সরাসরি না বলে কায়দা করে কমলাকে পথে আনবার জন্যেই সে এতক্ষণ ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল।
 

তার চেষ্টা সফল হয়েছে দেখে সে কমলার কথার জবাবে বলেছিল, “না না, থাক। জীবনে কখনো এমনটা করিনি। এই বুড়ো বয়সে আর.... তাছাড়া তোর ঘেন্না করবে না আমার ওখানে মুখ দিতে”?

কমলা তখন বেশ সাহস দেখিয়ে মহিমার একটা ভারী স্তনের ওপর একটা হাত চেপে ধরে বলেছিল, “তুমি বুড়ি হয়ে গেছ? কী যে বলছ তুমি বৌদিদি। আমি তোমার ন্যাংটা শরীরটাকে তো কতদিন দেখেছি। তোমার পা থেকে মাথার সবকিছুই একেবারে পঁচিশ ত্রিশ বছরের ভরা যুবতীর মত দেখতে। তুমি বয়সে আমার থেকে বড় হলেও দেখে তোমাকে আমার থেকে অনেক ছোট বলে মনে হয়। আর ঘেন্নার কথা বলছ? তুমি একটি বার আমাকে সুযোগ দিয়ে দেখই না। তবেই বুঝতে পারবে আমার কতটা ঘেন্না হয়” বলতে বলতে মহিমার কামিজের নিচে আরেকটা হাত ঢুকিয়ে তার ভারী ভারী ঊরু দুটোর ভেতর জোর করে চেপে ঢুকিয়ে দিয়েছিল।
 

মহিমা কমলার সে হাতটাকে হাতে ধরে কাতর কন্ঠে বলে উঠেছিল, “আহ কমলা কী করছিস তুই। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে তো। মাথাটা কেমন যেন করছে। বুকটা ধরফর করছে। আহ, ছাড়” বলতে বলতে সে নিজের দু’পায়ের জোড়টা অনেকটা আলগা করে দিয়েছিল।

কমলা একহাতে মহিমার একটা ভরাট স্তন টিপতে টিপতে অন্য হাতে শালোয়ার সহ মহিমার পুরুষ্ট নিম্নাঙ্গ চেপে ধরে বলেছিল, “সে কথাই তো বলছি। তোমার শরীরটা এখন পাল খেতে চাইছে। বড়সাহেব বাড়িতে থাকলে তো এখন একবার করে শান্ত হতে পারতে। কিন্তু এখন তোমার শরীরে যে যন্ত্রণা হচ্ছে তা শুধু আমিই শান্ত করতে পারি। আহ বৌদিদি, তোমার দুধগুলো টিপে কি আরাম পাচ্ছি গো। তোমার দুধ টিপতে টিপতে আমারই ভোদায় রস এসে যাচ্ছে গো। একবার সুযোগ দাও না বৌদিদি। আমি বলছি তুমি খুব সুখ পাবে”।

মহিমা কাতর কন্ঠে চাপা গলায় হিসহিসিয়ে বলেছিল, “ওহ, কমলারে, কী করছিস তুই? আমি যে আর থাকতে পারছি না রে। যা করতে চাস কর। আমাকে ঠাণ্ডা কর তুই। নইলে আমি বোধহয় মরেই যাব এখন”।

কমলা একইভাবে মহিমার শরীরের ওই বিশেষ সম্পদ দুটোকে টিপতে টিপতে জিজ্ঞেস করেছিল, “এখানেই শুরু করব বৌদিদি? না তোমার ঘরে যাবে”?
 

মহিমা আগের মতই কাৎরাতে কাৎরাতে জবাব দিয়েছিল, “আমার আর ওঠার ক্ষমতা নেই রে। হাতে পায়ে মনে হয় একফোঁটা শক্তি নেই। যা করবি এখানেই কর। আহ মাগো”।

কমলা সাথে সাথে সোফায় মহিমার পাশে বসে নিজের বুকের ওপর মহিমাকে টেনে নিয়ে মহিমার পিঠ জাপটে ধরে তার ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরেছিল। মহিমাও আবেগে কমলার পিঠের মাংস খাবলে ধরলেও নিজের অনভিজ্ঞতার পরিচয় দিয়ে ঠোঁট দুটোকে চেপে ধরেছিল। কমলা তার মালকিনের লোভনীয় শরীরটাকে নিজের চওড়া বুকের ওপর চেপে ধরতে ধরতে মহিমার চেপে রাখা ঠোঁট দুটোকে কিছুক্ষণ চেটে চুসে বলেছিল, “ও বৌদিদি, একটু হাঁ কর নাগো। তোমার মুখের ভেতরে আমাকে একটু আদর করতে দাও”।

মহিমা কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করেছিল, “আচ্ছা নে। কিন্তু আমি কী করব? এমনি বসে থাকবো? না তোর দুধ দুটো ধরবো”?

কমলা জবাব দিয়েছিল, “আমি তোমার সাথে যা যা করব তুমিও আমার সাথে সেসব কর। আর তোমার মন যা চায়, তাই কর। তবে একটু দাঁড়াও। জামা কাপড় গুলো আগে খুলে নেওয়া দরকার। নইলে খেলা জমবে না” বলে মহিমার বুকের ওপর হাত এনে তার ওড়নাটা এক ঝটকায় সরিয়ে দিয়ে তার কামিজের হুকগুলো খুলতে আরম্ভ করতেই মহিমা লাজুক ভাব দেখিয়ে নিজের বুকের ওপর দু’হাত জড় করে ধরে বলেছিল, “এই কমলা, আমার লজ্জা লাগছে রে”।
 

কমলা বলেছিল, “লজ্জা করলে তো পুরো মজা পাবেনা বৌদিদি। আচ্ছা দাঁড়াও, আমি নিজেই আগে ন্যাংটা হয়ে নিই। তাহলে তোমার লজ্জাটা কমবে” বলে সোফা থেকে উঠে ত্র্যস্ত হাতে নিজের শাড়ি ব্লাউজ ব্রা সায়া সবকিছু একে একে খুলে ফেলল। ভেতরে প্যান্টি ছিল না।
 

কমলার কালো শরীরের নগ্ন শোভা দেখে মহিমা সেদিন সত্যিই মুগ্ধ হয়েছিল। কোন মেয়ের সাথে এভাবে সমকামিতার খেলা না খেললেও অনেক মেয়েকেই সে নগ্ন দেখেছে। যে সব মেয়েরা তার এসকর্ট ব্যবসার সাথে যোগ দিয়েছে, তাদের নগ্ন শরীরটা দেখার পরেই সে তাদের রেট ফিক্স করত। তাই নগ্ন নারী শরীর দেখতে সে মোটামুটি অভ্যস্তই ছিল। কিন্তু সেদিন কমলার কালো শরীরটার দিকে তাকিয়ে তার মনে হয়েছিল, কোনও এক পটু ভাস্কর যেন তার নিপুণ হাতের কারিগরীতে আশ্চর্য সুন্দর একটা কালো পাথরের নারীমূর্তির নির্মান করেছে। নিটোল স্তন দুটো যতটা বড় বড় সে তুলনায় নিম্নমুখী হয়নি। বেশ জমাট বাঁধা। আর বুক থেকে পায়ের পাতা অব্দি কোথাও অতিরিক্ত মেদের চিহ্ন মাত্র নেই। চওড়া মাঝারি উচ্চতার ভরপুর শরীরে যেখানে যতটুকু মাংস থাকা উচিৎ ঠিক ততটুকুই আছে। সুঠাম মসৃণ পা দুটো একেবারে তেলতেলে। মনে হছিল হাত দিলে হাত পিছলে যাবে। ঊরু দুটোর আকৃতি প্রায় মহিমার নিজের ঊরুর মতই। অস্বাভাবিক মোটা বা ভারী না হলেও সত্যি দারুণ লোভনীয়। যে কোন পুরুষ এমন সুন্দর মসৃণ ঊরু দেখলেই জিভ বের করে চাটতে শুরু করবে। তবে দু’পায়ের ফাঁকে ফোলা নিম্নাঙ্গটা কুচকুচে ঘণ কালো যৌনকেশে ভর্তি। মহিমা এর আগে অব্দি কোন মেয়ের যৌনাঙ্গে এমন ঘণ যৌনকেশ দেখেনি।
 

কমলা নিজে পুরোপুরি উলঙ্গ হয়ে কোমরে হাত রেখে এক পায়ের ওপর ভর রেখে আরেকটা পা কে একটু ভাজ করে দাঁড়িয়েছিল। যেন পর্ণ ছবির কোন নায়িকা একটা বিশেষ ভঙ্গীতে দাঁড়িয়েছিল। মহিমার অবাধ্য চোখ দুটো একবার কমলার গলা থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত ভাল করে দেখার পর আবার হাঁটু ঊরু তলপেট বেয়ে ওপরে উঠতে উঠতে কমলার বুকের টসটসে স্তন দুটোর ওপর এসে থামল। চোখা চোখা খাড়া খাড়া স্তনদুটোকে মন দিয়ে দেখতে শুরু করেছিল। কমলার স্তন দুটোর সাইজ মহিমার নিজের স্তনের চেয়ে একটু ছোট হলেও নিপল দুটো একেবারে শক্ত হয়ে মহিমার দিকে উঁচিয়ে ছিল। কালো স্তনের বোঁটা দুটো আরো বেশী কালো দেখাচ্ছিল। মহিমার দুধে আলতায় গোলা বাদামী স্তনবৃন্তের চারপাশ ঘিরে হালকা কালচে গোলাপী রঙের যে এরোলা দুটো আছে, কমলার স্তনবৃন্তের চারপাশে সে এরোলাগুলো প্রায় চোখেই পড়ছিল না। এমন উত্তেজনা জাগানো কালো নারী শরীর মহিমা আগে আর কখনও দেখেনি। কমলার স্তন দুটো ছুঁয়ে দেখবার জন্য তার হাত নিশপিশ করছিল। একবার একটা হাত খানিকটা উঠিয়েও আবার নামিয়ে নিয়ে নিজের মুখটা কমলার স্তনের বেশ কাছে এনে ভুরু কুঁচকে এরোলা দুটোকে খোঁজবার চেষ্টা করেছিল সে। ভাবটা ছিল এমন, সে যেন ঘরের আবছা আলোয় ভাল করে দেখতে পাচ্ছিল না।

কমলা তখন বলেছিল, “ভাল মত দেখতে পাচ্ছ না বুঝি তাই না বৌদিদি? দাঁড়াও ঘরের বড় আলোটা জ্বেলে দিচ্ছি” বলে সরে গিয়ে আগে জানালা দুটো বন্ধ করে দিয়েছিল। তারপর ঘরের টিউব লাইটের সুইচটা অন করে দিতেই ঘরটা যেন ঝলমল করে উঠেছিল। আর উজ্জ্বল বিদ্যুতের আলোয় কমলার কালো শরীরটাও যেন চকচক করে উঠেছিল। কমলা এবার সোফায় বসে থাকা মহিমার এত কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছিল যে তার খোলা স্তন দুটো একেবারে মহিমার মুখের একেবারে সামনে এসে গিয়েছিল। মহিমা সে অবস্থায় বসে থেকেই জিভ বের করে দিলেই কমলার স্তন চাটতে পারত। কিন্তু মহিমা জিভ বের না করে কমলার স্তনবৃন্ত দুটোর দিকেই নির্নিমেষ চোখে তাকিয়ে ছিল। খুব আবছা একটা কালো বলয় যেন তার চোখে ধরা পড়ল। তার খুব ইচ্ছে করছিল কমলার স্তনের বোঁটা দুটো মুখে নিয়ে চুসতে। কিন্তু মন উন্মুখ হলেও তার সেটা করতে লজ্জা বোধ করছিল।
 

কমলা ঠিক তখনই জিজ্ঞেস করেছিল, “কিগো বৌদিদি? আমাকে দেখে খুব খারাপ লাগছে”?

মহিমার বুকটা তখন শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে সাথে ওঠানামা করতে শুরু করেছিল। তার প্যান্টিটা তখন তার নিজের যৌনরসেই ভিজে একেবারে চপচপে হয়ে গিয়েছিল। সে মনে মনে ভেবে অস্থির হচ্ছিল যে কমলা তাকে এভাবে জ্বালাতে শুরু করেছে কেন? কেন সে তার যৌনাঙ্গের ভেতর কিছু একটা ঢুকিয়ে তাকে সুখ না দিয়ে এভাবে দাঁড়িয়ে আছে। কমলার প্রশ্নের জবাবে সে চাপা গলায় প্রায় হাঁপাতে হাঁপাতে জবাব দিয়েছিল, “এমনভাবে কোন বয়স্কা মেয়েকে আমি ন্যাংটো দেখিনিরে কোনদিন। শুধু আয়নায় নিজেকেই দেখেছি। কিন্তু তোকে এভাবে দেখতে সত্যি খুব ভাল লাগছে রে। তুই তো বেশ সুন্দরী”।

কমলা একটু হেসে মহিমার দু’কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করেছিল, “শুধু ভাল লাগছে? আর কিছু করতে ইচ্ছে করছে না তোমার”?
 

মহিমাও নিজের অভিনয় বজায় রেখে জবাব দিয়েছিল, “মেয়েরা মেয়েরা খেলার সময় কী করতে হয় তা তো জানিনা রে। কিন্তু তোর এই টসটসে দুধ দুটোতে মুখ দিতে ইচ্ছে করছে। দেওয়া যাবে? মানে তুই কিছু মনে করবি না তো”?
 

কমলা হেসে বলেছিল, “ওমা, মনে করার আবার কী আছে গো বৌদিদি। বড়সাহেব তোমার শরীরটাকে নিয়ে যা যা করে, তুমি আমার সাথে সে’সব কিছু করতে পার। এভাবেই তো মেয়ে মেয়ে খেলতে হয়” বলে মহিমার গলা ধরে তার মুখটাকে নিজের বুকের কাছে এনে নিজের একটা স্তন তার মুখে ঢুকিয়ে দিয়ে বলেছিল, “নাও, তোমার যেভাবে খেতে ইচ্ছে করে খাও। আর আমার শরীরের অন্য যে কোন জায়গায় হাত দিতে ইচ্ছে করে, দাও। আহ, তোমার মুখের ভেতরটা কি গরম গো বৌদিদি! মনে হচ্ছে আমার দুধে গরম ছ্যাকা লাগছে। ওহ, তুমি তো খুব কামবেয়ে গো। কামবেয়ে মাগিদের মুখ আর ভোদার ভেতর এত গরম হয়ে থাকে”।
 

মহিমার যেন তখন ঘোর লেগে গিয়েছিল। জীবনে প্রথমবার কোন নারীর তুলতুলে স্তনের মাংসপিণ্ডে নিজের মুখের ভেতরটা ভরে যেতেই তার শরীরটা থরথর করে কাঁপতে শুরু করেছিল। আর যৌনাঙ্গের ভেতর থেকে যেন ঝরঝর ধারায় বন্যার বাঁধ ভাঙার মত উথালপাথাল করা স্রোত বেরোতে শুরু করেছিল। কমলার একটা স্তনকে মুখের ভেতর রেখেই সে গুঙিয়ে উঠে কমলার অন্য স্তনটা খপ করে চেপে ধরেছিল।

কমলাও মহিমার মাথাটা দু’হাতে জড়িয়ে ধরে আদর করতে করতে বলেছিল, “খাও বৌদিদি। কামড়ে কামড়ে জোরে জোরে চুসে চুসে খাও। তোমার যে ভাবে খেতে ভাল লাগে, সেভাবে খাও। যা করতে ইচ্ছে হয় করো। কোন সঙ্কোচ করো না। লজ্জা করো না। জানো তো ছেলেদের সাথেই করো বা মেয়েদের সাথে করো, চোদাচুদি করার সময় যত লজ্জা করবে, তত সুখ কম পাবে”।
 

মহিমাও তখন সব কিছু ভুলে গিয়ে পাগলের মত কমলার দুটো স্তনকে চুসতে আর ছানতে শুরু করেছিল। মেয়েদের স্তন চুষে মেয়েরাও যে কেমন মজা পায় সেটা সে ওই মূহুর্তে বুঝতে পেরেছিল। সেদিন সে প্রথম অনুভব করেছিল মহিলারাও তার কাছ থেকে ফিমেল এসকর্টের ডিমান্ড কেন করে থাকে। কমলা মহিমার মাথা একটা হাতে নিজের স্তনের ওপর চেপে ধরে অন্য হাতটা মহিমার পিঠে বোলাতে বোলাতে তার বগল তলার দিকে নিয়ে গিয়েছিল। মহিমার সুবিশাল স্তনদুটো ব্রা কামিজ পড়ে থাকা অবস্থাতেও তার বগলের দু’পাশে দু’দিকে ছড়িয়ে থাকে অনেকটা। কমলা মহিমার একটা স্তনের পাশে হাত বোলাতে বোলাতে বলেছিল, “ও বৌদিদি, তোমার কামিজটা খুলে দিই এখন? তাহলে আমিও তোমার দুধ দুটো নিয়ে একটু খেলতে পারতাম। খুলি? না এখনও লজ্জা পাচ্ছ”?
 

মহিমা কমলার স্তনটাকে চোসা ছেড়ে দিয়ে মুখটা সামান্য তুলে জবাব দিয়েছিল, “যা খুশী কর। কিন্তু আমি তোর দুধ চোসা ছাড়ছি না” বলেই আবার হাঁ করে কমলার স্তনটাকে মুখে পুরে চুসতে আরম্ভ করেছিল।

কমলা নিজের বুকের ওপর থেকে মহিমার মাথা না সরিয়েই তার দু’বগলের তলা দিয়ে দু’হাত বাড়িয়ে মহিমার কামিজের হুকগুলো খোলার চেষ্টা করেছিল। চোখ বন্ধ করে অন্ধকারে হাতড়াবার মত করে অনেক চেষ্টার পর সে সবক’টা হুক খুলে ফেলতে সক্ষম হয়েছিল। তারপর মহিমার টুকটুকে ফর্সা কাঁধ দুটোর ওপর থেকে কামিজের অংশ দুটো দু’দিকে অনেকটা নামিয়ে দিয়েছিল। তারপর একটা একটা করে মহিমার হাত দুটো এদিক ওদিক করে কামিজের হাতাগুলো হাত গলিয়ে বের করে নিয়েছিল। তারপর মহিমার ফর্সা মসৃণ মাংসল পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে মাথা ঝুঁকিয়ে মহিমার কাঁধ দুটোয় ঠোঁট আর জিভ বোলাতে শুরু করেছিল। কিন্তু মহিমা তার স্তন চোসা ছাড়ছে না বলে কমলা মালকিনের কাঁধের ওপর তার পুরোপুরি দক্ষতা দেখাতে পারছিল না। কিছুক্ষণ সে ভাবে কাটিয়ে সে মহিমার আটত্রিশ ইঞ্চি ব্রার হুকটা অনায়াসেই খুলে ফেলেছিল। তারপর মহিমার দু’বগলের পাশ দিয়ে অনেকটা করে ঠেলে বেরিয়ে আসা ভারী ভারী স্তনদুটোকে যতটা সম্ভব ধরে টিপতে আরম্ভ করেছিল। মহিমা যেভাবে তার বুকের ওপর হামলে পরে ছিল, এর চাইতে আর বেশী কিছু করবার সামর্থ্য তখন আর কমলার ছিল না।

প্রায় দশ মিনিট বাদে মহিমার চোয়ালে একটু একটু ব্যথা শুরু হতে সে নিজেই কমলার বুক থেকে মুখ উঠিয়ে নিয়ে নিজের গায়ে ঝুলতে থাকা ব্রাটাকে দুরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েই কমলাকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে নিজে উঠে কমলার মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে নিজেই কমলার মুখের ওপর নিজের একটা ভারী স্তন চেপে ধরে বলেছিল, “এবার তুই আমার দুধ খা”।

কমলার হাইট পাঁচ ফুটেরও নিচে। কিন্তু মহিমার হাইট বেশ ভাল। সাড়ে পাঁচ ফুটের ওপর। তার স্তনদুটো যদি কমলার স্তনের মত অতটা টাইট থাকত তাহলে সে’দুটো এ অবস্থায় কমলার কপালের নিচে নামত না। কিন্তু আটত্রিশ সাইজের বুক হলেও ছোটবেলা থেকেই নানা পুরুষের অত্যাচারে অত্যাচারে তার স্তন দুটো খুব নরম আর বড় হয়ে গিয়েছিল। আর অরিন্দমের খুব পছন্দের এ জিনিসদুটো নিয়ে প্রতি রাতে মাতামাতি করার ফলে স্তন দুটো বেশ খানিকটা ঝুলে গেছে। বিয়ের পর এতগুলো বছর কেটে গেলেও তার স্বামী এখনও তার শরীরটা নিয়ে খুব মাতামাতি করে। তার স্তনদুটো নিয়ে অরিন্দম এখনও ঘুমের ঘোরেও রীতিমত মাতামাতি করে। আর তাদের বিয়ের ঊণিশ বছর কেটে যাবার পর আবার নতুন করে সে নানা বয়সের নানা পুরুষের সাথে যৌনতার সুখ নিতে আরম্ভ করেছিল। আর তাই তার স্তনদুটো প্রায় কমলার গলা পর্যন্ত নেমে এসেছিল। তার একটা স্তনকে মুখের ভেতর নিতে কমলাকে নিজের মাথাটা একটু নোয়াতেই হয়েছিল। কিন্তু মুখে নেবার আগে, কমলা মহিমার একটা স্তনকে একহাতে নিচ থেকে তুলে ধরার চেষ্টা করতেই তার ছোট হাতের তালু থেকে মহিমার তুলতুলে স্তনটা এদিক ওদিক গড়িয়ে পড়তে চাইছিল। কমলা তখন দু’হাতের অঞ্জলিতে মহিমার একটা স্তন তুলে ধরে প্রায় লালচে স্তনটার দিকে চেয়ে দেখতে দেখতে অবাক গলায় বলে উঠেছিল, “ইশ মাগো, বৌদিদি, কী সুন্দর তোমার দুধ গো! এমন সুন্দর দুধ কোন মেয়ের হতে পারে! পাঞ্জাবী মেয়েদের দুধই বুঝি এমন সুন্দর হতে পারে। এবার বুঝতে পারছি, বড়বাবু তোমার দুধদুটোকে হাতের মুঠোয় পেলেই অমন পাগল হয়ে ওঠে কেন। ইশ, আমার তো চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে গো”!

মহিমার শরীরটা তখন পুরোপুরি তার আয়ত্ত্বের বাইরে বেরিয়ে গিয়েছিল। সে নেশাগ্রস্ত মহিলার মত স্বরে বলেছিল, “তোর বড়বাবু যখন আমাকে করে তখন তো প্রায়ই জানালায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তুই আমার আর আমার স্বামীর সব কিছুই দেখেছিস। তাতেও মন ভরেনি তোর? আচ্ছা সে কথা বাদ দিয়ে তুই যা খুশী কর কমলা। আমি আর থাকতে পারছিনা রে। আমাকে একটু শান্তি দে তুই”।


______________________________
[+] 2 users Like riank55's post
Like Reply
#71
Keep going. I am with you.
Astroner
[+] 2 users Like astroner's post
Like Reply
#72
(04-03-2020, 12:25 PM)astroner Wrote: Keep going. I am with you.

Thanks Dada. Thanks a lot for the encouragement...means a lot.
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply
#73
(Upload No. 91)

কমলা আর কোন কথা না বলে মহিমার স্তনটাকে তার হাঁ মুখের ভেতর যতটা সম্ভব ঢুকিয়ে নিয়ে আলতো আলতো করে কামড়াতে আরম্ভ করেছিল। আর মহিমাও কমলার মাথাটাকে দু’হাতে নিজের বুকের ওপর চেপে ধরে হিসহিস করতে শুরু করেছিল। আর একহাতে কমলার কালো টাইট একটা স্তনকে টিপতে শুরু করেছিল। কিছুক্ষণ পর কমলা চোসা শুরু করেছিল। আর মহিমার মনে হয়েছিল এমন সুন্দর ভাবে কোন পুরুষই তার স্তন চোসেনি কখনও। কমলা মহিমার স্তন চুসতে চুসতে মহিমার কোমড়ের দিকে দু’হাত নামিয়ে দিয়ে তার শালোয়ারের দড়ি খুলে দিয়েছিল। শালোয়ারটা আলগা হতেই ঝপ করে নিচে পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু কমলা সেখানে থেমে না থেকে মহিমার দু’পায়ের ফাঁকে হাত গলিয়ে দিতেই ভিজে প্যান্টি থেকে চটচটে রস কমলার হাতে এসে লেগেছিল। কমলা মহিমার অবস্থাটা বুঝতে পেরেই মহিমার অন্য স্তনটা মুখে নিয়ে চুসতে চুসতে প্যান্টির ইলাস্টিকের ভেতর দিয়ে হাত ঢুকিয়ে দিতেই মহিমা তার পা দুটো থেকে সালোয়ারটাকে ছাড়িয়ে নিয়ে নিজে থেকেই দু’ পা ফাঁক করে দিয়েছিল। কমলা মহিমার রসে মাখামাখি হয়ে থাকা নির্লোম যৌনাঙ্গটা হাতের মুঠোয় নিয়ে ছানতে ছানতে চোঁ চোঁ করে মহিমার স্তন চুসে যাচ্ছিল। মহিমা নিজের স্তনে আর যৌনাঙ্গে কমলার আদর খেতে খেতে পাগল হয়ে উঠছিল। সে কমলার মাথাটাকে নিজের বুকের ওপর জোরে চেপে ধরে কাতর স্বরে বলে উঠেছিল, “ওহ, কমলারে। আর পারছি না। এবার আমার চুতের জ্বলন ঠাণ্ডা কর রে। ওহ আহ আআহ”।
 

কমলা আর দেরী না করে মহিমাকে সোফায় চিৎ করে শুইয়ে দিয়ে তার দু’পায়ের মাঝে বসে বলেছিল, “তোমার শরীরটা কি সুন্দর গো বৌদিদি। এখন বুঝলাম, বড়সাহেব তোমাকে রোজ পাগলের মত চোদে কেন। এমন শরীর নিয়ে খেলতে পেলে পুরষ মানুষই হোক আর মাগিই হোক, সবাই পাগল হয়ে যাবে”।

মহিমা এবার রেগে উঠে মুখ ঝামটা দিয়ে বলেছিল, “আরে তুই কথা ছেড়ে কাজ কর তো। আমি মরছি আমার চুতের জ্বালায়, আর তুই শুধু শুকনো কথায় চিড়ে ভেজাবার চেষ্টা করছিস? নে তাড়াতাড়ি আমার রস খসা এবার”।

কমলা ধমক খেয়ে আর কোন কথা না বলে তার মালকিনের যৌনাঙ্গের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল। আর তারপর যা হয়েছিল সে কথা ভাবলে মহিমা আজও শিউড়ে ওঠে। কমলার সুদক্ষ প্রচেষ্টায় সে একের পর এক কতবার যে রাগমোচন করেছিল, তার হিসেবও সে রাখতে পারেনি সেদিন। একটা সময় তার মনে হয়েছিল সে বুঝি অজ্ঞান হয়ে গেছে। কিছু সময় পরে ঘোরের মধ্যেই তার মনে হয়েছিল কেউ যেন তার মাথা থেকে পায়ের হাঁটু পর্যন্ত খুব আদর করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। তার স্তনবৃন্ত গুলোকে কেউ যেন আলতো ভাবে কামড়াচ্ছিল। ভারী চোখের পাতা দুটো অনেক কষ্টে মেলে ধরে দেখেছিল কমলা তার স্তনদুটোর ওপর মুখ ঘসতে ঘসতে তার সারা শরীরে আদর করছে। সেও পরম আবেগে কমলাকে তার বুকে চেপে ধরে বলেছিল, “তুই আমাকে এ কী সুখ দিলিরে কমলা! জীবনে এত সুখ আমি কখনো পাইনি রে। তুই আজ থেকে আমার বন্ধু হয়ে গেলি। মাঝে মাঝে আমাকে এভাবে সুখ দিবি তো”?
 

কমলা মহিমার বুকে মুখে ঘসতে ঘসতেই জবাব দিয়েছিল, “দেব বৌদিদি, দেব। তুমি যখন চাইবে তখনই দেব। কিন্তু বৌদিদি তোমাকে সুখ দিতে দিতে তো আমার অবস্থা শোচনীয় হয়ে উঠেছে গো”।

মহিমা তখন নিজেই বলেছিল, “ঠিক আছে তুই শুয়ে পড়। আমি তোর মত করে দিচ্ছি। কিন্তু একটু অপেক্ষা কর। আমার হাঁপানিটা একটু থামতে দে। তবে না চুসতে পারব”।

কমলা মহিমাকে টেনে তুলে তার মুখটাকে নিজের বুকে চেপে ধরে বলেছিল, “তোমার ভোদার রস কী দারুণ সুস্বাদু গো বৌদিদি। আর কতবার ঢেলেছ! খেতে খেতে আমার পেট ভরে গেছে। মেয়েদের ভোদার রস যে এত সুস্বাদু হতে পারে তা তোমার ভোদার রস না খেলে বুঝতেই পারতাম না আমি”।

মহিমা কমলার একটা চোখা স্তনে মুখ ঘসতে ঘসতে অন্য স্তনটা হাতের মুঠোয় ধরে টিপতে টিপতে বলেছিল, “মেয়ে মেয়েতে করে যে এত সুখ পাওয়া যায়, সেটা তো আমিও জানতাম না রে। চল, শুয়ে পড়। দেখি তোকে সুখ দিতে পারি কি না আমি”।

কমলা সাথে সাথে চিত হয়ে শুয়ে নিজের পা দুটো ভাঁজ করে অনেকটা ফাঁক করে দিয়েছিল। আর মহিমা কমলার নিম্নাঙ্গের ওপর ঝুঁকে দেখল কমলার ঘন কালো যৌনকেশের জঙ্গল পুরোটাই কামরসে ভিজে একেবারে সপসপে হয়ে আছে। ভেজা যৌনকেশ গুলোতে হাত বোলাতে বোলাতে বলেছিল, “বাপরে! তোর এখানে যা জঙ্গল! এই জঙ্গলের ভেতর তোর ফুটোটা তো বোঝাই যাচ্ছে না রে”।

কমলা বলেছিল, “কি করব বৌদিদি। আমি যে নিজের বাল কামাতে পারি না। জীবনে কখনো বাল কামাই নি আমি। রামু, লক্ষণ ওরা সবাই বলে আমার বালগুলো কামিয়ে ফেলতে। কিন্তু আমি তো জানিই না কি করে সেটা করব”।

মহিমা দু’হাতে কমলার ভেজা যৌনকেশ গুলো দু’দিকে সরাতে সরাতে বলেছিল, “ঠিক আছে। কাল আমি তোর বাল কামিয়ে দেব” বলে নিজের মুখটা কমলার যৌনাঙ্গের ওপর চেপে ধরেছিল। কিন্তু কয়েক সেকেণ্ড বাদেই কমলায় যৌনকেশ তার নাসারন্ধ্রে সুড়সুড়ি দিতেই সে হেঁচে উঠেছিল। হাঁচি দিয়ে সে কমলার যৌনাঙ্গের ফোলা ফোলা পাপড়ি দুটোকে দুদিকে টেনে ফাঁক করবার চেষ্টা করতে বার বার তার হাত পিছলে যাচ্ছিল। কমলার যৌনাঙ্গে ঠিক মত মুখ দিতে না পেরে সে নিজেই বিব্রত হয়ে উঠেছিল। সে মনে মনে ভেবেছিল, আগে যৌনাঙ্গের ওপর লেগে থাকা রস গুলো চেটে খেয়ে নিলে বোধহয় সেটা আর হাত থেকে পিছলে যাবে না। সে উদ্দেশ্যে সে কমলার ফোলা পাপড়ি দুটো চাটতে শুরু করতেই আরেক বড় বিপত্তি হয়েছিল। তার জিভের মধ্যে কয়েক গাছা বাল ঢুকে যাবার ফলে সেগুলো মুখের মধ্যে চলে গিয়েছিল। কমলার যৌনাঙ্গ থেকে নিজের মুখটা তুলে নিয়ে থু থু করে মুখের ভেতর লেগে থাকা বালগুলো ফেলবার চেষ্টা করছিল সে।

অনভিজ্ঞা মালকিন তার গুদে মুখ বসাতে পারছে না দেখে কমলাই বলেছিল, “ও বৌদিদি, আমার ভোদাটা বালে ভরা বলে তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে না গো? এক কাজ কর। তোমাকে চুসতে হবে না। তুমি বরং তোমার হাতের আঙুল আমার ভোদার ভেতর ঢুকিয়ে আঙুল চোদা করো আমাকে”।

মহিমা তখন তার ডানহাতের মধ্যমাঙ্গুলটা কমলার যৌনাঙ্গের গহ্বরে ঠেলে ঢুকিয়ে দিয়ে হাত নাড়তে শুরু করেছিল। কমলার যৌনসুরঙ্গের ভেতর মহিমার আঙুলটা একেবারে হলহলে হয়ে আসা যাওয়া করছিল। মহিমা নিজেই বুঝতে পারছিল যে কমলার গহ্বরটা বেশ প্রশস্ত। তার একটা সরু আঙুলের ঘসায় কমলার তৃপ্তি হবে না। তাই সে মধ্যমার সাথে সাথে প্রথমে নিজের তর্জনী আর পরে অনামিকাটাকেও ঢুকিয়ে দিয়ে তিন আঙুল দিয়ে কমলার যৌনাঙ্গ মন্থন শুরু করতেই কমলা হাঁসফাঁশ করতে শুরু করেছিল। কিন্তু অনভিজ্ঞা মহিমা সে প্রক্রিয়াটাও বেশীক্ষণ চালাতে পারেনি সেদিন। তার হাত ব্যথা হয়ে এসেছিল। তখন সে কমলার যৌনাঙ্গ থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে বলেছিল, “উঃ, আমার হাত ব্যথা হয়ে গেছে রে কমলা। দাঁড়া তোর জন্যে আমি একটা ভাল জিনিস আনছি। তুই এভাবেই শুয়ে থাকিস” বলে উলঙ্গ অবস্থাতেই সিঁড়ি বেয়ে তিনতলায় নিজের ঘরে এসে তার আলমারি থেকে একটা রবারের ডিলডো বের করে নেমে এসেছিল। নিজে সে ডিলডোটাকে খুব বেশী ব্যবহার না করলেও অরিন্দমই একবার বিদেশ থেকে তার জন্যে এটা এনে দিয়েছিল। জিনিসটা দৈর্ঘে প্রস্থে একেবারে অরিন্দমের পুরুষাঙ্গের মত।

মহিমা কমলার কাছে ফিরে এসে দেখেছিল সে নিজেই ঠোঁটে দাঁত চেপে তার যৌনাঙ্গে আংলি করে যাচ্ছিল চোখ বুজে। মহিমা কোন কথা না বলে এক ঝটকায় কমলার হাতটাকে সরিয়ে দিয়ে রবারের ডিলডোটাকে তার যৌনাঙ্গের ভেতর ঢুকিয়ে দিতেই কমলা প্রায় চেঁচিয়ে উঠে বলেছিল, “ও বৌদিদি, কী করলে গো তুমি! আমার ভোদার মধ্যে এটা কী ঢোকালে গো? এটা যে বড়বাবুর ধোনের মত মোটা আর বড় বলে মনে হচ্ছে গো”!

মহিমা ডানহাতে খুব বেগে ডিলডো চালাতে চালাতে কমলার একটা স্তন বামহাতে জোরে টিপতে টিপতে বলেছিল, “আমার সরু সরু তিনটে আঙুলেও তোর ভোদার ফুটো ভরছিল না। তোর সুখ হত না। এবার তাই একটা নকল ধোন তোর ভোদায় ঢোকালাম। আরাম পাচ্ছিস না”?

কমলা কাৎরাতে কাৎরাতে জবাব দিয়েছিল, “হ্যাগো বৌদিদি, খুব আরাম লাগছে। চোদো চোদো। তোমার নকল ধোন দিয়েই চুদে চুদে আমার ভোদাটা ফাটিয়ে ফেল আজ”।

পাঁচ মিনিটেই কমলা চরম পুলক পেয়ে ছটফট করতে করতে নিজের যৌনাঙ্গের রস ছেড়ে দিয়ে নেতিয়ে পড়েছিল।

সে’দিনের পর থেকে কমলা তার সেক্স পার্টনার হয়ে গিয়েছিল। তাই প্রায় বিকেলেই সে এখন কমলার সাথে এমন সুখের খেলা খেলে। প্রথমদিন গোটা ঘটণাটাই প্রায় একতরফা হয়ে থাকলেও পরের দিন থেকে মহিমাও সক্রিয় ভূমিকা নিতে শুরু করেছিল। আর চুটিয়ে সমকামিতার মজা নিতে শুরু করেছিল।
 

তারপর থেকে কাজে কর্মে কমলার মনযোগিতা আরও বেড়েছে। তবে কমলার সাথে তার সমকামী সম্পর্ক অনেকদিন ধরেই অব্যাহত থাকলেও কমলা মহিমার বা তার পরিবারের কাছ থেকে অন্য কোনরকম ফায়দা তোলবার চেষ্টা করেনি। বরং মহিমার প্রতি আনুগত্য তার আরও বেড়েছে। তবে মহিমা নিজেই কমলাকে সন্ধ্যে বেলায় দেড় ঘন্টার ছুটি দিয়ে থাকে তাকে পুরুষ মানুষের সান্নিধ্য নিতে। তবে সেই সাথে মহিমার কিছু কড়া নির্দেশও কমলা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে। বৌদিদির নির্দেশেই সে এ বাড়ির বাইরে গিয়ে কোন পুরুষের সাথে সময় কাটিয়ে আসে। অনেকেই তাকে খুশী হয়ে দু’ পাঁচশ টাকাও দিতে চায়। কিন্তু তার বৌদিদির উপদেশ মাথায় রেখেই সে কারো কাছ থেকে একটি পয়সাও নেয় না। আর পয়সা নেবার তার দরকারই বা কি? তার আর্থিক আর দৈহিক সমস্ত প্রয়োজন তো তার বৌদিদিই মিটিয়ে থাকে। তাই বৌদিদির আর বড়বাবুর সব রকম যত্ন আত্যি করার পাশাপাশি সে বাড়ির সব কিছুর ওপর সর্বদা তীক্ষ্ণ নজর রাখে। সে বেঁচে থাকতে এ বাড়ির কারুর কোন ক্ষতি কাউকে করতে দেবে না, মনে মনে এমন প্রতিজ্ঞাই কমলা করেছে।
 

****************
 
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply
#74
(Update No. 92)

অনুপমার আজ প্রচুর ব্যস্ততা। দুপুরের পর থেকে বিকেল সাড়ে তিনটের মধ্যেই তার ঘরে দুজন খদ্দের এসেছিল। বেলা চারটের সময় একজনের একঘন্টার বুকিং আছে। সন্ধ্যে ছ’টা থেকে সাতটা আর তারপর তার সাড়ে সাতটা থেকে সাড়ে আটটার জন্য আরো দু’জন খদ্দেরের বুকিং আছে। আবার রাত ন’টা থেকে বাইরের এক কাস্টমারকে খুশী করতে যেতে হবে দু’ঘন্টার জন্যে। তবে ব্যস্ততা নিয়ে অনুপমার মনে কোন দুশ্চিন্তা নেই। কিন্তু দুপুরের পর আজকের প্রথম খদ্দের দুটোকে বিদেয় করতে করতে তার মেজাজটা বিগড়ে উঠেছিল। আজ তার প্রথম খদ্দের ছিল একটা বিহারী বুড়ো। বুড়োটার ক্ষমতা থাকলেও তার মুখে খৈনীর এমন বিশ্রী গন্ধ ছিল যে সে যখনই অনুপমার মুখের ওপর তার মুখ চেপে ধরছিল তখনই খৈনীর দুর্গন্ধে অনুপমার বমি বমি লাগতে শুরু করেছিল। অবশ্য এমন ধরণের অনেক খদ্দেরই এসে থাকে মাঝে মধ্যে। আর তাই নিজের আলমারিতে সে মাউথ ফ্রেশনার ডিওডোরান্ট পারফিউমের বিভিন্ন ধরণের স্প্রে আর কিছু নতুন টুথ ব্রাশ মজুত রাখে। প্রথম কাস্টমারটার মুখে একটা বিদেশী পারফিউমের শেষটুকু স্প্রে করে মুখের দুর্গন্ধ দুর করে তবে তাকে তার ওপরে চাপতে দিয়েছিল। কিন্তু তার পরের উড়িয়া খদ্দেরটার মুখেও এমন বাজে দুর্গন্ধ ছিলো যে অনুপমার পেটের নাড়িভুড়ি পর্যন্ত গুলিয়ে উঠেছিল। মাউথ ফ্রেশনার আর স্টকে ছিল না বলে, খিস্তি মেরে খদ্দেরের চৌদ্দ পুরুষের শ্রাদ্ধ করতে করতে নতুন একটা টুথ ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে তাকে দাঁত ব্রাশ করে নিতে বলেছিল। কিন্তু মিনিট দশেক পর মুখ ধুয়ে আসবার পরেও তার মুখের দুর্গন্ধ যায়নি দেখে অনুপমা উপুড় হয়ে শুয়ে খদ্দেরটাকে বলেছিল পেছন থেকে তাকে করতে। আধঘন্টা ধরে লোকটা অত্যাচার করার পর সে নিজেই সময় শেষ হবার আগেই চলে যেতে অনুপমা হাঁপ ছেড়ে বেচেছিল। বাথরুমে গিয়ে ভালো করে দাঁত ব্রাশ করে তড়িঘড়ি স্নান সেরে বেড়িয়ে তার পরের খদ্দেরের জন্য নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে নেবার প্রায় সাথে সাথেই তার ঘরের কলিং বেল বেজে উঠল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল, বেলা তিনটে পঞ্চান্ন। পরের খদ্দের এসে গেছে ভেবে সে দরজা খুলে অবাক হয়ে দেখল একজন বছর ত্রিশের এক মহিলা দু’কাধে দুটো বড় বড় ব্যাগ ঝুলিয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
 

অনুপমাকে দেখেই মহিলাটি হাতজোড় করে নমস্কার করে বলল, “নমস্কার বৌদি। কিন্তু সরি, এখানে তো আগে অন্য আরেক বৌদি থাকতেন। ও তারা বুঝি এ ফ্ল্যাট ছেড়ে অন্য কোথাও গেছে। সরি বৌদি। তবে আমি একজন সেলস গার্ল। কিছু কিছু বিদেশী ভাল কোয়ালিটির জিনিস এনে ডোর টু ডোর সেল করি। আগে এ ফ্ল্যাটে যে বৌদি থাকতেন সে আমার কাছ থেকে রোজই কিছু না কিছু নিতেন। তাই এসেছিলাম। তা আপনি কি এমন কিছু নিতে ইন্টারেস্টেড”?
 

অনুপমা জবাব দিল, “হ্যা আমরা এ ফ্ল্যাটে অল্প কিছুদিন হল এসেছি। কিন্তু আপনি কী ধরণের জিনিস বিক্রী করেন”?
 

মহিলা জবাব দিল, “কিছু কিছু বিদেশী পারফিউম, ডিওডোরান্ট, মাউথ ফ্রেশনার, জেল, স্প্রে, লুব্রিকান্ট, কনডোম, জি স্ট্রিং, লোকাল এনেস্থেটিক জেল, এন্টিসেপ্টিক লোশন, বিদেশী টুথ ব্রাশ, পেস্ট আর আরো অনেক বিদেশী জিনিস আছে বৌদি। ঘরের মেয়ে মহিলাদের খুব প্রয়োজনীয় আরো অনেক কিছুও আছে” বলেই অনুপমার কানের কাছে মুখ এনে বলল, “খুব ভাল কোয়ালিটির ডিলডো, ভাইব্রেটর আর ছেলেদের কাজের কিছু সেক্স টয়ও আছে। কিছু নেবেন”?

অনুপমা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল, “ভাল কোয়ালিটির জিনিস থাকলে ডিওডরান্ট আর মাউথ ফ্রেশনার স্প্রে নিতাম ঠিকই। কিন্তু আমার হাতে তো এখন সময় হবে না। এখনই একজন গেস্ট আসবেন আমার ঘরে”।

মহিলা জবাব দিল, “আমি আপনার খুব বেশী সময় নেব না বৌদি। আপনাকে আমি দু’একটা জিনিস দেখাচ্ছি”।

মহিলার পেছনের দিকে শঙ্করকে দেখতে পেয়েই অনুপমা বলল, “না থাক। আমার এখন সময় হবে না ভাই। আমার ঘরে গেস্ট এসে গেছেন। আপনি বরং আরেক সময় আসবেন”।

ততক্ষণে শঙ্কর সেলস গার্ল মহিলার ঠিক পেছনে এসে দাঁড়িয়ে বলল, “গুড আফটারনুন ম্যাডাম। কিছু কিনছেন বুঝি”?
 

অনুপমা কিছু একটা বলতে যেতেই সেলস গার্ল মহিলা পেছন ফিরে শঙ্করকে দেখে বলল, “হ্যালো স্যার। গুড আফটারনুন” বলে অনুপমার দিকে তাকিয়ে বলল, “বৌদি আমরা তো আর এক এলাকায় রোজ রোজ আসি না। মাসখানেক বাদেই হয়ত আবার এদিকে আসা সম্ভব হবে। তাই বলছিলাম, আমাকে দশটা মিনিট সময় দিন। এর ভেতরেই আমি আপনাকে আপনার পছন্দের জিনিস দিয়ে দিতে পারব”।
 

এবার শঙ্কর নিজেই মহিলার পাশ কাটিয়ে ঘরের ভেতর ঢুকতে ঢুকতে বলল, “নো প্রব্লেম ম্যাডাম। আপনি যা কিনতে চাইছেন তা কিনুন না। আমিও অনেকটা পথ হেঁটে এসেছি। আমি বিশ্রাম নিতে নিতে আপনার কেনাকাটা শেষ করে নিন। আর দশ পনের মিনিট দেরী না হয় হলই। কিচ্ছু হবে না”।
 

অনুপমা এবার সেলস গার্ল মহিলাটিকে বলল, “বেশ তাহলে, আপনি ভেতরে এসে বসুন। আমি স্যারকে এক গ্লাস কোল্ড ড্রিঙ্কস দিয়ে এসে না হয় দেখছি”।

সেলস গার্ল মহিলা হাতজোড় করে মিষ্টি হেসে বলল, “না বৌদি, আমি কারো ঘরের ভেতর ঢুকি না। মানে বোঝেনই তো অনেকেই সেলস গার্ল সেজে এসে লোকের ঘরে ঢুকে এটা ওটা নিয়ে পালিয়ে যায় আর আমাদের মত সেলস গার্লদের বদনাম হয়। আমি ভেতরে যাব না বৌদি। আপনি বরং আমাকে একটা মোড়া, টুল বা একটা চেয়ার টেয়ার দিন আমি দরজার সামনেই বসছি। আপনি স্যারকে ঘরে বসিয়ে ফ্রি হয়ে আসুন”।

অনুপমা আর কথা না বাড়িয়ে শঙ্করকে ডেকে ঘরের ভেতর ঢুকে গেল। ড্রইং রুমে ঢুকে চাপা গলায় শঙ্করকে বলল, “আবার এসেছেন বলে আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ স্যার। কিন্তু আপনি কি চারটের বুকিং করেছেন”?

শঙ্কর একবার ঘরের সামনের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা সেলস গার্ল মহিলার দিকে চোখের ঈশারা করে সোফার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে অনুপমার হাত ধরে এক ঝটকায় তাকে বুকের ওপর এনে তার ঠোঁটে ঠোঁট চেপে চুমু খেয়ে চাপা গলায় বলল, “ইয়েস ডার্লিং। বিকেল চারটে। সরজু ভাইয়া দুশ বাইশ”।

অনুপমাও শঙ্করের ঠোঁটে চুমু খেয়ে বলল, “চারটের সময় এক বাঙালী বাবু আসবেন দুশ বাইশ নাম্বার নিয়ে, এটা জানতাম। কিন্তু সেটা যে আপনি, তা জানতাম না। তবে স্যার, আপনাকে দশটা মিনিট একটু অপেক্ষা করতে হবে। কিছু মনে করবেন না প্লীজ। আপনার সময় আমি পুষিয়ে দেব”।

শঙ্কর অনুপমার শাড়ি ব্লাউজের ওপর দিয়েই তার স্তন দুটোকে আলতো ভাবে টিপতে টিপতে বেশ জোরে বলল, “ঠিক আছে ম্যাডাম। আপনি আপনার কাজটুকু সেরে নিন। আমি ততক্ষন একটু বিশ্রাম নিয়ে নিই। এ গরমে এতোটা পথে হেঁটে এসে সত্যি একটু ক্লান্ত লাগছে নিজেকে”।

অনুপমা চাপা গলায় ‘ছাড়ুন আমাকে’ বলেই স্বাভাবিক স্বরে জিজ্ঞেস করল, “এক মিনিট স্যার, আসছি আমি” বলে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ভেতরের দিকে ঢুকে গেল। মিনিট দুয়েক বাদেই একগ্লাস অরেঞ্জ স্কোয়াশ এনে শঙ্করের হাতে দিয়ে বলল, “এটা নিন স্যার। একটু বরফ মিশিয়ে দিয়েছি। এ গরমে ভাল লাগবে। আর প্লীজ দশটা মিনিট অপেক্ষা করুন”।
 

শঙ্কর গ্লাসটা হাতে নিয়ে টেবিলের ওপর রাখতে রাখতে অন্য হাতে অনুপমার একটা হাত ধরে নিজের কাছে টেনে নিল। তারপর দু’হাতে অনুপমার একটা স্তন দুদিক থেকে চেপে ধরে ফিসফিস করে বলল, “ঠাণ্ডা শরবত খাবার আগে তোমার এই গরম দুধ দুটো একটু খেতে দেবেনা ডার্লিং”? বলে হাঁ করে মুখটাকে একটা স্তনের কাছে নিতেই অনুপমা বাঁধা দিয়ে চাপা গলায় বলল, “কী করছেন স্যার। সবই তো পাবেন। কিন্তু এখন ব্লাউজটা ভিজিয়ে দিলে আমি ও মেয়েটার কাছে যাব কেমন করে”?

শঙ্কর অনুপমার স্তন দুটোকে গাড়ির হর্ণ টেপার মত করে তিন চার বার চেপে তাকে ছেড়ে দিতেই অনুপমা নিজের বুকের ওপরের শাড়ি ঠিক করতে করতে বলল, “স্যার এ ঘরে এসি নেই। আপনি চাইলে ভেতরের রুমটায় বসতে পারেন। আমি ওই কাজটুকু সেরে আসছি” বলে সামনের দরজার দিকে এগিয়ে গেল।
 

শঙ্কর সাথে সাথে পা টিপে টিপে সামনের দরজার দিকে কিছুটা এগিয়ে যেতেই সেলস গার্ল সেজে আসা সুপর্ণার সাথে তার চোখাচোখি হল। হাতের বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে সে পেছন ফিরে ড্রয়িং রুমে এসে ঢুকল। তারপর আর সময় নষ্ট না করে ড্রইং রুমের দু’কোনায় বসিয়ে রাখা স্পাই ক্যামেরা দুটো খুলে নিজের পকেটে পুরে ফেলল। তারপর কোনরকম শব্দ না করে বেডরুমের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে বেডরুমের দু’কোনা থেকেও ক্যামেরা দুটো খুলে নিল। তারপর আবার ড্রইং রুমে এসে গ্লাস হাতে নিয়ে কোল্ড ড্রিঙ্কস খেতে শুরু করল। তারপর আবার পা টিপে টিপে সামনের দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে সুপর্ণাকে ডানহাতে থামস আপ দেখিয়ে ঘরের ভেতর ঢুকে এল। ড্রয়িং রুম থেকে এবার সে হাল্কা মনে বেডরুমে ঢুকে বেডরুমের দরজা বন্ধ করে দিল। এসির দৌলতে এ ঘরটায় গরম একেবারেই নেই। শঙ্কর নিজের প্যান্ট আর শার্ট খুলে শুধু গেঞ্জী জাঙ্গিয়া পড়ে অনুপমার বিছানায় শুয়ে পড়ল।

কয়েক মিনিট বাদেই শরীরে ঠাণ্ডা আমেজ পেয়ে তার চোখ বুজে এল। একটু বোধহয় তন্দ্রা মতও এসে গিয়েছিল। বুকের ওপর চাপ পেয়েই তার তন্দ্রা ভাঙল। চোখ মেলে দেখে অনুপমা তার নিজের বুকের ওপর তার বুকটাকে চেপে ধরেছে। শঙ্কর অনুপমাকে জোরে বুকের সাথে জাপটে ধরে জিজ্ঞেস করল, “মেয়েটা চলে গেছে? তা কি কিনলে”?
 

অনুপমা শঙ্করের বুকের ওপর নিজের স্তন দুটোকে রগড়াতে রগড়াতে বলল, “তেমন কিছু না। দুটো মাউথ ফ্রেশনার, দুটো ডিওডোরান্ট, একটা লোকাল এনেস্থেটিক ক্রিম, কয়েকটা টুথ ব্রাশ, পেস্ট আর এক ডজন কনডোম। তা উঠুন এবার কাজ শুরু করুন। প্রায় কুড়ি মিনিট সময় নষ্ট হয়েছে। এখন থেকে শুরু না করলে অসুবিধে হবে। সাড়ে পাঁচটার ভেতর আপনাকে বিদেয় না দিতে পারলে পরের কাস্টমারের টাইমিং নিয়ে সমস্যা হয়ে যাবে”।
 

শঙ্কর আর দেরী না করে অনুপমাকে ছেড়ে দিয়ে বলল, “তুমি আমাকে আগে ন্যাংটো কর ডার্লিং। তারপর আমি তোমায় ন্যাংটো করব” বলে উঠে বসল।

অনুপমা নিপুণ হাতে শঙ্করের গেঞ্জী জাঙ্গিয়া খুলে ফেলে শঙ্করের পুরুষাঙ্গটা হাতে নিয়ে নাড়তে লাগল। শঙ্কর বিছানা থেকে নিচে নেমে এক এক করে অনুপমার গায়ের ওপর থেকে তার শাড়ি ব্লাউজ, ব্রা, পেটিকোট আর প্যান্টি খুলে ফেলল। তারপর অনুপমাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বলল, “হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে থাক। আমি তোমার পেমেন্টটা করে নিই আগে” বলে একটা চেয়ারের ওপর ঝুলিয়ে রাখা তার প্যান্টের ব্যাক পকেট থেকে তিনখানা হাজার টাকার নোট বের করে, নোটগুলোকে একসঙ্গে রোল করে একটা কলমের মত আকৃতি বানাল। তারপর সেটাকে নিজের দু’ দাঁতের পাটির মাঝে চেপে ধরে অনুপমার কাছে এসে তার যৌনাঙ্গের পাপড়িদুটোকে দু’দিকে টেনে ফাঁক করে ধরে দাঁতে চেপে ধরা টাকার রোলটাকে অনুপমার যৌনাঙ্গের সুরঙ্গের ভেতর ঢুকিয়ে দিয়ে একলাফে অনুপমার ওপরে চড়ে তার মাথার দু’পাশে পা রেখে নিজের প্রায় শক্ত হয়ে ওঠা পুরুষাঙ্গটাকে অনুপমার মুখের কাছে নিয়ে গেল। আর অনুপমাও কোন কথা না বলে হাঁ করে সেটাকে নিজের মধ্যে ঢুকিয়ে নিল।
 

শঙ্কর সেদিন আগেই একটা ট্যাবলেট খেয়ে নিয়েছিল নিজের সম্ভোগ ক্ষমতা বাড়াতে। প্রায় পয়তাল্লিশ মিনিট ধরে নানা ভঙ্গীতে অনুপমাকে ভোগ করতে করতে একাধিকবার অনুপমাকে নিস্তেজ করে ফেলেছিল। অনুপমার নতুন কেনা একখানা বিদেশী কনডোম পঁয়তাল্লিশ মিনিট পর শঙ্করের বীর্যরসে ভরে গিয়েছিল। অনুপমাও শঙ্করের সাথে পূর্ণ সহযোগিতা করে নিজেও পরিপূর্ণ সুখ পেয়েছিল। একঘন্টার নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাবার পরেও অনুপমা আরও মিনিট দশেক শঙ্করকে তার স্তনদুটো নিয়ে খেলার সুযোগ দিয়েছিল।

শঙ্কর অনুপমার ঘর থেকে বেরিয়ে আসবার আগে অনুপমা তাকে বলল, “প্রথম দিন আমাকে যেভাবে চুদেছিলেন, আজ তার থেকে অনেক ভাল চুদেছেন স্যার। অনেকদিন বাদে কাউকে দিয়ে চুদিয়ে এমন সুখ পেলাম। সত্যি একটা ঘন্টা বড্ড তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল। আরেকদিন দু’ঘন্টার বুকিং করে আসুন না। কিছুটা কনসেশন করে দেব”।

শঙ্কর মুচকি হেসে ‘আসব’ বলে অনুপমার স্তন দুটো টিপে দিয়ে তার ঘর থেকে বেরিয়ে এল।
 

সাড়ে পাঁচটা নাগাদ বড় রাস্তায় এসে একদিকে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে সে একটা গলির ভেতর ঢুকে পড়ল। একটা বিদেশী মদের দোকান থেকে একটা বোতল প্যাক করে নিয়ে সে আরেকটা গলির ভেতর ঢুকে পড়ল। তারপর সেই গলিটা দিয়ে আরো খানিকটা এগিয়ে যাবার পর সে পকেট থেকে ফোন বের করে অভিকে ফোন করে বলল, “পেছন দিকের দরজাটা খুলে দে। আমি এসে গেছি”।

অভির রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে বোতলটা এগিয়ে দিয়ে বলল, “নে এটা তোর গিফট। আর তোর খবর কি বল”।

অভি বোতলটা হাতে নিয়ে শঙ্করকে জড়িয়ে ধরে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ গুরু। এই জন্যেই তোকে আমি এত ভালবাসি। তা গুরু ট্যাবলেটটা খেয়ে কেমন লেগেছে। সেটা আগে বল” বলতে বলতে হাতের প্যাকেটটা খুলেই চিৎকার করে উঠল, “আরেব্বাস গুরু। এটা কী মাল এনেছিস রে? এ তো হেভি কস্টলি মাল”!

শঙ্কর একটা চেয়ারে বসে বলল, “যেমন মাল এনে দিলাম। তোর কাছ থেকে তেমন রিটার্ন যেন পাই। সেদিকে খেয়াল রাখিস। তবে তোর ট্যাবলেটটা সত্যি দারুণ কাজ করেছে রে। পঁয়তাল্লিশ মিনিট এক নাগাড়ে মাগিটাকে উল্টে পাল্টে চুদে তবে মাল ফেলেছি আজ। মাগিটা চার পাঁচবার গুদের জল খসিয়ে কাবু হয়ে পড়েছিল। তবে সত্যিরে। মাগিটারও দম আছে বলতে হবে। আমার চোদন খেয়ে নেতিয়ে পড়লেও এত খুশী হয়েছিল যে সময় শেষ হয়ে যাবার পরেও দশ বারো মিনিট আমাকে ওর মাই চুসতে দিয়েছিল। আর শালী বলে কি জানিস? বলে যে ‘স্যার আজ একটা ঘন্টা খুব তাড়াতাড়ি কেটে গেল। পরের দিন দু’ঘন্টার বুকিং নিয়ে আসবেন। আমি কিছুটা কনসেশন করে দেব আমার রেটে’ বলে হাসতে লাগল।

অভি ভেতরের পার্টিশানে ঢুকে দুটো গ্লাস আর জলের বোতল এনে দু’ গ্লাসে মদ ঢালতে ঢালতে বলল, “মাগিটা পুরো খানকি রে। কাল মাগিটাকে এমন চোদা চুদব যে সারা জীবনেও এ চোদনের কথা সে ভুলতে পারবে না”।

গ্লাসে একটা চুমুক দিয়ে শঙ্কর জিজ্ঞেস করল, “তাহলে সব মিলে কটা সেশন রেকর্ড করেছিস? আর কটা এডিটিং করলি”?

অভিও গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলল, “সাত তারিখ রাত আটটা থেকে কাল রাত বারোটা পর্যন্ত মাগিটা ষোলটা কাস্টমারের সাথে চোদাচুদি করেছে। আর সব গুলোই রেকর্ড করেছি। তুই তো মাত্র পাঁচ ছটাই করতে বলেছিলিস। কিন্তু লাইভ চোদাচুদি দেখবার এমন সুযোগ কি আর সব সময় পাওয়া যায়? তাই দেখতে দেখতে রেকর্ডও করেছি। তার মধ্যে যে গুলোতে কাস্টমার আর মাগিটার মুখ ভাল ক্যাপচার হয়েছে এমন ছ’টা বেছে নিয়েছি এডিটিং করবার জন্যে। আর তিনটের এডিটিং কমপ্লিট হয়ে গেছে। দারুণ হয়েছে গুরু। বাজারেও এমন সুন্দর ব্লু ফিল্ম খুঁজে পাবি না। বাকি তিনখানাও কাল দুপুরের আগে এডিটিং হয়ে যাবে। তারপর শুধু হোটেলের প্রজেক্টটা রেকর্ডিং হলেই দু’দিনের মধ্যে ডেলিভারি দিয়ে দিতে পারব”।

শঙ্কর নিজের পকেট থেকে ক্যামেরা চারটে বের করে টেবিলের ওপর রেখে বলল, “এই নে জিনিস গুলো। হোটেলে কিভাবে কোথায় সেট করবি সেটা তোর দায়িত্ব। তবে একটা কথা মনে রাখিস। তোর নিজের মুখটা যেন পুরো সিডিটায় এক বারও দেখা না যায় সেদিকে খেয়াল রাখিস। আর হোটেল বুক করেছিস”?

অভি বলল, “হ্যা গুরু, ওটা হয়ে গেছে। কাল দুপুর বারোটায় আমি সেখানে চেক ইন করব। তারপর এক ঘন্টার মধ্যেই সব কিছু রেডি করে ফেলব। ওই মাগি তো আসবে তিনটের সময়। কিন্তু গুরু, মাগিটা সত্যি সত্যি আসবে তো”?

শঙ্কর বলল, “অবশ্যই আসবে দেখিস। তোকে আজ রাতে কিংবা কাল সকালেই ফোন করে হোটেলের ঠিকানা জেনে নেবে। তারপর তিনটে বাজবার পাঁচ ছ’মিনিট আগেই তোর হোটেলের রুমে পৌঁছে যাবে দেখিস। কোড নাম্বারটা মনে আছে তো? সেটা ভুল মেরে দিলে কিন্তু মাগিটাকে পাবি না। আমার দেড়শ’ টাকা জলে যাবে”।

অভি বলল, “না গুরু, সেটা কি ভোলা যায়রে? সরজু ভাইয়ার দুশ’ তেইশ নাম্বার, তাই তো”?

শঙ্কর বলল, “হ্যা, আর বুকিংটা হয়েছে প্রকাশ সামন্তের নামে। আর প্রকাশ সামন্ত মানে তুই। সেটা ভুলে যাস নে। অনুপমা আর সরজু ভাইয়ার কাছে এ নামটাই আছে। তাই অনুপমা তোকে ওই নামেই ডাকবে। আর শোন, তোর রেকর্ডিংএর ল্যাপটপটা টয়লেটে বসাস না। অনুপমা এতোটা পথে যাবে আসবে। তাছাড়া তোর চোদা খেয়ে বাথরুমে ঢুকে একটু ফ্রেশ হয়ে নেবার পরই সে হোটেল থেকে বেরোতে চাইবে। তাই টয়লেটে ল্যাপটপটা বসাস না”।

অভি বলল, “সে’সব তোকে ভাবতে হবে না গুরু। আমি রুমটার মধ্যেই এমন জায়গায় মালগুলোকে সেট করব যে ওই মাগির চৌদ্দ পুরুষও ঘূণাক্ষরেও সেটা ভাবতে পারবে না। আর দেখিস কত ক্লোজ শট আসে। ও’সব আমি সামলে নেব”।

দুই বন্ধু মিলে ঘন্টা খানেক আড্ডা মেরে আসর শেষ করে শঙ্কর যখন উঠতে চাইল, ঠিক তখনই অভির ফোন বেজে উঠল। অভি একটা আননোন নাম্বারের কল দেখে কিছুটা অবাক হয়েই কল রিসিভ করতেই ও’পাশ থেকে সুরেলা মেয়েলী গলায় কেউ জিজ্ঞেস করল, “আমি কি মিঃ প্রকাশ সামন্তের সাথে কথা বলছি”?

অভির চোখদুটো চকচক করে উঠল। সে শঙ্করের হাতটা খপ করে চেপে ধরে ফোনে জবাব দিল, “হ্যা আমি প্রকাশ সামন্তই বলছি। কিন্তু আপনাকে তো ঠিক...”?

ও’পাশ থেকে জবাব এল, “আমি অনুপমা। অনুপমা প্রসাদ বলছি। বুঝতে পেরেছেন”?

অভি নিজের উত্তেজনাকে প্রশমিত করে গলার স্বর স্বাভাবিক রাখবার চেষ্টা করে বলল, “হ্যা হ্যা। বুঝেছি। আমি তো তোমার কলের জন্যই অপেক্ষা করছিলাম”।
 

ও’পাশ থেকে অনুপমা জিজ্ঞেস করল, “আপনার কোডটা বলবেন প্লীজ”?

অভি বলল, “সরজু ভাইয়ার দুশ তেইশ নম্বর”।

অনুপমা এবার জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা, বিকেল তিনটে থেকে চারটে, একঘন্টার জন্যেই তো”?

অভি ছোট্ট করে জবাব দিল, “হ্যা”।

অনুপমা আবার জিজ্ঞেস করল, “আপনি কি আমাকে পিক আপ করবেন? না আমাকে একা কোথাও যেতে হবে”?

অভি জবাব দিল, “আমি তো তোমার অ্যাড্রেস জানি না। আর তাছাড়া আমি কলকাতার ছেলেও নই। তাই তোমার ওখান থেকে আমার হোটেলে আসতে কতক্ষন সময় লাগবে, সেটাও বলতে পারব না”।

অনুপমা অভির কথা শেষ হবার সাথে সাথে বলল, “বেশ ঠিক আছে। আপনি আপনার হোটেলের ঠিকানা আর রুম নাম্বারটা বলুন, আমি ঠিক সময়ে পৌঁছে যাব”।

অভি হোটেলের নাম ঠিকানা আর রুম নাম্বার বলে দিতেই অনুপমা বলল, “ঠিক আছে স্যার। কাল আপনার সাথে ঠিক তিনটেয় দেখা হচ্ছে। কিন্তু আমাকে কি আর কিছু সাথে করে নিয়ে যেতে হবে”?

অভি অনুপমার কথার মানে বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করল, “ঠিক বুঝলাম না। কী বলতে চাইছ”?

অনুপমা মিষ্টি করে হেসে বলল, “বলছি কি আমাকে কি সাথে করে ড্রিঙ্কস, কনডোম বা অন্য কিছু নিয়ে যেতে হবে”?

অভি জবাব দিল, “ওহ, আচ্ছা। তবে সে’সব তোমাকে আনতে হবে না। আমি সব ম্যানেজ করব। কিন্তু হুইস্কিতে আপত্তি নেই তো তোমার”?

অনুপমা আগের মতই হেসে জবাব দিল, “না স্যার, কোন আপত্তি নেই। আর কী পড়ে গেলে আপনি খুশী হবেন? শাড়ি ব্লাউজ? না অন্য কিছু? মাথায় সিঁদুর দিয়ে বৌ সেজে যাব”?


______________________________
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply
#75
(Update No. 93)

অভি বলল, “না না, বৌ সেজে এসো না। বৌ সেজে এলে আমার মনে হবে অন্য কারো বৌকে চুদতে যাচ্ছি। তুমি বরং স্কার্ট আর টপ পড়ে এস। তবে টপটা যতটা লো নেক হয় ততই ভাল লাগবে। তোমার ক্লিভেজের কিছু অংশ যেন পোশাক পড়া অবস্থাতেই দেখা যায়। বুঝেছ”?

অনুপমা আবার মিষ্টি করে হেসে বলল, “ওকে স্যার, বুঝেছি। আর কিছু”?

অভি জবাব দিল, “আর কিছু করতে হবে না। তবে একটা কথা আগে থেকে জানতে পারলে একটু ভাল লাগত”।

অনুপমা জিজ্ঞেস করল, “বলুন স্যার, কী জানতে চান? এত সঙ্কোচ করছেন কেন? কয়েক ঘন্টা বাদেই তো আমাকে ন্যাংটো করে উল্টে পাল্টে চুদবেন। আর এখন মুখের কথা বলতেই লজ্জা পাচ্ছেন”?

অভি বলল, “ইশ তোমার কথা শুনে তো এখনই আমার বাড়া ঠাটিয়ে উঠছে ডার্লিং। কিন্তু জিজ্ঞেস করতে চাইছিলাম যে এনাল সেক্স করার সুযোগ দেবে তো”?

অনুপমা হেসে বলল, “নিশ্চয়ই দেব। আপনার যেভাবে যা খুশী তাই করতে পারবেন স্যার। তবে ঠিক আছে স্যার, তাহলে আমাদের এপয়েন্টমেন্টটা কনফার্ম হল। রাখছি তাহলে” বলে লাইন কেটে দিল।
 

অভি ফোন রেখেই শঙ্করকে জড়িয়ে ধরে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ গুরু। তুই আমার মনের আশাটা পূর্ণ করলি। এবার বাকিটা সিডিতে দেখিস। কেমন চোদা চুদি মাগিটাকে”।

শঙ্কর ডান হাতের বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বলল, “বেস্ট অফ লাক। হোটেল থেকে ফিরে এসে ফোন করে জানাস। আমি যাচ্ছি এখন”।
 

***************

সকাল আটটা নাগাদ ব্রেকফাস্ট খেতে খেতে রচনা রতীশকে জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা সোনা, দিদিভাই, মা-বাবা, বড়কাকু, ছোটকাকু সকলেই তো তাদের মতামত জানিয়ে দিয়েছেন। আমিও তো আমার কথা তোমাকে বলেছি। তাহলে এখনও তুমি কী ভাবছ বল তো? তোমার কি মন সায় দিচ্ছে না”?

রতীশ মনে মনে ভাবতে ভাবতেই জবাব দিল, “তা নয় সোনা। মহিমা বৌদির কথাবার্তা ব্যবহার আমারও খুব ভাল লেগেছে। আর ইনস্টিটিউটটা ঘুরে ফিরে দেখেও আমার ভাল লেগেছে। কিন্তু টেলিফোনে ওই লোকটার সাথে কথা বলার সময় মহিমা বৌদি যা যা বলেছিলেন। ওই কথাগুলোই বারবার ঘুরে ফিরে মনে আসছে। কেন জানিনা বারবার মনে হচ্ছে, ব্যাপারটা খুব স্বাভাবিক নয়। তাই ভাবছিলুম, মন্তির সাথে এ ব্যাপারটা নিয়ে আরেকটু ডিসকাস করব”।

রচনা বলল, “কিন্তু পরশু দিন সকালের পর থেকে তো দিদিভাইয়ের নাম্বারটা এক নাগাড়ে আনরিচেবল আনরিচেবল শোনাচ্ছে। আমার মনটা ভাল লাগছে না গো। বারবার শুধু দিদিভাইয়ের জন্য চিন্তা হচ্ছে। অবশ্য দিদিভাই তো সে’কথা আগেই বলেছিলেন যে ওখানে নাকি মোবাইলের সিগন্যাল পাওয়া যায় না। তবে দিদিভাইয়ের তো কাল ফেরার কথা। তার আগে তো আর তার সাথে কথা বলতে পারছ না। কিন্তু তুমি তো মহিমা বৌদির কাছে দু’দিনের সময় চেয়ে নিয়েছিলে। দু’দিন তো পার হয়ে গেছে। আজ তো তাকে তোমার মতামতটা জানিয়ে দেওয়াই উচিৎ”।

রতীশ একটু চিন্তিত ভাবে বলল, “সেটাই তো ভাবছি। আজ মহিমা বৌদিকে আমার মতামতটা না জানালে উনি তো ভাববেন যে আমার কথার ওপর কোন ভরসা করা যায় না। সেটাও মন থেকে মানতে পারছি না। কিন্তু, মন্তির ব্যাপারটাও আমি ঠিক বুঝতে পারছিনা জানো। মানছি ও যেখানে গিয়ে থাকছে, সেখানে হয়ত সিগন্যাল পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু ও তো আর সারাক্ষন একই জায়গায় বসে থাকবে না। কাজের জন্যও তো ওকে এদিক সেদিক ঘুরতে হবে। কোন জায়গা থেকেই কি একটা ফোন করতে পারত না”?

রচনাও রতীশের কথায় সায় দিয়ে বলল, “আমিও তো কাল রাত থেকে এ’কথাটাই ভাবছি সোনা। কাল সকালে দিদিভাই রওনা হবার আগে ফোন করেছিলেন। ওথানে গিয়ে পৌঁছোতে ঘন্টা দেড়েক দুয়েক লাগবে বলেছিলেন। তার মানে বেলা এগারোটা নাগাদ সেখানে পৌঁছে যাবার কথা। তারপর থেকে সারাটা দিনে আমি তিনবার তাকে ফোন করেছি। একবারও লাইন পাইনি। দিদিভাই তো কোন না কোন জায়গা থেকে একবার ফোন করে একটু খবর দিতে পারতেন, তিনি কোথায় আছেন, কেমন আছেন। দিদিভাইয়ের কোয়ার্টারের ল্যাণ্ডলাইনেও ফোন করেছি আজ সকালে। লক্ষ্মীদি বলল, দিদিভাই তাকেও কোন ফোন করেন নি। আমার মনটা যে কেমন করছে, সে আমি তোমায় বলে বোঝাতে পারব না”।

রতীশ রচনার একটা হাত মুঠো করে ধরে বলল, “না রচু, দুশ্চিন্তা কোর না। মন্তি যেখানেই থাকুক না কেন, নিশ্চয়ই ভাল আছে। আমি তো শুধু মহিমা বৌদির ব্যাপারটা নিয়ে মন্তির সাথে কথা বলতে পারছিনা বলেই, মহিমা বৌদিকে ফোন করে কী বলব, সেটাই বুঝতে পাচ্ছি না। সেটা নিয়েই ভাবছি আমি। আমার মনে হয় এ বেলাটা দেখি। মন্তির সাথে কথা বলা যায় কি না। যদি কথা না-ই হয় তাহলে বিকেলের দিকে মহিমা বৌদিকে ফোন করে কিছু একটা বলে দিতে হবে”।
 

রচনা বলল, “ভেবে দেখ তুমি। কিন্তু আমার কি মনে হয় জানো সোনা। মহিমা বৌদি যখন বলেছেনই যে তোমার কোন ব্যাপারে যদি সন্দেহ হয়, আর সে সন্দেহ যদি সত্যি হয়, তাহলে তুমি যে কোন সময় তার কাজ ছেড়ে দিতে পারবে, তখন আমার মনে হয় না যে তার ইনস্টিটিউটে অমন কোন কারবার হয়ে থাকে। আর ইনস্টিটিউটের বাইরে যদি সে তেমন কিছু করেও থাকে, তাতে তোমার কি? তুমি তো শুধু তার ইনস্টিটিউটের কাজের সাথেই যুক্ত থাকবে। তবে হ্যা, তুমি এটা পরিস্কার ভাবে বৌদিকে আগে থেকেই বলে নিতে পার যে ইনস্টিটিউটের বাইরে গিয়ে তুমি কখনও কোন ডিউটি করবে না। আর তিনিও যেন তোমাকে এমন আদেশ কখনও না করেন”।
 

রতীশ ভাবতে ভাবতে বলল, “হ্যা এমনই কিছু একটা বলতে হবে। কিন্তু সোনা, আমি আরেকটা কথা ভাবছি। ধর, মহিমা বৌদির ওখানে যদি কাজ না করি, তাহলে কতদিন আর এভাবে ঘরে বসে থাকব! হাতের জমা পুঁজিটুকু ফুরিয়ে গেলে তখন কি করব”?
 

রচনা বলল, “সে জন্যেই তো বলছি। মহিমা বৌদি যখন তোমাকে এতটা ছাড় দিয়েছেন, তখন তোমার সেখানে কাজে যোগ দেওয়াই উচিৎ। পরে যে কোন সময় কোন অসুবিধে হলে তুমি চাইলেই তো তার চাকরী ছেড়ে দিতে পারবে। তাই না”?

রতীশ বলল, “দেখি। বিকেলের মধ্যে মন্তির সাথে কথা না হলে মহিমা বৌদিকে এমনই কিছু একটা বলতে হবে। আচ্ছা সোনা, বিমলজীকে কি এ ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করব”?

রচনা রতীশের একটা হাত চেপে ধরে জবাব দিল, “না সোনা, ওই লোকটাকে কিছু বলার দরকার নেই। হ্যা মানছি, সে-ই তোমাকে মহিমা বৌদির খবরটা দিয়েছে। নিজে সঙ্গে করে তোমাকে সেখানে নিয়ে গেছে। কিন্তু সোনা, একটা কথা ভেবে দেখ তো। ওই লোকটার এত কি দায় পড়েছে আমাদের জন্যে এত ভাবাভাবি করবার? আর তাছাড়া রবিশঙ্কর আমাদের সাথে যা কিছু করেছে, তার পেছনে এ লোকটা নিশ্চয়ই কোন না কোন ভাবে জড়িত আছেই। সে তুমি যা-ই বলনা কেন সোনা। আমাদের সর্বনাশের পেছনে সে একেবারেই নেই, একথা সে হাজার বার বললেও আমি মানতে পারব না। তাই ওই লোকটার সাথে তুমি আর যোগাযোগ করবার চেষ্টা কোরনা। তবে মহিমা বৌদির ওখানে তুমি যদি সত্যি সত্যি জয়েন কর, তাহলে তাকে শুধু একটা ধন্যবাদ জানিয়ে দিও। কিন্তু তার পরে ওই লোকটার সাথে তুমি কোনরকম যোগাযোগ রাখবে না। এটা কিন্তু আমি স্পষ্ট তোমাকে জানিয়ে দিচ্ছি। আর মহিমা বৌদির ওখানে কাজ না করলে তুমি অন্য কোথাও কাজের সন্ধান কর। আর কিছুই যদি না জোটে তাহলে আমরা বাড়িতেই ফিরে যাব। কিছুই যদি কপালে না জোটে তাহলে যে কোন একটা ব্যবসা খুলে তো বসতে পারবে। আর আমাদের পরিবারের সবাই তো আমাদের পাশে আছে। কিন্তু বিমল আগরওয়ালার সাথে আর কোন রকম ঘনিষ্ঠতা করবে না তুমি। বল সোনা, আমাকে তুমি কথা দাও। আমার এ কথাটা তুমি রাখবে”।

রতীশ রচনার এমন স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা শুনে মনে মনে একটু অবাক হলেও রচনার হাত ধরে বলল, “ঠিক আছে সোনা। তোমার অমতে কি আমি কিছু করতে পারি? আমি তোমায় কথা দিচ্ছি। বিমলজীর সাথে আর ঘনিষ্টতা বাড়াব না আমি। তুমি বিশ্বাস কর”।
 

তখন বেলা প্রায় সওয়া এগারটা। রতীশ ড্রইং রুমে বসে একটা যোগা চিকিৎসার বই পড়ছিল। রচনা কিচেনে রান্নায় ব্যস্ত। এমন সময়ে হঠাৎ তাদের কলিং বেল বেজে উঠতে রতীশ চমকে উঠল। মনে মনে ভেবে অবাক হল, কে আসতে পারে? সে সোফা থেকে উঠে দাঁড়াতেই রচনা ছুটে ড্রইং রুমে এসে চাপা গলায় জিজ্ঞেস করল, “কে এসেছে গো”?

রতীশ রচনাকে ফিসফিস করে বলল, “তুমি ভেতরের ঘরে যাও। আমি দেখছি। ভেব না। কিচ্ছু হবে না”।

রচনা আবার ভেতরের ঘরে ঢুকে ভেতরের দরজাটার পর্দা ভালো করে টেনে দিয়ে দরজার পাশেই কান খাড়া করে দাঁড়িয়ে রইল। একটু বাদেই সামনের দরজা খোলার শব্দ শোনা গেল। আর সেই সাথে সাথে রতীশের গলা শোনা গেল, “এ কী বৌদি আপনি”?
 

রচনা সে’কথা শুনে মনে মনে অবাক হয়ে ভাবল, কোন বৌদি এখানে আসতে পারে? এখানে তো তাদের ঘরের মালিক আর রবিশঙ্কর ছাড়া আর কেউ আসেনি কখনো। এ বৌদিটা আবার কে? কোত্থেকে এল? তবে কি রতীশের মহিমা বৌদিই এসেছেন!

তার ভাবনার মধ্যেই মিষ্টি একটা মেয়ের গলা শোনা গেল। বলছে, “সরি, রতীশ কোন খবর না দিয়ে এভাবে চলে এসে তোমাকে বুঝি বিব্রত করে ফেললাম আমি। কিন্তু কি করব বল? মাত্র দু’দিন আগেই যার সাথে আমি দেবর বৌদির সম্মন্ধ পাতালাম, সেই দেবরটি যদি দু’দিনেই বৌদিকে ভুলে যায়, তাহলে সে হতভাগী বৌদি আর কী করতে পারে বল? তাই তো নিজেই চলে এলাম তোমার বাড়িতে”।

রতীশের গলা শোনা গেল, “ছি ছি বৌদি, এভাবে বলে আমাকে লজ্জা দেবেন না প্লীজ। আসুন আসুন। ভেতরে আসুন। তারপর কথা বলা যাবে” বলেই রচনার উদ্দেশ্যে বলল, “এই রচু, শুনছ। দেখ কে এসেছে? ইশ আমি তো ভাবতেই পাচ্ছিনা। আপনি এভাবে আমার বাড়ি এসে পড়বেন”।

রচনা তখন বুঝে গেছে, এ নিশ্চয়ই মহিমা বৌদি। কিন্তু কিচেনে স্টোভের ওপর রান্না চাপানো আছে। সেটা এভাবে ফেলে চলে গেলে নষ্ট হয়ে যাবে। তাই সে প্রায় ছুটে কিচেনে গিয়ে কড়াইতে খুন্তি দিয়ে নাড়তে নাড়তে গলা তুলে বলল, “একটু দাঁড়াও। আসছি। রান্নাটা নামিয়ে আসছি। নইলে ধরে যাবে”।

মহিমা ঘরে ঢুকে রতীশের হাত ধরে বলল, “রাগ করলে না তো ভাই? কিন্তু ইনস্টিটিউট থেকে বেরিয়েই কী যে মনে হল, বাড়ি না গিয়ে তোমার এখানে চলে এসেছি”।

রতীশ মহিমাকে একটা সোফায় বসাতে বসাতে বলল, “না না বৌদি, রাগ করব কেন। আপনি বসুন তো এখানে”।
 

মহিমা রতীশকে বাঁধা দিয়ে বলল, “এসেছি যখন তখন তো বসবই ভাই। কিন্তু তার আগে আমাকে যে একটু ভেতরে যেতে হবে। যেতে পারি ভাই”?
 

রতীশ মনে মনে ভাবল মহিমা বুঝি টয়লেটে যাবে। তাই সে বলল, “হ্যা হ্যা বৌদি, আসুন না”।

ভেতরের রুমে ঢুকেই মহিমা বলল, “তোমার বৌ কোথায় গো ভাই”?

রতীশ বলল, “ওই তো ওদিকে কিচেনে আছে বৌদি। রান্না করছে” বলেই কিচেনের দিকে মুখ করে বলল, “রচু কী হল এস। দেখ বৌদি এসেছেন”।

রচনা সাথে সাথে জবাব দিল, “এই তো আসছি গো। কড়াইটা নামিয়েই আসছি। এক মিনিট”।

মহিমা আর দাঁড়িয়ে না থেকে ডাইনিং রুমের ভেতর ঢুকে যেতেই রচনাকে দেখতে পেল পাশের কিচেনে। রচনা তখন স্টোভ নিভিয়ে দিয়ে কড়াইটাকে স্টোভের ওপর থেকে নামাচ্ছিল। অসম্ভব রূপসী একজন মহিলাকে কিচেনে ঢুকতে দেখেই সে বলে উঠল, “এ মা ছি ছি, সোনা, তুমি বৌদিকে এ’ঘরে নিয়ে এলে কেন? রান্নার ঝাঁঝে বৌদির কষ্ট হবে তো। ইস দেখেছ”?
 

মহিমা ততক্ষণে রচনার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। রচনা নিজের হাতটা একটু জলে ধুয়ে নিয়ে একটা টাওয়েলে মুছে নিয়ে ঝুঁকে মহিমার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে যেতেই মহিমা তাকে ধরে ফেলে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, “এই না না। এ কি করছ তুমি? প্লীজ আমার পায়ে হাত দিও না ভাই” বলে রচনার কপালে চুমু খেল।
 

রচনা একটু অভিমানী গলায় বলল, “ইশ এভাবে কোন খবর না দিয়ে কেউ হুট করে চলে আসে”? বলে মহিমার মুখের দিকে চাইতেই তার অপরূপ রূপ মাধুরী দেখে মুখের কথা হারিয়ে ফেলল যেন।
 

মহিমার চেয়ে রচনা অনেকটাই খাটো। তবু রচনার ঘামে ভেজা মুখটার দিকে চোখ পড়তেই মহিমা যেন আর তার চোখ সরিয়ে নিতে পারছিল না। রচনার সুন্দর মুখটার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকবার পর মহিমা বলল, “একেই বুঝি বলে রিয়েল বাঙালী বিউটি”।

রচনা একটু লজ্জা পেয়ে কিছু একটা বলতে যেতেই মহিমা হাত তুলে তাকে বাঁধা দিয়ে বলল, “দাঁড়াও রচনা, এক মিনিট” বলে নিজের কাঁধের ব্যাগটা নামিয়ে তার ভেতর থেকে একটা বড় মিষ্টির প্যাকেট বের করে হাতে ধরে রেখে অন্য হাতে ব্যাগের ভেতর থেকে এক মুঠো টাকা বের করে রচনার মাথার চারদিকে ঘুরিয়ে তার মুখের সামনে ধরে বলল, “এটা নাও”।

রচনা প্রায় ভয় পাবার ভঙ্গীতে এক পা পেছনে গিয়ে বলল, “না না বৌদি। এ কি করছেন আপনি”?

মহিমা মিষ্টি করে হেসে বলল, “এমন কিছুই করছি না ভাই। শুধু একটু নিয়ম রক্ষা করছি। আমি তো পাঞ্জাবী। বাঙালী ঘরের বৌ হলেও বাঙালী রীতিনীতি প্রায় জানিই না। কিন্তু আমাদের পাঞ্জাবী রীতিতে ঘরে আসা নতুন বৌয়ের মুখ দেখে বড়রা সবাই এভাবে শগুন দিয়ে থাকে। আমি তো তোমার চেয়ে বড়। আর রতীশ আমার দেবর। তাই তুমি হলে আমার দেবরানী মানে জা। আর বাঙালী পরিবারে বড় জাকে তো ছোট জায়েরা দিদি বলে ডাকে। তাই আমি তো তোমার দিদিই হলাম। কিন্তু শগুনটা তো তোমায় নিতেই হবে ভাই। নইলে যে তোমার আমার সকলেরই অমঙ্গল হবে”।
 

রচনা সাথে সাথে বলল, “ইস না না বৌদি, অমন কথা বলবেন না প্লীজ। আচ্ছা ঠিক আছে। আমি নিচ্ছি। কিন্তু এতগুলো নয় শুধু একটা নোট দিন আমাকে”।

মহিমা তার বাঁ হাতের প্যাকেটটা কুকিং স্ল্যাবের ওপর রেখে দিয়ে রচনার হাত ধরে ডানহাতের পুরো টাকাটাই তার হাতের মধ্যে গুঁজে দিতে দিতে বলল, “তুমি কিচ্ছু জান না রচনা। এটা তো তোমার নামে উৎসর্গ করা হয়ে গেছে। এটা কি আর আমি ফিরিয়ে নিতে পারি? পাগলী কোথাকার”?
 

রচনা রতীশের দিকে কাতর চোখে চেয়ে বলল, “সোনা দেখেছ? তুমি বোঝাও না বৌদিকে একটু”।

রতীশ কিছু বলবার আগেই মহিমা বলল, “এতে বোঝবার বোঝাবার কিচ্ছু নেই। জানো তো শগুন হচ্ছে আশীর্বাদ। বড়দের আশীর্বাদ সম্মানের সাথে নিয়ে নাও। আর এটাও নাও। তোমার সাথে প্রথম দেখা করতে এসেছি। তোমাকে একটু মিষ্টিমুখ না করালে হয়? নাও হাঁ কর তো দেখি। আমি নিজে হাতে তোমাকে খাইয়ে দেব” বলে প্যাকেটের ভেতর থেকে একটা মিষ্টি তুলে রচনার মুখের কাছে তুলে ধরল।
 

নিরুপায় রচনা হাঁ করতেই মহিমা মিষ্টিটা রচনার মুখে ঢুকিয়ে দিয়ে রতীশের দিকে ঘুরে বলল, “রতীশ ভাই, তুমিও একটা নাও। হাঁ কর”।
 

রতীশ কোন কথা না বলে মিষ্টি মুখে নিতে রচনা প্যাকেটের ভেতর থেকে একটা মিষ্টি তুলে নিয়ে মহিমার মুখের সামনে তুলে ধরে বলল, “আপনাকেও তাহলে আমি খাইয়ে দেব। নিন, হাঁ করুন”।

মহিমাও একটু হেসে হাঁ করতেই রচনা একটা মিষ্টি তার মুখে ঢুকিয়ে দিল। রতীশ ডাইনিং টেবিলের ওপর থেকে জলের বোতল নিয়ে মহিমার হাতে দিতেই রচনা বলল, “সোনা, তুমি বৌদিকে নিয়ে ও ঘরে গিয়ে বস। আমি বাকি রান্নাটুকু সেরে নিই। ও বৌদি। আপনি প্লীজ কিছু মনে করবেন না। আর দশ পনের মিনিটের মধ্যেই আমার রান্না শেষ হয়ে যাবে। তারপর আমি এসে আপনার সাথে গল্প করছি”।

মহিমা রচনাকে আবার জড়িয়ে ধরে বলল, “তোমার আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না। আমি রতীশকে নিয়ে তোমাদের ডাইনিং টেবিলে বসেই গল্প করছি। তুমি রান্না করতে করতে আমার সাথে একটু আধটু কথা বললেই হবে। আর রান্না বন্ধ কর না। নইলে তোমাদের লাঞ্চ টাইম পেরিয়ে যাবে”।

রচনা হেসে বলল, “আচ্ছা বেশ, তাহলে এখানেই বসুন। কিন্তু আপনারই কিন্তু কষ্ট হবে। এমনিতেই আমাদের ঘরে এসি নেই। তার ওপর কিচেনেও চিমনি নেই। ঝাঁঝেও আপনার কষ্ট হতে পারে”।

রতীশ ততক্ষণে দুটো ডাইনিং চেয়ার কিচেনের কাছাকাছি এনে দিয়েছে। রতীশ মহিমাকে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে নিজেও একটা চেয়ারে বসে বলল, “আচ্ছা বৌদি, আপনি আমাদের ফ্ল্যাটটা খুঁজে পেলেন কী করে? এ ফ্ল্যাটের ঠিকানা তো সেদিন আপনাকে আমি বলিনি”।
 

মহিমা মিষ্টি করে হেসে জবাব দিল, “তাগিদ থাকলে সব কিছুই করা যায় রতীশ। তোমার সাথে সেদিন কথা বলে আমার খুব ভাল লেগেছিল। তোমার স্ত্রীও তোমার সাথেই আছে জেনে তাকেও একটু দেখবার লোভ ছিল। আর তাছাড়া, ভেবেছিলাম আজ সকালে তুমি ফোন করবে। তোমার ফোন না পেয়ে মনটা একটু খারাপ হয়েছিল। ইনস্টিটিউট বন্ধ হবার পর গাড়ি নিয়ে বাড়ির দিকেই রওনা হয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ কি খেয়াল হতেই এদিকে চলে এলাম। আসতে আসতেই বিমলকে ফোন করে তোমার ফ্ল্যাটের ঠিকানাটা জেনে নিয়েছিলাম। তাই তেমন কোন অসুবিধা হয় নি। কিন্তু আমি আগে কোন খবর না দিয়ে হঠাৎ করে এসে তোমাদের খুব অসুবিধায় ফেলে দিয়েছি, তাই না”?

রতীশ বলল, “না না বৌদি, তেমন কিছু নয়। আর আমি আপনাকে বিকেলেই ফোন করব ভেবেছিলুম। আসলে আমার এক বোনের সাথে কথা বলেই আপনাকে ফোন করতুম। কিন্তু ওর ফোনটা বারবার আনরিচেবল পাচ্ছি বলেই বিকেলে আপনাকে ফোন করে জানাব ভেবে রেখেছিলুম”।
 

রচনা তাদের কথা শুনতে শুনতে রান্না করে যাচ্ছিল। সে এবার বলল, “বৌদি একটা কথা আছে, আসাটা নিজের ইচ্ছেয় হলেও যাওয়াটা কিন্তু নিজের ইচ্ছেয় হয় না। এ কথাটা শুনেছেন তো”?
 

মহিমা একটু হেসে বলল, “হ্যা তা তো শুনেছিই। তবে তোমরা যদি আমাকে আঁটকে রাখতে চাও, তাহলে সেটা আরেকদিনের জন্য তুলে রাখো ভাই। আজ এমনিতেই হঠাৎ করে এসে তোমাদের বিব্রত করে ফেলেছি”।

রচনা বলল, “ও’কথা বললে চলবে না বৌদি। এসেই যখন পড়েছেন, তখন আমাদের সাথে খেয়ে দেয়ে তবেই যেতে পারবেন। অবশ্য গরীব দেবরানীর হাতের ছাপোষা রান্না খেয়ে আপনার ভাল লাগবে কিনা সেটা বলতে পারব না। কিন্তু না খেয়ে কিছুতেই যেতে পারবেন না। এই বলে দিলুম”।

মহিমা চমকে উঠে বলল, “এই নারে বোন। অমন কথা বোলনা প্লীজ। আসলে আমি তো ঘরে কোনকিছু জানিয়ে আসিনি”।

রচনা বলল, “আমি কোন কথা শুনছি না। জানিয়ে আসেননি, তো এখন ফোন করে জানিয়ে দিন। আমরা কলকাতা আসবার পর এই প্রথম আমাদের ঘরে কেউ এল। এমনি এমনি যেতে দেওয়া যায় নাকি? হ্যা অবশ্য দাদাকে বোধহয় বাড়িতে একা লাঞ্চ করতে হবে”।

মহিমা একটু হেসে বলল, “তোমার দাদার কথা আর বলো না। সে তো প্রায় দিনই অফিসেই লাঞ্চ সেরে নেয়। আজ তো আগেই বলে গেছে, সে দুপুরে বাড়ি আসবে না। বেশ ঠিক আছে। রোজ তো নিজের ঘরে কাজের লোকের হাতের ভাল ভাল রান্নাই খাই। আজ না হয় গরীব দেবরানীর হাতের খারাপ রান্নাই খেয়ে দেখি। দাঁড়াও,বাড়িতে তাহলে একটা ফোন করে দিই। নইলে কমলা আমার জন্যে না খেয়ে বসে থাকবে” বলে ফোন বের করে নাম্বার ডায়াল করল।
 

ও’পাশের সাড়া পেতেই সে বলল, “হ্যা কমলা শোন। আমি এক জায়গায় লাঞ্চ সারছি আজ। আর তোর বড়বাবু তো আজ অফিসেই লাঞ্চ করবে। তাই তুই আমার জন্যে বসে না থেকে খেয়ে নিস। আমি সন্ধ্যের আগেই বাড়ি ফিরে আসব। বুঝেছিস”?

আধঘন্টার ভেতর রচনার রান্না শেষ হয়ে গেল। এ সময়টুকুতে রতীশের সাথে মহিমা যোগা নিয়ে টুকটাক কথা বলে গেল। একবারও রতীশের কাজে যোগ দেবার কথা ওঠাল না মহিমা। কিচেনের সব জিনিসপত্র গোছগাছ করে রচনা মহিমার কাছে গিয়ে বলল, “ও বৌদি, আপনি স্নান করবেন তো”?
 

মহিমা একটু হেসে বলল, “হ্যা, তা তো একটু করতেই হবে। কিন্তু মুস্কিল হল যে এক্সট্রা পোশাক তো আমি কিছু সঙ্গে আনিনি”।

রচনা বলল, “হ্যা আমিও তো সেটাই ভাবছি। কিন্তু শাড়ি দিতে পারলেও আমার ব্লাউজ তো আপনার মাপের হবে না। আর আমার নাইটিও তো আপনার একটু খাটোই হবে মনে হচ্ছে”।
 

মহিমা বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে। আমি স্নান করে না হয় এগুলোই পড়ে নেব। কিন্তু তোমাদের বাথরুমে স্পেস আছে তো? মানে স্নান করবার সময় এগুলো না ভিজিয়ে স্নান করবার মত উপায় হবে তো”?

রচনা মুচকি হেসে বলল, “হ্যা হ্যা, তা আছে। কিন্তু তাহলে আপনি আপনার এই দেবরের সাথে আরেকটু কথা বলতে থাকুন। আমি স্নানটা সেরে নিই আগে। আমাকে আবার তারপর একটু ঠাকুর পূজো করতে হবে খেতে বসবার আগে। আমার ঠাকুর পূজো শেষ হতে হতে আপনার স্নান হয়ে যাবে”।
 

রতীশও রচনার কথা সায় দিতেই রচনা বেডরুমে এসে আলমারি থেকে ধোয়া শাড়ি ব্লাউজ নিয়ে বাথরুমে ঢোকার আগে রতীশকে বলল, “সোনা, তুমি বৌদিকে নিয়ে বেডরুমে বা ড্রইং রুমে এসে বস না। গরমটা একটু কম লাগবে” বলে বাথরুমে ঢুকে পড়ল।
 

স্নান সেরে বাথরুম থেকে লাল পেড়ে শাড়ি পড়ে বেরিয়ে রচনা ভেজা কাপড় চোপর গুলো নিয়ে তাদের ব্যালকনিতে যাবার সময় দেখল রতীশ আর মহিমা ড্রইং রুমে বসেই গল্প করছে। রচনা ভেজা কাপড়গুলো ব্যালকনিতে মেলতে মেলতে বলল, “সোনা তুমি বৌদিকে বাথরুমটা দেখিয়ে দাও। বৌদি স্নান করে নিক। আমি চট করে পূজোটা সেরে ফেলি”।

______________________________
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply
#76
(Update No. 94)

রতীশ মহিমাকে নিয়ে বেডরুমের ভেতর দিয়ে বাথরুমের সামনে নিয়ে গিয়ে বাথরুমের দরজা খুলে দিল। মহিমাও দেরী না করে বাথরুমে ঢুকে পড়ল।
 

রচনা ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে চুল আঁচরে নিয়ে কপালে আর সিঁথিতে সিঁদুর দিয়ে ঠাকুর ঘরে গিয়ে পূজোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। প্রায় মিনিট পনের পর পূজো শেষ করে ঠাকুরকে প্রণাম করে উঠে পেছন ফিরতেই দেখে মহিমা ঠাকুর ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে তার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।

রচনা মিষ্টি করে হেসে জিজ্ঞেস করল, “আপনার স্নান হয়ে গেছে বৌদি”?

মহিমা ঠাকুরের আসনের দিকে তাকিয়ে দেখতে দেখতে জবাব দিল, “হ্যা, স্নান হয়ে গেছে আমার। আচ্ছা রচনা একটা কথা জিজ্ঞেস করব? কিছু মনে করবে না তো”?

রচনা হেসে বল, “না না বৌদি। মনে করব কেন? বলুন না কি বলবেন”?

মহিমা বলল, “তুমি যে ঠাকুরকে পূজো দিলে তার ছবি তো অনেক জায়গাতেই চোখে পড়ে। কিন্তু আমি কোনদিন সেভাবে জানতে চেষ্টা করিনি ইনি কোন ঠাকুর, এর নাম কি? একটু বলে দেবে আমাকে”?

রচনা ঠাকুরের সামনে আবার হাঁটু গেঁড়ে বসে গলবস্ত্র হয়ে প্রণাম করে বলল, “এই যে, মাঝে যিনি আছেন তিনি হচ্ছেন ঠাকুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। আর এ’পাশে যিনি আছেন তিনি হলেন জগজ্জননী মা সারদা। ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণের সহধর্মিণী। আর এ’পাশে যিনি আছেন তিনি ..... “।

মহিমা রচনার কথা মাঝেই বলে উঠল, “হ্যা, একে আমি জানি। ইনি তো স্বামী বিবেকানন্দ, তাই না”?
 

রচনা হেসে বলল, “হ্যা বৌদি, ঠিক বলেছেন। ইনি স্বামী বিবেকানন্দ। আমরা ঠাকুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণকেই ভগবান বলে মানি আর পুজো করি। আর স্বামী বিবেকানন্দ আমাদের ঠাকুরের সবচেয়ে প্রিয় শিষ্য ছিলেন বলেই ঠাকুরের সাথে সাথে আমরা তাকেও পূজো করি। তা বৌদি আপনি কোন ঠাকুরের পূজো করেন”?

মহিমা চমকে উঠে বলল, “আমি? না মানে, আমি তো পূজো টুজো কিভাবে কি করতে হয় তা ঠিক
 
জানিনা। আসলে কেউ আমাকে শেখায়ও নি। ছোটবেলায় বিয়ের আগে দিল্লীতে থাকতে তো অনেক বাড়িতেই ভগবান শিব, বজরঙ্গবলী, মাতারানীর পূজো করতে দেখেছি। কিন্তু নিজে তো কখনও কোন ঠাকুর বা ভগবানকে পূজো করিনি। আর বিয়ের পর স্বামীর ঘরে এসেও শ্বশুর শাশুড়ি কাউকে পাইনি। শুধু এক অসুস্থ মাসিকেই দেখেছি আমি। সেও বছর দুয়েক বাদেই আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিল। তাই এ’সব পূজাপাঠ আমার কোনদিন শেখাই হয়নি গো”।

মহিমার চোখে মুখে লজ্জার ছায়া দেখে রচনা বলল, “এতে মন খারাপ করার কি আছে বৌদি? আপনার যদি কখনও মন চায় সেসব করবেন”।

মহিমা কাতর চোখে রচনার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “আমি তোমার ঠাকুরকে একটা প্রণাম করতে পারি রচনা”?

রচনা মিষ্টি করে হেসে বলল, “বারে, ঠাকুরকে প্রণাম করতে আবার কারো অনুমতি নিতে হয় নাকি? করুন না”।

মহিমা তবু খানিকটা ইতস্ততঃ করে জিজ্ঞেস করল, “তুমি আরেকবার একটু প্রণাম করে দেখিয়ে দেবে প্লীজ”?

রচনা আরেকবার হাঁটু গেঁড়ে বসে মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করে উঠে বলল, “এভাবে করুন”।

মহিমা তার শাড়ির আঁচল দিয়ে গা ঢেকে নিয়ে হাঁটু গেঁড়ে প্রণাম করে উঠে জিজ্ঞেস করল, “ঠিক হয়েছে রচনা? আমি ঠিক মত প্রণাম করতে পেরেছি তো”?

রচনা মিষ্টি করে হেসে জবাব দিল, “হ্যা, খুব ভাল হয়েছে বৌদি” বলে মহিমার পেছনে দাঁড়ানো রতীশকে উদ্দেশ্য করে বলল, “সোনা, তুমি বৌদিকে নিয়ে ও’ঘরে গিয়ে বস। আমি প্রসাদ দিয়েই খাবার ব্যবস্থা করছি”।
 

রতীশ পেছন থেকে ‘আসুন বৌদি’ বলতেই মহিমা রতীশের পেছন পেছন গিয়ে ড্রইং রুমে গিয়ে ঢুকল। খানিকক্ষণ বাদে রচনা প্রসাদের থালা নিয়ে ড্রইং রুমে এসে রতীশ আর মহিমার হাতে প্রসাদ দিয়ে রতীশকে বলল, “প্রসাদ খেয়ে তুমি বৌদিকে নিয়ে ডাইনিং রুমে চলে যেও সোনা। আমি শাড়িটা পাল্টেই আসছি”।
 

মহিমা প্রসাদটা হাতে নিয়ে রচনার ফিরে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। রতীশ প্রসাদটা খেতে গিয়েই থেমে গিয়ে বলল, “প্রসাদটুকু মুখে দিন বৌদি”?

মহিমা অবুঝ শিশুর মত জিজ্ঞেস করল, “এমনি এমনি মুখে দেব? না আর কিছু করতে হবে”?
 

রতীশ নিজের হাতের প্রসাদটা মাথায় ঠেকিয়ে বলল, “এভাবে একটু মাথায় ছুঁইয়ে তারপর মুখে দেবেন। তাহলেই হল। আর খাবার পর হাতটা গায়ে বা পোশাকে লাগাবেন না। আগে একটু জলে ধুয়ে নেবেন”।

মহিমা চুপচাপ হাত মাথায় ঠেকিয়ে প্রসাদটা খেয়ে নিতে রতীশ তাকে নিয়ে ডাইনিং রুমে বেসিনের কাছে নিয়ে গেল। মহিমা হাত ধুয়ে বেসিনের পাশের টাওয়েলে হাত মুছে সরে দাঁড়ালে রতীশও হাত ধুয়ে মহিমাকে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসল। মিনিট কয়েক বাদেই রচনা ডাইনিং রুমের ভেতর দিয়ে কিচেনের দিকে যেতে যেতে দেখল মহিমা আর রতীশ দু’জনেই চুপচাপ বসে আছে। রচনা ডাইনিং টেবিলে জলের বোতল, জগ, গ্লাস রাখতে রাখতে বলল, “কি হল বৌদি? এমন চুপচাপ বসে আছেন যে? খুব ক্ষিদে পেয়ে গেছে বুঝি, তাই না”?

মহিমা রচনার কথা শুনে কিছুটা চমকে উঠে বলল, “অ্যা? না না রচনা, তা নয়”।

রচনা আচারের বোতল, নুনের পাত্র টেবিলে সাজাতে সাজাতে জিজ্ঞেস করল, “বৌদি, আপনি যে আজ আমাদের এখানে চলে আসবেন, সেটা যদি আগে থেকে একটু জানিয়ে দিতেন, তাহলে হয়ত একটু ভাল আয়োজন করতে পারতুম। কিন্তু এখন তো খুবই সাধারণ খাবার খেতে হবে। আচ্ছা বৌদি, আপনি কি রুটি খাবেন না ভাত”?

মহিমা শান্ত গলায় বলল, “না না, তুমি ভেবো না রচনা। আমি দুপুরে ভাতই খাই। রাতের বেলায় অবশ্য রুটি খাই”।

রচনা কিচেনে ঢুকে থালা বাটিতে খাবার সাজাতে সাজাতে বলল, “আপনি কি খেতে ভাল বাসেন তা তো জানিনা বৌদি। আর আগে থেকে আমার কিছু জানাও ছিল না। তাই একটু কষ্ট করে খেতে হবে বোধহয় আপনাকে”।
 

একেবারে পুরোপুরি বাঙালী ঘরোয়া রান্না। কুমড়ো ভাজা, চালতা দিয়ে টকডাল, ভাজা মুগডাল আর একটা নিরামিষ তরকারীর পর টোমেটোর চাটনি আর সবশেষে রসগোল্লা দিয়ে সকলে মিলে খাবার খেল। চালতার ডাল মহিমার কাছে একটা নতুন জিনিস ছিল। তাই মহিমার কৌতূহল মেটাতে রচনা আর রতীশ তাকে সব বুঝিয়ে দিল। এর আগে মহিমা এমন জিনিস কখনও খায়নি। রচনার হাতের সুস্বাদু রান্না খেয়ে মহিমা খুবই খুশী হল। দেড়টা নাগাদ খাওয়া শেষ হলেও রচনার অনুরোধ সত্বেও মহিমা রতীশের সাথে ড্রইং রুমে না গিয়ে রচনার পাশে পাশে থেকেই তাকে ডাইনিং রুম আর কিচেনের জিনিসপত্র ধোয়াধুয়ি করতে আর সব কিছু গোছগাছ করতে দেখে গেল। সব কিছু গোছগাছ করে রচনা মহিমার হাত ধরে ড্রইং রুমে এসে বসতেই মহিমা বলল, “এই রতীশ, ভাই আমি কিন্তু আর খুব বেশীক্ষণ বসতে পারব না গো। আমাকে উঠতে হবে এখন” বলে রচনার একটা হাত ধরে বলল, “আর রচনা, তোমাকে কী বলব ভাই, তা আমি বুঝতেই পাচ্ছি না। তুমি দেখতে যেমন মিষ্টি, তোমার ব্যবহারও তেমনই মিষ্টি আর তোমার হাতের রান্নাও খুব মিষ্টি। আমার ঘরের কুকটাও একজন বাঙালী মহিলা। কিন্তু তা সত্বেও এমন সুস্বাদু খাবার, বিশেষ করে ওই চালতার ডাল, আমি কখনও খাওয়া তো দুর, এর কথাও কখনও শুনিনি। আর এর স্বাদ বোধহয় কোনদিন ভুলতে পারব না। তবে ভাই, জানি তুমি আপত্তি করবে। কিন্তু আমাদের পাঞ্জাবী প্রথা মেনেই তোমার হাতের প্রথম রান্না খেয়েও আমাকে একটু শগুন দিতেই হবে” বলে সোফার ওপর রাখা নিজের ভারী ব্যাগটা হাতে নিয়ে তার ভেতর থেকে দুটো একশ’ টাকার প্যাকেট বের করে রচনার মাথার চারপাশে ঘুরিয়ে নিয়ে তার হাতে দিতেই রচনা অবাক হয়ে বলে উঠল, “না না বৌদি, এ আপনি কী করছেন? এতগুলো টাকা দিচ্ছেন কেন আপনি”?

মহিমা শান্ত স্বরে রচনার গালে হাত বুলিয়ে বলল, “না রচনা, অমন বলতে নেই। এটা টাকা নয়, শগুন। মানে বাংলায় একে তোমরা আশীর্বাদী বলতে পার। আর আশীর্বাদ কি কখনও ফিরিয়ে দিতে হয়”?
 

রচনা তবু কিছু একটা বলতে চাইতেই মহিমা তার মুখে হাত চাপা দিয়ে বলল, “চুপ, আর কোন কথা বোল না প্লীজ রচনা। আর শোন না, বলছি কি, যাবার আগে আরেকবার তোমার ঠাকুরকে প্রণাম করতে পারব”?

রচনা মহিমার কথা শুনে বেশ অবাক হল। সে হাতে ধরা টাকার প্যাকেট দুটো রতীশের হাতে দিয়ে মহিমাকে বলল, “বেশ তো যান না। প্রণাম করে আসুন”।

মহিমা রচনার হাত ধরে ভেতরের দিকে যেতে যেতে বলল, “আমি কি তোমার ঠাকুর ঘরের ভেতরে ঢুকে আরো একটু কাছে থেকে তোমার ঠাকুরকে দেখতে পারি”?

রচনা ঠাকুর ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে বলল, “তাহলে আপনাকে একটা ধোয়া কাপড় পড়ে নিতে হবে বৌদি। আপনি তো সকাল থেকেই এ শাড়িটা পড়ে আছেন। অফিস করে আবার এতটা রাস্তা পেরিয়ে এখানে এসেছেন। এটা পড়ে ঠাকুরঘরে ঢোকাটা ঠিক হবে না”।

মহিমা একটু হতাশ হয়ে বলল, “ও, তাহলে বরং ভেতরে না ঢুকে আগের মত বাইরে থেকেই করি”।

রচনা মহিমার হাত দুটো ধরে বলল, “আপনার যখন অমন ইচ্ছে হচ্ছে, তাহলে একটা কাজ করুন না বৌদি। আমি আপনাকে একটা শাড়ি বের দিচ্ছি। কিন্তু আমার ব্লাউজ তো আপনার গায়ে হবে না। আমি আপনার দেবরকে নিয়ে ড্রইং রুমে বসছি। আর ড্রয়িং রুমের দরজাটাও বন্ধ করে দিচ্ছি। আপনি শাড়িটা নিয়ে বাথরুমে ঢুকে আপনার শরীরের পড়ে থাকা সব কিছু খুলে ফেলে শুধু আমার শাড়িটা পড়ে ঠাকুরঘরে ঢুকে প্রণাম করে নিন। তারপর আবার নিজের শাড়ি ব্লাউজ পড়ে নিয়ে আমাকে ডাকবেন। আমি তখন ড্রইং রুমের দরজা খুলে দেব”।
 

মহিমা খুব আগ্রহের সাথে বলল, “কিন্তু তোমার খারাপ লাগবে না তো? বা রতীশ কিছু মনে করবে না তো”?

রচনা নিজের আলমারি খুলে একটা শাড়ি মহিমার হাতে দিয়ে বলল, “কেউ কিছু ভাবব না আমরা। নিন, এ শাড়িটা পড়ে ঠাকুরঘরে ঢুকবেন। ঠিক আছে”?
 

মহিমা রচনার হাত ধরে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ রচনা”।

রচনা মহিমাকে ছেড়ে বেডরুম পার হয়ে ড্রইং রুমে এসে ড্রয়িং রুমের দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে রতীশের পাশে বসতেই রতীশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “কি হল? বৌদি কোথায় গেলেন”?
 

রচনা রতীশকে সব কিছু বুঝিয়ে বলল। তারপর আবার বলল, “ইশ দেখেছ সোনা? বৌদি শগুন দেবার নাম করে কতগুলো টাকা আমাকে দিল! এটা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেল না”?

রতীশ কিছু একটা ভাবতে ভাবতে বলল, “হ্যা তা তো ঠিকই। কিন্তু আশীর্বাদীর জিনিস তো ফিরিয়েও দেওয়া যায় না। কিন্তু আমি অন্য কথা ভাবছি সোনা। দেখ আমি তো ভেবেছিলুম বৌদি তার ওখানে আমাকে কাজে যোগ দেবার কথা বলতেই এসেছিলেন। কিন্তু উনি তো এ ব্যাপারে এখনও একটা কথাও বলেন নি! আর আরেকটা জিনিস লক্ষ্য করেছ? উনি যখন আমাদের বাড়ি এসেছিলেন তখন তাকে খুব উচ্ছ্বসিত খুব চনমনে দেখাচ্ছিল। কিন্তু খাবার টেবিলে বসবার আগে থেকেই উনি যেন কেমন চুপচাপ হয়ে গেছেন। অনেকক্ষণ তো একেবারে চুপচাপ বসেছিলেন। ব্যাপারটা কেমন অদ্ভুত ঠেকছে আমার কাছে”।
 

রচনা বলল, “হ্যা সেটা আমিও খেয়াল করেছি। কিজানি, আমার রান্না খেয়ে বুঝি ভাল লাগেনি তার। কিন্তু সোনা তুমি আমাকে একটা কথা বল তো? তুমি কি বিমল আগরওয়ালাকে আমাদের ফ্ল্যাটের ঠিকানা বলেছিলে কখনও”?

রতীশ বলল, “না রচু, আমি তো কক্ষনো বিমলজীকে আমাদের ফ্ল্যাটের ঠিকানা বলিনি। তবে হ্যা আমরা যে বরানগরে থাকি এটা বলেছি। কিন্তু বরানগরের কোন রোডে কোন লেনে আর কোন বিল্ডিঙে থাকি, এসব তাকে আমি কখনো বলিনি। আর শুধু তার কথাই বা বলছি কেন। আমি কাউকেই সেসব বলিনি। এমনকি সেদিন ইন্টারভিউএ বৌদিকেও সেকথা বলিনি। কিন্তু বৌদি তো বললেন, তিনি বিমলজীর কাছ থেকে আমাদের ফ্ল্যাটের ঠিকানা জেনে নিয়েছেন”!
 

রচনা কিছু না বলে চুপ করে মনে মনে কিছু একটা ভাবতে লাগল। খানিকক্ষণ বাদে ড্রইং রুমের দরজার ও’পাশ থেকে মহিমা রচনার নাম ধরে ডাকতেই রচনা উঠে দরজা খুলে দিল। মহিমা রচনার দুটো হাত ধরে চুমু খেতে খেতে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ রচনা। আমার জীবনে এমন একটা দিন আগে আর কখনও আসেনি। তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই। এ দিনটার কথা আমার সারা জীবন মনে থাকবে”।

রচনা মহিমাকে ধরে সোফায় বসিয়ে দিয়ে বলল, “বসুন এখানে বৌদি। কিন্তু .... “

মহিমা নিজের ভারী ব্যাগটা কাঁধে উঠিয়ে বলল, “আর কোন কিন্তু নয় আজ। আমাকে এখন বেরোতেই হবে ভাই”।
 

রতীশ এবার জিজ্ঞেস করল, “কিন্তু বৌদি, আপনি কী বলতে এসেছিলেন, সে ব্যাপারে তো কিছু বললেনই না”!

মহিমা মিষ্টি করে হেসে জবাব দিল, “হ্যা ভাই, কিছু একটা বলব বলেই তো এসেছিলাম। কিন্তু আসবার পর ভাবলাম সে প্রসঙ্গটা না তোলাই ভাল। তুমি দু’ দিন সময়ে চেয়েছ আমার কাছে। এখনও তো দু’দিন পুরো পেরোয় নি। তাই তোমার জবাব পেলেই এ ব্যাপারে পরের কথা বলব আমি। তাই এখন আর কিছু বলছি না। আগের বলা কথা গুলোই রিপিট করে বলে তো আর কোন লাভ নেই ভাই। আশা করি আমার কথাগুলো তুমি ভুলে যাওনি। আর এটাও আশা করছি যে আগামীকাল সন্ধ্যের আগেই তোমার মতামত জানতে পারব আমি। তবে ভাই রচনাকে দেখার পর আমার মনে হচ্ছে একটা কথা তোমাদের দু’জনকে আমার বলা উচিৎ। অবশ্য তোমরা আমার কথাটাকে যদি অন্য ভাবে না নাও”।
 

রতীশ বলল, “হ্যা হ্যা বৌদি বলুন”।

মহিমা একমূহুর্ত চুপ করে থেকে বলল, “দেখ রতীশ। তুমি হয়ত ভেবেছ যে বিমলের সাথে আমার খুব ঘণিষ্ঠ বন্ধুত্বের সম্পর্ক আছে। কিন্তু সেটা আসলে সত্যি নয়। বিমলের সাথে আমার সত্যি তেমন গভীর আন্তরিকতার কোন সম্পর্ক নেই। তবে একটা সময় বিমল আমার খুব উপকার করেছিল। আর তারই কৃতজ্ঞতা স্বরূপ ওর সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করে থাকি। আর তাছাড়া বিমলের স্ত্রী সবিতাও আমাদের ইনস্টিটিউটের একজন কাস্টমার। সেই সুবাদেও ওর সাথে একটা ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছেই। আর বিমলই তোমাকে আমার কাছে নিয়ে এসেছে। তোমার মত একজন যোগা এক্সপার্টকে পেলে আমিও উপকৃত হব। আর সেজন্যেও বিমলকে একটা ধন্যবাদ আমাকে দিতেই হবে। কিন্তু তা সত্বেও আমি তোমায় একটা কথা বলতে চাই রতীশ। তুমি আমার ওখানে কাজে যোগ দাও বা না দাও সেটা নিয়ে কিছু বলছি না আমি আর। আমার কথার ওপর তোমার আস্থা জন্মালে তুমি নিজেই সে ডিসিশন নেবে। কিন্তু ভাই, বিমলের সাথে তোমরা কেউ ঘনিষ্ঠতা বাড়িও না। ওর সংস্পর্শ থেকে যতটা দুরে থাকতে পার, সে চেষ্টা কোর তোমরা”।

রচনা আর রতীশ মহিমার কথা শুনে অবাক হল। রতীশ বলল, “কিন্তু বৌদি, এমন একটা কথা আপনি কেন .....”।

মহিমা নিজের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে উঠে রতীশের কথায় বাঁধা দিয়ে বলল, “আমাকে আর কিছু জিজ্ঞেস কোর না রতীশ। এ ব্যাপারে আমি আর বেশী কিছু বলব না এখন” বলে রচনার একটা হাত ধরে মুখে একটু হাসি টেনে এনে বলল, “তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ রচনা। আমি ভাবতেও পারিনি তোমাদের বাড়ি এসে যে সময়টুকু কাটাব তা এত সুন্দর হতে পারে। আর তোমার হাতের সাধারণ খাবার আমার মুখে কতটা অসাধারণ বলে মনে হয়েছে, সেটাও তোমাকে আমি বলে বোঝাতে পারব না। কিন্তু তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব”?

রচনাও নিজের মুখে জোর করে খানিকটা হাসি টেনে এনে বলল, “হ্যা বৌদি, বলুন”।

মহিমা খুব শান্ত গলায় বলল, “যদি রতীশ আমার ইনস্টিটিউটে কাজ করতে রাজি না হয়, তবে ওকে আমি বাধ্য করব না সেটা করতে। কিন্তু তারপরেও যদি কখনো আমার তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করে, তাহলে আমি কি তোমাদের এখানে আসতে পারি”?
 

রচনা একটু বিব্রত ভাবে জবাব দিল, “ছি ছি বৌদি, এমন করে বলছেন কেন? আপনার ইচ্ছে হলে যে কোন দিন আসতে পারেন। তবে একটা কথা, সেদিন আর এমনভাবে শগুণ দিয়ে আমাকে লজ্জা দেবেন না প্লীজ”।

মহিমা রচনাকে বুকে জড়িয়ে ধরে তার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে চুমু খেয়ে বলল, “আজ তোমাকে প্রথম দেখেছি, তোমার হাতের রান্না প্রথম খেয়েছি বলেই না শগুণ দিয়েছি। তবে তুমি যখন চাইছ, এর পর আর এভাবে তোমাকে শগুণ দেব না। কিন্তু আমার এই দেবরানীর জন্যে কিছু উপহার তো মাঝে মধ্যে আনতেই পারি। নাকি তাতেও বারণ আছে”?
 

রচনা হেসে বলল, “হালকা হলে আপত্তি নেই। কিন্তু ভারী কোন উপহার কখনো দেবেন না প্লীজ”।
 

মহিমা আরেকবার রচনার কপালে চুমু খেয়ে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ রচনা। থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ। তোমার মত এমন মিষ্টি মেয়ে আমি আর দেখিনি। আচ্ছা ভাই, আমি এখন যাব”।

রতীশ আর রচনা মহিমাকে লিফটের দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিল। মহিমা লিফটে চড়ে নেমে যেতে রতীশ আর রচনা ঘরে ঢুকতেই রচনা সামনের দরজা বন্ধ করে দিয়ে চুপচাপ একটা সোফায় গিয়ে বসে পড়ল। রতীশ ভেতরে বাথরুমে ঢুকে গিয়েছিল। বাথরুম থেকে ফিরে এসে রচনাকে গভীর ভাবে কিছু একটা ভাবতে দেখে রতীশ তার পাশে বসে তার কাঁধে আলতো করে হাত রেখে জিজ্ঞেস করল, “কী ভাবছ রচু”?


______________________________
 ss_sexy
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply
#77
(Update No. 95)

রচনা চমকে উঠে বলল, “না তেমন কিছু না। ওই মহিমা বৌদির কথাই ভাবছিলাম। কী সুন্দর দেখতে নাগো? গায়ের রঙটা দেখেছ? যাকে বলে দুধে আলতায় গোলা, ঠিক তাই। স্নান করে আসবার পর তার গাল দুটো দেখে মনে হচ্ছিল যে একটু টোকা দিলেই বুঝি ত্বক ফেটে রক্ত বেরিয়ে আসবে! আর কি সুন্দর অমায়িক ব্যবহার, আর কথাবার্তা! এতটুকু রুক্ষতা নেই। আর পাঞ্জাবী হয়েও কি সুন্দর বাংলা বলেন। আগে জানতে না পারলে কেউ তাকে পাঞ্জাবী মেয়ে বলে ভাববেই না”।

রতীশ একটু দুষ্টুমি করে বলল, “তুমি তো আমায় অবাক করে দিলে রচু। আমি তো এতদিন ভাবতুম যে ছেলেরাই বুঝি কেবল সুন্দরী মেয়েদের এমনভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে। কিন্তু সুন্দরীরাও যে অন্য সুন্দরী মেয়েদের রূপ সৌন্দর্যকে এভাবে দেখে, সেটা আজই বুঝলুম”।
 

রচনা একটু হেসে বলল, “সৌন্দর্যের বিচার পুরুষদের চাইতে মেয়েরাই বেশী ভালভাবে করতে পারে, সেটা জানো না? আর তাছাড়া আজকালকার ছেলে ছোকরাদের কথা আর কি বলব? তাদের বেশীর ভাগই তো সুন্দরী কুৎসিত সব মেয়েকে দেখেই জিভের জল ফেলতে থাকে। তারা আবার রূপের বিচার করতে পারে নাকি”?

রতীশ একহাতে রচনাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “উহু, তোমার কথাটা মানতে কষ্ট হচ্ছে আমার। সরি সোনা। আমি তো জীবনে মাত্র দুটো মেয়ের রূপের বিচার করেছি। আর তুমি তো গত তিন বছর ধরে আমার সাথে আছ। অন্য কোনও মেয়েকে দেখে আমার জিভ থেকে জল গড়াতে দেখেছ কখনো”?

রচনা রতীশের দিকে মুখটা সামান্য ঘুরিয়ে তার গালে একটা চুমু খেয়ে বলল, “না আমি মোটেও ভুল বলিনি। আমার বরটা ওই বেশীরভাগের দলে পড়ে না। তুমি আছ তোমার মত মাইনরিটিদের দলে। আর আমি যে ভুল বলছি না সেটা তুমিও ভাল ভাবেই জানো। আর ওই বেশীরভাগ দলের পুরুষেরা যদি সত্যি সত্যি রূপের বিচার করতে পারত, তাহলে একদিকে যেমন বড় শহরগুলোর একটা সুন্দরী মেয়েও ধর্ষিতা না হয়ে থাকতে পারত না, তেমনি অন্যদিকে যেসব মেয়েরা প্রকৃত অর্থে সুন্দরী নয়, তারা কেউ কখনো রেপড হত না”।

রতীশ রচনার কথা শুনে বলল, “হু টপিকটা মন্দ নয়। এ বিষয়টা নিয়ে অনেক সময় ধরে ডিবেট করা যায়। কিন্তু আপাততঃ সেদিকে না গিয়ে, মহিমা বৌদিকে কেমন লাগল, সেটা বল। তার প্রস্তাবে হ্যা করলে আমাকে তো রোজ প্রায় ঘন্টা পাঁচেক তার সাথে থাকতে হবে। তাই এ ব্যাপারে তোমার মতটা জানা এখন বেশী দরকার আমার”।

রচনা একটু ভেবে বলল, “আমি বৌদির চরিত্রের কয়েকটা বিশেষ কথা তোমাকে বলতে পারি। কিন্তু তার স্বপক্ষে কোনও প্রমাণ কিছু দেখাতে পারব না। তবে সেগুলো কিছুতেই ভুল হতে পারে না। কিন্তু সে কথাগুলো তোমার ভাল না-ও লাগতে পারে সোনা”।
 

রতীশ একটু অবাক হয়ে বলল, “বাপরে! তুমি কি জ্যোতিষবিদ্যা জানো নাকি? শুনি শুনি। কি বুঝেছ তুমি। আর তার ওখানে কাজ নেবার আগে তার সম্বন্ধে যতটুকু জানা যায় তাতে তো ভালই হবে”।

রচনা রতীশের একটা হাত ধরে বলল, “কিন্তু কথাগুলো কাউকে বলতে পারবে না তুমি। মহিমা বৌদিকে তো নয়ই, আর কাউকেও বলতে পারবে না। এমনকি দিদিভাইকেও বলবে না। যদি কথা দাও, তাহলেই বলব”।
 

রতীশ এবার পাশ থেকেই রচনাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে বলল, “বেশ কথা দিলাম। এই তোমাকে ছুঁয়ে কথা দিচ্ছি। এবার বল”।
 

রচনা বলল, “সোনা আমি জ্যোতিষী তো নই। কিন্তু বাবার পুঁথিপত্র পড়ে পড়ে আমি কিছু কিছু জিনিস জানতে বা বুঝতে শিখেছি। মহিমা বৌদির হাতে প্রসাদ দেবার সময় তার হাতের তালুর দিকে নজর যেতেই আমি বুঝেছি যে তিনি তার বিয়ের অনেক আগে থেকেই, সম্ভবতঃ বেশ ছোটবেলা থেকেই পুরুষ সংসর্গ করতে অভ্যস্ত ছিলেন। আর সেটা শুধু একজন পুরুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। বহুগামী সম্পর্ক ছিল। তাই ধরেই নেওয়া যায় যে, তিনি একসময় একাধিক পুরুষের সাথে বিবাহ বহির্ভুত শারীরিক সম্পর্কও রাখতেন। তবে এর পেছনের কারনটা শুধু সেক্স নয়। কিছু কিছু বিশেষ উদ্দেশ্যসিদ্ধি করতেই তিনি ওসব করেছেন। তবে এখনও তার চরিত্র অমনই আছে কিনা, সেটা বুঝতে পারিনি। তবে এটা বুঝেছি যে তার মনে তেমন ঘোরপ্যাঁচ নেই। আর পরিচিত সকলের সাথেই তিনি বন্ধুসুলভ আচরণ করেন। জেনে বুঝে কারুর ক্ষতি করেন না। বরং নিজের সাধ্যমত তার আশেপাশের লোকদের নানাভাবে উপকারই করে থাকেন। তাই ধরে নেওয়া যায় যে, মানুষ হিসেবে তিনি খুবই ভাল। তবে বৌদির হাতটা যদি আর একটু দেখবার সুযোগ পেতাম, তাহলে তার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কিছুটা আঁচ করতে পারতুম”।
 

রতীশ রচনার কথা শুনে ভেতরে ভেতরে কেঁপে উঠল। মনে একটা ভয়ের সঞ্চার হল তার। তবে সে ভয়টা মহিমার চরিত্রের কথা শুনে যতটা নয়, তার অনেক বেশী হয়েছিল নিজের আর সীমন্তিনীর কথা ভেবে। তার আর মন্তির মধ্যে ছোটবেলা থেকেই যা কিছু হয়েছিল, সে’সবের ছাপ কি তাদের হাতে আছে? সে’সব কি রচনা বুঝে ফেলেছে তাহলে? গত তিন বছরে রতীশের হাতের রেখাও কি সে পড়ে ফেলেছে? বিয়ের পর মন্তিকে অবশ্য খুব বেশীদিন রচনা কাছে পায়নি। কিন্তু মাধ্যমিক পাশ করার পর পর্যন্তও মন্তির সাথে সে তো অনেকবার অনেকটা করে সময় কাটিয়েছে! মন্তির হাতেও কি সে চিহ্ন সে লক্ষ্য করেছে! হে ভগবান, এবার তাহলে রতীশ কি করবে? রচনা তাকে ছেড়ে চলে যবে না তো? আর রচনা যদি তাকে ছেড়ে চলে যায় তবে তার নিজের কি হবে? মন্তিকে তো কোনদিনই নিজের করে পাবে না। গত তিন বছরে তার জীবনে রচনা ছাড়া আর কেউ নেই। মন্তি তো নিজেই তার জীবন থেকে সরে গেছে। আর সে নিজেও মন্তির ওপর আর আগের মত আকর্ষণ অনুভব করে না। কিন্তু তাকে সে ভাল তো বাসেই। মন্তি এখন তার শুধুই প্রিয় ছোট বোন। রচনাকে পেয়ে তার জীবনটা পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। রচনার অস্তিত্ব এখন তার শরীর আর মনের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে। তার ওপর সে এখন পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। রচনা তার জীবন থেকে সরে গেলে সে কি বেঁচে থাকতে পারবে? আর তার জীবন থেকে সরে না গেলেও রচনা যদি সে’সব ঘটণার আঁচ পেয়ে থাকে, তাহলে সে কি আর তার প্রাণের চেয়ে প্রিয় রচু সোনার মুখের দিকে তাকাতে পারবে?
 

শরীরের চারপাশে রতীশের হাতটাকে কিছুটা শিথিল হয়ে যেতে দেখে রচনা স্বামীর হাত ধরে ঝাঁকি দিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কি হল সোনা? চুপ করে গেলে যে একেবারে? কী ভাবছ”?
 

রতীশ সন্বিত ফিরে পেয়ে কিছু একটা বলতে যেতেই তার গলাটা কেমন যেন ঘড়ঘড় করে উঠল। গলা পরিস্কার করে সে বলল, “না মানে ভাবছিলুম। ভাবছিলুম যে এমন মহিলার সংস্পর্শে যাওয়াটা কি ঠিক হবে”?
 

রচনা একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “ওমা, এতে এত ঘাবড়ে যাবার কি আছে সোনা? আর তুমি কি ভাবছ আমি ওই কথাগুলো সিরিয়াসলি বলেছি? ইস আমার এমন সহজ সরল বরটাকে নিয়ে আমি কী যে করি? একটুও ঠাট্টা করবার উপায় নেই গো তোমার সাথে” বলে রতীশকে জড়িয়ে ধরে তার দু’গালে দুটো চুমু খেয়ে হেসে বলল, “ভেব না সোনা। আমি তো শুধু একটু ঠাট্টাই করছিলুম গো। আমার সে মনগড়া কথা শুনেই তুমি এত সিরিয়াস হচ্ছ কেন বল তো”?
 

রতীশ একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল, “মানে? তুমি মহিমা বৌদির হাত দেখে যে কথাগুলো বুঝতে পেরেছ বলেছিলে সেগুলো তোমার মনগড়া কথা? এমনি এমনি বানিয়ে বলেছ”?

রচনা মিষ্টি করে হেসে জবাব দিল, “তা নয়তো কি? আমি কি জ্যোতিষী নাকি? তবে মহিমা বৌদিকে দেখে আমার মনে কয়েকটা কথা উঠেছে। আসলে মহিমা বৌদির ওখানে ইন্টারভিউ দিয়ে ফিরে এসে তুমি আমাকে বলেছিলে যে তিনি অসম্ভব সুন্দরী এক মহিলা। সে’কথা শুনে আমার মনে মনে একটু ভয় হয়েছিল। মনে একটুখানি আশঙ্কা হয়েছিল। অমন সুন্দরী এক মহিলার সাথে রোজ তোমার দেখা হবে, তোমাদের ভেতর কথা হবে। তাই ভেবেছিলুম তোমার ওপর তিনি যদি অন্যভাবে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন, তাহলে আমি হয়ত তোমাকে ধরে রাখতে পারব না। তোমাকে মুখে কিছু বলিনি, কিন্তু মনে মনে খুব ইচ্ছে ছিল তাকে একবার দেখার। কিন্তু মেঘ না চাইতেই জলের মত মহিমা বৌদি নিজেই আমাদের ঘরে চলে এলেন আজ। তাই তার, চলাফেরা, কথাবার্তা, ভাবগতি আর বিশেষ করে তার মুখ চোখের অভিব্যক্তির ওপর খুব ভাল করে নজর রেখে বোঝবার চেষ্টা করছিলাম, তোমার প্রতি তিনি অন্য কোন ভাবে আকৃষ্ট হয়েছেন কিনা। আর সে’সব লক্ষ্য করতে গিয়েই কয়েকটা কথা আমার মনে এসেছে”।
 

রতীশ কিছুটা সহজ হয়ে উঠে রচনার কথা শুনে তার মুখের দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করল, “তাই নাকি? তা কী মনে হল তোমার, শুনি”।

রচনা জবাবে বলল, “শোন সোনা, মহিমা বৌদি এখন পরিপূর্ণ ভাবে পরিপক্ক এক মহিলা। তুমিই তো বলেছ যে সে তোমার থেকে ঊণিশ বছরের বড়। তার মানে তিনি এখন সাতচল্লিশ আটচল্লিশ বছর বয়সী হবেন। অবশ্য তাকে দেখে একেবারেই তা মনে হয় না। খুব দারুণ ভাবে তিনি মেনটেন করেছেন তার শরীরটাকে। আগে থেকে না জানা না থাকলে আমিও তাকে চল্লিশোর্ধ ভাবতে পারতুম না। কিন্তু তিনি হয়ত এ বয়সে দু’ তিনটে সন্তানের মা-ও হয়ে থাকবেন। তার সন্তানেরাও হয়ত প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে উঠেছে। বয়সের সাথে সাথে প্রত্যেকটা লোকেরই স্বভাব চরিত্র বদলে যায়। তার শরীরের গঠন, বিশেষ করে তার বুক কোমড় আর পাছা দেখে আমার সত্যি মনে হয়েছে যে তার শরীরে অনেক পুরুষের হাত পড়েছে। তবে আমার সে ধারণা মিথ্যেও হতে পারে। কোন কোন মেয়ের বুক বিয়ের আগেই পুরুষের ছোঁয়া ছাড়াও স্বাভাবিক ভাবেই গড় পড়তা মেয়েদের বুকের তুলনায় ভারী হয়ে উঠতে পারে। আর বিয়ের পর স্বামীর সোহাগে সব মেয়েরই মাইগুলো আরো বড় হয়ে ওঠে। আর আমার ধারণা .....”

রতীশ রচনাকে বাঁধা দিয়ে জিজ্ঞেস করল, “সত্যি এমনটা হয়? কিন্তু তোমার বুক দেখে তো আমার তেমন মনে হয় না সোনা”।

রচনা বলল, “তুমি আর আমার গুলোতে ভাল করে নজর দাও কখনও? শুধু তো মুখে নিয়ে চোখ বুজে চুসতে থাক। এখন আমার ব্রার সাইজ জানো তুমি? বলতো দেখি কত”?
 

রতীশ রচনার একটা স্তনের ওপর হাত বোলাতে বোলাতে বলল, “এমন সুন্দর জিনিসগুলো ছেড়ে আমি বোকার মত তোমার ব্রার সাইজ দেখতে যাব নাকি”?

রচনা রতীশের হাতটাকে ঝটকা মেরে সরিয়ে দিয়ে বলল, “এই শুরু হল তোমার না? যে কথাটা বলতে যাচ্ছিলাম, দিলে তো সেটা থেকে সরিয়ে”?

রতীশ আবার রচনার বুকের ওপর হাত চেপে ধরে বলল, “বারে, নিজের বৌয়ের এমন সুন্দর বুকের এই জিনিসগুলোকে আমি না ধরলে কে ধরবে শুনি? তুমি তোমার কথা বলে যাও না। আমি তো তোমাকে বাঁধা দিচ্ছিনে বলতে”।
 

রচনা বলল, “মুখে তো বলছ বাঁধা দিচ্ছ না। কিন্তু তুমি কি এই তিন বছরেও বুঝতে পারনি? তুমি আমার এগুলোকে নিয়ে টেপাটিপি শুরু করলেই আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনা। যদি আমার কথা সত্যি শোনার ইচ্ছে থাকে তাহলে তোমার হাত সরাও”।

রতীশ রচনার গালে আদর করে চুমু খেয়ে বলল, “আচ্ছা বেশ। বেশী টিপব না। শুধু একটু একটু হাত বোলাবো আলতো করে। এটুকু তো এলাও কর প্লীজ”।

রচনা একমূহুর্ত চুপ করে থেকে ভালবাসা মাখা চোখে স্বামীর দিকে চেয়ে বলল, “বেশ, হাত বোলাও। কিন্তু ব্লাউজের হুক খুলবেনা প্লীজ”।

রতীশ রচনার একটা স্তনের ওপর নিজের হাতের থাবা বসিয়ে বলল, “ঠিক আছে, ব্লাউজ খুলছি না। শুধু এভাবে হাত বোলাবো। আহ, এতো কাছাকাছি থেকেও হাতগুলোকে এভাবে খালি রাখা যায় বল তো”?

রচনা কপট রাগ দেখিয়ে বলল, “হু, এই করে করেই তো এ দুটোকে ফুটবলের মত বড় করে তুলছ। এখন আর চৌত্রিশ সাইজের ব্রা পড়তেই পারিনা। টিপে টিপে আর চুসে চুসে এগুলোকে ছত্রিশ সাইজ বানিয়ে ফেলেছ। আচ্ছা যাক সে কথা। মহিমা বৌদির কথাই বলছি। বলছিলাম যে বৌদি যদি অন্য পুরুষদের সাথে সেক্স রিলেশন রেখেও থাকেন কোন সময়, তাহলেও তেমন ভয়ের কিছু আছে বলে মনে হয় না আমার। কম বয়সে অনেক ছেলেমেয়েই শারীরিক উন্মাদনার নেশায় অমন করে থাকে। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে এ’সবের প্রবণতা কমে যায়। আর বিয়ের পর স্বামীর ঘর করতে করতে বেশীরভাগ মেয়েরাই সে’সব অভ্যেস ভুলে যায়। আমার মনে হয় মহিমা বৌদি ছোটবেলায় এমন কিছু করে থাকলেও তার ভেতরে ছোটবেলার সে’সব অভ্যেস হয়ত আর অবশিষ্ট নেই এখন। তিনি যতটুকু সময় আমাদের সাথে ছিলেন, ততক্ষণে তার কথা বার্তা চোখের চাউনি লক্ষ্য করে আমার কিন্তু তেমনটাই মনে হয়েছে। তিনি আর আগের মত নেই। পুরুষের সান্নিধ্যলোভী মেয়ে মহিলাদের চোখের দৃষ্টি অন্যরকম হয়ে থাকে। আর তোমার দিকেও তাকে যেভাবে তাকিয়ে থাকতে আমি দেখেছি, তাতে আমার মনে হয়েছে তার চোখে তেমন সেক্সুয়াল এট্রাকশনের চিহ্ন একেবারেই ছিল না। যদি তার স্বভাবের পরিবর্তন না হত, তাহলে তোমার মত এমন একজন পুরুষের প্রতি তিনি অন্য চোখেই তাকাতেন। আর সেটা আমার চোখ এড়িয়ে যেতে পারত না কিছুতেই। তাই আমার মনে হচ্ছে, আমার ধারণা যদি পুরোপুরি সত্যি না-ও হয়, সেই পুরোন স্বভাব তার ভেতর যদি এখনও থেকে থাকে, তো থাকতে পারে। কিন্তু অন্ততঃ তোমার ওপর তার মনোভাবটা সে’রকম নয়। আমি কিংশুককে বা মেজদাভাইকে যে নজরে দেখি, মহিমা বৌদির চোখেও একই দৃষ্টি দেখেছি আমি। বিয়ের পর মহিমা বৌদি কোন দেবর পায়নি। কিন্তু বাঙালী আদব কায়দা খুব ভালভাবে রপ্ত করেও কারুর মুখে সে ‘বৌদি’ সম্বোধন শুনতে পাননি। তোমাকে দেখে হয়ত সে তাই তোমার মুখ থেকে সে ডাক শুনে নিজের মনের একটা অপূর্ণ ইচ্ছে পুরন করতে চাইছেন”।

এতখানি বলে রচনা একটু থেমে দম নিয়ে আবার রতীশকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, “তাছাড়া তোমার ওপর তো আমার আস্থা আর ভরসার অভাব নেই। আর নিজের ভালবাসার ওপরেও আমার পুরো আস্থা আছে। আমার ভালবাসা যদি সত্যি হয়ে থাকে, আমার ভালবাসায় যদি জোর থেকে থাকে, তাহলে মহিমা বৌদি কেন, তার চেয়ে আরো অনেক বেশী কোন সুন্দরীও তোমাকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে পারবে না। আমি কি ভুল বলছি সোনা”?

রতীশও রচনাকে দু’হাতে বুকে চেপে ধরে তার গালে কপালে চুমু খেতে খেতে বলল, “আই লাভ ইউ রচু সোনা। তোমাকে ছেড়ে আমি একটা দিনও থাকতে পারব না গো। তুমি যে আমার প্রতিটি শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে জড়িয়ে থাক। তোমাকে ভোলবার সাধ্য আমার নেই। তেমন ভীমরতি হবার আগে ভগবান যেন আমাকে এ পৃথিবী থেকে ........”

রচনা সাথে সাথে রতীশের মুখে হাত চেপে ধরে বলল, “ছিঃ সোনা। কোন আজেবাজে কথা বোল না প্লীজ” বলে রতীশের মুখটাকে নিজের কাঁধের ওপর চেপে ধরল। রতীশও রচনার কাঁধে গলায় চুমু খেয়ে নিজেকে সংযত রাখতে না পেরে বলল, “রচু সোনা, একটু আদর করতে দাও না। দেখছ না তোমার সোনাখোকাটা রেগে গেছে”।

রচনা রতীশের উঁচু পাজামার দিকে চাইতেই দেখল তার বুকের ব্লাউজটা পুরোপুরি খোলা। আর ব্রার নিচ দিয়ে তার স্তনদুটো খানিকটা বেরিয়ে আছে। সেটা দেখেই সে চমকে উঠে বলল, “ওমা, সোনা! তুমি না বলেছিলে আমার ব্লাউজ খুলবে না? তাহলে এ’সব কী? আমি কথা বলতে বলতে টেরই পাইনি। কী দুষ্টু গো তুমি? আর এটার কী অবস্থা করেছ”? বলে পাজামার ওপর দিয়েই রতীশের পুরুষাঙ্গটাকে চেপে ধরে বলল, “ইস মাগো”।

রতীশ রচনার ব্রার ওপর দিয়েই তার একটা স্তন হাতে চেপে ধরে বলল, “প্লীজ সোনা, একবার। তুমি দেখতে পাচ্ছ না তোমার সোনাখোকা আমার সোনামণিকে না পেয়ে কতটা রেগে আছে”।

রচনা রতীশের বুকে একটা আলতো কিল মেরে বলল, “ইশ, তুমি না ....। নাও, যা করার কর। তবে তোমার সোনামনি কিন্তু তৈরী হয়নি এখনও”।
 

রতীশ রচনার ব্রার হুক খুলতে খুলতে বলল, “সে জন্যে ভেব না। আমার সোনামণি তোমার মত নিষ্ঠুর নয়। আমার এক ডাকেই সে সাড়া দেবে” বলেই রচনাকে নিজের কোলের ওপর তুলে নিয়ে তার শাড়ি সায়া গুটিয়ে দিয়ে রচনাকে চিৎ করে শুইয়ে দিয়ে তার দু’পায়ের মাঝে হুমড়ি খেয়ে পড়ল।
 

পনের কুড়ি মিনিট ধস্তাধস্তি করে নিজেদের শরীরকে শান্ত করল তারা দু’জন। শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক হতে রতীশ রচনার গালে মুখ ঘসতে ঘসতে বলল, “উঠতে ইচ্ছে করছে না? আরেকবার শুরু করব নাকি”?

রচনা চোখ মেলে দেখে ঘর প্রায় অন্ধকার হয়ে গেছে। ইশ, সন্ধ্যে হয়ে এসেছে। রতীশকে নিজের শরীরের ওপর থেকে ঠেলে নামিয়ে সোফা থেকে উঠে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে বলল, “ইশ প্রায় ছ’টা বাজতে চলেছে গো। কথায় কথায় সময় কিভাবে কেটে গেল, বুঝতেই পারিনি। যাই, সন্ধ্যে প্রদীপটা জ্বালাই। সোনা তুমি আরেকবার দিদিভাইকে ফোন করে দেখ না। এ মা, শাড়ি সায়া দুটোই ভিজে গেছে” বলতে বলতে ভেতরের ঘরে ঢুকে গেল।

বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে ধোয়া শাড়ি পড়ে বেডরুমে এসে রতীশের মোবাইলটা হাতে নিয়ে আবার ড্রয়িং রুমে এসে ফোনটা রতীশের হাতে দিয়ে বলল, “সোনা, দিদিভাইকে ফোন করার আগে একবার বৌদিকে ফোন করে একটু খবর নাও না, তিনি বাড়ি গিয়ে পৌঁছেছেন কিনা। তারপর দিদিভাইকে ট্রাই করো। আমি সন্ধ্যে প্রদীপটা জ্বালাই” বলে সে আবার ভেতরে চলে গেল।

রতীশ মহিমার মোবাইল সুইচড অফ পেল। আর সীমন্তিনীর মোবাইলও আনরিচেবল শুনল। রচনা সন্ধ্যে প্রদীপ জ্বালিয়ে সব গুলো ঘর ঘুরে এসে ঠাকুরঘরে ঢুকে ঠাকুর প্রণাম করে বেডরুমে এসে শাড়ি পাল্টাতে পাল্টাতে রতীশকে জিজ্ঞেস করল, “সোনা ফোনে লাইন পেয়েছ”?
 

রতীশ জবাব দিল, “নাহ, কারুর সাথেই কথা হল না। মন্তির ফোন এখনও আনরিচেবল শুনতে পেলাম। আর বৌদির ফোন সুইচড অফ”।

রচনা শাড়ি পড়তে পড়তে বলল, “ওমা, বৌদির ফোনও সুইচড অফ! আচ্ছা ঠিক আছে, পরে না হয় আর একবার ফোন করে দেখা যাবে। আর দিদিভাই তো যেন আমাদের কথা ভুলেই গেছে। আচ্ছা সোনা, তুমি হাত মুখটা ধুয়ে নাও। আমি চা বানাচ্ছি”।

ডাইনিং রুমে বসে চা খেতে খেতে রতীশ জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা রচু, মন্তির সাথে তো মনে হচ্ছে আজও কথা বলা হবে না। তাহলে বৌদিকে কী বলা যায়, সেটা বল তো? আর আজ এসে উনি যা করে গেলেন, তাতে তো তাকে ‘না’ বলতেও সঙ্কোচ হচ্ছে আমার। তুমি জানো, শগুণ হিসেবে বৌদি তোমাকে কত টাকা দিয়েছেন? ছাব্বিশ হাজার সাতশ টাকা! উত্তর ভারতের হিন্দিভাষীদের মধ্যে এমন শগুণ দেবার প্রথা আছে বটে। কিন্তু তাই বলে এত টাকা কেউ দেয়? নিজে চোখে না দেখলে তো আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারতুম না”!

রচনা রতীশের কথা শুনে অবাক হয়ে বলল, “কী বলছ সোনা? ছাব্বিশ হাজার সাতশ টাকা”!

রতীশ বলল, “হ্যা রচু, ঠিক তাই। প্রথমবার তোমার মুখ দেখে শগুণ দিয়েছেন ছ’হাজার সাতশ টাকা। আর পরের বার কুড়ি হাজার দিয়েছেন”।

রচনা অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “হু, এখন তো মনে হচ্ছে এটা উনি ফন্দি করেই দিয়েছেন। তুমি যাতে তার ইনস্টিটিউটে কাজে যোগ দিতে অস্বীকার না করতে পার, সেজন্যে। কিন্তু তাই বলে এতগুলো টাকা দেবার প্রয়োজন ছিল”? এই বলে ভুরু কুঁচকে কিছু একটা ভেবে নিয়ে বলল, “আচ্ছা, ব্যাপারটা আরেকটু ভেবে দেখা দরকার। কিন্তু সোনা, তুমি কি একটু বাইরে যাবে গো? চা পাতা শেষ হয়ে এসেছে। আজ এনে না রাখলে কাল সকালে অসুবিধে হবে”।

রতীশ বলল, “ঠিক আছে, আমি কাছের কোন একটা দোকান থেকেই নিয়ে আসছি, আর কিছু আনতে হবে কি”?

রচনা জবাব দিল, “না আর কিছু লাগবে না আজ। ওহ, আচ্ছা আধ কিলো ময়দা আর আটা আর চিনি এক এক কিলো নিয়ে এস”।
 

রতীশ পোশাক পড়ে বেরোবার আগে রচনা বলল, “সোনা, তুমি বরং আমার ফোনটা সাথে নিয়ে যাও। আর তোমার ফোনটা রেখে যাও। বৌদি ফোন করতে পারে। তার সাথে আমি কিছু কথা বলব”।

রতীশ রচনার কথায় সায় দিয়ে রচনার ফোনটা পকেটে পুরে বেরিয়ে গেল। রচনা সামনের দরজা বন্ধ করে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়াল। রাস্তায় বেশ কিছু লোকের আনাগোনা দেখতে পাওয়া গেল। তাদের ফ্ল্যাট থেকে বড় রাস্তার মোড়ের দিকে খানিকটা এগিয়ে গেলেই একটা ছোট পানের দোকান আছে। এ দোকানটা বেশ রাত অব্দি খোলা থাকে। দোকানের সামনে বেশ কয়েকজন লোক দেখা গেল। ব্যালকনি থেকে তাদের বিল্ডিঙের এন্ট্রান্সটা দেখা যায় না। নিচের ফ্ল্যাটগুলোর আড়ালে পড়ে যায়। সামনের গলিটা দেখা যায়। মিনিট খানেক যেতে না যেতেই রতীশকে দেখা গেল সামনের মোড়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। রাস্তার দিকে চেয়ে থাকতে থাকতেই রচনা মহিমার কথা ভাবতে লাগল।


______________________________

ss_sexy
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply
#78
(Update No. 96)

মহিমার আচার ব্যবহার কথা বার্তা আন্তরিকতা সবই রচনার খুব ভাল লেগেছে। কিন্তু এতগুলো টাকা শগুণ দেবার পেছনে সত্যিই কি তার কোন অভিসন্ধি ছিল? তিনি কি রতীশকে কাজে নেবার জন্যই শগুণের অজুহাতে রচনাকে ঘুস দিয়ে গেলেন? আর এটা উনি নিশ্চয়ই জানেন যে রচনার হাতে টাকাটা দিলেও সেটা রতীশের হাতেই শেষ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছাবে। ছাব্বিশ হাজার টাকা তো কম কথা নয়! তিনি রতীশকে মাসিক বেতন হিসেবে যা দিতে চেয়েছেন, রতীশ কাজে যোগ দেবার আগেই অতগুলো টাকা দিয়ে তিনি কী প্রমাণ করতে চাইছেন? এটা তো বোঝাই যাচ্ছে যে তাদের প্রচুর টাকা পয়সা আছে। কিন্তু তার কথাবার্তা শুনে রচনার একটুও মনে হয়নি যে তার ভেতরে টাকার গরম আছে। বরং তার অমায়িক ব্যবহারে উল্টোটাই মনে হয়েছে। ঠাকুরঘরে প্রণাম করবার সময়, ঠাকুরের প্রসাদ খাবার সময় মহিমার মুখে চোখে যে ভাব ফুটে উঠেছিল, তা কোন দাম্ভিক মহিলার, সে যত বড় অভিনেত্রীই হন না কেন, চোখে এভাবে ফুটে উঠতে পারে না। আর বেরিয়ে যাবার ঠিক আগ মূহুর্তে বিমল আগরওয়ালাকে নিয়ে অমন কথাই বা বললেন কেন? বিমল তো তার বন্ধু। তিনি নিজে মুখেই বললেন, বিমল তার খুব উপকার করেছে কোন এক সময়। তাহলে বিমল সম্পর্কে তিনি অমন কথা বললেন কেন? রবিশঙ্কর যে তাদের দু’লাখ টাকা লুটে নিয়ে গেছে, এর পেছনে যে বিমল আগরওয়ালাও জড়িত আছে, সেটা রচনা আগে থেকেই অনুমান করতে পেরেছে। বিমল কি রতীশকে আরও কোন বিপদে ফেলতে চাইছে? আর যদি সেটাই ঠিক হয়, তাহলে মহিমা রতীশকে সতর্ক করে দিচ্ছেন কেন? কেন তিনি বিমলের সংস্পর্শ থেকে রতীশকে দুরে থাকতে বলছেন? তাহলে তিনি কি বিমলের অভিসন্ধি সম্বন্ধে কিছু জানেন? যদি সেটাই হয়ে থাকে, তাহলে তো মনে হচ্ছে রতীশের কোনও বিপদ হোক, তা তিনি চান না। আর রতীশকে তিনি বাঁচাতেই বা চাইছেন কেন? তিনি কি কোনভাবে রতীশের প্রতি দুর্বল? আর সেটা হলে এ দৌর্বল্য কেন? তিনি কি সত্যি সত্যি রতীশকে ভালবেসেই এমনটা করছেন? আর সেটা কি দেবর বা ভাইয়ের প্রতি নিষ্কাম ভালবাসা? না এ ভালবাসার পেছনেও তার কোনও স্বার্থ, কোনও গোপন কামনা আছে? কিন্তু কই, রচনা তো মহিমার চোখের দৃষ্টি খুব ভাল ভাবেই লক্ষ্য করেছে। রতীশের প্রতি কোনরকম কামভাব থাকলে রচনা সেটা অবশ্যই বুঝতে পারত। নাহ, এটা বোধহয় সে ঠিক ভাবছে না। কিন্তু তাহলে রচনাকে দেখে এতগুলো টাকা শগুণ দেবার মানে কি? রতীশকে তিনি প্রথম দিনই বলেছিলেন যে রতীশকে তার ইনস্টিটিউটের কাজে লাগাতে তিনি রতীশকে আরও বেশী সুযোগ সুবিধে দিতে পারেন। সে প্রলোভনই কি যথেষ্ট ছিল না? এমন লোভনীয় প্রস্তাবে যে কোন বেকার ছেলে রাজি হয়ে যাবে। তাহলে এতগুলো টাকা শগুণ দেবার পেছনে কি কারন থাকতে পারে? রতীশের মুখে বৌদি ডাক শুনে তিনি খুশী হন। রতীশকে কথায় কথায় ভাই ভাই বলে ডাকেন। রতীশকে বিমলের কাছ থেকে দুরে রাখতে চান। এ সবই খুব ভাল কথা। বাড়ি ছেড়ে বিদেশ বিভূঁইয়ে এসে এমন হিতাকাঙ্ক্ষী পাওয়া সত্যি বড় ভাগ্যের ব্যাপার। এ শগুণের ব্যাপারটা না ঘটলে রচনা তো নিশ্চিন্ত হয়েই রতীশকে বলতে পারত মহিমা বৌদির ইনস্টিটিউটে জয়েন করতে। এতগুলো টাকা শগুণ দেবার ব্যাপারটাই রচনার মাথায় আসছিল না অনেক ভেবেও।

রচনা নিজের ভাবনায় এতটাই মশগুল ছিল যে রতীশের ফিরে আসাটা সে খেয়ালই করেনি। কলিং বেল বেজে উঠতেই সে চমকে উঠল। ব্যালকনি থেকে ড্রইং রুমে ঢুকে দরজায় লাগালো ম্যাজিক আইয়ে চোখ রেখে দেখল রতীশ ফিরে এসেছে। দরজা খুলে দিতেই রতীশ ভেতরে ঢুকে জিজ্ঞেস করল, “মহিমা বৌদি ফোন করেছিল”?
 

রচনা অবাক হয়ে বলল, “কৈ না তো। ফোন তো আমার হাতেই ছিল। কোন কল আসেনি তো”?

রতীশ ডাইনিং রুমের টেবিলে জিনিসগুলো রেখে বলল, “কিংশুক ফোন করেছিল তোমার ফোনে। বলল বাড়ির সবাই ভাল আছে। ওর পড়াশোনা ঠিক চলছে। আর বাড়ির সামনে নাকি একটা দোকান ঘর বানানো প্রায় কমপ্লিট। সামান্য কিছু কাজই বাকি আছে। মা বাবার সাথেও কথা হল। তারা সবাই ভাল আছেন। তোমাকে কাল হয়ত আবার ফোন করতে পারে। তা তুমি বৌদিকে ফোন করেছিলে”?

রচনা বলল, “না আমিও করিনি। আসলে তুমি বেরিয়ে যাবার পর বৌদির কথা ভাবতে ভাবতেই সময়টা কাটিয়ে দিয়েছি। তোমাকে ফিরে আসতেও দেখিনি আমি”।

রতীশ বলল, “ঠিক আছে। দাও দেখি ফোনটা। আরেকবার করে দেখি”।

রচনা রতীশের ফোন ফিরিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কী বলবে সেটা ঠিক করেছ”?

রতীশ বলল, “না সেটা ভাবিনি। ভাবছি আজ আর ও ব্যাপারে কিছু বলব না। তখন ফোন করে পেলাম না। একটু খবর নিই শুধু। আসলে, বৌদি যখন আমাদের ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন তখন তার মুখ চোখের চেহারাটা আমার ঠিক স্বাভাবিক লাগেনি রচু। কিছু একটা ভেবে যাচ্ছিলেন তিনি। নিজে গাড়ি ড্রাইভ করে এসেছিলেন। ঠিকমত গিয়ে পৌঁছেছেন কিনা সেটাই ভাবছি”।
 

রচনা বলল, “হ্যা গো, সেটা আমিও খেয়াল করেছি। বৌদি যখন এলেন তখন তার ভেতরে যেমন উচ্ছলতা ছিল, যাবার সময় সেটা ছিল না। কিন্তু আমরা তো তার সাথে কোন খারাপ ব্যবহার করিনি। এক হতে পারে, আমার হাতের রান্না হয়ত তার ভাল লাগেনি। কিন্তু তাই বলে অত মনমরা হয়ে যাবেন? দেখ একবার ফোন করে। লাইন পেলে আমাকেও একটু কথা বলতে দিও” বলে দোকান থেকে আনা জিনিসগুলো নিয়ে কিচেনে ঢুকে গেল।
 

কিছুক্ষণ পর রতীশ কিচেনে এসে বলল, “নাহ, এখনও সুইচড অফ বলছে! কী ব্যাপার বল তো রচু? এখান থেকে ফিরে যাবার সময় কোন আপদ বিপদ হয়নি তো”?
 

রচনাও অবাক হয়ে বলল, “এখনও সুইচড অফ? আমাদের এখান থেকে বৌদি তো সাড়ে চারটে নাগাদ বেরিয়ে গেছেন। এখন রাত প্রায় সাড়ে আটটা বাজতে চলল। এতক্ষণ ধরে ফোন সুইচড অফ করে রাখবেন? আচ্ছা সোনা। কতক্ষণ লাগতে পারে যেতে সে সম্বন্ধে তোমার কোন ধারণা আছে”?

রতীশ একটু চিন্তান্বিত ভাবে বলল, “তা কী করে জানব বল। এখান থেকে ইনস্টিটিউটে যেতে এক ঘন্টার বেশী সময় লাগবে সেটা বলতে পারি। কিন্তু তার বাড়ি কোন রাস্তায় কোন দিকে তা তো জানা হয়নি আমার”।

রচনা বলল, “ও-ও। আর দেখ দিদিভাই আজও কোন ফোন করলেন না। আমার মনটা সত্যি ভাল লাগছে না গো। ডুয়ার্সের জঙ্গলে কোথায় কিভাবে আছেন দু’দিন ধরে, তার একটা খবরও পাচ্ছি না। আমার ফোনটা দাও তো সোনা। লক্ষ্মীদিকে আরেকটা ফোন করে দেখি”।

রতীশ রচনার ফোন এগিয়ে দিতেই রচনা ফোন হাতে নিয়ে সীমন্তিনীর কোয়ার্টারের ল্যাণ্ডলাইনে ফোন করল। দু’তিনবার রিং হতেই ও’পাশ থেকে লক্ষ্মীর সাড়া পেয়েই রচনা জিজ্ঞেস করল, “দিদিভাইয়ের কোন খবর পেয়েছ লক্ষ্মীদি? আমরা তো কিছুতেই তার লাইন পাচ্ছি না”।

লক্ষ্মী ও’পাশ থেকে জবাব দিল, “না গো বৌদিমণি। দিদিমণি তো আমাকেও কোন ফোন করেন নি গো। তবে আমাদের কোয়ার্টারের সামনে পাহারা দেয় যে গার্ড গুলো আছে, তাদের একজন বলছিল যে জলপাইগুড়ির বড় থানায় দিদিমণি নাকি ফোন করেছিলেন। কাল নাকি ফিরে আসবেন বলেছেন”।

রচনা জিজ্ঞেস করল, “কাল কখন ঘরে আসবেন তা শুনেছ”?

লক্ষ্মী বলল, “না গো বৌদিমণি সে ব্যাপারে কিছু বলতে পারেনি”।

রচনা বলল, “আচ্ছা শোন লক্ষ্মীদি। তুমি কাল সকালেই অল্প করে কিছু খাবার বানিয়ে রেখ। প্রয়োজন পড়লে ফ্রিজে ঢুকিয়ে রেখে দিও। দিদিভাই এলেই সাথে সাথেই যেন একটু গরম করেই তাকে খেতে দিতে পার। আর দিদিভাই ফেরার সাথে সাথে আমাকে ফোন করতে বলবে। দিদিভাইয়ের গলা না শুনলে আমার চিন্তা কমবে না, বুঝেছ তো? মনে করে কথাটা বলবে কিন্তু” বলতে বলতে রচনার গলা ধরে এল।
 

লক্ষ্মী বলল, “তুমি কেঁদো না বৌদিমণি। দিদি আসবার সাথে সাথেই আমি তাকে বলব তোমাকে ফোন করতে”।

রচনা নিজেকে সামলে নিয়ে জিজ্ঞেস করল, “তুমি নিজে খাওয়া দাওয়া করছ তো ঠিকমত? রান্নাবান্না কিছু করেছ? না দিদিভাই নেই বলে তুমিও মুড়ি চিড়ে খেয়ে যাচ্ছ”?

লক্ষ্মী জবাব দিল, “না গো বৌদিমণি। আমি ডাল ভাত আর সব্জী বানিয়েছি আজ। তুমি ভেব না”।
 

রচনা বলল, “ঠিক আছে। ঘরের দরজা জানালা ভালো করে বন্ধ করে ঘরের ভেতরেই থেক। রাতে আর বাইরে টাইরে কোথাও যেও না, বুঝেছ তো”?
 

লক্ষ্মী বলল, “ঠিক আছে বৌদিমণি। তাই করব। তুমি ভেব না”।

রচনা ফোন বন্ধ করে নিজের চোখ মুছল। রতীশ পাশ থেকে রচনাকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দিয়ে বলল, “কেঁদো না সোনা। একটা খবর তো তবু পাওয়া গেছে। মন্তি যে ঠিক আছে সেটা তো জানা গেল অন্ততঃ। কাল নিশ্চয়ই তার সাথে কথা বলতে পারবে দেখো”।

রতীশ রচনাকে বেডরুমে টেনে এনে বিছানার ওপর বসিয়ে দিয়ে বলল, “এখানে বসো একটু। আর নিজেকে সামলাও সোনা। মন খারাপ কোর না .........”

রতীশের ফোনটা বেজে উঠতেই তার কথা থেমে গেল। পকেট থেকে ফোনটা বের করেই বলল, “এই দেখ সোনা, বৌদির ফোন”।
 

রচনা এ কথা শোনার সাথে সাথে রতীশের হাত থেকে ফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে কানে লাগিয়ে কান্না ভেজা উদবিঘ্ন গলায় জিজ্ঞেস করল, “বৌদি কোথায় আছ গো তুমি? তুমি ঠিক আছ তো”?

রতীশ হাত বাড়িয়ে ফোনের স্পীকার অন করে দিতেই শুনতে পেল মহিমা বলছে, “আরে! কি হয়েছে তোমার রচনা? আমি তো বাড়িতেই আছি। আর ঠিকই আছি। তুমি কাঁদছ কেন”?

রচনা মহিমার কথা শুনে কিছুটা শান্ত হয়ে বলল, “না বৌদি কিছু না। তুমি যাবার পর থেকে দু’তিনবার তোমায় ফোন করেছি। আর তোমার ফোন সুইচড অফ পেয়েছি। তাই একটু চিন্তা হচ্ছিল”।
 

মহিমা জবাব দিল, “তুমি ফোন করেছিলে? কেন বল তো? আমি কি তোমাদের ওখানে কিছু ফেলে টেলে এসেছি নাকি”?

রচনা বলল, “না বৌদি, তা নয়। আসলে তুমি নিজে গাড়ি ড্রাইভ করছিলে বলেই একটু খবর নিতে চাইছিলাম যে তুমি ঠিকমত গিয়ে পৌঁছেছ কি না। আর তোমার ফোন সুইচড অফ পেয়েই এতক্ষণ ধরে আমরা দু’জনই বেশ চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলুম গো”।

মহিমা ও’পাশ থেকে বলল, “সরি রচনা। কথাটা তোমাদের বলা হয়নি। আসলে আমার সব ফোনই সকাল বিকেল দু’বেলা সাড়ে পাঁচটা থেকে সাতটা অব্দি বন্ধ থাকে। কিন্তু এ ফোনটা সাতটার পরেও অন করতে ভুলে গিয়েছিলাম। সরি ভাই। কিন্তু তোমরা যে আমাকে ফোন করবে, সেটা আন্দাজ করতে পারলে আমি তোমাদের কথাটা জানিয়ে দিতাম। কিন্তু এ জন্যে তুমি কাঁদতে শুরু করে দিয়েছ”?

রচনা বলল, “না গো বৌদি, দু’দিন ধরে আমার দিদিভাইয়ের ফোন পাচ্ছি না বলেই মনটা খুব খারাপ হয়ে আছে”।
 

মহিমা জিজ্ঞেস করল, “তোমার দিদিভাই মানে কি তোমার দিদি”?

রচনা জবাব দিল, “না বৌদি, আমার নিজের দিদির সাথে তো দশ বছরের ওপর হয়ে গেছে আমার কোন যোগাযোগই নেই। ও শ্বশুর বাড়িতে কেমন আছে, সে খবরটুকুও আমরা জানতে পারিনা। কিন্তু আমার এ দিদিভাই হচ্ছে তোমার দেবরের ছোটবোন। তিনি অফিসের কাজে গত পরশু দিন ডুয়ার্সের কোন একটা জায়গায় গিয়েছেন। তখন থেকেই তার ফোন সব সময় আনরিচেবল পাচ্ছি। একটু আগে তোমার দেবরের সাথে তার ব্যাপার নিয়েই কথা বলতে বলতে আমার কান্না এসে গিয়েছিল”।

এতটুকু বলার পর রচনার হুঁশ হল, সে মহিমাকে ‘তুমি তুমি’ করে বলছে। মহিমা এবার বলল, “রতীশের ছোট বোন? তাকে তুমি দিদিভাই বলে ডাকো বুঝি? সত্যি বাঙালীদের এই মিষ্টি মিষ্টি ডাকগুলো শুনতে সত্যিই খুব মিষ্টি লাগে। রতীশের মুখের বৌদি ডাক শুনেও আমার কী যে ভাল লাগে, সেটা আমিই শুধু জানি। আচ্ছা রচনা শোনো। রতীশের সাথে একটু কথা বলব বলেই ফোন করেছিলাম। কিন্তু তোমাদের মন এখন ভাল নেই বলে, এখন আর কথা বলছি না। তবে ওকে বলে দিও কাল ওর সাথে অবশ্যই কথা বলব”।

রচনা বলল, “সরি বৌদি, মনটা ভাল ছিল না বলেই বুঝি খেয়াল করিনি। আমি আপনাকে ‘তুমি’ বলে ফেলেছি। প্লীজ কিছু মনে করবেন না”।

মহিমা বলল, “মনে করব, যদি আবার ‘আপনি’ করে কথা বল। তোমার মুখে এই ‘তুমি’ সম্মোধনটাই বেশী মিষ্টি লাগছে শুনতে”।

রচনা এবার অনেকটা সহজ হয়ে বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে বৌদি। আপনার.. সরি তোমার ভাল লাগলে সেভাবেই বলব। কিন্তু তুমি কিন্তু আজ খুব বাড়াবাড়ি করে ফেলেছ বৌদি। শগুণে এত টাকা কেউ দেয়”?

মহিমা বলল, “আচ্ছা পাগলী মেয়ে তো তুমি। শগুণকে কখনও টাকার মাপে মাপতে হয়না। তবু তোমার কথার জবাবে বলছি, একটা সময় এই টাকার জন্যে আমাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। ছেলে মেয়ের পড়াশোনার খরচ যোগাতে আমাকে হিমশিম খেতে হয়েছে একটা সময়। আজ আর আমার টাকার অভাব নেই। আজ আমার হাতে এত পয়সা আছে যে আমার আশেপাশে যারা থাকে তাদের কোন আর্থিক কষ্টের কথা শুনলেই আমি তাদের সাধ্য মত পয়সার যোগান দিয়ে থাকি। কিন্তু তাই বলে, আমাকে খুব মহৎ বলে ভেবো না। আমি মেয়েটা মোটেও ভাল মেয়ে নই। বড় পাপী আমি”।

রচনা জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা বৌদি, তোমার ছেলে মেয়েরা বাইরে পড়ছে বুঝি? তারা কী নিয়ে কোথায় পড়ছে”?

মহিমা জবাব দিল, “আমার এক ছেলে এক মেয়ে। দেড় বছরের ব্যবধানে দু’জন হয়েছিল। মেয়েটাই বড়। এখন তার বয়স পঁচিশ। আর ছেলের বয়স সাড়ে তেইশের মত চলছে। আর বাইরে মানে, বিদেশে কোথাও নয়। মেয়েটা আহমেদাবাদে এমবিএ পড়ছে। আর ছেলেটা ব্যাঙ্গালোরে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ছে। সামনের দশেরায় ওর আসছে। তখন দেখতে পাবে”।

রচনা বলল, “ও বেশ ভাল। তবে তোমাদের দশেরা মানে তো আমাদের দুর্গাপুজো। তখন তো আমরা এখানে থাকব না বৌদি। পুজোতে তো বাড়িতে যেতেই হবে। বাড়ি থেকে ফিরে এসে তোমার ছেলেমেয়েদের দেখতে পাব কিনা, দেখা যাক। আচ্ছা বৌদি, আরেকটা কথা শোনো। তোমার দেবর কাজের ব্যাপারে আজ তোমার সাথে কথা বলতে পারছে না। তুমি কিন্তু খারাপ পেও না। আসলে দিদিভাইয়ের সাথে কথা বলতে না পারলে ও তোমায় কিছু জানাতেও পারছে না। দিদিভাইয়ের সাথে ওর কালই কথা হবে। তবে কাল কখন হবে, সেটা এখনই বলতে পারছিনা। হয়ত কাল রাতের আগে কথা হবে না। তাই বলছি কি, তোমার সাথে ও হয়ত কাল রাতেই কথা বলতে পারবে। তুমি রাগ কোর না প্লীজ”।

মহিমা বলল, “তুমি আমার দেবরটাকে বলে দিও আমি কোন রাগ করব না। আর সাথে সাথে এটাও বলে দিও যে, ও আমার ইনস্টিটিউটে কাজ করলে আমি তো খুশী হবই। আমার মনে হবে যে আমি হাতে চাঁদ পেলাম। কিন্তু ও যদি আমার ইনস্টিটিউটে জয়েন না-ও করে তবুও আমি ওর মুখের বৌদি ডাকটা শুনতে চাইব। আমার মনের এ ইচ্ছেটাকে অন্ততঃ তোমরা রাখতে পারবে না”?

রচনা এবার বেশ অবাক হয়ে কিছু একটা কথা বলতে যেতেই মহিমা আবার বলে উঠল, “আর হ্যা, আরেকটা কথা শোনো রচনা। দেখ, শগুণ বা আশীর্বাদ কাউকে দিলে, সেটা তো আর ফিরিয়ে নেওয়া যায় না। আমি বুঝতে পারছি, হয়ত আমি একটু বাড়াবাড়িই করে ফেলেছি। কিন্তু তোমরা ভেবো না যে তোমাকে ওই শগুণ দেবার পেছনে আমার অন্য কোন মতলব আছে। আমি তোমার ঠাকুরের নামে শপথ করে বলছি রচনা। আমি তোমাকে শুধুই আশীর্বাদী দিয়েছি। আর কোন মতলবই আমার ভেতরে ছিল না ভাই। আমি তোমাকে বলে বোঝাতে পারব না হয়ত। কিন্তু আমার নিজের কোন ভাই বা দাদা ছিল না। আমরা দু’বোন। বিয়ের পরেও স্বামীর ঘরে এসেও কোন ভাশুর বা দেবর কাউকে পাইনি। তোমার দাদারও কোন ভাই বোন নেই। কিন্তু আমার জীবনে আমি অনেক পুরুষের সাথেই মেলামেশা করেছি। সে’সব কথার সব কিছু তোমাকে বলতে চাইছি না। এতদিন মনের ভেতর এমন কোন ইচ্ছে না হলেও রতীশকে দেখার পরেই আমার মনের ভেতরটা কেমন করে উঠেছিল যেন। মনে হয়েছিল যে ওর মত একটা ভাই বা দেবর যদি আমার থাকত! দেবর তো ভাইয়ের সমতূল্য। তাই রতীশকে প্রথম যেদিন দেখেছি সেদিন থেকেই আমার ওকে দেবর বলে ভাই বলে ভাবতেই ইচ্ছে করছিল। আর আজ তোমাদের বাড়িতে তোমাকে দেখেও খুব খুশী হয়েছিলাম। তাই ব্যাগে হাত ঢুকিয়ে যা পেয়েছিলাম, তা-ই তোমাকে শগুণ দিয়েছি। তার পরিমান কত ছিল তা আমি এখনও জানিনা। শগুণ দিয়ে ক্ষমা চাওয়াটাও ভাল দেখায় না। ক্ষমা চাইলে সে শগুণের মাহাত্ম্যটা কমে যায়। তাই তোমার কাছে ক্ষমাও চাইতে পারছি না। তবে তোমরা হয়ত ভেবে থাকতে পার, যে রতীশ যাতে আমার ইনস্টিটিউটে যোগ দিতে অস্বীকার না করতে পারে, সে জন্যেই হয়ত তার মুখ বন্ধ করবার জন্য আমি তোমাকে অমন শগুণ দিয়েছি। কিন্তু তা নয় রচনা। তাই আমি বলছি, রতীশ আমার ওখানে কাজে যোগ দিতে না চাইলে আমি কিচ্ছু মনে করব না। কিন্তু তোমরা আমার দেবর দেবরানি হয়ে আমার সাথে সম্পর্কটা রেখো। প্লীজ ভাই। আমি হাতজোড় করে তোমার কাছে এ মিনতি করছি”।
 

রচনা অবাক হয়ে রতীশের সাথে চোখাচোখি করে বলল, “না না বৌদি। তুমি এমন করে বলছ কেন বল তো? আমরা তো এতকিছু ভাবিনি। শুধু তুমি অতগুলো টাকা শগুণ দিয়েছ বলেই মনে স্বস্তি পাচ্ছিলাম না। আমরা তোমাকে কোন কষ্ট দিতে চাই না বৌদি। আর তোমার দেবর কাজে যোগ দেবার ব্যাপারে তোমাকে এখনও কোন জবাব দেননি কেন, সেটা তো তোমাকে আগেই বলেছি। দিদিভাইয়ের সাথে কথা না বলে আমরা কোন ব্যাপারেই কোন সিদ্ধান্ত নিই না। দিদিভাই শুধু আমাদের দিদি নয়। সে আমাদের একজন বন্ধু এবং অভিভাবকও। তাই তার সাথে কথা বলেই তোমার দেবর তোমাকে ফোন করবেন। আর শোন বৌদি, তুমি যাকে দেবর বলে ভাবছ সে তোমার দেবর হয়েই থাকবে। আর আমিও তোমার দেবরানী হলাম আজ থেকে। বাড়ি ঘর ছেড়ে এতদুরে চলে এসে তোমার মত একজন বৌদি পেয়ে আমরাও খুব খুশী হয়েছি গো। তুমি আর অন্য কিছু ভেব না”।

রচনার কথা শেষ হয়ে যাবার পরেও মহিমা কিছু বলছে না দেখে রচনা বলল, “হ্যালো হ্যালো, বৌদি। কি ব্যাপার লাইন কেটে গেল নাকি”?

এমন সময় মহিমা খুব শান্ত গলায় জবাব দিল, “তুমি সত্যি বলছ রচনা? তোমরা সত্যি আমাকে তোমাদের বৌদি বলে ভাববে”?

রচনা জবাব দিল, “হ্যা বৌদি, আমি সত্যি বলছি। আর তোমার দেবরও আমার পাশে বসে আমাদের সব কথা শুনছেন। তিনিও তোমার দেবর হয়ে থাকতে রাজি আছে”।

মহিমা খুশী হয়ে বলল, “সত্যি বলছ রচনা? সত্যি বলছ তুমি? তাহলে আমি মাঝে সাঝে তোমাদের ওখানে যেতে পারি? তোমরা তাতে আপত্তি করবে না তো”?

রচনা হেসে বলল, “হ্যা অবশ্যই আসতে পার বৌদি। কিন্তু অমন শগুণ আর দিতে পারবে না”।

মহিমা উচ্ছ্বসিত গলায় বলল, “ধুর পাগলী মেয়ে। শগুণ কি আর যখন তখন দেবার জিনিস নাকি? ঘরে নতুন কেউ এলে আর কোন বিশেষ বিশেষ ঘটণা ছাড়া শগুণ দিতে নেই। হ্যা উপহার অবশ্য যে কোন সময় দেওয়া যায়। তা আমার দেবর তো বিয়ে করেছে তিন বছর হয়ে গেছে। মা হবে কবে তুমি, বল তো”?


______________________________
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply
#79
(Update No. 97)

রচনা একটু লজ্জা পেয়ে বলল, “সেটা হতে আরও কিছুদিন লাগবে গো বৌদি। তোমার দেবর পাকাপাকি ভাবে কিছু একটা করে থিতু হয়ে বসলেই সেটা সম্ভব। ওর তেমনই ইচ্ছে”।
 

মহিমা অবাক হয়ে বলল, “এ আবার কী কথা রে? তা আমার দেবরটা কী করতে চায় বল তো? আমি সব কিছুর বন্দোবস্ত করে দেব। বল তো শুনি ও কি করতে চায়”?
 

রচনা বলল, “তোমার দেবর যা করতে চায় সেটা তিনি নিজেই করবেন। তোমাকে সেটা নিয়ে ভাবতে হবে না বৌদি। তোমার মত একটা বৌদি আমাদের পাশে থাকলেই আমরা আর কিছু চাইনে গো”।

মহিমা বলল, “কিছু ভেবো না রচনা। আজ থেকে আমি সব সময় তোমাদের পাশে আছি”।

রচনা বলল, “শুনে খুশী হলাম বৌদি। তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ”।

মহিমা বলল, “ধন্যবাদ তো তোমাদের আমি দেব রচনা। তুমি আমাকে আজ কত দামী একটা উপহার দিলে, সেটা তোমায় বলে বোঝাতে পারব না। তাই তোমাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ। আর শোন, রতীশকে বোল, ও যদি আমার ইনস্টিটিউটে কাজ না করতে চায়, তাহলেও কোন ব্যাপার নেই। কিন্তু আমার সাথে সম্পর্কটা যেন রাখে। ঠিক আছে”?

রচনা বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে বৌদি। তোমার দেবর তোমার কথা শুনেছেন”।

মহিমা বলল, “ঠিক আছে তাহলে। আর তোমার চালতার ডালের স্বাদ এখনও আমার মুখে লেগে আছে গো। রাতে কমলার হাতের রান্না খেয়ে আজ কেমন লাগবে কে জানে। আচ্ছা রচনা, এখন রাখছি তাহলে। কাল আবার কথা বলব তোমাদের সাথে”।

রচনা ‘ঠিক আছে বৌদি, গুডনাইট’ বলে ফোন নামিয়ে রাখল।


***************

বেলা এগারোটা নাগাদ সীমন্তিনীর গাড়ি নাগরাকাটা অভিমুখে রওনা হয়েছে। যে উদ্দেশ্যে সে দার্জিলিং বর্ডারে এসেছিল, সে কাজটা খুব ভালভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। আইবির একটা দল তাকে যথেষ্ট সাহায্য করেছে। তবে সবচেয়ে বেশী উপকার করেছেন দেবাশীষ বক্সী। পরিতোষের রেফারেন্স নিয়ে তার সাথে দেখা করতেই তিনি সীমন্তিনীকে উপদেশ দিয়েছিলেন কোত্থেকে কিভাবে কাজটা শুরু করলে ভাল হবে। পুরো অ্যাকশন প্ল্যানটা কিভাবে ডিজাইন করলে সবচেয়ে ভাল হবে তিনি সেটা প্রথমেই সীমন্তিনীকে ভালভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন যে সীমন্তিনীর সব কাজ শেষ হয়ে যাবার পর সীমন্তিনী যেন তিন চার ঘন্টা সময় হাতে নিয়ে তার সাথে দেখা করে। সীমন্তিনীর কাজ আগের দিন রাতেই মোটামুটি শেষ হয়ে গিয়েছিল। আজ সকালে সে দেবাশীষ বক্সীর সাথে এপয়েন্টমেন্ট করে তার বাড়িতে গিয়েছিল। ভদ্রলোক প্রায় ঘন্টা তিনেক ধরে যে সব তথ্য আর যুক্তি সীমন্তিনীকে বুঝিয়ে দিয়েছিল, তাতে সীমন্তিনীর মনে হল, সে একখানা অসাধারণ অ্যাকশন রিপোর্ট বানিয়ে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হেড কোয়ার্টারে পাঠিয়ে দিতে পারবে। আর এ রিপোর্ট পেলে ডিপার্টমেন্টে হয়তো একটা হুলুস্থুল পড়ে যাবে। আর এ সবের পেছনে সবচেয়ে বড় হাত দেবাশীষ বক্সীর। তার সাহায্য না পেলে রিপোর্টটা খুবই সাধারণ মানের হত।
 

তিনখানা পুলিশ জীপের কনভয় মাল বাজারের কাছাকাছি আসতেই মোবাইলে সিগ্ন্যাল পাওয়া গেল। বেলা তখন প্রায় বারোটা। রচনার নাম্বার ডায়াল করে ফোন কানে লাগাতেই রচনা প্রায় চেঁচিয়ে উঠল, “দিদিভাই ও দিদিভাই। ইশ কতদিন বাদে তোমার ফোন এল গো। পরশুদিন থেকে কতবার তোমাকে ফোন করে যাচ্ছি। বারবার শুধু আনরিচেবল পাচ্ছিলাম। তুমি কোথায় আছ গো দিদিভাই? তুমি ঠিক আছ তো? তোমার শরীর ঠিক আছে তো? খাওয়া দাওয়া সময় মত করেছ তো? না কাজ করতে করতে নাওয়া খাওয়া সব ভুলে বসে আছ? তোমার কোন খবর না পেয়ে আমার মনে ভেতর যে কী হচ্ছিল, কী বলব তোমাকে। ঠাকুরের কাছে বারবার মিনতি করছি, ঠাকুর যেন তোমার ওপর নজর রাখেন। আচ্ছা তুমি কিছু বলছ না কেন বল তো দিদিভাই? ও দিদিভাই, কি হল? চুপ করে আছ কেন তুমি”? বলতে বলতে রচনা কেঁদে ফেলল।
 

সীমন্তিনী তাড়াতাড়ি বলে উঠল, “রচু রচু, সোনা বোন আমার। কাঁদছিস কেন তুই”?

রচনা কাঁদতে কাঁদতেই বলল, “তুমি কথা বলছ না কেন তাহলে”?

সীমন্তিনী বলল, “আচ্ছা পাগলী মেয়ে তো তুই। আমাকে কথা বলার সুযোগ তুই দিচ্ছিস কোথায় যে কথা বলবো? শোন, কান্না থামা। চোখ মোছ। শান্ত হ। তবে আমি কথা বলব। মুছেছিস চোখ”?

রচনা চোখ মুছে নাক টানতে টানতে বলল, “হ্যা মুছেছি। বল”।

সীমন্তিনী বলল, “তোকে তো আগেই বলেছিলাম, যে জায়গাটা ঘণ জঙ্গলে ভরা। যেখানে আমি ছিলাম সেখানে সিগন্যাল একেবারেই ছিল না। তাই তো কাউকে ফোন করতে পারিনি”।

রচনা অভিমানী গলায় প্রশ্ন করল, “যেখানে সিগন্যাল পাওয়া যায় সেখান থেকে তো অন্ততঃ একটা ফোন করতে পারতে”?

সীমন্তিনী জবাব দিল, “সরি রে সোনা। সেটা হয়ত চেষ্টা করলে পারতুম ঠিকই। কিন্তু সেটাও সম্ভব ছিল না। আর কেন সম্ভব ছিল না, সেটা তোকে পরে বুঝিয়ে বলব। বাড়ি গিয়ে। তা তোরা কেমন আছিস বল তো? তুই আর দাদাভাই ঠিক আছিস তো”?

রচনা বলল, “তুমি যদি ভেবে থাক যে তোমার সাথে তিনদিন ধরে কথা না বলেও আমরা ভাল আছি, তাহলে সেটাই ধরে নাও। কিন্তু দয়া করে বলবে কি? তুমি এখন কোথায় আছ”?

সীমন্তিনী আদরের সুরে বলল, “রচু, সোনা বোন আমার। রাগ করিসনে ভাই। আমি এখন রাস্তায় আছি। মালবাজারের কাছাকাছি। গাড়িতে আছি। বেলা দেড়টা দুটো নাগাদ পৌঁছে যাব। আগে অফিসে যাব, তারপর বাড়ি যাব। বাড়ি গিয়ে তোকে সব খুলে বলব। তখন বুঝতে পারবি, কেন ফোন করিনি। আচ্ছা এবারে বল, তোদের দু’জনের শরীর ঠিক আছে তো? ভালো আছিস তো তোরা? দাদাভাই কোথায়? ওই যোগা ইনস্টিটিউটে জয়েন করেছে”?

রচনা জবাব দিল, “আমরা ঠিক আছি। তোমার দাদাভাই এখন ঘরে নেই। একটু বাজারে গেছেন। আর ওই যোগা ইনস্টিটিউটে এখনও জয়েন করেননি। বলছিলেন যে তোমার সাথে আরেকটু কথা বলবেন ওই ব্যাপারে। আমারও তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে। তুমি ঘরে গিয়ে স্নান খাওয়া দাওয়া করেই আমাকে ফোন করো। তখন সব কথা শুনতে পারবে”।

সীমন্তিনী বলল, “ঠিক আছে। ভাল থাকিস। রাখছি”।

মালবাজার পেরিয়ে আসবার পর সীমন্তিনী পরিতোষ আর লক্ষ্মীকে ফোন করল। তারপর বাড়ির নাম্বারে ফোন করে বড়মার সাথে কথা বলল। তার কিছুক্ষণ বাদেই তার মোবাইলে একটা ফোন এল। কালচিনি থানার ওসি মিঃ রায়ের ফোন। সীমন্তিনী একটু অবাক হয়ে কলটা রিসিভ করে বলল, “হ্যা মিঃ রায়, বলুন কি খবর”?

মিঃ রায় বললেন, “ম্যাম, আপনি কি একবার কালচিনি আসতে পারবেন আজ”?

সীমন্তিনী এবার আরও অবাক হয়ে বলল, “আজ আসতে বলছেন? কিন্তু কেন স্যার? কোন জরুরী কিছু ব্যাপার”?

মিঃ রায় বললেন, “ম্যাম, একটা খারাপ খবর আছে। গতকাল রাত প্রায় এগারটা নাগাদ অর্চনা আচার্য্যিকে অচেতন অবস্থায় ট্রেন লাইনের ধারে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। আমরা ইনফর্মেশন পেয়ে সাথে সাথেই মুভ করেছিলাম। তাকে অচেতন অবস্থায় সেখান থেকে উদ্ধার করে আমরা কালচিনি হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়েছি। আজ সকালে তার জ্ঞান ফিরলেও, তিনি অপ্রকৃতিস্থ ছিলেন। এখনও যথেষ্ট দুর্বল এবং অজ্ঞান অবস্থায় আছেন। ডাক্তাররা বলছেন গত দু’তিন দিনের ভেতর তার স্টমাকে নাকি কিছুই ঢোকেনি। সাংঘাতিক ডিহাইড্রেশন হয়েছে। আমি জানি, উনি আপনার রিলেটিভ। আর তার শ্বশুর বাড়ির লোকেরা তার প্রতি সহৃদয় ছিল না। আমরা তাই আপনার সাথে কন্টাক্ট করবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম কাল রাত থেকেই। কিন্তু আপনার ফোন নট রিচেবল বলছিল বার বার। পরে ডিস্ট্রিক্ট হেড কোয়ার্টার থেকে আপনার লোকেশান জানতে পেরেছি। আমি ইচ্ছে করেই তার শ্বশুর বাড়িতে ব্যাপারটা জানাইনি। আপনার সাথে কথা বলবার অপেক্ষায় ছিলাম। তা আপনি কি আসতে পারবেন ম্যাম? নইলে ব্যাপারটাকে আমার মত করেই হ্যান্ডেল করব আমি। আর সবার আগে ওই বদমাশ ত্রিলোচন আচার্য্যিকে এটেম্পট টু মার্ডারের চার্জ লাগিয়ে লকআপে পুড়ব”।

সীমন্তিনী মিঃ রায়ের কথা শুনে অস্থির হয়ে উঠল। তাই সে সাথে সাথে বলল, “স্যার আমি অন ডিউটি এখন কালচিনি থেকে প্রায় একশ’ কিলো মিটার দুরে আছি। তবে আপনি যে আমাকে খবরটা দিয়েছেন সে জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ। আমি এখন সোজা আপনার ওখানেই যাচ্ছি। আশা করি ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে পৌঁছে যাব। কিন্তু স্যার ততক্ষন ব্যাপারটাকে অফিসিয়াল বা পাব্লিক কোনটাই করবেন না। আশা করি আপনি বুঝতে পারছেন আমি কি মীন করছি”?

মিঃ রায় বললেন, “হ্যা ম্যাম বুঝেছি। আর সে জন্যেই তো আপনার সাথে কথা বলার অপেক্ষায় ছিলাম। ঠিক আছে ম্যাম, আপনি কালচিনিতে ঢুকেই আমাকে একটা ফোন করে দেবেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে চলে যাব। আপনিও সোজা হাসপাতালেই চলে আসুন। বাকিটা সাক্ষাতে আলোচনা করব। কিন্তু ম্যাম, ইন দা মীন টাইম, আমি কি ত্রিলোচন আচার্য্যির বাড়িতে বা মেয়েটির বাপের বাড়িতে কোন খবর পাঠাব”?

সীমন্তিনী বলল, “না মিঃ রায়। আমি না পৌঁছনো অব্দি একটু অপেক্ষা করুন না প্লীজ। তবে এখন অর্চনার অবস্থা কেমন? সেখানকার ডাক্তাররা কী বলছে? ওকে কি বড় কোনও হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে নিয়ে যেতে হবে”?

মিঃ রায় জবাবে বললেন, “ম্যাম, ওনাকে যখন হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলাম তখন তো আমরা সকলেই ভেবেছিলাম, ওনাকে বোধহয় আর বাঁচাতে পারব না। এখানে হাসপাতালও ছোট। কিন্তু অমন অবস্থায় তাকে আলিপুরদুয়ারেও নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। তবে এখানকার ইনচার্য ডঃ সোম খুবই দক্ষ একজন ডাক্তার। গতকাল রাত বারোটা থেকে অর্চনাকে নিয়ে ওটিতে ঢুকে আজ ভোর সাড়ে পাঁচটা অব্দি অক্লান্ত পরিশ্রম করে ওটি থেকে বেরিয়ে জানালেন যে পেশেন্ট মোটামুটি বিপদমুক্ত। তবে আরও কয়েক ঘন্টা কনস্ট্যান্ট ওয়াচে না রাখলে পুরোপুরিভাবে বিপদ কেটে গেছে বলা যাবে না। তবে অর্চনার জ্ঞান এখনও ফেরে নি। কিন্তু ডাক্তার বলেছেন যে আলিপুরদুয়ার নিয়ে যেতে পারলে ভাল হত। কিন্তু অর্চনার কন্ডিশান দেখে ডাক্তার তাতেও বিপদের ঝুঁকি আছে বলছেন”।

সীমন্তিনী শ্বাসরূদ্ধ অবস্থায় মিঃ রায়ের কথাগুলো শুনে বলল, “ওকে মিঃ রায়। আমি এখন সোজা কালচিনি যাচ্ছি”।

মিঃ রায় সংক্ষেপে বললেন, “ওকে ম্যাম। সি ইউ সুন” বলে ফোন কেটে দিল। সীমন্তিনী তার গাড়ির ড্রাইভারকে বলল, “আমরা এখন সোজা কালচিনি হাসপাতালে যাব। সেখানে একটা আর্জেন্ট কাজ শেষ করে তারপর অফিসে ফিরব” বলে জীপের পেছনে বসে থাকা একজন এসআই কে বলল, “আপনি সামনের আর পেছনের গাড়িতে খবরটা পাঠিয়ে দিন মিঃ বড়াল। আমরা সোজা কালচিনি হাসপাতালে যাচ্ছি”।
 

গভীরভাবে মনে মনে অনেক কিছু ভাবতে ভাবতে সীমন্তিনী কালচিনি টাউনে ঢুকেই মিঃ রায়কে ফোন করে বলল, “মিঃ রায়, আমরা কালচিনিতে ঢুকে গেছি। সোজা হাসপাতালে যাচ্ছি। আপনিও প্লীজ চলে আসুন”।
 

বেলা আড়াইটে নাগাদ কালচিনি হাসপাতালের সামনে গাড়ি থেকে নামতেই একদিক থেকে মিঃ রায়কে ছুটে আসতে দেখল সীমন্তিনী। ছ’সাতজন বন্দুকধারী সতর্ক ভঙ্গীতে সীমন্তিনীর চারপাশে এসে দাঁড়াল। মিঃ রায় সীমন্তিনীর সাথে এত ফোর্স দেখে একটু অবাকই হলেন। সীমন্তিনীর কাছে এসে তিনি বললেন, “গুড আফটারনুন ম্যাম। আসুন”।
 

সীমন্তিনী মিঃ রায়কে অনুসরন করে হাসপাতালের গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল। দু’জন গার্ড সীমন্তিনীর সাথে ভেতরে ঢুকল। আর বাকিরা হাসপাতালের মূল দরজার পাশে দাঁড়াল। মিঃ রায় সীমন্তিনীকে নিয়ে একটা কেবিনে ঢুকতেই ডাক্তারের পোশাক পড়া একজন হন্তদন্ত হয়ে কেবিনে ঢুকে বললেন, “সরি স্যার। আমি একটা অন্য পেশেন্টকে দেখতে ব্যস্ত ছিলাম। তাই আপনাদের রিসিভ করতে যেতে পারিনি”।
 

সীমন্তিনী সে লোকটার দিকে চাইতেই মিঃ রায় বললেন, “ম্যাম, ইনি ডক্টর শিবরঞ্জন সোম। ইনিই পেশেন্টের ট্রিটমেন্ট করছেন। আর ডোক্টর সোম, ইনি হচ্ছেন আইপিএস অফিসার সীমন্তিনী ভট্টাচার্যি। পেশেন্টের রিলেটিভ”।
 

সীমন্তিনী হাত বাড়িয়ে ডক্টর সোমের সাথে হ্যাণ্ডশেক করে বলল, “হ্যালো ডক্টর সোম। তা পেশেন্টের কণ্ডিশন কেমন বুঝছেন? প্রাণে বাঁচবে তো”?
 

ডক্টর সোম বললেন, “কাল যখন পেশেন্টকে আনা হয়েছিল, তখন আমরা নিজেরাও সিওর ছিলাম না ম্যাম। তবে আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করে গেছি। আর ইতিমধ্যে প্রায় চৌদ্দ ঘন্টা যখন সারভাইভ করে গেছে, তাহলে বড়সর বিপদের সম্ভাবনাটা কেটেই গেছে ধরা যায়। সকাল আটটার দিকে একবার সেন্স ফিরে এসেছিল। কিন্তু সাংঘাতিক ট্রমাটাইজড ছিল। প্রচণ্ড রকম চিৎকার করছিল। বারবার বলছিল ‘আমাকে মেরোনা, আমাকে মেরোনা। আমাকে আমার বাবার কাছে যেতে দাও। আমাকে আমার মার কাছে যেতে দাও’। অনেক চেষ্টা করেও তাকে শান্ত করতে না পেরে আমরা সেডেটিভ দিতে বাধ্য হয়েছি। এখন ঘুমোচ্ছে। পালস রেট ইম্প্রুভ করলেও এখনও বেশ স্লো চলছে। বিপি অস্বাভাবিক রকম লো। ডিহাইড্রেশন খুব সাংঘাতিক মাত্রায় হয়েছিল। তখন হাসপাতালে না আনলে আর ঘন্টা খানেকের মধ্যেই চরম বিপদটা ঘটে যেত। তবে শুরু থেকেই স্যালাইন চলছে। ডিহাইড্রেশনের প্রকোপ কমে এসেছে অনেকটাই। কিন্তু শরীর এখনও খুবই দুর্বল। আরেকবার সেন্স ফিরলে তবে আরেকটু এক্সামিন করে ভাল ভাবে বলতে পারব। আসলে ম্যাম, এই ছোট হাসপাতালে তো সবকিছু উপলব্ধ নয়”।

সীমন্তিনী ডাক্তারের কথা শুনে জিজ্ঞেস করল, “আমি কি একটু বেডের কাছে গিয়ে দেখতে পারি ডক্টর”?

ডক্টর সোম বললেন, “হ্যা ম্যাম, সেটা করতে পারেন। তবে জাগাবার চেষ্টা আপাততঃ না করলেই ভাল হবে। মনে হয় আর ঘন্টাখানেকের মধ্যেই উনি সেন্সে ফিরবেন। তবে আপনারা যদি পেশেন্টের কোন কাছের মানুষ বা কোন প্রিয়জনকে তার সামনে আনতে পারেন, তাহলে খুব ভাল হত”।

সীমন্তিনী বেডের কাছে গিয়ে দেখল খুবই শীর্ণকায় একটা কমবয়সী মেয়ে চোখ বুজে বিছানায় মরার মত পড়ে আছে। শ্বাস চলছে কি না তা প্রায় বোঝাই যাচ্ছে না। শরীরটা যেন বিছানার সাথে একেবারে মিশে আছে। থুতনীর নিচ দিয়ে দু’কান ঢেকে মাথার ওপর দিয়ে ব্যাণ্ডেজ করা। মুখের আদলের সাথে রচনার মুখের বেশ মিল আছে। না চাইতেও সীমন্তিনীর চোখ দুটো জলে ভরে এল। নিজেকে সামলে নিয়ে চোখের জল মুছে ডাক্তারের দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করল, “শরীরে ইনজুরিও আছে নাকি ডক্টর”?

ডক্টর সোম বললেন, “হ্যা ম্যাম, তার গালে কাঁধে আর কানের নিচে বেশ কয়েকটা জায়গায় মারধরের চিহ্ন আছে। তবে সেগুলো তেমন ফ্যাটাল নয়। তার ট্রমাটা কেটে গেলেই সে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠবে বলে মনে হয়। আর সেটা তাড়াতাড়ি দুর করবার জন্য মেয়েটার কোন প্রিয়জনের এখানে থাকাটা খুবই আবশ্যক”।

সীমন্তিনী বলল, “আমি সে চেষ্টা করছি ডক্টর। কিন্তু মোটামুটি রিকভারি হতে কতটা সময় লাগতে পারে বলে মনে হয় আপনার? মানে ওকে কতদিন এখানে থাকতে হবে”?

ডক্টর সোম বললেন, “যদি মেয়েটা জ্ঞান ফিরে তার মা বাবাকে দেখতে পায়, তাহলে আমার মনে হয় ট্রমাটা খুব তাড়াতাড়িই কেটে যাবে। কিন্তু তবু দুটো দিন তো এখানে পুরো থাকতেই হবে। কিছুটা স্ট্রেন্থ রিগেইন না করা পর্যন্ত তো ডিসচার্জ করা যাবে না”।

সীমন্তিনী বলল, “ওকে ডক্টর, থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ। আমি ওর মা বাবাকে এখানে আনবার ব্যবস্থা করছি”।

সীমন্তিনীর পেছন পেছন মিঃ রায়ও কেবিন থেকে বেরিয়ে এল। সীমন্তিনী হাসপাতালের দরজার বাইরে এসে মিঃ রায়কে বলল, “আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ মিঃ রায়। আমি ওর মা বাবাকে নিয়ে আসছি। আর শুনুন, এটা তো এটেম্পট টু মার্ডারই। আর কালপ্রিট কে, সেটা আমরা জানলেও, আমাদের হাতে তো কোনও প্রুফ নেই। ভিক্টিমের বয়ান না পাওয়া পর্যন্ত তো আমরা কোন অ্যাকশন নিতে পারব না। তাই আমার মনে হয় একটু অপেক্ষা করাই ভাল। আপনি আপাততঃ ব্যাপারটাকে একটু সিক্রেট রাখবার চেষ্টা করুন। ত্রিলোচন আচার্য্যির বাড়ির লোকেরা যাতে জানতে না পারে, সেদিকে একটু খেয়াল রাখুন। আর একটু অপেক্ষা করুন আমার জন্যে প্লীজ। আমি আধঘন্টার ভেতরেই ফিরে আসব”।

মিঃ রায় বললেন, “হ্যা হ্যা, ম্যাম। আপনি আসুন। আমি এখানেই থাকছি আপনি ফিরে না আসা পর্যন্ত”।
 

সীমন্তিনী তার গাড়ির কাছে এসে তার সঙ্গের এক ইনস্পেক্টরকে বলল, “মিঃ বর্মন, আমাদের বাজার পেরিয়ে ওদিকে একটা জায়গায় যেতে হবে। দু’তিন জনকে এসকর্ট করে আনতে হবে এখানে। তাই আমার গাড়িতে শুধু পেছনে দু’জনকে বসতে বলুন। আপনি একটা গাড়িতে আর চার পাঁচ জনকে নিয়ে আমাদের ফলো করুন”।
 

মিঃ বর্মন ফোর্সের বাকিদের সাথে কথা বলে একটা গাড়িতে উঠে বসল। সীমন্তিনী কিংশুকের নাম্বারে ফোন করল। কিংশুক ফোন ধরেই বলল, “হ্যা দিদিভাই, বল”?

সীমন্তিনী বলল, “ভাই তুমি এখন কোথায় আছ, বাড়িতে”?

কিংশুক জবাব দিল, “না দিদিভাই, ঠিক বাড়িতে নয়। তবে বাড়ির কাছাকাছিই আছি। একটা জিনিস নিতে এসেছি”।
 

সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “আর মা বাবা কি বাড়িতেই আছেন”?

কিংশুক বলল, “হ্যা দিদিভাই, তারা বাড়িতেই আছেন। কেন বল তো”?

সীমন্তিনী নিজের গলাকে শান্ত রাখবার চেষ্টা করে বলল, “ভাই শোন, তুমি এক্ষুনি বাড়ি ফিরে যাও। বাবা আর মাকে পোশাক পড়ে তৈরী হতে বল। তুমিও তৈরী হয়ে নিও। তোমাদের সবাইকে নিয়ে আমি এক্ষুনি একটা জায়গায় যাব। আমি দশ মিনিটের ভেতর বাড়ি আসছি। এসে সব কথা বলছি” বলেই কিংশুককে আর কোন প্রশ্ন করবার সুযোগ না দিয়েই ফোন কেটে দিল।

______________________________
 
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply
#80
(Update No. 98)

পনের মিনিট পার হতে না হতেই সীমন্তিনীর গাড়ি বিধুবাবুর বাড়ির সামনে এসে পৌঁছল। সীমন্তিনী এক মূহুর্ত দেরী না করে বাড়ির ভেতর ঢুকে যেতেই একটা ঘরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা কিংশুক তাকে দেখতে পেয়েই চেঁচিয়ে উঠল, “ওই তো দিদিভাই এসে গেছে”।

সাথে সাথে বিধুবাবু আর বিভাদেবী আরেকটা ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। বিধুবাবু সীমন্তিনীকে জিজ্ঞেস করলেন, “কি গো মা? আমার পুলিশ অফিসার মেয়ে কি আমাদের থানার গারদে পুরতে নিয়ে যাবে নাকি”?

বিভাদেবী সীমন্তিনীর কাছে এসে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “ইশ দেখেছ! মুখখানা একেবারে শুকিয়ে আমসি হয়ে গেছে গো। হ্যারে মা, কী হয়েছে রে? খোকাকে ফোন করে কী বলেছিস? ও তো ঠিকমত কিছু বলতেই পারছে না। আচ্ছা, তুই আগে বস তো। আমি আগে তোকে কিছু একটা খেতে দিই। দাঁড়া”।
 

সীমন্তিনী বিভাদেবীর হাত ধরে থামিয়ে বলল, “না মাসি। হাতে সময় নেই। ওসব পরে হবে। তোমরা রেডি হয়েছ তো যাবার জন্য”?
 

কিংশুক একটা জলের বোতল এনে সীমন্তিনীর হাতে দিয়ে বলল, “ও দিদিভাই, তুমি আগে একটু জল খেয়ে নাও তো”।

সীমন্তিনী কিংশুকের গালে হাত বুলিয়ে বলল, “দাও ভাই। সত্যি বড় জল তেষ্টা পেয়েছিল রে”।

ঢকঢক করে অনেকখানি জল খেয়ে পকেটে হাত দিতেই বিভাদেবী এগিয়ে এসে তার শাড়ির আঁচল দিয়ে সীমন্তিনীর মুখ মুছিয়ে দিতে দিতে বললেন, “ইশ কি হাল করেছিস রে মা নিজের”?

সীমন্তিনী বিভাদেবীর হাত ধরে বলল, “মাসি ও’সব কথা ছাড়ো। শোনো, আমার সাথে তোমাদের এক্ষুনি হাসপাতালে যেতে হবে। তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নাও। আমার গাড়িতেই নিয়ে যাব তোমাদের”।

বিভাদেবী, বিধুবাবু আর কিংশুক তিনজনেই একসাথে চিৎকার করে উঠল। বিভাদেবী সীমন্তিনীকে আঁকড়ে ধরে বললেন, “কী বলছিস তুই মা? হাসপাতালে যাব কেন? কার কী হয়েছে রে? বল না চুপ করে আছিস কেন? কে কোন বিপদে পড়েছে”?

সীমন্তিনী বিভাদেবীকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, “মাসি, মাসি, তুমি এমন কোরনা গো। তুমি চল। বেশী দেরী করা ঠিক হবে না। আমি যেতে যেতে তোমাদের সব কথা বলছি”।

বিধুবাবু দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল, “মন্তি মা। আমার যে হাতে পায়ে বল পাচ্ছিনে গো। একটু খুলে বলো না মা”।

সীমন্তিনী কিংশুককে মাকে ধরতে বলে বিধুবাবুর কাছে ছুটে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “মেসো, তোমরা সবাই এমন করলে আমি কী করে সামলাই বল তো? ভগবান সহায় আছেন আমাদের। তাই বড় কোন বিপদ ঘটবার আগেই তাকে আমরা হাসপাতালে নিয়ে যেতে পেরেছি। তোমরা এভাবে ভেঙে পড়ো না। আমি তো তোমাদের সাথে আছি। ভয় পাচ্ছ কেন তোমরা” বলতে বলতে বিধুবাবুকে বারান্দার একটা মোড়ার ওপর বসিয়ে দিয়ে ছুটে গিয়ে জলের বোতলটা এনে বিধুবাবুর মুখের সামনে ধরে বলল, “আচ্ছা একটু জল খেয়ে নাও তো। আমি বলছি”।

বিধুবাবু জল খেয়ে করুণ চোখে সীমন্তিনীর দিকে চাইতেই সীমন্তিনী কিংশুকের দিকে তাকিয়ে বলল, “ভাই, মাকে নিয়ে আমার কাছে এস তো”।

কিংশুক আর বিভাদেবী কাছে এলে সীমন্তিনী তিনজনের হাত একসাথে ধরে বলল, “তোমরা ভয় পেও না। বড় বিপদটা কেটে গেছে। ডাক্তার বলেছে, আর কোন বিপদ হবার সম্ভাবনা নেই। তাকে এখন ডাক্তাররাই ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে। তবে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়ত তার জ্ঞান ফিরে আসবে। আর ডাক্তার বলছেন, জ্ঞান ফিরে আসবার পর সে চোখ মেলে তোমাদের সবাইকে দেখতে পেলে খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে”।

বিভাদেবী প্রায় অস্ফুট স্বরে জিজ্ঞেস করলেন, “কার বিপদ কেটে গেছে? কে সুস্থ হয়ে উঠবে? কার কথা বলছিস মা তুই? আমার রচু রতু ওরা ঠিক আছে তো”?

সীমন্তিনী বলল, “তোমার রচু রতু ওরা ঠিক আছে মাসি। আর ওরা তো কলকাতায়। ওরা এখানে হাসপাতালে কী করে আসবে”?

বিভাদেবী বললেন, “তাহলে? তাহলে কার কথা বলছিস তুই”?
 

সীমন্তিনী বিভাদেবীর হাত দু’খানা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে আস্তে করে বলল, “তোমার বড় মেয়ে গো মাসি। অর্চনাদি। সে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছে এখন। চল, তোমাদের দেখতে পেলেই সে সুস্থ হয়ে উঠবে দেখো”।

বিভাদেবী চোখ বিস্ফারিত করে প্রায় চেঁচিয়ে উঠলেন, “অর্চু? অর্চুর কথা বলছিস তুই? তুই ওকে কোথায় পেলি? কী হয়েছে ওর”?
 

সীমন্তিনী বিভাদেবীকে জড়িয়ে ধরে বলল, “সব বলব মাসি। যেতে যেতে তোমাদের সব কথা খুলে বলব। অর্চনাদির যে কোন মূহুর্তে জ্ঞান ফিরে আসতে পারে। আর ডাক্তার বলেছেন তার জ্ঞান ফেরার আগেই তোমাদের তার কাছে নিয়ে যেতে। তাই আর দেরী করা চলবে না। শীগগীর করো। ভাই, তুমি ঘরগুলোতে তালা লাগিয়ে দাও। আর বাইরের গেটেও তালা লাগাবার ব্যবস্থা করো। চলো চলো, আর দেরী করা যাবে না”।
 

গাড়িতে যেতে যেতে সীমন্তিনী সবাইকে সব কথা খুলে বলল। সব শুনে বিভাদেবী সীমন্তিনীর হাত আঁকড়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞেস করলেন, “ও মন্তি মা, আমার মেয়েটা বাঁচবে তো রে? আমরা ওকে সুস্থ করে বাড়ি নিয়ে আসতে পারব তো রে”?
 

সীমন্তিনী তাকে আশ্বস্ত করে বলল, “অবশ্যই পারবে মাসি। আর আমি তো এসে গেছি। যা করতে হয় আমি তার সবকিছু করব। তবে ডাক্তার যেমন বললেন, তাতে ওকে আরো দু’ তিনটে দিন হাসপাতালে থাকতেই হবে। তারপর তোমরা ওকে বাড়ি নিয়ে যেতে পারবে”।
 

চারটে নাগাদ হাসপাতালে ফিরে এসে সীমন্তিনী আর মিঃ রায়ের সাথে তিনজনে অর্চনার কেবিনের সামনে এসে দাঁড়াল। মিঃ রায় কেবিনের দরজা খুলে ভেতরের নার্সটাকে জিজ্ঞেস করল, “সিস্টার ডক্টর সোম কোথায়? আর পেশেন্টের সেন্স ফিরেছে কি”?
 

নার্সটা জবাব দিল, “ডক্টর এক্ষুনি আসবেন স্যার। আমি খবর পাঠিয়ে দিয়েছি। পেশেন্টের সেন্স ফিরে আসছে মনে হচ্ছে। তবে স্যার, আপনারা ডক্টর না আসা অব্দি বাইরেই অপেক্ষা করুন প্লীজ”।

বিভাদেবী সীমন্তিনীর হাত আঁকড়ে ধরে জিজ্ঞেস করলেন, “ও মা, আমাদের কি ভেতরে ঢুকতে দেবে না”?

সীমন্তিনী বলল, “দেবে মাসি, দেবে। ডাক্তার আসছেন। উনি এসেই তোমাদের ভেতরে নিয়ে যাবেন দেখো”।

এমন সময়েই ডক্টর সোম এসে কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে সীমন্তিনীকে জিজ্ঞেস করল, “ম্যাম, এরাই কি পেশেন্টের মা বাবা”?

সীমন্তিনী সকলের পরিচয় দিয়ে বলল, “হ্যা ডক্টর। ইনি বিধুভূষণ চক্রবর্তী, পেশেন্টের বাবা। ইনি হচ্ছেন পেশেন্টের মা বিভা চিক্রবর্তী। আর এ হচ্ছে কিংশুক, পেশেন্টের ছোট ভাই”।
 

ডক্টর বেশ খুশী হয়ে বলল, “বাহ, ফাইন। আপনারা একটু অপেক্ষা করুন প্লীজ। আমি ভেতরে ঢুকে আগে পেশেন্টের কণ্ডিশানটা দেখি। আমি ডাকলে এদের তিনজনকে নিয়ে ভেতরে আসবেন আপনারা” বলে কেবিনের মধ্যে ঢুকে গেল।
 

সীমন্তিনী দু’হাতে বিধুবাবুর আর বিভাদেবীর এক একটা হাত ধরে ফিসফিস করে বলল, “ভেবো না মেসো। সব ঠিক হয়ে যাবে। আর তোমরা ভেতরে ঢুকে অর্চনাদির অবস্থা দেখে বেশী কান্নাকাটি কোরনা কিন্তু। দিদি খুব চিৎকার চেঁচামেচি করতে পারে। তোমরা তাকে সামলাতে চেষ্টা কোর”।

খানিকক্ষণ যেতে না যেতেই ভেতর থেকে চিৎকার শোনা গেল, “না না। আমাকে মেরো না। আমাকে মেরো না। আমাকে আমার বাবার কাছে যেতে দাও। আমি আর কখনও তোমাদের কাছে খাবার চাইব না। আমার মায়ের কাছে যেতে দাও আমাকে। আমি তোমাদের পায়ে পড়ি”।

সে চিৎকার শুনেই বিভাদেবী সীমন্তিনীর হাত প্রায় খামচে ধরে বলে উঠলেন, “এ যে অর্চুর গলা! ও মন্তি মা, ও এভাবে কাঁদছে কেন রে ......”।

সীমন্তিনী বিভাদেবীর মুখটাকে নিজের কাঁধে চেপে ধরে বলল, “মাসি, ভেবো না। সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি আছি তো তোমাদের সাথে”।

প্রায় সাথে সাথেই নার্সটা দরজা খুলে বলল, “আপনারা ভেতরে আসুন”।

সীমন্তিনী বিভাদেবী আর বিধুবাবুর হাত ধরে কেবিনের ভেতর ঢুকতে ঢুকতে কিংশুককে বলল, “ভাই এস”।

ডক্টর তখন অর্চনাকে শান্ত করার চেষ্টা করতে করতে বলছে, “কেউ মারবে না আপনাকে। আপনি খুব ভাল জায়গায় আছেন। এটা তো হাসপাতাল। এখানে কেউ কাউকে মারে না। আর দেখুন। ওদিকে তাকিয়ে দেখুন কে এসেছে। আপনার মা বাবা ভাই এরা সবাই এসেছেন। ওই দেখুন”।

অর্চনার কানে যেন কোন কথাই ঢুকছিল না। সে চোখ বন্ধ করেই হাত পা ছুঁড়তে ছুঁড়তে একই কথা বলে যাচ্ছিল বারবার। বিভাদেবী মেয়ের অবস্থা দেখে কেঁদে উঠলেন। সীমন্তিনীর হাত ছাড়িয়ে তিনি ছুটে গিয়ে অর্চনাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলতে লাগলেন, “অর্চু, অর্চু মা আমার। এই দেখ আমি এসে গেছি মা। তোর আর কোন ভয় নেই। আর কেউ তোকে মারতে পারবে না। ওই দেখ তোর বাবাও এসেছেন। খোকা এসেছে। দ্যাখ মা। আমার মুখের দিকে তাকা। দ্যাখ আমি তোর মা তো” বলতে বলতে অর্চনার মুখটাকে দু’হাতের অঞ্জলিতে সোজা করে ধরলেন।
 

বিধুবাবুও অর্চনার কাছে গিয়ে বললেন, “হ্যারে মা। এই দেখ আমরা সবাই এসে গেছি। তুই কেন ভয় পাচ্ছিস? কেউ তোকে মারবে না”।
 

কিংশুক সীমন্তিনীর হাতটাকে খামচে ধরে ফিসফিস করে বলল, “ও দিদিভাই, আমি তো বড়দিকে চিনতেই পাচ্ছি না গো। এটা কি সত্যিই আমার বড়দি”?
 

সীমন্তিনী কিংশুকের হাত ধরে বলল, “ভাই, তুমি তো দিদিকে দেখেছ ছ’ সাত বছর আগে। তুমি তো তখন অনেক ছোট ছিলে। আর তাছাড়া দিদি তো এখন অসুস্থ, ওর শরীর স্বাস্থ্য ভেঙে গেছে, মাথায় মুখে ব্যাণ্ডেজ বাঁধা আছে, তাই তোমার চিনতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু দেখছ না বাবা মা তাকে ঠিক চিনতে পেরেছে। তবে এখন আর অন্য কোন কথা বোল না। যাও দিদির কাছে গিয়ে তার সাথে কথা বলো। তোমার কথা শুনলেই হয়ত দিদি শান্ত হবে। আর শোন ভাই, দিদির সাথে তুমি আগে যেভাবে কথা বলতে, ঠিক সে ভাবেই কিছু বলো গিয়ে। দিদির সাথে আগে যেসব কথা বলতে, সে’সব কথা বলার চেষ্টা কর। যাও ভাই”।

কিংশুক ধীরে ধীরে অর্চনার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। অর্চনা তখনও একই ভাবে চিৎকার করে যাচ্ছে। বিভাদেবী আর বিধুবাবু একনাগাড়ে মেয়েকে ডেকে নানা কথা বলে তাকে শান্ত করবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু অর্চনা আগের মতই ছটফট করে যাচ্ছিল। ডক্টর সোম অর্চনার ভাবগতিক লক্ষ্য করতে করতে আর তার পালস পরীক্ষা করতে করতে হাতের ঈশারায় বিভাদেবী আর বিধুবাবুকে চেষ্টা চালিয়ে যেতে বলছেন। কিংশুক অর্চনার মাথার কাছে এসে বেশ জোরে বলল, “এই না না বড়দি, এটা ঠিক হচ্ছে না। তুই কিন্তু আমার সাথে চিটিং করছিস। আচ্ছা আমি না তোর ছোট ভাই! আমাকে এভাবে ঠকাতে তোর একটুও কষ্ট হচ্ছে না? যা, আমি আর তোর সাথে কথা বলব না। কক্ষনো কথা বলব না আর তোর সাথে”।
 

কেবিনের প্রতিটা লোক অবাক চোখে দেখল কিংশুকের কথার পরেই অর্চনার হাত পা ছোড়াছুড়ি বন্ধ হয়ে গেল। তার মুখের চিৎকারও থেমে গেল। ডক্টর সোম কিংশুকের দিকে তাকিয়ে ঈশারা করতেই কিংশুক আবার বলতে লাগল, “হ্যা হ্যা, আমি সত্যি বলছি। আমি আর তোর সাথে কক্ষনো কথা বলব না। তুই আমার দিদি নোস। তুই একটা রাক্ষুসী, তুই একটা ডাইনী। নইলে নিজের ছোট ভাইকে তুই এভাবে ঠকাতে পারতিস”?
 

অর্চনা এবার হঠাৎ খুব দুর্বল গলায় বলে উঠল, “না না, আমি ডাইনী নই। আমি রাক্ষুসী নই। আমি তো তোর বড়দিদি। আচ্ছা আচ্ছা, আমার সোনা ভাই, আমি আর কক্ষনো তোকে ঠকাবো না। আমার সাথে তাহলে কথা বলবি তো ভাই? আমার সাথে খেলবি তো? আমার সাথে আর রাগ করে থাকবিনা তো”? বলতে বলতে তার শরীরটা একপাশে ঢলে পড়ল।
 

বিভাদেবী অর্চনার মাথাটাকে নিজের বুকে চেপে ধরে বলল, “অর্চু, সোনা মা আমার। দ্যাখ মা। আমার দিকে তাকা। এই দেখ আমি তোর মা”।

অর্চনা এবার অনেক কষ্টে নিজের চোখের পাতা দুটো একটু খানি মেলে ধরে অস্ফুট গলায় বলল, “মা, মা, আমাকে নিয়ে চল মা। আমাকে তোমার কাছে নিয়ে চল”। এ’টুকু কথা বলেই সে আবার পুরোপুরি নিস্তেজ হয়ে বিছানায় নেতিয়ে পড়ল।

ডক্টর সোম উৎসাহিত হয়ে নার্সটাকে বলল, “সিস্টার, ইঞ্জেকশন প্লীজ, তাড়াতাড়ি”।

অর্চনাকে ইঞ্জেকশন দিয়ে ডক্টর সোম সীমন্তিনীর দিকে চেয়ে বলল, “গুড জব ম্যাম। দারুণ টিপস দিয়েছেন ওকে। ইট ওয়ার্কড এক্সেলেন্টলি। থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ”।

সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “কিন্তু ডক্টর, পেশেন্ট”?

ডক্টর সোম অর্চনার পালস পরীক্ষা করতে করতে জবাব দিলেন, “ডোন্ট ওরি ম্যাম। শী ইজ পারফেক্টলি অল রাইট নাউ। ট্রমাটা কেটে গেছে, আর ভয়ের কিচ্ছু নেই। ও এখন একটু ঘুমোবে আবার। ঘন্টা দুয়েক বাদে যখন ঘুম ভাঙবে, তখন তাকে স্বাভাবিক দেখতে পারবেন। তাই আমি আপনাদের অনুরোধ করছি, এখন ওকে ডিসটার্ব না করে ঘুমোতে দিন। আপনারা এখান থেকে বেরিয়ে আমার সাথে আমার চেম্বারে আসুন”।

সীমন্তিনী তিনজনকে সাথে নিয়ে অর্চনার কেবিন থেকে বেরোতেই কিংশুক মেঝেয় বসে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল। কেঁদে কেদেই বলতে লাগল, “না না, তুই রাক্ষুসী নোস বড়দি। তুই তো খুব ভাল রে। আমি তো তখন ছোট ছিলাম। তাই তোকে অমন ভাবে বলতাম। কিন্তু এখন আর আমি আগের মত ছোটটি নেই। তুই ভাল হয়ে ওঠ বড়দি। আমরা তোকে বাড়ি নিয়ে যাব। আর কক্ষনও তোর সাথে ঝগড়া করব না আমি”।

সীমন্তিনী কিংশুকের পাশে বসে ওকে জড়িয়ে ধরে বলল, “কেঁদো না ভাই। শুনলে না, ডাক্তার কি বললেন? দিদি এখন ঠিক হয়ে যাবে। ওঠো, লক্ষ্মী ভাই আমার। তুমি কি আর এখন ছোটটি আছ? তুমি তো এখন সব বোঝ। তুমি এভাবে কাঁদলে মা বাবার কষ্ট হবে না? বল”?
 

ডক্টর সোমের চেম্বারে এসে সবাই বসতে ডক্টর বললেন, “ম্যাম, আশা করি আপনারা বুঝতেই পারছেন, মেয়েটার ওপর অনেকদিন ধরে শারীরিক আর মানসিক অত্যাচার করা হয়েছে। আমার আন্দাজ, মেয়েটা দীর্ঘদিন, হয়তো বছরের পর বছর ধরে এমন সব অত্যাচার সইতে বাধ্য হয়েছে। ওর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এমন কিছু কিছু ক্ষতের চিহ্ন আছে যেগুলো বেশ পুরনো। তাতেই বোঝা যায় যে ওর ওপর নিয়মিতভাবেই শারীরিক অত্যাচার চালানো হয়েছে। আর গতকাল রাতে ট্রেন লাইনের ওপর ওকে ফেলে যাবার আগে ওকে বেশ ভাল রকম মারধোর করা হয়েছে। ওর কাঁধে গলায় আর কানের নিচে বেশ কিছু ফ্রেশ ইঞ্জুরি আছে। যারাই ওর এ অবস্থার জন্যে দায়ী তারা মোটামুটি ভাবে নিশ্চিত ছিল যে এর আর বেঁচে থাকবার সম্ভাবনা নেই। লাইনের ওপরেই সে শেষ নিঃশ্বাস ফেলবে। আর সেটা না হলেও ট্রেণের তলায় কাটা পড়বে। কারন তার তো তখন আর নড়াচড়া করার ক্ষমতা ছিল না। আর ওনার ডিহাইড্রেশনটা যে পর্যায়ে উঠেছিল তাতে মনে হয় ওকে বোধ হয় গত চার পাঁচ দিনে কিচ্ছু খেতে দেওয়া হয় নি। তবে সঠিক কতটা কি হয়েছিল সেটা তার জ্ঞান ফিরলেই জানা যাবে”।

ডাক্তারের কথা শুনতে শুনতে বিভাদেবী মুখে আঁচল চাপা দিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন। সীমন্তিনী সাথে সাথে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “মাসি, শান্ত হও। কেঁদো না। ডাক্তার বাবু তো বলছেন দিদি এবার সুস্থ হয়ে উঠবেন”।
 

বিভাদেবী মুখে কিছু না বললেও নিজেকে সামলাবার চেষ্টা করতে লাগলেন। ডক্টর সোম বললেন, “হ্যা, যেটা বলছিলাম। তার স্টেটমেন্ট আপনারা খুব জরুরী মনে করলে আজ সন্ধ্যে নাগাদ নিতে পারেন। তবে এজ এ ডক্টর আমি সাজেস্ট করব, সেটা আপনারা কাল করুন। আর আজ তো তাকে স্যালাইনের ওপরেই থাকতে হবে। কাল দুপুর থেকে তাকে কিছু স্যুপ জাতীয় খাবার দিতে হবে। কোনরকম তেল মশলা ছাড়া। আমাদের হাসপাতালের খাবারের যা কোয়ালিটি, সেসব তাকে না দেওয়াই ভাল। আপনারা যদি নিজে থেকে কিছু এরেঞ্জ করতে পারেন, তাহলে ভাল হয়”।

সীমন্তিনী বলল, “সেটা আমরা অনায়াসেই করতে পারব ডক্টর। কিন্তু আমাদের মধ্যে কেউ কি রাতে এখানে পেশেন্টের সাথে থাকতে পারব”?
 

ডক্টর সোম বললেন, “একজন অবশ্যই থাকতে পারেন। কিন্তু ম্যাম, এখানে বিছানা পত্রের কিন্তু কোন ব্যবস্থাই করতে পারব না। পেশেন্টের রুমে একটা এক্সট্রা বেডই শুধু দিতে পারব আমি। তাতে যদি আপনাদের অসুবিধে না হয় তাহলে থাকতে পারেন। তবে একজনের বেশী নয়”।

মিঃ রায় তখন বললেন, “কিন্তু ডক্টর, অফিসিয়ালি আমাকে দু’জন কনস্টেবল তো কেবিনের সামনে মোতায়েন করতেই হবে। তাকে তো এমন আনপ্রোটেক্টেড ভাবে রাখা যাবে না। যারা তাকে মেরে ফেলতে চাইছিল, সে বেঁচে আছে জানতে পারলে তো আবার এর ওপর হামলা করতে পারে”।
 

ডক্টর সোম বললেন, “হ্যা, তা আপনারা করতে পারেন। তবে কেবিনের বাইরেই তাদের থাকতে হবে। খুব প্রয়োজন না পড়লে তারা যেন কেবিনের ভেতরে না ঢোকে। আর আমি আরেকটা সাজেশান দিতে চাই। পেশেন্ট যখন তার ভাইয়ের কথাতেই রেসপন্ড করেছে, আমার মনে হয় রাতে উনি পাশের বেডে থাকলেই সবচেয়ে ভাল হবে। অবশ্য আমি জানিনা, আপনাদের অন্য কোনও অসুবিধে হবে কি না”।

কিংশুক সাথে সাথে বলে উঠল, “না না ডক্টর, আমার কোন অসুবিধে হবে না। আমিই থাকব দিদির সাথে”।

সীমন্তিনী কিংশুকের একটা হাত ধরে বলল, “ঠিক আছে ভাই। তুমিই থাকবে” বলে ডাক্তারকে উদ্দেশ্য করে বলল, “আচ্ছা ডক্টর, রাতে আর কোন প্রব্লেম হতে পারে বলে মনে হয় আপনার? মানে আমি জানতে চাইছি তেমন কিছু হলে ভাই আপনাকে কন্টাক্ট করবে কি করে”?

ডক্টর সোম বললেন, “রাতে আর কোন প্রব্লেম হবে বলে মনে হয় না। তবু আমি আমার মোবাইল নাম্বারটা ওনাকে দিয়ে যাব। আমার কোয়ার্টারও এখান থেকে খুবই কাছে। আর ওনার ফোন পেলেই আমি যে কোন সময়ে চলে আসব। তবে ভাই, তুমিও শুনে রাখো। দিদির জ্ঞান ফিরলে তাকে এমন কোন প্রশ্ন কোর না যাতে সে এক্সাইটেড হয়ে পড়ে। কী হয়েছিল, কে মেরেছে, কে তাকে খেতে দেয়নি এসব প্রশ্ন একেবারেই করবে না আজ। মনে রেখো, তোমার দিদি এখনও খুব দুর্বল। তার মনের ওপর কোন চাপ পড়লেই সে আরও অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। তুমি দিদির সাথে তোমাদের বাড়ির ব্যাপারে, মা বাবার ব্যাপারে, তোমার পড়াশোনার ব্যাপারে কথা বলবে। আর তাকে খুশী রাখবার চেষ্টা করবে। বুঝেছ”?
 

কিংশুক মাথা হেলিয়ে বলল, “ঠিক আছে স্যার”।


(To be cont'd .....)
______________________________
[+] 2 users Like riank55's post
Like Reply




Users browsing this thread: 5 Guest(s)