Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
#41
(Update No. 63 dt. 29.7.2018)

রাস্তায় বেরিয়ে বাস স্টপের দিকে হাঁটতে হাঁটতে পকেট থেকে ফোন বের করে সেটাকে সুইচ অফ করে দিল। নিজে কাউকে ফোন না করলেও রচনা, মন্তি বা বাড়ির অনেকেই এখন ফোন করবে তাকে, সে সেটা জানে। এখানে রাস্তায় এ’সময় প্রচণ্ড ভিড়। সিটি বাসেও নিশ্চয়ই ভিড় হবে। তাই ফ্ল্যাটে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত সে আর কারো সাথে কথা বলতে চাইল না। এবার তাকে বাড়ি ফিরতেই হবে। রচনা এসব ব্যাপার কিছু না জানলেও সে যে সকাল থেকেই খুব চিন্তায় আছে এটা তার অজানা নয়। আর দুপুরে খেতে গিয়ে যেভাবে রচনার সাথে চোখাচোখি না করে সে আবার বাইরে বেরিয়ে এসেছিল, তাতে রচনার উৎকণ্ঠা যে আরো বেড়েছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। সারাটা দিন লুকিয়ে বেড়ালেও এখন তো তাকে বাড়ি ফিরে রচনার মুখোমুখি দাঁড়াতেই হবে। সিটিবাসে চেপে ফিরতে ফিরতে সে ভাবতে লাগল, রচনাকে সে কী বলবে, কতটা বলবে? একবার ভাবল টাকাটা কোনভাবে হারিয়ে গেছে বললেই বুঝি নিজের মান সম্মানটা বাঁচাতে পারবে। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবল, না না রচনার কাছে সে মিথ্যে কথা কিছুতেই বলতে পারবে না। মন্তির গায়ে হাত দিয়ে শপথ করার কথা তার মনে পড়ল। বিয়ের আগে সে মন্তিকে কথা দিয়েছিল রচনাকে সে কখনও কষ্ট দেবে না, কখনও তার কাছে কোন মিথ্যে কথা বলবে না, কখনও কিছু গোপন করবে না রচনার কাছে। আর তাছাড়া গত তিনটে বছরে রচনা তার বুকের সমস্ত জায়গাটাই নিজের দখলে নিয়ে নিয়েছে। তাকে সে মিথ্যে কথা কিছুতেই বলতে পারবে না। কিন্তু সবকিছু খুলে বললে রচনা আবার তাকে পরিহাস করে অসম্মানজনক কিছু বলে বসবে না তো?
 

মনে মনে ভাবল করুক পরিহাস। করুক তাকে অসম্মান। সম্মান সম্বর্ধনা পাবার মত সে কি কিছু করতে পেরেছে? রচনা আর মন্তি পই পই করে বুঝিয়ে দেওয়া সত্বেও সে তাদের কথা মনে রাখে নি। সে ওই মূহুর্তে লোকটার ছেলেটা কলেজে ভর্তি হতে পারবে না ভেবেই কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে আর কিছুটা রবিশঙ্করের ছলনায় ভুলে টাকাটা সে বের করে দিয়ে একেবারেই ঠিক করেনি। পরিহাসই তার প্রাপ্য। আর সে যেমন কাজ করেছে তার প্রতিদানে পরিহাস আর অবমাননা ছাড়া সে আর কী পেতে পারে? করুক অপমান। সে অপমান আর পরিহাস তো তাকে শুধু একটা দিনই সইতে হবে। মিথ্যে কথা বলে রচনাকে ঠকিয়ে সে কি আর কখনও স্ত্রীর মুখের দিকে চাইতে পারবে? প্রতিটা দিন প্রতিটা মূহুর্তে রচনাকে মিথ্যে কথা বলার জন্যে সে নিজেকে অপরাধী বলে ভাবতে বাধ্য হবে। তারচেয়ে সব কিছু সত্যি সত্যি বলে দিয়ে নিজের ভেতরের যন্ত্রণাগুলোকে কিছুটা হলেও সে কমাতে পারবে।
 

রাত প্রায় ন’টা নাগাদ রতীশ বাড়ি ফিরে এল। রচনা দরজা খুলে “কিগো তুমি....” বলেই স্বামীর মুখের দিকে চেয়েই থেমে গেল। রতীশকে দেখে মনে হচ্ছে একদিনেই তার বয়স বুঝি কুড়ি বছর বেড়ে গেছে। মুখ চোখ শুকনো। চোখের কোলে কালি। রচনা তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ করে ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখে রতীশ ভেতরে না ঢুকে বসবার ঘরের সোফার ওপরেই বসে পড়েছে। সে স্বামীর কাছে এসে তার মুখটাকে দু’হাতে চেপে ধরতেই রতীশের ঘাড়ে গলার ঘামে তার হাত ভিজে উঠতে দেখে বলল, “ইশ মাগো। তুমি দেখি ঘেমে নেয়ে একসা হয়ে গেছ গো! যাও যাও, আগে হাত মুখটা ধুয়ে এস সোনা। ওঠো, তাড়াতাড়ি এসব কিছু খুলে বাথরুমে একপাশে রেখে দিও। আমি ভিজিয়ে দেব’খন পরে” বলতে বলতে বেডরুমের আলমারি খুলে ভেতর থেকে ধোয়া পাজামা টাওয়েল আর গেঞ্জী বের করে বাথরুমের হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রেখে ভেতরে ঢুকে বলল, “এখন এত রাতে কিন্তু স্নান করো না সোনা। ভেজা টাওয়েল দিয়ে শুধু গা টা ভাল করে স্পঞ্জ করে নাও। তারপর চা খেতে খেতে কথা বলা যাবে”।

রতীশ কোন কথা না বলে চুপচাপ পকেটের ভেতরের জিনিসগুলো আর মোবাইল বের করে খাটের পাশের সাইড টেবিলে রেখে বাথরুমে ঢুকে পড়ল। দরজা বন্ধ করে নিজের পোশাক পরিচ্ছদ সব খুলে বাথরুমের মেঝের ওপর ক্লান্ত শরীরটাকে নিয়ে বসে পড়ল। বেশ কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে বসে থাকবার পর ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে শাওয়ারের নবটা ঘুরিয়ে দিয়ে জলে ভিজতে শুরু করল। বেশ কিছুক্ষণ বাদে শাওয়ার বন্ধ করে টাওয়েল হাতে নিয়ে মুখ চোখ মুছতে মুছতেই দেয়ালের আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখে নিজেই চমকে উঠল। সারা দিনের হতাশা দুশ্চিন্তা দৌড়ঝাঁপ আর ধকলের সমস্ত চিহ্নই তার মুখে জমে আছে। তার মুখের এমন চেহারা দেখে রচনার নিশ্চয়ই বুঝতে অসুবিধে হয়নি যে তার স্বামীর ওপর দিয়ে আজ কত ঝড় ঝাপটা বয়ে গেছে। কিন্তু সে ঝড়ের প্রকৃতি যখন সে জানতে পারবে, তখনই তো রতীশ তার প্রাপ্য অসম্মানটা পাবে।
 

গা, হাত, পা ভাল করে মুছে সে পাজামা গেঞ্জী পড়ে বাথরুম থেকে বেরিয়েই দেখে রচনা চা এনে সাইড টেবিলের ওপর রাখছে। রতীশের হাত ধরে ড্রেসিং টেবিলের কাছে নিয়ে যেতে যেতে রচনা বলল, “স্নানটা আর না করে থাকতে পারলে না, তাই না? যাক, গা টা ভাল করে মুছেছ তো? চুল তো এখনও জলে ভেজা আছে দেখছি। দাঁড়াও” বলে ছুটে বাথরুমে গিয়ে টাওয়েলটা এনে নিজেই স্বামীর মাথা ভাল করে মুছিয়ে তার চুল আঁচরে দিয়ে বলল, “নাও, এবার চা টা খাও। আমি ভেজা টাওয়েলটা ব্যালকনিতে মেলে দিয়ে আসছি”।
 

ব্যালকনিতে টাওয়েলটা মেলে দিতে দিতে রচনা ভাবতে লাগল, আজ যা যা হবার কথা ছিল, সেসব নিশ্চয়ই হয়নি। হলে রতীশের মুখে চোখের এমন অবস্থা হত না। এমন কিছু হয়েছে যা হবার কথা ছিল না। হয়ত কমপ্লেক্সটা আজও লিজ নিতে পারেনি। আর এমন অপ্রত্যাশিত কিছু হয়েছে যে তার স্বামী তাকে বলতে পারছে না। সকাল থেকেই তার মনটা যেন কেমন করছিল। বিকেলে বাড়ি থেকে মামনি আর ছোটকাকু ফোন করে বলেছেন যে রতীশ তাদের ফোন ধরছে না। রতীশের খবর না পেয়ে তারা খুব চিন্তায় আছেন। রচনা তাদের বুঝিয়ে আশ্বস্ত করেছে যে রাতে তাদের ফোন করে জানাবে। রাত আটটা থেকে ন’টার ভেতরে রচনা নিজেও বেশ কয়েকবার স্বামীকে ফোন করেছে। কিন্তু তার ফোন সব সময় সুইচড অফ পেয়েছে। তখন থেকেই তার মনটা চঞ্চল হয়ে উঠেছিল। সে বুঝতে পেরেছিল কিছু একটা অঘটন নিশ্চয়ই হয়েছে। কিন্তু রাত সাড়ে আটটা নাগাদ দিদিভাই তাকে ফোন করে বলেছিল যে রতীশ কমপ্লেক্সের মালিকের সাথে আলোচনায় ব্যস্ত আছে বলে তার সাথে কথা বলতে পারেনি। কিন্তু তারপর থেকে রতীশের ফোন বারবার সুইচড অফ পেয়ে তার দুশ্চিন্তা বেড়েই গেছে। স্বামীকে বাড়ি ফিরে আসতে দেখে তার একটা দুশ্চিন্তা সরে গেলেও, তার মুখ চোখ দেখেই সে বুঝে গেছে যে আশাতীত কিছু একটাই ঘটেছে। কিন্তু স্বামীকে যতটা বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে, এখন তাকে কোন প্রশ্ন না করাই ভাল। তাকে নিজেকে একটু সামলে নেবার সুযোগ দেওয়া উচিৎ।

ভেতরের ঘরে নিজের মোবাইল বেজে ওঠার শব্দ শুনে সে তাড়াতাড়ি বেডরুমে এসে নিজের মোবাইলটা হাতে নিতে নিতে দেখল রতীশ বিছানায় বসে আস্তে আস্তে চা খেয়ে যাচ্ছে। বাড়ি থেকে মামনি ফোন করেছেন। কলটা রিসিভ করে সে সামনের বসবার ঘরে চলে এল।

ও’পাশ থেকে সরলাদেবী বলছেন, “হ্যারে রচু? খোকা কি বাড়ি ফেরেনি এখনও”?

রচনা জবাব দিল, “হ্যা মামনি। তোমার ছেলে মিনিট পনের হল ঘরে এসেছেন”।

সরলাদেবী এ’কথা শুনে বললেন, “যাক বাবা। বড্ড দুশ্চিন্তা হচ্ছিল রে আমার। কিন্তু ও ফোনটা বন্ধ করে রেখেছে কেন রে”?
 

রচনা জবাব দিল, “মামনি, ওনার ফোন অফ পেয়ে আমিও খুব চিন্তা করছিলাম। কিন্তু দিদিভাইয়ের সাথে ওনার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ কথা হয়েছিল। দিদিভাইই আমাকে বলল যে উনি কমপ্লেক্সের মালিকের সাথে আলোচনায় ব্যস্ত আছেন। সেজন্যেই বোধ হয় ফোনটা অফ করে রেখেছিলেন। আর তারপর সিটিবাসের ভিড়ে আর ফোনটা সুইচ অন করেননি হয়ত। তবে তুমি ভেব না মামনি। উনি এখন চা খাচ্ছেন”।

সরলাদেবী বললেন, “ফোনটা ওকে একটু দে তো মা”।

রচনা একটু ইতস্ততঃ করে বলল, “হ্যা দিচ্ছি মামনি। কিন্তু ওনাকে খুব টায়ার্ড দেখাচ্ছে” বলতে বলতে সে বেডরুমে এসে রতীশকে বলল, “নাও। মামনি কথা বলতে চাইছেন তোমার সাথে”।
 

রতীশ হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিয়ে ভাঙা ভাঙা গলায় বলল, “হ্যা মা বল। তোমরা ভাল আছ তো সবাই”?
 

সরলাদেবী বললেন, “আমরা তো সবাই ঠিক আছিরে বাবা। কিন্তু দুপুরের পর থেকে তোকে তোর বাবা, ছোটকাকু আর আমি এতবার ফোন করে যাচ্ছি, তুই ফোন ধরছিলিস না কেন? আর রাত সাড়ে আটটার পর থেকে ফোনটা বন্ধই করে রেখেছিস। কেন রে? তোরা এমন করলে আমাদের বুঝি চিন্তা হয় না? আর এত রাত পর্যন্ত তুই বাইরে ছিলিস কেন? রচুর কথাটাও তো একটু ভাববি না কি? বেচারী সারাটা দিন একা একা ঘরের মধ্যে বন্দী হয়ে আছে। কথা বলবার একটা লোক পর্যন্ত ওর কাছে নেই। দুপুরে নাকি তুই সময় মত খেতেও আসিস নি। আর ওকে ফোন করে কিছু বলিসও নি। ভাল করে না খেয়েই নাকি উঠে আবার ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলিস। এমন করলে চলবে? রচুর খেয়াল তুই এভাবে রাখবি”?

রতীশ কোন রকমে বলল, “মা আমায় ক্ষমা কোর। আসলে আজ দুপুরের পর থেকে এত ব্যস্ত ছিলাম যে কাউকে ফোন করতে পারিনি। কাল থেকে আর এমনটা হবে না”।

সরলাদেবী বললেন, “হ্যা, কথাটা মনে রাখিস। আর তোর বাবা কাকুরা জানতে চাইছিলেন, ওই লিজ নেবার ব্যাপারটা মিটে গেছে কি না। কাজটা হয়েছে তো”?

রতীশ আমতা আমতা করে বলল, “সেটা নিয়েই তো এত ব্যস্ত থাকতে হয়েছে মা আজ সারা দিন। কিন্তু কাজটা আজও হয়নি গো। তাই মনটা ভাল লাগছে না”।
 

সরলাদেবী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “ওমা, সে কিরে? আজও হয়নি কাজটা”?

রতীশ ক্লান্ত গলায় বলল, “মা, আমি খুব ক্লান্ত আছি গো এখন। একদম কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। তাই এখন আর কিছু জিজ্ঞেস কোর না আমাকে প্লীজ” বলে ফোনটা রচনার হাতে ফিরিয়ে দিল। রচনা ফোনটা কানে লাগিয়ে বলল, “হ্যা মামনি শোনো না। তোমার ছেলেকে সত্যি খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে গো। আমি তো দরজা খুলে ওনার মুখ চোখের অবস্থা দেখেই চুপ হয়ে গেছি। আমার মনে হয় ওনাকে আগে একটু বিশ্রাম নিতে দেবার সুযোগ দেওয়া খুব প্রয়োজন। তাই তোমরা কেউ ওনার ফোনে আজ আর ফোন কোর না। বাড়ির আর সবাইকেও কথাটা বলে দিও প্লীজ। প্রয়োজন হলে আমিই তোমাদের ফোন করব। আর ভেবো না। আমি ওনার সাথেই আছি। ওনার ওপর নজর রাখব”।

সরলাদেবী বললেন, “হ্যারে মা, ওর গলা শুনেই বুঝেছি ও খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। ঠিক আছে, তুই ওর দিকে খেয়াল রাখিস মা। আর কিছু প্রয়োজন হলেই আমাদের ফোন করিস। ঠিক আছে রাখছি, হ্যা? তোরা দুটিতে ভাল থাকিস মা। তোদের দুটিকে নিয়ে সব সময় চিন্তা হচ্ছে আমার। দেখে শুনে থাকিস” বলে ফোন কেটে দিলেন।

রচনা বেডরুমে ঢুকে দেখে রতীশ বালিশে মুখ চেপে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। ফোনটা রেখে খালি কাপ প্লেট উঠিয়ে রান্নাঘরে ঢুকে গেল। মনে মনে ভাবল, আজও কমপ্লেক্সটা লিজ নেওয়া হল না কেন? কাল তো শুনেছিল যে কাল বিকেলের মধ্যেই এগ্রিমেন্টটা বানিয়ে ফেলা হবে। আজ সকালেই সেটা সাইন হবার কথা ছিল। তাহলে এমন কি হল যে আজ রাত ন’টা পর্যন্তও সে কাজটা শেষ হল না। তাহলে কি কমপ্লেক্সের মালিক সেটা আর রতীশকে লিজ দিতে চাইছেন না? কাল সকালে রতীশ ব্যাগে করে টাকাটা নিয়ে গিয়েছিল। টাকাটা কি মালিককে দিয়ে এসেছিল? না না, সেটা তো হবার কথা নয়। তার নিজের কথা না মানলেও দিদিভাইয়ের কথার অবাধ্যতা রতীশ কখনই করবে না। এগ্রিমেন্ট যখন এখনও সই করা হয়নি, তাহলে টাকা দেবার তো প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু রতীশ এ ব্যাপারে তাকে কিছুই বলে নি। হঠাতই তার মনে হল আজ সকালে যাবার সময় তো রতীশ ব্যাগটা নিয়ে যায় নি। কিন্তু টাকাটা তো আজই দেবার কথা ছিল! তাহলে সে ব্যাগ নিয়ে বেরোয়নি কেন? দু’লাখ টাকা কি সে প্যান্টের পকেটে পুরে বের হয়েছিল? প্যান্টটা তো খুলে বাথরুমে রেখে দিয়েছে। শার্ট আর প্যান্টের পকেট থেকে জিনিসগুলো বের করে সে তো পোশাকগুলো বাথরুমে রেখে দিয়েছে। কিন্তু টাকা তো বের করতে দেখেনি। সেটা কি ভুলে প্যান্টের পকেটেই রেখে দিয়েছে তাহলে?
 

কথাটা মনে হতেই সে তাড়াতাড়ি কিচেন থেকে বেরিয়ে এসে বাথরুমে গিয়ে ঢুকল। রতীশের জামা প্যান্ট গুলো বাথরুমের এক কোনে জড় করা ছিল। রচনা প্যান্ট শার্ট উঠিয়ে পকেটগুলো ভাল করে চেক করে দেখল। না, টাকা নেই। তাহলে কি সে টাকা ছাড়াই বেরিয়েছিল আজ? কিন্তু আজই তো এগ্রিমেন্ট সই করবার কথা ছিল। টাকাও আজই দেবার কথা ছিল। তাহলে রতীশ খালি হাতে বেরিয়েছিল কেন আজ? বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে বিছানার দিকে তাকিয়ে বুঝল রতীশ ঘুমিয়ে পড়েছে। গভীর শ্বাস প্রশ্বাসে তার শরীরটা ওঠানামা করছে। রচনা ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে আলমারির চাবিটা নিয়ে আলমারি খুলল। হ্যা, ব্যাগটা ভেতরেই আছে। কৌতুহলী হয়ে ব্যাগটা খুলে ভেতরে হাত ঢোকাল। ভেতরটা ফাঁকা। টাকা নেই তার ভেতরে। আলমারির লকারটা খুলে দেখল ভেতরে কিছু টাকা আছে। রচনা সে গুলো বের করে দেখল তাতে মোট দেড় লাখের মত আছে। রচনা জানত রতীশ সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকার কিছু বেশী নিয়ে এখানে এসেছিল। প্রথম দিনই লাখ খানেক টাকার আসবাব পত্র কেনা হয়েছে। টুকটাক বাজার করাও হয়েছে। কমপ্লেক্সের লিজের টাকা যদি দেওয়া না হয়ে থাকে, তাহলে তো সাড়ে তিন লাখের মত ঘরে থাকবার কথা। কিন্তু এখানে তো মোটে দেড় লাখ আছে। বাকি দু’লাখ টাকা রতীশ কোথায় রেখেছে? তাহলে কি সে দু’লাখ টাকা সে বিল্ডিঙের মালিককে দিয়ে দিয়েছে। আর টাকাটা দেবার পরেও তারা লিজ দিতে চাইছে না? হে ভগবান, এমন সর্বনাশই কি হল তাদের?
 

রচনার মাথার ভেতরটা যেন ঝিমঝিম করে উঠল। রতীশের মুখ চোখের অবস্থা দেখেই সে আন্দাজ করেছিল ভয়ঙ্কর কিছু একটা হয়েছে। কিন্তু সেটা যে এত ভয়ঙ্কর হতে পারে, সেটা সে কল্পনাই করতে পারেনি। টাকাটা যখন ঘরে নেই, তার মানে তো এটাই যে টাকাটা কমপ্লেক্সের মালিককে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আজও লিজ এগ্রিমেন্ট সই করা হয়নি! এতবার করে বলা সত্বেও রতীশ এগ্রিমেন্ট সই করবার আগেই টাকাটা তাদের হাতে তুলে দিয়েছে! আজ রতীশ টাকার ব্যাগটা সাথে নিয়েই যায়নি। সেটা নিয়ে গিয়েছিল আগের দিন। তার মানে আগের দিনই সে টাকাটা দিয়ে এসেছিল! কিন্তু কেন? আর আগের দিন টাকা দেওয়া সত্বেও আজও যখন এগ্রিমেন্ট সাইন হয় নি, তার মানে সে কমপ্লেক্সটা আর পাওয়া যাবে না। মালিক নিশ্চয়ই এখন আর লিজ দিতে চাইছে না। কিন্তু টাকাটা? সেটাও তো ফেরত আনে নি! বাবা আর কাকাদের কাছ থেকে চেয়ে আনা টাকাগুলো এভাবে নষ্ট হয়ে গেল! এতগুলো টাকা! হে ভগবান, এখন কী হবে? সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার যে স্বপ্ন চোখে নিয়ে তার স্বামী এ শহরে এসেছে সে স্বপ্ন শুরুতেই ভেঙে চুরমার হয়ে গেল?
 

টাকাটা থাকলে না হয় অন্য কোন কমপ্লেক্সের খোঁজ করা যেত। কিন্তু টাকাটা যদি হাতছাড়া হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে তো আর কিছু করারই থাকবে না। এখন তাহলে রতীশ কী করবে? সব টাকা পয়সা খুইয়ে সে খালি হাতে বাড়ি ফিরে যাবে? নইলে তারা এ শহরে বেঁচে থাকবে কি করে? মাসে মাসে ফ্ল্যাটের ভাড়া কি করে দেবে সে? ভাবতে ভাবতে তার চিবুক আর কপাল বেয়ে ঘাম গড়াতে লাগল। বিছানার কোনায় বসে সে সাইড টেবিলের ওপর রাখা রতীশের পকেট থেকে বের করে রাখা জিনিসগুলো দেখতে লাগল। মোবাইল, মানিব্যাগ আর কয়েকটা কাগজ। কাগজগুলো খুলে খুলে দেখতে লাগল। একটা কাগজে দেখল রবিশঙ্করের বাড়ির ঠিকানা লেখা। বিমল আগরওয়ালার একটা ভিজিটিং কার্ড। আরেকটা কাগজে একটা লিস্ট। সেন্টার খুলবার জন্যে যেসব জিনিস কিনতে হবে, তার লিস্ট। মানিব্যাগের ভেতর শ’ তিনেক টাকা।

ঠিক এমন সময়েই রচনার মোবাইল আবার বেজে উঠল। রতীশের ঘুম ভেঙে যেতে পারে ভেবে সে মোবাইলটা হাতে নিয়ে প্রায় ছুটে বসবার ঘরে গিয়ে সীমন্তিনীর কলটা রিসিভ করল। সীমন্তিনী উদবিঘ্ন গলায় ওদিক থেকে জিজ্ঞেস করল, “হ্যারে রচু? দাদাভাই কি এখনও বাড়ি ফেরেনি না কি রে? ওর ফোন যে এখনও সুইচড অফ পাচ্ছি”।
 

রচনা নিজের ভেতরের অস্থিরতা সামলাবার চেষ্টা করতে করতে জবাব দিল, “না দিদিভাই। তোমার দাদাভাই তো ন’টা নাগাদ বাড়ি ফিরে এসেছেন। তার ফোনটাও ঘরেই আছে। কিন্তু সেটা হয়ত অফ করেই রেখেছেন, আমি ঠিক দেখিনি”।

সীমন্তিনী খানিকটা আশ্বস্ত হয়ে বলল, “আচ্ছা, তুই ওকে ফোনটা দে তো একটু সোনা”।

রচনা বলল, “দিদিভাই তুমি রাগ কোর না। উনি চা খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছেন গো। চোখ মুখের খুব খারাপ অবস্থা। বলছিলেন খুব টায়ার্ড। বাড়ি থেকে কিছু আগে মামনি ফোন করেছিলেন। আমি তার সাথে কথা বলতে বলতেই তোমার দাদাভাই ঘুমিয়ে পড়েছেন। ওনার অবস্থা দেখে আমি আর এখন তাকে ডাকতে চাইছি না। ওনার এখন একটু বিশ্রাম নেওয়াটা খুবই প্রয়োজন মনে হচ্ছে আমার”।

সীমন্তিনী বলল, “ও তাই বুঝি? তাহলে থাক, ডাকতে হবে না। কিন্তু বাড়ি ফিরে এসে তোকে কিছু বলেছে কি”?

রচনা জবাব দিল, “নাগো দিদিভাই। উনি যখন বাড়ি ফিরলেন তখন তার চোখ মুখের অবস্থা দেখেই আমি বুঝে গিয়েছিলাম যে তার ওপর দিয়ে খুব ঝড় বয়ে গেছে আজ। শার্ট গেঞ্জী ঘামে ভিজে একেবারে সপসপে হয়ে উঠেছিল। তাই কোন কিছু না বলে তাকে হাত মুখ ধোবার জন্য বাথরুমে পাঠিয়ে দিয়েছিলুম। বেশ কিছুক্ষণ পর স্নান করে বের হবার পর তাকে চা করে দিয়ে ভাবলুম, একটু ধাতস্থ হোক। পরে সব কিছু শোনা যাবে। চা খেতে খেতেই মামনির ফোন এল। মামনির সাথেও বেশী কথা বলেন নি। মামনিকেই বলছিলেন যে তিনি খুব টায়ার্ড, তার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না বলে আমার হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়েছিলেন। আমি মামনির সাথে কথা বলতে বলতেই তিনি ঘুমিয়ে পড়েছেন দেখে তাকে আর ডাকিনি আমি। মনে মনে ভাবলুম ঘন্টা খানেক ঘুমিয়ে নিক। তারপর উঠিয়ে খেতে দেব। তাই আমার সাথেও কথা একেবারেই কিছু হয়নি আজ। কিন্তু জানো দিদিভাই, আজ সকাল থেকেই আমার মনটা ভাল লাগছিল না গো। ভেতরটা কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগছিল। এখন তোমার দাদাভাইয়ের অবস্থা দেখে আমার মনে খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছে গো”।
 

সীমন্তিনী বলল, “তুই ভাবিসনে রচু। সোনা বোন আমার। আচ্ছা দাদাভাইয়ের শরীর ঠিক আছে তো রে? জ্বর টর আসেনি তো”?

রচনা জবাব দিল, “না দিদিভাই, শরীরের টেম্পারেচার ঠিকই আছে। আমি ওনার চুল আঁচরে দেবার সময় সেটা খেয়াল করেছি। কিন্তু কিছু একটা নিয়ে যে উনি খুব দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সেটা বুঝতে পেরেছি আমি”।

সীমন্তিনী বলল, “শোন রচু। ওর যখন এমন অবস্থা, তাহলে ওকে ঘুমোতে দে। তুইও ওর কাছ থেকে কিছু জানবার জন্যে পিড়াপিড়ি করিস নে। জানি, তুই মনে মনে অনেক আবোল তাবোল কথা ভাববি সারাটা রাত ভরে। হয়ত আমিও তা-ই করব। কিন্তু ওকে ভাল করে ঘুমোতে দে। নিজেকে সামলে নিতে পারলে ও নিজেই তোকে সবকিছু খুলে বলবে। তাই বলছি, ওকে আজ আর জাগাস নে”।
 

রচনা বলল, “সেটা তো আমিও ভাবছিলুম দিদিভাই। কিন্তু দিনের বেলাতেও তো উনি প্রায় কিছুই খাননি। রোজ যেটুকু ভাত খান, আজ তার চার ভাগের এক ভাগও খাননি। তখনও কেন জানিনা আমার মুখের দিকে তাকাচ্ছিলেনই না। তাই পেটে তো বলতে গেলে কিছুই নেই এখন। রাতে একটু খাওয়াতে না পেলে আমিও কি আর কিছু খেতে পারব”?
 

সীমন্তিনী বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে। তবে অন্ততঃ একটা ঘন্টা ওকে ঘুমিয়ে থাকতে দে। তারপর না হয় ডেকে উঠিয়ে যতটা পারিস খাইয়ে দিস। তবে জোরাজুরি কিছু করিস না। আর নিজে থেকে কিছু না বললে তুইও কিছু জিজ্ঞেস করিস না আজ। কাল সকালে দেখা যাবে। আর ওর দিকে ভাল করে খেয়াল রাখবি কিন্তু। রাতে যদি এমন কিছু হয়, যে তোর কী করা উচিৎ, তা বুঝতে পাচ্ছিস না, তাহলে যত রাতই হোক আমাকে ফোন করবি। বুঝলি”?
 

রচনা বলল, “হ্যা দিদিভাই, ঠিক আছে”।
 

ফোনে কথা বলা শেষ হতে রচনা আবার বেডরুমে ফিরে এল। বিছানার ওপর রতীশ একইভাবে শুয়ে আছে উপুড় হয়ে। রচনা স্বামীর পাশে বসে তার পিঠে কাঁধে আলতো করে হাত বোলাতে বোলাতে একহাত বাড়িয়ে সাইড টেবিলের ওপর থেকে রতীশের মোবাইলটা হাতে নিয়ে পরীক্ষা করে দেখল, সেটা এখনও সুইচ অফ করাই রয়ে গেছে। মনে মনে ভাবল, থাক। যদিও আজ আর কেউ ফোন করবে বলে মনে হয় না। তবুও অন না করেই ফোনটা আবার আগের জায়গায় রেখে দিল। তারপর ধীরে ধীরে উঠে আবার রান্নাঘরে চলে গেল।
 

নিজের মনে নানারকম দুশ্চিন্তা করতে করতে রান্না শেষ করে রাত সাড়ে দশটা নাগাদ সে রতীশকে ঘুম থেকে ডেকে তুলল। রতীশও কোন কিছু না বলে হাত মুখ ধুয়ে খাবার টেবিলে গিয়ে বসল। বলতে গেলে সারাদিন ধরেই রতীশ অভুক্ত। তাই তেল মশলা খুব কম দিয়ে সে রাতের রান্না করেছে। রতীশ চুপচাপ খেতে খেতে কয়েকবার রচনার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বলবার চেষ্টা করছিল। কিন্তু বলতে গিয়েও সে কিছুই বলে উঠতে পারেনি। রচনাও সেটা খেয়াল করেছে। তবু সে কোন প্রশ্ন করে স্বামীকে বিব্রত করতে চায়নি। সে বুঝতে পেরেছে রতীশ এখনও নিজের মনকে পুরোপুরি তৈরী করতে পারেনি তার মনের ভেতরের কথাগুলো রচনাকে খুলে বলতে। তার মনের দ্বন্দ সে এখনও পরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি।


______________________________
ss_sexy
[+] 3 users Like riank55's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#42
(Update No. 64 dt. 29.7.2018)

খাওয়া শেষে রচনা বলল, “সোনা, একটু সামনের ঘরে গিয়ে বস। আমি হাতটা ধুয়েই বিছানাটা পেতে দিচ্ছি” বলে হাত ধুয়েই বেডরুমে এসে বিছানা ঝেড়ে ভাল করে পেতে দিয়ে বসবার ঘরে গিয়ে রতীশের হাত ধরে বলল, “চল, বিছানা হয়ে গেছে। তুমি শুয়ে পড়। আমি রান্নাঘরের কাজটুকু সেরে পরে আসছি”।
 

রতীশ বিছানায় এসে বসে রচনার একটা হাত আঁকড়ে ধরে ভাঙা ভাঙা গলায় বলে উঠল, “আই এম সরি সোনা, তোমাকে আজ অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি আমি”।

রচনা স্বামীকে বিছানায় শুইয়ে দিতে দিতে বলল, “কিচ্ছু হয়নি সোনা। আর এখন কিছু বলতেও হবে না। চুপ করে শুয়ে পড়। ভাল করে ঘুমোও। কাল সকালে যা বলার বলো”।
 

রতীশ আর কথা না বলে চোখ বুজে শুয়ে পড়ল। আধঘন্টা বাদে রচনা একটা নাইটি পড়ে বিছানায় এসে স্বামীর পাশে শুয়ে পড়ল। অন্য দিন রতীশ বিছানায় শুয়েই রচনার নাইটির সামনের বোতামগুলো খুলে ফেলে। রচনা শোবার সময় ভেতরে কোন অন্তর্বাস রাখে না। রচনার খোলা বুকে কিছুক্ষণ মুখ গুঁজে রেখেই সে যৌবনের খেলা খেলতে শুরু করে দেয়। রচনাও মনে প্রাণে স্বামীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে খেলায় মেতে ওঠে। কিন্তু আজ ক্লান্ত দেহ আর মন নিয়ে রতীশ যে কিছু করবে সেটা রচনা আশা করছে না। তাই সে নিজেই নিজের নাইটির বোতামগুলো খুলে ফেলে তার উন্মুক্ত বুকে স্বামীর মুখটা চেপে ধরে তার গলা জড়িয়ে ধরে চোখ বুজল। কিন্তু ঘুম যে তার এত তাড়াতাড়ি আসবে না, এটা তার জানাই ছিল। স্বামীর ওপর দিয়ে আজ সকাল থেকে নাজানি কত ভয়ঙ্কর ঝড় বয়ে গেছে, এসব কথাই সে ভাবতে লাগল।

এক সময় হঠাৎ রচনার মনে হল তার বুকের ত্বক যেন ভেজা ভেজা। মাথা ঝাঁকি দিয়ে চিন্তার জাল ছিন্ন করে ভাল করে খেয়াল করে বুঝল হ্যা ঠিক তাই। এক কনুইয়ের ওপর ভর দিয়ে সে রতীশের মুখটাকে বুক থেকে সরিয়ে দিয়ে নিজের বুকে হাত দিয়ে দেখে তার দুটো স্তনের মাঝের বিভাজিকাটা জলে ভেজা। চমকে উঠে বেডল্যাম্পটা জ্বালাতেই দেখে রতীশের দু’গাল বেয়ে অঝোর ধারায় চোখের জল পড়ছে। রচনা দু’হাতে স্বামীর মুখটা অঞ্জলি করে ধরে জিজ্ঞেস করল, “এ কী সোনা? তুমি কাঁদছ কেন গো? কী হয়েছে সোনা? আমি কি নিজের অজান্তেই তোমাকে কোন দুঃখ দিয়ে ফেলেছি? বল না গো। লক্ষ্মীটি প্লীজ বল, কী হয়েছে তোমার”।

রতীশ ছোট শিশুর মত রচনাকে আঁকড়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল, “তোমার এ অপদার্থ স্বামীটাকে ক্ষমা করে দিও তুমি রচু। আমি তোমার আর আমার মন্তির বিশ্বাসভঙ্গ করে ফেলেছি”।

রচনা পরম ভালবাসায় স্বামীর মুখটাকে আবার নিজের বুকে চেপে ধরে বলল, “চুপ, চুপ কর সোনা। এখন কিচ্ছু বলতে হবে না। অনেক রাত হয়ে গেছে। আর তুমি এখন সত্যি খুব ক্লান্ত। আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। একটু ঘুমোবার চেষ্টা কর। কাল সকালে উঠে সব কিছু শুনব’খন। লক্ষ্মী সোনা আমার। এখন আর একটাও কথা বলো না” বলতে বলতে রতীশের মুখটাকে নিজের নরম বুকে চেপে ধরল। রতীশও অসহায়ের মত রচনাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে তার বুকে মুখ চেপে রইল।

রচনা অনেকক্ষণ ধরে রতীশের পিঠে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে আকাশ পাতাল ভাবতে লাগল নিজের মনে মনে। অনেকক্ষন বাদে তার মনে হলে রতীশের শরীরটা আর কান্নার আবেগে ফুলে ফুলে উঠছে না। সে তার হাতের আলিঙ্গন খানিকটা শিথিল করলেও দু’হাতে রতীশের গলা জড়িয়ে ধরে রইল। জেগে থাকতে থাকতে আর রতীশের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে কখন যেন সে নিজেও ঘুমিয়ে পড়ল।

পরদিন সকালে সকাল ছ’টা নাগাদ রচনার ঘুম ভাঙল। নিজের বুকের দিকে চেয়ে দেখে রতীশ হাঁ করে তার একটা স্তনের ওপর মুখ রেখে ঘুমোচ্ছে। ভাল করে খেয়াল করে দেখল রতীশের ঘুম ভাঙে নি। সে আলতো করে রতীশের মাথার নিচ থেকে তার হাতটা বের করে তার মাথাটাকে বালিশের ওপর ভাল করে রেখে বিছানায় উঠে বসল। তারপর নিজের খোলা বুকটাকে ঢাকতে ঢাকতে বাথরুমে গিয়ে ঢুকল। প্রাতঃকৃত্য সেরে দাঁত ব্রাশ করে স্নান সেরে বাথরুম থেকে বেরিয়ে নিঃশব্দে আলমারি খুলে ধোয়া শাড়ি ব্রা ব্লাউজ পড়ে ঠাকুর ঘরে গিয়ে ঢুকল। ঠাকুরকে প্রণাম করে মনে মনে ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করল, “হে ঠাকুর, আমার স্বামীর মনে শক্তি দাও। উনি যেন ভেঙে না পড়েন। যে বিপদই ঘটে থাকুক না কেন, উনি যেন সব ঝড় ঝাপটা সয়ে নিয়ে সোজা হয়ে আবার উঠে দাঁড়াতে পারেন”।
 

ঠাকুরঘর থেকে বেরিয়ে বিছানার কাছে এসে স্বামীর মাথায় আলতো করে হাত বোলাল রচনা। রতীশ গভীর ঘুমে। রচনা ইচ্ছে করেই তাকে জাগাল না। বাড়িতে থাকতে রতীশ রোজ ভোর পাঁচটা থেকে একঘন্টা যোগ চর্চা করত। কলকাতায় আসবার পর থেকে এ দু’তিন দিনে সে আর যোগচর্চা করবার সুযোগ পায়নি। নানান ব্যস্ততায় আর সেটা করতে পারেনি। কাল রাতেও বারোটা পর্যন্ত সে তার বুকে মুখ গুঁজে কেঁদেছে। তারপর কিছুটা ঘুমিয়েছিল। সে নিজেও ঘুমিয়ে পড়েছিল। কিন্তু অনেক রাতে আবার তার ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। তখন রতীশ আবার কাঁদছিল। কিন্তু সে বুঝতে পেয়েও রতীশকে বুঝতে দেয় নি যে সে জেগে গেছে। চোখ বুজে নিথর হয়ে শুয়ে থাকতে থাকতে আবার ঘুমিয়ে পড়েছিল।
 

রচনা ইচ্ছে করেই রতীশকে জাগাল না। না জানি রাতে কতক্ষণ অব্দি সে গুমরে গুমরে কেঁদেছে। বিছানার পাশে সাইড টেবিলের ওপর থেকে নিজের মোবাইলটা নিয়ে সে ব্যালকনিতে এসে একটা চেয়ারে বসল। বাড়ি থেকে কেউ ফোন করতে পারে। রতীশের ফোন তো সুইচ অফই আছে। তাই তার ফোনেই কল আসবে। মোবাইলের শব্দে রতীশের ঘুম ভেঙে যাক এটা সে চাইছিল না। ব্যালকনিতে বসে আবার রবিশঙ্কর আর কমপ্লেক্সের মালিক বিমল আগরওয়ালাকে নিয়ে সে ভাবতে শুরু করল। এখন সে মোটামুটি নিশ্চিত যে রতীশের হাত থেকে টাকাটা তারা নিয়েও কমপ্লেক্স লিজ দেয় নি। তাই রতীশ অমনভাবে ভেঙে পড়েছে। কিন্তু একটা কথা রচনার মাথায় কিছুতেই ঢুকছিল না। সে আর সীমন্তিনী বারবার করে বোঝানো সত্বেও রতীশ কী করে লিজ এগ্রিমেন্ট সাইন করবার আগেই টাকাটা তাদের হাতে তুলে দিয়েছে। না কি তারা জোর করে টাকাটা রতীশের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবল, না এমনটা হলে রতীশের হাবভাবে সে আগের দিনই সেটা আঁচ করতে পারত। কিন্তু আগের দিন রতীশ ব্যস্ত থাকলেও মোটামুটি স্বাভাবিকই ছিল। টাকাটা যে তার হাতছাড়া হয়ে গেছে, সেটা সে আগের দিন নিশ্চয়ই বুঝতে পারেনি। সেটা সে বুঝেছে গতকাল। হয়ত সকালেই সে সেটা বুঝতে পেরেছে। আর তারপর থেকেই বুঝি পাগলের মত এদিক সেদিক ঘুরে বেরিয়েছে। তাই সময় মত খেতেও আসতে চায় নি।
 

কিন্তু টাকাটা হাতে থাকলে রতীশ এতোটা নিশ্চয়ই ভেঙে পড়ত না। টাকাটা যে খোয়া গেছে, এ ব্যাপারে তো সে এখন প্রায় নিশ্চিত। যে স্বপ্ন বুকে নিয়ে রতীশ কলকাতায় এসেছে, তার সে স্বপ্ন ভেঙে গেছে। তবে রচনা ভাবল যেটা হবার ছিল তা তো হয়েই গেছে। বুঝে বা না বুঝে রতীশ যা-ই করে থাকুক না কেন, তার কৃতকর্মের জন্য সে নিজেই অনুতপ্ত। নইলে কাল রাতে তার বুকে মুখ গুঁজে সে ও’সব কথা বলত না। তাই এখন তাকে দোষারোপ করে, তার নিন্দা করে, ছিঃ ছিঃ করে তাকে আর দুঃখ দেওয়া ঠিক হবে না। নিজের ভালবাসার লোকটাকে এভাবে নিন্দা করলে সে আরও ভেঙে পড়বে। স্ত্রী হয়ে সেটা করা তার পক্ষে অনুচিত হবে। ব্যাপারটা ভাল করে জেনে নিয়ে দু’জনে পরামর্শ করে ঠিক করতে হবে, এরপর তাদের কি করা উচিৎ। তবে সে যা ভাবছে, তেমনটাই হয়ে থাকলে, রতীশ যদি কাল সেটা না করে থাকে, তাহলে সবার আগে থানায় গিয়ে একটা ডাইরী করতে হবে।

হাতের মোবাইলটা হঠাৎ বেজে উঠতে রচনা চমকে উঠল। বাড়ি থেকে মামনির ফোন। কল রিসিভ করে সে বলল, “হ্যা মামনি, বল”।
 

সরলাদেবী উদ্বিঘ্ন গলায় জিজ্ঞেস করলেন, “রতু কেমন আছে রে মা? এখনও ওর ফোন বন্ধ দেখছি! ও ঠিক আছে তো”?

রচনা বলল, “হ্যা মামনি, তোমার ছেলে ঠিক আছে। তবে রাতে অনেক দেরীতে ঘুমিয়েছেন বলে এখনও ঘুম থেকে ওঠেন নি। আর ঘুমোচ্ছেন বলেই তার ফোনটা আমি অফ করে রেখেছি। নইলে ফোনের শব্দে তার ঘুম ভেঙে যেত। তুমি ভেব না। উনি ঠিক আছেন”।

সরলাদেবী বললেন, “তুই ঘুমিয়েছিলিস তো? তুই তাহলে এত তাড়াতাড়ি উঠে পড়েছিস কেন”?
 

রচনা জবাব দিল, “হ্যাগো, আমিও ঘুমিয়েছি রাতে। আর আমি তো রোজ পাঁচটা সাড়ে পাঁচটা নাগাদই উঠি। অবশ্য আজ আমারও ছটায় ঘুম ভেঙেছে। একটু দেরী হয়েছে আমারও”।

সরলাদেবী বললেন, “কাল রাতের কথা শুনে রতুর বাবা কাকারা খুব চিন্তা করছেন। হ্যারে মা, কালও যে ওর কাজটা হয়নি, এ ব্যাপারে তোকে কিছু বলেছে”?

রচনা একটু সতর্কভাবে বলল, “না মামনি। আমাকে কিছু বলেন নি। রাতে খাবার সময় তোমার ছেলে হয়তো বলতে চাইছিলেন কিছু একটা। কিন্তু আমিই তাকে বাঁধা দিয়েছি। আসলে মামনি, তার অবস্থা দেখে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল গো। তাকে এমন বিধ্বস্ত হতে কখনও দেখিনি আগে। তাই ভেবেছিলুম রাতটা ভাল করে ঘুমিয়ে নিক। তাহলে তার শরীরটা একটু ভাল লাগবে, তাই”।

সরলাদেবী বললেন, “খুব ভাল করেছিস মা। ঠিক কাজই করেছিস তুই। ভাগ্যিস এ সময়ে তুই ওর পাশে আছিস। জানিস মা, মুখ ফুটে না বললেও, তোরা বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার পর তোদের দু’জনের ওপরেই আমার একটু অভিমান হয়েছিল। কাল রাত থেকে ভাবতে ভাবতে বুঝেছি, তুই রতুর সাথে গিয়ে সত্যি খুব ভাল করেছিস। নইলে কাল রাতে আমার ছেলেটার কী গতি হত, বল তো”?
 

রচনা একটু সময় চুপ করে থেকে বলল, “আমি তো কখনই চাই না কেউ আমার ওপর অভিমান করুক বা রাগ করে থাকুক। কিন্তু আমার আর কী করার ছিল বল তো মামনি? আমি কার কথা অমান্য করব আর কার কথা রাখব”।

সরলাদেবী বললেন, “নারে মা, তুই আমার ওপর রাগ করিসনে লক্ষ্মী মা আমার। আমার ছেলেটাকে যদি একা ছেড়ে দিতুম তাহলে আজ কী হত বল তো? তুই আছিস বলেই না ওকে সামলে নিতে পারছিস। তা হ্যারে, সকালের চা খেয়েছিস”?

রচনা বলল, “না মামনি। এখনও খাই নি। তোমার ছেলে উঠলে একসঙ্গে খাব ভাবছি”।
 

সরলাদেবী বললেন, “ঠিক আছে মা। তাই করিস। তবে রতু সব কথা খুলে বললে আমাদের জানাস কিন্তু”।

রচনা বলল, “হ্যা মামনি, জানাব”।
 

সরলাদেবী বললেন, “ঠিক আছে রে মা। এখন তাহলে রাখছি। পরে আবার কথা হবে কেমন”?

রচনা ফোন ডিসকানেক্ট করে বসবার ঘরের ভেতর দিয়ে বেডরুমে ঢুকে দেখে রতীশ বিছানায় নেই। বাথরুমের দরজার দিকে চেয়ে দেখল, সেটা ভেতর থেকে বন্ধ। রতীশ ঘুম থেকে উঠে গেছে বুঝেই সে ফোন রেখে বিছানা গোছাতে আরম্ভ করল। বিছানা গুছিয়ে সে কিচেনে গিয়ে ঢুকল। তাড়াতাড়ি চা বানিয়ে একটা প্লেটে কয়েকটা বিস্কুট আর ট্রেতে করে দু’কাপ চা নিয়ে বেডরুমে ঢুকে দেখল রতীশ ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল আচড়াচ্ছে। ডাইনিং রুমে চা নিয়ে ঢুকতে ঢুকতে বলল, “সোনা, এ’ঘরে চলে এস”।
 

রতীশ খাবার টেবিলে এসে একটা চেয়ারে বসতেই রচনা তার পাশে বসে বলল, “নাও, চা খাও”।
 

রতীশ চুপচাপ চা খেতে শুরু করল। রচনা চা খেতে খেতে জিজ্ঞেস করল, “এখন শরীরটা কেমন লাগছে সোনা”?

রতীশ রচনার মুখের দিকে না তাকিয়েই বলল, “হু, ভাল আছি”।

তারপর আবার দু’জনেই চুপচাপ। রচনা আশা করছে তার স্বামী যা বলবার নিজেই বলবে। আর রতীশ ভাবছে কথাটা কি করে, কোত্থেকে শুরু করবে। কয়েকবার শুরু করবার উদ্যোগ নিয়েও সে আবার থেমে গেল। কিন্তু রচনা ভাবল কথাগুলো রতীশ যতক্ষণ পর্যন্ত না বলতে পারবে ততক্ষণ পর্যন্ত সে কিছুতেই স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারবে না। কিন্তু সে যে কথাগুলো বলতে চেয়েও বলতে পারছেনা সেটা রচনাও খুব ভাল ভাবেই বুঝতে পারছিল। সে ভাবল তাকেই উদ্যোগ নিতে হবে। চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিতে না দিতেই বেডরুমে তার ফোন বেজে উঠল। রচনা মনে মনে ভাবল এটা নিশ্চয়ই সীমন্তিনীর ফোন হবে। বেডরুমে এসে ফোনটা হাতে নিয়ে সে এবার আর বসবার ঘরে বা ব্যালকনিতে না গিয়ে ডাইনিং রুমে ঢুকতে ঢুকতেই বলল, “হ্যা দিদিভাই, তুমি কি বেরোচ্ছ”? বলে ফোনের স্পীকার অন অন করে দিল।

সীমন্তিনী জবাব দিল, “হ্যারে, তৈরী হয়েছি। তা তোদের খবর কি? বল তো”?

রচনা আড়চোখে রতীশের দিকে দেখতে দেখতে আর টেবিলের ওপর থেকে নিজের প্লেট কাপ তুলতে তুলতে বলল, “সে খবর তো আমিও এখনো জানিনা দিদিভাই। তোমাকে কী করে বলব”?
 

সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “সে কি রে? এখনও দাদাভাই কিছু বলেনি তোকে”?

রচনা জবাব দিল, “নাগো দিদিভাই, কিছুই শুনিনি এখনও। আসলে আমাদের আজ উঠতে একটু দেরী হয়ে গেছে গো। তোমার দাদাভাই তো বলতে গেলে সারাটা রাত প্রায় জেগেই ছিলেন। ভোরের দিকেই একটু ঘুমোতে পেরেছেন সে। আমিও ছ’টার সময় উঠেছি। এখন চা খাচ্ছি”।

সীমন্তিনী বলল, “আমি যে খুব উৎকণ্ঠায় আছি রে রচু। রাতে আমিও ঠিক মত ঘুমোতে পারিনি রে। আচ্ছা তুই কি কিছু আঁচ করতে পেরেছিস”?

রচনা আবার আড়চোখে রতীশের দিকে চেয়ে দেখল সে মাথা নিচু করে আস্তে আস্তে চা খেয়ে চলেছে। সে সীমন্তিনীর প্রশ্নের জবাবে বলল, “সেটা যে একেবারেই করতে পারিনি তা নয় দিদিভাই। তবে সে ধারণা আমার ভুলও হতে পারে। তাই সে’সব কথা বলে সকাল সকাল তোমার দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। তুমি শান্ত মনে অফিসে যাও। আমি টিফিন টাইমে তোমাকে ফোন করব’খন”।

সীমন্তিনী বলল, “বিপজ্জনক কিছু একটা যে ঘটেছে সেটা তো আমিও আন্দাজ করতে পারছি রে। কিন্তু ব্যাপারটা সঠিক ভাবে জানাটা তো দরকার। আর দাদাভাইয়ের ফোন তো এখনও সুইচড অফ পাচ্ছি”।

রচনা এবার রতীশের চেয়ারের পেছনে দাঁড়িয়ে বলল, “হ্যা দিদিভাই, ওটা সুইচ অফই আছে এখনও। আসলে তোমার দাদাভাই ভোরের দিকেই একটু ঘুমিয়েছিলেন বলে আমিও আর সেটা চালু করিনি। বাড়ি থেকে মামনি আর তুমি যে ফোন করবেই সেটা তো জানাই ছিল। ফোনের শব্দে ওনার ঘুম ভেঙে যাবে বলেই করিনি”।

সীমন্তিনী বলল, “বেশ করেছিস। কিন্তু ব্যাপারটা না শোনা অব্দি আমি যে কোন কাজেই মন বসাতে পারব না রে বোন। ঠিক আছে, টিফিন টাইমেই না হয় শুনব। কিন্তু দাদাভাই এখন কেমন আছে রে? ওর শরীর ঠিক আছে তো? ও সুস্থ আছে তো”?
 

রচনা পেছন থেকে রতীশের গলা জড়িয়ে ধরে বলল, “হ্যা দিদিভাই, সে শারীরিক ভাবে সুস্থই আছে। তুমি ও নিয়ে ভেব না। আমি আছি তো তোমার দাদাভাইয়ের পাশে”।
 

সীমন্তিনী বলল, “ঠিক আছে রে রচু। আমি তাহলে এখন বেরোচ্ছি। তুই ফোন করে আমাকে জানাস সব কিছু। তবে টিফিন টাইমের আগে ফোন করিস না। আজ অফিসে খুব জরুরী একটা কাজে ব্যস্ত থাকব আমি। ঠিক আছে? ছাড়ছি”।
 

সীমন্তিনী ফোন কেটে দিতে রচনা ফোনটা টেবিলের ওপর রেখে রতীশের মুখটাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে তার মাথার চুলে মুখ ঘসতে ঘসতে বলল, “দেখেছ সোনা? দিদিভাই কত দুশ্চিন্তায় আছেন? মামনিও সকালে ফোন করেছিলেন। কিন্তু আমি তো কাউকে কিছু বলতে পারিনি। এবার সব কিছু আমাকে খুলে বল না লক্ষ্মীটি। আমার বুঝি কষ্ট হয় না? আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় লোকটা আমার কাছে তার মনের কথা খুলে বলছে না। এতে আমার মনে কতটা দুঃখ হতে পারে, সেটা তুমি আন্দাজ করতে পারছ না? কাল রাতে আমার বুকে মুখ চেপে রেখে ওভাবে কাঁদছিলে কেন? বলনা সোনা আমার”।

রতীশ রচনার হাতের ওপর নিজের হাত চেপে ধরে বলল, “আমি যে ভুল করেছি, তার জন্য কান্না ছাড়া আমার যে আর কিছুই করবার নেই রচু” বলে আবার ফুঁপিয়ে উঠল।

রচনা এবার রতীশের পাশে দাঁড়িয়ে তার মুখটাকে দু’হাতে ধরে উঁচু করে তার চোখের জল মুছতে মুছতে বলল, “না সোনা। আর কেঁদো না। কাল তো সারাটা দিন সারাটা রাতই কেঁদেছ তুমি। এবার নিজেকে একটু সামলাও। আমাকে সবটা খুলে বল। তুমি না তোমার মন্তিকে কথা দিয়েছ যে আমার কাছে কখনও কিছু লুকোবে না। তুমি সে কথা ভুলে গেছ”?
 

রতীশ এবার হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলে বলল, “হ্যা হ্যা আমি সব ভুলে গেছি। তোমাকে দেওয়া কথা, মন্তিকে দেওয়া সব কথা আমি ভুলে গেছি। তোমাদের কথার অমান্য করেই তো নিজের সবথেকে বড় সর্বনাশটা আমি করে বসেছি। তাই তো বলছি, আমার মত অপদার্থ এ পৃথিবীতে আর দুটি নেই। আমাকে তোমরা সবাই ক্ষমা করে দিও সোনা। কিন্তু এটাও জানি, সব জানলে হয়ত তোমরা কেউ আমাকে ক্ষমা করতে পারবে না”।

রচনা রতীশের মাথা নিজের বুকে চেপে ধরে তার চোখের জল মুছতে মুছতে বলল, “না সোনা, অমন কথা বলো না গো। রবিশঙ্করকে চিনতে যে ভুল হয়েছে, সে ভুল শুধু তোমার একার নয়। ছোটকাকু দশ বছর যাবৎ তার সাথে ব্যবসা করেও তাকে চিনতে ভুল করেছেন। বাবা আর মেজকাকুও তো রবিশঙ্করের সাথে কথা বলেছেন। তারাও তো কেউ বুঝতে পারেননি যে সে আমাদের এভাবে ঠকাতে পারে। কিন্তু আমার মনে হয় বিমল আগরওয়ালার হাতে টাকাটা তুমি পরশু দিনই দিয়ে দিয়েছিলে, তাই না”?
 

রতীশ একটু অবাক হয়ে রচনার মুখের দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করল, “তুমি কী করে বুঝলে সেটা”?

রচনা একইভাবে রতীশের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলল, “কাল রাতে তোমার অবস্থা দেখে মনে মনে হিসেব করে আমার এমনটাই মনে হয়েছে। কিন্তু সেটাই কি ঠিক”?
 

রতীশ রচনাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “হ্যা রচু। তোমার ধারণা ঠিক। টাকাটা আমি পরশু সকালেই বিমল আগরওয়ালাকে দিয়েছি। কিন্তু সে লোকটা আসলে বিমল আগরওয়ালা নয়ই। রবিশঙ্কর একটা অন্য লোককে বিমল আগরওয়ালা বলে আমার সাথে পরিচয় করিয়েছিল। আসল বিমল আগরওয়ালার সাথে আমার তো কাল পরিচয় হল। আর তখনই বুঝতে পারলুম রবিশঙ্কর আর ওই ভুয়ো বিমল আগরওয়ালা মিলে আমার দু’লাখ টাকা লুটে নিয়েছে” বলে আবার হাউ হাউ করে কেঁদে উঠল।

রচনা রতীশকে শান্ত করতে করতে বলল, “না সোনা, লক্ষ্মী সোনা আমার। আর কেঁদো না গো। আমাকে পুরো ব্যাপারটা গুছিয়ে ভাল করে বল দেখি। চল, বসবার ঘরে বসে আমাকে সবটা খুলে বল”।

বসবার ঘরে রতীশ রচনাকে আদ্যোপান্ত সব কথা খুলে বলল। পরশুদিন সকালে কমপ্লেক্সে যাবার পর থেকে গতকাল রাতে বিমল আগরওয়ালার অফিসে গিয়ে কথাবার্তা বলা পর্যন্ত সব কিছু খুলে বলল। রবিশঙ্করের বাড়ি যাবার কথাও বলল। রতীশের মুখে পুরো ঘটণাটা মন দিয়ে শুনে রচনা বলল, “রবিশঙ্কর এভাবে আমাদের ঠকালো শেষ পর্যন্ত! কাল রাতে আমি এমনটাই আশঙ্কা করেছিলুম। কিন্তু সোনা, তোমার কালই থানায় গিয়ে ডাইরীটা করানো উচিৎ ছিল। যদি ওই দু’লাখ টাকা তারা দু’জনে ভাগাভাগি করে নিয়ে থাকে তাহলে সে টাকা তারা এতক্ষণে খরচ করে ফেলেছে হয়ত। তাই টাকা ফিরে পাবার সম্ভাবনা তো প্রায় নেইই ধরে নেওয়া যায়। তবু থানায় গিয়ে রিপোর্টটা লেখাতেই হবে। ওই ভুয়ো লোকটার নাম ঠিকানা না জানলেও রবিশঙ্করের ঠিকানাটা তো পুলিশকে বলতেই পারব আমরা। রবিশঙ্কর বাড়ি থেকে পালিয়ে কোথায় গিয়ে উঠেছে সেটা হয়ত পুলিশ খুঁজে বের করতে পারবে। যদি পুলিশ তাকে ধরতে পারে তাহলে অন্য আরেকজনকেও ঠিক খুঁজে বের করতে পারবে। টাকাটা ফেরত না পেলেও ওই লোকগুলোর সাজা পাওয়া উচিৎ। তাই চল, আমরা দু’জনে মিলেই লোকাল থানায় গিয়ে ডাইরীটা করে আসি। তবে দাঁড়াও। আগে চট করে কিছু একটা বানিয়ে নিই। সকালের খাবারটা খেয়েই আমরা বেরিয়ে পড়ব”।
 

রচনা রান্নাঘরে এসে কাজে লেগে গেল। খানিক বাদে রতীশও রান্নাঘরে এসে একটা চেয়ার নিয়ে বসতে বসতে বলল, “রচু, আমার মনে হয়, টাকাটা যে আমি স্বেচ্ছায় তাদের হাতে তুলে দিয়েছিলুম এ’কথাটা মন্তিকে বা বাড়ির কাউকে না জানালেই বোধ হয় ঠিক হবে। আমরা যদি কথাটা একটু অন্যভাবে বলি, ধর যদি বলি টাকাটা আমি হারিয়ে ফেলেছি, তাহলে কেমন হয় বল তো”?
 

রচনা নিজের কাজ করতে করতে জবাব দিল, “না সোনা। দিদিভাই আর বাড়ির সকলেই আমাদের আপনজন। আমাদের প্রিয়জন। আমাদের খুব কাছের মানুষ। এমন কারো কাছে মিথ্যে কথা বলা একেবারেই উচিৎ নয়। আর জানো তো? সত্যকে সাময়িক ভাবে লুকোতে পারলেও, সেটা একদিন না একদিন ঠিক প্রকাশ পাবেই। আর যখন তারা বুঝতে পারবে যে আমরা তাদের মিথ্যে কথা বলেছি, তখন তারা কতটা আঘাত পাবে, একবার ভাব তো? আমি বুঝতে পারছি, কথাটা বলতে তোমার সঙ্কোচ হচ্ছে। তুমি সেটা নিয়ে ভেব না। আমি সবাইকে বুঝিয়ে দেব যে তুমি রবিশঙ্করদের ছলনাটা না বুঝে সরল মনে লোকটার ছেলের কলেজের অ্যাডমিশনের কথা শুনেই টাকাটা দিয়েছিলে। তুমি টাকাটা তাদের হাতে দিয়েছ বলেই তো তোমার লজ্জা হচ্ছে সে’কথাটা বলতে? কিন্তু একটু ভেবে দেখ তো? এ লজ্জা তো শুধু তোমার একার নয়। আমাদের সকলের। আমরা কেউই তো রবিশঙ্করের বদ মতলবটা বুঝতে পারিনি। আর বিপদের দিনে নিজের লোকেরা পাশে থাকলে সব বিপদই কাটিয়ে ওঠা যায়। বাড়ির সকলে আমাদের পাশে আছেন, দিদিভাই আমাদের পাশে আছেন। তাই বাড়ির লোকদের কাছে আমরা কোন কথাই গোপন করব না। টাকাটা তো আমরা হারিয়েই ফেলেছি সোনা। এখন তাদের কাছে মিথ্যে কথা বললে তাদের সকলের ভালবাসাও হাঁরিয়ে ফেলব আমরা। সেটা কি হতে দেওয়া যায় বলো”?


***************

লোকাল থানায় যেতে যেতে রচনা রতীশকে বলল, “সোনা, আমাদের দিদিভাইও যে পুলিশে চাকরি করে এটা কিন্তু আমরা এখন থানায় গিয়ে বলব না। আগে দিদিভাইয়ের মতামত নিতে হবে এ ব্যাপারে। তারপর প্রয়োজন হলে আমরা সে’কথা পুলিশকে বলব”।
 

থানায় গিয়ে তাদের যা কিছু জানা ছিল তার সবটাই পুলিশকে খুলে বলল রতীশ আর রচনা। পুলিশ অফিসার লোকটা আরও অনেক কিছু জানতে চাইছিল। কিন্তু রতীশ সে সব কথার জবাব দিতে পারেনি। পুলিশ অফিসার রতীশের আর রবিশঙ্করের নাম ঠিকানা নোট করে নিয়ে আর বিমল আগরওয়ালার ভিজিটিং কার্ডের একটা ফটোকপি জমা নিয়ে জানতে চাইল যে রতীশের কাছে রবিশঙ্করের কোন ছবি আছে কিনা। রতীশ জানাল, নেই।

______________________________
[+] 3 users Like riank55's post
Like Reply
#43
(Update No. 65 dt. 29.7.2018)

থানা থেকে বেরিয়ে অটোয় চেপে বাড়ি ফিরতে ফিরতেই রচনা সীমন্তিনীকে এসএমএস পাঠাল “অনেক কথা আছে। সময় হাতে নিয়ে ফোন কোর”। বাড়ি এসে রচনা পোশাক বদলে কিচেনে ঢুকে পড়ল। রান্না শেষ হল বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ। দু’জনে একসাথে খেয়েদেয়ে বসবার ঘরে এসে বসল। দুপুরে ঘুমনোর অভ্যাস তাদের কারোরই নেই। রচনা সোফায় বসে রতীশকে টেনে নিজের কোলের ওপর শোয়াতে শোয়াতে বলল, “আচ্ছা সোনা, রবিশঙ্কর তো প্রতি মাসেই দু’বার করে ছোটকাকুর দোকানে যেত। তোমার কি মনে হয় ওর কোন ছবি সেখানে থাকতে পারে”?
 

রতীশ রচনার কোলে মাথাটা ভাল করে পেতে নিয়ে বলল, “জানিনে রচু। কিন্তু আমি তো কখনও এমন কোন ছবি দেখিনি”।

রচনা মনে মনে ভাবতে ভাবতে বলল, “ছোটকাকুর সাথে কথা বলতে হবে। তিনি হয়ত ভাল বলতে পারবেন। আর তাছাড়া রবিশঙ্কর যে ছোটকাকুর দোকানে মালপত্র সাপ্লাই করত, তাতে কলকাতার যে’সব কোম্পানীর সাথে রবিশঙ্কর ব্যবসা করে, সেসব কোম্পানীর কিছু ক্যাশমেমো, ভাউচার বা আরো কিছু ডকুমেন্ট ছোটকাকুর কাছে থাকতে পারে। সে’সব যদি আমরা পুলিশকে দিতে পারি, তাহলে তারা সে’সব জায়গায় রবিশঙ্করের খোঁজ করতে পারবে। তবে সবার আগে দিদিভাইয়ের সাথে কথা বলে নিই। দেখি দিদিভাই কী বলেন। আর দিদিভাইকেই বলব বাড়িতে ঘটণাটা যেন তিনিই জানিয়ে দেন”।
 

কিছুক্ষণ দু’জনেই চুপ করে থাকবার পর রতীশ বলল, “তোমাকে আরেকটা কথা বলছি সোনা। দেখ, যে আশা নিয়ে এখানে এসেছি সে আশা তো শুধু স্বপ্ন হয়েই রইল। কিন্তু এখন আমাদের কী করা উচিৎ বল তো? আমরা কি বাড়ি ফিরে যাব? আর ফিরে গিয়ে করবই বা কি? কলেজের চাকরিটা তো আর আমি ফিরে পাব না। সেখানে ফিরে গেলে তো বাবা কাকুদের দোকানেই বসতে হবে। নিজে কোন দোকান খুলে বসতে চাইলেও তো আবার বাবা কাকুদের কাছেই হাত পাততে হবে। কিন্তু সেটা কি উচিৎ হবে বল? নিজের কাছে যা আছে তাতে কয়েক মাস সংসার চালানোর খরচটাই কুলোতে পারব। বাবা আর কাকুরা মিলে যে চার লাখ টাকা আমাকে দিয়েছিলেন তার দু’লাখ টাকা তো লুটই হয়ে গেল। ঘরের ফার্নিচারগুলো কিনতে একলাখ খরচ হয়ে গেছে। তাই সেখান থেকে একলাখ টাকাই শুধু হাতে আছে। আর নিজের একাউন্ট থেকে তুলে আনা হাজার পঞ্চাশেক আছে। এই দেড়লাখ দিয়ে কিছু একটা করতে চাইলে সংসার খরচ সামলানো মুস্কিল হয়ে পড়বে। কি করব তাহলে”?
 

রচনা বলল, “আমি তো গরীবের ঘরের মেয়ে সোনা। আলুসেদ্ধ ডাল ভাত খেয়েও আমি দিনের পর দিন থাকতে পারব। প্রয়োজন হলে মাঝে সাঝে উপোষ করেও থাকতে পারব। কিন্তু তোমাকে তো আমি উপোষী রাখতে পারব না গো। তাই আমার মনে হয়, এ দেড়লাখ টাকা দিয়ে তুমি যদি রাজগঞ্জে কোন ব্যবসা খুলে বসতে পার, তাহলে না হয় সেটাই কর। বাড়িতে আপনজনদের সাথে থেকে আমরা সব কিছু মানিয়ে নিতে পারব”।

রতীশ বলল, “রাজগঞ্জের মত জায়গায় দেড় লাখ টাকায় ছোটখাট একটা ব্যবসা খুলে বসাই যায়। কিন্তু সোনা, সেখানে গেলে তো আবার আমাদের সংসার খরচ আমাদের যৌথপরিবারের ওপরই বর্তাবে। বিয়ের পর এই তিনটে বছরে ওভাবে থাকতে আমার খুব খারাপ লাগছিল বলেই না এভাবে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম। আবার আগের পরিস্থিতিতেই ফিরে যেতে হবে! আর তাছাড়া যোগা ইনস্টিটিউট খোলার স্বপ্ন আমার কখনোই সফল হবে না। আবার দেখ, আসবার সময় আমাদের এত আসবাব পত্র ছিল না। এসব জিনিস নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে হলে তো তিরিশ চল্লিশ হাজার টাকা এমনিতেই খরচ হয়ে যাবে। যখন বাড়ি গিয়ে পৌঁছব তখন হাতে হয়ত মাত্র একলাখ টাকাই থাকবে। সেটুকু হয়ত নতুন ব্যবসা খোলার পক্ষে যথেষ্ট হবে না। আবার বাবা কাকুদের কাছ থেকে হাত পেতে টাকা চাইতে হবে। আমার যে খুব লজ্জা করবে”।

রচনা জিজ্ঞেস করল, “এছাড়া আর কোন উপায় আছে বলে মনে হয় তোমার”?

রতীশ বলল, “একটা উপায় আছে হয়ত। তবে সেটাও এখনই নিশ্চিত করে বলতে যাচ্ছে না। তবে শোনো। কাল রাতে বিমল আগরওয়ালার সাথে কথা বলে চলে আসবার আগে তিনি আমাকে একটা কথা বলেছেন। তার কোন এক বন্ধুর নাকি দক্ষিন কলকাতায় একটা যোগা ইনস্টিটিউট আছে। সেখানে কয়েকজন টিচার থাকলেও তিনি নাকি একজন ভাল যোগা টিচারের খোঁজ করছেন। বিমলজী বললেন যে আমি চাইলে তিনি আমাকে সেখানে যোগা টিচার হিসেবে ঢুকিয়ে দিতে পারেন। মাসে হয়ত কুড়ি থেকে পঁচিশ হাজারের মত বেতন পাব। অবশ্য ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে কুড়ি হাজার টাকায় সংসার চালাতে টানাটানিই হবে। তবু আমি আমার লাইনেই থাকতে পারব। আর কিছুদিন সেখানে কাজ করলে আমি কলকাতার এ লাইনের লোকজনের সংস্পর্শে আসতে পারব। তাতে ভবিষ্যতে একটা যোগা সেন্টার খুলতে সুবিধে হবে আমার”।

রচনা শুনে বলল, “বিমল আগরওয়ালা? মানে যে তোমার ওই কমপ্লেক্সটার আসল মালিক”?
 

রতীশ সায় দিয়ে বলল, “হ্যা রচু সে-ই”।

রচনা একটু ভেবে বলল, “এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবার আগে আমাদের ভাল করে বিচার বিবেচনা করে দেখতে হবে সোনা। এই বিমল আগরওয়ালা লোকটাকে আমার একেবারেই ধোয়া তুলসীপাতা বলে মনে হচ্ছে না। সে কিছু করুক আর না করুক, আমাদের এ সর্বনাশের পেছনে তার নামটা কিন্তু জড়িয়ে আছে। আচ্ছা সোনা একটা কথা ভেবে দেখ তো। রবিশঙ্কর বা ওই লোকটার সাথে বিমল আগরওয়ালার যদি কোন পরিচয়ই না থেকে থাকে, তাহলে লোকটা ওই কমপ্লেক্স খুলে তার ভেতর তোমাকে নিয়ে গিয়েছিল কী করে? বিমল আগরওয়ালা তোমার কাছে স্বীকার না করলেও, যে তালার চাবি তার লকারে লুকনো থাকে, সে চাবিটা ওই ঠকবাজ লোকটা পায় কি করে? অবশ্য তাকে যদি পুলিশ জেরা করে তাহলে সে হয়ত বলতে পারে যে কেউ হয়ত একটা নকল চাবি বানিয়ে কাজটা করেছে। কিন্তু আমি কিন্তু তার কথাগুলো পুরো বিশ্বাস করতে পারছি না”।

রতীশ বলল, “যে প্রশ্নটা তুমি তুলছ তা হবার সম্ভাবনা যে থাকতে পারে, এমন কথা তো আমার মনেও এসেছিল। তাই আমি দ্বিতীয়বার তার সাথে দেখা করতে তার অফিসে গিয়েছিলুম মূলতঃ এ প্রশ্নের জবাব নিতেই। কিন্তু লোকটার সাথে কথা বলে শেষ পর্যন্ত আমার মনে হয়েছে তিনি এ ঘটণার সাথে জড়িত নন। তিনি তো নিজে মুখেই কথাটা স্বীকার করেছেন যে এ ঘটণায় তার নামটা জড়িয়ে গেছে বলেই তিনি আমার জন্য দুঃখ পাচ্ছেন। তাই তিনি আমাকে তার বন্ধুর ওখানে কাজ পাইয়ে দেবার চেষ্টা করছেন। আর তিনি নিজেই বললেন যে তার ব্যাপারেও যেন আমি পুলিশকে সব কিছু খুলে বলি। তিনি নিজে যদি এ ঘটানার সাথে জড়িত থাকতেন তাহলে কি আর এমন কথা বলতেন”?

রচনা বলল, “হ্যা সে কথা ঠিক। তবে তার বন্ধুর ওখানে কাজ নেবার ব্যাপারে আমরা আগে দিদিভাইয়ের সাথে একটু কথা বলে নিই। নিজেরাও একটু ভেবে দেখি দু’চার দিন। তারপর না হয় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব আমরা। আর শুধু দিদিভাইই নয়, বাবা কাকুদের সাথেও আমাদের এ ব্যাপারে কথা বলতে হবে। তারা তো আজ রাতে সব ঘটণা শুনেই আমাদের মতই হাঁ হুতোশ করতে শুরু করবেন। তাদের না জানিয়ে তাদের কাছে লুকিয়ে আলাদা করে কোন সিদ্ধান্ত নিলে যে তাদের অসম্মান করা হবে সোনা। বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছি বলে আমরা কি তাদের কাছ থেকে আলাদা হয়ে গেছি? তারাই তো আমাদের আপনজন। তারাও যেমন সব সময় আমাদের কথা ভাবেন, তেমনই সারাটা দিন ধরে আমিও যে শুধু তাদের কথাই ভাবি গো। তুমি তো এখানে আসবার পর থেকে এখানে ওখানে ছোটাছুটি করে বেড়াচ্ছ। আমি একা একা ঘরে বসে কি করব? সারাক্ষণ বাড়ির সকলের কথা ভাবি। বাবা কাকুরা সময় মত খাওয়া দাওয়া করছেন কিনা। মায়েরা, ভাই বোনেরা আমাদের কথা ভেবে দুঃখ পাচ্ছে কিনা, চন্দু চঞ্চু ওরা কে কি করছে, এ’সবই তো ভাবতে থাকি আমি” বলতে বলতে রচনার গলা ধরে এল। চোখ ঝাপসা হয়ে এল।
 

রতীশ বলল, “জানি সোনা। তিনবছর আগে আমার বৌ হয়ে আমাদের বাড়ি এসেই তুমি বাড়ির সবাইকে এমনভাবে ভালবেসে ফেলেছ যে আমি অবাক না হয়ে পারিনি। নিজের বাবা মাকে ছেড়ে এসে একটা দিনও তোমাকে বাড়ির কেউ মুখ ভার করে থাকতে দেখেনি। আর কোন নতুন বৌ শ্বশুর বাড়ির সকলকে এত তাড়াতাড়ি আপন করে নিতে পেরেছে বলে আমি শুনিনি কখনও”।

রচনা নিজের চোখ মুছতে মুছতে বলল, “সবটাই হয়েছে শুধু আমার দিদিভাইয়ের জন্যে। বিয়ের এক বছর আগে থেকেই দিদিভাই আমাকে মোবাইল দেবার পর থেকেই তো বাড়ির সকলের সাথে আমার রোজ কথা হত। আর আমাদের বাড়ির সকলেই এত ভাল যে বিয়ের আগেই তারা ফোনে ফোনেই আমার আপনজন হয়ে উঠেছিলেন। আমি তো অপরিচিতদের মাঝে এসে পড়িনি। তাই বিয়ের পর আমার কোন সমস্যাও হয়নি। আজ তাদের কাছ থেকে অনেক দুরে চলে এলেও আমি জানি বাবা, কাকুরা, মায়েরা আর ভাইবোনেরা সকলেই আগের মতই আমাদের ভালবাসছে। আমাদের কথা ভাবছে। আমিও দু’বেলা ঠাকুরের কাছে তাদের সকলের জন্য প্রার্থনা করি। তাদের বাদ দিয়ে আমাদের কী আলাদা কোন অস্তিত্ব আছে”?

দুপুর দুটো বাজতে পাঁচ মিনিট আগেই সীমন্তিনীর ফোন এল। সে জিজ্ঞেস করল, “হ্যারে রচু? অমন একটা এসএমএস পাঠিয়েছিস কেন রে? কোন রকমে একটা অপারেশন শেষ করেই ক্যান্টিনে চলে এসেছি। বল তো শুনি, কি খবর”?
 

রচনা জিজ্ঞেস করল, “তুমি দুপুরের খাবারটা আগে খেয়ে নাও দিদিভাই। আমি দশ মনিট বাদে তোমাকে ফোন করছি”।

সীমন্তিনী বলল, “না না রচু, ফোন কাটিস নে। আমি খাওয়া শুরু করছি। তুই বলতে শুরু কর। আমি আর ধৈর্য ধরতে পারব না রে বোন। প্লীজ লক্ষ্মী বোন আমার। তুই বল না। আমি তোর দিব্যি খেয়ে বলছি, আমি খেতে খেতেই তোর কথা শুনতে থাকব”।
 

রচনা বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে। শোনো দিদিভাই” বলে রচনা আদ্যোপান্ত সব খুলে বলল। অনেকক্ষণ সময় নিয়ে প্রথম থেকে শুরু করে থানায় গিয়ে রিপোর্ট করা পর্যন্ত সব কিছু খুলে বলল। সীমন্তিনী খেতে খেতে মাঝে মধ্যে হু হা করে সাড়া দিয়ে সবটা শুনে বলল, “ইশ এ শয়তান রবিশঙ্করটা এত বছর ধরে কাকুর সাথে ব্যবসা করে যাচ্ছিল, আর কাকুরা কেউ তাকে চিনতে পারেনি! আমি তো ভেবেই অবাক হচ্ছি রে। তবে শোন রচু, তোর কথা শুনতে শুনতে আমার খাওয়াও শেষ হয়ে গেছে, আর আমাকে আরও কিছু দরকারী কাজ সারতে হবে সন্ধ্যের মধ্যে। তাই এখন আমি কথা শেষ করে আমার কেবিনে যাচ্ছি। আমি পাঁচটার পর ফ্রি হয়েই তোকে আবার ফোন করব। তখন বাকি সব কথা হবে। আর শোন, আপাততঃ তোরা বাড়িতে কাউকে এ ব্যাপারে কিছু বলিস না। আমি সন্ধ্যের পর কাকুর সাথে আগে কথা বলব। কাকুকে বুঝিয়ে বলব যাতে ধীরে সুস্থে সবাইকে ব্যাপারটা বলে। নইলে সবাই মিলে হুলুস্থুল শুরু করে দেবে”।

রচনা বলল, “কিন্তু দিদিভাই মামনি তো বারবার করে জানতে চাইছেন। তিনিও তো কাল থেকে খুব উতলা হয়ে রয়েছেন। সকালেও ফোন করেছিলেন। তখন আমিও ঘটণাটা শুনিনি বলে তাকে বলেছি যে আমি জানতে পারলেই তাকে সব কিছু জানাব। আমরা ফোন না করলেও তিনি তো নিজেই হয়ত আরেকটু বাদেই ফোন করবেন। তাকে মিথ্যে কথা কী করে বলব আমি”?
 

সীমন্তিনী বলল, “শোন, তোর আর দাদাভাইয়ের ফোন সুইচ অফ করে রাখ এখনই। তারপর দাদাভাইকে একটু ঘুমিয়ে নিতে বল। সন্ধ্যে সাড়ে পাঁচটার পর তোরা ফোন অন করবি। তার আগেই আমি বাড়িতে খবর পাঠিয়ে দেব। তারপর তারা ফোন করলে তখন কথা বলিস। বা নিজেরাও ফোন করতে পারিস”।
 

রচনা বলল, “কাল তোমার দাদাভাইয়ের ফোন সুইচ অফ পেয়েই মামনি যা চিন্তা করছিলেন। আজ দু’জনের ফোন সুইচ অফ থাকলে তো তার আরও চিন্তা হবে দিদিভাই”।

সীমন্তিনী বলল, “সেটা নিয়ে তুই ভাবিস না। আমি বাড়িতে এখনই ফোন করে তাদের বলে দিচ্ছি যে তোরা দু’জন ম্যাটিনি শোর সিনেমা দেখতে গিয়েছিস। তাই তোদের দু’জনের ফোনই বন্ধ থাকবে সন্ধ্যে ছ’টা অব্দি। তাহলে তারা কেউ আর চিন্তা করবেন না”।

রচনা আবার বলল, “তাহলে কথা তো সেই একই দাঁড়াচ্ছে। সন্ধ্যের পর মামনিকে আমাদের মিথ্যে কথাই বলতে হচ্ছে। না দিদিভাই, আমি সেটা পারব না গো। অন্য কোন বুদ্ধি বের কর তুমি”।

সীমন্তিনী অধৈর্য ভাবে বলল, “আরে পাগলী মেয়ে, তোকে মিথ্যে কথা বলতে হবে না রে। আমি সন্ধ্যের আগেই বড়মাকে জানিয়ে দেব যে আমার কথাতেই তোরা ফোন বন্ধ করে রেখেছিলিস। তোরা কেউ সিনেমা টিনেমা দেখতে যাস নি। তোরা সত্যি কথাই বলিস। বলিস যে আমার কথাতেই তোরা ফোন বন্ধ রেখেছিলিস। এবার হল তো? আচ্ছা রাখছি আমি। কাজগুলো তাড়াতাড়ি শেষ করবার চেষ্টা করি গিয়ে। আর সন্ধ্যের পর তোদের সাথে আবার কথা বলব। তুই ছ’টা নাগাদ ফোন অন করে সবার আগে আমাকে ফোন করবি” বলে ফোন কেটে দিল।


****************

নিজের কেবিনে এসেই সীমন্তিনী তার নিজস্ব ফোন থেকে একজনকে ফোন করল। দু’বার রিং হতেই ও’পাশ থেকে একটা পুরুষ কন্ঠ বলে উঠল, “কী সৌভাগ্য আমার! অধরা রূপসী মুন ডার্লিং আমায় ফোন করেছে! আমি তো বিশ্বাসই করতে পাচ্ছি না”!
 

সীমন্তিনী গম্ভীর গলায় জবাব দিল, “প্লীজ পরি, ঠাট্টা রাখো। একটা বিশেষ প্রয়োজনে তোমাকে অফিস থেকেই ফোন করছি। তাই আজেবাজে কথা ছেড়ে মন দিয়ে আমার কথাটা শোনো প্লীজ”।

ও’পাশ থেকে সেই পুরুষ কণ্ঠটি এবার সতর্ক গলায় বলল, “তুমি ঠিক আছ তো মন্তি? কোন বিপদ হয়নি তো তোমার”?

সীমন্তিনী বলল, “আমি ঠিক আছি পরি। আর কোন প্রশ্ন না করে চুপ করে আমার কথাটা শোনো প্লীজ। আমার হাতে সময় খুব কম। আমার দাদাভাই তিন চারদিন আগে কলকাতা গেছে। সাথে তার স্ত্রীকেও নিয়ে গেছে। সেখানে সে একটা যোগা কোচিং সেন্টার খুলবে বলে গেছে। বরানগরে তারা একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছে। ফ্ল্যাট থেকে খানিকটা দুরেই একটা কমপ্লেক্স দু’লাখ টাকায় এক বছরের জন্য লিজ নেবার কথা ছিল। রবিশঙ্কর প্রসাদ নামের আমার কাকুর পরিচিত একজন রিপ্রেজেন্টেটিভ তাকে এসব ব্যাপারে সাহায্য করছিল। গত পরশু রবিশঙ্কর আর অন্য আরেকজন মিলে আমার দাদাভাইয়ের কাছ থেকে দু’লাখ টাকা নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে। অন্য লোকটাকে কমপ্লেক্সের মালিক সাজিয়ে নিয়ে আসা হয়েছিল। গতকাল দুপুরে দাদাভাই ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে। ততক্ষণে পাখি ফুড়ুৎ হয়ে গেছে। আজ লোকাল থানায় ডাইরী করা হয়েছে একটা। তবে রবিশঙ্কর যেখানে ভাড়া থাকত সে ঠিকানা থেকে সরে গেছে। আর কমপ্লেক্সের মালিক সেজে যে লোকটা এসেছিল তার আসল নাম ঠিকানা দাদাভাই জানতেই পারেনি। তাই বুঝতেই পারছ কেসটা অফিসিয়ালি ডিল করা কতটা অসম্ভব। তাই তোমার কাছে আমি কি চাইছি সেটা আশা করি তুমি বুঝতে পারছ”।

ও’পাশের পুরুষ কন্ঠ বলল, “তুমি ভেবো না মুন ডার্লিং। ওরা দু’জন পৃথিবীর যেখানেই লুকিয়ে থাকুক না কেন আমার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। তবে কলকাতার বাইরে চলে গেলে সময়টা একটু বেশী লাগবে সেটা তো বুঝতেই পারছ। তুমি শুধু রবিশঙ্করের পুরনো বাড়ির ঠিকানাটা আমাকে জানিয়ে দাও। আর তার চেহারার ডেসক্রিপশানটা এসএমএস করে দাও আমাকে। বাই দি বাই, একটা প্রশ্ন করতে পারি”?

সীমন্তিনী জবাব দিল, “ওকে, তবে আপাতত শুধু একটাই প্রশ্ন নেব আমি। কাজের খুব চাপ আছে। বলো”।

ও’পাশ থেকে প্রশ্ন ভেসে এল, “ইনিই কি তোমার সেই দাদাভাই”?
 

সীমন্তিনী খুব শান্তভাবে জবাব দিল, “কিপ ইট ফুললি কনফিডেন্সিয়াল। হ্যা”।

ও’পাশ থেকে পুরুষ কন্ঠটি এবার দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল, “শালারা ভীমরুলের চাকে ঘা মেরেছে! ওদের পরমায়ু বোধহয় ফুরিয়ে এসেছে”।

সীমন্তিনী বলল, “না পরি, নো এনকাউন্টার প্লীজ। আমি শুধু চাই ওদের কাছ থেকে টাকাটা ফিরে পেতে। তবে ছোটখাটো শাস্তি তুমি দিতেই পার, যাতে এমন ঘটণার পুনরাবৃত্তি করতে তাদের বেশ কয়েকবার ভাবতে হয়”।
 

ও’পাশের পুরুষ কন্ঠ এবার কিছুটা সংযত গলায় বলল, “তোমার আদেশ শিরোধার্য দেবী। কিন্তু দয়া করে তোমার দাদাভাইয়ের ফ্ল্যাটের ঠিকানাটা একটু জানাবে”?
 

সীমন্তিনী বলল, “দিতে পারি। কিন্তু অন ওয়ান কণ্ডিশন। তাদের সাথে ডাইরেক্ট ইনট্রোডাকশন করতে পারবে না”।

পুরুষ কন্ঠ বলল, “কথায় কথায় তুমি এত কণ্ডিশন রাখছ কেন বল তো ডার্লিং? তাকে আমার শ্যালক বানাবার স্বপ্নটা তো তুমি শুরুতেই ভেঙে দিয়েছ। এখন আমার বান্ধবীর দাদার সাথেও পরিচয় করতে পারব না? ওকে বাবা। তোমার এ কণ্ডিশনও মেনে চলব আমি”।
 

সীমন্তিনী বলল, “ওকে, আমি তোমাকে এসএমএস করে পাঠাচ্ছি কিছুক্ষণের মধ্যেই। রাতে বাকি কথা হবে, এখন রাখছি” বলে ফোন কেটে দিল। পরপর তিন খানা এসএমএস পাঠিয়ে সে টেবিলের ওপরে রাখা কলিং বেলের সুইচ টিপতেই একজন কনস্টেবল তার কেবিনে ঢুকে স্যালিউট ঠুকে বলল, “ইয়েস ম্যাম”।

সীমন্তিনী তাকে বলল, “রমেনবাবুকে একটু আমার কেবিনে আসতে বল তো। ইটস আর্জেন্ট”।

কনস্টেবলটা সেলাম ঠুকে বেরিয়ে যেতেই সীমন্তিনী ড্রয়ারের ভেতর থেকে একটা ফাইল বের করে দেখতে লাগল। একটু পরেই একজন তার কেবিনের দরজায় এসে স্যালিউট ঠুকতেই সীমন্তিনী তাকে ভেতরে ডেকে বলল, “রমেন বাবু। আপনার কেবিনে কি এখন আর অন্য কেউ আছে”?

রমেনবাবু জবাব দিল, “না ম্যাম, আমি একাই আছি”।
 

সীমন্তিনী ফাইলটা তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “এটা নিন। আমি মোটামুটি ফাইনাল শেপ দিয়ে দিয়েছি। আপনি শেষ বারের মত গোটা রিপোর্টটায় একটু চোখ বুলিয়ে দেখুন, কোথাও কোন মিস্টেক আছে কিনা। আর আপনি তো জানেনই, কেসটা কতটা কনফিডেন্সিয়াল। তাই সতর্ক থাকবেন। অন্য কেউ যেন এটা দেখার সুযোগ না পায়। কাজটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কমপ্লিট করুন। আর কোথাও কোন অসংগতি চোখে পড়লে সে পয়েন্টগুলো আলাদা নোট করে আমাকে দেখাবেন। আর বিকেল পাঁচটার আগেই এটা নিয়ে আপনাকে এসপি অফিসে যেতে হবে। খোদ এসপি স্যারের হাতে ডেলিভারি দিয়ে আসবেন। বুঝেছেন”?
 

রমেনবাবু ফাইলটা হাতে নিয়ে স্যালিউট ঠুকে বলল, “ওকে ম্যাম” বলে চলে গেল।

সীমন্তিনী এবার তার মোবাইলটা হাতে নিয়ে বাড়ির নম্বর ডায়াল করতেই ও’পাশ থেকে সতীশের গলা পেল। সীমন্তিনী ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখল বিকেল তিনটে। একটু অবাক হয়ে বলল, “ভাই তুই এ’সময় বাড়িতে”?

সতীশ সীমন্তিনীর গলা শুনে খুশী হয়ে বলল, “বড়দি তুই? তুই কেমন আছিস দিদি”?

সীমন্তিনী বলল, “আমি তো ঠিকই আছি ভাই। কিন্তু তুই এ’সময় বাড়িতে কেন রে? তোর তো এখন জলপাইগুড়ি থাকবার কথা! তুই ভাল আছিস তো ভাই”?

সতীশ জবাব দিল, “কাল আমাদের কলেজ ছুটি। আজও শুধু একটাই ক্লাস হয়েছে। তাই মা বাড়ি আসতে বলেছিলেন। আধঘন্টা আগেই আমি বাড়ি এসেছি। আর তুই ভাবিস না, আমি ভাল আছি বড়দি”।

সীমন্তিনী বলল, “ভাই শোন না, আমি এখন অফিসে আছি। তোর সাথে পরে কথা বলব। এখন একটু বড়মাকে ডেকে দে না ভাই। খুব দরকারী একটা কথা বলার আছে রে”।
 

সতীশ বলল, “হ্যা দিচ্ছি বড়দি, তুই একটু লাইনে থাক। আমি মাকে ডেকে দিচ্ছি”।

প্রায় মিনিট খানেক বাদে সরলাদেবী ফোন ধরে উৎকণ্ঠিত গলায় জিজ্ঞেস করলেন, “কিরে মন্তি? তুই তো কখনও এমন সময় ফোন করিসনা রে! সব ঠিক আছে তো? তুই ভাল আছিস তো মা”?

সীমন্তিনী বলল, “বড়মা তুমি শান্ত হও। আমি ঠিক আছি গো। এখন অফিসে আছি। একটা কথা তোমাকে এখনই জানানো দরকার বলেই এ’সময় ফোন করছি। শোনো বড়মা। দাদাভাই আর রচুর সাথে আমার একটু আগে কথা হয়েছে। ওরা ভাল আছে। তবে দাদাভাইয়ের কাজটা হয়নি। আমি মোটামুটি শুনেছি। কিন্তু এখন তোমাকে সবটা খুলে বলতে পারছি না। রাতে তোমাকে সব বলব। তোমাকে শুধু এটা জানাবার জন্যেই ফোন করেছি যে, রচু দাদাভাইকে নিয়ে ম্যাটিনী শোর সিনেমা দেখতে গেছে। তাই সন্ধ্যে পর্যন্ত ওদের দু’জনের ফোন বন্ধ থাকবে। সন্ধ্যের পর তুমি ওদের ফোন কোরো”।

সরলাদেবী একটু অবাক হয়ে বললেন, “ওরা দু’জন সিনেমা দেখতে গেছে! কাল রতুটার শরীর ভাল ছিল না, আর আজ ওরা সিনেমায় গেল”?

সীমন্তিনী বলল, “বড়মা সব কথা আমি অফিস থেকে বেরোবার পর তোমাকে বলব। এখন অফিসে বসে সে সব বলতে পাচ্ছি না। কিন্তু তুমি চিন্তা কোর না। দাদাভাইয়ের শরীর ঠিক আছে। কাল কাজটা হয়নি বলেই ওর মনটা একটু খারাপ ছিল। আর ওর মনটা ভাল করবার জন্যে আমিই ওদেরকে বলেছি সিনেমা দেখতে যেতে। তুমি ফোন করলে ওদের দু’জনের ফোন বন্ধ দেখে দুশ্চিন্তা করবে বলেই কথাটা তোমায় জানিয়ে দিচ্ছি আমি। এবার বুঝেছ তো? আচ্ছা ছাড়ছি এখন। রাতে কথা হবে”।

(To be cont'd .....)
______________________________
 
[+] 3 users Like riank55's post
Like Reply
#44
আমি মনে করেছিলাম দিদি আবার এই লেখাটি পুনরায় পোষ্ট করছেন। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম। দিদিকে অনেক মিস করি।


দাদা আপনি কিছু মনে করবেন না। অনেক ভালো কাজ করছেন আপনি। এই গল্পটি অনেক খুজেছি কিন্তু কোথাও পাইনি। এই গল্পের শেষ অব্ধি ছিলাম আমি। তাই কিছু আর বলতে পারছি না। সাথে আছি।
Astroner
[+] 2 users Like astroner's post
Like Reply
#45
(25-02-2020, 09:01 PM)riank55 Wrote: Update No. 57 (date 27.7.2018)

সে’কথা শুনে সরলাদেবীর নিজের বুকটাও খুশীতে ভরে উঠেছিল সেদিন। মনে মনে তিনি আরেকবার
 
সীমন্তিনীকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। সীমন্তিনী না থাকলে এ সোনার লক্ষ্মী প্রতিমা কি তাদের সংসারে আসতো?

সবাই দোকানে আর কলেজে চলে যাবার পর রচনার ফুরসত হয় সকালের চা খাবার। তার তিন শাশুড়িমাও সকালের চা খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। রচনার সাথে একসাথে বসে চা খান তারা সবাই। তারপরই শুরু হয় রান্নাবান্নার কাজ। রান্নার রাঁধুনি থাকলেও, রচনা রোজ একটা না একটা কিছু রাঁধবেই। রান্নার হাতটাও বড় সুন্দর তাদের বড়বৌমার। যাই রাঁধুক সবই কেমন অপূর্ব সুস্বাদু হয়ে থাকে। সকলেই চেটে পুটে খায়। তিন শাশুড়িমার সাথে চা খেয়েই তাদেরকে আর রান্না ঘরে থাকতে দেয় না রচনা। তারা যে যার ঘরের কাজকর্ম করতে বাধ্য হয়। দুপুরে তিন শ্বশুরমশাইকে খেতে দিতে হয় রচনাকেই। বৌমার হাত ছাড়া আর কারুর হাত থেকে ভাতের থালা নিতে তারা প্রস্তুত নন কেউই।

রচনার মনে কিন্তু কোন ক্ষোভ নেই। সবার সব ফরমাস পুরো করে সেও খুব খুশী হয়। এমন সুন্দর স্বামী আর শ্বশুর বাড়ি পেয়ে সে রোজ ঠাকুর প্রণাম করবার সময় মনে মনে সে তার দিদিভাইকেও প্রণাম করে। দিদিভাই ছিলেন বলেই না এমন একটা শ্বশুর বাড়ি সে পেয়েছে। কিন্তু তাদের দ্বিরাগমনের পর আর একটা দিনের জন্যেও তার দিদিভাইয়ের সাথে তার দেখা হয়নি। দ্বিরাগমনে যাবার দিন সে তার দিদিভাইকে শেষবার দেখেছিল। বাপের বাড়ি থেকে ফিরে এসে সে আর তাকে দেখতে পায়নি। রচনার সাথে নিয়ম করে দু’বেলা ফোনে কথা বললেও সীমন্তিনী আর কখনো বাড়ি আসেনি। তাদের বিয়ের মাস চারেক বাদেই সীমন্তিনী আইপিএস পরীক্ষায় পাশ করে জলপাইগুড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল কোলকাতায়। সেখানে এক মাসের মত থেকেই সে হায়দ্রাবাদ চলে গিয়েছে আড়াই বছরের আইপিএসের ট্রেনিং নিতে।
 

শ্বশুর বাড়ির প্রত্যেকে রচনাকে যতটা ভালবেসেছে রচনাও ঠিক তেমনি করে সবাইকে ভক্তি শ্রদ্ধা করে, ভালবাসে। সকলের সব প্রয়োজনের দিকে তার তীক্ষ্ণ নজর। বিয়ের মাস খানেকের মধ্যেই সে বুঝে গিয়েছিল কার কোন সময় কোন জিনিসটার প্রয়োজন হয়। তারা বলবার আগেই রচনা তাদের হাতের কাছে সে জিনিস পৌঁছে দেয়। তাই বাড়ির ছোট বড় প্রত্যেকজন সদস্যই কোন না কোন ভাবে রচনার ওপর কিছুটা হলেও নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। রচনা একটা দিন কোন কারনে বাড়ির বাইরে থাকলেই সকলে যেন চোখে অন্ধকার দেখে। সকাল থেকে শুরু করে রাত এগারটা অব্দি একটু সুস্থির হয়ে বসবার সুযোগ পায় না সে। কিন্তু তার যেন তাতে কোন ক্লান্তি নেই। সর্বদাই তার মুখে মিষ্টি একটা হাঁসি যেন লেগেই আছে। তার মনে শুধু একটাই দুঃখ ছিল। তার প্রাণের চেয়ে প্রিয় দিদিভাইয়ের মুখটা সে দেখতে পাচ্ছে না। দিদিভাই বিয়ের আগেই তাকে বলেছিল, রচনা যেন বিয়ের পর গ্রাজুয়েশানটা করে নেয়। কিন্তু সেটা করতে গেলে তাকে জলপাইগুড়িতে গিয়ে থাকতে হবে। রতীশ তাকে বাঁধা দেয় নি। সে বলেছিল যে সেও জলপাইগুড়ি থেকেই রোজ আসা যাওয়া করে কলেজের চাকরী করতে পারবে। কিন্তু বাড়ির সকলেই সে’কথা শুনে মুখ ভার করেছিল। রচনাও বাড়ির সকলের মনে কষ্ট দিয়ে নিজের পড়াশোনা করতে চায়নি। তাই সে আর কলেজে ভর্তি হয় নি। নিজেকে পুরোপুরি গৃহবধূ বানিয়ে তুলেই সে পরম আনন্দে দিন কাটাচ্ছিল।
 

প্রথম প্রথম একটু অস্বস্তিতে থাকলেও অল্প কিছু সময়েই বাড়ির অন্যান্য সকলের মত রতীশও রচনার ন্যাওটা হয়ে উঠেছিল। রচনার মিষ্টি কথায় আর ব্যবহারে রতীশও তাকে ভালবাসতে শুরু করেছিল। সে বুঝতে পেরেছিল সীমন্তিনী বিয়ের আগে তাকে যে’সব কথা বলেছিল, কথাগুলো একেবারে খাঁটি ছিল। আর নিজের মন থেকে রচনাকে মেনে নিতে পেরে সে আরেকবার সীমন্তিনীকে মনে মনে ধন্যবাদ জানিয়েছিল। ফুলশয্যার রাতে বন্ধ ঘরে রচনার শরীরটাকে নিজের দু’হাতের মধ্যে নিয়ে রতীশ ভাববার চেষ্টা করেছিল সে যেন তার মন্তিকেই বুকে জড়িয়ে আছে। তাই আট বছরের পুরনো অভ্যেসেই সে শুধু জড়িয়ে ধরা, একটু আদর করা, আদর করে দু’ একটা চুমু খাওয়া এ সবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছিল। কারন মন্তির সাথে সেই ছোট্টবেলা থেকে সে এসবই করতে অভ্যস্ত ছিল। কিন্তু ফুলশয্যার রাতে বেশ কিছুক্ষণ সময় কেটে যাবার পর বুদ্ধিমতী রচনা তার অনভিজ্ঞ স্বামীর সীমাবদ্ধতা বুঝে গিয়েছিল। তাই একটা সময় সে নিজেই সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। আর সে রাতেই রতীশ বুঝতে পেরেছিল, বান্ধবী বা প্রেমিকার থেকে একজন স্ত্রী তার পুরুষকে কতটা বেশী করে আপন করে নিতে পারে। তাদের প্রথম মিলনের পরেই রতীশ বুঝতে পেরেছিল যে মন্তি ছোটবেলা থেকে তার প্রেমিকা হয়ে থাকলেও, সে সব সময় রতীশকে একটা সীমার ভেতরেই বেঁধে রেখেছিল। সেই ফুলশয্যার রাতেই রতীশ বুঝতে পেরেছিল যে তার আর মন্তির মধ্যে যে আদর ভালবাসার সম্পর্ক ছিল সেটা একান্তভাবেই আত্মিক ছিল। মনের গভীরে শিকড় গেঁড়ে বসলেও শারীরিক ভাবে তারা কখনোই প্রকৃত স্বামী-স্ত্রীর মত আচরণ করেনি। কিন্তু মন্তি যে তাকেই নিজের স্বামী বলে মানে এ ব্যাপারটাও সে অনেক আগে থেকেই জানত। কিন্তু বুদ্ধিমতী মন্তি খুব সতর্ক ভাবেই নিজেকে এবং রতীশকে ওই সীমারেখার বাইরে চলে যেতে দেয়নি। সেই রাতে রতীশ নিজেই বুঝতে পেরেছিল যে রচনা যেভাবে তার হাতে নিজের সর্বস্ব তুলে দিয়েছিল, সেভাবে মন্তিও যদি নিজেকে উজার করে দিত, তাহলে তাদের জীবনে কতবড় বিপর্যয় নেমে আসত। তাই প্রথম রাতের ওই মিলনের শেষেই সে মন্তিকে মনে মনে অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে মন্তির নির্দেশের কথা মাথায় রেখে রচনাকে আপন করে নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আর তার সে সিদ্ধান্ত বজায় রাখতে রচনাও কখনও কোনওরকম কার্পণ্য করেনি। তাই রচনাকে সে সর্বতোভাবেই একাত্ম করে নিয়েছিল। রচনার ইচ্ছেতেই মধুচন্দ্রিমা সারতে বিয়ের পরের মাসেই রচনা আর রতীশ ব্যাঙ্গালোর উটি আর চেন্নাই ঘুরে এসেছে।

সীমন্তিনী আইপিএস হয়ে ২০০৯ এর আগস্ট মাসে হায়দ্রাবাদ চলে গেছে আড়াই বছরের ট্রেনিং নিতে। ২০০৯ সালের দর্গাপূজোর দিন চারেক আগে চন্দ্রকান্তবাবুর দোকানে কুরিয়ারের লোক এসে একটা বিশাল বড় কার্টন ডেলিভারি দিয়ে গেল। চন্দ্রকান্তবাবু অমন বিশাল আকারের কার্টন দেখে একটু মনে মনে অবাক হয়েছিলেন। কিন্তু প্রেরকের ঠিকানায় সীমন্তিনীর নাম দেখে তিনি ডেলিভারি নিয়েছিলেন। এতবড় কার্টনে সীমন্তিনী হায়দ্রাবাদ থেকে কী পাঠাতে পারে সেটা ভাবতে ভাবতেই তার মনে হল সীমন্তিনী নিশ্চয়ই সকলের জন্য পূজোর উপহার পাঠিয়েছে। প্রচণ্ড কৌতুহল হওয়া সত্বেও সে নিজেকে সম্বরন করে ভাবলেন রাতে বাড়ি ফিরেই না হয় সকলের সামনে সেটা খোলা যাবে।

সন্ধ্যের সময় চন্দ্রকান্তবাবুর পিসিওর নাম্বারে সীমন্তিনীর ফোন এল। চন্দ্রকান্তবাবু ফোন ধরে ‘হ্যালো’ বলতেই সীমন্তিনী বলল, “কাকু আমি মন্তি বলছি”।

চন্দ্রকান্তবাবু মন্তির কথা শুনে খুব উৎফুল্ল ভাবে জিজ্ঞেস করলেন, “মন্তি মা তুই? তুই ভাল আছিস তো মা”?

সীমন্তিনী বলল, “হ্যা গো আমি ভাল আছি। কাকু শোন, তোমার দোকানের ঠিকানায় একটা প্যাকেট পাঠিয়েছি আমি এখান থেকে। তুমি ওটা পেলে .....”

চন্দ্রকান্তবাবু তার কথার মাঝখানেই বলে উঠলেন, “তুই এটাকে প্যাকেট বলছিস? এটা তো বিশাল সাইজের একটা কার্টন রে মা”!

সীমন্তিনী একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “তারমানে, তুমি সেটা পেয়ে গেছ? আমি তো ভেবেছিলুম তুমি সেটা আরও দু’একদিন বাদে পাবে হয়ত। আচ্ছা, শোনো না কাকু। আমার মনে একটা সাধ ছিল যে চাকরি পেয়ে বাড়ির সকলকে কিছু না কিছু দেব। কিন্তু সিলেকশন হবার সাথে সাথেই আমাকে কলকাতা চলে আসতে হয়েছিল। আর তার পরের মাসেই হায়দ্রাবাদ চলে আসতে হল আমাকে। এখন তো এ আড়াই বছরের ট্রেনিং শেষ না হওয়া অব্দি এখান থেকে অন্য কোথাও যেতেই পারব না। এদিকে সামনে পূজো। দাদাভাইয়ের বিয়ের পর এটাই প্রথম পূজো। তাই এখান থেকেই বাড়ির সকলের জন্য কিছু কাপড় জামা পাঠালুম। তোমরা সবাই এ’সব নেবে তো? না এ অলক্ষ্মী মেয়েটার দেওয়া উপহারও তোমরা নেবে না”?

চন্দ্রকান্তবাবু হা হা করে বলে উঠলেন, “এসব তুই কী বলছিস মা? এমন আজেবাজে কথা একদম ভাববি না তুই। আমি তোকে কথা দিচ্ছি মা, আমি মেজদা আর মেজবৌদিকে সামলে নেব। তুই কিচ্ছু ভাবিস না। সবাই তোর উপহার নেবে। কেউ আপত্তি করবে না”।

সীমন্তিনী বলল, “কাকু, ছোটবেলা থেকে তোমার কাছেই শুধু আব্দার করে এসেছি। আজও আরেকটা অনুরোধ আছে গো তোমার কাছে। তুমি সেটা কিন্তু অবশ্যই রাখবে”।

চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “তুই এমন করে কেন বলছিস রে মা? বল না কী চাই তোর”?
 

সীমন্তিনী বলল, “তেমন কিছু চাইনে কাকু। শুধু সামান্য একটা অনুরোধ। এ প্যাকেটটা তুমি দোকানে বা বাড়িতে গিয়ে খুলে ফেল না। বাড়ি নিয়ে গিয়ে এটা রচুর হাতে দিয়ে বোল, রচু নিজে হাতে যেন এটা খোলে। তারপর যেন যার যার হাতে জিনিসগুলো তুলে দেয়”।
 

চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “ঠিক আছে রে মা। এ আর এমন কী কথা? বড়বৌমাই এটা খুলবে। তা তুই কি বড়বৌমাকে এ ব্যাপারে কিছু বলেছিস”?
 

সীমন্তিনী বলল, “না কাকু। রচুর সাথে কথা তো রোজই বলি। কিন্তু এ ব্যাপারে আমি ওকে কিছু বলিনি। কিন্তু আমি জানি, আমি মনে মনে যা ভাবছি রচু ঠিক তা-ই করবে। তোমাকেও ওকে আলাদা করে কিছু বলতে হবে না। শুধু গিয়ে বোল, ও যেন নিজে হাতে প্যাকেটটা খোলে। আর যখন ও প্যাকেটটা খুলবে তখন তোমরা বাড়ির সবাই বড়ঘরে থেকো। সতুও তো বাড়ি ফিরে এসেছে। ওকেও থাকতে বোল। তাহলেই হবে”।

চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “ঠিক আছেরে মা। তাই করব। তুই ভাবিসনা”।
 

অন্যান্য দিন চন্দ্রকান্ত বাবুদের তিন ভাইই রাত ন’টার পর দোকান বন্ধ করেন। কিন্তু আজ রাত আটটা বাজতেই চন্দ্রকান্তবাবু দোকান বন্ধ করবার সময় রতীশকে বললেন, “রতু, তুই দোকানে তালা লাগিয়ে দে। তবে এ প্যাকেটটা বাইরে বের করে রাখিস। এটা বাড়ি নিয়ে যেতে হবে। আমি একটু দাদাদের সাথে কথা বলে আসছি”।

বড়দা আর মেজদার সাথে কথা বলে চন্দ্রকান্তবাবু ফিরে এসে একটা রিক্সা ডেকে কার্টনটাকে নিয়ে রতীশের সাথে রিক্সায় চেপে বসলেন। বাড়ি এসে রতীশের সাহায্যে কার্টনটাকে নিয়ে বড় ঘরে রেখে রচনাকে ডেকে বললেন, “বড়বৌমা, মন্তি হায়দ্রাবাদ থেকে এ প্যাকেটটা পাঠিয়েছে। কিন্তু ফোনে আমাকে বলেছে যে প্যাকেটটা যেন বাড়ির আর কেউ না খোলে। এটা খোলবার দায়িত্ব সে তোমাকে দিয়েছে। বড়দা মেজদা এলে আজ এ ঘরেই সবাইকে চা খেতে দিও। তারপর প্যাকেটটা খুলো”।
 

রচনা একটু অবাক হল ছোটকাকুর কথা শুনে। একটু আগেও তো দিদিভাই তার সাথে ফোনে কথা বলেছেন! কিন্তু এ ব্যাপারে তো কিছু বলেননি তিনি! আন্দাজ করাই যাচ্ছে যে তিনি হায়দ্রাবাদ থেকে বাড়ির লোকদের জন্যে কিছু পূজোর উপহার পাঠিয়েছেন। কিন্তু প্যাকেটটা তাকেই খুলতে বলেছেন ভেবে একটু অবাকই হল। প্যাকেটটার দিকে তাকিয়ে দেখল ছোটকাকুর নামেই প্যাকেটটা এসেছে। হঠাতই তার মনে হল, সে তার দিদিভাইয়ের মনের ইচ্ছেটা বুঝতে পেরেছে। নিজের মনের ভাব মনেই লুকিয়ে রেখে সে বলল, “ঠিক আছে ছোটকাকু। আমি আগে তোমাদের সবার জন্যে চা টা বানিয়ে আনি। তারপর এটা খুলছি। কিন্তু বাবা আর বড়কাকু বাড়ি এলেই তো এটা খুলব? নাকি”?
 

চন্দ্রকান্তবাবু নিজেদের ঘরের দিকে যেতে যেতে বললেন, “আমি দাদাদের বলে এসেছি। তারাও এক্ষুনি এসে পড়বেন মা”।
 

মিনিট দশেকের ভেতরেই বাড়ির সবাই এসে বড় ঘরে হাজির হল। বাড়ির তিন কর্তা হাত মুখ ধুয়ে সে ঘরে এসে হাজির হয়েছেন। বাড়ির তিন গিন্নী আর ভাইবোনেরাও চন্দ্রকান্তবাবুর নির্দেশ ওই ঘরে এসে বসেছে। রচনা মমতার সাথে সবার জন্য চা জল খাবার নিয়ে ঘরে এসে সকলের হাতে দিয়ে মেঝেয় পেতে রাখা মাদুরের ওপর বসে কার্টনটা খুলতে শুরু করল। কার্টনটার ভেতরে বড় ছোট নানা ধরণের অনেক গুলো প্যাকেট দেখা গেল। সবার ওপরের প্যাকেটটার গায়ে একটা স্টিকার লাগানো আছে। আর তাতে মার্কার পেন দিয়ে লেখা “জেঠু”। সে প্যাকেটটা বের করে শ্বশুর মশাইয়ের হাতে দিয়ে নিচু হয়ে তার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করল।

রতিকান্তবাবু বললেন, “একি বড়বৌমা, তুমি প্রণাম করছ কেন”?
 

রচনা একটু হেসে বলল, “বাবা, দিদিভাই তো এজন্যেই আমাকে প্যাকেটটা খুলতে বলেছেন। তিনি জানেন যে আমি এ উপহারগুলো তোমাদের হাতে তুলে দিয়ে তার হয়ে আমি তোমাদের প্রণাম করব। তাই আমার এ প্রণামটা স্বীকার করে তোমরা সবাই আশীর্বাদটা আমার দিদিভাইকে কোর। দিদিভাই মনে মনে এটাই চেয়েছেন”।
 

ঘরের প্রায় সকলেই রচনার কথা শুনে অবাক হল। বাড়ির বড়মেয়েটা আট দশ বছর ধরে বাড়ির বাইরে বাইরে কাটাচ্ছে। বাড়ির কেউ কেউ মেয়েটা ভাল আছে কি না, সুস্থ আছে কি না, এ কথা ভাবলেও তার ইচ্ছে অনিচ্ছার কথা কেউ ভেবে দেখেনি কোনদিন। আর তাদের বাড়ির সবচেয়ে নতুন সদস্য তাদের বড়বৌমা তাদের বড়খুকির মনের ইচ্ছেটা কত সহজেই না বুঝে ফেলল। রতিকান্তবাবু বড়বৌমার মাথায় হাত দিয়ে চোখ বুজে সীমন্তিনীকে আশীর্বাদ করলেন। সেই সঙ্গে তার বড়বৌমাকেও।

রচনা এরপর এক এক করে সকলের নাম লেখা প্যাকেটগুলো যার যার হাতে তুলে দিল। বয়োজ্যেষ্ঠ সবাইকে প্রণাম করল, আর ছোটদের কপালে চুমু খেয়ে আদর করল। মেজকাকু আর মেজমাও তাদের প্যাকেটগুলো নিয়ে রচনার প্রণাম স্বীকার করে দু’হাত কপালে ঠেকিয়ে ঈশ্বরের কাছে মনে মনে বুঝি কোন প্রার্থনা করলেন।
 

মমতাদির নামেও একটা প্যাকেট ছিল। আর বাগানের মালী আর ক্ষেতের কাজের দু’জনের জন্যেও দুটো প্যাকেট ছিল। সীমন্তিনীর দেওয়া উপহার সকলের হাতে তুলে দেবার পর রচনার নাম লেখা প্যাকেটটা বের হল। তারপর আরেকটা বড় প্যাকেট বের হল। তার গায়ে লেখা আছে কালচিনি। রচনা সেটা বুকে চেপে ধরে কেঁদে ফেলল। নিজের বুকের ভেতর থেকে উথলে ওঠা কান্নার বেগকে কোন ভাবেই আর সামলাতে পারল না সে। সরলাদেবী তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দিতে দিতে বললেন, “কাঁদিস নে মা। কাঁদিস নে। জানি তো, তোর দিদিভাইকে না দেখে তুই মনে মনে খুব কষ্টে আছিস। আমরাও কি ওকে দুরে রেখে সুখে আছি রে মা? কিন্তু আমরা কে আর কি করতে পারি বল? ও যে নিজে স্বেচ্ছায় আমাদের সকলের কাছ থেকে দুরে চলে গেছে রে। তুই কাঁদিস নে মা”।

সতীশ পরিস্থিতি সামাল দিতে বলল, “আচ্ছা মা, দিদির এ উপহার পেয়ে আমারও তো তাকে প্রণাম করা উচিৎ। তোমরা তো বৌদিভাইকে আশীর্বাদ দিয়েই দিদিকে আশীর্বাদ করলে। তাহলে আমিও বৌদিভাইকে প্রণাম করলেই তো দিদি সে প্রণামটা পেয়ে যাবে তাই না”?
 

রচনা সতীশের এ কথা শুনেই সরলাদেবীর পেছনে লুকোতে লুকোতে বলল, “মামনি, তোমার এই ছোট ছেলেটাকে ভাল করে বুঝিয়ে দাও, আমি তার থেকে বয়সে ছোট। আর বয়সে ছোট না হলেও আমি তার প্রণাম নিতুম না। সূর্য্য, চঞ্চু, চন্দু ওদের সবাইকে আমি নিজের ভাই বোনের মত স্নেহ করি। তাই ওরাও যেন কেউ আমাকে প্রণাম না করে”।

এমন সময় সূর্য্য বলে উঠল, “কিন্তু বৌমণি, দিদির এ উপহারটা পেয়ে তাকে যে একবার খুব প্রণাম করতে ইচ্ছে করছে আমার”।
 

রচনা সূর্য্যর হাত ধরে বলল, “ভাই, তুমি ঠাকুরঘরে গিয়ে ঠাকুরকে প্রণাম কর। তাহলেই দিদিভাইকে প্রণাম করা হবে, যাও”।
 

চঞ্চল আর চন্দ্রিকাও সাথে সাথে লাফিয়ে উঠল, “আমরাও করব তাহলে”।

চন্দ্রাদেবী বললেন, “ঠিক আছে, তোমরা সবাই গিয়ে ঠাকুরকে প্রণাম করে বল ঠাকুর যেন তোমাদের বড়দিকে ভাল রাখেন। যাও”।
 

সরলাদেবী তার স্বামীকে বললেন, “হ্যাগো, একটা প্যাকেট তো বেয়াই বেয়ানদের জন্যেও পাঠিয়েছে মন্তি। পুজো তো সামনের সপ্তাহেই। তবে এটা কালচিনি পাঠাবার ব্যবস্থা কি করবে”?
 

রতিকান্তবাবু বললেন, “সতুকে কাল পাঠিয়ে দেব’খন। তাহলেই তো হল। কাল সকালে গিয়ে ও না’হয় কালই ফিরে আসবে। আর থাকতে চাইলে রাতটা না হয় থেকেই আসবে”।


______________________________
ss_sexy
 speechless
[+] 1 user Likes Dddd's post
Like Reply
#46
(Update No. 66) 

বিকেলের দিকের বাকি কাজগুলো সেরে সীমন্তিনী একটু তাড়াতাড়িই অফিস থেকে বেরিয়ে গেল। পাঁচটা নাগাদ ঘরে পৌঁছেই সে কাকুকে ফোন করল। চন্দ্রকান্তবাবু ফোন ধরতেই সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “কাকু তুমি কি খুব ব্যস্ত আছ নাকি গো”?

চন্দ্রকান্তবাবু জবাব দিলেন, “হ্যারে মা, এ’সময় তো রোজই দোকানে একটু বেশী ভিড় হয়। আর বড়বৌমা আমাদের সংসারে আসবার পর তো মা লক্ষ্মীর কৃপা আরও খানিকটা বেড়েই গেছে। তা তুই কি বলবি, বল না”?
 

সীমন্তিনী খুব শান্ত গলায় বলল, “এক কাজ করো কাকু। তোমার কর্মচারীটাকে খানিকক্ষণ ভিড় সামলাতে দিয়ে তুমি ভেতরের ঘরে চলে যাও। খুব সিরিয়াস কথা কিছু বলার আছে আমার”।

চন্দ্রকান্তবাবু একটু থমকে থেকে ব্যস্ত গলায় বললেন, “আচ্ছা মা। তুই একটু ফোনটা ধর” বলে প্রায় মিনিট খানেক চুপ থাকবার পর বললেন, “হ্যা মন্তি বল তো কী ব্যাপার? বড়বৌমা রতু ওরা সবাই ঠিক আছে তো? তুই ভাল আছিস তো”?

সীমন্তিনী বলল, “কাকু কাকু, তুমি এত উতলা হয়ো না। আমি ঠিক আছি। আর দাদাভাই আর রচুও ঠিক আছে। কিন্তু ওদের ব্যাপারেই কিছু কথা বলার আছে আমার। তুমি শান্ত হয়ে আগে আমার কথাটুকু শুনে নাও”।

চন্দ্রকান্তবাবু আবার বললেন, “কি হয়েছে রে বল মা আমায়। কাল থেকে রতুর ফোনে কম করেও কুড়ি পঁচিশ বার ফোন করেছি। কিন্তু প্রত্যেকবার শুনেছি ওর ফোন সুইচ অফ। আজ ঘন্টা খানেক আগেও তো একবার ফোন করলুম। কিন্তু একই অবস্থা”।

সীমন্তিনী বলল, “কাকু একটা বিপদ হয়ে গেছে গো। কিন্তু তুমি উতলা হয়ো না প্লীজ। ঠাণ্ডা মাথায় আমার কথাগুলো শোনো। আচ্ছা সবার আগে বল তো, রবিশঙ্করকে তোমরা কতদিন ধরে চিনতে”?
 

চন্দ্রকান্তবাবু প্রায় আঁতকে উঠে বললেন, “তুই রবিশঙ্করের কথা জিজ্ঞেস করছিস কেন রে মা? ও কি রতুকে কোনভাবে বিপদে ফেলেছে”?
 

সীমন্তিনী আবার আগের চেয়েও বেশী শান্ত গলায় বলল, “কাকু, মাথা গরম কোরো না তুমি। ঘটণাটা ঘটেছে গত পরশু দিন। দাদাভাই সেদিন বুঝতেও পারেনি। কাল গোটা ব্যাপারটা বুঝেই সে একেবারে ভেঙে পড়েছে। তবে আমাদের রচু খুব বুদ্ধিমতী মেয়ে। দাদাভাইকে ও খুব ভালভাবে সামলাচ্ছে। রচুও কাল অব্দি কিছুই জানত না। দাদাভাই ওকে কিছু বলেনি কাল রাত অব্দি। আজ দুপুরের আগে আগে রচু গোটা ব্যাপারটা দাদাভাইয়ের মুখ থেকে শুনেছে। আমার সাথে দুপুরে ওদের কথা হয়েছে। আমি তখনই সব কিছু জানলুম। রচু তো তখনই তোমাকে আর বড়মাকে ফোন করে সবটা জানাতে চাইছিল। আমিই বারণ করেছি। কারন খবরটা শুনলেই তোমরা সকলে মাথায় হাত দিয়ে হাঁ হুতোশ করতে বসবে। তাই আমিই ওদের দু’জনকে ওদের ফোন বন্ধ রাখতে বলেছি। আর সবার আগে তোমাকে ঘটণাটা জানাচ্ছি”।

চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “মন্তি মা আমার। তুই আর আমাকে টেনশনে রাখিস নে মা। খুলে বল মা আমায় সব কিছু”।
 

সীমন্তিনী আগাগোড়া ঘটণার বিবরণ শুনিয়ে থামতেই চন্দ্রকান্তবাবু বলে উঠলেন, “হায় হায়। রবিশঙ্কর আমাদের এভাবে ঠকাল? দশ বছর ধরে ওর সাথে আমি ব্যবসা করছি। কিন্তু ও যে ভেতরে ভেতরে এত শয়তান হতে পারে, সেটা তো আমি ঘূণাক্ষরেও ভাবতে পারিনি রে মা? ইশ কী সর্বনাশটাই না করল আমাদের। ব্যাটা আবার আসুক। ওকে বাজারের লোক দিয়ে গণধোলাই দিয়ে সোজা পুলিশের হাতে তুলে দেব আমি, দেখিস তুই”।
 

সীমন্তিনী বলল, “সে সুযোগ তুমি পাবে বলে ভাবছ কাকু? ও তো আগে থেকে প্ল্যান করেই তোমাদের সবাইকে এভাবে ঠকাল। সে আর রাজগঞ্জে আসবে বলে ভেবো না। ও পরশুদিন দাদাভাইয়ের কাছ থেকে টাকাটা নিয়ে নেবার ঘন্টা খানেক বাদেই নিজের বৌ বাচ্চা আর ঘরের জিনিসপত্র নিয়ে ওর বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে। দাদাভাই কালই ওর বাড়ি গিয়ে এ খবর পেয়েছে”।

চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “তাই নাকি? ও ওর বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে? তা পুলিশের লোকেরা কি বলছে? ওদের ধরতে পারবে বলে মনে হয় তোর”?
 

সীমন্তিনী জবাব দিল, “দেখ কাকু, কলকাতা তো আর একটুখানি জায়গা নয়। আর দাদাভাই তো তোমার রবিশঙ্করের চেহারার বর্ণনা আর ওর বাড়ির ঠিকানা, ফোন নাম্বার ছাড়া আর কিছু পুলিশকে দিতে পারেনি। অন্য যে লোকটা ভুয়ো পরিচয় দিয়ে রবিশঙ্করের সাথে কমপ্লেক্সের মালিক সেজে এসেছিল, দাদাভাই তো তার আসল নাম ঠিকানা কিছুই জানে না। সে তো ওই বিল্ডিঙের মালিকই নয়। আর রবিশঙ্কর তো টাকা নিয়ে চলে যাবার সাথে সাথেই নিজের মোবাইলের সিমকার্ড হয়ত খুলে ফেলেছে। আর সে এখনও কলকাতায় আছে, না বাইরে কোথাও চলে গেছে কে জানে। একটা ছবিও যদি থাকত কারো সাথে তবুও সেটা পুলিশকে দিতে পারলে তারা কিছু একটা করতে পেত। কিন্তু এমন অবস্থায় ওদের খুঁজে বের করা তো প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। তবু আমি এখান থেকেই ব্যাপারটা নিয়ে ওখানকার পুলিশের সাথে কথা বলব। তবে কতটুকু কি হয় না হয় তা তোমরা পরে সবই জানতে পারবে। আপাততঃ তুমি জেঠু, বাবা আর মায়েদের সামলিও। নইলে সবাই মিলে কান্নাকাটি জুড়ে দেবে। আর দাদাভাই আর রচুর সাথে আমি সব সময় যোগাযোগ রাখছি। ওরা এরপর কি করবে না করবে এ’সব নিয়ে আমি রাতে ওদের সাথে কথা বলব”।

চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “রতু আর বড়বৌমা বুদ্ধি করে এখন অব্দি বাড়িতে খবরটা না দিয়ে ভালই করেছে। নইলে বাড়িতে এতক্ষন হুলুস্থুল পড়ে যেত। সবাইকে শান্ত করতে আমাদের তিন ভাইকে নাকানি চোবানি খেতে হত। তুই ভাবিসনে মা। আমি এদিকে সামলে নেব। কিন্তু রতুটার এখন কী হবে বল তো? টাকাটা হাতে থাকলেও না হয়ে কয়েকদিনের মধ্যে আরেকটা জায়গা খুঁজে নিতে পারত। কিন্তু হাতে আর যেটুকু আছে, তা দিয়ে তো আর ও সে কাজটা শুরু করতে পারবে না। ও কি তাহলে আবার বাড়ি ফিরে আসবে? কিন্তু এখানে ফিরে এসেও কলেজের চাকরিটা তো আর পাচ্ছে না ও। তাহলে কি করবে”?

সীমন্তিনী বলল, “সেসব ব্যাপার পরে আলোচনা করে দেখা যাবে। কিন্তু আপাততঃ দাদাভাইকে সুস্থ আর স্বাভাবিক রাখাটাই বেশী দরকারি। ও তো পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। তবে রচুর ওপর আমার ভরসা আছে। ও ঠিক দাদাভাইকে সামলে নেবে। কাকু তুমি এখনই বাড়ি চলে যাও। আর সন্ধ্যে ছ’টার আগেই খবরটা জানিয়ে দিয়ে আমাকে জানিয়ে দিও। তারপর আমি দাদাভাই আর রচুকে ফোন খুলতে বলব। তারপর তোমরা ওদের সাথেও কথা বলতে পারবে। তবে কাকু, বাড়ির সবাইকে একটু বুঝিয়ে দিও, তারা যেন দাদাভাইকে কোন গালমন্দ না করেন। তোমরা তো জানোই কাকু, ও কত সহজ সরল। দাদাভাই নিজেই এমনিতেই খুব অনুতপ্ত আর লজ্জিত। বাড়ির লোকেরা ওর কাজে এখন ওকে আবার ছিঃ ছিঃ করলে রচুর খুব অসুবিধে হবে ওকে সামলাতে। তাই বাড়ির সবাইকে বলে দিও, তারা যেন দাদাভাইয়ের সাথে বেশী কথা না বলেন। রচুর সাথেই যেন বেশী কথা বলেন”।

চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “ঠিক আছেরে মা। আমি এখনই বেরোচ্ছি। দাদাদের নিয়ে বাড়ি গিয়ে এখনই সব কথা খুলে বলছি”।
 

*************

ফোন কেটে সীমন্তিনী দেখল বেলা পাঁচটা পঁয়ত্রিশ। রতীশ আর রচনার ফোন এখনও বন্ধই থাকবার কথা। সে মনে মনে ভাবল, এখন সবার আগে তাকে দাদাভাই আর রচুর সাথে কথা বলতে হবে। ফোনটা রেখে উঠতেই তার ঘরের কাজের ঝি লক্ষ্মী চা জলখাবার নিয়ে ঘরে ঢুকে বলল, “ওমা দিদিমণি, তুমি তো এখনও পোশাকও ছাড় নি! আমি যে তোমার খাবার নিয়ে এলুম গো”।
 

সীমন্তিনী লাগোয়া বাথরুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল, “তুমি ওগুলো টেবিলের ওপর রাখ লক্ষ্মীদি। আমি হাত মুখটা ধুয়ে আসছি”।
 

লক্ষ্মী সেন্টার টেবিলে খাবার গুলো রাখতে রাখতে জিজ্ঞেস করল, “তুমি কি এখন আবার বেরোবে নাকি দিদিমণি”?

সীমন্তিনী হাত মুখ ধুয়ে টাওয়েল হাতে নিয়ে বলল, “নাগো লক্ষ্মীদি। এখন আর বেরোবার কথা নেই। তবে কিছু জরুরী কথা ছিল বলেই ফোনে কথা বলছিলাম। তাই ড্রেস খোলার সময় পাইনি। খাবারটা খেয়ে নিয়ে তারপর চেঞ্জ করব। দাও দেখি। খুব ক্ষিদে পেয়েছে গো, সত্যি”।
 

নুডলস খেয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিয়েই পাশের রুমে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করতে না করতেই ল্যাণ্ডলাইন ফোনটা বেজে উঠল। তাড়াহুড়ো করে পোশাক পাল্টাতে পাল্টাতে সে গলা তুলে বলল, “লক্ষ্মীদি, ফোনটা ধর তো আমি আসছি”।

ড্রেস চেঞ্জ করে আবার বেডরুমে ঢুকতেই লক্ষ্মী বলল, “বৌদিমণি ফোন করেছে গো দিদিমণি। এই ধর”।

সীমন্তিনী চায়ের কাপটা হাতে নিয়েই ফোনের রিসিভার কানে লাগিয়ে জিজ্ঞেস করল, “হ্যা রচু বল। বাড়ি থেকে কেউ ফোন করেছিল”?
 

রচনা জবাব দিল, “না দিদিভাই আমাদের ফোন তো তুমিই সুইচড অফ করে রাখতে বলেছিলে। এখন অন করে প্রথম তোমাকেই ফোন করছি। কিন্তু আগে বল তো, তুমি কখন বাড়ি ফিরেছ? আর ফিরে এসে কিছু খেয়েছ তো”?

সীমন্তিনী বলল, “হ্যারে খেয়েছি। পাঁচটার আগেই বাড়ি এসেছি আজ। তারপর কাকুর সাথে সবকিছু নিয়ে আলাপ করে নুডলস খেয়েছি। এখন চা খাচ্ছি”।

রচনা জিজ্ঞেস করল, “ছোটকাকু কি রাতে বাড়ি ফিরে সবাইকে বলবেন খবরটা”?

সীমন্তিনী বলল, “নারে, কাকু আমার সাথে কথা বলেই বাড়ি যাবেন বলেছিলেন। এতক্ষণে হয়ত বাড়ির সবাই ঘটণাটা জেনে গেছে। দাদাভাইয়ের ফোনটা অন করতে বলে দে। একটু বাদেই বাড়ি থেকে তোদের কাছে ফোন যাবে দেখিস। তবে তোরা দুপুরে খাওয়া দাওয়া করেছিস তো? আর দাদাভাই কি করছে? দুপুরে ঘুমিয়েছিল একটু”?

রচনা জবাব দিল, “হ্যা দিদিভাই, খেয়েছি। আর কাল রাতে তো কেউই ঘুমোতে পারিনি। তাই তোমার দাদাভাইকে জোর করেই শুইয়ে দিয়ে আমিও শুয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। মোবাইলে এলার্ম দিয়ে রেখেছিলুম। এলার্মের শব্দেই এখন ঘুম ভেঙেছে আমাদের। তা দিদিভাই, ছোটকাকু শুনে কী বললেন গো? তিনি কি তোমার দাদাভাইয়ের ওপর খুব রেগে গেছেন”?

সীমন্তিনী বলল, “আরে নারে পাগলী মেয়ে। রাগবেন কেন? একদম রাগেননি কাকু। বরং এত বছর ধরে ব্যবসা করলেও রবিশঙ্করের স্বরূপটাকে তিনি চিনতে পারেননি বলে দুঃখই করছিলেন। তুই ভাবিস না, কেউ দাদাভাইকে গালমন্দ করবে না দেখিস”।

রচনা বলল, “আচ্ছা দিদিভাই, ছোটকাকুর কাছে রবিশঙ্করের কোন ছবি আছে কি না জিজ্ঞেস করেছিলে”?

সীমন্তিনী বলল, “নারে, সে’কথাটা তখন জিজ্ঞেস করিনি। তবে রাতেই আবার তার সাথে কথা হবে আমার। এখন তো খবরটা শুনে সকলেরই মাথা গরম হয়ে যাবে। মাথাগুলো একটু ঠাণ্ডা হোক তাদের। তারপর সে’সব কথা বলব। আচ্ছা দাদাভাই কেমন আছে রে? একটু ধাতস্ত হয়েছে তো”?

রচনা বলল, “অনেকটাই সামলে নিতে পেরেছে সে। আর আমিও সর্বক্ষণ তার সাথে সাথেই আছি। ঘন্টা দুয়েক ঘুমিয়ে নিয়েছে বলে চোখ মুখের চেহারা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে এখন। কিন্তু কথাগুলো যে এখনও তার মনে বারবার ঘুরে ফিরে আসছে, সেটাও বুঝতে পাচ্ছি”।
 

সীমন্তিনী বলল, “সে তো হবেই। এত বড় একটা ধাক্কা ভুলতে কিছুটা সময় তো লাগবেই। আচ্ছা শোন রচু। আমি ফোনটা রাখছি। একটু ঘরের কাজ সেরে নিই। তোরাও বাড়ির লোকদের সাথে কথা বলে নে। ঘন্টা খানেক বাদে আমি তোকে আবার ফোন করছি। কেমন”?

রচনা বলল, “ঠিক আছে দিদিভাই। রাখছি তাহলে”।
 

পরের একঘন্টায় রতীশ আর রচনার সাথে বাড়ির প্রায় সকলেই দফায় দফায় কথা বলল। সকলের কথার মূল বিষয় একটাই, রবিশঙ্কর আর রতীশের দু’লাখ টাকা। সকলের সাথে কথা বলার পর রচনা ছোটকাকা চন্দ্রকান্তবাবুকে বলল, “ছোটকাকু, সকলের সাথে কথায় কথায় তো অনেক রাত হয়ে গেল। কিন্তু তোমার সাথে আমার আরও কিছু জরুরী কথা ছিল। তোমরা সবাই তো দোকান খোলা রেখে এসেছ। তাই বলছি কি দোকান বন্ধ করে এসে আমাকে একটু ফোন করবে তুমি”?

চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “তুমি কেমন কথা বলছ বড়বৌমা? তোমাদের এমন বিপদের দিনেও কি আমার দোকান সামলানোটা বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে? আমি আজ আর দোকানে যাচ্ছি না। দাদারা বেরোবে এখন। আমি তাদের কাছে খবর পাঠিয়ে দিচ্ছি। কর্মচারীরাই দোকান বন্ধ করে দেবে’খন। তুমি যা বলতে চাও বল”।
 

রচনা বলল, “ছোটকাকু, আসলে এখানে থানায় আমরা ঘটণাটা জানিয়েছি বটে। কিন্তু রবিশঙ্করের বাড়ির ঠিকানা, ফোন নাম্বার, আর তার চেহারার বিবরণ ছাড়া আমরা তো পুলিশকে আর কিছু বলতে পারিনি। কিন্তু পুলিশ অফিসার রবিশঙ্করের একটা ছবি চাইছিলেন। কিন্তু আমাদের কাছে তো তেমন কিছুই নেই। তবে লোকটা তো তোমার দোকানে প্রায়ই যেত। তোমার কি মনে হয়, রবিশঙ্করের কোন ছবি তোমাদের কারুর কাছে আছে”?
 

চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “আমার তো তেমন কিছু মনে পড়ছে না বড়বৌমা। রবিশঙ্কর যখন রাজগঞ্জে থাকত তখন সে প্রায় রোজই সন্ধ্যের দিকে আমার দোকানে এসে আড্ডা দিত, সে’কথা ঠিক। কিন্তু কেউ ওর ছবি কখনও তুলেছে বলে মনে পড়ছেনা গো”।
 

রচনা কিছু বলবার আগেই আরেকজনের হাল্কা একটা আওয়াজ শোনা গেল, “না বাবা আছে। আমার কাছে আছে”।
 

রচনা কথাটা শুনে অবাক হল। গলাটা তো মনে হল চন্দ্রিকার। চন্দ্রিকার কাছে রবিশঙ্করের ফটো কী করে থাকবে, বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করল, “কে কথা বলছে গো ছোটকাকু? চন্দু”?
 

চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “হ্যা বড়বৌমা। চন্দু তো আমার কোলে বসে তোমার কথা শুনছিল। ওর কাছে নাকি রবিশঙ্করের ছবি আছে বলছে। আমাদের ঘরে গেছে আনতে। দেখি সত্যি কিছু আছে নাকি”?

রচনা বলল, “ছোটকাকু, আরেকটা কথা ছিল। রবিশঙ্কর তোমাদের দোকানে যেসব মাল সাল্পাই করত এতদিন ধরে, সেসবের কোন বিল, ভাউচার বা ক্যাশমেমো এসব কিছু আছে”?

চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “হ্যা সে’সব তো আছেই। তবে ওর নিজের নামের কোন বিল ভাউচার নেই। ও যেসব কোম্পানীর মাল আমাদের দিত, সেসব কোম্পানীর কিছু কিছু বিল ক্যাশমেমো আছে আমার কাছে”।

রচনা বলল, “তাহলে ওই সব কাগজে যে সব কোম্পানীর মাল সে সাপ্লাই করত, সে’সব কোম্পানীর নাম ঠিকানা নিশ্চয়ই লেখা থাকবে, তাই না”?

চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “হ্যা সে তো আছেই। কিন্তু ও’গুলো দিয়ে কী হবে গো বড়বৌমা”?

রচনা বলল, “ও’গুলো থেকে পুলিশ তো বুঝতে পারবে যে ব্যবসার কাজে রবিশঙ্কর কলকাতার কোন কোন এলাকায় ঘোরাফেরা করে। একটু উদ্যোগ নিলে তারা হয়ত সে’সব জায়গায় ওর হদিশ পেয়ে যেতে পারে”।
 

রচনার কথা শেষ হবার আগেই আবার চন্দুর গলা শোনা গেল, “বাবা এই দেখ, এ লোকটাই রবিশঙ্কর না”?

চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “হ্যা হ্যা এটা তো রবিশঙ্করই। আরে বড়বৌমা শুনছ? রবিশঙ্করের ছবি একটা সত্যি আছে চন্দুর কাছে। ছবিটা আসলে চন্দুরই। কিন্তু পেছনে একটা চেয়ারে রবিশঙ্করকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে”।

রচনা উল্লসিত হয়ে বলল, “তাহলে তো খুব ভাল কথা ছোটকাকু। তাহলে শোন না। কাল তুমি এ ছবিটার একটা কপি বানিয়ে নিয়ে আর আলাদা আলাদা দোকান বা কোম্পানীর ওই সব বিল ক্যাশমেমোগুলো কয়েকটা ফটোকপি করে কুরিয়ার করে আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিতে পারবে না”?
 

চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “পারব না কেন মাগো? নিশ্চয়ই পারব। আমি কালই সব কিছু রেডি করে সম্ভব হলে কালই কুরিয়ারে দিয়ে দেব”।
 

রচনা বলল, “তাহলে সেটাই কোর। ও’সব পুলিশের হাতে দিলে তাদের একটু সুবিধে হতে পারে। আচ্ছা ছোটকাকু, অনেকক্ষণ ধরে মোবাইলে কথা বলতে বলতে কান গরম হয়ে গেছে গো। তাই ছাড়ছি এখন। তুমি জিনিসগুলো পাঠিও”।
 

চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “ঠিক আছে বৌমা, তুমি একদম ভেব না। আমি কালই পাঠাবার চেষ্টা করছি। আর তোমরা সাবধানে থেক মা। রতুকে বোল, ও যেন মন খারাপ না করে। আর যে কোন সময় যে কোন প্রয়োজনে আমাকে ফোন কোর। আর রতু এরপর কি করতে চায় সেটা তোমরা দু’জনে মিলে আগে ভাল করে পরামর্শ করে নাও। তারপর আমাদের জানিও। একটা কথা মনে রেখো তোমরা দুজনেই বৌমা, বাড়ি থেকে দুরে আছো বলে তোমরা নিজেদের একদম একা বলে ভেবো না। আমরা সব সময় তোমাদের পাশে আছি মনে রাখবে। আচ্ছা রাখছি তাহলে”।
 

ফোন রেখে রচনা পাশে বসে থাকা স্বামীর মুখের দিকে চেয়ে বলল, “সোনা শুনেছ তো? চন্দুর কাছে ওই রবিশঙ্করের একটা ছবি আছে। ছোটকাকু ওই ছবিটার একটা কপি বানিয়ে আর রবিশঙ্করের দেওয়া কিছু বিল আর ক্যাশমেমো ফটোকপি করে কুরিয়ারে আমাদের ঠিকানায় পাঠিয়ে দেবেন। ও’গুলো আমরা এখানে থানায় জমা দিলে পুলিশ এবার রবিশঙ্করের খোঁজ করতে পারবে”।

রতীশ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, “হ্যা, পুলিশ চাইলে ও’সব পেলে কিছু একটা করতেই পারে। কিন্তু কাজের কাজ কতটুকু কি হবে কে জানে। কিন্তু টাকাগুলো কি আর ফেরত পাব আমরা”?
 

রচনা রতীশের একটা হাত ধরে বলল, “টাকা যে আমরা ফেরত পাব, তার সম্ভাবনা তো সত্যিই খুব কম। কিন্তু সোনা, লোকটার সাজা হওয়া তো উচিৎ” একটু থেমে বলল, “আচ্ছা তুমি চা খাবে তো? চল, তাহলে কিচেনে গিয়ে বসো। দিদিভাই হয়ত এখনই ফোন করবেন আবার। এসো” বলে দু’জনের মোবাইল হাতে নিয়ে রতীশকে সঙ্গে নিয়েই কিচেনের দিকে চলল।
 

সীমন্তিনী রতীশের ফোনে ফোন করল রাত সাড়ে আটটা নাগাদ। বলল, “দাদাভাই, তুই মন খারাপ করিস নে। যেটা হবার ছিল তা তো হয়েই গেছে। কিন্তু এখন কি করবি বলে ভাবছিস, বল তো”?

রতীশ বলল, “সেটাই তো বুঝতে পারছিনা রে মন্তি। যেটা করব ভেবে এখানে এসেছিলুম সেটা তো আর সম্ভব হচ্ছে না। টাকাটা হাতে থাকলে তবু না হয় অন্য কোন কমপ্লেক্স খুঁজে বের করবার চেষ্টা করতে পারতুম। কিন্তু এখন কমপ্লেক্স একটা খুঁজে পেলেও ভাড়া দেবার পয়সা কোথায়? বাবা, কাকাদের কাছে আবার কোন মুখে আমি টাকা চাইব”?

সীমন্তিনী বলল, “দাদাভাই, তোকে টাকার জন্য ভাবতে হবেনা রে। আর তুই কি জানিস না? তোর স্বপ্ন তো আমারও স্বপ্ন রে। তুই দেখিস আমরা দু’জন মিলে তোর স্বপ্ন অবশ্যই সাকার করে তুলতে পারব। তুই আমাকে একটু সময় দে। অন্ততঃ মাস ছয়েক। তারপর আমিই তোকে সেটা দিতে পারব। বাড়ির কারো কাছে তোকে চাইতে হবে না। কিন্তু এই ছ’টা মাস তুই কি বেকার বসে থাকবি কলকাতায়”?

ফোনের স্পীকার অন ছিল বলে চা করতে করতে রচনা দু’জনের সব কথাই শুনতে পাচ্ছিল। সে রতীশের কাছে এসে বলল, “দিদিভাই, তুমি আর কত করবে গো? আমার মা বাবার সংসারের সব আর্থিক দায়িত্বই তো তুমি নিজের হাতে তুলে নিয়েছ। ভাইয়ের লেখাপড়ার সমস্ত খরচও তুমিই বহন করছ। এখন আবার তুমি আমাদের ..”

সীমন্তিনী তার কথার মাঝপথে বাঁধা দিয়ে বলল, “তুই তো দেখছি দিনে দিনে খুব স্বার্থপর হয়ে উঠছিস রে রচু। খুব যে আমার আমার করছিস। তোর মা বাবা ভাই কি আমার কেউ না? আর তুই আর তোর বরও কি আমার কেউ নোস? আমি তো শুধু তোদের এই ক’টা লোককে নিয়েই বেঁচে থাকতে চাই রে। তুই আমাকে সেটুকুও করতে দিবি না? সবাইকে তুই শুধু তোর নিজের করে রাখবি? এত স্বার্থপর তুই”?

রচনা অভিমানী গলায় বলল, “আমি কি তা-ই বলেছি নাকি দিদিভাই? তুমি চাকরি পাবার পর থেকেই তো আমার মা বাবা আর ......”

সীমন্তিনী এবার প্রায় ধমক দিয়ে বলল, “এই মেয়ে, তোকে আমার দাদাভাইয়ের সাথে বিয়ে দিয়েছি বলে তুই কি নিজেকে আমার গার্জিয়ান ভাবতে শুরু করেছিস? আর শোন, তোর সাথে আমি এ ব্যাপারে কোন কথা বলতে চাইছি না এখন। তুই সরে যা, নিজের কাজ কর। আমাকে দাদাভাইয়ের সাথে কথা বলতে দে তো। আমি তোর সাথে পরে কথা বলছি”।

রচনা মুখ ভার করে আবার স্টোভের কাছে চলে গেল। এমন সময় রতীশ বলল, “মন্তি শোন না। ওই কমপ্লেক্সটার আসল মালিক বিমল আগরওয়ালা আমাকে একটা কথা বলেছেন। যদিও আমি তার কথার কোন জবাব এখনও দিই নি। অবশ্য রচুকে বলেছি। কিন্তু রচুও বলেছে তোর সাথে আগে পরামর্শ করে নিতে”।
 

সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “আসল বিমল আগরওয়ালা, মানে ওই বিল্ডার না প্রোমোটার? তা সে আবার কী বলেছে”?

______________________________
ss_sexy
 
[+] 2 users Like riank55's post
Like Reply
#47
(Update No. 67)

রতীশ বলল, “হ্যা সে ভদ্রলোকই। তুই কাল রাতে যখন আমাকে ফোন করেছিলিস, তখন আমি তো তার সাথেই কথা বলছিলাম। উনি বলছিলেন, দক্ষিণ কলকাতায় তার এক বন্ধুর একটা যোগা সেন্টার আছে। আর সেখানে নাকি একজন যোগা টিচারের প্রয়োজন। তাই উনি বলছিলেন যে আমি রাজি থাকলে তিনি তার বন্ধুর সাথে কথা বলে আমাকে সেখানে টিচার হিসেবে ঢুকিয়ে দিতে পারবেন। মাসে মাসে হয়ত কুড়ি বাইশ হাজারের মত বেতন দেবে। তুই কি বলছিস”?

সীমন্তিনী বলল, “যোগা সেন্টারের কাজ তো তোর পক্ষে ভালই হবে দাদাভাই। একটা ইনস্টিটিউট চালাবার অভিজ্ঞতাও অর্জন করতে পারবি। কিন্তু দেখ দাদাভাই, একটা কথা মনে রাখিস। কলকাতায় অনেক জিম, ম্যাসেজ পার্লার, বিউটি পার্লার আর এমন ধরণের কিছু কিছু যোগা ট্রেনিং সেন্টারেও লোকচক্ষুর আড়ালে অনেক রকম দুষ্কর্ম হয়ে থাকে। আমি চাই না তুই ও’সবের সাথে জড়িয়ে পড়। তবে এ লাইনে থাকলেই তোর ভবিষ্যতের স্বপ্নের যোগা সেন্টার খোলার ব্যাপারে তুই অনেক কিছুই জানতে বুঝতে পারবি। কিন্তু দাদাভাই, আমার ভয় শুধু একটাই রে। তুই যে খুব সহজ সরল। তুই আবার কোন রকম ফাঁদে পড়ে যাবি না তো”?

রতীশ বলল, “ভদ্রলোকের সাথে তো কাল আমার দু’বার কথা হয়েছে রে মন্তি। তার সাথে কথা বলে কিন্তু আমার তেমন হয়নি। তবে ইনস্টিটিউটটা তো আর তার নয়। তার আরেক বন্ধুর। সে লোকটা কেমন হবে তা তো তার সাথে কথা না বললে বুঝতে পারব না। আর তুই যে’সব দুষ্কর্মের কথা বলছিস সে’সব তো আর বাইরে থেকে বোঝা যাবে না। যদি সেখানে কাজটা পেয়েই যাই, তাহলে কিছুদিন সেখানে যাতায়াত করলে হয়ত এ’সব জানতে পারব। একটু সতর্ক থাকতে হবে এই যা। তেমন বুঝলে না হয় তখন ছেড়ে দেব”।
 

সীমন্তিনী বলল, “বাইরে থেকে যে বুঝতে পারবি না সে কথা তো বলাই বাহুল্য দাদাভাই। কিন্তু তোকে কিন্তু চোখ কান খোলা রেখে চলতে হবে সব সময়। তবে আমার মনে হয় আগেই বিমল আগরওয়ালার কথায় রাজি না হয়ে তার বন্ধুর ইনস্টিটিঊটে গিয়ে একবার দেখে শুনে আয়। তারপর না হয় ভেবে চিন্তে ডিসিশন নেওয়া যাবে”।

রচনা কাজ করতে করতেই তাদের কথা শুনে যাচ্ছিল। এবার সীমন্তিনীর কথা শেষ হতে সে ফোনের কাছে এসে বলল, “কিন্তু দিদিভাই, তুমি যতই বল না কেন, এই বিমল আগরওয়ালা লোকটাকেও কেন জানিনা আমার ঠিক সুবিধের বলে মনে হচ্ছে না গো। আচ্ছা তুমিই বল, যে কমপ্লেক্সের চাবি একমাত্র তার লকারেই থাকে সে চাবি অন্য লোকের হাতে গেলে সে জানতে পারবে না? এটা কি কোন কথা হল? কিন্তু রবিশঙ্কর যে লোকটাকে কমপ্লেক্সের মালিক বলেছিল, সে তো চাবি দিয়ে তালা খুলেই তোমার দাদাভাইকে নিয়ে ভেতরে ঢুকেছিল। বিমল আগরওয়ালার অজান্তে তার হাতে চাবিটা গেল কী করে? আমার তো মনে হয় বিমল আগরওয়ালার সাথে রবিশঙ্কর আর ওই লোকটার নিশ্চয়ই জানাশোনা আছে। কিন্তু তোমার দাদাভাইকে তো সে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে যে রবিশঙ্কর নামের কাউকেই সে চেনেনা। আর চাবিও নাকি অন্য কারুর হাতে যায়নি। তাহলে ব্যাপারটা কী দাঁড়ায় ভেবেছ”?
 

সীমন্তিনী রচনার কথা শুনে বলল, “এ যুক্তিটা আমিও মানছি রে রচু। কিন্তু তোর এ ধারণা যে পুরোপুরি সত্যি সেটাও জোর দিয়ে বলা যায় না। কিছু কিছু এক্সপার্ট কারিগর আছে, যারা যে কোন তালার নকল চাবি বানিয়ে দিতে পারে। তেমন কাউকে দিয়েই রবিশঙ্কর বা ওই লোকটা হয়ত একটা নকল চাবি বানিয়ে নিয়েছিল। এমনটাও তো হতেই পারে। তাই তোর কথাই যে ঠিক হবে তার কোনও গ্যারান্টি নেই। তবে, রচু সোনা, তোর বুদ্ধির তারিফ না করে পারছিনা রে। কাকুকে তুই যা কিছু বলেছিস, সে’সব আমি শুনেছি। তুই একদম ঠিক ভেবেছিস। রবিশঙ্করের ছবি, আর ওই ক্যাশমেমো গুলো হাতে পেলে পুলিশের খুব সুবিধে হবে রবিশঙ্করকে খুঁজতে। তোর মাথায় কথাগুলো এল কী করে রে”?
 

রচনা একটু লাজুকভাবে বলল, “আমি তো সামান্য উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা একটা মেয়ে দিদিভাই। আমি কি আর তোমাদের মত ভাবতে পারি? কিন্তু মা আমার ছোটবেলা থেকেই শিখিয়েছেন যে বিপদ আপদের সময় শুধু হা হুতোশ করলে কোন লাভ হয় না। মাথা ঠাণ্ডা রেখে ভেবেচিন্তে কাজ করতে হয়। আর দেখো, পুলিশ তো আর ভগবান নয় যে তুড়ি মেরেই অপরাধীকে ধরে ফেলবে। এত বড় একটা শহরে শুধু নাম ধরে খোঁজ করলেই কি রবিশঙ্কর ধরা পড়বে? এ শহরে হয়ত হাজারটা রবিশঙ্কর প্রসাদ খুঁজে পাওয়া যাবে। কিন্তু বিনা প্রমাণে তাদের কাউকে কি পুলিশ ধরতে পারবে? তাই ছোটকাকুকে ছবির কথা জিজ্ঞেস করেছিলুম। আর আমার মনে হয়েছিল যে’সব কোম্পানীর মাল রবিশঙ্কর সাপ্লাই দেয় সে’সব জায়গায় তার যাতায়াত থাকবেই। তাই পুলিশ ওই জায়গাগুলোতে নজর রাখলে হয়ত রবিশঙ্করকে পেয়েও যেতে পারে”।
 

সীমন্তিনী বলল, “তুই একদম ঠিক বলেছিস রচু। তুই যদি একজন গোয়েন্দা বা পুলিশ অফিসার হতিস তাহলে খুব নামডাক হত তোর। আচ্ছা শোন রচু, আমিও কাকুকে বলেছি, তিনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জিনিসগুলো পাঠিয়ে দেবেন। আর দাদাভাই, জিনিসগুলো পেলে বেশী দেরী না করে ওগুলো থানায় নিয়ে ইনভেস্টিগেটিং অফিসারের হাতে দিয়ে দিবি। ও হ্যা, আরেকটা কথা শোন দাদাভাই। তোর বোন যে একজন পুলিশ অফিসার এ’কথাটা থানায় না বলে ভালই করেছিস। আমি অন্যভাবে কলকাতার পুলিশের সাথে যোগাযোগ রাখছি। তাই আমার রেফারেন্স আর থানায় দিস না। আর বিমল আগরওয়ালার কাছ থেকে তার বন্ধুর যোগা ইনস্টিটিউটের ঠিকানাটা জেনে নিয়ে একবার গিয়ে দেখে আয় সব কিছু। তবে আগেই কাজ করবি বলে কথা দিস না, বুঝেছিস। আর শোন দাদাভাই, ভেঙে পড়িস না। যা হবার ছিল তা হয়ে গেছে। এখন সে’সব ভুলে ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হবে আমাদের”।
 

রতীশ বলল, “সেটা ছাড়া আর করবার কি আছে বল। রবিশঙ্কর ধরা পড়লেও আমি যে আমার টাকা ফিরে পাব, এ আশা তো প্রায় নেই বললেই চলে। এখন একবার ওই ইনস্টিটিউটে গিয়ে দেখি। তারপর তোকে জানাব সব”।

সীমন্তিনী বলল, “হ্যা তাই কর। আর রচুর সাথে পরামর্শ না করে কিছু করবি না কিন্তু। ওর কাছে কোনও কথা গোপন করবি না। কোথায় যাচ্ছিস, কার সাথে তোর কি কথা হচ্ছে, সবকিছু রচুকে জানাবি। আচ্ছা রাখছি এখন। কাল আবার কথা হবে, গুডনাইট”।
 

রতীশ আর রচনাও গুডনাইট জানিয়ে কথা শেষ করল।


*************

পরদিন সকালে চা খেতে খেতে রচনা রতীশকে জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা সোনা, তুমি রবিশঙ্করের খোঁজে যখন তার বাড়ি গিয়েছিলে, তখন ওই বাড়িটা সম্বন্ধে কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করেছিলে কি”?
 

রতীশ জবাব দিল, “আমার কি আর তখন মাথার ঠিক ছিল সোনা? ওর বাড়ির উল্টোদিকের দোকানের লোকটা শুধু আমাকে ও’টুকুই বলেছে। আমারও তখন আর অন্য কিছু জিজ্ঞেস করবার কথা মাথায় আসে নি”।
 

রচনা বলল, “আমাকে একটু নিয়ে যাবে সেখানে? আরেকটু গিয়ে দেখিই না যদি কোন হদিশ পাওয়া যায় লোকটার”।
 

রতীশ বলল, “সে তুমি যদি যেতে চাও, নিয়ে আমি যেতেই পারি। কিন্তু গিয়েও সত্যি কি আর কোন লাভ হবে”?
 

রচনা বলল, “টাকাটা যে ফিরে পাব, সে আশা তো প্রায় নেইই সোনা। কিন্তু বদমাশটাকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিতে পারলে, মনের জ্বালা খানিকটা কমতো। আর আমার পক্ষে যদি সম্ভব হত, তাহলে ওকে এমন শাস্তি দিতুম যে আর কখনও কাউকে এভাবে ঠকাতে চেষ্টা করত না। কিন্তু আইন অনুসারেই ওর সাজা তো হওয়াই উচিৎ”।
 

রতীশ বলল, “লোকটাকে যদি আরেকবার চোখের সামনে পেতুম, তাহলে আমি শুধু ওকে জিজ্ঞেস করতুম যে আমরা ওর কী ক্ষতি করেছিলুম যে ও এভাবে আমাদের সর্বনাশ করল”।

রচনা বলল, “তাহলে চল না। তুমি তো আর অন্য কোথাও বেরোচ্ছ না আজ। চল না দুপুরের আগেই ঘুরে আসা যাক। সকালের খাবার খেয়েই বেরিয়ে পড়ি। একটু ঘুরে এলে, আর কিছু হোক বা না হোক, মনের ভেতরের একঘেয়ে চিন্তাগুলো থেকে তো একটু রেহাই পাব। ফিরে এসে দুপুরের রান্না করব”।

রতীশ বলল “বেশ চল। কিন্তু এ’সময়ে তোমাকে নিয়ে সিটি বাসে চড়া কিন্তু সম্ভব হবে না। একটা অটো টটো ভাড়া নিতে হবে। অফিস টাইমে সিটি বাসের ভিড়ে তোমাকে নিয়ে ওঠা অসম্ভব”।

বেলা সাড়ে দশটা নাগাদ রতীশ আর রচনা রবিশঙ্করের বাড়ির সামনে এসে পৌঁছল। রতীশ বাড়িটার দিকে হাতের ঈশারা করে বাড়িটা দেখিয়ে বলল, “ওই যে ওই বাড়িটায় ছিল ওরা। কিন্তু আজ তো দরজায় অন্য একটা তালা দেখতে পাচ্ছি। সেদিন অন্য একটা তালা লাগানো ছিল”।
 

আশেপাশে তাকিয়ে দেখতে দেখতে রচনা জিজ্ঞেস করল, “সেদিন তুমি কোন দোকানের লোকের সাথে কথা বলেছিলে”?
 

রাস্তার উল্টোদিকের ওষুধের দোকানটার দিকে ঈশারা করে রতীশ জবাব দিল, “ওই যে ওষুধের দোকানটা দেখতে পাচ্ছ, সেখানে জিজ্ঞেস করেছিলুম”।

রচনা একবার ওষুধের দোকানটার দিকে দেখে আশে পাশের অন্যান্য দোকানগুলোকে দেখতে দেখতে আস্তে আস্তে এগোতে লাগল। রবিশঙ্করের বাড়িটা পার হয়ে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে রাস্তার ডানদিকে একটা লণ্ড্রীর সামনে গিয়ে দাঁড়াল। একজন বেঁটে মত বছর চল্লিশের গাট্টাগোট্টা চেহারার লোক লণ্ড্রীর ভেতর ইস্ত্রি করছে কিছু একটা।
 

রতীশকে সাথে নিয়ে রচনা সেখানে গিয়ে বলল, “দাদা শুনুন, এখানে রবিশঙ্কর বলে একজন থাকত ওই বাড়িটায়। আপনি কি তাদের সম্বন্ধে কিছু জানেন? মানে তারা এখান থেকে কোথায় গেছে”?

লণ্ড্রীর লোকটা মাথা উঠিয়ে রতীশ আর রচনাকে তীক্ষ্ণ চোখে দেখতে দেখতে জিজ্ঞেস করল, “রবিশঙ্কর মানে রবিশঙ্কর প্রসাদের কথা বলছেন কি”?

রচনা মাথা ঝাঁকিয়ে জবাব দিল, “হ্যা হ্যা, তাই। ওরা তো ওই বাড়িটাতেই থাকত তাই না”?
 

লণ্ড্রীর লোকটা জবাব দিল, “হ্যা ম্যাডাম। ওরা ও বাড়িতেই থাকত। কিন্তু তার সম্পর্কে কী জানতে চান বলুন তো”?

রচনা জিজ্ঞেস করল, “তার সাথে আমার দেখা করার কথা ছিল। কিন্তু পরশু দিন আমার হাসব্যাণ্ড এসে জানতে পারলেন যে সে নাকি এ বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। আপনি কি জানেন? ওরা কোথায় গেছে”?

লণ্ড্রীর লোকটা মনে মনে কিছু একটা ভেবে বলল, “ম্যাডাম, তারা কোথায় গেছে সেটা তো আমার জানা নেই। তবে ওই বাড়ির যে আসল মালিক, কামেশ্বর মিশ্র, সে পাশের চায়ের দোকানে বসে আছে। সে হয়ত জানলেও জানতে পারে। আপনারা বরং তার সাথেই কথা বলুন”।
 

রচনা তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রতীশকে সঙ্গে নিয়ে চায়ের দোকানটার সামনে গিয়ে বলল, “সোনা এই দোকানের কাউন্টারে বসা লোকটাকে জিজ্ঞেস করে দেখ তো কামেশ্বর মিশ্র বলে কেউ সেখানে আছে কি না। আর থাকলে তাকে একটু বল যে আমি তার সাথে একটু কথা বলতে চাই, সে একটু বাইরে এসে আমার সাথে কথা বলবে কি না”।
 

কিছুক্ষণ বাদেই রতীশের সাথে একজন বয়স্ক বিহারী লোক রচনার দিকে এগিয়ে এসে বলল, “হ্যা বলুন ম্যাডাম। আমার সাথে আপনার কী কথা আছে”?

রচনা লোকটাকে নমস্কার করে বলল, “দেখুন আপনাকে বিরক্ত করছি বলে দুঃখিত। আমরা বাইরে থেকে এসেছি। রবিশঙ্কর প্রসাদ নামে যে লোকটা আপনাদের বাড়িতে ভাড়া থাকত, তার সাথে একটু কাজ ছিল। কিন্তু এখানে এসে শুনতে পেলুম যে তারা নাকি গত এক তারিখে আপনার বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। তাই জিজ্ঞেস করছিলাম, ওরা কোথায় গেছে সে ব্যাপারে কি আপনাকে কিছু বলেছে”?

কামেশ্বর বলল, “না ম্যাডাম, আমাকে এ ব্যাপারে তারা কেউ কিছু বলেনি। আসলে আমি তো এখানে থাকি না। আমার বাড়ি অন্য এলাকায়। রবিশঙ্করকে আমি মাস দুয়েক আগেই বাড়ি ছেড়ে দেবার নোটিশ দিয়েছিলাম। আগে কিছু না বললেও এক তারিখ দুপুর বেলা আমার বাড়িতে গিয়ে বলল যে ওরা অন্য জায়গায় ঘর ভাড়া নিয়েছে। তাই চলে যাচ্ছে। তবে ঘরের কিছু কিছু জিনিস সাথে করে নিয়ে যেতে পারেনি বলে ঘরে তালা লাগিয়ে গিয়েছিল। আজ সকালে ফোন করে আমাকে জানিয়েছে যে সে আজ সকালেই ঘর খালি করে দেবে। আমি খানিকক্ষণ আগেই এসেছি এখানে। ঘর খোলা ছিল। ঘরে ঢুকে দেখি জিনিসপত্র সব নিয়ে গেছে। তাই আমি একটা তালা কিনে লাগিয়ে দিলাম”।

রচনা বলল, “ও-ও। কিন্তু আমাকে সে এখানে এসে দেখা করবার কথা বলে আগেই ঘর ছেড়ে দিয়ে অন্য জায়গায় চলে গেল! আশ্চর্য তো! তারা বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে জেনেও আমাদের এখানে তার সাথে দেখা করবার কথা বলেছিল কেন তাহলে সোনা”? রচনা রতীশের দিকে চেয়ে কথাটা বলল।

রতীশ তার কথার জবাব দেবার আগেই রচনা আবার কামেশ্বরকে জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা ওরা যে চলে যাবে, সে’কথা কি আগেই আপনাকে বলেছিল”?
 

কামেশ্বর বলল, “না ম্যাডাম, দু’মাস আগে তাকে আমি বাড়ি ছেড়ে দেবার কথা বললেও রবিশঙ্কর আমাকে আগে থেকে কিছু বলেনি। সেদিন হঠাতই আমার বাড়ি গিয়ে ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে বাড়ি ছেড়ে যাবার কথাটা বলেই তারা চলে গেছে”।

রতীশ জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা কামেশ্বরবাবু, আপনাকে কি তার কোন কন্টাক্ট নাম্বার দিয়ে গেছে”?

কামেশ্বর বলল, “না স্যার, তারা আমাকে কোন কন্টাক্ট নাম্বার দেয়নি। আর আমিও তাদের কাছে সেটা চাইনি। আমার বাড়িটা যে তারা ছেড়ে চলে গেছে আমি এতেই খুব খুশী হয়েছি। প্রতিবেশীরা প্রায় রোজই কেউ না কেউ তাদের নামে আমার কাছে নালিশ করত। তাই তো আমি ওদের বাড়ি ছেড়ে দেবার নোটিস দিয়েছিলাম”।
 

রচনা জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা কামেশ্বরবাবু, ওর আসল বাড়ি কোথায়, তার ঠিকানা কি আপনার জানা আছে”?
 

কামেশ্বর বলল, “বছর দুয়েক আগে যখন বাড়ি ভাড়ার এগ্রিমেন্ট করেছিলাম, তখন সে তার পার্মানেন্ট বাড়ির ঠিকানা একটা বলেছিল, যেটা এগ্রিমেন্টে লেখা ছিল। কিন্তু সেটা ঠিক আমার মনে নেই। বিহারের ওর দেশের বাড়ির কোন একটা ঠিকানা ছিল”।

রচনা মনে মনে একটু হতাশ হলেও জিজ্ঞেস করল, “ওই এগ্রিমেন্টটা দেখে সে ঠিকানাটা কি আমাদের জানাতে পারবেন আপনি”?
 

কামেশ্বর একটু হেসে বলল, “কি করে তা সম্ভব ম্যাডাম? আমি তো আগেই বললাম যে আমি এখানে থাকি না। আমার বাড়ি এখান থেকে অনেক দুরে। এগ্রিমেন্টটা না দেখলে তো সেটা বলা সম্ভব নয়। আর এখন তো সেটা অসম্ভব”।

রচনা বলল, “প্লীজ কামেশ্বর বাবু, আমাদের একটু সাহায্য করুন না। দেখুন ওর সাথে দেখা করাটা খুবই দরকার আমাদের। তবে আপনার কথাও আমি বুঝেছি। কিন্তু আপনি বাড়ি যাবার পর ওই এগ্রিমেন্টটা দেখে আমাকে সেটা জানিয়ে দিতে পারবেন না? আমি আমার ফোন নম্বর আপনাকে দিয়ে যাচ্ছি। দয়া করে প্লীজ এটুকু উপকার করুন আমাদের”।
 

কামেশ্বর বলল, “ঠিক আছে, আপনাদের নাম্বারটা বলুন। আমি বিকেলের দিকে কোন সময় আপনাদের ফোন করে জানিয়ে দেব”।

রচনা রতীশের ফোন নম্বরটা বলে দিয়ে আরেকবার অনুরোধ করল, “আপনাকে বিরক্ত করছি বলে খুব খারাপ লাগছে। কিন্তু রবিশঙ্করের সাথে দেখা করাটা খুবই প্রয়োজন। তাই ওর বাড়ির ঠিকানাটা পেলেও সেখানে যোগাযোগ করে দেখতে পারব। আচ্ছা কামেশ্বরবাবু, আমরা তো তাকে ফোনেও পাচ্ছি না। কিন্তু আপনি একটু আগেই বলছিলেন যে রবিশঙ্কর আজ সকালে আপনাকে ফোন করেছিল। সে কোন নাম্বার থেকে ফোন করেছিল, সেটা একটু বলবেন প্লীজ”।

কামেশ্বর মিশ্র পকেট থেকে তার মোবাইলটা বের করে কিছুক্ষণ সেটা নিয়ে খুটখুট করে ফোনটা রচনার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “এই যে ম্যাডাম, এই নাম্বার থেকে ফোনটা এসেছিল, দেখুন”।

রচনা নিজের মোবাইলে নাম্বারটা নোট করে নিয়ে কামেশরবাবুকে বলল, “ধন্যবাদ কামেশ্বরবাবু। আমরা আসছি এখন। তবে একটা অনুরোধ করে যাচ্ছি। রবিশঙ্কর যদি আবার কখনও ফোনে বা অন্য কোনভাবে আপনার সাথে যোগাযোগ করে তাহলে দয়া করে আমাকে একটু জানাবেন”।
 

কামেশ্বরের সাথে কথা শেষ করে রচনাকে নিয়ে ফিরতি পথে এগোতে এগোতে রতীশ বলল, “বুঝেছ সোনা, বদমাশটা সমস্ত আটঘাট বেঁধেই আমাদের সর্বনাশটা করেছে”।

রচনা একটু সতর্কভাবে রতীশকে বাঁধা দিয়ে বলল, “সোনা চুপ কর। এখন আর কিছু বল না। জায়গাটা আমার খুব সুবিধের বলে মনে হচ্ছে না। তাড়াতাড়ি ফেরা যাক। বাড়ি গিয়ে না হয় বাকি কথা ....”

রচনার কথা শেষ না হতেই পেছন থেকে একটা যুবক এসে প্রায় রতীশের গা ঘেঁসে হাঁটতে হাঁটতে বলল, “দাদা, একটা কথা বলার ছিল। যদি কিছু মনে না করেন”।

রচনা আর রতীশ দু’জনেই চমকে উঠল। দু’জনেই ছেলেটার মুখের দিকে তাকাল। রতীশ বলল, “কী ব্যাপারে বলুন তো? আমি তো আপনাকে চিনি না। আপনি কি আমাকে চেনেন”?
 

ছেলেটা বলল, “মাফ করবেন দাদা। আপনি আমায় চেনেন না। তবে আপনার সাথে পরিচয় না থাকলেও আমি আপনার ব্যাপারে কিছু কথা জানি। কিন্তু সে’সব কথা নিয়ে সময় নষ্ট না করে আসল কথাটাই বলি” এই বলে ছেলেটা একটা ফোন নাম্বার বলে জিজ্ঞেস করল, “এটাই তো আপনার ফোন নাম্বার তাই না”?

রতীশ চরম অবাক হয়ে বলল, “হ্যা এটা আমারই। কিন্তু আপনি কি করে.....”

ছেলেটা রতীশের কথার মাঝখানেই বলে উঠল, “দেখুন দাদা। আপনি যেমন আমায় চেনেন না। আমিও তেমনই আপনাকে চিনি না। কিন্তু আপনার ফোন নাম্বারটা আমি জেনে গেছি। এখন এই নাম্বারে ফোন করে আমি যদি আপনাকে কিছু উল্টোপাল্টা কথা বলি, বা আপনাকে কোথাও ডেকে পাঠাঁই এবং বলি যে রবিশঙ্করের ঠিকানা আমি জানি, তাহলে আপনি আমার কথা বিশ্বাস করবেন? আমি যেখানে যেতে বলব, আপনি সেখানে যাবেন”?

রতীশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে হাঁটা থামিয়ে বলল, “না মানে, এসব আপনি কী বলছেন? আমি আপনাকে চিনিনা জানিনা। আপনার কথায় আমি অচেনা জায়গায় যাবই বা কেন? আপনি কি আমার সাথে ঠাট্টা করছেন”?
 

ছেলেটা রতীশের পিঠে হাত দিয়ে তাকে একটু সামনের দিকে ঠেলে দিয়ে বলল, “না না দাদা, থামবেন না এগিয়ে চলুন। আর শুনুন, আমি আপনার সাথে ঠাট্টাও করছিনা, আর অযথা ভয় দেখাবার চেষ্টাও করছি না দাদা। আর রবিশঙ্কর প্রসাদকেও আমি চিনি না। ওটা শুধুই কথার কথা ছিল। কিন্তু ওই কামেশ্বর মিশ্রের সাথে আপনারা যে’সব আলোচনা করলেন, সেগুলো আমিও শুনেছি। একজন হিতৈষী হিসেবেই বলছি। এভাবে যাকে তাকে নিজেদের ফোন নাম্বার দেবেন না। এ এলাকাটা খুব একটা সুবিধের নয়। বৌদিকে সঙ্গে এনে কাজটা একেবারে ঠিক করেন নি। কলকাতায় পা দিয়েই তো এক সর্বনাশ বাঁধিয়ে বসে আছেন। অন্য কোন বিপদ আর না-ই বা ডাকলেন। যে লোকটা আপনাদের সর্বনাশ করে পালিয়ে গেছে, সে কি তার ঠিকানা রেখে যাবে আপনার জন্য? আপনারা হয়তো ভাবছেন যে রবিশঙ্কর আজ সকালে যে নাম্বার থেকে কামেশ্বরকে কল করেছিল, সেই নাম্বারে আপনারা ওকে পেয়ে যাবেন। কিন্তু তা নয়। আমি নিশ্চিত জানি ওটা কোন পিসিও বা অন্য কোনও লোকের নাম্বার হবে। আর শুনুন, থানায় তো ডাইরী করেছেনই। তাহলে এবার যা করবার তা পুলিশকেই করতে দিন না। কেন অচেনা অজানা জায়গায় ঘুরে নিজেদের আবার নতুন করে বিপদে ফেলতে চাইছেন? বাড়ি থেকে যেসব ডকুমেন্ট পাবেন বলে অপেক্ষা করছেন, সেসব এলে সেগুলো পুলিশের হাতে তুলে দিন। নিজেরা গোয়েন্দাগিরি করে নিজেদের বিপদ আর বাড়াবেন না দয়া করে। আর এক মূহুর্তও দেরী না করে এখান থেকে চলে যান। এই অটোটাতে উঠে পড়ুন প্লীজ” বলেই হাত বাড়িয়ে একটা চলতি অটো থামিয়ে দিয়ে ছেলেটা তাদের দু’জনকে ঈশারা করল।
 

রচনা আর রতীশ ছেলেটার কথা শুনে বিস্ময়ে যেন বোবা হয়ে গেল। রচনা আর কোন কথা না বলে রতীশের হাত ধরে অটোয় উঠতে উঠতে বলল, “সোনা চল”।
 

অটো ড্রাইভারটা জিজ্ঞেস করল, “কোথায় যাবেন দাদা”?
 

রতীশ নিজের গন্তব্যের ঠিকানা বলে অটোর বাইরের দিকে তাকাল। কিন্তু ছেলেটাকে কোথাও দেখতে পেল না। রতীশ হাত বাড়িয়ে রচনার একটা হাত ধরে বলল, “ছেলেটা কোথায় গেল বল তো? আমরা অটোতে উঠে বসতে না বসতেই হাওয়া হয়ে গেল”!
 

বাড়ি ফিরে এসে রচনা যেন বুক ভরে শ্বাস নিতে পারল। রবিশঙ্করের বাড়ির ওখান থেকে অটোতে ওঠবার পর থেকে সে দুশ্চিন্তায় আর ভয়ে গুটিশুটি মেরে সারাটা রাস্তা কাটিয়ে এসেছে। অচেনা ছেলেটার বলা কথা গুলো যেন অনবরত তার কানে বেজে যাচ্ছিল। সারাটা রাস্তা আসতে আসতে সে ভেবেছে, ছেলেটা কে? আর তাদের ওপর যে বিপদ এসে পড়েছে সে বিপদের কথা সে জানল কিভাবে? কলকাতায় একমাত্র পুলিশ ছাড়া আর কাউকেই তো তারা এ ব্যাপারে কিছু বলেনি! অবশ্য বিমল আগরওয়ালাও পুরো ঘটণাটা জানে। তাহলে ছেলেটা কি বিমল আগরওয়ালার লোক? বিমল আগরওয়ালা কি তাদের পেছনে লোক লাগিয়েছে? না কি পুলিশের কোন চর! আর পুলিশ তাদের পেছনে লোক লাগাবে কেন? তারাই তো একটা অপরাধের শিকার হয়েছে। তবে ছেলেটার যে কোন বদ মতলব ছিল না তা তো বেশ ভালভাবেই বোঝা গেছে। সে তো রতীশকে ঠিক কথাই বলেছে। যাকে তাকে ফোন নাম্বার দিতে বারন করল সে। রচনার নিজেরও মনে হচ্ছিল জায়গাটা কেমন যেন। যতক্ষণ সেখানে ছিল ততক্ষন একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিল তার।
 

ফ্ল্যাটে ঢুকেই রতীশ রচনাকে বলল, “রচু, দেখ, যা হবার তা তো হয়েই গেছে। টাকাটা যে আর আমরা ফিরে পাব না, এ’কথা তো সত্যি। তাই আমার মনে হয়, পুলিশ যা করার করুক। রবিশঙ্করকে তারা ধরতে পারলে পরে দেখা যাবে আমাদের টাকাটা নিয়ে সে কি করেছে। তবে এখন থেকে আমরা আর কোন খোঁজ খবর করব না। টাকার দুঃখ দু’দিন বাদে আর আমাদের কারুর মনে থাকবে না। কিন্তু তোমার কোন বিপদ হলে সে কষ্ট যে সারা জীবন বুকে করে বয়ে বেড়াতে হবে আমাকে। তুমি কিন্তু আর কোথাও যেতে টেতে চেও না প্লীজ”।

______________________________
 
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply
#48
(Update No. 68)

রচনা নিজের পোশাক বদলাতে বদলাতে বলল, “হ্যা সোনা, তুমি বোধ হয় ঠিকই বলেছ। কিন্তু ছেলেটা কে হতে পারে বল তো? আমাদের ব্যাপারে এত কিছু সে জানল কি করে”?

রতীশও নিজের পোশাক চেঞ্জ করে বলল, “সারা রাস্তা আসতে আসতে তো ছেলেটার কথাই ভাবছিলুম আমি সোনা। কিন্তু এত ভেবেও কোন হদিশ করে উঠতে পাচ্ছি না”।
 

রচনা জিজ্ঞেস করল, “তোমার কি ছেলেটাকে পুলিশের ইনফর্মার বলে মনে হয়”?
 

রতীশ একটু অবাক হয়ে বলল, “পুলিশের ইনফর্মার! পুলিশ আমাদের পেছনে লোক লাগিয়েছে বলছ তুমি”?
 

রচনা বলল, “একটু ভেবে দেখ তো সোনা। ছেলেটা যতটুকু বলেছে তাতে এটা তো স্পষ্ট যে সে ঘটণাটার সব কিছুই জানে। যে ঘটণাটা আমাদের সাথে ঘটেছে, সেটা পুলিশ ছাড়া আর কে জানে? হ্যা, ওই বদমাশ রবিশঙ্কর আর তার সাথের ওই লোকটা জানে। আর জানে বিমল আগরওয়ালা, যে তোমার মুখ থেকে সেটা শুনেছে। কিন্তু ছোটকাকু যে আমাদের জন্যে কিছু পাঠাবেন, আর আমরা তার অপেক্ষায় আছি, এ’কথা তো পুলিশও জানে না এখনও। আর রবিশঙ্কররা বা বিমল আগরওয়ালা কিভাবে জেনে যাবে? অথচ ছেলেটা জানে! এটা কী করে সম্ভব হয়”?

রতীশ বলল, “সেটা আমিও ভেবে পাচ্ছি না সোনা। তবে আমরা যে রবিশঙ্করের খোঁজ করতে আর কোথাও যাব না, এটা আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। টাকাটা গেছে, যাক। আর কিছু খোয়াতে রাজি নই আমি। তবে আজকের কথাটা মন্তিকে জানাতেই হবে। ও পুলিশ অফিসার। হয়ত কিছু বুঝতে পারবে”।
 

*************

দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর রচনা আর রতীশ বিছানায় শুয়ে শুয়ে গল্প করতে করতে রচনা জিজ্ঞেস করল, “তাহলে সোনা, এখন কী করবে বলে ভাবছ বল তো? বিমল আগরওয়ালার ওই বন্ধুর সেন্টারেই কাজে যোগ দেবে? না অন্য কিছু ভাবছ”?
 

রতীশ রচনাকে নিজের বুকের ওপর টেনে নিয়ে বলল, “আর কিছু নিয়ে তো আর ভাবিই নি সোনা। আমি তো ভাবছি মন্তির কথা মত, একবার বিমল আগরওয়ালার বন্ধুর ইনস্টিটিউট থেকে ঘুরেই আসি। তুমি কি বলছ”?

রচনা স্বামীর বুকে গাল ঘসতে ঘসতে বলল, “আমি কি আর তোমার ইচ্ছের বিরূদ্ধে যেতে পারি সোনা? কিন্তু দিদিভাইয়ের কথাগুলো মনে রেখ। দিদিভাই কাল যে’সব কথা বলল, তা শুনে তো আমার মনে মনে বেশ ভয় হচ্ছে। তেমন কোন অসামাজিক কাজের সাথে তুমি জড়িয়ে পড়লে আমি কী করব”?
 

রতীশ রচনার কাঁধে আর পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে বলল, “স্বেচ্ছায় যে ও’সব কাজে জড়িয়ে পড়ব না, এ’কথা তো বলাই বাহুল্য। তিন বছর ধরে তো আমাকে দেখছ তুমি। তোমার কি মনে হয় আমি জেনে বুঝে অমন পাপ কাজে নিজেকে জড়িয়ে ফেলব”?
 

রচনা স্বামীর বুকে চুমু খেয়ে বলল, “তুমি জেনে বুঝে যে কখনই ও’সব কাজ করবে না, এ ব্যাপারে আমার মনে কোন সন্দেহই নেই সোনা। কিন্তু দিদিভাই যে কথাগুলো বলেছে সে’গুলোও তো ঠিক। তুমি যে খুব সহজেই সবাইকে বিশ্বাস করে ফেল। আর কাউকে মুখের ওপর কোন ব্যাপারে ‘না’ বলতে পার না। আর যার ইনস্টিটিউটে তুমি কাজ করবে তার আদেশ তো তোমাকে মানতেই হবে। চাকরি কথাটার মানেই তো পরাধীনতা। রুলস রেগুলেশনস, টার্মস কণ্ডিশনস এসব তো মেনে চলতেই হবে। নিজের মর্জি মাফিক তো কিচ্ছুটি করতে পারবে না। আবার মন সায় না দিলেও মালিকের বা বসের হুকুম তোমায় তো মানতেই হবে। তারা যদি তোমাকে অমন কোন আদেশ দেন, তাহলে তুমি কী করবে”?

রতীশ বলল, “তেমন হলে তো সেখানে কাজ ছেড়ে দিতেই হবে। কিন্তু সবচেয়ে বড় মুস্কিলটা যে অন্য জায়গায় রচু। আমার মত হাজার হাজার গ্র্যাজুয়েট ছেলে কলকাতার রাস্তা ঘাটে ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ক’জনের কপালে আর সরকারী চাকরি জোটে বল। অনেক উচ্চ শিক্ষিত ছেলেও পেটের দায়ে অনেক হীন কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু আমি যেমন পরিবারের ছেলে, আমি তো তা করতে পারব না। কোন বিজনেস ফার্মে বা দোকানেও কর্মচারি হতে পারব না। আর যোগা নিয়ে ছোটবেলা থেকেই মনে মনে যে স্বপ্নটা দেখে বেড়াচ্ছি, সেটা যেন আমায় তাড়া করছে অবিরত। তাই আমি যে সে লাইনেই থাকতে চাই”।

রচনা স্বামীর বুকের একপাশে নিজের মাথা রেখে একহাতে স্বামীর বুকের আরেক পাশে হাত বোলাতে বোলাতে বলল, “তুমি যদি তা-ই করতে চাও, তাহলে বিমল আগরওয়ালার সাথে কথা বলে দেখ। কিন্তু আমার একটা কথা শুনবে”?

রতীশ বলল, “তুমি আর মন্তি ছাড়া আমি আর কার কথা শুনব বল তো? ছোটবেলা থেকে বিয়ের আগে পর্যন্ত মন্তির প্রতিটা কথা শুনেছি। বিয়ের পর থেকে তোমার কথাই তো মেনে আসছি। বল না কী বলবে”?

রচনা স্বামীর বুকে হাতের ভর রেখে নিজের মাথাটা তুলে রতীশের চোখে চোখ রেখে বলল, “তুমি আমাকে কথা দাও। সেখানে ও’সব কাজে তুমি কখনও নিজেকে জড়াবে না। যদি তেমন কিছু বুঝতে পার, তাহলে সাথে সাথে সেখানে কাজ করা ছেড়ে দেবে। আর এখানে কিছু করতে না পারলে তুমি আমাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যাবে। সেখানে যাহোক কিছু একটা তুমি করতেই পারবে। আর কিছু হোক না হোক বাবা কাকাদের মত কোন একটা দোকান তো খুলে বসতে পারবে। আর আমি তো তোমার কাছে টাকা পয়সা গয়না গাটি এসব চাই না। আমি শুধু তোমার ভালবাসা নিয়েই সারা জীবন সুখে কাটিয়ে দিতে পারব। তুমি, তোমার ভাইবোনেরা যেভাবে ও বাড়িতে বড় হয়ে উঠেছ, ভবিষ্যতে আমাদের সন্তানও সেভাবেই না হয় বড় হবে। তাতে তো ক্ষতির কিছু নেই। না-ই বা রইল প্রাচুর্য্য। আমরা যদি সুখে থাকতে পারি, তাহলে আর কী চাই আমাদের বল? আর আমাদের পুরো পরিবারটা তো আমাদের পাশে আছেই। আর ওই যোগা ইনস্টিটিউটে যা কিছু ঘটণা ঘটবে, সে সব কথা তুমি আমাকে খুলে বলবে। কখনও কোন কথা গোপন করে যাবে না। এই দুটো কথা তুমি আমাকে দাও”।
 

রতীশ রচনার কথার জবাব দেবার আগেই তার মোবাইল বেজে উঠল। রচনাই হাত বাড়িয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে বলল, “নাও দিদিভাই ফোন করেছে। কথা বল”।

রতীশ ফোনের স্পীকার অন করে বলল, “হ্যা মন্তি বল। টিফিন করেছিস”?

ও’পাশ থেকে সীমন্তিনী জবাব দিল, “এই জাস্ট খেতে বসেছি রে দাদাভাই। তোদের খাওয়া হয়েছে তো”?

রতীশ জবাব দিল, “হ্যারে আমরা মিনিট পনের আগেই খেয়েছি”।

সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা দাদাভাই, একটা কথা বল তো। রবিশঙ্কর যে লোকটাকে বিল্ডিঙের মালিক সাজিয়ে এনেছিল সে লোকটা দেখতে কেমন ছিল রে”?
 

রতীশ জবাব দিল, “সে লোকটা তো লম্বায় প্রায় ছ’ফুটের কাছাকাছি ছিল। রোগা পাতলা চেহারা, মাথার সামনের দিকে টাক, বয়স বেয়াল্লিশ তেতাল্লিশ হবে বোধ হয়। আর যে দু’ তিন দিন তাকে আমি দেখেছি, সে সব সময় সাদা ধুতি পাঞ্জাবী পড়েছিল। কিন্তু লোকটাকে দেখে আমার কিন্তু কখনই তাকে মারোয়ারী বলে মনে হয়নি। বরং তাকে আমার বিহারী লোক বলেই মনে হচ্ছিল। এ ছাড়া আর বেশী কিছু তো মনে পড়ছে না। ও হ্যা, আরেকটা কথা মনে পড়েছে। লোকটার বা হাতের কব্জির ঠিক ওপরে একটা পুরোন কাটা দাগ আছে”।

সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “এ’কথা গুলো তুই থানায় বলেছিস তো”?

রতীশ বলল, “হ্যা, সবকিছুই বলেছি। কিন্তু তুই আবার এসব কথা জানতে চাইছিস কেন রে মন্তি? তুই কি অতদুর থেকেই এ ব্যাপারে কিছু করতে পারবি”?
 

সীমন্তিনী বলল, “কিছু করতে যে পারবই একথা তো জোর দিয়ে বলতে পারছিনা রে দাদাভাই। কিন্তু একটু চেষ্টা করতে দোষ কিসের বল? আচ্ছা ও’কথা ছাড়। আজ সকাল থেকে কি কি করলি তোরা দু’জনে? রচু কি ঘুমিয়েছে”?
 

রতীশ জবাব দেবার আগেই রচনা বলে উঠল, “আমি যে দিনের বেলায় ঘুমোতে ভালবাসি না, একথাটাও ভুলে গেছ দিদিভাই”?

সীমন্তিনী বলল, “রচু সোনা আমার। তোর কোনও কথা আমি ভুলে যেতে পারি রে? এতক্ষণ ধরে তোর সাড়া পাচ্ছিলাম না ভেবেই দাদাভাইকে ও’কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম। তা কেমন আছিস রে বোন? ভাল আছিস তো তোরা দুটিতে”?

রচনা বলল, “হ্যাগো দিদিভাই। এমনিতে তো ভালই আছি। কিন্তু ওই ঘটণাটাকে তো ভুলতে পাচ্ছি না গো। ওহ, দিদিভাই শোনো। আজ তোমার দাদাভাইকে নিয়ে আমি রবিশঙ্করের বাড়ি গিয়েছিলুম। মানে সে আগে যে বাড়িতে থাকত। সেখানে তার বাড়ির মালিকের সাথে কথা হল। কিন্তু সে লোকটাও রবিশঙ্করের বর্তমান ঠিকানা বলতে পারল না। কিন্তু দিদিভাই, একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটে গেছে, জানো? আমরা যখন ওখান থেকে ফিরে আসছিলুম তখন একটা ছেলে এসে আমাদের খুব করে ধমকে দিয়ে হঠাতই উধাও হয়ে গেল। কী অদ্ভুত না”?
 

সীমন্তিনী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “কি বলছিস? একটা অজানা অচেনা ছেলে এসে তোদের ধমকে গেল”?

রচনা এবার সব কথা খুলে বলল। সব শুনে সীমন্তিনী বলল, “ছেলেটা কিন্তু অন্যায় কিছু করেনি রে রচু। কলকাতায় পথে ঘাটে চোর গুণ্ডা বদমাশদের বড় বড় গ্যাং আছে। রবিশঙ্করও তেমন কোন গ্যাঙের সাথে জড়িত থাকতে পারে। এমনও হতে পারে যে তোরা যখন কামেশ্বর মিশ্রের সাথে কথা বলছিলিস, তখন হয় তো তাদের গ্যাঙের অন্য কেউ তোদের ওপর নজর রাখছিল। ছেলেটা তোদের যেভাবে সাবধান করে দিল, তাতে মনে হয় সে-ও তোদের ওপর নজর রাখছিল। তবে শোন রচু, সোনা বোন আমার। তোরা এমন করে নিজেদের বিপদে ফেলিস না। তোদের কোথাও যাবার দরকার নেই। পুলিশের কাছে রিপোর্ট করেছিস, এখন তো যা করবার পুলিশেরই করবার কথা। আর দেখ, ওই দু’লাখ টাকা রবিশঙ্কর আর ওই লোকটা যে খেয়ে হাপিস করে দিয়েছে এতক্ষণে, সেটা তো আশা করাই যায়। তাই তাদেরকে ধরতে পারলেও তাদের কাছ থেকে টাকাটা উদ্ধার হবার সম্ভাবনা প্রায় নেইই বলা যায়। তাই, যা হয়েছে, সেটার পেছনে তোরা আর কোন ছোটাছুটি করিস না। তাতে হিতের চেয়ে বিপদই বেশী হবে। বুঝেছিস”?

রচনা বলল, “হ্যা দিদিভাই। আমি আর তোমার দাদাভাই বাড়ি ফিরে আসতে আসতে এসব কথাই তো ভেবেছি। আমরাও ভেবেছি আর কোথাও নিজেরা গিয়ে খোঁজ খবর করব না। তুমি দুশ্চিন্তা কোর না”।
 

সীমন্তিনী বলল, “আচ্ছা শোন। তোরা এরপর কী করবি বলে ভাবছিস দাদাভাই? ওই ইনস্টিটিউটের ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছিস কিছু”?
 

রতীশ বলল, “আমি আর রচু এই নিয়েই কথা বলছিলাম রে এতক্ষণ। আমি ভাবছি বিমল আগরওয়ালার সাথে কথা বলব। তিনি যদি আমাকে ইনস্টিটিউটের ঠিকানাটা বলে দেন, তাহলে সেখানে গিয়ে সব কিছু দেখে শুনে আসি একবার। তারপর না হয় সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। তোর আপত্তি নেই তো”?

সীমন্তিনী বলল, “খোঁজ খবর নিয়ে দেখবি, তাতে আপত্তি করার কী আছে দাদাভাই। কাজে যোগ দেবার আগে সেটাই তো তোকে করতে হবে। তুই একবার নিজে গিয়ে সবকিছু দেখে শুনে আয়। তারপর আমরা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব। কিন্তু শোন দাদাভাই, রচুকে সঙ্গে নিয়ে যাস নে কিন্তু। বিমল আগরওয়ালার কাছে বা তার বন্ধুর ইনস্টিটিউটে রচুকে নিয়ে যাবি না এখন। তুই একা গিয়ে তাদের সাথে কথা বলিস। তবে একটা কথা মাথায় রাখবি। প্রাইভেট ফার্মের চাকরিতে অনেক সময় সার্ভিস কন্ট্রাক্ট বা বন্ড সাইন করতে হয়। সার্ভিস কন্ট্রাক্টে বা বন্ডে যদি এমন কিছু উল্লেখ করা থাকে যে চাকরিতে ঢোকার পর এতদিন বা এত বছরের মধ্যে তুই সে চাকরি ছেড়ে যেতে পারবিনা, তাহলে তুই কিন্তু সে চাকরিতে ঢুকবি না। মানে কোনরকম প্রমিজ বা মেয়াদী প্রতিজ্ঞাবদ্ধতার চুক্তি শর্ত থাকলে তোর সেখানে কাজে ঢুকে দরকার নেই। বুঝেছিস তো”?

রতীশ বললো, “ঠিক আছে, তোর কথা মনে রাখব”।

এবার সীমন্তিনী বললো, “আচ্ছা রচু, তোর সাথে আরেকটা কথা বলার আছে আমার”।

রচনা বলল, “হ্যা দিদিভাই, বল। আমি শুনছি”।

সীমন্তিনী বলল, “আচ্ছা শোন না। তোদের কালচিনির বাড়ির সামনে আমি মেসোর জন্যে একটা দোকান খুলে দেবার কথা ভাবছি। এরিয়াটা তো বেশ ভালই। বাজারের কাছাকাছি। আর সামনের রাস্তায় লোক চলাচলও বেশ ভালই হয়। আমি ভাবছি সেখানে ছোটখাটো মুদি দোকান বা একটা ষ্টেশনারী দোকান দিলে ভালই হবে। আসলে কি জানিস। ভাইয়ের সাথে আর মাসি মেসোর সাথে তো মাঝে মধ্যেই কথা হয় আমার। আর মাসি এখন প্রায়ই বলেন যে মেসোর শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। অবশ্য আমার কথায় মেসো আলিপুরদুয়ার গিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে এসেছেন। ডাক্তারের সাথেও আমি ফোনে কথা বলেছি। ডাক্তার বলছে, মেসোর টেনশনের জন্যেই তার শরীর দুর্বল হয়ে পড়ছে। আর দিনে দিনে বয়সও তো বাড়ছে। আমি চাই না মেসো এ বাড়ি ও বাড়ি ঘুরে পুজো আচ্চা করে বেড়াক এ বয়সে। তাই এমনটা ভাবছি। তোর কোন আপত্তি নেই তো এ ব্যাপারে”?

রচনা বলল, “হ্যা দিদিভাই মা আর ভাই আমাকে সব কথাই বলেছে। কিন্তু আমি আর কী বলব তোমাকে? তুমি তো চার বছর আগে থেকেই তাদের আরেকটা মেয়ে হয়ে গেছ। আমরা দু’বোন তো বাবা-মার জন্য কিছু করতে পারিনি। যেদিন থেকে তুমি আমাদের জীবনে এসেছ সেদিন থেকেই তুমি তো তাদের জন্য অনেক কিছু করে আসছ দিদিভাই। সে’সব কথা বললে তো তুমিই রেগে যাও আমার ওপরে। তবে তোমার কোন কাজে আমি আগেও কখনও প্রতিবাদ করিনি, আজও করছি না। তুমি যা করবে, তাদের সকলের ভালোর জন্যেই তো করবে। আমার এতে আপত্তি হবে কেন”।

সীমন্তিনী বলল, “আচ্ছা বেশ, তাহলে তুই বল দেখি কোনটা করলে ভাল হবে? মুদি দোকান না ষ্টেশনারী দোকান”?
 

রচনা জবাব দিল, “দিদিভাই দুটো মিলিয়ে মিশিয়েও তো করা যায়। গালামালের সাথে কিছু ষ্টেশনারী সামগ্রীও তো রাখা যেতেই পারে, তাই না”?
 

সীমন্তিনী বলল, “হ্যা মন্দ বলিস নি তুই। ঠিক আছে। আমি মেসোর সাথে একবার কথা বলে দেখি। আর শোন, রবিশঙ্করের ব্যাপার নিয়ে ভেবে তোরা দুটিতে আর টেনশন নিয়ে মন আর শরীর খারাপ করিস না। আচ্ছা এখন রাখছি রে। পরে কথা হবে আবার” বলে ফোন কেটে দিল।

****************

রাতে চন্দ্রকান্তবাবু ফোনে জানালেন রবিশঙ্করের ছবি আর কয়েকটা আলাদা আলাদা কোম্পানীর শো রুমের বিল আর ক্যাশমেমোর ফটোকপি তিনি কুরিয়ার সার্ভিসে পাঠিয়ে দিয়েছেন। কাজের কথা সারা হবার পর রচনা জিজ্ঞেস করল, “ছোটকাকু, চন্দু কেমন আছে গো? ও ঠিকমত খাচ্ছে দাচ্ছে তো”?

চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “তুমি তো জানই বৌমা। তুমি এ বাড়ির বৌ হয়ে আসবার পর থেকে তুমিই তো ওর সবচেয়ে কাছের মানুষ হয়ে উঠেছিলে। তোমরা কলকাতা চলে যাবার পর ওকে সামলাতে বাড়ি শুদ্ধ সবাই প্রায় হাঁপিয়ে উঠেছিল। সব সময় কান্নাকাটি করত। খেত না। কলেজে যেতে চাইত না। এমন কি বাড়িতেও পড়তে বসত না। বলত যে বৌমণি না এলে সে কিচ্ছু করবে না। কিন্তু মা, বললে তুমি বিশ্বাস করবে কি না জানিনা। গতকাল বাড়ির সকলে রবিশঙ্করের ব্যাপারটা নিয়ে যখন আলোচনা করছিল, তখন থেকেই ও হঠাৎ করেই কেমন শান্ত হয়ে গেছে যেন। আজ সকালে লক্ষ্মী মেয়ের মত কলেজে গেছে, টিফিন খেয়েছে। বিকেলে বাড়ি ফিরেও নাকি চুপচাপই ছিল। আমি একটু আগে বাড়ি ফিরে দেখি ও পড়াশোনা করছে। হঠাৎ করে কী যে হল ওর কে জানে। যে মেয়ে যতক্ষন বাড়ি থাকে ততক্ষন সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখে চিৎকার চেঁচামেচি করে। সে মেয়ের মুখে কাল থেকে টু শব্দটি পর্যন্ত নেই”।

এ কথা শুনে রচনার চোখ জলে ভরে এল। সে প্রায় রুদ্ধ গলায় বলল, “ছোটকাকু, আমাকে একটু ওর সাথে কথা বলতে দেবে”?
 

চন্দ্রকান্তবাবু খুব খুশী হয়ে বললেন, “তুমি ওর সাথে কথা বলবে বৌমা? দাঁড়াও আমি ঘরে যাচ্ছি, তুমি ওকে একটু বুঝিয়ে দাও বৌমা। কিন্তু ওর সাথে কথা বলতে বলতে তো তুমিও ওদিকে কেঁদে ভাসাবে। মন্তি বাড়ির সবাইকে বলে দিয়েছে চন্দু যেন কখনও তোমার সাথে ফোনে কথা বলতে না পারে, সেদিকে যেন সবাই নজর রাখে। অবশ্য মন্তি ভেবেচিন্তেই কথাটা বলেছে। কিন্তু কাল থেকে ও এমন চুপচাপ হয়ে গেছে আমিও মনে মনে ভাবছিলাম একবার তোমার সাথে একটু কথা বলতে পারলে ও বোধহয় খানিকটা শান্ত হত। আচ্ছা ধর মা, চন্দুর সাথে কথা বল”।

রচনা শ্বাস বন্ধ করে ফোন কানে লাগিয়ে পাশে বসে থাকা স্বামীর মুখের দিকে চাইল। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে চন্দ্রকান্তবাবুর গলা শোনা গেল। তিনি চন্দ্রিকাকে বলছেন, “চন্দু মা, দেখ তোর বৌমণি ফোন করেছে। তোর সাথে কথা বলবে। নে নে, কথা বল”।

পরক্ষনেই চন্দ্রিকার চিৎকার শোনা গেল, “বৌমণি ই ই ই! দাও দাও বাবা। আমি জানি তো, তোমরা আমাকে বৌমণির সাথে কথা বলতে না দিলে কী হবে। বৌমণিই আমার সাথে কথা বলবে”। পরক্ষণেই চন্দ্রিকা বলে উঠল, “বৌমণি, আমি চন্দু বলছি গো। তুমি কেমন আছ বৌমণি? শুনতে পাচ্ছ তুমি”?

রচনা নিজের গলার কাছটা একহাতে চেপে ধরে বলল, “হ্যা সোনা বোন আমার, আমরা ভাল আছি। কিন্তু তুমি ওখানে কান্নাকাটি করছ, খেতে চাইছ না, পড়তে চাইছ না, এসব শুনেই তো কান্না পাচ্ছে আমার। তুমি এভাবে কাঁদলে আমি কি ভাল থাকব বল সোনা”?

চন্দ্রিকা এবার খানিকটা সংযত গলায় বলল, “না গো বৌমণি। আমি তো আজ সারাদিনে একটুও কাঁদি নি গো। তুমি মাকে জিজ্ঞেস করে দেখো। আজ আমি কলেজে টিফিনও খেয়েছি। তবে কলেজ থেকে ফিরে আজ বিকেলে খেলতে যাইনি। ভাল লাগছিল না”।

রচনা বলল, “কেন বোন? বন্ধুদের সাথে একটু খেললে তো তোমার ভালই লাগবে। তাহলে যাও নি কেন”?

চন্দ্রিকা বলল, “তুমি আর বড়দা ওখানে মন খারাপ করে আছ। এখানে বাড়ির সবাই তোমাদের কথাই শুধু বলে যাচ্ছে। বাড়ির সকলেরই মন খারাপ। আর আমি বন্ধুদের সাথে মজা করে খেলতে যাব? আমি তো তক্কে তক্কে আছি। ওই বদমাশটাকে আমি যেখানেই দেখতে পাব পাথর ছুঁড়ে ওর মাথা ফাটিয়ে ফেলব আমি, তুমি দেখে নিও”।
 

রচনা চন্দ্রিকার কথা শুনে আঁতকে উঠে বলল, “না না বোন। অমনটি কোর না তুমি। তুমি তো ওর ছবি খুঁজে বের করেছ। বাবা সেটা আমাদের পাঠিয়ে দিয়েছেন। আমরা সেটা পেলেই পুলিশের হাতে দিয়ে দেব। আর পুলিশ ওকে চট করে ধরে ফেলবে। তোমাকে আর কিচ্ছু করতে হবে না। কিন্তু তুমি নাকি আজ বাড়ির কারো সাথে কথা বলছ না? কেন সোনা? কী হয়েছে তোমার? আমায় বলবে না”?
 

চন্দ্রিকা বলল, “নাগো বৌমণি, তোমায় বলব না কেন? আসলে আমি তো এতদিন ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারিনি। বড়দাকে ঠকিয়ে ওই বদমাশটা টাকাগুলো নিয়ে নেবার পর বাড়ির সকলের মুখে শুনে বুঝেছি যে বড়দার কত কষ্ট হচ্ছে। বড়দার সাথে তুমি চলে যাবার পর আমার খুব দুঃখ হয়েছিল। আমার মনে হয়েছিল বড়দা আর তুমি আমার কথাটা একটুও ভাবনি। তাই তো এ ক’দিন ধরে শুধু কান্নাকাটি করে যাচ্ছিলুম আমি। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি, বড়দার সাথে তুমি না থাকলে কে তাকে এ’সময় সামলাত? এখানে তো বাড়ি শুদ্ধ লোক আছে আমাকে সামলাবার। কিন্তু বড়দা যে সেখানে একা। তার কাছে তো তুমি ছাড়া আর কেউ নেই। আর তখনই আমার মনে হল, বড়দার সাথে তোমার চলে যাওয়াটা ঠিকই হয়েছে। তাই এখন আর কান্নাকাটি করছি না। আমার খুব ইচ্ছে করত তোমার সাথে কথা বলতে। কিন্তু কেউ আমাকে ফোনে হাত দিতে দেয় না। বলে যে আমি ফোন করলে নাকি তুমি কাঁদবে। কিন্তু এখন তুমি আমার সাথে কথা বলছ বলে আমার খুব ভাল লাগছে। এখন আমার মনটা খুশী খুশী লাগছে। তুমি যে আমায় ভুলে যাও নি, এটা জেনেই আমি খুশী হয়েছি গো বৌমণি। কিন্তু পাঁচ ছ’দিন ধরে তোমাকে দেখতে পাচ্ছিনা বলেই মনটা আবার খারাপ হয়ে যাচ্ছে”।

রচনা বলল, “এমন মিষ্টি সোনা বোনটাকে আমি কখনও ভুলতে পারি? কিন্তু সোনা, তুমি কিন্তু আর মন খারাপ করে থাকবে না। আমি মাঝে মাঝে তোমার সাথে ফোনে কথা বলব। কিন্তু আমি যদি শুনি, তুমি ভাল করে খাওয়া দাওয়া করছ না, মন দিয়ে পড়াশোনা করছ না, তাহলে কি আমার ভাল লাগবে বল”?

চন্দ্রিকা বলল, “না বৌমণি, আমি তোমার নামে দিব্যি করে বলছি, আমি ভাল ভাবে থাকব। মন দিয়ে পড়া শোনা করব। ভাল করে খাব। কিন্তু তোমাকে যে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে গো। কবে আসবে তোমরা”?

রচনা বলল, “এই তো সোনা, তোমার বড়দা একটা কাজ টাজ কিছু শুরু করলেই আমরা একবার বাড়ি গিয়ে ঘুরে আসতে পারব। আর দু’ তিনমাস বাদেই তো পুজো। তোমার বড়দা আর আমি পুজোর সময় তো বাড়ি যাবই সোনা”।
 

চন্দ্রিকা জিজ্ঞেস করল, “বড়দা কোথায় গো বৌমণি? সে কি এখনও বাড়ি ফেরে নি”?

রচনা বলল, “তোমার বড়দা তো ঘরেই আছে বোন। বড়দার সাথে কথা বলবে”?

চন্দ্রিকা বলল, “একটু দাও না”।

রচনার হাত থেকে ফোন নিয়ে রতীশ “হ্যালো চন্দু সোনা” বলতেই চন্দ্রিকা বলল, “বড়দা, তুমি মন খারাপ করে বসে থেক না। বৌমণি তোমার সাথে আছে। তুমি ভেব না, সব ঠিক হয়ে যাবে। আর তুমি দেখে নিও, ওই বদমাশ লোকটা ঠিক ধরা পড়বে পুলিশের হাতে”।

রতীশ বলল, “হ্যা বোন, তুই যখন বলছিস, সে নিশ্চয়ই ধরা পড়বে। কিন্তু আমি তোর বৌমণিকে নিয়ে এসেছি বলে তুই আমার ওপর রাগ করে থাকিস না সোনা। আমি কিছু একটা কাজ শুরু করতে পারলেই তোর বৌমণিকে তোর কাছে নিয়ে যাব একবার। ততদিন তুই কিন্তু লক্ষ্মী মেয়ে হয়ে থাকবি। মন দিয়ে পড়াশোনা করবি, ভাল করে খাওয়া দাওয়া করবি, আর মা-র কথা শুনবি। ঠিক আছে সোনা”?

চন্দ্রিকা বলল, “হ্যা বড়দা। ঠিক আছে। তুমিও সময় মত খাওয়া দাওয়া কোর”।

রতীশ বলল, “লক্ষ্মী সোনা বোন আমার। এবার তাহলে তুই মন দিয়ে পড়। আর আমার আদর নিস” বলে একটা চুমু খেয়ে ফোন বন্ধ করল।

কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে রচনা বলল, “যাক, চন্দুটা যে কান্নাকাটি বন্ধ করেছে, এটা শুনে বেশ ভাল লাগল। ছোটকাকু বলছিলেন কাল থেকে ও নাকি কান্নাকাটি না করে একেবারে চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল। আমার মনে হয় আমাদের সাথে কথা বলে ওর মনটা একটু ভাল হবে। তা সোনা, তুমি কি আজ ফোন করবে তোমার ওই বিমল আগরওয়ালাকে”?
 

রতীশ জবাব দিল, “কাল সকালের দিকে ফোন করে দেখব। কিন্তু তার সাথে দেখা করতে গেলে তো সন্ধ্যের দিকে যেতে হবে। সকাল ন'টা নাগাদ একবার ফোন করে দেখি কী বলেন”।

*************

___________________________________________
ss_sexy
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply
#49
(Update No. 69)

পরদিন সকালে রতীশ বিমল আগরওয়ালাকে ফোন করে বলল, “বিমলজী, আপনি আপনার ওই বন্ধুর যোগা ইনস্টিটিউটের ঠিকানাটা বলবেন? আমি সেখানে গিয়ে একটু কথা বলতাম”।

বিমল বলল, “আপনি সেখানে কাজ করতে রাজি আছেন? আচ্ছা শুনুন রতীশবাবু। আমি আজ আমার বন্ধুর সাথে কথা বলে নিই। আপনি সন্ধ্যের দিকে আমার অফিসে চলে আসুন। নইলে সন্ধ্যে সাড়ে ছ’টার পর আমাকে একবার ফোন করুন। আমি তখন আপনার সাথে কথা বলব। আমি এখন একটা জায়গায় যাচ্ছি। রাস্তায় আছি। তাই আপনি কিছু মনে করবেন না। সন্ধ্যের সময় কথা বলছি আমরা”।

রতীশ “আচ্ছা বিমলজী” বলে ফোন রেখে দিল। সারাটা দিন রতীশ বাড়িতেই কাটাল। সন্ধ্যে সাড়ে ছ’টা বাজতেই রতীশ বিমলকে ফোন করল। বিমল ফোন ধরেই বলল, “হ্যা রতীশবাবু শুনুন। আমি আমার বন্ধুর সাথে কথা বলেছি। আমার বন্ধু তো এমনিতে রাজি আছে। কিন্তু সে জানতে চাইছিল যে আপনি কি কোন যোগা ডিগ্রী টিগ্রী পেয়েছেন কি না”।

রতীশ বলল, “হ্যা বিমলজী, দেরাদুন আর ঋষিকেশের দু’তিনটে ইনস্টিটিউট থেকে আমি কয়েকটা ডিগ্রী পেয়েছি। সে’সব সার্টিফিকেটও আমার কাছে আছে। উনি চাইলে সে’সব দেখতেও পারবেন”।

বিমল খুশী হয়ে বলল, “বাহ, এ তো খুব ভাল কথা। তাহলে আপনি এক কাজ করুন। আজ তো বৃহস্পতি বার। আপনি রবিবার সকাল দশটার দিকে আমার অফিসে চলে আসুন। ওই সার্টিফিকেটগুলো নিয়ে আসবেন সঙ্গে করে। আমি তার সাথে কথা বলে এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রাখব। আমি সঙ্গে করেই আপনাকে নিয়ে যাব সেখানে। কোন অসুবিধে হবে না”।

রতীশ বলল, “হ্যা সে তো ঠিক আছে বিমলজী। কিন্তু রবিবারে যাওয়া মানে আমাকে তো আরও দুটো দিন বেকার বসে থাকতে হবে। তাই বলছিলাম, আপনি তো নানা কাজে ব্যস্ত থাকেন। আপনি যদি শুধু তার ঠিকানাটা আমাকে দিতেন, তাহলে আমি নিজে গিয়েও তার সাথে কথা বলতে পারতাম”।
 

বিমল বলল, “আরে আপনাকে কিছু ভাবতে হবে না রতীশবাবু। আপনার কাজ সেখানে হয়ে যাবেই। তবে আমার বন্ধুও তো খুব ব্যস্ত থাকে। আর সে বোধহয় ছোটখাট একটা ইন্টারভিউও নেবেন। রবিবার ছাড়া অন্য দিন ইন্টারভিউ নেবার সময় তার হয় না। তাই আপনাকে রবিবারেই সেখানে যেতে হবে। আর ওই বন্ধুর সাথে আমারও একটা পার্সোনাল কাজ আছে। তাই সেদিন একসাথে দুটো কাজই হয়ে যাবে। আর তাছাড়া আমার বন্ধুকে জিজ্ঞেস না করে আমি তার ফোন নাম্বার আপনাকে দিতেও পারব না। দুটো দিন আপনি একটু ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন। আশা করি রবিবারে আপনার কাজ হয়ে যাবে। আপনি সোমবার থেকেই সেখানে কাজ করতে পারবেন। আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন এ ব্যাপারে”।
 

রতীশ বলল, “ঠিক আছে বিমলজী, আপনি যে আমার জন্যে এতটা করছেন তাতে আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি রবিবার দশটার দিকে তাহলে আপনার অফিসে চলে যাব”।

বিমল বলল, “হ্যা রতীশবাবু, সেটাই ভাল হবে। তবে শুনুন। রবিবারে আমার অফিস কিন্তু খোলা পাবেন না। আপনি অফিসের সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকবেন। আমি দশটা থেকে সওয়া দশটার ভেতরই গাড়ি নিয়ে পৌঁছে যাব সেখানে। তারপর আপনাকে নিয়ে আমার বন্ধুর ওখানে যাব। ঠিক আছে তো”?
 

রতীশ বলল, “ঠিক আছে বিমলজী। আমি সময় মত আপনার অফিসের সামনে পৌঁছে যাব”।
 

বিমল বলল, “ঠিক আছে রতীশবাবু। তাহলে রবিবার সকালে আপনার সাথে দেখা হচ্ছে। এখন ছাড়ছি তাহলে” বলে ফোন কেটে দিল।
 

*************

সীমন্তিনী সন্ধ্যের ঠিক আগে আগে তার কোয়ার্টারে ফিরে এসেছে। থানা থেকে বেরিয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে সে রতীশের কথা ভাবছিল। রবিশঙ্কর এক তারিখে রতীশের কাছ থেকে টাকাগুলো নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে। তিন তারিখে সে ব্যাপারটা জানতে পেরেছে। আর তিন তারিখেই সে পরিতোষকে সব কিছু জানিয়ে দিয়েছে। পরিতোষ তার থেকে বয়সে মাত্র দু’বছরের বড় হলেও চাকুরির ক্ষেত্রে সে সীমন্তিনীর চার বছরের সিনিয়র। অস্বাভাবিক বুদ্ধিমান পরিতোষ খুব অল্প দিনের মধ্যেই পুলিশ ডিপার্টমেন্টে নিজের অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। সীমন্তিনী আইপিএস হয়ে হায়দ্রাবাদে ট্রেনিং নিতে গিয়েই পরিতোষ সান্যালকে দেখেছিল। অসম্ভব বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার লোকটাকে দেখেই সীমন্তিনী বুঝেছিল লোকটা অন্য আর দশটা পুলিশ অফিসারের মত নয়। সে সময় থেকেই নিজে না চাইলেও পরিতোষের সাথে তার একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তারপর থেকে পরিতোষের নানা কীর্তির কথা সে শুনেছে। সৎ পুলিশ অফিসারেরা বড়কর্তা আর রাজনৈতিক নেতাদের চাপে অনেক সময়ই আসল অপরাধীকে গ্রেপ্তার করতে বা তাদের শাস্তি দিতে পারে না। কিন্তু পরিতোষ নিজের অসাধারণ বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে আইনের মাধ্যমে শাস্তি দিতে না পারলেও, তার হাত থেকে কোন অপরাধীই রেহাই পায় নি। আইনের আওতার বাইরেও তার নিজস্ব একটা আলাদা গোপন নেটওয়ার্ক আছে। আর সেই নেটওয়ার্কের প্রতিটা সদস্যই কোন না কোন ভাবে পরিতোষের কাছে কৃতজ্ঞ। পরিতোষের একটা কথায় তারা নিজের প্রাণের বাজি ধরতেও দ্বিধা করেনা বিন্দুমাত্র। পরিতোষের সেই গোপন নেটওয়ার্কের সদস্যরা পরিতোষকে পুলিশ রবিনহুড বলে ডাকে। ডুয়ার্সে সীমন্তিনীর পোস্টিং হবার পর থেকে পরিতোষ মাঝেমধ্যেই ফোন করে সীমন্তিনীর খবরাখবর নিয়ে থাকে। রতীশ আর রচনার দেওয়া ইনফর্মেশনের ওপর ভিত্তি করে রবিশঙ্করকে কলকাতা পুলিশ যে ধরতে পারবে না এ’কথা সীমন্তিনী আগেই বুঝেছে। তাই সমস্ত ঘটণাটা সে পরিতোষকে খুলে বলেছে। তার বিশ্বাস পরিতোষ ছাড়া আর কেউ রবিশঙ্করকে খুঁজে বের করতে পারবে না। কিন্তু তিনদিন পেরিয়ে যাবার পরেও পরিতোষের কাছ থেকে কোন খবর না পেয়ে তার একটু চিন্তাই হচ্ছিল।
 

কোয়ার্টারে ফিরে হাতমুখ ধুয়ে চা খেতে খেতে তার পার্সোনাল মোবাইলটা হাতে নিতেই মোবাইলটা বেজে উঠল। স্ক্রিনে দেখা গেল ‘পরিতোষ কলিং’। ফোনটা রিসিভ করে কানে লাগিয়ে বলল, “হ্যা স্যার, বলুন”।

ও’পাশ থেকে পরিতোষ বলল, “আমি মানছি গত ঊণপঞ্চাশ ঘন্টায় আমি তোমাকে একটি বারও ফোন করিনি। কিন্তু তাই বলে তুমি আমাকে এভাবে গাল দেবে মুন ডার্লিং”?
 

সীমন্তিনী বলল, “ওমা? আমি তো আমার সিনিয়র অফিসারকে স্যার বলেছি শুধু। গাল কোথায় দিয়েছি”?
 

পরিতোষ বলল, “তিন বছর আগে তোমাকে নিজের করে নেবার জন্য কত সাধ্য সাধনা করেছি। ফুঁ মেরে আমার সে আবেদন উড়িয়ে দিলেও অনেক তোষামোদ করে তোমার বন্ধু হবার যোগ্যতাটুকু অর্জন করতে পেরেছিলাম। আজ সেই বন্ধুর মুখে যদি আমাকে স্যার ডাক শুনতে হয়, তবে সেটা কি আর গালিগালাজের চেয়ে কোন অংশে কম কিছু হয় ডার্লিং? যাক গে, আমার মনের দুঃখ তুমি আর কবেই বা বুঝেছ? তবে শোনো ডার্লিং। তোমার দাদাভাইয়ের কালপ্রিটেরা দুটো আলাদা আলাদা জয়গায় আছে। টার্গেট ওয়ান, রবিশঙ্কর প্রসাদ। তার তেইশ বছর বয়সী সুন্দরী স্ত্রী অনুপমা প্রসাদকে নিয়ে বড়বাজারে একটা নতুন ফ্ল্যাটে এ মাসের এক তারিখ থেকে থাকতে শুরু করেছে। দেড় বছরের একটি পুত্র সন্তান আর বছর তেরোর একটা কাজের মেয়ে গুড়িয়াকে নিয়ে সে ফ্ল্যাটে আছে। আর টার্গেট টু হচ্ছে দিবাকর প্রসাদ, বয়স বেয়াল্লিশ। বেলঘরিয়ার একটা বস্তিতে তার চেয়ে দু’বছরের বড় স্ত্রী বিন্দিয়া, পনের বছরের একটি কন্যা সন্তান, যার বাড়ির ডাকনাম হচ্ছে গুড্ডি, আর কুড়ি বছরের এক ছেলে নিয়ে থাকে। তাদের আরেকটি সন্তান চব্বিশ বছরের ছেলে বছরখানেক আগে বিয়ে করে আলাদা জায়গায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকে। রবিশঙ্করের ব্যবসার কথা তো তুমি জানই। দিবাকর একজন দালাল। মূলতঃ মেয়ে মানুষের দালাল। নিজের স্ত্রীর জন্য গ্রাহক খুঁজে আনে। তবে একটা চমকপ্রদ খবর এই, যে দিবাকর প্রসাদ লোকটা নিজে হোমো হলেও তার দু’বছরের বড় স্ত্রী বিন্দিয়া তিন তিনটি সন্তানের মা”।

সীমন্তিনী এতটা শুনে প্রশ্ন করল, “রবিশঙ্করের সাথে দিবাকরই যে হাত মিলিয়ে দাদাভাইয়ের টাকাটা লুট করেছে, এ ব্যাপারে তুমি নিশ্চিত”?

পরিতোষ বলল, “এ তুমি কেমন কথা জিজ্ঞেস করছ ডার্লিং? আমার রিপোর্টের ওপর তোমার ভরসা হচ্ছে না? শোনো, আমি এ ব্যাপারে একশ দশ শতাংশ নিশ্চিত। ওই দিবাকর প্রসাদকেই রবিশঙ্কর তোমার দাদাভাইয়ের কাছে বিমল আগরওয়ালা বলে পরিচয় করিয়েছিল। এরা দু’জনেই বিহারী। কিন্তু এদের স্ত্রীরা কেউই বিহারী নয়। বিহারীদের মত চালচলন হলেও এরা দু’জনেই বাঙালী। আর দু’জনেই দেহ ব্যবসায় লিপ্ত। অনুপমা তার দেহ ব্যবসার কথা স্বামীর কাছে গোপন রেখেছে। কিন্তু বিন্দিয়ার দেহ ব্যবসার খদ্দের তার স্বামীই খুঁজে এনে দেয়। অবশ্য তার অন্য এজেন্টও আছে। নিজেদের মধ্যে রক্তের কোন সম্পর্ক না থাকলেও রবিশঙ্কর দিবাকরকে চাচা বলে ডাকে। আর রবিশঙ্কর দিবাকর এবং আরো দু’তিনজন অসৎ লোকের সাথে হাত মিলিয়ে আরও কয়েকজন লোকের টাকা আত্মসাৎ করেছে। এমন চার পাঁচটা কেসের ডিটেইলস জানতে পেরেছি”।

সীমন্তিনী চুপচাপ পরিতোষের কথা শুনে যাচ্ছিল। পরিতোষ আবার বলল, “দিবাকর নিজে এ ধরণের লোক ঠকিয়ে তাদের টাকা আত্মসাৎ করে না। সে শুধু স্ত্রীর জন্যে গ্রাহকের যোগান দেওয়া ছাড়া নিজের জন্য পুরুষ সঙ্গীও জুটিয়ে থাকে। কিন্তু রবিশঙ্করের সাথে হাত মিলিয়ে সে এমন অপারেশন দুটো করেছে। আর তোমার দাদাভাইয়ের কাছ থেকে লুট করা টাকাটা তারা দু’জন সমান সমানে ভাগ করে নিয়েছে। কিন্তু বিমল আগরওয়ালার সাথে তাদের যোগাযোগ আছে কি না, সেটা এখনও নিশ্চিত ভাবে জানতে পারিনি। অবশ্য আমার লোক বিমলের পেছনেও লেগে আছে। বিমল আমার লিস্টে টার্গেট থ্রি হিসেবে এনলিস্টেড আছে। কিন্তু বিমল, দিবাকর আর রবিশঙ্কর কেউ কারুর সঙ্গে গত দু’দিনে দেখা করেনি। কিন্তু আমার দৃঢ় ধারণা, দিবাকরের সাথে না হলেও রবিশঙ্করের সাথে বিমলের কোন না কোন যোগাযোগ নিশ্চয়ই আছে। সেটা খুঁজে বের করবার চেষ্টা করছি”।

একটু থেমে পরিতোষ আবার বলল, “তোমার দাদাভাইয়ের সাথে তোমার বৌদিও গতকাল রবিশঙ্করের পুরোন বাড়িতে খোঁজখবর করতে গিয়েছিল। সেখানে রবিশঙ্করের আগের ঘরের মালিক কামেশ্বর মিশ্রের সাথে তারা কথা বলেছে। এরিয়াটা একেবারেই ভাল নয়। গোটা এলাকাটাই অ্যান্টি সোশাল এলিমেন্টে ভরা। তোমার দাদাভাই বৌদিকে নিয়ে সেখানে গিয়ে ঠিক কাজ করেনি। অবশ্য আমার লোক সেদিন ওদের পেছনে ছিল। আর সে তাদেরকে সাবধান করে দিয়েছে। তুমিও একটু তোমার দাদাভাই আর বৌদিকে বুঝিয়ে দিও। তারা যেন কখনও আর সেখানে না যায়। রবিশঙ্কর ওখানে নেই বলে আমার লোকেরাও আর এখন ওখানে কেউ নেই এখন। ওই এরিয়া থেকে যতটুকু ইনফর্মেশন কালেক্ট করার ছিল সেটা করে তারা রবিশঙ্করের নতুন ঠিকানার পেছনে ধাওয়া করছে এখন। কিন্তু ওই পুরনো জায়গায় রবিশঙ্করের স্ত্রী অনুপমার চ্যানেল এখনও এফেক্টিভ আছে। সেখানে একজন বিহারী লোকের একটা লণ্ড্রী আছে। লোকটার নাম সরজু। সরজু অনুপমার ব্যবসার বুকিং এজেন্ট। তোমার দাদা আর বৌদি সেখানে গিয়েই রবিশঙ্করের খোঁজ করছিল প্রথমে। তাই রবিশঙ্করের কানে কথাটা চলে যাওয়া বিচিত্র কিছু নয়। আর রবিশঙ্কর যদি বুঝতে পারে যে সে বিপদে পড়তে চলেছে, তাহলে সে আরও কোন বিপদ বাঁধাতে পারে। তাই তুমি....”

সীমন্তিনী পরিতোষকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “সে ঘটণাটা আমি শুনেছি পরিতোষ। আর শুনেই বুঝেছি যে তোমার কোন লোকই ওদের সতর্ক করে দিয়েছিল। তবে ওটা নিয়ে আর ভেবো না। আমি ওদের দু’জনকেই বুঝিয়ে দিয়েছি। ওরা ও’সব জায়গায় আর যাবে না”।
 

পরিতোষ বলল, “দ্যাটস ফাইন। তবে শোনো ডার্লিং। আমাকে ভুল বুঝো না। আমি কিন্তু তোমার দাদাভাইয়ের ওপর নজর রাখতে তাকে আমার লিস্টে টার্গেট নাম্বার ফোর হিসেবে রেখেছি। আমার মনে হয়েছে কিছুদিন তাদের ওপর ওয়াচ রাখা দরকার। না তুমি ভেবনা যে আমি তাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখছি বা অন্য কিছু সন্দেহ করছি। যে তোমার ভালবাসা পেয়েছে সে যে একেবারে খাঁটি সোনা এ ব্যাপারে আমার মনে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। এটা করছি জাস্ট অ্যাজ এ সিকিউরিটি মিজার। যাতে তারা নতুন কোন বিপদের মুখে পড়লে আমি তাদের সাহায্য করতে পারি। আশা করি তুমি আমার উদ্দেশ্যটা বুঝতে পেরেছ”?
 

সীমন্তিনী খুব শান্তভাবে বলল, “তুমি এমন করে বলছ কেন পরিতোষ। আমি জানি তুমি আমার দাদাভাই আর রচু সোনার নিরাপত্তার জন্য সব কিছু করবে”।
 

পরিতোষ বলল, “এই দাঁড়াও দাঁড়াও ডার্লিং। তুমি কি তোমার বৌদি রচনাকে রচু সোনা বলে ডাকো”?
 

সীমন্তিনী অবাক হয়ে বলল, “ওর নাম যে রচনা, সেটাও জেনে ফেলেছ? তবে হ্যা, আমার দাদাভাইয়ের বিয়ের আগে থেকেই আমি ওকে ওই নামে ডাকি। কিন্তু সে’কথা আপাততঃ থাক। তুমি এবার আমাকে তোমার কোর্স অফ অ্যাকশন সম্বন্ধে বল দেখি”।
 

পরিতোষ বলল, “সরি ডার্লিং। নিজের অ্যাকশন প্ল্যান আমি কাউকে জানতে দিই না। আর তুমিও সেটা জানতে চেও না। তুমি শুধু আউটকাম সম্বন্ধে প্রশ্ন করবে আমাকে। তবে তোমার বন্ধু হিসেবে আপাততঃ শুধু এটুকু বলতে পারি যে ব্লু প্রিন্ট বানানো হয়ে গেছে। দুটো টার্গেটে কাজ কাল সকাল থেকেই শুরু হচ্ছে। মানে টার্গেট ওয়ান আর টুর ওপর। টার্গেট থ্রির অবজার্ভেশন চলছে। আর টার্গেট ফোরে ভোর চারটে থেকে রাত বারোটা অব্দি ওয়াচম্যানেরা নজর রেখে চলছে”।
 

সীমন্তিনী বলল, “ওকে পরিতোষ। তবে একটা অনুরোধ তোমায় করছি। দাদাভাইয়ের টাকাটা ফিরে পাই আর না পাই, সে কূকর্মটা যারা করেছে ওই বদমাশ গুলোকে কিন্তু শাস্তি দিতেই হবে। ওরা যেন বুঝতে পারে আমার দাদাভাইকে ঠকিয়ে ওরা কত বড় ভুল করেছে”?
 

পরিতোষ বলল, “ডার্লিং, তুমি ইমোশনাল হয়ে পড়ছ। আমাদের কাজে ইমোশনাল হয়ে পড়াটা কিন্তু খুব বিপজ্জনক, এ’কথাটা ভুলে গেলে”?

সীমন্তিনী অবাক হয়ে বলল, “মানে? কী বলতে চাইছ তুমি”?
 

পরিতোষ বলল, “একটু মাথা ঠাণ্ডা করে ভেবে দেখ তো ডার্লিং। যে অপরাধ তারা করেছে, তাতে আইন মাফিক শাস্তি দিলে কি সেটা যথেষ্ট হবে বলে ভাবছ তুমি? এ অপরাধের জন্য কোর্ট কি তাদের মৃত্যুদণ্ড দেবে? কী শাস্তি হতে পারে তাদের, সেটা একটু ভেবে দেখ তো? এক দু’বছরের কারাবসের বেশী আর কি শাস্তি হবে তাদের? আর তাছাড়া ডিফেন্স লইয়াররাও কি ছেড়ে কথা কইবে? আর দু’বছর জেল খেটে বেরিয়ে এসে তারা যে আবার তোমার দাদাভাইয়ের ওপর কোন প্রতিহিংসামূলক কিছু করতে চাইবে না, তারও কি কোন গ্যারান্টি আছে”?

সীমন্তিনী একটু থতমত খেয়ে কোন রকমে বলল, “হ্যা, সে’কথা তো ঠিক। কিন্তু তাহলে কী হবে”?

পরিতোষ বলল, “হতাশ হবার মত কিছু নেই ডার্লিং। তোমার প্রাণের মানুষটার যে ক্ষতি ওরা করেছে তার অনেকগুণ বেশী শাস্তি ওরা পাবে। কিন্তু ওদেরকে বুঝতে দেওয়া যাবে না যে তোমার দাদাভাইকে ঠকিয়েছে বলেই ওরা এ শাস্তি পাচ্ছে। তাতে ভবিষ্যতে তোমার দাদাভাইয়ের ওপর আরও কোন বিপদ নেমে আসতে পারে। তুমি সেটা বরদাস্ত করতে পারবে”?
 

সীমন্তিনী প্রায় আঁতকে উঠে বলল, “না না পরিতোষ। প্লীজ এমন কথা বোল না তুমি”।

পরিতোষ বলল, “সে জন্যেই বলছি, আমার কথাটা মন দিয়ে শোন। তোমার দাদাভাইয়ের কাছ থেকে ওরা দু’লাখ টাকা লুটেছিল। আর আমি ওদের কাছ থেকে এর অনেকগুণ বেশী আদায় করে ছাড়ব। আর টার্গেট ওয়ানকে ইম্মোরাল ট্রাফিক অ্যাক্টে জেলে ঢোকাব। আর এমনভাবে কেসটা সাজাব যে অন্ততঃ পাঁচ বছরের জন্যে ওকে শ্রীঘরে বাস করতে হয়। টার্গেট টুকেও তেমনই আরেকটা ফলস কেসে কেমন ভাবে ফাঁসাচ্ছি তা তুমি সময় মত জানতে পারবে। তবে কোন না কোন সময় ওরা তো জেল থেকে ছাড়া পাবেই। কিন্তু ওরা এটা বুঝতেই পারবে না যে তোমার দাদাভাইকে লুট করেছে বলেই ওদের এমন শাস্তি ভোগ করতে হয়েছে। তাই তোমার দাদাভাইয়ের ওপর প্রতিশোধ নেবারও কোন সম্ভাবনাও থাকবে না। এবার বুঝতে পারছ তো”?
 

সীমন্তিনী শান্তগলায় জবাব দিল, “হ্যা পরিতোষ, তুমি ঠিক বলছ। আমি সত্যি ইমোশনাল হয়েই অমনটা ভেবেছিলাম। সরি”।
 

পরিতোষ বলল, “সরি বলার কি আছে ডার্লিং? আমি তো জানি তোমার দাদাভাই তোমার কাছে কী, আর কতখানি। আমি তোমাকে চেয়েও পাই নি। আর তুমি তাকে স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিয়েও আঁকড়ে ধরে আছ। তোমার মনের সিংহাসনে তোমার দাদাভাই ছাড়া আর কেউ জায়গা পায়নি। আর এটাও জানি, তোমার জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত সে-ই তোমার হৃদয়ের আসনের একমাত্র অধিকারী হয়ে থাকবে। তোমাকে আমি ভালবেসে নিজের করে পেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তোমার সাধনার কথা শুনে তোমাকে মনে মনে শুধু প্রণামই করে আসছি গত তিন বছর ধরে। এমনভাবে ক’জন ভালবাসতে পারে? আমার ভালবাসা পূর্ণতা না পেলেও তোমার ভালবাসাকে আমি কুর্ণিশ করতে বাধ্য হয়েছি ডার্লিং”।

সীমন্তিনী পরিতোষকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “আমি তোমায় যদি আরেকটা অনুরোধ করি, তুমি আমার সে অনুরোধটাও রাখবে পরিতোষ”?
 

পরিতোষ বলল, “কী বলছ ডার্লিং! তোমার কথা রাখব না, এ কখনও হতে পারে? বল কি বলবে”।

সীমন্তিনী বলল, “আগে তুমি কথা দাও আমার অনুরোধটা রাখবে। প্লীজ পরি”।

পরিতোষ বলল, “আচ্ছা বাবা, ঠিক আছে। রাখব তোমার কথা। এবার বলে ফেল তো”।

সীমন্তিনী বলল, “এবার তুমি একটা পছন্দসই মেয়ে খুঁজে তাকে বিয়ে করে সংসারী হও না”।

পরিতোষ কয়েক মূহুর্ত চুপ করে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, “ঠিক আছে আমার মুন ডার্লিং। চেষ্টা করব। আচ্ছা রাখছি এখন” বলেই ফোন কেটে দিল।
 

ফোনটা নামিয়ে রেখে পরিতোষ অনেকক্ষণ মাথা নিচু করে বসে নবনীতার কথা ভাবতে লাগল। কিন্তু মিনিট পাঁচেক বাদেই মাথা ঝাঁকি দিয়ে যেন সব ভাবনা ঝেরে ফেলে দিল। পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে নিয়ে আবার মোবাইল থেকে কাউকে একটা ফোন করল। ও’পাশের সাড়া পেতেই সে বলল, “কিরে সব ঠিকঠাক আছে তো”? আর দু’সেকেণ্ড বাদে সে আবার বলে উঠল, “শোন, তোর অপারেশনটা কাল থেকেই শুরু করে দে। আর অপারেশনটা যে দুটো ফেজে পুরো হবে তা তো জানিসই। তোর পার্টটুকু করতেই সময় বেশী লাগবে। পরের পার্টের পুরো কাজটা তো একদিনেই শেষ হয়ে যাবে। তাই তুই আর দেরী না করে কাল সকাল থেকেই কাজে নেমে পর। তোর টিমের বাকিদেরও তৈরী করে নে। আর যে ভাবে প্ল্যানটা করে দিয়েছি, ঠিক ঠিক সেই ভাবেই স্টেপ বাই স্টেপ এগিয়ে যাবি। আর আমাকে সকাল বিকের দু’বেলা আপডেট দিয়ে যাবি। প্রয়োজনে প্ল্যানে হেরফের হতে পারে। আর সবটাই ডিপেণ্ড করবে তোর দেওয়া ফিডব্যাকের ওপর। তাই রোজ দু’বেলা লেটেস্ট আপডেট জানাবি আমাকে। ঠিক আছে”?
 

তারপর আরেকজনকে ফোন করে বলল, “এই বামুন ব্যাটা, ফিল্ডে নেমে পর। তবে দেখিস কোনরকম উল্টো পাল্টা যেন না হয়। ওরা যেন ঘূণাক্ষরেও জানতে না পারে যে এর পেছনে কে বা কারা আছে। আর যেভাবে ব্লু প্রিন্ট বানিয়ে দিয়েছি, সেটা ঠিক ঠাক ফলো করে চললে সবকিছু স্মুথলি হয়ে যাবে। আর কাজের শুরুটা ওই বাজার থেকে কর, ঠিক আছে”?
 

কয়েক সেকেণ্ড ও’পাশের কথা শুনে “ও কে বাই” বলে সে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ল।

****************
_______________________________________________
 
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply
#50
 

(Update No. 70)

পরদিন সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ একটা পলিথিনের ব্যাগ হাতে নিয়ে একজন আটাশ ঊণত্রিশ বছরের সুপুরুষ যুবককে দেখা গেল রাস্তার একটা বিশেষ জায়গায় বারবার এদিক ওদিক ঘোরা ফেরা করছে। দু’একবার সে চোখ তুলে একটা তালাবন্ধ ঘরের দিকেও তাকাচ্ছিল। কিন্তু তার বেশী নজর ছিল একটা বন্ধ ঝুপড়ি দোকান ঘরের ওপর। কিছুক্ষণ বাদেই ঝুপড়ি দোকানটার দরজা খুলতে দেখেই যুবকটি পাশের চায়ের দোকানে ঢুকে পড়ল। এক কাপ চা খেয়ে মিনিট দশেক বাদেই চায়ের দোকান থেকে বেরিয়ে এসে সে ওই ঝুপড়ি দোকানটায় এসে দেখে বছর চল্লিশেকের গাট্টাগোট্টা চেহারার একটা লোক বসে বসে হাতে খৈনী ডলছে। যুবক ছেলেটা কাউন্টার ঘেঁসে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, “ভাইয়া, আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব”?

ভেতরের লোকটা কৌতুহলী চোখে ছেলেটার দিকে চেয়ে বলল, “হ্যা বলুন”।

যুবকটি বলল, “দেখুন আমি এ এলাকায় নতুন। দেড় দু’মাস হল এসেছি মাত্র” বলে হাত দিয়ে একদিকে দেখিয়ে বলল, “ওই ওদিকে তিন নম্বর গলির ভেতর একটা ঘর ভাড়া নিয়েছি। আমার কিছু শার্ট প্যান্ট ইস্ত্রি করতে হবে”।
 

দোকানের লোকটা বলল, “কি ইস্তিরি করবেন, দেখি”।

ছেলেটা নিজের হাতের ব্যাগটার ভেতর থেকে দুটো শার্ট আর দুটো প্যান্ট বের করে কাউন্টারের ওপর রেখে বলল, “এই যে, এই দু’জোড়া শার্ট আর প্যান্ট”।

লোকটা খৈনী মুখে দিয়ে হাত ঝেড়ে কাউন্টারের কাছে এসে ছেলেটার শার্ট প্যান্টগুলো নেড়েচেড়ে দেখতে দেখতে বলল, “ঠিক আছে বাবুজী। হয়ে যাবে। আপনি বিকেলের দিকে ডেলিভারি পেয়ে যাবেন” বলে শার্ট প্যান্টগুলোতে ট্যাগ লাগাতে লাগাতে বলল, “আপনার নামটা বলুন তো বাবুজী”।

ছেলেটা বলল, “শঙ্কর, শঙ্কর পাণ্ডে আমার নাম”।

লোকটা ট্যাগে কিছু একটা লিখে বলল, “তো। আপনিও তাহলে বিহারেরই লোক”?

ছেলেটা বলল, “হ্যা তা ঠিক। কিন্তু আপনিও কি বিহারী”?

লোকটা বলল, “হাঁ বাবুজী। আমিও বিহারী। আমার নাম সরজু পাসোয়ান। তবে পাসোয়ান বলে এখন আর আমাকে কেউ চেনে না। সরজু লণ্ড্রীওয়ালা বলেই সবাই জানে”।
 

শঙ্কর এবার বিস্ময়ে চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞেস করল, “ক্যা? আপনিই সরজু লণ্ড্রীওয়ালা? সত্যি বলছেন”?

এবার সরজুও খানিকটা অবাক হয়ে বলল, “হাঁ বাবুজী। আমিই সরজু লণ্ড্রীওয়ালা? কিন্তু আপনি তো এখানে নতুন এসেছেন বললেন। আপনি আমার নাম কোথায় শুনলেন”?
 

শঙ্কর বলল, “সরজু ভাইয়া, আপনার নাম তো এখানে প্রায় সকলেই জানে। তবে আমি প্রথম আপনার নাম শুনেছি লচ্ছু ভাইয়ের মুখে”।

সরজু জিজ্ঞেস করল, “কৌন লচ্ছু ভাই? ওই সামনের মার্কেটের ফলওয়ালা লছমন”?

শঙ্কর বলল, “হাঁ হাঁ বো হি”।

সরজু হেসে বলল, “আপনি ওকে চেনেন নাকি বাবুজী? লচ্ছু তো আমার অনেক পুরানা বন্ধু আছে”।

শঙ্করও মুচকি হেসে বলল, “হাঁ সরজু ভাইয়া। লচ্ছু ভাইয়ের কাছ থেকে তো আমি রোজই ফল কিনি। তার সাথে ভাল দোস্তীও হয়ে গেছে আমার। লচ্ছু ভাই আপনাদের দোস্তীর কথা আমাকে অনেক বলেছে। ভাবীর কথাও বলেছে সে। সে’সব কথা শুনে আমারও তো মন চাইছিল আপনার সাথে দোস্তী করতে”।

সরজু বলল, “কৌন ভাবীর কথা শুনেছেন ওর কাছে বাবুজী? বিন্দিয়া ভাবী”?
 

শঙ্কর বলল, “না না সরজু ভাইয়া, বিন্দিয়া ভাবী বুঝি আপনার বিবি হবেন? কিন্তু না লচ্ছু ভাই তো আমাকে অনুপমা ভাবীর কথা বলেছে”।

সরজু বলল, “ও, অব সমঝা বাবুজী। আপনি অনুপমা ভাবীর কথা শুনেছেন। ঠিক আছে। কিন্তু বিন্দিয়া ভাবীকেও আমার বিবি ভেবে ভুল করবেন না। অনুপমা ভাবী আর বিন্দিয়া ভাবী দু’জনেই আমার কাছে এক সমান”।
 

শঙ্কর বলল, “আরে সরজু ভাইয়া, আপনি কি বাবুজী বাবুজী রট লাগাচ্ছেন বলুন তো? আপনি লচ্ছু ভাইয়ের দোস্ত, আর লচ্ছু ভাই আমার দোস্ত। তাহলে আমিও তো আপনার দোস্ত কা দোস্ত হলাম না? ফির কেন বাবুজী বাবুজী বলছেন? আমাকে শঙ্কর ভাই বলে ডাকুন না”।

সরজু একটু হেসে বলল, “ঠিক হ্যায় শঙ্কর ভাইয়া। ওই হবে। তাহলে একটু ভেতরে এসে বসুন না। একটু গল্প সল্প করে আমাদের দোস্তীকে পাক্কা করে নিই”।
 

শঙ্কর খুশী হয়ে বলল, “হাঁ এবার ঠিক কথা বলেছেন আপনি সরজু ভাইয়া। কিন্তু কোথায় ঢুকতে বলছেন? আপনার দোকানের ভেতর? কিন্তু ঢুকব কোন দিক দিয়ে”?
 

সরজু দোকানের বাঁদিকে ঈশারা করে বলল, “এই দিকে একটা ছোট গলি আছে দেখুন। ওটা দিয়ে চলে আসুন। আমি আমার দোকানের পেছনের দরজা খুলে দিচ্ছি”।
 

শঙ্কর গলিটা দিয়ে ঢুকে খানিকটা ভেতরে যেতেই বাঁ পাশে একটা ছোট দরজা খুলে যেতে দেখল। সে দরজাটার সামনে থামতেই সরজুকে দেখতে পেয়ে সেদিকে এগিয়ে গেল। পেছনের দরজা দিয়ে দোকানের ভেতরে ঢুকে দেখে একদিকে দুটো চেয়ার রাখা আছে। সরজু শঙ্করকে একটা চেয়ারে বসতে দিয়ে বলল, “এখানে বসুন শঙ্কর ভাই। আর বলুন, ধন্দা ওয়ান্দা কি করেন আপনি”।

শঙ্কর চেয়ারে বসে পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে বলল, “আপনার চলে তো সরজু ভাইয়া? নিন একটা” বলে সরজুর হাতে একটা সিগারেট দিয়ে নিজেও একটা হাতে নিয়ে সিগারেটের প্যাকেটটাকে আবার পকেটের ভেতর রাখতে রাখতে বলল, “আমি তো অর্ডার সাপ্লাইয়ের বেওসা করি সরজু ভাইয়া। নানা ধরণের জিনিস কলকাতা থেকে নিয়ে বিহারের কিছু কিছু এলাকার সরকারী আর প্রাইভেট অফিসে সাপ্লাই করি। যার যা প্রয়োজন তাকে সেটাই সাপ্লাই করি। আমার বাড়ি বিহারের কিষনগঞ্জে। কিন্তু বেওসার কাজে আমাকে দো হফতে মে একবার কলকাতায় আসতেই হয়। কখনও কখনও সাতদিনও থাকতে হয় এখানে অর্ডারি সামান জোটাতে। তাই দেড় মাস আগে এখানে একটা ছোট ঘর ভাড়া নিয়েছি রাতে শোবার জন্যে। খানা পিনা সব এখানে হোটেলে করি। তবে ঘরে শুধু ফল কিনে রাখি। লচ্ছু ভাইয়ের সাথে তখন থেকেই আমার দোস্তী হয়েছে”।
 

সরজু বলল, “বাহ বাহ, খুব ভাল কথা। তা শঙ্কর ভাই, আপনি বিয়েশাদি করেছেন কি না”?
 

শঙ্কর একটু হেসে বলল, “করেছি সরজু ভাইয়া। সাত আট মাস হল। কিন্তু এখানে আসবার সময় তো আর বিবিকে সাথে আনতে পারি না। একবার এনেছিলাম। তখন আমি এখানে ঘর ভাড়া নিই নি। হোটেলে উঠেছিলাম। আমি সারাদিন বেওসার কাজে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়িয়েছি। আর ও বেচারী একা একা হোটেলের রুমে বসে টিভি দেখতে দেখতে হয়রান হয়ে গিয়েছিল। তারপর থেকে আর ও এখানে আসতেই চায় না। তাই আমি এখন একাই আসি। আর হরবার এসে ছয় সাত দিন করে থাকতে হয় বলে এখানে একটা ঘর ভাড়া করলাম। হোটেলে থাকলে মুনাফার অনেকটাই খরচ হয়ে যায়। আর এবার তো মনে হয় দস পন্দ্র দিন থাকতে হবে আমাকে। বহত সামান খরিদ করতে হবে”।

সরজু বলল, “খুব ভাল করেছেন শঙ্কর ভাই। খুন পসিনার কামাই যদি হোটেলের পেছনেই চলে যায় তাহলে পরিবার চলবে কেমন করে। আর এখানে তো কোন জিনিসের অভাব নেই। যা যা চাইবেন সব কিছু পাবেন। কিন্তু নতুন নতুন সাদি করেছেন। বিবিকে ছেড়ে রাত কাটাতে হয়ত ভাল লাগবে না। অবশ্য তেমন কষ্ট হলে টেম্পোরারি বিবি পেতে কোন অসুবিধা নেই। আর এখানে সে’সব চাইলেই পাবেন”।

শঙ্কর চোখ বড় বড় করে শ্বাস চেপে বলল, “আরে হাঁ, সরজু ভাইয়া। অভি অভি আপনি দোকান খুলবার আগে আমি এই পাশের দোকানে চা খেতে ঢুকেছিলাম। বয়টা আমাকে চা দিয়ে কি বলল জানেন? বলে কি বাবুজী রাত কে লিয়ে সাথী চাহিয়ে ক্যা? জ্যাদা নহী সির্ফ দো শ রুপিয়া মে মিল জায়েগা”।

সরজু একটু হেসে বলল, “ঝুট বলেনি শঙ্কর ভাই। এখানে দো শ তিন শ টাকায় সারা রাতের জন্য অনেক মেয়েমানুষ পেয়ে যাবেন। আমিও এক সময় ও’সব ধন্দা করেছি। কিন্তু সস্তার মেয়ে মানুষগুলোকে নিয়ে খুব ঝামেলা হয়। তাই এখন ও’সব ছেড়ে দিয়েছি”।

শঙ্কর বলল, “হাঁ সরজু ভাইয়া। সস্তার মেয়েগুলো কেমন হয় সেটা আমিও জানি। কিন্তু লচ্ছু ভাই তো আমাকে বলেছিল যে সে নাকি আপনার কাছ থেকেই অনুপমা ভাবীর টিকট নেয়! অনুপমা ভাবি নাকি খুব বঢ়িয়া সার্ভিস দেয়। আর সে তো আমাকেও বলেছিল যে আপনার কাছ থেকে অনুপমা ভাবীর একটা টিকিট নিতে”।
 

সরজু একটু হেসে বলল, “হাঁ সেটা তো ঠিকই শঙ্কর ভাই। কিন্তু অনুপমা ভাবী তো সস্তার মাল নয়। বহত কিমতি। তার একটা টিকিটে আমি কমিশন পাই ডের শ। আর এখানে আপনি ডের শ টাকায় আসল মালই পেয়ে যাবেন। অনুপমা ভাবী সাদিশুদা ঘর গিরহস্তী করনেওয়ালী ঔরত। দেখনে সুননে মে ভি লাজবাব। সার্ভিসকে বারে মে তো লচ্ছুর মুখেই শুনেছেন। তাই পয়সাও বহত খরচা করতে হবে”।

শঙ্কর বলল, “সরজু ভাই, সস্তার মাল আমি চাই না। আর রোজ রোজ আমার দরকারও নেই। আজ চার দিন হল, বিবিকে ছেড়ে আছি। খুব কষ্ট হচ্ছে। অনুপমা ভাবীর রেট কত? আমাকে একটা টিকিট দিন না”।

সরজু বলল, “কিন্তু শঙ্কর ভাই। অনুপমা ভাবীর টিকিট তো আপনাকে দিতে পারব না আমি এখন। তবে আপনি চাইলে আমি বিন্দিয়া ভাবীর একটা টিকিট আপনাকে দিতে পারি। অনুপমা ভাবীর চেয়ে একটু সস্তাই হবে”।

শঙ্কর জিজ্ঞেস করল, “এই বিন্দিয়া ভাবী আবার কে সরজু ভাই? লচ্ছু ভাই তো আমাকে অনুপমা ভাবীর কথা বলেছে। আর তার মুখে অনুপমা ভাবীর সব কথা শুনে আমি তার টিকিটই নিতে চাইছিলাম”।
 

সরজু বলল, “শঙ্কর ভাই, লচ্ছু ভাই বোধ হয় খবরটা জানে না। আসলে অনুপমা ভাবী আমার দোকানের কাছেই কামেশ্বরজীর ঘরে ভাড়া থাকত। পাঁচ দিন আগে তারা এখান থেকে বড়বাজারের দিকে একটা জায়গায় চলে গেছে। আর তার ফোন নাম্বারে ফোন করেও তাকে পাচ্ছি না। আর নতুন জায়গায় গিয়ে সে আবার বেওসা সুরু করেছে কি না সেটাও জানিনা আমি। তার সাথে কথা না হওয়া পর্যন্ত তো আমি তার জন্য টিকিট দিতে পারব না। তাই আপনাকে বলছি আপনি বিন্দিয়া ভাবীর একটা টিকিট নিন। আমার কাছে তো শুধু এই দু’জনের টিকিটই পাবেন। বিন্দিয়া ভাবীও খুব ভাল মাল আছে। সার্ভিসও ভাল পাবেন। কিন্তু তার বয়সটা একটু বেশী। চুয়াল্লিশ সাল। কিন্তু সে-ও খুব গরম চীজ। অনুপমা ভাবী তো মাত্র তেইশ বছরের। আর অনুপমা ভাবীর রেট হচ্ছে তিন হজার আর পাঞ্চ হজার। আর বিন্দিয়া ভাবীর টিকিটের দাম ঢাই হজার। কিন্তু আমি আপনাকে গ্যারান্টি দিচ্ছি শঙ্কর ভাই। বিন্দিয়া ভাবীও আপনাকে ভরপুর খুশী দেবে”।
 

শঙ্কর মনে মনে একটু ভেবে জিজ্ঞেস করল, “সরজু ভাইয়া, অনুপমা ভাবীর তো দুটো রেট বললেন। তিন হজার আর পাঞ্চ হজার। কিন্তু বিন্দিয়া ভাবীর শুধু একটাই রেট বললেন কেন আপনি”?

সরজু হেসে বলল, “আপনি বোধহয় এ লাইন সম্বন্ধে খুব বেশী কিছু জানেন না শঙ্কর ভাই। তাই আপনি বোঝেন নি। আচ্ছা আমি আপনাকে বুঝিয়ে দিচ্ছি। অনুপমা ভাবীকে একঘন্টার জন্য নিলে তার দুটো আলাদা আলাদা রেট আছে। যদি তার নিজের ঘরে একঘন্টা কাটান তাহলে তিন হজার দিতে হবে। আর আপনি যদি তাকে নিয়ে কোন হোটেলে বা আপনার নিজের ঘরে ডেকে আনতে চান তাহলে আপনাকে পাঞ্চ হজার দিতে হবে। আর বিন্দিয়া ভাবী শুধু তার নিজের ঘরেই বেওসা করে, সে বাইরে কোথাও যায় না। সে একঘন্টার জন্যে ঢাই হজার নেয়। এটাই হল কথা”।
 

শঙ্কর শুনে বলল, “ও, এক ঘন্টার ঘরে আর বাইরের রেট আলাদা আলাদা। কিন্তু সরজু ভাইয়া, যদি আমি সারা রাতের জন্য চাই, তাহলে”?
 

সরজু জবাব দিল, “সারা রাতের জন্য বিন্দিয়া ভাবীর বুকিং করলে আপনাকে দস হজার দিতে হবে। আর অনুপমা ভাবীর ঘরে হোল নাইটের টিকিট সব সময় আপনি পাবেন না। তার হাজবেণ্ড বাইরে থাকলেই সে শুধু হোল নাইটের বুকিং দেয়। তখন তার ঘরে হলে বারহ হজার, আর বাইরে হলে পন্দ্রহ হজার”।

শঙ্কর এবার জিজ্ঞেস করল, “আর বিন্দিয়া ভাবীর হোল নাইটের টিকট সব দিন পাওয়া যায়”?
 

সরজু বলল, “বেশীর ভাগ সময়েই পাবেন। তবে হোল নাইট মানে রাত দশটা থেকে ভোর পাঞ্চটা পর্যন্ত। আর আগে থেকে কারুর বুকিং কনফার্ম করা না থাকলে পেয়ে যাবেন। আপনি কি হোল নাইটের জন্য নিতে চান”?

শঙ্কর একটু দ্বিধান্বিত ভাবে বলল, “না প্রথমেই হোল নাইটের জন্য চাই না আমি। কিন্তু সরজু ভাইয়া, আমি যে অনুপমা ভাবীর টিকিটই নিতে চাইছিলাম। একটু চেষ্টা করে দেখুন না, যদি একটা টিকিট দিতে পারেন। শুধু একঘন্টার জন্যে হলেও চলবে”।
 

সরজু বলল, “সেটাই তো মুস্কিল শঙ্কর ভাইয়া। আমিও তো তার সাথে কথা বলতে পাচ্ছি না। মনে হয় সে তার সিমকার্ড চেঞ্জ করেছে। রোজ অনেক কাস্টমার তার বুকিং নিতে আমার কাছে আসছে। কিন্তু কাউকে টিকিট দিতে পারছি না। তাই আমারও ইনকাম হচ্ছে না। তবে আমি তাকে অনেক কাস্টমার দিয়েছি। তাই আমার মনে হয় অনুপমা ভাবী নতুন নাম্বার নিয়ে থাকলে আমাকে নিশ্চয়ই ফোন করবে। তার সাথে কথা বলার পরই জানতে পারব সে আর বুকিং নেবে কি না। তার আগে তো আমার কিছু করার নেই”।

শঙ্কর একটু মনমরা হয়ে বলল, “ওহ, তাহলে তো আর এ ব্যাপারে কথা বলে লাভ নেই। ঠিক আছে সরজু ভাইয়া, আমি তাহলে এখন চলি”।

সরজু বলল, “আরে শঙ্কর ভাইয়া, একটু বসুন না। আজ প্রথম আপনার সাথে দোস্তি হল। এককাপ চা তো খেয়ে যাবেন। একটু বসুন। আমি পাশের দোকানে একটু বলে আসছি। এক মিনিট”।
 

শঙ্করের খুব একটা বসবার ইচ্ছে না থাকলেও সে উঠল না। সরজু বাইরে বেরিয়ে গিয়ে মিনিট দুয়েক বাদেই আবার ফিরে এসে বলল, “হাঁ শঙ্কর ভাইয়া, চায় আ জায়েগা। আপনি বলুন তো আপনার কাম ধান্দা সব ঠিক চলছে তো”?
 

শঙ্কর বলল, “হাঁ সরজু ভাইয়া, কাম ধন্দা তো ঠিকই চলছে। আরা এবার তো ভাল অর্ডার পেয়েছি। তাই তো এখানে দস পন্দ্রহ দিন থাকতে হবে”।

সরজু বলল, “বাহ খুব ভাল কথা। আমার তো লণ্ড্রীর বেওসাটা ঠিকই চলছে। কিন্তু এটা থেকে তো খুব বেশী কিছু ইনকাম হয় না। কোন কোন দিন তো একশ রুপিয়াও হয় না। গেল চার পাঁচ দিনে অনুপমা ভাবীর কোন টিকিট বেচতে পারছি না। আর এদিকে বিন্দিয়া ভাবীর ডিমাণ্ড অনুপমা ভাবীর মত নয়। তবু রোজ একটা দুটো করে বিন্দিয়া ভাবীর টিকিট বেচতে পারছি। ওটাই তো আমার আসলি ইনকাম। কিন্তু অনুপমা ভাবীর টিকিট দিতে না পেরে খুব লোকশান হচ্ছে”।

দোকানের সামনে একজন লোক এসে দাঁড়াতে সরজু কথা থামিয়ে তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “হাঁ বাবুজী বলুন। কিছু ইস্ত্রী করবেন”?
 

লোকটা কাউন্টারের ওপর একটু ঝুঁকে আস্তে করে বলল, “সিনেমার টিকিট আছে? আজকের শোর”।
 

সরজুও গলা নামিয়ে বলল, “অনুপমা হল এখন বন্ধ আছে ক’দিন থেকে। বিন্দিয়া হলের টিকিট পাবেন”।

লোকটা বলল, “ঠিক আছে একটা টিকিট দিন। বিকেল চারটের শো-র”।

সরজু বলল, “আজকের টিকিট হবে না বাবুজী। কালকের টিকিট দিতে পারি। তবে কনফার্মেশন কিন্তু কাল সকালে পাবেন, আসলে অনুপমা হল বন্ধ বলেই বিন্দিয়া হলে ভিড় বেশী হচ্ছে তো”।

লোকটা পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করতে করতে বলল, “ঠিক আছে। কাল বিকেল চারটের শো-র একটা টিকিট দিন” বলে সরজুর হাতে টাকা দিল। সরজু টাকাটা দেখে পকেটে রেখে পকেট থেকে একটা ডাইরী বের করে সেটা খুলে লোকটাকে দেখিয়ে বলল, “দেখুন তো বাবুজী। এটাই তো আপনার নম্বর। তাই না”?

লোকটা ডাইরীর দিকে দেখে বলল, “হ্যা ওটাই আমার নম্বর”।

সরজু এবার তাকে বলল, “ঠিক আছে বাবুজী, আমি কাল সকালে আপনাকে ফোন করব”।
 

লোকটা আর কিছু না বলে চলে যেতেই চায়ের দোকানের একটা ছেলে দু’কাপ চা কাউন্টারে রেখে বলল, “লিজিয়ে সরজু ভাই। আপনার চা”।
 

ছেলেটা চলে যেতেই সরজু চায়ের কাপ হাতে ভেতরে এসে শঙ্করের দিকে এক কাপ চা বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “আরে বাহ, শঙ্কর ভাইয়া, আপনি তো আমার জন্যে খুব লাকি আছেন। আপনি আছেন বলেই সকাল সকাল একটা টিকিট বেচতে পারলাম। ডের শ রুপিয়া ইনকাম হয়ে গেল আমার”।
 

শঙ্কর ব্যাপারটা আন্দাজ করতে পারলেও না বোঝার ভাণ করে জিজ্ঞেস করল, “আপনি কি সিনেমার টিকিটও ব্ল্যাক করেন নাকি সরজু ভাইয়া”।
 

সরজু নিজের চেয়ারে বসে চায়ের কাপে একটা চুমুক দিয়ে বলল, “আরে না শঙ্কর ভাইয়া। সবাই তো আর আপনার মত নতুন খিলাড়ি নয়। এ আমার পুরানা কাস্টমার। তাই অল্প কথায় কাজ সাড়া হয়ে গেল। এই লোকটা বিন্দিয়া ভাবীর একটা টিকিট নিল। এ’সব ধান্দা করতে গেলে সবার সামনে তো সব কথা খুলে বলা যায় না। একটু রেখে ঢেকেই কথা বলতে হয়। অনুপমা হল আর বিন্দিয়া হলের টিকিটই এখানে পাওয়া যায়। আর সবাই সে ভাবেই সিনেমার টিকিট কিনতে আসে আমার কাছে”।

শঙ্কর খুশী হয়ে বলল, “বাহ, খুব সুন্দর সিস্টেম বানিয়েছেন তো আপনি”?

সরজু হেসে বলল, “আমার ধান্দা তো এভাবেই করতে হয় শঙ্কর ভাই। আচ্ছা এক মিনিট দাঁড়ান। একটা ফোন করে নিই” বলেই নিজের পকেট থেকে মোবাইল বের করে একজনকে ফোন করে বলল, “হাঁ রাকেশ জী। সুনিয়ে। আপকা টিকট কনফার্ম হো গয়া। আজ শাম পাঞ্চ বজে কা। আপকা কোড নাম্বার হোগা সরজু এক শ নব্বই। ঠিক হ্যায়”? বলে কয়েক সেকেণ্ড চুপ করে থেকে বলল, “হাঁ হাঁ, একদম পাক্কা। আপ বেফিক্র রহিয়ে। সব কনফার্ম হো গয়া হ্যায়। পর আগে ভি মুঝসে মিলিয়েগা জরুর। ওকে রাকেশ জী”।
 

ফোন রেখে শঙ্করের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল, “এই লোকটা কাল বিন্দিয়া ভাবীর টিকিট নিয়েছিল। আজ টিকিট কনফার্ম করে দিলাম”।
 

শঙ্কর জিজ্ঞেস করল, “তার মানে এ লোকটা আগে টিকিট নিয়েছিল আপনার কাছ থেকে”?

সরজু বলল, “হাঁ শঙ্কর ভাইয়া। এ লোকটা কাল টিকিট কিনেছিল। আপনি তো এ লাইনে নতুন। তাই সবটা ভাল বুঝতে পারছেন না। আসলে আমার এখানে এটাই সিস্টেম। ধরুন আপনি এখন কাল দুপুর দুটোয় একঘন্টার জন্যে বিন্দিয়া ভাবীর টিকিট চাইলেন আমার কাছে। তাহলে আপনাকে তো এখন ডেরশ রুপিয়া দিতে হবে। কিন্তু আপনার টিকিট কিন্তু এখনই কনফার্ম হবে না। রাতে আমার বিন্দিয়া ভাবীর সাথে কথা হবে। সে যদি কাল দুপুর দুটোয় ফ্রি থাকে তবেই তো আপনার টিকিট কনফার্ম করে আপনাকে সেখানে পাঠাতে পারব আমি। আর যদি বিন্দিয়া ভাবী কাল দুপুর দুটোয় অন্য কাস্টমার নিয়ে থাকেন তাহলে তো আপনি আর তাকে ওই সময় পাবেন না। তাই আপনার টিকিটও কনফার্ম করতে পারব না। আর তখন আপনার ডেরশ রুপিয়া আপনি আমার কাছ থেকে কাল সকালে ফেরত পেয়ে যাবেন। পরে চাইলে আপনাকে আবার নতুন করে টিকিট নিতে হবে। তবে আমি কনফার্ম করে দেবার পর আপনি সিনেমা দেখুন বা না দেখুন, এই ডেরশ রুপিয়া কিন্ত আর ফেরত পাবেন না। আপনি সেখানে সময় মত যেতে না পারলে আপনার বুকিং কেনসিল হয়ে যাবে। ঠিক টাইমে আপনাকে সেখানে হাজির হতে হবে। টাইমিং কিন্তু চেঞ্জ করা যায় না। কারন একঘন্টা বাদে ভাবীদের অন্য কাস্টমার থাকবে। তাই টাইমিং মিস হলে আপনার শো দেখা ক্যানসিল হয়ে যাবে আর এই ডেরশ রুপিয়াও কিন্তু বরবাদ হয়ে যাবে”।

শঙ্কর কিছু একটা বলতে যেতেই সরজুর পকেটের মোবাইলটা আবার বেজে উঠল। সরজু পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দেখে শঙ্করকে বলল, “শঙ্কর ভাইয়া, চুপ রহিয়ে গা। এক অঞ্জান নাম্বার থেকে ফোন এসেছে” বলে কলটা রিসিভ করে বলল, “হ্যালো, কৌন বোল রহে হ্যায় আপ”?
 

একটু চুপ করে থেকেই সরজুর চোখ মুখ চকচক করে উঠল। সে খুশী গলায় বলে উঠল, “আরে ভাবীজী আপনি? আপনাকে তো আমি চার পাঞ্চ দিন থেকে ফোন করে পাচ্ছিই না”।

আবার কিছুক্ষণ অন্যদিকের কথা শুনে বলল, “আরে ভাবীজী, আপনার মার্কেটে কী ডিমাণ্ড আছে সে কি আপনি জানেন না? রোজ তিন চারজন করে কাস্টমার ফিরিয়ে দিচ্ছি আমি। আপনার সাথে কন্টাক্ট করতে না পারলে আমি কি করে তাদের টিকিট দেব বলুন তো? আর তাছাড়া আপনি কোথায় আছেন, সেখানে বেওসা করছেন কি না, এসব তো আমি কিছুই জানি না। ফোন করেও বার বার শুনছি সুইচ অফ” বলে আবার থেমে গিয়ে কিছুক্ষণ ও’পাশের কথা মন দিয়ে শুনে বলল, “আরে ভাবিজী আজ সকালেও তো একজন আমার কাছে এসেছিল আপনার বুকিং নেবার জন্য। আমি তো তাকে ফিরিয়ে দিলাম। কিন্তু হতে পারে সে হয়ত আশে পাশেই আছে। বাইরে গিয়ে দেখতে হবে”।

তারপর অনেকক্ষণ ফোন কানে ধরে খুব মন দিয়ে কথাগুলো শুনে বলল, “ঠিক আছে ভাবীজী, আমি দেখছি। তবে আমি যদি তাকে দেখতে পাই তাহলে কোন টাইমের জন্য তাকে কনফার্ম করে দেব বলুন”।

আবার প্রায় মিনিট দুয়েক ও’পাশের কথা শুনে বলল, “ঠিক আছে ভাবীজী, আমি দেখছি। আপনাকে পরে ফোন করছি তাহলে”।

______________________________
[+] 2 users Like riank55's post
Like Reply
#51
(Update No. 71)

ফোনে কথা বলা শেষ করে সে মিনিট খানেক ফোনটা হাতে নিয়ে খুটখাট করে শঙ্করের দিকে তাকিয়ে বলল, “আপনি সত্যি সত্যি বহুত কিস্মতওয়ালা আছেন শঙ্কর ভাইয়া। অনুপমা ভাবীর ফোন ছিল। সে কাল থেকে বুকিং নেবে। তাহলে আপনি কি টিকিট নিতে চাইছেন এখন”?
 

শঙ্কর খুব খুশী হয়ে বলল, “হ্যা সরজু ভাইয়া। সেটা নেবার জন্যেই তো আমি এসেছি। কিন্তু আজকের বুকিং হবে না”?

সরজু বলল, “না শঙ্কর ভাইয়া। আজ ভাবীজীর হাজবেণ্ড বাড়িতে আছে। কাল সকালে সে বেওসার কাজে বাইরে যাচ্ছে কয়েক দিনের জন্য। তাই কালকের বুকিংই পাবেন”।

শঙ্কর বলল, “ঠিক আছে সরজু ভাইয়া, তবে আমাকে তো বড়বাজার যেতে হবে সিনেমা দেখতে, তাই না? তাহলে বিকেল চারটে থেকে একঘন্টার বুকিং করে দিন”।
 

সরজু বলল, “বিকেল চারটার টিকিট? কিন্তু ভাবীজী তো বলছিল সন্ধ্যা ছটার আগে বুকিং নেবে না”।

শঙ্কর কিছু বলতে যেতেই সরজু আবার পকেট থেকে ফোন বের করতে করতে বলল, “এক মিনিট রুকিয়ে শঙ্কর ভাইয়া” বলেই আবার কাউকে ফোন করল।

ফোন কানে লাগিয়ে বলল, “হাঁ ভাবীজী। কাস্টমারটাকে পেয়েছি। কিন্তু নতুন লোক তো। তাই একটু বোঝাতে হচ্ছে। কিন্তু ভাবীজী সে তো কাল বিকেল চারটার বুকিং চাইছে। পর আপনি তো দুপুর .....” কথা শেষ না করেই সরজু থেমে গিয়ে ও’দিকের কথা শুনতে লাগল। তারপর বলল, “ঠিক হ্যায় ভাবীজি, আমি তাহলে তাকে টিকিট দিয়ে একেবারে কনফার্ম করে কোড দিয়ে দিচ্ছি” বলে ফোন কেটে দিল।
 

শঙ্করের দিকে চেয়ে হেসে বলল, “আপনি সচমুচ অনেক কিস্মতওয়ালা আছেন শঙ্কর ভাইয়া। ভাবীজী আপনার চারটার শোয়ের টিকিট কনফার্ম করে দিল। এবার আপনি কনফার্ম টিকিট নিয়ে নিতে পারেন”।
 

শঙ্কর জিজ্ঞেস করল, “সে তো খুব ভাল কথা সরজু ভাইয়া। তাহলে আমাকে কত দিতে হবে এখন”?

সরজু জবাব দিল, “আমাকে আপনি শুধু এখন ডেরশ রুপিয়া দিন। কিন্তু আপনি কি ভাবীজীকে বাইরে আনতে চান? না তার ঘরে যাবেন”?

শঙ্কর পকেট থেকে দেড়শ টাকা বের করে সরজুর হাতে দিয়ে বলল, “না না সরজু ভাইয়া, বাইরে কোথাও নয়। আমি সেখানেই মানে তার বাড়িতেই যাব”।

সরজু টাকাটা নিয়ে নিজের পকেটে রেখে বলল, “তাহলে কাল বিকেল চারটায় আপনার শো-র টিকিট কনফার্ম হয়ে গেল শঙ্কর ভাই। তবে ঠিক সময়ে হলে গিয়ে তিন হজার রুপিয়া অপারেটরকে দিতে হবে আপনাকে। আর বুকিংটা কিন্তু এক ঘন্টার জন্য হল। আর টাইমিংটা মিস করবেন না যেন”।

শঙ্কর বলল, “কিন্তু সরজু ভাইয়া ভাবীর বাড়ির ঠিকানাটা তো বলবেন আমাকে। নইলে বড়াবাজার গিয়ে তার ঘর আমি খুঁজে বের করব কী করে”?

সরজু বলল, “সে সব আমি বলে দিচ্ছি আপনাকে। শুনুন” বলে শঙ্করকে বড়বাজারের একটা নামকরা ফার্নিচার হাউসের ঠিকানা বুঝিয়ে দিয়ে বলল, “ওখানে ওই ফার্নিচার হাউসটা ছাড়িয়ে পন্দ্র বিস ফুট এগিয়ে গেলেই একটা চৌপথী আছে। আপনি সেখানে গিয়ে আমাকে একটা ফোন করবেন। আমার নাম্বার আপনি নোট করে নিন। আমাকে ফোন করার দস মিনিটের মধ্যেই একটা বাচ্চা মেয়ে, লগভগ বারহ তেরহ সাল কি, আপনার কাছে এসে বলবে ‘ভাইসাব, দিদি কা সামান লায়ে হ্যায় ক্যা’। কথাটা মনে রাখবেন। আপনি প্রথমবার সেখানে যাচ্ছেন বলেই এটা করতে হচ্ছে। পরের বার যখন যাবেন তখন আর এ’সবের প্রয়োজন হবে না। তখন তো নিজেই হলে চলে যেতে পারবেন। কিন্তু এবারের জন্যেই শুধু মনে রাখবেন, ওই বাচ্চা মেয়েটা এসে আপনাকে বলবে ‘ভাইসাব, দিদি কা সামান লায়ে হ্যায় ক্যা’। আর আপনি তার জবাবে বলবেন ‘সরজু ভাইয়াকা সামান লায়া হু। ডেলিভারি দেনা হ্যায়’। মনে থাকবে তো? আপনাকে বলতে হবে ‘সরজু ভাইয়াকা সামান লায়া হু। ডেলিভারি দেনা হ্যায়’। তখন মেয়েটা আপনাকে সাথে করে ভাবীজীর ঘরে নিয়ে যাবে। আর ভাবীজীর ঘরে গিয়ে আপনি তাকে বলবেন ‘সরজু ভাইয়া কা দো শ সাত নাম্বার বুকিং’। বুঝেছেন তো। ভাবীজীকে এই কথাটাই আপনাকে বলতে হবে। হেরফের হলে কিন্তু মুস্কিল হয়ে যাবে। তখন ভাবীজী আবার আমাকে ফোন করবে। আপনিই আমার কাছে টিকিট নিয়েছেন কি না সেটা বুঝবে, তারপর আপনাকে হলে ঢুকতে দেবে। কিন্তু আপনার সময় বরবাদ হবে। সেইজন্যে কথাটা ভালভাবে মনে রাখবেন, ‘সরজু ভাইয়া কা দো শ সাত নম্বর বুকিং’। ব্যস তারপর ভাবীজীই আপনার মেহমান নওয়াজী করতে শুরু করবে। ঠিক আছে ভাইয়া? সবটা মনে থাকবে তো”?

শঙ্কর খুশী হয়ে জবাব দিল, “হাঁ সরজু ভাইয়া। বুঝেছি”।

সরজু বলল, “তবু কোন সমস্যা হলে সময় নষ্ট না করে আমাকে ফোন করবেন। আমি মদত করব আপনাকে”।

শঙ্কর চেয়ার ছেড়ে উঠে সরজুর হাত ধরে বলল, “বহুত বহুত ধন্যবাদ আপনাকে সরজু ভাইয়া। আপনার সাথে দোস্তি খুব ভাল জমবে মনে হয়। তাহলে আজ চলি আমি”?
 

সরজু বলল, “ঠিক আছে শঙ্কর ভাইয়া। আপনার কাপড়গুলো বিকেলে এসে নিয়ে যাবেন”।

শঙ্কর আবার সরজুকে ধন্যবাদ জানিয়ে বেরিয়ে গেল। সরজুর লণ্ড্রী থেকে বেরিয়ে অনেক দুর এসে শঙ্কর নিজের মোবাইল বের করে একজনকে ফোন করল। ও’পাশ থেকে সাড়া পেতেই সে বলল, “হ্যা অভি শোন। টিম মোতায়েন করা হয়ে গেছে”?

ও’পাশ থেকে অভি জবাব দিল, “আরে গুরু, টিম তো রেডি আছে। কিন্তু এক্সাক্ট লোকেশানটা না জানলে মোতায়েনটা করব কী করে বল”?

শঙ্কর বলল, “শোন, লোকেশানটা আমি এইমাত্র জানতে পেলাম। তুই দু’জনকে বিপ্লবের দোকানে ঢুকিয়ে দে। ওর দোকানের সামনের চৌপথীতে কড়া নজর রাখতে বলবি। আমি কাল বেলা তিনটে পঞ্চাশ বা পঞ্চান্নতে সেখানে পৌঁছব। তারপর কেউ একজন ফলো করে যেন দেখে নেয় আমি কোন ফ্ল্যাটে ঢুকছি। আর তুই মালবিকাকে বলিস রেডি থাকতে। আমি ফ্ল্যাটে ঢোকবার ঠিক পাঁচ মিনিট বাদেই যেন ও ওর কাজ শুরু করে দেয়। আমি সেখানে পৌঁছেই তোকে একটা এসএমএস করে ফ্ল্যাটের ঠিকানাটা জানিয়ে দেব। তুই জিনিসপত্র নিয়ে একেবারে রেডি থাকবি। তিনটে পঞ্চান্ন থেকে চারটে পাঁচের মধ্যে তুই আমার এসএমএস পেয়ে যাবি। আর সাথে সাথে তোর মেশিনারি নিয়ে ঠিক জায়গা মতো সে গুলোকে ইনস্টল করবি। আর মালবিকা যদি মিস না করে তাহলে আমার আসল কাজ চারটে দশের মধ্যে কমপ্লিট হয়ে যাবে। তুই সিগন্যাল পেলেই একটা মিসকল দিবি আমার নাম্বারে। তাহলেই আমি বুঝতে পারব আমাদের পারপাস সাকসেসফুল হয়েছে। ঠিক আছে”?

অভি সব শুনে বলল, “গুরু সে’সব তো ঠিকঠাক হয়ে যাবে। সেসব নিয়ে ভাবিস না। কিন্তু গুরু তুই ওখানে কতক্ষণ থাকবি”?

শঙ্কর একটু মুচকি হেসে বলল, “এক ঘন্টার সিনেমা”।

অভি বলল, “কী বলছিস গুরু? তুই একঘন্টা ধরে ওই খাসা মাগিটাকে ...বি! কী কপাল নিয়ে জন্মেছিস রে তুই”?

শঙ্কর বলল, “অভি শোন। আমি এখন রাস্তায় আছি। আমার মটকা গরম করে দিস না প্লীজ। তোর সাথে একবার ফাইনাল কথা বলতে হবে। কাল সকাল আটটায় আমি তোর বাড়ি যাচ্ছি। আমি না যাওয়া অব্দি তুই বাড়ি থেকে বেরোবি না। আর আগে যা যা বললাম সেভাবে সব এরেঞ্জমেন্ট করে রাখ। বুঝেছিস”?

অভি বলল, “ওকে গুরু। তাই হবে। তুই একদম টেনশন নিস না। বসের আর কোন অর্ডার আছে”?

শঙ্কর জবাবে বলল, “আমার সাথে স্যারের মিটিং আছে রাতে। নতুন কিছু ইনস্ট্রাকশন দিলে সেটা তোকে কাল সকালে জানাব। এখন রাখছি”।


*************

সকাল এগারটা নাগাদ কুরিয়ারের লোক এসে চন্দ্রকান্তবাবুর পাঠানো ইনভেলাপটা ডেলিভারি দিয়ে গেল রতীশের ফ্ল্যাটে। রতীশ খামের মুখটা খুলে ভেতরের জিনিসগুলো বের করে রান্না ঘরে এসে রচনাকে সবকিছু দেখাল। চন্দ্রিকার ছবির পেছনে চন্দ্রকান্তবাবুর দোকানে বসে থাকা রবিশঙ্করকে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে। রচনা আগে বিল ক্যাশমেমো গুলো দেখে চন্দ্রিমার ছবিটা দেখতে দেখতে বলল, “সোনা, এ ছবিটা থেকে একটা কপি বানানো যাবে না”?

রতীশ একটু অবাক হয়ে বলল, “তা হয়ত যেতে পারে। কোনও স্টুডিওতে গিয়ে দেখতে হবে। কিন্তু তুমি কপি করতে চাইছ কেন সোনা”?

রচনা ছবিটার দিকে চোখ রেখেই জবাব দিল, “চন্দু সোনাকে কী সুন্দর লাগছে ছবিটাতে। এ ছবিটার একটা কপি আমার কাছে রাখতে পেলে মাঝে মাঝে দেখতে পাব। তাই বলছি”।

রতীশ রচনার কাঁধে হাত রেখে আদর মাখা গলায় বলল, “ঠিক আছে। থানায় যাবার পথেই কোন একটা স্টুডিও থেকে আর্জেন্ট অর্ডার দিয়ে বানিয়ে নেব। ভেব না”।
 

সেদিন বিকেলেই থানায় গিয়ে পুলিশ অফিসারের হাতে জিনিসগুলো জমা দিল। পুলিশ অফিসার তাদের আশ্বস্ত করলেন যে রবিশঙ্করকে তারা ঠিক খুঁজে বের করবে। ইনভেস্টিগেটিং অফিসার মিঃ মুখার্জী তার মোবাইল নাম্বারটা রতীশকে বলে দিয়ে জানালেন যে এখন আর রতীশকে থানায় আসতে হবে না। প্রয়োজন হলে রতীশ যেন তাকে ফোন করে। আর রবিশঙ্করকে ধরতে পারলে তিনি নিজেই রতীশকে ফোন করে ডেকে নেবেন।
 

****************
 
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply
#52
(Update No. 72)

বেলঘরিয়া অঞ্চলের খুব কাছাকাছি একটা ছোট খাটো বাজার এলাকা। এ বাজারটায় সকাল থেকে সারাটা দিন ভিড় ভাট্টা কম থাকলেও বিকেল চারটের পর থেকে লোক সমাগম বেশী হতে শুরু করে। বাজারের বাইরে পুব দিকের বড় রাস্তার ধারে একে একে প্রাইভেট গাড়ি এসে জমা হতে থাকে। বাজারের ভেতর কোন গাড়ি ঢুকতে পারে না। যেসব গাড়িতে শুধু ড্রাইভার ছাড়া আর কেউ থাকে না, সে গাড়ি গুলো রাত আটটা থেকে দশটার মধ্যেই ফিরে চলে যায়। কিন্তু ফিরে যাবার সময় গাড়ির পেছনের বা সামনের সীটে ড্রাইভারের পাশে নতুন আরেকজনকে বসে থাকতে দেখা যায়। এই নতুন ব্যক্তিটি পুরুষ বা মহিলা দু’ধরণেরই হয়ে থাকে। বাকি গাড়ি গুলো পেছনের সীটের লোক বাজারের গলি থেকে বেরিয়ে না আসা অব্দি সেখানেই পার্ক করা থাকে। তবে এ গাড়িগুলো যখন ফিরে যায় তখন নতুন কোন সওয়ারী আর তাতে থাকে না। কিন্তু পেছনের সীটের পুরুষ তখন আর মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসতে পারে না। তারা সকলেই নিজের শরীরটাকে পেছনে হেলিয়ে না দিয়ে বসতে পারে না।
 

রাত আটটায় এ বাজারের কোন গলিতেই আশে পাশের লোকের ধাক্কা না খেয়ে কেউ এক পা-ও এগোতে পারে না। রাত আটটা থেকে ন’টা এ বাজারে সবচেয়ে বেশী ভিড় থাকে। রাত ন’টা থেকে আবার লোক চলাচল কমতে শুরু করে। আর রাত এগারটার পর থেকে একে একে দোকান গুলো বন্ধ হতে শুরু করে। আর রাত বারোটা নাগাদ সব দোকান পাটই পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। তখন মাঝে মাঝে দু’একজন পুরুষ মানুষকে দেখা যায় বাজারের পশ্চিম দিকের একটা বড় বস্তি থেকে বেরিয়ে বাজারের মধ্যে দিয়ে পুব দিকের বড় রাস্তার দিকে এগিয়ে যেতে। তাদের অনেকেই আবার জ্যান্ত দু’পেয়ে কোন অবলম্বন ছাড়া এক পা-ও এগোতে পারে না। আর এরা সকলেই বাজারের শেষ প্রান্তে এসে রাস্তার ধারে অপেক্ষমান কোন গাড়িতে উঠে বসে। গাড়ির ড্রাইভারেরা কেউ কেউ হয়ত অবলম্বন হিসেবেই তার মালিককে বস্তি থেকে বাজারের ভেতর দিয়ে টেনে এনেছে। আবার কেউ কেউ হয়ত গাড়িতেই শুয়ে শুয়ে ঘুমিয়েছে। মালিক গাড়িতে উঠতেই গাড়িগুলো চলে যায়। রাত সাড়ে বারোটা একটার পর থেকে রাস্তায় পার্ক করা গাড়িগুলোর ফিরে যাবার পালা শুরু হয়। আর ভোর পাঁচটা নাগাদ একটিও গাড়ি আর থাকে না। তবে ভোর পাঁচটা থেকে ছ’টার ভেতর শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে কিছু কিছু গাড়ি এখানে এসে থামে। তবে সে’সব গাড়ি ইঞ্জিন বন্ধ না করেই তার পেটের ভেতর থেকে একজন ছেলে বা মেয়ে বা মহিলা যাত্রীকে নামিয়ে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ইউ টার্ন মেরে চলে যায়। আবার বিভিন্ন বয়সের দু’চারজন পদযাত্রী পুরুষকেও ভোরের দিকে বস্তির দিকে হেঁটে যেতে দেখা যায়। সকাল আটটা নাগাদ আবার বাজারের কিছু কিছু দোকান খুলতে শুরু করে। তবে দুপুর দুটো পর্যন্ত কিছু কিছু দোকান বন্ধই থেকে যায়। তারপর আবার বাজারটা পূর্ণ রূপে ফুটে ওঠে।

সন্ধ্যে ছ’টা নাগাদ মাঝারী উচ্চতার কিন্তু সুগঠিত স্বাস্থ্যের অধিকারী ত্রিশ বছর বয়সী প্রভু লাহিড়িকে দেখা গেল বাজারের ভিড় ঠেলে এগিয়ে যেতে। একটা জায়গায় এসে সে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে উল্টো দিকের একটা চায়ের দোকানের দিকে দেখতে দেখতে পকেট থেকে বিড়ির প্যাকেট বের করে একটা বিড়ি ধরাল। দেখতে সুন্দর স্বাস্থ্যবান হলেও তার বেশভূষা দেখে তাকে একজন নিম্ন স্তরের ব্যবসায়ী বলেই মনে হচ্ছে।

চায়ের দোকানের একটা বেঞ্চে বসা সাইত্রিশ আটত্রিশ বছরের একজন মজবুত চেহারার লোকের ওপর প্রভুর চোখ বার বার পড়ছিল। ওই লোকটার পাশে একটা আঠার ঊণিশ বছরের ছেলে বসে লোকটার সাথে কথা বলতে বলতে কিছু একটা খেয়ে যাচ্ছিল। প্রায় মিনিট দশেক বাদে কমবয়সী ছেলেটি উঠে দোকান থেকে বেরিয়ে যেতেই প্রভু তাড়াতাড়ি দোকানে ঢুকে ছেলেটির পরিত্যক্ত জায়গায় বসে পড়ল।
 

খানিক বাদেই দোকানের একটা ছেলে এসে প্রভুর সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, “বলুন স্যার, কি দেব আপনাকে”?

প্রভু ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, “আমি তো এই প্রথম এখানে এসেছি রে। তাই, তোদের দোকানে ভাল জিনিস কি পাওয়া যায় তা তো জানিনা। তা কি কি পাওয়া যাবে বল তো”?
 

ছেলেটি কিছু বলবার আগে প্রভুর পাশে বসা লোকটি অযাচিত ভাবে বলে উঠল, “আপনি পকৌড়া খেতে পারেন ভাইসাব। এ দোকানে ওটাই সব চেয়ে বেশী ভাল লাগে খেতে”।

প্রভু সাথে সাথে দোকানের ছেলেটাকে বলল, “ঠিক হ্যায় বেটা। এক প্লেট পকৌড়াই দে তাহলে”।

ছেলেটা জিজ্ঞেস করল, “ফুল প্লেট দেব? না হাফ প্লেট”?
 

প্রভু বলল, “ফুল প্লেটই দিস, যা”।

ছেলেটা চলে যেতেই প্রভু পাশের লোকটার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলল, “শুক্রিয়া ভাইসাব”।

পাশে বসা লোকটি চা খেতে খেতে বলল, “ঠিক আছে ভাইসাব। এতে শুক্রিয়া জানাবার আর কি আছে। তবে আপনাকে তো এ বাজারে আর আগে কখনও দেখিনি ভাইসাব”?

প্রভু আবার হেসে বলল, “কি করে দেখবেন ভাইসাব। আমি তো এর আগে কখনও এ বাজারে আসিই নি। আজ এক বন্ধুর কথায় এখানে এলাম। এখানে নাকি সব জিনিসের কাস্টমার পাওয়া যায়। তাই ভাবলাম একবার দেখি গিয়ে। আমার মতলবের কোন কাস্টমার পাওয়া যায় কি না”।
 

পাশের লোকটা বলল, “আপনি কিন্তু ঠিকই শুনেছেন ভাইসাব। কিন্তু কেমন কাস্টমার খুঁজছেন বলুন। আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারি”।
 

প্রভু লোকটার দিকে তাকিয়ে বলল, “ও, তাহলে আপনি দালালী করেন? তা কত পার্সেন্ট নেবেন শুনি”।

পাশের লোকটা বলল, “সেটা তো আর জিনিসের ধরণ কোয়ালিটি না জেনে সোজাসুজি বলা যায় না ভাইসাব” বলে প্রভুর কানের কাছে মুখ এনে বলল, “আনমেরেড মেয়ে চাইলে আট শ। মেরেড মহিলা চাইলে পাঁচ শ। আর পুরুষ চাইলে তিন শ টাকা নেব। তবে কম বয়সী ছেলে ছোকরা চাইলে পাঁচ শ দিতে হবে”।

দোকানের ছেলেটা একটা বড় প্লেট ভর্তি পকৌড়া এনে দিতে সেটা দেখেই প্রভু বলে উঠল, “আরে বাপরে! এতগুলো কেন এনেছিস রে”?

দোকানের ছেলেটা বলল, “আপনি তো ফুল প্লেট আনতে বলেছেন স্যার। এটা ফুলপ্লেটই দিয়েছি আপনাকে আমি”।
 

পাশের লোকটা ছেলেটাকে বলল, “ঠিক হ্যায়, ঠিক হ্যায়। তু ভাগ। জা অপনা কাম কর”।
 

ছেলেটা চলে যেতে প্রভু পাশের লোকটাকে বলল, “আপনি তো ছেলেটাকে ভাগিয়ে দিলেন। কিন্তু আমি তো এর অর্ধেকও খেতে পারব না। জিনিসগুলো বেকার নষ্ট হয়ে যাবে”।

পাশের লোকটা বলল, “সেটা নিয়ে ভাবছেন কেন ভাইসাব। কথা বলতে বলতে আস্তে আস্তে খেতে থাকুন। ঠিক শেষ হয়ে যাবে। তা বলুন, কী চান আপনি”?
 

প্রভু বলল, “না ভাইসাব, আপনি ভুল বুঝেছেন। আমি কিছু চাইতে বা নিতে আসিনি এখানে। আমি পুরানা গাড়ি কেনা বেচা করি। গাড়ি কেনার কাস্টমার খুঁজতেই আমি এসেছি। ছেলে মেয়ে এসব কিছু চাই না আমার। কিন্তু প্রায় একঘন্টা ধরে এ মার্কেটে ঘুরেও কোন কাস্টমার পেলাম না। মনে হচ্ছে আমার বন্ধুর কথা শুনে এখানে এসে কোন লাভ হল না। কাল অন্য জায়গায় যেতে হবে”।

পাশের লোকটা বলল, “ও, তাহলে এই কথা। আপনি গাড়ি বেচবেন। সে জন্যেই জিজ্ঞেস করেছিলেন কত পার্সেন্ট, তাই না? তা কি গাড়ি? দেশী না বিদেশী”?
 

প্রভু একখানা পকৌড়া মুখে দিয়ে জবাব দিল, “দেশী বিদেশী সবই আছে। তবে এখন হাতে বিদেশী গাড়িই বেশী আছে। তা, আপনার হাতে কোন কাস্টমার আছে নাকি ভাইসাব”? বলে পকৌড়ার প্লেটটা লোকটার দিকে একটু ঠেলে দিয়ে বলল, “আপনিও নিন না”।

লোকটা একটা পকৌড়া হাতে নিয়ে বলল, “হাঁ ভাইসাব। একটা কাস্টমারের খোঁজ আমি আপনাকে দিতে পারি। কিন্তু তার সাথে বাজারে দেখা করতে পারবেন না। একটু হেঁটে যেতে হবে। দশ পনের মিনিট লাগবে যেতে। কিন্তু আমাকে পন্দ্রহ পার্সেন্ট কমিশন দিতে হবে”।
 

প্রভু পকৌড়া চিবোতে চিবোতে একটু ভেবে বলল, “টয়োটা বা মার্সিডিসের কাস্টমার পেলে পনের পার্সেন্ট কমিশন দেব ঠিক আছে। কিন্তু অন্য কোম্পানীর মাল নিলে পনের পার্সেন্ট দিতে পারব না ভাইসাব। দশ পার্সেন্টের বেশী দিতে পারব না। তাহলে আমার পোষাবে না”।
 

লোকটা এবার একটু ভেবে বলল, “ঠিক আছে। তাহলে চলুন কাস্টমারের কাছে যাওয়া যাক”।

প্রভু পকৌড়া খেতে খেতেই বলল, “ঠিক হ্যায়। কিন্তু পকৌড়া গুলোর কী হবে? পকৌড়াগুলো খেতে খেতে আমাদের পরিচয়টা সেরে নিলে ভাল হবে না? নিন। আমার নাম প্রভুদাস লাহিড়ি। বড়বাজারে থাকি। সেখানে সবাই আমাকে প্রভু বলেই ডাকে”।

পাশের লোকটাও পকৌড়া খেতে খেতে বলল, “আমার নাম মাঙ্গিলাল যাদব। কিন্তু এ মহল্লায় সবাই আমাকে মঙ্গু বলে ডাকে। দালালীর ব্যবসা করি। সবরকম জিনিসের দালালী। যখন যেটা পাই আর কি। আচ্ছা প্রভুজী, আমি আগে একটু খবর নিয়ে নিই” বলে পকেট থেকে মোবাইল বের করে কাউকে ফোন করে জিজ্ঞেস করল, “হাঁ ভইয়া, আপ কাঁহা হো ইস বক্ত”?
 

প্রভু কান খাঁড়া করে পকৌড়া খেতে খেতে মঙ্গুর কথা শুনে যাচ্ছিল। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে মঙ্গু আবার ফোনে বলল, “বাত ইয়ে হ্যায় ভইয়া। এক পার্টি মিলা হ্যায়। পুরানা গাড়ি বেচনেওয়ালা। ভাবী উস দিন বোল রহি থি না? ইসিলিয়ে কহ রহা হু ভইয়া কি অগর আপ চাহে তো ইনসে মিল সকতে হ্যায়। বো মেরে সাথ হি হ্যায়। ভাবীজী কাম মে বিজি হ্যায় ক্যা অভি”?

আবার কিছুক্ষণ ও’পাশের কথা শুনে মঙ্গু বলল, “ঠিক হ্যায় ভইয়া তব। পর আপ দের মত করনা। বাত নহী বনেগী তো পার্টি তো বেকার সময় খরাব নহী করেগা না? সমঝে ন আপ”?

আরেকবার থেমে অন্যদিকের কথা শুনে বলল, “অচ্ছা ভাইয়া। ম্যায় দস মিনট তক উনকে সাথ হু বজার পর। আপ ইসি বিচ মুঝে ফোন কীজিয়েগা”।
 

ফোন পকেটে রেখে মঙ্গু প্রভুকে বলল, “একটু পরে খবর পাব। নিন। ততক্ষণে দু’জন মিলে খাওয়া শেষ করি”।

প্রভু খেতে খেতে জিজ্ঞেস করল, “আপনি যার সাথে কথা বললেন, সে নিজে কিনবেন না”?
 

মঙ্গুও খেতে খেতেই জবাব দিল, “নিজে কিনবেন না তা ঠিক নয় প্রভুজী। কিন্তু ওর বৌ ওর থেকে অনেক বেশী রোজগার করে বলে বৌয়ের কথা ছাড়া সে কোন কাজই করে না। কেমন গাড়ি নেবে, কি গাড়ি নেবে এ সব কিছুই তার বৌ ঠিক করবে। আর তার সাথেই আপনাকে কথা বলতে হবে। কিন্তু ভাবীজী তো দুপুর দুটোর পর থেকে রাত এগারটা বারোটা পর্যন্ত হেভি ডিউটি করে। তাই সে এখন আপনার সাথে কথা বলতে পারবে কি না, সেটা তো তাকে জিজ্ঞেস না করলে বোঝা যাবে না”।

প্রভু খেতে খেতে স্বাভাবিক ভাবেই জিজ্ঞেস করল, “আপনার এই ভাবী এমন কি কাজ করে যে তাকে দুপুর দুটো থেকে রাত বারোটা অব্দি ব্যস্ত থাকতে হয়? হাসপাতালের নার্স বা ডাক্তার নাকি উনি”?
 

মঙ্গু জবাব দিল, “আরে না প্রভুজী। নার্স উর্স কিছু না” বলেই প্রভুর কানের কাছে মুখ এনে চাপা স্বরে বলল, “ঘরে কাস্টমার নেয়। বুঝেছেন তো? ঘরে এই সময় কাস্টমার থাকলে তো তার সাথে কথা বলা যাবে না”।

প্রভুও গলা নামিয়ে জিজ্ঞেস করল, “তা আপনার ভাইয়া কী বলল? তার বৌয়ের ঘরে এখন কোন কাস্টমার আছে”?
 

মঙ্গু নিচু গলায় জবাব দিল, “দিবাকর ভাইয়া তো বলল যে এখন একজন কাস্টমার আছে। তবে সাতটা থেকে একঘন্টা ভাবী ফ্রি আছে। এখন তো প্রায় পৌনে সাতটা বেজেই গেল। তাই ভাবীর সাথে কথা বলে জানাতে বললাম”।
 

প্রভু বলল, “ঠিক আছে। দশ পনের মিনিট আমি আপনার সাথে বসতে পারব। কিন্তু এর চেয়ে বেশী দেরী কিন্তু আমি করব না। এক জায়গায় বেশীক্ষণ বসে থাকা আমার পক্ষে ঠিক নয়”।
 

মঙ্গু বলল, “আরে প্রভুজী সে কথা আপনাকে বলতে হবে না। এ’সব ধান্দার ভেতরের খবর আমিও তো জানি। আর ভাইয়া ভাবীও জানে। তাই খবর আসতে খুব দেরী হবে না”।
 

আরও কিছু টুকটাক কথা বলে প্রভু শেষ পকৌড়াটা মুখে নিতেই মঙ্গুর পকেটের ভেতর ফোন বেজে উঠল। মঙ্গু ফোন নিয়ে কানে লাগিয়েই বলল, “হ্যা ভইয়া, কহিয়ে”।

তারপর কিছু সময় চুপ করে থাকবার পর আবার বলল, “ঠিক হ্যায় ভইয়া। হম অভি নিকল রহে হ্যায়। আপ বোহি পর হমারা ইন্তজার করনা”।
 

ফোন পকেটে রেখেই মঙ্গু প্রভুর হাত ধরে বলল, “চলিয়ে প্রভুজী, গ্রীন সিগন্যাল মিল গয়া হ্যায়”।

প্রভু দোকানের বিল মিটিয়ে দিয়ে মঙ্গুর সাথে ভিড় ঠেলে একদিকে এগিয়ে যেতে থাকল। অনেকটা হেঁটে বাজারের প্রায় শেষ মাথায় এসে মঙ্গু হাতের ঈশারায় একটা দোকানের সামনের বেঞ্চিতে বসে থাকা একজন রোগা লম্বা লোকের দিকে ঈশারা করে বলল, “ওই যে দিবাকর ভইয়া। রাস্তার ওদিকে চলুন”।
 

ধুতি পাঞ্জাবী পড়া ঢ্যাঙা রোগা হাড়গিলে টাইপের লোকটার কাছে এসে মঙ্গু তাকে বলল, “ভইয়া ইয়ে হ্যায় প্রভুজী। ইনহি কে বারে মে আপকো বোলা থা”।
 

দিবাকর প্রভুর সাথে হ্যাণ্ডশেক করে জিজ্ঞেস করল, “তো প্রভুজী আপনি তৈরী হয়েই এসেছেন তো? মানে ক্যাটালগ টগ সব নিয়ে এসেছেন তো”?

প্রভু কিছু জবাব দেবার আগেই মঙ্গু বলল, “আপ ক্যায়সি বাত কর রহে হ্যায় ভইয়া। ভলা ইয়ে সব সামান কা ক্যাটালগ আপকো কাঁহা মিলেগা? চোরি কে সামান কে লিয়ে কোই এয়সা সবাল করতা হ্যায় ক্যা”?
 

প্রভু একটু হেসে বলল, “মঙ্গু ভাই ঠিক বলেছে। ক্যাটালগ নেই। কিন্তু মোবাইলে ছবি আছে। আর গাড়ির ডিটেইলস সব কিছু আমি মুখেই বলব। সেভাবেই ডিল করতে হবে দিবাকরজী”।
 

দিবাকর বলল, “আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। চলুন, আর দেরী না করে যাওয়া যাক” বলে মঙ্গুর হাত ধরে হাঁটতে শুরু করল একদিকে। প্রভুও তাদের পাশে পাশে চলতে লাগল।
 

প্রায় মিনিট দশেক হেঁটে একটা বাড়ির বন্ধ দরজার সামনে এসে দরজায় টোকা দিল দিবাকর। কয়েক সেকেণ্ড বাদেই চৌদ্দ পনের বছর বয়সী একটা মেয়ে এসে দরজা খুলে দিল। দিবাকর সবাইকে নিয়ে ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করতে করতে মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করল, “গুড্ডি, তেরী মাম্মি কে ঘর কা মেহমান চলা গয়া কি অভিভি হ্যায়”?
 

মেয়েটা মঙ্গু আর প্রভুর দিকে এক একবার দেখে জবাব দিল, “অভি থোড়ি দের পহলে চলা গয়া হ্যায় পাপা। মাম্মি ফ্রেশ হো রহি হ্যায়”।
 

দিবাকর বলল, “তো ঠিক হ্যায়। হমলোগ বাহর ওয়ালে কমরে মে বৈঠতে হ্যায়। তেরি মা কো বোল তৈয়ার হোকে ইয়াহা আনে কে লিয়ে। হাঁ বেটি”?

“ঠিক হ্যায় পাপা” বলে মেয়েটা ভেতরের দিকে একটা প্রায়ান্ধকার রুমের ভেতর ঢুকে গেল। সামনের দিকের ঘরে ঢুকে দিবাকর সবাইকে বসতে দিয়ে প্রভুকে জিজ্ঞেস করল, “তো বলুন প্রভুজী। ভাল জিনিস দেবেন তো? আর দাম টাম কেমন নেবেন”?

প্রভু নিজের পকেট থেকে মোবাইল বের করে বলল, “আগে আমার মোবাইলের ছবি গুলো দেখে গাড়ি পছন্দ করুন। তারপর আমি সব বলব। তবে আমি আপনাদের কোন ভাবেই ঠকাব না। এটা তো জানেনই দিবাকরজী, দু নম্বরী ব্যবসা যারা করে তারা কেউ কাউকে ঠকায় না। আর একে অপরের ওপর বিশ্বাস না করলে এ’সব ব্যবসা করাই যায় না”।

দিবাকর খুশী হয়ে বলল, “হাঁ হাঁ, এটা তো একদম সত্যি কথাই বলেছেন আপনি। কিন্তু ছবি দেখা, সামান পছন্দ করা ও’সব আমার কাজ নয়। ও’সব যার কাজ সে এখনই আসবে”।
 

প্রভু বলল, “সে ঠিক আছে দিবাকরজী। কিন্তু একটা কথা মনে রাখবেন। যদি ডিল ফাইনাল হয়ে যায় তাহলে গাড়ি ডেলিভারি দেবার সাথে সাথে আমাকে ফুল পেমেন্ট করে দিতে হবে। ধার বাকির ব্যবসা কিন্তু আমি করিনা। আর একটা কথা আগেই বলে দিচ্ছি আপনাকে। এ’সব কারবারে কিন্তু সব কিছু গোপনে করতে হয়। তাই যে কেনে তাকেও যেমন সাবধান থাকতে হয়, তেমনি যে বেচে, তাকেও একই রকম সাবধান থাকতে হয়। তাই বলছি গাড়ি ডেলিভারি দেবার সময় তাতে যে নাম্বার প্লেট থাকবে সেটা কিন্তু ফলস হবে। তাই আপনি চেষ্টা করবেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজেদের নামে নতুন রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নেবেন। আর নতুন নাম্বার প্লেটটা গাড়িতে লাগিয়ে নেবেন। সেটা না করলে কিন্তু যে কোন সময় পুলিশের খপ্পরে পড়তে পারেন”।
 

প্রভু থামতে দিবাকর একটু হেসে বলল, “আরে ও’সব নিয়ে আমার চিন্তা নেই। সব জায়গায় আমার চ্যানেল ফিট করা আছে। আমি চব্বিশ ঘন্টার মধ্যেই সব ঠিক করে নেব”।

প্রভু আবার বলল, “কিন্তু ওই চব্বিশ ঘন্টা সময়টাই কিন্তু সবচেয়ে বেশী রিস্কি দিবাকরজী, সেটা মনে রাখবেন”।

দিবাকর প্রভুকে আশ্বস্ত করল, “প্রভুজী আমি এখন অন্যরকম দালালীর ব্যবসা করলেও, এক সময় চোরাই মালের দালালীও করেছি। তাই এ সব কিছুই আমার জানা আছে। আপনি কিচ্ছু ভাববেন না। আপনার কোন ভয় নেই। আমি সব কিছু সামলে নেব”।

এমন সময়ে ভেতরের দরজা দিয়ে টুংটাং শব্দে নুপুর বাজিয়ে টকটকে ফর্সা রঙের অপরূপা সুন্দরী এক মহিলা ঘরে এসে ঢুকল। সারাটা ঘর যেন তার রূপের ছটায় ঝলমল করে উঠল। একটা মন মাতানো মিষ্টি গন্ধে ভরে উঠল ঘরটা। প্রভুজী সেই রূপসীকে দেখে প্রায় হাঁ করে তার মুখের দিকে চেয়ে রইল। একটু ভারিক্কি চেহারা হলেও সে রূপসীর দেহের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ থেকে যেন সৌন্দর্য্য আর যৌনতা চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে।


______________________________
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply
#53
(Update No. 73)

প্রভুর মনে হল, এমন সুন্দরী আর সেক্সী মহিলা বা মেয়ে সে জীবনে আগে কখনও দেখে নি। মহিলাটি প্রভুর দিকে চেয়ে নিজের জিভের ওপর ঠোঁট বুলিয়ে দিবাকর আর মঙ্গুর চেয়ার দুটোর মাঝখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে তাদের দু’জনের কাঁধে হাত রেখে কামনা মদির চোখে প্রভুর দিকে দেখতে দেখতে মঙ্গুকে উদ্দেশ্য করে বলল, “আরে দেবরজী যে? কতদিন বাদে এলেন। তা কোথায় সময় কাটাবেন বলুন? আপনার ভইয়ার এখানে, না আমার ঘরে যাবেন”?

প্রভুর মনে হল মহিলা যেন একটু নেশাগ্রস্ত। মঙ্গু কিছু বলবার আগেই দিবাকর বলে উঠল, “আরে মেরে বচ্চো কি মা। রুক জা জরা। দেখতি নহী হ্যায় ক্যা? নয়া মেহমান আয়া হ্যায় ঘর মে”।
 

রূপসী মহিলা বলল, “দেখ তো রহি হু। ঔর খুশ ভি বহত হুয়ি হু। বহত দিন বাদ এয়সা মেহমান মেরে ঘর আয়া হ্যায় আজ। দেখ কে তো লগতা হ্যায়, বহত দম হোগা ইনমে। বড়া মজা আয়েগা”।

এবার মঙ্গু চেয়ার থেকে উঠে মহিলার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল, “আরে ভাবীজী, ক্যা হো গয়া হ্যায় আপ কো? শরাব জ্যাদা পি লিয়া হ্যায় আপ শায়দ”।

রূপসী মহিলা মঙ্গুর চিবুক ধরে বলল, “আরে উসকে লিয়ে তু চিন্তা মত কর। তু চল অন্দর। ফির দিখাতি হু তুঝে মেরা দম”।
 

মঙ্গু রূপসীর দুটো গাল দু’হাতে চেপে ধরে তার চোখে চোখ রেখে বলল, “অরে ভাবীজী, সম্ভালিয়ে অপনে আপ কো। দেখিয়ে ইয়ে নয়া মেহমান আপ কা কোই গ্রাহক নহী হ্যায়। ইয়ে প্রভুজী হ্যায়। আপ গাড়ি খরিদনা চাহতি থি না? প্রভুজী উসি সিলসিলে মে আয়ে হ্যায়। আপকে সাথ মৌজ মস্তি করনে কে লিয়ে নহী আয়া হ্যায়। ইনকে পাস কয়ী সারে বিদেশী গাড়িয়া হ্যায়। ইনকে পাস গাড়িয়ো কে তসবিরে হ্যায়। অগর আপকো পসন্দ আয়ে তো আপ খরিদ সকতে হ্যায়। সমঝি আপ”?
 

রূপসী মহিলা যেন হঠাৎ করেই বদলে গেল। তার আধবোজা চোখ দুটো এবার বিস্ময়ে বড় বড় হয়ে উঠল। এতক্ষন একটু একটু দুলতে থাকা শরীরটা স্থির হয়ে এল। আর পরের কথা শুনে একটুও মনে হল না যে সে নেশাগ্রস্ত। রূপসী এবার দিবাকরের দিকে মুখ করে প্রায় ধমকের ভঙ্গীতে বলে উঠল, “তুমি কেমন মানুষ গো? এই কথাটা গুড্ডিকে বলতে পারনি তুমি? ও তো আমায় বলল যে নয়া মেহমান এসেছে। এই বাবুটি যে অন্য কাজে এসেছে, সেটা তুমি আমাকে জানাবে না”? বলেই প্রভুর দিকে হাতজোড় করে বলল, “সরি প্রভুজী, কিছু মনে করবেন না। আমার বুঝতে একটু ভুল হয়ে গেছে”।

প্রভুও হাতজোড় করে নমস্কার করে বলল, “ঠিক আছে, ঠিক আছে। আপনি ও নিয়ে ভাববেন না ভাবিজী। নমস্কার আমি প্রভুদাস লাহিড়ি”।

রূপসী মহিলাটি এবার একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “আপনি বাঙালী”?

প্রভু জবাব দিল, “হ্যা ভাবিজী, আমি বাঙালী। কিন্তু তাতে কী হল? বাঙালীদের সাথে বেচাকেনা করতে কোন বাঁধা আছে আপনার”?
 

রূপসী এবার একটু লজ্জা পেয়ে বলল, “আরে না না, এ আপনি কি বলছেন? তাহলে চলুন, আমরা ভেতরে গিয়ে কথা বলি”।
 

দিবাকর সাথে সাথে বলে উঠল, “হাঁ হাঁ, সেটাই ঠিক হবে। তোমরা ভেতরে গিয়ে কথা বল। আমি ততক্ষন মঙ্গুর সাথে একটু দরকারী কাজ সেরে নিই”।

রূপসী মহিলাটি প্রভুর হাত ধরে চেয়ার থেকে টেনে উঠিয়ে তার স্বামীকে বললেন, “তুম লোগোকা জরুরী কাম তো ম্যায় জানতি হু। পর বিটিয়া থোড়ি দের মে চায়ে লেকর আয়েগি। তব তক তুম দোনো কাম শুরু মত করনা। ম্যায় বাবুজী কো লেকর অন্দর জাতি হু”।
 

দিবাকর বলল, “ঠিক হ্যায়। তুম উসকে লিয়ে চিন্তা মত করনা। তুম আপনি গাড়ি পসন্দ করো অন্দর জা কর। ঔর প্রভুজী কা অচ্ছি তরহ খাতিরদারি ভি করনা”।
 

রূপসী মহিলা প্রভুর হাত ধরেই ভেতরের আবছা অন্ধকার পথ ধরে একটা ঘরের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে মাঝপথে থেমে প্রভুর শরীরের সাথে ঘেঁসে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, “কী খাবেন প্রভুজী? গরম না ঠাণ্ডা? চা, কফি না আর কিছু”?
 

প্রভু নিজের পাঁজরের কাছে রূপসীর তুলতুলে স্তন দুটোর স্পর্শে বিহ্বল হয়ে পড়ল যেন। কিন্তু সে ততক্ষণে বুঝে গেছে সে এই রূপসী মহিলার সাথে চাইলে অনেক কিছুই করতে পারবে। মঙ্গু তো আগেই বলেছে এ মহিলার কাজের কথা। সে নিজে গ্রাহক হয়ে না এলেও এমন সুন্দর যৌবনবতী এক রূপসীকে সুযোগ পেলে সে একটু চেখে দেখতেই পারে। মনের ভেতর অনেক ইচ্ছে থাকা সত্বেও সে নিজের স্ত্রী ছাড়া অন্য কোন মেয়ে বা মহিলার সাথে কিছু করার সুযোগ পায়নি জীবনে।
 

নিজের বুকটাকে ইচ্ছাকৃত ভাবে রূপসীর গায়ে আরো একটু চেপে ধরে সে কোন রকমে বলল, “না ভাবিজী, ব্যবসার সময় আমি অন্য কিছু খাই না। আপনি বরং এক কাপ চা বা কফিই দিন”।

রূপসী এবার প্রভুর হাতটা তার সুবিশাল বুকে চেপে ধরে অন্য একটা ঘরের দিকে মুখ করে বলল, “গুড্ডি বিটিয়া, তিন কপ কফি বনানা বেটি। দো কপ বাহরওয়ালে কমরে মে লেকে জানা তেরা পাপা ঔর মঙ্গুচচা কে লিয়ে। ঔর এক কপ মেরে কমড়ে মে দে কে জানা হাঁ”? কথা বলতে বলতে রূপসী নিজেই তার বিশাল সাইজের বুকের ওপরের বিশাল বিশাল মাংসপিন্ড দুটোকে প্রভুর বুকের সাথে একেবারে চেপে ধরল।
 

একটা ঘরের ভেতর থেকে কম বয়সী একটা মেয়ের জবাব এল, “আচ্ছা মাম্মি, দিচ্ছি। তুমি ঘরে যাও”।

রূপসী এবার নিজের সুউন্নত বুকটা দিয়েই প্রভুর পাঁজরে ধাক্কা মেরে বলল, “চলুন এগিয়ে চলুন। ওই সামনেরটাই আমার ঘর”।

নিজের ঘরে ঢুকেই রূপসী জোড়াল আলো জ্বেলে দিয়ে প্রভুর একটা হাত নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে টানতে টানতে বিছানার দিকে নিতে নিতে বলল, ”এখানে বিছানার ওপর আরাম করে বসুন। আর বলুন তো, আমি কি এই শাড়ি ব্লাউজ পড়েই থাকব? না অন্য কিছু পড়ব”?

প্রভু নিজেকে সংযত রাখবার চেষ্টা করতে করতে বলল, “ভাবিজী, কী করছেন? ঘরের দরজা খোলা আছে। আপনার মেয়ে তো যে কোন সময় এসে পড়তে পারে। আর সত্যি বলছি, আমি তো শুধু আমার ব্যবসার কাজে এসেছি”।

সুন্দরী উদ্ভিন্ন যৌবনা রূপসী একটু হেসে বলল, “সে তো করবেনই। কিন্তু এমন সিরিয়াস কাজের সময় একটু আরাম করে বসে না নিলে কি হয়? আপনি গায়ের শার্টটা খুলে একটু আরাম করে বসুন না। গরম লাগছে না আপনার”? বলে নিজেই ঘরের এক কোনে রাখা টেবিল ফ্যান চালিয়ে দিল। তারপর প্রভুর কাছে এসে তার শার্টের বোতাম খুলতে যেতেই প্রভু তার হাত ধরে বলল, “না ভাবিজী। আগে ব্যবসার কথাটা সেরে নিই”।
 

রূপসী একটু অবাক হয়ে বলল, “বা রে? না বলছেন কেন? কোনদিন মেয়েদের শরীর নিয়ে খেলেন নি? এখনও কি বিয়ে করেন নি? না কি, আমাকে দেখে মনে ধরছে না? আমি কি কোন কুৎসিত কদাকার একটা মেয়ে”?
 

প্রভুর শরীর মন একটু একটু উত্তপ্ত হয়ে উঠলেও সে নিজেকে সামলে বলল, “তা নয় ভাবিজী। আমি বিয়েও করেছি, আর বৌয়ের শরীর নিয়ে খেলেও থাকি। কিন্তু নিজের স্ত্রী ছাড়া অন্য কোন মেয়ে মহিলার সাথে কোনদিন শারীরিক সম্পর্ক করিনি। আর আপনাকে কে কদাকার কুৎসিত বলবে বলুন তো? সত্যি বলতে, আপনার মত এত সুন্দরী আর সেক.. সরি.. আপনার মত এমন সুন্দরী মহিলা আমি আগে দেখেছি বলে মনে পড়ছে না আমার। কিন্তু, কাজ বাদ দিয়ে এ’সবের পেছনে সময় দেবার মত সময় আজ আমার হাতে নেই”।

রূপবতী মহিলা এবার প্রভুর দুটো গাল চেপে ধরে তার নাকের সাথে নিজের নাকটা ঠেকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “মাঝের কথাটায় সরি বললেন কেন? আমি শুধু সুন্দরী? আর কিছু নয়? সেক্সী মনে হচ্ছে না আমাকে”?

প্রভু অপারগ হয়ে জবাব দিল, “না ভাবিজী। মোটেও তা নয়। আপনি অসম্ভব রকমের সেক্সী দেখতে। প্লীজ এবার ছাড়ুন। আপনার মেয়ে যে কোন সময় এসে পড়তে পারে”।
 

রূপবতী মহিলা হঠাৎ করে হাঁ করে প্রভুর ঠোঁট দুটো নিজের মুখের ভেতরে নিয়ে চোঁ চোঁ করে চুসতে লাগল। প্রায় মিনিট খানেক ধরে ওভাবে ঠোঁট চুসতে চুসতে সে প্রভুকে বিছানায় চিৎ করে ফেলে দিয়ে তার বুকের ওপর নিজের সুউন্নত ভারী বুক দুটো চেপে ধরল। প্রভুর দম যেন প্রায় বন্ধ হয়ে আসতে চাইছিল। অনেক কষ্টে সে নিজের মুখ ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, “ঠিক আছে ভাবিজী, আপনি যা চাইছেন সেটা পরে দেখব। কিন্তু আগে আমার আসল কাজটা সেরে নিই”।
 

রূপসী মহিলা এবার প্রভুকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, “কথা দিচ্ছেন তো? বলুন”?
 

প্রভু বলল, “হ্যা ভাবিজী সত্যি বলছি। করব। কিন্তু ভাবিজী, আগে ব্যাবসার কথাটা সেরে ফেলতে হবে”।
 

রূপসী মহিলা তা সত্বেও প্রভুকে ছাড়তে চাইল না। সে প্রভুর বুকে নিজের ভারী বুকটা ঘসতে ঘসতে বলল, “বেশ, তাহলে আগে একটা কথা বলুন তো দেখি। আমার শরীরের কোন জিনিসটা আপনি প্রথম মুখে নেবেন”?

প্রভু রেহাই পাবার উদ্দেশ্যে তাড়াতাড়ি বলে উঠল, “আপনার বুকের এই বড় বড় জিনিস দুটো ভাবিজী”।

রূপসী মহিলা একটু খুশী হয়ে হেসে বলল, “মানে আমার বুকের এই দুধ দুটো? এ দুটোই আপনার সবচেয়ে বেশী ভাল লাগছে”?
 

প্রভু জবাব দিল, “যা কিছু পড়ে আছেন, তার ওপর দিয়ে এ দুটোই তো আমার চোখে পড়ছে বেশী। অন্য কিছু তো আর চোখে পড়ছে না”।
 

রূপসী মহিলা প্রভুর গেঞ্জীর ভেতর হাত ঢুকিয়ে তার রোমশ বুকের একদিকে হাতে চেপে ধরে বলল, “আপনি তো খুব অসভ্য। এভাবে কোন মেয়ের দুধের প্রশংসা করতে হয়? মেয়েদের দুধের প্রশংসাও করতে শেখেন নি”?

প্রভু এবার কিছুটা চালাকি করে জবাব দিল, “আমি নিজে থেকে প্রশংসা করলে সেটা অন্যভাবে করে দেখাতাম। কিন্তু আপনার মৌখিক প্রশ্নের মৌখিক জবাব তো এভাবেই দিতে হল ভাবিজী”।

রূপসী মহিলা এবার দুষ্টুমি করে বলল, “বাবা, আপনি তো দেখছি খুব চালাক। কিন্তু তাহলে তো এটাই ধরে নিতে হয় যে আপনি মন থেকে এ কথা বলেন নি। শুধু আমার কথার পরিপ্রেক্ষিতে একটা জবাবই দিয়েছেন। আমার শরীরের কিছুই আপনার ভাল লাগে নি”।
 

প্রভু বলল, “না না ভাবিজী, মোটেও তা নয়। আপনি সত্যিই খুব সুন্দরী আর সেক্সী। আর আপনার বুকের ওই জিনিসগুলোও অসাধারণ লোভনীয়। যে কোন পুরুষকে পাগল করে তুলতে পারে”।
 

রূপসী সম্মোহনী চোখে প্রভুর চোখে তাকিয়ে বলল, “তাহলে একটু নিজে থেকে নিজের মনের ভাষায় আমার দুধ দুটোর প্রশংসা করে দেখান না”।
 

প্রভু বলল, “সেটা শুধু মুখের কথায় বোঝান যাবে না ভাবিজী। মুখের সাথে হাত আর মুখটাকেও কাজে লাগাতে হবে যে”।
 

রূপসী এবার প্রভুর ওপর থেকে নিজের শরীরটা তুলে প্রভুকে টেনে ওঠাল। তারপর তার মুখের সামনে নিজের বুকটা চিতিয়ে ধরে বলল, “কে বারণ করেছে আপনাকে সে সব করতে। করুন তো। আমিও দেখি আমার এই নতুন দেবরটি কিভাবে তার ভাবীর দুধের প্রশংসা করে। নিন, করুন”।

প্রভু এক মূহুর্ত রূপসীর সাথে চোখাচোখি করে খোলা দরজার দিকে তাকাতেই রূপসী তাড়া দিয়ে বলল, “আবার ওদিকে কী দেখছেন বলুন তো? আমার বুকের দুধ দুটো কি দরজার কাছে চলে গেছে নাকি? নিন তাড়াতাড়ি যা করবার করুন। আমি কথা দিচ্ছি, আপনি যদি ভাল ভাবে আমার দুধের প্রশংসা করতে পারেন, তাহলে আপনার আসল কাজ আমি এখনই করতে দেব”।

প্রভু তবু একটু ইতস্ততঃ করে বলল, “ভাবিজী আমার সত্যি ভয় করছে। এতক্ষণে আপনার মেয়ে বোধ হয় কফি তৈরি করে ফেলেছে। ও তো যে কোন সময় চলে আসতে পারে। অন্ততঃ দরজাটা তো একটু ভেজিয়ে দিন”।
 

রূপসী নিজের বুকটা আরো খানিকটা সামনের দিকে ঠেলে বলল, “বলেছি তো। আপনাকে ও’সব নিয়ে ভাবতে হবে না। আমার মেয়ে অমন অনেক কিছুই দেখে। আমিই ওকে বলেছি দেখে দেখে ধীরে ধীরে সব কিছু শিখে নিতে। আর দু’তিন মাস পর থেকেই তো ওকেও এ’সব করতে হবে”।

প্রভু একটু অবাক হয়ে বলল, “কী বলছেন ভাবিজী? ওই টুকু মেয়েটাকে এসব কাজে নামাবেন? মা হয়ে অমনটা আপনি করতে পারবেন”?

রূপসী মহিলা জবাব দিল, “যার যেটা কাজ সেটাই তো করতে হয়। পুরুষেরা যেমন পৈত্রিক ব্যবসায় নামে, তেমনি আমাদের ঘরের মেয়েরাও মায়ের ব্যবসাতেই নামে। আর ওকে ওইটুকু বলে ভেবে ভুল করবেন না। ঢিলে ঢালা ফ্রক পড়ে আছে বলে হয়ত বুঝতে পারেন নি আপনি। শরীরটা খুব সুন্দর ভাবে ভরে উঠেছে। এক মাস বাদেই ও ষোলতে পড়ছে। তার পর থেকেই তো এ কাজে নেমে পড়বে। ও এখনই কাজ শুরু করবার জন্য ছটফট করছে। আর আমিও শিখিয়ে পড়িয়ে ওকে পুরোপুরি তৈরী করে তুলেছি। কিন্তু বিহারী প্রথায় ওর সীল ভাঙা হয়নি এখনো। ষোল বছর পূর্ণ না হলে সেটা করা যাবে না। তাই অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কিন্তু ও’সব কথা ছেড়ে আসল কাজটা করুন না। নইলে আপনার আর আমার দু’জনেরই সময় নষ্ট হবে”।
 

প্রভু আর কোন কথা না বলে খপ করে রূপসীর দুটো স্তন খাবলে ধরে তার বুকে মুখ ঘসতে ঘসতে বলল, “সত্যি ভাবিজী, এমন সুন্দর আর এত বড় দুধ আমি আর কোন মেয়ের বুকে দেখিনি। আপনার এ দুটো সত্যিই অসাধারণ। আমার তো কামড়ে চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে” বলে ব্লাউজের ওপর দিয়ে রূপসীর স্তন দুটোকে এমন ভাবে চেপে ধরে ওপরের দিকে ঠেলে দিল যে মহিলার ব্লাউজের ওপর দিয়ে প্রায় অর্ধেকটা স্তনভার ফুলে উঠল। প্রভু বড় করে হাঁ করে সেই ফুলে ওঠা নরম মাংসপিণ্ডে কামড় বসিয়ে দিল।
 

রূপসীও দু’হাতে প্রভুর মাথার চুল মুঠো করে ধরে তার মুখটাকে নিজের স্তনের ওপর চেপে ধরে শীৎকার করে বলল, “আআহ, আজ কতদিন বাদে একজন বাঙালী পুরুষ আমার দুধে কামড় দিল। আহ আআহ। আরেকটু কামড়ান। আরেকটু টিপুন। বিহারী আর উড়িয়াদের সাথে করে করেই আমার দুধ গুদ সবই শেষ হয়ে যেতে বসেছে। এতদিন বাদে একজন বাঙালী পুরুষের মুখের ছোঁয়ায় খুব সুখ পাচ্ছি। এই দেবরজী, একটু দাঁড়ান না। আমি ব্লাউজটা খুলে দিই, তাহলে আপনার আরো ভাল লাগবে”।
 

রূপসীর স্তনের স্পর্শে প্রভুর শরীর উত্তেজিত হয়ে উঠতে শুরু করল। একটু সময়ের জন্য সে নিজের উদ্দেশ্য ভুলে গিয়ে রূপসীর শরীরের সুঘ্রাণে মেতে উঠল। রূপসীর কোন কথার জবাব না দিয়ে সে রূপসীর স্তন দুটো নিয়ে নানাভাবে খেলায় মেতে উঠল। রূপসী অনেক কসরত করে নিজের ব্লাউজের সবগুলো হুক খুলে ফেলতেই তার বিশাল সাইজের স্তন দুটো অনেকটা নিচের দিকে ঝুলে পড়ল। কিন্তু প্রভু সে দুটোকে নিজের হাতের থাবায় নিয়ে আবার ওপরের দিকে ঠেলে তুলে একটা স্তনের বোঁটা নিজের মুখের মধ্যে পুরে নিয়ে জোরে জোরে চুসতে লাগল।
 

রূপসী প্রভুর মুখের মধ্যে নিজের স্তনটা বেশী করে ঠেলে ঢোকাতে ঢোকাতে বলল, “আহ, কী ভাল লাগছে। বাঙালী পুরুষদের মত অন্য কোন পুরুষই মেয়েদের দুধ চুসে এত সুখ দিতে পারে না। খান দেবরজী। প্রাণ ভরে খান। আপনার কাজ নিয়ে ভাববেন না। আপনি আমাকে যা সুখ দিচ্ছেন, তাতে আপনার কাজ অবশ্যই হয়ে যাবে”।
 

রূপসী মহিলার এ কথা শুনেই প্রভুর হুঁশ ফিরল যেন। সে রূপসীর স্তন দুটো দু’হাতে খামচে ধরে রেখেই নিজের মুখ তুলে বসতেই রূপসী মহিলা প্রভুকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ দেবরজী। অনেক দিন বাদে কাউকে দুধ খাইয়ে এমন সুখ পেলাম। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিলেন কেন? আমার তো খুব ভাল লাগছিল। আরেকটু খান না” বলতে বলতে প্রভুর মুখটাকে দরজার দিকে ঘুরিয়ে দিতেই প্রভু চমকে উঠল। দরজার পর্দাটাকে নড়তে দেখে সে ছিল ছেঁড়া ধনুকের মত ছিটকে সোজা হয়ে বসে নিজের মুখ ফিরিয়ে পেছন দিকে তাকাল।

রূপসী নিজের খোলা বুকটা শাড়ি দিয়ে ঢেকে দরজার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কফি বানিয়েছিস গুড্ডি”?
 

বাইরে থেকে কচি মেয়েলী গলা শোনা গেল, “হা মাম্মি, হয়ে গেছে। পাপা আর মঙ্গু কাকুকে দিয়ে এলাম। বাবুজীরটা আনব”?

রূপসী মহিলা বলল, “হ্যা আন”।

মেয়েটা কফির কাপ হাতে নিয়ে ঢুকতেই তার মা আবার বলল, “একে বাবুজী বলবি না। এ তো অন্যদের মত পয়সা দিয়ে আমার বাবু হয়ে এখানে আসেননি। উনি অন্য একটা কাজে এসেছেন। তুই ওনাকে চাচাজী বলতে পারিস। কারন আমি ওকে আমার দেবর বানিয়ে নিয়েছি। বুঝেছিস? এবার তুই চাচাকে কফিটা দিয়ে চলে যা। এখন আমরা তার কাজ নিয়ে কথা বলব। আর শোন তোর পাপাকে বলে দে, আটটার কাস্টমার এলে যেন বলে দেয় যে আজ কাজ হবে না। আমার শরীর ভাল নেই। সে কাল বিকেল পাঁচটায় আসতে পারে। আর রাজি না হলে আসতে হবে না। আর মনে করে তার কোড নাম্বারটা যেন নোট করে রাখে। কাল যদি সে আসতে না চায় তাহলে এজেন্টকে তো বলে দিতে হবে তার কমিশন ফিরিয়ে দিতে। বুঝেছিস”?

গুড্ডি বলল, “ঠিক আছে মাম্মি, পাপাকে বলে দিচ্ছি আমি” বলে কফির কাপটা টেবিলে নামিয়ে রেখে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
 

মেয়েটা চলে যেতেই রূপসী মহিলা প্রভুর হাত ধরে বলল, “আসুন দেবরজী। নিন কফিটা খান। ভয় পাবেন না। আমার মেয়ে কিছু দেখেনি। আর দেখে থাকলেও কিছু হবে না। এবার বলুন তো দেখি কি গাড়ি আছে আপনার কাছে”?
 

প্রভু মুখ ঘুরিয়ে সোজা হয়ে বসে নিজের পকেট থেকে মোবাইল বের করে বলল, “ঠিক আছে ভাবিজী। তাহলে বলুন, আপনি কি গাড়ি চাইছেন? দেশী না বিদেশী? পেট্রোল না ডিজেল? কী পছন্দ আপনার”?

রূপসী প্রভুর গায়ে নিজের বুক চেপে ধরে একহাতে তার পিঠ বেষ্টন করে বলল, “শুনুন দেবরজী, আপনার কথা শুনতে শুনতে আমি এটা ওটা করতে পারি। আমাকে কোন কাজে বাঁধা দেবেন না। কিন্তু গাড়ি আপনি পছন্দ করে দেবেন। তবে আমি একখানা বিদেশী গাড়িই নিতে চাই। ডিজেল বা পেট্রোল দুটোই চলবে। ভাল মাইলেজ দেওয়া চাই। ভাল কন্ডিশনের হওয়া চাই। তবে ডিজেল গাড়ি হলেই ভাল হয়। এবার আপনি পছন্দ করে দিন। আপনাকে আমি আরও সুযোগ দেব আমার দুধ খাবার। চাইলে আরও বেশী কিছু পাবেন। আমি পয়সা নেব না আপনার কাছ থেকে। কিন্তু আপনি আমাকে খারাপ গাড়ি দেবেন না”।
 

প্রভু আর অন্য কথায় না গিয়ে বলল, “ভাবিজী, বিদেশী ডিজেল গাড়ি আপাততঃ আমার হাতে শুধু দুটোই আছে। কিন্তু পেট্রোল গাড়ি বেশ কয়েকটা আছে। ডিজেল গাড়ি একটা হবে টয়োটা করোলা, আর একটা হবে ভক্সওয়াগেন ভেন্টো। তবে আপনি যদি এ দুটোর মধ্যে আমাকেই একটা পছন্দ করতে বলেন তাহলে আমি বলব এ দুটোর যে কোন একটাই আপনি নিতে পারেন। দুটোরই মাইলেজ খুব ভাল। টয়োটাটা ২১ কেএমপিএল আর ভক্সওয়াগেনটা ১৯ কেএমপিএল মাইলেজ দেবে। আর দুটোই মাত্র এক বছর পুরোন গাড়ি। আর একেবারে টিপ টপ কণ্ডিশান দুটোরই। এক্সট্রা অর্ডিনারি মিউজিক সিস্টেম ছাড়া একটা প্রাইভেট গাড়িতে যা যা থাকবার কথা, তার সব কিছু আছে। তবে দামের দিকে দুটোর মধ্যে অনেক তফাৎ হবে। টয়োটার দাম পড়বে আট লাখ পঁচিশ হাজার। ওটার অরিজিনাল দাম ছিল প্রায় আঠার লাখ। আর ভক্সওয়াগেনটার দাম পড়বে পাঁচ লাখ পঞ্চাশ হাজার, যেটার অরিজিনাল প্রাইস ছিল প্রায় তের লাখ টাকা। এবার এ দুটোর মধ্যে আপনার যদি কোনওটা পছন্দ হয় তাহলে বলুন। কারন আমার হাতে অন্য কোন বিদেশী ডিজেল গাড়ি এ মূহুর্তে নেই। তবে পেট্রল গাড়ি অনেক আছে। স্কোডা, হুন্ডাই, এমনকি মার্সিডিস পর্যন্ত আছে”।
 

রূপসী মহিলা প্রভুর কথা শুনতে শুনতে নিজের বুকের ওপর থেকে শাড়ি সরিয়ে দিয়ে নিজের ব্লাউজটাও খুলে ফেলেছে। এবার সে প্রভুর একখানা হাত টেনে নিয়ে নিজের একটা স্তনের ওপর চেপে ধরে বলল, “আচ্ছা, আমায় একটু ভাবতে দিন। আপনি ততক্ষন আমার দুধ দুটো একটু টিপুন। কিন্তু একটা কথা বলুন দেবরজী। গাড়ি দুটোই ভাল হবে তো”?


______________________________
 
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply
#54
(Update No. 74)

প্রভু রূপসীর একটা নুয়ে পড়া স্তন একহাতে তুলে ধরে আস্তে আস্তে টিপতে টিপতে বলল, “হ্যা ভাবিজী, সে ব্যাপারে পুরো গ্যারান্টি দিচ্ছি আমি। আপনি যেমন সেক্সী সুন্দরী আর টসটসে, ও গাড়ি দুটোও ঠিক তেমনই। আর আপনি টেস্ট ড্রাইভ করেই সেটা বুঝতে পারবেন”।

রূপসী প্রভুর মাথাটা নিজের বুকের দিকে নামাতে নামাতে বলল, “ঠিক আছে। আপনি আমার একটা দুধ খেতে খেতে অন্যটা টিপতে থাকুন। আমি একটু ভেবে দেখি” বলে নিজের অন্য স্তনটা প্রভুর মুখের মধ্যে ঠেলে ঢুকিয়ে দিল। প্রভুও লজ্জা সঙ্কোচ ছেড়ে খুব করে রূপসীর স্তন দুটো ছানতে আর চুসতে লাগল।
 

তারপর প্রায় মিনিট দশেক দু’জনেই চুপচাপ। রূপসী প্রভুর মাথা নিজের বুকে চেপে ধরে তার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে গাড়ির কথা ভাবতে লাগল। প্রভু পালা করে রূপসীর স্তন দুটো চুসছিল আর টিপছিল। রূপসীর শরীরে তেমন কোন চাঞ্চল্য লক্ষ্য করা না গেলেও প্রভুর কোমড়ের নিচে তার পুরুষাঙ্গটা যে ওপরের দিকে প্যান্ট ফুটো করে বেরিয়ে আসতে চাইছে, সেটা প্রভু খুব ভাল ভাবেই বুঝতে পাচ্ছিল। আর এ অপরূপা সেক্সী মহিলার সাথে সেক্স করবার জন্য সে মানসিক প্রস্তুতি নিতে লাগল। এমন সেক্সী এক অপরূপাকে এভাবে পেয়ে তার শরীরটাকে পুরোপুরি ভোগ না করে চলে যাওয়াটা বোকামি হবে। প্রয়োজনে মহিলা তার অন্যান্য গ্রাহকদের কাছ থেকে যে পয়সা নেয়, সে সেটাও দিতে রাজি আছে।
 

কিছুক্ষণ বাদে রূপসী মহিলা হঠাৎ করেই কেঁপে উঠে ‘ওহ ওঃ’ করে প্রভুর মাথার চুল খামচে ধরে প্রভুর মুখটাকে নিজের বিশাল স্তনের ওপর আরো জোরে চেপে ধরে বলল, “দেবরজী আপনি কী সুন্দর করে আমার দুধ দুটো খাচ্ছেন। আআহ। খুব আরাম লাগছে আমার। অনেক বছর বাদে কেউ এত ভালবেসে আমার দুধ খাচ্ছে। রোজ রোজ কত পুরুষ আমার শরীরটাকে ভোগ করে। কিন্তু আমি নিজে ভোগ বা উপভোগ কিছুই করিনা। আমি শুধু তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েই খুশী হই। আজ আপনার মুখের ছোঁয়াতেই আমার সারা শরীরে সুখ ছড়িয়ে পড়ছে। জীবনের শুরুতে এক বন্ধুর সাথে প্রথম বার সেক্স করবার সময় যেমন হয়েছিল, আজ ঠিক তেমনই অনুভূতি হচ্ছে। আআআহ, আমার যে আজ সুখে মরে যেতে ইচ্ছে করছে” বলতে বলতেই সে “ওহ ওহ ও মা গো” বলে প্রভুর মুখটাকে গায়ের জোরে নিজের বুকে চেপে ধরে কাঁপতে লাগল। প্রভু তখন রূপসী রমণীর একখানা স্তনের অনেকখানি মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে নিয়ে বেশ জোরে কামড়ে ধরে অন্য স্তনটাকে কব্জির জোর লাগিয়ে টিপতে ছানতে লাগল। মিনিট খানেক বাদে রূপসীর হাতের বাঁধন খানিকটা আলগা হতে প্রভু মহিলার বুক থেকে মুখ উঠিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কি ভাবলেন ভাবিজী? পছন্দ হল”?
 

রূপসী মহিলা ঘন ঘন শ্বাস নিতে নিতে জবাব দিল, “পছন্দ না হয়ে উপায় আছে? শুধু দুধ চুসে এর আগে আর কেউ আমার গুদের রস বের করতে পারেনি আজ পর্যন্ত”।

প্রভু দু’হাতে রূপসী মহিলার স্তন দুটো ধরে টিপতে টিপতে বলল, “আপনার দুধ দুটোই এমন লোভনীয় যে আমিই নিজেকে হারিয়ে ফেলছি। আমার বৌয়ের দুধ গুলো আপনার দুধগুলোর অর্ধেকেরও কম হবে। জীবনে কোন মেয়ের বুকে এত বিশাল দুধ আমি আর কখনও দেখিনি। কিন্তু ভাবিজী, আমি তো জিজ্ঞেস করছিলাম গাড়ির কথা। ওই দুটোর মধ্যে কোনটা পছন্দ হয়েছে”?
 

রূপসী দু’হাতে প্রভুর মুখটা ধরে জবাব দিল, “পছন্দ তো আপনিই করে দিয়েছেন দেবরজী। আমি তো শুধু আমার সামর্থ্যের কথা ভাবছিলাম। ভেবে দেখলাম, টয়োটাটা আমাদের বাজেট ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তাই ভাবছি ভক্সওয়াগেনটাই নেব। পাঁচ লাখ পঞ্চাশ দিতে পারব। আচ্ছা সেটার কালারটা কি হবে”?

প্রভু বলল, “দারুণ সুন্দর কালার, গ্লিটারিং সিলভার। মার্কেটে এ কালারের গাড়ির খুব ডিমাণ্ড”।

রূপসী বলল, “হু এ কালারটা আমারও খুব ভাল লাগে। কিন্তু দেবরজী, একটা শর্ত আছে আমার। আপনি যদি আমার সে শর্তটা রাখেন তাহলে ডিল ফাইনাল বলে ধরতে পারেন”।
 

প্রভু রূপসী মহিলার স্তন টিপতে টিপতেই জবাব দিল, “ঠিক আছে, শর্তটা বলুন। দেখি রাখতে পারি কি না”।

রূপসী বলল, “তার আগে আমার একটা কথা জেনে নেওয়া উচিৎ। আপনি মিথ্যে জবাব দেবেন না কিন্তু। আচ্ছা দেবরজী, নিজের বৌ ছাড়া অন্য কোন মেয়ের সাথে আপনি সেক্স করেছেন কখনও”?

প্রভু একটু লজ্জা পেয়ে বলল, “আমি আপনার দু’এক কথাতেই আপনার দুধ খেয়েছি বলেই এ’কথাটা জিজ্ঞেস করছেন তো? কিন্তু না ভাবিজী, বিয়ের আগেও আমি কোন মেয়ের সাথে ও’সব করিনি। আর বিয়ের পরেও শুধু নিজের বৌ ছাড়া অন্য কারুর সাথেই এমন করিনি। কোন মেয়ে কোনদিন আমাকে এ ভাবে আমন্ত্রণ করেনি। আপনার মত এমন সুন্দরী মহিলার আমন্ত্রণ অস্বীকার করতে ইচ্ছে করছিল না বলেই আপনার দুধ খেয়েছি”।

রূপসী খুশী হয়ে প্রভুর মুখটাকে তার বুকে চেপে ধরে বলল, “আমিও ঠিক তেমনটাই আন্দাজ করতে পেরেছিলাম। নইলে আমি যে একজন বেশ্যা এটা জেনেও আপনি এত ভদ্রভাবে কথা বলতেন না আমার সাথে। আর আপনার দুধ চোসার স্টাইলেই বুঝেছি, নিজের বৌকে বা প্রেমিকাকে ছেলেরা যেমন ভাবে আদর করে, আপনি সেভাবেই আমার দুধ দুটো নিয়ে আদর করছিলেন। এ ব্যাবসা শুরু করবার পর থেকে এমন আদর কখনও কাউকে করতে দেখিনি। সকলের মুখেই নোংরা কথা আর খিস্তি শুনতেই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি। আর সকলেই নিষ্ঠুরের মত আমার শরীরের ওপর অত্যাচার করে তাদের পয়সা উসুল করে নেয়”।

প্রভু রূপসীর একটা স্তনে চুমু খেয়ে অন্য স্তনটাকে মোলায়েমভাবে হাতাতে হাতাতে বলল, “আপনার দুধ দুটো সত্যি অসাধারণ ভাবিজী। এমন অসাধারণ সুন্দর দুধ দুটো পেয়ে আমি সত্যি নিজেকে ভাগ্যবান বলে করছি। কিন্তু ভাবিজী, এবার আসল কথাটা বলুন। আপনার শর্তটা কি”?

রূপসী মহিলা বলল, “আপনি আমার সাথে দু’বার সেক্স করবেন। যদি আপনার হাতে সময় থাকে, তাহলে এখনই একবার করুন আমাকে। আর যেদিন গাড়ি ডেলিভারি দেবেন সেদিন আপনাকে নিয়ে আমি টেস্ট ড্রাইভে যাব। তখন কোন একটা উপযুক্ত জায়গায় গিয়ে আপনি গাড়ির ভেতরেই আমাকে আরেকবার করে সুখ দেবেন”।

প্রভু রূপসীর কথা শুনে মনে মনে খুশী হলেও একটু চালাকি করে বলল, “এতক্ষণ ধরে আপনার দুধ দুটোকে নিয়ে যা করছি, সেটা কি সেক্স নয়”?

রূপসী কামার্ত গলায় বলল, “আমি আসল সেক্সের কথা বলছি দেবরজী। মানে আমি আপনার কাছ থেকে পুরোপুরি সুখ নিতে চাই। পুরুষ মানুষেরা নিজের প্রেমিকা অথবা বৌয়ের সাথে যেভাবে সেক্স করে থাকে, আপনি সেভাবে আমার সাথে সেক্স করুন। আপনাকে পেয়ে আজ অনেক বছর বাদে ভালবেসে নিজের শরীরটা আপনাকে দিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে আমার। আমিও আপনাকে আমার গ্রাহক না ভেবে আমার স্বামী ভেবে আপনাকে সব কিছু উজার করে দেব”।

প্রভু রূপসীর ভারী ভারী স্তন দুটো দু’হাতে নাচাতে নাচাতে বলল, “আপনিই তো বললেন, রোজই কত পুরুষ সেভাবে আপনার শরীরটাকে ভোগ করে। তাহলে আমার কাছে আবার সেই একই জিনিস আপনি চাইছেন কেন ভাবিজী”?

রূপবতী মহিলা বললেন, “রোজ অনেক পুরুষই আমাকে ভোগ করে। দিনে আট দশজনও হয় কখনো কখনো। কিন্তু তারা সবাই আমাকে রেন্ডি বেশ্যা ভেবেই ভোগ করে। আমিও তাদের কাউকেই আমার প্রেমিক বলে ভাবি না। আজ আপনাকে আমার প্রেমিক ভেবে আপনার সাথে সেক্স করতে চাইছি। প্লীজ আপনি আমাকে নিরাশ করবেন না দেবরজী”।

প্রভু বলল, “কিন্তু আমার সাথে তো কনডোম টনডোম কিছু নেই ভাবিজী”।

রূপসী মহিলা বলল, “বেশ্যাদের মুখের কথার তো কেউ কোন দাম দেয় না দেবরজী। আপনি যদি আমার কথা বিশ্বাস করেন তাহলে কনডোম ছাড়াও চুদতে পারেন আমাকে। কোন ঝামেলা হবে না। আমরা রেগুলার মেডিক্যাল চেকআপ করিয়ে থাকি। আমার শরীরে কোনও রোগ নেই। আর পেটে বাচ্চাও আসবে না আর কখনও। তবে কনডোম আমার স্টকেও আছে। আপনি চাইলে কনডোম লাগিয়েও চুদতে পারেন। তাহলে আর দেরী না করে এখনই একবার চুদুন না” বলেই জিভে কামড় দিয়ে বলল, “সরি দেবরজী, মুখ ফস্কে গেছে। আসলে প্রায় তিরিশ বছর ধরে এ’সব ভাষা বলতেই জিভটা অভ্যস্ত হয়ে গেছে তো। সেক্সের সময়েও কিন্তু আমার মুখ দিয়ে এ’সব স্ল্যাং কথা বেরোবেই। তাতে কিছু মনে করবেন না। আপনিও যা খুশী তাই বলতে পারেন। আমি তাতে কিছু মনে করব না”।

প্রভু দরজার দিকে ঈশারা করে বলল, “ঠিক আছে ভাবিজী, তাতে কিছু মনে করিনি আমি। তবে বেশ, তাহলে দরজাটা বন্ধ করে দিন। আপনার দুধ খেয়ে আমারও খুব ইচ্ছে করছে আপনাকে করতে”।

রূপসী মহিলা দুষ্টুমি করে জিজ্ঞেস করল, “করতে মানে? চুদতে”?

প্রভু মুখে কিছু না বলে লাজুক হেসে সম্মতি জানাল। রূপসী মহিলা সাথে সাথে খাটের ওপর উঠে দাঁড়িয়ে চটপট করে নিজের শাড়ী সায়া প্যান্টি সব খুলতে খুলতে বলল, “দরজা খোলা থাকলেও কোন অসুবিধে নেই। আপনি যতক্ষণ এ ঘরে থাকবেন, ততক্ষণ আর অন্য কেউ এ ঘরে আসবে না। আসুন”।

প্রভু তবু বলল, “আপনার মেয়ে পাশের ঘরে আছে। আর সামনের ঘরে আপনার স্বামী আছে, মঙ্গু ভাইয়া আছে। তাদের মধ্যে কেউ তো আসতেই পারে”।

রূপসী মহিলা এবার প্রভুর গায়ের শার্ট খুলতে খুলতে বলল, “আমার মেয়ে, স্বামী আর মঙ্গু ভাল ভাবেই জানে যে আমার ঘরে পুরুষ মানুষেরা এসে কী করে। তাই তারা কেউ আসবে না। আর তাছাড়া গিয়ে দেখুন গে, আমার স্বামী আর মঙ্গু হয়তো এখন দু’জন দু’জনের গাঁড় মারছে”।
 

প্রভু চমকে উঠে জিজ্ঞেস করল, “একি বলছেন ভাবিজী? সত্যি”?
 

রূপসী প্রভুর শরীরের ঊর্ধাঙ্গ উন্মুক্ত করে প্যান্টের হুক খুলতে খুলতে বলল, “ওরা দু’জন একসাথে হলেই একে অন্যের গাঁড় মারে। এই তো দু’দিন আগেও আমার স্বামীর গাঁড়ে ধোন ঢুকিয়ে মঙ্গু যখন চুদছিল, তখন হঠাৎ করেই আমার মেয়েটা সেখানে চা দিতে ঢুকে পড়েছিল। আর মঙ্গু সাথে সাথে কোনরকমে জামা প্যান্ট পড়েই ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। আর আমার স্বামী পুরুষদের সাথে সেক্স করেই বেশী সুখ পায়। ওর আরও অনেক পুরুষ পার্টনার আছে। আর আমার মত সেও পয়সা নিয়ে অনেক পুরুষকেই নিজের গাঁড় মারতে দেয়। কিন্তু ও’সব কথায় সময় নষ্ট করে তো লাভ নেই। শুয়ে পড়ুন তো দেখি। আমি আপনার সুন্দর ধোনটাকে আগে একবার চুসে দেখি, আপনার মালের স্বাদটা কেমন। তারপর আপনি যেভাবে খুশী আমাকে চুদবেন”।

প্রভু আর কথা না বলে চিত হয়ে বিছানায় শুয়ে জিজ্ঞেস করল, “আমার বাড়ার ফ্যাদা কি আপনি গিলে খাবেন? না মুখে নিয়ে ফেলে দেবেন”?
 

রূপসী মহিলা সম্পূর্ণ বিবস্ত্রা হয়ে প্রভুর দু’পায়ের ফাঁকে বসতে বসতে বলল, “সে আমি যা করার করব। আপনি শুধু দেখে যান দেবরজী” বলে ঘরের সিলিঙের দিকে মুখ করে লম্বালম্বি দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষাঙ্গটাকে এক হাতের মুঠোয় ধরে অন্যহাতে প্রভুর অণ্ডকোষের থলিটা হাতে নিয়ে আলতো ভাবে চাপতে চাপতে পুরুষাঙ্গের লাল টকটকে মুণ্ডিটার মাথায় নিজের নাক ঘসতে লাগল। মুণ্ডির ছেদা দিয়ে এক ফোঁটা কামরস বেরিয়ে এসে রূপসীর নাকে লাগতেই রূপসী বলে উঠল, “আহ কি দারুন সুগন্ধ” বলেই পুরুষাঙ্গ চেপে ধরা হাতটাকে আস্তে আস্তে ওঠানামা করাতে লাগল।

প্রভু নিজের হাত দুটো নিচের দিকে সটান বাড়িয়ে দিয়েও রূপসীর স্তনের নাগাল না পেয়ে নিজের দুটো পা দিয়ে মহিলার বিশাল সাইজের পাছার দাবনা দুটো চাপতে লাগল। মহিলা প্রভুর পুরুষাঙ্গের ওপরের চামড়া নিচের দিকে ঠেলে নামিয়ে দিয়ে টকটকে লাল মুণ্ডিটার দিকে তাকিয়ে বলল, “ইস কি দারুণ সুন্দর দেখতে আপনার ধোনটা। একেবারে টাটকা মনে হচ্ছে। দেখেই বোঝা যায়, এটা খুব বেশী মেয়েদের গরম গর্তে ঢোকেনি। কতদিন হল বিয়ে করেছেন বলুন তো? আর বৌকে কি বেশী চোদেন না আপনি”?
 

প্রভু রূপসী মহিলার মাথার চুল ধরে জবাব দিল, “ছ’মাস হল বিয়ে করেছি ভাবিজী। আর রোজ রাতেই বৌকে করি”।
 

রূপসী মহিলা আর কোন কথা না বলে হাঁ করে প্রভুর পুরুষাঙ্গটাকে নিজের মুখের ভেতর ঢুকিয়ে নিয়ে চুসতে লাগল। পাঁচ ছ’বার মুখ ওঠানামা করেই সে মুখ তুলে প্রভুর মুখের দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করল, “বৌয়ের গুদ চোসেন আপনি”?

প্রভু একটু সুযোগ পেতেই মহিলার স্তন দুটো খপ করে ধরে জবাব দিল, “হ্যা ভাবিজী চুসি। আমার বৌ গুদ চোসাতে খুব ভালবাসে”।

রূপসী একটু হেসে বলল, “সব মেয়েই সেটা ভালবাসে। কিন্তু আপনার চুসতে ভাল লাগে”?

প্রভু রূপসীর স্তন দুটো খুব করে ছানতে ছানতে জবাব দিল, “আমারও ভালই লাগে”।

রূপসী নিজের শরীরটাকে খানিকটা ওপরের দিকে টেনে তুলে প্রভুর পেটে আর বুকে হাত বোলাতে বোলাতে বলল, “প্রেমিকা স্ত্রীর গুদ চুসতে তো ভাল লাগবারই কথা। আপনার বৌয়ের গুদে হয়ত শুধু আপনার ধোনটাই ঢোকে। আমার গুদে তো হাজারটা লোকের ধোন ঢোকে। আমারটা চুসতে ভাল লাগবে আপনার”?

প্রভু বলল, “ভাবিজী, আপনি তো এখন আমার প্রেমিকা, আমার বৌ। বৌয়ের সুখের জন্য আমি চুসতেই পারি”।
 

রূপসী সাথে সাথে প্রভুর ওপর থেকে উঠে পড়ে উল্টো ঘুরে নিজের যৌনাঙ্গটাকে প্রভুর মুখের ওপর বসিয়ে নিজে আবার প্রভুর পুরুষাঙ্গটাকে মুখের ভেতর ঢুকিয়ে নিয়ে চুসতে চুসতে প্রভুর অণ্ডকোষটা নিয়ে খেলতে লাগল। প্রভুও রূপসী মহিলার ভারী পাছার নরম দাবনা দুটো চাপতে চাপতে মহিলার প্রশস্ত যোনিছিদ্রে নিজের জিভ ঢুকিয়ে দিয়ে চাটতে চুসতে লাগল।

দশ পনের মিনিট এভাবে চলার পরেই দু’জনেই নিজের নিজের রস অপরের মুখে ছেড়ে দিল। রূপসী মহিলা আর সময় নষ্ট না করে ঘুরে গিয়ে প্রভুর বুকে তার ভরাট স্তন দুটো চেপে ধরে প্রভুর পুরুষাঙ্গটাকে ধরে নিজের গোপন গুহার মধ্যে ভরে নিয়ে বিপরীত বিহারে মগ্ন হল। প্রভু জানতেই পারল না যে একটা কচি মেয়ের দুটো কৌতুহলী চোখ পর্দার ফাঁক দিয়ে ঘরের ভেতরের সব কিছু দেখে যাচ্ছে।
 

রাত প্রায় ন’টা নাগাদ নিজেদের শরীর পূর্ণরূপে পরিতৃপ্ত করবার পর দু’জনে নিজেদের পোশাক পড়ে নেবার পর মহিলা একটু গলা তুলে ডেকে বলল, “গুড্ডি বিটিয়া, তুই কোথায়”?

দরজার ওপার থেকে মেয়েটি জবাব দিল, “কেন মাম্মি? আমি বাইরের ঘর থেকে এলাম। ভেতরে ঢুকব”?

রূপসী বললেন, “ঠিক আছে আসতে হবে না। তুই তোর পাপাকে গিয়ে বল, আমাদের কাজ হয়ে গেছে, আমরা বাইরের ঘরে আসছি। তবে দরজার বাইরে থেকেই কথাটা বলিস”।

মেয়েটি জবাব দিল, “ঠিক আছে মাম্মি”।

খানিক বাদেই রূপসী মহিলা প্রভুর ঠোঁটে খুব আদর করে একটা চুমু খেয়ে নিজের মুখটা আয়নায় দেখে একটু ঠিকঠাক হয়ে প্রভুকে নিয়ে বাইরের ঘরে এসে হাজির হল। দিবাকর তাদের দু’জনকে ঢুকতে দেখে জিজ্ঞেস করল, “কি হল, গাড়ি পছন্দ হয়েছে তোমার গুড্ডি কি মা”।
 

রূপসী মহিলা প্রভুকে একটা চেয়ারে বসতে বলে বলল, “হ্যা পছন্দ হয়েছে। ভক্সওয়াগেনের একটা মডেল খুব পছন্দ হয়েছে। পাঁচ লাখ পঞ্চাশ হাজারে রফা হয়েছে। এবার দেবরজী বলুন, গাড়ি কবে ডেলিভারি দেবেন? তবে আমি কিন্তু পেমেন্ট করবার আগে একটা লম্বা টেস্ট ড্রাইভ করে দেখব। আপনিও তখন আমার সাথে থাকবেন। টেস্ট ড্রাইভে খুশী হলেই কিন্তু আমরা ডেলিভারি নেব”।

প্রভু বলল, “অবশ্যই। টেস্ট ড্রাইভ না করে কেউ গাড়ি কেনে নাকি? তবে আপনারা পেমেন্ট রেডি রাখলে আমি কাল সকালেই গাড়ি নিয়ে আসতে পারি। টেস্ট ড্রাইভ করে পছন্দ হলে আমাকে পুরো পেমেন্টটা ক্যাশে করে দেবেন”।
 

সবাই রাজি হতেই মঙ্গু প্রভুকে সঙ্গে নিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে গেল। প্রভু মঙ্গুকে বলল, “মঙ্গু ভাইয়া, আমি কাল সকাল ন’টা সাড়ে ন’টার মধ্যে গাড়ি নিয়ে আসব। আর বাজারের সামনে না রেখে ও’দিকের রাস্তা দিয়ে ঘুরিয়ে দিবাকরজীর ঘরের অনেকটা কাছাকাছি আসা যাবে। সেখানেই এসে গাড়ি পার্ক করব। আপনি সকাল সকালই এখানে চলে আসবেন। দিবাকরজীকে বলবেন টাকাটা রেডি রাখতে। টেস্ট ড্রাইভ শেষ করে ভাবীজী খুশী হলে তারা যেন আমাকে পুরো পেমেন্টটা করে দেয় এটা আপনি দেখবেন। আর আপনার কমিশন পচপান্ন হাজার টাকাও আমি সাথে সাথেই আপনাকে দিয়ে দেব”।

এই বলে প্রভু মঙ্গুকে ছেড়ে বাজারের বাইরের দিকে এগোতে শুরু করল।
 

***************
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply
#55
(Update No. 75)

পরদিন সকাল ঠিক ন’টার সময় প্রভু নিজে ড্রাইভ করে ঝকঝকে সিলভার কালারের ভক্সওয়াগেন ভেন্টো গাড়িটাকে দিবাকরের বাড়ি থেকে প্রায় তিরিশ চল্লিশ মিটার দুরে এনে পার্ক করে গাড়ি থেকে নামতেই দেখে গলির ভেতর থেকে দিবাকর, দিবাকরের রূপসী স্ত্রী আর মঙ্গু এগিয়ে আসছে। রূপসীর পোশাক দেখেই প্রভুর প্যান্টের নিচের জিনিসটা লাফিয়ে উঠতে চাইল। ডীপ নীল রঙের একটা টাইট জীনস প্যান্টের ওপর টকটকে লাল রঙের একটা লো নেক টপ পড়েছে রূপসী। চোখে একখানা ডিজাইনার সানগ্লাস। পায়ে সুন্দর ডিজাইনার একজোড়া শু। কাঁধে মাঝারি সাইজের একটা লেডিজ ব্যাগ। মহিলাকে দেখে কে বলবে যে তার বয়স চুয়াল্লিশ পেরিয়ে গেছে আর সে তিন সন্তানের মা! এ পোশাকে তাকে তিরিশ বছরের একটা টগবগে তরুনী বলেই মনে হচ্ছে। ভারী ভারী ঊরু দুটোর ওপর পড়নের জিনসটা একেবারে টাইট হয়ে আছে। বেয়াল্লিশ সাইজের ভারী ভারী স্তনদুটো হাঁটার তালে তালে একটু একটু দুলছে। লো নেক টপটার ওপরের দিক দিয়ে ভরাট স্তনদুটো যেন ফুলে উঠতে চাইছে। আর তার চলার ছন্দটাও যে কোন পুরুষের মন দুলিয়ে দিতে পারে।
 

প্রভু সবাইকে গুড মর্নিং বলে গাড়ির চাবিটা আগুনের লেলিহান শিখার মত রূপসীর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “এই নিন চাবি ভাবিজী। আর গাড়ি আপনার সামনে। চালিয়ে দেখুন”।

দিবাকর আর মঙ্গু মহিলার সাথে গাড়ির চারপাশ দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে নিজেদের খুশী জাহির করতে লাগল। গাড়ির ডিকি খুলে দেখল। তারপর সব গুলো দরজা খুলে ভেতরের সব কিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল তারা সবাই মিলে। প্রভু গাড়িটা থেকে ফুট ছয়েক দুরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের সকলের মুখ চোখের ভাব দেখে যাচ্ছিল। সব কিছু দেখে শুনে রূপসী ড্রাইভিং সীটে বসে স্টিয়ারিঙে হাত রেখে সামনের দিকে দেখল। তারপর চাবি লাগিয়ে স্টার্ট করে ওয়াইপার, সাইড লাইট, ব্যাকলাইট সবকিছু জ্বালিয়ে দেখল। হেডলাইট গুলোও জ্বালিয়ে দেখল। ক্লাচ পেডেল ডাবিয়ে গিয়ার লিভারটাকে সব গিয়ারে ফেলে টেস্ট করল। রিয়ার গিয়ারে ফেলে গাড়িটাকে ফুট পাঁচেক পেছনে নিয়ে আবার সামনে চালিয়ে আগের জায়গায় নিয়ে এল। তারপর স্টার্ট অফ করে প্রভুকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করল, “ট্যাঙ্কিতে তেল কতটা আছে প্রভুজী? কতদুর আপডাউন করা যাবে”?

প্রভু গাড়ির কাছে এসে জবাব দিল, “ফুল ট্যাঙ্কি আছে ভাবিজী। ভাববেন না। আপনি নিশ্চিন্তে টেস্ট ড্রাইভ সেরে আসুন” বলে মঙ্গু আর দিবাকরের দিকে চেয়ে বলল, “আপনারাও উঠে পড়ুন দিবাকরজী”।

দিবাকর বলল, “না প্রভুজী, আমরা দু’জন যাচ্ছি না। আসলে ব্যাঙ্কে গিয়ে টাকাও তো উঠিয়ে আনতে হবে। নইলে আপনাকে পেমেন্ট কি করে করব। আমি আর মঙ্গু তাই এখন ব্যাঙ্কে যাব। আপনিই আমার বিন্দিয়া ডার্লিংকে নিয়ে ঘুরে আসুন। আপনারা ফিরে আসবার আগেই আমরা ব্যাঙ্ক থেকে ফিরে আসব। আর আপনাকে ফুল পেমেন্ট করে দিতে পারব”।

রূপসী বিন্দিয়া গাড়ির সামনের দরজা খুলে দিয়ে বলল, “হ্যা প্রভুজী আসুন। ওরা ব্যাঙ্ক থেকে ঘুরে আসুক। আমরা দেবর ভাবী মিলে একটু ঘুরে আসি”।

প্রভু আর কোন কথা না বলে গাড়িতে উঠে বসতেই বিন্দিয়া গাড়ি স্টার্ট করল। দিবাকর আর মঙ্গু হাত উঠিয়ে বাই জানাতেই গাড়ি চলতে শুরু করল। সীট বেল্ট বেঁধে বিন্দিয়ার গাড়ি চালানো দেখতে দেখতে প্রভু বলল, “বাহ, আপনি তো দারুণ গাড়ি চালান ভাবিজী! সুন্দর ড্রাইভিঙের হাত আপনার”।
 

সরু রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালাতে চালাতে বিন্দিয়া জবাব দিল, “অনেকদিন পর ড্রাইভ করছি। বেশ ভাল লাগছে। থ্যাঙ্ক ইউ দেবরজী। কিন্তু এখন আপনার সাথে আমার দেবর বৌদির সম্পর্কটা মানতে ইচ্ছে করছে না। আমরা একটু অন্য রোল প্লে করতে পারি না”?
 

প্রভু মিষ্টি করে হেসে বলল, “হু, অসুবিধের তো কিছু নেই। দিবাকরজী, মঙ্গু ভাইয়া এরা তো কেউ নেই এখন। তা কি রোল প্লে করবেন বলুন”?

রূপসী বিন্দিয়া বলল, “আমরা এখন এমন দু’জন প্রেমিক প্রেমিকা, যারা আর ক’দিন বাদেই বিয়ে করবে। বিয়ের ঠিক আগে আগে আমরা লং ড্রাইভে বেরিয়েছি। আর চলতি গাড়িতে একটু খানি সুযোগ পেলেই আমরা একে অন্যের শরীরে হাত দেব। কিস করব। টেপাটিপি করব। আর একটা নির্জন জায়গায় গিয়ে গাড়ির পেছনের সীটে আমরা সেক্স করব”।

প্রভু বিন্দিয়ার বাম ঊরুর ওপর সামান্য চাপ দিয়ে বলল, “জীনস পড়ে এসে আপনি তো আমাকে আগে থেকেই গরম করে তুলছেন। এ পোশাকে আপনাকে একটা পনের ষোল বছর বয়সী মেয়ের মা বলে মনেই হচ্ছে না। মনে হচ্ছে তিরিশ বছরের একটা অবিবাহিতা মেয়ে”।
 

বিন্দিয়া গাড়ি ড্রাইভ করতে সামনের দিকে চোখ রেখেই বলল, “আমি যে আজ তোমার প্রেমিকা। আমি তোমার বিন্দিয়া ডার্লিং। তুমি আমার প্রিয় বয়ফ্রেণ্ড প্রভু। আপনি করে বলছ কেন? যে প্রেমিকাকে তুমি একমাস বাদে বিয়ে করতে যাচ্ছ তাকে আপনি করে বললে মানায়”? বলতে বলতে বিন্দিয়া বাঁ হাত বাড়িয়ে প্রভুর জীনসের ওপর দিয়েই তার পুরুষাঙ্গের ওপর দু’বার চাপ দিল।

প্রভুও রাস্তা খালি দেখে বিন্দিয়ার বাম স্তনটাকে ধরে দু’বার গাড়ির ভেপু বাজাবার মত করে টিপে দিয়ে বলল, “তোমার নামটাও তোমার এ জিনিস দুটোর মতই মিষ্টি আর সুন্দর বিন্দিয়া”।

রূপসী বিন্দিয়া বলল, “এই দুষ্টু। দেখেশুনে টেপাটিপি কোর। রাস্তায় অনেক লোকজন আছে”।

প্রভু দুষ্টুমি করে জবাব দিল, “থাকুক গে লোক। তাই বলে আমি আমার প্রেমিকাকে আদর করতে পারব না? তার এমন অসাধারণ সুন্দর দুধ দুটোকে টিপতে ছানতে পারব না”?
 

বিন্দিয়া মোহনীয় ভঙ্গিতে বলল, “বারে, পারবে না কেন? নিশ্চয়ই তুমি তোমার গার্ল ফ্রেণ্ডের দুধ ধরবে, টিপবে চুসবে। কিন্তু তাই বলে সকলের সামনে? ঠিক জায়গায় গিয়ে সব কিছু কোর। আমি আজ তোমায় কোনও বাঁধা দেব না”।

প্রভু প্রেমিকের মত অভিনয় করে বলল, “এই ডার্লিং। জানালার কাঁচ গুলো তুলে দিয়ে এসিটা চালিয়ে দাও না”।
 

বিন্দিয়াও প্রেমিকার মত ভালবাসা মাখা গলায় বলল, “এখন তো তেমন গরম লাগছে না। এসি চালাতে বলছ কেন ডার্লিং”?

প্রভু বিন্দিয়ার ঊরুর ওপর হাত বোলাতে বোলাতে বলল, “প্লীজ ডার্লিং, দাও না। তারপর দেখ আমি কিভাবে তোমাকে চলতি গাড়িতেই আদর করি”।

বিন্দিয়া মন মোহনীয় হাসি হেসে বলল, “ও এই কথা? আমার হবু বরটার আর তর সইছে না, তাই না? আচ্ছা বেশ। কিন্তু আমি গাড়ি ড্রাইভ করছি। আমাকে বেসামাল করে দিও না ডার্লিং” বলতে বলতে পাওয়ার উইন্ডোর কালো কাঁচ তুলে দিয়ে এসি চালিয়ে দিল।
 

গাড়ি সরু রাস্তা থেকে হাইওয়েতে ওঠবার সাথে সাথেই দু’জনের একটু একটু ঠাণ্ডা লাগতে লাগল। প্রভু সামনের ড্যাশবোর্ড খুলে ভেতর থেকে দুটো টাওয়েল বের করে একটা টাওয়েল বিন্দিয়ার গলায় জড়িয়ে দিয়ে তার বুকটা ঢেকে দিয়ে অন্য টাওয়েলটা নিজের কোলের ওপর পেতে দিল।
 

বিন্দিয়া জিজ্ঞেস করল, “ওমা টাওয়েল গুলো এভাবে দিয়ে কী করবে তুমি ডার্লিং”?

প্রভু নিজের কোলের ওপর পাতা টাওয়েলটার তলায় দু’হাত ঢুকিয়ে নিজের প্যান্ট খুলে ফেলল তারপর বিন্দিয়ার বাম হাতটা টেনে এনে নিজের জাঙিয়ার ভেতর দিয়ে ঢুকিয়ে দিয়ে বলল, “এবার কী মনে হচ্ছে ডার্লিং? আমি খারাপ কিছু করেছি”?

বিন্দিয়া একহাতে স্টিয়ারিং সামলে প্রভুর আধা শক্ত হয়ে ওঠা পুরুষাঙ্গটাকে জাঙ্গিয়া শুদ্ধ মুঠো করে ধরে বলল, “তুমি একটা সাংঘাতিক বদমাশ। তবু এ বদমায়েশির জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। খুব ভাল লাগছে। কিন্তু তুমি কী করবে”?
 

প্রভু ড্যাশবোর্ডের ভেতর থেকে আরেকটা টাওয়েল বের করে বিন্দিয়ার কোলের ওপর বিছিয়ে দিয়ে বলল, “তুমিও যদি আমার মত একটু বদমায়েশী করতে পার, তাহলে আমারও একটু সুখ হবে”।

বিন্দিয়া একটু অবাক হয়ে বলল, “আমি স্টিয়ারিং ছেড়ে দিয়ে আমার প্যান্ট খুলব? না না, আমি পারব না সেটা করতে। তুমি তো আমার বুকটাও টাওয়েল দিয়ে ঢেকে রেখেছ। তুমি টাওয়েলের নিচে হাত দিয়ে অনায়াসেই আমার দুধ টিপতে পারবে”।

প্রভু বলল, “সেটা তো করবই ডার্লিং। তোমার বুকের ওপর টাওয়েলটা তো সেজন্যেই রেখেছি। কিন্তু এটাও কি ছেড়ে থাকা যায়? একটু স্লো কর। আমি স্টিয়ারিংটা ধরছি। তুমি চট করে প্যান্ট আর প্যান্টি দুটোই খুলে নিচে নামিয়ে দাও”।

প্রভু ডানহাতে স্টিয়ারিং ধরতে বিন্দিয়া নিজের প্যান্ট খুলে ফেলল। তারপর নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে বলল, “তুমি আগে থেকেই প্ল্যান করে এ টাওয়েলগুলো এনেছো না? এত শয়তানি বুদ্ধি তোমার”? বলতে বলতে নিজের প্যান্টিটাও অনেক খানি নামিয়ে দিয়ে নিজের নিতম্ব আর ঊরুসন্ধি উন্মুক্ত করে স্টিয়ারিং ধরে বলল, “গুদের ওপর বেশী অত্যাচার কোর না কিন্তু। অনেক দিন বাদে ড্রাইভ করছি। গুদের রস বেরিয়ে গেলে হয়ত সামাল দিতে পারব না”।

প্রভু বলল, “ভেব না ডার্লিং। আমি তো আছি তোমার পাশে” বলতে বলতে বিন্দিয়ার কোলের টাওয়েলের নিচ দিয়ে হাত ঢুকিয়ে বিন্দিয়ার ভারী ঊরু দুটোর মাঝে ঠেলে ঢুকিয়ে দিল। বিন্দিয়ার ঊরু দুটিকে আরো একটু ফাঁক করতে চাইতেই বিন্দিয়া বলল, “আর বেশী ফাঁক করা যাবে না ডার্লিং। প্যান্টের কোমড়ের জায়গাটা থাইয়ের কাছাকাছি আঁটকে আছে। তাছাড়া ক্লাচ ব্রেকে পা রাখতে অসুবিধে হতে পারে। এভাবেই যতটা যা করতে পার, আপাততঃ সেটুকুই কর। আর কিছু বাদেই একটা ভাল জায়গায় পৌঁছে যাব আমরা। সেখানে গিয়ে ভালমত সব কিছু করার সুযোগ পাবে”।

হাইওয়েতে লোকজনের ভিড় বেশী নেই। শুধু দু’দিক থেকে একের পর এক গাড়ি ছুটে যাচ্ছে। তাই বিন্দিয়ার বুকে হাত দেবার সুযোগ পাচ্ছিল না প্রভু। হাতটা যতটা সম্ভব দু’ ঊরুর মাঝে ঠেলে দিয়েও বিন্দিয়ার যৌনাঙ্গটাকে সে ভালমত চেপে ধরতে পারছিল না। ফোলা ফোলা যৌন বেদীটাকে সে আঙুল দিয়েই শুধু টিপতে পারছিল। এক সময় সামনে অনেক দুর পর্যন্ত রাস্তা ফাঁকা দেখে বিন্দিয়া প্রভুর পুরুষাঙ্গে চাপ দিয়ে বলল, “নাও ডার্লিং, এই সুযোগে আমার দুধ টিপে নাও একটু” বলে গাড়ির গতি কিছুটা কমিয়ে দিল।
 

প্রভু হাতটা বিন্দিয়ার কোলের টাওয়েলের তলা থেকে টেনে বুকের টাওয়েলের তলায় ঢুকিয়ে দিয়েই তার টপটাকে নিচের দিক থেকে টেনে তুলতে তুলতে বিন্দিয়ার বাঁ দিকের স্তনের ওপর উঠিয়ে দিতেই ব্রা বিহীন স্তনটা বেরিয়ে পড়ল। সাথে সাথে প্রভু সেটাকে জোরে খামচে ধরল। বিন্দিয়া “আহ’ করে উঠে বলল, “ইশ কি জোরে টিপে দিয়েছ গো তুমি? বলি আমি কি পালিয়ে যাচ্ছি না কি? এই হাত সরাও, সামনে গাড়ি আসছে”।
 

প্রভু আরেকবার তাড়াতাড়ি বিন্দিয়ার স্তনটা টিপেই হাত সরিয়ে নিল। সামনে আরো অনেক গুলো গাড়ি দেখে সে আবার বিন্দিয়ার পায়ের ফাঁকে হাত ঢুকিয়ে দিল।

এভাবে মিনিট পনের চলার পর হাইওয়ে ছেড়ে একটা সরু রাস্তায় গাড়ি ঢুকিয়ে দিল বিন্দিয়া। আর কিছুটা দুরে যাবার পরেই দু’পাশে ঝোপ ঝার আর ধানের ক্ষেত দেখা গেল। রাস্তায় মানুষজন প্রায় নেই বললেই চলে। সেই সুযোগে প্রভু বেশ আয়েশ করে বিন্দিয়ার বাম স্তনটাকে একনাগাড়ে টিপে যাচ্ছিল। আরো খানিক এগিয়ে গিয়ে বিন্দিয়া রাস্তার ধার ঘেঁসে গাড়ি দাঁড় করিয়ে দিয়ে ইঞ্জিন বন্ধ করে দিয়ে বলল, “সামনের দরজা না খুলেই পেছনের সীটে চলে যাও ডার্লিং। এতক্ষণ টেপাটিপি করে আমাকে ক্ষেপিয়ে তুলেছ তুমি। আর তোমাকে না চুদে থাকতে পারছি না”।
 

প্রভু সামনের সীটদুটোর মাঝের ফাঁক দিয়ে পেছনের সীটে এসে বসতেই বিন্দিয়া বলল, “সব খুলে ফেল। তারপর আমি আসছি”।

প্রভু কিছু না বলে বিন্দিয়ার নির্দেশ পালন করতেই বিন্দিয়া নিজের খোলা প্যান্টটা হাতে চেপে ধরে পেছনের সীটে এসে নিজের প্যান্ট, প্যান্টি আর টপ খুলে সম্পূর্ণ বিবস্ত্রা হয়ে প্রভুর শরীরের ওপর চেপে বসতে বসতে বলল, “এখন সব কিছু এমেরিকান স্টাইলে হবে” বলেই প্রভুর পুরুষাঙ্গটাকে মুখের ভেতর ঢুকিয়ে নিল।
 

বিভিন্ন ভঙ্গীতে প্রায় ঘন্টা খানেক সম্ভোগ করে তৃপ্ত হয়ে, নিজেদের পোশাক আশাক পড়ে ঠিকঠাক হয়ে তারা আবার ফিরতি পথে চলল। আর সারা রাস্তাই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে করতে তারা বিন্দিয়ার বাড়ির কাছাকাছি, যেখান থেকে যাত্রা শুরু করেছিল, সেখানে এসে পৌঁছল।
 

গাড়ি থেকে নেমে প্রভুকে সাথে করে বিন্দিয়া নিজের বাড়িতে এল। বাইরের ঘরেই মঙ্গু আর দিবাকর বসে গল্প করছিল। বিন্দিয়াকে খুশী মনে ঘরে ঢুকতে দেখে দিবাকর জিজ্ঞেস করল, “গাড়ি ড্রাইভ করে কেমন লাগল ডার্লিং? সব ঠিক ঠাক আছে তো”?
 

বিন্দিয়া একটা চেয়ারে বসতে বসতে বলল, “দারুণ ভাল লেগেছে। দেবরজীর কাজে আমি খুব খুশী হয়েছি। গাড়িটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। চালিয়ে খুব আরাম পেয়েছি। তুমি ব্যাঙ্কের কাজ সেরে এসেছ তো”?

দিবাকর বলল, “হাঁ হাঁ, সেসব হয়ে গেছে। এই ব্যাগেই পুরো সাড়ে পাঁচ লাখ আছে। দেখে নিন প্রভুজী” বলে প্রভুর দিকে ব্যাগটা এগিয়ে দিল। প্রভু ব্যাগের ভেতর থেকে টাকা গুলো বের করে ভালো করে পরীক্ষা করে দেখল ঠিকই আছে। সেখান থেকে পঞ্চান্ন হাজার টাকা মঙ্গুর হাতে দিয়ে বলল, “মঙ্গু ভাইয়া, এই নিন আপনার কমিশন। আর অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে”।

মঙ্গু খুশী হয়ে বলল, “ঠিক আছে প্রভুজী। কিন্তু আপনার সাথে আরো কাজ করতে পেলে আমি খুশী হব। আমার কথা মনে রাখবেন। আর মাঝে মাঝে যোগাযোগ রাখবেন। এই কাগজটায় আমার ফোন নাম্বার লিখে দিয়েছি। এটা রাখুন। আর যদি অসুবিধে না থাকে তাহলে আপনার নাম্বারটাও দিন। ভবিষ্যতে আরো কাস্টমারের খোঁজ আমি দিতে পারব আপনাকে”।
 

প্রভু মঙ্গুর হাত থেকে কাগজটা নিয়ে বলল, “আমার নাম্বার রাখতে পারেন। কিন্তু খুব কাজ হবে বলে মনে হয় না। আমি একটা ডীল শেষ হবার পরেই সিম চেঞ্জ করে ফেলি। নইলে যে কোনও সময় পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যাব। বোঝেনই তো এ কাজে কতটা রিস্ক। তবে আপনার নাম্বার তো আমার কাছে রইলই। আমি মাঝে মধ্যে আপনাকে ফোন করব” বলেই সে দিবাকরের দিকে মুখ করে তার উদ্দেশ্যে বলল, “আর দিবাকরজী, আপনাকে তো কালই কথাগুলো বলেছি। আপাততঃ গাড়িটাকে কোন একটা জায়গায় লুকিয়ে রাখুন। আর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রেজিস্ট্রেশনটা করিয়ে নেবেন” বলতে বলতে সে তার পকেট থেকে বেশ পুরু ধরণের একটা পলিথিনের ব্যাগ বের করে তাতে টাকাগুলো ঢুকিয়ে ফেলল।

দিবাকর বলল, “হাঁ হাঁ, প্রভুজী। আমি লোক লাগিয়ে দিয়েছি। কালই রেজিস্ট্রেশন নাম্বার পেয়ে যাব। কিন্তু একটু বসুন। একটু মিষ্টি খেয়ে যাবেন। গুড্ডি এখনই আনবে” বলে বিন্দিয়াকে জিজ্ঞেস করল, “প্রভুজীর সাথে তোমার আর কোন কাজ নেই তো ডার্লিং”?
 

বিন্দিয়া চেয়ার থেকে উঠে বলল, “হ্যা আর একটু কথা আছে। গাড়ির ব্যাপারে আরো দু’ একটা কথা জেনে রাখি। তোমরা এখানে বসে মিষ্টি খাও। আমি দেবরজীকে ভেতরে নিয়ে যাচ্ছি। তাকে আমি সেখানেই মিষ্টি খাইয়ে দেব। আসুন দেবরজী” বলে প্রভুর হাত ধরল। প্রভুও টাকার ব্যাগটা হাতে নিয়ে বিন্দিয়ার সাথে ভেতরের দিকে চলল।
 

গুড্ডিকে দেখা গেল ট্রেতে করে চার প্লেট মিষ্টি নিয়ে আসছে। বিন্দিয়া তাকে থামিয়ে ট্রে থেকে দু’হাতে দুটো প্লেট উঠিয়ে নিয়ে বলল, “আমি দেবরজীর সাথে এ ঘরে বসে খাব। তুই ও’গুলো ও ঘরে দিয়ে আয়। আর শোন, তোকে জল আনতে হবে না। আমার ঘরে আছে। আর তুই এখন আমার ঘরে আসিস না”।

গুড্ডি বলল, “ঠিক আছে মাম্মি। কিন্তু আমার যে গাড়িটা দেখতে খুব ইচ্ছে করছে মাম্মি”।

বিন্দিয়া নিজের ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলল, “দাঁড়া, চান করেই আমি তোদের সবাইকে গাড়ি করে নিয়ে গিয়ে মন্দিরে পুজো দিতে যাব। তোরা সবাই তৈরী হয়ে নিস” বলেই নিজের ঘরে ঢুকে গেল। নিজের হাতে প্রভুকে মিষ্টি খাইয়ে বিন্দিয়া জিজ্ঞেস করল, “আর কিছু খেতে চাও দেবরজী”?

প্রভু নিজের হাত ঘড়ির দিকে দেখে বিন্দিয়ার একটা স্তন হাতাতে হাতাতে বলল, “খাবার কথা শুনলেই তো তোমার এ দুটো জিনিস খেতে ইচ্ছে করে ভাবী। কিন্তু আমার যে অনেক দেরী হয়ে গেছে। এবার না গেলেই নয়”।
 

বিন্দিয়া নিজের টপটাকে মাথা গলিয়ে খুলতে খুলতে বলল, “তুমি যে মেয়েদের দুধ খেতে খুব ভালবাস, সেটা তো আমি কালই বুঝেছি। আজ ভালমত খেতে পারনি এ দুটো। আজ তো বলতে গেলে আমিই তোমার ওপর জুলুম করেছি। নাও, বেরোবার আগে একটু খেয়ে নাও। নইলে আমার মনটাও ভাল লাগবে না। নাও” বলে প্রভুর মাথাটাকে এক হাত দিয়ে টেনে অন্য হাতে নিজের একটা ভারী স্তন তুলে তার মুখে ঢুকিয়ে দিল। প্রভু বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে বিন্দিয়াকে নিজের দু’পায়ের মাঝে টেনে নিয়ে, টাকার ব্যাগটা বিছানায় রেখে, বিন্দিয়ার একটা স্তন চুসতে চুসতে অন্য স্তনটাকে বেশ জোরে জোরে টিপতে লাগল।
 

বিন্দিয়া প্রভুর গালে গলায় হাত বোলাতে বোলাতে বলল, “দুপুর দুটোর পর আমার ঘরে একের পর এক কাস্টমার আসতে থাকে, রাত এগারটা বারোটা অব্দি ও’সবই চলতে থাকে। যদি আমার কথা মনে পড়ে, আমার দুধ খেতে ইচ্ছে করে, আর যদি সময় করে উঠতে পার, তাহলে যে কোন দিন বেলা ন’টার দিকে চলে এস। আমার দুধ খেয়ে তুমি সুখ নিও, আর আমাকেও একটু সুখ নিতে দিও। তোমাকে এজন্যে একটা পয়সাও খরচ করতে হবে না কোনদিন”।
 

প্রভু কোন কথা না বলে একমনে বিন্দিয়ার স্তন দুটো চুসতে আর ছানাছানি করতে লাগল। বিন্দিয়া মনের সুখে আয়েশের শীৎকার ছাড়তে ছাড়তে প্রভুর মুখে নিজের স্তন ঠেসে ঠেসে ধরতে লাগল। মিনিট দশেক বাদে মুখ উঠিয়ে প্রভু দেখে বিন্দিয়ার ফর্সা টুকটুকে স্তন দুটো একেবারে লাল হয়ে গেছে। সে বুঝতে পারল এবার সে বেশ বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে। কিন্তু বিন্দিয়া এক মূহুর্তের জন্যেও তাকে বাঁধা দেয়নি।
 

প্রভু তাকে ছেড়ে দিতেই বিন্দিয়া তাকে টেনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে মিনতি ভরা গলায় বলল, “আরেকবার তোমার মিষ্টি রস খেতে দেবে না আমায় ডার্লিং”? বলতে বলতে প্রভুর অনুমতির অপেক্ষা না করেই সে প্রভুর প্যান্টের হুক আর জীপার খুলে প্যান্ট আর জাঙ্গিয়াটাকে এক ঝটকায় হাঁটুর কাছে নামিয়ে দিয়ে প্রভুর শক্ত পুরুষাঙ্গটাকে নিজের মুখের ভেতর ভরে নিল। প্রভুও বিন্দিয়ার মাথার চুল দু’হাতে মুঠো করে ধরে কোমর আগুপিছু করে বিন্দিয়ার মুখের মধ্যে তার পুরুষাঙ্গ সঞ্চালন করতে লাগল। কামকলায় নিপুণা বিন্দিয়ার অদ্ভুত পটুতায় প্রভু মিনিট পাঁচেক যেতে না যেতেই বিন্দিয়ার কন্ঠনালীর মধ্যে নিজের উষ্ণ বীর্য ধারা ঢেলে দিতে বাধ্য হল।

বিন্দিয়া প্রভুর পুরুষাঙ্গ চেটে পুটে পরিষ্কার করে দিয়ে নিজেই প্রভুর জাঙ্গিয়া আর প্যান্ট ঠিকঠাক মত পড়িয়ে দিয়ে নিজের বুকটাকে আরেকবার প্রভুর মুখের সামনে নিয়ে তার গলা ধরে বলল, “আজ অব্দি হাজার হাজার পুরুষ আমার শরীরটাকে লুটে পুটে খেয়েছে। কিন্তু আমার এই চুয়াল্লিশ বছরের জীবনে তোমার মত পুরুষ আর কেউ আসেনি। হাজারটা পুরুষকে এ ঘর থেকে আমি হাসিমুখে বিদেয় করেছি। কিন্তু কেন জানিনা, তুমি চলে যাচ্ছ ভেবে আজ মনে এক বিন্দুও খুশী হচ্ছে না। তোমাকে ছাড়তে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু জানি তোমারও না গিয়ে উপায় নেই। তাই শেষ বারের মত বলছি, তোমার পছন্দের এ জিনিস দুটোতে আরেকবার শেষ চুমু খেয়ে যাও ডার্লিং” বলে নিজের একটা স্তনভার আবার প্রভুর মুখে ঢুকিয়ে দিল।

দুটো স্তনকেই একটু একটু চুসিয়ে নিয়ে বিন্দিয়া নিজের টপটা টেনে নামিয়ে নিজের বুক ঢেকে নিয়ে নিজের ঘরের দরজা খুলে দিয়ে প্রায় কান্না ভেজা গলায় বলল, “আবার এসো প্রভু ডার্লিং”।

প্রভু পলিথিনের ব্যাগটা হাতে নিয়ে পর্দা ঢাকা খোলা দরজার কাছে গিয়ে থমকে দাঁড়াল। খোলা হাতটা তুলে বিন্দিয়ার দুটো স্তনের ওপর আদর করে হাত বুলিয়ে দিয়ে প্রভু “বাই ডার্লিং” বলে বেরিয়ে গেল।

দিবাকরের বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রভু আর গাড়ির দিকে না গিয়ে বাজারের দিকে হেঁটে চলল। দ্রুত পায়ে বাজারটা পেরিয়ে এসে সে বাইকে বসে থাকা এক যুবকের কাছে গিয়ে বলল, “এই, টিম রেডি আছে তো”?

বাইকে বসা ছেলেটি জবাব দিল, “হ্যা রে সবাই আমার সিগন্যালের জন্য অপেক্ষা করে আছে। তোর কাজ শেষ হয়েছে তো”?
 

প্রভু বাইকটার ডিকিতে পলিথিনের ব্যাগটা রাখতে রাখতে বলল, “হ্যা সব প্ল্যান মাফিক হয়ে গেছে। তুই এখনই সিগন্যাল দিয়ে দে। গাড়িটা এ মূহুর্তে বাজারের উত্তর পুব কোনায় আছে। আগের নাম্বার প্লেটটাই এখনও লাগানো আছে। অপারেশনটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শেষ করবার চেষ্টা করতে হবে। আর শোন, ওরা কিছুক্ষণের মধ্যেই গাড়িটা নিয়ে কোন একটা মন্দিরে যাবে বোধহয়। তারপর হয়ত গাড়িটা কোথাও নিয়ে গ্যারেজ করবে। কিন্তু সে মন্দির বা গ্যারেজের লোকেশানটা আমি জানতে পারিনি। প্রয়োজন হলে সেটা তোদেরকেই খুঁজে বের করতে হবে”।

ছেলেটা একটা ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বাইক থেকে নেমে বলল, “ঠিক আছে, তুই আর দেরী না করে চলে যা। বাকিটুকু আমি সামলে নেব। ভাবিস না”।

প্রভু ছেলেটার বাইক নিয়ে রওনা হয়ে গেল। আর ছেলেটা কাউকে ফোন করে বলল, “আমি বাজারের পুব দিকে বাজারে ঢোকবার ঠিক মুখেই দাঁড়িয়ে আছি। তোরা সবাই তাড়াতাড়ি এখানে চলে আয়। ততক্ষণে আমি ইউনিফর্ম পড়ে নিচ্ছি” বলেই একটা খালি টয়লেটে ঢুকে গেল।
 

মিনিট পাঁচেক বাদেই সে টয়লেটটা থেকে ছেলেটা বেরিয়ে এল। কিন্তু তার পড়নে তখন পুলিশ অফিসারের পোশাক। হাতে পুলিশের রুল।


 
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply
#56
(Update No. 76)

প্রায় চল্লিশ মিনিট পর উত্তর কলকাতার একটি অঞ্চলে বড় রাস্তা ছেড়ে দু’তিনটে গলি পেরিয়ে প্রবাল একটা পুরোন একতলা বাড়ির সামনে এসে বাইক থামাল। বাইকের সীটের ওপর বসেই সে পকেট থেকে নিজের মোবাইলটা বের করে সেটার ব্যাক কভার খুলে সিমকার্ডটা বের করে নিল। পকেট থেকে অন্য একটা সীম বের করে মোবাইলে লাগিয়ে মোবাইলটা অন করেই একজনকে ফোন করে ফোনটা কানে লাগিয়ে পুরোন সীমটা নিজের মানিব্যাগের ভেতরের ছোট্ট একটা পকেটের ভেতর ঢুকিয়ে রাখল।

কয়েকবার রিং হবার পর ও’পাশের সাড়া পেতেই সে জিজ্ঞেস করল, “স্যার আমি তো বাড়িটার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু বাড়ির সদর দরজা তো তালা বন্ধ দেখছি। মালটা কোথায় রাখব তাহলে”?

ও’পাশের লোকটা বলল, “প্রবাল, বাড়িটার ডান পাশে একটা ছোট্ট গলি আছে দেখ। সে গলিটায় বাইকটা ঢুকিয়ে দে। বাড়িটার পেছনে গেলেই আরেকটা গেট দেখতে পাবি। পুরোন টাইপের ওই লোহার গেটে পরপর চারবার ঠকঠক করবি। মাথায় কালো টুপি পড়া একটা চব্বিশ পঁচিশ বছরের ছেলে এসে গেট খুলে দেবে। তার হাতে ব্যাগটা দিয়েই তুই ওখান থেকে কেটে পড়বি। আর রাত আটটা নাগাদ অন্য পোশাকে আবার সেখানে আসবি। তখন আমাকে পাবি। ঠিক আছে”?

প্রবাল জবাব দিল, “হ্যা স্যার বুঝেছি”।

ও’পাশ থেকে আবার জিজ্ঞেস করল, “টিম টু সেখানে পৌঁছে গেছে”?

প্রবাল জবাব দিল, “আমি একজনকে ওয়াচে রেখে সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে মাল নিয়ে চলে এসেছি স্যার। আপনি তো এমনটাই বলেছিলেন। এতক্ষণে পুরো টিম লোকেশানে নিশ্চয়ই পৌঁছে গেছে। আর পরের আপডেট তো ওরা আপনাকে দেবে”।

ও’পাশ থেকে আবার বলল, “হ্যা, ঠিক আছে। আর শোন, প্ল্যান মাফিকই সব করেছিস তো? কোন ভুলচুক হয়নি তো”?
 

প্রবাল বলল, “না স্যার কোন ভুলচুক হয়নি। পুরোপুরি প্ল্যান মাফিকই সব কিছু কমপ্লিট করে এসেছি আমি”।

ও’পাশ থেকে বলল, “খুব ভাল। এবার তাহলে যেভাবে বললাম সেভাবে জিনিসটা ডেলিভারি দিয়ে চলে যা। রাতে আমার সাথে দেখা করিস। বাই” বলে অন্য প্রান্ত থেকে ফোন কেটে দিল।
 

প্রবাল আর দেরী না করে বাড়িটার ডানপাশের সরু গলিতে বাইক ঢুকিয়ে দিল। বাড়িটার পেছন দিকে এসে একটা ভাঙ্গাচোরা লোহার গেট দেখতে পেয়ে সে বাইক থামিয়ে গেটের লোহায় চারবার ঠকঠক করল। কয়েক সেকেণ্ড বাদেই কালো টুপি পড়া এক যুবক গেট খুলে জিজ্ঞেস করল, “প্রবাল”?

প্রবাল জবাব দিল, “হ্যা”।

ছেলেটা এবার গলির আরো ভেতরের দিকে হাত দেখিয়ে বলল, “ব্যাগটা আমাকে দিয়ে এদিক দিয়ে বাইক চালিয়ে চলে যান। কিছুটা দুর গিয়ে গলিটা দু’ভাগে ভাগ হয়ে যাবে। আপনি ডানদিকে ঘুরে যাবেন। তাহলে মেইন রোডে পৌঁছে যাবেন। আর রাত আটটায় স্যারের সঙ্গে এখানেই এসে দেখা করবেন”।

প্রবাল আর কথা না বলে ডিকি খুলে ব্যাগটা যুবকটির হাতে দিয়েই সে বাইক চালিয়ে যুবকটির দেখিয়ে দেওয়া পথে এগিয়ে গেল।


**************

ওদিকে বিন্দিয়া স্নান সেরে একটা সুন্দর লাল পেড়ে শাড়ি পড়ে, হাতে পুজোর থালা নিয়ে দিবাকর, মঙ্গু আর গুড্ডিকে সাথে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেখানে সদ্য কেনা গাড়িটা পার্ক করে রাখা ছিল, সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। বেশ দেরী হয়ে গেছে তাদের বেরোতে। বাথরুমে স্নান করতে করতে গত রাতে আর আজ সকালে টেস্ট ড্রাইভে গিয়ে প্রভুর সাথে কাটানো সময়গুলোর কথা ভাবতে ভাবতে অনেকটা সময় কাটিয়ে ফেলেছিল। সেই মূহুর্ত গুলোর কথা ভাবতে ভাবতে তার পোড় খাওয়া পরিপক্ক যৌনাঙ্গটাও একটা কুমারী মেয়ের যৌনাঙ্গের মতই কামরস নিঃসরণ করছিল অনবরতঃ। শরীরটা যেন একটা ফার্নেসের মত গরম হয়ে উঠেছিল। সে শরীরকে ঠাণ্ডা করতে তাকে স্বমেহনের সাহায্য নিতে হয়েছিল। এমনটা হত তার কচি বয়সে। প্রায় আঠাশ ঊণত্রিশ বছর পর আজ সে স্বমেহন করে সেই কচি বয়সের মতই তৃপ্তি পেয়েছে। তাই স্নান সেরে বেরোতে বেরোতে অনেকটাই দেরী হয়ে গিয়েছিল। মঙ্গু, দিবাকর আর গুড্ডি অনেক আগেই তৈরী হয়ে তার জন্য অপেক্ষা করছিল।
 

রাস্তার শেষ মোড়টা পেড়িয়েই দেখা গেল জনা পাঁচেক পুলিশ বিন্দিয়ার নতুন কেনা গাড়িটার চারপাশে ঘুরঘুর করছে। ফলস নাম্বার প্লেট লাগান গাড়ির চারপাশে পুলিশের লোকগুলোকে ঘুরতে দেখেই সবাই একসাথে চমকে উঠল। মঙ্গু সঙ্গে সঙ্গে ফিসফিস করে বলল, “দিবাকর ভাইয়া, রুক জাইয়ে। ঔর আগে নহী জানা। না জানে ইয়াহা ইস সময় পুলিশ কাঁহা সে আ গয়ী। ভাবীজী লৌট চলিয়ে। হম সব মুসীবত মে হ্যায়”।

দিবাকর সবাইকে নিয়ে বাড়ির দিকে ফিরতে ফিরতে বিন্দিয়াকে জিজ্ঞেস করল, “তুমি গাড়িটাকে রাস্তার এত কাছে রেখেছিলে কেন? আরেকটু ভেতরে এনে ওই ঘেরাও করা জায়গাটায় রাখতে পার নি”?

বিন্দিয়া ঘাবড়ে যাওয়া গলায় জবাব দিল, “প্রভুজী বলেছিল আমাকে ঠিকই। কিন্তু মন্দিরে যাব ভেবেই ওখানে রেখেছিলাম। ভেতরে ঢোকালে আবার ব্যাক করে বের করতে হত, তাই। কিন্তু এবার কী হবে বল তো? পুলিশ কী করে এল এখানে”?
 

সবাই চিন্তান্বিত ভাবে ছুটে ঘরে এসে ঢোকবার পর শলা পরামর্শ করতে শুরু করে দিল। পুলিশ যে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের বাড়ি এসে হাজির হবে, আর গাড়ির কাগজ পত্র দেখতে চাইবে এ নিয়ে কারুর মনে আর কোন সন্দেহ রইল না। প্রভু দু’দিনই তাদেরকে এ ব্যাপারে সাবধান করে দিয়েছিল। গাড়ির নতুন কাগজ পত্র বের না করা অব্দি গাড়িটা প্রকাশ্য জায়গায় রাখতে সে বারণ করেছিল। একবার পুলিশ যখন গাড়িটার খোঁজ পেয়েই গেছে, তাহলে সেটা যে তারা সীজ করে নিয়ে যাবেই এ ব্যাপারে তো আর কোন সন্দেহই নেই। কিন্তু এখন পুলিশের কাছে যদি স্বীকার করা হয় যে গাড়িটা তারা আজই কিনেছে, তাহলে চোরাই গাড়ি কেনার অপরাধে পুলিশ গাড়ির সাথে সাথে দিবাকর বা বিন্দিয়াকেও এরেস্ট করে নিয়ে যেতে পারে। সাড়ে পাঁচ লাখ টাকার গাড়িটা তো হাতছাড়া হয়েই গেল বলা যায়। কিন্তু থানায় নিজেদের হাজত বাস আটকাতে গেলে গাড়ির মায়া ছেড়ে পুলিশকে এটাই বলতে হবে যে তারা ওই গাড়ির ব্যাপারে কিছুই জানে না। মন্দিরে যাবার জন্য গাড়িটাকে তারা ভাড়া করে এনেছিল বাজার থেকে।

মিনিট দশেক বাদেই দরজার কড়া নাড়ার শব্দ হতেই দিবাকর এসে দরজা খুলে দিল। সামনে বস্তির একটা লোকের সাথে দু’জন পুলিশ দেখে দিবাকর অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “কী ব্যাপার স্যার? কী হয়েছে”?

একজন পুলিশ জিজ্ঞেস করল, “আপনার নাম দিবাকর প্রসাদ”?

দিবাকর হাতজোড় করে বলল, “হ্যা স্যার। কিন্তু আমি তো কিছু বুঝতে পারছিনা কী ব্যাপারে .....”

পুলিশটা বলল, “আপনি একটু আমাদের সাথে আসুন তো। আমাদের স্যার আপনার সাথে একটু কথা বলতে চাইছেন”।
 

দিবাকর তবু জিজ্ঞেস করল, “আমার সাথে কি ব্যাপারে কথা বলবেন”?

পুলিশটি জবাব দিল, “সেটা স্যারের মুখ থেকেই শুনবেন। আসুন”।
 

দিবাকর ভেতরের ঘরের দিকে মুখ করে বলল, “আরে গুড্ডি কি মা, সুনতি হো? ম্যায় থোড়া বাহর জা রহা হু। জরা দরওয়াজা বন্দ কর লে না” বলে বাইরে বেরিয়ে গেল।

গাড়ির কাছে আসতেই এক পুলিশ অফিসার জিজ্ঞেস করল, “এ গাড়িটা কি আপনার”?

দিবাকর অবাক হয়ে হাতজোড় করে জবাব দিল, “কী বলছেন স্যার? গাড়ি কেনার সামর্থ্য কি আমাদের মত গরীব মানুষের আছে”?

পুলিশ অফিসার আশে পাশে ভিড় করে থাকা লোকগুলোর দিকে ইশারা করে বলল, “কিন্তু এরা তো বলছে ঘন্টা খানেক আগে আপনার স্ত্রী নাকি এ গাড়িতে চেপেই এখানে এসেছেন”।
 

দিবাকর আগের মতই গোবেচারা হাঁসি হেসে বলল, “হ্যা স্যার, সে’কথা ঠিক। আসলে আমরা পরিবারের সবাই মিলে মন্দিরে পুজো দিতে যাব বলে আমার স্ত্রী এ গাড়িটা ভাড়া করে এনেছিল। ড্রাইভার ছিল তো! সে এখানে নেই না কি”? বলে এদিক ওদিক দেখতে লাগল।

পুলিশ অফিসার জিজ্ঞেস করল, “কে এ গাড়ির ড্রাইভার? দেখুন তো, এখানে সে আছে কি না”?

দিবাকর আশে পাশের লোকগুলোর দিকে চোখ বুলিয়ে বলল, “আসলে স্যার, ড্রাইভারকে তো আমি দেখিনি। সকালে আমার স্ত্রী বাজারে গিয়েছিল। সেখান থেকে ফেরবার সময়েই সে গাড়িটা ভাড়া করে এনেছিল। আমরা তো মন্দিরে যাবার জন্যেই তৈরী হচ্ছিলাম। এই দেখুন না, আমি মন্দিরে যাবার পোশাক পড়ে বাকি সকলের তৈরী হবার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এমন সময়েই আমাকে ডেকে আনা হল”।
 

পুলিশ অফিসার আবার জিজ্ঞেস করল, “বেশ তাহলে আপনার স্ত্রীকে ডেকে আনা হোক। দেখি সে এখানে ড্রাইভারকে খুঁজে বের করতে পারে কি না” এই বলে একটা কনস্টেবলকে আবার দিবাকরের বাড়ি পাঠিয়ে দিল।
 

মিনিট দশেক বাদে লাল পেড়ে শাড়ি পড়েই বিন্দিয়া কনস্টেবলের সাথে সেখানে এসে হাজির হল। পুলিশ অফিসার তাকে জিজ্ঞেস করল, “আপনার স্বামী বলছে, আপনি ঘন্টা খানেক আগে এ গাড়িটাকে বাজার থেকে ভাড়া করে এনেছিলেন মন্দিরে যাবেন বলে। কথাটা কি ঠিক”?

বিন্দিয়া একবার দিবাকরের দিকে দেখে ঢোঁক গিলে বলল, “হ্যা স্যার, ঠিক”।

পুলিশ অফিসার জিজ্ঞেস করল, “গাড়িতে নিশ্চয়ই ড্রাইভার ছিল। দেখুন তো এখানে সে আছে”?

বিন্দিয়া চারপাশে দেখে বলল, “না স্যার, এখন তো তাকে এখানে দেখছিনা কোথাও। ফর্সা মত মাঝারি হাইটের জীনস আর টি শার্ট পড়া ছিল ছেলেটা। এখানেই তো থাকবার কথা ছিল। আমরা তো মন্দিরে যাবার জন্যে তৈরী হয়ে এখনই বেরিয়ে আসতাম”!

পুলিশ অফিসার আর কোন কথা না বলে নিজের মোবাইল থেকে কাউকে ফোন করে বলল, “একটা ক্রেন পাঠিয়ে দাও তো। বাজারের উত্তর পুব দিকে। একটা লকড গাড়ি তুলতে হবে”।
 

ফোন রেখেই অফিসার তার একজন জুনিয়রকে বলল, “প্রদীপ, তুমি সীজার লিস্টটা বানিয়ে ফেল তো চটপট। আর সাক্ষী হিসেবে এদের দু’জনের সই নিয়ে নাও। আর অন্য আরেকজনের সই নিও” বলে দিবাকরের দিকে তাকিয়ে বলল, “শুনুন দিবাকরজী। গাড়িটার তো মালিক বা ড্রাইভার কেউই এখানে নেই। আর আমাদের থানায় আগেই ডাইরী করা হয়েছিল যে গাড়িটা দিন পনের আগে চুরি হয়েছিল। তাই এটাকে আমরা সীজ করে নিচ্ছি। আপনারা সবাই এটার সাক্ষী রইলেন”।
 

সিজার লিস্টে ঘটণার সাক্ষী হিসেবে বিন্দিয়া, দিবাকর এবং আরো একজনের নাম ঠিকানা লিখে নিয়ে তাদেরকে দিয়ে সই করিয়ে নিয়ে পুলিশ অফিসার সবাইকে চলে যেতে বলতেই দিবাকর আর বিন্দিয়া নিজের ঘরের দিকে চলে গেল। মিনিট দশেক বাদে পুলিশের ক্রেন এসে ভক্সওয়াগেন গাড়িটাকে তুলে নিয়ে গেল।

**************

বিকেল ঠিক তিনটে পঞ্চাশে শঙ্করকে দেখা গেল বড়বাজারে সেই বিখ্যাত এলাকার চৌপথীর মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে। তার পড়নে ক্রিম রঙের একটা টিশার্ট আর নীল রঙের জীনস। একটা ওষুধের দোকানের দিকে তাকিয়ে মনে মনে আশ্বস্ত হয়ে সে পকেট থেকে মোবাইল বের করে সরজুর নাম্বার ডায়াল করল। ও’পাশ থেকে সরজুর সাড়া পেতেই সে বলল, “সরজু ভাইয়া, আমি শঙ্কর বলছি। আমি চৌপথীতে পৌঁছে গেছি”।

সরজু জবাব দিল, “ঠিক আছে শঙ্কর ভাইয়া, আমি এখনই ভাবীজীকে ফোন করে বলে দিচ্ছি। আপনি ওই জায়গাতেই অপেক্ষা করুন পাঁচ দশ মিনিট। ভাববেন না। আচ্ছা শঙ্কর ভাইয়া আপনি কী পোশাক পড়ে গেছেন বলুন তো”?

শঙ্কর নিজের পোশাকের বিবরণ বলতেই সরজু বলল, “ঠিক আছে শঙ্কর ভাইয়া। আপনি কয়েক মিনিট ওখানেই দাঁড়ান। গুড়িয়া বলে একটা বাচ্চা মেয়ে এখনই আপনার কাছে যাবে” বলে ফোন কেটে দিল।

শঙ্কর নিজের মোবাইল থেকে আরেকটা ফোন করতেই ওষুধের দোকানে একটা লোককে দেখা গেল তার পকেট থেকে মোবাইল বের করে কানে লাগিয়ে বলল, “হ্যা বল”।

শঙ্কর আশে পাশে দেখতে দেখতে বলল, “মালবিকা এসে গেছে”?

লোকটা জবাব দিল, “হ্যা ও সব কিছু নিয়ে রেডি হয়ে আছে”।

শঙ্কর বলল, “আমার ওপর চোখ রাখিস। কয়েক মিনিট বাদেই একটা বাচ্চা মেয়ে এসে আমাকে ফাইনাল লোকেশানে নিয়ে যাবে। তুই দোকান থেকে বেরোবি না। গৌতমকে বলিস আমায় ফলো করতে। আর আমি কোন ফ্ল্যাটে ঢুকছি, সেটা দেখে নিয়ে তোর কাছে ফিরে গেলেই মালবিকাকে ঠিক মত বিল্ডিঙটা চিনিয়ে দিয়ে লোকেশান বুঝিয়েই পাঠিয়ে দিবি। আর ফ্ল্যাট নম্বরটা আমি সেখানে ঢুকেই অভিকে জানিয়ে দেব। অভি তোদের জানিয়ে দেবে। একদম যেন মিস না হয়। ঠিক আছে”?
 

সকালে অভিকে সাথে নিয়ে শঙ্কর এ এলাকাটা ভাল করে দেখে গেছে। তখন সবকিছু নিয়ে ডিটেইলস আলোচনা করে দলের বাকি পাঁচ জনকে সব কিছু বুঝিয়ে দিয়েছে। ফোনটা পকেটে রেখে সে এমন একটা জায়গায় গিয়ে দাঁড়াল যেখানে তাকে সহজেই যে কেউ দেখতে পারে। পাঁচ ছ’ মিনিট পর ফ্রক পড়া একটা বারো তের বছরের বাচ্চা মেয়ে একটা রাস্তা থেকে বেরিয়ে তার কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, “ভাইসাব, দিদি কা সামান লায়ে হ্যায় ক্যা”?

শঙ্কর মেয়েটার দিকে চেয়ে দেখল বারো তের বছরের শ্যাম বর্ণা মিষ্টি চেহারার একটা মেয়ে। শঙ্কর জিজ্ঞাসু চোখে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “তুমি গুড়িয়া”?

মেয়েটা জবাব দিল, “হাঁ ভাইসাব”।

শঙ্কর নিজের গলায় হাত বুলিয়ে দোকানের দিকে একটা ইশারা করে জবাব দিল, “হাঁ, সরজু ভাইয়াকা সামান লায়া হু। ডেলিভারি দেনা হ্যায়’।

মেয়েটা বলল, “আপ মেরে সাথ আইয়ে”।

শঙ্কর মেয়েটার পিছু পিছু চলতে চলতে একবার ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল,তার আট দশ ফুট পেছনেই গৌতম আসছে। একটা রাস্তা দিয়ে মিনিট তিনেক যাবার পরেই মেয়েটার পেছন পেছন সেও একটা গলিতে ঢুকে পড়ল। তারপর একটা পাঁচতলা বিল্ডিঙের মেইন গেট দিয়ে ঢুকে পড়ল। মেইন গেটের পাশে ছোট একটা বোর্ডে লেখা ‘লাবিনা এনক্লেভ- ব্লক এ’। মেয়েটা লিফটের সামনে গিয়ে দেখল লিফটটা পাঁচ তলায় এনগেজড আছে। তাই সে শঙ্করকে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে গেল। একশ চার নম্বর রুমের সামনে এসে মেয়েটা দরজায় ধাক্কা দিতেই সেটা খুলে গেল।
 

ভেতর থেকে মিষ্টি সুরেলা গলায় এক নারীকন্ঠ ভেসে এল, “গুড়িয়া এলি”?

বাচ্চা মেয়েটি শঙ্করকে নিয়ে ঘরের ভেতর ঢুকে জবাব দিল, “হ্যা দিদি, আমি। আর সরজু ভাইয়ার লোকও এসেছে”।

ভেতর থেকে আবার বলল, “বাবুকে ড্রয়িং রুমে বসতে দে। আমি আসছি”।

মেয়েটা শঙ্করকে সোফায় বসতে বলে ভেতরের একটা দরজা দিয়ে ঢুকে গেল। শঙ্কর একটা সোফায় বসেই পকেট থেকে মোবাইল বের করে ‘লাবিনা এনক্লেভ। ব্লক এ। ১০৪’ লিখে অভির নাম্বারে একটা এসএমএস পাঠিয়ে দিয়ে, আরেকটা নাম্বারে একটা মিসকল দিল। তারপর আবার সরজুর নাম্বারে ফোন করে বলল, “হাঁ, সরজু ভাইয়া, ঠিক জায়গায় পৌঁছে গেছি। ধন্যবাদ” বলে ফোন কেটে দিয়ে ফোনটা পকেটে পুরে রাখতে না রাখতেই ভেতরের দরজা দিয়ে সালোয়ার কামিজ পড়া ভরন্ত যৌবনা অপূর্ব সুন্দরী একটি মেয়ে ঘরে ঢুকে হাঁসি মুখে শঙ্করকে বলল, “নমস্কার স্যার। আশা করি এখানে আসতে কোন অসুবিধে হয়নি”।
 

শঙ্কর একটু ইতস্ততঃ করে বলল, “না অসুবিধে তো কিছুই হয় নি। কিন্তু আমার মনে হয়, আমি বোধ হয় ভুল জায়গায় এসে পড়েছি”।

______________________________
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply
#57
(Update No. 77)

মেয়েটা সোফায় শঙ্করের প্রায় গা ঘেঁসে বসে জিজ্ঞেস করল, “ভুল জায়গায় এসে পড়েছেন বলে মনে হচ্ছে আপনার? আপনি সরজু ভাইয়ার জিনিস নিয়েই এসেছেন তো? না কি”?

শঙ্কর জবাব দিল, “হ্যা, সে’কথা তো ঠিক। আমি সরজু ভাইয়ার ২০৭ নাম্বার বুকিং নিয়েই এসেছি। কিন্তু সরজু ভাইয়া বলেছিল যে এখানে আমি অনুপমা ভাবীকে পাব। আর সে তেইশ বছর বয়সী এক সন্তানের মা। কিন্তু আপনাকে দেখে তো তেমন মনে হচ্ছে না। আপনাকে দেখে তো মনে হচ্ছে আপনি একজন অবিবাহিতা ঊণিশ কুড়ি বছরের মেয়ে”!

মেয়েটা খিলখিল করে হেসে বলল, “ভাববেন না স্যার। আপনি ঠিক জায়গাতেই এসেছেন। আমার নামই অনুপমা”।

শঙ্কর চমকে উঠে বলল, “আপনিই অনুপমা? মানে আপনিই সেই অনুপমা ভাবী? কিন্তু আপনাকে দেখে তো ..... “

অনুপমা ভেতরের দিকে মুখ করে জিজ্ঞেস করল, “গুড়িয়া, তু অভি তক তৈয়ার নহি হুয়ি ক্যা”?

ভেতর থেকে বাচ্চা মেয়েটার গলা শোনা গেল, “হাঁ দিদি, হো গয়া। অভি জাতি হু” বলতে বলতেই দেড় দু’বছরের একটা বাচ্চাকে কোলে নিয়ে মেয়েটা ড্রয়িং রুমে এসে ঢুকল।
 

তাকে দেখে অনুপমা বলল, “ঠিক হ্যায়। সুন, সাড়ে চার বজে তক রহনা বাহর। ঔর আতে বক্ত দুকান সে সামান ভি লেকে আনা”।

“আচ্ছা দিদি” বলে মেয়েটা বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে গেল। শঙ্কর মনে মনে ভাবল, পাঁচ সাত মিনিট সাধারণ কথাবার্তা বলে কাটাতে হবে। মেয়েটি বেরিয়ে যেতে অনুপমা সামনের দরজা বন্ধ করে আবার শঙ্করের পাশে সোফায় এসে বসল। কিন্তু এবার সে এতটাই ঘনিষ্ঠ হয়ে বসল যে তার একটা ঊরু শঙ্করের একটা ঊরুর সাথে প্রায় চেপে বসল। অনুপমা শঙ্করের ঊরুতে হাত বোলাতে বোলাতে বলল, “ওই যে মেয়েটাকে দেখলেন, একটা বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে গেল, সেটা আমারই ছেলে। আর ওই যে ওই শোকেসটার ওপরে একটা ছবি দেখছেন, সেটা আমাদের বিয়ের পার্টির দিন তোলা হয়েছিল। এবার বিশ্বাস হল তো যে আমি বিবাহিতাও আর এক ছেলের মা-ও। কিন্তু আপনি কি এক বাচ্চার মা ছাড়া অন্য কোন মেয়ের সাথে কিছু করেন না”?
 

শঙ্কর তার কথার জবাব না দিয়ে সোফা থেকে উঠে শোকেসের সামনে গিয়ে ছবিটা দেখতে লাগল। রবিশঙ্করের ছবিটা চিনতে তার কোন অসুবিধেই হল না। মনে মনে সে ভাবল, অনুপমার সৌন্দর্য তো যে কোন পুরুষের মাথা ঘুরিয়ে দিতে পারে। এ মেয়েটাকে দেখলেই তো কামুক পুরুষদের প্যান্টের ভেতরের জিনিসটা নাচতে শুরু করবে। একটা বিশেষ উদ্দেশ্য সিদ্ধি করতে এসে এমন অদ্ভুত যৌন আবেদনময়ী নারী শরীরকে সে একঘন্টার জন্যে ভোগ করতে পারবে ভেবে তার প্যান্টের ভেতরের জিনিসটারও ঘুম ভেঙে গেছে। কিন্তু মালবিকা না আসা পর্যন্ত নিজেকে সামলে রাখতেই হবে। তারপর এ চামকী মেয়েটাকে সে প্রাণ ভরে ভোগ করবে।

এসব ভাবতে ভাবতেই তার মনে হল তার পিঠে নরম কিছু একটা যেন এসে লাগছে। ঘুরে দেখবার আগেই দুটো মসৃণ পেলব হাত তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল।

তার কানের কাছে অনুপমা প্রায় ফিসফিস করে বলল, “এবার বিশ্বাস হয়েছে তো? আসলে অনেক পুরুষই গৃহস্থ ঘরের বৌয়ের সাথে সেক্স করতে পছন্দ করলেও বৌটার সিঁথিতে বা কপালে সিঁদুরের ছোঁয়া দেখতে পছন্দ করে না। আর আপনি আমার নতুন খদ্দের। প্রথমবার আমাকে চুদতে এসেছেন। তাই আপনার পছন্দ অপছন্দ গুলো তো আমার জানা নেই। আমার মাথায় সিঁদুর দেখতে আপনার হয়ত ভাল লাগবে না ভেবেই সিঁদুর লাগাইনি” বলতে বলতে শঙ্করের প্যান্টের ওপর দিয়েই তার পুরুষাঙ্গটাকে চেপে ধরে বলল, “তা আমাকে দেখে পছন্দ হয়েছে তো আপনার স্যার? না, শাড়ি শাঁখা সিঁদুর পড়ে বৌ সেজে আসব”?

শঙ্কর নিজেকে অনুপমার বাহুবন্ধন থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে অনুপমার বুকের দিকে দেখতে দেখতে বলল, “না না, তার দরকার নেই। আপনার মত মেয়েকে কি আর কারো অপছন্দ হতে পারে? তবে আমি ভেবেছিলাম, আপনার বুকটা আরো বড় আরো ভারী হবে। মানে সাধারণতঃ এক বাচ্চার মায়েদের যেমন হয়। সরজু ভাইয়া তো বলেছিল যে আপনার বুকের সাইজ ছত্রিশ হবে”।

অনুপমা কামুক হাঁসি দিয়ে বলল, “বুঝেছি, আপনি মেয়েদের বড় বড় বুক ভালবাসেন। ভাববেন না। সরজু আপনাকে মিথ্যে কথা বলেনি। বরং কমই বলেছে। আসলে সরজু তো আর সব সময় আমার মাই দেখতে পায় না। ও প্রায় বছর খানেক আগে আমার মাই দেখেছিল। তখন আমি ছত্রিশ সাইজের ব্রা পড়তাম। আর এখন কামিজের নিচে আছে বলে আপনি আসল সাইজটা বুঝতে পারছেন না স্যার। আমি এখনই তৈরী হয়ে আসছি। তারপর আপনি আমার আসল সাইজটা বুঝতে পারবেন। আপনি এক মিনিট বসুন স্যার। আর গরম বা ঠাণ্ডা কী খাবেন বলুন”।

শঙ্কর কামিজের ওপর দিয়ে অনুপমার দুটো স্তনে হাত বোলাতে বোলাতে বলল, “আমার তো এ’গুলো ছাড়া আর কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না এখন”।

অনুপমা শঙ্করের কথা শুনে খিলখিল করে হেসে তাকে নিজের স্তন টেপার সুযোগ দিয়ে অত্যন্ত কামাতুর গলায় জিজ্ঞেস করল, “আপনি বুঝি এই প্রথম পয়সা দিয়ে কোন মেয়ে মানুষকে চুদতে এসেছেন, তাই না স্যার”?
 

শঙ্কর অনুপমার বুক থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে বলল, “হ্যা হ্যা ম্যাডাম, তা ঠিক। কিন্তু এখানে এসে আমি কোন ভুল করিনি তো? মানে। আপনার তাতে কোন অসুবিধে নেই তো”?
 

অনুপমা শঙ্করের কথা শুনে নিজের বুক কাঁপাতে কাঁপাতে ছোট বাচ্চার মত আবার খিলখিল করে হাসতে লাগল। হাসতে হাসতেই সে শঙ্করের বুকের ওপর নিজের নরম বুকটাকে চেপে ধরে বলল, “পয়সা দিয়ে মাগী চুদতে এসে কেউ যে ম্যাডাম বলে ডাকে, আপনি আজ্ঞে করে কথা বলে, সেটা আজই আমি প্রথম দেখলাম। তবে আমাকে ওভাবে বললে কিন্তু আমার হাসি পাবে। আপনি যদি অন্যদের মত আমাকে মাগি, রেণ্ডী, শালি এসব বলতে না চান, তাহলে আপনি বরং আমাকে নাম ধরেই ডাকবেন। তবে একটু বসুন। আমি আপনাকে এক পেগ হুইস্কি দিচ্ছি। সেটা খেতে খেতে নিজের লজ্জা কাটাতে থাকুন। আমি ড্রেসটা চেঞ্জ করেই আপনার কাছে আসছি”।

শঙ্কর সোফায় বসতে বসতে বলল, “আমি তো ও’সব খাই না। তাই সে’সব লাগবে না”।

শঙ্করের কথা শেষ না হতেই কলিং বেলের শব্দ হল। অনুপমা একটু বিরক্ত আর অবাক হয়ে বলল, “এখন আবার কে এল! একটু বসুন আমি দেখছি” বলে ঘরের দরজার দিকে এগিয়ে গেল। শঙ্কর হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল ঠিক চারটে বেজেছে। সোফা থেকে ঘরের দরজাটা দেখা যাচ্ছে না। সে মনে মনে ভাবল এখন তো মালবিকার আসবার কথা। সে-ই কি এসেছে? না অন্য কেউ? সে সোফা থেকে উঠে পা টিপে টিপে দরজার দিকে এগিয়ে যেতেই নিজেকে আড়ালে রেখেই দরজার বাইরে মালবিকাকে দেখতে পেল। মালবিকা তখন অনুপমাকে বলছে “ম্যাডাম, আমি ইলেকশন অফিস থেকে আসছি। ভোটার লিস্ট সংশোধনীর কাজে এসেছি। আচ্ছা আপনি কি মিসেস লাবনী দত্ত”?
 

অনুপমা বলল, “না, আমার নাম অনুপমা প্রসাদ”।

শঙ্কর চুপিসারে আর এক পা এগোতেই মালবিকার সাথে তার চোখাচোখি হল। শঙ্কর ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুলে থামস আপ দেখিয়ে আবার ড্রয়িং রুমের ভেতরে এসে ঢুকল। ড্রয়িং রুমের ভেতরে এসেই সে ঘরটার সিলিঙের দিকে তাকিয়ে দেখতে দেখতেই নিজের পকেটে হাত দিয়ে দুটো ছোট্ট জিনিস বের করল। এ জিনিসদুটো খুব উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ইম্পোর্টেড কর্ডলেস নাইট ভিশন স্পাই ভিডিও ক্যামেরা। এর সফটওয়ার লোড করা আছে অভির ল্যাপটপে। দু’শ মিটার দুর থেকে ক্যামেরার সিগন্যাল পাওয়া যাবে। এক দিকে একটা কাঠের আলমাড়ির ওপর জড় করে রাখা কয়েকটা বাক্স দেখতে পেল। পছন্দ মত জায়গা খুঁজে পেতেই তার চোখটা খুশীতে চকচক করে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে সে নিঃশব্দে একটা চেয়ার ঘরের এক কোনায় টেনে নিয়ে তার ওপর দাঁড়িয়ে আলমাড়ির ওপর জড় করে রাখা কয়েকটা বাক্সের তলা থেকে একটা খালি বাক্স বের করে দেখল তাতে একটা ছোট ফুটো আছে। বাক্সের মুখটা খুলে সে পকেট থেকে বের করা একটা ক্যামেরা বাক্সটার ভেতরে ঢুকিয়ে সে জিনিসের মুখটাকে বাক্সের ছোট ফুটোটার মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েই বাক্সটা বন্ধ করে আবার দু’তিনটে খালি বাক্সের নিচে আগের জায়গায় রেখে দিয়ে নেমে পড়ল। চেয়ারটাকে সরিয়ে নিয়ে সোফার কাছে দাঁড়িয়ে বাক্সটার দিকে তাকিয়ে দেখল কিছুক্ষণ। বাক্সের ফুটোটা ঠিক এঙ্গেলেই পড়েছে দেখে সে খুশী হল। মনে মনে সন্তুষ্ট হয়ে সে ঘরের উল্টোদিকের কোনার দিকে দেখতে লাগল। দেয়ালের সাথে একটা মোটা ফ্রেমে বাঁধানো পেন্টিং দেখতে পেয়ে আবার চেয়ারটাকে পেন্টিংটার কাছে টেনে এনে পেন্টিংটার ওপরের দিকের ফ্রেমের ওপরে একই রকম দেখতে আরেকটা ক্যামেরা সেলোটেপ দিয়ে আঁটকে দিয়ে ঘরের মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল। জিনিস দুটোকে চট করে একনজরে বোঝা যাবে না ভেবে সন্তুষ্ট হয়ে সে ভেতরের ঘরে যাবার চেষ্টা করতেই বাইরে থেকে বেশ উঁচু গলায় মালবিকার গলা শুনতে পেল, “আচ্ছা ঠিক আছে ম্যাডাম। আমি এ’সব লিখে নিচ্ছি। আপনারা এর আগে কোথায় ছিলেন সে ঠিকানাটা আপনি আমাকে দিন। কিন্তু আমাকে এক গ্লাস জল দেবেন প্লীজ। সকাল থেকে ঘুরতে ঘুরতে বড্ড জল তেষ্টা পেয়েছে”।
 

শঙ্কর বুঝল, মালবিকা তাকে সিগন্যাল পাঠাচ্ছে। সে চট করে চেয়ারটাকে আগের জায়গায় রেখে দিয়ে প্রায় লাফ দিয়ে গিয়ে সোফায় বসে পড়ল। ঠিক আগের জায়গাতে। আর প্রায় সাথে সাথেই অনুপমা ভেতরে ঢুকে বলল, “সরি স্যার। ইলেকশন অফিস থেকে একজন সার্ভে করতে এসেছে। তাকে বিদেয় করে আপনার সাথে কথা বলব। প্লীজ কিছু মনে করবেন না” বলে ঘরের এক কোনে একটা টেবিলের ওপর থেকে জলের বোতল নিয়ে মালবিকাকে দিয়ে আবার ঘরে এসে ঢুকল।

শঙ্কর জবাব দিল, “হ্যা হ্যা ঠিক আছে। করে নাও। কিন্তু একঘন্টা বাদেই তো আমাকে চলে যেতে হবে। অনেকটা সময় তো চলে যাচ্ছে”।

অনুপমা শঙ্করের কাছে এসে তার গলা জড়িয়ে ধরে নিজের বুকটাকে শঙ্করের মুখে ঘসতে ঘসতে চাপা গলায় ফিসফিস করে বলল, “আপনি আজ আমার ঘরে প্রথমবার এসেছেন। আপনাকে ঠকাব না স্যার। একঘন্টার মস্তি করবার সুযোগ আপনি ঠিকই পাবেন। কিন্তু আপনাকে যে একটু বসতেই হবে স্যার। আমি মহিলাকে বিদেয় করেই আপনার কাছে আসছি। আর আপনার সময় তখন থেকেই শুরু হবে, ভাববেন না”।

অনুপমা শঙ্করের হাত ধরে সোফা থেকে টেনে ওঠাতে ওঠাতে বলল, “আপনি ভেতরের ঘরে চলুন স্যার। প্রচণ্ড গরম পড়েছে। ও’ঘরে এসি আছে। আরাম করে বসুন। আসুন” বলে শঙ্করকে নিয়ে পাশের আরেকটা দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়ল। ভেতরে ঢুকেই শঙ্কর বুঝতে পারল এটা একটা বেডরুম। ঘরের ভেতরটা মনোরম ঠাণ্ডা। এসি চলছে।

অনুপমা শঙ্করকে বিছানার ওপর বসিয়ে দিতে শঙ্কর জিজ্ঞেস করল, “এটা তো মনে হচ্ছে তোমাদের একটা বেডরুম। ক’টা বেডরুম আছে আর”?
 

অনুপমা বেডরুমের ভেতরের দরজা দিয়ে আরেকটা ঘরে ঢুকে বলল, “আর বেডরুম নেই স্যার। এটা তো এক বেডরুমের ফ্ল্যাট। কিন্তু আগে যদি জানতাম যে আপনি ও’সব খান না, তাহলে গুড়িয়াকে যাবার আগে আপনাকে চা বা কফি কিছু একটা করে দিয়ে যেতে বলতাম। এদিকে আবার আরেক ঝামেলা এসে হাজির হয়েছে। আমিও যে আপনাকে এককাপ চা বা কফি করে দেব, তারও সুযোগ পাচ্ছি না” বলতে বলতে সে একটা ফাইল হাতে নিয়ে আবার শঙ্করের সামনে এসে দাঁড়াল।
 

শঙ্কর অনুপমার একটা হাত ধরে বলল, “না না, তোমাকে সে সব নিয়ে ভাবতে হবে না। কিন্তু কতক্ষণ এখানে এভাবে একা বসে থাকতে হবে বল তো। তোমাকে দেখার পর থেকেই আমার শরীরটা ছটফট করছে তখন থেকে। যে এসেছে তাকে বিদেয় করে দাও তো। আরেক সময় আসতে বল তাকে”।

অনুপমা একটু হেসে শঙ্করের একটা হাত টেনে নিয়ে নিজের একটা স্তনের ওপর চেপে ধরে বলল, “সরি স্যার। সে চেষ্টা আর করিনি ভাবছেন? কিন্তু মেয়েটা নাছোড়বান্দা। বলছে এ মহল্লার অন্য সব জায়গার কাজ তার শেষ হয়ে গেছে। শুধু আমাদের ফ্ল্যাটটাই না কি বাকি। তাই সে সেটা এখন সেরে ফেলতে পারলেই কাল অন্য এলাকায় গিয়ে সার্ভে করতে পারবে। আপনি একটু আমার মাই দুটো টিপে নিন এখন। আর আরেকটা ঝামেলাও আছে। আমরা তো এ ফ্ল্যাটে নতুন এসেছি। আগে যারা এ ফ্ল্যাটে ভাড়া ছিলেন, তাদের নামই মেয়েটার লিস্টে আছে। তাই তাদের নামের বদলে আমাদের নামটা এখানে ঢোকাতে হবে। আর আগের ভাড়াটেরা কোন এলাকায় আছেন সেটা খুঁজে না পেলে নাকি কাজটা শেষ হবে না। তবে সেটা সে এখন করতে পারবে না। তার নাকি অফিসের রেকর্ড চেক করতে হবে। আপাততঃ আমরা আগে যেখানে থাকতাম তার ঠিকানাটা ওকে জানাতে হবে। আমি সেটা করেই ওকে বিদেয় করে দিয়ে আপনার কাছে চলে আসছি”।

শঙ্কর অনুপমার স্তন দুটো বেশ আয়েশ করে টিপতে টিপতে জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা অনুপমা। এ বিছানাতে তো তুমি তোমার স্বামীর সাথে শোও। আমরা কি এখানেই করব নাকি”?

অনুপমা একহাতে শঙ্করের প্যান্টের ওপর দিয়েই তার পুরুষাঙ্গটাকে চাপতে চাপতে জবাব দিল, “হ্যা স্যার। যারা বিছানায় ফেলে আমাকে চুদতে চায়, তারা এখানেই চোদে আমাকে। কেউ কেউ অবশ্য ব্লু ফিল্মের কায়দায় সোফার ওপরেও চুদতে চায়। তাদের সাথে আমি ড্রয়িং রুমেই চোদাচুদি করি। কিন্তু ও’ঘরে এসি নেই। আর আজ গরমটাও বেশী পড়েছে। তবে আপনি চাইলে ড্রয়িং রুমেও আমাকে চুদতে পারবেন। আর আমি তো ঘন্টা খানেকের জন্য আপনার বৌই হচ্ছি। আমার স্বামী আমার সাথে এ বিছানায় শুয়ে যা করে আপনিও তো ঠিক তাই করবেন, তাই না? কিন্তু এখন আমি ফ্রি না হওয়া পর্যন্ত এখানে এসির হাওয়ায় একটু জিরিয়ে নিন”।

শঙ্কর অনুপমাকে নিজের ওপর থেকে সরাতে সরাতে বলল, “ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি আপদটাকে বিদেয় করে এস তাহলে”।

অনুপমা একটু দুষ্টুমি করে বলল, “আপনার বাড়াটা তো বেশ শক্ত হয়ে উঠেছে। গত সাতদিন স্বামী ছাড়া আর কেউ চোদেনি আমাকে। আপনার বাড়া ধরে মনে হচ্ছে, আজ চুদিয়ে খুব সুখ পাব। তবে নিরুপায় হয়েই আপনাকে বসিয়ে রাখতে হচ্ছে। আর একটু অপেক্ষা করুন স্যার। আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মেয়েটাকে বিদায় করে আসছি। কিন্তু স্যার কাজ শুরু করবার আগেই কিন্তু আমার পেমেন্টটা করে দেবেন। সেটাই কিন্তু নিয়ম” বলে ফাইলটা হাতে নিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেল।

শঙ্করও প্রায় সাথে সাথে বিছানা থেকে লাফ দিয়ে নেমে পকেট থেকে আরো দুটো স্পাই ক্যামেরা বের করে বেডরুমের দুটো কোনায় লুকিয়ে ফিট করে দিল। তারপর ঘরের এদিকে সেদিকে ঘুরতে ঘুরতে ভাল করে দেখে বুঝল যে জিনিসগুলো চট করে কারো চোখে পড়বার সম্ভাবনা নেই। পা টিপে টিপে আস্তে করে বেডরুমের দরজা খুলে সে আবার ড্রয়িং রুমে এল। ড্রয়িং রুমে লাগানো ক্যামেরা গুলোর দিকে তাকিয়েও তাকে বেশ আশ্বস্ত মনে হল। তারপর পা টিপে টিপেই সে আবার সামনের দরজার দিকে এগিয়ে গেল। অনুপমার অনেকটা পেছনে থাকতেই এবার মালবিকার সাথে তার চোখাচোখি হল। আবার ডানহাতে থামস আপ দেখিয়েই সে আবার পা টিপে টিপে ড্রয়িং রুমের মধ্যে দিয়ে অনুপমার বেডরুমে এসে বিছানায় বসে পড়ল। পকেট থেকে নিজের মোবাইলটা বের করে অভিকে একটা মিসকল দিল। মিনিট দুয়েক বাদে নিজের মোবাইলটা বেজে উঠতেই সে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দেখে অভির মিসকল। আশ্বস্ত হয়ে সে এবার ফোনটাকে সুইচ অফ করে পকেটে রেখে দিল।

তারও প্রায় ছ’ সাত মিনিট বাদে বাইরের দরজা বন্ধ হবার শব্দ পাওয়া গেল। আর কয়েক সেকেণ্ড বাদেই অনুপমা ফাইল হাতে বেডরুমে এসে ঢুকেই ফাইলটাকে শঙ্করের পাশে রেখেই শঙ্করকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে তার গালে ঠোঁটে চুমু খেতে খেতে বলল, “ইশ মাগি চুদতে এসেও আমার নাগর বেচারাকে কতক্ষণ ধরে বাড়া প্যান্টের ভেতর ঢুকিয়ে রেখেই বসে থাকতে হচ্ছে। সরি স্যার। তবে আর অপেক্ষা করতে হবে না আপনাকে। টাকাটা দিন” বলে শঙ্করকে নিজের আলিঙ্গনমুক্ত করলেও প্যান্টের ওপর দিয়ে তার প্রায় শক্ত হয়ে ওঠা পুরুষাঙ্গটাকে চাপতে লাগল।
 

শঙ্কর নিজের প্যান্টের ব্যাক পকেট থেকে টাকা বের করে ছ’খানা পাঁচশ টাকার নোট অনুপমার চোখের সামনে কিছুক্ষণ দুলিয়ে টাকাগুলোকে দু’ভাজ করে হাতের মুঠোয় নিয়ে অনুপমার কামিজের গলার ভেতর দিয়ে হাতটা ঢুকিয়ে দিল। কামিজের তলায় ব্রার ভেতর হাত ঢুকিয়ে ব্রার কাপের ভেতর টাকাগুলো রেখে আরেকহাতে কামিজের আর ব্রার ওপর দিয়ে টাকা সমেত অনুপমার একটা স্তন চেপে ধরে টিপতে লাগল।

অনুপমা মিষ্টি করে হেসে শঙ্করের ঠোঁটে চুমু খেয়ে বলল, “একটু ছাড়ুন স্যার। আমি ফাইলটা আলমাড়িতে রেখে ড্রেসটা চেঞ্জ করে আসছি। নাইটি পড়ে আসব? না পুরো নেকেড হয়ে আসব”?
 

শঙ্কর অনুপমার পেছনে গিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল, “আমার নিজের বৌ আমার সামনে ন্যাংটো হতে এত লজ্জা পায় যে গায়ের ওপর চাদর টাদর কিছু একটা চাপা না দিয়ে সে নিজের শাড়ি ব্লাউজ কিছু খোলে না। আজ তোমাকে আমি নিজের হাতে ন্যাংটো করে আমার মনের সাধ মেটাব”।

অনুপমা মিষ্টি হেসে বলল, “বেশ তো। ঘরের বৌরা স্বামীকে পুরোপুরি সুখ দিতে পারেনা বলেই তো তারা আমার মত মাগিদের কাছে আসে। আমিও সকলের সব আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করবার চেষ্টা করি। আপনার যা ভাল লাগবে, আপনি আমার সাথে তা-ই করবেন। আমার তরফ থেকে কোন বাঁধাই পাবেন না। বরং সব ব্যাপারে আমি আপনাকে সাহায্যই করব। তাহলে আমি ফাইলটা রেখে আসছি” বলে ফাইলটা হাতে করে ভেতরের ছোট ঘরে ঢুকে গেল। আর মিনিট খানেক বাদেই আবার বেডরুমে এসে শঙ্করের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল, “নিন স্যার, যেভাবে যা করতে চান করুন। আপনার সময় এখন থেকে হিসেব করব” বলে দু’হাত দু’দিকে প্রসারিত করে দাঁড়াল।
 

শঙ্কর বিছানা থেকে নেমে অনুপমার স্তনদুটো কামিজের ওপর দিয়ে টিপতে টিপতেই বলল, “ড্রয়িং রুমে চল অনুপমা। সেখানে আমি তোমাকে ন্যাংটো করব। আর তুমি আমাকে ন্যাংটো করবে। তারপর আমাকে সোফায় বসিয়ে তুমি আমার বাড়াটাকে একবার ভাল করে সাক করে আমার রস বের করে খাবে। তারপর আমি তোমাকে এ বিছানায় ফেলে তোমার ওপর চাপব”।
 

অনুপমা শঙ্করকে জড়িয়ে ধরে ড্রয়িং রুমে ঢুকতে ঢুকতে জিজ্ঞেস করল, “আপনার বৌ বুঝি আপনার বাড়া চুসে ফ্যাদা খেতে পছন্দ করে না, তাই না স্যার”?
 

শঙ্কর অনুপমার স্তন টিপতে টিপতেই জবাব দিল, “ফ্যাদা খাওয়ার কথা বলছো তুমি? আমার এটার ফ্যাদা খাওয়া তো দুর, ও তো এটা মুখেই নিতে চায় না। খুব জোরাজুরি করলে, চোখ বন্ধ করে জিভ বের করে একটুখানি ছোঁয়ায় শুধু। আর সাথেই সাথেই থু থু ছুঁড়তে থাকে। মুন্ডিটাও মুখের ভেতরে নেয় না কখনো” বলতে বলতে অনুপমার পেছনে দাঁড়িয়ে তার কামিজের হুকগুলো পটপট করে খুলে ফেলে জিজ্ঞেস করল, “মাথার ওপর দিয়ে খুলব? না কাঁধ থেকে টেনে নিচের দিকে নামাব”?

অনুপমা বলল, “আপনার যেভাবে খুশী সেভাবে করুন। কিন্তু ব্রার হুকটাও একবারে খুলে দিন”।
 

শঙ্কর অনুপমার সামনে ঘুরে এসে বলল, “দাঁড়াও ডার্লিং। ব্রার ওপর দিয়ে তোমার জিনিসগুলো দেখতে কেমন লাগে, সেটা একটু দেখে নিই” বলে অনুপমার ফর্সা মসৃণ কাঁধের ওপর থেকে কামিজের অংশগুলো সরিয়ে দিল। তারপর কামিজের গলার কাছটা ধরে বুকের সামনের দিকে নিচে নামাতে নামাতে বলল, “তোমার বুকটা তো দারুণ সুন্দর অনুপমা”!

ফর্সা শরীরে নীল রঙের ব্রায়ে ঢাকা অনুপমার স্তনদুটো শঙ্করের চোখের সামনে প্রস্ফুটিত হয়ে উঠল। যেন এক জোড়া নীলপদ্ম ফুল। কিন্তু আকারে অনেক বড়। ব্রার ওপরের দিকে ফর্সা তুলতুলে মাংসের স্তূপ ঠেলে বেরিয়ে আছে অনেক খানি। দুটো স্তনের মাঝে সুগভীর ক্লিভেজটা দারুণ মোহনীয় লাগছে দেখতে। ব্রার ওপর দিয়েই দুটো স্তন দু’হাতে হাতাতে হাতাতে শঙ্কর মুখ নামিয়ে অনুপমার ক্লিভেজে নাক চেপে ধরল। দারুণ সুন্দর মিষ্টি গন্ধে শঙ্করের বুকটা ভরে উঠল। অনুপমা সে ভাবেই দাঁড়িয়ে থেকেই নিজের কামিজের হাতা দুটো নিজের হাত গলিয়ে বাইরে বের করে দিয়ে শঙ্করের মুখটাকে নিজের অপূর্ব স্তন বিভাজিকায় কয়েকবার ঘসেই শঙ্করের মুখটা নিজের মুখের ওপর টেনে নিয়ে তার ঠোঁট দুটোকে নিজের মুখের মধ্যে পুরে নিয়ে চুসতে শুরু করল। অনুপমার জিভের গরম স্পর্শে শঙ্করের সারা শরীর শিরশির করে উঠল। সেও দু’হাতে অনুপমাকে শক্ত করে নিজের বুকে চেপে ধরে অনুপমার রসাল ঠোঁটে চুমু খেতে লাগল।


______________________________
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply
#58
(Update No. 78)

কমলালেবুর কোয়ার মত সে দুটোকে কামড়ে কামড়ে চুসতে লাগল। অনুপমার ব্রায়ের ভেতর আবদ্ধ থাকা সত্বেও তার স্তন দুটো শঙ্করের বুকের সাথে চ্যাপ্টা হয়ে লেগে গেল।
 

প্রায় মিনিট পাঁচেক অনুপমার ঠোঁট চুসে মুখ তুলে শঙ্কর বলল, “দেখি, এবার তোমার আসল সুন্দর জিনিস দুটোকে দেখি” বলে অনুপমার ব্রার ওপর দিয়েই তার স্তন দুটোকে দু’হাতে ছানতে ছানতে বলল, “ওয়াও, দারুণ জিনিস। এতক্ষণ কামিজের তলায় ঢেকে রেখেছিলে বলে বুঝতে পারিনি। মনে হচ্ছে আটত্রিশ সাইজের, তাই না”?
 

অনুপমা নিজেই দু’হাতে নিজের স্তনদুটো নিচ দিক থেকে ওপরের দিকে তুলে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে কামুক ভঙ্গীতে বলল, “হ্যা স্যার, আটত্রিশ। কিন্তু কাপগলো ডিডি। পছন্দ হয়েছে আপনার”?
 

শঙ্কর এবার নিজেই অনুপমার স্তনদুটো দু’হাতে নাচাতে নাচাতে বলল। “এমন জিনিস কি কারো অপছন্দ হতে পারে ডার্লিং? কিন্তু দাঁড়াও। এবার ঢাকনাগুলো সরিয়ে দেখি” বলে অনুপমার পেছনে গিয়ে তার পিঠের ওপর ব্রার হুকটাকে ঝট করে খুলে ফেলল। ভারী স্তনদুটো খানিকটা নিচের দিকে ঝুলে পড়লেও আলগা ব্রার কাপের ভেতরেই রইল। শঙ্কর ঘুরে অনুপমার সামনে এসে দেখল ব্রার নিচ দিয়ে গোলাকার মাংসপিণ্ড দুটোর কিছুটা অংশ চোখে পড়ছে। দু’হাতে দুটো স্তনের সে জায়গা দুটোয় হাত বোলাতে বোলাতে সে বলল, “ডার্লিং, এবার খুব ধীরে ধীরে তোমার ব্রাটাকে তোমার গা থেকে সরিয়ে ফেল”।
 

অনুপমা শঙ্করের নির্দেশ পালন করল। কামুক ভঙ্গীতে আলগা ব্রাটাকে গা থেকে খুলে ফেলতে সে প্রায় মিনিট খানেক সময় লাগাল। অনুপমার চোখ, মুখ আর ঠোঁট জিভের ভাবভঙ্গী দেখতে দেখতে শঙ্করের প্যান্টের নিচের জিনিসটা চড়চড় করে ঠাটিয়ে উঠল। কোন মেয়ে যে এত সেক্সী ভঙ্গিতে নিজের ব্রা খুলতে খুলতে পুরুষকে এত উত্তেজিত করে তুলতে পারে, এটা সে কোনও ব্লু ফিল্মেও দেখেনি। আর স্তনদুটো তাদের পূর্ণ রূপ শঙ্করের চোখের সামনে মেলে ধরতে শঙ্কর আর নিজেকে সামলাতে পারল না। “আহ কী দারুণ, কী সুন্দর” বলেই সে অনুপমার একটা স্তন মুখের মধ্যে ভরে নিয়ে চুসতে শুরু করল। আর এক হাতে অন্য স্তনটা ধরে বেশ আয়েস করে টিপতে লাগল। স্তনের ঠিক নিচ থেকেই অনুপমার শরীরটা আবৃতই রইল। আধা খোলা কামিজটা শুধু অনুপমার কাঁধ থেকে স্তন দুটোকেই উন্মুক্ত করে দিয়েছে।
 

হঠাৎ শঙ্করের মনে হল, তার মুখটা যেন একটু সামান্য মিষ্টি মিষ্টি এক তরলে ভরে যাচ্ছে। একটু অবাক হয়ে মুখ তুলে কিছু একটা বলতে যেতেই অনুপমা দুষ্টুমি করে সে স্তনের বোঁটাটা একটু জোরে চেপে ধরতেই ফিনকি দিয়ে সাদা পাতলা দুধ বেরিয়ে শঙ্করের মুখে ছিটকে পড়ল। শঙ্কর ততক্ষণে মুখের ভেতর জমে থাকা তরল জিনিসটুকু গিলে খেয়ে ফেলেছে। মুখে দুধের ছিটে পড়তেই সে অনুপমার স্তনটাকে হাতের মুঠোয় চেপে ধরে জিজ্ঞেস করল, “একি! তোমার মাই থেকে দুধ বেরোচ্ছে”?
 

অনুপমা সেক্সী হাঁসি দিয়ে বলল, “হ্যা স্যার। ছেলে এখনও দু বছরের হয়নি। বুকে তাই দুধ আছে। নিজের বৌয়ের বুকের দুধ খাননি কখনও”?

শঙ্কর অনুপমার স্তনের বোঁটা টিপতে টিপতে দুধ বের করতে করতে জবাব দিল, “না ডার্লিং। আমার বৌয়ের তো এখনও বাচ্চা কাচ্চা হয়নি। কিন্তু তোমার দুধ খেতে তো বেশ ভাল লাগছে। আরেকটু খেলে আপত্তি করবে না তো”?

অনুপমা হেসে বলল, “আপত্তি করব? তাই কখনও হয়? আপনি তিন হাজার টাকা খরচ করে এসে আমার বুকে দুধ আছে বলে আমার মাই না চুসেই চলে যাবেন নাকি? খান, আমার আপত্তি নেই। আমার মাইয়ের দুধ আর গুদের রস সবই আপনি চুসে খেতে পারেন। কিন্তু অনেকক্ষণ ধরে তো শুধু একটাই চুসছেন। এবার অন্য মাইটা চুসুন। সেটাতেও দুধ আছে তো” বলে তার অন্য স্তনটাকে ঠেলে শঙ্করের মুখের ভেতর ঢুকিয়ে দিল।
 

শঙ্কর তিন চার মিনিট ধরে সে স্তনটাকে চোঁ চোঁ করে চুসে চলল। প্রথম কয়েকটা চোসনে দুধ না বেরলেও পরের দিকে তার মুখ দুধে ভর্তি হতে থাকল। ঢোঁক গিলে দুধ খেতে খেতে সে স্তনটাকে মনের সুখে চুসে যেতে থাকল। অনেকক্ষণ বাদে মুখ উঠিয়ে দেখে তার চোষণের ঠেলায় অনুপমার ফর্সা স্তনদুটো টকটকে লাল হয়ে উঠেছে। মনে হতে লাগল, একটা টোকা দিলেই বুঝি পাতলা ত্বক ফেটে গিয়ে ভেতর থেকে রক্ত বের হয়ে আসবে।
 

অনুপমাও নিজের বুকের দিকে দেখে মুখের কামুকী হাঁসি বজায় রেখে বলল, “বাব্বা, কী চোসাটাই না চুসলেন স্যার! আর একটু হলে তো আমার মাইয়ের চামড়া ফেটে যেত। আপনার মুখে দুধের বদলে বুঝি আমার বুকের রক্ত ছিটকে পড়ত”।
 

শঙ্কর কোন কথা না বলে অনুপমার সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে তার আধা খোলা কামিজটাকে নিচের দিকে টেনে নামিয়ে তার পেট নাভি আর তলপেট উন্মুক্ত করে দিল। তারপর অনুপমার নাভির সুগভীর গর্তে নিজের নাক চেপে ধরে জিভ দিয়ে নাভির চারপাশ আর তুলতুলে প্রায় সমতল পেটটা চাটতে চাটতে তার সালোয়ারের দড়ির ফাঁস খুলতে লাগল। একটু চেষ্টাতেই দড়ির ফাঁসটা খুলে যেতেই সে সালোয়ারের কোমড়টাকে ঢিলে করে দিতেই সেটা ঝুপ করে অনুপমার পায়ের কাছে পড়ে গেল। নীল নাইলনের ডিজাইনার প্যান্টির ওপর দিয়ে তার ভারী চওড়া পাছাটার দাবনা দুটো দু’হাতে ডলতে ডলতে অনুপমার কলাগাছের মত মোটা আর মসৃণ দুই ঊরুর মাঝে ফোলা জায়গাটায় প্যান্টির ওপরেই দাঁত বসিয়ে কামড়ে দিতে চাইছিল শঙ্কর। কিন্তু নাইলনের প্যান্টি তার মনের সাধ পূরণের ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাঁড়াল।
 

অনুপমা শঙ্করের মাথা চেপে ধরে চাপা গলায় হিসহিস করে বলল, “প্যান্টিটা খুলে নিন স্যার। নাইলনের প্যান্টির ওপর দিয়ে কামড়ানো যাবে না। শঙ্কর সে’কথা শুনেই এক ঝটকায় অনুপমার প্যান্টিটাকে তার হাঁটুর কাছে নামিয়ে দিতেই অনুপমার পুরো নিম্নাঙ্গের সৌন্দর্য শঙ্করের চোখে ঝলসে দিল যেন। অনুপমার মত সুন্দর নিম্নাঙ্গ অনেক ব্লু ফিল্মের নায়িকাদেরও থাকে না। অনুপমা শঙ্করের মাথাটা চেপে ধরে নিজের শরীরের ব্যালেন্স রেখে একটা একটা করে তার দু’পা তুলে প্যান্টি, সালোয়ার আর কামিজটাকে পা দিয়ে ঠেলে দুরে সরিয়ে দিয়ে নিজের দু’পা ফাঁক করে দাঁড়িয়ে শঙ্করের মাথাটাকে নিজের ফোলা যৌনাঙ্গটার ওপর চেপে ধরল। শঙ্কর জিভ বের করে অনুপমার যৌনকেশ বিহীন মসৃণ চকচকে যৌনাঙ্গটার আগপাশ তলা ভালো করে চেটে যৌনাঙ্গের দু’পাশের ফোলা ফোলা পাপড়িগুলো মুখের মধ্যে টেনে নিয়ে আস্তে আস্তে কামড়াতে লাগল। অনুপমা দাঁতে দাঁত চেপে শঙ্করের দংশন সহ্য করবার চেষ্টা করেও মিনিট খানেক বাদেই ‘আহ আআহ’ করে শীৎকার দিতে লাগল। আর তীব্র যৌনলিপ্সায় শঙ্করের মুখে নিজের যৌনাঙ্গটাকে চেপে চেপে ধরতে লাগল। কিন্তু এভাবে নিজের যৌনাঙ্গের ওপর অত্যাচার বেশীক্ষণ সহ্য সে করতে পারল না। একসময় ‘ওহ আহ ওমা’ বলে সে কাঁপতে কাঁপতে মেঝের ওপর বসে পড়ে শঙ্করকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে হাঁপাতে লাগল। শঙ্করের প্রায় গোটা মুখটাই অনুপমার যৌনাঙ্গের রসে ভিজে গেছে। কিন্তু সে ভঙ্গীতে বসে সে আর অনুপমার নিম্নাঙ্গে মুখ দিতে পারছিল না।
 

তাই সে দু’হাত বাড়িয়ে অনুপমার স্তন দুটো টিপতে টিপতে বলল, “এবার তুমি আমাকে সুখ দাও অনুপমা ডার্লিং। তুমি আমার বাড়া চুসে ফ্যাদা করে খাও”।

অনুপমা নিজের শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক করে শঙ্করের টিশার্টটাকে তার মাথা গলিয়ে বের করে দিয়ে বলল, “উঠে দাঁড়ান স্যার। আপনাকে আনড্রেস করি। নইলে আপনার বাড়া চুসব কি করে”।

শঙ্কর উঠে দাঁড়াতেই অনুপমা দ্রুতহাতে শঙ্করের জীনসের হুক আর জিপার খুলে জীনসটাকে তার হাঁটুর কাছে নামিয়ে দিয়েই ফুলে ওঠা জাঙ্গিয়াটার ভেতর ফুঁসতে থাকা পুরুষাঙ্গটাকে কয়েকবার জোরে জোরে টিপতেই শঙ্কর বলে উঠল, “জাঙ্গিয়াটা নামিয়ে দাও ডার্লিং। আমার বাড়াটা যে তোমার হাত আর ঠোঁটের ছোঁয়া পাবার জন্যে ছটফট করছে”।
 

অনুপমা আর কোন কথা না বলে শঙ্করের জাঙ্গিয়াটাকেও টেনে তার হাঁটুর কাছে নামিয়ে দিল। শঙ্কর নিজেই অনুপমার মাথা ধরে নিজের পা গুলো এক এক করে তুলে তার প্যান্ট আর জাঙ্গিয়াটাকে পা দিয়ে একদিকে ছুঁড়ে দিয়েই অনুপমার মাথার চুল মুঠো করে ধরে নিজের পুরুষাঙ্গের ওপর তার মুখটাকে চেপে ধরল। অনুপমা পাকা বেশ্যার মত শঙ্করের পুরুষাঙ্গটাকে নিজের মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে নিয়ে চুসতে চুসতে দু’হাতে শঙ্করের অণ্ডকোষ আর শক্ত লাঠির মত জিনিসটার গায়ে নানা কৌশলে হাত বোলাতে বোলাতে নিজের পারদর্শিতার পরিচয় দিতে লাগল। অনুপমার দাঁত, ঠোঁট আর জিভের নিপুণ কারুকার্যে শঙ্করের মনে হচ্ছিল তার পুরুষাঙ্গটা বুঝি ফেটেই যাবে। অনুপমা যখন তার পাছার দাবনা দুটোয় হাত বোলাতে বোলাতে তার পায়ুছিদ্রে নখের আঁচড় দিতে শুরু করল তখন শঙ্করের মনে হচ্ছিল সে বুঝি কোনও অপার্থিব জগতে চলে গেছে। অনুপমার মুখের ও হাতের নিপুণ কারিগড়িতে কয়েক মিনিটের মধ্যেই তার শরীরটা থরথর করে কেঁপে উঠল। আর সেই সাথে সাথে পিচকারীর ফোয়ারার মত বীর্যধারা ছিটকে বেরিয়ে অনুপমার মুখের ভেতর পড়তে লাগল। এমন অসহ্য সুখ সইতে না পেরে গুঙিয়ে উঠে শঙ্কর অনুপমার মুখের ভেতর তার পুরুষাঙ্গটা ভরে রেখেই তার মাথা নিজের নিম্নাঙ্গের ওপর চেপে ধরেই অনুপমাকে হিঁচড়ে টেনে এনে কোনরকমে সোফার ওপর ধপ করে বসে পড়ল। অনুপমা এসবে অভ্যস্ত ছিল বলে সে সহজেই নিজের শরীরটাকে আরামদায়ক স্থিতিতে বসিয়ে নিয়ে শঙ্করের পুরুষাঙ্গটা চুসে চুসে তার ভেতরের শেষ রসবিন্দুটুকু শুষে নিতে লাগল। আর শঙ্কর অনুপমার দু’বগলের তলা দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়ে তার স্তনদুটো ধরে আবার টিপতে শুরু করল।

কিছুক্ষণ বাদে অনুপমা মুখ তুলে দেয়াল ঘড়ির দিকে দেখে শঙ্করের পুরুষাঙ্গটাকে হাতাতে হাতাতে বলল, “স্যার চোসাচুসি করতে করতেই তো ত্রিশ মিনিট চলে গেল। চুদবেন কখন আমাকে”?
 

শঙ্কর উঠে দাঁড়িয়ে অনুপমাকে পাঁজা কোলে তুলে বলল, “এবার তোমার বিছানায় তোমাকে চিত করে ফেলে চুদব আমি ডার্লিং” বলে অনুপমার বেডরুমে ঢুকে পড়ল।
 

**************

আরও প্রায় চল্লিশ মিনিট বাদে অনুপমার ঘর থেকে বেরিয়ে চৌপথীর কাছে এসে শঙ্কর নিজের পকেট থেকে মোবাইল বের করে অভিকে ফোন করল, “কিরে, তুই কোথায় আছিস”?

অভি জবাব দিল, “লাবিনা এনক্লেভ, ব্লক এ, ফ্ল্যাট নাম্বার ৩০৩”।

শঙ্কর অভির কথা শুনে চমকে উঠে বলল, “কি বলছিস তুই? তুই ওই বিল্ডিংটাতেই আস্তানা গেড়েছিস? আমি তাহলে কি করে যাব তোর এখানে? যে কেউ তো আমাকে চিনে ফেলতে পারে রে। ওই অনুপমা বা তার ঘরের কাজের মেয়েটা যদি আমাকে দেখে ফেলে, তাহলে কী হবে জানিস? পুরো প্ল্যানটাই যে ভেস্তে যাবে”।

অভি শঙ্করের কথা শুনে বলল, “গুরু, গুরু, তুই এতো উতলা হোস না। আমার কথা শোন। যে গলি থেকে তুই বেরিয়ে এসেছিস, আমার এখানে আসতে তোকে সে গলিতে আর ঢুকতে হবে না। তাই ওরা কেউ তোকে দেখতেও পাবে না। শোন গুরু, আরেকটু এগিয়ে গিয়ে ডানদিকে একটা সরু গলি দেখতে পাবি। তুই সে গলিটায় ঢুকে পড়। আর প্রায় পঞ্চাশ মিটার যাবার পর দেখবি গলিটা ডানদিকে বেঁকে গেছে। ওই টার্নিংটার পর ডানদিকের তিনটে বাড়ি পার হয়ে একটা ছোট লোহার গেট দেখতে পাবি। তুই ওই গেটটা দিয়ে ঢুকে আয়। আমি তোকে সেখানেই রিসিভ করব। তোর ওই অনুপমা তোর ছায়াটি পর্যন্ত দেখতে পাবে না। আর তুই একবার এলেই বুঝতে পারবি, আমি কতটা সেফ পজিশানে আছি। তুই নিশ্চিন্তে চলে আয়”।

অভির নির্দেশ মত শঙ্কর সেই লোহার গেট পেরিয়ে যেতেই আবছা অন্ধকারে একটু দুরেই অভিকে দেখতে পেল। শঙ্করের বুঝতে অসুবিধে হল না যে সে লাবিনা এনক্লেভের পেছন দিক দিয়ে ঢুকছে। যে রাস্তায় সে এসেছে তাতে সে সকলের চোখের আড়ালেই ছিল। অভি বিল্ডিঙের পেছন দিকের লিফটে চেপে চারতলায় উঠে ৩০৩ নাম্বার ফ্ল্যাটে ঢুকে দরজা বন্ধ করেই শঙ্করকে জড়িয়ে ধরে লাফাতে লাফাতে বলল, “গুরু কী সাংঘাতিক ক্যাপচার হচ্ছে দেখে যা। ক্যামেরা গুলো যেমন পারফেক্ট লোকেশানে বসিয়েছিস গুরু, তোর জবাব নেই। দেখ কী দারুণ রেকর্ডিং হয়েছে”!

শঙ্কর চমকে উঠে বলল, “শালা তুই আমার আর অনুপমার ওইসব কীর্তি রেকর্ড করেছিস? তোর কী মাথা খারাপ হয়েছে? শিগগীর ওটা ডিলিট কর বলছি” বলে টেবিলের ওপর রাখা ল্যাপটপের দিকে এগিয়ে গেল।

অভি শঙ্করের হাত টেনে ধরে বলল, “রাগ করছিস কেন গুরু। আমি তো শুধু একটা ট্রায়াল রেকর্ডিং করে দেখলাম যে ক্যাপচারিং কেমন হচ্ছে। তোকে দেখিয়েই সব কিছু ডিলিট করে দেব বস, ভাবিস না তুই। এই দেখ কেমন রেকর্ডিং হয়েছে। মনে হচ্ছে ঘর পুরো অন্ধকার করে নিলেও পরিষ্কার সিগন্যাল পাব” বলে একটা ফাইল প্লে করতেই শঙ্কর ড্রয়িং রুমে যা যা হয়েছিল সবকিছু একেবারে স্পষ্ট দেখতে পেল। ছবি গুলো তো একেবারে পুরোপুরি ঝকঝকে। আর তাদের কথোপকথন গুলোও পরিস্কার ভাবে শোনা যাচ্ছে। তার মনে হচ্ছিল সে কোন রেকর্ডিং নয় একটা ডিজিটাল ব্লু ফিল্মের সিডি দেখছে। মনে মনে সে ক্যামেরা গুলোর তারিফ না করে পারল না। ওই ছোট্ট ছোট্ট ক্যামেরাগুলো যে এত সুন্দর ভাবে অডিও ভিডিও ক্যাপচার করবে এটা সে ভাবতেও পারেনি।
 

অভি মিনিট খানেক বাদে বলল, “এবার আরেক রুমেরটা দেখ গুরু” বলে আগের ফাইলটা ক্লোজ করে আরেকটা ফাইল প্লে করল। বেডরুমের বিছানায় শঙ্কর আর অনুপমার উদ্দাম খেলার রেকর্ডিং দেখা গেল এবার। অভি নিজের ফুলে ওঠা প্যান্টের ওপর দিয়ে নিজের পুরুষাঙ্গটাকে চাপতে চাপতে বলল, “কী চোদাই না চুদেছিস তুই মাগিটাকে। দেখ গুরু, তোর ঠাপের চোটে মাগিটার মুখ চোখ কেমন কুঁচকে কুঁচকে উঠছে। তোদের খেলা দেখতে দেখতে আমি হাত মেরে মাল না ফেলে পারিনি”।

শঙ্কর ফাইলটা ক্লোজ করে ওই ফোল্ডারের সব গুলো ফাইল ডিলিট করে দিয়ে জিজ্ঞেস করল, “এগুলো কি আরো কোন ড্রাইভে বা ফোল্ডারে কপি করে রেখেছিস নাকি”?

অভি বলল, “নারে গুরু। আমি তো আর এডিটিং শুরু করিনি। তোকে ডাইরেক্ট রেকর্ডিংটাই দেখালাম”।

শঙ্কর তবু জিজ্ঞেস করল, “ঠিক বলছিস তো”?

অভি বলল, “আমি তোকে মিথ্যে কথা বলছি বলে ভাবছিস তুই গুরু? আমার ওপর এতটুকু ভরসা করতে পারছিস না”?

শঙ্কর বলল, “বেশ। আচ্ছা এবার লাইভ ক্যামেরা ফুটেজ গুলো দেখা তো দেখি। এখন তো ঘরের ভেতর মোটামুটি অন্ধকার হয়ে গেছে। দেখি ক্যামেরা কেমন ক্যাপচার করছে”।

অভি প্রোগ্রাম মেনু দিয়ে এসভিসি ইনপুটে ঢুকতেই ল্যাপটপের স্ক্রীনে চারটে অংশে চারটে ক্যামেরার ফোকাসের ছবি ফুটে উঠল। ড্রয়িং রুমের প্রায় গোটাটাই কভার হচ্ছে দু’কোনার ক্যামেরা দুটোতে। আর বেডরুমটা পুরোপুরি কভার করতে না পারলেও ঘরটার দুটো কোনা বাদে প্রায় সবটাই দেখা যাচ্ছে। দুটো ঘরের ভেতরেই সিএফএল টিউব লাইট জ্বলছে। তার মানে ঘরের ভেতর অন্ধকার হয়ে গেছে। অনুপমাকে দেখা যাচ্ছে বেডরুমের ভেতরে ড্রেসিং টেবিলের পাশে একটা আলমারি খুলে কাপড় চোপর গুছিয়ে রাখছে।
 

হঠাৎ অনুপমার কথাও শোনা গেল। সে গুড়িয়াকে উদ্দেশ্য করে বলছে, “গুড়িয়া, তুই মুন্নাকে খাইয়ে দে। ছ’টা বাজতে চলল। আমার ঘরে ছ’টার সময় এক মেহেমান আসবে আবার”।

সাথে সাথে বাচ্চা কোলে নিয়ে গুড়িয়াকে ঘরে ঢুকতে দেখা গেল। সে অনুপমার কাছে এসে বলল, “দিদি তোমার মেহেমান এলে আমাকে তো মুন্নাকে নিয়ে আমার ঘরেই থাকতে হবে, তাই না”?

অনুপমা আলমারি বন্ধ করতে করতে বলল, “হ্যা তোর ঘরেই থাকবি তুই। রাতে আর বাইরে কোথায় যাবি। আর দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে রাখবি। আমার মেহেমান চলে গেলে আমি তোকে ডাকব। তার আগে দরজা খুলে বেরোবি না” বলে বেডরুমের লাইট নিভিয়ে দিয়ে ড্রয়িং রুমে গিয়ে ঢুকল।
 

অন্ধকার বেডরুমের ছবিও বেশ ভালই দেখা যাচ্ছিল দেখে শঙ্কর বলল, “সত্যি ক্যামেরা গুলো দারুণ রে! অন্ধকারেও যেমন ছবি আসছে তাতেও কাজ চলে যাবে মনে হচ্ছে, তাই না রে”?

অভি বলল, “গুরু, তুই ভাবছিস কেন? এই ডবকা মাগিটাকে কেউ অন্ধকারে চুদবে বলে এতো টাকা খরচ করে আসবে বলে ভাবছিস তুই? সব ব্যাটাই ঝকঝকে আলোর নিচেই এ মাগিকে চুদবে দেখিস। আর ক্যামেরা গুলো তো এখান থেকে মাত্র বারো মিটার দুরে বসানো আছে। পিকচার তো ক্লিয়ার আসবেই। অডিওও চমৎকার সুন্দর আসছে। আর খামতি কিছু থাকলে ওটা এডিটিংএর সময় ঠিক করে দেব”।

শঙ্কর বলল, “ঠিক আছে শোন। আজ তো খানিক বাদেই এক কাস্টমার আসছে ওই ঘরে। সেটা রেকর্ড করিস। পাঁচ ছ’টা সেশন রেকর্ড করলেই আমাদের কাজ চলে যাবে। আর আমার মনে হয় রাত জেগে করতে পারলে দু’দিনেই সেটা হয়ে যাবে। তবে রাত জেগে করবার দরকার নেই তোর। তুই সাতটা থেকে রাত নটা অব্দি এখানে থেকে যতটা পারিস রেকর্ড করিস। আমি পরে খবর নেব। কিন্তু একটা আউটডোর সেশন রেকর্ড করতে পারলে বেশ হত। স্যারও সেটাই চাইছে। অনুপমা বাইরে হোটেলেও যায়, আবার কাস্টমারদের পছন্দ করা অন্য কোন জায়গাতেও যায়। কিন্তু আগে থেকে লোকেশানটা জানতে না পারলে তো সেটা করা সম্ভব নয়”।
 

অভি বলল, “গুরু, আমি একটা সাজেশান দিতে পারি তোকে। কিন্তু কথা দিতে হবে। তুই রেগে গেলে চলবে না”।

শঙ্কর একটা চেয়ারে বসে বলল, “ঠিক আছে রাগব না। বল শুনি”।

অভি বলল, “তুই আমার জন্য ওই মাগিটাকে বুক করে দে। হোটেলে নিয়ে মাগিটাকে চুদতে চুদতে সব রেকর্ডিং করে নেব”।

শঙ্কর অবাক হয়ে বলল, “কি বলছিস তুই? নিজের শুটিং করা ব্লু ফিল্ম অন্যদের দেখাতে তোর লজ্জা করবে না”?

অভি বলল, “কে আর দেখবে? এ সিডি তো আর বাজারে বিক্রী হবে না। অপারেশনের ব্লু প্রিন্ট যেভাবে বানানো হয়েছে তাতে এটা শুধু ওই মাগিটার বরকেই দেখানো হবে। অবশ্য স্যার যে টিমটাকে ফাইনাল স্টেজে কাজে লাগাবেন, সে টিমের মেম্বাররাও দেখতে পারে। তবে ওরা আর কতটুকু দেখবে? ছ’ সাতটা সিডি পুরোপুরি ভাবে দেখতে গেলে তো ওদের ছ’ সাত ঘন্টা সেখানে বসে থাকতে হবে। কিন্তু ওরা তো আর অতক্ষণ সেখানে থেকে নিজেদের বিপদ বাড়াবে না। আর তুই ও’সব নিয়ে ভাবিস না। আমি সেখানে এমনভাবে ক্যামেরা গুলো বসাবো যে ওই মাগিটার সব কিছু দেখা গেলেও আমার মুখ তাতে দেখা যাবে না। আর এসে গেলেও এডিটিং করবার সময় সেসব উড়িয়ে দেব। তুই একবার আমার বুকিং করে দে গুরু। এমন একটা মাগিকে বাগে পেয়ে একবার না চুদলে, সারা জীবনেও এ আপসোস মিটবেনা আমার। প্লীজ গুরু”।
 

শঙ্কর হেসে বলল, “ঠিক আছে বুকিং না হয় করে দেব। কিন্তু এ ক্যামেরা গুলোকেই তো ব্যবহার করতে হবে। তাই এ জায়গার রেকর্ডিং শেষ হবার পরেই সেটা করা সম্ভব। আর ক্যামেরা গুলো খুলে আনতে আমাকেই তো আরেকবার যেতে হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত তুই সামলে রাখিস নিজেকে”।

অভি শঙ্করের হাত দুটো ধরে লাফাতে লাফাতে বলল, “মাইরী গুরু, তোর জবাব নেই। থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ। তুই এদিকের কাজের জন্যে একদম টেনশন নিস না। আমি সব কিছু রেডি করে নিয়েছি। এখন জমিয়ে বসে বসে মাল খাব আর মাগিটাকে তার অন্য খদ্দেররা কেমন করে চোদে সেটা দেখব”।

শঙ্কর চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “বেশ, তাহলে ওই কথা রইল। মাঝে মাঝে আমাকে ফোন করে আপডেট দিবি। আমি যাচ্ছি এখন। আর সাবধানে থাকিস। আমি ছাড়া আর অন্য কেউ যেন এ’সব ঘূণাক্ষরেও জানতে না পারে খেয়াল রাখিস”।
 

***************
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply
#59
(Update No. 79)

সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা নাগাদ পরিতোষের গাড়িটা একটা রেস্টুরেন্টের সামনে এসে দাঁড়াল। এ রেস্টুরেন্টের বয় বেয়ারা সিকিউরিটি গার্ড থেকে রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার আর মালিক পর্যন্ত সবাই পরিতোষকে খুব ভাল ভাবে চেনে। প্রতি সপ্তাহের সোম থেকে শনি, পরিতোষ এখানে রোজ দুপুরে লাঞ্চ করতে আসে। আর সপ্তাহে তিন চার দিন সে এ রেস্টুরেন্টে ডিনারও করে। একা মানুষ সে। সকাল ন’টা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে হয় তাকে। তাই দুপুরের রান্না করবার মত সময় হাতে পায় না সে। আর সারাদিন থানায় এবং শহরের বিভিন্ন জায়গায় অন ডিউটি ঘুরে ঘুরে রাতে ফাঁকা ঘরে ফিরে এসে বেশীর ভাগ দিনই তার আর হাত পুড়িয়ে রান্না বান্না করতে ইচ্ছে করে না। রেস্টুরেন্টটা তার বাড়ি আর থানা দু’জায়গা থেকেই প্রায় সমান দুরত্বে। তাই সে এ রেস্টুরেন্টের নিয়মিত কাস্টমার। আর এভাবে রেগুলার যাতায়াতের ফলেই রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার আর মালিকের সাথে তার প্রায় বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। আর এখানে সে সবদিক দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারে। কোন কোন সময় নিজের অবস্থান গোপন করতে সে এ রেস্টুরেন্টে নিজের গাড়িটাকে রেখে রেস্টুরেন্টের পেছন দিকের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যায়।

রেস্টুরেন্টের পার্কিং-এ গাড়িটাকে রেখে সে একজন সিকিউরিটি গার্ডের কাছে গিয়ে তাকে গাড়ির চাবিটা দিয়ে বলল, “আমি ডিনার সেরে রাত ন’টা নাগাদ বেরোবো এখান থেকে। গাড়িটাকে এখানে না রেখে সেফ জায়গায় রেখে দিও ভাই। আর চাবিটাকে তোমাদের ম্যানেজারের কাছে রেখে দিও”।

পরিতোষ সিভিল ড্রেসে থাকলেও সিকিউরিটি গার্ডটা চাবিটা হাতে নিয়ে তাকে একটা স্যালিউট ঠুকে বলল, “ঠিক আছে স্যার”।

পরিতোষ রেস্টুরেন্টের ভেতর ঢুকে একটা ফাঁকা টেবিলে বসতেই একজন ওয়েটার প্রায় ছুটে এল তার কাছে। ওয়েটারটাকে এক কাপ কফির অর্ডার দিয়ে সে ম্যানেজারের দিকে তাকিয়ে হাতের ঈশারা করতেই চল্লিশ বছর বয়সী ম্যানেজার তার পাশের মেয়েটিকে কিছু একটা বলেই পরিতোষের কাছে চলে এল। পরিতোষ তাকে চেয়ারে বসতে বলে বলল, “দীপুদা, আমার গাড়িটা তোমাদের ভেতরের গ্যারেজে রাখতে বলেছি। চাবিটা তোমার কাউন্টারে রেখ। কফি খেয়ে আমি একটু বেরোবো ব্যাকডোর দিয়ে। রাত ন’টা নাগাদ ফিরব। তারপর ডিনার সেরে গাড়ি নিয়ে যাব। তোমাদের কোন অসুবিধে হবে না তো”?

ম্যানেজার বলল, “না, অসুবিধে কিসের? তোমাকে কি আমরা চিনি না? নিশ্চয়ই কোন সিক্রেট মিশনে যাচ্ছ। তুমি নিশ্চিন্ত থাকতে পার”।

ওয়েটারটা কফি নিয়ে আসতেই পরিতোষ ম্যানেজারকে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ দীপুদা। তবে, এ সময়ের মধ্যে কেউ যদি আমার খোঁজ করতে আসে, তাহলে বোল যে আমি এখানে আসিনি”।
 

ম্যানেজার পরিতোষকে আশ্বস্ত করে বলল, “ঠিক আছে। আর কিছু”?

পরিতোষ বলল, “আপাততঃ এটুকুই দীপু-দা। ধন্যবাদ”।
 

কফি শেষ করেই পরিতোষ চেয়ার ছেড়ে উঠে ভেতরের দিকে যেতে যেতে ম্যানেজারকে ঈশারা করল। রেস্টুরেন্টের পেছনের দিক দিয়ে বেরিয়ে আসতেই একটা ওয়েটার দৌড়ে এসে কম্পাউণ্ডের পেছন দিকের গেটের তালা খুলে দিল। পরিতোষ পেছনের রাস্তায় এসে এদিক ওদিক একবার ভাল করে দেখে নিয়ে একদিকে হেঁটে চলল। প্রায় দশ মিনিট এ গলি ও গলি দিয়ে হেঁটে এসে সে একটা ভাঙাচোরা লোহার গেটে ঠকঠক করল। একটু বাদেই একটা কম বয়সী ছেলে এসে গেটটা খুলে দিতেই পরিতোষ ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে জিজ্ঞেস করল, “প্রবাল এসে গেছে”?

ছেলেটা আবার গেটে তালা লাগাতে লাগাতে জবাব দিল, “হ্যা দাদা, একটু আগেই এসেছে। ভেতরের ঘরে আছে”।

পরিতোষ একটা দরজা দিয়ে ঘরের ভেতর ঢুকে পড়ল। প্রথম ঘরটা পেরিয়ে দ্বিতীয় রুমে ঢুকতেই প্রবাল লাহিড়ী চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “গুড ইভিনিং স্যার”।

পরিতোষও তাকে ‘গুড ইভিনিং’ বলে একটা চেয়ারে বসে প্রবালকে জিজ্ঞেস করল, “দিবাকরদের ওখানে কাউকে নিজের আসল নাম ঠিকানা বলিস নি তো”?

প্রবাল বলল, “না না স্যার। ওরা জানে যে ওরা প্রভুদাস লাহিড়ি বলে একজনের কাছ থেকে গাড়িটা কিনেছিল। আপনার ব্লু প্রিন্ট অক্ষরে অক্ষরে ফলো করা হয়েছে। গাড়িটাকে সীজ করতেও কোন অসুবিধে হয়নি। দিবাকর আর বিন্দিয়া কেউই স্বীকার করেনি যে গাড়িটা তারা আমার কাছ থেকে কিনেছিল। আমার ভুয়ো নামটাও তারা মুখে উচ্চারণ করেনি। নকল পুলিশের টিম দিবাকর, বিন্দিয়া আর ওই মহল্লার আরও একজনের সই নিয়ে তাদেরকে সাক্ষী বানিয়ে বেওয়ারিশ চোরাই গাড়ি হিসেবে সেটাকে সীজ করে নিয়েছে। তাই ও গাড়ি নিয়ে দিবাকর আর কিছুই করতে পারবে না। শুধু সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা জলে ভেসে গেছে বলে দুঃখ করা ছাড়া আর কিছুই আর তাদের করার নেই এখন”।

পরিতোষ পকেট থেকে সিগারেট বের করে একটা সিগারেট ধরিয়ে বলল, “হু, পরের আপডেটগুলোও আমি পেয়েছি। ভাবনার কিছু নেই বলেই মনে হচ্ছে। তা কাকে কততে কন্ট্রাক্ট করেছিলিস”?

প্রবাল বলল, “স্যার, আপনি তো বলেছিলেন, সব খরচ খরচা মিটিয়ে দিয়ে নেট দু’লাখ আসল জায়গায় দিতে হবে। দিবাকরের কাছ থেকে উসুল করেছিলাম সাড়ে পাঁচ লাখ। এর ভেতর থেকে মঙ্গুর দালালীর কমিশন পঞ্চান্ন হাজার সেখানেই দিয়ে এসেছিলাম ওর হাতে। বাকি সবটাই এখানে জমা দিয়ে গিয়েছি। এখন যার গাড়িটা এ কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল তাকে পঞ্চাশ দিতে হবে। যে পাঁচ জন রেইড করতে গিয়েছিল তাদের প্রত্যেককে পঁচিশ পঁচিশ করে কন্ট্রাক্ট করেছিলাম। তাই ওদের পাঁচজনকে দিতে হবে এক লাখ পঁচিশ”।

পরিতোষ বলল, “তার মানে পাঁচ লাখ পঞ্চাশের মধ্যে পঞ্চান্ন হাজার তুই দালালটাকে দিয়েছিস। আর এখানে ওই ব্যাগে তুই চার লাখ পচানব্বই হাজার রেখে গেছিস, এই তো? বিট্টু পেছনের ঘরে বসে আছে। ওর কাছ থেকে ব্যাগটা নিয়ে আয়, যা”।
 

প্রবাল সাথে সাথে উঠে চলে গেল। আর একটু বাদেই সেই পলিথিনের ব্যাগটা হাতে নিয়ে আবার ঘরে এসে দু’জনের মাঝখানের ছোট টেবিলটার ওপর ব্যাগটা রাখতেই পরিতোষ বলল, “বের কর টাকাগুলো”।

প্রবাল বিনা বাক্যব্যয়ে ব্যাগের ভেতর থেকে টাকাগুলো বের করে টেবিলে রাখতেই পরিতোষ বলল, “এখান থেকে গাড়ির ভাড়া পঞ্চাশ হাজার আর পাঁচ জনের জন্য এক লাখ পঁচিশ হাজার আলাদা করে রাখ। তাহলে এখানে পড়ে থাকবে তিন লাখ কুড়ি। তুই কত নিবি”?
 

প্রবাল অবাক গলায় বলল, “এ কী বলছেন স্যার। আপনার নিজের জন্যে একটা কাজ করে দিয়েছি। তার বিনিময়ে আপনার কাছ থেকে আমি পয়সা নেব? এমনটা আপনি ভাবতে পারলেন? আজ যে কিছু করে কামিয়ে খেয়ে পড়ে বেঁচে আছি, এ তো আপনারই দয়ায়। নইলে এতদিনে হয়ত জেলের কয়েদী হয়ে থাকতে হত, নয়ত আপনার মতই কোন এক পুলিশ অফিসারের গুলি খেয়ে মরতে হত আমাকে। আপনি সাহায্য করেছিলেন বলেই না আজ বিয়ে থা করে সংসারী হয়ে ভদ্রভাবে জীবন যাপন করতে পারছি। আর আপনার আদেশে মাঝে মধ্যেই তো এটা সেটা করে থাকি। কিন্তু তার জন্যেও তো আপনি ভরপুর পারিশ্রমিক দিয়ে থাকেন আমাকে। কিন্তু আমরা সবাই জানি যে আপনি নিজের প্রমোশন বা অন্য কোনও স্বার্থের খাতিরে এ’সব কাজ করেন না স্যার। আগে যতবার আপনার কাজ করেছি, সে কাজগুলো করে আপনি অন্য কাউকে সাহায্য করতেন জেনেই আমি আমার পারিশ্রমিক নিয়েছি। কিন্তু এটা আপনার নিজের লোকের জন্য করেছেন। তাই এ কাজে আমি কোন পারিশ্রমিক নিতে পারব না স্যার। আপনি আমাকে অমন অনুরোধ করবেন না প্লীজ”।
 

পরিতোষ বেশ কিছু সময় চুপ করে প্রবালের দিকে চেয়ে থেকে বলল, “এবারেও আমি ঠিক একই উদ্দেশ্যে এ অপারেশনটা তোদের দিয়ে করালাম রে প্রবাল। তবে তফাৎ শুধু এটুকুই যে, এর আগের অপারেশন গুলো যার বা যাদের জন্যে আমি করেছি তাদের সবাইকেই আমি সরাসরি সাহায্য করেছি। হ্যা, অবশ্যই আমাদের দেশের বস্তা পচা আইনের ধারার বাইরে গিয়ে। এবারেও তাই করেছি। কিন্তু এবারের সাহায্যটা আমি সরাসরি করছি না। অন্যান্যবার ভিক্টিমেরা আমার সংস্পর্শে থাকে। কিন্তু এবারে ভিক্টিমের সাথে আমার কখনও মুখোমুখি দেখা হচ্ছে না। আমার খুব বিশ্বাসভাজন আরেকজনের কথায় এটা করতে হয়েছে। বলতে পারিস আমার এক বিশেষ বন্ধুর অনুরোধেই এটা করেছি। কিন্তু তোদের কাছে তো ব্যাপারটা একই। আর নিজের কাজ ছেড়ে আমার মুখের কথায় তোরা এসব করিস বলে আমি তো তোদের ভালবাসা আর শ্রদ্ধার দোহাই দিয়ে তোদের এক্সপ্লয়েট করতে পারব না। তোদের যাতে কোন রকম ক্ষতি না হয়, সেটা তো আমাকেই দেখতে হবে। আর ভাবছিস কেন। আমি কি আর নিজের পকেট থেকে তোদের পারিশ্রমিক দিয়ে থাকি নাকি? এটাও তো বদমাশগুলোর কাছ থেকেই আদায় করেছিস। আমি তো শুধু মাছের তেলে মাছ ভাঁজছি। নে, এখান থেকে এক লাখ তুই নিয়ে নে। সামনে তোর পয়সার প্রয়োজন পড়বে। তা হ্যারে, প্রণিতা কেমন আছে রে? সময়মত চেকআপ করাচ্ছিস তো? আর ডাক্তার কী বলছে? কবে নাগাদ ডেট এক্সপেক্ট করছে”?
 

প্রবাল বলল, “হ্যা স্যার, ও ভালই আছে। আর ডাক্তারের কথা মত রেগুলার চেকআপ আর ওষুধ চলছে। ডাক্তার তো বলছে নভেম্বরের ন’ দশ তারিখ নাগাদ”।

পরিতোষ বলল, “ওর প্রতি সব সময় নজর রাখবি। যদি কখনও শুনি যে ওর কোন ব্যাপারে তুই কোন অবহেলা করেছিস, তাহলে জেনে রাখিস, আমার হাতে অবধারিত শাস্তি পাবি। আচ্ছা শোন, এখানে তাহলে আর কত রইল? দু’লাখ কুড়ি হাজার, তাই না? এ টাকাটা এ পলিথিনের ব্যাগটায় ভরে আমাকে দিয়ে দে। আর বাকি গুলো তুই নিয়ে যা। যাকে যা দেবার দিয়ে ওখান থেকে এক লাখ তুই রেখে দিস। আর একটা ছোট্ট কাজ করিস। দিবাকরের গাড়িটা সীজ করবার সময় যে সীজার লিস্টটা বানানো হয়েছিল, সে কাগজটা ওদের কাছ থেকে নিয়ে আমার হাতে দিয়ে যাবি একসময়। ওটার দরকার পড়তে পারে আবার”।

প্রবাল পলিথিনের ব্যাগে দু’লাখ কুড়ি হাজার টাকা ঢোকাতে ঢোকাতে বলল, “ঠিক আছে স্যার। আমি সেটা কাল বিকেলের মধ্যেই আপনার হাতে দিয়ে যাব। কিন্তু স্যার, আরও কোন ঝামেলা হতে পারে বলে ভাবছেন নাকি আপনি”?
 

পরিতোষ বলল, “দু’লাখ টাকা দিবাকর আর তার এক পার্টনার মিলে ভিক্টিমের কাছ থেকে লুটে নিয়েছিল। বেআইনি ভাবে টাকাটা আদায় করলাম। এবার আইনি ভাবে দিবাকরকে শাস্তি দেব। বছর খানেকের জন্য জেলের ভাত খেয়ে নিজেকে সংশোধন করবার সুযোগটা তো দেওয়া দরকার। তাই ওর নাম ঠিকানাটা আমার রেকর্ডে রাখা উচিৎ। তবে আমরা ওকে এখনই এরেস্ট করব না। ক’টা দিনের মধ্যে আরেকটা অপারেশন সাকসেসফুলি শেষ করতে পারলে দুই আসামীকে একসাথে এরেস্ট করব। আচ্ছা তুই এবার যা। পরে তোর সাথে যোগাযোগ করব আমি”।
 

প্রবাল চলে যাবার পর পরিতোষ কম বয়সী ছেলেটাকে ডেকে জিজ্ঞেস করল, “মাকে দেখতে গিয়েছিলিস আজ বিট্টু? কেমন আছেন তিনি”?

বিট্টু বলল, “হ্যা দাদা, দু’বেলাই গিয়েছিলাম। ডাক্তারের সাথেও কথা বলেছি। ডাক্তার বলল কাল হসপিটাল থেকে রিলিজ করে দেবে। কিন্তু হসপিটালের বিল হয়েছে প্রায় পনের হাজার টাকা। বিলটা পেমেন্ট করতে না পারলে মাকে রিলিজ করিয়ে আনব কি করে, সেটাই তো বুঝতে পাচ্ছি না”।
 

পরিতোষ পলিথিনের ব্যাগটা খুলে কুড়ি হাজার টাকার প্যাকেটটা বের করে ছেলেটার হাতে দিয়ে বলল, “এটা নে। এখানে কুড়ি হাজার আছে। হসপিটালের বিল দিয়ে বাকিটা তোর কাছে রেখে দিস। আর যদি আর কিছুর প্রয়োজন পড়ে, তাহলে আমাকে ফোন করিস”।

বিট্টু টাকাটা হাতে নিয়ে বলল, “আপনার কাছ থেকে আর কত নেব দাদা? কিন্তু হাত পেতে না নিয়ে তো আর কোন উপায়ও নেই। একটা কাজ টাজ না পেলে এভাবে আর কতদিন চলতে পারব জানিনা”।

পরিতোষ বলল, “শোন বিট্টু, তোকে তো আমি আগেও বলেছি। সরকারি চাকরি চাইলেই কি আর পাওয়া যায়রে ভাই? আমি তো খোঁজ খবর রাখছি। তুইও তো চেষ্টা করে যাচ্ছিস। তবু বলছি, আপাততঃ একটা প্রাইভেট ফার্মে ঢুকে পড়। সরকারী চাকরি পেলে না হয় ছেড়ে দিস তখন। আমার জানাশোনা কোন একটা জায়গায় আমি তোকে ঠিক ঢুকিয়ে দিতে পারব। মাসের শেষে দশ পনের হাজার মাইনে তো অন্ততঃ পাবি। সেটাই কি একেবারে ফ্যালনা কিছু? একেবারে কিছু না করে বসে থাকার চাইতে তো ভাল। আর বেকার বসে থাকতে থাকতে ধীরে ধীরে ফ্রাস্টেশনে ভুগতে শুরু করবি। মাথায় উল্টোপাল্টা চিন্তা আসতে শুরু করবে। তার চেয়ে কিছু একটা করতে থাকা অনেক ভাল”।
 

বিট্টু বলল, “ঠিক আছে দাদা। আর ক’টা দিন অপেক্ষা করে দেখি। আর মাস দেড়েকের মধ্যে দুটো পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোবে। তাতে যদি আমার নাম না থাকে, তাহলে তোমার কথা মতই কিছু একটা করতে শুরু করব”।
 

পরিতোষ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে পলিথিনের প্যাকেটটা পকেটে ঢুকিয়ে বলল, “চল। আমার সাথে আজ ডিনার করবি”।

বিট্টু বলল, “কোথায়? তোমার বাড়ি? না দাদা, এখন আর অতদুর যেতে ইচ্ছে করছে না গো। ঘরেই কিছু একটা বানিয়ে নেব’খন”।

পরিতোষ বলল, “আমার বাড়িতে কে খেতে দেবে তোকে? আমি রেস্টুরেন্টে খাব আজ। তুইও চল। সে জায়গাটা তো তোর বাড়ি থেকে আর বেশী দুর নয়। চল চল, আর কথা বলে সময় নষ্ট করিস না”।
 

***************

রেস্টুরেন্টে ডিনার সেরে বিট্টুকে বিদেয় দিয়ে পরিতোষ নিজের গাড়ি নিয়ে বাড়ি ফিরে এল। ড্রেস পাল্টে হাত মুখ ধুয়েই সে সীমন্তিনীকে ফোন করল, “কি মুন ডার্লিং, ভাল আছ তো”?

ও’পাশ থেকে সীমন্তিনী জবাব দিল, “হ্যা পরিতোষ, ভালই আছি। তুমি কেমন আছ”?
 

পরিতোষ বলল, “আমি তো অ্যাজ ইউজুয়াল আছি। কিন্তু আই এম সরি টু সে ডার্লিং। তোমাকে একটা খুব রিস্কি অ্যাসাইনমেন্ট অ্যালট করা হচ্ছে। এটা ভেতরের খবর। অবশ্য কফিডেনশিয়াল চিঠিটা আজ লাস্ট আওয়ার অব্দি পাঠানো হয়নি। বাট আই নো। ইউ উইল ডেফিনিটলি কমপ্লিট দা অ্যাসাইনমেন্ট কোয়াইট এফিসিয়েন্টলি। কিন্তু তবু বলছি, সব সময় এলার্ট থেক”।

সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “তা অ্যাসাইনমেন্টটা কী, সেটা বলবে তো”।

পরিতোষ জবাব দিল, “সেটা আমি না বললেও তুমি কাল দুপুরের আগেই জেনে যাবে। ডিপার্টমেন্টাল অর্ডার ডিপার্টমেন্ট থেকে জানাই ভাল। আমি শুধু একটু প্রয়োজনীয় অ্যাডভাইস দিচ্ছি তোমাকে। ডুয়ার্সের একেবারে উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে তোমাকে একটা ইনভেস্টিগেটিভ অ্যাসাইনমেন্টে পাঠানো হচ্ছে। কোন অপারেশন করবার অর্ডার না থাকলেও তুমি জানই, যে কোন মোমেন্টে তোমার ওপর হামলা হতে পারে। অবশ্য ফুল ফোর্স নিয়ে যাবার সুযোগ তুমি পাচ্ছ। কাজটা তুমি খুব ভাল ভাবেই করতে পারবে, তাতে আমার কোনও সন্দেহই নেই। হায়দ্রাবাদ ট্রেনিং-এ তার নমুনা তুমি দেখিয়েছিলে। আই রিমেম্বার দ্যাট। কিন্তু তা সত্বেও তোমাকে সতর্ক করে দেওয়াটা উচিৎ বলে মনে হল আমার”।

সীমন্তিনী বলল, “পরিতোষ আমি তো গত চার মাস ধরে নর্থ ডুয়ার্সেই তো আছি। এতদিনে এ জায়গা সম্বন্ধে মোটামুটি জেনেই গেছি। তুমি ও নিয়ে ভেব না”।

পরিতোষ বলল, “সে তো জানি মুন ডার্লিং। কিন্তু তুমি এখন আছ ভূটান বর্ডারে। কিন্তু এ নুতন অর্ডারে তোমাকে আরো খানিকটা পশ্চিম দিকে দার্জিলিং ডিস্ট্রিক্টের বর্ডারে যেতে হবে। আসাম আর উত্তরবঙ্গের অনেকগুলো জঙ্গী গোষ্ঠী ও’সব এলাকায় গোপন ঘাঁটি গেঁড়ে কী ধরণের কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে, সে সম্বন্ধে আশা করি তোমার ধারণা আছে। তবে আগে থেকেই আইবির লোকেরা সেখানে আছে। তারা তোমায় রিপোর্টটা বানাতে যথেষ্ট সাহায্য করবে। আপাততঃ তোমাকে একটা অ্যাকশন প্ল্যান ফর্মুলেট করে হেড কোয়ার্টারে পাঠাতে হবে। আর শোন, ওখানে মিস্টার দেবাশীষ বক্সী বলে আইবির এক সিনিয়র অফিসারকে পাবে তুমি। আমার বিশেষ পরিচিত। তার হেল্প নেবে। আমি অলরেডি তার সাথে কথা বলেছি। আর তুমি সেখানে কি উদ্দেশ্যে যাচ্ছ, তাও বলে দিয়েছি। আর উনিও তোমাকে সব রকম ভাবে সাহায্য করবেন বলে কথা দিয়েছেন। তাতে তোমার পরিশ্রম অর্ধেকটা কমে যাবে”।

সীমন্তিনী সব শুনে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ পরিতোষ। এতদুরে থেকেও তুমি যে আমার জন্যে এতটা ভাবছ, তাতে আমার নিজেরই লজ্জা লাগছে”।

পরিতোষের মুখে ম্লান একটা হাঁসি ফুটে উঠল। সে বলল, “ভাবার মত আমার জীবনে আর যে কিছু নেই মুন ডার্লিং” বলেই নিজেকে সামলে নিয়ে সীমন্তিনী কিছু বলে ওঠার আগেই বলল, “আর শোন, একটা সুখবর আছে। আমাদের টার্গেট টুর অপারেশন শেষ হয়েছে। ওই দিবাকর হারামজাদা তোমার দাদাভাইয়ের এক লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছিল। তার কাছ থেকে আমি সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা আদায় করে নিয়েছি। তবে যাদের মাধ্যমে অপারেশনটা করিয়েছি, তাদের পারিশ্রমিক মিটিয়ে দিয়ে তোমার দাদাভাইয়ের জন্য দু’লাখ টাকা আমার ঘরে নিয়ে এসেছি। এবার তুমি বল, টাকাটা কি তোমার দাদাভাইয়ের হাতে দেব, না তোমার কাছে পাঠিয়ে দেব”?

সীমন্তিনী উল্লসিত কন্ঠে বলল, “কী বলছ পরিতোষ তুমি! এরই মধ্যে তোমার অপারেশন শেষ করে ফেললে? দিবাকর কি তাহলে এখন লকআপে আছে”?

পরিতোষ বলল, “না মুন ডার্লিং। তুমি তো জানোই, এটা ধরাবাঁধা আইনি পদ্ধতিতে হয়নি। আর কাজটায় পুলিশের কেউই ছিল না। তবে হ্যা, পুলিশের লক আপেও তাকে যেতে হবেই। সে আটঘাটও বাঁধছি আমি। টার্গেট ওয়ানের গ্রাউণ্ড প্রিপারেশন কমপ্লিট হয়ে গেছে। টার্গেট ওয়ানের অপারেশনটা দুটো ফেজে কমপ্লিট হবে। ফার্স্ট ফেজের কাজও শুরু হয়ে গেছে। সেকেণ্ড ফেজটা কমপ্লিট হবার পর দিবাকর আর রবিশঙ্করকে একসঙ্গে অ্যারেস্ট করা হবে। কলকাতার অন্ততঃ চারটে থানায় জালিয়াতী আর জোচ্চুরির অনেকগুলো মামলায় ওদের দু’জনকে ফাঁসানো হবে, যাতে সব গুলো মিলে অন্ততঃ চার পাঁচ বছরের জন্য শয়তান দুটোকে জেলে পাঠানো যায়। তবে সে’সব নিয়ে তোমাকে টেনশন নিতে হবে না। তুমি শুধু আপাততঃ আমাকে এটুকু বল, আমি ওই টাকাটা কাকে কিভাবে দেব”।

সীমন্তিনী এবার খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “পরিতোষ, ওটা আপাততঃ তুমি তোমার কাছেই রেখে দাও। মানে, তুমি এমন আচমকা খবরটা দিলে যে আমি এ মূহুর্তে ঠিক কী করা উচিৎ, সেটা ভাবতেই পাচ্ছি না। তুমি আমাকে দুটো দিন ভাবতে দাও প্লীজ। আমাকে একটু ঠাণ্ডা মাথায় ব্যাপারটা ভেবে দেখতে দাও। তারপর তোমাকে জানাচ্ছি”।

পরিতোষ বলল, “ওকে, ফাইন ডার্লিং। তবে তুমি তো জানোই ডার্লিং, একজন পুলিশ অফিসারের ঘরে দু’লাখ টাকা আছে, ব্যাপারটা যদি কোনভাবে এসিবিতে গিয়ে পৌঁছয় তবে কী হতে পারে। তবে নিজেকে বাঁচিয়ে এসব করার রেকর্ড আমার আগেও আছে। আমি সামলে নেব। তাহলে আর নতুন কিছু খবর আছে আমাকে জানাবার? তোমার দাদাভাই এ টাকাটা পেলেই তো তার কাজ শুরু করতে পারবেন। এ ব্যাপারে কিছু ভেবেছ কি? আর তোমার দাদাভাইই বা কি ভাবছেন”?
 

সীমন্তিনী বলল, “একটা খবরই আছে শুধু তোমাকে দেবার মত। বিল্ডার বিমল আগরওয়ালার এক বন্ধুর নাকি দক্ষিণ কলকাতায় কোথাও একটা যোগা ট্রেনিং সেন্টার আছে। বিমল আগরওয়ালা দাদাভাইকে বলেছে সে ওই ট্রেনিং সেন্টারে দাদাভাইকে ট্রেনার হিসেবে ঢুকিয়ে দিতে পারবে। মাসে মাসে নাকি কুড়ি থেকে পঁচিশ হাজারের মত স্যালারি পাবে সেখানে। দাদাভাই আমার পরামর্শ চাইছিল। আমি ওকে বলেছি একদিন নিজে গিয়ে ওই সেন্টারটা দেখে আসুক আর তার মালিকের সাথে কথাবার্তা বলে দেখুক। তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। আমি তো ভাবছিলাম, তোমাকে ওই সেন্টারটার ব্যাপারে একটু খোঁজ নিতে বলব। কিন্তু তোমার কাজের বোঝা কি আর কম কিছু? আর আগে থেকেই তুমি আমার কথায় চারটে টার্গেট নিয়ে ডিল করছ। এর ওপর আরেকটা ঝামেলা তোমাকে দিতে কিছুটা সঙ্কোচ হচ্ছিল। তাই দাদাভাইকেই বলেছি সে নিজে গিয়ে সেখানকার পরিস্থিতি যাচাই করে দেখুক”।
 

পরিতোষ হঠাৎ প্রশ্ন করল, “আচ্ছা ডার্লিং, বিমল আগরওয়ালা তোমার দাদাভাইকে কাজ পাইয়ে দেবার ব্যাপারে এতটা অগ্রণী ভূমিকা নিতে চাইছে কেন, সে ব্যাপারে কি কোনও ধারণা আছে তোমার”?

সীমন্তিনী বলল, “সে প্রশ্নটা তো আমার মনেও উঠেছিল পরিতোষ। আর দাদাভাই নিজেও বিমলকে একই প্রশ্ন করেছিল। বিমল তাকে বলেছে যে রবিশঙ্কর অন্য একটা লোককে তার পরিচয় দিয়ে দাদাভাইয়ের সর্বনাশ করেছে বলেই সে নাকি আন্তরিক ভাবে খুব অনুতপ্ত। তাই সে দাদাভাইকে সাহায্য করতে চাইছে। কথাটা আমার কাছে খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হয়নি। লোকটা নিজে কলকাতার বেশ নামকরা একজন বিল্ডার এবং প্রোমোটার। তার উদ্দেশ্য যদি এতটাই সৎ হবে তাহলে সে চাইলে তো অন্যভাবেও দাদাভাইকে সাহায্য করতে পারত। তার আরেকবন্ধুর ওখানে সে দাদাভাইকে নিয়ে যেতে চাইছে কেন”?

______________________________
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply
#60
(Update No. 80)

পরিতোষ বলল, “একটা কারণ হতে পারে যে, তোমার দাদাভাই যে একজন যোগা এক্সপার্ট সেটা বিমল কোনভাবে জেনে গেছে। তাই তার লাইন অফ এক্টিভিটি হিসেবেই সে ওই যোগা ট্রেনিং সেন্টারে তোমার দাদাভাইকে ঢুকিয়ে দিতে চাইছে। তবে আরো একটা কারণ ভেতরে থাকতে পারে। বিমল আগরওয়ালা হয়ত চাইছে না যে তোমার দাদাভাই এভাবে সর্বস্বান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে যাক। আর এটাই যদি সত্যি হয়, তাহলে এর পেছনে দুটো কারণ থাকতে পারে। এক, তার কোন স্বার্থ আছে। আর দুই, সে নিঃস্বার্থ ভাবেই তোমার দাদাভাইকে সাহায্য করতে চাইছে। আচ্ছা ডার্লিং, একটা কথা জিজ্ঞেস করছি। ডোন্ট টেক ইট আদারওয়াইজ। আমি তো তোমার বৌদি মানে তোমার রচু সোনাকে দেখেছি। খুবই সুন্দরী দেখতে সে। আচ্ছা তোমার কি ......”

পরিতোষের কথার মাঝেই সীমন্তিনী বাঁধা দিয়ে জিজ্ঞেস করল, “তুমি আমার রচু সোনাকে দেখেছ”?

পরিতোষ বলল, “না দেখলে কি চলে ডার্লিং? যাদেরকে আমি আণ্ডার ভিজিলেন্স রাখছি, তাদের না দেখলে কি ভালভাবে কাজটা করতে পারব? কিন্তু কথার মাঝে কথা বলে আমাকে অফ ট্র্যাক করে দিও না প্লীজ। আমি তোমার কাছে জানতে চাইছি যে বিমল আগরওয়ালা কি তোমার রচুসোনাকে চাক্ষুষ দেখেছে? অথবা এমনটাও হতে পারে যে চাক্ষুষ না দেখলেও কোন ছবিতে তোমার রচুসোনাকে সে দেখেছে। তুমি কি এ ব্যাপারে কিছু জানো”?

সীমন্তিনী জবাব দিল, “বিমলের সাথে রচুসোনার যে দেখা হয়নি সেটা জানি। কিন্তু আজকাল মোবাইল ইন্টারনেটের যুগে কারুর ছবি দেখে ফেলাটা তো কঠিণ কিছু নয়। তাই জোর দিয়ে কিছু তো বলা যায় না”।

পরিতোষ বলল, “বিমল আগরওয়ালার পেছনেও আমার লোক লেগে আছে। তবে এখন পর্যন্ত যতটুকু জানতে পেরেছি তাতে লোকটার প্রচুর দু’নম্বরী ইনকাম আছে। বছরে কয়েক লক্ষ টাকা কর ফাঁকি দিচ্ছে। কিছু নারীসঙ্গের খবরও পেয়েছি। কিন্তু লোক ঠকিয়ে ব্যবসা করবার খবর এখনও পাইনি। তবে তুমি শুধু দাদাভাই আর তোমার রচু সোনার কাছ থেকেই যতটুকু যা জানতে পার সে চেষ্টা কোর। আর ইনফর্মেশন গুলো আমাকে দিও। আজ তাহলে ছাড়ছি ডার্লিং”।

সীমন্তিনী প্রায় সাথে সাথে বলে উঠল, “আরে শোন শোন। আমি যে কথাটা আগে বলেছিলাম সে ব্যাপারে তো কিছু বললে না”?

পরিতোষ একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “কোন ব্যাপারে”?

সীমন্তিনী মোলায়েম গলায় বলল, “ও, সেটাও ভুলে গেছ? বেশ, আমি তো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কথা বলা বা শোনা কোনটাই পছন্দ করিনা। তাই .......”

পরিতোষ একটু হেসে বলল, “তোমার সে গুণের কথা আমার চাইতে আর কে বেশী জানে বল? আমার প্রথম আবেদনটাই তুমি এককথায় যেভাবে স্ট্রেট ড্রাইভ ওভার বাউণ্ডারী মেরে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছিলে, সেটা তো আমি সারা জীবনেও ভুলতে পারব না ডার্লিং”।

সীমন্তিনী একটু ধমকের সুরে বলল, “বাজে কথা রাখ পরি। সত্যি করে বল তো, পছন্দসই কাউকে তুমি খুঁজে পেয়েছ, কি না”?

পরিতোষ হেসে বলল, “সেটাও যথা সময়ে জানতে পারবেন দেবী। গুড নাইট” বলে ফোন কেটে দিল।
 

***************

বিছানায় হেলান দিয়ে বসে পরিতোষ সীমন্তিনীর বলা কথাটা নিয়েই ভাবতে লাগল। পছন্দের মেয়ে! তার জীবনে তার পছন্দসই মেয়ে তো মাত্র সে দু’জনকেই দেখেছে। প্রায় ন’বছর আগের কথা। নবনীতাকে নিয়ে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখেছিল সে। কিন্তু নবনীতাকে বিয়ে করে নিজের স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে যেদিন সে নিয়ে আসতে পারবে ভেবে খুশী হয়েছিল, সে দিনই তার সারাটা পৃথিবী যেন ওলট পালট হয়ে গিয়েছিল। মরুভূমির মরিচিকার মতো নবনীতা তার জীবন থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল। তার জীবনের একমাত্র ভালবাসা আর তার সব স্বপ্ন যেন এক ঝটকায় ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল। দুটো বছর সে ওই মরীচিকা নিয়ে মাতোয়ারা হয়ে রয়েছিল। কিন্তু সে মরীচিকা মিলিয়ে যাবার বছর দুয়েক পরে তার যেন মোহভঙ্গ হয়েছিল। সে বুঝতে পেরেছিল নবনীতাকে সে আর কোনদিন খুঁজে পাবে না। কিন্তু নবনীতার স্মৃতিগুলো যেন তাকে অবিরত তাড়া করে বেড়াত। তার জীবনের একমাত্র প্রেম নবনীতা তার জীবন থেকে হারিয়ে যাবার বছর চারেক বাদে সে সীমন্তিনীর দেখা পেয়েছিল। তাকে দেখে পরিতোষের ভাল লেগেছিল। কিন্তু কথায় আছে না? ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখেও ভয় পায়। তাই সীমন্তিনীকে নিয়ে মনে মনে কোন স্বপ্ন দেখবার আগেই সে তার সাথে কথা বলে দেখে নিতে চাইছিল। নতুন করে আর সে কোন মরীচিকার পেছনে ছুটতে রাজি ছিল না। সেটাই সে করেছিল। কিন্তু সীমন্তিনী তাকে খুবই ভদ্রোচিত ভাবেই প্রথম দিনেই নিজের জীবনের কিছু কথা খুলে বলে তাকে বুঝিয়ে দিয়েছিল যে তার হাতে শাখা নোয়া না থাকলেও, তার সিঁথির সিঁদুর কারুর চোখে না পড়লেও সে নিজেকে তার ছোটবেলা থেকেই বিবাহিতা বলে মনে করে। রোজ রাতে সে তার স্বামীর সাথে মানসিক ভাবে মিলিত হয়। তাই মনের ভেতরে একজন স্বামীকে নিয়ে সে পরিতোষকে আরেকটা স্বামী হিসেবে কখনোই মেনে নিতে পারবে না। বুদ্ধিমতী সীমন্তিনী ওই মূহুর্তেই বুঝে গিয়েছিল যে শুধু মুখের সামান্য ‘না’ শুনেই পরিতোষ শান্ত হবে না। তাই যে’কথাগুলো ততদিন পর্যন্ত সীমন্তিনীর অন্তরাত্মা ছাড়া আর কেউ জানতো না, সেই সমস্ত কথাগুলো অকপটে সেদিন সে পরিতোষকে খুলে বলেছিল। সীমন্তিনীর সব কথা শুনে সেদিন পরিতোষ আশা হত হলেও সীমন্তিনীর ভালবাসাকে সে শ্রদ্ধা না জানিয়ে পারেনি। সেদিন থেকেই চাকরির সুবাদে পরিতোষ সীমন্তিনীর থেকে চার বছরের সিনিয়র হওয়া সত্বেও তারা একে অপরের বন্ধু হয়ে উঠেছিল। তাদের ভেতর এখন দেখা সাক্ষাৎ না হলেও পরিতোষ সবসময় সীমন্তিনীর সমস্ত খবরাখবর রাখে।
 

তিনকূলে পরিতোষের নিজের বলতে কেউ নেই। বাবা-মার একমাত্র সন্তান সে। দু’ বছর বয়সেই সে নিজের মাকে হারিয়েছিল। বাবা পুলিশে চাকরি করতেন। অসাধারণ সৎ কনস্টেবল ছিলেন। দ্বিতীয় বিয়ে না করে একা হাতে সন্তানকে প্রতিপালিত করে বড় করে তুলেছিলেন তিনি। তার বাবার সাধ ছিল ছেলেকে বড় পুলিশ অফিসার বানাবেন। সৎ এবং নির্ভিক এক পুলিশ অফিসার, যে কখনও অন্যায়ের সাথে কোন রকম আপোষ করবে না। জীবনের একমাত্র আপনজনের ইচ্ছেকে সম্মান জানিয়ে পরিতোষ ২০০৫ ব্যাচের আইপিএস হয়েছিল। ছেলের গায়ে পুলিশ অফিসারের উর্দি দেখে তার বাবার সেদিন খুশীর সীমা পরিসীমা ছিল না। চাকরি পাবার একমাসের মধ্যেই পরিতোষকে ট্রেনিং-এ যেতে হয়েছিল। কিন্তু মাস দু’য়েক যেতে না যেতেই ফোনে বাবার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে পরিতোষ ভেঙে পড়েছিল। বাবার মৃত্যু সংবাদ পেয়েও তার দাহ সৎকার করবার জন্যে সে কলকাতা আসতে পারেনি। কিন্তু অনেক কষ্টে অনেক কাকুতি মিনতি করে সে ট্রেনিং থেকে সাত দিনের ছুটি নিয়ে বাড়ি এসে বাবার অন্ত্যেস্টিক্রিয়া সম্পন্ন করেছিল। তখন তার পাশে ছিল শুধু নবনীতা। যাকে সে চাকরি পাবার বছর দুয়েক আগে থেকে ভালবাসতে শুরু করেছিল।
 

নবনীতা তার চেয়ে বছর পাঁচেকের ছোট ছিল। নবনীতার বাবা ছিল একটা চটকলের কর্মী। ওদের পরিবারে ওর বাবা, মা আর বখাটে বড়ভাইকে নিয়ে মোট চারজনের সংসার ছিল। নবনীতার বাবা যা মাস মাইনে পেত তাতে তাদের ছোট সংসারটা মোটামুটিভাবে চলে যাবার কথা ছিল। কিন্তু রোজ শুঁড়িখানায় গিয়ে মদ খেতে খেতে একটা সময় মদই তাকে এমনভাবে গ্রাস করেছিল যে, মাইনের অর্ধেকটা টাকাই সে মদের পেছনে উড়িয়ে দিত। ছেলেটা তো অনেক আগেই পড়াশুনোর পাট চুকিয়ে দিয়ে বদসঙ্গে পড়ে বখাটে হয়ে গিয়েছিল। নবনীতা যখন এগার ক্লাস পাশ করেছিল তখন তাকেও কলেজ থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হয়েছিল। ঠিক অমন সময়েই নবনীতার সাথে পরিতোষের পরিচয় হয়েছিল। তখন পরিতোষ বেকার। গ্রাজুয়েট হয়ে সে আইপিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। শান্ত স্বভাবের মিষ্টি দেখতে নবনীতাকে প্রথম পরিচয়ের দিনটি থেকেই পরিতোষের ভাল লেগে গিয়েছিল। পরের দু’মাসের মধ্যেই নবনীতাও পরিতোষকে ভাল বেসেছিল। আইপিএস হবার পর ট্রেনিংএ যাবার আগে পরিতোষ নবনীতাকে বাড়ি এনে তার বাবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তাদের দু’জনের ভালবাসার কথা খুলে বলেছিল। নবনীতা নিম্নবিত্ত কায়স্থ ঘরের মেয়ে হলেও পরিতোষের ', বাবা বিনা দ্বিধায় নবনীতাকে দেখে পছন্দ করেছিলেন। পরিতোষকে স্পষ্ট করে বলেও দিয়েছিলেন তিনি, যে পরিতোষের ট্রেনিং শেষ হলেই তিনি নবনীতাকে ঘরের বৌ করে নিজের সংসারে এনে তুলবেন। পরিতোষের মা চলে যাবার পর থেকেই তাদের ঘরটা যেন কেমন ছন্নছাড়া হয়ে উঠেছিল। বাবা ছেলের সংসারটা শ্রীহীন হয়ে উঠেছিল দিনে দিনে। নবনীতাকে ঘরের লক্ষী করে এনে তার শ্রীহীন সংসারের চেহারা পাল্টাতে চেয়েছিলেন পরিতোষের বাবা। কিন্তু তার মনের এ ইচ্ছেটাকে আর পূর্ণ করে যেতে পারেননি তিনি।
 

নবনীতার বাবা মা-ও মেয়ের বিয়ের জন্য কোমড় বেঁধে পাত্রের সন্ধান করতে শুরু করেছিল। নবনীতাও চাইছিল পরিতোষ একবার তার মা বাবার সাথে দেখা করে তাদের দু’জনের বিয়ের ব্যাপারে কথা বলুক। পরিতোষের বাবার শ্রাদ্ধ শান্তি মিটে গেলে ছুটির শেষ দিনে পরিতোষ নবনীতার সাথেই তাদের বাড়ি গিয়েছিল। নবনীতার বাবা, মা ও দাদার কাছে তাদের দু’জনের সম্পর্কের কথা খুলে পরিস্কার ভাবে বলেছিল যে সে তাদের ঘরের মেয়েকে বিয়ে করতে চায়। সুন্দর চেহারা, ভাল চাকরি, আর সদ্বংশের এমন একজন সুপাত্র পেয়ে নবনীতার পরিবারের সকলেই বিয়ের স্বপক্ষে মত দিয়েছিল। কিন্তু পরিতোষ তাদের বলেছিল যে বিয়েটা তার সদ্য প্রয়াত বাবার ইচ্ছানুসারেই সে করতে চায়। তাই ঠিক হয়েছিল যে ট্রেনিং শেষ হলেই সে নবনীতাকে বিয়ে করবে। ততদিনে তার কালাশৌচও শেষ হয়ে যাবে। নবনীতার পরিবারের সকলেও তার কথা মেনে নিয়েছিল।
 

পরদিনই পরিতোষ আবার তার ট্রেনিংএ চলে গিয়েছিল। হায়দ্রাবাদে আসবার দু’দিন পরেই তার এক বন্ধু তাকে ফোন করে জানিয়েছিল যে যেদিন পরিতোষ নবনীতাদের বাড়ি গিয়েছিল সে দিন রাত থেকেই নাকি নবনীতাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় নি। আড়াই বছরের ট্রেনিং পেরিয়ডে কোন রকম ছুটি নেওয়াই বারণ। বাবার মৃত্যুতে ডিপার্টমেন্ট তাকে বিশেষ ছুটি মঞ্জুর করেছিল শুধু মাত্র বাবার পারলৌকিক কাজগুলো সম্পন্ন করবার জন্যে। পরিতোষ জানত, নিজের প্রেমিকা হারিয়ে গেছে বলে কেঁদে মরলেও সে আর ছুটি পাবে না। জেনে বুঝেও সে আবার ছুটি নিয়ে কলকাতা যাবার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ডিপার্টমেন্ট তাকে আর ছুটি দিতে রাজী হয়নি। তাই শুধু ফোনে ফোনে খবরাখবর নেওয়া ছাড়া সে আর তখন কিছুই করে উঠতে পারেনি। কলকাতার তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু বান্ধবের মাধ্যমে সে যত রকম ভাবে সম্ভব নবনীতার খোঁজ খবর নেবার চেষ্টা করেছে। সব শেষে এটুকুই সে জানতে পেরেছিল যে, নবনীতাদের পাড়ার এবং বাড়ির লোকজনেরা বলছে যে বাড়ি থেকে মা বাবারা মেয়ের বিয়ে ঠিক করতেই মেয়ে নিজের পছন্দের কোন ছেলের সাথে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। কথাটা শুনে পরিতোষ একেবারে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল। দু’বছর আগে থেকে তারা পরস্পরকে ভালবাসতে শুরু করেছিল। নবনীতার জীবনে অন্য কোনও পুরুষ থাকতে পারে, এটা তার কল্পনাতেও ছিল না। আর তাছাড়া নবনীতা নিজেও তো তাকে ভালবাসত। সে যদি কখনও জানতে বা বুঝতে পারত যে নবনীতা অন্য কাউকে ভালবাসে, তাহলে সে হাসিমুখেই তার জীবন থেকে সরে দাঁড়াত। কিন্তু ট্রেনিংএ যাবার আগে নবনীতা তো তার বাবার মনের ইচ্ছের কথা শুনে তাকে প্রণাম করে তার আশীর্বাদ নিয়েছিল। তারপর বাবার শ্রাদ্ধ আর মৎস্যমুখী মিটে যেতেই নবনীতাই তো পরিতোষকে বলতে গেলে টেনে নিয়ে গিয়েছিল তার মা বাবার সাথে বিয়ের কথা বলতে। ওর মা বাবা রাজি হতে পরিতোষের চেয়ে বেশী খুশী তো ওকেই দেখাচ্ছিল। আর সে রাতেই সে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেল! আর কারো সাথে পালিয়েই যদি যাবে, তাহলে পরিতোষকে তার মা বাবার কাছে টেনে নিয়ে যাবার প্রয়োজন কি ছিল? আর কারো সাথে স্বেচ্ছায়ই যদি সে গিয়ে থাকে, তাহলে পরিতোষকে সেটা বলল না কেন সে? পরিতোষের ফোন নাম্বারও তো সে জানতো। সামনা সামনি সে’কথা বলতে যদি তার কোন সঙ্কোচ হয়ে থাকত, তবে তো সে ফোন করেও কথাটা বলতে পারতো!
 

তার জীবনের প্রথম ভালবাসাকে এভাবে জীবন থেকে হারিয়ে যেতে দেখে পরিতোষ খুবই হতাশ হয়ে পড়েছিল। কলকাতায় আর তার ফিরে আসতে ইচ্ছে করছিল না। ২০০৭ সালের মাঝামাঝি তার ট্রেনিং শেষ হতেই ভাইজ্যাগে তার পোস্টিং হয়েছিল। ট্রেনিং শেষে দু’দিনের জন্য সে একবার কলকাতার বাড়িতে এসেছিল। লেটার বক্স খুলে প্রায় ন’মাস আগের লেখা নবনীতার একটা চিঠি পেয়েছিল সে। তাতে নবনীতা পরিতোষের কাছে ক্ষমা চেয়ে তাকে ভুলে যেতে অনুরোধ করেছিল। আর একটা ভাল মেয়েকে বিয়ে করে তাকে সংসারী হতে বলেছিল। কিন্তু সে কোথায় আছে, কেমন আছে বা কার সাথে আছে, এ’সব ব্যাপারে কিছুই জানায়নি সে।
 

সে ঘটণার প্রায় দু’বছর বাদে ২০০৯ সালে হায়দ্রাবাদ পুলিশ ট্রেনিং একাডেমীতে পরিতোষ প্রথম দেখতে পেয়েছিল সীমন্তিনীকে। পরিতোষ তখন সে একাডেমীতে ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি হিসেবে মাঝে মাঝে গিয়ে নতুন আইপিএস অফিসারদের বিহেভেরিয়াল সায়েন্সের ক্লাস নিত। সে ব্যাচে দেশের পূর্বাঞ্চল এবং উত্তরপূর্বাঞ্চলের চল্লিশ জন নতুন আইপিএস অফিসার ট্রেনিং নিতে এসেছিল। তার মধ্যে বাঙালী অফিসার ছিল চার জন। আর সীমন্তিনী ছিল একমাত্র বাঙালী মহিলা আইপিএস। উড়িষ্যা, ঝাড়খণ্ড আর উত্তরপুর্ব রাজ্য গুলো থেকে আরোও পাঁচজন মহিলা ট্রেণী ছিল। কিন্তু অসাধারণ ব্যক্তিত্বময়ী মিতভাষী এবং সুন্দরী দীর্ঘাঙ্গীনি সীমন্তিনীকে প্রথম দেখেই পরিতোষ মুগ্ধ হয়ে পড়েছিল। তারপর ধীরে ধীরে সীমন্তিনীর প্রখর বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পেয়ে আর তার অসাধারণ পারফর্মেন্স দেখে সে মনে মনে ভেবেছিল, এই মেয়েটিই বোধহয় তার মন থেকে নবনীতার স্মৃতিকে মুছে ফেলতে পারবে। কিন্তু সীমন্তিনী তার আবেদনে সাড়া দেয় নি। পরিতোষের মনের ইচ্ছে বুঝতে পেরেই সীমন্তিনী তাকে নিজের অতীত জীবনের সব কথা খুলে বলেছিল তাদের প্রথম ব্যক্তিগত সাক্ষাতের সময়েই। নিজের আপন জেঠতুতো দাদাকে ভালবেসে, তাকে কখনও সামাজিকভাবে বিয়ে করে স্বামী হিসেবে পাবেনা জেনেও মেয়েটা তাকেই তার স্বামী, তার জীবনের সর্বস্য বলে ভাবছে, এ কথা জেনে সে বয়সে বছর দুয়েকের বড় হলেও সে মনে মনে সীমন্তিনীকে প্রণাম করেছিল। সীমন্তিনীও পরিতোষকে নিজের প্রেমিক স্বামীর মর্য্যাদা না দিলেও পরিতোষের অনুরোধেই তার বন্ধুত্ব স্বীকার করে নিয়েছিল।
 

২০১০ সালে সীমন্তিনী হায়দ্রাবাদে ট্রেনিংএ থাকতেই পরিতোষের ট্র্যান্সফার হয়েছিল কলকাতায়। তারপর থেকে এখন অব্দি সীমন্তিনীর সাথে তার আর কখনও দেখা সাক্ষাৎ না হলেও তাদের মাঝের বন্ধুত্বের সম্পর্ক অটুট আছে।
 

ক’দিন আগে সীমন্তিনী যেদিন তাকে ফোন করে বলেছিল যে তার প্রেমাস্পদ দাদাভাই কলকাতায় এসে এক বিপদের মুখে পড়েছে, সে সেদিনই সীমন্তিনীর মত অসাধারণ একটা মেয়ের মনের মানুষকে দেখবার লোভ সামলাতে পারেনি। পরদিন সকালেই নিজের গাড়ি নিয়ে তাদের ফ্ল্যাটের খোঁজে বেড়িয়েই সে সীমন্তিনীর দাদাভাই এবং বৌদিকে দেখেছিল। আর ঠিক তখনই তাদের দু’জনকে কোথাও যেতে দেখে তার নেটওয়ার্কের একজনকে সে তাদের পেছনে ফলো করে যেতে নির্দেশ দিয়েছিল। সীমন্তিনীকে ভালবেসে কাছে টেনে নেবার ইচ্ছে তার পূরণ না হলেও সীমন্তিনীর সাথে খুব ভাল বন্ধুত্বের সম্পর্ক সে বজায় রেখেছে। সীমন্তিনীর ভালবাসার মানুষটাকে সে সব রকম বিপদ আপদ থেকে আগলে রাখবে বলে নিজের কাছেই নিজে শপথ করেছে।

**************

রবিবার সকালে রতীশ তার সার্টিফিকেট গুলো একটা ফাইলে নিয়ে বিমলের অফিসের সামনে এসে পৌঁছল দশটা বাজবার আগেই। রবিবার বলে এলাকার প্রায় সব দোকান পাটই বন্ধ। তবু রতীশ ওপরের দিকে মুখ করে বিমল আগরওয়ালার অফিসের দিকে একবার তাকাল। বিমলের অফিস বন্ধ তো বটেই, দেখে মনে হল গোটা বিল্ডিঙে বুঝি কোথাও কেউ নেই। একটা ঘরের ছায়ায় মিনিট দশেকের মত দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করবার পরেই একটা ঝকঝকে গাড়ি রতীশের প্রায় সামনে এসে থামল। পেছনের দিকের জানালা খুলে বিমল বাইরে মুখ বের করে বলল, “রতীশবাবু, উঠে আসুন” বলে পেছনের দরজা খুলে দিল। রতীশ কোন কথা না বলে চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসতেই গাড়ি আবার ছেড়ে দিল।
 

পেছনের সীটে বিমলের পাশে বসে রতীশ বলল, “সরি বিমলজী, আমার জন্যে আপনাকে এত কষ্ট করতে হচ্ছে দেখে আমার নিজেরই লজ্জা লাগছে”।

বিমল হাসিমুখে বলল, “আরে ও’সব নিয়ে ভাবা ছেড়ে দিন তো। আর আমি এমন কী করছি? আজ আমাকে এমনিতেও সেখানে যেতেই হত। আমার বন্ধুর সাথে বিশেষ একটা কাজ আছে। আর সেজন্যেই তো সেদিন বললাম যে রবিবারে গেলে আমাদের দু’জনের কাজই হবে। আপনার জন্যে তো আর আমাকে আলাদা করে গাড়ির তেল খরচ করতে হচ্ছে না”।

গাড়িটা দক্ষিণ কলকাতার দিকে এগিয়ে চলল। বিমল রতীশের লেখাপড়া, যোগ চর্চা আর কলকাতায় আসবার উদ্দেশ্য, এসব নিয়ে গল্প গল্প করতে করতেই মিনিট চল্লিশেক কাটিয়ে দিল। তারপর এক জায়গায় গাড়ি থামতেই বিমল বলল, “ব্যস আমরা এসে গেছি”।

রতীশ বিমলের সাথে গাড়ি থেকে নেমে দেখে গাড়িটা একটা আটতলা বিল্ডিঙের পেছনে থামানো হয়েছে। বিমল রতীশের পাশে দাঁড়িয়ে ওপরের দিকে হাত দেখিয়ে বলল, “এটার ছ’তলায় আমার বন্ধুর যোগা সেন্টার। অবশ্য এদিকটা পেছন দিক। বিল্ডিঙের ফ্রন্ট ও’পাশে। কিন্তু ও’দিকে গাড়ি পার্ক করবার অসুবিধে আছে বলে আমরা পেছন দিকে এসেছি। চলুন”।
 

রতীশ মাথা তুলে বিল্ডিঙের ওপরের দিকে একবার দেখেই ফাইল হাতে বিমলের পেছন পেছন চলতে লাগল। লিফটে চেপে ছ’তলায় এসে করিডোর ধরে হাঁটতে হাঁটতে বিমল নিজের ফোন থেকে একটা কল করল। ও’পাশ থেকে সাড়া পেতেই বলল, “তোমাদের ব্যাকডোরটা খোলা আছে তো? আমরা কিন্তু পেছনের লিফট দিয়ে উঠেছি”।

একটু অন্য পাশের কথা শুনে বলল, “হ্যা হ্যা, তোমার এখানে কি আমি নতুন এলাম নাকি? এই তো এখনই ঢুকছি তোমার অফিসে। তা তুমি তোমার চেম্বারেই আছ তো”?

কথা বলতে বলতে বিমল একটা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল। তারপর ফোনে “ওকে” বলেই রতীশকে নিয়ে সে দরজা দিয়ে ঢুকে পড়ল। ভেতরেও অপেক্ষাকৃত সরু আরেকটা করিডোর দিয়ে খানিক এগিয়ে একটা দরজার সামনে থেমে বিমল রতীশকে বলল, “এদের ইনস্টিটিউটের লোকেরা সকাল সাড়ে দশটার দিকে সকলেই চলে যায়। তাই এখন পিওন বা স্টাফ কেউ আছে কিনা বলা মুস্কিল। আপনি এখানেই একটু অপেক্ষা করুন রতীশবাবু। আমি আগে ঢুকছি। তারপর আপনাকে ডেকে নেব, কেমন”?
 

রতীশ ঘাড় নেড়ে বলল, “ঠিক আছে বিমলজী”।

রতীশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে করিডোরের এপাশ ওপাশ দেখতে লাগল। সরু করিডোরটার বাঁদিকে খানিক বাদে বাদে এক একেকটা দরজা। পাঁচ ছ’টা দরজা। কিন্তু ডানদিকে বিমল যে ঘরে ঢুকল সেটা বাদে আর শুধু একটা দরজাই দেখা যাচ্ছে। সবগুলো দরজাই বাইরের দিক থেকে তালা মারা। মিনিট তিন চারেক বাদেই একজন শার্ট প্যান্ট পড়া বছর ত্রিশেকের যুবক ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে রতীশকে জিজ্ঞেস করল, “আপনি ভেতরে যান স্যার”।

রতীশ ভেতরে ঢুকে একটা কাঠের পার্টিশান দেওয়া রুমের সামনে এসে প্রথামত জিজ্ঞেস করল, “মে আই কাম ইন স্যার”?

ভেতর থেকে অস্বাভাবিক মিষ্টি গলায় এক মহিলা কন্ঠের জবাব এল, “ইয়েস মিঃ ভট্টাচারিয়া, আসুন প্লীজ”।

মহিলা কন্ঠ শুনে রতীশ একটু চমকে গেলেও মূহুর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়ল। একটা অর্ধগোলাকার টেবিলের ও’পাশে একজন অসামান্যা সুন্দরী মহিলা বসে আছে। রতীশের মনে হল ভদ্রমহিলা পঁয়ত্রিশ ছত্রিশ বছর বয়সী হবে। আর টেবিলের উল্টোদিকে চার পাঁচখানা চেয়ারের একটায় বিমল আগরওয়ালা বসে আছে। বিমল ঘাড় ঘুরিয়ে পেছন দিকে তাকিয়ে বলল, “আসুন, আসুন রতীশবাবু”।

রতীশ বিমলের চেয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁচুমাচু করে বলল, “সরি ম্যাডাম, বিমলজী আমাকে বলেন নি যে তার বন্ধু একজন মহিলা। তাই স্যার বলে ঘরে ঢোকবার পারমিশান চাইছিলাম”।
 

ভদ্রমহিলা এতক্ষণ অবাক মুগ্ধ চোখে রতীশের দিকে তাকিয়েছিল। কিন্তু এবার চোখাচোখি হতেই সে অসম্ভব সুন্দর মিষ্টি করে হেসে বলল, “নো প্রব্লেম মিঃ ভট্টাচারিয়া। বসুন প্লীজ”।

রতীশ পাশের একটা চেয়ারে বসতে বসতে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ ম্যাম”।
 

এবার বিমল বলল, “ওয়েল রতীশবাবু, আপনাদের দু’জনের আলাপ করিয়ে দিই। ইনি হচ্ছেন আমার বন্ধু, মিসেস মহিমা সেন। এই যোগা ইনস্টিটিউটের মালকিন”।

মহিমা একটু হেসে বলল, “মহিমা মালহোত্রা সেন। জন্ম সূত্রে আমি পাঞ্জাবী”।

রতীশ বুকের কাছে হাত জোড় করে নমস্কার করে বলল, “নমস্কার ম্যাডাম। আমি রতীশ ভট্টাচার্যি”।

______________________________
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply




Users browsing this thread: 4 Guest(s)