Thread Rating:
  • 20 Vote(s) - 3.35 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance ভাবি যখন বউ (সম্পূর্ণ)
#61
Ajke ki arekta post koeben?
[+] 2 users Like noman658's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#62
Update din dada.. R aktu boro update.
[+] 2 users Like Bislybaran's post
Like Reply
#63
darun hoyece
[+] 1 user Likes nil akash's post
Like Reply
#64
পর্ব-১২



কিছুক্ষণ পর দরজা খুলে দেয়। তাকিয়ে দেখি অবন্তীর আম্মু, আমাকে দেখেই মোটামুটি একটা টাসকি খেলো। খাওয়ার কথা যেখানে জুয়েলকে বলতে বলতে আসেনা, সেখানে নিজে থেকেই এসে হাজির তাও আবার রাতের বেলা।

শাশুড়িঃ আরে জুয়েল! আসো বাবা আসো।

আমি সালাম দিয়ে ভিতরে গেলাম। অবন্তীর বাবা বসে বসে টিভি দেখতেছে আমাকে দেখে উঠে দাঁড়ালো। আমি উনার সাথে কৌশল বিনিময় করলাম।



শ্বশুরঃ অবন্তী রুমে আছে যাও।

আমিঃ যাবো এখন না, একটু পর।

শ্বশুরঃ তাহলে বসো, গল্প করি।

আমি উনার পাশে গিয়ে বসলাম, বাবা মায়ের কথা জিজ্ঞেস করলো, চাকুরীবাকরির কি খবর জিজ্ঞেস করলো।

আমিও উনার পাশে বসে সব কিছুর উত্তর দিচ্ছি।

কিছুক্ষণ পর অবন্তী আসলো আমাকে দেখে ভুত দেখার মতো অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো, আমি ওরে পাত্তা না দিয়ে আবারও শ্বশুরের সাথে কথা বলতে লাগলাম।

একসাথে খেয়ে আমি অবন্তীর রুমে চলে গেলাম। একটু পর অবন্তী আসলো,,,

অবন্তীঃ কি ব্যাপার তুমি এখানে আসছো কেন??

আমিঃ সেটা আপনাকে কেন বলবো????

অবন্তীঃ আজব তো! আমার রুমে এসে শুয়ে আছো অথচ আমাকেই বলবে না।

আমিঃ আমি আমার বউয়ের রুমে আসছি। আপনার সমস্যা কোথায়?

অবন্তীঃ জুয়েল এসবের মানে কি?

আমিঃ মানে খুব সোজা। আমি আমার বউয়ের কাছে আসছি আর বউয়ের সাথেই থাকবো।

অবন্তীঃ দেখো জুয়েল ভালো হবে না কিন্তু। আমি কিন্তু চিৎকার করবো।

আমিঃ তো করেন, দেখি কে আসে?

অবন্তী একটু ভয় পেয়ে গেলো। তারপর আমার একটু সামনে আসলো।

অবন্তীঃ জুয়েল তুমি সত্যি করে বলো তো কেন আসছো?

আমিঃ কেউ একজন কে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি। ওরে ছাড়া থাকতে পারছিনা তাই চলে আসলাম।

অবন্তী কিছুক্ষণ আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো তারপর আমার পাশে এসে বসলো।

অবন্তীঃ কাকে ভালোবাসো????

আমিঃ যে এখন আমার পাশে বসে আছে।

অবন্তীর চোখে পানি টলোমলো করতেছে, আমি ওর একটা হাত ধরে বললাম….

আমিঃ আমি কি এতোই বাজে? এতোই খারাপ যে আপনি আমাকে মেনে নিতে পারছেন না?

অবন্তীঃ…….. (চুপ করে আছে)

আমিঃ এটা ঠিক যে আপনি কখনো আমাকে মন থেকে মেনে নিবেন না। আবার এটাও জানি কোনো এক কারনে আপনি আমাকে শাস্তি দিতে চেয়েছেন কিন্তু এমন শাস্তি দিচ্ছেন আর একটু হলে তো আমি এই পৃথিবী ছেড়ে……(শেষ করার আগেই মুখ হাত দিয়ে দিলো)

অবন্তীঃ না প্লিজ। এগুলো ভুলেও মুখে আনবে না। একজন কে হারিয়ে ফেলেছি, আর কাওকে হারাতে চাইনা। এই সব কিছুর জন্য আমি অনেক অনেক সরি।

আমিঃ তো কেন এমন করলেন আমার সাথে, আমার দোষটা কি ছিলো???

অবন্তীঃ তুমি যখন মাহির বিয়েতে লিমার সাথে হেসে হেসে কথা বলতেছিলে সেটা দেখে আমার ভিতর একটা মোছড় দেয়। মনে হলো আমি খুব দামি একটা জিনিষ হারিয়ে ফেলতেছি।

তোমার আড়ালে আমি লিমাকে সব বলি তখন উনি হাসি মুখে সব বলে দেয় যেটা তোমার আর ওর প্ল্যান ছিলো। তবুও আমার মনে একটা ভয় ছিলো যে তোমাকে যদি কেউ নিয়ে যায় বা তুমি যদি অন্য কারো হয়ে যাও। সেজন্য সেদিন রাতে তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছিলাম।

আমিঃ সেটা নাহয় বুঝলাম কিন্তু আমি এক্সিডেন্ট হওয়ার পর একবারও যাননি কেন?

অবন্তীঃ গিয়েছি সেটা তুমি দেখার আড়ালে। তুমি যখন ঘুমে থাকতে তখন যেতাম। আব্বু আম্মুর সাথে কথা বলে তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়্র আবার চলে আসতাম।

আমিঃ কিন্তু এতো নাটক করার মানে কি?

অবন্তীঃ জুয়েল! তুমি যখন চাকরিটা পাইছো তখন আমি কি পরিমাণ খুশি হয়েছি তা বলে বুঝাতে পারবো না। কিন্তু দুঃখের বিষয় তুমি তোমার চাকরির ব্যাপারে কিছুই বলো নি। উলটো লিমাই আমাকে বলেছে,,,,

আমিঃ তখন বলিনি ঠিক আছে, কিন্তু বাসায় এসেতো বলতাম। আমি ভাবছিলাম মিষ্টি কিনে নিয়ে গিয়ে আব্বু আম্মু আর আপনাকে একসাথেই খবিশ টা দিবো।

অবন্তীঃ সেটা নাহয় ঠিক আছে, কিন্তু একবার কল করে বললে কি এমন ক্ষতি হয়ে যেতো?

আমিঃ ক্ষতি হতো না, ইচ্ছা ছিলো বাসায় গিয়ে বলবো। আচ্ছা সেদিন রাতে আমাকে এতো অপমান কেন করলেন তাহলে?

অবন্তীঃ জুয়েল! আমি জানি তুমি অনেক ভালো। তোমাকে হিট করার মতো কোনো কথা আমার কাছে ছিলো না। তাই সেদিন আবোলতাবোল কি বলছি নিজেও জানি না।

আমিঃ তো কেন বললেন?

অবন্তীঃ তোমার ভাইয়া যখন ছিলো তখন আমাদের মাঝে খুব ভালো একটা সম্পর্ক ছিলো। কিন্তু তুমি প্রতিদিন কাজ থেকে এসে ফ্লোরে ঘুমিয়ে যেতে।

আমিঃ আপনিই তো বলেছেন আপনি আমাকে মেনে নিতে পারবেন না, সেজন্যই তো ফ্লোরে থাকতাম।

অবন্তীঃ জুয়েল জানো তোমার ভাইয়াকে এতো ভালোবেসে ছিলাম যে, তোমার ভাইয়ার জায়গায় অন্য কাওকে কোনো দিন কল্পনাও করতে পারিনা। তাই তোমাকে কথা গুলো বললাম।

কিন্তু সত্যি কথা হচ্ছে এইভাবে তো আর লাইফ যায় না।

আমিঃ তো আমাকে বলতেন,,,,

অবন্তীঃ সব কথা মুখে বলতে নেই, কিছু কথা বুঝে নিতে হয়। তুমি যদি ফ্লোরে না থেকে খাটে থাকতে আমি কি কিছু করতে পারতাম?

আমিঃ সেটা নাহয় পারতেন না কিন্তু পরে বলতেন সব পুরুষ সমান। শুধু মেয়েদের সাথে থাকতে চায়,,,

অবন্তীঃ মোটেও না।

আমিঃ তো এতো কিছু করার কারন টা কি????

অবন্তীঃ দেখলাম।

আমিঃ কি দেখলেন?

অবন্তীঃ আমার বরটা আমাকে ভালোবাসে কিনা!

আমিঃ তাই নাকি?

অবন্তীঃ হুম।

আমিঃ তো কি রেজাল্ট পেলেন?

অবন্তীঃ সেটা জানি না তবে এটা মনে হচ্ছে পৃথিবীর ভাগ্যবতী নারীদের মধ্যে আমিই একজন। যে তোমার ভাইয়ার মতো ছেলেকে পেয়েছি। নিজের বাবা মায়ের চাইতেও ৩ গুণ ভালো শ্বশুর শাশুড়ি পেয়েছি। আর সেরা ভাগ্যবতী এই জন্য,,, সব শেষে তোমাকে পেয়েছি।

আমিঃ…….. (কি বলবো বুঝতে পারছিনা)

অবন্তীঃ খুব ভালোবাসি তোমায়, বলে বুঝাতে পারবো না।

আমিঃ কিন্তু আপনি যে বললেন অন্য কোনো মেয়েকে বিয়ে করতে আমি তো আয়মানকে বলে দিছি অন্য মেয়ে খুঁজতে।

অবন্তীঃ ওই কি বললে তুমি? খুন করে ফেলবো।

আমিঃ কেন আপনিই তো বললেন।

অবন্তীঃ আমি বললেই কি করতে হবে।

আমিঃ হুম, আপনার আবদার না রেখে পারি?

অবন্তীঃ খুব ভালোবাসি তোমায়, পারবো না তোমাকে ছাড়া থাকতে। পারবো তোমাকে অন্য কারো হতে দিতে।

আমিঃ……. (চুপ করে রইলাম)

অবন্তীঃ ভাবতেছি আপনাকে এখন কি বলে ডাকবো, ভাবী নাকি অবন্তী????

অবন্তীঃ মাইর খাবা কিন্তু, ভাবি কেন ডাকবে হুম? আচ্ছা মাঝেমাঝে ভাবি ডাকিও। ভাবি ডাক শুনার মাঝেও অন্যরকম একটা আনন্দ আছে।

আমিঃ ও তাই নাকি?

অবন্তীঃ হুম। বাট একটা শর্ত আছে!

আমিঃ কি সেটা?

অবন্তীঃ আজ থেকে আপনি নয় তুমি করে বলতে হবে।

আমিঃ হুম।…… (কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম)

অবন্তীঃ এই জুয়েল! চুপ করে আছো কেন?

আমিঃ ভাবতেছি।

অবন্তীঃ কি ভাবছো?

আমিঃ আব্বু আম্মুর ইচ্ছা টা কিভাবে পূরণ করবো। আজ থেকে কার্যক্রম শুরু করবো কিনা সেটা ভাবছি।

অবন্তীঃ কোন ইচ্ছা?

আমিঃ ওই যে নাতী/নাতনীর ইচ্ছাটা।

অবন্তী লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। তারপর বললো….

অবন্তীঃ এই একদম ফাজলামো করবে না।

আমিঃ ফাজলামো করি তাই না!!

এই কথা বলেই অবন্তীর হাতটা ধরে একটা টান দিলাম। অবন্তী নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে আমার বুকের উপর এসে পড়লো….

অবন্তীঃ এই জুয়েল শোনো শোনো।

আমিঃ হুম বলো।

অবন্তীঃ তোমার না অনেক ইচ্ছা ধুমধাম করে বিয়ে করা।

আমিঃ হুম, ছিলো বাট এখন বলে লাভ কি?

অবন্তীঃ বলে লাভ আছে। আমাদের বিয়েটা আবারও হবে এন্ড সেটা তোমার ইচ্ছা মতোই।

আমিঃ অনেক টাকা লাগবে কিন্তু পাবো কোথায়?

অবন্তীঃ সেটা তুমি জানো বাট যদি বিয়ের অনুষ্ঠান না হয় তাহলে কিন্তু আমি তোমাদের বাসায় যাবো না। আর আমাকে টাচও করতে দিবো না।

আমিঃ এটা কেমন কথা?

অবন্তীঃ যেটা বলেছি সেটাই হবে।

আমিঃ আরে ধুর, এই মুহূর্তে টাকা কই পাবো আর আব্বু আম্মুকে কি বলবো?

অবন্তীঃ আচ্ছা আব্বু আম্মুকে বোঝানোর দায়িত্ব আমার।

আমিঃ আচ্ছা দেখি কি করা যায়।

অবন্তীঃ হুম দেখো, আর এখন নিচে থাকবা।

আমিঃ মানে! সব কিছুতো ঠিক আবার নিচে কেন?

অবন্তীঃ কোনো কিছুই ঠিক নেই। বলছিনা অনুষ্ঠান ছাড়া তোমার মনের আশা পূরণ হওয়া ছাড়া খাটে উঠতে দিবো না।

আমিঃ এটা কোনো কথা, নিচে থেকে থেকে আমার সমস্যা হয়ে গেছে। প্লিজ আজকে অন্তত উপরে থাকতে দাও।

অবন্তীঃ ওকে দিবো বাট একটা শর্ত আছে।

আমিঃ আবার কি শর্ত?

অবন্তীঃ আমাকে টাচ করতে পারবে না। দুজনের মাঝখানে কোলবালিশ থাকবে।

আমিঃ আচ্ছা বাবা ঠিক আছে, তারপরও উপরে থাকি।

অবন্তীঃ ওকে ওই পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ো।

আমিঃ আপনি ঘুমাবেন না?

অবন্তীঃ বলছিনা তুমি করে বলতে।

আমিঃ ও সরি,,,

অবন্তীঃ তুমি ঘুমাও, আমি পরে ঘুমাবো।

কি আর করা মাঝখানে একটা কোলবালিশ দিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। আমি আবার সব সময় কোল বালিশ জড়িয়ে ধরে ঘুমাই।

রাতের বেলা মনে হচ্ছে কোলবালিশ নাড়াচাড়া করছে, কিন্তু কোলবালিশ এতো নরম কিভাবে হয়। আস্তে করে তাকিয়ে দেখি কোল বালিশ নিচে পড়ে আছে আর অবন্তী আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। এইজন্যই তো বলি কোল বালিশ এতো নরম কেন!!!

এটা যে আসল কোলবালিশ, যাইহোক আমিও কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেলাম।

সকালে ঘুম থেকে উঠলাম কারো মিষ্টি হাসি দেখে। বাহ! ভেজা চুল দেখে আবারও ক্রাশ খেলাম।

উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। তারপর নাস্তা করে আবার রুমে এসে অফিসের জন্য রেড়ি হয়ে নিলাম। অবন্তী রুমে আসলো….

অবন্তীঃ এই তুমি কি এখন চলে যাবে?

আমিঃ হুম।

অবন্তীঃ আচ্ছা সাবধানে যেও, আর যাওয়ার পর আমাকে একটা কল দিও। ওকে.???

আমিঃ ওকে, ওইটা কি দেখেন তো?

অবন্তীঃ কোনটা?

এ কথা বলে আমি যেদিকে ইশারা করেছি অবন্তী সেদিকে তাকালো আর আমি এই সুযোগে ওর গালে একটা ভালোবাসার স্পর্শ একে দিলাম।

অবন্তী লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।

অবন্তীঃ এটা কি করলে?

আমিঃ কোনটা?

অবন্তীঃ এই যে এক্ষুনি দিলা।

আমিঃ আমার বউকে আমি দিয়েছি, আপনার সমস্যা কোথায়?

অবন্তী হাসতে শুরু করলো।

আমিঃ এই রাতে আসবো?

অবন্তীঃ জি না মশাই, আপনি আর এই বাসায় আসবেন না। আবার বিয়ের জন্য প্রিপারেশন নেন। নতুন বউ সেজে আপনাদের বাসায় যাবো। তখন পেট ভরে আদর করিয়েন। এর আগে যাতে আপনার চেহারাও না দেখি।

আমিঃ আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে?

অবন্তীঃ না পারার কি আছে? এই তুই বকবক না করে অফিসে যাও। দেরি হয়ে যাচ্ছে,,, আর হে আমি আব্বু আম্মুকে আবার বলে দিবো।

আমিঃ ওকে,,

অবন্তীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলাম। আজকে অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করতেছে।

তারপর অফিসে চলে গেলাম, সারা দিন অফিসে কাজ করলাম এর মধ্যে বেশ কয়েকবার অবন্তীর সাথে কথা হলো।

বিকালবেলা আয়মানকে কল দিয়ে আসতে বললাম, ওর সাথে দেখা করে কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম। অবন্তীর কথা গুলো বলতে লাগলাম।

আয়মানঃ যাক বাবা, বেঁচে গেলাম। জানিস জুয়েল আমি কতো টেনশনে ছিলাম।

আমিঃ আরে আমিও তো অনেক টেনশনে ছিলাম। যে অবন্তী আব্বু আম্মুকে ছাড়া কিছু বুঝে না সে কি করে আবভ আম্মুকে ছাড়া থাকবে।

আয়মানঃ হুম সেটাই। যাইহোক সব কিছু মিটমাট হয়েছে।

আমিঃ নারে আরো বড় একটা প্যারায় ফেলেছে আমাকে।

আয়মানঃ আবার কি?

আমিঃ আমাদের বিয়ের তো কোনো অনুষ্ঠান হয়নি, আবার অনেকে জানেও না। তাই অবন্তী চাইছে বড় করে অনুষ্ঠান করে ওরে আবার নতুন করে বউ সাজিয়ে নিয়ে যেতে।

আয়মানঃ ভালো তো। তোরও তো ইচ্ছা ছিলো ভালোভাবে বিয়েটা করা।

আমিঃ হুম ইচ্ছা তো ছিলো, কিন্তু এখন টাকা কোথায় পাবো? অনেক টাকার দরকার,,,,

আয়মানঃ টাকা তো লাগবেই, টাকা ছাড়া কিছুই হবে না।

আমিঃ আগামী ১ বছর টাকা জমাতে হবে যদি অনুষ্ঠান করতে চাই।

আয়মানঃ আরে না, এটা পসিবল হবে না। তুই কি এই একবছর অবন্তীকে ওর বাবা বাসায় রেখে দিবি? এটা কিছুতেই হয় না।

আমিঃ সেটাই তো ভাবছি।

আয়মানঃ জুয়েল! আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে।

আমিঃ কি?

আয়মানঃ তুই তোর অফিস থেকে লোন নে। তাহলে তোর বেতন থেকে প্রতি মাসে একটা করে পার্সেন্টিস ওরা রেখে দিবে। এতে করে তোর উপর খুব বেশি প্রেশার পরবেনা।

আমিঃ জয়েন করেছি অল্প কিছু দিন হলো, এখন কি লোন দিবে? পুরাতন চাকুরীজীবী ছাড়া লোন দেয়না।

আয়মানঃ আরে বেটা, তুই লিমার সাথে কথা বল। দেখনা কিছু একটা হয় কিনা।

আমিঃ হুম দেখি।

এরপর আর কিছু কথাবার্তা বলে বাসায় চলে আসলাম। রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে সোফা রুমে গেলাম। আব্বু বসে বসে টিভি দেখতেছে। আমি গিয়ে বাবার পাশে বসলাম।

বাবাঃ কিরে কি অবস্থা, চাকরি কেমন চলছে।

আমিঃ এইতো ভালোই।

বাবাঃ আমার মেয়ে কেমন আছে?

আমিঃ ভালো। তোমাদের সাথে কথা হয়নি?

বাবাঃ হুম সব সময় হয়। তুই নাকি মহা ধুমধামে বিয়ে করতে চাস?

আমিঃ এগুলো কি বলো! (লজ্জায় আমার অবস্থা শেষ)

বাবাঃ ঠিকই তো বললাম। তোর নাকি সেই ছোট বেলা থেকে স্বপ্ন মহা ধুমধাম করে বিয়ে করবি। এখন আবার সেই ইচ্ছাটা জেগে উঠেছে।

আমিঃ ধুর এখানে বসবোই না।

আমি উঠে চলে গেলাম। বাবা বসে বসে হাসছে, আমি আম্মুর কাছে গেলাম, আম্মু রান্না করতেছে।

আম্মুঃ কিরে বাবার কাছ থেকে চলে আসলি কেন?

আমিঃ আরে ধুর আব্বু শুধু উল্টাপাল্টা কথা বলে।

আম্মুঃ ঠিকই তো বলছে।

আমিঃ আম্মু তুমিও বলছো। ধুর আমি রুমে গেলাম,,,,

রুমে এসে বসে রইলাম, চারপাশে যেন অবন্তীর স্মৃতি গুলো ছড়িয়ে আছে। আমি অবন্তীকে কল দিলাম।

আমিঃ কি করেন!

অবন্তীঃ একজনের কথা ভাবতেছিলাম আর উনিই কল দিলো।

আমিঃ আমিও, খুব মিস করছি। প্লিজ চলে আসো, অনুষ্ঠান পরে করবো।

অবন্তীঃ জ্বি না সাহেব, সেটা হচ্ছে না।

আমিঃ আমার উপর বেশি প্রেশার হয়ে যাচ্ছে না?

অবন্তীঃ আমার বরের উপর প্রেশার পরবে এতে আপনার সমস্যা কোথায়!

আমিঃ সত্যিই মিস করছি

অবন্তীঃ হুম, আমিও করছি

আমিঃ ওকে রাখি।

কল কেটে দিলাম। অবন্তীর কথা ভাবতেছি এমন সময় আম্মু রুমে আসলো, ডেকে নিয়ে গেলো খাওয়ার জন্য।

আমি আব্বু আর আম্মু একসাথে খাচ্ছি এমন সময় আব্বু বললো….

বাবাঃ জানিস জুয়েল!

আমি উনার দিকে তাকালাম….

বাবাঃ আমাদের মানে তোর আম্মুর আর আমারও অনেক ইচ্ছা ছিলো আমাদের ছোট ছেলের বিয়েটা অনেক সুন্দর হবে। সবাই অনেক আনন্দ করবে, কিন্তু দেখ কেমন বাবা হলাম আমি সেই ইচ্ছাটাও পূরণ করতে পারলাম না।

আমিঃ আব্বু এগুলো কি বলো? টাকা হলে সব করা যাবে। এতে টেনশন করার দরকার নেই।

আব্বুর মন খারাপ দেখে আমি উঠে চলে গেলাম। রাতের বেলা আব্বু আম্মু ঘুমিয়ে গেছে। আমি উঠে বের হয়ে গেলাম।

ভাইয়ার কাছে যাবো, কয়েকদিন ভাইয়ার কাছে যেতে পারিনি। আমার ভাইটা মন খারাপ করবে। বাইরে চাঁদের আলো ছিলো। আমি হেটে হেটে ভাইয়ার কবরের কাছে গেলাম। কবরের মাথা বরাবর গিয়ে বসলাম।

ভাইয়ার কবরের পাশে কয়েকটা গাঁদাফুল গাছ লাগিয়ে ছিলাম সেগুলোতে ফুল ফুটেছে। দেখে মনে হচ্ছে ভাইয়া হাসতেছে।

“ভাইয়া কেমন আছিস? তুই হয়তো ভাবছিস আমি তোকে ভুলে গেছি। নারে ভাই আমি তোকে ভুলিনি,সময় পাইনি তোর কাছে আসার।

তোর কর্তব্য গুলো আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করতেছি কিন্তু তোর মতো পারছিনা। তবুও চেষ্টা করতেছি।

ভাইয়া যেখানেই যাইনা কেন তোর অভাব টা আমি অনুভব করি, তোর স্মৃতি গুলো আমাকে ঘুমাতে দেয়না। ঘুমাতে গেলে তোর সাথে ঘুমানোর কথা মনে পড়ে, খেতে গেলে তোর সাথে ভাগাভাগি করে খাওয়ার কথা মনে পড়ে।

খেলা দেখতে গেলে তোর দলের বিরোধিতা করার কথা গুলো মনে পড়ে।

আজ সব আছে, ভালো একটা চাকরিও পেয়েছি, টাকা এখন নেই হয়তো ভবিষ্যৎ এ হবে। সব কিছু হয়তো পাবো কিন্তু তোকে পাবো না।

ভাই আমি জানি তুই আমার উপর অভিমান করে আছিস, ভাই বিশ্বাস কর ১ সেকেন্ডের জন্যও আমি তোকে ভুলিনি। তোর অবন্তীকে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি ভালো রাখার। পড়ালেখা করানোর, আমি সফল হয়েছি।

জানিস ভাইয়া প্রতি রাতেই আমি মায়ের কান্নার আওয়াজ শুনতে পাই, কিন্তু আমি মাকে শান্তনা দিই না। তুই আবার এটা ভাবিস না আমি স্বার্থপর। আমি আম্মুকে শান্তনা দিই না এইজন্য যে আম্মুকে সান্তনা দেওয়ার মতো ভাষা আমার নেই।

অবন্তী এখনো তোকে অনেক ভালোবাসে। আমাকে মেনে নিলেও অবন্তীর মনে তুই যে জায়গাটা করে নিয়েছিস সেটাতে তুই সারা জীবন থাকবি।

ভাই আজকে সব আছে শুধু তুই নেই, আর একবারের জন্য আমাদের মাঝে ফিরে আয়। দেখে যা ওদের আমি ঠিকমতো রাখতে পারছি কিনা আর একবার এসে আমার সাথে ঝগড়া করে যা। এবার আর তোর সাথে মারামারি করবো না। তুই শুধু একবার আয়। “””

চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে গেছে আর কোনো কথাই আসছে না আমার মুখ দিয়ে। আরো কিছুক্ষণ ওখানে বসে কবর জিয়ারত করে বাসায় চলে আসলাম।

পরের দিন ঘুম থেকে উঠে, ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে অফিসে চলে গেলাম।

১১ টার দিকে লিমা আসলো…

লিমাঃ দুলাভাই জুয়েল নাকি এইটা?

আমিঃ মনে হয়।

লিমাঃ কি অবস্থা?

আমিঃ ভালো নারে। বিপদে আছি,,,

লিমাঃ কেন আবার কি হইছে। এবার তো সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে গেছে। অবন্তী আমাকে সব কিছু বলেছে। তুই তো হারামি কিছুই বলবি না। এখন বল আবার কি হইছে?

আমিঃ…… (সব কিছু বললাম)

লিমাঃ ওরে অনেক টাকা লাগবে।

আমিঃ হুম। লোন ওতো দিবে না, কারন নতুন জয়েন করেছি

লিমাঃ হুম, আচ্ছা আমি ম্যানেজারকে বলে দিবো, দেখ কিছু হয় কিনা।

আমিঃ থেংক্স দোস্ত!

লিমাঃ একটা শর্ত আছে।

আমিঃ কিসের শর্ত? আচ্ছা বল শুনি,,,,

লিমাঃ যদি টাকা দেয় তাহলে তোদের বাসর ঘরটা আমি সাজাবো। আমার অনেক দিনের শখ, কিন্তু কেউ আমাকে সাজাতে দেয় না।

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে। তুই আগে ম্যানেজারকে বলে দেখ।

লিমাঃ ওকে।

লিমা আমার ডেস্ক থেকে চলে গেলো। আমি অবন্তীকে কল দিয়ে কথাটা বললাম, অবন্তী শুনেই…….

চলবে…….
বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড 
http://biddutroy.family.blog
Like Reply
#65
পর্ব-১৩



অবন্তী শুনেই বললো….

অবন্তীঃ হইছে আর ঢং করতে হবে না। টাকা হাতে পেলে তারপর বলবে।

এ কথা বলে মোবাইল টা রেখে দিলো। লিমা কিছুক্ষণ পর ম্যানেজার এর রুম থেকে বের হলো….



লিমাঃ এই জুয়েল!

আমিঃ হুম বল।

লিমাঃ আমি ম্যানেজারকে বলে দিয়েছি, দেখ উনি কি বলে।

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।

লিমাঃ হুম ম্যানেজার হয়তো তোকে ডাকবে, যদি জিজ্ঞেস করে টাকা কেন দরকার তাহলে বলবি যে বাসার কাজ চলতেছে।

আমিঃ ওকে।

লিমাঃ আরো একটা গুড নিউজ আছে!

আমিঃ কি?

লিমাঃ আজকে সানি আসবে, আমি ওরে নিয়ে আসার জন্য যাচ্ছি।

আমিঃ সানি কে?

লিমাঃ তোর দুলাভাই, আমার হবু,,,,,

আমিঃ বাহ! বিয়ের আগেই এতো প্রেম, বিয়ের পর কি করবি?

লিমাঃ তুই আর অবন্তী যেটা করবি আমরাও সেটা করবো।

আমিঃ আমাকে একটু বলিস, তোরা কি কি করস।

লিমাঃ মাইর খাবি ফাজিল। আচ্ছা আমি গেলাম,,,,

আমিঃ ওকে, আল্লাহ হাফেজ,,,

লিমা চলে গেলো। আমি বসে বসে কাজ করতে লাগলাম, দুপুর শেষ হয়ে বিকাল হয়ে গেলো, কিন্তু ম্যানেজারের কোনো খবিশ নাই। আমি ভাবতেছি টাকা হয়তো দিবে না।

ছুটি হওয়ার প্রায় ২০ মিনিট আগে পিয়ন আসলো আমার কাছে।

পিয়নঃ স্যার আপনাকে ডাকছে..

আমিঃ কে?

পিয়নঃ ম্যানেজার স্যার। এখন গিয়ে দেখা করেন।

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে আপনি যান আমি আসছি।

এক বুক আশা নিয়ে ম্যানেজারের রুমে গেলাম,,,

আমিঃ স্যার আসবো?

ম্যানেজারঃ মি.জুয়েল! আসুন ভিতরে আসুন।

আমিঃ থেংক ইউ স্যার।

ম্যানেজারঃ হুম, বসুন।

আমি বসলাম।

ম্যানেজারঃ আপনার নাকি টাকার খুব প্রয়োজন?

আমিঃ জ্বি স্যার।

ম্যানেজারঃ কতো?

আমিঃ ৩ লক্ষ হলে হবে।

ম্যানেজারঃ এতো টাকা দিয়ে কি করবেন?

আমিঃ স্যার বাসার কাজ চলতেছে।

ম্যানেজারঃ কিন্তু মি.জুয়েল আপনি জয়েন করেছেন যে এখনো একমাস হয়নি। আমরা এই মুহূর্তে আপনাকে এতো টাকা দিতে পারি না।

আমিঃ কেন স্যার, অন্যান্য কোম্পানি গুলোতে তো যারা কর্মকর্তা তাদের কে লোন দেয়,আর মাস শেষে বেতন থেকে কেটে নিয়ে যায়। আমার ক্ষেত্রেও একই টা করিয়েন।

ম্যানেজারঃ হুম লোন দেয়, আমরাও দিই। কিন্তু সেটা পুরাতন লোকদের কে। আপনি যে এই অফিসে সারাজীবন কাজ করবেন তার কোনো গ্যারান্টি আছে?

আমিঃ সেটা না হয় ঠিক আছে, কিন্তু আমি তো আর এই মুহূর্তে চলে যাচ্ছি না। আর আমার সব কাগজপত্র আপনাদের কাছে আপনারা ওগুলো না দিলে তো আমি অন্য কোথাও চাকরি করতে পারবো না।

আমি যদি এই অফিস থেকে চলেও যাই তাহলে আপনাদের টাকা শোধ করে তারপরেই যাবো।

ম্যানেজারঃ সেটা নাহয় বুঝলাম। কিন্তু এতো গুলো টাকার জন্য আপনাকে কিছু ডোকোম্যান্ট জমা দিতে হবে।

আমিঃ কি?

ম্যানেজারঃ আপনাদের বাড়ির কাগজপত্র, যদি কোনো কারনে আপনি টাকা না দিয়ে চলে যান আমরা আপনার বাড়ি দখল করবো।

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে দিবো।

ম্যানেজারঃ হুম, আর আপনার বর্তমান বেতন ২৫ হাজার টাকা, আমরা প্রতি মাসে ৫ হাজার কেটে নিবো। বাকি ২০ হাজার পাবেন।

আমিঃ ওকে স্যার।

ম্যানেজারঃ ওকে কালকে আসার সময় বাড়ির কাগজপত্র নিয়ে আসবেন।

আমিঃ আসি স্যার।

সালাম দিয়ে বের হয়ে গেলাম। তারপর বাসায় চলে গেলাম।

রাতে বসে বসে ভাবতেছি কি করে আব্বু আম্মুকে কাগজের কথা বলবো।

খাওয়ার সময় আব্বুকে বলেই দিলাম দলিলের কথা। বাবা কিছুই বললো না খাওয়া শেষ করে আমি রুমে চলে গেলাম।

কিছুক্ষণ পর আব্বু একটা ফাইল নিয়ে আমার রুমে আসলো। আমার হাতে দিয়ে বললো….

আব্বুঃ এখানে সব কিছু আছে। আমি জানি তুই খারাপ কিছু করবি না। আমি তোকে আমানত দিলাম,,,,,,

আমি কিছুই বললাম না। ফাইলটা রেখে দিলাম। অবন্তীকে কল দিলাম। কিছুক্ষণ কথা বলে মোবাইল রেখে দিলাম।

তারপর ঘুমিয়ে গেলাম,সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে অফিসে চলে গেলাম। সোজা ম্যানেজারের রুমে গেলাম। ফাইলটা উনার হাতে দিয়ে আমি আমার ডেস্কে গিয়ে কাজ করতে শুরু করলাম।

১১ টার দিকে পিয়ন এসে ডেকে নিয়ে যায় ম্যানেজার নাকি আমাকে ডাকতেছে।

ম্যানেজার এর রুমে গেলাম। উনি আমাকে একটা চেক কেটে দিলো।

আমি তো খুশিতে শেষ। যাইহোক ম্যানেজার থেকে ১ ঘন্টার জন্য ছুটি নিলাম। নাহলে বিকালবেলা ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাবে। আয়মানকে কল দিয়ে আসতে বললাম তারপর আয়মান আসলো।

ওরে নিয়ে টাকা টা ব্যাংক থেকে নিয়ে আসলাম। তারপর আবার অফিসে চলে গেলাম।

কাজ শেষ করে বাসায় চলে আসলাম। রাতে অবন্তীকে কল দিলাম।

অবন্তীঃ বলেন সাহেব! সারাদিন কোনো খবর ছিলো না আপনার এখন মনে হয়েছে তাই না?

আমিঃ সরি, কাজে ছিলাম তো তাই। তুমিও তো দাও নি

অবন্তীঃ মোবাইলে টাকা ছিলো না। তোমারে তো বলেছিলাম টাকা পাঠাতে বাট তুমি তো পাঠাও নি।

আমিঃ সরি, মনে ছিলো না।

অবন্তীঃ কয়দিন পর দেখা যাবে আমি যে তোমার বউ সেটাও মনে থাকবে না।

আমিঃ সেটা ভুলবো না। আচ্ছা শোনো।

অবন্তীঃ হুম বলো।

আমিঃ কালকে বিকালে একটু দেখা করিও তোমার সাথে খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে

অবন্তীঃ কি কথা এখন বলো।

আমিঃ মোবাইলে বলা যাবে না। সরাসরি বলবো।

অবন্তীঃ আচ্ছা ঠিক আছে। খাইছো?

আমিঃ না মাত্র বাসায় আসলাম। তুমি?

অবন্তীঃ না খাবো,একটু পর। তুমি খেয়ে ঘুমিয়ে যাও।

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।

তারপর খাওয়াদাওয়া করে ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে ফ্রেশ হয়ে অফিসে চলে গেলাম।

এর মাঝে কয়েকবার অবন্তীকে কল দিলাম ওরে বললাম শাড়ি পড়ে আসতে।

বিকালবেলা আমাদের কলেজের সামনেই আসতে বললাম।

আমি কাজ শেষ করে সোজা কলেজের সামনে চলে গেলাম। কিছুক্ষণ পর অবন্তী আসলো।

আমিঃ কি ব্যাপার এতো দেরি হলো কেন?

অবন্তীঃ এই সরি সরি, আসলে শাড়ি পরতে দেরি হয়ে গেছে।

আমিঃ মানে?

অবন্তীঃ তুমি তো জানো আমি শাড়ি পড়তে পারি না। কারো না কারো হেল্প লাগে। আজকে আম্মুও বাসায় নেই মামার বাড়ি গেছে। একটা কাজিন কে বলেছিলাম আসার জন্য। সে আসতে দেরি করে ফেললো। তাই আমারও দেরি হয়ে গেলো।

আমিঃ এতো কষ্ট হলে শাড়ি পরার কি দরকার ছিলো?

অবন্তীঃ না আসলে তো তোমার চেহারার দিকে তাকানো যেতো না। বলবে যে একটা রিকুয়েস্ট করেছি সেটাও রাখেনি।

আমিঃ আচ্ছা এবার বসো। বলো কি খাবে?

অবন্তীঃ আগে বলো তুমি যে এখানে আসছো আব্বু আম্মুকে বলেছো।

আমিঃ না বলার সময় পাইনি। অফিস থেকে সোজা এখানে চলে এসেছি।

অবন্তীঃ এটা কোনো কথা হলো?

আমিঃ সমস্যা নাই, আমি বাসায় গিয়ে বলে দিবো।

অবন্তীঃ এবার বলো কি এমন কথা যেটা মোবাইলে বলা যাবে না, সরাসরি বলতে হবে!

আমিঃ লোন তো পেয়ে গেছি।

অবন্তীঃ বাহ! আগে বলোনি কেন?

আমিঃ এখন তো বললাম। এখন কথা হচ্ছে আমি কয়দিনের ছুটি নিবো?

অবন্তীঃ ছুটি কেন?

আমিঃ আরে পাগল! বিয়ের জন্য কেনাকাটা করতে হবে, তারপর বিয়ের অনুষ্ঠান কোন দিন হবে সেটা তো ঠিক করতে হবে নাহলে আমি আন্দাজি ছুটি কিভাবে নিবো?

অবন্তীঃ তুমি এক সপ্তাহের জন্য ছুটি নাও।

আমিঃ এতো দিন দিবে না। সর্বোচ্চ দিলে ৩ দিন দিবে।

অবন্তীঃ তাহলে তোমার বিয়ে করার দরকার নেই।

আমিঃ আরে ধুর এগুলো কি বলো।

অবন্তীঃ ঠিকই তো বললাম, আচ্ছা তুমি কালকে অফিস করো। তারপরের কয়েকদিনের জন্য ছুটি নিও।

আমিঃ ওকে, শপিং কোন দিন করবে?

অবন্তীঃ শপিংয়ে যাবো পরশুদিন।

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।

অবন্তীঃ আচ্ছা শোনো বাসায় কেউ নেই, আমি চলে যাচ্ছি। রাতে মোবাইলে কথা হবে, আর পরশুদিন তো দেখা হচ্ছেই।

আমিঃ এখন চলে যাবা?

অবন্তীঃ হুম।

আমিঃ এই যাওয়ার আগে একটা দিয়ে যাওনা!

অবন্তীঃ কি?

আমিঃ….. (গাল দেখিয়ে দিলাম)

অবন্তীঃ মাইর খাবা, বিয়ের আগে এগুলো কিচ্ছু হবে না। আসি আমি,,,,

অবন্তী চলে যাচ্ছে আমি ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি আর ভিতরে ভিতরে হাসতেছি।

তারপর আমিও বাসায় চলে গেলাম। রাতে আব্বু আম্মুকে সব কিছু বললাম…

আম্মুঃ তোর বলা লাগবে না। অবন্তী আমাদের সব বলেছে।

আমিঃ ও, তাহলে তো ভালোই।

আম্মুঃ হুম, তুই ছুটে বেশি করে নিতে পারিস কিনা দেখিস।

আমিঃ এটাও বলেছে?

আব্বুঃ বলবে না কেন, ও কি তোর মতো হারামি নাকি?

আমিঃ আমি হারামি?

আম্মুঃ হুম আমাদের আদরের হারামি। যা বাবা তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যা।

তারপর রুমে গিয়ে কিছুক্ষণ অবন্তীর সাথে কথা বললাম।

তারপর ঘুমিয়ে গেলাম। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে অফিসে চলে গেলাম। সোজা ম্যানেজার এর রুমে গেলাম…

আমিঃ স্যার আসতে পারি?

ম্যানেজারঃ মি. জুয়েল! আসুন।

আমিঃ ধন্যবাদ স্যার।

ম্যানেজারঃ হুম কি অবস্থা বলেন?

আমিঃ এইতো স্যার আছি মোটামুটি।

ম্যানেজারঃ কিছু বলবেন নাকি?

আমিঃ জ্বি স্যার একটা কথা বলার ছিলো।

ম্যানেজারঃ হুম বলেন।

আমিঃ স্যার আমার কয়েকদিন ছুটি লাগবে। আমি দরকার হলে পরের দিন গুলোতে কাজ বাড়িয়ে করে দিবো।

ম্যানেজারঃ সেটা নাহয় বুঝলাম। কিন্তু ছুটি কয়দিনের জন্য চাচ্ছেন?

আমিঃ স্যার ১ সপ্তাহ।

ম্যানেজারঃ এতো দিন কি করবেন?

আমিঃ আসলে স্যার আমার বিয়ে। (মাথা নিচু করে বললাম)

ম্যানেজারঃ congratulations,,,,

আমিঃ থেংক ইউ স্যার।

ম্যানেজারঃ তো বিয়ে কখন?

আমিঃ আপনার ছুটির উপর নির্ভর করবে।

ম্যানেজারঃ আচ্ছা ঠিক আছে দিলাম।

আমিঃ ধন্যবাদ স্যার, আপনার আর আপনার পুরো ফ্যামিলির দাওয়াত রইলো অবশ্যই আসবে। স্যার বিয়ের কার্ড এখনো বানানো হয়নি তাই দিতে পারিনি। আজকে গিয়েই বানাবো আর প্রথমটা আপনাকে দিবো।

ম্যানেজারঃ আচ্ছা ঠিক আছে দিয়েন। (হাসতে হাসতে)

আমিঃ ওকে স্যার আমি আসি তাহলে।

ম্যানেজারঃ আজকে কি কাজ করবেন?

আমিঃ জ্বি স্যার, কালকে থেকেই ছুটি কাটাবো

ম্যানেজারঃ ওকে যান।

তারপর বেরিয়ে গেলাম। নিজের ডেস্কে গিয়ে কাজ করলাম।

কাজ শেষ করে বাসায় চলে গেলাম। মনের মধ্যে অন্যরকম একটা আনন্দ বইতেছে।

রাতে খেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নিলাম।

আয়মানকে কল দিয়ে আমাদের বাসায় আসার জন্য বললাম। আব্বু আম্মুকেও রেড়ি হতে বললাম।

অবন্তীকে কল দিলাম…

অবন্তীঃ হ্যালো জুয়েল! তোমার নাম্বার অফ ছিলো কেন?

আমিঃ রাতে বন্ধ করে ঘুমাইছিলাম। রেড়ি হইছো?

অবন্তীঃ না হইতেছি।

আমিঃ আসার সময় আব্বু আম্মুকে নিয়ে আসিও।

অবন্তীঃ আমার কাজিন প্রেমা আসতে চাইছে।

আমিঃ ওকে নিয়ে আসো।

অবন্তীঃ হুম, কোথায় আসবো?

আমিঃ গ্র্যান্ড হক টাওয়ারের সামনে আসো, আমরা ওখানে থাকবো।

অবন্তীঃ আচ্ছা ঠিক আছে।

আমিঃ ওকে।

কল কেটে দিয়ে আমিও ফ্রেশ হয়ে রেড়ি হয়ে গেলাম। তারপর একটা CNG ডেকে আব্বু আর আম্মুকে পিছনে বসতে দিলাম। আমি আর আয়মান সামনে দিয়ে বসলাম।

তারপর শপিংমলে চলে গেলাম। অনেকক্ষণ ধরে বসে আছি অবন্তীর আসার কোনো খবর নাই। যাইহোক ৩০ মিনিট পর ওরা আসলো। বেয়াই বেয়ান একে অপরকে জড়িয়ে ধরলো, কিছুক্ষণ কথাবার্তা বললো, আমারও ইচ্ছা হয়েছিলো অবন্তীকে জড়িয়ে ধরি কিন্তু পাব্লিক প্লেসে এগুলো করা যাবে না।

যাইহোক তারপর ভিতরে গেলাম। প্রথমে আব্বু আম্মুর জন্য কেনাকাটা শুরু করলাম।

আব্বুর জন্য পাঞ্জাবি, পায়জামা, গেঞ্জি, জুতা আরো কিছু জিনিষ নিলাম। আম্মুর জন্য শাড়ি, ব্লাউজ সহ আরো অনেক কিছু নিয়েছে। শ্বশুর শাশুড়ির জন্যও সেম জিনিষ নিলাম।

তারপর আয়মানকে নিতে বললাম কিন্তু সে নিচ্ছে না। অনেক জোরাজুরি করে একটা পাঞ্জাবি নিলাম, সেম কালারের আমিও একটা নিলাম।

প্রেমাকে বলার আগেই কেনাকাটা শুরু করে দিলো। আসলে মেয়েদের শখ একটু বেশিই, সেটা যদি জামাকাপড় এর উপর হয় তাহলে তো কথাই নাই।

প্রেমাও অনেক গুলো জামা নিলো। এরপর আমার সিরিয়াল আসলো।

আমার জন্য সব কিছু অবন্তী নিজেই চয়েস করলো। আব্বু আম্মুর জন্যও অবন্তী চয়েস করলো।

আমি অল্প কিছু নিলাম কারন টাকা টা হিসাবের মধ্যে রাখতে হবে পরে যাতে টানাটানি না হয়।

এরপর অবন্তীর পালা আসলো।

অবন্তী একটা নীল শাড়ি পছন্দ করলো।

আমিঃ বিয়েতে কেউ নীল পড়ে? বিয়েতে তো লাল পড়ে।

অবন্তীঃ আমার নীল পছন্দ। আর কোথাও লেখা আছে যে বিয়েতে শুধু লাল পড়তে হবে, অন্য কোনো কালারের শাড়ি পড়া যাবে না!

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে যেটা ভালো লাগে সেটাই কিনো।

অবন্তীর জিনিষ কিনতে কিনতে হয়রান হয়ে গেছি। অন্তত ৫০ টা দোকান গেছে। মেয়েদের যে এতো জিনিষ লাগে বিয়ে না করলে বুঝতাম না।

দীর্ঘ ৪ ঘন্টা শেষ অবন্তীর শপিং শেষ হলো। তারপর সবাই মিলে একটা হোটেলে গিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম।

এরপর যে যার মতো বাসায় চলে আসলাম। আগামী কাল মেহমানদের দাওয়াত করতে হবে, পরশুদিন গায়ে হলুদ আর পরের দিন বিয়ে।

বাসায় এসে ঘুমিয়ে গেলাম। সারাদিন ঘুরাঘুরির কারনে ক্লান্ত লাগছিলো তাই শোয়ার সাথে সাথেই ঘুম চলে আসলো।

পরের দিন ঘুম থেকে উঠে আয়মানকে সাথে নিয়ে বিয়ের কার্ড বানাতে গেলাম। তারপর কার্ড গুলো রেড়ি করে আত্নীয় স্বজন, বন্ধু বন্ধক সবাইকে দাওয়াত দিলাম। আব্বুর হাতে অনেক গুলো কার্ড দিয়ে দিলাম উনার পরিচিত যারা আছে তাদের দাওয়ার দেওয়ার জন্য।

আয়মান ডেকোরেশন করার জন্য সব রকম ব্যবস্থা করা শুরু করে দিলো।

পরের দিন মানে হলুদের দিন, সকাল থেকেই বাসা সাজানো শুরু করে দিলো। চারপাশে লাইট, ফুল দিয়ে বাসাটা অন্যরকম ভাবে সাজানো হলো।

অনেক দিন পর এই বাসায় একটু কোলাহল শুরু হলো। আত্নীয় স্বজনরা এক এক করে আসতে শুরু করলো।

আমি আর আয়মান বাজারে গেলাম। গিয়ে বাজার করে নিয়ে আসলাম।

বিকালবেলা অবন্তীকে কল দিলাম, তারপরেই…….

চলবে………
বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড 
http://biddutroy.family.blog
[+] 4 users Like Biddut Roy's post
Like Reply
#66
দারুণ হচ্ছে....  yourock
[+] 2 users Like dessertzfox's post
Like Reply
#67
super.....
[+] 1 user Likes nightangle's post
Like Reply
#68
ধন্যবাদ। আপডেট এর জন্য।
[+] 1 user Likes Bislybaran's post
Like Reply
#69
waiting
[+] 1 user Likes madhorse's post
Like Reply
#70
পর্ব-১৪



বিকালবেলা অবন্তীকে কল দিলাম, কিছুক্ষণ পর অবন্তী কল ধরলো….

আমিঃ ওই কল ধরতে এতো দেরি করো কেন?

অবন্তীঃ ধুর বইলো না, বাচ্চাকাচ্চা গুলা পুরা পাগল করে দিচ্ছে। আমার সব জিনিষ এলোমেলো করে ফেলেছে।



আমিঃ ও,,,

অবন্তীঃ এই জুয়েল!

আমিঃ হুম বলো!

অবন্তীঃ কি করো?

আমিঃ এতোক্ষন কাজ করলাম তাই তোমার খবর নিতে পারিনি, তাই এখন কল দিলাম।

অবন্তীঃ ও আচ্ছা।

আমিঃ তুমি কি করো?

অবন্তীঃ এই তো পার্লারে যাবো রেড়ি হচ্ছি।

আমিঃ আমি আসবো?

অবন্তীঃ তুমি আসবা কেন?

আমিঃ তোমাকে কিভাবে সাজায় দেখবো, আর সাজালে কেমন লাগে সেটাও দেখবো।

অবন্তীঃ অতো দেখতে হবে না। সারা জীবন দেখছো, ভবিষ্যতেও দেখবা। সো টেনশন করার দরকার নেই।

আমিঃ হুম।

অবন্তীঃ আচ্ছা রাখি, পরে কথা বলবো।

কলটা কেটে দিলো। বিকাল থেকেই মেহমান আসতে শুরু করে দিয়েছে। একে একে সবাই আসলো। আয়মানও ব্যস্ত…..

আয়মানঃ কিরে তুই এখানে?

আমিঃ হুম, আচ্ছা তুই আমাদের বন্ধের সবাইকে কল দিয়ে দেখতো ওদের কি অবস্থা! কখন আসবে?

আয়মানঃ আচ্ছা দিতেছি। লিমা আসবে?

আমিঃ যাহ শালা! আমি তো লিমার কথা ভুলেই গেছিলাম। দাঁড়া কল দিই, ও না থাকলে আমার বিয়েও হতো না।

লিমাকে কল দিলাম,,,,,

আমিঃ হ্যালো লিমা!

লিমাঃ হুম দোস্ত বল।

আমিঃ কিরে তুই আসছিস না।

লিমাঃ আমি এসে কি করবো, তোরা সেরে নে। আমি নাহয় কালকে আসবো।

আমিঃ কালকে আসবি মানে!আমি এতো কিছু বুঝি না। তুই এক্ষুনি আসবি।

লিমাঃ কিন্তু আমার সাথে তো সানি আছে।

আমিঃ তো সমস্যা কোথায়? সানিরেও নিয়ে আয়।

লিমাঃ আচ্ছা ঠিক আছে,নিয়ে আসছি।

আমিঃ হুম তাড়াতাড়ি আয়।

কল কেটে দিলাম। তারপর আরো কিছু কাজ সেরে নিলাম। সন্ধ্যায় গোসল করে নিলাম। এরপর রেড়ি হলাম, আয়মান আমাকে সাজিয়ে দিলো। দুজনে একই পাঞ্জাবি পরলাম।

রাত ১১ টা পর্যন্ত গান বাজনা হলো। আমার বন্ধুরা হাকিম, ফাহাদ, ফারুক, সাদ্দাম সবাই উরাধুরা নাচলো। ওদের সাথেও আমিও নাচলাম। আসলে নিজের বিয়েতে নিজে নাচার মধ্যে অন্যরকম একটা আনন্দ আছে।

কিছুক্ষণ পর লিমা আসলো, আমি ওর সাথে কথা বলে নিলাম, ও সানির সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দেয়। তারপর ওদের ভিতরে যেতে বলি।

১১ টার পর হলুদের কাজ শুরু হলো। শুরুতেই আব্বু আম্মু দুজনে আসলো, আমাকে মিষ্টি খাইয়ে দিয়ে যখন হলুদ মাখতে যাবে তখনই দুজনে কাঁধতে শুরু করলো আমাকে জড়িয়ে ধরে।

আমিও নার্ভাস হয়ে গেলাম। তারপর আয়মান হাকিম ফাহাদ এসে উনাদের সব বুঝিয়ে আবারও পরিস্থিতি ঠিক করলো।

তারপর আয়মান, হাকিম, ফাহাদ, লিমা, সানি, সাদ্দাম একে একে এসে হলুদ মেখে গেলো। আত্নীয় স্বজন সবার হলুদ দেওয়া শেষ শুধু একজন ছাড়া,যে জীবনেও আমাকে হলুদ দিতে পারবে না। সে হচ্ছে আমার ভাই, ভাইয়া বেঁচে থাকলে হয়তো ভাইয়া সবার আগে আমাকে হলুদ দিতো।

ভাইয়ার কথা মনে পরতেই মন টা খারাপ হয়ে গেলো।

আমার মন খারাপ দেখে বন্ধুরা সবাই আসলো….

আয়মানঃ কিরে আপসেট কেন?

আমিঃ এমনি।

হাকিমঃ মামা একটা কাজ কর।

আমিঃ কি?

হাকিমঃ চল তোর বউকে হলুদ দিয়ে আসি।

আমিঃ আরে ধুর জামাই কখনো বউকে হলুদ দিতে দেখেছিস?

ফাহাদঃ আরে ব্যাটা কয়জন জামাই পারবে নিজের বউকে গায়ে হলুদ দিতে। চল এটা হবে অন্যরকম গায়ে হলুদ।

আমিঃ তারপরেও….

হাকিমঃ আরে ব্যাটা এতো কথা বলদ কেন? চলতো,,,

আমিঃ এতো রাতে গাড়ি কোথায় পাবি?

আয়মানঃ গাড়ি লাগবে না, বাইক আছে। আমার টা আর ফাহাদের টা নিলে হয়ে যাবে।

আমিঃ আচ্ছস ঠিক আছে চল।

এরপর বাইক নিয়ে আমি আর হারামি গুলা অবন্তীদের বাসার দিকে রওনা দিলাম। পুরো রাস্তা ফাঁকা, গভীর রাত হওয়ায় রাস্তায় গাড়ি তেমন নেই।

স্পিডে চালিয়ে অবন্তীদের বাসার সামনে চলে গেলাম।

গেইট পার হয়ে ভিতরে গেলাম। চারপাশে কেমন হইচই,আমার এক প্রকার লজ্জাও করতেছে।

হলুদের রাত কোথায় জামাই নিজের বাসায় থাকবে সেটা না করে বউয়ের বাসায় চলে এসেছে। মানুষ কি বলবে আল্লাই জানে।

আমাদের কে দেখে সবাই একটু অবাক হলো। আসলে হওয়ারই কথা, অবন্তীর বাবা এগিয়ে আসলো।

শ্বশুরঃ আরে জুয়েল! বাবা আসো আসো…

হাকিমঃ জুয়েলের অনেক ইচ্ছা হইছে, সে নাকি অবন্তীকে মানে আপনার মেয়েকে হলুদ লাগাবে।

শ্বশুর হাসতে লাগলো, হারমিটা আমাকে জায়গা মতো বাঁশ দিলো।

শ্বশুর সামনে দিয়ে হাটতে লাগলো আর আমরা পিছনে,,,

আমিঃ এই শালা আমি এসেছি নাকি তোরা নিয়ে আসছিস?

ফাহাদঃ ঠিক আছে চল তাহলে তোর হলুদ দেওয়া লাগবে না।

আমিঃ মানে কি! তাহলে নিয়ে আসলি কেন?

হাকিমঃ এই চুপ থাক। আমরা এসেছি ভালো কোনো মেয়ে পাই কিনা সেটা দেখার জন্য।

আমিঃ শালা, এতোক্ষনে তোদের মতলব বুঝেছি। দাঁড়া আমি সবাইকে বলে দিবো।

ফাহাদঃ তাহলে বলবো তুই বাসা থেকে চুরি করে এখানে এসেছিস। কাওকে না জানিয়ে, পিছনের দরজা দিয়ে চোরের মতো বের হয়ে এখানে এসেছিস।

আমিঃ ব্যাল্ক মেইল করছি।

আয়মানঃ এই চুপ থাক। আগে ভিতরে চল।

ভিতরে গেলাম। সবাই অবন্তী কে হলুদ লাগাতে ব্যস্ত। আমাদের কে দেখে একটু টাসকি খেলো।

ভিতরে গিয়ে বসলাম। অবন্তীর হলুদ লাগানো প্রায় শেষ পর্যায়ে। আর কয়েকজন বাকি আছে।

অবন্তীর আত্নীয়রা সবাই এসে আমাদের সাথে কথা বলতে শুরু করলো। যথেষ্ট আপ্যায়ন করা হলো।

অবন্তী আমাকে দেখে বার বার তাকাতে লাগলো। আর অবন্তীর দিক থেকে চোখ অন্য কোথাও ফিরাচ্ছি না। কারন অবন্তীকে অসাধারণ লাগছে।

আমরা গিয়ে কয়েকটা চেয়ার নিয়ে বসলাম। আমাদের কে হলুদ দেওয়ার জন্য ডেকে নিলো।

প্রথমে সাদ্দামকে পাঠালাম, তারপর ফাহাদ, হাকিম, আয়মান সব শেষে আমি।

আমি গিয়ে অবন্তীর পাশে বসলাম। কানে কানে বললাম…..

আমিঃ সারপ্রাইজ টা কেমন দিলাম?

অবন্তী মুছকি মুছকি হাসছে, একটু পর হাকিম এসে আমার কানে কানে বললো….

” বাটির মধ্যে যতো গুলো হলুদ আছে সব গুলো একসাথে মাখবি, যদি একটুও কম হয় তাহলে এখানে চিৎকার দিয়ে এমন বাঁশ দিবো কল্পনাও করতে পারবি না।

আমি পুরা আবুল হয়ে গেলাম। বাকি হারামি গুলোর দিকে তাকালাম ওরা ইশারায় সেটা করতে বললো।

কি করবো বুঝতে পারছি না। এমন সময় অবন্তী একটা মিষ্টি আমার মুখের সামনে তুলে ধরে। আমার দিকে তাকিয়ে মুছকি একটা হাসি দিলো, আমি খেয়ে নিলাম তারপর ওরেও খাইয়ে দিলাম।

তারপর অবন্তী অল্প একটু হলুদ নিয়ে আমার মুখে আর গলায় মেখে দেয়, আমি ওই হারামী গুলোর দিকে তাকালাম। সবাই ইশারায় বলতেছে সব গুলো লাগিয়ে দেওয়ার জন্য।

তারপর আমি অবন্তীকে ইশারায় অন্য দিকে তাকাতে বললাম, সে যখন অন্য দিকে তাকালো। আমি পুরো বাটির হলুদ নিয়ে ওর মুখে মেখে দিলাম। অবন্তী তো পুরা টাসকি খেয়ে গেলো। তারপর অবন্তী ওর মুখ থেকে কতো গুলো হলুদ নিয়ে আমার চোখ, কান গলা আর কোথাও বাকি রাখেনি।

হাকিম, ফাহাদ আর আয়মান আমার কাছে আসলো, তারপর ওরাও আমাকে পুরো শরীরে হলুদ লাগাতে শুরু করলো।

আয়মান আমাকে ডাক দিয়ে সাইডে নিয়ে আসে। গিয়ে দেখি বাকিরাও আছে।

আমিঃ কিরে এখানে নিয়ে আসলি কেন?

আয়মানঃ জুয়েল বন্ধু আরো একটা কাজ বাকি আছে।

আমিঃ আবার কি?

ফাহাদঃ তুই অবন্তীকে কোলে নিয়ে রুমে দিয়ে আসবি।

আমিঃ মানে কি! এতো মেহমানের সামনে ওরে কোলে নিলে সবাই কি বলবে?

হাকিমঃ আরে ব্যাটা লোকে বলুক তাতে তোর সমস্যা কোথায়? তুই তোর বউকে কোলে নিবি।

আমিঃ আরে না এটা হয় না।

ফাহাদঃ হবে হবে, সব হবে।

আমিঃ কেমনে?

হাকিমঃ সবার সামনে গিয়ে বলবো আপনাদের আদরের জামাই এখানে আসার আগে মদ খেয়ে আসছে, যার কারনে এগুলো করতেছে।

আমিঃ মানে কি! সবাই তো জানে আমি ভালোবেসে এগুলো করছি।

ফাহাদঃ তোমার ভালোবাসার উপর একটু পরই ঠাডা পড়বে।

আমিঃ না ভাই এগুলো করিস না। আমার একটা ইজ্জত আছে।

হাকিমঃ তোর ইজ্জতের গুষ্টি গিলাই। যেটা বলছি সেটা কর,,,

আমিঃ তুই অন্তত আমাকে সাপোর্ট দে,, (আয়মানকে)

আয়মানঃ আরে রাখ তোর সাপোর্ট, ওরা যেটা বলেছে সেটাই কর।

আমিঃ এই সাদ্দাইম্মা, তুই অন্তত আমার পক্ষে থাক।

সাদ্দামঃ আমি তোর পক্ষে থাকি আর ওরা সবাই আমাকে মারুক, দরকার নেই ভাই। ওরা যেটা বলেছে সেটাই কর।

পড়ে গেলাম মাইনক্যা চিপায়।

আমিঃ আচ্ছা দাঁড়া! একটু পর।

আয়মানঃ আগে স্টেজে চল।

তারপর আবারও স্টেজের সামনে আসলাম। দেখলাম অবন্তী ওর কাজিন আর বান্ধবীদের সাথে নাচতেছে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি,,,,

আয়মানঃ কিরে তুই নাচবি নাকি?

আমিঃ আর বাঁশ দিস না ভাই, এমনিতে যেগুলো দিছস সারা জীবন মনে থাকবে।

হাকিমঃ এই জুয়েল! মামা এবার যা,,, সবাই বাসায় চলে যাচ্ছে।

আমিঃ একটু পর যাই।

ফাহাদঃ শালা এখন যাবি নাহলে,,,,,

আমিঃ না না ভাই যাচ্ছি।

শালা তোরা বন্ধু নামের শত্রু, এতো সুন্দর করে সাজিয়ে আমাকে বাঁশ দিবে কল্পনাও করিনি।

যাই হোক ৫০০ গ্রাম সাহস নিয়ে অবন্তীর সামনে গেলাম।

সে আমাকে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো “কি”!!

আমি কোনো উত্তর না দিয়ে ওরে একটা টান দিতে কোলে তুলে নিলাম। বিয়ে বাড়ির সবাই তো আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

এদিকে আয়মান, হাকিম, ফাহাদ তালি দেওয়া শুরু করলো, ওদের তালি দেওয়া দেখে বাকিরাও তালি দেওয়া শুরু করলো।

অবন্তী লজ্জায় লাল হয়ে যায়, তারপর আমার বুকে মাথা লুকিয়ে ফেলে। আমি অবন্তীকে কোলে নিয়ে ওর রুমে নিয়ে গেলাম।

খাটের উপর রাখলাম। তারপর আস্তে আস্তে ওর কাছে গেলাম।

অবন্তীঃ ওই কি করো?

আমিঃ কিছু না, জাস্ট একটু!!!

অবন্তীঃ এই না, এখন না। গায়ে হলুদে এগুলো কেউ করে না।

আমিঃ সমস্যা কোথায়, কালকে তো বিয়ে হবেই।

অবন্তীঃ জ্বি না মশাই, কালকেই করিয়েন।

আমিঃ আজকে এখানে থেকে যাই?

অবন্তীঃ কোনো দরকার নেই। আজকে চলে যাও, কালকে তো দেখা হচ্ছেই।

আমিঃ তাহলে একটা আদর দাও।

অবন্তীঃ মাইর খাবা বলে দিলাম। যাও এখন কেউ চলে আসবে, দরজাও খোলা।

আমিঃ দাঁড়াও দরজা লাগিয়ে দিয়ে আসি।

যখন উঠে দরজার কাছে গেলাম। দেখলাম অবন্তীর কাজিনরাই সবাই আসতেছে।

ধুর সবাই জায়গায় আমি ব্যার্থ, অবন্তীর দিকে একরাশ হতাশা নিয়ে তাকালাম সে আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাসছে।

তারপর ওর রুম থেকে চলে আসলাম। বাইরে এসে সবার থেকে বিদায় নিয়ে আবারও আমাদের বাসার দিকে রওনা দিলাম।

আমি বাইকের পেছনে বসে আছি। আয়মান ড্রাইভ করতেছে আর বাকি হারামি গুলা আমারে নিয়া ট্রল করতেছে।

একটা ভালো লাগা কাজ করতে লাগলো। যদিও বাঁশ দিয়েছে কিন্তু আমারই উপকার হয়েছে।

যাইহোক অবশেষে বাসায় চলে আসলাম। এসে ওদের সবাইকে রুম দেখিয়ে দিলাম ঘুমানোর জন্য।

আমি রান্না ঘরে গেলাম, কোথাও হলুদ আছে কিনা দেখার জন্য।

হুম একটা ছোট বাটির মধ্যে অল্প একটু আছে।

আমি ওগুলো নিয়ে বের হয়ে গেলাম। সবাই হলুদ দিয়েছে শুধু একজন ছাড়া। তার কাছেই যাচ্ছি,,,,,

আমি ভাইয়ার কাছে যাচ্ছি। সব কিছু ভুলে গেলেও আমার ভাইয়ার কথা আমি ভুলিনি, এতো আনন্দের মধ্যেও ভাইয়ার শূন্যতা আমি অনুভব করি।

হাটতে হাটতে ভাইয়ার কবরের পাশে গিয়ে বসলাম। কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম, তারপর বলতে শুরু করলাম।

“”” ভাইয়া কেমন আছিস? আমি জানি তুই অভিমান করে আছিস। প্লিজ ভাই অভিমান করিস না। আমি ব্যস্ত ছিলাম তাই আসতে দেরি হয়ে গেছে। কিন্তু বিশ্বাস কর তোর কথা আমার মনে ছিলো।

ভাইয়া তুই তো জানিস আজকে আমার গায়ে হলুদ। সত্যি বলতে আজকে গায়ে হলুদের কোনো কথা ছিলো না। কারন আমার বিয়েটা অনেক আগেই হয়ে গেছে। হুম অনুষ্ঠান ছাড়া হয়েছে, কিন্তু ছোট বেলার ইচ্ছা আর অবন্তীর জন্যই এই অনুষ্ঠান টা করতেছি।

ভাইয়া সবাই তো আমাকে হলুদ দিলো, তুই দিবি না? জানি তুই অভিমান করে আছিস কারণ আমি তোর অবন্তী কে বিয়ে করছি তাই।

কিন্তু বিশ্বাস কর আমি জীবনেও কল্পনা করিনি এমনটা হয়ে যাবে। আমারও ইচ্ছা ছিলো তোর মতো ভালো চাকরি পেয়ে তারপর মেয়ে দেখে বিয়ে করবো।

তোদের পছন্দের মেয়েকেই বিয়ে করবো এটাই ইচ্ছা ছিলো। আমি সব সময় ভাবতাম আমার বিয়েতে তুই কি পরিমাণ ব্যস্ত থাকবি।

তোর মনে আছে ভাইয়া তোর বিয়েতে সবার শেষে আমিই তোকে হলুদ দিয়েছিলাম আর পুরো বাটি দিয়ে দিয়েছিলাম। তুইও আমাকে দিয়েছিলি। তারপর আমাকে জড়িয়ে ধরেই ঘুমিয়েছিস।

আজকে যখন আমি অবন্তীকে পুরো হলুদ মেখে দিলাম তখন অবন্তীর চেহারায় আমি তোকে দেখেছিলাম।

জানিস ভাইয়া আমার বুক ফেটে কান্না আসতে ছিলো কিন্তু কাওকে কিছু বুঝতে দিই নি।

ভাইয়া তুই তো আমাকে হলুদ দিতে যাসনি, তাই আমিই চলে আসছি, দিবিনা ভাইয়া আমাকে হলুদ? দেখ সত্যিই আমি আসছি। নিবি না আমাকে বুকে জড়িয়ে, ডাকবি না জুয়েল বলে। আর একবার ডাকনা ভাইয়া তোর মুখ থেকে আবার জুয়েল ডাকটা শুনতে চাই।

দেনা ভাইয়া আমাকে একটু হলুদ লাগিয়ে, অল্প একটু দে ভাইয়া। আচ্ছা তোর দেওয়া লাগবে না। আমিই তোকে লাগিয়ে দিচ্ছি,,,,,,

তারপর বাটি থেকে হলুদ গুলো নিয়ে কবরের উপরে ভাইয়ার মুখ বরাবর মেখে দিলাম। না পারলাম না আর চোখের পানি ধরে রাখতে। চোখের সামনে সব কিছু ঝাপসা দেখতে লাগলাম।

আমি ভাইয়ার কবরের কাছে বসে আছি এমন সময় আব্বু কল দিলো।

আব্বুঃ কিরে কোথায় তুই?

আমিঃ এই তো বাইরে আসছি।

আব্বুঃ একটু পর ফজরের আজান দিবে, তুই বাইরে কি করিস? তাড়াতাড়ি বাসায় আয়।

আমিঃ আসছি!

কল কেটে দিলো। আমি ভাইয়ার পাশে আরো কিছুক্ষণ বসে রইলাম তারপর উঠে বাসার দিকে হাটতে শুরু করলাম।

কিন্তু মনে হচ্ছে ভাইয়া আমাকে যেতে দিচ্ছে না, পেছন থেকে টানতেছে। আসলেই আমার ভাইয়া আমাকে যেতে দিচ্ছে না।

কারন আমি জানি এখানে আমার ভাইয়া খুব একা, যে ভাই বাসায় থাকতে আমাকে ছাড়া ঘুমাতো না রাতে কোথাও গেলে আমাকে সাথে নিয়ে যেতো। ভুতের ভয়ে বেশি রাতে বাসার বাইরে যেতো না সেই ভাই এখানে একা একা কি করে থাকবে।

আমি স্বার্থপরের মতো হাটা দিলাম। ভাইয়ার কথা যতো মনে পরছে ততোই চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে।

অতঃপর আমি বাসায় চলে আসলাম, বাবার সাথে কথা বলে নিলাম। বাবা হয়তো বুঝতে পেরেছে আমি কোথায় গিয়েছি কারন পাঞ্জাবিতে মাটি লেগে আছে,,, বাবা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো, উনার চোখেও আমি স্পর্শ পানি দেখলাম। তারপর বললো ” যা বাবা, অনেক রাত হয়েছে। ঘুমিয়ে পর”

আমি কোনো কথা না বলে রুমে গিয়ে আয়মানের পাশে ঘুমিয়ে গেলাম।

সকালে ঘুম ভাঙ্গলো অবন্তীর কলে…..

অবন্তীঃ কি ব্যাপার, নতুন জামাই ঘুমাচ্ছে নাকি?

আমিঃ হুম!

অবন্তীঃ ভালো, ভালো! এখন উঠে যাও। অনেক কাজ আছে।

আমিঃ হুম, রেড়ি হবে কখন?

অবন্তীঃ মাত্র উঠলাম, কিছুক্ষণ পর পার্লারে যাবো সেখান থেকে সোজা কমিউনিটি সেন্টারে,,,,

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।

অবন্তীঃ তাড়াতাড়ি উঠে যাও, আব্বু আম্মুকে একটু হেল্প করো।

আমিঃ ওকে।

অবন্তীঃ আচ্ছা রাখি এখন।

অবন্তী কল কেটে দিলো। আমি হারামি গুলার দিকে তাকালাম। একটার শরীর খাটে পা ফ্লোরে, সাদ্দাম হা করে আছে। হাকিমের লুঙ্গি মাথার উপরে উঠে গেছে।

আয়মানের মোবাইলটা নিয়ে সবার একটা ছবি তুললাম। শালারা এতোদিন আমাকে বাঁশ দিয়েছে। এবার দেখ আমি তোদের কিভাবে বাঁশ দিই।

ছবি তুলে ওদের ডেকে দিলাম। আমি চলে গেলাম ফ্রেশ হতে।

বাইরে এসে দেখি সবাই উঠে গেছে, আমি গিয়ে নাস্তা করে আবার রুমে আসলাম। কমিউনিটি সেন্টারে কল দিলাম কি অবস্থা জানার জন্য, সেখানে আব্বু আর মামা আছে। যাক তাহলে আর সমস্যা নাই।

হারামি গুলা এখনো ঘুমাচ্ছে। লাথি দিয়ে সবাইকে তুললাম। ওরা উঠে গেলো। নাস্তা করে নিলো।

লিমা আর সানিকে দেখতেছিনা, তাই কল দিলাম।

আমিঃ কিরে কই তোরা???

লিমাঃ আমরা তো কালকে রাতেই চলে আসছি। তোকে খুঁজেছিলাম। কিন্তু কোথাও পাইনি পরে আংকেল আন্টিকে বলে চলে আসছি।

আমিঃ ও আচ্ছা। তো এখন চলে আয়,,

লিমাঃ নারে আমরা সেন্টারে থাকবো।

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে তাড়াতাড়ি আসিস,,,

হারামি গুলা নাস্তা করে আসলো।

আয়মানঃ জুয়েল!

আমিঃ বল,,

আয়মানঃ তোর তো দুলাভাই নাই?

আমিঃ না কেন?

হাকিমঃ তোরে গোসল দেওয়ার জন্য।

আমিঃ আমার গোসল কেন দুলাভাই দিবে?

ফাহাদঃ আরে বিয়ের গোসল দুলাভাইরা দেয়।

আমিঃ আমারটা আমিই দিবো।

হাকিমঃ চল আমরা দিয়ে দিচ্ছি।

আমিঃ তোরা কেন দিবি?

আয়মানঃ চুপ থাক, চল এখন।

ওরা জোর করে নিয়ে গেলো, তারপর টাউটারি করতে করতে গোসলটা শেষ করলো। রুমে এসে ফাটাফাটি করে রেডি করে দিলো। আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই ক্রাশ খেলাম।

কিছুক্ষণ পর এই হারামি গুলো আমার সামনে এসে হাত পেতে দাঁড়িয়ে আছে।

আমিঃ কিরে কি হইছে?

হাকিমঃ টাকা দে!

আমিঃ কিসের টাকা?

ফাহাদঃ গোসল করালাম যে!

আমিঃ অদ্ভুত গোসল করালে টাকা দিতে হবে নাকি? আমার কাছে কোনো টাকা নাই।

হাকিমঃ টাকা দিবি নাকি জায়গা মতো আমরা তোকে বাঁশ দিবো।

আমিঃ আরে তুই বাঁশ দিবি আমিই তোদের বাঁশ দিবো।

হাকিমঃ তাকি নাকি, দেখি তো তুই কি বাঁশ দিস।

আমি আয়মানের কাছ থেকে মোবাইলটা নিয়ে হাকিমের লুঙ্গি উঠা ছবিটা দেখালাম, ওরা তো হাসতে হাসতে শেষ।

আমিঃ টাকা আর নিবি?

হাকিমঃ…. (মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে)

তারপর সবাই রেড়ি হলো, আমি আর বন্ধুরা সবাই মেহমানদের কে গাড়িতে উঠিয়ে দিলাম।

সবার শেষে আমি আর হারামি গুলা একসাথে গেলাম।

আমি গিয়ে বসে আছি কিন্তু অবন্তীর কোনো খবর নাই, কল দিলাম সে নাকি এখনো পার্লারে।

মেয়েদের এতো কিসের সাজ আল্লাই ভালো জানে।

খাওয়াদাওয়া শুরু হলো, হারামি গুলা আমাকে রেখে খেতে বসে গেলো। ওদের খাওয়া দেখে আমারও খেতে ইচ্ছা করছে কিন্তু দুলা তো খাওয়ার সিস্টেম নাই।

প্রায় ১ ঘন্টা ৩৫ মিনিট পর অবন্তীকে নিয়ে আসলো। আমি ওরে দেখে হা করে তাকিয়ে আছি।

আয়মান এসে একটা টোকা দিয়ে বললো….

আয়মানঃ ওই হা করে না থেকে ওর পাশে গিয়ে বস। যা,,,

আমি গিয়ে ওর পাশে বসলাম, অবন্তী আমার কানের কাছে ওর মুখ এনে বললো..”””এই যে মি. জুয়েল””””

তারপরেই,,,,,,,

চলবে…….
বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড 
http://biddutroy.family.blog
[+] 4 users Like Biddut Roy's post
Like Reply
#71
অসাধারণ সুন্দর একটি গল্প। ধন্যবাদ এমন একটি গল্প উপহার দেওয়া জন্য।
[+] 1 user Likes tonmoy1212's post
Like Reply
#72
চালিয়ে যাও। রোমান্টিক ঘড়ানার গল্প মনে হচ্ছে, খারাপ না। বোঝায় যাচ্ছে আস্তে আস্তে ইরোটিকার দেখা পাবো। দেখবেন ইরোটিকা যেন সম্পূর্ণ রুপে উপস্থাপিত হয়। ধন্যবাদ।
Astroner
[+] 1 user Likes astroner's post
Like Reply
#73
পর্ব-১৫ (শেষ পর্ব)





অবন্তীঃ এই যে মি.জুয়েল!!!

আমিঃ জ্বি ম্যাম বলেন।



অবন্তীঃ তোমার খবর আছে,,

আমিঃ কেন আমি কি করেছি?

অবন্তীঃ তুমি অন্য মেয়ের দিকে তাকাইছো কেন?

আমিঃ আরে আজব আমি কখন তাকালাম।

অবন্তীঃ আমি নিজের চোখে দেখেছি, দাঁড়া বিয়েটা শেষ হোক তারপর তোমার ১২ টা বাজাবো।

আমিঃ ওকে ম্যাম দেখা যাবে! আপনি আমার ১২ টা বাজান নাকি আমি আপনার ১২ টা বাজাই।

অবন্তীঃ হুম দেখবো।

আমিঃ আব্বু আম্মুর ইচ্ছার কথা মনে আছে?

অবন্তী লজ্জায় আরো লাল হয়ে যায় আমি অন্যদিকে তাকিয়ে হাসছি।

একটু পর বড় প্লেটে করে খাওয়ার নিয়ে আসা হলো। আমি অবন্তীকে খাইয়ে দিচ্ছি অবন্তী আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে। আহ! কি এক ভালো লাগা সেটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।

এতো আনন্দ বিয়েতে আগে জানা ছিলো না। খাওয়াদাওয়া শেষ, আমাদের আবার বিয়ে পড়ানো হবে না। কারন আমরা আগে থেকেই স্বামী স্ত্রী।

আগে যেহেতু কালিমা পড়ে আল্লাহকে সাক্ষী রেখে অবন্তীকে বিয়ে করেছি এখন নতুন করে এগুলো লাগবে না। শুধু অনুষ্ঠান টা করে নিলাম।

এরপর শুরু হলো ছবি তোলা, যদিও এর মধ্যে কয়েক হাজার ছবি উঠানো হয়ে গেছে।

ছবি তোলা শেষে আমি আর অবন্তী সবার সাথে কথা বলে নিলাম।

একেবারে শেষ মুহূর্ত অবন্তীকে গাড়িতে তোলা হচ্ছে আমি একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছি। হারামী গুলা আসলো আমার কাছে।

হাকিমঃ জুয়েল! বন্ধু,,,

আমিঃ হুম বল।

হাকিমঃ অবন্তীকে দেইখা রাখিস, বেশি কিছু করিস না।

ফাহাদঃ হুম অবন্তী তোর ভাবি লাগে। সো রেসপেক্ট দিয়ে সব কিছু করবি।

আমিঃ আরে হারামখোর! ভাবি আগে ছিলো এখন তো বউ।

হাকিমঃ তবুও ভাবির দৃষ্টিতে দেখিস।

আমিঃ চুপ থাক হারামি।

আয়মানঃ ওই জুয়েল তুই গাড়িতে যা। অবন্তী উঠে গেছে

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে তোরা অন্য গাড়িতে বাসায় চলে আয়। আসলে দেখা হবে।

আয়মানঃ আচ্ছা ঠিক আছে যা।

তারপর আমি গাড়িতে গিয়ে বসলাম। অবন্তীর সাথে একদম গা লাগিয়ে বসলাম।

অবন্তীঃ ওই আরো দূরে যাও।

আমিঃ কেন সমস্যা কি?

অবন্তীঃ ড্রাইভার আর ওরা দেখতেছে।

আমিঃ দেখকে দেখুক। আমার কি? আমি আমার বউয়ের সাথে কিভাবে বসবো সেটা আমি বুঝবো।

আমি অবন্তীর একটা হাত ধরলাম, ও আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো।

গাড়ি চলছে তার আপন মনে। আমি অবন্তীর হাত ধরে স্বপ্নে হারিয়ে গেলাম।

অনেকক্ষণ পর বাসায় আসলাম। আমার এক খালাতো ভাইয়ের বউ অবন্তীকে কোলে করে বাসায় নিয়ে যায়।

আমি বের হয়ে ড্রেস চেইঞ্জ করে বাইরে চলে আসলাম। তারপর হাকিম, ফাহাদ, আয়মান আর সাদ্দাম ওদের সাথে বাইরে বের হলাম।

রাত ৯.০০ টার সময় সবাই বাসায় আসলাম। এসে খাওয়াদাওয়া করে সবাই ছাদে চলে গেলাম। অনেকক্ষণ আড্ডা দিলাম।

১০.০০ টার দিকে আব্বু ছাদে আসলো।

আব্বুঃ জুয়েল তুই এখানে?

আমিঃ জি আব্বু।

আব্বুঃ এতো রাতে এখানে কি করিস।

আমিঃ এই তো ওদের সাথে বসে আছি।

আব্বুঃ আচ্ছা এবার রুমে যা। অবন্তী অনেকক্ষণ ধরে বসে আছে।

আমিঃ আচ্ছা যাচ্ছি, আপনি নিচে যান আমি আসছি।

আব্বুঃ তাড়াতাড়ি আয়।

আব্বু চলে গেলো। হারামী গুলা আমারে নিয়ে ট্রল করতে শুরু করে দিলো।

হাকিমঃ যা বন্ধু যা। এই যুদ্ধে তুই যেন জয়ী হতে পারিস এ দোয়াই রইলো।

ফাহাদঃ পানি লাগলে আমারে বলিস।

আয়মানঃ সব কিছু ঠিক ভাবে করিস। (মুছকি হেসে)

ফাহাদঃ জুয়েল বন্ধু তোর লাইফটা অনেক দারুণ দুইবার বাসর। তাও আবার একই বউয়ের সাথে।

আমি মনে মনে বললাম ওটা বাসর ছিলো না। আমার লাইফের সবচেয়ে বড় বাঁশ ছিলো।

আমিঃ আচ্ছা তোরা যা। ঘুমিয়ে পড়, আজকে অনেক খাটাখাটি করেছিস।

ফাহাদঃ আরে আমরা কি করেছি করবি তো তুই এখন।

আমিঃ দূর শালা তোদের সাথে কোনো কথাই নাই।

আমি নিচে চলে আসলাম। রুমের সামনে গিয়ে দরজায় হাত দিবো এমন সময় ভাইয়ার কথা মনে পড়ে গেলো।

আজকে তো আমি ভাইয়ার সাথে দেখা করিনি। দরজার সামনে থেকে নিজেকে ঘুরিয়ে নিলাম।

বের হয়ে হাটা দিলাম ভাইয়ার কাছে। ভাইয়ার কবরের পাশে গিয়ে বসলাম।

“ভাইয়া কেমন আছিস। প্লিজ রাগ করিস না আমার আসতে দেরি হয়ে গেলো। তুই আবার এটা ভাবিস না আমি বিয়ে করে তোকে ভুলে গেছি। আরে পাগল তুই সব সময় আমার পাশেই আছিস।

জানিস ভাইয়া আমি যখন বিয়ের পেড়িতে বসেছি তখন চোখের সামনে তোকে দেখতেছি। আমার মনে হচ্ছে তুই আমার বিয়ের সব কাজ করছিস।

ভাইয়া আজকে আমার বাসররাত, তুই থাকলে হয়তো আরো বেশি মজা হতো বিয়েতে। আমি জানি তোর অবন্তীকে আমি বিয়ে করেছি দেখে তুই আমার উপর রাগ করে আছিস। কিন্তু কি করবো বল আমি না করলে অবন্তীর অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে যেতো।

ভাইয়া আমি অবন্তী কে তোর মতো করে ভালো রাখার চেষ্টা করবো। তুই আমার জন্য দোয়া করিস ভাইয়া। “”

এমন সময় অবন্তী কল দিলো। আমি কল কেটে দিলাম, আরো কিছুক্ষণ থেকে তারপর বাসার দিকে রওনা দিলাম। বাসায় ডুকে যেই রুমের দিকে পা বাড়ালাম তখনই লিমা আর সানি আমার পথ আটকিয়ে দাঁড়ালো।

লিমাঃ এই যে মি. জুয়েল! কোথায় যাওয়া হচ্ছে?

আমিঃ তোর ভাবি অনেকক্ষণ ধরে বসে আছে।

লিমাঃ কিন্তু আমাদের পাওনা।

আমিঃ তোর আবার কিসের পাওনা?

লিমাঃ বাহ ভুলে গেলি।

সানিঃ এই যে এতো কষ্ট করে আপনার বাসরঘর সাজালাম। সেটার পাওনা।

আমিঃ লিমা বোন আমার, সানি ভাই আমার আমাকে এখন মাফ করে দে। অন্যদিন ডাবল দিবো।

লিমাঃ জি না মি. এখন মাফ করা যাবে না।

আমিঃ আচ্ছা এই নে। (৫০ টাকা দিলাম)

লিমাঃ এটা কি দিলি?

আমিঃ তোদের বখশিশ।

লিমাঃ ফকিন্নি ৫ হাজারের কমে এক টাকাও নিবো না।

আমিঃ ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন। এটা কি বললি? পুরো বিয়েতেও তো ৫ হাজার খরচ হয়নি। আর বাসর ঘরের জন্য ৫ হাজার দিবো?

সানিঃ জি ভাইয়া, বাসর ঘরটাই তো আসল।

শালা মাইনক্যা চিপায় পড়ে গেলাম। পরে ১ হাজার দিয়ে কোনমতে ভিতরে গেলাম। যাক আল্লাহ বাঁচাইছে।

ভিতরে গেলাম দেখলাম অবন্তী গাল ফুলিয়ে বসে আছে। আমি জানি দেরি করার কারনে এমন ভাবে গাল ফুলিয়ে রাখছে।

আমি ওর সামনে গিয়ে বললাম….

আমিঃ এই সরি সরি।

অবন্তীঃ তোমার কোনো ক্ষমা নাই।

আমিঃ এই সরি বললাম তো। আচ্ছা যাও কান ধরলাম।

অবন্তীঃ উঠবস করো।

আমিঃ এই না প্লিজ এটা করো না।

অবন্তীঃ তাহলে তোমার সাথে কথা নাই।

আমিঃ প্লিজ কথাটা শোনো।

অবন্তীঃ কি শুনবো, এতোক্ষন কোথায় ছিলা?

যদি সত্যিটা বলি, আমি ভাইয়ার কাছে গিয়ে ছিলাম তাহলে অবন্তীর মন খারাপ হয়ে যাবে। হয়তো ভাইয়ার স্মৃতি গুলো মনে পড়ে যাবে তাই বললাম….

আমিঃ আরে ওই হারামী গুলার সাথে ছিলাম আসতে দিচ্ছিলো না। তারপর এখানে আসার সমন লিমা আর সানি আক্রমণ করে। সব কিছু ঠিকঠাক করে আসতে একটু সময় লেগে গেছে। প্লিজ এবারের মতো মাফ করে দাও আর হবে না।

অবন্তীঃ মনে থাকে যেন। এবার রুমের বাইরে যাও।

আমিঃ বাইরে কেন?

অবন্তীঃ আমি কাপড় চেইঞ্জ করবো।

আমিঃ তো আমার সামনে করলে সমস্যা কি?

অবন্তীঃ তুমি বাইরে যাবে নাকি মাইর খাবে।

আমিঃ আচ্ছা বাবা যাচ্ছি।

বাইরে চলে এলাম। প্রায় ১০ মিনিট হবে কিন্তু এখনো দরজা খুলছে না। আমি কল দিলাম,,,

আমিঃ এই কি হলো!

অবন্তীঃ আর ২ মিনিট।

ধুর বাসরঘর এমন হয় নাকি। বিরক্ত লাগছে। আরো ৭ মিনিট মোট ১৭ মিনিট পর অবন্তী দরজা খুলে দিলো।

আমি ভিতরে গেলাম। অবন্তী পাশে গিয়ে বসলাম। একটা হালকা নীল রঙ্গের শাড়ী পড়ে নিলো একটু অন্যরকম লাগছে।

অবন্তীঃ এই তোমার অজু আছে?

আমিঃ ছিলো বাট এখন নেই।

অবন্তীঃ যাও অজু করে আসো।

আমি ওয়াশরুমে গিয়ে অজু করে নিলাম।

যখন অবন্তীর সামনে আসলাম তখন অবন্তী পা ছুঁয়ে সালাম করতে যাবে এমন সময় আমি ওর হাত ধরে ফেললাম। ওরে বুকে জড়িয়ে বললাম।

আমিঃ তোমার জায়গা পায়ে নয়, আমার এই বুকে।

অবন্তীঃ আসো ২ রাকাত নামাজ পড়ে নিই।

আমিঃ হুম।

তারপর দুজনে নামাজ পড়ে নিলাম। আমি গিয়ে খাটের উপর বসলাম, অবন্তীও আমার পাশে এসে বসলো।

আমিঃ এই আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।

অবন্তীঃ মাইর দিবো। আজকে ঘুমটুম কিছু হবে না। আজকে সারা রাত গল্প করবো।

আমিঃ এতো গল্প কোথায় থেকে আসবে?

অবন্তীঃ চুপচাপ শুনতে থাকো।

আমিঃ এইভাবে গল্প শুনে মজা নাই।

অবন্তীঃ তো কিভাবে শুনবে।

আমিঃ এই যে মনে করো আমি কারো কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকবো আর সে আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে গল্প করবে।

অবন্তী মুছকি হাসলো, আমি ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে গেলাম। আর অবন্তী আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে আমাদের ভবিষ্যৎ এর স্বপ্ন গুলো বলতে শুরু করলো।

অনেকক্ষণ পর আমি উঠলাম। তারপর অবন্তীর একটা হাত ধরে বললাম।

আমিঃ মনে আছে।

অবন্তীঃ কি?

আমিঃ আব্বু আম্মুর ইচ্ছে!!!

অবন্তীঃ এই জুয়েল না একদম না।

আমি অবন্তীর কোনো কথা না শুনে ওর হাত ধরে একটা টান দিলাম, সাথে সাথেই আমার সামনে চলে আসলো। আমি একটু একটু আগাচ্ছি আর অবন্তী পিছাচ্ছে। ওর ঠোট গুলো কাঁপতেছে। আমি আস্তে আস্তে ওর মুখের কাছে গেলাম। তারপর চার ঠোট এক হয়ে গেলো। দুজনেই হারিয়ে গেলাম অন্য এক জগতে। শুরু হলো আমাদের নতুন জীবনের নতুন অধ্যায়,,,,,

****** ৫ বছর পর ******

অনাঃ আব্বু, এই আব্বু উঠো। অফিসে যাবে না?

আমিঃ না মা আজকে অফিসে যাবো না। তোমাদের নিয়ে ঘুরতে যাবো।

অনাঃ ও কি মজা কি মজা। আচ্ছা আব্বু কোথায় যাবে?

আমিঃ সেটা নাহয় পরে বলবো। তোমার আম্মু কোথায়?

অনাঃ আম্মু তো নাস্তা রেড়ি করছে। তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো।

আমিঃ ওকে মামুনি। তুমি যাও আমি আসছি।

ফ্রেশ হতে হতে আপনাদের কাহিনী টা বলে দিই। এই যে একটু আগে যে কথা বললো সে হচ্ছে আমার মেয়ে অনা। হুম, আমাদের কন্যা সন্তান হয়েছে। অনার চেহারাটা ভাইয়ার সাথে প্রায় মিল। ওর মধ্যেই আমরা ভাইয়াকে খুঁজে পাই।

এই ৫ বছরে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে গেছে। আমি আর অবন্তী একসাথে মাস্টার্স কমপ্লিট করি, তারপর আমি আগের অফিস মানে লিমাদের ওখান থেকে ভালো একটা অফিসে ম্যানেজার পদে চাকরি পাই।

ইচ্ছা ছিলো লিমাদের ওখানেই থেকে যাবো। আমাদের বিয়ের কিছুদিন পর লিমারও বিয়ে হয়্র যায় সানির সাথে। তারপর তারা দেশ ছেড়ে চলে যায়। লিমার কোনো ভাই বোন না থাকায় তার আব্বু কোম্পানি বিক্রি করে লিমার ওখানেই চলে যায়। আমি অন্য একটা কোম্পানিতে চাকরি নিই।

আয়মানও খুব ভালো একটা চাকরি পেয়েছে তবে আফসোস আমার ফ্রেন্ডটা আমার সাথে নেই। চাকরীর কারনে দুইজন দুই প্রান্তে। কিন্তু সব সময় কথা হয়। আর হাকিম ফাহাদ সাদ্দাম ওরাও চাকরি করে বিয়ে সাদি করে যে যার মতো সেটেল। মাঝেমধ্যে কথা হয়।

আমার আর অবন্তীর সম্পর্কটা আরো গভীর হয়, ভালোবাসা দিনে দিনে অনেক বেড়ে যায়।

ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে গেলাম। আমি আব্বু আম্মুকে রেড়ি হতে বললাম। উমারা সবাই রেড়ি হলো।

তারপর নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করে উনাদেরকে ঘুরানোর জন্য নিয়ে গেলাম।

আসলে আমি ভাইয়ার কাছে যাচ্ছি। আমি গাড়ি নিয়ে সোজা ভাইয়ার কবরের পাশে গেলাম।

আমরা সবাই গাড়ি থেকে নামলাম, নেমে ভাইয়ার কবর জিয়ারত করলাম। অনা বললো…

অনাঃ আব্বু এখানে কি?

আমিঃ এখানে তোমার বড় আব্বু আছে।

অনাঃ উনাকে বলো না আমাদের সাথে ঘুরতে বের হতে!

আমিঃ হুম আম্মু বলেছি। রাতের বেলা আমাদের বাসায় আসবে।

আব্বু আম্মু আর অবন্তীর দিকে তাকিয়ে দেখি ওদের চোখে পানি এসে গেছে। হয়তো ভাইয়া থাকলে আমাদের ফ্যামিলিটা আরো সুন্দর হতো। আজকে সব আছে আমার। টাকা আছে, সুখ আছে, ফ্যামিলি আছে, সম্মান আছে কিন্তু নেই শুধু আমার কলিজার ভাইটা।

যদি আমার জীবনের বিনিময়ে ভাইয়াটা আবার ফিরে আসতো তাহলে হাসতে হাসতে জীবনটা দিয়ে দিতাম। নিজেকে সান্তনা দিতাম আমার ভাই, আমার কলিজা আবার ফিরে এসেছে আমাদের মাঝে। কবর থেকে হয়তো আমার ভাই বলতেছে “জুয়েল কাঁদিস না ভাই, আমাদের আবার দেখা হবে, খুব শীগ্রই দেখা হবে। ইহকালে না হোক পরকালে দেখা হবে। তখন আমরা আবার একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঘুরবো। কাটাবো অনেকটা সময় তোর কাছে। বসবো দুজন একসাথে। ভালো থাকবি সব সময় দেখে রাখবি আব্বু আম্মুকে আর সুখে রাখবি আমার মামুনি অনাকে সাথে তোর অবন্তীকে।

ভাই-ভাই সম্পর্কটা থাকবে চিরকাল অটুট হয়ে।

****** সমাপ্ত ******
বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড 
http://biddutroy.family.blog
[+] 6 users Like Biddut Roy's post
Like Reply
#74
shesher line gulo khub emotion kora dilo.....thanks.....
Aro chai......waiting for next story....like this...
[+] 2 users Like nightangle's post
Like Reply
#75
awesome Heart
[+] 1 user Likes snigdhashis's post
Like Reply
#76
Heart 
অসাধারণগল্প ও তার প্লঅট। ভাই আপনার লিখা দারুন। আরো নতুন সূচনা চাই।
[+] 1 user Likes Jholokbd1999's post
Like Reply
#77
অনেক সুন্দর গল্প।
[+] 1 user Likes premik25's post
Like Reply
#78
nice ending
[+] 1 user Likes kabir5khan's post
Like Reply
#79
এই ধরনের গল্প আরো চাই
[+] 1 user Likes Chiranjib130279's post
Like Reply
#80
দারুন হয়েছে গল্পটা।।।
[+] 1 user Likes Dinu123's post
Like Reply




Users browsing this thread: 2 Guest(s)