Thread Rating:
  • 20 Vote(s) - 3.35 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance ভাবি যখন বউ (সম্পূর্ণ)
#1
Heart 
রোমান্টিক প্রেমের গল্প।  এখানে কোন ইরোটিক কিছু নেই।
বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড 
http://biddutroy.family.blog
[+] 2 users Like Biddut Roy's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#2
গল্পঃ ভাবি যখন বউ

লেখক -জুয়েল

পর্ব_০১


হঠ্যাৎ করেই বিয়েটা হয়ে গেলো। আজকে যে আমার বিয়ে হবে সেটা আমি আজকে সকালেও ভাবিনি, কি থেকে কি হয়ে গেলো নিজেও জানি না। সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হলো যার সাথে আমার বিয়েটা হয়েছে সেটা আর কেউ নয়, আমার ভাবি। হুম আমার আপন বড় ভাইয়ের বউ। যাকে আজকে সকালেও আমি ভাবি বলে ডেকেছি কিন্তু এখন আমার বউ।

এখন দাঁড়িয়ে আছি বাসার ছাদের উপর, আর ভাবি মানে আমার বউ বাসর ঘরে অপেক্ষা করছে আমার জন্য।

কিছু বুঝতেছেন না তো? চলেন পুরো বিষয় টা আপনাদের বুঝিয়ে বলি,,,,,,

আজ থেকে প্রায় ১ বছর আগে ভাবির আর ভাইয়ার বিয়ে হয়, খুব সুন্দর দিন যাচ্ছিলো। ভাইয়া ইটালি থাকতো, আমি আম্মু আব্বু বাড়িতে থাকতাম, আমি তখন অনার্স ৩য় বর্ষের স্টুডেন্ট ছিলাম। ভাইয়া আর আমার সম্পর্ক ছিলো বন্ধুর মতো।

দুজনে খুবই ক্লোজ ছিলাম, বাবার একটা দোকান ছিলো, ভাইয়া ইটালি যাওয়ার পর বিক্রি করে দিয়েছে কারণ ভাইয়ার নিষেধ ছিলো বাবা যেন আর কোনো কাজ না করে, এভাবেই আমাদের দিন যাচ্ছিলো। আমিও বন্ধুবান্ধব, পড়ালেখা, আড্ডা এসব নিয়েই অসাধারণ লাইফ কাটাচ্ছিলাম। একটা ঝড় এসে আমাদের এই সুখি লাইফটাকে তছনছ করে দিয়েছে।

ভাইয়া বিদেশ থেকে বাড়িতে আসলো, আমরা ভাইয়ার জন্য মেয়ে দেখতে শুরু করে দিলাম। যদিও ভাইয়া বিয়ের জন্য রেড়ি ছিলোনা তবুও আব্বু আম্মুর জোরাজোরিতে রাজি হয়ে গেলো। অনেক গুলো মেয়ে দেখার পর একটা মেয়েকে ভাইয়ার জন্য আমরা পছন্দ করি। মেয়েটা দেখতে অসাধারণ, ,,

প্রথম দেখায় যে কারো পছন্দ হয়ে যাবে। ভাইয়ার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম কিছু হয়নি। ভাইয়াও মেয়েটা পছন্দ করে ফেললো। মেয়েটা আমার সাথেই পড়তো, অর্থাৎ অনার্স ৩য় বর্ষে। শুধু ক্যাম্পাসটা ভিন্ন ছিলো। নাম হচ্ছে অবন্তী।

দুই ফ্যামিলির সম্মতিতে মহা ধুমধামে ভাইয়ার বিয়েটা হয়ে গেলো।

ভাইয়া আর ভাবির আন্ডারেস্টিং টা ছিলো অসাধারণ, দুজন দুজনকে অল্প দিনেই অনেক ভালোবেসে ফেললো সেটা উনার হাবভাব দেখলেই বুঝা যায়।

বিয়ের পরে ভাইয়া ভাবিকে নিয়ে অনেক ঘুরাফেরা করলো,, আমিও ভাবির সাথে অনেক মস্করা করতাম, ভাবি সব ক্লোজ ভাবে নিতো।

ভাবিও অল্প দিনে আব্বু আম্মুর মন জয় করে নিলো, আম্মু নিজের হাতে ভাবির মাথায় তেল দিয়ে দেয়, রান্না শিখায়।

আব্বু আর আম্মু ভাবিকে কখনো ছেলের বউ হিসেবে দেখেনি। নিজের মেয়ের মতোই দেখেছে। ভাবির আব্বু আম্মুকে নিজের বাবা মায়ের মতোই সেবাযত্ন করতো, সব কিছুতে হেল্প করতো।

ভাবি বাসায় আসার পর থেকে যেন বাসাটা অন্যরকম হয়ে গেলো, খুব সুন্দর ভাবে আমাদের দিন যাচ্ছিলো।

বিয়ের দুই মাস পরে ভাইয়ার ছুটি শেষ, তাই আবারও ইটালি চলে যেতে হবে। যদিও ভাইয়ার যাওয়ার মতো মন মানসিকতা ছিলো না। কারণ নতুন বিয়ে করেছে আরো কিছু দিন থাকার ইচ্ছা ছিলো বাট নিজের ক্যারিয়ার ফ্যামিলির কথা চিন্তা করে ভাইয়া ইটালি চলে গেলো।

ভাইয়া চলে যাওয়ার প্রতিদিনই আমাদের সবার সাথে কথা হতো, আমি এটাওটা বলে ভাইয়াকে খেপাতাম। এভাবে কিছু দিন চলে যায়।

একদিন আমি কলেজ থেকে বাসায় আসছি এমন সময় একটা বিদেশি নাম্বার থেকে কল আসে, আমি ভেবেছিলাম ভাইয়া কল দিয়েছে। কিন্তু না, আমি কলটা রিসিভ করলাম….

আমিঃ হ্যালো ভাইয়া, কেমন আছিস?

কিন্তু ওপাশ থেকে অন্য একটা লোক বললো….

লোকঃ আমি আপনার ভাই না। আপনার নাম কি জুয়েল???

আমিঃ হুম, আমিই জুয়েল বাট আপনি কে? আমাকে কিভাবে ছিনেন?

লোকঃ আমি তোমার ভাইয়ের বন্ধু, একসাথেই কাজ করি। আমার নাম রহিম,,,,,

আমিঃ ও আচ্ছা। তো ভাইয়া কেমন আছে?

রহিমঃ……… (চুপ)

আমিঃ কি ব্যাপার চুপ করে আছেন কেন? ভাইয়া কেমন আছে?

রহিমঃ তোমার ভাই,,,

আমিঃ হুম আমার ভাই কি? কি হয়েছে ভাইয়ার?

রহিমঃ তোমার ভাই আর বেঁচে নেই!

কথাটা শুনার সাথে সাথেই আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যেতে লাগলো, আমি নিজেকে আর সামলাতে না পেরে মাটিতে বসে পড়ি। চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসলো,,,,,

আমিঃ কি বলছেন, এটা হতে পারে না। আমি সকালেও ভাইয়ার সাথে কথা বলেছি। (কাঁদতে কাঁদতে)

রহিমঃ হুম ঠিকই বলছি, কিছুক্ষণ আগে তোমার ভাই ডিউটিতে যাচ্ছিলো, প্রতিদিন আমি আর তোমার ভাই একসাথেই কাজে যেতাম কিন্তু আজকে আমার সিপ্ট সকালে ছিলো আর তোমার ভাইয়ের রাতে। একটু আগে বাস উলটে তোমার ভাই সহ ওই কোম্পানির প্রায় ১৩ জন মারা যায়। বাকিদের অবস্থাও খুব ভালো না।

আমিঃ না আমার বিশ্বাস হয়না। আপনি ভালো করে দেখেন, আমার ভাইয়ের কিছু হয়নি।

রহিমঃ দুই দিনের মধ্যে লাশ দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

এ কথা বলেই রহিম ভাই কলটা কেটে দিলো। আমি যেন পাথর হয়ে গেলাম। মুখ দিয়ে কোনো কথা আসছে না।

আমি আব্বু আম্মুকে কি জবাব দিবো? কি বলে বুঝাবো ভাবি কে? মাত্র দুই মাস পরে বিধবা হয়ে গেছে এটা শুনলে ভাবির কি অবস্থা হবে? আব্বু আম্মুকে যদি বলি তোমাদের বড় সন্তান আর নেই কি হবে উনাদের?

নাহ আমি আর কিছু ভাবতে পারছিনা। মাথাটা ঘুরতেছে। তাড়াতাড়ি বাসায় যাই,,,,

একটা রিক্সা নিয়ে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে গেলাম।

কলিং বেল দেওয়ার একটু পর ভাবি এসে দরজা খুলে দেয়।

ভাবিঃ কি ব্যাপার, আজকে আমার দুষ্টু দেবরটা এতো তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসছে কেন? নিশ্চই কলেজ ফাঁকি দিয়েছে।

ভাবির কথা শুনে আমার ভিতরটা আবারও মোছড় দিয়ে উঠলো, আমি কোনো কথা না বলে নিজের রুমে চলে গেলাম। দরজা লাগিয়ে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম, পানি ছেড়ে দিয়ে ইচ্ছামতো কাঁদতে লাগলাম,,,

অনেকক্ষণ পর বের হলাম, ভাবি আমার রুমের দরজায় টোকা দিতে লাগলো,,,,,

ভাবিঃ কি ব্যাপার দেবর সাহেব, মন খারাপ কেন? কি হয়েছে?

মনে মনে বললাম কি হয়েছে সেটা যদি শুনেন তাহলে আপনি নিজেকে স্থির রাখতে পারবেন না। ভাবি যেন কিছু না বুঝে সেজন্য বললাম,,,

আমিঃ কিছু না,,,

ভাবিঃ না না, কিছু তো একটা হয়েছে। চোখমুখ লাল কেন,,,

আমিঃ বললাম তো ভাবি কিছু হয়নি।

ভাবিঃ আচ্ছা খেতে চলো, আব্বু আম্মু বসে আছে।

আমিঃ আপনারা খেয়ে নেন, আমি খাবো না।

ভাবি কিছু একটা বলতে চেয়েছিলো কিন্তু আমি তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম।

যেখানেই যাই ভাইয়া স্মৃতি গুলো মনে পড়তে লাগলো, মনে হচ্ছে ভাইয়া আমার পাশে গল্প করতেছে।

নিজেকে কোনো ভাবেই শান্তনা দিতে পারতেছিনা।

রাতের বেলা রুমে বসে বসে ভাইয়ার ছবি গুলো দেখতেছি আর চোখ দিয়ে পানি ঝরতেছে, এমন সময় আম্মু আমার রুমে আসলো,,,,

আম্মুঃ কিরে কি করিস?

আমিঃ কিছু না,,,

আম্মুঃ কাঁদতেছিস কেন?

আমিঃ কই না, মনে হয় চোখে কিছু একটা পড়েছে।

আম্মুঃ মিথ্যা বলবি না। তোর হাতে কার ছবি।

আম্মু ছবি গুলো আমার হাত থেকে নিয়ে দেখে আমার আর ভাইয়ার ছবি, তারপর বলে।

আম্মুঃ ভাইয়ের কথা মনে করে কাঁদতেছিস?

আমি আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলাম,,,

আম্মুঃ এই হঠ্যাৎ করে তোর কি হলো?

আমিঃ কিছু না, ভাইয়াকে খুব মিস করতেছি।

আম্মুঃ পাগল একটা, ওরে কল দিয়ে কথা বল। ও আচ্ছা ভালো কথা সকাল থেকে তোর ভাই কল দেয়নি, অবন্তী নাকি কল দিয়েছিলো বার বার মোবাইল অফ পাচ্ছে। তুই একটু দেখতো।

আমি হ্যা সূচক মাথা নাড়ালাম। তারপর আম্মু রুম থেকে চলে আমি আবারও ছবি গুলো দেখতে লাগলাম।

এভাবে দুই দিন চলে গেলো, আম্মু আব্বু ভাবি সবাই অনেক টেনশন করতেছে, ভাইয়ার কোনো খবর নাই। আমি জেনেও উনাদের কিছু বলতে পারছিনা।

পরের দিন, একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল আসে,,,,

আমিঃ হ্যালো!

লোকঃ আপনার নাম কি জুয়েল?

আমিঃ জ্বি! আপনি কে?

লোকঃ আমি কাস্টমস থেকে বলতেছি, আপনার ভাইয়ের লাশ এসেছে। এসে নিয়ে যান,,,,,

আমি আর কোনো কিছু না বলে দৌড় দিলাম, একটা গাড়ি নিয়ে তাড়াতাড়ি এয়ারপোর্ট গেলাম, দেখলাম অনেক গুলো লাশ একসাথে শুয়ে রাখছে। দেখেই ভিতরটা কেঁদে উঠলো।

তারপর কয়েকজন পুলিশ লাশ গুলোকে পোস্টমর্টেম করার জন্য লাশবাহি গাড়িতে উঠিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেলো।

অনেক রিকুয়েস্ট করার পরও ওরা আমাদের কারো কথা শুনলো না। পুলিশের পিছে পিছে হাসপাতালে গেলাম, অনেকক্ষণ ধরে হাসপাতালে বসে আছি।

চারপাশে অন্যান্য লোক গুলো কেঁদেই যাচ্ছে,,, আমারও চোখ দিয়ে পানি ঝরতেছে। এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে আমার ভাই আর বেঁচে নেই।

তারপর প্রত্যেকটা লাশ তাদের আত্নীয়দের নিকট দিয়ে দেওয়া হচ্ছে, আমি ভাইয়ার লাশের পাশে দাঁড়িয়ে রইলাম। ভাইয়ার চেহারার দিকে তাকিয়ে আছি।

দেখে মনে হচ্ছে আমার ভাইটা এখনো হাসতেছে, কিছুই হয়নি। কি সুন্দর ঘুমাচ্ছে আমার ভাই,,,,

আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে কাঁদতেছি এমন সময় কেউ একজন কাঁধের উপর হাত দেয়, ঝাপসা চোখে তাকিয়ে দেখি একজন ডাক্তার,,,

ডাক্তারঃ লাশ বেশিক্ষণ উপরে রাখা ঠিক হবে না, মেডিসিন দেওয়া উনাদের শরীরে। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব দাফনের ব্যবস্থা করেন।

আমি আর কিছু বললাম না, হাসপাতাল থেকে একটা এম্বুলেন্স নিয়ে ভাইয়ার লাশটা উঠালাম, গাড়ি তার আপনমনে চলতেছে, আমি আব্বু আম্মু আর ভাবিকে কি জবাব দিবো?

তারপর এম্বুলেন্স আমাদের বাসার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো, এম্বুলেন্স এর আওয়াজ শুনে আব্বু, আম্মু, ভাবি সহ আশেপাশের সবাই বাইরে আসলো, আমাকে নামতে দেখে সবাই একটু অবাক হলো।

আমি এম্বুলেন্স এর পেছনের দরজাটা খুলে ভাইয়ার লাশটা বের করলাম, আম্মু আব্বু, ভাবি সবাই এগিয়ে আসলো।

আব্বুঃ কিরে এম্বুলেন্স কেন? আর এটা কার লাশ?

আমি কোনো কথা না বলে ভাইয়ার মুখের উপর থাকা সাদা কাপড়টা সরিয়ে দিলাম।

তারপরেই…….

#চলবে……..
বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড 
http://biddutroy.family.blog
[+] 1 user Likes Biddut Roy's post
Like Reply
#3
khalato bon er por vabi khub valo khub valo . golpo guli porte valoi lage . repu dilam
[+] 2 users Like gang_bang's post
Like Reply
#4
Thanks abar suru korar jono......waiting for next update
[+] 1 user Likes nightangle's post
Like Reply
#5
অপেক্ষায় আছি।
[+] 1 user Likes buddy12's post
Like Reply
#6
পর্ব_০২



আমি আর কোনো কথা না বলে ভাইয়ার মুখের উপর থাকা সাদা কাপড়টা সরিয়ে দিলাম।

ভাইয়াকে দেখে আম্মু একটা চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়, বাবা এসে জড়িয়ে ধরে। ভাবি ঠাস করে বসে যায়।

অঝোর ধারায় সবাই কান্না করতে থাকে। এরপর ভাইয়ার কাফন দাপন শেষ হয়, আমি আর বাবা অনেক সময় ভাইয়ার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম, বাবা বাসায় আসতে চায়নি। একসময় আমি জোর করে বাসায় নিয়ে আসি।

বাসায় আসার পর ভাবি আর আম্মু আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না করে, আমিও নিষেধ করিনি।

আমি স্ট্রং ছিলাম, কারণ আমিও যদি ভেঙ্গে পড়ি ফ্যামিলির কেউই হয়তো ভালো থাকবে না।

সেদিন থেকে আমাদের পরিবারের মুখের হাসি টা উড়ে গেলো। ভাবি একদম স্তব্ধ হয়ে যায়।

ভাইয়া মারা যাওয়ার পর ফ্যামিলিতে ক্রাইসিস শুরু হয়, কারণ আগে ভাইয়ার টাকা দিয়েই সব খরচ হতো। আব্বুর দোকানটাও বিক্রি করে দিছে।

আর আব্বুর এখন যে অবস্থা তার দ্বারা কোনো কাজ করা পসিবল না। বাধ্য হয়ে আমি নেমে গেলাম জীবন যুদ্ধে।

অনার্স টা শেষ না করার কারনে ভালো কোনো চাকরি পাইনি,একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি নিই।

আমার কাজ হচ্ছে বাজারের প্রত্যেকটা দোকানে গিয়ে কার কি মাল রাখবে সেটা লিখে এনে মাল গুলো আবার পৌঁছে দেওয়া। যাকে বলা হয় এস আর,,,

ভাইয়ার কথা খুব মনে পড়তো, কতো কষ্ট করে ভাইয়া টাকা ইনকাম করতো এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।

বেতন ছিলো কম, মাত্র ৮ হাজার টাকা। যেটা দিয়ে ফ্যামিলি কোনোমতে চললেও আব্বু আম্মুর মেডিসিন কেনা প্রায় অসম্ভব।

তাই বন্ধুদের বলে কয়েকটা টিউশনি নিয়ে নিলাম।

সকাল ৬ টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত আমার এই যুদ্ধ চলতে থাকে। নিজের পড়ালেখা প্রায় শেষ করেই দিলাম, কিন্তু ভাবিরটা কন্টিনিউ রাখলাম।

এরমাঝে ভাবির বাবা মা অনেক বার এসেছে আমাদের বাসায় ভাবিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু আব্বু উনার হাত ধরে অনেক রিকুয়েস্ট করে ভাবিকে রেখে দেয়।

ভাবিকে এতো ভালোবাসতো যে অন্য কারো ঘরে পাঠানোর চিন্তাও আব্বু আম্মু করতো না।

সেদিন আমি কাজ শেষ করে টিউশনি করিয়ে বাসায় আসলাম, রুমে গিয়ে চেইঞ্জ করে নিলাম তখন বাবা আমার রুমে আসলো….

আমিঃ আরে আব্বু! আসো ভিতরে আসো।

বাবাঃ আমার পাশে বস,,,,

আমি গিয়ে বাবার পাশে বসলাম,,,, বাবা আমার হাত ধরে বললো….

বাবাঃ তোর খুব কষ্ট হচ্ছেরে?

আমিঃ আরে ধুর এগুলো কি বলো?

বাবাঃ তোর জন্য আমরা কিছুই করতে পারিনি, তুই আমাদের মাফ করে দিস।

আমিঃ আব্বু তুমি কি পাগল হইছো, এগুলো কি বলো। আমার ফ্যামিলি আমি না দেখলে কে দেখবে? আর আমার কোনো কষ্ট হচ্ছে না।

বাবাঃ অবন্তীর বাবা আসছিলো।

আমিঃ হুম কি বললো?

বাবাঃ ওরে নিয়ে যেতে চায়, এভাবে নাকি দিন যায় না।

আমিঃ তুমি কি বললে?

বাবাঃ আমি তো বলে দিয়েছি আমি আমার মেয়েকে জীবনেও দিবো না।

আমিঃ ও আচ্ছা।

বাবাঃ বেয়াই যদি আবার আসে?

আমিঃ আসবে না, টেনশন করার দরকার নেই।

বাবাঃ তোর কাছে কিছু টাকা হবে? (করুনার সুরে)

আমিঃ এভাবে কেন বলো? কত টাকা লাগবে সেটা বলো।

বাবাঃ অবন্তীর বই নাই, বই কিনতে হবে তাই।

আমি মানিব্যাগ চেক করে দেখলাম মাত্র ৫৭৬ টাকা আছে, যেটা আমার পুরো মাসের পকেট ও যাতায়াত খরচ। এটা যদি দিয়ে দিই তাহলে পুরো মাস পায়ে হেটে কাজ করতে হবে।

ধুর এতো কিছু চিন্তা করে লাভ নেই, পুরো টাকাটা বাবা হাতে দিয়ে দিলাম।

বাবা টাকা হাতে নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে নিজের রুমে চলে গেলো।

পরের তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলাম কেননা আমাকে পায়ে হেটে যেতে হবে, গাড়ি ভাড়া নাই।

তাই তাড়াতাড়ি উঠে রওনা দিলাম। তারপরও অফিস পর্যন্ত যেতে ২০ মিনিট দেরি হয়। বস ইচ্ছা মতো ঝাড়ি দিলো। তারপর গত কালকে রে মাল গুলোর রিসিট কেটে নিয়ে আসছি সেগুলো দোকানে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটা কভার ভ্যান নিয়ে রওনা দিলাম।

অন্য একজন ভ্যান চালাচ্ছে আমি পিছন দিক থেকে ধাক্কা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। হাতে অনেক গুলো মালের সেম্বল,,,

একটা দোকানে মাল দিয়ে আসার পথে ভাবিকে দেখলাম অনেক গুলো মেয়ের সাথে, মনে হয় ক্লাস শেষ করে বাসায় যাচ্ছে। ভাবির চোখ দেখেই চিনে ফেললাম যে এটা ভাবিই হবে।

আমি তখন ভ্যান ঠ্যালতেছি। ভাবি আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, আমি উনার চোখে স্পর্শ পানি দেখলাম। আমি ভাবিকে দেখেও না দেখার ভান ধরে চলে গেলাম।

এভাবেই আমাদের দিন যাচ্ছে। বাস্তবতা কি জিনিষ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।

আজকে শুক্রবার, চাকরি টিউশনি সব কিছুই বন্ধ। তাই ঘুমিয়ে আছি, অনেক ধরে ঠিক মতো ঘুমাতে পারি না।

ভাবি আমার রুমে আসলো,,,,

ভাবিঃ জুয়েল! এই জুয়েল,,,,

আমিঃ আরে ভাবি আপনি কখনো আসলেন?

ভাবিঃ এই তো একটু আগে, অনেক বেলা হইছে এবার ঘুম থেকে উঠো।

আমিঃ হুম উঠতেছি, আসলে শরীরটা কেমন যেন ব্যাথা করতেছে, তাই ঘুমটা একটু বেশিই হলো।

ভাবিঃ তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না?

আমিঃ আরে ধুর এগুলো কি বলেন, আমি তো সুন্দর লাইফ
কাটাচ্ছি। কোনো প্রবলেম হচ্ছে না।

ভাবিঃ আমি দেখেছি কেমন সুন্দর লাইফ কাটাচ্ছো।

আমিঃ আচ্ছা আপনার পড়ালেখার কি অবস্থা? (কথা ঘুরিয়ে নিলাম)

ভাবিঃ মোটামুটি তুমি আর পড়বে না?

আমিঃ দেখি কি করা যায়, কলেজে যাওয়ার মতো তো সময় নাই। পরীক্ষাটা দিবো। যদি কপালে পাশ লেখা থাকে তাহলে তো আলহামদুলিল্লাহ্‌,,,,

ভাবিঃ হুম, আসো খেয়ে নাও।

আমিঃ আপনি যান, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

তারপর ভাবি চলে গেলো, আমি ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নিলাম।

এভাবেই আমাদের দিন যাচ্ছিলো, এমন একটা লাইফ কাটাচ্ছি যেটাতে নিজের স্বাধীনতা বলে কিছু নাই। পরিবারের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে সব ত্যাগ করতে হয়।

একদিন খেয়াল করে দেখলাম মায়ের শাড়ি গুলো সব পুরাতন হয়ে গেছে, ভাবিও প্রতিদিন একটা ড্রেস গায়ে দিয়ে কলেজে যায়। বাবারও পাঞ্জাবি গুলোতে ময়লা জমে গেছে। ভাবির মোবাইলটা হাত থেকে পড়ে ভেঙ্গে যায় এরপর আর মোবাইল নেয়নি। তারপর লজ্জায় আর আমাদের কাওকে বলেনি। সব কিছু মিলিয়ে সবারই অবস্থা খারাপ।

নিজের শখের জিনিষ গুলা বিক্রি করে দিলাম, হুম আমার কম্পিউটার, গিটার, হাতের ঘড়ি এবং শখের মোবাইলটাও বিক্রি করে দিলাম সবার অজান্তে।

তারপর আব্বু আম্মু আর ভাবিকে নিয়ে শপিং এ গেলাম। আব্বুর জন্য কয়েকটা লুঙ্গি, পাঞ্জাবি আর গেঞ্জি নিয়ে নিলাম। আম্মুর জন্য শাড়ি, ছায়া, ব্লাউজ আরো টুকটাক জিনিষ নিলাম।

ভাবিকে উনার পছন্দ মতো নিতে বললাম, উনি কয়েকটা থ্রি পিছ, জুতা, কিছু কসমেটিক্স নিলো।

আম্মু বললো…..

আম্মুঃ তোর জন্য কিছু নিবি না?

আমিঃ নাহ! আমার সব আছে। (মুছকি হাসি দিয়ে)

তারপর উনাদের বাইরে দাঁড়িয়ে রেখে আমি একটা মোবাইলের দোকানে গেলাম, আমার জন্য একটা নরমাল মোবাইল নিলাম আর ভাবির জন্য একটা স্মার্ট ফোন নিলাম।

তারপর উনাদের নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।

রাতের বেলা সবাই আমার রুমে আসলো,,,,

আমিঃ কি ব্যাপার সবাই একসাথে?

আম্মুঃ কেন আসতে পারি না?

আমিঃ আরে আজব না পারার কি আছে? আসো,,,,,

সবাই এসে বসলো, আমি ব্যাগ থেকে ভাবির জন্য কেনা মোবাইলটা ভাবির হাতে দিলাম।

ভাবিঃ কি এটা?

আমিঃ মোবাইল আপনার জন্য নিলাম।

ভাবিঃ আমার তো এখন মোবাইলের কোনো দরকার নেই, টাকা নষ্ট করলে কেন?

বাবাঃ সত্যি করে বলতো তুই টাকা কোথায় ফেলি?

আমিঃ আমার কাছে জমানো ছিলো।

আম্মুঃ মিথ্যা বলিস কেন? সত্যি করে বল টাকা কোথায় পাইছিস?

আমিঃ কম্পিউটার, গিটার আর মোবাইলটা বিক্রি করে দিয়েছি। (মাথা নিচু করে)

বাবাঃ কেন তোরে এগুলো বিক্রি করতে কে বলেছে?

আমিঃ তোমাদের সবার কাপড়চোপড় গুলো পুরাতন হয়ে গেছে, দেখতেই তো খারাপ লাগে। সেজন,,,,,

ভাবিঃ তাই বলে এগুলো বিক্রি করে দিবে?

আমিঃ আরে কোনো সমস্যা নাই, আমি এখন কম্পিউটার চালানোর মতো সময় পাই না। আর গিটার তো বিলাসিতা ছাড়া কিছুই না। এগুলো একটারও আমার দরকার নেই?

ভাবিঃ মোবাইল কেন বিক্রি করলে?

আমিঃ এতো দামি মোবাইলের কাজ নেই এখন, সারাদিন কাজে থাকি মোবাইল চালানোর সময় কই, আর মোবাইলের প্রতি এতো শখ নাই। একটা নরমাল হলেই চলবে।

কেউ আর কিছু বললো না, নির্বাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। সবার চোখে যে পানি চলে আসছে সেটা আমি ভালো করেই দেখছি।

কিছুদিন পর আমি শুয়ে আছি, সকাল ১০.০০ টার মতো বাজে,, সোফা রুমে চিল্লাচিল্লি শুনে তাড়াতাড়ি সেখানে গেলাম, গিয়ে দেখি তালোই মানে ভাবির বাবা আর মা এসেছে।

আমি গিয়ে সালাম দিলাম, কৌশল বিনিময় করে বাজারে গেলাম বাজার আনতে, কারণ মেহমান আসছে ভালোমন্দ কিছু না হলে খারাপ দেখা যায়।

আমি বাজার থেকে কিছু বাজার করে নিয়ে আসলাম। তারপর রান্না ঘরে দিয়ে আসলাম ভাবি আর মা রান্না করতেছে।

আমি গিয়ে উনাদের সাথে কিছুক্ষণ গল্প করলাম।

দুপুরবেলা খাওয়াদাওয়া করে সবাই সোফা রুমে গিয়ে বসলাম। আমি বসিনি আব্বু আম্মু আর ভাবির বাবা মা সবাই বসছে, মনে হয় কিছু বলবে। ভাবি দরজা পাশে ঘোমটা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

কিছুক্ষণ পরই ভাবি আব্বু মানে আংকেল বললো….

আংকেলঃ দেখেন বেয়াই সাব যেজন্য আমরা আসছিলাম।

বাবাঃ জ্বি বেয়াই বলুন।

আংকেলঃ আমার মেয়েটার বয়স খুব একটা বেশি না। এই বয়সে সে বিধবা হয়ে যাবে কল্পনাও করিনি। যাইহোক আল্লাহর যা পছন্দ হয়েছে তাই করেছে। আমার মেয়েটা মাত্র দুইমাস জামাইয়ের সাথে ছিলো। তারপর কি হলো সেটা তো জানেন।

এখন কথা হচ্ছে ওর তো একটা ভবিষ্যৎ আছে, এভাবে তো আর তার জীবন চলবে না।

বাবাঃ তো এখন কি করতে পারি?

আংকেলঃ আপনাদের কিছু করতে হবে না, আমাদের মেয়েকে আমরা নিয়ে যাবো। ওর অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়ে দিবো। এভাবে থাকলে তো আর হবে না।

বাবাঃ না বেয়াই এটা করবেন না, আমার মেয়েকে আমার কাছ থেকে নিয়ে যাবেন না।

আংকেলঃ দেখেন আবেগ দিয়ে তো আর জীবন চলে না। বাস্তবতা মেনে নিতে হবে।

হুম এটা ঠিক যে আমার মেয়ের কপাল অনেক ভালো, আপনাদের মতো শ্বশুর শাশুড়ি পেয়েছে। খুব কম মেয়েই এই রকম শ্বশুর শাশুড়ি পেয়ে থাকে। কিন্তু আপনারা তো আর ওর কিছু করতে পারবেন না। ওকি আপনাদের সাথে জীবন কাটাতে পারবে? আপনাদের ওতো বয়স হয়েছে। মরতে তো হবেই। আপনাদের কিছু হয়ে গেলে আমার মেয়েটার কি হবে?

ভাবি নির্বাক দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে আছে, না পারছে বাবার পক্ষে কিছু বলতে না পারছে শ্বশুরের পক্ষে কিছু বলতে।

বাবাঃ কিন্তু এখানে তো ওর কোনো সমস্যা হচ্ছে না। সব ঠিকঠাক মতো আছে।

আংকেলঃ হুম সব আছে বাট স্বামী তো নাই। একটা মেয়ে কি এভাবে লাইফ কাটাতে পারে? আপনিই বলুন, আপনার মেয়ে হলে আপনি কি করতেন?

বাবাঃ……….(মাথা নিচু করে বসে আছে)

আংকেলঃ আমি জানি আপনি অবন্তীকে অনেক ভালোবাসেন, নিজের মতোই দেখেন। কিন্তু অনন্তীকে আমরা আর এখানে থাকতে দিতে পারি না। অন্তত পক্ষে ওর বাবা হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব।

বাবাঃ আমার মেয়ে আমার কাছেই থাকবে, আমি আমার মেয়েকে যেতে দিবো না।

আংকেলঃ আপনি এসব কি বলছেন?

বাবাঃ হুম, আমার এক ছেলে হয়তো আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু আরেকজন তো আছে, আপনি না অবন্তীকে বাইরে বিয়ে দিয়ে চেয়েছেন? বাইরে দেওয়ার দরকার নেই। আমার ছোট ছেলের কাছেই ওর বিয়ে দিবো। এবার তো আর বলতে পারবেন না যে আপনার মেয়ে বিধবা? ওর স্বামী নাই। এগুলো তো আর বলতে পারবেন না।

আমি বাবার কথা শুনে চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকালাম, এটা কেমনে হয়, এখনো আমি অবন্তীকে ভাবি ডাকে আর সে নাকি আমার,,,,

না এটা কিছুতেই সম্ভব না, আমার মাথা ঘুরতেছে। হঠ্যাৎ করে বাবা আমার দুহাত চেপে ধরে বলে…..

বাবাঃ প্লিজ বাবা, তুই না করিস না। তুই অবন্তীকে বিয়ে কর, আমার মেয়েকে আমার কাছে থাকতে দে। প্লিজ বাবা, আমার অনুরোধ টা রাখ। নাহলে যে আমি মরেও শান্তি পাবো না।

বাবা কথা শুনে আমি কি বলবো কিছুই বুঝতেছি না, আম্মুও করুণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

আম্মুঃ জুয়েল! বাপ আমার প্লিজ না করিস না।

আমি বাবা হাত ধরে হ্যা সূচক মাথা নাড়ালাম। ভাবির দিকে তাকিয়ে দেখি উনি চোখ মুছতে মুছতে রুমে চলে গেলো।

ভাবির আব্বু বললো…..

আংকেলঃ বেয়াই (বাবাকে) আপনি মানুষ না, ফেরেশতা। একটা মানুষ এতো ভালো হয় কেমনে? আমি নিজেও জীবনে আমার মেয়ের জন্য এতোকিছু করিনি যেটা আপনি করলেন।

বাবাঃ আচ্ছা বেয়াই মশাই, বিয়েটা আজকেই হয়ে যাক। আমি কাজী ডেকে নিয়ে আসি।

আংকেলঃ আচ্ছা ঠিক আছে, আমি আমার ছেলেকে আর ছেলের বউকে আসতে বলি। আর অবন্তীকে বাইরে নিয়ে গিয়ে সাজিয়ে আনার জন্য বলবো।

বাবাঃ আচ্ছা আমি বাজারে গেলাম।

কোনো রকম অনুষ্ঠান ছাড়াই বিয়েটা হয়ে গেলো। ভাবি কে আজকে একটু অন্যরকম সুন্দর লাগছে। প্রথম বিয়ের ছেয়েও বেশি, শুধু একটা জিনিষের অভাব। সেটা হচ্ছে মুখের হাসিটা।

ভাইয়ার সাথে যখন বিয়ে হয়েছিলো তখন ভাবির মুখে খুব সুন্দর হাসি ছিলো, আজকে সব আছে সেটাই নেই। হয়তো এমন কিছু হয়ে যাবে কল্পনাও করেনি।

তারপর……

#চলবে…..
বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড 
http://biddutroy.family.blog
[+] 4 users Like Biddut Roy's post
Like Reply
#7
গল্পটা সুন্দর । তাড়াতাড়ি আপডেট দিয়েন দাদা।
[+] 2 users Like Bislybaran's post
Like Reply
#8
super......waiting for next
[+] 1 user Likes nightangle's post
Like Reply
#9
যদিও এইটা চটি সাইট তবুও এইরকম দুই একটা গল্প মন্দ না ।
[+] 1 user Likes gang_bang's post
Like Reply
#10
পর্ব_০৩





ছোট বেলা থেকেই আমার অনেক ইচ্ছা ছিলো খুব সুন্দর করে বিয়ের অনুষ্ঠান করবো, ভালো একটা চাকরি পাওয়ার পর বিয়েটা করবো। কিন্তু সব কিছু তো সবার কপালে থাকে না।

আমার কপালেও হয়তো নেই, আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবছি জীবনে এমন একটা সময় আসবে আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। ভাবিকে বিয়ে করতে হবে তাও নিজের অজান্তে,,,,

এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখে পানি চলে আসলো টেরিই পাইনি। কেউ একজন পেছন থেকে কাঁধের উপর হাত দেয়, তাকিয়ে দেখি বাবা,,,,

আমিঃ আব্বু এখনো তুমি এখানে? ঘুমাও নি।

বাবাঃ পৃথিবীর নিকৃষ্ট বাবার মধ্যে আমিই একজন, যে অন্যের মেয়ের জন্য নিজের ছেলেকে কোরবানি দিলাম।

আমিঃ…………

বাবাঃ তোর সাথে আমি অনেক বড় অন্যায় করেছি। এই বয়সে সবাই ঘুরাফেরা করতেছে আর আমি তোর কাঁধে সব চাপ তুলে দিলাম। আবার তোর অমত থাকা স্বত্ত্বেও অবন্তীর সাথে তোর বিয়ে দিলাম। তুমি আমাকে মাফ করে দিস বাবা,,, (হাত ধরে)

আমিঃ ধুর তুমি এগুলো কি বলো? তোমার যেটা ভালো মনে হয়েছে সেটাই করেছো।

বাবাঃ অবন্তীকে অনেক ভালোবাসিরে, মেয়েটাকে ছাড়া ঘরটা কেমন যেন ফাকা ফাকা লাগে।

আমিঃ………….

বাবাঃ যা, অনেক রাত হয়েছে। এবার ঘরে যা। মেয়েটা অনেকক্ষণ ধরে বসে আছে।

আমি আর কোনো কথা না বলে নিচে চলে আসলাম, এসে রুমে চলে গেলাম। দরজা খুলে ভিতরে গিয়ে দেখি ভাবি মানে অবন্তী ভাইয়া একটা ছবির দিকে তাকিয়ে কাঁদতেছে।

আমার ঠিক কি করা উচিত কিছুই বুঝতেছি না। আমি খাটের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। একটু পর ভাবি, (না আর ভাবি বলবো না কারণ সে এখন আমার স্ত্রী!) বললো……

অবন্তীঃ জুয়েল!

আমিঃ জ্বি,,,,

অবন্তীঃ তোমার সাথে কিছু কথা আছে। (চোখ মুছতে মুছতে)

আমিঃ হুম বলেন।

অবন্তীঃ আমি জানি তুমি ছেলেটা অনেক ভালো, তোমার মতো ছেলেকে স্বামী হিসেবে পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের বেপার। কিন্তু আমি তোমাকে কখন স্বামী হিসেবে মানতে পারবো না।

আমিঃ…….. (অবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম)

অবন্তীঃ তুমি তো জানোই তোমার ভাইকে আমি কতটা ভালোবাসি। তোমার ভাইয়ের জায়গায় আমি অন্য কাওকে জীবনেও কল্পনা করতে পারবো না।

আমিঃ………….

অবন্তীঃ যেদিন প্রথম বউ সেজে তোমাদের বাসায় এসেছিলাম তখনই ওয়াদা করেছি তোমার ভাইকে ছাড়া জীবনে আর কারো দিকে তাকাবোও না।

আমার থেকে তোমার ভাই আমাকে বেশি ভালোবাসতো, কতটা বাসতো সেটা হয়তো কল্পনাও করা যাবে না।

আমিঃ…….. (এখনো চুপ)

অবন্তীঃ তুমি হয়তো আমাকে প্রশ্ন করতে পারো, আমি যদি অন্য কাওকে স্বামী হিসেবে না মানতে পারি তাহলে তোমাকে কেন বিয়ে করলাম?

হ্যা এটার উত্তরও দিয়ে দিচ্ছি। তোমার সাথে বিয়ে না হলে অন্য কোথাও ঠিকই বাবা মা আমার বিয়ে দিয়ে দিতো। কিন্তু আমি এইখানে আব্বু আম্মুর আর তোমার কাছ থেকে যে ভালোবাসা, আদরযত্ন পেয়েছি অন্য কোথাও সেটা নাও পেতে পারি।

আমার মনের অবস্থাটা তোমরা একটু হলেও বুঝবে বাট অন্যরা বুঝবে না।

আমিঃ……..

অবন্তীঃ জানো জুয়েল আমি হচ্ছি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অভাগা, সুখ ঠিকই আসলো কিন্তু কপালে লেখা ছিলো না।

আমিঃ………

অবন্তীঃ তুমি আমাকে মাফ করে দিও। তোমার সুন্দর জীবনটা আমি নষ্ট করে দিলাম, জানো আমারও অনেক ইচ্ছা ছিলো তোমার জন্য খুব সুন্দর একটা মেয়ে দেখ তারপর তোমার সাথে বিয়ে দিবো।

আমরা জ্যা হিসেবে নয় বোন হিসেবে থাকতাম। একবার চিন্তা করো কতো সুন্দর হতো আমাদের ফ্যামিলিটা।

আমিঃ…….(এখনো চুপ)

অবন্তীঃ তুমি প্লিজ আমাকে মাফ করে দিও। আমি তোমাকে স্বামী হিসেবে মানতে পারছি না।

আমিঃ অনেক রাত হইছে, ঘুমিয়ে পড়ুন।

এটুকু বলেই বারান্দায় চলে গেলাম। এমন কিছু হবে আমি জীবনেও কল্পনা করিনি।

আমি ভাবছি অন্য কোথাও অবন্তীর বিয়ে হয়ে গেলে সে সুখে থাকবে না, সব কিছু মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগবে।

আমার সাথে বিয়ে হয়ে গেলে হয়তো অবন্তীর কোনো আফসোস থাকতো না। কিন্তু কি ভাবলাম আর কি হয়ে গেলো? আসলে সব কিছু সবার কপালে থাকে না।

আমার কপাল যে এতো খারাপ হবে আমি কখনো ভাবিনি। কতো সুখেই না ছিলাম আমি, কিন্তু আজ? সুখের চিহ্নও নাই,,, মনে মনে বাবার উপর রাগ হচ্ছে।

উনার আবেগ রাখতে গিয়ে আমার জীবনটাই শেষ, ভাইয়ার কথা খুব মনে পড়তেছে।

আমি রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম। ভাইয়ার কবরের কাছে যাবো। ঘড়ি দেখলাম ১২.০০ টা বাজে, আমি কাওকে কিছু না বলে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম।

বাইরে খুব সুন্দর চাঁদের আলো, একা একা হাটতেছি। কিছুক্ষণ পর ভাইয়ার কবরের কাছে গেলাম….

কবরের বেড়াটা ধরে তাকিয়ে রইলাম কবরের দিকে, ভাইয়া আর আমার স্মৃতি গুলো মনে পড়তে লাগলো।

নিজেই নিজেই বলতে শুরু করলাম,,,

” ভাইয়া কেমন আছিস? তোর কি সময় হবে একটু কথা বলতাম। জানিস তুই যে আমার মাথার উপর ছায়ার মতো ছিলি এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।

যখন যেটা চেয়েছি সেটাই তুই আমাকে দিয়েছিস, কিন্তু দেখ আমি কি হতভাগা, তোর জন্য কিছুই করতে পারলাম না।

তুই যখন ফ্যামিলি চালাইছিস রাজার মতো চলেছি আমরা, অথচ দেখ আমি কিভাবে চালাচ্ছি একবেলা খেলে পরের বেলা না খেয়ে থাকতে হয়।

বাবা মাকে আমি সুখে রাখতে পারছি না। জানিস ভাই এখনো আমি কোনো জিনিষ কিনলে তোর জন্যও কিনে রাখি। আমি যেখানেই যাই না কেন সব সময় যেন মনে হয় তুই আমার পাশেই আছিস।

ভাই তোর মনে আছে তুই যে দিন বাইক কিনেছিলি চাবিটা আমার হাতে দিয়ে দিলি আর বললি বাইকটা আজ থেকে তোর, তুই আমার জন্য অনেক sacrifice করেছিস, কিন্তু দেখ আমি কতো বড় হারামি! তোর জন্য তো কখনো sacrifice করিনি বরং তোর বউটাকে নিজের বউ করে নিয়েছি।

ভাই বিশ্বাস কর, আমি অনন্তীকে বউ হিসেবে কল্পনাও করিনি। তোর যাতে মনে কষ্ট না যায় সেজন্য আমি কখনো অবন্তীর দিকে খারাপ নজরেও তাকাই নি।

তুই সব সময় আমাকে বলতি অবন্তীকে দেখে রাখতে কিন্তু দেখ আমি কতো বড় বেইমান দেখে রাখার নাম করে আমি নিজেই ওরে বিয়ে করে ফেলেছি।

ভাই, এই ভাই, আর একবার আমাদের মাঝে আয়। আমি যে আর পারছি না। মা বাবাকেও কিছু বুঝতে দিতেছি না কারণ আমি যদি ভেঙ্গে পড়ি তাহলে ওদের কি হবে?

ভাই আমি তোর সাথে অনেক বড় অন্যায় করেছি তুই আমাকে মাফ করে দিস,,,,

আর কোনো কথা মুখ দিয়ে আসছে না, বার বার ভাইয়ার চেহারাটা চোখে ভাসতেছে। আরো কিছুক্ষণ কবরের পাশে থেকে বাসার দিকে হাটা দিলাম।

ভাবতে লাগলাম আমিই হয়তো একমাত্র ব্যক্তি যে বাসর রাতে নিজের বউয়ের সাথে না থেকে একটা কবরস্থানের মধ্যে রাত কাটিয়ে দিলো।

বাসায় যাওয়ার পর দেখলাম অবন্তী এখনো নাক টেনে টেনে কাঁদতেছে,,,,

আমিঃ কি ব্যাপার আপনি এখনো ঘুমান নি?

অবন্তীঃ কোথায় গিয়েছিলে?

আমিঃ ছাদে, রাত অনেক হইছে ঘুমিয়ে যান।

তারপর আমি একটা বালিশ নিয়ে ফ্লোরে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালবেলা ফজরের আজানের সময় ঘুম ভেঙ্গে যায়, আমি উঠে নামাজ পড়ার জন্য রেড়ি হচ্ছি।

অবন্তীর দিকে তাকিয়ে দেখি বাচ্চাদের মতো ঘুমাচ্ছে, কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম তারপর বাসা থেকে বের হয়ে মসজিদে চলে গেলাম।

নামাজ পড়ে এসে দেখি অবন্তীও উঠে গেছে। আমি ওয়াশরুমে গিয়ে গোসল করে নিলাম, কাজে চলে যেতে হবে। পকেটে কোনো টাকা নাই, তাই হেটেই যেতে হবে। তাড়াতাড়ি না গেলে বসে ঝাড়ি খেতে হবে।

গোসল করে রেড়ি হয়ে রুম থেকে বের হলাম, দেখি মা রান্না করছে আর অবন্তী সেগুলো সাজিয়ে দিচ্ছে। বাবা বসে বসে খবরেরকাগজ পড়তেছে। আমাকে এতো সকাল সকাল রেড়ি হতে দেখে বললো….

বাবাঃ কিরে তুই কই যাস?

আমিঃ আব্বু কাজে যাচ্ছি। কালকেও যাইনি,,,

বাবাঃ কয়েকটা দিন বাসায় থাক। সবেমাত্র বিয়েটা হলো, আরো কয়েকদিন পরে যাবি।

আমিঃ না আব্বু, বাসায় তো তেমন কোনো কাজ নাই। সো বসে থেকে কোনো লাভ নাই।

বাবাঃ আচ্ছা শোন,,,,

আমিঃ হুম বলো।

বাবাঃ অবন্তীর তো সামনে ফাইনাল পরীক্ষা। কলেজের তো ফিস, বেতন সব রয়ে গেলো।

আমিঃ আচ্ছা, আমি রাতে দিয়ে দিবো। কতো টাকা হয়েছে আমাকে বলে দিও। সেকি আজকে কলেজে যাবে?

বাবাঃ হুম যাবে।

আমিঃ ওকে তাহলে কলেজে গিয়ে কতো টাকা হয়েছে সেটা যেনে আমাকে কল দিয়ে বলার জন্য বলিও।

বাবাঃ আচ্ছা ঠিক আছে।

আমিঃ ওকে আমি বের হচ্ছি।

তারপর বেরিয়ে গেলাম, কি করবো বুঝতেছি না। অবন্তীর ফাইনাল পরীক্ষা মানে তো আমারও ফাইনাল পরীক্ষা। কারণ অবন্তী আর আমি সেম ইয়ারেই পড়ি শুধু ক্যাম্পাসটা ভিন্ন।

যখন কলেজে নিয়মিত যাইতাম, টাকা খরচ করতাম কতো বন্ধুবান্ধব ছিলো, আর এখন টাকাও নাই বন্ধুও নাই। ফাইনাল এক্সাম চলে আসছে অথচ কেউ একটু আমাকে জানালোও না।

আমারও অনেক ইচ্ছা ছিলো অনার্সটা অন্তত শেষ করা। কিন্তু কিভাবে কি করবো? অবন্তীর টাকা দেওয়ার মতো টাকাও তো আমার হাতে নাই।

প্রতিদিনের মতো গোডাউনে চলে গেলাম, বস সেখানে বসে আছে।

আমিঃ আসসালামু আলাইকুম বস।

বসঃ হুম কি অবস্থা মি. জুয়েল। কালকে আসো নি যে?

আমিঃ বস একটু কাজ ছিলো।

বসঃ এতো কি কাজ তোমার? এতো কাজ হলে চাকরি করার কি দরকার?

আমিঃ…….(চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি)

বসঃ যাও আজকে সব গুলো মাল সেল করে আসবে। না হলে বেতন কেটে নিয়ে যাওয়া হবে।

আমিঃ……… (এখনো দাঁড়িয়ে আছি)

বসঃ কি ব্যাপার দাঁড়িয়ে আছো কেন? কিছু বলবা নাকি?

আমিঃ জ্বি বস, একটা কথা ছিলো।

বসঃ কি কথা?

আমিঃ আমাকে যদি এই মাসের টাকাটা অগ্রিম দিতেন উপকার হতাম। আমার খুব দরকার,

বসঃ তোমার কাজ করার দরকার নাই, আসছে উনি কাজ ছাড়া টাকা নিতে। ভালো লাগলে করো না হলে চলে যাও।

আমি আর কোনো কথা না বলে মাল গুলো নিয়ে বেরিয়ে গেলাম। অবন্তীর পরীক্ষার টাকা কোথায় পাবো সেই চিন্তায় আমি শেষ।

হাতের ঘড়িটা অনেক দামি ছিলো, ভাইয়া ইটালি থেকে নিয়ে আসছিলো। বাংলা টাকায় অনেক দাম। উপায় না পেয়ে সেটা বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিলাম।

ভাইয়ার শেষ চিহ্নটুকুও বিক্রি করে দিলাম।

কয়েকটা দোকানে মাল সেল দেওয়ার পর আয়মান (কলেজ বন্ধু) এর সাথে দেখা।

আয়মানঃ কিরে জুয়েল! তুই এগুলো কি করিস?

আমিঃ আয়মান বন্ধু তুই? হায় রে কতো দিন পর দেখা। কি অবস্থা তোর?

আয়মানঃ আমি তো আছি। তুই এগুলো কি করিস?

আমিঃ চাকরি নিয়েছি।

আয়মানঃ ধুর ব্যাটা এটা কোনো চাকরি হলো? আর তোর বাবা ইনকাম করে ভাইয়া ইনকাম করে তুই এগুলো কেন করস।তুই তো রাজার হালে থাকার কথা।

আমিঃ হুম ছিলাম বাট এখন প্রজা থেকেও আমার অবস্থা খারাপ।

আয়মানঃ কেন কি হইছে?

আমিঃ…..(সব কিছু বললাম)

আয়মানঃ কি বলিস তুই? তো তোর পড়ালেখা?

আমিঃ শেষ করে দিলাম, আমি পড়তে গেলে অবন্তীর আর পড়া হবে না। দুই জায়গায় টাকা দেওয়ার মতো অতো টাকা আমার কাছে নাই।

আয়মানঃ তোর রেজিস্ট্রেশন করা আছে?

আমিঃ হুম, বাট সেটা দিয়ে আর কি হবে।

আয়মানঃ তোর পরীক্ষার টাকা আমি দিবো, তুই পরীক্ষা দে।

আমিঃ ধন্যবাদ বাট আমি টাকা নিতে পারবো না।

আয়মানঃ কেন?

আমিঃ দেখ আমার টাকা নাই এটা সত্য। কিন্তু কারো করুণা নেওয়ার মতো ছেলে আমি না সেটা তুই ভালো করেই জানিস।

আয়মানঃ আজকে যদি তোর ভাই দিতো তাহলে কি বলতি ভাই তোর প্রতি করুণা করছে?

আমিঃ……..

আয়মানঃ মনে কর এখন আমিই তোর ভাই, তাই টাকাটা দিচ্ছি। কিন্তু মনে রাখিস একেবারে দিচ্ছি না। তুই ভালো কোনো চাকরি পেলে আমার টাকা দিয়ে দিবি। (হাসতে হাসতে)

আমিঃ ওকে।

আয়মানঃ চল কলেজে যাই, সব কিছু ঠিক করে আসি।

আমিঃ না দোস্ত তুই যা। আমার এগুলো সেল করতে হবে। তুই গিয়ে আমার নামে টাকা জমা দিয়ে দিস।

আয়মানঃ আচ্ছা ঠিক আছে ভালো থাকিস, আমি আবার দেখা করবো।

আমিঃ ওকে তুই বাসায় আসিস।

এরপর আয়মান চলে যায়, মনের মধ্যে একটু শান্তি আসলো। তারপর বাকি গুলো মাল বিক্রি করে বসের কাছ থেকে টাকা আর ঘড়ি বিক্রি করা টাকা নিয়ে টিউশনিতে গেলাম। সেখানেও অগ্রিম টাকা নিলাম, সব মিলিয়ে ৬ হাজারের মতো।

আবারও হাটতে হাটতে বাসায় গেলাম, রাত প্রায় ১১ টা বাজে। আমি বাসায় গিয়ে বাবাকে ডাকলাম, তারপর………..

#চলবে……….
বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড 
http://biddutroy.family.blog
[+] 3 users Like Biddut Roy's post
Like Reply
#11
bhalo golpo eguchhe
[+] 1 user Likes ranjan_kumarsaha's post
Like Reply
#12
caliye jan dada
[+] 1 user Likes nil akash's post
Like Reply
#13
খুব সুন্দর গল্প।
[+] 2 users Like buddy12's post
Like Reply
#14
পর্ব-০৪



আমার ডাক শুনে আব্বু আম্মু আর অবন্তী আসলো।

বাবাঃ কিরে এতো দেরি হলো যে?

আমিঃ কাজের চাপ ছিলো। এই নাও (টাকা গুলো দিলাম)

বাবাঃ কি এখানে?

আমিঃ তোমার মেয়ের পরীক্ষার খরচ। ৬ হাজার আছে,,,

বাবা টাকা গুলো হাতে নিলো, অবন্তীকে দিয়ে দিলো। তারপর অবন্তী বললো….

অবন্তীঃ আব্বু একটা কথা বলতাম।

বাবাঃ হুম মা বল।

অবন্তীঃ জুয়েলের একা ইনকামে দিয়ে তো আর সব কিছু করা সম্ভব না। তাই বলছিলাম কি আমিও একটা চাকরি করি। তাহলে মোটামুটি আমাদের পরিবারে একটু স্বচ্ছলতা আসবে।

আমিঃ এই পরিবারে আর কারো ইনকাম করার দরকার নেই। আমি এখনো মরিনি। যদি করার এতো ইচ্ছা থাকে তাহলে আমি মরার পরে করিয়েন।

সবাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে,আমি আর কোনো কথা না বলে রুমে চলে গেলাম।

আসল কথা হচ্ছে আমি চাইনা অবন্তী কোনো কাজ করুক। এমনিতে আমি সারা দিন বাইরে থাকি, এখন যদি অবন্তীও বাইরে চাকরি করে তাহলে আব্বু আম্মুকে কে দেখবে? বুড়া বয়সে দুজনেরই কষ্ট হবে।

রাতে খেয়ে আমি বাইরে থেকে ঘুরে আসলাম, রুমে এসে দেখি অবন্তী ভাইয়ার ছবিটা হাতে নিয়ে বসে আছে। আমাকে দেখার পর ছবিটা রেখে দিলো।

আমি বিছানা থেকে একটা বালিশ আর কাঁথা নিয়ে ফ্লোরে শুয়ে পড়লাম।

অবন্তীঃ জুয়েল একটা কথা বলতাম!

আমিঃ হুম বলেন।

অবন্তীঃ তুমি খাটে থাকো, আমি ফ্লোরে ঘুমাই। সারাদিন কাজ করে আসছো এখন ফ্লোরে ঘুমালে হয়তো ঘুম আসবে না।

আমিঃ আমি কাপুরুষ নই যে একটা মেয়ে মানুষকে নিচে ঘুমাতে দিয়ে আমি নিজে খাটে ঘুমাবো। আপনি ঘুমান, এমনিতে অনেক রাত হইছে।

আর কোনো কথা না বলে ফ্লোরে ঘুমিয়ে গেলাম, সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি অবন্তী গোসল করে আয়নার সামনে বসে চুল ঠিক করছে। ভেজা চুলে একটু অন্যরকম সুন্দর দেখাচ্ছে।

আমি দেখেও না দেখার ভান ধরে শুয়ে রইলাম। পরে মনে হলো যে পায়ে হেটে কাজ করতে হবে রোমান্টিক মুডে থাকার মতো সময় নাই।

উঠে ফ্রেশ হয়ে গোসল করে রেড়ি হয়ে বেরিয়ে গেলাম। আজকেও অনেক গুলো মাল নিয়ে কভার ভ্যান ঠ্যালতে শুরু করলাম।

মনে মনে ভাবতে লাগলাম, অবন্তী কেন আমাকে মেনে নিচ্ছে না, যেখানে আমিই ওকে মেনে নিবো না সেখানে তার উলটো টা হচ্ছে।

এভাবে দিন যেতে লাগলো, বিয়ে করেও আমার অবন্তীর সম্পর্ক ভাবি দেবরের মতোই রয়ে গেলো

মাঝে মাঝে অবন্তীর উপর অনেক রাগ হয়, কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। আব্বু আম্মুর জন্য আজকে আমার এই অবস্থা। দেশে মেয়ের অভাব পরেছে যে আমাকে ভাবিকেই বিয়ে করতে হলো।

সারা দিন কাজ করে এসে আবার রাতে ফ্লোরে ঘুম, জীবনটা অসহ্য লাগছে।

পরেরদিন কাজে গেলাম, শরীরটা ভালো লাগছে না। মনে হচ্ছে জ্বর আসবে। ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও রাত পর্যন্ত কাজ করলাম।

রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে গেলাম। গভীর রাতে আমার কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসছে। ঠিক মতো চোখও মেলতে পারছি না।

হঠ্যাৎ করে কপালে কারো নরম হাতের স্পর্শ পেলাম। ঝাপসা চোখে তাকিয়ে দেখি অবন্তী ডাকতেছে,,,,,

অবন্তীঃ জুয়েল, এই কি হইছে তোমার? এই রকম করছো কেন?

আমার অবস্থা এতোই খারাপ যে ওর সাথে কথা বলার মতো শক্তিও আমার নেই। অবন্তী আমাকে উঠিয়ে খাটে শুইয়ে দিলো। তারপর সারা রাত মাথায় পানি ঢাললো। আর কি কি করছে কিছুই মনে নেই, জ্বরের ঘোরে কোনো কিছু অনুভব করতে পারিনি।

সকালবেলা অবন্তীর ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো। তাকিয়ে দেখি আব্বু আম্মু সবাই বসে আছে। অবন্তী নাস্তা হাতে দাঁড়িয়ে আছে।

তারপর নিজের হাতে খাইয়ে দিয়ে, মেডিসিন খাইয়ে দিলো।

বাবাঃ এখন কেমন লাগছে?

আমিঃ ভালো। তোমরা খেয়েছো?

আম্মুঃ হুম, ঠিক মতো খাওয়াদাওয়া করিস না তাই এমন হলো।

বাবাঃ ডাক্তার বলেছে কয়েকদিন রেষ্টে থাকতে।

আমিঃ ডাক্তার কখন আসলো?

বাবাঃ আরো আগে, তুই ঘুমে ছিলি। অবন্তী কল দিয়ে আসতে বলেছে।

আমি আর কোনো কথা বললাম না, সেদিন আর কাজে যাইনি। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময়….

অবন্তীঃ সরি!

আমিঃ সরি কেন?

অবন্তীঃ আমার জন্য আজকে তোমার এই অবস্থা।

আমিঃ আরে ধুর এগুলো কি বলেন, আপনার জন্য হবে কেন?

অবন্তীঃ ফ্লোরে ঘুমানোর কারনে এমন হইছে।

আমিঃ……

অবন্তীঃ প্লিজ তুমি খাটে ঘুমাও আমি নিচে ঘুমাচ্ছি।

আমিঃ দরকার নাই, আমার জন্মই হয়েছে নিচে ঘুমানোর জন্য। আমি থাকতে পারবো, সমস্যা নেই। আপনি ঘুমান।

অবন্তীঃ কিন্তু!

আমিঃ কোনো কিন্তু না, নিচে ঘুমালে আপনারওতো সমস্যা হতে পারে। তখন কি করবেন, সো ঘুমিয়ে পড়ুন।

অবন্তী কিছু একটা বলতে চেয়েছিলো বাট আমি বলার আর সুযোগ না দিয়ে উলটো পাশ হয়ে শুয়ে গেছি। ফকিন্নি এটা বলতে পারছে না যে আসো আমরা দুজনে খাটে ঘুমাই।

দুজন খাটে ঘুমালে কি এমন সমস্যা হয়ে যাবে? আব্বু আম্মু বুঝে যাবে তাই অন্য রুমেও যেতে পারছিনা।

দেখবো অবন্তী মেডাম, আপনি কতোদিন এভাবে থাকতে পারেন।

কয়েকদিন পর মোটামুটি সুস্থ। আবারও কাজে চলে গেলাম।

এমন সময় আয়মানের সাথে দেখা হলো,,,

আয়মানঃ কিরে দোস্ত কি অবস্থা?

আমিঃ এইতো আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তোর?

আয়মানঃ ভালোই, তোর কাজ শেষ হতে কতোক্ষন লাগবে?

আমিঃ সন্ধ্যা হবে।

আয়মানঃ আচ্ছা কাজ শেষে দেখা করিস, অনেক দিন তোর সাথে আড্ডা দিই না।

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।

তারপর আবার কাজে চলে গেলাম।

বিকালবেলা আয়মানের সাথে দেখা করতে গেলাম।

আয়মানঃ আসছিস?

আমিঃ হুম, বল কি অবস্থা?

আয়মানঃ এই তো চলছে। এই জানিস আগামী মাস থেকে তো পরীক্ষা।

আমিঃ কিহ! আগামী মাসে পরীক্ষা?

আয়মানঃ হুম, তোর প্রিপারেশন কেমন?

আমিঃ হা হা হা, পরীক্ষাও তো দেওয়ার কথা ছিলো না। তুই তো টাকার ব্যবস্থা করে দিলি। আর বইও তো কিনিনি। প্রিপারেশন কেমন হবে তুই বল।

আয়মানঃ তোর ভাই মারা যাওয়ার পর থেকে সব কিছু ওলটপালট হয়ে গেছে।

আমিঃ হুম, বাস্তবতা কি জিনিষ এখন বুঝতেছি।

আয়মানঃ তোর ভাবি কেমন আছে?

আমিঃ ভাবি না, বউ আমার।

আয়মানঃ বউ মানে?

আমিঃ ভাবির সাথেই আব্বা আমার বিয়ে দিছে।

আয়মানঃ কিহ, কখন? আমাকে তো কিছুই বলিস নি।

আমিঃ……. (পুরো ঘটনা শেয়ার করলাম)

আয়মানঃ এতো কিছু হয়ে গেছে অথচ আমাকে কিছুই জানালি না?

আমিঃ সরি দোস্ত, বলার মতো তেমন সুযোগ ছিলো না।

আয়মানঃ তো অবন্তীর জন্য তো এটা প্লাস পয়েন্ট তবুও তোকে মেনে নিচ্ছে না কেন?

আমিঃ জানিনা রে, হয়তো আমি ওর যোগ্য নই।

আয়মানঃ তো এখন কি করবি?

আমিঃ কি আর করা এভাবেই দিন যাবে।

আয়মানঃ শোন জুয়েল, এটা কোনো জীবন নয়, তোরও একটা ভবিষ্যৎ আছে। এভাবে তো তোর কিছুই হবে না।

আমিঃ তো এখন কি করতাম?

আয়মানঃ অবন্তীর সাথে কথা বলে সব কিছু ঠিকঠাক কর।

আমিঃ কোনো লাভ হবে না। ও আমাকে মেনে নিতে পারবে না।

আয়মানঃ না নিলে ডিভোর্স দিয়ে দে। অন্য কোথাও বিয়ে হলে তখন ঠ্যালা বুঝবে।

আমিঃ ধুর তুই পাগল নাই, ওরে রাখার জন্যই আব্বু আমার সাথে বিয়ে দিছে। আর তুই বলছিস ডিভোর্স!!

আয়মানঃ ভালো তো, তাহলে সারা জীবন সিঙ্গেল থাক, ভাবি আর দেবরের মতো জীবন কাটা।

শোন ভাই, জীবন অনেক কঠিন সেটা তুই আমার থেকে ভালো জানিস।

আমিঃ সেটা ঠিক বাট অবন্তীকে ডিভোর্স দেওয়া তো দূরের কথা ডিভোর্স এর নাম মুখেও আনা যাবে না।

আয়মানঃ দেখ যা করবি ভেবেচিন্তে কর, আবেগ দিয়ে জীবন চলে না। আব্বা কি বললো আম্মা কি বললো এগুলোর দিকে কান দিয়ে নিজের মন কি বলে সেটা দেখ।

তোর লাইফ তোকেই হ্যান্ডেল করতে হবে।

আমিঃ হুম ঠিক।

আয়মানঃ তুই একটা কাজ কর।

আমিঃ কি?

আয়মানঃ তুই অবন্তীর সাথে সরাসরি এই ব্যাপারে কথা বল।

আমিঃ কোন ব্যাপার?

আয়মানঃ তোকে স্বামী হিসেবে মেনে নিবে নাকি নিবেনা সেটা। যদি না মেনে নিবে বলে তাহলে তুইও অবন্তীকে বলে দিবি, যে তুই ওরে ডিভোর্স দিয়ে দিবি।

আমিঃ এটা কি করে হয়।

আয়মানঃ সব হয়, তুই কথা বল।

আমিঃ এখন না, পরীক্ষাটা শেষ হোক, তারপর।

আয়মানঃ আচ্ছা ঠিক আছে।

তারপর আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে বাসায় চলে আসলাম।

এভাবেই দিন যাচ্ছে। অবন্তীর সাথে দরকার ছাড়া কথা বলি না। কেমন যেন অস্বস্তি লাগে।

দেখতে দেখে পরীক্ষার সময় চলে আসলো। অবন্তী আর আমি একসাথেই পরীক্ষা দিলাম। আমার পরীক্ষার কথা শুনে বাবা মা অনেক খুশি।

পরীক্ষার কিছুদিন পর একদিন সকাল বেলা অবন্তী বসে বসে মোবাইল টিপতেছে, আব্বু আম্মু মামার বাড়িতে গেছে। আমি মনে মনে ভাবলাম এটাই সুযোগ অবন্তীর সাথে এবার বোঝাপড়া টা হয়ে যাক।

আমি অবন্তীর সামনে গেলাম।

অবন্তীঃ কিছু বলবে?

আমিঃ হুম,,,

অবন্তীঃ বলো।

আমিঃ আপনি কি চান?

অবন্তীঃ মানে?

আমিঃ মানে আপনি কি আমার কাছে থাকতে চান নাকি আমার কাছ থেকে মুক্তি চান, কোনটা?

অবন্তীঃ জুয়েল তোমার মাথা ঠিক আছে, এগুলো কি বলছো?

আমিঃ আপনি উত্তর দেন। এখানে থালতে কি আপনার কোনো সমস্যা হচ্ছে?

অবন্তীঃ না,,,,

আমিঃ তাহলে আমাকে স্বামী হিসেবে মানতে আপনার সমস্যা কোথায়?

অবন্তীঃ দেখো আমি তোমাকে আগেই বলেছি এটা কোনো ভাবেই সম্ভব নয়।

আমিঃ যদি আপনার অন্য কোথাও বিয়ে হতো?

অবন্তীঃ………. (চুপ করে আছে)

আমিঃ আমার সাথে বিয়ে হয়েছে বলে আপনি আমাকে মেনে নিতে পারছেন না, কিন্তু অন্য কোথাও হলে কি পারতেন? জীবনেও না। আমি কোনো দিনই আপনাকে কোনো কথা বলিনি। তারমানে এই নয় যে সারাজীবন এভাবে থাকবো।

আমারওতো একটা লাইফ আছে,আমারও তো ইচ্ছা করে সুন্দর করে সংসার করতে।

আব্বু আম্মু আপনাকে অনেক ভালোবাসে, নিজের মেয়ের মতো দেখে। এখন যদি উনাদের বলি আপনাদের আদরের মেয়ে বিয়ের পরের দিন থেকে আমাকে ফ্লোরে রাখছে, তখন কি হবে চিন্তা করছেন?

অবন্তীঃ……..

আমিঃ আপনার সাথে বিয়ে টা হয়েই আমার জীবনটা শেষ, সারাদিন এতো কাজ করার পরেও কোনো শান্তি নাই।
আপনার সামনে দুটো রাস্তা খোলা আছে!

অবন্তীঃ….. (প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো)

আমিঃ হয় আপনি আমাকে মুক্তি দেন নাহয় আমি আপনাকে,,,,

পুরোটা বলার আগেই অবন্তী আমার দিকে তাকিয়ে কাঁদতে শুরু করলো।

আর কোনো কথা না বলে সে রুমে চলে গেলো। ঠাস করে দরজাটা লাগিয়ে দিলো, আমি সোফায় গিয়ে বসে রইলাম,একটু পর দেখি সে ব্যাগপত্র গুছিয়ে চলে যাচ্ছে।

থামাতে গিয়েও থামাইনি, যাক তাতে আমার কি? এসব আবেগ দিয়ে তো আর জীবন চলে না। আমি তো ওরে জোর করে বিয়ে করিনি।

আমাকে যদি এতোই অপছন্দ করতো তাহলে বিয়ের দিন বলে দিলেই পারতো।

সারা দিন বাসায় কাটিয়ে দিলাম, বাবা মাও নেই। বাসাটা কেমন খালি খালি লাগছে।

বিকালবেলা বের হতেই দেখি……..

চলবে……
বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড 
http://biddutroy.family.blog
[+] 2 users Like Biddut Roy's post
Like Reply
#15
darun.... khub sundor hocha...thanks for update...waiting for next...
[+] 1 user Likes nightangle's post
Like Reply
#16
আহারে বেচারা এখনো ভাবি কে বউ করতে পারলো না । আর ভাবি ও আর কত কষ্ট দেবে বেচারা কে ।
[+] 2 users Like gang_bang's post
Like Reply
#17
VAlo laglo
[+] 1 user Likes chndnds's post
Like Reply
#18
rchalu rakhen
[+] 1 user Likes madhorse's post
Like Reply
#19
পর্ব-০৫





বিকালবেলা বাসা থেকে বের হয়ে দেখি আয়মান আমাদের বাসার সামনে বসে আছে,,,,

আমিঃ কিরে তুই এখানে?

আয়মানঃ কেন আসতে পারি না?

আমিঃ আরে ধুর সেটা না, এই সময় তুই তো এদিকে আসিস না, সেজন্য জিজ্ঞেস করলাম।

আয়মানঃ তোকে অনেকবার কল দিতেছিলান, মোবাইল অফ দেখাচ্ছে, তাই চলে আসলাম।

আমিঃ আচ্ছা ভিতরে আয়।

তারপর আয়মানকে নিয়ে আবার বাসায় গেলাম।

আয়মানঃ কিরে কাওকে দেখছি না যে?

আমিঃ আব্বু আম্মু মামার বাসায় গেছে। আসতে রাত হবে,,,,

আয়মানঃ আর তোর বউ?

আমিঃ ও ওর বাপের বাড়িতে চলে গেছে।

আয়মানঃ কেন?

আমিঃ আমার সাথে ঝগড়া করে।

আয়মানঃ তুই আবার কি করলি?

আমিঃ……..(পুরো ঘটনা শেয়ার করলাম)

আয়মানঃ তো এখন কি সিদ্ধান্ত নিলি, অবন্তীকে রাখবি নাকি ডিভোর্স দিয়ে দিবি?

আমিঃ এখনো কিছু চিন্তা করিনি।

আয়মানঃ যেটা ভালো মনে হয় সেটা কর।

আমিঃ হুম।

আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে, আয়মান চলে গেলো।

মাগরিবের পরে নামাজ পড়ে আর বাসায় আসিনি। ভাইয়ার কবরের কাছে গেলাম,,,,

কবরের পাশে বসে নিজে নিজেই বলতে শুরু করলাম,,,,,

“ভাইয়া কেমন আছিস? তোর এই অকৃতজ্ঞ ভাইটা তোর বউকে সুখে রাখতে পারছেনা রে, তুমি আমাকে মাফ করে দিস ভাই।

আমি কি করবো বল, এতো অল্প টাকা বেতনে ফ্যামিলি চালাতেও আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।

তুই জানিস ভাই আমি সকালবেলা কখন নাস্তা করেছি ভুলে গেছি, শুক্রবার ছাড়া দুপুরবেলা আমার পেটে ভাত পড়েনা, শুধু পানি আর এক টুকরো পাউরুটি ছাড়া।

জানিস ভাই আমি দুইটা শার্ট দিয়ে পুরো বছর টা কাটিয়ে দিয়েছি। নিজের স্বাদ ইচ্ছা সব বিসর্জন দিয়ে দিয়েছি।

নিজের কম্পিউটার, মোবাইল, ঘড়ি সব বিক্রি করে দিয়েছি ওদের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য। জানিস ভাই আমি পড়ালেখাটাও শেষ করে দিয়েছি শুধু অবন্তীর জন্য, কিন্তু দেখ সে আজকে আমাকে রেখে চলে গেছে।

আসলে ভাই দোষটা আমারই, আমি ওদের কাওকে ঠিক মতো সুখে রাখতে পারছিনা।

কি করবো বল, সারাদিন এতো কাজ করে বাসায় এসে আমার ফ্লোরে থাকতে ইচ্ছা করে না, আমারও ইচ্ছা করে অন্তত রাতের বেলা কেউ একজন আ।আমার সাথে ভালো ব্যবহার করুক, ঠিক ভাবে আমার যত্ন নিক কিন্তু দেখ কপালটা এতোই খারাপ যে এই সামান্য চাওয়া টুকুও আল্লাহ কপালে রাখলো না।

ভাই তুই আমাকে মাফ করি দিস, আমি কাওকে সুখে রাখতে পারছি নারে ভাই। “””

আর কিছু বলতে পারলাম না, ভাইয়ার স্মৃতি গুলো চোখের সামনে ভাসতে লাগলো,আরো কিছুক্ষণ ভাইয়ার পাশে থেকে, কবর জিয়ারত করে বাসায় চলে গেলাম।

দেখলাম তালা আগে থেকেই খোলা, তারমানে আব্বু আম্মু এসে গেছে। দরজাও খোলা।

দেখলাম আব্বু আম্মু চোখ মুখ লাল করে বসে আছে,,,

আমিঃ আব্বু কখন আসছো?

আব্বুঃ তার আগে বল আমার মেয়ে কোথায়?

আমিঃ……..(মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি।)

বাবাঃ কি হলো কথা বলছিস না যে?

আমিঃ ওর বাবার বাড়িতে গেছে। অনেক দিন নাকি ওর আম্মুকে দেখেনি।

বাবাঃ বাবার বাড়ি গেছে নাকি তুই পাঠিয়েছিস?

আমিঃ আরে আজব আমি কেন পাঠাবো? ও নিজেই গেছে।

আম্মুঃ অবন্তী আমাদের সব কিছু বলেছে। যা মেয়েটাকে নিয়ে আয়।

আমিঃ নি আসবো মানে? এখন রাত হয়ে গেছে। আর সে যখন নিজে থেকে গেছে আবার নিজে থেকেই আসবে।

আম্মুঃ এতো কথা কেন বলিস, আর বিয়ের পর থেকে তো তুই ওই বাড়িতে যাস নি। এখন যা,,,

আমিঃ এখন গেলে আসবো কখন?

বাবাঃ তোকে কি একবারও বলছি এখন চলে আসতে। যা এখন যখন ভালো লাগবে তখন আসবি। পারলে ২ দিন থেকে আয়।

আমিঃ হুম আমি ওখানে দুই দিন থাকি আর এই দিকে আমার চাকরিটা চলে যাক।

বাবাঃ হইছে যা এখন।

কি আর করা রেড়ি হয়ে অবন্তীদের বাসার দিকে রওনা দিলাম। রাত ৯.০০ টার সময় ওদের বাসায় গিয়ে পৌছালাম।

কলিংবেল দিলাম, প্রায় ৫ মিনিট পর অবন্তীর মা মানে শাশুড়ি এসে দরজা খুলে দিলো।

আমিঃ আসসালামু আলাইকুম,,,

শাশুড়িঃ আরে বাবা তুমি! আসো আসো ভিতরে আসো।

ভিতরে গেলাম, শ্বশুরও বেরিয়ে আসলো, সালাম দিলাম আরো কিছুক্ষণ কথা বললাম। তারপর উনি বললো ” অবন্তী রুমে আছে, তুমি যাও ”

আমি ওর রুমের কাছে গেলাম, দেখলাম অনেক গুলো মেয়ের সাথে বসে বসে হাসছে, ভাইয়া মারা যাওয়ার পর এই প্রথম অবন্তীকে এইভাবে হাসতে দেখছি।

এই মুহূর্তে আমার রুমে যাওয়া।উচিত হবে কিনা ভাবতেছি,,,,

রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে রইলাম, কেউ একজন আমাকে দেখে ফেলেছে মনে হয়,,,

তারপর দুলাভাই দুলাভাই বলে ডাকতে শুরু করলো। ভিতরে গেলাম দেখি অবন্তী আর ওর কয়েকটা কাজিন বসে বসে গল্প করছে।

সবার সাথে পরিচিত হওয়ার পর এক এক করে সবাই চলে গেলো। তারপর আমি গিয়ে সোফায় বসলাম। কেউ কোনো কথা বলছি না, নীরবতা ভেঙ্গে অবন্তী বললো…..

অবন্তীঃ কেন আসছো?

আমিঃ আব্বু আম্মু আপনাকে নিয়ে যেতে বলেছে।

অবন্তীঃ তারা বলেছে সেজন্য এসেছো, নিজে থেকে আসো নি?

আমিঃ…….. (চুপ করে রইলাম)

অবন্তীঃ আমি তো তোমাকে প্যারা দিই, আমি না থাকলে তুমি ভালোই থাকবে।

আমিঃ সরি, আসলে সকালবেলা আমার মাথা ঠিক ছিলো না, তাই ভুলভাল বলে ফেলছি।

অবন্তীঃ সরি আমি যেতে পারবো না।

আমিঃ কেন?

অবন্তীঃ এমনিতে তুমি অনেক কিছু করেছো আর দরকার নেই।

আমি কিছু বলতে যাবো এমন সময় অবন্তীর আম্মু এসে খাওয়ার জন্য ডেকে গেলো। অবন্তী তখন বললো….

অবন্তীঃ খেতে আসুন।

আর কোনো কথা না বলে খেতে চলে গেলাম। বাহ! অল্প সময়ের মধ্যে এতো আইটেম? জামাই আদর আসলেই অনেক মজার কিন্তু আমার মনের মধ্যে অন্য চিন্তা ঘুরতেছে।

খাওয়াদাওয়া শেষ করে আবার রুমে চলে গেলাম। আমি গিয়ে খাটের উপর বসলাম, অনেকক্ষণ পর অবন্তী আসলো।

আমি উঠে সোফায় চলে গেলাম।

অবন্তীঃ তুমি খাটে ঘুমাও।

আমিঃ আর আপনি?

অবন্তীঃ আমি সোফায় ঘুমাবো।

আমিঃ দরকার নেই, আপনি খাটে ঘুমান। সকালে একটু তাড়াতাড়ি উঠিয়েন। আমি আপনাকে বাসায় দিয়ে আমাকে আবার কাজে যেতে হবে।

অবন্তীঃ তোমারে বলেছিনা আমি যাবো না।

আমিঃ যাবেন না মানে?

অবন্তীঃ যাবো না মানে যাবো না।

আমিঃ তারমানে আপনার কাছে আব্বু আম্মুর ভালোবাসার কোনো দাম নেই?

অবন্তীঃ………

আমিঃ সকালে রেড়ি থাকবেন।

অবন্তীঃ বললাম তো আমি যাবো না।

ধুর না গেলে নাই, এতো অনুরোধের কিচ্ছু নাই। দেখি কয়দিন না গিয়ে থাকতে পারে, আমারও তো একটা পার্সোনালিটি আছে।

ঘুমিয়ে গেলাম, সকালে কাওকে কিছু না বলে চলে গেলাম। বাসাও গেলাম না, সরাসরি কাজে চলে গেলাম। এরমধ্যে বাবা কয়েকবার কল দিয়েছে বাট ধরিনি।

রাতের বেলা বাসায় গেলাম। আব্বু আম্মু দুজনেই আমার উপর ফায়ার। আমি কিছু না বলে রুমে চলে গেলাম।

আব্বু আমার রুমে আসলো,,,,,

বাবাঃ কিরে কি করিস।

আমিঃ কিছুনা। কিছু বলবা নাকি?

বাবাঃ হুম অবন্তীর সাথে আমাদের কথা হয়েছে। ও কিছুদিন ওখানে থাক মন মানসিকতা ভালো হোক তারপর চলে আসবে।

আমিঃ সেটা আমাকে বললেই তো পারতো।

বাবাঃ হুম, আচ্ছা শোন।

আমিঃ হুম বলো,,,

বাবাঃ অবন্তীর কোন ফ্রেন্ডের নাকি বিয়ে। যদি ওর হাতে কিছু টাকা দিতি।

আমিঃ তোমাকে কে বললো?

বাবাঃ সে নিজেই বলেছে। তোকে নাকি বলতে লজ্জা করছে তাই আমাকে বলেছে।

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে, দিয়ে দিবো।

বাবাঃ বিয়েতো কয়েকদিন পর, কালকে দিতে পারবি?

আমিঃ আচ্ছা দেখি।

তারপর খেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে কাজে যাওয়ার আগে টিউশনিতে গেলাম। পড়ানো শেষে টাকাটা অগ্রিম চেয়ে নিলাম।

টাকাটা নিয়ে আবার কাজে চলে গেলাম, দুপুরবেলা আমি নামাজ পড়ে বাইরের একটা দোকানে পানির মধ্যে পাউরুটি চুবিয়ে খাচ্ছি এমন সময় দেখলাম একটা মেয়ে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।

ভালো করে খেয়াল করে দেখলান এটা অবন্তী, তার কয়েকটা ফ্রেন্ডের সাথে কোথাও যাচ্ছে মনে হয়। বাসের জন্যই অপেক্ষা করছে।

আমি দেখেও না দেখার ভান করে কভার ভ্যান চালককে তাড়াতাড়ি এখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য বললাম। সে ভ্যান চালাচ্ছে আর আমি পিছন থেকে ঠ্যালতেছি।

রাতের বেলা বাসায় আসলাম, দরজা টোকা দেওয়ার একটু পর দরজা খুলে দেয়, তাকিয়ে দেখি……..

চলবে……..
বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড 
http://biddutroy.family.blog
[+] 3 users Like Biddut Roy's post
Like Reply
#20
superb... waiting for next
[+] 1 user Likes nightangle's post
Like Reply




Users browsing this thread: