Posts: 1,976
Threads: 56
Likes Received: 1,969 in 955 posts
Likes Given: 228
Joined: Jan 2019
Reputation:
125
বিকেলটা হোটেলেই কাটিয়ে দিলাম । বিকেলের মুন্নার যেন মনে আনন্দের বন্যা বইয়ে দেয়, কি হবে হিসেব নিকেশ করে , কি বা হারালাম , এ মহাবিশ্বে হাজার হাজার আমি জন্মে আবার মরে যাবো, কিন্তু এমন স্বর্গীয় অনুভূতি শুধু মুন্নারই দিতে পারে । সূর্যাস্ত মানুষ কে নতুন দিনের কথা ভাবতে শেখায় । সব নশ্বর, কোনো কিছুই
থাকবে না না এ পৃথিবী না এ মহাবিশ্ব , চরম অসীম শুন্যতায় একটা একটা করে এমন বিশ্ব মিলিয়ে যাবে , আর তারই আসিব অনাদি শক্তি নিয়ে আবার তৈরী হবে কোনো নতুন মহাবিশ্ব । এর ই নাম ব্রহ্মজ্ঞান । নিজের দেহ অনুভূতির বাইরে গেলে এই জ্ঞান এর অনুভূতি মানুষের আসে না।
অধ্যায় আমি শেষ পর্যন্ত ববিনের হাতেই সপে দিয়েছে , ঐটুকু মায়া না করাই ভালো । মাকে লুকিয়ে দুপুর থেকে এক নিঃশ্বাসে পড়ে চলেছে আমার ভালো মন্দ দোষ গুন্, আর বাবা হিসাবে এর চেয়ে বড়ো সাহস জীবনে আর হয় তো বোধি কে দেয়া হবে না । বিচার আমার যদি করতেই হয় , তাহলে আমার উপযুক্ত ছেলেই করুক । দোষ গুনে ভরা আমার জীবনের উপলব্ধি যাচাই করে নিক বোধি, যাতে ওকে আমার মতো ভুল করতে না হয় । কাল হয় তো ওর অধ্যায় পড়া শেষ হয়ে যাবে , তার পর আমিও আমার চোখ দিয়ে ওর চোখের গভীরে খুঁজবো , কোনো ক্ষমা অবশিষ্ট আছে কিনা ! যদি খুঁজে পাই তাহলে শ্রী কে প্রশ্ন করবো তার চোখে কোনো ক্ষমা কেন ছিল না সেদিন ।
কাল আমিও সাহস করে এগিয়ে যাবো , নতুন করে একলা হতে হবে বলে । এক দিন মার মতো আমায় ববিন কে ছেড়েও আমায় চলে যেতে হবে , তাই বদলের শেষ লড়াই টা লড়তে চাই একলা নিঃসঙ্গ হয়ে , নিজের সাহস আর ভুল স্বীকার করবার ক্ষমতা নিয়ে রুখে দাঁড়াবো আমার জীবনের এই প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে ববিন কে নিজের ঢাল বানিয়ে নয় । ভীরু কাপুরুষের মতো বাঁচতে চাই না , তাই তো নিজের জীবনের পাতা টাই ধরে দিয়েছি ববিনের হাতে যাতে ওহ আমার মতো লেখবার সাহস আর প্রেরণা পায়। সব গল্পে নায়ক থাকে , আর জীবন এমন অনেক নাম গোত্র হীন সাধারণ মানুষ কে দিয়ে বিত্তবানের স্তম্ভ রচনা হয় ।
আমি বিত্তবান নই, কিন্তু বিত্তহীন হয়ে মরার চেয়ে জীবনের শেষ লড়াই লড়বো বলেই শ্রীর সামনে আসা ।
চায়ের কাপ রেখে গেলো এক জোয়ান ছোকরা।
চায়ের কাপ নিয়ে ব্যালকনি তে বসে দেখতে থাকলাম দূরের নীল আকাশ, ওই আকাশের কোনো ঠিকানা হয় না ,না হয় দেশ দেশান্তরের সীমা রেখা ওই আকাশে , সেখানে আকাশ মানুষ কে নাম ধরে ডাকে না , চেনে না, জানেও না কোনো মানুষের জাত পাত বর্ণ গন্ধ আর ছোট খাটো মিথ্যে ঝগড়া। আকাশ শুধু তাদের জন্য যারা প্রায়শ্চিত্ত করতে চায়, আর সেই জন্য বুঝি চিতার ধোয়া গুলো আকাশেই মিলিয়ে যায় ।
অন্ধকার আমার সাহস কে ভেঙে ফেলতে পারে নি , হালকা পাহাড়ি হিমেল হওয়ায় দাঁতে দাঁত পিষে এখনো লড়ার প্রেরণা পাই । কাল মহাসংগ্রাম আর তারই প্রস্তুতি আমার শিহরণে শিহরণে । মানুষ ভুল করে ফিরেও আসতে পারে, সব শেষ হয়ে যায় না ভুলে , মা এমনটি করে আগলে তার কোলের শিশু কে মাটিতে আরেক বার ঠেলে দেয় , আর এক দিন সোজা হয়ে মানুষ হাটতে শেষে ।
শ্রী আমায় সেই সুযোগ দেয় নি ।
আর দেয় নি বলে রীনাকে মন থেকে মুছে ফেলা হয় নি , মুছে ফেললেও সুগন্ধি ধূপের মতো আমায় এতো দিন সুবাসিত করে রেখেছে আস্তাকুড়ে পড়ে থাকা আমার জীবন কে বেশ কিছু অন্তরঙ্গ ভালোলাগার মধ্যে দিয়ে ।
রাতে বিশেষ কিছু খাই না, তবুও ওয়েটার যা খাবার ঘরে দিয়ে গেলো , তার গন্ধে মন খেতেই চাইলো , রাজমা চাউল, রায়তা, নান আর একটা সুইট ডিশ । অনেক ক্ষণ ববিন আসে নি আমার কাছে । ওকেও হয় তো এই সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যেতে হচ্ছে আমারি মতো , নিজের বাবা কে ক্ষমা করা যায় কিনা ! ওকেও মেপে নিতে হচ্ছে আমার এতো গুলো বছরের কেটে যাওয়া অন্তরঙ্গ মুহূর্ত গুলোর সাক্ষী হয়ে । মার্ রাজসাক্ষী হয়ে তাকেই আমার মৃত এ সম্পর্কের বৈতরণী বয়ে বেড়াতে হবে । একটা সোনার আর রুপোর কাঠি তার চাই, নাহলে আমার বাকি জীবনের পাথেয় বলে কিছুই থাকবে না ।
সকালে মুন্নার লেকে , অনেক মানুষের ভিড় , তারা ছোটো হাঁসি গুলো কুড়িয়ে নিয়ে একে ওপর কে উপহার দিচ্ছে , জীবনের পাথেয় ভেবে । তাদের যোবনের চলার পথ অনেক টাই বাকি রয়ে গেছে , আর আমি জীবনের অনেক টা পথ চলে জীবনের পাথেয় খুঁজতে বেড়িয়েছি ।
পা আমার লক্ষ্য ভ্রষ্ট হয়েছিল অনেক বছর আগে , আজ লক্ষ্য স্থির করা হয় নি । বেসামাল মন টা আজ ঠিক করে উঠতে পারে না , শ্রী বড়ো ছিল না রীনা বড়ো । সুতোর ডাক ধরে এগিয়ে গিয়ে নিজেকেই খুঁজে পেয়েছি , কিন্তু খুঁজে পাইনি আমার সংসারকে ।
খানিকটা এগিয়ে একটু ফাঁকা জায়গায় এসে বসলাম । এখন থেকে লেকের ধার ধরে প্রেমিক প্রেমিকা রা হাত ধরে হেটে বেড়ায় । হাঁটার তালে তালে উপচে পড়া স্বপ্ন গুলো মুক্তোর মতো রাস্তায় বিছিয়ে যায় । কখনো আবেগের রোমন্থনের মিষ্টি বাতাস জীবনের সব গ্লানি মুছিয়ে দেয় , কোথাও নতুন জীবন জেগে ওঠে । এমনি মায়া ভরা এ সংসার, আমার আমার বলে আঁকড়ে থাকে পৃথিবীর সব মানুষ শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত , আর মারা যাবার পরেও উপঢৌকন দিয়ে ভুলিয়ে দিতে হয় এমন আমার জিনিস পসরা করে শেষ কৃত্যে আমারই অস্তিত্বে ।
দূর পাহাড়ি গাছ গুলোর নাম জানা হয় নি কখনো , হালকা বেগুনি রঙের ফুলে ভরে উঠেছে রাস্তা , এখানে বোধ হয় কোনো ঋতু বা কাল কখনো আসে না , এতো মানুষের ভালোবাসায় তার আর আসবার দরকার পড়ে না মনের ভাব বদলে দিতে । শ্রীর সামনে দাঁড়াবো বলে চোখ টা চিলের মতো সাজিয়ে রেখেছি , আর হাজার দূরেই থাকুক না কেন সে , তার শরীরের একটা চলন আমার চোখ কে ফাঁকি দিয়ে যাবে না । একটা মেয়ের সামনে আমি হেরে গেছি । আর এ হার আমার নয় , এ হার রীনার ও । আমাকে সুখী দেখতে চায় বলেই মহাপ্রস্থান হয়েছে তার । জীবনে নাম গোত্রহীন হয়ে কোথাও নিজের জীবন কাটিয়ে দিয়েছে জীবন থেকে কিছু না পাবার পরোয়া করে । আমি রীনার মতো সাহসী হতে পারি নি ।
ঘন্টা খানেক এদিক ওদিক ঘুরে মনের সাহস টা মোমবাতির মতো গলে চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে । দপ করে নিভে যাবে এমন নয় । কিন্তু আলোর ক্ষমতা তার মৃতপ্রায় । ঝিলেরই এক কোণে নিঃশব্দে বসে জলের তরঙ্গ দেখছে শ্রী । হাতের মুঠো গুলো শক্ত করে এক বার পিষে নিলাম । সামনে আজ আমায় দাঁড়াতেই হবে , যোগ্য উত্তর থাকে আর না থাকে । পা বাড়িয়ে এগিয়ে গেলাম শ্রীর কাছে ।
পাশে এসে বসলাম শ্রীর । আমার দিকে না তাকিয়েই মুখ শক্ত করে বললো শ্রী "জানতাম একদিন ববিন তোমায় আমার সামনে এনে দাঁড় করাবে ।
বোলো কি বলবে , এটাই যে তুমি নির্দোষ , নাকি ক্ষমা চাইবে , এদুটোর বাইরে আজ তুমি যা চাইবে আমি দেব !"
তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দেব আজ"" ।
আমার বলার আগেই আমাকে বাক রুদ্ধ করে তাকিয়ে রইলো অপলক আমার দিকে ।
আমি হারতে চাই না এ বদলানোর খেলায় আমি হেরে গেলে আমার অস্তিত্ব আমায় কাপুরুষ বলে ঘৃণা করবে । "আমাকে আমার কথা বলার অধিকার টুকু কেন দিলে না ! কোন অপরাধে !"
"অপরাধ তো তোমার নয় বরুন , অপরাধ আমার , স্বপ্ন দেখার অপরাধ ! আর অধিকারের প্রশ্ন , তুমি কি আমায় নিষ্পাপ ভালোবাসা দিয়েছো ? প্রশ্ন করো নিজেকে !"
সত্যি তো আমার শ্রী কে নিষ্পাপ ভাবে ভালোবাসা হয় নি , আমিও তো আমার ভালোবাসাকে ভাগ করে ফেলেছি । তবুও লড়ে যাবো আর শ্রী কে আমার স্ত্রীর যোগ্য মর্যাদা দেব । হোক এতো বছর পর তবুও তো সময় এসেছে । আমার অস্তিত্ব , মেকি মূল্যবোধ সব কিছু দূরে সরিয়ে সমর্পন করবো শ্রীর কাছে !
"তোমার মনে হয় না তুমি প্রতারণা করেছো ? না তার সাথে না , তোমার নিজের স্ত্রী আর সন্তানের সাথে !" শ্রী তীক্ষ্ন ধারালো দৃষ্টি দিয়ে শানিত আঘাত করে ।
আমি প্রতিঘাত সামলে প্রশ্ন তুলি "কেউ যদি ভুল করে কোনো ভুল করে বসে সে ভুলের কি কোনো ক্ষমা নেই তোমার কাছে !"
"এটা ভুল হতে পারে না বরুন তুমি কি জানতে না * স্ত্রী সব কিছু সইতে পারে, পারে না শুধু স্বামীর ভাগ দিতে , আর তুমি সে ভাগ কি করে দিতে পারলে আরেকজন কে ?"
কোনো প্রতারণা তো আমি করিনি , আর স্বীকার করছি ভুল করেছি , কিন্তু তোমার আর ববিনের অধিকার ক্ষুন্ন করে , কাওকে মিথ্যে ছলনা করে প্রলোভন দেখিয়ে আমি তো তোমার সাথে প্রতারণা করি নি !"
"স্বীকার করছি ভুল কিন্তু সে ভুলের কি এতো বছর কোনো ক্ষমা ছিল না ?"
শ্রী তীক্ষ্ন দৃষ্টি দিয়ে আমার বুকের ভিতর পড়ে নিতে থাকলো আমার লুকোনো কথা ।তার পর শান্ত হয়ে বলে উঠলো " স্নেহের বেলায় কি তুমি একই কথা বলবে ! দিনের পর দিন আমি স্নেহের চোখে তোমার প্রতি তার অযাচিত ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছি ! বোলো চুপ করে আছো কেন !"
" আমি নিরুপায় ছিলাম শ্রী । কিন্তু বিশ্বাস করো স্নেহের মেয়ে আমার সন্তান নয় , সে শুধু সিদ্ধার্থের , তুমি আবার ভুল করছো শ্রী !আমি অপরাধ করেছি আমি প্রায়শ্চিত্ত শুধু করতে চাই !"
এতো গুলো বছর আমি কাটিয়েছি রোজ এই মনে করে যে এটাই আমার প্রায়শ্চিত্ত !"
শ্রী আমার চোখের দিকে তাকায়, তার চোখ শান্ত , কোনো প্রতিশোধের লেশ মাত্র নেই !
"আর তোমার প্রায়শ্চিত্তের আগুনে আমি হারিয়েছি আমার সংসার , আমার স্বপ্ন আমার পরিচয় আর আমার সমাজ ! তার প্রায়শ্চিত্তের হিসাব যে বাকি রয়ে গেলো বরুন !"
থমকে দাঁড়িয়ে গেলাম , এভাবে সত্যি ভাবা হয় নি , কি দিয়েছি শ্রী কে স্বামী হয়ে , শুধু কর্তব্য পালনের তাগিদে যান্ত্রিক হয়ে দিনের পর দিন কাটিয়েছি , তার স্বপ্নের নূন্যতম সন্মান আমি রাখতে পারি নি। সে তো কিছু চাই নি তবুও বিশ্বাস ঘাতকতা কেন , কেন আমার এমন পদস্খলন । বুকের ভিতর মুচড়ে ওঠে আমার ।
জানি না কি বললে শ্রীর একটু কাছে আসতে পারবো তার জীবনের জমে থাকা কষ্টের আগুন একটু নিভিয়ে দিতে পারবো । "একান্ত নিরুপায় হয়ে " বলতে চাইলেও , শ্রী আমায় বলতে দিলো না ।
"বার বার নিরুপায় হয়ে তুমি আমার কাছে আস্তে পারো না বরুন , আমার সন্মান বোধ এখনো বেঁচে আছে !"
বুক বেদনায় কেঁপে ওঠে। চোখের রং গুলো কেমন বাস্প হয়ে নিংড়ে নিচ্ছে জল রং আস্তে আস্তে আবছা হয়ে, ভেসে ভেসে যাচ্ছে সামনের রং গুলোর দিকে ।
কি ভয়ঙ্কর মিথের মধ্যে কাটিয়েছি এতো গুলো বছর , আত্মসন্মান আর দাড়ি পাল্লায় শ্রী কে তুলে , কেমন করে মুখ দেখাবো ববিনকে । আমার এ ভুল দুটো জীবন কে নষ্ট করে দিয়েছে ।
গলা বুজে আসছে , কেউ যেন দম বন্ধ করে দিয়েছে শ্রীর সামনে আমায় । নিজের অজান্তেই হাত দুটো মেলে ধরেছি শ্রীর সামনে । "একটু দয়া ভিক্ষা হবে ?"
এক দু এক ফোটা করে জল গড়িয়ে পরে শ্রীর চোখ থেকে গালের চিবুক গড়িয়ে ।
"আমি প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই শ্রী , আমায় বলে দাও কি করলে তোমায় একটু শান্তি দিতে পারবো আজ আমি বড় অপরাধী , এ অনুতাপের আগুনে আমি জ্বলে শেষ হতে পারবো না !"ভেঙে পড়ি নিজে কে সামলাতে সামলাতে ।
আমার ভুলেরকি কোনো ক্ষমা হয় না ?"
শ্রী ডুকরে ওঠে "ফিরিয়ে দিতে পারবে আমার হারিয়ে যাওয়া সংসার টাকে?
ফিরিয়ে দিতে পারবে আমার এতো গুলো বছর ? ফিরিয়ে নিতে পারবে তোমার এমন অগোছালো জীবন কে আগের মতো সাজিয়ে ? কি তুমি জীবনে পেলে বরুন ?
তোমার তো সব কিছু ছিল!আজ দেখো আমার সামনে দাঁড়িয়ে তোমায় আমার ক্ষমা ভিক্ষা চাইতে হচ্ছে !"
তুমি সব কিছু শেষ করে দিয়েছো বরুন তোমার ক্ষমা হয় না । চলে যাও বরুন আরো দূরে চলে যাও !"
শ্রী থাকতে না পেরে ফুঁপিয়ে ওঠে শাড়ীর খুট মুখে নিয়ে, মুখ টা ঘুরিয়ে নেয় আমার থেকে । এই প্রত্যাখানের যন্ত্রনা আর কেউ কোনো দিন বুঝবে না , কারণ এমন সমর্পন কেউ করে নি ।
শ্রীর প্রত্যাখ্যান আমার জীবনের আশীর্বাদ হোক ।
উঠে দাঁড়াবার আগে শ্রী কে খুব আদর করতে ইচ্ছা করছিলো । মনে পড়ছিলো প্রথম দিন যখন কাঁদতে কাঁদতে আমার বাড়িতে এসেছিলো , এক দিন কাঁদতে কাঁদতে আমার বাড়ি থেকে চলে গেছে , একেও আমার জীবনে কিছু দিতে পারি নি । জীবনে চলার ভরসা টুকুও আমি কেড়ে নিয়েছি শ্রী এর থেকে । কি হীন আমার মন , আর এমন মনে কে প্রশ্রয় দিয়ে চলে গেছি বছরের পর বছর । অনেক আগেই তো পারতাম শ্রীর পায়ে আছড়ে পড়তে ।
যাবার আগে ইচ্ছে হলো দুটো কথা আরো বলে যাই , জানি না জীবদ্বশায় আর এ কথা বলার সুযোগ হবে কিনা । "আসলে শ্রী আমিও লোভী , তুমি চলে যাবার পর থেকে ওই বিছানায় শুয়ে আমি একটাও রাত ঘুমাতে পারি নি , তোমার বলতেও পারি নি যে আমার ঘুম হচ্ছে না , আর বলতেও পারি নি যে আর আমার চোখে ঘুম আসে না ! তুমি চলে যাবার পর রান্না ঘরেও যাই নি তোমায় ডাকবো বলে ! বৃষ্টি হলে ছাদের দরজা খুলে ছুটে কাপড় নামাতে যাই নি । বছর বছর দূর্গা পুজোয় দরজা বন্ধ করে বসে ছিলাম দু হাটু এক করে , আর বছর শেষ হলে একটা করে ক্যালেন্ডার ছিড়ে ফেলে দিয়েছি কখন তুমি আসবে ।
তোমার আসা হয় নি আমিও ডাকতে পারি নি , এ বছর ডাকছি আমার বাড়ি আসবে ? পারলে এস এবছর আমি দরজা বন্ধ করে বসে থাকবো হাটু মুড়ে !
গলা টা বুজে এলো আর দাঁড়িয়ে থাকা হলো না , অচেনা রাস্তায় পা এগিয়ে যাচ্ছে গন্তব্য হীন !
•
Posts: 1,976
Threads: 56
Likes Received: 1,969 in 955 posts
Likes Given: 228
Joined: Jan 2019
Reputation:
125
কখন হোটেলে ফিরেছি জানি না । দিনের আলো চোখে খুব বিঁধছে । মনে হচ্ছে যদি কালো অন্ধকার কোনো ঘর থাকতো । দরজা জানলা বন্ধ করে বিছানায় শরীর টা ফেলে দিলাম । চোখে হাত দিয়ে আদ্যপান্ত দেখছি নিজের জীবন টাকে ।জীবনের থেকে কত কি শেখবার আছে । ভুলের আগে সাইরেন বাজিয়ে যদি সবাই কে সচেতন করে দেওয়া যেত তাহলে কিছু ভুল হয়তো কম হতো মানুষের আর ববিন কে কেটে দু ভাগ করতে হতো না । দরজায় নক করলো কেউ । আজ আর কথা বলতে ইচ্ছা করছে না ।
তবুও দরজা খুলতেই দেখলাম ববিন দাঁড়িয়ে । ওর চোখ মুখ দেখে বুঝতে অসুবিধা হলো না অধ্যায় তার পড়া শেষ হয়ে গেছে । চুপ চাপ মুখ নিচু করে আমার বিছানায় বসলো আমার পাশে ।কিছু কথা বলতে চায় কিন্তু বলতে দ্বিধা করছে মনে হয় চোখ মুখ দেখে । বলতে পারে না , ওর যৌবনে এতো ঝড় ওহ নিতে পারে নি । আমি তো এতো দিন ধরে দিনের হিসেবে করে বসে আছি ।
কিছু না বলে জড়িয়ে ধরে আমার বললো "ববি আই লাভ ইউ সো মাচ, আই লাভ ইউ! ইউ আর মাই উইনার ।"
ওর ছোট বেলাটা মনে পড়ে গেলো । পিঠে হাত বুলোতে বুলোতে বললাম "মা ফিরে এসেছে !"
ববিন উত্তর দিলো না ! আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো " রীনা মা কে খোজ করা টা এখনো বাকি ববি !"
তাকে ছাড়া তো অধ্যায় শেষ হওয়া সম্ভব নয় !"
আমি বললাম "যাও তোমার মার কাছে , ওনার সাথে তুমি দু এক দিন কাটাও , আমি দু এক দিন সামলে নেবো !"
"আচ্ছা ববি মা কি তোমায় ক্ষমা করতে পারে না ?"
আমি জানি না শ্রী আমায় ক্ষমা করতে পারে কিনা , কিন্তু ববি কে সংসারের জটিলতা বোঝাতে অনেক সময় লেগে যাবে । "ক্ষমা তিনি আমায় করে দিয়েছেন ববিন কিন্তু আমায় গ্রহণ করতে পারেন নি !"
আমার আর কোনো অনুতাপ নেই !"
ববি উঠে চলে গেলো ! দু তিন দিন শ্রী আর আমার সামনে আসে নি , আমিও তার কাছে যাবার চেষ্টা করি নি । পাচ্ছে ববিনের সুন্দর ছুটি টা নষ্ট হয় । ববিন কে আমি বেশি করে বুঝিয়ে বলেছি মাকে যেন ভালো করে ঘুরিয়ে সব কিছু দেখিয়ে ব্যস্ত রাখে মার মন । নতুন করে এখন শরীরে যৌবনের জোয়ার আসে । শ্রী কে দেখে শ্রী কে ভালোবাসতে ইচ্ছা হয় । কত দিন দেখিনি , কোনো দিন ছুঁয়ে দেখিনি তার শরীর ।
দু দিন আমি আসে পাশেই কাটিয়েছি , ববিন মা কে নিয়ে ঘুরে বেরিয়েছে আমার কথা মতো । আমার আর শ্রীর মিলে মিশে যাওয়া হয়তো ববিনের কাছে সব থেকে বড় আশীর্বাদ হতো কিন্তু তা হবার নয় হয়তো । আদি এসেছে আমার সাথে দেখা করতে । "ইয়ং চ্যাপ , শুধু হোটেলে বসে থাকলে হবে ? আমি তো ভাবলাম আপনি আমার থেকেও সাহসী , কিন্তু মনে হচ্ছে , না আপনিও ভীতু !" মনে মনে ভাবলাম আমি ভিতুই বটে ।
"কি হে কি খবর , তুমি যে আমার সাথে দেখায় করতে আসোনি আর আমি তো তোমার বাড়ি চিনি না !" আমাকে থামিয়ে বললো আদি "চিনি না বললে হবে, কাওকে জিজ্ঞাসা করলেই বলে দিতো যে মুন্নার কনভেন্ট প্রিন্সিপাল এর বাড়ি কোন দিকে । তবে আমার বাড়ি গিয়ে আপনার বিশেষ লাভ হতো না দু দিন আমার নাইট শিফট ছিল ।"
আমার হটাৎ প্রশ্ন জাগলো "আচ্ছা তুমি মাস্টার্স বা FRCS করছো না কেন ? "
মুখ টা চুপসে গেলো আদির। ব্যাপারটা একটু হালকা করবো বলেই ওকে নিয়ে বেরোলাম হোটেলের বাইরে বেলা হয়েছে ঘড়ির দিকে দেখা হয় নি । "চলো তোমার হাসপাতাল দেখাবে !"
"খুব আনন্দ নিয়ে বললো এখনই চলুন !"
নানা কথা বলতে বলতে হাসপাতালের দিকে এগিয়ে চললাম । মুন্নার হাসপাতাল যত ছোট ভেবে ছিলাম ততো ছোট নয় । একটা ব্যাপার বুঝতেই পারলাম যে আদি ওই হাসপাতালের প্রাণ কেন্দ্র । ওর এই হাসপাতালে এতো লোকের ভালোবাসা জড়িয়ে আছে ভাবতেই অবাক লাগলো । এমন কেউ নেই যে আদি কে চেনে না । বেয়ারা থেকে নার্স তাকে একের পর এক অভিবাদন করে যাচ্ছে ।
"আচ্ছা হাইয়ার স্টাডি যেটা বলছিলাম , তুমি হাইয়ার স্টাডি করতে চাও না? "
আদি আমার দিকে তাকিয়ে নিষ্পাপ একটা হাসি দিয়ে বলে "কেন এই তো বেশ ! এখানে ওসবের দরকার পড়ে না !"
আমি একটু হেসে বললাম " ওখানে দরকার পড়ে না কিন্তু অন্য জায়গায় ?"
"না অন্য জায়গায় যাবার কোনো ইচ্ছে যে আমার নেই !" আদি উত্তর দেয়! আমি যা চাইছি তা আদির থেকে পাচ্ছি না । ঘুইরে প্রশ্ন করতে হলো "কেন এমন কেন ?"
"মা কে ছেড়ে অনেক দিন বাইরে ছিলাম আর মন চায় না , আর মাকে ছেড়ে ভালো লাগে না দেখলেন না এতদিন আপনাদের বাড়ি যাওয়া হয় নি !"
হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে কি মনে করে আদি কে বললাম "চলো হোটেলে ফিরে যাই ।"
আদি বললো চলুন । একটু হেসে বললো "আমার বাড়ি চাইলে এক কাপ চা খাওয়াতে পারি , হাসপাতালের ঠিক পিছনে । পড়ে বলবেন "বাড়ি নিয়ে গেলাম না ।"
যতই মিশছি আদির সাথে ততই যেন গভীর একটা টান অনুভব করছি , আমাদের একে অপরকে যেন নখদর্পনে চেনা । ভালোই লাগলো ,বললাম "চলো তোমার মায়ের হাতের চা খেয়ে আসবো ।"
ঘড়ি দেখে আদি বললো "ভাগ্য ভালো মা বাড়িতেই আছেন ।" আমি জিজ্ঞাসা করলাম কেন ?
"বাহ্ উনি অন্যদিন কলেজে থাকেন আজ উনি ফিরে এসেছেন , মাঝে মাঝে ফিরে আসেন । ঘড়িতে ২ :00 বাজে দুপুর গড়িয়ে গেছে খেয়াল করি নি ।
ছোট্ট বাড়ি দু তিনটে ঘর আর বারান্দা , হিল স্টেশনের বাড়ির মতো । বাইরেই বারান্দায় আমায় বসতে দিয়ে আদি ভিতরে চলে গেলো । বাড়ির বাইরে আদিত্যর নাম প্লেট লেখা দেখে ভালো লাগলো ।
তুমি যে আমার নাম চুরি করে নিয়েছো হে ছোকরা! যেন আমার নাম বরুন সেন গুপ্ত , আর তুমি আগে শুধু এটি আদিত্য বসিয়ে নিয়েছো নাম টা কিন্তু বেশ ভালো আদিত্য বরুন সেনগুপ্ত । না আমার নাম এভাবে ব্যবহার করা চলবে না ।তোমার মাকে কমপ্লেন করতে হবে ।
আদি এক গাল হেসে বললো " মা আসলে বলুন , আমিও বলি আদিত্য যা বরুণ তাই দুটো রাখবার কি দরকার ছিল ।
আদি ভিতরে বোধ হয় মা কে বলতে গেলো আমি এসেছি । আমি বারান্দায় বসে রইলাম ।
কিছু ক্ষনের মধ্যেই আদি বেরিয়ে এসে বললো চলুন হাত মুখ ধুয়ে নিন "মা বললেন এসেছেন যখন তখন গরিবের বাড়ি দু মুঠো খেয়েই যাবেন ।"
আমি কিন্তু কিন্তু করলাম । তার পর মনে হলো না চা হোক পরে না হয় আরেক দিন আসা যাবে ।
আদি বললো "ভাবছেন কি চা আসছে না , ভাত খাবেন ।" কেমন দ্বিধা গ্রস্ত হয়ে হাত মুখ ধুয়ে খাবার টেবিলে বসলাম ।তোমার মাকে কৈ দেখছি না ? উনি আসছেন নিন আপনি খেতে শুরু করুন ।"
এক জন ভদ্রমহিলা এসে টেবিলে আমার খাবার বেড়ে দিলো । বাড়িতে কাজ করেন হয়তো । আমি আদি কে বললাম আমি কিন্তু অল্পই খাই ।
আদি হাসলো কিছু বললো না ।
মুখে খাবার তুলতেই , মাথা টা ঘুরে উঠলো । গলা দিয়ে খাবার টা কিছুতেই নামছে না , চোখ টা ভিজে গেছে বুঝতেই পারি নি । চোখের নোনা জল টা
মুখে মিশে যাচ্ছে , এতো দিন ধরে মনের অবচেতনে যাকে খুঁজে গিয়েছি ভাগ্য এভাবে তাকে মিলিয়ে দেবে ভাবি নি । দু চোখ মেলে তাকে দেখবার আশায় অসাড় হয়ে গেছে আমার শরীর । পিছনেই দাঁড়িয়ে কিছু করছে আদি । এক বার ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে ছেলেটাকে ।
প্রাণ ভোরে ডাকতেও পারছিনা আদি আয় ।
হ্যাঁ সেই এক স্বাদ , এই এক মাধুর্য , উফফ!!! ভাতের থালা পরেই রইলো । খাওয়া আর হলো না । কথা দিয়েছি খোঁজার চেষ্টা করবো না তাকে । আদি একটু আশ্চর্য হয়ে বললো "কি শরীর খারাপ করছে ?" আমি বললাম "হ্যাঁ ওই আর কি !"
উঠে বাইরে জলের গ্লাস নিয়ে বারান্দায় হাত ধুয়ে আদির দিকে না তাকিয়েই যাবার উদ্যোগ নিলাম । দু চোখের জল লুকোতেই হবে ।সামনে দাঁড়ালে আমি হয়তো নিজেকে সামলাতে পারবো না । ছোবার লোভে পিছন থেকেই কাঁধ টা চেপে ধরলাম আদির । নিজের শরীরে বিদ্যুতের একটা শিহরণ বয়ে গেলো ।
" আদি আসি ! " বলে বেরিয়ে আসলাম রুদ্ধশ্বাসে । হতচিকিত হয়ে আদি দাঁড়িয়ে রইলো । বুঝতে পারলো না আমার এমন ব্যবহারের কি কারণ ।
দূর থেকে রীনার কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম "কি আদি উনি খেয়ে গেলেন না আর তুমি যেতে দিলে ? "
বাকি কথা গুলো মিলিয়ে গেলো বাতাসে । আমি হাসপাতালের রাস্তা ধরে ছুটছি হোটেলের দিকে ববিন কে খুঁজবো বলে ।
কোনো রকমে হোটেলের ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে দিলাম । না এ হতে পারে না, শ্রীর কাছে আগেই হেরে বসে আছি, এর পর রীনার কাছে না , পারবোই না । সবার অলক্ষ্যে আমাকে এখুনি এই শহর ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হবে । কাওকে কিছু বলা যাবে না , আমি পারবো না রীনার সামনে দাঁড়াতে । কি নিয়ে দাঁড়াবো আমি আদির সামনে ? আর তার পর শ্রী আর ববিন ? ওরা কি ভাববে আমায় !
এখন উপলব্ধি করছি মানুষ কেন কাপুরুষ হতে চায় । আর কোনোকিছুর জায়গা থাকে না তার মনে শুধু পরাজয়ের গ্লানি ছাড়া , তাই বাইরের খোলস ছেড়ে নিজের পরিচয় পরিচয় ভুলে যেতে চায় প্রায়শ্চিত্তের জ্বালায় । আবার কেউ সেই খোলস গায়ে নিয়ে বাঁচতে থাকে বিত্তবানের মতো প্রায়শ্চিত্তের আগুনে জ্বলতে জ্বলতে ।
মনে আনন্দের বান এসেছে আজ , কিন্তু সেখানে স্নান করার অধিকার নেই , যাবোই বা কোথায় ? ববিনের সাথে দেখা না করে আমার যাওয়া হবে না । ওর জন্যই আমার মায়া , শ্রীর মায়া কাটিয়ে ফেলবো , রীনার মায়া কাটিয়ে ফেলবো । কিন্তু আদি তো কোনো অন্যায় করে নি, ওকে বঞ্চিত করা পাপ হবে । না, হিসাবের খাতায় ডানদিক আর বা দিক এক রাখতে হবে । প্রায়শ্চিত্তই যখন করতে নেমেছি দুজনের আমাকে বিচার করার সমান অধিকার , একে ওপরের জীবনে জড়িয়ে আছে যে!
এই অপেক্ষা বড়ো অপেক্ষা একটা করে ঘড়ির কাটা টিক টক করছে , কখন আসবে ববিন তাকে সাক্ষী রেখেই আমার পথ চলা, জানি দুজনের কাছে সমান অপরাধী আমি কিন্তু শ্রীর জেনে রাখতে হবে রীনার সন্তান আদি আমার সন্তান, আর তা বলতে না পারলে আমার কোনো প্রায়শ্চিত্তই হবে না ।
ঘন্টা দেড়েক হবে হোটেলের ওয়েটার আমায় খবর দিয়ে গেলো ববিন ফিরে এসেছে, আদি আর আসেই নি হোটেলে, হয় তো ওর মন ভেঙে গেছে আমার ব্যবহারে । বাইরে বেরিয়ে দেখলাম বিকেল হচ্ছে আস্তে আস্তে।
রীনার সামনে দাঁড়ানো আমার ভীষ্মের শরশয্যার মতো । আমার যে ইচ্ছা মৃত্যু । ববিন দৌড়ে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বললো " শুনলাম তুমি অস্থির হয়ে বসে আছো আমায় দেখবে বলে ।"
আমি বাচ্ছাদের মতো ববিনের হাত ধরে ভয়ার্ত চোখে বললাম " ববিন আমায় এখুনি চলে যেতে হবে , তবে যাবার আগে কিছু কথা বলে যেতে চাই ।"
আমি জানি না তোর বিচারে আমি কেমন বাবা , কিন্তু আদির প্রতি জীবন ভর না জেনে অন্যায় করা হয়ে গেছে !"
" কি বলতে চাইছো বলতঃ , বুঝতে পারছি না !" ববি কেঁপে উঠলো । অজানা সংকেত সে ঠিকই ধরতে পেরেছে ।
"রীনা মার সাথে দেখা করতে যাবি? " আমি আগ্রহ ভোরে ববিনের চোখে তাকিয়ে থাকি !
ধপ করে বসে পরে ববিন , মা কে সে বড়ো ভালো বাসে, আমার মতো সে মা কে ভাগ করতে পারবে না । হাজার হলেও সংসারের খুঁটি নাটি এখনো বুঝতে শেখেনি । হয়তো ছুটি শেষ করে ফিরে যাবে নিজের অন্য পৃথিবীতে , তাকে নিজের পৃথিবীতে ফিরিয়ে দিতে আমায় অনেক সাহস দিতে হবে, কিন্তু এই মোহের মায়াজালে সে লক্ষ্য ভ্রষ্ট হয়ে পড়বে । সঙ্গে যদি আদি কে নেয় নিক , ভালোই হবে। এতদিন মায়ের দায়িত্ব নিলো আমায় দেখে শুনে । এখন বাবার দায়িত্ব নিক আদি কে দেখে ।
একটু কাঁধে হাত রাখতে ভয়ে বলে উঠলো ববিন " মা কিন্তু একেবারে ভেঙে পড়বে !"
আমি কাঁধে হাত রেখে বললাম " চল না যাই দুজনে , সেই জন্যই তো আমি পাশে চাই তোকে, আর যে নতুন করে পথ হাঁটার সাহস নেই , তুই তো আমার সাহস , সম্বল !"
"এখনই যাবে ?" ববিন অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো !
আমি বললাম হ্যাঁ ববিন আর দেরি চলে না , আমার প্রায়চিত্তের পার্থ যে বড়ো দুর্গম, আর শ্রীর অপরাধী হয়ে নিজেকে কুঁকড়ে রাখতে পারতাম হয়তো কিন্তু রীনার সামনে আমার সে শক্তিও নেই !"
"তুই আমায় সাহস দে বোধি তুই আমার জ্ঞানের সপ্ত বোধ , তোর জ্ঞানেই আমার মহাপ্রয়াণ আসুক, কালের অতলে অধ্যায় তলিয়ে যাক ক্ষতি নেই , কিন্তু আমার অনেক কাজ তোকেই তো শেষ করতে হবে ?
পারবি না, দেখ আমার মুখের দিকে দেখ পারবি না!"
আমি জানি তুই পারবি আমায় প্রায়শ্চিত্তের পথ করে দিতে !"
আমার হাত ধরে উঠে একটা নিঃস্বাস ফেললো , তার বুক কতটা জমে পাথর হয়েছে সে অনুমান আমি করতে পারি ।
ববি জানে সে তার বাবা কে হারাতে চলেছে , এই কঠিন উপলব্ধি তে কোনো মহাপ্রয়াণ হয় না , এ শুধু লুকিয়ে পালিয়ে বাঁচা ।কিন্তু যাবার পথ তাকেই করে দিতে হবে , অধ্যায় তার পড়া শেষ হয়ে গেছে । এমন অধ্যায় শেষ হয় না , বরুন সেনগুপ্তের পথের শেষ কোথায় পাঠক জানবে না ! বাস্তব মননশীল সত্তায় আমরা আফসোস করি ইশ যদি রীনা আর শ্রী যদি ফিরে আসতো আর কি বা ক্ষতি হতো !
•
Posts: 1,976
Threads: 56
Likes Received: 1,969 in 955 posts
Likes Given: 228
Joined: Jan 2019
Reputation:
125
সবুজ দুটো সতেজ গাছ মাথা ছাড়া দিয়ে উপরে উঠতো শুধু আমাদের মতো করে বেঁচে বিত্তবানের মতো ।
" তাহলে আবার কবে দেখা হবে আমাদের? আমি চাইলেই কি দেখতে পাবো তোমায় ?" বলে বোধি আমার হাত টা চেপে ধরে । "যদি খুব দরকার পড়ে ?" ববির চোখের কোন চিক চিক করে । আর কোনো কথা আসে না ।
"মাথার চুলে হাত দিতে দিতে বলি " এই যে রেখে গেলাম অধ্যায় তোর কাছে নিজের মতো করে বাকি টা লিখিস !" চল চল এর পর অন্ধকার নেমে আসবে ।"
অন্ধকার হয় নি , তবুও এ জমাট মনের অন্ধকার কাটবে না । ববিন কে পাশে নিয়ে হাটতে গিয়ে বেশ হালকা হালকা লাগছে আমার । অভিমান সব ঝেড়ে ফেলেছি গা থেকে । মনে মনে ভাবছি "না দিতে পারলাম বুক ভোরে শ্রী কে , না দিতে পারলাম রীনা কে ! শ্রীর অধিকার আমি হারিয়েছি , আর রীনা হারিয়েছে আমার অধিকার। রীনা তার মহান আদর্শ নিয়ে আমার সংসার বাঁচিয়ে যেতে চেয়েছিলো হয়তো , ভাগ্যের পরিহাসে সেটাও আমার কপালে জোটে নি ।
ববিন বললো " আমি যতই রীনা মা কে ভাবি আমি অবাক হয়ে যাই , ববি ইউ আর সো লাকি! আমি এমন প্রাণবন্ত মহিলা দেখিনি , যার কিছুই নেই অথচ কত মানুষের মন জুড়ে আছে !"
আমি বললাম " ববিন আর যাবো না, বাড়ির কাছে দেখা করা ঠিক হবে না তুই বরণ আদি কে ডেকে নিয়ে আয় আমার কাছে ।" বোধি চলে গেলো । বোধি কে কিছু বলতে না করেছি ।
আমি একটু দূরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে রইলাম । হালকা কুয়াশা ভিজিয়ে দিচ্ছে আমায় , একটু একটু করে দূর আরো আবছা হয়ে পড়ছে , পাহাড়ি রা নিজেদের ঘরের উঠোনে বসে আগুন সেকে ভুট্টা খায় । আর খায় গরম পানীয় , তাদের উচ্ছাস জীবনে কম । পাহাড়ের অন্ধকার গুমোট অন্ধকার । তাই পাহাড়ের সব আলোয় টিম টিম করে জ্বলে ।আমার জীবনে কোনো আলো জ্বলে না টিম টিম করেও।
আদি কে দেখলাম ববিনের কাঁধে হাত দিয়ে আসছে । আমার কাছে এসে একটু রাগের গলায় বললো " আপনি কিন্তু এটা ঠিক করেননি , মা ভীষণ দুঃখ পেয়েছে । মার খাবার কেউ আজ পর্যন্ত আমাদের বাড়ি থেকে না খেয়ে যায় নি ।"
আমি কাঁধে হাত দিয়ে বললাম " আদি আমি তোমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি । আমি তোমার কাছে একটা দাবি রাখতে চাই পূরণ করবে ! এই ধরো ববিনের বাবা হয়ে অনুরোধ করছি !"
আদি একটু বিরক্ত হয়ে বললো " আচ্ছা গরিব কাওকে ফ্রি তে চিকিৎসা
করে দিতে হবেই এই তো! রোজ আমি করি , শয়ে শয়ে , পাঠিয়ে দেবেন, আসে আমার কাছে , ওদের থেকে পয়সা নিতে পারি না , মন চায় না ! আচ্ছা বোধি বললো আপনি নাকি এখুনি চলে যাচ্ছেন । চেন্নাই হয়ে ?"
আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে বললাম " জানি না , না মানে হ্যাঁ চেন্নাই হয়ে !"
" আচ্ছা তুমি কথা দাও যে আমি তোমায় যা দেব তা তুমি ফিরিয়ে দেবে না !" আমি কাঁধ ঝাকিয়ে বললাম ।
" আপনি কি দেবেন ? মা বলে কারোর কাছ থেকে কিছু নিও না , দিয়ে যাবে আর দিয়ে যাওয়ার নাম জীবন !" আদি আমায় হেঁসে বলে উঠে । আমি জানি তার মা কে, এমন শিক্ষা শুধু সেই দিতে পারে ।
আমি বললাম "এখন না সময় হলে বলবো । আরেকটা কথা, তুমি একটা কথা দাও যে ববিনের হাত ছাড়বে না সামনে যে দিন আসুক !"
আদি একটু বিমর্ষ হয়ে পড়লো " বোধি ,কাকু এমন কথা কেন বলছেন একটু বোঝাবি ?"
বোধি বললো "চল বাবা কে এগিয়ে দিয়ে আসি ।"
দুদিকে আমার সক্ষম দুই সন্তান, আমাকে এগিয়ে দেবে অজানা গন্তব্যের পথে, এ পথের শেষ নেই , আমার চেয়ে বিত্তবান আর কটা মানুষ আছে । আদি বোধি কে বলে " শোন্ 7 :00 চেন্নাই এর বাস ধরলে ভালো হয় । সকালেই পৌঁছে দেবে আর AC সুপার ডিলাক্স ।" বাকি রাস্তা টা আদির কাঁধ ধরে চললাম । বাস টার্মিনাল এ এসে বোধি একটা টিকিট কেটে দিলো আমায় বাস স্টেশন এ । আমায় জড়িয়ে ধরলো । আজ ববিনের অনেক সাহস আদির মতো একটা ভাই তার সাথে থাকবে , বাবা হয়ে এই টুকুই তাদের দিতে পেরেছি । আমার কাঁধে মাথা দিয়ে বোধি নিঃস্বাস নেয়, আর জোরে জোরে আমার শরীরের গন্ধ শোঁকে । আমি জানি আমিও এমন ছিলাম । ঠাকুমার শাড়ীর গন্ধ শুঁকতাম কি ভালো লাগতো । আর যখন ঠাকুমা চলে যেত তখন শুন্য হয়ে যেত , মনে হতো ঠাকুমার সাথে চলে যাই ।
আদির মন ভার । সে কিছু বুঝেও বুঝতে পারে না । আমার শুধু ভয় হয় বোধি পারবে তো অধ্যায়ের শেষ টুকু লিখতে ? বাসটা টা ছাড়বে ছাড়বে করছে । দুজন কে জড়িয়ে ধরলাম । বোধি কে শেষ সাহস টুকু দেবার জন্য বললাম " মাকে বলবি ববি ইস এ উইনার আর বলিস আমি আমার জীবনে সত্যি অনুতপ্ত তাই নিজের ইচ্ছায় নির্বাসন নিলাম , হেরে নয় আমার সব দায়িত্ব পালন করে ।"
বোধি আমার বুক জড়িয়ে জাপ্টে ধরলো " বাপি এসব এখন থাকে ।"
বাস টা ছেড়ে দেবে , উঠতে হলো , আমি ইশারা করতে ববিন আদি কে টেনে নিয়ে সরে গেলো। আদি জানবে না জীবনে যে এক মুহূর্তে তার বাবা তাকে জড়িয়ে ধরেছিলো পরম স্নেহ আর আশীর্বাদে । রীনার প্রতিশ্রুতি ভাঙবে না বলে সে তার পরিচয় পর্যন্ত দেয় নি পাচ্ছে রীনার এতো দিনের ত্যাগ ব্যর্থ না হয় । এর চেয়ে বড়ো প্রায়শ্চিত্ত মানুষ আর কি করে করতে পারে । বাস টা বাক ঘুরে পাহাড়ের দিকে মিলিয়ে যাচ্ছে , বোধির আজ খুব অসহায় মনে হচ্ছে আদি কে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে হোটেলে ফিরে এলো নিঃসঙ্গ , ক্লান্ত ভারাক্রান্ত । ববি কে সে ভালোবাসে আর তাকে হেরে যেতে দিতে পারে না শুধু ভাগ্যের খেলায় , তাই চুপ করে তার ছেলের হবার নৈতিক কর্তব্য করে গেছে মাত্র । যদি অধিকার থাকতো তাহলে মা কে প্রশ্ন করতো " এমন সুন্দর মানুষকে কি ক্ষমা করে একটু শান্তি দেয়া যেত না ! এতোই কি নিষ্ঠুর তার মা !"
এর পর আর কিছু আমার দেখা হয় নি । দেখা হয় নি আদি কেও । কিন্তু গল্পের এমন পরিণতিতে কেউ খুশি হবে না । বাধ্য হয়েই বোধি কে চিঠি লিখি । আর অধ্যায়ের শেষ অংশ টুকু বলে দিতে চাই আপনাদের । না হলে না বলা অনেক প্রশ্নের উত্তর আবছা থেকে যায় ।....
শ্রী ববিন কে প্রশ্ন করে " তোর মুখ্ শুকনো দেখাচ্ছে কেন !"
বোধি উত্তর দেয় না । " না এমনি !"
"যা তো তোর বাবা কে ডেকে নিয়ে আয় , এখানেই খাক আজ !" শ্রী উত্তর করে ।
ববিন জানে না তার কি বলাউচিত " উনি চলে গেছেন , চলো খেয়ে নেয়া যাক ।"
শ্রী উত্তর দেয় না । কিন্তু ববিন তার মায়ের নিঃস্বাস শুনতে পায়, যেমন কোনো শেষ না হওয়া গল্প বাতাসে ভেসে বেড়ায় শেষ খুঁজবে বলে ঠিক তেমন । দুজনেই নিঃশব্দে খেতে থাকে ।
"এখনই গেলো বুঝি ?" শ্রী প্রশ্ন করে । আবার একটু থেমে প্রশ্ন করে " কোথায় গেলো !"
ববিন নিজে জানে না ববি কোথায় যাবে শুধু জানে ববির আর শ্রীর সামনে জায়গা নেই , তার জীবনে ববিনের অধিকারও শ্রী সে ভাবে দেয় নি । চুপ করেই থাকে সে খেতে খেতে ।
" তুই বারণ করলি না ?" শ্রী ববিনের দিকে একটু তাকিয়ে থাকে ।
ববিন বলে " আমি বাধা দিলে কি ববি শুনতো ?"
শ্রী চুপ করে যায় । মা ছেলের বিছানার মাঝে অনেক টা রাত নেমে আসে , দুজনেই অন্ধকারে চোখ খুলে বিছানায় পড়ে আছে তাদের কাছের মানুষ টাকে জায়গা দিতে , কিন্তু তাদের কাছে মানুষ টাকে জায়গা করে দেবার মতো জায়গা দুজনের কেউই রাখে নি ।
অন্য দিকে আদি চুপ করে খাবার টেবিলে বসে থাকে । বরুন আংকেল এর জীবন দর্শন বোঝার চেষ্টা করে সে ।রীনা আদিকে চেনেন তাই আদিকে বিরক্ত করেন না ।
" কি ভাবছিস ?" রীনা প্রশ্ন করে ।
" যেন মা বড়ো বিচিত্র মানুষ এই বোধির বাবা ! " আদি বলে ওঠে ।
" কেন বিচিত্র কেন বলছিস !" রীনা প্রশ্ন করে ।
" কোনো লোভ নেই , এতো বড়ো পসিশন , কোনো বাসনা নেই, এতো ট্যালেন্টেড ছেলে কিন্তু অহংকার নেই , আর নিজের স্ত্রী এর সাথে সামান্য বচসায় , নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন 20 -22 বছর । এখানে এসেছিলেন তার স্ত্রীর সাথে দেখা করতে । একচুয়ালী বোধি সব কিছু আরেঞ্জ করেছিল । "
আজ আবার উনি চলে গেলেন ! বোধি আবার একা হয়ে গেলো । সাকসেস ফুল হলো না । "
রীনা দরজায় ঠেসে দিয়ে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ নিঃস্বাস ফেলেন ।
"হ্যাঁরে আরেকটু ডাল দি !"রীনা আদি কে প্রশ্ন করে ।
" ওই যে মা ওখানে দেখছো বড়োবড়ো তিনটে মোটা পুরোনো খাতা , উনি লিখে রেখেছেন কেমন করে উনি কাটিয়েছেন একা একা তার স্ত্রী কে ছাড়া । বোধি বললো তুই অবশ্যই পড়িস !"
"ছি আদি তুই এতো বড়ো হয়েছিস কারোর ব্যক্তিগত জিনিস এভাবে পড়তে হয় না ।"
" যেন উনি যাবার আগে আমার সাথে দেখা করতে এসেছিলেন । এই বয়সে মানুষের এতো সাহস , ঝাঁকড়া চুল চোখে চশমা, এক গাল দাঁড়ি তোমায় দেখলে পাগল মনে হবে । কিন্তু ওনার মুল্যো বোধ আমাকে এখনো ভাবায় ।"
"যেমন ?" রীনা কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন করে ।
" আমায় উনি কিছু দিতে চান , এখন নয় , বললেন পরে দেবেন, আর বলছিলেন আমি হাইয়ার স্টাডি করছি না কেন !"
আচ্ছা তুমি বোলো তোমার PF এর টাকা শেষ , সব কিছু দিয়ে তুমি আমায় পড়িয়েছো এর পর এতো টাকা আমাদের কোথায় মা , যে বিদেশে গিয়ে পড়বো। সে কি ওনাকে বোঝানো যায় । আমরা তো আর ওনার মতো বিত্তবান নয় । "
রীনার দীর্ঘনিশ্বাস এ ঘর ভরে যায় । আদি বলে "কার্ডিও নিয়ে MD করতে পারলে ভালোই হতো । নম্বর ও ছিল । দেখি !"
রীনা আদির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় " চল শুয়ে পর এবার !"
আচ্ছা "বোধি দের একদিন দেখে আসবো কি বলিস ? কবে চলে যাবে , হয়তো দেখাই হবে না !"
আদি বলে " বেশ নিয়ে যাবো না হয় !" রীনা বলে ওঠে "হ্যাঁ কি বুদ্ধিদীপ্ত পরিণত ছেলে , এতো প্রখর ওর মেধা নিশ্চয় ওর বাবার মতো কি বলিস ! আমার ওকে খুব ভালো লাগে ।"
আদি কিছুটা শান্ত হয়ে যায় । খুব আস্তে বলে ওঠে " ওর বাবার আর ওর সম্পর্ক টা ঠিক কবিতা আর তার লয়ের মতো তুমি বুঝবে না মা !"
ঘরের আলোটা এমন করেই আসতে আসতে নিভে যায় । রাত নিজের মতো করে চাদর বিছিয়ে দেয় এমন অনেক পরিবারে , নতুন ভোরে সে চাদর ওঠে যাবে হয়তো আগের দিনের গ্লানিও মুছে যাবে খানিকটা , নতুন গাছের ফুল গুলো কেউ তাকিয়ে ভালোবাসবে নতুনের মতো। রীনা হয়তো জানবে না বরুন তার প্রতিজ্ঞা ভাঙে নি , জীবনের সব প্রতিকূলতা দিয়ে বাঁচাবার চেষ্টা করেছে শ্রীর আর তার স্বপ্নের সংসার । অকাতরে দিয়ে গেছে নিজের যে টুকু ছিল সব কিছু , প্রতিদানে একটু প্রায়শ্চিত্তের আশায় ।
শেষ পর্যন্ত আদির মার বোধির সাথে দেখা করার সুযোগ হয় নি । বোধি সে সুযোগ দেয় নি আদি কেও । ফিরে আসার পর বোধি চলে গেছে আমেরিকায় । তাকে তার অনেক জমানো কাজ শেষ করতে হবে । মা সম্পূর্ণ একা । আর রীনা মাকেও বোধি দেখে রাখবে । তাই নিয়ম করে ফোন করে । কিছু তেই রাস্তা বের করতে পারে না , শ্রীমা আর রীনামা কে কিভাবে একে ওপরের সামনে আনা যায় ।
বোধি ও জানে আদির মোটা খাতা গুলো পড়া হয় নি ! ওর ব্যস্ত জীবনে মোটা খাতা গুলোর দাম হয় তো অল্প হবে, কারণ সে জানে না তার বাবা নিজের স্নেহ বিসর্জন দিয়ে দূরে সরে গেছে । পড়লে ওহ নিশ্চই বোধি কে ফোন করতো । অথবা পড়ে সেই সম্পর্কের যাঁতাকলে আটকে পড়েছে বোধির মতো ।কিন্তু এতো দিন সে নিয়ে একে ওপরের সাথে কথা বলে নি সে বিষয়ে ।
আদি কে কি করে বলা যায় যে আদি ওর ভাই । আদি অনেক বার বোধির বাবার কথা বোঝবার চেষ্টা করেছে । কিন্তু বোধি উত্তর দেয় নি ।দু মাস কেটে গেছে । তবুও আদি বোধির বাবার কথা টা এখনো শুনতে পায় । আদি এক দুর্বোধ্য টান অনুভব করে মানুষ টার প্রতি । মাকে বোঝাতে গিয়েও পারে না । মোটা খাতা গুলো পড়ে থাকে আদির টেবিলের এক কোনে একটু ধুলো মেখে ।
এমন ই এক কোনো রিক্ত দুপুরে কারোর আওয়াজে চমকে উঠলো আদি ।
" পার্সেল ! ডাক্তার বাবু পার্সেল !"
আদি পার্সেল টা নেড়ে চেড়ে দেখলো ! ফরেন থেকেই এসেছে , কোনো ইউনিভার্সিটি থেকে এসেছে হয়তো কিন্তু বাইরে বিশেষ কিছু লেখা নেই ।
পার্সেল নিয়ে আদি পাগলের মতো খুলতে থাকে পার্সেল টা !
ইউনিভার্সিটি এপ্প্রুভাল লেটার, ফর ফরেন স্টুডেন্ট মিস্টার আদিত্য বরুন সেনগুপ্ত , অ্যাডভান্স 4 ইয়ার পেমেন্ট রিসিপ্ট 8 সেমিস্টার এর , কন্টাক্ট ডিটেলস, আর মেন্টর ডিটেলস , আর আছে লন্ডন কলেজ অফ মেডিসিন এর সমস্ত ইউনিটের মোটা মোটা ব্রোচর ।
" মা মা , মা এখুনি আসো !" চেঁচিয়ে ওঠে আদি । হুড়মুড় করে রীনা ছুটে আসে আদির এমন চিৎকারে, " কি হয়েছে . কি কি হলো !"
আমি বলেছিলাম না " এ নিশ্চয়ই ওনার কাজ , আমি বলেছিলাম না বোধির বাবার কথা , দেখো কি পাঠিয়েছেন উনি । নাম পর্যন্ত লেখা নেই। "
ভিজে হাতে কাঁচের একটা গ্লাস মাজতে মাজতে তাকিয়ে দেখে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন পার্সেল টার দিকে । "
" হ্যারে এতো অনেক টাকা !" রীনা বিস্ময়ে প্রশ্ন করে !
আদি এক রাশ উচ্ছাস নিয়ে বলে " যাবো মা আমি যাবো, তুমি যেতে দেবে ???"
আরেকবার সব কাগজ হাতড়ে রিসিপ্ট হাতে দিয়ে দেখতে দেখতে বলে " সব মিলিয়ে নব্বই লক্ষ হবে তবে আমার স্কোর অনুযায়ী ফিস-এ 100% ডিসকাউন্ট , এটা শুধু আমার প্রত্যেক মাসের বোর্ডিং !"
•
Posts: 1,976
Threads: 56
Likes Received: 1,969 in 955 posts
Likes Given: 228
Joined: Jan 2019
Reputation:
125
রীনা মুখের শব্দ ছিনিয়ে নেই তার গোপন মনের অনুভূতি । , তার চিন্তার অক্ষর গুলো এলোমেলো হয়ে পাকিয়ে যাচ্ছে , চোখের সামনে লম্বা লাইনের মতো ঝরে পড়ছে অজানা কোনো তথ্য সংকলনের আশায় । তার বিগত জীবনে হাজার মানুষের ভিড়ে এমন কোনো মানুষ আসে নি , যাকে বোধির বাবার সাথে মিলিয়ে নেয়া যায় শুধু একজন ছাড়া !"
বারান্দার ইটের পিলারে রীনার পিঠ টা থেকে যায় মানুষ টাকে না পাওয়ার চরম শুন্যতা নিয়ে । রীনা যাকে এক বারের জন্য দেখবে বলে লড়াই টা এখনো লড়ে যাচ্ছে , যাকে জীবনে জিতিয়ে দেবার আশা নিয়ে নিঃশেষে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছে , যাকে সুখে রাখবে বলে নিজের সন্তান কে পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত করেছে , সে মানুষটা ঘরেও এসেছিলো নিভৃতে , বুঝতেও দেয় নি তার অস্তিত্বের কথা । আর নিজের সংসার ভেঙে গেছে বলে সমবেদনা নিয়েও আসে নি একটি বার তার কাছে , এমন মানুষটা কে যদি ফিরে পাওয়া যেত । লোভে চক চক করে ওঠে রীনার চোখ, বুকের শুন্যতা নিয়ে শেষ নিঃস্বাস দিয়ে ঠেলে দেয় শব্দ গুলো স্বর নালী দিয়ে আদির দিকে ।
" নাম কি ওনার !"
" আরে বোলো না , যেদিন প্রথম এলেন আমায় বললেন তোমায় নালিশ করবেন , আমি নাকি ওনার নাম চুরি করেছি । "
হাত থেকে কাঁচের গ্লাস টা খসে যায় যেমন করে পালক হাবাস ভেসে মাটিতে নুইয়ে যায় কাঁচের ভাঙা টুকরো গুলো ছড়িয়ে পড়ে এদিকে ও দিকে জীবনের সব ভাঙা টুকরো টুকরো স্বপ্ন গুলোর মতো । রীনার বার্ধক্যের গোধূলিতে ভাঙা কাঁচের টুকরো গুলো মধুর স্মৃতির মতো জ্বল জ্বল করে ওঠে ।
দপ করে ম্লান হয়ে নিভে যায় আদির মুখের রক্তিম রাগের সূর্য টুকু ভাঙা কাছে । নীরবে মায়ের পাশে গিয়ে দাঁড়ায় আদি । জড়িয়ে ধরে মাকে বিত্তবানের মাটিতে পুঁতে দেয়া দুটো অশথগাছ এর মতো । যার আজ ডাল পালা ছাড়িয়ে স্নিগ্ধ ঝরনা ধারায় ঝরিয়ে দেবে পুড়ে যাওয়া দুটো মনের মরুভূমিকে । নতুন ফুল হয়তো ফুটবে না , কিন্তু যে মানুষ টাকে ক্ষমা করা যেত তাকে ক্ষমা করে কাছে ডেকে মহান হবার বাতুলতা বোধ করে নি রীনা কোনোদিন।
ঘরের নির্জনতায় দুটো স্তব্ধ মন হাতড়ে খুঁজে বেড়ায় তাদেরই হারিয়ে যাওয়া অস্থিমজ্জার কোনো শরীরের অন্য প্রত্যঙ্গ কে । তাদেরই স্রষ্টার মহানুভব আর মূল্য বোধ কে খুঁজতে থাকে না পাওয়া হতাশার অনুপ্রেরণায় । চকিতে মাকে ঘরে রেখে বেরিয়ে যায় আদি । এ ৰেরিয়ে যাওয়া কোনো একান্ত অপমান আর লাঞ্ছনার নয়, আদি তার মূল্যবোধ খুঁজে পেয়েছে নিশ্চয়ই। তার পদখেয়ে বরুনের সেই যৌবনের দৃঢ়তা দেখতে পায় রীনা । তাকে আজ বাধা দেয়া ঠিক হবে না ।
আদির ফোন বেজে যাচ্ছে অনর্গল । বোধির নাম টা জ্বল জ্বল করে ভেসে উঠছে রীনার দিকে আদির মোবাইল স্ক্রিন থেকে । নিজেকে সামলে নিলেও ববিনের কানে পৌঁছবে জীবনে প্রথম রীনার কোনো মুখের শব্দ তার পার্টি একান্ত আঙ্গিক হয়ে ।
সাহস নিয়ে ফোন তোলে রীনা ! " কাকিমা , আদি কি পার্সেল পেয়েছে !"
উত্তর দিতে পারে না রীনা " ববিন ...আর কিছু বলতে পারে না , বুক খালি করে কেঁদে ওঠে , ববিন ফোনএই অনুভব করে সেই অদ্ভুত শুন্যতা কে, গলা তার নিচে নেমে আসে । স্নেহের আকুলতায় " রীনা মা ..বলে থমকে যায় সে !
কাঁদতে কাঁদতে রীনা প্রশ্ন করে " বাবা কোথায় ববিন !তুই কবে আসবি আমার কাছে !"
বোধি সত্যি জানে না বাবা কোথায় । " রীনা মা খুব তাড়াতাড়ি আসবো তোমার কাছে ! " আজ আর কিছু না বললেও মন ভরে যাবে । অনেক গুলো মানুষ এতো বছর পর খুঁজে পেয়েছে তাদের সম্পর্কের সুতো গুলো , একে অপরকে শক্ত করে বাঁধবে বলে ।
একটু পড়ে বাড়ি আসে আদি । তার মুখ ভার করে রেখেছে জমে থাকা 27 বছরের অভিমান । মার দিকে তাকিয়ে বলে " এগুলো তোমার খুব দরকার মা !" বলে কিছু একটা হাতে দেয় রীনার ।
চেয়ার ধরে চেয়ারেই বসে পড়ে রীনা । আদি সামনে থেকে লুকিয়ে গেছে । বোধি হয়তো আবার ফোন করেছে । ভাই ভাইয়ের প্রেম টা তাদের বুঝে নিতে হবে । সেখানে রীনা নাই বা দাঁড়ালো ।
কি ভেবে হাতের কাগজে মোড়া আদির দেওয়া প্যাকেট টা খুলে দেখ চায় তার মন । দেখে সযত্নে সামনে সাজিয়ে রাখে টেবিলের উপর । স্নান করতে হবে তাকে । নিজের চুলের গোছা হাতে করে সাজিয়ে সযন্তে মাথায় গুঁজে নেয় , টাওয়াল টা উঠিয়ে নিয়ে ।
টেবিলে আদির দেয়া সিঁদুরের কৌটো আর হাতের পলার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে ওঠে রীনা । আর কোনো অভিমান নেই দুপুরের । আদিও হয়তো নামের পাশে বরুন সেনগুপ্ত লিখবে ।
রীনা উঁকি মেরে পর্দা সরিয়ে দেখতে চায় আদি কে পরম মমতায় । আদি তখন যত্ন করে কোলে সাজিয়ে অধ্যায়ের পাতা গুলো উল্টে যাচ্ছে অবিরত । এই নতুন বরুনের আজ আর ভয় নেই । পর্দা টা এখনো ঘড়ির পেন্ডুলামের মতো দুলছে রীনার চোখের সমানে।দূরে কোনো ফেরিওয়ালা এখনো হেঁকে চলেছে একা , কিছু জমে থাকা তার জীবনের বিকিকিনির প্রায়শ্চিত্ত করবে বলে !
সমাপ্ত
Posts: 1,976
Threads: 56
Likes Received: 1,969 in 955 posts
Likes Given: 228
Joined: Jan 2019
Reputation:
125
This story is posted as per request from Aronno56974
•
Posts: 23
Threads: 1
Likes Received: 6 in 5 posts
Likes Given: 6
Joined: Jan 2019
Reputation:
6
অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা।
•
Posts: 91
Threads: 0
Likes Received: 76 in 42 posts
Likes Given: 1,984
Joined: Jan 2019
Reputation:
5
01-05-2019, 05:43 PM
(This post was last modified: 01-05-2019, 05:45 PM by Voboghure. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.
Edit Reason: Spelling mistake
)
Just speechless...
সহজ বাংলায় যদি বলি, বলব শেখার আছে অনেক কিছু। দুটোথেকেই, কাহিনী এবং লেখনী...
জানিনা সত্যি কাহিনী কিনা, বাট যদি শুধু গল্পই ধরি তবে বলব এমন সাবলীল ভঙ্গিতে লেখাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কোনো পাকা জহুড়িরই কাজ...
আমারও খুব ইচ্ছে আছে লেখবার...
ভয়ে ভয়েই বললাম, ক্ষমা করবেন সাথে দোয়াও...
•
Posts: 128
Threads: 7
Likes Received: 64 in 48 posts
Likes Given: 135
Joined: Feb 2019
Reputation:
3
এক নাগাড়ে পড়ে শেষ করলাম। এককথায় অসাধারণ।।।। লেখক কে ধন্যবাদ এরকম একটা গল্প লেখার জন্য।।।
•
Posts: 2,276
Threads: 8
Likes Received: 2,959 in 1,523 posts
Likes Given: 2,315
Joined: Mar 2019
Reputation:
537
''এক নাগাড়ে পড়ে শেষ করলাম। এককথায় অসাধারণ।।।। লেখক কে ধন্যবাদ এরকম একটা গল্প লেখার জন্য।।।'' - সহমত । তাই রজাজীর মতামতকেই কোট করলাম । সালাম ।
•
Posts: 130
Threads: 0
Likes Received: 80 in 48 posts
Likes Given: 14
Joined: Jun 2019
Reputation:
1
01-08-2019, 09:19 PM
(This post was last modified: 10-05-2020, 03:59 PM by Fantasy lover. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
Deleted
Posts: 33
Threads: 0
Likes Received: 12 in 11 posts
Likes Given: 23
Joined: May 2019
Reputation:
2
অতুলনীয়! শেষের দিকে এসে সত্যিই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম।
•
Posts: 31
Threads: 0
Likes Received: 15 in 12 posts
Likes Given: 216
Joined: Jun 2019
Reputation:
1
অসাধারন, মনোমুগ্ধ হয়ে শেষ করলাম।অনুভব করলাম গভীরভাবে।
•
Posts: 175
Threads: 0
Likes Received: 49 in 43 posts
Likes Given: 9
Joined: Dec 2018
Reputation:
1
font-ta boro kora jeto na???
•
Posts: 75
Threads: 0
Likes Received: 47 in 35 posts
Likes Given: 250
Joined: Mar 2019
Reputation:
2
Osadharon. Wish to read more stories like it.
•
Posts: 151
Threads: 0
Likes Received: 80 in 75 posts
Likes Given: 30
Joined: Aug 2019
Reputation:
6
Onoboddho lekhoni .varginia bulls ek osadharon lekhok hotath hariye gelen
•
Posts: 4
Threads: 1
Likes Received: 21 in 4 posts
Likes Given: 0
Joined: Jun 2022
Reputation:
5
(04-06-2021, 07:40 PM)Susi321 Wrote: Onoboddho lekhoni .varginia bulls ek osadharon lekhok hotath hariye gelen
Hariye ami jai ni bhai songsar samlachhilam! Amake loke mone rekheche bhabtei parchi na!
Neel selam!
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(10-06-2022, 11:48 PM)Virginiabull_is_back Wrote: Hariye ami jai ni bhai songsar samlachhilam! Amake loke mone rekheche bhabtei parchi na!
Neel selam!
নীল সেলাম !!!!!
•
Posts: 102
Threads: 0
Likes Received: 17 in 17 posts
Likes Given: 16
Joined: May 2019
Reputation:
0
osadharon , anobodyo lekha. aage porini keno ke jane , Virginiabulls u r great
•
Posts: 690
Threads: 2
Likes Received: 580 in 347 posts
Likes Given: 2,246
Joined: Nov 2022
Reputation:
68
আমি এ গল্পটা এবার নিয়ে তিন বার পড়লাম।প্রথম পড়েই মনে করেছি আর পড়বোনা এ গল্পটা।কিন্তু পারিনি।আশা করি এটাই হবে আমার এ গল্পের শেষ বার পড়া।
যেমন "" ভালবাসার রাজ প্রাসাদ"" একবারই পড়েছি।
জানি ধৃষ্টতা দেখাচ্ছি।তবুও আমার মতে এ গল্পটার নাম দেয়া উচিৎ ছিল।""ক্ষমা""
লাইক ও রেপু
-------------অধম
•
Posts: 90
Threads: 0
Likes Received: 46 in 35 posts
Likes Given: 8
Joined: Nov 2022
Reputation:
2
(25-01-2019, 11:23 AM)pcirma Wrote: যখন নিজের সাহস টুকু আসতে আসতে ফুরিয়ে যাবে , যখন দিনের আলো একটু একটু করে নিভে আসবে , এমন কোনো সময় তুলে দেব এটা সপ্তবোধির হাতে আমার বোধিত্ব লাভের আশায় ।
বাড়িতে আর তাই সাহস করে ক্যালেন্ডার রাখি নি । দিনের হিসাব দিনান্তে দিনের ফেরিওয়ালা করে , আমি ফেরিওয়ালা নই, বরণ আমার বিকিকিনির ঝুলি শুন্য করে অনেক আগেই আমার জীবন দর্শন খুঁজে নিয়েছে কোনো মহান জীবন দর্শন । তার মার্গ দর্শন আমার শেষ সম্বল , যদি কোনো দৈব বসে ফিরে পাই আমার একঃ মাত্র সখ্য কে , আর উজাড় করে বলতে পারি এমন স্বপন পুরের রাজবাড়ীর রাজপুত্রের কথা । ঘোড়ায় চড়ে তার আর আশা হয় নি, কদর্য বিকৃত গ্লানি নিয়ে নীরব রয়ে গেছে চমৎকার করা মিরাকেল এর আশায় ।
হ্যাঁ এমনি ছিল আমার জীবন । কিন্তু অবশেষে ভগবান ও উদয় হলেন হেঁসে বরদান করলেন আমায় । আমার তপস্যা শেষ হবে , তপে জপে আমার মন জর্জরিত । ববিন তখন সানফ্রান্সিসকো তে , ওকে মাসাচুটে পড়াতে আমায় ধার দেনাও করতে হয় নি । সাধের বাবার বাড়িটা বেচে মেসে চলে গিয়েছিলাম । এখনো বাঁচিয়ে রেখেছি জীবনের সব জমানো টাকা যদি ববিনের কাজে লাগে । শ্রী কে বুঝতে দি নি । খুব বুদ্ধিদীপ্ত প্রখর ববিন , আর হয় তো তার আমার পয়সা লাগবে না । এম আই টি তে পড়ে সে অর্থে কাওকে জীবনে পিছনে তাকাতে হয় নি । PHD পড়া শেষ না হলেও তাকে ডেকে নিয়েছে কোনো এক ডেনিশ সংস্থা । আর মাস মেইন আমার এক বছরের উপার্জিত অর্থের সমান। নিজেকে ভারী ব্যাগের মতো টেনে টেনে নিয়ে আর 10 বছর চাকর সাজতে চাই না , ভাবছি সবে চাকরি টা ছেড়ে দেব ।
"ববি , কেমন আছো ? " ববিন ফোন করেছে । ওর ববি সম্মোধন টা ছোট থেকেই , যখন কথা বলতে পারতো না তখন থেকেই ববি ববি বলে আমার কাছে ছুটে আসতো । আমি বললাম "কিরে , কি ব্যাপার, তোর কেমন চলছে ওখানে ?"
" ওহ বললো " ভালোই আছি , কিন্তু যে জন্য ফোন করা সেটা আগে বলে নি । তোমায় খুব মিস করছি ! পাপা! মাকে মিস করি না যত তোমায় মিস করি, নতুন জায়গায় গেলেই মনে হচ্ছে তুমি আমার কাঁধ ধরে হাঁটছো ।"
আমার চোখের কোনটা একটু ভিজে উঠলো । সামলে নিয়ে বললাম " বাহ্ মনেই কোরনা তোর পাশে আছি ? কালকের ফ্লাইট ধরে চলে আসবো নাকি? দুজনে একটা বিয়ার খেয়ে নেয়া যাবে !"
ববিন বললো " হ্যাঁ চলেই এস বুঝলে !"
না থেমে তার পর আমায় বললো " ববি তোমার জন্য একটা গুড নিউস আছে । " আমি উৎসাহ নিয়ে বললাম " কি গুড নিউস , আমার জন্য কিউবান সিগার কিনেছিস নাকি ?"
ববিন বললো "না না , আগে বোলো এই গুড নিউস টা দিলে তুমি আমায় কি দেবে ?"
আমি বললাম " বাহ্ আমার সব কিছুই তো তোর , যা চাষ তাই নাহয় দেব , কিন্তু যা আমার তার বাইরে কিছু পাবি না সে তো তুই জানিস !"
" ওকে প্রমিসে করো একটা "
আমি অবাক হয়ে বললাম " কি প্রমিস করবো ?"
"যে তুমি আমার কথা শুনবে " ববিন চেঁচিয়ে উঠলো অন্য প্রান্ত থেকে । আমি কিছু না ভেবেই বললাম "প্রমিস এবার বল " মুন্নার এ আমরা বেড়াতে যাচ্ছি , মা আর আমি , মুন্নারস ইন এ তুমি 27 অগাস্ট থেকে 10 তারিখ সেপ্টেম্বর মাসের আলাদা রুম বুক করো । আদিত্যর সাথে হলিডে কাটাবো বলে ।তোমায় আদিত্যর সাথে দেখা করাতে চাই বাবা । "
আদিত্য ওর এক বন্ধু বয়সেও অনেক ছোট , একে অপরকে চেনে যখন আদিত্য ডাক্তারি পড়তো আর ববিন মাস্টার্স । কিভাবে ওদের আলাপ হয়েছিল মনে নেই ঠিক কিন্তু তার পর থেকে ওরা একে ওপরের অভিন্ন বন্ধু। শুনেছি আদিত্য গোল্ড মেডেলিস্ট বছর দুয়েক হলো আদিত্য হাউস সার্জন হয়েছে মুন্নার হসপিটালে।
আমি একবার একটু ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে গলা কাঁপিয়ে ফেললাম " ববিন মা জানে আমি যাবো ?"
ববিন বললো " সেই জন্যই তো ডার্লিং কে একটা সারপ্রাইস দিতে চাই ।"
"বাবাই তুমি কিন্তু কথা দিয়েছো !"
কিছু বলতে সাহস হলো না , ববিন আমার দৃঢ়চেতা মনের কথা জানে । কিছুতেই আমি ভেঙে পড়ি না । মাথায় আকাশ টা ভারী হয়ে উঠলো । এই আকাশ পেরিয়ে মাথা উঁচু করে যদি একটু নিঃস্বাস নেয়া যেত ।
ববিন ফিরেছে দেখে আমার খুব আনন্দ হলো , ওকে বন্ধু ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারি না । আগে এসেই আমার মেসের সামনে দাঁড়িয়ে ডাক দেয় " ববি ববি ই আমি ব্যাক ।" মেসের বাকি যারা সদস্য তারা ভাবতে পারে না আমার এতো বড়ো ছেলে থাকার সত্ত্বেও আমি একলা কেন থাকি। শরীরে আগের মতো জৌলুশ নেই , কিন্তু মেস টা খুব গণ্য মান্য ব্যক্তি বর্গের বাস আর তার দেখতায় নিজেকেও পরিপাটি আভিজাত্যে মুড়ে রাখতে হয় না চাইলেও । কাঁচাপাকা দাঁড়িতে বড়ো ঝাঁকড়া চুলে আমার অনেক আত্মীয় বন্ধু আমায় না চিনে পাশ কাটিয়ে চলে যায় । এতে আমার সুবিধা হয় বৈকি । অনেক প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে চলা যায় যেমন আমি নিজের অনেক প্রশ্ন এড়িয়ে গেছি আজীবন কাল ।
আমায় প্রৌঢ় বলা চলে না বৃদ্ধ, আমি জানি না । বাকি ব্যবস্থা সব ববিন করেছে কথা মতো । সেদিন ছিল শুক্র বার , হাওড়া থেকে ট্রেন-এ ওঠার আগে ববিন কে বললাম " তোর ডার্লিং কে দেখিনি অনেক দিন একবার দেখা যাবে !"
নেই নেই করে শ্রী কে দেখিনি অনেক বছর , 10 বছর ডিভোর্সের পর আমার সামনে আসে নি , আর আমিও জানি না কেন নিজেকে বেশি করে অপরাধী মনে করেছি তাই শরীর সামনে দাঁড়ানোর সাহস হয় নি ।ববিন বললো দূর থেকে ওকিস, কিন্তু সামনে যেও না যেন ববি ।"
কিছু দূর প্লাটফর্ম থেকে এগিয়ে যেতে দূরে দেখলাম শ্রী বসে আছে প্লাটফর্মে লাগেজের সামনে ।বয়সের ছাপ তেমন ভাবে ওকে কাবু করতে পারে নি । আগের মতোই স্নিগ্ধ মুখ , শুধু একটু কঠিন হয়েছে দৃষ্টি , কিন্তু পেলব শরীরটা তেমনি রয়েছে , চুলে বোধ হয় হেনা করা , আর চুড়িদার পড়ে মনেই হচ্ছে না ববিনের মা ।
দেখে একটা দীর্ঘ নিঃস্বাস পড়লো । অপরাধীর মতো লুকিয়ে সরে আসলাম, আর ববিনের কথা মতো টিকেট কেটেছি আমি সেকেন্ড AC তে, ববিন মা কে নিয়ে গাড়ি আসার পর উঠেও গেলো ফার্স্ট ক্লাসে । আমি ব্যাগ টা নিয়ে ওদের কম্পার্টমেন্ট টা কোনো রকমে টপকে উঠে গেলাম আমার কপার্টমেন্ট এ । প্রায় দেড় দিন এর জার্নি ।
বই পড়ার শখ আছে বলে , দু একটা বই নিয়ে এসেছি । মোবাইলে গান শুনি , আর অভ্যাস করেছি ববিনেরই দৌলতে ।
এই জার্নি টা আমার কাছে আবেগ ঘন চরম অপমানিত হবার কৌশল মাত্র , সে তা যাই হোক , কদিন ববিন কে কাছে পাবো লুকিয়ে । নাহয় আরেকটু অপমান গায়ে মেখে নেবো শরীর সমানে । এ শরীরে অপমান পলেস্তারার মতো খসে খসে পড়ে আজ কাল ।শ্রী কে দেখতে পাবো সেও তো কম কথা নয় ।আমায় নাহয় দুটো কটু কথা শোনাবে । শুনে নেবো এই কান দুটো দিয়ে , কত বছর পর ওর গলার স্বর আমার কান স্পর্শ করবে , ওহ তো আমার পরম আত্মীয় ।
বার বার আসতে থাকলো ববিন আমার কাছে , আমার রোমাঞ্চের ভাগ নিতে । ববিনের বড়ো কৌতূহল আমার অধ্যায় পড়বে , সে কথাও আদায় করে নিয়েছে আমার কাছে । অধ্যায়ের তৃতীয়খন্ড আমি অর্ধেক লিখেছি আর ববিনের আবদার ওঃ নিজের মতো করে লিখে শেষ করতে চায় বাকি টা । বাঁধা দি নি তাকে , বাধা দি নি শ্রী কেও ! সে আমার অক্ষমতা হোক বা হোক দুর্বলতা ।
মুন্নার পৌঁছে দেখলাম আদিত্য গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের অভিবাদন করতে । লম্বা চওড়া সুদর্শন , গাম্ভীর্য পূর্ণ্য গলায় বললো " কাকু আমি কিন্তু বোধি আর মার আলাদা গাড়ির ব্যবস্থা করেছি , আপনার সাথে আলাপ জমাবার কৌতূহল সামলাতে পারলাম না । আসুন গাড়িতে ! ওদের রাস্তা টা কিন্তু আমাদের থেকে আলাদা ভয় নেই আপনার ডার্লিং আপনাকে দেখতে পারবে না , আর আপনাকে দেখলেও চিনতে নিশ্চয়ই পারবে না ।"
" মাই ইয়ং বয়ে, তোমার কথা শুনে আমিও বুঝলে ভাবলাম বন্ধুত্ব টা আমাদের আত্মীয়তায় বদলে যাওয়া ভালো । " বলে গাড়িতে উঠলাম । আদিত্যর ব্যবহারে নিজের প্রতি নিজের একটা অদ্ভুত আত্ম বিশ্বাস চরিত্রে প্রকাশ পাচ্ছিলো । অবাক হয়ে ভাবছিলাম , এতো কম বয়সে এতো কনফিডেন্ট ।"
আমি বললাম " আদি , তোমার বাবা কি করেন ?"
আদি একটু অপ্রতিভ না হয়েই বললো " কখনো দেখিনি ওনাকে , ছোট থেকেই মার কাছে মানুষ !" মা তো বলেন সব সন্তানের বাবা হয় না , তাই ডেফিনেশন টা আমি নিজেই এমন তৈরী করে নিয়েছে , উনি বেচে থাকলে দেখা হবে নিশ্চয়ই , আর দেখা হলে উত্তর দেব না হয় আপনাকে উনি কি করেন !"
আমি হো হো হো হো করে হেঁসে উঠলাম । অদ্ভুত তোমার হুমার। " আর মা "
"ওঃ উনি মুন্নার কনভেন্ট এর প্রিন্সিপাল " বলে গাড়ি চালানোয় মন দিলো । কি সুন্দর এই মুন্নার , প্রকৃতি যেন মুন্নার কে বানিয়ে দিয়ে নিজেই কেঁদে ফেলেছে , মেঘে ঢাকা সবুজ চা বাগান আর শান্ত পরিবেশে নিজেকে একলা খুঁজে পাওয়ার অদ্ভুত এক আনন্দ ।
আমি আবার বললাম " শুনেছি তুমি দিল্লী তে পড়ার সময় বধির সাথে আলাপ !"
আদি হেঁসে উঠলো " জানেন কাকু বোধি কে আমি দাদাই বলতে চাই , কিন্তু ওর মধ্যে ব্যাপক আকর্ষণ আছে , মানুষ কে চুম্বকের মতো আপন করে নিতে পারে , তাই তো ওর এতো গার্ল ফ্রেন্ড , আর দেখুন আমার একটাও নেই !"
আমি আবার হেসে উঠলাম " বোধি ভাগ দেয় নি বুঝি !"
এবার আদি হেসে উঠলো হো হো করে " কাকু ইউ আর টু মাচ! এমন ভাবার কারণ নেই , দুজনেই দুজন কে প্রমিস করেছি , কনসাল্ট ফার্স্ট তার পর ভাববো কি করবো ! ওঃ তো এতো সুন্দরী সুন্দরী মেয়ে দেখে , ওদের পাত্তাই দেয় না !"
বোধি কে আমি চিনি । আমাদের জটিল সম্পর্কে এর যাঁতাকলে আটকে ববিন কাওকে ভালোবাসতে ভয় পায় । পাছে তাকে হারিয়ে ফেলে !
সকালে থেকে বেলা গড়ালো না ,এসে গেলাম গল্প করতে করতে হোটেলে, ববিন দের ঘর গ্রাউন্ড ফ্লোরে , আর আমার চার তলায়। তাই ওদের সাথে আমার অকস্মাৎই দেখা হবে নচেৎ নয় । আমার রুম নেবার পর ববিন দৌড়ে আমার রুম-এ আসলো । " ববি কাল সকাল নয়টায় তুমি কিন্তু ভালো করে একটু গেট আপ নিয়ে মুন্নার লেকে চলে যাবে । অনেক বড়ো জায়গা , চারিদিক ঘুরতে ঘুরতে ঘুরতে তুমি কিন্তু ডার্লিং কে দেখতে পাবে । এর পর বাকি টা তোমায় ম্যানেজ করতে হবে !"
জানি না এই পা আর এগিয়ে যাবে কিনা । এ পায়ে আগের মতো জোর আর নেই , ভুল কে মাড়িয়ে সঠিক করবার প্রেরণাও হারিয়ে ফেলেছি । তবুও সংকোচ নিয়ে একটা পুলওভার -এই বেরিয়ে পড়লাম মুন্নার দেখতে । হোটেল থেকে বললো " আপনি মাট্টুপেটটি ড্যাম এর দিক থেকে ঘুরে আসুন , খুবই কাছে , খুব ভালো লাগবে !"
একলা একলা ঘুরে বেড়ানোর সাহস সঞ্চয় করেছি অবিনাশদার থেকে । অবিনাশ দা কে সঙ্গে আনবার চেষ্ট করেছিলাম কিন্তু ওনার একই হেয়ালি " তোমরা যাচ্ছ রসভঙ্গ করতে সেখানে আমি কেন তীর্থের কাক হই?" আসলে ওনার অন্য বিশেষ প্রয়োজন টা আমি জানি , ব্যক্তিগত বলেই জোর দি নি ।
পাহাড়ে ঘন্টা খানেক হাঁটলে বেশ ঘাম ঝরে , তা ছাড়া অভ্যাস নেই , ড্যামের সামনে আসতেই ঠান্ডা হাওয়ায় মন জুড়িয়ে গেলো ।
কি অদ্ভুত এই প্রকৃতি , , পাহাড় চিরে নদী নেমে এসেছে মাটিতে আর মানুষ সেই অবিরাম জলরাশি বেঁধে দিয়েছে কৌশলে । মানুষ আবেগ কে কেন এমন বেঁধে দিতে পারে না , আবেগের কাছেই মানুষ বোধ হয় সব থেকে অসহায় ।
এই প্রকৃতির কাছে নিজেকে মিলিয়ে কত ছোট মনে হয় , কি উদার এই প্রকৃতি, নিঃসংকোচে আমাদের দিয়ে যায় ভোগ করতে , আর আমার গ্লানি , চেতনার নতুন আবির্ভাব নিয়ে ভোরে ওঠে নতুনের আনন্দে । অনেক ক্ষণ বসে প্রাণ ভোরে নিঃস্বাস নিলাম । এ প্রাণ আমার এ বাঁচা আমার নিজের মতো করে বাঁচা , কোনো শুন্যতা নেই কোনো রিক্ত্ব স্থান নেই , আমার চেয়ে বিত্তবান আর কেই বা আছে ?
ঘোর ভাঙলো, গাড়ির আওয়াজে , দেখলাম ববিন আর আদি আমায় রিসিভ করতে এসেছে আদি চেঁচিয়ে উঠলো " একেই বলে বোহেমিয়ান লাইফ ! দেখেছিস বোধি ঠিক রাইট প্লেস আর রাইট পারসন !"
ববিন বললো " একটু বলে আসবে তো , মা তো আর কোথাও বেরোলেই না , বলে নাকি মন ভালো নেই !"
"আদি দের বাড়ি দেখে আসলাম । আদির মা ইশ এ জেম লেডি , কত বই উফফ ভাবা যায় না ! কে নেই তার সংগ্রহে !"
আমি একটু উৎসাহ নিয়ে বললাম " বাহ্ তাহলে তো আলাপ করতে হয় । "
"চলো এর পর এখানে বিকেল হয়ে যাবে, হোটেলে খাবার দাবার সব রেডি করা , এখন একটু রেস্ট নাও আর কালকের প্রিপারেশন নাও বুঝলে !"
আমাকে একরকম ঠেলে ঠেলে হোটেলে নিয়ে এসে ফেললো ববিন !
এক বার ঘাড় উঁচু করে দেখতে ইচ্ছা হলো ববিনের ঘরটা । না বারান্দায় কেউ দাঁড়িয়ে নেই । খালি মন কে সমঝিয়ে চললাম " সব চরিত্রের হার জিৎ হয় না এর বাইরেও প্রবন্ধ লেখা হয়ে যায় , আমার অধ্যায় ববিন কি ভাবে লিখবে আমি জানি , কিন্তু শ্রী কে ফিরে পেলে এতদিনের অপেক্ষা এর একটা যবনিকা পাত ঘটলেও ঘটতে পারতো । অসাধারণ গল্প
•
|