18-01-2019, 12:56 PM
Awesome. Thanks for sharing.
BEAUTY LIES IN THE EYES OF THE BEHOLDER
Adultery অভিশপ্ত ডায়েরী by subha chatterje completed
|
18-01-2019, 08:53 PM
It was the most exceptional piece in Xossip Bengali section.
Subha Chatterje kothay?? Aar lekhen ni keno??
19-01-2019, 09:21 AM
তৃতীয় খণ্ডঃ
পর্ব ১- অশরীরীঃ সুবীর বাবুঃ (কিছুটা গম্ভীর ভাবে) কিরে মানব কেমন আছিস? মানব বাবুঃ (ফোনের ওপর প্রান্ত হতে) আমি ভালো আছি, তোরা ভালো আছিস তো? সুবীর বাবুঃ মানব আমাদের এই ফ্ল্যাট টায় খুব অসুবিধা হচ্ছে। রূপসা আর তিলোত্তমা খুব মন খারাপ করছে। ওরা আর ১০-১৫ দিনের ই মধ্যে চলে যাবে। ততদিন যদি তুই... মানব বাবুঃ ওটা তোর ই বাড়ী সুবীর। আমি চিরকাল ওটাকে তোদের ই বাড়ী ভেবে এসেছি। আমি চাবি নিইনি, ঘরটা খুলে দেখিও নি একবার ও। তোরা আজ ই চলে আয়। আর চিন্তা করিস না, আমি এখন অনেক অনেক দূরে। আমার সাথে হয়ত তোদের কারুর ই আর দেখা হবেনা। সুবীর বাবুঃ তুই বিশাল উপকার... ওপাশ থেকে পিপ পিপ করে শব্দ ভেসে আসলো। অর্থাৎ মানব ফোন তা কেটে দিল। সুবীর বাবু চরম হতাশায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলেন। মালতী দেবী কিছুটা দূর থেকে সব ই দেখছিলেন, উনি এগিয়ে এলেন। সুবীর বাবুর কাঁধে হাত রেখে বললেন মালতী দেবীঃ সব আমার ই জন্য হোল। জানি তুমি আমার কথা বিশ্বাস করবে না। কিন্তু সত্যি কেউ আছে যে সবসময় আমার পাশে পাশে ঘোরে। কখনো আমার কোমর টা জড়িয়ে ধরে কখনো আমার গালে চুমু খায়। সুবীর বাবু অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলেন মালতী দেবীর দিকে। উনি কি বলবেন মালতী দেবীকে উনি নিজেই তো কিছুক্ষন আগে এরকম ই একটা ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন। হয়ত ডায়েরি টা চায় যে ওনারা সেলিমতলার সেই পুরনো বাড়ীটায় আবার ফিরে যান। মনে মনে ঠিক করলেন মালতী দেবীকে কিছুই বলবেন না। যা হচ্ছে তা হোক, ঠিক ই একদিন এই অভিশপ্ত অবস্থার বাইরে ওনারা বেড়িয়ে আসবেন। সুবীর বাবু আবার একটা ফোন করেন। মালপত্র সব নিয়ে যেতে হবে, অন্তত ৩ টে গাড়ী চাই। সুবীর বাবু সবার দিকে তাকিয়ে রেডি হয়ে যেতে বলেন। আজ ই ওনারা বাড়ী তা চেঞ্জ করবেন। সময়মত গাড়ী চলে আসে, ওনারা খাওয়া দাওয়া সেরে সমস্ত মালপত্র নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন। সেলিমতলার বাড়ীতে পৌছাতে প্রায় বিকেল ৫ টা বেজে যায়। মনিশ বাবুর থেকে বাড়ীর চাবিটা আনতে যান। মনিশ বাবু বলেন মনিশ বাবুঃ আরে সুবীর বাবু যে। আচ্ছা মানব বাবুর কোনও খবর জানেন? বহুদিন হয়ে গেলো দেখা সাক্ষাত নেই। ফোন করলেও সুইচ অফ বলে। সুবীর বাবুঃ হ্যাঁ মনিশ বাবু আমাদের নতুন ফ্লাট টা ভালো লাগছিল না। ওটা ভাড়া দেবো ঠিক করলাম। এখানে অনেক ভালো ভাবে থাকা যায়। না আমার তো মানবের সাথে এই কিছুক্ষন আগেই কথা হোল। ও বলল যে অনেক দূরে আছে। সুবীর বাবু চাবি টা নিয়ে আবার বাড়ীর দিকে আসতে শুরু করেন। রাস্তায় সাইদুলের সাথে মুখোমুখি। প্রচণ্ড ঘেন্না লাগে ছেলেটার প্রতি। গরিবের ছেলে ভেবে ওকে কতই না মায়া দয়া করেছে আর ওই কিনা ওনার স্ত্রী এর দিকে নোংরা চোখে তাকিয়েছে। সাইদুলঃ আরে দাদা, কবে এলেন। কাল থেকে দুধ দিচ্ছি তাহলে। সুবীর বাবু শুধু “হ্যাঁ” এই শব্দ টা করে চলে গেলেন। সাইদুল অতকিছু বুঝলনা। ও শুধু এটাই জানল যে সুবীর বাবুরা ফিরে এসেছেন সুতরাং এই মুহূর্তেই রাজুকে খবর টা দেওয়া উচিত। ১-২ মিনিটের মধ্যেই রাজুর কাছে সমস্ত খবর চলে গেলো। রাজু আর সাইদুল আবার সেই দেওয়ালের পেছনের ফাঁক টা দিয়ে ভেতরে উঁকি মেরে দেখতে শুরু করল। হ্যাঁ মালতী, রূপসা ও তিলোত্তমা তিন জনেই এসেছে। রাজুরা ওখান থেকে উঠে যায়, ওদের এই মুহূর্তেই নতুন কোনও প্লান বানাতে হবে। এবার আর ব্যর্থ হলে চলবে না। এক দু ঘণ্টার মধ্যেই বাড়ীতে সব মালপত্র ঢোকানো হয়ে যায়। লেবার রাও টাকা নিয়ে চলে যায়। রূপসা ও তিলোত্তমা যে যার নিজের নিজের রুমে চলে যায়। সুবীর বাবু পরিশ্রান্ত হয়ে উঠোনে দাঁড়িয়ে থাকেন। মাত্র ১২ টা ঘণ্টার মধ্যে ওনার জীবনের প্রতিটি সাজানো গোছানো জিনিস কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যায়। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখেন কালো মেঘ করেছে আকাশে। এক্ষুনি হয়ত ঝড় আসবে। কিন্তু যে ঝড় ওনার জীবনে ও সংসারে আসতে চলেছে তা উনি কি করে মোকাবিলা করবেন। সংসারের অনেক ঘটনাই ওনার অজানা ছিল কিন্তু আজ সত্য বাবুর মুখ থেকে সেই প্রতিটি ঘটনাই উনি জানতে পারেন। যে সুব্রত কে উনি নিজের ছোট ভাইএর মত স্নেহ করতেন সেও কিনা মালতীর শরীরের দিকে কুনজর দিয়েছে। সাইদুল রাজু এদের ও বা সুবীর বাবু কিকরে ভুলে যাবেন। আর মানব, যে কিনা এই পরিবারের ই একটা অঙ্গ ছিল সেই মালতী কে একবার ছোঁয়ার জন্য এতো বড় একটা চক্রান্ত করেছিল। সুবীর বাবুর আসতে আসতে সেই রাতের প্রতিটা কথা মনে পড়ে যায়। মালতী দেবীর উলঙ্গ শরীর তা সুবীর বাবুর সামনেই লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা থেকে সুবীর বাবুর সাথে নিজের পোশাক পরিবর্তন করা। কিন্তু মালতী... একবার মনে মনে বলে ওঠেন মালতী কেন সমস্ত ব্যাপারটা আমার থেকে লুকিয়ে গেলো। সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ে মালতী দেবীর ই ওপর। এই রাগ সঙ্গত ছিল। কত কষ্ট করে সুবীর বাবু ও মালতী দেবী এই সংসার তা গড়ে তুলেছেন, দুজনের কেউ ই নিজেকে কখনো অসহায় মনে করেনি। কিন্তু আজ সুবীর বাবু প্রচণ্ড অসহায়। কেন মালতী এতটা দূরে সরে গেলো? এই একটাই প্রশ্ন ওনার মনে বারবার করে আসতে লাগলো। পেছন থেকে এসে হথাত মালতী দেবী ওনাকে জাপটে ধরলেন। এই স্পর্শ তা আজ আর সুবীর বাবুর মনে কোনও তৃপ্তি ই দিচ্ছেনা। উনি একবার ও ঘুরে দেখলেন না। মালতী দেবীঃ কি গো আমার ওপর রাগ করেছ না? আমি জানি আমার ওপর রাগ করেছ। আমি একটাও মিথ্যে কথা বলিনি, আমায় বিশ্বাস কর। সত্যি ওই ফ্ল্যাট টায় ভুত আছে। কেউ আমায় পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে, আমার গালে চুমু খায়। সবসময় যেন একটা গভীর ঘন নিশ্বাস আমার কাঁধের ওপর পড়ে। সুবীর বাবুঃ (প্রচণ্ড গম্ভীর ভাবে) ভুত তুমি দেখনি মালতী। ভুত কি হয় তার আতঙ্ক কি হয় তুমি জাননা। মালতী দেবীঃ (কিছুটা ইয়ার্কির ছলে) এমনভাবে বলছ যেন তুমি কত ভুত দেখেছ। আমি জানি তুমি বিশ্বাস করতে পারছনা। সুবীর বাবুঃ (প্রচণ্ড অবজ্ঞ্যার ছলে) বিশ্বাস করতেও চাইনা। তুমি জানো আজ আমায় ঠিক কতটা অপমানিত হতে হোল। মানব আমার ফোন তা কেটে দিল, পুরো কথাটা শুনল ও না। আর কতদিন, আর কতদিন আমি এভাবে অন্যের দয়ায় বাঁচব। লোক আমায় দেখে হাসে মজা করে। মালতী দেবি কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান। উনি আশাও করেননি যে ওনার স্বামী এরকম ভাবে ওনাকে প্রত্তুত্তরে জবাব দেবেন। মালতী দেবীঃ ঠিক আছে তুমি বিশ্বাস করোনা। আমিও তোমায় বিশ্বাস করাতে যাবনা। তুমি বাবা হিসেবে একজন গবেষক হিসেবে যতটা ভালো একজন স্বামী হিসেবে ঠিক ততটাই উদাসীন। সুবীর বাবুর মাথা গরম হয়ে যায়। মাথায় আগুন জ্বলতে থাকে। এক তো মালতী দেবী ওনার থেকে সব ই লুকিয়েছে তার ওপর আবার স্বামী হিসেবে ওনার কর্তব্য বোধ নিয়ে ওনাকে কটাক্ষ করছেন। সুবীর বাবুঃ স্বামী হিসেবে আমি কেমন তা তোমার পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। যে চিরকাল শুধু কিকরে একটু সুখ পাওয়া যায় সে কথা ভেবে গেলো, সে কি করে দায়িত্ব কর্তব্য নিয়ে বুঝবে। কথাটা তো রাগের মাথায় সুবীর বাবু বলে ফেললেন, কিন্তু পরমুহুরতেই বুঝতে পারলেন, বিশাল এক ভুল হয়ে গেছে। এটা বলা সত্যি ই উচিত হয়নি। আজ উনি ও ওনার পরিবার যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন তার পেছনে মালতী দেবীর আত্মত্যাগ উনি কিছুতেই অস্বীকার করতে পারেন না। মুহূর্তের মধ্যে বুঝতে পারেন, ভুল করে ফেলেছেন, বিশাল একটা ভুল। পেছন ঘুরে দেখেন মালতী দেবীর চোখ দিয়ে জল পড়ছে টপ টপ করে। সুবীর বাবু আর নিজেকে শান্ত রাখতে পারেন না, মালতী দেবীর দুহাত জড়িয়ে ধরেন। সুবীর বাবুঃ ভুল হয়ে গেছে মালতী, বিশাল একটা ভুল। আমি কেন এরকম বলে ফেললাম নিজেও জানিনা। আমায় ক্ষমা করে দাও। এটা আমার মনের কথা নয়। আমি আমার কথা ফিরিয়ে নিচ্ছি। কিন্তু হয়ত অনেক অনেক দেরি হয়ে গেছে। মালতী দেবীর কানে তখন আর কোনও কথাই ঢুকছে না। চোখের সামনে ভেসে উঠছে বিয়ের পর থেকে আজ অবধি ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনা। মাথাটা কেমন ঝিম ঝিম করছে। এদিকে সুবীর বাবু নিজের ভুল স্বীকার করেই চলেছেন আর বুঝিয়েই চলেছেন যে ওনার ভুল হয়েছে এটা মনের কথা নয়। বহুকষ্টে মালতী দেবী নিজের চোখের জল মোছেন ও স্বাভাবিক হন। মালতী দেবীঃ না কোনও ব্যাপার নয়। তুমি ভেতরে গিয়ে বস। এখানে ঠাণ্ডা লেগে যাবে। সুবীর বাবুঃ ঠিক আছে আমি ভেতরে যাচ্ছি। কিন্তু মালতী তুমি আমায় ভুল বুঝবে না। তুমি আমায় চেন। তুমি জানো এরকম কথা কখনই আমার মুখ দিয়ে বেরতে পারেনা। ভুল মানুষ মাত্রেই হয়, আমার ও হয়েছে। মালতী দেবী চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকেন ওখানে। নারীর অভিমান বড্ড কঠিন ও অনমনীয়। যতই হোক মালতী দেবীও একজন নারী। সুবীর বাবু আসতে আসতে ভেতরের দিকে যেতে থাকেন। হথাত মালতী দেবী “ওমা” বলে চিৎকার করে ওঠেন। সুবীরবাবু পেছন ফিরে দৌড়ে যান মালতী দেবীর কাছে। মালতী দেবী চোখ বন্ধ করে আছেন। আসতে আসতে উনি আবার চোখ খোলেন সুবীর বাবুঃ কি হয়েছে মালতী? শরীর খারাপ লাগছে? চলো ভেতরে চলো। আর এখানে দাঁড়াবে না। চলো ভেতরে চলো। সুবীর বাবু কিছুটা জোর করেই ওনাকে ভেতরে নিয়ে গেলেন। মালতী দেবী নিজেকে শান্ত করে রান্না ঘরে ঢুকলেন। ঠিক কি ঘটে চলেছে ওনার সাথে তা উনি কাউকেই বোঝাতে পারবেন না। সত্যি ই কি কোনও অলৌকিক ঘটনা কোনও আত্মা নাকি শুধুই ওনার মনের ভুল। উনি নিজেও জানেন মানসিক ধাক্কা একটা ওনার লেগেছে, কিন্তু তার জন্যই কি এতকিছু। ফ্ল্যাটে যখন স্নান করার সময় ঘন নিশ্বাস খোলা পিঠের ওপর পড়ছিল উনি একবার পেছন ঘুরে তাকালেন, কিন্তু কেউ ছিলনা। তারপর হথাত করেই পুরো বাথরুম জুড়ে মদের তীব্র গন্ধ ছেয়ে গেলো। এই গন্ধটা ওনার অতি পরিচিত, ঠিক সেই রাতে মানব বাবুর মুখ থেকে বা তার জাস্ট আগেরদিন সুবীর বাবুর মুখ থেকে যে গন্ধটা পেয়েছিলেন ঠিক সেটাই। মালতী দেবীর মনে পড়ে গেলো গতকাল সুবীর বাবুর সাথে সঙ্গমের কথা, হথাত ই সুবীর বাবুকে মানব বাবু মনে করে এক কল্পনা করে ফেলা। তাহলে কি এগুলো শুধুই ওনার মনের ভ্রম, উনি কি শুধু এসব কল্পনা করে চলেছেন। মালতী দেবী গভীর ভাবে ভাবতে শুরু করলেন। হথাত ই আবার কেউ ওনাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল। সেই উগ্র মদের গন্ধটা আবার ওনার চারপাশে ভনভন করতে লাগলো। প্রথমে একটু চমকে গেলেও ঠিক করেন এবার আর কোনও আওয়াজ করবেন না। চুপ করে সব সহ্য করবেন আর লক্ষ্য করবেন। একটা কোমল শীতল হাত পেছন থেকে ওনার কোমর টা জড়িয়ে ধরে, আঙুল গুলো আসতে আসতে নাভির কাছে গিয়ে লাট্টুর মত ঘুরতে থাকে। দুটো শুষ্ক কড়া ঠোঁট ঘাড়ের ওপর ক্রমাগত উষ্ণ চুম্বন করতে থাকে। মালতী দেবীর ও শরীরে স্পন্দন শুরু হয়, এই স্পন্দন তীব্র কাম আকাঙ্খার। ঠোঁট গুলো ঘাড় পেরিয়ে ক্রমাগত গালের দিকে ও হাত দুটো ক্রমাগত নাভি ছাড়িয়ে বুকের দিকে হাঁটতে শুরু করে। একটা হাত মালতী দেবীর মুখটা পেছন দিকে আলতো করে ঘোরাতে শুরু করে। মালতী দেবীও সজাগ হয়ে চোখ দুটো খুলে রাখেন, ভয়ে হৃৎপিণ্ডতে কম্পন শুরু হয়। চোখের সামনে ভাসমান হয় সেই অশরীরী, হয়ত মালতী দেবী জোরে চেঁচিয়ে বলতে চেয়েছিলেন “একি মানব দা তুমি” কিন্তু সেই সুযোগ উনি পেলেন না। দুটো ঠোঁট ভীষণ ভাবে ওনার দুই ঠোঁটের ওপর অধিকার গ্রহন করে। যখন ছাড়া পেলেন চোখের সামনে কেউ নেই। শুধু মিষ্টি উগ্র মদের গন্ধ টা সামনে থেকে আসতে আসতে সরে যাচ্ছে। মালতী দেবী নিজেকেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না, সত্যি ই কি উনি মানব দা কেই দেখলেন নাকি অন্য কেউ নাকি এটা ওনার মনের ভুল। ওখানে দাঁড়িয়ে উনি ভয়ে কাঁপতে লাগলেন। না সুবীর বাবুকে এব্যাপারে কিছুই বলবেন না, কাউকেই কিছু বলবেন না।
19-01-2019, 09:22 AM
পর্ব ২- কে সেই অশরীরীঃ
রান্নাঘরে বেশ কিছুক্ষন চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকার পর মালতী দেবী নিজের মনে বলে ওঠেন, আমার কোনও মানসিক দুর্বলতা হয়েছে। নিজের থেকেই আমায় এটা কাটিয়ে উঠতে হবে। মানব দার সেই রাতের ওই ঘটনা টা আমাকে ভীষণভাবে মানসিক যন্ত্রণা দিয়েছে তাই হয়ত। কিন্তু বেশিক্ষন মালতী দেবী মানসিক স্থিরতা ভোগ করতে পারেন না। আবার সেই উগ্র মিষ্টি গন্ধটা চারপাশে ভনভন করতে শুরু করে। ধীরে ধীরে এটা মালতী দেবীর কাছে অভ্যাসে পরিনত হয়ে যায়। উনি যেন বুঝতে পারেন প্রতি মুহূর্তে এই অশরীরী ওনাকে স্পর্শ করবে, কিন্তু ওনার কিছুই করার থাকবেনা। এতকিছু সত্বেও উনি একবারও সুবীর বাবু বা মেয়েদের কাছে সবকথা খুলে বলেন না। এক চাপা অভিমান সুবীর বাবুর কথায় ওনার মনে চেপে বসে। এদিকে সুবীর বাবু এইসব ঘটনা সম্বন্ধে একদম ই ওয়াকিবহাল থাকেন না। ওনার মন জুড়ে শুধু একটাই কথা ঘুরতে থাকে, কখন এই অভিশপ্ত ডায়েরি হতে উনি মুক্তি পাবেন। এবং সেই মুক্তির ক্ষন আসবে একবার ডায়েরি টা উনি পড়ার অনুমতি পেলে। কবে ও কিভাবে সেই অনুমতি আসবে, সুবীর বাবু তার ই জন্যে অপেক্ষায় থাকেন। এভাবে একটা একটা করে দিন অতিবাহিত হয়ে যায়। রূপসা ইঞ্জিনিয়ারিং ও তিলোত্তমা মেডিক্যাল কলেজ এ ভর্তি হয়ে যায়। ঘরে পরে থাকেন শুধু একা মালতী দেবী। অফিস থেকে এসে এক কাপ চা চাওয়া, দুবেলা খেতে চাওয়া এই হয়ে দাঁড়ায় মালতী দেবী ও সুবীর বাবুর দাম্পত্য। আশ্চর্যজনক ভাবে সেই গভীর ভালোবাসা অন্ধ বিশ্বাস হথাত ই পরিনত হয়ে যায় উদাসীন সম্পর্ক ও অবহেলিত বন্ধনে। এভাবে যে কি করে ৩ মাস কেটে গেলো। তা মালতী দেবী ও সুবীর বাবু কেউ ই বুঝতে পারেন না। সুবীর বাবু অপেক্ষায় থাকেন কবে তিনি আবার ডায়েরি তা পড়তে পারবেন তার জন্য, মালতী দেবী ঠিক কি চান তা কেউ জানেনা। এরমধ্যে একবার ও সুবীর বাবু ও মানব বাবুর কথা হয়নি। সুবীর বাবু যে মানবের কথা ভাবেন নি তা নয় কিন্তু কোনও এক ইগো ও আত্মসম্মান বোধ তাকে আটকে দিয়েছে। মালতী দেবী ও একবারের জন্য মানব বাবুর কথা ওথান নি। স্বাভাবিক ভাবেই সাইদুল রোজ দুধ দিতে আসে। রাজুও এই পাড়াতেই থাকে, কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারনে এদের নাম এই বাড়ীতে উচ্চারিত হয়না। বেশ কিছুদিন ধরে সুবীর বাবুর মন বলছিল ডায়েরি তা পড়ার সময় হয়ত এসে গেছে। ঠিক ৩ মাস পর কোনও একদিনঃ------------------------------------------------ সুবীর বাবু তখন কলেজ এ। প্রায় বিকেল ৬ টা বাজে। মোবাইল এ তিলোত্তমার একটা ফোন। সুবীর বাবু রিসিভ করেন। তিলোত্তমাঃ বাবা আজ আমি আর মা রূপসার কলেজ এ যাচ্ছি। আমি তো কিছুদিনের মধ্যেই চলে যাবো আবার তাই ভাবলাম যাই রূপসার সাথে একবার দেখা করে আসি। মাও আমার সাথেই যাচ্ছে। তুমি কোনও চিন্তা করোনা। আমাদের আসতে একটু দেরি হবে। তুমি জলখাবার টা বাইরে থেকে খেয়ে এসো। সুবীর বাবু শুধু আচ্ছা বলে ফোন টা রেখে দেন। আসলে অভিমান টা তিলোত্তমার ওপর নয়, অভিমান টা গিয়ে পড়ে মালতী দেবীর ওপর। মনে মনে ভাবেন মালতী কত চেঞ্জ হয়ে গেছে। এই ৩ টে মাস তো বাড়ীতে ওনারা দুজন প্রায় একাই ছিলেন অথচ একটাও কোনও ভালবাসার কথা নেই। শুধুই যেন পাশাপাশি থাকা, নিজের ই প্রানের মালতী হথাত ই কেমন যেন অচেনা হয়ে ওঠে। এরকম ও নয় যে মালতী খুব মানসিক কষ্টে রয়েছে। দিব্যি রয়েছে, আগের ই মত গুনগুন করে গান করে, খুব হাসিখুশি থাকে। সুবীর বাবুর সবসময় এটাই মনে হয় যে মালতী দেবী যেন ওনাকে ছাড়া প্রচণ্ড সুখি রয়েছেন, প্রচণ্ড খুশি রয়েছেন। আর ঠিক এটাই কঠোর হৃদয়ের মানুষ সুবীর বাবুর পৌরুষে ভীষণ ভাবে আঘাত করে। সুবীর বাবুও নিজেকে গুটিয়ে রাখেন। আর আজ রূপসা কে দেখতে যাওয়ার কথা একবার ও না বলে যে চরম অবজ্ঞার পরিচয় মালতী দেবী দিলেন তা যেন ওনাকে আরও বেশি করে অভিমানি করে তুলল। কলেজ এ আরও অনেক কাজ ছিল কিন্তু সুবীর বাবুর আর ভালো লাগলো না। কলেজ থেকে ব্যাগ গুছিয়ে বেড়িয়ে এলেন। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে শুধু মালতী দেবীর ই কথা চিন্তা করছিলেন। সামনেই বাস, কলেজ থেকে বালিগঞ্জ যেতে বেশি সময় লাগেনা। ১০ মিনিটের মধ্যেই বাড়ীর কাছাকাছি পৌঁছে গেলেন। খুব ক্ষিদে পাচ্ছিল ওনার, কিন্তু না অভিমান উনিও করতে জানেন। সোজা বাড়ীর পথে হাঁটা দিলেন। একদম বাড়ীর কাছাকাছি এসে একবার পকেট টায় হাত দিলেন। পকেট এ চাবি নেই, মনে মনে ভাবলেন কলেজ এ ফেলে চলে এলেন না তো। পেছন থেকে একটা অতি পরিচিত গলা “সুবীর বাবু চাবিটা বোধ হয় আপনার ব্যাগেই আছে, ভালো করে দেখুন তো একবার” সুবীর বাবু বোধ হয় নিজেকে জোর করে অবিস্বাস করতে চাইছিলেন, নিজেকেই বলতে চাইছিলেন না এ সে নয়। উনি একবার ও পেছন ফিরে দেখলেন না। আবার পেছন থেকে সেই পরিচিত কণ্ঠ ভেসে এলো। “কই ব্যাগ টা একবার দেখুন” সুবীর বাবু এবার পেছন ফিরে দেখলেন এবং যথারীতি আঁতকে উঠলেন। সত্য বাবুঃ একি সুবীর বাবু আমাকে দেখে এতো ভয় পাওয়ার কি আছে। আপনি তো সত্যেন্দ্র, দেবেন্দ্র, অনুরাধা, তিনকড়ি, ঠাকুর ডাকাত প্রত্যেক কেই চেনেন। অভিশপ্ত ডায়েরি যে লেখা হচ্ছে তাও আপনি জানেন। খালি এটা জানেন না অভিশপ্ত ডায়েরি লেখা শেষ হয়ে গেছে। সুবীর বাবুর কণ্ঠ আবার জড়িয়ে গেলো, মুখ দিয়ে কোনও কথা বেরলনা। কোনরকমে ব্যাগ হাতড়ে চাবিটা পেলেন ও ভেতরে ঢুকে গেলেন সাথে সত্যেন্দ্র ওরফে সত্য বাবুও। সত্য বাবুঃ আমি পারলেই কোনও সঙ্কেতের মাধ্যমে আপনাকে বলতে পারতাম যে ডায়েরি লেখা শেষ। কিন্তু কি করি বলুন তো। নিজের মুখে গল্প বলার লোভ টা তো কিছুতেই সামলাতে পারলাম না। আপনি জানেন গল্প বলতে আমি ঠিক কি পরিমান ভালোবাসি। সুবীর বাবু দাঁড়িয়ে ঠক ঠক করে কাঁপতে শুরু করলেন। সত্য বাবুঃ একি এরকম কাঁপছেন কেন। লোকে ভুত দেখে কাঁপে আমি জানি। কিন্তু আপনি তো আমাদের ব্যাপারে সব ই জানেন, আমাদের আত্মা অভিশপ্ত নয়, অভিশপ্ত শুধুই ডায়েরি টা। সুবীর বাবু শরীর বেশিক্ষন ধরে রাখা যায়না। আপনি যদি অনুগ্রহ করে ডায়েরি টা আনেন আমি তাহলে গল্প টা শুরু করে দিতে পারি। সুবীর বাবু একবার নিজের মনে মনে বলেন যে যাই হয়ে যাক আর কয়েকটা ঘণ্টা মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করতে পারলেই এই অবস্থার থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। সুবীর বাবু নিজেকে শান্ত করেন। সত্যবাবুর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠেন সুবীর বাবুঃ সত্য বাবু আমি তো কারুর কোনও ক্ষতি করিনি তাহলে আমার সাথেই এরকম কেন হচ্ছে। আমার কি অপরাধ একটাই যে আমি ডায়েরি টা কারুর কোনও অনুমতি ছাড়াই পড়ে ফেলেছি। সত্য বাবুঃ সুবীর বাবু আমি আপনাকে সব ই বুঝিয়ে বলেছি। আমরা কেউ ক্ষতিকর নই। আমরা শুধুই এই ডায়েরি তার দাস। না সুবীর বাবু আপনি ডায়েরি টা পড়ে কোনও অন্যায় করেন নি। আসলে একটা ষড়যন্ত্রের মধ্যে আপনি ফেঁসে গেছেন। কে এই ষড়যন্ত্র করেছে কেন করেছে তা আপনি সবশেষে বুঝতে পারবেন। আপনাকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে। যান ডায়েরি তা নিয়ে আসুন। সুবীর বাবু ঘরের দিকে হেঁটে হেঁটে যেতে শুরু করলেন। ডায়েরি তা সস্থানেই ছিল। একদম নিচ থেকে ডায়েরি তা বার করে উনি আবার বাইরে সত্য বাবুর কাছে যেতে শুরু করলেন। সত্য বাবু ততক্ষনে খাটিয়ার ওপর বসে গেছেন। সত্য বাবুঃ হ্যাঁ সুবীর বাবু, ডায়েরি তা আমায় দিন। আমিও আমার গল্পটা শুরু করে দি। সুবীর বাবু কোনও উত্তর দিলেন না। সত্য বাবুঃ সুবীর বাবু এতটা তো আপনিও জানেন যে এই গল্পের চরিত্র গুলো হোল আপনি নিজে, মালতী দেবী, মানব বাবু, রাজু, সাইদুল, রূপসা ও তিলোত্তমা। যে ৩ মাস আপনি কিছুই বোঝেন নি, কোনও সাংসারিক ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন নি এটা সেই ৩ মাসের ই গল্প। তাই ডায়েরি তা যে ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর তা ভাববেন না। এই ডায়েরি তা পড়েই আপনি জানতে পারবেন আপনার চোখের আড়ালে আপনার ই সংসারে ঠিক কি ঘটে গেছে। এর প্রথম পর্বের নাম অশরীরী। এর সম্বন্ধে আপনি কিছুটা হলেও অবগত। সুবীর বাবু তাহলে আমি আমার গল্প শুরু করি। সুবীর বাবু শুধুই একটা হাল্কা মাথার ঝাঁকুনি দিয়ে সত্য বাবুকে জবাব দিলেন। সত্য বাবুঃ আপনি লক্ষ্য করেছেন জমিদারবাড়ি থেকে আপনার ফেরার পর, মালতী দেবী অদ্ভুতভাবেই কোনও এক আতঙ্কের মধ্যে থাকেন, ওনার মনে হয় ওনার চারপাশে কোনও এক অশরীরী ঘুরঘুর করে। ওনাকে জড়িয়ে ধরে, ওনার দুই ওষ্ঠকে নিজের শুষ্ক, কঠোর ঠোঁট দিয়ে স্পর্শ করে। এতটা আপনি জানেন। এবার যা বলব তা আপনি জানেন না। ওই অশরীরীর উপস্থিতিতে পুরো ঘরটা একটা অদ্ভুত উগ্র মিষ্টি গন্ধে ভরে যায়। ঠিক জেন সেই রাতের বিভীষিকা তা মালতী দেবীর জীবনে নিজের থেকেই ফিরে আসতে চায়। সেইরাতের মানে যেদিন মানব বাবু আপনার বাড়ীতে এসেছিলেন আপনারা মদ্যপান করেছিলেন। তারপর আপনাকে ঠকিয়ে মানব বাবুর মালতী দেবীর উলঙ্গ দেহটা দর্শন করা ও আপনার ই ঘরে আপনার স্ত্রী কে প্রায় ৫-১০ মিনিট ধরে যৌন নিপীড়ন করা। মালতী দেবী সেই অশরীরীকে অল্প হলেও দেখতে পান। উনি নিজের চোখে দেখেছেন এই অশরীরী আসলে মানব বাবু। সুবীর বাবু আঁতকে ওঠেন, বড় বড় চোখে তাকিয়ে থাকেন সত্য বাবুর দিকে। সত্য বাবুঃ না সুবীর বাবু আপনি ভুল ভাবছেন। মানব বাবু জীবিত, ভীষণভাবেই জীবিত। তাহলে এই অশরীরী কে? এর উত্তর একদম শেষ পর্বে গিয়ে আপনি পাবেন। অনেক গুলো প্রশ্নই এই মুহূর্তে আপনার মাথায় ঘুরঘুর করছে, তা আমি জানি। প্রথম প্রশ্ন এই অশরীরী কেন মানব বাবুর শরীর ই ধারন করে? দ্বিতীয় প্রশ্ন, মালতী দেবী হথাত ই ৩-৪ দিন পর থেকে স্বাভাবিক কি করে হয়ে যান? সব উত্তর ই আপনি পেয়ে যাবেন। আপনার আর মালতী দেবীর মধ্যে একটা মানসিক দুরত্ব তৈরি হয় আর তার সাথেসাথে মালতী দেবীর মনে এক চাপা আতঙ্ক গ্রাস করে নেয়। কে ওনাকে প্রতি মুহূর্তে স্পর্শ করছে অথচ উনি কিছুই করতে পারছেন না। মানব বাবুর মত দেখতে হলেও কেন উনি তাকে দেখতে পাচ্ছেন না, সেইসব ই। ঠিক এই ঘটনার পরের রাতের ঘটনা। ততক্ষনে মালতী দেবী কোনও এক অশরীরীর উপস্থিতি সম্পূর্ণ ভাবে বুঝে গেছেন। আপনি তখন বিছানায় গভীর নিদ্রায় মগ্ন। মালতী দেবীও আপনার পাশেই সবে চোখ গুলো বন্ধ করেছেন। হথাত ই একটা তীব্র মিষ্টি গন্ধ। উনি বুঝতে পারেন সেই অশরীরী এসে গেছে। কিন্তু মনে মনে উনি ঠিক করে রেখেছিলেন যে আজ উনি কোনও শঙ্কা করবেন না শুধুই লক্ষ্য করবেন যে কে এই অশরীরী। যথারীতি উনিও চোখ বন্ধ করে পড়ে থাকেন। আসতে আসতে ওনার শরীরের এক এক করে সব কাপড় খুলে যেতে শুরু করে। উনি শুধু চোখ বন্ধ করে পড়ে থাকেন। সেই দুটো শুষ্ক ঠোঁট ও তীব্র ঠাণ্ডা দুটো হাত ওনাকে স্পর্শ করতে থাকে। উনি শুধু চোখ তা বন্ধ করেই পড়ে থাকেন। এরপর পুরো ৫ তা মিনিট ওনার দুই স্তন কে সেই অশরীরী নিজের দুই হাত দিয়ে ডলতে থাকে ও শুষ্ক দুই ঠোঁট দিয়ে উত্তেজিত করতে থাকে। কিন্তু হথাত ই সেই স্পর্শ শান্ত হয় ও সেই উগ্র গন্ধটা বিলীন হয়ে যায়। মালতী দেবী উঠে বসেন ও চোখ খোলেন। ওনার শরীরে প্রতিটি কাপড় সস্থানেই ছিল। কেউ যে এতক্ষন ওনার শরীর তা ভোগ করছিল এতক্ষন তার কোনও প্রমান ই নেই। এই একি ঘটনা, ঠিক ১০ মিনিটের জন্য যৌনতা ওনার কাছে দৈনিক অভ্যাস হয়ে দাঁড়ায়, আর তার ই সাথে সাথে ওনার মনেও একটা ধারনা বদ্ধমূল হতে শুরু করে। তা হোল সেই রাতে মানব বাবুর ওই নিষিদ্ধ যৌনতা কোথাও না কোথাও ওনার মনে এক তীব্র যৌন আকাঙ্ক্ষার জন্ম দিয়েছে। উনি শুধুই অনুভব করছেন, কোনও অশরীরী বা আত্মা নেই। কিন্তু সুবীর বাবু এটা প্রচণ্ড সত্যি যে এক অশরীরী আছে, ভীষণ ভাবেই আছে। আর সেই মালতী দেবীর শরীর তা এরকম অসম্পূর্ণ ভাবে ভোগ করে চলেছে। কিন্তু কে সেই অশরীরী? জানতে গেলে গল্পের শেষ অবধি আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে।
19-01-2019, 09:22 AM
পর্ব ৩- রূপসার হৃদয়ঃ
সত্য বাবুঃ সুবীর বাবু গল্পটা শুরু হয়ে গেছে। আপনার জন্য আমার খুব ই খারাপ লাগছে সুবীর বাবু। এই গল্পটার সাথে আপনার ব্যাক্তিগত জীবন ও আপনার স্বজনরা জড়িয়ে আছে। কিন্তু কি করব বলুন গল্পটা বলা যে আমার দায়িত্ব। এতক্ষন মালতী দেবীর ব্যাপারেই আপনাকে বলছিলাম। কিন্তু আপনার দুই মেয়ে রূপসা ও তিলোত্তমা ও এই গল্পের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে। অর্থাৎ যৌন সঙ্গম যে শুধু মালতী দেবীর ই হয়েছে তা নয়, রূপসা ও তিলত্তমাও এই অভিশপ্ত ডায়েরীর শিকার। প্রথমেই আপনাকে রূপসার ব্যাপারে বলতে চাই। এই ঘটনা তা ঘটে আজ থেকে ঠিক ১০ দিন আগে। রূপসা তখন কলেজ থেকে বাড়ী ফিরেছিল। রূপসা নিজেকে যতই চালাক ও পটু মনে করুক না কেন ফাঁদে রূপসাও পড়েছিল। সুবীর বাবুঃ সত্য বাবু প্লিজ চুপ করে যান। আমি আর শুনতে চাইনা। সুবীর বাবু মাথায় হাত দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে বসে থাকলেন। সত্য বাবু কিছুক্ষন চুপ করে থাকার পর আবার শুরু করলেন। সত্য বাবুঃ বহুদিন ধরেই সাইদুলের নজর ছিল রূপসার ওপর। সাইদুল প্রায় ই রূপসার কলেজ এর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো। রূপসা ও বহুবার তা লক্ষ্য করেছিল। সাইদুল কখনো রূপসার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেনি, শুধুই দাঁড়িয়ে থাকতো আর রূপসা কে দেখত। রূপসার মধ্যে ধৈর্যের প্রচণ্ড অভাব। রূপসা একদিন অধৈর্য হয়ে পড়ে নিজের থেকেই সাইদুলের কাছে যায়, এবং কিছুটা ভয় দেখানোর ভঙ্গীতে বলে ওঠে। রূপসাঃ সাইদুল দা তুমি এরকম ভাবে আমায় ফলো করা বন্ধ কর। নয়ত আমি সবকথা বাবাকে বলে দেবো। বাবা জানলে ঠিক কি হতে পারে তা তুমি খুব ভালো করেই জানো। আজকের পর থেকে তোমায় যেন আর কখনোই আমায় ফলো করতে না দেখি। রূপসা ফিরে চলে যাচ্ছিল হথাত ই সাইদুল বলে ওঠে সাইদুলঃ তোমার বাবা জানলে আমার তোমাদের বাড়ীতে দুধ দেওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। হয়ত আশেপাশের সমস্ত বাড়ীতেও উনি কথা বলে আমার দুধ দেওয়া বন্ধ করিয়ে দিতে পারেন। এরচেয়েও বেশি আমার অন্য কোনও ক্ষতি করতে পারেন। হয়ত আমার পরিবার টা ভেসে যাবে। হয়ত পাড়ায় আমার বাড়ীর কেউ মুখ দেখাতেও পারবেনা। কিন্তু তারমানে এটা নয় যে আমি আমার মনের কথা টা চেপে রাখব। আজ এতো বছর ধরে তো চেপেই রেখেছি। রূপসা এটা হয়ত আশা করেনি। যতই নিজেকে আধুনিক ও স্মার্ট দেখানোর চেষ্টা ও করুক আসলে তো ও একজন নারী। সদ্য আঠেরো তে পা দেওয়া একটা তরুণীর মন যতটা আবেগপ্রবন হওয়া উচিত ওর ও তো ঠিক ততটাই। রূপসা পেছন ঘুরে আবার সাইদুলের দিকে দেখে। এদিকে সাইদুল ও বুঝে যায়, রাজুর সমস্ত প্ল্যান ই সাকসেসফুল হয়ে যাচ্ছে। রাজুও তাই ধীরে ধীরে নিজের সংলাপগুলো মনে করতে শুরু করে। সাইদুলঃ তোমায় প্রথম দেখেছিলাম আজ থেকে প্রায় ৫ বছর আগে। সেদিন ই আমি প্রথম তোমাদের বাড়ী তে দুধ দিতে গেছিলাম। তার আগে আমার বাবা তোমাদের বাড়ীতে দুধ দিতেন। আগের দিন আমার বাবা মারা গেছিলেন। মন প্রচণ্ড খারাপ ছিল। যখন প্রথম ঢুকলাম, দেখি একটা লাল ফ্রক পড়ে তুমি ব্রাশ করছ। ব্যাস প্রথম দেখাতেই প্রেম। আমি সেদিন থেকেই তোমায় ভালোবাসি রূপসা। জানি আমরা দুজন সম্পূর্ণ আলাদা। আমাদের মানায় না। তোমায় পাওয়ার কোনও আশাই আমি করিনা। শুধু তোমায় ভালোবাসি। রূপসা সাইদুলের ই দিকে তাকিয়ে থাকল। সাইদুল একটু হেসে, ওকে একটু হাত নেড়ে ওখান থেকে চলে এলো। রূপসার পুরো ব্যাপারটা কেমন যেন একটা ফেয়ারি টেল এর মত লাগলো। একজন ওকে ভালবাসে আর সহজ সরল ভাবে ওকে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করে চলে গেলো। এর আগে যে কেউ রূপসা কে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করেনি তা নয়, কিন্তু এতটা সহজ সরল ভাবে কেউই করেনি কখনো। রূপসা ধীরে ধীরে কলেজ এ ফিরে গেলো। কিন্তু ক্লাস এ কিছুতেই মন লাগলো না। কানের সামনে শুধু সাইদুলের ওই কথাগুলো ভাসতে লাগলো। কেউ যেন কানে কানে বলে গেলো আরে রূপসা এটাই তো সত্যিকারের ভালোবাসা, একে আর ঠোক্কর মারিস না। রূপসা একবার নিচের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠল। এদিকে সাইদুল বাড়ী গিয়ে সবকথা রাজুকে খুলে বলে। অভিজ্ঞ রাজু জানে যে সাইদুলের রূপসাকে ভোগ করা পৃথিবীর কোনও শক্তি ই আর রুখতে পারবে না। শুধু কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। রাজুঃ ভাই তোর জন্য এতটা করলাম, তুই আমার জন্য কিছু করবি তো। সাইদুলঃ আরে ভাই তুই তো আমার জিগ্রি দোস্ত রে, তোকে না দিয়ে আমি কি একা কিছু খেতে পারি। যা খাব তোর সাথে ভাগ করেই খাব, কোনও চিন্তা করিস না। রাজুঃ ঠিক আছে ভাই। কিন্তু একটা কথা মনে রাখবি সবসময় যে এখনো কিছুই হয়নি আরও অনেক অনেক চেষ্টা তোকে করতে হবে তবেই তুই রূপসা কে পাবি। তাড়াতাড়ি খাওয়া দাওয়া সেরে নিয়ে বেড়িয়ে যা। ওদের কলেজ তো ৫ টায় ছুটি হয়। কলেজ থেকে হোস্টেল অবধি রাস্তা তা খুব একটা কম নয়। সাইদুল রাজুর ইশারা ভালই বুঝতে পারে। সাইদুল তাড়াতাড়ি খেয়ে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। কলেজ এর সামনে পৌছাতে পৌছাতে পউনে ৫ টা হয়ে যায়। সাইদুল চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। ঠিক ৫ তার সময় কলেজ থেকে এক এক করে সব ছেলে মেয়েরা বের হতে শুরু করে। রূপসা ও বেরোয় আর সোজা রাস্তা বরাবর হাঁটতে শুরু করে। সাইদুল জানে রূপসা যতদূর ই যাক, একটা বার তো পেছন ঘুরে দেখবেই, ও জানে সাইদুল ওর জন্য ওকে একবার দেখার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। সাইদুলের কথাই ঠিক হয়, রূপসা কিছুদুর গিয়ে দাঁড়িয়ে যায় আর বন্ধুদের কিছু বলে। সম্ভবত বন্ধুদের এগিয়ে যেতে বলে, যা সাইদুল শুনতে পায়নি। বন্ধুরা কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার পর রূপসা একবার পেছন ঘুরে দেখে। দেখে বেশ কিছুটা দূরে গাছের নিচে সাইদুল দাঁড়িয়ে আছে। রূপসা দ্রুত মুখটা ঘুরিয়ে নেয়। কিন্তু ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। সাইদুল বুঝতে পারে, এটাই গ্রিন সিগন্যাল। রূপসা ওকে দাকছে। সাইদুল সাইকেল নিয়ে রূপসার দিকে এগিয়ে যায়। রুপ্সাঃ তুমি তো খুব সাহসী। সকালে এতো কিছু বললাম তাও আমার পিছু করছ। আর একদম কলেজ এর মধ্যেই ঢুকে গেছো। জানো এটা হাই সিকিউরিটি এরিয়া, আমি চাইলে তোমায় পুলিসের কাছে ধরিয়ে দিতে পারি। সাইদুল কিছুই বলল না। রূপসা খুব ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগিয়ে চলল। রূপসা যে এতো ধীরে হাঁটে না তা সাইদুল খুব ভালো করেই জানে। ওর এই হাঁটার ভঙ্গী যেন এটাই বলছে আসো সাইদুল আমাকে হোস্টেল অবধি ছেড়ে দাও। সাইদুলের সাহস আরও বেড়ে যায়। সাইদুল সাইকেল তা নিয়ে একটু জোরেই হেঁটে রূপসা কে ধরে ফেলে। রূপসা একবার আড় চোখে দেখে ওর দিকে, একবার নিচের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে, কিন্তু কিছুই বলেনা। সাইদুলঃ আসলে কলেজ থেকে হোস্টেল এতটা দুরত্ব, তুমি একা একা যাবে। তাই ভাবলাম তোমার সাথে যাই। রূপসাঃ কই এমন কিছু তো দুরত্ব নয়। আর একা কোথায় আমার সাথে তো বন্ধুরা ছিল। আমি তো বেশ ভালোভাবেই যাচ্ছিলাম। সাইদুল এবার কিছুটা চুপ করে যায়। সাইদুল ভাবতে থাকে কি বলা যায়। সাইদুলঃ রূপসা তোমার একটা ফটো দেবে আমায়। রূপসাঃ কেন তোমায় হথাত করে আমার ফটো কেন দিতে যাবো? সাইদুলঃ তোমায় এক মুহূর্ত না দেখলে আমার ঠিক করে ঘুম আসেনা। তাইতো আমি তোমাকে দেখার জন্য সাইকেলে করে এতো দূর থেকে ছুটে আসি। রূপসাঃ (রূপসার বেশ ভালই লাগছিল সহজ সরল একটা ছেলেকে এভাবে টিজ করতে) কেন আমায় না দেখলে ঘুম কেন আসেনা? আমি কি কোনও দেবী নাকি? সাইদুল চুপ করে থাকে বেশ কিছুক্ষন। সাইদুলঃ রূপসা আমি তোমায় আগেই বলেছি যে আমি তোমায় ভালোবাসি, কিন্তু রূপসা আমি এর চেয়ে বেশি কিছুই চাইনা। তুমি জানো যে আমাদের মধ্যে সামাজিকভাবে দুরত্ব অনেকটাই। আর তুমি অনেক অনেক বেশি ভালো ছেলে পেয়ে যাবে, তারসাথে তুমি সুখি ও হবে। রূপসা কোনও উত্তর দেয়না। তবে এটা প্রচণ্ড সত্যি যে এই সহজ সরল কথাগুলো রূপসার হৃদয়কে প্রচণ্ড ভাবে বিদ্ধ করছিল। রূপসা তাও চুপ করে থাকে। রূপসা চাইছিল একবার সাইদুল কে বাজিয়ে দেখতে। সাইদুলঃ রূপসা, আমাকে নিজের পরিবার তা চালাতে হয়। বাড়ীতে কাজ করার মত ছেলে আমি একাই। আমি যে এভাবে তোমায় দেখার জন্য পাগলের মত এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছি এতে সত্যি আমার পরিবারের খুব ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। রূপসাঃ তাতে আমার কি? আমি তো তোমায় বলিনি আমার পেছন পেছন ঘুরতে। তুমি আর আমার পেছন পেছন ঘুরনা। ব্যাস তাহলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। রুপ্সা কথাগুলো একটু রাফ হয়েই বলেছিল। সাইদুল এতটাও এক্সপেক্ট করেনি। সাইদুল চুপ করে দাঁড়িয়ে পড়ে। আর রুপ্সা সামনের দিকে এগিয়ে চলে। সাইদুলঃ আমি তোমাকে ভালোবাসি রূপসা। তাই আমি এরকম পাগলের মত তোমার পেছনে ঘুরে বেড়াই। তুমি প্লিজ আমার অবস্থাটা একবার বোঝার চেষ্টা কর। রূপসা এবার দাঁড়িয়ে পড়ে। রূপসা ও সাইদুলের মধ্যে ৩-৪ হাতের দুরত্ব। রূপসা পেছন ঘুরে সাইদুলের দিকে ফিরে আসে। সাইদুলের সাইকেল এর হ্যান্দেল টা একহাতে ধরে বলে ওঠে রূপসাঃ দেখো সাইদুল এভাবে কারুর ভালোবাসা পাওয়া যায়না। আর যদি তুমি ভাবো আমার পেছনে দিনরাত ঘুরলেই আমার মন দুর্বল হয়ে যাবে তাহলে তুমি ভুল করছ। আমি সেই মেয়েদের মধ্যে নয় যারা খালি একটা ছেলেকে খোঁজে। আমি সেরকম নই। তুমি যতই আমার পেছনে ঘোর তোমার তাতে কোনও লাভ ই নেই। সাইদুল কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। রূপসা সাইকেল থেকে হাত টা সরিয়ে নিয়ে এবার নিজের স্বাভাবিক ছন্দে, হনহন করে হেঁটে হোস্টেলের দিকে যেতে শুরু করে। সাইদুল নিচের দিকে হতাশায় তাকিয়ে থাকে। বেশ কিছুক্ষন পর “সাইদুল” বলে একটা শব্দ হয়। সাইদুল ওপর দিকে তাকিয়ে দেখে রূপসা আবার ওর কাছে এসেছে। রূপসাঃ সাইদুল তুমি গরিবের ছেলে, আমার খুব খারাপ লাগলো তোমায় এরকম ভাবে বলে। আমাকে সবাই ভুল বোঝে। আমি এরকম ছেলেদের মত ড্রেস পড়ি, এতো রাফ তাই সবাই আমায় খারাপ ভাবে। কিন্তু তোমায় একটা সত্যি কথা বলি সাইদুল। আমার ও মধ্যে একটা মেয়ে লুকিয়ে আছে। সেই মেয়েটার মন জয় করার চেষ্টা কর। তুমি গরিব না বড়লোক সেটা আমি কখনোই দেখবনা। সত্যি ই দেখবনা। প্রমিস রইল। রূপসা আবার গটগট করে হেঁটে চলে গেলো। সাইদুল ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকল।
19-01-2019, 09:22 AM
পর্ব ৪- সাইদুলের দ্বন্দ্বঃ
রূপসা চলে যাওয়ার পর ও সাইদুল ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। সাইদুল একটা ধন্দের মধ্যে পড়ে যায়। সত্যি ই কি রূপসার মত একটা রাফ মেয়েকে বিছানায় শোয়ানো যায়। কি দরকার ওর এতো সময় নষ্ট করার। সাইদুল যেকোনো কঠিন পরিস্থিতি তে যা করে ঠিক তাই করল। সাইদুল রাজুকে ফোন করে। সাইদুলঃ ভাই, মনে হয়না এই মাল টা পটবে। এর হেবি ঘ্যাম। এই বয়সে কি আর পাগলের মত মেয়েদের পেছন পেছন ঘোরা যায়। এতো দেখছি তাই চায়। সাইদুল রাজুকে সবকথা খুলে বলে। রাজুঃ তুই সত্যি ই মূর্খ রে সাইদুল। আরে এতো পুরো পটেই গেছে রে। এতো কেন ভাবছিস তুই। আজ এমন একটা কিছু কর যাতে ও পুরোপুরি তোর ওপর ফিদা হয়ে যায়। অন্য কিছু ভাবিস না। রাজুর কথায় সাইদুলের মনে একটু সাহস আসে। সাইদুল ভাবতে থাকে কি করা উচিত সেব্যাপারে। আপাতত একটাই লক্ষ্য, গার্লস হোস্টেল। সাইদুল গার্লস হোস্টেল টা চেনে। সাইদুল সোজা চলে যায় গার্লস হোস্টেলের কাছে। উল্টো দিকেই একটা বিশাল বট গাছ আর তারপাশেই একটা চায়ের দোকান। সাধারনত কলেজ এর ই ছেলেমেয়েদের জন্য ওই দোকান টা। সাইদুল গিয়ে দোকান থেকে এক কাপ চা নেয় ও আবার গাছের তলায় এসে দাঁড়ায়। চায়ে একটা কি দুটো চুমুক দিয়েছে ওমনি দেখে ভেতর থেকে এক ঝাঁক মেয়ে বাইরে আসছে। সাইদুলের চোখ এটাও এড়িয়ে যায়নি যে ওদের মধ্যে রূপসা ও আছে। বট গাছ টা একদম হোস্টেলের গেটের সোজা। হথাত একটা মেয়ে চেঁচিয়ে বলে “এই ছেলেটা কে রে? আগে তো দেখিনি। দেখে তো কলেজ এর স্টুডেন্ট বলে মনে হচ্ছেনা। ঠিক ঝাড়ি মারার জন্য বাইরে থেকে এসেছে। দাঁড়া সিকিউরিটি কে বলে এর মজা দেখাচ্ছি” কথাটা সাইদুলের ও কানে এসেছে। সাইদুল এই মুহূর্তে একটা দ্বৈত সঙ্কটের মধ্যে। ভয় পেয়ে পালিয়ে যাবে নাকি দাঁড়িয়ে থাকবে। রূপসা ওর ই দিকে তাকিয়ে আছে। সম্ভবত রূপসা ও ওকে পরীক্ষা করতে চাইছে। সাইদুল একবার চোখ টা বন্ধ করে ভেবে নেয়। মনে মনে বলে না এতটা যখন এগিয়েই গেছি, তখন শেষ দেখেই ছাড়বো। ওদিকে একটা মেয়ে ততক্ষনে হোস্টেলের ভেতরে ঢুকে সিকিউরিটির কাছে চলে গেছে। ভেতরের সব আওয়াজ বাইরে আসছে। “দাদা ওই গাছের তলায় দেখুন একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের কলেজ এর নয়। এভাবে গার্লস হোস্টেলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তো ঠিক নয়” এতক্ষন রূপসা শুধুই সাইদুলকে পরীক্ষা করার ছলে পুরো ব্যাপারটা দেখে যাচ্ছিল। এবার রূপসার ও ভয় লাগতে শুরু করে। রূপসা একটু পিছিয়ে এসে সাইদুলের দিকে ইশারা করে ওকে ওখান থেকে চলে যেতে বলে। কিন্তু সাইদুল মুখ ঘুরিয়ে নেয়। ও জানে এটাই ওর ফাইনাল পরীক্ষা, এটায় উতরে যেতে পারলে আর কোনও চিন্তা থাকবেনা। ভেতর থেকে দুজন সিকিউরিটি সাইদুলের দিকে এগিয়ে আসে। সাইদুল মাথা তুলে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকে। সিকিউরিটিঃ তুমি কে ভাই? কোন ইয়ারের স্টুডেন্ট? আগে তো তোমায় কখনো কলেজ এ দেখিনি। এখানে কি করছ? সাইদুলঃ না আমি কোনও স্টুডেন্ট নই। আমি এমনি ই দাঁড়িয়ে আছি। আমি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবো। সাইদুলের স্পর্ধা দেখে সমস্ত মেয়েরা এমনকি রূপসা ও স্তম্ভিত হয়ে যায়। সিকিউরিটিঃ দেখো ভাই, তোমার ভালোর জন্যই বলছি। এখানে বাইরের ছেলেদের দাঁড়িয়ে থাকার অনুমতি নেই। তুমি এখান থেকে এক্ষুনি চলে যাও। সাইদুলঃ না আমি যাবনা। এবার রূপসার ও ভয় করতে থাকে। ওরা সাইদুল কে মারবেনা তো। নিজেকে দোষী মনে হয়। ও চাইলেই ওই মেয়েটাকে সিকিউরিটির কাছে যাওয়ার থেকে আটকাতে পারতো। এইসব ভাবতে ভাবতেই হথাত এক সিকিউরিটি জোরে একটা চড় মারে সাইদুলের গালে। সাইদুল মাটিতে পড়ে যায়। আবার উঠে দাঁড়ায়। সাইদুলঃ যত ইচ্ছে মারো। আমি এখান থেকে যাবনা। সাইদুলের এই স্পর্ধা দেখে, সিকিউরিটি দের পক্ষে আর চুপ করে থাকা সম্ভব ছিলনা। দুজন সিকিউরিটি নিজের নিজের লাঠি দুটো দিয়ে সাইদুল কে বেধড়ক মার মারতে লাগলো। সাইদুল মাটিতে পড়ে যন্ত্রণায় ছটপট করতে লাগলো। এবার যে মেয়েরা ওখানে দাঁড়িয়ে ছিল তাদের ও খুব মায়া হতে লাগলো। রূপসার চোখ দিয়ে টপ টপ করে জল পড়তে লাগলো। রূপসা আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলনা। রূপসা দৌড়ে ওখানে চলে গেলো। রূপসাঃ প্লিজ ওকে মারবেন না। ও আমার পরিচিত, ও আমার ই কাছে এসেছিলো। সিকিউরিটি রা সবাই দাঁড়িয়ে যায়। সাইদুল ও উঠে দাঁড়ায়। রুপ্সা সাইদুলের হাত ধরে ওকে কিছুটা দূরে নিয়ে যায়। একজন সিকিউরিটি বলে ওঠে সিকিউরিটিঃ এই যে মিস, এটা রোমান্স করার জায়গা নয়। আপনি ওকে আগে থেকে যদি চিনে থাকেন তো আমাদের বলেন নি কেন? রূপসা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। যে মেয়েটা সিকিউরিটি কে নালিশ করেছিল সে এগিয়ে আসে “রূপসা তুই যদি ছেলেটাকে চিনতিস তাহলে আমায় আটকালি না কেন? এ তুই ভীষণ বাজে কাজ করেছিস। এভাবে একজন কে মার খাওয়ালি” রূপসা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। রূপসার চোখ দিয়ে টপ টপ করে জল পড়তে থাকে। সাইদুল সেটা লক্ষ্য ও করে। সাইদুল এটা বুঝেও যায় যে এতো মার ও খেলো এর ওষুধ ও পেয়ে যাবে। আবার একজন সিকিউরিটি বলে ওঠে “আপনার রোমান্স করার ইচ্ছে যদি হয়ে থাকে তাহলে আপনি কলেজ এর দিকে যান। গার্লস হোস্টেল এর সামনে ছেলেদের দাঁড়িয়ে থাকার অনুমতি নেই” রূপসা বুঝতে পারে যে কথাটা ওর ই উদ্দেশে বলা হয়েছে। রূপসা সাইদুলের হাত টা ধরে ওখান থেকে কিছুটা জোর করেই ওকে নিয়ে যায়। গার্লস হোস্টেল ছাড়িয়ে ওরা অনেক টা দূর অবধি চলে যায়। না তো রূপসা না তো সাইদুল কারুর ই মুখে কোনও কথা নেই। বেশ কিছুটা যাওয়ার পর বাদিকে একটা ফাঁকা মাঠ আর ওখানে কিছু কমবয়সী ছেলে মেয়ে বসে আছে। রূপসা এবার বলে রূপসাঃ চলো আমরা ভেতরে গিয়ে বসি। সাইদুল কোনও উত্তর দেয়না, শুধু রূপসার সাথে যেতে শুরু করে। ওরা মাঠের মধ্যে একটা ফাঁকা জায়গা দেখে বসে পড়ে। এবার সাইদুল এতক্ষন পর কথা বলে সাইদুলঃ কি রূপসা এতক্ষনে নিশ্চয়ই এই গরিবের ছেলেটার ওপর বিশ্বাস হচ্ছে তোমার। আমি চাইলেই কিন্তু পালিয়ে যেতে পারতাম কিন্তু আমি পালিয়ে যাইনি। রূপসা কোনও উত্তর না দিয়ে শুধু নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে আর রূপসার চোখ দিয়ে টপ টপ করে জল পড়তে থাকে। সাইদুল ও চুপ করে যায়। রূপসা, সাইদুলের হাত টা আলতো করে ধরে বলে ওঠে রূপসাঃ সাইদুল, আমি অসহায়। আমার বাবা মা আমায় অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছে। আজ আমাদের অবস্থা দেখে তুমি তা বুঝবেনা, কিন্তু আমার বাবা মার অনেক আত্মত্যাগ রয়েছে, আমার আর তিলোত্তমার জন্য। সাইদুলঃ আমি তো তোমার থেকে কিছুই চাইনি। তুমি এতো কেন ভাবছ? আমি জানি আমার তোমার মধ্যে বিশাল দুরত্ব রয়েছে। আমি তো তোমায় একবারের ও জন্য বলিনি যে তুমি আমায় ভালোবাসো বা আমায় বিয়ে কর। রুপ্সা আবার চুপ করে যায়। বেশ কিছুক্ষন দুজনেই চুপ করে থাকে। রূপসাঃ তুমি হয়ত সত্যি ই বুঝবেনা। কিন্তু আমার সত্যি ই কিছু প্রবলেম আছে। আর যে সম্পর্ক টিকবেই না তাকে আগে বাড়িয়ে কি লাভ বলতো। সাইদুলঃ লাভ ক্ষতি আমি খুব একটা বুঝিনা। আমি সামান্য একটা ছেলে। আমি তো আমার মনের ই কথা মেনে চলেছে ব্যাস এতটুকুই। রূপসাঃ তুমি ই বলে দাও আমার কি করা উচিত? সাইদুল কিছুক্ষন চুপ করে থাকে। তারপর কিছুটা অস্ফুট কণ্ঠে বলে ওঠে সাইদুলঃ তোমায় কবে থেকে দেখি জানিনা। আমার জীবনে প্রচুর যন্ত্রণা দুঃখ কষ্ট আছে। তোমায় দেখলে সব মিলিয়ে যেত। মন তা ঠিক হয়ে যেত। তুমি বাড়ী তে থাকনা, তোমায় চোখের সামনে দেখতে পাইনা আমার তাই আর কিছুই ভালো লাগেনা। রূপসা কোনও উত্তর দেয়না। রূপসাঃ সাইদুল এর আগে আমায় কেউ এরকম ভাবে বলেনি। সাইদুল মেয়েদের হৃদয় প্রচণ্ড কমজোর হয়। একটা মেয়ে যখন নিজের মনের কথাগুলো অন্যের মুখ থেকে শুনে নেয় তখন আর তার নিজের হৃদয়ের ওপর কন্ট্রোল থাকেনা। আমি আমার বাবা মাকে ঠকাতে চাইনা। সাইদুলঃ আমার দোষ তা কি, শুধু কি এটাই যে আমি গরিব। আমি তোমায় ভালোবাসি রূপসা। প্লিজ একটু আমার কথাগুলো বোঝো। আমি নিজেও জানিনা আমি কি করে তোমায় বোঝাবো। রূপসাঃ তুমি এতটাও হতাশ কেন হয়ে যাচ্ছ। আমার তোমাকে খুব খুব খুব ভালো লাগে। কিন্তু এটাও তো সত্যি যে আমি একজন মেয়ে। প্লিজ একটু ধৈর্য ধর আর আমাকে একটু সময় দাও। আমরা আজ ফোন এ কথা বলব। তুমি আমার ফোন নাম্বার তা রেখে দাও। সাইদুল রূপসার ফোন নাম্বার তা সেভ করে নেয়। রূপসাঃ সাইদুল, আমার এবার লেট হচ্ছে। তুমি সাবধানে বাড়ী যাও। আমি তোমায় ১-২ ঘণ্টা পর ফোন করছি। সাইদুল সাইকেল তা নিয়ে উঠে পড়ে। সাইদুল জানে ওর প্ল্যান সুপারহিট। সাইদুল আসতে আসতে সামনের দিকে এগোতে থাকে। রুপ্সা হোস্টেলের দিকে চলতে শুরু করে। সাইদুল দাঁড়িয়ে পড়ে, একবার পেছন ঘুরে দেখে, রুপ্সা ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসির সাথে সুন্দর ভাবে হাত তা নাড়ছে। হথাত ই সাইদুলের বুক তা কেমন করে ওঠে। সাইদুল সামনের দিকে এগিয়ে চলে আর নিজেকে প্রশ্ন করে “আমি কি সত্যি ই ওকে ভালবেসে ফেললাম। সত্যি ই কি আমার জীবনে এরকম ই একজনকে চাই। আমিও কি মানুষের মত বাঁচতে পারি” সাইদুলের মন তা খুব খারাপ হয়ে গেলো। গাঁজা মদের জীবনে মরুদ্যানের মত করে ফিরে এলো রূপসা। সত্যি ই কি সাইদুল এতক্ষন রূপসার সাথে অভিনয় করছিল। সাইদুল কাকে বেছে নেবে রূপসা না রাজু।
19-01-2019, 09:23 AM
পর্ব ৫- সাইদুলের পরিবর্তনঃ
সুবীর বাবুঃ সত্য বাবু আমার আর শুনতে ইচ্ছে নেই। এই ৩ মাসে ঠিক যা যা অভিশাপ আমার জীবনে নেমে এসেছে আমি তা মাথা পেতে নিলাম। কিন্তু নিজের ই প্রিয়জনদের ব্যাপারে আমি কোনও অপ্রিয় কথা শুনতে চাইনা। যা হয়েছে তার জন্য আমি ই দায়ী, আমি যদি জমিদারবাড়ি তে না যেতাম... সত্য বাবুঃ আরে না সুবীর বাবু আপনি কেন নিজেকে দোষারোপ করছেন। যা ঘটছে তা শুধুই এই ডায়েরি তার জন্য। আমি আপনি আমরা সবাই তো শুধু মাত্র এই ডায়েরিটার দাস, তাই নয় কি। সুবীর বাবু কোনও উত্তর দিলেন না, মাথা নিচু করে শুধু বসে থাকলেন। সুবীর বাবুর এই অবস্থা দেখে সত্য বাবুর প্রচণ্ড মায়া হোল। সত্য বাবুঃ আপনার এই মানসিক অবস্থা দেখে আমিও আর থাকতে পারছি না সুবীর বাবু। আপনি আমার কথাগুলো অনুগ্রহ করে মন দিয়ে শুনুন। সুবীর বাবু আমি যদি আপনাকে না বলে দিতাম যে আমি ই সত্যেন্দ্র, আপনি কি কখনো জানতে পারতেন সত্য ও সত্যেন্দ্র একি মানুষ। চোখে দেখা বা কানে শোনা কথা সবসময় সত্যি হয়না। আমি ব্যাক্তিগতভাবে দায়িত্ব নিয়ে আপনাকে বলতে পারি যে এই ডায়েরি কখনো কারুর ক্ষতি করেনি। শুধু একটা চরম মানসিক যন্ত্রণা দিয়েছে। কিন্তু সবশেষে খুব সুখের সমাপ্তি হয়। আপনিও আমার কথা মিলিয়ে নেবেন। আপনার যেমন এই মুহূর্তে সব কিছু ওলট পালট হয়ে যাচ্ছে, ঠিক একি ভাবে ডায়েরীর কথাগুলো ও সম্পূর্ণ ওলট পালট হয়ে গিয়ে আবার আগের জায়গায় ফিরে যাবে। না আপনাকে আর আমি রহস্যের মধ্যে রাখতে চাইনা। সুবীরবাবু সবশেষে সব ই শুভ হবে। সুবীর বাবুঃ আমি কখনো কারুর কোনও ক্ষতি করিনি, আমার ই কেন এরকম হোল। নিজের স্ত্রী কন্যাদের সম্মান নিয়ে প্রশ্নঃ আর আপনি বলছেন সব শুভ হবে। সত্য বাবুঃ সুবীর বাবু আপনি বিচক্ষন মানুষ। আপনি তো জানেন ধৈর্য ধরলে সব ই পাওয়া যায়। সুবীর বাবু আমায় আমার কর্তব্য পালন করতে দিন। আমি আর বেশিক্ষন নিজের শরীর ধরে রাখতে পারছিনা। সুবীর বাবু আবার চুপ করে গেলেন। সত্য বাবু আবার নিজের গল্প শুরু করলেন। সত্য বাবুঃ সাইদুল রূপসার কলেজ থেকে বাড়ী ফেরার পথে বহুবার রাজুর ফোন এসেছে, কিন্তু প্রতিবার ই সাইদুল ফোন রিসিভ করেনি। রাজুর চিন্তা বাড়তে থাকে, বারবার মনে হতে থাকে সাইদুলের বুঝি কোনও বিপদ হয়েছে। রাজু বস্তি পেরিয়ে রাস্তার ওপর এসে দাঁড়ায়। কিছুক্ষনের মধ্যেই সাইদুল ওখানে এসে পৌছায়। তখনও সাইদুলের ঠোঁটে কেটে যাওয়ার দাগ, বাঁ দিক টায় তখনও রক্তের দাগ লেগে আছে। রাজু দৌড়ে এগিয়ে যায় সাইদুলের কাছে। রাজুঃ একি রে সাইদুল, কোনও বিপদ হয়েছে নাকি তোর? কে তোকে মেরেছে এইভাবে? আমায় নাম বল আমি তারপর দেখছি কি করা যায়। পুরো রাস্তায় সাইদুল শুধু ভাবতে ভাবতে এসেছে ওর কি করা উচিত তা নিয়ে। একবার মন বলেছে প্রানের বন্ধুকে সব সত্যি কথা বলতে, আবার একবার মন সদ্য যুবতীর হৃদয়ের স্পর্শ চাইছে। সাইদুল বেশিদুর পড়াশুনা শেখেনি, যদি শিখত তাহলে হয়ত মনে মনে একটিবার ও বলত “একেই বলে ধর্মসঙ্কট”। সাইদুল নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে। মনে পড়ে যায় ছোটবেলায় বাবার মারা যাওয়ার কথা, কত কষ্ট করে ও নিজের আর বাড়ীর সবার জন্য দুবেলার ভাত জোগাড় করেছে, কত মানুষের অপমান সহ্য করেছে। কেউ ওকে কখনো বোঝেনি। শিশুমনের মান-অভিমানগুলো কবে যে মরে গেছিল হয়ত ও নিজেও তা ভুলে গেছে। আজ এতদিন পর কেউ যেন ওর জীবনে এলো যার ওপর অকারনে রাগ করা যায়, যার সাথে অকারনে ঝগড়া করা যায়। আর রাজু, রাজুতো শুধুই মালতীদেবীদের বাড়ীর দিকে নজর রাখার জন্য ওকে ব্যাবহার করেছে। কোথায় ছিল রাজু ওর সেই কষ্টের দিনগুলোতে। সাইদুল মনে মনে সব ঠিক করে নেয়। সাইদুলঃ আরে কিছু নয়রে। মেয়েটা কলেজ এর ছেলে দিয়ে মার খাইয়েছে। শালা গরিবের ছেলে হয়ে যেমন গেছিলাম চাঁদের দিকে হাত বাড়াতে। শালা আমার যা শিক্ষা হয়ে গেলো রে, সত্যি আর কখনো ওই পথে পা মারাচ্ছিনা। রাজু কোনও উত্তর দিলনা। শুধুই ওর দিকে তাকিয়ে থাকল। সাইদুল চোখ টা সরিয়ে নিল। সাইদুলঃ রাজু তুই এবার বাড়ী যা। সেই কোন দুপুরে বেড়িয়েছি। মা খুব চিন্তা করছে আমি বরং বাড়ী যাই। সাইদুল, রাজুকে এড়িয়ে সাইকেল টা নিয়ে চলে যেতে শুরু করে। রাজু সাইদুল কে চেনে, রাজু জানে সাইদুল ওকে মিথ্যে কথা বলছে। রাজু একদৃষ্টিতে সাইদুলের দিকে তাকিয়ে থাকে। রাজুঃ ওরা তোকে শুধুই মারল, পুলিসের হাতে তুলে দিলনা? সাইদুল জানে রাজু ওকে সন্দেহ করছে। সাইদুল পরিস্থিতিটা স্বাভাবিক করার জন্য একটু চেঁচিয়েই বলে উঠল সাইদুলঃ কেন বলত, আমি কি এখন থানায় থাকলে তুই বেশি খুশি হতিস। শোন রাজু, তোর এইসব আইদিয়াতে আমি আর নেই। আমি গরিবের ছেলে, খেটে খাই। আমার কিছু হয়ে গেলে আমার সংসার টা কে দেখবে। সাইদুল আর ওখানে দাঁড়াল না। খুব জোরে জোরে হেঁটে ওখান থেকে বেড়িয়ে চলে গেলো। রাজু একবার মুচকি হাসল সাইদুলের দিকে তাকিয়ে। রাজুও আর ওখানে দাঁড়াল না। বাজারের দিকে চলতে শুরু করল। এদিকে সাইদুল বাড়ী পৌঁছে হাত পা ধুয়ে মোবাইল টা নিয়ে বসে যায়। মোবাইলে ম্যাসেজ লেখে “কি করছ রূপসা? আমার না তোমার সাথে খুব কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে” কিন্তু ব্যাস ওই অতটুকুই। ম্যাসেজ টা পাঠাবে কি পাঠাবে না সেই নিয়েই শুধু দোনোমনা করতে শুরু করে। ঠিক সেইমুহূর্তেই ওর মোবাইলে একটা ম্যাসেজ চলে আসে। “সাইদুল, ফ্রি আছো এখন। আমার খুব জরুরি কিছু কথা আছে তোমার সাথে” সাইদুল আনন্দে প্রায় লাফিয়েই ওঠে। ভেতর থেকে আম্মি বেড়িয়ে এসে বলে “কি হয়েছে সাইদুল এরকম করছিস কেন?” সাইদুল কোনরকমে আম্মিকে বুঝিয়ে ভেতরে পাঠায়। মোবাইল থেকে রূপসার নাম্বার টা বার করে সাথে সাথে ফোন লাগিয়ে দেয়। একবার রিং হওয়ার পর ই ফোন কেটে যায়। সাইদুল কিছুটা অবাক ই হয়ে যায়। কিছুক্ষনের মধ্যেই ওপাশ থেকে ফোন আসে। সাইদুল ফোন টা হাতে নিয়ে দেখে ওটা রূপসার। সঙ্গে সঙ্গে ফোন টা রিসিভ করে নেয়। সাইদুলঃ কি হয়েছে রূপসা? আমার ফোন টা কেটে কেন দিলে তুমি? কিছু প্রবলেম হয়েছে? রূপসাঃ বেশ করেছি কেটে দিয়েছি। আমার কথা বলার ইচ্ছে হয়েছে আমি ফোন করব, তুমি কেন করবে। মানুষ প্রেমে পড়লে মনের ও মাথার অবস্থা ঠিক কি হয় তা সাইদুল কিছুক্ষন আগেই জেনেছে। কিন্তু নিজের প্রিয়তমা যখন এইভাবে আবেগমেশানো গলায় উত্তর দেয় তখন যে ঠিক কি আনন্দ হয় তা সাইদুল আগে জানত না। একবার ওপরের দিকে তাকায় সাইদুল। সাদা ধবধবে একটা পূর্ণিমার চাঁদ। আর এই মুহূর্তে সাইদুলের হাতে গোটা চাঁদ তাই রয়েছে। এই এতোগুলো ফিলিংস এর মাঝে সাইদুল প্রায় ভুলেই গেছিল যে রূপসা কে উত্তর দিতে হবে। ও কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে রূপসার মধুর মত মিষ্টি একটা কণ্ঠ ভেসে ওঠে রূপসাঃ এই জানো আমি কিছু খাইনি। আমায় না বন্ধুরা, দিদিরা সবাই খুব বকেছে। সবাই বলেছে আমি এক নাম্বারের পচা মেয়ে। পচাই তো। নয়ত এভাবে একটা মিষ্টি ছেলেকে কেউ মার খাওয়ায়। সাইদুল বুঝে গেছে ওর পক্ষে আর নিজেকে সামলানো সম্ভব নয়। হয়ত ওই মুহূর্তেই মনে মনে ও বলে উঠেছিল “ইস যদি পেটে একটু বিদ্যে থাকতো তাহলে একটা কবিতা শুনিয়ে দিতাম” সত্যি ই যদি জীবনটা সিনেমার মত হত। আব্বা বেঁচে থাকা অবস্থায় ও হলে গিয়ে বন্ধুদের সাথে কত সিনেমা দেখত। লাস্ট দেখেছিল ম্যায়নে পেয়ার কিয়া। এই মুহূর্তে সাইদুল ম্যায়নে পেয়ার কিয়ার সালমান এর জায়গায় নিজেকে রেখে ফেলেছে। আবার রূপসার মিষ্টি একটা কথা, রাজুর যেন মনটা জুড়িয়ে গেলো যেন এক পশলা বৃষ্টির জল ছিটকে এসে ওর গায়ে লাগলো। রূপসাঃ এই দেখো আমি কি বদমাশ মেয়ে। খালি নিজের কথাই বলে যাচ্ছি। তোমার তো বাড়ী পৌছাতে অনেক দেরি হোল, তুমি কি কিছু খেয়েছ? প্লিজ বলনা তুমি কিছু খেয়েছ? সাইদুল জানে আর বেশি ভাবনা চিন্তা করলে চলবে না এবার একটা ভালো করে জবাব দিতে হবে নয়ত সব কেঁচিয়ে যাবে। সাইদুলঃ না খাইনি। কেন খাবো? তুমি আগে খাও তবে আমি খাবো। রূপসাঃ এমা তুমি এখনো খাওনি। প্লিজ খেয়ে নাও আগে। কোন দুপুরে আমার মত একটা বাঁদর কে দেখার জন্য তুমি বেড়িয়েছিলে। প্লিজ খেয়ে নাও। সাইদুলঃ না আগে তুমি খাবে নয়ত আমি খাবার নিয়ে তোমার কাছেই আসব আর তোমায় জোর করে খাইয়ে দেবো। রূপসাঃ (খিলখিল করে হেসে) হ্যাঁ এসে দেখইনা কিকরে তুমি জোর করে আমায় খাওয়াও আমিও দেখব। জানো আমায় বাবা, মা, তিলোত্তমা সবাই ভয় পায়। আমায় কেউ জোর করতে পারেনা। আমি খুব খুব খুব বদমাশ। সাইদুলঃ তাইনাকি। কে বেশি বদমাশ দেখা যাবে। আমি আসছি। রূপসাঃ এই না, না সাইদুল... রূপসার কথা শেষ হতে না হতেই সাইদুল ফোন টা কেটে দেয়। রূপসা নিজের ই মনে খুব জোরে হেঁসে ওঠে। এদিকে সাইদুল ও সাইকেল টা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে, সোজা ময়রার দোকানে এসে ১০ টা কচুরি ও ১০ টা জিলিপি নেয়। রাজু কিছুটা দুরেই দাঁড়িয়ে ছিল। সমস্ত কিছু রাজুর নজরে পড়ে। মেয়েদের ব্যাপারে রাজুর মত অভিজ্ঞতা খুব ই কমজনের আছে। রাজু একটা সন্দেহ করেছিল যে সাইদুল ওকে মিথ্যে বলেছে। এখন রাজু নিশ্চিত হয়ে যায় যে সাইদুল শুধু মিথ্যেই নয় একটা বিশাল ব্যপার ওর থেকে লুকিয়েছে। সাইদুলের খাবার নেওয়া হয়ে যায় ও সাইদুল খুব দ্রুত ওখান থেকে বেড়িয়ে পড়ে। রাজুর পক্ষেও চুপ করে সবকিছু দেখে যাওয়া সম্ভব ছিলনা। রাজুও পাশের দোকান থেকে একটা সাইকেল জোগাড় করে সাইদুলের পিছু নেয়। ১০ মিনিট পর সাইদুল কলেজ এর গেট এ প্রবেশ করে। তখন ও রাস্তায় ছেলেমেয়েরা ঘোরাঘুরি করছিল। রাস্তার ধারের নিয়নের আলোয় চারপাশটা প্রচণ্ড রোম্যান্টিক মনে হচ্ছিল সাইদুলের। তীব্র গতিতে সাইদুলের সাইকেল ছুটতে থাকে গার্লস হোস্টেলের দিকে। আর ঠিক টার কিছুটা পেছনেই রাজুও সাইকেল নিয়ে সাইদুলকে ফলো করতে থাকে। রূপসা জানত যে সাইদুল আসবে। রূপসা ও হোস্টেলের গেট থেকে বেড়িয়ে রাস্তা বরাবর হাঁটতে থাকে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই সাইদুল রূপসাকে দেখতে পায়। একটা নীল রঙের সালোয়ারে চাঁদের আলোয় তখন রূপসাকে ডানাকাটা পরীর মতই লাগছিল। সাইদুল সাইকেল থেকে দুদিকে পা দিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। সাইদুলের মুখে একটা স্ফীত হাসি, নজর সোজা রূপসার দিকে। রূপসার ও মুখে একটা খুব খুব খুব মিষ্টি হাসি। রাজু অনেকটা পেছনে একটা গাছের নিচে লুকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
19-01-2019, 09:23 AM
পর্ব ৬- রূপসার আবেগঃ
সাইদুলের নজর সোজা রূপসার দিকে। এর আগেও ও রূপসার মুখোমুখি বহুবার হয়েছে, প্রতিবার ই লজ্জায় হোক বা হীনমন্যতায় হোক নিজের থেকেই মুখটা নামিয়ে নিয়েছে। কিন্তু আজ নয়। কেন মুখটা সরাবে ও। এতো ঈশ্বরের পুরস্কার। ঈশ্বর ওকে এই পুরস্কার তা দিয়েছেন আর বলেছেন যা ব্যাটা এবার আমি তোর সব দুঃখ কষ্ট ঘুচিয়ে দিলাম। রূপসার কালো পটলচেরা চোখের চকচকে মনির দিকে তাকিয়ে যেন সাইদুল বলে ওঠে এই দুচোখে আমি অনেক স্বপ্ন দেখে ফেলেছি রূপসা, কেউ এই স্বপ্নগুলো আমার থেকে কেড়ে নিতে পারবে না রূপসা। রূপসা সদ্য অষ্টাদশী, ভালোবাসা কি হয় ও জানেনা। বন্ধুমহলে বিশাল একটা দুর্নাম রয়েছে ওর। সবাই মনে করে রূপসা পুরুষবিদ্বেষী। রূপসা কত মেয়েকে ভুল বুঝিয়ে রিলেশন ভাঙিয়েছে টার কোনও ইয়ত্তা নেই। আর করবেওনা কেন, ওটা ভালোবাসা না ছাই। বাইকের পেছনে বসিয়ে গঙ্গার হাওয়া খাওয়ালেই বোধ হয় ভালোবাসা হয়ে যায়। রূপসার ভালোবাসা অনেক অনেক আলদা। ছোটবেলায় তিলোত্তমার থেকে শরৎচন্দ্রের উপন্যাস চুরি করে পড়ত রূপসা। তিলোত্তমা, সুবীর বাবু মালতী দেবী কেউ কখনো বুঝতে পারেনি যে রূপসাও উপন্যাস পড়ে। সবাই ভেবে এসেছে তিলত্তমাই বুঝি নারী আর এটার ব্যাটা ছেলে হওয়ার কথা ছিল হয়ে গেছে মেয়ে। মনে মনে বলে রূপসা ইস আমার বুঝি লজ্জা পেতে ইচ্ছে হয়না, আমার বুঝি বালিশে মুখ লুকিয়ে একা একা হাঁসতে শখ হয়না। তোমরা সবাই ভুল, আমিও মেয়ে। বাকি ১০ টা মেয়ের যা হয় আমার ও তো তাই ই হয়। হয়ত আবার মনে মনে বলে এই না রূপসা এসব রোম্যান্টিক ফিলিংস এর জন্য সময় অনেক পাওয়া যাবে, আপাতত একটাই কাজ মনের মানুষ তাকে একটু শাসন করা। রূপসা কিছুটা জোর করেই মুখের হাসিটা মুছে ফেলে, মুখটাকে গম্ভীর করে। সাইদুলের সেদিকে মন নেই। সাইদুল তখন ও ওই কালো দুটো চোখে হারিয়ে অন্য এক জগতে রয়েছে। হয়ত ২-৩ মিনিট এভাবেই কেটে গেছে। নিস্তব্ধতাটা রূপসাই ভঙ্গ করল। রূপসাঃ (প্রচণ্ড গম্ভীর হয়ে) তুমি খাওনি কেন? তোমায় কি কেউ খেতে বারন করেছে? সারাদিন খাটা খাটনির পর খাওয়া দাওয়া ঠিক না করলে শরীর খারাপ হবে। আর তখন কে দেখবে তোমায়? সাইদুলের আম্মিও যে শেষ কবে এরকমভাবে সাইদুল কে বকাবকি করেছে তা সাইদুলের ঠিক করে মনে নেই। সাইদুলের মনে হচ্ছিল, জীবনে এই জিনিসটাই ওর হারিয়ে গেছিল। একটা ভাঙাচোরা ঘর, একটা মিষ্টি বউ, কিছু প্রয়োজনীয় ও কিছু অপ্রয়োজনীয় ঝগড়াঝাঁটি, অভিমান, মন কষাকষি এই তো দরকার বেঁচে থাকতে। সত্যি ই কি আর অন্যকিছুর প্রয়োজন রয়েছে বেঁচে থাকার জন্য। সাইদুলের মুখ দিয়ে “এই মানে” ধরনের একটা আমতা আমতা শব্দ বেরোল। এই আত্মসমর্পণের মধ্যে যে ঠিক কতটা নিষ্পাপ ও সরল আবেগ মিশে আছে তা রূপসা ও জানে। তাই নিজের অজান্তেই একটু ফিক করে হেঁসে ফেলল রূপসা। আবার নিজেকে শান্ত করে বলে ওঠে রূপসাঃ মানে মানে কি করছ। যদি শরীর খারাপ করে তখন কি হবে? আর এভাবে হথাত চলে এলে, একবার ও ভাবলে না এতোদূর আসবে, যদি মা চিন্তা করেন। মায়ের বয়স হচ্ছে, মায়ের কথা চিন্তা না করলে চলবে। কি হোল জবাব দাও। আবার সেই আবেগঘন কণ্ঠে উত্তর এলো “মানে আমি তো মাকে বলে বেড়িয়েছি” রূপসা আর পারলনা। আর ওর পক্ষে সত্যি ই নিজেকে আটকে রাখা সম্ভব ছিলনা। কতক্ষন আর নিজের সাথে লড়াই করবে। দুহাত দিয়ে সাইদুলের দুটো গাল জড়িয়ে ধরল। সাইদুলঃ তুমি এতো ভালো কেন? তুমি জানো আমি কত বদমাশ। বাবা কোনও খাবার আনলে আমি কক্ষনো তিলোত্তমাকে বলিনা, নিজে লুকিয়ে খেয়ে নি। আমি খুব খারাপ, তুমি বুঝবে, দেখো তুমি ঠিক ই বুঝবে। সাইদুলের ততক্ষনে ঘন ঘন নিশ্বাস পড়া শুরু হয়ে গেছে। সাইদুল একদৃষ্টিতে রূপসার দুটো চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। সাইদুলঃ তুমি মোটেও খারাপ নয়। তুমি খুব ভালো। এতো সহজ সরল স্বীকারোক্তি রূপসা সত্যি ই আশা করেনি। রূপসা খুব জোরে হেঁসে ফেলে। রূপসাঃ হ্যাঁ ভালো, আমি খুব খুব ভালো। আর শোন আমার দাড়ি গোঁফ একদম ভালো লাগেনা, কেমন একটা বনমানুষ বনমানুষ ফিলিংস আসে। তুমি কাল থেকেই একদম ক্লিন সেভ থাকবে, আমি যেন না দেখি তোমার গালে সামান্য দাড়ি গোঁফ আছে। এত্ত সুন্দর পুচকি পুচকি কি সুন্দর দুটো গাল। দাড়ি কেটে আসবে, আমি গাল গুলো টিপব। আমি গাল টিপতে খুব ভালোবাসি। আরে হ্যাঁ আমার জন্য কি যেন একটা খাবার আনবে বলেছিলে? তাড়াতাড়ি বার কর দেখি, পেটে ছুঁচো দৌড়াচ্ছে। এক কাজ করি চলো ওই মাঠটায় গিয়ে বসি। ওরা দুজন মাঠের দিকে গুটিগুটি পায়ে চলতে থাকে আর রাজু ও কাছাকাছি একটা লুকোনোর জায়গা খুঁজতে শুরু করে। বেশ কিছুটা যাওয়ার পর রূপসা দাঁড়িয়ে যায়, সাইদুল বুঝতে পারে যে এখানেই ওরা বসবে। প্রথমে যে টেনশন তা সাইদুলের মধ্যে ছিল, আসতে আসতে এখন তা ভ্যানিস হয়ে গেছে। সাইদুলঃ রূপসা আমি তোমার জন্য কচুরি আর জিলিপি এনেছি। তোমার ভালো লাগে তো? রূপসাঃ আরে তুমি কি করে জানলে যে আমি জিলিপি এতো ভালোবাসি। তুমি না সত্যি খুব ভালো। আমি খাবো কিন্তু একটাই শর্তে, তোমায় নিজের হাতে আমায় খাইয়ে দিতে হবে। চিন্তা নেই আমিও তোমায় খাইয়ে দেবো। কথাটা শেষ করেই রূপসা ফিক করে একটা হেঁসে দেয়। সাইদুল ও লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে একটু হাসে। সাইদুলের এই লজ্জা দেখে রূপসা আরও জোরে জোরে হাঁসতে শুরু করে দেয়। সাইদুল এবার কচুরি একটু ছিরে রূপসার মুখের কাছে নিয়ে গিয়ে ধরে। রূপসা মুখে খাবার থাকা অবস্থাতেই জড়িয়ে জড়িয়ে বলে ওঠে রূপসাঃ একটা কথা বলছিলাম, তোমায় না টি শার্ট পড়ে হেব্বি লাগে। কখনো শার্ট পড়বে না, সবসময় টি শার্ট ই পড়বে। এখনো হেব্বি লাগছে। সাইদুলঃ (সাইদুল একবার নিচের দিকে তাকিয়ে হাসে)তোমায় সালোয়ারে খুব ভালো লাগে, কিন্তু জানতো সাড়ি পড়লে তোমায় আরও ভাল লাগবে। সত্যি বলছি সাড়ি পড়লে তোমায় খুব ভালো লাগবে। আমি আজ এখানে আসার সময় হলুদ একটা সাড়ী দেখে এসেছিলাম। খুব সুন্দর ওই সাড়ীটা। তুমি ওই সাড়ীটাই কাল বাড়ী যাওয়ার আগে পড়বে। রূপসার প্রচণ্ড জোরে বিষম লেগে যায়। রূপসা কোনরকমে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে ওঠে রূপসাঃ রূপসা আর সাড়ী? জানো আমার মা যদি আমায় সাড়ী পড়া অবস্থায় দেখে না হার্ট অ্যাটাক করবে। শোন না, আমি পড়ব, কিন্তু আগে তুমি খেয়ে নাও। সেই সকাল থেকে না খেয়ে আছো তুমি। সাইদুল রূপসার হাতে খেতে শুরু করে। বেশ কিছুক্ষন দুজনের মধ্যে কথাবার্তা বন্ধ থাকে। সাইদুল খেতে খেতে একবার রূপসার দিকে তাকায়, রূপসার দুচোখ বেয়ে জল পড়ছে। সাইদুল খাওয়া বন্ধ করে রূপসার হাত টা চেপে ধরে সাইদুলঃ কি হয়েছে রূপসা, তুমি কাঁদছ কেন? আমায় বল প্লিজ, কেন কাঁদছ? রূপসাঃ না ও কিছু নয় এমনি ই কাঁদছি আমি। তুমি ছাড় এসব। তুমি খাও, সকাল থেকে তুমি কিছু খাওনি। সাইদুল ও প্রচণ্ড আবেগঘন হয়ে পড়ে। সাইদুল নিজের দুহাত রূপসার দুগালে রেখে ওর মাথাটা নিজের বুকের দিকে টেনে নেয়। সাইদুল একবার ও ভাবেনি যে রুপ্সা ভেতর থেকে এতটা ভেঙে পড়েছে। এই বয়কাট চুলের দুষ্টু মেয়েটার হৃদয় যে এতটা কোমল তা সত্যি ই সাইদুল জানতোনা। রূপসা দুহাত দিয়ে জোরে সাইদুলের টিশার্ট তাকে টেনে ধরে। রূপসার মুখ দিয়ে কোনও আওয়াজ আসছিলনা কিন্তু রূপসা যে ডুকরে ডুকরে কেঁদেই চলেছে তা সাইদুল বুঝতে পারে। সাইদুলের টিশার্ট তা রূপসার চোখের জলে একদম ভিজে যায়। সাইদুলঃ এই রূপসা কি হয়েছে? এরকম কেন করছ? প্লিজ একটু শান্ত হও। একবার দেখো রাস্তায় এখনও ছেলেমেয়েরা আছে। প্লিজ রূপসা একটু শান্ত হয়ে যাও। আমায় সবকথা খুলে বল প্লিজ। আমি তো তোমার ই বল আমায় সবকিছু। রূপসা উঠে বসে, দুহাতে নিজের দুই চোখ ভালো করে মুছে নেয়। ধরে থাকা ভিজে গলায় বলে ওঠে রূপসাঃ আমায় কেউ কখনো বোঝেনি জানতো। সবাই ভাবে আমি বুঝি নিষ্ঠুর, মানুষের মনের কথা বুঝিনা। নিষ্ঠুর তো নিষ্ঠুর, আমিও কাউকে কেয়ার করিনা। সবাই খালি বলে তিলোত্তমা লক্ষ্মী মেয়ে, ভালো মেয়ে। আমরা তো যমজ, ওকি আমার চেয়ে দেখতে ভালো নাকি, আমরা তো একি দেখতে। ও একটু মোটা ধরনের আর আমি স্লিম ব্যাস এটাই তো পার্থক্য। সাইদুলঃ আরে ধুর পাগলী, এসব নিয়ে কেউ কষ্ট পায়। ছোটবেলায় তো মানুষের মন এরকম ই হয়। প্রচুর অভিমান থাকে। তুমি তো তাও কান্নাকাটির সময় পেয়েছ, অভিমানের সময় পেয়েছ। আমি তো তাও পাইনি। আমার আব্বা যখন মারা যায় তখন আমি ক্লাস ৭ এ পড়ি। তখন থেকেই পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে ঘর সামলাতে হচ্ছে। ছাড় এসব। রূপসা এবার শান্ত হয়ে সাইদুলের দিকে তাকিয়ে থাকে। সাইদুল রূপসার কাঁধটা দুহাত দিয়ে জড়িয়ে নেয়। রূপসাঃ জানো সাইদুল, আমার বাবা মা খুব ভালো। একটু বুঝিয়ে বললেই ওরা তোমার ব্যাপারে সব কিছু মেনে নেবে। এতক্ষনে সাইদুল বাস্তবের মাটিতে পা দেয়। মাত্র কয়েকটা দিন আগে তিলোত্তমার সাথে রাজু যা যা করেছে সব ওর মনে পড়ে যায়। মালতী দেবীর ওপর ওর আর রাজুর লোভাতুর দৃষ্টিও হয়ত মালতী দেবী ও সুবীর বাবুর অজানা নয়। সাইদুলের মনটা ভীষণভাবে খারাপ হয়ে যায়। রূপসা ও তা দেখে বুঝতে পারে। রূপসাঃ সাইদুল তোমার এই ঠোঁটের কোনায় কাটা দাগটা আমি যত দেখছি ততই আমার মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। দেখি সাইদুল একটু। কতটা কেটেছে দেখি। রূপসা দুহাত দিয়ে সাইদুলের দুগাল ধরে ওকে সামনের দিকে টানতে থাকে। সাইদুলের মুখটা একদম রূপসার মুখের কাছাকাছি চলে আসে। রূপসার নাকের উষ্ণ নিশ্বাস সাইদুলের মুখের ওপর পড়তে থাকে। এতো উত্তেজনা কখনো কোনও মেয়ে ওকে দেয়নি। সাইদুল লজ্জায় রূপসার চোখের দিকে তাকাতে পারেনা। চোখটা নামিয়ে নেয়। রূপসা কিছুটা ঝুকেই বসেছিল, এতক্ষন সাইদুল তা খেয়াল করেনি। রূপসার নিল সালোয়ার এর বুক টা কিছুটা নিচে নেমে গেছে। ভেতর থেকে সাদা ব্রা টা দেখা যাচ্ছে, সাদা অপক্ক দুধ দুটো বেড়িয়ে এসেছে। সাইদুল সেইদিকেই তাকিয়ে ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলতে থাকে। রূপসাঃ (অত্যন্ত মোহময়ী কণ্ঠে) সাইদুল তোমার দুই ঠোঁটে আজ আমি এমনভাবে ওষুধ লাগিয়ে দেবো যে দেখো সব ব্যাথা নিমেষের মধ্যেই হারিয়ে যাবে। রূপসা নিজের ঠোঁট দুটো সাইদুলের ঠোঁটের দিকে নিয়ে যায়। সাইদুল নিজের থেকেই ওর ঠোঁট দুটো একটু ফাঁক করে রূপসা নিজের দুই ঠোঁট দিয়ে সাইদুলের নিচের ঠোঁট টা চেপে ধরে। সাইদুল, রূপসা দুজনেই চোখ বন্ধ করে নেয়। মুহূর্তের মধ্যেই কমবয়সী দুই যুবক যুবতীর শরীরে আদিম কামরিপু ভীষণভাবে চেপে বসে। পাগলের মত করে একে অপরকে জড়িয়ে ঠোঁট গুলো উলতে পালটে ওরা কিস করতে শুরু করে। এভাবে হয়ত ১০ মিনিট... সুবীর বাবুঃ দয়া করে আপনি চুপ করুন সত্য বাবু, আমি আর শুনতে পারছিনা। (প্রচণ্ড চিৎকার করে) রূপসা আমার নিজের ই মেয়ে সত্য বাবু, দয়া করে আমায় এতোবড় শাস্তি দেবেন না। সুবীর বাবু দুহাতে নিজের মাথাটা ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকেন। সত্য বাবুও চুপ করে যান। সত্যি উনিও জানেন এতো সহজে সুবীর বাবু পুরো ডায়েরি টা শুনতে পারবেন না।
19-01-2019, 09:24 AM
পর্ব ৭- রাজু বনাম সাইদুলঃ
সত্য বাবুঃ সুবীর বাবু আপনি দয়া করে শান্ত হন, আমি আপনাকে আবার আশ্বস্ত করছি যে আপনার ব্যক্তিগত জীবনে কোনও অনিষ্ট করার অভিপ্রায় আমার নেই। সুবীর বাবু আপনিও জানেন যে ডায়েরিটা অভিশপ্ত। যে অভিশাপ আপনার সংসারে নেমে এসেছে সে অভিশাপ আপনার সংসার থেকে একদিন নিজের অজান্তেই বিলীন হয়ে যাবে। সুবীর বাবু মানুষ সময়ের দাস। আপনি বিজ্ঞ মানুষ, অপেক্ষা করুন নিজেকে সময় দিন দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে। সুবীর বাবু কোনও উত্তর ই দিলেন না, শুধু প্রচণ্ড ভারাক্রান্ত মনে নিচের দিকে তাকিয়ে বসে থাকলেন। সত্য বাবুঃ সুবীর বাবু আপনিও জানেন যে আমি এই ডায়েরিটার দাস। আমার একটাই কাজ তা হোল এই ডায়েরিটা আপনাকে পড়ে শোনানো। জানেন তো অন্যের সর্বনাশের ইতিহাস পড়া সহজ, কিন্তু নিজের সর্বনাশের ইতিহাস পড়া খুব কঠিন। ইতিহাস বিষয় তাই তো এরকম। সত্য বাবু আবার একবার সুবীর বাবুর দিকে তাকালেন। সুবীর বাবু কোনরকমে উঠে বসেছেন। সত্য বাবুঃ আমি আপনার সাহায্যার্থে একটাই কথা শুধু বলতে চাই। আপনি ধাঁধা বোঝেন। এক কঠিন ধাঁধার মধ্যে আপনি জড়িয়ে পড়েছেন। যখন এই ধাঁধার উত্তর আপনি পাবেন দেখবেন সব শুভ হয়েছে, মঙ্গলময় হয়েছে। সুবীর বাবু যা ঘটে তা ভালোর জন্য ঘটে। আপনাকে এর চেয়েও কঠিন অপ্রিয় কিছু কথা শুনতে হবে যা এই ডায়েরি তে লেখা আছে। যা না পড়ে আপনার নিস্তার নেই। অনুগ্রহ করে আমায় গল্পটা বলার অনুমতি দিন। সুবীর বাবু এতক্ষনে শান্ত হয়েছেন। হয়ত উনিও নিজের মনে মনে এটাই বলে চলেছেন যে যা ঘটে তা মঙ্গলের ই জন্য ঘটে, একসময় সব ই ঠিক হয়ে যাবে। সত্য বাবু আবার নিজের গল্প শুরু করে দিলেন। সত্য বাবুঃ প্রায় ৫-১০ মিনিট পর রূপসা ও সাইদুল একে ওপরের উষ্ণ আলিঙ্গন থেকে মুক্ত হয়। সাইদুল একদৃষ্টিতে রূপসার দিকে তাকিয়ে থাকে। রূপসার মিষ্টি হাসি যেন সাইদুলের কানে কানে একটাই কথা বলছিল “কি গো এবার তো আমায় বিশ্বাস হোল, বুঝলে তো আমি কত ভালো। মিলিয়ে গেলো তো সব যন্ত্রণা” সাইদুল এর নজরে ভালোবাসা, কাম, উত্তেজনার চেয়ে অনেক বেশি যা ছিল তা হোল আনুগত্য। সাইদুল বদসঙ্গে পড়ে যতই খারাপ হয়ে যাক না কেন একসময় সাইদুল ও স্বপ্ন দেখত- ভালবাসার স্বপ্ন, ঘর বাঁধার স্বপ্ন। রূপসা যেন এক ডানা কাটা পরী, দুহাতে ওই স্বপ্নগুলো উজাড় করে দিচ্ছে ওকে। রূপসাঃ কি পাগল এইভাবে কেন তাকিয়ে আছো? আমি তো অতটাও সুন্দরী নই। আজ থেকে এই ডানপিটে, বদমাশ মেয়েটা শুধুই তোমার। আমায় তুমি বকো, আমার ওপর রাগ কর, অভিমান কর যা ইচ্ছে তাই কর কিন্তু আমায় এমনভাবে ভালবাসতে হবে যেন আমি পাগল হয়ে যাই। নয়ত তোমায় রূপসার অত্যাচার সহ্য করতে হবে। কথা শেষ করেই খিল খিল করে রূপসা হেঁসে ওঠে। সাইদুল জানে এবার আর কথা বলার আগে ওকে কোনও চিন্তা করতে হবেনা, যা মনে আসবে তাই ও বলতে পারে। সেই অনুমতি রূপসা ওকে দিয়ে দিয়েছে। সাইদুলঃ আমার একটা ইছে আছে। ইচ্ছে মানে তোমাকে নিয়ে একটা ইচ্ছে। বলব তোমায়? রূপসাঃ (আবার মিষ্টি করে একটা হেঁসে) উলি বাবা কি চুন্দর কথা, বলব তোমায়। আরে পাগল আমি তো তোমার ই। এতো কিন্তু কিন্তু কেন করছ বলতো। যা মনে আসে, যা বলতে ইচ্ছে হয় তাই বলে ফেল। বল, প্লিজ বল কি বলতে চাও। সাইদুলঃ রূপসা, আজ যখন সাইকেলে করে আসছিলাম তখন বাজারে একটা সাড়ি দেখছিলাম। খুব পছন্দ হয়েছে আমার। তুমি ওটা পড়ে সোজা কাল আমার বাড়ীতে আসবে। তুমি জাননা রূপসা, সাড়ী পড়লে তোমায় কেমন লাগবে। জানো তোমার মুখশ্রীটা খানিকটা মনীষা কইরালার মত। রূপসাঃ সাইদুল, এই শেষবারের মত বললাম, আমার সামনে অন্য কোনও মেয়ের নাম ও ওঠাবে না তুমি। তুমি কেন বোঝো না বলতো আমি এটা কিছুতেই মানতে পারবনা যে তোমার অন্য কোনও মেয়েকে ভালো লাগে। তা সে যত বড় অভিনেত্রী ই হোক না কেন। সাইদুলঃ ঠিক আছে এই কান মুললাম আর কখনো বলব না। কিন্তু একটা অনুরোধ তো রাখো। তুমি বাড়ীতে বলনা যে কাল বাড়ী আসছ বলে। আমি তোমায় আনতে আসব এখানে। তোমায় সাড়ীটা দেবো। তুমি ভেতরে গিয়ে পড়ে আসবে তারপর আমার সাইকেলে করে আমার বাড়ী যাবে। আমি তোমায় নিজে বাড়ী পৌঁছে দেবো। রূপসাঃ এই না, এরকম বলনা প্লিজ, বাবা জানতে পারলে না আমায় জ্যান্ত রাখবেনা। প্লিজ এই অনুরোধটা করোনা। সাইদুলঃ ওহ তুমি এতো কেন চিন্তা করছ। আমি তোমায় ভেতরের রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাবো, চেনাশোনা কেউ ই দেখতে পাবেনা। আমার ওপর বিশ্বাস রাখো। রূপসাঃ বিশ্বাস আছে বলেই তো রাজী হয়ে যাচ্ছি। কিন্তু সাইদুল, খুব সাবধান দেখো যেন আমার বাড়ীর চেনাশোনা কেউ দেখতে না পায়। এই সন্ধে ৮ টা হয়ে গেলো। কাল তুমি কখন আসবে তা আমি তোমায় ফোন এ জানিয়ে দেবো। আজ আমায় উঠতে হবে নয়ত হোস্টেল এ ঢুকতে অসুবিধা হবে। রূপসা দ্রুত ওখান থেকে উঠতে যায়, সাইদুল রূপসার হাত টা চেপে ধরে। রূপসা একটা দুষ্টু হাসি ভরা নজরে সাইদুলের দিকে তাকায়। রূপসাঃ মন ভরেনি বুঝি। আর মন ভরানোর দরকার ও নেই। পরবর্তী অংশ বিবাহের পর। কেমন। রূপসার মুখে আকস্মিক এই কথা শুনে সাইদুল কিছুটা লজ্জায় ই পড়ে যায়। সাইদুলঃ আমি এটাই বলছিলাম যে কাল সত্যি এই গরীবের বাড়ী যাবে তো? রূপসাঃ (আবার খিলখিল করে হেঁসে) ওহে মিস্টার, রূপসার কথার দাম আছে। রূপসা যখন আপনাকে কথা একবার দিয়ে দিয়েছে তখন রূপসা কথা রাখবেই। সাইদুল খুব সুন্দর ভাবে হেঁসে রূপসার হাতটা ছেড়ে দেয়। রূপসা উঠে দাঁড়ায়। পেছনে সাইদুল ও উঠে দাঁড়ায়। রূপসার প্রচুর দেরি হয়ে গেছিল। রূপসা হনহন করে হোস্টেলের দিকে চলতে শুরু করে, সাইদুল ও পেছন পেছন যায়। রাস্তায় আর ওদের মধ্যে সেরকম কোনও কথা হয়না। ঠিক হোস্টেলের সামনে পৌঁছে রূপসা সেই মোহময়ী দৃষ্টিতে একবার সাইদুলের দিকে তাকায়। মুখে একটা মিষ্টি হাসির সাথে বলে ওঠে রূপসাঃ সাইদুল, আই লাভ ইউ, আমি তোমাকে খুব খুব খুব ভালোবাসি। তোমায় জিজ্ঞেস করলাম না। কারন এতো সুন্দরী একটা মেয়ে যখন কাউকে ভালোবাসার কথা জানায় তখন ভালো না বাসার কোনও কারন ই থাকেনা। রূপসার এই কথাটা শুনে সাইদুল ও খুব জোরে জোরে হেঁসে দেয়। রূপসাও সুন্দর ভাবে হেঁসে প্রত্তুত্তর করে। রূপসাঃ ওকে বাই। তুমি সাবধানে বাড়ী যাও। আমি কল করছি তোমায়। সাবধানে জেও কিন্তু। কথাটা বলতে বলতেই আর হাত নাড়াতে নারাতেই রূপসা হোস্টেলের দিকে চলতে শুরু করে। সাইদুল ঠিক ততক্ষন ই হাত নাড়ায় যতক্ষণ ও রূপসাকে দেখতে পায়। রূপসা হোস্টেলের ভেতরে ঢুকে যায় তাও সাইদুল ওইদিকেই তাকিয়ে থাকে। সাইদুলের মুখের ওই নিষ্পাপ হাসিটা বেশিক্ষন স্থায়ী হলনা। পেছন থেকে একটা বেশ শক্ত হাত এসে ওর কাঁধে থাবা মারল আর সাথে সেই পরিচিত কণ্ঠ “কি ভাই প্রেম করছ, হাত নাড়ছ, কিস ও করলে অথচ বন্ধুকে একবার ও বললে না” সাইদুল প্রচণ্ড চমকে গিয়ে পেছন ঘুরে দেখে। ঠিক ওর ই পেছনে রাজু দাঁড়িয়ে আছে। সাইদুলঃ একি রাজু তুই এখানে। তুই আমাকে ফলো করেছিস। (সাইদুল বেশ কিছুটা গলার জোরেই কথাটা বলল) রাজু একবার বড় বড় চোখে সাইদুলের দিকে তাকাল রাজুঃ গলার জোর কাকে দেখাচ্ছিস বে? বেইমানি করলি বন্ধুর সাথে। (রাজু আরও দুগুন চেঁচিয়ে কথাটা বলল) এবার সাইদুল সত্যি ই ভয় পেয়ে গেছে। ওদের কথাবার্তা চেঁচামিচি শুনে যদি রূপসা বাইরে বেড়িয়ে আসে আর যদি রাজুকে এখানে দেখে ফেলে তাহলে রূপসা ভীষণভাবে ভুল বুঝবে সাইদুলকে। সাইদুল কিছুটা কাতর দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে বলল সাইদুলঃ রাজু ভাই আমার, এখানে প্লিজ ঝগড়া করিস না। আমি ভয়ে তোকে কিছু বলতে পারিনি। একটু আগে চল আমি তোকে সব খুলে বলছি। রাজু ওর কথা শুনল, দুজনেই সাইকেল নিয়ে ওখান থেকে বেড়িয়ে এলো। ঠিক যে মাঠটায় বসে এতক্ষন ওরা কথা বলছিল, সেই জায়গাটায় গিয়ে ওরা বসলো। রাজুঃ (প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করে) কেনরে আমি কি তিলোত্তমাকে ভালোবেসে ফেলিনি। আমিও ভালবেসে ছিলাম। কিন্তু কি হোল। বড়লোকের মেয়ে ঠিক মা বাবার কথা শুনে আমায় অপমান করে দিল। আমি তিলোত্তমার কোনও ক্ষতি করতে চাইনি সাইদুল। সাইদুল প্রচণ্ড অনুতাপের সাথে মাথা নিচু করে সব শুনছিল। সাইদুল নিজের ডান হাতটা রাজুর কাঁধে রাখে। সাইদুলঃ তুই আমায় ভুল বুঝিস না রাজু। আমি তোকে ঠকাতাম না রে রাজু। কেন যে এরকম হোল রাজু আমি জানিনা। আমি রূপসাকে ভালোবেসে ফেলেছি। আমি অনেক স্বপ্ন দেখে ফেলেছি। আমার তো অনেক কষ্ট তুই জানিস, ছোটবেলায় আব্বাকে... রাজুঃ (প্রচণ্ড জোরে হাত টা কাঁধ থেকে নামিয়ে দিয়ে) আর কষ্ট চোঁদাস না শালা। আমি কোটিপতির ছেলে নয়, কষ্ট অভাব আমার ও আছে। সাইদুল মাথাটা নিচু করে চুপ করে থাকে। রাজুঃ আজ যখন দেখছিলাম তুই আর রূপসা চুম্মাচাটি করছিস, আমার চোখে জল এসে গেছিল। বারবার তিলোত্তমার কথা মনে এসে যাচ্ছিল। শালা এতো ভালো একটা মেয়ে, সত্যি আজকের দিনে আর একটাও হয়না। আমি শালা জানোয়ারের বাচ্চা একটা। কথা গুলো বলতে বলতে রাজু প্রচণ্ড উদাসীন হয়ে যায় আর আকাশের দিকে তাকায়। সাইদুল আবার ওর কাঁধে হাত রাখে। রাজুও কিছু উত্তর দেয়না। সমবেদনার সুরে সাইদুল বলে ওঠে সাইদুলঃ তুই একাই এর জন্য দায়ী নয়। আমি সব জেনেও তোকে আটকাইনি। আমি তোকে হ্যাঁ হ্যাঁ বলেই গেছি শুধু। কিন্তু ভাই একি ভুল কেন আমরা দুবার করব বল। রাজুঃ (প্রচণ্ড রেগে গিয়ে সাইদুলের কলার টা ধরে) শুয়োরের বাচ্চা, আমি হব জানোয়ার আর তুই হবি মানুষ, ভদ্রলোক। ভুলে গেলি তিলোত্তমার ফটোগুলো তুই তুলেছিস। আমি নয়। কিরে শালা মনে পড়ছে সব। মন আমার ও দুর্বল ছিলরে। তুই আমায় কথা দিয়েছিলি আমায় রূপসার ভাগ দিবি... সাইদুল প্রচণ্ড রেগে গিয়ে রাজুর গালে সপাটে একটা চড় মারে। সাইদুলঃ আমি বেঁচে থাকতে তা হবেনা। আমার দরকার নেই ভালোবাসার। রূপসার ভালো ছেলের সাথে বিয়ে হবে। আমি থাকতে কিছুই হবেনা রে। সাইদুল প্রচণ্ড রেগে গিয়ে সাইকেল নিয়ে উঠে পড়ে, রাজু ওখানেই বসে থাকে। সাইদুল সাইকেল টা খুব জোরে চালিয়ে ওখান থেকে বেড়িয়ে যায়।
19-01-2019, 09:24 AM
পর্ব ৮- হৃদয়ের যন্ত্রণাঃ
ঠিক কলেজ গেট এর কাছে এসে সাইদুল সাইকেলের স্পিডটা একটু স্লো করে দেয়। কি যেন হয় ওর মনের মধ্যে। নিজেকে ভীষণ পাপী মনে হয়, মনে হয় বিশাল একটা অন্যায় করে ফেলেছে। রাজু ওর বন্ধু, হয়ত মালতী দেবীদের বাড়ীতে দুধ দিতে যাওয়ার পর থেকেই ওদের বন্ধুত্ব শুরু হয়। তা হলেও এই বন্ধুত্বে কখনো কোনও ভেজাল দেখেনি সাইদুল। আম্মির যখন প্রচণ্ড শরীর খারাপ হয়, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় ও সেই রাজুই ওর ভরসা ছিল। রাজু আর রাজুর বন্ধুরাই তো সাইদুলের আম্মিকে ধরে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সাইদুল সাইকেলটা থামিয়ে ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। ও জানে রাজুও ওখান দিয়েই বস্তিতে ফেরত যাবে। সাইদুল ওখানেই দাঁড়িয়ে ওয়েট করতে থাকে। এতক্ষনে সাইদুলের নিজের ওপর ই রাগ হয়। ও রাজুর গায়ে হাত তুলেছে। রাজু বরাবর ই একটু রগচটা ছেলে। একটুতেই রেগে যায়। আর কি আর এমন ও বলেছে। রূপসার সাথে আলাপ হওয়ার আগে অবধি তো ওদের মধ্যে এইধরনের কতই কথা হত। হয়ত রাজু ঠিক বুঝতেই পারেনি যে সাইদুল সত্যি ই রূপসার প্রেমে পড়ে গেছে। হয়ত সাইদুল আর রূপসাকে দেখে কিছুটা ঈর্ষা বোধ করে ফেলেছে। সাইদুলের মনটা খুব ভারী হয়ে যায়। এদিকে প্রায় ১০ মিনিট হয়ে যায়, কিন্তু রাজু ফিরে আসেনা। সাইদুল আর ওখানে দাঁড়িয়ে না থেকে আবার কলেজ গেট দিয়ে ভেতরে ঢোকে। সোজা মাঠের দিকে যেতে শুরু করে। বেশকিছুটা যাওয়ার পর ও রাজুকে লক্ষ্য করে। রাজু একি ভঙ্গিমায় মাঠের মধ্যে বসে আছে। রাজু হয়ত মুখটা অন্যদিকে করেছিল তাই সাইদুল কে খেয়াল করেনি। সাইদুল সাইকেল টা রাস্তার একপাশে রেখে আসতে আসতে মাঠের মধ্যে নেমে রাজুর পাশে গিয়ে বসে। এতক্ষনে রাজু খেয়াল করে যে সাইদুল এসে ওর পাশে বসেছে। রাজু কোনও উত্তর দেয়না। এভাবে সাইদুল ও প্রায় ১-২ মিনিট চুপ করে বসে থাকে। যে দুই বন্ধু আর ৬ ঘণ্টা আগেও একে ওপরের সাথে আঠার মত চিটে থাকতো হথাত ই তাদের মধ্যে এতো উচু এক প্রাচীর তৈরি হয়ে যায়। সাইদুল জানে ও নিজেই অপরাধ করেছে। আর রাজু যে ধরনের অভিমানী ছেলে ও কিছুতেই মুখ ফুটে সাইদুলকে কিছু বলবে না। সাইদুল আলতো করে নিজের হাত টা রাজুর হাতের ওপর রাখে। রাজু তাও কোনও উত্তর দেয়না। একদৃষ্টিতে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে। সাইদুলঃ কি রে আমার ওপর রাগ করেছিস। আমি ভুল করে ফেলেছি রে রাজু। আর কখনো এরকম হবেনা। রাজু কোনও উত্তর দেয়না। সাইদুল রাজুর আরও কিছুটা কাছ ঘেঁষে বসে। নিজের ডান হাত টা রাজুর কাঁধে রাখে। সাইদুলঃ আমি এরকম করতে চাইনি। কোথা থেকে যে কি হয়ে গেলো, তা সত্যি আমিও কিছুই বুঝতে পারলাম না। এতো ভালো বাড়ীর একটা মেয়ে যে এভাবে আমাকে ভালোবেসে ফেলবে তা আমি ভাবতেও পারিনি। আমি তো অভিনয় করছিলাম রে। কি করে যে অভিনয় থেকে বাস্তবে পৌঁছে গেলাম কিছুই বুঝলাম না। রাজু কোনও উত্তর দেয়না। চুপ করে একদৃষ্টিতে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে। সাইদুলঃ তোকে হয়ত বললে তুই আর আমাকে বিশ্বাস করবিনা। জানিস এখনো আমার কাছে রাজু নিজের ই ভাই এর মত। তুই যদি চাস, আমি তাহলে সরে আসব নিজের জায়গা থেকে। রূপসাকে বলে দেবো যে আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এতক্ষনে রাজু উত্তর দেয় রাজুঃ আমি তোকে কখনো বলিনি, আমিও তিলোত্তমাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। ছোটবেলায় একটা মেয়েকে ভালবাসতাম তোকে বলেছিলাম না। ওটাও ছিল বড়লোকের মেয়ে। তবে আমার ভালোবাসা তা নিখাত ছিল। যতদিন ওর ভালো লেগেছে ততদিন সাথে ঘুরল। তারপর বাড়ীতে জানাজানি হোল। সবাই বোঝাল যে এইরকম ছেলেকে তো আর বিয়ে করা যায়না। রাজু হথাত করেই চুপ হয়ে গেলো। সাইদুল জানে এটা রাজুর জীবনের সবচেয়ে দুর্বলতম জায়গা। এখানে একবার টান ধরলে রাজুর মত পাষণ্ডের ও চোখ দিয়ে এক দু ফোঁটা জল পড়েই যাবে। সাইদুলঃ আরে পাগল, তোর জন্য মেয়ে আমি দেখব রে... রাজুঃ (কিছুটা অবজ্ঞার স্বরে) না থাক ছেড়ে দে। আমি ই দেখে নেবো। তোর রূপসাকে ভালো লাগেছে খুব ভালো কথা। চুটিয়ে প্রেম কর। কিন্তু ভাই একটা কথা মাথায় রাখিস, বিশাল একটা ধাক্কা তুই খাবি। গরীব বড়লোকে ভালোবাসা হয়েই থাকে কিন্তু আমাদের মত অশিক্ষিত ও অসামাজিক জীবদের সাথে একটা নিষ্পাপ মেয়ের ভালোবাসা কখনোই মানায় না। সাইদুলঃ ভাই আমি তোকে সব সত্যি বলছি। একটু ভেবে দেখ আমরা দুজনেই রূপসাকে ঠিক কি পরিমান অহংকারী ও নাকউঁচু মেয়ে ভাবতাম। কিন্তু রূপসা ওরকম নয়। ও খুব খুব ভালো মনের মেয়ে রে। রাজুঃ ওটা আজ মনে হচ্ছে রে। কিছুদিন পর মনে হবেনা। মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে ভালোবাসা কখনোই টিকে থাকেনা। রাজুর মত একটা অসামাজিক ছেলের থেকে যে এতোবড় একটা নৈতিক মূল্যবোধের কথা শুনতে হবে তা হয়ত সাইদুল একবার ও আশা করেনি। সাইদুল জানে রাজু জন্ম থেকেই এরকম ছিলনা। ক্লাস ১০ অবধি কলেজে পড়েছিল। অভাবের তাড়না ছিল কিন্তু পড়াশুনাটা ঠিক করেই করত। বস্তিতে ওকে সবাই ভালো ছেলে নামেই জানত। তিথি বলে একটা মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল রাজুর। দুজনেই দুজনকে প্রচুর ভালবাসত। একদিন তিথির বাড়ীতে সব কিছু জানাজানি হয়ে যায়। ব্যাস শুরু হয়ে যায় মগজ ধোলাই। সাইদুল সেইসময় রাজুর বিশাল একটা ভালো বন্ধু ছিলনা। তবে বস্তির অন্য ছেলেদের থেকে শুনেছে যে রাজু প্রচণ্ড কষ্ট পেয়েছিল। বহুবার তিথির বাড়ীর সামনে দাঁড়িয়ে থেকে কান্নাকাটি করেছে, চেঁচামিচি করেছে। তিথির মা, বাবা, দাদাদের হাতে পায়ে ধরেছে। কিন্তু গরিবের কাকুতি মিনুতি কেই বা শোনে। এরপর একদিন তিথির বিয়েও হয়ে যায়। তারপর থেকেই ছেলেটা কেমন যেন পাষণ্ড হয়ে যায়। মানুষ বড়ই জটিল তার একটাই কারন মানুষের হ্রদয় বড়ই ঠুনকো, যেকোনো সময় ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যেতে পারে। এতক্ষন সাইদুল চুপ করে শুধুই সব ভেবে যাচ্ছিল হথাত ই রাজুর কথায় ওর হুঁশ ফেরে রাজুঃ তুই কি রূপসাকে সব কথা বলেছিস না লুকিয়ে রেখেছিস? তিলোত্তমা ওর নিজের বোন হয় রে। ওকি মানতে পারবে তোকে সব জানার পর? সাইদুল কোনও উত্তর দেয়না, শুধুই নিচের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে। সত্যি ই তো রাজু কোনও মিছে কথা বলেনি। সত্যি ই রাজু তিলোত্তমার সাথে যা করেছে, তারপর তো কোনমতেই রূপসা ওকে মানতে পারবে না। এতো সহজে রূপসাকে নিজের মন টা দিয়ে দেওয়া হয়ত সাইদুলের সত্যি ই উচিত হয়নি। রাজুর পাপের সমান ভাগীদার সাইদুল ও। রাজুঃ তুই এতো ভয় পাচ্ছিস কেন? তোর কি মনে হয় আমি তোর সম্পর্ক ভাঙিয়ে দেবো? আরে পাগল রাজু অতটাও খারাপ নয় রে। আমি তো তোকে শুধুই সাবধান করে দিলাম। আমি তোকে চিনি সাইদুল। রূপসার আগে তুই কাউকে ভালবাসিস নি। মেয়েসঙ্গ কি হয় তাও জানিস না। প্রথম ভালবাসাকে হারানোর কষ্ট তুই বুঝিস না রে আমি বুঝি। হয়ত এই রাজু আজ সকলের সামনে ভালো ছেলে হিসেবেই থাকতো। ছার এসব চল ওঠা যাক... সাইদুলঃ ওঠার আগে আমি তোকে একটা কথা বলতে চাই রাজু। আমি রূপসাকে সব সত্যি কথা বলে দেবো। সত্যি ই মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে ভালোবাসা সম্ভব হয়না। তাতে যা হওয়ার তাই হবে। রাজুঃ যাই হোক তার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকিস। জীবন বড়ই জটিল রে সাইদুল। যাই হয়ে যাক মেনে নিস। রাজু ও সাইদুল দুজনেই উঠে দাঁড়ায়। প্রায় ৮ টা ৪৫ হয়ে গেছে। এতক্ষনে বাড়ীতেও চিন্তা করতে শুরু করে দিয়েছে। কাল সকালে সাইদুলের আম্মি একবার বাপের বাড়ী যাবে। ঘর ফাঁকাই থাকবে, এদিকে রুপ্সাকেও ডেকে নিয়েছে কাল ও। এখনো রূপসার ম্যাসেজ বা ফোন কিছুই আসেনি। যেকোনো সময় চলে আসতে পারে। রাজু ও সাইদুল দুজনেই খুব জোরে জোরে সাইকেল চালাতে শুরু করে। ফাঁকা রাস্তা, তাই ১০ মিনিটের মধ্যেই বস্তিতে পৌঁছে যায় ওরা। সাইদুল বাড়ীতে ঢোকার মুখেই সাইদুলের মোবাইলে ম্যাসেজ। সাইদুল জানে এটা রূপসার ই ম্যাসেজ। ভেতরে ঢুকে আম্মির সাথে কথা বলে নিয়ে সাইদুল ম্যাসেজ টা পড়ে। “কি গো এখনো পৌছাওনি তুমি? আর কতক্ষন লাগবে তোমার? আমি এখনো বসে আছি তোমার জন্য। হোস্টেলে ৯টার মধ্যেই খেয়ে নিতে হয়। প্লিজ তাড়াতাড়ি জানাও, কোথায় আছো। আমি তারপর খেতে যাবো” সাইদুল ঠিক করে রূপসাকে ফোন করবে। রাজু সাইদুলকে অন্তর থেকে চাগিয়ে দিয়ে গেছে। সাইদুল বদ্ধপরিকর যে আজ ই ও রূপসাকে সবকথা জানাবে। সত্যি এতোবড় একটা মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে কিছুতেই ওর পক্ষে রূপসাকে ভালোবেসে যাওয়া সম্ভব নয়। সাইদুল সঙ্গে সঙ্গে রূপসাকে ফোনটা করেও ফেলে। সাইদুলঃ রূপসা, এই বাড়ী পৌছালাম, বাজারে কিছু কাজ ছিল তাই একটু দেরি হয়ে গেলো। আমার কিছু কথা ছিল রূপসা, তুমি শুনবে? রূপসাঃ সব শুনবো কিন্তু আগে বল, এতটা পথ ২-৩ বার যাতায়াত করলে শরীরটা ভালো আছে তো? তুমি যে কেন এরকম পাগলামি কর সত্যি আমি বুঝতে পারিনা। সাইদুলঃ আমি একদম ঠিক আছি রূপসা। আমার কিছু কথা ছিল... রূপসাঃ ওহ আমি কি মরে যাচ্ছি নাকি। কাল তো আসছি শ্বশুরবাড়িতে ওখানেই না হয় সব বলবে। আচ্ছা সাইদুল আম্মি আমাকে দেখে আবার কিছু বলবে না তো? আমায় পছন্দ করবে তো আম্মি? সাইদুলঃ এ আবার কি কথা, আম্মি কেন পছন্দ করবেনা শুনি। তোমার চেয়ে ভালো বউ কি আম্মি আমার জন্যে খুঁজে আনতে পারবে নাকি। তুমি এসব ভেবনা একদম। আর হ্যাঁ তোমায় তাহলে কাল ই কথাগুলো বলব। আমি জানি যে কথাগুলো আমি তোমায় বলব, তুমি কিছুতেই তা মানতে পারবেনা। আমায় ভুল বুঝবে ভীষণভাবে। কিন্তু আমি মন থেকে এটাই বিশ্বাস করি যে একদিন সব ভুল বোঝাবুঝি সরিয়ে তুমি ঠিক ই ফিরে আসবে আমার কাছে। আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করে থাকবো। কথাগুলো বলার সময় সাইদুল সত্যি ই প্রচণ্ড আনমনা হয়ে গেছিল। শব্দগুলো যেন মুখ থেকে নয় সাইদুলের হৃদয় থেকে বেড়িয়ে এসে রূপসার কানে গিয়ে পৌছাচ্ছিল। কথায় আছে না, নারীমন ভীষণ সংবেদনশীল। হৃদয়ের প্রতিধ্বনি নারীর কোমল হৃদয়ে খুব সহজেই ধরা পড়ে যায়। রূপসার আর বুঝতে কোনও অসুবিধাই রইলনা যে সাইদুল নিজের জীবনের কোনও অসহায়তার কথা কিছু মানসিক যন্ত্রণার কথা বলছে। কাছের মানুষের এই হাহাকার কিকরে রূপসা অবজ্ঞা করে, যতই হোক ও তো নারী। রূপসাঃ আরে পাগল, আমি খুব খুব লাকি তোমায় পেয়ে, তুমি এভাবে কষ্ট পেয়না। তোমার ভালো মন্দ সব ই আমি গ্রহন করে নিয়েছি। ভালো সাইদুল ও মন্দ সাইদুল দুজনেই আমার, শুধুই আমার। শোন না আমি এবার খেতে যাচ্ছি। আজ আবার রাতে সিনিয়র দিদিরা রুমে আসবে। ভুল করেও কোনও ম্যাসেজ পাঠিওনা। বোঝোই তো, প্রেম করছি জানলে র*্যাগিং আরও বেড়ে যাবে। সাইদুলঃ (কিছুটা উদাসীনভাবে) ঠিক আছে যাও তুমি খেয়ে নাও। আমি কাল সকালেই ফোন করব। রূপসার সাথে কথা বলা হয়ে গেলেও, সাইদুলের মনের দ্বিধাদ্বন্দ্বগুলো স্বস্থানেই বহাল থাকল। না চাইলেও প্রচণ্ডরকম ভাবে রাজু ও তিলোত্তমার এই ৩ মাসে ঘটে যাওয়া প্রতিটা ঘটনা মনে পড়ে গেলো। সাইদুলের মনে শুধু একটা কথাই ঘুরঘুর করতে লাগলো, যদি সত্যি ও চাইত তাহলে এতোবড় অনাচার হয়ত হতনা।
19-01-2019, 09:25 AM
পর্ব ৯- ব্যাভিচারঃ
সাইদুল জানে যে তিলোত্তমার সাথে রাজু যা করেছে তা শুধুই ওর প্রতিহিংসাপরায়ন মানসিকতার জন্য। বন্ধু হিসেবে সাইদুলের কর্তব্য ছিল রাজুকে একটা ভ্রান্ত ধারনা থেকে মুক্ত করা। সুবীরবাবু যে মিথ্যেকথা বলে তিলোত্তমার মন ভেঙে দিয়েছেন তা শুধুই মেয়ের প্রতি নিজের স্নেহ থেকে। তিলোত্তমা হয়ত রাজুকে ভীষণভাবে ভুল বুঝেছিল কিন্তু তা কখনোই প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার মত নয়। তিলোত্তমার সাথে যা হয়েছে তা ঘোর অন্যায়। সাইদুল নিজেও জানে যে সে এই দায় কিছুতেই এড়িয়ে যেতে পারেনা। ঘটনার সুত্রপাত হয় যখন সুবীরবাবুরা আবার সেলিমতলার পুরনো বাড়ীতে ফিরে আসে তখন থেকে। এ প্রসঙ্গে একটি আরও ঘটনা উল্লেখ না করলে সম্পূর্ণ ঘটনাটি পরিস্ফুট হবেনা। সুবীর বাবুরা বাড়ীটা ছেড়ে দেওয়ার পর, রাজু ও সাইদুলের দুজনের ই মন খুব খারাপ হয়ে যায়। মালতী দেবী ছিলেন রাজু ও সাইদুলের কামনা বাসনা পুরন করার একমাত্র সম্বল। হতাশ জীবনে যখন প্রায় সবগুলো দরজাই ওদের সামনে বন্ধ ছিল তখন মালতী দেবীর অপরুপ সুন্দর শরীর তা ওদের কাছে শুধুই যে বিনোদনের মুল উৎস ছিল তা নয়, তার সাথে সাথে ছিল এক আশ্রয়। নিজেদের জীবনের প্রতি মুহূর্তের ক্ষোভ হতাশা দারিদ্র কে ভুলে থাকার জন্য মালতী দেবীর লাস্যময়ী শরীরটা ছিল ওদের দুজনের কাছে মদ বা গাঁজার চেয়েও প্রিয় আশ্রয়। যাকে নিয়ে ভেবে কল্পনা করে ওরা সব ভুলে থাকতে পারতো। ওরা জানত আগেরদিন ই মালতী দেবীরা বাড়ী ছেড়ে চলে গেছেন। তবুও প্রতিদিনের রুটিন মেনে ওরা বাড়ীর পেছনের সেই পাতলা গলিটায় নিজেদের পুরনো আড্ডা মারার জায়গায় আসে। ওখানে বসে একে অপরকে মালতী দেবী ও তার দুই মেয়ে না থাকার হতাশার কথা ব্যাক্ত করতে থাকে। ওরা খেয়াল ও করেনি যে ওদের ঠিক পেছনে কোনও এক মানুষ দাঁড়িয়ে ওদের সমস্ত কথা শুনে চলেছে। সেই মানুষের উপস্থিতি ওরা কিছুক্ষন পর টের পায়। সেই ভয়ঙ্কর দিনটার কথা সাইদুল আজ ও ভোলেনি। রাজু আর সাইদুল নিজেদের আড্ডায় আর ওরা কি করে মালতী দেবীর শরীরটা প্রতিদিন ভোগ করত সেই আলোচনাতেই মশগুল ছিল। হথাত ই সাইদুলের মনে হয় কেউ একজন ওদের ঠিক পেছনেই দাঁড়িয়ে আছে। সাইদুল পেছন ঘুরে দেখে আঁতকে ওঠে। ওদের ঠিক পেছনেই মানব বাবু দাঁড়িয়ে ছিলেন। এবং সাইদুল নিশ্চিত যে এতদিন ধরে ওরা যে অপকর্ম করে এসেছে তাও মানব বাবু সম্পূর্ণভাবে বুঝে গেছেন। দেওয়ালের নিচের দিকে ইট সরিয়ে ওরা যে গর্তটা করেছিল, সেই গর্তেও ইট দিয়ে ঢেকে রাখার কথা ওদের মনে ছিলনা। রাজুও সাইদুলের দেখাদেখি পেছন ঘুরে তাকায়। মানব বাবু যে এরকম রুদ্রমূর্তি ধারন করতে পারেন তা ওরা ভ্রুনাক্ষরেও কখনো বোঝেনি। ওরা দুজনেই উঠে দাঁড়ায়। সাইদুল জানে রাজু ঠিক কতটা রগচটা ছেলে, তাই সাইদুল ঠিক করে নেয় যাই হয়ে যাক ও মানব বাবুর সাথে কথা বলবে, রাজুকে কিছুই বলতে দেবেনা। এক হাত দিয়ে রাজুকে কিছুটা পেছনের দিকে ঠেলে দিয়ে ও মানব বাবুর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে সাইদুলঃ দাদা কিছু বলবেন? আমরা এই বাড়ি ফিরছিলাম তাই ভাবলাম একটু আড্ডা মারি... সাইদুলের কথা শেষ হওয়ার আগেই সপাটে এক চড়। সাইদুল প্রায় হুমড়ি খেয়ে মাটিতে গিয়ে পড়ে। সাইদুল উঠে দাঁড়ানোর আগেই রাজু সামনে এগিয়ে আসে। মানব বাবুর চোখে চোখ রেখে বলে ওঠে রাজুঃ একি আপনি কোন অধিকারে ওর গায়ে হাত দিলেন? আমরা গরিব বলে কি মানুষ নই নাকি। রাজুর এই উদ্ধত স্পর্ধা মানব বাবুর মেজাজটাকে আরও বেশি করে তাতিয়ে তোলে। মানব বাবুর চোখের কোঠর থেকে লাল রঙের দুটো বিস্ফোরিত চোখ বাইরে বেড়িয়ে আসে। সাইদুলের ক্ষমতা ছিলনা সেই চোখের দিকে তাকানোর। রাজু নির্ভীক, এইরকম বহু তথাকথিত ভদ্রলোকের সাথে রাজু বহু লড়াই করেছে। ভয় শব্দটা রাজুর অভিধানে নেই। রাজু আবার বলে ওঠে রাজুঃ কি ব্যাপার বলুন, আপনি ওকে চড় মারলেন কেন? আপনি কি ওর অবিভাবক? মানব বাবু এতক্ষন রাগে বিষধর সাপের মত ফোঁসফোঁস করছিলেন। এতক্ষনে উনি হুঙ্কার ছাড়লেন মানব বাবুঃ (প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করে) শুয়োরের বাচ্চা মুখে মুখে কথা বলছিস। চল তোকে কয়েক বছরের জন্য জেলের ঘানি টানাবো। (মানব বাবু এক হাত দিয়ে রাজুর জামার কলারটা চেপে ধরলেন) সাইদুল বুঝতে পেরছিল যে এমনকিছু হয়ে যেতে পারে যাতে রাজু ও ওর দুজনের ই পরিবার বিশাল বিপদে পড়ে যাবে। সাইদুল দ্রুত উঠে দাঁড়ায়। গায়ের জোর দিয়ে রাজুকে ঠেলে পেছনে নিয়ে যায়। সাইদুল নিজে মানব বাবুর মুখোমুখি দাঁড়ায়। কিছুটা কাতর স্বরে বলে ওঠে সাইদুলঃ দাদা আমাদের যদি কিছু ভুল হয়ে থাকে, তো ছোট ভাই ভেবে আমাদের ক্ষমা করে দিন। মানুষমাত্রেই ভুলভ্রান্তি হয়, আমাদের ও হয়েছে। মানব বাবু এবার সাইদুলের ও কলার টা চেপে ধরেন। প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করে বলে ওঠেন মানব বাবুঃ ভুল, এটা ভুল! তোরা তো ক্রিমিনাল রে। পরের বাড়ীর পাঁচিলের ইট সরিয়ে বাড়ীর মেয়েদের স্নান করা দেখিস। তোদের দুজনকেই আমি আজ এক্ষুনি পুলিসে দেবো। এতক্ষন রাজু পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল। সাইদুল জানে রাজুর কলারে কেউ হাত দিলে রাজুর ও মাথায় রক্ত উঠে যায়। রাজুঃ যান এক্ষুনি পুলিসে খবর দিন। আপনার কাছে প্রমান আছে কিছু যে আমরা এরকম করেছি বলে। রাজুর কথা মানব বাবুর রাগকে শতগুন বাড়িয়ে দেয়। সাইদুল কোনরকমে মানব বাবু ও রাজুর মধ্যে থেকে দুজনকে বাধা দিয়ে দূরে রাখে। মানব বাবুঃ (প্রচণ্ড চিৎকার করতে করতে) শালা, আমার এক কথায় তোর মত চুনোপুঁটির ফাসি হয়ে যাবে রে। তুই কি জানতে চাস আমার কত ক্ষমতা। দাঁড়া দেখাচ্ছি আমি। মানব বাবু পকেট থেকে মোবাইলটা বার করে কারুর একটা নাম্বার খুঁজতে শুরু করেন। এতক্ষনে সাইদুল বোঝে ব্যাপারটা সত্যি ই খুব বাজে দিকে চলে যাচ্ছে। যা কিছু করার ওকেই করে ফেলতে হবে। সাইদুল মানব বাবুর হাঁটুর কাছে বসে দুহাত দিয়ে মানব বাবুর পা জড়িয়ে ধরে। প্রায় কেঁদে ফেলার মত করে মানব বাবুর পা জড়িয়ে সাইদুল কাকুতি মিনতি করতে থাকে সাইদুলঃ দাদা আপনি তো সব ই জানেন। বেকার ছেলে আমরা। চাকরি বাকরি কিছুই নেই। বদসঙ্গে পরে এরকম ভুল কাজ করে ফেলেছি। আপনি তো আমাদের মাই বাপ। আমাদের এলাকার এতো নামকরা রাজনীতিক, আপনি যদি একটু দয়া না করেন কে করবে দাদা। দাদা আমরা দুজনেই গরিবের ছেলে দাদা। আমাদের দয়া করুন। আপনি কি পরিমান ক্ষমতাশালী তা আমরা খুব ভালো করেই জানি। প্লিজ ক্ষমা করে দিন দাদা। কিছুদিন পড়েই মিউনিসিপ্যালিটি ভোট, হয়ত সেই কথা চিন্তা করেই মানব বাবু নিজেকে একটু শান্ত করেন। মানব বাবুঃ গরিবের ছেলে তাই পুলিসে দিলাম না তোদের। এই বাড়ীর আশেপাশেও আর কোনোদিন তোদের দুজনকে দেখতে চাইনা। হারামি কোথাকার। পরের বাড়ীর মেয়েদের দিকে কুনজর দিস। বলেই প্রায় লাথি মেরে সাইদুলকে পা থেকে সরিয়ে দেন মানব বাবু। রাজু দূরে দাঁড়িয়ে রাগে থরথর করে কাঁপতে থাকে। বেঁচে থাকতে বন্ধুর এই অপমান রাজুকে দেখতে হোল এ কথা রাজু নিজেকেই বিশ্বাস করাতে পারেনা। “ভাগ শুয়োরের বাচ্চা ভাগ এখান থেকে” আবার একটা গর্জন ভেসে আসে। সাইদুল উঠে দাঁড়ায়। রাজুকে প্রায় টানতে টানতে ওখান থেকে নিয়ে চলে যায়। বস্তিতে ঢোকার পর রাজু প্রথমবারের জন্য মুখ খোলে রাজুঃ শালা নিজে পরের বউকে ভোগ করে তাতে কোনও অন্যায় নেই। আর আমরা যদি তা করতে যাই, তখন ই ভদ্রলোক সেজে যায়। সাইদুল রাজুকে শান্ত করার জন্য বলে ওঠে সাইদুলঃ ছাড় না ভাই। ওদের এতো পয়সা, এতো ক্ষমতা, আমরা কি ওদের সাথে পেরে উঠবো নাকি। ভুলে যা সবকিছু। আর ওরাও তো এখন এখানে থাকেনা। ছেড়ে চলে গেছে। আর তো কোনোদিন দেখা... রাজুঃ দেখা হবেই রে। আমি তিলোত্তমার কোনও ক্ষতি করিনি। পারলে অনেককিছুই করতে পারতাম। বাবার এককথায় আমায় ভুল বুঝে গেলো। কত কত বাজে কথা আমায় বলল। সাইদুলঃ ছাড় না, ভুলে যা সব। আমরা গরিব আমাদের কি আর এইসব ভাবা উচিত রে। ছেড়ে দে। তারচেয়ে চল আজ বিকেলে একটু ঘুরে আসি। রাজুঃ তুই ঘুরতে যা সাইদুল। আমার মুড ভালো নেই। বলেই রাজু হনহন করে নিজের ঘরের দিকে যেতে শুরু করে। সাইদুল জানে রাজুর মুড গরম থাকলে স্বয়ং ভগবান ও ওকে আটকাতে পারবে না। সাইদুল বাড়ীতে ঢুকে স্নান করে নেয়। আম্মি বাইরে কোথাও গিয়েছিল, আম্মি এসে খেতে দেবে তাই ও আম্মির জন্য অপেক্ষা করছিল। এমন ই সময় ঘরের দরজাটা প্রচণ্ড জোরে খুলে যাওয়ার আওয়াজ। সাইদুল বাইরে বেড়িয়ে দেখে রাজু এসেছে। প্রায় দূর থেকেই চেঁচাতে চেঁচাতে আসতে শুরু করে “আম্মি কি বাড়ীতে আছে?” সাইদুল জানে, রাজুর মাথা বিগড়ে গেছে। এইসময় ওকেই খুব শান্ত হয়ে থাকতে হবে। সাইদুল মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দেয় যে আম্মি বাড়ীতে নেই। রাজু ভেতরে ঢুকে বসে। রাজুর ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া আর লাল টকটকে দুই চোখ দেখে সাইদুল বেশ ভালো ভাবেই বুঝতে পারে যে অপমানটা রাজু ভালোভাবে নেয়নি। রাজুঃ সাইদুল, আমি যদি ওই ৩ টে মেয়েমানুষের সাথে বিছানায় না শুতে পারি তাহলে আমি কিছুতেই শান্তিতে ঘুমাতে পারবোনা। আমাকে অনেকদিন পর কেউ এভাবে অপমান করার সাহস দেখাল। আমার কথাগুলো মন দিয়ে শোন। আমি জানি সুবীর বাবুই তিলোত্তমাকে ভুল বুঝিয়েছিলেন। তিলোত্তমা শেষ ম্যাসেজটায় আমাকে বলেছিল যে ও নিজের সিম চেঞ্জ করে নেবে। সাইদুল তিলোত্তমা কিন্তু নিজের সিম চেঞ্জ করেনি। সাইদুলঃ ছেড়ে দে না ভাই। ওরা তো এখন অনেক দূরে থাকে। ছেড়ে দে এতো কেন চিন্তা করছিস। রাজুঃ (প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করে) আরে এই পৃথিবীতেই তো থাকে নাকি। পৃথিবীর বাইরে তো আর চলে যায়নি। তুই দেখে নিস ওরা ফিরে আসবে। ভাই তিলোত্তমার মনে এখনো রাজুর নাম লেখা আছে। আমি ওকে রোজ ম্যাসেজ পাঠাই। ও হয়ত উত্তর দেয়না। ফোন করলে ফোন ধরেনা। কিন্তু এটাও সত্যি যে ও নাম্বারটা কিন্তু চেঞ্জ করেনি। আমি নেবো তিলোত্তমাকে তুই রূপসাকে আর দুজন মিলে মালতীকে। মনের মধ্যে যত ভালোমানুষি লুকিয়ে আছে সেগুলো বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দে। সাইদুল সেদিন ওকে আটকায়নি। মালতী দেবীর সাথে যা হয়েছে সে ব্যাপারে ওর কোনও দুশ্চিন্তা নেই। তার কারন মালতী দেবীকে তার আগে এমন অবস্থায় ও আর রাজু দেখেছে যে সত্যি ই মালতী দেবীর ওপর থেকে ওর সব সম্মান চলে গেছে। ওর কাছে মালতী দেবী শুধুই একটা যৌনতায় ভরপুর শরীর, যে প্রতি মুহূর্তে একজন পুরুষ শরীরকে খুঁজে বেড়ায়। কিন্তু তিলোত্তমা সত্যি ই খুব ভালো। তিলোত্তমা রাজুকে আবার নতুন করে বিশ্বাস করেছিল। আর তার বদলে ওরা যা ফিরিয়ে দিল তা সত্যি ই ব্যাবিচার।
19-01-2019, 09:27 AM
পর্ব ১০- নতুন মোড়ঃ
সুবীর বাবুঃ এ আপনি কি বলছেন সত্য বাবু। আপনার কথা আমি বিশ্বাস করিনা। আমার দুই মেয়ে তিলোত্তমা ও রূপসা কমবয়সী। ওরা হয়ত কিছু ভুলভ্রান্তি করে ফেলেছে, মানুষ চিনতে ভুল করেছে। ওদের পিতা হিসেবে যা মেনে নেওয়া আমার কাছে প্রচণ্ড কঠিন। আমি জানি এই ডায়েরিতে লেখা সম্পূর্ণ অভিশপ্ত ইতিহাস না পড়া পর্যন্ত আমার নিস্তার নেই। কিন্তু সত্য বাবু আপনার ও একটি ব্যাপারে অবগত হওয়া দরকার। এই সংসারকে তিলেতিলে গড়ে তুলতে আমি যা কষ্ট করেছি যা আত্মত্যাগ করেছি তার সহস্রগুন আত্মত্যাগ মালতী করেছে। আপনি তো সামান্য অশরীরী আত্মা, স্বয়ং ভগবান এসেও আমায় বললে আমি কিছুতেই এটা বিশ্বাস করতাম না। আমি আপনার কথা বিশ্বাস করিনা, সত্যবাবু। সত্যবাবু কোনও উত্তর দেন না, শুধুই শান্ত দৃষ্টিতে সুবীর বাবুর দিকে তাকিয়ে থাকেন। সুবীর বাবুঃ ডায়েরি যতই অভিশপ্ত হোক তা কখনোই মালতীকে কলঙ্কিনী করতে পারেনা। রাবনের মত পণ্ডিত ও সাহসী যেমন পারেন নি সীতার গায়ে সামান্য কোনও কলঙ্কের দাগ লাগাতে সেরকম ই মালতীর গায়ে সামান্য কোনও কলঙ্ক লাগানো আপনাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমি মানিনা ডায়েরীর এই গল্প। সত্য বাবুঃ জানি আপনি বিশ্বাস করবেন না। এই অনুরুপ বিশ্বাস সুপ্রতীক এর ও ছিলনা। জানেন আপনি ঠিক যে চেয়ারে বসে ডায়েরি পড়া আরম্ভ করেছিলেন, ঠিক ওই ঘরটায় ওই জায়গায় বসেই সুপ্রতীক ডায়েরিটা পড়া শুরু করে। সুবীর বাবুঃ কে সুপ্রতীক? সত্য বাবুঃ একি সুবীর বাবু এতো দ্রুত আপনি সুপ্রতীক বাবুকে ভুলে গেলেন। ডায়েরীর প্রথম পাতায় ই তো সুপ্রতীক বাবুর লেখা ছিল। মনে করুন ডায়েরীর দ্বিতীয় খণ্ড পর্ব ৫- পোড়োবাড়ী ও ডায়েরী। কি লেখা ছিল ওখানে? “আমি সুপ্রতীক রায় চৌধুরী। সুতানুটি গ্রামের একচ্ছত্র জমিদার। ডায়েরী লেখার অভ্যাস বা অভিপ্রায় কোনকালেই আমার ছিলোনা। আমি বর্তমানে জীবন সঙ্কটে শঙ্কিত। আমার স্ত্রী মালা দুই বোন প্রিয়া ও গার্গী এবং অসংখ্য আত্মীয় পরিজন বেইমান দের ষড়যন্ত্রে আজ মৃত” আরও একটি কথা লেখা ছিল ওখানে যা আপনি কখনোই নিজের সাথে খেয়াল করেন নি। “প্রিয়া ও গার্গী জন্মসুত্রে যমজ”-- কিছু মিল খুঁজে পেলেন? সুবীর বাবু এই ডায়েরীটা অনেকবার হাত বদল হয়েছে কিন্তু ডায়েরীতে লেখা অন্য গল্প গুলো মুছে গেলেও দুটো গল্প মোছেনি, এক, দেবেন্দ্র, সত্যেন্দ্র, অনুরাধা, ঠাকুর ডাকাত এর গল্প, দুই সুপ্রতীকের গল্প। অন্য সময় ডায়েরী মোট ৩ টি খণ্ডে লেখা হয়ে থাকে। কিন্তু এইবার ডায়েরী ৪ টি খণ্ডে লেখা হচ্ছে। অর্থাৎ আপনার গল্প ও ডায়েরীতে লেখা হয়ে থাকবে। কেন জানেন? সুবীর বাবু কোনকিছু বুঝতে না পেরে চুপ করে তাকিয়ে থাকেন। সত্য বাবুঃ সুবীর বাবু আপনি দেবেন্দ্র, সত্যেন্দ্র ও সুপ্রতীকের ই বংশধর। যখন ব্রিটিশ ও বেইমান লাঠিয়ালদের আক্রমনে সমগ্র জমিদারবাড়ি শেষ হয়ে যায়, সকলে মনে করেছিলেন যে জমিদারবাড়ীর কোনও উত্তরাধিকারী নেই। কিন্তু একজন ছিলেন আর তিনি আর কেউ নয় আপনার ই এক পূর্বপুরুষ। আপনি আমার ই বংশের সুবীর বাবু। সুপ্রতীকের পিসতুতো ভাই একমাত্র জীবিত সদস্য ছিলেন, আপনি তার ই বংশধর। সুবীর বাবু নতুন এক রহস্যের আবরণে সম্পূর্ণ ভাবে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছিলেন, উনি শুধু নিস্ফলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন সত্য বাবুর দিকে। সত্য বাবুঃ সুপ্রতীক এর আত্মা আজও অভিশপ্ত। সুপ্রতীকের শরীর এখনো জমিদারবাড়ির বাইরের প্রাঙ্গনে মাটির নিচে প্রোথিত আছে কেউ জানেনা সেকথা। সুপ্রতীকের আত্মা চরম যন্ত্রণায় ছটপট করে চলেছে। জমিদার বংশে দীর্ঘ ১৭০ বছর পর আবার যমজ কন্যার জন্ম হয়েছে। সুপ্রতীকের আত্মার মুক্তির সময় এসে গেছে। নতুন গল্প প্রকাশ্যে এলেই সুপ্রতীক মুক্ত হবে। ডায়েরীটা মোট ৪ টি খণ্ডে লেখা হবে। এটা তৃতীয় খণ্ড। এখানে সুপ্রতীকের জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু অভিশপ্ত ইতিহাস ও তার সাথে আপনার সম্পর্ক এই সম্পর্কে আলোচনা হবে। চতুর্থ খণ্ডে মালতী দেবী ও আপনার দুই কন্যা রূপসা ও তিলোত্তমার যৌন ব্যাবিচার নিয়ে আলোচনা হবে। সুবীর বাবু ঠিক এই কারনেই আমি নিজে এসে আপনাকে গল্পটা বলতে চেয়েছিলাম। আপনার নিজের পক্ষে এটা বোঝা সম্ভবপর ছিলনা। সুবীর বাবু এক নতুন রহস্যের ও ইতিহাসের দোরগোড়ায় এসে দাঁড়ালেন। সত্য বাবুও নিজের নতুন গল্প শুরু করে দিলেন। সত্য বাবুঃ সালটা ছিল ১৮৫৭। সিপাহী বিদ্রোহের দামামা বেজে গেছে চারপাশে। ভারতবর্ষের সমস্ত রাজা, জমিদার ও মহাজনরা তখন দ্বিধাগ্রস্ত, হয় ব্রিটিশ নয় বিদ্রোহী যেকোনো একটি পক্ষকে সমর্থন করতে হবে। এছাড়া অন্য কোনও পথ ছিলনা। ব্রিটিশদের সমর্থন করলে বিদ্রোহীদের এবং বিদ্রোহীদের সমর্থন করলে ব্রিটিশদের রোষানলে পড়তে হবে। সমগ্র দেশবাসীর মতই দেশীয় রাজারাও তখন চরম সঙ্কটে। ইংরেজদের সমর্থন করলে যে জমিদারী রক্ষা পাবে তার কোনও নিশ্চয়তা ছিলনা। আর বিদ্রোহীদের সমর্থন করলেও যে জমিদারী রক্ষা পেয়ে যাবে তার ও কোনও নিশ্চয়তা ছিলনা। অনেক জমিদারের ই মনে ভয় ছিল এরা আসলে মুঘলদের ই নতুন করে ক্ষমতায় আনতে চায়, যদিও তা সত্য ছিলনা। এমন ই বিশ্বাস অবিশ্বাসের এক কঠিন ঐতিহাসিক সময়ে সুতানুটির জমিদার ছিলেন সুপ্রতীক রায় চৌধুরী। শোভাবাজার রাজবাড়ী ততদিনে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তাই সুপ্রতীক কে জমিদার না বলে রাজা বলাই শ্রেয়। অন্য সমস্ত জমিদারের মতই উনিও ছিলেন এক গভীর সঙ্কটের মধ্যে। যদিও এই কথাটা আগে থেকে বলে রাখতেই হয় যে প্রশাসনিক ও সামরিক দক্ষতায় উনি আমার দাদা অর্থাৎ দেবেন্দ্রর থেকে অনেকটাই এগিয়ে ছিলেন। আড়ালে বিদ্রোহী ও ব্রিটিশ উভয়কেই উনি আশ্বস্ত করে রাখলেও আসলে উনি ছিলেন স্বতন্ত্র। এই দুই পক্ষের আক্রমন ই রক্ষা করতে উনি তিলে তিলে গড়ে তুলেছিলেন এক লাঠিয়াল বাহিনী। এই লাঠিয়াল বাহিনী আর অন্য কোনও দল নয় ঠাকুর ডাকাতের দল। মৃত্যুঞ্জয়ের মৃত্যুর ২০০ বছর পর ও কলকাতার জঙ্গলে ঠাকুর ডাকাতের অনুগামীরা বিদ্যমান ছিল। বংশপরম্পরায় তারা জমিদারবাড়িকে চরম শত্রু হিসেবে মেনে এসেছেন। কোনোএক অলৌকিক ক্ষমতায় সুপ্রতীক এই ডাকাত দলকে বশ করে ও তাদের নিজের ই জমিদারবাড়ির লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে নিযুক্ত করে। এইভাবে ঠাকুর ডাকাতের দলবলের সমাপ্তি ঘটে। লাঠিয়াল বাহিনীর প্রধান ছিল বংশিরাজ। বংশিরাজের নামের শেষে রাজ শব্দটা ডাকাত দলে যোগ দেওয়ার পর ও নিজেই যোগ করে দেয়। অর্থাৎ বুঝতেই পারছেন রাজা হওয়ার প্রবল ইচ্ছা ও উদ্যম ছিল বংশীর মধ্যে। সামান্য গরীব চাষার ছেলে থেকে ৫ বছরের মধ্যেই ডাকাত সর্দার হয়ে যাওয়া, ইতিহাসটা যেন এককথায় ছিল রুপকথার ই মত। কিছুটা শ্যামবর্ণের এই মানুষটা শারীরিক ভাবে যথেষ্ট সবল হলেও উচ্চতার দিক থেকে ছিল যথেষ্ট খাটো। কিন্তু শরীরের চেয়েও যা বেশি লক্ষণীয় ছিল তা হোল ওর মস্তিষ্ক। ঠাকুর ডাকাতের দল ও জমিদারবাড়ির আপোষ এবং তারসাথে জমিদারবাড়ির লাঠিয়ালে পরিনত হওয়া এই গল্পটা বংশীর ডাকাত হওয়ার অনেক আগে থেকেই লেখা হয়ে গেছিল। সুপরিকল্পনা এই ছিল বংশীর ক্ষমতার চূড়ায় বসার প্রধান অস্ত্র। ক্ষমতা এই শব্দটা হয়ত পৃথিবীর সবচেয়ে ঘৃণ্য শব্দ। প্রথমে যে লোভ ছিল শুধুই রাজবাড়ীর নিকটে পৌঁছানোর লোভ তাই পরিনত হয় রাজ সিংহাসনে বসার লোভে। অবশেষে এর সাথে যোগ হয় মালা, প্রিয়া ও গার্গীকে ভোগ করার অদম্য কামনা। বংশীর শেষ ইচ্ছেটার ব্যাপারে অবগত না থাকলেও প্রথম দুই ইচ্ছের ব্যাপারে সুপ্রতীক যথাযথভাবেই অবগত ছিলেন। সুতানুটি ছিল সেই সময়ে সমগ্র বাংলার ক্ষমতার প্রানবিন্দু। ঠাকুর ডাকাতের দল ছিল জমিদারবাড়ির সবচেয়ে বড় শত্রু। রাজনীতি যে কি অদ্ভুত তা হয়ত চাণক্যের অর্থশাস্ত্র থেকেই বোঝা যায়। দুই বিপদ অর্থাৎ ইংরেজ ও বিদ্রোহী এদের থেকে কিছুটা নিরাপদে থাকার জন্য পুরনো শত্রুর সাথে মিত্রতা অত্যন্ত আবশ্যক হয়ে পড়েছিল। যদিও এই সিদ্ধান্তে ঠিক কি পরিমান ঝুঁকি ছিল তা একমাত্র সুপ্রতীক ই জানতেন। ডাকাতদের মধ্যে জন্মগতভাবেই জমিদারবাড়ির প্রতি এক বিষ রন্ধ্রে রন্ধ্রে পরিপূর্ণ ছিল। সেই বিষাক্ত শত্রুতার স্থলে মিত্রতা ও আনুগত্যকে প্রতিষ্ঠা করাই ছিল সুপ্রতীকের একমাত্র লক্ষ্য। অদ্ভুতভাবেই কাজটা অত্যন্ত সহজ হয়ে যায়। আর তারপর থেকেই সুচারু সুপ্রতীকের মনে বংশীর প্রতি সন্দেহ দানা বাধে। সুপ্রতীক নিজের বিশ্বস্ত কর্মচারীদের এই ব্যাপারে সতর্ক ও করে দেন ও তাদের বংশীর ওপর কড়া নজর রাখার আর্জি ও জানান। এইভাবে সুপ্রতীক সমগ্র খেলাটাকে প্রায় নিজের ই হাতের তালুতে নিয়ে আসেন। সমস্ত অবস্থার পরিবর্তন হথাত ই ঘটে যায়। জমিদারীর অন্তর্গত লক্ষিকান্তপুর অঞ্চলে হথাত ই বিদ্রোহীদের আবির্ভাব ঘটে। এই গ্রামের ই এক ছেলে সৈন্যদলে যোগ দেয় প্রায় ১ বছর আগে। তার ই সাহায্যে লক্ষিকান্তপুর হয়ে ওঠে বিদ্রোহীদের নয়া আঁতুড়ঘর। যা খুব দ্রুত প্রবলপরাক্রমি ব্রিটিশ রাজার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নির্দেশে সুতানুটি অঞ্চলে বিশাল ব্রিটিশ সৈন্যকে মোতায়েন করা হয়। আর এদের দেখভালের জন্য নিয়োগ করা হয় অত্যাচারী লর্ড সিলিং সাহেবকে। সিলিং সাহেবের জমিদারি অঞ্চলে প্রবেশ করার পর থেকেই সুপ্রতিকের সুতীক্ষ্ণ সমস্ত পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে শুরু করে। প্রথম প্রথম সুপ্রতীক সিলিং সাহেবের সাথে অত্যন্ত সুব্যবহার নিয়ে চলেন এবং অপর দিকে জমিদারবাড়ির ই লোকেরা লক্ষিকান্তপুরে গিয়ে বিদ্রোহীদের আশ্বস্ত করে যে জমিদারবাবু তাদের ই সাথে আছেন। কিন্তু এই দ্বিমুখি রাজনীতি চিরস্থায়ী হওয়া সম্ভব ছিলনা। সিলিং সাহেব ছিলেন প্রচণ্ড আক্রমণাত্মক। উনি একটা ভ্রান্ত ধারনায় বিশ্বাস করতেন, তা হোল ভীতি ই হোল সুসাশনের ভিত্তি। দেশের অন্যস্থানের মত উনিও সুতানুটির সংলগ্ন সমস্ত গ্রামে জোর করে চাষিদের নীল চাষ করাতে বাধ্য করলেন। উর্বরা জমিতে নীলচাষ ছিল খানিকটা আত্মহননের মত। খুব অল্পসময়ের মধ্যেই চাষিরা বিদ্রোহ শুরু করে দিল। এতে সিলিং সাহেবের অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে দ্বিগুন হয়ে যায়। সিলিং সাহেব ব্যাক্তিগতভাবে ছিলেন অত্যন্ত কামাতুর এক ব্যাক্তি। নির্বিচারে সৈন্যরা নীলকুঠিতে গরিব চাষিদের মা বোন কে উঠিয়ে আনতে শুরু করে। মা বোনের ইজ্জত মানুষের কাছে প্রানের চেয়েও প্রিয় ছিল। বিদ্রোহী হয়ে ওঠে চাষিরা। জমিদারবাড়ি তে চাষিদের প্রতিনিধিদল আসে, ওদের বিদ্রোহে পাশে থাকার জন্য। লক্ষিকান্তপুরে যে বিদ্রোহী সেনারা ঘাঁটি গেড়ে বসেছিল তারাও নজর রাখে সুপ্রতীকের এই সিদ্ধান্তের ওপর। সুপ্রতীক পড়ে যায় উভয়সঙ্কটের মধ্যে। সাহসী সুপ্রতীক চতুর হলেও অসৎ ছিলেন না। উনি জানতেন প্রজাকে রক্ষা করাই রাজা ও জমিদারের ধর্ম। মনে ভয় ও দ্বিধা থাকলেও উনি চাষিদের আশ্বস্ত করেন। মুহূর্তের মধ্যেই এই খবর পৌঁছে যায় লক্ষিকান্তপুরের বিদ্রোহী ও সিলিং সাহেব উভয়ের ই কাছে। বিদ্রোহীরা এতদিনে জমিদারের ওপর সম্পূর্ণভাবে নিজেদের বিশ্বাস রাখে একিসাথে সিলিং সাহেব ও জমিদারের এই স্পর্ধায় যথেষ্ট বিস্মিত হয়ে যান। সিলিং সাহেব ব্যাক্তিগত জীবনে যতই কামাতুর আর বিলাসী হন না কেন রাজনৈতিক ভাবে উনিও ছিলেন যথেষ্ট পারদর্শী। চালাক সিলিং সাহেব জানতেন যে এই মুহূর্তে ওনার হাতে চাষি, জমিদার ও বিদ্রোহীদের সম্মিলিত শক্তির সাথে লড়াই করার পর্যাপ্ত শক্তি নেই। তাই উনি কিছুটা ধীরে চলো নীতি নিয়েই এগোতে শুরু করলেন। অপরদিকে সমগ্র ঘটনার ওপর বংশী ও পুঙ্খানুপুঙ্খ নজর রেখেই চলছিল। এতদিনে ও নিজের ইচ্ছেগুলো চরিতার্থ করার সুযোগ পায়। ইচ্ছে বাসনা তো ওর মনে অনেক ই ছিল। কিন্তু সেই ইচ্ছেগুলো চরিতার্থ করার জন্য বংশী কোনোরকম তাড়াহুড়ো করার পক্ষপাতী ছিলনা। আপাতত ওর একটাই লক্ষ্য ছিল তা হোল সুপ্রতীকের হৃদয়ের একমাত্র আশ্রয় মালার সামনে নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমান করা। এই কয়েকটা দিনের মধ্যে সুযোগ বুঝে ও মালার সামনে রাজাবাবুকে নিয়ে নিজের মনের সমস্ত আশঙ্কা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করে ফেলেছিল। তাই রাজাবাবুর প্রানের মালার কাছে বংশী ছিল নেহাত ই ভালো মানুষ। সুপ্রতীক বাইরের জগতটায় ঠিক যে পরিমান সুচাগ্র ছিলেন অন্দরমহলে ছিলেন ততটাই উদাসীন। হয়ত ওনার দোষ ও সেরকম কিছু ছিলনা। অপরুপ সুন্দরী মালার প্রেমে যে উনি সম্পূর্ণ নিমগ্ন ছিলেন। সারাদিনের হতাশা ক্লান্তি ভুল গুলোকে ভুলে যেতে উনি কয়েকটা ঘণ্টার জন্য মালার কাজলহরিন দুই চোখে ডুব দিতে চাইতেন। হৃদয় বড়ই ঠুনকো, এই হৃদয় ই মানুষকে দুর্বল করে দেয়।
19-01-2019, 09:28 AM
পর্ব ১১- সাজানো বাগানের রুপকথাঃ
কথায় আছে মানুষের এক শরীরে একের বেশি মানুষ লুকিয়ে থাকে। সুপ্রতীকের ও একটাই শরীরের মালিক হলেও ওর মধ্যে দুখানা আলাদা আলাদা মানুষ লুকিয়ে ছিল। একজন যে কঠোর দক্ষ ও সুচতুর প্রশাসক, অন্যজন যে শুধুই উন্মত্ত প্রেমিক। জমিদার হিসেবে যে সুপ্রতীক ছিলেন দোর্দণ্ডপ্রতাপ, সেই সুপ্রতীক ই ছিলেন অন্দরমহলে একান্তই অনুগত দাস। তাজমহল বানানোর সামর্থ্য সুপ্রতীকের ছিলনা। হয়ত ভালোবাসা একটা কি দুটো তাজমহল দিয়ে প্রকাশ ও করা যায়না। তবুও প্রেমিকের মন নিজের হৃদয়কে মনের মানুষের সামনে ভূলুণ্ঠিত করার জন্য কোনও না কোনও তাজমহলের আশ্রয় নিয়েই থাকে। হয়ত তাজমহলের চেয়েও বেশি সুন্দর এক সৃষ্টি সুপ্রতীক নিজের হাতেই করে ফেলেছিলেন। জমিদারবাড়ির অন্দরমহলে বিশাল পরিমান জায়গা নিয়ে এক উদ্যান তৈরি হয়েছিল। সেখানে জুঁই, চাঁপা, রজনীগন্ধা, গোলাপ ও আরও বহু সুগন্ধি ফুলের গাছের সমারোহ ঘটেছিল। এই উদ্যান সুপ্রতীকের নিজের ই হাতে গড়া। এই উদ্যানের প্রতিটি ফুল, প্রতিটি পাতা, মাটির সোঁদা গন্ধ, হাল্কা মৃদুমন্দ হাওয়ায় গাছের পাতার খসখস শব্দ সব ই ছিল সুপ্রতীকের ভালোবাসার প্রতিমূর্তি। নিজের হাতে এই উদ্যানটি বানাতে সুপ্রতীকের প্রায় ৬ মাস লেগে গিয়েছিল। সুপ্রতীকের বুককে একটা ছুরি দিয়ে যদি কেটে দেওয়া হয় তাহলে ওতে একটা টকটকে লাল রঙের হৃদয় পাওয়া যাবে, যে হৃদয়ে প্রতিটি খাঁজে খাঁজে শুধু একটি ই নাম মালা, সুপ্রতীকের প্রিয়তমা মালা। মালা ঠিক কতটা ফুল ভালবাসতেন তা সুপ্রতীক আগে থেকে জানতেন না, উনি শুধু এটাই জানতেন কিছু গোলাপ, কিছু জুঁই আর কিছু রজনীগন্ধা এছাড়া বোধহয় মালা সম্ভব নয়। মালার সাথে বিবাহের পূর্ব হতেই উনি নিজে হাতে এই উদ্যান তৈরি করে যেন এটাই বোঝাতে চেয়েছেন যে মালা তুমি আমার ই, তোমার শরীর মনের প্রতিটি ফুল আমার ই হাতে তৈরি। সুপ্রতীকের ভালোবাসা এই ফুলগুলির ই মত নিষ্পাপ। মালা একবারের জন্য সুপ্রতীকের দিকে নিজের মমতা ভরা দুই চোখ দিয়ে তাকালে যেন এক ফাল্গুনে শিরশিরে বাতাস সুপ্রতীকের ওপর দিয়ে বয়ে যায়। এই উদ্যান মালার নিজের প্রানের চেয়েও প্রিয়। মালাকে কেউ কখনো বলে দেয়নি এই উদ্যান শুধুই মালার জন্য। আসলে হৃদয়ের ও এক ভাষা আছে আর সেই ভাষা বড়ই বধির। মালা কান পাতলেই সুপ্রতীকের হৃদয়ের স্পন্দন শুনতে পায়, ওর প্রতি মুহূর্তের সঙ্কোচ লজ্জা সব ই অনুভব করতে পারে। আর মালার হৃদয় ও একি ভাষায় উত্তর দেয় “প্রিয়তম কিসের এতো সঙ্কোচ কিসের এতো লজ্জা। যে ফুল নিজের হাতে তুমি সাজিয়ে দিয়েছ তাকে মালা নিজের শরীরে ধারন করেছে” সাধারনত জমিদারীর কাজ সেরে সুপ্রতীক ঠিক ১২ ঘটিকায় অন্দরমহলে প্রবেশ করেন। এর প্রায় আধ ঘণ্টা আগে থেকেই মালা উদ্যানে দাঁড়িয়ে থাকে। ফুলের সাথে, পাখির সাথে গাছের পাতার সাথে কথা বলে, ও অধীর অপেক্ষা করে কখন আসবে ওর হৃদয়ের শাহজাদা। যখন ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়, কোনও এক ফুলের পাপড়িতে নিজের আদ্র নরম ওষ্ঠ স্পর্শ করে বলে “যা না রে ডেকে নিয়ে আয় আমার প্রিয়তমকে” আর ঠিক সেই মুহূর্তেই বাগানের ধার দিয়ে মুখে এক তৃপ্ত হাসি মেখে ধীরে ধীরে অন্দরমহলে প্রবেশ করেন সুপ্রতীক। এতো ছিল রোজকার ঘটনা। ওদের দুজনার ভালোবাসা ইতিহাসে স্থান পায়নি। কেনই বা পাবে ইতিহাস তো শুধুই তাদের জন্য যারা নিজের ভালবাসাকে দম্ভরুপে পৃথিবীর কাছে পরিবেশন করতে জানে। সেদিন জমিদারবাড়ি একটু অধিক ই কোলাহলপূর্ণ ছিল। অন্দরমহলেও সেই কোলাহল পৌঁছে গেছিল। কোকিলের কুহুডাক, ঘুঘুর মিষ্টি সুরেলা আওয়াজ সেদিন কেমন যেন হারিয়ে গেছিল। তারবদলে জমিদারবাড়ি জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল এক গভীর মেঘের গর্জন। মালার কেন জানিনা মনে হচ্ছিল এই কালোমেঘ ভেঙে নেমে আসবে তীব্র বর্ষণ। আর তারপর এক এক করে গোলাপের পাপড়ি গুলো এক এক করে সব ঝরে পড়ে যাবে। সাজানো এই বাগানের স্থলে অভিষেক হবে এক মরুভুমির, ধুধু সর্বনাশা মরুভুমি। মালা তখন বাগানেই দাঁড়িয়ে সুপ্রতীকের অন্দরমহলে প্রবেশ করার প্রহর গুনছিল। বাইরে তখন গরীব চাষিদের হাহাকার। ফিরিঙ্গী সাহেবদের হাতে বাড়ীর মা বোনের ইজ্জত যাওয়ার লজ্জার ক্রন্দন। সুপ্রতীক অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে সকলকে আশ্বস্ত করার দৃঢ় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মালার এসব ভালো লাগেনা। বারবার মন বলে কেমন হত যদি ওরা এই জমিদারবাড়ির বদলে গ্রামের কোনও মাটির বাড়ীতে থাকতো। রোজ দুপুরে ভাতের থালা নিয়ে নিজের প্রিয়তমর জন্য অপেক্ষা করে থাকতো। কোনও এক সময় হয়ত মনের মানুষটি ঘরে প্রবেশ করতেন, মালা হাতে একটা ঘটি নিয়ে ছুটতে বাইরে বেড়িয়ে আসত। নিজের হাতে নিজের ই প্রভুর দুই পা ধুইয়ে দিয়ে ভেতরে তাকে আমন্ত্রন জানাত। এই জমিদারবাড়ি এবং জমিদারির দায়িত্ব যেন মালাকে কিছুতেই সুপ্রতীকের একান্ত আপন হতে দেয়না। মালার মনে পড়ে যায় প্রভাতকালে অন্দরমহল থেকে বিদায় নেওয়ার আগে সুপ্রতীক ওর দিকে একখানা চিঠি ছুঁড়ে দিয়েছিলেন। সেই চিঠি মালার অন্তত শতাধিক বার পড়া হয়ে গিয়েছে। যতবার পড়েছে লাল বেনারসি সাড়ীর আচলে মুখ লুকিয়ে হেসেছে আর লজ্জায় নিজের দুই গাল লাল করেছে। মালা জানে আজ ওর প্রিয়তমর আসতে কিছুটা দেরি ই হবে। মালা সাড়ীর আচল থেকে আবার একবার চিঠিটা নিয়ে পড়তে শুরু করে। প্রিয়তমা, বেশ কয়েকদিন যাবত আমি লক্ষ্য করছি যে তুমি আমার জমিদারির ব্যাস্ততা নিয়ে অত্যাধিক চঞ্চল। আমি জানি তুমি দাসিদের থেকে প্রতিমুহূর্তে খোঁজখবর নাও আমি কি অত্যাধিক দুশ্চিন্তা করছি কিনা সে ব্যাপারে। প্রিয়তমা আমি আজ সকালে দাসীদের ডেকে আলাদা করে বলে দিয়েছি ওরা যেন তোমায় কিছু না জানায়। জানি তোমার অভিমান হোল আমার ওপর। তোমার এই চঞ্চলতা, আমাকে নিয়ে চিন্তা করা এসব দেখে আমিও বিগলিত হয়ে যাই। কোন পুরুষ না চায় তার মনের মালকিন তাকে নিয়ে চিন্তা করুক ভাবুক। কিন্তু মালা চিন্তা করলে যে তোমার মুখের ওই হাসিটা মিলিয়ে যাবে। জানো ওই হাসিটা মিলিয়ে গেলে কি হবে? কোকিলগুলো আর কু কু করে ডাকবে না, ফুলগুলো তোমার দিকে তাকিয়ে হাসবেনা, এমনকি তোমার মাথার ওই লম্বা চুলের গোছা যে সবসময় তোমায় মিষ্টি গালের ওপর পড়ে তোমায় বিরক্ত করে সেও থমকে যাবে। নিজের একটা ক্ষুদ্র আনন্দের জন্য আমি যে এতোগুলো প্রানিকে কষ্ট দিতে পারিনা মালা। জানি সারাদিন তোমার খুব একা লাগে। তুমি বাগানে ফুলের সাথে কথা বল, পাখির সাথে গান কর, আমি ঠিক এসে যাবো। তুমি কিন্তু নিজের হাতে আমায় খাইয়ে দিয়ো। ইতি- তোমার হৃদয় ও মনের একান্ত অনুগত তোমার প্রিয়তম” মালা চিঠিটা আবার স্বস্থানে অর্থাৎ নিজের শাড়ির আঁচলে লুকিয়ে রাখে। সামনেই একটা হলুদ গোলাপের কুঁড়ি মাথা তুলে দাঁড়িয়ে ছিল। ওর দিকে তাকিয়ে মালা বলে ওঠে “প্রিয়তম ফুল ছাড়া কি আর মালা বাঁচে। তুমি শীঘ্র ফিরে আসো। আমি তোমার অপেক্ষায় রয়েছি। এই নাও তোমার পুরস্কার” মালা নিজের লাল নরম দুই ওষ্ঠ কুঁড়িটার সদ্য জন্ম নেওয়া পাপড়িগুলোর ওপর রাখে। ও জানে এই চুম্বন এতক্ষনে ওর শাহজাদার হৃদয়ে পৌঁছে গেছে। মালা অপেক্ষা করতে থাকে সুপ্রতীকের। সময় পেরিয়েই চলে, কিন্তু বাইরের কোলাহল আরও বাড়ে। এবার কিছুটা দুশ্চিন্তাই হয় মালার। এক এক করে সব দাসীদের কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করে বাইরে কি হচ্ছে, মহারাজ কোথায়? কিন্তু কেউ ই ওনাকে উত্তর দেয়না। মনেমনে বলে ওঠে মালা “রাজা আজ তোমার সাথে আমার আড়ি। তুমি রাজা কিন্তু তাই বলে এক স্ত্রীর মনের উদ্বেগ, আশঙ্কাগুলোর ওপর রাজত্ব করতে পারনা” সময় ক্রমশ গড়িয়েই যায়, কিন্তু রাজাবাবুর আর অন্দরমহলে ফেরা হয়না। মালার প্রচণ্ড রাগ হতে শুরু হয় সুপ্রতীকের ওপর। কোন সকালে খাওয়া দাওয়া করে বেড়িয়েছেন উনি, এতক্ষনে হয়ত ওনার শরীর ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় ছটপট করছে। আর থাকতে পারেনা মালা। বাগান থেকে বেড়িয়ে এসে অন্দরমহল ও বৈঠকখানার মাঝে যে প্রশস্ত বারান্দা রয়েছে সেখানে চলে আসে। ঠিক এই জায়গায় দাঁড়িয়ে পাহারা দেয় বংশী। এর আগেও মালা দু তিনবার বংশীকে রাজাবাবুর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছে। মালাকে কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে ওখানে আসতে দেখে বংশী উঠে দাঁড়ায়। হাতের মোটা লাঠিটা দেওয়ালে হেলান দিয়ে রেখে ধীরে ধীরে মালার দিকে এগিয়ে যায়। বংশীঃ রানীমা, কোনও আজ্ঞা করবেন আমায়? ভৃত্যের প্রান আপনার চরনেই রয়েছে। আমি আপনার আজ্ঞার অপেক্ষায় রয়েছি। বংশীর এই অত্যাধিক প্রভুভক্তি মালাও খুব একটা ভালো নজরে দেখেনা। কিন্তু মালাও নিরুপায়, রাজাবাবুর মানসিক অবস্থা জানার জন্য ওনার মন এই মুহূর্তে আনচান করে উঠছে। সঠিক উত্তরটা বংশী ছাড়া আর কেউ ই যে দেবেনা তা উনিও জানেন। মালাঃ বংশী বাইরে এতো কোলাহল কিসের? ওরা কারা, ওরা কাদছে কেন কারুর কোনও বিপদ হয়নি তো? বংশীঃ মহারানী, মহারাজের কঠোর নির্দেশ আছে জমিদারীর কথা আপনাকে জানিয়ে বিব্রত না করার। কিন্তু আপনার একান্ত অনুগত ভৃত্যেরও আপনার এই বিচলন সহ্য করা সম্ভব নয়। রানিমা বেশ কিছুদিন যাবত ফিরিঙ্গীদের অত্যাচার বেড়ে গেছে। ওরা গরীব চাষিদের জোর করে নীল চাষ করতে বাধ্য করছে। এমনকি ওরা এখন গরীব চাষিদের বাড়ীর মা বোনের দিকেও হাত বাড়িয়েছে। আজ চাষিরা মহারাজের কাছে নিজের নালিশ জানাতে এসেছে। মালা গভীর চিন্তায় পড়ে যায়। তাহলে কি মহারাজ এবার প্রবল শক্তিশালী ইংরেজদের সাথে যুদ্ধের কথা ভাবছেন। মালার বাবা ছিলেন বিদগ্ধ পণ্ডিত। মালা বাবার থেকে শুনেছে যে ইংরেজরা প্রায় সমগ্র পৃথিবীকে হারিয়ে আমাদের এই বঙ্গদেশে এসেছে। খুব দ্রুত আমরাও ওদের দাসে পরিনত হব। ছোটবেলা থেকেই মালার ইংরেজদের প্রতি প্রবল ভয়। মালা মনে মনে ঠিক করে সুপ্রতীক যত রাগ করার করুক, মালা আজ ওনাকে বলবেন যে ইংরেজদের সাথে যুদ্ধ না করতে। মালার কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখে কামুক বংশী আরও এক ধাপ এগিয়ে যায়। বংশিঃ রানিমা, আপনি কোনও চিন্তা করবেন না। ইংরেজরা যতই শক্তিশালী হোক না কেন মহারাজকে রক্ষা করতে আমাদের মত বীররা সদাজাগ্রত আছে। এবার মালা কিছুটা বিরক্তি ই প্রকাশ করে। নিজের মুখে আবার কেউ নিজেকে বীর বলে সম্ভাষণ করে নাকি। বংশীর দিকে তাকিয়ে কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে মালা, ও আবার অন্দরমহলে প্রবেশ করে। বংশী নিজের কামাতুর দৃষ্টির সাথে তাকিয়ে থাকে নরম তুলতুলে দোদুল্যমান নিতম্বের দিকে। বংশীর তলপেট শিরশির করে ওঠে, নিজের পৌরুষের সিংহটা গর্জন করে ওঠে। বংশী জানে সময় ওর ই পক্ষে, সবকিছুই ধীরে ধীরে সুপ্রতীকের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। বংশী ততক্ষন মালার দিকে তাকিয়ে থাকে ঠিক যতক্ষণ মালাকে দেখা যায়। এদিকে উদ্বিগ্ন মালা একবারের জন্য ও এই কুনজর খেয়াল করেনি, যদি খেয়াল করত তাহলে ঠিক ই বুঝে যেত ওর ই বাড়ীর মধ্যে লুকিয়ে আছে কোনোএক মীরজাফর। মালার কিছুতেই আর বাগানে থাকতে মন চায়না। হথাত ই যেন বাগানের সতেজ ফুলগুলো শুকিয়ে যায়, বাগান ছেড়ে সমস্ত পাখি নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে থাকে। মালা অন্দরমহলের ভেতরের ঘরে একটা আরাম কেদারা নিয়ে বসে পড়ে। বাইরের কোলাহল ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে আসে। মালা বোঝে তার মনের রাজকুমারের ভেতরে প্রবেশ করার সময় হয়েছে। আজ মালা অভিমান দেখাবে রাগ দেখাবে, ও জানে সেই অধিকার ওর আছে। সুপ্রতীক রাজা গোটা পৃথিবীর কাছে কিন্তু মালার কাছে শুধুই প্রেমিক প্রিয়জন। মালা দরজার ফাঁক দিয়ে বাইরের দিকে তাকায়। সুপ্রতীক অন্দরমহলে প্রবেশ করছে। অন্দরমহলে প্রবেশপথেই প্রথমে পরে মালা ও সুপ্রতীকের নির্ভেজাল প্রেমের প্রতীক ওই সাজানো সুন্দর বাগানটা। ভেতরে প্রবেশ করেই সুপ্রতীক বাগানের দিকে তাকায়, মুখের সেই মিষ্টি হাসি, মনের মধ্যে তৈরি হওয়া সুতীব্র প্রেমের গহন কোথায় যেন হারিয়ে যায়। সুপ্রতীকের মুখটা প্রচণ্ড ফ্যাকাশে হয়ে ওঠে। মালার ও হৃদয়টা কেঁদে ওঠে, প্রিয়তমর এই কস্তটা মালার পক্ষে সহ্য করা খুব ই কঠিন ছিল। মালা যেন মনে মনে বলে ওঠে “পাও তুমি যত ইচ্ছে কষ্ট পাও, তবু আমি তোমায় ফিরিঙ্গীদের সাথে যুদ্ধ করতে দেবনা” কি সুবীরবাবু রুপকথা মনে হচ্ছে তাইতো? সুবীরবাবু কারুর জীবন ই রুপকথা হয়না। আপনার আর মালতী দেবীর জীবন ও নয়। সুবীর বাবু কোনও উত্তর দেন না, শুধু একাগ্র মনে সত্য বাবুর গল্প শুনতে থাকেন।
19-01-2019, 09:29 AM
পর্ব ১২- রাজনীতির পাশাখেলাঃ
অন্দরমহলে প্রবেশ করেই রোজ সুপ্রতীক সোজা বাগানের দিকে তাকাতেন, আর মুখে একটা স্নিগ্ধ হাসি নিয়ে সুপ্রতীকের সাধের বাগান থেকে বেড়িয়ে আসতেন মালা। এই মিষ্টি হাসিটা দেখার জন্য লাল ওই দুই ওষ্ঠকে একবার স্পর্শ করার জন্য সুপ্রতীক ও পাগলের মত মালার কাছে ছুটে আসতেন। রোজকার এই ঘটনায় কোনও ক্লান্তি ছিলনা, একঘেয়ে ছিলনা। আজ মালাকে বাগানের মধ্যে দেখতে না পেয়ে সুপ্রতীকের মনটা বিষণ্ণ হয়ে যায়। মনে মনে ভাবেন মালার শরীর ভালো আছে তো। হন্তদন্ত করে উনি অন্দরমহলের ভেতরে প্রবেশ করেন। ওনাকে ওইভাবে আসতে দেখে মালাও ছুটতে গিয়ে পর্দার আড়ালে নিজের শরীরটা লুকিয়ে দেন। ভেতরে প্রবেশ করেই সুপ্রতীক “মালা মালা” বলে উদ্বিগ্ন কণ্ঠে ডাকতে থাকেন। পর্দার ভেতর থেকেই মালা উত্তর দেয় মালাঃ আমার আপনার ওপর অভিমান হয়েছে। আমি আপনার সামনে আসতে চাইনা। সদ্য অষ্টাদশী মালার এই বাৎসল্যে সুপ্রতীকের মনে আবার ভালোবাসার আগুন জ্বলে ওঠে, মুখে সেই স্নিগ্ধ সতেজ হাসিটা ফিরে আসে। সুপ্রতীক ধীরে ধীরে পর্দার দিকে এগিয়ে যান। পর্দা সুদ্ধু পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেন লুকিয়ে থাকা মালাকে। সুপ্রতীকঃ আমি জানি কেন আমার প্রিয়তমার অভিমান হয়েছে। তুমি মিছিমিছি আমায় নিয়ে চিন্তা কর মালা। আমি যে চাইনা একমুহূর্তের ও জন্য তোমার মুখের ওই মিষ্টি হাসিটা মিলিয়ে যাক। (পর্দার ওপর থেকেই উনি নিজের চিবুকটা মালার নরম কাঁধের ওপর রাখেন, হাতদুটো আরও শক্ত করে মালার পাতলা কোমরটাকে জড়িয়ে ধরে) তুমি যে আমার ভালোবাসা মালা। আমি চাইনা তুমি দুশ্চিন্তা কর। জানো মালা আমি সেই বাল্যকাল থেকে জমিদারীর কাজ করে আসছি। অনেক কঠিন পরিস্থিতি এসেছে কিন্তু আমি ভেঙে পড়িনি। তুমি কি মনে কর আমি এই জমিদারির চাপ সামলাতে পারবোনা। আমি কি এই কাজের অযোগ্য। সুপ্রতীক জানেন উনি একদম সঠিক স্থানে আঘাত করে ফেলেছেন। পর্দার মধ্যে থেকে ছিটকে বেরোয় মালা, সম্পূর্ণভাবে সুপ্রতীকের দিকে ঘুরে নিজের ডান হাতটা দিয়ে সুপ্রতীকের মুখ চাপা দেয়। মালাঃ অনুগ্রহ করে একথা মুখেও আনবেন না। আপনি কি বোঝেন না আমি আপনাকে ঠিক কতটা সম্মান করি। আপনি কি করে এরকম ভেবে নিলেন। আমি কি সত্যি এরকম ভাবতে পারি। এতক্ষনে সুপ্রতীক সম্পূর্ণভাবে মালাকে নিজের বাহুডোরে বেঁধে ফেলেন। একহাত দিয়ে মালার কোমরটাকে জোরে নিজের শরীরের দিকে টেনে নেন আরেকহাতে মালার হাতটা আলতো করে ধরে নিজের দুই ঠোঁট দিয়ে ওটাকে চুম্বন করতে থাকেন। নিজের প্রানের পুরুষের স্পর্শে আসতে আসতে মালার কাজলহরিন দুই চোখ বুজে আসে। ঠোঁটদুটি থরথর করে কাঁপতে থাকে। সুপ্রতীকের ও নজর সুন্দর পুরু ওই দুটি ঠোঁটের দিকে। ঠোঁটের এই কম্পন যেন সুপ্রতীকের পৌরুষ আরও বাড়িয়ে দেয়। মালা হারিয়ে যায় প্রিয়তমর বাহুতে। সুপ্রতীক নিজের দুই ওষ্ঠ মালার দুই ওষ্ঠের নিকটে নিয়ে যান। মালার নাসারন্ধ্রের গরম বায়ু ধীরে ধীরে সুপ্রতীকের সমগ্র শরীরকে উত্তপ্ত করে তুলতে শুরু করে। হয়ত দুজনের ওষ্ঠ একে অপরকে আলিঙ্গন করার জন্য আর প্রহর গুনতে পারছেনা, ঠিক এরকম সময় ই মালা বলে ওঠে মালাঃ আপনি যদি আমায় সত্যি ই ভালোবেসে থাকেন তাহলে আজ এইমুহূর্তে আমায় একটা কথা দিতে হবে আপনাকে। নয়ত আমি নিজেই নিজেকে কষ্ট দেবো, কাউকে কিছু বুঝতেও দেবনা। সুপ্রতীক প্রায় নিজের সুন্দরী বউএর প্রেমসাগরে ডুব দিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু নিজেকে সংবরন করে নেন। মালাকে নিজের বুকে টেনে নেন। নিজের দুহাত মালার মাথায় রেখে সুন্দরভাবে মালার মাথায় স্নেহের স্পর্শ রাখতে শুরু করেন। সুপ্রতীকঃ মালা আমি তোমার জন্য সব করতে পারি। আমি তোমার জন্য নিজের প্রান ও দিতে... মালা প্রচণ্ড জোরে সুপ্রতীকের বন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত করে, দুহাত দিয়ে সুপ্রতীকের বুকের পোশাক কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে মালাঃ আপনি কেন এরকম অমঙ্গলের কথা বলে আমায় আহত করেন। আপনার চিঠি পড়ে আমি অভিমান করিনি। আমি শতাধিকবার আপনার চিঠি পড়েছি। আপনি দাসীদের আমাকে উদ্বিগ্ন করতে বারন করেছেন তাতেও আমি অভিমানী হইনি। সুপ্রতীকঃ তাহলে কি হয়েছে প্রিয়তমা। আমার কি কোনও ভুলত্রুটি হয়েছে পতিধর্ম পালনে। তুমি আমায় নিঃসঙ্কোচে বল, আমি সব মেনে নেবো। সুপ্রতীক নিজের দুই হাত দিয়ে মালার দুই গালকে শক্ত করে ধরেন, মালার মুখ ওপর দিকে তুলে ধরেন। মালার দুই কাজলহরিন চোখ সোজা সুপ্রতীকের চোখের দিকে দৃষ্টিপাত করে। সুপ্রতীক লক্ষ্য করেন, মালার দুই চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। সুপ্রতীক নিজের দুই হাত দিয়ে চোখের জল মুছিয়ে দিতে দিতে প্রশ্ন করেন সুপ্রতীকঃ কি হয়েছে মালা, বলই না আমায়। মালাঃ ছোটবেলায় বাবার থেকে শুনেছি ইংরেজরা প্রবল শক্তিশালী। ওরা সমগ্র দেশকে পরাজিত করে আমাদের এই বঙ্গদেশে এসেছে। আমি জানতে পেরেছি আপনি ওই ফিরিঙ্গীদের সাথে যুদ্ধ করতে চলেছেন। আমার মাথার দিব্যি রইল আপনি এরকম করবেন না। আর যদি হয় তাহলে আমার মরা মুখ দেখবেন। কথা শেষ করেই মালা ডুকরে একটু কেঁদে উঠে নিজের মাথাটা সুপ্রতীকের বুকে সম্পূর্ণভাবে লুকিয়ে দেয়। সুপ্রতীক ও ওর মাথাটা শক্ত করে নিজের বুকে ধরে থাকে। এতক্ষন যে ভয় ও সঙ্কোচ সুপ্রতীকের হৃদয়কে তোলপাড় করে দিচ্ছিল তা যেন অজান্তেই মিলিয়ে গেলো। আর তার বদলে এসে গেলো এক অষ্টাদশীর নিষ্পাপ চিন্তায় তৈরি নির্ভেজাল ভালোবাসা। সুপ্রতীক আবার মালার মুখটা ওপরের দিকে তুলে কপালে একটা স্নেহে ভরা চুম্বন উপহার দিয়ে বলে উঠলেন সুপ্রতীকঃ জানো মালা, আজ আমার মন একদম ঠিক ছিলনা। শুধু এটাই ভাবছিলাম যদি ইংরেজদের সাথে সত্যি ই যুদ্ধ লেগে যায় আমি আমার স্তিমিত ক্ষমতা দিয়ে কিকরে ওদের সাথে লড়বো। আজ মনে হচ্ছে ইংরেজ কেন যতবড় দস্যুর সাথেই লড়াই হোক, আমি ই জিতব। কেন জানে? কারন আমার কাছে মালার ভালোবাসা আছে, যা ওদের কাছে নেই। মালা আবার শীতল কণ্ঠে বলে ওঠে মালাঃ আপনি লড়বেন না তো ফিরিঙ্গীদের সাথে? আপনি কিন্তু আমায় স্পর্শ করে কথা দিয়েছেন। সুপ্রতীক শুধুই চোখের ইশারায় মালাকে বুঝিয়ে দেয় যে উনি যথাসম্ভব চেষ্টা করবেন ওদের সাথে লড়াই না করার। এতক্ষনে মালার বুকের মধ্যে বয়ে চলা তুফান শান্ত হয়, সেই পুরনো রৌদ্র ঝলমলে হাসিটা ফিরে আসে। মালা দুচোখ বন্ধ করে নিজের মাথাটা আরও উঁচু করে দেয়। মালার হৃদয়ের প্রতিটি ভাষাই সুপ্রতীক বোঝে। এই মুহূর্তে মালার হৃদয় বলে উঠল “নাও প্রিয়তম নিজের পুরস্কার গ্রহন কর” সুপ্রতীক ও নিজের পুরস্কার গ্রহন করতে কোনও দ্বিধা রাখেনা। নিজের দুই পুরু ওষ্ঠের মাঝে মালার নীচের আদ্র কোমল ঠোঁটকে সম্পূর্ণভাবে জাপটে ধরে। মালা নিজের কামনার আগুনকে নেভাতে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সুপ্রতীককে। কালো মেঘ সরে গিয়ে ঝিকমিকে রোদ্দুর স্নান করিয়ে দেয় দুই কপোত কপোতীকে। মালাই নিজেকে সুকৌশলে সুপ্রতীকের বাহুডোর থেকে মুক্ত করে। “চলুন আহার গ্রহন করবেন” বলে ভেতরের ঘরে প্রবেশ করে মালা। প্রায় ২-৩ দিন ধরে সমগ্র পরিস্থিতির ওপর সুচাগ্র নজর রেখে চলেছে বংশী। এরমধ্যে ২-৩ বার রাতের অন্ধকারে ও সিলিং সাহেবের সাথে দেখাও করে এসেছে। শুধু একদিন সিলিং সাহেবের সাথে কথা বলতে হবে এইভেবে পাশের গ্রামের এক পণ্ডিত ব্যাক্তির থেকে ইংরিজি ভাষাটা ও প্রায় ১ বছর আগে থেকেই আয়ত্ত করতে শুরু করে দিয়েছিল। যদিও সিলিং সাহেবের সাথে দেখা করে দেখে যে সিলিং সাহেব বেশ ভালোই ভাঙা ভাঙা বাংলা বলেন। বেশ ভালোই লাগে সিলিং সাহেবের মুখের ওই বাংলা উচ্চারন। সিলিং সাহেব যে বংশীকে বেশ বিশ্বাস করেছেন তা বংশী ভালোই আন্দাজ করতে পেরেছে। সিলিং সাহেবের কাছে যে উদ্দেশ্য নিয়ে বংশী গিয়েছিল তা হোল ইংরেজদের চোখে জমিদার সুপ্রতীককে যথাসম্ভব শত্রু প্রমান করা। সুপ্রতীক যে নিজের চরদের সাহায্যে লক্ষ্মীকান্তপুরের বিদ্রোহীদের সাথে যোগাযোগ রেখে চলেছে ও তাদেরকেই নিজের আপনজন মনে করে এটা বোঝাতে বংশী খুব ভালোভাবেই সক্ষম হয়েছে। আজ সকাল থেকে যে বিদ্রোহী চাষিরা জমিদারের কাছে নিজেদের নালিশ জানাতে এসেছে তাও বংশী নিজের এক বিশ্বস্ত অনুচরের মাধ্যমে সিলিং সাহেবের কাছে খবর পাঠিয়ে দিয়েছে। শেষ যেবার ও সিলিং সাহেবের সাথে দেখা করেছিল সেবার সিলিং সাহেব ওকে একটি আর্জি জানিয়েছিলেন। সিলিং সাহেব চান বংশী রাতের অন্ধকারে সুপ্রতীক কে হত্যা করুক এবং তার প্রতিদানে সুপ্রতীকের স্থলে বংশীকেই উনি জমিদার হিসেবে নিযুক্ত করে দেবেন। বংশী ডাকাত হওয়ার জন্য ডাকাত হয়নি, ছোট থেকেই ওর ক্ষমতার লোভ। ও জানে এই সুতানুটি অঞ্চলে ক্ষমতার উৎস মোট দুই জায়গায়ঃ এক জমিদারবাড়ি ও দুই ঠাকুর ডাকাতের দল। অত্যন্ত বুদ্ধি খাটিয়েই বংশীর ডাকাত সর্দারে পরিনত হওয়া। এবং তারপর ওর ই ব্যাক্তিগত দক্ষতায় ডাকাতের দল পরিনত হয় জমিদার বাড়ীর লাঠিয়ালে। ক্ষমতা বংশীর চোখের সামনে ভেসে উঠেছে কিন্তু তাতেও বংশী ক্ষান্ত হয়নি। মালার ওপর বংশীর বহুদিনের লোভ। বংশী অন্দরমহল ও বাহিরমহলের মাঝে দায়িত্বে থাকে। তাই প্রায় ই ওর চোখে ভেসে ওঠে মালা আর সুপ্রতীকের শরীর মন দুইএর মিলে যাওয়ার রুপকথা। ও কিছুতেই মানতে পারেনা সুপ্রতীকের এই মালাকে ভোগ করা। মালাকে নগ্ন একা সুপ্রতীক ও দেখেনি, মিলনরত অবস্থায় বহুবার বংশীও দেখেছে। আজ ও যখন ওরা নিজেদের হৃদয়ের গভীর ভালোবাসা প্রকাশ করছিল তখন বংশী বারান্দা থেকে একদৃষ্টিতে সব ই লক্ষ্য করছিল। বংশী সিলিং সাহেবের কথায় হয়ত রাজি হয়ে যেতে পারতো কিন্তু ও মীরজাফরের কাহিনী শুনেছে। বেইমান মীরজাফরকে কিন্তু ইংরেজরা ছারেনি। তাই ও শুধুই সময়ের অপেক্ষায় থাকে। ও জানে এই ফিরিঙ্গীদের বিশ্বাস করে কিছু করলে ওর পতন অবশ্যম্ভাবী। বংশীর কাছে কয়েকটি অঙ্ক রয়েছে। সেই অঙ্কগুলো যদি ও কোনোদিন সমাধান করে দিতে পারে তো কেল্লাফতে। বিদ্রোহীরা কেউ ই জমিদার বা রাজবংশের নয়, ওরা সবাই গরীব কৃষক ও সাধারন বাড়ীর ই সন্তান। সাধারনত এদের মধ্যে বাংলার জমিদার ও মহাজনদের নিয়ে খুব একটা সন্তোষভাব নেই। সুপ্রতীক নিজে প্রজাদের কল্যান করলেও তার পূর্বপুরুষরা কম অত্যাচার করেনি সাধারন প্রজাদের ওপর। সেই অত্যাচারের কাহিনী আজও ঘরে ঘরে লোকমুখে ঘুরে বেড়ায়। অর্থাৎ সিপাহী ও বিদ্রোহীরা শুধুই জমিদারকে ব্যাবহার করছে, কখনোই সুপ্রতীককে নিজেদের মানুষ বলে গন্য করছেনা। সুতানুটি ও তার আশপাশের গ্রামে ইংরেজদের সৈন্য মোতায়েন আছে তাই বিদ্রোহীরা এই অঞ্চলটায় ঘাঁটি গেড়ে উঠতে পারেনি। একসময় অবধি সুপ্রতীক, সিলিং সাহেবকে যথেষ্ট তোয়াজ করে চলতেন। এটা প্রায় সমস্ত গ্রামবাসীর ই জানা। অনেকে এখনো এটাই বিশ্বাস করেন এতো জায়গা থাকতে এই সুতানুটিতে ইংরেজদের ঘাঁটি গাড়ার পেছনে আসলে রয়েছেন সুপ্রতীক। জমিদার ই ইংরেজদের সাথে সদ্ভাব রাখতে ওদের এই অঞ্চলে আশ্রয় দিয়েছে। অর্থাৎ গরীব কৃষকের ওপর যে অত্যাচার হচ্ছে তার মুলে ওই জমিদার সুপ্রতীক। অপরদিকে সিলিং সাহেবের একটা সময় অবধি জমিদারের ওপর যথেষ্ট আস্থা থাকলেও কিছুটা বংশীর কূটনীতি ও কিছুটা গ্রামবাসীদের আশ্রয় দেওয়া এই দুই সিলিং সাহেবের মনে সুপ্রতীকের প্রতি বিষবৃক্ষ রোপণ করে দিয়েছে। এদিকে সুপ্রতীকের কাছে ইংরেজ ও সিপাহী উভয় ই শত্রু। সুপ্রতীক মনপ্রানে বিশ্বাস করে যে বিদ্রোহীরা মুঘলদের ই ফিরিয়ে আনতে চায় আর তাতে জমিদার ও মহাজনদের এক বিশাল ক্ষতি। ইংরেজরা সম্পূর্ণভাবে ক্ষমতায় এলেও জমিদারদের এক বিশাল ক্ষতি। সুপ্রতীকের প্রধান দুর্বলতা মালা, গার্গী ও প্রিয়া। গ্রামবাসীদের দুর্বলতা তাদের অজ্ঞতা ও দ্রুত কাউকে অবিশ্বাস করার প্রবনতা। সিপাহিদের দুর্বলতা তাদের বিপ্লবী মনোভাব। সিলিং সাহেবের দুর্বলতা নারী আশক্তি। আর বংশীর দুর্বলতা বংশী রাজনীতির এই চক্রব্যূহের মধ্যে নেই। বংশী শুধুই বাইরে থেকে সব লক্ষ্য করে নিজেকে ক্ষমতার অলিন্দে প্রবেশ করাতে চায়। এখন দেখার রাজনীতির এই পাশাখেলায় কেই বা জেতে আর কেই বা হারে।
19-01-2019, 09:31 AM
পর্ব ১৩- নতুন সঙ্গমঃ
বংশী খুব ভালো করেই জানে যে ক্ষমতার অলিন্দে প্রবেশ করার জন্য সবচেয়ে বেশি যা দরকার তা হোল ধৈর্য, আদি অনন্তকালীন ধৈর্য। এবং সেই পরিমান ধৈর্য বংশী রাখতে সক্ষম। ক্ষমতার কাছাকাছি তো বংশী পৌঁছে গেছেই, কিন্তু যে কথাটা যে অভিপ্রায়টা বংশীর ছায়াসঙ্গীরাও জানেনা তা হোল মালার প্রতি বংশীর এক চরম লালসা। মালা ছাড়া ক্ষমতা জমিদারী সবই ওর কাছে নিতান্তই তুচ্ছ ব্যাপার। জমিদারবাড়ির অন্দরমহলের নিরাপত্তার দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই স্বল্পবসনে বা বিনাবসনে মালার শরীর ওকে হিংস্র সিংহের মত আগ্রাসী করে তুলেছে। জমিদারবাড়ির অন্দরমহল ও বাহিরমহলের মাঝে একটা বারান্দা আছে, সেখানেই বংশী লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে থাকে। জমিদারবাড়ির অন্দরমহলে কে প্রবেশ করবে কখন করবে এইসবের দেখভালের দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে বংশীর ওপর আরোপ করা হয়েছে। সকাল ৯ ঘটিকায় মালা বাগানের ঠিক বাইরে যে দিঘি রয়েছে সেখানে স্নান করতে যান। ব্লাউজহীন সাদা ফিনফিনে কাপড়ে মালা যখন ধীরে ধীরে বাগানের মধ্যে দিয়ে দিঘির দিকে যান তখন বংশীও ধীরে ধীরে বাগানের দিকে এগিয়ে যান। মালার ওই অমুল্য শরীর যে নিজের চকচকে দুই লোভাতুর চোখ দিয়ে বংশী বহুদিন ধরেই ভোগ করে যাচ্ছে তা মালা কখনোই অনুধাবন করে উঠতে পারেনি। অনুধাবন করতে পারেন নি না বলে অনুমান করতে পারেন নি তাই বলা শ্রেয়। কারন জমিদারবাড়ির সামান্য এক লাঠিয়াল যে এরকম দুঃসাহসিক কাজ নিয়মিত করে চলেছেন তা মালার স্বপ্নাতীত। স্বচ্ছ কাঁচের মত জলে নিজের শরীর কে সিক্ত করতে করতে করতে কখন যে মালার বুকের কাপড় নিচের দিকে পড়ে যায় তা হয়ত মালা খেয়াল ও করেনা কোনোদিন। বংশীর নজর থাকে সোজা মালার উন্নত দুই বক্ষ যুগলের দিকে। হয়ত মনে মনে বংশী বলে ভগবান কি নৈপুণ্যের সাথে তুমি এই রুপসীকে তৈরি করেছ। মালার বক্ষযুগলের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হোল বাদামি রঙের উঁচু হয়ে থাকা কাঁচাপাকা সুপারির মত দুই অংশ। বংশীর বারবার করে শুধু এটাই মনে হয় কবে নিজের কামনাভরা জিভ দিয়ে ওই দুই সুপারিকে চেটে দেবে ও মালা তীব্র কামদহনে শীৎকার করে উঠবে। দীঘি তে স্নান করে আবার যখন মালা ওপরে উঠে আসে তখন ওর দুধের মত ফর্সা দুই পা অনেকটাই প্রকাশ্যে চলে আসে। বংশীর ইচ্ছে করে প্রচণ্ড জোরে পায়ের পেশীগুলোকে ডোলে দিতে। কিন্তু ভাগ্য বংশীর সাথ দেয়না। দুই দিকে প্রচণ্ড জোরে দোদুল্যমান দুই নিতম্ব, তরমুজের মত গোল ও বৃহৎ দুই স্তন এবং ততধিক চাকচিক্যে ভরপুর আঁকিবুঁকি করা ওই অর্ধনগ্ন শরীরটা বংশীকে অন্তর থেকে তাতিয়ে দেয়। বংশীর শরীরে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়, কোমরের নিচে শান্তিতে শুয়ে থাকা পুরুষ প্রতীক মাথা তুলে ওপরে ওঠে। বংশীর সাহস সময়ের সাথে সাথে আরও বাড়তে থাকে। যে বাগান সুপ্রতীক নিজের হাতে মালার জন্য তৈরি করেছেন তাতে সুপ্রতীক ও মালা ছাড়া পৃথিবীর কারুর ই প্রবেশ নিষেধ। এবং এই আদেশ জমিদারবাড়ির প্রায় প্রত্যেক কর্মচারীকেই বলা আছে। তবুও মনে সাহস নিয়ে বংশী একদিন ওই বাগানের মধ্যে প্রবেশ করে। বাগানের সামনে শুধুই রঙবেরঙের সুগন্ধি ফুলের গাছ হলেও পেছন দিকে বেশ কিছু আম জাম কাঁঠালের গাছ আছে। বংশী খুব ভালো করেই জানে যে এই উদ্যানটা মালা ও সুপ্রতীকের শোয়ার ঘরের মুখোমুখি তৈরি করা হয়েছে যাতে বাগানের সুগন্ধ ও নির্মলতা ওনাদের একান্ত আপন সময়ের সঙ্গী হয়। বংশী বাগানে প্রবেশ করে দ্রুত পেছন দিকে গিয়ে একটা মোটা গাছের গুঁড়ির পেছনে নিজেকে লুকিয়ে নেয়। এরপর সাহস করে মুখটা বার করে সোজা মালার শোবার ঘরের দিকে উঁকি মারে। সেই সময় মালা বিছানায় শুয়ে আরাম করছিলেন। মালার পরনে শুধু একটাই সাড়ী ছিল। সাড়ীর নিচে কোনও অন্তর্বাস বা সায়াও ছিলনা। অবচেতন মনে থাকার জন্য মালার বুক থেকে কাপড় সরে গিয়ে কোমরের কাছে চলে যায় ও পায়ের কাপড় অনেকটা ওপরে উঠে যায়। একঝলক সেইদিকে দেখার পর বংশীর শরীরে প্লাবন শুরু হয়। পরনের ছোট ধুতিটা ভেদ করে ঠ্যাটানো যৌনাঙ্গ বাইরে বেরিয়ে আসার জন্য কাকুতি মিনতি করতে থাকে। এতদিন অন্দরমহলের বাইরের বারান্দা থেকে বংশীকে মালার শরীরের সৌন্দর্য ভোগ করতে হত। তাই বংশী কখনোই সেই অপরুপ সৌন্দর্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলেনি। কিন্তু এই মোটা গাছের আড়ালে সেদিন বংশী যথেষ্ট নিরাপদ মনে করেছিল নিজেকে। বংশী নিজের ধুতি একটানে খুলে নীচে ফেলে দেয়। কোমরের সাথে লম্বভাবে ফণা তুলে বিষাক্ত সাপটা দাঁড়িয়ে যায় এবং গাছের গুঁড়িতে প্রায় ছোবল মারতে শুরু করে। মালার শরীর নিদ্রার ঘোরে মাঝে মাঝেই এদিক ওদিক করতে থাকে আর তার সাথে সাথে উন্মুক্ত হয়ে যায় একেকটা নতুন নতুন অঙ্গ। বংশী আর নিজেকে সংবরন করতে পারেনা। বংশী নিজের হাত নিজের দাঁড়িয়ে থাকা বিষধর সাপটার ওপরে নিয়ে যায় এবং প্রানপনে ওটাকে ধরে নাড়াতে শুরু করে। সাপের ওপর এই অর্বাচীন আক্রমনে সাপ ও নিজের ফণা তুলে ভয়ঙ্কর রুপ ধারন করে। এভাবে যে ঠিক কতক্ষন চলেছিল তা বংশীর ও খেয়াল নেই। একসময় সাপ ক্ষিপ্ত হয়ে নিজের বিষ উন্মোচন করে ও সাদা রঙের সেই কামনামেশানো বিষ গাছের গুড়ি বেয়ে নিচের দিকে পড়তে থাকে। এতদিন যা ছিল শুধুই কল্পনা তাই সেদিন পরিনত হয় বাস্তবে। রোজ রাতে নিজের বিছানায় এই সাপটাকে বংশী জাপটে ধরে আর চোখ বুজে মালার ওই কোমল শরীরটাকে কল্পনা করে সাপের বিষ মোচন করে। সেসময় কলকাতায় সবে বেশ্যাপাড়া তৈরি হয়েছে। অবিবাহিত বংশীর প্রায় ই এই বেশ্যাপাড়ায় যাতায়াত ছিল। বংশী বেশ্যাদের মুখ একটা কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দিয়ে নগ্ন শরীরকে মালার শরীর কল্পনা করে নিজের কামের আগুন নেভাত। সেদিন বাগানের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে বংশী যে আনন্দ ভোগ করল তা বংশীকে বেশ্যাপাড়ার সেই যান্ত্রিক সুখ কে সম্পূর্ণ পরিত্যাগ করতে বাধ্য করে। এরপর থেকে এই বাগান ই হয়ে ওঠে বংশীর একান্ত কামনা পুরন করার গুপ্তস্থান। সেদিন সুপ্রতীক ও মালার মধ্যে প্রেমের আগুনে সিক্ত যে কথোপকথন বংশী লক্ষ্য করেছিল তা বংশীকে একটি ব্যাপারে আশ্বস্ত করে তোলে তা হোল আজ এই দুই প্রেমিক প্রেমিকার মিলন অবশ্যম্ভাবী। সুপ্রতীকের উপস্থিতিতে কখনোই বংশী বাগানে বা অন্দরমহলে প্রবেশ করেনা। কিন্তু মালার প্রতি তীব্র কামলোভ বংশীকে অনেক বেশি সাহসী করে তোলে। বংশী অন্দরমহলের সামনে থেকেই ভেতরের দিকে লক্ষ্য করতে থাকে। সুপ্রতীক হাত ধুয়ে নিয়ে শোয়ার ঘরের দিকে যায়। অর্থাৎ আর কিছুক্ষনের মধ্যেই মালাও খাওয়া শেষ করে শোয়ার ঘরে প্রবেশ করবে এবং আজ তাদের শরীরের মিলন অবশ্যম্ভাবী। বংশী মনে অসীম সাহস সঞ্চার করে ধীরে ধীরে বাগানে প্রবেশ করে ও রুদ্ধশ্বাস দৌড়ে পেছনের দিকে গিয়ে এক বড় গাছের পেছনে আশ্রয় নেয়। বংশী ধীরে ধীরে নিজের মুখ বাইরে বার করে ভেতরের দিকে লক্ষ্য করে। সুপ্রতীক খাটের ওপর শরীর টা ছড়িয়ে দিয়ে একটা বালিশে ভর করে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। সুপ্রতীকের শরীরের ঊর্ধ্বাঙ্গে কোনও কাপড় নেই, নিম্নাঙ্গে শুধুই একটা আলগা করে বাঁধা সাদা ধুতি। বাগানটা ওদের শোয়ার ঘর থেকে এতই সামনে যে ভেতরে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কি কথা হচ্ছে তা বাগানে দাঁড়িয়ে থেকে যেকোনো মানুষ ই স্পষ্ট করে শুনতে পাবে। বংশী কান খাড়া করে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকে। সুপ্রতীকঃ মালা, আর দেরি করোনা, আমায় আবার বিকেলে একবার গ্রামে যেতে হবে, প্রজারা আমাকে ওখানে যেতে অনুরোধ করেছে। ভেতর থেকে কোনও উত্তর আসেনা, শুধুই গুনগুন করে গানের শব্দ ও চুরির ঠুংঠুং শব্দ ভেসে আসে। সুপ্রতীক কামনা মেশানো গলায় আবার বলে ওঠেন সুপ্রতীকঃ এই মালা কোথায় তুমি। কেন এরকম করে আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নাও তুমি? তুমি আমার প্রতিটা শব্দকে অনুভব করতে পারো, আমার শরীরের প্রতিটা নিশ্বাস হ্রিদস্পন্দন তুমি শুনতে পাও। তুমি কি বুঝতে পারছনা আজ আমার মন একটিবার তোমাকে কাছে পাওয়ার জন্য কিরকম ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। তুমি এই মুহূর্তে আমার কাছে আসো। আমি আর অপেক্ষা করতে পারছিনা। চুরির ঠংঠং শব্দের তীব্রতা আরও বাড়তে শুরু করে। এবং তার ই সাথে সাথে বংশীর ও যৌনতার তীব্রতা বাড়তে শুরু করে কারন বংশী জানে যে মালার ঘরে প্রবেশ আসন্ন। শোবার ঘরের পর্দাটা হথাত পেছনদিকে সরে যায় এবং ঘরের ভেতর মালা প্রবেশ করে। পরনের লাল সাড়ীটা কাঁধ থেকে অনেকটাই নিচে নেমে গেছে। ডান দিকের ধবধবে সাদা বক্ষ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে অনেকটাই বেরিয়ে এসেছে। সাদা মসৃণ পিঠটা যেন এটাই জানান দিচ্ছে যে নিজের মনের মানুষকে চরম যৌনতার আনন্দ দিতে ঠিক কি পোশাক পরিহার করতে হয় তা মালা জানে। মালার দুই চোখ সোজা সুপ্রতীকের দিকে, দুই ঠোঁটে একটা সুন্দর দুষ্টু হাসি। যে রমনী আর কিছুক্ষন আগেই ছিল অভিমানী পতিব্রতা বাঙালি বধু এখন সেই হয়ে উঠেছে কামনার আগুন উদ্রেককারী চরম লালসাময়ী এক নারী। মালার এই দ্বৈত চরিত্র বংশীর ও মনে এক ঝড় তুলে দেয়। বংশী মনে মনে বলে ওঠে “আজ ই আমি বুঝলাম নারী কেন এতো রহস্যজনক হয়” বংশী ও সুপ্রতীক উভয়েই স্থির নয়নে তাকিয়ে থাকে সুন্দরী অপ্সরার স্বল্পবসনা শরীরের দিকে। মালা নিজের নিচের ঠোঁট দাঁত দিয়ে অল্প করে কামড়ে ধরে আর প্রচণ্ড মাদকতা মেশানো একটা হাসির সাথে সুপ্রতীকের শরীরে যে আগুন জ্বলছিল তাতে কয়েক ফোঁটা ঘি ঢেলে দেয়। সুপ্রতীকের ও আর ওখানে বসে থাকা সম্ভব ছিলনা। হিংস্র বাঘের মত খাট থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে সুপ্রতীক নিচে নেমে আসে ও দুই হাত দিয়ে মালার নগ্ন পিঠটা জড়িয়ে ধরে। মুহূর্তের মধ্যে নিজের ঠোঁটদুটো মালার ঠোঁটের কাছাকাছি নিয়ে যায়। সুপ্রতীকের নাক থেকে পৌরুষের উত্তপ্ত নিশ্বাস মালার মুখের ওপর পড়তে থাকে, মালার ও শরীরে শুরু হয় তীব্র কামদহন। সুপ্রতীক নিজের ঠোঁট দুটোকে আরও সামনে নিয়ে গিয়ে মালার পাপড়ির মত কোমল দুই ঠোঁটকে স্পর্শ করতে উদ্যত হয়। কিন্তু মালা চায় খেলা করতে, মালা চায় নিজের মনের পুরুষকে আরও নাচিয়ে নাচিয়ে তবেই ছোবল খেতে। মালা নিজের বাম হাত দুজনের ঠোঁটের মাঝে নিয়ে আসে। সুপ্রতীক প্রচণ্ড হতাশ হয়ে পড়ে। মালা সুপ্রতীকের এই হতাশা দেখে প্রচণ্ড দুষ্টুমিতে ভরা একটা হাসি ফিরিয়ে দেয়। সুপ্রতীক ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই কামনার আগুনে হাঁপাতে থাকে। মালা আরও একটু জোরে হেঁসে বলে ওঠে মালাঃ আপনি আমায় বহুবার এক জিনিস চেয়েছেন কিন্তু আমি বারেবারে আপনাকে বিরত করেছি। আজ আমি আপনাকে তাই দেবো। কিন্তু সত্যি বলতে আমার ইংরেজদের এইরুপ ভালোবাসার ব্যাপারে যথাযথ শিক্ষা নেই। আজ সকাল থেকে আমি আপনার মনকে বহুবার কষ্ট দিয়েছি। আপনি যখন আমার নাম ধরে বারবার ডাকছিলেন আমি তখন ই ঠিক করে নিয়েছিলাম যে আজ আপনার কাছে নিজেকে সঁপে দেবো সম্পূর্ণ ভাবে সঁপে দেবো। এর চেয়ে বেশি কিছু আমি বলতে পারিনা, যতই হোক আমি নারী আর আপনি পুরুষ। মালা আবার সুপ্রতীকের দিকে তাকিয়ে দুষ্টুমি ভরা এক হাসি উপহার দেয়। সুপ্রতীক ও এবার হেঁসে ফেলে। বাগান থেকে বংশী চরম উত্তেজনার সাথে সব ই লক্ষ্য করছিল। বংশীও ভাবতে থাকে, কি এমন বিশেষ জিনিস যা মালা আজ সুপ্রতীক কে দিতে চায়। সুপ্রতীক নিজের দুই হাতের আঙুল দিয়ে মালার পিঠে আঁচর কাটতে শুরু করে, মালা শরীরটা একটু পেছন দিকে বাঁকিয়ে উম্ম করে একটা শব্দ করে কিন্তু মুখে সেই কামনাভরা হাসিটা লেগেই থাকে। সুপ্রতীকঃ তুমি তো জানো মালা, বাবা আমায় চিরাচরিত গুরুকুলে পড়াশুনা শেখান নি। আমি পড়াশুনা শিখেছি পাশ্চাত্য সংস্কৃতির বিদ্যালয়ে। ওখানে আমার বহু ইংরেজ ও ফিরিঙ্গী বন্ধু হয়েছিল। ওদের দৈহিক মিলনে এমন অনেক বিষয় রয়েছে যাকে আমরা রক্ষনশীলতার সাথে বর্জন করেছি। এমন ই এক বিশেষ কলা ছাড়া স্ত্রীদের শারীরিক সুখ সম্পূর্ণ হয়না। আমি আজ তোমাকে তাই দিতে চাই। দেখো মালা আজকের পর তুমি নিজেই আমায় বলবে যে সুখ আমি তোমায় দিলাম তা তোমার শ্রেষ্ঠ সুখ। তুমি আমায় অনুমতি দাও মালা, তোমার অনুমতি ছাড়া আমি কখনো তোমায় স্পর্শ ও করিনি মালা, তুমি জানো খুব ভালো করে তা। এই কথা শুনে মালা নিজের দুই ঠোঁট সুপ্রতীকের গালে স্পর্শ করে ওর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে মালাঃ আমি তো তোমার ই, এতো অনুমতির কি আছে। তোমার সুখ আমার ই সুখ। তুমি আমার এই শরীর থেকে সামান্য কোনও আনন্দ পেলে আমি মনে করব আমি নরকেও সুখি হব। সুপ্রতীক জানে ভালোবাসার চরম মুহূর্তেই মালার মুখ থেকে সুপ্রতীকের প্রতি “তুমি” শব্দটা নির্গত হয়। সুপ্রতীক ও মালাকে দুই হাতে নিজের কোলে তুলে বিছানার দিকে নিয়ে যায়। বাইরে বাগান থেকে বংশী লক্ষ্য করে যায় ও ভাবতে থাকে মালা ও সুপ্রতীক ঠিক কোন যৌন মিলনের ইঙ্গিত দিতে চায়। মালা ও সুপ্রতীকের সঙ্গমের তালে তালে বংশীও দুলে ওঠার জন্য তৈরি হয়।
19-01-2019, 09:34 AM
পর্ব ১৪- কামশিক্ষাঃ
সুপ্রতীকঃ মালা আজ তোমায় আমি কিছু কথা আগে বলতে চাই। তুমি জানো একসময় অর্থাৎ বৈদিক যুগে আমরাই ছিলাম পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ও বিজ্ঞানমনস্ক জাতি। বৈদিক পরবর্তী যুগে ধীরে ধীরে রক্ষনশীলতা আমাদের গ্রাস করে ও আমরা আমাদের সেই পূর্ববর্তী গৌরবকে ধরে রাখতে সক্ষম হইনা। বেচারা মালা এতকিছু কথা বোঝা বা শোনার অবস্থায় ছিলনা। মালার শরীর পুরুষস্পর্শ পাওয়ার প্রবল ইচ্ছায় তখন ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। ওদিকে বংশীও একদৃষ্টিতে ভেতরে তাকিয়ে আছে আর ওদের দুজনকে দেখে যাচ্ছে। সুপ্রতীকঃ মালা, দৈহিক মিলনে আমরা এই ভারতবর্ষের মানুষরা একসময় অনেক বেশি আধুনিক ছিলাম। বাৎস্যায়নের লেখা কামসুত্র তো তার ই উদাহরন। এরপর ধীরে ধীরে নিজেদের রক্ষনশীলতার মোড়কে ঢেকে দিয়ে আমরা নিজেদের ই সমস্তরকম আনন্দ ও তৃপ্তি থেকে বঞ্চিত করেছি। যে কামালাপের জন্য ইংরেজরা নিজেদের উন্নতচিন্তনের জাতি মনে করে, আসলে তা আমাদের ই সৃষ্টি। আমি আজ তোমার সাথে সেরকম ই কিছু প্রাচীন কলায় সঙ্গম করতে চাই। মালা কিছু না বুঝে শুধু শান্ত নয়নে সুপ্রতীকের দিকে তাকিয়ে থাকে। সুপ্রতীকঃ মালা জানি প্রথমে তুমি বেশ ভালোই ইতস্তত বোধ করবে। কিন্তু তুমি দেখো সবশেষে তুমি নিজেই এটা স্বীকার করবে যে আজকের পূর্বে এরুপ শান্তি তুমি কখনোই পাওনি। তোমার চেয়ে আমি একটাই জিনিস প্রার্থনা করি, তুমি শুধু আমায় আজ নিজের মনের মত করে সঙ্গম করার অনুমতি দাও। মালা খুব মিষ্টতার সাথে হেঁসে উত্তর দেয় মালাঃ তুমি আবার অনুমতি চাইছ? আমি তো তোমার ই, শুধুই তোমার। আজ অবধি যতবার তুমি আমায় স্পর্শ করেছ প্রতিবার ই আমি স্বর্গসুখ লাভ করেছি। জানি আজও তাই পাবো। আমি তোমায় নিজের স্বামী হিসেবে পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করি। মালার মুখের এই মিষ্টতায় সুপ্রতীক ও আবেগপ্লুত হয়ে পড়ে। মালার মুখের ওপর ঝুঁকে পড়ে ওর সুন্দর কপালে ছোট্ট একটা চুম্বন করে। সুপ্রতীক মালার থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে খাট থেকে নিচে নেমে দাঁড়ায়। বংশী অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ও বোঝার চেষ্টা করে যে সুপ্রতীক ঠিক কি করতে চায়। সুপ্রতীক মালার পায়ের ঠিক নিচে এসে খাটের কাছে বসে। আলতা মাখা মালার ফর্সা দুই পা নিজের কোমরের ওপর রেখে ডান পাটা হাতে করে নিজের মুখের কাছে ধরে। দাঁত দিয়ে আলতো করে বুড়ো আঙুল টা কামড়ে ধরে। মালা মুখ দিয়ে আহ করে মৃদুস্বরে চিৎকার করে ওঠে। সুপ্রতীকের হাতের আঙুলগুলো ঠিক তানপুরার তারকে নাড়ানোর ভঙ্গিমায় মালার পায়ের চেটোকে উদ্দীপিত করে চলে। মালার শরীর অদ্ভুত এক উত্তেজনায় কেঁপে ওঠে। ডান পাটা ওপরের দিকে ওঠানোর জন্য মালার পা থেকে সাড়ী অনেকটাই উঠে গিয়ে থাইএর কাছে ছলে যায়। সাদা ধবধবে ও সুস্বাদু মাংশল পেশীর অনেকটাই প্রকাশ্যে চলে আসে। সুপ্রতীক এক পলক সেদিকে দিয়েই খানিকটা শেষপাত থেকে চাটনি চেটে চেটে খাওয়ার মত করে মালার পায়ের পাতা থেকে ওপরের দিকে নিজের জিভটা প্রসারিত করতে শুরু করে। সুপ্রতীকের দুহাত ধীরে ধীরে মালার শাড়িকে ওপরের দিকে টেনে নিয়ে যায়। শাড়ির নিচে কোনও অন্তর্বাস না থাকায় সাড়ীর প্রসারন ও খুব সহজসাধ্য হয়ে যায়। মালার শরীর ভিজে কাকের মত থরথর করে কাঁপতে শুরু করে। বাগানে দাঁড়িয়ে অভিনব এই কামলীলা দেখে বংশীও নিজের ধুতি থেকে প্রকাণ্ড দণ্ডটি বার করে নাড়াতে শুরু করে। নারীর শরীরের হয়ত সবচেয়ে কোমল ও স্পর্শকাতর অঞ্চল তার যোনী ও যোনিসংলগ্ন পায়ের পেশিবহুল অঞ্চল। সুপ্রতীকের দাঁতএর কামড় ও তারসাথে জিভের সুড়সুড়ির প্রবল আক্রমনে মালার শরীর মোচর দিয়ে ধনুকের মত বেঁকে যেতে শুরু করে। মালা প্রায় বিছানা থেকে শরীরটা উঠিয়ে নিয়ে এসে সুপ্রতীকের পিঠকে আঁকড়ে ধরে। মালার মুখ দিয়ে আম্ম আম্ম ওহ ওহ করে শীৎকার নির্গত হতে শুরু হয়। মালার এই শীৎকার হয়ত সুপ্রতীকের পথ যে সঠিক তাই হয়ত বারবার করে প্রমান করে দিচ্ছিল। সুপ্রতীক প্রায় দ্বিগুন উত্তেজনায় মালার মাংশল পেশী গুলোকে ডলতে শুরু করে ও জিভ দিয়ে নরম মাংসকে শীতল উত্তেজনা দিতে শুরু করে। মালার সাড়ী প্রায় কোমরের ওপরে উঠে যায়। প্রবল উত্তেজনার মধ্যেও মালা প্রায় অর্ধবৃত্তাকারে ঘুরে এসে সুপ্রতীকের হাতদুটোকে জাপটে ধরে। সুপ্রতীক মালার এই প্রতিরোধে ক্ষুন্ন না হয়ে নিজের কর্তব্য পালনেই ব্যাস্ত থাকে। সুপ্রতীক একবার মালার দিকে তাকায়। মালার দুই চোখ কিছুটা ইচ্ছাধারী নাগিনের মতন ঘোলাটে হয়ে ওঠে, শরীর জুড়ে শুধুই কামত্তেজনা। সুপ্রতীক ঝুঁকে পড়ে মালার মুখের ওপর মালার দুই ঠোঁট নিজের দুই ঠোঁট দিয়ে আলাদা করে নিজের সিক্ত জিভ মালার মুখমণ্ডলে প্রবেশ করায়। বহুক্ষন বাদে স্বামীকে আদর করার সুযোগ পেয়ে মালা প্রানপনে সুপ্রতীকের মাথা দুহাতে জড়িয়ে ধরে। নিজের ভালবাসাকে উজাড় করে দেওয়ার জন্যে সুপ্রতীকের ঠোঁটকে নিজের ঠোঁট দিয়ে উলটে পালটে আদর করতে শুরু করে। মালার কোমল দুই ঠোঁটের স্বাদ তো সুপ্রতীক বহুবার ই পেয়েছে। আজ সুপ্রতীক অন্য কিছু করতে চায় যাতে আজকের এই অপরাহ্ণে ও মালাকে ঠিক প্রথমবার স্পর্শ করার আনন্দ ও অনুভুতির ন্যায় উত্তেজনা খুঁজে পায়। মালার এই আকস্মিক আত্মসমর্পণে সুপ্রতীক হার মানেনা, সুপ্রতীকের ঠোঁট ও জিভ মালার অধীনে থাকলেও নিজের দুই হাত ও মস্তিস্ক তখনও স্বাধীন ছিল। নারীশরীরের চরম সংবেদনশীল স্থান হতে সুপ্রতীক অল্প কিছু দুরেই ছিল। মালার এই আকস্মিক উত্তেজনা কে অতিক্রম করে সুপ্রতীকের হাত মালার যোনীগহ্বর ও সেখানের সুবিনস্ত কেশরাশিকে স্পর্শ করে। মালার শরীর একবার ওপরের দিকে লাফিয়ে ওঠে, মুখ দিয়ে উম করে একটা আওয়াজ নির্গত হয়। সুপ্রতীক মালার এই বেঁকে থাকা শরীরটা সম্পূর্ণভাবে নিজের কোলের ওপর বসিয়ে নেয়। সুপ্রতীকের হাতের দু তিনটে আঙুল কোদাল দিয়ে মাটি খোঁড়ার মত করে মালার যোনিগহ্বরে ক্রমাগত প্রবেশ করে মালাকে উত্তেজিত করতে শুরু করে দেয়। মালা সম্পূর্ণভাবে সুপ্রকাশের কাছে পরাস্ত হয়। সুপ্রকাশকে সুবিধে করে দিতে মালা নিজের দুই পাকে অনেকটা প্রশস্ত করে দেয়, আর নিজের মুখের কামাতুর অভিব্যাক্তিকে লুকিয়ে ফেলার জন্য নিজের মাথাটা সুপ্রতীকের বুকের মধ্যে লুকিয়ে ফেলে। মালার থেকে অনুচ্চারিত অনুমতি পেয়ে গিয়ে সুপ্রতীক ও নিজের দুই আঙুল দিয়ে প্রচণ্ড জোরে মাটি খুঁড়তে শুরু করে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সুপ্রকাশের হাতের প্রায় সমস্ত আঙুল ই পিচ্ছিল হয়ে ওঠে। সুপ্রকাশ মালার উত্তেজনার প্রমান পেয়ে আরও জোরে আঙুল ওঠানামা করাতে শুরু করে দেয়। মালার পক্ষে আর শামুকের খোলসে নিজেকে আঁটকে রাখা সম্ভব ছিলনা। মালা লজ্জার খোলসটাকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিয়ে মাথা ওপরে তোলে। দুই হাতে সুপ্রতীকের মাথার চুল মুঠো করে ধরে সুপ্রতীকের কাঁধে প্রায় নিজের দাতের কামড় বসাতে শুরু করে। সুপ্রতীক জানে এই যন্ত্রণা যদি ও সহ্য করে নিতে পারে তাহলে যে অচেনা উত্তেজনা আজ ও চায় তা অবশ্যম্ভাবী। প্রচণ্ড যন্ত্রণা হওয়া সত্ত্বেও সুপ্রতীক নিজের হাতের আঙুলগুলো মালার পিচ্ছিল নরম উত্তপ্ত যোনীর ভেতরে বারেবারে প্রবেশ করাতে শুরু করে। বেশ কিছুক্ষন পর মালা নিজের অত্যাচার বন্ধ করে শরীরটা আবার ধনুকের মত পেছন দিকে বাঁকিয়ে দেয়, দুপা দিয়ে সুপ্রতীকের কোমরটা জড়িয়ে ধরে। সুপ্রতীক লক্ষ্য করে মালার দুই পায়ের খাজ দিয়ে পুরু গরম তরল গড়িয়ে পড়ছে। মালা প্রবল উত্তেজনায় চোখ বন্ধ করে দিয়ে উম্ম উম্ম করে শব্দ করে চলেছে। সুপ্রতীক মালাকে আর ক্লেশ না দিয়ে স্থির হয়ে ওর কোমরটা জাপটে ধরে বসে থাকে। বেশ কিছুক্ষন পর মালার শরীরের স্পন্দন শান্ত হয়। সুপ্রতীক বোঝে সে প্রথম ধাপ অতিক্রম করে ফেলেছে এবার দ্বিতীয় ধাপ। মালার শরীরএর নিম্নাঙ্গ থেকে শাড়ী অনেকটা সরে গিয়ে প্রায় কোমরের কাছে চলে গিয়েছিল। সুপ্রতীক কিছুটা গায়ের জোরেই সাড়ীর আঁচলটা ধরে একটা হ্যাঁচকা টানে সাড়ীটা খুলে নিচে ফেলে দেয়। এতটা নিষ্ঠুরভাবে সুপ্রতীক কখনোই মালাকে নগ্ন করে দেয়নি, মালা লজ্জায় দুহাত দিয়ে নিজের মুখ ঢাকা দেয়। মালা ও সুপ্রতীকের এই অভিনব যৌনসুখ লাভের অভিপ্রায় দেখে বাগানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বংশী ওদের প্রায় দ্বিগুন উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটতে শুরু করে। বংশীর প্রকাণ্ড যৌনাঙ্গ সাপের মত ফণা তুলে দাঁড়িয়ে যায়। সামনের টুপিটা ঠেলে লাল মাথাটা অনেকটাই বাইরে বেরিয়ে আসে, প্রায় জানোয়ারের ক্ষিপ্রতায় বংশী ওই লাল অংশটাকে ভেতরে ও বাইরে করতে থাকে। বংশীর চোখের সামনেই ভেসে উঠেছে তরমুজের মত বিশালাকারের মালার দুই স্তন, স্তনের সামনের দিকের সুপারির মত বাদামি দুই বোঁটা। কামরসে যোনির চারপাশের চুলগুলো জড়িয়ে গিয়ে ডলা পাকিয়ে গেছে। সুপ্রতীকের কোলের ওপর মালার দুই পা থাকায় পেছন থেকে থলথলে কোমল দুই নিতম্বের অনেকটা অংশই বাইরে বেরিয়ে এসেছে। চোখের সামনে মনোরম এই দৃশ্য দেখে বংশীর পক্ষেও নিজেকে তাই সংবরন করা সম্ভবপর ছিলনা। বংশী নিজের খেয়ালে পুরুষাঙ্গটিকে আক্রমন করে চলল। ক্লান্ত মালাকে বেশ কিছুটা সময় উপহার দিলেও সুপ্রতীকের ভালোবাসার আরও কিছুটা বাকি ছিল। মালা সম্পূর্ণভাবে শান্ত হয়ে গেলে সুপ্রতীক কিছুটা মালার ওপর ঝুঁকে পড়ে ওর দুই স্তনকে প্রবল পরাক্রমে জাপটে ধরে। মালা মুখ দিয়ে কিছুটা যন্ত্রণায় ও কিছুটা উত্তেজনায় হিস করে একটা শব্দ করে ওঠে। দুই হাতে মাখনের মত নরম দুই স্তনকে সুপ্রতীক প্রবল ক্ষিপ্রতায় আক্রমন করতে শুরু করে। নিজের মাথাকে ধীরে ধীরে নিচের দিকে নিয়ে গিয়ে একদম যোনির কাছাকাছি নিজের মুখটা নিয়ে আসে। যোনি থেকে সদ্দ কামরস নির্গত হওয়ায় তখন ওইখানে সুমিষ্ট এক গন্ধ ভনভন করছিল। স্ত্রীলোকের সেই কামসুধার মিষ্টি গন্ধে সুপ্রতীক পাগল হয়ে ওঠে। দুই ঠোঁটের মাঝ দিয়ে বিষাক্ত সাপের মত জিভ বার করে যোনির ওপর স্থাপন করে। উত্তপ্ত যোনিতে কোমল ও শীতল আদ্র জিহ্বার স্পর্শ পেয়ে মালা আবার ককিয়ে ওঠে। প্রথম স্পর্শেই মালার শরীরটা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে যায়। সুপ্রতীক থেমে থাকেনা। নিজের জিভ লম্বালম্বি ভাবে পিচ্ছিল যোনিদ্বারে চালিত করতে শুরু করে। অসহায় মালা প্রচণ্ড জোরে বিছানার চাদরটাকে চেপে ধরে। সুপ্রতীক জিভের সাথে তাল মিলিয়ে মালার দুই বক্ষকে ওপর নিচ ডানদিক বাঁদিক করে আন্দোলিত করতে শুরু করে। মালার শরীরটা ডাঙায় উঠে যাওয়া কইমাছের মত করে ছটপট করতে করতে কাঁপতে শুরু করে। আর এই কম্পনের সাথেই তাল মিলিয়ে বাড়তে থাকে সুপ্রতীকের মুখলেহন। সুপ্রতীক হাতদুটো মালার বুক থেকে নামিয়ে এনে নিয়ে যায় মালার দুই ভারী পাছার কাছে, দুপাশ থেকে পাছাদুটোকে প্রচণ্ড জোরে চেপে ধরে মালার শরীরকে আন্দোলিত করতে শুরু করে। সদ্যবিবাহিত মালার পক্ষে এই যৌনাচার বেশিক্ষন সহ্য করা সম্ভবপর ছিলনা। মালার শরীর আবার ধনুকের ন্যায় বেঁকে ওঠে, মালা দুই হাত দিয়ে সুপ্রতীকের পিঠ চেপে ধরে। হাতের আচরে সুপ্রতীকের পিঠ কেটে যেতে শুরু করে। সুপুরুষ সুপ্রতীক প্রবল যন্ত্রণা স্বত্তেও নিজের জিভ মালার যোনি থেকে সরায়না। সুপ্রতীক অনুভব করে মালার যোনি থেকে চুইয়ে চুইয়ে ঘন এক তরল ওর জিভে এসে পড়ছে। সুপ্রতীক চুমুক দিয়ে সম্পূর্ণ কামরস পান করে নেয়। মালার শরীরটা কিছুটা পাথরের মত দুই হাতে বিছানার চাদর জড়িয়ে ধরে পড়ে থাকে। মালার দুই চোখ চরম ক্লান্তিতে বুজে আসে। সুপ্রতীক জানে মালাকে কিছুক্ষনের জন্য হলেও একটু সময় দিতে হবে। সুপ্রতীক মালার ঠিক পাশে শুয়ে স্নেহের সাথে মালার কপালে হাত বুলিয়ে দিতে শুরু করে, মালার কপালে আদ্র চুম্বনের সাথে ওর প্রতি নিজের ভালোবাসা জানান দেয়। মালা দুহাত দিয়ে সুপ্রতীকের গলা জড়িয়ে ধরে, অত্যন্ত স্থিরভাবে বলে ওঠে মালাঃ আজ আপনি আমায় যে আনন্দ পুরস্কার দিয়েছেন আপনার প্রথম স্পর্শর দিন ও আমি সেই আনন্দ পাইনি। আজ আমি বুঝেছি আপনি ঠিক আমায় কতটা ভালবাসেন। সুপ্রতীকঃ মালা, আমি বললাম না যে আমি গুরুকুলে পড়াশুনা করিনি, তাই আমার চিন্তনে অনেকটাই ইংরেজদের ভাবধারা প্রবেশ করেছে। যদিও প্রাচীনকালে আমাদের ও সম্ভোগকর্মে এরুপ অনেকরকম কলার ই উল্লেখ আছে। আমরা ক্রমশ রক্ষনশীলতার মোড়কে হারিয়ে যাচ্ছি। সুপ্রতীকের কথায় মালা কিছুটা লজ্জা পেলেও মালা উত্তর দেয় মালাঃ আমি আজ যে সুখ পেয়েছি তা কখনো আপনাকে বোঝাতে পারবোনা। কিন্তু আপনি তো আমাকেই সুখ দিয়ে গেলেন নিজেকে তো সম্পৃক্ত করলেন না। বাইরে বাগানে দাঁড়িয়ে বংশী হাঁপাতে শুরু করে ততক্ষনে। বংশী জানে খেলা এখনো শেষ হয়নি। অনেককিছু এখনো বাকি আছে। চরম উত্তেজনায় বংশী অপেক্ষা করতে থাকে। সুপ্রতীকঃ তুমি কিছুক্ষন বিশ্রাম কর, আমি তোমার কপালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। তারপর আমি তোমায় শেখাব একজন নারী কিকরে এক পুরুষকে চরম সুখ দিতে পারে।
19-01-2019, 09:35 AM
পর্ব ১৫- নীলকুঠীর অত্যাচারঃ
অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই মালার ক্লান্তির অবসান হতে শুরু হয়। মালার চোখের দৃপ্ত নজর ও ঠোঁটের দুষ্টুমি ভরা ভাসি যেন তাই প্রমান করে। সুপ্রতীক কিছুটা মালার মুখের ওপর ঝুঁকে পড়ে। সুপ্রতীকের শরীরে যে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত হচ্ছিল তার থেকে কিছুটা গরম লার্ভা মালার গালের ওপর পড়ে। পৌরুষ মেশানো উত্তপ্ত নিঃশ্বাসে মালা ধীরে ধীরে আবার প্রান ফিরে পায়। সুপ্রতীক দ্রুত নিজের দুই ঠোঁটের আড়ালে মালার কোমল ফুলের মত রসালো ঠোঁটকে লুকিয়ে নেয়। দুই কপোত কপতির ঠোঁট ও আদ্র জিভ একে অপরকে আন্দোলিত করতে শুরু করে। মালার বন্ধ মুখ দিয়ে উম উম করে শব্দ নিঃসৃত হয়। সুপ্রতীক জানে কামের উত্তেজনায় মালা আবার টগবগ করে ফুটতে শুরু করেছে। যে উল্লাস ও মালাকে উপহার দিয়েছে ঠিক সমপরিমান উল্লাস ও মালার থেকে ফেরত নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে। নিজের বন্ধন থেকে মালাকে মুক্ত করে, মালার মাথাটা দুই হাত দিয়ে ধরে নিজের কোলের কাছে নিয়ে যায়। মালাও কোনকিছুই না বুঝে নিজের মাথাটা সুপ্রতীকের কোলের ওপর রেখে বিশ্রাম নিতে শুরু করে। চরম কামত্তেজনায় সুপ্রতীকের যৌনাঙ্গ তখন শক্ত হয়ে ফণা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। কোলে মাথা রাখার সাথে সাথেই মালার গালে পাথরের মত শক্ত সেই দণ্ডর ঘষা লাগে। নিজের যোনী ব্যাতীত অন্য কোনও অঞ্চলে কখনোই মালা পুরুষাঙ্গের স্পর্শ অনুভব করেনি। জীবনে প্রথমবারের পাওয়া এই অমুল্য উপহারে মালার শরীরে শিহরন শুরু হয়, মালার দুই গাল লজ্জায় লাল হয়ে যায়। সুপ্রতীক ও তা বুঝতে পারে। সুপ্রতীক জানে সেই সময় উপস্থিত যার জন্য ও এতদিন অপেক্ষা করেছিল। সুপ্রতীকঃ প্রিয়তমা এতক্ষন যে সুখ আমি তোমায় দিয়েছি আজ এই মুহূর্তে তোমার থেকে আমি সমপরিমান সুখের কামনা করি। মালা লাজুক হলেও বুদ্ধিমতি, মালা জানে সুপ্রতীক ঠিক কি চায়। লজ্জায় মালা লজ্জাবতি পাতার মত নিজেকে আরও লুকিয়ে নেয়। মালার এই লজ্জা ও নীরবতা সুপ্রতীকের আবদার মিটিয়ে দেওয়ার ই ইঙ্গিত ছিল। সুপ্রতীক কোমরের কাছে হাত নিয়ে গিয়ে নিজের ধুতির বাঁধনটা আলগা করে। একহাতে মালার মাথায় স্নেহের স্পর্শ করতে করতে ধুতিটা খুলে অনেকটাই নিচে নামিয়ে দেয়। মালার মুখের সামনে বেরিয়ে আসে প্রকাণ্ড আকারের প্যাঁচালো সাপের মত যৌনাঙ্গ। এর আগে এতো সামনে থেকে কোনও পুরুষের যৌনাঙ্গ দেখার সুযোগ মালার হয়নি। চোখের সামনে বিপরীত লিঙ্গের সুচক কে দেখা মাত্র মালার শরীরে কম্পন শুরু হয়, মালার কপাল বেয়ে টপটপ করে ঘাম নিচের দিকে পড়তে থাকে। সুপ্রতীক একহাতে মালার মাথাটা একটু ওপরের দিকে উঠিয়ে নিজের শরীরটা সামনের দিকে বাঁকায়। সুপুরুষ দণ্ডটা মালার ঠোঁটকে স্পর্শ করে। পুরুষের বীর্যের সুগন্ধ এর আগেও মালা বহুবার আস্বাদন করেছে, কিন্তু এবারের অনুভূতিটা অনেকটাই আলাদা। নিজের ই অজান্তে মালার ঠোঁটদুটো ফাঁক হয়ে যায়। সুপ্রতীকের লিঙ্গ মালার মুখের ভেতর প্রবেশ করে। চোখের সামনে এই দৃশ্য দেখে বংশীর তলপেট চিনচিন করে ওঠে। বংশী নিজের লিঙ্গকে উদ্বেলিত করা সাময়িক ভাবে বন্ধ করে। কারন ও জানে ওর লিঙ্গর পক্ষে এই অসম্ভবরকম উত্তেজনা সহ্য করা সম্ভব নয়। বংশী বহুবার বেশ্যাগৃহে গেছে কিন্তু যৌনতার এই চরম উত্তেজনা কখনোই ভোগ করেনি। বংশী বাগানের মধ্যে দাঁড়িয়েই পন করে ফেলে ওর সুদাম দণ্ডটি একদিন মালার মুখের ভেতরে ও প্রবেশ করাবে। সুপ্রতীক জানে মালা অনভিজ্ঞ, তাই মালাকে শেখানোর জন্য সুপ্রতীক নিজেই শরীরটা ভেতরে ও বাইরে করতে শুরু করে দেয়। সুপ্রতীকের শরীরের প্রতিটি দোলার সাথে মালাও নিজের আদ্র জিভ ও ঠোঁটকে নাড়াতে শুরু করে। চরম কামনার আনন্দে সুপ্রতীকের চোখ বুজে আসে। বংশী অবাকচিত্তে সুপ্রতীকের সেই উত্তেজিত শরীরের দিকে তাকিয়ে থাকে। সব কিছু ঠিকঠাক ই ছিল, কিন্তু হথাত ই জমিদারবাড়ির বাইরে বিশাল জোর কলরব শুরু হয়। বহু লোকের জমায়েতে ঠিক যেরকম শোরগোল হয় খানিকটা সেরকম ই আওয়াজ ভেসে আসে। যৌনতার খেলায় মত্ত মালা ও সুপ্রতীকের কাছে হয়ত সেই শব্দ পৌঁছায়নি কিন্তু সুচারু বংশীর কানে খুব দ্রুত সেই শব্দ পৌঁছে যায়। বংশী বোঝে এই মুহূর্তে আর ওই বাগানের মধ্যে থাকা ওর পক্ষে নিরাপদ নয় খুব দ্রুত ওকে আবার স্বস্থানে ফিরে যেতে হবে। বংশী খুব সন্তর্পণে বাগান হতে বাইরে বেরিয়ে আসে। বাহিরমহলে গিয়ে দেখে জমিদারবাড়ির ঠিক সামনে অন্তত ১০০০ মানুষ জমা হয়েছেন। বংশী ওদের সামনে এগিয়ে যায়। নায়েবমশাই তখন ওদের সাথে কিছু কথা বলছিলেন। বংশী গিয়ে নায়েব মশাইএর পাশে দাঁড়ায়। নায়েবমশাই অনবরত একি কথা বলে চলেছেন “অনুগ্রহ করে আপনারা শান্ত হন। জমিদারবাবু এখন বিশ্রাম নিচ্ছেন। এক দুই ঘণ্টা পড়ে আপনারা আসবেন। জমিদারবাবু তখন কথা বলবেন” অন্তত ২-৩ টে আলাদা আলাদা গ্রাম থেকে প্রজারা এসেছেন। ওনারা কিছুতেই নায়েব মশাইএর কথা শুনতে রাজি নন। প্রায় প্রত্যেকেই প্রচণ্ড জোরে নিজের নিজের কথা চিৎকার করে বলে চলেছেন। বংশীর হৃদয় নতুন কোনও বিপদের গন্ধে ব্যাকুল হয়ে উঠছে। বংশী নায়েবমসাই এর দিকে তাকিয়ে ম্রিদু কণ্ঠে বলে ওঠে বংশীঃ নায়েবমশাই আপনি এদের শান্ত করতে পারবেন না। আমায় কথা বলার অনুমতি দিন। নায়েবমশাই ও জানেন, লাঠিয়াল বংশীর একটা ইতিহাস আছে আর তা হোল দুর্ধর্ষ ডাকাত বংশীরাজ। এই বংশীরাজের এক হুঙ্কারে আজও বাঘে গরুতে জল খায়। নায়েবমশাই কিছুটা পিছিয়ে এলেন। বংশী নিজের লাঠিটা বুকের কাছে ধরে হুঙ্কার ছেড়ে বলে ওঠে বংশীঃ সাবধান, জমিদারবাড়ির সামনে এরকম ব্যাবহার করার অনুমতি নেই। আপনাদের কারুর যদি কিছু বলার থাকে তো যেকোনো একজন সামনে এগিয়ে আসুন, আমরা তার কথা মন দিয়ে শুনবো। বংশীর এক হুঙ্কারে শ্মশানের নিস্তব্ধতা ছেয়ে যায় চারপাশে। মিনিট ১-২ পর ভিড়ের মধ্যে থেকে এক সুদর্শন যুবক এগিয়ে আসে। কিছুটা ভীত কণ্ঠে সে বলতে শুরু করে “হুজুর আমাদের চরম বিপদ। আজ সকালে আমরা জমিদারবাবুর কথায় আশ্বস্ত হয়ে গ্রামে ফিরে যাই। তার কিছুক্ষন পরেই সিলিং সাহেব বিশাল সৈন্য নিয়ে আমাদের গ্রামে আসেন। আমরা কেন নীলচাষ বন্ধ করে দিয়েছি সে ব্যাপারে আমাদের হুঙ্কার দিতে থাকেন। আমরা বলি জমিদার আমাদের মাই বাপ। চাষ করে আমরা জমিদারকে খাজনা দি। আমাদের সেই জমিদার ই আমাদের নীলচাষ করতে নিষেধ করেছেন। তাই আমরা নীলচাষ করবোনা। আমাদের কথা শুনে সিলিং সাহেব ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। ৩-৪ টে গ্রামে প্রায় ৫০০ বাড়ীতে আগুন ধরিয়ে দেন। সাধারন গ্রামবাসীদের বেধড়ক মারধর করেন। ওনার ঘোড়ার পায়ের আঘাতে গ্রামের দুজন সাধারন মানুষ মারা গেছেন” কথা শেষ করেই সেই যুবক হাউহাউ করে কাঁদতে শুরু করে দেন। আবার বলেন “শুধু তাই নয় যাওয়ার সময় আমার দুই বোনকে জোর করে নীলকুঠিতে ধরে নিয়ে গেছে। ওদের ১ মাস বাদে বিবাহ ঠিক হয়েছিল” দুই মহিলার সাথে যৌনসংগম করার যে প্রবল মানসিক দ্বিচারিতা সিলিং সাহেবের মধ্যে রয়েছে তা বংশী আগে থেকেই জানত। বংশী মনে মনে একবার বলে ওঠে “বাবা সিলিং কেন ওই গ্রামের কালো মেয়েদের দিকে চোখ দাও। দুই রমনীর সাথে যৌনতা চাও তো জমিদারের বোনের দিকে তাকাওনা। জমজের সাথে যৌনতা এ তোমার ওই সাত সাগরপাড়েও হয়না” ওদের মধ্যে থেকে একটু বয়স্ক এক ভদ্রলোক এগিয়ে আসেন। বংশী খুব ভালো করে জানে এটাই সেই মোক্ষম সময়, আজ এই মুহূর্ত থেকেই সম্পূর্ণ ইতিহাস ওর ই হাতে চলে যেতে পারে। সেই ভদ্রলোক এগিয়ে এসে একটু উত্তেজিত হয়ে বলে ওঠেন “জমিদার বাবু নিজের কথা রাখেন নি। আমাদের উনি কথা দিয়েছিলেন যে ইংরেজরা আমাদের ওপরে আর কোনও অত্যাচার করবেনা। আমরা জানি এই অঞ্চলে ইংরেজদের জমিদারবাবুই ডেকে নিয়ে এসেছেন। উনি চাইলেই ইংরেজরা এখান থেকে চলে যাবে। জমিদারবাবু ঠিক কি চান তা আমরা জানতে চাই। আমরা জমিদারবাবুর হুকুম মেনে চলি তাই সিপাহীদের এই অঞ্চলে ঘাঁটি গাড়তে দিইনি। কিন্তু আজ তো মনে হচ্ছে জমিদারবাবুকে সিলিং সাহেব পরোয়াই করেন না” ঠিক এরকম ই একটা পরিস্থিতি বংশী চেয়েছিল। বংশী প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করে বলে ওঠে বংশীঃ সাবধান। জমিদারবাবু সর্বেসর্বা। ওনার হুকুম ই এই অঞ্চলের শেষ হুকুম। এখানে না তো সিলিং সাহেবের আর না বিদ্রোহীদের হুকুম চলবে। সিলিং সাহেবের মোকাবিলা জমিদার বাবুই করবেন। বংশীর এই হুঙ্কারে সমবেত সমস্ত মানুষ চুপ করে যায়। বংশী বুঝে যায় পাশা খেলার নিয়ন্ত্রন প্রায় ওর ই হাতে চলে এসেছে। কম বয়সী যে যুবক কিছুক্ষন আগে কথা বলছিল সে আবার এগিয়ে আসে “হুজুর, আমার দুই বোনের সম্মান এখন জমিদার বাবুর হাতে। ওনাকে অনুগ্রহ করে সব খুলে বলুন” বংশী কিছুটা আশ্বস্ত করার ভঙ্গীতে উত্তর দেয় বংশীঃ আপনারা কোনও চিন্তা করবেন না। আপনাদের নিরাপত্তা দেওয়া জমিদারবাবুর কর্তব্য। আপনার বোনের ইজ্জত জমিদার বাবুই রক্ষা করবেন। আপনারা শান্ত হয়ে বাড়ী ফিরুন আমি জমিদার বাবুর সাথে কথা বলছি। বংশীর এই আশ্বাসে কয়েক মুহূর্তের মধ্যে সমস্ত সমবেত মানুষ ধীরেধীরে জমিদার বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে শুরু করে। বংশীর এই অতিভাষণে নায়েব মশাই কিছুটা স্তম্ভিত হয়ে গেলেও আশ্চর্য হন না। কারন উনি এটাকে বংশীর আনুগত্য ভেবেই ভুল করে ফেলেছিলেন। বংশী নায়েবমশাইএর দিকে তাকিয়ে বলে বংশীঃ জমিদার বাবুকে তো এক্ষুনি খবর পাঠানো দরকার। (একজন দাসীর দিকে তাকিয়ে) তুমি ভেতরে গিয়ে জমিদার বাবুকে বল যে বিশাল একটা বিপদ ঘটেছে। ওনাকে এক্ষুনি একবার বাহিরমহলে আসতে হবে। বংশীর কথা শুনে দাসী ভেতরে চলে যায়। নায়েবমশাই ও বংশী বাহিরমহলে কেদারায় বসে জমিদারবাবুর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। বংশীর শরীরে তখনও মালা ও সুপ্রতীকের সদ্য দেখা যৌনলীলার উত্তেজনা রয়েছে। কিন্তু বংশী জানে ঠিক কি করে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে হয়। সমস্ত কিছু বংশীর ই পক্ষে চলছে। আজ ই বর্ধমানের মামাবাড়ি থেকে গার্গী ও প্রিয়ার ফিরে আসার কথা। ওরা এতক্ষনে রওনা হয়ে গেছে। সুপ্রতীক নিজেই যাবে ওদের গঙ্গাপাড় থেকে নিয়ে আসতে, সুতরাং সিলিং সাহেবের কাছে গিয়ে কথা বলা সুপ্রতীকের পক্ষে সম্ভব নয়। এছাড়া এই কাজ জমিদারের রক্তেও নেই তা যতই ওরা প্রবলপরাক্রমী ইংরেজ জাত হয়ে থাকুক না কেন। সুতরাং বংশীর ই সিলিং সাহেবের কাছে যাওয়ার সম্ভবনা প্রবল। সুপ্রতীক ও জানে ওর এই লাঠিয়াল শুধুই একজন লাঠিয়াল নয় একজন বীর সৈনিক কিছুটা সেনাপতির মত। সুপ্রতীক জানে সিলিং সাহেবের কাছে নিজের দাবী রাখার দৃঢ়তা বংশীর মধ্যে রয়েছে। আর সুপ্রতীকের এই বিশ্বাস ই বংশীর সবচেয়ে বড় শক্তি। কিছুক্ষনের মধ্যেই হন্তদন্ত করে সুপ্রতীক বাইরে বেরিয়ে আসে, বংশী কিছুটা আড় চোখে ভেতরের দিকে তাকায়। ও জানত মালাও জমিদার বাড়ীর এই আসন্ন বিপদের কথা জেনে বসে থাকবেনা। মালা বাগানের কিছুটা পাশে দাঁড়িয়ে উদগ্রীব হয়ে ওদের কথা শুনতে থাকে। বংশী ও নায়েবমশাই অল্প সময়ের মধ্যেই সুপ্রতীককে সমস্ত ঘটনার বিবরন দেয়। সুপ্রতীকঃ তুমি খুব বুদ্ধিমানের কাজ করেছ বংশী। সত্যি এরকম অবস্থায় যদি আমরা প্রজাদের আশ্বস্ত করতে না পারতাম তাহলে ওদের আমার ওপর থেকে সমস্ত আনুগত্য চলে যেত। আর ঠিক এই জিনিসটার জন্যই ইংরেজরা আর বিদ্রোহীরা অপেক্ষা করে আছে। কিন্তু আজ তো প্রিয়া আর গার্গীর আসার কথা। আচ্ছা বংশী তুমি তো এর আগেও ইংরেজদের কাছে আমার হয়ে কথা বলেছ, তুমি পারবেনা এই কঠিন কাজটা সম্পন্ন করতে? বংশীঃ আমি আপনার আজ্ঞাবহ দাস প্রভু। আপনি অনুমতি দিলে আমি এক্ষুনি নীলকুঠিতে রওনা দি। আপনার সম্মান আমি রক্ষা করবই। সুপ্রতীকঃ আমার নয় ওই দুই নিরীহ মেয়ের সম্মান যেন রক্ষা পায় বংশী, এটা আমার আদেশ ই ভেবে নাও।
19-01-2019, 09:35 AM
পর্ব ১৬-গুপ্তধনঃ
সুপ্রতীকের আদেশ পেয়ে বংশী নিজের হাতের মোটা লাঠিটা উঁচু করে কাঁধের ওপর রাখে, বুকের কাছে একটা হাত রেখে নিচের দিকে ঝুঁকে সুপ্রতীক ও নায়েবমশাইকে প্রনাম জানায়। বংশী রওনা হওয়ার জন্য উদ্যত হয়। কিন্তু পেছন থেকে সুপ্রতীক ওর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে সুপ্রতীকঃ না বংশী এই বেশে নয়, তুমি যাবে আমার সেনাপতি হিসেবে। এইভাবে গেলে সিলিং সাহেব তোমার সাথে ভৃত্যের ন্যায় আচরন করবে। (দাসিদের দিকে তাকিয়ে) বংশীকে ভেতরে নিয়ে যাও ও আমার পোশাকগুলোর থেকে কোনোএকটি বার করে ওকে দাও। যাও বংশী তুমি দাসীদের সাথে অন্দরমহলে যাও। বংশীর হৃদয়ে প্রবল রক্তপ্রবাহ শুরু হয়ে যায়। যে জমিদারবাড়ির অন্দরমহলে একবার প্রবেশ করার জন্য রাজার পোশাক একবার গায়ে চাপানোর জন্য ওর এই লড়াই এই ছলনা সব ই আজ পূর্ণ হতে চলেছে। অন্দরমহলের ভেতর থেকে নুপুরের ঝুমঝুম শব্দ ক্রমশ ভেসে আসতে লাগলো। বংশী জানে এতক্ষন মালা আড়ালে দাঁড়িয়ে সব শুনে যাচ্ছিল, বংশীর ভেতরে প্রবেশ করার খবরে মালা দ্রুত অন্দরমহলে চলে যাচ্ছে। বংশী নিশ্চিত যে মালা ওকে অন্দরমহলে একা পেয়ে নিশ্চয়ই সিলিং সাহেব ও গ্রামবাসীদের মধ্যে যে সংঘাত ঘটেছে তার ব্যাপারে সব কিছু জানতে চাইবে। অন্দরমহলে মালার সাথে একান্তে কথা বলার যে কি আনন্দ তা বংশী এর আগে কখনো উপলব্ধি করেনি এই প্রথম করবে। দাসীদের অনুসরন করে বংশী অন্দরমহলে প্রবেশ করে। বাগান বরাবর হেঁটে বাসগৃহে প্রবেশের পূর্বে একবার থমকে দাঁড়ায়। সামনে একটা লম্বা বারান্দা, তার ডান দিকে বৈঠকখানা ও আহারের ব্যাবস্থা এবং বাঁ দিকে জমিদারবাবুর বিশ্রাম নেওয়ার জন্য দুটো বিশাল কক্ষ। কিছুক্ষন আগে এখানেই মালা ও সুপ্রতীক উদ্দাম যৌনতায় মত্ত হয়েছিল এবং বাইরের বাগানে লুকিয়ে বংশী সেই মদ্যতা উপভোগ করছিল। বাসগৃহের চৌকাঠ পার করার আগে বংশী একবার নিজমনে বলে ওঠে “জীবিত থাকলে এই মহল ও মহলের ওই রানী দুই ই আমার হবে”। দাসীরা ততক্ষনে বারান্দা দিয়ে সোজা অনেকটাই এগিয়ে গেছে। সোজা বারান্দা দিয়ে চলে গেলে উঠোনের মত কিছুটা ফাঁকা জায়গা। তার দুদিকে মোট ৪ টে ঘর। বংশী জমিদারবাড়ির এই দিকটায় কখনো আসেনি। দাসীদের পেছন পেছন ও ওদিকেই যেতে শুরু করল। দাসীরা হথাত একটা ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে দরজাটা খুলে দিয়ে বংশীর দিকে তাকিয়ে ইশারা করল। বংশী বুঝে গেলো যে এখানেই ওকে নতুন পোশাক পড়তে হবে। বংশী ভেতরে ঢুকে দেখে ঘর ভর্তি শুধু রাজকীয় পোশাক। একজন দাসী দেওয়ালে ঝুলিয়ে রাখা রাজকীয় কারুকার্য করা এক পাঞ্জাবী ও পাজামা বার করে দেয় বংশীর উদ্দেশে। দাসীরা বেরিয়ে যায় ঘরের দরজা বাইরে থেকে ভিজিয়ে দিয়ে। বংশী বিছানার কাছে গিয়ে একবার ওই কাপড়কে স্পর্শ করে। এর আগে এরকম পোশাক পড়া তো দুরের কথা বংশী জীবনে কখনো এতো মুল্যবান পোশাক দেখেওনি। জমিদারবাড়ির অন্দরমহলে প্রবেশ করার পর থেকেই বংশীর সমগ্র শরীরে রাজা হওয়ার যে তীব্র বাসনা শুরু হয়েছিল এতক্ষনে বংশী সেই কামনাকে সম্পূর্ণভাবে নিবারন করে। বংশী জানে এই মুহূর্তে ওকে ধৈর্যশীল হতে হবে, ওর সামনে প্রচণ্ড কঠিন এক লড়াই। দ্রুত পোশাক পড়ে নিয়ে আয়নার সামনে নিজেকে একবার দেখে নিয়ে বংশী ঘর থেকে বাইরে বেরোয়। বাইরে বেরতেই একজন দাসী বংশীর কাছে এগিয়ে এসে বলে “আপনি এখানেই দাঁড়ান, রানীমা আসছেন, উনি আপনাকে কিছু কথা বলতে চান” বংশীর হৃদয়ে আবার নতুন করে রক্তচালনা শুরু হয়ে যায়। জমিদারবাড়ির অন্দরমহলে মালার সাথে একান্তে কথা বলার অভিপ্রায় ওর বহুদিন ধরেই ছিল আজ তা পরিপূর্ণ হতে চলেছে। দাসীরা একেএকে ওখান থেকে চলে যায়। নুপুরের ঝুমঝুম শব্দ বংশীর দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করে। কিছুক্ষনের মধ্যেই বংশী দেখতে পায় নীল রঙের এক অতি কারুকাজ করা সাড়ি পড়ে ওর দিকে এগিয়ে আসছে মালা। মালার লোভনীয় শরীরটা দূর থেকে আড় চোখে দেখলেও বংশী নিজেকে বোঝায় এখন নয়, সময় এখনো রয়েছে। মালা একেবারে বংশীর সোজাসুজি এসে দাঁড়ায়, বংশীর চোখের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে মালাঃ বংশী তোমার জন্য আমি পুরস্কার এনেছি। (মালা নিজের হাতটা শাড়ির আঁচলে নিয়ে গিয়ে কিছু একটা বার করে। হাত সামনের দিকে প্রশস্ত করে) এই নাও। বংশী দেখে মালার হাতে রয়েছে একটা সোনার মুদ্রা। বংশী মনে মনে হেঁসে ওঠে ও বলে ওঠে তোমার শরীরের কাছে সহস্র সোনার মুদ্রা নগন্য। যখন পুরস্কার আমার লাগবে আমি তোমার থেকে চেয়ে নেবো। হাত বাড়িয়ে থেকেই মালা বলে ওঠে মালাঃ বংশী, আমি জমিদারবাবু ও ইংরেজদের এই লড়াই নিয়ে খুব ই চিন্তিত। আমি জমিদারির ব্যাপারে একদম ই অবগত নই। উনি চান না আমি এসব নিয়ে চিন্তা করি। কিন্তু আমার সমস্ত কিছু জানা অত্যন্ত জরুরি। তুমি খুব ভালো করেই জানো আমি ঠিক কি পরিমান ব্যাকুল হয়ে আছি বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে। আমার তরফ থেকে যৎসামান্য এই পুরস্কার তুমি গ্রহন কর এবং আমার কাছে প্রতিজ্ঞা কর ঠিক কি হচ্ছে বাহিরমহলে তা তুমি আমায় জানাবে। বংশী মনেমনে বলে এই তো পাখি নিজের থেকেই খাঁচায় চলে আসছে। বংশী কোনও উত্তর না দিয়ে সোজা মালার দিকে তাকিয়ে থাকে। যৌনতায় ভরপুর এই শরীরটা কিছুক্ষন আগেই বস্ত্রহীন অবস্থায় ও দেখেছে, এই মোটা কাপড়টা বংশীর চোখে বিষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বংশী চায়না ওর যৌনতার আকাঙ্ক্ষা ওর মালা শরীরে সামান্য কোনও কাপড় জড়িয়ে থাকুক। ওর এই নীরবতা দেখে মালা আবার বলে ওঠে মালাঃ আমি জানি বংশী, উনি তোমাদের প্রবলভাবে সতর্ক করেছেন আমায় কিছু না বলার জন্য। কিন্তু তুমি আমায় বিশ্বাস করতে পারো, তুমি যে আমায় সবকিছু জানাও তা উনি কোনোদিন জানতে পারবেন না। আমায় তুমি বিশ্বাস কর বংশী। মালার চোখের এই কাকুতি মিনতি দেখে বংশীও বুঝে যায় মালাকে ভোগ করতে গেলে সুপ্রতীককে চরমভাবে বিপদে ফেলতে হবে, নিজের প্রাণপুরুষের প্রান ভিক্ষা করতে করতে মালা ওর সামনে স্বেচ্ছায় নগ্ন হয়ে দাঁড়াবে। বংশী বলে ওঠে বংশীঃ রানীমা, আমি আপনার আজ্ঞাবহ দাস, আমার কোনও উপঢৌকন চাইনা। আমি আপনার মনের ব্যাকুলতা বুঝি। তাই আজ আপনাকে কিছু সত্য কথা বলছি। জমিদারবাবুর সমূহ বিপদ, প্রানভয় ও রয়েছে। সিলিং সাহেব অত্যন্ত নিষ্ঠুর ও বিপজ্জনক এক ব্যাক্তি। প্রজাদের কথা শুনে জমিদারবাবু ওনার সাথে সম্মুখসমরে অবতীর্ণ হয়েছেন। ওদের কাছে বন্দুক, টোটা, বারুদ রয়েছে যা আমাদের লাঠি ও তরোয়ালের সৈন্যকে নিমেষের মধ্যে ধুলিস্যাত করে দিতে পারে। আমার এক বাল্যবন্ধু ইংরেজ সেনার কর্মচারী, ওই আমাকে সিলিং সাহেবের সাথে দেখা করিয়ে দেবে। আমি বন্ধুর মুখ হতে বহুবার শুনেছি সিলিং সাহেব জমিদারবাবুকে হত্যা করার ছক কষছেন। বংশীর কথা শুনে ভয়ে ও আশঙ্কায় মালা হাত দিয়ে নিজের মুখ চাপা দেয়। বংশীঃ রানীমা, তাহলে এবার আমায় আজ্ঞা করুন আমি যাই। বংশী আড় চোখে মালার দিকে তাকায়। আশঙ্কায় ও ভয়ে মালা তখন অন্য এক জগতে হারিয়ে গেছে। কোমর থেকে সাড়ী সরে গিয়ে মালার সুস্বাদু নাভী বাইরে বেরিয়ে এসেছে। বংশী সেদিকেই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। বংশীর ও আর ধৈর্য থাকেনা, যত দ্রুত বংশী এই কামনাময়ী রমনীর সাথে সহবাস করতে পারে বংশীর পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য তা ততই মঙ্গলময় হবে। বেশ কিছুক্ষন পর মালা উদ্বিগ্ন হয়ে বংশীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে মালাঃ এই স্বর্ণমুদ্রা উপহার হিসেবে নয় জমিদারবাড়ির স্মৃতি হিসেবে তুমি রেখে দাও। (বংশী সামনের দিকে হাত না বাড়ানোয়, মালা এক পা এগিয়ে এসে প্রায় বংশীর গা ঘেঁষে দাঁড়ায় ও বংশীর দুই হাত ধরে স্বর্ণমুদ্রাটি বংশীর হাতে দিয়ে দেয়) মালার হাতের স্পর্শ অনুভব করে বংশীর সমস্ত শরীরে বিদ্যুতের ঝলকানি শুরু হয়। কোনরকমে নিজেকে শান্ত করে বংশী মালার থেকে অনুমতি নিয়ে জমিদারবাড়ি ছেড়ে নীলকুঠীর দিকে রওনা দেয়। জমিদার বাড়ী থেকে নীলকুঠি যেতে আধ ঘণ্টা মতন সময় লাগে। এই আধ ঘণ্টা রাস্তাটা বংশী শুধু মালার কোমল হাতের স্পর্শ ও মালার নগ্ন শরীরটা কিভাবে জঙ্গলের মধ্যে ভোগ করবে সেব্যাপারে চিন্তা করতে করতে কাটিয়ে দেয়। জঙ্গলের সর্দার থাকাকালীন বংশী নিজের সহচরদের সাহায্যে বেশকিছু ঝুপড়ি বানিয়েছিল জঙ্গলের মধ্যে। বংশীর আগে ডাকাতরা রাতে শোয়ার জন্য গ্রামের নিরাপদ আশ্রয়কেই বেছে নিত। কিন্তু ধূর্ত বংশীর ডাকাত দলে অন্তর্ভুক্তির পর এই ধারনাও পরিবর্তন হয়। জমিদারবাড়ির কাজ হতে সামান্য কিছু অব্যাহতি পেলে বংশী চলে যায় বেশ্যাপাড়ায়। সেখান থেকে মনের মতন বেশ্যাকে পছন্দ করে সোজা চলে যায় জঙ্গলে, নিজের হাতে বানানো ওইসব কাঠের কুটীরে আদিম যৌনলীলায় মত্ত হয়ে ওঠে। খেয়াল ও শখের দিক থেকে তো বংশী যেকোনো রাজা মহারাজাকেও হার মানায়। নিজের শয্যাসঙ্গিনীকে জঙ্গলের মধ্যে তাড়া করতে করতে কিছুটা লুকোচুরি খেলার ধরনে বংশী যৌনতায় মেতে উঠতে পছন্দ করে। মালার সাথেও যে এরকম ভাবেই ও কামলীলা করতে চায় সেব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। এইসব ভাবতে ভাবতেই বংশী নীলকুঠীর একদম সামনে এসে পৌছায়। ইংরেজ সৈন্যে ১০-১২ জন ফিরিঙ্গী থাকলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশটাই ছিল ভারতীয়। সিলিং সাহেবের পাশাপাশি এদেরকেও বংশী যথেষ্ট হাত করে রেখেছিল। মুল ফটকের একদম সামনে ছিল ৪-৫ জন দারোয়ান গোছের সৈন্য, এরা প্রত্যেকেই ছিল ভারতীয় এবং যথারীতি বংশীর সাথে এদের সদ্ভাব ছিল। বংশীকে দেখে ওরা মুচকি হেঁসে চোখের অঙ্গভঙ্গিতে বুঝিয়ে দেয় ভেতরে দারুন এক দৃশ্য চলছে, যাও গিয়ে সব নিজের চোখেই দেখে নাও। ওরা দরজাটা বেশ কিছুটা ফাঁক করে, বংশী ভেতরে ঢুকে যায়। ভেতরে ঢুকে দুদিকে প্রশস্ত বাগিচা, সেখানে বিভিন্নরকম ফুলের গাছ লাগানো আছে। আর একদম সোজা রাস্তা বরাবর ছোট অট্টালিকার মত একটা কুটির। বংশী দূর থেকেই দেখতে পায়, জানলার পাল্লাটা সামান্য ফাঁক করে টমাস ভেতরে তাকিয়ে আছে। টমাস সিলিং সাহেবের দূরসম্পর্কের ভাই হয়, বয়স ও খুব কম এই ২০-২১ ই হবে। টমাস একদম ই বাংলা বলতে পারেনা। বংশী ইংরেজিটা শিখে রাখায় ও কিছুটা অঙ্গভঙ্গি করে বহুবার টমাসের সাথে কথা বলেছে। এই ছেলেটা সিলিং সাহেবের মত নয়, ওর নারীর প্রতি লোভ নেই। ইতিহাসের বইতে পড়েছে, ভারতের রাজাদের কাছে প্রচুর অর্থ রয়েছে। সেইসবের ই লোভে সিলিং সাহেবকে অনেক আবদার করে ও ভারতে এসেছে। কয়েকমাসের মধ্যেই আবার দেশে ফিরে যাবে। টমাসের অর্থ লোভ ও পকেটে থাকা সোনার মুদ্রাটা থেকে কুটিল বংশীর মগজে নতুন এক পরিকল্পনা চলে আসে। বংশী সিলিং সাহেবের ঘরের প্রায় কাছাকাছি চলে আসে। ভেতর থেকে তখন “আহ আহ ওমা ওহ ছেড়ে দাও ছেড়ে দাও” এইসব শীৎকারের আওয়াজ ভেসে আসে। বংশী খুব ভালো করেই জানে এই শীৎকার কোনও এক রমনীর নয় দুই রমনীর একত্রিত। সিলিং সাহেবের এই একসাথে দুই নারীর সাথে যৌন খেলায় মত্ত হওয়ার গল্প বংশী এর আগে অনেকবার শুনেছে, কিন্তু আজ প্রথমবার চাক্ষুষ তা লক্ষ্য করবে। কিন্তু তার আগে এই টমাস ছেলেটিকে নতুন পরিকল্পনার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। বংশী ফিসফিস করে একবার ডাকে “টমাস” টমাস প্রায় ভুত দেখার মত চমকে উঠে পেছনে তাকায়। বংশীকে দেখে টমাস যে এরকমভাবে ঘাবড়ে যাবে তা বংশী ভ্রুনাক্ষরেও ভাবেনি। বংশীর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে টমাস নিজের হাতটা রাখে সোজা পরনের প্যান্টের ওপর। বহুবার হাত বোলানোর পর ওখানেই দাঁড়িয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। টমাসের এইসব কার্যকলাপ দেখে বংশী হেঁসে ফেলে। সিলিং সাহেবের ঘরের ভেতর থেকে শীৎকারের শব্দ আরও বেড়ে যেতে শুরু করে। বংশীর হাসি শুনে টমাস ও পেছন ফিরে তাকিয়ে চোখ টিপে ইশারা করে। টমাস ওখান থেকে নেমে বংশীর দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করে। এই টমাস ছেলেটি ফিরিঙ্গী হলেও একদম ই নিষ্পাপ। এর আগেও বহুবার ও বংশীর সাথে কথা বলেছে। বংশীকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে ভারতে প্রচুর গুপ্তধন রয়েছে ও এরকম ই গুপ্তধনের সন্ধানে সাতসাগর পাড়ি দিয়ে এখানে এসেছে। বংশীও ইয়ার্কির ছলে ওকে বলেছে যে বংশী যদি এরকম কোনও গুপ্তধনের সন্ধান পায় তো ওকে নিশ্চয়ই জানাবে। টমাস বংশীর কথায় কতটা বিশ্বাস করেছে তার ই ওপর নির্ভর করছে বংশীর পরবর্তী পরিকল্পনা। টমাস বংশীর সামনে এসে দাঁড়ায়। বংশী একটাও শব্দ ব্যয় না করে ওর হাতে স্বর্ণমুদ্রাটি দেয়। চকচকে চোখে টমাস বলে ওঠে “গুপ্তধন” এরকম কিছু বাংলা শব্দের ইংরিজি মানে বংশী আগেই শিখে রেখেছিল, ওকে যে রাজা হতে হবে। ভাঙা ভাঙা ইংরিজিতে বংশী উত্তর দেয় বংশীঃ এটা কিছু নয়, আরও অনেক আছে। তুমি যদি ইংল্যান্ডে এগুলো নিয়ে যেতে চাও তো আজ রাত ৮ টায় জমিদারবাড়ির পেছনের মাঠে চলে আসো। আর হ্যাঁ কাউকে জানাবেনা আমি তোমায় বলেছি বলে। টমাসের মাথা নাড়া দেখে বংশী আশ্বস্ত হয়ে যায় যে টমাস কাউকে বলবে না। বংশী কিছুটা অঙ্গভঙ্গি করে টমাসকে বুঝিয়ে বলে “ভাই তুমি তো এতক্ষন দেখলে আর তো ১০-১৫ মিনিট বাকি হয়ত। আমায় একটু দেখতে দাও। এতটুকু তো তুমি করতেই পারো আমি তোমায় গুপ্তধন দিচ্ছি তার বদলে” বংশীর কথা শুনে হাঁসতে হাঁসতে টমাস ওই জায়গা ছেড়ে অন্য দিকে চলে যায়। ভেতর থেকে নারীর চরম শীৎকার ভেসে আসতে থাকে। বংশী সামনের জানলার দিকে অগ্রসর হয় এক বিদেশি সাহেবের পাশবিক যৌনতাকে উপভোগ করার জন্য।
19-01-2019, 09:36 AM
পর্ব ১৭- দ্বিতীয় পরিকল্পনাঃ
টমাস বাগানের ভেতর দিয়ে বাইরের দিকে যেতে শুরু করে, বংশীর হাত থেকে সদ্য পাওয়া সোনার মুদ্রাটি বংশীকে উন্মত্ত যৌনতার আনন্দ ও ভুলিয়ে দিয়েছে। বংশী একবার চারপাশটা দেখে নেয়, না আশেপাশে কেউ ই ছিলনা। বংশী ঘরের দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করে। জানলাটা তখনও ফাঁক করাই ছিল। ঘরের ভেতর থেকে আগত শীৎকারের তীব্রতা ক্রমশ বেড়েই চলতে থাকে। বংশী সন্তর্পণে জানলা দিয়ে ভেতরে চোখ রাখে। ভেতরের দৃশ্য দেখার পর বংশীর শরীর থরথর করে কাঁপতে শুরু করে। ঘরের ভেতরে সুন্দরী দুই রমনী, সম্পূর্ণ নগ্ন। দুজনের ই হাত চাদর দিয়ে খাটের সাথে বাঁধা। সিলিং সাহেব দুজনকেই একদম কাছাকাছি রেখেছেন। নিজের বিশাল আকারের লিঙ্গটা একজনের যোনীতে প্রবেশ করিয়ে বিশাল জোরে জোরে শরীরটা ভেতরে ও বাইরে করতে থাকে। সেইসময় সিলিং সাহেব অপর নারীর দুই বক্ষকে নিজের হাত ও মুখ দিয়ে প্রায় চিবিয়ে চিবিয়ে খেতে শুরু করেন। একিসাথে দুই নারীর সাথে যৌন সঙ্গমের যে কি আনন্দ তা বংশী আজকের আগে কখনোই বোঝেনি। মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যেই সিলিং সাহেব নিজের লিঙ্গটা বার করে নেন। শরীরটা আবার একটু বাঁদিকে করে অপর নারীর যোনীতে লিঙ্গটা প্রবেশ করান ও প্রচণ্ড জোরে জোরে থাপ দিতে শুরু করেন। সেইসময় অপর যুবতীর সাময়িক স্বস্তি হলেও তার গলা থেকে স্তন অবধি হাত ও জিভ দিয়ে আদর করে নিজের কামক্ষুদা তার শরীরেও বিদ্যমান রাখলেন। সিলিং সাহেবের মুখ দেখেই মনে হচ্ছিল যে উনি আর বেশিক্ষন ধরে রাখতে সক্ষম হবেন না। আর ঠিক তাই হোল, কিছুক্ষনের মধ্যেই সিলিং সাহেব উম করে বিশাল জোরে গর্জন করে উঠলেন। তার শরীরটা বেশ কিছুক্ষন জোরে জোরে সামনে ও বাইরে হতে লাগলো। ধীরে ধীরে দানবীয় শরীরটা শান্ত হয়ে পাথরের মত পড়ে রইল। এই জানবিক অত্যাচারে ততক্ষনে গ্রামের ওই দুই যুবতী ও জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। বংশীর পুরুষাঙ্গ সোজা তালগাছের মত লম্বা হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। বংশী বহুকষ্টে নিজেকে শান্ত করে বাইরে বেরিয়ে আসে। বাগানের কাছে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। ও জানে যেকোনো সময় ই সিলিং সাহেব বাইরে বেরিয়ে আসবে। এতক্ষন যে যৌনলীলা ও দেখেছে মাথা থেকে সম্পূর্ণভাবে তা বার করে দেয়। স্মৃতিচারণ করা শুরু করে নিজের সেই পরিকল্পনাগুলোর ব্যাপারে, যার জন্য ও এখানে এসেছে। বেশ কিছুক্ষন পড়ে প্রায় টলতে টলতে নিজের জামাটা একহাতে ধরে অর্ধনগ্ন অবস্থায় বাইরে বেরিয়ে আসেন সিলিং সাহেব। সোজা সামনের দিকে তাকিয়েই বংশীকে দেখতে পান। বংশীকে দেখা মাত্র “হেই বাংশী” বলে চেঁচিয়ে ওঠেন। ও মুখ বেঁকিয়ে এতক্ষন ঠিক কি পরিমান মজা লুটেছেন তা অঙ্গভঙ্গি করে বুঝিয়ে বলেন। বংশী সামনের দিকে ঝুঁকে সিলিং সাহেবকে সেলাম করে। বংশীর সেলামে সিলিং সাহেব খুব খুশি হয়ে বংশীর দিকে এগিয়ে আসেন। সিলিং সাহেবঃ (ভাঙা ভাঙা বাংলায়) কি হয়েছে বংশী তোমার পোশাকে এতো পরিবর্তন? আর এইসময়ে নীলকুঠিতে তুমি। আমি যে গ্রাম থেকে মেয়েদের উঠিয়ে এনেছি তা কি জমিদার জানে। জমিদার এখনো বোঝেনি ইংরেজরা ওদের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী। দেখলে তো চাষিরা ওর কাছে গেলো, ওকি কিছু করতে পারলো। সিলিং সাহেবের মুখ দিয়ে আত্মবিশ্বাস ও অহঙ্কার ঝরে পড়ে। সুচারু বংশী জানে ওকে এই অহংবোধেই আক্রমন করতে হবে। সিলিং সাহেবের কাছে সুপ্রতীককে মুল শত্রু বানিয়ে তুলতে হবে তবেই ওর সব পরিকল্পনা সফল হবে। বংশীঃ আপনি কাজটা ঠিক করেননি সিলিং সাহেব। আপনি আগুনে হাত দিয়ে দিয়েছেন। আপনি নিজেই নিজের বিপদকে ডেকে এনেছেন। সিলিং সাহেব বংশীর কথায় কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে বলে ওঠেন সিলিং সাহেবঃ আমি ইংরেজ। গোটা পৃথিবী আমাদের দখলে। আমরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাত। আমরা যা করি তা ঠিক ই করি। ভুল আমরা করতে পারিনা। ভুল তো তোমাদের মত অসভ্যরা করে। সিলিং সাহেবের মুখের ওই অবজ্ঞাসুচক বাঁকা হাসি ও জাত তুলে অপমান অন্য যেকোনো মানুষের রক্ত গরম করে দিত। কিন্তু বংশী তো আর মানুষ নয়, ক্ষমতার অলিন্দে প্রবেশ করার অন্ধ নেশায় ও প্রায় জানোয়ার হয়ে গেছে। বংশী একটু হেঁসে বলে ওঠে বংশীঃ আজ আমাকে এখানে জমিদারবাবুই পাঠিয়েছেন। আপনি খুব ভালো করেই জানেন, এক সময়ে আমি কুখ্যাত ডাকাত ছিলাম। আজ জমিদারবাড়ির লাঠিয়াল হলেও জমিদারির প্রতি রাগ আমার আজ ও যায়নি। আপনার ভালো চাই বলে কিছু কথা বলতে চাই আপনাকে। এতক্ষনে সিলিং সাহেব ও শান্ত হয়ে যান। উনি জানেন বিদ্রোহীরা ওনার স্বঘোষিত শত্রু। গ্রামবাসীরা ওনার বিরুদ্ধে চলে গেছেন। আজকের পর জমিদার ও শত্রুতার পথেই হাঁটতে শুরু করবে। এই সম্মিলিত তিন শক্তির সাথে লড়াই করার সামর্থ্য এই মুহূর্তে ওনার নেই। বড়লাট ওনার এই নারীসক্তির জন্য ওনাকে একদম ই পছন্দ করেন না। যুদ্ধ না বাঁধলে বড়লাট ও খুব একটা সৈন্য সামন্ত দিয়ে ওকে সাহায্য করবেনা। সিলিং সাহেব দুশ্চরিত্র হলেও যথেষ্ট বিচক্ষন। উনি জানেন এই মুহূর্তে বংশীর উপদেশ মত চলা ছাড়া ওনার কাছে দ্বিতীয় কোনও উপায় ও নেই। ওনার এই স্থিরতা ধূর্ত বংশীর মনেও আশার আলো ফুটিয়ে তোলে। বংশী বুঝতে পারে সিলিং সাহেব ওনার অপর বিশ্বাস করতে বাধ্য। বংশীর এখন একমাত্র কর্তব্য এটাই যে এই বিশ্বাসটা বজায় রাখা। সিলিং সাহেবঃ তুমি কি বলতে চাও বংশী। তুমি বল আমি শুনছি। বংশীঃ শিলিং সাহেব আপনার সামনে এই মুহূর্তে চরম বিপদ। আপনি একটু সাবধানে থাকবেন। জমিদারবাবু আপনাকে হত্যা করার ছক কষছে। আজ আপনি যা করলেন, জমিদার যদি বদলা না নিতে পারেন তাহলে প্রজাদের কাছে নিজের আনুগত্য হারিয়ে ফেলবেন। আর আপনি তো খুব ভালো করেই জানেই প্রজা আনুগত্য ছাড়া জমিদারী টেকেনা। বংশীর কথা শুনে সিলিং সাহেব চমকে ওঠেন। সিলিং সাহেবের কপালের চিন্তার ভাঁজ বংশীকে আশ্বস্ত করে। বংশী বুঝতে পারে সুপ্রতীক, মালার পর এবার সিলিং সাহেব ও ওর তৈরি ফাঁদে পা দিচ্ছে। সিলিং সাহেব বেশ কিছুক্ষন চিন্তা করে বলে ওঠেন সিলিং সাহেবঃ তুমি সত্যি বলছ বংশী? এক সামান্য জমিদারের কি সত্যি ই এতো বড় দুঃসাহস হবে। ও ঠিক কি করতে চায়। ও কি যুদ্ধ ঘোষণা করবে। সিপাহীদের সাথে এক হয়ে আমার বিরুদ্ধে লড়াই করবে? কি চায় ও? বংশীঃ হয়ত আর ৪-৫ ঘণ্টা আগেও এই কথা জমিদার ভাবতেও পারতেন না। আপনি গ্রাম থেকে এই দুই মেয়েকে উঠিয়ে নিয়ে আসার পর জমিদারবাড়ীর সামনে প্রচুর মানুষ উঠে আসেন। ওরা প্রায় বিদ্রোহের সুরেই জমিদারবাবুর সাথে কথা বলছিলেন। জমিদারবাবু বাধ্য হয়েই ওদের কথা দেয় যে গ্রামের দুই যুবতীর সম্মান উনি দায়িত্ব নিয়ে রক্ষা করবেন। সম্মান তো আপনি রাখতে দিলেন না। গ্রামের মানুষ তো এবার জমিদারবাড়ি ঘিরে ধরবে, জমিদারকে বিদ্রোহীদের সাথে মিলে আক্রমন করবে। আপনি তো জানেন বিদ্রোহীরা জমিদারকেও নিজেদের বন্ধু মনে করেনা, শুধুই একটা আপোষ হয়ে গেছে এতটুকুই। আমি যখন এই দুই মেয়েকে নিয়ে গ্রামে ফিরে যাবো কি অবস্থা হবে ভেবে দেখেছেন? সিলিং সাহেব গভীর চিন্তায় পড়ে গেলেন। বেশ কিছুক্ষন নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে উনি বলে উঠলেন সিলিং সাহেবঃ তুমি এতকিছু যখন জানতে তাহলে আমায় আটকালে না কেন? আর তোমায় তো জমিদার ই এখানে পাঠিয়েছে, কি কারনে তোমায় পাঠানো হয়েছে? বংশীঃ আমি যখন এসেছিলাম তখন তো সব শেষ। আর জমিদার আমাকে মিত্রতার জন্য পাঠিয়েছিলেন। উনি আপনাকে এই দুই মেয়েকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করতে পাঠিয়েছিলেন। আমি আপনাকে সব ই বললাম, এবার আমায় হুকুম করুন, আমি এদেরকে গ্রামে ছেড়ে দিয়ে আসি। সিলিং সাহেবঃ বংশী, আমি কিন্তু তোমায় বিশ্বাস করি। জমিদারবাড়িতে কি হচ্ছে সব আমায় জানিও। বংশীঃ আমি কাল সকালে আবার আসব, কিন্তু এখন আগে এদেরকে আমি গ্রামে ছেড়ে দিয়ে আসি। আপনি অনুগ্রহ করে এখান থেকে চলে যান। বংশীর কথা শুনে সিলিং সাহেব ওখান থেকে আসতে আসতে বাইরের দিকে যেতে শুরু করেন। বংশী ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে। বিছানার ওপর সদ্যযুবতী হওয়া দুই নারীর নগ্ন দেহ দেখে বংশীর তলপেটটা চিনচিন করে ওঠে। বংশী মনে মনে বলে আমার কপালটাই ফুটো, হাতের সামনে নগ্ন নারীর দেহ দেখেও কিছুই করতে পারলাম না। ঘণ্টা কয়েক আগে মালার যে নগ্নতা বংশী লক্ষ্য করেছিল তা আরও একবার চিন্তা করে নিজেকে সংবরন করে নেয়। ঘর থেকে দুটো বেশ বড় আকারের চাদর দিয়ে ওদের দেহকে ঢেকে ফেলে। কোনরকমে ওদেরকে দুহাতে চেপে ধরে বাইরে বেরোয়। ইজ্জত হারিয়ে দুই হতভাগী ধীর কদমে বংশীর সাথে চলতে শুরু করে। নীলকুঠি পেরোনোর পর থেকেই পেছন পেছন আরও লোক সমাগম হতে শুরু করে। যখন বংশী ওই দুই মেয়েকে নিয়ে গ্রামে পৌছায় ততক্ষন কয়েক সহস্র লোক চারপাশ থেকে এসে জড় হয়ে গেছে। বংশী জানে ওর তৃতীয় পরিকল্পনা অর্থাৎ গ্রামবাসী ও বিদ্রোহীদের খেপিয়ে তোলার কাজ ঠিক এই মুহূর্ত থেকেই শুরু করে ফেলতে হবে। “একি সর্বনাশ হোল আমাদের, আমাদের মা বোনের ইজ্জতের কি কোনও দাম নেই” এই ক্রন্দনরোল ও হাহাকার শুরু হয়ে যায় চারপাশে। বংশীকে ঘিরে ধরে সবাই। সেই যুবকটি যে কিছুক্ষন আগে জমিদারবাড়িতে এসেছিলো সে এগিয়ে আসে। “আপনি কথা দিয়েছিলেন, জমিদার কথা দিয়েছিলেন, তাও কেন এরকম হোল? জবাব দিন আমাদের? কেন আমার বোনের ইজ্জত গেল?” বংশী নিচের দিকে মাথা করে দাঁড়িয়ে থাকে। ক্ষুব্ধ সেই ছেলেটি প্রচণ্ড রেগে গিয়ে বংশীর গালে সপাটে একটা চড় মেরে দেয়। বংশী হাঁটু গেড়ে বসে যায় ওখানে সামনের দিকে দুহাত জড় করে বংশী বলে ওঠে বংশীঃ আপনারা আমায় যে শাস্তি দেবেন আমি তা মাথা পেতে নেবো। আমি তো জমিদারবাড়ির সামান্য ভৃত্য একজন। জমিদারবাবু লড়াই করতে চাননি, ইংরেজদের সাথে, উনি আমায় কথা বলতে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু সিলিং সাহেব আমায় নীলকুঠিতে ঢুকতেই দেননি। আমি বহুকষ্টে ওদের এখানে নিয়ে এসেছি। আমি তো জমিদারের আজ্ঞাবহ দাস। তবুও একটাই কথা আপনাদের বলব এই বংশীর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ডাকাত দল ত্যাগ করে জমিদারের সেবা করা। আমি ভেবেছিলাম এই জমিদার আগের জমিদারদের মত নয় উনি গরীবের সেবা করেন। আমি বিশাল ভুল করেছি। জমিদার কখনো গরিবের বন্ধু হয়না। আপনারা যা শাস্তি দেবেন আমি মাথা পেতে নেবো। পেছন থেকে কেউ একজন চেঁচিয়ে বলে ওঠে আমাদের জমিদারের কাছে যাওয়া উচিত হয়নি, বিদ্রোহীদের কাছে যাওয়া উচিত ছিল। ওদেরকে বিশ্বাস করা উচিত ছিল, ওরা আমাদের ই মত গরীব মানুষ। এখন এই দুঃসময়ে আমাদের পাশে ওরাই থাকবে, জমিদার নয়। আমরা প্রতিশোধ চাই। জমিদারকে আজ থেকে আমরা আর মানিনা। ওখানে সমবেত প্রায় সকলে চিৎকার করে নিজেদের সহমত পোষণ করে। বংশী বুঝে যায় ওর দ্বিতীয় পরিকল্পনা ভীষণভাবেই সফল। এই সুযোগে বংশীও পাশ কাটিয়ে ওখান থেকে বেরিয়ে আসে। বংশী আবার জমিদারবাড়ির দিকে যাত্রা করতে শুরু করে। নিজের মনে মনে বংশী বলে ওঠে “এই বংশীর মস্তিষ্ক এতো ক্ষুরধার যে, আমি চাইলে আজ রাতেই জমিদারবাড়ি দখল করতে পারতাম। কিন্তু না, ওভাবে নয়। মালাকে ছাড়া জমিদারী আমার কাছে মুল্যহীন। রানি ছাড়া রাজমহলে আমার মন টিকবে না” মালার কথা ভাবতেই বংশীর তলপেটটা আবার চিনচিন করে ওঠে। মনে মনে বলে বংশী “মালা আর বেশিদিন তোমায় বা আমায় দূরে থাকতে হবেনা। আমার এই প্রকাণ্ড দণ্ড তোমার শরীরকে অচিরেই আনন্দ দিতে ব্যাস্ত হয়ে যাবে। তারপর থেকে বংশীরাজ ও মালা, ব্যাস আর কেউ নয়” বংশীর মাথায় এই মুহূর্তে মোট ৩ জন সুপ্রতীক, মালা ও টমাস। ব্যাস এই পরিকল্পনাগুলো সফল হলেই পুরো রাজ্যটা শুধুই ওর। হথাত ই বংশীর খেয়াল আসে আজ জমিদারের দুই যমজ বোন প্রিয়া ও গার্গীর জমিদারবাড়িতে আসার কথা। জমিদারবাড়িতে কাজ করছে প্রায় ২ বছর হয়ে গেলেও বংশী এই দুই রুপসীকে একবারের জন্য ও দেখেনি। ওদেরকে একবার দেখার জন্য বংশীর মনটা আনচান করতে শুরু করল। বংশী আরও দ্রুত জমিদারবাড়ির দিকে যেতে শুরু করল।
19-01-2019, 09:37 AM
পর্ব ১৮- মহামুল্যবান গুটিঃ
নিজের সমস্ত পরিকল্পনা সঠিকভাবে প্রয়োগ করার আনন্দ যে কি হয় তা এর আগে বংশী কোনোদিন ই বোঝেনি। বংশীর আজ খালিগলায় চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে “হ্যাঁ আমি বংশী, আমি রাজা, আমি ই এই অঞ্চলের সবচেয়ে যোগ্য প্রশাসক আমার চেয়ে বিচক্ষন এই রাজ্যে দ্বিতীয় আর কেউ ই নেই” এইসব ভাবতে ভাবতেই বংশী দ্রুত জমিদারবাড়ির কাছাকাছি পৌঁছে যায়। দূর থেকে লক্ষ্য করে জমিদারবাড়ির সামনে সার দিয়ে দাসীরা দাঁড়িয়ে আছে। প্রত্যেকের ই হাতে ফুলের মালা। বংশী বোঝে বহুদিন বাদে জমিদারবাড়িতে বাড়ির মেয়েরা ফিরছে, এগুলো তার ই জন্য। মনে মনে বলে ওঠে বংশী “এই আনন্দ এই ফুর্তি ক্ষণস্থায়ী জমিদারবাবু। আজ রাতের পরিকল্পনার ওপর ই নির্ভর করছে আপনার ভাগ্য। জমিদারবাড়ির একেবারে সামনে এসে গেলেও ওর দিকে কেউ তাকায়না। বংশীর খুব খারাপ লাগে, হয়ত ও ভেবেছিল সবাই ওকেও সম্বর্ধনা দেবে। বংশী ভেতরের দিকে এগিয়ে যায়, অন্দরমহলের বাইরে যেখানে ও প্রহরায় থাকে সেখানে বসে পড়ে। বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে একদৃষ্টিতে, দুই কন্যা গার্গী ও প্রিয়ার ব্যাপারে বহুকথাই ও শুনেছে। আশেপাশের কোনও রাজ্যেই নাকি ওদের মত সুন্দরী কন্যা নেই। যমজ হলেও দুজনে নাকি দুধরনের, একজন যদি গোলাপ হয় তো অপরজন রজনিগন্ধা। এসব ই ভেবে চলছিল বংশী, হথাত ই ভেতর থেকে “বংশী” বলে একটা মৃদুস্বর ভেসে এলো। এই সুমিষ্ট আওয়াজ বংশী খুব ভালো করেই চেনে, এই আওয়াজ আর কারুর নয়, ওর প্রানের চেয়েও প্রিয় মালার। বংশী ভেতর দিকে তাকায়। মালা ওর দিকে তাকিয়ে ভেতরে আসার জন্য ইশারা করে চলেছে। বংশী এক মুহূর্ত ও সময় নষ্ট করেনা। গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যায় ভেতরে। মালা দুকদম সামনে এসে প্রায় ওর গা ঘেঁসে দাঁড়ায়। মালার শরীর থেকে সুমিষ্ট আতরের গন্ধ ভনভন করে বংশীর নাকে আসে। সারাদিনের ক্লান্তি হথাত ই এই সুমিষ্ট গন্ধে কোথায় যেন হারিয়ে যায়। বংশী একবার মাথা তুলে মালার দিকে তাকায়। ও জানে মালা প্রচণ্ড চিন্তার মধ্যে রয়েছে। অদ্ভুতভাবেই এই এতো চিন্তার মধ্যেও ওর মুখে একটা মনহর হাসি লেগেই আছে। বংশীর চোখ নামিয়ে আনতে ইচ্ছে করেনা, কিন্তু কি করবে এখনো তো ও সামান্য লাঠিয়াল ই হয়ে আছে, রাজা এখনো ও হতে পারেনি। মালা খুব ধীরে ধীরে বলে ওঠে মালাঃ কি খবর বংশী, সব কুশল তো। তুমি নীলকুঠিতে গেলে তারপর কি হোল। ওই দুই গ্রামের মেয়ের কোনও বিপদ হয়নি তো। চুপ করে আছো কেন বংশী, তুমি জাননা আমার হৃদয় চিন্তায় ব্যাকুল হয়ে যাচ্ছে। কি হয়েছে বংশী জবাব দাও আমায়। বংশী বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থাকে তারপর বলে ওঠে বংশীঃ রানীমা, খবর ভীষণ ই খারাপ। জমিদারবাড়ির ওপর ঘোর অমঙ্গল নেমে আসছে। বংশীর কথা শুনে মালার মুখের হাসিটা হারিয়ে যায়, চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়ে যায়। মালাঃ কি হয়েছে বংশী, তুমি কি ওই দুই মেয়ের সম্মান বাঁচাতে পারনি। কি হয়েছে আমায় সব খুলে বল। বংশীঃ রানীমা, বলার তো অনেককিছুই আছে। আমি এখনো জমিদারবাবুকে কিছু জানাইনি। উনি যদি জানতে পারেন আমি আপনাকে সব কথা জানিয়ে দিচ্ছি, তাহলে আর এই ধরে প্রান থাকবে না। মালা বেশ কিছুক্ষন নিচের দিকে গভীরভাবে চিন্তা করে, তারপর বলে ওঠে মালাঃ ওনার আসতে এখনো অনেক দেরি। তুমি আমার সাথে ভেতরে চলো। তুমি কোনও চিন্তা করোনা, তোমার কোনও বিপদ হবেনা। উনি আসার আগে তুমি আমায় সব জানিয়ে দাও। মালা হাত দিয়ে ইশারা করে বংশীকে ওর সাথে ভেতরে যেতে ইশারা করে। বংশী মালাকে অনুসরন করতে থাকে। অন্দরমহলের ভেতরে ঢুকে মালা বাঁ দিকে বেঁকে যায় ও পেছন ফিরে বংশীকে ওর সাথে আসার জন্য হাত নেড়ে ইশারা করে। কয়েক ঘণ্টা আগে এই অন্দরমহলে ও প্রবেশ করেছিল। কিন্তু সুপ্রতীক ও মালার শোয়ার ঘরে যায়নি, বংশী জানে মালা ওকে এবার শোয়ার ঘরেই নিয়ে যাচ্ছে। বংশীর শরীরের ভেতর হাজার হাজার কেউটে ছোবল মারতে শুরু করল। প্রথমে নিজের দুই চোখের ওপর নিয়ন্ত্রন রাখলেও বংশী খুব দ্রুত হেরে গেলো। মালার দদুল্যমান দুই নিতম্ব ও সরু কোমরটা বংশীর ভেতর থেকে এক অচেনা জানোয়ারকে জাগিয়ে দিতে শুরু করে। উত্তপ্ত ও কামুক নিঃশ্বাসে সম্পূর্ণ ঘরটাই উত্তপ্ত হয়ে যায়। ঘরের ভেতরে গিয়ে মালা দাঁড়িয়ে যায়। বিছানার ওপর বসে বংশীকেও ওর ই পাশে বসার জন্য আমন্ত্রন জানায়। অন্য সময় হলে বংশী হয়ত আনুগত্য দেখিয়ে নাটক করে নিচে বসে পড়ত। আজ সারাদিনে একবার মালা ও সুপ্রতীককে ও একবার সিলিং সাহেবকে দুই যুবতীর সাথে উদ্দাম যৌনখেলায় মত্ত হতে দেখেছে বংশী। আজ হথাত করেই মানুষ বংশীর কাছে সুচারু কূটনীতিক বংশী হেরে যাচ্ছে। মালা মুখে আবার স্নিগ্ধ একটা হাসি এনে বংশীর দিকে তাকায়। বংশী কিছুতেই নিজের নজর মালার দুই কাজলহরিন নয়ন থেকে সরাতে পারেনা। মালা ধীরে ধীরে নিজের ডান হাত বংশীর দিকে নিয়ে যায়। পায়ের ওপর রাখা বংশীর হাতটা আলতো করে ধরে। এতক্ষন যে কেউটেগুলো শুধুই ভেতর থেকে ফোঁসফোঁস করছিল সেগুলো যেন কিলবিল করে একসাথে সবাই বাইরে বেড়িয়ে চলে আসে। বংশী আবার একবার মালার পুরু ও সুস্বাদু দুই ঠোঁটের দিকে তাকায়। বংশীর দ্রুত হৃৎস্পন্দন ও গভীর ঘন কামুকি নিশ্বাস যেন একটাই কথা বারবার করে বলতে চায় “বংশী এই লাস্যময়ী শরীরটা দুহাতে জাপটে ধরে ওই দুই ঠোঁটে নিজের ঠোঁটটা গুঁজে দে, কামনাময়ী শরীরটা থেকে বিন্দু বিন্দু সব রস শুষে খেয়ে নে” বংশী একবার নিজের দুই চোখ বন্ধ করে আর মনেমনে বলে ওঠে “না বংশী কোনও তাড়াহুড়ো নয়, সব ই তোর ইচ্ছে মত হচ্ছে। আর তো একটাই খেলা। ওটাতে জিতে গেলে রাজত্ব ও রানি দুই ই তোর” বংশীর দিকে তাকিয়ে মালা বলে ওঠে মালাঃ বংশী তুমি আমায় বিশ্বাস কর। তোমাদের জমিদারবাবু কখনোই কিছু জানতে পারবেনা। তুমি আমায় সব কথা বল। তুমি তো গিয়েছিলে নীলকুঠিতে কি হোল ওখানে? আমায় সব বল বংশী। বংশী মনের সমস্ত জোর দিয়ে নিজের কামনাকে নিয়ন্ত্রন করে ও ধীরে ধীরে মালার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে বংশীঃ রানিমা, এই মুহূর্তে আমাদের সামনে চরম বিপদ। আমি নীলকুঠিতে গেলেও আমায় ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বেশ কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করার পর, সিলিং সাহেব বাইরে এসে আমার দিকে ওই দুই নিষ্পাপ মেয়েকে ছুঁড়ে দেয়। সংজ্ঞাহীন ওই দুই মেয়েকে আমি বহুকষ্টে গ্রামে পৌঁছে দি। “ইস” বলে একটা শব্দ করে মালা নিজের কপালে হাত দেয়। বংশীও মালার দিকে তাকিয়ে চুপ করে যায়। বংশী আবার বলে ওঠে বংশীঃ রানীমা, আমি না গিয়ে জমিদারবাবু নিজে যদি জেতেন তাহলে বিপদ আরও বাড়ত। জমিদারবাবু এতোবড় অনাচার সহ্য করতেন না। আমি কিছুই করতে পারলাম না রানিমা। মালাঃ মানুষ এরকম জানোয়ার কি করে হয় বংশী। মেয়েদুটোর সম্মান আমরা রাখতে পারলাম না। আমরা কি সত্যি ই পরাধীন হয়ে গেছি বংশী। নিজের রাজ্যে আমরা এরকম আশঙ্কার মধ্যে থাকবো? ভিনরাজ্য থেকে সাত সাগর পার করে এসে এক ম্লেচ্ছ জাতি এভাবে আমাদের ওপর অত্যাচার করে যাবে। বংশীঃ রানিমা, সমস্ত গ্রামবাসী জমিদারবাবুকে নীচ নজরে দেখতে শুরু করেছে। ওরা অনেক আশা নিয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ করতে এসেছিলো। ওরা ভাবতেও পারেনি যে জমিদারবাবু ওদের বাড়ীর মেয়ের সম্মান রক্ষা করতে পারবেন না। জমিদারবাবুর এই মুহূর্তে চরম বিপদ। মালা বংশীর হাতটা আরও শক্ত করে ধরে বলে ওঠে মালাঃ কি বলছ তুমি? বিপদ মানে কি? বংশীঃ প্রজারা বিরুদ্ধে চলে গেছে। ওরা যেভাবে হোক সিলিং সাহেবের কোনও ক্ষতি করবেই। গ্রামে গিয়ে আমি তাই বুঝেছি। আর ওরা কোনও ক্ষতি করলে তার সমস্ত দায় গিয়ে পড়বে জমিদারবাবুর ওপর। রানিমা, ইংরেজদের কাছে কামান আছে, বন্দুক আছে, গুলিগোলা আছে। আমাদের কাছে তো লাঠি আর তরোয়াল ছাড়া কিছুই নেই। জমিদারবাবু প্রথমে ইংরেজদের সাথে বন্ধুত্ব নিয়ে চলছিলেন সেটাই ভালো ছিল। এখন সব কেমন জটিল হয়ে যাচ্ছে। মালাঃ তাহলে এখন কি হবে বংশী? কোনও উপায় কি নেই এই যুদ্ধকে থামানোর। বেশ কিছুক্ষন চিন্তা করার ভান করে বংশী উত্তর দেয় বংশীঃ রানিমা, আমাদের এই মুহূর্তে অপেক্ষা করা ছাড়া কিছুই করার নেই। আমি আপনাকে আগেই বলেছিলাম আমার এক দূরসম্পর্কের ভাই নীলকুঠীর সৈন্য, আমি ওর থেকে কিছু তথ্য জোগাড় করার চেষ্টা করব। এবার আপনি আমায় আজ্ঞা করুন রানিমা, আমি প্রস্থান করি। জমিদারবাবুর আসার সময় হয়ে গেছে, আমায় তো এবার প্রহরায় যেতে হবে। মালা উদাসীন মনে বংশীর দিকে তাকিয়ে থাকে ও ওকে যাওয়ার অনুমতি দেয়। শেষবারের মত মালার শরীরটা একবার নীচ থেকে ওপর অবধি দেখে নিয়ে বংশী বেড়িয়ে যায়। বাহিরমহলের কাছে আসতেই বাইরে থেকে প্রচণ্ড কোলাহলের শব্দ ভেসে আসে। বংশী নিজের লাঠিটা হাতে নিয়ে বাইরে বেড়িয়ে আসে। বাইরে এসে সবার আগে বংশীর নজরে যা পড়ে তা হোল অপরুপ সুন্দরী দুই অপ্সরা, দুজনকেই দেখতে হুবহু এক অর্থাৎ যমজ। চোখে ঘন করে কাজল, গোলাপি রঙের সাড়ী ও সবুজ ব্লাউজে দুজনকেই দেখে মনে হচ্ছে স্বর্গ হতে কোনও ডানাকাটা পরী নেমে এসেছে মর্তে। সাজপোশাক থেকে শুরু করে চোখের দুষ্টুমি প্রায় সব ই অনুরুপ। এক্ষুনি যদি দুজনে দৌড়ে ভেতরে প্রবেশ করে যায় তাহলে এদের মধ্যে কে গার্গী আর কে প্রিয়া তা স্বয়ং ভগবানের পক্ষেও বলা সম্ভব নয়। দাসীরা উলু দিয়ে হাতে ফুলের ডালি নিয়ে ওদের বরন করছে। বংশী একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ওই দুই অপ্সরার দিকে। মুখের মিষ্টতা ওদের শরীরের পরিপূর্ণতাকে ঢেকে দেয়নি, একটু ভালো করে নজর দিলেই বোঝা যায় খানিকটা শক্ত বেলের মত স্তনগুলো যেন আঠা দিয়ে ব্লাউজের খাঁজে খাঁজে চিটে আছে। সাড়ীর ফাঁক দিয়ে সুন্দর দুই নাভী মাঝেমধ্যেই উঁকি দিচ্ছে। গভীর কামনায় বংশীর শরীরে আবার উত্তাপ শুরু হয়। নিজেকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য বংশী দুচোখ বুজে দেয়। বন্ধ দুই চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক নতুন পরিকল্পনা। প্রিয়া ও গার্গী উলঙ্গ হয়ে নীলকুঠীর মধ্যে খাটের সাথে বাঁধা, আর এই দুই শরীরের সাথে লালমুখো সাহেব খেলা করে চলেছে। প্রচণ্ড উত্তেজনার সাথে বংশী চোখ খোলে। মনে মনে ভাবে “সত্যি বংশী তুমি ই রাজা হওয়ার যোগ্য। এতো বুদ্ধি রাজা ছাড়া কি আর অন্য কেউ নিজের মাথায় ধরে” জমিদারবাড়ির মাথায় আজ সকাল থেকেই অভিশাপের কালো মেঘ ছেয়ে এসেছে। রাজকুমারীদের অভিষেক ও তাই নিস্কলঙ্ক হলনা। হথাত করে সেই যুবক, যে দুপুরে জমিদারবাড়িতে এসে সিলিং সাহেবকে অভিযোগ করেছিল সে দৌড়ে সামনে এগিয়ে এলো। ওই স্থানে তখন হাজার হাজার মানুষের ভিড়, কেউ হয়ত ভাবেওনি এই ভিড় রাজকুমারিদের স্বাগত জানাতে নয় জমিদারির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতেই এখানে এসেছে। সেই যুবক অতর্কিতে সুপ্রতীকের পরনের কাপড় খুব জোরে চেপে ধরে বলে ওঠে “অত্যাচারী জমিদার, আজ যে অনাচার আমার বোনেদের সাথে হয়েছে, আমি তোকে অভিশাপ দিলাম সেই অনাচার একদিন তোর বোনেদের সাথেও হবে। তোর এই সুন্দরী বোনরা একদিন নিজেদের ইজ্জত হারাবে” গ্রাম্য এক যুবকের এই অতর্কিত আক্রমনে ওখানে উপস্থিত সকলেই অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। দাসীরা সামনে এগিয়ে এসে গার্গী ও প্রিয়াকে ভেতরে নিয়ে যেতে উদ্যত হয়। লাঠিয়ালদের মধ্যে একজন লাঠি নিয়ে সেই যুবককে মারতে উদ্যত হয়। শান্ত মাথার সুপ্রতীক তাকে বিরত করে। এক মুহূর্ত ওখানে না দাঁড়িয়ে থেকে সুপ্রতীক ও ভেতরে প্রবেশ করে। বাইরে থেকে গ্রামের সমবেত মানুষ সুপ্রতীককে অভিশাপ দিতে থাকে। অন্দরমহলে প্রবেশ করেই সুপ্রতীক বংশীকে ডেকে পাঠায়। বংশী সুপ্রতীকের কাছে গিয়ে সমস্ত ঘটনা ব্যাখ্যা করে। চিন্তায় ও আশঙ্কায় সুপ্রতীকের কপালে ভাঁজ পড়ে যায়। বংশী আবার বাইরে বেড়িয়ে আসে। বংশী জানে, এখনো অবধি ও সফল। কিন্তু ও জানে ওকে সজাগ হতে হবে কারন ওর শেষ পরিকল্পনা এখনো বাকি। আর সেই পরিকল্পনা ওর এই পাশাখেলার সবচেয়ে মুল্যবান ঘুঁটি, সিলিং সাহেবের ভাই, টমাস। এই ঘুঁটিটা বংশী যতটা পারদর্শিতার সাথে ব্যাবহার করতে পারবে, জমিদারী তত দ্রুতই ওর হাতে চলে আসবে। |
« Next Oldest | Next Newest »
|