Thread Rating:
  • 183 Vote(s) - 3.34 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica অঘটনঘটন পটিয়সী (নতুন আপডেট ৩১ )
আপডেট ২৯



সাফিনা করিম সাইকোলজিস্ট আদিবা রহমান এর সামনে বসে আছেন। সেইদিন সাইকোলজিস্ট এর কথা মাথায় ঢুকে নি তেমন করে কিছু। নুসাইবা কে টাকা দেওয়ার জন্য অস্থির হয়ে বসেছিল ভিতরে। সাইকোলজিস্ট সেটা খেয়াল করেছিল। গুড সাইকোলজিস্ট। সাফিনা কে পরে আলাদা করে ফোন করে জিজ্ঞেস করেছিল ডিস্টার্ব কিনা কিছু নিয়ে। সাফিনা ঠিক নুসাইবার ঘটনা বলতে না পারলেও বলেছিল একটা ব্যক্তিগত কারণে কনসার্ন ছিল। তখন সাইকোলজিস্ট বলেছিল আর দুই দিন পর একটা সেশন টাইম খালি আছে তখন আসতে চায় কিনা। সাফিনা রাজি হয়ে গেছে। আজকাল থেরাপি সেশনে যে মন খুলে কথা বলা যায় কোন জাজমেন্ট ছাড়া এইটা যেন মানসিক ভাবে একটা বড় রিলিফ। তাই রাজি হয়ে গেছে। আদিবা রহমান নরমালি প্রত্যেক সেশনের শুরুতে বলে দেন আজকে কি সেশনে কি হবে বা এই সেশনের উদ্দ্যেশ কি।


আদিবা রহমান আজকে সেশনের শুরুতে বলে দিয়েছেন আজকের সেশনে মূলত প্রশ্ন উত্তর হবে। এই কয়দিন সাফিনা নিজের গল্প বলেছেন। মাঝে মাঝে দুই একটা প্রশ্ন করলেও আদিবা খুবে বেশি কথার ব্যাঘ্যাত ঘটান নি। আদিবা রহমান সাইকোলজিস্ট হিসেবে দেখেছেন প্যাশেন্টের ট্রাস্ট অর্জন করা সবচেয়ে প্রথম কাজ। এইজন প্রথম কিছু সেশন খালি কথা শুনেন মনযোগ দিয়ে। এই সময় সম্পূরক দুই একটা কোশ্চেন করলেও খুব বেশি প্রশ্ন করেন না। কারণ আদিবা রহমান দেখেছেন ট্রাস্ট অর্জনের আগে বেশি প্রশ্ন করলে প্যাশেন্ট অনেক বেশি ডিফেন্সিভ হয়ে যায়। সাইকোলজিস্টদের আরেকটা বড় বাধা হচ্ছে প্যাশেন্টদের থেকে সত্য কথাটা বের করা। যদিও এখানে কোন জাজমেন্ট এর ভয় নেই তাও মানুষ সাইকোলজিস্টদের সামনে এসে সত্যটা আড়াল করে, কেউ মিথ্যা বলে। যারা এই কাজটা করে তারা যে মিথ্যা বলতে পছন্দ করে তেমন না, অনেক সময় না বুঝেই মিথ্যা বলে। আসলে আমরা আমাদের মনে নিজেদের একটা ভার্সন তৈরি করি সেইটা অনেক সময় বাস্তবের আমাদের থেকে আলাদা। সাইকোলজিস্টদের সামনেও লোকে নিজেদের সেই কল্পনার ভার্সনটা দেখাতে থাকে। তবে সমস্যা হল আসল প্যাশেন্ট বা তার আসল বাস্তবতা না বুঝতে পারলে সাইকোলজিস্টদের জন্য প্যাশেন্ট এর ট্রিটমেন্ট খুব জটিল। সাফিনা করিম এর সাথে এই কয়দিন কথা বলে আদিবা রহমান কিছু সিদ্ধান্তে এসেছেন। সাফিনা করিম কিছুটা ডিপ্রেসড। এই ডিপ্রেশন অল্প থাকা অবস্থাতেই উনি সাইকোলজিস্ট এর কাছে এসেছেন এইটা ভাল ব্যাপার। আবার সাধারণত বাঙ্গালী মধ্যবয়সী মহিলা বা পুরুষদের ডিপ্রেশনের কারণ অনেক সময় অনেক পুরাতন ঘটনার সাথে বা ট্রমার সাথে জড়িত। তেমন কিছু হলে ট্রিটমেন্ট অনেক সময় একটু কঠিন। সাফিনা করিম পরিবার অন্তপ্রাণ আবার একই সাথে ক্যারিয়ারিস্টিক। যদিও সাফিনা সব সময় পরিবার কে প্রাধান্য দিয়েছেন অন্তত তার কথাতে তাই মনে হচ্ছে কিন্তু এই বয়সে এসে যখন পরিবারের সবাই যার যার মত ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তখন ক্যারিয়ারে যে অংশটুকুতে পরিবারের জন্য পিছিয়ে পড়েছেন সেইটা নিয়ে এক ধরণে বিষাদ আছে তার মনে। তার সমান যোগ্যতার বা তার থেকে কম যোগ্য লোকজন সামনে এগিয়ে গেছে। এটা সাফিনার মনের মাঝে একটা অস্বস্তি তৈরি করে রেখেছে।  মেয়েদের কে ভালবাসেন। আর দশটা বাংগালী মায়ের মত মেয়েদের পিছনে অনেক সময় দিয়েছেন। এখন মেয়েরা সাবলম্বী হয়ে যার যার মত ব্যস্ত হয়ে পড়ায় সেই সময়টা নিয়ে কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। ব্যস্ত মেয়েরা হয়ত সব সময় সময় করে মায়ের খোজ নিতে পারছে না তাতে মনের মাঝে এক ধরনের কষ্টবোধ আছে। আর সব শেষে সাফিনা করিমের স্বামী মিজবাহ করিম। সাফিনার কথায় মনে হচ্ছে মিজবাহ করিম আর দশটা সাধারণ বাংগালী পুরুষের মত। ফ্যামিলির প্রতি টান আছে এবং ফ্যামিলির প্রতি লয়াল। তবে বাংগালী পুরুষ তাদের বেড়ে উঠার সময় শেখানো নিয়মের কারণে অনেক সময় ফ্যামিলির প্রতি তাদের ভালবাসা খালি অর্থ উপার্জন বা গিফট দিয়ে নয় বরং সময় দিয়ে বা সান্নিধ্য দিয়ে কিভাবে মেটাতে হয় সেটা শিখে উঠতে পারে না। মিজবাহ করিমের মাঝেও সেই সমস্যাটা আছে বলে এই কয় সেশনের কথাতে প্রাথমিক ভাবে বুঝতে পেরেছেন আদিবা রহমান। আজকের সেশন আসলে এইসব ব্যাপার নিয় হবে। আদিবা রহমান এইসব ব্যাপারে নানা প্রশ্ন করে আর বিস্তারিত জানতে চান। হয়ত এক সেশনে হবে না তাহলে দরকার হলে পরের আরেক সেশন নিতে হবে। আর বুঝতে হবে সাফিনা করিমের মনের ভিতর এই পয়েন্ট গুলোর মধ্যে কোনটা বেশি গূরুত্বপূর্ন।


আদিবা রহমান শুরু করেন সেশন। কেমন আছেন আপনি? সাফিনা উত্তর দেয় ভাল। আদিবা আবার জিজ্ঞেস করে, আজকে আর অন্য মনস্ক থাকবেন না তো। সাফিনা হাসি দিয়ে বলে না। সাফিনা এইবার বলে আমি কলেজের টিচার। সব সময় সবাই কে প্রশ্ন করে অভ্যস্ত। আজকে আপনি যেভাবে প্রশ্ন করছেন তাতে মনে হচ্ছে আমি ছাত্রী। আদিবা হাসি দিলেন, এটা গুড সাইন। প্যাশেন্ট তার সাথে বেশ খোলামেলা হচ্ছে, নিজের অনের অনুভূতি গুলো হালকা চালে প্রকাশ করছে। আদিবা বললেন না, না একদম তেমন ভাববেন না। বরং ভাবুন আমি আপনার কাউন্সিলর। সো আমি প্রশ্ন করছি আপনাকে আর ভালভাবে জানার জন্য। আপনাকে আমি যদি ভালভাবে বুঝতে না পারি তাহলে কাউন্সিলর হিসেবে আমার পক্ষে আপনাকে হেল্প করা অসম্ভব। সাফিনা মাথা নাড়েন, বুঝতে পেরেছে সাফিনা প্রশ্নের উদ্দ্যেশ। আদিবা তাই প্রথম প্রশ্ন করে, আপনি আপনার ফ্যামিলি কে ভালবাসেন? সাফিনা উত্তর দেয়, হ্যা। কতটুকু ভালবাসেন? সাফিনা কোন সময় না নিয়ে বলে একজন মানুষ যতটুকু ভালবাসতে পারে। আদিবা এইবার প্রশ্ন করেন, ফ্যামিলি বলতে আপনি কি বুঝেন? মানে আপনার সংজ্ঞায় কারা আপনার ফ্যামিলির অংশ? সাফিনা এইবার একটু সময় নেন, চিন্তা করেন। ফ্যামিলি কে কেউ এইভাবে সংজ্ঞায়িত করতে বলে নি এর আগে। ছোটকালে শেখা পরিবারের সংজ্ঞা দিবেন? সেটা তো হাস্যকর শোনায়। শিক্ষক মানুষ সাফিনা। সব সময় কথা গুছিয়ে সুন্দর করে বলেন। এইবার তাই কয়েক সেকেন্ড বললেন, ফ্যামিলির সংজ্ঞা তো আপনি জানেন। আধুনিক যুগে নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি হলে হাজব্যান্ড ওয়াইফ আর বাচ্চারা। পুরাতন যুগের সংজ্ঞায় ধরলে আপনার বৃহত্তর পরিবার, মানে আপনার আত্মীয় স্বজন, ভাইবোন, হাজব্যান্ডের আত্মীয়স্বজন সবাই। তবে আমি মনে করি ফ্যামিলির সংজ্ঞা খালি এই রক্তের সম্পর্ক বা বিবাহের সম্পর্কের বাধনে বাধা না। পরিবার হল সেই মানুষ গুলো যাদের জন্য আপনি সব করতে পারেন আবার যারা আপনার জন্য সব করতে পারে প্রতিদানে। যারা ছোটখাট মান অভিমানে আপনাকে ছেড়ে যায় না আবা আপনি যাদের ছেড়ে যান না। তাই অনেক সময় রক্তের সম্পর্কের মানুষও দূরের হয়ে যায় আর দূরের মানুষ কাছের হয়। আদিবা মাথা নাড়ে। এইবার জিজ্ঞেস করে, আপনার সংজ্ঞা অনুযায়ী তাহলে কারা আপনার পরিবার? মানে কাকে আপনি একদম আপনার ফ্যামিলির কোর অংশ বলে ভাবেন। সাফিনা ভাবে। তারপর যেন মনে মনে গুণছে সেইভাবে বলে, আমার বর, মেয়েরা, মেয়ের জামাই, নুসাইবা আমার বরের বোন, আমার মা, আমার ভাইয়েরা। আদিবা নোট নেয় খাতায়। আদিবা প্রশ্ন করে আপনি কি সব সময় আপনার পরিবারের সদস্যদের জন্য বেস্ট টা দিয়েছেন আপনার? সাফিনা কোন দ্বিধা না করেই বলল, সব সময়। আমার সাধ্যমত আমি সব সময় চেষ্টা করেছি আমার ফ্যামিলির লোকদের হেল্প করতে, তাদের সময় দিতে। আদিবা এইবার প্রশ্ন করে আপনার ফ্যামিলির লোকেরা কি সেইম ভাবে আপনাকে সময় দিয়েছে, হেল্প করেছে? সাফিনা এইবার একটু দ্বিধায় পড়ে যায়। কি উত্তর দিবে? আদিবা রহমান জানে প্যাশেন্টদের জন্য এটা বড় অসস্তিকর প্রশ্ন। অনেক সময় মনের ভিতর থাকা কথা গুলো বলা সম্ভব হয় না কারণ আমাদের সামাজিক নিয়ম বলে নিজের ফ্যামিলির সদস্যদের বিরুদ্ধে বাইরের কার কাছে খারাপ কিছু না বলতে। কিন্তু এইটা কাউন্সিলিং এর অংশ। আদিবা রহমান তাই বলে আপনি নিসংকোচে বলুন। আপনি যখন আপনার এসেসমেন্ট বলছেন তার মানে এইটা কার নিন্দা করা না, আপনার ভালবাসার মানুষ গুলোর প্রতি কোন রকম বিদ্বেষ পোষণ করা না। মানুষ হিসেবে আমরা সবাই ভুল করি, আমাদের আপনজনরাও করে। সেই রকম কিছু যদি আপনার মনে লাগে বলতে পারেন। কারণ মনে রাখবেন এই রুমের কথা বাইরে কোথাও যাবে না। আমরা খালি এই জিনিস গুলো নিয়ে আলোচনা করছি খালি এইটা বুঝার জন্য আপনার ভবিষ্যতে মানসিক ভাবে ভাল থাকার জন্য এই ইনফরমেশন গুলো কে আমরা কিভাবে কাজে লাগাতে পারি সেইজন্য।


সাফিনা এইবার উত্তর দেয়। সাফিনার উত্তর আদিবার আগের সন্দেহটাই সঠিক প্রমাণ করে। একজন নারী যখন সংসার শুরু করে তখন সে অনেক কিছু বিসর্জন দেয়। পরিবার গড়ে উঠার সময় অনেক অবদান রাখে। কিন্তু যখন সময় বাড়ে তখন পরিবারের বাকি সদস্যরা সেই পরিমান সময় বা ত্যাগ করতে পারে না সেই নারীটার জন্য। এমন না যে তারা একজন স্ত্রী, মা,বোন বা পরিবারের নারী সদস্য হিসেবে তাকে ভালবাসে না। আসলে নারীর অবদান কে পরিবারে মহিমান্বিত করে এমন ভাবে দেখানো হয় যে এটা দেবীর কাজ আর দেবীর কাজের প্রতিদান কে বা দিতে পারে বলুন। তাই বেশির ভাগ সময় কেউ সেই চেষ্টা করে না। দেবীর মন বুঝতে পারে না। অল্প একটু সময়, সাহচার্য আর যত্ন যে সেই প্রতিদানটুকু দিতে পারে এইটাই বুঝি অনেক সময় অনেকে বুঝে উঠতে পারে না। আদিবা বুঝেন এই ব্যাপারটায় আর প্রশ্ন করতে হবে। আজকে হয়ত প্রথমবার এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে দেখে সাফিনা সব কিছু খুলে বলতে স্বস্তি বোধ করছে না তবে পরে প্রশ্ন করলে হয়ত আর বিস্তারিত জানা যাবে। আদিবা বলে চলুন তাহলে আপনার প্রফেশনাল লাইফ নিয়ে কথা বলি। সাফিনা করিম এসোশিয়েট প্রফেসর সরকারী কলেজের। এডুকেশন ক্যাডারে ঢুকেছিলেন প্রায় বিশ বছর। পড়াশুনার মাঝেই বাচ্চা হয়েছে এরমাঝে বিসিএস দিয়েছেন, এডুকেশন ক্যাডারে চাকরিও হয়েছে। সেই সময়টাতে হ্যাজব্যান্ড, ননদ, শ্বশুড়-শ্বাশুড়ী ভাল সাপোর্ট দিয়েছেন। আদিবা রহমান প্রশ্ন করেন আপনার কি মনে হয় আপনি আর ভাল করতে পারতেন? সাফিনা একটু ভাবে। বলে, দেখুন বাচ্চা না থাকলে আমার অনার্স মাস্টার্সের রেজাল্ট হয়ত আর ভাল হত। কে জানে হয়ত ভার্সিটির টিচার  হতে পারতাম। আর বিসিএস এর সময় আর পড়তে পারলে হয়ত এডুকেশন ক্যাডার না আর প্রেস্টেজিয়াস কোন ক্যাডার হতে পারতাম। এডমিন বা ট্যাক্স। আদিবা জিজ্ঞেস করেন পুলিশে ইচ্ছা ছিল না? সাফিনা হেসে বলেন না পুলিশে আমার আগ্রহ নেই কখনো। আদিবা জিজ্ঞেস করেন তাহলে কি আপনার মনে এইটা নিয়ে আফসোস আছে? সাফিনা বললেন দেখুন আফসোস যে একটুকু নেই তা বলব না। আমার থেকে খারাপ ছাত্ররা আমার থেকে ভাল রেজাল্ট নিয়ে বের হয়েছে। বিসিএস এর সময়টাতে আমি জানতাম আমি এর থেকে ভাল করতে পারি কিন্তু ছোট দুইটা বাচ্চা সামলিয়ে এর থেকে বেশি করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। আদিবা রহমান প্রশ্ন করলেন, আপনি তো অনেক কম বয়সে ক্যাডার হয়েছেন। মাত্র ২৬ বছরে। এরপর আর কয়েকবার চেষ্টা করলেন না কেন। সাফিনা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। আদিবা জিজ্ঞেস করেন আর চেষ্টা করেন নি? মাথা নাড়েন সাফিনা, না। কেন? সাফিনা বললেন প্রথমবার এডুকেশন ক্যাডার হয়ে যাওয়ার পর হাজব্যান্ড আর ফ্যামিলির অন্য লোকেরা সবাই বলল এটাই সবচেয়ে ভাল আমার জন্য। অন্য ক্যাডারে কত ঝামেলা। এখানে ঝামেলা কম। মেয়েদের জন্য নাকি শিক্ষকতা সবচেয়ে ভাল পেশা। আদিবা প্রশ্ন করে আপনি এর প্রতিবাদ করেন নি। সাফিনা বলেন মধ্যবিত্ত ফ্যামিলিতে আমার মত যেসব মেয়েরা বেড়ে উঠে বিশেষ করে ত্রিশ চল্লিশ বছর আগে তাদের শিক্ষাটাই এমন ছিল যে ফ্যামিলির সবার বিরুদ্ধে গিয়ে খুব বড় প্রতিবাদ করাটাই হত না তখন। আর সবাই যখন বলছে ভালর জন্য বলছে এমন একটা ভাব তো ছিল সব সময়। আর আমার অন্য বান্ধবীদের অনেকের যেখানে বিয়ের পর পড়াশুনা বন্ধ হয়ে গেছে সেখানে আমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা শেষ করলাম। শ্বশুড়বাড়ী আর হাজব্যান্ড যথেষ্ট সহায়তা করেছে এইটা আমি অস্বীকার করতে পারি না এই ব্যাপারে। সেখানে সবার বিরুদ্ধে গিয়ে আমি আর কিছু করতে পারি নি। আর করতে গেলে বিসিএস এর প্রস্তুতির জন্য যে সময় দিতে হবে সেইটা আমি আর কম পাব কারণ তখন এইবার সবাই যতটা সহায়তা করেছে পরেরবার তা নাও করতে পারে এবং তখন সম্পর্ক আর খারাপ হবে। বাচ্চা গুলো তখন একদম ছোট। একটা প্রায় ছয় আরেকটা দুই বা তিন। সব ভেবে জীবনের লক্ষ্যটা খানিকটা নামিয়ে এনেছি। আদিবা রহমান নোট নেন, প্রফেশনাল লাইফ আর সাংসারিক জীবনের একটা টানাপোড়েন আছে, মেনে নিলেও মনে মনে আফসোস আছে প্যাশেন্টের।


আদিবা বলেন এরপর বলুন। সাফিনা বলল এই তো এরপর চাকরিতে জয়েন করলাম। ঢাকার বাইরে খুব একটা যাওয়া লাগে নি। মাঝে এক বছরের মত গাইবান্ধা সরকারী কলেজে পোস্টিং ছিল। এছাড়া বাকিটা সময় ঢাকাতেই বিভিন্ন কলেজে চাকরি করেছি। আদিবা বললেন বিশ বছর চাকরি জীবনের ঊনিশ বছর ঢাকাতেই? আপনি তো লাকি। সাফিনা হাসে। বলে এইটা আসলে লাকের ব্যাপার না তদবির। আমার হাজব্যান্ড বিভিন্ন কানেকশন কাজে লাগিয়ে মাঝে কয়েকবার ঘুষটুষ দিয়েও আমাকে ঢাকাতে পোস্টিং এর ব্যবস্থা করে দিয়েছে। মেয়েরা তখন স্কুলে পড়ছে আমি বাইরে গেলে কিভাবে হবে বলেন। আর এইটা জেনে অবাক হবেন যে ঢাকার সব সরকারী কলেজ গুলো বড় আমলা নাহলে পলিটিশিয়ানদের ওয়াইফদের পূনর্বসান কেন্দ্র। প্রচুর বড় আমলা আর পলিটিশিয়ানদের ওয়াইফ এডুকেশন ক্যাডারে আছে। তাদের মান যা হোক এরা তদবিরের জোরে ঢাকাতেই থাকে। আমার হাজব্যান্ড আমলা বা পলিটিশিয়ান না হলেও কর্পোরেটে বড় চাকরি করে আর ভার্সিটির বন্ধু বান্ধব, ফ্যামিলি কানেকশন সব মিলিয়ে সব সময় তদবিরে সমস্যা হয় নি। খালি একবার ঢাকার সবাই কে বাইরে বদলি করা হল একটা কারণে। তখন আমার বদলি হল। অবশ্য ততদিনে মেয়েরা বড় হয়ে গেছে। বড় মেয়ে ভার্সিটিতে আর ছোট মেয়ে কলেজে। ফলে ঐ একবছর বাইরে ছিলাম নাহলে সার্ভিসে অনেকের চক্ষুশূল হয়ে যেতাম। আদিবা জিজ্ঞেস করে আপনি পিএইচডি করেছেন বলেছিলেন না। সাফিনা বলে হ্যা। এই ডিগ্রিটা নিয়ে সাফিনা বেশ গর্বিত। পরিবারের দ্বায়িত্বের কারণে দেশের বাইরে যাওয়া হয় নি পিএইচডি করতে কিন্তু ঠিক দেশের ভিতর ঠিক পিএইচডি শেষ করেছে। এডুকেশন ক্যাডারের সিংহভাগ লোক শেষ পর্যন্ত পিএইচডি করে না। অর্নাস লেভেলের ক্লাস নেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কিন্তু নেই কোন পিএইচডি। সাফিনা এটা মানতে পারে না। তাই দেশের ভিতর পিএচডি করেছে এবং মনোযোগ দিয়ে করেছে। দেশের ভিতর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পিএচডি হয় ভিক্ষার পিএইচডি। সুপারভাইজার এর পেয়ারা লোক না হলে ভর্তির সুযোগ নেই আর ভর্তি হলে সুপারভাইজার অল্প কিছু কাজ করিয়ে পিএইচডি দিয়ে দেয়। সেইসব কাজের মান কেমন হল সেগুলো নিয়ে কেউ প্রশ্ন করে। সাফিনা এমন কাজ করে নি আর সাফিনার গাইডও যথেষ্ট কড়া ছিল। ইংরেজী সাহিত্যের ছাত্রী ছিল সাফিনা। সাহিত্যটা ভাল বুঝে। পিএইচডিতে কাজ করেছে বাংলাভাষাভাষীদের লেখায় ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে। এই ধরনের সাহিত্যের পরিমান খুব অল্প হলেও সব সময় বেশ কিছু লোক বাংলাদেশে এইভাবে লেখালেখি করে গেছে ইংরেজিতে। গল্প, কবিতা, উপন্যাস লিখেছে। তাই ওর কাজটা বেশ ইউনিক। সাফিনার পিএইচডি কাজ থেকে তিনটা আর্টিকেল বের হয়েছে আন্তর্জাতিক জার্নালে। তাই নিজের এই এচিভমেন্ট নিয়ে নিজে বেশ গর্বিত। আদিবা রহমান নোট নেয়, সাফিনা নিজের একাডেমিক এচিভমেন্টে সন্তুষ্ট। তবে সাফিনা এরপর নিজেই বলে, আমার মনে হয় আরেকটু সময় দিতে পারলে আজকে হয়ত ফুল প্রফেসর হয়ে যেতাম। ঢাকার বাইরে যেতে রাজি থাকলে হয়ত একটা কলেজের প্রিন্সিপালও হতে পারতাম। দেখা যাক। এখন মেয়েরা যার যার মত ব্যস্ত, হাজব্যান্ড কর্পোরেটে সর্বোচ্চ সোপানের পানে ছুটছে। হয়ত এখন বাইরে কোথাও পোস্টিং নিব প্রিন্সিপাল হয়ে। এতদিন ধরে শিক্ষকতা করছি এইবার এখানে আরেকটু উন্নতি করলে খারাপ কি। সাফিনার কথায় সায় দেয় আদিবা রহমান। নোট নেয় প্রফেশনালি উচ্চাকাংখা আছে।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: অঘটনঘটন পটিয়সী (নতুন আপডেট ২৮) - by কাদের - 28-01-2024, 04:16 PM



Users browsing this thread: papersolution, Sadko, 17 Guest(s)