Thread Rating:
  • 183 Vote(s) - 3.34 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica অঘটনঘটন পটিয়সী (নতুন আপডেট ৩১ )
মাহফুজ ফোন রিসিভ করেই জেবা বলল, পড়লেন নিউজটা? মাহফুজের প্রথমবার খবরটা পড়ার অভিনয় করতে হচ্ছে তাই মাহফুজ বলল, ক্যান ইউ বিলিভ ইট? জেবা বলল, আমি আগেই বলেছিলাম গড়বড় আছে আরশাদ ভাইয়ের মধ্যে। নাহলে কেউ এই চাকরি করে লাখ লাখ টাকার জুয়া খেলতে পারে। অবশ্য সেই কথা তো ওনার বৌ এর সামনে বলা যাবে না। আরেক আমার স্বামী। যে কিনা বন্ধুর জন্য পাগল। সবার সব কিছু দেখে কিন্তু বন্ধুর বেলায় চোখ বুঝে থাকে। মাহফুজ বলে আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না। জেবা বলে আপনাকে আমার অফিসে যেদিন আসলেন ইংগিত দিয়েছিলাম না। রিয়াদের অফিসের সাথে উনার কিছু ডিলিংস আছে। তবে আমি ভেবেছিলাম সেটাই বুঝি একমাত্র। এখন তো মনে হচ্ছে আর অনেক কিছু আছে। আরে অফিসের জুনিয়র কলিগরা কখন ঘুষ খাওয়ার সাহস পায়? যখন অফিসের বস নিজেই ঘুষ খায়। তারা জানে তখন বস তাদের কিছু বলতে পারবে না। মাহফুজ বলে হ্যা। তবে আমি ঐ অফিসের কয়েকজন কে জিজ্ঞেস করেছিলাম কেউ তখন কিছু বলে নি। জেবা বলে হ্যা জানি। আপনি ঐদিন বলেছিলেন। কিন্তু দেখেন এত টাকার জুয়া খেলা তো আর বেতনের টাকা দিয়ে হয় না। আর আগও বলেছিলাম ঢাকার আশেপাশে উনার অনেক সম্পত্তি। মাহফুজ বলে এটা কি আপনি শিওউর? জেবা একটু ক্ষেপে  উঠে। সব সময় সবাই ওর উপর ডাউট দেয়। সবাই কি ভাবে জেবা অবলা নারী। আশেপাশের কোন খবর রাখে না। জেবা বলে দেখেন আপনাকে ঐদিন যখন বললাম আপনি বিশ্বাস করলেন না। আজকে পত্রিকার রিপোর্টটা দেখেন। দেখলেই বুঝবেন। এরপর আমার দেওয়া খবর গুলোর সাথে রিপোর্ট মেলান। মাহফুজ মনে মনে ভাবে আপনার দেওয়া খবর গুলোই তো এই রিপোর্ট করতে সাহায্য করেছে। জেবা বলে দামী ফ্ল্যাট, ঢাকার আশে পাশে গোপন সম্পত্তি, ইউরোপে ট্যুর। এইসব কি সরকারী বেতনের টাকায় হয়। মাহফুজ বলে হ্যা, তা অবশ্য ঠিক। পত্রিকায় এইবার যখন এসেছে তখন নিশ্চয় ঠিক খবর। জেবা বলে জানেন, আমার অনেক দিনের আফসোস কেউ আরশাদ ভাই আর  নুসাইবা আপা কে ঠিক করে জাজ করে না। তারা যা বলে আশেপাশে সবাই মেনে নেয়। তারা যা করে সবাই তাতে গুণমুগ্ধ হয়। দেখেন, ঐদিন আপনাকে খেলার মাঠে এত কথা বলল কেউ একটা টু শব্দ পর্যন্ত করল না। আপনি মন খারাপ করে চলে গেলেন আর সবাই নুসাইবা আপার সাথে এমন ভাবে কথা বলা শুরু করল যেন কিছুই  হয় নি। মাহফুজ নিজের ভিতর পুরাতন রাগটা টের পেল। ঐদিন মাঠের অপমানটা যেন এখনো যায় নি বুকের ভিতর থেকে। মাহফুজ চিবিয়ে চিবিয়ে উত্তর দিল এইসব ব্যাপার কি ভুলা যায় জেবা আপা। জেবা বুঝে ঠিক জায়গায় আঘাত করেছে ও। জেবা তাই বলে আসলে পুরুষ মানুষ বেশির ভাগ একটা জিনিস খেয়াল করে। মেয়েদের রূপ। আমি অবশ্য আপনার কথা বলছি না। আপনি অন্য রকম। কিন্তু বেশির ভাগ ছেলেরা মেয়েদের রূপ আর ফিগার এই দুইটার আড়ালে মেয়েদের আর কোন দোষ গুণ দেখে না। আমি যদি সেদিন ঐরকম একটা কাজ করতাম তাহলে সবার সামনে আমাকে পাচ মিনিটের মধ্যে এসোশিয়েশনের লোকেরা মাফ চাইয়ে ছাড়ত। এইজন্য এত দেমাব বেটির বুঝছেন। নুসাইবা আপার দেমাগ এই জন্য। উনিও বুঝে ছেলেরা কি চায়। সবার সাথে কেমন হেসে হেসে কথা বলে। জেবার সব সময় মানুষের সাথে সহজে মিশতে পারে না। তাই নুসাইবার এই হাসি হাসি করে সবার সাথে কথা বলা আর সবার এতে গলে পড়া একদম অসহ্য লাগে। মাহফুজ বুঝে জেবা ক্ষেপে উঠেছে। আর ঝড়ুক ওর রাগ তাই চুপ করে থাকে মাহফুজ। জেবা এতদিন নুসাইবার পাশে থেকে থেকে অন্যদের কাছ থেকে পাওয়া সব অগ্রাহ্য, অবহেলার জন্য নুসাইব কে মনে মনে দায়ী করে এসেছে। ভিতরে জমে জমে সেই ক্ষোভ এখন বিস্ফোরণের জন্য প্রস্তুত। অনেক দিনের এত অবহেলা যেন মনের ভিতর তৈরি করেছে বিষাক্ত ক্ষোভ। এর আঘাতে নুসাইবা কে ছন্নছাড়া করে দিতে চায় জেবা। হিংসার মত শক্তিশালী রিপু আর নেই তা যেন প্রমাণ করছে জেবা আবার। জেবা বলে আমাদের রেজাল্ট প্রায় এক কিন্তু দেখেন সবাই নুসাইবা আপাকে ব্রিলায়ান্ট বলবে। কারণ কিছুই না উনি সুন্দরী। উনি বিদেশে পড়াশুনা করে এসেছেন। আরে আমি কি বিদেশে পড়তে যেতে পারি না? পারি কিন্তু দুই দুইটা বাচ্চা হয়েছে বিয়ের পর পর তাহলে বলেন কিভাবে আমি সময় দিব বাইরে পড়তে যাবার। বাংলাদেশ ব্যাংকে উনি চাকরি করে আর আমি নরমাল সরকারি ব্যাংকে চাকরি করি বলে সবাই আমাকে ইনফেরিওর ভাবে। কিন্তু কেউ এটা ভাবে না আমার পাশ করার পর পর তিন বছর বাংলাদেশ ব্যাংক কোন সার্ক্কুলার দেয় নি নতুন নিয়গের। আর যখন দিল তখন আমি প্রথম বাচ্চা নিয়ে প্রেগনেন্ট। এরপর সেই বাচ্চা যখন দুই বছর তখন আবার প্রেগনেন্ট। এই দুই বাচ্চা কে সময় দিতে গিয়ে নিজের পিছনে সময় দিতে পারলাম না। সরকারী চাকরির বয়সটাই চলে যাচ্ছিল। তাই এর মাঝে ঘর সামলিয়ে এই ব্যাংকের চাকরি যোগাড় করেছি। কিন্তু কেউ সেই সব নিয়ে প্রসংশা করবে না। কারণ আমি সুন্দরী না। আমি সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলতে পারব না। আমার আত্মীয় স্বজন সব বড় বড় জায়গায় চাকরি করে না। আমি শরীর দুলিয়ে মানুষের মন দুলাতে পারব না। গড় গড় একটানে কথা গুলো বলে হাফাতে থাকে জেবা। আমার মত দুই বাচ্চা হলে পর পর শরীরের এই গড়ন থাকত? পাড়ত এই চাকরি যোগাড় করতে? যে স্বামী কে নিয়ে এত দেমাগ জানেই না সেই স্বামী গোপনে গোপনে জুয়া খেলে। বলেন কি মানে এই দেমাগের। আর আমিও ঠিকঠাক করে ফ্যাশন করে কাপড় পড়লে এখনো অনেক ছেলে আমার কথায় কথায় হ্যা বলবে। মাহফুজ বলে আপা আপনি এমনিতেই বিউটিফুল। জেবা বলে থ্যাংকিউ ভাই। আপনি আমার থেকে বয়েসে ছোট। এইসব কথা বলা ঠিক হচ্ছে না বাট না বলেও পারছি না। আপনি আর আমি সেইম লোকের দেমাগের আঘাতে আহত। মাহফুজ মনে মনে বলে ঠিক এই কারণেই তো আপনাকে আমার দরকার।



মাহফুজ বলে সব অহংকারীর একদিন পতন হয় জেবা আপা। নুসাইবা ম্যাডামের এই গর্ব দেখবেন কেমন করে ধবসে পড়ে। জেবার মনের কথাটাই যেন বলেছে মাহফুজ। জেবা বলে ন্যাশনাল নিউজ পেপারে এসেছে এই খবর এখন নিশ্চয় লোকের চোখের পর্দা সড়বে। মাহফুজ বলে দেখবেন লোকেরা এইবার  বুঝবে আপনি ফেলনা কোন জিনিস নন। রিয়াদ ভাই তো আর এইভাবে টাকা কামাই করে না। আপনিও ঘর সংসার সামলিয়ে সুন্দর করে চাকরি করছেন। জেবা বলে, তবু একটু সন্দেহ হয় জানেন। মানুষ যেভাবে নুসাইবা আপা আর আরশাদ ভাইয়ের গুণমুগ্ধ দেখবেন এই ব্যাপারে কেউ কিছু বলবে না। মাহফুজ দেখে এই ওর সুযোগ। মাহফুজ বলে আপনাদের পরিচিতদের মধ্যে এমন লোক আছে না যারা এর খবর অন্যকে বলে বেড়ায়? জেবা হেসে বলে এমন লোক নেই এমন কোন সার্কেল কি আছে। মাহফুজ বলে আপনি কথাচ্ছলে এমন দুই একজনের কাছে পত্রিকার রিপোর্টের কথা বলেন। দেখবেন আগুনের বেগে তাড়াই আপনাদের পরিচিত সব মহলে এই খবর ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে। তখন নুসাইবা ম্যাডাম আর আরশাদ সাহেবের কি অবস্থা হয়। আমাদের দেশে সবাই হাতি গর্ত পড়লে লাথি দিতে চায়। দেখবেন লোকেরা ফোন করে করে খোজ নিচ্ছে রিপোর্টের ব্যাপারে উনাদের কাছে। প্রতিবার এই রিপোর্ট নিয়ে কথা বলতে গেলে উনাদের কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার মত হবে ব্যাপারটা। জেবা ব্যাপারটা চিন্তা করে খুশি হয়ে উঠে। ঠিক কথা বলেছে মাহফুজ ভাই। লোকটা ব্রিলিয়ান্ট। সব ব্যাপারে কিছু না কিছু কাজের কথা বলে। জেবা কৌতুহল থেকে জিজ্ঞেস করে আপনার কি মনে হয় এই রিপোর্টে আরশাদ ভাইয়ের কিছু হবে। মাহফুজ বলে এটা বলা কঠিন। কারণ উনার পিছনে কারা আছে তাদের খুটির জোর কেমন সেটার উপর নির্ভর করছে। আর পত্রিকা তো বলেছে পরের কিস্তিতে উনার উপর বিস্তারিত রিপোর্ট করবে। সেটা পড়লে বুঝা যাবে উনি গদি রাখতে পারবেন কিনা। জেবার মনের মধ্যে হিংসা কাজ করলেও বাস্তবে একদম খারাপ মানুষ না। বলতে গেলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে দেখা অন্য অনেকের মত সাধারণ ভাল মানুষ যাকে এই মূহুর্তে হিংসা গ্রাস করে আছে। জেবার মনের মধ্যে ভাল স্বত্তাটা আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। জেবা তাই বলে জানেন আমি চাইনা এটার জন্য আরশাদ ভাইয়ের চাকরি যাক বা নুসাইবা আপার কিছু হোক কিন্তু আমি চাই সবাই জানুক  উনারা কি। মিথ্যা মিথ্যা অহংকার যেন আর না করতে পারে। মাহফুজ এবার পরের চাল দেয়। বলে আরশাদ সাহেবের জায়গায় আমি থাকলে এই রিপোর্ট বন্ধ করার চেষ্টা করতাম। কারণ পরের রিপোর্ট কত বড় ক্ষতি করবে কে জানে। জেবা সংশয়ের সাথে বলে এটা ইজি  হবে না। মন্ত্রী এমপিরা পর্যন্ত তাদের  বিরুদ্ধে রিপোর্টিং বন্ধ করতে পারে না। আর এটা জাতীয় পত্রিকা এত সহজ হবে না। মাহফুজ বলে এইসব জিনিস সহজ না আবার খুব একটা কঠিন না। আরশাদ সাহেব জাতীয় নেতা না ফলে এই রিপোর্ট বন্ধ হলে কেউ কথা বলবে না। আবার পরের পার্টে যদি ড্যামেজিং কিছু থাকে তাহলে আর বড় ক্ষতি হবে উনার। জেবা বলে আপনি কি করতেন এই জায়গায়। মাহফুজ বলে ধরেন ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটের যুগ্ম সম্পাদক হাবিব ভাই কে আমি চিনি। আমি পলিটিক্সের কারণে জানি উনি এমন অনেক রিপোর্টিং এর ব্যাপারে দুই পক্ষের মধ্যস্ততা করতে সহায়তা করেন। আমি হলে হাবিব ভাইয়ের মাধ্যমে ট্রাই করতাম। জেবা কি যেন ভাবে। তারপর বলে আপনাকে যদি আরশাদ ভাই অনুরোধ করে তাহলে আপনি আপনার পরিচিত হাবীব ভাইয়ের মাধ্যমে ঐ রিপোর্টার কে এপ্রোচ করবেন? মাহফুজ মনে মনে বলে, এই তো আসল জায়গায় আসছে ঘুঘু। মাহফুজ উত্তর দেয় হ্যা। জেবা বলে কেন করবেন? নুসাইবা আপা আপনাকে এত অপমান করল আর আরশাদ ভাই সেটা দেখেও কিছু বলল না। তারপরেও আপনি উনাদের এই উপকার করবেন? মাহফুজ বলল দেখেন জেবা আপা আমার পলিসি ভিন্ন। আমাকে অপমান করার পর যদি আমার থেকে উপকার নেওয়া লাগে সেটা উনাদের সারা জীবন গলার কাটা হয়ে থাকবে। আমার সামনে আর কখনো এরপর মাথা উচু করে কথা বলতে পারবে না। কারণ উনাদের এই গোপন সমঝোতার আমি হব স্বাক্ষী। তাই কখনো আমাকে কিছু বলতে পারবে না। কাউকে অপমান করার জন্য সবার সামনে ডেকে বকতে হয় না। অনেক সময় এমন নীরবে অপমানের প্রতিশোধ নেওয়া যায়। ভাবতে পারবেন আপনার দেমাগী নুসাইবা আপা এরপর থেকে সব সময় আমাকে আপ্যায়ন করতে হবে। মিষ্টি করে কথা বলতে হবে। আমাকে যত বার দেখবে ততবার নিজেদের কৃতকর্মের কথা ভেবে মাথা নিচু করে থাকবে। ভাবুন। এর থেকে বড় প্রতিশোধ আর কি হয়। জেবা মাহফুজের কথা শুনে খুশি হয়ে উঠে। মনে মনে ভাবে এরকম হলে খারাপ হয় না। আরশাদ ভাইদের বড় কোন ক্ষতিও হল না আর নুসাইবা আপার দেমাগ ভেংগে গেল।  মাহফুজের প্রতি আবার আস্থায় মনটা ভরে উঠল জেবার। মাহফুজ ভাইকে দিয়েই নুসাইবা আমার দেমাগ ভাংগতে হবে।




নুসাইবা গত দুই ধরে প্রচন্ড অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। রোববার অন্যদিনের মত সকালে অফিসে গেছে। একটা মিটিং ছিল এইএমএফ এর প্রতিনিধি দলের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের। সেই মিটিং এ বাংলাদেশ দলের সদস্য হিসেবে ছিল  নুসাইবা। গূরুত্বপূর্ণ মিটিং। মিটিং শেষে অফিসে বসে কয়েকটা ফাইল চেক করছিল। লাঞ্চের আগে দিয়ে নুসাইবার মনে হল ডিরেক্টর স্যারের সাথে দেখা করে আসি। ওর ডিভিশনের যিনি ডিরেক্টর উনি নুসাইবা কে খুব স্নেহ করেন। উনার অফিসে যাবার আগে একটা বড় হলরুমের ভিতর দিয়ে যেতে হয়। সেখানে অনেক জুনিয়র অফিসাররা কাঠের পার্টিশন দিয়ে বসে। সেটা পার হবার সময়  নুসাইবা খেয়াল করল সবাই মনে হয় ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ওর দিকে অফিসের জুনিয়র কলিগ এমনকি সিনিয়র কলিগরা আড়চোখে তাকায়। যখন খেয়াল করছে না তখন ওর শরীরের দিকে নজর দেয়। বাংলাদেশে সব খানে কাজ করতে গেলে এমন হবেই। নুসাইবা এগুলো কে আজকাল আর গায়ে মাখে না। কেউ যদি খুব বেশি আগ বাড়িয়ে কিছু না করে তাহলে খালি দেখতে চাইলে নুসাইবা কিছু বলে না আর। কতজন কে বলবে? বলতে গেলে অফিসের ছেলে কলিগদের আশি পার্সেন্ট কে ধরতে হবে। বরং মনে মনে ভাবে সরকারী অফিসে এগুলো কম। প্রাইভেট অফিসে চাকরি করলে এইসব ঝামেলা আর বেশি পোহাতে হত। তবে আজকে মনে হচ্ছে যেন সবাই ওকে দেখছে। এমন কি মেয়ে কলিগরা। নুসাইবা বুঝে উঠতে পারে না। ওর মনে হয় হয়ত ভুল ভাবছে। ও ক্রস করে যাওয়ার পর মৃদু একটা গুঞ্জন উঠল যেন আলোচনার। নুসাইবা কি হল বুঝতে পারে না। ডিরেক্টর স্যারের রুমে ঢোকার পর সালাম দিতেই স্যার বললেন, নুসাইবা তুমি ঠিক আছ তো? আর ইউ অলরাইট? এইবার নুসাইবা সত্যি সত্যি একটু অবাক হয়। কি হল স্যারের? ডিরেক্টর স্যার বলেন নুসাইবা বস। নুসাইবা বসতেই বলে শোন এই সব পত্রিকার খবরে খুব একটা মাথা ঘামিয়ো না। অনেক সময় টাকা খেয়ে ভুলভাল রিপোর্ট করে। আমার অনেক  বন্ধুদের বিরুদ্ধেও এমন রিপোর্ট হয়েছে। একটু শক্ত মনে হ্যান্ডেল করতে পারলে আর কিছু হবে না। নুসাইবা অবাক হয়ে যায়। কি রিপোর্ট? কিসের রিপোর্ট? ডিরেক্টর স্যার আবার বলেন, তোমার হাজবেন্ডের সাথে কথা বলেছ? হাউ ইজ হি হ্যান্ডলিং দ্যা রিপোর্ট? নুসাইবা পুরো পাজলড। এখানে কিসের রিপোর্ট এর কথা বলছে স্যার আর সেখানে আরশাদের কি ভূমিকা। স্যার আবার বললেন, প্রতিবার ট্যাক্স ফাইলের সময় আরশাদ সাহেব যেভাবে আমাকে হেল্প করেন তাতে বলতেই হবে হি ইজ ভেরি মাচ এ জেন্টলম্যান। এইসব রিপোর্ট নিশ্চয় অফিস পলিটিক্সে কেউ করিয়েছে। নুসাইবা একদম বিস্ময়ে হতবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে কিসের কথা বলছেন স্যার। ডিরেক্টর বুঝেন নুসাইবা এখনো রিপোর্টের খবর জানে না। তাই সামনে থাকা পত্রিকাটা এগিয়ে দেন। নুসাইবা উনার সামনে বসে দুই বার রিপোর্টটা পড়ে। পত্রিকার নামটা পড়ে। নতুন পত্রিকা বাট বেশ ভাল করছে। নুসাইবার চোখ মুখ গাল লাল হয়ে উঠে। ডিরেক্টর ব্যাপারটা খেয়াল করেন। উনি নুসাইবা কে স্নেহ করেন। তাই বলেন, আজকে তুমি হাফ বেলা অফ নাও। ছুটির দরখাস্ত দেওয়া লাগবে না। আমি দেখব। আই থিংক এই মূহুর্তে তোমার সাপোর্ট দরকার হবে আরশাদ সাহেবের। ডিরেক্টর স্যার কে সালাম দিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে আবার ঐ হলরুমের ভিতর দিয়ে নিজের অফিসে ফিরতে হয় নুসাইবা কে। আসার সময় আবার সেই চোরা চাহনি, ফিসফাস গুঞ্জন। আগেরবার না জানলেও এইবার নুসাইবা জানে এই ফিসফাস আর চোরা চাহনির মানে। এই অফিসের অনেকের ট্যাক্স ফাইলের কাজে আরশাদ হেল্প করে দিয়েছে। তাই আরশাদ বেশ পরিচিত মুখ ওদের ডিপার্টমেন্ট। নুসাইবার মনে হয় ওদের সবার চোখে বুঝি ওর আর আরশাদের সম্মান ভেংগে ধূলোয় মিশে গেছে। সবার সামনে দিয়ে হেটে যাবার সময় নুসাইবার মনে হয় লজ্জায় আর অপমানে লাল হয়ে গেছে ও। ওয়াক অফ শেইম (walk of shame) কথাটা এতদিন ধরে জানলেও আজকে মনে হয় সেই কথাটার মানে উপলদ্ধি করতে পারছে।


এরপর থেকে গত দুই দিন নুসাইবার প্রচন্ড অস্থিরতার মধ্য দিয়ে সময় যাচ্ছে। অফিসে যাচ্ছে কিন্তু কাজ করতে পারছে না। বাসায় আসছে কিন্তু ঘুমাতে পারছে না। আরশাদ কে দেখলে আর মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এরপর আছে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন আর কলিগদের ফোন আর অজস্র প্রশ্ন আর উপদেশ। প্রতিবার এইরকম একটা ফোন কল রিসিভ করা মানে মনের ভিতরটা আর বিষিয়ে উঠা। তাই বেশির ভাগ সময় ফোন বন্ধ করে রাখছে নুসাইবা। আরশাদ কে যেন বুঝে উঠতে পারছে না। সেইদিন রিপোর্ট বের হবার পর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আরশাদ একবারও ফোন করে নি নুসাইবা কে। আবার বাসায় এসে এমন ভাব করছিল যেন কিছুই হয় নি। সব স্বাভাবিক। একটু পর আর নিতে পারে নি নুসাইবা। আরশাদের সামনে পত্রিকাটা রেখে জিজ্ঞেস করেছিল এটার মানে কি? আরশাদের চোখে মুখে তখন হতবিহবল দৃষ্টি। চুপ হয়ে থাকা আরশাদ কে তখন রাগী চোখে আরেকবার জিজ্ঞেস করেছিল নুসাইবা বল এটা কি সত্যি। আরশাদ যেন এরপর সম্বিত ফিরে পায়। বারবার বলতে থাকে এটা মিথ্যা। টাকা খেয়ে নিশ্চয় রিপোর্ট করেছে। অথবা নিশ্চয় ওর অফিসের কোন কলিগ  হিংসার বসে ভুলভাল খবর দিয়ে রিপোর্ট করিয়েছে। আর আজকাল সরকারি অফিসারদের দূর্নীতির খবর শুনলে সাংবাদিকরা ভাল করে চেক না করে ছাপিয়ে দেয় কারণ লোকে এইসব নিউজ খায় ভাল। দেখ ভাল করে এখানে আমার কোন স্টেটমেন্ট নিয়েছে কিনা। একটা ভাল রিপোর্টার অন্তত যার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করছে তার সাথে যোগাযোগ করে তার মতামত নেয় আর সেটা রিপোর্টে ছোট করে ছাপে। এটা শুনে একটু শান্ত হয় নুসাইবা। হ্যা এটাও সত্য বটে। রিপোর্টে কোনখানে আরশাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ রাখে নি। ভাল রিপোর্টিং এমন নয় সেটা নুসাইবাও জানে। কিন্তু আরশাদের সারাদিন ধরে এতবড় খবর গোপন রাখা, ওর প্রশ্ন শুনে একটা হতবিহবল দৃষ্টি সব কেমন যেন ওর ভিতরের হিসাব কে মিলতে দেয় না। ওর মনে হয় আরশাদ কিছু লুকাচ্ছে না তো। কিন্তু আরশাদ সারাজীবন যেভাবে ওর পাশে থেকেছে। বিপদে আপদে ওর সমর্থন দিয়েছে সেখানে আরশাদ কি এতবড় জিনিস ওর থেকে লুকাতে পারে? নুসাইবা ওদের  নিজেদের দিকে তাকায়। হ্যা ওদের একটা দামী ফ্লাট আছে। ঢাকায় বেশ কিছু জমি আছে। প্রায় বছর দেশের বাইরে ঘুরতে যায়। কিন্তু আরশাদ তো বলে এসেছে এগুলো ওর শেয়ার বাজারের টাকায় করা। আরশাদের বাবার যথেষ্ট টাকা ছিল। উনার মৃত্যুর পর পাওয়া টাকাটা নাকি আরশাদ শেয়ারে খাটিয়েছে। আর ওর পজিশনের জোরে প্রায় নাকি ভিতরের অনেক খবর ও আগে থেকেই জানে। কোন শেয়ার এর দাম পড়বে আর কোন শেয়ারের দাম বাড়বে। হ্যা এটাও নৈতিকভাবে হয়ত ঠিক না কিন্তু এটা সরাসরি ঘুষ খাবার যে ইংগিত দিয়েছে এই রিপোর্ট অত খারাপ না। সারাজীবন নুসাইবা জেনে এসেছে ঘুষ খায় একদম বদমাশ মাতাল লম্পট সরকারি অফিসাররা। যাদের বউদের অনেক ডিমান্ড। ওর কোন ডিমান্ড নেই। আর আরশাদ তো মোটেই লম্পট, বদমাশ না। মাঝে মাঝে হালকা ড্রিংক করে বাট সেটা মাতলামি করার মত কিছু না। হালকা অকেশনাল ড্রিংক।  সাপ্তাহে একবার বা কখনো দুইবার বন্ধুদের সাথে নাকি আড্ডা দিয়ে ক্লাবে একটু খেয়ে আসে। তবে কখনোই মাতাল দেখে নি আরশাদ কে। আরশাদ ওর লিমিট জানে। এটাই আসল ব্যাপার সব কিছুতে আরশাদ ওর লিমিট জানে। আরশাদ কখনোই এরকম ঘুষ খেতে পারে না। তবে আরশাদের ওর কাছে থেকে ব্যাপারটা লুকানো আর এই ব্যাপারে কথা উঠলেই চোরা দৃষ্টিতে ওকে লক্ষ্য করার চেষ্টা নুসাইবা এ পুরো নিসন্দেহ হতে দেয় না। আর নুসাইবার চরিত্রের একটা দিক হল কোন জিনিসের পুরোটা না জানা পর্যন্ত ও শান্ত হতে পারে না। কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। মানুষজনের এই হাজার হাজার প্রশ্ন আর দৃষ্টি কে উপেক্ষা করতে হলে  নুসাইবার নিজের মনের ভিতর আগে একমত হতে হবে আরশাদ ঘুষ খায় না। যদিও আরশাদ বারবার নানা যুক্তি দিয়ে ওকে বলেছে তবু ওর নিজের মনের শান্তির জন্য ওকে  নিশ্চিন্ত হতে হবে।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: অঘটনঘটন পটিয়সী (নতুন আপডেট ২১) - by কাদের - 03-08-2023, 10:53 PM



Users browsing this thread: 14 Guest(s)