Thread Rating:
  • 179 Vote(s) - 3.31 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica অঘটনঘটন পটিয়সী (নতুন আপডেট ৩১ )
আপডেট ২১



জেবার সাথে কথা বলার পর থেকেই মাহফুজের একটু নির্ভার লাগছে। ওর মাথার ভিতর থাকা প্ল্যানটা এক্সিকিউট করবার জন্য কি রাস্তা ব্যবহার করা যায় সেটা ঠিক করে উঠতে পারছিল না। জেবার সাথে ওর দুই দিনের কথোপকথন আসল রাস্তাটা দেখিয়ে দিয়েছে ওকে। মাহফুজ রাজনীতির মাঠে নতুন খেলয়াড় না। বয়স কম হলেও ওর বেড়ে উঠা রাজনৈতিক পরিবারে। নানা এবং বাবা দুইজনে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করছে বহু বছর। মাহফুজদের বাসায় প্রায় বিভিন্ন রাজনৈতিক মিটিং হয়। তাই ছোটবেলা থেকে রাজনৈতিক পরিবেশে বড় হওয়ায় কিভাবে প্রতিপক্ষ কে স্ট্রাটেজিক্যালি মোকাবেলা করতে হবে তার একটা প্রাথমিক ধারণা ওর ছিল। এরপর কলেজ থেকেই রাজনীতিতে জড়িয়েছে। ভার্সিটির প্রথমবর্ষে রাজনীতির সাথে সম্পর্ক আর গভীর হয়েছে ওর। সেই সময় থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক কূটচালের কখনো শিকার আর কখনো প্ল্যানকারি হিসেবে মাহফুজের অভিজ্ঞতার ভান্ডার সমৃদ্ধ হয়েছে। এইসব অভিজ্ঞতা থেকে মাহফুজ জানে প্রতিপক্ষ  শক্তিশালী হলে তার সাথে সরাসরি লড়াই করা বোকামি। সেখানে আড়াল থেকে লড়তে হয়, অন্য কাউকে উস্কে দিতে হয় লড়ায়ে। অনেক সময় প্রতিপক্ষ যাকে তুমি সরাসরি শত্রু বানাতে চাও না, কিন্তু একটা নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে হারাতে চাও। সেক্ষেত্রে সবচেয়ে ভাল উপায় হল একটা কৃত্রিম সংকট তৈরি করা সেই প্রতিপক্ষের জন্য। সংকটটা এমন ভাবে তৈরি করতে হবে যাতে সেখানে তোমার হাত আছে বুঝা না যায়। এরপর সেই সংকটে প্রতিপক্ষ ভালভাবে জড়িয়ে পড়লে উপস্থিত হতে হবে ত্রাতার ভূমিকায়। বিপদ থেকে উদ্ধার করে ঋণী করে ফেলতে তোমার কাছে। অনেকটা সর্প হইয়া দংশন কর, ওঝা হইয়া ঝাড় টাইপ ব্যাপার।



ভার্সিটি লাইফ থেকে শুরু হওয়া ওর মূল রাজনৈতিক জীবন আজ পর্যন্ত ধরলে প্রায় এক যুগ। এত দিনে এই টেকনিক বেশ কয়েকবার ব্যবহার করেছে এবং সাফল্যের হার খুব একটা খারাপ না। সিনথিয়ার সাথে ওর বিয়ের জন্য নুসাইবা-আরশাদের আর্শীবাদ দরকার ওর, আবার বর্তমান পরিস্থিতিতে এই আর্শীবাদ পাওয়ার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ। তাই সোজা রাস্তা না ধরে ওকে বাকা রাস্তা ধরতে হচ্ছে। এমন কোন একটা সংকট ওকে সৃষ্টি করতে হবে যেটার কারণে আরশাদ-নুসাইবা বিপদে পড়ে বা বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। সংকটের শুরুতে কোন হেল্প করা যাবে না যাতে সংকট আর ঘনীভূত হয়। এরপর যখন নুসাইবা-আরশাদ অস্থির হয়ে উঠবে তখন সহায়তা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। মানুষ যখন দিশেহারা হয় ঠিক তখন সামান্য সাহায্য মানুষ কে অনেক বেশি কৃতজ্ঞ করে তুলে। নুসাইবা আর আরশাদ দুইজনের মধ্যে নুসাইবার চাকরি বাংলাদেশের ব্যাংকে, মূলত রিসার্চ সেকশনে। সেখানে মাহফুজের দৌড় এখনো পৌছায় নি। আর বাকী থাকে আরশাদ। আরশাদ বড় অফিসার হলেও চাকরির ন্যাচারের কারণে প্রচুর পাবলিক ডিলিংস করতে হয়। সেই কারণে আরশাদ কে টার্গেট করা ইজি। সেটাই মাহফুজ করেছে। আর নুসাইবা যেভাবে জামাই অন্তপ্রাণ তাতে আরশাদ কে কোন বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারলে নুসাইবার মন পাওয়া কঠিন হবে না। আর কোন সংকট সৃষ্টি করতে গেলে যাকে  বিপদে ফেলতে হবে তার এবং তার পরিপার্শ্বিক সম্পর্কে ভাল ধারণা থাকা উচিত। এই তথ্য সংগ্রহের খেলাটা শুরু হয়েছিল সোলায়মান শেখ কে দিয়ে। সিনথিয়ার কাছ থেকে শোনা বিভিন্ন তথ্য আর পিকনিক বা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পিচ আয়োজন করতে গিয়ে কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করে বেশ অনেক তথ্য জানলেও এইসব তথ্য গুলো কি ঠিক কিভাবে কাজে লাগানো যায় সেটাই মাথায় কাজ করছিল না। জেবাই ওকে রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছে।


আরশাদ টাকা খায় এটা সোলায়মান শেখ ইংগিত দিয়েছিল তবে সরাসরি প্রমাণ করার উপায় ছিল না। আর সোলায়মান শেখ সে ঝামেলায় জড়াতে চাইছিল না। সরকারি অফিসে  নানা খবর বের করে মেহদী তাকেও কাজে লাগিয়েছিল মাহফুজ তবে সেও ব্যর্থ। সেখানে জেবাও না জেনে ওকে আসল জায়গাটা দেখিয়ে দিয়েছে। সানরাইজ গ্রুপ। সানরাইজ গ্রুপ দেশের একটা বড় উদ্যোক্তা গ্রুপ। ব্যবসায়ী আনোয়ার খান আর তিন ছেলে মিলে চালান এই গ্রুপ। বড় একটা ব্যবসায়ী গ্রুপ। আনোয়ার খান শুরু করেছিলেন বিড়ির বিজনেস দিয়ে কালে কালে সেটা অনেক বড় ব্যবসায় দাড়িয়েছে। সেখান থেকে পাওয়া টাকায় গার্মেন্টস, ঔষুধ তৈরির কারখানে। আর বিদেশ থেকে নানা শিল্প যন্ত্রের খুদ্রাংশ আমদানির এক বিশাল ব্যবসা দাড় করিয়েছে পরে তিন ছেলে কে সাথে নিয়ে। সানরাইজ গ্রুপ বিড়ি ছাড়া আর যা তৈরি করে তার খুব ক অংশ তারা দেশে বিক্রি করে। বেশির উতপাদিত পণ্য তারা দেশের বাইরে বিক্রি করে। আর খুচরা যে যন্ত্রাংশ তার বিক্রি করে সেটার ক্রেতাও বড় শিল্প কলকারখানা। তাই খুব বেশি একটা বিজ্ঞাপন দেয় না সানরাইজ গ্রুপ। তাই তাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতার সাথে তুলনা করে অত বেশি মানুষ সানরাইজ গ্রুপ সম্পর্কে জানে না। মাহফুজও অত ভাল করে জানত না তবে কিছুটা এখন জানে একটা বিশেষ কারণে। সানরাইজ গ্রুপের মালিক আনোয়ার খানের বড় ছেলে আজিম খান রাজনীতিতে আছেন। আর ভাল করে বললে সংসদ নির্বাচনে দাঁড়িয়ে এমপি হতে চান এবং সেটা মাহফুজদের দল থেকে। সেই কারণে খালেদ চাচার কাছে প্রায়ই আসেন। ওদের দলের ভিতরকার গ্রুপিং এ খালেদ চাচা যে  উপদলের মধ্যে আছেন আজিম খান সেই উপ-দলের সমর্থন নিয়ে সামনে নির্বাচনে নমিনেশন জিততে চান। বড় ব্যবসায়ী সেই সূত্রে খালেদ চাচাদের ফান্ডের একটা বড়  উৎস এই আজিম খান। তাই খালেদ চাচার এখানে আসলেই ভাল খাতির যত্ন পান। মাহফুজ যেহেতু খালেদ চাচার সাথে সাথে সাথে উনাকে প্রটোকল দেবার জন্য তাই আজিম খান আর সানরাইজ গ্রুপের ব্যাপারটা জানে। মাহফুজ জানে আজিম খান যখন নির্বাচনী নমিনেশন পাওয়ার জন্য মরিয়া সেই সময় আরশাদ আর সানরাইজ গ্রুপের ভিতর ডিলিং এর খবর টা কতটা সেনসেটিভ হতে পারে। এখন এই ইনফরমেশন ঠিক ভাবে কাজে লাগানো টা ইম্পোর্টেন্ট।




অফিস থেকে ফিরে এসে আরশাদ আর নুসাইবা গল্প করছিল। অফিস থেকে ফেরত আসলে দুইজনে প্রায় চা খেতে খেতে বারান্দায় বসে গল্প করে। আজ সারাদিন কি হল এটা নিয়ে। মাঝে নুসাইবা বান্ধবীদের সাথে ঘুরতে যায় বা আরশাদ ক্লাবে যায় অথবা যেসব দিনে অফিসে ছুটির পরেও কাজ করতে হয় সেই সব দিন বাদ দিলে এটা মোটামুটি রুটিন। এই সময় সাধারণত কেউ আসে না বা আসলেও ফোন করে আস। তাই কলিংবেলের শব্দে দুই জনেই অবাক হল। এই সন্ধ্যায় কে এল? দরজা খুলতেই দেখে রিয়াদ দাঁড়িয়ে আছে হাসি মুখে। ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে আরশাদ আর নুসাইবা দুই জনকেই বলল সুখবর আছে। আজকে তাই অফিস থেকে বের হয়েই তোদের এখানে প্রথম এসেছি, এই বলে একটা প্যাকেট নুসাইবার হাতে ধরিয়ে দেয়। নুসাইবা জিজ্ঞেস করে এটা কিসের প্যাকেট। রিয়াদ বলে খুলেই দেখেন ভাবী। নুসাইবা খেয়াল করে দেখে মিষ্টির প্যাকেট। কারণ জিজ্ঞেস করতেই বিশাল একটা হাসি দিয়ে বলে ছেলে কে তো গর্ভমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা করে ফেলছি। আরশাদ আর নুসাইবা দুইজনেই শুনে খুব খুশি হয়। রিয়াদ আর জেবার ছেলে মেয়ে দুইটাকে ওরা আসলেই খুব স্নেহ করে। এইবার আরশাদ চেষ্টা করলেও ভর্তি করাতে পারে নি। সেই সময় জেবা আর রিয়াদের মন খারাপ দেখে আরশাদের খারাপ লেগেছিল। তবে কিছু করার ছিল না। বেশির ভাগ সিট চলে যায় এই স্কুলে মেরিট লিস্টে ভর্তি পরীক্ষায় যারা চান্স পায় তাদের জন্য। আর কিছু থাকে বিভিন্ন কোটা। আর থাকে কিছু সিট হেডমাস্টারের হাতে, প্রভাবশালীদের তদবির রক্ষার জন্য। মন্ত্রী, এমপি, বড় ব্যবসায়ী, বড় সরকারী অফিসার,  নানা সেলেব্রেটি সবাই যার যার মত চেষ্টা করে ঢাকার মধ্যে ছেলেদের অন্যতম ভাল এই স্কুলে একটা সিট ম্যানেজ করতে।  আরশাদ ট্যাক ক্যাডারে বড় অফিসার হলেও আসলে সরকারী অফিসারদের বিচারে এখনো যথেষ্ট উপরে উঠে নি। তাই এত এত তদবিরের ভীড়ে ওর তদবির হারিয়ে গিয়েছিল। রিয়াদের ছেলেটাকে ভর্তি করাতে পারে নি। রিয়াদ যে খালি আরশাদের বেস্ট ফ্রেন্ড তা না, ওর নানা রকম কথা শেয়ার করার আর নানা কর্মকান্ডের পার্টনার। তাই এইবার আরশাদ একটা প্রতিজ্ঞা নিয়েছিল আগামী বছর যে করেই হোক রিয়াদ জেবার ছেলেটাকে গর্ভমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলে ভর্তি করাবে। ওর অফিসে ট্যাক্সের কাজে প্রচুর হোমরা চোমড়া লোকজন আসে। এইবার এরকম কাউকে  বলবে তার কাজের বিনিময়ে একটা কাজ করে দিতে হবে। গর্ভমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলে একটা সিট ম্যানেজ করে দিতে হবে। ব্যাপারটা যদিও রিয়াদ আর জেবা কে খুলে বলে নি। ভেবেছিল একটা সারপ্রাইজ দিবে। তাই এই খবর শুনে আরশাদ দারুণ খুশি হল। তবে সেই সাথে মনে একটা প্রশ্ন আসল। রিয়াদ সব সময় যে কোন তদবিরের কাজ হলে ওর কাছে আছে। আরশাদ সম্ভব হলে নিজে করে দেয় অথবা এমন কার সাথে লিংক আপ করে দেয় যে করে দিতে পারবে। রিয়াদ ওর সাথে যোগাযোগ ছাড়াই কিভাবে ছেলেকে ভর্তির ব্যবস্থা করে ফেলল?


নুসাইবা রিয়াদের ছেলের খবর শুনে দারুণ খুশি হয়েছে। কংগ্রেটস বলতে বলতে বলল, শুধু মিষ্টি খাওয়ালে কিন্তু হবে না খালি রিয়াদ ভাই, একটা ট্রিট দেওয়া লাগবে। রিয়াদ হাসতে হাসতে বলল সেটা আর বলতে হবে না। যেখানে চান সেখানে ট্রিট দেওয়া হবে ভাবী। আরশাদ এর মাঝে বলল, কিভাবে ভর্তি করালি তুই? কাকে ধরেছিস? তোদের এমডি আজিম খান কে ধরেছিলি নাকি? উনাদের পলিটিক্যালি আর ফিনিন্সিয়ালি দুইভাবেই অনেক ক্ষমতা। আমাদের প্রথমবারেই উনাদের কে রিকোয়েস্ট করা উচিত ছিল। রিয়াদ বলে না, না। আজিম স্যার বা আনোয়ার স্যার কাউ কে রিকোয়েস্ট করি নি। তুই তো জানিস উনারা ঠিক এমপ্লিয়িদের পার্সনাল ম্যাটারে মাথা ঘামাতে চান না। আরশাদ অবাক হয়। সাইরাইজ গ্রুপের মালিক বা মালিকের ছেলে ছাড়া আর কোন প্রভাবশালী লোকের সাথে রিয়াদের যোগাযোগ আছে। তাই প্রশ্ন করে, তাহলে কাকে ধরলি? রিয়াদ বলে আরে আমি কিছুই করি নি। যা করার জেবা করেছে। জেবার নাম শুনে আরশাদ আর নুসাইবা দুইজনেই সোজা হয়ে বসল। জেবা কে দুইজনেই পছন্দ করে। বন্ধুর বউ এবং ডিপার্টমেন্টের জুনিয়র হিসেবে খুব স্নেহ করে কিন্তু ওরা দুই জনেই একমত জেবা প্রফেশনালি খুব একটা চালাক চতুর না। তাই আরশাদ যে কাজ করতে পারে নি সেই কাজ রিয়াদ নয় বরং জেবা করে ফেলেছে শুনে আরশাদ- নুসাইবা দুই জনেই একটু নড়েচড়ে বসে। রিয়াদ, আরশাদ এবং জেবার মুখে অবাক হবার চিহ্ন দেখে তাই বলে, আমিও প্রথমে বিশ্বাস করতে পারি নি। জেবা দুই দিন আগে বলেছিল ভর্তির একটা উপায় নাকি ও বের করেছিল। তুই তো জানিস জেবা ভাল মেয়ে কিন্তু প্রফেশনালি অত স্ট্রং না। তাই আমি অতটা পাত্তা দেই নি। ছেলেটার স্কুলে চান্স না হবার পর থেকেই জেবা এটা নিয়ে প্রায় মন খারাপ করে থাকত। আমি ভেবেছিলাম হয়ত অফিসে আসা কোন ক্লায়েন্ট বা ওদের অফিসের কেউ হয়ত কোন আশ্বাস দিয়েছে। লোক জন কাজ আদায় করার জন্য এমন কত আশ্বাস দেয় তুই তো জানিস। আরশাদ আর নুসাইবা দুই জনেই হ্যা সূচক মাথা নাড়ায়। রিয়াদ বলছে, আমি তাই বলেছিলাম সাবধান। অনেক রকম ফ্রড থাকে। অনেকে এইসব বলে টাকা খায়। এরপর জেবা আর কিছু বলে নি আমিও ভুলে গেছিলাম। আজকে সকালে জেবা যখন ফোন দিয়ে বলল ছেলেটার ভর্তির ব্যবস্থা হয়ে গেছে, তখনো বিশ্বাস করতে পারি নি। পরে আমাকে ভর্তি ফরমের ছবি পাঠাল। কি যে খুশি লাগছে দোস্ত। রিয়াদ খুশির চোটে জেবার অনেক প্রশংসা করে যেতে থাকে। নুসাইবা আর আরশাদ দুইজনেই মাথা নাড়ায় প্রশংসাসূচক কথায় তবে দুইজনের মাথায় তখন ঘুরছে জেবা কিভাবে কাজটা করল। নুসাইবা কৌতুহল চেপে রাখতে পারে না। তাই প্রশ্ন করে, রিয়াদ ভাই জেবা কাজটা কার মাধ্যমে করল?


রিয়াদ বলে, দেখেছেন কান্ড! আরশাদ একটু আগে জিজ্ঞেস করল আমি বিভিন্ন কথা বলতে গিয়ে তো আসল কথাটাই বলতে ভুলে গেছি। আপনারা তো চিনেন। মাহফুজ? আপনারাই তো বলে ওর সাথে জেবার পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। মাহফুজ  বলে ছেলেটাই নাকি হেল্প করেছে ভর্তির ব্যাপারে। আরশাদ আর নুসাইবা প্রথমে দুইজনেই বুঝে উঠতে পারে না কোন মাহফুজের কথা বলছে রিয়াদ। কারণ ওদের কোন হিসাবেই জেবা মাহফুজের মাধ্যমে স্কুলে ছেলে কে ভর্তি করাবে। তাই কয়েক সেকেন্ড লাগে দুইজনের বুঝতে কোন মাহফুজ। আরশাদ প্রশ্ন করে এবার, কোন মাহফুজ? রিয়াদ বলে, আরে, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের ছেলেটা। তোদের ডিপার্টমেন্টের পিকনিক যারা আয়োজন করল। আরশাদ নুসাইবা দুই জনেই এত অবাক হয় যে কোন উত্তর দেয় না। আরশাদ নুসাইবা দুইজনে দুই জনের দিকে তাকায়। দুই জনের চোখেই অবিশ্বাস। নুসাইবা এইবার বলে উঠে, পিকনিকের দ্বায়িত্বে থাকা মাহফুজ? একি সাথে প্রশ্ন আর উত্তর দুইটাই যেন ওর কথায়। রিয়াদ মাথা নাড়ায়, হ্যা। নুসাইবা মেনে নিতে পারে না। ওর স্বামী যা পারে নি আরকেটা কম বয়েসী ছেলে সেটা করে ফেলেছে। তাই অনেকটা খোচার সুরে জিজ্ঞেস করে, অনেক টাকা খরচ করতে হয়েছে নিশ্চয়? কত টাকা দিতে হল মাহফুজ কে? রিয়াদ হেসে বলে, নাহ ভাবী। কোন টাকাই খরচ করতে হয় নি। ওর সাথে নাকি কোন বড় নেতার পরিচয় আছে। উনাকে রিকোয়েস্ট করে ভর্তির ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আর জেবা স্কুলের হেডমাস্টারের অফিসে যাবার পর মাহফুজের রেফারেন্স শুনে হেডমাস্টার নাকি অনেক খাতির যত্ন করেছে। নুসাইবার বিশ্বাস হতে চায় না। আরশাদ ভাবে ও মাহফুজ সম্পর্কে যা খোজ নিয়েছিল সেগুলো তাহলে সত্য। ছেলেটা পলিটিক্যালি ওয়েল কানেক্টেড এবং খুব শার্প। ওর অফিসে আসা এক নেতা বলেছিল মাহফুজ কে কোন দ্বায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্তে থাকা যায়। যে কোন ভাবেই ছেলেটা কাজটা আদায় করে আনবে। আরশাদের তাই মনে হয় বাসায় দাওয়াত দিয়ে একদিক দিয়ে ভাল করেছে নুসাইবা। ছেলেটার সাথে আরেকটু সম্পর্ক ভাল করা যাবে। আর নুসাইবা কেও একটু সফট খেলতে বলতে হবে। এই ছেলে ফুলটস বল দেবার লোক না বুঝা যাচ্ছে। তাই মাহফুজ কে এলবিডাব্লিউ এর ফাদে ফেলতে গিয়ে নিজেরা ইয়ার্কারের ফাদে পড়ার চান্স আছে। তাই দাওয়াতে ওদের প্ল্যানটা আর সুক্ষ ভাবে করার জন্য নুসাইবা কে বলতে হবে বা পারলে কিছু দিনের জন্য প্ল্যানটা বন্ধ রাখতে হবে।



এদিকে নুসাইবা মাহফুজ কোন টাকা ছাড়া কাজটা করেছে শুনে কি বলবে ভেবে পায় না। হাউ ইজ ইট পসিবল? কি না কি পলিটিক্স করে সে ছেলে কাজটা করে ফেলল?  তাও কোন টাকা ছাড়া? নুসাইবা অংক মেলাতে পারে না। একটা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি নাহয় চালায় অথবা টেন্ডারের কিছু বিজনেস না হয় আছে তাই বলে আরশাদ কে টক্কর দিয়ে এভাবে ভর্তি করিয়ে ফেলতে পারল ছেলেটা? সহ্য হয় না নুসাইবার। গায়ে যেন সুক্ষ একটা জ্বলুনি চলতে থাকে। নুসাইবা বলে জেবার মাহফুজ কে রাজি করাল কিভাবে এই কাজ করতে? রিয়াদ বলে ভাবী আই হ্যাভ নো আইডিয়া। জেবার মত সহজ সরল মেয়ে এইভাবে বিনা টাকায় প্রায় বিনা তদবিরে এই কাজ করতে পেরেছে তাতে আমি খুব অবাক হয়েছি। তবে মাহফুজ সাহেবের সাথে আমার কথা হয়েছে। ভদ্রলোক ইজ রিয়েলি এ জেন্টলম্যান। খুব অমায়িক। নুসাইবা টের পায় ওর শরীরের সুক্ষ জ্বলুনি যেন আর বাড়ছে। রিয়াদ বলে তবে জেবা কাজটা কিভাবে করেছে এটা মনে হয় জেবাই ভাল বলতে পারবে। নুসাইবা কৌতুহল চেপে রাখতে পারে না। তাই বলে ভাই বসেন, আমি ভিতর থেকে চা করে আনছি। আরশাদ আর রিয়াদ দুই বন্ধু কথায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। নুসাইবা ভিতরে ঢুকে কেতলিতে পানি বসাতে বসাতে জেবা কে ফোন করে। দুই রিং এর পর জেবা ফোন ধরে বলে, আপা স্লামালাইকুম। নুসাইবা বলে কংগ্রেচুলেশন। জেবা খুব খুশি হয়। নুসাইবার কাছ থেকে প্রশংসা পাওয়া সহজ কথা না। আর নুসাইবার প্রতি ভিতরে ভিতরে জেলাসি থাকলেও এক ধরণের মুগ্ধতা যে ভার্সিটি জীবন থেকে আছে সেটাও মিথ্যা না। তাই নুসাইবার যে কোন প্রশংসা জেবার কাছে আলাদা কদর পায়। নুসাইবা হালকা পাতলা দুইটা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলার পর আসল প্রসংগ তুলে। মাহফুজের সাথে জেবার পরিচয় কীভাবে আর মাহফুজ ভর্তি করাল কিভাবে। জেবা অবাক হয়। নুসাইবা অনেক সময় আশেপাশের অনেক জিনিস খেয়াল করে না সেটা আগেও লক্ষ্য করেছে। মাহফুজের সাথে তো নুসাইবার সামনেই এলমনাই এসোশিয়েশনের অফিসে পরিচয় হল। তারপর মাহফুজ যে ব্যান্ড দল ঠিক করে দিল সেটা নিয়ে তো নুসাইবার সাথেই আলোচনা হল। জেবা তাই উত্তর দিল, কেন আপা আপনার সামনেই না পরিচয় হল আমাদের এলমনাই অফিসে। নুসাইবা বলে, ওহ! তাই তো! ভুলে গেছিলাম। নুসাইবা প্রশ্ন করে তাহলে তুমিই ওকে বলেছিলে ভর্তির একটা ব্যবস্থা করতে? জেবা বলে নাহ, আপা। এটাই আশ্চার্যজনক ঘটনা। ছেলে কে ভাল স্কুলে ভর্তি করাতে চাই এটা কথায় কথায় বলেছিলাম। মাহফুজ ভাই তখন নিজে থেকেই বলল উনি হেল্প করতে পারবে। আমি একটু ডাউটে ছিলাম। আসলেই পারবে কিনা। আরশাদ ভাই পর্যন্ত যেখানে পারে নাই। জেবা ইচ্ছা করেই শেষ লাইনটা বলে। নুসাইবা কে একটু খোচা দেবার জন্য। নুসাইবার গায়ের জ্বলুনি তখন আর বাড়ে। জেবা বলে, মাহফুজ ভাই আসলেই খুব ভাল লোক। এই যুগে কে এমন কাউকে কোন কারণ ছাড়া হেল্প করে। নুসাইবা আর বিস্তারিত জানতে চায়। জিজ্ঞেস করে, কাকে বলেছে মাহফুজ স্কুলে ভর্তির জন্য। জেবা যদিও জানে স্থানীয় থানার সভাপতির ফোনে কাজ হয়েছে তাও নুসাইবা একটু জ্বালানোর সুযোগ ছাড়ে না। এমন সুযোগ তো দশ বছরে একবার পাওয়া যায় না। জেবা তাই বলে, আমি ঠিক জানি না, কোন এক মন্ত্রী কে নাকি ধরেছে মাহফুজ। আর আমরা হেডমাস্টারের রুমে যাবার পর যা খাতির যত্ন করল। স্কুলে ভর্তি তো করালোই সাথে দুপুর লাঞ্চ করাতে চেয়েছিল। জেবা একটু বাড়িয়ে বলে। এমনিতে সহজ সরল ভাল মানুষ হিসেবে পরিচয় আছে জেবার, তাই জেবার কথা বিশ্বাস করে নুসাইবা। তাতে আর অবাক হয়, মাহফুজের মন্ত্রী পর্যন্ত দৌড় আছে। একদম পাড়ার ছোটখাট নেতা না তাহলে। জেবা এরপর মাহফুজের আর অনেক প্রশংসা করে যায় ইচ্ছা করেই। জেবার মনে হয় এতদিন ওর স্বামী কে ছোট হয়ে থাকা লেগেছে আরশাদ ভাইয়ের জন্য। বিয়ের পর এই প্রথম জেবা দেখছে যেটা আরশাদ ভাই পারে নি সেটা ও করে ফেলেছে। তাই মাহফুজের প্রশংসা করে বেশি বেশি করে। জেবার মনে হয় এতে যেন আরশাদ ভাই ছোট হচ্ছে আর আরশাদ ভাই যত ছোট হবে রিয়াদ তত বড় হচ্ছে। জেবার ভাবা কথাটাই যেন নুসাইবার মনে ঘুরছে। আরশাদ যে কাজ করতে পারে নি সেই কাজ মাহফুজ করে ফেলেছে। তবে যতবার কথাটা মাথায় ঘুরে তত বেশি যেন গায়ের মাঝে জ্বলুনি টের পায় নুসাইবা।


সেই রাতে শোয়ার সময় নুসাইবা আর আরশাদের মাঝে কথা হয়। নুসাইবা আরশাদ দুইজনের কেউ যেন মেনে নিতে পারছে না মাহফুজ রিয়াদের ছেলে কে স্কুলে ভর্তি করিয়ে ফেলেছে। অনেক এংগেল থেকে নুসাইবা আরশাদ ব্যাপারটা বিশ্লেষণ করে। তবে যত বিশ্লেষণ করুক সত্য হল মাহফুজ ভর্তি করার ব্যাপারে সফল। না চাইলেও ব্যাপারটা মেনে নিতে হয় দুই জন কে। আরশাদ বলে আমরা মাহফুজ কে যত সহজ ভেবেছিলাম অত সহজ না ছেলেটা। অনিচ্ছা স্বত্তেও স্বামীর কথা মেনে নিতে হয় নুসাইবার। আরশাদ বলে দেখ, মাত্র চৌদ্দ দিনের ভিতরে কিভাবে আমাদের পিকনিকের আয়োজন করে ফেলল। নুসাইবা ক্ষীণ প্রতিবাদ করে বলে, আমরা তো আগে থেকেই ভেন্যু ঠিক করা, টাকা তোলা এইসব করে ফেলেছিলাম। আরশাদ বাস্তববাদী। তাই বলে, দেখ মাত্র চৌদ্দ দিনে কোন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি এই কাজ করত না। মাহফুজ কে কাজটা দেবার আগে এক সাপ্তাহ আমি অন্তত আর তিন চার জায়গায় ফোন দিয়েছি। সবাই তখন হাতে ২১ দিন সময় থাকার পরেও নানা ব্যস্ততার অযুহাত দেখিয়ে কাজটা নেয় নি। আর মাহফুজ আমাদের কাজটা করে দিয়েছে খুব কম টাকায়। এত কম টাকায় করে দেবার কারণেই আমরা ফুড মেনু আর ভাল দিতে পেরেছি। নুসাইবা বলে ও কি এমনি এমনি দিয়েছে, ও জানে আমাদের মন পাওয়া দরকার সিনথিয়ার জন্য। তাই এটা করেছে। আরশাদ বলে সেটা ঠিক। তবে জেবার জন্য কাজটা করল কেন? মাহফুজের এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না নুসাইবা। ছেলেটা কি আসলেই খুব ভাল। মানুষ কে দরকার পরলে সাহায্য করে? আরশাদের মনেও তখন একই প্রশ্ন। আরশাদ বলে দেখ, নুসাইবা আমাদের মনে হয় মাহফুজ সম্পর্কে আমাদের প্ল্যানটা আর ভাল করে ভেবে দেখা দরকার। মাহফুজ তোমার কাজিনের মত অত সহজ ছেলে না। ওকে আমাদের প্ল্যান মোতাবেক রাস্তায় আনা সহজ হবে না। আবার এখন মনে হচ্ছে ছেলেটা হয়ত অত খারাপ হবে না সিনথিয়ার জন্য। নুসাইবা চোখ গরম করে তাকায়। আরশাদ বলে, আরে রাগ করছ কেন। ভেবে দেখ। ছেলেটার ভাল ব্যবসা আছে, পলিটিক্যালি কানেক্টেড। তোমাদের ফ্যামিলিতে সবাই ভাল বড় কর্পোরেট জব করে বা সরকারি চাকরি করে। কিন্তু এই যুগে পরিবারে কিছু পলিটিক্যাল কানেকশন না থাকলে লাভ হয় না। ছেলেটা অত খারাপ মনে হয় না। যেভাবে জেবাদের হেল্প করল। আরশাদের কথা গুলো নুসাইবা ফেলে দিতে পারে না আবার ঠিক মেনেও নিতে পারে না। সদা আত্মবিশ্বাসী নুসাইবার মনে সে রাতে একটা সংশয়ের তৈরি হয়। সংশয়ের নাম মাহফুজ। ছেলেটাকে নিয়ে আসলে কি করা যায়? আরশাদ যা বলেছে সেটা মিথ্যা না। ছেলেটা হ্যান্ডসাম, ভাল প্রসপেক্ট আছে ফিউচারে কিন্তু ছেলেটার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড ঠিক ওদের স্টান্ডার্ডের না। আদরের ছোট ভাতিজি কে কি এই ছেলের হাতে তুলে দেওয়া যায়? সে রাতে নুসাইবার সংশয়ের নিষ্পত্তি হয় না।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: অঘটনঘটন পটিয়সী (নতুন আপডেট ২০) - by কাদের - 19-07-2023, 01:48 PM



Users browsing this thread: allanderose113, evergreen_830, Hasan, rizu sopno, 48 Guest(s)