Thread Rating:
  • 185 Vote(s) - 3.33 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica অঘটনঘটন পটিয়সী (নতুন আপডেট ৩২ )


মাহফুজের মনের ভিতর অস্থিরতা কমছে না। এইভাবে সবার সামনে অপমান হতে হবে উপকার করতে গিয়ে এটা মেনে নিতে পারছে না। মাহফুজ চোখের সামনে ঝুলতে থাকা ক্যালেন্ডারের পাতা দেখছে। একদিন হয়ে গেল অপমানের। ছোটকাল থেকে একটা জিনিস খুব ভাল করে ওর মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছিল ওর বাবা, কেউ অপমান করলে সহজে ছাড় না দিতে। আজকে হোক, কালকে হোক আর এক বছর পরে হোক অপমানের শোধ তুলে বুঝিয়ে দিতে হয় সৈয়দ বংশের ছেলেদের কেন সমঝে চলতে হয়। গতকাল সিনথিয়ার সাথে কথার সময় অল্প করে বলেছিল ওর ফুফুর কান্ড। কীভাবে সামান্য একটা লেমনেডের জন্য ওর সাথে এমন খারাপ  ব্যবহার করল। সিনথিয়াও অবাক হয়েছে।  নুসাইবার মাথা গরম এটা সে জানে তবে এভাবে মাহফুজের সাথে এই সামান্য ব্যাপার নিয়ে রাগারাগি করবে সেটা সিনথিয়া ভাবতে পারে নি। সিনথিয়ার কথা শুনে তেতে উঠেছিল মাহফুজ। রাগারাগি মানে? রাগারাগিতে তো দুইপক্ষ থাকে, কিন্তু নুসাইবা যা করেছে পুরাটাই একপাক্ষিক। শুধু সিনথিয়ার ফুফু না হলে আর বিয়ের ব্যাপারে অত সিরিয়াস না হলে পালটা উত্তর দেবার ক্ষমতা ওর ছিল। তবে  বাবা ওকে অপমানের প্রতিশোধ নিতে শিখালেও আরেকটা জিনিস মাহফুজ নিজেই শিখেছে ঠেকে ঠেকে। কোন লক্ষ্য স্থির করলে কোন ভাবেই সেটা থেকে বিচ্যুত হওয়া যাবে না। মাহফুজের মূল লক্ষ্য সিনথিয়ার সাথে রিলেশন। তাই ভিতরের রাগটা দমিয়ে রেখেছে। তবে শোধটা তুলবেই আজকে, কালকে না হয় আগামী বছর।

ফোন বেজে উঠল। সিনথিয়ার কল। আজকে কয়েক ঘন্টা পর পর সিনথিয়া কল দিয়ে খোজ খবর নিচ্ছে। সিনথিয়া বুঝেছে ব্যাপারটা মোটেই ভাল হয় নি। সিনথিয়া নিজেও খুব ক্ষেপে আছে ওর ফুপুর উপর। এমনিতে ফুফু কে দারুণ ভালবাসে তবে এই ব্যাপারটা মেনে নিতে পারে নি। তবে সিনথিয়া নিজেও যথেষ্ট ঠান্ডা মাথার মেয়ে তাই কোন আউটবাস্ট করে নি। তবে মাহফুজের যাতে মনের কষ্ট লাঘব হয় তাই একটু পর পর কথা বলে যাচ্ছে। ফোন ধরতেই সিনথিয়া বলল, মন ভাল হয়েছে বেবি। মাহফুজ বলল না। সিনথিয়া জিজ্ঞেস করল আমার উপর রাগ করে আছ? মাহফুজ তোমার উপর রাগ করব কেন, তবে তোমার ফুফুর উপর রাগ করে আছি। সিনথিয়া বলল, আমিও। ফুফু এভাবে কেন করল এটা আমার মাথায় ঢুকছে না। মাহফুজ বলে আমারো। সিনথিয়া বলে তবে একটা কারণ হতে পারে, গতকাল থেকে ভেবে ভেবে আমার মাথায় খালি এই একটা কারণ আসছে। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে কি কারণ? সিনথিয়া বলে আমি তো আগেই বলেছি ফুফু আমাদের বিয়ের ব্যাপারে কেমন বেশি কনজারভেটিভ। আমার মনে হয় তুমি আমাকে পছন্দ কর এটা টের পেয়ে আর রাগ আটকে রাখতে পারে নি। এমনিতেও ফুফু মেজাজ কন্ট্রোল করতে পারে না। এইটা উনার একটা বদগুণ। বাড়ির আদরের ছোটমেয়ে, একমাত্র মেয়ে। দাদা-দাদী থেকে বাবা-চাচারা সবাই মাথায় তুলে রেখেছে আদর দিয়ে তাই মেজাজ কন্ট্রোল করা শিখে নি। মাহফুজ বলে তোমাদের বাড়ির ব্যাপারটা কি বল তো? সব মেয়েরাই কি রাগের খনি নাকি? সিনথিয়া হাসতে থাকে। মাহফুজ একটু ইজি হয়েছে টের পায়। বলে কেন? আমি কি খুব রাগী? মাহফুজ বলে তুমি কত রাগী এইটা তো আমি খালি দেখি। বাইরের পৃথিবীর চোখে তুমি শান্ত লক্ষী লিটল এঞ্জেল আর আমি খালি জানি ভিতরে ভিতরে কতটা ডেভিল তুমি। খিল খিল করে হেসে উঠে সিনথিয়া। বলে, আর আপু? সাবরিনার কথা উঠতেই একটু থমকে যায় মাহফুজ। কি উত্তর দিবে। দুই সেকেন্ডে আবার সামলে উঠে। বল, তোমার আপু তো কথাই বলে না রাগের চোটে। অফিসের সবাই এত ভয়ে থাকে যে কি বলব। সিনথিয়া বলে তুমি তো ঠিক আপু কে জয় করে নিয়েছ। সিনথিয়ার কথায় ভিরমি খাবার যোগাড় হয় মাহফুজের। জয় করে নিয়েছি মানে? সিনথিয়া বলে, বারে, তুমি আপু কে যেভাবে প্রজেক্টে হেল্প করেছ আমি সিওর আপুর কাছে  তোমার অনেক ক্রেডিট পয়েন্ট জমা হয়েছে। পরে যখন তোমাকে আপুর সামনে হাজির করব তখন সেই পয়েন্ট গুলো কাজে লাগবে। মাহফুজের বুকটা ধক করে উঠে। সিনথিয়া যদি জানত মাহফুজ কিভাবে ওর অর্জন করা ক্রেডিট গুলো সাবরিনার উপর খরচ করছে তাহলে আতকে উঠত। এটা ভাবতেই মাহফুজের মনে নতুন একটা চিন্তা  উদয় হল। কীভাবে সাবরিনার সাথে ওর সম্পর্কে অগ্রগতি সিনথিয়া কে জানানো যায়। আর কীভাবেই বা সাবরিনা কে বলা যায় ও সিনথিয়া কে ভালবাসে। গত কিছুদিন ধরে অনেকবার ভাবছে এটা নিয়ে। তবে মনে হচ্ছে অসমাধানযোগ্য সমস্যা এটা। সিনথিয়া সাবরিনা কে নিয়ে সেক্সটকে অংশ নিলেও বাস্তবের ঘটনা শুনলে কতটুকু মেনে নিতে পারবে? আবার সাবরিনা যখন দেখবে মাহফুজের সিনথিয়ার প্রেমিকা তখন ওর কনজারভেটিভ মন কতটুকু মেনে নিতে পারবে। মাহফুজ মাথা থেকে এই কঠিন চিন্তা দূর করার চেষ্টা করে। তাই জিজ্ঞেস করে তুমি জেবা বলে কাউকে চেন? তোমার ফুফা ফুফুদের পরিচিত। উনাদের ডিপার্টমেন্টের ছোটবোন।


সিনথিয়া জিজ্ঞেস করে কোন জেবার কথা বলছ? জেবা আন্টি? রিয়াদ আংকেলের ওয়াইফ জেবা আন্টি? মাহফুজ বলে ভদ্রমহিলার জামাই এর নাম তো জানি না। তবে এটা জানি তোমার ফুপার স্কুলের ফ্রেন্ড। সিনথিয়া বলে তাহলে জেবা আন্টি হবে। জিজ্ঞেস করছ কেন উনার কথা? মাহফুজ বলে না জেবার গলায় কিছুটা স্লেষের আভাস পেয়েছিল আরশাদ আর নুসাইবার প্রসংগে। এড়িয়ে গিয়ে বলে, নাহ পিকনিক আয়োজন করতে গিয়ে পরিচয় হয়েছিল। তা ফুফা ফুফুর কেমন পরিচিত। সিনথিয়া বলে রিয়াদ আংকেল তো ফুপার একদম ছোটকালের বন্ধু। দুইজনের খুব খাতির। আর জেবা আন্টিকেও তো নুসাইবা ফুফু খুব পছন্দ করে। মাহফুজ মনে মনে ভাবে জেবা যে অতটা পছন্দ করে না এটা এখনো এরা কেউ টের পায় নি তাহলে। মাহফুজ প্রশ্ন করে তার মানে উনারা তোমার ফুফা ফুফু দুইজনের সম্পর্কে খুব ভাল করে জানে?  সিনথিয়া বলে অফকোর্স। না জানার কিছু নেই।  উনারা খুব ভাল ভাবে একে অন্যের পরিচিত। রিয়াদ আংকেল আর জেবা আন্টির পরিচয় তো উনারাই করিয়ে দিয়েছে। সেই সূত্রে এই বিয়ের ঘটক আসলে উনারা। আর ফুফা ফুফুর তো বাচ্চাকাচ্চা হয় নি তাই রিয়াদ আংকেলের ছেলে মেয়ে দুইটাকে খুব আদর করে উনারা। আর ফুফুদের বাসায় কোন দাওয়াত থাকলে সেখানে খুব কমন মেহমান থাকে রিয়াদ আংকেল আর জেবা আন্টি। মাহফুজ মনে মনে ভাবে ওর আন্দাজ সঠিক। নুসাইবা আরশাদ সম্পর্কে খোজ বের করার জন্য জেবাই আসল লোক।




জেবা আকতার। সরকারি একটা ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার হিসেবে আছেন। এমনিতে সাদাসিদে নরমাল মধ্যবিত্ত বাংগালী মহিলা। গায়ের রঙ শ্যামলা। খুব সুন্দরী নন আবার অসুন্দর বলেও এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। অত্যন্ত পরিবার অন্তপ্রাণ। এক ছেলে আর এক মেয়ে। মেয়েটা ক্লাস ফোরে পড়ে আর ছেলেটা ক্লাস সিক্সে। জামাই রিয়াদ আহমেদ একটা দেশী কর্পোরেট হাউজে আছে জিএম পজিশনে। আরশাদ আর নুসাইবার ফ্যামিলির সাথে জেবাদের দারুণ খাতির। তবে আর সব ক্লোজ বন্ধুবান্ধব কাপলের মত মনে মনে জেবা আরশাদ আর নুসাইবার উপর জেলাস। কোন মেয়ে না চায় তার স্বামী কে উপরে দেখতে। কিন্তু জেবার হাজব্যান্ড রিয়াদ সব সময় আরশাদের কথা শুনে চলে। তার উপর রিয়াদ যে কোম্পানিতে চাকরি করে তাদের মালিক মহলের সাথে আরশাদের যোগাযোগ আছে। আরশাদ তাদের বলে কয়ে রিয়াদের রিসেন্ট প্রমশোন করিয়েছে। তাই রিয়াদ যেন আর কৃতজ্ঞতায় নুয়ে পড়ে আরশাদ কে দেখলে। মনে মনে বিরক্ত হয় এইসব দেখলে জেবা। পরিশ্রম তো কম করে না রিয়াদ। বছরের বার মাস রোদ বৃষ্টি সব ঠেলে রাত নয়টা পর্যন্ত অফিসে পড়ে থাকে। প্রমোশন এমনিতেই পাওনা ছিল রিয়াদের। হয়ত আরশাদ একটু বলেছে তাই বলে পুরো কৃতিত্ব তো কোনভাবে আরশাদের  হতে পারে না। তার উপর নুসাইবার প্রতি ইর্ষা কাজ করে জেবার। বয়সে ওর থেকে দুই  বছরের  বড় কিন্তু দেখলে মনে হয় ওর থেকে সাত আট বছরের ছোট বুঝি। এমন না যে জেবা কে খুব বয়স্ক দেখায় বরং নুসাইবা কে কম বয়স্ক দেখায়। সবাই নুসাইবার রূপের প্রশংসা করে। কিন্তু কেউ বুঝতে চায় না দুই বাচ্চা হলে শরীরে সেটার ছাপ পড়ে। বাচ্চাহীন নুসাইবা কে দিয়ে কি সৌন্দর্য মাপা যায়? বাচ্চা থাকলে বুঝা যেত এভাবে বয়স ধরে রাখতে পারে কিনা। এছাড়া ফ্রেন্ড সার্কেলে আর এক ডিপার্টমেন্টের হওয়ায় অনেক অনুষ্ঠানে কমন দাওয়াত থাকে দুই কাপলের। সবখানে সবাই যেভাবে নুসাইবা কে নিয়ে মেতে থাকে এটা মোটেই পছন্দ না জেবার। তার উপর সবখানেই নুসাইবার একটা খবরদারি ভাব আছে। এমনিতে ওকে খুব স্নেহ করে কিন্তু এইসব কারণে জেবা নুসাইবার প্রতি জেলাস থাকে ভিতরে ভিতরে। তবে বাইরে কখনো কিছু প্রকাশ করে না।


মাহফুজ তাই যখন প্রায় একটা অনুমানের বশে জেবা কে টার্গেট করে তখন অনেকটা না জেনেই আসল লক্ষ্যে হিট করার মত হয় ব্যাপারটা। পিকনিকের সময় জেবার কাছ থেকে মাহফুজ একটা ভিজিটিং কার্ড চেয়ে নিয়েছিল যদি কোন দরকার হয় সেই জন্য। এখন মানিব্যাগ থেকে কার্ডটা বের করে দেখতে থাকে। ঢাকার একটা ব্যস্ত এলাকার সরকারি ব্যাংকের একটা ব্রাঞ্চে বসে জেবা। একবার ফোন করার কথা ভাবলেও পরে ভাবে সরাসরি গিয়ে দেখা করি। দেখা যাক কি হয়। আর সব সরকারি ব্যাংকের মতন এই ব্যাংকটাও একরকম। ভিতরে আলো কম। মানুষজন গিজ গিজ করছে। বেশির ভাগ এসেছে বিদ্যুৎ বা গ্যাসের টাকা জমা দিতে। লোকেরা লাইন ধরে আছে। ভিড়ের মধ্যে মাত্র একটা ফ্যান মাথার উপর ঘুরছে। এত লোকের নিশ্বাস দূর করতে পারছে না ফ্যানটা তাই ঘরের ভিতর একটা গুমোট আবহাওয়া। ঢুকবার দরজায় একজন বুড়ো সিকিউরিটি ম্যান একটা ইংরেজ আমলের দোনলা বন্দুক নিয়ে বসে আছে। সো টিপিক্যাল সরকারি ব্যাংক গুলো। চোখ বন্ধ করে সব ব্যাংকে এক রকম অবস্থা বলে দেওয়া যায়। বুক পর্যন্ত উচু কাঠের টেবিল আর তার উপর কাচের দেয়াল। দেয়ালের ঐপাশে ব্যাংকের লোকেরা কাজ করছে। মাঝে মাঝেই খট খট শব্দে সিল মারার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে, টাকা জমা দিলেই রসিদে দ্রুত সিল মারছে কাউন্টারে বসা লোকেরা। কাউন্টারে বসা লোকদের মাঝে জেবা কে দেখা যায় না। মাহফুজের মনে পড়ে জেবা সিনিয়র অফিসার। ক্যাশ কাউন্টারে বসবার কথা না। তাই ভিড় এড়িয়ে অফিসের ভিতরে যাবার কথা ভাবে। দরজার মুখে পিয়ন আটকায়। জিজ্ঞেস করে কই যাবেন। মাহফুজ জেবার ভিজিটিং কার্ডটা দেখিয়ে বলে ম্যাডামের কাছে যাব। পিয়ন আবার জিজ্ঞেস করে এপয়ন্টমেন্ট আছে? মাহফুজ এবার ওর ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির ভিজিটিং কার্ডটা দিয়ে বলে ম্যাডাম কে দেখান দেখালেই চিনবে। অল্প একটু পরেই পিয়ন বলল ভিতরে যান। ভিতরে ঢুকে ডান পাশ থেকে সেকেন্ড রুম ম্যাডামের।


যদিও পিয়ন রুম বলেছে আসলে  বড় একটা রুম কে কাঠের পার্টিশান দিয়ে কয়েকটা রুম করা। জেবার রুমের মুখে দাড়াতেই জেবার মুখে একটা হাসি ফুটে উঠল। বলল, আরে আসুন আসুন, কি ব্যাপার এইখানে? মাহফুজ বলল, নাহ কাছেই একটা কাজে এসেছিলাম। আপনি বলেছিলেন এই ব্রাঞ্চে বসেন। তাই ভাবলাম দেখা করে যাই। জেবা বলে, বসেন বসেন। মাহফুজ বসতেই দুইজনের কথাবার্তা শুরু হল। জেবার সাথে পরিচয়ের পর মাহফুজ একটা  ব্যান্ড দল খুব কম টাকায় ভাড়া করতে সাহায্য করেছিল জেবা কে অনুষ্ঠানের জন্য। সেখান থেকে জেবার সাথে ভাল একটা খাতির গড়ে উঠেছে। কথায় কথায় জেবা বলল পিকনিকের জন্য স্যরি ভাই। মাহফুজ না  বোঝার ভান করে বলল কেন। জেবা একটু লজ্জিত ভাবে বলল, পিকনিকের দিন  বিকাল বেলা খেলার মাঠের ঘটনার জন্য। আপনি আমাদের জন্য এত করলেন আর তার বদলে এত কথা শুনতে হল। মাহফুজ টের পেল ওর মুখ লাল হয়ে উঠছে। জেবা  বলছে, মানুষের একটা কমনসেন্স থাকা উচিত। একটা লেমনেডের জন্য কেউ এতগুলা কথা শোনায় বলেন? আপনি তো দেখেছেন গান গাওয়ার জন্য যথেষ্ঠ ভলান্টিয়ার পাওয়া যাচ্ছে না দেখে আমাকে কি বলল। আরে কেউ যদি সেচ্ছায় না আসে তাহলে কি আমি বাসা থেকে গিয়ে ধরে আনব। নিজে সেক্রেটারির বউ হয়েছে বলে ভাবে উনি নিজে বুঝি সেক্রেটারি। মাহফুজ বলল, হু। জেবা বলে চলেছে আপনার ব্যাথাটা আমি কিছুটা হলেও বুঝি। মাহফুজ উত্তর না দিয়ে আবার মাথা নাড়ায়। আসলে জেবা এতদিন পর এই ব্যাপারে কথা বলার মত কাউকে পেয়েছে। ওর স্বামীর কাছে নুসাইবা বা আরশাদ কার নামে টু শব্দ করা যায় না। আর বাকি পরিচিত যারা নুসাইবা বা আরশাদ কে চিনে সবাই কমবেশি নুসাইবার রুপমুগ্ধ। তাদের বললে কথা নুসাইবাদের কানে পৌছে যাবে দ্রুত। তাই চুপ করে সব বুকে চেপে রাখতে হয়। মাহফুজ কে ঐদিন বকা খেতে দেখে এবং মাহফুজের সাথে একটা খাতির জমে উঠায় জেবার মনে হয় এতদিন ধরে মনের ভিতর চেপে রাখা ক্ষোভ শেয়ার করার জন্য মাহফুজ উপযুক্ত ব্যক্তি। মাহফুজ মনে মনে ভাবে ওর উদ্দ্যেশ সফল। এখন খালি ভিতরের কথা বের করতে হবে।


জেবা কথা বলতে বলতে বলে আজকে আমার সাথে লাঞ্চ করে যান। মাহফুজ ভদ্রতা বশত না করে। জেবা জোর করে বলে আরে প্রথম দিন আমার অফিসে এসেছেন। আপনি পিকনিকে যা হেল্প করেছেন এর পর আপনাকে অফিসে আসার পর খালি মুখে যেতে দেওয়া খারাপ দেখায়। আর আমাদের অফিসের কাছেই খুব ভাল একটা বিরিয়ানির দোকান আছে। পিয়ন কে  বলে দিচ্ছি দুই প্যাকেট বিরিয়ানি নিয়ে আসবে আমাদের জন্য। খেতে খেতে কথা বলা যাবে। মাহফুজ এইবার আর না করে না। কারণ জেবার পেট থেকে আর কথা বের করা দরকার। জেবার সাথে কথা চালাতে থাকে মাহফুজ। জিজ্ঞেস করে বাসার সবাই কেমন আছে? জেবা উত্তর দেয় ভাল। মাহফুজ অভিজ্ঞতা থেকে জানে বিবাহিত মেয়েদের মন জয় করার একটা কমন টেকনিক হল তাদের বাচ্চাদের নিয়ে কথা বলা, বাচ্চাদের প্রশংসা করা। পিকনিকে জেবার দুই বাচ্চা কে দেখেছিল মাহফুজ। কিউট বাচ্চা। তাই মাহফুজ বাচ্চা দুইটার কথা জিজ্ঞেস করে। জেবার চোখ ঝলমল করে উঠে। বাচ্চাদের নানা গুণগাণ গাইতে থাকে। কথায় কথায় বলে এখন বাচ্চা দুইটা নিয়ে খালি একটাই চিন্তা। ছোট মেয়েটাকে অলরেডি ভিকারুননেসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছে। ঢাকায় মেয়েদের জন্য বেস্ট স্কুল। এখন ছেলেটাকে একটা ভাল স্কুলে ভর্তি করতে পারলে হয়। গভর্মেন্ট ল্যাবরটরি স্কুল বাসা থেকে কাছে হয়, ভাল স্কুল। কিন্তু কিছুতেই নাকি ভর্তি করাতে পারছে না। এই বছর ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিল কিন্তু টিকে নি। তবে না টিকলেও নাকি অনেকে বিভিন্ন কোটা এবং লবিং এর জোরে বাচ্চাদের ভর্তি করিয়ে ফেলছে। উনারা চেষ্টা করেছেন তবে সফল হন নি। মাহফুজ বুঝল এইবার আসল খোচা দেবার সময়। মাহফুজ তাই জিজ্ঞেস করল, কেন আরশাদ সাহেব হেল্প করেন নি? উনি না আপনার হাজব্যান্ডের প্রমোশনে হেল্প করেছিল। জেবার মুখ কাল হয়ে যায়। জেবা বলে শুনেন আমার হ্যাজব্যান্ড কাজ করেছে বলেই প্রমোশন পেয়েছে এমনি এমনি না। এই কথা টা আমি তাকে বুঝাতে পারি না। আর আরশাদ ভাই কি এমনি এমনি হেল্প করেছে। উনি করেছে উনার স্বার্থে। আমার হ্যাজব্যান্ডের কোম্পানির সাথে উনার ডিলিংস আছে ট্যাক্স আর ভ্যাট সারচার্জ নিয়ে। সেটা ঠিক রাখার জন্য একজন লোক দরকার উনার ভিতরে। আমার জামাই হচ্ছে সেই লোক। আর কোম্পানি দেখেছে এমনিতেই তারা প্রমোশন দিত তখন আরশাদ সাহেব বলায় এমন ভাব করছে যেন তার কথাই রেখেছে। আমার ভাল মানুষ জামাইটা এইসব কিছু ঠিক মত বুঝে না। আরশাদ ভাই কি আর এমনি এমনি হেল্প করার মানুষ। উনি গল্প গুজব হাসি ঠাট্টার জন্য ভাল, আড্ডায় ভাল কোম্পানি। কিন্তু স্বার্থ ছাড়া উনি কাউকে এক বিন্দু হেল্প করে না। এই সহজ কথাটা এত বছরেও রিয়াদ কে বুঝাতে পারলাম না। মাহফুজ মনে মনে খুশি হয়। যে তথ্য খুজছিল তার প্রথম সূত্র পাওয়া গেল। রিয়াদ সাহেবের কোম্পানির সাথে আরশাদের একটা আন্ডারহ্যান্ড ডিলিং আছে। গুড। জেবা বলে আমরা আরশাদ ভাই কে  বলেছিলাম, উনি দুই একটা কল করেছিল তবে কাজ হয় নি। ঢাকার ছেলেদের সেরা স্কুলে নিয়ে কেমন লবিং হয় বুঝেন তো। মন্ত্রী, এমপি্‌, সচিব, আইজির তদবিরে ভরে থাকে। সেখানে ট্যাক্সের কমিশনারের এক ফোনে কি হয়। উনি হয়ত অন্য কাউকে ধরে করাতে পারত তবে সেটা উনি করেন নাই। মাহফুজ বুঝে জেবার কন্ঠে ক্ষোভ। মাহফুজ বলে এটা তো ঠিক করে নায়। বেস্ট ফ্রেন্ডের ছেলের জন্য এতটুকু তো করতে পারতেন। জেবা বলে এইবার বুঝেন কি অবস্থা। জেবার কথা শুনে হঠাত করে মাহফুজের মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। জেবার ছেলে কে গর্ভমেন্ট ল্যাব স্কুলে ভর্তি করতে সাহায্য করলে কেমন হয়। গর্ভমেন্ট ল্যাভ নিউমার্কেট থানা এলাকায়। এই এলাকার ওদের মূল দলের সভাপতি ওদের ফ্যামিলি ফ্রেন্ড। মাহফুজ চাচা বলে ডাকে। মাহফুজ কে খুব স্নেহ করেন। এইসব বড় স্কুলে মন্ত্রী এমপিদের তদবির চললেও সাধারণত যে এলাকার স্কুল সেই এলাকার পার্টির সভাপতি বা সেক্রেটারির অনুরোধ স্কুলের হেডমাস্টার ফেলতে পারবে না। মাহফুজ তাই জেবা কে বলে আমি যদি আপনার একটা উপকার করি নিবেন? জেবা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়, বলে কিসের কথা বলছেন। মাহফুজ বলে আমি চেষ্টা করে দেখতে পারি আপনার ছেলে কে গর্ভমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলে ভর্তি করানো যায় কিনা। জেবা অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে জিজ্ঞেস করে পারবেন আপনি? মাহফুজ বলে দেখেন না। পলিটিক্স করি, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি চালাই। আমাদের অনেক ধরনের লোকের সাথে খাতির আছে, খাতির রাখতে হয়। তাই একটু চেষ্টা তো করাই যায়। সফল না হলে তো আর ক্ষতি নেই তবে সফল হলে আপনার ইচ্ছা পূরণ হবে। আপনার ছেলে একটা ভাল স্কুলে যাবে। জেবা একদম খুশিতে গদ গদ হয়ে যায়। মাহফুজ বলে আমাকে দুই দিন সময় দেন। আমি আপনাকে কোন ভাল খবর শুনাতে পারি কিনা দেখি।


জেবা খুশিতে আত্মহারা। ছেলের ভাল স্কুলে এডমিশন নিয়ে এমনিতেও খুব চিন্তিত ছিল। রিয়াদ তেমন কোন খোজ রাখে না ছেলে মেয়ের পড়াশুনা নিয়ে, বলে এই বয়সে এত চাপ দেওয়া ঠিক না। কিন্তু একটা ভাল স্কুল যে কত পার্থক্য করে দিতে পারে ওদে সন্তানদের জীবনে এই জিনিসটা  বুঝে না। তাই যত ক্ষীণ হোক একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে এটাতেই দারুণ খুশি হয়ে যায় জেবা। এরমধ্যে বিরিয়ানি এসে পড়েছে। দারুন সুগন্ধ বিরিয়ানীর। খেতে খেতে তাই মাহফুজের সাথে কথা হয়। মাহফুজ খুব সুক্ষ ভাবে আরশাদ নিয়ে প্রশ্ন করতে থাকে। জেবা তখন এমনিতে খুশির ঠেউয়ে ভাসছে তার উপর এতদিনের ক্ষোভ বের করতে পারছে তাই দেদারছে অনেক কথা বলে যায়। জেবার হাজবেন্ডে যে কোম্পানিতে চাকরি করে তাদের মালিকের পুরো ট্যাক্সের ব্যাপারটা আরশাদ দেখে। আরশাদের সাথে কোম্পানির মালিকের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল রিয়াদ। কিভাবে কত টাকা কম দেওয়া যায় সব ফাকফোকড় দেখিয়ে দেয় আরশাদ। আর সাধারণত বড় ট্যাক্স পেয়ারদের র‍্যান্ডম চেক হয়, আরশাদ নিশ্চিত করে রিয়াদের কোম্পানি মালিকের যাতে র‍্যান্ডম চেক না হয় বা হলেও সেই চেক যেন কিছু খুজে না পায়। তবে সবচেয়ে বড় লাভটা কোম্পানি কে আরশাদ দেয় ভ্যাটের ক্ষেত্রে। ওদের ফ্যাক্টরিতে প্রতি মাসে একটা ইন্সপেকশন যায় টোটাল কত পণ্য উতপাদন হচ্ছে সেটা দেখার জন্য। আরশাদ বছরের পর বছর নিশ্চিত করছে যারা ইনসপেকশনে যায় তারা যেন উতপাদনের পরিমাণ কম দেখায়। ফলে ভ্যাট হিসেবে সরকার কে অনেক কম টাকা দিতে হবে। মাহফুজ বিরিয়ানী খেতে খেতে মাথায় সব নোট করে রাখে। এরপর আর খোজ লাগাতে হবে এইসব তথ্যের উপর ভিত্তি করে। মাহফুজ আগুন আর উস্কে দেয়। বলে আমি ভেবেছিলাম আরশাদ সাহেব খুব সৎ লোক। জেবা মুখ বাকায়। বলে সবাই জানে সৎ। কিন্তু আমি তো জানি কি ব্যাপার। আমার স্বামীর সাথে সব শেয়ার করে। আপনি কি মনে করেন আমার হাজব্যান্ডের কোম্পানি কে এমনি এমনি ট্যাক্স ভ্যাট লুকাতে সাহায্য করে? টু পাইস কিছু পায় না? সারা দুনিয়ার কাছে যেভাবে ভদ্র সাজে তখন এইসব ভাবলে আমার গা জ্বলে যায়। কত সম্মান উনাদের, দুইজনে সরকারী বড় চাকরি করে বলে। আর আমার হাজব্যান্ড রাত দিন খেটে মরছে কিন্তু তার তেমন সম্মান নাই বন্ধু মহলে জানেন। আমি আর নুসাইবা আপা তো এক ডিপার্টমেন্টে পড়েছি। আপার থেকে ভাল ছাত্রী ছিলাম। মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির মেয়ে তাই তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে হল, জামাই বেসরকারী চাকরি পছন্দ করে না তাই সরকারী ব্যাংকে ঢুকলাম। নুসাইবা আপা এখন বাংলাদেশ ব্যাংকে আছে দেখে সবাই মনে করে আমি বুঝি আন্ডারকোয়ালিফাইড। কিন্তু কেউ বুজে না আমি পরিস্থিতির চাপে এখানে। বিয়ের পর পর দুইটা বাচ্চা হয়ে গেল, সেটা সামলিয়ে ক্যারিয়ার এতদূর এনেছি কি এমনি এমনি। নুসাইবা আপার বাচ্চা নেই তাই উনি ক্যারিয়ারে যত সময় দিতে পারেন আমি পারি না, এটা কেউ বুঝতে চায় না। আপা আমার থেকে খারাপ ছাত্র হয়েও বিদেশে একটা মাস্টার্স করে এসছে। পারত আমার মত দুইটা বাচ্চা থাকলে। সবাই এখন ভাবে আপা কত ব্রিলিয়ান্ট। মাহফুজ বুঝে ঠিক জায়গায় আঘাত করতে পেরেছে। তাই কিছু না বলে চুপচাপ শুনে। জেবা বলে চলেছে আপা এমন একটা ভাব করে উনার স্বামীর মত স্বামী দুনিয়াতে নেই। এত সৎ, অনেস্ট। কিন্তু এটা ভাবে না ঢাকায় এমন আলিশান ফ্ল্যাট কিভাবে হল। প্রতি বছর বাইরে একটা ফরেন ট্যুর করে সেই টাকা কি সরকারি চাকরির স্যালারিতে হয়। এইসব কি আমরা বুঝি না। খালি বন্ধুত্বের খাতিরে কিছু বলি না। এইভাবে সেইদিন জেবার মুখ থেকে আর কিছু দরকারি কথা বের করে। মাহফুজ বুজে জেবা কে ওর আর দরকার হতে পারে। তাই ওর ছেলের জন্য কিছু একটা করবে এই কথা দিয়ে সেদিনকার মত  বের হয়ে পড়ে। বের হয়ে মাহফুজ ভাবে আরশাদের সম্পর্কে খোজ নিতে গিয়ে সততার গল্প এত শুনেছে যেন আরশাদের সততা লক্ষীন্দরের ঘর, দূভের্দ্য। তবে লক্ষীন্দরের ঘরে একটা ফাক আছে সেটা সোলায়মান শেখ আগেই  বলেছিল তবে ফাকটা বের করতে পারে নি, জেবাই ওকে দেখিয়ে দিয়েছে ফাকটা কোথায়। আগে জেবার ছেলে কে একবার ভর্তি করিয়ে নেই। তারপর জেবা কে দিয়েই বের করা যাবে লক্ষীন্দরের ঘরে আর কোথায় কোথায় ছিদ্র আছে।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: অঘটনঘটন পটিয়সী (নতুন আপডেট ২০) - by কাদের - 10-07-2023, 12:59 PM



Users browsing this thread: 8 Guest(s)