Thread Rating:
  • 185 Vote(s) - 3.33 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica অঘটনঘটন পটিয়সী (নতুন আপডেট ৩২ )
মাহফুজ রাস্তার জ্যাম দেখে ফুটপাত মটরসাইকেল তুলে দেয়। ফুটপাথ দিয়ে কয়েকশ গজ সামনে যেতে পারলে হাতের বামে একটা গলি আছে, সেই গলি দিয়ে ঢুকে পড়তে পারলে মেইন রাস্তার জ্যাম এড়িয়ে অনেকটা পথ যাওয়া যাবে। ফুটপাথে সামনে একটা লোক এসে পড়ায় ব্রেক কষে মাহফুজ, তেমন জোরে না, নরমাল ব্রেক। অন্যমনস্ক সাবরিনা তাল সামলাতে পারে না। এমনিতেই একসাইডে পা দিয়ে বসে থাকলে বাইকে তাল সামলানো কঠিন তার উপর অন্যমনস্ক ছিল। তাই কোনরকমে পড়তে পড়তে দাঁড়িয়ে যায়, ভাগ্যিস ফুটপাথে খুব স্লো যাচ্ছিল বাইক। তবে হঠাত করে এমন পরিস্থিতিতে ভ্যাবাচ্যাকা খায় একটু সাবরিনা। বাইক স্লো থাকায় কোন মতে দাঁড়িয়ে পড়তে পেরেছে, মাটিতে পড়ে যায় নি। তবে সাধারণত চমকে গেলে মানুষের প্রতিক্রিয়া একেক সময় একেক রকম হয়। কখনো কান্না, কখনো রাগ, কখনো একদম চুপ। সাবরিনার প্রতিক্রিয়াটা বের হয়ে আসল রাগে।  

মাহফুজ যখন টের পেল সাবরিনা বাইক থেকে তাল সামলাতে না পেরে নেমে যাচ্ছে তখন বাইক থামিয়ে দিল। মাহফুজ ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে সাবরিনা ঠিক মাটিতে পরে যায় নি, ফুটপাথ ঘেষা এক দেয়াল ধরে তাল সামলিয়েছে। সাবরিনা কে যেই জিজ্ঞেস করল, ঠিক আছে কিনা ঠিক তখন শুরু হল অগ্নি বর্ষণ। সাবরিনা শুরু করল, বাইক চালাত না পারলে বাইক চালায় কেন, কোন সভ্য মানুষ কি রাস্তা ছেড়ে ফুটপাতে গাড়ি চালায়, কি ভাবে ব্রেক করতে  হয় সেটা জানে কিনা। একের পর অগ্নি বর্ষণ করে যেতে থাকে সাবরিনা। আমাদের দেশে লোকের অভাব নাই আর রাস্তায় ফ্রিতে মজা দেখার সুযোগ পেলে আর বেশি লোক এসে হাজির হয়। মাহফুজ পরিস্থিতি ঠিক করার জন্য বলে স্যরি। ফুটপাতে না উঠলে আজকে সারাদিন লেগে যাবে আমাদের যেতে। আর আগেই তো বলেছিলাম দুই দিকে পা দিয়ে বসতে তাহলে আর বাইকে ব্যালেন্স রাখতে প্রব্লেম হয় না। সাবরিনা আবার রেগে অগ্নি বর্ষণ শুরু করে। এই সময় পাশ থেকে একজন বলে আপা ঝগড়া বাসায় গিয়ে করেন। বাসার লোকের সাথে রাস্তায় ঝগড়া করলে ভাল দেখায় না। সাবরিনা চোখ পাকিয়ে তাকায়। উপদেশ দেবার সুযোগ পেলে রাস্তায় মানুষ ছাড়ে না বিশেষ করে মেয়েদের। তাই এবার আরেকজন বলে আপু ভাইয়ার উপর রাগ কইরেন না, আজকাল সবাই জ্যামে পড়লে বাইক ফুটপাথে তুলে। অন্য আরেকজন বলে, আপু ভাইয়া তো ঠিক বলছে, আপনি ঠিক করে দুই সাইডে পা দিয়ে বসলে এমন হইত না। এক সাইডে পা দিয়ে বসা তো ডেঞ্জারাস। মাহফুজ দেখল এভাবে চললে কথা বাড়তে থাকবে আর মানুষ নাটক দেখে মজা নিবে। তাই মাহফুজ এক প্রকার ঝাড়ি দিল, যাবা? নাকি রাস্তায় দাড়ায়ে নাটক করবা? বেশিক্ষণ সময় নায়। প্রাথমিক এন্ড্রোলিন রাশ কমার পর সাবরিনা হালকা শান্ত হয়েছে। চারপাশে লোকজনের ভীড় দেখে টের পায় মানুষ মজা নিচ্ছে। তাই বাইকে উঠে বসতে যায়। মাহফুজ বলে এবার দুই সাইডে পা দিয়ে না বসলে বাইক চালাবে না কারণ এবার অল্প স্পিডে ফুটপাথে থাকায় কিছু হয় নি যদি এটা মেইন রাস্তায় হত তাহলে ভংয়কর একটা একসিডেন্ট হতে পারত। কয়েক সেকেন্ড দ্বিধা দ্বন্দ্বে থেকে সাবরিনা মেনে নেয়। নিরাপত্তার থেকে বড় কিছু নেই।

পিছনে দুই পা দুই দিকে দিয়ে বসে সাবরিনা প্রথমে একটু দূরুত্ব বজায় রাখতে চায়। তবে বাইকে এভাবে বসার অভিজ্ঞতা না থাকায় অস্বস্তি হতে থাকে। এর মাঝে রাস্তার জ্যাম ভীড় তাই মাহফুজ গাড়ির ফাকে ফাকে একে বেকে বাইক নিয়ে এগুচ্ছে। এই সময় ঠিক ভাবে না বসলে অস্বস্তি হয় আর বেশি, বাইক এক দিকে বাক নিলে মনে হয় বুঝি সে দিকে পড়ে যাবে। মাহফুজেরও চালাতে অস্বস্তি হয় কারণ খেয়াল করে দেখবেন আপনার পিছনে রাইডার থাকলে সে যদি বাইকের সাথে সাথে ডানে বামে শরীর হেলায় তবে যে দিকে শরীর হেলায় সে দিকে বাইকের ওজন বেশি হয়ে যায় ফলে কন্ট্রোল ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। মাহফুজ তাই রাস্তার এক জায়গায় যখন জ্যামে বাইক দাড় করাতে হয় তখন ঘাড় ঘুরিয়ে সাবরিনা কে বলে একটু সামনে এগিয়ে বস প্লিজ। নাহলে বইকের কন্ট্রোল রাখা কঠিন। এভাবে হলে পরে কোন জায়গায় কন্ট্রোল হারিয়ে দুইজনেই গাড়ির তলে পড়তে হবে। রাস্তার এই কড়া রোদে এমনিতে ঘামতে ঘামতে সাবরিনা শেষ তার উপর প্রতি মূহুর্তে ভারসাম্য রাখার চিন্তায় আর অস্থির। তাই মাহফুজের কথায় আর বাধা দেয় না, হালকা সামনে এগিয়ে বসে। তবে পুরো শরীর মাহফুজের পিঠে মিশিয়ে দেয় না। মাহফুজ বলে একটা হাত আমার কাধে আরেকটা হাত আমার পেটে রাখ আর যখন বাইক ডানে বামে বাকবে তখন শরীর হেলাবে না। সাবরিনা মাথা নাড়ে। কাধে আর পেটে হাত দিয়ে বসার পর মাহফুজের একদম কাছে ঘেষে আসতে হয়। দুই শরীরের মাঝে পার্থক্য তখন মাত্র দুই ইঞ্চি। বাইক তখন হাইকোর্টের পাশ দিয়ে হাজার হাজার রিক্সা আর বাসের ফাকে ফাকে অতন্ত্য ধীর গতিতে এগুচ্ছে। সাবরিনা হঠাত টের পায় এত কাছে ঘেষে বসার জন্য মাহফুজের শরীরের গন্ধ ওর নাকে আসছে। একটা পুরুষালী শক্ত গন্ধ। ঘামের গন্ধ কখনো সাবরিনার ভাল লাগে না। মাহফুজ আজকে এত ঘামার পড়েও এটা খারাপ লাগছে না। এর আগে দুই দিন মাহফুজের খুব কাছে আসলেও কোনবার আলাদা করে মাহফুজের গায়ের ঘ্রাণ খেয়াল করা হয় নি। কৌতুহলে তাই সাবরিনার নাক আরেকটি এগিয়ে যায়, প্রায় মাহফুজের পিঠ স্পর্শ করে একটা ঘ্রাণ নেয়। শক্ত একটা পুরুষালী গন্ধ। কেমন কেমন যেন করে উঠে শরীর। লোকটা কে রাস্তায় বেশি বকা হয়ে গেছে। ওকে তো বলেছিল দুই পা দুই দিকে দিয়ে উঠে বসতে, ও নিজে শুনে নি। আর জ্যামে পড়লে ফুটপাতে বাইক চলে এটা তো সারাজীবন দেখে এসেছে। মিটিং শেষে স্যরি বলে দিতে হবে। আবার নাক ভরে ঘ্রাণ নেয়। ঘ্রাণটা যেন একেবারে বুকের ভিতর গিয়ে লাগে। হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দেয়। সাবরিনার একটু লজ্জা লাগে। এভাবে আর কখনো কার ঘ্রাণ নেয় নি ও। এমন পুরুষালী একটা গন্ধ যেন মনে হচ্ছে নির্ভরতার প্রতীক। ওর এক বান্ধবি বয়ফ্রেন্ডের ঘামে ভেজা টিশার্ট বাসায় নিয়ে যেত পড়ার জন্য। এটা নিয়ে হাসিঠাট্টা করলে উত্তর দিত, মানুষ তো আদতে একটা পশু। আমাদের আদিম প্রবৃত্তি গুলো এখনো রয়ে গেছে। প্রতিটা প্রাণী তাদের ঘামের মাধ্যমে ফেরোমেনেন ছড়ায়, বিপরীত লিংগ কে আকর্ষণ করার জন্য। একদিন সাবরিনা সেই টিশার্ট শুকে দেখেছিল, ঘামের একটা বোটকা গন্ধ। সেটা বলার পর ঐ বান্ধবীর উত্তর ছিল সবার ফেরোমেনন সবাই কে এট্রাক্ট করে না। যে যার প্রতি আকর্ষণ বোধ করে তার ঘামের গন্ধ তার ভাল লাগে। হঠাত করে এত বছর পর সেই কথা মনে পড়ে যায়। ঘামে লাল হয়ে থাকা সাবরিনা আর লাল হয়। তবু বুক ভরে আরেকবার ঘ্রাণ নেয়। বুক কাপতে থাকে, হাত ঘামে আর তলপেটে পরিচিত সেই শিরশির অনুভূতি। ভাগ্যিস লোকটা ওকে দেখতে পাচ্ছে না।



সেই দিন রাস্তার জ্যাম আর ভীড় ঠেলে প্রায় আড়াই ঘন্টার মত রাস্তায় থেকে শেষ পর্যন্ত গন্তব্যে পৌছায় সাবরিনারা। তিনটা থেকে চারটা মিটিং হবার কথা। আগে থেকে ব্যবস্থা করা ছিল তাই সাবরিনা আর মাহফুজ মিটিং এর পিছনে বসে মিটিং পর্যবেক্ষণ করে। চারটায় মিটিং শেষ হবার পর একটা ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন হওয়ার কথা আট জন ব্যবসায়ীর সাথে। মাহফুজ আগেই বাজার কমিটির সাথে কথা বলে একটা রুমের ব্যবস্থা করে রেখেছিল। প্রায় দেড় ঘন্টা পর ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন যখন শেষ হল তখন মাহফুজ আর সাবরিনা দুই জনেই ক্ষুধার্ত এবং ক্লান্ত। রাস্তায় জ্যামের কারণে আসতে দেরি হওয়ায় দুপুরের খাবার খাওয়া হয় নি। তবে টাইম মত শেষ পর্যন্ত পৌছাতে পারায় এবং ফোকাস গ্রুপটা ভাল ভাবে শেষ করতে পারায় সাবরিনা খুশি। ওর প্রজেক্টের এটাই শেষ বড় হার্ডল ছিল। এখন সব ডাটা দিয়ে মেইন স্ট্যাটিজিক্যাল পেপার টা দাড় করাতে হবে। সাবরিনার মনে হয় এই গত কয় মাসের ধকল বুঝি এবার কমল। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে কিছু খাবে কিনা কারণ মাহফুজ প্রচন্ড ক্ষুধার্ত। সাবরিনাও এখন খুশি কাজ শেষ হবার জন্য সাথে সাথে ক্ষুধার্ত তাই বলে কোথায় খাবেন। মাহফুজ বলে কাছেই একটা ভাল কাবাবের দোকান আছে, সেখানে ভাল বসার ব্যবস্থা আছে। সাবরিনা বলে এই গরমে কাবাব খাওয়া ঠিক হবে কিনা। মাহফুজ  বলে ম্যাডাম পুরান ঢাকায় গত দুই মাস ধরে আসছেন, একটু আমাদের কালচারে পরখ করে দেখুন। গরমে কাবাব কেমন শান্তি দেয় দিলে। মাহফুজের কথা বলার ধরণে সাবরিনা একটু মুচকি হাসে। সাবরিনার হাসি দেখে মাহফুজের ভাল লাগে। মনে মনে ভাবে সাবরিনা আবার খানিকটা নরমাল হয়েছে।

মোস্তফা কাবাব হাউজ। পুরান ঢাকার অন্যতম নামী কাবাবের দোকান। প্রায় আশি বছরের বেশি সময় ধরে চলছে। আদি মালিক মোস্তফা ঢাকার নবাবদের রসুই ঘরে হেড বাবুর্চি ছিলেন। পরে ১৯৪০ এর দশকে নবাবদের যৌলুস কমে আসলে একসময় নিজেই একটা দোকান খুলে বসেন। নানা রকম কাবাব আর খাসির পায়ার সুপের জন্য বিখ্যাত দোকানটা। এখন মোস্তফার নাতিরা চালায় দোকান। মাহফুজ ছোট থাকতে যেমন দেখেছিল তার থেকে বড় হয়েছে দোকানটা এখন। পুরান ঢাকার বেশির ভাগ ঐতিহ্যবাহী দোকান তাদের শত বছরের পুরান লুক ধরে রাখে। খানিকটা ঘিঞ্জি, পুরান আসবাবপ্ত্র। মোস্তফারা দোকানে ঠিক পুরান লুকটা রাখে নি। পাশের দুইটা দোকান কিনে নিয়ে দোকানের জায়গা বাড়িয়েছে। দোকানে এখান দুইটা সেকশন। ফ্যামিলি সেকশন আর নরমাল সেকশন। নরমাল সেকশনে বেঞ্চ আর টিবিল পাতা। লোক এসে যার যার মত বসে খেয়ে যাচ্ছে। সকাল এগারটা থেকে রাত একটা পর্যন্ত। আর ফ্যামিলি সেকশনে বসার ব্যবস্থা ভাল। পুরান ঢাকায় লোকজন সন্ধ্যার পর পরিবারের মেয়েদের নিয়ে খেতে বের হয়। কাস্টমারদের এই গ্রুপ কে ধরার জন্য ফ্যামিলি ্সেকশন কয়েক বছর আগে ডেকোরেট করে সুন্দর করা হয়েছে। পুরান দিনের মত কেবিন কেবিন ভাগ করা। একটা ভারী পর্দা দেওয়া প্রতি কেবিনে।

সাবরিনা গত দুইমাসে কাজের খাতিরে বেশ অনেকবার পুরান ঢাকায় এসেছে। মাহফুজ ওকে বেশ কয়েকবার পুরান ঢাকার কয়েকটা ঐতিহ্যবাহী দোকানে খাইয়েছে। এই দোকানটা অন্য দোকানগুলোর তুলনায় বেশ পরিষ্কার এবং পরিপাটি। একটা কেবিনে এসে বসল দুইজন। ওয়েটার এসে পানি দিয়ে গেল। সন্ধ্যার ঠিক আগে এই সময়টা দোকানে ভীড় কম, বিশেষ করে ফ্যামিলি সেকশনে। আর এক ঘন্টা পর লোক  বাড়তে থাকবে। মেনু দেখছ দুইজনে। সাবরিনা বলে আজকে কিন্তু আমি পেমেন্ট করব। মাহফুজ বলে আপনি আমাদের গেস্ট পুরান ঢাকার। তাই আমার পে করা উচিত। সাবরিনা বলে আসলে আপনি একদিনও পেমেন্ট করতে দেন নি আমাকে। তাছাড়া আজকের পর এই প্রজেক্টের ফিল্ডের কাজ মোটামুটি শেষ তাই আপনাকে ট্রিট দেবার এটাই আমার চান্স। সাবরিনার কথায় মাহফুজের মনে একটা ধাক্কা দেয়। প্রজেক্টের কাজ তাহলে প্রায় শেষ। কথাটা বলার পর সাবরিনাও টের পায় মাহফুজের সাথে ওর এখন থেকে নিয়মিত দেখা স্বাক্ষাত কমে যাবে। হয়ত মাহফুজ অফিসে অন্য কোন কাজে আসলে দেখা হবে। এই বোধদয়ে দুইজনেই অনমনস্ক হয়ে মেন্যুর দিকে তাকিয়ে থাকে।


দুই জনেই শিক কাবাব আর নান রুটি অর্ডার দেয়। কেবিনের ভিতর একটা নীরবতা। দুইজনের মাথায় তখন চিন্তার ঝড় চলছে। সাবরিনা ভাবছে মাথার ভিতর প্রশ্ন গুলোর কি হবে। আর মাহফুজ ভবে অনেক কথাই তো বলা বাকি থেকে গেল। একটা অস্বস্তিকর নীরবতা রুমে ভর করে। একটু পরে খাবার এসে হাজির হয়। দুইজন প্রায় নিঃশব্দে খেয়ে চলে। পেটের ক্ষুধা মোচন হচ্ছে তবে মনের ক্ষুধার কি হবে। এত প্রশ্ন, অনেক কথাই তো বাকি রয়ে গেল। খাওয়া শেষ হবার পর দুই জনে চুপ করে বসে থাকে। যেন সময় কে আরকেটু দীর্ঘায়িত করার উপায় খুজছে দুইজনে কিন্তু উপায় জানা নেই কার। মাহফুজ বুঝে আজকে ওকে কথা বলতে হবে। সাবরিনা কে প্রশ্ন করে লালবাগ কেল্লা দেখেছেন কখনো? সাবরিনা না সূচক মাথা নাড়ায়। মাহফুজ বলে সারাজীবন ঢাকায় বড় হয়ে লালবাগ কেল্লা দেখেন নি। আপনাকে এটা না দেখিয়ে প্রজেক্ট শেষ করলে তো আমি ব্যর্থ হয়ে যাব। মাহফুজের স্বভাবসুলভ প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা কথায় রুম যেন আবার প্রাণ ফিরে পায়। সাবরিনা বলে হ্যা দেখা হয় নি কিন্তু আজকে তো দেরি হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে যাবে না। মাহফুজ ঘড়ি দেখে। বলে, ভিতরের মিউজিয়াম বন্ধ হয়ে গেছে তবে ভিতরের চত্ত্বর দেখতে পারেন, ভিতরে একটা সুন্দর বাগান আছে সেটা দেখতে পারেন। সাবরিনা বলে গেট বন্ধ থাকবে না? মাহফুজ বলে আমি লোকাল ছেলে, পলিটিক্স করি। হাজারটা মানুষ আমার পরিচিত। দেখেন ঢুকতে পারি কিনা। সাবরিনা ভাবে লোকটা কনফিডেন্ট আর করিতকর্মা। যেভাবে কনফিডেন্স শো করে সেটায় একটা চার্ম আছে ঠিক এরোগেন্স না। সাবরিনা তাই বলে, ঠিকাছে চলুন। আপনার বদৌলতে না হয় এত বছর পর লালবাগ কেল্লা টা দেখা হয়ে যাবে।

গরমকালে সন্ধ্যা ছয়টার পর দর্শনার্থীদের জন্য কেল্লা বন্ধ হয়ে যায়। একমাত্র কোন বিশেষ অকেশন থাকলে যেমন স্বাধীনতা দিবস বা বিজয় দিবস সেদিন রাত দশটা পর্যন্ত কেল্লা খোলা থাকে দর্শনার্থীদের জন্য। এখন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা বাজে তাই কেল্লায় নরমালি ঢোকার উপায় নেই। তবে পিছন দিকে কেল্লার রক্ষণাবেক্ষণ এর জন্য নিয়জিত প্রত্নতাত্ত্বিক ডিপার্টমেন্টের কর্মচারীদের একটা টিনশেডের কোয়ার্টার আছে। সেই কোয়ার্টারে ঢোকার ছোট একটা গেট আছে আর সেই গেট দিয়ে কেল্লার ভিতরে অনায়াসে ঢুকা যায়। মাহফুজ ছোটকাল থেকে এই এলাকায় বড় হয়েছে তাই এখানকার অনেকেই তার পরিচিত। আর প্রত্নতাত্ত্বিক ডিপার্টমেন্টের কর্মচারী পর্যায়ে অনেক চাকরি বংশপরষ্পরায় চাকরি। মানে বাবা চাকরিতে ছিল তাই পোষ্য কোটায় ছেলে বা মেয়ে সেই চাকরি পায়। তাই এখন চাকরিতে থাকা কম বয়েসি অনেকে মাহফুজের ছোটবেলার খেলার সাথী। মাহফুজ আজিম বলে ওর এক বন্ধু কে ফোন দেয়। ওর চাকরির জন্য মাহফুজের বাবা হেল্প করেছে যাতে পোষ্য কোটায় চাকরিটা পায়। রাজশাহী ভার্সিটিতে ম্যানেজমেন্টে পড়ে এখন এখানে এসিসেটেন্ট সিকিউরিটি অফিসার। মাহফুজ ফোন দিয়ে বলে তোর বাসার সামনে আয়। আজিম আসতেই মাহফুজ কে সাবরিনার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। বলে উনার কোম্পানির সাথে আমি একটা প্রজেক্টে কাজ করছি। এই ম্যাডাম কখনো লালবাগ কেল্লার ভেতরে ঢুকে নি। আজকে প্রজেক্টের শেষ দিন। তাই উনাকে দেখাতে নিয়ে আসছি। আজিম বলে ঠিকাছে চল তোদের কে সামনের গেট দিয়েই ঢুকাই। মেহমান মানুষ কে পিছনের গেট দিয়ে ঢুকাতে কেমন লাগে। তবে ম্যাডাম আপনি কোন ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়েন না। কারণ রাতের বেলা কেউ কেল্লায় ঢুকতে পারছে এটা ফেসবুকে প্রচার হলে পরে আমার চাকরি থাকবে না। সাবরিনা বলে শিওর শিওর। আজিম সামনের গেটে নিয়ে আসে। মেইন ফটক বন্ধ। একটা ছোট গেট আছে। নক করতেই দ্বায়িত্বে থাকা গার্ড দরজা খুলল। এই গার্ডকেও মাহফুজ চিনে। মাহফুজ কে একটা সালাম দিল। আজিম হচ্ছে এসিসেটেন্ট সিকিউরিটি অফিসার তাই পদবীতে গার্ডদের সরাসরি বস। আজিম বলল আমার মেহমান একটু ভিতরে যাবে। গার্ড নিজেও মাহফুজের বাবা কে চিনে আর মাহফুজের কথা জানে। ইনফ্যাক্ট গার্ডের ছেলে একটা মারামারি করে মামলা খেয়েছিল, সেই মামলার জন্য প্রথমে মাহফুজের কাছে আসলে, মাহফুজ গার্ড কে তার বাবার কাছে নিয়ে গিয়েছিল। তাই গার্ড বলে আরে মাহফুজ ভাই কে আমি চিনি। উনার মেহমান মানে আমাদের মেহমান। আর আপনি বলে দিছেন মানে আর কোন চিন্তা নাই। মাহফুজ, আজিম আর সাবরিনা একসাথে ভিতরে ঢুকে। আজিম বলে আমি কি ঘুরে দেখাব তোদের? মাহফুজ বলে নারে দোস্ত। আমি এত হাজার বার আসছি আমি চিনি ভাল করে। আজিম হাসে, বলে হ্যা কত দিন তো আসিস না। মাহফুজ বলে আমি চিনব সমস্যা নাই। তোর কাজ থাকলে তুই যেতে পারিস। আজিম ঘড়ি দেখে। বলে হ্যা আজকে শ্বশুড়বাড়ির লোকজন আসার কথা বাসায় দাওয়াতে। তোর সমস্যা না হলে আমি যাব। তবে কোন প্রব্লেম হলেই কল দিস। দশ মিনিটে চলে আসব। মাহফুজ মাথা নাড়ায়। আজিম বলে তুই শালা আগের মত রয়ে গেছিস। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে কিভাবে। আজিম সাবরিনার দিকে তাকায়। সাবরিনা একটু সামনে এগিয়ে ঘুরে ঘুরে চারপাশটা দেখছে। এখনো পুরো অন্ধকার নামে নি। সাবরিনা একটু দূরে আছে বুঝে আজিম  বলে শালা আমরা যখন শ্বশুড় বাড়ির লোকের মেহমানদারি করে পারছি না তুই তখন মেয়ে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিস। মাহফুজ জোরে জোরে হাসতে থাকে। মনে মনে ভাবে আজিম কে তো আর বলা যাচ্ছে না সাবরিনা তার শ্বশুড়বাড়ির লোক। আজিম বলে, আমি আসলেই সিরিয়াস। তোর মেয়ে ভাগ্য দেখ। তুই যখন একের পর এক মেয়ের সাথে ডেটিং করতি আমরা তখন একটা মেয়ের ফোন নাম্বার যোগাড় করতে গিয়ে হয়রান হয়ে যেতাম। তুই একটু কথা বললেই মেয়ে গুলা কেমনে যে পটে যেত শালা। মাহফুজ বলে এমন কঠিন কিছু না, একটু ভালভাবে কথা বললেই হয়। সামনে গিয়ে কাচুমাচু না করলেই হয়। আজিম বলে শালা বলা সহজ করা কঠিন। বউ পর্যন্ত কথায় পটে না আর অন্য মেয়ে মানুষ। সত্যি করে বল তো এই মেয়ে কে পটাস নি? মাহফুজ কিছু না বলে হাসে। আজিম বলে শালা কুত্তা তুই। আর তোর ভাগ্য বটে একটা।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: অঘটনঘটন পটিয়সী (নতুন আপডেট ১৪) - by কাদের - 08-05-2023, 12:35 PM



Users browsing this thread: 6 Guest(s)