Thread Rating:
  • 185 Vote(s) - 3.33 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica অঘটনঘটন পটিয়সী (নতুন আপডেট ৩২ )
সাদমান সাবরিনার বিয়ের দাওয়াত ছিল ধানমন্ডিতে, হোয়াইট হল নামে একটা কমিউনিটি সেন্টারে। বিয়ের অনুষ্ঠানে অনেকেই সাবরিনার সাজের প্রশংসা করল। খাওয়া দাওয়া শেষে পরিচিত লোকদের সাথে কথা বলতে বলতে মাহফুজ কে মেসেজ পাঠাল সাবরিনা সোয়া চারটার দিকে দৃকে থাকবে। দৃকও ধানমন্ডিতে। বেশিক্ষণ লাগবে না বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে পৌছাতে। চারটার দিকে বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে বের হল সাবরিনা। সাদমান সাবরিনা কে দৃকের সামনে নামিয়ে দিয়ে গেল, পরে আসার সময় লিফট লাগবে কীনা জিজ্ঞেস করল। সাবরিনা বলল দরকার নেই, ও নিজেই চলে যাবে। সাদমান খুশি হল মনে হয় কেননা তাহলে আর বেশিক্ষণ আড্ডা দিতে পারবে। দৃকের সামনে এসে মেসেজ দিল সাবরিনা, আমি এসেছি আপনি কই। মাহফুজ দুই মিনিট পর সামনে হাজির হল, বলল ভিতরে ছিল। সাবরিনা বলল তাহলে  বাইরে আসার দরকার ছিল না, মেসেজ দিলেই হত। মাহফুজ বলল আরে আপনাকে রিসিভ করতে এসেছি। সাবরিনা মনে মনে বলল জেন্টেলম্যান। মাহফুজ একটা জিন্সের প্যান্ট, পোলো শার্ট আর কেডস পরে এসেছে। মানিয়েছে ভাল। আজকে দাড়ি ছেটে ক্লিন শেভেড হয়ে এসেছে। অনেক ছেলে কে ক্লিন শেভ করলে বাচ্চা বাচ্চা লাগে। মাহফুজের জন্য ব্যাপারটা সেরকম না বরং একটা ধারালো সৌন্দর্য আছে ওর চেহারায়। গালটা অত মসৃণ না, বড় চোখ সব, কপালের এক সাইডে ছোট করে অনেক আগের একটা কাটা দাগ। সব মিলিয়ে একটা মিস্টেরিয়াস ভাব ফুটে উঠে চেহারায়। পাশ দিয়ে গেলে যে কোন মেয়ে আরেকবার তাকাবে। সাদমানের অবস্থাও তখন ঠিক অনেকটা বাকহারার মত। সাবরিনা কে এতদিন অফিস সেটিং এ দেখে এসেছে। সাবরিনা সব সময় সুন্দর কিন্তু আজকে যখন বিশেষ করে সেজে এসেছে তখন মাহফুজের মুখ দিয়ে কথা সরছিল না কয়েক সেকেন্ড। এত সুন্দর। নীল শাড়ি, নীল ব্লাউজ আর গলায় একটা রূপার মালায় যেন মনে হচ্ছিল স্বাক্ষাত দেবী। তবে এই দেবী কে দেখলে কাম দেবতা জাগ্রত হয়। মাহফুজ টের পায় ওর বুকে একটা ধুকপুকানি হচ্ছে আর নিচে প্যান্টের ভিতর কাম দেবতা জাগ্রত হয়ে উঠছে। এক সাথে প্রেম আর কামের এই সম্মিলন এতদিন শুধু সিনথিয়া করতে পেরেছিল ওর জীবনে। সাবরিনা যেন এইখানে বোনের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে।


দৃকের ভিতর সাবরিনা মাহফুজ বেশ কিছুক্ষণ থাকল। ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন ছবি দেখছিল ওরা। সাবরিনা ছবি গুলা নিয়ে  বিভিন্ন মন্তব্য করলেও মাহফুজ চুপ করে ছিল। সাবরিনা যখন ভাবছিল মাহফুজের বুঝি এই ছবি নিয়ে আগ্রহ নেই খালি ওকে সংগ দেবার জন্য এসেছে তখন মাহফুজ আসলে কথা বলার বদলে সাবরিনার সৌন্দর্য দুই চোখ দিয়ে গিলছিল। ওর মনের মাঝের দুষ্ট অংশটা যেন বলছিল যত পারিস এই অমৃতসুধা পান করে নে, পরে আর কোন দিন পাস কীনা কে জানে। ভাল করে পান করে নে তাহলে রাতে ভাল করে এই অমৃত সুধা দিয়ে কাজ সারতে পারবি। নিজের ভিতর এমন চিন্তায় মাহফুজ একটু লজ্জা পেলেও সাবরিনার সৌন্দর্য দুই চোখ দিয়ে গিলতে একটুও ইতস্তত করছিল না। এর মধ্যে সাবরিনার বন্ধুর সাথে দেখা হল যার প্রদর্শনী। সাবরিনা মাহফুজ কে কলিগ বলে পরিচয় করিয়ে দিল, বলল এখানে এসে দেখা হয়েছে। মাহফুজ আড় চোখে তাকাল সাবরিনার দিকে, সবারিনা অবলীলায় মিথ্যা বলে বন্ধুর সাথে কথা বলছে যেন কিছুই হয় নি। মাহফুজ মনে মনে ভাবল মিস গুডি টু সুজ ইজ নট দ্যাট সিম্পল। কী অবলীলায় একটা মিথ্যা বলে দিল। দেখা শেষ হতেই দুইজন বের হল। মাহফুজ ভাবছিল এই বুঝি ওদের এই বিকালবেলার দেখা হওয়াটা এখনি শেষ হয়ে যাবে। মাহফুজ তখন যেন সাবরিনা কে আটকে রাখবার ছুতা খোজায় ব্যস্ত।

মাহফুজ তাই তখন তার আজকের দিনের ট্রাম্প কার্ড বের করল। মাহফুজ জীবনে বহু কিছু ট্রাই করেছে। একসময় ফটোগ্রাফি নিয়ে শখ ছিল। এমনকি দেশের প্রথম ফটোগ্রাফী স্কুল পাঠশালায় দুই মাসের একটা কোর্স করেছিল বছর দশেক আগে। ফটোগ্রাফীর বেসিক জ্ঞান তাই ওর আছে। সিনথিয়ার কাছে শুনেছিল সাবরিনার ফটোগ্রাফী নিয়ে আগ্রহ আছে তাই আজকে আসার আগে ওর বছর দশেক আগের জ্ঞান ইন্টারনেটের সার্চ ইঞ্জিনের বদৌলতে ঝালিয়ে নিয়েছিল। তাই এতক্ষণ দেখা ছবি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু করল। একটা ছবি আছে গুলিস্থানের ফুটফাতে সন্ধ্যার সময় এক বাদাম বিক্রেতা আর তার ক্রেতার। সাদা কালো ছবি। ডেপথ অফ ফিল্ড এর কারণে মূল সাবজেক্ট বাদাম  বিক্রেতা আর তার ক্রেতার বাইরে বাকি সবাই ঝাপসা হয়ে গেছে। এই ডেপথ অফ ফিল্ড এখানে বুদ্ধিমানের মত ব্যবহার করা হয়েছে, ঝাপসা হয়ে যাওয়া পিছনের জন সমুদ্র আর তার সামনে অফিস ফেরত ক্লান্ত ক্রেতা আর জীবন লড়ায়ে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে যাওয়া বাদামওয়ালার শক্ত মুখ। যেন ঢাকার একটা প্রতিচ্ছবি, এক কথায় ঢাকা শহর কে এমন সুন্দর করে তুলে ধরা যেত না। মাহফুজ কথা গুলো বলা শেষ করে খেয়াল করে সাবরিনা অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আসলে সাবরিনার জন্য মাহফুজের এই ছবির বিশ্লেষণ একটা চমকের মত ছিল। সাবরিনার ধারণা ছিল মাহফুজ হয়ত ওর প্রতি মায়া করে এই সংগ দিতে চেয়েছে, ফটোগ্রাফীর প্রতি তেমন কোন  উৎসাহ নেই ওর। তবে এই মাত্র মাহফুজের কথা শুনে বুঝল ফটোগ্রাফী সম্পর্কে ভাল ধারণা আছে এই ছেলের, অন্তত যেভাবে ওর বন্ধুর তোলা সাদাকালো ছবি টা বিশ্লেষণ করল সেভাবে ওর সাথে এইসব প্রদর্শনীতে নিয়মিত আসা ওর ফ্রেন্ড সার্কেলের অন্যরা পারবে কীনা সেটা নিয়ে সাবরিনা সন্দিহান। এইসব ফটোগ্রাফী প্রদর্শনী বা গানের সার্কেলে আসা লোকজন যতটা না শিল্পের টানে আসে তার থেকে বেশি আসে সোসাইটি মেইনটেইন করতে, নিজের ক্লাস উচু করতে। সেখানে মাহফুজ কে আগে থেকেই সাবরিনা ধরে রেখেছিল এই ব্যাপারে অজ্ঞ হবে কিন্তু মাহফুজ ঠিক উলটা প্রমাণ উপস্থান করে ওকে বাকহারা করে দিয়েছে। সাবরিনা কে চুপ করে থাকতে দেখে মাহফুজ একটু ভড়কে গেল, ভাবল এতদিনের পুরান জ্ঞানে  বুঝি ভুলভাল কিছু বলল। তাই ভুল কিছু বলে থাকতে তার দায় এড়াতে বলল, আসলে এইটা আমার মত, ভুল হতে পারে, আপনি এইসবের আর বেশি সমজদার। সাবরিনা বলল, আরে না, না। আপনি চমতকার একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আপনি যে ফটোগ্রাফীও জানেন এইটা আসলে আমাকে অবাক করেছে। আপনার এক অংগে অনেক রূপ। তাই অবাক  হচ্ছি।  


কথার জালে ফেলবার ক্ষেত্রে মাহফুজ ওস্তাদ। তাই সাবরিনার কথা প্রসংগে বলল, কেন ম্যাডাম, কি ভেবেছিলেন, আমার মত পলিটিক্স করা আনকালচার্ড লোকজন ছবির কী বুঝবে? মাহফুজের এই কথায় সাবরিনা একদম অপ্রস্তুত হয়ে গেল। এইভাবে ওর কথা ব্যাকফায়ার করবে সেটা বুঝতে পারে নি, আর পলিটিক্যাল লোকজনদের সম্পর্কে ওর মনের গোপন ভাব এইভাবে মাহফুজ ধরে ফেলবে সেটাও আন্দাজ করতে পারে নি। তাই বিব্রত হয়ে গেলে অনেক সময় মানুষ যেমন অনেক কথা বলে নিজেকে ডিফেন্ড করার চেষ্টা করে, সাবরিনা তাই করছিল। সাবরিনা হড়বড় করে নিজের কথা ডিফেন্ড করে মাহফুজের ছবি বিশ্লেষণের প্রসংসা যখন করছিল তখন খেয়াল করে দেখে মাহফুজ মিটিমিটি  হাসছে। সাবরিনা মাহফুজ কে হাসতে দেখে আর বিব্রত হয়ে গেল, ভাবল আবার ভুলভাল কিছু বলে দিল কীনা। কনফিডেন্ট স্মার্ট সাবরিনার বর্মে সহজে লোকজন ফাক খুজে পায় না কিন্তু মাহফুজ যেন এখানে সুড়ংগ খুড়ে ফেলেছে। সাবরিনা তখন বলেই চলেছে, মাহফুজ সাহেব আমি আসলেই তেমন কিছু মিন করি নি, আমি আসলে অবাক হয়েছিলাম আপনি ছবি সম্পর্কে এতকিছু জানেন বলে। আমি ভেবেছিলাম আপনি খালি আমি একা আসব বলে আমাকে সংগ দিতে আসতে চেয়েছেন কিন্তু আপনিও যে ছবি ভালবাসেন সেটা জানতাম না। আপনি ভুল বুঝে থাকলে স্যরি। মাহফুজ এবার জোরে একটা হাসি দিল। সাবরিনা যেন আর নার্ভাস হয়ে গেল, মনে হচ্ছে স্কুল লাইফের ম্যাথ ক্লাসে সবার সামনে বোর্ডে অংক ভুল করলে সাবিহা ম্যাডাম যেমন একটা হাসি দিতেন তেমন হাসি দিচ্ছে বুঝি মাহফুজ। বেশি বিব্রত হলে মানুষের হার্ট রেট বাড়ে হয়ত তাই অল্প কয়েক মিনিটের মাঝেই সাবরিনার  কপালে ঘামের রেখা। মাহফুজ এইবার বলল রিলাক্স ম্যাডাম, রিলাক্স। আমি জাস্ট লেগ পুলিং করছিলাম, আর কিছু না। একটু দুষ্টমি আর কি। তবে আপনি একটা কথা ভুল বলেছেন। আমি আপনি লোনলি ফিল করবেন দেখে এসেছি এটা পুরো সত্য না, আপনার সাথে কিছুটা সময় কাটানো যাবে এটাই আমার মূল উদ্দ্যেশ। সারাদিন অফিস সেটিং এ আমাদের দেখা হয় তাই এর বাইরে আপনাকে দেখার কৌতুহল ছিল। সাবরিনা মাহফুজের  উত্তর শুনে হাফ ছেড়ে বাচল। বলল, আপনি তো ভারী দুষ্ট আছেন দেখি। অফিসে আপনাকে দেখলে অনেক সিরিয়াস লোক মনে হয়। মাহফুজ উত্তর দিল ভাল করে মিশার সুযোগ কই দিলেন ম্যাডাম, নাহলে আমাকে কাঠখোট্টা বলতে পারতেন না। সাবরিনা আবার ওর উত্তর ডিফেন্ড করে কথা বলতে গিয়েই টের পেল মাহফুজ হাসছে। এইবার লেগ পুলিং টের পেয়ে সাবরিনা হাসতে বলল আপনি পারেন বটে। আপনার ভিতরে ভিতরে যে এত শয়তানি কে জানত। মাহফুজ বলল যাই বলেন আপনি হাসলে আপনাকে সুন্দর লাগে তবে আপনি যখন বিব্রত হয়ে একটু আগে ঘামছিলেন তখন আর বেশি সুন্দর লাগছিল। জীবনে অনেকবার অনেকরকম প্রসংশা শুনেছে সাবরিনা কিন্তু  বিব্রত হলে ওকে সুন্দর লাগে এটা প্রথম। আর আরেকটা জিনিস খেয়াল করল অন্য কেউ এইভাবে সরাসরি ওর রূপের প্রসংশা করলে অড লাগত কিন্তু মাহফুজ কত ইজি এন্ড কনফিডেন্টলি এটা বলল যেন এটা বলাই স্বাভাবিক। মাহফুজ এইবার কনফিডেন্ট যে সাবরিনা বেশ ইজি হয়ে উঠছে ওর সাথে। তাই বেশ সাহসের সাথেই বলল চলুন হাটতে হাটতে গল্প করি, নাকি চলে যাবার ইচ্ছা আছে। সাবরিনা বলল না, না চলুন। অনেকদিন এভাবে হেটে হেটে গল্প করা হয় না।

মাহফুজ আর সাবরিনা দৃক গ্যালারির সামনে থেকে  ধানমন্ডির অলিগলির ভিতর উদ্দ্যেশহীন ভাবে হাটতে থাকল। গল্প করতে করতে সাবরিনা টের পেল গল্প করার সাথী হিসেবে মাহফুজ চমতকার। সাবরিনাদের অফিস গসিপ, মাহফুজের পলিটিক্স, আজকের ছবির প্রদর্শনী এইসব নিয়ে কথা বলতে বলতে কখন যে দেড় ঘন্টা চলে গেল টের পেল না সাবরিনা। হাটতে হাটতে নিজেদের একসময় আবহানী মাঠের সামনে আবিষ্কার করল ওরা নিজেদের। বেশ অনেক সময় গেছে, হাটা হাটি করায় এই ভ্যাপসা গরমে একটু ক্লান্ত লাগছে। মাহফুজ প্রস্তাব দিল চলেন কফি খাই চাংগা লাগবে। ঠিক হল ধানমন্ডি সাতাশের ওখানে কফি ওয়ার্ল্ডে যাওয়া হবে। একটা রিক্সা নিল এবার, ছুটির দিন বিকাল বেলা ধানমন্ডি সাতাশের দিকে একটু ভীড় হয় তাই অল্প স্বল্প জ্যাম ঠেলে রিক্সা আস্তে আস্তে এগুচ্ছে। এই প্রথমবার মাহফুজ সাবরিনার পাশে রিক্সাতে বসল। সাবরিনার এত কাছে আর কখনো বসা হয় নি। সাবরিনার পারফিউমের গন্ধ যেন একবারে নাকে এসে লাগছে। ঢাকার রিক্সা এমনিতেও একটু ছোট, তাই দুইজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ পাশাপাশি বসলে শরীর না লাগিয়ে বসার উপায় নেই। মাহফুজ টের পেল দুইজনের কোমড় থেকে পাছার অংশটা একদম সেটে আছে পরষ্পরের সাথে। সরেও বসার উপায় নেই কারণ রাস্তায় খোড়াখুড়ির কাজ চলায় রিক্সা চলছে একদম দুলে দুলে। তাই তাল সামলানোর জন্য ভিতরের দিকে সরে বসতে হচ্ছে। প্রতিবার রাস্তার কোন ভাংগা অংশে পড়ে রিক্সা যখন দুলে উঠছে সাবরিনা আর মাহফুজের পাছা রিক্সায় স্পর্শ হচ্ছে। সাবরিনা প্রথম দিকে খেয়াল না করলেও একটু পর খেয়াল করে লজ্জায় লাল হতে থাকল। আড়চোখে তাকিয়ে দেখে মাহফুজ সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। আসলে মাহফুজ সাবরিনার শরীরের স্পর্শ উপভোগ করছিল কিন্তু কোন বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য সামনে তাকানোর ভান করছিল। এরমধ্যে রিক্সা একটা বড় গর্তে একটা চাকা পড়ল, তাই ভাল ভাবে দুলে উঠতেই তাল সামলানোর জন্য সাবরিনা রিক্সার  হুডে একহাত আর অন্যহাত মাহফুজের উরুতে দিতে হল। উরুতে  হাত পড়তেই মাহফুজের মনে হল যেন গরম একটা ভাপ বের হওয়া শুরু হয়েছে ওর কান দিয়ে। সাবরিনার হাত উরুর যথেষ্ট উপরে, আর কয়েক ইঞ্চি সামনে এগুলেই বিপদজনক জায়গা। সাবরিয়ান কি ইচ্ছে করে হাত দিল? ভাল করে খেয়াল করতে দেখল সম্ভবত না, সাবরিনা তখনো রাস্তার খানাখন্দে দুলে উঠা রিক্সায় তাল সামলাতে ব্যস্ত তাই ওর হাত কোথায় ল্যান্ড করেছে সেদিকে খেয়াল নেই। সাবরিনা মাহফুজ কে তাকিয়ে থাকতে দেখে দৃষ্টি অনুসরণ করে বুঝল হাত ভুল জায়গায় রেখেছে, দ্রুত হাত সরিয়ে নিতে নিতে বলল স্যরি। মাহফুজ বলল আরে না, এত স্যরি হবার কিছু নেই, রাস্তার যা অবস্থা। সাবরিনা খালি বলল, তাও স্যরি। মাহফুজ বলল আমার কিন্তু ভাল লাগছিল, চাইলে আবার হাত রেখে তাল সামলাতে পারেন। সাবরিনা এইবার লজ্জায় লাল হয়ে গেল। মাহফুজ ঘাড় ঘুড়িয়ে সাবরিনার দিকে তাকিয়ে বলল লজ্জায় লাল হলে আপনাকে খুব সুন্দর লাগে। সাবরিনা যেন আর লাল হয়ে গেল। ওর এত বছরের জীবনে আর কাউকে এত কনফিডেন্টলি ফ্লার্ট করতে দেখে নি। আর এমনভাবে উরুতে হাত রাখার কথা বলল যেন এটাই স্বাভাবিক। একদিকে লজ্জা পেল আবার অন্যদিকে মাহফুজের এই কনফিডেন্টলি ফ্লার্টিং যেন সাবরিনার মনের গোপন খাতায় মাহফুজের পয়েন্ট আরেকটু বাড়িয়ে দিল। সাবরিনা খালি বলল শয়তান। মাহফুজ উত্তর দিল শয়তানি তো কিছুই করলাম না ম্যাডাম, তাও এই অপবাদ।

কফি হাউজে পৌছে দুইজনে দুইটা কফি আর সাথে দুইটা পেস্ট্রি নিল। পশ দোকান, ভিতরে এসি আর সবাই খুব নিচু স্বরে কথা বলছে, মাঝে মাঝে টুংটাং শব্দ চামচের। ব্যাকগ্রাউন্ডে কোন একটা স্প্যানিশ গান বাজছে। ভিতরের এসির মৃদুমন্দ বাতাসে কোমল আলোর নিচে ওদের আড্ডা আর জমে উঠল। সাবরিনা যে এত কথা বলে মাহফুজ বুঝে উঠতে পারে নি। সিনথিয়া সব সময় বলে এসেছে ওর আপু মুডি, কম কথা বলে। আর অফিসের ইন্টারেকশ্যনেও মনে হয়েছিল কথা বলতে পছন্দ করে সাবরিনা। তাই অবাক হয় মাহফুজ। সাবরিনাও টের পায় স্বাভাবিকের থেকে বেশি কথা বলছে আজ ও। আসলে কর্পোরেট চাকরি, দৈনন্দিন সংসার সব মিলিয়ে হাফিয়ে উঠছিল সাবরিনা। কোথাও মন খুলে কথা বলার উপায় নেই। অফিসে শত্রু বেশি, বন্ধু বলতে ঐ এক সামিরা। ভার্সিটির বন্ধুরা কেউ দেশের বাইরে, কেউ সংসারী আর বাকিরা ব্যস্ত। সাদমান যে ওকে কিছুটা ভয় পায় এটা সাবরিনা টের পায়। আর সাদমান আর ওর পছন্দের জিনিসের আকাশপাতাল ফারাক। এরপর সাদমান যেন সব কিছুই মেনে নেয় সাবরিনার, কোন মতামতে দ্বিমত করে না। সাবরিনার মাঝে মাঝে মনে হয় সাদমানের কাছে ও বুঝি একটা অফিস প্রজেক্ট, যেখানে কোনভাবেই কাস্টমার কে ক্ষেপানো যাবে না। সদা সতর্ক, আবেগ প্রকাশে সাবধানী। সেইখানে মাহফুজের কনফিডেন্ট, দিলখোলা ব্যক্তিত্ব সাবরিনার জন্য খোলা হাওয়া। এতদিনের মনের ভিতর জমানো কথা যেন সব তাই হুড়হুড় করে বের হয়ে আসছে। মাহফুজ সব সময় ভাল স্রোতা। তারপর কথার মাঝে মাঝে নিজের মতামত দিয়ে বুঝিয়ে দেয় মনযোগ দিয়ে শুনছে সে, আবার যেই জায়গায় সাবরিনার সাথে একমত হতে পারে না সেই জায়গায় নিজের ভিন্ন মতামত উপস্থাপন করছে। সাবরিনার ভয়ে একটুও ভীত না। সাবরিনার এখনকার জীবনে কেউ ওর ভয়ে ভীত, কেউ ওকে তুষ্ট করতে ব্যস্ত তাই মাহফুজের এই অনেস্ট অপিনিয়ন গুলো ভাল লাগে, যেখানে মাহফুজ একটু সাবরিনা কে ছোট করছে না বরং কেন মাহফুজ সাবরিনা থেকে ভিন্ন ভাবে ভাবছে সেটা দেখিয়ে দিচ্ছে। মাহফুজের এই রেসপেক্টফুল কিন্তু ডিফারেন্স ইন অপিনিয়ন সাবরিনার মনে মাহফুজের সম্মান আরেকটু বাড়িয়ে দেয়। আসলেই এই লোকটা একটা সারপ্রাইজ প্যাকেট। যে কোন সময় চমকে দিতে পারে।

সাবরিনার সাথে কথা বলতে বলতে মাহফুজের নজর অন্য একটি টেবিলের দিকে যায়। ঠিক দেখছে কিনা বুঝবার জন্য আর ভাল করে তাকিয়ে বুঝে ঠিক দেখছে ও, দেখে মুচকি মুচকি হাসতে থাকে। সাবরিনা মাহফুজের মুচকি হাসি দেখে ভাবে ওর বেশি কথার জন্য বুঝি হাসছে। তাই বলে আমি বেশি কথা বলে ফেলছি তাই না। মাহফুজ বলে আরে না। সাবরিনা বলে তাহলে হাসছেন কেন? মাহফুজ বলে, বলতে পারি তবে রাগ করতে পারবে না কিন্তু। সাবরিনা  বলে আচ্ছা করব না, বলেন হাসছেন কেন। মাহফুজ ঘাড় ঘুরিয়ে ইশারা করে দেখায়। সাবরিনা প্রথমবার বুঝতে পারে না, চোখ উচিয়ে জিজ্ঞেস করে কি। মাহফুজ আস্তে করে বলে কোণার টেবিলটা খেয়াল করেন। সাবরিনা তাকিয়ে দেখে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে বসে আছে, দেখে মনে হয় কলেজ বা ভার্সিটির ফার্স্ট ইয়ার হবে। মেয়েটা একটা টপস আর স্কার্ট পড়া, ছেলেটা নরমাল জিন্স গেঞ্জি। সাবরিনা তাও বুঝে উঠতে পারে না তাই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় মাহফুজের দিকে। মাহফুজ এইবার একটু হতাশ ভংগিতে বলে আপনি বেশি গুড গার্ল। সাবরিনা উত্তর দেয়,  না বললে বুঝব কীভাবে। মাহফুজ এইবার সাবরিনার কানের কাছে এসে বলে ছেলেটার হাত খেয়াল করেন আর মেয়েটার মুখ। সাবরিনা খেয়াল করে দেখে ছেলেটার হাত মেয়েটার স্কার্টের ভিতর, আর স্কার্টের নড়াচড়া দেখে বুঝা যায় ভিতরে হাত নড়ছে, মেয়েটার চোখ আধবোঝা আর একটু পর পর মাছের মত মুখটা একটু খুলছে আর বন্ধ হচ্ছে। সাবরিনা হঠাত বুঝতে পারল কি হচ্ছে। কোণার টেবিলটা একটা থামের আড়ালে পড়ে আছে ফলে অন্য কোন টেবিল  বা কাউন্টার থেকে দেখা যায় না। খালি ওদের টেবিল থেকে আংশিক দেখা যাচ্ছে। আবার আলো আধারির মধ্যে একটা মাদকতাময় স্প্যানিশ সঙ্গীত যেন অপূর্ব সংমিশ্রণ। দেখে যেন মনে হচ্ছে কোন একটা সিনেমার দৃশ্য দেখছে, সামনেই ঘটছে কিন্তু বাস্তব না। সাবরিনা লজ্জায় লাল হয়ে গেল। মাহফুজ বলল আপনি গুড গার্ল নাহলে বলতাম দেখুন এবং মজা নিন, এই বলে নিজের রসিকতায় নিজেই হাসতে থাকে। সাবরিনার চোখ না চাইতেই আবার চলে যায় মেয়েটার চোখ সুখের আবেশে বন্ধ হয়ে আসছে আর ঠোট গুলো একবার খুলছে আরেকবার বন্ধ হচ্ছে। দেখে সাবরিনার সারা শরীরে যেন বিদ্যুৎ খেলে যায়। পেটের কাছে শিরশিরানি, বুকে ধুকপুক। মাহফুজ ওর রিএকশন খেয়াল করছে টের পেয়ে যেন বেড়ে যায় ওর শরীরের প্রতিক্রিয়া। একদিকে গুড গার্লের ইমেজ বাচানোর ইচ্ছা, অন্যদিকে নিষিদ্ধ জিনিস দেখার আকর্ষণ আবার মাহফুজের ওকে ভাল করে লক্ষ্য করা সব মিলিয়ে একটা বিব্রতকর অবস্থা। কিন্তু সাবরিনার তার পরেও ভাল লাগে, সাদমান হয়ত এইসব দেখলে বলত ছি, আজকাল এইসব জায়গা নষ্ট হয়ে গেছে, এরপর আসা যাবে না। সেখানে মাহফুজ এটাকে স্বাভাবিক ভাবে নিয়েছে, আবার নিষিদ্ধ জিনিস দেখার যে আগ্রহ সাবরিনার সেটাও লক্ষ্য করে বুঝার চেষ্টা করছে। এসির ভিতরেও যেন সাবরিনা ঘামতে থাকে। একটু পর ওয়েটার ঐ টেবিলের দিকে এগোলে ছেলেটা হাত বের করে নেয়, মেয়েটা স্কার্ট ঠিক করে। মাহফুজ সাবরিনার দিকে তাকিয়ে বলে আজকের শো শেষ। সাবরিনা একটু বিব্রত হয় তবে এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাওয়ায় আশাহত হয়। সাবরিনার চেহারায় আশা ভংগের চিহ্ন দেখে মাহফুজ হাসতে থাকে। আর লাল হয় সাবরিনা।


কফি শেষে দুইজনে বের হয়ে আসে। বাইরে সন্ধ্যা নামছে, আকাশে শেষ বিকালের লাল আলো। রাস্তার ধারে কারেন্টের লাইনে কাকের সারি। ঘরে ফেরত যাবার আগে যেন বিশ্রাম নিচ্ছে কারেন্টের লাইনে বসে। সাবরিনার মনে হয়ে মাঝখানে এতদিনের কাজের চাপ, ঐ রাতের ঘটনা গোপন রাখার প্রেসার, দৈনন্দিন সংসারের ক্লান্তি সব মিলিয়ে মনের ভিতর যে ভাড় টা ছিল তা যেন এক বিকালের আলাপে হালকা হয়ে গেছে। বাসায় ফিরে যেতে ইচ্ছা করে না সাবরিনার। সাদমান কে ফোন দেয়। সাদমান বন্ধুদের সাথে, পিছনে হাসাহাসির শব্দ আসে। সাদমান ওকে বলে দুই সাপ্তাহ বাবা-মা কে দেখতে যাও না, আজকে ঐখানে চলে যাও। তোমার ভাল লাগবে। সাবরিনা বুঝে ও বাবা-মায়ের ওখানে গেলে রাতে থেকে যাবে তাই সাদমানের আড্ডার আর সুবিধা হবে, রাত বারটা একটার সময় ফিরলেও ঘরে কেউ কিছু বলবে না। অন্যদিন হলে সাদমান কে একটা ঝাড়ি মেরে বলত তুমিও চল শ্বশুড় বাড়ি, কিন্তু আজকে কিছু বলল না। বলল ঠিকাছে। ফোন রাখার পর মাহফুজের দিকে তাকিয়ে এত তাড়াতাড়ি এই সন্ধ্যা শেষ করতে ইচ্ছা করে না সাবরিনার। বলে চলেন আরেকটু হাটি। মাহফুজ বলে ঠিকাছে তবে মনে মনে অবাক হয়। মাহফুজ ভেবেছিল সন্ধ্যা হলে হয়ত আজকের এই অভিযান শেষ হয়ে যাবে। তাই আজকের এই সময়টা আরেকটু লম্বা হওয়ার চান্স পেয়ে খুশি হয়। কফি ওয়ার্ল্ড থেকে বের হয়ে সাতাশের পাশ দিয়ে লালমাটিয়ার গলি গুলোতে ঢুকে পড়ে দুইজন। সাবরিনা আর মাহফুজ কথা বলে চলছে। সন্ধ্যার আলো আর কমে আসতে থাকে। রাস্তায় ল্যাম্পপোস্টের আর পাশের ফ্ল্যাট বাড়ি গুলো থেকে আসা আলোয় রাস্তা আংশিক আলোকিত। এই আলো আধারির রাস্তায় সাবরিনার মনের কথা বলতে সুবিধা হয়। মাহফুজের মত মনযোগী শ্রোতা আর এই আলো আধারির রাস্তা এবং সাথে এতদিনের মনের ভিতর চাপিয়ে রাখা কথার মেলা সব মিলে সাবরিনার মনে হয় মনের সব কথা বলবার বুঝি এইতো সময়। মাহফুজ অবাক হয়ে যায় এই স্ট্রং, ইন্ডিপেন্ডেন্ট মেয়ের ভিতরে এত চাপা ক্ষোভ লুকিয়ে ছিল। যাকে সবাই আড়ালে ডমিনেটিং বিচ ডাকে তার ভিতরের সফট সাইড টা মাহফুজ কে অবাক করে দেয়। সিনথিয়ার সাথে এক জায়গায় যেন এখানে মিল পায় সাবরিনার। এই সমাজে মেয়েদের যতই ইন্ডেপেন্ডিং আর স্মার্ট করে গড়ে তুলা হোক না কেন তাদের মনের গোপন কথা, ভার্নারেবিলিটি প্রকাশ করার জায়গা খুব কম। একটু ভংগুড় মানসিক অবস্থা প্রকাশ করলেই মেয়ে মানুষ চাপ সহ্য করতে পারে না বলে তাদের দমিয়ে দিবে। তাই সাবরিনা,সিনথিয়াদের মত মেয়েরা তাদের ভিতরের চাপা কষ্ট গুলো চেপে রাখে। তাই যখন সহানুভূতিশীল একজন মানুষ পায় তাদের ভার্নারেবিলিটি গুলো আর চাপা রাখতে পারে না।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: অঘটনঘটন পটিয়সী (আপডেট ১২) - by কাদের - 25-04-2023, 11:51 AM



Users browsing this thread: evergreen_830, 5 Guest(s)