Thread Rating:
  • 12 Vote(s) - 2 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance একটি অবাধ্য সম্পর্কের দিনলিপি
#1
একটি অবাধ্য সম্পর্কের দিনলিপি

 অধ্যায় ১

কলেজের শেষ সেমিস্টার।
আয়ন প্রায়ই অরিন্দমের বাড়িতে পড়তে যেত—আসলে পড়ার থেকে ওদের আড্ডাটাই বেশি জমত। রুমে ফ্যান ঘুরত, জানলার ধারে ধুলো জমা আলো, আর তাদের অন্তহীন হাসির গল্প।

কিন্তু আয়নের যাওয়ার আসল কারণটা অন্য কোথাও।
অরুন্ধতী।
অরিন্দমের মা।

তার আপাত সাদামাটা জীবনে অরুন্ধতীর মধ্যে আয়ন একটা নীরব আকর্ষণ খুঁজে পেতো।অরুন্ধতী কে দেখে মনে হতো যেন বহুদিন নিজের জন্য কিছুই ভাবেননি, অথচ ভেতরে অদ্ভুত উষ্ণতা লুকিয়ে রেখেছেন।
এক ধরনের অদৃশ্য উপস্থিতি—যা না দেখলে বোঝা যায় না।

সেদিন দরজায় নক করতেই অরুন্ধতী একটু হেসে বললেন—
“এসো আয়ন, আরিন্দমের আস্তে দেরি হবে। ভেতরে বসো।”

আয়ন ঢুকতেই শাড়ির আঁচলে ভেজা চুলের গন্ধটা নাকে এল—একটা বাড়ির, এক নারীর, এক অদ্ভুত শান্তির গন্ধ।
অরুন্ধতীর চোখে ক্লান্তির তিরচাপা ছাপ, কিন্তু সেই ক্লান্তির মধ্যেই ছিল নরম আলোর মতো কিছু।

চা এনে দিয়ে তিনি বললেন—
“তোমাকে আজকাল খুব চিন্তায় মনে হয়। সব ঠিক আছে?”

আয়ন হালকা হাসল, কিন্তু চোখ সরাতে পারল না।

“চিন্তা… হ্যাঁ, আছে। নিজের কথাই ভাবছি।”

“নিজের কথা?” অরুন্ধতীর গলায় আস্ত প্রশ্ন, নরম কৌতূহল।
“এই বয়সে নিজের কথা ভাবা খুব জরুরি। কিন্তু তোমাকে কেমন যেন ছটফট করতে দেখাচ্ছে।”

আয়ন নীচু গলায় বলল—
“কিছু দৃশ্য… কিছু মানুষ… মাথা থেকে বেরোয় না।”

অরুন্ধতী কাপটা নামিয়ে রাখলেন।
“হুম। কারও কথা বলছ?”

আয়ন তাকিয়ে রইল তার মুখের দিকে।
বলার মতো সাহস জন্মালেও শব্দটা বেরোতে পারল না।
বাতাসে যেন চাপা উত্তাপ জমে উঠল।

অরুন্ধতী নিজের চুলটা কানের পেছনে সরাতেই আয়নের মন কেমন করে উঠল—
যেন একটা সামান্য নড়াচড়া তাকেও অল্প কাঁপিয়ে দিল।

“তুমি কিছু বলবে?”
অরুন্ধতীর কণ্ঠটা অদ্ভুতভাবে নরম হয়ে গেল।
“নাকি শুধু একদৃষ্টে দেখেই যাবে?”

আয়ন ফিসফিস করে বলল—
“দেখা কখনো কখনো কথা বলার থেকেও অনেক বেশি বলে দেয়।”
নিমেষেই অরুন্ধতীর নিশ্বাস আটকে গেল।
তিনি একটু মুখ ফিরিয়ে জানালার দিকে তাকালেন—
বাইরে সন্ধ্যা নামছে, নরম একটা নীলচে আলো ঘর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে।

“এভাবে কথা বলো না আয়ন,”
তার গলায় এক অদ্ভুত কম্পন,
“এটা… ঠিক না।”

আয়ন ধীরে বলল—
“ঠিক-ভুলের সংজ্ঞা তো সবার কাছে এক নয়, কাকিমা।”

“আমি তোমার কাকিমা,”
অরুন্ধতীর গলায় অনুরোধ আর সতর্কতা মিশে গেল।
“এই সীমা তুমি ভুললে চলবে না।”

আয়ন এবার প্রথমবারের মতো তার চোখে সরাসরি তাকাল—
“কিন্তু চোখ তো সীমা মানে না।
ওরা তো যা দেখে… শুধু সেটাই বলে।”

অরুন্ধতীর গলা শুকিয়ে গেল।
এক পলক সেই নীরব আলো আয়নের দিকে ছুঁড়ে দিলেন তিনি—
যেন নিজের অজান্তেই একটা দরজা সামান্য খুলে দিলেন আবার তাড়াতাড়ি বন্ধও করতে চাইলেন।

তিনি উঠে দাঁড়ালেন।
“চা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে… আরেকটু দিই।”

কোনো উত্তর না দিয়ে তিনি রান্নাঘরের দিকে হাঁটলেন কিন্তু যাওয়ার আগে দরজার কাছে এক মুহূর্ত থেমে আয়নের দিকে তাকালেন।অরুন্ধতী আর কিছু বললেন না, কিন্তু তার চোখের ভিতর এমন এক স্রোত বয়ে গেল যাকে ভাষায় বাঁধা যায় না।

ঠিক তখনই অরিন্দমের বাইকের শব্দ বাইরে ভাসল।
অরুন্ধতী যেন বাস্তবে ফিরে এলেন।
এক নিঃশ্বাসে নিজেকে গুছিয়ে বললেন—

“আজকের কথা বাইরে যেনো না যায়।আর তুমি যা ভাবছো কোনোদিন সেটা সম্ভব নয়।”

অরিন্দম দরজায় ঢুকতেই সবকিছু যেন স্বাভাবিক হয়ে গেল।

 অধ্যায় ২

পরদিন আয়ন কলেজে গেলেও ক্লাসে মন বসছিল না।
বই খুলেছে, কিন্তু পাতার ওপরের লেখা মাথায় কিছু ঢুকছে না।
মাঝে মাঝে ফোন বের করে আবার রেখে দিচ্ছে—
নিজেই বুঝতে পারছে, নিজের ভেতরে একটা পরিবর্তন ঘটছে।

অরুন্ধতীর চোখ,
সেদিনের সেই কথার স্বর,
তার নীরব দৃষ্টি—
সবকিছু মাথার মধ্যে অবিরত ঘুরছিল।

ওদিকে, অরুন্ধতীও যেন অস্বাভাবিক নীরব হয়ে পড়েছিলেন।কিন্তু স্বাভাবিক ছিল না তার নিজের মন।

—“চোখ তো সীমা মানে না।”

এই লাইনটা তাকে অস্বস্তি দিচ্ছিল,
আবার এক অদ্ভুত টানও তৈরি করছিল।
কেন যে ছেলেটার এই কথায় তার মন কেঁপে উঠছে— তিনি নিজেই বুঝতে পারছিলেন না।
অরিন্দম লক্ষ্য করেছিল—
মা হঠাৎ করে খুব চুপচাপ হয়ে গেছে।
কিন্তু সে ভাবল হয়তো বয়স, কাজের চাপ, বা শরীর ভালো নেই—
এইটুকু।

---


সন্ধ্যায় আয়নের ফোনে অরিন্দম কল করল।

“কাল আসবি তো? মা বলছিল একটা ফর্ম নিয়ে তোর সঙ্গে কথা বলবে।”

আয়ন বুঝল অরিন্দম জানে না,
কিন্তু অরুন্ধতীর মাথায় আয়নের কথাই ঘুরছে।

“আচ্ছা, যাবো,”
সে বলল,
কিন্তু গলার ভিতরের ধুকপুকানি লুকিয়ে রাখল।

ফোন কেটে যেতেই মনে হচ্ছিল
সে যেন একটা নিষিদ্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে—
যা খোলা উচিত নয়,
তবু হাত এগিয়ে যাচ্ছে।


---

পরের দিন — 

অরিন্দম বেরিয়ে গেছে টিউশনে।
বাড়ির দরজা খুলতেই অরুন্ধতী একটু থমকে গেলেন।
আয়নও হাতের ব্যাগটা শক্ত করে ধরল।

“এসো,”
অরুন্ধতী বললেন,
কিন্তু গলায় সেই আগের দিনের মতো দৃঢ়তা ছিল না।
নরম, সাবধান, অস্থির একটা সুর।

আয়ন ঢুকতেই টের পেল—
আজ বাড়িটা অদ্ভুতভাবে নীরব।
টিভি বন্ধ, রান্নাঘর পরিষ্কার, বসার ঘরেও কোনো আওয়াজ নেই।

অরুন্ধতী জিজ্ঞেস করলেন—
“চা খাবে?”

“হ্যাঁ,” আয়ন বলল,
কিন্তু তার চোখ অরুন্ধতীর দিকে আটকে ছিল।

অরুন্ধতী চা বানাতে গিয়ে হাত কাপে সামান্য কেঁপে গেল।
তিনি বিরক্ত হয়ে বললেন—
“তুমি প্লিজ আমাকে এভাবে দেখবে না!
একবারেই অস্বস্তি লাগে।”

আয়ন খুব শান্তভাবে বলল—
“আপনাকে দেখছি বলে অস্বস্তি লাগছে,
নাকি… কারণটা অন্য কিছু?”

অরুন্ধতী তৎক্ষণাৎ উত্তর দিলেন না।
চুলটা কানের পেছনে সরাতে সরাতে বললেন—

“আয়ন, তুমি এখন যেটা ভাবছ,
এসব কোথাও গিয়ে টেকে না।
জীবন এত সহজ না।”

“কিন্তু অনুভূতি তো এমনিই হয়,”
আয়ন বলল,
“ওটা তো কেউ পরিকল্পনা করে না।”

অরুন্ধতী দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
“তোমার বয়স কম।
তোমার মনে যা হচ্ছে সেটা খুব স্বাভাবিক।
কিন্তু আমার পক্ষে…
এই অবস্থায়… এটা ঠিক নয়।”

আয়ন একটু এগিয়ে এসে বসল।
স্পর্শ করেনি,
কিন্তু দূরত্বটা আগের দিনের তুলনায় অনেক কম।

“আপনি কি সত্যিই শুধু ‘ঠিক নয়’ কারণেই নিজেকে থামাচ্ছেন?”
আয়ন জিজ্ঞেস করল।

অরুন্ধতী চোখ তুলে তাকালেন—
তার চোখে ক্লান্তি, লড়াই,
আর সেই লড়াইয়ের নীচে একটা নরম পরাজয়।

তিনি ধীরে বললেন—

“যা ভাবছ, তা বলার মতো বোকা আমি নই…
আর যা সত্যি… তা অস্বীকার করার মতো শক্তিও নেই।”

আয়নের বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠল।
সেই স্বীকারোক্তি ছিল অস্পষ্ট, কিন্তু স্পষ্টের থেকেও শক্তিশালী।

ঠিক তখনই দরজার বাইরে অরিন্দমের গলার আওয়াজ।

অরুন্ধতী ফিসফিস করে বললেন—
“আজকের মতো এখানেই শেষ।
তুমি কিছু ভুল করবে না।
আমাদের কেউই না।”

 
অধ্যায় ৩ —

পরদিন বিকেলটা অরুন্ধতীর কাছে যেন একটু অস্বাভাবিক লাগছিল।
দিনভর বাড়ির কাজ, কলেজের অনলাইন নোট তৈরি, আর মাঝে মাঝে নিজের অজান্তেই আয়নের কথাগুলো মনে পড়ে যাওয়া—
সব মিলিয়ে একটা অদেখা চাপ তার ভেতরে জমে ছিল।



বাজার থেকে বাড়ি ফেরার সময় রাস্তায় হঠাৎ দেখল আয়ন ফুটপাথের ধারে দাঁড়িয়ে কারও সঙ্গে ফোনে কথা বলছে।
অরুন্ধতী পাশ কাটিয়ে যেতে চাইছিল,
কিন্তু আয়ন তাকে দেখে ফোন কেটে এগিয়ে এল।

“আন্টি, আপনি ঠিক আছেন?”
মুখে খুব শান্ত স্বর,
তবু চোখে খাঁটি উদ্বেগ।

অরুন্ধতী এক মুহূর্ত থমকে গেল।
কেউ কি সত্যিই লক্ষ্য করছে সে ক্লান্ত কিনা?
অথবা তার মন ভাল নেই কিনা?

সে একটু হাসল—
“হুঁ… ভালো আছি। শুধু একটু কাজের চাপ।”

আয়ন শান্তভাবে মাথা নাড়ল।
কথা না বলেও যেন বুঝিয়ে দিল—
সে বিশ্বাস করছে না।

দু’জনে পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে গলির ভেতরে ঢুকল।
হালকা বাতাস বইছে,
রোদের তাপ কমে রাতের গন্ধ আসছে।

আয়ন হঠাৎ বলল—
“গতকাল আপনাকে একটু অন্যরকম লাগছিল।
কিছু চিন্তা?”

প্রশ্নটা খুব ব্যক্তিগত নয়,
তবু অরুন্ধতীর মনে খোঁচা লাগল।

“না… তেমন কিছু না,”
সে শান্ত গলায় বলল,
কিন্তু নিজের মধ্যেই বুঝল—
এই কথাটা পুরো সত্যি নয়।



বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে অরুন্ধতী ব্যাগ খুলে চাবি খুঁজছিল।
সেই সময় আয়ন এগিয়ে এসে একেবারে সহজভাবে বলল—
“ধরুন, এক হাতে ব্যাগ নিয়ে চাবি বের করা ঝামেলা। দিন, আমি ধরে দিচ্ছি।”

এই নিত্যদিনের সাহায্যেই অরুন্ধতীর বুকের ভেতরে কিছু যেন গলে গেল।
এতদিন কেউ এমন করে খেয়াল করেনি যে ব্যাগটা তার জন্য ভারী হতে পারে।

চাবি খুলে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে সে অনুভব করল—
একটা বাড়তি নরম জায়গা তৈরি হচ্ছে তার মনে,
যেখানে আয়নের উপস্থিতি অদ্ভুতভাবে আরাম দেয়।

“তুমি যাও, আয়ন। সময় হবে,”
অরুন্ধতী বলল।

আয়ন সামান্য থেমে বলল—
“আন্টি… মাঝে মাঝে মনে হয় আপনি খুব একা।
হয়তো ভুল, কিন্তু… মনে হয়।”

এই বাক্যটাই অরুন্ধতীর ভেতরের কোনও পুরোনো তালা নরম করে দিল।
কেউ এভাবে তাকে দেখেছে—
এটা ভাবতেই কেমন যেন শিরদাঁড়া বেয়ে একটা শীতল স্রোত নেমে গেল।

সে খুব মৃদু স্বরে বলল—
“সবাই তো সব বোঝে না, আয়ন।”

তারপর বাড়ির দরজা বন্ধ করে দিল।



ভেতরে ঢুকেই অরুন্ধতী টের পেল,
আজ সে নিজেকে একটু বেশি প্রকাশ করেছে।
কেন জানি না—
আয়নের সামনে নিজের ভেতরের ক্লান্তি লুকোতে পারল না।

দরজার পেছনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ স্থির রইল।
মনে একটাই প্রশ্ন—
আয়ন কি সত্যিই লক্ষ্য করে, নাকি সে-ই বেশি ভাবছে?

নিজেকে ধমক লাগাতে গিয়েও পারল না।
কারণ একটা কথা হঠাৎ সত্য হয়ে উঠছিল—
যে কথাটা সে কাউকে কখনও বলতে পারেনি—
কেউ তার দিকে এমনভাবে তাকায় না।

একটা সাধারণ, মনোযোগী দৃষ্টি—
যেটা তার ভিতরের অব্যক্ত কথাগুলো খুঁজে পায়—
ওটা তার জীবনে অনেকদিন ছিল না।



আয়ন বাড়ি ফেরার পথে কয়েকবার মোবাইল বের করে আবার রেখে দিল।
লিখতে চাইছে,
তবু মনে হচ্ছে—
এটা কি বেশি হয়ে যাবে?

কিন্তু শেষমেষ এক ছোট্ট মেসেজ পাঠিয়ে দিল—

“আপনার মুখটা খুব ক্লান্ত লাগছিল আজ।
নিজের খেয়াল রাখবেন।”

পাঠিয়েই মাথার মধ্যে একটা তীক্ষ্ণ অস্বস্তি—
এইভাবে কথা বলা কি ঠিক?

তবু কোথাও স্বস্তিও ছিল।
কারণ সে জানে,
অরুন্ধতীর নীরবতা তাকে টেনে নিয়ে যায় অরুন্ধতীর কাছে।




মেসেজটা দেখে অরুন্ধতীর মনে অদ্ভুত এক অনুভূতি উঠল—
কেউ তার ক্লান্ত মুখ লক্ষ্য করেছে।
কেউ সত্যিই বলেছে—নিজের খেয়াল রাখুন।

অনেকক্ষণ ফোনটা হাতে নিয়ে বসে থাকার পর
সে একটা খুব ছোট উত্তর দিল—

“হুম। ধন্যবাদ, আয়ন।”

অতিরিক্ত কিছু বলল না।
তবু কথাটা তার বুকের ভেতরে অদ্ভুত উষ্ণতা ছড়িয়ে দিল।

কোনো রোম্যান্স নয় এখনো,
কোনো স্বীকারোক্তি নয়,
কোনো নিষিদ্ধ উত্তেজনাও নয়—

শুধু দু’জনার
না-বলা কথার মাঝখানে জন্ম নেওয়া
একটা নীরব, বাস্তব, মানবিক সংযোগ।

যেটা বিপজ্জনক—
কারণ সত্যিকারের সম্পর্ক সবসময়ই একটু বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।


---

অধ্যায় ৪ 

আয়ন সেদিন বাড়ি থেকে বেরোতেই আকাশ ঝিমঝিম করে নামল নিচে।
শহরের আলো গুলিয়ে উঠছে বৃষ্টির ফোঁটায়—সবকিছু যেন একটু অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, ঠিক যেমন ক’দিন ধরে তার নিজের ভিতরটাও।

সে হেঁটে হেঁটে অরিন্দমদের বাড়ির গলিতে ঢোকে।
মোবাইলে অরিন্দম মেসেজ করেছে—
“আজ বাড়ি ফিরতে দেরি হবে, রাতে প্র্যাকটিস আছে।”

কিন্তু আয়নের মন জানে, সে আজ এখানে আসছে অন্য কারণে।

দরজা খুলে দাঁড়িয়ে থাকা অরুন্ধতীকে দেখে তার হৃদপিণ্ড আবার সেই অদ্ভুত ছন্দে কেঁপে ওঠে—
দোষের, টানার, আটকাবার, আবার কাছে টানার—এক জটিল আবেগের ছন্দ।

অরুন্ধতী এক মুহূর্ত তাকিয়ে থাকে।
তার চোখে সেই পরিচিত ক্লান্তির ছায়া, কিন্তু আজ তার মধ্যে আরেক রকম এক খোলা ভঙ্গি আছে—যেন নিজের ভেতরের একটা দরজা চুপচাপ খুলে রেখে দিয়েছে।

“এসো আয়ন… ভেতরে এসো,”
তার কণ্ঠটা আশ্চর্যভাবে নরম।

আয়নের কাঁধ ভিজে আছে, চুল থেকে বৃষ্টি পড়ছে মেঝেতে।
অরুন্ধতী তোয়ালে এগিয়ে দেয়।

“শরীর খারাপ হয়ে যাবে।”
এটা সাধারণ কথা, কিন্তু তাদের মাঝে আজকাল সাধারণ শব্দও অদ্ভুতভাবে ভারি হয়ে থাকে।

আয়ন তোয়ালেটা নিয়ে চুপ করে তার দিকে তাকিয়ে থাকে।
অরুন্ধতী চোখ সরিয়ে নেয়, যেন বুঝতে পেরেও না-পাওয়ার ভান করছে।


---



দু’জনে সোফায় বসে চা খেতে খেতে হালকা কথা বলে, কিন্তু মাঝেমাঝে এমন নীরবতা তৈরি হয়, যা সামান্য শব্দেও ভেঙে যায়।

আয়ন প্রশ্ন করে—
“আন্টি… মানে… আপনি আজ খুব ক্লান্ত লাগছে।”

অরুন্ধতী হালকা হাসে।
“বয়স তো হয়েছে অয়ন… তুমি তো ছোট ছেলে, বোঝো না এসব।”


আয়ন মৃদু আহত গলায় বলে—
“আপনি আমাকে এভাবে বললে… ভাল লাগে না।”

অরুন্ধতী কাপ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে জানালার বাইরে তাকায়।
তার গলাটা একটু ভারী শোনায়—
“তোমার ভাল কি লাগে আর কি লাগে না… সেটা নিয়ে ভাবার জায়গায় নেই আমি।”

আয়ন ধীর গলায় বলে—
“কিন্তু আপনি ভাবেন।”

এই এক বাক্যেই অরুন্ধতীর শ্বাস আটকে যায়।
কিন্তু সে উঠে দাঁড়ায়।

— “তুমি যাও আজ। দেরি হয়ে গেছে।”
তার কণ্ঠ কাঁপে, কিন্তু দৃঢ়।


আয়ন ধীরে ধীরে দরজার দিকে হাঁটে।
অরুন্ধতী পেছন থেকে তাকিয়ে থাকে—
তার মুখে এমন একটা অপরাধবোধ-ভরা অনুরাগ, যা সে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারে না।
[+] 11 users Like NILEEM's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#2
Darun
[+] 1 user Likes Saj890's post
Like Reply
#3
Darunnnn
Like Reply
#4
গল্প টা সুন্দর এগোচ্ছে.. পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়..
চরিত্র গুলোর বয়স জানালে ভালো লাগতো
Like Reply
#5
অসাধারণ পরের পর্বের অপেক্ষায়
Like Reply
#6
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় দাদা
Like Reply
#7
Asadharon...... Waiting for next update
Like Reply
#8
অধ্যায়
 
 
 
অরুন্ধতী সেদিন রাত অনেকক্ষণ ঘুমোতে পারেনি।
ঘরের বাতি নিভে আছে, জানালার পর্দায় চাঁদের আলো পড়ছে
কিন্তু তাঁর মাথার ভেতর যেন আলো-আঁধারের স্রোত বয়ে চলেছে। তিনি বুঝতে পারছেন, ছেলেটা কোনো হঠকারিতা করছে না;
ওর চোখে যে স্থিরতা ছিল, সেটা রোমান্টিক মোহ নয় বরং এমন এক গভীরতা, যা অনেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষও ধারণ করতে পারে না।
কিন্তু সেই গভীরতার মুখোমুখি হওয়ার সাহস
অরুন্ধতীর নিজের মধ্যেই কি আছে?
 
---
 আয়ন রাত তিনটের আগে ঘুমোতে পারেনি।
তার ঘরে ছোট্ট টেবিলল্যাম্প জ্বলছে, আর তার নোটবুকে বড় অদ্ভুত সব লাইন
 
কিছু সম্পর্ক জন্মায় নাতৈরি হয়।
কিছু দূরত্ব ভাঙা উচিত নয়তবু ভাঙে।
 
সে জানে সে বিপদের দিকে হাঁটছে।
কিন্তু অরুন্ধতীর মুখের সেই অসহায়, নরম ছায়া তাকে টানে
যেমন দীর্ঘদিন শুকনো মাটিকে টানে প্রথম বৃষ্টির গন্ধ।
 
পরের দিন কলেজে গিয়ে অয়ন স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করল।
অরিন্দম তার বন্ধুর চোখের নিচের কালি দেখে বলল
কাল রাতে গেম খেলতে গিয়ে জেগে ছিলি?”
 
অয়ন হেসে মাথা নাড়ল।
সে জানে, তার এই অস্থির রাতের সঙ্গে
গেমের কোনো সম্পর্ক নেই।
 
 
---
 
 
দুপুরে কলেজ থেকে ফেরা পথে
অরুন্ধতী নিজের ছায়া দেখে চমকে উঠলেন।
 
আজ কতবার তিনি ফোন তুলে আবার নামিয়ে রেখেছেন!
কাকে ফোন করতে চেয়েছিলেন?
আয়নকে?
কেন?
কি বলতেন?
 
তিনি ব্যাগ নামাতে গিয়ে হঠাৎ থেমে যান।
সাইকেলের ঘণ্টার শব্দ দূর থেকে ভেসে আসে।
তাঁর বুকের ভেতর হালকা কাঁপন ওঠে।
 
কয়েক সেকেন্ড পরেই দেখা গেল
আয়ন।
তার দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে বলল
ভেবেছিলামআজ দেখা পাব না।
 
অরুন্ধতীর হাতের ব্যাগটা কেঁপে ওঠে।
এভাবেইঅন্য কারও বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ঠিক হচ্ছে না, অয়ন।
 
অয়ন মাথা নিচু করে বলল
জানি। তবুওচলে যেতে পারিনি।
 
অরুন্ধতী চোখ বন্ধ করে ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলেন।
বৃষ্টির আগের ভারী গন্ধ চারদিকে।
 
 
---
 
 
দুজনে পাশাপাশি হাঁটতে লাগল।
গলির শেষ মাথায় পৌঁছে অরুন্ধতী থেমে গেলেন।
আয়নতুমি কি ভাবছো জানি না, কিন্তু—”
 
আয়ন শান্ত স্বরে কেটে বলল
আপনার কথা ভাবা ভুল?”
 
অরুন্ধতী চুপ করে তার মুখের দিকে তাকালেন।
এই নীরবতাই উত্তর।
 
আয়ন ছোট্ট গলা পরিষ্কার করে বলল
আপনি জানেন আমি আপনাকে অসম্মান করছি না, তাই না?”
 
অরুন্ধতী আরেকটু মাথা নামালেন।
অসম্মান নয়
কিন্তু তুমি এমন এক পথে হাঁটছো,
যেখানেআমিও জানি না কোথায় থামা উচিত।
 
আয়ন শ্বাস বন্ধ রেখে তাকিয়ে থাকে তাঁর দিকে।
তাহলে কি থামবেন?”
 
এই প্রশ্নে অরুন্ধতী কেমন যেন পিছিয়ে আসেন।
সময়দরকার। একটু সময় দাও আমাকে।
 
আয়নের মুখটা নরম হয়ে আসে।
ঠিক আছে। আমি অপেক্ষা করব।
 
তার কণ্ঠে অদ্ভুত এক দৃঢ়তা
না চাপ, না বেপরোয়া;
মনে হয় যেন সে জানে অপেক্ষা করা মানেই
সব কিছু শেষ হয়ে যাওয়া নয়।
 
 
---
অধ্যায় 
 
একটা সপ্তাহ কেটে যায়।
আয়ন আসে না।
মেসেজ করে না।
ফোনও না।
 
অরুন্ধতী ভাবে
ঠিকই করছে। এটাই ভালো।
 
কিন্তু প্রতিদিন বিকেলে
কারও সাইকেলের ঘণ্টা শুনলেই
তার বুকের ভেতর অদ্ভুত টান লাগে।
 
একদিন তার মোবাইলে ছোট একটা মেসেজ আসে
 
আপনাকে বিরক্ত করতে চাইনি। শুধু একটা কথা
ভালো আছেন তো?’ 
 
মেসেজটা পড়ে অরুন্ধতী কিছুক্ষণ নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকেন।
এই ছেলেটা তাকে একবারও চাপ দেয়নি
বরং দূরে থেকে শুধু খোঁজ নিয়েছে।
 
দুফোঁটা অদ্ভুত ভেজাভাব চোখে উঠে আসে।
বৃষ্টি নয়, দুঃখ নয়
একটা হালকা অপরাধবোধ আর একটা নাম না জানা অনুভূতির মিশ্রণ।
 
 
---
 
 
সন্ধ্যায় অরুন্ধতী নিজেই মেসেজ পাঠালেন
 
আয়ন, কাল একটু দেখা করবে?”
 
বেশ কিছুক্ষণ পর রিপ্লাই আসে
 
আপনি ডাকলেআমি না গিয়ে থাকতে পারি?”
 
মেসেজটার শেষে কোনো ইমোজি নেই।
তবু তার ভেতরে যে আবেগ আছে
অরুন্ধতী খুব সহজেই পড়ে ফেলেন।
 
তিনি মোবাইলটা রেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।
ফিরে যাওয়ার সব দরজা তিনি নিজেই বন্ধ করলেন
তবে আয়ন কোনো দরজা ভাঙার চেষ্টা করেনি।
শুধু অপেক্ষা করেছে।
 
আর সেই অপেক্ষাই
অরুন্ধতীর ভিতরে জমে থাকা দেয়ালগুলোকে ধীরে ধীরে নরম করে দিয়েছে।
 
রাত নেমে এলো।
চাঁদের আলো জানালার ফাঁক দিয়ে ঘরে ঢুকছে।
অরুন্ধতী অন্ধকারে বিছানায় বসে অনুভব করলেন
 
আগামীকাল থেকে তাদের সম্পর্ক আর আগের জায়গায় থাকবে না।
কিন্তু সে কোন দিকে যাবে
তিনি জানেন না।
 
তবু মনে হলো
একটি অদৃশ্য নদী
ধীরে ধীরে তাদের দুজনকে
একই স্রোতের দিকে টেনে নিচ্ছে।
 
[+] 7 users Like NILEEM's post
Like Reply
#9
বেশ সুন্দর এগোচ্ছে .. পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়
Like Reply
#10
ভালো লাগতেছে পড়ে। দ্রুত আপডেট চাই
Like Reply
#11
Update boddo choto..... But sotti lekhar dhoron khubi alada.... Really appreciate it...
Like Reply
#12
আপডেট এর অপেক্ষায় আছি দাদা
Like Reply
#13
অধ্যায়  
 
সকালটা অরুন্ধতীর ঘরে এক অদ্ভুত নীরবতায় শুরু হয়েছিল। জানালার পাতায় সূর্যর আলো পড়ে একটা উজ্জ্বল দাগ বানাচ্ছিল দেওয়ালে, কিন্তু অরুন্ধতীর মনের ভেতর আলো ঢুকছিল না। আগের রাতের কথোপকথন তার মাথায় ফিরে ফিরে বাজছিল
এভাবে কতদিন চলবে?”
আয়নের গলা ছিল নিচু, কিন্তু স্থির।
অরুন্ধতী এড়িয়ে গিয়েছিল, বলেছিল,
সময় এলেই দেখা যাবে।
 
সময় কিন্তু সহজে দেখা দেয় না, বরং চাপ বাড়ায়।
 
অরিন্দম সেদিন ফিরেছিল টিউশন থেকে। গেট খুলতেই তার ব্যাগের চেন খোলা, মুখে চাপা ক্লান্তি আর কপালের ভাঁজ দেখে অরুন্ধতীর বুক ধক করে উঠেছিল।
কী হয়েছে রে?”
কিছু না মাএকটু মাথা ধরেছে। অনেক পড়া ছিল।
 
অরুন্ধতী তাকে জড়িয়ে ধরতে গিয়েও হাত নামিয়ে ফেলল। তার নিজের মাঝের একটা অপরাধবোধ তাকে ছায়ার মতো অনুসরণ করছিল।
 
আয়ন সেদিন সন্ধ্যায় এল অরিন্দমকে নোটস দিতে। অরুন্ধতী স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলো, আয়নও। কিন্তু চোখের মধ্যে সেই অগোছালো আকর্ষণের রেখা লুকিয়ে রাখা সম্ভব হল না।
অরিন্দম অবশ্য কিছু বুঝতে পারল নাতার সমস্ত মনোযোগ আসন্ন পরীক্ষার দুশ্চিন্তায়।
 
নিচতলার ছোট বসার ঘরে অরিন্দম বই খুলে বসতেই আয়ন ফিসফিস করে বলল,
আজ রাতেতোমার সঙ্গে কথা বলতে চাই। জরুরি।
 
অরুন্ধতীর গলা শুকিয়ে গেল।
আজ নয়, আয়নঅরিন্দম আছে
 
আয়ন মাথা নাড়ল, কিন্তু চোখে চাপা হতাশা লুকোনো গেল না।
 
 
---
 
 
অরিন্দম ঘুমোতে যাওয়ার পরও বাড়িতে এক ধরণের তীক্ষ্ণ নীরবতা লাগছিল। অরুন্ধতী বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল, হাতে কুসুম গরম চা, কিন্তু সেটা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে।
 
নিচে রাস্তার ওপাশে দাঁড়িয়ে ছিল আয়ন। সে ফোন করেনি, ডাকেনিশুধু উপস্থিত ছিল।
অরুন্ধতীর বুকের ভেতর একটা খচখচে অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ল।
 
অবশেষে সে নিচে নামল।
 
আয়ন, এভাবে এসো না। ঠিক না,” অরুন্ধতী বলল।
তোমার কাছে আসা ভুল হলেতাহলে আমি আর ঠিকের মধ্যে বাঁচছি না।
আয়নের গলার কম্পনটা অরুন্ধতীর ভিতরটাকে কাঁপিয়ে দিল।
 
শুনো, আমরা দুজনেই জানি বাস্তবটা অন্যরকম,” অরুন্ধতী বলল।
জানি,” আয়ন ধীরে বলল, “কিন্তু তোমাকে ছাড়া বাস্তবটা ফাঁকা লাগে।
 
অরুন্ধতীর চোখে জল এসে গেল।
তুমি অরিন্দমের বন্ধুআমি তার মা। আমাদের সম্পর্কের কোথাও আলো নেই।
 
আয়ন এগিয়ে এল এক পাশুধু এক পা।
সে ছুঁতে গেল না, শুধু দাঁড়িয়ে রইল।
আলো নেইকিন্তু তুমি আছো।
 
অরুন্ধতীর গলা বন্ধ হয়ে গেল।
সে চোখ তুলে তাকালওই তরুণ ছেলেটার চোখে সে শুধু আকর্ষণ দেখল না, দেখল এক ধরনের অনমনীয় বিশ্বাস, যা তাকে আরও দুর্বল করে দিল।
 
বাতাস ভারী ছিল, কিন্তু শব্দহীন।
তাদের মধ্যে দূরত্ব ছিল এক হাত, কিন্তু তাতে হাজারো অজানা টান।
 
অরুন্ধতী শেষ পর্যন্ত বলল,
আয়নআজ না। আজ পারব না। আমাকে একটু সময় দাও।
 
আয়ন তাকিয়ে রইল স্থির চোখে, তারপর বলল
সময় যত লাগে লাগুকআমি আছি।
 
অরুন্ধতী বাড়ির সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে উঠতে বুঝল
ওদের সম্পর্কটা আর শুধু আকর্ষণ নয়।
এটা একটা জট, যেটা প্রতিদিন খুলছে, আবার প্রতিদিন নতুন করে জট বাঁধছে।
 

 
[+] 2 users Like NILEEM's post
Like Reply
#14
অধ্যায়
 
 
অরিন্দম কলেজের গ্রুপ স্টাডির নাম করে সেদিন রাতে ফিরবেনা বলে জানিয়েছিল।বাড়িটা অদ্ভুত নিরিবিলি হয়ে উঠেছিলযেন পুরো বাড়ি নিঃশ্বাস আটকে আছে। অরুন্ধতী ছাদের রেলিংয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। শীতের বাতাসে তার চুল এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু মন আরও এলোমেলো।ভাবনার ভেতর দিয়ে হঠাৎ নিচের গেট খুলে যাওয়ার শব্দ এল।
 
আয়ন।
 
ব্যাকপ্যাক নামিয়ে সে উপরে উঠতে লাগল, ধীর কিন্তু দৃঢ় পা ফেলে।অরুন্ধতী দরজা আটকে রাখতে পারত, ফোন করে থামাতে পারতকিন্তু সে কিছুই করল না।শুধু অপেক্ষা করল।আয়ন এসে দাঁড়াল তার সামনে।
 দুজনের চোখের মধ্যে একটা নীহারিকার মতো নরম আলো ছিলভয়, টান, অপরাধবোধ, আকর্ষণসব একাকার।
  তুমি ডাকলে না,” আয়ন বলল, খুব আস্তে।
 —“তবু তো এসেছ।অরুন্ধতী ছোট করে জবাব দিলো।
 কারণ আজ তোমার চেহারাটা পুরো দিন মাথা থেকে যাচ্ছিল না।
 অরুন্ধতী মুখ ফিরিয়ে আকাশের দিকে তাকাল।তার চোখে চাপা জল জমে ছিল, আর তার গলায় একধরনের বিকল নরমতা।
 আয়নআমরা ভুল পথে হাঁটছি,” সে বলল।
 আয়ন তার দিকে এক পা এগোল।
 আজ ভুল-ঠিক বিচার করতে চাই না। শুধু তোমার কথা শুনতে চাইতোমাকে অনুভব করতে চাই।
 অরুন্ধতী চোখ বন্ধ করল।যেন বহুদিনের ক্লান্তি তার বুক থেকে ঢাল ঢাল করে নেমে আসছে।
 সে আর পিছিয়ে গেল না।
 
 ঘরটা তখন প্রায় সম্পূর্ণ অন্ধকার,শুধু জানালার ফাঁক দিয়ে ঢুকে থাকা চাঁদের ধুলোর মতো আলো
 একটা নরম, স্বপ্নের পর্দা।অরুন্ধতী দাঁড়িয়ে ছিল পর্দার পাশে,তার ছায়াটা যেন পুরো ঘরের উপর এক অদ্ভুত মায়ার রেখা টানছিল।আয়ন দরজা বন্ধ করে দিল চুপচাপ।
 ক্লিক শব্দটা এতই ক্ষীণ, তবু তাদের দুজনের মধ্যে যেন এক অদৃশ্য সীমানা ভেঙে গেল সেই মুহূর্তেই
 বাইরের পৃথিবী হারিয়ে গেল,রইল শুধু দুজনের নিঃশ্বাসের ডাক।
আয়ন ধীরে ধীরে এগিয়ে এলে অরুন্ধতীর কাঁধে চাঁদের আলোটা নাচল,যেন কোনো অজানা নদী নিজের পথ পরিবর্তন করছে।অরুন্ধতী পিছিয়ে গেল নাবরং একটু ঝুঁকে সামনে এলো,তার চোখে এমন এক নীরব অস্বীকারহীন আহ্বান,
 যা কথার থেকেও অনেক বেশি প্রবল।আয়নের আঙুল তার বাহু ছুঁয়ে গেলে অরুন্ধতীর শরীরটা কেঁপে উঠল,
 ঠিক যেন ঘুমন্ত নদীর তলদেশকে হঠাৎ কেউ স্পর্শ করে জাগিয়ে তুলেছে।
 না কোনো শব্দ,না কোনো উচ্চারণকেবল দুএকের নিঃশ্বাস মিলেমিশে ঘরটাকে ভরিয়ে তুলতে লাগল,যেন অন্ধকারই হঠাৎ উষ্ণ হয়ে উঠেছে।অরুন্ধতী অয়নের গলা জড়িয়ে ধরল,ধীরে, কিন্তু এমন এক তীব্রতা,যেন সে বহুদিন ধরে আটকে রাখা আকুলতাকে এখন আর থামাতে পারছে না।তার আঙুলের চাপ বেড়ে উঠছিল ধীরে ধীরেএকটি অনুরোধ নয়,বরং একটি গভীর অনুমতির মতো।আয়ন তার মুখ হারিয়ে ফেলল অরুন্ধতীর চুলের মাঝের অন্ধকারেসেখানে ছিল রজনীর গন্ধ, অতীতের দুঃখ,এবং এমন এক নিঃশব্দ তৃষ্ণা যা ব্যাখ্যার বাইরে।অরুন্ধতী পিছনে সরে শয্যার দিকে টেনে নিল তাকে।তার চলন ধীরতর হলেও প্রতিটি ধাপে এমন এক আবেগের ভার ছিল যে আয়নের ভিতর গভীর কোথাও কিছু ছিঁড়ে গিয়ে আবার জোড়া লাগছিল।শয্যার কিনারায় বসতেই পর্দার ফাঁক দিয়ে ঢুকে আসা চাঁদের আলো
 দুজনের শরীরকে একসাথে ছুঁয়ে ফেরেএকটি স্পষ্ট ইঙ্গিত যে রাতটি আর দুজনের আলাদা হবে না।আয়ন ঝুঁকে পড়তেই অরুন্ধতী নিজেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত করে দিল,যেন সে শরীর নয়— একটি সম্পূর্ণ আত্মা সমর্পণ করছে।
 শয্যার নরম গদি দুজনের ওজন সামলাতে সামান্য ডেবে গেল— যেন তাদের কাছে এসে গোপন কথা ফিসফিস করে বলে উঠল,
  রাতকে থামিও না।
 
[+] 2 users Like NILEEM's post
Like Reply
#15
অরুন্ধতী শুয়ে ছিল আধেক আলোআধেক অন্ধকারে,চুলের ছায়া ছড়িয়ে পড়েছিল বালিশের ওপরে  মেঘে ঢাকা চাঁদের মতো তার চোখে সেই পুরোনো নিষিদ্ধ ভয় নেই বরং এক শান্তদৃঢ় আত্মসমর্পণের আভা আয়ন ধীরে ধীরে শয্যার কেন্দ্রে ঝুঁকে এলে অরুন্ধতীর বুকের ওঠানামায় ছন্দ তৈরি হল একটি গভীর ঢেউ,যা অয়নকে টেনে নেয় অবশ্যম্ভাবী কোনো   স্রোতের দিকে তার মুখ অরুন্ধতীর হাতের বাঁকের নিচে ঢুকে গেলঠিক যেমন ভেজা পাখি ডানার আড়ালে লুকায়। এরপর অরুন্ধতির বুকে আলো ছড়ানো দুটি প্রদীপের শিখায় সে মুখ রেখে আদরের উষ্ণতা ছড়িয়ে দিল।
 ধীরে ধীরে তাদের মাঝে বাতাসটাও যেন উষ্ণ হয়ে উঠল,শব্দহীন কোনো উত্তাপেআয়ন অরুন্ধতীর হাত ধরলে
 সেই হাতের চাপ ছিল এমনযেন দু'জনেই একে অন্যের ভিতরকার শূন্যতা পূরণ করতে চায়,নইলে রাতটা   অসম্পূর্ণ থেকে যাবে অরুন্ধতী তার পা সরিয়ে সামান্য জায়গা করে দিল থামেনিকাঁপেনি,শুধু নীরব এক খোলা দরজার মতো তার শরীর বলল,
 এসো।
 শয্যার নরম কাঁপুনি ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলনিশ্বাসের ভাঙা ছন্দ,দুজনের দম ফুরিয়ে আসা গতি,এবং পর্দার ওপরে আলোছায়ার দ্রুত নাচন স্পষ্ট করে দিচ্ছিল যে নৈকট্য এখন আর আবরণে রাখা যায় না।অরুন্ধতী শয্যার মাথার দিকটা দুহাতে শক্ত করে ধরল— সেই এক অদ্ভুত চাপেই বোঝা গেল কী প্রবল স্রোতের ভেতর তারা হারিয়ে যাচ্ছে। শয্যাটি নিজেও মনে হলো তাদের মিলনকেই বহন করছেমাঝে মাঝে গভীর দীর্ঘশ্বাসের মতো শব্দ করে উঠছে।দুজনের চলনে কখনো ঝড়ের বেগ,কখনো সমুদ্রের ফিরতি ঢেউ— বারবারআবারআরও গভীরে,যেন রাত নিজেই তাদের গতি নির্ধারণ করছে। চাঁদের আলো থেমে গেলতারপর আবার এল।ঘরের দেয়ালে দুই দেহের ছায়া একে অপরের ভেতর ঢুকে গিয়ে একটিমাত্র সত্তায় পরিণত হচ্ছিল।সময় কোথায় থেমে গেল তা কেউ বুঝতে পারল না— শুধু দমবন্ধ করা সেই যাত্রা দুজনকে এক ক্রমশ গভীর,নেশাময় অন্ধকারে টেনে নিয়ে যেতে লাগল যেখান থেকে ফেরার কোনো পথ নেই।
 শেষে সব থেমে গেলে শয্যার উপরে দুই ক্লান্ত নিঃশ্বাস এক হয়ে এল— এমন নিঃশ্বাস যা বলে দেয়এই রাত আরেকটি জন্মের মতো।
 
[+] 2 users Like NILEEM's post
Like Reply
#16
রাত আরও গভীর হয়ে এসেছিল।জানলার বাইরের চাঁদ যেন আস্তে আস্তে তার আলো সরিয়ে নিচ্ছিল— যেন লজ্জায় দেখতেও পারছে না ঘরের ভেতর ঘটে যাওয়া অঘোষিত সত্য। অরুন্ধতীর মাথা তখন আয়নের বুকের কাছে হেলান দিয়ে পড়ে ছিলএকটি অদ্ভুত শান্তি,যার ভিতরেই আবার উত্তাপের কোনো গোপন অঙ্গার দপদপ করে জ্বলছিল।
 শয্যার চাদর তাদের দেহের ওপর ধীরে ধীরে উঠানামা করছিল শ্বাসের তালে,কিন্তু সেই ছন্দে এখনও এক উষ্ণ পরাজয়ের মৃদু কাঁপন ছিলযেন দুজনেই জানে রাতটা তাদের জয় করেছে সম্পূর্ণভাবে।আয়ন তার আঙুল চালাচ্ছিল অরুন্ধতীর কাঁধের ঠিক নিচেআলতো বৃত্তে,শান্তির ছদ্মবেশে,কিন্তু স্পর্শের ভিতরেএকটু আগের অস্থির আকর্ষণ আবার জেগে উঠছিল নিঃশব্দে।অরুন্ধতী শ্বাস নিয়ে বলল না কিছু,কিন্তু তার শরীরের নরম আন্দোল পরিষ্কার জানিয়ে দিল রাতের আগুন এখনো পুরোপুরি নিভে যায়নি।তাদের মধ্যে যে দূরত্ব একসময় ছিল অসম্ভব পাহাড়এখন তা চাদরের কুঁচকোনো ভাঁজের মতোই পাতলা।আয়ন আরও কাছে ঝুঁকে এলো এবার কোনো তাড়াহুড়ো নয়,বরং তৃষ্ণার মতো এক ধীর টান যা শব্দহীন অথচ অপ্রতিরোধ্য।অরুন্ধতীর গলা থেকে একটা মৃদুঅচেনা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলোযা চাদরের নিচে হারিয়ে গিয়ে রাতের অন্ধকারকে আরও মোটা করে তুলল।বাইরে বাতাসপর্দা নাড়িয়ে দিচ্ছিল আলতো তালে,আর ভেতরে দুটি মানুষের দেহআরও একবার পরস্পরের দিকে টেনে নিচ্ছিল নিজেদের— এক ধরনের গোপন ভাষায়
 যার শব্দ কেবল শ্বাস  উষ্ণতা।আয়নের হাত এবার অরুন্ধতীকে আরও দৃঢ় ভাবে জড়িয়ে ধরল,
যেন অনেকদিনের খরা-শেষে মেঘ হঠাৎ আবার বৃষ্টির ইশারা করছে।অরুন্ধতী সেই আলিঙ্গনে গলে যেতে যেতে
 এক মুহূর্তের জন্য চোখ খুললতার চোখে আলো ছিল না,ছিল শুধু গভীর,অতল,অবদমিত আত্মসমর্পণের ছায়া।
 শয্যা  বার আবার নড়লধীরে,সতর্ক,কিন্তু অনিবার্যভাবেযেন রাত তাদের ডাকছে আরও একধাপ গভীরে,আরও এক শ্বাস,আরও এক নিঃশব্দ তরঙ্গে।অন্ধকারের ভিতর তাদের ছায়া
 একসময় পুরোপুরি মিলেমিশে গেল
 দুজনকে আলাদা করে চিনতে পারা অসম্ভব হয়ে উঠল।
 
 
 
 
[+] 2 users Like NILEEM's post
Like Reply
#17
অসাধারণ বর্ননা.. পরের পর্বের উত্তেজনা বজায় থাকলো..
একটা অনুরোধ, ওদের মিলনের বর্ণনা গুলো একটু ডিটেলে দিলে আরো ভালো লাগতো
Like Reply
#18
দাদার লেখার হায় অসাধারণ ।অমায়িক ।কিন্তু চটি গল্পে মিলনের সময় গুলো একটু ডিটেইলস এ লিখলে ভালো লাগে ।বিশেষ করে নারী চরিত্রেএ শরীরের আকার গল্পে অরুনতির বয়স থাকলে ও শারীরিক মাপ কাঠি কিচুই নেই।
Like Reply
#19
Ai দিয়ে লিখতেছেন?
Like Reply
#20
আপডেট এর অপেক্ষায় আছি দাদা..
Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)