Posts: 6
Threads: 1
Likes Received: 19 in 5 posts
Likes Given: 0
Joined: Oct 2025
Reputation:
2
27-10-2025, 05:45 PM
(This post was last modified: 22-11-2025, 06:18 PM by মাইটি. Edited 7 times in total. Edited 7 times in total.)
প্রিয় পাঠকবৃন্দ,
এই গল্পের শিরোনাম "কুন্ডলী ভাগ্য"। ভাগ্য কি সত্যিই আমাদের জীবনে এতটা প্রভাব ফেলে? জানি না। আমি এই গল্পটি এমনভাবে লিখেছি যে শুরুতে মনে হবে শিরোনামের সঙ্গে গল্পের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু এটি শিব নামের এক যুবকের গল্প, যে কোনো এক কারণে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একটি অনাথ আশ্রমে এসে পড়েছে। এখন সে কি তার পরিবারের সঙ্গে মিলিত হতে পারবে? তার ভাগ্যে কী লেখা আছে? অন্যান্য চরিত্রগুলো সম্পর্কে আপনারা জানতে পারবেন, তবে নায়িকা কে, সেটা আপনারাই দেখে নেবেন। শীঘ্রই শুরু হবে এই যাত্রা।
এই গল্পের কোনো টিভি ধারাবাহিকের সঙ্গে সম্পর্ক নেই। এটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক এবং প্রদর্শিত ছবিগুলো ইন্টারনেট থেকে নেওয়া।
আমাদের টেলিগ্রামে চ্যানেলে @sStory69 সার্চ করে জয়েন্ট করুন। আমাদের চ্যানেলে গল্প আগে দেওয়া হয় তারপর ২-৩ দিন পর এই সাইটে পাবেন।
Posts: 155
Threads: 0
Likes Received: 159 in 88 posts
Likes Given: 474
Joined: Dec 2021
Reputation:
6
সাথে আছি আপনি লিখুন। তবে কোনো চরিত্রের ছবি সরাসরি ব্যবহার না করাই ভালো। পাঠকরা নিজেরাই চরিত্র গুলো নিজের মনের কল্পনায় চিত্রায়িত করে নিবে। এতে পাঠকরা গল্প পড়ে বেশি মজা পাবে।
•
Posts: 6
Threads: 1
Likes Received: 19 in 5 posts
Likes Given: 0
Joined: Oct 2025
Reputation:
2
28-10-2025, 12:18 AM
(This post was last modified: 03-11-2025, 06:34 PM by মাইটি. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
আপডেট - ১ম পর্ব
প্রিয় বন্ধুরা,
এই গল্প এক এমন ছেলের, যে সত্যিই একা হয়ে গিয়েছিল। একটি অনাথ আশ্রমে বড় হয়েছে। না ভাই-বোন, না মা-বাবা, না কোনো আত্মীয়। এই গল্পের চরিত্রগুলো গল্পের মাঝেই আসবে, তাদের কোনো আলাদা পরিচয় দেওয়া হবে না। আশা করি, আপনাদের পছন্দ হবে।
এক তিন-চার বছরের বাচ্চাকে কোলে নিয়ে এক মহিলা রাস্তায় ভিক্ষা করছিল। আগত-যাত্রীদের কাছে ছেলের খাবারের জন্য সাহায্য চাইছিল। এমন দৃশ্য সাধারণ হলেও এখানে একটা বিশেষ ব্যাপার ছিল। মহিলাটি ছিল মোটা, কালো, কিন্তু তার সাথের বাচ্চাটি ছিল ফর্সা, অসম্ভব সুন্দর। হ্যাঁ, একটু দুর্বল মনে হচ্ছিল। এক গাড়ির কাছে মহিলাটি ভিক্ষা চাইছিল, আর গাড়ির লোকটি বাচ্চাটির দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল।
মহিলা: “বাবু, কিছু ভিক্ষা দিন, আমার ছেলে দুদিন ধরে খায়নি।”
লোকটি: “এটা তোমার ছেলে?”
মহিলা: “হ্যাঁ, এ আমারই ছেলে। কিছু দিন, ভগবান আপনার ভালো করবেন।”
লোকটি পকেট থেকে একশত টাকার একটি নোট বের করে দিল। তখন সে কিছু বলল না, কিন্তু গাড়ি একপাশে রেখে পুলিশে ফোন করল এবং তাদের আসতে বলল। পুলিশ এসে মহিলাটিকে ধরে নিয়ে গেল এবং বাচ্চাটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল।
পুলিশ: “এটা তোমার বাচ্চা?”
মহিলা: (পুলিশ দেখে ভয় পেয়ে গেল) “হ্যাঁ… হ্যাঁ… এ আমারই বাচ্চা।” (বারবার জিজ্ঞাসা করায় সে একই কথা বলতে লাগল। কিন্তু একজন মহিলা পুলিশ কঠোরভাবে জিজ্ঞাসা করায় সে ভয় পেয়ে গেল।)
মহিলা: “মাফ করে দিন, সাহেব, এ আমার বাচ্চা নয়। এ আমি রাস্তায় একা পেয়েছিলাম। ওর কেউ ছিল না, তাই আমার কাছে রেখেছি।”
পুলিশ: “কোথায় পেয়েছিলে? কবে?”
মহিলা: “সাহেব, এ এক মাতালের কাছে ছিল। সে মদের নেশায় ওকে মারছিল। আমি ওকে বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছি। মাতালটা বলেছিল, এ তার বাচ্চা নয়, সে ওকে বিক্রি করতে চায়। সে নেশায় ছিল, তাই আমি ওকে নিয়ে পালিয়ে আসি।”
পুলিশ: “কোথায় পেয়েছিলে এই বাচ্চা?”
মহিলা: “কলকাতায়। আমি ওকে নিয়ে এখানে চলে এসেছি।”
মহিলাটিকে হেফাজতে নেওয়া হলো, আর বাচ্চাটিকে পুলিশ তাদের হেফাজতে নিল। পুলিশ বাচ্চাটির মা-বাবার খোঁজে অনেক চেষ্টা করল, কিন্তু কিছুই জানা গেল না। কলকাতায় অনেক খোঁজাখুঁজি করা হলো, এমনকি পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দেওয়া হলো, কিন্তু কোনো তথ্য পাওয়া গেল না। অবশেষে বাচ্চাটিকে একটি অনাথ আশ্রমে পাঠানো হলো। এই আশ্রমটি ছিল জানকীদাস নামের এক ব্যক্তির, যিনি বাচ্চাটিকে নিয়ে গিয়ে আশ্রমের ম্যানেজার দেবীলালের হাতে তুলে দিলেন।
জানকীদাস অনেক দূরে থাকতেন। তিনি এই আশ্রমটি তৈরি করেছিলেন। মাঝেমধ্যে তিনি এখানে আসতেন, তবে বেশিরভাগ সময় দেবীলালই সবকিছু সামলাত। আশ্রমে অনেক বাচ্চা ছিল, বেশিরভাগই মেয়ে। সমাজের কী যেন শত্রুতা এই মেয়েদের সাথে, যারা তাদের ফেলে দেয়, যেন তারা কোনো আবর্জনা। বাচ্চাটি যখন আশ্রমে এল, তখন সে কাঁদছিল। লতা নামের একটি পাঁচ-ছয় বছরের মেয়ে তার কাছে গিয়ে তাকে শান্ত করতে লাগল। ছেলেটিরও লতাকে ভালো লাগল, আর সে চুপ হয়ে গেল।
আশ্রমে আরও কিছু বড় ছেলেমেয়ে ছিল। বড় মেয়েরা বাচ্চাদের দেখাশোনা ও আশ্রমের কাজকর্ম করত। দেবীলাল সবাইকে দিয়ে কাজ করাত, ছোট হোক বা বড়। কাজ না করলে মারত, খাবার দিত না। দেবীলাল ছিল এক নিকৃষ্ট মানুষ। আশ্রমের নামে সে মানুষের কাছ থেকে টাকা তুলত, মেয়েদের শোষণ করত। যারা তার কথা না মানত, তাদের মারত। বড় হয়ে অনেক ছেলেমেয়ে আশ্রম থেকে পালিয়ে যেত। কেউ এই বাচ্চাদের কথা ভাবত না। কখনো কখনো কিছু ভালো মানুষ দান করতে আসতেন, খাবার, কাপড়, আর অন্যান্য জিনিস দিয়ে যেতেন।
এভাবেই দিন কাটছিল। দিন মাসে পরিণত হলো, কিন্তু পুলিশ ছেলেটির সম্পর্কে কিছুই জানতে পারল না। বছর কেটে গেল, কোনো তথ্য না পেয়ে পুলিশ ফাইল বন্ধ করে দিল। লতা সারাদিন ছেলেটির সাথেই থাকত। সেই তার নাম রাখল শিব। শিবের সাথে খেলত, ঘুমোত, খাবার খাওয়াত। শিবও লতার সাথে এত মিশে গিয়েছিল যে তার সাথেই থাকত। লতাই তাকে স্নান করাত, খাওয়াত, নিজের সাথে শুইয়ে দিত। লতা নিজেও খুব বড় ছিল না, তবে মেয়েরা এসব বোধহয় ভালো শিখে যায়। তারা দুজন এতটাই কাছাকাছি হয়ে গিয়েছিল যে সবসময় একসাথে থাকত।
যখন আশ্রমে কেউ বাচ্চা দত্তক নিতে আসত, তাদের প্রথম পছন্দ হতো শিব। কিন্তু শিব কখনোই লতাকে ছেড়ে যেতে রাজি হতো না। তারা যখন একটু বড় হলো, লতাই শিবের ভালো করে যত্ন নিত, তাকে কলেজে নিয়ে যেত, পড়াত। লতার সমবয়সী আরেকটি মেয়ে ছিল, সরিতা। আরও দুটি মেয়ে ছিল, রঞ্জন আর বীণা, যারা শিবের কাছাকাছি বয়সের। আশ্রমে আরও অনেক বাচ্চা ছিল। শিব, রঞ্জন আর বীণার সাথে খেলত। তারা তখনো বাচ্চা ছিল, তাই ম্যানেজারের মার সহ্য করত। খেলতে খেলতে দিন কাটত।
কখনো খেলার মাঝে রঞ্জন আর বীণা শিবের সামনেই জামা তুলে প্রস্রাব করে বসত। শিব তাদের দিকে তাকিয়ে থাকত। আর শিব যখন প্রস্রাব করত, তারাও দেখত। বাচ্চা ছিল, তাই এটা স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু তারা বুঝতে শুরু করেছিল তাদের শরীরে কী কী পার্থক্য আছে। সবাই একসাথে উলঙ্গ হয়ে স্নান করত। বছর যেতে যেতে মেয়েদের শরীরে পরিবর্তন আসতে শুরু করল। কয়েক বছর এভাবে কাটল, কিন্তু তারা যখন আরও বড় হলো, তখন আলাদা আলাদা স্নান করতে শুরু করল। তবে লতা মাঝেমধ্যে শিবকে স্নান করিয়ে দিত।
এভাবে বেশ কয়েক বছর কাটল। আজ ছিল দশম শ্রেণির ফলাফলের দিন। এত কষ্টের মাঝেও শিব খুব ভালো নম্বরে নিয়া পাশ করেছিল। লতা এখন এক যুবতী মেয়ে হয়ে উঠেছে, আর শিবও লম্বা, গঠনবদ্ধ যুবক। শিব, রঞ্জন আর বীণা তাদের ফলাফল নিয়ে আশ্রমে ফিরল। শিব দৌড়ে লতাকে খুঁজতে গেল। রান্নাঘরে লতাকে কাজ করতে দেখে সে পেছন থেকে তার কোমরে হাত দিয়ে তাকে হাওয়ায় তুলে ফেলল। হঠাৎ এই আক্রমণে লতা ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠল। কিন্তু শিব কি থামার পাত্র? সে লতাকে হাওয়ায় তুলে ঘোরাতে লাগল। রান্নাঘরে কাজ করা অন্য মেয়েরা হেসে উঠল। লতা যখন বুঝল এ শিব, তখন সেও হাসতে লাগল।
লতা: “কী করছিস? নামা আমাকে, পড়ে যাব!”
শিব: (ঘোরাতে ঘোরাতে) “দিদি, আমি কি তোমাকে পড়তে দেব? তোমার কিছু হওয়ার আগে আমি নিজের জান দেব।” (এই বলে সে লতাকে নামিয়ে দিল।)
লতা: (মিথ্যে রাগ দেখিয়ে তার গালে আলতো চড় মেরে) “মরুক তোর শত্রু! ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম বলে বললাম। বল, ফলাফল কী হলো? তোকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে পাশ করেছিস।”
শিব: “শুধু পাশ? দেখো আমার মার্কশিট, কত ভালো নম্বরে পাশ করেছি। এসব তোমারই পরিশ্রম। তুমি আমাকে এই যোগ্য করে তুলেছ।”
লতা: (মার্কশিট দেখে খুশি হয়ে উঠল) “আরে বাহ! তুই তো আমার থেকেও ভালো নম্বরে পাশ করেছিস!”
শিব: “দিদি, আমি কলেজে প্রথম হয়েছি। শিক্ষকরা, প্রিন্সিপাল সবাই আমার প্রশংসা করছিলেন।”
লতা: “করবেনই তো! আর তোরা দুজন কী হলো? পেছনে লুকিয়ে আছিস কেন?”
রঞ্জন: “আমরাও পাশ করেছি, দিদি। তবে আমাদের নম্বর এই বাঁদরের মতো নয়।”
শিব: “এই, কাকে বাঁদর বললি, টিকটিকি?”
রঞ্জন: “তোকে বললাম, খাম্বা!”
শিব: “খাম্বা বললি?”
রঞ্জন: “হ্যাঁ বললাম। ভুল কী বললাম? খাম্বার মতো লম্বা হয়ে গেছিস।”
শিব: “দাড়া, এখন দেখাচ্ছি!” (এই বলে সে রঞ্জনের দিকে এগিয়ে গেল। রঞ্জন দৌড়ে পালাতে শুরু করল।)
লতা: “তোরা থাম! বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করছিস কেন? শিব, থাম!”
শিব: “আজ ওকে ছাড়ব না, দিদি।”
রঞ্জন: “বাঁদর, তুই শুধু ঘুরবি, আমাকে ধরা তোর সাধ্য নয়!”
রঞ্জন এদিক-ওদিক দৌড়াতে লাগল, আর শিব তার পেছনে। কখনো খাম্বার পেছনে, কখনো লতার পেছনে লুকিয়ে পড়ত। তারা মজা করছিল, এমন সময় আশ্রমের ম্যানেজার দেবীলাল এসে গর্জে উঠল।
দেবীলাল: “এটা কী হট্টগোল লাগিয়ে রেখেছিস?”
তার কণ্ঠে সবাই থমকে গেল। সে ছিল এমনই এক খারাপ মানুষ। সবাইকে বিরক্ত করত। শিব আর লতাকেও সে বাদ দেয়নি। সরিতা সাহস করে বলল,
সরিতা: (ভীত কণ্ঠে) “শিবের ফলাফল এসেছে। খুব ভালো নম্বরে পাশ করেছে, তাই…”
দেবীলাল: (সরিতার দিকে তাকিয়ে) “তাতে এত হইচই করার কী দরকার? নিজের কাজে মন দে, নয়তো এখান থেকে বের করে দেব।” (শিবের দিকে তাকিয়ে) “তুইও যা, কাজে লেগে যা। পেছনে কাঠ পড়ে আছে, কেটে ফেল। নয়তো রান্না হবে না, আর কেউ খেতে পারবে না।” (এই বলে সে চলে গেল।)
সরিতা: (আস্তে গলায়) “কী নীচ মানুষ!”
ভয়ে সবাই নিজের নিজের কাজে লেগে গেল। শিব তার ঘরে গিয়ে মার্কশিট রাখল। সেখানেই লতার ঘরও ছিল। সে একটা পুরোনো টি-শার্ট আর লুঙ্গি পরে পেছনের ঘরের দিকে গেল। মনে মনে ম্যানেজারকে গালি দিচ্ছিল, কিন্তু কিছু করতে পারছিল না। এখানেই তাকে থাকতে হবে। নয়তো এই নীচ মানুষটা আরও বিরক্ত করবে। আশ্রমের অনেক ছেলেমেয়ে বড় হয়ে তার জন্যই পালিয়ে গেছে। কিন্তু শিব পালাতে পারবে না। গেলেও কোথায় যাবে? আর সে একা নয়, লতা দিদিও আছে। তাকে ছেড়ে সে যেতে পারবে না। এই আশ্রমই এখন তার বাড়ি।
ইতিমধ্যে লতা, সরিতা, আর ছোট মেয়েরা, রঞ্জন আর বীণা সবাই কাজে লেগে গেল।
সরিতা: “এমন নীচ মানুষকে এখানে ম্যানেজার বানিয়েছে। মনে হয় ওর রক্তই ঝরিয়ে ফেলি।”
লতা: “ছাড় না। যখন উপরওয়ালা আমাদের ভাগ্য এমন লিখেছে, তখন কাউকে দোষ দেওয়ার কী আছে?”
সরিতা: “সত্যি বলছিস লতা, এই উপরওয়ালাও জানি না কার সাথে ঝগড়া করে বসে আমাদের ভাগ্য লিখেছে। মা-বাবা আমাদের আবর্জনার মতো ফেলে দিয়েছে। পালতে না পারলে জন্ম দিল কেন? তাদের দশ মিনিটের আনন্দের জন্য আমাদের পুরো জীবন নরক বানিয়ে দিয়েছে।”
লতা: “এসব কথা ছাড়। আমরা এতে কিছু করতে পারব না।”
সরিতা: “সত্যি বলছি, যদি ওই নীচ লোকগুলো আমার সামনে আসে, তবে মেরে মেরে তাদের হাল খারাপ করে দেব।”
লতা: “চুপ কর, ঠাকু মা। যখন দেখি তখন তুই আগুন হয়ে যাস। ম্যানেজারের সাথেও ঝগড়া করিস। যদি বের করে দেয়, তবে কোথায় যাবি?”
সরিতা: “ওই নীচ লোকটা আমাকে বের করবে? বিনামূল্যে আমার সাথে মজা করতে পায় বলে। একবার বলে দেখুক, ওর সব কুকীর্তি ফাঁস করে দেব। নীচ মানুষটা এখানের টাকা, জিনিসপত্র, যা আমাদের জন্য দান আসে, সব নিজে গিলে ফেলে। তার ওপর মেয়েদের শোষণ করে। আমাদের ভাগ্যই খারাপ। আমাদের মতো মেয়েদের কেউ বিয়েও করে না। নয়তো আমি কবে পালিয়ে যেতাম। এখানে তো এই একটা আছে, আর বাইরে পা ফেললেই এমন জানোয়ারে ভরা। আর এই উপরওয়ালাও আমাদের পাঠিয়ে আমাদের কথা ভুলে গেছে।”
লতা কোনো উত্তর দিল না। তার চোখেও জল চলে এল। সে নিজে জানে কীভাবে সে নিজেকে এই ম্যানেজারের হাত থেকে বাঁচিয়ে রেখেছে। প্রতিদিন কোনো না কোনো ছুতোয় তাকে বিরক্ত করে, নোংরা কথা বলে। এত বিরক্ত করত যে তার দশম শ্রেণির পর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেল। কলেজের সময়েও তাকে কাজ দিয়ে দিত। প্রায়ই সবাইকে দুই কিলোমিটারের বেশি দৌড়ে কলেজে যেতে হতো। দেরি হলে কলেজেও শাস্তি পেত। মেয়েদের হালকা শাস্তি দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হতো, কিন্তু শিবকে পাঁচ-দশ চক্কর মাঠে দৌড়াতে হতো। তাই শিবের জন্যই লতা কলেজ ছেড়ে দিয়েছিল, যাতে শিব সময়মতো কলেজে পৌঁছাতে পারে। তবুও ম্যানেজার শিবকেও বিরক্ত করত। কাঠ কাটা, শস্যের বস্তা রাখা, বড় বড় পাত্র পরিষ্কার করা, তুলে আনা-নেওয়া এমন নানা কাজ।
আশ্রমে ছিল ছয়-সাতটি ছোট ঘর আর একটি বড় হল। বড় হলে ছোট বাচ্চাদের রাখা হতো, সাথে কোনো বড় কেউ থাকত। বেশিরভাগ সময় সরিতা দিদি তাদের সাথে থাকত, কখনো লতা দিদি। কখনো শিবও সেখানে ঘুমিয়ে পড়ত। তবে বেশিরভাগ সময় শিব আর লতা একই ঘরে ঘুমোত। এক ঘরে রঞ্জন আর বীণা ঘুমোত। তাদের মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব ছিল। এক ঘরে মাঝেমধ্যে সরিতা ঘুমোত। বাকি ঘরগুলোতে জিনিসপত্র রাখা হতো। একটি ঘর ছিল অফিসের জন্য, যেখানে অফিসের জিনিস ছিল। একটি ঘর ছিল ম্যানেজারের। আগে সে এখানেই থাকত, কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে বেশিরভাগ সময় বাইরে থাকে। আশ্রমের মালিক জানকীদাস এখন আর এখানে আসেন না। দেবীলাল যখন থাকত, তখন মেয়েদের শোষণ করার চেষ্টা করত। তবে এখন তারও বয়স হয়েছে। আগে সে অনেক মেয়েকে শোষণ করেছে, যার জন্য অনেকে পালিয়ে গেছে।
রাতে শিব লতার সাথেই থাকত, যার জন্য ম্যানেজার কখনো লতার কাছে সফল হতে পারেনি। নয়তো অনেক মেয়ের মতো লতারও সম্ভ্রম লুট হতো। অনাথ হওয়ার কারণে তাদের কথা জিজ্ঞাসা করার কেউ ছিল না। এসব ভাবতে ভাবতে লতা চোখ মুছে রঞ্জনকে বলল,
লতা: “রঞ্জন, যা তো, শিবের কাছে গিয়ে ওর একটু সাহায্য কর।”
রঞ্জন: “ঠিক আছে, দিদি।” (সে পেছনের দিকে চলে গেল, যেখানে শিব রাগে কাঠ কাটছিল।)
রঞ্জন আশ্রমে শিবের আগে থেকেই ছিল। সে দুই-তিন দিন বয়সে এখানে এসেছিল। তবে তার বয়স শিবের কাছাকাছি। গায়ের রং গমের মতো, কিন্তু পরিষ্কার, উজ্জ্বল। দেখতে সুন্দরী, বড় বড় চোখ, ধারালো নাকের নিচে পাতলা ঠোঁট, যা তাকে আকর্ষণীয় করে। এমন পরিবেশে বড় হয়েছে, তাই শরীর একটু রোগা। কিন্তু যৌবনের দোরগোড়ায় পা রেখেছে, শরীর কিছুটা ভরাট হতে শুরু করেছে। বুকের উঁচু ভাব এসেছে, কোমরের নিচের অংশও কিছুটা ছড়িয়েছে, যেমনটা মেয়েদের বড় হওয়ার সময় হয়।
সে লাফিয়ে লাফিয়ে পেছনের দিকে পৌঁছল। দেখল শিব জোরে জোরে কাঠ কাটছে। কিছুক্ষণ সে তাকে দেখল। এখন সে যুবতী হয়েছে, তাই ছেলেদের দিকে তার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে। এই সেই শিব, যার সাথে সে ছোটবেলা থেকে আছে। একসাথে খেলেছে, ঝগড়া করেছে, হেসেছে। ছোটবেলায় একসাথে স্নানও করেছে। কিন্তু সেসব ছিল শৈশব। এখন তারা দুজনেই বড় হয়েছে। শিব এখনো ছেলেমেয়েদের সম্পর্কের ব্যাপারে অজ্ঞ, কিন্তু রঞ্জন আশ্রমে এসব খেলা দেখেছে, তাই এই বিষয়ে সে একটু বুঝতে শুরু করেছে।
শিব কাঠ কাটতে কাটতে ঘামে ভিজে গিয়েছিল। তার পাতলা টি-শার্ট শরীরে লেপটে গিয়েছিল, তার বুকের পেশি, কাঁধের গঠন স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। রঞ্জন একটু দূরে দাঁড়িয়ে তাকে দেখছিল। শিবের প্রতি তার মনে একটা অদ্ভুত টান অনুভব হচ্ছিল। তার হৃৎপিণ্ড একটু দ্রুত স্পন্দন করছিল। শিবের প্রতিটি কুঠারের আঘাতের সাথে তার শরীরে একটা শিহরণ জাগছিল। সে নিজেকে সামলে নিয়ে এগিয়ে গেল।
রঞ্জন: “কী রে, এত রাগ কিসের? কাঠের ওপর ঝাল ঝাড়ছিস?”
শিব: (কাঠ কাটা থামিয়ে, হাঁপাতে হাঁপাতে) “এই নীচ লোকটার জন্য। আমাদের জীবন নরক করে দিয়েছে।”
রঞ্জন কাছে এসে তার পাশে বসল। শিবের ঘামে ভেজা কপাল, তার চোখে জমে থাকা রাগ দেখে রঞ্জনের মনে একটা অজানা অনুভূতি জাগল। সে হালকা হেসে বলল,
রঞ্জন: “ছাড় না। এসব ভেবে কী হবে? তুই তো ভালো নম্বর নিয়া পাশ করেছিস। এবার কী করবি ভাব।”
শিব তার দিকে তাকাল। রঞ্জনের শাড়ির আঁচল কাঁধ থেকে একটু সরে গিয়েছিল। তার যৌবনের ভরা রূপ শিবের চোখে পড়ল। সে একটু অপ্রস্তুত হয়ে চোখ সরিয়ে নিল। রঞ্জন তা লক্ষ করল, তার ঠোঁটে একটা মুচকি হাসি ফুটে উঠল।
রঞ্জন: “কী রে, আমার দিকে তাকিয়ে লজ্জা পাচ্ছিস কেন?”
শিব: (মুখ লাল করে) “না, তা নয়। তুই এমন কথা বলিস কেন?”
রঞ্জন হেসে উঠল। তার হাসির শব্দে শিবের মনের রাগ কিছুটা কমে গেল। রঞ্জনের কাছাকাছি বসে থাকতে তার শরীরে একটা অদ্ভুত উষ্ণতা অনুভব হচ্ছিল। রঞ্জনের শাড়ির গন্ধ, তার চুলের মৃদু স্পর্শ শিবের মনে একটা অজানা ঝড় তুলছিল। সে কাজে মন দিতে চেষ্টা করল, কিন্তু রঞ্জনের উপস্থিতি তাকে বারবার বিভ্রান্ত করছিল।
রঞ্জন: “আমি তোকে সাহায্য করতে এসেছি। বল, কী করব?”
শিব: “তুই যা, আমি একাই পারব।”
রঞ্জন: “একা কেন? আমি তোর পাশে থাকব।”
তার কথার মধ্যে একটা গভীর আবেগ ছিল। শিব তার দিকে তাকাল। রঞ্জনের চোখে একটা অদ্ভুত ঔজ্জ্বল্য ছিল, যেন সে শিবকে শুধু দেখছে না, অনুভব করছে। শিবের বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেল। সে কাঠের দিকে তাকিয়ে কাজে মন দিতে চাইল, কিন্তু তার হাত কাঁপছিল। রঞ্জন হঠাৎ তার হাতের ওপর হাত রাখল।
রঞ্জন: “শিব, তুই আমার সাথে এমন করিস কেন? আমরা তো ছোটবেলা থেকে একসাথে আছি।”
শিবের গলা শুকিয়ে গেল। রঞ্জনের হাতের স্পর্শে তার শরীরে একটা বিদ্যুৎ খেলে গেল। সে কী বলবে বুঝতে পারছিল না। রঞ্জন কাছে এসে তার আরও কাছাকাছি বসল। তার শাড়ির আঁচল আবার সরে গেল, আর শিবের চোখ তার বুকের উঁচু ভাবের দিকে চলে গেল। রঞ্জন তা লক্ষ করে হাসল, কিন্তু কিছু বলল না।
শিব: “রঞ্জন, তুই… তুই যা এখান থেকে। আমি কাজ করছি।”
রঞ্জন: “আমি যাব না। তুই যতই রাগ দেখা, আমি জানি তুই আমাকে ভালোবাসিস।”
শিবের মুখ লাল হয়ে গেল। সে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। রঞ্জনের কথা, তার কাছাকাছি থাকা, তার শরীরের উষ্ণতা সব মিলিয়ে শিবের মনের মধ্যে একটা ঝড় বয়ে যাচ্ছিল। সে কাঠ কাটতে শুরু করল, কিন্তু তার মন ছিল অন্য কোথাও। রঞ্জন তার পাশে বসে তাকে দেখতে লাগল, তার চোখে একটা গভীর আকাঙ্ক্ষা জ্বলছিল।
এই মুহূর্তে তাদের মধ্যে কথা বন্ধ হয়ে গেল। কিন্তু তাদের নীরবতায় একটা অদ্ভুত ঘনিষ্ঠতা তৈরি হচ্ছিল। রঞ্জনের শ্বাসের শব্দ, শিবের হাতের কুঠারের আঘাত, আর তাদের কাছাকাছি থাকার উষ্ণতা সব মিলিয়ে পরিবেশটা যেন ভারী হয়ে উঠল।
##পরবর্তী অধ্যায়ে কী হবে? শিব আর রঞ্জনের এই সম্পর্ক কোন দিকে যাবে? লতার ভূমিকা কী হবে? জানতে কমেন্ট করুন।
টেলিগ্রামে সার্চবারে স্পেস ছাড়া @sStory69 লিখে সার্চ করুন। আর গল্প পড়ুন৷ ধন্যবাদ ❤️
Posts: 42
Threads: 4
Likes Received: 131 in 32 posts
Likes Given: 21
Joined: Dec 2023
Reputation:
37
রঞ্জন খুব তারাতাড়ি শিবের নিচে আসবে বাট লতার আসতে হয়তো দেরি হবে বাট কোন একদিন শিবের নিচে আসবে
Posts: 591
Threads: 0
Likes Received: 278 in 264 posts
Likes Given: 512
Joined: Jan 2024
Reputation:
6
Posts: 6
Threads: 1
Likes Received: 19 in 5 posts
Likes Given: 0
Joined: Oct 2025
Reputation:
2
30-10-2025, 10:57 AM
(This post was last modified: 03-11-2025, 06:35 PM by মাইটি. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
আপডেট - ২
রঞ্জন যখন শিবের কাছে পৌঁছল, দেখল সে রাগে কাঠ কাটছে। ম্যানেজারের এমন অত্যাচার সহ্য করেই শিব বড় হয়েছে, তাই তার শরীরও সেইরকম গড়ে উঠেছে। রঞ্জন লক্ষ করল, শিব ঘামে ভিজে গেছে। তার শরীর খুব ভরাট নয়, তবু কঠোর পরিশ্রমের কারণে তার পেশি শক্ত ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। লম্বা গড়ন আর ফর্সা রঙের কারণে সে সবার থেকে আলাদা দেখায়। তার মুখে এমন নিষ্পাপ ভাব, যে কেউ তাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে যায়। গোঁফের রেখা আর হালকা দাড়ি দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু এখন তার মুখে রাগ স্পষ্ট। রঞ্জন একটা পুরোনো কুর্তা আর পাজামা পরেছিল। শিবকে দেখতে দেখতে সে তার কাছে গেল এবং আদরের সুরে বলল,
রঞ্জন: “কী হলো, শিব? এত রাগ কেন?”
শিব: (তাকে ধমকের সুরে তাকিয়ে) “তুই এখানে কেন এলি? যা এখান থেকে।”
রঞ্জন: “লতা দিদি বলল তোর সাহায্য করতে।”
শিব: “আমার কারো সাহায্য লাগবে না।”
রঞ্জন: (মন খারাপ করে) “অন্য কারোর রাগ আমার ওপর কেন ঝাড়ছিস? আমি তো শুধু দিদির কথায় এসেছি।”
এই বলে সে চুপচাপ কাটা কাঠগুলো তুলে এক জায়গায় জড়ো করতে লাগল। শিব একটু পরে তাকে দেখল, রঞ্জন মনমরা হয়ে কাজ করছে। তার মুখের বিষণ্ণতা দেখে শিবের খারাপ লাগল। সে দুঃখের সুরে বলল,
শিব: “দুঃখিত!”
রঞ্জন এটা শুনে তার দিকে তাকাল। দুজন কিছুক্ষণ একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইল। তারা ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে বড় হয়েছে, তাই ঝগড়া-বিবাদ চলতেই থাকে, কিন্তু কাউকে কষ্টে দেখতে পারে না। রঞ্জন দুষ্টুমি করত, কিন্তু শিবের সঙ্গে অন্যায় হলে সে দুঃখ পেত। শিবের মুখের বিষণ্ণতা দেখে রঞ্জন হাসল।
রঞ্জন: “কোনো ব্যাপার নয়। তুই ওই নীচ লোকটার জন্য মন খারাপ করিস না। তুই তো ছোটবেলা থেকে ওকে চিনিস।”
এইভাবে কথা বলতে বলতে দুজন কাজে লেগে গেল। অনেক কাঠ কাটা হয়ে গেলে শিব কুঠার রেখে রঞ্জনের সঙ্গে কাঠ জড়ো করতে লাগল। এটা দেখে রঞ্জন আবার হাসল, শিবও হাসল।
রঞ্জন: “তুই এই ছোট ছোট ব্যাপার মনে কষ্ট নিস না। ওই নীচ লোকটার তো এমন অভ্যাস। আর আমরা তো বাধ্য।”
শিব: (রাগে) “একদিন আমি ওর মুখ ভেঙে দেব।”
রঞ্জন: “ছাড়, রাগ থামা। এই কাঠগুলো নিয়ে দিদির কাছে দিয়ে আসি।”
দুজনে কাঠ নিয়ে রান্নাঘরে রাখল। মুখ-হাত ধুয়ে শিব তার ঘরে চলে গেল, আর রঞ্জন রান্নাঘরে সাহায্য করতে লাগল। আশ্রমের মেয়েরা মিলে সব কাজ সামলাত। লতা, সরিতা আর আরও দুই-চারজন বড় মেয়ে ছিল। বাকিরা ছোট। বড় ছেলেরা বেশিরভাগই আশ্রম ছেড়ে চলে গেছে। বড় হয়ে কেউ অসভ্য হয়ে গেছে, কেউ টাকা রোজগার করতে শুরু করেছে, তাই আশ্রম ছেড়ে চলে গেছে। ম্যানেজার সবাইকে ভয় দেখাত, তাই বড় হয়ে সবাই চলে যেত। লতা আর সরিতা এখনো ছিল, তারাই বেশিরভাগ কাজ সামলাত, তাই ম্যানেজার তাদের সঙ্গে বেশি কঠোরতা করত না। আরেকটা কারণ, সে ছিল লম্পট। মেয়েদের ভয় দেখিয়ে বা ফুসলিয়ে শোষণ করত। অনেক মেয়ে তার জন্য আশ্রম ছেড়ে পালিয়েছে। সে লতার সঙ্গেও চেষ্টা করেছে, কিন্তু লতা কোনোমতে বেঁচে গেছে। লতার কাছে শিবই যেন সব, তাই সে তাকে ছেড়ে যেতে চায়নি। ম্যানেজারের অত্যাচার সহ্য করেই সে এখানে আছে।
ম্যানেজারের এই আচরণের জন্যই তাদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে। সে এত কাজ করাত যে কলেজে সবসময় দেরি হয়ে যেত। শিবকেও বিরক্ত করত, যাতে সে পালিয়ে যায় আর সে লতার ওপর হাত দিতে পারে। কলেজের সময় কোনো না কোনো কাজ দিয়ে দিত, যাতে শিব যেতে না পারে। তবু লতা কোনোমতে তাকে সাহায্য করত। তবুও শিব দেরি করে কলেজে পৌঁছত। পুরো রাস্তা দৌড়ে যেতে হতো, আর দেরি হলে কলেজের মাঠে চক্কর দিতে হতো। এমন পরিস্থিতিতেও শিব ভালো নম্বরে পাশ করেছে। এখন সে বড় হয়েছে, তার মনেও ইচ্ছে হয় আশ্রম ছেড়ে পালিয়ে যেতে। কিন্তু লতা তাকে বোঝায় যে আগে পড়াশোনা শেষ করে ভালো চাকরি করতে হবে। তাই মন মরিয়ে সে এখানে থেকে গেছে।
রান্নাঘরে মেয়েরা কাজ করছিল। রঞ্জন এলে লতা শিবের কথা জিজ্ঞাসা করল।
লতা: “সব হয়ে গেল? শিব কোথায় গেল?”
রঞ্জন: “হয়ে গেছে, দিদি। তোমার আদরের ছেলে ঘরে গেছে। তবে একটু রাগে ছিল। কাঠ এমন কাটছিল, যেন ম্যানেজারের মাথা কাটছে। আমার মনে হয়, একদিন সত্যিই ওর মাথা কাটবে।”
লতা: “চুপ কর, দুষ্টু! যা তা বলে যাচ্ছিস। শিব খুব সরল, ভালো ছেলে। মাঝে মাঝে রাগ করে, তবে খুব মিষ্টিও।”
সরিতা: “হ্যাঁ, আর খুব সুদর্শনও। একদম চকচকে।”
লতা: (চোখ পাকিয়ে) “তুই চুপ কর। ওর দিকে নজর লাগাস না।”
সরিতা: “আমি কেন নজর লাগাব? (মুচকি হেসে) আমি তো একদিন ওকে গিলে ফেলব।”
লতা: “মুখ ভেঙে দেব তোর মুখ, যদি ওর গায়ে হাত দিস।”
সরিতা: (অঙ্গভঙ্গি করে) “হায়, কী ফর্সা, কী লম্বা হয়ে গেছে। ওর সবকিছুই বোধহয় লম্বা।” (সব মেয়ে হিহি করে হাসতে লাগল।)
লতা: “চুপ কর, দুষ্টু! কী বকছিস?”
সরিতা: “হায়… সত্যি বলছি, ও যদি আমার সঙ্গে শুত, তাহলে এতদিনে… (হিহি করে হাসে)”
লতা: “এবার মার খাবি তুই। তোর এত আগুন জ্বলছে, যা ম্যানেজারের কাছে।”
সরিতা: (মুখে একটু বিষণ্ণতা ফুটে উঠল, তবে সামলে নিয়ে) “শিবের মতো কেউ হতে পারে? তুই বল, ওর মতো কেউ আছে?”
লতা: (সরিতার বিষণ্ণতা লক্ষ করে, নিজের কথায় আফসোস হলো। হেসে বলল) “সত্যি, ওর মতো ছেলে এখানে কোথায় পাবি? ও তো অন্যরকম।”
“চল, এখন কথা থামা। সবাই কাজে মন দে, বাচ্চারা ক্ষুধার্ত।”
সবাই তাড়াতাড়ি খাবার তৈরি করল। ছোট বাচ্চাদের আগে খাইয়ে তারপর বড়রা খেতে বসল।
লতা: “এই রঞ্জন, যা শিবকে ডেকে আন।”
রঞ্জন: “ঠিক আছে, দিদি।”
সে শিবকে ডাকতে তার ঘরে গেল। শিব চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিল। ঘামে ভেজা জামা খুলে ফেলেছিল। রঞ্জন তাকে দেখে থমকে গেল। তার শরীরের পেশি স্পষ্ট। কিছুক্ষণ সে তাকে দেখতে লাগল। তার হৃৎপিণ্ডে ঝড় উঠছিল। সে এখন যুবতী, তার মনে নতুন অনুভূতি জাগছে। শিবকে এভাবে দেখে তার মনে হচ্ছিল, গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে। কোনোমতে নিজেকে সামলে সে কাসি দিল।
রঞ্জন: “উহু… উহু…”
শিব: (না তাকিয়ে, রুক্ষ গলায়) “কী হলো?”
রঞ্জন: “খেতে আয়।”
শিব: “খাব না।”
রঞ্জন: “ঠিক আছে, আমি দিদিকে পাঠাচ্ছি।”
শিব: (চোখ পাকিয়ে) “আসছি।”
রঞ্জন হেসে চলে গেল। রান্নাঘরে সবাই শিবের জন্য অপেক্ষা করছিল। শিব এসে খেতে বসল। খাওয়ার পর আবার ঘরে ফিরে গেল। কিছুক্ষণ পর লতা এল। শিব শুয়ে ছিল, তাকে দেখে উঠে দাঁড়াল।
লতা: “কী হলো তোর?”
শিব: “দিদি, তুমি এমন করছ যেন কিছুই জানো না।”
লতা: “দেখ, আমি জানি। কিন্তু তুইও জানিস এসব তো রোজ হয়। এতে মনে কষ্ট নেওয়া উচিত নয়। তবে তুই তো খুব ভালো নম্বর নিয়া পাশ করেছিস।”
এই বলে লতা তাকে জড়িয়ে ধরল। শিবের মনও ঠিক হয়ে গেল। সে লতাকে জোরে বুকে জড়িয়ে ধরল।
লতা: “আহ! আস্তে, তোর মধ্যে কত শক্তি এসে গেছে, জানিস?”
শিব: “দুঃখিত, দিদি। আমি তো এখনো বাচ্চা। আমার মধ্যে শক্তি কোথায়?”
লতা: “বাচ্চা? কত লম্বা হয়ে গেছিস। এখন তো আমি তোর সামনে বাচ্চা লাগি। কারো নজর না লাগুক।” (এই বলে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।) “এবার বড় কলেজে যাবি। কাল গিয়ে ভর্তি হয়ে নে।”
শিব: “আমার এক শিক্ষক কলেজে কথা বলে রেখেছেন। স্কলারশিপও পেয়েছি। ভর্তি হয়ে যাবে।”
লতা: “এমনই মন দিয়ে পড়। এই ছোটখাটো ব্যাপারে মন দিস না। আমাদের তো আর কিছু নেই। তুই ভালো পড়াশোনা করলে ভালো চাকরি পাবি, জীবন গড়ে তুলবি।”
শিব: “আমার নয়, দিদি, আমাদের। আমি তোমাকে সঙ্গে রাখব।”
লতা: (হেসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে) “পরের কথা পরে দেখা যাবে।”
শিব: “না, দিদি, তুমি আমার সঙ্গেই থাকবে। আমার কসম খাও।”
লতা: (হেসে) “ঠিক আছে, বাবা। এতে কসম কোথায় এল? চল, এখন বিশ্রাম কর। আমাকেও বিশ্রাম করতে হবে।”
দুজনে শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ পর ঘুমিয়ে পড়ল। সেদিন আর কিছু হলো না। দুপুরে সবাই মিলে কাপড় ধুলো। শিব ভারী বালতি তুলে শুকোতে দিচ্ছিল, রঞ্জন আর বীণা মিলে কাপড় শুকোচ্ছিল। পরদিন শিবের ভর্তির জন্য যেতে হবে। সকালে লতা তাকে ডেকে তুলল। চা-নাস্তা খাইয়ে বলল,
লতা: “চল, তাড়াতাড়ি। তোকে স্নান করিয়ে দিই।”
লতা অনেকবার শিবকে স্নান করিয়েছে। ছোটবেলায় তো রোজ একসঙ্গে স্নান করত। শুধু দুজন নয়, অনেক ছেলেমেয়ে একসঙ্গে স্নান করত। কিন্তু বড় হওয়ার পর সবাই আলাদা স্নান করতে শুরু করেছে। তবে মাঝেমধ্যে লতা শিবকে স্নান করিয়ে দিত। এটা নতুন কিছু নয়। আজও সে শিবকে ঘষে ঘষে স্নান করাচ্ছিল। কিন্তু এখন দুজনেই বড় হয়েছে। অজান্তেই তাদের মধ্যে কিছু অনুভূতি জাগছিল। তারা এখনো এটা বুঝতে পারেনি, কিন্তু শিবের লতার স্পর্শ, তার শরীরে হাত বোলানো ভালো লাগছিল। লতারও এটা করতে ভালো লাগছিল। স্নান শেষ হলে শিব তৈরি হয়ে ভর্তির জন্য বেরিয়ে গেল। তখন ম্যানেজার তাকে ডাকল।
ম্যানেজার: “কোথায় যাচ্ছিস?”
লতা: (শিবের বদলে উত্তর দিয়ে) “ও কলেজে ভর্তির জন্য যাচ্ছে।”
ম্যানেজার: “পড়ে কী করবে? ওকে বল কোনো কাজ-ধান্দা দেখে এখান থেকে চলে যাক।”
লতা: “ওর এখন পড়তে হবে।”
ম্যানেজার আর বেশি কথা বাড়াল না। শিব ভর্তির জন্য চলে গেল।
ম্যানেজার: “কতবার বলেছি, ওকে এত আঁকড়ে থাকা বন্ধ কর। তুই এখানে থাকতে চাস তো থাক, কেউ মানা করেনি।”
লতা: “ও এখনো ছোট। আগে ওকে পড়তে দাও, আমরা নিজেরাই চলে যাব।”
ম্যানেজার জানত, শিবকে বের করলে লতাও চলে যাবে। তার লতার যৌবন লুট করার ইচ্ছা ছিল, তাই আর কিছু বলল না। লতা কাজে লেগে গেল। শিব নতুন কলেজে পৌঁছল। এটা তার আগের কলেজের তুলনায় অনেক বড়। আশ্রমের একমাত্র ছেলে সে, যে এই কলেজে পৌঁছেছে। এটা ছিল আধা-সরকারি কলেজ, ফি কম ছিল। শিব স্কলারশিপ পেয়েছিল, তাই ফি দিতে হয়নি। অনেক ছেলেমেয়ে তাদের মা-বাবার সঙ্গে এসেছিল। শিব যখন তাদের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল, কিছু ছেলে ঈর্ষার চোখে, আর মেয়েরা মুগ্ধ হয়ে তাকে দেখছিল। শিবের লম্বা গড়ন তাকে সবার থেকে আলাদা করে তুলেছিল। সে অফিসে গিয়ে সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করল। এক সপ্তাহ পর কলেজ শুরু হবে। তারপর সে আশ্রমে ফিরল।
ম্যানেজার কোথাও বাইরে গিয়েছিল। মেয়েরা কাজে ব্যস্ত ছিল। লতা তাকে দেখে জিজ্ঞাসা করল,
লতা: “সব ঠিকঠাক হয়ে গেল?”
শিব: “হ্যাঁ, দিদি।”
লতা: “ঠিক আছে, কাপড় বদলে নে। একটু পর খাবার তৈরি হবে।”
শিব ঘরে গিয়ে কাপড় বদলাল। তারপর ছোট বাচ্চাদের সঙ্গে খেলতে লাগল। রঞ্জন আর অন্য মেয়েরাও খেলছিল। শিবও তাদের সঙ্গে মিশে গেল। বাচ্চাদের সঙ্গে বাচ্চা হয়ে তাদের হাসাচ্ছিল। রঞ্জন হাসছিল।
রঞ্জন: “কলেজে সব হয়ে গেল?”
শিব: (স্বাভাবিকভাবে) “হ্যাঁ, হয়ে গেছে। একটা কথা জিজ্ঞাসা করব?”
রঞ্জন: (প্রশ্নবিদ্ধ চোখে) “এতে জিজ্ঞাসার কী আছে? যা জিজ্ঞাসা করবি, কর।”
শিব: “তোরা দুজন কলেজে ভর্তি হবি না?”
রঞ্জন: “হতে তো চাই। কিন্তু তুই এখন আলাদা কলেজে যাবি, আমাদের কলেজ আলাদা হয়ে যাবে। ভয় করছে।”
শিব: “এতে ভয়ের কী আছে? তুই কি ভয় পাস? তুই তো এমন যে সবার হাওয়া টাইট করে দিস।”
রঞ্জন: (হেসে লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে) “আমি কি এত খারাপ?”
শিব: “আমি বলতে চাইছি যে, তুই খুব সাহসী। আর আমি তো আছিই। কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলিস।”
রঞ্জন: (দ্বিধায় তাকিয়ে, কিছু না বলে)
শিব: “আর কিছু বলবি?”
রঞ্জন: (আড়ষ্ট হয়ে) “না, আর কিছু না।”
বীণা: “তুই তো জানিস আমাদের সঙ্গে কী হয়। আমরা আশ্রম থেকে এসেছি শুনলে কেউ আমাদের সঙ্গে কথা বলে না। এতদিন আমরা তিনজন ছিলাম। এখন শুধু আমরা দুই মেয়ে। তাই ভয় করে।”
শিব: “তাই তুই কলেজ ছাড়তে চাস? তোরা কি মনে করিস আমার সঙ্গে এসব হবে না? আমরা অনাথ, এতে আমাদের দোষ নেই। লোকে বলে তো বলুক। তাদের কথায় আমরা কি নিজেদের ক্ষতি করব? জীবনে এগোতে হলে, ভালো জীবন গড়তে হলে পড়াশোনা করতেই হবে। লোকে কী বলে, তা উপেক্ষা করতে হবে। তারাও বাচ্চা, তারা জানে না অনাথ হওয়া কী। তাদের পরিবার আছে, তাই তারা এসব বোঝে না। আমাদের কী? আমাদের তো ভবিষ্যৎ গড়তে হবে। এমন লোকদের উপেক্ষা কর।”
রঞ্জন: “ওই ম্যানেজারও তো কত বিরক্ত করে।”
শিব: “আমি দিদির সঙ্গে কথা বলব। তবে তুই পড়ায় মন তৈরি কর।”
রঞ্জন: “ঠিক আছে, তুই যদি সাহায্য করিস, আমি কলেজে যাব।”
বীণা: “আমিও।”
এমন সময় সরিতা এসে সবাইকে খেতে ডাকল। সবাই ছোট বাচ্চাদের নিয়ে খেতে গেল। বাচ্চাদের খাইয়ে বড়রা খেতে বসল।
শিব: “দিদি, তোমার সঙ্গে কথা ছিল।” (লতা তার দিকে তাকাল।) “দিদি, রঞ্জন আর বীণা পড়াশোনা ছাড়তে চেয়েছিল। আমি তাদের বোঝালাম। এখন তারা কলেজে যেতে রাজি।”
লতা: (দুজনের দিকে তাকিয়ে) “তাহলে যা। এতে জিজ্ঞাসার কী আছে?”
রঞ্জন: “কিন্তু ওই ম্যানেজার…” (কথা অসম্পূর্ণ রাখল।)
সরিতা: “ওর কী? আমি ওই নীচ লোকটাকে দেখে নেব। তোরা চিন্তা করিস না। পড়তে চাস তো পড়। বাকি আমরা দেখব। তাই না, লতা?”
লতা: “হ্যাঁ, তোরা চিন্তা করিস না।”
শিব: “দিদি, তুমিও তো পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছ। তুমিও ভর্তি হয়ে যাও।”
লতা: “এখানে আমরাই বড়। আমাদের এই দায়িত্ব নিতে হবে। তোরা পড়, বাকি আমরা দেখব।”
আর কোনো তর্ক হলো না। সবাই খেয়ে নিজের ঘরে শুতে গেল। কিছুক্ষণ পর লতা এল।
লতা: “বড় বুদ্ধিমান হয়ে গেছিস। নিজের সঙ্গে সঙ্গে অন্যদেরও চিন্তা করতে শুরু করেছিস।”
শিব: (হেসে) “তোমার কাছ থেকেই শিখেছি, দিদি। তুমি সবার এত চিন্তা করো, আমি তো শিখবই। তবে দিদি, তোমার পড়াও তো জরুরি।”
লতা: “জরুরি তো, কিন্তু কী করব? আর পড়াশোনার জন্য কলেজে যাওয়া জরুরি নয়। পড়াশোনা আমাদের বুদ্ধি বাড়ায়। এখন তুই আমাকে পড়াবি।”
শিব: “এটা ভালো। এতদিন তুমি আমাকে পড়িয়েছ, এখন আমি তোমাকে পড়াব।”
লতা: (হেসে) “ঠিক আছে। কাল ওদের ভর্তি করিয়ে আনিস। তোর কী হলো, সব ঠিকঠাক হয়েছে তো?”
শিব: “হ্যাঁ, দিদি। আমার এক শিক্ষক আগেই কথা বলে রেখেছিলেন। কোনো সমস্যা হয়নি। তবে দিদি, একটা কথা ভাবছিলাম।”
লতা: “কী?”
শিব: “দিদি, পড়াশোনার সঙ্গে যদি কোনো কাজ খুঁজি?”
লতা: “কেন, কী দরকার?”
শিব: “দিদি, পড়াশোনার জন্য বাড়তি বই, ইউনিফর্ম, ছোটখাটো খরচের জন্য তো টাকা লাগে। এখানে থাকা-খাওয়া পাওয়া যায়, তবে… তুমি তো বুঝছ।”
লতা: “তুই ঠিক বলছিস। কিন্তু তাতে তোর পড়াশোনার ক্ষতি হবে।”
শিব: “না, দিদি, আমি সব ম্যানেজ করব।”
লতা: “ঠিক আছে। কিন্তু কী কাজ করবি?”
শিব: “এখনো ভাবিনি। কিছু একটা করব।”
লতা: “ঠিক আছে, যা ভালো মনে করিস।”
বি:দ্র:
নতুন গল্প সবার আগে পেতে টেলিগ্রামে @sStory69 সার্চ করুন। সাইটে আপডেট আসে ২ দিন পর।
গল্পের প্রথম আলো ছড়ায় সেখানেই, সরাসরি আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে।
Posts: 667
Threads: 2
Likes Received: 410 in 359 posts
Likes Given: 486
Joined: Jun 2023
Reputation:
12
•
Posts: 591
Threads: 0
Likes Received: 278 in 264 posts
Likes Given: 512
Joined: Jan 2024
Reputation:
6
•
Posts: 75
Threads: 5
Likes Received: 418 in 67 posts
Likes Given: 11
Joined: Dec 2024
Reputation:
66
খুব ভালো হচ্ছে ভাইয়া। পাশে আছি।
•
Posts: 6
Threads: 1
Likes Received: 19 in 5 posts
Likes Given: 0
Joined: Oct 2025
Reputation:
2
আপডেট - ৩
সেদিন আর কিছু ঘটল না। পরদিন রঞ্জন আর বীণার ভর্তি হয়ে গেল। তারা একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হলো। তাদের কলেজও এক সপ্তাহ পর শুরু হবে। শিব বাজারে ঘুরতে গেল কাজ খুঁজতে। হাঁটতে হাঁটতে এক জায়গায় একটা বোর্ড দেখল, যেখানে কাজের জন্য ছেলে চাওয়া হচ্ছে। এটা ছিল একটা জিম। সে সেখানে গেল। জিমটা খালি ছিল। অফিসে একজন লোক বসে ছিল।
শিব: “আমি কি ভেতরে আসতে পারি?”
লোকটি: (শিবকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখে) “এসো।”
শিব: “ধন্যবাদ, স্যার। আমি বাইরে বোর্ড পড়লাম, আপনার কাজের জন্য ছেলে চাই।”
লোকটি: “হ্যাঁ, চাই। তুমি কে?”
শিব: “স্যার, আমার নাম শিব।”
লোকটি: “কোথায় থাকো?”
শিব: “জানকীদাস আশ্রমে।”
লোকটি: (অবাক হয়ে) “তুমি অনাথ?”
শিব: “জি, স্যার।”
লোকটি: “তাহলে তোমাকে কাজ দিতে পারব না।”
শিব: “কেন, স্যার?”
লোকটি: “আমার এমন ছেলে চাই, যে এখানে সব সামলাতে পারে, টাকার লেনদেন করতে পারে। তুমি টাকা নিয়ে পালালে কে গ্যারান্টি নেবে?”
শিব: “স্যার, কেউ গ্যারান্টি নিলেও যদি সে চুরি করে পালায়, তবে গ্যারান্টারের দোষে আপনার ক্ষতি পুষিয়ে দেবে না। আমার কেউ গ্যারান্টি নেবে না বলে কি আমি কোথাও কাজ করতে পারব না? একটা মানুষের কোনো মূল্য নেই? আপনি বড়, অভিজ্ঞ। কাউকে চিনতে পারেন না? আমি বছরের পর বছর এখানে আছি। আশ্রমে জিজ্ঞাসা করতে পারেন আমি কেমন। তবে ম্যানেজারের কাছে জিজ্ঞাসা করবেন না, সে ভালো মানুষ নয়। আমার আগের কলেজের যেকোনো শিক্ষকের কাছে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।”
লোকটি: (শিবকে গভীরভাবে দেখে হাসল) “কতদূর পড়েছ?”
শিব: “স্যার, দশম শ্রেণি পাশ করেছি। এখন একাদশ শ্রেণিতে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি।”
লোকটি: “তাহলে পার্ট-টাইম কাজ খুঁজছ। ভালো কথা। এখানে সকাল আর সন্ধ্যায় আসতে হবে। মাসে ২৫০০ টাকা বেতন। কে কখন এল, কে গেল, কার টাকা জমা, কার বাকি এসব হিসাব রাখতে হবে। পারবে?”
শিব: “জি, পারব। ধন্যবাদ, স্যার।”
লোকটি: “কাল সকাল ছটায় চলে আসবি, আর সন্ধ্যায় সাতটায়। বাকি কাল বুঝিয়ে দেব।”
শিব: “জি, স্যার। (দ্বিধা করে) আপনার নাম জানতে পারি?”
লোকটি: (হেসে) “আমার নাম পবন।”
শিব: “ধন্যবাদ, স্যার। কাল থেকে আসব।”
শিব আশ্রমে ফিরে লতাকে এই খুশির খবর দিল। লতাও খুব খুশি হলো। রাতে খাবারের প্রস্তুতি চলছিল। শিব আর মেয়েরা বাচ্চাদের সঙ্গে খেলছিল।
শিব: (রঞ্জন আর বীণার দিকে) “তোদের ভর্তি হয়ে গেছে। এখন পড়াশোনায় মন দিতে হবে।”
রঞ্জন: “তুই বলেছিলি আমাদের সাহায্য করবি।”
শিব: “হ্যাঁ, কী সাহায্য চাই?”
রঞ্জন: “রোজ আমাদের সঙ্গে পড়তে বসবি।”
শিব: “ঠিক আছে, কাল থেকে রোজ আমার সঙ্গে পড়তে বসবি।”
লতা আর সরিতা কথা বলছিল। লতা যখন বলল শিব কাজ পেয়েছে, সবাই খুশি হলো।
সরিতা: “লতা, তোর মনে হয় না শিব আমাদের সবার থেকে আলাদা?”
লতা: (প্রশ্নবিদ্ধ চোখে) “না, কেন মনে হচ্ছে?”
সরিতা: “দেখ, আমাদের দেখে মনে হয় আমাদের মা-বাবা গরিব পরিবারের ছিল, যারা আমাদের দেখাশোনা করতে পারেনি। কিন্তু শিবকে দেখে মনে হয় কোনো বড়লোকের ছেলে। তার রং-রূপ, লম্বা গড়ন, সব এমন যেন কোনো বড় বাড়ির দীপ। আমরা তো তার সামনে কিছুই না। তবে তুই আলাদা। তুই দেখতে ভালো, রঙও ফর্সা। কিন্তু শিবের কথাই আলাদা।”
লতা: (ভাবনায় পড়ে) “তুই ঠিক বলছিস। আমি যতদূর জানি, ওর মা-বাবার খোঁজার অনেক চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু কিছু পাওয়া যায়নি। জানি না ওর কুন্ডলীতে কী লেখা আছে যে ও এখানে এসেছে।”
সরিতা: (মজা করে হেসে) “ওর কুন্ডলী জানি না, কিন্তু আমাদের কুন্ডলী ভালো যে ও আমাদের সঙ্গে আছে।”
লতা: (চোখ দেখিয়ে) “কী বলতে চাস?”
সরিতা: “আরে, ও এমন সুন্দর, সজ্জন যুবক আমাদের সঙ্গে। আমাদের ভাগ্য ভালো যে ও আমাদের সঙ্গে। আমাদেরও ভাগ্যের সুযোগ নেওয়া উচিত।”
লতা: “দুষ্টু, এমন অশ্লীল কিছু ভাবিস না। ও খুব ভালো ছেলে।”
সরিতা: “ভালো হলে কি কারো সঙ্গে কিছু করবে না? ও যদি আমার সঙ্গে শুত, তাহলে এতদিনে আমি তাকে আমার ওপর তুলে নিতাম।”
লতা: “লজ্জা করে না এমন কথা বলতে?”
সরিতা: “আরে, যে লজ্জা করে তার কপাল ফাটে। আমি এমন সুযোগ ছাড়ব না। ও যদি আমাকে বলে, আমি তো পাজামার দড়ি খুলে দেব। এমন ছেলে আমার মতো মেয়ের কপালে কোথায় মিলবে? ও এত লম্বা, ওর সবকিছুই নিশ্চয় লম্বা। এটা ভাবলেই আমার শরীরে শিহরণ হয়। কী চমৎকার হতো যদি ও আমার দিকে মন দিত।”
লতা: “এবার মার খাবি, যদি আমার শিবের ব্যাপারে এমন বলিস।”
সরিতা: “ওহো, আমার শিব?”
লতা: (তাড়াহুড়ো করে) “দুষ্টু, আমার মানে আমার ভাইয়ের ব্যাপারে এমন বললে।”
সরিতা: “তুই কেন ওর বোন হয়ে গেলি? এই ভুল করিস না। তোর ভাগ্য ভালো যে ও তোর জীবনে এসেছে। সুযোগ হাতছাড়া করিস না। ওকে তোর ওপর তুলে নে। তোর এই সুন্দর যৌবন দিয়া কী আচার বানাবি?”
লতা: (সরিতার কথা শুনে একবার মনে হলো শিব তার ওপর উঠে গেছে। এই ভেবে তার শরীরে একটা ঝড় উঠল। পায়ের মাঝে একটা সাড়া জাগল। কোনোমতে নিজেকে সামলে বলল) “দুষ্টু, তোর নোংরা চিন্তা তোর কাছেই রাখ। ও আমার ভাই। রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও সম্পর্ক তো আছে।”
সরিতা: “কেন ভাগ্যকে পায়ে ঠেলছিস? ও এখন বড় হয়েছে। ছেলে বড় হলে তারও একটা মেয়ের সঙ্গ দরকার। যদি ওর বাইরে কেউ পছন্দ হয়ে যায়, তাহলে তুই হাত মলতে থাকবি। এবার তোর ইচ্ছা।”
লতা: “এই বাজে কথা বন্ধ করে কাজে মন দে।”
দুজনে কাজে লেগে গেল। রাতের খাবার খেয়ে সবাই নিজের নিজের জায়গায় ঘুমোতে গেল। আশ্রম বড় ছিল, ঘুমানোর কোনো সমস্যা ছিল না। বাচ্চাদের ঘরে বা আলাদা ঘরে সবাই নিজের মতো ঘুমোত। শিব আর লতা ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে ঘুমোয়, এটা এখনো চলছে। আজ লতা ঘরে এসে চুপিচুপি শিবকে দেখছিল। সরিতার কথাগুলো যেন তার মনে জাদু করেছে। সে এখন পুরো যুবতী, তাই তার মনে কোনো পুরুষের প্রতি আকর্ষণ জাগা স্বাভাবিক। কিন্তু সে এর আগে এসব ভাবেনি। আজ সরিতার কথায় তার মন বিগড়ে গেছে। সে অদ্ভুত দৃষ্টিতে শিবকে দেখছিল। তার মনে যেন যুদ্ধ চলছিল। শিব লক্ষ করল লতা দিদি অদ্ভুত আচরণ করছে। যখনই তার দৃষ্টি যায়, লতা চোখ নামিয়ে নেয়।
শিব: “কী হলো, দিদি?”
লতা: “ক-কিছু না। কিছুই তো নয়।”
শিব: “কিছু তো হয়েছে। তুমি আমাকে এই ভাবে দেখছ কেন?”
লতা: (গলা শুকিয়ে গেল) “ক-কেমন দেখছি?”
শিব উঠে লতার কাছে গিয়ে তাকে দেখল। লতাও তাকে একদৃষ্টে দেখছিল। শিব তাকে জড়িয়ে ধরল। লম্বা শিবের সঙ্গে লতা যেন ছোট্ট মেয়ে। তার মাথা শিবের বুক পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছিল। শিব তাকে বুকে জড়াতেই লতার চোখ বন্ধ হয়ে গেল। তার হাত শিবের কোমর জড়িয়ে ধরল। কিছুক্ষণ এভাবেই কাটল। লতা যেন অন্য জগতে।
শিব: (আদরের সুরে) “কী হলো, দিদি?”
লতা: “তুই… তুই আমাকে ছেড়ে যাবি না তো?”
শিব: (আরও জোরে জড়িয়ে) “কী বলছো দিদি, আমি কেন তোমাকে ছাড়ে যাবো?”
লতা: (আরও জোরে জড়িয়ে) “তোর বিয়ে হয়ে গেলেও?”
শিব: (হেসে) “কী দিদি, তুমি এই সব কী কী ভাবছ! আমি এখনো এত বড় হইনি যে তুমি এসব ভাবছ। আর তুমি তো জানো, আমাদের মতো মানুষকে কেউ বিয়ে করবে না।”
লতা: “আমাদের কথা আলাদা। কিন্তু তোর ব্যাপার আলাদা।”
শিব: “এই কথার কী মানে?”
লতা: “তুই এত সুন্দর, এত ভালো। তোর জন্য মেয়েরা লড়াই করবে। তোর বিয়ে নিশ্চয় হবে।”
শিব: “তাও আমি তোমাকে আমার সঙ্গে রাখব। আর আমার বিয়ে হলে তোমারও তো হবে।”
লতা: “আমাদের মতো মেয়েদের কে বিয়ে করবে?”
শিব: “কেন, দিদি? তুমিও তো এত সুন্দর। তোমারও বিয়ে হবে।”
লতা: “যদি না হয়?”
শিব: “তাহলে আমি তোমাকে আমার সঙ্গে রাখব।”
লতা: “যদি তোর বউ না মানে?”
শিব: (বিরক্ত হয়ে) “কী ফালতু কথা বলছো দিদি, আজ তুমি কী খেয়েছ যে এসব নিয়ে বসে গেছ? চলো, আমার ঘুম পাচ্ছে।”
দুজনে আলাদা হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল। শিব চোখ বন্ধ করে ঘুমোতে লাগল। কিন্তু লতার ঘুম কোথায়? সে শিবকে একদৃষ্টে দেখছিল। আজ প্রথমবার সে তাকে একজন মেয়ের দৃষ্টিতে দেখছিল।
লতা: (মনে মনে) “সরিতা ঠিকই বলছিল। আমার ভাই কত মিষ্টি।”
‘ভাই’ শব্দটা মনে আসতেই সে নিজের ওপর লজ্জা পেল। কিন্তু তার মনের ওপর যেন তার নিয়ন্ত্রণ ছিল না। সে শিবের একটা হাতের ওপর মাথা রাখল। শিব তাকে বুকে জড়িয়ে নিল। এটা নতুন কিছু নয়, প্রায়ই হতো। কিন্তু আজ লতার মনে একটা অদ্ভুত শান্তি ছিল। কিছুক্ষণ পর সে ঘুমিয়ে পড়ল।
সকালে উঠে দেখল শিব গভীর ঘুমে। তার মুখে শান্তি। লতা ঝুঁকে তার কপালে চুমু খেল। তারপর তার ঠোঁটের দিকে তাকাল। সে এগিয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু সামলে নিল। শিবকে ডেকে তুলল, কারণ আজ তাকে কাজে যেতে হবে। শিব উঠে তৈরি হয়ে জিমে চলে গেল।
সকাল ৫:৪৫-এ শিব জিমের বাইরে দাঁড়িয়ে। কিছুক্ষণ পর পবন স্যার এলেন। শিব তাকে গুড মর্নিং বলল। তারাও গুড মর্নিং বলে ভেতরে গেলেন। জিমটা চমৎকার। সব যন্ত্র ছিল। বড় বড় আয়না লাগানো। পবন স্যারের একটা কেবিন ছিল। প্রবেশপথে রিসেপশন, যেখানে একটা কোণার টেবিল আর চেয়ার ছিল, পেছনে দুটো লকার। যন্ত্রের জন্য একটা বড় ঘর, আরেকটা ঘর খালি, যেখানে কার্পেট পাতা, সেখানেও আয়না। এছাড়া একটা চেঞ্জিং রুম আর স্টোররুম ছিল। সব মিলিয়ে বড় জিম।
পবন: “ভেতরে আয়। নাম কী বলেছিলি?”
শিব: “জি, স্যার, শিব।”
পবন: “দেখ, শিব, এখানে অনেক ধনী লোক আসে। তাদের সঙ্গে সম্মান দিয়ে কথা বলবি। দুজন ট্রেনার আছে, তারা এখন আসবে। তাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব। ফি স্ট্রাকচারের ফাইল আছে, একটু পরে বুঝিয়ে দেব। আমরা কী কী সুবিধা দিই, তার ব্রোশার আছে। ভালো করে পড়ে নিস। আজ আমি সব সামলাব, তুই শুধু দেখবি।”
শিব: “জি, স্যার।”
এমন সময় একটা মেয়ে এল। পবন স্যারকে গুড মর্নিং বলে শিবের দিকে একবার তাকিয়ে চেঞ্জিং রুমে গেল। বেরিয়ে এলো জ্যাকেট খুলে, টাইট ব্যায়ামের পোশাকে। শিব এমন পোশাকের মেয়ে কখনো দেখেনি। তার শরীরের সব উঁচুনিচু স্পষ্ট। শিব দু-এক সেকেন্ড তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিল। তার মুখে লজ্জা দেখে মেয়েটি হাসল। সে ২১-২২ বছরের, ফর্সা, সুন্দরী। শিবের থেকে সামান্য ছোট। চুল পনিটেল করা। পবন স্যার এসে পরিচয় করালেন।
পবন স্যার: “জুহি, এ শিব। আজ থেকে রিসেপশন আর অন্য কাজ দেখবে।”
জুহি: (শিব তাকে হ্যালো বলল, সে হেসে উত্তর দিল। শিবকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখল।) “এবার মেয়ে নিলেন না কেন, স্যার?”
পবন স্যার: “জুহি, তুমি জানো, মেয়েরা সকালে সহজে আসে না। বিবাহিত হলে ঘরের কাজ থাকে। অবিবাহিত হলে বিয়ে বা অন্য কারণে চলে যায়। তাদের শেখাতে যে পরিশ্রম হয়, তা আবার করতে হয়। তাই এবার ছেলে নিলাম।”
জুহি: “ঠিক ভেবেছেন।”
এমন সময় কিছু মহিলা এলেন। কেউ বয়স্ক, কেউ তরুণী। তাদের পোশাক দেখে বোঝা যাচ্ছিল তারা ধনী ঘরের। সবাই জুহি ম্যাডামকে গুড মর্নিং বলল। জুহি হেসে উত্তর দিলেন। তিনি একটা রেজিস্টার বের করলেন। সবাই নাম, সই আর সময় লিখলেন। কেউ কেউ চেঞ্জিং রুমে গেলেন। কেউ ব্যায়ামের পোশাক পরে এসেছিলেন, ব্যাগে সাধারণ পোশাক নিয়ে। কেউ সাধারণ পোশাক পরে এসে ব্যায়ামের পোশাক নিয়েছিলেন। কিছুক্ষণ পর আরও মহিলা আর মেয়ে এল। সবাই শিবকে একবার দেখছিল, কারণ সে নতুন। তবে কেউ বিশেষ প্রতিক্রিয়া দেখাল না। কেউ খালি ঘরে, কেউ যন্ত্রের ঘরে গেল। সব জায়গায় স্বচ্ছ দরজা আর আয়না ছিল, তাই শিব সব দেখতে পাচ্ছিল। এমন দৃশ্য সে কখনো দেখেনি। তবু সে উপেক্ষা করার চেষ্টা করল। ব্রোশার পড়তে শুরু করল। মাসিক, তিন মাস, ছয় মাস, এক বছরের ফি আর লকারের ভাড়া লেখা ছিল। সে মন দিয়ে পড়ছিল। এক ঘণ্টা কীভাবে কেটে গেল বুঝলাম না। মহিলারা একে একে বেরিয়ে চেঞ্জিং রুমে পোশাক বদলে চলে গেল। তারা কথা বলছিল, সই করে বেরিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর পুরুষ আর ছেলেরা আসতে লাগল। একই রুটিন। সবাই সই করল, পোশাক বদলে ব্যায়াম শুরু করল। শিব দেখল, একজন সবাইকে গাইড করছে। পবন স্যার তার কাছে এলেন।
পবন স্যার: “কেমন লাগল, শিব? এখানে কাজ করতে পারবি?”
শিব: “জি, স্যার।”
পবন স্যার: “এই ব্যাচ সকাল আটটায় শেষ। তারপর একটু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা করে, যন্ত্র ঠিক জায়গায় রাখার পর তুই ফ্রি।” (ইশারায় গাইডকে ডাকলেন।) “এ শিব, রিসেপশন আর অন্য কাজের জন্য। আর এ মদন।”
শিব: “হ্যালো, স্যার।” (মদনও পেশিবহুল, গড়নে মাঝারি। হেসে শিবের পিঠে চাপড় দিলেন।)
পবন স্যার: “ব্যায়ামে শখ থাকলে ফাঁকা সময়ে করতে পারিস।”
শিব: “ধন্যবাদ, স্যার।”
সময় হয়ে গেল। শিব সব গুছিয়ে পরিষ্কার করল। জিমটা এসি ছিল, ধুলোর সমস্যা ছিল না। সব শেষ করে সে আশ্রমে ফিরল।
#পরবর্তী পর্ব কী হবে? শিবের নতুন কাজ কেমন চলবে? লতার মনের ঝড় কোন দিকে যাবে? আপনাদের মতামত কমেন্ট করে জানান।
বি:দ্র: টেলিগ্রামে সার্চবারে স্পেস ছাড়া @sStory69 লিখে সার্চ করুন।
Posts: 591
Threads: 0
Likes Received: 278 in 264 posts
Likes Given: 512
Joined: Jan 2024
Reputation:
6
•
Posts: 75
Threads: 5
Likes Received: 418 in 67 posts
Likes Given: 11
Joined: Dec 2024
Reputation:
66
•
Posts: 6
Threads: 1
Likes Received: 19 in 5 posts
Likes Given: 0
Joined: Oct 2025
Reputation:
2
আপডেট - ৪র্থ পর্ব
লতা যখন বলল, “এসে গেছিস? হাত-মুখ ধুয়ে নে, তারপর নাস্তা দিচ্ছি। আর হ্যাঁ, একটু কাঠও কেটে দিস।” শিব নাস্তা করে কাঠ কাটতে লাগল। সে কুঠার দিয়ে একটার পর একটা কাঠ কাটছিল, ঘামে তার শরীর ভিজে উঠেছিল। এমন সময় রঞ্জন এসে হাজির। কাঠের স্তূপ তখনও খুব বেশি জমেনি, তাই সে শিবের পাশে বসে তাকে দেখতে লাগল। তার চোখে কৌতূহল আর একটা অদ্ভুত মুগ্ধতা। শিবের শক্ত হাতের প্রতিটি কুঠারের ঘায়ে তার পেশি ফুলে উঠছিল, আর রঞ্জনের চোখ সেদিকেই আটকে যাচ্ছিল।
রঞ্জন: (হালকা হেসে) “তোর চাকরির প্রথম দিন কেমন গেল?”
শিব: (কাঠ কাটা থামিয়ে তার দিকে তাকিয়ে) “ভালোই ছিল।”
রঞ্জন: (একটু ইতস্তত করে) “তুইও কি তাহলে এখান থেকে চলে যাবি?”
শিব: (অবাক হয়ে, ভ্রু কুঁচকে) “কোথায় চলে যাব?”
রঞ্জন: (চোখে একটা উদ্বেগ নিয়ে) “যারা টাকা রোজগার শুরু করে, তারা তো এখান থেকে চলে যায়। তুইও কি তাই করবি?”
শিব: (মুচকি হেসে) “না, যাব না।”
রঞ্জন: (উৎফুল্ল হয়ে) “সত্যি?”
শিব: (মাথা নাড়িয়ে) “হ্যাঁ, বাবা। আমি কেন যাব? এই চাকরিটা তো আমি আমাদের সবার জন্য করছি।”
রঞ্জন: (ভ্রু কুঁচকে) “সবার জন্য মানে?”
শিব: “দেখ, আমরা পড়াশোনা করছি। পড়াশোনার জন্য শুধু টেক্সটবুক নয়, আরও কিছু বই লাগে। আর ছোটখাটো জিনিস পেন, পেনসিল, এসব। এগুলো কে দেবে আমাদের? তাই এই চাকরি খুঁজে নিয়েছি।”
রঞ্জন: (উৎসাহে চোখ চকচক করে) “তার মানে তুই আমাদের জন্যও এগুলো এনে দেবি?”
শিব: (হেসে) “হ্যাঁ, তা তো বটেই।”
রঞ্জন: (খুশিতে উচ্ছ্বসিত হয়ে) “তুই কত ভালো, শিব!”
শিব: “আরে, কথা বন্ধ কর। এবার কাঠগুলো গুছিয়ে নে।”
রঞ্জন: (দুষ্টুমি করে) “হয়ে যাবে। এখন আমাকে একটু বসতে দে।”
শিব মুচকি হেসে আবার কাঠ কাটায় মন দিল। দুজনে এটা-সেটা নিয়ে গল্প করতে লাগল। হঠাৎ রঞ্জন হালকা চিৎকার করে উঠল, “আউচ!” সে তার পায়ের কাছে হাত ঘষতে লাগল, মুখে ব্যথার ভাব।
রঞ্জন: (ব্যথায় কাতরে) “আউচ! আউচ! আইইই!”
শিব: (চিন্তিত হয়ে) “কী হলো? এমন করছিস কেন?”
রঞ্জন: (কষ্টে মুখ কুঁচকে) “কিছু একটা ভেতরে ঢুকে গেছে… আউচ! কামড়াচ্ছে!”
রঞ্জন এদিক-ওদিক নড়াচড়া করতে লাগল, কীটটা বের করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু ব্যথা সহ্য না হওয়ায় সে হঠাৎ তার কুর্তার নিচের দিকটা তুলে ফেলল। শিবের চোখ যেন স্থির হয়ে গেল। রঞ্জনের ব্রায় আটকে থাকা তার বুকের উঁচুনিচু অংশ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। বেচারি কীটের কামড় থেকে বাঁচতে এতটাই উদ্বিগ্ন ছিল যে, শিবের সামনে তার এই অবস্থার কথা মনেই ছিল না। কিন্তু কীটটা তখনও কামড়ে যাচ্ছিল। সে আরও অস্থির হয়ে ব্রা-টাও নিচ থেকে তুলে ফেলল। তার দুটো স্তন বেরিয়ে এলো, আর শিব দেখল, একটা কীট তার শরীর থেকে মাটিতে পড়ে গেল। শিবের দৃষ্টি রঞ্জনের স্তনে আটকে গেল। দুটো গোলাকার, উঁচু উঠে থাকা স্তন, তাদের চারপাশে গাঢ় বাদামি রঙের গোলাকার ছাপ, আর মাঝখানে ছোট ছোট দানার মতো বোঁটা। যেন দুটো নারকেলের টুকরো উল্টো করে বুকে লাগানো। কীটের কামড়ের জায়গায় লালচে দাগ পড়ে গিয়েছিল। তারা যেখানে ছিল, সেখানে কাঠের স্তূপের আড়ালে কেউ তাদের দেখতে পাচ্ছিল না।
কীটটা বেরিয়ে যেতেই রঞ্জনের হুঁশ ফিরল। সে বুঝল, সে শিবের সামনে কী অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। শিবের দিকে তাকাতেই দেখল, শিব তার স্তনের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে। লজ্জায় যেন তার মাটির নিচে ঢুকে যাওয়ার ইচ্ছে হলো। তাড়াতাড়ি ব্রা আর কুর্তা নামিয়ে সে সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে গেল।
শিব মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইল। তার চোখের সামনে রঞ্জনের সেই দৃশ্য ভাসছিল। কিছুক্ষণ পর তার হুঁশ ফিরল। নিচের দিকে তাকিয়ে দেখল, তার প্যান্টের সামনে উঁচু হয়ে আছে। তার শরীরের সেই অঙ্গ, যা সে এতদিন শুধু প্রস্রাবের জন্য ব্যবহার করেছে, সেটা এখন শক্ত হয়ে উঠেছে। তার হৃৎপিণ্ডে ঝড় উঠছিল। কোনোমতে কাজ শেষ করে সে কাঠগুলো নিজেই গুছিয়ে রান্নাঘরে রেখে এলো। হাত-পা ধুয়ে ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ল। কিন্তু তার চোখের সামনে রঞ্জনের সেই উন্মুক্ত স্তনের ছবি ঘুরছিল। চোখ বন্ধ করেও সে সেই দৃশ্য থেকে মুক্তি পাচ্ছিল না।
লতা যখন তাকে খেতে ডাকতে এলো, তখনও সে অন্যমনস্ক। লতার ডাক শুনে সে চমকে উঠল। তার চোখ অজান্তেই লতার বুকের দিকে চলে গেল। আজ পর্যন্ত সে কখনো লতাকে এভাবে দেখেনি। লতা লক্ষ করল, শিব তার বুকের দিকে তাকিয়ে আছে। এটা তার কাছে অদ্ভুত লাগল, কিন্তু সেই সঙ্গে তার মনে একটা অজানা ঢেউ উঠল। সে শিবের কাছে গিয়ে তাকে ঝাঁকালো।
শিব: (লতার চোখে তাকিয়ে, আমতা আমতা করে) “ক-ক-কিছুনা?”
লতা: “কোথায় হারিয়ে আছিস? চল, খেতে।”
শিব: (তাড়াতাড়ি করে) “হ্যাঁ… হ্যাঁ… চলো।” (আবার তার চোখ লতার বুকের দিকে চলে গেল। তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিয়ে) “তুমি যাও, আমি আসছি।”
লতা: “জলদি আয়।” (বলেই মুখ ফিরিয়ে চলে গেল।)
খানিক পরে শিব খেতে গেল। খাবার টেবিলে বসে তার চোখ রঞ্জনকে খুঁজছিল। রঞ্জন চোখ নামিয়ে খাচ্ছিল। তার হৃৎপিণ্ড জোরে জোরে ধুকপুক করছিল। রঞ্জনের অবস্থাও একেই অবস্থা, শিব এসেছে জেনে সে চোখ তুলতে পারছিল না। তার হৃৎপিণ্ডও তেমনি দ্রুত লাফাচ্ছিল। একবার সে সাহস করে শিবের দিকে তাকাল। দুজনের চোখাচোখি হতেই দুজনেই তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিল। রঞ্জনের মুখে লজ্জার সঙ্গে একটা হালকা হাসি ফুটে উঠল।
বীণা: (রঞ্জনের পাশে বসে, কনুই দিয়ে হালকা ধাক্কা দিয়ে) “কী রে, একা একা হাসছিস কেন?”
রঞ্জন: (বীণার দিকে তাকিয়ে, লজ্জায় চোখ নামিয়ে) “কিছু না।” (কিন্তু তার মুখের হাসি তখনও রয়ে গেছে।)
বীণার কাছে ব্যাপারটা অদ্ভুত লাগল, তবে সে আর বেশি ঘাঁটল না। খাওয়া শেষ হলে শিব তার ঘরে চলে গেল। লতাও কাজ শেষ করে এলো। শিবকে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকতে দেখে সে তার পাশে বসল। শিব যখন তার বুকের দিকে তাকিয়েছিল, সেই দৃশ্য তার মনে পড়ল। এটা প্রথমবার। এই অদ্ভুত আচরণ তার কাছে বিস্ময়কর, তবে সেই সঙ্গে তার মনে একটা অজানা উত্তেজনা জাগল।
লতা: (শিবের কপালে হাত রেখে, আলতো করে) “কী হয়েছে, শিব?”
শিব: (চোখ খুলে লতার হাসিমুখ দেখে নিজেও হাসল) “কিছু না, দিদি। এমনিই শুয়ে ছিলাম।”
লতা: “সন্ধ্যায় কটায় যেতে হবে?”
শিব: “সাতটায়, দিদি।”
লতা: “সেখানে সব ঠিক আছে তো?”
শিব: “হ্যাঁ, দিদি। খুব বেশি কাজ নেই। শুধু দেখাশোনা করতে হয়।”
লতা তার পাশে শুয়ে পড়ল। দুজনে এটা-সেটা গল্প করতে করতে একটু ঘুমিয়ে পড়ল।
সন্ধ্যায় শিব জিমে পৌঁছল। তখন কিছু ছেলে আর পুরুষ ব্যায়াম করছিল। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ সবাই চলে গেল। শিবও আশ্রমে ফিরে এলো। সে ফ্রেশ হয়ে দেখল, লতা তার জন্যই অপেক্ষা করছে। সবাই খাওয়া শেষ করেছে। দুজনে একসঙ্গে খেতে বসল। রঞ্জন কোথাও দেখা যাচ্ছিল না। সরিতা আর বাকি মেয়েরা কাজে ব্যস্ত ছিল। বীণা তাদের কাছে এলো।
বীণা: “কিছু লাগবে, দিদি?”
লতা: “না, বীণা। তুই কাজ কর। কিছু লাগলে আমি নিয়ে নেব।”
বীণা: “ঠিক আছে, দিদি। শিব, একটা কথা জিজ্ঞাসা করব?”
শিব: “জিজ্ঞাসা কর, এতে জিজ্ঞাসার কী আছে?”
বীণা: “আমি ভাবছিলাম, আমরা আজ থেকেই পড়াশোনা শুরু করতে পারি। কলেজ শুরু হওয়ার আগে একটু প্রস্তুতি হয়ে যাবে।”
লতা: “এ তো দারুণ কথা! তুই পড়াশোনায় এত উৎসাহ দেখাচ্ছিস, ভালো লাগল।”
বীণা: “শিব বোঝালো, তাই মনে হলো আমাদেরও পড়তে হবে। জীবনটা ভালো করতে হলে পড়াশোনা জরুরি।”
লতা: (শিবের দিকে হেসে তাকিয়ে) “ভালো কথা।”
শিব: “ঠিক আছে, একটু পরে তোদের ঘরে গিয়ে বসব।”
বীণা চলে গেল। খাওয়া শেষ করে সবাই নিজের নিজের কাজে লেগে গেল। লতা আর সরিতা শিবের ঘরে এলো। তারা গল্প করতে চাইছিল। শিব কয়েকটা বই নিয়ে রঞ্জন আর বীণার কাছে গেল। ঘরে ঢুকে দেখল, রঞ্জন একা বিছানায় শুয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে আছে। শিবের আসার কথা সে খেয়ালই করেনি। শিব তাকে দেখতে দেখতে আবার সেই দৃশ্য মনে পড়ল। তার চোখ অজান্তেই রঞ্জনের বুকের দিকে চলে গেল। রঞ্জন শুয়ে থাকায় তার বুকের উঁচুনিচু অংশ স্পষ্ট।
ছোট হলেও সেগুলো যেন নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছিল। রঞ্জন হঠাৎ টের পেল কেউ ঘরে এসেছে। শিবকে দেখে, আর তার দৃষ্টি তার বুকের দিকে লক্ষ করে, সে লজ্জায় মুখ লাল করে উঠে বসল। শিবও তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে তার মুখের দিকে তাকাল। রঞ্জন চোখ নামিয়ে হালকা হাসছিল, তার মুখে লজ্জার লালিমা ছড়িয়ে পড়েছিল। ঠিক তখনই বীণা ঘরে ঢুকল।
বীণা: “এসে গেছিস?”
শিব: (বীণার দিকে তাকিয়ে) “হ্যাঁ।”
বীণা: “চল, উঠ রঞ্জন। শিবকে পড়ার জন্য ডেকেছি।”
রঞ্জন: “কিন্তু কলেজ তো এখনও খুলেনি, তাই না?”
বীণা: “তাতে কী হয়েছে? যখন ঠিক করেছি পড়ব, তখন পড়তেই হবে।”
রঞ্জন উঠে তাদের কাছে এলো। তখনও সে শিবের সঙ্গে চোখাচোখি করতে পারছিল না। শিবেরও তেমনি লজ্জা হচ্ছিল। তিনজনে মেঝেতে বসে পড়তে শুরু করল। দুজন মেয়ে শিবের সামনে বসেছিল। অন্যদিকে, লতা আর সরিতা গল্পে মগ্ন। আজও তাদের আলোচনার বিষয় শিব।
সরিতা: “তো, শিব এখন রোজগার করছে। তাহলে কি সে অন্য ছেলেদের মতো এখান থেকে চলে যাবে?”
লতা: “না, সে তেমন নয়। আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না।”
সরিতা: (খোঁচা মেরে) “ওহো! আমাকে ছেড়ে? কী ব্যাপার, এত ভরসা তার ওপর?”
লতা: (একটু ঘাবড়ে) “হ্যাঁ…” (নিজেকে সামলে) “মানে, সে আমাকে ছেড়ে যাবে না। ও নিজেই বলেছে। আর যদি কখনো যায়, আমাকে সঙ্গে নিয়ে যাবে।”
সরিতা: (মুচকি হেসে) “আচ্ছা? আর সে তোর সঙ্গে কী সম্পর্কে থাকবে?”
লতা: “কী সম্পর্কে মানে? সে আমাকে দিদি বলে, তাই না?”
সরিতা: “দিদি বললেই কি তুই তার বোন হয়ে গেলি? আর দুনিয়ার লোক কি মানবে যে তোরা ভাই-বোন?”
লতা: “কেন, রক্তের সম্পর্কই কি সব? আমাদের মনের সম্পর্ক আছে।”
সরিতা: “ঠিক আছে, বাবা। আমি এ নিয়ে তর্ক করতে চাই না। সময় এলে দেখা যাবে। আচ্ছা, এবার বল, তোরা দুজন কীভাবে শুস?”
লতা: “কীভাবে শুই মানে? যেমন সবাই শোয়।”
সরিতা: “আরে, আমার লক্ষ্মী, মানে কাছাকাছি শুস, না দূরে দূরে?”
লতা: “কাছাকাছিই শুই। তাতে কী?”
সরিতা: (একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে) “হায়! এমন সুন্দর, যুবক ছেলে আমার পাশে শুত, আমি তো ঘুমোতেই পারতাম না। ওর সঙ্গে লেপটে যেতাম। তোরা কি আলাদা শুস, না লেপটে?”
লতা: “কখনো আলাদা, কখনো লেপটে। তাতে কী হয়েছে?”
সরিতা: (উত্তেজিত হয়ে) “হায়! তোর কিছু হয় না?”
লতা: “কী হয়?”
সরিতা: “তুই একদম বোকা। ছাড়, তোকে কী বোঝাব। যৌবনের রঙ কী, তুই কী বুঝবি? আচ্ছা, বল, শিব কখনো তোকে গভীরভাবে দেখে?”
লতা: (চট করে) “গভীরভাবে দেখা মানে কী?”
সরিতা: “আরে, আমার প্রিয়তমা, মানে, সে কখনো তোর পেছনের দিকে বা তোর বুকের উঁচুনিচু জায়গায় তাকায়?”
লতা: (শিবের বুকের দিকে তাকানোর কথা মনে পড়ল। একটু অস্বস্তি হলো, তবে সামলে নিয়ে) “না।”
সরিতা: “দেখছিস, সেও তোর মতোই বোকা।”
লতা: (মারার ভঙ্গিতে) “কী বলছিস?”
সরিতা: “তা না তো কী বলব? তোরা দুজনেই যুবক-যুবতী হয়েছিস, তবু তোদের মধ্যে কোনো কামনা জাগেনি।”
লতা: “কী বলতে চাস?”
সরিতা: “আরে, আমি বলতে চাইছি, যখন ছেলে-মেয়ে যুবক হয়, তখন তারা একে অপরের প্রতি আকর্ষিত হয়। ছেলেকে মেয়ে আকর্ষণ করে, মেয়েকে ছেলে। তুই তো শিব ছাড়া আর কারো সঙ্গে মিশিস না, তাই তোর কিছু হয়নি। কিন্তু শিব তো তোর বাইরেও অনেক মেয়ের সঙ্গে দেখা করে, তবু তার মেয়েদের প্রতি কোনো আকর্ষণ নেই। এই বয়সে ছেলেরা মেয়েদের শরীরের দিকে আকৃষ্ট হয়ই। এটা স্বাভাবিক। তারা মেয়েদের এমনভাবে দেখে, যেন এখনই তাদের গিলে ফেলবে। আর মেয়েরাও চায় কোনো ছেলে তার সঙ্গে সেসব করুক। কিন্তু তোরা যেন অন্য গ্রহের প্রাণী!”
লতার মনে হঠাৎ সেই মুহূর্তটা ফিরে এলো, যখন শিব তার বুকের দিকে তাকিয়েছিল। শিব কি তার শরীরের প্রতি আকৃষ্ট? এই ভেবে তার গাল লাল হয়ে উঠল। তার মনে নানা প্রশ্ন জাগতে লাগল। কিন্তু সে সরিতার কাছে কিছু বলতে চাইল না। সরিতা কি ছাড়বে?
সরিতা: “তোদের মধ্যে কিছু গোলমাল নেই তো? আমাকে পরীক্ষা করতে হবে।”
লতা: “কী পরীক্ষা করবি?”
সরিতা: “এই যে, তোরা স্বাভাবিক কি না?”
লতা: (হেসে) “তুই কি ডাক্তার যে আমাদের পরীক্ষা করবি?”
সরিতা: “আমার প্রিয়, এসব পরীক্ষা করতে ডাক্তার হওয়ার দরকার নেই। অভিজ্ঞতা লাগে, আর সেটা আমার আছে।”
লতা: (বিভ্রান্ত হয়ে) “তুই কী করতে চাস?”
সরিতা: “জানতে চাস কি না, তুই স্বাভাবিক কি না?”
লতা: (একটু ভেবে) “হ্যাঁ।”
সরিতা: “তাহলে আমাকে পরীক্ষা করতে দে। আগে দরজাটা বন্ধ করি।” (সে দরজা বন্ধ করে এলো। লতা তাকে দেখছিল।) “এবার চোখ বন্ধ কর।” (লতা না করায়) “আরে, কর না!”
লতা: (চোখ বন্ধ করল। হঠাৎ সে তার একটা স্তনে সরিতার হাতের স্পর্শ টের পেল। তাড়াতাড়ি চোখ খুলে একটু রেগে) “এটা কী করছিস?”
সরিতা: “জানতে চাস না? না চাইলে থাক, আমি যাই।”
লতা: (ভাবল, সত্যিই জানতে হবে আমি স্বাভাবিক কি না। তাই হাল ছেড়ে দিয়ে) “ঠিক আছে।”
সরিতা: “তাহলে চোখ বন্ধ কর। এবার চোখ খুলবি না। আর ভাব, কোনো ছেলে তোর সঙ্গে এসব করছে। অনুভব কর, তোর কেমন লাগছে।”
লতা কিছু বলল না। চোখ বন্ধ করল কিন্তু কার কথা ভাববে? সে তো শুধু শিবকেই চেনে। তাহলে কি শিবের কথা ভাববে? এই ভেবেই তার মনে ঝড় উঠল। ঠিক তখনই সে তার একটা স্তনে সরিতার হাতের স্পর্শ টের পেল। সরিতা আলতো করে তার স্তন স্পর্শ করছিল। শিব যেন তার স্তন ছুঁয়ে দিচ্ছে, এই ভেবে লতার শরীরে সুড়সুড়ে শিহরণ জাগল। তার শ্বাস দ্রুত হয়ে উঠল। সরিতা যখন দুহাতে তার দুটো স্তন স্পর্শ করতে লাগল, লতা চোখ বন্ধ করে নিচের ঠোঁট দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরল। তার মুখ থেকে “উমম… উমম…উমম…” শব্দ বেরিয়ে আসছিল। তার শরীরের গোপন অঙ্গ থেকে রস ঝরতে শুরু করল। সেই সাড়া টের পেয়ে সে তার দুই উরু আরও চেপে ধরল। এই অনুভূতি তাকে এতটাই আনন্দ দিচ্ছিল যে, সে বোঝাতে পারবে না। কিছুক্ষণ পর সরিতা তাকে ছেড়ে দিল। লতা চোখ খুলে সরিতার দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকাল, যেন বলছে, “কেন বন্ধ করলি?” সরিতা মৃদু হাসছিল। লতা লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিল।
সরিতা: “লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। এসব স্বাভাবিক। এবার তো বোঝা গেল, তুই স্বাভাবিক। তোর মধ্যেও মেয়েদের মতো ভাবনা আছে।”
লতা: (নিজেকে সামলে হেসে) “আর কী বোঝা গেল, ডাক্তার সাহেবা?”
সরিতা: (ডাক্তারের সুরে) “আর বোঝা গেল, মিস লতা, তুই চাইছিলি এটা যেন চলতে থাকে। ঠিক বললাম, না?”
লতা: (লজ্জায় চোখ নামিয়ে)
সরিতা: “আমার প্রিয়, এতে লজ্জার কিছু নেই। প্রত্যেক মেয়েই চায় তার পছন্দের ছেলে তার সঙ্গে এসব করুক। এবার যা করতে চাস, তা সেই ছেলের সঙ্গে কর, যার কথা তুই চোখ বন্ধ করে ভাবছিলি।”
এই বলে সরিতা হেসে বেরিয়ে গেল। পেছনে রেখে গেল বিভ্রান্ত লতাকে। লতা অনেকক্ষণ বসে রইল। শিব কখন এলো, তাও খেয়াল করল না।
বি:দ্র: টেলিগ্রামে সার্চবারে স্পেস ছাড়া @sStory69 লিখে সার্চ করুন।
Posts: 591
Threads: 0
Likes Received: 278 in 264 posts
Likes Given: 512
Joined: Jan 2024
Reputation:
6
•
Posts: 3,053
Threads: 0
Likes Received: 1,360 in 1,208 posts
Likes Given: 45
Joined: May 2019
Reputation:
34
•
Posts: 137
Threads: 6
Likes Received: 160 in 71 posts
Likes Given: 19
Joined: Jul 2022
Reputation:
4
sundor, liked + reputation added
•
|