পর্ব ১
কলকাতার কাছে ছোট্ট শহর বারাসত। সেখানেই এক পৈতৃক বাড়িতে সপরিবারে বসবাস করে অয়ন মুখার্জি, তার বয়স এখন ৪৩। ওদের একটা ওষুধের দোকান আছে , পৈত্রিক দোকান, বাবার হাতে কাজ শিখে ২৫ বছর বয়সেই এই দোকানের দায়িত্ব নেয় অয়ন। গত দশ বছরে তাদের ওষুধের দোকানের চেহারাটাই পাল্টে গেছে। পুরনো দোকান ভেঙে তারা বানিয়েছে আধুনিক এক নতুন দোকান, আর ব্যবসাও হয়েছে বেশ রমরমা। তবে প্রায় ৩ বছর আগে অয়ন তার মা-বাবা কে হারায়। এখন পরিবার বলতে অয়নের স্ত্রী রুবি, বয়স ৩১, আর তাদের একমাত্র মেয়ে তৃষা, যার বয়স ১০।
তৃষার যখন আট বছর বয়স, তখন থেকেই অয়ন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে এবার তাদের বারাসতের পৈতৃক ভিটেবাড়ি বিক্রি করে দেবে। কারণ সে চায় মেয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। বারাসাত ছেড়ে তাই তারা পাড়ি জমায় কলকাতার দমদমে, যেখানে তারা একটি ফ্ল্যাট কেনে। মেয়েকে ভর্তি করে দেয় এক নামকরা কলেজে। নতুন পরিবেশে রুবি ও তৃষা মানিয়ে নিলেও, অয়নের জন্য এই পরিবর্তনটা ছিল বেশ ঝক্কির। কারণ তাকে রোজ দমদম থেকে বারাসাত যেতে হতো লোকাল ট্রেনে করে, তার ওষুধের দোকানে। এই যাওয়া-আসার পথে, পুরোনো শহর আর নতুন শহরের জীবনযাত্রার পার্থক্যটা তার চোখের সামনে ভেসে উঠতো।
বারাসাত ছেড়ে কলকাতায় এসে দুটি বছর কেটে গেছে। ফ্ল্যাটের নতুন জীবনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে সবাই, আর তৃষাও কলকাতার নতুন কলেজে বেশ ভালোই মানিয়ে নিয়েছে। সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল, কিন্তু গত কয়েকমাস ধরে অয়নের ব্যবসার ছবিটা পাল্টে যেতে শুরু করে। অনলাইনের মাধ্যমে ওষুধ কেনার প্রবণতা বাড়ায় তাদের দোকানে বিক্রি কমতে থাকে। এই রমরমা ব্যবসা ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে আসছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে অয়ন ঠিক করল, সে হোম ডেলিভারি আর আকর্ষণীয় ছাড়ের ব্যবস্থা করবে। কিন্তু এতে লাভের বদলে খরচই বাড়তে থাকে, আর তাদের জমানো টাকাও ধীরে ধীরে ফুরিয়ে আসে।
বড়ো বড়ো কোম্পানির সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে মার্কেটিং, বিজ্ঞাপন আর নতুন নতুন অফার দিতে গিয়ে সাত-আট মাসের মধ্যেই অয়নের সমস্ত জমানো টাকা শেষ হয়ে যায়। ব্যবসায় লাভের বদলে লোকসান হতে দেখে তার রাতের ঘুম উড়ে যায়। অবশেষে, আর কোনো উপায় না দেখে সে ঠিক করে, সব কথা তার স্ত্রী রুবিকে জানাবে। রাতেই রুবি যখন তাদের বেডরুমে আরাম করছিল, অয়ন তার পাশে গিয়ে বসে। রুবির আকর্ষণীয় রূপ, যা আজও তার মনে মুগ্ধতা জাগায়, সেদিকে তাকিয়ে অয়ন এক গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তারপর ধীরে ধীরে সে বলে ওঠে, "রুবি, তোমাকে একটা কথা বলতে চাই..." তারপর অয়ন সব কথা খুলে বলে রুবি কে। সবকিছু শুনে রুবি ও খুব চিন্তিত হয়।
ব্যবসার লোকসান শুধু আর্থিক সংকটই আনেনি, তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছিল অয়ন ও রুবির ব্যক্তিগত জীবনেও। মানসিক চাপ আর দুশ্চিন্তার কারণে অয়ন রাতে তার স্ত্রীকে আর আগের মতো সুখী করতে পারছিল না। শারীরিক ও মানসিক দূরত্ব তাদের সম্পর্কটাকে ধীরে ধীরে বিষাক্ত করে তুলছিল। ৩১ বছর বয়সী সুন্দরী ও আকর্ষণীয় রুবি, স্বামীর কাছ থেকে সেই উষ্ণতা আর ভালোবাসা না পেয়ে ক্রমশ খিটখিটে আর মেজাজি হয়ে উঠছিল। তাদের ভালোবাসার ঘরে এখন নেমে এসেছিল এক অস্বস্তিকর নীরবতা, যা তাদের দুজনের কষ্টকেই আরও বাড়িয়ে দিচ্ছিল।
ব্যবসার এই মন্দা থেকে বেরোনোর জন্য অয়ন নতুন করে কৌশল খুঁজতে থাকে। প্রতিদিন দোকান খুলে সে শুধু ভাবে, কী করলে আবার আগের মতো ব্যবসা জমবে। ঠিক এমন সময়ে তার এক পুরনো বন্ধু দোকানে আসে। তার কাছে সব কথা খুলে বলে অয়ন, কীভাবে তার ব্যবসার অবস্থা খারাপ হচ্ছে। কিন্তু বন্ধুটি তার কথা তেমন গুরুত্ব দেয় না, বরং ঠাট্টা করে বলে, "আরে, এত চিন্তা করছিস কেন! দোকানের শাটারটা নামিয়ে দে আর কিছুক্ষণের জন্য ছেলে-মেয়েদের প্রাইভেট সময় কাটানোর জায়গা দে। এতে ভালো রোজগার হবে।" বন্ধুর মুখে এমন কথা শুনে অয়ন যেন হতবাক হয়ে যায়।
বন্ধুর কথা শুনে অয়ন প্রথমে অবাক হলেও, তার মনের কোণে সেই কুবুদ্ধিটা কোথাও যেন বাসা বাঁধছিল। মনে মনে সে ভাবছিল, কে জানে, হয়তো একদিন সত্যি সত্যি তাকে এমন ঘৃণ্য পথই বেছে নিতে হবে। দেখতে দেখতে আরও দু'মাস কেটে গেল। দোকানের বিক্রি আরও কমে গেল, আর ওষুধ ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছে তার দেনার পরিমাণ আকাশ ছুঁলো। এক রাতে রুবিকে কাছে পাওয়ার আশায় অয়ন তার সঙ্গে মিলিত হওয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু মানসিক চাপের ভার এতটাই বেশি ছিল যে এক মিনিটের আগেই তার সমস্ত ক্ষমতা লুপ্ত হয়ে গেল, আর সেই চেষ্টাও ব্যর্থ হলো।
অয়নের সেই ব্যর্থ চেষ্টাগুলো আরও কয়েকদিন ধরে চলল, কিন্তু তার ফল হলো একই— হতাশা। তার প্রতিটি ব্যর্থতা রুবিকে আরও বেশি কামুক আর অস্থির করে তুলছিল। শরীরের চাহিদা আর অতৃপ্তি তাকে যেন কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিল। একদিন রাতে তাদের মধ্যেকার নীরব দূরত্ব যখন চরমে, তখন রুবি আর নিজেকে সামলাতে পারল না। অয়নকে আঘাত করে সে স্পষ্ট বলে দিল, "মনে হয় এবার সুখ পেতে আমাকে অন্য কোনো পুরুষের শরীরের নিচে শুতে হবে।" রুবির এই কথাগুলো অয়নের বুকে ছুরির ফলার মতো বিঁধে গেল।
পর্ব ২
অয়ন আর রুবির দাম্পত্য জীবনের প্রথম দিকে তাদের সম্পর্ক ছিল গভীর বিশ্বাস আর উষ্ণ ভালোবাসার। তাদের শারীরিক সম্পর্কও ছিল খুবই খোলামেলা। বিয়ের আগেই রুবি অয়নকে জানিয়েছিল যে তার জীবনের প্রথম ভালোবাসার মানুষটির কাছে সে তার কুমারীত্ব হারিয়েছিল, আর অয়নের উদার মন তাতে কোনো আপত্তি জানায়নি। আসলে তারা দুজনেই ছিল খোলা মনের মানুষ। বিয়ের পরেও তারা নানা রকম রোমাঞ্চকর খেলায় মেতে উঠত, যেখানে রুবি তার প্রাক্তন প্রেমিককে আর অয়ন তার পছন্দের কোনো বৌদি বা মেয়েকে কল্পনা করে রোল প্লে 'র মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করত। সেইসব দিনে তাদের ভালোবাসা ছিল বাধাহীন, যা এখন কেবলই অতীত।
অনেক ভাবনাচিন্তা আর ঋণের বোঝা কাঁধে নিয়ে অয়ন শেষমেশ এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিল। সে ঠিক করল, দোকানের পেছনে যে স্টোররুমটি আছে, সেটিকেই সে তরুণ-তরুণীদের জন্য ঘন্টা হিসেবে ভাড়া দেবে। তার মনে হয়েছিল, এই নতুন উপায়ে ভালোই রোজগার হবে এবং তাদের আর্থিক সংকট কিছুটা হলেও মিটবে। এক রাতে, আবারও রুবি কে সুখ দিতে ব্যর্থ হওয়ার পর অয়ন রুবিকে তার এই পরিকল্পনার কথা জানায়। রুবির চোখে প্রথমে অবিশ্বাস আর চমক থাকলেও, অয়নের করুণ অবস্থা দেখে সে শেষ পর্যন্ত রাজি হতে বাধ্য হয়। তবে সে অয়নকে সতর্ক করে দেয়, যেন সবকিছু অত্যন্ত গোপনে করা হয়, যাতে এই খবর কোনোভাবেই বাইরে ফাঁস না হয়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী অয়ন দোকানের পেছনের স্টোররুমটা ভালো করে পরিষ্কার করে নিল। ভেতরে একটা ছোট খাট আর দুটো চেয়ার ও টেবিল দিয়ে সাজিয়ে সে ঘরটা প্রস্তুত করল। এরপর ধীরে ধীরে সেখানে তরুণ-তরুণীদের আনাগোনা শুরু হলো। ঘণ্টা প্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা রোজগার হতে লাগল, আর অনেক যুগল অয়নের দোকান থেকেই কন্ডোম কিনত। ওষুধ কেনার অজুহাতে তারা দোকানে আসত, আর অয়ন পাশ দিয়ে এঁকে-বেঁকে যাওয়া গলিটা দেখিয়ে দিত, যেখান দিয়ে তারা সোজা পেছনের ঘরে যেতে পারত। এভাবেই অয়নের নতুন ব্যবসা রমরমিয়ে চলতে শুরু করল।
অয়নের দোকানের তিন কিলোমিটার দূরে ছিল 'শান্তি গার্লস হোস্টেল'। দেখা গেল, সেই হোস্টেলের মেয়েরাই তাদের প্রেমিকদের নিয়ে বেশি আসত। এভাবেই সব চলছিল, যখন অয়ন লক্ষ্য করল এক সুদর্শন যুবককে। তার বয়স তিরিশ-বত্রিশের মতো হবে, পরনে দামি পোশাক, জিম করা শরীর, বেশ লম্বা, আর বাইরে দাঁড়িয়ে থাকত তার বিলাসবহুল গাড়ি। সেই ছেলেটি ছিল অয়নের দোকানের নিয়মিত খদ্দের, কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো, সে প্রতিবারই একটি নতুন মেয়েকে নিয়ে আসত। অয়নের মনে কৌতূহল জাগলেও সে তাতে কান দিত না। কিন্তু একদিন অয়ন অবাক হয়ে দেখল, মেয়েটির সঙ্গে ব্যক্তিগত সময় কাটানোর পর যুবকটি তাকে এক মোটা টাকার বান্ডিল দিচ্ছে। টাকার অঙ্ক টা বুঝতে না পারলেও, টাকার পরিমাণ দেখে অয়ন বুঝতে পারলো যে ১৫-২০ হাজার হবে। কিন্তু তার মাথায় একটা প্রশ্ন ঘুরতে লাগল—এই মেয়েগুলো তো হোস্টেলের ছাত্রী, এরা তো দেহ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত নয়!
পর্ব ৩
প্রায়ভেট রুমের খদ্দের বাড়তে দেখে অয়ন রুমের রেট ১০০০/- টাকা প্রতি ঘন্টা করে দিল। তাতে তার মাসে ৭০/৮০ হাজার টাকা আয় হতে শুরু করলো। লক্ষ লক্ষ টাকার দেনা এবং মেডিসিন ডিস্ট্রিবিউটরদের ধার মাথায় নিয়ে চলা অয়নের কাছে মাসিক সত্তর-আশি হাজার টাকা এখন আর শুধু আয় নয়, এটা যেন তার জীবনধারণের অক্সিজেনের মতো। এই বিপুল পরিমান ধার তার ভেতরে থাকা অপরাধবোধকে প্রায় পুরোপুরি মুছে দিয়েছে। সে এখন নিজেকে আর অন্যায়ের সহযোগী ভাবছে না, সে একজন বুদ্ধিমান ব্যবসায়ী, যে বাজারের চাহিদা বুঝে নিজের পণ্যের দাম বাড়াতে পেরেছে।
এরই মধ্যে একদিন সন্ধ্যায়, সেই সুদর্শন, বিলাসবহুল গাড়ির যুবকটি এল, সঙ্গে ২০/২২ বছরের একটা মেয়ে। অয়ন তাকে দেখে এক লহমায় চিনে ফেলল—এ যেন তার ব্যবসার 'সোনালী হাঁস'। যুবকটি ব্যক্তিগত কক্ষটি চাইতেই অয়ন অপ্রস্তুতভাবে জানাল যে ঘরটি অন্য একজন কাস্টমার চার ঘণ্টার জন্য বুক করে রেখেছে। যুবকের মুখে বিরক্তির ছাপ দেখে অয়ন বুঝল, এই কাস্টমারকে হাতছাড়া করা যাবে না।
তখনই অয়ন এক চটজলদি ব্যবসায়িক চাল চালল। সে দ্রুত একটি কাগজের টুকরোতে নিজের ব্যক্তিগত ফোন নম্বর লিখে যুবকটির হাতে ধরিয়ে দিল। "স্যার, এই নিন আমার নম্বর। পরের বার আসার আগে একবার ফোন করে দেবেন। আমি আপনার জন্য ঘরটা 'ব্লক' করে রাখব—তাতে অন্য কাস্টমার যত টাকাই দিক না কেন। আপনার মতো ভিআইপি কাস্টমার আমার কাছে সবার আগে।"
যুবকটি নম্বরটি পকেটে পুরে নিল এবং তার চোখেমুখে বিরক্তি বদলে ফুটে উঠল বিশেষ সুবিধা পাওয়ার সন্তুষ্টি। এই সামান্য ফোন নম্বর দেওয়া এবং ঘর 'ব্লক' করে রাখার প্রতিশ্রুতি অয়নের ব্যবসার এক নতুন দিগন্ত খুলে দিল।
ফোন নম্বর দিয়ে বিশেষ বুকিং-এর ব্যবস্থা করে দেওয়ার সেই ঘটনার পর, রানা (সেই সুদর্শন যুবক) আর কখনও না জানিয়ে আসত না। এখন সে প্রতিবার আসার আগে অয়নকে ফোন করে নিশ্চিত করত, এবং প্রায়শই রানা একাই সেই ঘরটা দিনের একটা বড় অংশের জন্য বুক করে রাখত। এভাবে বারবার ফোন করার সূত্র ধরে অয়ন আর রানার মধ্যে একটা পরিচিতি জন্ম নিল। রানা তার পরিচয় দিলো—সে এক ধনী পরিবারের সন্তান, তার বাবা একজন বিখ্যাত জুয়েলারি ব্যবসায়ী। টাকা-পয়সার কোনো অভাব নেই রানার।
অয়নের দোকানের পেছনে থাকা সেই ঘরটি এখন কার্যত রানার ব্যক্তিগত বিনোদনের জায়গায় পরিণত হল। সে সেখানে নিত্যনতুন মেয়েদের নিয়ে আসত এবং নিজস্ব সময় কাটাত। রানার এই নিয়মিত ভিআইপি বুকিং-এর ফলে অয়নের মাসিক আয় আরও স্থিতিশীল এবং নিশ্চিত হয়ে উঠল।
কিন্তু এই নিশ্চিত আয়ও অয়নকে স্বস্তি দিতে পারল না। এক দিকে লক্ষ লক্ষ টাকার দেনা শোধ করা, আর অন্য দিকে সংসার চালানো এবং মেয়ের ভবিষ্যতের চিন্তা—এই সমস্ত চাপ অয়নকে ঘুমাতে দিত না। সে বুঝতে পারছিল, এই সত্তর-আশি হাজার টাকা দিয়ে তার পুরনো ঋণ শোধ করতে বহু বছর লেগে যাবে, আর মেয়ের জন্য ভালো একটা ভবিষ্যৎ তৈরি করা যাবে না।
পর্ব ৪
এই পরিস্থিতিতে রুবি অয়নকে বারবার বলত যে সে কাজ করে আর্থিক সাহায্য করতে প্রস্তুত। অয়নের তাতে আপত্তি ছিল না, তবে বর্তমানের কঠিন চাকরির বাজারে কাজ পাওয়া সহজ ছিল না, তবুও রুবি তার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল।
এদিকে, রানা নিয়মিত ঘর বুক করতে থাকে, আর একদিন সে অয়নকে সারা রাতের জন্য ঘরটি বুক করতে চাইল। অয়ন তাতে রাজি হয়নি। কিন্তু রানা প্রথমে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করে এবং পরে টাকার পরিমাণ বাড়াতে শুরু করে। অবশেষে, অয়ন তাকে জানাল যে সে ভেবেচিন্তে বিষয়টি জানাবে এবং তখনই সে রুবিকে সব কথা বলল। রুবি একটি বুদ্ধি বের করে বলল যে দোকানের ঘর ভাড়া দেওয়ার দরকার নেই। বরং তাদের ফ্ল্যাটেই রানা ও তার সঙ্গিনীকে নিয়ে আসা হোক। তারা অয়ন ও রুবির বন্ধু এবং বন্ধুর স্ত্রী পরিচয়ে তাদের বাড়িতে আসবে এবং এক রাত সেখানে থাকবে। এতে কোনো সমস্যা হবে না। এই পরিকল্পনাতেই সবাই রাজি হলো এবং সেই অনুযায়ী রানাকে জানানো হলো, রানা নিজেও তাতে সম্মতি দিল।
পরের রবিবার অয়ন তার মেয়ে তৃষাকে দু’দিনের জন্য তার মাসির (রুবির বোনের) বাড়িতে রেখে আসার ব্যবস্থা করল। ঠিক রাত আটটা নাগাদ রানা তার নতুন সঙ্গিনী, রচনাকে নিয়ে ফ্ল্যাটে হাজির হলো। রুবি তাদের সাদরে অভ্যর্থনা জানাল এবং অয়ন রানার সঙ্গে রচনার পরিচয় করিয়ে দিল। রুবি নিজের হাতে সবার জন্য রাতের খাবার তৈরি করেছিল। রানা অন্য একটি মেয়েকে নিয়ে এলেও, তার চোখ কিন্তু বারবার রুবির আকর্ষণীয় দেহের দিকে ঘুরছিল—যেন সে চোখ দিয়েই তাকে উপভোগ করছে। রানার চোখ শুরু থেকেই রুবির ওপর আটকে ছিল। ৩১ বছর বয়সী এই নারী, যিনি ১২ বছরের বিবাহিত জীবন এবং ১০ বছরের একটি কন্যা সন্তানের মা, তার রূপে কোনো ঘাটতি ছিল না। রুবি ছিল ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি লম্বা, গায়ের রং উজ্জ্বল ফর্সা, এবং শরীর ছিপছিপে হলেও দারুণ কার্ভময়। তার শরীরের মাপ ছিল 34©-28-36—যা এক লহমায় যে কোনো পুরুষের চোখে কামনা জাগানোর জন্য যথেষ্ট ছিল। রানা তার সেই বিস্ময়কর ফিগারের দিকে বারবার তাকাচ্ছিল, যেন তার দৃষ্টি দিয়ে সে রুবিকে গিলে খাচ্ছিল। আহার পর্ব শেষ হলে অয়ন ও রুবি নিজেদের বেডরুমে চলে গেল, আর পাশের ঘরটি রানা ও রচনার জন্য প্রস্তুত ছিল।
রানা ও রচনা সারা রাত ধরে সম্ভবত ছয়-সাতবার মিলিত হয়েছিল। পাশের ঘর থেকে তাদের অবাধ উষ্ণতার শব্দ ভেসে আসায় অয়ন আর রুবির ঘুমে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটল। এই শব্দ শুনতে শুনতে রুবি মনে মনে কেবল ভাবছিল, “এতটা শারীরিক সক্ষমতা কী করে একজন মানুষের থাকতে পারে!” এই ভাবনা তার নিজের অতৃপ্ত শরীরকে আরও অস্থির করে তুলল। চরম কষ্টে নিজেকে সংযত রাখতে হলো রুবিকে। কথামতো পরদিন সকালে প্রাতরাশ সেরে রানা ও রচনা চলে গেল। এক রাতের এই ‘আতিথেয়তা’র জন্য রানা অয়নকে 30,000 টাকা পরিশোধ করল।
ঐ দিন রাতেই অয়ন ও রুবি গত রাতে রানা ও রচনার উদ্দাম শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে কথা বলছিল। দু-এক কথায় অয়ন বুঝতে পারল যে রানার যৌন সক্ষমতার কথা জানতে পেরে রুবি বেশ মুগ্ধ।
একসময় ইয়ার্কিচ্ছলে অয়ন রুবিকে জিজ্ঞেস করেই ফেলল যে, রুবিও কি রাতে সাত-আটবার সঙ্গম করতে চায়? রুবিও হাসির ছলে উত্তর দিল যে, সেও চায়, কিন্তু তার স্বামীর দ্বারা তো কিছুই হচ্ছে না।
অয়ন এই কথা শুনে বলল, “তোমার স্বামীর দ্বারাই হতে হবে তার তো কোনো মানে নেই!” এরপর সে রানাকে দিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার একটা প্রস্তাব দিল, বিশেষ করে রানা যেভাবে রুবির দিকে তাকাচ্ছিল, তাতে এই প্রস্তাব দেওয়া যেতেই পারে বলে অয়ন মনে করল।
উত্তরে রুবি খিলখিল করে হেসে উঠল। রানা যে তাকে বিশেষ নজর দিয়ে দেখছিল, সেই ব্যাপারটা রুবিও লক্ষ্য করেছিল। অনেকদিন পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একটু হাসি-ঠাট্টা হচ্ছিল। অয়ন আরও জানাল যে এমনটা হলে অয়নের রুবিকে অন্য পুরুষের সাথে সঙ্গম করতে দেখার ইচ্ছেটাও পূরণ হবে। বিয়ের পর প্রথম দিকে অয়ন কিন্তু রুবিকে জানিয়েছিল যে তার মধ্যে একটা কাকোল্ড (cuckold) ভাবনা আছে, এবং সে রুবির সাথে থ্রিসম ও গ্যাংব্যাং করতে চায়। রুবিও রাজি হয়ে বলেছিল যে কোনোদিন চেষ্টা করবে, কিন্তু তাড়াতাড়ি তাদের মেয়ে তৃষা জন্মে যাওয়ায় সেই ইচ্ছে আর পূরণ হয়নি।
এইরকম স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে করতে অয়ন উত্তেজিত হয়ে রুবিকে জড়িয়ে ধরল। গভীর ভালোবাসায় মিশে গেল দুটো শরীর। এবার আর ব্যর্থ হলো না অয়ন। আজ প্রায় আড়াই মিনিট পর্যন্ত নিজেকে ধরে রেখেছিল অয়ন, তারপর তার সব ক্ষমতা লুপ্ত হয়ে গেল। রুবির হয়তো এতে সম্পূর্ণ তৃপ্তি হলো না, কিন্তু আগের তুলনায় অনেকটা ভালো ছিল।
পর্ব ৫
দোকানের পেছনের অন্ধকার স্টোররুমটি, যা সাধারণত গোপন প্রণয়ের সাক্ষী থাকে, সেই রাতে হয়ে উঠল দুই পুরুষের এক অদ্ভুত আলাপচারিতার স্থান। রানা যখন হঠাৎ ফোন করে জানাল যে আজ সে ঘর বুক করবে না, অয়নের কপালে সামান্য ভাঁজ পড়লেও, পরক্ষণেই রানার মদ্যপানের প্রস্তাবে সে রাজি হয়ে গেল। “কী ব্যাপার রানা,” অয়ন হেসে বলল, “আজ রুম লাগবে না? নাকি সঙ্গী জুটল না?” রানা হাসল। “না অয়ন দা, আজ মনটা একটু অন্যরকম। ভাবছি, আজ আপনার সঙ্গে একটু বসে ড্রিঙ্কস করা যাক।“ অয়ন সম্মতি দিতেই শুরু হলো সেই গভীর নৈশ আড্ডা। বিকেল গড়াতে রাত নামল, আর হুইস্কির গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে দুজনই নিজেদের জীবনের কঠিন সত্যগুলো একে অপরের কাছে উজাড় করে দিতে শুরু করল।
পানীয়ের উষ্ণতায় অয়ন যেন সাহস খুঁজে পেল। সে তার বুকের ভেতরের চেপে রাখা দীর্ঘশ্বাসটা ফেলে রানাকে সব কথা খুলে বলল—কীভাবে তার পৈতৃক ফার্মেসি ব্যবসা ধুঁকছে, অনলাইন ব্যবসার সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে সে কীভাবে সর্বস্বান্ত হয়েছে। “আমার এখন লক্ষ লক্ষ টাকার দেনা মাথায়,” অয়ন ফিসফিস করে বলল, তার চোখদুটো যেন অন্ধকারে জ্বলছিল। “এই মাসিক সত্তর-আশি হাজার টাকা দিয়ে ঋণের একটা ভগ্নাংশও শোধ হবে না। তৃষার ভবিষ্যৎ অন্ধকারে... সব কিছু নষ্ট হয়ে গেল, রানা।“ অয়নের কণ্ঠস্বরে যে গভীর হতাশা ছিল, তা রানার মতো ধনী পরিবারের ছেলের কাছেও স্পষ্ট হয়ে উঠল।
অন্যদিকে, রানা শোনাল তার জীবনের গল্প—যেখানে টাকার কোনো অভাব নেই, কিন্তু আছে এক ভয়ঙ্কর শূন্যতা, যা সে পূরণ করে শুধু শরীরী উষ্ণতা দিয়ে।বাবা-মা এর ডিভোর্স হয়ে গেছে ৭ বছর আগে, তার মা বিয়ে করেছেন অন্য এক ব্যবসায়ী কে আর বাবা সবসময় ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত, কোলকাতা ছাড়াও আরও অনেক শহরে ওদের জুয়েলারী শোরুম আছে। বাবার সাথে রানার খুব একটা কথাবার্তা হয়না। রানা বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে এসে এখনে বাবার ব্যাবসা দেখাশোনা করে। রানা স্বীকার করল যে মেয়েদের প্রতি তার দুর্বলতা কতটা প্রকট। “দেখুন অয়ন দা,” রানা হেসে বলল, সেই হাসিতে ছিল এক শীতল ঔদ্ধত্য, “টাকা আমার কাছে কোনো সমস্যাই নয়। আমি চাই উন্মুক্ততা আর নতুনত্ব।“ সে এরপর জানাল যে সে কোনো পেশাদার নারী নয়, বরং কলেজ ও হোস্টেলের ২১/২২ বছর বয়সী মেয়েদের সঙ্গে একান্ত সময় কাটানোর জন্য অকাতরে টাকা খরচ করে। “তারাও জানে এটা এক ধরনের লেনদেন,” রানা বলল। “এক রাতের জন্য 30,000 থেকে 40,000 টাকা—এই দামে তারা আমার কাছে আসে। এতে কারও ক্ষতি হয় না, বরং দু’পক্ষেরই চাহিদা মেটে।“ সেই রাতে, তাদের এই আলাপচারিতা কেবল মদ্যপান ছিল না, ছিল দুটো ভিন্ন জগতের পুরুষের গোপন চুক্তি ও বাস্তবতার বিনিময়।
মদ্যপানের ঘোর কাটতে না কাটতেই, রানা হঠাৎ এক অবিশ্বাস্য প্রস্তাব দিল, যা অয়নের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখত। রানা বলল, “অয়ন দা, একটা কথা বলি। আপনার মেয়ের ভবিষ্যতের চিন্তাটা আমার উপর ছেড়ে দিন।“ এরপর সে জানাল যে দার্জিলিং-এ তার পিসির একটি বেসরকারি বোর্ডিং কলেজ আছে, নাম “হিমালয়স” (Himalayas)। তার পিসিই সেই কলেজের প্রিন্সিপাল।
গম্ভীর কণ্ঠে রানা বলল, “আমি আপনার মেয়ে তৃষাকে সেখানে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দিতে পারি।“ এই প্রস্তাব শুনে অয়ন যেন মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল। এত বড় আর্থিক দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি! তার মেয়ের জন্য একটা সুরক্ষিত ভবিষ্যতের হাতছানি! অয়নের মুখে এক মিশ্র অনুভূতি ফুটে উঠল—একদিকে বিশাল স্বস্তি, অন্যদিকে দ্বিধা। সে রানাকে বলল যে সে তার স্ত্রী রুবির সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে। তার মনে প্রশ্ন জাগল, তার ১০/১১ বছরের মেয়েকে এত দূরে ছেড়ে থাকতে হয়তো মন চাইবে না, কিন্তু একই সঙ্গে এটাও মনে হলো যে এত বড় আর্থিক সঙ্কট থেকে মুক্তি পাওয়ার এই সুযোগ হয়তো আর আসবে না।
সেদিন অনেক রাত করে নেশার ঘোর নিয়ে বাড়ি ফেরে অয়ন। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে, যখন রাতের পানীয়ের প্রভাব কাটল, তখনই সে রুবিকে বোর্ডিং কলেজের সেই অবিশ্বাস্য প্রস্তাবের কথা খুলে বলল। অয়ন প্রথমে ভয় পাচ্ছিল যে রুবি হয়তো এমন চরম সিদ্ধান্তে আপত্তি জানাবে।
কিন্তু অয়নকে অবাক করে দিয়ে রুবি কোনো আপত্তিই করল না। রুবি নিজে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর কলেজে ভর্তি হলেও, বিয়ে এবং সন্তান হওয়ার কারণে তার নিজের আর পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া হয়নি। নিজের অপূর্ণ স্বপ্ন সে পূরণ করতে চায় তার মেয়ের মাধ্যমে। তাই রুবি আবেগ চেপে রেখে স্থির কণ্ঠে বলল যে সে চায় তাদের মেয়ে তৃষা পড়াশোনা করে জীবনে বড় হোক, আর এই সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত নয়।
রুবি রাজি হতেই অয়ন আর দেরি করল না। সাথে সাথেই সে রানাকে ফোন করে জানিয়ে দিল যে তারা তাদের মেয়েকে দার্জিলিং-এর ‘হিমালয়াস্’ বোর্ডিং কলেজে পাঠাতে প্রস্তুত। যদিও তাদের ছোট মেয়ে তৃষা প্রথমে এই প্রস্তাবে রাজি হচ্ছিল না, কারণ মাকে ছেড়ে এত দূরে থাকার কথা সে ভাবতেই পারেনি। কিন্তু নিজেদের আর্থিক দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি এবং মেয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখিয়ে অয়ন আর রুবি অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে অবশেষে তৃষাকে রাজি করাল। একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে তারা দু’জনেই বুঝতে পারল—তাদের পারিবারিক জীবনের ভারসাম্যের জন্য এই বিচ্ছেদ ছিল অনিবার্য।
কথা মতো, রানা তার পরিচিতির সূত্র ধরে তৃষার ভর্তির সব ব্যবস্থা সম্পন্ন করল, এবং দার্জিলিং-এর ‘হিমালয়াস্’ বোর্ডিং কলেজে পৌঁছানোর জন্য একটি তারিখ ঠিক করে ট্রেনের টিকিট বুক করা হলো। এই যাত্রায় অয়ন, রুবি, তৃষার সঙ্গে রানাও যোগ দিল। পরিকল্পনা ছিল—তৃষাকে কলেজে পৌঁছে দিয়েই তারা পরের দিনের ট্রেনে করে কলকাতায় ফিরে আসবে।
দার্জিলিং-এর পর্ব শেষ হলো—তৃষাকে বোর্ডিং কলেজে রেখে আসার পর এক বুক শূন্যতা নিয়ে তারা কলকাতার ট্রেনে ফিরছিল। অয়ন মানসিকভাবে ক্লান্ত হলেও, তার চোখ রানা ও রুবির দিকে নিবদ্ধ ছিল। ফেরার পথে রানা যেন আরও বেশি খোলামেলা হয়ে উঠল। সে রুবির ঠিক পাশের সিটে বসে ছিল, এবং তাদের কথোপকথন ক্রমশ ব্যক্তিগত হয়ে উঠছিল। রানা রুবির পরিশ্রম এবং ধৈর্য্যের প্রশংসা করছিল, যা এক সাধারণ সৌজন্যের সীমা ছাড়িয়ে ব্যক্তিগত মুগ্ধতার দিকে ঝুঁকছিল। অয়নের মনে হলো, রানার প্রতিটি হাসির ভাঁজে যেন এক নীরব স্পর্ধা লুকিয়ে আছে।
রানা হাসি মুখে বলল, “আপনার এই সবুজ শাড়িটা খুব মানিয়েছে, রুবি বৌদি। আপনার মতো ‘ব্রাইট’ মানুষরা যে কোনো রং-কেই আরও বেশি উজ্জ্বল করে তোলে।“
রুবি লাজুক হেসে বলল, “আরে ধুর মশাই! কী যে বলেন! এই শাড়িটা তো পুরনো... আর ‘ব্রাইট’ কোথায়? এখন তো জীবনটাই পুরো ফ্যাকাশে!”
রানা তার দিকে ঝুঁকে এসে নরম স্বরে বলল, “ফ্যাকাশে! একদম নয়। আপনার চোখের দিকে তাকালে বোঝা যায়, ভেতরে কত আকাঙ্ক্ষা লুকিয়ে আছে। সেটাকে ফ্যাকাশে হতে দেবেন কেন? আপনার মতো মানুষের সব ‘ড্রিমস’ পূরণ হওয়া উচিত।“ এই শেষ বাক্যটি বলার সময় রানার কণ্ঠস্বরে যে গভীর ইঙ্গিত ছিল, তা রুবিও স্পষ্ট বুঝতে পারল। রুবি কেবল মুচকি হেসে প্রসঙ্গ পাল্টে দিল, কিন্তু তার হাসি বুঝিয়ে দিল যে সে রানার এই ঘনিষ্ঠতা উপভোগ করছে।
অয়ন সব কিছুই দেখছিল—রানার হাত কখন রুবির হাতের কাছাকাছি যাচ্ছে, কীভাবে রুবির প্রতিটি হাসিতে রানা আরও বেশি উৎসাহিত হচ্ছে। অয়ন যেন নিজের ভেতরের ‘কাকোল্ড’ ভাবনাটা সজোরে অনুভব করল। তার ঋণের বোঝা কমেছে, মেয়ের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত হয়েছে, আর তার বদলে তার স্ত্রী আজ অন্য এক পুরুষের কামনার কেন্দ্রে। এই লেনদেনটা তার কাছে একদিকে যেমন ছিল অপমানজনক, অন্যদিকে তেমনি ছিল গোপন উত্তেজক। সে স্থির করল, রানা যে তাদের এত বড় উপকার করেছে, তার প্রতিদান দেওয়ার সময় হয়তো এবার এসেছে।
দার্জিলিং থেকে ফেরার পর সেই রাতে, তৃষাকে বোর্ডিং কলেজে পাঠিয়ে দেওয়ার শূন্যতা চাপা পড়েছিল অন্য এক গভীর উত্তেজনায়। বিছানায় শুয়ে অয়ন আর রুবি আলোচনা করছিল—ট্রেনে রানা কীভাবে বারবার রুবির দিকে ঝুঁকে আসছিল, আর তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিল।
অয়ন মুচকি হেসে রুবির কাছে সরে এসে বলল, “কী গো, তোমার নতুন ফ্যান খুব মুগ্ধ হয়েছে দেখছি! রানার চোখ দুটো তোমার ওপর থেকে এক মুহূর্তের জন্য সরেনি। তোমার এত রূপের তেজ, সে তো কাবু হবেই!”
রুবি লজ্জায় অয়নের বুকে মুখ গুঁজে দিয়ে খিলখিল করে হেসে উঠল, “আরে দূর! কী যে বলো! ও তো শুধু সৌজন্য দেখাচ্ছিল!”
“সৌজন্য?” অয়ন হাসতে হাসতে রুবির চিবুক ধরে মুখটা তুলে ধরল, “না, রুবি। সেটা সৌজন্য ছিল না, সেটা ছিল স্পষ্ট আকাঙ্ক্ষা। ওর চোখে আমি সেই রাতের উদ্দীপ্ত কামনা দেখতে পেয়েছি, যা আমাদের বেডরুমের দরজা পর্যন্ত এসে থমকে গিয়েছিল।“
অয়ন এরপর আরও গভীরে ঢুকল, “আমি ভাবছিলাম, রানা আমাদের এত বড় উপকার করল, তৃষার ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করে দিল... ওকে কি আমাদের তরফ থেকে একটা ‘উপহার’ দেওয়া উচিত নয়? একটা দারুণ সারপ্রাইজ গিফট?”
রুবির চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল, “কী উপহার? কী প্ল্যান করছো তুমি?”
অয়ন এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে, নিজের বহু দিনের গোপন ইচ্ছে প্রকাশ করল, “আমি রানাকে থ্রিসমের অফার দেব, রুবি! আমার বহু দিনের শখ—অন্য পুরুষের বাহুতে তোমাকে দেখা... সেটা এবার পূর্ণ হোক!”
অয়নের কথা শুনে রুবি প্রথমে চমকে উঠলেও, তার মুখে ধীরে ধীরে লাজুক হাসির রেখা ফুটে উঠল। সে কিছুটা ইতস্তত করে বলল, কথাগুলো বলতে তার ভীষণ লজ্জা হচ্ছিল, তবুও সে অয়নের চোখ থেকে চোখ সরাল না।
“শোনো,” রুবি ফিসফিস করে বলল, “থ্রিসম তো হবেই... কিন্তু প্রথমেই থ্রিসম নয়।“ অয়ন আগ্রহ নিয়ে তার দিকে তাকাতেই রুবি সাহস জুগিয়ে বলল, “আমি আগে রানার সঙ্গে একান্তভাবে এক রাত কাটাতে চাই। তারপর—তোমার ইচ্ছেমতো, আমরা থ্রিসম করব।“
রুবি যখন নিজের এই সাহসী আকাঙ্ক্ষার কথা বলল, তখন তার মুখে এক অদ্ভুত লাজুকতা ও উত্তেজনা খেলা করছিল। অয়ন তখন হাসির ছলে তাকে আরও খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে কথাগুলো আদায় করে নিল—যেন সে নিশ্চিত হতে চাইছিল যে এটা কেবল মুহূর্তের আবেগ নয়, বরং রুবির ভেতরের সুপ্ত আকাঙ্ক্ষাই কথা বলছে। সেই রাতে তারা দুজনে মিলে তাদের আগামী দিনের গোপন চুক্তির নীলনকশা তৈরি করল।
চলবে......
কলকাতার কাছে ছোট্ট শহর বারাসত। সেখানেই এক পৈতৃক বাড়িতে সপরিবারে বসবাস করে অয়ন মুখার্জি, তার বয়স এখন ৪৩। ওদের একটা ওষুধের দোকান আছে , পৈত্রিক দোকান, বাবার হাতে কাজ শিখে ২৫ বছর বয়সেই এই দোকানের দায়িত্ব নেয় অয়ন। গত দশ বছরে তাদের ওষুধের দোকানের চেহারাটাই পাল্টে গেছে। পুরনো দোকান ভেঙে তারা বানিয়েছে আধুনিক এক নতুন দোকান, আর ব্যবসাও হয়েছে বেশ রমরমা। তবে প্রায় ৩ বছর আগে অয়ন তার মা-বাবা কে হারায়। এখন পরিবার বলতে অয়নের স্ত্রী রুবি, বয়স ৩১, আর তাদের একমাত্র মেয়ে তৃষা, যার বয়স ১০।
তৃষার যখন আট বছর বয়স, তখন থেকেই অয়ন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে এবার তাদের বারাসতের পৈতৃক ভিটেবাড়ি বিক্রি করে দেবে। কারণ সে চায় মেয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। বারাসাত ছেড়ে তাই তারা পাড়ি জমায় কলকাতার দমদমে, যেখানে তারা একটি ফ্ল্যাট কেনে। মেয়েকে ভর্তি করে দেয় এক নামকরা কলেজে। নতুন পরিবেশে রুবি ও তৃষা মানিয়ে নিলেও, অয়নের জন্য এই পরিবর্তনটা ছিল বেশ ঝক্কির। কারণ তাকে রোজ দমদম থেকে বারাসাত যেতে হতো লোকাল ট্রেনে করে, তার ওষুধের দোকানে। এই যাওয়া-আসার পথে, পুরোনো শহর আর নতুন শহরের জীবনযাত্রার পার্থক্যটা তার চোখের সামনে ভেসে উঠতো।
বারাসাত ছেড়ে কলকাতায় এসে দুটি বছর কেটে গেছে। ফ্ল্যাটের নতুন জীবনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে সবাই, আর তৃষাও কলকাতার নতুন কলেজে বেশ ভালোই মানিয়ে নিয়েছে। সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল, কিন্তু গত কয়েকমাস ধরে অয়নের ব্যবসার ছবিটা পাল্টে যেতে শুরু করে। অনলাইনের মাধ্যমে ওষুধ কেনার প্রবণতা বাড়ায় তাদের দোকানে বিক্রি কমতে থাকে। এই রমরমা ব্যবসা ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে আসছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে অয়ন ঠিক করল, সে হোম ডেলিভারি আর আকর্ষণীয় ছাড়ের ব্যবস্থা করবে। কিন্তু এতে লাভের বদলে খরচই বাড়তে থাকে, আর তাদের জমানো টাকাও ধীরে ধীরে ফুরিয়ে আসে।
বড়ো বড়ো কোম্পানির সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে মার্কেটিং, বিজ্ঞাপন আর নতুন নতুন অফার দিতে গিয়ে সাত-আট মাসের মধ্যেই অয়নের সমস্ত জমানো টাকা শেষ হয়ে যায়। ব্যবসায় লাভের বদলে লোকসান হতে দেখে তার রাতের ঘুম উড়ে যায়। অবশেষে, আর কোনো উপায় না দেখে সে ঠিক করে, সব কথা তার স্ত্রী রুবিকে জানাবে। রাতেই রুবি যখন তাদের বেডরুমে আরাম করছিল, অয়ন তার পাশে গিয়ে বসে। রুবির আকর্ষণীয় রূপ, যা আজও তার মনে মুগ্ধতা জাগায়, সেদিকে তাকিয়ে অয়ন এক গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তারপর ধীরে ধীরে সে বলে ওঠে, "রুবি, তোমাকে একটা কথা বলতে চাই..." তারপর অয়ন সব কথা খুলে বলে রুবি কে। সবকিছু শুনে রুবি ও খুব চিন্তিত হয়।
ব্যবসার লোকসান শুধু আর্থিক সংকটই আনেনি, তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছিল অয়ন ও রুবির ব্যক্তিগত জীবনেও। মানসিক চাপ আর দুশ্চিন্তার কারণে অয়ন রাতে তার স্ত্রীকে আর আগের মতো সুখী করতে পারছিল না। শারীরিক ও মানসিক দূরত্ব তাদের সম্পর্কটাকে ধীরে ধীরে বিষাক্ত করে তুলছিল। ৩১ বছর বয়সী সুন্দরী ও আকর্ষণীয় রুবি, স্বামীর কাছ থেকে সেই উষ্ণতা আর ভালোবাসা না পেয়ে ক্রমশ খিটখিটে আর মেজাজি হয়ে উঠছিল। তাদের ভালোবাসার ঘরে এখন নেমে এসেছিল এক অস্বস্তিকর নীরবতা, যা তাদের দুজনের কষ্টকেই আরও বাড়িয়ে দিচ্ছিল।
ব্যবসার এই মন্দা থেকে বেরোনোর জন্য অয়ন নতুন করে কৌশল খুঁজতে থাকে। প্রতিদিন দোকান খুলে সে শুধু ভাবে, কী করলে আবার আগের মতো ব্যবসা জমবে। ঠিক এমন সময়ে তার এক পুরনো বন্ধু দোকানে আসে। তার কাছে সব কথা খুলে বলে অয়ন, কীভাবে তার ব্যবসার অবস্থা খারাপ হচ্ছে। কিন্তু বন্ধুটি তার কথা তেমন গুরুত্ব দেয় না, বরং ঠাট্টা করে বলে, "আরে, এত চিন্তা করছিস কেন! দোকানের শাটারটা নামিয়ে দে আর কিছুক্ষণের জন্য ছেলে-মেয়েদের প্রাইভেট সময় কাটানোর জায়গা দে। এতে ভালো রোজগার হবে।" বন্ধুর মুখে এমন কথা শুনে অয়ন যেন হতবাক হয়ে যায়।
বন্ধুর কথা শুনে অয়ন প্রথমে অবাক হলেও, তার মনের কোণে সেই কুবুদ্ধিটা কোথাও যেন বাসা বাঁধছিল। মনে মনে সে ভাবছিল, কে জানে, হয়তো একদিন সত্যি সত্যি তাকে এমন ঘৃণ্য পথই বেছে নিতে হবে। দেখতে দেখতে আরও দু'মাস কেটে গেল। দোকানের বিক্রি আরও কমে গেল, আর ওষুধ ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছে তার দেনার পরিমাণ আকাশ ছুঁলো। এক রাতে রুবিকে কাছে পাওয়ার আশায় অয়ন তার সঙ্গে মিলিত হওয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু মানসিক চাপের ভার এতটাই বেশি ছিল যে এক মিনিটের আগেই তার সমস্ত ক্ষমতা লুপ্ত হয়ে গেল, আর সেই চেষ্টাও ব্যর্থ হলো।
অয়নের সেই ব্যর্থ চেষ্টাগুলো আরও কয়েকদিন ধরে চলল, কিন্তু তার ফল হলো একই— হতাশা। তার প্রতিটি ব্যর্থতা রুবিকে আরও বেশি কামুক আর অস্থির করে তুলছিল। শরীরের চাহিদা আর অতৃপ্তি তাকে যেন কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিল। একদিন রাতে তাদের মধ্যেকার নীরব দূরত্ব যখন চরমে, তখন রুবি আর নিজেকে সামলাতে পারল না। অয়নকে আঘাত করে সে স্পষ্ট বলে দিল, "মনে হয় এবার সুখ পেতে আমাকে অন্য কোনো পুরুষের শরীরের নিচে শুতে হবে।" রুবির এই কথাগুলো অয়নের বুকে ছুরির ফলার মতো বিঁধে গেল।
পর্ব ২
অয়ন আর রুবির দাম্পত্য জীবনের প্রথম দিকে তাদের সম্পর্ক ছিল গভীর বিশ্বাস আর উষ্ণ ভালোবাসার। তাদের শারীরিক সম্পর্কও ছিল খুবই খোলামেলা। বিয়ের আগেই রুবি অয়নকে জানিয়েছিল যে তার জীবনের প্রথম ভালোবাসার মানুষটির কাছে সে তার কুমারীত্ব হারিয়েছিল, আর অয়নের উদার মন তাতে কোনো আপত্তি জানায়নি। আসলে তারা দুজনেই ছিল খোলা মনের মানুষ। বিয়ের পরেও তারা নানা রকম রোমাঞ্চকর খেলায় মেতে উঠত, যেখানে রুবি তার প্রাক্তন প্রেমিককে আর অয়ন তার পছন্দের কোনো বৌদি বা মেয়েকে কল্পনা করে রোল প্লে 'র মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করত। সেইসব দিনে তাদের ভালোবাসা ছিল বাধাহীন, যা এখন কেবলই অতীত।
অনেক ভাবনাচিন্তা আর ঋণের বোঝা কাঁধে নিয়ে অয়ন শেষমেশ এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিল। সে ঠিক করল, দোকানের পেছনে যে স্টোররুমটি আছে, সেটিকেই সে তরুণ-তরুণীদের জন্য ঘন্টা হিসেবে ভাড়া দেবে। তার মনে হয়েছিল, এই নতুন উপায়ে ভালোই রোজগার হবে এবং তাদের আর্থিক সংকট কিছুটা হলেও মিটবে। এক রাতে, আবারও রুবি কে সুখ দিতে ব্যর্থ হওয়ার পর অয়ন রুবিকে তার এই পরিকল্পনার কথা জানায়। রুবির চোখে প্রথমে অবিশ্বাস আর চমক থাকলেও, অয়নের করুণ অবস্থা দেখে সে শেষ পর্যন্ত রাজি হতে বাধ্য হয়। তবে সে অয়নকে সতর্ক করে দেয়, যেন সবকিছু অত্যন্ত গোপনে করা হয়, যাতে এই খবর কোনোভাবেই বাইরে ফাঁস না হয়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী অয়ন দোকানের পেছনের স্টোররুমটা ভালো করে পরিষ্কার করে নিল। ভেতরে একটা ছোট খাট আর দুটো চেয়ার ও টেবিল দিয়ে সাজিয়ে সে ঘরটা প্রস্তুত করল। এরপর ধীরে ধীরে সেখানে তরুণ-তরুণীদের আনাগোনা শুরু হলো। ঘণ্টা প্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা রোজগার হতে লাগল, আর অনেক যুগল অয়নের দোকান থেকেই কন্ডোম কিনত। ওষুধ কেনার অজুহাতে তারা দোকানে আসত, আর অয়ন পাশ দিয়ে এঁকে-বেঁকে যাওয়া গলিটা দেখিয়ে দিত, যেখান দিয়ে তারা সোজা পেছনের ঘরে যেতে পারত। এভাবেই অয়নের নতুন ব্যবসা রমরমিয়ে চলতে শুরু করল।
অয়নের দোকানের তিন কিলোমিটার দূরে ছিল 'শান্তি গার্লস হোস্টেল'। দেখা গেল, সেই হোস্টেলের মেয়েরাই তাদের প্রেমিকদের নিয়ে বেশি আসত। এভাবেই সব চলছিল, যখন অয়ন লক্ষ্য করল এক সুদর্শন যুবককে। তার বয়স তিরিশ-বত্রিশের মতো হবে, পরনে দামি পোশাক, জিম করা শরীর, বেশ লম্বা, আর বাইরে দাঁড়িয়ে থাকত তার বিলাসবহুল গাড়ি। সেই ছেলেটি ছিল অয়নের দোকানের নিয়মিত খদ্দের, কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো, সে প্রতিবারই একটি নতুন মেয়েকে নিয়ে আসত। অয়নের মনে কৌতূহল জাগলেও সে তাতে কান দিত না। কিন্তু একদিন অয়ন অবাক হয়ে দেখল, মেয়েটির সঙ্গে ব্যক্তিগত সময় কাটানোর পর যুবকটি তাকে এক মোটা টাকার বান্ডিল দিচ্ছে। টাকার অঙ্ক টা বুঝতে না পারলেও, টাকার পরিমাণ দেখে অয়ন বুঝতে পারলো যে ১৫-২০ হাজার হবে। কিন্তু তার মাথায় একটা প্রশ্ন ঘুরতে লাগল—এই মেয়েগুলো তো হোস্টেলের ছাত্রী, এরা তো দেহ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত নয়!
পর্ব ৩
প্রায়ভেট রুমের খদ্দের বাড়তে দেখে অয়ন রুমের রেট ১০০০/- টাকা প্রতি ঘন্টা করে দিল। তাতে তার মাসে ৭০/৮০ হাজার টাকা আয় হতে শুরু করলো। লক্ষ লক্ষ টাকার দেনা এবং মেডিসিন ডিস্ট্রিবিউটরদের ধার মাথায় নিয়ে চলা অয়নের কাছে মাসিক সত্তর-আশি হাজার টাকা এখন আর শুধু আয় নয়, এটা যেন তার জীবনধারণের অক্সিজেনের মতো। এই বিপুল পরিমান ধার তার ভেতরে থাকা অপরাধবোধকে প্রায় পুরোপুরি মুছে দিয়েছে। সে এখন নিজেকে আর অন্যায়ের সহযোগী ভাবছে না, সে একজন বুদ্ধিমান ব্যবসায়ী, যে বাজারের চাহিদা বুঝে নিজের পণ্যের দাম বাড়াতে পেরেছে।
এরই মধ্যে একদিন সন্ধ্যায়, সেই সুদর্শন, বিলাসবহুল গাড়ির যুবকটি এল, সঙ্গে ২০/২২ বছরের একটা মেয়ে। অয়ন তাকে দেখে এক লহমায় চিনে ফেলল—এ যেন তার ব্যবসার 'সোনালী হাঁস'। যুবকটি ব্যক্তিগত কক্ষটি চাইতেই অয়ন অপ্রস্তুতভাবে জানাল যে ঘরটি অন্য একজন কাস্টমার চার ঘণ্টার জন্য বুক করে রেখেছে। যুবকের মুখে বিরক্তির ছাপ দেখে অয়ন বুঝল, এই কাস্টমারকে হাতছাড়া করা যাবে না।
তখনই অয়ন এক চটজলদি ব্যবসায়িক চাল চালল। সে দ্রুত একটি কাগজের টুকরোতে নিজের ব্যক্তিগত ফোন নম্বর লিখে যুবকটির হাতে ধরিয়ে দিল। "স্যার, এই নিন আমার নম্বর। পরের বার আসার আগে একবার ফোন করে দেবেন। আমি আপনার জন্য ঘরটা 'ব্লক' করে রাখব—তাতে অন্য কাস্টমার যত টাকাই দিক না কেন। আপনার মতো ভিআইপি কাস্টমার আমার কাছে সবার আগে।"
যুবকটি নম্বরটি পকেটে পুরে নিল এবং তার চোখেমুখে বিরক্তি বদলে ফুটে উঠল বিশেষ সুবিধা পাওয়ার সন্তুষ্টি। এই সামান্য ফোন নম্বর দেওয়া এবং ঘর 'ব্লক' করে রাখার প্রতিশ্রুতি অয়নের ব্যবসার এক নতুন দিগন্ত খুলে দিল।
ফোন নম্বর দিয়ে বিশেষ বুকিং-এর ব্যবস্থা করে দেওয়ার সেই ঘটনার পর, রানা (সেই সুদর্শন যুবক) আর কখনও না জানিয়ে আসত না। এখন সে প্রতিবার আসার আগে অয়নকে ফোন করে নিশ্চিত করত, এবং প্রায়শই রানা একাই সেই ঘরটা দিনের একটা বড় অংশের জন্য বুক করে রাখত। এভাবে বারবার ফোন করার সূত্র ধরে অয়ন আর রানার মধ্যে একটা পরিচিতি জন্ম নিল। রানা তার পরিচয় দিলো—সে এক ধনী পরিবারের সন্তান, তার বাবা একজন বিখ্যাত জুয়েলারি ব্যবসায়ী। টাকা-পয়সার কোনো অভাব নেই রানার।
অয়নের দোকানের পেছনে থাকা সেই ঘরটি এখন কার্যত রানার ব্যক্তিগত বিনোদনের জায়গায় পরিণত হল। সে সেখানে নিত্যনতুন মেয়েদের নিয়ে আসত এবং নিজস্ব সময় কাটাত। রানার এই নিয়মিত ভিআইপি বুকিং-এর ফলে অয়নের মাসিক আয় আরও স্থিতিশীল এবং নিশ্চিত হয়ে উঠল।
কিন্তু এই নিশ্চিত আয়ও অয়নকে স্বস্তি দিতে পারল না। এক দিকে লক্ষ লক্ষ টাকার দেনা শোধ করা, আর অন্য দিকে সংসার চালানো এবং মেয়ের ভবিষ্যতের চিন্তা—এই সমস্ত চাপ অয়নকে ঘুমাতে দিত না। সে বুঝতে পারছিল, এই সত্তর-আশি হাজার টাকা দিয়ে তার পুরনো ঋণ শোধ করতে বহু বছর লেগে যাবে, আর মেয়ের জন্য ভালো একটা ভবিষ্যৎ তৈরি করা যাবে না।
পর্ব ৪
এই পরিস্থিতিতে রুবি অয়নকে বারবার বলত যে সে কাজ করে আর্থিক সাহায্য করতে প্রস্তুত। অয়নের তাতে আপত্তি ছিল না, তবে বর্তমানের কঠিন চাকরির বাজারে কাজ পাওয়া সহজ ছিল না, তবুও রুবি তার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল।
এদিকে, রানা নিয়মিত ঘর বুক করতে থাকে, আর একদিন সে অয়নকে সারা রাতের জন্য ঘরটি বুক করতে চাইল। অয়ন তাতে রাজি হয়নি। কিন্তু রানা প্রথমে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করে এবং পরে টাকার পরিমাণ বাড়াতে শুরু করে। অবশেষে, অয়ন তাকে জানাল যে সে ভেবেচিন্তে বিষয়টি জানাবে এবং তখনই সে রুবিকে সব কথা বলল। রুবি একটি বুদ্ধি বের করে বলল যে দোকানের ঘর ভাড়া দেওয়ার দরকার নেই। বরং তাদের ফ্ল্যাটেই রানা ও তার সঙ্গিনীকে নিয়ে আসা হোক। তারা অয়ন ও রুবির বন্ধু এবং বন্ধুর স্ত্রী পরিচয়ে তাদের বাড়িতে আসবে এবং এক রাত সেখানে থাকবে। এতে কোনো সমস্যা হবে না। এই পরিকল্পনাতেই সবাই রাজি হলো এবং সেই অনুযায়ী রানাকে জানানো হলো, রানা নিজেও তাতে সম্মতি দিল।
পরের রবিবার অয়ন তার মেয়ে তৃষাকে দু’দিনের জন্য তার মাসির (রুবির বোনের) বাড়িতে রেখে আসার ব্যবস্থা করল। ঠিক রাত আটটা নাগাদ রানা তার নতুন সঙ্গিনী, রচনাকে নিয়ে ফ্ল্যাটে হাজির হলো। রুবি তাদের সাদরে অভ্যর্থনা জানাল এবং অয়ন রানার সঙ্গে রচনার পরিচয় করিয়ে দিল। রুবি নিজের হাতে সবার জন্য রাতের খাবার তৈরি করেছিল। রানা অন্য একটি মেয়েকে নিয়ে এলেও, তার চোখ কিন্তু বারবার রুবির আকর্ষণীয় দেহের দিকে ঘুরছিল—যেন সে চোখ দিয়েই তাকে উপভোগ করছে। রানার চোখ শুরু থেকেই রুবির ওপর আটকে ছিল। ৩১ বছর বয়সী এই নারী, যিনি ১২ বছরের বিবাহিত জীবন এবং ১০ বছরের একটি কন্যা সন্তানের মা, তার রূপে কোনো ঘাটতি ছিল না। রুবি ছিল ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি লম্বা, গায়ের রং উজ্জ্বল ফর্সা, এবং শরীর ছিপছিপে হলেও দারুণ কার্ভময়। তার শরীরের মাপ ছিল 34©-28-36—যা এক লহমায় যে কোনো পুরুষের চোখে কামনা জাগানোর জন্য যথেষ্ট ছিল। রানা তার সেই বিস্ময়কর ফিগারের দিকে বারবার তাকাচ্ছিল, যেন তার দৃষ্টি দিয়ে সে রুবিকে গিলে খাচ্ছিল। আহার পর্ব শেষ হলে অয়ন ও রুবি নিজেদের বেডরুমে চলে গেল, আর পাশের ঘরটি রানা ও রচনার জন্য প্রস্তুত ছিল।
রানা ও রচনা সারা রাত ধরে সম্ভবত ছয়-সাতবার মিলিত হয়েছিল। পাশের ঘর থেকে তাদের অবাধ উষ্ণতার শব্দ ভেসে আসায় অয়ন আর রুবির ঘুমে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটল। এই শব্দ শুনতে শুনতে রুবি মনে মনে কেবল ভাবছিল, “এতটা শারীরিক সক্ষমতা কী করে একজন মানুষের থাকতে পারে!” এই ভাবনা তার নিজের অতৃপ্ত শরীরকে আরও অস্থির করে তুলল। চরম কষ্টে নিজেকে সংযত রাখতে হলো রুবিকে। কথামতো পরদিন সকালে প্রাতরাশ সেরে রানা ও রচনা চলে গেল। এক রাতের এই ‘আতিথেয়তা’র জন্য রানা অয়নকে 30,000 টাকা পরিশোধ করল।
ঐ দিন রাতেই অয়ন ও রুবি গত রাতে রানা ও রচনার উদ্দাম শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে কথা বলছিল। দু-এক কথায় অয়ন বুঝতে পারল যে রানার যৌন সক্ষমতার কথা জানতে পেরে রুবি বেশ মুগ্ধ।
একসময় ইয়ার্কিচ্ছলে অয়ন রুবিকে জিজ্ঞেস করেই ফেলল যে, রুবিও কি রাতে সাত-আটবার সঙ্গম করতে চায়? রুবিও হাসির ছলে উত্তর দিল যে, সেও চায়, কিন্তু তার স্বামীর দ্বারা তো কিছুই হচ্ছে না।
অয়ন এই কথা শুনে বলল, “তোমার স্বামীর দ্বারাই হতে হবে তার তো কোনো মানে নেই!” এরপর সে রানাকে দিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার একটা প্রস্তাব দিল, বিশেষ করে রানা যেভাবে রুবির দিকে তাকাচ্ছিল, তাতে এই প্রস্তাব দেওয়া যেতেই পারে বলে অয়ন মনে করল।
উত্তরে রুবি খিলখিল করে হেসে উঠল। রানা যে তাকে বিশেষ নজর দিয়ে দেখছিল, সেই ব্যাপারটা রুবিও লক্ষ্য করেছিল। অনেকদিন পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একটু হাসি-ঠাট্টা হচ্ছিল। অয়ন আরও জানাল যে এমনটা হলে অয়নের রুবিকে অন্য পুরুষের সাথে সঙ্গম করতে দেখার ইচ্ছেটাও পূরণ হবে। বিয়ের পর প্রথম দিকে অয়ন কিন্তু রুবিকে জানিয়েছিল যে তার মধ্যে একটা কাকোল্ড (cuckold) ভাবনা আছে, এবং সে রুবির সাথে থ্রিসম ও গ্যাংব্যাং করতে চায়। রুবিও রাজি হয়ে বলেছিল যে কোনোদিন চেষ্টা করবে, কিন্তু তাড়াতাড়ি তাদের মেয়ে তৃষা জন্মে যাওয়ায় সেই ইচ্ছে আর পূরণ হয়নি।
এইরকম স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে করতে অয়ন উত্তেজিত হয়ে রুবিকে জড়িয়ে ধরল। গভীর ভালোবাসায় মিশে গেল দুটো শরীর। এবার আর ব্যর্থ হলো না অয়ন। আজ প্রায় আড়াই মিনিট পর্যন্ত নিজেকে ধরে রেখেছিল অয়ন, তারপর তার সব ক্ষমতা লুপ্ত হয়ে গেল। রুবির হয়তো এতে সম্পূর্ণ তৃপ্তি হলো না, কিন্তু আগের তুলনায় অনেকটা ভালো ছিল।
পর্ব ৫
দোকানের পেছনের অন্ধকার স্টোররুমটি, যা সাধারণত গোপন প্রণয়ের সাক্ষী থাকে, সেই রাতে হয়ে উঠল দুই পুরুষের এক অদ্ভুত আলাপচারিতার স্থান। রানা যখন হঠাৎ ফোন করে জানাল যে আজ সে ঘর বুক করবে না, অয়নের কপালে সামান্য ভাঁজ পড়লেও, পরক্ষণেই রানার মদ্যপানের প্রস্তাবে সে রাজি হয়ে গেল। “কী ব্যাপার রানা,” অয়ন হেসে বলল, “আজ রুম লাগবে না? নাকি সঙ্গী জুটল না?” রানা হাসল। “না অয়ন দা, আজ মনটা একটু অন্যরকম। ভাবছি, আজ আপনার সঙ্গে একটু বসে ড্রিঙ্কস করা যাক।“ অয়ন সম্মতি দিতেই শুরু হলো সেই গভীর নৈশ আড্ডা। বিকেল গড়াতে রাত নামল, আর হুইস্কির গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে দুজনই নিজেদের জীবনের কঠিন সত্যগুলো একে অপরের কাছে উজাড় করে দিতে শুরু করল।
পানীয়ের উষ্ণতায় অয়ন যেন সাহস খুঁজে পেল। সে তার বুকের ভেতরের চেপে রাখা দীর্ঘশ্বাসটা ফেলে রানাকে সব কথা খুলে বলল—কীভাবে তার পৈতৃক ফার্মেসি ব্যবসা ধুঁকছে, অনলাইন ব্যবসার সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে সে কীভাবে সর্বস্বান্ত হয়েছে। “আমার এখন লক্ষ লক্ষ টাকার দেনা মাথায়,” অয়ন ফিসফিস করে বলল, তার চোখদুটো যেন অন্ধকারে জ্বলছিল। “এই মাসিক সত্তর-আশি হাজার টাকা দিয়ে ঋণের একটা ভগ্নাংশও শোধ হবে না। তৃষার ভবিষ্যৎ অন্ধকারে... সব কিছু নষ্ট হয়ে গেল, রানা।“ অয়নের কণ্ঠস্বরে যে গভীর হতাশা ছিল, তা রানার মতো ধনী পরিবারের ছেলের কাছেও স্পষ্ট হয়ে উঠল।
অন্যদিকে, রানা শোনাল তার জীবনের গল্প—যেখানে টাকার কোনো অভাব নেই, কিন্তু আছে এক ভয়ঙ্কর শূন্যতা, যা সে পূরণ করে শুধু শরীরী উষ্ণতা দিয়ে।বাবা-মা এর ডিভোর্স হয়ে গেছে ৭ বছর আগে, তার মা বিয়ে করেছেন অন্য এক ব্যবসায়ী কে আর বাবা সবসময় ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত, কোলকাতা ছাড়াও আরও অনেক শহরে ওদের জুয়েলারী শোরুম আছে। বাবার সাথে রানার খুব একটা কথাবার্তা হয়না। রানা বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে এসে এখনে বাবার ব্যাবসা দেখাশোনা করে। রানা স্বীকার করল যে মেয়েদের প্রতি তার দুর্বলতা কতটা প্রকট। “দেখুন অয়ন দা,” রানা হেসে বলল, সেই হাসিতে ছিল এক শীতল ঔদ্ধত্য, “টাকা আমার কাছে কোনো সমস্যাই নয়। আমি চাই উন্মুক্ততা আর নতুনত্ব।“ সে এরপর জানাল যে সে কোনো পেশাদার নারী নয়, বরং কলেজ ও হোস্টেলের ২১/২২ বছর বয়সী মেয়েদের সঙ্গে একান্ত সময় কাটানোর জন্য অকাতরে টাকা খরচ করে। “তারাও জানে এটা এক ধরনের লেনদেন,” রানা বলল। “এক রাতের জন্য 30,000 থেকে 40,000 টাকা—এই দামে তারা আমার কাছে আসে। এতে কারও ক্ষতি হয় না, বরং দু’পক্ষেরই চাহিদা মেটে।“ সেই রাতে, তাদের এই আলাপচারিতা কেবল মদ্যপান ছিল না, ছিল দুটো ভিন্ন জগতের পুরুষের গোপন চুক্তি ও বাস্তবতার বিনিময়।
মদ্যপানের ঘোর কাটতে না কাটতেই, রানা হঠাৎ এক অবিশ্বাস্য প্রস্তাব দিল, যা অয়নের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখত। রানা বলল, “অয়ন দা, একটা কথা বলি। আপনার মেয়ের ভবিষ্যতের চিন্তাটা আমার উপর ছেড়ে দিন।“ এরপর সে জানাল যে দার্জিলিং-এ তার পিসির একটি বেসরকারি বোর্ডিং কলেজ আছে, নাম “হিমালয়স” (Himalayas)। তার পিসিই সেই কলেজের প্রিন্সিপাল।
গম্ভীর কণ্ঠে রানা বলল, “আমি আপনার মেয়ে তৃষাকে সেখানে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দিতে পারি।“ এই প্রস্তাব শুনে অয়ন যেন মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল। এত বড় আর্থিক দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি! তার মেয়ের জন্য একটা সুরক্ষিত ভবিষ্যতের হাতছানি! অয়নের মুখে এক মিশ্র অনুভূতি ফুটে উঠল—একদিকে বিশাল স্বস্তি, অন্যদিকে দ্বিধা। সে রানাকে বলল যে সে তার স্ত্রী রুবির সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে। তার মনে প্রশ্ন জাগল, তার ১০/১১ বছরের মেয়েকে এত দূরে ছেড়ে থাকতে হয়তো মন চাইবে না, কিন্তু একই সঙ্গে এটাও মনে হলো যে এত বড় আর্থিক সঙ্কট থেকে মুক্তি পাওয়ার এই সুযোগ হয়তো আর আসবে না।
সেদিন অনেক রাত করে নেশার ঘোর নিয়ে বাড়ি ফেরে অয়ন। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে, যখন রাতের পানীয়ের প্রভাব কাটল, তখনই সে রুবিকে বোর্ডিং কলেজের সেই অবিশ্বাস্য প্রস্তাবের কথা খুলে বলল। অয়ন প্রথমে ভয় পাচ্ছিল যে রুবি হয়তো এমন চরম সিদ্ধান্তে আপত্তি জানাবে।
কিন্তু অয়নকে অবাক করে দিয়ে রুবি কোনো আপত্তিই করল না। রুবি নিজে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর কলেজে ভর্তি হলেও, বিয়ে এবং সন্তান হওয়ার কারণে তার নিজের আর পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া হয়নি। নিজের অপূর্ণ স্বপ্ন সে পূরণ করতে চায় তার মেয়ের মাধ্যমে। তাই রুবি আবেগ চেপে রেখে স্থির কণ্ঠে বলল যে সে চায় তাদের মেয়ে তৃষা পড়াশোনা করে জীবনে বড় হোক, আর এই সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত নয়।
রুবি রাজি হতেই অয়ন আর দেরি করল না। সাথে সাথেই সে রানাকে ফোন করে জানিয়ে দিল যে তারা তাদের মেয়েকে দার্জিলিং-এর ‘হিমালয়াস্’ বোর্ডিং কলেজে পাঠাতে প্রস্তুত। যদিও তাদের ছোট মেয়ে তৃষা প্রথমে এই প্রস্তাবে রাজি হচ্ছিল না, কারণ মাকে ছেড়ে এত দূরে থাকার কথা সে ভাবতেই পারেনি। কিন্তু নিজেদের আর্থিক দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি এবং মেয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখিয়ে অয়ন আর রুবি অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে অবশেষে তৃষাকে রাজি করাল। একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে তারা দু’জনেই বুঝতে পারল—তাদের পারিবারিক জীবনের ভারসাম্যের জন্য এই বিচ্ছেদ ছিল অনিবার্য।
কথা মতো, রানা তার পরিচিতির সূত্র ধরে তৃষার ভর্তির সব ব্যবস্থা সম্পন্ন করল, এবং দার্জিলিং-এর ‘হিমালয়াস্’ বোর্ডিং কলেজে পৌঁছানোর জন্য একটি তারিখ ঠিক করে ট্রেনের টিকিট বুক করা হলো। এই যাত্রায় অয়ন, রুবি, তৃষার সঙ্গে রানাও যোগ দিল। পরিকল্পনা ছিল—তৃষাকে কলেজে পৌঁছে দিয়েই তারা পরের দিনের ট্রেনে করে কলকাতায় ফিরে আসবে।
দার্জিলিং-এর পর্ব শেষ হলো—তৃষাকে বোর্ডিং কলেজে রেখে আসার পর এক বুক শূন্যতা নিয়ে তারা কলকাতার ট্রেনে ফিরছিল। অয়ন মানসিকভাবে ক্লান্ত হলেও, তার চোখ রানা ও রুবির দিকে নিবদ্ধ ছিল। ফেরার পথে রানা যেন আরও বেশি খোলামেলা হয়ে উঠল। সে রুবির ঠিক পাশের সিটে বসে ছিল, এবং তাদের কথোপকথন ক্রমশ ব্যক্তিগত হয়ে উঠছিল। রানা রুবির পরিশ্রম এবং ধৈর্য্যের প্রশংসা করছিল, যা এক সাধারণ সৌজন্যের সীমা ছাড়িয়ে ব্যক্তিগত মুগ্ধতার দিকে ঝুঁকছিল। অয়নের মনে হলো, রানার প্রতিটি হাসির ভাঁজে যেন এক নীরব স্পর্ধা লুকিয়ে আছে।
রানা হাসি মুখে বলল, “আপনার এই সবুজ শাড়িটা খুব মানিয়েছে, রুবি বৌদি। আপনার মতো ‘ব্রাইট’ মানুষরা যে কোনো রং-কেই আরও বেশি উজ্জ্বল করে তোলে।“
রুবি লাজুক হেসে বলল, “আরে ধুর মশাই! কী যে বলেন! এই শাড়িটা তো পুরনো... আর ‘ব্রাইট’ কোথায়? এখন তো জীবনটাই পুরো ফ্যাকাশে!”
রানা তার দিকে ঝুঁকে এসে নরম স্বরে বলল, “ফ্যাকাশে! একদম নয়। আপনার চোখের দিকে তাকালে বোঝা যায়, ভেতরে কত আকাঙ্ক্ষা লুকিয়ে আছে। সেটাকে ফ্যাকাশে হতে দেবেন কেন? আপনার মতো মানুষের সব ‘ড্রিমস’ পূরণ হওয়া উচিত।“ এই শেষ বাক্যটি বলার সময় রানার কণ্ঠস্বরে যে গভীর ইঙ্গিত ছিল, তা রুবিও স্পষ্ট বুঝতে পারল। রুবি কেবল মুচকি হেসে প্রসঙ্গ পাল্টে দিল, কিন্তু তার হাসি বুঝিয়ে দিল যে সে রানার এই ঘনিষ্ঠতা উপভোগ করছে।
অয়ন সব কিছুই দেখছিল—রানার হাত কখন রুবির হাতের কাছাকাছি যাচ্ছে, কীভাবে রুবির প্রতিটি হাসিতে রানা আরও বেশি উৎসাহিত হচ্ছে। অয়ন যেন নিজের ভেতরের ‘কাকোল্ড’ ভাবনাটা সজোরে অনুভব করল। তার ঋণের বোঝা কমেছে, মেয়ের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত হয়েছে, আর তার বদলে তার স্ত্রী আজ অন্য এক পুরুষের কামনার কেন্দ্রে। এই লেনদেনটা তার কাছে একদিকে যেমন ছিল অপমানজনক, অন্যদিকে তেমনি ছিল গোপন উত্তেজক। সে স্থির করল, রানা যে তাদের এত বড় উপকার করেছে, তার প্রতিদান দেওয়ার সময় হয়তো এবার এসেছে।
দার্জিলিং থেকে ফেরার পর সেই রাতে, তৃষাকে বোর্ডিং কলেজে পাঠিয়ে দেওয়ার শূন্যতা চাপা পড়েছিল অন্য এক গভীর উত্তেজনায়। বিছানায় শুয়ে অয়ন আর রুবি আলোচনা করছিল—ট্রেনে রানা কীভাবে বারবার রুবির দিকে ঝুঁকে আসছিল, আর তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিল।
অয়ন মুচকি হেসে রুবির কাছে সরে এসে বলল, “কী গো, তোমার নতুন ফ্যান খুব মুগ্ধ হয়েছে দেখছি! রানার চোখ দুটো তোমার ওপর থেকে এক মুহূর্তের জন্য সরেনি। তোমার এত রূপের তেজ, সে তো কাবু হবেই!”
রুবি লজ্জায় অয়নের বুকে মুখ গুঁজে দিয়ে খিলখিল করে হেসে উঠল, “আরে দূর! কী যে বলো! ও তো শুধু সৌজন্য দেখাচ্ছিল!”
“সৌজন্য?” অয়ন হাসতে হাসতে রুবির চিবুক ধরে মুখটা তুলে ধরল, “না, রুবি। সেটা সৌজন্য ছিল না, সেটা ছিল স্পষ্ট আকাঙ্ক্ষা। ওর চোখে আমি সেই রাতের উদ্দীপ্ত কামনা দেখতে পেয়েছি, যা আমাদের বেডরুমের দরজা পর্যন্ত এসে থমকে গিয়েছিল।“
অয়ন এরপর আরও গভীরে ঢুকল, “আমি ভাবছিলাম, রানা আমাদের এত বড় উপকার করল, তৃষার ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করে দিল... ওকে কি আমাদের তরফ থেকে একটা ‘উপহার’ দেওয়া উচিত নয়? একটা দারুণ সারপ্রাইজ গিফট?”
রুবির চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল, “কী উপহার? কী প্ল্যান করছো তুমি?”
অয়ন এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে, নিজের বহু দিনের গোপন ইচ্ছে প্রকাশ করল, “আমি রানাকে থ্রিসমের অফার দেব, রুবি! আমার বহু দিনের শখ—অন্য পুরুষের বাহুতে তোমাকে দেখা... সেটা এবার পূর্ণ হোক!”
অয়নের কথা শুনে রুবি প্রথমে চমকে উঠলেও, তার মুখে ধীরে ধীরে লাজুক হাসির রেখা ফুটে উঠল। সে কিছুটা ইতস্তত করে বলল, কথাগুলো বলতে তার ভীষণ লজ্জা হচ্ছিল, তবুও সে অয়নের চোখ থেকে চোখ সরাল না।
“শোনো,” রুবি ফিসফিস করে বলল, “থ্রিসম তো হবেই... কিন্তু প্রথমেই থ্রিসম নয়।“ অয়ন আগ্রহ নিয়ে তার দিকে তাকাতেই রুবি সাহস জুগিয়ে বলল, “আমি আগে রানার সঙ্গে একান্তভাবে এক রাত কাটাতে চাই। তারপর—তোমার ইচ্ছেমতো, আমরা থ্রিসম করব।“
রুবি যখন নিজের এই সাহসী আকাঙ্ক্ষার কথা বলল, তখন তার মুখে এক অদ্ভুত লাজুকতা ও উত্তেজনা খেলা করছিল। অয়ন তখন হাসির ছলে তাকে আরও খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে কথাগুলো আদায় করে নিল—যেন সে নিশ্চিত হতে চাইছিল যে এটা কেবল মুহূর্তের আবেগ নয়, বরং রুবির ভেতরের সুপ্ত আকাঙ্ক্ষাই কথা বলছে। সেই রাতে তারা দুজনে মিলে তাদের আগামী দিনের গোপন চুক্তির নীলনকশা তৈরি করল।
চলবে......