12-09-2025, 08:38 PM
এপিসোড ১
কলকাতার সকালের শহরটা যেন আজ একটু অন্যরকম। ছুটির দিনের সকাল, চারদিকে কম হর্নের শব্দ, হালকা রোদে ঝলমল করছে রাস্তাঘাট। দূরে ভ্যানে করে ফুলওয়ালা যাচ্ছিল, আর পাশেই চায়ের দোকানে ভিড় জমেছে।
এই সকালের ভেতরেই চারতলার এক ফ্ল্যাটে কোলাহল তুঙ্গে। কারণ আজ ঘুরতে যাবে তারা।
মিথিলা (২৬) আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সোনালি রঙের কানের দুল পরে নিচ্ছে। সাজগোজে সে কখনো বেশি বাড়াবাড়ি করে না, তবে আজ একটু আলাদা। বাইরে বেরোবে তো, তাই পরেছে হালকা রঙের সালোয়ার-কামিজ। চুল খোলা, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক।
অন্যদিকে নিশি খাটের ওপর বসে আছে নতুন গোলাপি ফ্রক পরে। কোলে তার প্রিয় টেডি বিয়ার। উত্তেজনায় মুখটা লাল হয়ে গেছে।
– “মা, আজ তো আমরা গ্রামে যাব তাই না? আমি গরু দেখব”
মিথিলা মুচকি হেসে তার দিকে তাকাল।
– “হ্যাঁ রে বাবু, তবে প্রথমে তোমাকে জুতো পরতে হবে।”
নিশি গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে এসে জুতো পরার জন্য মায়ের সামনে দাঁড়াল।
ঠিক তখনই পাশের ঘর থেকে রোহিত (২৯) বেরিয়ে এলো। জিন্স-টি-শার্ট পরে, হাতে ঘড়ি বাঁধতে বাঁধতে হেসে বলল—
– “আরে, এখনো রেডি হয়নি তোমরা? মেয়ে মানুষের এত লেইট হয় নাকি!”
মিথিলা চোখ রাঙাল।
– “তুমি ছেলে মানুষরা কি বুঝবে! মেয়েকে রেডি করানো, টিফিন গুছানো, নিজের সাজগোজ—সব একসাথে সামলাতে হয়। শুধু খোঁচা মারা ছাড়া তোমাদের আর কোনো কাজ নেই।”
রোহিত কটাক্ষের ভঙ্গিতে বলল,
– “আমার কাজ নেই মানে? সংসারটা চলে কীসে? আমি না কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার, না রোজগার করি তাহলে আজ এই ঘুরতে যাওয়াটাই হতো?”
মিথিলা ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,
– “শুধু টাকা দিয়ে সব হয় না। সংসার চালাতে লাগে সময়, যত্ন আর ধৈর্য। যেটা আমি দিচ্ছি।”
তাদের কথার মাঝে নিশি খিলখিল করে হেসে উঠল।
– “তোমরা দুজন সবসময় ঝগড়া করো, তারপর আবার হাসো। আমি জানি।”
শুনে দুজনেই হেসে ফেলল।
[img=182x1]file:///data/user/0/com.microsoft.office.word/files/temp/msohtmlclip/clip_image001.png[/img]
চরিত্রের ঝলক
মিথিলা – শিক্ষিতা, ঘরোয়া অথচ স্মার্ট। সংসার সামলানোতেই তার আত্মতৃপ্তি। পরিবারকে ঘিরেই তার পৃথিবী।
রোহিত – দায়িত্ববান, তবে মজা করে খোঁচা দেওয়াই তার স্বভাব। চাকরি তাকে ব্যস্ত রাখে, কিন্তু পরিবারের জন্য সবকিছু করতে চায়।
নিশি – প্রাণবন্ত, কৌতূহলী শিশু। তার হাসিতেই যেন এই দম্পতির জীবনের সব আনন্দ।
[img=182x1]file:///data/user/0/com.microsoft.office.word/files/temp/msohtmlclip/clip_image001.png[/img]
মিথিলা সাজ শেষ করে আয়নায় নিজেকে দেখে নিল।
– “চল এবার, দেরি হয়ে যাচ্ছে। গাড়ি বের করোনি এখনো?”
রোহিত মাথা চুলকালো।
– “গাড়িটা তো কাল নষ্ট হয়ে গেছে। গ্যারেজে আছে।”
নিশি অবাক হয়ে চিৎকার করল,
– “ওফফ! তবে আমরা কিভাবে যাব? আমি তো গরু দেখতে চাই।”
রোহিত হেসে তার কপালে চুমু খেল।
– “ক্যাবে যাব বাবু। আগেই ডেকেছি, আসছে।”
মিথিলা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
– “তোমার গাড়িটা সারাদিনই কোনো না কোনো অজুহাত খোঁজে। শেষে ট্যাক্সিই ভরসা।”
রোহিত কাঁধ ঝাঁকাল।
– “গাড়ি তো মানুষ নয়, মাঝে মাঝে অসুস্থ হবেই। তাছাড়া ক্যাবে গেলে রাস্তার দৃশ্যও দেখা যায়।”
নিশি উচ্ছ্বাসে হাততালি দিল।
– “ইয়েস! আমি ক্যাবে যেতে ভালোবাসি। জানালা দিয়ে বাইরে সব দেখতে পারব।”
এই আনন্দে তিনজনের মন এক হয়ে গেল। ছোটখাটো অভিমান মিলিয়ে গিয়ে কেবল রইল ভালোবাসা আর প্রত্যাশা।
[img=182x1]file:///data/user/0/com.microsoft.office.word/files/temp/msohtmlclip/clip_image001.png[/img]
তাদের ফ্ল্যাটের দরজা টেনে তালা দিল রোহিত। সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে মিথিলা বলল,
– “শোনো, আজ কিন্তু আমার ইচ্ছে অনুযায়ী ঘুরব। প্রথমে তোমার গ্রামের বাড়ি, তারপর বিকেলে গঙ্গার ধারে বসব।”
রোহিত মজা করে বলল,
– “তাহলে তো বুঝলাম, আজ আমি ড্রাইভার না, বডিগার্ড মাত্র।”
মিথিলা হাসল।
– “বডিগার্ড তো আছোই, নইলে এত মানুষ ভিড়ের মধ্যে আমি আর নিশি কীভাবে চলতাম?”
নিশি মাঝখান দিয়ে হাত ধরে হাঁটছে। ছোট ছোট পদক্ষেপে যেন পুরো পৃথিবীকে নিজের করে নিতে চাইছে।
ফ্ল্যাটের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে তারা দেখল ক্যাব এসে থেমেছে। চালক হর্ন দিল।
মিথিলা নিশির টুপি ঠিক করে দিল।
– “চলো মা, আজকের দিনটা আমাদের জন্য।”
ফ্ল্যাটের নিচে এসে দাঁড়িয়েছে তিনজন—মিথিলা, রোহিত আর নিশি। সবার মুখে উচ্ছ্বাস, হাতে ব্যাগ, মনে যেন শহরের ধুলো মুছে নতুন করে সবুজ ছোঁয়ার অপেক্ষা। আজ তারা গ্রামে যাবে। কোলাহলমুক্ত প্রকৃতির কাছে গিয়ে এক রাত কাটিয়ে আসবে, এ পরিকল্পনাই সকাল থেকে তাদের রোমাঞ্চে ভরিয়ে রেখেছে।
কিন্তু পরিকল্পনা আর বাস্তবের মধ্যে যেন অনেক দূরত্ব।
প্রথম ১০ মিনিট অপেক্ষা করল, তারপর ২০ মিনিট। অবশেষে প্রায় ৩০ মিনিট পেরিয়ে গেল। চারপাশে লোকজন আসছে-যাচ্ছে, রোদ মাথার ওপরে উঠছে, অথচ গাড়ির দেখা নেই।
রোহিত পকেট থেকে ফোন বের করে আবার অ্যাপটা রিফ্রেশ করল, বিরক্ত কণ্ঠে বলল—
– “ধুর! এ জন্যই কোনো জায়গায় যেতে আমার ভালো লাগে না। আজই গাড়িটা নষ্ট হবার ছিল!”
মিথিলা একটু ধৈর্য ধরার ভঙ্গিতে বলল,
– “রাগ করো না, একটু অপেক্ষা করো। আসবে, ফোন করে দেখি?”
ঠিক তখনই ফোন বেজে উঠল। স্ক্রিনে ড্রাইভারের নাম ভেসে উঠল। রোহিত সঙ্গে সঙ্গে ধরল। ওপাশ থেকে ভদ্র কণ্ঠস্বর ভেসে এলো—
– “সরি স্যার, খুব দুঃখিত। গাড়ি নিয়ে আসতে দেরি হয়ে গেছে। রাস্তায় অনেক জ্যাম। আমি এখন আপনার ফ্ল্যাটের সামনেই দাঁড়িয়ে আছি।”
রোহিত দাঁত চেপে বলল,
– “এতক্ষণ লাগতে হলো? লোকজনকে অর্ধঘণ্টা রোদে দাঁড় করিয়ে রাখলে! নেমে আসছি।”
ফোন কেটে দিয়ে সে মিথিলা আর নিশিকে ইশারা করল।
– “চলো, ড্রাইভার নাকি এসে গেছে। দেখি কেমন মানুষ।”
তারা তিনজনেই নিচে নেমে রোদের ভেতর দাঁড়ানো গাড়ির কাছে গেল। গাড়ির দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছে মাঝবয়সী এক মানুষ। গায়ের রং কালো, ঘন দাড়িতে মুখ ঢেকে আছে। কপালের ডান পাশে এক-দুটি পুরনো দাগ। বয়স পঞ্চাশের বেশি হবে। গায়ে সাদা পাঞ্জাবি, পরনে পাজামা। চোখে ক্লান্তি, তবে মুখভঙ্গিতে বিনয়।
রোহিত এগিয়ে গিয়ে কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল—
– “এতক্ষণ সময় লাগে না আসতে! ক’ বছর হলো গাড়ি চালাচ্ছো? দেখে তো মনে হয় নতুন। বাংলাদেশি নাকি? কলকাতার রাস্তাঘাট চিনো তো?
লোকটা মাথা নিচু করে হাত জোড় করল।
– “জ্বি স্যার, আমি কুদ্দুস। আসলে নতুনে এসেছি পশ্চিমবঙ্গে। তাই একটু দেরি হয়ে গেল। খুব দুঃখিত।”
মিথিলা চুপচাপ দাঁড়িয়ে শুনছিল। তার দৃষ্টিতে এক ধরনের কৌতূহল—এই মানুষটার গলা যেন ভিন্ন টান, মুখে ভিন্ন ধর্মমতের ছাপ
রোহিত আবার কঠিন স্বরে বলল—
– “সব বিদেশিতেই ভরে গেছে এখন। তুমি কি নিশ্চিত নিয়ে যেতে পারবে আমাদের? আমরা তো গ্রামে যাচ্ছি, পথ চেনো তো?”
কুদ্দুস চোখ তুলে সোজা হয়ে দাঁড়াল।
– “অবশ্যই স্যার, চিন্তা করবেন না। আমি আপনাদের নিরাপদে পৌঁছে দেব। বসুন গাড়িতে।”
মিথিলা হালকা কণ্ঠে বলল—
– “চল রোহিত, আর কথা না বাড়াও। রোদে বাচ্চাটা কষ্ট পাচ্ছে।
নিশি এরই মধ্যে ছোট ছোট পা ফেলে গাড়ির দিকে দৌড় দিয়েছে।
– “মা, আমি জানালার পাশে বসব!”
রোহিত গভীর নিশ্বাস ফেলল। যেন নিজের বিরক্তি গিলে নিল।
– “আচ্ছা, যা হবার হলো। বসো সবাই।”
তিনজন পিছনের সিটে বসে পড়ল।
কলকাতার সকালের শহরটা যেন আজ একটু অন্যরকম। ছুটির দিনের সকাল, চারদিকে কম হর্নের শব্দ, হালকা রোদে ঝলমল করছে রাস্তাঘাট। দূরে ভ্যানে করে ফুলওয়ালা যাচ্ছিল, আর পাশেই চায়ের দোকানে ভিড় জমেছে।
এই সকালের ভেতরেই চারতলার এক ফ্ল্যাটে কোলাহল তুঙ্গে। কারণ আজ ঘুরতে যাবে তারা।
মিথিলা (২৬) আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সোনালি রঙের কানের দুল পরে নিচ্ছে। সাজগোজে সে কখনো বেশি বাড়াবাড়ি করে না, তবে আজ একটু আলাদা। বাইরে বেরোবে তো, তাই পরেছে হালকা রঙের সালোয়ার-কামিজ। চুল খোলা, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক।
অন্যদিকে নিশি খাটের ওপর বসে আছে নতুন গোলাপি ফ্রক পরে। কোলে তার প্রিয় টেডি বিয়ার। উত্তেজনায় মুখটা লাল হয়ে গেছে।
– “মা, আজ তো আমরা গ্রামে যাব তাই না? আমি গরু দেখব”
মিথিলা মুচকি হেসে তার দিকে তাকাল।
– “হ্যাঁ রে বাবু, তবে প্রথমে তোমাকে জুতো পরতে হবে।”
নিশি গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে এসে জুতো পরার জন্য মায়ের সামনে দাঁড়াল।
ঠিক তখনই পাশের ঘর থেকে রোহিত (২৯) বেরিয়ে এলো। জিন্স-টি-শার্ট পরে, হাতে ঘড়ি বাঁধতে বাঁধতে হেসে বলল—
– “আরে, এখনো রেডি হয়নি তোমরা? মেয়ে মানুষের এত লেইট হয় নাকি!”
মিথিলা চোখ রাঙাল।
– “তুমি ছেলে মানুষরা কি বুঝবে! মেয়েকে রেডি করানো, টিফিন গুছানো, নিজের সাজগোজ—সব একসাথে সামলাতে হয়। শুধু খোঁচা মারা ছাড়া তোমাদের আর কোনো কাজ নেই।”
রোহিত কটাক্ষের ভঙ্গিতে বলল,
– “আমার কাজ নেই মানে? সংসারটা চলে কীসে? আমি না কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার, না রোজগার করি তাহলে আজ এই ঘুরতে যাওয়াটাই হতো?”
মিথিলা ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,
– “শুধু টাকা দিয়ে সব হয় না। সংসার চালাতে লাগে সময়, যত্ন আর ধৈর্য। যেটা আমি দিচ্ছি।”
তাদের কথার মাঝে নিশি খিলখিল করে হেসে উঠল।
– “তোমরা দুজন সবসময় ঝগড়া করো, তারপর আবার হাসো। আমি জানি।”
শুনে দুজনেই হেসে ফেলল।
[img=182x1]file:///data/user/0/com.microsoft.office.word/files/temp/msohtmlclip/clip_image001.png[/img]
চরিত্রের ঝলক
মিথিলা – শিক্ষিতা, ঘরোয়া অথচ স্মার্ট। সংসার সামলানোতেই তার আত্মতৃপ্তি। পরিবারকে ঘিরেই তার পৃথিবী।
রোহিত – দায়িত্ববান, তবে মজা করে খোঁচা দেওয়াই তার স্বভাব। চাকরি তাকে ব্যস্ত রাখে, কিন্তু পরিবারের জন্য সবকিছু করতে চায়।
নিশি – প্রাণবন্ত, কৌতূহলী শিশু। তার হাসিতেই যেন এই দম্পতির জীবনের সব আনন্দ।
[img=182x1]file:///data/user/0/com.microsoft.office.word/files/temp/msohtmlclip/clip_image001.png[/img]
মিথিলা সাজ শেষ করে আয়নায় নিজেকে দেখে নিল।
– “চল এবার, দেরি হয়ে যাচ্ছে। গাড়ি বের করোনি এখনো?”
রোহিত মাথা চুলকালো।
– “গাড়িটা তো কাল নষ্ট হয়ে গেছে। গ্যারেজে আছে।”
নিশি অবাক হয়ে চিৎকার করল,
– “ওফফ! তবে আমরা কিভাবে যাব? আমি তো গরু দেখতে চাই।”
রোহিত হেসে তার কপালে চুমু খেল।
– “ক্যাবে যাব বাবু। আগেই ডেকেছি, আসছে।”
মিথিলা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
– “তোমার গাড়িটা সারাদিনই কোনো না কোনো অজুহাত খোঁজে। শেষে ট্যাক্সিই ভরসা।”
রোহিত কাঁধ ঝাঁকাল।
– “গাড়ি তো মানুষ নয়, মাঝে মাঝে অসুস্থ হবেই। তাছাড়া ক্যাবে গেলে রাস্তার দৃশ্যও দেখা যায়।”
নিশি উচ্ছ্বাসে হাততালি দিল।
– “ইয়েস! আমি ক্যাবে যেতে ভালোবাসি। জানালা দিয়ে বাইরে সব দেখতে পারব।”
এই আনন্দে তিনজনের মন এক হয়ে গেল। ছোটখাটো অভিমান মিলিয়ে গিয়ে কেবল রইল ভালোবাসা আর প্রত্যাশা।
[img=182x1]file:///data/user/0/com.microsoft.office.word/files/temp/msohtmlclip/clip_image001.png[/img]
তাদের ফ্ল্যাটের দরজা টেনে তালা দিল রোহিত। সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে মিথিলা বলল,
– “শোনো, আজ কিন্তু আমার ইচ্ছে অনুযায়ী ঘুরব। প্রথমে তোমার গ্রামের বাড়ি, তারপর বিকেলে গঙ্গার ধারে বসব।”
রোহিত মজা করে বলল,
– “তাহলে তো বুঝলাম, আজ আমি ড্রাইভার না, বডিগার্ড মাত্র।”
মিথিলা হাসল।
– “বডিগার্ড তো আছোই, নইলে এত মানুষ ভিড়ের মধ্যে আমি আর নিশি কীভাবে চলতাম?”
নিশি মাঝখান দিয়ে হাত ধরে হাঁটছে। ছোট ছোট পদক্ষেপে যেন পুরো পৃথিবীকে নিজের করে নিতে চাইছে।
ফ্ল্যাটের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে তারা দেখল ক্যাব এসে থেমেছে। চালক হর্ন দিল।
মিথিলা নিশির টুপি ঠিক করে দিল।
– “চলো মা, আজকের দিনটা আমাদের জন্য।”
ফ্ল্যাটের নিচে এসে দাঁড়িয়েছে তিনজন—মিথিলা, রোহিত আর নিশি। সবার মুখে উচ্ছ্বাস, হাতে ব্যাগ, মনে যেন শহরের ধুলো মুছে নতুন করে সবুজ ছোঁয়ার অপেক্ষা। আজ তারা গ্রামে যাবে। কোলাহলমুক্ত প্রকৃতির কাছে গিয়ে এক রাত কাটিয়ে আসবে, এ পরিকল্পনাই সকাল থেকে তাদের রোমাঞ্চে ভরিয়ে রেখেছে।
কিন্তু পরিকল্পনা আর বাস্তবের মধ্যে যেন অনেক দূরত্ব।
প্রথম ১০ মিনিট অপেক্ষা করল, তারপর ২০ মিনিট। অবশেষে প্রায় ৩০ মিনিট পেরিয়ে গেল। চারপাশে লোকজন আসছে-যাচ্ছে, রোদ মাথার ওপরে উঠছে, অথচ গাড়ির দেখা নেই।
রোহিত পকেট থেকে ফোন বের করে আবার অ্যাপটা রিফ্রেশ করল, বিরক্ত কণ্ঠে বলল—
– “ধুর! এ জন্যই কোনো জায়গায় যেতে আমার ভালো লাগে না। আজই গাড়িটা নষ্ট হবার ছিল!”
মিথিলা একটু ধৈর্য ধরার ভঙ্গিতে বলল,
– “রাগ করো না, একটু অপেক্ষা করো। আসবে, ফোন করে দেখি?”
ঠিক তখনই ফোন বেজে উঠল। স্ক্রিনে ড্রাইভারের নাম ভেসে উঠল। রোহিত সঙ্গে সঙ্গে ধরল। ওপাশ থেকে ভদ্র কণ্ঠস্বর ভেসে এলো—
– “সরি স্যার, খুব দুঃখিত। গাড়ি নিয়ে আসতে দেরি হয়ে গেছে। রাস্তায় অনেক জ্যাম। আমি এখন আপনার ফ্ল্যাটের সামনেই দাঁড়িয়ে আছি।”
রোহিত দাঁত চেপে বলল,
– “এতক্ষণ লাগতে হলো? লোকজনকে অর্ধঘণ্টা রোদে দাঁড় করিয়ে রাখলে! নেমে আসছি।”
ফোন কেটে দিয়ে সে মিথিলা আর নিশিকে ইশারা করল।
– “চলো, ড্রাইভার নাকি এসে গেছে। দেখি কেমন মানুষ।”
তারা তিনজনেই নিচে নেমে রোদের ভেতর দাঁড়ানো গাড়ির কাছে গেল। গাড়ির দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছে মাঝবয়সী এক মানুষ। গায়ের রং কালো, ঘন দাড়িতে মুখ ঢেকে আছে। কপালের ডান পাশে এক-দুটি পুরনো দাগ। বয়স পঞ্চাশের বেশি হবে। গায়ে সাদা পাঞ্জাবি, পরনে পাজামা। চোখে ক্লান্তি, তবে মুখভঙ্গিতে বিনয়।
রোহিত এগিয়ে গিয়ে কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল—
– “এতক্ষণ সময় লাগে না আসতে! ক’ বছর হলো গাড়ি চালাচ্ছো? দেখে তো মনে হয় নতুন। বাংলাদেশি নাকি? কলকাতার রাস্তাঘাট চিনো তো?
লোকটা মাথা নিচু করে হাত জোড় করল।
– “জ্বি স্যার, আমি কুদ্দুস। আসলে নতুনে এসেছি পশ্চিমবঙ্গে। তাই একটু দেরি হয়ে গেল। খুব দুঃখিত।”
মিথিলা চুপচাপ দাঁড়িয়ে শুনছিল। তার দৃষ্টিতে এক ধরনের কৌতূহল—এই মানুষটার গলা যেন ভিন্ন টান, মুখে ভিন্ন ধর্মমতের ছাপ
রোহিত আবার কঠিন স্বরে বলল—
– “সব বিদেশিতেই ভরে গেছে এখন। তুমি কি নিশ্চিত নিয়ে যেতে পারবে আমাদের? আমরা তো গ্রামে যাচ্ছি, পথ চেনো তো?”
কুদ্দুস চোখ তুলে সোজা হয়ে দাঁড়াল।
– “অবশ্যই স্যার, চিন্তা করবেন না। আমি আপনাদের নিরাপদে পৌঁছে দেব। বসুন গাড়িতে।”
মিথিলা হালকা কণ্ঠে বলল—
– “চল রোহিত, আর কথা না বাড়াও। রোদে বাচ্চাটা কষ্ট পাচ্ছে।
নিশি এরই মধ্যে ছোট ছোট পা ফেলে গাড়ির দিকে দৌড় দিয়েছে।
– “মা, আমি জানালার পাশে বসব!”
রোহিত গভীর নিশ্বাস ফেলল। যেন নিজের বিরক্তি গিলে নিল।
– “আচ্ছা, যা হবার হলো। বসো সবাই।”
তিনজন পিছনের সিটে বসে পড়ল।