পর্ব ১
সন্ধ্যে ৬টা। দক্ষিণ কলকাতার একটি কফি শপের একটি টেবিলে বসে দুই বন্ধু বিমলেশ ও অমরেশ। বিমলেশ মানে বিমলেশ মিত্র, কলকাতার এক বিখ্যাত বাঙালি শিল্পপতি পরিবারের একমাত্র বংশধর। আরেকজন হল তার বন্ধু অমরেশ দে। দুজনেরই বর্তমানে বয়স ৩২। এই বিমলেশ ও অমরেশের বন্ধুত্বের সুত্রপাত তারা দুজন যখন একই কলেজে একই বিষয় নিয়ে অধ্যয়ন করতে ভর্তি হয়। কলেজের প্রথম বর্ষেই তাদের দুজনের বন্ধুত্ব প্রগার হয়ে ওঠে। তাদের দুজনের বন্ধুত্ব এতটাই প্রগার হয়ে ওঠে যে কলেজের অনেকেই তাদের দুজনকে একে অপরের সহোদর বলে ভেবে বসত। কিন্তু অভিন্নহৃদয় বন্ধু হলেও বিমলেশ ও অমরেশের মধ্যে ছিল বিস্তর ফারাক। যেখানে বিমলেশ ছিল অসামান্য মেধাবী, কলেজের পরিক্ষায় প্রতি বছর র্যাঙ্ক হোল্ডার সেখানে অমরেশ ছিল নিতান্তই একজন অতি সাধারণ ছাত্র, প্রতিবছর কোনক্রমে টেনেটুনে পাশ করা ছাত্র। উপরন্তু বিমলেশ শুধুমাত্র একজন অসামান্য ছাত্রই ছিল না খেলাধুলাতেও সে ছিল সমান পারদর্শী। নিজের কলেজের তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল দলের অধিনায়ক। অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার পজিশনে সে ছিল একজন তুখোড় খেলোয়াড়, তার পায়ের কাজ ছিল দেখার মতন। দলের স্ট্রাইকারদের জন্য ডিফেন্স চেরা পাস বাড়াতে সে ছিল অনবদ্য। কলেজের বা বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে বিমলেশের পারফরমেন্স দেখেই কলকাতা ময়দানের এক নামজাদা ক্লাব তাকে তাদের খেলোয়াড় হিসেবে সই করায় ও সেই থেকে শুরু হয় বিমলেশের পেশাদারী ফুটবল ক্যারিয়ার। উল্টোদিকে অমরেশ কোনদিনও মাঠে পাও রাখেনি ও খেলাধুলো নিয়ে তার বিশেষ কোন আগ্রহও ছিল না।
বিমলেশ কফির কাপে চুমুক দিয়ে কাপ টা নামিয়ে রেখে বন্ধু অমরেশকে বলল, “এটা কি হয়ে গেল বলতো ? এক সেকেন্ডে জীবনটা তছনছ হয়ে গেল। আমার জীবনের সমস্ত স্বপ্নগুলো চুরমার হয়ে গেল।”
অমরেশ উত্তর দিল “কি আর করবি বল, সবই ভাগ্যের পরিহাস।”
“সত্যিই ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাস, তবে এই ঘটনার জন্য কেউই দোষী নয়। সবই আমার পোড়া কপাল” বিমলেশ বলে উঠল।
বলে আর বেশি কথা না বাড়িয়ে দুই বন্ধুতে মিলে নিজের নিজের কফি শেষ করে বিল মিটিয়ে বাইরে বিমলেশের বিএমডাব্লিউ গাড়ীর কাছে গিয়ে দাঁড়াল ও বিমলেশ বলল যে ও অমরেশকে ওর বাড়িতে ড্রপ করে দিয়ে নিজের বাড়ি ফিরবে।
এর প্রত্যুত্তরে অমরেশ তাকে জানালো যে সে এখন বাড়ি ফিরবে না আর বিমলেশের ওকে ড্রপ করতে হবেনা। উপরন্তু সে বিমলেশের উদ্দেশ্যে বলল “বিমলেশ আজ তোকে খুবই মনমড়া লাগছে, তুই বরং লেকের ধারের শান্ত ও উন্মুক্ত পরিবেশে গিয়ে একটু একা বসে নিজের মনটাকে শান্ত করার চেষ্টা করার চেষ্টা কর। তুই তো জানিস আমার জীবনেও কত বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। আমি এখনও খুব মন খারাপ করলে লেকের শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকি। তাই তোকে বলছি তুই ও যা it really helps."
বিমলেশও নিজের বন্ধুর কোথায় আশস্ত্ব হয়ে গাড়ি চালিয়ে সোজা একটু এগিয়ে বাঁদিকে লেকের উদ্দেশ্যে টার্ন নিয়ে অমরেশের দৃষ্টির অগোচর হয়ে গেল ও তা হতেই অমরেশ নিজের পকেট থেকে মোবাইল বের করে একটি নম্বরে কল কানেক্ট করল।
(ক্রমশ)