Posts: 17
Threads: 2
Likes Received: 30 in 15 posts
Likes Given: 4
Joined: Jul 2025
Reputation:
1
07-08-2025, 03:51 PM
(This post was last modified: Yesterday, 06:02 PM by gungchill. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
গ্রামের ছেলে নাইম , গ্রাম ছেড়ে শহরে আসে সিনেমার হিরো হওয়ার জন্য । সহজ সরল নাইম জানে না ওর জন্য এই রহস্যময় শহর নিজের আস্তিনে কত কি ম্যাজিক লুকিয়ে রেখছে । চলুন আমরাও যুক্ত হয় নাইমের এই হিরো হওয়ার সফরে ।
Posts: 17
Threads: 2
Likes Received: 30 in 15 posts
Likes Given: 4
Joined: Jul 2025
Reputation:
1
সব চরিত্র কাল্পনিক , জীবিত অথবা মৃত কারো সাথে সাদৃশ্য পাওয়া গেলে তা একান্ত কাকতালীয় ।
১
কি হইতে চাস ? নায়ক !
হু
হা হা হা হা হুনছস নি কালাম ওই নাকি নায়ক হইতে চায় । পাশে বসা লুঙ্গী পড়া মোটাসোটা লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বলে করিম তারপর আবার সামনে দাঁড়ানো , সদ্য দাড়ি গোঁফ ওঠা লম্বা ফর্সা ছেলেটির দিকে তাকায় আর বলে
শুন নাইম , নায়ক হওয়া এতো সহজ না , তার উপর তুই এতিম পোলা আইসস গেরাম থাইকা , তরে কে নায়ক বানাইব ?
ক্যান তুমি বানাইবা , নাইম নামক ছেলেটি বলল ।
আমার কি হেই ক্ষমতা আছে যে আমি তরে নায়ক বানামু , আমি হইলাম কামলা মানুষ , নায়ক নাইকাগো সামনে যাওয়ার ক্ষমতা ই আমার নাই আবার নায়ক বানামু ।
করিম এর কথা শুনে রাগে গা জ্বলে ওঠে নাইম এর । কত আশা করেই না এসেছিলো এই করিম এর কাছে । এসে জানতে পারছে শালা একটা জোচ্চোর । গ্রামে গিয়ে কত কিছু বলে , অমুক পরিচালকের খুব কাছের লোক, অমুক নায়ক ওকে ভাই ডাকে । আসলে ওসব সব মিথ্যা সেটা জানতে পেরে চোখে সর্ষে ফুল দেখছে নাইম । কত সখ করে এসেছিলো । আসার সময় চাচার কাছে বাপের রেখে যাওয়া শেষ সম্বল ও পানির দামে বিক্রি করে দিয়ে এসেছে । মনে করেছে , শহরে গিয়ে সিনেমায় কাজ করে অনেক উন্নতি করবে । কিন্তু কিসের কি যার উপর ভরসা করে এসেছিলো সেই হলো নাম্বার ওয়ান বাটপার ।
ক্যান তুমি না কইতা পরিচালক মুন্না মজিদ তোমারে ছোট ভাই ডাকে , নায়ক দিলাবার খান এর বাইত তোমার আহন যাওন ।
ঐ সব ভুল্লাই যাও ভাতিজা , গেরামে গিয়া মান ইজ্জত এর লইগা এইসব কইতাম । ক্যান তোমার বাপে তোমারে কয় নাই ?
নাইম বুঝলো আর কোন আশা নেই এই বজ্জাত করিমের কাছ থেকে , বিপদে যে পড়েছে সেটা সম্পর্কে ১০০ ভাগ নিশ্চিত। নাইমের বাবা প্রায় বলতো করিম একটা জোচ্চোর , কিন্তু নাইম বিশ্বাস করতো না । কিন্তু এই শহরে ওর এক মাত্র পরিচিত বেক্তি এই করিম তাই করিমকেই জিজ্ঞাস করলো । এহন আমি কি করমু করিম চাচা । আমি তো সব কিছু বেইচ্চা চইলা আসছি ।
কি ?
হ ভিটা বাড়ি সব চাচার কাছে বেইচ্চা দিসি ।
করিম এর চোখ দুটো চক চক করে উঠলো । একটা ঢোক গিলল করিম । তারপর বলল
সব বেইচ্চা কিন্না আইসস ? তোর বাপ কই
বাইচা নাই , মায় ও নাই , হের লইগা সব বেইচা কিন্না চইলা আসছি ।
টেকা কি লগে লইয়া ঘুরতাসস নাকি । এমন ভাবে বলল করিম যেন নাইমের জন্য খুব চিন্তিত
হ ক্যান ? নাইম জিজ্ঞাস করলো
হায় আমার কপাল , হুনছস নি কালাম এই পোলার কথা , এরা যে নিজেরে কি মনে করে ঢাকার শহরে বেগে টেকা লইয়া ঘুরতাসে । এই কথা বলে করিম উঠে দাঁড়িয়ে নাইম এর একটা হাত ধরে অনেকটা টানতে টানতে নিয়ে চলে নিজের সাথে ।
শোন , নায়ক বানাইতে পারুম না তবে লাইনে ঢুকাইয়া দিতে পারুম । হের পর নায়ক হইতে পারা না পারা তোর উপর । এহন চল আমার লগে । কিছু খাইসস ? চল আগে তোরে কিছু খাওয়াই লই ।
****
•
Posts: 17
Threads: 2
Likes Received: 30 in 15 posts
Likes Given: 4
Joined: Jul 2025
Reputation:
1
2
গত চারদিন যাবত একটা ঘোরের মাঝে আছে নাইম । একটা মানুষ কি করে আর একটা মানুষ এর সাথে এমন করতে পারে সেটাই ভাবে সিনেমা পাড়ার গেইটে বসে বসে । একেবারে সহায় সম্বলহীন এখন নাইম । জমি আর ভিটা বিক্রি করা সত্তর হাজার টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে করিম ।
চা রুটি খাইয়ে নাইম কে নিয়ে একটা হোটেলে ওঠায় করিম । বলে যে এটা মেস বাড়ি । নাইম অবাক হয়ে করিম এর বউ ছেলে মেয়ের কথা জানতে চাইলে । করিম উদাস হয়ে বলে ।
গেরামে আমারে যেমন দেহস আমি এইখানে তার উল্টা রে নাইম । এই ঢাকার শহর বড় নিষ্ঠুর কয়দিন থাক তুই ও জানতে পারবি ।
নাইম আর কোন কথা বাঁড়ায় নি । রাতে করিম দুই প্যাকেট বিরিয়ানি কিনে আলনে সেটা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে । পরদিন সকালে উঠে দেখে করিম আর ওর ব্যাগ হাওয়া । কিন্তু তখনো নাইম বুঝতে পারনি ওর সর্বনাশ এর কথা । বুঝতে পারলো যখন হোটেল এর ম্যানেজার ওকে প্রায় গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিলো । তখন সব কিছু পানির মতো পরিষ্কার হলো নাইম এর কাছে । করিম ওর সর্বনাশ করেছে, শহরের যে নিষ্ঠুরতা সম্পর্কে করিম ওকে বলেছিলো , নিজেই সেই নিষ্ঠুরতার সাথে নাইম কে পরিচয় করিয়ে দিয়ে গেলো ।
করিম এর বাসার ঠিকানা না জানা থাকায় নাইম প্রতদিন সিনেমা পাড়ার গেইটে বসে করিম এর অপেক্ষা করতে লাগলো । কিন্তু করিমের কোন হদিস নেই , একে তাকে করিমের কথা জিজ্ঞাস করে নাইম , বেশির ভাগ চিনি না বলে কাটিয়ে যায় , বাকি দু একজন যারা চেনে তারা কোন হদিস দিতে পারে না ।
আজো সেই গেইট এর পাশে এসে দাঁড়িয়ে আছে নাইম । পেন্টের পকেটে থাকা ১২০ টাকায় গত তিনদিন কলা রুটি আর প্রতি রাতের জন্য ১০ টাকা খরচ করে কাওরান বাজার একটি আড়ত এ ঘুমানোর সুযোগ পেয়েছে। আজ সেই টাকা ও শেষ । সকাল থেকে কিছু না খাওয়া । পেটের ভেতর ভুতের নাচন শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যে । খিধে একদম সহ্য করতে পারে না নাইম । কোনদিন না খেয়ে থাকতে হয়নি ওকে । বাবা মা গরীব হলেও তিন বেলা ওর খাবার ঠিক ই জোগাড় করে দিয়েছে । কোন দিন খাবার এর চিন্তা করতে হয়নি নাইম কে ।
এই ক্ষুধার্ত অবস্থায় খুব মনে পড়তে লাগলো বাবা মায়ের কথা । চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে এলো অনেক কষ্টেও কান্না থামাতে পারলো না নাইম। কেউ পাছে দেখে ফেলে এই ভয়ে হাঁটুর মাঝে মাথা গুজে মুখ লুকালো ।
কিছুক্ষন পর নাইম একটা নারী কণ্ঠ শুনতে পায় , এই ছেলে এইখানে বইসা কাঁদো ক্যান ? কয়দিন ধইরা দেখতাসি এইখানে বইসা থাকো ? কি হইসে ?
******
Posts: 17
Threads: 2
Likes Received: 30 in 15 posts
Likes Given: 4
Joined: Jul 2025
Reputation:
1
৩
গত চারদিন যাবত নির্দয় রাজধানীর দয়ামায়াহীন আচরনে এইটুকু দরদ যেন নাইম কে আরও আবেগতারিত করে ফেললো । উত্তর দেয়ার শক্তি হারিয়ে ফেললো নাইম । কারন চোখের জল যেন থামতেই চাচ্ছে না ওর ।
কিরে ডলি কি হইসে, এই পোলা কে ? অন্য একটি নারী জিজ্ঞাস করে । কোন ঝামেলা হইসে ?
নারে গত তিন চাইর দিন ধইরা দেখি এইহানে বইসা থাকে ছেলেটা , আজকে দেখি কান্না করে । কি হইসে জিজ্ঞাস করি কিছু বলে না ।
চল এইখনে দারাইয়া থাকিস না এমনেই আমাগো ঝামেলার শেষ নাই । বারতি ঝামেলার কি দরকার । এই বলে দ্বিতীয় নারী চলে গেলো । কিন্তু ডলি গেলো না । একটু ইসতস্তত করে ওখানেই থেকে গেলো । আসে পাশে তাকিয়ে দেখল দু একজন লোক জমা হতে শুরু করেছে । ডলির খুব মায়া হচ্ছে ছেলেটির জন্য । যেদিন প্রথম দেখছিলো সেদিনি বার বার তাকিয়ে দেখছে ডলি । কচি একটি ছেলে এখনো দাড়ি গোঁফ ও ঠিক মতো ওঠেনি আর চেহারায় রাজ্যের মায়া। ছেলেটিকে দেখে ডলির একজনের কথা মনে পড়ে যায় । ১৭ বছর আগে যাকে বিসর্জন দিতে হয়েছিলো ।
এই ছেলে কি হইল কিছু বল না ক্যান , ডলির কিছুতেই ছেলেটিকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না কিন্তু চারিদিকে যেমন লোক জড় হচ্ছে তাতে সমস্যা হতে পারে । যদিও ডলি বড় নায়িকা না যে ওর নামে পত্রিকায় খবর ছেপে যাবে ।তার উপর ডলি * সহ * পড়া। কিন্তু নানা রকম কথা হবে সিনেমা পারায় এতে কাজ পেতে সমস্যা হবে এমনিতেই ডলির যা বয়স এই বয়সে কাজের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমতেই থাকে ।
এই তুমি উঠবা না আমি গেলাম । এই বলে ডলি আর দাড়ায় না হন হন করে হাটা ধরে । অন্য দিনের মতো আর বাসে ওঠেনা , হাটতেই থাকে । যদি ছেলেটি ওর পিছু পিছু আসে এই আশায় । ডলি বোঝে না কেন ছেলেটির জন্য ওর এতো মায়া হচ্ছে । হাটতে হাটতে বার বার পেছন ফিরে তাকাচ্ছে ডলি । কিছুক্ষন পর ডলি বুঝলো ছেলেটি হয়তো আসেনি ওর পিছু পিছু । মনটা খারাপ হয়ে গেলো ডলির ইচ্ছে হলো আবার ফিরে যায় । কার না কার ছলে এমন করে রাস্তায় বসে কাঁদছে ।
কিন্তু ডলি আর ফিরে গেলো না । পরবর্তী বাসস্টপ আসতেই বাসের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো । বাসের অবস্থা দখে দম বন্ধ হয়ে এলো ডলির । ভীষণ চাপ প্যাসেঞ্জারর সবাই গাদাগাদি করে উঠছে বাসে , কে মহিলা কে পুরুষ সেদিকে কারো খেয়াল নেই । এমন নয় যে ডলির শরীর পরপুরুষ এর জন্য অস্পৃশ্য, হরদম পরপুরুষ এর হাত পড়ছে ডলির শরীরে , কেউ কাজের অসিলায় দিচ্ছে আবার কেউ কাজ দেয়ার অসিলায় । কিন্তু সিনেমা পাড়া থেকে বেরোলেই ডলি অন্য রকম হয়ে যায় ওর মাঝে একজন বাড়ির বউ এসে ভর করে । এই বাসের ভিরে কোন লম্পট এসে সুযোগ নিয়ে ওর শরীর এর বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেবে সেটা ভাবতেই ডলির শরীর টা কেমন জানি গুলিয়ে ওঠে ।
চাইলে ডলি একটি সিএনজী স্কুটার নিয়ে চলে যেতে পারে । কয় টাকা আর খরচ হবে ? কিন্তু ডলির মনে সায় দেয়না এতগুলি টাকা সুধু নিজের সাচ্ছন্দের জন্য খরচ করতে । একটা বড় নিশ্বাস নিয়ে ডলি বাসের দরজার দিকে এগিয়ে যায় । কেউই খেয়াল করেনা যে ডলি মহিলা না পুরুষ এক বুন্দু ছাড় পায়না ডলি একজন মহিলা হিসেবে । কয়েকজন ঘেমো পুরুষ মানুষ এর ভেতর অনেকটা হারিয়ে যায় ডলি। কারো কনুই এসে গুঁতো দেয় ডলির নরম বুকে আবার কারো হাঁটু এসে সজোরে লাগে ডলির পাছায় । এতে করে একটুও খারাপ লাগেনা ডলির । কারন এই লোক গুলি ওকে একজন প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই নিয়েছে একজন মহিলা হিসেবে নয় ।আর আঘাত হানা কনুই, হাত আর পা গুলো ওর শরীর একজন নারীর শরীর হিসেবে ছুঁয়ে যায়নি । বরং একজন প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আঘাত করেছে। খারাপ লাগে তখন যখন কোন লম্পট নারী লোভী নিজের কুচ্ছিত বাসনা পুরন করার জন্য নিজের কুচ্ছিত শরীর দিয়ে ডলি কে স্পর্শ করে । খারপ মনটা একটু ভালো হয়ে যায় । যাক কোন লম্পট এর পাল্লায় পড়তে হয়নি ওকে আজ ।
অনেক কষ্টে বাসে উঠে একটু হাপ ছেড়ে দাড়াতেই জানালা দিয়ে বাইরে চোখ পড়লো ডলির । সেই ছেলেটি , এদিক অদিক তাকিয়ে কি যেন খুঁজছে । অনেক লম্বা হওয়ার কারনে ওকে দেখতে ডলির তেমন সমস্যা হয়নি । ততোক্ষণে বাস ছেড়ে দিয়েছে । লোকজনের চাপে ডলি প্রায় বাসের মাঝা মাঝি চলে এসেছিলো । এখন এই ভীর ঠেলে দরজা পর্যন্ত যাওয়া ও একটা দুঃস্বপ্নের চেয়ে কম কিছু না । কিন্তু ডলি নিজের মাঝে একটা প্রচণ্ড তাগিদ বোধ করতে লাগলো । তাই ও ভুলে গেলো ওর আসে পাশে সব পুরুষ মানুষ আর ও একটা মহিলা । ঠেলে ঠুলে চলে এলো দারজার সামনে ।
এই ছেলে কি খোঁজো ? ছেলেটার পিছনে দাঁড়িয়ে আচমকা জিজ্ঞাস করে ডলি ।