08-06-2025, 10:06 PM
(This post was last modified: 15-06-2025, 07:14 PM by Max87. Edited 3 times in total. Edited 3 times in total.)
পর্ব ১ :
মধুমিতার মাঝে মাঝে মনে হয় তার নিজের জীবনটা একটা অভিশপ্ত জীবন। এমন মনে হবার পিছনে কারণও যে আছে। ছোটবেলাতেই একটা গাড়ি দুর্ঘটনায় মধুমিতার বাবা-মা দুজনেই মারা যান। কিন্তু ভাগ্যের জোরে মধুমিতা বেঁচে যাই। তখন খুব বেশি হলে তার বছর আষ্টেক হবে বয়স। আর তারপর থেকেই সে মামার কাছে মানুষ। আর স্বাভাবিক ভাবেই মামী এটাকে ভালো মনে মেনে নিতে পারেনি। আর মামাবাবুও স্ত্রীর বিরুদ্ধে যেতে পারেননি। ফলত, মধুমিতার গঞ্জনা-লাঞ্ছনা নিত্য দিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। তবে মামা মামীর গঞ্জনার হাত থেকে বাঁচাতে না পারলেও পড়াশোনা বন্ধ করেননি। তবে সেটাও বেশিদিন চলল না। উচ্চমাধ্যমিক দেবার আগেই মামী উঠে পরে লাগল মধুমিতার বিয়ে দিতে। আর সত্যি বলতে কি মামীর সাথে এখন মামাও মধুমিতার প্রতি যে ভালোবাসা ছিল তাতে টান দেখাতে শুরু করলেন। কারণ, এমন বাজারদরে কতদিন আর লোকের মেয়েকে পোষা যাই। যতই সে আপন ভাগ্নী হোক। তাও তার বাবা-মা কিছু রেখে গেলে হত। তাই মামাও স্ত্রীর কথায় রাজি হলেন মধুমিতার বিয়ে দিতে। দেখতে দেখতে একখানা পাত্রও জুটে গেল। পাত্রপক্ষের দাবীমত জিনিসপত্র দিতেও মধুমিতার মামা-মামী রাজি হয়ে গেলেন। কিন্তু বিপত্তি এলো বিয়ের দিন। বিয়ের সন্ধ্যায় পাত্রের বাবা রীতিমত দক্ষযজ্ঞ বাঁধিয়ে দিলেন। বাড়ি ভর্তি নিমন্ত্রীত লোকজনের সামনে মধুমিতার মামাকে পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, পনের দাবীমত নগদ টাকা না তুলে দিলে তিনি পাত্র নিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান ছেড়ে চলে যাবেন। মামা বড়কর্তার হাতে পায়ে ধরে বিয়ের পরে মিটিয়ে দেবার কথা বললেও পাত্রপক্ষের বাবা তা শুনলেন না। তিনি নিজের আত্মীয় স্বজন নিয়ে বিয়ের মণ্ডপ ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। মামী অপমানের জ্বালায় চিৎকার করে লোকজনের সামনেই মধুমিতাকে শাপশাপান্ত করতে লাগল। মামাবাবু লোকজনের হাতে পায়ে ধরতে লাগল যাতে মধুমিতাকে লগ্নভ্রষ্টা হবার থেকে যদি কেও বাঁচায়। কিন্তু দেখা গেল মজা নিতে সবাই এলেও, বিপদ থেকে উদ্ধার করতে কেও এগিয়ে এলো না। এইসব বেশ কিছুক্ষন ধরে দেখে শেষে মদনবাবু এগিয়ে এসে মধুমিতার মামাকে জানালেন, যদি মামাবাবুর আপত্তি না থাকে তাহলে তিনি মধুমিতাকে বিয়ে করতে রাজি। উপস্থিত সকলে একমুহূর্তের জন্য থমকে গেল। মামাবাবুও খুঁজে পাচ্ছিলেন কি বলবেন। আসলে মদনবাবুর বয়স হয়েছে। দেখতে গেলে মধুমিতা মদনবাবুর মেয়ের বয়সী। মামাবাবু চুপ করে আছে দেখে মামী এগিয়ে এলো। সে সানন্দে রাজি হল মদনবাবুর প্রস্তাবে। মামাবাবু বোঝানোর চেষ্টা করল স্ত্রীকে কিন্তু স্ত্রী এক হুংকারে মামাবাবুকে থামিয়ে দিয়ে বিয়ের পক্ষে মত দিল।
কিন্তু সমস্যা তাতেও মিটল না। মানুষের চরিত্র সত্যি বিচিত্র। একটু আগে কেও মধুমিতাকে লগ্নভ্রষ্টা হতে বাঁচাতে না এলেও, মেয়ের বয়সী মেয়েকে বিয়ে করার জন্য মদনবাবুকে উল্টে বিদ্রুপ করতে লাগলেন। এইরকম বাকবিতন্ডা শেষে সবাই এমন অনাসৃষ্টি দেখতে পারবেন না বলে বিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গেলেন। যাইহোক ঝামেলা একটু কমলে মাঝরাতের লগ্নে মদনবাবুর সাথে মধুমিতার বিয়ে হয়ে গেল। বর-কনে আর পুরোহিত ছাড়া সাকুল্যে জনাপাঁচেক লোকের সামনে। ভোররাতে বিয়ে মিটলো। কিন্তু সকাল হতেই মামী মেয়ে বিদেয় করে দিলেন। আর বিদায় বেলায় পরিষ্কার বলে দিলেন এই বাড়িতে যেন সে আর না ঢোকে। মদনবাবু নতুন বৌ নিয়ে সকাল সকাল নিজের বাড়িতে চলে এলেন। মদনবাবুর বাড়িতেই একজন বুড়ি কাজ করতো। সেই কোনমতে বরণ করে ঘরে তুলল। আগের দিনের সারারাতের অপমান আর ক্লান্তিতে তখন দুজনের শরীর ভেঙে আসতে চাইছিলো। কাজের বুড়ি মধুমিতাকে নিয়ে একটা ঘরে বিশ্রাম করতে বলল। আর তাদের পাড়ার একজন বৌকে আনলো মধুমিতাকে দেখার জন্য। আসলে বুড়ি ভয় পাচ্ছিলো, মধুমিতা না কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত না নিয়ে নেই। তাই বৌটাকে পাহারায় রাখল। অন্যদিকে মদনবাবুও নিজের ঘরে ঢুকে বিছানা নিলেন।
তা পাত্র-পাত্রী বিশ্রাম নিক, এই ফাঁকে তাদের সম্পর্কে কিছু কথা বলা যাক। মধুমিতার পরিচয় আগেই দিয়েছি। এখন মদনবাবু একজন একলা মানুষ। বয়স পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই হলেও বিয়ে এতদিন করেননি। কেন করেননি তা কেও জানে না। বিষয় সম্পত্তি বলতে গেলে বেশ স্বচ্ছল। বিঘে কুড়ি জমি আছে, তাই চাষ করে দিব্যি চলে যাই ওনার। তবে একটু একা থাকতে পছন্দ করেন। বাড়িটাও তাই গ্রাম ছাড়িয়ে এককোনে বেশ নিরিবিলিতে। বাড়ির চারপাশেই ওনার চাষের জমি। রান্নাবান্না আর বাকি ঘরের কাজকর্ম ওই বুড়িই এতদিন টুকটুক করে, করে দিত। তবে একলা থাকলেও মাঝে মাঝে যে তিনি বেশ্যাবাড়ি যান, সেটা কানাঘুঁষো থাকলেও তেমন প্রমাণ কেও দেখাতে পারেনি। তবে একটা জিনিস মদনবাবুকে বাকিদের থেকে আলাদা করে, আর খুব জোরালো ভাবে আলাদা করে, সেটা হল, ওনার দানবীয় আকার। প্রায় সাড়ে ছ'ফুটের চওড়া আর কুচকুচে কালো না হলেও শ্যামলা রঙের শরীর মানুষের মনে একটা সমীহ জাগায়। তবে নাদুস-নুদুস শরীর নয় মদনবাবুর। বেশ শক্তপোক্ত শরীর ওনার। নিজের কিষেনদের সাথে সমান তালে মাঠে খাটেন তিনি। বলা ভালো এই বয়সেও ওনার মত করে পরিশ্রম কোন জোয়ান ছেলে করতে পারে না। অন্যদিকে মধুমিতা মাত্র পাঁচ ফুট দুই ইঞ্চির গড়পড়তা বাঙালী মেয়ে। মধুমিতাকে মদনবাবুর পাশে আক্ষরিক অর্থেই বাচ্ছা মেয়ে মনে হয়। তারওপর অল্প বয়স। তবে মধুমিতা বেশ সুন্দরী। গায়ের রং ধবধবে ফর্সা না হলেও তাকে ফর্সা বলতে আপত্তি হবে না কারোর। নির্মেদ শরীর। তবে মধুমিতার একটা জিনিস বেশ গর্ব করার মত। আর তাহলে তার স্ত্রীগর্ব দুই বাতাবী লেবুর আকারের বুক। যা তার বয়সী মেয়েদের মধ্যে বেশ একটা ঈর্ষার কারণ।
এবার গল্পে ফিরে আসি। দুপুরে মদনবাবু ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে খেতে বসে মধুমিতার খোঁজ নিলেন। বুড়ি জানাল মধুমিতা ঘুম থেকে উঠে স্নান করেছে। এখন নিজের ঘরে আছে। মদনবাবু আর কিছু না বলে খেয়ে উঠে পড়লেন। বুড়ি মদনবাবুর খাওয়া হলে মধুমিতাকে ভাত বেড়ে দিল। কিন্তু মধুমিতার খাওয়ার রুচি ছিল না। সে কোনোমতে একটু খেয়ে উঠে পড়ল। বিকেলে মদনবাবু বাজার থেকে কিছু ফুল কিনে আনলে বুড়ি, নিজের পাড়ার বৌটাকে সঙ্গে নিয়ে যাহোক একটু সাজিয়ে দিল মদনবাবুর ঘর। তবে মদনবাবু এসবে রাজি ছিলেন না। কিন্তু বুড়ি মানতে চাইলো না। যতই হোক, বিয়ে করা বৌয়ের প্রথম রাত। নিয়ম তো মানতেই হবে। মদনবাবুর বুড়ির ওপর আর কথা বললেন না। সন্ধ্যের পরেই বুড়ি দুজনকে খাবার দিলেন। মধুমিতা আগের মতোই অল্প কিছু মুখে তুলল। খাওয়া হলে আদিবাসী বৌটা একটা ভালো দেখে শাড়ি পরিয়ে সাজিয়ে দিল মধুমিতাকে। দিয়ে মধুমিতাকে মদনবাবুর ঘরে পাঠিয়ে দিল। ঠিক ছিল আজকে বুড়ি আর বৌটা থাকবে। তারা নিচের তলায় একটা ঘরে শুয়ে পড়ল। আসলে মদনবাবুর বাড়িটা দেড়তলা বলা যাই। নিচে রান্নাঘর ছাড়া আরও দুটো ঘর আছে। আর ছাদে একটা ঘর। চাঁদের ঘরেই মদনবাবু থাকেন। নিচের ঘরগুলো সেরকম প্রয়োজন হতো না। বাড়ির সামনে বেশ ফাঁকা উঠোন আর তার পাশে বাথরুম। আর একটা বাথরুম মদনবাবুর ছাদের ঘরে। বাড়ির চারপাশটা অবশ্য উঁচু পাঁচিলে ঘেরা। পিছনে পাঁচিলের শেষে খামার। সেখানে একটা চালাঘর আছে, চাষের জিনিসপত্র রাখার। খামারের চারপাশে কিছু আম, জামের গাছ সাথে একটা মাঝারী পুকুর। সবই মদনবাবুর সম্পত্তি। তবে এমন নিরিবিলিতে চোর-ডাকাত যে কেন আসে না সেটাও একটা রহস্য।
যাইহোক মদনবাবু নিজের ঘরের সোফাতে বসে ছিলেন। বসে কিছু একটা হিসেবে করছিলেন। মধুমিতাকে ঢুকিয়ে দিয়ে আদিবাসী বৌটা দরজা টেনে মুচকি হেঁসে চলে গেল। বৌটা চলে গেলে একলা হতেই মদনবাবু নরম গলায় বললেন - তুমি আগে একটু ঠান্ডা হয়ে বসো। ভয় নেই, তোমার অনুমতি ছাড়া আমি তোমাকে স্পর্শও করব না।
মধুমিতা মুখে কিছু না বলে বিছানায় বসে পড়ল। মধুমিতাকে বসতে দেখে মদনবাবু বললেন - আজকে ঘুমাও। আমি এই সোফাতে শুয়ে যাব। মাথা ঠান্ডা করে কালকে না হয় আমরা কথা বলব।
মধুমিতা আপত্তি করল। যতই হোক দেখতে খারাপ লাগে। কিন্তু মদনবাবু আস্বস্ত করলেন। আলো নিভিয়ে মদনবাবু সোফাটাকে ছড়িয়ে শুয়ে পড়লেন। মধুমিতাও বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে গেল। আসলে শরীরের ক্লান্তি কারোরই পুরোপুরি মেটেনি। সাথে এতবড় একটা মানসিক ধাক্কা।
মধুমিতার মাঝে মাঝে মনে হয় তার নিজের জীবনটা একটা অভিশপ্ত জীবন। এমন মনে হবার পিছনে কারণও যে আছে। ছোটবেলাতেই একটা গাড়ি দুর্ঘটনায় মধুমিতার বাবা-মা দুজনেই মারা যান। কিন্তু ভাগ্যের জোরে মধুমিতা বেঁচে যাই। তখন খুব বেশি হলে তার বছর আষ্টেক হবে বয়স। আর তারপর থেকেই সে মামার কাছে মানুষ। আর স্বাভাবিক ভাবেই মামী এটাকে ভালো মনে মেনে নিতে পারেনি। আর মামাবাবুও স্ত্রীর বিরুদ্ধে যেতে পারেননি। ফলত, মধুমিতার গঞ্জনা-লাঞ্ছনা নিত্য দিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। তবে মামা মামীর গঞ্জনার হাত থেকে বাঁচাতে না পারলেও পড়াশোনা বন্ধ করেননি। তবে সেটাও বেশিদিন চলল না। উচ্চমাধ্যমিক দেবার আগেই মামী উঠে পরে লাগল মধুমিতার বিয়ে দিতে। আর সত্যি বলতে কি মামীর সাথে এখন মামাও মধুমিতার প্রতি যে ভালোবাসা ছিল তাতে টান দেখাতে শুরু করলেন। কারণ, এমন বাজারদরে কতদিন আর লোকের মেয়েকে পোষা যাই। যতই সে আপন ভাগ্নী হোক। তাও তার বাবা-মা কিছু রেখে গেলে হত। তাই মামাও স্ত্রীর কথায় রাজি হলেন মধুমিতার বিয়ে দিতে। দেখতে দেখতে একখানা পাত্রও জুটে গেল। পাত্রপক্ষের দাবীমত জিনিসপত্র দিতেও মধুমিতার মামা-মামী রাজি হয়ে গেলেন। কিন্তু বিপত্তি এলো বিয়ের দিন। বিয়ের সন্ধ্যায় পাত্রের বাবা রীতিমত দক্ষযজ্ঞ বাঁধিয়ে দিলেন। বাড়ি ভর্তি নিমন্ত্রীত লোকজনের সামনে মধুমিতার মামাকে পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, পনের দাবীমত নগদ টাকা না তুলে দিলে তিনি পাত্র নিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান ছেড়ে চলে যাবেন। মামা বড়কর্তার হাতে পায়ে ধরে বিয়ের পরে মিটিয়ে দেবার কথা বললেও পাত্রপক্ষের বাবা তা শুনলেন না। তিনি নিজের আত্মীয় স্বজন নিয়ে বিয়ের মণ্ডপ ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। মামী অপমানের জ্বালায় চিৎকার করে লোকজনের সামনেই মধুমিতাকে শাপশাপান্ত করতে লাগল। মামাবাবু লোকজনের হাতে পায়ে ধরতে লাগল যাতে মধুমিতাকে লগ্নভ্রষ্টা হবার থেকে যদি কেও বাঁচায়। কিন্তু দেখা গেল মজা নিতে সবাই এলেও, বিপদ থেকে উদ্ধার করতে কেও এগিয়ে এলো না। এইসব বেশ কিছুক্ষন ধরে দেখে শেষে মদনবাবু এগিয়ে এসে মধুমিতার মামাকে জানালেন, যদি মামাবাবুর আপত্তি না থাকে তাহলে তিনি মধুমিতাকে বিয়ে করতে রাজি। উপস্থিত সকলে একমুহূর্তের জন্য থমকে গেল। মামাবাবুও খুঁজে পাচ্ছিলেন কি বলবেন। আসলে মদনবাবুর বয়স হয়েছে। দেখতে গেলে মধুমিতা মদনবাবুর মেয়ের বয়সী। মামাবাবু চুপ করে আছে দেখে মামী এগিয়ে এলো। সে সানন্দে রাজি হল মদনবাবুর প্রস্তাবে। মামাবাবু বোঝানোর চেষ্টা করল স্ত্রীকে কিন্তু স্ত্রী এক হুংকারে মামাবাবুকে থামিয়ে দিয়ে বিয়ের পক্ষে মত দিল।
কিন্তু সমস্যা তাতেও মিটল না। মানুষের চরিত্র সত্যি বিচিত্র। একটু আগে কেও মধুমিতাকে লগ্নভ্রষ্টা হতে বাঁচাতে না এলেও, মেয়ের বয়সী মেয়েকে বিয়ে করার জন্য মদনবাবুকে উল্টে বিদ্রুপ করতে লাগলেন। এইরকম বাকবিতন্ডা শেষে সবাই এমন অনাসৃষ্টি দেখতে পারবেন না বলে বিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গেলেন। যাইহোক ঝামেলা একটু কমলে মাঝরাতের লগ্নে মদনবাবুর সাথে মধুমিতার বিয়ে হয়ে গেল। বর-কনে আর পুরোহিত ছাড়া সাকুল্যে জনাপাঁচেক লোকের সামনে। ভোররাতে বিয়ে মিটলো। কিন্তু সকাল হতেই মামী মেয়ে বিদেয় করে দিলেন। আর বিদায় বেলায় পরিষ্কার বলে দিলেন এই বাড়িতে যেন সে আর না ঢোকে। মদনবাবু নতুন বৌ নিয়ে সকাল সকাল নিজের বাড়িতে চলে এলেন। মদনবাবুর বাড়িতেই একজন বুড়ি কাজ করতো। সেই কোনমতে বরণ করে ঘরে তুলল। আগের দিনের সারারাতের অপমান আর ক্লান্তিতে তখন দুজনের শরীর ভেঙে আসতে চাইছিলো। কাজের বুড়ি মধুমিতাকে নিয়ে একটা ঘরে বিশ্রাম করতে বলল। আর তাদের পাড়ার একজন বৌকে আনলো মধুমিতাকে দেখার জন্য। আসলে বুড়ি ভয় পাচ্ছিলো, মধুমিতা না কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত না নিয়ে নেই। তাই বৌটাকে পাহারায় রাখল। অন্যদিকে মদনবাবুও নিজের ঘরে ঢুকে বিছানা নিলেন।
তা পাত্র-পাত্রী বিশ্রাম নিক, এই ফাঁকে তাদের সম্পর্কে কিছু কথা বলা যাক। মধুমিতার পরিচয় আগেই দিয়েছি। এখন মদনবাবু একজন একলা মানুষ। বয়স পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই হলেও বিয়ে এতদিন করেননি। কেন করেননি তা কেও জানে না। বিষয় সম্পত্তি বলতে গেলে বেশ স্বচ্ছল। বিঘে কুড়ি জমি আছে, তাই চাষ করে দিব্যি চলে যাই ওনার। তবে একটু একা থাকতে পছন্দ করেন। বাড়িটাও তাই গ্রাম ছাড়িয়ে এককোনে বেশ নিরিবিলিতে। বাড়ির চারপাশেই ওনার চাষের জমি। রান্নাবান্না আর বাকি ঘরের কাজকর্ম ওই বুড়িই এতদিন টুকটুক করে, করে দিত। তবে একলা থাকলেও মাঝে মাঝে যে তিনি বেশ্যাবাড়ি যান, সেটা কানাঘুঁষো থাকলেও তেমন প্রমাণ কেও দেখাতে পারেনি। তবে একটা জিনিস মদনবাবুকে বাকিদের থেকে আলাদা করে, আর খুব জোরালো ভাবে আলাদা করে, সেটা হল, ওনার দানবীয় আকার। প্রায় সাড়ে ছ'ফুটের চওড়া আর কুচকুচে কালো না হলেও শ্যামলা রঙের শরীর মানুষের মনে একটা সমীহ জাগায়। তবে নাদুস-নুদুস শরীর নয় মদনবাবুর। বেশ শক্তপোক্ত শরীর ওনার। নিজের কিষেনদের সাথে সমান তালে মাঠে খাটেন তিনি। বলা ভালো এই বয়সেও ওনার মত করে পরিশ্রম কোন জোয়ান ছেলে করতে পারে না। অন্যদিকে মধুমিতা মাত্র পাঁচ ফুট দুই ইঞ্চির গড়পড়তা বাঙালী মেয়ে। মধুমিতাকে মদনবাবুর পাশে আক্ষরিক অর্থেই বাচ্ছা মেয়ে মনে হয়। তারওপর অল্প বয়স। তবে মধুমিতা বেশ সুন্দরী। গায়ের রং ধবধবে ফর্সা না হলেও তাকে ফর্সা বলতে আপত্তি হবে না কারোর। নির্মেদ শরীর। তবে মধুমিতার একটা জিনিস বেশ গর্ব করার মত। আর তাহলে তার স্ত্রীগর্ব দুই বাতাবী লেবুর আকারের বুক। যা তার বয়সী মেয়েদের মধ্যে বেশ একটা ঈর্ষার কারণ।
এবার গল্পে ফিরে আসি। দুপুরে মদনবাবু ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে খেতে বসে মধুমিতার খোঁজ নিলেন। বুড়ি জানাল মধুমিতা ঘুম থেকে উঠে স্নান করেছে। এখন নিজের ঘরে আছে। মদনবাবু আর কিছু না বলে খেয়ে উঠে পড়লেন। বুড়ি মদনবাবুর খাওয়া হলে মধুমিতাকে ভাত বেড়ে দিল। কিন্তু মধুমিতার খাওয়ার রুচি ছিল না। সে কোনোমতে একটু খেয়ে উঠে পড়ল। বিকেলে মদনবাবু বাজার থেকে কিছু ফুল কিনে আনলে বুড়ি, নিজের পাড়ার বৌটাকে সঙ্গে নিয়ে যাহোক একটু সাজিয়ে দিল মদনবাবুর ঘর। তবে মদনবাবু এসবে রাজি ছিলেন না। কিন্তু বুড়ি মানতে চাইলো না। যতই হোক, বিয়ে করা বৌয়ের প্রথম রাত। নিয়ম তো মানতেই হবে। মদনবাবুর বুড়ির ওপর আর কথা বললেন না। সন্ধ্যের পরেই বুড়ি দুজনকে খাবার দিলেন। মধুমিতা আগের মতোই অল্প কিছু মুখে তুলল। খাওয়া হলে আদিবাসী বৌটা একটা ভালো দেখে শাড়ি পরিয়ে সাজিয়ে দিল মধুমিতাকে। দিয়ে মধুমিতাকে মদনবাবুর ঘরে পাঠিয়ে দিল। ঠিক ছিল আজকে বুড়ি আর বৌটা থাকবে। তারা নিচের তলায় একটা ঘরে শুয়ে পড়ল। আসলে মদনবাবুর বাড়িটা দেড়তলা বলা যাই। নিচে রান্নাঘর ছাড়া আরও দুটো ঘর আছে। আর ছাদে একটা ঘর। চাঁদের ঘরেই মদনবাবু থাকেন। নিচের ঘরগুলো সেরকম প্রয়োজন হতো না। বাড়ির সামনে বেশ ফাঁকা উঠোন আর তার পাশে বাথরুম। আর একটা বাথরুম মদনবাবুর ছাদের ঘরে। বাড়ির চারপাশটা অবশ্য উঁচু পাঁচিলে ঘেরা। পিছনে পাঁচিলের শেষে খামার। সেখানে একটা চালাঘর আছে, চাষের জিনিসপত্র রাখার। খামারের চারপাশে কিছু আম, জামের গাছ সাথে একটা মাঝারী পুকুর। সবই মদনবাবুর সম্পত্তি। তবে এমন নিরিবিলিতে চোর-ডাকাত যে কেন আসে না সেটাও একটা রহস্য।
যাইহোক মদনবাবু নিজের ঘরের সোফাতে বসে ছিলেন। বসে কিছু একটা হিসেবে করছিলেন। মধুমিতাকে ঢুকিয়ে দিয়ে আদিবাসী বৌটা দরজা টেনে মুচকি হেঁসে চলে গেল। বৌটা চলে গেলে একলা হতেই মদনবাবু নরম গলায় বললেন - তুমি আগে একটু ঠান্ডা হয়ে বসো। ভয় নেই, তোমার অনুমতি ছাড়া আমি তোমাকে স্পর্শও করব না।
মধুমিতা মুখে কিছু না বলে বিছানায় বসে পড়ল। মধুমিতাকে বসতে দেখে মদনবাবু বললেন - আজকে ঘুমাও। আমি এই সোফাতে শুয়ে যাব। মাথা ঠান্ডা করে কালকে না হয় আমরা কথা বলব।
মধুমিতা আপত্তি করল। যতই হোক দেখতে খারাপ লাগে। কিন্তু মদনবাবু আস্বস্ত করলেন। আলো নিভিয়ে মদনবাবু সোফাটাকে ছড়িয়ে শুয়ে পড়লেন। মধুমিতাও বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে গেল। আসলে শরীরের ক্লান্তি কারোরই পুরোপুরি মেটেনি। সাথে এতবড় একটা মানসিক ধাক্কা।