Thread Rating:
  • 5 Vote(s) - 3.2 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Amar Bon Mira
#1
একটি হিন্দি গল্প থেকে আইডিয়া নেয়া হয়েছে । সম্পূর্ণ কাল্পনিক গল্প , বাস্তবের সাথে কোন মিল নেই । ভালো লাগলে লাইক করবেন , ইচ্ছা হলে রেপু দেবেন  আর অবশ্যই কমেন্ট করবেন । প্রতিদিন আপডেট দেয়া সম্ভব নয় , তবে সপ্তায় একটা দুইটা দিতে পারি । মাঝে মাঝে ১০-১২ দিন গ্যাপ ও হতে পারে । নিজ গুনে ক্ষমা করবেন ।  

সবাইকে স্বাগতম  welcome
[+] 3 users Like KK001's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#2


প্রায় চার বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে নীলয় বাড়ি ছেড়ে এসেছে । আর প্রায় দু বছর পার হচ্ছে মায়ের মৃত্যুর । এর মাঝে ইশান আর নিলয়ের বিজনেস ফুলে ফেঁপে বিশাল আকার ধারন করেছে । দুই বন্ধু সারাদিন সুধু কাজ নিয়ে পরে থাকে । কাজ ছাড়া এরা কিছুই বুঝে না । অথচ নিলয়ের বয়স মাত্র ২৩ আর ইশান ২৪ । এই বয়সের অন্য ছেলেদের দিকে তাকালে সম্পূর্ণ উলটো চিত্র দেখা যাবে । কেউ হয়তো আড্ডা দিয়ে সময় পার করছে , কেউবা প্রেম করে বেড়াচ্ছে । কিন্তু এই দুজনের সেসব দিকে নজর নেই। আসলে ইশান প্রথমে এমন ছিলো না , অনেকটা নিলয়ের পাল্লায় পরেই এমন হয়েছে বলা চলে ।

 
দুই বন্ধুর কর্ম মুখর আর দশটা সাধারন দিনের মত , আজো দুজনে কাজে ব্যাস্ত । নীলয় একটা জরুরী মিটিং করছে এক ফরেন ক্রেতার সাথে । এমন সময় ওর ফোন বেজে ওঠে । সধারনত নীলয় মিটিং এর সময় ফোন বন্ধ রাখে । আজ কেন জানি ভুলে গিয়েছিলো । এসব ব্যাপারে বিদেশি লোক গুলো খুব খুঁতখুঁতে , মুখে বলে না তবে নীলয় বুঝতে পারে ওর সাথে আলাপরত লোকটিও বিরক্ত হয়েছে । তাই নীলয় দ্রুত মোবাইল সুইচ অফ করে “সরি স্যার” বলে আবার আলচনায় মন লাগায় ।
 
ঐ মিটিং শেষ করে নীলয় কে আরো দুটো অনলাইন মিটিং করতে হয় । তারপর দুজন বিদেশি বায়ার কে নিয়ে ফেক্টরি ভিজিটেও যেতে হয় । রাত প্রায় সারে নটায় ব্যস্ততা থেকে মুক্তি পায় নীলয় । আর ঠিক ঐ সময় ইশান কল করে ওকে । “ কিরে দোস্ত মায়ের জন্মদিন ভুইলা গেলি?” 
 
“ ওহ শিট “ বলে কপালে চাপর মারে নীলয় , তারপর দ্রুত বলে “ বন্ধু আধা ঘন্টার মধ্যে আসতেসি”
 
“ তারাতারি আয় মা ওয়েট করতাসে” বলে ইশান ।
 
তাড়াহুড়োয় আর মোবাইলের কল লিস্টে মিরা নামটা খেয়াল করা হয় না । দ্রুত গোসল সেরে জামাকাপড় পরে ড্রয়ার থেকে জোবায়দা বেগমের জন্য আগে থেকে কিনে রাখা গিফট নিয়ে বেড়িয়ে পরে নীলয় । বেশ রাত হওয়ায় রাস্তা ফাঁকা , তাই দশ মিনিটে পৌঁছে যায় ইশান দের বাড়ি । না  না জন্মদিনের জন্য কোন পার্টি নয় । এই ৪৪ বছর বয়সে এসে কোন পার্টি চায় না জোবায়দা বেগম । দুই ছেলে মেয়ে আর পুত্রতুল্য নীলয়ের জন্য ভালো কিছু রান্না করে সবাই মিলে রাতের খাবার খেতে বসেছেন ।
 
“ সরি আন্টি লেট হয়ে গেলো” ঘরে ঢুকেই দুই কান ধরে বল্লো নীলয় ।
 
“ হু সেইটা তো হবেই , কাজ ছাড়া আর কিছু মাথায় থাকে তোদের?” এই বলে হাতে থাকা চিকেন এর থালা রেখে রান্না ঘরের দিকে রউনা হলেন জোবায়দা আর যেতে যেতে বলতে লাগলেন “ তাও আবার বুড়ি মায়ের জন্মদিন”
 
ততক্ষনে নীলয় জোবায়দার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে , ওনাকে থামিয়ে বলল “ হইসে আমার বুড়ি মাকে আর কাজ করতে হইবো না , আমি ই সব নিয়া আসি। আর এই নাও তোমার গিফট”
 
নীলয়ের হাতে জোবায়দা বেগমের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা , সেটা হচ্ছে জামদানী সাড়ি । আর নিজের প্রিয় জিনিস দেখে বেশ খুশি ই হলেন উনি , হাত দিয়ে নীলয়ের গাল চেপে ধরে বললেন  “ আমারে খুশি করার সব টেকনিক ই তোর জানা আছে নারে শয়তান”
 
এমন সময় ঈশান তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে ,উছতে হাজির হলো , সাথে রিবা ।
 
রিবা হাঁসতে হাঁসতে বলল “ দেখলা মা তোমার দুই ছেলের চেয়ে আমি কত ভালো , সারাদিন তোমার সাথে ছিলাম”
 
“ হু সেটা তো ছিলা , কিন্তু একটা কাজেও হাত লাগাও নাই “ জোবায়দা কপট রাগে মেয়ে কে উদ্দেশ্য করে বলল ।
 
“ আরে সেইটা তো আমি ইচ্ছা করেই করসি , যেন তুমি তোমার জন্মদিনের রান্না একা একা করার আনন্দ নিতে পারো”
 
রিবার কথা শুনে সবাই হেঁসে উঠলো । বাকি খাবার গুলো ইশান আর নীলয় দুজনে মিলে টেবিলে এনে রাখলো । তাপর তিনজনে মিলে খাওয়া শুরু করলো । খুব হাঁসি তামাশার মাঝে খাওয়া দাওয়া চলছিলো । হঠাত করেই নীলয়ের মনটা একটু খারাপ হয়ে যায়। একটু আনমনা হয়ে গেলো ও , ভাবতে লাগলো নিজের মায়ের সাথে ও কোনদিন এমন ফ্রি ছিলো না। যদি দ্বিতীয়বার সুযোগ পেতো তাহলে ও নিশ্চয়ই এমন সম্পর্ক তৈরি করতো মায়ের সাথে ।  
 
জোবায়দা বেগমের নজর এরালো না ব্যাপারটা । তবে এই নিয়ে তেমন কিছুই বললেন না উনি , নরম স্বরে ডাকলেন নীলয় কে “নীলয় বাবা”
 
কোমল স্বরে নিজের নাম শুনে নীলয় সম্বিত ফিরে পেলো …… “ জি আন্টি”
 
“বাবা তোর আব্বু কল করেছিলো , তোর সাথে বিশেষ কি যেন দরকার। তুই নাকি কল ধরিস না”
হঠাত করে নীলয়ের মনে পড়লো , মিটিং এর সময় মিরা কয়েক বার কল করেছিলো । মিরা হচ্ছে নীলয়ের ছোট বোন , ওর চেয়ে তিন বছরের ছোট । নীলয় ভাবে , তাইতো মিরা তো এতবার কল করার মানুষ না । হয়তো আব্বুই কথা বলতে চেয়েছিলো । কপালে ভাঁজ পরে নীলয়ের , ভাবে ওর সাথে আব্বুর কি গুরুত্বপূর্ণ এমন কথা । শেষ কথা হয়েছিলো মায়ের মৃত্যুর সময় ।  এখন আবার আব্বুর কি দরকার পড়লো যে ওর সাথে কথা বলতে চাচ্ছেন । উনি তো সাগরে পরে গেলেও নীলয়ের হেল্প নিতে চাইবেন না।
 
“ এখন তো রাত অনেক হইসে আন্টি , আব্বু মনে হয় শুয়ে পরসে , আমি কালকে সকালে কল করবো” চিন্তিত স্বরে উত্তর দেয় নীলয় । তারপর খাওয়া দাওয়া শেষে বিদায় নিয়ে নিজের ফ্লাটে চলে আসে ও । তারপর বিগত চার বছরের কথা ওর মনে আসতে থাকে ।
 
 
 
চার বছর আগে ,নীলয় , ১৯ বছরের এক উঠতি বয়সের ছেলে । লেখাপড়ায় মোটামুটি , ভালোও না মন্দ ও না । তবে কলেজ শিক্ষক বাবার জন্য ছেলের এমন মিডীওকর স্টুডেন্ট হওয়া বেশ লজ্জাজনক ব্যাপার ছিলো। তাই বাড়িতে এই নিয়ে খিট্মিট লেগেই থাকতো । নিলয়ের বাবা নীলয় কে দু চক্ষে দেখতে পারে না (আপাত দৃষ্টিতে অন্তত তাই মত হতো)। তাই নিলয়ের মত ১৮ এর টগবগে রক্ত ওয়ালা এক নব্য যুবার ওই বাড়িতে থাকা অসহ্য হয়ে  উঠছিল । তাই নীলয় নীরবে কাউকে না জানিয়ে বাড়ি ছাড়ে ।  
 
সুধু বাড়ি না , একেবারে শহর ছেড়ে দেয় । যোগ দেয় নিলয়ের ই এক বন্ধুর সাথে , বন্ধুর নাম ইশান। বয়সে নিলয়ের চেয়ে বছর দুয়েক বড় । যদিও দুজন একি ক্লাসে পড়তো । হঠাত করে ইশানের পিতার মৃত্যু হলে ইশান নিজ শহরে বাবার বিজনেস দেখার জন্য চলে এসেছিলো বছর খানেক আগেই । তবুও নীলয়ের সাথে যোগাযোগ ছিলো ।
 
বাড়ি ছেড়ে নীলয় ইশানের কাছে এসে হাজির হয় । দাবি জানায় ইশান যেন ওর বিজনেসে যে কোন একটা কাজ ওকে দেয় । প্রথমে ইশান রাজি  হয় না । খুব করে নীলয় কে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাড়ি ফেরত পাঠাতে চায় । কিন্তু বন্ধুর দৃঢ় সংকল্প ইশান কে রণে ভঙ্গ দিতে বাধ্য করে । তাই নিজের সহকারি হিশেবেই নীলয় কে নিয়োগ দেয় । ইশান জানে নিলয়ের বিজনেস নিয়ে খুব আগ্রহ । ছাত্র অবস্থায় নীলয় কে টুকিটাকি বিজনেস করতে দেখেছে ও । ইশান জানে নিলয়ের নেগোসিয়েসন ক্ষমতা খুব ভালো । তাই ওর ইচ্ছা কিছুদিন নিজের এসিস্টেন্ট করে রেখে পরে একটা ভালো পজিসেনে নিয়োগ দেবে ।
 
তবে নিলয়ের আপত্তি থাকার পর ও ইশান প্রথম ছয় মাস নীলয় কে নিজ বাড়িতেই রাখে । সেখানেই নিলয়ের সাথে দেখা হয় ইশানের মা জোবায়দা খানমের সাথে । বিচক্ষণ মহিলা জোবায়দা নীলয় কে মাতৃ স্নেহে আশ্রয় দেয় । প্রথমে বাড়ীর সাথে যোগাযোগ করার জন্য কোন ধরনের চাপ না দিয়ে ধীরে ধীরে নীলয় কে বাধ্য করে বাড়ীর সাথে যোগাযোগ করার ।
 
এক পর্যায়ে নিলয়ের মা এসে নিলয়ের সাথে দেখাও করে যায় । এবং জোবায়দা খানমের পরামর্শে  নীলয় কে কোন চাপ না দিয়ে ওর যা ইচ্ছা করতে দিয়ে , নিজ শহরে ফিরে যায় । ছেলে ভালো আছে এটাই  নিলয়ের মায়ের জন্য যথেষ্ট ছিলো । তাছাড়া ইশানের মা কেও ওনার খুব ভালো লেগেছিলো । মহিলার উপর ভরসা করা যায় ।
 
তবে নীলয় বেশিদিন ঈশানদের বাড়ি থাকেনি । আট মাসের মাথায় একটি মেস বাড়িতে উঠে আসে । ইশান আর জোবায়দাও তেমন একটা আপত্তি করেনি । নিলয়ের উপর ওদের দুজনের ই আস্থা ছিলো। তাই স্বাধীনচেতা নিলয়ের  স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে চায়নি । ততদিনে নীলয় ও নিজের দক্ষতায় ইশানের বিজনেসে ভালো অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে । নিজের নেগোসিয়েসন দক্ষতা কাজে লাগিয়ে বেশ কয়েকটি ভালো ডিল হাসিল করে দিয়েছে কম্পানিকে । খুশি হয়ে ইশান নীলয় কে বিজনেস পার্টনার করে নিয়েছে । সত্যি বলতে ইশান বিজনেসের ক্ষেত্রে বেশ সাদামাটা প্রতিভার অধিকারি । কাজ চালিয়ে নেয়ার মত কিন্তু নিলয়ের মত তুখর না । তাই মায়ের সাথে আলোচনা করে নীলয় কে ১৫% শেয়ার দিয়ে দেয় ইশান ।
 
এভাবে বছর দুই ভালই কাটে , এর মাঝে নীলয় একবার বাড়ি থেকেও ঘুরে আসে । কিন্তু নিজের প্রতি  বাবার শীতল আচরনে একটুও পরিবর্তন হয়নি দেখে , অনেকটা হতাশ হয়েই ফিরে আসে । এর  পর আর তেমন যোগাযোগ রাখেনি নীলয় । সুধু মায়ের সাথে যোগাযোগ রাখতো , কিছু টাকা পাঠাতো ।কিন্তু বাবা আর ছোট বোন নামিরার সাথে তেমন যোগাযোগ রাখতো না । বাড়ি যাওয়া তো দুরের কথা ।   
 
এর পর অবশ্য নীলয় আরো একবার বাড়ি গিয়েছিলো , সেটাওর শেষ যাওয়া । মায়ের মৃত্যু সংবাদ শুনে গিয়েছিলো নীলয় । বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে এক্সিডেন্টে মৃত্যু হয় নিলয়ের মায়ের । খুব ভেঙ্গে পরে নীলয় , তবে ইশান আর জোবায়দা খানমের স্নেহ আর সহজগিতায় আবারো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে । তবে বাড়ীর সাথে এক প্রকার সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলে ।
 
বাবার সাথে হতাশা আর অভিমান থেকে কথা বলে না নীলয় । আর মিরার সাথে খুব প্রয়োজন না হলে কথা বলে না । আগে মিরার সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক থাকলেও বাড়ি থেকে চলে আসার পর আর তেমন যোগাযোগ রাখেনি নীলয় । তাই একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে দুই ভাই বোনের মাঝে । তাই দুজনের মাঝে এখন মাসে দুই একবার সুধু সামাজিকতা রক্ষার আলাপ হয় । এই দূরত্ব অবশ্য নীলয় ইচ্ছে করেই তৈরি করেছে । কেন করেছে সেটা সুধু নীলয় ই ভালো জানে । ধিরেধিরে এই আনুষ্ঠানিকতা রক্ষার যোগাযোগ ও প্রায় বন্ধ হয়ে যায় । এদিকে নীলয় কাজে ব্যাস্ত থাকে অন্য দিকে মিরা এখন বড় হচ্ছে , ওর আলাদা জগত তৈরি হচ্ছে , মিরার আচার আচরন ও পালটে যাচ্ছে , কল করলে বিরক্ত ই হয় । তাই পারিবারিক বন্ধন প্রায় ছিন্ন হয়ে দুটো আলাদা জগত তৈরি হয় একই পরিবারের তিন সদস্যের ।

(প্রথম পোস্ট করার পর দেখি থ্রেড টি দেখা যাচ্ছে না , পরে বুঝলাম আপ্রুভাল এর ব্যাপার সেপার আছে । এর পর থেকে ৫০২ এরর দেখাচ্ছিলো। আজকে দিনের বেলা দেখলাম ঠিক হয়েছে । কিন্তু দিনের বেলা পোস্ট করার পরিবেশ ছিলো না , তাই এখন দিলাম। দেরি হওয়ার জন্য দুঃখিত।) 
Like Reply
#3
সুন্দর শুরু।
লাইক ও রেপু দিলাম।
Like Reply
#4
(24-03-2025, 09:38 PM)buddy12 Wrote: সুন্দর শুরু।
লাইক ও রেপু দিলাম।

অনেক ধন্যবাদ buddy12 আপনাকে । সামনে আমার গল্প আপনার কাছে ভালো লাগবে কিনা জানি না । তবে আপনার এই প্রথম কমেন্ট আমার গল্পের জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত উৎসাহ বাড়িয়ে যাবে । আগামিকাল দ্বিতীয় আপডেট আসছে ।
Like Reply
#5
দারুণ হয়েছে আপডেট চাই
Like Reply
#6
2
 
পরদিন সকাল ৭ টায় কল করে নীলয় । মিরার নাম্বারে নয় ওর বাবার নাম্বারেই কল করে । মিরা এতো সকালে ঘুম থেকে ওঠে না । দুবার রিং বাজতেই ওপাশ থেকে নীলয়ের বাবার ভারি আওয়াজ শুনা যায়
 
“ হ্যালো, কে বলছেন”
 
বিরক্তি চরমে ওঠে নীলয়ের , একটা লোক যে কিনা ওর নাম্বার পর্যন্ত নিজের মোবাইলে সেইভ করে রাখে না , সে অন্য আরেকজন কে কল করে জানিয়েছে যে ওনার কল রিসিভ করা হচ্ছে না । তবে এই বিরক্তি প্রকাশ করে না নীলয় , কণ্ঠ থেকে সকল বিরক্তি লুকিয়ে জবাব দেয় “আমি নীলয়, আপনার নাকি কি জরুরী দরকার আছে?”যদিও নীলয় চেষ্টা করেছিলো যেন বিরক্তি প্রকাশ না পায় , কিন্তু কথাগুলো বলেই বুঝতে পারলো সেই চেষ্টা সফল হয়নি ।
 
“ওহ হ্যা , হঠাত করে মোবাইলটার কি যে হইলো সব নাম্বার ডিলিট হইয়া গেসে। হ্যাঁ দরকার আছে তোর সাথে , তবে এখন বলতে পারবো না , এখন কলেজে যাই । দুইটার দিকে একবার কল দিস”
 
কোন কিছু না বলেই কল কেটে দেয় নীলয় , মনটা ভার হয়ে যায় সকাল বেলাই । হয়তো ও ওর বাবার প্রতি অবিচার ই করেছে । হয়তো লোকটাকে বাইরে থেকে যেমন দেখা যায় ভেতরটা ওরকম নয় । এইতো একটু আগেই লোকটাকে ভুল বুঝলো ও। ওর নাম্বার নিজের মোবাইলে না রাখার জন্য বিরক্ত হয়েছিলো । অথচ ও জানেই না যে ওর বাবার মোবাইল থেকে অসাবধানতা বসত সব নাম্বার ডিলিট হয়ে গেছে ।
 
এসব ভাবতে ভাবতেই নীলয় অফিসে গিয়ে পৌছায় । এর পর অবশ্য এসব ভাবনার কোন অবকাশ থাকে না । নানা রকম কাজ এসে চেপে বসে এসব “ফালতু” ভাবনার উপর ।
 
কখন যে দুটো  বেজে গেছে সেই খেয়াল নীলয়ের ছিলো না । নানা রকম প্রডাক্টের একটা মূল্য তালিকা তৈরিতে ব্যাস্ত ছিলো । এজকের মাঝেই এটা এক ক্রেতাকে দিতে হবে । বড় একটা অর্ডার কনফার্ম হবে আজ । ক্রেতা একজন চাইনিজ খুব ঘাগু মাল তাই খুব বুঝে শুনে এগোতে হবে । নীলয়ের মত আর দশটা লোক এই অর্ডারের পেছনে লেগে আছে ।
 
হঠাত স্যার ডাকে কাজের জগত থেকে বের হয়ে এলো নীলয়ের আত্মা । দরজার সামনে পিওন দাড়িয়ে । “ কিছু বলবা মনির?” প্রস্ন করে নীলয় ।
 
“ এমডি স্যার আপনেরে খাইতে ডাকে” পিওন মনির দরজায় দাড়িয়ে থেকেই উত্তর দেয় ।
 
যেদিন ঈশান আর নীলয় এক সাথে অফিসে থাকে সেদিন দুপুরে দুইজন এক সাথে লাঞ্চ করে । বেশ অবাক হয় নীলয় , কখন লাঞ্চ টাইম হয়ে গেছে ওর খেয়াল নেই । দ্রুত ঘড়ি দেখে নেয় , দুটো বাজতে দেখে ওর বাবার কথা মনে হয় । পিওন কে “যাও আসছি” বলে বাবার নাম্বারে ফোন করে ।
 
“হ্যালো” সুধু এটুকুই বলে নীলয় , আব্বু ডাক থেকে নিজেকে বিরত থাকে , হ্যা আজকাল অতীত নিয়ে ভাবে নীলয় কিন্তু সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সময় অনেক আগেই চলে গেছে । এখন আর সেসব করতে চাইলেও হয় ওঠে না ।
 
“ হ্যাঁ নীলয় , একটা জরুরী কথা আছে তোর সাথে , দাড়া আমি একটু বাইরে বাইর হইয়া নেই”
 
অপর প্রান্তে নীলয় চেয়ার থেকে ওঠার শব্দ পায় , তারপর একটু খানি হেঁটে চলা । নীলয় বুঝতে পারে না এমন কি কথা বলবে ওর বাবা যে সবার কাছ থেকে দূরে যেতে হচ্ছে । অনেকটা চিন্তার উদ্রেক হয় ওর মাঝে । গেলো দুই বছর পরিবার নিয়ে চিন্তা করার কোন কিছু ছিলো না । আজকে হঠাত এই ভুলতে বসা অনুভুতিটা পুনরায় অনুভব করে বেশ অদ্ভুত লাগছিলো।
 
“ হ্যালো নীলয়”
 
“ জি বলেন”
 
“ কিভাবে বলবো ……… আসলে আমারি উচিৎ সমস্যাটা সমাধান করা , কিন্তু কি করবো বল জীবনে তো এইসব সমস্যা ট্যাকল করিনাই , তোর আম্মুই এসব করতো , তার উপর মিরা মেয়ে মানুষ , ছেলে হইলেও না হয় একটা কথা ছিলো”
 
“ আমি তো ছেলেই ছিলাম” এই কথাটা বলার লোভ নীলয় সামলাতে পারলো না , বলেই ফেলল। বলে নীলয় নিজেকে বেশ হালকা অনুভব করলো  । অপর প্রান্তে নীলয়ের বাবা কথাটা শুনে কয়েক সেকেন্ডের জন্য নিরব হয় গেলো । তারপর একটা বড় নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল
 
“ হুম , মনে হয় আমারই দোষ , আমিই মনে হয় বাবা হিশাবে ব্যারথ , নাইলে আমার দুই ছেলে মেয়ে রে জেইভাবে মানুষ করতে চাইলাম , একটারে ও পারলাম না ।“
নীলয় আবার বাধ সাধলো বলল “ ক্যান আব্বু মিরা তো ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট , আপনি যেমন চান”
 
“যাক ওইসব কথা বাদ দে । এখন সমস্যার সমাধান করতে হবে , তুই মিরা রে কিছুদিন তোর কাছে নিয়া রাখ , এইখানে বদ ছেলের পাল্লায় পরসে ও”
 
“ মানে?” বেশ উঁচু স্বরের জিজ্ঞাস করে নীলয় । এমন নয় যে এর মানে ও বুঝতে পারেনি । কিন্তু কথাটা ওকে বেশ বড় শক দিয়েছে ।
 
“ এসব আমি ডিটেল বলতে পারবো না , তোর মা থাকলে ভালো হইতো, এইটুকুই বলি যে সমস্যা বেশ সিরিয়াস , মান ইজ্জত নিয়ে টানাটানি হইতে পারে , যদি তুই পারিস আমাকে এই ঝামেলা থেকে উদ্ধার কর , আমি আর পারতেসি না”
 
হঠাত নীলয় ক্ষেপে গেলো , বেশ রাগান্বিত স্বরে ওর বাবাকে কিছু কটু কথা শুনিয়ে দিলো , বলল “ এইটা তো আপনার পুরানো অভ্যাস , সমস্যা দেখলে কাইটা পরা , কোন দিন আপনি আপনার ছেলে মেয়ের কোন সমস্যা সমাধান করসেন ? সব সময় খালি ছেলে মেয়ের কাছ থেইকা আশা করসেন , ওরা বড় হইলে এই হইবো সেই হইবো । কোনদিন দিন কি সন্তানের মনের কথা শুনছেন আপনি ? কোনদিন জিজ্ঞাস করসেন ওরা কি চায় ? সমস্যা মনে করসেন আর লাথি দিয়া দূরে সরাইয়া দিসেন।“
 
 
“ শোন নীলয়” অপর প্রান্ত থেকে বাবার নির্লিপ্ত শব্দ শুনে থেমে যায় নীলয় । তারপর ওর বাবা আবার বলতে শুরু করে “ এইসব শুনার জন্য আমি তোর সাথে কথা বলি নাই , যদি পারিস হেল্প কর , না হইলে বাদ দে । আমার বয়স হইসে তোর সাথে তর্ক করার মতন এনার্জি আমার আর নাই। হ্যাঁ মিরা আমার সন্তান , তুই যদি হেল্প না করিস কর , না হইলে আমিই যা পারি করবো , তারপর বাকিটা ভাগ্য , মিরার ভাগ্য যদি খারাপ হয় উচ্ছনে যাবে  নাহলে ঠিক পথে ফিরা আসবে”  
 
এই বলে নীলয়ের বাবা কল কেটে দেয় ।
 
প্রচণ্ড রাগে থর থর করে কাঁপতে থাকে নীলয় । কিন্তু রাগটা যে কার উপর ঠিক বুঝে আসে না ওর । প্রথমে ধরে নেয় রাগটা ও বাবার উপর করেছে । কিছুক্ষণ পর মনে হয় না , আসলে রাগটা মিরার উপর । আবার মনে হয় না ঠিক মিরার উপর নয় , যে ছেলেটাকে নিয়ে ঘটনা সেই ছেলের উপর । ঐ বদমায়েশ কে যদি সামনে পেতো তাহলে এখন হয়তো জ্যান্ত মাটিতে পুতে ফেলতো । আবার মনের এক কোনে এই ধারনা ও উঁকি দেয় যে রাগটা আসলে কারো উপরেই না , ওর নিজের উপর ই ।
 
নীলয় কে এমন রাগান্বিত দেখে পিওন মনির ঠিক বুঝতে পারে না যে স্যার কে কি আবার বলবে নাকি? এই স্যার কে কোনদিন এমন ভাবে রাগতে দেখনি ও । বারবার দরজা দিয়ে উঁকি ঝুকি মারতে থাকে । একপর্যায়ে সাহস সঞ্চয় করে ডেকে ফেলে  বলে ,“স্যার” । মনির ভেবেছিলো কঠিন ধমক খাবে । কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে নীলয় বেশ শান্ত ভাবেই বলল “ মনির তুমি যাও আমি আসতেসি”
 
মনিরের ডাক শুনে প্রচণ্ড রাগে কিছুটা ভাটা পড়েছে । নীলয় উঠে বাথ্রুমের দিকে যায় , ওয়াশ বেসিনের সামনে দাড়িয়ে মুখে পানি ছিটায় । তারপর আয়নায় নিজের চেহারা বেশ কিছুক্ষণ মনোযোগ দিয়ে দেখে।নীলয় বুঝতে পেরেছে আসলে ও কার উপর রাগান্বিত । কিছুটা বাবার উপর যে রেগেছে সেটা অনিবার্য । কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার হচ্ছে প্রায় সবটা রাগ ও নিজের উপর করেছে ।
 
নিজেকে আবারো খুঁটিয়ে দেখে নীলয় , চার বছর আগের সেই কচি চেহারা আর নেই । বেশ পরিপক্কতা এসেছে । ফিনফিনে পাতলা দাড়ির জায়গায় বেশ ঘন দাড়ি এসেছে , ক্লিন সেভ করার পর ও ফর্সা মুখের দাড়ির অংসটুকু নিলচে হয়ে আছে । চুলের ছাটেও বেশ আধুনিকতা এসেছে । ছোট শহরের সেই কনফিউসড নীলয় আর বেশ বড় সর একটি কোম্পানির মার্কেটিং ডাইরেক্টর এই নীলয়ের মাঝে অনেক তফাৎ । তাহলে কেনো মনটা সেই উনিশ বছর বয়সি নীলয়ের মত ঘাবড়ে যাচ্ছে । আর রাগটাও উঠেছে এই কারনেই ।
 
“ বাদ দে ব্যাটা আহাম্মক , চার বছর আগে যে জিনিস কবর দিয়া আসছিস সেই জিনিস আর খুঁড়াখুঁড়ির কি দরকার” বিড়বিড় করে নীলয় নিজেকে উদ্দেশ্য করে না বলে । না ঠিক নিজেকে না , নিজের ভেতরের সেই উনিশ বছর বয়সি মনটাকে উদ্দেশ্য করে বলে । তারপর বাথরুম থেকে বেড়িয়ে যায়।

(ভালো লাগলে লাইক করবেন , কমেন্ট করবেন) 
[+] 6 users Like KK001's post
Like Reply
#7
নিয়মিত ও বড় বড় আপডেট আশা করছি।
গল্প নিয়মিত থাকলে সাথে আছি সবসময়।
পরবর্তী বড় আপডেট এর অপেক্ষায়।
লাইক ও রেপ।


-------------অধম
Like Reply
#8
(27-03-2025, 02:33 AM)অভিমানী হিংস্র প্রেমিক। Wrote: নিয়মিত ও বড় বড় আপডেট আশা করছি।
গল্প নিয়মিত থাকলে সাথে আছি সবসময়।
পরবর্তী বড় আপডেট এর অপেক্ষায়।
লাইক ও রেপ।


-------------অধম

নিয়মিত আপডেট দেয়ার চেষ্টা করবো, কিন্তু বড় বড় শব্দদ্বয় দেখে একটু চিন্তায় পরে গেলাম । বড় ঠিক কত বড়? চেষ্টা করবো আরো একটু বড় করার । ধন্যবাদ কমেন্ট এর জন্য
Like Reply
#9
Update….please
Like Reply
#10
(29-03-2025, 09:15 PM)shafiqmd Wrote: Update….please

আগামি পরশু রাতে আপডেট দেবো । একটু বড় করে দেয়ার চেষ্টা করছি
Like Reply
#11

 
“ কিরে তোকে এইরকম দেখাইতাসে ক্যান? কি হইসে?” নীলয় অফিসের ডাইনিং হলে প্রবেশ করতেই ঈশান অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করলো । নীলয় ভেবেছিলো বাথরুমে গিয়ে মুখে পানি টানি দিয়ে এলে ওর রাগান্বিত ভাবটা হয়তো কিছুটা কেটে যাবে । কিন্তু সেটা যে হয়নি তা ঈশানের প্রশ্ন শুনেই বুঝতে পারলো।
 
নীলয় চায়নি ঈশান কে এই ব্যাপারে জানাতে । ও জানে ঈশান জানতে পারলে নিশ্চিত ভাবেই বাবার পক্ষ নেবে এবং চাপাচাপি করবে যেন নীলয় এই ব্যাপারে বাবাকে সাহায্য করে ।
 
“ আরে কিরকম আবার দেখায় , কিছুই হয় নাই” হেঁসে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে নীলয় । কিন্তু সফল হয় না । ঈশান বার বার খুঁটিয়ে জিজ্ঞাস করে । প্রথমে ঈশান ভাবে হয়তো অফিসের কাজ নিয়ে কিছু হয়েছে।  নীলয় ঈশান কে মিথ্যা কোন টেনশন দিতে চায় না , তাই বলে দেয় যে অফিস সম্পূর্ণ ঠিক আছে ।
এর পর ঈশান আরো বেশি করে ওকে জেরা করা শুরু করে । জেরার মুখে নীলয় মনে মনে ভাবে , যাহ শালা অফিসের সমস্যা বলে দিলেই ভালো হতো । শেষ পর্যন্ত নীলয় হার মানে , মিরার চরিত্র বাঁচিয়ে যতটুকু বলা সম্ভব ঈশান কে খুলে বলে ।
 
“ আর বলিস না ভাই , আমার বাবা আমার সাথে যা করেছে সেই একই  কাজ মিরার সাথেও করতেসে, কোন জায়গার কোন  পোলা  মিরার পেছনে লাগসে  তার জন্য আমারে বলতেসে মিরা কে আমার কাছে আইনা রাখতে, আমার বাপটাই এমন সমস্যা দেখেলে পিছটান দেয়ার অভ্যাস”
 
যদিও নীলয় ব্যাপারটা অনেক হলকা করে বলার চেষ্টা করেছে , কিন্তু ঈশান বেশ সিরিয়াস ভাবেই নিয়েছে । ঈশান কে দেখে খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে । তবে কিছু বলছে না । নীলয় জানে ঈশান মনে মনে কি ভাবছে। ঈশান যে এই কথা নিজের মায়ের কাছে বলবে এবং জোবায়দা বেগম কে দিয়ে ওকে চাপ দেয়াবে সেটা বুঝতে ওর বাকি নেই । তাই সমস্যা টাকে  আরো হালকা করার জন্য নীলয় বলল ,
 
“ দেখে আমি ওদের কাছ থেকে এতো দূরে আসছি কি ওদের সাথে আবার জোড়ানর জন্য ? এইসব ছোট খাটো সমস্যা যদি হান্ডেল করতে না পারে তাহইলে সে কিসের বাপ? বাদ দে এরক ছেলে পেলে দুই একটা পেছনে পরলেই কি ভয় পাইতে হইবো নাকি ? আসলে দেখবি কোন সমসসাই হয় নাই বাবা খালি খালি প্যাচাইতাসে” 
 
“ তারপরও মিরা তোর ছোট বোন হয় , যদি কিছু হইয়া যায় , আজকাল কত ঘটনা ঘটতাসে দেখস না?”
 
নীলয়ের রাগ আবার ফিরে আসে , একটু ঝাঁজের সাথেই বলে “ হইলে হবে , আমার কি ? আমি অনেক আগেই ঐ পরিবারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করসি, আজাইরা ঝামেলা আমি আর নিতে পারবো না, আমি যখন ঐ বয়সে বাড়ি ছাইড়া চইলা আসছিলাম আমারে কে হেল্প করসিলো?”
 
এর পর ঈশান যা বলল সেটার জন্য নীলয় প্রস্তুত ছিলো না । ঈশান যে এমন ক্ষেপে যাবে নীলয় বুঝতে পারেনি , আর ঈশানের এমন ক্ষেপে যাওয়ার কারন ও বা কি ? আশ্চর্য হয়ে নীলয় দেখলো ঈশান ও সমান ঝাঁজের সাথে বলল “ আমি হেল্প করসিলাম , মানুষ ই মানুষ কে হেল্প করে , তুই যে এমন সেলফিস আগে জানলে………”  বাকিটুকু ঈশান আর বলে না ।
 
হতবাক নীলয়ের ঘোড় কেটে যেতেই বুঝতে পারে ঈশানের না বলা কথা গুলো কি ছিলো , অপমানে আর রাগে ওর মুখ লাল হয়ে যায় । ঈশান যে বলতে চেয়েছে যে ওর এমন সেলফিস আচরনের কথা আগে জানলে ওকে হেল্প করতো না সেটা নীলয়ের বুঝতে বাকি রইলো না । খাওয়া রেখেই নীলয় উঠে দাড়ায় , কোন কথা না বলেই হন হন করে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায় । লজ্জায় অপমানে নীলয়ের কান থেকে গরম হাওয়া বের হতে থাকে ।
 
পারকিং লটে নিজের গাড়িতে উঠে বড় করে নিঃশ্বাস ফেলে নীলয় । ভেবে পায় না ঈশান কেন এমন একটা ছোট ব্যাপার নিয়ে ওর সাথে এমন আচরন করলো । হয়তো ঈশানের মাঝে অহঙ্কার চলে এসেছে। ওকে যে হেল্প করেছে সেটা এখন ওকে মনে করিয়ে দিতে চায় । নয়তো যাদের ঠিক মত চেনেও না তাদের জন্য ওকে এমন করে কেনো অপমান করবে ।
 
দ্রুত বেগে পারকিং লট থেকে বেড়িয়ে এদিক সেদিক গাড়ি ভাগায় নীলয় । এই শহরে ওর তেমন কোন বন্ধুও নেই যার কাছে যেতে পারে ও । বাসায় যেতেও ইচ্ছা হচ্ছে না । তাই এমনি এমনি শহরের রাস্তা ধরে চক্কর দিতে থাকে । ঘন্টা দের পর নীলয়ের মোবাইল বেজে ওঠে ,ঈশান কল করেছে । রিসিভ করার কোন ইচ্ছে হয় না ওর ।
 
এদিকে ঈশান ও নিজের আচরনে অবাক হয় । ভেবে পায় না হঠাত কেনো এমন করলো ও । এটা ঠিক নীলয় ওর বাবার সাথে যেটা করেছে সেটা খারাপ , খুব খারাপ করেছে । কিন্তু তাই বলে ওর নিজের এতটা কঠোর কথা বলা উচিৎ হয়নি । এমন কি নীলয়ের বাবা বা বোন কে ও চেনেও না ঠিক মত । বছর দুয়েক আগে নীলয়ের মায়ের মৃত্যুর সময় দেখছিলো ।
 
নাহ এমন কথা ঠিক হয়নি কিছুতেই , মনে মনে ভাবে ঈশান । তারপর নীলয় কে কল করে । ওর কল রিসিভ হয়নি দেখে বেশ হতাশ হয় ঈশান । মনে মনে নিজেকে একশো গালি দেয় । আর ঠিক করে এই ব্যাপারটা মা কেই হেন্ডেল করতে দেবে ।
 
<><><>
 
নীলয় ঘরে ফেরে প্রায় রাত দশটার সময় । রান্না করার ইচ্ছা হয় না বলে খাবার অর্ডার করে দেয় । ফ্রেস হয়ে বিছানায় এসে সোয় । এতো লম্বা সময় একা একা গাড়ি চালানোর সময় রাগটা প্রায় মিলয়েই গিয়েছে। ঈশান ওকে আপন ভাবে বলেই হয়তো ওর আচরনে নারাজ হয়েছে । ঈশান হয়তো ভাবতে পারেনি যে পরিবারের বিপদে ও এমন নিজেকে গুটিয়ে নেবে । আর নিজের আপনজনের এমন আচরনে যে কেউ রাগ করতে পারে । ঈশান ও তাই করেছে ।
 
আসলে ঈশানের কি দোষ , ও তো আর সবটা জানে না । সেদিন সুধু বাবার সাথে রাগ করেই তো ঘর থেকে বের হয়নি নীলয় । এর পেছনে আরো কারন ছিলো । নীলয়ের বাবা ওর পড়াশুনা নিয়ে কথা বলতো ঠিক , কিন্তু ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ার পরিস্থিতি কখনো হয়নি । আসলে ওর বাবা নীলয়ের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলো নীলয় বাড়ি ছেড়ে বেড়িয়ে যাওয়ার পর । এক মাত্র ছেলে লেখাপড়া ছেড়ে চাকরি করবে সেটা উনি কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি । কিন্তু অন্য সবাই কে নীলয় এটা ভাবতে বাধ্য করেছে যে ওর বাবার আচরনেই ও বাড়ি ছেড়ে বেড়িয়ে এসেছিলো । এমনকি নীলয়ের বাবাও সেটাই বিশ্বাস করে । কিন্তু এর পেছনে যে অন্য একটা কারন আছে সেটা সুধু নীলয় ই জানে ।  
 
আর বাবার প্রস্তাব টা শোনার পর থেকে ঐ ঘটনাই ওকে তাড়া করে ফিরছে । না পারছে কাউকে বলতে না পারছে নিজে কোন সমাধান বের করতে । সমাধান বের করা সহজ হতো যদি ঐ ঘটনার জন্য অন্য কাউকে আংশিক হলেও দায়ী করতে পারতো কিন্তু নীলয় জানে যে ঐ ঘটনার জন্য ও একাই দায়ী , আর কোন অংশীদার নেই ।
 
শুয়ে শুয়ে নীলয় আগের দিন গুলোর কথা চিন্তা করে , চিন্তা করে আজকে ইশানের সাথে কথপকথনের। যতই চিন্তা করে ততই ইশানের উপর রাগ কমে । নীলয় বুঝতে পারে ঈশান কেন এমন রিয়েক্ট করেছে । ইশানের নিজের ও একটা ছোট বোন আছে । হয়তো কোন ছেলে ওর বোন কে উত্তক্ত করছে এই কথা জানতে পারলে ঈশান ওর মত এমন নির্লিপ্ত থাকতে পারতো না , বেশিরভাগ ভাই ই পারে না । ঈশান হয়তো নিজেকে দিয়ে ওকে মেপেছে । তাই অমন ক্ষেপে গিয়েছিলো ।
 
কিন্তু ঈশান কে তো সব বলা সম্ভব না । হ্যাঁ নীলয় নিজেও চায় মিরার ভালো । কিন্তু চাইলে কি হবে একটা কালো অধ্যায় যে ওকে তাড়া করে ফেরে । বড্ড ভয় হয় নীলয়ের , হ্যাঁ ভয় হয় কারন এখনো ঐ ভুতটা নীলয়ের কাঁধে আছে । বাবার সাথে কথা বলার সময় ই টের পেয়েছে নীলয় , একি সাথে রাগ আর আনন্দের একটা সিহরন টের পেয়েছিলো নীলয় ।  আর তখনি ওঁত করে রাগ উঠে যায় ।
 
রাগ হয় কারন যে জিনিস কে পেছনে ফেলে আসার জন্য জীবনে এতো বড় রিস্ক নিয়েছিলো । সে জিনিস আবার ফিরে আসতে পারে ভেবে কেন মনটা আনন্দে নেচে উঠেছিলো , হউক না তা ন্যানো সেকেন্ডের জন্য ।
 
এসব ভাবতে ভাবতে রাত্রি গভির হয় কিন্তু ঘুম আসে না নীলয়ের । সুধু ভাবে এখন কি করা উচিৎ , যত কিছুই হোক মিরা ওর ছোট বোন । মিরা কে সাহায্য করা ওর কর্তব্য । সেই সাথে আরো একটা প্রশ্নের উদয় হয় , সেটা হচ্ছে মিরা কি আদৌ সাহায্য চায় নাকি বাবা নিজের ঘাড় থেকে ঝামেলা সরাতে চাচ্ছে।
<><><>
 
ঈশান বাড়ি ফিরে সোজা মায়ের কাছে যায় । আজকে বেশ কয়েকবার নীলয় কে মোবাইলে ট্রাই করেও পায়নি ও । ঈশান জানে কোথায় গেলে কাজ হবে । জোবায়দা বেগমের কথা যে নীলয় ফেলতে পারে না সেটা ঈশানের ভালো করেই জানা ।
 
সব কথা শুনে জোবায়দা বেগম বেশ ক্ষুণ্ণ হয় ঈশানের উপর । বলে “ ঈশান সব কিছু ভালো ভাবে না জেনে একটা মানুষ রে এইভাবে বলা তোর ঠিক হয় নাই বাবা”
 
তারপর বেশ কিছুক্ষণ ভাবে জোবায়দা বেগম তারপর বলে “ শোন , তাড়াহুড়ার দরকার নাই , সময় দে , তারপর আমি গিয়া কথা বলবো ওর সাথে বুঝলি”
 
মায়ের কথা মেনে নেয় ঈশান ।
 
<><><>
 
আজ প্রায় তিনদিন হতে চলল নীলয় অফিস যায় না । যদিও ঈশানের উপর রাগ সেই রাতেই কমে গেছে কিন্তু নিজের তো একটা মান সম্মান আছে । ঈশান আর ঐ দিনের পর নীলয় কে কল করেনি । তাই পরে যাওয়া রাগ অভিমান হয়ে ফিরে এসেছে । তাই আর অফিস যাওয়া হয়নি । তবে নিজের অধিন যারা আছে তাদের কে ফোনে সর্বক্ষণ কন্ট্রাক্ট করছে । সবাইকে কে বলেছে ওর ফ্লু হয়েছে তাই আসতে পারছে না । যত কিছুই হোক অফিসে কাউকে বুঝতে দেয়া যাবে না যে ওদের মনমালিন্য হয়েছে । এই বিজনেসকে নীলয় ঈশানের চেয়ে কম ভালোবাসে না ।
 
তবে একটা উপকার হয়েছে , এই তিনদিন অনেকটা সময় পেয়েছে ও বাবার প্রস্তাবের কথা ভাবার । এবং ভেবেছেও , কিন্তু কোন কুল কিনারা করতে পারছে না । যতবার ই একটা  সিদ্ধান্তে পৌছায় ততবার ই একটা সংকোচ ওকে টেনে ধরে ।
 
আজো এই নিয়েই ভাবছিলো , যদিও সামনে টিভি ছাড়া কিন্তু তাতে নীলয়ের মন নেই । আর ঠিক ঐ সময় কলিং বেল বেজে ওঠে । নীলয় ভাবে হয়তো ঈশান এসেছে । তাই একটু সময় নিয়েই দরজা খুলতে যায় । তবে দরজা খুলে বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরে যায় নীলয় । একটা শর্টস আর ট্যান টপ পরা ছিলো ও । আর দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে জোবায়দা বেগম , হাতে খাবারের বক্স।
 
“ কিরে কি করতেসিলি ? দরজা খুলতে এতো দেরি হইলো ক্যান?”  পর পর দুটো পরস্ন দাগলেন জোবায়দা বেগম , কণ্ঠে মাতৃত্ব সুলভ শাসনের ঝাঁজ । এতে নীলয় আরো ভড়কে গেলো ।
 
“ না মানে আন্টি টিভি দেখেতাসিলাম”
 
নীলয় কে প্রায় ঠেলেই ঘরে ঢুকলেন জোবায়দা , তারপর নাক শিটকে বললেন “ ছি ঘরের কি হাল”
 
টেবিলের উপর গত দুই দিনের অর্ডার করা খাবারের প্যাকেট গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে । নীলয় বুঝতে পারে যা হওয়ার হয়ে গেছে , এখন আর কিছুই করার নেই । তাই পাথার পেছন চুলকে হাঁসতে থাকে ।
 
জোবায়দা বেগম প্রথমে খাবার টেবিল পরিস্কারের কাজে হাত দেয় । অবশ্য এর ফাঁকে ফাঁকে নীলয় এমন কি অনুপুস্থিত ঈশান কে নিয়ে নিজের একশো একটা অভিযোগ গুলো করতে থাকে । সব কিছু পরিস্কার শেষে , জোবায়দা বেগম নীলয় কে গোসল করতে পাঠায় । নীলয় গোসল করে ভদ্রস্থ হয়ে এলে দুজনে মিলে খেতে বসে ।
 
খেতে বসেও নীলয় কে রেহাই দেয় না জোবায়দা বেগম । অফিস কামাই করার কারনে ভীষণ বকুনি দেয়। এবং ভবিষ্যতের জন্য ও হুমকি দিয়ে রাখে বলে , এর পর বিনা কারনে অফিসে না গেলে মুখে আর কিছু বলবে না , একদম লাঠি হাতে মাঠে নামবেন উনি ।
 
জোবায়দা বেগমের এমন মাতৃত্ব সুলভ শাসন গুলো নীলয় বেশ এঞ্জয় করছিলো । নিজের মায়ের কাছ থেকে ওকে দূরে থাকতে হয়ছে । বা মা যখন জীবিত ছিলো তখন মায়ের গুরুত্ব ঠিক মতো বুঝতে পারেনি। তাই মায়ের সাথে এমন সম্পর্ক ওর ছিলো না । জোবায়দা বেগমের কথা গুলো শুনতে শুনতে নীলয় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ।
 
ব্যাপারটা জোবায়দার কাছে গোপন থাকে না । ছেলেটা যে ওনার সাথে কথা বলার সময় প্রায় এমন করে সেটা উনি খেয়াল করেন । এবং কেনো এমন করে সেটাও জানেন । এই কারনেই ছেলেটার প্রতি ওনার বিশেষ দুর্বলতা আছে । বিশেষ করে ওর মা মারা যাওয়ার পর থেকে ।
 
খাওয়া দাওয়া শেষে জোবায়দা বেগম আসল কথা তুল্লেন । মিনার কথা নিয়ে বেশ অনেকক্ষণ সময় নিয়ে নীলয় কে বুঝিয়ে বল্লনে । প্রায় ঘণ্টা খানেক সময় নিয়ে দুজনের মাঝে কথা চালাচলি হলো । জোবায়দা বেগমের একটি বৈশিষ্ট্য হলো উনি কখনো কাউকে সরাসরি উপদেশ দেন না । নানা ভাবে পরিস্থিতি তুলে ধরেন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহনে সাহায্য করেন । নীলয়ের ক্ষেত্রেও তাই করলেন । অতীতেও তিনি নীলয় কে এসম পরস্থিতিতে হেন্ডেল করেছেন , তাই তিনি জানেন নীলয়ের কোন কোন বাটন চাপ দিলে কাজ হবে। এবং চলে যাওয়ার সময় উনি উনার কাজে সন্তুষ্ট ।
 
জোবায়দা চলে যাওয়ার পর নীলয় বেশ কিছুক্ষণ স্থির হয়ে বসে রইলো । ঈশানের মায়ের একটি কথাই বার বার বাজতে লাগলো ওর কানে । “ অনেক সময় অতীত কে ভুলে সামনে এগিয়ে যেতে হয় , নইলে ভবিষ্যতে দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না”
[+] 6 users Like KK001's post
Like Reply
#12
গল্পের শুরুতেই বিলম্ব , যদিও আমার ইচ্ছা ছিলো না । কিন্তু হয়েই গেলো , কি আর করা, আগামিকাল নতুন আপডেট দেবো ।
Like Reply
#13

 
নীলয় আবারো অফিসে যাওয়া আসা শুরু করে । ঈশান বেস লজ্জিত নিজের ব্যাবহারের কারনে । কিন্তু দুই বন্ধুর মাঝে এতোটাই ঘনিষ্ঠতা যে কেউ কারো কাছে ক্ষমা চাওয়ার অপেক্ষায় থাকে না । উল্টো প্রথম দিন থেকেই ঈশান আবারো নীলয় কে নিজের বাবাকে হেল্প করার জন্য নানা ভাবে বোঝাতে শুরু করে।
 
নীলয় নিজেও ভাবতে শুরু করেছে এই বিষয়ে , হয়তো জোবায়দা ঠিক ই বলেছে । অতীতের একটা বিষয় কে কেন্দ্র করে কারো ভবিষ্যৎ নষ্ট হতে দেয়া ঠিক হবে না । নইলে হয়তো দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া কোন কিছু করার  ই থাকবে না । আর তখন কার নীলয় আর আজকের নীলয়ের মাঝে অনেক তফাৎ , তখন যে ভুল করেছিলো তা আজো করবে তেমনটা হওয়ার চান্স খুবি কম । একবার ট্রাই অন্তত করা যায় । নইলে যে কারনে নিজের বাবাকে সারাজীবন দোষী সাব্যস্ত করে এসেছে সেই একি দোষে নিজেও দোষী হয়ে থাকবে। সেটা হচ্ছে নিজের দায়িত্ব থেকে পালিয়ে থাকা ।
 
বেস কয়েকদিন পর নীলয় সকাল বেলা নিজের পিতাকে কল করে । নীলয়ের বাবা তখন কলেজ যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলো । তাই একটু তাড়াহুড়ো করছিলো । তখন নীলয় তাকে একটু কড়া ভাবেই বলে
 
“ বাবা শোনেন সারা জীবন নিজের কাজ আর নিজেকে নিয়াই ব্যাস্ত থাকলেন আজকে না হয় একটু সময় নিজের সন্তানদের জন্য বাইর করেন, আপনি সেদিন যেই ভাবে বলতেসিলেন , আমার কাছে সমস্যা অনেক গুরুতর মনে হইসে , আমারে একটু খুইল্লা বলেন প্লিজ”
 
অপর প্রান্তে নীলয়ের বাবা বেস কিছুক্ষণ চুপ থাকে , তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে “ আমি এতো ডিটেইল বলতে পারবো না , তুই তো জোয়ারদার এর ছেলেটাকে চিনস ?”
 
হ্যাঁ নীলয় চেনে , নীলয়ের এক ক্লাস নিচে ছিলো । তবে খুব পয়সা ওয়ালা লোকের ছেলে বলে বেশ দাপট ছিলো ।
 
“ হুম চিনি? তো কি হইসে , ঐ ছেলে কি মিরা রে ডিস্টার্ব করে?”
 
“ ডিস্টার্ব করলে তো ভালই ছিলো রে , ঐ ছেলের সাথে মিরার খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক , কোন ভাবেই আমি মিরা রে ওর কাছ থেকে দূরে রাখতে পারতেসিনা”
 
নীলয়ের কান গরম হয়ে যায় , জায়েদ নামের ঐ ছেলেটাকে নীলয় খুব ভালো করেই জানে । কলেজে থাকার সময় ও অনেক মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিলো । কলেজে একটা কথা খুব প্রচলিত ছিলো সেটা হচ্ছে জায়দ যাকে ধরে , তাকে না খেয়ে ছাড়ে না । বড় ক্লাসে পড়লেও জায়েদের ঐ কীর্তির কথা নীলয়ের অজানা ছিলো না । তাই এমন একটা ছেলের সাথে নিজের ছোট বোনের সম্পর্ক শুনে স্বভাবতই নীলয়ের কান গরম হয়ে গেলো ।
 
“ কত টুকু গড়াইসে ?” নীলয় না জিজ্ঞাস করে পারলো না , নীলয়ের হার্ট বেশ দ্রুত ওঠানামা করছে । মনে মনে চাইছে ওর বাবা বলুক না তেমন বেশি না । কিন্তু হলো তার উল্টো নীলয়ের বাবা যা বলল তাতে নীলয়ের নাকের উপর চিকন ঘাম দেখা দিলো । সম্ভাব্য নানা সিনারিও ওর চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগলো ।
 
“ কি আর বলবো , এসব কথা কি বাপ হইয়া বলতে পারি , সুধু এইটুকু শোন , একদিন তোর বোন রাতে পেছনের জানালা টপকাইয়া ঐ ছেলের সাথে বাইর হইসিলো , রাত প্রায় ৩ টার দিকে বাসায় ফিরসে, আমার কাছে একদিন ই ধরা খাইসে , আরো কতদিন এই কাজ করসে আমি জানি না , জিজ্ঞাস ও করি নাই”
 
“ আর আপনি এতো দিনে আমারে বলতেসেন এই কথা” উল্টো নিজের বাবার উপর ক্ষেপে যায় নীলয়।
 
“আমি তোরে বলার চেষ্টা করসি , কিন্তু শুনলে তো” নীলয়ের বাবাও নিজেকে আর কুল রাখতে পারে না।
 
দুই বাপ বেটার মাঝে তুমুল লেগে যায় । তাই এই আলোচনাও ফলপ্রসূ হয় না ।
 
বেশ কিছুদিন পর অবশ্য নীলয় আর ওর বাবার মাঝে আবারো কথোপকথন হয় । এবং দুজনেই এবার বেশ ধৈর্য সহকারে আলোচনা করে । দুটো পথ খোলা আছে , একটি হচ্ছে নীলয় বাড়িতে গিয়ে মিরাকে শাসন করে আসবে যেন ঐ ছেলের সাথে আর না মেশে । আর দ্বিতীয় পথ হচ্ছে মিরাকে কোন ভাবে ঐ ছেলের কাছ থেকে আলাদা  করা । নীলয় ভালো করেই জানে শাসন করে কোন লাভ হবে না । এক মাত্র নীলয়ের মা ছাড়া ঐ পরিবারের বাকি সবার ঘারের রগ ত্যাড়া । শাসনে বরংউল্টো হবে । আর নীলয়ের পক্ষেও আর ঐ শহরে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয় ।   
 
তাই নীলয় ঠিক করে  মিরা কে নিজের কাছে এনে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে  ঐ শহরে রাখলে মিরা কোন না কোন ভাবে ঐ ছেলের সাথে দেখা করবেই ।
অবশ্য নীলয়ের বাবা একটা প্রস্তাব দিয়েছিলো , উনি চেয়েছিলো মিরার বিয়ে দিতে । যদিও নীলয় এটা করতে পারলে বেঁচে যেতো । কিন্তু একবার যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে এই ব্যাপারে ও হস্তক্ষেপ করবে , তাই এর শেষ ও দেখতে চায় । ওর মতে মিরার বিয়ে দিয়ে দেয়া সমাধান নয় । বরং ওর ভবিষ্যৎ নষ্ট করা ।
 
কিন্তু সমস্যা বাধলো মিরাকে কি বলে নীলয়ের কাছে রেখে যাবে । কিন্তু সমস্যা হলো হঠাত করে মিরা কে যদি বলা হয় নীলয়ের এখানে এনে রাখতে তাহলে নিশ্চয়ই মিরা কিছু একটা সন্দেহ করবে । তাই নীলয় ভাবতে শুরু করে কিভাবে মিরা কে এখানে নিয়ে আসা যায় । অনেক ভেবেও কোন কুল পায় না । এতদিন মিরার সাথে ওর তেমন যোগাযোগ ছিলো না । তাই হঠাত করে বলাও যায় না যে , আয় কদিন আমার এইখানে বেড়িয়ে যা । তা ছাড়া একটা ২০ বছর বয়সি মেয়ে কে তো জোড় করেও নিয়ে আসা যায় না । ভাবতে ভাবতে দুটো দিন পার করে দেয় নীলয় । এই দু দিনে দুবার করে কথাও বলেছে মিরার সাথে । না কোন হিন্টস দেয়নি । বরং হিন্টস পাওয়ার চেষ্টা করেছে । কিন্তু দুবার ই হতাশ হয়েছে নীলয় । মিরা ওর সাথে কথা বলতেই আগ্রহী নয় , নানা রকম বাহানায় কথা বলা এড়িয়ে যেতে চায় ।
 
কয়েকদিন পর অবশ্য নীলয়ের বাবাই একটা ভালো প্রস্তাব নিয়ে আসে । কলেজের কাজে  ওনাকে দুদিনের জন্য নীলয়ের শহরে আসতে হবে । সেই উসিলায় ই মিরা কে নিয়ে আসা যায় । কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সেটা প্রায় এক মাস পর । এর মাঝে জায়েদ মিরার সাথে কি কি করবে ভেবে নীলয়ের ঘাম ছুটে যায়। তবে আর কোন উপায় না দেখে বাপ ছেলে এই প্লান কেই কাজে লাগাতে সিদ্ধন্ত নেয় ।
 
কিন্তু আসল চ্যালেঞ্জ হলো মিরা কে এখানে থেকে যাওয়ার জন্য রাজি করানো । মিরা যদি কোন ছেলের সাথে না জড়িয়ে পরতো তাহলে ওকে এখানে থাকার জন্য রাজি করানো কোন সমস্যা ছিলো না । ওরা এখন যে শহরে থাকে সেটা এর তুলনায় একটা ছোট মফস্বল ছাড়া কিছুই না । এখানে বিশাল বিশাল কলেজ রয়েছে , বড় বড় সব সপিং মল । এছাড়া আধুনিক সব সুযোগ এখানে আছে । কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন । তাই অপেক্ষা করা ছাড়া কোন উপায় নেই । নীলয় ঠিক করলো , হুট করেই বলবে না কিছু । প্রথমে মিরা কে এই শহরের সব সুন্দর এবগ আকর্ষণীয় জায়গা গুলো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাবে। তারপর চলে যাওয়ার অল্প কিছুদিন আগে কথাটি তুলবে । তখন হয়তো মিরা ব্যাপারটা বিবেচনায় নেবে। অবশ্য সম্পূর্ণ ব্যাপারটা ডিপেন্ড করছে মিরা জায়েদের সাথে কতটুকু জড়িয়েছে ।
 
যদিও নীলয় এই দিকে তেমন আশার আলো দেখতে পাচ্ছে না । বাবার কাছে যেমনটা শুনেছে , তাতে মনে হচ্ছে ভালো রকম ই জড়িয়েছে । নীলয়ের একবার মনে হলো জোবায়দা বেগমের কাছ থেকে কোন বুদ্ধি নেয়া যায় কিনা । কিন্তু পরক্ষনেই সেই চিন্তা মাথা থেকে ঝেরে ফেলে দিলো । হ্যাঁ জোবায়দা বেগমকে ও বিশ্বাস করে ভক্তিও করে , কিন্তু নিজের ছোট বোনের চরিত্রে দাগ লাগে এমন কোন কথা ও জোবায়দা বেগম কে বলতে চায় না । সুধু জোবায়দা বেগম নয় , দুনিয়ার কারো কাছেই বলতে পারবে না।
<><><>
 
 
 
একটি মাস নীলয়ের কাছে এক বছরের মত মনে হলো , কিছুতেই কাটতে চায় না । নানা রকম চিন্তা মাথায় গিজগিজ করে । জায়েদের চরিত্র সম্পর্কে ধারনা থাকায়  দুশ্চিন্তা আরো বেশি হয় । নিলয়রা মধ্যবিত্ত মানসিকতার মানুষ , যদিও নীলয় এখন বেশ পয়সা করেছে তার পর ও ওই মানসিকতা থেকে বের হতে পারেনি পুরোপুরি । মিরার সম্পর্কে এসব কথা জানাজানি হয়ে গেলে ওদের মানসম্মান এর কি হবে এই ভেবে ওর রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে । সারাক্ষন ভাবে কি করে মিরাকে এই শহরের প্রতি আকর্ষিত করা যায় । অতীতের যে ঘটনাটি নীলয় কে বাধা দিচ্ছিলো । সেটা প্রায় ভুলতেই বসেছে নীলয় । অথচ ওই সময় এই ঘটনার জন্য বাড়ি ছেরেছিলো ও ।
 
অবশেষে সেই বিশেষ দিন চলে আসে ।  নীলয় যখন জানতে পারে যে ওরা দুজন ট্রেনে উঠেছে তখন নীলয় হাফ ছাড়ে । মনে মনে ভাবে যাক অন্তত প্রথম ধাপ সম্পূর্ণ হলো । ও ভেবেছিলো মিরা আসতে চাইবে না কোন বাহানা বানিয়ে ওই শহরেই কোন আত্মীয় বাড়ি থেকে যেতে চাইবে । কিন্তু বাবা ছেলে দুজন কেই অবাক করে দিয়ে মিরা বেশ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই এখানে আসতে রাজি হয়েছে । এমন কি ওর বাবার কাছে বলেছে , “বাবা আমি কিন্তু গেলে দুইদিন থাকবো না , তুমি কাজ শেষে ফিরা আইসো আমি আরো কয়দিন ভাইয়ার ঐখানে থাকবো”
 
অবিশ্বাস মাখানো কণ্ঠে নীলয়ের বাবা যখন নীলয় কে এ কথা গুলো বলছিলো তখন নীলয়ের ও বিশ্বাস হচ্ছিলো না । যে মেয়ে রাতে লুকিয়ে চুরিয়ে বয় ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে বের হয় , সেই মেয়ে বাবার অনুপুস্থিত থাকার সুযোগ কাজে না লাগিয়ে উল্টো বাবার সাথে ভাইয়ের বাসায় বেড়াতে আসছে । নাহ নীলয়ের মাথায় ঢোকে না । ও নিজে যদি  মিরার পজিশনে থাকত তাহলে কোনদিন ও বাবার সাথে এসে এমন সুবর্ণ সুযোগ হারাতো না ।
 
খুব ভোরে নীলয় গাড়ি নিয়ে স্টেশনে হাজির হয় । তবে সব সময়ের মত ট্রেন আজো লেট । পাকা দুই ঘণ্টা অপেক্ষার পর ট্রেন এসে স্টেশনে থাম্লো । আর ঠিক তখনি অতীতের সেই বিশেষ ঘটনা যা আজো নীলয় কে তাড়া করে বেড়ায় হঠাত করেই আবার নীলয়ের মনে উঁকি দিলো । যা বিগত এক মাস কোথায় যেন লুকিয়ে ছিলো ।
Like Reply
#14

 
বাবার মুখ থেকে জায়েদের কথা শোনার পর থেকে মাথায় সুধু একটি চিন্তাই ছিলো নীলয়ের । সেটি হচ্ছে কি ভাবে মিরা কে এখানে এনে রাখা যায় , এবং জায়েদের মত লম্পট ছেলের হাত থেকে রক্ষা করা যায়। তাই অতীতের সেই বিশেষ ঘটনা নিয়ে চিন্তা করার সময় ছিলো না । কিন্তু আজকেই সেই গোপন অতীত ফিরে আসার কারন এখন ট্রেন থেকে নামছে । ট্রেনের দরজার দুপাশের দুই হেন্ডেল ধরে সামনের দিকে ঝুকে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে । নীলয় কেই যে খুজছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না ।
 
প্রায় দু বছর আগে শেষ দেখছিলো নীলয় মিরা কে । নাহ বছরে এমন কোন পরিবর্তন হওয়ার কথা নয় যে একদম চেনাই যাবে না । আবার কি যেন একটা বিশেষ পরিবর্তন এসেছে যাতে করে কেমন যেন অপরিচিত ও লাগছে । কিন্তু পরিবর্তনটা ঠিক চোখে পরছেনা ।
 
কয়েকবার এপাশ ওপাশ তাকিয়েই মিরা নীলয় কে দেখে ফেল্ললো , তারপর মুখে ভেসে উঠলো সেই পরিচিত হাঁসি । লাফ দিয়ে নামলো প্লাটফর্মে , হাত নেড়ে জানিয়ে দিলো নিজের উপস্থিতি । মিরাকে দেখার পর থেকেই নীলয় জড় পদার্থের মত দাড়িয়ে ছিলো । মিরার ইশারায় সম্বিত ফিরে এলো । নিজেও হাত উচিয়ে নাড়াল , তারপর এগিয়ে গেলো সামনের দিকে ।
 
মিরার পেছনে ওদের বাবাও নেমেছে । দুই হাতে দুটো ট্রলি ব্যাগ আর কাঁধে একটি ছোট সাইড ব্যাগ । নীলয়ের বুঝতে বাকি রইল না সাইড ব্যাগটি ওর বাবার জিনিসপত্র আর বাকি দুটো ব্যাগের মালিক মিরা। দ্রুত গিয়ে নীলয় ব্যাগ দুটো নিজের হাতে নিয়ে নিলো । তেমন কোন ভাবের আদান প্রদান হলো না । এই কয়েক বছরে সম্পর্ক আর আগের মত স্বাভাবিক তো নেই ।
 
তবে গাড়িতে উঠে মিরাই প্রথম বরফ গলালো , “বাহ ভাইয়া এই গাড়ি তোর?”
 
“ হ্যা ও বলা যায় না ও বলা যায় ” ছোট্ট করে উত্তর দিলো ।
 
“মানে?” মিরা অবাক হলো মিরা
 
“ মানে গাড়ি চালাই মাই , কিন্তু মালিক কোম্পানি” হেঁসে উত্তর দিলো নীলয় । সম্পর্ক দ্রুত স্বাভাবিক করতে চায় ও , একমাত্র তাহলেও মিরা কে এখানে রাখা সম্ভব হবে । তাই যখন মিরা আর কথা বারাচ্ছিলো না তখন নীলয় ই বলা শুরু করলো ।
 
“ কোম্পানির গাড়ি ই ভালো , আমার কোন খরচা নাই , তেল দেয় কোম্পানি , মেইন্টেন করে কোম্পানি হা হা হা”
 
মিরা কিছুক্ষণ কি যেন ভাবে তারপর হেঁসে বলে ওঠে “ তাইলে ভালই , ব্যাপারটা পরকীয়ার মতন হইলো, খাওয়াচ্ছে পরাচ্ছে একজনে , আর ব্যাবহার করছে অন্যজনে  হি হি হি”
 
এই কথা শুনে মিরার বাবা জানালা দিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে কাশতে লাগলো , আর নীলয় কি বলবে ভেবে পেলো না । বাকিটা রাস্তা আর তেমন কোন কথা হলো না । পাছে মিরা কি বলতে গিয়ে কি বলে ফেলে । বেশ কয়েকবার বাবার সাথে চোখা চোখি হলো নীলয়ের , বাবা ইশারা করে বোঝানোর চেষ্টা করলো আজকাল মিরা এমন আচরন ই করছে ।
 
নিজের ফ্লাটের কাছে এসে গাড়ি থামালো নীলয় । পেছন থেকে ট্রলি দুটো নামাতে নামাতে মিরা আর ওর বাবা নেমে পড়েছে । মিরা চারপাশ একবার ভালো করে দেখে নিয়ে বলল “ এইটাও কি আরেকজনের বউ? মানে করছা দেয় একজনে আর ব্যাবহার করিস তুই”
 
“ আরে নাহ , ফ্লাটের ভাড়া আমি দেই নিজের পকেট থেইকা” নীলয় দ্রুত উত্তর দেয় , তারপর আশেপাশে একবার চেয়ে নেয় কেউ মিরার কথা শুনেছে কিনা । নাহ কেউ শোনার মত কাছে নেই। তবে একটা ব্যাপার খেয়াল করে , দূরে লোকজন যা আছে সবাই ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে । আর তাকিয়ে থাকার কারন বুঝতে নীলয়ের সময় লাগে না । ওরা যে হা করে সব মিরা কে দেখছে সেটা খুব অভিয়াস।
 
মিরা দুই হাত উপরে তুলে আড়মোড়া ভাংছে । একটা হলুদ রঙের হাটু পর্যন্ত লম্বা স্লিভ্লেস ফ্রক টাইপ ড্রেস পড়েছে মিরা আর সাথে সাদা লেগিন্স । ড্রেসটার কোমর থেকে বুক পর্যন্ত বেশ আঁটো আর স্লিভ্লেস হওয়ায় লোকগুলোর চোখের পিপাসা মেটানর খোঁড়াকের অভাব হচ্ছে না । মিরার সদ্য কামানো বগল আর তার আশপাশের খানিকটা অংশ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে । তা ছাড়া জামা বুকের সাথে আঁটো ভাবে সেঁটে থাকার কারনে সেখাকার কোন কিছুও লোকের কল্পনার ডাল পালা মেলতে কোন বাধা দিচ্ছে না । স্টেশনে মিরার যে পরিবর্তন টা নীলয়ের চোখে পরেনি সেটা এখন চোখে পরছে , মিরার বিশেষ স্থান গুলো অগের চেয়ে ভারি হয়েছে সাথে ওর ড্রেসআপ এ ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে ।
 
মিরা কখনোই রোগা পটকা ছিলো না , এখনো নয় । তবে মোটা বলা যাবে না কিছুতেই । একটা সুন্দর সুষম ফিগারের অধিকারি । সাথে বিশেষ জায়গা গুলোতে বাড়তি কিছু যোগ হয়ে যে কারো মাথা ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট , অস্ত্রশস্ত্র মিরার ভাণ্ডারে আছে । এমনকি বড় ভাই নীলয় ও সময় সময় এড়িয়ে যেতে পারে না । এই যেমন ঠিক এই মুহূর্তে পারছে না ।
 
কিন্তু অতি দ্রুত নিজেকে সামলে নেয় নীলয় , দ্রুত তাড়া দেয় ভেতরে ঢুকতে । নীলয় যে বাড়িতে থাকে সেটা দোতালা বাড়ি । দোতলার ফ্লাটে থাকে নীলয় । গেটে কোন দারোয়ান নেই , তালার চাবি নীলয়ের কাছে থাকে । নীলয় দ্রুত তালা খুলে সবাই কে নিয়ে ভেতরে ঢোকে ।
 
“পুরো বারিটায় তুই একলা থাকিস?” ঢুকতে ঢুকতে প্রস্ন করে মিরা ।
 
“নাহ , নিচতলায় বাড়ীর মালিক থাকে , চাচা একলা মানুষ , তাই দোতলা আমারে ভাড়া দিসে” সিঁড়ির দিকে এগুতে এগুতে উত্তর দেয় নীলয় । পেছনে পেছনে মিরা তার পর ওদের বাবা । নীলয় পেছন থেকে মিরা কে  অস্পষ্ট কিছু বলতে শোনে …… চাচা…… যেন হতাশ হয়েছে ও ।
 
ঘরে ঢুকেই মিরা ঘোষণা করে ঘুমিতে যাবে ও । ওকে ওর ঘর দেখিয়ে দিতে বলে । নীলয় নাস্তার কথা বললে জানিয়ে দেয় এখন নাস্তা খাবে না । দুঘণ্টা ঘুমোবে তারপর উঠে কিছু একটা খাবে । সাধারনত নীলয় নিজেই নাস্তা বানায় । কিন্তু আজ বাড়ীর সামনে রেস্টুরেন্টে বলে রেখেছিলো । নীলয় কল করে জানিয়ে দেয় দুজনের নাস্তা পাঠাতে ।
 
তারপর মিরা কে ওর রুম দেখিয়ে দেয় । মিরা বাথরুমে গিয়ে ফ্রেস হয় একটা পাজাম আর টিশার্ট পড়ে বেড়িয়ে আসে । নীলয় আর ওর বাবা তখন নাস্তা করছে । আড় চোখে নীলয় একবার মিরার গমন পথের দিকে না তাকিয়ে পারলো না । সেদিকে তাকিয়ে থেকেই নিজেকে নিজে প্রস্ন করলো নীলয় , একজন আদর্শ বড় ভাই হয়ে ওঠা কি ওর পক্ষে সম্ভব হবে আদৌ ?
Like Reply
#15
Vai onek valo golpo... Plz potidin update chai.
[+] 1 user Likes sagarhasan4333's post
Like Reply
#16
(13-04-2025, 03:23 PM)sagarhasan4333 Wrote: Vai onek valo golpo... Plz potidin update chai.

অনেক ধন্যবাদ ভাই , তবে প্রতিদিন তো আপডেট দেয়া সম্ভব না , কিন্তু দ্রুতই নেক্সট আপডেট দিচ্ছি । আগামি পরশু , আশা করি আপনার ভালো লাগবে
[+] 1 user Likes KK001's post
Like Reply
#17
(15-04-2025, 02:59 AM)KK001 Wrote: অনেক ধন্যবাদ ভাই , তবে প্রতিদিন তো আপডেট দেয়া সম্ভব না , কিন্তু দ্রুতই নেক্সট আপডেট দিচ্ছি । আগামি পরশু , আশা করি আপনার ভালো লাগবে

আজকে কি আপডেট পাবো?
[+] 1 user Likes Dipto78's post
Like Reply
#18
(16-04-2025, 08:52 PM)Dipto78 Wrote: আজকে কি আপডেট পাবো?

ফোরামে প্রবেশ করে নিজের থ্রেড এর নাম বোল্ড অক্ষরে দেখতে ভালই লাগে । ধন্যবাদ কমেন্ট করার জন্য । হ্যাঁ পাবেন তবে সেটা টেকনিক্যালি আগামিকাল হয়ে যাবে  Smile
[+] 1 user Likes KK001's post
Like Reply
#19
সরি পাঠক বন্ধুরা , অনেকটাই লেখা হয়েছে তবে আমার মনে হচ্ছে একটা নতুন আপডেটের জন্য যথেষ্ট নয় । আরো কিছুটা যোগ করে আগামিকাল আপডেট দেবো ।
[+] 2 users Like KK001's post
Like Reply
#20


 
নাস্তা করেই নীলয়ের বাবা আর দেরি করেনি , নীলয় বলেছিলো নিজে গাড়ি করে দিয়ে আসবে , কিন্তু ওর বাবা রাজি হয়নি । নীলয় যেখানে থাকে সেখান থেকে প্রায় দু ঘণ্টার পথ যেখানে ওর বাবা কাজ করবে, কলেজ থেকেই থাকার ব্যাবস্থা করেছে । তাই ওনার কোন সমস্যা হবে না । বরং নীলয়ের কাছে থাকলেই প্রতিদিন প্রায় দু ঘণ্টা করে চার ঘণ্টা রাস্তায় ব্যয় হবে । তাই নীলয় ও জরাজুরি করেনি ।
 
আজ নীলয়ে অফিসে প্রায় দু ঘণ্টা লেত করে গেলো । যাওয়ার আগে মিরাকে ডেকে দিয়ে গেলো । আর ওর জন্য কিছু খাবার এনে রেখে গেলো । প্রয়োজন হলে কল করতেও বলে দিলো । লাঞ্চের কথা নিচে রেস্টুরেন্টে বলে গেলো , যেন দুপুর দুটোর সময় দিয়ে যায় ।
 
সন্ধার দিকে নীলয় আজকে একটু তারাতারি অফিস থেকে বেড়িয়ে গেলো । নিজের টিম কে খুব ভালো করে সব কিছু ব্রিফ করে দিয়েছে তার পর ও যদি কোন দরকার হয় তবে ফোনে যোগাযোগ করতে বলে দিলো । বাসায় যখন পৌছুলো তখন প্রায় পৌনে সাতটা বাজে । নীলয়ের কাছে গেটের চাবি থাকায় কলিং বেল বাজালো না ।
 
মিরা টিভি দেখছিলো , হাতে কফির মগ। “ কিরে একা একা বোর হচ্ছিস নাকি রে?”
 
হঠাত দরজা খোলায় মিরা একটু চমকেই উঠেছিলো , টি শার্ট বুকের দিকে একটু ফাঁকা করে বুকে থুতু ছিটিয়ে বলল “ এই তুই এমন ভুতের মতন দরজা খুলবিনাতো ভাইয়া , আমি যতদিন আছি কলিং বেল চাপবি বুঝলি”
 
নীলয় হাসল , দেখলো টিভিতে একটা হরর সেনেমা চলছে । হয়তো এই জন্যই একটু ভয় পেয়েছে মিরা।
 
“ তুই কি সব সময় এতো দেরি কইরা বাসায় আসিস?” মিরা জিজ্ঞাস করলো , ততক্ষনে নীলয় ও এসে বসেছে । বসেই ওর চোখ গেলো মিরার উরুর দিকে , একটা বেশ ছোট শর্টস পরছে মিরা যা হাটুর অনেক উপরেই শেষ হয়ে গেছে ।  ফর্সা সুগটিত উরু , বেশ সুডোল , লোমের চিহ্ন নেই কোথাও । একটা ঢোক গিলল নীলয় । মিরা বেশ খলামেলা পোশাক পরে আজকাল , আগে এমন ছিলো না ।
 
তবে বেশিক্ষণ তাকালো না নীলয় । মিরা বুঝতে পারলে ব্যাপারটা বিব্রতকর হবে । তাই চোখ টিভির দিকে ফিরিয়ে নিয়ে উত্তর দিলো “ আরে না আজকে তো তারাতারি ফিরলাম , বেশিরভাগ সময় ই নয়টা দশটা বাজে”
 
“ বলিস কি রে , তাইলে আমি এতক্ষণ একলা একলা কি করবো , তুই সারাদিন অফিস করবি আর বাড়িতে টিভি দেখুম”
 
নীলয় নিজের ভুল বুঝতে পারলো , ও এখানে মিরাকে এনেছে যেন ওকে এখানে স্থায়ী ভাবে রেখে দেয়া যায় । আর প্রথম দিনেই ওকে বোর করে ফেলল । নীলয় দ্রুত বলল “ আরে না , আমি ছুটি নিসি দুইদিন, আর এখন চল রেডি হইয়া নে , তোরে বাইরে ডিনার করাই , তারপর আমরা রাতে ঘুরাঘুরি করবো , এইটা বড় শহর বুঝলি , এইখানে সারা রাত্র ঘুরাঘুরি করার অনেক জায়গা আছে, একেবার ডিনার কইরা , ঘুরাঘুরি কইরা একদম ১২ টার পর বাসায় আসবো”
 
“ ১২ টার পর কোন রাত্র হইলো” মিরা তাচ্ছিল্য করে বলল , তারপর বলল “ ছোট ছোট শহরেও আজকাল রাত ১২ টা কোন ব্যাপার না বুঝলি”
মিরার মুখে এই কথা শুনে নীলয়ের বাবার বলা কথা গুলো মনে পরে গেলো , মিরা কে জিজ্ঞাস করতে গিয়েও করলো না যে ও কত রাত পর্যন্ত বাইরে থাকতো । তার বদলে হাঁসতে হাঁসতে বলল , “ঠিক আছে যা আগে রেডি তো হ”
 
বোঝা গেলো মিরা বেশ খুশি হয়েছে । প্রায় একরকম লাফ দিয়ে উঠে নিজের ঘরের দিকে প্রায় নাচের ভঙ্গিমায় হেঁটে গেলো ,অনেক কষ্ট করেও নীলয় নিজেকে মিরার পশ্চাৎ দেশ ফলো করা থেকে বিরত রাখতে পারলো না। এবং নিজের মন কে এও বলা থেকে বিরত রাখতে পারলো না যে ইসসস  what an ass।
 
নীলয় নিজেও মুখে পানি ঝাপটা দিয়ে একটা পলো শার্ট আর জিন্স পরে নিলো । অফিসের পোষাকে তো আর বাইরে যাওয়া যায় না ।
 
নীলয় ভেবেছিলো মিরা সকালের মত খোলামেলা  কিছু পরবে । কিন্তু সেরকম  কিছু পরেনি মিরা , একটা ঢিলেঢালা বেশ বড় সাইজের টি শার্ট আর তারচেও ঢিলেঢালা জিন্স পরে বের হয়ে এলো । নীলয়ের মনে হলো ও মনে মনে একটু ডিজেপয়েন্টেড হয়েছে। কিন্তু অতি দ্রুত মন থেকে সেই চিন্তা বের করে দিলো। ঘাড় পর্যন্ত লম্বা চুলগুলো এলমেলো করে রাখা । ঠোঁটে হালকা কিছু মেখেছে , এছাড়া তেমন কোন প্রসাধনি ব্যাবহার করেনি । তবে বেশ দামি পারফিউম ব্যাবহার করেছে । যা মিরার হাত খরচা থেকে কেনা সম্ভব না । এমন কি ওদের বাবার সেলারি থেকেও না ।  নীলয় বুঝতে পারলো এটা জায়েদ গিফট করেছে । তবে যাই পরুক না কেনো মিরা কে সবসময় ই সুন্দর দেখায় ।    
 
গাড়ি তে উঠে নীলয় জিজ্ঞাস করলো “কি খাবি বল?”
 
“ তুই ই ডিসাইড কর , তোর এইখানে আমি তো মেহমান”
 
“ আচ্ছা ঠিক আছে চল”
 
প্রায় আধা ঘণ্টা পর নীলয় একটা বেশ ভালো রেস্তরার সামনে গাড়ি এনে রাখলো । গাড়ি থেকে বের হতেই পোড়া মাংসের গন্ধ এসে লাগলো ওদের নাকে ।
 
“ ওয়াও ব্রো , নাইস চয়েস , আমাদের ঐখানে এরকম স্টেক এর বেবস্থা নাই, গন্ধেই পেটের ভিতর পোকা গুলা কিলবিল শুরু করসে”
 
মনে মনে নীলয় বেশ খুশি হলো , ভাবল এইতো মাত্র শুরু , এই কয়দিকে মিরাকে এমন ইম্প্রেস করতে হবে যেন নিজে থেকেই এই শহরে থেকে যায় ।
 
স্টেক হাউজ টা বেশ নামকরা আর এক্সপেন্সিভ , নীলয় ইচ্ছা করেই মিরা কে এখানে নিয়ে এসেছে । মিরার পারফিউম কত এক্সপেন্সিভ সেটা বোঝার পর থেকে নীলয় বুঝতে পেরেছে যে মিরা কে এখানে রাখতে হলো ওকে বোঝাতে হবে যে এখানে ও অনেক এক্সপেন্সিভ লাইফস্টাইল লিভ করতে পারবে ।
 
ভেতরে ঢুকে মিরা আরো বেশি এক্সাইটেড হলো । রেস্তরার এম্বিয়ান্স দেখার মত । ওরা দুজনে দুটো প্রাইম কাট রিব আই স্টেক অর্ডার করলো । মিরা কে দেখলে বোঝা যায় না তবে ও রেড মিট খুব পছন্দ করে। তবে নীলয় একটা ঝটকার মত খেলো যখন মিরা সাথে বিয়ার অর্ডার করলো । ওর কাছে মনে হলো বেশ বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে , কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু তার আগেই মিরা বলল
 
“ ডোন্ট বিহ্যাব  লাইক ড্যাডি ব্রো ,  একটু আক্টু এইসব তো চলেই , আর এইখানে তো আমরা আমরাই”
 
গলার কাছে চলে আসা বড় ভাই সুলভ কথা গুলো ফের গিলে ফেললো নীলয় । মিরার ফ্রেন্ড হতে হবে ওকে , বড় ভাই নয় । তবে প্রস্ন করলো “এসব কবে থেইকা শুরু করলি” যতটুকু সম্ভব ফ্রেন্ডলি ভয়েস রাখার চেষ্টা করলো নীলয় ।
 
তবে মিরা কোন উত্তর দিলো না , বরং পাল্টা প্রস্ন করলো ভ্রু নাচিয়ে  “ ক্যান তুই কি এইসব করিস না?”
 
নীলয় উত্তরে না বলতে যাচ্ছিলো , কিন্তু তার আগেই মিরা নীলয়ের দিকে আঙ্গুল তাক করে বল্লো “ এই সত্যি বলবি , মিথ্যা কথা বইলা ভালো ছেলে সাজার দরকার নাই”
 
নীলয় কি বলবে বুঝে ওঠার আগেই , মিরা টেবিল চাপড়ে , উচ্চ স্বরে হেঁসে উঠলো , আর বলল “ব্রো ডোন্ট টেল মিঃ টু বিলিভ দিস শিট”
 
নীলয় অবশ্য কিছুই বলল না সুধু কাঁধ ঝাকালো আর হাসল “সত্যি বলছিস?তুই তো খুব ভালো পোলা হয়ে গেছিস রে”
 
“ আর তুই এমন দুষ্টু মাইয়া হইলি কিভাবে” নীলয় হাঁসতে হাঁসতে জিজ্ঞাস করলো
 
“ ক্যান একটু আধটু এঞ্জয় করলেই কি মানুষ দুষ্টু হয়ে যায় নাকি?” পাল্টা প্রস্ন করলো মিরা , কিন্তু ওইদিকে আরে গেলো না নীলয় । সুধু বল্লো “ না আমি সেইটা বলি নাই , তবে বাবার সাথে থাইকা এইসব করা, আসলে চিন্তা করা যায় না… নিতিবান প্রফেসর সাহেব , কড়া শাসনে ছেলে মেয়ে মানুষ করার পক্ষে” শেষের কথা গুলো বলার সময় নীলয় হাত নেড়ে বেশ কৌতুক পূর্ণ ভঙ্গি করে বলল ।
 
“ আরে না মায়ের পর বাবা আর ওই রকম নাই , তুই ও এখন বাবার সাথে থাকতে পাড়বি নিশ্চিন্তে”
 
মিরার শেষের কোথায় ওরা দুজনেই হেসে ফেলল । মিরার চাপাচাপিতে  নীলয় ও বিয়ার নিলো , কিন্তু শেষ করলো না , অবশ্য নীলয়ের ভালো ও লাগেনি । অজুহাত দিলো গাড়ি চালাতে হবে বলে । আসলে মিরার সামনে প্রকাশ করতে চায়নি যে ওর পক্ষে এই তেতো জিনিস খাওয়া সম্ভব না । নীলয়ের মনে হয়েছে এটা বললে মিরা ওকে বোরিং ভাববে । তবে যেভাবে হাসি তামাশার মাঝে ওরা ডিনার শেষ করলো তাতে নীলয়ের কাছে মনেই হয়নি যে ওরা প্রায় চার বছর যাবত একপ্রকার যোগাযোগ ই করে না ।
 
ডিনার শেষে নীলয় মিরা কে কলেজ পাড়ায় নিয়ে এলো । এই এলাকাটা রাতেও জমজমাট থাকে । কলেজ পড়ুয়া ছেলে মেয়েরা অনেক রাত পর্যন্ত এখানে আড্ডা দেয় । অনেক রাত পর্যন্ত  চায়ের দোকান খোলা  থাকে ।
 
মুখে না বললেও মিরা বেশ অবাক হয়েছে এখানকার পরিবেশ দেখে , সেটা ওর আচরনেই টের পেলো নীলয় । এই জিনিস্টাই নীলয় চাচ্ছিলো , ও চাচ্ছিলো মিরা এখানকার পরিবেশ দেখুক । এমন নয় যে নীলয় চাইবে মিরা এখানে থেকে রাতবিরাত বাইরে আড্ডা দিক । তবে লোভ দেখাতে কোন সমস্যা দেখছে না ও । ওর ইচ্ছা জায়দের মত ছেলের হাত থেকে রক্ষা পাক মিরা ।
 
“ ওয়াও পরিবেশটা তো দারুন” কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরির পর মিরা স্বীকার করতে বাধ্য হলো ।
 
“হুম” ছোট্ট করে উত্তর দিলো নীলয় ,
 
“ আমাদের ঐখানে এইরকম কিছু নাই , সন্ধার  পর কলেজ ফাঁকা” মিরাই কথা বলে যেতে লাগলো।
 
পুরো কলেজ পাড়া ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখালো নীলয় ওকে । কোথাও একদল ছেলে মেয়ে বসে নিজদের মাঝে আড্ডা দিচ্ছে । কোথাও বা দল বেধে গোল করে বসে গান গাইছে । কেউ কেউ চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছে । কোথাও তুমুল রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে । পুরো ঘণ্টা তিনেক ঘোরাঘুরির পর মিরা বলল ওর পা ব্যাথা করছে । তাই এবার বাড়ীর উদ্দেশ্যে গাড়িতে উঠলো ওরা ।
মনে মনে নীলয় বেশ খুশি । যে কারনে এখানে এনেছিলো মিরা কে সেটা সার্থক হয়েছে । মিরা নিজেই বলেছে এখানে পড়তে পারলে খুব ভালো লাগতো ওর ।  
 
ঘরে ঢুকে মিরা সোজা ওর রুমে চলে গেলো , যাওয়ার সময় হাত তুলে গুড নাইট আর থায়ঙ্ক ইউ এই দুটো শব্দ বলে গেলো । নীলয় ও ড্রেস চেঞ্জ করে শোয়ার প্রস্তুতি নিয় বিছানায় চলে এলো পনেরো মিনিট এর মাথায় । বেশ ক্লান্ত লাগছে ওর , খুব সকালে উঠে স্টেশনে যাওয়া , তারপর সারাদিন অফিস করা , এর পর রাতের বেলায় ঘুরাঘুরি । বিছানায় শুয়ে অবশ্য সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়লো না । আগামিকাল মিরাকে শপিঙয়ে নিয়ে যাওয়ার প্লান করলো । এখানকার সপিং মল দেখলে মিরার পিলে চমকে যাবে বলে নীলয়ের বিশ্বাস ।
[+] 5 users Like KK001's post
Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)