Thread Rating:
  • 5 Vote(s) - 2 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Erotic Horror অন্ধকারের অভিশাপ
#1
অন্ধকারের অভিশাপ

প্রথম অধ্যায়: নতুন বাড়ি, পুরনো আতঙ্ক

১৯৯৬ সালের এক শীতের সকাল। শহর থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই পুরনো জমিদারবাড়ির সামনে গাড়ি থামল। চারপাশে কুয়াশার আস্তরণ, শুকনো গাছপালার সঙ্গেই যেন বাড়ির পুরনো দেওয়ালগুলো মিলেমিশে গেছে। বিশাল লোহার গেট, উপরে জং ধরা শিকল। গেটের ওপাশে দোতলা বিশাল বাড়ি, স্থাপত্য দেখে বোঝা যায়, এককালে রাজকীয় ছিল, কিন্তু এখন তা ধ্বংসস্তূপের কাছাকাছি।

রঞ্জিত সরকার গাড়ি থেকে নামলেন। সরকারি চাকরিতে ২৫ বছর কেটে গেছে, বয়স ৫০ ছুঁই ছুঁই, তবে শরীরে এখনো বল আছে। মাসিক ২২,০০০ টাকা বেতনে সংসার চলে ভালোই, কিন্তু শহরের ব্যস্ততা থেকে দূরে নিজের বাড়ির স্বপ্ন ছিল অনেকদিনের। তাই এই পুরনো জমিদারবাড়ি কম দামে পেয়ে একপ্রকার লোভ সামলাতে পারেননি।

তার স্ত্রী, মীনা, ৩৯ বছরের গৃহবধূ। দেখতে অপূর্ব সুন্দরী—গায়ের রঙ উজ্জ্বল ফর্সা, সরু কোমর, বড় বড় চোখ, আর শরীরের গঠন এমন যে যেকোনো পুরুষ তাকিয়ে থাকতে বাধ্য। শুভ, তাদের ১৫ বছরের ছেলে, নবম শ্রেণিতে পড়ে।

গাড়ি থেকে নামতেই শুভ কেমন যেন অস্বস্তি অনুভব করল। বাড়িটার দিকে তাকিয়েই তার গা ছমছম করে উঠল। মনে হলো, কোথাও একটা কিছু ভুল আছে।

বাড়ির বর্ণনা

বাড়ির সামনে বড় বারান্দা, কাঠের বিশাল দরজা, যা খুলতেই বিকট শব্দে কেঁপে উঠল। ভিতরে ঢুকতেই পুরনো ধুলোমাখা আসবাবপত্র, বিশাল ঝাড়বাতি, আর মাটিতে ছড়িয়ে থাকা ভাঙা কাঁচ শুভর মনে এক অজানা আতঙ্ক সৃষ্টি করল।

নীচতলায় তিনটি বড় ঘর। রঞ্জিত আর মীনার থাকার জন্য সবচেয়ে বড় ঘরটি বেছে নেওয়া হলো। ঘরের একপাশে পুরনো কাঠের খাট, তার ওপরে ধুলোর স্তর জমে আছে। দেয়ালে ফ্রেমবন্দী কিছু পুরনো ছবি—তবে ছবিগুলোর মুখগুলো ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে গেছে, যেন কেউ ইচ্ছে করে মুছে দিয়েছে।

দোতলায় চারটি ঘর। শুভর জন্য বরাদ্দ হলো করিডোরের এক কোণের ঘরটা। জানালার পাশের ঘর, বাতাস এলেই জানালার শার্সিগুলো খটখট করে নড়ে ওঠে। ঘরটা তুলনামূলক ছোট, কিন্তু জানালা দিয়ে পুরো বাড়ির সামনের অংশ দেখা যায়। বিছানা, একটা কাঠের আলমারি, আর একটা পুরনো আয়না—এই নিয়ে তার ঘর।

সবার জন্য নতুন বাড়ির অভিজ্ঞতা ছিল রোমাঞ্চকর, কিন্তু শুভ প্রথম রাত থেকেই টের পেল, এই বাড়ির বাতাস ভারী। যেন কিছু একটা ওদের উপর নজর রাখছে।

রাতের বিভীষিকা

প্রথম রাতেই ঘটল অদ্ভুত এক ঘটনা।

শুভর ঘুম ভেঙে গেল গভীর রাতে। বাইরে থেকে আসছে কার যেন ফিসফিসানি। মনে হচ্ছে, করিডোরের বাইরে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।

সে আস্তে করে দরজা খুলে বাইরে উঁকি দিল।

কেউ নেই। কিন্তু অনুভব করল, ঠান্ডা বাতাসের সঙ্গে একটা ছায়া যেন দ্রুত সরে গেল।

তখনই পাশের ঘর থেকে শব্দ এলো—তার মা যেন কারও সাথে কথা বলছে!

(চলবে…)

অন্ধকারের অভিশাপ

দ্বিতীয় অধ্যায়: রাতের বিভীষিকা

বাড়িতে আসার তিনদিন কেটে গেছে। এই সময়ের মধ্যে রঞ্জিত বেশ খুশি, মীনা নতুন সংসার গোছানোর কাজে ব্যস্ত, কিন্তু শুভর মন থেকে প্রথম রাতের অনুভূতি একটুও কমেনি।

এই বাড়িটা কিছু লুকিয়ে রেখেছে। শুভ তা বুঝতে পারছে, কিন্তু কাউকে বলার সাহস পাচ্ছে না।

পুরনো দেয়ালের ফিসফিসানি

রাতে শুভর ঘুম ভেঙে গেল হঠাৎই।

ঘড়ির কাঁটা রাত ২টো ছুঁই ছুঁই করছে। ঘরের জানালা হালকা খোলা, বাইরে থেকে ঠান্ডা বাতাস ঢুকছে। শুভ ধীরে ধীরে উঠে বসল। কিন্তু তার দৃষ্টি আটকে গেল ঘরের দরজার দিকে।

দরজাটা আধখোলা, আর করিডোরের অন্ধকারে কিছু একটা নড়ছে।

সে শ্বাস আটকে চুপচাপ তাকিয়ে রইল।

আলোর অভাবে ভালো বোঝা যাচ্ছে না, কিন্তু মনে হচ্ছে, করিডোরের দেয়ালের কাছে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। শুভর বুক ধকধক করতে লাগল।

তখনই হালকা ফিসফিসানি শোনা গেল।

“ওরা আবার এসেছে…”

শুভর হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেল। এই কণ্ঠস্বরে একটা অদ্ভুত বিষাদ ছিল, ছিল ভয় আর… রাগ।

সে ধীরে ধীরে দরজার দিকে এগোতেই শব্দ বন্ধ হয়ে গেল। মুহূর্তের জন্য সবকিছু নিস্তব্ধ।

হঠাৎই দরজার ওপাশে ছায়াটা অদৃশ্য হয়ে গেল! যেন মুহূর্তের মধ্যে গলে গেল বাতাসে!

শুভ দরজা খুলে করিডোরে উঁকি দিল। কেউ নেই। শুধু অন্ধকার আর পুরনো কাঠের মেঝের গন্ধ।

তার মনে হলো, সে হয়তো স্বপ্ন দেখছে।

কিন্তু তখনই একটা ধাক্কা লাগার শব্দ এলো নিচতলা থেকে। যেন কেউ জোরে দরজা বন্ধ করল!

রঞ্জিত আর মীনার কক্ষ

শুভ ধীরে ধীরে সিঁড়ি দিয়ে নামল। নিচতলায় তার বাবা-মার ঘর। দরজাটা আধখোলা ছিল।

ভেতরে তাকিয়েই শুভ থমকে গেল।

মা বিছানায় ঘুমাচ্ছে, কিন্তু বাবা নেই! ঘরে অদ্ভুত ছায়াময় পরিবেশ। জানালা দিয়ে চাঁদের মলিন আলো পড়েছে, কিন্তু ঘরের পরিবেশ অস্বাভাবিক ঠান্ডা। শুভ একটু এগিয়ে গেল।

তখনই খাটের পাশে রাখা আয়নাটায় কিছু একটা নড়তে দেখা গেল!

শুভ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকল আয়নার দিকে। সেখানে কিছু একটা যেন দাঁড়িয়ে আছে…

একটা দীর্ঘ ছায়া, তার মুখ নেই, শুধু দুটি গহ্বরের মতো অন্ধকার চোখ!

শুভ আতঙ্কে এক পা পিছিয়ে যেতেই মুহূর্তের মধ্যে ছায়াটা মিলিয়ে গেল!

সে চোখ কচলিয়ে আবার আয়নার দিকে তাকাল। এখন কিছু নেই, শুধু তার নিজের প্রতিচ্ছবি।

শুভ দরজার বাইরে বেরিয়ে এল দ্রুত। তার পুরো শরীর কাঁপছে। এই বাড়িতে কিছু একটা আছে… কিন্তু সেটা কী?

বাড়ির চাকর

অন্ধকারের অভিশাপ

তৃতীয় অধ্যায়: আক্রমের আগমন (বাড়ির চাকর)

সকালবেলা সূর্যের আলো জানালা দিয়ে এসে পড়েছে, কিন্তু শুভর মনে কাল রাতের ঘটনা এখনো তাজা। আয়নার সেই ছায়া, করিডোরের ফিসফিসানি, আর নিচতলায় দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দ—সবকিছুই যেন একটা দুঃস্বপ্নের মতো লেগেছে।

কিন্তু এটা কি সত্যি দুঃস্বপ্ন ছিল?

শুভর কাছে সেটা স্বপ্নের চেয়েও বেশি বাস্তব মনে হচ্ছে।

সে কিছুটা ভয় নিয়েই ঘর থেকে বের হলো।

চাকরের আগমন

দুপুরের দিকে বাড়ির প্রধান দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হলো।

রঞ্জিত দরজা খুলতেই দেখা গেল, দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক বৃদ্ধ, বয়স ৬৫-এর কাছাকাছি। গায়ের রং কালচে, চেহারায় অদ্ভুত কাঠিন্য, চোখদুটো গভীর আর কেমন যেন ফাঁকা। পরনে মলিন পাঞ্জাবি আর লুঙ্গি, মাথায় সাদা টুপি।

সে ধীর গলায় বলল, “আমার নাম আক্রম… চাকরের দরকার বলেছিলেন শুনলাম।”

রঞ্জিত একটু অবাক হলেন। তিনি তো চাকরের জন্য কোথাও কোনো লোক পাঠাননি!

“তুমি কোথা থেকে শুনলে?”

আক্রম হাসল। সেই হাসিতে কেমন যেন এক ধরনের চাপা রহস্য লুকিয়ে ছিল।

“বাজারে একজন বলল, নতুন সাহেব এসেছেন… বড়বাড়ি নিয়েছেন, একা সামলানো যাবে না। তাই ভাবলাম, একবার এসে দেখা করে যাই। আমি অনেক বাড়িতে কাজ করেছি। ভালো মতো সামলে নিতে পারব।”

রঞ্জিত একটু ভাবলেন। সত্যি বলতে, বাড়ি সামলানোর জন্য একজন লোক দরকার ছিলই। তাছাড়া এই বৃদ্ধ দেখে নিরীহ মনে হচ্ছে।

তিনি সায় দিলেন।

“ঠিক আছে, তুমি থাকতে পারো।”

আক্রম ধীর পায়ে ভেতরে ঢুকল।

শুভর অস্বস্তি

শুভ দরজার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। সে আকরমের চোখের দিকে তাকাতেই বুকের ভেতর কেমন যেন অস্বস্তি অনুভব করল।

এই লোকটায় কিছু একটা আছে… শুভ নিশ্চিত।

কিন্তু ঠিক কী আছে, সেটা বোঝা যাচ্ছে না।

আকরম শুভর দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলল, “বাবুজি, তোমার নাম কী?”

শুভ আস্তে বলল, “শুভ…”

আকরম মাথা নাড়ল, তারপর তার গলায় এক অদ্ভুত স্বর শোনা গেল, যেন ফিসফিস করে বলছে, “এখানে রাতগুলো খুব নীরব হয়, না?”

শুভ চমকে উঠল।

সে কীভাবে জানল? শুভ তো কাউকে কিছু বলেনি!

রাতের রহস্য

সেই রাতে শুভ আরেকবার অনুভব করল যে এই বাড়ির পরিবেশ বদলে যাচ্ছে।

সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল, হালকা বাতাস বইছে। কিন্তু হঠাৎ করেই চারপাশের শব্দ থেমে গেল। যেন পুরো বাড়িটা এক মুহূর্তের জন্য সময়ের বাইরে চলে গেল।

এমন সময়, নিচতলার রান্নাঘরের দিকে চোখ পড়তেই শুভ দেখল, আকরম দাঁড়িয়ে আছে অন্ধকারে!

কিন্তু সে কিছু করছে না… শুধু স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যেন কোনো কিছুর অপেক্ষায়।

শুভর শরীরে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল।

তার মনে হলো, আকরম এই বাড়িতে নিজে আসেনি… কেউ বা কিছু তাকে এখানে এনেছে!

অন্ধকারের অভিশাপ

তৃতীয় অধ্যায়: আক্রমের আগমন (বাড়ির চাকর)

সকালবেলা সূর্যের আলো জানালা দিয়ে এসে পড়েছে, কিন্তু শুভর মনে কাল রাতের ঘটনা এখনো তাজা। আয়নার সেই ছায়া, করিডোরের ফিসফিসানি, আর নিচতলায় দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দ—সবকিছুই যেন একটা দুঃস্বপ্নের মতো লেগেছে।

কিন্তু এটা কি সত্যি দুঃস্বপ্ন ছিল?

শুভর কাছে সেটা স্বপ্নের চেয়েও বেশি বাস্তব মনে হচ্ছে।

সে কিছুটা ভয় নিয়েই ঘর থেকে বের হলো।

চাকরের আগমন

দুপুরের দিকে বাড়ির প্রধান দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হলো।

রঞ্জিত দরজা খুলতেই দেখা গেল, দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক বৃদ্ধ, বয়স ৬৫-এর কাছাকাছি। গায়ের রং কালচে, চেহারায় অদ্ভুত কাঠিন্য, চোখদুটো গভীর আর কেমন যেন ফাঁকা। পরনে মলিন পাঞ্জাবি আর লুঙ্গি, মাথায় সাদা টুপি।

সে ধীর গলায় বলল, “আমার নাম আক্রম… চাকরের দরকার বলেছিলেন শুনলাম।”

রঞ্জিত একটু অবাক হলেন। তিনি তো চাকরের জন্য কোথাও কোনো লোক পাঠাননি!

“তুমি কোথা থেকে শুনলে?”

আক্রম হাসল। সেই হাসিতে কেমন যেন এক ধরনের চাপা রহস্য লুকিয়ে ছিল।

“বাজারে একজন বলল, নতুন সাহেব এসেছেন… বড়বাড়ি নিয়েছেন, একা সামলানো যাবে না। তাই ভাবলাম, একবার এসে দেখা করে যাই। আমি অনেক বাড়িতে কাজ করেছি। ভালো মতো সামলে নিতে পারব।”

রঞ্জিত একটু ভাবলেন। সত্যি বলতে, বাড়ি সামলানোর জন্য একজন লোক দরকার ছিলই। তাছাড়া এই বৃদ্ধ দেখে নিরীহ মনে হচ্ছে।

তিনি সায় দিলেন।

“ঠিক আছে, তুমি থাকতে পারো।”

আক্রম ধীর পায়ে ভেতরে ঢুকল।

শুভর অস্বস্তি

শুভ দরজার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। সে আকরমের চোখের দিকে তাকাতেই বুকের ভেতর কেমন যেন অস্বস্তি অনুভব করল।

এই লোকটায় কিছু একটা আছে… শুভ নিশ্চিত।

কিন্তু ঠিক কী আছে, সেটা বোঝা যাচ্ছে না।

আকরম শুভর দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলল, “বাবুজি, তোমার নাম কী?”

শুভ আস্তে বলল, “শুভ…”

আকরম মাথা নাড়ল, তারপর তার গলায় এক অদ্ভুত স্বর শোনা গেল, যেন ফিসফিস করে বলছে, “এখানে রাতগুলো খুব নীরব হয়, না?”

শুভ চমকে উঠল।

সে কীভাবে জানল? শুভ তো কাউকে কিছু বলেনি!

রাতের রহস্য

সেই রাতে শুভ আরেকবার অনুভব করল যে এই বাড়ির পরিবেশ বদলে যাচ্ছে।

সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল, হালকা বাতাস বইছে। কিন্তু হঠাৎ করেই চারপাশের শব্দ থেমে গেল। যেন পুরো বাড়িটা এক মুহূর্তের জন্য সময়ের বাইরে চলে গেল।

এমন সময়, নিচতলার রান্নাঘরের দিকে চোখ পড়তেই শুভ দেখল, আকরম দাঁড়িয়ে আছে অন্ধকারে!

কিন্তু সে কিছু করছে না… শুধু স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যেন কোনো কিছুর অপেক্ষায়।

শুভর শরীরে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল।

তার মনে হলো, আকরম এই বাড়িতে নিজে আসেনি… কেউ বা কিছু তাকে এখানে এনেছে!

অন্ধকারের অভিশাপ

তৃতীয় অধ্যায়: আক্রমের আগমন (বাড়ির চাকর)

সকালবেলা সূর্যের আলো জানালা দিয়ে এসে পড়েছে, কিন্তু শুভর মনে কাল রাতের ঘটনা এখনো তাজা। আয়নার সেই ছায়া, করিডোরের ফিসফিসানি, আর নিচতলায় দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দ—সবকিছুই যেন একটা দুঃস্বপ্নের মতো লেগেছে।

কিন্তু এটা কি সত্যি দুঃস্বপ্ন ছিল?

শুভর কাছে সেটা স্বপ্নের চেয়েও বেশি বাস্তব মনে হচ্ছে।

সে কিছুটা ভয় নিয়েই ঘর থেকে বের হলো।

চাকরের আগমন

দুপুরের দিকে বাড়ির প্রধান দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হলো।

রঞ্জিত দরজা খুলতেই দেখা গেল, দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক বৃদ্ধ, বয়স ৬৫-এর কাছাকাছি। গায়ের রং কালচে, চেহারায় অদ্ভুত কাঠিন্য, চোখদুটো গভীর আর কেমন যেন ফাঁকা। পরনে মলিন পাঞ্জাবি আর লুঙ্গি, মাথায় সাদা টুপি।

সে ধীর গলায় বলল, “আমার নাম আক্রম… চাকরের দরকার বলেছিলেন শুনলাম।”

রঞ্জিত একটু অবাক হলেন। তিনি তো চাকরের জন্য কোথাও কোনো লোক পাঠাননি!

“তুমি কোথা থেকে শুনলে?”

আক্রম হাসল। সেই হাসিতে কেমন যেন এক ধরনের চাপা রহস্য লুকিয়ে ছিল।

“বাজারে একজন বলল, নতুন সাহেব এসেছেন… বড়বাড়ি নিয়েছেন, একা সামলানো যাবে না। তাই ভাবলাম, একবার এসে দেখা করে যাই। আমি অনেক বাড়িতে কাজ করেছি। ভালো মতো সামলে নিতে পারব।”

রঞ্জিত একটু ভাবলেন। সত্যি বলতে, বাড়ি সামলানোর জন্য একজন লোক দরকার ছিলই। তাছাড়া এই বৃদ্ধ দেখে নিরীহ মনে হচ্ছে।

তিনি সায় দিলেন।

“ঠিক আছে, তুমি থাকতে পারো।”

আক্রম ধীর পায়ে ভেতরে ঢুকল।

শুভর অস্বস্তি

শুভ দরজার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। সে আকরমের চোখের দিকে তাকাতেই বুকের ভেতর কেমন যেন অস্বস্তি অনুভব করল।

এই লোকটায় কিছু একটা আছে… শুভ নিশ্চিত।

কিন্তু ঠিক কী আছে, সেটা বোঝা যাচ্ছে না।

আকরম শুভর দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলল, “বাবুজি, তোমার নাম কী?”

শুভ আস্তে বলল, “শুভ…”

আকরম মাথা নাড়ল, তারপর তার গলায় এক অদ্ভুত স্বর শোনা গেল, যেন ফিসফিস করে বলছে, “এখানে রাতগুলো খুব নীরব হয়, না?”

শুভ চমকে উঠল।

সে কীভাবে জানল? শুভ তো কাউকে কিছু বলেনি!

রাতের রহস্য

সেই রাতে শুভ আরেকবার অনুভব করল যে এই বাড়ির পরিবেশ বদলে যাচ্ছে।

সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল, হালকা বাতাস বইছে। কিন্তু হঠাৎ করেই চারপাশের শব্দ থেমে গেল। যেন পুরো বাড়িটা এক মুহূর্তের জন্য সময়ের বাইরে চলে গেল।

এমন সময়, নিচতলার রান্নাঘরের দিকে চোখ পড়তেই শুভ দেখল, আকরম দাঁড়িয়ে আছে অন্ধকারে!

কিন্তু সে কিছু করছে না… শুধু স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যেন কোনো কিছুর অপেক্ষায়।

শুভর শরীরে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল।

তার মনে হলো, আকরম এই বাড়িতে নিজে আসেনি… কেউ বা কিছু তাকে এখানে এনেছে!

অন্ধকারের অভিশাপ

চতুর্থ অধ্যায়: আকরামের ছায়া

বাড়িতে আসার পর আজ প্রথম শুভ কলেজে যাবে। নতুন জায়গা, নতুন পরিবেশ—কিন্তু তার মন কোথাও স্থির হচ্ছে না। সারারাত ঘুম হয়নি, আকরামের রহস্যময় উপস্থিতি আর করিডোরের ছায়াগুলো তার মাথার ভেতর গেঁথে আছে।

নতুন কলেজ, পুরনো ভয়

সকালে রঞ্জিত তাকে সাইকেল কিনে দিলেন, যাতে সে কলেজে যেতে পারে। কলেজটা খুব বেশি দূরে নয়, গ্রামের মধ্যেই, তবে বেশ পুরনো।

শুভ কলেজে গেলেও তার মন পুরোপুরি অন্য কোথাও ছিল।

ক্লাসে বসে থাকতে থাকতে সে জানালার বাইরে তাকিয়ে ছিল। আর ঠিক তখনই তার গা ছমছম করে উঠল!

কলেজের মাঠের পাশে, একটা গাছের ছায়ায় কেউ দাঁড়িয়ে আছে।

একটা লম্বা আকৃতি, পরনে সাদা কাপড়… দাঁড়িয়ে থেকে শুধু শুভর দিকেই তাকিয়ে আছে।

শুভ চোখ কচলিয়ে আবার তাকাল। কেউ নেই!

তার শ্বাস ধড়ফড় করতে লাগল। কী হচ্ছে এটা?

আকরামের রহস্য

কলেজ থেকে ফিরে শুভ দেখে, আকরাম উঠোনে বসে কিছু পরিষ্কার করছে।

তাকে দেখে স্বাভাবিক মনে হলেও, শুভর ভেতরে এক অজানা আতঙ্ক কাজ করছিল।

শুভ ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে গেল।

“আকরাম কাকু, তুমি আগে কোথায় কাজ করতে?”

আকরাম এক মুহূর্ত শুভর দিকে তাকিয়ে থাকল। তার চোখের দৃষ্টি ঠান্ডা, গভীর, আর যেন একধরনের পুরনো দুঃখ লুকিয়ে আছে।

তারপর সে আস্তে হেসে বলল, “বহু জায়গায়… অনেক বছর ধরে ঘুরে বেড়াই। তবে এই জায়গাটা… খুব পুরনো মনে হয়।”

শুভর ভেতরটা কেঁপে উঠল।

আকরাম কি বুঝতে পারছে কিছু? নাকি সে ইচ্ছা করেই এমন কিছু বলছে?

রাতের বিভীষিকা

সেদিন রাতে শুভর চোখে ঘুম আসছিল না।

সে বিছানায় শুয়ে ছিল, কিন্তু মনে হচ্ছিল কেউ তার ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।

একসময় সে উঠে দরজার দিকে তাকাল।

করিডোরে অন্ধকারের মধ্যে একটা ছায়া নড়ছে!

শুভ ধীরে দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিল।

আকরাম ধীরে ধীরে সিঁড়ি দিয়ে নামছে… কিন্তু তার চলার ধরন স্বাভাবিক নয়।

তার শরীর কেমন যেন কঠিন হয়ে আছে, আর সে যেন কারও নির্দেশে নিচে যাচ্ছে!

শুভ নিঃশ্বাস আটকে তাকিয়ে রইল।

আকরাম নিচে গিয়ে রান্নাঘরের দিকে অদৃশ্য হয়ে গেল।

কিন্তু শুভ ঠিক তখনই শুনতে পেল, নিচ থেকে একটা গলায় গম্ভীর ফিসফিসানি…

“তুই ফিরে এসেছিস…? অনেক বছর পর…!”

শুভর গা কেঁপে উঠল।

এই আওয়াজটা… এটা আকরামের নয়!

(চলবে…)

পঞ্চম অধ্যায়: কুয়োর অভিশাপ

শুভর বুক ধড়ফড় করছে।

নিচের রান্নাঘর থেকে আসা সেই অদ্ভুত ফিসফিসানি তাকে তাড়া করে ফিরছে। “তুই ফিরে এসেছিস…? অনেক বছর পর…!”

কিন্তু কাকে বলা হলো এটা? আকরামকে? নাকি… অন্য কাউকে?

শুভ আর থাকতে পারল না। আস্তে আস্তে বিছানা থেকে নেমে দরজার ফাঁক দিয়ে করিডোরে উঁকি দিল। পুরো বাড়িটা নিস্তব্ধ, কেবল বাতাসে এক চাপা গন্ধ—পুরনো, স্যাঁতসেঁতে, আর কেমন যেন পচা গন্ধ ছড়িয়ে আছে।

অন্ধকারে অনুসরণ

সে পা টিপে টিপে করিডোর দিয়ে এগোতে লাগল।

রান্নাঘরের দরজা আধখোলা, ভিতরে মৃদু আলো জ্বলছে। শুভ আস্তে করে দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিল।

আকরাম দাঁড়িয়ে আছে রান্নাঘরের এক কোণায়, কিন্তু সে একদম স্থির।

তার সামনে মাটিতে কিছু একটা আঁকা… যেন কোনো পুরনো চিহ্ন, ধুলোমাখা কিন্তু স্পষ্ট।

শুভর শ্বাস আটকে গেল। আকরামের ঠোঁট নাড়ছে, কিন্তু কোনো শব্দ বেরোচ্ছে না! সে যেন নিজের অজান্তে ফিসফিস করে কিছু বলছে, অথচ মুখে কোনো আওয়াজ নেই।

হঠাৎ, আকরাম থেমে গেল।

সে ধীরে ধীরে মাথা ঘুরিয়ে শুভর দিকে তাকাল।

তার চোখ… স্বাভাবিক নয়!

একটা গা-ছমছমে অন্ধকার তার চোখের গভীরে খেলা করছে, যেন সেখানে কিছু একটা লুকিয়ে আছে!

শুভ দৌড়ে সোজা নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।

কুয়োর ইতিহাস

পরদিন সকালে শুভ রঞ্জিতকে জিজ্ঞেস করল, “এই বাড়ির পেছনে কি কোনো কুয়ো ছিল?”

রঞ্জিত চমকে উঠল।

“কে বলল তোকে?”

“আমি… মানে, জানি না, এমনিই জিজ্ঞেস করলাম…”

রঞ্জিত এক মুহূর্ত চুপ করে থাকলেন, তারপর ধীরে বললেন, “হ্যাঁ, ছিল। অনেক বছর আগে… ওটা বন্ধ করে দেওয়া হয়।”

“কেন?”

রঞ্জিত একদৃষ্টিতে শুভর দিকে তাকালেন। তার কণ্ঠ ভারী হয়ে গেল।

“সে এক ভয়ংকর গল্প… এখানে একসময় এক সিরিয়াল রেপিস্ট থাকত, নাম ছিল জাহাঙ্গীর। সে ১০-১২ জন গৃহবধূকে তুলে এনে এই বাড়ির নিচে… নির্যাতন করত। একদিন গ্রামবাসীরা তাকে খুঁজে পায়, তারপর তাকে মেরে ওই কুয়োর মধ্যেই ফেলে দেয়। তখন থেকে বলা হয়, এখানে কিছু একটা আছে… কিছু একটা যা এখনও ঘুরে বেড়ায়।”

শুভর শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত নেমে গেল।

এই বাড়ি… এই কুয়ো… এই ভূত… সবকিছু কি সত্যিই বাস্তব?

আকরামের পরিবর্তন

সেদিন রাতেই আবার কিছু একটা ঘটল।

শুভ দরজা বন্ধ করে শুয়ে ছিল, কিন্তু বাইরে একটা চাপা শব্দ শুনতে পেল—জলের ছিটে পড়ার মতো আওয়াজ!

সে আস্তে করে দরজা খুলে বাইরে উঁকি দিল।

আকরাম পেছনের উঠোনের দিকে হাঁটছে।

শুভ আস্তে আস্তে অনুসরণ করল।

পেছনে এক জায়গায় একটু ফাঁকা জমি, আর তার মাঝখানে… একটা পাথরের ঢাকনা দেওয়া কুয়ো!

শুভর বুক ধক করে উঠল।

আকরাম কুয়োর সামনে দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু তার শরীর কেমন যেন অস্বাভাবিক শক্ত হয়ে আছে, হাত দুটো অদ্ভুতভাবে মোচড়ানো।

তারপর সে ধীরে ধীরে কুয়োর পাথরটা সরানোর চেষ্টা করল!

ঠিক তখনই, শুভ একটা গা-ছমছমে শব্দ শুনতে পেল।

কুয়োর গভীর থেকে যেন একটা শ্বাস নেওয়ার আওয়াজ…

কেউ বা কিছু যেন বহু বছর পর আবার জেগে উঠছে!

(চলবে…)
[+] 5 users Like Toxic boy's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#2
ষষ্ঠ অধ্যায়: রাতের ছায়া

শুভ এখন নিশ্চিত—এই বাড়িতে কিছু একটা আছে। কুয়োর গভীরে কিছু একটা লুকিয়ে আছে, যা ধীরে ধীরে তার উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। কিন্তু আকরাম… তার আচরণ আরও অদ্ভুত হয়ে উঠছে। আর সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হলো—শুধু শুভ নয়, সে যেন এখন মীনার দিকেও অদ্ভুতভাবে তাকাচ্ছে!

আকরামের পরিবর্তন

সকালবেলা শুভ ঘুম থেকে উঠে দেখল, আকরাম উঠোনে দাঁড়িয়ে আছে। সে এক দৃষ্টিতে মীনাকে দেখছে, আর তার ঠোঁটের কোণে এক অস্বাভাবিক হাসি লেগে আছে। শুভর গা শিউরে উঠল।

মীনা তখন উঠোনে কাপড় মেলছিল। বাতাসে তার শাড়ির আঁচল উড়ে উড়ছিল, আর সূর্যের আলোতে তার ত্বক চকচক করছিল। আকরামের চোখ যেন একদম স্থির হয়ে গেছে—তার দৃষ্টি ছিল অস্বাভাবিকভাবে গভীর, যেন সে মীনাকে গিলে খেতে চাইছে!

শুভ তার গলার স্বর পরিষ্কার করে বলল,

— “আকরাম কাকা, কী দেখছেন?”

আকরাম ধীরে ধীরে শুভর দিকে তাকাল। তার চোখ অদ্ভুত শূন্য, এক অজানা অন্ধকার সেখানে খেলা করছে।

— “তোর মা খুব সুন্দর… তাই না?”

শুভর শরীর হিম হয়ে গেল।

— “কি… কি বলছেন?”

আকরাম হেসে ফেলল, তবে সেই হাসিতে একটা ভয়ংকর কিছু লুকিয়ে ছিল।

— “কিছু না, শুভ… তুই বরং কলেজে যা। অনেক দেরি হয়ে গেছে।”

শুভ দ্রুত সরে গেল, কিন্তু তার মনে সন্দেহ দানা বাঁধল। আকরামের দৃষ্টি… তার কথা… সবকিছু কেমন যেন ভয়ংকর মনে হচ্ছে!

মীনার অস্বস্তি

সেদিন রাতে শুভ দেখল, তার মা একটু অস্বাভাবিক আচরণ করছে। সে বারবার কপালে হাত দিচ্ছে, মনে হচ্ছে, তার শরীর কেমন যেন কাঁপছে।

— “মা, তুমি কি ঠিক আছো?”

মীনা তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করল, কিন্তু তার চোখে একটা অজানা আতঙ্ক খেলা করছিল।

— “হ্যাঁ, শুভ… ঠিক আছি।”

কিন্তু শুভ বুঝতে পারল, সে মিথ্যে বলছে।

বিছানায় শুয়ে শুভ স্পষ্ট শুনতে পেল, পাশের ঘরে তার মা-বাবার মধ্যে কথা হচ্ছে।

— “রঞ্জিত, আমি ঠিক ঘুমাতে পারছি না। মনে হচ্ছে কেউ আমাকে দেখছে… এমনকি রাতে, যখন ঘুমিয়ে থাকি, তখনও।”

রঞ্জিত দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।

— “এটা তোর মনের ভুল, মীনা। নতুন বাড়ি, অচেনা পরিবেশ… অভ্যাস হয়ে যাবে।”

কিন্তু শুভ জানে, এটা শুধু মনের ভুল না।

রাতের বিভীষিকা

সেদিন গভীর রাতে শুভর ঘুম ভেঙে গেল।

একটা আওয়াজ… যেন কারও নিঃশ্বাস ফেলার শব্দ!

সে ধীরে ধীরে দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিল।

আকরাম দাঁড়িয়ে আছে করিডোরে!

কিন্তু সে স্বাভাবিকভাবে দাঁড়িয়ে নেই।

সে ধীরে ধীরে মীনার ঘরের দিকে এগোচ্ছে।

তার নিঃশ্বাস ভারী, আর তার হাত দুটো অদ্ভুতভাবে মোচড়ানো। শুভর মনে হলো, সে যেন পুরোপুরি মানুষ নেই, বরং অন্য কিছুতে পরিণত হয়েছে!

তারপর… আকরাম ধীরে ধীরে দরজার হাতলে হাত রাখল!

শুভর শ্বাস বন্ধ হয়ে এল।

সে কী করতে যাচ্ছে?!

(চলবে…)
[+] 4 users Like Toxic boy's post
Like Reply
#3
সপ্তম অধ্যায়: নিস্তব্ধতার মাঝে ফিসফিসানি

ভোরের প্রথম আলো যখন ঘরে প্রবেশ করল, শুভর চোখ তখনও খোলা। রাতের ঘটনাগুলো তার মাথার ভেতরে একটা দুঃস্বপ্নের মতো ঘুরপাক খাচ্ছিল। আকরাম… সে কেন ওভাবে মায়ের ঘরের দরজায় হাত রেখেছিল? শুভ নিশ্চিত, সে যা দেখেছে তা কোনো স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল না। কিন্তু সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হলো—যখন সে দরজা খুলে বাইরে উঁকি দিয়েছিল, তখন করিডোর ফাঁকা ছিল!

তাহলে আকরাম কোথায় গেল?

শুভ এক ঝটকায় উঠে বসলো। মনে হচ্ছিল, রাতের আতঙ্ক যেন এখনও তার সাথে লেপ্টে আছে। বাইরে তখন সকাল নামছে, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো—চারপাশের পরিবেশ কেমন যেন ভারী লাগছিল। সাধারণত সকালে গ্রামের চারপাশে পাখির কিচিরমিচির শোনা যায়, কিন্তু আজ যেন সবকিছু স্তব্ধ!

নিস্তব্ধতা…

একটা চাপা অনুভূতি শুভর বুকের ভেতর দপদপ করছে।

প্রকৃতির অস্বাভাবিকতা

শুভ জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকালো। আশেপাশে গাছপালার ডাল নড়ছে না, বাতাস নেই, অথচ একটা অদ্ভুত গন্ধ বাতাসে ভাসছে।

হঠাৎ, কোথাও থেকে একটা কুকুরের কর্কশ চিৎকার শোনা গেল!

শুভ গা শিউরে উঠল। সেটা একটা সাধারণ ডাক ছিল না, বরং কেমন যেন আতঙ্কে ভরা, যেন কোনো ভয়ানক কিছু দেখে সে ভয় পেয়ে গেছে।

আর তখনই শুভ শুনতে পেল…

গাছের ডালে বসে থাকা কয়েকটা কাক একসাথে বিকটভাবে ডাকা শুরু করল।

কাঁ… কাঁ… কাঁ…

তাদের স্বর স্বাভাবিক ছিল না, বরং যেন কোনো ভৌতিক শিসের মতো শোনাচ্ছিল।

শুভর মনে হলো, তারা যেন ওকে কিছু বলতে চাইছে!

ঠিক তখনই পাশের ঘরে একটা শব্দ হলো।

“উফফ…!”

তার মা!

মীনার অস্বস্তি ও আতঙ্ক

শুভ ছুটে গেল মায়ের ঘরের দিকে। দরজা হালকা খোলা ছিল। সে ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখল—মীনা খাটের পাশে বসে আছে, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম, মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।

— “মা, তুমি ঠিক আছো?” শুভ ধীরে ধীরে ঘরের ভেতরে ঢুকল।

মীনা ধীর কণ্ঠে বলল, “আমি… ঠিক নেই, শুভ। আমার কেমন যেন লাগছে।”

— “কেন? কী হয়েছে?”

মীনা চোখ বন্ধ করে বলল, “রাতে… আমি ঘুমাতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল কেউ আমার ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। আমার বুক ধড়ফড় করছিল… এমনকি মনে হচ্ছিল, আমার গায়ে কেউ নিঃশ্বাস ফেলছে!”

শুভর শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল। সে নিশ্চিত, এটা কেবল মায়ের কল্পনা নয়।

— “তুমি কারো ছায়া দেখেছ?” শুভ ধীরে ধীরে জিজ্ঞেস করল।

মীনা কিছুক্ষণ চুপ করে রইল, তারপর বলল, “না, ছায়া না… কিন্তু একটা অদ্ভুত গন্ধ এসেছিল! কেমন যেন পচা জল আর ঘামের গন্ধ…”

শুভ হতভম্ব হয়ে গেল। ঠিক একই গন্ধ সে আগের রাতে অনুভব করেছিল!

— “তুমি বাবা কে বলেছ?”

— “না! বললে সে আমায় পাগল ভাববে।” মীনার গলা কাঁপছিল। “তোর বাবা এসব বিশ্বাস করে না, শুভ… সে এসব শুনতে চাইবে না।”

শুভ চুপ করে গেল। সে জানে, বাবা এসব পাত্তা দেবে না। কিন্তু মায়ের ভয়টা এখন সত্যি মনে হচ্ছে।

এটা কি আকরাম? নাকি কুয়োর অভিশাপই ধীরে ধীরে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে?

আকরামের অদ্ভুত আচরণ

সকালে নাস্তার টেবিলে সবাই একসাথে বসেছিল। রঞ্জিত স্বাভাবিকভাবে খবরের কাগজ পড়ছিল, কিন্তু শুভ লক্ষ্য করল, মায়ের মুখে একটা স্পষ্ট অস্বস্তির ছাপ।

আর আকরাম?

সে খুব স্বাভাবিকভাবেই সব কাজ করছে, কিন্তু মাঝে মাঝে শুভর চোখে পড়ল—সে মায়ের দিকে এমনভাবে তাকাচ্ছে, যেন তার শরীরের প্রতিটি বাঁক চুপচাপ মেপে নিচ্ছে!

শুভর মুঠি শক্ত হয়ে গেল। এই লোকটা দিন দিন আরও ভয়ংকর হয়ে উঠছে!

ঠিক তখনই আকরাম কথা বলল,

— “বৌদি, তোমার শরীরটা কেমন যেন দেখাচ্ছে। ঠিক আছো তো?”

শুভ কেঁপে উঠল। আকরামের গলায় এক অদ্ভুত মোলায়েম ভাব, কিন্তু তার চোখ… সেই ভয়ংকর লালচে দৃষ্টি, যেখানে কেবল একটাই অনুভূতি জ্বলজ্বল করছে—একটা বিকৃত লালসা!

মীনা এক মুহূর্ত চুপ করে থাকল, তারপর মাথা নিচু করে বলল, “হ্যাঁ, ঠিক আছি।”

আকরাম এক চিলতে হাসি দিল, তারপর বলল,

— “তোমার জন্য বিশেষ পানীয় বানিয়েছি, একবার খেয়ে দেখো… শরীর ঠিক হয়ে যাবে।”

মীনা ধাক্কা খাওয়ার মতো চমকে উঠল।

শুভর মনে হলো, এটা কোনো সাধারণ কেয়ারিং কথা নয়, বরং একটা গভীর ইঙ্গিত।

রঞ্জিত কাগজ সরিয়ে বলল,

— “আহ, এত কিছু লাগবে না! বউ একটু দুর্বল লাগছে, বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।”

আকরাম হাসল।

কিন্তু সেই হাসিতে শুভর গা ছমছম করে উঠল।

এই বাড়িতে কিছু একটা খুব ভয়ংকর ঘটতে চলেছে… এবং সেটা হয়তো আজ রাতেই!

(চলবে…)
[+] 3 users Like Toxic boy's post
Like Reply
#4
পাখিদের গান ও আশেপাশের পরিবেশ

সকালবেলা আশেপাশের বটগাছ আর আমগাছ থেকে বিভিন্ন পাখির ডাক ভেসে আসছিল। তবে সেগুলো ছিল অদ্ভুত—স্বাভাবিক কিচিরমিচির নয়, যেন শিস দেওয়ার মতো একটা একটানা শব্দ, যা সাধারণত শোনা যায় না। মীনা বারান্দায় দাঁড়িয়ে এই পাখিদের অস্বাভাবিক ডাক শুনছিলেন। কেন জানি না, মনে হচ্ছিল এগুলো কোনো সতর্কবার্তা দিচ্ছে, বা কারও উপস্থিতি জানান দিচ্ছে।

গাছের ডালে বসে থাকা এক দল কাক হঠাৎ যেন অস্থির হয়ে উঠল। তারা একসঙ্গে ডানা ঝাপটিয়ে উড়ে গেল, তাদের আওয়াজে বাতাস যেন ভারী হয়ে উঠল। আশেপাশের সবুজ প্রকৃতির মধ্যেও একটা অজানা অস্বস্তি ঘুরপাক খাচ্ছিল। দূরে শুকনো বাঁশবাগানের মধ্য থেকে এক ঝলক বাতাস এলো, মীনার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেল।

মীনার খারাপ লাগা ও ভয়ের অনুভূতি

মীনা অনুভব করলেন, শরীর কেমন যেন দুর্বল লাগছে। হালকা শীতের সকাল, তবু গায়ের মধ্যে ঘাম জমে উঠছে। মনটা অকারণে ভারী হয়ে আসছে, যেন চোখের আড়ালে কেউ দাঁড়িয়ে আছে, তাকিয়ে আছে।

তিনি ধীরে ধীরে ঘরে ফিরে এলেন, কিন্তু অস্বস্তি কমলো না। রান্নাঘরে ঢুকতে গিয়ে হঠাৎ মনে হলো কেউ যেন তাঁর কাঁধের ওপর নিঃশ্বাস ফেলল। চমকে পেছন ফিরে তাকালেন, কিন্তু কেউ নেই।

মীনা দ্রুত রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন, কিন্তু মনে হলো করিডোরের শেষ প্রান্তে… ছায়ার আড়ালে কেউ দাঁড়িয়ে ছিল।

শুভর অনুভূতি

শুভ দোতলার জানালার পাশে বসে ছিল, বাইরের গাছগুলো দুলছিল হালকা বাতাসে। কিন্তু সবকিছু কেমন যেন থমথমে। আশেপাশের প্রকৃতি সাধারণত সজীব থাকে, কিন্তু এখানে আসার পর থেকে পরিবেশটা যেন কিছু একটা চেপে রেখেছে।

হঠাৎ, একটা পাখি জানালার কাঁচে এসে ধাক্কা খেলো! শুভ চমকে উঠল। নিচে তাকিয়ে দেখল, ছোট্ট একটা শালিক মাটিতে পড়ে ছটফট করছে, তার চোখ দুটো বিস্ফারিত, শরীরটা অবশ হয়ে যাচ্ছে।

শুভর গলা শুকিয়ে গেল। সে জানালার কাঁচে হাত রাখতেই একটা ঠান্ডা অনুভূতি টের পেল—অস্বাভাবিক ঠান্ডা।

তারপর আবার শুনতে পেল সেই চাপা শব্দ…

মৃদু, ফিসফিসানির মতো… যেন খুব দূর থেকে ভেসে আসছে—

“তুই ফিরে এসেছিস…”

(চলবে…)
[+] 3 users Like Toxic boy's post
Like Reply
#5
রাতের বিভীষিকা ও আকরামের ছায়া

রাত তখন গভীর। চারপাশ নিস্তব্ধ, কেবল দূরে কোথাও রাতজাগা পাখির কর্কশ ডাক শোনা যাচ্ছে। হালকা বাতাস বইছে, কিন্তু সেই বাতাসেও যেন একটা চাপা গন্ধ মিশে আছে—পুরনো, পচা, যেন বহুদিন ধরে আটকে থাকা শ্বাস।

শুভ বিছানায় শুয়ে আছে, কিন্তু ঘুম আসছে না। সন্ধ্যার পর থেকেই তার মনে হচ্ছে, কিছু একটা ঠিক নেই।

তবে সবচেয়ে বেশি অস্বস্তি লাগছিল তার মায়ের জন্য।

সন্ধ্যার পর থেকে মীনার মুখটা কেমন যেন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। খেতে বসেও ঠিকমতো খাচ্ছিলেন না, বারবার এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিলেন। শুভ লক্ষ করছিল, মাঝে মাঝেই তার মা যেন পেছনে কিছু একটা দেখার চেষ্টা করছেন, কিন্তু কিছু বলছেন না।

আকরামও আজ কিছুটা অদ্ভুত লাগছিল।

গোসলের পর মীনা যখন ভেজা চুল মুছছিলেন, তখন আকরামের দৃষ্টি কেমন যেন স্থির হয়ে ছিল তার দিকে। শুভ তখন পাশেই ছিল, কিন্তু তার মনে হলো, আকরামের চোখে একটা অদ্ভুত আকাঙ্ক্ষা খেলা করছে। স্বাভাবিক দৃষ্টির চেয়ে কিছুটা বেশি গা ছমছমে, যেন সে মীনাকে পর্যবেক্ষণ করছে, শিকারীর মতো।

রঞ্জিত তখন অন্য ঘরে ছিল, কিছু খেয়াল করেনি।

শুভর বুক ধক করে উঠল।

তারপর হঠাৎ করেই আকরাম বলল, “ম্যাডাম, আপনার মতো সুন্দরী আমি খুব কম দেখেছি। এই বাড়ির বাতাস আপনার গায়ে খুব সুন্দর লেগেছে।”

শুভের শরীর কেঁপে উঠল।

মা থমকে গেলেন, এক মুহূর্ত চুপ করে থাকলেন, তারপর হাসির ছলে বললেন, “আহা, এসব কী বলছো!”

কিন্তু শুভ বুঝতে পারল, তার মায়ের হাসির মধ্যে ভয় লুকিয়ে ছিল।

আকরাম তখনও হাসছিল, কিন্তু সেই হাসির মধ্যে কেমন যেন অদ্ভুত কিছু ছিল।

তারপর সে ধীরে ধীরে চলে গেল।

কিন্তু যাবার আগে তার চোখ যেন একটু বেশি সময় মীনার শরীরের ওপর আটকে ছিল।

শুভর ভয়ংকর অভিজ্ঞতা

এখন রাত, শুভ শুয়ে আছে, কিন্তু চোখের সামনে বারবার সেই দৃশ্য ভেসে উঠছে।

সে পাশ ফিরে শোয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু হঠাৎ করেই যেন ঘরের বাতাস ভারী হয়ে উঠল।

দরজার নিচ দিয়ে কালো একটা ছায়া যেন ধীরে ধীরে ভিতরে ঢুকছে!

শুভর শ্বাস আটকে গেল।

তারপর…

সে অনুভব করল, কেউ তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে!

একটা ভারী নিঃশ্বাস ঠিক কানের কাছে।

গভীর, ধীর নিঃশ্বাস, যার মধ্যে একটা বিকৃত উষ্ণতা মিশে আছে।

সে শরীর নড়াতে পারছে না, চোখ খুলতে ভয় পাচ্ছে।

ঠিক তখনই…

তার কানের কাছে একটা চাপা গলা ফিসফিস করে উঠল,

“তোর মা খুব সুন্দর… তাই না?”

শুভর পুরো শরীর হিম হয়ে গেল!

সে এক ধাক্কায় উঠে বসল, চোখ কপালে উঠে গেল।

কিন্তু ঘরে কেউ নেই!

শুধু জানালার পর্দা ধীরে ধীরে নড়ছে, আর সেই সঙ্গে ঘরের কোণে রাখা পুরনো আয়নাটা যেন হালকা কাঁপছে।

শুভ দৌড়ে দরজা খুলে বেরিয়ে পড়ল।

তার মনে হলো, এই বাড়িতে কিছু একটা আছে।

কিন্তু সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হলো—

এই “কিছু একটা” শুধুমাত্র ওদের ভয় দেখাচ্ছে না…

ওটা মীনাকে চাইছে।

(চলবে…)
[+] 4 users Like Toxic boy's post
Like Reply
#6
অধ্যায়: অস্বস্তির শুরু

বিকেলবেলা, মীনা রান্নাঘরে কাজ করছিল। রোদ মরে এসেছে, আকাশে একটা অদ্ভুত কমলা আভা ছড়িয়ে আছে। শুভ উঠোনে বসে কিছু একটা লিখছিল, আর রঞ্জিত বারান্দায় বসে চা খাচ্ছিল। সবকিছুই যেন স্বাভাবিক ছিল—কিন্তু মীনার মনে হচ্ছিল, কেউ যেন তাকে দেখছে।

সে থেমে গেল। ধীর গতিতে পিছন ফিরে তাকাল।

রান্নাঘরের দরজার সামনে আকরাম দাঁড়িয়ে ছিল।

সাধারণত সে কাজের সময় আসে না, কিন্তু আজ কেমন যেন স্থির হয়ে তাকিয়ে আছে। চোখেমুখে কোনো ভাব নেই, অথচ তার দৃষ্টি মীনাকে যেন কেটে ফেলার মতো গভীর।

“আ… আকরাম, কিছু দরকার?”

আকরাম কয়েক সেকেন্ড চুপ করে রইল। তারপর খুব ধীরে হাসল। সেই হাসি ছিল ঠোঁটের কোণে—কোনো উচ্ছ্বাসহীন, অনুভূতিহীন।

“বউমা, আপনার হাত কেটে গেছে।”

মীনা চমকে তাকাল। সত্যিই, সে খেয়ালই করেনি, ছুরি কাটতে গিয়ে সামান্য আঙুল ছুঁয়ে গেছে। সামান্য রক্ত বেরিয়েছে।

আকরাম ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে এল।

“রক্ত বড় অদ্ভুত জিনিস, না?” সে ফিসফিস করে বলল। “একবার বেরোলে আর ধরে রাখা যায় না…”

মীনার শরীর হিম হয়ে গেল।

সে পেছিয়ে গিয়ে বলল, “আমি ঠিক আছি। তুমি যাও, তোমার কাজ করো।”

আকরাম তখনও তাকিয়েই ছিল। তারপর ধীরে ধীরে পিছু হটে চলে গেল।

কিন্তু মীনা অনুভব করল, কিছু একটা ঠিক নেই। এই লোকটা… স্বাভাবিক না।

রঞ্জিত বিশ্বাস করে না

রাতে মীনা রঞ্জিতকে বলল, “এই আকরাম লোকটাকে আমি পছন্দ করতে পারছি না।”

রঞ্জিত পত্রিকা পড়ছিল। সে মাথা না তুলেই বলল, “হঠাৎ এটা কেন বলছো?”

“আমি জানি না… কেমন যেন অস্বস্তি লাগে ওর সামনে।”

“অস্বস্তি লাগছে? কীরকম?”

“ঠিক বলতে পারব না। কিন্তু ওর চোখে কিছু একটা আছে… যেন খুব কিছুর সন্ধান করছে। আর ওর কথা বলার ভঙ্গি, তাকানোর ধরন—কেমন যেন অদ্ভুত।”

রঞ্জিত এবার তাকাল। “শোনো, তুমি না হয় একটু বেশি ভাবছো। লোকটা বয়স্ক, গ্রাম থেকে এসেছে, এদের ভাষা আমাদের মতো হবে না। এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই।”

“কিন্তু… আজ রান্নাঘরে ওর ব্যবহারটা কেমন ছিল। এমনভাবে তাকাচ্ছিল—”

“উফফ! এতসব ভাবার দরকার নেই, মীনা। তুমি বাড়তি কল্পনা করছো। আমি একেবারে বাজে লোক হলে তাকে কাজে রাখতাম না, বুঝলে?”

মীনা কিছু বলল না।

রঞ্জিত আবার পত্রিকায় মন দিল, আর মীনা জানত, সে যত কথাই বলুক, তার স্বামী এটা গুরুত্ব দেবে না।

ভয়ের অনুভূতি

সেই রাতে, শুভর হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল।

কেন জানি না, তার মনে হচ্ছিল, ঘরের বাইরে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।

সে আস্তে করে দরজার কাছে গেল। কান পেতে শুনল—কেউ নিঃশ্বাস নিচ্ছে। ভারী, ধীর নিঃশ্বাস।

তারপর খুব হালকা একটা খটখট শব্দ।

শুভ দরজার নিচের ফাঁক দিয়ে উঁকি মারল।

জানালার বাইরে দিয়ে এক ছায়া চলে গেল।

শুভর পুরো শরীর কাঁপতে লাগল।

কে ছিল সেটা?

(চলবে…)
[+] 3 users Like Toxic boy's post
Like Reply
#7
অধ্যায়: মীনার অস্বস্তি ও আকরামের ছায়া

রাতের খাবার শেষ হওয়ার পর মীনা থালাবাসন ধুতে বসেছিল। রান্নাঘরের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখে উঠোনটা অন্ধকারে ঢাকা, গাছের পাতাগুলো ধীরে ধীরে দুলছে। বাতাসে কেমন যেন একটা চাপা গন্ধ, যেন ভেজা মাটি আর দূর থেকে ভেসে আসা কিছু পোড়া কাঠের ধোঁয়া।

কিন্তু আজ মীনার মনে হচ্ছিল, এই বাড়িতে থাকা মানেই যেন একটা বন্দিত্বের মধ্যে থাকা।

সে ধীরে ধীরে থালা ধুচ্ছিল, কিন্তু বারবার মনে হচ্ছিল, কেউ পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। সে ঠান্ডা হয়ে গেল। হাতের কাজ থামিয়ে এক মুহূর্ত শ্বাস ধরে রাখল, তারপর আস্তে করে পিছনে তাকাল।

কেউ নেই।

কিন্তু অদ্ভুতভাবে, তার মনে হচ্ছিল—একটা অদৃশ্য ছায়া যেন কিছুক্ষণ আগে পর্যন্ত এখানে ছিল।

সে দ্রুত কাজ শেষ করে বাইরে এল। রঞ্জিত আর শুভ ড্রইং রুমে বসে গল্প করছিল, টেবিল ল্যাম্পের হলুদ আলোয় ঘরটা কেমন যেন দমবন্ধ করা লাগছিল মীনার কাছে। সে সোজা তার ঘরে চলে গেল, দরজা বন্ধ করল।

কিন্তু তখনই দরজার ওপাশে একটা ছায়া নড়ে উঠল।

আকরাম।

সে ধীরে ধীরে দেয়ালে হাত রেখে দাঁড়িয়ে ছিল, তার ঠোঁট অল্প একটু ফাঁকা। অন্ধকারে তার চোখের গভীরে এক অদ্ভুত আগুন জ্বলছিল।

সে ফিসফিস করে বলল, “তুমি বুঝতে পারছো, তাই না?”

তারপর এক মুহূর্ত অপেক্ষা করল, যেন মীনা তাকে শুনতে পাচ্ছে কি না সেটা বোঝার চেষ্টা করছিল।

কিন্তু দরজার ওপাশ থেকে কোনো শব্দ এল না।

আকরাম এবার আস্তে হাসল। তারপর নিঃশব্দে সরে গেল।

আকরামের উপস্থিতি: মীনার অস্বস্তি বাড়ছে

পরের দিন বিকেলে, মীনা উঠোনে কাপড় মেলছিল। শুভ তখন বারান্দায় বসে ছিল, দূর থেকে কাক-চিলের ডাক ভেসে আসছিল। আকাশটা ছিল ধূসর, যেন বৃষ্টি নামতে পারে যে কোনো মুহূর্তে।

মীনা কাপড় মেলে শেষ করে পেছনে ফিরে আসতেই দেখতে পেল—আকরাম ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।

সে আঁতকে উঠল!

“আরে, আপনি…! এত চুপচাপ এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?”

আকরাম কিছু বলল না। তার চোখদুটো স্থির ছিল, ঠোঁটে সেই অদ্ভুত হাসিটা লেগে ছিল।

তারপর সে হঠাৎ বলে উঠল, “বউমা, তুমি খুব সুন্দর।”

মীনার শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা স্রোত নেমে গেল।

“কি?”

আকরাম এবার ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে এল।

“তোমার গায়ের গন্ধটা খুব পরিচিত লাগছে, জানো?”

মীনা এবার সত্যিই ভয় পেল।

সে একপা পিছিয়ে গেল, কিন্তু তখনই শুভর কণ্ঠস্বর ভেসে এল, “মা, বাবা কই?”

মীনা আর কথা না বলে দ্রুত বারান্দার দিকে চলে গেল। শুভ তাকিয়ে ছিল, কিন্তু আকরাম যেন তখনও মাটিতে পা গেড়ে
[+] 4 users Like Toxic boy's post
Like Reply
#8
অধ্যায়: রাতের ছায়া, আকরামের চোখ

অস্বস্তির গভীরতা

মীনার মনে আজকাল এক অদ্ভুত অস্বস্তি কাজ করছে। যেন ঘরের প্রতিটি কোণ থেকে কেউ তাকে দেখছে, নিঃশব্দে অনুসরণ করছে। রান্নাঘরে গেলে মনে হয়, ঠিক পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু ঘুরে তাকালে কিছুই নেই। শোবার ঘরে আয়নার সামনে দাঁড়ালে মনে হয়, প্রতিচ্ছবিটা যেন তার নিজের নয়—কিংবা কারও নজরদারির আওতায় আছে।

শুভও লক্ষ্য করছিল, আকরামের আচরণ কেমন যেন অস্বাভাবিক হয়ে উঠছে। তার চোখের দৃষ্টি যেন শুধু তাদের মা মীনার দিকেই আটকে থাকে। প্রথমদিকে সে এটা বুঝতে পারছিল না, কিন্তু এখন স্পষ্ট লাগছে। আকরাম সুযোগ পেলেই মায়ের আশেপাশে ঘুরঘুর করে, মাঝেমধ্যে অদ্ভুতভাবে তার দিকে তাকিয়ে থাকে।

একদিন সকালে, মীনা বাগানে ফুল তুলছিলেন, শুভ জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। আকরাম তখন সামনের উঠোন পরিষ্কার করছিল। হঠাৎ শুভ লক্ষ্য করল, আকরাম একদৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে—অসঙ্গতভাবে। তার চোখের দৃষ্টি যেন স্বাভাবিক মানুষের মতো নয়, বরং সেখানে এক ধরনের বিকৃতি কাজ করছে। শুভর সারা গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল।

আকরাম তখনই চমকে উঠে চোখ সরিয়ে নিল, যেন কিছু হয়নি। কিন্তু শুভ বুঝতে পারল, এটা কোনো সাধারণ ঘটনা নয়।

রাতের ভয়াল উপস্থিতি

সেদিন রাতে, শুভর ঘুম ভেঙে গেল হালকা ফিসফিস শব্দে। প্রথমে ভেবেছিল বাতাসের আওয়াজ, কিন্তু কিছুক্ষণ শুনে বুঝতে পারল, কেউ আস্তে আস্তে কথা বলছে।

সে উঠে দরজার কাছে গিয়ে বাইরে উঁকি দিল। করিডোর অন্ধকার, কেবল এক কোণে চাঁদের আলো এসে পড়ছে। কিন্তু হঠাৎই, সে দেখতে পেল—আকরাম ধীরে ধীরে মায়ের ঘরের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াল।

শুভর শ্বাস আটকে গেল। আকরাম নিঃশব্দে দরজার কাছে মাথা ঝুঁকিয়ে কিছু শুনছে। তারপর, সে হাত বাড়িয়ে ধীরে ধীরে দরজার গায়ে হাত রাখল।

শুভর গা শিউরে উঠল।

আকরাম কি ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছে?

ঠিক তখনই, ঘর থেকে মায়ের আওয়াজ এলো, যেন তিনি কিছু অনুভব করেছেন। “কে ওখানে?”

আকরাম সঙ্গে সঙ্গে একপাশে সরে গেল, যেন কিছু হয়নি। শুভ দেখল, সে ধীরে ধীরে পেছন ঘুরে করিডোর ধরে হাঁটতে লাগল, কিন্তু তার হাঁটার ধরন কেমন যেন অস্বাভাবিক।

শুভ দরজা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পড়ল, কিন্তু ঘুম আসছিল না। এই বাড়ির ভেতরে কিছু একটা ঘটছে। আকরামের চোখ, তার অদ্ভুত আচরণ—সব মিলিয়ে যেন কেমন একটা ভয় ছড়িয়ে আছে।

রঞ্জিতের অবিশ্বাস

পরদিন সকালে মীনা রঞ্জিতকে বললেন, “আকরাম লোকটা কেমন যেন অদ্ভুত। ওকে আমি ঠিক বিশ্বাস করতে পারছি না।”

রঞ্জিত কাগজ পড়ছিলেন। “কেন, কী করেছে ও?”

মীনা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন। কী বলবেন? নির্দিষ্ট করে কিছু ধরতে পারছেন না, কিন্তু ভিতর থেকে একটা ভয় কাজ করছে।

“সে আমাকে মাঝে মাঝে এমনভাবে দেখে… বুঝতে পারি না, কিন্তু স্বাভাবিক লাগে না।”

রঞ্জিত হাসলেন, “তোমার মাথার ভুল। লোকটা বৃদ্ধ, এত কিছু ভাববে কেন?”

মীনা কিছু বললেন না, কিন্তু তার ভয় কমল না।

শুভও বাবার কাছে কিছু বলতে চেয়েছিল, কিন্তু পরে ভাবল, বাবার স্বভাব তো জানাই আছে—সে ভূত-প্রেত এসব বিশ্বাস করে না, তাছাড়া আকরামের ব্যাপারে তার কোনো সন্দেহও নেই। বরং উল্টো শুভকেই বলবে, এসব তার কল্পনা।

কিন্তু শুভ জানে, এটা কল্পনা নয়।

এই বাড়ির কিছু একটা আছে।

এই বাড়ির দেয়ালের মাঝে, বাতাসের মধ্যে, রাতের নীরবতার মধ্যে লুকিয়ে আছে এমন কিছু, যা ধীরে ধীরে তাদের গ্রাস করতে চাইছে।

(চলবে…)
[+] 6 users Like Toxic boy's post
Like Reply
#9
গল্পটা কেও বানিয়ে লিখতে পারবে আমি আর লিখতে পারছি না,,, any good writer?????
Like Reply
#10
Darun sshuru
Like Reply
#11
(04-03-2025, 11:42 PM)Toxic boy Wrote: গল্পটা কেও বানিয়ে লিখতে পারবে আমি আর লিখতে পারছি না,,, any good writer?????

আপনার লেখার হাত বেশ ভালো। যাকে বলে একদম পাকা হাতের লেখা। তবে যখন আর লিখতেই  পারবেন না, তখন শুরু না করলেই ভালো ছিল। 
বাংলা ফোরামে এই ধরনের ভৌতিক গল্প লেখার কৌশল রপ্ত করতে পেরেছিল একমাত্র বাবান। তবে ও নিজে একজন বড় মাপের লেখক, তাই অন্যের গল্প চালিয়ে নিয়ে যাবে বলে আমার মনে হয় না।

[Image: Shocked-Open-Asianpiedstarling-size-restricted.gif]

[+] 1 user Likes Sanjay Sen's post
Like Reply
#12
অধ্যায়: ছায়ার মধ্যে দৃষ্টি

আকরামের ছায়া

সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছিল। জানালার বাইরে লালচে আকাশ ধীরে ধীরে অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছিল। শুভ আপন মনে বই পড়ছিল, কিন্তু তার মনোযোগ বারবার বিচ্ছিন্ন হচ্ছিল। একটা অদ্ভুত অনুভূতি তাকে পেয়ে বসেছে—যেন কেউ তাকে দেখছে।

সে জানালার কাঁচে চোখ রাখল। উঠোনের এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল আমগাছের নিচে একটা ছায়ামূর্তি দেখা গেল। প্রথমে মনে হলো হয়তো কোনো ভুল দেখছে, কিন্তু একটু ভালো করে তাকাতেই গা শিরশির করে উঠল।

আকরাম!

সে অন্ধকারের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে, কোনো নড়াচড়া নেই। চোখ তুলে সোজা শুভর জানালার দিকে তাকিয়ে আছে। সেই দৃষ্টি… নিছক এক বৃদ্ধের নয়, যেন একটা শূন্যতা, এক ভয়ংকর অস্পষ্টতা তার চোখে ভাসছিল।

শুভ দ্রুত পর্দা টেনে দিল। বুকের মধ্যে ধুকপুক শুরু হয়ে গেছে। সে বুঝতে পারছে, এই বাড়ির পরিবেশটা স্বাভাবিক নেই, বিশেষ করে আকরামের উপস্থিতি যেন একটা অজানা অন্ধকার নিয়ে এসেছে।

রাতের নীরবতা ভাঙলো কে?

রাতে খাওয়ার পর মীনা শোবার ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করলেন। রঞ্জিত পাশের চেয়ারে বসে খবরের কাগজ পড়ছিল। শুভও নিজের ঘরে চলে গেল, কিন্তু ঘুম আসছিল না।

হঠাৎ…

ধীর পায়ের শব্দ।

শুভ চমকে উঠল। মনে হলো, কেউ করিডোর দিয়ে হাঁটছে। সে আস্তে করে দরজার দিকে এগোল। দরজার ফাঁক দিয়ে করিডোরের দিকে তাকাতেই তার সারা শরীর কেঁপে উঠল।

আকরাম।

সে ধীরে ধীরে মায়ের ঘরের দরজার সামনে দাঁড়াল, ঠিক আগের রাতের মতোই। কিন্তু এবার সে শুধু দাঁড়িয়ে নেই—সে নিঃশব্দে দরজার হাতলটা ধরে নাড়ানোর চেষ্টা করল।

শুভর শ্বাস আটকে এলো।

কেন আকরাম বারবার মায়ের ঘরের সামনে আসে?

ঠিক তখনই, ঘরের ভেতর থেকে মায়ের ফিসফিসে আওয়াজ এলো—

“কে ওখানে?”

আকরাম মুহূর্তের জন্য স্থির হয়ে গেল, তারপর আস্তে করে সরে গেল অন্ধকারের দিকে। শুভ হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। সে আর সহ্য করতে পারছে না, এই রহস্যের সমাধান তাকে বের করতেই হবে!

মীনার অজানা আতঙ্ক

পরদিন সকালে মীনা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শাড়ি পরছিলেন। চোখে কাজল দিচ্ছিলেন, কিন্তু মনে হচ্ছিল কিছু একটা ঠিক নেই। আজকাল তার বুকের মধ্যে একটা অজানা আতঙ্ক কাজ করে, বিশেষ করে আকরামের চোখের দিকে তাকালে।

বিছানার পাশে রাখা ছোট আয়নাটা হাতে নিয়ে মুখটা দেখলেন। ঠিক তখনই…

এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো, আয়নার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা মীনা তিনি নন!

তার প্রতিচ্ছবির ঠোঁটের কোণে যেন একটা বিকৃত হাসি খেলে গেল!

তিনি আতঙ্কে আয়নাটা ফেলে দিলেন।

দরজার বাইরে তখন ধীর পায়ের শব্দ…
[+] 5 users Like Toxic boy's post
Like Reply
#13
অধ্যায়: আকরামের চোখে মীনা

অন্ধকারের লালসা

আকরাম জানে, সে একজন সাধারণ বৃদ্ধ মাত্র নয়। বাইরের দুনিয়ার চোখে সে হয়তো শুধুই এক নীরিহ চাকর, বয়সের ভারে ন্যুব্জ, চুপচাপ কাজ করা এক লোক। কিন্তু তার ভেতরে লুকিয়ে থাকা আকাঙ্ক্ষা… সেই জিনিস কেউ দেখতে পায় না।

এই বাড়িতে আসার পর থেকেই তার ভেতরের কিছু একটা ধীরে ধীরে জেগে উঠছে। বিশেষ করে যখন সে মীনাকে দেখে।

মীনা…

যেন একটা আগুনের শিখা, যে আলোয় আকরাম নিজেকে দগ্ধ করতে চায়, কিন্তু সেই আগুনের স্পর্শই তার সবচেয়ে গোপনীয় তৃষ্ণাকে জাগিয়ে তোলে।

তার প্রতিটি চলাফেরা, প্রতিটি হাসি, প্রতিটি শাড়ির আচলে মোড়া কোমল শরীর… সবকিছু যেন এক অদ্ভুত নেশার মতো আকরামের রক্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

সে বুঝতে পারে, রাতে যখন সে করিডোরের অন্ধকারে দাঁড়িয়ে মীনাকে দেখে, তার চোখ শুধু দেখা নয়, তার চোখ মীনাকে গ্রাস করে।

শুভ যখন জানালার ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে ছিল, তখন সে বুঝতে পারেনি, আকরাম শুধু তাকিয়ে ছিল না—সে মীনাকে দেখছিল।

কীভাবে?

সেদিন সকালে, বাগানে ফুল তুলছিলেন মীনা। শরীরটা একটু সামনে ঝুঁকে গিয়েছিল, কোমরের আঁচলটা একটু আলগা হয়ে গিয়েছিল। মীনার ঘাড়ের কাছে, তার শাড়ির ফাঁকে উঁকি মারা ঘামের চিকচিকে রেখাগুলোর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল আকরাম।

তার চোখে তখন একটা পিশাচের ক্ষুধা।

সে দেখতে পাচ্ছিল, কেমন করে সূর্যের আলো মীনার ত্বকের ওপর লুটিয়ে পড়ছে, কীভাবে তার শরীরের বাঁকগুলো সেই আলোয় নরম ছায়া তৈরি করছে।

আকরামের চোখ ধীরে ধীরে নেমে যাচ্ছিল…

তার বুকের ওঠানামা, তার কোমরের বাঁক, তার দেহের প্রতিটি স্পন্দন যেন শয়তানের মতো আকরামকে গ্রাস করছিল।

সেই মুহূর্তে, মীনা হঠাৎ পেছনে ঘুরে তাকাল।

আকরাম দ্রুত মুখ নামিয়ে ফেলল, যেন সে কিছুই করছে না। কিন্তু তার ঠোঁটের কোণে তখনো সেই রহস্যময় হাসি লেগে ছিল।

আয়নার ভেতরের সত্য

রাতে, যখন মীনা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শাড়ি বদলাচ্ছিলেন, তখন তিনি টের পান কেউ দেখছে।

তিনি জানালার দিকে তাকালেন, কিন্তু সেখানে কেউ নেই।

কিন্তু আয়নার মধ্যে…

কেমন যেন একটা অস্বাভাবিক পরিবর্তন!

তিনি দেখলেন, আয়নার প্রতিচ্ছবির চোখগুলো যেন তার চোখ নয়।

সেগুলো আরও গভীর, আরও অন্ধকার… ঠিক যেমন আকরামের চোখ!

মীনা চমকে উঠলেন, পেছনে ফিরে তাকালেন—কেউ নেই!

কিন্তু দরজার বাইরে তখন নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে ছিল আকরাম, তার ঠোঁটের কোণে সেই অদ্ভুত হাসি…
[+] 4 users Like Toxic boy's post
Like Reply
#14
অধ্যায়: আকরামের কালো জাদু

অশুভ শক্তির ছায়া

আকরাম শুধু একজন চাকর নয়, তার দেহের ভেতরে লুকিয়ে আছে এক অন্ধকার শক্তি, এক অভিশপ্ত ক্ষমতা, যা ধীরে ধীরে বাড়ির পরিবেশকে গ্রাস করছে। সে জানে, একদিন এই বাড়ির প্রতিটি মানুষ তার ইচ্ছার দাস হয়ে যাবে—বিশেষ করে মীনা।

কিন্তু তাড়াহুড়ো করা যাবে না।

এই খেলা ধাপে ধাপে এগোতে হবে।

সেই রাত থেকে সে শুরু করল তার কালো জাদুর খেলা।

কালো জাদুর প্রথম ছাপ

শুভ লক্ষ্য করছিল, মায়ের আচরণ কেমন যেন বদলে যাচ্ছে।

আগে মায়ের চোখে সবসময় এক ধরনের স্নিগ্ধতা থাকত, এখন সেখানে যেন একটা শূন্যতা কাজ করছে। মাঝে মাঝে মা একদম চুপচাপ বসে থাকেন, শূন্য দৃষ্টিতে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকেন, যেন কিছু একটা অনুভব করছেন—কিন্তু বুঝতে পারছেন না।

একদিন সন্ধ্যায় শুভ লক্ষ্য করল, মা রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে শূন্যে তাকিয়ে আছেন।

শুভ ধীরে ধীরে কাছে গিয়ে ডাকল, “মা?”

মীনা চমকে উঠলেন, যেন হঠাৎ ঘোর কেটে গেল।

“হ্যাঁ, কী হয়েছে?”

শুভ কিছু বলল না, শুধু মায়ের দিকে ভালো করে তাকাল। মায়ের কপালের কাছ থেকে ঘাম গড়িয়ে পড়ছিল, আর চোখের মণি কেমন যেন একটু ফ্যাকাশে লাগছিল।

সে বুঝতে পারল, কিছু একটা ঠিক নেই।

রাতের রহস্যময় ধূপের গন্ধ

সেই রাতে শুভর ঘুম ভেঙে গেল এক অদ্ভুত গন্ধে।

এক ধরনের ধোঁয়া ঘরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু ধোঁয়াটা সাধারণ ধূপের গন্ধ নয়, বরং একটা তীব্র, নেশাগ্রস্ত করা ঘ্রাণ, যা মাথার ভেতরে অদ্ভুত অনুভূতি তৈরি করছে।

শুভ বিছানা থেকে উঠে বাইরে উঁকি দিল।

করিডোরের এক কোণে একটা কালো মোমবাতি জ্বলছে!

তার চারপাশে গোল করে লাল রঙের গুড়ো ছিটানো, আর তার ঠিক মাঝখানে বসে আছে আকরাম।

তার মুখ নিচের দিকে, কিছু বিড়বিড় করছে।

ঠিক তখনই শুভ দেখতে পেল—মোমবাতির শিখার ভেতরে একটা ছায়ামূর্তি কাঁপছে, যা দেখতে অবিকল মীনার মতো!

শুভর শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল।

আকরাম কী করছে?

তার মনে হলো, যদি সে এখন কিছু না করে, তাহলে কিছু একটা ভয়ংকর ঘটে যাবে।
[+] 4 users Like Toxic boy's post
Like Reply
#15
অধ্যায়: শুভর বিভীষিকা

আকরামের ভয় দেখানোর খেলা

শুভ বুঝতে পারছিল, সে যদি কিছু না করে, তাহলে মা কোনো এক অদ্ভুত শক্তির কবলে পড়ে যাবে। কিন্তু আকরামও বোকার মতো বসে থাকবে না।

সে জানে শুভ তার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

আর তাই, এবার শুভকেই ভয় দেখানোর পালা।

রাতের মধ্যরাতের ছায়া

সেদিন রাতে শুভর আবার ঘুম ভেঙে গেল।

কিন্তু এবার কোনো ফিসফিস শব্দ নয়, কোনো ধূপের গন্ধ নয়—বরং এক অদ্ভুত অনুভূতি, যেন কেউ তাকে তাকিয়ে দেখছে।

সে ধীরে ধীরে চোখ খুলল।

তার ঘরের জানালার পাশে কেউ দাঁড়িয়ে আছে!

আলো খুব কম ছিল, কিন্তু শুভ স্পষ্ট দেখতে পেল—কেউ একজন, একদম স্থির হয়ে, তার দিকেই তাকিয়ে আছে।

সে বুঝতে পারছিল না, এটা মানুষ না অন্য কিছু…

কিন্তু তারপর…

ছায়ামূর্তিটা ধীরে ধীরে হাসতে লাগল!

একটা বিকৃত হাসি, যেন তার সমস্ত ভয় শুষে নিচ্ছে।

শুভ চিৎকার করতে চাইল, কিন্তু গলা দিয়ে কোনো শব্দ বের হলো না!

ঠিক তখনই সেই ছায়া তার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল…

শুভ দ্রুত হাত বাড়িয়ে লাইটের সুইচ টিপল!

ঘর আলোতে ভরে গেল…

কিন্তু…

কেউ নেই!

কিন্তু শুভ জানে, এটা তার কল্পনা নয়।

মৃতদেহের হাত

সকালে শুভ ঠিক করল, সে বাবার কাছে কিছু বলবে না, কারণ সে জানে বাবা বিশ্বাস করবে না।

কিন্তু তার মনে একটা সন্দেহ হচ্ছিল—আকরামের ঘরে কি কিছু আছে?

সে সুযোগ বুঝে চুপিচুপি আকরামের ঘরে ঢুকে পড়ল।

ঘরটা অন্ধকার আর স্যাঁতসেঁতে, মনে হচ্ছিল বহুদিন ধরে কেউ এখানে ঠিকমতো থাকে না।

শুভ খুঁজতে লাগল, কিছু অস্বাভাবিক জিনিস আছে কি না।

তার চোখ গেল একটা কাঠের পুরোনো বাক্সের দিকে।

সে আস্তে করে সেটা খুলল…

তারপর যা দেখল, তাতে তার হৃৎপিণ্ড এক মুহূর্তের জন্য থেমে গেল!

বাক্সের মধ্যে একটা মানুষের কাটা হাত!

শুভ চিৎকার করে পিছিয়ে গেল।

তার গা গুলিয়ে উঠল, মনে হলো সে বমি করে ফেলবে।

ঠিক তখনই পেছন থেকে একটা ঠান্ডা, ভাঙা গলার আওয়াজ এলো—

“তুমি কী খুঁজছ, খোকা?”

শুভ ধীরে ধীরে পেছনে ঘুরল…

আকরাম সেখানে দাঁড়িয়ে, তার ঠোঁটের কোণে সেই বিকৃত হাসি!

শুভ বুঝতে পারল, সে খুব বড় একটা ভুল করে ফেলেছে।

আকরাম তাকে ছাড়বে না।
[+] 4 users Like Toxic boy's post
Like Reply
#16
অধ্যায়: শুভর জন্য সতর্কবার্তা

আকরামের সরাসরি হুমকি

শুভ জানত, আকরামের মধ্যে কিছু একটা অস্বাভাবিক আছে।

সে শুধু একজন বৃদ্ধ চাকর নয়।

তার চোখের ভাষা, তার অস্বাভাবিক আচরণ, তার রাতের ছায়ার মতো উপস্থিতি—এসব স্বাভাবিক কিছু নয়।

কিন্তু এবার আকরাম আর শুধু দূর থেকে ভয় দেখাবে না। এবার সে সরাসরি শুভকে সাবধান করে দেবে।

শুভর ঘরে অনাহূত অতিথি

সেই রাতে শুভ দেরি করে ঘুমাতে গিয়েছিল।

সে চুপচাপ শুয়ে ছিল, কিন্তু তার মন অস্থির ছিল।

মা দিন দিন কেমন যেন বদলে যাচ্ছে। বাবা কিছুই বিশ্বাস করে না।

কিন্তু শুভ জানে, কিছু একটা ভয়ংকর ঘটছে।

ঠিক তখনই সে শুনতে পেল…

“কড় কড় কড়”

তার ঘরের দরজায় কেউ ধাক্কা দিচ্ছে।

সে চমকে উঠে বসল।

তারপর দরজা আস্তে আস্তে আপনার-আপনি খুলে গেল…

শুভর বুক ধড়ফড় করে উঠল।

আলো কম ছিল, কিন্তু সে স্পষ্ট দেখতে পেল—আকরাম দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে!

তার মুখে একটা বিকৃত হাসি, যেন সে শুভর ভয়টা উপভোগ করছে।

“তোমার সাহস তো কম নয়, খোকা…” আকরাম ধীর লয়ে বলল।

শুভ গলা শুকিয়ে গেল।

“আমার পথে এসো না…”

আকরাম ধীরে ধীরে ঘরের ভেতরে ঢুকল।

তার চোখে একটা অদ্ভুত লালচে আভা, যেন গভীর অন্ধকারের গহ্বরের মতো।

শুভ সরে যেতে চাইল, কিন্তু শরীর যেন জমে গেল।

আকরাম ধীরে ধীরে তার সামনে এসে ফিসফিস করে বলল—

“আমি যা চাই, তা আমি পাবো… তুমি আমার পথে আসবে না…”

শুভ ভয় পেয়ে গেলেও সাহস করে বলল, “তুমি… তুমি কী করছো?”

আকরাম হালকা হেসে বলল—

“তোমার মা খুব সুন্দর, তাই না?”

শুভর সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল।

তার মুষ্টি শক্ত হয়ে গেল রাগে।

“তুই…!”

ঠিক তখনই আকরাম হেসে উঠল, কিন্তু সেই হাসির মধ্যে কোনো মানবীয় অনুভূতি ছিল না।

তারপর সে আস্তে করে শুভর কাঁধে হাত রাখল…

ঠিক তখনই শুভর শরীরে একটা বিদ্যুতের মতো শক লাগল!

সে অনুভব করল, তার সমস্ত শক্তি যেন টেনে নিয়ে যাচ্ছে আকরাম!

তার মাথার ভেতর একটা অদ্ভুত শব্দ হচ্ছিল, যেন বহু মানুষের কান্না একসাথে মিলিয়ে একটা ভয়ংকর গুঞ্জন তৈরি করেছে!

শুভ চিৎকার করতে চাইল, কিন্তু গলা দিয়ে শব্দ বের হলো না।

ঠিক তখনই আকরাম ফিসফিস করে বলল—

“যদি আমাকে বাধা দিতে চাও, তাহলে আগে ভেবে নিও… এই খেলায় আমি জিতব… আর তুমি শুধু দেখবে…”

আকরামের বিদায়… শুভর আতঙ্ক

এক মুহূর্তের জন্য ঘরটা কাঁপে উঠল, যেন ভূমিকম্প হচ্ছে!

তারপর আকরাম হঠাৎ করেই পিছিয়ে গেল, দরজার দিকে পা বাড়াল, আর দরজার বাইরে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল…

শুভ শক্ত হয়ে বসে রইল, তার বুক ধড়ফড় করছিল।

সে জানত, আকরাম তাকে সরাসরি সতর্ক করেছে।

সে জানত, এখন সে কিছু করতে গেলে আকরাম তাকে ছাড়বে না।

কিন্তু তার মাকে সে ছেড়ে দিতে পারবে না।

এখন শুভর সামনে দুটি পথ—

এক, সে ভয় পেয়ে চুপ থাকবে…

দুই, সে আকরামের বিরুদ্ধে লড়বে, কিন্তু তার জন্য তাকে আরও ভয়ংকর কিছুর মুখোমুখি হতে হবে…
[+] 4 users Like Toxic boy's post
Like Reply
#17
অধ্যায়: আকরামের দৃষ্টি, মীনার ভেতরের টানাপোড়েন

আকরামের চোখ যে কিছু লুকিয়ে রাখে…

আকরাম শুধু কালো জাদু করেই থেমে থাকেনি। এখন সে এক ধাপ এগিয়ে গেছে।

সে বুঝেছে, শুধু জাদুর প্রভাব ফেললেই হবে না—সে মনস্তাত্ত্বিক খেলাও খেলবে।

মীনার মনে ভীতি এবং অস্বস্তি জন্মানোই তার পরবর্তী লক্ষ্য।

রঞ্জিতের সামনে দাঁড়িয়ে মীনাকে তাড়া করা

সেদিন সন্ধ্যায় রঞ্জিত চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বারান্দায় বসে ছিল। মীনা ঠিক তার পাশে।

তারা কথা বলছিল—সাধারণ পারিবারিক বিষয় নিয়ে।

কিন্তু মীনা অনুভব করছিল কিছু একটা…

এক জ্বলন্ত দৃষ্টি তার শরীরকে বিদ্ধ করছে!

সে ধীরে ধীরে পাশ ফিরে তাকাল…

আকরাম দাঁড়িয়ে আছে, সামনের উঠোনে, হাতে একটা ঝাঁটা, কিন্তু ঝাঁটাটা পরিষ্কার করা বন্ধ করে সে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে!

তার চোখের দৃষ্টি কেমন যেন অস্বাভাবিক, গা শিউরে ওঠার মতো।

সে রঞ্জিতের সামনে দাঁড়িয়ে নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে আছে মীনার দিকে!

মীনার সমস্ত শরীরের রক্ত যেন জমে গেল!

সে চোখ সরিয়ে নিল, কিন্তু একটা অদ্ভুত অনুভূতি তার ভেতর ঢুকে গেল—আকরামের সেই দৃষ্টি যেন তার শরীর ভেদ করে মনের ভেতর ঢুকে পড়ছে!

কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, রঞ্জিত কিছুই টের পাচ্ছে না।

মীনা ফিসফিস করে বলল, “আকরাম কেমন যেন আচরণ করছে… তোমার কিছু মনে হয় না?”

রঞ্জিত তার কথার গুরুত্ব দিল না।

“লোকটা বৃদ্ধ, তুমি অযথা বেশি ভাবছ।”

কিন্তু মীনা জানে, সে বেশি ভাবছে না… এই চোখের ভাষা সে বুঝতে পারছে।

মাথার ভেতরে কণ্ঠস্বর…

সেই রাতেও মীনা ভালো করে ঘুমোতে পারল না।

তার কানে কেমন যেন একটা ফিসফিস আওয়াজ আসছে।

মনে হচ্ছে, কেউ যেন তার নাম ধরে ডাকছে—

“মীনা…”

সে চমকে উঠে তাকাল।

রঞ্জিত পাশে ঘুমিয়ে আছে।

কিন্তু অনুভব করল—কোথাও কেউ আছে।

সে ধীরে ধীরে পাশ ফিরে তাকাল…

আয়নার সামনে একটা ছায়া দাঁড়িয়ে আছে!

আয়নার প্রতিচ্ছবিতে সে দেখল—একটা কালো অবয়ব, লম্বা শরীর, মুখটা অস্পষ্ট, কিন্তু চোখ দুটি লালচে অন্ধকারের মতো জ্বলছে।

মীনা শ্বাস নিতে পারছিল না, চিৎকার করতে গিয়েও পারল না।

তার মনে হলো, এই ছায়াটা আস্তে আস্তে তার কাছে এগিয়ে আসছে…

ঠিক তখনই, মোমবাতির আলোয় ঘর উজ্জ্বল হয়ে উঠল, আর ছায়াটা এক ঝটকায় মিলিয়ে গেল!

মীনা উঠে বসে পড়ল, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেছে, শরীর ঘামে ভিজে গেছে।

সে বুঝতে পারল, এই বাড়িতে কিছু একটা আছে।

কিন্তু এটা কি তার কল্পনা? নাকি সত্যি সত্যি কিছু একটার প্রভাব পড়ছে তার ওপর?

শুভ বুঝতে পারছে… কিন্তু সে কি কিছু করতে পারবে?

শুভও লক্ষ্য করছিল, মা কেমন যেন বদলে যাচ্ছে।

আগে সে শক্ত ছিল, এখন কেমন অস্থির, দুর্বল, বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছে।

আকরাম যে শুধুমাত্র তাকিয়েই ভয় দেখাচ্ছে তা নয়, সে ধীরে ধীরে মায়ের মনে ঢুকে পড়ছে!

শুভ কি কিছু করতে পারবে? নাকি আকরামের শক্তি ধীরে ধীরে তাদের পুরো পরিবারকে গ্রাস করবে?
[+] 3 users Like Toxic boy's post
Like Reply
#18
অধ্যায়: অশুভ সকালের পূর্বাভাস

কু ডাক আর অদ্ভুত পূর্বাভাস

সকালের আকাশ ছিল ভারী, যেন কালো মেঘ জমে আছে। বাতাসে একটা অস্বাভাবিক ঠাণ্ডা।

শুভর ঘুম ভাঙল এক অদ্ভুত শব্দে—

“কাও… কাও… কাও…”

শুভ চোখ খুলেই দেখল, জানালার পাশে বসে থাকা এক ঝাঁক কাক বাড়ির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ডাকছে।

সে উঠে জানালার বাইরে তাকাল।

বাড়ির ছাদ, উঠোন, এমনকি গাছের ডালেও অসংখ্য কাক বসে আছে!

তারা সবাই যেন কিছু একটা দেখছে, কিছু একটা অনুভব করছে।

শুভর কেমন একটা অস্বস্তি হলো।

ঠিক তখনই মায়ের ডাক শুনে সে নিচে ছুটে গেল।

মায়ের ভয়ের অনুভূতি

মীনা রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে ছিলেন, কিন্তু তার চোখ আতঙ্কে বড় হয়ে গেছে।

“শুভ, এই কাকগুলো এত ডাকছে কেন? আমার খুব অস্বস্তি লাগছে…”

শুভ কিছু বলার আগেই তারা শুনতে পেল, দূর থেকে একটা লম্বা শিসের শব্দ আসছে।

একটা নয়, অনেকগুলো!

এটা কোনো সাধারণ শিস নয়—এটা যেন কোনো লুকিয়ে থাকা শক্তির ডাক!

মীনা কেঁপে উঠলেন, তার মনে হলো, এই ডাক তাকে কোথাও টেনে নিয়ে যেতে চাইছে।

শুভ কিছু একটা বলার আগেই, হঠাৎ করে একটা ছায়া রান্নাঘরের দরজার কাছে দেখা দিল।

আকরামের ছায়া

আকরাম দাঁড়িয়ে আছে রান্নাঘরের দরজায়।

তার মুখে অদ্ভুত এক অপার্থিব হাসি।

তার চোখ অস্বাভাবিক লালচে, ঠোঁটের কোণে একটানা সেই বিকৃত হাসি।

“বৌমা, আজ তোমার শরীরটা ঠিক আছে তো?”

তার কণ্ঠস্বরে একটা অদ্ভুত মায়া, কিন্তু সেই মায়ার আড়ালে একটা গভীর অন্ধকার লুকিয়ে আছে।

মীনা পিছিয়ে গেলেন।

শুভ গলা শক্ত করে বলল, “তুমি এখানে কী করছো?”

আকরাম ধীর লয়ে বলল, “আমি তো শুধু খোঁজ নিচ্ছিলাম, সবাই ভালো আছে কি না…”

তারপর সে তাকাল মীনার দিকে—একটা অস্বাভাবিক লোলুপ দৃষ্টি।

শুভর মনে হলো, এই দৃষ্টির ভেতরে কোনো মানুষ নেই—এটা যেন একটা ভিন্ন শক্তি।

অন্ধকারের টান

দিনের বেলা হলেও, আকরামের উপস্থিতি ঘরের ভেতরটা অন্ধকার করে তুলল।

মীনা বুঝতে পারছিলেন, কিছু একটা তাকে আকর্ষণ করছে, তাকে টেনে নিয়ে যেতে চাইছে।

তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে উঠল।

তার মাথার ভেতর একটা কণ্ঠস্বর—

“আসো… আসো… আমি তোমাকে ডাকছি…”

তার শরীর কাঁপছিল, কিন্তু পা যেন নিজের ইচ্ছায় আকরামের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল!

শুভ আতঙ্কে দেখল, তার মা আস্তে আস্তে আকরামের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

“মা!”

শুভ ঝাঁকিয়ে ধরল মীনাকে।

মীনা চমকে উঠলেন, যেন একটা ঘোর থেকে বেরিয়ে এলেন।

তিনি দ্রুত পিছিয়ে গেলেন, মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।

আকরামের বিদায়, কিন্তু হুমকি রয়ে গেল…

আকরাম একবার মীনাকে দেখল, তারপর হাসল।

“সব ঠিক আছে তো, বৌমা?”

মীনা কোনো উত্তর দিলেন না।

শুভ গর্জে উঠল, “এখান থেকে বেরিয়ে যাও!”

আকরাম ধীরে ধীরে পেছনে হাঁটতে লাগল, তার চোখের দৃষ্টি শুভর চোখের সঙ্গে আটকে থাকল।

তারপর সে ফিসফিস করে বলল—

“আমি তো শুধু শুরু করেছি, খোকা… তুমি থামাতে পারবে না…”

তারপর সে বেরিয়ে গেল, কিন্তু তার পিছনে একটা কুয়াশার মতো অন্ধকার রেখে গেল।

শুভ আর মীনা বুঝে গেল, তারা বড় বিপদের মধ্যে আছে…
[+] 3 users Like Toxic boy's post
Like Reply
#19
অধ্যায়: আকরামের ছায়ায় রঞ্জিত

আকরামের মুগ্ধ করার খেলা

সকালে রঞ্জিত বারান্দায় বসে কাগজ পড়ছিল। বাতাস ছিল শান্ত, যেন রাতের সমস্ত অস্বস্তি মুছে গেছে।

ঠিক তখনই, আকরাম এক গ্লাস গরম দুধ নিয়ে সামনে এল।

“বাবু, এই নিন। গরম দুধ খান, শরীর ভালো থাকবে।”

রঞ্জিত অবাক হয়ে বলল, “আরেহ! তুমি এসব করতে গেলে কেন?”

আকরাম হাসল, “আপনাদের তো আমি নিজের পরিবারের মতোই দেখি বাবু। তাই খেয়াল রাখা আমার দায়িত্ব।”

রঞ্জিত এক মুহূর্তের জন্য চিন্তা করল।

আকরামের ব্যবহার এতই ভদ্র, এতই বিশ্বস্ত লাগছিল যে, সে সত্যিই মুগ্ধ হয়ে গেল।

“আরে, তুমি তো খুব ভালো মানুষ, আকরাম। তোমার মতো বিশ্বস্ত লোক পাওয়া মুশকিল!”

আকরাম বিনীতভাবে মাথা ঝুকিয়ে হাসল, কিন্তু সেই হাসির আড়ালে একটা গভীর অন্ধকার ছায়া লুকিয়ে ছিল।

মীনাকে গোপন সতর্কবার্তা

মীনা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এই দৃশ্য দেখছিল।

রঞ্জিত কত সহজেই আকরামের কথায় মুগ্ধ হয়ে গেল!

কিন্তু মীনার চোখ আকরামের দৃষ্টি এড়ায়নি।

আকরাম একবার রঞ্জিতের দিকে তাকিয়ে হাসল, তারপর আস্তে করে মাথা ঘুরিয়ে মীনার দিকে তাকাল।

তবে সেই দৃষ্টি স্বাভাবিক ছিল না—সেই দৃষ্টিতে ছিল এক গভীর হুমকি।

“আমি চাইলে তোমার স্বামীকে শেষ করে দিতে পারি… তুমি জানো না আমি কী করতে পারি।”

মীনার সারা শরীর কেঁপে উঠল।

আকরামের চোখে কোনো ভয় নেই, বরং এক অদ্ভুত নির্লিপ্ত নিষ্ঠুরতা।

মীনা বুঝতে পারল—
এটা কোনো সাধারণ মানুষ নয়, এটা এক ভয়ংকর শক্তি, যে ধীরে ধীরে তাদের পুরো পরিবারকে গ্রাস করতে আসছে।

শুভর সন্দেহ আরও বাড়ছে

শুভ বারান্দার পাশে দাঁড়িয়ে সব দেখছিল।

আকরামের ব্যবহার এত মসৃণ, এত বিশ্বাসযোগ্য, কিন্তু শুভ জানে, এর নিচে কিছু একটা লুকিয়ে আছে।

আকরাম কেন তার বাবার সঙ্গে এত মিশতে চাইছে?

আর সেই দৃষ্টি?

শুভ স্পষ্ট দেখল, আকরাম এক মুহূর্তের জন্য তার মাকে এমন এক দৃষ্টি দিল, যেন সে তাকে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।

শুভর মনের ভেতর একটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল।

আকরামের বিজয়ী হাসি

আকরাম এবার মৃদু হেসে বলল,

“বাবু, আমি তো কিছুদিনের মধ্যেই আপনাদের আরও ভালোভাবে সাহায্য করব। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন, আমি আছি আপনার পাশে।”

রঞ্জিত তৃপ্তির হাসি দিল।

“তোমার মতো মানুষ থাকলে দুশ্চিন্তার কিছু নেই, আকরাম!”

মীনা বোঝে, এই বাড়িতে সত্যিকারের বিপদ নেমে এসেছে।

আকরাম শুধু তাদের আতঙ্কিত করছে না, সে রঞ্জিতের ওপর নিজের প্রভাব বিস্তার করছে।

এবং তার দৃষ্টি বলছে—

যদি কেউ বাধা দেয়, তবে তাকে সরিয়ে দেওয়াও কোনো ব্যাপার না!
[+] 3 users Like Toxic boy's post
Like Reply
#20
অধ্যায়: রাতের অতিথি, আকরামের উন্মাদনা

রঞ্জিতের আয়োজন

আজ রঞ্জিত খুব খুশি। সে নতুন বাড়িতে আসার পর থেকেই ভেবেছিল একটা ছোটখাটো পার্টি দেবে, যেখানে তার অফিসের কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ও তাদের পরিবার থাকবে।

“এটাই তো সুযোগ! এতদিন পর একটা ভালো মুহূর্ত উপভোগ করব,” রঞ্জিত চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলল।

মীনা খুব একটা আগ্রহী ছিল না, কিন্তু আজকের রাতটা তার ভাগ্যে কী নিয়ে আসবে, তা সে কল্পনাও করতে পারেনি।

অতিথিরা আসতে শুরু করল

সন্ধ্যা নামতেই অতিথিরা একে একে হাজির হতে লাগল।

প্রথমে এল রঞ্জিতের বস, শ্রীকান্ত সেন।
• বয়স: ৫৫
• চেহারা: দীর্ঘ, শক্তপোক্ত গড়ন, গলায় সোনার চেন
• স্ত্রী: লতা সেন (৪৮), লম্বা, এলিগ্যান্ট শাড়ি পরা, তবে চোখেমুখে একধরনের অহংকার

শ্রীকান্ত সেন বাড়িতে ঢুকেই চারদিক দেখে বললেন, “অসাধারণ জায়গা পেয়েছ রঞ্জিত! একেবারে পুরনো রাজবাড়ির মতো লাগছে!”

লতা সেন মৃদু হাসল, “পুরনো, কিন্তু বেশ গা ছমছমে, তাই না?”

তার কথায় মীনার হালকা কাঁটা দিয়ে উঠল, কিন্তু সে হাসি দিয়ে কথাটা উড়িয়ে দিল।

এরপর এল অমিতাভ ঘোষ, রঞ্জিতের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সহকর্মী।
• বয়স: ৪৭
• চেহারা: মোটা, গোল মুখ, সবসময় ঠাট্টা-তামাশা করে
• স্ত্রী: শর্মিষ্ঠা ঘোষ (৪৩), পরিপাটি গড়ন, পরনে হালকা রঙের শাড়ি

শর্মিষ্ঠা মীনাকে দেখে বলল, “তুমি বাস্তবে আরও সুন্দর!”

মীনা হেসে বলল, “তুমি এমন বলছ, যেন আমি পর্দার নায়িকা!”

এভাবে একে একে আরও তিনজন সহকর্মী এলো, তাদের সঙ্গে তাদের স্ত্রী ও সন্তানরাও।

সন্ধ্যা জমে উঠল, সবাই খেতে-খেলতে গল্পে মেতে উঠল।

মীনার অনন্য সৌন্দর্য এবং আকরামের পাগলামি

আজ মীনা নিজেও একটু সাজগোজ করেছিল।

সে পরেছিল গাঢ় লাল শাড়ি, চুল খোলা ছিল, কপালে ছোট্ট টিপ। রঞ্জিতও আজ প্রশংসা করেছিল, “তুমি তো সত্যিই চমৎকার দেখাচ্ছ!”

কিন্তু আজ রাতে শুধু রঞ্জিত বা অতিথিরাই নয়, আরেক জোড়া চোখ মীনাকে গিলে খাচ্ছিল।

সেই চোখ ছিল আকরামের!

শুভ যখন রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছিল, তখনই সে লক্ষ্য করল—আকরাম একটা কোণের অন্ধকারে দাঁড়িয়ে, স্থির চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।

কিন্তু সে সাধারণভাবে তাকায়নি।

আকরামের চোখ বিস্ফারিত, নিঃশ্বাস ভারী, দেহের পেশিগুলো কেমন যেন শক্ত হয়ে গেছে।

একটা উন্মাদনা, এক ধরনের আদিম লালসা তার দৃষ্টিতে ফুটে উঠেছে।

মীনার অনুভূতি

মীনা প্রথমে বুঝতে পারেনি, কিন্তু হঠাৎ করেই মনে হলো কেউ তাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছে, প্রতিটি বাঁক পর্যবেক্ষণ করছে।

সে একটু চুপ করে দাঁড়িয়ে চারদিকে তাকাল।

সেই মুহূর্তে তার চোখ গিয়ে পড়ল… আকরামের দিকে।

আকরাম এক মুহূর্তের জন্যও চোখ সরাচ্ছে না।

তার চোখে একটি জন্তুর মতো আকাঙ্ক্ষা, যেন সে কিছু একটা করতে চায়, কিন্তু এখনই করতে পারছে না।

মীনার শরীরে কাঁপুনি দিয়ে উঠল।

শুভর ভয়

শুভ এই দৃশ্য দেখে আতঙ্কিত হয়ে গেল।

আকরাম যে সাধারণ বৃদ্ধ নয়, এটা সে আগেই বুঝেছিল, কিন্তু আজকের চোখের দৃষ্টি… সেটা আর পাঁচটা সাধারণ বিকৃত লোকের মতো নয়।

এতে একটা ভয়ংকর শক্তি, একটা দানবীয় আকর্ষণ লুকিয়ে ছিল।

শুভ বুঝতে পারল, আকরাম তার মাকে কেবল ভালোবাসার চোখে দেখছে না—সে একরকম টানতে শুরু করেছে, যেন কিছু অদৃশ্য জাদুর বলয়ে ফেলে দিচ্ছে।

কিন্তু… মা এটা টের পাচ্ছে কিনা, সেটা সে জানে না!

পার্টির মাঝে আকরামের এক অদ্ভুত কান্ড

সবাই যখন খেতে বসেছে, তখন আকরাম ধীরে ধীরে মীনার পেছনে এসে দাঁড়াল।

শুভ সেটা দেখল এবং আতঙ্কিত হয়ে গেল।

আকরাম এক ইঞ্চি দূরে দাঁড়িয়ে ছিল, এবং তার চোখ ছিল খোলা… বড় করে খোলা!

এমনকি তার ঠোঁটের কোণে একটা বিকৃত হাসি ছিল।

ঠিক তখনই, মীনা হালকা অনুভব করল পেছন থেকে কারো নিঃশ্বাস লাগছে তার গলায়!

সে দ্রুত ঘুরে তাকাল।

কিন্তু আকরাম তখনই পিছিয়ে গেল, যেন কিছুই হয়নি!

মীনা স্তব্ধ হয়ে গেল।

তার চোখ সরাসরি আকরামের চোখের দিকে গেল… এবং সে যা দেখল, তাতে তার মাথা ঘুরে গেল।

আকরামের চোখ লালচে হয়ে উঠেছে!

তার মধ্যে একটা ভয়ংকর কিছু চলছে।

কিন্তু এর মাঝেই অতিথিরা হেসে গল্প করছে, রঞ্জিত তো বিন্দুমাত্র সন্দেহ করছে না।

মীনা কি একা অনুভব করছে এই ভয়টা?

আর শুভ? সে কি এখন কিছু করতে পারবে?
[+] 4 users Like Toxic boy's post
Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)