Thread Rating:
  • 2 Vote(s) - 3 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller সাজু ভাই সিরিজ নম্বর -০৬ (গল্প কাপ ঠান্ডা কফি)
#1
- একটা মেয়ের লাশ বস্তাবন্দি করে বাথরুমে রাখা আছে। এখনই সেই লাশ নদীতে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে, মেয়েটা বিয়ের পাত্রী ছিল।

- কার বউ বাবা? 

- আমিও জানি না, কাজের বিনিময়ে টাকা পাবো। কার লাশ সেটা জেনে আমাদের কোনো লাভ আছে নাকি? 

- আমার আর এসব করতে ভালো লাগে না বাবা, খুব খারাপ কাজ করি আমরা। 

- আর ছ'মাস পর এসব ছেড়ে দেবো। তারপর তোকে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়ে আমি গ্রামের বাড়িতে চলে যাবো। 

- তুমি বছর খানিক ধরে বলছো এসব ছেড়ে দিবে কিন্তু এখনো সেই সম্ভাবনা নেই। 

- এবার আর কথার নড়চড় হবে না। 

আর কোনো কথা না বাড়িয়ে বাথরুমের দিকে এগিয়ে গেল সাব্বির। কিছুক্ষণ আগে তার বাবা কল দিয়ে তাকে এই বাড়ির ঠিকানা দেয়। তারপর এখানে তাকে আসতে বলে দ্রুত। সাব্বির এখানে আসার আগেই বুঝতে পেরেছে তাকে ডাকার কারণ। তার বাবা প্রায়ই এসব লাশ গুম করার কাজ করেন। সেই লাশ দাফন করা কিংবা বেশিরভাগ সময় নদীতে ফেলে দেওয়ার কাজটা করে সাব্বির। 

কিন্তু আজকে তার আসতে মোটেও ইচ্ছে ছিল না। তবুও অনিচ্ছা সত্ত্বে আসতে হয়েছে, আর এখন দ্রুত লাশটা নিয়ে বেরিয়ে পড়তে চায় সে। কেবল সন্ধ্যা হয়েছে, লাশ নিয়ে পদ্মা নদীতে যেতে যেতে অনেক রাত হবে। আর সেই রাতের নিস্তব্ধতায় চুপিসারে কাজটা শেষ করে সে ফিরে আসবে ঢাকায়। 

--------

এক দিন আগে। 

পাত্রীকে কবুল বলাতে এসেই কাজি সাহেব অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল। মুখ দিয়ে সাদা ফেনা বের হচ্ছে, কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি মারা গেলেন। পাত্রীর আর কবুল বলা হলো না। বিয়ে বাড়িতে তখন হৈচৈ পড়ে গেছে, সবাই যে যার মতো ছোটাছুটি করতে লাগলো।

কিন্তু মাত্র দশ মিনিটের মধ্যে পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে গেল। কারণ পাত্রীকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, কাজি সাহেবের ব্যাপার নিয়ে সবাই ব্যস্ত ছিল। পাত্রীর সঙ্গে যে মেয়েটা ছিল তাকেও অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া গেছে। কিন্তু তার মাথা থেকে রক্ত বের হচ্ছে, বোঝা যাচ্ছে তাকে শক্ত কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। 

বিয়ে বাড়িতে কাজি সাহেবের মৃত্যুর সঙ্গে তখন পাত্রীর পালিয়ে যাওয়ার যোগসূত্র আছে বলে সবাই আলোচনা করতে লাগলো। যে যেমন ইচ্ছে তেমন করে মতামত দিতে শুরু করেছে। 

কেউ বলছে, পাত্রী নিজেই হয়তো মেয়েটাকে আঘাত করে পালিয়ে গেছে। মনে হয় বিয়ে করতে রাজি ছিল না তাই পরিকল্পনা করে সবকিছু করা হয়েছে। আর কাজি সাহেবকে এ বাড়িতে আসার পরে হয়তো বিষাক্ত কিছু খাওয়ানো হয়েছে। 

একজন বললো, বাহিরের কেউ অবশ্যই জড়িত ছিল কারণ কাজি সাহেবকে তো পাত্রী নিজের হাতে খাওয়াতে পারে নাই। আর এমনও হতে পারে যে শত্রুদের মধ্যে কেউ করেছে, যারা আগেই প্ল্যান করেছে সবকিছু। 

কাজি সাহেবকে বিষক্রিয়া করে মারবে তারপর হৈচৈ পড়ে গেলে তারা পাত্রীকে নিয়ে যাবে। মনে হয় নিজেদের মধ্যে কেউ হতে পারে, নাহলে এমন কাজ অপরিচিত কেউ কীভাবে করে? 

বিয়ে বাড়িতে এখন ভিন্ন ভিন্ন আলোচনাসভা শুরু করেছে। কাজি সাহেবের লাশটা রাখা হয়েছে বাহিরে, পুলিশ এসে যা করার করবেন। অনেকে বলছেন তখন যদি পাত্রীর রুম থেকে ধরাধরি করে লাশ বের না করত। তাহলে পাত্রী পালাতে পারতো না। থানায় খবর দেওয়া হয়েছে, একটু পরে হয়তো পুলিশ এসে যাবে। 

-----

সন্ধ্যা থেকেই অনবরত কান্না করছিল মাহিশা। ভালোবাসার মানুষকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করতে হচ্ছে তাই কষ্টের শেষ ছিল না। তবুও মা-বাবার কথা ভেবে আর ভাগ্যের উপর বিশ্বাস রেখে সবকিছু ছেড়ে দিয়েছিল আল্লাহর হাতে। 

কিন্তু কাজি সাহেবের এমন আকস্মিক মৃত্যু তার কাছে অস্বাভাবিক মনে হলো। মুহূর্তের মধ্যেই তার সন্দেহ চলে যায় নিজের বয়ফ্রেন্ড মাহিনের প্রতি। কারণ মাহিন তাকে বলেছিল, " যেভাবেই হোক আমি এই বিয়ে হতে দেবো না, এতে করে আমাকে যতটা নিচে নামতে হয় ততটাই নামবো। "

বুকটা কেঁপে ওঠে মাহিশার। মাহিন নিশ্চয়ই কিছু একটা করেছে, নাহলে এভাবে হঠাৎ করে কাজি সাহেবের মৃত্যু হবে কেন? সত্যি সত্যি মাহিনের হাত থেকে থাকে তাহলে তাকে কোনদিনই ক্ষমা করবে না মাহিশা। মনে মনে যখন বিভিন্ন চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিলো ঠিক তখনই তার রুমে প্রবেশ করে একটা অপরিচিত মানুষ। মাহিশার সঙ্গে থাকা মেয়েটা কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই তাকে এক আঘাতে অজ্ঞান করে। 

এরপর মাহিশার মুখে রুমাল চেপে ধরতেই সেও অজ্ঞান হয়ে গেল। কিন্তু ওই মেয়েকে রুমাল না দিয়ে আঘাত কেন করলো? 

----

শান্তিতে গাঁজা খাওয়ার জন্য এলাকার পুরনো বাগানের মধ্যে এসেছে হাসান। গ্রামের বাড়িতে এমন অবস্থা হয়ে গেছে যে যেকোন স্থানে বসে আর খেতে পারে না। গাঁজা টেনে কিছুক্ষণ বসে আছে হাসান, ঠিক তখন তিনজন লোককে এদিক আসতে দেখলো সে। 

মাঝের লোকটার কাঁধে অজ্ঞান অবস্থায় মাহিশা ছিল, তাকেও দেখতে পাচ্ছে। চাঁদের আলোয় যতটুকু দেখা যায় তাতে কাউকে চিনতে পারা সম্ভব না। এমন সময় হাসানের মোবাইল বেজে ওঠে, শব্দ করে রিংটোন বাজতেই চমকে ওঠে হাসান। হাসান রিসিভ না করে তাড়াতাড়ি কলটা কেটে দেয় কারণ মোবাইলের শব্দ পৌঁছে গেছে ঐ অপরিচিত মানুষের কানে। 

তিনজনই থমকে দাঁড়ালো। এদিক ওদিক তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করছে শব্দটা কীভাবে এসেছে। হাসান একটা গাছের সঙ্গে মিশে দাড়িয়ে আছে, ঠিক সেই মুহূর্তে আবারও কল এসেছে। হাসান এবার কল কেটে দেয়, তারপর তাকিয়ে দেখে সামনে তিনটা মানুষ থেকে একটা মানুষ নেই। যার কাঁধে অজ্ঞান অবস্থায় কেউ আছে, সে এবং আরেকজন দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু তিনজন থেকে আরেকজন গেল কোথাও সেটাই বুঝতে পারছে না হাসান। 

এমন সময় তার মোবাইলে একটা মেসেজ আসে। গ্রামেরই ছেলে মহসিন তাকে মেসেজে দিয়েছে, মহসিন পরপর দুবার কল দিয়েছিল। এখন সে মেসেজ দিয়ে লিখেছে, 

" মাহিশার বিয়ে আটকে গেছে, কাজি সাহেবকে বিষ দিয়ে মারা হয়েছে। মাহিশা পালিয়ে গেছে, তুই কোথায়? "

মেসেজ পড়ে হাসান বুঝতে পেরেছে তার সামনে যারা দাঁড়িয়ে আছে তাঁরাই মাহিশাকে কিডন্যাপ করেছে। হাসান সামনে তাকালো, কেউ নেই। 
পরক্ষনেই নিজের মাথায় ভারি কিছুর আঘাত পেয়ে ঘুরতে থাকে হাসান। গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে সে দেখতে পায় চাঁদটা ঘুরছে আকাশে। 

হাসান যখন চোখ মেলে তাকায় তখন চারিদিকে সূর্যের আলো ভরপুর। সে উঠে দাঁড়িয়ে আশেপাশে তাকিয়ে রইল, তারপর রাতের ঘটনা মনে পড়তেই সে দ্রুত বের হয়ে যায়। 

রাস্তায় নেমেই গতকাল রাতে কল দেওয়া মহসিন এর সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। মহসিন তার দিকে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে রইল। 

- হাসান বললো, এভাবে তাকিয়ে কি দেখিস? 

- তোর মাথা ফাটলো কীভাবে? রক্ত মনে হচ্ছে শুকিয়ে গেছে, তোকে আবার মারলো কারা? 

- মাহিশাকে কি পাওয়া গেছে? 

- না, রাত থেকে খোঁজা হচ্ছে কিন্তু কোথাও তার কোনো অস্তিত্ব নেই। 

- আমি গতকাল রাতে তাকে নিয়ে যেতে দেখেছি। 

- কোথায়? 

- বাগানবাড়িতে। 

- তারপর? 

- সেই সময় দুবার তোর কল আসে, ভেবেছিলাম মোবাইল বন্ধ করবো। কিন্তু তার আগেই ওরা আমাকে দেখে ফেলে আর আঘাত করে পিছন থেকে। 

- কতজন ছিল? 

- তিনজন। 

- বলিস কি? 

- মাহিশা যে ছেলের সঙ্গে প্রেম করতো সেই ছেলে ঢাকা শহরে থাকে তাই না? 

- হ্যাঁ, কিন্তু সবাই সন্দেহ করছে এটা পাত্রের বড় দুলাভাইয়ের কাজ। কারণ গতকাল রাতে পুলিশ এসে তার অনেক কিছু সন্দেহ করে। 

- কিরকম? 

- সামনে চল, হাঁটতে হাঁটতে বলি। 

-----

লাশ নিয়ে সাব্বির বাসা থেকে বের হতে পারছে না। লিফটে করে নিচে নামতে গিয়ে দেখে বস্তা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। সে আবারও সেই লাশটা বস্তা থেকে বাহির করে রক্ত যেন বাহিরে না যায় সেই ব্যবস্থা করতে লাগলো। সাব্বিরের বাবা চলে গেছেন, সাব্বির একাই এখন লাশটা নিয়ে বের হয়ে যাবে। 

নিচে গাড়ি পার্কিং করা আছে, তার গাড়ির ড্রাইভারের সাহায্যে সে কাজটা করবে। তারপর দ্রুত ত্যাগ করবে ঢাকা শহর, বিপদ থেকে মুক্ত হয়ে যাবে পদ্মার তীরে গিয়ে। 

বস্তা থেকে লাশ বাহির করে আঁতকে উঠল সাব্বির কারণ মেয়েটা বেঁচে আছে। সে কিছুক্ষণ সময় নিল ভাবার জন্য, জীবিত একটা মেয়েকে কী করে নদীতে ফেলে দেবে? 

চলবে...? 

গল্পঃ- 
এক কাপ ঠান্ডা কফি। 

[ সাজু ভাই সিরিজ নম্বর -০৬]
পর্বঃ- ০১ 
লেখাঃ- মোঃ সাইফুল ইসলাম।
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.




Users browsing this thread: 2 Guest(s)