Thread Rating:
  • 1 Vote(s) - 5 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller সাজু ভাই সিরিজ নম্বর-০৫ গল্প: সরি আব্বাজান (২) সমাপ্ত
#1
- খালা বললো, তোর মাকে কবর দেবার জন্য নিয়ে যাচ্ছে, শেষবারের মতো মা'কে দেখবি না? 

- আমি বললাম, আত্মহত্যা করা মায়ের মরা মুখ দেখার ইচ্ছে নেই, কবর দিয়ে দিতে বলো। 

- রাগ করে থাকিস না নয়ন, পরে যখন রাগ শেষ হবে তখন কিন্তু মাকে দেখার জন্য কবর ভেঙ্গে ফেলতে ইচ্ছে করবে। 

- আমি চিৎকার দিয়ে বললাম, বললাম তো ইচ্ছে করবে না কোনদিন। বাবার সঙ্গে রাগ করে সে স্বার্থপরের মতো আমাকে রেখে আত্মহত্যা করেছে কেন? আমি কি তার কেউ না? সে একবারও চিন্তা করে নাই আমি এতিম হয়ে যাবো। বাবা বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছে তাহলে কার কাছে আমি মানুষ হবো বলো? 

- শয়তানের ধোঁকায় পড়ে এসব করে বাবা, তুমি চল সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে। একটু পরে বৃষ্টি হতে পারে তখন মাটি দিতে ঝামেলা হবে। 

- আমি যাবো না যাবো না যাবো না। সে আমার কেউ না, যে মহিলা আমার কথা চিন্তা না করে একা একা মরে গেছে তার জন্য আমার কোন অনুভূতি নেই খালা। 

এরপরই জোর করে খালাকে রুম থেকে বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলাম। বাহির হতে আরও কিছুক্ষণ ডাকাডাকির শব্দ পেলাম, তারপর আর কেউ ডাকলো না। মনে হয় সবাই মায়ের দাফনের কাজে চলে গেছে, আর মহিলারা উঁকিঝুঁকি দিয়ে মায়ের শেষ বিদায় দেখছে। 

গতকাল দুপুরে খবর পাওয়া গেছে বাবা ইতালিতে আরেকটা বিয়ে করেছে। বিয়ের কারণ হচ্ছে তার পাকাপোক্ত ভাবে ইতালি থাকার ব্যবস্থা করা। ১৩ বছর ধরে এখনো বৈধ কাগজ করতে পারেননি তাই দেশেও আসতে পারে নাই। ইচ্ছে করলে তিনি আসতে পারবেন কিন্তু আর ফেরার পথ থাকবে না তাই আসছেন না৷ এদিকে বাবার পরে গিয়ে ও অনেকে বৈধ কাগজ পেয়েছে এমনকি তারা দেশে এসে ঘুরে গেছে। তাই বাবা আর ধৈর্য ধরতে না পেরে সেখানেই এক বাংলাদেশী ডিভোর্সি মেয়েকে বিয়ে করেছেন। সেই মহিলার বৈধ কাগজ আছে তাই তিনি সেই সূত্রে তার স্বামী (আমার বাবা) বৈধ কাগজ করে দিতে পারবেন। 

বাবা অবশ্য দাদা-দাদির এমনকি মায়ের সঙ্গেও বিষয়টি খোলামেলা আলোচনা করেছেন। কিন্তু মা সেখানে ঘোর আপত্তি জানিয়েছেন, রাগ করে বাবার সঙ্গে কথা বলেননি অনেকদিন। মায়ের মনে বিশ্বাস ছিল তার রাগের দিকে তাকিয়ে বাবা তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবেন। কারণ মা-বাবা ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন, তারপর আমার জন্মের দুই বছর পর বাবা বৈধ ভিসায় লিবিয়া চলে যায়। দুই বছর পর বাবা সেখান থেকে দালাল ধরে পালিয়ে ইতালিতে পৌঁছান।

কিন্তু এতকিছুর পরও যখন গতকাল বাবার বিয়ের সংবাদ পেলাম তখন মা একদম চুপচাপ হয়ে গেল। দাদা বাড়ি থেকে বিকেলেই আমাকে সঙ্গে নিয়ে নানা বাড়িতে চলে আসেন। নানা নানি কেউ জীবিত নেই, একমাত্র মামা তার স্ত্রী সন্তান সবাই কে নিয়ে চট্টগ্রামে থাকে। পুরনো নানা বাড়িতে বাস করে আমার ছোট খালা, তাই আমরা সেখানে এসে উঠলাম। পুরনো আমলের বিশাল বাড়ি তাই অনেকগুলো রুম, আমি প্রায়ই বেড়াতে আসতাম তাই আমার জন্য আলাদা একটা রুম থাকে। 

এ বাড়িতে আসার পরে মা কারো সঙ্গে কোনো কথা বলে নাই, চুপচাপ বসে থাকতেন। আমিও তেমন কিছু বলতাম না, রাত দশটার দিকে আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে ডিনার করলাম। 

আমি আমার রুমে ঘুমাতে গেলাম, কিন্তু বরাবরই রাত দুইটার আগে ঘুমানোর অভ্যাস নেই। তাই মোবাইলে হিন্দি সিনেমা দেখছিলাম। 

রাত ২:৪৮
হঠাৎ করে দরজা টোকা পড়লো, আমি উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখি মা দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে তিনি তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে মাত্র এসেছেন বা পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মা আমাকে ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করলো তারপর বিছানায় একপাশে বসতে বসতে বললেন,

- আমার ধারণা ছিল তুমি এখনো জেগে আছো তাই তোমার সঙ্গে কিছু কথা বলতে এলাম। 

- বলো মা, আর তুমি এখন না বলে সকালেও তো বলতে পারতে। 

- হ্যাঁ পারতাম, কিন্তু এখন বলতে ইচ্ছে করছে তাই এখনই বলি। মানুষের মৃত্যু কখন এসে উপস্থিত হয় কেউ বলতে পারে না, দেখা গেল আমি তোমার সঙ্গে কথা না বলে চলে গেলাম। সকাল বেলা তুমি দেখতে পেলে আমি পৃথিবীতে নাই তখন তোমার খুব আফসোস হবে তাই না? 

- হ্যাঁ হবে, কিন্তু আমি জানি আমার মা অনেক বছর বেঁচে থাকবে। আর আমি আমার মাকে মা বলে ডাকবো আর সে বলবে আরেকবার ডাক। 

- শোনো তোমাকে কিছু কথা বলি। তোমার এখন যথেষ্ট বয়স হয়েছে, পৃথিবীতে একা একা চলার মতো বুদ্ধি তোমার আছে। 

- মানে কি মা? এখনো তুমি মাথায় হাত রেখে আদর না করলে আমি ঘুমাতে পারি না। বাহির থেকে বাসায় ফিরে তোমার মুখ না দেখলে সবকিছু ভেঙ্গে ফেলতে ইচ্ছে করে। 

- এগুলো হচ্ছে অভ্যাস, মনে করো কাল থেকে যদি আমি না থাকি তাহলে সপ্তাহ খানিকের মধ্যে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে। 

- কেন? তুমি কোথায় যাবে মা? 

- এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি, তবে যেতে পারি বলে সম্ভাবনা আছে। তাই তাহাজ্জুদ নামাজের পড়ে তোমার সঙ্গে কথা বলতে আসলাম। 

- এটা যদি দাদা বাড়ি হতো তাহলে আমি তোমাকে বলতাম চলো নানা বাড়িতে চলে যাই। কিন্তু এটা তো তোমার বাড়ি সুতরাং এখান থেকে তুমি কোথাও যাবে না। 

- আচ্ছা সেই তর্কে যাচ্ছি না। তোমার বাবার কাজটা তোমার কাছে কেমন মনে হচ্ছে? তোমার বাবার সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল নাকি ভুল ছিল? 

- সম্পুর্ণ ভুল, এজন্য আমি বাবাকে কোনদিনই ক্ষমা করবো না। 

- তোমার বাবাকে আমি বলেছিলাম যে এতবছর ধরে তো অনেক টাকা আয় করলে। এখনো যদি বৈধ কাগজ না পাওয়া যায় তাহলে সবকিছু নিয়ে একেবারে দেশে চলে আসো। তারপর সেগুলো দিয়ে দেশে একটা ব্যাবসা করো, কিন্তু তোমার বাবা অন্য যুক্তি দিলেন। 

- কি যুক্তি মা? 

- তার বক্তব্য হচ্ছে, তিনি সেখানকার গ্রীণ কার্ড পেলে তোমাকেও সেখানে নিতে পারবেন। আর তোমার ভবিষ্যত উজ্জ্বল হবে, তাই তিনি আমার কথা রাখতে অস্বীকার করেছে। 

- আমার ভাগ্যে যদি ইউরোপ যাওয়া থাকে তবে সেটা হবে কিন্তু এভাবে বাবার সিদ্ধান্ত আমি মেনে নিতে পারি না। এখন হাজারো বললে আমি বাবার কাছে যাবো না সেখানে। 

- তোমার বাবার সিদ্ধান্ত আমিও মানতে পারি না নয়ন, তাই তো তোমাকে নিয়ে চলে এসেছি। আমি তোমার বাবার আর আমার জীবনের অনেক স্মৃতি আমার একটা ডায়েরিতে লিখে রাখতাম। আমার সেই ডাইরিটা তোমার কাছে দিচ্ছি কারণ তোমার বাবাকে নিয়ে লেখার মতো আর কিছু নেই। 

- এটা তোমার কাছে থাকুক। 

- না তুমি তোমার কাছে রাখো, আমাদের দুজনের প্রেমের শুরু থেকে এ পর্যন্ত সবকিছু এখানে লেখা আছে। তবে বিস্তারিত নয়, খুব অল্প অল্প করে সব লেখা আছে, তুমি পড়লে তোমার ভালো লাগবে। 

আমি তখন মায়ের একটা হাত আমার মাথায় ধরে বললাম, 
- ওমা তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে না তো? 

- মা বললো, আচ্ছা ঠিক আছে যাবো না তুমি এখন ঘুমিয়ে পড়ো রাত তিনটা পেরিয়ে গেল। 

এটাই মায়ের সঙ্গে আমার শেষ কথোপকথন, খুব দেরি করে ঘুমানোর জন্য সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠতে দেরি হবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সকাল বেলা, খুব সকাল বেলা প্রচুর চিৎকার চেচামেচি শুনে নিজেই ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলে দেখি মায়ের রুমের সামনে সবাই কান্না করছে। দৌড়ে গিয়ে দেখি বিছানায় মায়ের লাশ পড়ে আছে, তার মুখ থেকে সাদা লালা বের হয়ে একাকার অবস্থা। 

খালা কাঁদতে কাঁদতে সবার সঙ্গে বলছিল, মা সকালে উঠে ফজরের নামাজ পড়েছেন। বাহিরে তখনও অন্ধকার ছিল, খালা যখন দেখলেন যে মা জেগে উঠেছে। তাই তিনি চা বানাতে গেলেন, তারপর চা নিয়ে মায়ের রুমের সামনে এসে দেখে দরজা বন্ধ। ডাকাডাকি করতে লাগলো, কিন্তু ভিতর থেকে গোঙানির শব্দ পেলেন। অনেক কষ্টে একটা ছিদ্র দিয়ে ঘরের মধ্যে তাকালেন, রুমের মধ্যে যদিও অন্ধকার ছিল। কিন্তু তবুও বিছানায় শুয়ে মায়ের ছটফটানি বোঝা যাচ্ছিল খুব। তারপর তিনি চিৎকার দিয়ে সবাই কে ডাকেন। গ্রামের মধ্যে আমার নানার এই বাড়ির মধ্যে ছিল পাশাপাশি পাঁচটা পরিবার। প্রত্যেক পরিবার হতে দু'একজন করে এসেছেন। দরজা খুলে দেখেন মা ততক্ষণে পৃথিবী ত্যাগ করে চলে গেছেন। 

আমি এতটাই অবাক হলাম যে কাঁদতে ভুলে গিয়ে নিজের রুমে চলে গেলাম। তারপর কতকিছুই তো হলো বাড়ির মধ্যে কিন্তু আমি রুম থেকে আর বের হলাম না। থানা থেকে পুলিশ এসেছিল, আমি শুধু তাদের বলেছিলাম মায়ের লাশ কাটাছেঁড়া করার দরকার নেই। কারণ মায়ের টেবিলের উপর নাকি একটা সুইসাইড নোট পাওয়া গেছে। তাছাড়া গতকাল রাতেই তো মা আমাকে বলেছিলেন তিনি আমাকে রেখে চলে যাবেন।

আসরের নামাজের পরে মায়ের লাশ চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে। মাগরিবের পরে আমি রুম থেকে বের হলাম, নিজের বাইক নিয়ে সরাসরি চলে গেলাম দাদা বাড়িতে। আমার দাদা কাকা সবাই মায়ের জানাজায় উপস্থিত ছিলেন, তারাও আমার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছিল কিন্তু আমি কথা বলিনি। 

আমি দাদার ঘরে উঠে সরাসরি দাদার দিকে তাকিয়ে বললাম, 

- সবাই ঘর থেকে বের হও আমি এখন এই ঘর আগুন জ্বালিয়ে পুড়ে ফেলবো। 

- দাদা অবাক হয়ে বললো, তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে নয়ন? শোকের ছায়া পড়েছে জানি কিন্তু এসব কি ধরনের ব্যবহার? 

আমি কোনো জবাব না দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘরে আগুন লাগিয়ে দিলাম। বিশাল কাঠের বাড়ি তাই বেশি কষ্ট হলো না, কিন্তু ততক্ষণে চারিদিক থেকে লোকজন আসতে শুরু করেছে। আমি আবার বাইক নিয়ে নানার বাড়িতে এলাম, আর সেখানে সবাই আগুন নেভাতে ব্যস্ত। 

পরদিন সকাল বেলা গ্রামের মধ্যে পুলিশ এসে আমাকে খুঁজতে লাগলো। কাকা আমার নামে থানায় মামলা করেছেন, পরে জানতে পেরেছি বাবাই নাকি বলেছে যে আমাকে কিছুদিন জেলের মধ্যে রাখার ব্যবস্থা করা হোক। যেহেতু আমি মার মৃত্যুর পরে খুব রেগে আছি তাই যেকোন কিছু করতে পারি। সেজন্য আগুন লাগিয়ে দেবার মামলা দিয়ে আমাকে আটক করার চিন্তা। 

কিন্তু আমি পালিয়ে চলে এলাম চট্টগ্রামে মামার কাছে, তারপর থেকে এখানেই আছি। নিজের এলাকায় আজ পর্যন্ত যাওয়া হয়নি, তবে একদিন ঠিকই যাবো। যেদিন আমার বাবা ইতালি থেকে বাংলাদেশে ফিরবে সেদিন ঠিকই যাবো। দেখতে দেখতে আজ ০৯ বছর পেরিয়ে গেছে এখনো বাবা দেশে আসেননি। মাঝখানে দাদি মারা গেছে কিন্তু তবুও বাবা আসেনি, জানি না আর কতদিন তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। 

|
|

নিজের অতীত জীবনের কাহিনি বলে চোখের পানি মুছে তাকিয়ে রইল নয়ন। তার সামনে বসে কাজল এতক্ষণ কাঁদছিল, একটা মানুষের সঙ্গে আজ ৬ মাস ধরে পরিচয় কিন্তু সে জানেনা তার জীবনের এই করুন কাহিনি। 

- কাজল বললো, তুমি কোনদিন কেন তোমার এই কথা আমাকে বলো নাই? 

- বলতে ইচ্ছে করে নাই, কেন যেন এসব কথা বলতে ভালো লাগে না। কিন্তু আজকে তোমাকে বললাম এর পিছনে একটা কারণ আছে। 

- কি কারণ? 

- তুমি কিছুক্ষণ আগে বললে না তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে কাজল। 

- হ্যাঁ। 

- আমার এতদিন ধারণা ছিল তুমি আমাকে মনে মনে ভালোবাসো, খুব বেশি ভালোবাসো। 

- ভালোবাসি এটা সত্যি কিন্তু সেটা বন্ধু হিসেবে। 

- একটা কথা বলো কাজল? 

- বলো। 

- আমি যদি তোমাকে ভালোবাসতে চাই, তোমার সঙ্গে সারাজীবন থাকতে চাই তাহলে কি আমার ভালোবাসা গ্রহণ করবে না ফিরিয়ে দেবে? 

- পাগল নাকি তুমি? বিয়ের সবকিছু প্রায় ঠিক, বাবা গ্রামের বাড়িতে গেছে সবাইকে দাওয়াত করতে। যদিও কেউ আসবে না আবার দু'একজন আসতেও পারে তাই বাবা গ্রামে গেছে। 

- ওহ্ আচ্ছা, কিন্তু আমি তো বারবার ভাগ্যের কাছে হারতে চাই না কাজল। তোমাকে আমি চাই চাই চাই। 

- পাগলামি করো না, বাসায় চলে যাও আমিও এখন বাসায় যাবো। বাবার আজকে সন্ধার মধ্যে ফিরে আসার কথা, বিয়ে ঠিক হয়েছে তাই বাহিরে যাওয়া নিষেধ আমার। আজকে অনেক কষ্ট করে মায়ের কাছে বলে বের হলাম, মাগরিবের আগে বাসায় ফিরবো বলেছিলাম। কিন্তু তোমার পুরনো স্মৃতি শুনতে গিয়ে অলরেডি মাগরিবের আজান দিয়ে ফেলেছে।

কাজল চলে যাচ্ছে। বোকার মতো পিছনে পিছনে হাঁটতে লাগলো নয়ন। খানিকটা পথ হাঁটার পর কাজল দাঁড়িয়ে গেল, চারিদিকে প্রচুর মানুষের আনাগোনা। 

- কি ব্যাপার আবার পিছনে পিছনে কেন? চেহারা রাগান্বিত করার চেষ্টা করে কথাটা বললো কাজল। 

- নযন আমতাআমতা করে বললো, তুমি ওখান থেকে রাগ করে চলে এলে এটা ঠিক না। বিদায় নিয়ে চলে যাবারও কিছু নিয়ম আছে, তুমি যদি আমাকে ছেড়ে চলে যাও। তাহলে আমার কোনো ক্ষমতা নেই তোমাকে ধরে রাখার, তাহলে শুধু শুধু এভাবে অমীমাংসিত বিদায় কেন? 

- আমার যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে আমি চলে যাবো তাতে তোমার কোনো সমস্যা হচ্ছে? 

- হ্যাঁ হচ্ছে, মানুষ যে গরুটাকে কোরবানি করে সেটাকেও কিন্তু সকাল বেলা সুন্দর করে গোসল করায়। মানুষ জানে কিছুক্ষণ পর তারা নিজেরা তাকে পৃথিবী থেকে বিদায় করে দেবে। তবুও তারা তাকে আদর করে গোসল করিয়ে দেয়। আবার দেখো ফাঁসির আসামিকে ফাঁসির রায় হবার পরে বারবার জিজ্ঞেস করে তার কি খেতে ইচ্ছে করে। তার শেষ ইচ্ছে জানতে চাওয়া হয়, সুতরাং বোঝা যাচ্ছে যে সবকিছু বিদায় দেবার কিছু সুন্দর নিয়ম আছে যেটা মানা দরকার। 

- আমি কিছু মানতে চাই না। 

কাজলের চোখ ফেটে আবারও পানি বের হবার আগেই সে হনহন করে হাঁটতে লাগলো। অসহায় হয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইল নয়ন। 

★★

রাত বারোটা। 
বাসায় ফিরে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেছিল কাজল, মাত্র ঘুম থেকে উঠে শোনে পাশের রুমে তার বাবা কান্না করছে। 

বাবা কখন ফিরলো? আর এভাবে কান্না করে কেন সেটাই তো বুঝতে পারছে না কাজল। 

দ্রুত পাশের রুমে গিয়ে তার মায়ের কাছে যতটা জানতে পারলো তা অনেকটা এরকম,

ছেলে পক্ষের যাবতীয় মালামাল সহ দাবি ছিল নগদ তিন লক্ষ টাকা। কাজলের বাবা গ্রামের বাড়িতে গেছিলেন নিজের জমি বিক্রি করে টাকা যোগাড় করার জন্য। একমাত্র মেয়ের বিয়ের জন্য সবটা খরচ করতে তার আপত্তি নেই। কিন্তু গ্রামে গিয়ে তিনি নানান ঝামেলার মধ্যে পড়লেন, তার গ্রামের কিছু রাজনৈতিক নেতাদের জন্য জমির মালিকানা নিয়ে গন্ডগোল হচ্ছে। দীর্ঘদিন শহরে থাকতেন বলে এতদিন জমি যারা চাষ করতো তারাই মালিকানা দাবির চেষ্টা করছে৷ তিনদিন ধরে চেষ্টা করেও তিনি কিছু করতে পারেননি। 

ছেলে পক্ষের টাকার কথা শুনে কাজলের মগজে রক্ত উঠে গেল। সে তার হাত দিয়ে আংটি খুলে মায়ের হাতে দিয়ে বললো, 

- আমি মরে যাবো তবুও এই বিয়ে করবো না। 

|
|

রুমের মধ্যে এসেই কাজল নয়নের নাম্বার বের করে কল দিল। নয়ন রিসিভ করে বললো, 

- আমি গাড়িতে আছি, জরুরি কিছু বলবা? 

- গাড়িতে মানে? রাত সাড়ে বারোটার সময় তুমি গাড়িতে করে কোথায় যাও? 

- ঢাকায় যাচ্ছি কাজল। 

- কেন? হঠাৎ করে ঢাকায় কেন? 

- আমার নয় বছরের অপেক্ষা শেষ, বাবা আজ রাতের ফ্লাইটে দেশে ফিরবেন। আগামীকাল ভোর চারটায় তিনি ঢাকা বিমানবন্দরে নামবেন। একদম পারফেক্ট একটা সময়, ০৯ বছর আগে ঠিক ভোরবেলা কিন্তু মা আত্মহত্যা করেছিল। 

- কাজল পাগলের মতো হয়ে বললো, পাগলামি করো না নয়ন যা কিছু হয়েছে ভুলে যাও। 

- আমি রাখলাম কাজল, তোমার কাছে একটা নাম্বার এসএমএস করে দিচ্ছি। আমার মামাতো ভাইয়ের নাম্বার, বিমানবন্দরে খুনাখুনি করলে আমি হয়তো গ্রেফতার হবো। তুমি সকাল বেলা আমার নাম্বার বন্ধ পেলে সেই নাম্বারে কল দিয়ে আমার খবর জেনে নিও। 

নয়ন কল কেটে দিয়ে নাম্বার মেসেজ করে দিয়ে দিলো, তারপর মোবাইল বন্ধ। কাজল সঙ্গে সঙ্গে সেই নাম্বারে কল দিল কিন্তু সেটাও বন্ধ তখন। 

সারারাত জেগে টেনশনে অস্থির হয়ে কেটে গেল কাজলের। সকাল হয়ে গেছে তবুও বারবার শুধু দুটো নাম্বারে কল দিচ্ছে। 

বেলা সাতটার দিকে নয়নের মামাতো ভাইয়ের নাম্বারে কল গেল। আর সঙ্গে সঙ্গে রিসিভ হলো। 

- হ্যালো কে বলছেন? 

- আমি কাজল, নয়নের বন্ধু। 

- জ্বি বলেন। 

- নয়নের নাম্বার গতকাল রাত থেকে বন্ধ পাচ্ছি। 

- একটু পারিবারিক সমস্যা হয়েছে তাই বন্ধ। 

- আমি কিছুটা জানি, নয়ন বলেছিল তার খোঁজ না পেলে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে। 

- নয়ন গতকাল রাতে ঢাকা গেছে আমরা কিছু জানতাম না। তার বাবা আজকে সকালে বিমান থেকে নেমেছেন তার বর্তমান স্ত্রী সন্তান নিয়ে। বিমানবন্দরের বাইরে বের হয়ে তারা যখন গাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। তখন উত্তর কুড়িল বিশ্বরোডে ফ্লাইওভারের উপর তাদের গাড়ি দাঁড় করিয়ে নয়নের বাবাকে খুন করা হয়েছে। খুনিদের সবাই কালো মুখোশ পরে ছিল তাই কাউকে চেনা যায় নাই। তবে খুন যে নয়ন করেছে তাতে নাকি কোনো সন্দেহ নেই। 

- কেন? 

- নয়নের বাবাকে গুলি করার সময় তাকে বলা হয়েছে, মায়ের মৃত্যুর পর থেকে অপেক্ষা করছি, তুমিও পৃথিবী থেকে চলে যাও। নিজের সন্তান হয়ে তোমাকে খুন করলাম " সরি আব্বাজান "। 

চলবে....

গল্প:- 
সরি আব্বাজান (২)
পর্ব:- ০১ 

লেখা:- 
মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব।


===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 3 users Like Bangla Golpo's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#2
পর্ব:- দুই


নয়নের বাবা কিন্তু মারা যায়নি, তাকে গুলি করা হয়েছে ঠিকই কিন্তু তিনি মারা যাননি। মৃত্যুর খবর মূলত নয়নের দাদা বাড়ি থেকে পেয়েছিল নয়নের মামা। যেহেতু গ্রামের বাড়ি তাই শোনে এক আর বলে আরেক। 

ঘটনাটা এমন। 
আক্রমণকারীরা পরপর দুটো গুলি করে সেখান থেকে দ্রুত পালিয়ে যায়। তারপরই সেখান থেকে কাছেই কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেবার ফাঁকে গ্রামের বাড়িতে কল কল করে রাতুল। রাতুল হচ্ছে নয়নের বড় কাকার ছেলে, সে ঢাকায় এসেছিল তাদের রিসিভ করে গ্রামের বাড়িতে নেবার জন্য। 

রাতুল কল দিয়ে তার বাবাকে বলে,

- বাবা নয়ন তো চাচাকে গুলি করেছে, চাচার কি অবস্থা বুঝতে পারছি না। আমরা হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি আপনি তাড়াতাড়ি ঢাকায় আসুন। 

এতটুকু, এরপর নয়নের চাচা মনোয়ার হোসেন তার স্ত্রীকে বললেন যে নয়ন তার বাবাকে গুলি করেছে। এরপর মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে এক কান দুই কান করতে করতে ছড়িয়ে গেল। সেখান হতে একজন কল করেছিল নয়নের মামার কাছে, এর কারণ হচ্ছে নয়ন তার মামার কাছে থাকে। 

যিনি নয়নের মামার কাছে কল করেছেন তিনি সরাসরি বললেন যে নয়ন তার বাবাকে গুলি করে মেরে ফেলেছে। আর তারই কিছুক্ষন পরে যখন কাজল নয়নের মামাতো ভাইয়ের কাছে কল দিল তখন সেও বলে দিল মারা গেছে। 

|
|

নয়ন যে খারাপ কিছু করতে পারে সেটা সকলের ধারণা ছিল কিন্তু তা অনেক আগে। নয় বছরের পুরনো ঘটনা অনেকেই ভুলে গেছে, কারণ জীবন পেরিয়ে যায় ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে। পুরনো ক্ষত হারিয়ে যায় নতুন কষ্টের ভিড়ে, দিন বদলায় তবু মাঝে মাঝে স্মৃতি কাঁদায়। 

কিন্তু সকাল বেলার ওই একটা সংবাদে আবারও নড়েচড়ে ওঠে বাদালপুর ও মনিভাঙ্গা নামের গ্রাম দুটো। আস্তে আস্তে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে সম্পুর্ণ ইউনিয়নের মধ্যে। নয়নের নানা বাড়িতে খবর পৌঁছে গেল, তার খালা মাথায় হাত দিয়ে উঠোনে বসে পড়লেন। একটা মিথ্যা খবর প্রচার হতে লাগলো এলাকার মাঝে। বেলা দশটার দিকে যখন নয়নের বাবা সুস্থ আছেন সেই খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। ততক্ষণে মৃত্যুর খবর চারিদিকে ছড়িয়ে গেছে প্রতিটি মানুষের কাছে। 

এরপর যখন আবার সত্যিটা প্রচার হচ্ছে তখন কেউ বলে এক কথা আবার অন্যজন বলে আরেক কথা। সবমিলিয়ে একটা হুলস্থুল ঘটনা, কেউ কেউ নয়নের দাদা বাড়িতে আসছেন ঘটনা ভালো করে জানার জন্য।

★★

হাসপাতালে পুলিশ এসেছে। 
মোটামুটি যা কিছু জিজ্ঞেস করার সবকিছু রাতুল এর কাছে জিজ্ঞেস করতে হবে। দারোগা সাহেব রাতুলকে এক সাইডে নিয়ে বললেন, 

- আপনি তো সঙ্গে ছিলেন, যারা আক্রমণ করেছে তাদের চিনতে পেরেছেন? 

- না স্যার চিনতে পারিনি, তবে তাদের মধ্যে নয়ন মানে আমার চাচাতো ভাই ছিল। ওর কণ্ঠ আমার কাছে পরিচিত তাই স্পষ্ট চিনতে পেরেছি, নয়ন হচ্ছে আমার চাচার প্রথম স্ত্রীর সন্তান। 

- ছেলে তার বাবাকে খুন করার চেষ্টা করেছে? 

- জ্বি স্যার, নয় বছর আগে নয়নের মা আত্মহত্যা করে মারা গেছে। চাচির মৃত্যুর জন্য নয়ন তার বাবাকে দায়ী করে তাই পুরনো প্রতিশোধ নিতেই এই আক্রমণ। 

- আপনার চাচা সেটা জানতেন? 

- জ্বি, কিন্তু তার ধারণা ছিল এত বছর পরে হয়ত সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে গেছে। নয়ন তার মামার কাছে চট্টগ্রামে থাকতো, তার সঙ্গে আমাদের কারো কোনো যোগাযোগ নেই। 

- আপনার চাচিকে ডাকুন, তার সঙ্গে কিছু কথা বলতে হবে। 

ভদ্রমহিলা কাঁদতে কাঁদতে ইতিমধ্যেই চোখ লাল করে ফেলেছেন। দারোগা সাহেবের সামনে এসে দাঁড়িয়ে ফোঁপাতে লাগলো, 

- আপনার দেশে আসার আগে তার প্রথম সন্তান এর বিষয় কিছু বলতেন? 

- হ্যাঁ সবসময়ই বলতেন, তিনি তার প্রথম স্ত্রীকে খুব ভালোবাসতেন। একটা সমস্যার জন্য আমার সঙ্গে তার বিয়ে হয় কিন্তু সেটা প্রথম স্ত্রী মানতে না পেরে আত্মহত্যা করে। তিনি তার সন্তানকে অনেক বোঝাতে চেষ্টা করতেন, কথা বলতেন কিন্তু ছেলের রাগ কমেনি। 

- তাই যদি হয় তাহলে হঠাৎ করে দেশে আসার সিদ্ধান্ত নিলেন কেন? যেহেতু অনেক বছর নাকি আপনারা আসেননি। 

- আমার শশুর অসুস্থ, বছর তিনেক আগে আমার শাশুড়ী মারা গেছে তখন আসিনি। মাস খানিক ধরে রাতুলের বাবা ও আমার শশুর বরাবর করে অনুরোধ করছেন তাই এসেছি। তারা বলেছিল যে ঢাকা থেকে একবার গিয়ে বাড়িতে উঠতে পারলে তারপর আর সমস্যা হবে না। 

- আপনারা দেশে ফিরবেন সে কথা কি সেই ছেলে মানে নয়ন জানতো? 

- জ্বি না শুধু শশুর বাড়িতে জানতো। 

- আপনার কি মনে হয় যে এটা ওই ছেলেটারই কাজ নাকি অন্য কোনো শত্রু আছে? 

- আমি কিছু বুঝতে পারছি না, আমার ধারণা ছিল ছেলে যতই রাগারাগি করুক কিন্তু নিজের বাবাকে খুন করবে না। কিন্তু এখন তো সবকিছু নিজের চোখে দেখলাম দারোগা সাহেব। 

- যে গাড়িতে করে তারা এসেছিল সেই গাড়ির নাম্বার মনে আছে? কি কালারের গাড়ি তারপর কোন ব্রান্ডের এসব কেউ খেয়াল করেছেন? 

- রাতুল বললো, সাদা কালারের গাড়ি ছিল তবে প্লেট নাম্বার দেখতে পারিনি। 

- তারা ক'জন ছিল? 

- তিনজন বের হয়েছিল গাড়ি থেকে, আর মনে হয় একজন গাড়ির ড্রাইভার ছিল। 

- তাহলে মোট চারজন? 

- জ্বি। 

- আমি চারজন পুলিশ পাহারার ব্যাবস্থা করছি, আপনারা সাবধানে থাকবেন। আর এটা হচ্ছে সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত হাসপাতাল তাই এখানে কেউ আক্রমণ করার সাহস পাবে না। তবুও আমি তাদেরকেও ইনফরমেশন দিয়ে রাখবো যাতে নতুন করে কোনো আপত্তিকর কিছু না ঘটে। 

- ঠিক আছে স্যার ধন্যবাদ।

★★

বিমর্ষ দার্শনিকের মতো ঘরের সামনে হাতপা ছড়িয়ে বসে আছে নয়নের ছোট খালা রাবেয়া বেগম। তার সামনেই বসে আছে তার স্বামী খলিল আহমেদ শিকদার। খলিল সাহেব নিজের স্ত্রীকে বারবার বোঝাতে লাগলো যা হবার হবে এতো টেনশন করতে হবে না। 

- রাবেয়া বললো, বুবু মারা যাবার পর থেকে নয়ন তার জীবনটা এলোমেলো করে দিল। এখন আবার কেন ঝামেলা করতে গেল বলেন তো? 

- দেখো এসবে আমাদের হাত কি? তোমার ভাই নিজের কাছে তো রেখেছে ওকে, তারপরও যদি ভালো হতে না পারে আমরা কি করবো? 

- কিন্তু মনকে কীভাবে বোঝাবো বলেন। 

- সেদিন যদি তোমার বুবু আত্মহত্যা না করতেন তাহলে আজ তার সন্তান এভাবে বিপদের মধ্যে যেতো না৷ তিনি নিজে কিন্তু তার সন্তানকে ভালো ভাবে মানুষ করতে পারতেন। কতটা বছর ধরে তিনি স্বামী ছাড়া দেশে থাকতে পারলো আর যেই শুনলো বিয়ে করেছে অমনি মরে গেল। 

বোনের আত্মহত্যার কথা শুনে হঠাৎ মুখের আকৃতি পরিবর্তন হয়ে গেল রাবেয়ার। হঠাৎ করে যেন নতুন অজানা কারণে তার মনের মধ্যে কিছু জেগে উঠলো। কিসের একটা ভয় যেন তার মুখের উপর ফুটে উঠেছে যেটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। 

|
|

ঠিক দুপুর একটার দিকে নয়নের কাকা মনোয়ার হোসেন কল দিলেন নয়নের মামার কাছে। তারপর উপহাস করে বললেন, 

- নিজের বোনের গুন্ডা ছেলেকে দিয়ে তার বাবাকে খুন করার চেষ্টা করাচ্ছেন নাকি? 

নয়নের মামা আফজাল খন্দকার বললেন, 
- মানে কি? আমি কেন তাকে দিয়ে তার বাবাকে খুন করাতে যাবো। আমি তো জানতামই না সে ঢাকায় গেছে। 

- কি জানেন আর কি জানেন না সেটা সময় বলে দেবে খন্দকার সাহেব। আমার ভাইটা আগে সুস্থ হয়ে বাড়িতে আসুক তারপর নাহয় হিসাবটা নিয়ে বসা যাবে। 

- কিসের হিসাব? 

- দেখুন আমার ভাই বিয়ে করেছে ঠিকই কিন্তু সে তো আপনার বোনকে ত্যাগ করেনি। জিদের জন্য আপনার বোন আত্মহত্যা করলো আর নিজের সন্তানকে বানিয়ে গেল শয়তানের দাদা। ভাবতেই আফসোস লাগে যে ওই কুলাঙ্গারে শরীরে আমার বংশের রক্ত। 

- মুখটা একটু সংযত করেন, আর যা কিছু হচ্ছে সেটা কীভাবে সমাধান করা যায় ভাবুন। দরকার হলে আমিও গ্রামের বাড়িতে যাবো তবুও এসবের সমাধান করা দরকার। অবুঝ একটা ছেলে তার মনের মধ্যে পুষে রাখা রাগের জন্য ভুল করে জীবন নষ্ট করবে এটা কারোরই কামনা নয়। 

- গ্রামের বাড়িতে আপনাকে তো আসতেই হবে, ইচ্ছা করে নাহলেও আইনের চাপে। 

- আপনারাও কি পাগলামি করছেন নাকি? 

- নাহলে তো শান্তিতে থাকা যাবে না। 

★★

বিকাল ৪:১৭
জামাল রেস্টুরেন্টে, বাদামতলা, চট্টগ্রাম। 

মুখোমুখি হয়ে বসে আছে কাজল ও রিহানুল ইসলাম সাজু। দুজনেই নিরব, কারণ সাজু তার মোবাইলে কিছু একটা নিয়ে ব্যস্ত আছে। কাজল এমন পরিস্থিতিতে কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না কারণ সাজু নামের এই মানুষটা তার অপরিচিত। 

মোবাইল টেবিলের উপর রেখে সাজু সরাসরি কাজলের দিকে তাকিয়ে বললো, 

- আপনিই রামিশার বান্ধবী তাই না? 

- জ্বি ভাইয়া আমার নাম কাজল। 

- বলেন কিসের জন্য দেখা করতে চেয়েছিলেন। 

- আসলে আপনাকে বিষয়টা বলা ঠিক কিনা বুঝতে পারছি না। তবুও মনে হচ্ছে আপনাকে বলে যদি কিছু করতে পারি। 

- সাহিত্যিকের মতো বিশাল আকারে বর্ননা না করে সরাসরি বলেন। কিছু খাবেন? 

- না খাবো না। আসলে সাজু ভাই, আমার একটা বন্ধু তার বাবাকে আজকে সকালে খুন করেছে। 

- মানে? নিজের বাবাকে খুন? 

- জ্বি ভাই, তবে এর পিছনে অনেক কাহিনি আছে আপনি চাইলে সবটা বলবো। 

- আচ্ছা বলেন তাহলে। 

এরপর কাজল একনাগাড়ে নয়নের কাছ থেকে শোনা তার সম্পুর্ন অতীত এবং গতকাল রাতের ও আজকের সকালের সবকিছু বললো। 

সবটা শুনে সাজু গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেল। মনে হয় যেন কোনো একটা রহস্যের মধ্যে ডুবে যাচ্ছে সাজু৷ 

- কাজল বললো, নয়ন যদি তার বাবাকে খুন করে তাহলে তার কোনো খোঁজ নেই কেন? 

- সাজু বললো, হয়তো সে ভেবেছে পুলিশ তার নাম্বার দিয়ে তাকে খুঁজে বের করবে। তাই নিজের নাম্বার বন্ধ করে দিয়েছে। 

- কিন্তু অন্য নাম্বার দিয়ে হলেও তো আমাকে তার জানানোর কথা ছিল। 

- কেন আপনি কি তার বস? খুন করে আপনাকে কল দিয়ে জানাবে "অপারেশন সাকসেসফুল"।  

- তবুও, আপনি তো গোয়েন্দা তাই যদি আমাকে একটু সাহায্য করতেন। 

- দেখুন আপনি নিজেই জানেন খুন করার জন্য ছেলেটা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় গেছে। তারপর সে আজ সকালে খুন করেছে, তাহলে আমি গিয়ে কি করবো সেখানে? 

- ওকে যদি খুঁজে বের করতে পারতেন। 

- যেহেতু খুন হয়েছে সেহেতু পুলিশ তাকে খুঁজে বের করবে চিন্তা করবেন না। তবে একটা কাজ করতে পারবেন? 

- কি কাজ? 

- আমি একটু নয়নের মায়ের সেই ডায়েরিটা পড়তে চাই আর তার মামার সঙ্গে বা মামাতো ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে চাই। 

- আমি তাহলে কল দেবো? 

- আচ্ছা কল দিয়ে জিজ্ঞেস করুন তাদের বাসা কোথায় আর একটু দেখা করতে পারবে কিনা। 

কাজল কল দিলো মামাতো ভাইয়ের কাছে, সঙ্গে সঙ্গে রিসিভ করলো নয়নের মামাতো ভাই খালিদ মিনহাজ। 

- মিনহাজ বললো, কে বলছেন? 

- আমি কাজল নয়নের বন্ধু, সকাল বেলা আমি আপনার কাছে কল করেছিলাম। 

- ওহ্ আচ্ছা এটা আপনার নাম্বার? আমি কিন্তু আপনার কাছে কল করতে চেয়েছিলাম কিন্তু সকাল থেকে এতো পরিমাণ অপরিচিত নাম্বারের কল এসেছে। তাই বুঝতে পারছিলাম না কোনটা আপনার নাম্বার, আচ্ছা শুনুন, নয়নের বাবা মারা যায়নি তিনি বেঁচে আছে। গুলি লেগেছিল কিন্তু মারা যায় নাই। 

- তাহলে নয়ন কোথায়? ও কোনো যোগাযোগ করেনি আপনার সঙ্গে? 

- না। 

- আচ্ছা শুনুন, আমার এক পরিচিত মানুষ তিনি খুনের মামলার রহস্য বের করতে চেষ্টা করে৷ তার সঙ্গে আমি দেখা করেছি আর নয়নের সবকিছু বলার পরে সে আপনার সঙ্গে দেখা করতে চায়। 

- নাম কি? 

- সাজু। 

- মানে সাজু ভাই? 

- জ্বি আপনি চিনেন? 

- হ্যাঁ চিনি, পুলিশের চাকরি করি আর একজন পরিচিত গোয়েন্দার নাম জানবো না। আপনারা চলে আসুন আমি বাসায় আছি, ঠিকানা টেক্সট করে দিচ্ছি চলে আসুন। 

★★

মিনহাজদের বাসায় ড্রইং রুমে বসে আছে সাজু কাজল মিনহাজ ও তার বাবা। মিনহাজের বাবার দিকে তাকিয়ে সাজু বললো, 

- আপনার বোন অনেক ধার্মিক মহিলা ছিলেন তাই না? 

- জ্বি, কিন্তু একটা ভুল সিদ্ধান্তে বোনটা আমার তার জীবনের সকল আমল শেষ করে দিল। কেন আত্মহত্যা করে আল্লাহর নিষেধ অমান্য করে চলে গেল। (তিনি আফসোস করছেন) 

- সাজু আস্তে আস্তে বললো, আসলেই কি সে আত্মহত্যা করেছে নাকি তাকে খুন করা হয়েছে সেই অনুসন্ধান করেছেন আপনারা? 

চমকে গেল সবাই, আফজাল খন্দকার বিড়বিড় করে বললো, 

- কি বলছেন আপনি? 

- না তেমন কিছু না। কিন্তু আমি যতটা শুনলা তা থেকে এতটুকু ধারণা হচ্ছে যে তাকে খুন করা হয়েছে। যে মহিলা রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লেন, সকাল বেলা ফজরের নামাজ পড়লো। সেই মহিলা কোনদিনই আত্মহত্যা করবে না। 

- মানুষের মতামত পরিবর্তন হতে সময় লাগে না। 

- আপনাদের গ্রামের বাড়ি কোথায়? 

- খুলনা জেলার, তেরখাদা উপজেলায়। 

- তারমানে আমার পাশাপাশি, আমি বাগেরহাটের সন্তান। আচ্ছা যাইহোক, নয়নের কাছে তার মা একটা ডায়েরি দিয়ে গেছিল সেটা কি আপনার বাসায় আছে? 

- মিনহাজ বললো, হ্যাঁ আমাদের রুমে আছে। 

- একটু কষ্ট করে নিয়ে আসবেন? 

মিনহাজ চলে গেল ভিতরে, সাজু আবার জিজ্ঞেস করলো,

- আপনার বোন যে সুইসাইড নোট লিখে গেছে সেই নোটটা কি এখনো আছে? 

- আফজাল সাহেব আমতাআমতা করে বললো, কত বছর আগের জিনিস এখনো থাকে নাকি? 

- না তবুও এরকম জিনিস সবাই রেখে দেয় কারণ অনেকদিন পরে যদি পুলিশি ঝামেলা আসে তখন যেন দেখাতে পারে। 

- তাহলে গ্রামের বাড়িতে থাকতে পারে। 

মিনহাজ ডায়েরি নিয়ে প্রবেশ করলো, সাজু তার হাত থেকে ডায়েরি নিতে নিতে বললো, 

- আরেকটা ছোট্ট উপকার করতে হবে মিনহাজ সাহেব। 

- জ্বি বলেন সাজু ভাই। 

- আপনার ফুপু মৃত্যুর আগে যে সুইসাইড নোট লিখে গেছে সেটা সংগ্রহ করতে হবে। আমার বিশ্বাস সেটা আপনি যোগাড় করতে পারবেন। 

- মিনহাজ বললো, সেটা তো বাবার কাছে আছে, গত বছর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে বাবা নিয়ে এসেছে এখানে। নিয়ে আসবো? 

- সাজু কিঞ্চিৎ হাসি দিয়ে বললো, হ্যাঁ নিয়ে আসুন। 

মিনহাজ আবারও ভিতরে গেল, সাজু তখন আফজাল খন্দকারের দিকে তাকিয়ে রইল। 

- বললো, নয়নের বাবাকে সে খুন করার চেষ্টা করেছে কিনা জানিনা। নয়ন কোথায় সেটাও আমি জানি না, জানতেও চাই না। তবে আমি এটা পরিষ্কার বুঝতে পারছি নয়নের মা আত্মহত্যা করে নাই তাকে খুন করা হয়েছে। আপনার সঙ্গে আবারও দেখা হবে, আমি আপাতত ডায়েরি আর চিঠি নিয়ে আপনার গ্রামের দিকে যাবো। একটু সতর্ক থাকবেন, কারণ সত্য একদিন বের হয়। 

চলবে...

 
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#3
পর্বঃ- তিন 


" আমার মৃত্যু নিয়ে কেউ বিচলিত হবেন না, আমি সজ্ঞানে পৃথিবী থেকে বিদায় নিচ্ছি। বেশি ঝামেলা না করে আমার মা-বাবার কাছে পুরনো গোরস্থানে আমাকে কবর দিয়েন। আমার সন্তানকে বলবেন সে যেন আমাকে ক্ষমা করে দেয়। আমার স্বামীর এমন অবিচার আমার সহ্যের সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে তাই এরূপ সিদ্ধান্ত। 

আমি কারো স্ত্রী নয়, 
আমি শুধু নয়নের মা। 
রেবেকা আফরোজ। " 

খুব ভালো করেই সুইসাইড নোটের দিকে তাকিয়ে আছেন সাজু ও কাজল। ডায়েরির মধ্যে আগেই চোখ বুলিয়ে নিয়েছে সে, দুটো স্থানে হাতের লেখা দুই ধরনের। কোনো মিল নেই, তাই সাজু মিনহাজ এর দিকে তাকিয়ে বললো, 

- আপনি কি ডায়েরি পড়েছেন কখনো? 

- না, তবে সুইসাইড নোটটা পড়েছি। ডায়েরিটা ফুপুর ব্যক্তিগত জীবনের লেখা তাই সেটা পড়ার আগ্রহ ছিল না। তবে গভীর রাতে নয়ন মাঝে মাঝে পড়তো তারপর পড়া শেষ হলে সিগারেট ধরিয়ে বেলকনিতে বসে থাকতো। 

- সাজু তখন আফজাল খন্দকারের দিকে চেয়ে বললেন, আপনারা কি সত্যিই কোনো কারণে ভুল করেও আপনার বোনের মৃত্যুর রহস্য জানতে চাননি? 

- দেখুন, স্পষ্ট সুইসাইড নোট ছিল তাই এসব নিয়ে আর কোনো কথা ওঠেনি। 

- সুইসাইড নোটটা আপনার বোনের লেখা নয় আফজাল সাহেব, ডায়রির পাতার লেখা আর এই নোটটা ভালো করে দেখুন। এসব জানার জন্য কিন্তু গোয়েন্দা হতে হয় না, সামান্য নজর দিলেই এগুলো বোঝা যায়। আসল কথা হচ্ছে আপনার বোনের দিকে কেউ ভালো করে খেয়াল রাখেননি তাই না? 

- না আসলে আমি চট্টগ্রামে ছিলাম। 

- নয়ন কাজলের কাছে বলেছিল তার মা-বাবা নিজেরা পছন্দ করে বিয়ে করেছে। যদিও পরিবার থেকে বিয়ে করানো হয়েছে কিন্তু সেখানে কার কার আপত্তি ছিল জানতে পারি? মানে আপনার পরিবার থেকে আর নয়নের দাদা বাড়ির থেকে কে কে বিয়েটা চাননি? 

- প্রথম প্রথম সবাই আপত্তি করলেও পরে কিন্তু সবাই মেনে নিলাম। আর ওদের বিয়ে হয়েছিল প্রায় ২৬/২৭ বছর আগে, তখনকার কথা কীভাবে মনে থাকে বলেন। 

- ঠিক আছে এগুলো গ্রামের মধ্যে গিয়ে আমি আস্তে আস্তে খুঁজে বের করবো। আপনি ভালো থাকবেন আর গ্রামের বাড়িতে খোঁজ খবর রাখুন। 

- একটা কথা বলি সাজু সাহেব। 

- বলেন। 

- আমার বোনকে যদি সত্যি সত্যি হত্যা করা হয়ে থাকে তাহলে আপনি সত্যিটা খুঁজে বের করুন। আপনার যত টাকা ফিশ আসবে আমি সবটাই আপনাকে দেবো। 

- সাজু কিঞ্চিৎ হাসলো। 

- হাসলেন যে? 

- আমি টাকার জন্য কখনো মামলার কাজ করি না, আল্লাহর দয়ায় অনেক আছে আমাদের। যা করি সবটাই ভালো লাগে তাই করি তাছাড়া আমি কোনো চাকরি করি না। সবসময় শুধু ঘুরে বেড়াই তাই এটাই করি যেন সময়টা রহস্যময় হয়ে কাটে। 

|
|

সাজু ও কাজলের সঙ্গে সঙ্গে মিনহাজও বেরিয়ে এসেছে বাহিরে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে মিনহাজ সাজুর দিকে তাকিয়ে বললো, 

- আপনার যেকোনো সাহায্যের জন্য আমাকে আগে বলবেন সাজু ভাই। আমি আপনাকে সর্বদা সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকবো। 

- এই মুহূর্তে আপনাকে একটা কাজ করতে হবে। 

- বলেন। 

- অলংকার বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে গতকাল নয়ন কোন গাড়িতে ঢাকায় গেছে সেটা বের করতে হবে। জানি এটা খুবই ঝামেলার ব্যাপার তবুও চেষ্টা করতে দোষ নেই। ভালো ভালো ব্রান্ডের যতগুলো পরিবহন আছে সবগুলোতে নয়নের ছবি ও ফোন নাম্বার দিয়ে চেক করবেন। 

- এটা একদম অসম্ভব একটা কাজ। 

- সবার আগে উত্তরা আব্দুল্লাহপুর হয়ে গাজীপুর যেসব গাড়ি যায় সেগুলো চেক করবেন। নয়ন যেহেতু বিমানবন্দর যেতে চেয়েছে সেহেতু উত্তরার গাড়িতে সে উঠবে, চেষ্টা করুন। 

- কিন্তু কেন করতে হবে সাজু ভাই? 

- কারণ আমি জানতে চাই নয়ন ঢাকায় পৌঁছাতে পেরেছে নাকি তার আগেই তাকে কেউ নিজের হাতে বন্দী করেছে। 

- মানে? 

- একটা কথা ভেবে দেখুন মিনহাজ সাহেব, নয়ন হুট করে পিস্তল পাবে কোথায়? ঢাকায় গিয়ে সঙ্গী যোগাড় করা তারপর প্রাইভেটকার যোগাড় করে আক্রমণ করা। এটা কি সিনেমার কোনো ঘটনা যে সবকিছু পরিচালক ব্যবস্থা করে দিবে আর হিরো গিয়েই এ্যাকশনে যাবে। 

- না। 

- যদি এমন হতো যে নয়ন তার বাবাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেছে তাহলে কিছুটা বিশ্বাস হতো। আর সে মুখোশ পরবে কেন? দুটো পরিবারের সবাই জানে নয়নের রাগের কথা, তাহলে নয়ন এসবের মধ্যে কখনো যাবে না। 

- আমার কাছে সবকিছু পেঁচিয়ে যাচ্ছে সাজু ভাই। 

- যদি আপনার ফুপু খুন হয়ে থাকে, তাহলে নয়নে এর বাবার এই আক্রমণ আর নয় বছর আগের সেই খুনের সঙ্গে সম্পর্ক আছে। এমন কেউ আছে যিনি নয়নদের পরিবার ধ্বংস করতে চায়। আর সেজন্য নয়নের মা'কে নয় বছর আগে খুন আর এখন নয়নের বাবাকে খুন করে নয়কে আইনের কাছে অপরাধী করবে। তাহলে তো ধ্বংস হবে নয়ন ও তার বাবা, আর মাকে তো আগেই খুন করা হয়েছে। 

- আপনার কথায় যথেষ্ট যুক্তি আছে সাজু ভাই, আমি এখনই অলংকার যাবো। তারপর যেভাবেই হোক সেই পরিবহন খুঁজে বের করবো। 

- জ্বি চেষ্টা করুন আর আমার নাম্বারটা রাখুন। 

- আপনি এখন কোথায় যাবেন? নাহলে আপনি চলুন না আমার সঙ্গে অলঙ্কার। 

- আমি এখন মেসে যাবো তারপর গোছগাছ করে ঢাকায় রওনা দেবো। সেখানে গিয়ে নয়নের বাবার সঙ্গে কথা বলে চলে যাবো আপনাদের গ্রামের বাড়িতে। 

- বলেন কি? তারপর এখন থেকে কাজে লেগে যাচ্ছেন? 

- এই মামলার প্রতি আমার আলাদা রহস্য আছে মিনহাজ সাহেব। 

- যেমন? 

- আমার মা মারা গেছে তখন আমি খুব ছোট্ট ছিলাম, বাবা লন্ডনে থাকতেন। মা মারা গেছে একটা অসুখে পড়ে, নিজের অন্তিম সময়ে মা বারবার অনুরোধ করেছিল বাবাকে দেশে আসার জন্য। কিন্তু বাবা ততটা গুরুত্ব দেয়নি। অথচ হুট করে মা একদিন চলে গেল, আর দাদা-দাদির কাছে বলে গেল সারাজীবন তাদের কাছে রাখতে। তাই তো হাজারো চেষ্টা করে বাবা আমাকে লন্ডনে স্থায়ী করতে পারে না। যদিও আমি বছরে বছরে বেড়াতে যাই। এই পৃথিবীতে আমি আমার বাবাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি কিন্তু তাকে কোনদিন বুঝতে দেয়নি। 

- আপনার মাকে ভালোবাসেন না? 

- মা তো এখন পৃথিবীতে নেই। 

- হুম তা ঠিক। 

- আমার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছে, সেখানে তার দুটো মেয়ে আছে। তারা আমাকে আপন ভাইয়ের মতো সম্মান করে। 

- বুঝতে পারছি। 

- নিজের সঙ্গে নয়নের অনেকটা মিল আছে তাই আগ্রহ খানিকটা বেশি। 

- আপনার জীবনটাও অদ্ভুত সাজু ভাই। 

সাজু দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। 

★★

সাজুরা বের হবার পরপরই আফজাল খন্দকার তার মোবাইল বের করে নয়নের কাকা মনোয়ার হোসেনের কাছে কল দিলেন। 
নয়নের কাকা তখন ঢাকায় হাসপাতালে পৌঁছে গেছেন, কিছুক্ষণ আগে ভাইয়ের সঙ্গে সামান্য কথা বলে বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পকেটে ফোনে রিং হতেই বের করে রিসিভ করলো, 

- বেয়াই সাহেব আমি বলছিলাম। 

- হ্যাঁ চিনতে পেরেছি, নাম্বার তো সেভ করাই আছে চিনবো না কেন? 

- দেলোয়ার (নয়নের বাবা) এখন কেমন আছে? 

- আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ, গুন্ডা ছেলের আফসোস হচ্ছে নিশ্চয়ই। 

- আমি একটা কারণে আপনাকে কল দিলাম। 

- কি কারণ? 

- একটু আগে আমার বাসায় একটা ছেলে এসে অনেক কিছু বলে গেল। সে একজন গোয়েন্দা, প্রতিটি কথার মধ্যে প্যাঁচ লাগিয়ে দেয়। 

- গোয়েন্দা আপনার বাসায়? 

- হ্যাঁ, সে দেলোয়ারের আহত হবার বিষয় কোনো আগ্রহী নয়। 

- তাহলে? 

- ছেলেটা নয়নের মায়ের সুইসাইড নোট আর ব্যক্তিগত ডায়েরি পড়লো। তারপর বললো যে রেবেকা আত্মহত্যা করে নাই ওকে নাকি খুন করা হয়েছে। 

- কি বলছেন আপনি? 

- হ্যাঁ, ছেলেটা মনে হয় খুব তাড়াতাড়ি আমাদের গ্রামের বাড়িতে যাবে। তার নিজেরও গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটে। 

- এ তো আরেক ঝামেলার আগমন মনে হচ্ছে, ঘটনা ঠিক কোনদিকে যাচ্ছে বলেন তো? 

- আমি জানি না, এ ছেলে সবকিছু খুঁজে বের করতে পারবে বলে মনে হয়। 

- আপনি তো আমার মাথার মধ্যে টেনশনের বীজ বপন করে দিলেন। 

- আমি ভাবছি গ্রামের বাড়িতে যাবো। 

- আমিও তাহলে যাবো। 

- আচ্ছা। 

|
|

দামপাড়া বাসস্ট্যান্ড, চট্টগ্রাম। 

- রামিশা বললো, আমাকে সঙ্গে নিলে আপনার কি খুব বেশি সমস্যা হবে? 

- হ্যাঁ হবে, কারণ আমি এখন ঢাকায় যাবো আর সেখান থেকে গ্রামের বাড়ি। তোমাকে সঙ্গে নিয়ে তো এতো জার্নি করা যাবে না রামু। 

- আমার কিছু হবে না, আমি আপনার সঙ্গে যাবো সাজু ভাই। 

- রামু শোনো, আগেরবার ঢাকায় তোমার আত্মীয় ছিল সেখানে গিয়ে তুমি ছিলে। শাকিলার বাবার সেই মৃত্যুর রহস্যে তোমাকে সঙ্গে রেখেছি কিন্তু এটা সম্পুর্ণ গ্রামের ঝামেলা। 

- আপনি তো বললেন আপনার বাড়ির কাছেই তাহলে আপনার বাড়িতে থাকবো। আপনি তো আমার আত্মীয় তাই না সাজু ভাই। 

- আমি কিন্তু সিরিয়াস। 

- আমিও সিরিয়াস। 

- আচ্ছা ঠিক আছে, আমি আগে যাই তারপর তুমি নাহয় দুদিন পরে যেও। 

- সত্যি? 

- হ্যাঁ সত্যি সত্যি সত্যি। 

- মেলা মেলা ধন্যবাদ। 

গাড়ি ঢাকার উদ্দেশ্য চলতে শুরু করেছে, মনটা খারাপ করে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে আছে রামিশা। তার সেই তাকিয়ে থাকা দৃশ্য দেখে অবাক হয়ে গেল সাজু, এই চাহনি কিসের? 
শুধুই বন্ধু, নাকি ভালোবাসা? যদি ভালোবাসা হয় তাহলে এতটা দুরত্ব কেন? 

★★

বাদালপুর গ্রামের বিশিষ্ট ভদ্রলোক হাজী ফজলুল জোযাদ্দার। তিনি সবেমাত্র রাতের খাবার খেয়ে বাড়ির উঠোনে বসেছেন, কাজের ছেলে রমজান পান সাজিয়ে দিচ্ছে। হঠাৎ করে ঘরের মধ্যে তার মোবাইল বেজে উঠল, রমজান হজী সাহেবের হাতে পান দিয়ে মোবাইল আনতে গেল। মুহূর্তের মধ্যে মোবাইল নিয়ে আসতেই হাজী সাহেব কল রিসিভ করে সালাম দিলেন। 

অপর প্রান্ত থেকে সালামের জবাবের পরিবর্তে বলে উঠলো, 

- গ্রামের মধ্যে একটা ছেলে যাচ্ছে রেবেকার খুনের মামলা খুঁজে বের করতে। তার ধারণা যে রেবেকা আত্মহত্যা করে নাই ওকে খুন করা হয়েছে। এতবছর পরে রেবেকার খুনের রহস্য বের হবে সেটা আমি কল্পনাও করতে পারি নাই। 

চলবে...

  
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#4
 চতুর্থ_পর্ব



- মিনহাজ বললো, বাবা তুমি কি চাওনা ফুপু যদি সত্যিই খুন হয়ে থাকে তাহলে তার আসল খুনি ধরা পড়ুক, বলো চাও না? 

আফজাল খন্দকার ছেলের প্রশ্ন শুনে খানিকটা কাশলেন, তারপর নিজের স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললো, 

- নয়ন ছেলেটা ঝামেলা না করলে আজকে তো রেবেকার মৃত্যু নিয়েও প্রশ্ন উঠতো না। যা হবার তা হয়ে গেছে সেই নয় বছর আগে, এখন নতুন করে কি যে হবে আল্লাহ জানে। এদিকে ওই গোয়েন্দা ছোকরা কেবল আমার দিকে তাকিয়ে রহস্যের হাসি দিচ্ছে। মনে হয় যেন আমি আমার বোনকে মেরেছি। 

- মিনহাজ বললো, নিজের বোনের রহস্যজনক মৃত্যুর সময় বড়ভাই হিসেবে তোমার দরকার ছিল সত্যটা জানা। 

- আরে তখন এতটা বুঝতে পারিনি। 

- আচ্ছা বাবা, যেদিন সকালে ফুপু মারা গেছে তুমি সেদিনই গ্রামের বাড়িতে গেছিলে। 

- হ্যাঁ। 

- তোমার সঙ্গে কি ফুপুর দেখা হয়েছিল নাকি তুমি বাড়িতে যাবার আগেই মারা গেছে। 

- যেদিন নয়নের বাবা বিয়ে করে সেদিনই তোর ফুপু আমাকে কল দিয়ে কান্নাকাটি করে। আমিই ওকে বলেছিলাম নয়নকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে চলে যাবার জন্য আর আমি সন্ধ্যাবেলা খুলনার গাড়িতে রওনা দিলাম। 

- তোমার কথামতো ফুপু আমাদের বাড়িতে চলে যায়? 

- হ্যাঁ, আমি বলেছিলাম তুই বাড়িতে যা আমি এসে একটা ব্যবস্থা করবো। কিন্তু আমি বাড়িতে যাবার আগেই তো.... 

- আচ্ছা, কিন্তু এসব তোমার বলা দরকার ছিল সাজু ভাইয়ের সঙ্গে। যাইহোক আমিই বলবো তবে এখন আমি অলংকার যাবো কিছু কাজ আছে। 

মিনহাজ শব্দ করে মেইন দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে গেল, আফজাল সাহেব পানির পিপাসা অনুভূত করতে লাগলেন। কিন্তু স্ত্রীকে ডেকে পানির কথা বলতে ইচ্ছে করছে না তার। 

★★

সাজু যখন ঢাকায় পৌঁছালো ভোরবেলা, উত্তর বাড্ডায় এক বন্ধুর বাসায় উঠলেন। তারপর ওখান থেকে সকাল নয়টার দিকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে রওনা দিল। রিসিপশনে জিজ্ঞেস করে সহজেই জানা গেল নয়নের বাবা দেলোয়ার হোসেন ভর্তি আছেন ষষ্ঠ তলায়। 

মনোয়ার হোসেন, নয়নের বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী ও বাকি সবাই রাতে তাদের আত্মীয়ের বাসায় ছিল। শুধুমাত্র রাতুল তার চাচার সঙ্গে হাসপাতালের কেবিনে ছিলেন। সাজু আগেই মনোয়ার হোসেন হাসপাতালে এসেছেন, নয়নের বাবা এখন বেশ সুস্থ। 

মনোয়ার হোসেনের সামনে গিয়ে সাজু বললো, 

- আপনি কি নয়নের বড় কাকা? 

- জ্বি। 

- আমার নাম সাজু, আমি একটু আপনার ছোট ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে চাই। 

- পুলিশ বলেছে বাহিরের কাউকে যেন ওর সঙ্গে দেখা করতে না দেওয়া হয়। 

- আমি এই মামলা নিয়েই তার সঙ্গে কথা বলতে এসেছি, আপনারা থাকুন আমার সঙ্গে। আমি তো একা একা দেখা করতে যাবো না। 

- তবুও পুলিশের অনুমতি লাগবে আর সেটা স্বয়ং ওসি সাহেবের কাছ থেকে। 

- ওসি সাহেবের নাম্বার দেন। 

- আমরা কি তার নাম্বার সঙ্গে নিয়ে বসে আছি? উনি নিজেই আসে আবার চলে যায়, নাম্বার দিয়ে আমরা কি করবো? 

- গ্রামের মধ্যে যারা একটু সামান্য কিছু টাকার মালিক তাদের সমস্যা কি জানেন? যেকোনো স্থানে গেলে নিজেকে তালুকদার মনে করে, কিন্তু আপন বনে খাটাশ রাজা সেটা জানে না। 

- মানে? 

- আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন? শুনুন আপনার ভাইয়ের ব্যাপারে আমার কোনো আগ্রহ নেই। আমি এসেছি নয়নের মা রেবেকা আফরোজের মৃত্যুর বিষয় কথা বলতে। আমার পুরোপুরি ধারণা হচ্ছে নয় বছর আগে তাকে হত্যা করা হয়েছে। 

- আপনি কি পাগল নাকি? যদি খুন হতো তাহলে তো আমরাই মামলা করতাম, চিরকুট লিখে সে আত্মহত্যা করেছে। তাই তাকে কোনো প্রকার ঝামেলা না করে দাফন করা হয়েছে। 

- কিন্তু সেই চিরকুট তো নয়নের মার হাতের লেখা চিরকুট নয় জনাব মনোয়ার হোসেন। 

- কি বলতে চান আপনি? 

- ২২৭ পৃষ্ঠার একটা ডায়েরিতে রেবেকা মেডাম তার আর আপনার ভাইয়ের জীবনী লিখেছেন। সেখানের প্রতিটি পাতায় সবগুলো লেখাই একই রকম। 

- তো কি হয়েছে? 

- আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে সেই ২২৭ পৃষ্ঠার সবগুলো পাতা একরকম থাকলেও ০৬ লাইনের চিরকুটটা তার সঙ্গে মিলছে না। 

- দেখুন ডায়েরি লেখার সময় মানুষ নিশ্চিন্তে লিখতে থাকে, কিন্তু সুইসাইড নোট লেখার সময় নিশ্চয়ই ততটা গুরুত্ব থাকে না। 

- হাসতে বাধ্য হলাম। যাইহোক যেহেতু এসবের ব্যাপারে আপনাদের আগ্রহ নেই তাই সবকিছু আমি খুঁজে বের করবো। আপনি এখন দয়া করে দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে দেখা করতে দিন। 

- ওসি সাহেব আসুক, অপেক্ষা করুন।

|
|

সাজুকে সত্যি সত্যি অপেক্ষা করতে হলো, তবে সেটা বেশিক্ষণ নয়। যে চারজন পুলিশ পাহারায় ছিল তাদের মধ্যে একজন ওসি সাহেবের কাছে কল দিয়ে আসতে বলেছেন। ওসি সাহেব ও কিছু অবহেলা না করে দ্রুত হাসপাতালে এলেন। 

দেলোয়ার হোসেন আধশোয়া হয়ে বসে আছে, গুলি যেখানে লেগেছে সেখানে ব্যান্ডেজ করা। সাদা ব্যান্ডেজ সামান্য রক্তের দাগ। 

- সাজু বললো, কেমন আছেন আপনি? 

- জ্বি ভালো, আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না। 

- আমি পরিচয় দেবার মতো কেউ নয়, আপনার সঙ্গে সামান্য কিছু কথা বলতে এসেছে। আমি একজন ছোটখাটো গোয়েন্দা বলতে পারেন। 

- দেখুন আমি জানি আমার সন্তান তার রাগের বশে আমাকে আক্রমণ করেছে। কিন্তু আমি তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা করবো না, সে তো আমার সন্তান। 

- আমি আপনার প্রথম স্ত্রীর বিষয় কথা বলতে চাই। আমার ধারণা তাকে খুন করা হয়েছিল। 

দেলোয়ার হোসেনের চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেল, আস্তে করে বললেন, 

- কি বলছেন আপনি? আমি সেদিন বারবার সবার কাছে বলেছিলাম আমার রেবেকা কখনো আত্মহত্যা করতে পারে না। কিন্তু সবাই আমাকে বোঝাচ্ছিল রেবেকা নাকি সত্যি সত্যি আত্মহত্যা করেছে। 

- আপনাকে ভুল জানানো হয়েছে, আপনি তো দেশের বাইরে ছিলেন। তারা আপনাকে যা যা বলেছে তাই বিশ্বাস করতে হয়েছে। 

- আমার জন্যই ওকে মরতে হয়েছে, আমি যদি বিয়ে না করে দেশে আসতাম তাহলে আমার রেবেকাকে মরতে হতো না। 

- নয়নের বড়মামার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন ছিল জানতে পারি? আমার ধারণা আপনাদের মধ্যে তেমন ভালো বনিবনা ছিল না। 

- হ্যাঁ তিনি আমাদের বিরুদ্ধে ছিলেন, যখন আমি আর রেবেকা বিয়ে করতে চাই তখনও তিনি খুব আপত্তি করেন। কিন্তু আমার শশুর রেবেকাকে খুব ভালোবাসতেন তাই ওর কথা ফেলতে পারে নাই। 

- আর আপনার পরিবারের সবাই রাজি ছিল? 

- হ্যাঁ মোটামুটি সবাই রাজি ছিল। 

- বিয়ের পরে যখন আপনি দেশের বাইরে ছিলেন তখন আপনার স্ত্রী কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করতেন? মানে অমুকের সঙ্গে ঝগড়া, বা আরো কাউকে শত্রু মনে হচ্ছে এমন। 

- না, রেবেকা সবসময় বাড়িতে থাকতো তাছাড়া ওর মতো ভদ্র কেউ নেই। কারো সঙ্গে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত কথা বলতো না। 

- আমি চাই আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যাবেন। আমিও আপনাদের গ্রামের বাড়িতে যাবো, সেখানে ইন শা আল্লাহ দেখা হবে। 

- আমার রেবেকাকে যদি সত্যিই কেউ খুন করে তাহলে আপনি তাকে খুঁজে বের করুন। আপনার যতো টাকা লাগবে আমি দেবো, টাকার বিষয় নিয়ে চিন্তা করবেন না। 

- দেখুন আপনার স্ত্রীর মৃত্যুর রহস্য বের করতে আমিই আগ্রহ দেখিয়ে এসেছি। সুতরাং আমার কোনো টাকার দরকার হবে না, যদি আপনি নিয়ে আসতেন আমাকে তাহলে নাহলে টাকার প্রস্তাব দিতেন। 

- আমি দুঃখিত সাজু সাহেব। তবে সত্যি সত্যি যদি খুনি বের হয়ে যায় তাহলে আমার সন্তানের রাগ কিছুটা কমে যাবে৷ 

- আপনার সন্তানের কোনো খোঁজ নেই, কোথায় আছে সেটা জানা দরকার। 

- যেহেতু ভুল করে আমার উপর আক্রমণ করেছে তাই ভয়ে বা লজ্জায় সামনে আসবে না। একদিন ঠিক আসবে আমার বিশ্বাস আছে। 

- আমি তাহলে আসি, আপনি নিজের যত্ন নিবেন আর সাবধানে থাকবেন।

- এখন তো পরিবারের সবাই আছে তাই আর চিন্তা করছি না। 

- ছোট্ট একটা পরামর্শ দেবো আঙ্কেল? 

- বলেন। 

- একটু খেয়াল করে দেখবেন মানুষের আপনজন কিংবা আত্মীয়দের মধ্য থেকেই কিন্তু আঘাতটা বেশি আসে। একজন অপরিচিত মানুষ শুধু শুধু আপনার ক্ষতি করবে না। আমি আপনাকে চিনি না তাহলে আপনার ক্ষতি কেন করবো? তবে কিছু ক্ষেত্রে হয় কিন্তু সেটাও স্বার্থের জন্য, যেমন চোর ডাকাত হাইজ্যাকার ইত্যাদি। 

- ঠিক বলেছেন। 

- চোর ডাকাত হাইজ্যাকার দ্বারা আঘাত পেলে মানুষ সেটা সহজেই ভুলে যায়। কিন্তু আপনজনের আঘাত চিরদিন মনে থাকে, চাইলেই সেটা ভুলে থাকা যায় না। আপনি আপনার কিংবা আপনার প্রথম স্ত্রীর বাবার লোকজন হতে সাবধানে থাকার চেষ্টা করবেন। সরাসরি বললাম, কথাটা নিজের মধ্যে রেখে দিবেন। 

ওসি সাহেব, চলুন। 

দেলোয়ার হোসেন হা করে তাকিয়ে রইল। সাজুর বলা কথাটা তাকে আঘাত করেছে, তাহলে কি নিজের পরিবারের কেউ এসব করেছে নাকি শুধু সন্দেহ করে বলেছে। 

বাহিরে এসে সাজু ওসির সঙ্গে সবকিছু বললো, রেবেকা আফরোজের আত্মহত্যার রহস্য হতে শুরু করে এখন পর্যন্ত যতটুকু জানা ছিল। ওসি সাহেব বয়স্ক মানুষ, তিন বছরের মধ্যে রিটায়ার্ড করবেন তাই অভিজ্ঞতা কম নয়। 
তিনি সাজুর দিকে তাকিয়ে বললো, 

- আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি পারবেন। দোয়া করি আপনি এগিয়ে যান, আর সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে সেখানের স্থানীয় পুলিশের সাহায্য নিয়ে করবেন। পুলিশ আপনাকে অনেক সাহায্য করতে পারবে। 

- জ্বি স্যার, মেলা মেলা ধন্যবাদ আপনাকে। আমি ঢাকায় এলে আর আপনার এখানকার কোন কাজে আপনার সাহায্য দরকার হলে কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে চলে আসবো। 

- অবশ্যই। 

মনোয়ার হোসেন তাকিয়ে আছেন বিরক্তি হয়ে, রাতুল ও তার বাবার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। সাজুর ইচ্ছে করছিল দেলোয়ার হোসেনর দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে একটু দেখা করবেন। যদিও মহিলার কোনো সম্পর্ক নেই এখানে কিন্তু তবুও মানুষ দেখার আলাদা কৌতূহল। 

সারাদিন সাজু কাটালো নিউমার্কেটের কাছে এক কাকার বাসায়। সন্ধ্যা বেলা বাগেরহাটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবার কথা কিন্তু তা সম্ভব হলো না। রাত দশটার দিকে সাজু বাগেরহাটের গাড়িতে উঠে চোখ বন্ধ করে অপেক্ষা করতে লাগলো। 

নির্দিষ্ট সময়ে ফেরি পাওয়া গেল না। মাওয়া ঘাটে দীর্ঘ জ্যামের কারণে আটকে রইল গাড়ি। নদীর পানি কম, তাই রো রো ফেরি গুলো আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। ঘন্টার পর ঘন্টা যারা এই জ্যামের মুখোমুখি হয়েছে, কেবল তারাই অনুভব করতে পারে পদ্মা সেতু হওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ। 

★★★

সাজু নিজের বাড়িতে যখন পৌঁছালো তখন সকাল সাড়ে দশটা। বাগেরহাটে নেমে পুরনো এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়ে গেছে তাই দুই ঘন্টা দেরি হয়ে গেল। স্টেশন থেকে গাড়িতে ওঠার সময় এক ড্রাইভার বললো, 

- গতকাল রাত আটটার দিকে আপনাদের বাড়ি একটা মেয়ে এসেছে। অপরিচিত মেয়ে, আগে মনে হয় কখনো আসেনি। 

- বলেন কি? 

- হ্যাঁ, কিছু চেনে না পরে অবশ্য আপনার নাম বললো আপনার বাবার নাম দাদার নাম সবকিছু গড়গড় করে বলে দিল। 

- কিরকম দেখতে? 

- * পরে * বাঁধা ছিল তাই মুখ দেখতে পারিনি। 

সাজু বাইকে উঠে বসলো, গতকাল রাত দশটার সময় যখন দাদার সঙ্গে কথা হয়েছে দাদা এসব কিছু বলে নাই। সকাল থেকে চার পাঁচবার কল করেছে কিন্তু অপরিচিত কোনো মেয়ের কথা তো বলে নাই কেউ। 

বাড়িতে গিয়ে সাজু পুরোপুরি অবাক, ঘরের সম্মুখে সিঁড়িতে বসে আছে রামিশা সাজুর দাদি ও আরও দুজন মহিলা। রামিশাকে দেখে সাজু যেন বেশিই হতবাক হয়ে গেল। ঘাড়ের ব্যাগটা রেখে সরাসরি রামিশাকে বললো, 

- তুমি এখানে? আর কখন এসেছ? 

- গতকাল রাতে। 

- কিন্তু কীভাবে? তুমি তো কোনদিন আসোনি তবে চিনলে কীভাবে। 

- প্রথমে ভেবেছিলাম বাগেরহাট এসে খুঁজে পাবো কিন্তু সেটা আর হলো কোথায়? পরে আপনার বন্ধু সজীব ভাইকে কল দিলাম তিনি আমাকে সম্পুর্ণ ঠিকানা বলে দিল। 

- তো আমাকে জিজ্ঞেস করলে কি হতো? 

- আপনার চোখ গুলো যে হাঁসের ডিমের মতো বড়বড় হয়ে গেছে এটা হতো না। 

- রাতে যদি কোনো বিপদ হতো? 

- যদি কেউ অপহরণ করতো তাহলে আপনার খুঁজে বের করতেন। আর যদি খুন হতাম সেই খুনি আপনি বের করতেন। 

- ধুর, শুধু শুধু ফাজলামো ভালো লাগে না। 

- আপনি রাগ করবেন না সাজু ভাই, আপনার রাগকে আমি অনেক ভয় করি। 

- তাহলে না বলে কেন এলে? এটা গ্রামের বাড়ি এখানে সবাই এগুলো সহজভাবে নেয় না৷ 

- ভুল হয়ে গেছে। 

★★

বাড়িতে এসেও সাজুর মনটা চিন্তিত, চট্টগ্রামের কাউন্টার থেকে নয়নের কিছু জানা যায় নাই। মিনহাজ তবুও আশা ছাড়ছে না, বলে যেভাবেই হোক আমি বের করবো। 

দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে সাজু কাছে একটা অপরিচিত নাম্বার দিয়ে কল এসেছে। সাজু কল রিসিভ করতেই বললো, 

- কেমন আছেন ভাইজান? 

- জ্বি আলহামদুলিল্লাহ, আপনি? 

- আমার কথা বাদ দেন, ভাইজান আমি নয়ন বলছিলাম চিনতে পেরেছেন? যার মায়ের মৃত্যুর মামলা আপনি বের করার চেষ্টা করছেন। 

চলবে...

  
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#5
 পঞ্চম_পর্ব


- নয়ন বললো, বিশ্বাস করুন আমি বাবাকে গুলি করিনি। আমি অস্ত্র পাবো কোথায়? হয়তো সেদিন বিমানবন্দর যেতে পারলে কিছুক্ষণ বকাবকি করে ছেড়ে দিতাম। 

- সাজু বললো, কিন্তু কাজলের কাছে তো তুমি বলছো যে খুনাখুনি হবে তাই সে যেন তোমার মামাতো ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাহলে তুমি যদি সেরকম নিয়্যাত না করো তবে মোবাইল নাম্বার দিলে কেন? 

- ওটা রাগের মধ্যে বলেছি, তাছাড়া মানুষ কথার মধ্যে কতকিছুই বলে কিন্তু কাজে করতে পারে কতজন? 

- তুমি এখন কোথায়? 

- আমি নারায়ণগঞ্জ। 

- সেখানে কীভাবে? আর কেন? 

- আমি এখানেই পড়ে ছিলাম, কেউ হয়তো আমাকে বাসের মধ্যে নেশা জাতীয় কিছু করেছে। সাধারণত বাসের ভিতরে যেগুলোর মাধ্যমে যাত্রী অজ্ঞান করে সবকিছু নিয়ে যাওয়া হয়। আমার স্পষ্ট মনে আছে কুমিল্লা হোটেল পার হয়ে আমি কিছুটা ক্লান্ত বোধ করি। এরপরই আস্তে আস্তে আমি কোথায় হারিয়ে গেছি জানি না। যখন জ্ঞান ফিরেছে তখন আমি একটা লোকের বাসায়। 

- তুমি কি এখনো সেই বাসায়? 

- জ্বি, আমার মোবাইল মানিব্যাগ যাবতীয় কিছুই নেই আমার কাছে। কাজলের নাম্বার মুখস্থ ছিল তাকে কল দিলাম তারপর তার কাছ থেকে যতটা জানার তা জানলাম। আপনার নাম্বারটা আমি কাজলের কাছ থেকে নিয়েছি। 

- তুমি কি গ্রামের বাড়িতে আসবে? 

- আপনি বললে যাবো, তবে আমি কাজলকে বলেছি মিনহাজের নাম্বার দিতে। মামার কাছেও জিজ্ঞেস করে দেখি কি করতে বলে, তারপর যা করার করবো। 

- তোমার মামার সঙ্গে যোগাযোগ করার দরকার নেই তুমি বরং বাগেরহাট আসো। টাকা না থাকে তো আমি দিচ্ছি, তুমি সরাসরি আমাদের বাড়িতে আসো। আমি বিকেলে তোমার নানা বাড়িতে যাবো, তারপর তোমাদের থানার পুলিশের সঙ্গে কথা বলে সবটা ক্লিয়ার হই। 

- টাকা লাগবে না, কাজলের কাছ থেকে নিয়েছি টাকা, আপাতত চলবে। 

- তাহলে বাগেরহাট আসো, আজকে রাতে রওনা দাও আমি বরং বিকেলের দিকে দেখি কি করা যায়। 

- ঠিক আছে ভাই। 

★★

বিকাল ৩ঃ১০ 

রামিশার রুমের সামনে গিয়ে দরজা ধাক্কা দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল সাজু। রামিশা দরজা খুলতেই সাজু বললো, 

- তাড়াতাড়ি তৈরি হও নয়নের গ্রামে যাবো। 

- এখনই? 

- হ্যাঁ কেন সমস্যা আছে নাকি? তাহলে বলো একা একা চলে যাবো তোমাকে যেতে হবে না। 

- আরে ধুর, আমি এসেছি আপনার সঙ্গে মামলার রহস্য দেখবো বলে আর আপনি বলেন কিনা যে আমি যাবো না। 

- তাহলে কথা না বলে তাড়াতাড়ি তৈরি হও। 

নিজের বাইক নিয়ে সাজু রওনা দিল। সে যখন শহরে থাকে তখন তার এই বাইক বাড়িতেই পরে থাকে। যখন বাড়িতে আসে তখন শুধু ব্যবহার করা হয়। রামিশাকে নিয়ে বাইকে করে তেরখাদা উপজেলার বাদালপুর গ্রামের দিকে ছুটে চলেছে সাজু। 

গ্রামের মধ্যে যখন পৌঁছালো তখন পাঁচটা পেরিয়ে গেছে, লোকের কাছে জিজ্ঞেস করে করে নয়নের নানা বাড়ি এসে উপস্থিত হলো তারা। নয়নের খালা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন, গ্রামের মহিলা তাই মনে মনে ভয় পাচ্ছে সেটা বোঝা যাচ্ছে। 

- সাজু বললো, আমি আপনার সঙ্গে নয়নের মায়ের বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই। আপনার বোন সম্পর্কে আপনি সবচেয়ে বেশি জানেন এটা আমার বিশ্বাস। 

- কিন্তু আপনারা? আর বুবুর বিষয় কি জিজ্ঞেস করবেন? 

- আপনার বোন যেদিন মারা গেছে সেদিন সকাল বেলা আপনার সঙ্গে তার কথা হয়েছিল? 

- হ্যাঁ, বুবু আমাকে বলেছিল যে নামাজ পড়ে তার রুমে এক কাপ চা দিয়ে আসতে। 

- আপনাদের বাড়িটা অনেক বড়, কাজের লোক নেই কেউ? 

- এখন নেই তবে একসময় ছিল, আমার বাবার সময় থেকে আমাদের রাশেদা খালা কাজ করতো। বাবার মৃত্যুর পরেও তাকে রাখা হয়েছে কারণ তিনি দীর্ঘদিন ধরে ছিলেন। আমাদের টাকা পয়সার সমস্যা ছিল তবুও তাকে রাখা হয়েছে। 

- এখন তিনি কোথায়? 

- বুবু মারা যাবার তিন মাস আগে তিনি ইচ্ছে করে চলে গেছেন। 

- কেন কোনো কারণ ছিল? 

- আসলে আমার স্বামী তাকে কিছু বকাবকি করে যেটা তিনি সহ্য করতে পারেননি। যদিও সামান্য বকাবকি তবুও তিনি সেটাই বড় করে দেখেছেন। রেবেকা বুবু অনেক চেষ্টা করছিল রাখার জন্য কিন্তু তিনি থাকেননি। 

- রামিশা বললো, আমরা তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে কোথায় গেলে পাবো? 

- শুনেছি তিনি ভিক্ষা করেন। 

- কি বলেন? তার পরিবারে তেমন কেউ নেই নাকি? 

- একটা নাতনী ছিল, তার বিয়ে হয়েছিল বু্ুর মৃত্যুর ছ'মাস আগে। নাতনীর বিয়ের পর থেকে তিনি এ বাড়িতে আর থাকতে চাননি৷ তার নাতনীর বিয়ের সকল খরচ বুবু দিয়েছিল, দুলাভাইর কাছ থেকে টাকা এনে বুবু নিজের হাতে বিয়ে দিয়েছেন। 

- সাজু বললো, আপনি কোন ক্লাস পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন? 

- ক্লাস এইট, কিন্তু কেন? 

- আর আপনার বুবু? 

- বুবু মেট্রিক পাশ করেছিল। 

- যেদিন রেবেকা আফরোজ খুন হয়েছে সেদিন আপনাদের বাড়িতে কে কে ছিলেন? আপনার স্বামী কি বাড়িতে ছিলেন? 

- খুন হয়েছে মানে? আপু তো আত্মহত্যা করেছে সেটা গ্রামের সবাই জানে। 

- হ্যাঁ আমিও জানি, আসলে যেকোনো ঘটনা সত্য কিংবা মিথ্যা। আমরা প্রথমে যেটা প্রচার করবো সেটাই প্রচলিত হয়ে যায়। এবার বলেন সেদিন কে কে ছিল আপনাদের বাসায়? 

- আমি আমার স্বামী আমার দুটো মেয়ে নয়ন আর বুবু। তবে ভোরবেলা বড়ভাইজান চট্টগ্রাম থেকে এসেছিলেন। 

- নয়নের মায়ের মৃত্যুর পরে এসেছিল নাকি তার আগেই এসেছিল? 

- মনে হয় পরেই হবে, কারণ আমরা যখন বুবুর লাশ নিয়ে কান্নাকাটি করি তখন তখন হঠাৎ করে দেখি ভাইজান সবার মধ্যে উপস্থিত। 

- আমরা একটু সেই ঘরটা দেখতে চাই। 

- সেই ঘর তো তালাবদ্ধ, রুমের চাবি একমাত্র ভাইজানের কাছে। বুবুর মৃত্যুর পর থেকে তালা মেরে আটকে রাখা হয়েছে ঘরটা। 

- এখন আমরা গেলে কি তালা ভেঙ্গে প্রবেশ করতে হবে? 

- হ্যাঁ কিন্তু সেটা আমি করতে দেবো না, কারণ আপনারা গোয়েন্দা বা আর যাই হোক কিন্তু এভাবে প্রবেশ করতে দেবো না। 

- রামিশা বললো, যদি পুলিশ নিয়ে আসি তাহলে ঢুকতে দেবেন? 

সাজু তখন রামিশাকে থামিয়ে দিয়ে বললো, 

- ঠিক আছে আপনাকে প্রবেশ করতে দিতে হবে না, আমরা আবার আসবো। তবে আরেকটা তথ্য দিয়ে একটু সাহায্য করবেন? 

- বলেন। 

- আপনাদের গ্রামের মধ্যে সম্মানিত এমন কোনো ব্যক্তি আছে যার কথা অত্র এলাকার সবাই মান্য করে চলে। এমনকি থানা পর্যন্তও যাদের কথার খুব মূল্য আছে এমন কেউ? 

- হাজী সাহেব আছে? 

- কে উনি? 

- খুব ভালো মানুষ, আমাদের এলাকার মধ্যে তার কথার দাম বেশি। হাজী ফজলুল সাহেব যেকোনো বিচার-আচার বা সামাজিক কাজের জন্য তাকে ডাকা হয়। 

- ঠিক আছে মেলা মেলা ধন্যবাদ। 

★★

বাইকে উঠে সাজু রামিশাকে বললো, 

- তুমি তখন সেই কাজের মহিলার সঙ্গে দেখা করার কথা বললে কেন? 

- কারণ একটা পরিবারের মধ্যে কার সঙ্গে কেমন সম্পর্ক, কে কেমন চরিত্রের, কে কাকে বন্ধু বা শত্রু মনে করে ইত্যাদি সবকিছু সেই বাসার কাজের মানুষ অবশ্যই কিছুটা জানে। তাই ভাবলাম যদি আমরা তার সঙ্গে দেখা করতে পারি তাহলে তার কাছ থেকে জানতে পারতাম। 

- কি জানতে পারতাম? আর তিনি সবকিছু যে বলবেন তার গ্যারান্টি কি? 

- নয়নের মায়ের কে কে খারাপ চাইতেন, কার সঙ্গে তার বেশি শত্রুতা ছিল এসব। যেহেতু নয়নের মা নিজে তার স্বামীর কাছ থেকে টাকা এনে নাতনীর বিয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সেহেতু সে অবশ্যই নয়নের মায়ের খুনিকে ধরার জন্য আমাদের সাহায্য করবে। 

- বাহহ বাহহ, তুমি তো দেখি রহস্যের গন্ধ বুঝতে শিখে গেছো। হঠাৎ করে যদি আমি মারা যাই, তাহলে তো তুমিও আমার পরিবর্তে মামলা নিয়ে লড়তে পারবে। 

- সাজু ভাই...? 

- কি হলো! 

- আপনি এমন কথা আর কখনো বলবেন না, আপনি কেন মরার কথা বলেন? খারাপ লাগে। 

- আচ্ছা আর বলবো না। 

- একটা কথা বলবো সাজু ভাই? 

- বলো। 

- আমরা সেই বিশিষ্ট ভদ্রলোকের কাছে গিয়ে কি করবো জানতে পারি? 

- সেখানে গেলেই বুঝতে পারবে। 

|
|
|

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে, হাজী ফজলুল সাহেব তার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। ছোট্ট একটা মাঠ আর সেই মাঠের অদূরে পশ্চিমাকাশে সূর্য নিবুনিবু করে জ্বলছে। সাজু ও রামিশা আসার পরে তিনি তাদের নিয়ে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করলেন। উঠোনে চেয়ার পাতা আছে সেখানে বসে বললেন, 

- আমি মসজিদে নামাজ পড়তে যাবার জন্য বের হয়েছিলাম। এখনো কিছুটা সময় বাকি আছে তাই সময় দিতে পারবো তবে বেশিক্ষণ নয়। অপেক্ষা করতে বলতাম কিন্তু আজ বৃহস্পতিবার মসজিদে হালাকা জিকির আছে। 

- আমি তেমন কিছু জিজ্ঞেস করবো না, শুধু দুটো প্রশ্ন করবো। 

- জ্বি। 

- আজ থেকে নয় বছর আগে দেলোয়ার হোসেন এর স্ত্রী রেবেকা আফরোজ যখন আত্মহত্যা করে তখন তার লাশ পোস্টমর্টেম করা হয়নি। এতটুকু আমি জানি, কিন্তু আমি জানতে চাই যে লাশ নেবার জন্য পুলিশ যখন এসেছিল তখন কি আপনার সঙ্গে কথা হয়েছে? 

- হ্যাঁ আফজাল খন্দকার এসেছিল আমার কাছে সঙ্গে তার ছোট বোনের স্বামী খলিল ও ছিল। 

- তারাই কি আপনাকে অনুরোধ করেছিল যেন লাশ পোস্টমর্টেম করা নাহয়? 

- হ্যাঁ, ওরা বলেছিল রেবেকা ধার্মিক একটা মেয়ে তাই তার লাশ নিয়ে কাটাছেঁড়া করার দরকার নেই আপনি পুলিশকে অনুরোধ করেন। আমরা তো আত্মীয়রা আছিই, তবুও আপনি একটু বলেন তবে কাজ হবে। 

- তারপর আপনার কথাতে কাজ হয়ে গেল? 

- সবটা নয় কিছুটা, আমি তাদের পরামর্শ দিলাম যে একটা সুইসাইড নোট লিখে সেটা রেবেকার বলে চালিয়ে দিতে। মৃতের বাড়িতে সবাই যখন কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে তখন আফজাল নিজে চিঠি লিখে সেটা আবার টেবিলে রাখে। তারপর সুযোগ বুঝে সেটা বাহির করে ততক্ষণে বেলা এগারোটা বেজে গেছে। তবুও আফজাল নিজে যখন চিঠি বের করেছে তখন কেউ কিছু বলে নাই। 

- আপনার কি মনে হয়নি যে কাজটা একদমই অনুচিত হয়েছে, রেবেকা আত্মহত্যা করেনি সে খুন হয়েছে এমন মনে হয়নি? 

- না মনে হয় নাই, কারণ রেবেকা যেদিন শশুর বাড়ি থেকে এখানে এসেছে সেদিন তার সঙ্গে পথে আমার দেখা হয়েছিল। তারপর তারপর কান্না করে করে বললো বাঁচার ইচ্ছে নেই, কপাল থেকে সবকিছু শেষ হয়ে গেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। 

- তাই আপনিও ভাবলেন যে তিনি আত্মহত্যা করে মারা গেছে? 

- হ্যাঁ, হয়তো চিঠি লিখে যায় নাই ঠিকই কিন্তু সে আত্মহত্যা করেছে এটা নিশ্চিত ছিলাম। 

- মসজিদে আজান দিচ্ছে, আপনি বরং নামাজ পড়তে যান আমরা এ বিষয় নিয়ে আবার কথা বলবো। 

- মনে হয় দরকার নেই, কারণ সবকিছুই আমি বলে দিয়েছি। 

- সেটা সময় বলে দেবে। 

সাজু আর রামিশা হাঁটতে লাগলো, হাজী সাহেব এখনো বসে বসে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। এতটুকু ছোকরার এমন কঠিন কথার ধরণ দেখে অবাক হয়ে রইলেন। 

★★

গ্রাম থেকে বেরিয়ে মেইন রাস্তায় উঠতে উঠতে চারিদিকে অন্ধকার হয়ে গেল। বাইকের পিছন থেকে রামিশা বললো, 

- বুড়োকে কেমন সন্দেহ হচ্ছে সাজু ভাই। 

- কিরকম? 

- যা জিজ্ঞেস করা হয়েছে সবকিছুর ঝটপট করে জবাব দিয়ে দিল, মনে হয় যেন আগে থেকে তার মনের মধ্যে সকল উত্তর সাজানো ছিল। নাহলে কিছু উত্তর দেবার সময় তার ভাবনার দরকার ছিল। তারপর জিজ্ঞেস করতে পারতো তোমরা কারা? কিসের জন্য তোমাদের বলবো? 

- হুম সেটাই, তবে আমি চিন্তা করছি অন্য কিছু। 

- কি সেটা? 

- আমি ভেবেছিলাম নয়নের মায়ের খুন এবং তার বাবার উপর আক্রমণ দুটোই একই ব্যক্তির কাজ। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে দুটো ভিন্ন, নয়নের মায়ের খুন করেছে একজন। আর সেই সূত্র ধরে নয়নকে ফাঁসাতে অন্য কেউ তার বাবার উপর আক্রমণ করেছে। 

- তাহলে তো..... 


চলবে... 

 
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#6
পর্বঃ- ০৬


- রাতুল বললো, বাবা আজকে বিকেলে নাকি সেই গোয়েন্দা ছেলেটা নয়নের খালার কাছে গিয়ে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করেছে। 

- মনোয়ার হোসেন বললেন, ছেলেটাকে দেখে আমার সুবিধা হচ্ছে না। এমনিতেই তোর চাচার জন্য ঝামেলা হচ্ছে, এদিকে নয়ন গুন্ডাটা আবার কখন কি করে আল্লাহ জানে। 

- বাবা তুমি বরং ছোট চাচার কথা না শুনে নয়নের নামে মামলা করে দাও। পরে চাচা শুনলেও কিছু বলতে পারবে না, তাই করো বাবা। 

- আচ্ছা তোর তো এখনো মনে থাকার কথা কারণ নয়নের মায়ের মৃত্যুর সময় তোর বয়স ছিল ২১ বছর। নয়নের মায়ের লাশ দেখে কি একবারও মনে হয়েছিল যে তোর চাচি খুন হয়েছে। 

- না বাবা, তবে এ কথা ওই গোয়েন্দাকে বোঝাতে চাওয়া বোকামি হয়ে যাচ্ছে। আমাদের কারো কথা বিশ্বাস করতে চাইবেন না আমি বরং চাচাকে দিয়ে একটু চেষ্টা করবো। 

- তাই কর, নয়ন নষ্ট হবার পর তোর চাচার কাছে তুই ই তার ছেলে। তাই তোর কথা শুনবে আমার বিশ্বাস আছে, কারণ সে তোকে পছন্দ করে। তুমি তার ছেলের অভাব পুরন করেছিস। 

নয়নের বাবা দেলোয়ার হোসেন বিছানায় এখনো বসে আছে, তিনি অনেকক্ষণ ধরে অনেকটা যেন সুস্থবোধ করছেন। তার ইচ্ছে করছে এখনই গ্রামে চলে যেতে কিন্তু ডাক্তার আরো দু-তিনদিন থাকতে বলার হুকুম দিয়েছে। 

রুমের মধ্যে তার দ্বিতীয় স্ত্রী জাহানারা, রাতুলকে দেখে তিনি বলেন, 

- তোমার আঙ্কেলের কাছে একটু বসো তো রাতুল আমি একটু ওয়াশরুমে যাবো। 

রাতুল যেন এটাই চাচ্ছিল সে তৎক্ষনাৎ চাচার সামনে চেয়ারে বসে পড়লো। 

- চাচাজান আমি কিছু কথা বলতে এসেছি। 

- বলো বাবা। 

- আপনি একটু ওই গোয়েন্দা ছেলেটাকে ভালো করে বলেন যেন চাচির মৃত্যুর বিষয় নিয়ে গ্রামের মধ্যে ঝামেলা না করে। চাচিা মারা গেছে নয় বছর হয়ে গেছে, এখন আবার যদি এসব নিয়ে কথা ওঠে তাহলে কি বিশ্রী লাগে। 

- তা তো লাগবেই। 

- আপনি বলবেন যে চাচির মৃত্যুর বিষয় নিয়ে আমরা কোনো মামলা চাই না। সে যেন গ্রামের মধ্যে গিয়ে এসব নিয়ে মানুষের মনের মধ্যে বাজে আতঙ্ক সৃষ্টি না করে। 

- কিন্তু আমি তো তাকে বলেছিলাম যে তোমার চাচি যদি সত্যি সত্যি খুন হয়ে থাকে তাহলে যেন তাকে খুঁজে বের করে। এখন আবার নতুন করে নিষেধ করবো কীভাবে? 

- এখন আবার কল দিয়ে বলবেন যে তার গ্রামের বাড়িতে প্রবেশের কারণে গ্রাম থেকে সবাই কেমন কথাবার্তা শুরু করেছে। 

- বলো কি? গ্রামের বাড়িতে গেছে নাকি? 

- হ্যাঁ আজকে বিকেলে চাচির বাবার বাড়িতে গিয়ে ছোটখালার সঙ্গে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করেছে। তারপর নাকি হাজী সাহেবের কাছেও গেছিলো। 

রাতুলেত সূক্ষ্ম বোঝানোয় কাজ হয়েছে, দশটার দিকে দেলোয়ার হোসেন সাজুর নাম্বারে কল দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো। একটু পরে রিসিভ করে সাজু গম্ভীর গলায় বললো, 

- হ্যালো আসসালামু আলাইকুম। 

- আমি দেলোয়ার হোসেন বলছি, নয়নের বাবা। 

- সালামের জবাব দেওয়া ওয়াজিব। 

- সরি, ওয়া আলাইকুম আসসালাম। 

- এবার বলেন, আপনার শরীর কেমন আছে? 

- অনেক ভালো আছে, ইচ্ছে করছে এখনই বের হয়ে ছুটে যাই জন্মভূমিতে। 

- আরেকটু অপেক্ষা করলে এমনিতেই ডাক্তাররা ছুটি দিয়ে দিবেন। ডিনার করছেন? 

- হ্যাঁ করেছি। 

- আপনি যেটা বলার জন্য কল দিয়েছেন এখন সেটা বলতে পারেন। 

- আসলে সাজু সাহেব আমি চাচ্ছি আমার স্ত্রীর বিষয়টা এখানেই চাপা থাকুক। আপনি আজকে গ্রামের মধ্যে গেছেন তাই নিয়ে গ্রামের বাড়িতে একটা উত্তেজনা ছড়িয়ে গেছে। 

- তো সমস্যা কি? একটা খুনের রহস্য বের করতে গেলে মানুষের মধ্যে আগ্রহ তো আসবেই। 

- কিন্তু আমি তো চাই না সেটা, কারণ আমার স্ত্রী অনেক আগেই মারা গেছে। তাই নতুন করে তাকে নিয়ে আর সবার মধ্যে কিছু তুলতে চাই না। 

- একটা কথা বলবো দেলোয়ার সাহেব? 

- জ্বি বলেন। 

- কথাগুলো আপনাকে আপনার আপনজনেরা শিখিয়ে দিচ্ছে তাই না দেলোয়ার সাহেব? 

- ক্যা ক্যা কেন? আমি কি ভালোমন্দ বুঝতে পারি না নাকি, অবশ্যই বুঝতে পারি এখন। 

- আপনাকে আমি বলেছিলাম আত্মীয়ের কাছ থেকে সাবধানে থাকতে। আর আপনি কিনা সেই আত্মীয়ের কথা মতো আমাকে এই পথ থেকে সরে যেতে বলেন? 

- হ্যাঁ কারণ আপনাকে বিষয়টা বুঝতে হবে। 

- আমাকে কিছু বুঝতে হবে না দেলোয়ার সাহেব, বুঝতে হবে আপনার। আপনাকে আমি এতটা সতর্ক করার পরও মনে হচ্ছে না কিছু? তারা কেন এই মামলায় আমাকে যেতে দিতে চায় না এতটুকু বুঝতে পারেন না আপনি? 

- তাহলে কি...! (সামনে রাতুল বসে আছে তাই সম্পুর্ণ কথা শেষ করলেন না তিনি।) 

- হ্যাঁ সেটাই আমার সন্দেহ, তবে আরো কিছু লোক জড়িত তাদের যথাসময়ে বের হবার একটা সম্ভবনা রয়েছে। 

- আচ্ছা ঠিক আছে। 

- আপনি তাদের কথা শুনবেন না, আপনার স্ত্রীর খুনিদের বের করতে পারলে আপনার মনটাও ভালো লাগবে। 

- হ্যাঁ অনেক। 

- নিজের যত্ন নিবেন, তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যতো দ্রুত সম্ভব গ্রামের বাড়িতে আসুন। আন্টির মৃত্যুর সকল রহস্য গ্রামের ভিতর থেকে বের হবে। 

- জ্বি দোয়া করবেন। 

চাচার কথা শুনে হতাশ হয়ে গেল রাতুল, ধারণা ছিল তার চাচা সবকিছু নিষেধ করবে। কিন্তু তার উল্টো হয়ে গেছে দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল কিন্তু প্রকাশ করলো না। 

চেয়ার ছেড়ে উঠে কেবিন থেকে বের হয়ে গেল রাতুল। 

★★★

মাগরিবের পরে জিকির দুআ শেষে এশার আজান হবার পর মসজিদে নামাজ পড়ে হাজি সাহেব চলে গেলেন নয়নের নানা বাড়ি। রাবেয়ার স্বামী খলিল তখন বাড়িতে ছিল, হাজী ফজলুল সাহেব এসেছে শুনে ভিতরে নিয়ে গেল। 

হাজী সাহেব বললো, 

- আমি তোমাদের সঙ্গে খুব পুরনো একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে এসেছি। 

- রাবেয়া বললো, সেটা কি বুবুর মৃত্যুর কাহিনি? 

- একদম ঠিক ধরেছো, তোমার বোনের মৃত্যুর বিষয় নিয়ে কিছু বলতে এসেছি। আজকে সন্ধ্যায় একটা ছেলে আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল, তার সাথে আরেকটা মেয়েও ছিল। 

- তাহলে আপনার ওখানে যাবার আগে আমাদের বাড়িতে এসেছিল। আমার জামাই ঘরে ছিল না তাই আমাকে অনেক প্রশ্ন করেছেন। 

- ছেলেটার অদ্ভুত কথাবার্তা কিন্তু খুব শান্ত, যেন খুব ঠান্ডা স্বভাবের মানুষ। যেকোনো কথা এতটা সুন্দর করে গুছিয়ে বলে যে তাকিয়ে থাকতে নেশা ধরে যায়। 

- জ্বি, তবে অনেক ভয় ভয় লাগে। 

- কেন? 

- তা তো জানি না। 

- আমি তোমাদের স্বামী স্ত্রী দু'জনকে একটা কঠিন প্রশ্ন করি। 

- করেন। 

- তোমরা কি সত্যিই কিছু জানো মৃত্যুর বিষয়ে? 
সত্যি সত্যি যায় রেবেকা আত্মহত্যা না করে খুন হয়ে থাকে সেই বিষয় কিছু জানো কি? 

- রাবেয়া বললো, না না কীভাবে জানবো? বিশ্বাস করেন আমরা যা জানতাম সবকিছুই তো সেদিন বলে দিলাম। 

- এমন তো হতে পারে, সকাল বেলা পানির সঙ্গে তুমিই বিষ মিশিয়ে রেখেছো৷ তোমার বোন নামাজ পড়ছিল তুমি রুমের মধ্যে গিয়ে টেবিলের পানির জগে বিষ মিশিয়ে দিলে। তারপর তার মৃত্যুর পর সবাই যখন লাশ নিয়ে ব্যস্ত তখন তুমি সেই বাকি বিষাক্ত পানিটুকু সরিয়ে নিলে। 

রাবেয়া শব্দ করে কেঁদে উঠছে, 

- আপনি কি বলেন হাজি সাহেব? 

- আমি শুধু সন্দেহের কথা বলছি। দুদিন পরে সেই গোয়েন্দা ছেলেটা ঠিক এভাবেই হয়তো কথা বলতে আসবে৷ 

- খলিল সাহেব বললো, আপনি এভাবে সরাসরি রাবেয়ার উপর দোষ দিতে পারেন না। মানসিক ভাবে এটা একটা আক্রমণ, এগুলো কিন্তু ঠিক হচ্ছে না হাজি সাহেব। 

- এটা খুব সহজ প্রশ্ন, যেহেতু তদন্ত শুরু করেছে সেহেতু এসব কথা উঠবে ই৷ কিন্তু আমি আমার সম্মান ধরে রাখতে চাই, সেদিন আমার অনুরোধে রেবেকার লাশ পোস্টমর্টেম করতে নেয় নাই। কিন্তু এখন যদি কোথাকার কোন পিচ্চি একটা ছেলে এসে বের করে ফেলে এটা খুন হয়েছে। তাহলে আমি তখন কি জবাব দেবো, কি বলবো তাদের? 

- কিন্তু তাই বলে আপনি রাবেয়াকে? 

- বাড়িতে আর কে ছিল? তোমরা ছাড়া আর তো কেউ ছিল না তাই না? রাবেয়া যদি কিছু না করে তাহলে তুমি করছো? 

- আমি কেন? পাগল নাকি আপনি? 

- একটা কথা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কান খুলে সুন্দর করে শুনে নাও। সত্যি সত্যি যদি বের হয়ে যায় যে তোমরা কিছু করেছো তাহলে কিন্তু তোমাদের পুলিশ গ্রেফতার করার আগেই আমি খবর করে ছেড়ে দেবো। 

- রাবেয়া বললো, সেই লোকটা কি আমাদের সন্দেহ করেছে হাজি সাহেব? আপনার কাছে আমাদের বিষয় কিছু বলে গেছে? 

- না, বলে নাই। আমি মসজিদে জিকির করতে মন বসাতে পারিনি আজ। বারবার কেবল এসব মনের মধ্যে আসছিল, তাই সাবধান করতে এসে গেলাম। 

★★

অন্ধকার বেলকনিতে বসে বসে গভীর চিন্তায় ডুবে আছে সাজু, মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন জমা। কিন্তু তার সঠিক উত্তর মিলছে না, একবার একটা মিলে তো আরেকবার সেটা গন্ডগোল হয়ে যায়। কিছুটা মুহূর্ত সে ভাবনার আড়ালে গিয়ে বাহিরে তাকিয়ে রইল। একটা মাঝারি গাছের উপর অনেক গুলো জোনাকিপোকা বসে আছে। আশেপাশের গাছের উপর কোনো জোনাকিপোকা নেই, সাজু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। 

আকাশ থেকে পৃথিবীর দিকে তাকালেও নিশ্চয়ই এভাবে দেখতে পাওয়া যায়। যেটা শহরাঞ্চল সেটা এভাবে পাশাপাশি অনেক আলো জ্বলে। আর নদী কিংবা বনজঙ্গল নিস্তব্ধ অন্ধকার। যে গাছে সেই জোনাকিপোকা বসে আছে সেটা মনে হয় তাদের শহর হতে পারে। 

রুমের মধ্যে সাজুর দাদি প্রবেশ করলো, সাজুকে বেলকনিতে দেখে তিনি ডাক দিলেন। নিজে তখন বিছানায় বসে পড়ছেন আর সাজু বেলকনিতে হতে রুমের মধ্যে গিয়ে দাদির কাছে বসলো। 

- কি বলবা দাদি? 

- হ্যাঁ, তোর কি শরীর অসুস্থ নাকি? রাতে তেমন খেতে পারলি না যে। 

- তেমন কিছু না, রামিশা ঘুমিয়েছে? 

- হ্যাঁ সে দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়েছে। সাজু একটা কথা জিজ্ঞেস করবো? তোর দাদা আমাকে বলতে বলেছেন তাই বলতে এসেছি। 

- বলো। 

- মেয়েটাকে কি তুই পছন্দ করিস? আর মেয়েটা তোকে খুব পছন্দ করে? 

- কোন মেয়ে, রামিশা? 

- হ্যাঁ। 

- না দাদি, আমাদের মধ্যে এমন কোনো সম্পর্ক নেই। বন্ধু, খুব ভালো বন্ধু আমরা। পারিবারিক ভাবে ওর স্বাধীনতা আছে তাই আমাদের বাড়িতে পর্যন্ত চলে এসেছে। 

- তোর দাদা বলছিল যদি দুজনের মতামত থাকে তাহলে, কতদিন আর একা একা থাকবি? 

- ধুরো দাদি তুমি কি যে বলো না। এসব কথা ভুল করেও রামিশাকে বলতে যেও না তাহলে মেয়েটা খুব কষ্ট পাবে। কারণ তার মনের মধ্যে এমন কিছু নেই তাই সহ্য করতে পারবে না। 

- কিন্তু... 

- বাদ দাও দাদি, তোমার ছেলের সঙ্গে কথা হয় নাকি? মানে আমার বাবার সঙ্গে। 

- সন্ধ্যা বেলা কল দিছিল, তুই বাড়িতে শুনে খুব খুশি মনে হলো তাকে। 

- বাবাকে বলবা আমি তার সঙ্গে কথা বলতে চাই সে যেন আগামীকাল জরুরিভাবে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। 

- আচ্ছা ঠিক আছে, তাহলে এখন ঘুমিয়ে পড়। 

দাদি চলে যাবার পর সাজু কিছুক্ষণ রামিশার কথা ভাবলো, তারপর মোবাইল বের করে প্রথমে নয়ন এর নাম্বার বের করলো। কাজলের কাছে টাকা নিয়ে একটা ছোট মোবাইল কিনেছে। লোকটার কাছ থেকে একটা সিমকার্ড নিয়ে সে বাগেরহাটে রওনা দিয়েছে আটটার দিকে। 

কথা হলো, নযন এখন মাওয়া ঘাটে ফেরির জন্য অপেক্ষা করছে। নয়নের কাছ থেকে তখন সাজু ওই বাসের সুপারভাইজারের নাম্বার নিয়ে রাখল। কল কেটে দিল। 

আরো কিছুক্ষণ ভাবার পরে নয়নের মামাতো ভাই মিনহাজের নাম্বার বের করলো। মিনহাজ হয়তো মোবাইল হাতে নিয়ে ছিল তাই সঙ্গে সঙ্গে রিসিভ করতে পেরেছে। 

- আসসালামু আলাইকুম সাজু ভাই। 

- ওয়া আলাইকুম আসসালাম, কেমন আছেন? 

- জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভাই। 

- নয়ন আজকে আমাদের বাড়িতে আসতেছে, তার খোঁজ পাওয়া গেছে জানেন? 

- হ্যাঁ কাজল বলেছে। 

- আপাতত আমাদের বাড়িতে আসুক তারপর বাকিটা দেখা যাবে, কি বলেন? 

- সেটাই খুব ভালো হবে ভাই। 

- আপনাকে আমি অন্য একটা কাজের জন্য কল করেছি, সেটা বলি? 

- বলেন। 

- নয়নের মায়ের সেই ডায়েরিটা কুরিয়ার করে পাঠিয়ে দিতে হবে। ডায়েরিটা পড়া এই মুহূর্তে খুব জরুরি মনে হচ্ছে, আপনি ইমারজেন্সি ভাবে এটা পাঠিয়ে দেন। 

- বাবা তো কালকে মনে হয় গ্রামের বাড়িতে যাবে তাহলে তার কাছে পাঠিয়ে দেবো ভাই? 

- না না কোনো দরকার নেই। আপনার বাবা যেন জানতেই না পারে আপনি পাঠাচ্ছেন। আপাতত তিনদিন আমি আপনাদের গ্রামের মধ্যে আর যাবো না। রহস্যের অনুসন্ধান তিনদিন বন্ধ রাখবো তারপর আবার শুরু করবো। এই তিনদিনের মধ্যে যেন ডায়েরিটা এসে পৌঁছাতে পারে। 

- ঠিক আছে ভাই। 

- ডায়েরির মধ্যে মনে হয় শুধু তাদের দুজনের কথা নেই বরং আরো কিছু আছে। যাদের পরিচয় বা সম্পর্ক জানা দরকার, রেবেকা আন্টি অনেক বুদ্ধিমতী ছিলেন। তাই নিশ্চয়ই সেখানে নতুন কিছু খুঁজে বের করতে পারবো। 

- ঠিক আছে আমি কালকে সকালে উঠে সবার আগে অফিসে গিয়ে কুরিয়ার করবো। 

- আচ্ছা। 

- নয়ন কোন গাড়িতে করে যাচ্ছে সাজু ভাই? 

- " বনফুল পরিবহন " সরাসরি রায়েন্দা পর্যন্ত যাবে তবে নয়ন আমাদের এখানে নামবে। 

- ওহ্ আচ্ছা ঠিক আছে। 

★★ 

জীবনে কিছু মানুষ থাকে যাদের কথা কখনো ফেলে দেওয়া যায় না। যে শুধু অধিকার নিয়ে একবার বললেই সেটা শতবার না না বলার পরও করতে ভালো লাগে। আজকে গল্প লিখতেছি রাত ৩ঃ৩২ থেকে। 

★★

সকাল দশটা। 

খুব আতঙ্কে বসে আছে সাজু, নয়নের নাম্বার বন্ধ। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ার পরে কতদূর এসেছে জানার জন্য কল দিয়ে দেখলো নাম্বার বন্ধ। সঙ্গে সঙ্গে সে সুপারভাইজারের সেই নাম্বারে কল দিল, সাজুর মনে আগে থেকে একটু 
সন্দেহ ছিল। তাই সে গতকাল রাতে নয়নের কাছ থেকে সুপারভাইজারের নাম্বার নিয়েছে। 

কিন্তু সেই সুপারভাইজারের নাম্বার বারবার কল বেজে কেটে যায় রিসিভ হয় না। সাজুর মনের মধ্যে ধারণা হয়ে গেল নিশ্চয়ই তারা পৌঁছে গেছে আর তাই এখন ঘুমাচ্ছে। তার মানে হচ্ছে একটা কিছু গন্ডগোল হয়েছে। 

এই বেলা দশটা পর্যন্ত কমপক্ষে ২০০ বার কল করেছে সাজ ভাই কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না। সাজুকে চিন্তিত দেখে রামিশা এগিয়ে এলো, সে এতক্ষণ রান্না ঘরে ছিল। 

- কি হয়েছে সাজু ভাই? 

- বুঝতে পারছি না, নয়নের নাম্বার সেই ফজরের সময় থেকে বন্ধ। ঢাকার গাড়ি এতক্ষণ ধরে কেন আসবে না? দেরি হলেও নয়নের নাম্বার বন্ধ কেন সেটাই চিন্তার বিষয়। নিশ্চয়ই বিপদ হয়েছে, মনটা বলছে বারবার। 

এমন সময় সাজুর নাম্বারে সেই সুপারভাইজারের নাম্বার দিয়ে কল এসেছে। সাজু তাড়াতাড়ি রিসিভ করে বললো, 

- আপনি কি "বনফুল পরিবহন" সুপারভাইজার বলছিলেন? 

- হ্যাঁ ভাই, কে আপনি? 

- আমার নাম সাজু, গতকাল রাতে আপনার গাড়িতে নয়ন নামের একটা ছেলে ছিল। তার আসার কথা ছিল বাগেরহাট পেরিয়ে আরও কিছু সামনের দিকে। কিন্তু তার নাম্বার বন্ধ। 

- কি নাম বললেন, নয়ন? 

- হ্যাঁ নয়ন। 

- তাকে তো নোয়াপাড়া মোড় থেকে তিনটা লোক বাস থেকে নামিয়ে রেখে দিয়েছে। 

- কি বলছেন, কিন্তু কেন? 

- তারা নাকি পুলিশের লোক, বাস সিগনাল দিয়ে দাঁড় করালো। আমরা সচারাচর রাতে ওসব স্থান থেকে যাত্রী তুলি, তখন ভোর চারটার মতো বেজে গেছে। তাদের সিগনাল দেখে গাড়ি দাঁড় করানোর পরে তারা গাড়িতে উঠে সেই ছেলেটাকে বলে "তোর নাম নয়ন না? চল আমাদের সঙ্গে "। 

- সাজু বললো, কারণ জিজ্ঞেস করেননি? 

- করেছিলাম কিন্তু তারা খুব খারাপ ব্যবহার করে আমাদের সঙ্গে, আমরা কোম্পানির গাড়ি চালাই ভাই। তাই তাদের সঙ্গে তর্কে না গিয়ে বাকি সকল যাত্রী নিয়ে চলে এসেছি। 

- যেখানে সেখানে মানুষের সিগনাল দেখে গাড়ি দাঁড় করানোর মজা বের করবো আপনার। যদি সেই ছেলেকে খুঁজে না পাই তাহলে আপনার এবং আপনার কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করবো। 

সাজু কল কেটে দিল। কি করবে কিছু মাথার মধ্যে আসছে না, হঠাৎ করে তার মুখের ভাব আরও পরিবর্তন হয়ে গেল। চোখে মুখে শুকনো একটা বাব চলে এসেছে, তার দিকে তাকিয়ে রামিশা খানিকটা অবাক হয়ে গেল। 

- সাজু ভাই কি হয়েছে? 

- নয়নকে বাস থেকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। 

- কি বলছেন আপনি? 

- একটা ভুল হয়ে গেছে রামু। 

- কিসের ভুল? 

- গতকাল রাতে নয়নের মামাতো ভাই মিনহাজের সঙ্গে কথা হয়েছিল আমার। সে জানে যে নয়ন আমার বাড়িতে আসবে। কিন্তু একটা পর্যায়ে সে জিজ্ঞেস করলো নয়ন কোন বাসে আসবে? আমি কিছু না ভেবে বাসের নাম বলে দিছি। 

- রামিশা বললো, তারমানে মিনহাজ সাহেব কি বাসের নাম জেনে তারপর মানুষ সেট করেছে। যেন সঠিক বাসের মধ্য থেকে নয়নকে বের করে ধরে নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু কেন সাজু ভাই? 

.
.

কেমন লাগছে সাজু ভাইয়ের গল্প? 
আরো ভালো কিছু যেন লিখতে পারি তাই সবাই সুন্দর করে গঠনমূলক কমেন্ট করবেন। যাদের মন্তব্য করতে ইচ্ছে করে না তারা রিয়্যাক্ট করতে ভুলবেন না। (শুভকামনা) 

চলবে... 

 
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
#7
 পর্বঃ- ০৭


- সাজু বললো, মিনহাজকে যদি সন্দেহের মধ্যে রাখি তাহলে সকল হিসাব গন্ডগোল হয়ে যাবে। আমার মনে হচ্ছে কিছু একটা গরমিল হচ্ছে যেটা আমি ঠিকঠাক মেলাতে পারছি না। 

- এখন কি করবেন? 

- নয়নের মায়ের ডায়েরিটা খুব দরকার ছিল, সেই ডায়েরি পেলে অনেক কিছু প্রশ্নের উত্তর পেতাম। 

- আপনি চট্টগ্রাম থেকে সেটা নিলেন না কেন? 

- তখন বুঝতে পারিনি ঘটনা এভাবে রূপ নেবে। 

- মিনহাজকে কল দিবেন? 

- দিয়ে দেখতে পারি কারণ আমার মনে হয় কাল রাতে মিনহাজের কথা কেউ শুনেছে। আর নাহলে নয়ন যেখানে ছিল সেখানে কেউ তার উপর নজর রেখেছে। 

- দুটোই হতে পারে, তবে যদি এমনটা হয় তাহলে তো মিনহাজকে সন্দেহ করা ঠিক না। 

- তাকে আমিও সন্দেহের তালিকায় আনিনি, তবে তার বাবা আছে। 

সাজুর মোবাইল বেজে উঠল। বের করে দেখল মিনহাজ কল করেছে, খানিকটা বিস্মিত হয়ে রিসিভ করলো সাজু। 

- ভাই কি করছেন? 

- তেমন কিছু না, আপনি কি করেন? 

- আমার এক বন্ধু আজকে ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছে তাকে তুলে দিতে এসেছি। 

- নয়নকে বাস থেকে কিডন্যাপ করা হয়েছে তার কিছু জানেন? 

- কি বলেন ভাই? আমি তো ভেবেছিলাম নয়ন আপনার বাড়িতে গেছে। আমি তো কল করেছি যে ডায়েরিটা আমার বন্ধুর কাছে পাঠিয়ে দেবো তার বাড়ি পিরোজপুর। 

- আচ্ছা পাঠিয়ে দেন, কিন্তু নয়নকে বাস থেকে তিনজন লোক নামিয়ে নিয়ে গেছে। আপনি কি তার কথা অন্য কাউকে বলেছেন? 

- আমি গতকাল রাতে যখন কথা বলছিলাম তখন তো বাবা মা সামনে ছিল। আমরা তিনজন ছাড়া আর কেউ জানে না সাজু ভাই। 

- আপনার বাবা জানেন যে নয়ন কোন বাসে করে বাগেরহাট রওনা দিয়েছে ? 

- হ্যাঁ। 

- আপনার বাবাকে এবার ভালো করে জিজ্ঞেস করুন কারণ নয়নের সন্ধান তার কাছে পাবেন। 

- কি বলেন ভাই? 

- তাছাড়া আর কি? নয়নের আসার কথা আপনি আমি আর আপনার বলা ছাড়া কেউ জানে না তাহলে নয়নকে কে কিডন্যাপ করবে? 

- আমি আজই বাবার কাছে সবকিছু জিজ্ঞেস করবো সাজু ভাই। 

- কিছু করতে হবে না, আপনি একটা কাজ করে ফেলুন মিনহাজ সাহেব। 

- জ্বি বলেন ভাই। 

- ডায়েরিটা আপনার সেই বন্ধুর কাছে পাঠিয়ে দেন আমি পিরোজপুর গিয়ে নিয়ে আসবো। আর আপনি আপনার মা-বাবাকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। 

- কিন্তু কেন?

- আমি চাই আপনার ফুপুর খুনি ধরার সময় আপনাদের এবং নয়নের দাদা বাড়ির সবাই যেন উপস্থিত থাকে। 

- ঠিক আছে আমি ব্যবস্থা করবো। কিন্তু নয়নের বাবা কি সুস্থ হয়েছে? তিনি কবে যেতে পারবেন গ্রামের বাড়িতে? 

- তাকেও নিয়ে আসা হবে, ২/৩ দিন সময় দরকার হবে। তবে আরও কিছু তথ্যের বাকি আছে যেটা আমাকে ইতালি থেকে সংগ্রহ করতে হবে। 

- কীভাবে? 

- আচ্ছা বলেন তো, নয়নের বাবা যেখানে থাকে সেখানে আপনাদের বা নয়নের দাদা বাড়ির কেউ আছে? 

- হ্যাঁ, আমাদের বাড়ির পাশের একটা আঙ্কেল আছে সেখানে। কিন্তু তার সঙ্গে নয়নের বাবার খুব খারাপ সম্পর্ক, কোনো যোগাযোগ নেই। 

- আচ্ছা। 

- আমি তাহলে ডায়েরি পাঠিয়ে দেবো নাকি কাল নিজের সঙ্গে করে নিয়ে আসবো? 

- আজকে পাঠিয়ে দেন, ২৪ ঘন্টা আগে পৌঁছালে সেই ২৪ ঘন্টা আমার কাছে মূল্যবান। 

- ঠিক আছে ভাই 

★★★

বেলা ১১ঃ৩৫ 

সাজু তার বাবার বন্ধু অবিনাশ চ্যাটার্জিকে কল দিল লন্ডনে। তিনি একজন সখের ফটোগ্রাফার, সাজুর বাবার সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের পরিচয়। সাজু যখনই বাবার কাছে বেড়াতে যেত তখনই তার সঙ্গে কথা হতো বেশি। ভদ্রলোক ইউরোপের অনেক দেশে ভ্রমণ করেছেন, তার বাড়ি কলকাতা শিলিগুড়ি। 

বাংলাদেশের সময়ের সঙ্গে ৬ ঘন্টা পার্থক্য থাকা স্বত্বেও সাজু কল দিল। কারণ অবিনাশ চ্যাটার্জির খুব ভোরবেলা উঠে হাটাহাটি করেন। সেই হিসাব অনুযায়ী এখন সেখানে ভোর সাড়ে পাঁচটা। 

- সাজু বললো, আঙ্কেল কেমন আছেন? 

- খুব ভালো, তারপর হঠাৎ অনেকদিন পরে কি মনে করে স্মরণ করা হচ্ছে? তুমি কেমন আছো? 

- জ্বি ভালো। আঙ্কেল আপনি কি আজকে দিনের মধ্যে ইতালি যেতে পারবেন বা সেখানে আপনার কেউ পরিচিত আছে যার মাধ্যমে আমি দুটো মানুষের বিষয় কিছু তথ্য পাবো। 

- তাহলে তো তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে, যদি সেরকম ব্যবস্থা করতে পারি তাহলে বলবো। আর নাহলে আমিই চলে যাবো, যেভাবেই হোক। 

- আপনি সেখানে কাউকে পান কিনা দেখুন, তবে খুব গোপনে তথ্য বের করতে হবে। 

- আচ্ছা আমি জানাবো ঘন্টা খানিক পরে। 

মোবাইল রেখে সাজু বাসা থেকে বের হলো, আর তখনই বাড়ির সামনে একটা বাইক দাড়াতে দেখে থমকে গেল। বাইক ড্রাইভারের পিছন থেকে একটা ছেলে নামছে, যাকে কেমন পাগল পাগল মনে হচ্ছে। সাজু সেদিকে এগিয়ে যেতেই বাইকের ড্রাইভার লোকটা তাকে দেখিয়ে দিয়ে ছেলেটাকে বললো, " ইনি হচ্ছে সাজু " 

- ছেলেটা বললো, সাজু ভাই আমার নাম নয়ন। 

সাজু আরও অবাক হয়ে গেল, পকেট থেকে টাকা বের করে ড্রাইভারকে দিয়ে দিল। তারপর নয়নকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করলো। 

- সাজু বললো, তুমি কোথায় ছিলে? 

- ভাই অনেক বড় বিপদ থেকে আসলাম। 

- আগে ফ্রেশ হয়ে খাবার খাও তারপর সব শুনবো। 

তাই হলো। 
গোসল করে খাবার খেয়ে নয়ন কিছুটা স্বস্তি ফিরে পেল, তারপর কিছুটা কান্না মিশ্রিত আর কিছুটা রাগের বশে যা বললো তা হচ্ছে, 

নয়নকে নিয়ে সেই লোকগুলো মোংলার দিকে যাচ্ছিল, ভাগ্যক্রমে পথে তাদের গাড়িটা এক্সিডেন্ট করে। চারিদিক থেকে মানুষ ছুটে আসে তাই তাকে আর সেই লোকগুলো ধরে রাখতে পারে নাই। নয়ন তখন সেখান থেকে একটা লোকাল বাসে উঠে এসেছে বাগেরহাট। পকেটে টাকা ছিল কিন্তু মোবাইল ছিল না, মোবাইল তারা আগেই নিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। তারপর নয়ন বাগেরহাট থেকে মানুষের কাছে জিজ্ঞেস করে করে এখানে এসেছে। 

- সাজু বললো, কিন্তু সেই সকালে তোমাকে নিয়ে গেল তাহলে এতো দেরি হলো কেন? 

- জানি না কেমন কেমন করে দুপুর হয়ে গেল। 

- তুমি তাহলে বিশ্রাম করো। 

- ভাই আমার মায়ের খুনি কে? 

- এখনো পাইনি তবে দ্রুত পাবো, তোমার কাছে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা জিজ্ঞেস করি। 

- কি ভাই? 

- তোমার নানা বাড়িতে যে মহিলা কাজ করতেন তিনি কোথায় আছে জানো কিছু? 

- কীভাবে জানবো ভাই? মায়ের মৃত্যুর পর আমি তো আর খুলনা আসিনি। 

- আচ্ছা তুমি রেস্ট করো। 

|
|

অবিনাশ চ্যাটার্জি খুব চমৎকার কাজ করেছেন। তিনি ইতালিতে একজন কলকাতার সাংবাদিক খুঁজে বের করেছেন। তার মাধ্যমে যেকোনো কিছু জানতে পারা যাবে। 

সাজু সকাল বেলা সাজু ঢাকায় সেই হাসপাতালে পরিচয় হওয়া ওসি সাহেবের কাছে কল দিছিল। তাকে বলেছিলেন দেলোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রীর পাসপোর্টের কপি সংগ্রহ করতে হবে। সাজু সেটা চাইছে এই তথ্য গোপন করতে হবে এমনটাও বলেছিল সে। 

ওসি সাহেব দেলোয়ার হোসেনের পাসপোর্টের কপি সংগ্রহ করে ইমেইল করেছেন। সাজু সেটা পাঠিয়ে দিল অবিনাশ চ্যাটার্জির কাছে, কারণ এটা দিয়ে বের করতে হবে নয়নদের গ্রামের সেই লোকটাকে। যার সঙ্গে নয়নের বাবার সম্পর্ক বেশি ভালো ছিল না সেই লোকটাকে খুঁজে বের করতে হবে। তারপর আরও কি কি তথ্য বের করতে হবে সেগুলো সুন্দর করে লিখে ইমেইল করলেন। 

★★

রাত দশটার দিকে বাইক নিয়ে পিরোজপুর গিয়ে সাজু সেই ডায়েরি নিয়ে এলো। বাড়িতে ফিরেই সে ডিনার করে ডায়েরি নিয়ে পড়তে শুরু করলো। তার বিছানায় শুয়ে গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে নয়ন। 

চার ঘন্টা সময় নিয়ে ডায়েরি পড়া শেষ হলো। তারপর বেশ কিছুক্ষণ বেলকনিতে বসে রইল, বাতি বন্ধ করে যখন ঘুমানোর জন্য বিছানায় গেল তখন হুট করে নয়ন বললো। 

- কিছু পাওয়া গেল সাজু ভাই? 

- তুমি ঘুমাওনি? 

- না ভাই। 

- একটা কথা জিজ্ঞেস করি? 

- করেন। 

- তোমার বাবা বিদেশে গিয়ে যত জমিজমা ক্রয় করেছেন সবকিছু তোমার কাকা মনোয়ার হোসেন দেখাশোনা করে তাই না? 

- জ্বি। 

- আরেকটা ফ্রী মাইন্ডে কথা বলি। 

- বলেন। 

- তোমার কাকার চোখের দৃষ্টি কেমন ছিল? মানে তিনি কি তোমার মায়ের দিকে কোনদিন খারাপ নজরে তাকাতেন বলে মনে হয়? 

- হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেন ভাই? 

- তোমার মা তার ডায়েরিতে অনেক স্থানে কিছু কিছু গল্প উপন্যাসের চরিত্রের নাম ব্যবহার করে গেছেন। সবগুলো চরিত্র আমার পড়া নেই তাই বুঝতে পারছি না। সেখানে রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প আর শরৎচন্দ্রের উপন্যাসের কিছু চরিত্র আছে। 
শুধু নাম গুলো লিখেছেন। 

- বুঝলাম না ভাই। 

- শোনো, তোমার মা তার মৃত্যু ঠিক বছর খানিক আগের একটা পাতায় লিখেছেন। 

" শরৎচন্দ্রের পন্ডিত মশাইয়ের সেই কুঞ্জ আর কুসুমের মতো হয়ে গেলাম। আফসোস। " 

এখানে তিনি বুঝিয়েছেন, তোমার মা তার ভাইয়ের কাছে আগে প্রিয় থাকলেও পরে অপ্রিয় হয়েছে। 
যাইহোক এখন ঘুমাও, দুদিন পরে সব জানা যাবে।
আমার ধারণা খুনের হুকুমটা বিদেশ থেকে বাংলাদেশে এসেছে। 

চলবে...  
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
#8
 পর্বঃ- ০৮


সকাল বেলা সাজুর যখন ঘুম ভেঙ্গেছে নয়ন তখন ও অঘোরে ঘুমাচ্ছে। সাজু সবসময়ই যত গভীর রাতে ঘুমাক তবুও খুব সকালে ঘুম থেকে উঠবে এটাই তার অভ্যাস। 

সূর্য এখনো ওঠেনি, সাজু ওদের পুকুরপাড়ে হেঁটে হেঁটে কি যেন ভাবছে। রামিশা তার কাছে গিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে রইল তারপর বললো,

- কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি? 

- না রামু, একটা বিষয় নিয়ে বেশ চিন্তিত আমি। 

- কি বিষয়? 

- আমি গোপনে গোপনে অনেক কিছু জানার জন্য লোক লাগিয়েছিলাম। সবগুলোই আমাদের দেশের মধ্যে, আজকে সকালে দেখি আমার করা সবগুলো প্রশ্নের উত্তর ঢাকা থেকে এসেছে। এখন যদি ইতালির সেই তথ্যের সঙ্গে এটা না মিলে তাহলে তো গোলমাল হবে। 

- দেশের মধ্যে কি কি জানার ছিল? 

- সেগুলো পরে বলবো, কারণ যদি এগুলো বৃথা সংগ্রহ করা হয়ে থাকে তাহলে শুধু শুধু তোমাকে জানিয়ে কি হবে? 

- আমি একটা জিনিস ভাবছি। 

- কি? 

- এই ছেলেটা আসলে নয়ন তো, নাকি অন্য কেউ নয়ন সেজে এসেছে। 

- এটাই নয়ন, আমি গতকাল সন্ধ্যা বেলা মিনহাজ এর কাছ থেকে নয়নের ছবি এনেছি। 

- তাহলে ঠিক আছে। 

- তুমি বাড়িতে থাকো, আমি একটু নয়নের নানা বাড়ির গ্রামে যাবো। হাজী ফজলুল সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে হবে, তাকে তৈরি হতে বলবো। 

- আমি যাবো না? 

- না, তেমন কাজ নেই। আমি শুধু তার সঙ্গে দেখা করে সবকিছুর ব্যবস্থা করতে বলবো। 

- কখন ফিরবেন? 

- কাজ শেষ হলেই। 

হাজী ফজলুল সাহেবের কাছে সাজু গিয়ে বললো, রেবেকা আফরোজ সত্যিই খুন হয়েছে এবং তার ৯০% প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়ে গেছে। আপনি দ্রুত করে মনোয়ার হোসেন ও তার ভাই দেলোয়ার হোসেনকে বলেন সবাইকে নিয়ে যেন তাড়াতাড়ি গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসে। তারপর যখন সবাই আসবে তখন আপনি আমাকে একটু স্মরণ করে নিবেন, যদিও আমি খোঁজ রাখবো। 

হাজী সাহেব রাজি হলেন। তিনদিনের মধ্যে তিনি নয়নের বাবা ও কাকার সঙ্গে কথা বলে তাদের গ্রামের মধ্যে আনলেন। দেলোয়ার হোসেন এখন অনেকটা সুস্থ তবুও তাকে বেশ সাবধানে রাখা হয়েছে। 

কাজলকে কল দিয়ে বাগেরহাটে আনা হয়েছে, যেহেতু রামিশা তার বান্ধবী তাই বেশি ঝামেলা হবার সম্ভাবনা ছিল না। 

★★

রোজ বুধবার, সকাল দশটা। 

নয়নের দাদা বাড়ির সামনে দুই পরিবারের সকল মানুষ উপস্থিত। মিনহাজ তার মা-বাবাকে নিয়ে এসেছিল আরো আগেই। সাজু যখন নযন আর রামিশাকে নিয়ে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করলো তখন কেউ কেউ অবাক হয়ে গেল। কারণ নয়ন যে আবার ফিরে এসেছে এবং সে সাজুর সঙ্গে এটা কেউ জানতেন না। 

সবার আগে কথা শুরু করলেন হাজী ফজলুল সাহেব। তিনি সাজুকে বললেন, 

- আপনার কথা রাখার জন্য আমি সবাইকেই এখানে হাজির করেছি। এবার আপনি আপনার কথা শুরু করেন, আশা করি সবকিছু যুক্তি দিয়ে সবাইকে বোঝাবেন। 

- জ্বি চেষ্টা করবো সবটা পরিষ্কার করতে। 

সাজু তার হাতের কাগজের দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। মামলার সবকিছু সে এখানে সুন্দর করে তুলে নিয়েছে। এর বললো, 

আমি চট্টগ্রামে বসে প্রথম যেদিন নয়নের মায়ের মৃত্যুর কাহিনি শুনেছি তখন প্রাথমিক সময় আমি নয়নের খালু ও খালাকে প্রথমে রাখি। কারণ সেই সময় তারা ছিলেন বাড়ির মধ্যে, ভোরবেলা খলিল সাহেব কিংবা নাস্তার মধ্যে রাবেয়া মেডাম। এদের দুজনকেই সন্দেহ করার বিশেষ কারণ ছিল তাই মার্ক করলাম। 

- খলিল সাহেব বললো, এসব কি বলছেন? আমি কেন তাকে মারতে যাবো। 

- আমি শুধু সন্দেহের তালিকায় রেখেছি, আপনি খুন করেছেন সেটা নিশ্চিত বলিনি। 

- হাজী সাহেব বললো, আপনি বলতে থাকুন।

- আমি যখন কাজলের সঙ্গে আফজাল সাহেবের বাসায় গেলাম সেখানে গিয়ে আফজাল সাহেবের ব্যবহার আমার কাছে অস্বাভাবিক লাগে। তাকে আমি সুইসাইড নোটের কথা জিজ্ঞেস করি সে মিথ্যা বলে, আরো কিছু প্রশ্ন করি কিন্তু তিনি তার জবাব দিতে গিয়ে বেশ ভিতু হলেন। 

- আফজাল খন্দকার সামান্য কাশলেন। 

- সাজু বললো, আমি একটা বিষয় বুঝতে পারছি না তখন যে বড় ভাই কি কারণে ছোটবোনকে খুন করবে? এর পিছনে একটা উপযুক্ত কারণ অবশ্য থাকতে হবে। তখনই চোখে পড়ে বাসার পরিবেশ। 
বাসার পরিবেশ লক্ষ্য করে আমি অনেকটা যেন ভাবতে লাগলাম, তখনই মনের মধ্যে কিছু প্রশ্ন তৈরী হয়ে গেল। তাদের বাসা থেকে বের হয়ে আমি সেই প্রশ্নগুলো তুলে রেখেছি সমাধান করার জন্য। 

আমি ঢাকা এলাম, এখানে এসে নয়নের কাকা মনোয়ার হোসেনের আচরণ আমাকে নতুন করে যেন ভাবতে বাধ্য করে। কিন্তু তাকে আমি কখনো খুনির তালিকায় আনিনি কারণ তিনি চাইলে তো এই বাড়িতে খুন করতে পারতেন। যদিও মাঝে মাঝে মনে হতো নিজের বাড়িতে খুন করলে বেশ ঝামেলা হবে তাই হয়তো তার বাবার বাড়িতে খুন করা হয়েছে। কিন্তু সেই সন্দেহ বেশি শক্তিশালী ছিল না, তবে নয়নের মায়ের ডায়েরি পড়ে আবার অনেকটা শক্তিশালী হয়ে যায়। 

- হাজী সাহেব বললো, কিরকম? 

- মৃত রেবেকা আফরোজ তার ডায়েরির মধ্যে বেশ কিছু গল্পের চরিত্র ও কাহিনি উল্লেখ করে গেছেন। আমি সবগুলো পড়েছি, যেগুলো জানা ছিল না সেগুলোও পড়ে জেনেছি। কিন্তু ডায়েরির সেই কথাগুলো আমি সবার সামনে তুলবো না, তবে শেষের ২/৩ টা কাহিনি তুলতে হবে। 

- আচ্ছা বলেন। 

- সাজু তখন দেলোয়ার হোসেনের দিকে তাকিয়ে বললো, আপনার দ্বিতীয় সংসারে এখন কত বছর রানিং চলছে? 

- দেলোয়ার হোসেন বললো, মানে? 

- মানে আপনি দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন কত বছর আগে? 

- রেবেকা যেদিন মারা গেছে তার একদিন আগে। 

- কেন বাচ্চাদের মতো বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা কথা বলছেন আপনি? আপনি আপনার পরিবার এবং নয়নের নানা বাড়ির সবাইকে মিথ্যা বলে ঠকিয়ে এসেছেন তাই না? 

- আপনি কিন্তু যা ইচ্ছে তা বলতে পারেন না। 

- আপনি সবার কাছে বলেছিলেন যে আপনার বৈধ কাগজ হচ্ছে না তাই দ্বিতীয় বিয়ে করবেন। আসলেই কি তাই? নাকি আপনার দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে আর চার বছর আগে থেকে প্রেম ছিল? 
দেখুন আমি ইতালিতে আপনার বিষয় সবকিছুর খবর নিয়ে তারপর এখানে এসেছি। আপনি সেখানে বিগত বছরগুলোতে কি কি করেছেন, কবে বিয়ে করেছেন কতদিন প্রেম, কতদিন ধরে সংসার সবটাই জেনেছি আমি। 

- দেলোয়ার হোসেনের দ্বিতীয় স্ত্রী জাহানারা তখন বললো, হ্যাঁ মানছি আপনি অনেককিছু জানেন বা জেনেছেন। দুজন মানুষের একে অপরকে ভালো লাগতে পারে আর সেখানে তারা যদি বিয়ে করে এতে সমস্যার কি আছে? বাড়িতে পারিবারিক সমস্যা ছিল তাই আমরা বিয়ের সময় জানাইনি। তার মানে তো এটা নয় যে আমার স্বামী তার প্রথম স্ত্রীকে খুন করেছে। কারণ সে তখন ইতালিতে ছিল আর ওনার স্ত্রী খুন হয়েছে গ্রামে। 

- আমিও জানি তিনি খুন করেননি, আর তিনি তখন ইতালিতে ছিল সেটাও জানি। কিন্তু আপনি সেই সময় কোথায় ছিলেন? বাংলাদেশে তাই না? 

- মানে? 

- অবাক হয়ে লাভ নেই, আপনি বাংলাদেশ ছিলেন এটা যেমন সত্যি। আপনি যে খুন করেন নাই এটাও তেমন সত্যি, খুন করেছে আরেকজন। 

চলবে...

   
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
#9
 পর্বঃ- ০৯ (শেষ) 


- সাজু বললো, দেলোয়ার সাহেব আপনি চাইলে ডিভোর্স দিতে পারতেন কিন্তু মানুষ দিয়ে হত্যার ব্যবস্থা কেন করলেন? 

সবাই হা হয়ে গেল, সাজু হঠাৎ করে এমন একটা বোমা ফাটাবে কেউ ভাবেনি। দেলোয়ার হোসেন চিৎকার করে বললো, 

- কি বলছেন আপনি? পাগল নাকি? 

- আস্তে কথা বলেন, বেশি চিৎকার করলে কিন্তু শারীরিক সমস্যা হবে। আমি সবকিছু সুন্দর করে বলে দিচ্ছি আপনি আপনার পুরনো অতীতের সঙ্গে মিলিয়ে নেন৷ 

- হাজী সাহেব বললো, আপনি বলেন। 

- দেলোয়ার সাহেব যখন থেকে তার বর্তমান স্ত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান তার কিছুদিন পরেই সেটা রেবেকা আফরোজ জানতে পারেন। আর সেটা তার কাছে বলে তাদেরই গ্রামের একজন মানুষ যিনি ইতালিতে বাস করেন। সেই লোকটার সন্ধান পর্যন্ত আমি বের করেছি, এবং তার বক্তব্য হচ্ছে তিনি রেবেকা আফরোজের কাছে সত্যিটা বলার জন্য দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে তার সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়। এমনকি তাকে সেই স্থান ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে, তাই পরবর্তী সময়ের অনেক কিছু তিনি জানেন না। দেলোয়ার হোসেন ও বিয়ে করে এলাকা পরিবর্তন করে যার কারণে কেউ কারো খোঁজ জানেন না। এরপর দিন বদলে গেছে আস্তে আস্তে সবকিছু ভুলে গেলেন সেই লোকটা। কিন্তু দুবছর পরে যখন তিনি তার গ্রামের মানুষের কাছে জানতে পারেন রেবেকা আফরোজ আত্মহত্যা করেছে। এবং এর কারণ হচ্ছে স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে করা, তখন তিনি ভাবলেন দেলোয়ার মনে হয় তখনই বিয়ে করেছে। কিন্তু দেলোয়ার হোসেন যে অনেক আগেই বিয়ে করেছে সেটা তার জানা ছিল না। 

- মনোয়ার হোসেন বললো, কিন্তু এর সঙ্গে খুনের সম্পর্ক কিসের? 

- সাজু বললো, আফজাল সাহেব আপনার ছেলে মিনহাজের পুলিশের চাকরির জন্য কত টাকা ঘুষ লেগেছে? 

চমকে গেল মিনহাজ। আফজাল খন্দকার তখন বললো, 

- মিনহাজের চাকরির জন্য কোনো টাকা দরকার হয় নাই, ঘুষ ছাড়া চাকরি হয়েছে। 

- চাকরির বিষয় কি আপনি কথা বলতেন নাকি মিনহাজ নিজেই? 

- শহরে বসে একবার এক অফিসার ওকে দেখে মুগ্ধ হয়ে যায়। তারপর তিনি ওকে পুলিশ যোগ দেবার পরামর্শ দেন এবং যাবতীয় সাহায্য করার আশ্বাস দেন। 

- ছেলে ভুলানো গল্প, আপনার ছেলে বললো আর আপনি সেটা মেনে নিলেন? 

- আফজাল সাহেব বিরক্ত হয়ে বললো, এটা না মানার কি আছে বাপু? চাকরি টা তো হয়েছে তাই না? 

- চাকরি হয়েছে ঠিকই কিন্তু সেটা ঘুষের মাধ্যমে। 

- মানে?

- আপনার বোন তার ডায়েরির একদম শেষের দিকে লিখেছিল " আজকে আবারও তার সঙ্গে খুব ঝগড়া হয়ে গেল, কারণটা অবশ্য আমার ভাইয়ের ছেলে। ওর খুব ইচ্ছে পুলিশের চাকরি করবে কিন্তু অনেক টাকার দরকার। ভাইয়ার কাছে এতো টাকা নেই তাই সে আমার কাছে আবদার করেছে। নয়নের বাবার কাছে টাকার জন্য বললাম কিন্তু তিনি বরাবরের মতো আমার সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করলেন। বিগত কয়েক বছর ধরে এই ব্যবহার পেয়ে আমি অভ্যস্ত। "

- হাজী সাহেব বললো, তারমানে ঘুষের টাকার ব্যবস্থা রেবেকা করেছিল? 

- না হাজী সাহেব, রেবেকা আফরোজ টাকা দিতে পারে নাই তবে টাকা দিয়েছে তারই স্বামী। আর সেটা তাকে হত্যা করার শর্তে। 

- আফজাল খন্দকার বললেন, মিনহাজের বয়স তখন মাত্র সতেরো বছর। সেই বয়সে সে তার ফুপু কে হত্যা করবে, পাগল আপনি? 

- আচ্ছা তাহলে ভুল। আচ্ছা দেলোয়ার সাহেব আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো? 

দেলোয়ার হোসেনের গলা একদম শুষ্ক, তিনি যেন কিছু বলতে গিয়ে বলতে পারে না। উপস্থিত সবার মনের মধ্যে কৌতূহল, সবটা জানার আগ্রহ। 

- দেলোয়ার সাহেব বললো, কি কথা? 

- আপনারা সবাই দেশে ফিরবেন এটা আপনার নিজের পরিবার ছাড়া আর কে জানে? 

- না জানে না। 

- আপনি দেশে ফেরার আগেরদিন মিনহাজের সঙ্গে ৩৪ মিনিট কথা বলেছেন। কি কথা? আপনি তো নয়নের পরিবারের কারো সঙ্গে যোগাযোগ করেন না। তাহলে মিনহাজের সঙ্গে কিসের এতো সম্পর্ক যেখানে আপনি কয়েকবার তাকে ইতালি থেকে টাকা ও পাঠিয়েছেন। 

- কো-ই নাতো 

সাজু এবার নয়নের দিকে তাকিয়ে বললো, 

- তোমার কাছে তোমার বাবার দেশে আসার খবর কে দিয়েছে নয়ন? 

- নয়ন বললো, মিনহাজ ভাই বলেছে। বাবা কখন ফ্লাইট উঠবে, আর কখন তারা বিমানবন্দর থেকে বের হবে সবকিছুই। 

মিনহাজ বুঝতে পেরেছে সাজু তার গোপনীয় সব কর্মকান্ড বের করে ফেলেছে। সে চোখের পলকে ছুটে পালানোর বৃথা চেষ্টা করতে গেল কিন্তু রাতুল তাকে ধরে ফেললো। রাতুলের সঙ্গী হলো নয়ন, শক্ত করে তাকে আটকে বসানো হলো সবার সামনে। দেলোয়ার হোসেন ঘনঘন নিশ্বাস নিচ্ছেন, মনে হচ্ছে অক্সিজেনের ঘাটতি তার।

★★

দেলোয়ার হোসেন চোখের পানি ছেড়ে দিলেন। তার চোখের পানি দেখে সাজু মুচকি হাসি দিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে রইল। হাজী সাহেবের তাগিদে দেলোয়ার হোসেন বললো, 

- আমি দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলাম তার একটা শর্ত মানার পরে। তাকে বলেছিলাম আমি আমার প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে দেবো তবে একটু সময় নিতে হবে। বিয়ের পরে তার সঙ্গে প্রতিনিয়ত এটা নিয়ে ঝামেলা হতে থাকে। এদিকে গ্রামের বাড়িতে কল দিলে রেবেকার হাজার অভিযোগ, সবমিলিয়ে আমি একটা মানসিক চাপের মধ্যে ছিলাম। তখন আমার কি করা উচিৎ সেটা নিজে বুঝতে পারিনি। গ্রামের বাড়িতে দ্বিতীয় বিয়ের কথা অনেকদিন গোপন করে রাখি। পরে যখন জাহানারা আরো বেশি চাপ দিতে লাগলো তখন আমি বাড়িতে বলে দিলাম যে আমি বিয়ে করেছি। সেদিন রেবেকার সঙ্গে আমার প্রচুর ঝগড়া হয়ে গেল, তার কথার ধরণে আমার রাগ উঠে গেল অনেক। আমি সেই সময় মিনহাজকে কল দিলাম, কারণ তার টাকার দরকার ছিল অনেক। মিনহাজের বাবা ঘুষের টাকা দিয়ে কখনো ছেলেকে চাকরি করাবেন না। আমি সেই সুযোগটা নিলাম, মিনহাজের সঙ্গে কথা বলে তাকে কথার মধ্যে ফেলে দিলাম। তারপর টাকার লোভে হাবুডুবু খাইয়ে বললাম যে নিজের ফুপুকে খুন করতে হবে। মিনহাজ খানিকক্ষণ চুপ থেকে রাজি হয়ে গেল, বাংলাদেশ সময় তখন দুপুরের মতো হবে। এরপর বাংলাদেশ থেকে পরদিন খবর পেলাম রেবেকা নাকি বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছে। আমি মিনহাজকে কল দিয়ে বললাম তোমার ফুপু নিজেই মারা গেছে এখন আর তোমাকে কষ্ট করতে হবে না। 

- সাজু বললো, তাহলে আপনি তবুও কেন টাকা দিয়েছেন মিনহাজকে, আপনি যেহেতু শুনেছেন আপনার স্ত্রী আত্মহত্যা করেছে। 

- সেদিন মিনহাজের কাছে যে কথোপকথন ছিল সেটা সে রেকর্ড করেছিল। মিনহাজ বলেছিল যে আমি টাকা না দিলে সে এটা সবাইকে শুনাবে। 

- মিনহাজের মা বললো, তারমানে তুই সেদিন বন্ধুদের সঙ্গে কক্সবাজার যাসনি। গোপনে এখানে এসে ওকে খুন করেছিস? এতটা খারাপ তুই? 

- সাজু বললো, নিজেকে নয় বছর ধরে আড়াল করতে পেরেছেন মিনহাজ সাহেব। আর সুযোগ নেই তাই আপনার কৌশলটা যদি বলতেন আমি সহ সবাই একটু জানতে পারতাম। 

- মিনহাজ বললো, চাকরি আর টাকার দরকার ছিল তাই ভালো মন্দের বাচবিচার করিনি। আমি সেই বিকেলেই বাগেরহাটে রওনা দিলাম, চট্টগ্রাম থেকে আসার সময় বিষ এনেছিলাম। বিকেলের দিকে রওনা দিলাম আর ঘাটে জ্যাম ছিল না তাই রাত সাড়ে বারোটার দিকে আমি রূপসা এলাম। তারপর স্টেশনে গাড়ি নেই, মাঠের মধ্য দিয়ে হাঁটতে লাগলাম। দাদা বাড়িতে যখন গেলাম তখন রাত প্রায় দুইটার বেশি বেজে গেছে। আমি কিছু সময় দাঁড়িয়ে ছিলাম, ভেবেছিলাম নিজের আসার কথা সবাইকে বলবো। কিন্তু সেই মুহূর্তে ফুপুর ঘরের দরজা খুলে গেল, ফুপু বের হয়ে নয়নের রুমে চলে গেল। আমি তাড়াতাড়ি তার রুমের মধ্যে গিয়ে টেবিলের উপর পানির জগে বিষ মিশিয়ে দিলাম, গ্লাসেও খানিকটা দিলাম। তারপর বাড়ি থেকে বের হয়ে সোজা খুলনা শহরে চলে গেলাম। আমার ধারণা ছিল রাতে কিংবা সকালে পানি খেয়ে ফুপু মারা যাবে। হলো ও তাই, আমি সকাল বেলা বাবার কাছে শুনতে পেলাম ফুপু মারা গেছে আত্মহত্যা করে। চট্টগ্রামে মায়ের কাছে কল দিয়ে বললাম সে যেন রওনা দেয় আমি কক্সবাজার থেকে সরাসরি ঢাকার গাড়িতে উঠবো। তারপর সারাদিন খুলনা শহরে লুকিয়ে থেকে পরের রাত দশটার দিকে দাদা বাড়িতে গেলাম। বিকেলেই লাশ দাফন করা হয়েছে জানতাম, বাড়িতে গিয়ে কবরস্থানে খানিকটা কাঁদলাম। সত্যি বলতে তখন আমার সত্যি সত্যি কান্না এসেছিল, যেই ফুপুর এতো ভালোবাসা পেলাম। তাকে নিজের হাতে মেরে ফেলার মতো তীব্র কষ্ট আর কি হতে পারে? 

- সাজু বললো, তোমার খুনের কথা তো নয়নের বাবা ও জানতো না। তাহলে তুমি নয়নের বাবার উপর আক্রমণ করালে কীভাবে? আর কেন? 

- তিনি আমাকে বারবার বলতেন ফুপু মারা গেছে নাকি আমার হাতে। তিনি আমাকে টাকা দিলেও পরে বুঝতে পেরেছেন কাজটা ঠিক হয় নাই। এই কথাটা আমিও বুঝতে পেরেছি কিন্তু কিছু করার নেই কারণ ফুপু তখন কবরে। বাড়িতে আসার মাত্র কদিন আগে ফুপা আমাকে বলেন তার নাকি বারবার মনে হচ্ছে সেদিন আমি খুন করেছি। এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে প্রচুর তর্কবিতর্ক হলো, আমি তখন দ্বিতীয় বুদ্ধি করলাম। লোক সেট করলাম তাকে বিমানবন্দর থেকে নামার পরই সরিয়ে দেবে। আর নয়নকে পাঠিয়ে দিলাম ঢাকায়। তার রাগের কথা আমাদের দুই বংশের সবাই জানে। কিন্তু নয়ন যে খুন করতে পারবে না এতটুকু আমি নিশ্চিত ছিলাম তাই নিজেই ব্যবস্থা করা। নয়নকে কাঁচপুরের পরে নারায়ণগঞ্জ নামিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হলো। ওদিকে সকাল বেলা অন্যরা আক্রমণ করলো নয়নের বাবাকে। পরদিন নয়ন সুস্থ হবে কিন্তু ততক্ষণে তার ঘাড়ে উঠে যাবে বাবা হত্যার দায়। কিন্তু তার বাবা বেঁচে গেল, মাঝখানে সবটা এলোমেলো হয়ে গেল সাজু ভাই আপনার আগমনে। 

আমি কোনদিন ভাবিনি এটা নিয়ে তদন্ত হবে তাই সবকিছু বেশি নিখুঁত করিনি। তবুও সাজু ভাইয়ের সব কথা আমি পালন করেছি যেন সন্দেহের তীর আমার দিকে না আসে। সেদিন নয়ন ঢাকা থেকে ফেরার সময় তাকে কিডন্যাপারে ব্যবস্থা ও আমি করেছিলাম। 

|

হাজী ফজলুল সাহেব থানায় খবর দিলেন, পুলিশ এসে দেলোয়ার হোসেন ও মিনহাজকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেল। সাজু কাজল ও রামিশা রওনা দিল বাগেরহাট, হাজী সাহেব অনুরোধ করেছিল থাকার জন্য কিন্তু সাজু রাজি হয়নি। যা করার পুলিশ ও আদালত করবে, আপাতত তার কাজ শেষ হয়ে গেছে। সাজু নিজের শরীর অসুস্থ অনুভব করতে লাগলো আরো বেশি। 

★★★

পরদিন দুপুরের খানিকটা আগে সাজু তার মায়ের কবরের কাছে গেল। বহুদিন ধরে পরিষ্কার করা হচ্ছে না তাই ঝোপঝাড় জমে যাচ্ছে। নিজের হাতে সবকিছু কেটে কেটে পরিষ্কার করলো, রামিশা তখন দাঁড়িয়ে ছিল অদুরেই। 

- রামিশা বললো, আপনি কি সবসময় নিজের হাতে পরিষ্কার করেন নাকি মাঝে মাঝে মানুষের দ্বারা করেন। 

- যখনই বাড়িতে আসি তখনই নিজের হাতে এটা করি, মা বলে কথা। 

- আমরা চট্টগ্রামে কখন যাচ্ছি? 

- সন্ধ্যা বেলা, তোমরা চট্টগ্রামে চলে যাবে আর আমি যাবো ঢাকা। তবে একই বাসে যাবো, ঢাকা গিয়ে আমি নেমে যাবো আর তোমরা চলে যাবে। 

- কাজল যেতে চায় না, নয়নকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে চায়। 

- আপাতত তার দরকার নেই, সে শহরে যাক তারপর নয়ন পরে যাবে সমস্যা নেই তো। 

- হুম সেটাই বোঝাচ্ছি তাকে। 

আসরের পরে তারা রওনা দিল, যাবার সময় সাজু তার মায়ের কবরের কাছে গিয়ে আবারও কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। 

★★

মাওয়া ফেরিতে উঠে রাত দশটার দিকে রামিশা ও সাজু বাস থেকে নেমে গেল। তৃতীয় তলায় ফেরির ছাদে গিয়ে দাঁড়াল দুজন, প্রচুর বাতাস, মাথার উপর খোলা আকাশ চারিদিকে অন্ধকারে চরের আবছায়া। নদীর মধ্যে মাঝে নৌকার ভেতর বাতি জ্বলে, দুর দুরন্ত থেকে আলো আসে চোখে। 

- একটা কথা বলবো সাজু ভাই? 

- বলো। 

- চারিদিকের পরিবেশটা কেমন লাগছে? 

- খুব ভালো, যারা প্রেম করে তাদের উচিৎ এই ফেরিতে করে রাতে এভাবে এপার থেকে ওপারে ভ্রমণ করা। 

- ঢাকা থেকে আবার চট্টগ্রামে কবে যাবেন? 

- জানি না। 

- ওই যে নদীর চরে কত মানুষের ঘরবাড়ি দেখা যায়, ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে ওখানে থাকার ব্যবস্থা করা যায় না? যেখানে ব্যস্ত শহরের কোন আনাগোনা নেই, সবাই নিস্তব্ধ। 

সাজু সামান্য হাসলো তবে কিছু বলে নাই, সামান্য অন্ধকারে সাজুর চোখে দুফোঁটা পানি রামিশার নজরে আসে নাই। তবে এ পানির রহস্য আলাদা। 

রাত দুইটা।
ফেরিঘাট থেকে উঠেই ঘুমিয়ে গেছে রামিশা, বাস ততক্ষণে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায়। সুপারভাইজারকে সাজু আগেই বলে রেখেছিল তাকে যাত্রাবাড়ীতে নামিয়ে দিতে হবে। সুপারভাইজার এসে ডাকলো, ঘুমন্ত রামিশাকে আস্তে করে সরিয়ে দিল সাজু। ডাক দিয়ে ঘুম ভাঙ্গাতে গিয়েও পারলো না, যেমন করে ঘাড়ে মাথা রেখে জড়িয়ে ছিল সেখানে ডাক দিয়ে ঘুম ভাঙ্গানো কি দরকার? 

কাজলের কাছে একটা ডায়েরি রেখে বাস থেকে নেমে গেল সাজু। যতক্ষণ পর্যন্ত বাস দেখা গেল ততক্ষণ পর্যন্ত তাকিয়ে রইল। তারপর একটা সিএনজি নিয়ে বনানী রওনা দিল। 

রামিশার ঘুম ভাঙ্গে মেঘনা ব্রিজের ওপর এসে, কিন্তু ততক্ষণে তার পাশের সিটে সাজু নেই। সে চোখ মেলে তাকিয়ে চারিদিকে খুঁজতে লাগলো, পাশের সিটে এখন কাজল বসে আছে। সাজু নেমে যাবার পরে কাজল তার পাশে বসেছিল। 

- সাজু ভাই কোথায়? 

- তিনি তো নেমে গেছে ঢাকায়। 

- আমাকে ডাকেনি কেন? 

- তুই ঘুমাচ্ছিস তাই। আর হ্যাঁ, তোর জন্য একটা ডায়েরি রেখে গেছে, তুই ঘুম থেকে উঠলেই পড়া শুরু করতে বলেছে। তবে চট্টগ্রামে গিয়ে পড়লেও সমস্যা নেই। 

অনেক বড় ডায়েরি, মাত্র তিনটা পৃষ্ঠা লেখা। 

রামু, 
দুদিন পরে আমি লন্ডনে যাচ্ছি, চিকিৎসার জন্য। যাবার সময় তোমাকে বলে যেতাম, কিন্তু প্রতিটি বিদায় মুহূর্ত অত্যন্ত বেদনার। তুমি আমার খুব ভালো একটা বন্ধু, সম্পর্কটা আসলেই কি বন্ধুত্বে সীমাবদ্ধ নাকি আরেকটু বেশি সেটা জানি না। 
মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে সম্পর্কটা নিয়ে খানিকটা ভেবে নেবো কিন্তু তা আর হয় না। 

চট্টগ্রামে সেবার রাহুলের হত্যা মামলার সময় আমি বেশ অসুস্থ ছিলাম, জানো তো। সেখান থেকে ফিরে আমি বেশ কিছু টেষ্ট করিয়াছি কারণ শারীরিক অবস্থা ভালো ছিল না। 

রিপোর্ট সবগুলোই খারাপ, হার্টে সমস্যা। 

আমি সবগুলো রিপোর্ট বাবার কাছে লন্ডনে জমা দিছিলাম ভালো করে পরীক্ষা করতে। তারা দ্রুত অপারেশন করার দাবি করেন, তাই তখন থেকে বাবা আমাকে লন্ডনে যেতে বলেন। আমি বিদায় নেবার জন্য তোমার সঙ্গে শেষ দেখা করতে চট্টগ্রামে গেছিলাম কিন্তু সেখানে গিয়ে তোমার বান্ধবী কাজলের সঙ্গে কথা হয়ে গেল। 

তারপর ভাবলাম এই মামলা নাহয় শেষ করে যাই, কারণ হতে পারে এটাই আমার জীবনের শেষ রহস্যের সমাধান। অপারেশনে আমার বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম, আর সেজন্যই আমি লন্ডনে যেতে চাইনি। কারণ আমি চাই মৃত্যুর পরে আমার মায়ের কবরের পাশে আমার কবর হোক। মায়ের ও ঠিক একই রোগ হয়েছিল, মা বাঁচতে পারেনি আমিও মনে হয় চলে যাবো। 

বাবার কাছে লন্ডনে যাবার জন্য রাজি হয়েছি কারণ বাবা কথা দিয়েছে যে, যদি আমি মারা যাই তাহলে তিনি আমার লাশ দেশে আনবেন। আর মায়ের কবরের পাশে কবর দিবেন, যদি বাবা রাজি না হতো তাহলে যেতাম না। 

যদি বেঁচে থাকি তাহলে তো আলহামদুলিল্লাহ, কিন্তু তোমার সঙ্গে দেখা হবে কিনা জানি না। কারণ তোমার বিয়ের দিন ঘনিয়ে এসেছে। তুমি হয়ে যাবে অন্য কারো, সুইডেনের মনোরম প্রকৃতি মুগ্ধ করবে তোমাকে। 
আমার জন্য মন খারাপ করো না, এক জীবনে মানুষের কত আপনজন হয়। আবার কত মানুষ জীবন থেকে হারিয়ে যায়, তোমার কথা আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত স্মরণ থাকবে। 

যদি মারা যাই তাহলে তো জানতে পারবে, সম্ভব হলে আমার গ্রামের বাড়িতে যাবে। আর যদি বেঁচে থাকি তাহলে তুমি পৃথিবীর যেখানে থাকো তবুও একদিন ঠিক দেখা হবে। 

তোমার ভবিষ্যত সন্তানের জন্য কিছু নাম ঠিক করে দিলাম, ইচ্ছে হলে রাখিও। 
মেয়ে হলে, আনাহিতা বা আনায়া। 
ছেলে হলে, আরহাম। 

সাবধানে যেও, ভালো থেকো সবসময়। 

ইতি... সাজু। 

|

কি হবে সাজু ভাইয়ের? সে বেঁচে ফিরবে নাকি সবার ভালোবাসা নিয়ে হারিয়ে যাবে বহুদূর? সাজুর প্রতি ভালোবাসা আর গল্পের বিষয় মন্তব্য করবেন। 
 
-------- সমাপ্ত --------

লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব।


সাজু ভাই সিরিজের সব গুলোর গল্পের লিংক,

===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#10
Pls carry on.
[+] 1 user Likes Saj890's post
Like Reply
#11
Thank you for your encouragement.❤️❤️
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
#12
(Yesterday, 04:52 PM)Saj890 Wrote: Pls carry on.

Thank you for your encouragement ❤️❤️❤️.
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)