Thread Rating:
  • 26 Vote(s) - 3.38 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica দাগ
#1
উচ্চ স্বরে মেয়েলি কণ্ঠের কান্না শোনা যাচ্ছে। মৃতের বাড়িতে যেমনটা শোনা যায়, সেরকম। এর মধ্যে যার সুর সবচেয়ে চওড়া তিনি সাজ্জাদের ছোট ফুফু। ভদ্রমহিলার বয়স সম্ভবত সাজ্জাদের মায়ের মতোই হবে। মজার ব্যাপার হলো আজকে তার কান্নাকাটি দেখে যে কারো মনে হতে পারে স্বজন হারানোর বেদনায় এই মহিলার বুঝি বুক ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু আসল ঘটনা এর উল্টো। 

সাজ্জাদেরা সমাজের যেই প্রান্তের অংশীদার, সেখানকার সম্পর্কগুলো এমনই। খালি চোখে এগুলোর প্রকৃতি নিরুপণ করা জটিল কাজ। বাইরের দিকটা যেমন চকচকে, ভেতরটা তেমনই ভিন্নরকম — ঘোলাটে, অস্বচ্ছ। ইংরেজিতে যাকে বলে Shady. 

ছোটবেলা থেকে ধীরে ধীরে সাজ্জাদ মানব সম্পর্কের এইসব কানাগলি বুঝতে শিখেছে। আর যত বুঝেছে, ততই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। নিজের আলাদা জগৎ গড়ে তুলেছে। এমনকি একই শহরে থেকেও ১ যুগের বেশি সময় ধরে নিজের পৈতৃক বাড়িতে আসেনি। ঢাকার অভিজাত এলাকায় কোটি টাকা মূল্যের বাড়িতে সাজ্জাদের বিধবা মা, ডাক্তার শায়লা, একাই বাস করছিলেন। তবে এখন আর তিনি এ বাড়িতে থাকেন না। এখন তিনি অতীত হয়ে গেছেন। গত রাতে আনুমানিক তিনটায় ঘুমন্ত অবস্থায় মারা গেছেন শায়লা। মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে এতো বছর পরে ওকে বাধ্য হয়েই আসতে হয়েছে।

একদিকে সাজ্জাদের মায়ের কফিনের কাছে কান্নাকাটির আসর চলছে, অন্যদিকে সে বিব্রত মুখে নিজের বাপ মায়ের বেডরুমে রকিং চেয়ারে বসে দোল খাচ্ছে।। যদিও এই মুহূর্তে তারও উচিত ছিলো মায়ের কফিনের গায়ে উথাল পাথাল কান্নায় ভেঙে পড়া। সে তার বাপ মায়ের একমাত্র সন্তান। সে না কাঁদলে কে কাঁদবে! কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে ওর অভিব্যক্তিতে সুখ-দুঃখ কোন অনুভূতিরই ছাপ নেই। মায়ের মৃত্যুর দিনে একমাত্র ছেলে চোখ মুখ কুঁচকে করে বসে আছে এটা বাঙ্গালী সমাজের পক্ষে হজম করা কঠিন। তাই অন্যদের চক্ষুবাণ এড়াতে এই ঘরটিতে একরকম আত্মগোপনে আছে সাজ্জাদ। বাড়ি ভর্তি লোকজনের ভীড়ে একমাত্র এই ঘরটিই ফাঁকা পাওয়া গেছে।

সিগারেট ধরাবে বলে অন্যমনস্কভাবে নিজের পকেটে হাত দিতেই বেডরুমের দরজার কাছে শব্দ টের পেলো। 

দরজার মুখে সাজ্জাদের মেজচাচী দাঁড়িয়ে আছেন। ওনার ঠিক পেছনেই এক তরুণীর ফর্সা মুখ দেখা যাচ্ছে। দোল খাওয়া বন্ধ করে কৃত্রিম সৌজন্যতা দেখিয়ে বললো, "আসুন চাচী। ভেতরে আসুন।'' 

''এখানে একা একা মন খারাপ করে বসে আছো কেন বাবা?" মেজচাচী একটু দূরে খাটের উপর বসতে বসতে বললেন। সাজ্জাদ ভালো করেই জানে ওর চেহারায় মন খারাপের বিন্দুমাত্র ছাপ নেই। কিন্তু তারপরেও এই মেকি বক্তব্যটা শুনতে হলো।  কারণ এটাই এই সমাজের অভ্যাস — আসল কথা বলার আগে কিছু মেকি ভূমিকার অবতারণা করা। সাজ্জাদ মেজচাচীর প্রশ্নের জবাব দিলো না।

''সবাইকেই তো দুনিয়া ছাড়তে হবে বাবা। বাপ মা চিরকাল কারো থাকে না। অন্তত এইটা শুকরিয়া করো যে তোমার বাবা তোমার মায়ের নামে যে সম্পদ রেখে গিয়েছিলো তা দিয়ে তোমার মা কম্ফোর্টেবলি জীবনটা পার করতে পেরেছিলেন৷ শেষ বয়সে চিকিৎসা পাওয়া নিয়ে আফসোস ছিলো না। আফসোসের ভিতরে একটা আফসোসই ভাবী করতো। সেটা তোমাকে নিয়ে। একমাত্র ছেলে থাকা সত্ত্বেও তাকে নিঃসঙ্গ জীবন কাটাতে হয়েছে। তোমাকে কাছে পায়নি। এটাই বড় দুঃখ তার।"

নিশ্চুপ সাজ্জাদ মেঝের দিকে তাকিয়ে রইলো।

''সে যাই হোক। আমি যে জন্য এসেছি বাবা। এই মেয়েটিকে তুমি হয়তো চেনো না। ওর নাম জেরিন।''

''স্লামালাইকুম।'' জেরিন নামের মেয়েটি মিষ্টি কন্ঠে সালাম দিলো সাজ্জাদকে। সালামের শব্দে এই প্রথম সাজ্জাদের নজর পড়লো মেয়েটির উপর। আসলে এতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেও মেজচাচীর উপস্থিতির কারণে সেভাবে লক্ষ করেনি মেয়েটিকে।

মানুষের মন বড় অদ্ভুত। এমন দিনেও জেরিনের অপরূপ সৌন্দর্য সাজ্জাদের নজর এড়ালো না। বয়স আর কতই বা হবে! ১৮ থেকে ২১ এর ভেতরে কিছু একটা। উচ্চতা গড় বাঙালি মেয়েদের তুলনায় কিছুটা বেশি। গায়ে সাদা রঙের সালোয়ার কামিজ। পাতলা ওড়না মাথার উপরে অর্ধেক তুলে দেওয়া। পান পাতার মতো মুখের দুপাশ দিয়ে ঘন কালো দু গোছা চুল  ঝুলে পড়েছে। মেয়েটির হলুদ ফর্সা গায়ের রঙ থেকে যেন আলো ঠিকরে বের হচ্ছে। 

"ওয়ালাইকুম আসলাম।" বিমোহিত সাজ্জাদ সালামের উত্তর দিলো।

"জেরিন তোমার রাসেল মামার একমাত্র মেয়ে। রাসেলকে তো মনে আছে নিশ্চয়ই।"

 হঠাৎ সাজ্জাদের পেটের ভিতরটা কেমন যেন মুচড়ে উঠলো। স্মৃতির অতল অন্ধকারে কোথাও একটা আন্দোলন তৈরি হলো। মনের আন্ধারলোকে লুকিয়ে রাখা কোন বদ্ধ কুঠুরির পাল্লায় প্রবল ধাক্কা দিলো এই নামটি — 

রাসেল! রাসেল!  

অদ্ভুত এক অনুভূতি!

অনুভূতিটা জট পাকিয়ে পোক্ত হওয়ার আগেই মেজচাচীর একঘেয়েমি গলার স্বর পুনরায় তাকে বর্তমানে টেনে আনলো।

''জেরিনের মা ও জেরিন গতকালই আমেরিকা থেকে ঢাকায় এসেছিলো। তোমার মায়ের মৃত্যুর খবর শুনে আজকে দেখতে এসেছে।'' 

সাজ্জাদ বলার মতো কিছু খুঁজে না পেয়ে শুকনো মুখে কেবল বললো, "আচ্ছা।" 

ওকে চুপ থাকতে দেখে জেরিন বললো, "ভাইয়া আপনি মন খারাপ করবে না। She will be in heaven for sure." 

সাজ্জাদ মুচকি হেসে কাঁধ ঝাঁকালো। 

কেউ একজন এসে দরজায় নক করে জানালো সাজ্জাদের মাকে এখন দাফনের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হবে। ওকে ডাকা হচ্ছে খাটিয়া তোলার জন্য। চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ালো সাজ্জাদ। 

***

সাজ্জাদের বাবা, আইজুদ্দিন নিম্নবিত্ত সংসার থেকে উঠে এসেছিলেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নামসর্বস্ব একটি বিষয়ে অনার্স পাশ করেন। মাস্টার্স করার সুযোগ পাননি। তার পরিবর্তে নিজের ভাইবোনদের ভবিষ্যত গড়ার ও বাপ মায়ের মুখে হাসি ফোটানোর স্বপ্ন নিয়ে নেমে পড়েছিলেন জীবন যুদ্ধে। 

বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে ওনার যে ধরণের পারিবারিক ও একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড ছিলো তা দিয়ে তৃতীয় বা দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরি ছাড়া বিকল্প কোন ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারতো কি না সন্দেহ। কিন্তু আইজুদ্দিন ছিলেন ভিন্ন ধাঁচের মানুষ। তার ভিতরে এমন অসাধারণ ২টি গুণ ছিলো যেগুলো আশেপাশের সবার চেয়ে তাকে এগিয়ে রেখেছিলো। একটি হলো উচ্চ স্বপ্ন দেখা, অন্যটি হলো হাল না ছাড়া।

সাজ্জাদের বাবা জানতেন যে একদিন তিনি অনেক বড় হবেন। তার সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন, সব করতে রাজি ছিলেন তিনি। কথায় আছে, পরিশ্রমের ফল কখনো বৃথা যায় না। সাজ্জাদের বাবাও তার ফল পেয়েছিলেন। নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশে যখন রেডিমেড গার্মেন্টসের উত্থান ঘটছিলো, ঠিক সেই সময়ে নিজের বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে একান্ত নিষ্ঠা ও নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে একাধিক আন্তর্জাতিক মানের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। নিজের লভ্যাংশ থেকে দেশের বিখ্যাত সব কোম্পানিতে অর্থ লগ্নী করে ধীরে ধীরে ব্যবসার ক্ষেত্রকে বিস্তৃত করতে থাকেন। নিজের পরিবারকে গ্রামের অজপাড়া গা থেকে টেনে তুলে নিয়ে আসেন গুলশানের অভিজাত সমাজে। 

জীবনের আরেকটি ক্ষেত্রে মোড় পরিবর্তনকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আইজুদ্দিন। ব্যবসাকে দাঁড় করাতে গিয়ে জীবনের অনেকটা সময় পার করে ফেলেছিলেন বলে অন্যকিছু ভাবার সুযোগ পাননি। বয়স যখন চল্লিশের কোঠায় তখন তার হুঁশ হলো — আরে বিয়েটাই করা হয়নি! তবে ব্যবসার যে কোন মোক্ষম চুক্তির মতো এই ক্ষেত্রেও আইজুদ্দিন তাড়াহুড়ো করলেন না। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন কেবল কেবল সমাজ রক্ষার্থে তিনি বিয়ে করবেন না। বরং এই বিয়েটাকেও নিজের স্বপ্ন পূরণের কাজে ব্যবহার করবেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে এই সমাজে এলিটদের সমমর্যাদা পেতে এটা দারুণ সুযোগ হতে পারে। নানান খোঁজ খবর করে শেষমেষ শায়লা চৌধুরীকে বিয়ে করেন আইজুদ্দিন৷ এবং এই  বিয়ের মাধ্যমে তার পরিকল্পনা সফল হয়েছিলো। শায়লার পিতা, অর্থাৎ সাজ্জাদের নানা ছিলেন গুলশানের আদি ধনী বাসিন্দাদের একজন, গুলশান হান্টিং ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। তাদের পরিবারটি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ব্যবসায়ী পরিবারগুলোর অন্যতম। এমন পরিবারের মেয়েজামাই হওয়ার মাধ্যমে সাজ্জাদের বাবার সামনে বহু সম্ভাবনার পথ অবারিত হয়ে যায়। তার সামাজিক অবস্থানের আমূল পরিবর্তন ঘটে। 

অন্যদিকে সাজ্জাদের মা, শায়লা চৌধুরী, আইজুদ্দিনের সঙ্গে বিয়ের সময়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। একদিকে যেমন স্মার্ট ও মেধাবী হিসেবে পরিচিত ছিলেন, অন্যদিকে ছিলেন ডাকসাইটে সুন্দরী৷ ঐ সময়ে ঢাকার রাস্তায় নিজের প্রাইভেট গাড়ি ড্রাইভ করে ঘুরে বেড়াতেন। পরতেন বলিউডের নায়িকাদের মতো স্কার্ট আর টপস। শাড়ি পরলেও বাঙ্গালির নারীদের চিরায়ত জড়তা বা রক্ষণশীলতা তার ভিতরে ছিলো না। শায়লার একটু হাসি দেখার জন্য অগুনতি যুবক   চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করতো। ওকে কাছে পাওয়ার স্বপ্নে কতশত পুরুষ নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে তার হিসেব কে রেখেছে! এমনকি ঢাকাই সিনেমায় অভিনয়ের অফারও না কি পেয়েছিলেন। কিন্তু শায়লা রাজি হননি। তার স্বপ্ন ছিলো ডাক্তারি পাশ করে তার মতোই কোন স্মার্ট সুপুরুষকে বিয়ে করে এদেশ ছেড়ে চলে যাবেন। কিন্তু শায়লার সমস্ত স্বপ্নকে চুরমার করে দিয়ে আগমন ঘটে আইজুদ্দিনের। 

শায়লার মতো মেয়েকে কীভাবে আইজুদ্দিনের মতো ছেলে বিয়ে করলো, তাও আবার পারিবারিকভাবে, সেটা তখনকার সময়ে একটা মশলাদার গসিপের অংশ ছিলো। বোঝার মতো বয়স হওয়ার পরে সেসব মুখরোচক গসিপ সাজ্জাদের কানেও এসেছিলো। এত বছর পরে মায়ের ফটো এলবামের পাতা উল্টাতে উল্টাতে সাজ্জাদের মনে সেসব টুকরো টুকরো ভেসে আসছে। যদিও ওর মনোযোগ ছবিগুলোর দিকেই বেশি। অসংখ্য ছবি আছে এই এলবামে। বিয়ের সময়কার ছবি। বিয়ের আগের ছবি। বিয়ের পরে আইজুদ্দিন তার নববিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে দেশ বিদেশে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়িয়েছেন। সেখানকার একক ও যুগলবন্দী ছবিও আছে এলবামে। হঠাৎ একটি ছবিতে ওর চোখ আটকে যায়। মাথার পেছনে ঝন ঝন করে ওঠে।

(চলবে)
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#2
Nice start.
[+] 3 users Like Twilight123's post
Like Reply
#3
আপনার লেখার হাত ভালো। আমি আশাবাদী আপনার হাত থেকে ভালো কিছু আমরা পেতে যাচ্ছি।
[+] 3 users Like bluesky2021's post
Like Reply
#4
সুন্দর গল্প। 
আশা করি শেষ করবেন।
এটাই আপনার প্রথম পোষ্ট। 
কিন্ত আপনার লেখার হাত খুব ভাল। 
লাইক ও রেপু দিলাম। 
Five star rating দিলাম। 
সাথে আছি।
[+] 3 users Like buddy12's post
Like Reply
#5
Update diyen kintu
[+] 2 users Like fuckerboy 1992's post
Like Reply
#6
Nice start. Please keep it up.
[+] 2 users Like Jibon Ahmed's post
Like Reply
#7
Excellent writing.
[+] 2 users Like S.K.P's post
Like Reply
#8
ফ্যানটাসটিক শুরু। রেপু নেই দিতেন পারলাম না।

banana





গঠনমূলক মন্তব্য আমার অনুপ্রেরণা।

[+] 2 users Like মাগিখোর's post
Like Reply
#9
বেশ গোছানো ও সুন্দর লেখা।
শুভকামনা রইলো।
[+] 2 users Like Rancon's post
Like Reply
#10
সুন্দর শুরু.....চালিয়ে যান
[+] 2 users Like Maleficio's post
Like Reply
#11
Good Starting
[+] 2 users Like chndnds's post
Like Reply
#12
বাহ্ খুব ভালো শুরু  yourock লাইক আর রেপু দিলাম

[Image: Images-2-2-1.jpg]

[+] 2 users Like Somnaath's post
Like Reply
#13
পাকা হাতের লেখা
কমই যায় দেখা
শুরুটা খুবই চমৎকার
হারিয়ে না ফেলি আবার
[+] 4 users Like poka64's post
Like Reply
#14
Wow joss shuru like n reps
পাঠক
happy 
[+] 2 users Like Kakarot's post
Like Reply
#15
বধূবেশে পরীর মতো সুন্দর চেহারার শায়লা চৌধূরী বসে আছে বিয়ের আসরে। এ সময়ে অনেকেই কনের পাশে ছবি তোলার জন্য বসেন।  তেমনই একটি মুহূর্তের ছবিতে শায়লার পাশে একটি যুবক ছেলে বসে আছে। তখনকার সময়ের ফ্যাশন অনুযায়ী ছেলেটার নাকের নীচে পাতলা গোফ, ব্যাক ব্রাশ করা চুল, পরনে হাতা গোটানো নীল রঙের জিন্সের শার্ট, কালো রঙের প্যান্ট। সাজ্জাদ আরো কয়েকটি পাতা উল্টিয়ে আরো কিছু ছবিতে ঐ যুবককে শায়লার সঙ্গে দেখতে পায়। একটি ছবিতে সাদা রঙের ভক্সওয়াগন গাড়ির সামনে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে দুজনে। এই ছবিতে লাল রঙের লং স্কার্ট, কালো রঙের ভি নেক টি শার্ট, কালো পাম্প সু পরিহিত শায়লাকে একদমই কলেজ পড়ুয়া তরুণীর মতো দেখাচ্ছে। গ্রামে পুকুর পাড়ে বেশ দূর থেকে তোলা একটি ছবি রয়েছে। এছাড়া আরো কিছু গ্রুপ ছবি আছে। তবে একটি বিশেষ ছবিতে সাজ্জাদের চোখ আটকে যায়। এই ছবিটি কেবলই শায়লার। লোকেশন দেখেই অনুমিত যে দেশের বাইরের কোন স্থানে তোলা হয়েছে ছবিটি।

এখানে শায়লা পাথরের সিঁড়ির উপরে ক্যামেরার দিকে সামান্য মুখ ঘুরিয়ে বসে আছে। মাথায় গোলাকার চাইনিজ হ্যাট, চোখে সানগ্লাস, পরনে  লাল রঙের টি শার্ট, নীল রঙের জিন্স প্যান্ট। শায়লার দৃষ্টি দূরে কোথাও নিবদ্ধ। ক্যামেরা যেদিকে, ঐদিকের হাতটা শরীরের পেছনে মেঝেতে ভর দিয়ে রাখা, অন্য হাতটি দিয়ে হ্যাটের কিনারা স্পর্শ করে আছে।

এক পাশ থেকে ছবি তোলার কারণে শায়লাকে সম্পূর্ণ অন্যরকম লাগছে। মনে হচ্ছে যেন নব্বই দশকের নায়িকাদের মতো কোন ট্যাবলয়েড পত্রিকার জন্য পোজ দিয়েছে সে। শায়লার স্ট্রেইট করা সিল্কি চুলে রোদের খেলা, গায়ের সাথে লেগে থাকা টি শার্ট আর উরুতে কামড়ে ধরা স্লিমকাট জিন্স সবকিছু মিলিয়ে এই ছবিটা যেন সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমি এক শায়লা চৌধূরীর প্রতিচ্ছবি। ওর মায়ের এমন ছবি কে তুলে দিয়েছিলো? কবে তোলা হয়েছিলো? সাজ্জাদের মনে নানান প্রশ্ন উঁকি দেয়। কী মনে করে ছবিটা এলবাম থেকে বের করে পেছনে উল্টায়। সেখানে শুকিয়ে যাওয়া বলপয়েন্টের কালিতে লেখা,

'The Grand Palace, Thailand,
Thanks for the gift.
Yours,

নীচে প্যাঁচানো হাতে সই করা। পুরো সই না পড়া গেলেও শুরুটা R দিয়ে সেটা বোঝা যাচ্ছে।

সাজ্জাদ পুনরায় ছবিটা যথাস্থানে রেখে এলবামটা বেড সাইড টেবিলের উপরে ছুঁড়ে ফেলে। সেটা পিছলে নীচে পড়ে গেলেও ফিরে তাকায় না। টেবিলের ড্রয়ার থেকে ঘুমের ঔষধের পাতা বের করে ২টা ট্যাবলেট খেয়ে ধপাস করে শুয়ে পড়ে বিছানায়।

শায়লার দাফনের পরে নানান ঝামেলায় দেরী হয়ে যাওয়ায় আজ রাতটা এই বাড়িতেই থেকে গেছে সে। বহুবছর পর নিজের রুমে রাত কাটাচ্ছে। যদিও এখন মনে হচ্ছে কাজটা ঠিক হয়নি। সারাক্ষণই মনের ভিতরে কেমন যেন অস্বস্তি কাজ করছে।

সিলিং এর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে নিজের মনকে নানাভাবে বুঝাতে থাকে সাজ্জাদ। প্রথমত ২টা ঘুমের ঔষধ খেয়েছে। শীঘ্রই এগুলো কাজ করা শুরু করবে। এক ঘুমেই রাত পার করে দেবে। তারপর আগামীকাল সকালেই এ বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা নিজের আস্তানায় ফিরে যাবে। দ্বিতীয়ত, ঘুম আসার আগে নিজের মনকে ডাইভার্ট করা প্রয়োজন। এমনিতে পুরো বাড়ি যে একদমই ফাঁকা তা বলা যায় না। গেটে ১ জন দারোয়ান আছে। বাড়ির ভেতরে ১ জন কেয়ারটেকার ও ১ জন বাবুর্চি আছে। ভয়ের তেমন কিছুই নেই। তারপরেও অনেক বছর পর পুরানো বাড়িতে হুট করে রাত কাটাতে গেলে মনের ভিতর অজানা চাপ সৃষ্টি হয়। তাই মনকে ডাইভার্ট করার জন্য সাজ্জাদ অন্যকিছু নিয়ে ভাবার চেষ্টা করে। আচমকা জেরিনের কথা মনে এলো ওর। মেয়েটিকে খুব বেশিক্ষণ দেখার সুযোগ পায়নি। তাই চোখ বন্ধ করে জেরিনের চেহারাটা মনে করার চেষ্টা করে সে।

ফর্সা, সুন্দর, ডিম্বাকার মুখ,
কাজল দেওয়া টানা টানা চোখ,
গোলাপী বাঁকা ঠোঁট,
আর... আর...

টুকরো টুকরো ইনফো গুলো মিলিয়ে একটা ডিটেইলড চেহারা দাঁড় করানো যায় কি!

নাহ! ঠিক আসছে না।

কেবল সাদা রঙের সেলোয়ার কামিজ পরিহিত একটি শরীর দেখতে পাচ্ছে সাজ্জাদ। সুগঠিত, পরিপূর্ণ একটি রমণীর শরীর। গোল দুই উরুর মাঝে রহস্যময় সন্ধিক্ষণ, কলসীর কাঁধের মতো ঢেউ খেলা কোমর... বুকের উপর সাদা ওড়না...এই তো...এই তো... সাজ্জাদ আরেকটু চেষ্টা করে জেরিনের মুখটা দেখার জন্য।

কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে সে যে মুখটা দেখতে পায় সেটা তার পূর্বপরিচিত! যেন বহুকাল ধরে এই মুখটাকে চেনে সে! এই মুখটি সাজ্জাদের মা, শায়লা চৌধুরীর। বিয়ের আসরে জবুথবু হয়ে বসে থাকা শায়লা চৌধুরী নয়। হ্যাট মাথায় মোহনীয় ভঙ্গীতে বসে থাকা সেই শায়লা চৌধুরী। সাজ্জাদ অস্বস্তিতে ছটফট করতে থাকে। জেরিনের মুখের জায়গায় শায়লাকে কেন দেখছে সে! কিছুক্ষণের মধ্যেই জেরিনের (কিংবা শায়লার) পাশে আরেকজনকে এসে দাঁড়াতে দেখে। একজন যুবক পুরুষ... জিন্সের শার্ট, কালো প্যান্ট, ফিনফিনে গোঁফ, ব্যাক ব্রাশ চুল... এই লোকটিকেও চেনে সাজ্জাদ। এই লোকটির নাম রাসেল। রাসেল শিকদার। জেরিনের বাবা। কিন্তু এখানে রাসেলকে মোটেও জেরিনের বাবার মতো লাগছে না। বরং লোকটা জেরিনের (না কি শায়লার) কোমরে হাত দিয়ে আছে, হাসছে দুজনে। সাজ্জাদ ছুটে পালাতে চাইলো ওদের কাছ থেকে। অনেক দূরে।

অনেক জোরে দৌড়াতে থাকলো সে। ওদের থেকে যত দূরে সম্ভব পালাতে চায়। অন্ধকার রাস্তায় দৌড়াতে দৌড়াতে সামনে একটা খোলা দরজা দেখতে পায়। ওখানেই পৌছাতে হবে তাকে। হঠাৎ পা পিছলে পড়ে যায় সে। সারা শরীরে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খেয়ে চোখ খোলে সাজ্জাদ। বিছানায় উঠে বসে। চোখ খোলার পরেও বুঝতে পারছে না এখনো স্বপ্ন দেখছে না কি বাস্তবে ফিরে এসেছে?  ঘরটা এমন দুলছে কেন!

সাজ্জাদের শরীরটা যেন তার নিজের নিয়ন্ত্রণে নেই। পায়ে পায়ে বিছানা থেকে নেমে ঘরের বাইরে চলে আসে সে। ওর শোবার ঘর থেকে বের হলে ছোট্ট একটি খোলা জায়গা পড়ে, যেটা একসময় লিভিং রুম ও পারিবারিক লাইব্রেরি হিসেবে ব্যবহার করা হতো। নিজের ঘরের সামনে থেকে লাইব্রেরির ঠিক অপর পাশেই বাবা মায়ের বেডরুমের দরজা দেখতে পাচ্ছে সাজ্জাদ। ঐ ঘরের আধ খোলা দরজা থেকে অল্প অল্প আলো এসে পড়ছে বাইরে। কিসের যেন শব্দও শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। কে আছে ও ঘরে? কে?

সাজ্জাদ কোন এক নিষিদ্ধ আকর্ষণের টানে ঐ ঘরের দিকে হাঁটতে থাকে, পা টিপে টিপে। শৈশবে অনেকসময় রাতে একা একা থাকতে ভয় লাগলে এভাবেই বাপ মায়ের ঘরে গিয়ে হাজির হতো। কিন্তু এখন কেন এরকম করছে সাজ্জাদ জানে না। ও যেন ঘোরের ভিতরে আছে।

দরজার কাছাকাছি আসার পর ঘরের ভেতরকার শব্দ আরো স্পষ্ট হয়। কয়েক ধরণের শব্দের মিশ্রণ বলা যায়। সাজ্জাদের মস্তিষ্ক বলছে এই শব্দ তার পূর্ব পরিচিত। দরজার কাছে পৌছে দরজাটা পূর্বের চেয়ে সামান্য সরিয়ে দিলো। ওর বাবা মায়ের বিশাল মাস্টার বেডরুমের ঠিক মাঝখানে অবস্থিত বিছানাসহ প্রায় সম্পূর্ণ ঘরটি দেখতে পাচ্ছে সে। ঘরে থাকা বিশাল এলইডি টিভি চালু আছে। কোন একটা গানের সুর বাজছে সেখানে।

"Kisses on the foreheads of the lovers
wrapped in your arms
You've been hiding them in hollowed out
pianos left in the dark"

সেই সুরের সাথে মিশে যাচ্ছে আরো কিছু শব্দ। বিছানার পায়ের কাছে মেঝেতে দাঁড়িয়ে আছে একজন লোক, লম্বা পেশিবহুল শরীর, গায়ে কোন কাপড় না থাকায় সাজ্জাদ তার পিছনের দিকটা আপাদমস্তক স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। লোকটার সামনে বিছানায় একজন মেয়ে মানুষ নগ্ন হয়ে শুয়ে আছে — শঙ্খের মতো ফর্সা তার গায়ের রঙ, লম্বা খোলা চুল ছড়িয়ে আছে চারিদিকে। তার উলম্ব পা দুটি দু'হাতে শক্ত করে ধরে উলঙ্গ পুরুষ লোকটি সজোরে তালে তালে কোমর নাড়িয়ে যাচ্ছে সামনে পেছনে। মেয়েটির উরু ও নিতম্বের সঙ্গে পুরুষটির শরীরের ক্রমাগত আঘাতে শব্দ তৈরি হচ্ছে — থাপ! থাপ! থাপ! থাপ!

সাজ্জাদ পুরুষটির দুপায়ের ফাঁক দিয়ে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে যে মেয়েটির শরীরের ভেতরে কীভাবে একটা পুরুষাঙ্গ বার বার ঢুকছে, আর বের হচ্ছে...
আবার ঢুকছে,
আবার বের হচ্ছে।

যেন একটা মেশিন কাজ করে যাচ্ছে।

প্রতিবার লিঙ্গ সেঁধানোর সময়ে পুরুষটির পাছার মাংশ শক্ত হয়ে যাচ্ছে। আবার বের করার সময়ে শিথিল হচ্ছে। আবার শক্ত হয়ে প্রবল জোরে মাটি খোঁড়ার মেশিনের মতো নিজের লিঙ্গকে সেঁধিয়ে দিচ্ছে মেয়েটির যোনীতে। রুমের বাইরে থেকে যেই অদ্ভুত শব্দ শুনতে পেয়েছে সাজ্জাদ, সেটি ছিলো পুরুষ লোকটির কামাসোক্ত গর্জন, আর মেয়েটির উচ্ছ্বসিত শীৎকারের মিলিত রূপ। সাজ্জাদ হতবিহ্বলের মতো দাঁড়িয়ে থাকে দরজার কাছে। মস্তিষ্ক বলছে সামনে যা ঘটছে সেগুলো সব তার কল্পনা। এর কিছুই সত্যি নয়। সে জোরে জোরে দরজায় শব্দ করে। সঙ্গমরত পুরুষ লোকটি কেবল ঘাড় ঘুরিয়ে ওর দিকে ফিরে তাকায়। চমকে ওঠে সাজ্জাদ। চৌকো চোয়ালের মুখে ফিনফিনে গোঁফ, ব্যাকব্রাশ করা চুল — সাজ্জাদ এই লোকটিকে চেনে। লোকটির নাম রাসেল শিকদার। রাসেল ওর দিকে ফিরে তাকালেও কোমর নাড়ানো বন্ধ করে না। পূর্বের গতিতেই উলঙ্গ মেয়েলোকটার দু'পা ধরে তার শরীরকে খুঁড়তে থাকে, আর মুখে একটা কৌতূকপূর্ণ হাসি ঝুলিয়ে রাখে। শায়িত মেয়ে লোকটি রাসেলের দৃষ্টিকে অনুসরণ করে সাজ্জাদকে দরজার কাছে দেখতে পায়। মাথা উঁচু করে সাজ্জাদের চোখে চোখ রাখে। এতক্ষণ পরে সাজ্জাদ বুঝতে পারে মেয়েটির পরিচয়। সারা শরীর কাঁপতে থাকে ওর। মেয়েটিরও যেন হুঁশ ফেরে। এক ধাক্কায় রাসেলকে সরিয়ে দেয় সে। তারপর নগ্ন শরীরেই ছুটে আসতে থাকে ওর দিকে।

"দাঁড়া সাজুসোনা, শোন আমার কথা...''

মেয়েটি দরজায় পৌছানোর আগেই সাজ্জাদ ছুটে পালাতে চেষ্টা করে। কিন্তু সেটা সম্ভব হয় না। লাইব্রেরী রুমের কার্পেটে হোচট খেয়ে পড়ে জ্ঞান হারায় সে। পুরোপুরি জ্ঞান হারানোর ঠিক আগের মুহূর্তে কেবল অনেক দূর থেকে ম্রিয়মান শব্দে মেয়েলি কণ্ঠের 'সাজু, সাজু' ডাক শুনতে থাকে সে। কণ্ঠটি আর কারো নয় — তার মা, শায়লা চৌধূরীর।

****

মোবাইল ফোনের রিং টোনের শব্দে ঘুম ভাঙ্গে সাজ্জাদের। আধো ঘুম আধো জাগরণের মাঝে কল রিসিভ করে বলে, " হ্যালো।"
"সাজ্জাদ, আমি এডভোকেট হাসানুল করিম। তোমার হাসান আঙ্কেল।"
"স্লামালিকুম আঙ্কেল, কেমন আছেন?" ঘুম ঘুম কণ্ঠে উত্তর দেয় সে।
"ওয়ালাইকুম। ভালো আছি বাবা। তুমি কেমন আছো?''
" জ্বি। ভালো আছি।"
"বেশ। একটা জরুরি প্রয়োজনে তোমাকে কল দিলাম। প্রয়োজনটা আসলেই তোমারই। আমি কেবলই বার্তাবাহক।"
সাজ্জাদ ভ্রু কুঁচকে কয়েক মুহূর্ত চিন্তা করে। তেমন জরুরি কিছু ওর মনে পড়ে না।
ওপাশ থেকে এডভোকেট সাহেব বলতে থাকেন, "তোমার বাবা মারা যাওয়ার আগে নগদ কয়েক কোটি টাকা ব্যাঙ্কে রেখে গেছেন। এছাড়া বাড়ি, গাড়ি, ফ্যাক্টরি ও অন্যান্য সম্পদ মিলিয়ে প্রায় শ কোটি টাকার হিসাব নিকাশ আছে। তোমার মা যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন তিনিই এসব দেখেছেন। এখন তোমার বাবার একমাত্র সন্তান হিসেবে এগুলো বুঝে নেওয়ার সময় হয়েছে। তুমি এক কাজ করো। আজকে দুপুরে লাঞ্চের আগে আমার অফিসে চলে আসো। এখানেই লাঞ্চ করার ফাঁকে তোমাকে সমস্ত লিগ্যাল প্রসিডিউর সম্পর্কে বুঝিয়ে বলবো।"
সাজ্জাদের কাছে এই বিষয়টা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ছিলো। ছাত্রাবস্থায় মাসে একটা ভালো এমাউন্টের হাত খরচ পেয়েছে। এরপর নিজে ইনকাম করতে শুরু করলে নিজের মিনিমালিস্টিক লাইফে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে বাপের কোটি টাকার হিসেব নিয়ে কখনো মাথা ঘামাতে হয়নি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে না চাইতেও এসব বিষয়ে ঢুকতে হবে।
"জ্বি আচ্ছা আঙ্কেল। আমি আজকে চলে আসবো।"
''অল রাইট মাই বয়। টেক কেয়ার।"

ফোন রেখে বিছানায় উঠে বসতে গিয়ে টের পায় একটা হাত ওর  কোমর জড়িয়ে আছে। পাশ ফিরে হাতের মালিককে লক্ষ করে সে। ঘুমের রেশ পুরোপুরি কাটেনি বলেই কী না সাজ্জাদের দৃষ্টিভ্রম হয়। চমকে ওঠে সে। ঘন চুলে মুখ ঢেকে থাকায় বিভ্রান্ত মন তাকে এমন একজনের চেহারা দেখায় যার এই মুহূর্তে ওর পাশে থাকা সম্ভব নয়। হাত বাড়িয়ে চুলগুলো সরিয়ে দেয় মুখের উপর থেকে। পরক্ষণেই ভুল ভাঙে তার।

এই মেয়েটির নাম শাহেনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্রী। সাজ্জাদ ঐ বিভাগে ছবি আঁকা শেখায়।

শাহেনা বেশ আদুরে ভঙ্গিতে ঘুমিয়ে আছে। টিন এজ বয়সের কচি একটা মুখ। গোল কপোল, আর ছোট্ট চিবুকের মাঝে কাটা কাটা নাক, চোখ। গায়ের বর্ণ ঠিক ফর্সাও নয়, আবার শ্যামলাও নয়। অনেকটা ল্যাটিনা মেয়েদের মতো ক্রিম কালারের। এই ধরণের গায়ের রঙের মেয়েদের ত্বক সাধারণত খুব মসৃণ হয়। এই মেয়েটিও তার ব্যতিক্রম নয়। মুখটা একদম দাগহীন, নিখুঁত। ধনুকের মতো বাঁকা পাতলা ঠোঁটের ফাঁকে সাদা দাঁত দেখা যাচ্ছে।

মন কেন এরকম বিভ্রান্তিতে ফেললো সাজ্জাদ জানে না। আপাতত নিজেকে শান্ত করা প্রয়োজন। সে নীচু হয়ে শাহেনার ঠোঁটে আলতো চুমু খেলো কয়েকটা। অচীরেই সেগুলো গাঢ় চুমুতে পরিণত হতে লাগলো। হাত বাড়িয়ে মেয়েটার শরীরের উপর থেকে পাতলা চাদর সরিয়ে ফেললো সে। কোমর ধরে নিজের কাছে টেনে আনলো। শাহেনার তরুলতার মতো শরীরে স্তনজোড়া ব্যতিক্রমভাবে বড় ও পরিপুষ্ট। সাজ্জাদের কাছে মনে হয় এই মেয়েটার শরীরের তুলনায় স্তনের বয়স অন্তত পাঁচ বছর বেশি। অর্থাৎ শরীরের বয়স যদি ২০ বছর হয়। তবে স্তনের বয়স হবে ২৫ বছর।

ঘুমন্ত অবস্থাতেও শাহেনার শরীর ওর স্পর্শে সাড়া দিচ্ছে। নিজের বুকে শাহেনার শক্ত হয়ে ওঠা স্তনবৃন্তের খোঁচা টের পেলো। ঠোঁট থেকে মুখ সরিয়ে শাহেনার স্তনের দিকে মনোযোগ দেয় সে। কাত হয়ে শুয়ে থাকার কারণে একটার উপরে অন্যটা তাল খেয়ে আছে। ক্রিম রঙের ত্বকের মাঝে খয়েরি রঙের বোঁটা, আর ঠিক পয়সার মতো গোলাকার এরিওলা। শুয়ে থাকা অবস্থাতেও স্তনগুলো যে বেশ পোক্ত বোঝা যায়। নিঃসন্দেহে যে কোন মেয়ের জন্য অনেক বড় প্রকৃতিপ্রদত্ত আশীর্বাদ। ক্লাসের প্রথম দিনেই অনেক মেয়ের মাঝে শাহেনার এই সম্পদগুলো বিশেষভাবে চোখে পড়েছিলো। যেহেতু সাজ্জাদ ছবি আঁকে। তাই যে কোন মানুষের "আউট অব অর্ডিনারি" কোন শারীরিক বৈশিষ্ট্য সহজেই তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

সাজ্জাদ ছোট্ট বাচ্চাদের মতো শাহেনার স্তনের বোঁটায় আলতো করে দাঁত কাটে। নরম করে কামড়ে ধরে ছেঁড়ে দেয়। 'ইশ' — চাপা শব্দ করে ওঠে শাহেনা। যদিও তার চোখ বন্ধ।

সাজ্জাদ পালাক্রমে স্তন দুটোর বোঁটাগুলোয় জ্বিভের ডগা দিয়ে সুড়সুড়ি দেয়। বাছুর যেভাবে গাভীর ওলানে ধাক্কা মারে সাজ্জাদও সেভাবে নাকের ডগা দিয়ে শাহেনার পুষ্ট স্তনের বোঁটায় ধাক্কা দেয়। ''আহহাহ! উফ!" — কামোত্তেজক আওয়াজ বের হয় শাহেনার মুখ দিয়ে।

শাহেনার স্তন নিয়ে খেলার সময়ে ওর উরুতেও হাত বুলাচ্ছিলো সাজ্জাদ। উরু থেকে পাছায়, পাছা থেকে উরুতে হাত বুলাতে বুলাতে দুই উরুর মাঝখানে আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ করে। একেবারে ভিজে গেছে জায়গাটা। অর্থাৎ সাজ্জাদের প্রাথমিক কাজ শেষ। এখন পরবর্তী ধাপে যাওয়ার সময় হয়েছে। কিন্তু সেটা না করে বিছানা ছেড়ে নেমে যায় সে। চোখ বন্ধ থাকা অবস্থাতেই ভ্রু কোঁচকায় শাহেনা। প্রত্যাশা অপূর্ণ থাকলে বিরক্ত হওয়ায় স্বাভাবিক।

সাজ্জাদের এপার্টমেন্টটা অনেকটা স্টুডিওর স্টাইলের। নিজের রুচি অনুযায়ী সম্পূর্ণ ইন্টেরিওরটা তৈরি করে নিয়েছে। জানালার পাশে ক্যানভাসের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো সে। ক্যানভাসে একটা অসম্পূর্ণ ছবি আঁকা রয়েছে। কেবল এক জোড়া চোখের ছবি স্পষ্ট হয়েছে রঙ তুলির আঁচড়ে। সাজ্জাদ অন্যমনস্ক হয়ে সেই ছবির দিকে তাকিয়ে রইলো।

শাহেনা উঠে এসে ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। নরম হাত দিয়ে বিলি কাটে সাজ্জাদের বুকে আর পেটের লোমের উপরে।
"কী ব্যাপার? চলে আসলে যে?"
সাজ্জাদ মৃদু হাসলো, কিন্তু উত্তর দিলো না।
"কার ছবি আঁকছো?"
"এখনো জানি না।"
"রেফারেন্স ছাড়াই এত সুন্দর এঁকেছো?"
"হ্যাঁ। বলতে পারো।"
"আমার সেটা মনে হয় না।"
"মানে?"
"এই চোখগুলো অসম্ভব জীবন্ত। তার মানে তুমি সচেতনভাবেই আঁকছো। তুমি জানো এগুলো কার চোখ। হয় তুমি বলতে চাচ্ছো না অথবা নিজের কাছেই লুকোচ্ছো।"

সাজ্জাদ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে নিজের আঁকা ছবির দিকে। শাহেনার কথাটি কী সত্যি? ওর অবচেতন মন কী ওর কাছ থেকে কিছু লুকিয়ে রাখছে?

অন্যমনষ্ক সাজ্জাদ অনুভব করে ওর অর্ধ উত্থিত লিঙ্গটাকে শাহেনা  মুঠ করে ধরেছে। ওর পিঠের সাথে বুক ঠেসে ধরে সামনের দিকে হাত উঠানামা করে ধীরে ধীরে লিঙ্গটাকে মন্থন করছে। আহ! বেশ আরাম অনুভব করে সাজ্জাদ। কাম-আবেশে চোখ বন্ধ করে সে। আবারো তার মন চাতুরী শুরু করে। শরীরে স্পর্শ অনুভব করছে শাহেনার। কিন্তু মানসপটে দেখছে অন্য এক নিষিদ্ধ রমণীর মুখ। এমন সময় কলিং বেল বেজে ওঠে। ধ্যান ভঙ্গ হয় দুই নরনারীর।

"কে আসলো এখন?" শাহেনার প্রশ্ন। সাজ্জাদও অনুমান করতে পারলো না। নিকট বন্ধুরা প্রয়োজন ছাড়া তার কাছে আসে না। তবে আসার আগে অন্তত কল দিয়ে জানায়।
Like Reply
#16
ডোরভিউ দিয়ে নজর দিয়ে রীতিমত ভির্মি খেলো সে। দরজার সামনে জেরিন দাঁড়িয়ে আছে। চট জলদি ট্রাউজার আর টি শার্ট পরে ফেললো। শাহেনাও বুঝতে পেরেছে কিছু একটা হয়েছে। সে বুদ্ধিমতি মেয়ে। তাই অহেতুক প্রশ্ন করে সময় নষ্ট না করে নিজের জামা কাপড় হাতে নিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে পড়লো। কলিং বেল বেজেই চলেছে। সাজ্জাদের মনে হলো এখন দরজা না খুললে জেরিন হয়তো চলে যেতে পারে। তাই আর কিছু না ভেবে দরজা খুলে জেরিনের মুখোমুখি হয়।
"আসসালামু আলাইকুম, সাজ্জাদ ভাইয়া। কেমন আছেন?"
"ওয়ালাইকুম। ভালো আছি আমি। Surprised to see you. Please come on in।"
"Thank you."

জেরিন নির্দ্বিধায় ঢুকে পড়লো সাজ্জাদের এপার্টমেন্টে। হাঁটতে হাঁটতে স্টুডিওর মাঝখানে এসে চারপাশটা দেখতে লাগলো। কিছুক্ষণ পূর্বের শারীরীক উত্তেজনার রেশ তখনো রয়ে গেছে। তাই না চাইতেও সাজ্জাদের চোখ জেরিনকে ভিন্নভাবে দেখছে। নিজেকে প্রবলভাবে একটা ধমক দেয় সাজ্জাদ। শত হোক মেয়েটি তার অতিথি। প্রথম পরিচয়েই এমনটা করা উচিত নয়। দরজা বন্ধ করে জেরিনের দিকে এগিয়ে গেলো সে।

সাজ্জাদ কখনোই তেমন গোছানো মানুষ ছিলো না। নিতান্ত প্রয়োজনীয় আসবাব দিয়ে সাজানো এপার্টমেন্ট। আর জামাকাপড়, বই পত্র, সারা ঘরে ছড়িয়ে আছে। ছবি আঁকার জন্য একটা কর্ণার নির্ধারিত আছে। সেখানেই রাখা আছে ইজেল, ক্যানভাস ও অন্যান্য সরঞ্জাম। বিভিন্ন জায়গায় ওর নানান শখের জিনিস যেমন মাটির পুতুল, ফুলদানি, পাটের তৈরি জিনিস, ইন্ডোর প্লান্ট এসব রাখা আছে।

ফ্লোর বিছানার পাশে গত রাতের ব্যবহৃত কন্ডোমের প্যাকেট পড়ে ছিলো। জিনিসটা চোখে পড়তেই বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে সাজ্জাদ পা টিপে টিপে গিয়ে আঙ্গুলের খোঁচায় ওগুলো কোথাও আড়াল করার চেষ্টা করলো। জেরিন দেখে ফেললে কি না কি মনে করে কে জানে! জেরিন অবশ্য ওর আঁকা বিভিন্ন ছবি দেখতে ব্যস্ত।

"ঐদিন আপনার সঙ্গে ঠিকমত কথা বলতে পারিনি বলে আজ নিজেই চলে এলাম। কিছু মনে করেননি তো?"
"আরে না না। মনে করার কী আছে। ঠিকানা পেলে কোথায়?"
"ছোট চাচীর কাছে। ঐদিনই নিয়ে রেখেছিলাম।"
"ও আচ্ছা।"
"আপনি ভালো ছবি আঁকেন শুনেছিলাম। কিন্তু এতটা দারুণ আঁকেন জানতাম না।"
"কার কাছে শুনেছিলে?"
"আপনার মায়ের কাছে।"
সাজ্জাদ খুবই অবাক হলো। জেরিনের সাথে ওর মায়ের কথা হওয়া অসম্ভব ব্যাপার না। কিন্তু রাসেল শিকদারের মেয়ে শায়লা চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ রাখবে এটা কিছুটা অপ্রত্যাশিত ছিলো ওর কাছে। জেরিন বললো, "আপনি কী একাই থাকেন এখানে?"
"হ্যাঁ। মাঝে মধ্যে কেউ কেউ সঙ্গ দিতে আসে। তবে একাই থাকি বেশিরভাগ সময়ে।"
"ও আচ্ছা। আমি আসার আগে কী একাই ছিলেন না কি কেউ সঙ্গ দিচ্ছিলো?"
সাজ্জাদ আমতা আমতা করতে লাগলো। ঠিক তখনই ওয়াশ রুম থেকে শাহেনা বেরিয়ে এলো। ইতোমধ্যে সে পোশাক পরে ফ্রেশ হয়ে গেছে। শাহেনার সঙ্গে জেরিনের চোখাচুখি হয়ে যাওয়াতে সাজ্জাদ তাড়াতাড়ি বললো, "জেরিন, ও আমার ছাত্রী শাহেনা। আমার একটা প্রজেক্টে এসিস্ট করছে।''
জেরিন কোন কথা না বলে কেমন গম্ভীর মুখে তাকিয়ে রইলো। অন্যদিকে শাহেনার মুখেও কীসের যেন ছাপ দেখা গেল। সে কোন কথা না বলে নিজের হ্যান্ড ব্যাগ নিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো।

সাজ্জাদ মনে মনে প্রমাদ গুণছে। এই বুঝি জেরিনও গটমট করে চলে যাবে। কিন্তু ওকে অবাক করে জেরিন বললো, " সাজ্জাদ ভাই, আমি আপনার কাছে কেন এসেছি সেটা খুলে বলি। জন্মের পর থেকে আমি আসলে আমেরিকাতেই পুরোটা জীবন কাটিয়ে দিয়েছি। যদিও বাংলাটা ভালো বলতে পারি। কিন্তু বাংলাদেশে আসার তেমন সুযোগ পাইনি। এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি যতটুকু পারি এ দেশটাকে দেখে যেতে চাই। ইন ফ্যাক্ট সেই উদ্দেশ্যেই এসেছিলাম। কিন্তু হুট করে শায়লা আন্টির মৃত্যুর খবর পেয়ে গেলাম। সে যাক, এখন আমার খুব ইচ্ছে আমেরিকা ফিরে যাওয়ার আগে আগামী কয়েকদিন অন্তত কিছু জায়গা ঘুরে দেখবো। আপনি আমাকে এস্কোর্ট করবেন। You can't refuge me. I insist.''
"আমিই কেন?"
"সেটা আপনাকে পরে বলবো। কিন্তু আপনাকেই চাই আমার।"
"কিন্তু তাতে আমার লাভ?"
"আপাতত লাভ হলো আমার মতো সুন্দরী মেয়ের সঙ্গ পাবেন। তবে আপনার সার্ভিস আমি ফ্রিতে নিবো না। বলুন কী দিতে হবে আপনাকে?"
হঠাৎ সাজ্জাদের দিলখোলা অট্ট হাসি জেরিনকে চমকে দিলো। হাসি থামিয়ে বললো, "ঠিক আছে। তবে আমিও পরে বলবো। তবে যা চাইবো তাই দিতে হবে কিন্তু।"
"বেশ। ডিল।"
জেরিন হাত বাড়িয়ে দিলো হ্যান্ডশেক করার জন্য। সাজ্জাদের মনে হলো ওর হাতটা যেন তুলার মতো নরম। সকালের অভুক্ত শরীরটা হঠাৎ একটু আনচান করে উঠলো।
"তবে চলুন, এখনই বের হওয়া যাক।"
সাজ্জাদ এক মুহূর্ত ভেবে বলে, "আজকেই? তবে দুপুরের আগ পর্যন্ত সময় দিতে পারবো।"
"বেশ। ঠিক আছে।"

****

পরবর্তী কয়েকটি দিনে গুলশান বনানীর এস্থেটিক রেস্তোরা থেকে মহাসড়কের পাশের চায়ের দোকান, পুরান ঢাকা থেকে নতুন ঢাকা, শাঁখারি বাজার থেকে শিল্পকলা, শহীদ মিনার থেকে লালবাগ কেল্লা — বলতে গেলে পুরো ঢাকা শহরটা চক্কর দিয়ে ফেলে সাজ্জাদ আর জেরিন। সকালে সাজ্জাদের এপার্টমেন্টে এসে ওকে ধরে নিয়ে যায় জেরিন। তারপর সারাদিন চলে ঘোরাঘুরি, আড্ডা, খাওয়া দাওয়া আর অসংখ্য ছবি তোলা। প্রথমদিন ড্রাইভার থাকলেও পরে তাকে বিদায় করে দিয়েছে সাজ্জাদ। এরপর থেকে নিজেই ড্রাইভ করেছে। এতে জেরিনকে একান্তে কাছে পাওয়া গেছে। ওকে আরো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পেয়েছে।

স্বভাবে সাজ্জাদের সম্পূর্ণ বিপরীত হলো জেরিন। খুবই বহির্মুখী, প্রাণচঞ্চল একটি মেয়ে। একই সাথে ক্লাসি ও আত্মসচেতনও বটে। দামি রেস্তোরা কিংবা পশ মানুষদের সামনেও যেমন সপ্রতিভ থাকে। ঢাকা শহরের ভীড়ের মাঝেও তেমন গটগট করে হেঁটে যেতে পারে। যে কোন আড্ডাতে এই মেয়েটি এমনভাবে ঢুকে যেতে পারে যে নিজেই সেই আড্ডার মধ্যমণি হয়ে যায়। এক্ষেত্রে কথার পারদর্শীতা ছাড়াও জেরিনের আরো একটি ট্রাম্পকার্ড আছে। সেটা হলো তার শারীরীক সৌন্দর্য্য। বাঙ্গালি মাত্রই সৌন্দর্য্যের পূজারী। আর সাজ্জাদ এই কয়েক দিনে নির্দ্বিধায় স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে, এই মেয়েটি কোন রকম প্রসাধনী, কোন রকম অলঙ্কার, চন্দ্র-সূর্যের কোন বিশেষ মুহূর্তের অবস্থান ছাড়াই পৃথিবীর যে কোন মাপকাঠিতে আদর্শ সুন্দরী নারী হিসেবে বিবেচিত হবে। যদিও এরিস্টোটল সাহেব বলে গেছেন  'Beauty in the eye of the beholder.' তবুও প্রকৃতি মাঝে মধ্যে কাউকে কাউকে নিজের হাতে এমনভাবে সৌন্দর্য্য দান করে যেটাকে আসলে এই যুক্তির বেঁড়াজালে আটকানো যায় না। জেরিন তেমনই একজন।

সাজ্জাদ শিল্পীর চোখে ওকে দেখার চেষ্টা করেছে — উচ্ছ্বসিত হয়ে ফুটপাতের দোকানে কাচের চুড়ি নেড়ে দেখার সময়ে অথবা রমনা পার্কে বসে তন্ময় হয়ে কোন অপরিচিত নগর-বাউন্ডেলের উকুলেলের সুর শোনার সময়ে ওকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছে সে। মাঝ রাতের ল্যাম্পপোস্টের আলোয় গরম চায়ের কাঁপে চুমুক দিতে দেখেছে, নিয়ন আলোয় গানের মূর্ছনায় নাচতে দেখেছে, বুড়িগঙ্গার বুকে নৌকায় ভাসতে ভাসতে চাঁদের আলোয় বিষন্ন হতে দেখেছে।

ব্যাগি জিন্স, টি শার্ট, কিংবা সুতির শাড়ি, ব্যাকলেস ব্লাউজ অথবা ক্রপ টপ্স ও স্কার্ট সবকিছুতেই মানিয়ে যাওয়ার মোহনীয় শারীরিক সৌন্দর্য্য নিয়ে জন্ম নিয়েছে মেয়েটি। আর সবচেয়ে বড় কথা এই সৌন্দর্য্য প্রকাশ করা নিয়ে তার ভিতরে বিন্দুমাত্র সঙ্কোচ বা সংস্কার নেই। আড্ডারত পুরুষটি তার স্ফিত স্তনজোড়ার দিকে তাকিয়ে বারংবার দৃষ্টি-দোহন করতে থাকলেও সে কুঞ্চিত হয়নি। কিংবা রাজপথে ঘুরে বেড়াবার সময়ে কর্মপিষ্ট, যৌনক্ষুধার্ত পথচারী বাঙ্গালি পুরুষের লোলুপ নজরেও বিচলিত হয়নি।

প্রতীকূল সমাজের মাঝে দাঁড়িয়েও জেরিনের যে অবিচলতা সেটা যে আশেপাশের মানুষের মনোজগৎ নিয়ে উদাসীনতার কারণে, সেটাও ঠিক নয়। সেটার প্রমাণ সাজ্জাদ হাতে নাতে পায়। এবং সেই প্রমাণ পেতে গিয়ে এমন এক অভিজ্ঞতা হয় যেটার জন্য সাজ্জাদ কল্পনাতেও প্রস্তুত ছিলো না। জেরিনের প্রতি তার ধারণা রাতারাতি বদলে যায়।

একদিন ঢাকার কোলাহল ছেড়ে কাশবনের মাঝে হাঁটতে হাঁটতে জেরিন সাজ্জাদকে আচমকা প্রশ্ন করে, "আচ্ছা সাজ্জাদ ভাই, আপনি কোথায় আছেন?"
সাজ্জাদ বিভ্রান্ত হয়ে বললো, "কোথায় আছি মানে কী? এখানেই তো আছি।"
জেরিন যখন এই প্রশ্নটা করেছে সাজ্জাদ তখন ওর ঠিক পেছনেই হাঁটছিলো। জেরিন কাশফুলের মাঝখান দিয়ে ফুলের গায়ে গা ছুঁয়ে ছুঁয়ে হাঁটছিলো। আর সাজ্জাদ দেখছিলো শুভ্র কাশবনের মাঝে লুকোচুরি খেলা একমাথা ঘন কালো চুল, কালো রঙের পিঠ খোলা ব্লাউজ, আর নীল সাদা সিল্কের শাড়ি পড়া উত্তল নিতম্বের ঢেউ। চোখ ওদিকে থাকলেও মন যে মাঝে মাঝে সুদূরে হারিয়ে যাচ্ছিলো সেটা খুব সহজেই ধরে ফেলেছিলো জেরিন৷ কিন্তু সাজ্জাদ এই প্রশ্নের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।

জেরিন আবারো বললো, "আপনি একদমই এখানে নেই। আপনার শরীর এখানে আছে। কিন্তু মন অনেক অনেএএএক দূরে।" পাখির মতো দু হাত ছড়িয়ে উড়ে যাওয়ার ভঙ্গি করে সে। তারপর হঠাৎ পেছনে ঘুরে সাজ্জাদের মুখোমুখি দাঁড়ায়। সাজ্জাদ কোনমতে নিজের সম্মুখ ঝোঁক সামলে ওর উপরে হুমড়ি খেয়ে পড়া থেকে নিজেকে বাঁচায়। জেরিন ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে চোখ সরু করে তাকিয়ে আছে। দু হাত কোমরে বাঁধা। এমনিতেই উঁচু বুকটাকে পিঠ টান দিয়ে আরো উঁচিয়ে রেখেছে।

সাজ্জাদ আমতা আমতা করছে দেখে জেরিন হেসে ফেললো। কিংকর্তব্যবিমূঢ় সাজ্জাদকে ফেলে আবার কাশফুলের ফাঁক দিয়ে শরীরকে নানা ভঙ্গিমায় ঘুরিয়ে হাঁটতে লাগলো সে।
"আপনি কী জানেন সাজ্জাদ ভাই, আমি আমেরিকায় কোন সাবজেক্টে পড়াশোনা করছি?"
"না তো।"
"সাইকোলজি। শেষ বর্ষে। তবে ইতোমধ্যে রিসার্চ আর্টিকেল বেরিয়েছে আমার। যেই প্রফেসরের সাথে রিসার্চ এসিস্টেন্ট হিসেবে কাজ করছি উনি অসম্ভব ট্যালেন্টেড একজন মানুষ। আমি ওনার কাছ থেকে মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে অনেক কিছু শিখেছি। ওনার কাজের এতটাই ভক্ত হয়ে গিয়েছিলাম যে ওনার এসিস্ট্যান্ট হওয়ার ক্রেজি হয়ে গিয়েছিলাম। আর উনি কী শর্ত দিয়েছিলেন জানেন?"
''কী?"
"ওনার সাথে লিভ ইনে যেতে হবে।"
"ও আচ্ছা।"
"কেবল ও আচ্ছা? রাজি হয়েছিলাম কি না সেটা জানতে চাইলেন না?"
"তুমি তো শুরুতেই বললে যে ওনার রিসার্চ এসিস্টেন্ট হিসেবে কাজ করছো৷"
জেরিন মাথা কাত করে সাজ্জাদের মুখের দিকে তাকালো। চোখে মুখে দুষ্টু হাসি খেলা করছে। "Are you jealous?"
''জেলাস হবো কেন? মোটেও জেলাস না আমি।"

সাজ্জাদের পিত্তি জ্বালিয়ে দিয়ে জেরিন খিলখিল করে হাসতে লাগলো। হাসতেই থাকলো। কাশবনের পাখিরা ঝাঁক বেঁধে উড়ে যেতে থাকলো তার হাসির শব্দে। এই প্রথম সাজ্জাদ জেরিনের মাঝে কিছুটা অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করে চমকে উঠলো। নাহ! মেয়েটি রিসার্চের লোভে নিজের প্রফেসরের সাথে লিভ ইনে থাকছে সেটার জন্য নয়। কিংবা ওকে এটা নিয়ে খোঁচাচ্ছে তার জন্যেও নয়। এখানে অন্য একটা কিছু আছে যেটা সাজ্জাদের পক্ষে ব্যাখ্যা করা কঠিন। এই মেয়েটি যেন এক রহস্যের আধার।

জেরিন হাসি থামিয়ে বললো, "সাজ্জাদ ভাই, অন সিরিয়াস নোট। আমার মনে হয় আপনি কোন একটা গভীর সমস্যায় আছেন।"
"কেন তোমার এরকম মনে হচ্ছে?"
"আপনার দেখে যে কেউ সেটা বুঝবে। আপনি আয়নায় নিজেকে দেখেছেন? আপনার চোখের নীচে কালি পড়ে গেছে। প্রায়ই অন্যমনস্ক হয়ে কী যেন ভাবেন। মানছি শিল্পীরা একটু ভাবুক হয়। কিন্তু আপনার ব্যাপারটা অন্যরকম।''
কথা বলতে বলতে কাশবন থেকে বেরিয়ে গাড়ির কাছে চলে এসেছিলো ওরা। সন্ধ্যে হয়ে আসছে তখন। আশপাশে জনমানুষ নেই। গাড়িতে উঠতে যাবে এমন সময়ে একটা শীষ দেওয়ার শব্দ ওদের থামিয়ে দিলো। শব্দের উৎস খুঁজতে চারিদিকে তাকিয়ে দেখতে পেলো ওদের অদূরে কাশফুলের আড়ালে ১৮ বা ১৯ বছরের তিনটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। দু জনের হাতে সিগারেট। ওদের কেউই শীষ দিয়েছে এবং সাজ্জাদদের উদ্দেশ্যেই দিয়েছে বুঝতে অসুবিধা হলো না। সাজ্জাদের সিক্সথ সেন্স তাকে সতর্ক করে দিলো। জেরিনকে গাড়িতে উঠতে ইশারা করে নিজেও উঠতে যাবে এমন সময় ওই ছেলেদের একজন বলে উঠলো, "স্যার আপনার মানিব্যাগ পড়ে গেছে।"
[+] 4 users Like শূন্যপুরাণ's post
Like Reply
#17
রিফ্লেক্স একশনের ফাঁদে পড়ে ওদের আঙ্গুল দিয়ে নির্দেশ করা মাটিতে পড়ে থাকা ব্যাগটিতে চোখ গেলো সাজ্জাদের। পরক্ষণেই বললো, "ঐটা আমার না। অন্য কারো।"
"না ভাই। আপনার ব্যাগই হইবো। ভালা কইরা চাইয়া দেহেন।"
"দেখেছি। আমার না।" সংক্ষেপে বলে দরজা লাগাতে উদ্যত হলো সাজ্জাদ। তখনই কেউ একজন ডিম ছুঁড়ে মারলো ওর গাড়ির উইন্ডশিল্ডে। ফট করে ফেটে ছড়িয়ে পড়লো কাচে। সাজ্জাদের মাথায় আগুন ধরে গেল। কিন্তু ওর সিক্সথ সেন্স তখনো তাগাদা দিচ্ছে দ্রুত চলে যাওয়ার জন্য। ইতোমধ্যে ওর হতবিহ্বলতার সুযোগে একটা ছেলে গাড়ির সামনে চলে এসেছে। রিয়ার ভিউ আয়নায় দেখতে পেলো আরেকটি ছেলে একটা কাঠের টুকরো হাতে নিয়ে গাড়ির পেছনের চাকার কাছে যাচ্ছে। মুহূর্তেই বুঝে ফেললো কী হতে যাচ্ছে। ঐ কাঠের টুকরায় পেরেক লাগানো আছে।

সাজ্জাদ মাথা গরম করে গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে নেমে চিৎকার করে বললো, "কী করছো তোমরা। Do you know who I am?"
একটা ছেলে খ্যাকখ্যাক করে বললো, "আপনে ইয়াবাখোর। মাইয়া নিয়া ফূর্তি করতে আইছেন আমাগো এলাকায়।"
সাজ্জাদের মাথায় আগুন ধরে গেলো। তবুও নিজেকে যথাসাধ্য সামলে বললো, ''তোমরা কী চাও?"
"আমাগো এলাকায় কোন অসামাজিক কাজ করার দিমু না। আপনে স্বীকার যান আপনে ইয়াবা খাইয়া মাগী লাগাইতে আনছেন।"
"আমি পুলিশ ডাকবো। তোমরা জানো না তোমাদের কী হাল করতে পারি আমি।''
"আরে রাখ মাদারচোদ। পুলিশের মায়রে চুদি। ডাক তোর বাপরে। অয় মন্টু, বাইর কর মালডারে।"

গাড়ির সামনে দাঁড়ানো ছেলেটা অর্ডার পেয়ে একগাল হেসে জেরিনের দিকের দরজা খুলতে গেল। সাজ্জাদের উপরে কী ভর করলো কে জানে। সে গাড়ির বনেটের উপর দিয়ে অন্যপাশে গিয়েই মন্টু নামের ছেলেটার পাঁজরে প্রচণ্ড শক্তি দিয়ে লাথি কষালো। মন্টু তিন চার হাত দূরে গিয়ে মাটিতে পড়লো। অন্য ছেলে দুটো এর মধ্যে সাজ্জাদকে সামনে পিছনে ঘিরে ধরেছে। এলিমেন্ট অব সারপ্রাইজের কারণে মন্টুকে ধরাশায়ী করতে পারলেও এদের দুজনকে মোকাবেলা করা সাজ্জাদের জন্য মুশকিল। সে শিল্পী মানুষ। মারামারির মতো আদিমতার জন্য কখনোই কোন মানসিক বা শারীরীক প্রস্তুতি ছিলো না।

সামনের ছেলেটির হাতে সেই পেরেক পোঁতা লাঠি, সেটা দিয়ে ওর গায়ে আঘাত করার শাই করে ঘুরালে, সাজ্জাদ পিছনে সরে গেলো বাঁচার জন্য। তখন পিঠের উপরে একটা আঘাত পড়লো। যদিও তাতে ব্যাথা পেলো না তেমন। লাফ দিয়ে সরে গিয়ে দুজনেরই মুখোমুখি হলো সাজ্জাদ। পিছনে হেঁটে হেঁটে গাড়ি থেকে দূরে সরে যেতে লাগলো। এটা করলো যাতে ওকে অনুসরণ ছেলেগুলো সরে আসে এবং এই সুযোগে জেরিন পালিয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে মন্টু নামের ছেলেটাও উঠে এসেছে। এবার তিনজনের বিরুদ্ধে সাজ্জাদ একা। মার খাওয়াতে ওর উপরে মন্টুর রাগটা বেশি ছিলো। সে ছুটে এসে সাজ্জাদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়লো। সাজ্জাদ তড়িৎ গতিতে ওকে বোকা বানিয়ে সরে গেলে। কিন্তু কপাল মন্দ একটা ইটের টুকরায় বাঁধা পেয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলো। মন্টু এই সুযোগে ওর উপরে উঠে হাত পিঠমোড়া করে হাঁটু দিয়ে পিঠে চেপে ধরলো।

পেরেক পোতা লাঠি নিয়ে অন্য ছেলেটা এগিয়ে আসতে লাগলো। সম্ভবত ওটা দিয়ে সাজ্জাদের গায়ে জখম করতে চাচ্ছে। সাজ্জাদ অনেক চেষ্টা করেও নিজেকে ছাড়াতে পারলো না। তবে ঐ মুহূর্তে নিজের চেয়ে জেরিনকে নিয়ে বেশি চিন্তা হচ্ছে তার। জেরিন কী পালাতে পারলো? এই ছেলেগুলি কী ওকে ধরে ফেলবে?

হঠাৎ একটা দৃঢ় মেয়েলি কন্ঠ চিৎকার করে বললো, "Stop, you fuckers."

উপস্থিত চারজন পুরুষই চমকে উঠলো। দণ্ডায়মান ছেলে দুটো পেছনে ঘুরলো। গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে আছে জেরিন। সে পালায়নি দেখে সাজ্জাদ চমকে উঠলো। এবং সে দ্বিতীয়বার চমকালো জেরিনকে খুবই শান্তভাবে একটা রিভলভার উঁচিয়ে রাখতে দেখে।

জেরিন পূর্বের স্বরেই বললো,"আমি এক বললে ওর পিঠের উপর থেকে উঠে দাঁড়াবি। হাতের লাঠি ফেলে দিবি। দুই বললে দৌড়ানো শুরু করবি। তিন বলার আগেই যদি আমার দৃষ্টি সীমা থেকে না পালাতে পারিস, তোদের প্রত্যেকটায় পাছায় গুলি করবো।"

ছেলেগুলো ঘটনার এই নতুন মোড়ের জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলো না। শাড়ি পরা কোন বাংলাদেশি মেয়ের পক্ষে রিভলভার ব্যবহার করা তো দূরে থাক, বহন করাটাই তো বিস্ময়কর ব্যাপার। বন্দুকটা আসল নাকি নকল সেটা নিয়েও ওরা দ্বন্দ্বে পড়ে গেলো ছেলেগুলো। ওদের ভিতরে একটু নেতা টাইপের ছেলেটা বললো, "আমাগো পাছায় গুলি ঢুকানোর আগে তোর পুটকিতে আমার বন্দুক ঢুকায়ে গুলি করুম খাঙ্কিমাগী। ডর দেহাস আমারে। তোর মুখে আ.." কথা শেষ হওয়ার আগেউ জেরিন "এক" উচ্চারণ করে নিখুঁত নিশানায় ছেলেটার ডান হাতের কব্জি বরাবর গুলি করলো। ছেলেটার কবজি ছিঁড়ে ঝুলতে লাগলো চামড়ার সাথে। হাঁড়কাপানো আর্তনাদ করে উঠলো সে। বাম হাতে কবজি চেপে ধরে ভেউ ভেউ  করে কাঁদতে লাগলো। কেবল জেরিনের ভিতরে কোন উত্তেজনা নেই। একেবারে জলের মতো শান্ত মুখ। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। রিভলভারটা ধরার ভঙ্গিটা খুবই ক্যাজুয়াল।

বাকী ছেলে দুটোকে প্রাথমিক শক কাটাতে এক দুই সেকেন্ড সময় দিলো। তারপর "দুই" উচ্চারণ করে সাজ্জাদের পিঠের উপরের ছেলেটাকে গুলি করলো। ঐ ছেলেটার কান দুটো ছিলো বাঁদুড়ের মতো ছড়ানো। জেরিনের গুলিতে ডান কানের বাইরের অংশের অনেকটা উড়ে গেল। ছেলেটা কান চেপে ধরে "ও মাগো" "ও বাবাগো" বলে মাটিতে শুয়ে গড়াতে লাগলো। সাজ্জাদ লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। ওর নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে না পারলেও এখন আর কিছু ভাবার সময় নেই। সে গাড়ির দিকে ছুট লাগালো। জেরিন তিন নম্বর ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললো, "I will keep my promise if I reach to Three."

বর্বরগুলো ইংরেজি না বুঝলেও জেরিন কী বলতে চাচ্ছে সেটা ঠিকই বুঝেছে। প্রথমে তিন নম্বরটা উর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ে কাশবনে হারিয়ে গেলো। এরপর কানকাটা ছেলেটে হাঁচড়ে পাঁচড়ে উঠে এক দুবার আছাড় খেয়ে প্রথমজনকে অনুসরণ করলো। আর কব্জিকাটা ছেলেটা ইতোমধ্যে রক্ত ক্ষরণে আর ভয়ে যেন স্ট্যাচু হয়ে গেছে। তবে আগের দুজনকে পালাতে দেখে সেও দিক শূণ্যভাবে দৌড়াতে শুরু করলো। জেরিন ঠান্ডা মাথায় ওর পাছায় একটি গুলি করলো। ছেলেটা মুখ থুবড়ে পড়লো। জেরিন গাড়িতে উঠে রিভলবারটা ওর ভ্যানিটি ব্যাগে রেখে দিলো।

সাজ্জাদ গাড়ি চালিয়ে সোজা নিজের এপার্টমেন্টে চলে এলো। সম্পূর্ণ ঘটনা ওর নার্ভের উপরে প্রচন্ড চাপ দিচ্ছিলো। জেরিন সারাটা পথই চুপ ছিলো। বিন্দুমাত্র উত্তেজনা তার ভিতরে নেই। এপার্টমেন্টে ঢুকে তার প্রথম কথা ছিলো, "সাজ্জাদ ভাই, You are hurt."

সাজ্জাদ বুঝতে না পেরে বললো, "মানে?"
"You are bleeding from your back."
সাজ্জাদকে টেনে নিয়ে বিছানায় বসালো সে। তারপর ওর শার্ট খুলে দিলো। সাজ্জাদ এতক্ষণ পরে নিজের পিঠে যন্ত্রণা অনুভব করতে শুরু করেছে। দাঁতে দাঁত চেপে জিজ্ঞেস করলো, "How bad is it? Should I call a doctor?"
"লাগবে না। ফার্স্ট এইড সম্পর্কে আমার ভালো ধারণা আছে। আপনার বাসায় ফার্স্ট এইড বক্স আছে?"
সাজ্জাদ দেখিয়ে দিলো। জেরিন যত্ন সহকারে ওর ক্ষত পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দিতে লাগলো। ও যখন কাজ করছে সাজ্জাদ তখন ভাবছে যে এই মেয়েটি আসলেই অদ্ভুত। একটু আগেই যে মেয়েটা ঠান্ডা মাথায় তিনটা ছেলেকে রিভলবার দিয়ে গুলি করেছে। আর সেই মেয়েটি কী না কেমন মমতা দিয়ে ওর যত্ন নিচ্ছে। নারী বড়ই বিচিত্র! একই অঙ্গে কত রূপ তার! দেওয়ালের আয়নায় সাজ্জাদ দুজনের প্রতিবিম্ব দেখতে পায়। জেরিন খুব মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে। ওর মুখের উপরে চুল ঝুলে পড়েছে খাঁড়া নাক, চিকুন চিবুক কেমন মায়াময় লাগছে দেখতে। অনেক অনেক দিন এভাবে কোন নারীর যত্নের ছোঁয়া পায়নি সে।
তাই আজ হঠাৎ এরকম যত্ন পেয়ে জেরিনকে বড় আপন মনে হয় ওর। ড্রেসিং শেষ করে জেরিন বললো, "শেষ। এবার আপনি বিশ্রাম করুন। আমার জন্যই আপনাকে বিপদে পড়তে হলো। আমি খুবই দুঃখিত।"
সাজ্জাদের হঠাৎ প্রচন্ড ইচ্ছে হলো জেরিনকে কাছে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরে। জেরিনও কী বুঝতে পারলো ওর মনের কথা? তা নাহলে ওরকম রহস্যময়ভাবে হাসছে কেন? সাজ্জাদকে একা ফেলে ঠিকই জেরিন চলে গেলো সেদিন। সাজ্জাদ পড়ে গেলো এক মহা সমস্যায়।

****

ঐ দিনের ঘটনার পরে জেরিনের সাথে সাজ্জাদের যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো। সাজ্জাদ অপেক্ষায় ছিলো জেরিন হয়তো নিজে থেকে ওর সঙ্গে যোগাযোগ করবে। কিন্তু সেটা হয়নি। ওদিকে সাজ্জাদও অস্থির হয়ে উঠছে জেরিনকে দেখার জন্য, ওর সাথে একটু কথা বলার জন্য। জেরিনের কোন ফোন নাম্বার নেই ওর কাছে। ঠিকানাও জানা নেই। নিজে থেকে যোগাযোগ না করলে ওকে খুঁজে পাওয়ার কোন উপায় নেই সাজ্জাদের। কিন্তু জেরিনকে তার লাগবেই। যতই সময় যাচ্ছে ততই বুঝতে পারছে যে মেয়েটার প্রতি তার প্রবল আকর্ষণ তৈরি হয়েছে। তাছাড়া আরো একটি ব্যাপার রয়েছে।

ঐদিন জেরিন ঠিকই অনুমান করেছিলো। আসলেই সাজ্জাদ মানসিকভাবে সুস্থ নেই। রাতে ঘুম হয় না। প্রায় হ্যালুসিনেশন হচ্ছে। মন এমন এক নিষিদ্ধ প্যান্ডোরার বক্স খুলতে বাধ্য করছে যেটা তাকে এলোমেলো করে দিচ্ছে। এই সমস্যা থেকে সে মুক্তি চায়। একমাত্র জেরিনই তাকে মুক্তির পথ দেখাতে পারে।

(চলবে)
Like Reply
#18
Darun hoyece
[+] 1 user Likes Saj890's post
Like Reply
#19
অসাধারণ লেখা
[+] 1 user Likes Jibon Ahmed's post
Like Reply
#20
দারুণ ভাই দারুণ! অনেকদিন পর আরেক জন ভালো লেখক পেলাম।
আপনি অনেক দুর যেতে পারবেন। ভালো লেখকের কোয়ালিটি আছে আপনার মাঝে।
[+] 1 user Likes bluesky2021's post
Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)