Thread Rating:
  • 8 Vote(s) - 2.63 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romantic Thriller পুরোনো প্রেমের আহ্বানে
#1
পর্ব ১ 

হাসপাতালের আজ অবধি বিল পুরোটা মিটিয়ে দিলে আর ফেরার টাকা হাতে থাকবে না। কাল রাত থেকে বসে বসে রেখার হাত পা যেন টানছে। স্বামী শ্যামল আইসিইউ এ ভর্তি। ছেলে সূর্য এলে হয়তো ওর কাছে টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরা যাবে।  হাসপাতালের একজন স্টাফ এই নিয়ে সাতবার ডেকে গেলো রেখাকে। রেখার স্বামী ক্যান্সার আক্রান্ত। প্রোস্টেট ক্যান্সার। তার উপর আবার কিডনি ফেইল করলো। চিকিৎসা করাতে করাতে বিশাল সম্পত্তি সব শেষ। রেখা এসব ভাবতে ভাবতেই সূর্য এসে বলল শেষ সম্বল আর ব্যাংকে মাত্র 60 হাজার টাকা ছিল। সেটাই তুলে এনেছে। সেদিনের মত হাসপাতালের টাকা মিটিয়ে শেষবার একবার জালনার কাঁচ দিয়ে শ্যামল কে দেখে বেরিয়ে গেল ওরা। বাড়ি ফিরে এসে রেখা দেখলো ভাতের চাল কিনতে হবে। কিন্তু আর যে কিছুই নেই। শেষ ষাট হাজার টাকা তুলে নিয়েছে। প্রতিদিনের বেসরকারি হাসপাতালের খরচ প্রায় দশ হাজার। রেখা ভাবলো আর ছয় দিন। তারপর? সূর্যকে কেন্দ্র করে রেখার জীবন। ছেলেটার বয়স কুড়ি। ইন্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে পড়তে শুরু করে। দারুন পড়াশুনায়। ছেলের হয়তো পড়ার খরচ লাগে না। কিন্তু থাকা খাওয়া? ভগবানের দিকে তাকিয়ে কোথাও যেন রেখা একবার মুক্তি চেয়ে বসলো। সূর্য ততক্ষণে স্নান করে এলো। এবার রেখা স্নান করবে। কিন্তু তার আগেই ফোন এলো। হাসপাতালের ফোন। শ্যামল আর নেই। রেখা খবর টা শুনে ধুপ করে বসে পড়ল।

এরপর সমাজের নিয়মে যা যা কাজ হয় সবটা ঘটলো নিজের নিয়মেই। সদ্য বিধবা রেখা ভেঙে পড়েছিল মাত্র বছর পঁয়তাল্লিশে বিধবা হয়ে। মাথার উপর লোনের বোঝা। তিন কামরার ঘরটা ছাড়া হাতে মাত্র কিছু টাকা সম্বল। কি করবে কোথায় যাবে কি খাবে ছেলেটার কি হবে। এসব ভাবনায় রেখা ব্যস্ত থাকে। 

শ্যামল মারা যাওয়ার দিন পনেরো পর আবার ঘর ফাঁকা। বাড়িতে শুধু মা আর ছেলে। কাল থেকে আবার সূর্য কলেজ যাবে। অনেক ভাবনা অনেক চিন্তা করে একটু চা করে সূর্যকে দিয়ে রেখা কথা শুরু করল। 

রেখা: বাবা টাকা পয়সা কি কত আছে? 
সূর্য : মা তুমি ভেবো না। আমার কাছে এখন অনেক টাকা আছে। ওতে আর মাস দুই তিন চলে যাবে। আর তোমার কাছে যা আছে তাতে বাজার দোকানের জিনিস আনা হবে। 
রেখা কি একটু ভাবলো। তারপর টেবিলের উপর থেকে সূর্যের টাকার ব্যাগটা নিয়ে দেখলো তাতে কয়েকটা দশটাকার নোট মাত্র আছে। কি অদ্ভুত ভাবে কথাই কথাই টাকা উড়ানো এই কেনা সেই কেনা ছেলে টা অনেক বড় হয়ে গেল। এই বিশাল শহর কলকাতা, এখানে এই রকম নাটক প্রতিদিন কত ঘটে। 

পরের দিন সকালে ছেলে কলেজ চলে গেলে একাই বসেছিল জালনার ধারে। রাস্তা দিয়ে লোকজন হেঁটে যাচ্ছে। সাইকেল, মোটর বাইক যাচ্ছে। পাশের বাড়ির বৌদি, সামনের বাড়ির কাকিমা সবাই একবার করে কথা বলে যায় রেখার সাথে। তারপর ঘিরে ধরে একাকীত্ব। আগেও এই সময় একাই থাকতো। কিন্তু আজ অন্য রকম। রেখার জীবনের অনেক পাওয়া না পাওয়ার মাঝে বারবার ওর মনে পড়ে যায় সেই পঁচিশ বছর আগের একটা মানুষকে। বীরেন ঘোষ।

কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে পরিচয় লোকটার সাথে। কলেজের ইউনিয়ন রুমে। রেখার বান্ধবী শেফালির কি একটা দরকার ছিল। রেখা সাথে গেছিলো। তৃতীয় বর্ষের ছাত্র তখন বীরেন। বিনা কারণেই শেফালিকে কথা শোনাচ্ছিল। প্রতিবাদ করে রেখা। মাত্র দুমাসেই সেই মানুষটাকেই ভালোবেসে ফেলে। বাড়ির পাশের পাড়ায় কলেজে। তাই প্রেমটা শুধু কলেজের ভেতরেই সীমাবদ্ধ রাখে। রেখা একটা অতি সাধারণ মেয়ে থেকে গোটা কলেজের চেনা হয়ে যায়। বীরেনের প্রেমিকা বলে কথা। কলেজ শেষ করার আগেই রেখার বাবা বিয়ের দেখাশোনা শুরু করেন। রেখা তখন বীরেনের কথা বাড়িতে মাকে বলে। মা বলেছিল বামুনের মেয়ে হয়ে চাষার ছেলেকে মনে ধরলো। সাবধান করেছিল। বকা মার খেয়েছিল। কিন্তু রেখা বাবাকে সে কথা বলতে পারে নি। বীরেনের মত মস্তানকে যে শান্ত করে দিয়েছিল। সেই রেখা পারে নি তার বাবার সামনে দাড়িয়ে নিজের ভালোবাসার জন্য লড়তে। শেষে বীরেনের সাথে এক মুহূর্তে সব সম্পর্ক শেষ করে বাবার দেখা শ্যামলকে বিয়ে করে নেই রেখা। শ্যামল হয়তো অনেক টাকার মালিক ছিল। কিন্তু সুখী করতে পারে নি রেখা না। না শারীরিক না আর্থিক। জমানো টাকায় খেয়ে আর যায় হোক সখ পূরণ করে যায় না। যখন সক্ষম ছিল শ্যামল তখনও রাজনীতি আর আড্ডা ছাড়া দোকানে কিছুই বিক্রি বাট্টা হতো না। শ্বশুরের সম্পত্তি আস্তে আস্তে শেষ হয়েছে। এদিকে বীরেনের জীবন বদলেছে অন্য ভাবে। রেখাকে সত্যি ভালবেসেছিল বীরেন। কিন্তু রেখার এই রূপ বেঈমানিতে বড্ড কষ্ট পেলো ও। কলেজের জীবন শেষ করে একটা দোকানে সামান্য কিছু রোজগার করে জীবন কাটাতে থাকে। বছর দুয়েক পরে সামান্য আয় বাড়াতে এর পর চলেযায় অনেক দূরে দিল্লিতে। দিল্লিতে এটা সেটা করে করে আরও বছর দেড়েক পর হয়। কিন্তু শেষে একটা সুযোগ পেয়ে শুরু করে নিজের ব্যবসা। তারপর আর ভাবতে হয় নি। আজ বীরেন কে কাজ করতে হয় না। নিজের অধীনে  কাজ করে প্রায় দুশ লোক। অন্য কোনো মেয়েকে কোনোদিন আর ভালোবাসেনি। আজ হয়তো বীরেন ঘৃনা করে রেখাকে। কিন্তু এই ঘৃনা পাওয়াও অনেক ভাগ্যের ব্যপার। 

পঁচিশ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর দুজনের দেখা না হলেও পারত। কিন্তু বিধাতার মর্জি ছিল একটু অন্য। বীরেনের বাবা মা তখনও বেঁচে। ছেলের বিশাল বাড়িতে দিল্লিতেই তাদের বাস। ছেলে তাদের জন্য সব করেছে। কিন্তু নিজে কিছু পেলো না। রেখাকে তারা গাল মন্দ করে মনে মনে।মাঝে মাঝে ভাবে সেই তো সেই রেখায়। যে আমার ছেলেটাকে গুন্ডা থেকে এত ভালো মানুষ তৈরি করে দিয়েছে। তার চেয়ে থাকতো ও গুণ্ডা। এমনি একা তো হতো না। কিন্তু বীরেনের সামনে কিছু বলে না। আর এই বয়সে বলেই বা কি হবে। জীবনের প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে এই একটা ব্যথায় তাদের সারে নি। সেই বাবা মায়ের ইচ্ছাতেই একবার কলকাতায় ফিরে আসা। বাবা মা আর বীরেন একা আসেনি। সাথে আর জনা চারেকের বিশেষ দল। যারা কোম্পানির ম্যানেজার, পি এ, ইত্যাদি। কলকাতায় ফিরে একবার রেখাকে দেখার জন্য মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে বীরেনেরও। মনের গভীরে কি চলছে তা বুঝতে পারে না কেউই। কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে এটা সেটা দেখা, এর তার সাথে একবার দেখা করা সব চলতে থাকে। কিন্তু বীরেন সারাদিন পর যখন একা বিছানায় যায় মানি ব্যাগ খুলে সেই পুরোনো একটা ছবির দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর ঘুমিয়ে পড়েন । ভালোবাসা। বড় অদ্ভুত একটা অনুভুতি। যে তাকে এত আঘাত দিয়েছে। তাকে সে এখনো ভালোবাসে। 

রেখার এদিকে এখন আর কিছুই ভালো লাগে না। সারাদিন ফাঁকা ঘরটা যেন তাকে খেতে আসে। রেখা কাঁদে। কিন্তু শ্যামলের জন্য না। শ্যামল আর যাই হোক লোকটা খারাপ না। কিন্তু রেখা তাকে ভালোবাসতে পারে নি কোনোদিন। চেষ্টা করেছে বীরেনকে ভুলে যেতে। চেষ্টা করেছে শ্যামলকে সব টুকু উজাড় করে ভালোবাসতে। কিন্তু রেখা সব দিকেই হেরে গেছে। না পেরেছে বীরেন কে সত্যি করে ভালোবেসে তাকে মনের গভীরে ধরে রাখতে, না পেরেছে স্বামীকে ভালোবাসা দিতে। আজ দুজনেই তার কাছে নেই। থাকলে হয়তো আর একবার চেষ্টা করে দেখতো। রেখা ঠিক করল সে কোনো মন্দিরে যাবে। নিজেকে সংসার থেকে বের করে আনবে। পরকালের পথ করবে। 

দিনটা সেজেছিল বড় চমৎকার করে। শরৎকাল। শিউলি গাছের তলটা সাদা হয়ে আছে ফুলে ফুলে। বাগান জুড়ে মাধবীলতা, টগর, অপরাজিতা, বাগানবিলাস আজ ফুলে ফুলে ভরে গেছে। রোদ উঠেছে বেশ ঝলমলিয়ে। কি একটা পাখি খুব মিষ্টি সুরে ডাকছে। সকালের চা নিয়ে বসে রেখা।  কি যেন ভাবে। তারপর সূর্যকে ফোন করে অনেকক্ষন ধরে কথা বলতে বলতে চা শেষ করে স্নানে যায় রেখা। ঠিক এমন সময় বাড়ির কলিং বেল বেজে ওঠে। স্নান থামিয়ে কে বলে আওয়াজ দেই রেখা। একটা ভারী পুরুষ কন্ঠে উত্তর আসে। একটু আসবেন কথা ছিল ম্যাডাম। অচেনা পুরুষকে স্নান করছে বলবে বলে খুব অসস্তিকর লাগে রেখার।
[+] 5 users Like Tarun_cuckson's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#2
সুন্দর শুরু
Like Reply
#3
খুবই সুন্দর শুরু। আশা করি, গল্পটিকে একইরকম করে সুন্দরভাবে শেষ করবে।
Like Reply
#4
Next porbo koi bro?
Like Reply
#5
সবকিছুই সুন্দর তবে ক্যানসারের মতো একটা দুরারোগ্য ব্যধির গল্পে উল্লেখ করা কোথাও যেন মনের ভেতর অজানা একটা ভয়ের শিড়শিড়ানি ছুটে যায়,বাকীটা সুন্দর লিখেছেন। ভালো থাকবেন।
Like Reply
#6
Khub taratari next porbo asbe. 13 may amader ekhane vote. Electricity dept. E kaj kri ektu chap ache tai.
Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)