03-02-2024, 01:33 PM
*অর্জুনের গুরুদক্ষিণা
মহাভারতে নিজের প্রিয়সিশ্য অর্জুন কে জেতাতে একলব্য এর আঙ্গুল চেয়েছিলেন দ্রোণাচার্য।
উল্টো হলে কেমন হতো?
যদি একালব্যর কৌশলে প্রসন্ন হয়ে অর্জুনের থেকে তার আঙ্গুল চেয়ে বসতেন?
আরে শ্রী এ তোর কেমন প্রশ্ন?
না তুমি ভেবে দেখো আদি দা…
আরে এতে ভাবার কি আছে…অর্জুন তো অর্জুন ই। কিছু না কিছু করে নিত।
তুমি পারবে?
মানে?
দেখো আদি দা। আমি তোমায় ভালোবাসি। তুমিও আমাকে ভালোবাসো। এই নিয়ে আমার সন্দেহ নেই। তোমার কথা মত আমি তোমার বাড়ি গিয়ে প্র্যাকটিস করেছি। তুমি আমাকে ইউটিউব, insta তে একপ্রকার সেলিব্রিটি বানিয়ে দিয়েছ।
কিন্তু যখন নন্দিনী ম্যাম আর ঐশী ম্যাম নিজে দেখা করতে চাইছেন, স্বয়ং সুকান্ত স্যার এর অফিস থেকে আমায় নতুন অ্যালবাম সাইন করাতে চাইছে তুমি এত বাঁধ সাধছ কেনো?
তুই জানিস শ্রী … এই নিয়ে আমি বলেছি আগেও ।
হ্যাঁ বলেছ। আর তোমার কথা ততটাই যুক্তিহীন।
যুক্তিহীন?! কোনটা যুক্তিহীন শ্রী?
আমরা তো দিব্যি ছিলাম শ্রী।
বাবা air force এর বড় পোস্ট এ ছিলেন।
হেলিকপ্টার পাইলট।
আমার মা সকালে তানপুরা বাজিয়ে রেওয়াজ করতেন। আমিও করতাম। আমি তবলা বাজাতাম। যেমন বাবা বাজাতেন।
আজ থেকে বছর দশেক আগে মনেপড়ে তোমার উত্তরাখণ্ডের হেলিকপ্টার ক্র্যাশ? আমার বাবা ছিলেন সহকারী পাইলট। প্রধান পাইলট এর ভুলে বাবা সহিদ হন।
মা বাবার শোক ভুলতে গান কে আশ্রয় করে নেন।
আমিও পড়াশোনা আর গান কে আকড়ে নি।
আর এদিকে বাবার মৃত্যুর বছর দেড়েক এর মধ্যেই অনিল দেব রায় মা কে বিয়ে করেন।
আমায় ওরা দার্জিলিঙ এর বোর্ডিং এ দিয়ে দেন।
আমি আরেকবছর ঘুরতেই জানতে পারি আমার বোন হয়েছে। বোন মায় ফুট!
তুই জানিজ শ্রী, আমি কলকাতায় ফিরে জানতে পারি আমাদের বাড়িটা মা বিক্রি করে দিয়েছে।
বাবার সব চিন্হ বাইরে পরে ছিল।
তার সার্ভিস ট্রাংক টা বাইরে বৃষ্টি রোদে ক্ষয়ে গেছিলো। তাতে তার ইউনিফর্ম আর মেডেল গুলও ক্ষতি হয়। আমি কোনমতে ওগুলো বাঁচাই আর বাবার তবলা গুলো। জানিজ ওখানে আমার সব ছিল। বাবার সব ছিল। ছিল না মায়ের কোনো কিছু। যদি তোর যুক্তি মেনেও নি, যে তাড়াহুড়ো করে হয়তো বেরিয়েছিল তাই সব নিতে পারেনি।
সেক্ষেত্রে মা নিজের শাড়ি, গয়না, এমনকি ওই হারমোনিয়াম আর তানপুরা নিতে পারলো অথচ বাকি সব লাওয়ারিস হয়ে পড়ে রইলো?!
যে মহিলা নিজের আগের পরিবারকে ছুড়ে ফেলতে দ্বিধা করেনি… তোর চেয়ে বেটার কাউকে পেলে তোকেও সেম ট্রিট করবে না প্রমাণ কি?
শ্রী একটু চুপ করে থেকে এবার জোরে জোরে হেসে উঠলো।
আরে পাগল হলি নাকি?
পাগল না পাগল না আদীরাজ প্রধান …
একটা সত্যি জানতে পারলাম। বুঝলাম আমি কত বোকা ছিলাম যে তোমায় ভালোবাসছি।
মানে?
মানে এটাই যে তুমি নিজেও স্বর্ণ হংস এর জন্য অডিশন এর কিল্প সেন্ড করেছিলে। কিন্তু সেটা রিজেক্ট হয়। তুমি আমার রেকর্ড করা একটা অরিজিনাল গান নিজের লেবেল দিয়ে বিক্রি করতে চেয়েছিলে ?! ছি।
আরে তুই বলছিস টা কি?
আমি তোর গান ওদের দেব কখন? আর দিলে ওদের দেব কেনো?
এতদিনে তোর রেকর্ড করা র গান সবার আগে কাকিমা, তারপর সোহিনী আর সবার শেষে আমি শুনি।
স্টুডিও তে আমি তুই বাদে সোহিনী আর দ্বীপ আসে। দ্বীপ এর গান নিয়ে কোনো ইন্টারেস্ট নেই।
তাহলে তুমি বলছ সোহিনী?
তো আর কি বলবো বল…ও যদি মেল না সেন্ড করে তো কে করেছে?
বেশ দাড়াও।
হ্যালো সোহিনী , তুই কাল স্টুডিও তে এসেছিলি?
কোনো অডিও ক্লিপ মেল করেছিস?
করিসনি?
আদি দা যে বলছে? বেশ। না রে … কিছু হয়নি।
কি বললো সোহিনী?
তুমি দেখো আগে তুমি হয় ভুল করে সেন্ড করেছো বা তোমার সিস্টেম একসেস আর কারো কাছে আছে কি না…
আরে এ তো আচ্ছা মুশকিল…।
সিস্টেম থেকে তো কোনো ট্রানজেকশন শো করছে না… কোনো মেল ও সেন্ড হয়নি…
পেলে না তাই তো… আমি জানতাম।
আরে তুমি কত মিথ্যে ঢাকবে আর?
তুমি আসলে হিংসে করো। তোমার বোন।
সরি সৎ বোন। ঐশী আমায় বলেছিল।
তুমি যখন হোস্টেল থেকে ফিরে আসলে তুমি খুব অশান্ত হয়ে ছিলে। তুমি নিজের মায়ের কোনো কথাই সনোনি।
সেদিন ম্যাম তোমার বাবার আর তোমার জিনিস ইচ্ছে করে ফেলে যান নি।
তোমার মায়ের সব দামী গয়নাই লকারে থাকতো।
আর তান পুরা ওই বাড়ির নতুন মালিক এর মেয়ে কিনে নেয়। কোনো মতে পড়ার কিছু কাপড় নিয়ে তোমার মা তোমার অনিল আঙ্কেল এর সাথে চলে যান। ঐশী এটাও বলে যে তুমি কোনদিন ও খুব ভালো তবলছি ছিলে না, না ভালো গায়ক ছিলে। তাই তোমার চেয়ে তোমার মা ঐশী কে বেশি পছন্দ করত এই দিক থেকে। তুমি তোমার মায়ের প্রথম সন্তান হওয়ার শুধু সুবিধা চেয়েছিলে।
তোমার মা, বোন, প্রেমিকা যে তোমার চেয়ে ভালো হতে পারে তোমার পদবী ছাড়া পরিচয় ছাড়া তাদের ও নাম হতে পারে এটা তোমার মেল ইগোতে বাঁধে অদিরাজ প্রধান।
আমি তোমার মত পণ্ডিত নয় তবে এটা বলি।
You are nothing but an empty shell filled with empty pride।
ব্যাস শ্রী। লোকের বলা কথা এত শুনিস না।
বিশ্বাস করো তোমায় আমি খুব ভালো ভাবে বলতে চেয়েছিলাম । কিন্তু তুমি আমায় ব্যবহার করছ যখন জানতে পারলাম … ঐশী না বললে তো…
ঐশী কথা থেকে আসলো?
Insta তে আমায় ফলো করে সেখান থেকে বন্ধুত্ত্ব।
কিন্তু আর নয়। তুমি আর আমায় ব্যবহার করতে পারবে না। আমার গুরু নন্দিনী ম্যাম এর সাথে ও আমার কথা হয়েছে। আমি জানি তোমার হয়তো কষ্ট হবে । আমি স্বর্ণ হংস এর নিচে সই করছি।
5 বছরের কন্ট্রাক্ট। যদি ভালোবাসো আমায়…আটকাবে না। আর তোমার ভালোবাসা যদি এতই ঠুনকো হয় যে আমার সাফল্যে তোমার চোট লাগবে তাহলে আমাদের সম্পর্ক এগোনোর মানে নেই ।
আদির শান্ত মুখ এখন পাথুরে কাঠিন্য নিয়ে ও মৃত শীতল গমগমে আওয়াজে বলে
শ্রেষ্ঠা সিংহ। বিদায়। তোর সাফল্য বা ব্যর্থতা আমায় কখনো বিচলিত করেনি। করবেও না।
সর্ত দিয়ে ভালোবাসা হয়না । তুই তোর নতুন জীবনে ভালো থাক। আমি চললাম।
শ্রেষ্ঠা এর চোখে জল। এটা রাগ এর চেয়েও বেশি অপমানের।
তার অবচেতন মন হয়তো ভেবেছিল যে আদি হয়তো ওকে আটকাবে , নিজের ভুল মেনে আরেকটা সুযোগ চাইবে ওর কাছে শ্রেষ্ঠা একটু না না করলেও ওকে নিয়েই থাকবে … কিন্তু আদি যেনো ওকে চেনেইনা! ওদের এই সাড়ে 3 বছরের সম্পর্কের কোনো দাম নেই? ব্রেকআপ এতই সহজ?
শ্রেষ্ঠা চোখের জল মুছে ওর ব্যাগ থেকে একটা খাম বার করে ধরিয়ে দেয়।
এটা কি?
কোর্ট এর নোটিশ ।
কেনো?
না বলে আমার গান বিক্রি করেছো যেটা কিনা অলরেডি স্বর্ণ হংস এর সম্পত্তি।
দাঁড়া দাঁড়া… আমি যদি তোর গান বিক্রি করি তাহলে সেটা আমি এই 3 দিনের ভেতর করেছি আর এই চিঠিতে বলা আছে তুই গানেই সত্ব সপ্তাহ খানেক আগেই দিয়েছিস। তার মানে গত দুই সপ্তাহ তুই sh এর স্টুডিও তে ছিলি…?
শ্রেষ্ঠা বলে… তোমায় শান্ত করে বলবো ভেবেছিলাম। নন্দিনী ম্যাম আর ঐশী এর সাথে আসবো এসে চমকে দেবো… তবে সত্যি যখন জেনেই গেছো… আর নোটিশ যখন পেয়েই গেছো… দেখো কি করবে…
আরে দাঁড়া। ও এই তো… এই যে লেখা… এ তো তুই আমার এই স্টুডিওর বিরুদ্ধে কেস করেছিস…
Fraud, আর plagiarism এর।
আর তোকে SH (swarna Hansa) মদত করছে।
দেখ আমিও পেশায় উকিল…
এখানে আমায় আগামী সপ্তাহের মধ্যে হয় 2 কোটি টাকা বা এই স্টুডিও সাথে আমার গান প্রডিউস করার সব সত্ত তোর আর sh এর নামে করে দিতে বলেছে…
হম এই তো তোর, রাজনন্দিনি দেব রায়, ঐশী দেব রায়, আর অনিল দেব রায় এর সই ও আছে… । অনিল দেব রায় তো আবার লয়ার.. ।
আরে তুই তো ভালই ঘুটি সাজিয়েছিস…
হম…
বেশ। তোকে একদিন একটু জ্বালাবো।
কাল তোর নতুন বন্ধু এর সাথে আসিস।
এবার তুই বেরিয়ে যা।
বলে আদি ওর চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ে।
শ্রেষ্ঠা এর এবার চোখে জল মা যেমন ছেলেকে বকলে মারলে মায়ের কষ্ট হয়, বোন যদি দাদার সাথে ঝগড়া করে তারপর গিল্ট এ লেগে তার যেমন কষ্ট হয় প্রেমিকার কষ্ট তার চেয়েও একটু বেশি কারণ সম্পর্ক টা আত্মার।
শ্রেষ্ঠা আদিকে ভীষণ ভালোবাসে। রাগের মাথায় যা নয় তাই বলেছে… । তবে আদিকে ও রাগতে দেখেনি। শ্রেষ্ঠা চায় না যেতে। তাই ও চেষ্টা করে আদিকে শান্ত করার…
তুমি… তুমি কি সত্যিই আমায়..
এখনো যাসনি? দেখ শ্রেষ্ঠা … । তোর সামনেই মুহুরী কে ফোন করবো। তুই যখন চাস ই না এই স্টুডিও হোক, আমি যখন তোর গান বেচেঁ তোকে শুধু ব্যবহার করেছি তখন চাই না আমি এই স্টুডিও। এই অপবাদ আর এই স্মৃতি।
আমি আমার মা কে আমার সৎ বোন কে পছন্দ করি না তার কারণ আলাদা। তাদের সাফল্য কে ব তাদের পেশা কে আমি এর মাঝে অনি না।
তবে খাল কেটে কুমির আমিই এনেছি। কামড় তো খেতে হবেই।
তুই বলেছিলি না যে অর্জুন এর থেকে গুরু ড্রোন তার আঙ্গুল চাইলে অর্জুন কি করতো?
আমার মা তো আমার গুরু ই।
আর এই স্টুডিও আমার আঙ্গুল হিসেবে ধরেইনি… তাহলে এটা জেনে রাখ ধনুর্ধর হওয়ার আগে অর্জুন যোদ্ধা। আর যোদ্ধারা শুধু একটা অস্ত্র চালনায় দক্ষ হয় না ।
আদি প্রায় চিৎকার করে এক সাথে সব বলে চলল
আদি ফোন বার করে কল করে…
হ্যাঁ দীনেশ দা… হ্যা বলছি কাল সকাল সকাল একটু কোর্টে এসো তো.. আরে না না তেমন কিছু না… SH group আছে না? আরে হ্যা রে বাবা ঐ মিউজিক লেবেল.. হ্যা ওদের নতুন গায়িকা… আরে আমাদের শ্রেষ্ঠা সিংহ… হম… হ্যা আমার বিরুদ্ধে কেস করেছে… এবার তাই ওদের সর্ত হয় স্টুডিও আর প্রোডিউারের সত্ব দাও না হয় দুই কোটি টাকা দাও। তাই আমি স্টুডিও আর সত্ব দিয়ে দেবো।
শোনো না আর্জেন্ট হ্যা… ।
নে… তোর সামনেই সব মিটিয়ে দিলাম।
দ্বীপ কে বলছি তোকে একটা ক্যাব ডেকে দিতে … দেখ আমার এখন স্টুডিও আর আমার প্রোডাকশন এর সব ডকুমেন্ট রেডি করতে হবে …
তুমি কি সিরিয়াস আদি দা?
উহু আদি দা নয় মিস সিংহ। আপনি দয়া করে কাল এসে আপনার নতুন স্টুডিও তে কাজ করবেন।
আমি আজকেই পরিষ্কার করে দেবো।
শ্রেষ্ঠা এর নীল চোখ থেকে জল পড়েই যাচ্ছে.…
এবার আদি বিরক্তই হয় …
দেখুন আপনার সর্ত মেনে নিয়েছি।
আপনি এবার আপনার সাফল্য নিয়ে আনন্দ করুন। নমস্কার।
বলে আদি বেরিয়ে যায় স্টুডিও থেকে
এসে নিচে নেমে সোজা বাথরুমে ঢুকে
শাওয়ারটা ছেড়ে দেয়।
আজ আদি কান্না করে । শেষ কেঁদেছিল যেদিন মা ওকে ছেড়ে দিয়েছিল।
স্টুডিওতে আদি আর শ্রী এর একটা বাঁধানো ফটো বুকে জড়িয়ে কাঁদছে শ্রেষ্ঠা।
মহাভারতে নিজের প্রিয়সিশ্য অর্জুন কে জেতাতে একলব্য এর আঙ্গুল চেয়েছিলেন দ্রোণাচার্য।
উল্টো হলে কেমন হতো?
যদি একালব্যর কৌশলে প্রসন্ন হয়ে অর্জুনের থেকে তার আঙ্গুল চেয়ে বসতেন?
আরে শ্রী এ তোর কেমন প্রশ্ন?
না তুমি ভেবে দেখো আদি দা…
আরে এতে ভাবার কি আছে…অর্জুন তো অর্জুন ই। কিছু না কিছু করে নিত।
তুমি পারবে?
মানে?
দেখো আদি দা। আমি তোমায় ভালোবাসি। তুমিও আমাকে ভালোবাসো। এই নিয়ে আমার সন্দেহ নেই। তোমার কথা মত আমি তোমার বাড়ি গিয়ে প্র্যাকটিস করেছি। তুমি আমাকে ইউটিউব, insta তে একপ্রকার সেলিব্রিটি বানিয়ে দিয়েছ।
কিন্তু যখন নন্দিনী ম্যাম আর ঐশী ম্যাম নিজে দেখা করতে চাইছেন, স্বয়ং সুকান্ত স্যার এর অফিস থেকে আমায় নতুন অ্যালবাম সাইন করাতে চাইছে তুমি এত বাঁধ সাধছ কেনো?
তুই জানিস শ্রী … এই নিয়ে আমি বলেছি আগেও ।
হ্যাঁ বলেছ। আর তোমার কথা ততটাই যুক্তিহীন।
যুক্তিহীন?! কোনটা যুক্তিহীন শ্রী?
আমরা তো দিব্যি ছিলাম শ্রী।
বাবা air force এর বড় পোস্ট এ ছিলেন।
হেলিকপ্টার পাইলট।
আমার মা সকালে তানপুরা বাজিয়ে রেওয়াজ করতেন। আমিও করতাম। আমি তবলা বাজাতাম। যেমন বাবা বাজাতেন।
আজ থেকে বছর দশেক আগে মনেপড়ে তোমার উত্তরাখণ্ডের হেলিকপ্টার ক্র্যাশ? আমার বাবা ছিলেন সহকারী পাইলট। প্রধান পাইলট এর ভুলে বাবা সহিদ হন।
মা বাবার শোক ভুলতে গান কে আশ্রয় করে নেন।
আমিও পড়াশোনা আর গান কে আকড়ে নি।
আর এদিকে বাবার মৃত্যুর বছর দেড়েক এর মধ্যেই অনিল দেব রায় মা কে বিয়ে করেন।
আমায় ওরা দার্জিলিঙ এর বোর্ডিং এ দিয়ে দেন।
আমি আরেকবছর ঘুরতেই জানতে পারি আমার বোন হয়েছে। বোন মায় ফুট!
তুই জানিজ শ্রী, আমি কলকাতায় ফিরে জানতে পারি আমাদের বাড়িটা মা বিক্রি করে দিয়েছে।
বাবার সব চিন্হ বাইরে পরে ছিল।
তার সার্ভিস ট্রাংক টা বাইরে বৃষ্টি রোদে ক্ষয়ে গেছিলো। তাতে তার ইউনিফর্ম আর মেডেল গুলও ক্ষতি হয়। আমি কোনমতে ওগুলো বাঁচাই আর বাবার তবলা গুলো। জানিজ ওখানে আমার সব ছিল। বাবার সব ছিল। ছিল না মায়ের কোনো কিছু। যদি তোর যুক্তি মেনেও নি, যে তাড়াহুড়ো করে হয়তো বেরিয়েছিল তাই সব নিতে পারেনি।
সেক্ষেত্রে মা নিজের শাড়ি, গয়না, এমনকি ওই হারমোনিয়াম আর তানপুরা নিতে পারলো অথচ বাকি সব লাওয়ারিস হয়ে পড়ে রইলো?!
যে মহিলা নিজের আগের পরিবারকে ছুড়ে ফেলতে দ্বিধা করেনি… তোর চেয়ে বেটার কাউকে পেলে তোকেও সেম ট্রিট করবে না প্রমাণ কি?
শ্রী একটু চুপ করে থেকে এবার জোরে জোরে হেসে উঠলো।
আরে পাগল হলি নাকি?
পাগল না পাগল না আদীরাজ প্রধান …
একটা সত্যি জানতে পারলাম। বুঝলাম আমি কত বোকা ছিলাম যে তোমায় ভালোবাসছি।
মানে?
মানে এটাই যে তুমি নিজেও স্বর্ণ হংস এর জন্য অডিশন এর কিল্প সেন্ড করেছিলে। কিন্তু সেটা রিজেক্ট হয়। তুমি আমার রেকর্ড করা একটা অরিজিনাল গান নিজের লেবেল দিয়ে বিক্রি করতে চেয়েছিলে ?! ছি।
আরে তুই বলছিস টা কি?
আমি তোর গান ওদের দেব কখন? আর দিলে ওদের দেব কেনো?
এতদিনে তোর রেকর্ড করা র গান সবার আগে কাকিমা, তারপর সোহিনী আর সবার শেষে আমি শুনি।
স্টুডিও তে আমি তুই বাদে সোহিনী আর দ্বীপ আসে। দ্বীপ এর গান নিয়ে কোনো ইন্টারেস্ট নেই।
তাহলে তুমি বলছ সোহিনী?
তো আর কি বলবো বল…ও যদি মেল না সেন্ড করে তো কে করেছে?
বেশ দাড়াও।
হ্যালো সোহিনী , তুই কাল স্টুডিও তে এসেছিলি?
কোনো অডিও ক্লিপ মেল করেছিস?
করিসনি?
আদি দা যে বলছে? বেশ। না রে … কিছু হয়নি।
কি বললো সোহিনী?
তুমি দেখো আগে তুমি হয় ভুল করে সেন্ড করেছো বা তোমার সিস্টেম একসেস আর কারো কাছে আছে কি না…
আরে এ তো আচ্ছা মুশকিল…।
সিস্টেম থেকে তো কোনো ট্রানজেকশন শো করছে না… কোনো মেল ও সেন্ড হয়নি…
পেলে না তাই তো… আমি জানতাম।
আরে তুমি কত মিথ্যে ঢাকবে আর?
তুমি আসলে হিংসে করো। তোমার বোন।
সরি সৎ বোন। ঐশী আমায় বলেছিল।
তুমি যখন হোস্টেল থেকে ফিরে আসলে তুমি খুব অশান্ত হয়ে ছিলে। তুমি নিজের মায়ের কোনো কথাই সনোনি।
সেদিন ম্যাম তোমার বাবার আর তোমার জিনিস ইচ্ছে করে ফেলে যান নি।
তোমার মায়ের সব দামী গয়নাই লকারে থাকতো।
আর তান পুরা ওই বাড়ির নতুন মালিক এর মেয়ে কিনে নেয়। কোনো মতে পড়ার কিছু কাপড় নিয়ে তোমার মা তোমার অনিল আঙ্কেল এর সাথে চলে যান। ঐশী এটাও বলে যে তুমি কোনদিন ও খুব ভালো তবলছি ছিলে না, না ভালো গায়ক ছিলে। তাই তোমার চেয়ে তোমার মা ঐশী কে বেশি পছন্দ করত এই দিক থেকে। তুমি তোমার মায়ের প্রথম সন্তান হওয়ার শুধু সুবিধা চেয়েছিলে।
তোমার মা, বোন, প্রেমিকা যে তোমার চেয়ে ভালো হতে পারে তোমার পদবী ছাড়া পরিচয় ছাড়া তাদের ও নাম হতে পারে এটা তোমার মেল ইগোতে বাঁধে অদিরাজ প্রধান।
আমি তোমার মত পণ্ডিত নয় তবে এটা বলি।
You are nothing but an empty shell filled with empty pride।
ব্যাস শ্রী। লোকের বলা কথা এত শুনিস না।
বিশ্বাস করো তোমায় আমি খুব ভালো ভাবে বলতে চেয়েছিলাম । কিন্তু তুমি আমায় ব্যবহার করছ যখন জানতে পারলাম … ঐশী না বললে তো…
ঐশী কথা থেকে আসলো?
Insta তে আমায় ফলো করে সেখান থেকে বন্ধুত্ত্ব।
কিন্তু আর নয়। তুমি আর আমায় ব্যবহার করতে পারবে না। আমার গুরু নন্দিনী ম্যাম এর সাথে ও আমার কথা হয়েছে। আমি জানি তোমার হয়তো কষ্ট হবে । আমি স্বর্ণ হংস এর নিচে সই করছি।
5 বছরের কন্ট্রাক্ট। যদি ভালোবাসো আমায়…আটকাবে না। আর তোমার ভালোবাসা যদি এতই ঠুনকো হয় যে আমার সাফল্যে তোমার চোট লাগবে তাহলে আমাদের সম্পর্ক এগোনোর মানে নেই ।
আদির শান্ত মুখ এখন পাথুরে কাঠিন্য নিয়ে ও মৃত শীতল গমগমে আওয়াজে বলে
শ্রেষ্ঠা সিংহ। বিদায়। তোর সাফল্য বা ব্যর্থতা আমায় কখনো বিচলিত করেনি। করবেও না।
সর্ত দিয়ে ভালোবাসা হয়না । তুই তোর নতুন জীবনে ভালো থাক। আমি চললাম।
শ্রেষ্ঠা এর চোখে জল। এটা রাগ এর চেয়েও বেশি অপমানের।
তার অবচেতন মন হয়তো ভেবেছিল যে আদি হয়তো ওকে আটকাবে , নিজের ভুল মেনে আরেকটা সুযোগ চাইবে ওর কাছে শ্রেষ্ঠা একটু না না করলেও ওকে নিয়েই থাকবে … কিন্তু আদি যেনো ওকে চেনেইনা! ওদের এই সাড়ে 3 বছরের সম্পর্কের কোনো দাম নেই? ব্রেকআপ এতই সহজ?
শ্রেষ্ঠা চোখের জল মুছে ওর ব্যাগ থেকে একটা খাম বার করে ধরিয়ে দেয়।
এটা কি?
কোর্ট এর নোটিশ ।
কেনো?
না বলে আমার গান বিক্রি করেছো যেটা কিনা অলরেডি স্বর্ণ হংস এর সম্পত্তি।
দাঁড়া দাঁড়া… আমি যদি তোর গান বিক্রি করি তাহলে সেটা আমি এই 3 দিনের ভেতর করেছি আর এই চিঠিতে বলা আছে তুই গানেই সত্ব সপ্তাহ খানেক আগেই দিয়েছিস। তার মানে গত দুই সপ্তাহ তুই sh এর স্টুডিও তে ছিলি…?
শ্রেষ্ঠা বলে… তোমায় শান্ত করে বলবো ভেবেছিলাম। নন্দিনী ম্যাম আর ঐশী এর সাথে আসবো এসে চমকে দেবো… তবে সত্যি যখন জেনেই গেছো… আর নোটিশ যখন পেয়েই গেছো… দেখো কি করবে…
আরে দাঁড়া। ও এই তো… এই যে লেখা… এ তো তুই আমার এই স্টুডিওর বিরুদ্ধে কেস করেছিস…
Fraud, আর plagiarism এর।
আর তোকে SH (swarna Hansa) মদত করছে।
দেখ আমিও পেশায় উকিল…
এখানে আমায় আগামী সপ্তাহের মধ্যে হয় 2 কোটি টাকা বা এই স্টুডিও সাথে আমার গান প্রডিউস করার সব সত্ত তোর আর sh এর নামে করে দিতে বলেছে…
হম এই তো তোর, রাজনন্দিনি দেব রায়, ঐশী দেব রায়, আর অনিল দেব রায় এর সই ও আছে… । অনিল দেব রায় তো আবার লয়ার.. ।
আরে তুই তো ভালই ঘুটি সাজিয়েছিস…
হম…
বেশ। তোকে একদিন একটু জ্বালাবো।
কাল তোর নতুন বন্ধু এর সাথে আসিস।
এবার তুই বেরিয়ে যা।
বলে আদি ওর চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ে।
শ্রেষ্ঠা এর এবার চোখে জল মা যেমন ছেলেকে বকলে মারলে মায়ের কষ্ট হয়, বোন যদি দাদার সাথে ঝগড়া করে তারপর গিল্ট এ লেগে তার যেমন কষ্ট হয় প্রেমিকার কষ্ট তার চেয়েও একটু বেশি কারণ সম্পর্ক টা আত্মার।
শ্রেষ্ঠা আদিকে ভীষণ ভালোবাসে। রাগের মাথায় যা নয় তাই বলেছে… । তবে আদিকে ও রাগতে দেখেনি। শ্রেষ্ঠা চায় না যেতে। তাই ও চেষ্টা করে আদিকে শান্ত করার…
তুমি… তুমি কি সত্যিই আমায়..
এখনো যাসনি? দেখ শ্রেষ্ঠা … । তোর সামনেই মুহুরী কে ফোন করবো। তুই যখন চাস ই না এই স্টুডিও হোক, আমি যখন তোর গান বেচেঁ তোকে শুধু ব্যবহার করেছি তখন চাই না আমি এই স্টুডিও। এই অপবাদ আর এই স্মৃতি।
আমি আমার মা কে আমার সৎ বোন কে পছন্দ করি না তার কারণ আলাদা। তাদের সাফল্য কে ব তাদের পেশা কে আমি এর মাঝে অনি না।
তবে খাল কেটে কুমির আমিই এনেছি। কামড় তো খেতে হবেই।
তুই বলেছিলি না যে অর্জুন এর থেকে গুরু ড্রোন তার আঙ্গুল চাইলে অর্জুন কি করতো?
আমার মা তো আমার গুরু ই।
আর এই স্টুডিও আমার আঙ্গুল হিসেবে ধরেইনি… তাহলে এটা জেনে রাখ ধনুর্ধর হওয়ার আগে অর্জুন যোদ্ধা। আর যোদ্ধারা শুধু একটা অস্ত্র চালনায় দক্ষ হয় না ।
আদি প্রায় চিৎকার করে এক সাথে সব বলে চলল
আদি ফোন বার করে কল করে…
হ্যাঁ দীনেশ দা… হ্যা বলছি কাল সকাল সকাল একটু কোর্টে এসো তো.. আরে না না তেমন কিছু না… SH group আছে না? আরে হ্যা রে বাবা ঐ মিউজিক লেবেল.. হ্যা ওদের নতুন গায়িকা… আরে আমাদের শ্রেষ্ঠা সিংহ… হম… হ্যা আমার বিরুদ্ধে কেস করেছে… এবার তাই ওদের সর্ত হয় স্টুডিও আর প্রোডিউারের সত্ব দাও না হয় দুই কোটি টাকা দাও। তাই আমি স্টুডিও আর সত্ব দিয়ে দেবো।
শোনো না আর্জেন্ট হ্যা… ।
নে… তোর সামনেই সব মিটিয়ে দিলাম।
দ্বীপ কে বলছি তোকে একটা ক্যাব ডেকে দিতে … দেখ আমার এখন স্টুডিও আর আমার প্রোডাকশন এর সব ডকুমেন্ট রেডি করতে হবে …
তুমি কি সিরিয়াস আদি দা?
উহু আদি দা নয় মিস সিংহ। আপনি দয়া করে কাল এসে আপনার নতুন স্টুডিও তে কাজ করবেন।
আমি আজকেই পরিষ্কার করে দেবো।
শ্রেষ্ঠা এর নীল চোখ থেকে জল পড়েই যাচ্ছে.…
এবার আদি বিরক্তই হয় …
দেখুন আপনার সর্ত মেনে নিয়েছি।
আপনি এবার আপনার সাফল্য নিয়ে আনন্দ করুন। নমস্কার।
বলে আদি বেরিয়ে যায় স্টুডিও থেকে
এসে নিচে নেমে সোজা বাথরুমে ঢুকে
শাওয়ারটা ছেড়ে দেয়।
আজ আদি কান্না করে । শেষ কেঁদেছিল যেদিন মা ওকে ছেড়ে দিয়েছিল।
স্টুডিওতে আদি আর শ্রী এর একটা বাঁধানো ফটো বুকে জড়িয়ে কাঁদছে শ্রেষ্ঠা।