Thread Rating:
  • 5 Vote(s) - 3.4 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance কুইন অফ শেবা
#1
Heart 
অধ্যায় ০১: গৌরচন্দ্রিকা


শেবার রাণী বিলকিসের কথা ছোটবেলায় পড়েছেন নিশ্চয়ই? কিং সলোমনের কাছে গিফট নিয়ে এসেছিলেন তিনি, সাথে এনেছিলেন একইরকম দেখতে দুইটা ফুলের তোড়া- সলোমনের প্রজ্ঞার পরীক্ষা নিয়েছিলেন। সলোমনও তার জ্ঞানের উপযুক্ত পরীক্ষাই নিয়েছিলেন। সেসব কথা থাকুক, আমার গল্পটা শেবার রাণী বিলকিসকে নিয়ে নয়, আর আমিও কিং সলোমন নই। এই গল্পের পাত্রপাত্রী আমরা দুইজনই সাধারণ মানুষ, তবে কাকতালীয়ভাবে আমাদের নাম তাদের সাথে মিলে গিয়েছিলো, যখন এই ঘটণাটা গল্পাকারে প্রকাশ করবো বলে ঠিক করি তখন একবার ভেবেছিলাম ছদ্মনাম নেবো, পরে ঠিক করি আসল নাম আর পরিচয় দিলেও কারো কোনো ক্ষতি হবে না, আমার আজ আর প্রকাশ করতে বাধা নেই, আর অপরজন বাঁধা দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই, আমাকে একলা ফেলে সে মুক্ত হয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে ইডেনের বাগানে।
সলোমন নাম হলেও অস্ট্রেলিয়ায় আমাদের প্রতিবেশী কিংবা সহপাঠী সবাই আমাকে সবাই ডাকতো স্যাম বলে৷ আসলে আমিও তাতে খুশীই হতাম, সংক্ষেপ আর স্মার্ট একটা নাম ছিলো৷ ও লেভেল পরীক্ষার ঠিক আগে আগে অনেকটা আচমকাই আমাদের দেশে ফিরে আসতে হয়। শুরুতে ভেবেছিলাম হয়তো আবার নতুন কোনো দেশে যেতে হবে পাপার সাথে। কিন্তু পাপা আর বাইরে যেতে চাচ্ছিলেন না, পিএমওতে ফরেন এডভাইজর হিসাবে ডেপুটেশনে জয়েন করার জন্য তিনি আবেদন করলেন, আর এনিয়ে মমের সাথে তার ঝগড়ার শুরু হলো। সেই ঝগড়া একসময় রূপ নিলো আলাদা থাকার। পাপা থাকেন সরকারি কোয়াটারে, মম থাকছেন একটু দূরে একটা বাসায়- বেকায়দায় পরে গেলাম আমি আর এসএস, আমার স্মল সিস্টার। বোন অবশ্য কয়েকদিনের মাঝেই মমের পক্ষ নিলো, কিন্তু আমি কোনো পক্ষ নির্বাচন করতে না পেরে ত্রিশঙ্কু হয়ে রইলাম।
অবস্থা আরো খারাপে রূপ নিলো যখন জানতে পারলাম মম একটা হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশনে জব নিয়েছেন, সামনের মাসেই বাইরে চলে যাবেন। আমার সামনে তখন বিশাল কিছু প্রশ্ন দাঁড় করানো- আমি কার দিকে যাবো? কার সাথে থাকবো? যার সাথে থাকি না কেন, অপরজন আমাকে কীভাবে নেবে? আমি কি আর একসাথে দুইজনকে দেখতে পারবো না? এসবের উত্তর খুঁজে খুঁজে আমি দিশেহারা- পড়াশোনা তখন নেপচুন পার হয়ে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি ছেড়ে চলে যাচ্ছে। সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় একসময় আমাকে অনেকটা একা ফেলেই মম চলে গেলেন প্রতিবেশী দেশে, যাওয়ার আগে অবশ্য জানালেন আমার সাথে তার দূরত্ব প্লেনে মাত্র ছয় ঘণ্টার, চাইলেই আমি চলে যেতে পারবো, আমার জন্য একটা রুম তিনি রেখে দেবেন। এয়ারপোর্ট থেকে ফিরে পাপাকে জানানোয় তিনি অনেকটা ক্ষেপে গেলেন, যেন মমের চলে যাওয়ার পেছনে আমিই দায়ী। অবশ্য বিষয়টা আমার জন্য শাপে-বর হলো, গ্র‍্যানি আর গ্র‍্যানপা বিষয়টা দেখে ফেললেন। আমাকে তারা তাদের সাথে নিয়ে গেলেন গ্রামের বাড়িতে।
গ্র‍্যানপা ছিলেন আইসিএস, ঘুরে বেড়িয়েছেন শহর থেকে শহরে। ফর্টিসেভেনের পার্টিশনের আগে দার্জিলিং, আসাম কিংবা মিজোরাম হয়ে এপাড়ের পঞ্চগড় কিংবা চিটাগং- সবই ঘুরে বেড়িয়েছেন। পার্টিশনের পর পাকিস্তানে চলে যান, ভালো না লাগায় ফের পূর্ব-বাংলায় ব্যাক করেন। সেভেন্টি টুতে যতোদিনে রিটায়ার করেন ততোদিনে পাকিস্তান সরকারের অধিগ্রহণকরা শত্রু সম্পত্তির একটা জমিদারবাড়িতে রীতিমতো জাঁকিয়ে বসেছেন। ক্ষমতাবানদের কাছে সবসময়ই নস্যি, তাকেও কেউ কিছু বলতে সাহস পায় নি।
বর্ডারে কাটাতারের বেড়া পরলেও মানুষের মনে তখনো বিভেদ সৃষ্টি হয় নি, গ্র‍্যানপা আমাকে নিয়ে নানা জায়গায় ঘুরতে বেরোলেন, যেন আমার মন ভালো হয় তার জন্য সব চেষ্টাই করতে লাগলেন। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা একবছরে ঘুরে বেড়ালাম আঠারোটি পর্যটন এলাকা, আর শিখতে লাগলাম অনেককিছু। তবে সবকিছুরই শেষ আছে, আলোকোজ্জ্বল দিনের শেষে একসময় সূর্য ঢাকা পরে যায় সন্ধ্যার চাদরে, একসময় হারিয়ে যায় রাত্রির অন্ধকারে। আমার ক্ষেত্রেও একই কাহিনী হলো৷ পাপা আর মম এতোদিনপর একত্র হলেন আমার ইস্যুতে- গ্র‍্যানপাকে জানালেন আমার পড়াশোনা মিল্কিওয়্যে ছেড়ে চলে যাওয়ার উপক্রম, এখনই আমাকে তাদের একজনের কাছে ফেরত পাঠাতে হবে। অবশ্য রাত্রিশেষে ভোরের আলো সবসময়ই দেখা যায়, এবারও তার ব্যত্যয় হলো না। গ্র‍্যানির সামনে পাপা আর মম টিকতে পারলেন না, অবশ্য তারা কথা আদায় করে নিলেন, এই বছরই আমাকে স্কুলে ভর্তি হতে হবে, যেভাবে হোক এক্সাম পাশ করে এ লেভেলে ভর্তি হতে হবে কিংবা ইকুইভ্যালেন্স আনতে হবে। আমার জন্য স্কুলের সন্ধান শুরু হলো। দেড় বছরের স্টাডি গ্যাপ আর মিডল অফ দ্য ইয়্যার, আমাকে সহজে কেউ তার স্কুলে নিতে চাইবে না, স্বাভাবিক, তবে ক্ষমতাবানদের হাতে মিরাকল থাকে, সেইটা গ্র‍্যানপা আবার প্রমাণ করলেন। আমার ভর্তি হলো গ্রামের একটা স্কুলে। জানলাম আমার ক্লাস না করলেও চলবে, শুধু তিনমাস পরপর পরীক্ষা দিতে হবে আর ফরমফিলাপ করে আসতে হবে। বিনিময়ে স্কুলে একটা বিল্ডিং এর কাজ আটকে ছিলো সেটার বাজের পাশ হয়ে গেলো।
স্কুল না থাকলেও পড়াশোনার চাপ বেড়ে গেলো হুট করে, স্বাধীন উড়ুক্কু পাখির জীবন যাপন করছিলাম এতোদিন, এখন অনুভব করলাম একটা খাঁচার মাঝেই ছিলাম আমি, শুধু খাচাটা আকারে বড়ো আর শিকগুলো অদৃশ্য। গ্র‍্যানপা রোজ এদিকসেদিক ঘুরতে নিয়ে যেতেন, নতুন কিছু শেখাতেন - তবে রাত হলেই আবার বই নিয়ে বসতে হতো। শিখতে হতো ইতিহাস, ভূগোল, অর্থনীতি ইত্যাদি ইত্যাদি যেগুলো আগে কখনো সেভাবে পড়াই হয়নি। একটা সাময়িক পরীক্ষা হলো, পরীক্ষার দিন স্কুলে ঢুকে বুঝতে পারলাম কেন টিচাররা বলেছিলেন আমার স্কুলে না আসতে। সহপাঠী আর সহপাঠীনীরা সবাই আমার দিকে চেয়ে ছিলো অবাক ভঙ্গিতে। যদিও একবছরের ঘোরাঘুরিতে আমার সাদা রঙ অনেকটাও বাদামী হয়ে এসেছে, তবুও পোষাকআশাকে আমাকে দেখে সহজেই সবার থেকে আলাদা করা যাচ্ছিলো। ঘামে ভেজা হরেকরকম পোষাক আর সদাচঞ্চল চেহারার একদল কিশোর কিশোরীর মাঝে ফুলহাতা ইউনিফর্ম আর চকচকে লেদারের শ্যু চাপিয়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়া আমি রীতিমতো দর্শনীয় বস্তু হয়েছিলাম ওদের কাছে। একেকজন একেকরকম টোন করছিলো আমাকে নিয়ে, কেউ কেউ আপত্তিকর প্রশ্নও তুলছিলো, পরিস্থিতি খারাপের দিকে চলে যেতো যদি না একজন টিচার চলে আসতেন। তিনি এসে গলা খাকড়ানো দিতেই সবাই ঠান্ডা হয়ে গেলো। স্যার একবার আমার দিকে আর একবার সবার দিকে তাকিয়ে জোর গলায় জানালেন আমার পরিচয়, বললেন আমি এখান থেকে পরীক্ষা দেবো, সবাই যেন আমার সাথে ভালো আচরণ করে আর আমাকে সহযোগিতা করে৷ আমি একবার বলতে চাইছিলাম আই ডোন্ট নীড এনি হেল্প কিন্তু ভবিষ্যতের কথা ভেবে বলাটা আপাতত বাদ দিলাম।
স্যার এবার আমার সাথে বাকিদের পরিচয় করিয়ে দিলেন, একে একে জানা হলো সবার নাম- যদিও অর্ধেকের বেশি ততোক্ষণেই ভুলে গিয়েছি। স্যার একজনের নাম বলছিলেন এমনসময় পরিমরি করে রুমে ঢুকলো একটা মেয়ে। স্যারকে দেখে থমকে দাঁড়িয়ে আবার ফেরত গেলো দরোজার কাছে, কাঁপা গলায় অনুনয়ের সুরে জিজ্ঞাসা করলো, "May I come in Sir?" এই পুরো ঘটনায় হাসির কিছুই ছিলো না, কিন্তু আমি ফিক করে হেসে ফেললাম। স্যার পেছন ফিরে মেয়েটাকে দেখে স্বগতোক্তি করলেন- ওহ, তোমার কথাই ভাবছিলাম। তারপর বললেন, "আসো, সামনে এসে বসো। এই ছেলেটার নাম স্যাম, ভালো নাম সলোমন। আর স্যাম, ও হলো আমাদের ফার্স্টগার্ল, বিলকিস। ওর সাথেই তোমার কম্পিটিশন হবে।" আমি কেন জানি না, বলে বসলাম,
"In Sheba's realm, fair Bilqis reigns in grace,
Her beauty bright, intelligence embrace."
প্রত্যুত্তর আশা করি নি, তবে জবাবে যখন বিলকিস বলে উঠলো-
"Bilqis am I, who dared to test thy might.
To face thee bold, beneath the sun's bright light."
আর যাই হোক, আমি এই গ্রামের স্কুলের কাউকে স্ক্রাইব দ্যা ব্রাউন পড়ার আশা করি নি, আমার থতোমতো চেহারা দেখেই সারা ক্লাসে যেন হাসির রোল পরে গেলো। স্যার নিজেও অবাক হয়ে বিলকিসের দিকে তাকিয়ে রইলেন। বিলকিস কিন্তু হাসিমুখে আমার পাশেই এসে বসলো, আমিও হাসিমুখে তার দিকে নড করে বসে পরলাম। ঘণ্টা বাজলো, স্যার খাতা আর প্রশ্ন বিতরণ শুরু করলেন।


[Image: 0e5f355d7f4623deff13699121a2b3dc-1.png]
বাঁশ খাই, বাঁশ দিই


[+] 3 users Like π@nDA's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#2
ফাটাফাটি শুরু। কাঠামোটা ভাল বেঁধেছ। চালিয়ে যাও ভাই
Like Reply
#3
Good story
Like Reply
#4
ভালো হচ্ছে ,   চালিয়ে যান

[Image: Images-2-2-1.jpg]

Like Reply
#5
গৌরচন্দ্রিকাটা জব্বর হয়েচে। এবারে তো আসল গল্প
Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)