Thread Rating:
  • 16 Vote(s) - 3.5 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
রোমান্টিক গল্প: মেঘবতী (লেখিকা:সুলতানা_সিমা)
#1
_ প্রেম করবি তুই আর প্রপোজ করবো গিয়ে আমি?
_ তো কি হইছে? আমার হয়ে প্রপোজ করবি।
_পরে যদি তোর হয়ে বিয়ে করতে হয় তখন?

ফারদিনের কথা হো হো করে হেসে উঠলো ইরান ও সুলভ। একরাশ বিরক্তি নিয়ে তাঁদের দিকে তাকালো আরার। তাঁর ভালো নাম হচ্ছে ইমতিয়াজ রাফি আরান। বাড়ির লোকজন ছাড়া সবাই তাকে আরার নামে ডাকে। তাঁর পেছনেও একটা কারণ আছে। আরারকে নিয়ে মজা উড়ানো তাঁর মোটেও পছন্দ হয়না। যেটা এই মুহুর্তে তাঁর বন্ধুরা করছে,কিন্তু বন্ধুদের তো কিছু বলাও যাবে না। প্রপোজটা সে নিজেই করতে পারতো। কিন্তু তাঁর ভয় হয়। যদি মেয়েটা রিজেক্ট করে দেয় এটা ভেবে। আরার রিজেক্ট করার মতো ছেলে নয়। কিন্তু তাকে সবাই ভিলেন বলে জানে। সহজ ভাষায় যাকে মাস্তান বলে। সে জন্য আরারের ভয় হচ্ছে। কোনো মেয়ে নিশ্চয়ই চাইবে না মাস্তান কারো সাথে সম্পর্কে জড়াক। আরার কিন্তু মোটেও মাস্তান নয়। সে যথেষ্ট ভালো স্টুডেন্ট। তবে একবার দুটো কলেজে খুব মারামারি করেছিলো সে। তাঁর বোনদের সাথে ছেলেরা খারাপ কিছু করতে চেয়েছিলো সে জন্য। আর সেই মারামারির মূহুর্ত অনেকে ভিডিও করে সোসাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে দেয়। তারপর আরো দু এক জায়গায় বোনদের সাথে বাদরামি করেছে বলে ছেলেদের সাথে মারামারি করেছে। সে ভিডিও গুলোও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেই থেকে সবার চোখে সে মাস্তান। সবাই চুপচাপ বসে ছিলো,হঠাৎ সুলভ বলে উঠলো,

_আইডিয়া।

সুলভের কথায় চট করে সবার জিজ্ঞাসুক চোখ সুলভের উপর এসে স্থির হলো। সুলভ বলল,

_আমরা তো একটা লেটার দিলেই পারি তাইনা।

ফারদিন ঠোঁট বাঁকিয়ে ভ্যাঙ্গ করে বলল, আমরা তো লেটার দিতেই পারি। দেখ তোর মতো নির্বোধ ওই মেয়েটা না।

_তো নির্বোধ না হলে কি হবে? লেটার পেয়ে থাপড়াতে আসবে? 

আরার সুলভের পিঠ চাপড়াতে চাপড়াতে বলল,

_ভাই। একটা লেটার লিখে দেনা।
_তোর হাতে কি ফোসকা পড়েছে?
আরার নাটকীয় ভাবে বলল,"
_পড়ে যেতে পারে,রিস্ক চাইনা।

ফারদিন বিরক্ত নিয়ে বলল," দেখ আরার, তুই না ওই নড়বড়ের কথা শুনবি না। ওর বুদ্ধিতে কাজ করলে সব সময় উল্টা পাল্টা কিছু হয়।

আরার ঝাড়িমারা গলায় বলল,"তাহলে তুই একটা আইডিয়া দে। সেটা তো পারবি না। বললাম আমার হয়ে প্রপোজ কর সেটাতেও তোর কলিজা কাঁপে। ওই সুলভ তুই লিখ তো।

সুলভ চট করে খাতা কলম বের করে বাইকের উপর রেখে লিখতে লাগলো। আরার মিটিমিটি হাসছে। তাঁর হাসির দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে ফারদিন। ইরান নোক কামড়াতে কামড়াতে কি যেন ভাবছে। ফারদিন ইরানের মাথায় চাপড় দিয়ে বলল,"ওই চিন্তাবিদ কি ভাবছিস?" ইরান ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে বলল, 

_আচ্ছা মেয়েটা যদি লেটারটা প্রিন্সিপাল স্যারকে দেখায় তখন কি হবে?

ইরানের কথা শুনে আরার সুলভকে বলল," এই এই এই ওর নাম লিখবি না।

সুলভ নির্বোধ মার্কা হাসি দিয়ে বলল,
_লেখা শেষ। ওর ও নাম লিখিনি তোর ও নাম লিখিনি। শুধু RR দিছি।" আরার লেটারটা হাতে নিয়ে পড়লো। মোটামুটি ভালোই লিখেছে। সে হলে তো এতোটাই পারতো না। ইরান চাপা গলায় বলল,

_ভাই চেয়ে দেখ ভাবি হল রুমের দিকে যাচ্ছে।

ফারদিন ঝাড়ি দিয়ে বলল,"হ্যাঁ এবার নিয়ে যা লেটার সাথে জুতার বাড়ি খেয়ে আয়।" 

আরার বলল",আচ্ছা ফারদিন তোর এতো জ্বলছে কেন শুনি? তোদের কাউকে যেতে হবেনা।" আরার চারদিকে তাকিয়ে দেখলো ক্যান্টিনের ওখানে সাত-আট বছরের একটা পিচ্চি ছেলে দুজনকে চা দিচ্ছে। আরার ছেলেটাকে ডেকে আনলো। তারপর বলল,

_এইমাত্র হলরুমে যে তিনটা মেয়ে ঢুকেছে তাঁর মধ্যে চশমা চোখে নীল ড্রেস পরা যে মেয়েটা, তাকে এই লেটারটা দিবি।" আরানের কথায় পিচ্চি ছেলেটি মাথা দুলিয়ে আচ্ছা ভাইয়া বলে হল রুমের দিকে দৌঁড় দিলো৷ আরান বাইকে শুয়ে পায়ে পা তুলে মনের সুখে গুনগুন করে গান গাইতে লাগলো। তাঁর বন্ধুগুলো আহাম্মকের মতো তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে। তাঁর ভাব দেখে মনে হচ্ছে সে এই দলের নেতা। আর তারা সবাই জ্বি বস জ্বি বস বলা পাবলিক। অথচ সে কিনা সরাসরি ভালোবাসার কথা না জানিয়ে লেটার দিচ্ছে। গত ছ'মাস থেকে আরার একটা মেয়েকে ভালোবাসে। কখনো মেয়েটার সামনে দাঁড়িয়ে মনের কথাটা প্রকাশ করতে পারেনা। অনেকবার ভালোবাসি বলার জন্য মেয়েটার সামনে দাঁড়িয়েছিলো, কিন্তু বলতে পারেনি। সামনে গেলেই সে বাঘ থেকে বেড়াল হয়ে যায়। হুদাই তাঁর হাত পা কাঁপে।

______________________

পিচ্চিটা হল রুমে ঢুকে দেখলো তিনটা মেয়ে বসে কথা বলছে। আর কেউ নেই শুধু তারা তিনজনই। পিচ্চিটা মাথা চুলকাতে চুলকাতে ভাবলো,"

_এখানে তো চশমা পরা মেয়েটা লাল ড্রেস পরে আছে ভাইয়া তো বলল নীল ড্রেস পরা? মনে হয় ভাইয়া রং চিনিনা। নয়তো লাল বলতে গিয়ে নীল বলে দিছে।"

 নিজের মনের করা প্রশ্নের উত্তর নিজে দিয়ে তিনটি মেয়ের সামনে দাঁড়ালো সে। চশমা চোখে লাল ড্রেস পরা মেয়েটার দিকে লেটারটা দিয়ে বলল,"

_আপু এটা তোমাকে আরার ভাইয়া দিছে।"

পিচ্চির ছেলের কথায় তিনজনই ৪৪০ ভোল্টের শকড হয়। আরার নামটা যেন ভূবন কাঁপানোর মতো কোনো শব্দ। তারা তিন বান্ধবী। তর্নি,সুপ্তি,জুহা। দুপাশে জুহা ও সুপ্তি বসা। মাঝখানে বসে আছে তর্নি, যাকে পিচ্চিটা লেটার দিয়েছে। সুপ্তি ও জুহা তর্নির দিকে হা হয়ে তাকায়। তর্নিও আহাম্মকের মতো তাকিয়ে আছে। আরারের মতো ভিলেন তাকে লেটার দিয়েছে? ওয়ার্নিং লেটার নয়তো? কিন্তু সে তো কিছু করেই নি যে ওয়ার্নিং দিবে। ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে সে। সুপ্তি পিচ্চির হাত থেকে ছু মেরে লেটারটা নিলো। পিচ্চি দৌড়ে হলরুম থেকে বেরিয়ে যায়। সুপ্তি তৎক্ষণাৎ লেটার খুলে জোরে জোরে পড়তে লাগলো,

আমি তোমাকে ভালোবাসি। খুব বেশি ভালোবাসি। জানিনা কেন জানি তোমায় দেখলে আমার সব এলোমেলো হয়ে যায়। হয়তো তুমি আমার চোখে সব থেকে সুন্দরী নারী বলে এমনটা হয়। ****৬৫৮৫৭৭ হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার। তোমার মেসেজের অপেক্ষায় থাকবো।

"RR"

লেটারটা পড়ে দু'মিনিট তিনজন শকডের উপর থাকে। কেমন রিয়েকশন দিবে কেউই বুঝতে পারছে না। হটাৎ সুপ্তি মুখ বাকিয়ে বলে উঠলো,"

_লাইক সিরিয়াসলি? এই যোগে এসে প্রপোজ লেটার? তাও আরারের মতো একটা ভিলেন? লেটারের কথাগুলাই তো সব এলোমেলো। সে আবার তোকে দেখলে এলোমেলো হয়ে যায়? আর কি দিলো এটা? লেটার? আরারের মতো ছেলেরা কোনো মেয়েকে পছন্দ করলে কি করে জানিস? রাস্তায় দাঁড় করিয়ে বলে,"[পুরুষের মতো কণ্ঠ করে] ওই শুন আমি তোকে ভালোবাসি। তুই আমাকে ভালোবাসবি নাকি বাসবি না এটা তোর ব্যাপার। সোজা কথা তুই শুধু আমার অন্যকারো না।" 

সুপ্তিকে থামিয়ে জুহা বলল,"

_ইয়ার মুখ বন্ধ কর। এই লেটারের লেখাও যেমন এলোমেলো তোর কথাগুলাও তেমনি এলোমেলো। তবে যাই বলিস। আরার পুরো ভার্সিটির ক্রাশ।

সুপ্তি মুখ বাঁকিয়ে ভ্যাঙ্গ করে বলল,
_পুরো ভার্সিটির ক্রাশ। পুরো ভার্সিটি না। কয়েকজনের ক্রাশ।
_একই তো। সে আমাদের তর্নির মতো গাঁধীকে লাভ করে এটা কিন্তু আমাদের সবারই সৌভাগ্য।" তর্নি জুহার দিকে রাগি লুকে তাকালো। সুপ্তি বলল,"

_ওই সৌভাগ্য হবে কেন? সে কি বিল গেটসের ছেলে?
_ওই তুই থাম তো। 
_তুইও থাম। তর্নি তুই শুন। তোর না কপালটাই খারাপ। আজ এক মাসের জন্য ভার্সিটির বন্ধ দিবে। আর আজই কিনা আরার তোকে লেটার দিলো৷ দুদিন আগে দিলেই পারতো একটু দেখা সাক্ষাৎ করতি। আর হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারটা ওতো দিলো। তোর তো Android ফোন নাই কথা বলবি কেমনে? শুধু মেসেজ আর ফোনালাপ?"

 জুহা বলল,"তাতে কি হয়েছে একমাস পরে দেখা হবে। তবুও না বলবি না কিন্তু তর্নি।
_ও না বলবে কেন? ও নিজেই তো আরারের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে।
_তাও ঠিক। তবে যাই বলিস আরার কিন্তু অনেক হট রে।" 

তর্নি চোখের চশমাটা খুলে টাস করে টেবিলে রেখে বলল,"চুপ যা তোরা,মুখে যা আসছে তাই বলছিস।" সুপ্তি চশমা হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখতে দেখতে বলল,"ওরে আল্লাহ ভেঙে দিছে। এতো জোরে রাখলি কেন, যদি ভেঙে যেতো? পড়তে দিছি বলে এভাবে রাখবি?
_আমি কি জোর করে পড়েছি নাকি? তুই তো পড়তে দিলি। কানি কোথাকার।
_মোটেও আমাকে কানি ডাকবি না। চশমা পড়তেও কপাল লাগে যেটা আমার আছে। জানিস তোর ওই আরার আমায় একদিন বলেছিলো, আমাকে নাকি চশমা পড়লে অনেক সুন্দর লাগে। এখন যদি আমার স্বাদের চশমাটা ভেঙে যেতো তাহলে সেই সুন্দরটাও লাগতো না। আসলে চশমায় তোরে কেমন লাগে দেখতে চাওয়াই আমার ভুল ছিলো।"

 বলতে বলতে চোখে চশমা পড়ে নেয় সুপ্তি। সুপ্তির বলা কোনো কথাই তর্নির কানে আসছে না। সে আরারের ভাবনায় মগ্ন। আসলেই কি আরার তাকে ভালোবাসে? এই ভার্সিটিতে এতো সুন্দরী মেয়ে থাকতে। সুপ্তি আর জুহার মতো সুন্দরী থাকতে তাঁর মাঝে এমন কি দেখলো যে আরার তাকে ভালোবাসলো? তর্নি যে অসুন্দরী তাই নয় কিন্তু তর্নি গ্রাম থেকে উঠে আসা মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। যা আরারের মতো ছেলের পছন্দ হওয়ার কথাই নয়। আরারের মুখটা চোখে ভেসে উঠতেই হেসে উঠলো তর্নি। আরারকে সে প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলছিলো।

চলবে,,,,,।

https://www.facebook.com/groups/41899633...group_link

 ভালোবাসা, খুনসুটি,মান অভিমান,পারিবারিক, সামাজিক,কমেডি, বাস্তবতা সব মিলিয়ে গল্পের প্লট সাজিয়েছি। জানিনা সবার কাছে গল্পটা কেমন লাগবে। চার-পাঁচ জুটির অদ্ভুত প্রেম কাহিনি। আশা করি আপনারা সাথে থেকে উৎসাহ দিবেন। ভালো কিছু লিখার চেষ্টা করবো। অবশ্যই জানাবেন কেমন হয়েছে।
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#2
পর্ব:০২


চলছে চৈত্র মাস। আকাশের রঙ বদলাচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে। সকালের আকাশ দেখলে বিকালের আকাশ কেমন হবে তা আন্দাজ করা যায়না। এই রোদ তো এই বৃষ্টি। কাল সারারাত অনেক বৃষ্টি ছিলো। সকালটাও ছিলো মেঘলা। অথচ দুপুর হতেই আকাশটা চকচকে হয়ে গেছে। সাথে আছে তার প্রখর রোদ৷ বিকাল হতে যাচ্ছে রোদের তেজ এখনো কমছে না। এই রোদের মধ্যে রাস্তা দিয়ে ছাতা বিহীন গাড়ি বিহীন হেঁটে যাচ্ছে আরান। তাঁর বাইকটা ইরান নিয়েছে। কোথায় নাকি যাবে সে। তাই তাকে পায়ে হেঁটে যেতে হচ্ছে। এই রোদের মধ্যে ঘেমে একদম একাকার হয়ে গেছে। তবুও তাঁর ক্লান্তি লাগছে না। আজ তাঁর মনটা ফুরফুরে। সুপ্তিকে আজ তাঁর মনের কথা জানিয়েছে, হোক সেটা পত্রের মধ্যেই। তবু তো আজ বলেছে মনের কথাটা। আরারের মাথায় প্রশ্ন জাগে," আচ্ছা সুপ্তি আমায় একসেপ্ট করবে তো?" কিছুক্ষণ ভাবার পরে উত্তর খুঁজে পায়,না করলে ক্ষতি কি? আবার প্রপোজ করবো। এভাবে করতে করতে একদিন সুপ্তি হ্যাঁ বলে দিবে। প্রায় একঘন্টা হাঁটার পরে আরার বাসায় পৌঁছে যায়। সাদা রংয়ের দোতলা একটা বিল্ডিং। বাসাটা বেশ সুন্দর। দোতলার বারান্দায় নানা ফুলের টব সাজানো। ফুল তাঁর বাহার দিয়ে বাসাটার সৌন্দর্য দ্বিগুন বারিয়ে দিছে। আরান কলিং বেল টিপলো। কলিং বেল দেওয়া মাত্রই দরজা খুলে দেয় ১১-১২ বছরের একটা মেয়ে। যেন এতোক্ষণ দরজা খুলার জন্যই বসে ছিল সে। মেয়েটার গায়ের রং আরানের মতোই উজ্জ্বল শ্যামলা। হলুদ রঙের একটা টপস পড়েছে সে। হলুদ রং যেন তাঁর গায়ের রংটা মলিন করে দিছে। আরার তাকিয়ে দেখলো মেয়েটার মুখটা মলিন। আরান শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে ভিতরে পা বারিয়ে বলল,"

_কিরে আঞ্জু কালি। তোর আবার কি হলো? মুখটা গোমড়া করে রাখছিস কেন?" 

আরানের কথায় মেয়েটা ঠোঁট উল্টে কেঁদে দিলো। আরান অবাক হয়ে পিছনে থাকায়৷ মেয়েটাকে ধরে গিয়ে সোফায় বসে চোখ মুছতে মুছতে জিজ্ঞেস করলো,

_কাঁদিস কেন? আম্মু বকেছে তোকে?

মেয়েটা কিছু বলতে যাবে তাঁর আগেই তিনটা যুবতি মেয়ে দৌড়ে এসে আরানকে ঘিরে ফেলে। একজনের হাতে টাওয়াল। একজনের হাতে পানির গ্লাস। একজনের হাতে একটা হাতপাখা। টাওয়াল হাতে মেয়েটার নাম আশু,এই মেয়েটাও আরানের মতোই শ্যামলা। গ্লাস হাতে মেয়েটার নাম আনু আর পাখা হাতে মেয়েটার নাম আরু। দুজনই জমজ। সুন্দর কাকে বলে এই দুটো মেয়েকে না দেখলে কেউ আন্দাজ করতে পারবে না। দুজন একই রকম দেখতে হলেও আরুর চুল শর্ট আর আনুর চুল কোমর পেরিয়ে যায়। তাদের মধ্যে আরেকটা পার্থক্য আছে। আরুর কণ্ঠ হলো ভারি আর আনুর চিকন। আশু হলো আরু ও আনু থেকে দু বছরের বড়। তবে দেখলে মনে হয় একই বছরে এই তিনটা মেয়ের জন্ম হয়েছে৷ আরান আনুর হাত থেকে গ্লাস নিয়ে পানি খেতে লাগলো। আশু টাওয়াল নিয়ে আরারের কপালের ঘাম মুছে দেয়। আরু পাখা দিয়ে বাতাস করে যাচ্ছে। আরান গ্লাসটা টে টেবিলের উপর রেখে বলল,

_কি ব্যাপার আজ এতো সেবা করা হচ্ছে সিস্টার্স। কোনো প্ল্যান ক্ল্যান চলছে নাকি?

আরানের কথায় আনু আশু আরু বড় চোখ করে একজন আরেকজনের দিকে তাকালো। তারপর সূচক মাথা নেড়ে এক সাথে বলল,

_কোনো প্ল্যান নেই ভাইয়া।" আশু টাওয়াল রেখে আরানের ডান পাশে বসে আহানের হাত টিপে দিতে দিতে বলল,

_তুমি আমাদের চার বোনের একটা মাত্র ভাই। তুমি কি কম আদরের বলো? 

 আনু আঞ্জুকে তুলে আরানের বাম পাশে বসে আরানের বাম হাত টিপে দিতে দিতে বলল,

_ভাই তুমি কত টায়ার্ড। তোমার মতো টায়ার্ড হলে না আমার খুব ঘুম পায়। তোমারও এখন ঘুমানো উচিত। চলো রুমে চলো।

আরু পাখা দিয়ে বাতাস করতে করতে বলল,

_হ্যাঁ ভাইয়া চলো ঘুমাবে। তোমাকে ভিষণ টায়ার্ড লাগছে। হ্যাঁ না রে আপুনি?

আরান দুহাত এটে সোজা হয়ে বসলো। তারপর একেক বার একেকজনের দিকে তাকালো। আরানের এভাবে তাকানো দেখে তিন বোনের চেহারায় চোরের মতো লোকচুরি ভাব চলে আসে। যেন এই পালালে লুকিয়ে বাঁচবে। আরান সরু চোখে সবার দিকে তাকিয়ে বলল,

_কাহিনি কি? অন্যদিন তো বাসায় ঢুকা মাত্রই তোরা চকলেটের জন্য আমার পকেট ছিঁড়ে ফেলিস। আজ এতো কদর কেন?

আশু বাঁজ খাই গলায় বলল,"কদর করলে কি হয়? আমরা কি তোকে কদর করিনা।

_কদর করিস কিন্তু তোদের কদরের মাঝে ঘাপলা থাকে। হয় তোরা আমার পকেট মারতে কদর করিস, নয় আমার হয়ে আম্মুর পকেট মারতে কদর করিস।

আনু আরানকে আহ্লাদী গলায় বলল,

_ভাইয়া কারো কদরে যদি কোনো ঘাপলা থাকে, তাহলে সেটা আপুর। আমরা তো সুইট কিউট আর নম্র ভদ্র মেয়ে। হ্যাঁ না রে আরু?

আশু দুহাত কোমরে রেখে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,
_আমার কদরে ঘাপলা আছে?

_নাতো কি। এক ভাইয়াই আছে, যে আমাদের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত। আর তুমি? নিজের একটা ড্রেসই পড়তে দাওনা।

_বেশ করি। আমি ভাইয়ার মতো হতে পারবো না, ঠিক আছে। তবে আমি তোদের মতো হতে পারি।

আরু ও আনু বেশ আগ্রহ নিয়ে প্রফুল্ল হয়ে বলল" আমাদের মতো কেমন?
আশু মুখ বাঁকিয়ে বলল,

_সারাক্ষণ শুধু খাই খাই খাই।

_আপুউউউউউউ।

আরান বোনদের কান্ড দেখে হেসে উঠলো। তারপর আড়মোড়া ভেঙে বলল,"

_তোরা ঝগড়া কর আমি সুপ্তির মাঝে যাচ্ছি। 

_কার মাঝে?

_আরে ঘুমের মাঝে।

সুপ্তি ভ্রু নাচিয়ে বলল,"

_তুমি অন্যটা বলেছো ভাইয়া।

_সুপ্তি মানে ঘুম। মানে আমি ঘুমাতে যাচ্ছি।"

বলেই আরান উঠে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো। আশু আনু ও আরু খুশিতে গদগদ করতে করতে তাঁদের ঘরে চলে গেলো। আনজু এতোক্ষণ বসে বসে বোনদের তামশা দেখেছে৷ এখন উঠে গেলো আরানের ঘরের দিকে। আরান ওয়াসরুমে যাচ্ছিলো আনজুর ক্ষীণস্বরে ভাইয়া ডাক শুনে দাঁড়ায়। আনজু রুমে ঢুকে আরানের সামনে দাঁড়ালো। আরান বলল,

_কিছু বলবি কালি?

আঞ্জু দরজার দিকে একবার তাকিয়ে তারপর বলল, 
_ভাইয়া। আপুরা আজ ছাদে উঠে নেচে সেটা ভিডিও করেছে। পাশের ছাদে একটা ছেলেও ছিলো। 

_আম্মু কই ছিলো?

_আম্মু স্কুলে ছিলো। আম্মু আসার পর আমি আম্মুকে বলেছি বলে আপুরা আমায় বকা দিয়েছে। আম্মু আপুদের বকেছে আর বলেছে তুমি বাসায় আসলে সব বলে দিবে। 

আরানের নাকের ডগা ফুলে উঠলো। সেদিন এতো করে বুঝানোর পরেও আজ তাঁরা ছাদে উঠেছে? তাও ভিডিও বানানো? আরান রাগে বোনদের রুমের দিকে পা বাড়ালো। বড় হয়েছে বলে একটার গায়েও হাত তুলেনা। আজ একদম মেরেই দিবে। কলেজ পড়ুয়া মেয়েরা ছাদে উঠে নাচানাচি করে। আশেপাশের লোক দেখলে কি বলবে? কই যাবে এই মানসম্মান? আরান রুম থেকে বের হতেই তাঁর ফোন বেজে উঠে। আরান হেঁটে হেঁটে কল রিসিভ করে কর্কশ গলায় বলে,

_হ্যালো কে?

কেউ কথা বলল না। আরান দু তিন বার হ্যালো হ্যালো করে তাঁর মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। রাগান্বিত গলায় বলল,

_ওই মিয়া কথা বলেন না কেন?

_আ আ আপনি লেটার দিছিলেন।"

তৎক্ষণাৎ আরানের পা থেমে গেলো। এতোক্ষণে সে তাঁর বোনদের দরজায় এসে গেছে। তাকিয়ে দেখলো তাঁর বোনরা জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে ভিতু চোখে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে। ফোনের ওপাশ থেকে সেই মধুর কণ্ঠটা বলে উঠলো,

_শুনতে পাচ্ছেন?" আরান মৃদু হেসে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো। তাঁর বোন গুলো অবাক হয়ে একজন আরেজনের দিকে তাকলো। তারপর খুশিতে নেচে উঠলো। 


আরান রুমে এসে দরজা বন্ধ করে গিয়ে খাটে বসলো। উত্তেজনায় তাঁর হাত পা কাঁপছে। সুপ্তি তাকে কল দিয়েছে? তার মানে সুপ্তি তাকে মেনে নিয়েছে? খুশিতে আরানের ইচ্ছে করছে ডান্স করতে। রুমে আসতে আসতে কল কেটে গেছে। আরান আবার কল দিতে গিয়ে থেমে গেলো। কেমন জানি একটা অনুভূতি হচ্ছে তাঁর। খুব খুশি খুশি লাগছে। আরান কল দিলো ফারদিনকে। প্রথম রিংয়েই ফারদিন কল রিসিভ করে। আরান আনন্দিত গলায় বলল,

_ফারদিন জানিস সুপ্তি আমায় একসেপ্ট করেছে। ও আমায় কল করেছিলো। 

_আচ্ছা ঠিক আছে রাখ।

_রাখবো মানে? আরে ভাই জীবনের প্রথম প্রেম করতে যাচ্ছি। congratulations বল।

_রাখ তোর জীবনের প্রথম প্রেম আমি টয়লেটে আছি।

_টয়লেট মানে? ছিঃ ফারদিন তুই ভদ্র ঘরের ছেলে হয়ে টয়লেট ব্যবহার করিস?

_তুই কোন অভদ্রের বাচ্চারে যে টয়লেট করিস না?

_আরে ছিঃ ছিঃ এটা বলতে চাইনি। আমি বলতে চাইছি তুই ভদ্র ঘরের ছেলে হয়ে টয়লেটে ফোন ব্যবহার করিস?

_তো তুই কেন ভদ্র ঘরের বাচ্চাদের টয়লেটে থাকা অবস্থায় ফোন দিস?

_দ্যাত রাখ ফোন।

_তুই রাখ।

আরান ফোন রেখে দিয়ে কিছুক্ষণ আগে কল আসা নাম্বারটা বের করলো। ইশ নাম্বারটা দেখেই কি প্রশান্তি লাগছে তাঁর। না জানি এই নাম্বারের মানুষটার সাথে কথা বললে কেমন লাগবে। ভয়ার্ত গলার বলা আপনি লেটার দিছিলেন কথাটা বার বার কানে বাজছে আরানের। ভয়েসটা এতো মিষ্টি কেন? আরান ফোন দিলো। দুতিন বার দেওয়ার পরেও কেউ ফোন তুললো না।


খাটের উপর দুহাতে পা এটে বসে আছে সুপ্তি। পা বাজ করে কোলে বালিশ নিয়ে বসে আছে জুহা। বালিশে কনুই ঠেকে নোক কামড়াচ্ছে সে। তাঁদের দুজনের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে তর্নি।তাঁর এই অসহায় দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে একটু পর পর তাঁর দিকে তাকাচ্ছে দুজোড়া তীক্ষ্ণ চোখ। তাঁর উপর প্রচন্ড রেগে আছে সুপ্তি ও জুহা। তাঁরা দুজন এক পাহাড় উত্তেজনা নিয়ে বসে আছে আরান কিভাবে কথা বলে তা শুনার জন্য। আর তর্নি কিনা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে শেষ হয়ে যাচ্ছে? তাও তাঁরা দুজন জোর করে একবার ফোন দেওয়ালো তো এখন আরান ফোন দিচ্ছে সে ফোন ধরছে না। জুহা কোলের বালিশটা টাস করে বিছানায় রেখে বিরক্তি নিয়ে বলল,

_আমি বুঝতে পারছি না এখানে এতো ভয় পাওয়ার কি হলো? সে তো নাম্বার দিয়েছে কথা বলার জন্য তাইনা?

_এটা ঠিক না জুহা। উনি মাত্র একটা লেটার দিলেন আর আমি কিনা চট করে উনাকে কল দিয়ে দিবো?

সুপ্তি রাগে পা এটে রাখা হাত দুটো নাচিয়ে বলল,

_এখন তোকে বস্তা বস্তা লেটার দিতে হবে বুঝি? 

_আরে না সেটা বলছি না। আমাদের তো দু একদিন ভাবা উচিত তাইনা?'"

 তর্নির কথা শেষ হতেই আবার কল এলো৷ সুপ্তি দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

_এখন যদি ফোন না ধরেছিস তোকে লাত্তি দিয়ে জানালা দিয়ে ফেলে দিবো। 

_দেখ সুপ্তি তুই বাড়াবাড়ি করছিস। এসব ঠিক না।

জুহা বলল,
_দেখ তর্নি আরারকে না জিজু হিসাবে আমাদের বেশ লেগেছে। তাই চাই ঘটনা মুচড় দেওয়ার আগে তুই ঝাপটে ধর। আরে ভাই আজকাল মানুষ রাস্তা ঘাটে প্রেম করে৷ তুই ঘরে বসেও করতে পারবি না?

সুপ্তি ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চাপা গলায় বলল,"এই ভুও চুপ চুপ।" বলে সুপ্তি ফোন রিসিভ করে নিলো৷ তর্নিকে ফোনটা দিয়ে ফিসফিস করে বলল," নে কথা বল।"তর্নি ভিতু চোখে তাকিয়ে দুহাত মাথা এক সাথে নাড়িয়ে না বলল। জুহা ধমকের চোখে তাকালো। তর্নি কাঁপা হাতে ফোন হাতে নেয়৷ তাঁর বাটনের ছোট ফোনটাও যেন ধরার শক্তি নেই তাঁর। ফোনটা লাউডে দেওয়া আছে। জুহা সুপ্তি একফালি উত্তেজনা নিয়ে বসলো, আরানের মতো মাস্তান ছেলেটা গার্লফ্রেন্ডের সাথে কিভাবে কথা বলে সেটা দেখতে। তর্নি কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, 

_হ্যা হ্যা হ্যালো।

_হাই মিস,,,,,,,

চলবে,,,,,,,।
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#3
পর্ব:০৩


_হাই মেঘবতী।
_কে মেঘবতী?
_তুমি।
_আ আমি?
 _হুম তুমি। এক আকাশ মেঘ নিয়ে তুমি আমায় প্রথম দেখা দিয়েছিলে। আর আজ সকালটাও আকাশ ভরা মেঘ ছিলো। তাই তুমি মেঘবতী। আমি তো তোমাকে মেঘবতী বলেই ডাকবো।

আরানের কথায় তর্নির হৃদপিণ্ড চলাচলের গতি বাড়তে লাগলো৷ যেদিন প্রথম তাঁরা তিন বান্দবী ভার্সিটিতে পা রেখেছিলো, সেদিন হঠাৎ করেই আকাশটা মেঘের চাদরে মোড়িয়ে গেছিলো। পুরো আকাশ জুড়ে ছিলো মেঘের খেলা। ভার্সিটির গেট পেরিয়েই তর্নির চোখ আটকে গেছিলো শ্যামবর্ণ এক সুদর্শন যুবকের উপর। যে কালো চশমা চোখে তাকিয়ে ছিলো গেটের দিকে। সেই প্রথম দেখাতেই তর্নি আরার নামের মানুষটার প্রেমে পড়ে যায়। সেই প্রেমে পড়ার প্রথম অনুভূতি আজও অনুভব করে তর্নি। জুহা আর সুপ্তি মিটিমিটি হাসছে। আরান হ্যালো হ্যালো বলে যাচ্ছে। লজ্জায় তর্নি কিছু বলতে পারছে না। আচমকা লজ্জা এসে ঘিরে ধরেছে তর্নিকে। আরান বলল,

_মেঘবতী শুনতে পাচ্ছো? 
_জ্বি। 
_তোমাকে মেঘবতী ডাকার অধিকারটা দিবে তো আমায়?
তর্নি কিছু বলল না৷ আরান বলল,
_তুমি কি আমার এলোমেলো অগোছালো জীবনের সঙ্গী হবে মেঘবতী?

তর্নি ঠোঁট কামড়ে হাসলো৷ জুহা ও সুপ্তির দিকে তাকিয়ে দেখলো, ওরাও হাসছে। তর্নি কি বলবে কথা খুঁজে পাচ্ছে না। আরান বলল,

_হবে মেঘবতী? তর্নি ছোট করে "হুম" বলল। আরান আনন্দিত গলায় বলল, 
_সত্যিইইইই? 
আরানের খুশি দেখে হেসে উঠলো তর্নি। আরান স্নিগ্ধ গলায় বলল, 
_আচ্ছা মেঘবতী। তোমার এটা মনে হয়না যে আমি খারাপ বা আমার হ্যাবিট গুলো তোমার সাথে যায় না। সবার সাথে আমি রুড বিহেভ করি।
_আপনি মোটেও খারাপ নয় আমি জানি।
_কিভাবে জানো?
_আপনি মেয়েদের অনেক সম্মান করেন। নারীদের সম্মান করার গুনটা শুধু ভালো পুরুষদের মাঝেই থাকে।" 
তর্নির কথা জুহা ও সুপ্তি বড় বড় চোখ করে ঠোঁট উল্টে একজন আরেকজনের দিকে তাকালো৷ দুজনই টিটকারি মেরে ইশারায় মজা উড়ালো৷ আরান বলল,
_আচ্ছা চলো না আমরা ভিডিও কলে কথা বলি।
_আব,,আমার স্মার্ট ফোন নেই।
_তোমার হাতে মনে হয় আমি স্মার্ট ফোনই দেখেছিলাম।
_আসলে আমার ফ্রেন্ডদের ফোন মাঝে মাঝে হাতে নেই।
_অহ। ইটস ওকে, থাক। কাল একবার দেখা করবে?
_কাল?
_হুম।

তর্নি সুপ্তি ও জুহার দিকে তাকালো৷ আজ রাতের ট্রেনে যে যার বাড়িতে রওনা দিবে, সেখানে কাল দেখা করা কি করে সম্ভব? তর্নি বলল,

_আমি তো রাতের ট্রেনে চলে যাবো।
_তাহলে এখন আসো। নয়তো আমি আসি তোমার হোটেলের সামনে?

সুপ্তি ও জুহা দুহাতে না বুঝালো। এখানে আরার আসলে বিরাট সমস্যা হবে। আর এই সময়ে দেখা করাও সম্ভব নয়। তর্নি বলল,

_আমি এখনো লাগেজ গুছাইনি। সব জিনিসপত্র গুছাতে সময় লাগবে। সন্ধ্যা হতে তো বেশিক্ষণ নেই।
_অহ।
_আপনার বাবা মা ভালো আছেন?
_হুম। মা ভালো আছে,বাবা নেই।
_সরি। 

আরারের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দেয় তর্নি। ফোন রাখার পর তর্নি বুকে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করলো। অনুভূতি গুলো হাতুড়ি হয়ে হৃদপিণ্ডে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। সেই হাতুড়ি পেটানোর ধুকপুক শব্দে তর্নির সবার্ঙ্গ কাঁপছে। কানে লেপ্টে লেগে আছে আরারের মেঘবতী বলা ডাকটা। হঠাৎ সুপ্তি ও জুহা ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠলো। তর্নি চোখ মেলে চেয়ে দেখল জুহা আর সুপ্তি বিছানায় গড়াগড়ি খেয়ে হাসছে। তাঁরা যে তর্নিকে নিয়ে হাসছে সেটার কোনো সন্দেহ নেই। আজ ছয় মাস থেকে যাকে নিয়ে ভেবে এসেছে তর্নি তাকেই আজ ভালোবাসা হিসাবে পেয়েছে। তাঁর অনুভূতি গুলো কেমনে দমাবে সে? ফোনটা বিছানায় রাখতেই ফোনের মেসেজ টোন বেজে উঠলো। তিন বান্ধবীর তিনটি হাত এসে হামলে পড়লো ফোনের উপর। তর্নি টান দিয়ে ফোন এনে দেখলো আরানের নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে। ফোনের ছোট স্ক্রীনের উপর তিন বান্ধবীর চোখ তিনজোড়া চোখ রেখে মেসেজ পড়তে লাগলো,"

"_তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে মেঘবতী। তোমার এলোমেলো চুলগুলো একবার ছুঁয়ে দিতে মনটা ছটফট করছে। জানো, খুব হিংসা হয় যখন দেখি অবাধ্য বাতাস তোমার চুল গুলো ছুঁয়ে দিচ্ছে। আর তোমার নির্লজ্জ চুলগুলো লাজ লজ্জা ভুলে তাঁর ছোঁয়া পেয়ে সুখের আকাশে উড়ছে। আমারও তখন ইচ্ছে করে বাতাস হয়ে তোমার মাঝে মিশে যাই। যেন অন্য কেউ আমায় না দেখতে পারে। শুধু তুমি আমায় অনুভব করো। আর আমি ছুঁয়ে দিয়ে যাই তোর শরীরের প্রতিটি পশম। আমার ছোঁয়া পেয়ে তুমি কেঁপে উঠো ক্ষণে ক্ষণে। আচ্ছা মেঘবতী,তোমার নির্লজ্জ চুলগুলো একবার আমাকে ছুতে দিবে? আমি দেখতে চাই সে কতটা উড়ে আমার ছোঁয়া পেয়ে। তোমার ক্লিপগুলোর মতো একবার তোমার মেঘ কালো চুলো নাক ডুবাতে চাই। নেশাতুর হতে চাই তোমার চুলের সুগন্ধে। ঘোর লাগা গলায় বলতে চাই,মেঘবতী তুমি অনেক আবেদনময়ী। নির্লজ্জ চুলের অধিকার লজ্জাবতী তুমি তখন আমায় তোমার চুল থেকে ছাড়াতে চাইবে। আর আমি বেহায়া ক্লিপের মতো তোমার দু একটা চুল আঁকড়ে ধরে আটকে থাকতে চাই। দেবে কি আমায় সেই অধিকার মেঘবতী?"

মেসেজটা পড়ে সুপ্তি বুকে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে বলল,
_আয় হায় কি রোমান্টিক। আমার তো ইচ্ছে করছে তর্নি হয়ে আমি আরারের সাথে প্রেম করি।

জুহা বলল,
_ইয়ার এটা তো unbelievable। আরারের মতো ছেলে এত্তো কিউট কিউট কথা বলে? সম্পর্কের শুরুতেই এত্ত এত্ত রোমান্টিক কথাবার্তা?"জুহা বুকে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলল," হায় রাব্বা। আই ওয়ান্ট এ ভিলেন বয়ফ্রেন্ড।

_জুহা বিশ্বাস কর তোর পঞ্চাশতম ক্রাশের কসম। আরার যদি এখন এসে আমাকে বলে তর্নি বাদ সুপ্তি ডান আমি কিন্তু এক পায়ে দাঁড়িয়ে রাজি হয়ে যাবো।

তর্নি একটা বালিশ নিয়ে সুপ্তি ও জুহার উপর ছুঁড়ে মারলো। ওরা আবারও ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠলো। তর্নি ওয়াসরুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দরজায় পিঠ ঠেকে চোখ বন্ধ করে জুড়ে জুড়ে শ্বাস নিতে লাগলো। প্রথম প্রেমে পড়ার অনুভূতি হলো সর্বনাশা অনুভূতি। এই অনূভুতি একা একা হাসায়৷ লোক সমাজেও এই হাসি চলে আসে। সব কিছু তখন তেঁতু তেঁতু লাগে। আশেপাশের এতো মানুষকে বিরক্ত লাগে। শুধু ভালোবাসার মানুষটা নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে। লজ্জায় তর্নির গাল দুটো লাল হয়ে গেছে। চোখ মেলে থাকাতেও লজ্জা লাগছে তাঁর। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলের খোপাটা খুলে দিলো তর্নি। জুহা ও সুপ্তির জোরাজোরিতে বেশ কয়েকদিন চুল ছেড়ে ভার্সিটি গিয়েছে সে। নয়তো সব সময় বেনি করেই যেতো। আসলেই তর্নি এতো সুন্দর? নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলো সে। আরারের মেসেজের কথাগুলো মনে পড়তেই লজ্জা আরো দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। হেসে উঠে দুহাতে মুখ ঢেকে ধরলো সে।


তর্নিকে মেসেজ দিয়ে কিছুক্ষণ রিপ্লাইয়ের অপেক্ষা করলো আরান। কোনো রিপ্লাই আসলো না। হয়তো টাকা নাই সুপ্তির ফোনে এটা ভেবে ফোনটা রেখে দিলো আরান। সুপ্তি এভাবে তাকে একসেপ্ট করে নিবে কল্পনাই করেনি সে। ভেবেছিলো অন্য মেয়েদের মতো সুপ্তিও তাকে মাস্তান ছেলে ভেবে ফিরিয়ে দিবে। আরার মুচকি হাসতে হাসতে ওয়াসরুমে গেলো। এখনো ফ্রেশ হয়নি সে। আয়নায় নিজের মুখটা দেখতেই কানে বাজলো তাঁর মেঘবতীর বলা কথাটা,"আপনি মোটেও খারাপ নয় আমি জানি।" আচ্ছা সুপ্তির গলা এতো মিষ্টি কেন? আরার তাকে ভালোবাসে বলে কি এতো মিষ্টি তাঁর গলা? মুখে পানির ছিঁটা দিয়ে আয়নায় তাকালো আরান। ঠোঁটের কোণে হাসি লেগে আছে। এ কোন সর্বনাশ হলো তাঁর? একা একা হাসে কেন সে?
_______________________

 ফারদিন আর সুলভ একই বিভাগের ছেলে। তাই ভার্সিটির ছুটিতে তাঁদের একসাথেই যাওয়া আসা হয়। এবারও ব্যতিক্রম নেই। দুই বন্ধু এক সাথে মিলে আপন বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ট্রেন ছেড়ে দিবে। দৌড়ে দু বন্ধু এসে ট্রেনে উঠলো। তাঁদের সিট পড়েছে ৬নং কেবিনে। নিজেদের কেবিনে ঢুকে দেখলো এক বৃদ্ধা মহিলা ও একটা মেয়ে বসে আছে। মেয়েটা জানালার দিকে মুখ করে আছে তাই মুখটা দেখা যাচ্ছে না। দুই বন্ধু ব্যাগপত্র রেখে বসা মাত্রই চোখে পড়লো চশমা চোখে হলুদ ড্রেস পড়া সুপ্তির উপর। এতোক্ষণ জানালার বাইরে সে-ই তাকিয়ে ছিলো । সুলভ আর ফারদিন অবাক হয়ে একজন আরেকজনের দিকে তাকালো। ফারদিন চট করে উঠে গিয়ে সুপ্তি ও বৃদ্ধা মহিলার মাঝখানে বসলো। মহিলাটি ফারদিনের দিকে আগুন চোখে তাকালেন। এভাবে আচমকা কেউ বসায় সুপ্তিও কেঁপে উঠলো। পাশ ফিরে ফারদিনকে দেখে বিস্ময় ভরা চোখে তাকিয়ে বলল," 

_আরে আপনি?
_হ্যাঁ আপনিও যে?
_আমি তো রাজশাহী যাবো।
_সত্যি? আমরাও রাজশাহী যাচ্ছি।" সুপ্তি সামনের সিটে তাকিয়ে দেখলো সুলভ বসে আছে। অন্য সময় হলে এদের সাথে কথাই বলতো না। কিন্তু এখন তর্নি ও আরারের মাঝে একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। সেই সুবাদে তো কথা বলতেই হবে। যতই হোক তাঁদের দুলাভাইয়ের বন্ধু বলে কথা। সুপ্তি সুলভকে বলল,
_আরে সুবল ভাই ভালো আছেন?
সুলভ চট করে সোজা হয়ে বসে মাথার চুল ও কলার ঠিক করতে করতে বলল,
_হ্যাঁ ভালো। তবে সুবল না সুলভ।
_অহ সরি সঠিক জানিনা। এখন জেনে যাবো। আপনারা এখন আমাদের মেহমান হয়ে যাবেন।
"ফারদিন বলল,"
_হ্যাঁ ঠিকি বলেছেন ভাবি।"

ভাবি ডাক শুনে সুপ্তির মুখের হাসি উদাও হয়ে গেলো। আঁড়চোখে একবার সুলভের দিকে তাকালো। ফারদিন ভাবি বলল কেন? এই ছেলেটা তাকে ভালোবাসে নাকি? সুপ্তি কড়া চোখে ফারদিনের দিকে তাকিয়ে কিঞ্চিৎ ধারালো গলায় বলল,

_মুখ সামলে কথা বলবেন,ফাজলামি আমার একদম পছন্দ না। 
_ফাজলামি কই করলাম ভাবি? আপনি আমার বন্ধুর বউ হলে তো আপনি ভাবি লাগেন তাইনা?

সুপ্তি আবার তাকালো সুলভের দিকে। সুলভ তাঁদের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। সুপ্তি এবার কড়া করে বলল,

_আর একবার ভাবি বলে ডাকবেন তো এক্ষুনি আপনার বন্ধু আরার কে ফোন লাগিয়ে নালিশ করবো। তখন দেখবেন সে আপনাদের কি হাল করে। 
ফারদিন তাঁর বত্রিশপাটি দাঁত বের করে হেসে বলল,
_কিছুই করবে না। সে জানে বন্ধুর বউদের সবাই ভাবি ডাকে।

সুপ্তির রাগ এবার সপ্তম আকাশে চড়ে গেলো। অগ্নি তীক্ষ্ণ দুটো চোখ দিয়ে সুলভের দিকে তাকালো। ফারদিনকে দিয়ে ভাবি ডাকিয়ে সে বসে বসে মজা নিচ্ছে? দাঁতে দাঁত চেপে ফারদিনকে বলল,

_উঠেন।
ফারদিন না শুনার ভান করে সুপ্তির দিকে কান বাড়িয়ে বলল,"
_জ্বি বুঝিনি।

সুপ্তির ইচ্ছে করলো ফারদিনকে লাত্তি দিয়ে সিট থেকে তুলে দিতে৷ কিন্তু তর্নির মাত্র প্রেমটা শুরু হয়েছে। এখন যদি আরারের বন্ধুদের সাথে তাঁরা খারাপ বিহেভ করে তাহলে তো ওরা যেভাবেই হোক তর্নির উপর সে শোধ নিবে। বেচারি সাদামাটা তর্নিটা শুধু শুধু কষ্ট পাবে। তার থেকে ভালো সুপ্তি রাগ কন্ট্রোল করুক। সুপ্তি নিজেকে শান্ত করে জোরপূর্বক হেসে বলল, 

_আপনার সিটে যান ভাইয়া।
ফারদিন উঠে নিজের সিটে চলে গেলো। বৃদ্ধা মহিলাটি কেমন তীক্ষ্ণ চোখে তাঁদের দেখে যাচ্ছে। বুঝাই যাচ্ছে উনি মনে মনে সুপ্তি ফারদিন ও সুলভকে চোদ্দগুষ্টি তুলে গালি দিচ্ছেন। সুপ্তির অগ্নি চোখ দুটো আবারও সুলভকে খুন করে যাচ্ছে। সুলভ ফারদিনকে চাপা গলায় বলল,

_এই ফারদিন, ভাবি এভাবে আমার দিকে তাকায় কেন?" ফারদিন তাকিয়ে দেখলো সত্যি সত্যি সুপ্তি রাক্ষসী রূপে তাকিয়ে আছে। ফারদিন বলল,"তুই জুহাকে পছন্দ করিস, সেটা মনে হয় আরার বলে দিছে। 
_তাই বলে এভাবে তাকাবে ভাই? দেখ চোখ দুটো কেমন ডাইনির মতো লাগছে। যেন চশমা না থাকলে চোখ দুটো বেরিয়ে যেতো।

ওদের ফিসফিসানি দেখে সুপ্তি ধমক দিয়ে বলে উঠলো,
_ওই কি কানাকানি করেন?

ফারদিন আগের ন্যায় কান বারিয়ে বলল,
_কি বুঝিনি।
সুপ্তি দাঁতে দাঁত চেপে বলল, "
_আমার মনে হয় ভাইয়া আপনি কানে একটু কম শুনেন। বাসায় গিয়ে না আগে কানের ডাক্তার দেখাবেন। 
ফারদিন আগের মতোই বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হেসে বলল, 
_আমাদের এলাকায় না কানের ডাক্তার পাওয়া যায়না। এই সুলভ তোদের এলাকায় পাওয়া যায়?" সুলভ না সূচক মাথা নাড়ায়। ফারদিন বলে,"
_ভাবি আপনাদের এলাকায় পাওয়া যায়?" সুপ্তি আবার রাগান্বিত চোখে তাকায়। ফারদিনের চোখে চোখ পড়তেই হেসে বলে,"
_না দুর্দিন ভাইয়া পাওয়া যায়না।"
_আমার নাম ফারদিন, দুর্দিন না।
_আমি দুর্দিন বলিনি দূর্দিন বলেছি। দ ঊ কারে দূ র দূর। দূর্দিন।

ফারদিনের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। সুলভ ফারদিনের একটা হাতে ধরে শান্ত হওয়ার ইঙ্গিত দিলো৷ ফারদিন মুখে কিঞ্চিৎ হাসির রেখা টেনে বলল,

_বুঝতে পেরেছি মিস করল্লা।
_কিহ? আমি,,,,আমি করল্লা?

সুলভ ফারদিনকে বলল,
_ভাই করল্লা না অনেক তিতা। পেয়াজ বল পেয়াজের অনেক দাম।

সুপ্তি ব্যাগের উপর থাকা চকলেটটা সুলভের উপর ছুঁড়ে মেরে বলল,

_আপনার চৌদ্দগুস্টি পেয়াজ। নিজেদের নাম তো একেকটা ডাসবিন থেকে তুলে এনে রাখা হয়েছে। কারো নাম আরার কারো নাম দুর্দিন কারো নাম আবার সুলভ। সুলভ মানে কি জানেন? মূল্যহীন,তুচ্ছ। একজন তো পুরো দেশের নাম রেখে ফেলছে। আহা, ইরান। এর থেকে তো উগান্ডা নামটা ভালোই মানাতো। আপনাদের মতো ছেলেদের এসব ট্রেনে উঠতে দেয় কে বলেন তো? যত্তসব আজাইরা।"
ফারদিন এতোক্ষণ নিজেকে শান্ত করে রেখেছে আর পারলো না। সিট থেকে উঠে তেড়ে আসতে চায়। সুলভ কোমর জড়িয়ে ধরে আটকায়। ফারদিন রাগান্বিত গলায় বলে,"
_ওই কাকে আজাইরা ডাকলেন? আমরা আজাইরা?
সুপ্তি শীতল গলায় জবাব দেয়,"
_না মিস্টার দুর্দিন। আপনারা আজাইরা হবেন কেন? আপনারা নাম্বার ওয়ান খচ্চর।
_কিহ আমরা খচ্চর? আর দুর্দিন কে হ্যাঁ? নাম উচ্চারণ করতে পারেন না তো নাম ধরে ডাকেন কেন?
_রেগে যাচ্ছেন কেন, ভুল কি বললাম? আপনার নাম কি? fardin,, far মানে দূর। সেই হিসাবে আপনি হলেন দূর্দিন।

ফারদিন রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,
_আপনাকে যে কোন এঙ্গেল থেকে আমার বন্ধু পছন্দ করে সেটা আমি বুঝে উঠতে পারিনা। দেখেই না একদম ডাইনিদের মতো লাগে। চশমা ছাড়া চলতে পারে না কানা কোথাকার।
_আর আপনি কি হ্যাঁ? নাক মোটা বাদর কোথাকার।
_আমার নাক মোটা?
_শুধু নাক না আপনার মাথাটাও মোটা।

সুলভ ফারদিনকে চাপা গলায় বলল,
_আহ ফারদিন কি করছিস? আরার জানলে কিন্তু সমস্যা হবে।"
ফারদিন ঝাড়া দিয়ে সুলভের হাত ছাড়িয়ে বলল,
_হোক সমস্যা। এতো ভয় পাইনা আমি।" বলতে বলতে সুপ্তির ছুঁড়ে ফেলা চকলেটের উপর বসে পড়লো ফারদিন। এটা দেখেই সুপ্তি তৎক্ষণাৎ উঠে এসে টান দিয়ে ফারদিনকে বসা থেকে তুললো। ফারদিন রেগে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,"হোয়াট দ্যা হেল।" সুপ্তি চকলেট হাতে নিয়ে আবার জায়গা মতো বসে গেলো। সুপ্তির এমন কান্ডে বৃদ্ধা মহিলা থেকে শুরু করে তাঁরা দুই বন্ধু অবাক হয়ে গেলো। ফারদিন মিনমিন করে সুপ্তিকে বকা দিতে দিতে গিয়ে সিটে বসলো। সুপ্তি কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনতে লাগলো। এই ফারদিনের মতো মাথা মোটার সাথে ঝগড়া করার থেকে গান শুনাই ভালো।
_____________________

ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে আরার। আকাশের চাঁদটার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে সে। চাঁদে যেন সুপ্তির মুখটা ভেসে উঠছে বার বার। মনের গভীরে এক সুখের দোলা লাগছে। অজানা সুখ। এই সুখটা চিনেনা আরার। আজ ভালোবাসার শুরু হয়েছে তাঁর। এই নিয়ে চারবার তাঁর মেঘবতীর সাথে কথা হয়েছে। তবুও মনে হচ্ছে পিপাসা মিটেনি৷ সুপ্তি বলেছে সে তাঁর গ্রামের বাড়ি যাচ্ছে। আর কাল কথা হবে তাঁদের মাঝে। ট্রেনে থেকে কথা বলতে পারবে না বলে জানিয়েছে তাঁর মেঘবতী। আরারের ইচ্ছে করছে আবার তাঁর মেঘবতীর সেই নেশাভরা কণ্ঠটা শুনতে। একবার দেখার প্রবল ইচ্ছে মনের ঘরটা বার বার কাঁপিয়ে তুলছে। কিন্তু আফসোস। সুপ্তির অ্যান্ড্রয়েড ফোন নাই। নয়তো বলতো একটাবার ভিডিও কল দিতে। তাঁর মধুর কণ্ঠের একটা ভয়েস দিতে। আরান ফোন বের করে মেঘবতী নামে সেভ করা নাম্বারে মেসেজ দিলো, 

_"মেঘবতী তুমি কিন্তু আমার তখনের মেসেজের রিপ্লাই দাওনি। আমি অপেক্ষায় আছি।"

মেসেজটা সেন্ড করে পাঁচমিনিট ছাদে দাঁড়িয়ে থেকে নিচে গেলো আরার৷ তাঁর বোনরা বসার রুমে বসে টিভি দেখছে। আরার নিচে যেতে পা বাড়াতেই ভাইব্রেশনে ফোনটা কেঁপে উঠলো। মেঘবতী মেসেজ দিয়েছে। আরারের মলিন মুখে হাসি ফুটে উঠলো। ঠোঁট কামড়ে হেসে হেসে রুমে চলে গেলো। তাঁর এইভাবে রুমে যাওয়াটা চোখ আওড়ালো না তাঁর বোনদের। আরার ঘরে এসে মেসেজটা সিন করলো।

_"আমার নির্লজ্জ চুলগুলো আপনার হাতের ছোঁয়া পেতে বড্ড ছটফট করছে। ওরা আপনার হাতের ছোঁয়া পেয়ে লজ্জাবতী হয়ে নুয়ে পড়তে চায়৷ আপনার ঘোর লাগা গলার দু একটা লাগামহীন কথা শুনতে চাচ্ছে ওরাও। আপনি আসেন না একবার বাতাস হয়ে আমায় ছুঁয়ে দিতে। যেন সবার সামনে ছুঁয়ে দিলেও কেউ দেখেনা আপনায়। আমি চোখ বন্ধ করে আপনায় অনুভব করতে চাই। আমার সাথে সাথে আমার নির্লজ্জ বেহায়া চুলেও আপনায় লেপ্টে রাখতে চাই। নির্লজ্জ চুলের বাঁধনে আপনাকে বেঁধে রাখতে চাই। আপনার হাতের ছোঁয়ায় আমার খোপা বাঁধতে চাই। সেই খোপার মাঝে একটা বেলি ফুলের মালা চাই৷ আমার এতো চাওয়ার পরেও শুধু আপনাকে চাই।

চলবে,,,,,,,।
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#4
পর্ব:০৪


মুন্সি বাড়ির উঠুনের মাথায় দাঁড়িয়ে আছে তর্নি। টিনের চালের এক তলার একটা দালান ঘর। ছয় রুমের দালানটা দেখতে বড়সড় না হলেও অনেক সুন্দর। নিজের জন্ম ঘরটা দেখে কলিজা ঠান্ডা হয়ে গেলো তর্নির। কতদিন পরে বাড়ি আসলো সে। বাবা মাকে দেখার জন্য মনটা আঁকুপাঁকু করছিলো৷ আজ তাঁর বাবা মাকে দেখার সময়টা এলো। কাউকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। রাতে ফোন জানিয়ে দিয়েছে সে আসছে। তবুও কেউ তাঁর পথ চেয়ে দাঁড়িয়ে নেই। কে থাকবে? বোনদের তো বিয়ে হয়ে গেছে? মা মনে হয় কাজে আছে। 

তর্নি ঘরের দিকে পা বাড়ালো। দু এক কদম এগিয়ে যেতেই কানে ভেসে এলো চাপা কান্নার আওয়াজ। তর্নির বুঝতে দেরি হলোনা কে কাঁদছে বা কেন কাঁদছে। দৌড়ে চলে গেলো তাঁর মায়ের ঘরে। হ্যাঁ। সে যা ভেবেছিলো তাই-ই,তাঁর বাবা আতিকুর রহমান তাঁর মাকে মারছেন। তর্নি দৌড়ে গিয়ে তাঁর বাবার হাত ধরে আটকে মিনতি করে বলল, 

_বাবা ছেড়ে দাও। মাকে মাইরো না বাবা প্লিজ।" 

আতিকুর রহমান তর্নিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন। তর্নি গিয়ে খাটের সাথে ধাক্কা খায়। উনি আবার তর্নির মায়ের দিকে তেড়ে যান। তর্নি বাঁধা দিতে আসলে উনি তর্নিকে থাপ্পড় মারতে হাত উঠান। তর্নির মা তাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে কেঁদে বলে,

_মাইয়াটা মেলাদিন পরে আইজকা বাড়িতে আইছে৷ দয়া কইরা আমার মাইয়ারে মাইরেন না।

আতিকুর রহমান উনার টকটকে লাল চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে হুংকার দিয়ে বললেন,
_কেন মারুম না? তোর মাইয়াগুলাই তো সব নষ্টের মূল। আমার সব সম্পদ শেষ করে দিছে এই অলক্ষীরা। আমায় রাস্তার ফকির বানাইয়া দিছে তোর জারজ সন্তান গুলা।

জারজ সন্তান শুনে তর্নি রেগে গেলো। চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
_জুয়া খেলে খেলে জমিজামা যা ছিলো সব বিক্রি করে দিছো। পাঁচ হাজার দামের মদ না খেলে তোমার রাতে ঘুম আসেনা। এখন বলতেছো আমরা তোমার সম্পদ শেষ করে দিছি? আর জারজ সন্তান কাদের বলো তুমি? নিজের সন্তানদের জারজ বলতে লজ্জা করেনা?

আতিকুর রহমান তেড়ে আসেন। তর্নির মা বাঁধা দিয়ে বলেন,

_আল্লাহর দোহাই লাগে জোয়ান মাইয়ার গায়ে আর হাত তুইলেন না। 

আতিকুর রহমান উনাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে গিয়ে তর্নির গলা টিপে ধরে বলেন,

_তোরা সবগুলাই জারজ৷ আমি জন্ম দিলে সব গুলা পোলা হইতো তোরা হইতি না।"

বলেই তর্নিকে নিয়ে আলমারির সাথে চেপে ধরেন। তর্নির মা আতিকুর রহমানের থেকে তর্নিকে ছাড়াতে চান, কিন্তু উনার শক্তিতে কুলিয়ে উঠে না। আতিকুর রহমানের দুটো পায়ে ধরে মেয়ের জান ভিক্ষা চান। তবুও কাজ হয়না। তর্নির চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে আসে। চোখ দুটো যেন উল্টে যেতে চাচ্ছে। মাজেদা বেগম মেয়ের অবস্থা দেখে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে আতিকুর রহমানকে একটা ধাক্কা দেন। উনি গিয়ে ছিটকে পড়েন দরজার কাছে। তর্নি জোরে জোরে শ্বাস ফেলে কাশতে লাগে। আতিকুর রহমান উঠে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে একহাতে লুঙ্গি ধরে হাঁটুর উপর লুঙ্গি তুলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। এই ধাক্কার হিসাব তিনি পরে নিবেন। এখন উনাকে খেলায় যেতে হবে। নয়তো এই মা মেয়ে দুটোকে মেরে বস্তায় ভরে নদীতে ফেলে আসতেন। তর্নির পুরো শরীর কাঁপছে। গাল বেয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে লোনাজল। মাকে জড়িয়ে কেঁদে কেঁদে বলল,

_এতো পোড়া কপাল নিয়ে আল্লাহ আমাদের কেন জন্ম দুনিয়ায় দিলো মা? না আপুরা শান্তি মতো এখানে থাকতে পারলো না আমি পারি। আমাদের জন্মের পরপরই জ্যান্ত কবর দিলেনা কেন মা? মানুষ তাঁর মেয়েগুলোকে রাজকন্যা করে রাখে। আর আমরা তা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখি। আমরা এতো হতভাগী কেন মা?"

বলেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো তর্নি। মাজেদা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বললেন,

_কেন আইছস বাড়িতে? তোরে কইছিনা,আমি মইরা গেলে আইয়া আমারে দেইখা যাবি। এর আগে আইবি না।

তর্নি মায়ের বুক থেকে মাথা তুলে জল ভরা চোখে অবাক হয়ে তাকালো। এতোদিনে সে বাড়িতে এসেছে। উনিও তাকে এটা বলছেন? চোখ মুছে শক্ত গলায় বলল,

_আর আসবো না মা৷ এইবার গেলে আর আসবো না৷ যেদিন টাকার বান্ডিল এনে তোমাদের সামনে রাখতে পারবো। সেদিন আসবো।"

বলেই উঠে দরজার সামনে থেকে ব্যাগ নিয়ে নিজের ঘরে চলে আসলো তর্নি। মাকে এসব বলেই বা কি হবে? উনি তো নিজেই বিষজীবনের অধিকারি৷ সেই ছোট থেকে তর্নি দেখে আসছে। কোনো না কোনো কারণে তাঁর মায়ের গায়ে হাত তুলেন তাঁর বাবা৷ তর্নিরা পাঁচ বোন। সে সবার ছোট। ছেলের আশায় এতোগুলো মেয়ের জন্ম দিয়েছেন মাজেদা বেগম। বার বার মেয়ে জন্ম দেওয়ার কারণে স্বামীর কাছে অনেক মারধর খেতে হতো উনাকে। 

তর্নির লজ্জা লাগে। একজন নেশাখোর জুয়াখোর পুরুষকে নিজের বাবা বলে পরিচয় দিতে। টিউশনি করে নিজের লেখাপড়া থেকে শুরু করে নিজের যাবতীয় সব খরচ চালায়। কখনো মায়ের কাছে হাত পাত্তে পারেনা কারণ সে জানে, তাঁর মা তাঁকে না বলবেন না। কিন্তু অনেক কষ্ট করে তাকে একটা জিনিস দিবেন। সেটা তর্নি চায়না। তাঁর থেকে ভালো তর্নি কষ্ট করে নিজের খরচ নিজে চালাক।

_____________

ট্রেন থেমেছে কিছুক্ষণ হলো। অনেকেই নেমে গেছে। কেউ কেউ নামছে তো কেউ নামার জন্য ব্যাগপত্র বের করছে। ফারদিন নিজের ব্যাগ নিচে নামিয়ে সুপ্তির দিকে তাকিয়ে দেখলো এখনো সে ঘুমিয়ে আছে। ঘন পাপড়ি চোখের মেয়েটাকে ঘুমন্ত অবস্থায় অনেক সুন্দর লাগছে। কয়েকটা অগোছালো চুল কপালের সাথে লেপ্টে গেছে ঘামের কারণে৷ সুলভ ফারদিনকে কিছুক্ষণ আগে বলেছে সুপ্তিকে জাগানোর জন্য ফারদিন জাগায় নি। কিন্তু এখন জাগানোটা জরুরি মনে হচ্ছে। ট্রেনের সবাই নেমে যাচ্ছে। সুপ্তিকে এভাবে ঘুমন্ত অবস্থায় রেখে যাওয়া ঠিক হবে না। পরে যদি কোনো দূর্ঘটনা ঘটে আরারকে কি জবাব দিবে তাঁরা? ফারদিন সুপ্তিকে দু-একবার ডাক দিলো সুপ্তি শুনলো না। সুপ্তিকে জাগাতে হাত বাড়িয়েও পিছিয়ে নিলো। ঘুমন্ত অবস্থায় কোনো নারীকে ছোঁয়া ঠিক নয়। তাও এটা আরারের গার্লফ্রেন্ড। ফারদিন সুপ্তির একগুচ্ছ চুলে ধরে টান দিলো। সাথে সাথে সুপ্তি লাফিয়ে উঠলো। তাকিয়ে যখন দেখলো ফারদিন তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে আছে সুপ্তি দু এক না ভেবেই তাঁর পাশ থেকে পানির বোতল নিয়ে ফারদিনের উপর ছুঁড়ে মারলো। বোতলটা পড়লো ফারদিনের নাকের উপর। সে নাক ধরে অগ্নিচোখে তাকালো সুপ্তির দিকে। সুপ্তির কান্ডে সুলভ বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। ফারদিন চেঁচিয়ে বলল, 

_ওই আপনি ছুঁড়া ছুঁড়ি ছাড়া কিছু জানেন না তাইনা? ম্যানারলেস গার্ল।

সুপ্তি ফারদিনের থেকে আরো গলা উঁচিয়ে বলল,
_আমি ম্যানারলেস? আপনার মাঝে যখন এতোই ম্যানার্স তাহলে ঘুমন্ত একটা মেয়ের চুল ধরে টান দেন কিভাবে?

_আমি চুল ধরে টান দিছি অন্যকেউ হলে গায়ে ছুঁয়ে দিতো। "

বলতে বলতে নাক থেকে হাত সরায় ফারদিন। তাঁর নাকের ডগা লাল হয়ে আছে। লাল নাকের কারণে ফেসটা কেমন বিশ্রী রূপ নিয়েছে। ফারদিনের নাকে চোখ পড়তেই ফিক করে হেসে দিলো সুপ্তি। হাসি দেখে ফারদিন আরো রেগে গেলো। বোতলটা তুলে সুপ্তি কিছু বুঝে উঠার আগেই বোতলের সব পানি ঢেলে দিলো সুপ্তির মাথায়। সুলভ ফারদিনকে টেনে নিয়ে ট্রেন থেকে নেমে আসে। সুপ্তি তখনো শকডের উপর দিয়ে যাচ্ছিলো। সুলভ ফারদিনকে নিয়ে বাইরে আসতেই ফারদিন সুলভের হাত ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে বলল,

_আমি বুঝিনা এই অসভ্য মেয়েটাকে আরার কিভাবে পছন্দ করেছে। এই মেয়ের মধ্যে ভালো লাগার মতো কিছু আছে? ঝগড়াটে মহিলাদের মতো সারাক্ষণ ঝগড়ার মুডে থাকে। আমি এক্ষুনি আরারকে বলে দিবো এই মেয়ের সব কর্মকাণ্ডের কথা।"

 বলতে বলতে ফোন বের করতে লাগে ফারদিন। সুলভ আরারকে থামিয়ে বলে,

_ফারদিন মাথা ঠান্ডা কর। কি বলবি তুই আরারকে? আরার যদি বলে তুই কেন সুপ্তির চুল ধরে টেনেছিস, তখন কি বলবি? যদি বলে কেন ভিজিয়ে দিয়েছিস তখন কি বলবি? আর এখন সুপ্তির নামে কিছু বলতে যাবি তো তুই আরারের দোষমন হবি৷ ভুলে যাবিনা নতুন প্রেম সাংঘাতিক। আগে দেখ সুপ্তি আরারকে কি বলে তারপর না হয় আমরা বলবো এখন এই ট্রেনের বিষয়টা আরারকে না বলাই ভালো।

_বিরক্ত লাগছে এই মেয়ের কথা আর বলবি না চল। তুই দেখিস আরার যদি এই মেয়েকে বিয়ে করে, আমি ওর বিয়েতেই যাবো না।

______________

ছাদের ডান পাশে রাখা দোলনাটায় বসে আছে আরান। তাঁর মনটা ছটফট করছে তাঁর মেঘবতীর জন্য। দুপুর হয়ে গেছে এখনো সুপ্তি একটা কল দেয়নি। সুপ্তির ফোনটাও বন্ধ দেখাচ্ছে। সে কি বাসায় পৌঁছেনি? সুপ্তির চিন্তায় কিছু খেতেও পারছে না আরার। দুপুর দুটো বাজে এখনো কিছু মুখে নেয়নি সে। যতক্ষণ না তাঁর মেঘবতীর সাথে কথা হবে ততক্ষণ কিছুই খাবে না সে। খেতেই পারবে না। সেই মায়াজড়ানো কণ্ঠস্বর একবার শুনতে চায় সে। কিন্তু মায়াবতীর যে ফোনটা বন্ধ। আশু প্লেটে করে চিড়া ভাজা নিয়ে এসে আরারের সামনে বসে খাচ্ছে। আরার অন্যদিনের মতো ঝাপটে এনে খাবে কি একবার তাকাচ্ছেও না। ভাইয়ের এমন উদ্বিগ্ন চেহারা পূর্বে কখনো দেখেছে বলে মনে হচ্ছে না আশুর। প্লেটটা রেখে এসে আরারের পিছনে দাঁড়ালো৷ আরারের চুলে হাত ডুবিয়ে মুঠিবদ্ধ করলো৷ বোনের কোমল হাতের ছোঁয়ায় চোখ বন্ধ করে দিলো আরান। আশু এভাবে ভাইয়ের চুলে হাত ডুবিয়ে ডুবিয়ে আহ্লাদী গলায় বলল,

_ভাই, জানো তোমার মুখটা মলিন দেখলে তোমার বোনের খুব কান্না পায়।

_বোনের নয় বোনদের।" সিঁড়ির দিক থেকে আরু আনুর কন্ঠস্বর ভেসে আসতেই সেদিকে তাকালো আশু ও আরান। আরু ও আনু দৌড়ে এসে আরানের দুপাশে বসে আরানের গলা জড়িয়ে ধরে গলায় মুখ লুকালো। আশু বলল,

_বলনা ভাই কি হয়েছে তোমার?
আনু আরানের একটা হাত ধরে বলল,
_হ্যাঁ ভাইয়া বলনা কি হইছে? তুমি সেই সকাল থেকে কিচ্ছু খাও নি।

_কিছু হয়নি রে। এমনি ভালো লাগছে না।
আরু আরানের গালে হাত রেখে ব্যথিত গলায় বলল,
_মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে। কিছু তো একটা হয়েছে ভাইয়া। বলোনা কি হইছে?

আরুর কথা শেষ হতেই আরারের ফোন বেজে উঠলো৷ তড়িঘড়ি করে ফোনটা বের করলো আরান। ফোনের স্ক্রীনে স্পষ্ট ভাসছে মেঘবতী নামটা। মূহুর্তেই আরানের মুখটা খুশিতে ঝলমলে উঠলো। এইতো তাঁর মেঘবতী কল দিয়েছে।

চলবে,,,,,,,।

 
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#5
পর্ব:০৫


একমাস পর,,,,,

সময়ের সুতোর টানে চলে গেলো একটি মাস। প্রতিটা মিনিটে মিনিটে ভালোবাসার মানুষের মুখটা দেখার পিপাসা নিয়ে এই একটা মাস কাটিয়েছে তর্নি ও আরার। অবশেষে সেই কাঙ্ক্ষিত দিনটি চলে এলো। কাল তাঁরা দুজন দুজনকে চোখ ভরে দেখবে। ঘুম থেকে উঠেই ব্যাগপত্র গুছাতে লাগলো তর্নি। পঞ্চগড় থেকে ঢাকা যাওয়া আসাও মুখের কথা নয়। ১২ঘন্টা সময় লাগে আসতে যেতে। সুপ্তি আর জুহা ঢাকা চলে গেছে। রাজশাহী আর কুমিল্লা থেকে তো যাওয়া আসা মুখের কথা বলা যায়। ব্যাগপত্র গুছিয়ে তর্নি কালো শাড়িটা বের করে রাখলো। এটা পড়ে যাবে সে। আরার জেদ ধরেছে কালো শাড়ি আর কালো চুড়ি পরে যেন তর্নি যায়। স্টেশন থেকে সে নিতে আসবে। 

তর্নির হাতে টাকা ছিলো না। তাই কাল তাঁর মায়ের থেকে টাকা চেয়ে এনে শাড়িটা কিনেছে। রাতে তর্নির বাবা বাড়ি এসে তর্নির মাকে মেরেছেন। মারার কারণ ছিলো উনার মানিব্যাগ থেকে এক হাজার টাকা নাকি তর্নির মা না বলে নিয়ে গেছেন। তর্নির বুঝতে কষ্ট হলোনা এই টাকাটাই উনি তর্নিকে দিয়েছেন৷ ভেবেছিলো মায়ের হাতে টাকা আছে তাই চেয়েছিলো, কিন্তু উনি যে তর্নির চাওয়া পূরণেত জন্য জেনে শুনে সাপের গর্তে হাত দিবেন জানতো না সে। জানলে কখনোই টাকা চাইতো না।

রাগে তর্নির মন চেয়েছিলো শাড়িটা আবার দোকানদারকে ফেরত দিয়ে টাকা এনে উনার মুখের উপর ছুঁড়ে ফেলতে। কিন্তু আরারের আবদার এটা। আরার প্রতিদিন বলে যেদিন তর্নি ঢাকা যাবে সেদিন যেন কালো রংয়ের শাড়ী পড়ে যায়। হাত ভরে যেন কালো রংয়ের চুড়ি থাকে। শাড়ি চুড়ি কিনার জন্য তর্নির হাতে টাকা ছিলো না। টুকটাক যা টাকা ছিলো সব ফোনে ফ্লেক্সি দিয়ে দিয়ে শেষ হয়ে গেছে। রোজ রোজ আরারের সাথে মেসেজে কথা বলা ফোনে টাকা তো লাগবেই। আরার বলেছিলো অনেকবার ফ্লেক্সি দিতে তর্নি না বলেছে। মায়ের থেকে এক হাজার টাকা নিয়ে ৮শ টাকার একটা শাড়ি আর ৮০টাকার দু'ডজন চুড়ি কিনেছে। সবই কম দামের। যে টাকা দিয়ে বড়লোকের ঘর থেকে বের হওয়া খারাপ দেখায় সে টাকায় গরীবের একদফা শপিং হয়ে যায়। 

সব গুছানো শেষে ফোনটা বের করে আরারকে কল দিলো তর্নি। যত দিন যাচ্ছে আরারের জন্য পাগল হচ্ছে সে। একমিনিট আরারে গলা না শুনলে তাঁর দম বন্ধ হয়ে আসে।ভালোবাসার অতল সাগরে ডুবে যাচ্ছে সে। ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৫-১৬ ঘন্টা চলে যায় আরারের সাথে ফোনে কথা বলে বা চ্যাট করে। সারাদিন ঘরে বসে থেকে আরারের সাথে কথা বলা ছাড়া কোনো কাজ নেই তর্নির। সে তাঁর মাকেও জানিয়ে দিয়েছে তাঁদের সম্পর্কের কথা। উনি তর্নিকে বলেছেন এসব ছেলে ভালো নয়। আজ ভালোবাসি বললে কাল বলবে ভালোবাসি না। এসব সম্পর্ক রাখবি না। তর্নি শুনেনি তাঁর মায়ের কথা। সে তো জানে আরার কেমন ছেলে। তর্নি আরারকে আবার ফোন দিলো। আরার ফোন কেটে মেসেজ দিলো,

_মেঘবতী রেস্টুরেন্টে আছি। সুলভ ও ফারদিন পাশে। পরে ফোন দিবো।

 তর্নি রিপ্লাই দিলো
_আচ্ছা। আমি দুপুরে বাড়ি থেকে বের হবো। রাতের ট্রেনে আসবো। পৌঁছাতে কাল সকাল হবে।

 আরার। রিপ্লাই দিলো 

_তাহলে এখন একটা ঘুম দাও। আমি সকালে স্টেশনে এসে বসে থাকবো। আমার মেঘবতীকে দেখতে। শাড়ি পরে আসবা কিন্তু নয়তো মাইর দিবো।" 

মেসেজটা পড়ে তর্নি হেসে উঠলো। ফোনটা রেখে দিয়ে খেতে গিয়েও ফিরে আসলো৷ আরারের গলা না শুনা পর্যন্ত গলা দিয়ে খাবার নামবে না তাঁর। আবার ফোন হাতে নিয়ে আরারকে মেসেজ দিলো,,,

_এই যে লাগানহীন ভদ্রলোক শুনেন না,স্টেশন থেকে আপনি আমাকে নিতে আসবেন এটা ভেবেই না আমার কেমন জানি লাগছে। আমি খুব নার্ভাসফিল করছি। হাত পা কাঁপছে সাথে হৃদপিণ্ডটাও। আপনারও কি এমন হচ্ছে?

মেসেজ সেন্ড করে তর্নি ফোনটা বুকে রেখে লম্বা একটা শ্বাস নিলো। আরার শব্দটাও তাকে এলোমেলো করে দেয়। তাহলে এই মানুষটা চোখে সামনে থাকলে নিজেকে গুছাবে কেমনে সে? মিনিট দুএক পরে ফোনে মেসেজ এলো। তর্নি তৎক্ষণাৎ মেসেজ সিন করে,

_কণ্ঠরাণী মেঘবতী। তুমি জানো আমার কেমন লাগছে? কখনো কি আমার কথা ভেবে তোমার শিরায় শিরায় গরম রক্ত স্রোত অথবা শীতল স্রোতের অনুভব করেছো তুমি? আমি করেছি। এখনো করছি৷ জানো তোমার কণ্ঠস্বর শুনলে আমার নিঃশ্বাস ভারি হয়ে আসে। হৃদপিণ্ড দ্রুত গতিতে চলে। কাল এই কণ্ঠ রাণীর সাথে আমার দেখা হবে। আমি আমার মেঘবতীকে ছুঁয়ে দিবো। নিজ হাতে খাইয়ে দিবো। এসব ভাবতেই অনূভুতির চাদর আমাকে মুড়িয়ে নিচ্ছে। আচ্ছা মেঘবতী, তোমাকে ছুঁয়ে দিলে কি তুমি লজ্জায় এসে আমার বুকে মুখ লুকাবে? নাকি চোখ বন্ধ করে আমার ছোঁয়া অনুভব করবে? আচ্ছা তোমাকে ছুঁয়ে দেওয়ার পর আমি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কোনো অঘটন ঘটাবো না তো? অথবা তুমি আমার বুকে মাথা রাখলে অতিদ্রুত হৃদস্পন্দনে আমি হার্টঅ্যাট্যাক করবো না তো?

মেসেজের শেষ কথাটা পড়ে তর্নি হেসে উঠলো। তারপর লিখলো,

 _আপনার বুকে মাথা রেখে আমি আপনার হৃদস্পন্দন গুনতে চাই। দেখতে চাই আপনার হৃদ কি আমার হৃদের থেকে বেশি দৌড়ায়। এটাও দেখতে চাই আপনার নাম শুনে যেমন শিহরণে আমি কেঁপে উঠি। তেমনি আপনার ছোঁয়াও আমায় কাঁপিয়ে তুলে কিনা।

তর্নির মেসেজ পরে আরান মিটিমিটি হাসতে লাগলো। তাঁর হাসি দেখে ফারদিন সুলভকে কনুই মেরে আরারের দিকে ইশারা করলো। সুলভ ফারদিনকে উঠে যাওয়ার ইশারা দিলো। তাঁরা গলা খাঁকারি দিয়ে উঠে গেলো। আরারের সেদিকে খেয়াল নেই সে মেসেজ লিখছে,

_মেঘবতী! তোমার মায়াবী চোখ দুটো একবার আকাশে মেলে দাওনা। দেখো, আকাশটা আজ মেঘে ভরে গেছে। তুমি আসবে বলে কি তাঁরা খুশিতে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে, বৃষ্টি হয়ে তোমায় স্বাগতম জানাতে? তাহলে আসুক না তাঁরা। একটা বৃষ্টির দিন হোক না আমাদের। কালো শাড়ি কালো চুড়ি পরা তোমাকে মেঘে ভিজিয়ে জবুথবু করে দিক। তোমার অঙ্গে লেপ্টে যাক ভেজা শাড়ী৷ অঙ্গ ছুঁয়ে বৃষ্টিগুলো বেয়ে পড়ুক। তোমার ভেজা চুলে নাক ডুবিয়ে হারিয়ে যাই আমি মাতাল হয়ে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নির্লজ্জের মতো কান্ড করি দু একবার। তুমি খুব করে আমাকে শাসন করো৷ আমি অবাধ্য হই বার বার।

মেসেজটা পড়ে তর্নির শ্বাস যেন আটকে আসছে। অনুভূতি গুলো বুকে ঘূর্নিঝড় তুলে যাচ্ছে। আরারের প্রেম মাখানো কথা গুলো শুনলে এমনই হয় তর্নির। ইচ্চে করে আরারের বুকে মাথা রেখে খুশিতে কেঁদে দিক। তর্নি ছোট করে মেসেজ দিলো"

_মিস্টার লাগামহীন ভদ্রলোক, আপনি সত্যিই একটা নির্লজ্জ।

 তর্নির মেসেজ পড়ে কিঞ্চিৎ শব্দ করে হেসে উঠলো আরার। তারপর রিপ্লাই দিলো

_লাগামহীনতার আর নির্লজ্জতার দেখলে কি? সব তো লজ্জা ভাঙাভাঙির রাতে হবে। তখন দেখবো তোমার লজ্জাটাও কই যায়।

_উঁহু আমাদের ফুলসজ্জায় কোনো লজ্জা ভাঙাভাঙি হবে না। আমাদের ফুলসজ্জা হবে সবার থেকে আলাদা। মাথার উপর থাকবে একটা বিশাল আকাশ। সেই আকাশের ঠিক মাঝখানে থাকবে এক ফালি চাঁদ। চাঁদের চারপাশে থাকবে লক্ষ লক্ষ ঝলমলে তারা। রাস্তার আইলেনের উপর বসে থাকবো আমরা দুজন। লাল বেনারসি পরে থাকবো আমি। আপনার কাঁধে মাথা রেখে দেখবো ব্যস্ত শহরের তারা ভরা আকাশ৷ আর আপনার ঘুম পেলে আমার কোলে মাথা রেখে আকাশের তারা গুনবেন আপনি। আপনার অগোছালো চুলে হাত ভুলিয়ে দিলে পরম আয়েশে আমার কোমর জড়িয়ে ধরে দু'একটা ছোটখাটো বেয়াদবি করবেন আপনি। আপনার ভারি নিঃশ্বাসের ভারিতে বেয়াদব হবো আমিও। আচ্ছা আমি কেন আপনার মতো কথা বলছি? তবে কি আপনার প্রভাবটা আমার উপর পড়েছে? 

মেসেজটা সেন্ড করার অনেক্ষণ পরেও আরারের কোনো রিপ্লাই এলো না। তর্নি ফোনটা রেখে দিলো৷ বিদ্যুৎ চলে গেছে চার্জও তেমন নাই। সব চার্জ শেষ করে দিলে আরারের সাথে কথা বলবে কেমনে?

____________

অবাকের সপ্তম আকাশে দাঁড়িয়ে আছে আরার। তাঁর চোখের সামনে ফারদিন ও সুপ্তি তুমুলঝগড়া করে যাচ্ছে। একজন আরেকজনের দিকে বার বার তেড়ে যাচ্ছে। সুলভ ও জুহা ওদের আটকাচ্ছে। সুপ্তির সাথে মেসেজে কথা বলা কালীন বাইরে অনেক চিল্লাচিল্লি শুনে আরার বাইরে এসেছিলো সে। এসে এই দৃশ্যটা দেখে মাথায় বাজ পড়েছে তাঁর। সুপ্তি বলল সে আজ আসবে তাঁর বন্ধুরা কাল চলে এসেছে অথচ সুপ্তি কিনা অলরেডি চলে এসেছে? তারমানে আরানকে সে মিথ্যা বলল? আরার এগিয়ে ওদের সামনে আসতেই ওরা ঝগড়া থামিয়ে দিলো। চারদিকে অনেক মানুষজন। আরার সবাইকে নিয়ে অন্যদিকে গেলো। একটা নিরিবিলি জায়গায় নিয়ে যেতেই ফারদিন আরারকে বলল,

_ভাই তোর এই মাথা মোটা গার্লফ্রেন্ডকে তুই সামলা। আমার কোনো রুচি নাই আলাদা ভাবে আড্ডা দেওয়ার। আমি যাচ্ছি।

সুপ্তি চেঁচিয়ে উঠে বলল,
_ওহ হ্যালো মিস্টার দুর্দিন। কাকে মাথা মোটা বলছেন? মাথা মোটা হলেন আপনি? আর আমি উনার গার্লফ্রেন্ড নই শালি লাগি। ওকে?

আরার এমনিতেই সুপ্তির উপর রেগে গেছিলো এখন শালি শুনে আরো রেগে গেলো। তেড়ে এসে সুপ্তির হাত ধরে বলল,

_ওই তুমি কি বলছো এসব? আর তুমি না বললে তুমি আজ ঢাকা আসবে। মিথ্যে বললে কেন?

সুপ্তি অবাক হয়ে বলল,
_আরে জিজু আপনার সাথে তো আমার কথাই হয়নি। 

_কাকে জিজু ডাকছো তুমি? আমি তোমার জিজু লাগি?

জুহা এসব দেখতে দেখতে বলল,

_এক মিনিট। আমার না মাথায় কিছু ঢুকছে না। ও আপনাকে জিজু ডাকলে সমস্যা কি ভাইয়া? আর ফারদিন ভাইয়া, আপনিই বা কেন এটা বললেন যে সুপ্তি উনার গার্লফ্রেন্ড? আমাকে কেউ একটু বুঝিয়ে বলুন প্লিজ।

সুলভ এগিয়ে এসে জু্হাকে বলল,

_আমি বুঝাচ্ছি। আরার মিস করল্লা ভাবির সাথে,,,,,,"সুপ্তি বড় বড় চোখ করে সুলভের দিকে তাকালো৷ সুলভ শুকনো এক ঢোক গিলে গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,"আরার সুপ্তির সাথে প্রেম করলে তো সুপ্তি আরারের গার্লফ্রেন্ডই হবে তাইনা?

সুলভের কথায় সুপ্তি ও তর্নি বড়সড় একটা ধাক্কা খেলো। সুপ্তি ফারদিনের দিকে তাকালো। ফারদিনের বিরক্তি চোখ দুটো সুপ্তিকে লবণ মরিচের সাথে পিষে দিচ্ছে। সুপ্তি বুঝতে পারলো ফারদিন কেন সেদিন ভাবি ভাবি ডেকেছিলো। কিন্তু ওরা এটা কেন ভাবে? ওরা কি জানেনা আরার তর্নির সাথে প্রেম করে? জুহা বলল,

_আপনাদের কোথাও ভুল হচ্ছে ভাইয়া৷ আরার ভাইয়া সুপ্তির সাথে নয়, তর্নির সাথে প্রেম করেন।

জুহার কথাটা যেন বিকট আওয়াজে চারদিকে প্রতিধ্বনি তুললো। আরার সুপ্তিকে বলল,"

_ওওওও এসব কি বলছে সুপ্তি?

সুপ্তি সহজ গলায় বলল,
_তাঁর আগে আপনারা আমাকে বুঝান আপনারা কি বলছেন? আরার দ্রুত নিজের ফোন বের করে মেসেজ দেখিয়ে বলল,

_কি বলি বুঝতে পারো না? কেন ফাজলামো করছো সুপ্তি? এ এ এই দেখো তুমি আমার সাথে চ্যাট করেছো। এই দেখো তুমি কত কত মেসেজ দিয়েছো।

_এটাই তো তর্নি। 

_দেখো মেঘবতী একদম মজা করবে না। এটা তুমি আমি জানি। কেন শুধু শুধু আমাকে কষ্ট দিতে এসব বলছো? 

জুহা এগিয়ে এসে বলল,

_এক মিনিট আরার ভাইয়া। আমার মনে হয় কোথাও অনেক বড়সড় ভুল হচ্ছে। আপনারা লেটারটা দিয়েছিলেন কাকে?

সুলভ বলল,
_ও তো সুপ্তিকেই লেটার দিয়েছিল।

_কিন্তু ওই পিচ্চি তো তর্নিকে লেটার দিয়েছিলো।

আরার, সুলভ ও ফারদিন এক সাথে "হোয়াট" বলে উঠলো। সুলভ বলল,
_ আরার তো বলে দিয়েছিল নীল ড্রেস পরা চশমা চোখে মেয়েটাকে লেটার দিতে। যেটা সুপ্তি ছিলো। তোমাদের ফ্রেন্ডের মাঝে তো আর কেউ চশমা পরে না তাহলে সব এলোমেলো হয় কেমনে?

সুপ্তি ও তর্নি আরেকদফা শকড হলো। যেদিন পিচ্চিটা লেটার দিয়েছিল সেদিন তো তর্নি মিনিট কয়েকের জন্য সুপ্তির চশমা চোখে দিয়েছিলো। তাহলে কি আরার সুপ্তিকে ভালোবাসে তর্নিকে নয়? 

আরার ধপ করে মাটিতে বসে গেলো। এতদিন তাহলে সে মিথ্যে সুখ অনুভব করেছে? সব মিথ্যে ছিলো? এতো খুশি,এত ভালোবাসা সব মিথ্যে? ফারদিন সুলভ কারও মুখে কোনো কথা নেই। সুপ্তি ও জুহা একদম পাথর হয়ে গেছে। মাত্র শুনা কথাগুলো যেন মানুষকে পাথর করে দেওয়ার কোনো মন্ত্র। যা শুনে তাঁরা পাথর হয়ে গেছে৷ হঠাৎ আরার বসা থেকে উঠে সুপ্তির হাত ধরে বলল,

_সুপ্তি। দেখো আমি তর্নি টর্নি কাউকে চিনিনা। আমি তো তোমাকে চেয়েছি সুপ্তি। তুমি আমার সেই মেঘবতী যাকে আমি মনের গভীর থেকে অনুভব করি। 

বলতে বলতে চোখ ভিজে গেলো আরারের। ফারদিন আরারের কাঁধে হাত দিয়ে বলল,

_আরার বাদ দে। যা হওয়ার হয়ে গেছে। 

_কি বাদ দিবো? আমি ওকে ভালোবাসি। সাতটা মাস ধরে ভালোবাসি ওকে আমি।"
 
আরার সুপ্তির সামনে হাঁটু গেড়ে বসে হাত জোর করে বলল, 

_সুপ্তি বিশ্বাস করো আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তর্নি মেয়েটাকে আমি ভালো করে চিনিও না। আমি তোমাকে চাই সুপ্তি।

সুপ্তি ধরা গলায় জুহার হাত ধরে বলল,
_জুহা চল।

সুপ্তি জুহাকে নিয়ে চলে গেলো। আরার ওখানেই বসে থাকলো অনূভুতিহীন দুটো চোখে। 

সেদিন ফারদিন আরারকে তাঁর বাসায় নিয়ে গেলো। আরার একদম এলোমেলো হয়ে গেছে তাকে এই অবস্থায় বাসায় পাঠালে আরারের মা বোন কেঁদেকেটে বন্যা বানিয়ে দিবে। রাত দুটো হয়ে যায় আরার কিছুই খায়নি৷ মেঘবতী নামে সেভ করা নাম্বার থেকে একেরপর এক কল মেসেজ আসছে রাগে আরার ফোন বন্ধ করে দিলো। সুপ্তিকে ভালোবাসে সে সুপ্তি ছাড়া অন্য-কোনো মেয়েকে নিয়ে কেমনে ভাব্বে? সুলভ আরারের কাঁধে হাত দিয়ে বলল,

_আসলে ফারদিন ঠিকই বলে আমার বুদ্ধিতে কখনো কিছু করা উচিত নয়৷ আমি সেদিন এই বুদ্ধি না দিলে আজ এমনটা হতো না।

আরার সুলভের দু'হাত ধরে মিনতি করে বলল,

_সুলভ। একটাবার সুপ্তিকে বুঝিয়ে বলনা প্লিজ। এই একটা মাস ওকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে আমি আরো বেশি ভালোবেসে ফেলেছি ওকে। আমি মরে যাচ্ছি ওকে ছাড়া। একটাবার বলনা ও আমাকে মেনে নিতে।

ফারদিন রাগ করে এসে বলল,
_আরার তুই কি পাগল হয়েছিস? ওই মেয়েটার কথা একবার ভাব।

_কি ভাব্ব আমি? ওই মেয়েকে তো ভালোবাসি না আমি৷ এখানে একটা মিস্টেক হয়ে গেছে এটা বুঝালে কেন বুঝবে না ও?

আরারকে অনেক বুঝানোর পরেও বুঝাতে পারলো না ফারদিন বা সুলভ সারাটা রাত কেটে গেলো কারো চোখে ঘুম নেই। সকালে ঘুম থেকে উঠেই আরার সুপ্তির হোটেলে চলে যায়৷ দারোয়ান আরারকে অনেক ধাক্কাধাক্কি করেও সরাতে পারেনি। পরিস্থিতি বিগড়ে যাওয়ার আগেই সুপ্তি নিচে চলে আসলো। আরারের হাত ধরে টেনে তাকে হোটেল থেকে দূরে নিয়ে আসে। তারপর দু-হাত জোর করে বলে,

_দয়া করে আমার আশেপাশে আসবেন না প্লিজ। যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। সব কিছু স্বপ্ন ভেবে ভুলে যান।

বলেই সুপ্তি চলে যেতে পা বাড়ালো। আরার খপ করে সুপ্তির হাত ধরে ফেলল। তারপর কান্নাজড়িত গলায় বলল,
_আমি তোমায় ভালোবাসি সুপ্তি। তোমাকে নিয়ে আমার এতো এতো স্বপ্ন এতো এতো অনুভূতি এগুলো মিথ্যে হতে পারে না। এই একটা মাস আমি স্বপ্ন ভেবে ভুলে যেতে পারিনা।

_ক্ষমা করবেন আমাকে। যা হয়ে গেছে একটা এক্সিডেন্ট বলে ভুলে যান। হাত ছাড়ুন।

_এটা তো সত্যিই এক্সিডেন্ট সুপ্তি। এটা ভালোবাসা নয়। আমি তোমাকে ভালোবাসি। এতদিন আমি কোনো তর্নিকে অনুভব করিনি তোমাকে করেছি। আমি তোমাকে ভালোবাসি সুপ্তি। বিশ্বাস করো অনেক বেশি ভালোবাসি। 

_যখন ভালোবাসার বেসেছেন, এখন ভুলে যান। আমার বান্ধবী যাকে নিয়ে ভেবেছে আমি তাকে নিয়ে ভাবতে পারবো না।

_তোমার বান্ধবীকে বুঝালে সে বুঝবে। তুমি প্লিজ এমন করনা সুপ্তি। আমি মরে যাবো। সত্যি মরে যাবো তুমি ছাড়া।

_পাগলামী করে লাভ নেই। বুঝার চেষ্টা করুন। 

আরার সুপ্তির হাত ছেড়ে বলল,
_ঠিক আছে। বুঝতে বলছো তো। আমার বুঝার একটা রাস্তা আছে। তা মৃত্যু।

আরার দ্রুত হেঁটে গেটের সামনে এসে তাঁর দাঁড় করানো বাইকে উঠতে যায়। ফারদিন সুলভ আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে দৌড়ে গিয়ে আরারকে ধরে আরার তাঁদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। খুব রাগ হচ্ছে তাঁর নিজের উপর। কেন সেদিন নিজে সামনে গিয়ে বলেনি ভালোবাসার কথা। আজ তাঁর এতো এতো অনুভূতি গুলো নাকি স্বপ্ন বলে ভুলে যাবে? আরার বাইকে উঠে বাইক স্টার্ট দিবে তখনই সুপ্তি তাঁর হাত আরারের বাইকে রাখা হাতের উপর রাখে। আরার কাতর চোখে সুপ্তির দিকে তাকায়। সুপ্তি বলে,

_এতোই যদি ভালোবাসেন তো বলার সাহস পাননি কেন আগে?

সুপ্তির কন্ঠে কোমলতা। কিন্তু তাঁর এই কোমল কণ্ঠ কোমল চাহনির দিকে কারো তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সাথে সাথেই ঘৃণায় পরিনত হলো। কেউ নিজের বন্ধুর কথা না ভেবে কিভাবে অন্যের কথা ভাবতে পারে?

_______________________

ট্রেন থেকে নেমে তর্নি পাগলের মতো চারদিকে আরারকে খুঁজলো। কোথাও আরারকে দেখা যাচ্ছে না। কাঁদতে কাঁদতে তর্নির চোখ দুটো মারবেলের মতো হয়ে আছে। কাল থেকে আরারের সাথে কথা হচ্ছে না। আরার কেমন আছে কি করছে সুস্থ আছে কিনা খুব চিন্তা হচ্ছে তাঁর। দুপুরে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময়ও কিছু খেয়ে আসেনি। সারারাত গেলো কিছু খায়নি সে। আরার কি জানেনা তাঁর সাথে কথা না হলে তর্নির দম বন্ধ হয়ে আসে? সে কিছু গিলতে পারেনা। তাহলে কেন আরার এমন করছে? একটাবার একটা ফোন দেয়না কেন? স্টেশন থেকে নিতে আসবে বলেও আসেনি। কেন আরার এমন করছে? ব্যাগটা নিয়ে কেঁদে কেঁদে হেঁটে যাচ্ছে তর্নি৷ চারদিকে তাকিয়ে কাঙ্গালি দুচোখ শুধু আরারকে খুঁজে যাচ্ছে। কালো শাড়ি কালো চুড়ি পরে এসেছে সে। বুক ভরা আশা নিয়ে এসেছে আরার তাকে দেখে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরবে। আরারের কথামত সে তর্নিকে কোলে নিয়ে স্টেশন থেকে বের হবে। নিজ হাতে তর্নিকে তাকে খাইয়ে দিবে। অথচ আরার কিনা আসেই নি? আচ্ছা আরার অসুস্থ নয়তো? ও ঠিক আছে তো? কিছু হয়নি তো ওর? ভাবতেই কলিজা মুচড়ে উঠে তর্নির। আরারের কিছু হলে যে সে মরেই যাবে।

চলবে,,,,,।

 
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 2 users Like Bangla Golpo's post
Like Reply
#6
Next part
[+] 1 user Likes Raj Bai 23's post
Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)